Monday, August 4, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1547



ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১৫

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৫ (বোনাস)
#অদ্রিতা_জান্নাত

আকাশের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে ৷ আকাশ নিচে নেমে মায়ার সামনে এসে দাঁড়ালো ৷ মায়াকে একপলক দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে অরূপকে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“তোর ভালোবাসা এতোটা ঠুনকো ৷ সেটা আমার জানা ছিল না ৷ নিজের ভালোবাসার মানুষের প্রতি কোনো বিশ্বাস না থাকলে সেটা কেমন ভালোবাসা? মায়ার ফাঁদে পা দিলি তুই? একবার তো শ্রেয়ার সাথে কথা বলে দেখতে পারতিস ৷ কিন্তু তুই তো সামান্য কিছু জেনে শ্রেয়াকে কষ্ট দিয়ে গিয়েছিস ৷ ইভেন তুই শ্রেয়াকে আমার সাথে দেখেও সন্দেহ করেছিলিস ৷ শ্রেয়াকে তো আমি নিজের বোনের মতো ভাবি ৷ তো একটা ভাই কি তার বোনকে কোলে নিতে পারে না? যখন তার বোন অসুস্থ হয়ে যায়? তুই তো সেটাকেও একটা বড় ইস্যু তৈরি করেছিস ৷ শ্রেয়ার কথাগুলো বিশ্বাসই করিস নি ৷ এই তোর ভালোবাসা? হাহ হাসালি!”

তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“নিজের বোন না অন্তত একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সাথে এতো জঘন্য একটা কাজ করার আগে দুবার ভাবতে পারতে ৷ কিন্তু তুমি ভাবো নি ৷ তোমার মতো মেয়েদের এভাবে ছেড়ে দেয়ার সাহসও নেই আমার ৷”

বলেই কয়েকটা মহিলা পুলিশকে ভিতরে ডাকলো আকাশ ৷ শ্রেয়ার বলা সব কথাই আকাশ উপর থেকে শুনেছে ৷ তখনি পুলিশকে ফোন করে আসতে বলে দিয়েছিল ও ৷ মায়াকে তারা নিয়ে গেল ৷ যদিও মায়া ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করছিল আর চেঁচাচ্ছিল ৷ তবুও কাজ হয় নি ৷

(০৬ বছর আগে আকাশ দেশের বাইরে পড়ালেখা করতে গিয়েছিল ঠিকই ৷ কিন্তু তার ০১ বছর পর ও আবার দেশে এসেছিল কিছু জরুরি কাজের জন্য ৷ তখনি আচমকা ওর মায়ার সাথে দেখা হয়ে যায় ৷ প্রথম দেখায় ভালো লেগে যায় ওর ৷ আস্তে আস্তে ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে ৷ কিন্তু আকাশের আবার বিদেশ চলে যেতে হবে দেখে ও মায়াকে ওর মনের কথাগুলো জানিয়ে দেয় ৷ মায়া খুশি হয়ে এক্সেপ্ট করে নেয় ৷ দুই বছর ওরা নিজেদের মধ্যে ফোনে কথা বলে ৷ আকাশ ওর স্টাডির জন্য চাইলেই মায়ার সাথে দেখা করতে দেশে আসতে পারতো না ৷ দুই বছর রিলেশনের পর মায়া হুট করেই বলে ব্রেকআপ করবে ৷ আকাশ সেদিন রাগ করে কিছু বলে নি ৷ তখন থেকেই ওদের মধ্যে ভালোভাবে কোনো কথা হতো না ৷ তার বছরখানিক পর কাউকে কিছু না বলে দেশে ফিরে আকাশ ৷ তখনি জানতে পারে যে অরূপের বিয়ে হবে তাও মায়ার সাথে ৷ ঠিক এই কারনেই ও মায়াকে কিডন্যাপ করায় ৷ এমন একটা জায়গায় ওকে রেখেছিল যে ওকে যেন খুঁজে না পাওয়া যায় ৷ তারপর ও নিজেও অন্য কোনো জায়গায় লুকিয়ে থাকতো ৷ প্রত্যেকদিন সকালবেলা অরূপ নিজে মায়ার খোঁজ করতে বের হতো ৷ কিন্তু প্রতিদিনই নিরাশ হতে হতো ওকে ৷ একদিন কোনো ভাবে জানতে পেরে যায় যে মায়াকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে ৷ অরূপ মায়াকে খুঁজতে যায় কিন্তু আকাশ আর শ্রেয়াকে একসঙ্গে দেখে ওর মাথায় রক্ত উঠে যায় ৷ তাই আর খোঁজাখুঁজি না করে চলে গিয়েছিল ও ৷ ঐ দিনের অনেক দিন পর হঠাৎ অরূপ মায়ার খোঁজ পেয়ে ওই পুরাতন বাড়িটাতে গিয়ে মায়াকে উদ্ধার করে আনে এই বাড়িতে ৷ আর তার সব দোষটা পরে শ্রেয়ার ঘাড়ে ৷)

আকাশ পুরো ঘটনাটা খুলে বলে সবাইকে ৷ সবাই চুপচাপ সব শুনেছে ৷ হঠাৎ করেই অরূপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ৷ গাড়ি নিয়ে সোজা শ্রেয়ার বাসায় আসলো ৷ কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ওর বাড়ির দরজায় তালা ঝুলছে ৷ সেটা দেখে অরূপ অবাক হয়ে গেলো ৷ শ্রেয়ার ফোনে ফোন দিয়েও ফোন বন্ধ পেল ৷ শ্রেয়া বলা ওই কথাটা এখন ওর মাথায় বাজছে যখন শ্রেয়া বলেছিল ‘নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার এই থার্ড ক্লাস চরিত্রহীন মেয়ের কাছে যেন কখনো ফিরে আসতে নাহয়’ ৷ এখন কি করে জানবে শ্রেয়ার খবর? কোথায় আছে ও? সেটা জানা নেই ওর ৷

__________________________________

একটা ক্লাবে বসে এলোমেলোভাবে ড্রিংক করছে অরূপ ৷ ক্লাবের মধ্যে জোরে জোরে গান বাজছে আর একেকজন নাচানাচি করছে ৷ কিন্তু অরূপ বসে বসে একের পর এক গ্লাস খালি করে যাচ্ছে ৷ হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠলো ৷ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আকাশের নাম্বার ৷ রিসিভ করে কানে দিতেই আকাশ বলে উঠলো,,,,,,,,,

“অরূপ? তুই কই? আবার ক্লাবে গিয়েছিস? বাড়ি আয় তাড়াতাড়ি ৷”

