Sunday, June 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1588



তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-০৭

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৭
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
ফাহাদ গাড়ি থেকে নেমে প্রিয়ার সামনে দাঁড়ালো। চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে পরিষ্কার করতে করতে প্রিয়াকে বললো,
“দুলাভাই চলেন বাড়ি যাই।”
ফাহাদের এমন কথায় আকাশ থেকে মনে হয় মাটিতে পড়লো প্রিয়া। এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললো,
“কাকে বলতেছেন স্যার?”
“আপনাকেই বলতেছি দুলাভাই।”
“কি যা তা বলতেছেন? কে কার দুলাভাই?”
“কে আবার? আপনি আমার দুলাভাই।”
“আমি আপনার দুলাভাই হতে যাবো কেন আজব!”
ফাহাদ এবার ধমক দিয়ে বললো,
“তাহলে আমায় শালা বললেন কেন?”
প্রিয়া একটু চমকে গেলো। তোতলাতে তোতলাতে বললো,
” ক..ক…কখন বললাম?”
“কখন বললাম তাই না? আমি স্পষ্ট শুনেছি আপনি আমাকে শালা বলেছেন।”
“আপনি ভুল শুনেছেন স্যার।”
“কিহ্? কি বললেন আপনি? আমি ভুল শুনেছি? দ্যাট’স মিন আমি বয়রা? এই আয়মান চৌধুরী ফাহাদকে বয়রা বলা?”
প্রিয়া মিনমিন করে বললো,
“শুরু হয়েছে তার নাম নিয়ে মহাভারতকে শুদ্ধ করা।”
মুখে বললো,
“এমা! ছিঃ ছিঃ। আমি আপনাকে বয়রা বলবো? এত সাহস আছে নাকি আমার?”
ফাহাদ এবার সানগ্লাসটা চোখে পড়তে পড়তে বললো,
“হ্যাঁ এটা সবসময় মাথায় রাখবেন।”
“সেই তো! কোথায় হাতি আর কোথায় হরিণ!”
“ওয়েট ওয়েট। কে হাতি আর কে হরিণ?”
“কেন স্যার, আপনি হাতি আর আমি হরিণ।”
“স্টুপিড লেডি আমায় দেখে হাতি মনে হলো আপনার?”
প্রিয়া মনে মনে বললো,
“হাতি তো দেখতে তাও সুন্দর আছে। আপনাকে তো আমার গণ্ডার মনে হয়।”
ফাহাদ চেঁচিয়ে বললো,
“চুপ করে আছেন কেন?”
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রিয়া কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
“আপনি সবসময় আমার সাথে এমন করেন কেন স্যার? আমার ভয় করে তো।”
“এই এই চুপ! রাস্তাঘাটে একদম কান্নাকাটি করবেন না।”
এরমধ্যে পৃথা দোকান থেকে চলে আসে। পৃথাকে দেখে ফাহাদ বললো,
“উনাকে নিয়ে বাড়িতে যান।”
“জ্বী স্যার।”
ফাহাদ চলে যাওয়ার পরই প্রিয়া বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলো। পৃথা বললো,
“বসের সাথে কি কথা বলছিলি রে?”
“কথা বললাম কই? ঝগরা করছিলাম।”
“কি বলিস? স্যার ঝগরা করে?”
“কেনো রে? তোদের কি মনে হয় তোদের বস দুধে ধোয়া তুলসী পাতা? এক নাম্বারের একটা বজ্জাত। প্রথমদিন থেকেই জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে খাচ্ছে।”
পৃথা দুষ্টুমি করে বললো,
“সবসময় বস তোর সাথেই কেন ঝগরা করে বলতো? ভালোবাসার পূর্বলক্ষণ নয়তো?”
প্রিয়ার মুখের বর্ণ পাল্টে যায় এবার। আনমনা হয়ে বলে,
“ভালোবাসা বলতে কোনো শব্দ নেই আমার জীবনে। লেট হয়ে যাচ্ছে, বাড়ি ফিরতে হবে।”
“হুম চল।”

প্রিয়া বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমের দরজা আটকিয়ে শুয়ে পড়ে। বুকের ভেতর অশান্তি হচ্ছে খুব। শোয়া থেকে উঠে বসে। এত কষ্ট কেন হচ্ছে। সারাদিনের ব্যস্তায় সব ভুলে থাকা গেলেও রাতে কেন সব স্মৃতি এভাবে দুমড়ে মুচরে দেয়। রাতটা এত স্বার্থপর কেন। কেন এসব অতীত পিছু ছাড়ছে না। ভালো থাকার অভিনয় করতে যে খুব কষ্ট হয় খুব।
আলমারি থেকে ডায়েরী বের করে প্রিয়া। ডায়েরী লেখার স্বভাব ছোট থেকেই। জীবনের বেশিরভাগ ঘটনাই প্রিয়া ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করে রাখে। মাঝখানে বেশিকিছুদিন ডায়েরী লিখেনি প্রিয়া। পুরনো ডায়েরীটা দেখে আপুর একটা কথা পড়ে যায়। আপু বলেছিল,
“যখন খুব বেশি মন খারাপ হবে তখন ডায়েরী খুলে নিজের লেখাগুলো পড়বি। হয়তো কষ্ট হবে কিন্তু এটা বুঝতে পারবি লাইফে কি কি তুই ডিজার্ভ করিস আর কতটা রিকোভার করতে পেরেছিস।”
ডায়েরীর প্রথম, মাঝখানে কয়েকটা পেজ পড়েই দম আটকে আসে প্রিয়ার। এই কষ্টগুলো এত অসহনীয় কেন। ডায়েরী না পড়ে এবার প্রিয়া লিখা শুরু করে। লিখতে লিখতে কখন যে টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল করেনি প্রিয়া।
ঘুম ভাঙ্গে সকালে মায়ের ডাকে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা বাজে।
“হায় আল্লাহ্! এত বেলা হয়ে গিয়েছে। ঠিক সময়ে যদি আজ পৌঁছাতে না পারি তাহলে বস আজ আমায় পাউডার ছাড়াই ওয়াশিং মেশিনে ধুবে।”
প্রিয়া তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দিলো। আলমারি থেকে কাপড় নিতে নিতে মাকে বললো,
“এত দেড়িতে কেউ ডাক দেয়?”
“মারবো এক চড়। সেই সাতটা থেকে ডাকছি। তুই তো উঠিসনি ঘুম থেকে।”
প্রিয়া আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি গোসল করতে চলে যায়। সময় নেই বিধায় না খেয়েই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। বাড়ির ভেতর থেকে বোঝাই যাচ্ছিলো না যে, বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। আবার বাড়িতে এসে ছাতা নিতে হলো। মা পিছন পিছন গিয়ে বললো,
“আজ তো হিজাবও পড়লিনা। খেলিও না। খাবারটা নিয়ে যা। ওখানে গিয়ে খাস। আর হিজাবও দিয়ে দিলাম। চুল শুকালে পড়ে নিস। তোর আবার হিজাব ছাড়া নাকি আনইজি লাগে।”
মা নামের এই মানুষটা কি করে যে এত খেয়াল রাখতে পারে! প্রিয়া শুধু একটা পার্স নিয়ে বের হয়েছিলো মা ভ্যানিটিব্যাগ এগিয়ে দিলো। ভ্যানিটিব্যাগের ভেতর পার্সটা ঢুকিয়ে প্রিয়া অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
.
.
সকালঃ ১০:২০
সবাই অফিসে এসে কাজ শুরু করে দিয়েছে। প্রিয়ার চেয়ারটাই ফাঁকা। ফাহাদ তার পিএ তোয়াকে ডেকে বললো,
“এই চেয়ার ফাঁকা কেন? কে আসেনি?”
“স্যার প্রিয়া আসেনি।”
“কেন?”
“তা তো জানিনা স্যার।”
“এই মেয়েটা অলটাইম লেট করে আসে। এটাকে অফিস আর এলাও করা যাবে নাকি এখন আমাকে সেটাই ভাবতে হবে। ও আসলে আমার রুমে পাঠিয়ে দিবে। কাজটাকে কি পেয়েছে ও? খামখেয়ালি? এসব খামখেয়ালিপনা আমার অফিসে চলবে না একদম। নিয়ম, টাইমিং সব যদি মানতে পারে তবেই কেবল এই অফিসে চাকরী করতে পারবে। নয়তো না।”

ফাহাদের রুমের সাথে ব্যালকোনির মত জায়গা আছে। যেটা কাঁচ দিয়ে আবৃত। ওখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিল আর কফি খাচ্ছিলো ফাহাদ। হঠাৎই বাহিরে চোখ আটকে যায় সাদা থ্রি-পিছ পড়া একটা মেয়ের দিকে। ছাতার কারণে মুখটা দেখা যাচ্ছে। তবে মেয়েটা অফিসের দিকেই এগিয়ে আসছে। কে এই মেয়ে! মেয়েটা কি আমার অফিসেরই। ফাহাদ দ্রুত নিচে নামলো। কিন্তু বিধিবাম! মেয়েটাকে আর পেলো না। ফাহাদ ভাবতে লাগলো,
“কে এই মেয়ে! কেন আমার এমন লাগলো।মেয়েটাকে দেখার জন্য আমি নিচে পর্যন্ত নেমে গেলাম!”

প্রিয়া অফিসে আসতেই পৃথা প্রিয়ার কাছে এসে বললো,
“আজ তো তোর খবর আছে রে প্রিয়া।”
“কেন?”
“আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন? আজও তুই লেট করে আসছিস। বস আজ খুব ক্ষেপে আছে তোর ওপর। এবার বোধ হয় তোর চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়েই গেলো।”
“বলিস কিরে! এখনো তো আমি অন্য কোথাও চাকরীর জন্য ট্রাই করিইনি। যদি চাকরীটা চলে যায়?”
ফাহাদের পিএ তোয়া এসে বলে,
“প্রিয়া স্যার তোমায় ডেকেছিলো।”
“জ্বী ম্যাম যাচ্ছি।”
“একটু টাইমিং মেনে চলতে পারো না?”
“স্যরি ম্যাম।”
“আমাকে স্যরি বলে কি হবে? দেখো স্যার কি করে। স্যার কিন্তু খুব রেগে আছে।”
“হুম।”
প্রিয়া ভয়ে ভয়ে স্যারের কক্ষের দিকে আগায়। হাত-পা ভয়ে সমানে কাঁপছে। প্রিয়া দরজায় নক করে বললো,
“মে আই কাম ইন স্যার?”
“ইয়েস কাম”
প্রিয়া ভেতরে ঢুকতেই ফাহাদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। প্রিয়া সাথে সাথে কানে ধরে বলে,
“স্যরি স্যরি স্যার। এবারের মত ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আর কখনো লেট হবে না। প্রয়োজনে ইচ্ছোমত আপনি আমায় বকেন আজ আমি একটা টুঁশব্দও করবো না। যে শাস্তি ইচ্ছে হয় দেন কিন্তু চাকরীটা কেড়ে নিয়েন না প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
প্রিয়া আকুতি-মিনতি করেই যাচ্ছে কিন্তু ফাহাদের কানে এসব কোনো কথাই যাচ্ছে না। ফাহাদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে এসেছে। দীঘল লম্বা চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। চোখে-মুখেও বৃষ্টির পানির ফোঁটা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সামনের কাটা চুলগুলো কপালে গালে লেপ্টে আছে। ফাহাদ মনে মনে বলে ফেলে,
“এই তো আমার সেই বৃষ্টিভেজা সাদা পরী। যাকে দেখে আমার হৃদস্পন্দন এক সেকেন্ডের জন্য থেমে গিয়েছিলো। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সাদা পরীটাই প্রিয়া। এতদিন তো চোখে পড়েনি মেয়েটাকে। নিজের সৌন্দর্যগুলো কি এতদিন লুকিয়ে রাখতো মেয়েটা? এতটা অসস্তি কেন লাগছে আমার! আজ লেট করে আসার কারণেই কি ওকে আমার চোখে বিঁধলো। আচ্ছা এক পলকের দেখায়ও কি ভালোবাসা যায়? তবে কি এই মেয়েটা আমার ভালোবাসা!”
হাজারও কথা ভেবে যাচ্ছে ফাহাদ।
প্রিয়া তখনো কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদের কোনো রেসপন্স না পেয়ে প্রিয়া কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
“এবারের মত কি ক্ষমা করা যায় না?”
ফাহাদের কল্পনার ঘোর কাটলো। প্রিয়ার মুখের দিকে তাকালো। বাচ্চাদের মত ঠোঁট বাঁকিয়ে কানে ধরে আছে। ঠোঁটের নিচে গাঢ় কালো একটা তিলও আছে। বাঁকানো ঠোঁটজোড়ায় হাত দিয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে,
“এভাবে কেঁদোনা গো তাহলে যে তোমার প্রেমের অতল সাগরে ডুবেই মরে যাবো যেটা তুমি জানতেও পারবে না।”
প্রিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। প্রিয়া মনে মনে ভেবেই নিলো, এবার আর চাকরী বাঁচানো যাবেনা। সব চেষ্টাই তো বৃথা গেলো। হুট করেই মাথায় একটা বু্দ্ধি এলো।
“কান ধরে উঠবস করলে কেমন হয়?”
যেই ভাবা সেই কাজ। প্রিয়া কান ধরে উঠবস করতে লাগলো। এবার ফাহাদ শব্দ করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতেই বললো,
“এখনো বাচ্চা রয়ে গেছেন।”
প্রিয়া এবার একটু সস্তি পেয়েছে। একবার হেসেছে মানে চাকরীটা বাঁচানো যেতে পারে। তবে এত সহজে যে বস ছেড়ে দিবেনা এটাও জানে প্রিয়া। একটা ধোলাই তো দিবেই। অবশ্য সেটার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে প্রিয়া। ফাহাদ হাসি থামিয়ে বললো,
“কিছু দিয়ে মাথাটা মুছে নিন। নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।”
ফাহাদের কথা শুনে প্রিয়ার মাথাটা ভনভন করে ঘুরে উঠলো। এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি! চোখ দুইটা বড় বড় করে তাকিয়ে আছে প্রিয়া। ফাহাদ মুচকি হেসে বললো,
“এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন?”
“আপনি কি ফাহাদ স্যার নাকি ভূত?”
“আমি ফাহাদের ভূত। এবার আপনার ঘাড় মটকাবো।”
“আমি কি আপনাকে একটু টাচ করতে পারি স্যার?”
ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কেন?”
“দেখতাম, আপনি সত্যিই মানুষ নাকি ভূত।”
ফাহাদ এবারও শব্দ করে জোরে জোরে হাসলো। প্রিয়া নিজেই নিজের গায়ে চিমটি দিলো।
” ও বাবাগো।”
ফাহাদ হাসি থামিয়ে বললো,
“কি হলো?”
“আমি তো বাস্তবেই আছি। তার মানে আপনি যা বললেন সত্যি?”
“হ্যাঁ। এত অবাক হওয়ার কি আছে?”
“কিন্তু..স্যার….”
“কিন্তু টিন্তু সব পড়ে হবে। এখন যান মাথাটা মুছে নিন।”
প্রিয়া বেড়িয়ে ভাবতে লাগলো,
“কেমনে সম্ভব এটা!”
প্রিয়া বের হয়ে আসার পর পৃথা এসে বললো,
“দোস্ত কি হলো রে? বস কি খুব বকেছে? চাকরীটা কি আছে?”
প্রিয়া চুপ করে আছে।
“কিরে বল না? স্যার কি বললো?”
“বললো, কিছু দিয়ে মাথাটা মুছে নিতে। নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“এ্যা? এটা কিভাবে সম্ভব? স্যার যেই হুংকার ছেড়েছিল আমরা তো ভেবেছিলাম আজ তুই শেষ! তুই কি মজা করছিস প্রিয়ু?
“আরে না রে। মজা কেন করবো? সত্যি বলছি। স্যার এটাই বলেছে।”
“আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না রে প্রিয়ু।”
“আমারও প্রথমে বিশ্বাস হয়নিরে।”
.
প্রতিটা দিন হন্যে হয়ে খুঁজেছে প্রিয়াকে মৃন্ময়। যে নিজ থেকে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া যে বোকামি এটা মৃন্ময়ের অবাধ্য মন বুঝতেই চাচ্ছে না। আজ অনেকদিন পর ল্যাপটপ ওপেন করে মৃন্ময়। মৃন্ময়ের হার্টবিট বেড়ে যায়। ল্যাপটপের ওয়ালপেপারে যে প্রিয়ার ছবি ছিল এটা তো ভুলেই গিয়েছিল মৃন্ময়। প্রিয়ার হাসিমাখা মুখটা দেখে মৃন্ময়ের প্রতিটা হৃদস্পন্দন জানান দেয়, ভালোবাসি প্রিয়া। তবে কি নতুন করে ভালোবেসে ফেললো মৃন্ময়। ল্যাপটপে আরো কিছু ছবি পেলো মৃন্ময়। ছবিগুলো ফোনে নিয়ে স্টুডিও এর দোকানে গেলো। পাঁচটার মত ছবি পেয়েছে। সবগুলো ছবি বের করে ফ্রেমে বাঁধিয়ে এনেছে মৃন্ময়। মৃন্ময়ের বেডরুমজুরে এখন শুধু প্রিয়ার ছবি। প্রিয়ার একটা ছবিতে চুমু খেয়ে বললো,
“ভালোবাসি।”
মৃন্ময়ের মা ঘরে ঢুকে বললো,
“এমন পাগলামির মানে কি মৃন্ময়?”
“কোনটা পাগলামি মা? এটা তোমার চোখে পাগলামি হতে পারে কিন্তু আমার কাছে আমার ভালোবাসা।”
“হারিয়ে বুঝে লাভ কি?”
“সমস্যা নেই তো। খুঁজে বের করে নিবো।”
“যদি অন্য কারো হয়ে যায়?”
“এত অল্প সময়ে ডিসিশন নেওয়ার মত মেয়ে প্রিয়া না। একবার শুধু দেখা পাই, প্রয়োজনে পা ধরে ফিরিয়ে আনবো।”
পেছন থেকে মৃন্ময়ের বন্ধু সাদিক বললো,
“সেদিনও তুই প্রিয়ার পা ধরেই মাফ চেয়েছিলি। সেদিন মাফ চেয়েছিলি ছেড়ে যাওয়ার জন্য আর এখন চাইবি ভালোবাসার জন্য?”
“দেখ সাদিক,ভুল তো মানুষই করে তাই না?”
“না জানা ভুলগুলো ক্ষমা করা যায় কিন্তু জেনেশুনে ভুলগুলো ক্ষমা করা যায় না। সেদিন কিন্তু একবারের জন্য তুই ওর কথা ভাবিসনি।”
“আমি জানি উত্তর দেওয়ার মত কিছুই নেই আমার কাছে। এখন আমি শুধু জানি, আমি ভালোবাসি প্রিয়াকে। আর ওকে আমি খুঁজে বের করবোই।”

