Sunday, June 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1587



তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-১৭

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
ফাহাদের বাবার মুখোমুখি বসে আছে প্রিয়া। প্রিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। কথা বলাটা ফাহাদের বাবাই শুরু করলেন।
“তুমি কি তাহলে ফাহাদকেই বিয়ে করছো?”
“ইনশাআল্লাহ। যদি ফাহাদ না মত বদলায় তাহলেই।”
“তুমি খুব ভালো করেই জানো তোমার অতীতের কথা। তোমার কি মনে হয় এসব জানার পরও ফাহাদ তোমার সাথে থাকতে রাজি হবে?”
“আপনার কথার উত্তর দেওয়াটা হয়তো বেয়াদবি দেখাবে। কিন্তু আপনি তো মূলত উত্তর জানার জন্যই আমায় ডেকেছেন তাই বেয়াদবি হলে মাফ করবেন। আপনি যেটা বলছিলেন। আমার অতীতের কথা। হ্যাঁ আমি, আমার অতীত খুব ভালো করেই জানি। শুরু থেকে শেষটা জানি। যেটা বিস্তারিত আমার পরিবারের বাহিরের মানুষ জানেনা। আর আমার এমন আহামরি কোনো অতীত না যে, ফাহাদের খুব বেশি সমস্যা হতে পারে। ভালোবাসা তো অপরাধ নয়। আমি ভালোবেসেছিলাম আর ভাগ্য আমায় নিয়ে খেলেছে। এখানে তো আমার কোনো হাত ছিলো না। তবুও আমার এই ছোটখাট কোনো অতীতই আমি ফাহাদের থেকে লুকাবো না। যার সাথে সারাটা জীবন থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়েছি তার অধিকার আছে আমার অতীত, বর্তমান জানার। এরপর যদি ফাহাদের মনে হয় সম্পর্ক আগাবে তাহলে স্যরি, আমি ফাহাদকে ছাড়তে পারবো না। মোট কথা, ফাহাদ নিজে থেকে যদি আমায় না ছাড়ে তাহলে আমি কখনোই ফাহাদকে ছাড়বো না।”
“আমি রাজি না জেনেও তুমি বিয়ে করবে?”
“আমার পরিবার আমাকে একা বিয়ে করার শিক্ষাী দেয়নি। আমি বলেছি, আমি ফাহাদকেই বিয়ে করবো। তার মানে এই নয় যে, আপনাদের কিংবা আমার পরিবারের কারো অমতে। যেদিন আপনি মেনে নিবেন সেদিনই বিয়ের বিষয়ে ভাববো আমরা। কিন্তু আমি আবারও বলছি আমি ফাহাদকে ছাড়তে পারবোনা।”
“যদি আমি কোনোদিনই না মেনে নেই?”
“প্রত্যেক বাবা-মা’ই চায় তাদের সন্তান সুখী হোক। এখন সন্তান কার সাথে সুখী হবে সেটাও তার বাবা-মাকে দেখতে হবে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো ডিসিশন চাপিয়ে দেওয়া মানেই বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন করা না।”
“আমি তোমার সব কথাই মানছি। কিন্তু তুমি নিজেই একবার ভেবে দেখো, এটা কি কখনো হওয়ার মত? কোথায় তুমি আর কোথায় ফাহাদ? সোসাইটিতে ছোট হয়ে যাবো আমি।”
“যতদিন আমি ফাহাদকে ভালোবাসিনি ততদিন আমিও এটাই ভাবতাম বড়লোকদের সাথে গরীবদের কখনো ভালোবাসা, বিয়ের মত সম্পর্ক হতে পারেনা। কিন্তু যেদিন থেকে আমি ফাহাদকে ভালোবেসেছি সেদিন থেকে এসব ইস্যু তুচ্ছ মনে হয় আমার কাছে।আর বাকি রইলো সোসাইটি? জীবনের এই ছোট্ট বয়স থেকেই আমি সোসাইটি জিনিসটাকে ঘৃণা করি। এই সোসাইটি শুধু পারে খোঁচাতে, কিভাবে টেনে-হিঁচড়ে একটা মানুষকে নিচে নামাতে হয় সোসাইটি খুব ভালো করেই পারে সেটা। এরা তিলকেও তাল বানাতে পারে। প্রত্যেকটা মানুষেরই আগে দেখা উচিত মেয়ে কে! কি করে! কিন্তু তারা তা করে না। তারা আগে দেখে মেয়ের বাপের কি আছে। কয় তলা ফ্লাট আছে, কয় বিঘা জমি আছে, কয়টা বাড়ি আছে। এরপর দেখবে মেয়েকে। মেয়ে যদি হয় কোটিপতির তখন মেয়ে ট্যারা হলেও সোসাইটি কিচ্ছুই বলবে না। সোসাইটিতে বড় হলেও ছোট থেকেই আমি বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছি। আমি তখনই যখন পাত্তা দেইনি আর এখন আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায় শুরু হওয়ার সময় ভুলেও সোসাইটিকে পাত্তা দিবো না। সোসাইটি আমার বিপদে কখনো এগিয়ে আসেনি, এরা আমাকে একবেলা খাওয়ায়ও নি, আমাকে পড়াশোনা করায়নি। তাহলে কেন সোসাইটিকে মূখ্য বিষয় মনে করবো? সোসাইটি পেরেছে তিলকে তাল বানিয়ে বদনাম ছড়াতে, আমার সমালোচনা করতে। এরচেয়ে বেশি কিছুই সোসাইটি থেকে আমি আশা করিনা।”
ফাহাদের বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়ার দিকে। তিনি প্রিয়াকে দেখে ভেবেছিলেন, যা বুঝাবেন তাই বুঝবে। কিন্তু এত চালাকচতুর তিনি প্রিয়াকে ভাবেননি। তবে প্রিয়ার কোনো কথাই ফেলে দেওয়ার মত না। প্রত্যেকটা কথা সত্যি এবং গুরুত্বপূর্ণ।
.
.
অফিসে গিয়েই প্রিয়া ফাহাদের রুমে যায়। ফাহাদ হাসিমুখে বলে,
“মাই হোয়াইট ফেইরি কাম টু মি।”
“আপনাকে কিছু বলার ছিল।”
“কিছু কেন? সব শুনবো। বলো কি বলবে?”
“আপনি কখনো কাউকে ভালোবেসেছেন?”
“হ্যাঁ। এখনও বাসি।”
“কাকে?”
“আমার সাদা পরীকে।”
“আমি সিরিয়াস।”
“ভালোবেসেছি বলতে কলেজ লাইফে একটা রিলেশন ছিল।”
“পরে?”
“পরে আর কি! মেয়েটা পরবর্তীতে অন্য রিলেশনে যায়।”
“আপনি কিছু বলেননি?”
“কি বলবো? এসব নিয়ে আমি মাথা ঘামাইনা। হঠাৎ এসব কথা তুলছো কেন?”
“আপনার ইচ্ছা হয়না আমার সম্পর্কে জানার?”
“যেই মানুষটাই আমার তার সম্পর্কে জানার এত কিউরিসিটির কি আছে।”
“তবুও আমি জানাতে চাই।”
“আমি জানতে চাইনা। অতীতে যাই হয়ে থাকুক তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। যাই হোক আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”
“তবুও…”
“শসসসসস!!”
ফাহাদ প্রিয়ার ঠোঁটে এক আঙ্গুল রেখে বলে,
“চুপ! আর কোনো তবুও না। ভালোবাসি।”
প্রিয়া হেসে দেয়।
“আমিও ভালোবাসি।”
“তুমি কম ভালোবাসো।”
“কিভাবে?”
“কম সময় ধরে তো আর ঘুরাওনি আমায়।”
“হিহিহি।”
“এভাবে হেসো না তো। বুকে লাগে।”
“লাগুক।”
“লাগুক তাই না? লাগলেই বা তোমার কি?”
“হয়েছে এখন আর ঝগড়া করতে পারবোনা। কাজ জমা হয়ে আছে।”
“ধুর! শুধু কাজ কাজ আর কাজ। আমার দিকে কোনো খেয়ালই নেই।”
“হুহ ঢং।”

অফিসের সব কাজ শেষ করতে করতে দেখে ফাহাদ নেই। প্রিয়ার খুব অভিমান হলো। একবার বলে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো। দেখাও হলো না। কাজ শেষ করে বাসায় চলে যায় প্রিয়া। বাসে থাকাকালিন বেশ কয়েকবার কল দেয় ফাহাদ। কিন্তু প্রিয়া রিসিভড করেনি। এটাই ওর শাস্তি।
রাতের খাবার খেয়ে প্রিয়া মায়ের রুমে শুয়ে গল্প করছিলো। রাত তখন ১০টা বাজবে। প্রিয়ার বড় বোন লামিয়া এসে প্রিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে প্রিয়ার রুমে নিয়ে আসে।
“আরে এভাবে টানছিস কেন? কি হয়েছে? ঘুমাসনি কেন এখনো তুই?”
লামিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে প্রিয়াকে ব্যালকোনিতে নিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে। প্রিয়া হাত বরাবর তাকাতেই চমকে যায়। ফাহাদ এখানে। প্রিয়া একবার নিচে তাকায় আরেকবার ওর বোনের দিকে। লামিয়া হেসে দিয়ে মায়ের রুমে চলে যায়। প্রিয়া ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাহাদ কান ধরে বললো,
“স্যরি।”
স্যরি বলাটা আসলে শোনা যায়নি। কিন্তু ফাহাদের মুখভঙ্গিতে এটাই বোঝা গিয়েছে। প্রিয়া এবার অন্যদিকে মুখ ঘোরালো। আড়চোখে আবার ফাহাদকেও দেখছে। ফাহাদকে এভাবে দেখে প্রিয়ার পেট ফেটে হাসি আসছে। কিন্তু কোনোরকমে তা চাপিয়ে রেখেছে। প্রিয়া রুমের ভেতর চলে আসলো। ফাহাদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মন খারাপ করেই ওখানে দাঁড়িয়ে রইলো। প্রিয়া ফাহাদকে ম্যাসেজ করলো,
“ছাদে আসো।”
প্রিয়ার এই ম্যাসেজ দেখে ফাহাদ খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। ফাহাদ সাথে সাথে ছাদে আসে। প্রিয়া কিছুক্ষণ পর যায়। প্রিয়াকে দেখেই ফাহাদ জড়িয়ে ধরে।
“স্যরি স্যরি। আসলে আর্জেন্ট একটা কাজ থাকায় হুট করেই চলে যেতে হয়েছে। প্লিজ স্যরি প্লিজ।”
প্রিয়া ধাক্কা দিয়ে ফাহাদকে সরিয়ে দেয়। তখন ফাহাদের মুখটা দেখার মত ছিল। যদিও প্রিয়ার খুব হাসি পাচ্ছিল কিন্তু কোনোরকমে হাসি আটকে বললো,
“আপনার ঢং আমার একদম পছন্দ না। এখানে ডেকেছি আদিক্ষেতা করার জন্য নয়। এত রাতে বাড়ির সামনে আসতে বলেছিল কে? কাল অফিসে বলা যেতো না? এসব করে কি প্রমাণ করতে চান? আপনি আমায় খুব ভালোবাসেন?”
“তুমি এভাবে কেন কথা বলছো প্রিয়া?”
“কারণ এরচেয়ে ভালো করে কথা বলতে পারিনা তাই।”
ফাহাদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়ার কথায় যে ফাহাদের মন খারাপ হয়েছে সেটা প্রিয়া বুঝেছে। ফাহাদ কোনোরকমে বললো,
“তুমি কি বিরক্ত হয়েছো?”
“হ্যাঁ হয়েছি। খুব বিরক্ত হয়েছি।”
“আচ্ছা আমি তাহলে চলে যাচ্ছি। তবুও প্লিজ রাগ করো না। আমি আসছি।”
ফাহাদ চলে যাওয়ার জন্য এগোতেই প্রিয়া হাত টেনে ধরে ফাহাদের বুকে মুখ লুকায়।
“কেন বিরক্ত হয়েছি সেটা তো জিজ্ঞেস করলেন না? বিরক্ত এজন্যই হয়েছি কেন আসেননি আরো আগে আমার জীবনে? কেন এত ভালোবাসেননি আগে?”
এবার ফাহাদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।
“বিয়ের পর সবটা পুষিয়ে দিবো।”
রেলিং ঘেষে দুজনে একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদের এক হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখে প্রিয়া। অপর হাতের আঙ্গু্ল ফাহাদের হাতের আঙ্গুলে সীমাবদ্ধ। মাথার উপর মস্তবড় একটা চাঁদ। চাঁদের আলোতে ফাহাদকে দেখছে প্রিয়া। ফাহাদ যখনই তাকায় তখনই প্রিয়া চোখ সরিয়ে নেয়। ফাহাদের দিকে তাকিয়ে প্রিয়া বললো,
“আচ্ছা একটা কথা বলি?”
“বলো।”
“সবসময়ই এভাবে ভালোবাসবেন তো?”
“না।”
“কিহ্?”
“এরচেয়েও অনেকবেশি ভালোবাসবো।”
“প্লিজ কখনো চেঞ্জ হয়ে যাইয়েন না। তাহলে ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস সারাজীবনের জন্য উঠে যাবে।”
“সারাজীবন ভালোবাসবো।”
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রিয়া বললো,
“জানেন, একটা ছেলেকে খুব বেশি ভালোবাসতাম।”
ফাহাদ এবার প্রিয়াকে সামনে দাঁড় করিয়ে অবাক হয়ে বললো,
“তুমি ভালোবাসতেও জানতে? আমি তো ভাবতাম তুমি খুবই আনরোমান্টিক। ভালোবাসায় এলার্জি আছে তোমার।”
“ভালোবাসা নিয়েই আমার সমস্যা শুরু থেকেই ছিল। মাঝখানে ভালোবাসা নিয়ে স্বপ্ন বুনতে শুরু করি।”
“তারপর?”
“তারপর…..”
প্রিয়া হারিয়ে যায় সেই শুরুর দিকে….

তখন ক্লাস টেনে পড়ে প্রিয়া। সারাদিন বান্ধবীদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা, ঘুরাঘুরি, আড্ডা দেওয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। প্রিয়াদের ফ্রেন্ডের একটা গ্যাং ছিল। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিল যারা রিলেশন করতো। রিলেশনের প্রথম কয়েক মাস ভালোই যেত। বান্ধবীরা চুটিয়ে প্রেম করতো। এরপর একটা সময় থেকে মনমালিন্য, ঝগরা লেগেই থাকতো। ক্লাসে বসে বসে কাঁদতো, মন খারাপ করে থাকতো। এইসব বিষয়গুলো খুব বিরক্ত লাগতো প্রিয়ার। এসব ভালোবাসা নাকি আজাইরা সময় কাটানো প্রিয়া ভেবে পেতো না। বান্ধবীদের জন্য খারাপও লাগতো। এদের মধ্যে প্রিয়ার সবচেয়ে ভালো বান্ধবী ছিল রাহা। একটা সময়ে রাহাও রিলেশন করে। প্রিয়া বারবার বারণ করা সত্ত্বেও শুনেনি। রাহা বলতো ছেলেটা আমায় খুব ভালোবাসেরে। রিলেশনের চার মাস পর্যন্ত খুব প্রেম চললো দুজনের মধ্যে। এরপর আবারও সেই ঝগরার পর্ব শুরু। প্রিয়া ক্লাসে এসে দেখে রাহা কাঁদছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে রে?”
কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছেনা রাহা। পাশ থেকে সীমা বললো,
“মনে হয় বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগরা হয়েছে।”
“হলে হয়েছে। তো? ফ্যাসফ্যাস করে কান্নার কি আছে?”
প্রিয়া রাহাকে ধমক দিয়ে বললো,
“এই কান্না বন্ধ কর। একশোবার বলেছিলাম এসব রিলেশনে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। শুনেছিস আমার কথা? এখন কেন কাঁদছিস?”
রাহা কোনোরকমে কান্না থামিয়ে বললো,
“তুই কি বুঝবি? তুই তো কখনো কাউকে ভালোইবাসিসনি। যেদিন কাউকে ভালোবাসবি সেদিন বুঝবি।”
“এসব ফালতু প্রেমের ওপর আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই বুঝলি। এখন চল ফুসকা খাবো।”
“আমি খাবো না।”
“আরে টাকা আমি দিবো।”
“বললাম তো খাবো না। মন ভালো নেই।”
“গলায় পাড়া দিয়ে খাওয়াবো। চল তাড়াতাড়ি।”
রাহাকে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে প্রিয়া। ফ্রেন্ডসরা মিলে জমিয়ে আড্ডা দেয় আর ফুসকা খায়। ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলে কারো মন খারাপ থাকলে কেউই কখনো স্কুল মিস দিতো না। কারণ একমাত্র ওরাই ছিল যারা মন খারাপের ওষুধ ছিল। বিশেষ করে প্রিয়া! প্রিয়া বকবে খুব বকবে প্রথমে। এরপর আদর করে ফুসকা, আচার, আইসক্রিম খাওয়াবে। হাসাবে।
কিছুদিন পর রাহার বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাহার ঝগরা মিটে যায়। টেস্ট পরীক্ষা পর্যন্ত ভালোই চলছিল সবকিছু। কিন্তু রাহার বয়ফ্রেন্ড একেবারের মত ব্রেকাপ করে দিয়ে অন্য মেয়ের সাথে রিলেশনে যায়। রাহা এটা মানতে না পেরে সুইসাইড এটেম্প নেয়। তখন ওর বাড়ির সবাই ওর বিয়ে দিয়ে দেয়। রাহার আর এস.এস.সি পরীক্ষা দেওয়া হয়না। এই ঘটনার পর প্রিয়ার আরো রাগ আর ক্ষোভ হয় ভালোবাসার প্রতি। প্রিয়ার ধারণায় জন্ম নেয় ভালোবাসা মানেই কষ্ট! দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষা এসে পড়ে। খুব ভালোভাবে সব পরীক্ষা শেষ হয়। এরপর আস্তে আস্তে ফ্রেন্ড সার্কেলের অনেকেরই বিয়ে হয়ে যায়। যে কয়জন থাকে সবাই আলাদা আলাদা কলেজে ভর্তি হয়। স্কুল লাইফের পরিচিত গ্যাং আলাদা হয়ে যায়।
কলেজের প্রথমদিনেই ভালোবাসার অধ্যায়ে পা দিয়ে ফেলে প্রিয়া।
গেটের সামনে অনেক মানুষ। প্রিয়ার বাবা কলেজ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। প্রিয়া গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই কয়েকটা ছেলে হাসাহাসি শুরু করে দেয়। হাসির কারণ কি প্রিয়া বুঝলো না। এমনিতেই কলেজের প্রথম দিন। তারমধ্যে আবার একা। খুব আনইজি ফিল করে প্রিয়া। ছেলেগুলো শিহাবকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“মামা! তোর বোন এসে পড়েছে দেখ! তোর শেষ বোনই কিন্তু এটা।”
শিহাব হা করে তাকিয়ে আছে প্রিয়ার দিকে। শিহাবের বন্ধু রোমান চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
“ঐ শালা! আমাদের গেমসের রুলস অনুযায়ী মেয়েটা তোর বোন লাগে। সো এভাবে তাকিয়ে থাকার কোনো মানে হয়না।”
“চুপ কর! সব মেয়ে যদি বোন হয় তাহলে বউ হবে কে?”
“আরে! এভাবে পল্টি খাচ্ছিস কেন? কথা ছিল এই মার্ক করা জায়গায় প্রথম যেই ১০ জন মেয়ে পা রাখবে তারা তোর বোন। এটা হলো দশ নাম্বার মেয়ে। বাকিগুলোকে তো বোন বানাতে ঠিকই রাজি হয়েছিস।”
“পরবর্তী আরো কয়েকশো মেয়েকে বোন বানাতে রাজি আছি। শুধু এই মেয়ে বাদে।”
“প্রেমে পড়লি নাকি?”
“বন্ধু হয়েছিস কি করতে? বন্ধুর মনের কথা বুঝিস না?”
“কিন্তু!”
“আবার কিন্তু কি? যা মেয়েটার সব খোঁজখবর জোগার কর।”
প্রিয়া ক্লাসে আসার পর থেকেই দেখছে গেটের সেই ছেলেগুলো উঁকিঝুঁকি মারছে। ক্লাস থেকে স্যার বের হওয়ার সাথে সাথে রোমান প্রিয়ার কাছে গিয়ে বললো,
“শিহাব তোমাকে দেখা করতে বলেছে।”
“কে শিহাব?”
“আমার বন্ধু।”
“আমি চিনিনা।”
“আমি চিনিয়ে দিচ্ছি। চলো।”
“পারবোনা।”
“শিহাব আসলে কিন্তু সিনক্রিয়েট করবে।”
প্রিয়া খুব বিরক্ত হয়। বাধ্য হয়েই শিহাবের কাছে গিয়ে বলে,
“আঙ্কেল আমায় ডেকেছেন?”
আঙ্কেল ডাক শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না শিহাব। বন্ধুরা সব হাসাহাসি করছে। শিহাব রেগে বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায়। রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে এক পা দু পা করে এগোতে থাকে। কলেজের মাঠের মধ্যে এমন এক অবস্থা সবাই তাকিয়ে আছে। প্রিয়া এবার ভয় পাচ্ছে। শিহাব এমন এক কাণ্ড করলো সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে…….