অরূপ কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো ৷ আরো কয়েকটা গ্লাস খালি করে ঢুলতে ঢুলতে গাড়িতে উঠে বসলো ৷ তারপর সোজা বাড়িতে চলে গেল ৷ অরূপের বাবা মা ওর অপেক্ষাতেই বসে ছিল ৷ অরূপ এসেছে ঠিকই কিন্তু কোনো কথা না বলে সোজা উপরে চলে গেল ৷ এটা এখন ওর কাছে রোজকার রুটিন ৷ এই একবছর এভাবেই কেটেছে ৷ হ্যাঁ শ্রেয়া চলে গেছে এক বছর হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু অরূপ এখনো জানেনা শ্রেয়া কোথায়? শ্রেয়ার মা বাবা কিছুই বলে নি ওকে ৷ আশা এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে গিয়ে অরূপকে খাইয়ে দিল ৷ এলোমেলো করে বিছানায় শুয়ে পরায় ওকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে চলে গেল ও ৷ ঘুমের মধ্যেই বিড়বিড় করে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,,

“আই ট্রাস্ট ইউ শ্রেয়া অ্যান্ড আই এম সরি! প্লিজ ফিরে এসো ৷ আর কখনো এরকম ভুল করবো না ৷ তুমি না বলেছিলে যে ভুল করে তাকে একটা সুযোগ দিতে হয় ৷ আমি চাই সেই সুযোগটা ৷ আর কখনো এরকম ভু..ল হবে না…”






এপ্রিল মাস ৷ মূলত বাংলাদেশে এই সময়টা গ্রীষ্মকাল ৷ কিন্তু কানাডাতে এই সময়টা বসন্তকাল ৷ গাছে গাছে নতুন নতুন রঙ বেরঙের ফুলে চারপাশটা সেজে উঠেছে ৷ দূর থেকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে শহরটাকে ৷ রাস্তাঘাট বেশ পরিষ্কার ৷ মানুষজন তাদের একেক জনের কাজের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাচ্ছে ৷
কানাডার একটা সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ‘টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়’ ৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাহির থেকে দেখতে একদম রাজপ্রাসাদের মতো ৷ বিশ্ববিদ্যালয়টির আশপাশ জুড়ে রয়েছে সবুজে ঘেরা বিশাল মাঠ ৷

এই ভার্সিটির রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে তুহিন ৷ চোখের চশমাটা ঠিক করে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ভিতরে ঢুকে সোজা দোতলায় চলে গেল ৷ তুহিন এখানে ইংরেজির টিচার ৷ বেশ ভালোই পারে ও সবাইকে পরাতে তাই এই পেশাকেই বেছে নিয়েছে এখানে এসে ৷ আরেকটু সামনে আগাতেই দুইটা মেয়েকে একসাথে দেখতে পেল ও ৷ ওরা ঘুরে দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে কথা বলছে পড়া নিয়ে ৷ তুহিন হালকা হেসে ওদের সামনে গিয়ে হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়ালো ৷

মেয়ে দুইটা তুহিনের দিকে তাকিয়ে তারপর দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো ৷ তুহিন মুচকি হেসে বলতে লাগলো,,,,,,,

“দুজন এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবার পড়াশুনা শুরু করে দিয়েছো?”

ওরা কিছু বললো না ৷ হাতের বইগুলো ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে আবার তুহিনের দিকে তাকালো ৷ তুহিন আবার বলে উঠলো,,,,,,

“তো শ্রেয়া ম্যাডাম আর চৈতি ম্যাডাম আজ কি বাসায় যাবেন? নাকি এখানেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করছেন হুমম?”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১৪

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৪
#অদ্রিতা_জান্নাত

রুমের মধ্যে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে শ্রেয়া ৷ পাশেই ওর মা বসে বসে ওর কপালে জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে ৷ তখনি তুহিন হন্তদন্ত হয়ে রুমের ভিতর ঢুকলো ৷ শ্রেয়ার পাশে এসে বসে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“শ্রেয়া? কি হয়েছে তোমার? আন্টি কি হয়েছে ওর?”

তুহিনের কথা শুনে শ্রেয়া চোখ খুলে তাকালো ৷ শ্রেয়ার মা তুহিনকে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“দেখো না বাবা ৷ কাল রাতে ওর জ্বর এসেছিল কিন্তু আমাদের কাউকেই কিছু বললো না ৷ ভোরের দিকে ওকে ডাকতে এসে দেখি ওর গাঁ গরম ৷ পরে ওর বাবাকে বলে ডাক্তার দেখালাম ৷ এখন জ্বরটা একটু কমেছে ৷”

“এতোটা কেয়ারলেস কেন তুমি?”

আমি আম্মুকে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,

“তুমি একটু যাও ৷ ওনার জন্য কিছুর ব্যবস্থা করো আম্মু ৷ আমি ঠিক আছি ৷”

বলেই উঠে বসলাম ৷ আম্মু আমাদের দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে চলে গেল ৷ আমি তুহিনকে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“জানতে পেরেছেন সব?”

তুহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবটা খুলে বললেন আমাকে ৷ আমি শুধু শুনলাম কিছু বললাম না ৷ ভালোবাসায় কোনো বিশ্বাস না থাকলে সেটাকে ভালোবাসা বলে না ৷ হয়তো অরূপও তাই ৷ তুহিন আমাকে আবার বললেন,,,,,,,,

“তো এখন কি করবে?”

আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলাম,,,,,,,,

“ওই বাড়ি যাবো আজ আমি ৷”

“তোমার শরীর খারাপ ৷ আর তুমি এই অবস্থায় যাবে?”

“এতোটাও খারাপ লাগছে না আমার যে আমি যেতে পারবো না ৷ আমি আজ যাবো ৷ আর এসবকিছুর শেষদিনও আজ ৷ আপনি না করবেন না প্লিজ ৷”

তুহিন কিছু বললেন না দেখে আমি আবার বললাম,,,,,,,,,

“রিয়েল ভিডিও গুলা আসছে?”

“হুম একটু আগেই পেয়েছি আমি ৷”

“আচ্ছা আপনি নিচে যান ৷ আমি রেডি হয়ে আসছি ৷”

উনি মাথা নাড়িয়ে নিচে চলে গেলেন ৷ অামিও রেডি হয়ে নিচে গিয়ে অাব্বুর পাশে বসলাম ৷ সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“শরীর কেমন এখন তোর? ভালো লাগছে তো নাকি?”

“হুম আমি একদম ঠিক আছি ৷”

“তো কোথাও বের হবি নাকি?”

“আব্বু তুমি না বলেছিলে অরূপের সাথে আমার ডিভোর্স পেপার রেডি করবে ৷ সেটা কোথায়?”

“হুম বলেছি তো ৷ আজ নিয়ে আসার কথা ৷ আরেকটু অপেক্ষা কর দেখি ৷”

“আমার কানাডা যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট রেডি করেছো?”