রাতঃ১০:৫০ মিনিট
ফাহাদ মাকে ফোন দেয়। এই রুম থেকে ঐ রুমে ফোন দেওয়ার কি আছে ভেবে পায় না ফাহাদের মা। ফোন রিসিভড করার পর ফাহাদ বললো,
“তাড়াতাড়ি একটু আমার রুমে আসো তো।”
ফাহাদের মা ভয় পেয়ে গেলো। না জানি, কি হলো। ফাহাদের রুমে যাওয়ার পর ফাহাদ মায়ের হাত ধরে টেনে বিছানায় বসে। মায়ের কোলে আয়েশ করে মাথা রেখে ফাহাদ বললো,
“ও মা ভালোবাসা মানে কি গো?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন? হলো কি তোর আজ?”
“তুমি না বড্ড প্রশ্ন করো মা। আচ্ছা কাউকে এক পলক দেখেই কি ভালোবাসা যায়?”
“উদ্দেশ্য সৎ হলে এক সেকেন্ডই যথেষ্ট। তুই কি কারো প্রেমে পড়েছিস ফাহাদ?”
“প্রেমে পড়েছি কি না জানিনা মা, তবে ভালোবেসে ফেলেছি।”
“কি বলছিস? সত্যি? কে সেই মেয়ে? ছবি আছে? দেখা। মেয়েটা দেখতে কেমন? তোকে ভালোবাসে তো?”
“উফফ! মা এত অস্থির হচ্ছো কেন? আর একসাথে এত্তগুলো প্রশ্ন? মেয়েটা তো জানেই না যে, আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
“তাহলে জানিয়ে দে।”
“হুম জানাবো। আরেকটু সময় যাক, অবশ্যই জানাবো।”
“সময় নিতে গিয়ে আবার দেড়ি করে ফেলিস না কিন্তু।”
“না মা, এই ভালোবাসাকে হারাতে দেওয়া যাবে না।”…

চলবে…

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-০৬

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৬
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
মৃন্ময়ের সাথে রিমির সম্পর্কটা বেশ কয়েকদিন ভালো চললেও ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। রিমি চাইলেও মৃন্ময় কেন জানি সম্পর্কটা আগের মত করতে পারছেনা। মৃন্ময়ের সবসময়ই মনে হয় কি যেন একটা মিসিং কি যেন মিসিং! কিন্তু কি সেটা বুঝতে সময় লাগলেও বাকি রয় নি! মিসিং বিষয়টা প্রিয়াকে নিয়ে। না চাইতেও প্রিয়াকে নিয়ে কাটানোর স্বল্প স্মৃতিগুলোই বারবার পিছু ডাকে মৃন্ময়কে। মনের বিরুদ্ধে সম্পর্কও আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেনা। এটা যেন এক নিদারুণ কষ্ট। এভাবেই ইচ্ছের বিরুদ্ধে ইগনোর করে চলছে রিমিকে। রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটছিল রিমি আর মৃন্ময়। মৃন্ময় অন্য মনষ্ক হয়ে হাঁটছিল। রিমি হাত ধরে বললো,
“কি ভাবছো?”
“কই কিছু না তো।”
“সত্যিই কিছু ভাবছো না?”
“না।”
তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা। হাঁটতে হাঁটতে একটা লেকের পাশে বেঞ্চিতে বসলো দুজনে। রিমি বললো,
“মৃন্ময়!”
“হু।”
“একটা জিনিস খেয়াল করেছো?”
“কি?”
“তুমি আগের মত নেই।”
“আগের মত বলতে?”
“আগের মত আমায় ভালোবাসো না।”
“আমারও কেন জানি মনে হয় আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি।”
“কার সাথে?”
“প্রিয়ার সাথে।”
“মানে!”
“হ্যাঁ। অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। জানি ওর সাথে অনেক অল্প সময় কাটিয়েছি কিন্তু এই অল্প সময়েই আমায় অনেক ভালো ভালো মুহুর্ত উপহার দিয়েছে। জানিনা ওর মধ্যে কি এমন ছিল যেটা ওর প্রতি আমায় খুব বেশি টানতো। এখন আমি ফিল করতে পারি যে আসলে আমি ওকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছি।”
“মৃন্ময় তুমি কি বলছো এসব?”
“আমি ঠিকই বলছি রিমি। আমি এখন এটা উপলব্ধি করতে পেরেছি, আমি তোমায় নয় প্রিয়াকে ভালোবাসি। হয়তো দেড়ি হয়ে গিয়েছে বুঝতে। তবে আমি চাই সব ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলতে।”
“এমনটা করো না মৃন্ময়। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“কেমন ভালোবেসেছিলে আমায়? আমার সাথে রিলেশন থাকার পরেও তুমি অন্য ছেলের সাথে রিলেশন করেছো। আমার সাথে প্রিয়ার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমার কাছে কান্নাকাটি করেছো পায়ে ধরে। আমিও ইমোশোনাল হয়ে গিয়েছিলাম তোমার কান্না দেখে। আর তাই এত বড় ভুলটা করে ফেলেছিলাম। আসলে এভাবে মিথ্যা সম্পর্ক আর রাখা সম্ভব না তোমার সাথে। আমায় ক্ষমা করো।”
এতটুকুনি বলেই মৃন্ময় উঠে দাঁড়ায়। হাঁটা শুরু করে। গন্তব্য প্রিয়ার বাড়ি। পেছন থেকে রিমি অনেকবার ডাকা সত্ত্বেও পিছু ফিরে তাকায়নি মৃন্ময়।

প্রিয়ার বাসায় গিয়ে দরজায় নক করলো। দরজা খুলে দিলো এক অপরিচিত মহিলা। ভদ্র মহিলা মৃন্ময়কে জিজ্ঞেস করলো,
“কাকে চাই?”
“জ্বী প্রিয়া আছে?”
“প্রিয়া কে?”
“ওরা তো এই বাসাতেই থাকতো।”
“স্যরি চিনিনা আমি। আমরা এই বাড়িতে নতুন এসেছি।”
“তার মানে ওরা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে?”
“হয়তো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ।”
মৃন্ময় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। ভাবতে লাগলো এই অল্প সময়ে বাড়িও চেঞ্জ করে ফেললো। এখন কার থেকে প্রিয়ার খবর নিবে। বাড়ির সামনে মস্ত বড় একটা মাঠ আছে। বিভিন্ন খেলাধুলা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এখানেই হয়। বিকেলের দিকে ছোট ছোট বাচ্চারা খেলাধুলা করে। এদের মধ্যে একজনকে চিনে মৃন্ময়। প্রিয়ার সাথে একদিন কথা বলতে দেখেছিল। মৃন্ময় ছেলেটিকে ডেকে বললো,
“এই পিচ্চি প্রিয়া কোথায় বলতে পারবে?”
“আপুরা তো বাড়ি পাল্টে চলে গেছে।”
“নতুন বাড়ি চিনো?”
“না।”
“তোমাদের বলে যায়নি কোথায় বাড়ি নিয়েছে?”
“না। শুধু যাওয়ার আগে হাতে চকোলেট দিয়ে বলছে ঠিকমত পড়বি। নিজের যত্ন নিবি। ভালো থাকিস।”
মৃন্ময় পিচ্চিটার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“আচ্ছা।”
অজানা এক ভয়ে মৃন্ময়ের বুকে মোচর দিয়ে উঠলো। তবে কি মৃন্ময় হারিয়ে ফেললো প্রিয়াকে! মৃন্ময় ফোন বের করে প্রিয়ার নাম্বার খুঁজতে লাগলো কিন্তু পেলো না। হুট করেই মনে হলো রিমি প্রিয়ার সব ছবি, নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছিল। নিজের ওপর নিজেরই রাগ হচ্ছিলো মৃন্ময়ের। ফেসবুকে গিয়ে দেখলো আইডিও ডিএক্টিভ। খুঁজে বের করার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে প্রিয়া।
.
.
অফিস টাইমগুলো এখন ভালোই কাটে প্রিয়ার। আগে খুব বেশি বিরক্ত লাগতো। এখন নতুন নতুন ফ্রেন্ড হয়েছে। কাজ করে, এদের সাথে সময় কাটিয়ে দিব্যি চলে যাচ্ছে সময়। কিন্তু বসের মুখোমুখি হলেই ঝগড়া হবেই। সেই প্রথমদিনের রাগ এখনো পর্যন্ত ঝাড়ে বস। প্রিয়া শুধু মনে মনে বলে,
“চান্দু একবার শুধু ভালো একটা চাকরী পাই আপনার অফিসকে সালাম দিয়ে বিদায় হবো।”
লাঞ্চ টাইমে ক্যান্টিনে যাচ্ছিলো প্রিয়া। হঠাৎ ই সামনে পড়ে বস। তার পিএ-এর সাথে হেসে কথা বলছে। প্রিয়া সেখানেই থমকে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে,
“এই গোমড়ামুখো আবার হাসতেও পারে? হ্যাঁ পারেই তো। সবার সাথে হাসতে পারে শুধু আমার সাথেই ঘ্যানঘ্যান করবে। না জানি কোন জন্মের শত্রুতা তার সাথে।”

এরমধ্যে ফাহাদের সাথে প্রিয়ার চোখাচোখি হয়ে যায়। প্রিয়া দ্রুত চোখ সরিয়ে নিয়ে ক্যান্টিনে চলে যায়। সবাই খাবার খাচ্ছে। প্রিয়া গিয়ে পৃথার পাশে বসলো। অফিসে একমাত্র পৃথার সাথেই প্রিয়ার সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক। পৃথা মুচকি হেসে বললো,
“লেট হলো কেন সুন্দরী?”
“ঐ একটু হয়ে গেলো আরকি!”
একসাথে লাঞ্চ করার সময় আশেপাশের কলিগদের কথা কানে ভেসে আসছিল। আলোচনার টপিক হচ্ছে ফাহাদ। একেকজন একেক কথা বলছে। কেউ বলছে, বস কত্ত হ্যান্ডসাম!! কত কিউট। আরেকজন বলছে, দেখ গিয়ে গার্লফ্রেন্ডও হয়তো আছে। আরেকজন বলছে, এভাবে বলিস না কষ্ট লাগে। সবার কথা শুনে প্রিয়া এটাই ভেবে পায় না ঐ মানুষটার মধ্যে এমন কি আছে যে সব মেয়ে তাকে নিয়ে এমন মাতামাতি করছে। বিরক্তিকর একটা লোক!

রাত ৮টায় অফিস ছুটি হয়ে যায়। ফাহাদ গাড়ি নিয়ে গেটের কাছে যেতেই প্রিয়াকে দেখতে পায়। পেছন থেকে বলে,
“এইযে চাশমিস লেট লতিফ।”
প্রিয়া দাঁত কটমট করতে করতে তাকায়। ঐ একটা দিনের মাশুল প্রতিটা মুহুর্তে দিতে হচ্ছে প্রিয়ার। প্রিয়া বিড়বিড় করে বললো,
“আল্লাহ্ কোন কুলক্ষণে যে তার সাথে প্রথম সেদিন দেখা হলো।”
“কিছু বললেন?”
“জ্বী না।”
“সবসময়ই কি আপনি লেট লতিফ? সবাই চলে গিয়েছে অথচ আপনি এখনো যাননি।”
“পৃথার জন্য অপেক্ষা করছিলাম স্যার।”
“কোথায় সে?”
“ঐতো আসতেছে।”
“ওকে। সাবধানে যাবেন। রাতে চোখে দেখেন তো?”
প্রিয়ার মেজাজ এবার বিগড়ে যায়। মাছের কাঁটার মত গলায় আটকে আছে। ইচ্ছে থাকলেও তুলে ফেলতে পারছে না। ফাহাদ বিশ্বজয়ের মুচকি হেসে বললো,
“আসি।”
প্রিয়া অস্পষ্ট স্বরে বলে ফেললো,
“আপনি গেলেই আমি বাঁচি শালা।”
তখনই দুম করে ফাহাদ গাড়ি থামিয়ে দিলো। প্রিয়ার জান তখন যায় যায় অবস্থা। না জানি, কথাটা শুনে ফেলেছে….

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-০৫

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৫
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
অফিসের গেটের কাছে আসতেই একটা পিচ্চি মেয়ে প্রিয়ার ওড়না টেনে ধরলো। প্রিয়া চমকে গেলো। বললো,
“আরে কি করছো? ওড়না ছাড়ো।”
মেয়েটা কিছু বললো না। প্রিয়ার হাত ধরে টানতে লাগলো। প্রিয়া বিরক্ত হয়ে বললো,
“একটার পর একটা ঝামেলা তো দেখি লেগেই আছে।”
টানতে টানতে একটা দোকানের সামনে নিয়ে গেলো এবং খাবার দেখাতে লাগলো। এবার প্রিয়া ভালো করে তাকালো মেয়েটার দিকে। পড়নে একটা পুরাতন ফ্রক। তাও হাতার এক পাশ ছেঁড়া। মাথার চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। প্রিয়ার মায়া লাগলো। মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“কিছু খাবে?”
মেয়েটা কথা না বলে মাথা উপর নিচ করলো। প্রিয়া দোকানদারকে বললো,
“আংকেল এক প্যাকেট পাউরুটি, চারটা কলা আর এক বোতল পানি দিনতো।”
খাবারগুলো পিচ্চিটার হাতে দেওয়ার পর খুশিতে মেয়েটার চোখমুখ উজ্জল হয়ে গেলো। খাবারগুলো নিয়ে দৌঁড়ে চলে গেলো। দোকানদারকে টাকা দিয়ে প্রিয়া অফিসে চলে গেলো।
হাতঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ১০:১০ বাজে। ১০টার মধ্যে উপস্থিত থাকার কথা সেখানে ১০ মিনিট লেট। না জানি, কপালে কি আছে। চাকরীর মুখ দেখার আগেই বোধ হয় চাকরীটা যাবে।
.
তিন তলায় গিয়ে এদিক সেদিক ঘুরছিলো প্রিয়া। একটা ছেলে এসে বললো,
“কাজ বাদ দিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
“একচুয়ালি আমি আজ নতুন জয়েন করেছি।”
“আপনি এখানে কেন তাহলে? নতুনদের নিয়ে তো মিটিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনি জানেন না?”
“জানি। কিন্তু আসলে আমার দেড়ি হয়ে গিয়েছে।”
“প্রথম দিনই লেট। আসুন আমার সাথে।”
প্রিয়াকে উদ্দেশ্যে করে বললো,
“নক করে ভেতরে যান।”
“আচ্ছা।”
ছেলেটা চলে গেলো। প্রিয়া দরজায় নক করে বললো,
“মে আই কাম ইন?”
একটা মেয়ে মিষ্টি স্বরে বললো,
“ইয়েস কাম ইন।”
সম্ভবত মেয়েটা স্যারের পিএ হবে। প্রিয়া এক পা বাড়াতেই স্যার বললো,
“আউট!”
প্রিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। এটা তো সেই বাসের ছেলেটা ফাহাদ। প্রিয়া হা করে তাকিয়ে রইলো। ফাহাদ ধমক দিয়ে বললো,
“কি হলো? কথা কানে যাচ্ছে না? বের হতে বলেছি আমি। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে।”
প্রিয়া মুখটা কালো করে বেড়িয়ে এলো। বাহিরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। মিটিং শেষে সবাই বেড়িয়ে এলো। ফাহাদও। একবার প্রিয়ার দিকে তাকালো তারপর তার পিএ কে বললো,
“উনাকে আমার রুমে পাঠিয়ে দাও।”
“আচ্ছা।”
ফাহাদের কথা মত প্রিয়াকে পাঠিয়ে দিলো তার কেবিনে। প্রিয়া দরজায় নক করে বললো,
“আসতে পারি স্যার?”
“আসুন আসুন। আপনার জন্যই তো অপেক্ষা করছিলাম লেট লতিফ।”
প্রিয়া মুখটা মলিন করে ভেতরে প্রবেশ করলো। কয়েক মিনিট নিরবতা চললো। মনে হয় বড় কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস। হলোও তাই! ফাহাদ ধমক দিয়ে বললো,
“কয়টা বাজে?”
ফাহাদের ধমকে প্রিয়া কেঁপে উঠলো। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
“এ..এ..এগারোটা পাঁচ।”
” এ এ কি? আপনি কি তোতলা?”
“জ্বী না।”
“প্রথমদিনেই অফিসে লেট করে আসলেন। জানেন এর শাস্তি কি দিতে পারি আমি?”
“জ্বী না।”
“জানেন না?”
“না।
“কেন জানেন না?”
“আজব তো! আপনি কি শাস্তি দিবেন সেটা আমি কি করে বলবো?”
“আমার মুখে মুখে তর্ক? আমি আপনার বস হই বস!”
“উদ্ধার করেছেন আমায় বস হয়ে। মুখে তো একটুসখানিও মধু নেই আবার চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে বস হই বস!”
“আউট।গেট আউট।”
“হ্যাঁ যচ্ছি যাচ্ছি। এখানে বসে থাকতে আসিনি আমি।”
প্রিয়া চলে যাওয়ার সময় পেছন থেকে আবার ফাহদ ডাক দিলো,
“দাঁড়ান।”
প্রিয়া ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,
“জ্বী।”
ফাহাদ চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে প্রিয়ার হাতে ১০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“এইযে আপনার ১০ টাকা। আয়মান চৌধুরী ফাহাদ কারো কাছে ঋণ থাকেনা।”
প্রিয়া রাগে গজগজ করতে করতে বেড়িয়ে এলো।
“ইশ! কি ঢং এর নাম গো! সেটা আবার ঢং করে বারবার রিপিট করা লাগে। এমন বসই কি কপালে জুটতে হলো আমার? কিভাবে সহ্য করে চাকরী করবো আল্লাহ্!”

