Sunday, August 3, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1546



শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৪

0

#শুধু_তোমায়_ঘিরে💞
#Writer_Nondini_Nila
#Part_4

“রুস্তম মেয়েটা কোথায় গেল?”
“জানি না স্যার। হয়তো চলে গেছে।
আশেপাশে তাকিয়ে ছোয়াদের খুঁজে।
“উফ সেট মেয়েটার ডিটেলস আমার চাই।
“ডোন্ট ওয়ারি স্যার আমি আছি তো আমি আপনাকে ওই মেয়ের খবরা-খবর এনে দেব।
ছোঁয়ার উপর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিল মাহের কিন্তু রুস্তম ডাকে ওর কথা কাটাকাটি হয়
কথা গুলো হলো,
স্যার আপনি কোন মেয়ে দেখেই ভাবে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন অবিশ্বাস্য!
চুপ করবে তুমি।
স্যার আপনি প্রেম পরেছেন?
দেখো ফালতু কথা বলবে না। সত্যি মেয়েটাকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু তাই বলে প্রেমে পড়েছি তা বলতে পারোনা চাইলে কি আমি ভালোবাসতে পারি এটা বলতে পারো কারন একে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।

রুস্তম মাহের এর কথায় স্তম্ভিত হয়ে যায় বড় বড় চোখ করে সে নিজের স্যারকে দেখছে।
স্যার একদম ভালোবেসে ফেললেন এক দেখায়।
রুস্তম ভালোবাসা এক সেকেন্ডে হয়। সো আমি তো অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। ভাবতে পারবে না ও কন্ঠ আমাকে কতটা পুলকিত করেছেন। তুমি খুব ভালো করে জানো আমি গানটান ভুল করে শুনি না। কিন্তু ওই নজরকাড়া কণ্ঠ আমাকে মুগ্ধ করেছে
ওর দৃষ্টি আমাকে পাগল করে দিয়েছে। কি তার চাহনী, সুন্দর হাসি, আমি মুগ্ধ আই এম লাভ ফর ইউস। ওকে আমার চাইই চাই। আমার ২৮ বছর জীবনে আমি ফার্স্ট কোনো মেয়েকে দেখে এতটা উদাসীন হয়ে পড়েছি। যার মাঝে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছি। ও শুধু আমার জন্যই তৈরি হয়েছে। ওকে এক দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি ইটস লাভ এন্ড ফাস্ট সাইড।তুমি জানো ওকে যখন দেখছিলাম আমার আর কোন দিকে খেয়াল ছিল না শুধু ওর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলাম।মনে হচ্ছিল কতদিনের চেনা কত আপন ওর জন্য আমি এতোদিন নিঃসঙ্গ ছিলাম কালকে আমার মনে ধরেনি। আমার প্রিয়সি কে আমি পেয়ে গেছি এবার শুধু নিজের করার পালা।
রুস্তম হা করে মাহের এর দিকে তাকিয়ে আছে।
কথাগুলো বলে আবার বাচ্চাগুলোর দিকে তাকাতেই দেখে মেয়েটা নেই। কোথায় গেল পুরো পার্ক খুঁজে পাওয়া গেল না। হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে এলো।বাসায় এসে দেখতে পেল নিজের কাজের লোক খুব বিশ্বস্ত দুজনের মৃত্যু। তাদের দেখে মাহের খুব কষ্ট পেল কিন্তু কিছু করার নেই এমন আপন অনেককেই মৃত্যুবরণ করতে দেখেছে ও। চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে এলো। বিশাল বড় একটা রম, কাচের সাদা জানালা, নরম তুলতুলে একটা বিছানা, কিন্তু এত সুন্দর রুমটা সুন্দর নেই খুব নোংরা হয়ে আছে
এইসব কিছু করেছে ‌ সে আর কেউ নয় মাহেরের চিরশত্রু নিহাল।
বাইরে সব গার্ডরা পড়েছিল কিন্তু কারো শরীরে আঘাতের চিহ্ন নাই তার মানে সবাই কি ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এবারও নিশ্চিত হলে এসব কিভাবে করেছে? এক মাস আগে একটা নতুন লোক এনেছিলো খাবার তৈরি করার জন্য! সেই নিহালে লোক। যার দ্বারা সবাইকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে যার জন্য বাসায় ঢুকতে হয়েছে না হলে এটা সম্ভব ছিল না।
রুস্তম সবাইকে জাগা না করলো। বাসা পুরো সাফ করা হলো এক ঘন্টার ভেতরে।মায়ের চোখ বন্ধ করে তার ইজি চেয়ারে বসে আছে। রাগের চোখমুখ শক্ত হয়ে আসছে কিন্তু রাগ নিমিষে ভুলে গেল। চোখ বন্ধ করতে এসে তার প্রিয়সী কে দেখতে পেল। সেই হাসি সেই চাহনি সেই সুর যা মাহেরকে ঘায়েল করেছে। রাগের মাঝেও মাহের চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটালো। রাগটা ধরে রাখতে পারছে না। রুস্তম তখন রুমে এসে দেখে তাঁর স্যারের এই অবস্থা। বিস্ময়ে মুখটা হা করে তাকিয়ে আছে ‌মাহের এর দিকে এত কিছু ঘটে গেছে স্যার বসে বসে হাসছে। অবাক করা কান্ড।

মাহের চোখ মেলে দেখে রুস্তম বড় বড় চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,
ও বিরক্ত হয়ে বলল, কী হয়েছে রুস্তম এমন সং হয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে আছো কেন?
স্যার আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন নাকি?
হোয়াট?
মাহের চিৎকার শুনে রুস্তম আমতা আমতা করে বলে, সরি স্যার আসলে আপনি হাসছেন তো তাই।
তো হাসবো না কাঁদবো। তুমি কি আমাকে কাঁদতে বল।
এমা কি বলছেন স্যার কাদতে কেন বলবো আমি তো চাই আপনি সব সময় হাসি খুশি থাকেন।
তো হাসছি অবাক হচ্ছ কেন?
হঠাৎ করে একজন গম্ভীর মানুষ কে এমন হাসতে দেখলে সবাই অবাক হবে স্যার? আর পাগল আখ্যায়িত করবে।
কি বললে তুমি?
ক‌ই কিছু না তো স্যার আমি আসছি।
এই যে দাঁড়া।
রুস্তম ভয়ে ভয়ে বলে কি?
আমার সুইট হার্ট এর খবর কালকের মধ্যেই চায়।
সুইটহার্ট কে স্যার?
ভীতু মুখ করে।
মাহের রেখে তাকাতেই।
ওকে স্যার ওকে।

কোনমতে ছুটে চলে আসে বাইরে আর বলে বাঁচলাম। স্যার শেষে কেন প্রেমে পাগল হয়ে।
পরদিন রোস্তম কে নিয়ে মাহের গার্ড ছাড়া গাড়ি নিয়ে ছোঁয়ার ভার্সিটিতে আসে।
ছোঁয়া ক্লাস শেষ করে ব্যষ্টিক ম্যামের কাছে যায়। একটা প্রশ্ন বুঝতে তাই ওর বের হতে আধা ঘন্টা লেট হয়। অফিস রুম থেকে বের হয়ে দেখে পুরো ভার্সিটি ফাঁকা। সবাই চলে গেছে একাই ও একাই ধীর পায়ে মাঠ পেরিয়ে গেট দিয়ে বের হয়।
এদিকে মাহের বিরক্তে নাক মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। এত সময় জীবনে কারো জন্য অপেক্ষা করে না কিন্তু আজকে নিজের প্রেয়সীর জন্য করতে হচ্ছে। খুব এক্সাইটেড মাহের। সারা রাত ঘুমোতে পারেনি শুধু নিজের প্রেয়সী দেখেছে সেই হাসি সেই সুর কানে বেজেছে। পাগল করে দিয়েছে ওকে ওর তোর স‌ইছে না কিন্তু উপায় নাই‌।
ছোঁয়া বাইরে আসতেই চমকে উঠলো,
“কে আপনি আমার হাত ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছারুন আমার হাত।
একজন অপরিচিত লোক আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ভয়ে হাত ছোটানোর চেষ্টা করছি পারছি না তার মুখটা আমি দেখতে পারিনি। আমার কথা শুনতে পেল কিনা কে জানে সে আমাকে একটা গাড়ির কাছে এনে ছাড়লো আর আমার দিকে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো।

আমি রেগে ছিলাম কিন্তু তার দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেলাম। আমার সামনে দাড়িয়ে আছে একটা অতি সুদর্শন পুরুষ যার জীম করা বডি, গায়ে রং অত্যাধীক ফর্সা এতো ফর্সা কেন? নীল শার্ট সাদা কোট, চোখে কালো সানগ্লাস যা খুব এ্যাটিডিউট লুক নিয়ে খুলে নিলো।চোখের মনি নীল, আমি হাঁ করে চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। ঠোটের কোনে মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আরো চমকালাম লাল টকটকে ঠোঁট যেন লিপস্টিক দিয়েছে কিন্তু না কারন উনি ঠোট কামড়ে ধরে হাসছে।চুল গুলো ব্রাউন কালো কালার মিলিত যা পেছনে জুটি করে আছে।আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি যেন কোন নায়ক দেখছি এতো সুন্দর ছেলে কখনও দেখি নি।
বিউটিফুল মাই লেডি। তুমি ও কি আমাকে ভালোবাসে ফেললে আমার মতো এক দেখায়।
ছেলেটার কথায় চমকে উঠলাম, কি সব বলছে আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম,
বুঝতে পারছো না।
আপনি কে আর আমাকে এভাবে এখানে আনলেন কেন?
আমি তোমার ফিউচার হাজবেন্ড মাই লেডি।
কিহ? অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম লোকটার কথায়।
হাজবেন কিসের হাজব্যান্ড কি সব বলছেন আপনি পাগলের মত!
সামনের লোকটা আমার কথায় কিছু না বলে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করল,
হোয়াটস ইওর নেম?
আমি আমতা আমতা করে বললাম, জি ছোঁয়া।
রূস্তম নাম তো ঠিকই বলেছিলে।
রুস্তম এগিয়ে এসে বলল, স্যার আমি কখন আপনাকে ভুল ইনফরমেশন দিয়েছে।
মাহের সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে ছোয়া দিকে তাকিয়ে বলল,
আমি ভনিতা করা একদম পছন্দ করি না যা বলার সরাসরি বলছি। আই লাভ হার ফর ইউ। তোমাকে আমি প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি কিভাবে কেন কিজন্য আমি জানিনা কিন্তু আমি শুধু জানি আমার তোমাকে চাই। তুমি শুধু আমার আমার হবে আমার বউ হবে। তোমাকে ঘিরে হবে আমার ভালোবাসার সংসার। যেটা কখনো আমি চাইনি সেটা তোমাকে দেখার পর থেকে আমার মনের কনে বাসা বাঁধছে। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।তোমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পেয়েছি তোমার ফ্যামিলিতে কেউ নাই ফ্যামিলি প্রবলেম বাদ। আমি কোন কিছুতে লেট করা পছন্দ করি না তাই তুমি চাইলে আজকেই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলব। আসলে অনুষ্ঠান করতে বিয়ে করতে পারব না তাই চুপিচুপি বিয়েটা করতে হবে। আমি চাইনা আমার জন্য তোমার বিপদে পড়তে হোক।
ছোয়া হা করে মাহেরের দিকে তাকিয়ে আছে মাহের একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে।

#চলবে

শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৩ | বাংলা ধারাবাহিক গল্প

0

#শুধু_তোমায়_ঘিরে💞
#Writer_Nondini_Nila
#Part_3

ফোনটা এই পর্যন্ত দশবার বেজে গেছে আমি ইচ্ছে করেই রিসিভ করিনি চুপ করে বিছানায় শুয়ে আছি চোখ বন্ধ করে। ফোনের শব্দে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করছি।
তখন হুড়মুড় করে উঠে বসলো ঐশী। চোখ কচলে রেগে আমার দিকে তাকালো।
ফোনের আলোতে ওর মুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
তুই কি আমাকে শান্তিতে ঘুম পারতে দিবিনা।
আমি আবার কি করলাম?
আবার জিজ্ঞেস করছিস কি করলাম ফোন রিসিভ করছিস না কেন ?
আমার কথা বলতে অসহ্য লাগে তাই।
তাহলে কেটে অফ করে দিচ্ছিস না কেন? এইটা শব্দটা আমার ঘুমের বারোটা বেজে গেল!
কাটলে বাসায় এসে উপস্থিত হবে সেটা কি ভালো হবে?
তাহলে সাউন্ড টা তো কমিয়ে রাখতে পারিস।
হ্যাঁ কিন্তু আমি সাউন্ড কমানো ভুলে গেছি।
ওফ তোর সাথে আসলেই কথায় পারা যায়না। তোকে কে বলেছিল ইন্ডোয়েট ফোন কিনে দিতে?
সেটা আমি কি জানি মাহের কে জিজ্ঞেস কর?

ঐশী আমার দিকে কিছুক্ষণ নাক মুখ কুঁচকে তাকিয়ে থেকে রেগে গটগট করে ওয়াশরুমে চলে গেল।
ফোন বাজা অফ হয়ে গেছে তখনই এসএমএসের শব্দ আসলো। আমি আর এসএমএস দেখলাম না সিওর এসএমএসে কোন হুমকি আছে যা দেখলে আমার ফোন রিসিভ করতে হবে। তার থেকে বরং ঘুমিয়ে পরি যা হওয়ার সকালে হবে।
ঐশী আসার আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙলো লেট করে। উঠে দেখি দশটা বেজে গেছে। ঐশী রুম নেই আমি একাই পরে মরার মত ঘুমাচ্ছি।
উঠে আমি ফোন ধরে দেখে দেখি ঠিকই মাহের রাতে ফোন রিসিভ করার জন্য অনেক এস‌এসমেস দিয়েছে শেষে গুড নাইট লিখেছে আর বলেছে কাল রাতে নাকি জার্মানি গেয়েছে।
কালকে চলে গেছে মেসেজটা পড়ে আমি না চাইতে ও বুকের ভেতর ব্যথা অনুভব করলাম। লোকটা কালকে চলে গেল শুনেছিলাম আজকে যাবে।
তারপর নিজের আফসোস নেই কথাটা ভেবে নিজেই বোকা বনে গেলাম গিয়েছে ভালোই হয়েছে। দুইদিন অন্তত শান্তিতে থাকতে পারবো।

এতো লেট করে উঠেছি যে আজকে আর ভার্সিটিতে যেতে পারলাম না। বাসায় বসে রইলাম। আজকাল কেউ ডিস্টার্ব করার নেই সকালের নাস্তা করে আবার ধপ বিছানায় শুয়ে পরলাম।
ঘুম আসছেনা মাহের এর সাথে প্রথম দেখা হওয়া থেকে কথাগুলো মনে পরতে লাগলো। সেদিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে অভিশপ্ত দিন।