আব্বু কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“তুই আজই চলে যাবি?”

“হুম ৷ আজই যেতে চাই আমি ৷”

আম্মু দৌঁড়ে চলে এলো আমার কাছে ৷ আমার দুই গালে হাত রেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“তুই আজই চলে যাবি আমাদের ছেড়ে? আমরা থাকবো কি করে রে মা?”

আমি কিছু বললাম না ৷ আম্মু আবার বললো,,,,,,,,

“তুই একা সেখানে থাকবি কি করে? তোর কষ্ট হবে অনেক ৷ তুই যাস না মা ৷”

“আম্মু আমি সবটা সামলিয়ে নিব ৷ চিন্তা করো না প্লিজ ৷ দেখো তোমার মেয়ে ওখানে ভালো থাকবে অনেক ৷”

পাশ থেকে আব্বু বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“তোকে একা কীভাবে ছেড়ে দিব বল? আমাদেরও তো টেনশান হয় নাকি?”

তখনি তুহিন বলে উঠলেন,,,,,,,,,

“আমি আছি তো ৷ আমি সবসময় থাকবো ওর সাথে ৷”

তুহিনের কথা শুনে অবাক হলাম আমি ৷ আব্বু বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“তুমি আছো মানে? তুমি কি ওর সাথে যাবে নাকি?”

“হ্যাঁ আঙ্কেল যদি আপনি চান ৷ আমি তো এখানে কোনো কাজ করি না আপাতত ৷ কানাডা যেতেই পারি অন্তত ঘোরার জন্য ৷ তারপর শ্রেয়ারও খেয়াল রাখতে পারবো ৷ আবার আমার মামা সেখানেই থাকে ৷ তাহলে তো বেশি সমস্যা হবে না যদি শ্রেয়া আমার সাথে যায় ৷”

আমি বলতে লাগলাম,,,,,,,

“না না ৷ আপনি অনেক করেছেন ৷ আর করতে হবে না ৷ শুধু শুধু কেন কষ্ট করবেন আমার জন্য?”

“কষ্টের কিছু নেই ৷ আমার যতটুকু সাধ্য ততটুকু করবো আমি ৷ তো আঙ্কেল আপনি কি রাজি?”

আব্বু কিছু একটা ভেবে উঠে নিজের রুমে চলে গেল ৷ কিছুক্ষন পর এসে আমার সামনে বসে আমার হাতে কিছু একটা দিল ৷ আমি তাকিয়ে দেখি পাসপোর্ট ৷ আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“নে পাসপোর্ট ৷ আর শোন তুই কানাডা যাবি আজ কিন্তু একা একা না ৷ তুহিনের সাথে গেলেই আমি রাজি হবো ৷ নাহলে আরো কয়েকদিন পর আমি নিজে তোকে দিয়ে আসবো ৷”

“আমার জন্য কেন ওনাকে টানছো আব্বু?”

“তুহিন তোর সঙ্গে গেলে আমিও নিশ্চিন্ত হবো ৷ তাই বলছি শুধু শুধু টেনশান না বাড়িয়ে রাজি হয়ে যা ৷”

আম্মু আব্বু এরকম করে আরো কিছুক্ষন বুঝালো আমায় ৷ কোনো উপায় না পেয়ে রাজি হলাম অামি ৷ কিছুক্ষন পর একটা লোক এসে আমার আর অরূপের ডিভোর্সের কিছু কাগজ পত্র দিয়ে চলে গেলেন ৷ আমি ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে সোফায় বসলাম ৷ পেপারটা টেবিলের উপর রেখে কলম হাতে নিলাম সাইন করার জন্য ৷ হাত বারবার কেঁপে উঠছে ৷ চোখ ভিজে আসছে ৷ যতই বলি আমি অরূপকে ভালোবাসি না ৷ তবুও মনের এক কোনায় হয়তো ওনার জন্য সবটুকু ভালোবাসা পরে আছে ৷ কিন্তু সেই ভালোবাসাটা চাঁপা পরে আছে রাগ, অভিমান, কষ্ট আর ঘৃনার কারনে ৷

কাঁপাকাঁপা হাতে কোনো রকমে সাইন করে দিলাম ৷ জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,

“আম্মু আব্বু তোমরা আমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে সোজা এয়ারপোর্ট চলে যাও ৷ আমি অরূপের বাসা থেকে সোজা এয়ারপোর্ট চলে যাবো ৷ আর তুহিন আপনি নাহয় বাসায় চলে যান ৷ সবাইকে তো জানতে হবে আপনাকে না?”

“শ্রেয়া আমি ফোন করে জানিয়ে দিব সবাইকে ৷ এখন তোমার সঙ্গে যাওয়া দরকার আমার ৷ সবকিছু তো আমার কাছে না?”

“কিন্তু…”

“কোনো কিন্তু না ৷ আমি যাচ্ছি ৷ তুমি তাড়াতাড়ি এসো৷”

বলেই চলে গেলেন উনি ৷ আমি আম্মু আব্বুকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ বেশকিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামলো অরূপের বাড়ির সামনে ৷ পুরো বাড়িটাতে একটু চোখ বুলিয়ে নিলাম ৷ তুহিন গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন আর চোখের ইশারায় ভিতরে যেতে বললেন ৷ আমি হালকা একটা দম নিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে বেল বাজালাম ৷ কিছুক্ষন পর নয়না মা এসে দরজা খুলে দিলো ৷ আমাকে দেখে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,,

“এতোদিন পর মনে পরলো আমাদের হ্যাঁ? একটু তো আসতে পারিস নাকি? আমরা কি ভুল করেছি যে আমাদের এইভাবে শাস্তি দিচ্ছিস?”

মাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,,,,,,,,,

“ভিতরে গিয়ে কথা বলি?”

“সেটা আর বলতে হবে নাকি? আয় ভিতরে আয় ৷”

তুহিনকে নিয়ে আমি ভিতরে গেলাম ৷ এই বাড়িতে আজ আমার শেষ দিন ৷ আর কখনো হয়তো আসতে পারবো না ৷ ডায়নিং টেবিলে সবাই বসেছিল ৷ আমাকে এখানে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকালো ৷ মা আমার হাত ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“কিছু খেয়েছিস? আয় খাবি ৷”

আমি তার হাত ধরে আমার দিকে ঘুরিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,,

“আজ আমি এখানে খেতে বা থাকতে আসি নি ৷ নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে এসেছি ৷”

মায়া আপু চমকে উঠলো ৷ তার মুখের রিয়্যাকশানটা আমার চোখ এড়ালো না ৷ হালকা হেসে অরূপের দিকে এগিয়ে গেলাম ৷ ওনার সামনে দাঁড়িয়ে ওনার চোখে চোখ রাখলাম ৷ চোখ সরিয়ে নিলেন উনি ৷ এতো কিছুর পরও আমি আবার এসেছি সেটা হয়তো অবিশ্বাস্য ওনার কাছে ৷ মায়া আপুর কাছে গিয়ে বললাম,,,,,,,,,

“তোকে অন্যরকম লাগছে আজ ৷ এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?”