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-১৬

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়া যথাসম্ভব চেষ্টা করে নিজেকে সামলানোর। কিন্তু সেটা কিছুতেই পারছেনা। বরাবরের মত এবারও প্রিয়ার ছলছল করা চোখ ফাহাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারেনি। ফাহাদ চুপ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে ফুলও থেমে যায়। ফাহাদ জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে প্রিয়া?”
“কিছুনা।”
“মিথ্যা বলছো কেন? তোমার চোখে পানি কেন তাহলে?”
“কই?”
“আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই। বলো কি হয়েছে?”
“আসলে আপনার আর ফুলের খুনসুটি দেখে আমার ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। আপনি তো জানেনই বাড়িতে প্রবলেম হওয়ার পর থেকে ভাইয়ার সাথে তেমন করে আর কথা বলিনা। তাই আগের কথা মনে পড়ে খারাপ লাগছে।”
প্রিয়া সম্পূর্ণ কথাটাই মিথ্যা বললো। কারণ সত্যিটা যে একদমই প্রিয়ার গলা দিয়ে বের হবেনা। ফাহাদ কিছু না বলে এখনো তাকিয়ে আছে। ফাহাদ স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে, প্রিয়ার চোখমুখ মিথ্যা বলছে আর কিছু একটা লুকাচ্ছে। এদিকে প্রিয়াও আর বসে থাকতে পারছেনা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে। আচমকা প্রিয়া ফাহাদের হাত ধরে বলে,
“প্লিজ আমাকে বাসায় দিয়ে আসেন প্লিজ।”
“মানে কি? মা তোমাকে না খেয়ে যেতে দিবেনা।”
“প্লিজ!”
কান্নায় প্রিয়ার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। খুব হার্ট হয়েছে প্রিয়া। ফাহাদ আর কিছু বললো না। কাউকে কিছু না বলেই প্রিয়াকে বাসায় রেখে আসলো।

প্রিয়াকে বাসায় রেখে আসার পথে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বাসায় আসার পরই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সবাই দুপুরের খাবার খেতে বসেছে। ফাহাদের মা রেগে বললো,
“ফাহাদ, তুই কোন আক্কেলে মেয়েটাকে এভাবে বাসায় দিয়ে আসলি? আমাকে কিছু জানালিও না।”
“মা ওর মন খারাপ ছিল। তাই কিছু বলিনি।”
ফাহাদের বাবা বললো,
“আরেকদিন বাড়িতে এনো।”
“হুম।”
সবাই যে যার মত খাওয়া শুরু করলো। ফাহাদের মা ভীষণ রেগে আছে নিজের স্বামী আর ছেলের ওপর। ফাহাদ ভাবছে প্রিয়ার কথা। হুট করেই কি হলো মেয়েটার! মেয়েদের হুটহাট মুইড সুইং এর একটা বিষয় আছে যেটা ফাহাদ জানে। কিন্তু প্রিয়াকে দেখে তো তেমন মনে হলো না। খেতে খেতে ফাহাদের বাবা বললেন,
“তা ফাহাদ বিজনেসের তো আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক উন্নতি করে ফেলেছো। এবার বাড়িতে একটা বউ আনো।”
ফাহাদ মুচকি হেসে বললো,
“হুম আব্বু এবার আর বিয়েতে না করবো না।”
“তাহলে মেয়ে দেখা শুরু করি?”
“না আব্বু। আমার পছন্দ করা মেয়ে আছে।”
“কে সে? প্রিয়া?”
ফাহাদ মাথা চুলকে বললো,
“হুম! ভেবেছিলাম আজ পরিচয় করিয়ে দিবো। কিন্তু….”
পুরো কথা বলার আগে তিনি বললেন,
“যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।”
“বুঝলাম না আব্বু।”
“না বুঝার মত তো কিছু বলিনি ফাহাদ। দেখো, তুমি এখন বাচ্চা নও। ভালোমন্দ বোঝবার মতন যথেষ্ট জ্ঞানবুদ্ধি আছে তোমার। আমি আশা রাখবো, তোমার চয়েসটাও সেরকমই হবে।”
“আব্বু তুমি প্রিয়াকে চিনো না তো তাই এমন বলছো। প্রিয়া অনেক ভালো একটা মেয়ে। ওর মত মেয়ে অনেক কম আছে।”
“আমি প্রিয়াকে খারাপ বলিনি ফাহাদ। শুধু মেয়ে দেখলেই তো আর হবেনা। মেয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, আমাদের ফ্যামিলির সাথে ওদের ফ্যামিলির স্ট্যাটাস ম্যাচ করে কিনা সেটাও তো দেখতে হবে। তাছাড়া তোমার মায়ের কাছে শুনলাম মেয়েটা তোমার অফিসের ওয়ার্কার। আর একজন ওয়ার্কারের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস কেমন সেটা অবশ্যই তুমি জানো। তাই বলছি, আর আগানোর দরকার নেই। যতদূর এগিয়েছো বাদ দাও। অন্য কোনো মেয়ে দেখো। প্রয়োজনে আমি তোমায় হেল্প করবো।”
“এনাফ আব্বু! এতক্ষণে আমি ক্লিয়ার হলাম প্রিয়া কেন এমন হুট করেই চলে গেলো। সত্যিই আব্বু তোমার মানসিকতা দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমি আরও অবাক হচ্ছি যে, আমি এতদিন গর্ব করে বলতাম আমার আব্বু আমার আইডল। কিন্তু তোমার মানসিকতা এত্ত নিচু সেটা আমি জানতাম না।”
“ফাহাদ!!!”
“একদম চেঁচাবে না আমার ওপর। সত্যিটা মুখের ওপর বলার মত সৎ সাহস আমার আছে।”
“তুমি আমায় ভুল বুঝছো ফাহাদ। একবার নিজেই বিষয়টা নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো।”
“একবার কেন? আমি হাজার বার ভেবেছি। কিন্তু তোমার মানসিকতায় যা এসেছে, আমার মানসিকতায় তা আসেনি। আমার মন বারবার এটাই বলেছে আমি প্রিয়াকে ভালোবাসি। আর একটা জিনিস আমি বুঝিনা, তুমি কি জন্মগতভাবেই এত সম্পত্তির মালিক ছিলে? আচ্ছা তোমার কথা বাদই দিলাম। আমার কথাই বলি। আমি কি জন্মগতভাবেই বড়লোক? তোমার টাকায় ফুটানি করলেই আমি বড়লোক হয়ে গেলাম? সেজন্য কি আমি পরিশ্রম করিনি? যখন তোমার এত এত সম্পত্তি ছিল না তখন তো তুমি এসব স্ট্যাটাস নিয়ে ভাবোনি। তাহলে আজ কেন? আজ কেন ধনী-গরীব বিষয়টা আসছে? তুমিই তো আমায় বলতে, গরীবদের যেন কখনো অবহেলা না করি, তাদের সাথে কোনো অন্যায় না করি। সবাইকে সমান চোখে দেখি। তাহলে আজ তোমার সেই শিক্ষা কোথায় গেলো? ছেলের বউ হলে এত সমস্যা চোখে পড়ে? বিয়ের পর কি আমরা ওর বাড়িতে গিয়ে শুয়ে-বসে থাকবো? থাকবো না তো। তাহলে কেন ওর বাড়ি নিয়ে, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস নিয়ে টানাটানি করছো? আর বাকি রইলো সমাজ, আত্মীয়-স্বজন? কোনো একটা বিজনেসে লস খেয়ে বা সব সম্পত্তি হারিয়ে বিছানায় পড়ে দেখো তো সমাজ তোমাকে বিপদ থেকে তুলতে আসে নাকি। আত্মীয়-স্বজন কয়দিন দেখবে তোমাকে? একদিন? দুইদিন? সর্বোচ্চ একমাস? ব্যাস এরপর তারা উধাও। তাহলে এসব কারণকে কেন এত প্রায়োরিটি দিতে হবে? শোনো বাবা, এরপরও তুমি কি করবে না করবে আমি জানিনা। আমি ক্লিয়ার বলে দিচ্ছি, আমি প্রিয়াকে ভালোবাসি। আর যাই হয়ে যাক আমি প্রিয়াকেই বিয়ে করবো।”

কথাগুলো বলেই ফাহাদ বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
.
.
ছাদে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়া। আগে একটা সময় ছিল যখনই বৃষ্টি হতো প্রিয়া ছুটে যেত বৃষ্টিতে। বৃষ্টিতে ভিজতো আনন্দে। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা প্রিয়াকে ডাকতো ভেজার জন্য। আর প্রিয়াও মরিয়া হয়ে পড়তো ভেজার জন্য। মায়ের কড়া নজর এড়িয়েও যে কত বৃষ্টিতে ভিজেছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। এমনও সময় গিয়েছে প্রিয়াকে ঘরে তালা দিয়েও রাখা হয়েছে। কিন্তু হাড় মানেনি তখনও প্রিয়া। জানালা খুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা যেন প্রিয়ার ছিলই না। লাস্ট বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করে চোখের পানি লুকানোর জন্য। এরপর আর তেমন ভেজা হয়নি। আজ অনেক অনেক দিন পর এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছে প্রিয়া।ভাগ্যিস চোখের পানির কোনো রং নেই। বৃষ্টির সাথে সাথে চোখের প্রতিটা ফোঁটা পানি ধুয়ে যাচ্ছে। প্রিয়া এটাই ভেবে পাচ্ছেনা যে, প্রিয়া কেন কষ্ট পাচ্ছে। ফাহাদের বাবা তো ভু্ল কিছু বলেনি। ঠিকই বলেছে। তাহলে কেন কষ্ট হচ্ছে প্রিয়ার। এমনও তো নয় যে প্রিয়া ফাহাদকে ভালোবাসে। ভালোবাসে! নাকি বাসেনা! নাহ্ আর ভাবতে পারছেনা প্রিয়া। এবার শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই বসে পড়ে। পেছন থেকে সবটা দেখছে ফাহাদ। আস্তে আস্তে করে এগিয়ে যায় প্রিয়ার কাছে। সামনে গিয়ে প্রিয়ার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রিয়া সামনে মাথা তুলে তাকাতেই চমকে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আপনি?”
“অন্য কাউকে আশা করেছিলে?”
“আপনি এখানে কি করছেন?”
“নিজের চোখে দেখতে আসলাম।”
“কি?”
“তোমাকে। ভালোবাসো অথচ বলো না।”
“আমি কাউকে ভালোবাসিনা। ভালোবাসা আমার জন্য না।”
ফাহাদ প্রিয়ার কোমড়ে ধরে কাছে টেনে বলে,
“কিন্তু তুমি যে আমার ভালোবাসা।”
প্রিয়া ধাক্কা দিয়ে ফাহাদকে সরিয়ে দেয়।
“একদম আমার কাছে আসবেন না। ভালোবাসিনা আমি। চলে যান আপনি এখান থেকে।”
“কেন এভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো? আমার বাবার জন্য? তুমি বাবার কথাগুলোই শুনলে আমার ভালোবাসা দেখলে না? এতগুলা মাস যে পাগলের মত ভালোবেসেছি সেটা চোখে পড়েনি তোমার?”
“আমি আপনার কোনো কথাই শুনতে চাই না। চলে যান আপনি এখান থেকে।এইসব ভালোবাসা আবেগ। আজ আছে, কাল নেই। একটা সময় ঠিকই বাবার কথাগুলোকে প্রায়োরিটি দিবেন। তখন বলবেন, আসলেই ভুল করেছি ভালোবেসে।”
ফাহাদ একবার এদিক-সেদিক তাকালো। প্রিয়ার হাত ধরে বললো,
“চলো।”
“কোথায়?”
“আমার সাথে।”
“আমি যাবো না কোথাও।”
“আমিও একা কোথাও যাচ্ছি না।”
ফাহাদ প্রিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।

গাড়ি থামায় একটা খোলামেলা জায়গায়। এখানেও বেশকিছু কাপল দেখা যাচ্ছে। কোনো কাপল এক ছাতায় হাত ধরে হাঁটছে। কেউ কেউ ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ টং দোকানে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। কোনো কোনো কাপল আবার শখে ভিজছেও। সবার সামনে খোলা জায়গায় দাঁড় করালো প্রিয়াকে। প্রিয়া উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি করতে চলেছে ফাহাদ। ফাহাদ এবার প্রিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। সবার দৃষ্টি এবার জোগান দিলো। কয়েকজন কিছুটা কাছেও এগিয়ে আসে। রাস্তায় ফুল বিক্রি করা পথশিশুগুলা বড় বড় কচু পাতায় মাথা ঢেকে ওদের কিছুটা সামনে আসে। প্রিয়া আশেপাশে তাকিয়ে বেশ বিরক্ত হয়। সবাই কিভাবে দেখছে! আস্তে আস্তে আরো অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। ফাহাদ জোড়ে জোড়ে বলা শুরু করে,
“আমি আমার বাবার কথার ধার করিনা। আমি তোমায় ভালোবাসি। সারাটা জীবন আমি তোমার সাথে কাটাবো। তাই আমি কাকে আমার জীবনসঙ্গী করবো সেটার ডিসিশন শুধু আমিই নিবো। সিদ্ধান্ত তো আমি সেদিনই নিয়ে নিয়েছি, যেদিন তোমায় বৃষ্টির মধ্যে দেখি। তোমার স্নিগ্ধ ভেজা চোখমুখ তখনই আমার মনটা উইল করে নিয়েছে। আমি তখনও ভাবিনি এর পরিণতি কি হতে পারে। আমি এখনও ভাববো না এর পরিণতি কি হবে।আমি শুধু ভাববো কি করে তোমাকে আমার করবো। কি করে তোমার ঐ দুটি হাত সারাজীবন আমার হাতের মুঠোয় রাখবো। তুমি যদি একটা বার বিশ্বাস করে তোমার হাত দুটি আমার হাতে দিতে পারো তাহলে কথা দিচ্ছি এই বৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে, এই এতগুলো মানুষকে সাক্ষী রেখে সব বাঁধা-বিপত্তি পেড়িয়ে শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার হাত দুটি শক্ত করে ধরে রাখবো। বাসবে আমায় একটু ভালো?”
ফাহাদের কথা শেষ হতেই একটা ছেলে একগুচ্ছ কদম ফাহাদের দিকে ছুঁড়ে দেয়,
“ব্রো!”
ফাহাদ মুচকি হেসে ফুলগুলো ধরে। ফুলগুলোতে চুমু খেয়ে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।
“কে কি বলে, বলবে সব ভুলে দাও না হাতটা বাড়িয়ে। বিশ্বাস করো ভালোবাসার বিনিময়ে কখনোই কষ্ট দিবো না। ভালোবাসবে একটু? বিয়ে করবে আমায়?”
প্রিয়া চুপ! ফাহাদ আবারও বললো,
“উইল ইউ ম্যারি মি প্রিয়া?”
প্রিয়া মুখে হাত দিয়ে কাঁদছে। সবাই এবার জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলছে,
“হ্যাঁ বলো, হ্যাঁ বলে দাও।”
চারপাশ থেকে একই ধ্বনি ভেসে আসছে। প্রিয়া কান্নার জন্য উত্তর দিতে পারছেনা। ফাহাদের হাত থেকে ফুলগুলো নেয়। ফাহাদ উঠে দাঁড়াতেই প্রিয়া ফাহাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফাহাদকে। কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
“ভালোবাসি ফাহাদ ভালোবাসি।”
চারপাশ থেকে এবার সবার করতালি ভেসে আসে। ফাহাদ প্রিয়ার চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
“আজই শেষ। এই চোখে আর কোনোদিন পানি দেখতে চাইনা। এই চোখে শুধু আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে চাই।”
প্রিয়া তখনও কাঁদছে। ফাহাদ হালকা ধমক দিয়ে বললো,
“কাঁদতে বারণ করলাম না?”
“কান্না পেলে আমি কি করবো?”
ফাহাদ মুচকি হাসলো। কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
“ভালোবাসি।”
চারপাশে সবাইকে দেখে প্রিয়া খুব লজ্জা পায়। ফাহাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। ফাহাদ বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো,
“লজ্জাবতী!”

যে ছেলেটা কদম ফুল এগিয়ে দিয়েছিলো সে ওদের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“হেয় ব্রো, ফ্রি হলে একটু কথা বলতাম?”
প্রিয়া তো লজ্জায় মাথা তুলেই তাকাতে পারছেনা। ফাহাদ বললো,
“হ্যাঁ শিওর।”
“আমায় চিনেছেন তো?”
“তুমিই একটু আগে ফুল দিলে না?”
“হ্যাঁ ব্রো। গার্লফ্রেন্ডের জন্য এনেছিলাম। কিন্তু আপনাদের দেখে মনে হলো ফুলগুলো আপনাদের কাছেই শোভা পাবে। আসলে ভাই এমন প্রপোজ খুব কমই দেখেছি। সচারচর ভালোবাসার জন্য প্রস্তাব দিতে দেখা যায়। কিন্তু আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তাও এত মানুষের সামনে। জিনিসটা আমায় খুব মুগ্ধ করেছে।”
ছেলেটার গফ পিঠে একটা কিল দিয়ে বললো,
“তুমি তো আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিলে না।”
“বিয়ের প্রস্তাব দিবো না। বিয়ে করে নিয়ে আসবো।”
ফাহাদ হেসে বললো,
“যাকে ভালোবাসি তাকে এভাবে আর ভালোবাসতে ইচ্ছে করেনা। বউ করেই ভালোবাসবো। কত কষ্ট দিয়েছে জানোনা। সব সুদে-আসলে শোধ তুলবো।”
“কিভাবে?”
“ওটা সিক্রেট! বলা যাবেনা।”
বলেই হো হো করে হাসলো ফাহাদ। সাথে ঐ ছেলেটাও। এদিকে ছেলেটার গফ আর প্রিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ফাহাদ বুঝতে পেরে কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,
“আমি ফাহাদ। আর ও আমার হবু বউ প্রিয়া।”
“আমি নিহান। আর ইনি আমার গার্লফ্রেন্ড থুক্কু হবু বউ রেসী।”
“তোমাদের সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগলো। বৃষ্টি না থাকলে বসে কফি খেতাম। কিন্তু প্রিয়াকে আর বেশিক্ষণ ভেজানো যাবেনা। ঠান্ডা লেগে গেলে তো সমস্যা বুঝোনা! আমি তো এখন ওর সাথে থাকি না যে সেবা করবো।”
নিহান হেসে বললো,
“এটা আমার নাম্বার।”
ফাহাদ নিজের নাম্বারটাও দিয়ে বললো,
“একদিন সময় করে আমরা অবশ্যই কফি খাবো একসাথে ওকে? আর আমাদের বিয়েতে কার্ডও পাঠিয়ে দিবো।”
“খুশি হলাম ভাই।”
“ধন্যবাদ তোমাদের। আজ আসি। আল্লাহ্ হাফেজ।”
“আল্লাহ্ হাফেজ।”
ফাহাদ আর প্রিয়া হাঁটা ধরলো। দুজনের মাঝে সামান্য দূরত্ব। ফাহাদ প্রিয়ার হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের হাতের আঙ্গুল ঠুকিয়ে শক্ত করে হাত ধরে হাতের পিঠে একটা চুমু খায়। প্রিয়া মুচকি হেসে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়….

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-১৫

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
অফিসে গেলে এখন আর প্রিয়ার ততটা খারাপ লাগেনা। তার দুইটা কারণও অবশ্য রয়েছে। প্রথমত পৃথা আগামী মাস থেকেই অফিসে জয়েন করবে আর দ্বিতীয়ত আজকাল প্রিয়াও চুপিচাপি ফাহাদকে দেখে। কেন দেখে তা জানেনা প্রিয়া। প্রিয়া নিজেই নিজেকে বারবার সংযত করার চেষ্টা করে কিন্তু বেহায়া মন সেটাতে পাত্তা দেয়না।
মাত্রই গোসল সেরে ছাদে জামা-কাপড় রোদে দিতে যায় প্রিয়া। মৃদু মৃদু রোদ ভালোই লাগছিল। তাই নিচে না গিয়ে ছাদেই দাঁড়ায়। একা একা থাকলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। এজন্য প্রিয়া সবসময়ই নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চায়। আজ ইচ্ছে হলো কিছু সময় একলা থাকা দরকার।একটাবার হয়তো অতীত থেকে ঘুরে আসা দরকার। তাহলেই হয়তো এই বেহায়া মন ফাহাদের দিক থেকে ঘুরে আসবে। চোখজোড়া বন্ধ করতেই পেছন থেকে প্রিয়ার খালাতো বোন আপু আপু বলে দৌঁড়ে কাছে আসে। প্রিয়ার আর অতীতের দরজায় কড়া নাড়া হলো না। হয়তো প্রকৃতি চাচ্ছেনা স্বল্প কষ্টও প্রিয়ার মনে দাগ কাটুক!
“কি হয়েছে?”
“আপু ঐ ভাইয়াটা এসেছে।”
“কোন ভাইয়া?”
“ঐযে ঐদিন এসেছিল। কি যেন নাম? ফ..ফা..”
“ফ ফা না ফাহাদ।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। ঐ ভাইয়াটা এসেছে।”
“তো কি হয়েছে?”
“নানু তোমায় ডাকছে।”
“তোর নানুকে গিয়ে বল তার আদরের ফাহাদকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে।”
“অত বড় ছেলেকে নানু কোলে নিবে কিভাবে?”
“এটা নিয়ে তোর এত মাথাব্যথা কেনো রে?”
“আমার তো মাথাব্যথা করছেনা আপু।”
“ঐ তুই যা তো।”
“আমি তোমাকে নিয়েই যাবো।”
“আমার সাথে তো তুই কখনো জেদ ধরিস না। এই সত্যি করে বলতো কি ঘুষ খেয়েছিস?”
“ঘুষ খাবো কেন? যারা ঘুষ খায় ওদের পেট তো অনেক বড় দেখেছি। আমার পেট কি বড়? দেখো আমার পেট কি স্লিম! একদম দীপিকার মত।”
“যা ভাগ! আসছে আমার দীপিকা।”
“ও আপু চলো না প্লিজ।”
“ঠিক আছে চল।”
নিচে নেমে প্রিয়া সোজা নিজের রুমে গেলো। ফাহাদ আর নানুর আড্ডাখানা এখন প্রিয়ার রুমটাকেই ঘিরে। পিচ্চিটা প্রিয়ার টেবিলের ওপর থেকে পাঁচ বক্স চকোলেট পেটের ওপর রেখে নিয়ে যাচ্ছে। প্রিয়া জিজ্ঞেস করলো,
“এত চকোলেট তুই কোথায় পেলি? আর আমার রুমে কেন?”
“তোমায় বলবো কেন?”
“কত্ত বড় সাহস! বেয়াদব।”
ফাহাদ হেসে বললো,
“শালিক পাখি চকোলেট কি আরো লাগবে?”
“নেক্সট টাইম দুই বক্স বাড়িয়ে দিলেই হবে।”
বলেই চকোলেটগুলো নিয়ে চলে গেলো। প্রিয়া আগামাথা কিছুই বুঝলো না। নানু বললো,
“এত পাখি থাকতে তুমি আমার নাতনীরে শালিক পাখি ডাকলা?”
“ওহ নানু! এজন্যই তো বলি তুমি বুড়ি হয়েছো বাতাসে। তোমার মনের বয়স তো এখনো ১২ বছরের বাচ্চার মত। কিচ্ছু বুঝোনা। শালিক পাখি বলেছি আদর করে। শালিকা থেকে শালিক পাখি বুঝছো?”
প্রিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“এসব আদিক্ষেতা বন্ধ করেন তো।”
“তোমার হিংসে হচ্ছে?”
“আমার হিংসে হবে কেন?”
“এইযে তোমার বোনকে আদর করে শালিক পাখি ডাকলাম বলে। আচ্ছা আজ থেকে তোমাকে আমি কৈতরী বলে ডাকবো কেমন?”
“এই এই একদম আজেবাজে নামে ডাকবেন না বলে দিলাম।”
“রাগ করেনা আমার কৈতরী।”
“ধ্যাত!”
“এত রাগ করো কেন? রাগ করলে তোমায় দারুণ লাগে জানো?”
“জানি।”
“কে বলেছে? আমি ছাড়া আর কার সাথে তুমি রাগ করো?”
“আপনাকে কেন বলবো?”
“আচ্ছা বলতে হবেনা। এখন রেডি হও।”
“কেন?”
“আমার মায়ের সাথে দেখা করতে নিয়ে যাবো তোমায়।”
“আপনার মায়ের সাথে আমি কেন দেখা করবো?”
“মাকে তোমার কথা বলেছি। মা তখনই তোমায় দেখতে চেয়েছিল।”
“তখন আর এখন কি? তখনও কোনো সম্পর্ক ছিলোনা আর এখনো নেই।”
“নেই তো কি? হতে কতক্ষণ?”
“হবেনা।”
“বেশ! কিন্তু মায়ের সাথে প্লিজ দেখা করো।”
“আমি পারবো না।”
“কেন?”
“আনইজি লাগে।”
“আমি পাশে থাকলে সবই ইজি লাগবে। তাছাড়া আমার মা এত্ত ভালো মানুষ যে তোমার মনেই হবেনা সে অপরিচিত।”
“না, আমি যাবো না।”
“প্লিজ!”
.
.
ফাহাদের রুমে বসে আছে প্রিয়া। একটা ছেলে মানুষের রুম এতটা সাজানো-গোছানো হতে পারে সেটা ফাহাদের রুম না দেখলে বুঝাই যাবেনা। একদমই ইচ্ছে ছিলনা এই বাসায় আসার। কিন্তু বাড়িতে সবার জোড়াজুড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছে। ফাহাদের মা বাসায় নেই। মেয়েকে নিয়ে একটু বাহিরে গিয়েছে। একটু পরই এসে পড়বে। ফাহাদের বাবা অফিসে। প্রিয়া ড্রয়িংরুমেই বসে অপেক্ষা করতে চেয়েছিল কিন্তু ফাহাদ শোনেনি। টেনে নিজের রুমে নিয়ে এসেছে। পুরো বাড়ি ফাঁকা। শুধু দুইজন কাজের লোককে দেখলো কিন্তু তারা নিচে কাজে ব্যস্ত। এক রুমে ফাঁকা বাড়িতে ফাহাদের সাথে প্রিয়া। প্রিয়ার একটুও ভয় করছেনা। কেন জানি প্রিয়ার মন বলে এই ছেলেকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। সত্যি বলতে মেয়েরা এমনই একজন জীবনসঙ্গী চায় সবসময়। ফাহাদ এতক্ষণ ওয়াশরুমে ছিল। চুলগুলোতে হালকা পানি দিয়েছে। হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। প্রিয়া এক পলক তাকিয়েই অন্যদিকে তাকায়। ফাহাদের প্রিয়ার সামনে এসে একই স্টাইলে হাত দিয়ে চু্ল ঠিক করতে করতে বললো,
“একা একা বসে থাকতে বোরিং লাগছে?”
প্রিয়া কিছু বললো না। ফাহাদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
“আমার কথা শুনে নাকি তার বুকের বাম পাশে লাগে। আর এখন তার চুল ঠিক করার এই দৃশ্যটা যে আমার বুকের বাম পাশে লাগছে সেটা কি মিষ্টার আয়মান চৌধুরী ফাহাদ জানে!”
“কি হলো?”
“হাত দিয়ে চুল ঠিক করছেন কেন? বাসায় চিরুনি নেই?”
“আছে। কিন্তু আমার এভাবেই চুল ঠিক করতে ভালো লাগে।”
“একদম বাজে লাগে বিষয়টা।”
“সত্যিই?”
“হু।”
“তোমার কাছে বাজে লাগলে আর করবো না।”
“হু।”
“হু হু করছো কেন? মুখে কি হয়েছে?”
“কিছুনা।”
“আচ্ছা তোমার ভয় লাগছেনা?”
“কেন?”
“এইযে আমার সাথে একা রুমে আছো।”
“এখানে ভয় পাওয়ার কি হলো? আপনি বাঘ নাকি ভাল্লুক?”
“তা নয়। কিন্তু একা ঘরে একটা ছেলে একটা মেয়ের কাছে কিন্তু বাঘ, ভাল্লুকের চেয়েও কম ভয়ংকর নয়।”
“সেটা আপনার মনে হতে পারে। আমার নয়।”
“কেন? যদি কিছু করে ফেলি?”
“বিশ্বাস আছে।”
“কার ওপর?”
“এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ আছে নাকি?”
“তার মানে তুমি আমায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছো?”
“জানিনা।”
ফাহাদ আর কিছু বললো না। মিটমিট করে হাসছে। প্রিয়া বললো,
“হাসির কিছু হয়েছে?”
“নাহ্ তো।”
“তাহলে হাসছেন কেন?”
“একটা কথা ভেবে।”
“কি কথা?”
“তুমি কি জানো তুমি প্রেমে পড়েছো?”
“নাহ্ জানিনা। কারণ আমি তো প্রেমেই পড়িনি।”
“তুমি প্রেমে পড়েছো এবং সেটা নিজের অজান্তেই।”
“বাজে বকবেন না।”
“একদম সত্যি বলছি।”
“তাই? তা কার প্রেমে পড়লাম শুনি?”
ফাহাদ চোখ টিপ দিয়ে বললো,
“এই আয়মান চৌধুরী ফাহাদের।”
“আপনার বেশি বুঝার স্বভাবটা আর গেলো না।”
ফাহাদ হোহো করে হেসে দিলো। কিছুক্ষণ পরই ফাহাদের বাবা-মা আর বোন আসে। বোনটা টেনে পড়ে। ফাহাদের মা আর বোন তো প্রিয়ার ব্যাপারে সবই জানে। তাই প্রিয়াকে দেখে চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি ওদের। ফাহাদের ছোট বোনের নাম ফুল। দেখতেও ফুলের মতই সুন্দর। টেনে পড়ে এবার। ফুল দৌঁড়ে এসে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
“তুমি এসেছো! ভাইয়া তো ঠিকই বলেছে। তুমি একদম সাদা পরী। আর এই সাদা শাড়িটায় তোমায় দারুণ লাগছে।”
প্রিয়ার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। যাদের কখনো দেখেনি, চিনেনা তাদের কাছে এসব প্রসংশা সত্যিই লজ্জাজনক। লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে প্রিয়া। ফাহাদের মা এগিয়ে এসে প্রিয়ার গালে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে বললো,
“মাশআল্লাহ্।”
ফাহাদ চোখের ইশারায় সালাম করতে বললো। প্রিয়ার কি হলো কে জানে! ফাহাদের কথামত পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। তিনি এবার প্রিয়ার হাত ধরে বললেন,
“আমার ছেলের পছন্দ আছে।”
প্রিয়া কিছু বলতে পারছেনা। শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদের মা বললো,
“ওকে তো কিছু খেতেও দিসনি তাইনা?”
ফাহাদ মাথা চুলকালো।
“ইয়ে….”
“হয়েছে বুঝছি। ফুল তুই ওকে নিয়ে একটু গল্প কর। আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।”
“ওকে মম।”
ফুল প্রিয়াকে নিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললো,
“আচ্ছা ভাবী তোমার প্রিয় খাবার কি?”
“তুমি আমায় ভাবী ডাকছো কেন?”
“ভাইয়ের বউকে তো ভাবীই ডাকে তুমি জানো না?”
“আমি তো তোমার ভাইয়ের বউ নই।”
“এখন নও কিন্তু হয়ে যাবে।”
ফাহাদ ফুলের কোলে মাথা রেখে বললো,
“তোর ভাবী আমার বউ হতে ভয় পায় বুঝলি?”
“বুঝাবুঝি পরে। আগে তুমি ভাবীর কোলে মাথা রাখো। বউ আছে তাও খালি আমার কোলে মাথা রাখবে।”
“বাবারে! তুই তোর ভাবীকে এখনো চিনিসইনা। আমাকে ধাক্কা দিয়েই ফেলে দিবে।”
দুই-ভাই বোনের কথোপকথন চুপচাপ গিলে যাচ্ছে প্রিয়া। আনইজি লাগছে খুব আবার ভালোও লাগছে ভাই-বোনের খুনসুটি।