৫টার দিকে অফিস ছুটি হয়ে যায়। সবার সাথে সাথে প্রিয়াও বের হয়ে আসে। বাহিরে এসেই ফাহাদের মুখোমুখি হয়। প্রিয়া অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আর ফাহাদ গম্ভীর হয়ে গাড়িতে উঠে চলে যায়।
.
.
বাড়িতে এসেই প্রিয়া ফ্যান ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। মা রুমে এসে বললো,
“কিরে এসেই শুয়ে পড়লি যে?”
“ক্লান্ত লাগছে মা।”
“যা ফ্রেশ হয়ে আয়।”
“একটুপর যাই মা?”
“না, এখনই যাবি। উঠ তাড়াতাড়ি।”
প্রিয়া উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ততক্ষণে মা কফি বানিয়ে আনে। প্রিয়া তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে। কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে মা বললো,
“অফিসের প্রথম দিন কেমন কাটলো?”
অফিসের কথা মনে হতেই প্রিয়ার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু এসব মা বা ভাইয়ারা কেউ জানলে কখনোই এই চাকরীটা করতে দিবে না এটা প্রিয়া ভালো করেই জানে। আর অতীত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রিয়ার ব্যস্ত থাকাটা খুব জরুরী। বস রাগী তো কি হয়েছে? হোক রাগী! তার সাথে ঠিকমত কথা বললেই হয়। সে রেগে যায় এমন কাজ করবে না। ব্যস হয়ে গেলো। চাকরী করতে করতে একটা অভিজ্ঞতাও হয়ে যাবে। তখন ভালো কোনো চাকরী পেলে এটা ছেড়ে দিবে। মনে মনে এসব ছক কষে নিচ্ছিলো প্রিয়া। মা হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
“কিরে? কোথায় হারিয়ে গেলি?”
“এ্যা? হারাইনি তো।”
“জিজ্ঞেস করলাম কেমন কাটলো আজকের দিন?”
প্রিয়া কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো,
“ভালো।”
“ভালোমত কাজ করবি।”
“আচ্ছা।”

মাগরিবের নামাজ পড়ে প্রিয়া সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে। কারো হাতের ঠান্ডা স্পর্শে প্রিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ মেলে দেখে ছোট ভাইয়া ভেজা হাত দিয়ে প্রিয়ার দুই গাল চেপে ধরেছে। প্রিয়া হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
“এটা কি হলো?”
“ঘুম ভাঙ্গানো হলো। এখনো ঘুমাচ্ছিস তুই?”
“ঘুমাবো না তো কি করবো?”
“উঠ তাড়াতাড়ি সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
“কেন?”
“কেন আবার কি? খাওয়ার জন্য।”
“আমি খাবো না।”
“তুই খাবি, তোর ভাইও খাবে।”
“তাহলে ভাই’ই খাক। আমি খাবো না।”
“খাবিনা?”
“না, না, না।”
“ওকে।”
ছোট ভাইয়া প্রিয়াকে কোলে করে ডাইনিং রুমে নিয়ে গেলো। প্রিয়া চেঁচামেচি করতে করতে হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি করতে লাগলো। ছোট ভাইয়া বললো,
“খবরদার প্রিয়ু। এমন করলে কিন্তু ঠাস করে ফ্লোরে ফেলে দিবো।”
ছোট ভাইয়া প্রিয়াকে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। প্রিয়া কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
“আমার ঘুম, তোমাদের কারো সহ্য হয়না আমি জানি তো।”
বড় ভাইয়া হাসতে হাসতে বললো,
“জানিস প্রিয়ু তুই এভাবে কথা বললে তোকে না অনেক কিউট লাগে। এমন করে থাকিস না, তাহলে কিন্তু আমিই তোকে কাঁদাবো।”
প্রিয়া চেঁচিয়ে বললো,
“মা, তোমার এই বাঁদর দুই ছেলেকে কিছু বলবা নাকি আমিই দুইটার ঘাড় মটকাবো বলো?”
ছোট ভাইয়া বললো,
“সে কি রে প্রিয়ু? তুই রাক্ষসী নাকি?”
বড় ভাইয়া বললো,
“ও তো রাক্ষসীই। দেখিস না হাতের নোখ কি বড় বড়।”
“মাআআআআআ।”
এবার বড় ভাবী বললো,
“কি শুরু করলে তোমরা? রাগাচ্ছো কেন ওকে?”
“ইশ! ননদের জন্য কি দরদ।”
“দরদ তো হবেই। চুপচাপ খাও।”
প্রিয়া ভাত নিতে যাবে তখন ছোট ভাইয়া বললো,
“তুই না বললি তুই খাবিনা?”
প্রিয়া দাঁত কটমট করে বললো,
“তো আমি কি এখানে এখন নৃত্য করবো?”
“না বোন। বাতাসে কখন উড়ে যাবি কে জানে।”
“খাবো না। ওকে খাবো না।”
বড় ভাইয়া বললো,
“আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।”
ছোটভাইয়া বললো,
“সবসময় ও কেন আদর পাবে? আমায় খাইয়ে দাও না কেন?”
“ছোট ভাইয়া তুমি খুব হিংসুটে।”
“একদম তোর মত। তাই না?”
“কচু।”
দুই ভাই মিলে প্রিয়াকে খাইয়ে দিলো। ছোট ভাবী বিছানা ঠিক করে দিলো,মশারী টানিয়ে দিলো। বড় ভাবী প্রিয়ার চুলে বেণী করে দিলো। রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো,
“পরিবারের প্রতিটা মানুষই আমাকে কতটা ভালোবাসে। অথচ আমি যাদের ভালোবাসি তাদের কাছেই প্রতারিত হই। আমার পরিবারের মত কেউ আমায় কখনো বুঝবে না। আর ভালোও বাসতে পারবে না। আল্লাহ্, তুমি আমার পরিবারকে এভাবেই হাসিখুশি রেখো। ভালো রেখো।”
প্রিয়া শান্তির একটা ঘুম দিলো।

সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে অফিসে চলে গেলো। আজ পাক্কা ৩০ মিনিট আগেই অফিসে পৌঁছে গেলো। অফিসে গিয়েই খেলো এক ধাক্কা। বিড়বিড় করে বললো,
“বাবারে দেওয়াল নাকি আইফেল টাওয়ার! গেলো রে মাথাটা।”
সামনে তাকিয়ে দেখলো এটা কোনো দেয়াল না আবার কোনো আইফেল টাওয়ারও না। সাক্ষাত বস! ফাহাদ অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া মিনমিন করে বললো,
“প্রিয়ারে আজ তুই শেষ! যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যো হয়। এর চেয়ে যদি, আমি তিন তলা থেকে নিচে পড়ে যেতাম তাও ভালো ছিল। নয়তো কলার খোসায় পা পিছলে ফ্লোরে পড়ে কোমড় ভাঙ্গতাম তাও ভালো ছিল। এখন তো জম সামনে দাঁড়িয়ে।”
ফাহাদ রাগী কণ্ঠে বললো,
“চশমায় পাওয়ার আছে?”
“হ্যাঁ।”
“তবুও দেখে চলতে পারেন না? চোখ কি কপালে তুলে রাখেন? আমি তো ব্লাক সানগ্লাস পড়েও সব ঝকঝকা তকতকা দেখি।”
প্রিয়ার ইচ্ছে হলো একবার জিজ্ঞেস করতে, তাহলে আপনি ধাক্কা খেলেন কেন? আপনি দেখে চললেই তো আর ধাক্কা লাগতো না। কিন্তু মুখে এটা বলা যাবেনা। মুখে বললো,
“স্যরি স্যার।”
“স্যরি? স্যরি বললেই সব সমাধান হয়ে গেলো তাই না?”
“তাহলে কি করবো?”
“কিচ্ছু করতে হবে না। চশমাটা দেন।”
কোনো প্রশ্ন ছাড়াই প্রিয়া চশমা খুলে দিলো। ফাহাদ চশমাটা চোখে দিতে দিতে বললো,
“দেখেন আমি কিভাবে পাওয়ারের চশমা পড়ে হাঁটি।”
চশমা পড়ে দুই কদম যেতেই ধপাস করে এক শব্দ হলো। অন্যকিছু নয়! ফাহাদই পড়ে গেছে। প্রিয়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। এগিয়ে গিয়ে বললো,
“উঠুন উঠুন। ব্যথা পেয়েছেন?”
“ইশরে! সবই কেমন উঁচুনিচু লাগছিলো আর তাই ধপাস করে পড়ে গেলাম।”
প্রিয়া মিটমিট করে হাসতে লাগলো।
“আসলে স্যার, আপনার অভ্যাস নেই তো তাই পড়ে গিয়েছেন।”
“আপনি তো মনে মনে এটাই চেয়েছেন।”
“এমন কেন চাইবো আমি?”
“না চাইলে প্রথমে বললেন না কেন?”
“আপনার মুখে মুখে কি আর তর্ক করা যায় স্যার? হাজার হলেও আমার বস আপনি।”
ফাহাদ রাগে দাঁত কটমট করতে লাগলো। মনে মনে বললো,
“আমার কথাই আমায় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেখে নিবো আমিও।”..

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-০৪

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৪
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
মা বিছানায় বসে কাঁদছিল। প্রিয়া মায়ের কাছে গিয়ে বললো,
“মা কিছু কথা ছিল।”
প্রিয়াকে দেখে মা তাড়াতাড়ি চোখ মুছে বললো,
“হ্যাঁ বল।”
“মা, আমি আর এখানে থাকতে চাই না। ভাইয়াকে বলো না অন্য কোথাও বাড়ির ব্যবস্থা করতে। চলো না মা, আমরা এখান থেকে একেবারে চলে যাই।”
মা প্রিয়াকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“বলবো মা। আজই তোর ভাইয়াকে বলবো।”

রাতে খাওয়ার টেবিলে বসে মা দুই ভাইয়াকে বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে জানায়। সবাই প্রিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে রাজি হয়ে যায়।
ছাদে বসে বসে গান শুনছিল প্রিয়া। ভাবছিল, জীবন কি অদ্ভুত গতিতে চলে! সুখ ধরা দিয়েও দেয়না ধরা। ছাদে হাঁটতে হাঁটতে রেলিং এর কাছে যায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আজ চাঁদ উঠেছে। বড় থালার মত সম্পূর্ণ একটা চাঁদ। প্রিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কেমন আছো তুমি আব্বু? তুমি কি আমায় মিস করো না একটুও? জানো আব্বু, আমি সত্যিই অলক্ষী! না হলে কেন বারবার আমার সাথেই এমন হবে বলো তো? আমার অপরাধটা কি? তোমায় খুব মিস করছি আব্বু। একবার তোমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। তুমি একটিবার আসবে? ও আব্বু বলো না একটিবার আসবে?”
নিজে নিজে কথা বলতে বলতে একটা সময় ডুকরে কেঁদে উঠে প্রিয়া। বেশ কিছুক্ষণ পর চোখের পানি মুছে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি? আল্লাহ্ তুমি সব দেখছো তো? অন্যের জন্য কেন নিজে কষ্ট পাচ্ছি আমি? সাথে পরিবারের মানুষগুলোকেও কষ্ট দিচ্ছি। অনেক হয়েছে। আর না। আজ, এখন থেকে নিজের কাছে নিজেই প্রমিস করছি, কারো জন্য আর কষ্ট পাবো না। নিজেকে এভাবে গুটিয়ে রাখবো না। থেমে থাকবো না আমি। সফলতাকে ছিনিয়ে আনবো।”
.
.
এক মাসের মধ্যেই বাড়ি চেঞ্জ করার সব ব্যবস্থা করে ফেলে প্রিয়ার দুই ভাই। আজ ওরা বাড়ি চেঞ্জ করে নতুন বাড়িতে উঠেছে। সম্পূর্ণ নতুন একটি এলাকা। নতুন পরিবেশ, নতুন প্রতিবেশি। মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হলেও কষ্টগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আগের থেকে অনেকটাই পরিবর্তন করেছে নিজেকে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটা চাকরীর ইন্টার্ভিউও দিয়েছে। শেষে যেই অফিসে ইন্টার্ভিউ দিয়েছে সেই অফিস থেকেই ফোন আসে। ভাগ্য ভালো থাকায় চাকরীটাও হয়ে যায়। প্রিয়ার যে চাকরী করাটা খুব বেশিই দরকার বিষয়টা এমন নয়। নিজেকে ব্যস্ত রাখলে অতীত থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যাবে এটা ভেবেই বাড়ির লোকজন আর বাঁধা দেয়নি। ভার্সিটিতে প্রতিদিন ক্লাসও করা লাগেনা বিধায় কারোরই কোনো সমস্যা নেই।
অফিসে প্রথম জয়েনের দিন প্রিয়া একটা সুতি থ্রি-পিছ পড়ে। অফ-হোয়াইট কালার একটা থ্রি পিছ সাথে ব্লাক কালার হিজাব। ঠোঁটে একদমই হালকা গোলাপি লিপস্টিক দেয়। খাবার খাওয়ার সময় ছোট ভাইয়া বললো,
“কিরে প্রিয়ু তুই লিপস্টিক দিয়ে খাচ্ছিস যে?”
খাবার মুখে নিয়েই প্রিয়া বললো,
“তো কি হয়েছে?”
“পেট খারাপ হলে বুঝবি।”
“লিপস্টিক খেলে পেট খারাপ হয় তুমি কি করে জানলে?”
আমার কথা শুনে ছোট ভাবী বিষম খেলো। ছোট ভাইয়া একটু কেশে বললো,
“জানিনা তো। আন্দাজে বললাম আরকি! জানিসই তো লিপস্টিকে কত কেমিক্যাল থাকে। তাছাড়া লিপস্টিক ঠোঁটে দিয়ে খেয়ে লাভ কি? লিপস্টিক তো উঠেই যাবে।”
“উঠলে উঠুক! আমারটা শেষ হলে ভাবীরটা দিবো।”
খাওয়া শেষে প্রিয়া উঠে দাঁড়ায়। মাকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
“মা, আমি আসি কেমন।”
মা প্রিয়ার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“সাবধানে যাবি। মন দিয়ে কাজ করবি।”
ছোট ভাইয়া ডাক দিয়ে বললো,
“এদিকে আয় তো প্রিয়ু।”
“কি হয়েছে?”
“আরে আয় তো।”
প্রিয়া ছোট ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললো,
“কি?”
“শার্টের পকেটে কি আছে দেখতো।”
“এটার জন্য তুমি আমায় ডেকে আনলে?”
“দেখছিস তো আমি খাচ্ছি।”
ছোট ভাবী হাসতে হাসতে বললো,
“তোমার ভাইয়ার এই স্বভাব কি আজ নতুন নাকি। অলসের ঢেঁকি একটা।”
প্রিয়া আর কথা না বাড়িয়ে ছোট ভাইয়ার পকেটে হাত দিলো। একটা পাঁচশো টাকার নোট।
টাকাটা ভাইয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“এই ধরো।”
“আমাকে দিচ্ছিস কেন?”
“তো কাকে দিবো?”
“তুই নিবি।”
“আমার লাগবেনা। বড় ভাইয়া অফিসে যাওয়ার আগে পাঁচশো টাকা দিয়ে গেছে।”
“বলিস কিরে! ভাইয়া তোরে টাকা দিলো অথচ আমায় দিলো না। আচ্ছা ওটা আমি পরে বুঝে নিবো। এখন এই টাকাও তুই নিয়ে যা। রাস্তাঘাট বলা তো যায় না কখন কোথায় টাকা লাগে।”
“আমার লাগবেনা ভাইয়া।”
“লাগবেনা মানে কি রে? আর আমি কি তোকে এমনি এমনিই দিচ্ছি নাকি? বেতন পেয়ে এটার ডাবল টাকা মানে সুদসমেত এক হাজার টাকা ফেরত দিবি।”
ছোট ভাইয়ার কথা শুনে প্রিয়া হেসে দিলো। টাকা নিয়ে বললো,
“তোমার সাথে ঝগরা করতে থাকলে আমার অফিস টাইম পাড় হয়ে যাবে। আমি এখন আসি।”
“সাবধানে যাস।”
“আচ্ছা।”
প্রিয়া চলে যাওয়ার পর ছোট ভাবী বললো,
“মা, প্রিয়া কিন্তু আগের থেকে পরিবর্তন হচ্ছে। কি সুন্দর হাসিখুশি থাকে দেখেছেন।”
“হ্যাঁ রে মা। আল্লাহ্ যেন আবারও ওকে আগের মত হাসিখুশি করে দেয়।”

বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াতেই সাথে সাথে একটা বাস আসে। প্রিয়া বাসে উঠে জানালার পাশে একটা সিট দেখে বসে পড়ে। বাসে আরো যাত্রীরা উঠছিলো। হুট করে একটা ছেলে বাসে উঠে ধপাস করে প্রিয়ার পাশের সিটে বসে পড়ে। প্রিয়া একবার তাকিয়ে দেখলো রীতিমত ছেলেটা রাগে কাঁপছে। চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে। প্রিয়া আর সেদিকে না তাকিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। বাস অলরেডি ছেড়ে দিয়েছে। পাশে বসা ছেলেটা ফোনে কল আসতেই রাগ ঝাড়া শুরু করে দেয় সে। ঐপাশ থেকে কি বলছে শোনা যাচ্ছেনা। কিন্তু ছেলেটা বলছে,
“এখন আমি গাড়ি দিয়ে কি করবো? এতক্ষণে গাড়ি পাঠানোর সময় হলো তোমাদের? এদিকে যে, আমার মিটিং এর সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে সেটা কি তোমাদের মাথায় নেই। ননসেন্স একেকটা। সব কয়টাকে যদি কঠিন শাস্তি না দেই তো আমার নামও ফাহাদ নয় বলে দিলাম।”
এতটুকু বলেই তিনি ফোন কেটে দিলেন।
এরপর সব চুপচাপ। হেল্পার ভাড়া নিতে আসার সময় প্রিয়াকে উল্লেখ করে বললো,
“আপা ভাড়াটা দেন।”
প্রিয়া ভাড়া মিটিয়ে দিলো। ফাহাদ নামক ছেলেটা হেল্পারের দিকে পাঁচশো টাকার নোট’টা এগিয়ে দিলো। হেল্পার বললো,
“ভাইজান পাঁচশো টাকা তো ভাংতি নাই।”
ফাহাদ রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
“ভাংতি নেই কেন? কেন নেই? ভাংতি কেন রাখেন না আপনারা?”
হুটহাট এমন আচরণে হেল্পারসহ বাসের অনেকেই বেশ অবাক হয়। বিষয়টাকে থামাতে প্রিয়া তার ভাড়াটা দিয়ে হেল্পারকে বললো,
“আপনি যান।”
হেল্পার চলে যাওয়ার পর ফাহাদ প্রিয়ার দিকে ঘুরে বললো,
“আপনি কে?”
“স্যরি?”
“কে আপনি?”
“আমি প্রিয়া।”
“আপনার নাম জানতে চাইনি আমি। আমি জানতে চেয়েছি আপনি আমার কে?”
“কিছুইনা।”
“তাহলে আপনি কেন দিবেন আমার ভাড়া?”
“আশ্চর্য লোক তো আপনি! কারো উপকার করলেও দোষ।”
“কে বলেছে আপনাকে আমার উপকার করতে? ১০ টাকার ভাড়া দিয়ে আমায় উদ্ধার করেছেন।”সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
“পায়ে পা দিয়ে এমন ঝগরা করছেন কেন?”
“কি মিথ্যুক মহিলা। পায়ে পা দিলাম কখন?”
“ঐটা কথার কথা ছিল। আর কালো সানগ্লাসটা চোখ থেকে খুলেন তো। একটা ছোট বাচ্চা মেয়েকে বলে মহিলা। বলি, চোখে কি ছানি পড়েছে?”
“কিহ্? এত্ত বড় কথা? আমার চোখে ছানি? আমি কি আপনার মত কানি?”
প্রিয়া কিছু বলতে যাবে তখনই হেল্পার বললো,
“আপা নামেন। আইসা পড়ছেন।”
প্রিয়া রাগে দাঁত কটমট করতে করতে বাস থেকে নেমে পড়লো। প্রিয়ার সাথে সাথে ফাহাদও নেমে পড়লো। কিছুদূর যেতেই প্রিয়া পেছন ঘুরে দাঁড়ালো। এক হাত কোমড়ে গুঁজে বললো,
“সমস্যা কি? পেছন পেছন আসছেন কেন? ঝগরা করে স্বাদ মিটেনি?”
“ঐ হ্যালো, আমি! আমি আপনার পিছন পিছন আসছি? এই ফাহাদ? আয়মান চৌধুরী ফাহাদ কারো পিছন পিছন যায় না ওকে?”
প্রিয়ার মেজাজ চরমে উঠে গেলো। এদিকে বেশিকিছু বলতে গেলে অফিসে লেট হয়ে যাবে। আর প্রথমদিনই লেট হলে দেখা যাবে কর্পূরের মত চাকরীটাও উধাও হয়ে যাবে। তাই আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলো আর মনে মনে বললো,
“কোথা থেকে যে এই পাগলের উদয় হলো আল্লাহ্! এত ঝগরুটে হয় ছেলেরা।”

চলবে…..

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-০৩

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৩
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। একদিন বাদেই যার সাথে বিয়ে তাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে এভাবে দেখা সত্যিই কষ্টকর। মৃন্ময়কে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। শুধু তাই নয়। মেয়েটা কাঁদছে। মৃন্ময় প্রিয়াকে দেখে মেয়েটাকে এক প্রকার জোর করেই ছাড়িয়ে দিলো। মেয়েটা তবুও মৃন্ময়ের হাত ধরে কাঁদছিল। মৃন্ময় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে প্রিয়ার কাছে আসলো।
“প্রিয়া তুমি?”
“মেয়েটা কে?”
“রিমি।”
এবার রিমি প্রিয়ার কাছে এগিয়ে আসলো। কাঁদতে কাঁদতে মৃন্ময়কে বললো,
“এই সেই প্রিয়া? যার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে?”
“হুম।”
প্রিয়া আর মৃন্ময়কে অবাক করে দিয়ে রিমি প্রিয়ার পা পেঁচিয়ে ধরলো। প্রিয়া তাড়াতাড়ি উঠানোর চেষ্টা করলো।
“আরে কি করছো? উঠো উঠো।”
“প্লিজ মৃন্ময়কে আমায় ভিক্ষা দাও প্লিজ আপু। আমি মৃন্ময়কে ছাড়া থাকতে পারবো না। তোমার পায়ে ধরে ভিক্ষা চাইছি আমার ভালোবাসাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।”
প্রিয়া রিমিকে অনেক চেষ্টার পর উঠিয়ে দাঁড় করায়।
“ভালোবাসা কোনো ভিক্ষা দেওয়ার জিনিস নয় আপু। মৃন্ময় হয়তো তোমার ভালোবাসার মানুষ ছিল কিন্তু সে এখন আমার হবু স্বামী। রাত পোহালেই বিয়ের সব আয়োজন শুরু হবে। অলরেডি বাড়িতে বিয়ের ধুম পড়ে গিয়েছে। আর তুমি এখন এসে ভিক্ষা চাইছো? ভালোই যখন বাসো তখন ছেড়ে কেন গিয়েছিলে?”
“আমি জানি আমি ভুল করেছি। কিন্তু অন্য কারো সাথে আমি ওকে মেনে নিতে পারবোনা।”
প্রিয়া কিছু না বলে মৃন্ময়ের দিকে তাকালো।
“আপনি কিছু বলবেন না?”
মৃন্ময় অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। এরপর রিমিকে বললো,
“তুমি চলে যাও বাড়ি থেকে।”
মৃন্ময় অন্য রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। প্রিয়া আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা করলো না। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। রিক্সা চলছে আপন গতিতে। প্রিয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে সাথে ভয়। কি করা উচিত প্রিয়ার!

বাড়িতে যাওয়ার পর বেশ কয়েকবার ফোন দেয় মৃন্ময়কে। কিন্তু রিসিভড করেনা। রাতে মৃন্ময় নিজেই ফোন দেয়। কিন্তু ছন্নছাড়া কথাবার্তা। মনোযোগ নেই। মোট কথা আগের থেকে চেঞ্জ। হয়তো কষ্ট থেকে এমন হচ্ছে।
.
.
গায়ে হলুদের দিনঃ
গাঢ় হলুদ একটা কাপড় পড়েছে প্রিয়া। মাথায়, গলায়, হাতে, কোমড়ে ফুল। খোঁপায় ফুল গুঁজানো। অদ্ভুত সুন্দর আর আনন্দ লাগছে। প্রিয়ার মা প্রিয়ার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“কারো নজর না লাগুক আমার মেয়ের দিকে।”
উত্তরে প্রিয়া মিষ্টি একটা হাসি দিলো।
কিছুক্ষণ পরই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। মৃন্ময় ফোন দেয় এরমধ্যে। প্রিয়া রিসিভড করতেই মৃন্ময় বললো,
“কোথায় তুমি?”
“বাসায়। কেন?”
“তোমার বাড়ির পেছনে আসো তো একটু।”
“কেন?”
“কোনো প্রশ্ন নয় প্লিজ। একা এসো। আর তাড়াতাড়ি আসো।”
“আচ্ছা দেখছি।”
প্রিয়া আশেপাশে ভালো করে দেখে নিলো। এরপর লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ির পেছনে গেলো। হালকা আবছা আলোয় প্রিয়াকে এভাবে দেখে মৃন্ময়ের বুকে মোচর দিয়ে উঠলো। মৃন্ময়কে দেখে প্রিয়া মিষ্টি একটা হাসি দিলো। মৃন্ময় প্রিয়ার কাছে এসে হাত ধরে বললো,
“আমায় ক্ষমা করে দিয়ো প্রিয়া।”
“মানে? কিসের ক্ষমা?”
“আমি পারলাম না।”
“কি পারলেন না?”
“আমি রিমিকে ফিরিয়ে দিতে পারলাম না প্রিয়া।”
“এসব কি বলছেন আপনি?”
“জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তোমায় বিয়ে করলে এরচেয়েও বেশি কষ্ট পাবে রিমি। আমি রিমিকে কষ্ট দিতে পারবো না প্রিয়া।”
প্রিয়ার চোখে পানি টলমল করছে। পানিগুলো উপচে পড়তে চাইছে। গলাটা ধরে এসেছে। কথা বলতে গিয়েও কথা বের হচ্ছে না গলা থেকে। অনেক কষ্টে বললো,
“কিন্তু আমাকে ঠিকই ঠকাতে পারলেন তাই না?”
মৃন্ময় এবার প্রিয়ার পায়ে ধরলো।
“আমায় ক্ষমা করে দাও প্রিয়া প্লিজ। আমি জানি ক্ষমার যোগ্য হয়তো আমি না। আমি তোমার পায়ে ধরছি প্লিজ।”
এবার আর প্রিয়ার চোখের পানিগুলো আটকে রাখতে পারলো না। দু গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
“আমার পা ছাড়ুন।”
“আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ।”
প্রিয়ার ডান হাতে হলুদ কাচের চুড়ি ছিল। পাশেই পেয়ারা গাছটার সাথে প্রিয়া জোরে হাতে বাড়ি দিলো। সাথে সাথে কাচের চুড়িগুলো ভেঙ্গে গেলো। কয়েকটা কাঁচের টুকরো হাতেও ঢুকেছে। যেই হাতে হলুদের স্পর্শ পাওয়ার কথা সেই হাত এখন লাল রক্তে রক্তাক্ত।
মৃন্ময় প্রিয়ার পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। প্রিয়ার হাত ধরে বলে,
“এটা কি করলে তুমি?”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“আমার হাত ছাড়েন।”
“না, ছাড়বো না।”
“কোন অধিকারে আপনি আমার হাত ধরেন? আপনার কিসের অধিকার আমার উপর? আমার তো নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে যে, আমি অন্য একটা মেয়ের ভালোবাসাকে নিজে ভালোবেসে বিয়ে করতে যাচ্ছিলাম।”
মৃন্ময় প্রিয়ার কোমড় চেপে ধরে কাছে এনে বললো,
“নিজের ক্ষতি করা এগুলো কোন ধরণের পাগলামি?”
প্রিয়া মৃন্ময়কে জোরে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“একদম টাচ করবেন না আমায়। কিসের পাগলামি তাই না? আমার অবস্থাটা বুঝতে পারছেন আপনি? আজ আমার গায়ে হলুদ হওয়ার কথা ছিল আর সেখানে এখন বিয়েটাই হবেনা। জানেন, এটা কতটা অপমান আমার পরিবারের জন্য? কতটা লজ্জাজনক একটা মেয়ের জন্য?”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে বললো,
“সবচেয়ে বড় কথা এটা কতটা কষ্টকর আমার জন্য জানেন সেটা আপনি? কেন এসেছিলেন আমার জীবনে? আমি তো যাইনি আমার জীবনে। জোর করিনি কখনো। পায়ে ধরেও আনিনি আমার জীবনে। তাহলে কেন এসেছিলেন বলেন? কেন এসেছিলেন? আমায় ঠকাতে? ঠকিয়ে সুখি হবেন তো আপনি?”
মৃন্ময় প্রিয়াকে ধরে দাঁড় করায়।
“প্লিজ এমন করো না।”
“কিচ্ছু করবো না আমি। কিচ্ছু করবো না। যা করার একজনই করবে। উনি দেখছে উপর থেকে সব। আমি ক্ষমা করলেও প্রকৃতি কখনোই ক্ষমা করবেনা। আরে এটাই যদি করার ছিল, তাহলে কেন বিয়ে করতে আসছিলেন? নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে ফিরে আসার জন্য সামান্য সময়টুকুও দিতে পারলেন না? শেষমেশ নষ্ট করে দিলেন আমার জীবনটা।”
মৃন্ময় কিছু বললো না। প্রিয়া চলে যাওয়ার সময় পেছন থেকে হাত ধরলো। প্রিয়া হাত ছাড়িয়ে নিলো। দুই হাত জোর করে বললো,
“দয়া করে এভাবে কখনো কাউকে ঠকিয়েন না। ভালো থাকবেন রিমিকে নিয়ে।”
মৃন্ময়কে আর কিছু বলতে না দিয়ে প্রিয়া দৌঁড়ে বাসায় চলে গেলো। বাড়িতে ঢুকেই বড় ভাবীর সাথে দেখা হয়। ভাবী বললো,
“আমরা সবাই তোমাকে খুঁজছি। কোথায় ছিলে তুমি?”
প্রিয়া কিছু বলছেনা। কেঁদেই চলেছে। বড় ভাবী প্রিয়ার গালে হাত রেখে বললো,
“কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন?”
প্রিয়া কিছু না বলে সব চেয়ার, টেবিল, ফু্ল সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দিলো। প্রিয়ার দুই ভাই, ভাবী, আপু, দুলাভাই, মা সবাই দৌঁড়ে আসলো। বাকি আত্নীয়স্বজন, পাড়াপড়শি সকলেই চারপাশে জোরো হয়ে গেলো। সবাই জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। কিন্তু প্রিয়া কিছু বলতেই পারছেনা। একসময় প্রিয়া সেন্সলেস হয়ে যায়। সবাই ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। কি থেকে, কি হয়ে গেলো।
প্রিয়ার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন চোখ মেলে দেখলো মাথার উপর ফ্যানটা শো শো শব্দ করে ঘুরছে। পুরো বাড়ি যে নিশ্চুপ সেটা ফ্যানের এই আওয়াজই বলে দিচ্ছে। প্রিয়া শোয়া থেকে উঠে বসলো। চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই ফ্লোরে বসে আছে। সবার চোখেই পানি আর চিন্তা। মা তো শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে কেঁদেই যাচ্ছে। প্রিয়া মাকে ডাক দিলো।
“মা।”
প্রিয়াকে উঠতে দেখে মা চোখের পানি মুছে নিলো। প্রিয়ার কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো। দুজনই একসাথে কেঁদে দিলো। মা কেঁদে কেঁদে বললো,