মায়া আপু হকচকিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“কককই ভভয় কেন পপপাবো?”

“তো ভয় পাস নি তুই?”

মায়া আপু কিছু বললো না এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হাত কচলাতে লাগলো ৷ হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে ও ৷ অরূপ গম্ভীর সূরে বলে উঠলেন,,,,,,,,

“কি বলবে তুমি?”

আমি তুহিনের কাছ থেকে ওনার মোবাইলটা হাতে নিলাম ৷ তারপর রেকর্ড করে রাখা মায়া আর রকির সব কথা গুলা শুনালাম সবাইকে ৷ মায়া আপু ঘামছে ক্রমশ ৷ ও নিজেই জানেনা আজ কি হবে ওর ৷ তবুও সাহস নিয়ে হালকা চেচিঁয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“মিথ্যা সব মিথ্যা ৷ শ্রেয়ার সাজানো এসব ৷ এখন আমাকে ফাসাতে চাইছে ও ৷”

“তোর কথাগুলোও কি মিথ্যা?”

“হহহ্যাঁ আমার মতো কারো সেইম ভয়েস দিয়ে আমাকে ফাসাতে চাইছিস তুই ৷”

“ও তাই নাকি? নিজের দোষ এখনো আমাকে দিবি? ওকে ওয়েট ৷”

বলেই ভিডিও আর ছবি গুলাে অরূপের হাতে দিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“কোনটা সত্যি অর মিথ্যা সেটা যাচাই করার দরকার ছিল আপনার ৷ এভাবে মিথ্যা অপবাদ না দিলেও পারতেন ৷ এই ভিডিও আর ছবিগুলো কিন্তু রিয়েল লাগলে চেক করে নিতে পারেন আপনি ৷ ফেইক কিছু তথ্যের জন্য আমাকে কথা শুনাতে একটুও বাঁধলো না আপনার?”

অরূপ হাতের মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিলেন ৷ রাগে ওনার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ৷ মায়ার একহাত ধরে টেনে সামনে এনে ঠাস করে একটা থাপ্পর দিয়ে দিল ওর গালে ৷ মায়া ঠোঁট কেঁটে যাওয়ার ব্যাথায় আহ করে উঠলো ৷ অরূপের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগবো,,,,,,,,,

“বববিশ্বাস করো এসব মিথ্যা ৷ আমি জানি এগুলা কিছুই…”

ধাক্কা দিয়ে মায়াকে সরিয়ে দিল অরূপ ৷ চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,

“তোমার গলা মিথ্যা কীভাবে হতে পারে? এখনো নিজের দোষটা স্বীকার করছো না? এতোটা স্বার্থপর তুমি কি করে হতে পারলে?”

মায়া কিছু বললো না ৷ চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ অরূপ আমার কাছে এসে আমাকে একপলক দেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

“শ্রেয়া…”

ওনাকে বলতে না দিয়ে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“কৈফিয়ত দেয়ার দরকার নেই কোনো ৷ আমার ভাগ্যটাই এরকম ৷ কিন্তু আমার এই ভাগ্যের জন্য আপনার লাইফটা নষ্ট করতে পারবো না আমি ৷ আপনি ভালো থাকিয়েন মায়া আপুর সাথে ৷ কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না অামি আর ৷ কিন্তু এতো অপবাদ না দিলেও পারতেন ৷”

“শ্রেয়া আমি…”

“বললাম না আমার মতো একটা মেয়ের কাছে কোনো কৈফিয়তের দরকার নেই ৷ শুধু আমার জন্য কেন নিজের সম্মানটা নষ্ট করবেন?”

হাতের ডিভোর্স পেপারটা ওনার হাতে দিলাম ৷ উনি কপাল কুচকে তাকালেন আমার দিকে ৷ অামি তাচ্ছিল্য হেসে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,

“ডিভোর্স পেপার ৷ আপনার আর আমার ৷ আপনি একদিন বলেছিলেন না? আপনি নিজে আমায় ডিভোর্স দিবেন ৷ আজ আমি বলছি আপনি নন ৷ আমি নিজে আপনাকে ডিভোর্স দিলাম স্ব ইচ্ছায় ৷ সাইন করে দিয়েছি আমি দয়া করে আপনিও সাইনটা করে দিবেন ৷ মুক্তি দিবেন আমায় ৷”

অরূপ বাকরূদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ আমি মায়া আপুর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,

“নিজের হাতে শাস্তি দিব না তোকে ৷ আসলে আমি না এতো মনুষ্যত্বহীন মানুষ না ৷ যে নিজের বোনকে শাস্তি দিব ৷ তুই হয়তো বোন ভাবিস না আমাকে তবে আমি তো ভাবি ৷ নিজেকে শুধরে নে ৷ সব মানুষ যেমন ভুল করে তেমন ভুলটা শুধরে নেওয়ার সুযোগও পায় ৷ তুইও নিজেকে শুধরে নিস ৷ যদি না শুনিস তাহলে তোর প্রাপ্য শাস্তি প্রকৃতিই তোকে দিবে ৷ তার জন্য আমায় আর পরিশ্রম করতে হবে না ৷ আমি ক্ষমা করে দিয়েছি তোকে একজন মেয়ে হিসেবে ৷ অন্য মেয়ের চরিত্রে দাগ লাগাতে গেলে সেখানে আগে তুই নিজেকে বিবেচনা করে নিস ৷ দেখিস কেমন লাগে ৷”

চোখের পানিটা মুছে নিয়ে আবার বলতে লাগলাম,,,,,,,,

“আপনাকেও মাফ করে দিয়েছি আমি অরূপ ৷ তাই এতোটা অনুতপ্ত হবারও কোনো দরকার নেই ৷ ডিভোর্স পেপারে সাইন করে আমাদের মধ্যকার সম্পর্কটা শেষ করে দিবেন ৷ খুশি হবো ৷ ভালো থাকবেন ৷ আজ আসি আমি ৷ নিজের প্রমিস রেখেছি আমি ৷”

বলেই বাড়ি থেকে বের হতে গেলেই নয়না মা আমাকে আটকে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“যাস না কোথাও আমাদের ছেড়ে ৷”

মাকে ছাড়িয়ে নিলাম ৷ আশার হাতে মায়ের হাত ধরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,

“নিজের মা বাবার খেয়াল রাখবে ৷ তাদের সুরক্ষিত রাখবে ৷ আমি বলেছি তোমায় ৷ শুনবে না আমার কথা?”