পাশের রুমেই ফাহাদের বাবা ফাহাদের মাকে জিজ্ঞেস করলো,
“মেয়েটা কে?”
“তুমি জানোনা?”
“নাহ্ তো।”
“ফাহাদ তোমায় বলেনি?”
“এমন কিছু কি যেটা বলতে হবে আমায়?”
“তার চেয়েও বেশি কিছু।”
“কি সেটা?”
“মেয়েটাকে ফাহাদ অনেক ভালোবাসে।”
“কিহ্?”
“হ্যাঁ।”
“কবে থেকে?”
“এক বছরের কাছাকাছি তো হবেই।”
“মেয়েটাও ভালোবাসে।”
“জানিনা শিওর। তবে ভালো না বেসে আর যাবে কোথায়!”
“নাম কি? কোথায় থাকে, কি করে?”
“নাম প্রিয়া। পড়াশোনা+জব করে।”
“কোথায় জব করে?”
“ফাহাদের অফিসেই।”
এবার ফাহাদের বাবা একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন,
“হোয়াট? অফিসের সাধারণ একজন ওয়ার্কারকে ভালোবাসে ফাহাদ? ওর মাথা কি ঠিক আছে?”
“ওয়ার্কার তাতে কি হয়েছে?”
“স্ট্যাটাস বলে একটা কথা আছে সেটা কি ভুলে যাচ্ছো?”
“ভালোবাসার কাছে আবার স্ট্যাটাস কিসের?”
“ছেলের মত তুমিও পাগল হইয়ো না। সময় থাকতে ফাহাদকে বুঝাইয়ো এসব ভালোবাসার ভূত যেন মাথা থেকে নামায় বলে দিলাম। আর যদি ভালোবাসতেই হয় তবে এমন কাউকে ভালোবাসতে বলিয়ো যাতে তাকে বাড়ির বউ করতে গিয়ে আমাদের সোসাইটিতে কোনো কথা শুনতে না হয়।”

ফাহাদ আর ফুল খুনসুটিতে মেতে থাকলেও পাশের রুম থেকে কথাগুলো ভেসে প্রিয়ার কানে ঠিকই আসে। না চাইতেও চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসে…..

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-১৪

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়ার কথা শুনে ফাহাদ হো হো করে হেসে দিলো। প্রিয়ার কথাটা রিপিট করে বললো,
“ইশ! আমি বিয়েই করবো না।”
প্রিয়া রাগি রাগি গলায় বললো,
“এতে হাসির কি হলো?”
“কিছু হয়নি?”
“না।”
“হবে কি করে আমি তো কিছু করিইনি।”
“নির্লজ্জ একটা।”
“ইশ! বুকের বাঁ পাশে লাগলো।”
“বুকে না লেগে গলায় লাগলে খুশি হতাম।”
“গলায় তো তুমি ঝুলেই আছো।”
“কিহ্?”
“এত্ত জোড়ে কেউ কিহ বলে? আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।”
“আমি মোটেও এত জোরে বলিনি।”
“আমি কি মিথ্যে বলছি?”
“আপনি তো মিথ্যুকই।”
ওদের ঝগরা দেখে পৃথা ফ্লোরেই বসে পড়লো গালে হাত দিয়ে। প্রিয়া পৃথাকে টানতে টানতে বললো,
“আরে কি করছিস তুই? উঠ উঠ তাড়াতাড়ি।”
“না, তোরা ঝগরা কর। আমি বসে বসে দেখি। বিয়ে করা লাগবেনা আমার।”
পৃথার কথায় প্রিয়া একটু লজ্জা পেলো।

খুব ধুমধাম ভাবেই পৃথার বিয়ে হয়ে যায়। যাওয়ার আগে পৃথা প্রিয়াকে একা রুমে নিয়ে যায়। দুজনের চোখেই পানি টলমল করছে। পৃথা প্রিয়ার দুই গালে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে বললো,
“একদম কাঁদবিনা। তুই কাঁদলে আমার কষ্ট হয় জানিস না?”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“তুই কেন এসেছিলি আমার লাইফে বলতো? আর এলিই যখন তখন এভাবে ছেড়ে যাচ্ছিস কেন?”
“তোর লাইফে না এলে কি এমন মিষ্টি মেয়েটাকে পেলাম? তুই অনেক লক্ষী একটা মেয়ে। তুই অনেক অনেক বেশিই সুখি হবি। আর আমি কি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছি নাকি? আমি আকাশকে পরে বোঝাবো যাতে জবটা করতে দেয়।”
প্রিয়ার চোখেমুখে খুশি চিকচিক করছে।
“সত্যিই বলবি?”
“তিন সত্যি।”
প্রিয়া পৃথাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
“শোন প্রিয়ু, তোকে কিছু কথা বলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।”
“বল।”
“দেখ কোনো রকম রিয়াক্ট করবিনা কথাটা শুনে বলে দিলাম। যদি আমায় বকিস আমি কিন্তু কষ্ট পাবো।”
প্রিয়া হেসে বললো,
“বল। কিচ্ছু বলবো না।”
“ফাহাদ স্যার তোকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে রে। তুই হয়তো কখনো চাসইনি তার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে। কিন্তু আমি দেখেছি এবং সেটা খুব কাছ থেকেই। প্রচন্ড রকম ভালোবাসে তোকে মানুষটা। শুধু একটাবার তার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করিস, দেখবি এতটুকুও মিথ্যা নেই সেখানে।”
প্রিয়া কিছু বলার আগেই পৃথার কাজিনরা দৌঁড়ে রুমে ঢুকে বলে,
“তুই এখানে। আর সবাই তোকে খুঁজছে। চল চল।”
এক প্রকার জোর করেই টেনে নিয়ে যায় পৃথাকে। পৃথার বিদায়ের পর থেকে অনেক বেশি ভেঙ্গে পড়ে প্রিয়া। যে কেউ দেখলে ভাববে নিজের বোনের বিয়ে হচ্ছে হয়তো। প্রিয়ার অন্যান্য মেয়ে কলিগরা এগিয়ে আসলে ফাহাদ হাতের ইশারায় বারণ করে। প্রিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ফাহাদ কাছে গিয়ে বললো,
“এভাবে কেঁদো না প্লিজ। এখনই যদি সব চোখের পানি ফেলে দাও তাহলে আমাদের বিয়ের সময় কাঁদবে কি করে?”
প্রিয়া কিছু বললো না। শুধু হাউমাউ করে কাঁদছে। ফাহাদও আর কিছু না বলে প্রিয়াকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। আলতো করে প্রিয়ার মাথাটা ফাহাদের বুকে রাখলো।
.
.
পরেরদিন থেকে প্রিয়া যথারীতি অফিসে যাওয়া শুরু করে। আবারও আগের মত চুপচাপ হয়ে যায়। ফাহাদ কতকিছুই বলে তবুও প্রিয়া চুপ করে থাকে। তাই ফাহাদ ভাবলো প্রিয়াকে নিয়ে একটু বের হওয়া উচিত। কিন্তু প্রিয়াকে কি করে বলবে এটা? ফাহাদ ভাবতে লাগলো কিভাবে বলবে আর কি বলে রাজি করাবে। ভাবতে ভাবতেই ফাহাদ আইডিয়া পেয়ে গেলো। তিনদিন পরই ফাহাদের জন্মদিন। যা করার এই জন্মদিনকে ইস্যু করেই করতে হবে। ফাহাদ তখন থেকেই দিন গুণতে লাগলো। কবে আসবে সেইদিন। দেখতে দেখতে আকাঙ্ক্ষিত সেই দিনটা এসেও পরে। জন্মদিনের একদিন আগে প্রিয়াকে জানানো হয় আগামীকাল অফিস বন্ধ থাকবে। তাই প্রিয়াও আর আসেনি। ঐদিকে অফিসের সবাইকেই জন্মদিনের আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হয় গতকাল অফিসে ফাহাদের জন্মদিন পালন করা হবে। ফাহাদের পিএ তোয়া আর অফিসের জুনিয়র এক বসকে দিয়ে ফাহাদের বার্থডের আয়োজন করা হয়। সবাই ফাহাদের জন্য ঐদিন গিফ্ট নিয়ে আসে,শুধু প্রিয়া বাদে। কারণ প্রিয়া তো জানতোই না যে ফাহাদের জন্মদিন। যখন সবাই ফাহাদকে গিফ্ট দিচ্ছিলো তখন প্রিয়া ভীষণ লজ্জার মুখে পড়ে যায়। কেক কাটার পর প্রিয়াকে নিজের রুমে নিয়ে যায় ফাহাদ।
“আমার গিফ্ট কোথায়?”
প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারছেনা। মুখটা কাচুমুচু করে বললো,
“আমি তো জানতাম না স্যার। আচ্ছা আমি কাল গিফ্ট দিয়ে দিবো।”
“জন্মদিন আজ আর গিফ্ট দিবে কাল?”
“তাছাড়া তো আর উপায় নেই।”
“আচ্ছা আমার গিফ্ট যদি আমি নিজেই চেয়ে নিই?”
“কি গিফ্ট চান?”
“আমি চাই আজকের দিনটা তুমি আমায় দাও।”
“বুঝলাম না।”
“না বুঝার কি আছে? তুমি আর আমি মিলে ঘুরবো, খাবো, ছবি তুলবো।”
“আমি পারবোনা।”
“কেন নয়?”
“আমার ইচ্ছে তাই।”
ফাহাদ জানে প্রিয়া খুবই ঘাড়ত্যারা। একবার যখন না বলেছে তখন হ্যাঁ বলানো অনেক কঠিন কাজ। তাই অন্য টোপ দিলো। বললো,
“ওকে ফাইন। আমি ভেবেছিলাম আজকের দিনটা আমায় দিলে আমি আর কখনোই তোমাকে বিরক্ত করতাম না।”
প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে বললো,
“সত্যি তো?”
“হুম।”
“পরে আবার অস্বীকার করলে চলবে না কিন্তু।”
ফাহাদ হাসলো। মনে মনে বললো,
“স্যরি প্রিয়া তোমায় মিথ্যা বলার জন্য। একটা মিথ্যা যদি একদিনের জন্য হলেও তোমায় খুশি রাখতে পারে তবে আমি সেই মিথ্যা বলে মিথ্যুক হতেও রাজি আছি। আমি কখনোই তোমাকে ছাড়তে পারবো না। কখনো না।”
প্রিয়া ফাহাদের চোখের সামনে হাত ঝাঁকিয়ে বললো,
“কই চলেন?”
“হুম চলো।”
অফিস থেকে বেড়িয়ে ফাহাদ একটা রিক্সা নিলো। প্রিয়া অবাক হলো কিন্তু কিছু বললো না। ফাহাদ সেটা বুঝতে পেরে হাসলো। ফাহাদ প্রিয়ার ছোট খালাতো বোনের কাছে শুনেছে প্রিয়া বাইকে চড়তে আর রিক্সায় চড়তে খুব পছন্দ করে। ফাহাদ তো বাইক চালায় না তাই এখন রিক্সাই নিতে হলো। তবে খুব তাড়াতাড়িই ফাহাদ একটা বাইক কিনে নিবে।
রিক্সা আপনগতিতে চলছে। দুজনই চুপচাপ বসে আছে। মাঝখানে যথেষ্ট স্পেস আছে। নিরবতা কাঁটিয়ে ফাহাদ বললো,
“কোথায় যাবে?”
“যেদিকে ইচ্ছে।”
“আচ্ছা তোমার রিক্সায় চড়তে কেমন লাগে?”
“একদম ভালো লাগে না।”
“সত্যি বলছো?”
“মিথ্যা কেন বলবো?”
“উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেছো তার মানে এটা মিথ্যা কথা।”
“অনেক বেশি বুঝেন আপনি।”
“তুমিই তো বোঝাও।”
আবারও নিরবতা। রিক্সা থামে একটা ফুচকার দোকানের সামনে। দোকানটা ফুটপাতে। এসব খাবার একদম খায় না ফাহাদ। কিন্তু প্রিয়ার এসব পছন্দ। তাই ফাহাদ প্রিয়ার পছন্দকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। ভাড়া মিটিয়ে ওরা দোকানে এগিয়ে গেলো।ফাহাদকে দেখে বারবার অবাক হচ্ছে প্রিয়া। এই মানুষটা হঠাৎ করে এমন হয়ে গেলো? নিজের ভেতর অজস্র কৌতুহল ছোটাছুটি করছে। নিজের সাথে আর না পেরে প্রিয়া জিজ্ঞেস করে ফেললো,
“আপনি তো কখনো রিক্সায় চড়তেন না।বাইরের এসব খাবারও খান না। তাহলে হঠাৎ চেঞ্জ কেন? আমাকে ইম্প্রেস করার জন্য?”
“তোমার এই কেনোর উত্তর একটাই। আর সেটা হলে তুমি। তখন তুমি আমার জীবনে ছিলে না তাই এসবের প্রতি কখনোই কোনো আগ্রহ জন্ম নেয়নি। আর তুমি এমন একটা মেয়ে যাকে সহজে ইম্প্রেস করা খুব কঠিন। এত টাকা-পয়সা দেখে যেই মেয়ে ইম্প্রেস হয়না সেই মেয়ে এই সামান্য কিছুতে ইম্প্রেস হবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনা। তাছাড়া আমি চাইও না যে তুমি আমার উপর ইম্প্রেস হও। আমি চাই তুমি আমায় ভালোবাসো।”
“আপনি কিন্তু আপনার কমিটমেন্টের কথা ভুলে যাচ্ছেন।”
“কিসের কমিটমেন্ট?”
“কিসের কমিটমেন্ট মানে? আজকের পর আপনি আর কখনো আমায় জ্বালাবেন না বলেছিলেন।”
ফাহাদ প্রিয়ার কথার উত্তর দিলো না। ফুচকাওয়ালাকে বললো,
“মামা বানানো হয়েছে?”
“হ, মামা।”
ফুচকাওয়ালা দুই প্লেট ফুচকা এগিয়ে দিলো ওদের দিকে। প্রিয়া ফুচকা খাওয়া শুরু করলো এবং সেটা অনেকদিন পর। অনেকগুলো সময় পাড় হয়ে গিয়েছে প্রিয়া ফুচকা খায়না। প্রিয়া বেশ মজা করেই খাচ্ছে। হঠাৎ করে ফাহাদের দিকে তাকাতেই দেখলো, ফাহাদ মাত্র দুইটা ফুচকা খেয়েছে। তাতেই ফাহাদের অবস্থা কাহিল। চোখ দুইটা লাল টকটকে হয়ে গেছে। ঠোঁটদুইটারও একই অবস্থা। চোখের পানি টলমল করছে। প্রিয়া বুঝতে পারলো ফাহাদ ঝাল খেতে পারেনা। ফাহাদের প্লেটের ফুচকাগুলো নিজের প্লেটে নিতে নিতে বললো,
“চাইলেই সব অর্জন করা যায়। অযথাই আমার জন্য কষ্ট করার দরকার নেই। এইসব আপনার কাম্য নয়।”
“না, আমি পারবো। আমাকে দাও। তুমি ঝাল খেতে পারলে আমি পারবো না কেন?”
প্রিয়া কোনো উত্তর দিলো না। ফাহাদ আবার বললো,
“দিবে না তুমি? ঠিক আছে দিয়ো না। মামা আমাকে আরেক প্লেট ঝাল দিয়ে ফুচকা দিন তো।”
প্রিয়া এবার ধমক দিয়ে বললো,
“একদম না। মামা আপনি বরং কয়েকটা শুকনা ফুচকা দিন।”
ফুচকাওয়ালা প্লেটে করে শুকনা ফুচকা দিয়ে গেলো। ফাহাদ জেদ ধরে বললো,
“আমি এসব খাবো না।”
প্রিয়া দাঁত কটমট করে বললো,
“এরকম টিনেজারদের মত করার মানে কি?”
“জানিনা। আমি খাবোনা এগুলা।”
প্রিয়ার খুব রাগ হলো। নিজের ফুচকার প্লেটটা রেখে শুকনা ফুচকাগুলো হাতে নিয়ে গুঁড়ো করলো। এক হাত দিয়ে ফাহাদের গাল চেপে ধরে মুখে গুঁজে দিলো। ফাহাদ ফেলে দিতে চাচ্ছিলো। প্রিয়া হাত দিয়ে ফাহাদের মুখ আটকে ধরে।
“একদম ফেললে খবর আছে বলে দিলাম। কষ্ট করে খেয়ে পানি খান। ঝাল কমে যাবে।”
ফাহাদের চোখমুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো অনেক কষ্টে খেয়েছে। পানি পান করেই বললো,
“ইশ! শুকনা ফুচকা খেতে কি বিশ্রি টেষ্ট। একটুও লবণ নেই।”
“ঝাল কমেছে?”
“হুম অনেকএএএএকককটা।”
“চলুন এবার উঠি।”
ফুচকার বিল দিয়ে ফাহাদ আর প্রিয়া হাঁটা শুরু করলো। ফুটপাতেই হরেক রকমের কাঁচের চুড়ি, রেশমি চুড়ি বিক্রি করছে। প্রিয়াকে নিয়ে ফাহাদ সেখানে গেলো।
“দেখো তো কোন চুড়িগুলো ভালোলাগে।”
“চুড়ি দিয়ে কি করবেন?”
“চুড়ি দিয়ে মানুষ কি করে?”
প্রিয়া চুপ করে রইলো। ফাহাদই চুড়ি দেখতে লাগলো। অনেক বেছে বেছে একমোট চুড়ি ফাহাদের দৃষ্টি কাড়লো যেমনটা প্রিয়া কেঁড়েছিল। খাঁজকাটা সাদা কালার চুড়ি। চুড়িগুলো নিয়েই প্রিয়ার হাতে পড়িয়ে দেওয়া শুরু করলো।
“আরে আরে কি করছেন এগুলা? আমি চুড়ি পড়িনা।”
“আজ থেকে পড়বে।”
চুড়ি পড়ানো শেষে প্রিয়ার হাতটা ধরে বললো,
“ইশ! কি সুন্দর লাগছে দেখতে। মনে হচ্ছে চুড়িগুলো তৈরি করাই হয়েছে তোমার হাতের জন্য। আমি শিওর এই চুড়িগুলো অন্য কারো হাতে একদম পূর্ণতা পেতো না।”
“আপনার মত পাগল আমি খুব কমই দেখেছি।”
“আমার গুড লাক।”
প্রিয়া মুখে বিরক্তির ছাপ ফুঁটিয়ে বললো,
“আমি পানি খাবো।”
“পানি খাবে? আচ্ছা তুমি এখানেই দাঁড়াও। আমি রাস্তার ঐপাশ থেকে নিয়ে আসছি। এপাশে কোনো পানির দোকান নেই।”
“আচ্ছা।”
ফাহাদ যাওয়ার পরই প্রিয়া একটু ঘুরেঘুরে দোকানগুলো দেখছিলো। আশেপাশে অনেক লোকজনই আছে। এর মধ্যে কয়েকটা ছেলে প্রিয়ার সামনে আসে। ওদের মধ্যে একজন বলে,
“এক্সকিউজ মি ম্যাম?”
প্রিয়া পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়।
“আমাকে বলছেন?”
“হ্যাঁ। কিছু মনে না করলে কয়টা কথা বলতাম।”
“বলুন?”
“আপনার নাম কি?”
“একজন অপরিচিত লোককে আমি আমার নাম কেন বলবো?”
“নাম বলতে সমস্যা হলে নাম্বারটা যদি একটু দিতেন প্লিজ প্লিজ।”
“দেখি সরেন, আমাকে যেতে দিন।”
প্রিয়া চলে যাওয়া ধরলে ছেলেটাও পিছু পিছু আসে আর রিকোয়েস্ট করে নাম্বার দেওয়ার জন্য। এমন করতে করতে অনেকটা রাস্তার মাঝখানে চলে যায় ওরা। পেছন থেকে ফাহাদ পানির বোতল এনে ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে বলে,
“কি সমস্যা ভাই? বিরক্ত করছেন কেন?”
“আমি উনাকে বিরক্ত করছিনা।”
ছেলেটা খুব ঠান্ডাভাবেই কথা বলছিল। কিন্তু ফাহাদ ভীষণ রেগে যায়। ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় ছেলেটার গালে। ছেলেটা শান্তভাবেই বলছে,
“আরে ভাই মারছেন কেন? আর আপনিই বা কে? হুটহাট করে গায়ে হাত তু্লতেছেন।”
“রাস্তায় মেয়েদের বিরক্ত করার আগে মারের কথা ভাবা উচিত।”
প্রিয়া বারবার ছাড়তে বলছে কিন্তু ফাহাদ ওর কথা কানেই নিচ্ছেনা। ধস্তাধস্তি করার এক পর্যায়ে ফাহাদ একদমই মাঝরাস্তায় চলে যায়। আর ওর পাশ থেকেই দ্রুতবেগ একটা ট্রাক ফাহাদের কাছে এসে পড়ে। প্রিয়া জোরে চেঁচিয়ে বলো,
“ফাহাদ!!!!!!!!”
ফাহাদ পিছনে তাকিয়ে দেখে প্রিয়ার একদম কাছে একটা বাস এসে পড়েছে। রাস্তাটা বাঁকানো টাইপের হওয়ায় ড্রাইভার বুঝতে পারেনি। ফাহাদও চেঁচিয়ে বললো,
“প্রিয়া!!! সরোওও ওখান থেকে।”
প্রিয়া পেছন ঘুরে তাকাতে তাকাতেই প্রিয়ার খুব কাছ ঘেঁষে বাতাস বয়ে গেলো। ওখান থেকে সরার শক্তি পাচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো মৃত্যু খুব সন্নিকটে। প্রিয়া চোখ বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। জীবনটা বুঝি চলেই গেলো। আসলে কি হয়েছে বুঝতে প্রিয়ার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। খুব ভয় পেয়ে গেছে। ভয়ে প্রিয়ার শরীর কাঁপছে।ফাহাদ প্রিয়ার গালে হাত দিয়ে বললো,
“কিচ্ছু হয়নি তোমার। তাকাও আমার দিকে।”
প্রিয়া চোখ খুলে দেখলো ফাহাদের বাহুডোরে আবদ্ধ। ফাহাদের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
“আর ইউ ওকে?”
প্রিয়া মাথা নাড়ালো। প্রিয়ার হাত ধরে ঐ ছেলেটির সামনে গিয়ে বললো,
“তখন বলেছিলে না আমি ওর কে হই? হাত ধরার অধিকার দেখে বুঝতে পারছো? ও আমার ভালোবাসা।”
প্রিয়ার হাত ধরেই উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলো। প্রিয়া অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফাহাদের দিকে। আজ পৃথার কথাগুলো কানে বাজছে প্রিয়ার। তবে কি প্রিয়া সত্যিই উপলব্ধি করতে পারছে ফাহাদের ভালোবাসা?
এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি?”
প্রিয়া চোখের ইশারায় বললো,
“কিছুনা।”
ফাহাদ একটা রিক্সা থামালো। রিক্সায় উঠে প্রিয়ার হাত ছেড়ে দিলো। প্রিয়ার খুব রাগ হলো। কি দরকার ছিল রিক্সাটা নেওয়ার? হাত ধরে হাঁটাটাই তো ভালো লাগছিল। পরক্ষণেই প্রিয়ার মনে হলো,
“এসব কেন ভাবছি আমি? এর আগেও তো ফাহাদ আমার হাত ধরেছিলো। কই তখন তো এমন কিছু ফিল করিনি আমি। তবে কি আমি ভুল করলাম আজকের দিনে তার সাথে বেড়িয়ে? নাকি ভালোবেসে ফেললাম?”
প্রিয়ার কথায় ছেদ ফেললো ফাহাদ। আকাশের দিকে একটা আঙ্গুল তুলে বললো,
“দেখো চাঁদটা সুন্দর না?”
প্রিয়া আকাশের দিকে তাকালো। আসলেই আজকের চাঁদটা অপরূপ সুন্দর। হঠাৎ করে হুট খোলা রিক্সায় ঠান্ডা শীতল হাওয়া বয়ে গেলে প্রিয়ার চোখমুখ স্পর্শ করে। সব জড়তা দূরে সরিয়ে দিয়ে প্রিয়া ফাহাঁদের এক হাতের মুঠোয় নিজের হাত মুঠোবন্দি করে নিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে যায় ফাহাদ। এটা কি সত্যিই প্রিয়া? কিন্তু সেটা বুঝতে দেয়না প্রিয়াকে। প্রিয়ার দিকে তাকাতেই প্রিয়া ফাহাদের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভয় করছে!”
ফাহাদ কিছু বললো না। মুচকি হেসে প্রিয়ার হাত আরো শক্ত করে হাতের মুঠোয় জড়িয়ে ধরলো……