তিন মাস আগের কথা.
জীবনটা আমার ভালোই চলছিল নিজের খেয়াল-খুশি মতো চলেছিলাম। চাচার বাসায় কষ্টেই ছিলাম এখান থেকে বের হতে পেরে আমার অভাব ছিল কিন্তু নিজের ইচ্ছামত চলতে পারতাম। কিন্তু সমাজে একটা মেয়ে চলা খুবই কঠিন।কথা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে কিন্তু মহান আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছে।
ভার্সিটি আর একটা পার্টটাইম জব ছাড়া আমি আর কোন দিকে যাইতাম না। তো ঐশী আমাকে একদিন জোর করে একটা পার্কে নিয়ে যায় শুক্রবার করে। প্রথমে যাওয়ার জন্য রাজি না থাকলে সেখানে গিয়ে খুব ভালো লাগে। আমরা সেখানে সময় কাটাতে থাকি।
সেখানে কিছু বাচ্চারা থাকে তো বাচ্চাদের সাথে ছোটাছুটি করি ছোটাছুটি করে হাতে আমরা সবাই রেস্ট করি এমন সময় ঐশী বলে ওঠে আমাকে গান গাইতে।আমি কখনো গান শিখিনি কিন্তু মীরাক্কেলে আমার আবার গানের গলাটা একটু ভালো আর সেইটা একদিন ঐশীকে শুনিয়েছিলাম। তো করলো শুরু সবাই মিলে জোর আমি না করছি কে শুনে কার কথা শুনাতেই হবে সবাই মিলে জেঁকে ধরলো।
না পেরে রাজি হয়ে গেলাম।

~~~তোমার ইচ্ছে গুলো, ও ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো,ইচ্ছে হলে, আমায় দিতে পার , আমার ভালো লাগা ভালোবাসা তোমায় দেব আর ও।
তোমার ইচ্ছে গুলো, ও ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো,ইচ্ছে হলে, আমায় দিতে পার , আমার ভালো লাগা ভালোবাসা তোমায় দেব আর ও।
তুমি হাতটা শুধু ধরো আমি হব না আর কারো,
তোমার সপ্ন গুলো আমার চোখে হচ্ছে জরোসরো।
তোমার ইচ্ছে গুলো, ও ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো,ইচ্ছে হলে, আমায় দিতে পার , আমার ভালো লাগা ভালোবাসা তোমায় দেব আর ও।~~~

এদিকে মাহের ছদ্মবেশে ও আর ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট কে নিয়ে পার্কে এসেছে। কারণ জানতে পেরেছে বিপক্ষে দল এই পার্কে একটা বোমা রেখেছে। তো তাই তাদেরকে রক্ষা করার জন্য আর বোমাটা খোঁজার জন্য ওর আশা। পুরো পার্ক তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে কিন্তু তেমন সন্দেহজনক কিছুই পায়নি।
তাই রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সুপারি গাছে ডান হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুস্তম।
“স্যার আমার বিশ্বাস ওরা আমাদের বোকা বানিয়েছে।
সেতো আমি বুঝতেই পেরেছি রুস্তম আর কেন এমনটা করেছে সেটাও আমার মাথায় খুব ভালোভাবে ঢুকেছে এখন।
কেন স্যার?
বাসায় কল লাগাও।
বাসায় কেন?
রেগে রুস্তম এর দিকে তাকাতেই রুস্তম আর জিজ্ঞেস করার সাহস পেল না। ঢোক গিলে তাড়াতাড়ি ফোন বের করে বাসার কল লাগিয়ে যা শুনতে পেল তাতেও স্তব্ধ হয়ে গেল।
স্যার বাসায় আক্রমণ হয়েছে।
এবার বুঝতে পেরেছ কেন এটা করেছে?
জি স্যার আপনাকে বাসা থেকে সরানোর জন্য।
তাহলে এখন কি হবে স্যার পেনড্রাইভটা কি আপনি বাসায় রেখে এসেছিলেন?
মাহেন বাঁকা হাসলো রুস্তমের কথায় তারপর নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটা ছোট্ট কিছু একটা বের করে রুস্তমকে দেখালো।
আপনার মাথায় অনেক বেশি বুদ্ধি।
তা তো থাকতেই হবে। যাই হোক আমি হলাম মাফিয়া বস আমার সাথে টক্কর দিয়ে এত সহজে তো সবাই পার পেয়ে যাবে না।এই পেনড্রাইভটা নিতে চাইলে নিহালকে আমাকে 500 ডলার দিতে হবে না হলে সোজা পুলিশের কাছে।
বলেই মাহের শয়তানী হাসি দিল।

কথাগুলো বলছিল তখন মাহের এর কানে আসে একটা কন্ঠ। যে তার অপূর্ব কন্ঠে গান গাইছে। কন্ঠটা কানে আসতেই মাহের এর বুকের ভেতর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। গানের অপূর্ব সুরে মাতাল ও বিভোর হয়ে যায়। এক পা দু’পা করে গানের মালিককে খুজতে লাগে।
কি অসাধারণ কন্ঠ মনটা ভড়ে আসে।মাহের সেই সুরে মরিয়া হয়ে ওঠে।
ও ওই কন্ঠের নারীর প্রেমে পরে যায় তার এক ঝলক মায়াবী মুখ দেখে।
ও থমকে যায় মুগ্ধ হয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে ঠোট নাড়িয়ে গানের সুর তুলছে আর দূরে থেকে একজন তার প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে।
খোলা চুল, কপালে ছোট টিপ ঠোঁটে লিপস্টিক বিহীন গোলাপি ঠোঁট।গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা ফর্সা। মেয়েটি গান গাওয়া শেষ করে চোখ মেলে তাকালো সাথে সাথে মাহের নিজের বুকে হাত দিলো। কি চাহনী যা মাহের কে খুন করতে সক্ষম। কাজল বিহীন টানা চোখ ঘন কালো পাপড়ি চোখের মাহের সেকেন্ডের মাঝে চোখের প্রেমে পরে যায়।
মেয়েটি বাচ্চাদের প্রশংসা শুনে হাসছে তারপর সবার সাথে খিলখিলিয়ে হেসে কথা বলছে কি বলছে তা মাহের শুনতে পাচ্ছে না আর না শুনতে চাইছে ও তো ওর মায়াবতী দিকে মুগ্ধ তাকিয়ে আছে।কি হাসি যা মাহেরকে প্রেমে ফেলে দেয় হা করে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
পাশে দাঁড়িয়ে হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে মাহের এর দিকে তাকিয়ে আছে রুস্তম অবিশ্বাস্য চোখে।
স্যার
মাহের শুনছে না হা করে তাকিয়ে আছে সামনের মেয়েটার দিকে অপলক।রুস্তম মাহেরকে ধাক্কা দিতেই সম্মতি পায়।
বিরক্ত হয়ে তাকায় রুস্তম এর দিকে।

#চলবে

শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০২

0

#শুধু_তোমায়_ঘিরে💞
#Writer_Nondini_Nila
#Part_2

সুইট হার্ট, তুমি আমাকে এত ভয় পাও কেন বলতো?
বলতে বলতে মাহের আমার কপালের ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিল। আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি মাহের এর দিকে। মাহের আমাকে স্পর্শ করতেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
বুকের ভেতর হাটবিট জোরে জোরে লাফাচ্ছে। আমি নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করতে লাগলাম তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
ছারুন প্লিজ আমাকে।
ছারানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম।
মাহেদ আমাকে শক্ত করে ধরে বলল,
ছারার জন্য তো ধরিনি‌। এই যে ধরেছি মৃত্যুর আগে ছারবো না। এখন একটু ভালো বাসতে দাও তো দুদিন দেশে থাকবো না তোমাকে ও কাছে পাব না।
বলেই আমার গলায় মুখ ডুবালো। আমি চোখ বন্ধ করে চোখের জল ফেলছি আমার চোখের পানি মাহের এর গালে পরতেই মাথা উঁচু করলো,
তুমি আবার কাঁদছো?
আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছি উওর দিচ্ছি না।
আমি কাছে আসলে তোমার এতোটাই খারাপ লাগে।

আমি এবার বলে উঠলাম, আপনি আমার কাছে এলে আমার নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে । আই হেইট ইউ। আমার ঘৃনা লাগে আমার স্পর্শ।
মাহেদ রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
রেগে বলে উঠলো,
তুমি খুব জেদি সুইটহার্ট আই লাইক ইট।মাহেদ এর ব‌উ এর এমন জেদ থাকা উচিত।‌ এজন্য আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি। কিন্তু আমার ভালোবাসাকে একদম অপমান করবে না আর এটা ভেবনা তোমার কথায় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব‌। এমনিতেই ব‌উকে নিজের থেকে দূরে রেখেছি এটা যদি তোমার লাইফ রিক্স না থাকতো কখনো করতাম না। তোমাকে সেভ রাখার জন্য আমার থেকে আলাদা থাকতে হবে। এতে যে আমার কতো কষ্ট হয় আমি জানি।
বলেই আমার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকালো মাহেদ। মাহের এর ঘনঘন শ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পরছে আমি চোখ বন্ধ করে আছি।
হুট করেই আমার নাকের ডগায় চুমু দিলো আমি চমকে চোখ মেললাম।
আমাকে ছেড়ে দিলো আমি নিজের সিটে বসে চোখের জল ফেলছি। মাহের আমার একহাত ধরে রেখেই ড্রাইভ করছে।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলেছি।মাহের ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে।একটা রেস্টুরেন্টের পাঁচ মিনিট আগে গাড়ি সাইট করে রাখলো তারপর কাউকে ফোন দিলো 10 মিনিট পর একটা ছেলে একটা প্যাকেট দিয়ে চলে গেল মাহের এর কাছে।
মাহের গাড়ি থেকে নেমে প্যাকেটটা নিয়ে এসেছে। আমি বোঝার চেষ্টা করছি প্যাকেট টা কিসের।
একটু পরেই বুঝতে পারলাম গাড়িতে এনে প্যাকেট খুললো খাবার আছে।
আমি চুপটি করে বসে আছি মাহের খাবার বের করে আমার মুখে ধরলো খাওয়ার জন্য আমি এই কাজ গুলো আগেও দেখেছি মাহের কাছে আসলে এইভাবে আমাকে খাইয়ে দেয়। না করার উপায় নাই ধমকে খাইয়েই ছারবে তাই না করলাম না হাঁ করে খাবারটুকু মুখে নিলাম।
খাবার মুখে নিতে মাহের খাবারের প্যাকেট আমার হাতে দিলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি আমার কাছে দিচ্ছে কেন?
আমার কৌতূহল চাহনি দেখে মাহের হেসে উঠলো আর বলল,
তোমাকে তো সবসময় খাইয়ে দেই আজকে তুমি আমাকে খাইয়ে দাও।
আমি চোখ দুটো ইয়া বড় বড় করে মাহেরের দিকে তাকিয়ে আছি।
কি হলো এমন বিশ্মিত হয়ে তাকাচ্ছ কেন? তাড়াতাড়ি করো আমি কিন্তু কাল থেকে কিছু খাইনি! বলে আমার মুখোমুখি হয়ে বসলো। কাল থেকে কিছু খাইনি মানে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি মাহের এর দিকে।তাও জিজ্ঞেস করলাম না জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু আমি খাইয়ে কিছুতেই দেবো না।
এই লোকটাকে আমি কিছুতেই খাইয়ে দেবো না।
আমি শক্ত হয়ে বসে আছি।
কি হলো এভাবে পাথরে বসে আছো কেন খাইয়ে দিতে পারলাম না একটু সেবা-যত্ন করো স্বামীর।খালি স্বামীর সেবা যত্ন নিতে মন চায় তাই না। আমার কি ইচ্ছে হয় না বউয়ের আদর যত্ন ভালোবাসা পেতে।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,এতো ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে হলে অন্য কারো কাছে যান। আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর কখনো বাঁসবো না আর না স্বামী মানি‌। আমি আপনাকে খাইয়ে দিতে পারব না। আর কি বললেন শুধু আমি আপনার আদর যত্ন চাই আমি এসব চাই না বুঝতে পেরেছেন আপনি জোর করে করেন এইসব।
আমি তীব্র রাগ নিয়ে কথাগুলো বললাম,
আমার কথা শেষ হতেই মাহের মাথা এগিয়ে এনে ফট করে আমার গালে চুমু খেলো আচমকা কান্ডে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম।
সুইটহাট এত রেগে কথা বল না।তুমি রাগলে তোমার গাল লাল টকটকে হয়ে যায়। আমার তো তখন অনেক কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করে।আর খেইয়ে যেহেতু দিতে বলেছি তোমাকে দিতে হবে তাই জোর করতে বাধ্য করো না প্রচন্ড খিদে পেয়েছে তাড়াতাড়ি করো।
আমি বললাম তো আমি কিছুতেই আপনাকে খাইয়ে দেবো না। আপনি নিজে খেয়ে নিন।
মাহের মুখ এগিয়ে এনে বললো, তাড়াতাড়ি করো না হলে আজকেই তোমার সাথে বাসরটা করে ফেলবো যেটা এক মাসে করিনি।
মাহের কথাটা বলে বাঁকা হাসলো আমি স্তম্বিত হয়ে মাহের এর দিকে তাকালাম,
স্তব্ধ হয়ে মাহেরের দিকে তাকিয়ে আছি।
ও তার মানে তোমার বাসর করার ইচ্ছে জেগেছে ওকে নো প্রবলেম দাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে।
বলে খাবার আমার হাঁটুর উপর থেকে নিতে যাবে। আমি চমকে উঠে তারাতারি খাবারের প্যাকেট নিজের হাতে নিলাম,
না না না আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

বলে তাড়াতাড়ি খাবার তুলে ‌মাহের এর দিকে দিলাম।মাহের খুশি হয়ে খাবার মুখে তুলে নিলো।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাহেরকে খাইয়ে দিতে হলো।
নিজের সাথে আমাকে খাবার দিয়েছে। তারপর বাসায় সামনে নামিয়ে দিলো তার আগে একটা কথায় বলেছে,
সুইট হার্ট দুই দিন নিজের খেয়াল রাখবে আমি দেশে থাকব না। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে ‌ রুস্তম কে বলবে। ওকে।
বলে আমার কপালে চুমু দিয়ে শো শো শব্দ করে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

বাসায় এসে দেখি ঐশী চলে এসেছে
ও আমার সহপাঠী ও বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে আছে। আমি ভেতরে ঢুকতে ও বলে উঠলো,
ছোঁয়া তোর এতো লেট এলো কেঝ তুই তো সব সময় আমার আগে এসে পড়েছ?
আমি কিছু না বলে ব্যাগ টেবিলের উপর রেখে জগ থেকে গ্লাস পানি নিয়ে ঢটঢক করে বিছানার উপর বসে খেলাম।
ও আমার দিকে ব্রো কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
তারপর ফট করে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
মাহের আসছিল তাই না।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে সম্মতি দিলাম।
ওর খুশি দেখে কে,
আস্তে বলতি বাসায়। ইস মাহের তোর বর ভাবতেই আমার গর্ব হয়।
আমি রাগী দৃষ্টি তার দিকে তাকালাম।
এ ভাবে তাকাস না প্লিজ। গর্ব হয় বলতে সাহস হয়
কে দেখে সবাই ভয় পায় আর সে কিনা তোর বর ভাবতেই আমার ভালো লাগে। সুইট হ্যান্ডসামটাকে মেনে নেসনা আমি বুঝিনা।
মাহের যদি তোকে পছন্দ না করে আমাকে করতো না আমি এক চান্সে রাজি হয়ে যেতাম সারাদিন মাহের কে নিজের কাছে ধরে রাখতাম।
কত্ত ভালবাসি তোকে বেচারা কথা হয়না করলি অপমান করলি তাও দেখ একটু ভালোবাসা কমায়নি। খেয়ে এসেছিস তাই না। এখন আমি কি খাব আমি আরো ভাবছি তুই আসলে দুজন মিলে রান্না করে খাওয়াব আমার এত টায়ার্ড লাগছে না একা রান্নাঘরে যেতে ইচ্ছে করছে না।
মন খারাপ করে বললো।
সমস্যা নাই আমি রান্না করে দিচ্ছি তুই রেস্ট নে।
তোকে একারণে করতে হবে না আমিও যাচ্ছি চলো।
দেখ আমি জানি তোর এসব অভ্যাস নাই তবুও তুই আমার জন্য করতে যাস আমার জন্য তুই নিজের বাসা ছেড়ে ভাড়া বাসায় আছিস। আমি চাইনা তোর আর কষ্ট দিতে তুই থাক আমি করে দিচ্ছি।

#চলবে

শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০১

0

#শুধু_তোমায়_ঘিরে💞
#writer_Nondini_Nila
#Part_1

রোদে তীব্র আলোয় মধ্যে রাস্তা বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। রোদের তাপমাত্রা আজকে প্রচন্ড বেশি। তখন কোথা থেকে আমার উপর কেউ ছাতা ধরলো। আমি বিরক্ত হয়ে মাথা উচু করে তার দিকে তাকালাম। সে আমি তাকাতেই ৩২ টা দাঁত বের করে হেসে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম, ভাল আছেন?
ছেলেটার কথা শুনে আমার রাগের মাত্রা বেড়ে গেল।একে দেখলেই আমার বিরক্তে নাক মুখ কুঁচকে আসে মন চাই থাপড়িয়ে এর গাল লাল করে দেয়।
কিন্তু আমি নিরুপায় এটা আমি করতেই পারব না। তবুও সালামের জবাব দিলাম, আর দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
“আপনি এখানে কি করছেন আবার আমাকে ফলো করা শুরু করছেন?
ছেলেটা সামান্য হেসে বলল,
“সেতো আমি সবসময়ই করি। এটাই তো আমার কাজ।
“তোমাকে আমার মন চায় কি করতে জানো?
“জানি তো ম্যাম আপনার আমাকে খুন করে ফেলতে মন চায়।
“তাও তোমার ভয় করে না।
“আপনি তো সেটা করতেই পারবেন না। আপনার মতো নরম মনের মেয়ে কাউকে খুন করতে পারে না। শুধু ভাবতে পারে আর ভাবনা দিয়ে তো কিছু হয় না। কিন্তু স্যারের কথা না শুনলে সত্যি খুব করে ফেলবে।
ভয়ার্ত কন্ঠে বলল।
আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি বিরক্ত হয়ে তারপর বললাম,
“যাও এখানে থেকে।
“ছাতাটা ধরেন।