“আমায় ক্ষমা করে দিস রে মা। আমি তোর ভালো করতে গিয়ে তোকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। ভেবেছিলাম বিয়ে হলে তুই সব কষ্ট ভুলে সুখে সংসার করবি। কিন্তু এখন যে আমি নিজেই তোকে কষ্টের সাগরে ফেলে দিলাম মা।”
প্রিয়ার কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গিয়েছে।
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা। খুব কষ্ট হচ্ছে। বারবার কেন আমার সাথেই এমন হয় বলো তো?”
সবাই কাঁদছে ওদের সাথে। সত্যিই কি এই কষ্টটা সহ্য করার মত। মৃন্ময়ের পরিবারের সবাই প্রিয়ার কাছে এসে ক্ষমা চায়। উত্তরে প্রিয়া বলে,
“আপনাদের তো কোনো দোষ নেই। আপনারা কেন ক্ষমা চাচ্ছেন। আপনাদের উপর আমার কোনো রাগ নেই।”

রাতটা এভাবেই কেটে যায়। সকাল হতেই প্রতিবেশিদের আনাগোনা আর কানাকানি শুরু হয়। কিছু মানুষ শান্তনা দেয় নাকি বুকের কষ্টটা বাড়িয়ে দেয় বুঝা দ্বায়! সারাদিন রুমের দরজা বন্ধ করে বসে ছিল। সন্ধ্যার দিকে প্রিয়া নিজেই মায়ের কাছে যায়।…

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-০২

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_২
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
সকাল সকাল প্রিয়া ফ্রেশ হয়ে স্কুলে চলে যায়। দুইটা ক্লাস নিয়ে বের হতেই মৃন্ময় ফোন দেয়।
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন প্রিয়া?”
“আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। আপনি?”
“আমি ভালো নেই।”
“কেন?”
“মনটা চুরি হয়ে গিয়েছে।”
“ওহহ।”
“ওহহ মানে কি?”
“এটার কোনো মানে নেই তো।”
“তাই বলে একবার জিজ্ঞেস করবেন না কে চুরি করলো?”
“জিজ্ঞেস করলে কি মন ফেরত পাবেন?”
“আমি তো মন ফেরত পেতে চাইনা। আমি তো তাকে চাই।”
“আচ্ছা।”
“কি আচ্ছা?”
“আপনি যা বললেন তা আচ্ছা।”
“উফফ! বাবা এমন অনুভূতিহীন কেন আপনি?”
“জানিনা তো।”
“কোথায় আপনি?”
“স্কুলে।”
“দেখা করতে পারবেন বিকালে?”
“চেষ্টা করবো।”
“চেষ্টা নয়। দেখা করতে হবে প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি এখন।”
প্রিয়া কলটা কেটে দেয়। মৃন্ময় ফোন হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“ওগো প্রেয়সী প্রিয়া তোমায় তো আমার করবোই।”
.
.
বিকালের দিকে প্রিয়া মৃন্ময়ের সাথে দেখা করে। প্রাইভেট কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রিয়াকে দেখেই এগিয়ে আসলো। এক পলক তাকিয়ে বললো,
“আপনি কি স্কুল থেকে সোজা এখানে এসেছেন?”
“হ্যাঁ।”
“এজন্যই তো এত ক্লান্ত দেখাচ্ছে।”
“হুম। গরম লাগছে খুব।”
“গাড়িতে বসো। এসি অন করে দেই।”
“না।”
“কেন?”
“দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।”
“মানে কি?”
“কঠিন কিছু বললাম নাকি? আমার প্রকৃতির বাতাসই ভালো লাগে।”
“আপনি এত সাধাসিধা?”
“তাই মনে হলো?”
“দেখে এবং কথা বলে এটাই মনে হচ্ছে।”
“হবে হয়তো।”
“আপনি কি আগে থেকেই এমন?”
“না।”
“তবে?”
“ঐযে আমার অতীত।”
“সেটা কি আমি জানতে পারিনা?”
“পারেন।”
“তাহলে বলেন।”
“ইচ্ছে করছেনা এখন।”
“অদ্ভুত তো।”
“আমার খুব টায়ার্ড লাগছে। আমি বাসায় যাই এবার?”
মৃন্ময় হতাশ চোখে তাকায় প্রিয়ার দিকে। তারপর ভাবলেশহীনভাবে বলে,
“হুম।”
প্রিয়া আর অপেক্ষা করেনা। হাঁটা শুরু করে। মৃন্ময় তাকিয়ে আছে সেদিকে। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“এই মেয়ের মন জয় করবো কিভাবে!”

বন্ধুদের আড্ডামহলে সবাই হাসিখুশি থাকলেও মৃন্ময় একদম মনমরা হয়ে বসে আছে। মৃন্ময়ের বন্ধু সাদিক ধাক্কা দিয়ে বললো,
“কিরে শালা বসে বসে শোক দিবস পালন করছিস নাকি?”
“সেরকমই।”
“বলিস কি রে? এতদিন পর সবাই একসাথে হলাম আর তুই শোক পালন করছিস?”
“তাছাড়া আর কি করবো বল? যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তার মন জয় করতে পারছিনা।”
“কি বলছিস মৃন্ময়? তোকে তোর হবু বউ পাত্তা দিচ্ছে না?”
“না। বিষয়টা সেরকম নয়। মেয়েটা কেমন যেন চুপচাপ। প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলেনা।”
“মেয়ে কি খুব সুন্দরী?”
“খুব সুন্দর নাকি জানিনা তবে মায়াবিনী।”
“কই ছবি দেখা তো।”
মৃন্ময় পকেট থেকে ফোন বের করে প্রিয়ার ছবি বের করে দেখায়। সাদিক বেশ ভালো করে দেখে বললো,
“এই মেয়ে চুপচাপ হয় কিভাবে? ছবিটা ভালোমত দেখেছিস? চোখে-মুখে হাসির, দুষ্টুমির ঝিলিক স্পষ্ট।”
“ছবির সাথে বাস্তবে ওর কোনো মিলই খুঁজে পাইনা। হাসেনা একটুও।”
“এমন কেন জিজ্ঞেস করিসনি?”
“করেছি তো।কেমন যেন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে।”
“তোর কি মনে হয়? এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে।”
“বলে তো কিসের নাকি অতীত আছে। কিন্তু কি সেটা তা বলেনা।”
এবার মেয়ে বান্ধবীরা মুখ খুললো। বললো,
“দোস্ত একটা আইডিয়া আছে।”
“কি?”
“মেয়েরা সবসময় গিফ্ট পেতে পছন্দ করে। গিফ্ট বলতে সারপ্রাইজ আরকি!”
“তো?”
“তুইও ওকে সারপ্রাইজ দে।”
“কি সারপ্রাইজ দিবো?”
সুবাহ্ বললো,
“গাধা একটা! কি সারপ্রাইজ দিবি সেটাও আমরা বলে দিবো?”
“মেয়েদের ব্যাপারে আমি আনাড়ি।”
“ইশ! রিমিকে মনে হয় কখনো গিফ্ট দেসনি।”
“দিয়েছি। তবে রিমি যেটা চেয়েছে সেটাই দিয়েছি।”
“বুঝলাম। তুই ওকে শাড়ি, চুড়ি এসব গিফ্ট করতে পারিস।”
“পড়বে বলে মনে হয়না।”
“আরে দিয়ে তো দেখ।”
“ঠিক আছে। চল তাহলে শপিংমলে যাই।”

মৃন্ময় বন্ধুদের নিয়ে শপিংমলে যায়। পছন্দমত ৩টা শাড়ি কিনে। তার সাথে ম্যাচিং চুড়ি। তবে সেগুলো সরাসরি দেয়নি। পার্সেল করে পাঠিয়েছে। একদিন পরই প্রিয়ার বাসায় পার্সেল পৌঁছে যায়। পার্সেল পেয়ে বেশ অবাক হয় প্রিয়া। নামহীন গিফ্ট আবার কি করে হয়! কার গিফ্ট কার কাছে এসেছে। প্যাকেট খুলে প্রিয়া ‘থ’ মেরে বসে থাকে। শাড়ি, চুড়ি এসব কার! সাথে একটা চিরকুট। তাতে লেখা,
“ওগো প্রেয়সী সামান্য গিফ্ট তোমার জন্য।”
শাড়িগুলো নেড়েচেড়ে প্রিয়া রেখে দেয়। ঐদিকে মৃন্ময় অধিক আগ্রহে বসে আছে কখন প্রিয়া ফোন দিবে। মৃন্ময় বসে বসে ভাবছে,
“এতক্ষণে প্রিয়া নিশ্চয়ই বুঝে গেছে গিফ্টগুলো আমি পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনো ফোন করছেনা কেন? মেয়েটা এমন কেন? এত অবুঝ! আমি যে কখন থেকে ফোনের অপেক্ষা করছি সেটা কি বুঝেনা ও।”
এভাবে তিন ঘন্টা পাড় হয়ে যাওয়ার পরও যখন প্রিয়ার ফোন আসেনা তখন বাধ্য হয়ে মৃন্ময়ই ফোন দেয়।
“হ্যালো।”
“কি করছেন প্রিয়া?”
“এইতো বসে আছি। আপনি?”
“আমিও।”
মৃন্ময় একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আজকে কি মন খুব খুশি নাকি হুম?”
“না তো! কেন?”
“না। মনে হলো।”
“ওহহ।”
“আচ্ছা আপনার প্রিয় রং কি?”
“নাই।”
“মানে?”
“মানে সব রংই ভালো লাগে।”
“আপনার কোন জামা ভালো লাগে? মানে শাড়ি, থ্রি পিছ?”
“এসব প্রশ্ন কেন করছেন?”
“করতে পারিনা?”
“কারণ?”
“তেমন কিছুই না।”
“জানেন, আজ না একটা পার্সেল এসেছে।”
এবার মৃন্ময়ের মনে লাড্ডু ফুটলো। মনে মনে একবার লুঙ্গি ডান্সও দিয়ে ফেললো। এরপর খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
“ওহ তাই? পার্সেলে কি ছিল?”
“শাড়ি আর চুড়ি।”
“কে পাঠিয়েছে?”
“কি জানি কোন পাগলে পাঠিয়েছে।”
এবার মৃন্ময়ের হাসিমাখা মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। শেষমেশ কি না পাগল উপাধি নিতে হলো! মৃন্ময় কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। প্রিয়া বললো,
“আপনি আছেন?”
“না, আমি গেছি।”
“মানে?”
“মানে মানে আমি ছাদে গেছি।”
“ওহহ।”
“আচ্ছা আমি একটু পর ফোন দেই কেমন?”
“আচ্ছা।”
মৃন্ময় ফোন রেখেই চেঁচিয়ে বললো,
“সুবাহর বাচ্চা!”
সাথে সাথে মৃন্ময় সুবাহকে কল দিলো।
সুবাহ কল রিসিভড করে বললো,
“হ্যালো দোস্ত।”
“রাখ তোর দোস্ত। শাঁকচুন্নি যেন কোথাকার। তোর তিনটা ফুটবল টিম হবে দেখে নিস।”
“আরে! এত রেগে আছিস কেন?”
“রাগবো না তো কি করবো রে? তোকে কোলে নিয়ে ধেই ধেই করে নাচবো?”
“কি হয়েছে বলবি তো?”
“হারামি তোকে আমি কচুরীপানা ভর্তি পুকুরে চুবাবো। ঐরকম বুদ্ধি তোকে কে দিতে বললো রে? জানিস প্রিয়া আমায় কি বলেছে?”
“কি বলেছে?”
“পাগল উপাধি দিয়েছে পাগল।”
সুবাহ্ এবার শব্দ করে হাসতে লাগলো। মৃন্ময় রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
“একেই তো এক আজাইরা বুদ্ধি দিছিস। এখন আবার আমার এই অসময়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছিস।”
সুবাহ কোনো রকমে হাসি থামিয়ে বললো,
“কি আর করবো বল!”
তোদের আর কিছু বলতে হবেনা।
“রাগ করিসনা। তুই বরং এক কাজ কর। একদিন প্রিয়াকে আমাদের আড্ডায় নিয়ে আয়।”
“কেন? কোন নতুন কেলেঙ্কারি বাঁধাবি শুনি?”
“আরে আগে আনতো।”
পরেরদিন প্রিয়াকে নিয়ে গোল মিটিং বসানো হয়। সবার মধ্যমনি হচ্ছে প্রিয়া। একেকজন একেক কথা বলছে। কেউ গল্প বলছে, কেউ কবিতা বলছে, কেউ গান গাইছে, কেউ জোক্স শোনাচ্ছে। প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও আস্তে আস্তে ভালো লাগা কাজ করছিল। কখনো কখনো কারো গল্প শুনে ইন্টারেস্ট বাড়ছিল, কখনো কারো কবিতায় মুগ্ধ হচ্ছিলো, কখনো কারো গানে অনুভূতিরা হাতছানি দিচ্ছিলো আবার কখনো কারো জোক্স শুনে প্রাণ ভরে হাসছিল। আর এই সবকিছুই মনে ভরে দেখছিল মৃন্ময়। মনে মনে হাজারটা ধন্যবাদ দিচ্ছিলো বন্ধুদের। শুধু তাই নয়, বন্ধুদের বড় করে একটা ট্রিটও দিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে প্রায়ই প্রিয়া সবার সাথে আড্ডা দিতো। হাসিখুশিতে মেতে থাকতো। আগের মত স্বাভাবিক হতে লাগলো। আস্তে আস্তে বিয়ের ডেটও এগিয়ে আসলো। না চাইতেও এক ভালোলাগার অনুভূতি ছুঁয়ে যাচ্ছিলো দুজনের মনেই।
আগামীকাল গায়ে হলুদ। প্রিয়া আজ মৃন্ময়ের দেওয়া একটা শাড়ি পড়েছে।ম্যাচিং করে চুড়ি পড়েছে। আজ মৃন্ময়কে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু মৃন্ময়ের বাড়িতে গিয়ে প্রিয়া নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যায়। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছিলো। বিশ্বাসই হচ্ছিলো না এটা হতে পারে…

চলবে…

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-০১

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya

“মেয়েটার সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক ছিল।”
বেশ সহজভাবেই কথাটা বললো মৃন্ময়। এরপর বেশকিছুক্ষণ পিনপতন নিরবতা চললো। নিরবতা কাটিয়ে তুললো মৃন্ময়। বললো,
“চুপ করে আছেন যে?”
প্রিয়া এতক্ষণ অন্যদিকে মুখ করে বসে ছিল। এবার মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি বলবো?”
“আপনার অদ্ভুত লাগছে না?”
“বুঝতে পারছি না।”
“দেখেন, আমি জানি আপনার খারাপ লাগছে। খারাপ লাগাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কয়েকদিন পরই আপনার আমার বিয়ে। সেখানে আপনি এখন শুনতেছেন হবু বরের অন্য কোনো মেয়েটার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন ছিল। আমি চাইলে হয়তো লুকাতে পারতাম। কিন্তু লুকাইনি কারণ আমি চাইনি আপনায় মিথ্যা বলে ঠকাতে।”
প্রিয়া বেশকিছুক্ষণ চুপ করে ভাবতে লাগলো,
“আসলেই তো! কিন্তু আমার খারাপ লাগছেনা কেন? আবার ভালোও লাগছেনা। অন্য কোনো সময় হলে হয়তো দেখা যেতো আমি মৃন্ময়কে ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে দিতাম। কিন্তু এখন আমার কোনো অনুভূতিই হচ্ছেনা। আমার কি বলা উচিত আমি সেটাও বুঝতে পারছিনা।”
মৃন্ময় বললো,
“অনেক ভালোবাসতাম মেয়েটাকে। ওর নাম ছিল রিমি। আমার এক ইয়ার জুনিয়র ছিল। কোনো এক বৃষ্টির সময়ে দেখে ভালো লেগে যায়। এরপর প্রণয়, তারপর ভালোবাসা। এরপর একসময় ফিজিক্যালি জড়িয়ে যাই দুজনে। আমি ওকে কোনো জোর করিনি। দুজনের ইচ্ছেতেই হয়েছিল।”
মৃন্ময়ের কথাগুলো শুনে বেশ অসস্তি হচ্ছিলো প্রিয়ার। তাই প্রসঙ্গটা পাল্টে বললো,
“আমার খুব খারাপ লাগছে। আপনার আর কিছু বলার না থাকলে আমি বাড়িতে যেতাম।”
“খুব বেশি খারাপ লাগছে?”
“ঐ একটু আরকি!”
“চলুন, আমি আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দেই।”
“ধন্যবাদ। আমি একাই যেতে পারবো।”
“বেশ! তবে আমার বলা কথাগুলোর উত্তর আমি এখনই চাচ্ছি না। আপনি আগে সময় নিয়ে ভাবুন তারপর উত্তর দিন। যদি সবকিছু জেনেও মনে হয়, বিয়ে করার জন্য আমি আপনার জন্য পার্ফেক্ট তাহলে বিয়েটা হবে। আর যদি মেনে নিতে না পারেন তাহলে জোর করে বিয়ে করবো না।”
প্রিয়া কিছু বললো না। উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলো। বেশ অসস্তি লাগছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছেনা।