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-১৩

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
ফাহাদকে ইগনোর করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় প্রিয়া। কিন্তু তাতে এতটুকুও লাভ হচ্ছে না। ফাহাদও আঠার মত লেগেই আছে। কখনো কখনো কোনো ফাইলের সাথে লাভ লেটার পাঠাচ্ছে তো কখনো কখনো গোলাপ। অফিসের কম বেশি সবাই জানে এখন ফাহাদ প্রিয়াকে ভালোবাসে। এটা নিয়েও নানান জনের নানান মতামত। কারো কারো মতে প্রিয়া খুব বোকা। নয়তো এমন ছেলেকে কি কেউ হাতছাড়া করে? আবার কেউ কেউ এটাই ভেবে পায় না যে, এত বড়লোকের ছেলে সাধারণ ঐ মেয়ের মধ্যে এমন কি খুঁজে পেলো! এসব কথা যে প্রিয়া কিংবা ফাহাদের কানে আসেনা বিষয়টা এমন নয়। সব কথাই ওদের কানে আসে। এইসব রাগ প্রিয়া ফাহাদের ওপর ঝাড়ে। আর ফাহাদ মিষ্টি হেসে প্রতিবারই উত্তর দেয়,
“লোকের কথায় আমার কি এসে যায়? আমি তো তোমায় ভালোবাসি।”
প্রিয়া জানতো, খুব ভালো করেই জানতো ফাহাদকে বোঝানো ওর কাম্য নয়।
দেখতে দেখতে এভাবেই কেটে যায় ছয়টা মাস। এই ছয়টা মাসে প্রিয়ার এত অবহেলা পেয়েও ফাহাদের ভালোবাসা একটুও কমেনি। বরং দিনকে দিন ভালোবাসা চক্রবৃদ্ধি মুনাফা হারে বেড়েই চলেছে। মাঝে মাঝে ফাহাদ নিজেও বুঝেনা এমন কি কম আছে যে কারণে প্রিয়া আমায় ভালোবাসেনা। আর কেনোই বা ও কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনা!
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছে। ফাহাদও চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়াতেই কাঁচ ভেদ করে দেখতে পেলো প্রিয়া গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে। প্রিয়াকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে প্রিয়া কথা বলতে নারাজ। কিন্তু ঐদিকে ছেলেটাও কিছুতেই সরছে না। এমনকি প্রিয়ার হাত পর্যন্ত ধরে ফেলে। ফাহাদের মাথায় রক্ত উঠে যায়। এত্ত বড় সাহস ফাহাদের অফিসের সামনে দাঁড়িয়েই ফাহাদের ভালোবাসার মানুষটিকে বিরক্ত করা। ফাহাদ দ্রুত বেগে লিফ্টে ওঠে। আজ মনে হয় লিফ্টও স্লো চলছে। ফাহাদ যখন বের হলো প্রিয়া তখন ছেলেটার বাইকে বসেছে। ফাহাদ কিছুই বুঝতে পারলো না। মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে ফাহাদও পিছন পিছন ফলো করে ওদের। একটা বাড়ির সামনে বাইক থামতেই ফাহাদও গাড়ি থামায়। ফাহাদ দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগিয়ে যায়। ছেলেটার শার্টের কলার ধরে বলে,
“হাউ ডেয়ার ইউ ইডিয়ট।”
ফাহাদের চোখেমুখে রাগে আগুন ঝড়ছে মনে হচ্ছে। ঘটনায় আকস্মিকতায় ছেলেটা চমকে যায় আর সাথে প্রিয়াও। কারণ ছেলেটা আর কেউই নয়। প্রিয়ার ছোট ভাইয়া। প্রিয়া বিশ্বাসই করতে পারছেনা এটা ফাহাদ। ফাহাদের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে প্রিয়া রাগি কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি এখানে কেন? আর আপনার সাহস কি করে হয় ভাইয়ার কলার ধরার?”
এবার যেন ফাহাদ আকাশ থেকে পড়ে। কি করবে কিছুই আসছেনা মাথায়। এক পলকে শুধু প্রিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছেনা। কোনোমতে থতমত খেয়ে বললো,
“ক কে কে? তো..ত..তোমার ভাই?”
“হ্যাঁ আমার ভাই। কিন্তু আপনি এখানে কেন?”
ফাহাদ এবার প্রিয়ার ভাইয়ার কাছে হাত জোর করে বললো,
“প্লিজ ভাইয়া প্লিজ মাফ করে দিবেন। আমি আসলে একদম বুঝতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম কোনো ছেলে হয়তো ওকে বিরক্ত করছে। আর তাই মাথা ঠিক ছিলো না।”
ছোট ভাইয়া কিছু বলার আগেই ফাহাদ প্রিয়াকে বললো,
“তুমি তো বলোনি যে তোমার ভাইয়ারা ফিরে এসেছে? তোমার ভুলের জন্য আজ আমি কি একটা ভুল করে ফেললাম।”
“ভাইয়ার সাথে আমি যোগাযোগ করতে চাইনি। তাই ভাইয়া আজ অফিসের সামনে গিয়েছিল। তাছাড়া আমার সব কথা আপনাকে বলবো কেন? কে আপনি?”
এবার ছোট ভাইয়া বললো,
“ছেলেটা কে?”
“আমার অফিসের মালিক প্লাস বস।”
ছোট ভাইয়া মাথা চুলকে বললো,
“বস! তাহলে এত রিয়াক্টের কি হলো?”
“ভাইয়া উনি একটা সাইকো।”
ফাহাদ মুখটা কাচুমুচু করে বললো,
“শুধু শুধু ভাইয়ার সামনে আমার বদনাম করছো কেন?
ভাইয়া আপনি ওর কথা রাখেন, আগে আমায় বলেন ক্ষমা করেছেন?”
“আপনি ওর বস! আপনার দোষ, ক্ষমা দেখি কি করে!”
“আমাকে আপনি তুমি করেই বলেন। আর ওর বস শুধু আমি অফিসে বাহিরে তো….”
ফাহাদ পুরো কথা বলার আগে প্রিয়া বললো,
“বাহিরে উনি একটা সাইকো। ভেতরে চলো মা নাকি অপেক্ষা করছে?”
“আরে উনাকেও নিয়ে চল। বাড়ির সামনে এসে খালি মুখে চলে যাবে নাকি?”
“গরীবের ঘরের খাবার উনার মুখে উঠবে না।”
“সোজা কথায় বললেই পারো যে, আমি খেলে তোমাদের বাড়ির খাবার কমে যাবে। অযথাই আমার দোষ দিচ্ছো কেন?”
“আপনি প্রিয়ার কথা কানে নিয়েন না। আমার সাথে আসেন।”
“আমি না তুমি করে বলতে বললাম ভাইয়া?”
“আচ্ছা সে বলবোনি। এখন আসো।”
“না ভাইয়া। যেদিন প্রিয়া মন থেকে চাইবে সেদিনই ভেতরে যাবো। আজ আসি।”
ফাহাদ আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে আসলো। ফাহাদের এমন রিয়াক্ট, আচরণ সবই সন্দেহজনক লাগলো ছোট ভাইয়ার। কিন্তু এখন প্রিয়াকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করা যাবেনা। এমনিতেই প্রিয়ার রাগ ভাঙ্গাতে জীবন চলে যাবে তার ওপর যদি এসব কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে বোনকে চিরদিনের জন্যই হারাতে হবে।
.
.
প্রিয়াদের বাড়িতে উৎসব উৎসব একটা আমেজ এসে পড়েছে। তার কারণও আছে। বাড়িতে যে নতুন একটা পুচকু আসবে। প্রিয়ার বড় বোন লামিয়া প্রেগন্যান্ট। তাই বড়বোনকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসে। যদিও লামিয়ার স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কেউ প্রথমে রাজি ছিলো না। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে আনতে হয়েছে। কতদিন পর বোন বাড়িতে এসেছে। কিন্তু আসলে কি হবে! দুবোনের ঠুকরাঠুকরি লেগেই থাকে। প্রিয়ার নানু, খালামনি, কাজিনরাও এসেছে। দুই ভাইয়াও মাঝে মাঝে আসে। ভাইদের ওপর প্রিয়ার চাপা রাগ থাকলেও শুধুমাত্র মায়ের কথা ভেবে তা প্রকাশ করেনা। আগের মতই কথা বলে সবার সাথে। এরমধ্যেই ঘটে যায় আরেক অঘটন।সেদিন প্রিয়া অফিসে না গিয়ে বাড়িতে বসে বসে বোনের জন্য হরেক রকম আচার বানাচ্ছে। টেষ্ট করার জন্য ছোট্ট একটা বাটিতে করে একটুখানি আচার দেয় লামিয়াকে। লামিয়া আচার খেতে খেতে বললো,
“তোর বসটা কিন্তু হেব্বি দেখতে!”
প্রিয়া অবাক হয়ে বললো,
“তুই কি করে জানলি?”
“সবাই জানে আর আমি জানবো না?”
“সবাই কি জানে?”
“ন্যাকা! এখন কিছুই বুঝো না?”
“সিরিয়াসলি বুঝতে পারছিনা তুই কি বলছিস।”
“তোর বসের সাথে তোর কি চলে?”
“কেমন ধরণের কোশ্চেন এটা?”
“কেন কমন পড়েনি? নাকি বলবি না?”
“বলার মত হলে তো বলবো।”
“তোর বস ছোট ভাইয়াকে কি বলেছে জানিস?”
“কি?”
“সে তোকে ভালোবাসে।”
“কিহ্! এই ঠোঁট পাতলার পেটে কি কিচ্ছু থাকেনা? ডিরেক্ট ভাইয়াকে বললো?”
“পেটে পেটে রাখতে চাচ্ছিস কেন? আমরা জানলে কি সমস্যা?”
“এমন কিছুই নারে আপু।”
“ছেলে তো ভালোই। রাজি হয়ে যা।”
“আপু অন্তত তুই এটা বলিস না। আমার কোনো কিছুই তো তোর অজানা নয়।”
প্রিয়া চুলা নিভিয়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। লামিয়া মনে মনে বড় শ্বাস নিয়ে বলে,
“আমার বোনটাকে সুখ মিলিয়ে দাও আল্লাহ্।”
প্রিয়া চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে নিজের রুমে যায়। গিয়ে যা দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুণী একটা হার্টএটাক হয়ে যাবে প্রিয়ার। এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি প্রিয়া বুঝতেই পারছেনা। হা করে তাকিয়ে আছে। ফাহাদ পান ছেঁচে দিচ্ছে ওর নানীকে। সাথে রাজ্যের সব গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসে আছে। ফাহাদ একবার প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো। এমন একটা ভাব যেন প্রিয়াকে চিনেই না। ফাহাদের কথা শুনে নানী কখনো কখনো আবেগে আপ্লুত হয়ে যাচ্ছে। প্রিয়া কোমড়ে দুই হাত গুঁজে বললো,
“আপনি আমার বাড়িতে কেন? তাও আবার রুমে?”
ফাহাদ না চেনার ভান করে বললো,
“স্যরি? আমাকে বলছেন?”
“একদম ঢং করবেন না বলে দিলাম।”
“নানী কে এই মেয়ে? বউয়ের মত করে কেন কথা বলছে?”
নানী বললো,
“তুই ওকে চিনিস না? খুব ভালো রে ছেলেটা। ছোট নানুভাইর সাথে এসেছে। দেখেছিস কত আদর-যত্ন করছে আমার? ছেলেটার নানী নেই। নানীর ভালোবাসা কি জানেই না।”
বলেই নানী শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলো। সাথে ফাহাদও কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
“নানী তুমি প্লিজ মন খারাপ করো না। আমার এক নানী নেই তো কি হয়েছে? এইতো তুমি আছো আমার।”
দুইজনের কথাবার্তা শুনে প্রিয়া ঢের বুঝতে পারছে যে ফাহাদ খুব ভালো করে মালমসলা মাখিয়েছে। কি জিনিস রে বাবা! প্রিয়া নানীর কাছে গিয়ে বললো,
“ছোট ভাইয়া তাকে নিয়ে আসলো আর তুমি একজন অপরিচিত লোককে সোজা আমার রুমে নিয়ে আসলে?”
“এভাবে কেন বলছিস তুই? ছেলেটা কি চোর-ছেচ্চড় নাকি ডাকাত যে তোর ঘরের সব লুট করে নিয়ে যাবে। ওমন হলে ছোট নানুভাই কখনোই বাড়িতে আনতো না বুঝলি।”
“তা নয় নানু! ইনি আমার অফিসের বস।”
“কি? ফাহাদ তোর বস?”
“হ্যাঁ নানু হ্যাঁ।”
“তাহলে তোর তো আরো বেশি খাতির-যত্ন করা উচিত। যা যা তাড়াতাড়ি কিছু বানিয়ে আন।”
নানীর কথা শুনে প্রিয়ার ইচ্ছে করছে মাটির ভেতর ঢুকে যেতে। কিন্তু প্রিয়া এটাই বুঝতে পারছেনা যে ছোট ভাইয়াকে এমন কি যাদু করলো বস! প্রিয়া চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
“আমি পারবোনা।”
“তুই তো দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস রে।”
“থাক নানী ওকে কিছু বলো না। ছোট মানুষ তো বুঝেনা।”
প্রিয়ার একদম পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিলো। ছোট মানুষ বলা হচ্ছে এখন।
“তুমি বসো ফাহাদ। আমি ওর মাকে বলে আসি কিছু দেওয়ার জন্য।”
ফাহাদ নানীকে আটকায়নি। তার কারণ এটা নয় যে ফাহাদের ক্ষুধা লেগেছে। নানী গেলেই প্রিয়াকে একটু একা পাবে ভেবেই ফাহাদ চুপচাপ বসে থাকে। নানী চলে যেতেই ফাহাদ খপ করে প্রিয়ার হাত ধরে ফেলে। প্রিয়া দাঁত কটমট করে বললো,
“এটা কেমন অসভ্যতা? আমার বাড়িতে এসে আমার রুমে বসেই হাত ধরছেন?”
“আমি কি তোমার হাত ধরেছি নাকি? আমি তো আমার বউয়ের হাত ধরেছি।”
“ঐ কে আপনার বউ হ্যাঁ?”
“কেন তুমি!”
“স্বপ্নই দেখে যান সারাজীবন।”
“হুম দেখিতো। তোমাকে নিয়ে হাজারও স্বপ্ন দেখি। একদিন ইনশাআল্লাহ স্বপ্ন পূরণও করবো।”
“আপনি আমার বাড়িতে ঢুকলেন কি করে?”
“তোমার ভাইয়াকে হাত করে। এই শুনো তুমি আমায় কি ভাবো? তোমাকে পাওয়ার জন্য শুধু তোমার পিছনে ঘুরঘুর করে যাবো? অত বোকাও নই আমি। আর তাই তো তোমার পরিবারকে আগে হাত করেছি। সবাই রাজি। এখন শুধু বিয়ের আয়োজনটাই বাকি।”
প্রিয়ার মাথা রাগে যেন ফেঁটে পড়ছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
“এত্ত বড় সাহস ওদের! আমার মতামত ছাড়াই বিয়ে ঠিক করে? কার এত্ত বড় সাহস। কে দিয়েছে এই পারমিশন। তাকে তো আজ আমি দেখেই নিবো।”
ফাহাদ পেছন থেকে শক্ত করে প্রিয়ার হাত আঁকড়ে ধরে। প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
“শান্ত হও! এত অল্পতেই রেগে যাচ্ছো? কেউ রাজি হয়নি তোমার বাড়ির। সবাই বলেছে তুমি রাজি হলেই বাড়ির সকলে রাজি হবে। আদারওয়াইজ তারা তোমাকে কোনো প্রেশার দিবেনা বা ফোর্স করবে না। আমার ধৈর্যও এত কম নয়। তুমি যেদিন আমায় ভালোবাসবে সেদিনই আমরা বিয়ের ব্যাপারে আগাবো। তার আগে নয়। তবে আমি তোমার পিছুও ছাড়ছিনা। যতবার ফিরিয়ে দিবে ততবারই বলবো ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।”
.
.
আজ পৃথার জীবনে সবচেয়ে খুশির দিন। যাকে ভালোবাসে তার সাথেই আজ বিয়ে হবে পৃথার। প্রিয়া আজ সোনালি পাড়ের লাল জর্জেট একটা শাড়ি পড়েছে। তার সাথে মিলিয়ে হালকা মেকাপ। প্রিয়ার একদম ইচ্ছে ছিলো না এভাবে সাজার। বড় বোনের জোড়াজুড়িতে এভাবে সাজতে বাধ্য হয়েছে। পৃথার বিয়ের কারণে একদিকে প্রিয়া খুশি হলেও আবার মনও খারাপ হয়ে যায়। কারণ আজকের পর থেকেই পৃথা সম্পূর্ণ ব্যস্ত হয়ে পড়বে। অফিসে গিয়েই কারো সাথে আর গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসা হবেনা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ক্যান্টিনে বসে কফির আড্ডা দেওয়া হবেনা। ভাবতেই প্রিয়ার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। পাশ থেকেই ফাহাদ এসে বলে,
“মন খারাপ?”
“না।”
“মিথ্যা বলছো কেন? আমি তো স্পষ্ট বুঝতে পারছি তোমার মন খারাপ।”
প্রিয়া মনে মনে বললো,
“এই লোকটা কি মন পড়তে পারে নাকি?”
প্রিয়াকে চুপ থাকতে দেখে ফাহাদ আবার বললো,
“পৃথার সাথে দেখা করেছো?”
“না।”
“কেন?”
“ওকে দেখলেই আমার কষ্ট লাগবে।”
“তাই বলে দেখবে না নাকি? পৃথা কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। চলো।”
ফাহাদ প্রিয়ার হাত ধরে উপরের রুমে নিয়ে যায়। প্রিয়া কিছুই বললো না। মনটা যে আজ বেশিই বিষণ্ণ। একটা রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো প্রিয়াকে নিয়ে। প্রিয়া ওখান থেকেই দেখলো, পৃথাকে কি অপরূপ সুন্দর লাগছে। শ্যাম বর্ণের এই মেয়েটি প্রচুর মায়াবী। ইচ্ছে করছে গালে চুমু দিয়ে বলতে সারাজীবন সুখে থাক আমার মায়াবী। পরক্ষণেই খেয়াল করলো প্রতিদিনের তুলনায় পৃথা আজ অনেক বেশিই খুশি। চোখেমুখে হাসির ঝলক। ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দটাই হয়তো অনেক। কিজানি! প্রিয়ার জানা নেই এর উত্তর। পৃথা এতক্ষণ অন্যদের সাথে কথা বলছিল তাই প্রিয়াকে খেয়াল করেনি। সামনে প্রিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই পৃথা দৌঁড়ে এসে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে। এবার আর প্রিয়া নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনা। কেঁদে দেয়। সাথে পৃথাও কাঁদছে। পরিচয়টা হয়তো অল্প সময়ের কিন্তু ভালোবাসার গভীরতা অনেক। ফাহাদের নিজেরও অনেক খারাপ লাগছে। তাই পরিস্থিতি সামলাতে বললো,সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
“এই এই কি করছো পৃথা? প্রিয়ার ফাঁদে পা দিয়ো না একদম। ও তোমাকে কাঁদাচ্ছে কেন জানো? যাতে তোমার মেকাপ চোখের পানিতে নষ্ট হয়ে যায় আর তোমাকে দেখতে বিচ্ছিরি লাগে।”
প্রিয়া দুম করে ফাহাদের পিঠে কিল বসিয়ে দেয়।
“আমার পৃথা কি মেকাপ সুন্দরী নাকি? ওকে মেকাপ ছাড়াও অনেক অনেক সুন্দর লাগে।”
সবাই ওদের কাণ্ড দেখে হেসে দেয়। প্রিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
“তুই অনেক স্বার্থপররে পৃথা। আমাকে একা করে তুই বিয়ে করে নিচ্ছিস”
পৃথা উত্তর দেওয়ার আগে ফাহাদ বললো,
“আরে এই জন্য কষ্ট পাওয়ার কি আছে? চলো তুমি আর আমিও পৃথার সাথে বিয়ে করে নিই। তুমি তো লাল শাড়ি পড়েই আছো আর আমিও অফ-হোয়াইট কালার পাঞ্জাবি পড়েছি। হয়েই তো গেছে বিয়ের সাজ।”
“আমি মোটেও এই সাজে বিয়ে করবো না! আমার অন্যরকম ইচ্ছে আছে।”
“তাই? শুনি সেটা কি?”
“আপনাকে বলবো কেন? আমি কি আপনাকে বিয়ে করবো নাকি?”
“তো কাকে করবে?”
“আমি বিয়েই করবোনা।”…