‘ছাতা কেন ধরবো।
ভ্রু কুটি করে বললাম।

“বাপে রে কি রোদ দেখেন না। আপনি তো ঘেমে গেছেন।তা যদি আপনাকে ছাতা না দেই স্যার জানলে তো আমাকে খন্ড করে ফেলে।
“এত ভয় পেয়ে তুমি তোমার স্যারের সাথে থাকো কিভাবে? ওমন গুন্ডার সাথে থাকো লজ্জা করে না।
সামনে ছেলেটা বলল,
“কি যে বলেন ম্যাডাম লজ্জা কেন করবে? স্যার গুন্ডামি করে জানি কিন্তু স্যারের মনটা খুব ভালো আর স্যার সব ভাল কাজই করে। স্যারের জন্য আজ আমি বেঁচে আছি স্যার আমার পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে স্যারের মত মানুষ হয় না। স্যার.
“আচ্ছা থামো তোমার স্যারের গুন গান গাইতে বলি নাই আমি।
রেগে বললাম কিছু একটা বলা যায় না একদম স্যারের গুনো গান গাইতে শুরু করে দেয় যত্তসব।
“ম্যাডাম ছাতা টা ধরেন।
রেগে না করতে যাব তখন দেখি গাড়ি চলে এসেছে। আমি ছাতার আড়াল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
ছেলেটার দৌড়ে এসে বলল,
“ম্যাডাম ছাতা নিয়ে যান। আজকে প্রচুর রোদ।
“দরকার নাই তুমি যাও।
“দরকার হতো না যদি আপনি স্যারের দেওয়া গাড়িটা ইউজ করতেন কিন্তু আপনিতো স্যারের জিনিস ইউজ করেন না কেন যে স্যারকে সহ্য করতে পারেন না বুঝি না।
আমি তার কথার প্রতি উত্তর করলাম। গাড়ির ড্রাইভারকে বললাম,” মামা চলেন।

এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলাম ওর নাম হচ্ছে রুস্তম। যে একজন আমার ফলো কারী অ্যাসিস্ট্যান্ট। সব সময় আমাকে ফলো করো আমি কোথায় যাই কি করি না করি।প্রথমে ব্যাপারটা আমি জানতাম না আস্তে আস্তে জানতে পেরেছি আর জেনেও বেশকিছু লাভ হয়নি আমি তাকে আমার পেছন থেকে সরাতে পারি নাই কারণ তার উপরে যিনি আছেন তিনি যাকে দেখলে আমার কাপাকাপি উঠে যায়। উঠবে না কেন সে হচ্ছে একজন গুন্ডা , সন্ত্রাসী , মাফিয়া বস যাকে দেখে সবাই কাপে। তার নাম শুনলেও সবাই ভয় পেয়ে যায়। আর তার খুবলে কিনা না পড়লাম আমি।

আমি ছোঁয়া। পৃথিবীতে আপন বলতে আমি নিজেই।ছোট থাকতেই বাবা মা মারা গেছে বড় হয়েছি চাচার বাসা লাথি খেয়ে।শেষে সেখানে থেকে বিতারিত হয়ে বর্তমানে দুইবছর যাবত একটা বাসা ভাড়া করে ঢাকা শহরে আছি।আমার সাথে আছে একজন সহপাঠী যার জন্য থাকতে পারছি ফ্রেন্ড কম বোন বেশি।আমরা দুই ভার্সিটিতে পড়ি দুজনে ও পরে প্রাইভেট আমি ন্যাশনাল।
ওরা অনেক ধনী পরিবারের। কিন্তু ওর মন খুব ভালো।
আমি অনার্স প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করি।

ভার্সিটিতে এসে ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে চলে গেলাম। ভার্সিটিতে আমার তেমন ফ্রেন্ড নাই একাই ক্লাস শেষ করলাম তারপর গেটের বাইরে এসে গাড়ির জন্য ওয়েট করতে লাগলাম।
তখনই একটা গাড়ী এসে থামলো আমার সামনে গাড়িটা দেখে আমার হাত পা কাপাকাপি শুরু করে দিলো। এই গাড়িটা দেখলে আমার এই অবস্থা হয়।এখন গাড়ির ভেতর থেকে যে বের হবে তাকে দেখে যে আমার কি হবে সেটা শুধু আমি জানি।ঠিক তাই হলো এখন গাড়ির দরজা খুলে খুব নায়কি ইস্টাইলে বেরিয়ে এলো মাহের। মাহেরের এর দিকে তাকিয়ে আমার চোখদুটো স্থির হয়ে গেল।
সাদা শার্ট পড়ে আছে বুক পর্যন্ত খোলা তাই সাদা বুক দেখা যাচ্ছে। চোখে সানগ্লাস পড়েছিল হাতে ব্লেজার যেটা গাড়ির ভেতরে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে সানগ্লাস খুলে একটা বাঁকা হাসি দিল ঠোঁট কামড়ে। এই টুকুই আমার জন্য যথেষ্ট। একটা বড়সড় ক্রাশ খেলাম নিজের শত্রুর উপর। মাহের অত্যন্ত সুদর্শন একজন পুরুষ। মাহের হাসলে গালে টোল পড়ে। ঠোঁটদুটো রক্তের মত টকটকে লাল। কপালে গুছ ফালিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে যখন হাসে এত সুন্দর লাগে কি বলব আমি নিজে ফিদা হয়ে যায়।কিন্তু এই লোকটা আমার জীবনে অভিশাপ। আই জাস্ট হেট ইউ।

আমি দাঁড়িয়ে থেকেই থরথর করে কাঁপছি। মাহের নিজের বাম হাত উঁচু করে ঘড়িতে সময় দেখে নিল তারপর সচা একদম আমার কাছে এসে দাঁড়ালো কিন্তু স্পর্শ করল না শরীরের কোথাও আমার মাহের আমার থেকে যথেষ্ট লম্বা তাই ঘাড় নিচু করে আমার একদম মুখের কাছে এসে বলল,
“সুইটহার্ট আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে বুঝি।
এত কাছে এসে কথা বলাতে মাহিরে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস সব আমার মুখে বাড়ি খেলো যেন শরীর তো আগে থেকেই থরথর করে কাঁপছিল এখন হার্টবিট বেড়ে গেল। ওরনার কোনা আমি শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে।

হঠাৎ মনে হল আমার আশেপাশে কোথাও মাহের নেই। আমি ফট করে চোখ মেলে তাকালাম,
ঠিকই মাহের আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ফোনে কথা বলছে।আমি ঢোক গিলে আশেপাশে তাকালাম ঠিকই আমার আশেপাশে ছেলে মেয়ে যারা আছে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে মাহের এর দিকে।
পাশে দুইটা মেয়ে কথা বলছিল,
দোস্ত এটা মাহের চৌধুরী না মাফিয়া বস।
আরেকজন বলল হ্যাঁ দোস্ত এই তো সেই কি হ্যান্ডসাম দেখছিস।
হ্যা রে দোস্ত কি সুন্দর কত হ্যান্ডসাম উফ। এর সাথে যদি প্রেম করতে পারতাম।
কি বলছিস এর সাথে প্রেম করবি গুন্ডা তোকেনা শুট করে দেবে।
ধুর প্রেমিকাকে কেউ শুট করে না কি। আমাকে শুট করবে না কিন্তু প্রেম করবো কি করে?
আমি মেয়ে দুটোর কথা কান খাড়া করে শুনছিলাম।তখনই মাহের আমাকে এসে বাম হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
আমি চমকে ওঠে তাকিয়ে দেখি মাহের। মেয়ে দুটো বড় বড় চোখ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।আশেপাশের সবাই সেদিকে মাহেরের কোন তোয়াক্কা নাই। ও গাড়ি দরজা খুলে দিয়ে আমাকে ভেতরে বসতে বলে আমি কাচুমাচু হয়ে ভিতরে বসে পড়ি।মাহের ফোনে কথা বলতে বলতে অন্য পাশে গিয়ে গিয়ে দরজা খুলে ভেতরে আসে।
মাহের গাড়ি স্টার দিলো।
আমি জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি ছাদের এক কোনায়। মাহের ড্রাইভিং করছে আর এয়ার ফোনে ফোনে কথা বলছে।
আমি একবার মাহের এর দিকে তাকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকি। জানালা দিয়ে সুড়সুড় বাতাস এসে আমাকে ছুয়ে যাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে বাতাস অনুভব করছি।
তখনই আচমকা গাড়ি থেমে যায়।আচমকা গাড়ি থেমে যাওয়ায় বাতাস থেমে যায় আমি চোখ খুলে ফেলি।মাহের এর দিকে তাকানোর আগেই মাহের আমার হাতের বাহু ধরে হেঁচকা টানে একদম কাছে টেনে নেয়। আমি আচমকা টানে ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি আর দুহাতে মাহেরের বুকের কাছে শার্ট খামচে ধরি‌।
“চোখ খোল সুইটহার্ট।
মাহের এর জরানো কন্ঠে আমি কাঁপতে কাঁপতে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালাম।
ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে মাহের এ দৃষ্টি খুব তীব্র ভাবে আঘাত করে আমাকে।
চোখ সরাতে চেয়েও সরাতে পারছিনা।
#চলবে

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-২১ এবং শেষ পর্ব

2

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#অন্তিম_পর্ব
#অদ্রিতা_জান্নাত

হসপিটালের ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে অরূপ ৷ কাচের গ্লাস ভেদ করে ওপাশের শ্রেয়ার মুখটা দেখতে পাচ্ছে ও ৷ দেয়ালের সাথে ঠেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে শ্রেয়াকে দেখে যাচ্ছে ৷ চোখ মুখ সব ফুলে গেছে ৷ মাথার চুল সব এলোমেলো ৷ হাতে শার্টে রক্ত লেগে রয়েছে ৷

অন্যদিকে শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তুহিন ৷ চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে ৷ তাও নিঃশব্দে ৷ মনে মনে একটাই প্রার্থনা করছে শ্রেয়া যেন ভালো হয়ে যায় ৷ দরকার পরলে শ্রেয়ার বদলে যেন ওকে নিয়ে যায় ৷ তবুও যেন শ্রেয়া ভালো থাকে ৷

কিছুক্ষন পর শ্রেয়ার মা বাবা আর বাকি সবাই হাসপাতালে এসে পৌঁছালো ৷ শ্রেয়ার মা পাগলামি শুরু করে দিয়েছে ৷ মেয়ের কাছে যাবে ৷ ওটির ভিতরে যাবে ৷ সব নার্সরা মিলে তাকে আটকিয়ে রাখছে ৷ হঠাৎ শ্রেয়ার মায়ের চোখ যায় অরূপের দিকে ৷ তার কান্না মূহুর্তেই রাগে পরিনত হলো ৷ সব নার্সকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে অরূপের কাছে গিয়ে ওকে টেনে নিজের দিকে ঘুরালেন ৷ অরূপ অবাক হয়ে তাকালো তার দিকে ৷ উনি অরূপকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,

“তুমি? তুমি কেন এসেছো এখানে? আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েও শান্তি পাও নি? আরো দিতে এসেছো আবার? তোমার জন্য আজ আমার মেয়েটার এই অবস্থা ৷ তুমি কি আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলতো চাচ্ছো? ওর [শ্রেয়ার দিকে ইশারা করে] মুখটা দেখলে কি তোমার একটুও কষ্ট হয় না? কেন এসেছো আবার আমার মেয়েটার জীবনে?”

বলেই অরূপকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিল ৷ অরূপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল ৷ ভুল যখন করেছে তখন শাস্তিও পেতে হবে ৷ কিন্তু ওর ভুলের শাস্তি শ্রেয়া কেন পাবে? এটা তো হতে পারে না ৷ অরূপ আবার শ্রেয়ার দিকে তাকালো ৷

কিছুক্ষন পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলে সবাই তার কাছে ছুটে চলে গেল ৷ একের পর এক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলো তাকে ৷ ডাক্তার সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

“দেখুন? অপারেশন এখনো কম্পিলিট হয় নি ৷ তাই তেমন কিছু বলতে পারছি না ৷ পেসেন্টের প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে ৷ O- গ্রুপের রক্ত লাগবে আমাদের ৷ আপনারা যেখান থেকে পারেন ব্যবস্থা করুন ৷ আমাদের স্টক এ নেই ৷ আর হ্যাঁ পেসেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না ৷ ওনার পেটে গুরুতর ভাবে আঘাত লেগেছে ৷ এর কারনে ভবিষ্যৎ এ কোনো বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে ৷ আরেকটা কথা ওনার একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷”

শ্রেয়ার মা চিৎকার দিয়ে উঠলেন ৷ কিছুক্ষন পর উনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন ৷ ওনাকে একটা কেবিনে নিয়ে ঘুমের ইনজ্যাকশান দেয়া হলো ৷ তুহিন শ্রেয়ার দিকে একবার তাকিয়ে রক্ত আনতে চলে গেলো ৷ অন্যদিকে অরূপ কিছু একটা ভেবে দৌঁড়ে অন্যদিকে চলে গেলো ৷

____________________

চার বছর পর ৷
পুরো আকাশ জুড়ে রয়েছে কালো মেঘ ৷ সূর্যের এক ফোঁটা চিহ্ন পর্যন্ত নেই ৷ আশেপাশে বয়ে চলেছে শা শা করে ছুটে চলা বাতাস ৷ পুরো প্রকৃতি যেন কালো রূপ ধারন করেছে ৷ একটু পরেই হয়তো আকাশের বুক চিড়ে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির পানি কনা পৃথিবীর বুকে ঝড়ে পরবে ৷
এসবে ভেবেই মুখটা হালকা প্রসারিত করে হাসলো শ্রেয়া ৷ একটু পর আকাশ যেমন তার বৃষ্টির পানি দিয়ে পৃথিবীর বুক ভিজিয়ে দিবে ঠিক তেমন ভাবেই যদি শ্রেয়াও ওর চোখের পানি দিয়ে কারো বুক ভিজিয়ে দিতে পারতো!

চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরলো এক ফোঁটা অশ্রু ৷ হঠাৎ ওর সামনে কেউ কিছু একটা ধরলো ৷ ও শূন্য আকাশের থেকে চোখ সরিয়ে সেই ব্যক্তিটির দিকে তাকালো ৷ তুহিন হাত আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে শ্রেয়াকে বললো,,,,,,, “নাও!”

শ্রেয়া তুহিনের হাত থেকে কফির কাপটা নিল ৷ তুহিন চুপচাপ শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ৷ শ্রেয়া এখন কারো সাথে বেশি কথা বলে না প্রয়োজন ছাড়া ৷ অনেক বেশি চুপচাপ হয়ে গিয়েছে ৷ তবে একজনের সঙ্গে মন খুলে কথা বলে ও ৷ তুহিন হাসলো তার কথা ভেবে ৷ শ্রেয়া চায়ের কাপটা পাশে রেখে আবার আকাশ পানে চেয়ে রইলো ৷ ঠিক তখনি একটা ছেলে ‘মাম্মা’ বলে দৌঁড়ে আসলো ওর কাছে ৷ শ্রেয়ার কোলের উপর উঠে শ্রেয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“কি হয়েছে মাম্মা? তোমার মন খারাপ?”

শ্রেয়া হেসে মাথা নেড়ে ‘না’ বোঝালো ৷ ছেলেটার দুগালে চুমু খেয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নিল ৷ একমাত্র এই ছেলেটার কাছেই ও শান্তি পায় ৷ সেটা কি মা হওয়ায় নাকি কোনো ভালোবাসার টানে সেটা জানা নেই ওর ৷ হঠাৎ ঝিড়িঝিড়ি করে বৃষ্টি পরতে লাগলো ৷ শ্রেয়া ছেলেটাকে কোলে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে নিচে চলে গেল ৷ তুহিনও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চায়ের কাপ দুটো নিয়ে নিচে চলে গেল ৷

শ্রেয়া ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে এসে চেয়ারে বসালো ৷ হালকা পানি পরা চুলগুলো ঝেড়ে দিল ও ৷ তারপর ওর মুখটা মুছতে মুছতে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“কেন গেলে বলো তো? যদি আরো ভিজে যেতে?”

“ভালোই হতো ৷”

ছেলেটা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শ্রেয়ার হাত ধরে আবার বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“মাম্মা আজ চলো না একটু ঘুরতে যাই ৷ বৃষ্টি দেখবো আর ঘুরবো কত্তো মজা না?”

“আজ না বাবা ৷ পরে একদিন ৷ আজ ভালো লাগছে না আমার ৷”

“প্লিজ মাম্মা প্লিজ চলো না ৷”

“বললাম না আজ না ৷ একটা কথাও যদি শুনতে ৷”

ছেলেটা ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ তখনি তুহিন রুমের মধ্যে এসে ছেলেটাকে কোলে নিয়ে শ্রেয়াকে বলতে লাগলো,,,,,,

“এভাবে বলছো কেন? আজ আমি আমার বাবাটাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে ৷ যাবে না বাবা ৷”

ছেলেটা মাথা নাড়ালো ৷ তুহিন ওকে নিচে নামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“যাও রেডি হয়ে নাও হুম? আমি আসছি এক্ষুনি তোমার কাছে ৷ যাও যাও ৷”

ছেলেটা দৌঁড়ে অন্যদিকে চলে গেল ৷ তুহিন শ্রেয়ার পাশে এসে বসে বলে উঠলো,,,,,,,

“আর কত ভাববে বলো তো?”

শ্রেয়া কিছু বললো না ৷ তুহিন একটা দম নিয়ে বললো,,,,,,,,,

“আজ অন্তত কেঁদো না প্লিজ ৷”

শ্রেয়া এবারও কিছু বললো না ৷ তুহিন উঠে যেতে যেতে বলে উঠলো,,,,,,,,

“সাবধানে থেকো ৷ অরূপকে ঘুরিয়ে নিয়েই চলে আসবো আমি ৷”

শ্রেয়া চোখ তুলে তাকালো তুহিনের দিকে ৷ অরূপ নামটা প্রত্যেকবার ওর বুকে আঘাত করে করে চলে যায় ৷ তবুও ফিরে আসে না মানুষটা ৷ মানুষ এতোটা স্বার্থপর কি করে হয়? শ্রেয়া ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইল ৷