আশা মাথা নাড়ালো ৷ আমি একপলক সবার দিকে তাকালাম ৷ সবার চোখে পানি ৷ এক মূহুর্তও দাঁড়ালাম না আর দৌঁড়ে বাহিরে চলে এলাম ৷ আশ্চর্য ভাবে আজ অরূপের চোখেও পানি দেখেছি আমি ৷ কিন্তু এটা করুনা ছাড়া আর কিছুই না ৷ আমি গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ কিছুক্ষনপর তুহিন গাড়িতে বসে এয়ারপোর্টের দিকে গাড়ি নিয়ে যেতে লাগলেন ৷





শ্রেয়া বাড়ি থেকে চলে যাবার পর অরূপের মা মায়ার গালে একেকটা থাপ্পর মারতে লাগলো ৷ অরূপের বাবা তাকে মায়ার কাছ থেকে সরিয়ে নিলেন ৷ অরূপ চিৎকার করে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে ৷”

মায়া অবাক হয়ে তাকালো অরূপের দিকে ৷ অরূপ মায়ার হাত ধরে বাড়ি থেকে বের করে দরজা লাগাতে গেলেই উপর থেকে অাকাশ বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“সবটা না জেনেই ওকে এভাবে ছেড়ে দিবি? এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার আগে সবার তো আরো একটা হিসটোরি জানা প্রয়োজন না? এই ভাবে একে ছেড়ে দিলে তো ও আরো অনেকের জিবন নষ্ট করে দিতে পারে ৷ তাই না?”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১৩

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৩
#অদ্রিতা_জান্নাত

পিছন থেকে অরূপের মা মায়াকে এভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন ৷ মায়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই ওর হুশ ফিরলো ৷ একটা ঢোক গিলে ওই ব্যক্তিটির দিকে আবার তাকালো ও ৷ অরূপের মা বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভিতরে আয় না!”

বলেই তাকে ভিতরে এনে সোফায় বসালো ৷ অরূপের মা তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“আকাশ তুই একা এলি কেন? আপুকে আর ভাইকে নিয়ে আসতে পারতি ৷”

আকাশ বলে উঠলো,,,,,,,,

“দুদিন আগেই তো গেলো ৷ আজ মম আর আসতে চায় নি তাই ৷ আর আব্বুর তো কাজ আছে তাই আসতে পারে নি ৷ আমিই এলাম তোমাদের সাথে দেখা করতে৷”

“এই রাতের বেলাও ভাইয়ের কি কাজ রে?”

“আরে বড়মা তুমি তো জানোই আব্বুর কাজের জন্য সকাল অর রাতের দরকার হয় না ৷ যখন ইচ্ছা তখন করে ৷ শোনো না এক গ্লাস পানি দাও তো ৷”

“এবাবা ভুলে গেছি একদম ৷ বস আমি এক্ষুনি আনছি৷”

বলেই মায়ার দিকে একবার তাকিয়ে চলে যান তিনি ৷ আকাশ পকেট থেকে ফোন বের করে টিপতে লাগলো ৷ মায়া যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেটা দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে ৷ মায়া ওর সামনে গিয়ে চাপা স্বরে বলে উঠলো,,,,,,,

“তুমি এখানে কি করছো?”

আকাশ একবার ওর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল ৷ ও কিছু বললো না দেখে মায়ার আবার বলে উঠলো,,,,,,,

“আমি তোমাকে কিছু বলছি ৷ তুমি এখানে কেন এসেছো? কি চাও তুমি?”

আকাশ এবারেও কিছু বললো না ৷ মায়া রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরূপের মা হাতে ট্রে নিয়ে ওর পাশে এসে বসলো ৷ আকাশ সেখান থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“খাবারের দরকার নেই ৷ খেয়ে নিয়েছি রাস্তায় আমি ৷ এখন আর খাবো না ৷ তোমরা খেয়েছো?”

তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,,,,,,,,,

“হুম ৷ তুই খেয়ে নে না ৷”

“নট পসিবল ৷ সত্যি পেট পুরো ভরা আমার ৷”

“আচ্ছা যা তাহলে রেস্ট নে রুমে গিয়ে ৷”

আকাশ মাথা নাড়িয়ে মায়ার দিকে একপলক তাকিয়ে উপরে চলে গেল ৷ বিদেশ যাওয়ার আগে ও এ বাড়ি প্রায়ই আসতো ৷ তাই ওর আলাদা রুমও আছে এখানে ৷ আশেপাশে তাকিয়ে রুমে ভিতরে ঢুকে দরজা লাগাতে গেলেই মায়া ওকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল ৷ আকাশ চোখ মুখ কুচকে তাকালো ওর দিকে ৷ মায়া আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“আমার প্রশ্নের উত্তর দাও ৷”

“বের হও এখান থেকে ৷”

মায়া খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো ৷ আকাশ তাচ্ছিল্য স্বরে বলতে লাগলো,,,,,,,

“কি? অবাক হচ্ছো?”

“না এটা বলো তুমি এখানে কেন এসেছো? কি সম্পর্ক এই বাড়ির সাথে তোমার?”

“এখন আমি যদি বলি তুমি কেন থাকছো এখানে? কি সম্পর্ক এখানকার সবার সাথে তোমার?”

“এটা আমার প্রশ্নের উত্তর না ৷”

“আমি বাধ্য নই তোমাকে উত্তর দেয়ার ৷”

“আকাশ আমাকে একটু শান্তি দিবে প্লিজ? কেন এরকম করছো তুমি?”

“কারনটা কি আবার নতুন করে বলতে হবে? আমাকে অশান্তিতে রেখে তুমি শান্তিতে থাকবে সেটা কি করে হয় সুইটহার্ট ৷”

মায়া আকাশের দিকে কিছুটা চমকে তাকালো ৷ তারপর কাঁপাকাঁপা গলায় বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“আকাশ ততুমি আমাকে কিডন্যাপ করেছিলে না?”