মৃন্ময় বড়লোক বাবার ছেলে। বাড়িতে বাবা-মা, আর মৃন্ময় থাকে। বড় ২ বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। প্রিয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাড়িতে মা,২ ভাই-ভাবী আর প্রিয়া থাকে। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। প্রিয়া সবার ছোট্ট। মৃন্ময়ের বাবার বড় বিজনেস আছে সেটারই দেখাশুনা করে মৃন্ময়। আর প্রিয়া অনার্স ১ম বর্ষে পড়ে+একটা স্কুলে জব করে।
.
বাসায় যেতেই মায়ের সাথে দেখা হয় প্রিয়ার। তিনি প্রিয়ার গালে হাত রেখে চুমু দিয়ে বললো,
“কেমন দেখলি ছেলেটাকে?”
“হুম ভালো।”
“পছন্দ হয়েছে তোর?”
“তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ।”
প্রিয়া রুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। হাজার চেষ্টা করেও ঘুম আসছেনা। ঘুমও এখন স্বার্থপর হয়ে গিয়েছে। যে ঘুম আগে প্রিয়ার পিছুই ছাড়তো না সেই ঘুম এখন প্রিয়াকে ধরাই দেয়না। সবই সময়ের বিবর্তন। প্রিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এরপর উঠে টেবিল থেকে হুমায়ুন আহমেদের “আজ হিমুর বিয়ে” বইটা নিলো। বেশ কয়েকবার পড়ার পরও ইন্টারেস্ট কমেনা। হিমুর চরিত্রটা এখানে সত্যিই মুগ্ধকর। বই পড়তে পড়তে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে খেয়ালই করেনি। মাগরিবের আজান শেষ হতেই প্রিয়া ওযু করে নামাজ পড়ে নেয়। এরপর আবার বিছানায় গিয়ে পা গুটিয়ে বসে থাকে। মনটা আনচান করছে। কেন করছে এমন বোধগম্য হয়না প্রিয়ার। ফোনের রিংটোনে ধ্যান ভাঙ্গে । নাম্বারটা সেভ করা নয় কিন্তু পরিচিত। মৃন্ময়ের নাম্বার। কলটা কেটে যায়। দ্বিতীয়বার রিং হতে প্রিয়া রিসিভড করে সালাম দেয়।
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ্‌। আপনি?”
‘আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। কি করছেন?”
“বসে আছি। আপনি?”
“এইতো ব্যালকোনিতে।”
“ওহহ।”
“হুম।”
এরপর আবারও নিরবতা। মৃন্ময় কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
“আপনি কি এরকমই?”
“কিরকম?”
“কেমন যেন চুপচাপ।”
“কিজানি।”
“আপনি জানেন না?”
“না।”
“নিজে কেমন সেটা নিজেই জানেন না?”
“না।”
“অদ্ভুত তো।”
“হয়তো। নিজেকে এতদিন ভুল জানতাম আর ভুল চিনতাম। তাই এখন সঠিক কোনটা জানিনা।”
“ঠিক বুঝলাম না।”
“কিছুনা।”
“উমম ওকে! আচ্ছা কিছু ভাবলেন?”
“কোন বিষয়ে?”
“আজকে বিকালে বলা কথাগুলোর ব্যাপারে।”
“ভাবার কিছু নেই।”
“কেন?”
“সবকিছুরই কি প্রশ্ন হয়?”
“তা নয়। তবুও এত বড় একটা বিষয়ে আপনার ভাবা উচিত।”
“ভাবিনি।”
“তাহলে আমি উত্তরটা কি ধরে নিবো?”
“হ্যাঁ।”
“কি হ্যাঁ?”
“উত্তরটা হ্যাঁ।”
“তাহলে আমার অতীত নিয়ে আপনার কোনো সমস্যা নেই?”
“না। মা বলে, প্রতিটা মানুষের উচিত অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া। কিন্তু অতীত আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা নেহাৎই বোকামি।”
“হুম আপনার মা ঠিকই বলে। ইভেন, আমি মনে করি সন্তানদের মঙ্গলের জন্য প্রতিটা বাবা-মায়ের উপদেশই সঠিক।”
“জ্বী।”
“তো বিয়েটা কি বাবা-মায়ের ইচ্ছেতেই করতেছেন?”
“জ্বী।”
“আমায় আপনার ভালো লেগেছে?”
“আপনাকে আমার পরিবারের পছন্দ হয়েছে।”
“সংসার তো আপনি করবেন। আপনার কোনো মতামত নেই?”
“আমার মনে হয়, আমি নিজে থেকে সবসময়ই ভুল সিদ্ধান্ত নিই।”
“এমন মনে হওয়ার কারণ?”
“আমার অতীত।”
“আপনারও অতীত আছে?”
“প্রতিটা মানুষেরই অতীত থাকে।”
“আপনারটা কি জানতে পারি?”
“পুরনো ক্ষত জাগিয়ে তুলতে ইচ্ছে করছেনা।”
“ঠিক আছে।”
কথা বলা শেষ করে প্রিয়া মায়ের রুমে গেলো। মা তখন বিছানা ঝাড়ছিল। প্রিয়াকে দেখে বললো,
“কিছু বলবি?”
“আমার কষ্ট হচ্ছে মা।”
মা তাড়াডাড়ি প্রিয়াকে নিজের কাছে এনে বুকে জড়িয়ে নিলেন। প্রিয়া কান্না করেই বললো,
“এভাবে জড়িয়ে ধরো না মা। আমার আরো কষ্ট হয়।”
“তোকে না কতবার বলেছি অতীত নিয়ে ভাববি না?”
“আমি কি করবো মা? অতীত যে আমার পিছু ছাড়ছে না।”
“অতীত ভুলে যা মা। সবাই অন্যায়ের শাস্তি পায়।”
প্রিয়া কিছু বলছেনা। কেঁদেই যাচ্ছে। প্রিয়াকে বিছানার ওপর বসিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মা চোখ মুছিয়ে দিলো। বললো,
“মৃন্ময় ছেলেটা অনেক ভালো। কত ভালো পরিবারের ছেলে দেখেছিস। অনেক সুখে থাকবি তুই। এমন পরিবার আর ছেলে সচারচর পাওয়া যায় না।”
“হুম।”
“আমি আমার আগের সেই হাসিখুশি প্রিয়াকে ফিরে পেতে চাই। যার হাসিতে এই বাড়ির প্রতিটা লোক হাসে। যার দুষ্টুমিতে এই বাড়ি মেতে থাকে।”
প্রিয়া আবারও চুপ। মা বললো,
“মৃন্ময়ের সাথে কথা হয়েছিল আর?”
“হ্যাঁ। একটু আগে ফোন দিয়েছিল।”
“কি বললো?”
প্রিয়া সব কথাই মাকে বললো। শুধু ফিজিক্যাল রিলেশনের কথা স্কপি করে। মা বললো,
“কোনো মানুষই পার্ফেক্ট হয়না। তাকে মনের মত বানিয়ে নিতে হয়। আর আমি জানি, আমার মিষ্টি মেয়েটা সেটা পারবে।”
প্রিয়া মাকে জড়িয়ে ধরলো। পৃথিবীর অর্ধেক শান্তি তো মায়ের বুকেই।
.
রাত ১২টা ছুঁই ছুঁই। একাই ছাদে হাঁটছে মৃন্ময়। আকাশে আজ চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। তবে অসংখ্য তারা মিটমিট করে জ্বলছে। ছাদের রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় মৃন্ময়। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে প্রিয়ার কথা। আর আনমনেই বলে,
“মেয়েটা এমন অদ্ভুত কেন? হাসেনা, প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনা। কিন্তু তবুও এই মেয়েটার মধ্যে কি যেন একটা আছে। যেটা আমাকে বারবার ওর প্রতি টানে। মাত্র অল্প কিছুদিনের পরিচয়েও কি কাউকে এত ভালো লাগতে পারে? আচ্ছা প্রিয়াকে কি শুধুই আমার ভালো লাগে? নাকি ভালোবাসাটাও সৃষ্টি হচ্ছে? তাহলে রিমি? রিমিকে কি আমি ভালোবাসিনা? না, না রিমিকে আমি সত্যিই ভালোবেসেছিলাম। বরং রিমিই আমাকে ঠকিয়েছে।”
মৃন্ময় ছাদে পায়চারি করতে লাগলো। একসময় থমকে গিয়ে ভাবতে লাগলো,
“প্রিয়া তখন কি একটা অতীতের কথা বলেছিল। আচ্ছা ওর আবার কি অতীত আছে? ওরও কি আমার মত ফিজিক্যাল রিলেশন ছিল? ছিঃ না কি ভাবছি। আচ্ছা যদি থেকে থাকে?”
হাজারটা প্রশ্ন মৃন্ময়ের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ইচ্ছে করছে একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে। আবার পরক্ষণেই মনে হলো সামনাসামনি জিজ্ঞেস করবে। অবাধ্য মনটা তবুও কি যেন চাচ্ছে। মৃন্ময় নিজের গালে এক আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিয়ে ভাবতে লাগলো,
“উমম! প্রিয়ার ভয়েসটা শুনতে ইচ্ছে করছে।”
উনিশ-বিশ না ভেবে ফোন দিয়ে দিলো। প্রিয়া তখন ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে ছিল। ঘরে এসে বিছানার ওপর থেকে ফোন নিয়ে দেখে মৃন্ময় ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে সালাম দেওয়ার আগেই মৃন্ময় তড়িঘড়ি করে বললো,
“স্যরি স্যরি এত রাতে কল করার জন্য। কিন্তু কি করবো বলুন? হাজার চেয়েও নিজের মনটাকে বোঝাতে পারছিলাম না। মনটা বারবার বলতেছিল, প্রিয়াকে ফোন দে তাড়াতাড়ি ফোন দে। এক্ষুণী ফোন দে। তাই আমিও আর মনের কথা না শুনে পারলাম না।”
মৃন্ময়ের কথা শুনে প্রিয়া একটু হাসলো। মৃন্ময় বললো,
“আপনি হেসেছেন?”
“হু।”
“সত্যিই হেসেছেন?”
“হ্যাঁ।”
“আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা আপনি হাসতে পারেন।”
“কি জন্য এত রাতে কল করলেন?”
প্রশ্নটা ইগনোর করায় মৃন্ময় একটু কষ্ট পেলো। নিজেকে সংযত করে বললো,
“ঘুমাচ্ছিলেন?”
“না।”
“তাহলে কি বিরক্ত করলাম?”
“জ্বী না। এমনিই জিজ্ঞেস করলাম। আমি ভাবলাম, কিছু বলার জন্য হয়তো ফোন দিয়েছেন।”
“কতকিছুই তো বলতে চাই। শুধু অধিকারটা নেই।”
“কিছু বলার জন্য অধিকারও লাগে?”
“হুম লাগে তো। এত রাতে কল করেছি সেটাই তো অধিকারের বাহিরে হয়ে গিয়েছে। সব দোষ এই বেহায়া মনটার। আপনার কণ্ঠ শোনার জন্য আকু্ল হয়ে গিয়েছিল।
তখন প্রিয়া দুম করে একটা প্রশ্ন করে বসলো,
“আমি আপনার কে?
মৃন্ময় ওপাশ থেকে কিছু বলতে যাবে তখনই প্রিয়ার ফোন সুইচড অফ হয়ে যায়। এটা অস্বাভাবিক নয়। প্রিয়ার ফোন খুব একটা প্রয়োজন হয়না এখন তাই চার্জও দেওয়া হয়না বেশ কয়দিন। ফোন চার্জে দিয়ে প্রিয়া শুয়ে পড়ে। ঐদিকে মৃন্ময় ফোনে ট্রাই করেই যাচ্ছে কিন্তু প্রতিবারই অসহ্যকর একটা কথা মহিলা কন্ঠে শুনতে হচ্ছে, “আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ।” হুট করেই মৃন্ময়ের প্রশ্নের কথা মনে পড়ে। আর রিপিট করে বলে,
“আমি আপনার কে!!”

চলবে

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১৯ এবং সমাপ্ত
#Arshi_Ayat

তিন বছর পর…………..

একদিন রাস্তায় রুহি আর ওর তিন বছরের বাচ্চা রাহিন একসাথে হাটছিলো।ছোট্টো বাচ্চাটা রুহির হাত ধরে ছোট ছোট পা ফেলে হাটছিলো।হঠাৎ পিছন থেকে কারো গলার আওয়াজ শুনে রুহি পেছনে তাকাতেই দেখলো আকাশ দাড়িয়ে আছে।আকাশকে দেখে রুহি অবাক হলো।আকাশ ধীরে ধীরে রুহির সামনে এসে দাড়ালো।তারপর বলল”কেমন আছো,রুহি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি?”

“ভালো নেই।”

“দেখতেই পাচ্ছি।কিন্তুু ভালো না থাকার কারণ কি?ভালো থাকতেই তো আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে।”

“হ্যাঁ সেটাই আমার জীবনের বড় ভূল ছিলো।তোমাকে ডিবোর্স দেওয়ার পর নাতাশা অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছিলো।সেই সময়টায় আমি বুঝেছিলাম তুমি আমার কতোখানি জুড়ে ছিলে।ভেবেছিলাম তোমার কাছে মাফ চাইবো।কিন্তুু পারি নি।প্রত্যেকটা মুহুর্ত মৃত্যুসম লাগতো।কয়েকবার আত্নহত্যাও করতে চেয়েছিলাম কিন্তুু তাও পারি নি।এক পর্যায়ে চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিলাম।বাবা মা এ অবস্থা দেখে বলেছিলে আবার বিয়ে করতে কিন্তুু করি নি।ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সৌদি আরবে চলে গিয়েছিলাম।কিছুদিন হলো দেশে ফিরেছি।”

“আর বিয়ে করো নি কেন?”

“ইচ্ছে করে নি।”

“আর নাতাশা?তারপর কি আর যোগাযোগ হয় নি?”

“না তবে শুনেছি সংসারে কলহের কারণে কয়েকদিন আগে আত্মহত্যা করেছে।”

“ওহ!”

“হ্যাঁ,তারপর বলো তোমার কি খবর?”

“যাচ্ছে ভালোই।”

হঠাৎ আকাশ রাহিনের সামনে বসে পড়লো।তারপর রুহির দিকে তাকিয়ে বলল”আমাদের ছেলে?”

“নাহ!শুধু আমার ছেলে।তোমার না।”

“কিন্তুু…….”

আকাশকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রুহি বলল”কোনো কিন্তুু নেই।তিনবছর আগের কথা মনে পড়ে?এই বাচ্চার জন্য তুমি আমাকে কম অত্যাচার করো নি।একে মেরেও ফেলতে চেয়েছিলে।তাহলে এখন কোন মুখে বলতে এসেছে তোমার ছেলে?যদি শুধু তুমি আমাকে কষ্ট দিতে আমি তোমাকে তোমার ছেলে দিয়ে দিতাম কিন্তুু না তুমি ওকে ও কষ্ট দিয়েছো।গর্ভাবস্থায় একটা মেয়ে সবসময় তার ভালোবাসার মানুষটা তার স্বামীকে চায়।চোখে থাকে হাজারো স্বপ্ন।কিন্তুু আমার ক্ষেত্রে এমন হলো কেনো আকাশ?আমি কি তোমাকে কম ভালোবেসেছিলাম?আমার ভালোবাসার কি এই প্রতিদান? তারপর বাচ্চা প্রসবের সময় একটা মেয়ে বাচা মরার মাঝখানে থাকে।সে নিজেও জানে না সে বাঁচবে কি না!সেই সময়টা একটা মেয়ে তার ভালোবাসার মানুষটাকে খুব করে চায় কারণ তার কিছু হয়ে গেলে যেনো বাচ্চাটা নিরাপদ থাকে।কিন্তুু আমি!আমি পাই নি তোমাকে আকাশ!তারপর যখন বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো দেখলো তখনও তুমি ছিলে না।ওকে তিনটা বছর আমি একা লালন পালন করেছি।ওর বাবা, মা সব আমি।কই তখন তো তুমি ছিলে না।ওর কাছে তুমি মৃত।আর সারাজীবনই থাকবে।এটাই তোমার শাস্তি!”

এটা বলেই রুহি রাহিনের হাত ধরে আবার হাটা শুরু করলো কালো অতীতকে পিছনে রেখে।চাইলেই তাদের সুন্দর একটা সংসার,হাসিখুশি সব থাকতো কিন্তু নিয়তি যেনো মেনে নিতে পারে নি।

রাহিন হাটতে হাটতে রুহিকে জিগ্যেস করলো”মাম্মাম,প্রিয় আঙ্কেল আজ আসবে না?”