শ্রেয়া ওই বাচ্চা ছেলেটার নাম অরূপের সঙ্গে মিলিয়ে অরূপ রেখেছে ৷ ছেলেটা পুরো অবিকল অরূপের মতো দেখতে ৷ কথা বার্তাও অরূপের মতো ৷ একদম ছোট্ট অরূপ ৷ অরূপের স্মৃতি বেঁচে আছে শ্রেয়ার মনে আর বাচ্চা ছেলেটার মুখে ৷ শুধু প্রাণটাই ওদের থেকে দূরে ৷ ছোট্ট ছেলেটা শ্রেয়ার নিজের ছেলে না ৷ তবে নিজের ছেলে থেকে কম কিছু ভাবে নি ও ওকে ৷ চার বছর আগে শ্রেয়ার অপারেশন হয় ৷ ওর ঠিক হতে প্রায় মাস খানিক সময় লেগে যায় ৷ একটা কিডনি আর রক্ত দিয়ে ওকে বাঁচায় একজন ৷ সেই একজনটা হচ্ছে শ্রেয়ার ভালোবাসার অরূপ ৷ হয়তো জীবনে একটা ভুল করেছে ৷ সেই ভুলটাও শুধরে নিয়েছে ৷ শ্রেয়ার যে ব্রেন ক্যান্সার হয়েছিল সেটার জন্য কোমোথেরাপি করে সব ক্যান্সারে আক্রমন কোষ গুলোকে মারা হয় ৷ মূলত এই রোগের রোগীরা সহজে ভালো হয় না ৷ তবে সেটা সম্পূর্ন ভাগ্যের উপর নির্ভর করে ৷ সেখানে হয়তো শ্রেয়ার আয়ু বেঁচে ছিল ৷ তাই ও বেঁচে গিয়েছে ৷ শ্রেয়ার জ্ঞান ফিরে প্রায় একমাস পর ৷ সবাইকে দেখলেও তখন অরূপকে দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিল ৷ কিন্তু শেষ দেখাও দেখতে পেল না ও ৷ ওকে বাড়িতে নিয়ে গেলে ও প্রায়ই পাগলামী করতো ৷ হাসপাতালে থাকতে ডাক্তার বলেছিল শ্রেয়ার আর কখনো মা হতে পারবে না ৷ তখন শ্রেয়ার মানসিক অবস্থা খারাপ ছিল বলে তুহিন অনাথ আশ্রম থেকে একটা বাচ্চাকে কোলে করে নিয়ে আসে ৷ এমনি এমনি তুহিন ছেলেটাকে আনে নি ৷ কাকতালীয় ভাবে ছেলেটার চেহারার সাথে অরূপের চেহারার অবিকল মিল রয়েছে ৷ বাচ্চাটার বয়স তখন হবে প্রায় ৫ মাস ৷ শ্রেয়া সেই ছেলেটার মুখেই অরূপকে দেখতে পায় ৷ সারাদিন সেই ছেলেটাকে নিয়ে পরে থাকতো ৷ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয় ও ৷ তবে অরূপের কথা কাঁদায় ওকে ৷ একটা বিধবা মেয়ের কোলে একটা ছোট্ট বাচ্চা দেখে অনেকে অনেক রকমের কথা শুনায় শ্রেয়াকে ৷ তাই শ্রেয়ার বাবা মা বাধ্য হয়ে তুহিনের সাথে শ্রেয়ার বিয়ে দেয় ৷ শ্রেয়া করতে না চাইলেও ওকে জোর করে ৷ কেউ জীবনে একা বাঁচতে পারে না ৷ একজন সঙ্গি তো লাগেই ৷ শ্রেয়ার ক্ষেত্রেও তাই ৷ তুহিন বিয়ে করতে চায় নি ৷ কিন্তু পরে ওই বাচ্চা ছেলেটার কথা ভেবে রাজি হয়ে যায় ৷ তুহিন আর শ্রেযার সম্পর্ক একদম বন্ধুর মত ৷ আগে যেরকমটা ছিল এখনো ঠিক সেরকম ৷ ওরা এখন বাংলাদেশেই নিজের বাড়িতে থাকে ৷

(এখন অনেকে বলবেন একটা কিডনি না থাকলে কি মানুষ বাঁচে না? হ্যাঁ বাঁচে তবে তার অনেক যত্নের দরকার হয় ৷ অরূপের মানসিক অবস্থাও ভালো ছিল না শ্রেয়াকে ঐভাবে দেখে ৷ ও ওর নিজের শরীরের সবটুকু রক্ত দিয়েছে শ্রেয়াকে সঙ্গে কিডনিও দিয়েছে ৷ যার জন্য ওর শরীর দুর্বল ছিল প্রচুর ৷ যেই কয়দিন বেঁচে ছিল শ্রেয়াকে মন ভরে দেখে নিত ৷ কিন্তু অরূপকে দেখতে পেল না শ্রেয়া ৷)


ছোট্ট অরূপকে গাড়িতে বসিয়ে তুহিন নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো ৷ ছোট্ট ছেলেটা গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরের বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে ধরতে লাগলো ৷ কিছুক্ষন পর তুহিন গাড়ি থামিয়ে অরূপকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“এরকম করছো কেন বাবা? ঠান্ডা লেগে যাবে তো ৷”

অরূপ মাথা নাড়িয়ে ‘না’ করে বলে উঠলো,,,,,,,,

“আচ্ছা পাপা মাম্মার কি হয়েছে? প্রায়ই সময় মন খারাপ করে থাকে ৷”

“তোমার মাম্মার যখন ভালো লাগে না ৷ তখন এরকম করে ৷ যখন এরকম করবে তখন তাকে একটুও জ্বালাবে না ৷ শক্ত করে জড়িয়ে রাখবে ৷ কেমন!”

অরূপ দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে নিজের হাত পা নাড়িয়ে খেলতে লাগলো ৷ তুহিন বাহিরের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের কোনায় জমে থাকা পানিটা আস্তে করে মুছে নিলো ৷



শ্রেয়া নিজের চোখ মুছে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল ৷ আলমারির কাছে গিয়ে অালমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করলো ৷ প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো ৷ প্যাকেটটা খুলে তার মধ্যে থেকে একটা শাড়ি বের করলো ৷ তার সঙ্গে শাড়ির সাথে কিছু ম্যাচিং জুয়েলারী সেটও রয়েছে ৷ সবকিছু ভিতর থেকে বের করে হাতে নিল ৷ এইটা অরূপের দেয়া শেষ স্মৃতি ওর কাছে ৷ এর আগের সব স্মৃতিগুলা যে ও নষ্ট করে ফেলেছে ৷ কিন্তু এগুলা ও ওর নিজের জীবন দিয়ে আগলে রাখবে ৷ মানুষটা তো আর ফিরে আসবে না কিন্তু তার দেয়া জিনিসপত্র আগলে রাখবে ও ৷ শাড়ির সঙ্গেই তার উপরে একটা চিরকুট রয়েছে ৷ শ্রেয়া সেটা হাতে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো ৷ এটা যে ও কতবার পরেছে তার কোনো হিসাব নেই ৷ সময় হলেই এইটা পরে আর কাঁদে ৷ চিরকুটের লিখাগুলা এখন ওর মুখস্ত হয়ে গেছে ৷ লিখাগুলো পরলেই ওর বুকটা ফেটে যায় ৷ আস্তে আস্তে সেটা খুললো শ্রেয়া ৷ আর প্রথম থেকে পরতে লাগলো!!

“প্রিয়”
এটা যখন পরবে তখন হয়তো তোমার কাছে আমি থাকবো না ৷ তুমি হয়তো আমাকে স্বার্থপর ভাববে ৷ তবে তোমার জন্য এতোটুকু স্বার্থপর হতেই পারি কি বলো! আমি কিন্তু তোমার পাশে আছি সবসময় ৷ তোমার সাথে আছি আর সারাজীবন থাকবো ৷ তুমি কষ্ট পেও না ৷ আর আমার জন্য একদম চোখের পানি ফেলবে না ৷ তাতে আমারও কষ্ট হবে অনেক ৷ জানো? যে কয়দিন বেঁচে ছিলাম তোমাকে মন ভরে দেখে নিতাম কিন্তু কথা বলতে পারতাম না ৷ আচ্ছা তুমি কি আমাকে শেষ দেখা দেখেছো? দেখো না কিন্তু ৷ আমি জানি তাতে অনেক কষ্ট হবে তোমার ৷ আমার কথা বেশি ভাববে না ৷ যে চলে যাওয়ার সে যাবেই ৷ যেমনটা আমি ৷ তাই আমার কথা না ভেবে লাইফে মুভ অন করো ৷ আমার জন্য নিজের জীবনটা থামিয়ে রেখো না শ্রেয়া ৷ আমি তো ভুল করেছিলাম ৷ তার শাস্তিও পেয়েছি ৷ তুমি তো কিছু করো নি তুমি কেন শাস্তি পাবে? আমার ভুলগুলো ক্ষমা করে দিও শ্রেয়া ৷ আর হ্যাঁ এই শাড়ি গয়নাগুলো পরে নিজেকে একবার দেখো ৷ আমি তো তোমাকে দেখার জন্য থাকবো না ৷ কিন্তু তুমি পরো ৷ অভিমান করে থেকো না আবার আমার উপর ৷ কি বলো তো তোমার অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য আমি আর নেই ৷ হয়তো সেই কাজটা অন্য কেউ করবে ৷ আমার আরেকটা কথা রাখবে শ্রেয়া? তুহিনকে বিয়ে করবে প্লিজ ৷ ও অনেক ভালো ছেলে ৷ আমার থেকেও সুখে রাখবে তোমাকে ৷ একা একা সারাজীবন না কাটিয়ে একজনের সঙ্গে কাটাও ভালো লাগবে ৷ আমি জানি তুমি এখনো আমায় ভালোবাসো ৷ আমি যদি সেই ভুলটা না করতাম তাহলে হয়তো আজ আমরা এভাবে থাকতাম না ৷ আমাকে ভালোবাসো সমস্যা নেই ৷ তুহিনকেও ভালোবেসো ৷ আমি জানি এখন তুমি বলবে তুমি ওকে ভালোবাসতে পারবে না ৷ আমি বলবো একসাথে থাকো দুজন ঠিক “ভালোবাসবে তুমিও” ৷ তুহিন তোমার জন্য যোগ্য ৷ আমার মতো ভাগ্যকে পায়ে ঠেলে দিয়ে সেই ভুলটা করো না শ্রেয়া ৷ একটু চেষ্টা করো পারবে ৷ ভালোবাসা বলে কয়ে হয় না মূহুর্তের মধ্যেই হয়ে যায় ৷ শুধু এইটুকুই চাইবো কখনো খারাপ পথে পা বাড়াবে না ৷ ভালো থেকো! ভালো রেখো! পরিশেষে বলবো “ভালোবাসি তোমায়!”

শ্রেয়া চিরকুটটা বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো ৷ জোরে একটা দম নিয়ে মুখটা হালকা প্রসারিত করে হাসলো ৷ সেই হাসির পিছনে রয়েছে একজনকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট আর তার ভালোবাসা ছাড়া বেঁচে থাকার হতাশা!

সমাপ্ত________________

★অরূপকে কেন মেরে ফেললাম?
=ওর অন্যায়ের শাস্তি ও পেয়েছে ৷ এখন যদি বলেন যে তার জন্য কেন মেরে ফেললাম? একটা প্রানকে বাঁচাতে ও নিজের প্রান দিয়েছে ৷ সেটা নিশ্চয়ই পাপ না!

★অরূপের সাথে শ্রেয়ার বিয়ে হয়েছে আবার তুহিনের সাথে শ্রেয়ার বিয়ে দিলাম কেন?
=একলা বাঁচা অনেক কঠিন ৷ আর অরূপ যেহেতু মারা গেছে তো দ্বিতীয় বিয়ে শ্রেয়া করতেই পারে ৷ অন্তত নিজের জন্য না হোক ওই ছোট্ট ছেলেটার জন্য ৷ যে একমাত্র ওর বাঁচার আশা ৷

★অরূপের সঙ্গে শ্রেয়ার মিল না দিয়ে কেন তুহিনের সাথে দিলাম?
=কারো সাথেই দেয় নি আমি ৷ বিয়ে হলেই যে মিল হবে এমন কোনো কথা নেই ৷ দুটো মনের মিল হলেই সেটা মিল ৷ বিয়ের পর কি স্বামী স্ত্রী বন্ধু হিসেবে থাকতে পারে না? অবশ্যই পারবে কেন পারবে না? আর নায়ক নায়িকার মিল হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই ৷

★স্যাড এন্ডিং কেন দিলাম?
=গল্পটা মোটেও স্যাড এন্ডিং দেই নি ৷ অরূপকে মেরেছি সেটা স্যাড কিন্তু শ্রেয়া ওর ছেলেকে নিয়ে তুহিনের সাথে ভালো থাকবে সেটা ততোটাও স্যাড না ৷

গল্পটা আমি আমার মতো লিখেছি ৷ কারো কথা শুনে নয় ৷ আমার মত সবাইকে সাজিয়েছে ৷ জানিনা কতটুকু পেরেছি ৷ তবে অরূপকে মারার জন্য যারা রেগে আছেন তাদের বলবো বাস্তব জীবনে এরকম হাজার হাজার ভালোবাসা রয়েছে যেগুলো অসমাপ্ত ৷ অনেকেরই হয়তো ইন্ডিংটা ভালো লাগে নাই ৷ তার জন্য সরি ৷ সবার ভালো লাগবে এমন তো কোনো কথা নেই ৷ দয়া করে কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না ৷ সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ৷ আল্লাহ হাফেজ💔

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-২০

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__২০
#অদ্রিতা_জান্নাত

শ্রেয়া অন্যদিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্নাটাকে আটকে রাখার চেষ্টা করছে ৷ কিন্তু পারছে না ৷ অরূপের চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ৷ আর কোনো কষ্টই ওদের সহ্য হচ্ছে না ৷ শ্রেয়ার মাথায় চাপ পরছে আবার ৷ মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পরলো ৷ অরূপ শ্রেয়ার দিকে মুখ তুলে তাকাতেই শ্রেয়াকে এভাবে দেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“শ্রেয়া তোমার কি হলো? এরকম করছো কেন তুমি?”

বেশকিছুক্ষন এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল শ্রেয়া ৷ বাহ্যিক ব্যাথাটা নিজে নিজেই চলে গেল ৷ কিন্তু মনের ব্যাথাটা কাটিয়ে উঠতে পারলো না ৷ আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো ৷ অরূপ শ্রেয়াকে সাহায্য করলো ৷ শ্রেয়া অরূপের হাত সরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“আপনি যান এখন ৷ কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে ৷”

অরূপ অবাক হয়ে বললো,,,,,,,,

“তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো?”

“একটু সময় দিন আমাকে ৷ আমি জানি না আমি কি করবো ৷ কিন্তু যেটাই করি না কেন সবার ভালোর জন্যই করবো ৷ তাতে কেউ কষ্ট পেলে আমার যে কিছুই করার নেই ৷”

“তাহলে তুমি তুহিনকে বিয়ে করবে?”

“এসব কথা তো পরেও বলা যেতে পারে ৷ আমার ভালো লাগছে না ৷ মাথা ব্যথা করছে ৷ আমাকে রুমে যেতে হবে ৷ আপনি চলে যান প্লিজ ৷”

বলেই শ্রেয়া আর না দাঁড়িয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল ৷ অরূপ ওর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পিছনে ঘুরে চলে গেল ৷

___________________________

মাঝখানে কেটে গেল আরো দুইটা দিন ৷ শ্রেয়া আর অরূপের এই দুদিনে একবারো দেখা হয়নি ৷ শ্রেয়া তো রুম থেকে বেরই হয় নি ৷ এই দুইদিন নিজেকে রুমের মধ্যে বন্দি করে রেখেছিল ৷ কারো সাথে বেশি একটা কথাও বলে নি ৷ তুহিন হাসপাতালে গিয়েছে শ্রেয়ার রিপোর্ট আনতে ৷ ড্রয়িং রুমে সবাই গোল হয়ে বলে আছে ৷ আজকে তারা শ্রেয়া আর তুহিনের বিয়ের তারিখ ঠিক করবে ৷

কিছুক্ষনপর তুহিন বাড়িতে ফিরলো ৷ সবাই ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো ৷ কিন্তু ও কাউকে কিছু না বলে সোজা উপরে নিজের রুমে চলে গেল ৷ তুহিনকে কি রকম এলোমেলো লাগলো সবার কাছে ৷ সবাই একসাথে তুহিনের রুমের দিকে চলে গেল ৷ রুমের মধ্যে তুহিন হাত দিয়ে চোখ মুখ চেপে ধরে বসে আছে ৷ তখনি ওর রুমে সবাই এলো ৷ সবাই ওকে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু ও কিছু বলছে না ৷ পাথরের মতো চুপচাপ বসে আছে ৷ শ্রেয়ার মা মিনতির সুরে বলতে লাগলো,,,,,,

“কি এমন হয়েছে বাবা আমার মেয়েটার? তুমি বলছো না কেন? আমার অনেক ভয় করছে ৷ বলো প্লিজ ৷”

তুহিন এবারও কিছু বললো না ৷ শ্রেয়ার মায়ের চোখ যায় একটা ফাইলের দিকে যেটা হাতে নিয়ে তুহিন বাড়িতে ঢুকেছিল ৷ শ্রেয়ার মা ছুটে সেদিকে চলে গেলেন ৷ কাঁপাকাঁপা হাতে ফাইলের ভিতরের সব কাগজ পত্র দেখে আৎকে উঠলেন ৷ ধপ করে বিছানায় বসে পরলেন ৷ ফাইলটাও পরে গেল ওনার হাত থেকে ৷ সবাই অবাক হয়ে তাকালেন ওনার দিকে ৷ একে একে সবাই শ্রেয়ার রিপোর্ট দেখে গেল ৷ কারো যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না ৷

এদিকে রুমের মধ্যে শ্রেয়া শুয়ে আছে ৷ ওর পাশে বসে চৈতি ওর মাথা টিপে দিচ্ছে ৷ তবুও ওর যন্ত্রনা কমছে না ৷ আশেপাশের সব শব্দ ওকে আরো বিরক্ত করছে ৷ হালকা চেঁচিয়ে চৈতিকে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,

“কাদের আওয়াজ আসছে বারবার? কারা কান্না করছে? সবাইকে চুপ করতে বলো প্লিজ ৷ আমার মাথাটা ফেটে যাচ্ছে ৷ যন্ত্রনা হচ্ছে প্রচুর ৷ ওদের সবাইকে কিছু বলো ৷ থামতে বলো ওদের ৷”

বলেই ও নিজের মাথাটা আবার চেপে ধরলো ৷ চৈতি রুমের দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিয়ে শ্রেয়ার পাশে বসে ওর মাথায় যত্ন সহকারে আস্তে আস্তে টিপে দিতে লাগলো ৷




পরেরদিন ৷
তুহিন আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন ৷ সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিবেন তখনি ওনার মনে হলো উনি কিছু একটা ফেলে এসেছেন ৷ আমাকে বসতে বলে গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে চলে গেলেন ৷ আমি আশেপাশে তাকাতেই হঠাৎ আমার চোখ পরলো গাড়ির ফ্রন্ট গ্লাস দিয়ে ব্যাক সিটের দিকে ৷ মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা ফাইল রাখা আছে ৷ হাত বাড়িয়ে সেটা হাতে নিলাম ৷ হাসপাতালের নাম দেখে কপাল কুচকে ফেললাম ৷ বাড়ির দরজার দিকে একবার তাকিয়ে আবার ফাইলটার দিকে তাকালাম ৷

ফাইলটা খুলে একের পর এক পেইজ উল্টে উল্টে দেখতে লাগলাম ৷ তখনি তুহিন এসে আমার পাশে এসে বসলেন ৷ আমার হাতে ফাইলটা দেখে রেগে হাত থেকে টেনে নিয়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,,

“একটু শান্ত থাকতে পারো না? কেন সবকিছু ধরে ধরে দেখতে হবে?”

বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলেন ৷ আমি হালকা হেসে বললাম,,,,,,,,,,,

“আমি কিন্তু সবটা দেখে নিয়েছি ৷”

তুহিন কিছু বললেন না ৷ তার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট ৷ আমি আবারো বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“যা হয় ভালোর জন্যই হয় ৷ আমার না বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই মরে গেছে ৷”

তুহিন অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে ৷ আমি জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকালাম ৷ উনি চোখ সরিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলেন ৷ বেশকিছুক্ষন পর গাড়ি থামিয়ে আমাকে নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে গেলেন ৷ ডাক্তার আমার চেকআপ করে বাইরে দাঁড়াতে বললেন ৷ আর তিনি নাকি তুহিনের সাথে আলাদা কথা বলবেন তাই তুহিনকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলেন ৷ আমার এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে মোটেই ভালো লাগছে না ৷ তাই আমি নিচে নেমে বাহিরে চলে গেলাম ৷