মায়ার এক হাত ধরে নিজের কাছে টেনে এনে খানিকটা হেসে আকাশ বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“এতোটা বোকা তুমি সেটাতো জানতাম না আমি ৷ সবজায়গায় আমাকে খোঁজার জন্য লোক লাগিয়েছো? কিন্তু খোঁজ পেয়েছো? না পাও নি ৷ আমি নিজে থেকেই ধরা দিয়েছি তোমায় ৷ তাই পেলে এতোক্ষনে ৷”

“ছাড়ো আমাকে ৷ তুমি এইটা কি করলে? কেন এরকম করলে বলো? কেন আমার বিয়ের দিনই এরকম একটা কাজ করলে ৷”

আকাশ মায়াকে আরো চেপে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“মাঝপথে আমাকে ছেড়ে দিয়ে তুমি সুখে থাকবে ভেবেছো? কিন্তু আমি এতোটাও ভালো নই ৷ ভালোবেসেছি দেখে এই নয় যে যা ইচ্ছা তাই করবে ৷”

আকাশ মায়াকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে আবার বলতে লাগলো,,,,,,,

“তোমার মতো মেয়ে না আসলেই ভালোবাসার যোগ্য নয় ৷ টাকা দেখে হিসাব করো? ভালোবাসাটা টাকায় হয় না দুটো পবিত্র মনের হয় ৷ অরূপের লাইফ থেকে তো তোমার মতো জঘন্য মেয়েকে সরাবোই আমি ৷ তার সঙ্গে আমার লাইফ থেকেও ৷”

বলেই ঠাসস করে ওর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো আকাশ ৷ মায়া রেগে সেখান থেকে চলে গেল ৷

____________________________

সকাল ১০ টা ১০ বাজে ৷
একটা ক্লাবের পিছন দিক দিয়ে তুহিন দাঁড়িয়ে আছে ওর সঙ্গে আছে কালকের সেই মাতাল ছেলেটা যার নাম রকি ৷ কিছুক্ষন পর সেখানে মায়া এসে হাজির হলো ৷ ওকে এই জায়গায় ডেকে আনা হয়েছে ৷ তুহিন রকিকে সব বুঝিয়ে দিলে ছেলেটা মায়ার কাছে চলে গেল ৷ আর এদিকে তুহিন এসব কিছু ভিডিও করতে লাগলো ৷ রকি মায়ার কাছে আসলে মায়া বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো যেতে হবে আমাকে আবার৷”

ছেলেটা একটা ঢোক গিলে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“ইইয়ে মমানে ম্যাম আপনার সঙ্গে আমার দরকারি কিছু কথা আছে ৷”

মায়া ভ্রু কুচকে বললো,,,,,, “কি?”

“আব আসলে আমি কিছু জানতে চাই ৷”

মায়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রকির দিকে ৷ ছেলেটা আবার বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“না মানে জানা দরকার ৷ আসলে আপনি ওই ভিডিও দিয়ে কি করেছেন সেটাই জানতে চাচ্ছি আমি ৷”

“সে সব কথা তোমাকে কেন বলবো?”

সন্দেহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মায়া কথাগুলাে বললো ৷ মায়ার কথা শুনে রকি কিছুক্ষন চুপ থেকে কিছু একটা ভেবেই বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“নাহলে কেউ জানতে আসলে বলবো কীভাবে?”

মায়া চমকে উঠে বললো,,,,,,,,,, “মানে?”

“আসলে যদি কেউ এই ভিডিও গুলোর খোঁজ নিতে আসে তাহলে আমি কীভাবে কি বলবো?”

“মানে? কেউ এসেছিল?”

রকি হালকা ভাবার ভান করে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“হ্যাঁ হ্যাঁ এসেছিল তো ৷”

“কে এসেছিল? কি বলেছো তুমি তাকে?”

“শ্রেয়া নামের একটা মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করেছিল যে মায়া নামের কেউ অরূপকে কোনো কিছুর মাধ্যমে ভুল বুঝিয়েছে কিনা আমি না বলে দিয়েছি ৷”

“তুমি না বলেছো আর ও মেনে নিয়েছে?”

“হ্যাঁ নিয়েছে তো ৷ এখন যদি আপনি আমাকে না বলেন যে আপনি এই ভিডিও গুলো দিয়ে কাকে কীভাবে ভুল বুঝিয়েছেন তাহলে তো অামি জানতেই পারবো না যে আপনি কীভাবে ভুল বুঝিয়েছেন তাকে ৷ কেউ জিজ্ঞেস করলে সত্যিটা না জানলে তো আমি কিছুই বলতে পারবো না ৷ এই ধরুন যাকে আপনি ভুল বুঝিয়েছেন সে যদি এসে বলে সব সত্যি কিনা? আমি তো আর জানিনা আপনি তাকে কি বুঝিয়েছেন ৷ যদি বলি যে ওসব মিথ্যা ৷ তাহলে তো সে সব জেনে যাবে না? তাই জানতে চেয়েছি আমি ৷”

মায়া কিছুক্ষন চুপ করে ভাবতে লাগলো যে ও কিছু বলবে কিনা? বলা কি ঠিক হবে ওর? রকি অাবার বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,

“কি হলো ম্যাম বলুন না ৷ আচ্ছা থাক বলে দিব আমি যে সব মিথ্যা এটাই হয়তো ঠিক হবে ৷”

মায়া গর্জে উঠে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“না ৷ আমি বলবো আজ সব তোমায় ৷ কিন্তু তুমি কাউকে বলতে পারবে না বুঝেছো?”

ছেলেটা মাথা নাড়ালে মায়া একটা দম নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,

“আমি যখন কলেজে ফার্স্ট ভর্তি হই তখন অরূপকে প্রথম দেখে ভালো লেগে যায় আমার ৷ বিভিন্ন কিছুর হেল্প চাইতে ওর কাছে যেতাম আমি ৷ আমাদের কলেজের একটা নিয়ম ছিল যে সব কাজে জুনিয়ররা সিনিয়র দের কাছে হেল্প চাইতে পারবে ৷ সিনিয়ররাও তাদের যথাসাধ্য হেল্প করবে ৷ অরূপ আমার সিনিয়র ছিল তাই সবসময় ওর কাছেই সাহায্য চাইতাম আমি ৷ একসময় আমাদের মধ্যের সম্পর্কটা অনেকটা মজবুত হয় ৷ বন্ধুত্ব করি আমরা ৷ কিন্তু আমার অরূপ অনেক ভালো লাগতো ৷ এতোই ভালো লাগতো যে সারাদিন ওর কথাই মাথায় আসতো ৷ আমি যখন ২য় বর্ষে পরি তখন শ্রেয়া ১ম বর্ষের জন্য এডমিশান নেয় এই কলেজে ৷ তখন থেকেই অরূপ আর শ্রেয়া দুজন দুজনার মধ্যে কথা বলতে থাকে ৷ হাসি, মজা আর আড্ডার মাধ্যমে অরূপ আর শ্রেয়া নিজেদের মধ্যে ফ্রি হয়ে যায় ৷ অরূপকে দেখে প্রায়ই মনে হতো ও হয়তো শ্রেয়াকে পচ্ছন্দ করে ৷ কিন্তু আমার অরূপকে ভালো লেগে গিয়েছিল ৷ ভালোও বেসেছিলাম ওকে ৷ কিন্তু যখন জানলাম অরূপ শ্রেয়াকে ভালোবাসে ওকে আমার সামনে প্রোপোজ করবে তখন রাগ হয়েছিল খুব ৷ অরূপের সাথে তো আমার পরিচয় শ্রেয়ার পরিচয় হবার আগেই ৷ তাহলে ও কেন আমাকে রেখে অন্য কাউকে ভালোবাসবে ৷ এই বিষয়টা মোটেও ভালো লাগে নি আমার কাছে ৷”

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থামলো মায়া ৷ রকি উত্তেজিত হয়ে জানতে চাইলো,,,,,,,,, “তারপর?”