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-১২

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১২
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়ার মাথা ফাহাদের কোলে রেখে সমানে ডাকছে প্রিয়াকে। কিন্তু প্রিয়ার কোনো হুশ নেই। আলতো করে গালে চাপড় দিচ্ছে আর বলছে,
“এই প্রিয়া কি হলো তোমার? চোখ খোলো। প্রিয়া, প্রিয়া!”
চোখেমুখে পানির ছিটাও দিলো কিন্তু কোনো কাজ হলো না। ভয়ে ফাহাদের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ফোনটা নিয়ে পৃথাকে কল দেয়,
“হ্যালো”
“হ্যাঁ স্যার বলুন।”
“দ্রুত আমার রুমে আসো।”
বলেই ফাহাদ কল কেটে দিলো। পৃথাও সাথে সাথে চলে আসলো। এই অবস্থা দেখে পৃথা বললো,
“প্রিয়ার কি হয়েছে?”
“জানিনা। হুট করেই সেন্সলেস হয়ে গেলো।”
পৃথা এবার চোখে-মুখে পানি দিলো। বেশকিছুক্ষণ পর প্রিয়ার জ্ঞান ফিরে। প্রিয়া তখনও ফাহাদের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ফাহাদের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিবে সেই শক্তিটুকুও নেই। প্রিয়ার জ্ঞান ফিরতেই ফাহাদ অস্থির হয়ে বললো,
“এই কি হয়েছিল তোমার হঠাৎ করে? জানো কত টেনশন হচ্ছিলো!”
প্রিয়া উত্তর না দিয়ে বললো,
“বাসায় যাবো আমি।”
ফাহাদও আর কিছু বললো না। পৃথার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি তুমি ওকে বাড়িতে দিয়ে আসো।”
“জ্বী স্যার।”
ফাহাদের কথামত পৃথা প্রিয়াকে নিয়ে বাড়িতে গেলো। প্রিয়ার শরীর খুব দূর্বল লাগছিল তাই পৃথা ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো। দরজা খুলে দেয় প্রিয়ার মা। মা ভয় পেয়ে বললো,
“কি হয়েছে ওর? এভাবে নিয়ে আসছো কেন?”
“আন্টি শান্ত হোন। তেমন কিছু হয়নি। সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল।”
পৃথার সাথে মাও প্রিয়াকে ধরে নিয়ে বিছানায় শোয়ায়। মা প্রায় কান্না করে দিবে এমন ভাব। কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
“দিনদিন মেয়েটার ওপর দিয়ে যা যাচ্ছে। একটার পর একটা সমস্যা লেগেই আছে। আল্লাহ্ জানে আমার মেয়ে কবে একটু সুখের দেখা পাবে।”
“আন্টি প্লিজ কাঁদবেন না। রেস্ট নিলেই সুস্থ হয়ে যাবে।”
“কি করবো বলো মা! মা হয়ে মেয়ের এত কষ্ট আর সহ্য হয়না।”
“আমি বুঝতে পারছি আন্টি।”
কথা বলার ফাঁকে ফাহাদ পৃথাকে কল দিলো।
“হ্যালো পৃথা।”
“জ্বী স্যার বলুন।”
“বাসায় গিয়েছো?”
“হ্যাঁ।”
“প্রিয়া কোথায়?”
“শুয়ে আছে।”
“আচ্ছা ওকে রেস্ট নিতে বলো। আর বলে দিয়ো যে কয়দিন পর থেকে যেন অফিসে আসে।”
“ওকে স্যার।”
“রাখছি।”
মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে পৃথা বিদায় নিলো। আসার আগে ফাহাদের বলা কথাগুলোও বলে আসলো।

সন্ধ্যার দিকে ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়া। মা কফি নিয়ে এসে বললো,
“ধর কফি খা।”
“রাখো।”
“মন খারাপ?”
“না।”
“তাহলে?”
“কিছুনা।”
“কি লুকাচ্ছিস?”
“কি লুকাবো?”
“সেটা তো তুই জানিস।”
“কিছুই লুকাচ্ছি না।”
মা প্রিয়ার দুই বাহু ধরে বললো,
“আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতো।”
“এভাবে ফোর্স করো না। ভালো লাগেনা।”
“কি হয়েছে বল আমায়।”
“কি বলবো বলো তো? যেইসব অতীত থেকে আমি দূরে থাকতে চাই সেগুলোই আমাকে বারবার তাড়া করে।”
“আবার মৃন্ময়ের সাথে দেখা হয়েছে?”
“না।”
“তবে?”
“বস আজ আমায় ভালোবাসার কথা বলেছে।”
“কিহ্!”
“হ্যাঁ। ভালো লাগে না আর। আর কিছু জিজ্ঞেস করিয়ো না। আমি একটু একা থাকবো। যাও তুমি।”
মা আর কিছু বললো না। চলে গেলো। মা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ফাহাদ ফোন দেয়। প্রিয়ার একদম ফোন রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। তবুও ফোনটা রিসিভড করলো। ওপাশ থেকে ফাহাদ বললো,
“এখন কেমন আছো?”
“জ্বী আলহামদুলিল্লাহ্‌।”
“কি হয়েছিল তোমার? হুট করে সেন্সলেস হয়ে গেলে কেন?”
“জানিনা।”
“তোমার কি মন খারাপ?”
“না।”
“আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার মন খারাপ। আমি পরে ফোন দিবো কেমন।”
“হুম।”
ফাহাদ ফোনটা রেখে দিলো। এই মেয়েটাকে বুঝা বড্ড কঠিন। আনমনে হাজারও কথা ভাবছিল তখন ফাহাদের মা রুমে আসে।
“কি করছিস?”
“কিছু না মা।”
“কিছু কি ভাবছিস?”
“হুম। তবে তেমন কিছুনা।”
“নিশ্চয় প্রিয়াকে নিয়ে ভাবছিস?”
ফাহাদ হাসলো।
“জানোই তো।”
“ভালোবাসার কথা জানিয়েছিস?”
“আজ তো জানালাম। কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনি।”
“বলার সাথে সাথে কি হ্যাঁ বলে দিবে নাকি? লেগে থাক আঠার মত। ভালো না বেসে যাবে কোথায়?”
ফাহাদ ওর মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমার লক্ষী মা!”
.
পরেরদিন ফাহাদ অফিসে গিয়ে প্রিয়াকে দেখতে পেলো। প্রিয়াকে দেখেই ওর মাথা গরম হয়ে গেলো। মনে মনে বললো,
“এতবার করে বললাম রেস্ট নিতে। তা না করে অফিসে এসে পড়েছে। কি এত কাজ মহারাণীর!”
ফাহাদের রুমে প্রিয়ার ডাক পড়লো। হিমি বললো,
“আসতে না আসতে তোর ডাক পড়ে গেছে। যা তাড়াতাড়ি, নয়তো দেখবি তোকে দেখতে না পাওয়ার পিপাসায় গলা শুকিয়েই মারা যাবে।”
“সবসময়ই শুধু আজেবাজে কথা।”
ফাহাদ প্রিয়ার রুমে গেলো।
“মে আই কাম ইন স্যার?”
“ইয়েস।”
প্রিয়া ভেতরে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদ হাতে একটা কলম নিয়ে ঘুরাচ্ছে আর প্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ করছে। ফাহাদ কিছু বলছেনা দেখে প্রিয়াই বললো,
“আমায় ডেকেছিলেন?”
“কি এত কাজ তোমার অফিসে?”
“মানে?”
“আমি তোমাকে রেস্টে থাকতে বলেছিলাম না? তাহলে অফিসে কেন আসছো?”
“আমার কোনো রেস্টের প্রয়োজন নেই। আমি একদম ঠিক আছি।”
ফাহাদ টেবিলের ওপর হাত দিয়ে বাড়ি দিলো। চেয়ার ছেড়ে প্রিয়ার কাছে এগিয়ে আসতেই প্রিয়া দুই পা পিছিয়ে গেলো।
“স্যার আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন যে আমি আপনার অফিসের সামান্য একজন ওয়ার্কার। আর আপনি আমার বস। হুটহাট এভাবে কাছে আসাটা মানায় না। আদারওয়াইজ আমি তো আপনার ওয়াইফ নই।”
ফাহাদ ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুঁটিয়ে বললো,
“বউ হবে বুঝি?”
প্রিয়া সিরিয়াস মুডে বললো,
“কোনো ইচ্ছে নেই আমার। আর একটা কথা, আপনি আমার বস তাই আমাকে ডাকতেই পারেন তবে অবশ্যই কাজের জন্য ডাকবেন। অযথাই অকারণে ডাকবেন না প্লিজ। এতে আমার ওপর ইফেক্ট পড়ে। নানান জন নানান কথা বলে।”
এতটুকু বলেই প্রিয়া চলে যাওয়া ধরলো ফাহাদ প্রিয়ার হাত ধরে বলল,
“তুমি কি আমায় ইগনোর করছো?”
ফাহাদের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে প্রিয়া বললো,
“আপনি কি ইগনোর করার মত কেউ? ইগনোর তাকেই করা যায় যার সাথে এমন কোনো রিলেশন থাকে যাতে তাকে ইগনোর করা যায়। আপনার সাথে আমার এমন কোনো রিলেশন নেই।”
প্রিয়া চলে গেলো। হ্যাঁ ফাহাদকে ইগনোর করা শুরু হয় এখান থেকেই। বেশি কিছু ঘটার আগে এখন থেকেই সবকিছু এমনকি ফাহাদকে এড়িয়ে চলতে হবে। অন্যান্য অফিসে জবের এপ্লাইও করেছে অলরেডি। জব হলেই এখান থেকে, ফাহাদের জীবন থেকে সরে যাবে প্রিয়া। মিছেমিছি ভালোবাসা নামক কোনো বন্ধনো আটকাতে চায় না প্রিয়া।

এভাবে প্রতিনিয়তই প্রিয়া ফাহাদকে এড়িয়ে চলছে। ফাহাদ যতই প্রিয়ার কাছে যেতে চাইছে, প্রিয়া ততই দূরত্ব বজায় রাখছে। ফাহাদও মনে মনে প্রতিজ্ঞা নেয়, “যত পারো ইগনোর করো। আমিও পিছু ছাড়বো না। দেখবো তোমার ইগনোর করার ধৈর্য কত আর আমার ভালোবাসার ধৈর্য কত!”
.
.
অফিস থেকে বাড়ি এতটুকুতেই প্রিয়া নিজেকে আটকে রেখেছে। কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথেই কথা বলছেনা। অনেক জোড়াজুড়ির পর পৃথার সাথে শপিং-এ যেতে রাজি হয় প্রিয়া। পৃথা শপিং করছে আর প্রিয়া ঘুরে ঘুরে সব দেখছে চুপচাপ। আজ ততটাও ভিড় নেই শপিংমলে। আবার এত কমও নয়। আচমকা কেউ প্রিয়ার হাত ধরে টান দেয়। প্রিয়া পেছন ঘুরে দাঁড়াতেই থমকে যায়। কি করবে বা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। প্রিয়ার সামনে মৃন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়াকে অবাক করে দিয়ে মৃন্ময় প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে। যেটার জন্য প্রিয়া একদমই প্রস্তুত ছিলো না। প্রিয়া এক প্রকার জোর করেই নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে অনেকেই উৎসুক চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে মৃন্ময়কে কিছু বলা মানেই সিনক্রিয়েট করা। আর একটু চেঁচামেচি হলেই মৃন্ময়ের আস্ত বাড়িতে ফেরা লাগবেনা যেটা প্রিয়া একদমই চাচ্ছিলো না। তাই বেশি কিছু না বলে শুধু বললো,
“আপনি লেকে যান আমি আসছি।”
“না, না একদম না। আবার আমার থেকে লুকিয়ে যাওয়ার জন্য? এটা একদম হবেনা। গেলে আমার সাথেই যেতে হবে।”
প্রিয়া উপায় না দেখে পৃথাকে নিয়ে মৃন্ময়ের গাড়িতে করে লেকে গেলো। প্রিয়া আর মৃন্ময়ের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে পৃথা। প্রিয়া কিছু বলার আগেই মৃন্ময় বললো,
“জানো তোমাকে কত কষ্ট করে খুঁজে পেয়েছি। সেদিন কেন আমার থেকে পালিয়ে গেলে? আমার ওপর রাগ করে? আমি জানি, আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ।”
বলতে বলতেই মৃন্ময় প্রিয়ার পা পেঁচিয়ে ধরে। প্রিয়া মৃন্ময়কে ধরে দাঁড় করায়। না চাইতেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। উহু যেকোনো হাসি নয় এটা। এটা তাচ্ছিল্যর হাসি।
“ভাগ্য মানুষকে কোথায় এনে দাঁড় করায় তাই না? যেদিন আপনি আমাকে ছেড়ে যান সেদিনও ঠিক একইভাবে আমার পা ধরে মাফ চেয়েছিলেন। কিন্তু পার্থক্য এটাই যে, সেদিন মাফ চেয়েছিলেন আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য। আর আজ মাফ চাইছেন ফিরে আসার জন্য।”
“আই এম স্যরি প্রিয়া।”
“আমাকে আপনার কি মনে হয় বলেন তো? পুতুল? যেভাবে নাচাবেন সেভাবেই নাচবো?”
“না প্রিয়া। আমি কি করতাম বলো? রিমির কান্নাকাটি আমি তখন সহ্য করতে পারিনি। তাই আবেগে পড়ে ভুলটা করে ফেলেছি।”
“আপনার এই ভুলটা যে আমার জীবনটা তছনছ করার জন্য যথেষ্ট ছিল সেটা কি আপনি জানেন? সে যাই হোক, নিজের ভালোবাসার কাছে গিয়েছেন ভালো কথা। এখন কেন এমন হন্যে হয়ে খুঁজছেন আমায়?”
“আমি আমার ভু্লটা বুঝতে পেরেছি। আমি তোমায় ভালোবাসি।”
“হাহ্! হাসালেন। আপনি কি ভালোবাসা কি সত্যিই জানেন? তখন আপনার মনে হয়েছিল রিমিকে ঠকাতে পারবেন না আর এখন বলছেন আমায় ভালোবাসেন? আপনি যদি তখন একটাবার সময় নিয়ে ভাবতেন তাহলে হয়তো এইদিনটা আমাদের দেখতে হতো না। রিমির সাথে যখন আপনার ব্রেকাপ হয় তখনও একবার উচিত ছিল নিজের একটু সময় নেওয়া এবং রিমিকে সময় দেওয়া। এরপর বিয়ের ব্যাপারে আগানো উচিত ছিল। কিন্তু আপনি সেটা করেননি। এমনকি আমায় দেখার পরও আপনি আমার প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেন। পরমুহূর্তে রিমি ফিরে আসায়,সেটা আবার ভ্যানিশ হয়ে যায়। রিমি যখন ব্যাক করলো, তখন যদি ঠান্ডা মাথায় ভাবতেন। একবার আমায় জানাতেন তাহলেও হতো। কিন্তু আপনি এমন কিছুই করেননি। সবকিছু আপনি এলোমেলো করে দিয়েছেন।”
“আমার মাফ চাওয়ার মুখ নেই। তবুও বলবো একটাবার মাফ করো। ভুল তো মানুষই করে। ভালোবেসে না হয় ভুলটা মাফ করে দাও।”
“সেই ভুলের ক্ষমা হয় যেটা অনিচ্ছাকৃত হয়। ইচ্ছাকৃত ভুলের কোনো মাফ হয়না। সেদিন আপনার অনেক কিছু করার ছিল কিন্তু আপনি কিচ্ছু করেননি। নিজ স্বার্থে আমায় ঠকিয়ে গিয়েছেন।”
“আমি জানি তুমি আমায় এখনো ভালোবাসো।”
“আপনি ভুল জানেন। আমি আপনাকে কখনোই ভালোবাসিনি।”
“তাহলে বিয়ের ব্যাপারে?”
“হ্যাঁ বিয়ের ব্যাপারে এগিয়েছিলাম। যেকোনো সম্পর্ক গড়ার আগে সবচেয়ে বেশি কোন জিনিসটা দরকার জানেন? বিশ্বাস! আমি তো কাউকে বিশ্বাসই করিনা। কিন্তু আপনাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম। আপনি আমার চোখে আঙ্গু্ল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, আপনি আমার বিশ্বাসের যোগ্য নন। সেখানে ভালোবাসা তো অনেক দূরের কথা।”
“প্রিয়া প্লিজ….”
“কোনো কিছু বলেই কোনো লাভ হবেনা। জানিনা আপনার সাথে আবার রিমির কি হয়েছে। তবুও বলছি যাই হোক মিটিয়ে নিন। জানেন তো,একটা কাঁচের বা মাটির জিনিস ভেঙ্গে গেলে সেটা কখনো জোড়া লাগেনা। আর যদিও জোড়া লাগে তাহলে সেটার গায়ে দাগ থেকে যায়। আপনার আর রিমির ব্রেকাপের পর একটা দূরত্ব এসে গেছে মাঝখানে যে কারণে ভাঙ্গা কাঁচ বা মাটির বস্তুর গায়ের দাগের ন্যায় আপনাদের কারো না কারো অনীহা এসে পড়েছে। আবেগের বশে আর কোনো ভুল না করে ঠান্ডা মাথায় এবার ভাবেন। সময় নিন। আমি মনে করি রিমির সাথেই আপনার জীবন জড়ানো উচিত। আশা করি কারণটাও আপনি জানেন। আর হ্যাঁ, আপনার আর আমার সম্পর্ক কখনোই আর হওয়া সম্ভব নয়। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। তাই দয়া করে আমায় আর বিরক্ত করবেন না। ভালো থাকবেন।”
প্রিয়া আর কিছু বললো না। পৃথাকে নিয়ে ওখান থেকে চলে আসে। মৃন্ময়ের চোখে পানি টলমল করছিলো। যেকোনো মুহুর্তেই পানিগুলো উপচে পড়বে। মৃন্ময় এখন উপলব্ধি করতে পারছে, সেদিন অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে যার ফলস্বরূপ প্রিয়াকে হারাতে হলো। না পাওয়ার কষ্ট দারুণ কিন্তু পেয়েও হারানোর কষ্ট নিদারুণ। যেটা সহ্য করার ক্ষমতা খুব কম মানুষেরই থাকে।

প্রিয়া কাউকে ভালোবাসেনা। কেন জানি মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গেছে। তবে ভালোই হয়েছে। মৃন্ময় অন্তত নিজের মনকে এটা বলে বোঝাতে পারবে যে, প্রিয়া এখন অন্য কারো। কিছু কিছু ভালোলাগা, ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়। যখন মানুষটি জীবনে থাকে তখন তার মূল্য কেউই দিতে পারিনা। কিন্তু যখন মানুষটা দূরে সরে যায়, হারিয়ে যায় তখনই আমরা বুঝতে পারি সে কি আর কতটা ছিল আমাদের জীবনে। তখন বুকের এই শূন্য হাহারগুলো নিজেকেই বয়ে বেড়াতে হয়।
সেদিনের পরই মৃন্ময় বাংলাদেশ থেকে চলে যায় ব্যাংকক। যে দেশে ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়েও নিজের দোষে হারাতে হলো সে দেশে থাকাটা বড্ড কষ্টের। তাছাড়া এখানে থাকলে বেহায়া মনটা বারবার চাইবে প্রিয়ার কাছে যেতে। যতই প্রিয়াকে দেখবে ততই কষ্ট পাবে। যদি কখনো নিজের মনকে আটকাতে পারে তবেই বাংলাদেশে ফিরে আসবে মৃন্ময়।
মৃন্ময় প্লেনে বসে নীলচে আকাশে সাদা সাদা মেঘগুলো দেখছিলো। সাথে এক বুক হাহাকার। প্রিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো….