আশেপাশে তাকাতে তাকাতে সামনের দিকে যেতে লাগলাম ৷ কোথায় যাচ্ছি জানি না ৷ কিন্তু যেতে ইচ্ছা করছে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে ৷ হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কারো সঙ্গে ধাক্কা খেলাম ৷ সামনে তাকিয়ে দেখি অরূপ দাঁড়িয়ে আছেন ৷ ওনাকে দেখে আমি পিছনে ঘুরে চলে যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন ৷ কিন্তু আমি ওনার দিকে ঘুরলাম না ৷ অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ এই চোখের সাথে চোখ মেলাতে পারবো না আমি ৷ আমার অসুস্থতার খবর জানলে কি করবেন উনি? সে যাই করুক ৷ এখন আমার জীবনের সঙ্গে কারো জীবনই জড়ানো যাবে না ৷

অরূপ আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন ৷ আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম ৷ উনি শান্ত স্বরে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,,

“গত দুই দিন ধরে এরকম করছো ৷ না যোগাযোগ করতে দিচ্ছো আর না যোগাযোগ করছো ৷ কেন এরকম করছো? এখন আবার কথাও বলতে চাচ্ছো না ৷ কি হয়েছে তোমার বলবে?”

“আমার কিছু হয় নি ৷ আপনি যান এখান থেকে ৷ ভালো লাগছে না আমার কিছু ৷”

অরূপ কিছুক্ষন শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকা শ্রেয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো কোথাও ৷ শ্রেয়া হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“এরকম করছেন কেন? ছাড়ুন ৷ হাতে লাগছে আমার ৷”

অরূপ শুনলেন না ৷ হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে ব্যথায় ‘আহ’ করে উঠলাম ৷ উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে ঘুরে তাকালেন ৷ আমাকে মাথায় হাত দিয়ে ধরতে দেখে আমার কাছে এসে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,

“এই তোমার মাথায় কি হয়েছে? দেখি ৷”

হাত দিয়ে অরূপকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“যা হবার হয়েছে ৷ আপনি চলে যান এখান থেকে ৷ চলে যান আপনি প্লিজ ৷”

অরূপ অবাক হয়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,,

“তুমি কি এখনো রেগে আছো আমার উপর? দেখো আমি ভুল করেছি ৷ সেগুলো শুধরানোর তো একটা সুযোগ দাও ৷”

“তুহিনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে আমার ৷ চলে যান আপনি ৷”

অরূপ রেগে শ্রেয়াকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“কি ভাবো তুমি নিজেকে? এতোবার বলছি তাও শুনছো না? আরে আমাদের তো ডিভোর্সও হয় নি ৷ তুমি কেন বুঝতে পারছো না ৷ কেন বারবার আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো শ্রেয়া? একটা সুযোগ চাই আমি ৷”

শ্রেয়া অরূপের হাত ঝাটা মেরে সরিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“ভালো লাগছে না আমার ৷ কেন বুঝতে পারছেন না? বিরক্ত লাগছে আমার ৷ আপনাকে এখন অসহ্য লাগছে৷”

অরূপ অবাক হয়ে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ৷ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হঠাৎ পিছনে ঘুরে শ্রেয়াকে রেখেই চলে যেতে লাগলো ৷ শ্রেয়া অরূপের দিকে তাকিয়ে রইল ৷ ও যেতে চেয়েও যেতে পারছে না ৷ কোনো একটা অজানা কারন ওকে আটকে দিচ্ছে ৷ আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শ্রেয়া বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,

“আমার জীবনের কয়েকটা দিনের সাথে আপনাকে জড়াতে পারবো না আমি ৷ আমার জীবন তো শেষ পুরো ৷ সেই জীবন আপনার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আপনার জীবনটা নষ্ট করে দিতে পারবো না আর ৷ যতদিন বেঁচে আছি ততদিন আপনাকে নিজের চোখে দেখতে পারলেই হবে ৷ আর কিছুর দরকার নেই ৷”

বলেই হালকা হাসলো শ্রেয়া আর এক দৃষ্টিতে অরূপের দিকে চেয়ে রইলো ৷ তখনি আচমকা পাশ থেকে একটা গাড়ি এসে শ্রেয়াকে ধাক্কা মেরে দিলো ৷ রাস্তায় ছিটকে পরে গেল ও ৷ চারপাশের লোকজন দৌঁড়ে আসতে লাগলো ওর দিকে ৷ পুরো রাস্তা রক্তে মাখামাখি ৷ গাড়ির ড্রাইভার দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার এরকম অবস্থা দেখে গাড়ি রেখেই উল্টো দিকে ঘুরে দৌঁড়ে পালিয়ে গেল ৷

হঠাৎ কিছু ছিটকে পরার আওয়াজ পেয়ে অরূপ দাঁড়িয়ে গেল ৷ পিছনে ঘুরে তাকাতেই ওর চোখ শান্ত হয়ে এলো ৷ নিবার্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শ্রেয়ার দিকে ৷ আশেপাশের মানুষের চেঁচামেচি শুনে অরূপ দৌড়ে শ্রেয়ার কাছে চলে গেল ৷ মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে শ্রেয়ার মাথাটা নিজের কোলে রাখলো ৷ শ্রেয়ার অল্প অল্প জ্ঞান আছে ৷ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে ও ৷ ওর পেটের বাম সাইডের সামনের দিক থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে তো পরছেই ৷ অরূপ ওর হাত দিয়ে সেখানে চেপে ধরলো ৷ তবুও রক্তের বাঁধ থামছে না ৷ শ্রেয়ার মাথার থেকে আঘাত বেশি লেগেছে পেটে ৷ তাই রক্তও সেখান থেকে বেশি পরছে ৷

অরূপ শ্রেয়ার গালে ওর রক্তে ভেজা হাত দিয়ে শ্রেয়াকে ডাকতে ডাকতে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“এ এটা কি হ হলো? শ্রেয়া? ত তুমি ত তোমার এরকম কি করে হলো? শ্রেয়া কথা বলো প্লিজ ৷ আমার ভ ভয় করছে ৷”

শ্রেয়া জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিলো ৷ কথা বলার শক্তিটুকুও যেন ওর মধ্যে নেই ৷ অরূপের হাত খামচে ধরে জোরে জোরে হাপাতে লাগলো ৷ শ্রেয়ার চোখের কোন বেয়ে বেয়ে পানি পরতে লাগলো ৷ অরূপ ওর হাত দিয়ে শ্রেয়ার চোখের পানি মুছে দিলো ৷ ওকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“তোমার কিছু হবে না ৷ আমি হতে দিব না ৷ তুমি বললেই শুনবো না আমি ৷ তোমাকে আমার জন্য বাঁচতে হবে ৷ নাহলে আমি শেষ হয়ে যাবো যে ৷”

বলেই অরূপ আশেপাশের লোকজনের কাছে চিৎকার করে হেল্প চাইতে লাগলো ৷ কয়েকজন লোক দৌঁড়ে অন্যদিকে চলে গেল গাড়ির ব্যবস্থা করতে ৷


হাসপাতাল থেকে কাগজপত্র ঠিক করতে করতে বের হলো তুহিন ৷ শ্রেয়াকে ভিতরে খুঁজে না পেয়ে বাহিরে খুঁজতে এলো ৷ চারপাশে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ থেমে গেল ৷ অরূপের বুকে শ্রেয়াকে এরকম রক্তাত্ত অবস্থায় দেখে আতকে উঠলো ও ৷ হাত থেকে সব কাগজ পত্র গুলো পরে গেল ৷ পলকহীন ভাবে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো তুহিন ৷ ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো ৷

শ্রেয়ার কাছে গিয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পরলো ও ৷ অরূপকে একপলক দেখে আবার শ্রেয়ার দিকে তাকালো ৷ চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ওর কিছু মূহুর্তের মধ্যেই ৷ কাঁপাকাঁপা হাতে শ্রেয়ার রক্তাত্ত হাতে হাত রাখলো তুহিন ৷ শ্রেয়া আবছা আবছা চোখে তুহিনের দিকে তাকালো ৷ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিলো কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলো না ৷ গলা ধরে আসছে ওর ৷ দুজনকেই একবার দেখে চোখ বন্ধ করে নিলো ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১৯

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৯
#অদ্রিতা_জান্নাত

রুমের মধ্যে বিছানায় জ্ঞানহীন অবস্থায় পরে আছে শ্রেয়া ৷ বাড়ির সবাই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে ৷ ডাক্তার ওর পাশে বসে ওর চেকআপ করছে ৷ কিছুক্ষন শ্রেয়াকে চেকআপ করে গম্ভীর মুখে বসে রইলেন তিনি ৷ তুহিন ওনার কাছে গিয়ে চিন্তিত স্বরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“আঙ্কেল শ্রেয়ার কি হয়েছে? ওর হঠাৎ করে কি হলো?”

লোকটি কিছুক্ষন গম্ভীরমুখে বসে রইল ৷ তারপর কিছু একটা ভেবে তুহিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,,,,,,,

“আমি ঠিক বুঝতে পারছি না ৷ তুমি আমার থেকেও ভালো একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে দেখো ৷”

“মানে?”

“শ্রেয়াকে একজন ভালো ডাক্তার দেখাও ৷ যত দ্রুত সম্ভব ৷ একজন ভালো ডাক্তার দিয়ে ওর চিকিৎসা করাও ৷ শ্রেয়ার লক্ষন মোটেও ভালো লাগছে না আমার৷”

তুহিন একবার শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

“কি হয়েছে ওর? যে ওকে চিকিৎসা করাতে হবে?”

“আমি যেটা ধরেছি সেটা নাও হতে পারে ৷ তাই বলছি ভালো কাউকে দিয়ে ওর চেকআপ করাও ৷ আমারটা ভুল হলে শুধু শুধু তোমরা চিন্তা করবে ৷ তাই বলছি ভালো কোনো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওর চিকিৎসা করাও ৷ ভালো রিপোর্ট আসতেও পারে ৷ চিন্তা না করে মনকে শক্ত করো ৷ আজ আমি আসি ৷ দরকার হলো আবার বলো ৷”

বলেই চলে গেলেন তিনি ৷ বাড়ির সবাই একপলক শ্রেয়াকে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ তুহিন একদৃষ্টিতে শ্রেয়ার শুকিয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে রইল ৷ চৈতি তুহিনের কাঁধে হাত রেখে বললো,,,,,,,,

“সব ঠিক যাবে ৷ তুমি যাও ভাইয়া ৷ আমি শ্রেয়ার পাশে আছি ৷ ওকে দেখে রাখবো ৷ কোনো চিন্তা করো না ৷”

তুহিন শ্রেয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে চৈতির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,,,,

“ওর জ্ঞান ফিরলে বলিস আমাকে ৷”

আর এক মূহুর্তও দাঁড়ালো না ও ৷ রুম থেকে বাহিরে বেরিয়ে গেল ৷ চৈতি তুহিনের দিকে একটু তাকিয়ে থেকে শ্রেয়ার পাশে গিয়ে বসলো ৷ শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল ৷ কিন্তু তুমি তো ভাইয়াকে বলতে দিলে না ৷ ভেবেছো নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে ৷ অসুখ কি কখনো নিজে নিজে সাড়ে? আমিও যে কেন আগে বুঝলাম না ৷”

_________________________________

বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠার শব্দে চৈতি নিচে নেমে দরজা খুলে দিল ৷ বাহিরে অরূপকে দেখে অবাক হলো ও ৷ অরূপ বাহির থেকে ভিতরে একবার উঁকি দিতে দিতে বলে উঠলো,,,,,,,,

“সরো সামনে থেকে ৷ এরকম খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

চৈতি রেগে গিয়ে বললো,,,,,,,,

“কি বললেন আপনি? আমার বাড়িতে এসে আমাকেই ইনসাল্ট করছেন? কে আপনি? সরবো না আমি ৷ ভিতরেও যেতে দিবো না ৷ চলে যান ৷”

বলেই দরজা লাগাতে নিলে অরূপ ঠেলে ভিতরে ঢুকলো ৷ আশেপাশে তাকাতে তাকাতে সোজা উপরে চলে গেল ৷ চৈতি হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ চেনা নেই জানা নেই এভাবে বাড়ির ভিতর ঢুকে পরলো? ওর বিষয়টা একটুও ভালো লাগলো না ৷

পুরো বাড়ি সার্চ করেও অরূপ শ্রেয়াকে খুঁজে পেল না ৷ এক প্রকার হতাশ হয়ে নিচে নেমে এলো ৷ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে নিতেই পিছন থেকে চৈতি বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“আপনি কে হ্যাঁ? এভাবে বাড়িতে ঢুকে পুরো বাড়ি সার্চ করে গেলেন ৷”

অরূপ চৈতির দিকে ঘুরে তাকালো ৷ ওর এখন কথা বলতে বিরক্ত লাগছে ৷ তাই কোনো প্রকার কথা না বলে চুপচাপ বাড়ির বাহিরে চলে গেল ৷ এদিকে চৈতি রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বিড়বিড় করতে করতে উপরে চলে গেল ৷




একজন ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হলো শ্রেয়া ৷ সোজা নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো ও ৷ ওর মাথায় খালি কালকের ঘটনাগুলো ঘুরছে ৷ হঠাৎ করে কাল ওর কি হলো সেটাই বুঝতে পারছে না ৷ অরূপ কেন আসবে ওর কাছে তাও এতোদিন পর? আসার হলে তো আরো আগেই আসতে পারতো ৷ ওটা হয়তো ওর মনের কোনো ভুল ছিল ৷

কিছুক্ষন পর তুহিন এসে ড্রাইভিং সিটে বসলেন ৷ আমি একবার ওনার দিকে তাকিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম ৷ তুহিন কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলেন ৷ কিছুদূর যেতেই একটা গাড়ির দিকে চোখ আটকে গেল ৷ কালকের মতো সেই গাড়িটা ৷ গাড়িটাকে দেখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি থামাতে বললাম ৷ উনি অবাক হয়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,,

“হঠাৎ করে কি হলো? গাড়ি কেন থামাতে বললে?”

আমি কিছু বললাম না ৷ তুহিন গাড়ি ব্রেক করলে সাথে সাথে কিছু না বলেই নেমে গেলাম ৷ রাস্তা পাড় হয়ে ওই গাড়িটার কাছে গেলাম ৷ গাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি দিলেও ভিতরে কাউকে দেখতে পেলাম না ৷ আশেপাশে একটু তাকাতেই তুহিন আমার সামনে এসে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,,,,,

“এসব কি শ্রেয়া? তুমি এভাবে গাড়ি থেকে নেমে চলে এলে কেন? চলো তাড়াতাড়ি ৷”

বলেই আমাকে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন ৷ আমি আশেপাশে তাকাতে তাকাতে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ পুরোটাই মনের ভুল ৷ কেন ওনার কথা বারবার ভাবছি আমি ৷ যে যাওয়ার সে চলেই যাবে ৷ তাহলে আবার তার কথা কেন ভাবছি আমি? উনি আসেন নি আর আসবেনও না কখনো ৷ শুধু শুধু তার জন্য তুহিনকে কষ্ট দিতে পারবো না ৷




বেশ কিছুক্ষন পর বাড়িতে এসে পৌঁছালাম ৷ বাড়িতে এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম ৷ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই চৈতি এলো ৷ আমার পাশে বসে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“এখন কেমন আছো?”

কপাল হালকা কুচকে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,,,,

“আমার আবার কি হবে?”

“না কিছু না ৷ তোমার কোথাও খারাপ লাগছে নাকি সেটাই জিজ্ঞেস করছিলাম ৷”

“আচ্ছা তুহিন হঠাৎ ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গেলেন আমাকে ৷ কিন্তু কেন?”

“ওওওই যে তোমার মাথা ব্যাথা হয় কেন সেটা জানার জন্য ৷”

“কেন হয়?”

“উফ রিপোর্ট অাসলে বুঝতে পারবো ৷ তুমি এতো চাপ নিও না তো ৷ সব ঠিকঠাকই আসবে দেখো ৷”

“হুম ৷ আচ্ছা বাড়ির সবাই কোথায়? দেখতে পেলাম না তো কাউকে ৷”

“পাপার অফিসে গেছে সবাই ৷ এক্ষুনি চলে আসবে ৷ তুমি একটু রেস্ট নাও ৷ মাথায় চাপ দিও না একদম ৷ আমি আসছি এখন ৷”

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই কাশি উঠে গেল ৷ মুখে হাত দিয়ে কাশতে লাগলাম ৷ চৈতি আমাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিল ৷ আমি পুরোটা পানি খেয়ে নিলাম ৷ হাতের দিকে তাকাতেই দেখি হাতে রক্ত লেগে রয়েছে ৷ সেটা দেখে চৈতি বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“রক্ত?”

“তুমি একটু যাবে প্লিজ ৷ আমি একটু একা থাকবো ৷”