মায়া আবার বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“তারপর আমি তোমাদের দিয়ে বেশ কয়েকটা ফেইক ভিডিও আর ছবি গুলা রেডি করাই ৷ আমি একটা নতুন সিমের নাম্বার দিয়ে নিজের পরিচয় না দিয়ে অরূপকে কল করে শ্রেয়ার সম্পর্কে অনেক বাজে বাজে কথা বলি ৷ প্রথমে অরূপ আমার একটা কথাও বিশ্বাস করলো না ৷ বেশ কয়েকটা নাম্বার দিয়ে এভাবে বলেও কাজ হয়নি ৷ ও উল্টা আমার নাম্বার ব্লক করে দিয়েছিল ৷ তাই কোনো উপায় না পেয়ে আবার নতুন নাম্বার দিয়ে ভিডিও আর ছবি গুলা দেখাই ওকে ৷ ভিডিও গুলা ফেইক হলেও কিন্তু সেগুলা রিয়েল মনে হয়েছিল ৷ কখনোই কেউ ধরতে পারবে না যে ওগুলা আসলে ফেইক ৷ অরূপ বিশ্বাস করে নিয়েছিল সেগুলা কিন্তু তবুও ওর মন মানছিল না ৷ তাই আমি এবার ওকে নিজের চোখে দেখাই আমি ৷”

“কীভাবে?” (রকি)

“একদিন শ্রেয়ার সাথে রাস্তায় তুহিনের দেখা হয় ৷ সেটাই কাজে লাগাই আমি ৷ মাঝরাস্তায় হঠাৎ শ্রেয়ার পা মচকে যায় ৷ আর ও নিচে বসে পরে ৷ তুহিন ওকে ধরে ধরে ওঠায় আর ওকে ধরে ধরে নিয়ে যেতে থাকে ৷ আর এটা অরূপ দেখে ফেলে ৷ ও ভেবেছে হয়তো শ্রেয়াই তুহিনকে ইচ্ছা করে ধরতে বলেছে ৷ মানে অনেকটা দূর থেকে অরূপ এটাই বুঝে ৷ সেদিনের পর থেকেই ও শ্রেয়ার সাথে কথা বলে না ৷ পরেরদিন আচমকা অরূপ আমাকে প্রোপোজ করে ৷ সেটা এমনি এমনি না শ্রেয়াকে দেখানোর জন্য ৷ শ্রেয়াকে দেখিয়েই অরূপ বিয়েতে রাজি হয় আমার সাথে ৷ আর দিনের পর দিন ওকে নানাভাবে কথা শুনাতে থাকতো ৷”

“এসব করে আপনার লাভ কি ম্যাম?”

“লাভ ছাড়া কিছুই করি নি আমি ৷ হ্যাঁ অরূপকে আমি সত্যি ভালোবাসি ৷ তাই ওর থেকে শ্রেয়াকে আলাদা করি ৷ তবুও ওদের বিয়েটা হয়ে গেল শেষমেষ ৷ এখন ডিভোর্সটা তাড়াতাড়ি হলেই হয় ৷ এই শ্রেয়াকে আমার বিশ্বাস নেই ৷ কিন্তু কয়েকদিন ধরে অরূপও যেন কেমন করছে ৷ আচ্ছা তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছো? এখন এসব কিন্তু কাউকে বলবে না একদম৷”

“ওকে ম্যাম কাউকে বলবো না আমি ৷”

“হুম আমি যাই তাহলে দেরি হয়ে গেলে সবাই সন্দেহ করবে আবার ৷”

রকি মাথা নাড়াতেই মায়া চলে গেল ৷ পিছন থেকে তুহিন রকির সামনে এসে ওর হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,,,,,,,,,,

“চলে যাও এই শহর ছেড়ে ৷ মায়া যেন তোমায় আর কখনো খুঁজে না পায় ৷ আর এসব খারাপ কাজ না করে খেটে খাও ৷”

“ধন্যবাদ স্যার আমি এখন থেকে আর এসব করবো না ৷ আপনার কথার মান রাখবো আমি ৷”

বলেই ছেলেটা চলে গেল ৷ তুহিন হালকা হেসে শ্রেয়ার নাম্বারে কল দিল ৷ কিন্তু ফোন বন্ধ ৷ হঠাৎ ফোন বন্ধ কেন ওর? শ্রেয়ার ফোন তো কখনো বন্ধ থাকে না ৷ মাঝেমাঝে বিরক্ত বা রাগে শ্রেয়া ইচ্ছা করে ফোন বন্ধ করে দেয় ৷ কিন্তু এখন বন্ধ কেন? আর কিছু না ভেবে তুহিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো শ্রেয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১২

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১২
#অদ্রিতা_জান্নাত

আব্বুকে কিছু বললাম না বলেও লাভ নেই ৷ অরূপের থেকে দূরে চলে গেলে আমারই ভালো হবে ৷ যেখানে মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই সেখানে মায়া কাটাতে শিখতে হয় ৷ এই দেশে থাকলে অরূপকে ভুলা আমার জন্য অনেক কঠিন হবে ৷ তাই ওনার থেকে যত দূরে যাবো ততই ভালো ৷ তাই রাজি হয়ে গেলাম ৷ রুমে এসে বিছানা বসে চোখ মুখ চেপে ধরলাম ৷ কিচ্ছু ভালো লাগছে না ইচ্ছা করছে সব ছেড়ে চলে যাই অনেক দূরে





কেটে গেছে আরো সাতদিন ৷ এই সাতদিনে বিশেষ কিছুই জানতে পারি নি আমি ৷ তুহিন বলেছেন মায়া আপু নাকি সতর্ক হয়ে গিয়েছে ৷ সাবধানে সবকিছু সামলে নিয়েছে সে ৷ তাই আমরা কেউই কিছু টের পাচ্ছি না ৷ তবে আজ সকালে নাকি মায়া আপুকে একটা ক্লাবে যেতে দেখেছেন তুহিন ৷ সেই ক্লাবে যাওয়ার জন্যই রেডি হচ্ছি আমি ৷ রাতে যাচ্ছি তাতে বেশি সুবিধা হবে ৷ রাতের অন্ধকারে কেউ আমার চেহারা দেখলেও চিনতে পারবে না ৷

একটা কালো জিন্স তার সাথে কালো একটা টপস আর সেটার উপরে একটা কালো জ্যাকেট গাঁয়ে জড়ালো শ্রেয়া ৷ হাতে কালো গ্লাভস পরলো ৷ চুলগুলো উঁচু করে খোপা করে তার উপর দিয়ে মুখসহ একটা ওড়না দিয়ে পুরো মুখ আর মাথাটা ঢেকে নিলো ৷ তখনি শ্রেয়ার আম্মু রুমে এসে ওকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে বললো,,,,,,,,,,

“কি করেছিস তুই এগুলা? আচ্ছা তুই কি শ্রেয়া?”