“আসবে তো বাবা।তোমার আঙ্কেল সন্ধ্যায় আসবে।”

রাহিন খুশী হয়ে গেলো প্রিয়মের আসার খবর শুনে।রুহি মুচকি হাসলো রাহিনের খুশী দেখে।ছেলেটা কতো অল্পতেই খুশী হয়!রুহি একটু হাটাহাটি করে বাসায় ফিরলো।রুহি প্রতিবারই বাসায় এসে একটা আনন্দ পায়।হয়তো নিজের বাসা বলে।তিনবছরের পরিশ্রম এই বাড়িটা।এখন কিছুরই কমতি নেই।বাব মা আর রাহিনের সাথে এখানেই থাকে এখন।নিজের দুটো শোরুম আছে।আরেকটা কয়েকদিনের মধ্যেই প্রস্তুত হবে।আর কি লাগে!পর্যাপ্ত টাকা পয়সা সব আছে কিন্তু ভালোবাসা নেই!রুহি এটা নিয়ে আফসোস করে না।কিন্তুু মাঝেমধ্যেই খুব একাকীত্ব অনুভব করে।আর প্রিয়ম!সে তো তিনবছর ধরে কতোবার রুহিকে “ভালোবাসি” বলেছে তার হিসেব নেই।কিন্তু রুহি স্পষ্টভাবে বলেছে”আমার ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে।অবশিষ্ট বলতে কিছু নেই যে আপনাকে দিবো।একজীবনে যতোটুকু ভালোবাসা আছে সব তাকেই দিয়েছি।এখনো তাকেই ভালোবাসি।আপনি যদি বন্ধু হয়ে থাকতে চান তাহলে আমার আপত্তি নেই।কিন্তুু প্লিজ আমাকে ওসব বলবেন না।

এর পরও প্রিয়ম হাল ছাড়ে নি কিন্তু রুহির উত্তর একই।তাই এখন আর বলে না।কিন্তুু ভালোবাসা ঠিকই আছে।

ঘড়িতে সময় ৮.৩০………..

প্রিয়ম রুহির বাসায় এসেছে।হাতে কয়েক প্যাকেট চকলেট এনেছে রাহিনের জন্য।রাহিন খুশীতে আত্নহারা হারা হয়ে চকলেট গুলো নিয়ে বলল”প্রিয় আঙ্কেল তুমি খুব ভালো।”

প্রিয়ম মুচকি হেসে বলল”তুমিও।”

তারপর গাল এগিয়ে বলল”একটা চুমু দাও তো।”রাহিন চট করে প্রিয়মের গালে চুমু খেয়ে দৌড়ে চলে গেলো।রাহিন যেতেই রুহি আসলো চা নিয়ে।প্রিয়মের হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে নিজেও নিলো।তারপর বলল”কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ।তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।তো কি খবর?”

প্রিয়ম একটা বিয়ের কার্ড হাতে দিয়ে বলল”মা বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।বিয়েটা করতেই হবে।”

“করে ফেলুন।”

“আরেকবার ভাবো রুহি।সত্যি কি করে ফেলবে।”

“ভাবাভাবির কিছু নেই।করে ফেলুন।”

প্রিয়ম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল”আচ্ছা,আজ তাহলে উঠি।শুক্রবারে বিয়ে।আসবে কিন্তু!”

“অবশ্যই।”
এরপর প্রিয়ম চলে গেলো।প্রিয়ম যাওয়ার পর রুহি ঘরে এসে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চেহারার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল”আকাশ তুমি আমাকে শেষ করে দিয়েছো!!!”

—————————-

অরুণী বিষন্ন চেহারায় জানালা দিয়ে দাড়িয়ে আছে।কয়েকদিন ধরে দেখছে প্রণয় কেমন যেনো পাল্টে গেছে!আগের মতো কথা বলে না।ভালোও বাসে না।ফিরতেও দেরি করে।কেমন যেনো হয়ে গেছে।এই প্রণয় আর আগের প্রণয়ের কোনো মিল নেই।হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ পড়তেই অরুণী গিয়ে দরজা খুলে দিলো।প্রণয় দাড়িয়ে আছে।অরুণী দরজা থেকে সরে দাঁড়াতেই প্রণয় ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে বলল”অরুণী খাবার দাও।আজকে অনেক টায়ার্ড।”

“আচ্ছা বসো।”

অরুণী প্রণয়কে খাবার বেড়ে দিলো।প্রণয় চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে গেলো।একবারও জিগ্যেস করলো না ‘তুমি খেয়েছো কি না?’অরুণী অভুক্ত পেট আর অভিমানী মন নিয়ে ঘরে গিয়ে বলল”শোনো।কাল একটু বাসায় আসবে।”

“কেনো?”

“ভুলে গেলে?”

“মনে পড়ছে না।”

“আচ্ছা থাক।তুমি কাল তাড়াতাড়ি চলে এসে এতেই হবে।”

“না, না অরুণী।কাল কোনোভাবেই তাড়াতাড়ি আসা যাবে না।বসের সাথে জরুরি মিটিং আছে।”

“প্লিজ,চেষ্টা করো তাড়াতাড়ি আসার।”

“আচ্ছা দেখবো।তুমি এখন যাও আমি কাজ করবো।”

অরুণী চলে গেলো।
——————
অনেক্ক্ষণ ধরে প্রণয়ের আশায় বসে আছে অরুণী।আজ ওদের বিবাহবার্ষিকী!কিন্তু এখনো প্রণয়ের আসার নাম নেই।এক সময় অরুণী রাগে দুঃখে কেক,পায়েস সব ফেলে দিলো।ঘরে এসে নিজের সাজগোজ মুছে আগের মতো হয়ে গেলো।

প্রণয় রাত ১০ টা বাজে ফিরেছে।অরুণী প্রণয়ের সাথে একটা কথাও বলে নি।শুধু খাবার বেড়ে দিয়েছে।প্রণয় খাবার খেয়ে ঘরে চলে গেলো।সেও কোনো কথা বলে নি।

এভাবেই দিন কাটছে ওদের।অভিমান,অভিযোগের পাল্লা বড়ো থেকেও বড়ো হচ্ছে!সেদিকে কোনো খেয়াল নেই প্রণয়ের।

হঠাৎ একদিন প্রণয়ের কাছে ফোন এলো।ওপাশ থেকে কেউ একজন বলল”মিসেস অরুণী রহমানের অবস্থা ভালো না!আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।”

প্রণয় খবরটা শুনেই বাসায় চলে এলো।বাসার সামনে আসতেই দেখলো অ্যাম্বুলেন্সে তরুণীকে নেওয়া হচ্ছে।প্রণয়ও সাথে গেলো।চিন্তায় ঘাম ছুটে যাচ্ছে।হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার বলল”অবস্থা খারাপ।পাকস্থলীতে ক্যান্সার হয়েছে!প্রচুর রক্তবমন হচ্ছে।”

প্রণয় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল”ডাক্তার প্লিজ ওকে বাচান।”

“আমরা চেষ্টা করবো।আমার মনে হয় আপনার স্ত্রী খাওয়া দাওয়ার প্রতি অনেক অনিয়ম করতো!”

“আমিতো জানি না।আমিতো ব্যাস্ত থাকি কাজে।আপনি প্লিজ কিছু করুন।”

‘আচ্ছা ঠিকাছে আপনি শান্ত হোন আমি দেখছি।”

ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে চলে যাওয়ার পর প্রণয় কান্নায় ভেঙে পড়ালো।সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করছে সে! কিন্তুু সব তো অরুণীর জন্য করতো।অরুণী যেনো ভালো থাকে কিন্তুু এসব করতে করতে যার জন্য করছিলো সব তারই খেয়াল রাখতে পারলো না।

ডাক্তার তিন ঘন্টা পর বাইরে এসে বলল”দুঃখীত,আমারা পারি নি।”

প্রণয় দৌড়ে অরুণীর কাছে গিয়ে দাড়ালো।অবিরাম ধারায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।অরুণী বেডের সামনে বসে ওর হাত ধরে কাঁদতে লাগলো।

একসপ্তাহ পর………
একদিন প্রণয় অরুণী শাড়িগুলো দেখছিলো হঠাৎ একটা শাড়ির ভাঁজে একটা চিরকুট পেলো।প্রণয় খুলতেই দেখতে পেলো ওতে লিখা ছিলো”আপনাকে কতোটা ভালোবাসি আমি নিজেও জানি না।কিন্তুু কখনো বলতে পারি নি।যাওয়ার আগে একবার বলতে চেয়েছিলাম কিন্তুু হলো না।ভালো থাকবেন।”

প্রণয় চিরকুট টা হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে কাদতে লাগলো।

সমাপ্ত।

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১৮

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১৮
#Arshi_Ayat

ভার্সিটি শুরু হবে দশটায় কিন্তু রুহিকে আজ বের হতে হবে আট’টায় কারণ আজকে একটা অর্ডারের ডেলিভারি আছে।ডেলিভারি করে তারপর ভার্সিটিতে যেতে হবে।তাই খাওয়া দাওয়া করে কাপড়ের পার্সেলটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
————–
আজ আকাশ অফিসে যাবে।আর কতোদিন ঘরে বন্ধী হয়ে থাকবে।তার চেয়ে ভালো আফিসে যাওয়া।অসুস্থতার একথা বলে এক সপ্তাহ ছুটি নিয়েছিলো এখন এই একসপ্তাহও ফুরিয়ে গেছে।না যেতে চাইলেও যেতে হবে।আকাশ রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো।আকাশের মা খাবার দিতে দিতে ছেলের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বলল”আকাশ,তুই শুধু শুধু ওই মেয়েটার জন্য কষ্ট পাচ্ছিস কেনো?তোকে আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো।”

আকাশ মায়ের দিকে তাকিয়ে বিরস মুখে বলল”না মা আমি ওর জন্য কষ্ট পাচ্ছি না।আমিতো আমার পাপের প্রাশ্চিত্য করছি।হয়তো সারাজীবন ধরে করে যাবো।”

“তুই কি আর বিয়ে করবি না?” আকাশের মা ছেলেকে খাবার দিতে দিতে বলল।

“না,এমনিতেই অনেক পাপের বোঝা কাঁধে জমে আছে।আর বাড়াতে চাই না।”

এটা বলেই আকাশ উঠে চলে গেলো অফিসের কাজে।
———–
আট’টা পয়তাল্লিশ বাজে।পনেরো মিনিট ধরে জ্যাম পড়ে আছে রাস্তায়।সারি সারি গাড়ি লাইন ধরে অচল অবস্থায় দাড়িয়ে আছে।হাটার জায়গাও নেই এমন জ্যাম।রুহি রিকশায় বসে হাঁপিয়ে ওঠছে।এর চেয়ে হেটে চলে যাওয়াই অনেক ভালো ছিলো কিন্তু সেই উপায়ও নেই।ধ্যাত!রুহি বিরক্ততিতে কপাল কুচকে এদিকে সেদিক চাইতে লাগলো।হঠাৎ বাসের সারির পরের সারির ওর রিকশা বরাবর একটা অতি পরিচিত মুখ দেখে চোখে নিমিষেই পানি চলে এলো।রুহি দ্রুত চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে মনে মনে বলল’আল্লাহ,আমাকে কষ্ট সহ্য করার তৌফিক দান করো।আমি যেনো সব দুঃখ কষ্ট কাটিয়ে উঠতে পারি।’

এদিকে আকাশের মেজাজ তুঙ্গে।এতোদিন পর বের হলো তাও আজকে দেরি হবে।আকাশ নিজের সীটের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে রুহির রিকশায় চোখ পড়তেই হৃদয়টা ব্যাকুল হয়ে উঠলো।ইচ্ছে করছ গিয়ে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সে অধিকার তো অনেক আগেই হারিয়েছে সে।এখন দূর থেকে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।আকাশ একদৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে মনে মনে চাইছে রুহি যেনো একটা বার ওর দিকে তাকায়।কিন্তু না রুহি একবারো এদিক তাকাচ্ছে না।এরমধ্যেই জ্যাম ছুটে গেলো আর আকাশের গাড়িটা আগে চলে গেলো।আকাশ যতটুকু পারে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই রুহি দৃষ্টির অগোচরে হারিয়ে গেলো।আকাশ নিজের সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো।এই কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না!প্রতিটা মুহুর্ত মৃত্যুসম মনে হচ্ছে।মনে মনে নিজের এই পরিণতির জন্য কয়েকদিন আগেও নাতাশাকে দোষ দিলেও এখন মনে হচ্ছে না এই পরিণতির জন্য সে নিজেই দায়ী কারণ ‘যেমন কর্ম,তেমন ফল’।তুমি যদি ভালো কাজ করো আজ হোক কাল হোক এর প্রতিদান তুমি পাবেই আর যদি মন্দ কাজ করো তবে যতোই পালাও তোমার পাপের শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবে না।প্রত্যেক মানুষেরই উচিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া।হয়তো এই সিদ্ধান্তের ওপর ভবিষ্যৎ পাল্টে যেতে পারে।
——————–
অরুণী ক্যাম্পাসে বসে আছে রুহির জন্য।বিয়ের পর তেমন একটা যোগাযোগ করা হয়ে উঠে নি।রুহি আজকাল অনেক ব্যস্ত থাকে।সারাদিন প্রাইভেট পড়ায় নিজের ভার্সিটি আছে তারপর আবার শাড়ির ব্যাবসা করে।এটার ডেলিভারি করতে হয়।সব মিলিয়ে আগের মতো কথা হয় না তবুও বন্ধুত্বটা যেনো একচুলও খারাপ হয় নি।সামনাসামনি কথা না বলতে পারলেও প্রতিদিন রাতে ফোন দিয়ে দুজনেই কথা বলে।কিন্তু আজ অরুণীর রুহিকে একবার হলেও দেখতে ইচ্ছে করছে।তাই তো ক্লাস টাইমের আগেই চলে এসেছে।প্রণয়কেও সাথে আনে নি।প্রণয় পরে আসবে।এমনিতে প্রতিদিন দুজনে একসাথে আসে।অরুণী বসে কফি খাচ্ছিলো হঠাৎ একটা ছেলে এসে কোনো কথা না বলেই অরুণীর সামনের চেয়ারে বসলো।অরুণী ভ্রু কুচকে ছেলেটার দিকে তাকাতেই ছেলেটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল”হাই,তুমি মনে হয় ফাস্ট ইয়ার?”

অরুণী কিছু বলল না।চুপচাপ শুনতে লাগলো।দেখা যাক ছেলেটা ওকে শেষ পর্যন্ত ইরিটেড করতে পারে কি না!অরুণী ব্যাগ থেকে ফোন আর ইয়ারফোনটা বের করে কানে দিয়ে গান শুনতে লাগলো।অরুণীর এমন ব্যাবহারে ছেলেটা রেগে হাত দিয়ে টেবিলে বাড়ি দিলো এবার অরুণী রেগে কান থেকে হেডফোন খুলে বলল”সমস্যা কি?অনেক্ক্ষণ ধরে দেখছি আপনি আমাকে ইরিটেড করার চেষ্টা করছেন।”

“এতো দেমাগ কেনো তোমার?কে তুমি?”

রুহি কিছু বলার আগে পেছন থেকে প্রণয় বলে উঠলো”মিসেস অরুণী রহমান।”

ছেলেটা ভ্রু কুচকে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলল”আপনি কে?”

“যাকে আপনি বিরক্ত করছেন আমি তার স্বামী।আর আপনি ভাবছেন যে সে আপনার সমবয়সী কিন্তু আপনার ধারণা ভুল সে আপনার থেকে দুইবছরের সিনিয়র।আমি জানি আমার বউটা অনেক কিউট একদম পুতুলের মতো তাই বলে জেনে নিবেন না কে সে?সবসময় তাকে ভাবী বলবেন।আর ভাবী মায়ের সমান হয়।আর মায়ের সাথে কি কেউ এমন বাজে ভাবে কথা বলে?এখনি সরি বলুন।”

ছেলেটা মাথা নিচু করে বলল”সরি ভাবী।আর এমন হবে না।”

অরুণী প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে ছেলেটাকে বলল”আচ্ছা।ঠিক আছে।এখন ক্লাস যাও।”

ছেলেটা মাথা দুলিয়ে চলে গেলো।ছেলেটা যেতেই প্রণয় আর অরুণী দুজনে ফিক করে হেসে দিয়ে পাশাপাশি চেয়ারে বসে পড়লো।এরমধ্যেই রুহি চলে আসলো।অরুণী রুহিকে দেখে বলল”এতো দেরি হলো কেনো রে?”

“রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো।যাওয়ার সময় কোনোমতে গিয়েছিলাম কিন্তু ভার্সিটি আসার সময় মাঝ রাস্তা থেকে হেটে এসেছি।”

“ওহ!তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেন?বসে জিরিয়ে নে।দাড়া তোর জন্য ঠান্ডা জুস অর্ডার দেই।”

“আরে সমস্যা নেই।ঠান্ডা পানি খেলেই হবে।”

“তুই চুপ থাক।”

এতক্ষণ ধরে প্রণয় দুই বান্ধবীর শাসন আর ভালোবাসাগুলো মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিলো হঠাৎ অরুণী প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলল”ও হলো রুহি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড আমার বোন।”

অরুণী কথায় রুহি হাসলো।প্রণয়ও মৃদু হাসলো।অরুণী এবার রুহিকে বলল”আর এই হলো তোর দুলাভাই।বিয়ের দেড় মাস পর তোর সাথে পরিচয় করাতে হলো।তোর তো কোনো দেখাই পাওয়া যায় না।”

“কি করবো রে বল!পড়াশোনা আর কাজেই তো সময় চলে যায়।”

“হ্যাঁ কিন্তু আর যাই করিস নিজের যত্ন নিবি এই ছোট্টো বুলবুলিটার জন্য।”

রুহি হাসলো।তারপর প্রণয়কে বলল”দুলাভাই কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

“আজকে আমাদের বাসায় আসতে হবে কিন্তু।”

রুহি কিছু বলার আগেই অরুণী বলল”তা আর বলতে ও না যেতপ চাইলেও ওকে আমি কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবো।”

অরুণীর কথা শুনে রুহি আর প্রণয় দুজনই হেসে দিলো।তারপর অরুণী আর প্রণয়ের জোরাজোরিতে রুহিকে যেতেই হলো।
—————-
প্রিয়ম আজও একই সময় অফিস থেকে বের হলো।আর মনে মনে ঠিক করে রেখেছে আজ যাই হোক বলবেই।সেইজন্য আজ সকাল থেকে এক্সাইটেড হয়ে আছে।কিন্তু প্রতিদিন রুহি যে জায়গায় দাড়ায় সে জায়গায় আজও রহিকে দেখতে পেলো না।কালই ছিলো না।প্রিয়মের মন খারাপ হয়ে গেলো।নিজের ফোন বের করে রুহিকে কল দিলো।

রুহি মাত্রই বাসায় ফিরেছে।ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে বসতেই কল এলো।স্ক্রিনে প্রিয়মের নাম্বার দেখে কিছুটা অবাক হয়েই ফোন রিসিভ করলো।রুহি ফোন রিসিভ করতেই প্রিয়ম বলল”আপনি কোথায়?”

“আমার বাসায়।কোনো সমস্যা?”

প্রিয়ম আমতা আমতা করতে করতে বলল”আচ্ছা স্যার কি বাসায় আছে?ওনার সাথে একটু দেখা করতাম আর কি!”

“হ্যাঁ বাবা বাসায়ই আছেন।আপনি আসুন।”

“ঠিকাছে।”

প্রিয়ম ফোন রেখে গাড়ি স্টার্ট দিলো রুহির বাসায় যাওয়ার জন্য।থাক না আজ হয়তো না বলাই হলো কিন্তু চোখের তৃষ্ণাতো মিটবে।প্রিয়ম মুখে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে গাইতে শুরু করলো

“তুমি হয়তো বহুদূর, তবু তোমার কথার সুর
দেখো বাজছে আমার বেসুরো জীবনে
তুমি কোথায় নিরুদ্দেশ, তবু তোমায় ছোঁয়ার রেশ
আমার একলা জীবন মুহূর্তরা জানে
আজ রাত্রি যখন আসে, এই জীবন খানিক হাসে
বলে, “পারলি নাতো ছুঁতে তুই আর একটা দিন”
আজও স্বপ্নে তোমায় খুঁজি, বড়ো আশায় চোখ বুজি
ভাবি, নামবে দু’চোখ জুড়ে সেই আদুরে দিন
আহা, আহা, আহা”

চলবে…..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১৭

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১৭
#Arshi_Ayat

একসপ্তাহ হয়ে গেছে আকাশের সাথে নাতাশার কোনো যোগাযোগ নেই।থাকবেই বা কিভাবে বিয়ের পরের দিনই নাতাশা আর ওর স্বামী হানিমুনে চলে গেছে।আকাশ অনেকবার চেষ্টা করেছিলো নাতাশার সাথে কথা বলার কিন্তু নাতাশা সেই সুযোগই দেয় নি।চলে গেছে।আজ একসপ্তাহ ধরে আকাশ নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে পড়ে আছে।কয়েকবার আত্নহত্যাও করতে চেয়েছিলো কিন্তু পারে নি।এখন কারো সাথে কথাও বলে না তেমন।ভেতরে ভেতরে তীব্র ভাবে অপরাধ বোধে জ্বলছে।এখন মনে হচ্ছে জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছে নাতাশাকে বিশ্বাস করা আর রুহির ভালোবাসাকে অপমান করা।কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই রুহির সাথে ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে আর ও কখনো আকাশকে মাফ করবে না সেটা আকাশও জানে তবুও একবার মন বলছে রুহির কাছে ক্ষমা চাইতে।কিন্তু কোন মুখে চাইবে!ওর সামনে দাড়ানোর মতো মুখও নেই।

আকাশের বুকের ভেতর প্রচন্ড যন্ত্রনা হয়।পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যখন রুহি ছিলো ওর জীবনে নাতাশা নামের কোনো অস্তিত্ব ছিলো না।দিব্যি চলছিলো দুজনের সংসার।রুহির ভালোবাসায় নিজেকে ধন্য মনে হতো কিন্তু নাতাশা আসার পর চোখে কালো কাপড় পড়ে গেলো।রুহির পবিত্র ভালোবাসাগুলো চোখে পড়তো না।ন্যাকামি মনে হতো ওর ভালোবাসাগুলো।কতো মানষিক আর শারীরিক অত্যাচার সহ্য করেও রুহি পড়েছিলো।চেয়েছিলো থেকে যেতে কিন্তু নিজের গাফিলতির কারণে আজ রুহিও দূরে।আকাশের চোখ বেয়ে নোনাজলের ধারা বইছে।গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।মনে হচ্ছে কেউ যেনো টুটি চেপে ধরে রেখেছে।কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল হয়ে গেছে।অসহায়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে লাগছে নিজেকে।অসহ্য লাগছে নিজেকেই নিজের কাছে।একটা প্রচন্ড আত্মগ্লানিতে বারবার শিরা উপশিরা দগ্ধ হচ্ছে।ইচ্ছে হচ্ছে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে তবে যদি মুক্তি মেলে!
————————
ইদানীং প্রিয়ম রাত নয়টায় বাড়ি ফেরে।এইতো একসপ্তাহ ধরে এমন হচ্ছে।বাড়িতে ওর বাবা মা ভাবছে হয়তো কাজের চাপ কম সেইজন্যই তাড়াতাড়ি আসে কিন্তু ছেলের ভেতরে যে অন্যকিছু চলছে তার বাবা মা বুঝতে পারে নি।

আজও প্রিয়ম নয়টায় থানা থেকে বেরিয়ে পড়লো আর রুহি যেখানে দাড়ায় সেখানে গাড়ি থামালো।কিন্তু আজকে রুহিকে না দেখতে পেয়ে প্রিয়মের বেচারা মনের মন খারাপ হয়ে গেলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলো প্রিয়ম। প্রতিদিন রাত নয়টার সময় বাড়ি ফেরার পথে রুহিকে দেখতে পায় সে এই জায়গায় প্রতিদিন এখন থেকে প্রিয়মের সাথেই সে বাড়ি ফেরে।কখনো কথার ঝুলি নিয়ে বসে আবার কখনো চুপচাপ গাড়ির কাচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রাতের আকাশ দেখতে দেখতে যায়।কিন্তু তার বিপরীত পাশের মানুষটা গাড়ি চালাতে চালাতে তাকে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখে যে সেটা সে টের পায় না।রুহি নিজের বাড়ির সামনে নেমে গেলে বাকি রাস্তা প্রিয়মের মন খারাপ থাকে।মন বলে ‘এই পথ যদি না শেষ হয়,তবে কেমন হতো তুমি বলো তো?’

তবে মনের কথা মনেই রয়ে যায় যার জন্য এই আকুতি তাকে আর জানানো হয় না।মনে আক্ষেপ থেকে যায় ইশ!সে যদি জানতো!

আজকাল রুহিকে দেখলে মনের মধ্যে এক অজানা আকর্ষণ জাগে।মন হয় কতোটা সরলতা লুকিয়ে আছে মেয়েটার মাঝে।প্রিয়ম বুঝতে পারছে সেও বাদ যায় নি ভালোবাসার মরণ ছোবল থেকে।কিন্তু এ কথা তার সখীকে বলবে কিভাবে?আর বললেই বা কি সে মানবে?প্রিয়ম একটু চিন্তিত হলো।
তারপর ভাবলো কোনো একদিন এক আকাশ তারা আর একটা মুধময় চাঁদকে সামনে রেখে স্বীকার করেই ফেলবে ভালোবাসি!ভালোবাসি!ভালোবাসি!

প্রিয়ম এগুলো ভাবতে ভাবতে কবে যে বাসায় এসে পৌঁছুলো সে খবরই নেই তার।ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই পায়েল চৌধুরী বললেন “প্রিয়ম শোন বাবু।এই ছবিগুলো দেখতো একটু।”

প্রিয়ম ভ্রু কুচকে বলল”কিসের ছবি মা?

“আরে তুই আগে দেখ তো!” এই বলে পায়েল চৌধুরী প্রিয়মের হাতে ছবিগুলো দিলে।প্রিয়ম ছবিগুলো নিয়ে দেখলে পাঁচটা মেয়ের ছবি।ছবিগুলো দেখে বলল”এই ছবিগুলো আমাকে দেখাচ্ছো কেন?”

“দেখ এর মধ্যে কাকে ভালো লাগে?”

“সবগুলোকেই তো ভালো লাগে।”

“প্রিয়ম ঠাট্টা করিস না।ভালোভাবে বল কাকে ভালো লাগে।আমরা তোর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছি।”

“ঠাট্টা না মা।সত্যিই আমার পাঁচজনকেই পছন্দ হয়েছে।পাঁচজনকেই বিয়ে করবো।তোমার যদি আমাকে বিয়ে করাতেই হয় তবে এই পাঁচজনের সাথে করাও।”এটা বলে প্রিয়ম গিয়ে সোফায় বসলো।

প্রিয়মের মা রেগে বলল” আমি মরলে তুই বুঝবি।এর আগে কখনো আমার কথার মূল্য দিবি না।”

এবার প্রিয়ম ওর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল”কি বলছো এসব মা?তোমার যদি আমাকে বিয়ে করাতেই হয় তবে আমার পছন্দমতো করাতে হবে।আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি।”

পায়েল বেগমের মুখে একটুরো সূর্যের আলোর ন্যায় হাসির ঝিলিক ঘুটে উঠলো।খুশীতে টগবগিয়ে প্রিয়মকে জিগ্যেস করলেন”কে রে সেই মেয়ে?”

“বলবো।তবে আমাকে আরো কিছুদিন সময় দাও।আমিই ওকে তোমাদের সাথে পরিচয় করাবো।কিন্তু এখন খাবার দাও।”

পায়েল চৌধুরী ছেলেকে ডাইনিং টেবিলে বসতে দিয়ে খাবার বাড়তে লাগলেন।তারপর নিজেও ছেলের পাশে বসলেন।আজকে মা আর ছেলে একসাথে খেতে বসলো।রাহাত চৌধুরী গতকাল ব্যবসার কাজে সিলেট চলে গেছেন।
——————–
অরুণী আজ প্রচুর রেগে আছে প্রণয়ের ওপর।বারবার না করা স্বত্বেও আজকে সকালে সে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে জ্বর আনিয়েছে।সাথে ঠান্ডা কাশিতো ফ্রি!অরুণী প্রণয়ের মাথার পাশে বসে জলপট্টি দিচ্ছে আর মনেমনে ইচ্ছেমতো প্রণয়ের চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করছে।আর বেচার প্রণয় জ্বরে কাঁপছে।অনেক্ক্ষণ জলপট্টি দেওয়ার পরও যখন জ্বর কমছিলো না তখন অরুণীর চিন্তা হতে লাগলো।অরুণী ওর ফোনটা হাতে নিয়ে ডাক্তার রশিদকে ফোন করলো।উনি সব শুনে বললেন সারা শরীর একবার মুছে দিয়ে মাথায় পানি ঢালতে।উনি বাসায় ফেরার সময় একবার প্রণয়কে দেখে যাবেন।ডাক্তারের কথা মতো অরুণী কাপড় ভিজিয়ে এনে প্রণয়ের মুখ,হাত,মা মুছে দিলো কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে বুক মুছবে কি করে।ইতস্তত করতে করতে প্রণয়ের শার্ট খুলে বুক আর পিঠ মুছে দিয়ে আবারও শুইয়ে দিলো।এখন কিছুটা কম আছে জ্বর।একটু পর ডাক্তার রশিদ এসে ঔষধ দিয়ে গেলেন।ভাত খাওয়ার পর খাওয়াতে বললেন কিন্তু সন্ধ্যা থেকে একটু কিছুও প্রণয়কে খাওয়াতে পারে নি অরুণী।কিছু খাওয়াতে নিলেই নাকি তিতা লাগে।কি মসিবত!ডাক্তার চলে যাওয়ার পর অরুণী স্যুপ নিয়ে এলো।প্রণয়ের মুখের সামনে ধরতেই প্রণয় মুখটা সরিয়ে নিলো।অরুণী রেগে চোখ রাঙানি দিতেই প্রণয় কাদো কাদো গলায় বলল”তিতা লাগে।খাবো না।”

“না খেলে এক সপ্তাহ কথা বলবো না।” অরুণী এটা বলে টেবিলের ওপর স্যুপের বাটি রেখে দিলো।অরুণীর এমন কঠিন শর্ত শুনে প্রণয় ব্যাথাতুর মুখে বলল”আচ্ছা খাবো।কিন্তু অল্প!”

অরুণী টেবিলের ওপর থেকে স্যুপের বাটিটা নিয়ে প্রণয়কে খাওয়াতে লাগলো।প্রণয়ের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে অরুণীর হাসি পাচ্ছে কিন্তু ও হাসছে না।প্রণয়কে ধমকে পুরো স্যুপ খাওয়ালো তারপর অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে শুইয়ে দিলো।আর পাশে নিজেও শুয়ে পড়লো।অরুণীকে নিজের পাশে শুতে দেখে প্রণয় বলল”তুমি এখানে শুবে?”

“হ্যাঁ।এখানেই শোব।আপনি কথা না বলে ঘুমান।চুপচাপ ঘুমাবেন।যদি দেখি উঠে বসে আছেন তাহলে খবর আছে।”

“কিন্তু আমার তো ঘুম আসছে না।” প্রণয় করুণ স্বরে বলল।

প্রণয়ের কথা শুনে অরুণী ওর শিয়রে বসে পর মাথটা নিজের কোলে রেখে চুলে হাত বুলতে লাগলো।প্রণয় চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসি দিলো।সেই সাথে অরুণীর ঠোঁটেও মৃদু হাসির ঝিলিক খেলে গেলো।অরুণী কখনো ভাবতে পারে নি এই মানুষটাই তার জীবনের সাথে জড়িয়ে যাবে যাকে একটা সময় পাত্তাই দিতো না।এখন সে তার স্বামী।প্রায় দেড় মাসের মতো প্রণয়ের সাথে থেকে অরুণীর ভালোবাসার ওপর হারানো বিশ্বাস আস্তে আস্তে জোড়া লাগছে।মনে হচ্ছে আসলেই ভালোবাসা বলতে কিছু আছে।
.
.
তবুও কোথাও একটা বাধা এসে আর বলা হয় না ভালোবাসি।মনে হয় বললেই হারিয়ে যাবে।অরুণীর ভয় হয়!যদি রুহির মতো ওর জীবনটাও তছনছ হয়ে যায় তখন!
———–
রোদের আলোর ঝিলিক খেলে যাচ্ছে প্রণয়ের চোখে মুখে প্রণয় এক হাত চোখের ওপর দিয়ে রোদটাকে আড়াল করে চোখ খুললো।তারপর উঠে বসতেই দেখলো অরুণী ওর পাশে নেই।প্রণয় বিছানা ছেড়ে কিচেনে গিয়ে দেখে তার হৃদয়ের রাণী রুটি বানাচ্ছে!প্রণয় অরুণীর পাশে এসে দাড়ালো।প্রণয়কে ওর পাশে দাড়াতে দেখে বলল”জ্বর কমেছে?”

“বুঝতে পারছি না।তুমি একটু দেখে বলো তো।”

অরুণী প্রণয়ের পায়ের ওপর দাড়াতেই প্রণয় অরুণীর কোমড় জড়িয়ে ধরলো।তারপর অরুণী প্রণয়ের কপাল ছুয়ে দেখলো জ্বর ছেড়ে দিয়েছে কিনা।কিন্তু প্রণয় সে খেয়ালে নেই তো ব্যাস্ত অরুণীকে দেখতে।হঠাৎ দরজায় বেল পড়ায় দুজনেই আলাদা হয়ে যায় আর প্রণয় দরজা খুলতে চলে যায়!!

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)