চৈতি কিছু না বলেই দৌঁড়ে বাহিরে চলে গেল ৷ আমি হাত মুখ ধুয়ে এসে বিছানায় বসতেই আমার উপর একটা মোড়ানো কাগজ এসে পরলো ৷ জানালা দিয়ে বাহিরে উঁকি দিলাম কিন্তু কাউকে পেলাম না ৷ চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই আবার আরেকটা কাগজ এসে পরলো ৷ সবগুলা সাদা কাগজ ৷ কিছুই লিখা নেই এতে ৷ তো কাগজ গুলো এভাবে দিচ্ছে কে? জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করলাম কে আছে ৷ কিন্তু এবারো কাউকে পেলাম না ৷ অন্যদিকে তাকাতেই আরেকটা কাগজ আমার উপর এসে পরলো ৷ রেগে জানালা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পরলাম ৷

এবার পাথর ছোঁড়ার আওয়াজ পাচ্ছি ৷ মানে কেউ পাথর ছুড়ছে আর সেটা জানালার গ্লাসের সাথে লেগে শব্দ হচ্ছে কিন্তু রুমের ভিতরে আসছে না ৷ আমি রুম থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ির বাহিরে চলে গেলাম ৷ যেদিক থেকে কাগজ ছোঁড়া হচ্ছিল সেদিকে গেলাম ৷ কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলাম না ৷ আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ হাতে টান পরলো ৷ ভয়ে আমার হাত পা কেঁপে উঠলো ৷ কেউ আমার হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো ৷ আমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম ৷ কোনো পরিচিত গলার আওয়াজ পেয়ে চোখ খুললাম ৷

অরূপকে আমার সামনে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে গেলাম ৷ পুরো এক বছর পর ওনার গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম ৷ কষ্টটা যেন আরো বের হয়ে আসতে চাইছে ৷ এতোদিন পর কেন আজ আসলেন উনি? চাইলে তো আগেই আসতে পারতেন ৷ সেসব ভেবেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম ওনাকে ৷ উনি কিছু কদম পিছিয়ে গেলেন ৷ আমি হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“এখানে কেন এসেছেন? চলে যান আপনি ৷ আর ঝামেলা করতে আসবেন না প্লিজ চলে যান ৷”

বলেই আমি চলে যেতে নিলে অরূপ আমার হাত চেপে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন ৷ আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলাম না ৷ অরূপ বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

“এই একবছর আমাকে দূরে রেখেও শান্তি পাও নি?”

আমি কিছু বললাম না ৷ উনি আবার বলতে লাগলেন,,,,,,,,

“এই একবছর তো দূরে থেকেছো আমার থেকে ৷ বুঝেছি রাগ করে দূরে রয়েছিলে ৷ তাই বলে তুহিনকে বিয়ে করতেও রাজি হয়ে যাবে? এটা কীভাবে করলে?”

“আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই আমি রাজি হয়েছি ৷ আপনি বলার কে? আপনি কোন অধিকারে বলবেন আমাকে এসব?”

“ভালোবাসার অধিকার নিয়ে বলবো ৷”

তাচ্ছিল্য হেসে বললাম,,,,,,,,

“ভালোবাসা? আপনি না মায়া আপুকে ভালোবাসতেন ৷ তো আমাকে কেন টানছেন আবার? মায়া আপুকে এখন আর ভালো লাগে না তার জন্য?”

অরূপ চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,

“হ্যাঁ ওকে আমার ভালো লাগে না ৷ ও আমাকে মিথ্যা বলেছে তোমার নামে ৷”

“আপনি নাকি ভালোবাসতেন আমাকে? তো আপনার ভালোবাসা এতোটা সস্তা? কারো একটু মিথ্যা জালে নিজেকে জড়িয়ে ফেললেন?”

“আচ্ছা আমি ভুল করেছি ৷ হ্যাঁ এটাকে ভুল না অন্যায় বলে ৷ কিন্তু এর জন্য কি তুমি আমার থেকে দুরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবে? একটা কি সুযোগ দিবে না? স্বামী স্ত্রীর মাঝে তো কতই ঝগড়া হয় ৷ তাই বলে কি তারা আলাদা হয়ে যায়?”

“ঝগড়া আর কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া এক না ৷ এতোই যখন আমাকে নিজের বউ মনে করতেন তাহলে বিয়ের পর অন্তত সেই মিথ্যা কথাগুলো বিশ্বাস না করে আমাকে মেনে নিতে পারতেন ৷ কিন্তু আপনার মধ্যে কোনো বিশ্বাস নেই ৷ এক ভুল তো আবারো করতে পারেন ৷ তখন?”

“তখন নাহয় নিজের হাতে মেরে ফেলো ৷”

অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম আমি ৷ চোখ ভিজে আসছে বারবার ৷ অরূপ আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,

“চলে যাওয়ার একটু আগে যদি একবার পিছনে ঘুরে দাঁড়াতে, পিছনে তাকিয়ে দেখতে তাহলে আজ এক বছর হয়তো আমরা একসাথেই থাকতাম ৷”

অামি অরূপের দিকে তাকালাম ৷ উনি আবার বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,,,,,,,

“হুম হয়তো আমার ভালোবাসাটা অবিশ্বাসের ছিল ৷ কিন্তু কি বলো তো আমি তোমাকে তখন মাত্র ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম ৷ সম্পূর্ণ ভালোবাসার আগেই মায়া আমাকে ভুল বুঝিয়ে দিল ৷ আমি তখন জানতাম না যে মায়া ছিল এসবের পিছনে ৷ কে এরকম করেছিল তাকে আমি খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পাই নি ৷ তুমি চলে যাওয়ার পর তোমার শুন্যতা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে কাকে কতটা ভালোবাসি আমি ৷ কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল ৷ তুমি তো আমাকে ফেলেই চলে গিয়েছিলে ৷ কোথায় খুঁজি নি তোমাকে? সব জায়গায় তোমাকে খুঁজে বেরিয়েছি ৷ জায়গায় জায়গায় লোক লাগিয়েছি ৷ দেশের বাইরেও লোক পাঠিয়েছি ৷ নিজেও সব জায়গায় হন্ন হয়ে খুঁজেছি ৷ কিন্তু কোত্থাও পায় নি তোমায় ৷ তোমাদের বাড়িতেও গিয়েছিলাম ৷ তোমার মা বাবাকে বারবার বলতে বলেছিলাম তুমি কোথায় আছো? কিন্তু তারা কিছুই বলে নি আমাকে ৷ কত কাকুতি মিনতি করেছি তবুও বলেন নি তারা ৷ তাদের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছি ৷ হাত জোড় করে তোমার খবর দিতে বলেছিলাম ৷ কিন্তু তারা একটা টু শব্দও মুখ থেকে বের করেন নি ৷ ওই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল তারা ৷ আমি আমার নিজের মতো খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে গেছি কিন্তু পাই নি কোত্থাও ৷”

ধরা গলায় বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“তো এখন কীভাবে জানলেন?”

“তোমার আব্বুর মোবাইল থেকে তোমার নাম্বারের লোকেশান পেয়েছিলাম ৷ আচ্ছা শ্রেয়া অতীতকে ভুলে কি আমার কাছে আসতে পারবে না?”

অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“অতীত আমি ভুলতে পারবো না ৷ অতীত অতীতই ৷ আপনি আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছেন ৷ আমার তুহিনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ৷ আমি তুহিনকে কষ্ট দিতে পারবো না ৷ এখন আমি চাইলেও আপনার কাছে ফিরতে পারবো না ৷ আমি চাই না আমার জন্য তুহিনের মন ভেঙ্গে যাক ৷ উনি তো কোনো দোষ করেন নি ৷ আমাকে সবসময় সাহায্য করেছেন ৷ সবসময় আমার পাশে ছিলেন ৷ তো আমি কীভাবে তাকে কষ্ট দিব? তাও আমার জন্য?”

অরূপ আমাকে ওনার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,

“তাহলে তুমি আমাকে মেরে ফেলো ৷ এই এক বছর তো আমাকে কষ্ট দিয়েছো তাতে কি তুমি ভালো ছিলে? প্রত্যেকটা মূহুর্ত আমি জ্যান্ত লাশ হয়ে বেঁচে ছিলাম ৷ বারবার মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা জেকে বসতো ৷ কিন্তু মনের মধ্যে একটা ছোট্ট আশা নিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করতাম রোজ ৷ কিন্তু প্রতিদিনই নিরাশ হতে হতো আমাকে ৷ যখন তোমার খবর পেয়েছিলাম তখন কতটা খুশি হয়েছিলাম জানো? কিন্তু সেই খুশির থেকেও বেশি কষ্ট হয়েছে তখন যখন তোমার আর তুহিনের বিয়ের কথা শুনেছি আমি ৷ আচ্ছা আমার একটা ভুলের জন্য এতো বড় শাস্তি দিচ্ছো আমাকে? তাহলে নাও মেরে ফেলো আমাকে এক্ষুনি ৷ আমাকে নিজের হাতে মেরে যা ইচ্ছা করো তবুও আমার চোখের সামনে তুহিনকে বিয়ে করো না শ্রেয়া ৷ সহ্য করতে পারবো না আমি ৷ মরে যাবো আমি ৷”

বলতে বলতেই দুই হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পরলো অরূপ ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১৮

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৮
#অদ্রিতা_জান্নাত

মাঝখান দিয়ে কেটে গেল আরো দুই দিন ৷ এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসলো অরূপ ৷ আজ সকালের ফ্লাইটেই কানাডা এসেছে ও ৷ গাড়ি চালিয়ে সোজা যেতে লাগলো ওর গন্তব্যের দিকে ৷ বেশ কিছুক্ষন গাড়ি চালানোর পর হঠাৎ ওর গাড়ির সামনে একটা মেয়ে এসে পরলো ৷ জোরে ব্রেক কষে গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল ওই মেয়েটার কাছে ৷ মেয়েটার হাত ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে রেগে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“এই মেয়ে? দেখেশুনে চলতে পারো না? রাস্তা দিয়ে এভাবে পাগলের মতো দৌঁড়াচ্ছো কেন?”

মেয়েটা হাত ছাড়িয়ে নিল ৷ অরূপের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার স্ক্যান করে বলে উঠলো,,,,,,,

“দেখে তো ভদ্র বাড়ির ছেলে মনে হচ্ছে ৷ তো কথা বার্তা এতো অভদ্রদের মতো কেন?”

“কি? একি তো আমার গাড়ির সামনে মরতে এসেছো ৷ আবার বড় বড় লেকচার দিচ্ছো?”

“আমি কি আপনার টিচার যে আপনাকে লেকচার দিব?”

“ইডিয়ট!”

বলেই অরূপ গাড়ির দিকে চলে গেল ৷ মেয়েটা পেছন থেকে চিল্লিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,

“ইউ’র বংশ ইডিয়ট!”

অরূপ রেগে পিছনে একবার তাকিয়ে কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে চলে গেল ৷ মেয়েটা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,

“সব গুলা ছেলে এমন ৷ একদিক ভালো হলে আরেকদিক খারাপ ৷ ছেলেটার চেহারা ভালো কিন্তু ব্যবহার খুবই খারাপ ৷ ধূর আমার তো লেট হয়ে গেল এই ত্যাড়া ছেলেটার জন্য ৷ উফ কেন যে আজ ভার্সিটি আসতে গেলাম ৷”

বলেই চৈতি ওর বাড়ির দিকে যেতে লাগলো ৷




আজ তুহিন আর শ্রেয়ার অ্যাঙ্গেজমেন্ট ৷ সেই জন্য বাড়িতে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ৷ পুরো বাড়ির বাহিরের দিক সঙ্গে ভিতরের দিক অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷ চারদিকে অনেক মানুষ ৷ সবাই খুব সুন্দর করে সেজে রয়েছে ৷ একটা রুমে বসে আছে শ্রেয়া ওর গাঁয়ে ডিজাইন করা ডার্ক পারপেল কালারের একটা ভারী গাউন ৷ কানে গলায় আর হাতে মেচিং জুয়েলারী ৷ মুখে হালকা মেকআপ ৷ তবে এসব কিছুর মধ্যেও ওর মুখে কোনো হাসি নেই ৷ কিছুক্ষন পর ওর মা এসে ওকে নিচে নিয়ে গেল ৷ তুহিনের পাশে দাঁড় করানো হলো ওকে ৷ কালো শার্টের উপর ডার্ক পারপেল কালারের কোর্ট প্যান্ট পরেছে ও ৷ স্টেজে দাঁড়িয়ে চৈতির বাবা বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন ৷ সবার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তিনি ৷ শ্রেয়া তুহিনের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ৷



নিজের বাড়ির সামনে সেই সেইম গাড়িটা দেখে অবাক হলো চৈতি ৷ তবুও বেশি কিছু না ভেবে দ্রুত ভিতরে চলে গেল ৷ দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই অরূপের সাথে ধাক্কা খেল ও ৷ পেছনে ঘুরে অরূপকে দেখে অবাক হলো ৷ অরূপও অবাক হলো চৈতিকে দেখে ৷ চৈতি সামনে গিয়ে সিকিউরিটিকে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“কি হয়েছে আঙ্কেল? এই ছেলেটা কেন এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে?”

লোকটি চৈতিকে বললো,,,,,,

“দেখো না মা ইনভিটেশান কার্ড ছাড়া চলে এসেছে ৷ আর এখন ভিতরে যাওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করছে ৷ সাহেব তো আগেই বলে দিয়েছিল কার্ড ছাড়া কেউ এলাউ না ৷”

“হুম সেটাই যান আপনি এখান থেকে ৷”

চৈতির কথা শুনে অরূপ রেগে বলে উঠলো,,,,,,,,

“এই তুমি কে? আমাকে তাড়িয়ে দেবার তুমি কে? আর তুমিও বা এখানে কেন? সরো সামনে থেকে ৷”

বলেই যেতে নিলে সিকিউরিটি লোকটি আটকে নিলো অরূপকে ৷ চৈতি আবার বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“এই যে মিস্টার ঘাড়ত্যাড়া! আপনার ত্যাড়ামি অন্য জায়গায় দেখান গিয়ে ৷ এটা আমার বাড়ি ৷ সো এভাবে গুন্ডামি করলে পুলিশ ডেকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিব একদম ৷ আঙ্কেল কার্ড ছাড়া ভেতরে ঢুকতে দিবেন না একে একদম ৷”

বলেই চৈতি ভিতরে চলে গেল ৷ ভিতরে ঢুকেই শ্রেয়াকে খুঁজতে লাগলো ৷ শ্রেয়াকে এক জায়গায় তুহিনের সাথে দেখতে পেয়ে চৈতি সেদিকে চলে গেল ৷ ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালে শ্রেয়া ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“এতোক্ষনে আসার সময় হলো?”

“আর বলো না দেরি হয়ে গেল একটু একটা ত্যাড়া ছেলের জন্য ৷”

শ্রেয়া কপাল কুচকে ফেললো ৷ চৈতি হালকা হেসে বললো,,,,,,,,

“তোমাকে না অনেক সুন্দর লাগছে ৷ আমি যাই একটু সেজে আসি হুম?”

আমি মাথা নাড়াতেই চৈতি দৌঁড়ে উপরে চলে গেল ৷ কিন্তু কার কথা বললো ও? সেটা বুঝতে পারলাম না ৷ হঠাৎ আমাকে আর তুহিনকে স্টেজে ডাকা হলো ৷ আমি তুহিনের দিকে তাকালে উনি ওনার বাম হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন ৷ উপস্থিত সবার চোখ এখন আমাদের দিকে ৷ জোরে একটা শ্বাস নিয়ে তুহিনের হাত ধরে স্টেজে উঠে গেলাম ৷




এদিকে অরূপকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হলো না ৷ ও রেগে সেখান থেকে চলে যেতে নিতেই একটা লোকের হাতের ইনভিটেশান কার্ডের দিকে চোখ গেল ৷ ও লোকটাকে ডেকে একটু দূরে এনে টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে কার্ডটা ওকে দিয়ে চলে যেতে বললো ৷ লোকটা প্রথমে যেতে না চাইলে অরূপ আরো কিছু টাকা তার হাতে ধরিয়ে দিল ৷ লোকটা কিছু একটা ভেবে চলে গেল ৷ আর অরূপ সেই কার্ডটা নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল ৷ বাড়ির ভিতরে যেতেই শ্রেয়াকে তুহিনের পাশে দেখে অবাক হলো ৷ সঙ্গে রাগও ৷ চারপাশে একবার তাকিয়ে মুখে একটা মাস্ক পরে অাবার শ্রেয়ার দিকে তাকালো ৷

চৈতি রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো ৷ শ্রেয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো ও ৷ তখনি ওর চোখ যায় অরূপের দিকে ৷ মুচকি হাসলো ও ৷

কিছুক্ষন পর গান বেজে উঠলো ৷ উপস্থিত সবাই জোরেজোরে হাত তালি দিতে লাগলো আর চিয়ারআপ করতে লাগলো ৷ সেই গানের তালে তালে আমি তুহিনের সাথে নাঁচতে লাগলাম ৷ অবশ্য এটার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আমার ৷ তবুও করতে হচ্ছে ৷ কিন্তু এখন আমার একটা অদ্ভুত ফিলিং’স হচ্ছে ৷ যেটা বুঝতে পারছি না আমি ৷ এরকম কেন লাগছে? কেন এতো অস্থিরতা হচ্ছে আমার ৷ আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে লাগলাম ৷ কিন্তু কাকে? সেটা জানা নেই আমার৷

মিউজিক বন্ধ হয়ে গেলে তুহিন আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো ৷ ডানহাতে একটা আংটি আর বাম হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মুখে হাসি নিয়ে বসে আছে ৷ উপস্থিত সবার দৃষ্টি আমাদের দিকে ৷ কিন্তু আমার এই দু চোখ অন্য কাউকে খুঁজছে ৷ বারবার মনে হচ্ছে অরূপ আছেন এখানে ৷ কিন্তু সামনে আসছেন না কেন? হাত বাড়িয়ে তুহিনের হাতের উপর হাত রাখতেই উনি অামার হাতে রিং পরিয়ে দিলেন ৷