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-১১

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১১
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
আজ সবাই ট্যুর থেকে বাসায় ফিরছে। রাতের জার্নি হওয়ায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। পৃথা ফোনে তখনও কথা বলছিল। সারাদিন কেমন ঘুরেছে কেমন কেটেছে ট্যুর সেগুলো বলছিল পৃথার ভালোবাসার মানুষ আকাশকে। ফাহাদ ফিসফিস করে বললো,
“পৃথা তুমি কি আমার সিটে আসবে?”
পৃথা ফোনটা একটু দূরে সরিয়ে বললো,
“কেন স্যার?”
“ইয়ে…মানে!”
পৃথা ফাহাদের ইয়ে মানের ভাষা বুঝে গেছে। ফাহাদ যে প্রিয়ার সাথে বসার জন্য পৃথাকে নিজের সিটে যেতে বলেছে সেটা পৃথা ভালোই বুঝেছে। তবুও একটু মজা নেওয়ার জন্য বললো,
“কিন্তু স্যার, প্রিয়া তো আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। আমি গেলে তো ও পড়ে যাবে।”
“আরে না, না পড়বে কেন? আমি তোমার সিটে যাবো আর তুমি আমার সিটে। এক কথায় যাকে বলে অদল-বদল।”
পৃথা হাসলো। বললো,
“ঠিক আছে।”
পৃথা খুব সাবধানে প্রিয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। ফাহাদ পৃথার জায়গায় এসে বসলো। প্রিয়া ঘুমের ঘোরে মাথাটা ফাহাদের কাঁধে রাখলো। ফাহাদ মুচকি হাসলো। মনে মনে বললো,
“সারাজীবন যদি এভাবেই পাশে পাই তোমায়, তাহলে এই দুনিয়ার কাছে আমার আর চাওয়ার কিছু নেই।”
প্রিয়া শুধু ফাহাদের কাঁধে মাথাই রাখলো না বরং ফাহাদের বাম হাতটা পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরলো যেমনটা পৃথাকে ধরেছিলো। ফাহাদ ফিসফিসিয়ে বললো,
“তোমার কোলবালিশটা অনেক লাকি। কবে যে কোলবালিশের জায়গায় আমি থাকবো।”
বলেই হাসলো ফাহাদ। প্রিয়া তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ফাহাদ পকেট থেকে ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। বেশ কয়েকটা ছবি তোলার পর গ্যালারিতে গিয়ে ছবিগুলো দেখছে আর বলছে,
“ইশ! কি লাগছে। মনে হচ্ছে স্বামী-স্ত্রী হানিমুনে যাচ্ছি।”
ছবিগুলোর ওপর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো ফাহাদ। ছবির দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাস্তবে তো তোমায় এভাবে ছুঁয়ে দেওয়ার অধিকার এখনো পাইনি তাই ছবিতেই দিলাম। যখন অধিকার পাবো তখন চুমু দিতে দিতেই বিরক্ত করে ফেলবো তোমায়।”
ওদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ভোর হয়ে যায়। গাড়ি পৌঁছানোর আগেই ফাহাদ ওখান থেকে সরে গিয়ে পৃথাকে বসিয়ে দেয় আবার। প্রিয়া ঘুম থেকে উঠেই আড়মোড়া ভাঙ্গে। পৃথার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয়। উত্তরে পৃথাও হাসে। পাশের সিট থেকেই ফাহাদ সেটা খেয়াল করে। নিজের সিট ছেড়ে ওদের সিটের সামনে এসে পৃথাকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
“বুঝলে পৃথা তোমার,আমার ডায়াবেটিস হতে বেশি সময় লাগবে না।”
ফাহাদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না পৃথা আর প্রিয়া। উৎসুক দৃষ্টিতে দুজনই ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাহাদ বললো,
“কি বুঝলে না?”
পৃথা বললো,
“না।”
“সকাল সকাল তোমার ফ্রেন্ড যেই মিষ্টি হাসি দিলো তাতে তোমার ডায়াবেটিস না হলেও আমার হয়ে যাবে।”
পৃথা এবার হা হা করে হেসে দিলো। প্রিয়া লজ্জা পেলেও সেটা প্রকাশ না করে চুপ করে রইলো। ফাহাদ আবার বললো,
“জানো পৃথা এমন মিষ্টি হাসি দেখলে কি করতে ইচ্ছে করে?”
“কি?”
“ইচ্ছে করে তোমার বান্ধবীকে টুপ করে মিষ্টির মত খেয়ে ফেলি।”
এবার পৃথা একটু লজ্জা পেলো। প্রিয়া চোখমুখ কুঁচকে বললো,
“নির্লজ্জ!”
ফাহাদ আবারও ডান হাত বুকের বাম পাশে রেখে বললো,
“দেখেছো পৃথা দেখেছো তোমার বান্ধবী কিভাবে আমাকে তার প্রেমে ফেলে? এভাবে নির্লজ্জ বললে যে আমি প্রেমে পড়ে যাবো সেটা জেনেও বারবার বলে। কেন বলে সেটা আমি বুঝিনা ভেবেছো?”
প্রিয়া উত্তর দিলো,
“আপনি কচু বুঝেন। আর আপনি সবসময় এমন মজা করেন কেন বলেন তো?”
“বারে! আমি কখন মজা করলাম?”
“কখন না করেন? বেশ কয়েকদিন ধরেই দেখছি রাগের বদলে এখন কেমন কেমন জানি করেন।”
ফাহাদ চোখ দুইটা বড় বড় করে বললো,
“ছিঃ ছিঃ কি বলো এসব! প্লিজ এসব বলো না। আমার হবু বউ জানলে আমায় খুন করে ফেলবে।”
প্রিয়া দাঁত কটমট করে বললো,
“আমি কি কিছু বলেছি?”
ফাহাদ চোখ টিপ দিয়ে বললো,
“কিছু বলতে চাও বুঝি?”
“মোটেও না।”
“আরে বলো, বলো। আমি কিছু মনে করবো না। আমরা আমরাই তো!”
“আমরা আমরাই কি হ্যাঁ? আপনি আমার বস আর আমি আপনার কর্মচারী। অনেক তফাৎ আমাদের মধ্যে।”
“ওহ আচ্ছা। তার মানে তুমি এই সম্পর্ককে নতুন রূপ দিতে চাইছো?”
“এমন কখন বললাম আমি?”
“ওমা বলতে হবে কেন? আমি কি বুঝিনা? তাছাড়া মেয়েদের যে বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না সেটা তো আমি জানিই।”
“আপনি একটু বেশিই জানেন।”
“কম জানলে বউকে কব্জা করবো কিভাবে?”
“সেটা আমি কি জানি।”
“তুমি জানো না বলছো?”
“না, জানিনা।”
“কেন জানোনা?”
“উফফ! বড্ড বেশি প্রশ্ন করেন আপনি। এভাবে জ্বালাচ্ছেন কেন বলেন তো?”
“বউকে না জ্বালালে কাকে জ্বালাবো?”
“কিহ্?”
“না মানে, বউকে কিভাবে জ্বালাবো সেটার প্র্যাকটিস করছি আরকি!”
“পাগল।”
“সে তো তোমারই জন্য আমার পরী।”
“মানে কি?”
“কথায় কথায় এত মানে কি মানে কি করো কেন হ্যাঁ? তোমায় বলেছি ভেবেছো? তোমায় কেন বলবো? আমি তো আমার পরীর জন্য পাগল।”
“আমি কখন বললাম আপনি আমার জন্য পাগল?”
“তুমি বললেই হবো নাকি। তুমি আমায় পাবে আমার মন পাবেনা বুঝছো! আমার মন তো পরী সেদিনই নিয়ে নিয়েছে।”
“উফফ! আল্লাহ্ বাঁচাও আমায়।”
“আমায় তোমার করে নাও বেঁচে যাবে।”
“এই আপনার সমস্যা কি বলেন তো? ভালোটালো বাসেন নাকি? এমন কিছু হলে খবরদার বলে দিচ্ছি, একদম এসব ভাববেন না।”
“হুম বাসিতো! আমার পরীকে ভালোবাসি। তুমি না সেদিন বললে, দূর থেকে কোনো মেয়েকে ফলো করলে নাকি মেয়েটা বুঝতে পারে যে কোনো ছেলে তাকে ফলো করছে। তাহলে এত কাছ থেকে দেখে তোমার কি মনে হয় আমায়?”
“আমার মনে হয় আপনি একটা উন্মাদ, পাগল। আর আপনার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।”
বলেই প্রিয়া বাস থেকে নেমে যায়। ফাহাদ মুচকি হেসো বলে,
“এই পাগলের ট্রিটমেন্ট করতে পারলে একমাত্র তুমিই পারবে প্রিয়া।”
পৃথা বললো,
“স্যার বেশি সময় না নিয়ে এবার তো ভালোবাসার কথাটা ওকে জানিয়ে দেন। নয়তো দেখবেন অন্য কারো হয়ে যাবে।”
“চুপ! প্রিয়া শুধু আমার। আমার ভালোবাসা। ভালোবাসার কথা বলবো তো অবশ্যই। আগে ইশারায় তো বুঝাই, দেখি ম্যামের কি রিয়াকশন।”
“যদি রিজেক্ট করে দেয়?”
“তাহলে আঠার মত লেগে থাকবো। ওকে আমি ছাড়ছি না। তাছাড়া আমি কি রিজেক্ট করার মত ছেলে?”
“তা নয়। কিন্তু ও যদি অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকে তাহলে?”
“প্রিয়া অন্য কাউকে ভালোবাসে না।”
“কি করে জানলেন?”
“কাউকে ভালোবাসলে অবশ্যই তোমায় বলতো। আর তুমিও আমায় জানাতে।”
“এমনও তো হতে পারে প্রিয়া কাউকে ভালোবাসে কিন্তু আমায় বলেনি। বা আমায় বলেছে ঠিকই কিন্তু আমি আপনাকে বলিনি।”
“দুটোর একটাও না।”
“কেন এমন মনে হলো?”
“তুমি কাউকে ভালোবাসো?”
“হ্যাঁ।”
“প্রিয়া জানে?”
“হ্যাঁ।”
“তুমি জানিয়েছো তাই না?”
“হুম।”
“কেন বলেছো?”
“কারণ ও আমায় সব শেয়ার করে। আর আমিও করি। তাছাড়া খুব ভালোবাসি ওকে। প্রিয়াও ভালোবাসে আমায়। বেষ্টফ্রেন্ডের থেকে কোনো অংশে কম নই আমরা।”
“আশা করি তোমার প্রথম কথার উত্তর তুমি পেয়ে গিয়েছো। আর দ্বিতীয়ত তুমি আমায় নাই বলতে পারো তাই না? যদি প্রিয়া অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকে আর সেটা তুমি জানতে তাহলে তুমি কি চাইতে না প্রিয়া তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে সুখী হোক?”
“অবশ্যই।”
ফাহাদ হাসলো। বললো,
“তাহলে যেদিন আমি তোমার সাহায্য চাইলাম সেদিনই তুমি জানিয়ে দিতে প্রিয়া কাউকে ভালোবাসে। আশা করি এবার দ্বিতীয় উত্তরও পেয়ে গিয়েছো।”
“কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা।”
“একটা কথা জানো পৃথা, কাউকে ভালোবাসার আগে তাকে বিশ্বাস করতে হয়। জানতে হয়, বুঝতে হয়। আর আমি সেটাই আগে রপ্ত করেছি।”
“আপনি সত্যিই অসাধারণ স্যার। আমি দোয়া করি আপনি আপনার ভালোবাসাকে পান আর প্রিয়া পাক সত্যিকারের একজন ভালোবাসার মানুষ।”
.
.
মিটিং শেষ করে বসে আছে মৃন্ময়। কাঁচ ভেদ করে বাহিরের পরিষ্কার আকাশ দেখছে চুপচাপ। দুইজন দুইপ্রান্তে। কিন্তু মনটা এখনো বাংলাদেশেই। ফোনের ওয়ালপেপারে প্রিয়ার ছবি দেখছিলো। অনেকদিন ফেসবুকে যাওয়া হয়না মৃন্ময়ের। তাই একটু ফেসবুকে গেলো। ম্যাসেঞ্জারে টুংটাং আওয়াজে রিমির ম্যাসেজ ভেসে আসলো। ম্যাসেজগুলো এমন,
“কোথায় তুমি মৃন্ময়?
তোমাকে অনেক মিস করি। প্লিজ ফিরে আসো জান।
তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না?
তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।”
আরো অনেক অনেক ম্যাসেজ। মৃন্ময় ম্যাসেজগুলো দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এরপর ডাটা অফ করে অনলাইন থেকে বেড়িয়ে গেলো।

পরেরদিন অফিসে যেতেই প্রিয়ার ডাক পড়লো ফাহাদের রুমে। বিরক্ত লাগা সত্ত্বেও প্রিয়া গেলো। হাজার হোক বস বলে কথা! যাওয়ার পথে প্রিয়ার মেয়ে কলিগরা পথ আঁটকে ধরে। ওরা সবাই ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“কি মামা কি চলে?”
“কি চলে মানে?”
“সেটাই তো বলি কি চলে? তলে তলে টেম্পু চালাও?”
“কি আজগুবি কথা বলছিস তোরা?”
“ইশ! এখন এগুলো আজগুবি কথা তাই না? ঘনঘন এত স্যারের রুমে কি হুম?”
“মানে কি? স্যার আমায় কাজের জন্য ডাকে। সে আমার বস সেটা মনে হয় তোরা ভুলে যাচ্ছিস।”
ফাহাদের ওপর সবেচেয়ে বেশি ক্রাশিত প্রিয়ার যেই কলিগ, হিমি বললো,
“কি কপাল রে ভাই তোর! তুই স্যারকে দেখতে পারিস না আর স্যার তোকেই সবসময় ডেকে পাঠায়। আমাকে তো স্যারের চোখেই পড়েনা।”
বলেই ন্যাকা ন্যাকা স্বরে নাক টানা শুরু করে হিমি। আরেক কলিগ বলে ওঠে,
“তোর ন্যাকামি বন্ধ করতো! আমার দিকেই তো তাকায় না। তুই আর এমনকি?”
এক কথায় দুই কথায় ওদের মধ্যে তর্কাতর্কি লেগে যায়। প্রিয়া শুধু চুপচাপ কাণ্ডকারখানা দেখছে।
ঐদিকে এতক্ষণেও প্রিয়া আসছেনা দেখে ফাহাদই আসে। আর এসে দেখে এখানে তুলকালাম কাণ্ড হচ্ছে। ফাহাদ ধমক দিয়ে বলে,
“কি হচ্ছে এখানে? এটা অফিস নাকি মাছের বাজার? কারো কাজের দিকে কোনো মন নেই।”
ধমক খেয়ে সবাই চুপ হয়ে যায়। প্রিয়া একটু এগিয়ে গিয়ে বললো,
“আরে স্যার আপনি ওদের বকছেন কেন? ওরা তো আপনাকে নি….”
পুরো কথা বলতে পারলো না প্রিয়া। তার আগেই হিমি প্রিয়ার মুখ চেপে ধরলো। জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে বললো,
“স্যরি স্যরি স্যার। আসলে আমরা একটা বিষয় নিয়ে ডিসকাস করছিলাম।”
প্রিয়া জোর করে হিমির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। দম নিয়ে বললো,
“সত্যিটা বলতে দিচ্ছিস না কেন? তারও তো জানা দরকার তোরা যে স্যারকে পছন্দ করিস।”
হিমি কান চুলকে ফিসফিসিয়ে বললো,
“আরে বাপ! তোর মুখটা বন্ধ কর। নয়তো চাকরীই চলে যাবে আমাদের।”
ফাহাদ আবারও ধমক দিয়ে বললো,
“এইসব ফিসফিসানি বাদ দিয়ে যে যার কাজে যান। আর প্রিয়া, তোমাকে না আমি ডেকেছিলাম?”
“জ্বী স্যার আসছি।”
সবাই যে যার কাজে লেগে পড়লো। ফাহাদ চলে গেলো। পিছু পিছু প্রিয়াও যাচ্ছে। ফাহাদ চেয়ারে বসে বললো,
“তুমি কি আমার বউ?”
“মানে?”
“সোজা বাংলা ভাষায় বললাম তাও বুঝোনি? বলেছি তুমি কি আমার বউ?”
“আমি আপনার বউ হতে যাবো কেন আজব!”
“তাহলে সুরসুর করে যে আমার পিছু পিছু চলে এলে? স্যারের রুমে ঢুকতে হলে যে পারমিশন লাগে জানো না? তবে বউ হলে আলাদা বিষয়।”
প্রিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফাহাদ চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললো,
“এই দাঁড়াও দাঁড়াও!”
এটা বলেই প্রিয়ার সামনে গিয়ে একটু ঝুঁকে দাঁড়ালো। ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“আমার বউ হওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?”
প্রিয়া দুই হাত দিয়ে ফাহাদকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“এহ্! আপনার বউ হবো আমি? এটা স্বপ্নেও ভাবিনা আমি।”
“অফিসের কতশত মেয়ে আমার জন্য পাগল। ইভেন বাহিরেও কত মেয়ের ক্রাশ আমি। আর তুমি আমায় ইগনোর করো?”
“এটাই তো স্যার। সমস্যাটা তো এখানে। পাগলই তো পাগলের জন্য পাগল হবে। স্যরি কথাটা হবে, পাগলীই তো পাগলের জন্য পাগল হবে। আপনি এক পাগল আর যারা আপনাকে পছন্দ করে, ক্রাশ খায় ওরা হচ্ছে আরেক পাগল। পাগল আর পাগলী একদম পার্ফেক্ট জুটি। আমি তো বাবা কোনো পাগল টাগল নইযে আপনার উপর ক্রাশ খাবো।”
“আমি চাইও না তুমি আমার ওপর ক্রাশ খাও।”
“কেন?”
ফাহাদ ঠোঁট কামড়ে বললো,
“আমি চাই তুমি আমায় ভালোবাসো।”
“আপনি যে এতটা নির্লজ্জ সবাই কি সেটা জানে? অবশ্য জানবে কি করে? সবার সামনে তো আপনি একদম রাগী বস। কিন্তু আপনার এই আসল চেহারার কথা তো সবাই জানেনা।”
“তাহলেই বুঝো তুমি কত স্পেশাল। দেখো, আমি শুধু তোমার কাছেই নির্লজ্জ। অন্য কোনো মেয়ের কাছে না। এর মানে কি? এর মানে হলো তোমার ইম্পোর্ট্যান্সই আমার কাছে সব। অন্য কোনো মেয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তাছাড়া বউয়ের কাছে নির্লজ্জ হবো না তো কি বাহিরের কারো কাছে নির্লজ্জ হবো নাকি? আমি হবো আমার বউয়ের পার্ফেক্ট স্বামী। যাতে সে গর্ব করে সবার সামনে বলতে পারে আমি তার ভালোবাসা।”
প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারছেনা। তাই চুপ করে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাহাদ বললো,
“কি হলো? এমন ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে আছো যে? কিছু বলো?”
“আপনি আর কলাগাছ একই কথা। বলে লাভ নাই।”
“আমার প্রচুর প্রচুর প্রচুর লাভ আছে। যা শুধু আমার পরীকে দিবো। লাগবে তোমার?”
“মানে?”
“আরে এটাই বুঝলে না? তুমি দেখছি ইংরেজিতে প্রচুর কাঁচা। লাভ মানে হচ্ছে ভালোবাসা। আমার কাছে অনেক ভালোবাসা আছে। নিবে তুমি?”
“আমি কি এই লাভের কথা বলেছি?”
ফাহাদ চোখ টিপ দিয়ে বললো,
“সব কথা বলেনা হৃদয়, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।”
প্রিয়া চোখমুখ খিঁচে বললো,
“কেন ডেকেছেন সেটা বলেন। আমার কাজ আছে।”
“আরিব্বাস! অফিসের বসকেই তুমি কাজ দেখাচ্ছো? অবশ্য হবু স্বামীর অফিসের লাভ-লোকসানের কথা বউই তো ভাববে। তুমি কত লক্ষী গো! কিন্তু এখন তোমার কাজ করতে হবেনা, আমার সামনে বসে থাকো।”
“উফফ! আপনি যে এরকম আমি ভাবতেই পারিনি। প্রথম প্রথম তো খুব বকতেন, রাগ দেখাতেন সেটাই তো ভালো ছিল। হঠাৎ করে কি হলো আপনার? এমন রোমান্টিক হয়ে গেলেন কেন?”
“কি করবো বলো? তাকে ঐদিন দেখেই যে আমি ফিদা হয়ে গেলাম। আমার উষ্ণ ভালোবাসাগুলো বারবার বলছে পরীর কাছে যাবো পরীর কাছে যাবো।”
“তো নিয়ে যান না পরীর কাছে। আমায় জ্বালাচ্ছেন কেন?”
“তুমি ছাড়া পরীকে আমার হাতে কেই বা তুলে দিবে?”
“কেন? আমি দিবো কেন? তাছাড়া আমি তো চিনিই না তাকে।”
“দেখবে তাকে?”
“কই দেখি।”
“দাঁড়াও।”
ফাহাদ ফোনটা বের করে সামনে ধরলো। ফোনের ওয়ালপেপারে প্রিয়া আর ফাহাদের ছবি। প্রিয়া ফাহাদের এক হাত পেঁচিয়ে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। প্রিয়া চোখ দুইটা বড় বড় করে বললো,
“আরে….”
পুরো কথা বলার আগেই ফাহাদ বললো,
“এই এই এখন আবার বলো না এটা তোমার ছবি। এটা হচ্ছে আমার পরীর ছবি। আমার সাদা পরী।”
বলেই ফাহাদ ছবিটাতে চুমু খেলো।
প্রিয়া রাগি রাগি গলায় বললো,
“এটা তো আমারই ছবি। এই ছবিটা আপনি কখন তুললেন? আমি তো পৃথার সাথে ছিলাম।”
“এই ছবিটা তোমার বলছো?”
“অবশ্যই।”
“তুমি শিওর?”
“১০০% শিওর আমি।”
“তার মানে তুমি স্বীকার করছো তুমি আমার বউপরী?”
“আশ্চর্য! এটা আমি একবারের জন্যও বলিনি।”
“বলোনি কিন্তু বুঝিয়েছো।”
“কিভাবে?”
“আমি বলেছি এই ছবিটা আমার বউয়ের। আর তুমি বলতেছো ছবিটা তোমার। তাহলে এর ফলাফল কি দাঁড়ায়? তুমি আমার বউ?”
প্রিয়া হাত দুইটা মুঠোবন্দি করে ফাহাদের দিকে তেড়ে যায়। ফাহাদ প্রিয়ার হাত দুইটা পেছনে নিয়ে এক হাত দিয়ে ধরে রাখে। অন্য হাত দিয়ে প্রিয়ার চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখে। প্রিয়া নিজেকে ছাড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিন্তু ফাহাদের শক্তির কাছে প্রিয়ার এই জোড়াজুড়ি কিছুই না। ফাহাদ প্রিয়ার চোখ দুইটা ছুঁয়ে দিতেই প্রিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখের পাতায় হাত বুলাতে বুলাতে ফাহাদ বললো,
“এই কাজল কালো চোখের প্রেমে হাজার বার মরতেও রাজি আছি আমি।”
প্রিয়া এবার জোরে ফাহাদের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো। আশ্চর্যের বিষয় হলো ফাহাদের মধ্যে এর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। যেভাবে ছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। শুধু ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে আছে। একসময় প্রিয়া ফাহাদের হাত ছেড়ে দিলো। হাতে দাঁতের দাগ বসে গেছে। ফাহাদ চোখ খুলতেই দেখলো চোখ লাল হয়ে আছে। টলমল করছে পানি। ফাহাদ মুচকি হেসে প্রিয়ার দুই হাত ছেড়ে দিলো। নিজের দুই হাত দিয়ে চুলগুলোকে ঠিক করে হুট করেই প্রিয়ার এক হাত ধরে টেনে ফাহাদের কাছে নিয়ে আসলো। প্রিয়া ভয়ে কুঁকড়ে যায়। এক হাত দিয়ে প্রিয়াকে ধরে অন্য হাত প্রিয়ার গালে রাখে।
“তুমি কি ভেবেছো তুমি আমায় আঘাত করবে আর আমি তোমার হাত ছেড়ে দিবো? ছেড়ে দেওয়ার জন্য হাত ধরেছি? হাত যখন ধরেছি সারাজীবনের জন্যই ধরেছি। যত পারো আঘাত করো। না তোমাকে ছাড়বো আর না তোমার হাত। তুমি এতকিছু বুঝো, আর এটা বুঝো না আমি তোমাকে ভালোবাসি? শোনো, এত ঘটা করে আমি প্রপোজ করতে পারিনা। আমি শুধু জানি আমি তোমায় ভালোবাসি।”
প্রিয়া কিছু বলছেনা। শুধু ফাহাদের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ার ডান হাত ফাহাদের বুকের বামপাশে। যার কারণে ফাহাদের বুকের ধুকপুকানি স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারছে প্রিয়া। চোখের সামনে অস্পষ্টভাবে অতীতটা ভেসে আসছে। না আর সহ্য করতে পারছেনা। যেকোনো মুহুর্তে প্রিয়া পড়ে যাবে মনে হচ্ছে। গায়ে এতটুকুও শক্তিই নেই। প্রিয়া পড়ে যেতে নিতেই ফাহাদ শক্ত করে ধরে রাখে। প্রিয়ার সম্পূর্ণ ভর এখন ফাহাদের ওপর। আস্তে আস্তে চোখ দুইটা বন্ধ হয়ে আসে প্রিয়ার। অস্পষ্ট স্বরে বলে,
“আ..আমি আমি চাই ন…..”
পুরো কথা বলার আগেই সাথে সাথে প্রিয়া ফাহাদের বুকে লুটিয়ে পড়ে।..

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-১০

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১০
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
রেষ্টুরেন্টে বসে আছে ফাহাদ আর মৃন্ময়। খাবার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। মৃন্ময়ের মন খারাপ। কালই ওকে বাসায় ব্যাক করতে হবে। বিজনেসের একটা কাজে বাহিরে যেতে হবে। বাবার আদেশ বলে কথা। খাবার সামনে থাকা সত্ত্বেও মৃন্ময় চুপ করে বসে আছে। ফাহাদ মৃন্ময়কে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“কিরে খাচ্ছিস না কেন?”
“ভালো লাগছেনা।”
“আরে খেয়ে তো দেখ। এই রেষ্টুরেন্টের খাবারগুলো জাস্ট ইয়াম্মি!”
“মন ভালো না থাকলে কি খেতে ইচ্ছে করে?”
“আরে মন খারাপ করছিস কেন? তুই তো আর একেবারে চলে যাচ্ছিস না। কাজটা শেষ করেই তো চলে আসবি।”
“হু।”
“নে এখন খা।”
এরপর মৃন্ময় আর ফাহাদ একসাথে খাওয়া শুরু করলো।