এদিকে অরূপ রাগে ফুসছে ৷ পারছে না স্টেজে চলে আসতে ৷ এখন সবার সামনে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছে না ও ৷ কোনো রকমে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছে ৷ আর অন্যদিকে চৈতি অরূপকে এভাবে রেগে যেতে দেখে কপাল কুচকালো ৷ ও বুঝতেই পারছে না শ্রেয়া আর তুহিনকে একসাথে দেখে অরূপের এতো রাগ হচ্ছে কেন? আপাতত এসব বিষয় বাদ দিয়ে হাতে একটা রিং বক্স নিয়ে স্টেজে উঠে শ্রেয়ার সামনে ধরলো সেটা ৷ তারপর ইশারা করে রিংটা নিতে বললো ওকে ৷ শ্রেয়া রিংটা হাতে নিয়ে চারপাশে তাকাতে লাগলো বারবার ৷ কিন্তু কাউকেই পাচ্ছে না ৷ তাহলে ওর মন কেন এতো টানছে? কেন এতো ছটফট করছে?

অরূপ আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না ৷ হনহনিয়ে বাড়ির বাইরের দিকে চলে এলো ৷ গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো গেইট টায় হাত দিয়ে জোরে চেপে ধরলো ৷ গোলাপের কাঁটায় অরূপের হাত কেঁটে রক্ত পরছে ৷ ও আরো জোরে চেপে ধরলো ৷ ওর ইচ্ছা করছে নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করে দিতে ৷ ওর একটা ভুলের শাস্তি শ্রেয়া কেন ওকে এভাবে দিচ্ছে? এতো বড় ভুল করে ফেলেছে ও? যেটা ক্ষমার অযোগ্য?

দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো ৷ গাড়ির গ্লাসে কয়েক বার হাত দিয়ে ঘুষি দিতে লাগলো ৷ তবুও রাগটা কমাতে পারলো না ৷ রক্তাত্ত হাত দিয়ে নিজের মাথাটা চেপে ধরে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“কেন শ্রেয়া কেন? এতোটাই ঘৃনা করো আমাকে? এই একবছর তো দূরে থেকেছো অামার থেকে আবারও দূরে যাওয়ার চেষ্টা কেন করছো? একটা সুযোগ কি দেবে না আমায়? মানুষ তো ভুল থেকেই শিক্ষা নেয় ৷ আমিও নিয়েছি ৷ অতীতকে ভুলে কি আমার কাছে ফিরে আসা যায় না? এতোটাই খারাপ আমি?”




তুহিনের হাতে আংটিটা পরিয়ে দিয়ে আমি সোজা স্টেজ থেকে নেমে বাহিরের দিকে চলে গেলাম ৷ পিছন থেকে কেউ ডাকলেও শুনলাম না আমি ৷ দৌঁড়ে বাহিরের দিকে চলে এলাম ৷ তখনি আমার চোখ গেলো একটা ধবধবে সাদা রঙের গাড়ির দিকে ৷ গাড়ির ভিতরে কেউ একজন আছে ৷ কিন্তু কে আছে সেটাই দেখতে পারছি না ৷ আমি ছুটে চলে গেলাম সেদিকে ৷ গাড়িটা ধরবো এমন সময় গাড়িটা সামনের দিকে এগিয়ে গেল আমাকে ফেলেই ৷ আমি সেটার পিছনে দৌঁড়ে গেলাম ৷ কিন্তু মাঝরাস্তায় হোঁচট খেয়ে পরে গেলাম ৷ আর গাড়িটা আমার চোখের আড়াল হয়ে গেল ৷

তখনি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“অরূপ যাবেন না ৷ আপনি এসেছিলেন সেটা জানি আমি ৷ প্লিজ আমাকে না নিয়ে যাবেন না…”

বলেই সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ‘আহ’ করে উঠলো শ্রেয়া ৷ তুহিন ছুটে চলে এলো শ্রেয়ার কাছে ৷ ওর পিছে পিছে বাড়ির সবাইও চলে এলো ৷ তুহিন শ্রেয়া মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে শ্রেয়ার গালে হালকা থাবা দিতে দিতে বলে উঠলো,,,,,,

“এই শ্রেয়া কি হলো তোমার? এরকম করছো কেন তুমি? শ্রেয়া?”

শ্রেয়া মাথায় হাত দিয়ে আবারো চিৎকার করে উঠলো ৷ চোখের কোণ বেয়ে পরতে লাগলো নোনা পানির কণা ৷ চোখ খুলার চেষ্টা করেও চোখ খুলে রাখতে পারলো না ৷ সমস্ত ভার ছেড়ে দিল তুহিনের উপর ৷ তুহিন দু হাতে শ্রেয়াকে আগলে নিয়ে পাগলের মতো একেকজনকে ডাক্তার ডাকতে বললো ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১৭

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৭
#অদ্রিতা_জান্নাত

মাথায় যন্ত্রনা করছে প্রচুর ৷ মাথা চেপে ধরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম ৷ বেরোতেই চৈতিকে দেখতে পেলাম ৷ ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,,,,,,,,,

“তুমি এখানে?”

চৈতি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“তোমার কি হয়েছে? কি রকম জানি দেখাচ্ছে? তোমার শরীর ঠিক আছে তো?”

“আমার আবার কি হবে? আমি ঠিক আছি ৷ আমাকে এক পাতা ঘুমের ওষুধ দাও তো ৷”

চৈতি কপাল কুচকে বলে উঠলো,,,,,,,,

“ভাইয়া না তোমাকে কয়েকদিন আগে এনেদিল?”

“ওগুলো শেষ তো ৷ তোমার কাছে থাকলে দাও প্লিজ আমার মাথায় যন্ত্রনা করছে ৷”

“শ্রেয়া তোমার কি হয়েছে? ইদানিং ধরে তুমি এই এক কথা বলে যাচ্ছো ৷ আমি ভাইয়াকে বলে আসি আগে ৷”

চৈতি যেতে নিলেই আমি ওর হাত ধরে আটকে দিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“তুহিনকে কিছু বলার দরকার নেই ৷ তাহলে উনি শুধু শুধু চিন্তা করবেন ৷ আর আমার কিছু হয়নি ৷ তুমি ওষুধটা দেও ৷ একটা ঘুম দিলেই ঠিক হয়ে যাবে ৷”

“সত্যি তো?”

“হুম ৷”

“আচ্ছা তাহলে নিচে চলো আগে খেয়ে পরে নাহয় ওষুধ খেয়ো ৷”

বলেই চৈতি আমাকে নিচে নিয়ে গেল ৷




পরেরদিন ৷
ভার্সিটি থেকে বাড়িতে ফিরতেই বাড়ির সামনে এতো বড় একটা গাড়ি দেখে অবাক হলাম আমি আর চৈতি ৷ এই গাড়িটা এই বাড়িতে আগে কখনো দেখেছি বলে তো মনে হচ্ছে না ৷ তাহলে হঠাৎ কোথা থেকে আসলো ৷ আমি আর চৈতি বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলাম ৷ বাড়ির ভিতরে গিয়ে আশেপাশে তাকাতেই আমার চোখ ছলছল করে উঠলো ৷ দৌঁড়ে গিয়ে আম্মু আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম ৷ আম্মু আব্বু দুজনেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ৷ পুরো একবছর পর তাদের হাতের ছোঁয়া পেয়ে কষ্টটা যেনো আরো বেড়ে গেল ৷ আম্মু আমার দুগালে হাত রেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“কতটা শুকিয়ে গেছিস তুই ৷”

বলেই কেঁদে দিল ৷ আমি আম্মুকে একসাইড দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“আরে আর কত কাঁদবে? আমার কিন্তু ভালো লাগছে না এখন ৷”

আম্মু চোখের পানি মুছে হালকা হাসলো ৷ এখানে শুধু আমার বাবা মা না তুহিনের বাবা মাও আছে ৷ আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“এতো তাড়াতাড়ি তোমরা কীভাবে এলে?”

“সবকিছু তুহিন করেছে ৷ আমাদের আসা যাওয়ার জন্য যা যা লাগবে সব ও নিজেই রেডি করেছে ৷”

অবাক হয়ে তাকালাম তুহিনের দিকে ৷ উনি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন ৷ আমি তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নিলেন ৷ তাকে উদ্দেশ্যে করে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,

“এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে কি করলেন?”

তুহিন মাথা চুলকে উত্তর দিলেন,,,,,,,,

“ওই আর কি ৷”

আমি মুচকি হেসে বললাম,,,,,,,, “থ্যাংক ইউ!”

তারপর আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“ফ্রেশ হয়ে এসে তোমাদের সাথে গল্প করবো ৷”

তারপর চৈতি আর শ্রেয়া উপরে চলে গেল ৷ তুহিনও ওর রুমে চলে গেল ৷ চৈতির বাবা, শ্রেয়ার বাবা মা আর তুহিনের বাবা মা এক সাথে সোফায় বসলেন ৷ কয়েকজন সার্ভেন্ট এসে তাদের সামনে খাবার দিয়ে গেল ৷ শ্রেয়ার বাবা চৈতির বাবাকে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

“ধন্যবাদ ভাই ৷ আমার মেয়েটাকে আপনার কাছে সুরক্ষিত রাখার জন্য ৷”

চৈতির বাবা মুচকি হেসে বললেন,,,,,,,

“শ্রেয়াকে আমি আপনার মেয়ে হিসেবে নিজের কাছে রাখি নি কিন্তু ৷ ওকে আমি নিজের মেয়ে হিসেবে রেখেছি ৷”

শ্রেয়ার মা বলতে লাগলেন,,,,,,,,

“সত্যি আপনাদের মতো ভালো মানুষ পৃথিবীতে খুব কম দেখেছি আমি ৷ দেশে থাকতে মেয়েটার জন্য চিন্তা হতো অনেক ৷ কিন্তু আপনারা থাকতে আমার মেয়েটা ভালো থাকবে ৷ সেটা আজ নিজ চোখে দেখে চিন্তা মুক্ত হলাম ৷”

চৈতির বাবা বললেন,,,,,,,,,

“সেটা নাহয় ঠিক আছে ৷ কিন্তু আমার কিছু দরকারি কথা আছে আপনাদের সাথে ৷”

তুহিনের মা কপাল কুচকে বলে উঠলেন,,,,,,,

“কি কথা ভাই?”

চৈতির বাবা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,

“আমার মনে হয় শ্রেয়া আর তুহিন দুজন দুজনকে পচ্ছন্দ করে ৷”

ওনার কথায় শ্রেয়ার মা বললেন,,,,,,,,

“আমার তো মনে হয় তুহিন শ্রেয়াকে পচ্ছন্দ করে ৷ কখনো তো এটা মনে হয়নি শ্রেয়াও তুহিনকে পচ্ছন্দ করে ৷”

“হুম সেটা ঠিক ৷ কিন্তু পরে যে ও পচ্ছন্দ করবে না তেমন তো কোনো কথা নেই ৷” (চৈতির বাবা)

“কি বলতে চান আপনি?” (শ্রেয়ার বাবা)

“দেখুন আমি শ্রেয়ার সম্পর্কে সব কিছু জানি ৷ সবসময় তুহিন শ্রেয়ার পাশে ছিল ৷ শ্রেয়াকে সব রকম ভাবে ও সব সময় সাহায্য করেছে ৷ কেউ কারো জন্য এতোটা কি করে করতে পারে? তুহিন শ্রেয়াকে ওর মনের কথা জানাতেও ভয় পায় ৷ যদি শ্রেয়া ওকে ভুল বুঝে? আমি জোর করবো না ৷ শুধু বলবো তুহিনের মতো শ্রেয়াকে আর কেউ বুঝবে না ৷ শ্রেয়া আমার মেয়ের মতো ৷ তাই আমার মেয়ের সুখের জন্য কোনটা ঠিক সেটা আপনাদের বললাম ৷ এখন বাকিটা আপনাদের হাতে ৷”

শ্রেয়ার মা বাবা কিছুক্ষন চুপ থেকে ভাবতে লাগলেন কি করবেন ৷ কিছুক্ষন পর শ্রেয়ার বাবা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শ্রেয়ার মা বলে উঠলেন,,,,,,,,,

“ভাই আপনি একদম ঠিক বলেছেন ৷ একা একা অনেক লড়াই করেছে আমার মেয়েটা আর না ৷ অরূপের জন্য ও দেশেও যায় নি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে ৷ ওর মনে এখনো ওর নাম গেঁথে রয়েছে ৷ ওর মন থেকে ওই নামটা মুছে ফেলতে হলে আমাদের শ্রেয়াকে তুহিনের সাথে বিয়ে দিতে হবে ৷”

শ্রেয়ার বাবা বললেন,,,,,,,,,

“এসব তুমি কি বলছো? শ্রেয়াকে না জানিয়ে এতো বড় সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক না ৷ ও জানলে কষ্ট পাবে ৷”

“সারাজীবন যখন কষ্ট পেয়েছে ৷ আজও নাহয় আরেকটু পাক ৷ যে ছেলেটা ওকে এতো ভালোবাসে সে ছেলেটা অন্তত ওকে কষ্ট দিতে পারবে না ৷” (শ্রেয়ার মা)

“কিন্তু…” (শ্রেয়ার বাবা)

“আর কোনো কথা না ৷ আমি আমার মেয়ের খারাপ চাইবো না কখনোই ৷ ভাই আপনি তুহিনের সঙ্গে কথা বলে দেখেন ৷ আমি আমার মেয়েকে রাজি করিয়ে নিব ৷ আর ভাইয়া, ভাবি (তুহিনের মা, বাবা) আপনারা কি রাজি?” (শ্রেয়ার মা)

তুহিনের মা মুচকি হেসে বললেন,,,,,,,,,,

“শ্রেয়াকে আমরা চিনি ৷ তাই আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন ৷ ওরা রাজি থাকলে আমরাও রাজি ৷”




বিকালেবেলা ৷
আমি বিছানায় বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি ৷ তখনি আম্মু রুমে এলো ৷ হালকা হেসে আমার পাশে বসতে বসতে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“পড়ছিস নাকি?”

আমি বইটা সাইডে রেখে আম্মুর কোলে মাথা রাখলাম ৷ আম্মু আমার মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“তোর শরীর ঠিক আছে তো?”

“হুম আমার আবার কি হবে?”

“তোকে দেখে অন্য রকম লাগছে ৷ নিজের একটু যত্ন করতে পারিস তো নাকি ৷”

আমি কিছু বললাম না ৷ চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলাম ৷ আম্মু কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো,,,,,,

“তোর সঙ্গে কথা আছে ৷”

আমি চোখ বন্ধ রেখেই বললাম,,,,,,,,,

“হুম বলো না?”

“আগে বল আমার কথাটা শুনবি? রাখতে পারবি আমার কথা?”

“বলেই দেখো না ৷ আমি কি কখনো তোমার কথার অবাধ্য হয়েছি? কোন কথাটা শুনি নি বলো? না শুনলে বলো আজ শুনবো ৷”

“আগে শুনেছিস কিন্তু আজ নাও শুনতে পারিস ৷”

আম্মুর দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,

“কি এমন কথা? যে আমি শুনবো না?”

“অতীতকে ভেবে আর কত কষ্ট পাবি বল? নিজের জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নে ৷”

“হঠাৎ এই কথা?”

“তুহিনের সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক করেছি আমি ৷”

আম্মুর দিকে একপলক তাকিয়ে উঠে বসলাম ৷ ছলছল চোখে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“এএটা কি বলছো তুমি? এএএটা হয় না ৷”

“কেন হয় না? তুই কি জানিস না যে তুহিন তোকে ভালোবাসে?”

“ভ…ভালোবাসে?”

“হুম ৷ তুহিন তোকে ভালোবাসে ৷ তুই কি সেটা কখনো বুঝতে পারিস নি? তুহিন সবসময় তোর পাশে ছিল ৷ যখন তোর পাশে কেউ ছিল না ৷ তখন তুহিন ছিল তোর পাশে ৷ সেটা কি এমনি এমনি? অরূপকে তো তুই ভালোবেসেছিস ৷ কিন্তু পরিবর্তে কি পেয়েছিস? শুনেছি অরূপও নাকি তোকে ভালোবাসতো ৷ আর সেই ভালোবাসাটা অবিশ্বাসের ছিল ৷ আর অরূপ তোকে ভালোবাসতো ৷ ভালোবাসে না এখন আর ৷ তাহলে কেন তুই অরূপের স্মৃতি আকড়ে ধরে বেঁচে থাকবি? তুহিন কিন্তু সবসময় তোকে বিশ্বাস করে গেছে ৷ আবার দেখ কাল রাতে তুই আমাদের দেখতে চেয়েছিলি ৷ তাই তুহিনও আজই আমাদের তোর সামনে হাজির করলো ৷ তোর কষ্টটা যে ওর সহ্য হয় না সেটা কি তুই জানিস না? তোর মুখে একটু হাসি ফুটানোর জন্যই তো ও এতো কিছু করে ৷ কিন্তু কেন করে? সেটা জানতে পারিস না?”

“কিন্তু এর জন্য কেন ওনার সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে চাইছো?”

“কারন বিয়ের আগেই ও যদি তোর এতোটা খেয়াল রাখতে পারে ৷ তাহলে বিয়ের পর কেন পারবে না?”

আমি বিছানা থেকে নেমে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,

“না আম্মু এটা হয় না ৷ উনি হয়তো ভালোবাসেন আমাকে ৷ কিন্তু আমি তো ওনাকে ভালোবাসি না ৷ ইভেন পারবোও না কখনো ৷ প্লিজ আম্মু এরকম করো না ৷ আমি তুহিনের সঙ্গে নিজেকে মানাতে পারবো না ৷ পারবো না আমি এই বিয়েটা করতে ৷”

আম্মু আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,

“তুই যদি আমাকে নিজের মা ভাবিস তাহলে রাজি হয়ে যা ৷ একটা কথা মাথায় রাখবি মা বাবা কখনো তার সন্তানের খারাপ চায় না ৷ তুই শুধু নিজের কথা ভেবে সবাইকে কষ্ট দিস না ৷ তুই তো অরূপকে ভালোবাসিস তো তুই তো জানিস এক তরফা ভালোবাসার কষ্টটা কি রকম? সেই একই কষ্ট তুহিনকে দিবি?”

আম্মুর দিকে ছলছল চোখে তাকালাম ৷ আম্মু চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“যত ইচ্ছা ভেবে নে ৷ যত ইচ্ছা সময় নে ৷ সমস্যা নেই আমার ৷ কিন্তু রাজি হয়ে যাস ৷”

বলেই আম্মু রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ আমি চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম ৷




রাতের বেলা ৷
ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আমি ৷ হালকা লাইটের আলোয় ছাদের বাহিরে ও ভিতরের সবকিছু দেখা যাচ্ছে ৷ চারপাশে বয়ে চলেছে হালকা ঠান্ডা বাতাস ৷ আশেপাশের সবকিছু চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি ৷ কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ কিন্তু সবার জন্য হলেও আমাকে এই বিয়েতে রাজি হয়ে যেতে হবে ৷ হঠাৎ কারো গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলাম ৷

পাশে তাকিয়ে দেখি তুহিন দাঁড়িয়ে আছেন ৷ চোখ ফিরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম ৷ তুহিন হালকা আওয়াজে বললেন,,,,,,,,

“সরি!”

কপাল কুচকে তাকালাম তার দিকে ৷ উনি আমার তাকানো দেখে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,

“আসলে আমি বুঝতে পারি নি ৷ ব্যাপারটা এরকম হয়ে যাবে ৷ তোমার চিন্তা করার দরকার নেই ৷ বিয়েটা করতে হবে না তোমাকে ৷ আমি সবাইকে বলে দিব আমি রাজি না ৷ সবাই ঠিক মেনে যাবে ৷ শুধু শুধু নিজে স্ট্রেস নিও না ৷”

“আপনি এতো ভালো নাহলেও পারতেন ৷”

“মানে?”

আমি চোখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“সবাই যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভালোই নিয়েছে ৷ আপনার আর আমার ভালোর কথা ভেবেছে সবাই ৷ আমি আর অতীতকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই না ৷”

“তাহলে তুমি রাজি এই বিয়েতে?”

“আমি আমার মা বাবার জন্য রাজি হয়েছি শুধুমাত্র ৷ কিন্তু আমার নিজেকে তৈরি করে নিতে সময় লাগবে ৷”

“জোর করে কেন রাজি হচ্ছো শ্রেয়া?”

“জোর করে নি আমাকে কেউ ৷ আর কেউ জোর করলেও রাজি হতাম না আমি ৷”

“তুমি সত্যি মন থেকে রাজি হয়েছো?”

তুহিনের গলাটা ভেজা শোনালো ৷ ওনার দিকে তাকালাম আমি ৷ ওনার চোখে পানি কিন্তু কেন? আমি কিছু বললাম না শুধু মাথা নাড়িয়ে ‘হুম’ বললাম ৷ আচমকা উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন ৷ কেঁপে উঠলাম আমি ৷ চোখ বন্ধ করে তুহিনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম ৷ তাতে ওনার হুশ ফিরলো ৷ উনি আমাকে বললেন,,,,,,,,,,

“শ্রেয়া আমি…”

“স…সমস্যা ন…নেই ৷”

বলেই ওখান থেকে ছুটে নিচে চলে গেল শ্রেয়া ৷ তুহিন ওখানে দাঁড়িয়ে নিজের কপাল চাপড়িয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“শিট কি করলাম আমি এটা? অন্তত শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে নেয়ার দরকার ছিল ৷”

এদিকে শ্রেয়া রুমে এসে নিজের মাথা হাত দিয়ে চেপে ধরলো ৷ অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে ৷ মনে হচ্ছে এক্ষুনি মাথাটা ফেটে যাবে ৷ একদিক দিয়ে মনের যন্ত্রনা আরেক দিক দিয়ে মাথার যন্ত্রনা ৷ নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে ৷ টি টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ঘুমের ওষুধ বের করে খেয়ে নিল ৷ এটাই এখন ওর সঙ্গি ৷ এটা না খেলে অশান্তি লাগে ওর ৷ মূহুর্তের মধ্যেই বিছানায় ঢলে পরলো ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১৬

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৬
#অদ্রিতা_জান্নাত

“তো শ্রেয়া ম্যাডাম আর চৈতি ম্যাডাম আজ কি বাসায় যাবেন? নাকি এখানেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করছেন হুমম?”

তুহিনের কথা শুনে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,

“আপনি সামনে এগোন ৷ আমরা আসছি ৷”

উনি হালকা হেসে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন ৷ আমি চৈতির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“বাকিটুকু বাসায় গিয়ে বোঝানো যাবে ৷ এখন চলো তাড়াতাড়ি ৷ নাহলে দেখা যাবে তোমার ভাই আমাদের রেখেই চলে যাবে ৷”

চৈতি নিঃশব্দে হাসলো ৷ তারপর আমরা দুজন নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ বেশ কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামলো একটা বড় বাড়ির সামনে ৷ ভিতরে যেতেই দেখি আঙ্কেল ঘড়ি দেখছে আর অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য ৷ এটা তার প্রতিদিনের কাজ ৷ আমরা বাড়িতে না থাকলে এভাবে ঘড়ি দেখে অপেক্ষা করে আমাদের জন্য ৷ আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দেখে আমাদের কাছে এগিয়ে এসে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“ভার্সিটিতে কোনো সমস্যা হয়নি তো আবার? তোদের নিয়ে কিন্তু আমার অনেক চিন্তা হয় ৷”

চৈতি আঙ্কেলের একহাত জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“পাপা এতোটা চিন্তা কেন করো? শ্রেয়া তো আছে আমার সাথে না?”

“তবুও চিন্তা হয় রে মা ৷”

“এতোটা চিন্তা করা কিন্তু ভালো না তোমার শরীরের জন্য ৷ আমি আছি তো আঙ্কেল ৷ সবসময় দুজন দুজনকে ঠিক সামলে নিব ৷”

আঙ্কেল আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“তাই তো তোর উপর আমার এতো ভরসা ৷ এখন যা দুজন একটু ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে গিয়ে ৷”

ওরা দুজন মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে গেল ৷ তুহিন চৈতির বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“কি ভাবছো তুমি মামা?”

সে তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“কি আর ভাববো বল ৷ মেয়ে দুটোকে নিয়ে চিন্তা হয় আমার ৷ যদিও শ্রেয়া আমার নিজের মেয়ে না ৷ তবুও ওকে তো আর আমি আলাদা চোখে দেখি না ৷”

“শ্রেয়া সম্পর্কে সব তো জানো তুমি ৷”

চৈতির বাবা মুচকি হেসে বলতে লাগলেন,,,,,,

“হুম জানি তো ৷ তুই যেভাবে ওর পাশে সবসময় থেকেছিস তাতে আমার মনে হয় সারাজীবন তুইই পারবি ওর পাশে থেকে ওর খেয়াল রাখতে ৷”

তুহিন মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,

“সেটা হয় না মামা ৷”

“কেন হয় না? শ্রেয়া কি কখনো বলেছে তোকে যে ও তোকে পচ্ছন্দ করে না? তুই যদি বলিস তো আমি আপুর সাথে কথা বলতে পারি ৷”

“তার কোনো প্রয়োজন নেই ৷ আমি চাই না এই কারনে শ্রেয়া আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে যাক ৷ এখন অন্তত ওকে নিজের চোখে দেখতে পারি ৷ কিন্তু তখন সেটাও হবে না ৷ ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না ৷ তাই আম্মুকে এসব বিষয় জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই ৷ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ৷”

বলেই তুহিন উপরে চলে গেল ৷ চৈতির বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,

“তোর মতো ছেলে আমি খুব কম দেখেছি রে ৷ যে কিনা নিজের কথা না ভেবে নিঃস্বার্থভাবে অন্যের কথা ভেবে চলেছে সারাক্ষন ৷ কখনো সম্ভব হলে আমি নিজ হাতে তোকে শ্রেয়ার সাথে মিলিয়ে দিব ৷”




ব্যালকনিতে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি ৷ চোখের পলকে একবছর চলে গেছে নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছি ৷ আব্বু আম্মুর থেকে দূরে রয়েছি পুরো বছর খানিক সময় ৷ অবশ্য তাদের সাথে আমার প্রতিদিন কথা হয় ৷ কিন্তু সেটাতো আর সামনাসামনি না ৷ প্রথম যখন এই বাড়িতে এসে উঠেছিলাম তখন অনেক ভয় লেগেছিল মনে মনে ৷ কিন্তু এই বাড়ির সবাই আসলেই অনেক ভালো ৷ সবাই বলতে এখানে আছে শুধু চৈতি আর ওর বাবা ৷ চৈতির মা অনেক আগেই মারা গেছে ৷ চৈতির বাবাই ওকে বাবা আর মায়ের আদর একসাথে দিয়ে বড় করে তুলেছে ৷ চৈতিকে দেখে বোঝাই যায় না যে ওর মা নেই ৷ ওর বাবাই ওর সব ৷ মেয়েটা বড্ড হাসিখুশি ৷ প্রথমদিন থেকেই আমার সঙ্গে খুব ভালো ভাবে কথা বলেছে যেন ও আগে থেকেই চিনতো আমাকে ৷ চৈতি হচ্ছে তুহিনের মামাতো বোন ৷

পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি চৈতি দাঁড়িয়ে আছে ৷ দুই হাতে দু কাপ কফি ৷ একটা কাপ আমার দিকে এগিয়ে দিলো ৷ আমি কাপটা হাতে নিয়ে আবার সামনের দিকে চোখ রাখলাম ৷ চৈতি বলে উঠলো,,,,,,,,,

“আবার কি ভাবছো?”

“তেমন কিছু না ৷”

“প্রতিদিন এতো গভীরভাবে কি ভাবো বলো তো?”

আমি হাসলাম কিছু বললাম না ৷ কফিটা শেষ করলে কাপ দুটো হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ও ৷ আমি আবার বাহিরের দিকে তাকালাম ৷ বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে ৷ চারপাশে সূর্য ডোবার পূর্বাভাশ ফুটে উঠেছে ৷ এখান সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হচ্ছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত ৷ পাশের চেয়ারে বসে প্রকৃতির এই দৃশ্যটা উপভোগ করতে লাগলাম আমি ৷

___________________________________

বাংলাদেশে এখন সকাল সাড়ে আটটা বাজে ৷ অরূপের বাবা ডাইনিং টেবিলে বসে আছে ৷ অরূপের মা তাকে খাবার সার্ভ করে দিল ৷ তিনি ভাত মাখতে মাখতে বলে উঠলেন,,,,,,,,

“কাল রাতে ছেলেটা কিছু খায় নি ৷ এখন তাড়াতাড়ি ডেকে নিয়ে আসো ৷ একসাথে বসে খাই নাহয় ৷”

“তোমার ছেলে এখন খাবে? সেটা মনে হয় তোমার? সারাদিন ওসব খেয়েই তো কাটিয়ে দেয় ৷ আমার একটা কথাও যদি শুনতো ৷”

অরূপের বাবা কিছু না বলে চুপচাপ খাওয়ায় মন দিলেন ৷ আশা নিজের চোখ কচলাতে কচলাতে রুম থেকে বের হলো ৷ ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“মাত্র উঠলি? আজ না তোর কলেজে কিসের প্রোগ্রাম আছে ৷”

চেয়ার টেনে আশা ওর বাবার পাশে বসে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“হুম আছে তো ৷ খেয়ে রেডি হয়ে নি ৷ খুব খিধে পেয়েছে খেতে দাও আগে ৷ আর ভাইয়া কি উঠবে না? ও তো বলেছিল আজ আমায় কলেজে দিয়ে আসবে ৷”

“ওর বলা আর না বলা একই কথা ৷”

বলেই তিনি আশাকে খাবার বেড়ে দিলেন ৷ খাবার শেষ করে ও সোজা চলে গেল অরূপের রুমে ৷ ভাইয়া বলে রুমে ঢুকেই দেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে অরূপ ৷ বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি সে ৷ আশার গলা শুনে অরূপ পিছনে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“কি রে? আমাকে বলে তুই নিজেই এখনো রেডি হোস নি?”

আশা আমতা আমতা করে বলে উঠলো,,,,,,

“ওওওই আর কি ৷ আমি রেডি হয়ে আসছি তাহলে ৷”

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“ভাইয়ার আজ কি হলো? এতো সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডিও হয়ে গেল ৷ আমিও রেডি হয়ে নি ৷ নাহলে আবার আমাকে রেখেই চলে যাবে ৷”




আশাকে কলেজে ড্রপ করে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে কলেজের এক সাইডে দাঁড়িয়ে রইলো অরূপ ৷ হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে ৷ কিছুক্ষনপর আকাশ সেখানে অরূপের সামনে এসে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“কি হলো আবার? আজ এভাবে ডাকলি?”

“এতো কথা বলার সময় নেই ৷ এটা ধর ৷”

বলেই আকাশের হাতে একটা ফোন দিল অরূপ ৷ আকাশ কপাল কুচকে তাকালো ৷ অরূপ আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“এই ফোনের কললিস্ট চেক করে ৷ প্রত্যেকটা নাম্বারের লোকেশান চেক কর ৷ প্রত্যেকটা নাম্বারের লোকেশন জেনে নাম্বারসহ বলবি আমাকে ৷”

“কার মোবাইল এটা?”

অরূপ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,,,,,,,,

“তোর শ্বশুড়ের হইছে?”

“এ্যাঁ? কিন্তু এটা দিয়ে কি হবে?”

অরূপ বাঁকা হেসে বললো,,,,,,,,,

“অনেক কিছু হবে ৷ যেরকমটা বলেছি সেরকমটা কর ৷ আজ আমি আসি অফিসে আবার একটা ডিল কম্পিলিট করার জন্য মিটিং আছে ৷ আব্বু আমাকে এই ডিলটার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছে ৷ সো আমাকে সেটা করতে হবে ৷ তুই তোর কাজ শেষে আশাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে চলে যাস বরং ৷”

বলেই অরূপ আকাশকে কিছু বলতে না দিয়ে উল্টোদিকে ঘুরে হাঁটতে লাগলো ৷ আকাশ বোকার মতো ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ অরূপ কি করতে চাইছে সেটা ওর নিজের কাছেই অজানা ৷ তবুও যা করতে বলেছে সবটা ওকে করতেই হবে ৷

_______________________________

রাতের বেলা রুমে একা বসে আছি আমি ৷ প্রচুর বিরক্ত লাগছে ৷ এই বাড়িতে যতক্ষন থাকি সারাক্ষন ফ্রি থাকি ৷ এভাবে বসে থাকতে কি ভালো লাগে সবসময়? বিভিন্ন চিন্তা মাথায় খালি জেকে বসেছে ৷ বারবার ইচ্ছা করছে এখান থেকে ফিরে চলে যাই নিজের দেশে ৷ কিন্তু কোনো একটা কারন আটকে দিচ্ছে আমাকে ৷ কারনটা তো আর আমার কাছে অজানা নয় ৷ মোবাইল হাতে নিয়ে আম্মুর নাম্বারে ভিডিও কল দিলাম ৷ সাথে সাথে রিসিভ হলেই বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,,

“কেমন আছো তোমরা?”

“ভালো আছি রে তুই?”

“হুম আমিও ৷”

“শোন ওখানে কোনো সমস্যা হলে বলিস কিন্তু আমরা তোকে ওখানে আর রাখবো না ৷ আর তোকে না একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে ৷ দেশে এসে একবার আমাদের সাথে দেখা করে যেতে পারিস তো নাকি?”

“টাইম নেই আম্মু ৷ তোমরা আসো না প্লিজ ৷ আব্বুকেও বলে দেখো ৷ আমিও দেখতে চাই তোমাদের ৷ আমার যাওয়া সম্ভব না ৷ তোমরা তো আসতে পারো নাকি?”

“জানিস তোর বাবা চিন্তা করে সারাক্ষন তোর জন্য ৷ মানুষটা ভালো নেই রে ৷ তোকে যদি এমন কারো হাতে তুলে দিতে পারতাম যে তোকে সারাজীবন আগলে রাখবে ৷ তাহলে হয়তো এসব চিন্তা থেকে মুক্তি পেতাম৷”

“আম্মু প্লিজ চুপ করবে? কি সব কথা বলে যাচ্ছো? আমাকে নিয়ে কেন টেনশান করছো ৷ ঠিক আছি তো আমি নাকি ৷ আর তোমরা যদি সবসময় আমার কাছে আমার পাশে থাকো তো সবসময় ঠিক থাকবো আমি ৷”

“সবসময় কি আর থাকতে পারবো?”

“চুপ করো ৷ কবে আসবে সেটা বলো ৷ দু দিনের মধ্যেই কিন্তু তোমাদের আমার সামনে দেখতে চাই আমি ৷”

“আচ্ছা দেখছি ৷”

আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলো শ্রেয়া ৷ চোখ মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল ৷ প্রিয় মানুষদের থেকে দূরে থাকার যন্ত্রনা সেই ই বুঝে যে দূরে থাকে ৷ চোখ মুখের থেকে হাত সরিয়ে চোখের পানি মুছে আনমনেই বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“কেন আমার সঙ্গে এরকম হলো? আর সব মেয়েদের মতো তো আমিও অামার জীবন নিয়ে অনেক কিছু ভেবেছিলাম ৷ কেন এক দমকা বাতাসে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে শেষ হয়ে গেল? কেন হলো এরকম?”

জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিল ৷




দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে শ্রেয়াকে পলকহীন ভাবে দেখে যাচ্ছে তুহিন ৷ শ্রেয়ার চোখের পানিতে ওর মন ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে ৷ ভালোবেসেও ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টটা ও বুঝে কারন ও তো নিজেও এর স্বীকার ৷ দেয়ালে হাত দিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“যদি কখনো আমায় বলতে যে তুমি অরূপকে ভালোবাসো আর যেকোনো ভাবেই ওকে তোমার চাই ৷ তো আমি নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করতাম শ্রেয়া ৷ কিন্তু তুমি তো বলো নি আমায় ৷ তাহলে আমি কিভাবে করতাম বলো? এই এক বছর তোমাকে কষ্ট পেতে দেখেছি আমি নানা রকমভাবে ৷ আর প্রত্যেকবার তোমার কষ্ট দেখে নিজের কষ্টটা দ্বিগুন বেড়ে গেছে ৷ কখনো অরূপকে তোমার সামনে আনতে পারবো না কিন্তু তোমার মা বাবাকে এখানে নিয়ে আসবো আমি ৷ আমি জানি তারা আসলে তোমার কষ্টটা একটু হলেও কম হবে ৷”

পেছন থেকে চৈতি ডেকে উঠলে তুহিন দ্রুত ওর চোখ মুছে নিয়ে পিছনে ঘুরে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“কিছু বলবি?”

“এখানে কি করছো ভাইয়া?”

“এই তো এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই শ্রেয়াকে দেখতে এলাম ৷”

“তো ভিতরে চলো ৷ এভাবে কেন দেখছো?”

“এএমনি ৷ আসছি আমি ৷”

বলেই তুহিন চলে গেল ৷ চৈতি শ্রেয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে আবার তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“কেউ কাউকে এরকম ভাবে নিঃশব্দে কীভাবে ভালোবাসতে পারে?”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,