বাড়িতে কোনো বাজার নেই। ফ্রিজও সম্পূর্ণ ফাঁকা। সব খুঁটিয়ে খাঁটিয়ে দেখে প্রিয়া মাকে বললো,
“ও মা ঘরে তো কোনো বাজারই নেই!”
“হ্যাঁ রে। বাজার করতে হবে। আজ ডিম রান্না করেছি। রাতে এগুলো দিয়েই আমাদের চলে যাবে। কাল আমি বাজার করে আনবো।”
“কাল কখন বাজার করবে আর কখন রান্না করবে? আমি বরং যাই পাশের বাজার থেকেই কিছু কিনে আনি।”
“না, না। তোকে বাজারে যেতে হবে না।”
“কেন?”
“কেন আবার কি? আমি বারণ করেছি তাই।”
“বারণ করলেই হবে? খেতে হবে না? তুমি টিভি দেখো। আমি শুধু যাবো আর আসবো।”
“তাহলে আমাকেও তোর সাথে নিয়ে চল।”
“তুমি আবার কষ্ট করে যাবে কেন? তুমি বাসায় থাকো। যখন মাসকাবারির বাজার করবো তখন দুজন একসাথে যাবো কেমন!”
প্রিয়া একটা ব্যাগ নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। নতুন জায়গা খুব একটা চিনেনা প্রিয়া। ফুটপাত ধরে হাঁটছিল টুকটাক বাজার করে বাসায় ফিরছিল। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা সাতটা বাজে। এখনো কত কপোত-কপোতি হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে। কেউবা রিক্সায় চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাশেই খেয়াল করলো, একটা ছেলে একটা মেয়েকে হাত ধরে রাস্তা পাড় করে দিচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে প্রিয়ার ভেতর থেকে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। প্রিয়া আর সেদিকে খেয়াল না করে হাঁটা শুরু করে।
.
ফাহাদ আর মৃন্ময় খাওয়া শেষ করে রেষ্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে আসে। ফাহাদ বললো,
“চল ব্যস্ত শহরে একটু হাঁটি।”
মৃন্ময় হাসিমুখে বললো,
“চল।”
দুই ভাই মিলে হাঁটছিল আর গল্প করছিল। ফাহাদ বললো,
“এভাবে হাঁটতে ভালো লাগছেনা। তুই দাঁড়া আমি দোকান থেকে কিছু কিনে আনি।”
“যা।”
ফাহাদ দোকানে গেলো। মৃন্ময় প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে গুণগুণ করে গান গাইছিল। আচমকা মৃন্ময়ের হার্টবিট বেড়ে গেলো। পা দুইটা অসাড় হয়ে আছে। সামনে এগোতে পারছেনা। মুখ দিয়ে অনেক কষ্টে বের করলো,
“ফাহাদ! প্রেয়সী প্রেয়সী!”
মৃন্ময় দৌঁড়াতে শুরু করলো। পেছন পেছন ফাহাদও দৌঁড়ালো। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মৃন্ময় থেমে গেলো। সাথে ফাহাদও। দুইজনই সমানে হাঁপাচ্ছে। ফাহাদ হাঁপাতে হাঁপাতেই বললো,
“প্রেয়সী প্রেয়সী বলে চেঁচাচ্ছিলি কেন?”
“আমি প্রেয়সীকে দেখেছি ফাহাদ।”
“কি বলিস! কোথায় দেখলি?”
“যেখানে তুই দোকানে গেলি। তখন দেখলাম আমি ওকে।”
“তুই শিওর তুই ওকে দেখেছিস?”
“আমি স্পষ্ট দেখেছি। ওকে চিনতে আমার একটুও ভুল হবেনা।”
“তাহলে কোথায় চলে গেলো?”
“জানিনা। এত মানুষের ভীড়ে হারিয়ে ফেলেছি।”
“ও কি তোকে দেখেছে?”
“আমি শিওর না। তবে মনে হচ্ছে দেখেছে।”
“যে নিজে থেকে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন রে মৃন্ময়।”
“এত সামনে থেকে দেখেছি, তবুও বলছিস খুঁজে পাওয়া কঠিন?”
“দেখা আর মানুষটাকে পাওয়া এক কথা নয়। এমন তো হতে পারে সে তোর কাছে ধরাই দিতে চায়না কখনো।”
“জানিনা আমি এতকিছু। আমি শুধু জানি, একবার যখন ওকে এখানে দেখেছি তখন ওকে তো আমি খুঁজে বের করবোই।”
“তারপর?”
“তারপর আর কি? ক্ষমা চাইবো।”
“যদি ফিরে না আসে?”
“তুই আমার ভাই নাকি শত্রু হ্যাঁ? পজেটিভ ভাবতে পারিস না?”
ফাহাদ এবার হেসে দিলো। বললো,
“স্যরি স্যরি। তবে পজেটিভ ভাবার আগে নিগেটিভ দিকটাও ভাবতে হয়।”
“সব ভাবাভাবি বাদ। বিজনেসের কাজে যে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল সেটাও ক্যান্সেল।”
“পাগল হলি নাকি তুই? আংকেল এতে ভীষণ রেগে যাবে। পাগলামি না করে কাজটা কর। বাড়ির সবাইকে খুশি রাখ আগে। আর একবার যখন তাকে দেখেছিস তখন এটা তো তুই শিওর যে তোরা এক দেশে, এক জেলাতেই আছিস! সো, ওকে খুঁজে বের করতে কোনো সমস্যা হবেনা। আর একবার যা করেছিস এরপরও পরিবারের সাপোর্ট পাওয়া অনেক কঠিন বুঝলি?”
মৃন্ময় ভাবলেশহীনভাবে বললো,
“হুম।”
“কি বুঝলি?”
“তুই যা বুঝালি।”
“তাহলে তুই মালয়েশিয়া যাচ্ছিস তো?”
“হুম।”
“দ্যাট’স লাইক আ গুড বয়। নাউ লেট’স গো।”

বাড়িতে গিয়ে দরজা আটকেই ফ্লোরে ধপাস করে ব্যাগটা ফেললো প্রিয়া। জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেলো। অনেকটা হাঁপিয়ে গিয়েছে। মা এসে বললো,
“এমন হাঁপাচ্ছিস কেন?”
প্রিয়া কিছুক্ষণ দম নিয়ে বললো,
“মা মৃন্ময়কে দেখেছি আজ।”
“কোথায়?”
“বাজারের ঐখানে।”
“ও তোকে দেখেছে?”
“হ্যাঁ। শুধুই দেখেনি আমার পিছন পিছনও এসেছিল। আমি লুকিয়ে ছিলাম।”
“ওকে দেখে লুকানোর কি আছে? তুই তো কিছু করিসনি।”
“সব অতীত থেকে দূরে সরার জন্য সব চেঞ্জ করে নতুন জায়গায় আসা। সেখানে যদি অতীত এসে এভাবে হাত বাড়ায় তখন আমি লুকাবো না? এসব বাজে অতীতের সম্মুখীন আমি হতে চাইনা মা। ঘৃণা করি আমি অনেক ঘৃণা করি।”
মা প্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“শান্ত হো। আর যা ফ্রেশ হয়ে নে। অতীত চাইলেও আর তোকে ছুঁতে পারবেনা।”
.
.
মৃন্ময় মালয়েশিয়া চলে গিয়েছে। কিন্তু মনটা বাংলাদেশেই পড়ে আছে। ফাহাদ আজকাল প্রিয়াকে নিয়েই বিভোর থাকে। মনের না বলা কথাটাকে এখনো হৃদয়ে বন্দি করে রেখেছে। কবে যে এই মনের শিকল থেকে মুক্ত হবে ভালোবাসার কথা কে জানে!
অফিস থেকে একটা ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়েছে সিলেটে। প্রিয়া প্রথমে যেতে একদম রাজি হয়নি। ফাহাদ এটার টোপ হিসেবে কাজে লাগালো পৃথাকে। পৃথাকে দিয়ে রাজি করালো। বাসে বসে যে যার মত আনন্দ করছে আর ফাহাদ চুপিসারে দেখছে প্রিয়াকে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে কেউ সেটা বুঝতেও পারছেনা। কারণ ফাহাদ চোখে কালো সানগ্লাস পড়ে বাসের সিটের সাথে হেলান দিয়ে আছে। যাতে সবাই বুঝে যে, ফাহাদ ঘুমাচ্ছে। স্পটে পৌঁছে সবাই ফ্রেশ হয়ে আগে খেয়ে নিলো। এরপর যে যার মত ঘুরতে শুরু করলো। পৃথা আর প্রিয়া চা বাগানের উঁচুনিচু জায়গায় ঘুরছিলো। প্রাকৃতিক দৃশ্য যে কতটা মনোরম তা বাহিরে গেলেই বুঝা যায়। পৃথার ফোন আসায় পৃথা ফোনে কথা বলছিল। আর প্রিয়া অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিল। মনটা বিষণ্ণ খুব। হুট করেই ফাহাদ পেছন থেকে বলে,
“কি ম্যাম মন খারাপ?”
প্রিয়া পিছনে তাকিয়ে দেখলো ফাহাদ।
“উঁহু।”
“মন খারাপ না?”
“না।”
“সত্যিই?”
“হুম।”
“একটা কথা বলি?”
“জ্বী।”
“আমি যদি আপনাকে তুমি করে ডাকি তাহলে কি কোনো সমস্যা?”
প্রিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বললো,
“না। সমস্যা হবে কেন? আপনি তো পৃথাকেও তুমি করে ডাকেন।”
ফাহাদের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। মনে মনে বললো,
“এই মেয়েটা এত আনরোমান্টিক! কিসের সাথে কি তুলনা করে! আরে আমি কি পৃথাকে ভালোবেসে তুমি ডাকি নাকি।”
প্রিয়া আবারও হাঁটা শুরু করলো। সাথে ফাহাদও হাঁটছে। ফাহাদের মাথায় দুষ্টু বু্দ্ধি এলো। জোরে চেঁচিয়ে বললো,
“সাপ সাপ!”
ফাহাদের সাথে প্রিয়া জোরে জোরে চেঁচাতে লাগলো। সাথে বাচ্চাদের মত লাফাতে লাগলো। প্রিয়ার এই অবস্থা দেখে ফাহাদ হাসতে হাসতে শেষ। বিষয়টা প্রিয়া খেয়াল করে থেমে গেলো। ভ্রু কুঁচকে বললো,
“আপনি হাসছেন কেন? আর কোথায় সাপ?”
ফাহাদ হাসতে হাসতেই বললো,
“হাসছি তোমার বাচ্চামো দেখে। তোমার মধ্যে কতই সৌন্দর্য লুকায়িত। কিন্তু তুমি যে কেন তা প্রকাশ করো না আল্লাহ্ মালুম।”
প্রিয়া কথাটাকে এড়িয়ে গিয়ে বললো,
“সাপ কোথায়?”
“সাপ নেইতো।”
“তবে আপনি যে সাপ সাপ বলে চেঁচালেন?”
“সেটা তো তোমার রিয়াকশন দেখার জন্য করেছি। আর….”
“আর?”
ফাহাদ চোখে-মুখে দুষ্টুমির রেখা ফুঁটিয়ে বললো,
“আর ভাবলাম যে তুমি ভয় পেয়ে একটু জড়িয়ে ধরবে।”
বলেই ফাহাদ ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলো। প্রিয়া চোখমুখ কুঁচকে বললো,
“নির্লজ্জ।”
ফাহাদ ডান হাত বুকের বা পাশে রেখে বললো,
“আয়ে হায়! এভাবে বলো না। প্রেমে পড়ে যাবো।”
প্রিয়া আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলো।

সন্ধ্যায় গানের আসর বসিয়েছে সবাই মিলে। যে যে গান পারে সবাই গান গাইছে। আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডার এক ফাঁকে অফিসের অন্যান্য বসরা সবার উদ্দেশ্যে বললো,
“তোমরা কি জানো যে, তোমাদের বস মিস্টার ফাহাদ যে খুব ভালো গান করে? গান কিন্তু তার স্বপ্ন।”
ফাহাদ বললো,
“এটা কি হলো? এভাবে ফাঁসানো?”
কিন্তু মনে মনে ফাহাদ খুশিই হলো। এই সুযোগে গানের মাধ্যমে ইশারা ইঙ্গিতে প্রিয়াকে ভালোবাসার কথা জানাবে।
উপস্থিত সকলে বললো,
“তাহলে স্যার একটা গান হয়ে যাক?”
ফাহাদ হেসে বললো,
“হোক তাহলে।”
ফাহাদ গিটার নিয়ে টুংটাং আওয়াজ তুললো। ফাহাদের সরাসরি বসে আছে প্রিয়া। প্রিয়ার সাথে বসে আছে পৃথা। ফাহাদ গাওয়া শুরু করলো,

“তোমার নামের রোদ্দুরে, আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে,,
জানিনা যাবো কদ্দুরে এখনো..!!
তোমার নামের রোদ্দুরে, আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে,
জানিনা যাবো কদ্দুরে এখনো।
আমার পোড়া কপালে,
আর আমার সন্ধ্যে সকালে,,
তুমি কেন এলে জানিনা এখনো…
ফন্দি আঁটে মন পালাবার,,
বন্দি আছে কাছে সে তোমার..!!
যদি সত্যি জানতে চাও,
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই।
যদি মিথ্যে মানতে চাও,
তোমাকেই চাই।
হুম,,,,,যদি সত্যি জানতে চাও,
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও,
তোমাকেই চাই….!!!”

চলবে….

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-০৯

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৯
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদ বললো,
“এতদিন অফিসে আসেননি কেন?”
“সমস্যা ছিল।”
“কি সমস্যা?”
প্রিয়া এবার উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদ আবার বললো,
“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি। কি সমস্যা ছিল যে এতদিন অফিসে আসলেন না? একটা ফোন করে তো জানায় মানুষ? ফোনটা পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছিলেন আপনি। কি সমস্যা আপনার বলেন? আমার অফিসে কাজ করতে ভালো লাগেনা? নাকি আমায় বিরক্ত লাগে? আপনার দিকে তাকাই বলে খুব সমস্যা?”
ধমক দিয়েই কথাগুলো বললো ফাহাদ। ফাহাদের কথায় অধিকার স্পষ্ট। কিন্তু কিসের অধিকার সেটা বুঝেনা প্রিয়া। ফাহাদের ধমকে প্রিয়া কেঁদেই দিলো। ফাহাদ ঝাড়ি দিয়ে বললো,
“কিছু বললেই শুধু ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদে। এছাড়া আর কিছু পারেন না? কি হয়েছে সেটা তো বলবেন!”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“স্যরি স্যার। আর এমন হবে না। আমি ইচ্ছে করে এতদিন অনুপস্থিত ছিলাম না। দয়া করে শেষবারের মত একটা সুযোগ দিন প্লিজ।”
ফাহাদ মনে মনে বললো,
“আমি বলি কি আর সে বুঝে কি! ওরে জ্বালা আমি কি একবারও বলেছি যে অফিস থেকে বের করে দিবো! আমার যে টেনশন হয় সেটা এই মেয়ে বুঝবেনা। এত অবুঝ কেন এই মেয়ে!”
ফাহাদ যথাসম্ভব রাগ দমিয়ে বললো,
“আচ্ছা আপনি এখন যান।”

প্রিয়া চলে যাওয়ার পর ফাহাদ মাকে ফোন দিলো।
“হ্যালো মা।”
“হ্যাঁ বল।”
“পেয়ে গেছি মা পেয়ে গেছি।”
“কি পেয়ে গিয়েছিস?”
“আমার সাদা পরীকে পেয়ে গেছি মা।”
“অফিসে এসেছে?”
“হ্যাঁ মা।”
“তাহলে তো আমার ছেলেটা আজ খুব খুশি।”
“অনেক খুশি মা। কিন্তু কিছু একটা গন্ডগোল আছে মা।”
“কিসের গন্ডগোল?”
“প্রিয়ার চোখমুখ কেমন জানি। কি জানি হয়েছে, কিন্তু সেটা বলছেনা।”
“হয়তো পারিবারিক কিছু তাই তোকে বলেনি। তাছাড়া তুই ওর বস, তোকে কি আর সব বলবে নাকি!”
“তাহলে কি করে জানবো?”
“ওর কোন ফ্রেন্ড যেন আছে ওকে দিয়ে জিজ্ঞেস করা।”
“এটা করা যেতে পারে। কিন্তু মা পৃথা বিষয়টা কিভাবে নিবে সেটাই তো বুঝতেছিনা। অফিসের বস অফিসেরই একজনকে পছন্দ করে, ভালোবাসে বিষয়টা কেমন জানিনা?”
“এখানে কেমন জানির কি আছে? কে কিভাবে নিবে সেটা তার বিষয়। তোর কাজ হচ্ছে তুই কিভাবে প্রিয়ার সব ইনরফরমেশন নিবি। এখন ওর ইনরফরমেশন তো আর ও নিজে এসেই দিবে না তাই না? এজন্য অবশ্যই ওর কাছের কারো সাহায্য দরকার তোর। আর ওর কাছের কেউ বলতে তুই শুধু পৃথাকেই চিনিস। সো তোকে সাহায্য করতে পারলে পৃথাই পারবে। প্রয়োজনে ওকে সব জানা। ও তোকে সাহায্য করতে পারবে। ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য যা করা লাগবে করবি। যেটা সবাই দুদিন পর এমনিতেই জানবে সেটা না হয় দুদিন আগেই কেউ জানুক।”
“ওহ মা! সত্যিই তুমি বেষ্ট। এজন্যই বোধ হয় আমার কোনো বেষ্টফ্রেন্ড নেই। যার বেষ্টফ্রেন্ডের মত মা আছে তার আবার কোনো বেষ্টফ্রেন্ডের দরকার হয় নাকি। লাভ ইউ সো মাচ মা।”
“পাগল ছেলে আমার। লাভ ইউ টু। এখন যা, কাজে লেগে পড়।”
“যথাআজ্ঞা মেরি আম্মিজান।”

রেষ্টুরেন্টে অপেক্ষা করছে পৃথা। কিছুক্ষণ পরই ফাহাদ আসে। ফাহাদকে দেখে পৃথা দাঁড়িয়ে পড়ে। ফাহাদ মুচকি হেসে বলে,
“আরে বসো বসো। রেষ্টুরেন্টে এত ফর্মালিটি দেখাতে হবেনা।”
“সমস্যা নেই স্যার।”
ফাহাদ বসতে বসতে বললো,
“এখানে আসার জন্য কোনো সমস্যা হয়নি তো?”
“না স্যার।”
“আসলে যে কথাগুলো বলবো সেগুলো অফিসে বলার মত নয়। তাই এখানে ডেকেছি।”
“সমস্যা নেই স্যার। আপনি বলুন।”
“একচুয়ালি কথা বলার টপিক হচ্ছে প্রিয়া!”
পৃথা মুচকি হেসে বললো,
“এটাই আন্দাজ করেছিলাম।”
“মানে?”
“না মানে প্রায়ই দেখতাম আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রিয়াকে দেখেন।”
ফাহাদ লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকালো।
“আসলে কি জানো পৃথা, কখনো ভাবতেই পারিনি এভাবে কাউকে ভালোবেসে ফেলবো। সেই বৃষ্টিতে সাদা ড্রেসে আধভেজা অবস্থায় দেখে কি যে হলো আমার। এখন ধ্যানেজ্ঞানে শুধুই প্রিয়া।”
“তাহলে ওকে বলছেন না কেন?”
“বলবো। আসলে আমি সেরকমভাবে প্রিপেইড নই তো, তাই চাচ্ছিলাম একটু সময় নিতে।”
“ওহ্!”
“আচ্ছা এই ক’দিন ও অফিসে আসেনি কেন জানো?”
“না স্যার। অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি বলেনি। বলেছে পরে বলবে। তবে মুখ দেখে মনে হয়েছিল যাই হোক না কেন ভালো হয়নি।”
ফাহাদ চিন্তিতস্বরে বললো,
“হুম!! এক কাজ করবে কাল কি হয়েছে তা জানার জন্য ওকে ফোর্স করবে। যেভাবেই হোক ওর থেকে কথা আদায় করবে। আর যখন জিজ্ঞেস করবে তখন আমায় বলবে আমি কল দিবো। তুমি শুধু ফোনটা লাইনে রেখো।”
“আচ্ছা।”
“আর হ্যাঁ, প্লিজ এসব কিছু আগেই কাউকে জানিয়ো না। এমনকি প্রিয়াকেও না।”
“ওকে স্যার।”
“থ্যাঙ্কিউ।”
.
.
ফাহাদ বাড়িতে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো। ফাহাদের বাবা তখন পত্রিকা পড়ছিলেন। পত্রিকার পাতা উল্টে বললো,
“কি ব্যাপার? খুব খুশি মনে হচ্ছে?”
“হুম আব্বু খুব খুশি।”
“তো কি কারণ শুনি? আমরাও একটু খুশি হই তোমার সাথে।”
“স্যরি আব্বু। এখন তো বলা যাবেনা। তবে সময় হলে অবশ্যই অবশ্যই জানাবো।”
“সিরিয়াস কিছু মনে হচ্ছে?”
ফাহাদ কিছু বললো না। লাজুক হেসে উপরে চলে গেলো। মৃন্ময় তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে গান শুনছিল। ফাহাদকে দেখে মৃন্ময় বললো,
“একটু আগে বাড়িতে আসতে পারিস না?”
“কেন?”
“কেন আবার কি? আমার সাথে একটু সময় কাটাবি।”
“ধুর ব্যাটা! এতদিন পর আমার সাদা পরীটাকে পেয়েছি। ওকে না দেখে তোকে দেখবো?”
“কি সেলফিস রে! যাই হোক, অফিসে এসেছে?”
“হ্যাঁ রে। এজন্যই তো আজ এত খুশি আমি।”
“খুব লাকিরে তুই! তোর পরীকে তো তুই খুঁজে পেলি কিন্তু আমার প্রেয়সীকে যে আমি কবে পাবো কে জানে!”
“মন খারাপ করিস না। খুব শিঘ্রয়ই খুঁজে পাবি দেখিস।”
“তাই যেন হয়। তবে আমার ট্রিট চাই।”
“কিসের ট্রিট?”
“এই যে তোর পরীকে খুঁজে পেলি তাই।”
“ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। ওকে খাওয়াবো। যত খেতে পারিস খাওয়াবো কিন্তু আজ না ভাই। কাল খাওয়াবো। আজ খুব টায়ার্ড আমি। কাল অফিস পাঁচটায় ছুটি দিবো। তখন বাহিরে যাবো কেমন? অফিস থেকে ৪০ মিনিট লাগে যেতে একটা রেষ্টুরেন্ট আছে। দারুণ সব খাবার পাওয়া যায়।”
“ওকে ডান।”

পরেরদিনঃ
লাঞ্চ টাইমে খুব ফোর্স করছে পৃথা প্রিয়াকে। ফাহাদ তখন ফোনের লাইনেই আছে। সব শুনছে। প্রিয়া বলতে নারাজ। বারবার কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে। পৃথা এবার ইমোশোনাল ব্লাকমেল করে বললো,
“তুই কি আমায় একটুও বিশ্বাস করিস না প্রিয়ু? আমার সাথে কি শেয়ার করা যায় না?”
“উল্টাপাল্টা ভাবিস নারে পৃথা। এই নতুন জগতে আমার বন্ধু বলতে শুধু তুই’ই আছিস আমার আপন। যাকে আমি সব শেয়ার করি। কিন্তু এই বিষয়টা তুই সহ্য করতে পারবিনা তাই আমি বলতে চাচ্ছিনা।”
“যেটা তুই সহ্য করতে পেরেছিস সেটা আমি পারবো না? তোর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুই সহ্য করতে পারলে আমিও পারবো। আফটারঅল তুই আমার ফ্রেন্ড। আমার বেষ্টফ্রেন্ড। প্লিজ বল কি হয়েছে?”
প্রিয়ার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। গলাটা ধরে আসছে। ধরা গলায় প্রিয়া বললো,
“সব শেষ গয়ে গিয়েছে রে পৃথা। নতুন জগতে নতুনভাবে বাঁচার সব আশা নিভে গিয়েছে সব। আমি সত্যিই একটা অলক্ষী।
ঐদিন অফিস শেষে বাড়িতে গিয়ে দেখি দুই ভাবীর বাবা-মা আর ভাই এসেছে। আমার দুই ভাবী সম্পর্কে আপন বোন। ছোট ভাইয়া আর ছোট ভাবীর রিলেশন ছিল। তখন প্রস্তাবের মাধ্যমেই বাড়ির দুই মেয়েকে আমার দুই ভাইয়ের বউ করে আনে। আমি তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে আমার রুমে চলে যাই। ভাবীর ছোট ভাই আমায় আগে থেকেই পছন্দ করতো যেটা আমি জানতাম। তাই সবসময়ই এড়িয়ে চলতাম। আমার পিছু পিছু ভাবীর ছোট ভাই রামিম আমার রুমে আসে। খাটের উপর বসে বললো,

“কি খবর বিয়াইন সাহেবা! খবর কি তোমার?”
আমার খুব রাগ হয় তখন। সরাসরি একটা মেয়ের রুমে আসা আবার খাটে বসা বিষয়টা খুবই বিরক্তিকর। কিন্তু ভাবীর ভাই বলে কিছু বলিনি। মুখে হাসির রেখা টেনে বলেছিলাম,
“জ্বী ভালো।”
“মন খারাপ নাকি?”
“না।”
“তাহলে কথা বলছো না কেন?”
“একটু টায়ার্ড তো তাই। মাথা ব্যথা করছে।”
“আসো মাথা টিপে দেই।”
“আশ্চর্য! নিজের সীমা অতিক্রম করবেন না প্লিজ।”
“আরে আরে রেগে যাচ্ছো কেন? আমি তো মজা করলাম।”
“আপনি এখন আসতে পারেন।”
“প্রিয়া!”
“হু।”
“আর কতবার বলবো তোমায় ভালোবাসি?”
“আমি কতবার বলবো যে, আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।”
“প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড!”
“আমি কিচ্ছু বুঝতে চাইনা। আমার এসব ভালোবাসার প্রতি কোনো ইনটেনশন নেই।”
“আমি তো তোমায় বিয়ে করতে চাই। দেখো তোমার অতীত নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই।”
“আপনার সমস্যা থাকলেই বা আমার কি? আমার অতীতকে দূর্বলতা ভেবে আমায় বিয়ে করবেন এই আশা থাকলে প্লিজ সেটা ভুলে যান। আপনাকে আমি কোনো জন্মেই বিয়ে করবো না। তার কারণও আপনি খুব ভালো করেই জানেন।”
“দেখো আমি জানি আমি নেশা করি, মেয়েদের প্রতি উইক। কিন্তু প্রমিস তুমি আমার জীবনে আসলে সব ছেড়ে দিবো আমি।”
“হাসালেন রামিম। শুনেছিলাম, আপনি নাকি আপনার মাকে ছুঁয়েও কথা দিয়েছিলেন এসব আর করবেন না? কিন্তু আপনি কথা রাখতে পেরেছেন কি? পারেননি তো! যেই ছেলে গর্ভধারিণী কে দেওয়া কথা রাখতে পারেনা, সে আমায় দেওয়া কথা রাখবে?”
“তুমি শোনো….”
“আমি আর কিছু শুনতে চাইনা। আপনি এখনই আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যাবেন প্লিজ। নয়তো আপনি থাকেন, আমিই চলে যাই।”
এরপর আর রামিম কিছু বলেনি। চলে যায়। কিন্তু দমে যায়নি তখনো। আমায় বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। আমার দুই ভাবীকেই বিষয়টা জানায়। ভাবীরা তাদের আদরের ভাইয়ের আবদার রাখতে গিয়ে আমার কথা ভাবা ভুলে যায়। ভাইয়াদের বিষয়টা বুঝায়। আমি রাজি ছিলাম না বিধায় ভাইয়ারাও কেউ রাজি হয়নি। কিন্তু ভাবীরা এমন কি বুঝিয়েছিল কে জানে! আর রামিমও এত ভালো মানুষ সাজার অভিনয় করলো যে ভাইয়ারাও রাজি হয়ে যায়। সবাই মিলে আমাকে বুঝাতে শুরু করে। আমার অফিসে আসা বন্ধ করে দেয়। আমি জেনেশুনে ওমন একটা লোককে কি করে বিয়ে করতাম বল? আমি রাজি হয়নি। একমাত্র মা’ই আমার পাশে ছিল। আমার সেই পরিচিত ভাই-ভাবীদের আবারও অচেনা মনে হতে শুরু করলো। একদিন ভাইয়ারা মাকে বললো,
“তুমি তোমার মেয়েকে বোঝাচ্ছো না কেন? আমরা কি ওর খারাপ চাই? যদি ওর খারাপ চাইতাম তাহলে কি ফিরে আসতাম আমরা? ওর প্রথম সেই ঘটনার পর বাবা মারা যায়। তখন কিন্তু আমরা দূরে সরে থাকতে পারিনি মা। সাপোর্ট হয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়েছি। আর আজ ওর কাছে আমাদের কথার কোনো মূল্যই নেই।”
“দেখ বাবা, সংসার তো ও করবে। তাহলে ও যখন রাজি না কেন বারবার এমন জোর করছিস?”
“বাহ্! তুমিও তো দেখছি এখন মেয়ের দলে।”
“এটা দলের কোনো বিষয় না রে বাবা। একটু ওর কথা ভাব।”
“ওর কথা ভেবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে রামিমের সাথেই ওর বিয়ে দিবো। তুমি দেখো মা, আমাদের বোন অনেক সুখী হবে।”
আড়াল থেকে সেদিন সবটা শুনেছিলাম আমি। পরিস্থিতি যে আমার অনুকূলে ছিল না সেটা আমি ঢের বুঝতে পেরেছিলাম। শুধুমাত্র মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজিও হয়ে গিয়েছিলাম। ঘরোয়াভাবে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এরপর….”
এতটুকু বলে হুহু করে কেঁদে দিলো প্রিয়া। ওপাশ থেকে নিঃশব্দে সব শুনছিল ফাহাদ। প্রিয়ার কান্নাগুলো তীরের মত বিঁধছিল ফাহাদের বুকে। মনে তখন এক অজানা ভয়। তবে কি সত্যিই ফাহাদ প্রিয়াকে হারিয়ে ফেললো!
পৃথা প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কাঁদিস না প্লিজ। এরপর কি হলো?”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“এরপরই আমার পরিবারটা এলোমেলো হয়ে গেলো রে পৃথা। বিয়ের আগেরদিন রাতে রামিম ড্রিঙ্ক করে আমার রুমে আসে। রাত তখন এগারোটার মত বাজবে। আমি বসে বসে উপন্যাসের বই পড়ছিলাম। রামিম হুট করেই রুমে ঢুকে যায়। আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে। আমি ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু ও অনেক বেশি জোড়াজুড়ি শুরু করে দেয়। ওকে দেখে আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলাম ও মদ খেয়েছে। আমি বারবার বলেছিলাম,
“রুম থেকে বেড়িয়ে যান। প্লিজ বেড়িয়ে যান।”
“সরিয়ে দিচ্ছো কেন? কাল তো আমাদের বিয়ে হচ্ছেই।”
“আমি রুম থেকে বের হতে বলেছি আপনাকে।”
রামিম কিছুতেই আমার কথা শুনছিল না। তখন আমি সজোরে একটা থাপ্পড় দেই রামিমকে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চেঁচামেচি শুরু করি। তখন সবাই দৌঁড়ে আমার রুমে আসে। আমি কেঁদে কেঁদে সব বলি ওদের। কিন্তু জানিস পৃথা, আমার ভাইরা এর কোনো প্রতিবাদ করেনি। উল্টো বলেছে নেশা করেছে তো তাই এমন হয়ে গেছে। মাফ করে দে ওরে বোন। রামিমের ওমন ব্যবহারে যতটা না কষ্ট পেয়েছিলাম তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম ভাই-ভাবীর কথায়। তখন আর চুপ করে থাকতে পারিনি। রাগে বলেছিলাম,
“আমি এই বিয়ে করবো না। করবো না এমন চরিত্রহীন, নেশাখোর কোনো ছেলেকে বিয়ে। এতে যদি কখনো আমার বিয়ে না হয় তো না হোক। তবুও আমি এই বিয়ে করবো না। এখন যা খুশি করতে পারো তোমরা।”
তখন এক কথায়, দুই কথায় অনেক ঝামেলা হয়ে যায় বাড়িতে। এই বিয়ে না করলে ভাবীরা বাপের বাড়ি চলে যাবে সিদ্ধান্ত নেয়। ভাইয়ারাও চায় আমি এই বিয়েটা করি। মা শুধু মুখে আঁচল গুঁজে কাঁদতো। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে দৃঢ় ছিলাম। অন্যায়ের কাছে আমি মাথা নত কিছুতেই করবো না। ভাইয়া ঠান্ডা মাথায় বলেছিল,
“দেখ বোন, মানছি রামিম একটা ভুল করেই ফেলেছে। তাই বলে বিয়েটাই ভেঙ্গে দিবি? আগের কথাই ভাব? পরপর দুইটা অতীত তোর। তাছাড়া রামিম সব জেনেই তোকে বিয়ে করতে রাজি। আর তুই ওর একটা দোষ মাফ করতে পারবি না?”
“বাহ্ ভাইয়া বাহ্! কয়লা ধুলে যেমন ময়লা যায়না তেমনি খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়ালেই ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করা যায় না। আমায় বিয়ে দিতে চাচ্ছো নাকি কুরবানি দিতে চাইছো তোমরা? আমি মেয়ে বলে সবসময় স্যাক্রিফাইজ আমাকেই করতে হবে? কেন? সবসময় আমিই কেন? প্রয়োজনে সারাজীবন এভাবেই থাকবো তবুও এমন চরিত্রহীন কাউকে আমি বিয়ে করবো না।”
“তুই কি চাস আমরা আবার আগের মত আলাদা হয়ে যাই?”
“ভয় দেখাচ্ছো? আমি আর ভয় পাইনা ভাইয়া। বিয়ের প্রায় এক বছরের মাথায় দুই ভাই মিলে কৌশলে আলাদা হয়ে গিয়েছিলে। বলেছিলে অফিস থেকে ট্রান্সফার করা হয়েছে। মাসেও একটা খবর নিতে না। আমি বুঝতাম না ভেবেছো? তখন কি তোমাদের ছাড়া থাকিনি? থেকেছি তো! এরপর আব্বু মৃত্যুর পর আবার ফিরে এলে। মনে হয়েছিল পৃথিবী ফিরে পেয়েছি আমি। কিন্তু আমি তো ভুল ছিলাম। তোমরা শোধরাওনি ভাইয়া তোমরা শোধরাওনি।”
ভাবী রাগে গজগজ করতে বলেছিল,
“এইটুকুন একটা মেয়ের কাছে আমাদের এত কথা শুনতে হচ্ছে? তোমাদের কথায় ফিরে আসছিলাম আর এখন তোমারই বোন এসব কথা শুনাচ্ছে। নিজের ছোটবোনের মত ভালোবেসেছিলাম আর তোমার বোন এর প্রতিদান দিচ্ছে এখন।”
“ভাবী, আমার আপু কিন্তু কখনোই এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতো না। এটা সত্যিই যে, যে কয়টা দিন একসাথে ছিলে সে কয়টা দিন শুধু আপুর মতই না মায়ের মতও ভালোবেসেছো। তাহলে এখন এমন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছো কেন ভাবী?”
ভাবীর আর কোনো উত্তর পাইনি। তারা চলে যাওয়ার জন্য রেডি। ভাইয়াদের বলেছিলাম,
“তোমরাও নিঃসঙ্কোচে চলে যেতে পারো। আটকাবো না। ছোট ছোট বাচ্চা আছে তোমাদের। আমাদের জন্য নিজেদের পরিবার নষ্ট করো না। মাকে নিয়ে আমি ভালো থাকবো।”
জানিস পৃথা, তখন মুখে এটা বললেও মনে মনে বলেছিলাম ভাইয়া প্লিজ যেয়ো না প্লিজ যেয়ো না। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সবাই চলে গেলো। তখন থেকেই মাকে নিয়ে আমার একলা জীবন।”
প্রিয়া এবার জোরে জোরে শব্দ করে কাঁদছে। প্রিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে পৃথা। পৃথাও কাঁদছে। কি করে একটা মানুষ এত কষ্ট সহ্য করতে পারে। ক্যান্টিনে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। ফোনের ওপাশে ফাহাদও কাঁদছে। ভাবতেই পারছেনা মেয়েটার এত কষ্ট। ইচ্ছে করছে রামিম ছেলেটাকে খুন করে ফেলতে। ওপাশ থেকে মানুষের হৈচৈ শোনা যাচ্ছে। সবার চোখেমুখে কৌতুহল কি হয়েছে! এই মুহুর্তে পরিস্থিতি সামলাতে হবে। ফাহাদ ভালো করে চোখমুখ মুছে নিলো। এরপর ক্যান্টিনে গিয়ে বললো,
“কি হয়েছে কি এখানে? এত হৈচৈ কেন? আর ক্যান্টিনে কি সবার? লাঞ্চ টাইম যে পেড়িয়ে গেছে সে খেয়াল কি আছে আরো? যাও সবাই যে যার কাজে।”
ফাহাদের ধমকে সবাই চলে যায়। ক্যান্টিন এখন পুরোপুরি শান্ত। ফাহাদ ইশারায় পৃথাকে চলে যেতে বললো। পৃথা চোখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো। প্রিয়াও চোখ মুছতেছে। কিন্তু বারবার চোখে পানি এসে পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গিয়েছে। ফাহাদ গিয়ে প্রিয়ার পাশে বসলো। প্রিয়া ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো,
” স স স্য রি স্যার! আ..মি কাজে যাচ্ছি।”
প্রিয়া চলে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ফাহাদ হাত টেনে ধরে। প্রিয়া দাঁড়িয়ে পড়ে। ফাহাদ প্রিয়ার সামনে গিয়ে চোখের পানি মুছে বললো,
“এই মিষ্টি চোখে পানি মানায় না। কারা কাঁদে জানেন? যারা হেরে যায়। আপনি কি এত সহজেই হেরে যাবেন?”
প্রিয়ার কি হলো, কে জানে! দুম করে কাঁদতে কাঁদতে ফাহাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
“কেন সবসময় আমার সাথেই এমন হতে হবে কেন!”
ফাহাদ প্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“কাম ডাউন প্রিয়া।”
প্রিয়া ফাহাদকে ছেড়ে দিয়ে দৌঁড়ে চলে যায়।…

চলবে…

তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-০৮

0

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৮
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.

ফাহাদ সকাল সকাল অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। তার কারণটাও প্রিয়া।
প্রিয়া অফিসে আসে ১০ মিনিট আগে। প্রিয়াকে আসতে দেখেই ফাহাদ মনে মনে বলে,
“এই মেয়েটাকে দেখার জন্য আমি ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে অফিসে এসে বসে আছি আর মহারাণী আসলো মাত্র ১০ মিনিট আগে!”
ফাহাদ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা শুরু করলো প্রিয়াকে। কারণে-অকরাণে প্রিয়ার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। একটু পরপরই নিজের রুমে ডাকছে। এই ফাইল, ঐ ফাইল প্রিয়াকে দিয়ে ঘাটাচ্ছে সামনে বসিয়ে। আর সেসময়টুকুই আড়চোখে প্রিয়াকে দেখছিল ফাহাদ। প্রিয়া বিষয়টা খেয়াল করলেও প্রথম কয়েকদিন মনের ভুল বলে এড়িয়ে চললো। কিন্তু বিষয়টা এখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। অফিসের প্রায় অনেকেই বিষয়টাকে নিয়ে কানাঘুষা করছে। প্রিয়া একদিন ফাহাদকে বললো,
“স্যার একটা কথা বলবো?”
“হ্যাঁ শিওর।”
“আপনি আমায় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন কেন?”
“সেকি? আমি কখন আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম?”
“দূর থেকে কোনো ছেলে ফলো করলে সেটা মেয়েরা বুঝতে পারে, আর আপনি এত কাছ থেকে আমায় দেখেন সেটা আমার চোখে পড়বে না?”
“তার মানে বলতে চাইছেন আমরা কাছাকাছি থাকি?”
“এমন কখন বললাম আমি?”
“বলেননি?”
“না।”
“আচ্ছা বেশ! তা কে বললো আমি আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি?”
“বলতে হবে কেন? আমি নিজেই দেখেছি।”
“তার মানে আপনিও আমায় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন?”
“মোটেও না।”
“না দেখলে জানলেন কি করে যে আমি তাকাই?”
“চোখ পড়ে যায়। তাছাড়া অফিসের অনেকেই বিষয়টা নিয়ে খুব মাতামাতি করছে।”
“আপনার খারাপ লাগে তাতে?”
“অবশ্যই। যেখানে আমি কোনোভাবেই ইনভলভ্ নই সেখানে আমাকে নিয়ে কোনো কানাঘুষা হোক সেটা আমার একদম পছন্দ নয়।”
“ওকে ওকে রিলাক্স! এত রেগে যাচ্ছেন কেন?”
“আপনি বুঝতে পারছেন না স্যার।”
“কি বুঝতে পারছি না আমি?”
“আপনি কিছুই বুঝতে পারেন না।”
“আমি অনেক কিছুই বুঝি। বরং আপনিই বুঝেন না।”
“ধ্যাত! আপনার সাথে কথা বলা আর কলাগাছের সাথে কথা বলা একই কথা।”
প্রিয়া রাগ করে চলে গেলো। আর ফাহাদ হেসে দিলো।
“মেয়েটাকে এতদিন চুপচাপ স্বভাবের মনে হলেও বেশ রাগ আছে দেখা যাচ্ছে।”

তার পরেরদিন থেকেই প্রিয়া অফিসে আসা বন্ধ করে দেয়। একদিন,দুইদিন করে পেড়িয়ে যখন সময়টা এক সপ্তাহে চলে যায় তখন ফাহাদের মনে ভয় ঢোকা শুরু করে। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না। তবে কি প্রিয়া চাকরীটা ছেড়ে দিলো! ভালোবাসা পাওয়ার আগেই কি হারিয়ে গেলো! নাহ্! এসব কিছুই ভাবতে পারছেনা ফাহাদ। এক অজানা ভয় মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে।
ফাহাদ অফিস থেকে প্রিয়ার নাম্বার জোগার করে ফোন দেয়। কিন্তু অদ্ভুত! ফোন নাম্বারটা বন্ধ। হলো কি মেয়েটার। এবার ফাহাদের মনটা উতলা হয়ে পড়লো। কি করবে না করবে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
রুমের মধ্যে একা একা পায়চারী করছিল। ফাহাদের মা এসে বললো,
“কি হয়েছে তোর? কয়েকদিন ধরেই তোকে অস্থির দেখাচ্ছে।”
ফাহাদ মায়ের হাত জড়িয়ে ধরে বললো,
“মা, আমি বোধ হয় প্রিয়াকে হারিয়ে ফেলেছি।”
“মানে? কি হয়েছে?”
“আজ সাতটা দিন হয়ে গেলো প্রিয়া অফিসে আসেনা। কোনো খোঁজখবরই নেই। ফোন নাম্বারটা পর্যন্ত বন্ধ।”
“এত চিন্তা করিস না বাবা। হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে।”
“চিন্তা তো আমি করতে চাইনা মা। কিন্তু ওর অনুপস্থিতি কেন যেন আমায় বেশিই টেনশনে ফেলে দিচ্ছে। এক মুহুর্তে কাউকে এত ভালোবাসা যায় এটা আমি বিশ্বাসই করতাম না যদি না আমার সাথে হতো।”
“আল্লাহ্ সহায় আছে। খারাপ কিছু হবেনা দেখে নিস।”
“যদি সত্যিই হারিয়ে ফেলি?”
“ধুর পাগল! হবেনা এমন কিছু। তোর ভালোবাসা তুই ফিরে পাবি। ওর কোনো ফ্রেন্ডকে চিনিস না?”
“আমি তো তেমন করে কিছুই জানিনা ওর ব্যাপারে। শুধু জানি ওকে ভালোবাসি। এখন এটা ভালোবাসা নাকি আকর্ষণ এটা বোঝার জন্য নিজেই নিজেকে সময় দিচ্ছিলাম। আর এরমধ্যেই এই ঘটনা ঘটে গেলো। তবে ওকে অফিসের একটা মেয়ের সাথে বেশিই মিশতে দেখি। নাম মেবি পৃথা।”
“তাহলে ওকে জিজ্ঞেস করলেই তো পারিস।”
“তাইতো! এটা তো আমার মাথায়ই আসেনি। টেনশনে মাথা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো। কালই অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করবো।”
“পাগল ছেলে আমার। আচ্ছা শোন, মৃন্ময় এসেছে আজ।”
“কি বলো? কখন এসেছে?”
“বিকালে এসেছে। একটু আগে বাহিরে গেলো।”
“ওহ।”
মৃন্ময় আর ফাহাদ খালাতো ভাই। দুজনের সম্পর্ক শুধু ভাইর’ই নয় খুব ভালো বন্ধুও ওরা।
কিছুক্ষণ পরই মৃন্ময় ফোন দেয় ফাহাদকে।
“হ্যালো ফাহাদ।”
“হ্যাঁ বল।”
“অফিস থেকে ফিরেছিস?”
“আরো আগেই। তুই কোথায়?”
“বাহিরে আছি। আসছি এখনই।”
“আচ্ছা আয়।”
ফোন রেখে কপালে হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে ফাহাদ। মনটা খুব অস্থির। যতক্ষণ না প্রিয়ার কোনো খোঁজখবর পাবে, প্রিয়াকে একটা নজর দেখতে পারবে ততক্ষণে পর্যন্ত শান্তি পাবেনা ফাহাদ। মলিন মুখে ঘরে প্রবেশ করে মৃন্ময়। মৃন্ময়কে দেখেই উঠে বসে ফাহাদ।
“কিরে মৃন্ময় শরীরের এই অবস্থা কেন তোর?”
“আর শরীর! শরীরে মন-প্রাণ না থাকলে কি শরীর ঠিক থাকে?”
“মানে?”
“একজনকে খুঁজছি। মনটা তার কাছেই।”
“কে? রিমি?”
“আরে না। আমার সেই প্রেয়সী।”
“যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছিল?”
“হ্যাঁ। ওকেই তো আমি ভালোবেসে প্রেয়সী বলে ডাকতাম।”
“চুপ কর শালা! তুই যেই কাজটা করেছিস মেয়েটার সাথে এরপরও কোন মুখে বলিস ভালোবাসার কথা?”
“আমি জানিরে ভাই। খুব বেশি ভুল করে ফেলছি। কিন্তু কি করবো বল? ওর থেকে দূরে গিয়েই তো ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে পেরেছি।”
মৃন্ময়ের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ফাহাদ। ভালোবাসা বুঝি এমনই। দূরে গেলেই ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করা যায়।
“তো কোথায় খুঁজছিস তাকে?”
“পৃথিবীটা গোল। একটা সময় ঠিকই পেয়ে যাবো।”
“ছবি আছে? থাকলে দেখা।”
“উঁহু! ছবি না। আমার প্রেয়সীকে সামনে এনে দেখাবো। দেখবি কত সুন্দরী সে!”
“তাই? ছবি না দেখালে নাই। আমারও এত ইন্টারেস্ট নেই অন্য কাউকে দেখার। তবে তোর প্রেয়সী যত সুন্দরীই হোক না কেন, আমার দেখা সেই সাদা পরীর মত সুন্দর নয়।”
“সাদা পরী কোথায় পেলি তুই? আর কথাবার্তা এমন কেন?”
“কেমন?”
“কেমন যেন প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি।”
“ওরে এটা প্রেম নয়! ভালোবাসা। কিন্তু আমারও যে তোর মত দশা।”
“কেন? কি হয়েছে?”
“হারিয়ে ফেলেছি পরীটাকে।”
“কিভাবে?”
“নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। ভালোবাসার কথা জানানোর আগেই পাখি ফুড়ুৎ। এখন তোর মতই দেবদাস হয়ে খুঁজছি।”
“হায়রে কপাল! দুই ভাইয়েরই ফুডা কপাল বুঝলি। আল্লাহ্ যে কবে পাইয়ে দিবে তাদের।”
“আশা ছাড়ছিনা। ভালোবাসার টানে হলেও খুঁজে বের করবোই।”
দুজনে গল্প করতে করতে শুয়ে পড়লো। রাতে খেলোও না। খাবে আরকি! দুজনেরই তো খুশিতে পেট ভরে গেছে। ভালোবাসার মানুষের কথা মনে পড়লে নাকি অদ্ভুত এক ভালোলাগা তৈরি হয় আর তখন খাওয়ার প্রয়োজন হয়না। পেট আপনাআপনি ভরে যায়। সে রাতে দুই ভাই মিলে জম্পেশ আড্ডা দিয়েছে। দুজনের আড্ডার মানুষটাই তাদের ভালোবাসা।
মানুষটা এক, অনুভূতিগুলো আলাদা। যেটা জানেও না দুই ভাই। কিজানি কি আছে কি কপালে!
.
.
পরেরদিন সকালে রেডি হয়ে অফিসে গেলো ফাহাদ। অফিসে গিয়েই আগে পৃথাকে খুঁজলো। পৃথা তখনো অফিসে আসেনি। তাই তোয়াকে বলে রেখেছিল পৃথা আসলে জানাতে।অফিসে আসার পর পৃথার আর যাওয়া লাগেনি। ফাহাদই এসে পড়েছে। এই নিয়ে ১০ বার আসা-যাওয়া হয়ে গেছে। পৃথাকে দেখেই এগিয়ে গেলো ফাহাদ। পৃথা বললো,
“স্যরি স্যার। আমি এখনই যাচ্ছিলাম।”
“না সমস্যা নেই। আসলে একটা কথা জিজ্ঞেস করার জন্য ডেকেছিলাম।”
“জ্বী স্যার বলুন।”
“আসলে…”
ফাহাদ আমতা আমতা করতে লাগলো। অবশেষে সব লাজ-লজ্জা কাটিয়ে বলেই ফেললো,
“প্রিয়ার কি হয়েছে? অফিসে কেন আসছেনা?”
পৃথার চেহারায়ও চিন্তিত ভাব আসলো। মলিন মুখে বললো,
“জানিনা স্যার। অনেকবার ফোন করেছি। ফোন বন্ধ পেয়েছি বারবার। আর ওর বাড়িও চিনিনা আমি।”
“ওহ।”
ফাহাদ চলে যাচ্ছিলো। আস্তে আস্তে সব আশার আলোই যেন নিভে যাচ্ছিলো। হুট করেই পৃথার মুখে শুনতে পেলো,
“প্রিয়া!!”
ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে পেছনে তাকালো। হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে ফাহাদের। প্রিয়া এসেছে। ফাহাদের মত খুশি মনে হয় আর কেউ নেই আজ। পরক্ষণে আবার রাগও হলো। এতদিন কষ্ট দেওয়া! এর শাস্তি তো পেতেই হবে।”
ফাহাদের পিএ তোয়াকে ডেকে বললো,
“প্রিয়াকে আমার রুমে পাঠিয়ে দাও।”
“ওকে স্যার।”
কিছু সময় পর প্রিয়া ফাহাদের রুমে যায়। আজ কিছুই বলছেনা প্রিয়া। ফাহাদ ভেবেছিল সেদিনের মত হয়তো বাচ্চামো করবে, বকবক করবে কিন্তু এমন কিছুই করেনি প্রিয়া। শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো চঞ্চলতা নেই। আগের থেকে শুকিয়ে গিয়েছে, চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। অজানা ভয়ে বুকে মোচর দিয়ে উঠলো ফাহাদের। কি হয়েছে প্রিয়ার!…..

চলবে…..