বিছানায় বসে জুতার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে শ্রেয়া বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“উফ আম্মু নিজের মেয়েকেই চিনতে পারছো না?”

“তুই এগুলা কি পরেছিস মা? তোর শরীর ঠিক আছে তো?”

“ইয়াহ আই এম অল রাইট ৷”

বলেই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একটা কালো চশমা হাতে নিয়ে সেটা চোখে দিলাম ৷ তারপর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,,,,

“কেমন লাগছে আমাকে দেখো? তুমিই আমাকে চিনতে পারো নি ৷ আশা করি কেউই আমাকে আর চিনতে পারবে না ৷”

“কিন্তু কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

“সত্যিটা জানতে ৷ চিন্তা করো না আমি একা না ৷ আমার সাথে তুহিনও আছে ৷”

আম্মু মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,,,,,,

“আচ্ছা যা তবে সাবধানে ৷ তোর বাবা আসার আগেই চলে আসিস কিন্তু ৷”

আমি মাথা নাড়িয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম ৷




ক্লাবের সামনে এসে গাড়ি থামালাম ৷ আশেপাশে একবার তাকিয়ে ভিতরে চলে গেলাম ৷ ভিতরে যেতেই তুহিনকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলাম ৷ উনি আমার দিকে তাকালে আমি ইশারা করে বললাম,,,, “কোথায়?”

তুহিন চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখালেন আমাকে ৷ আমি ওই দিকে তাকিয়ে তুহিনকে ইশারা করে বললাম,,,,, “আচ্ছা!” তারপর সেইদিকে চলে গেলাম ৷

শ্রেয়া গিয়ে একটা ছেলের সামনে বসলো ৷ ছেলেটা মদ খেয়ে পুরো মাতাল হয়ে গেছে ৷ আবছা আবছা চোখে শ্রেয়াকে দেখতে পেয়ে একটা বিচ্ছিরি হাসি দিল ৷ শ্রেয়া সামনে থেকে এক গ্লাস ড্রিংক নিয়ে সেখানে অ্যালকোহল মিশিয়ে দিল ৷ যাতে নেশাটা একটু হলেও বেশি হয় ৷ তারপর গ্লাসটা ছেলেটার মুখের সামনে ধরে তার মুখের সামনে ঘুরাতে ঘুরাতে শ্রেয়া বলে উঠল,,,,,,,

“hold it!”

ছেলেটা একবার গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে থেকে শ্রেয়ার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে পুরোটা একটানে খেয়ে নিলো ৷ তারপর শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,

“ওহহো তোমার হাতের ড্রিংকটা তো সেই ছিল ৷ না জানি তুমি কেমন!”

বলেই ছেলেটা একটা বিচ্ছিরি ভাবে হাসি দিল ৷ শ্রেয়ার রাগ উঠে গেলো ৷ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটার শার্ট ধরে টেনে আনলো ক্লাবের পিছনে ৷ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল তাকে ৷ তারপর শ্রেয়া কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,,,,,,

“আমি কেমন? সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাবি তুই ৷”

বলেই তুহিনকে চিল্লিয়ে ডাকলো ৷ তুহিন ওর সাথে আরো কয়েকজন ছেলেকে নিয়ে এসে হাজির হলো সেখানে ৷ ছেলেগুলা ওই মাতাল ছেলেটাকে ধরে বেঁধে একটা চেয়ারে বসালো ৷ মাতাল ছেলেটা রেগে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“আব্বে ওই তোরা কারা? আমাকে আটকে রাখার সাহস পেলি কই ৷ ছাড় আমাকে ৷”

শ্রেয়া ছেলেটার সামনে গিয়ে ছেলেটাকে ঠাস করে একটা থাপ্পর দিয়ে বললো,,,,,,

“দেখলি তো? আমাদের সাহস? নাকি আরো দেখাতে হবে?”

ছেলেটা ছুটার চেষ্টা করতে লাগলো আর অকথ্য ভাষায় গালি দিতে লাগলো ৷ কিন্তু শ্রেয়া সেদিকে মন না দিয়ে তুহিনকে বললো,,,,,,,,,,,,,

“তুহিন? রেকর্ড অন করুন ৷ আর যা বলবে সবটা রেকর্ড করবেন ৷”

তুহিন মাথা নাড়িয়ে রেকর্ড অন করলে ছেলেটাকে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“মায়ার সবকিছু খুলে বল আমাকে ৷”

ছেলেটা চমকে গেল ৷ কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,,,,,,,,,,

“কককে তুমি?”

নিজের মুখের থেকে কাপড় সরিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,,,

“চিনতে পেরেছিস?”

“তততততুমি?”

“বাহ মাতাল অবস্থায়ও সব মনে আছে দেখছি ৷ এখন সব সত্যিটা বল নাহলে তোকে মেরে এখানেই পুতে রেখে দিব ৷”

“ককককোন সত্যি? ককককিসের সত্যি? আমি ককককিছু জজজানি না ৷”

“ভালোই ভালোই বলতে বলছি নাহলে…”

ছেলেটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“নাহলে কি? কিচ্ছু বলবো না আমি ৷”

“ওকে তো একটু ট্রেইলার দেখানোই যেতে পারে ৷”

বলেই তুহিনকে ইশারা করলাম ৷ উনি ওনার লোকদের ইশারা করলে তারা এগিয়ে এসে মাতাল ছেলেটাকে ইলেকট্রিক শক দিল ৷ চিৎকার করে উঠলো ছেলেটা ৷ আমি হাত দিয়ে ওদের থামিয়ে দিয়ে বললাম,,,,,,,,,,,

“হয়েছে? এবার বল ৷”

ছেলেটা ঢুলতে ঢুলতে আস্তে বলে উঠলো,,,,,,,,

“আমি জানি নাহ ৷”

“ওকে! ডু এগেইন ৷”

আবার ইলেকট্রিক শক দিতে গেলে ছেলেটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,

“জানি জানি বলছি আমি ৷”

“হুম বল!”

“কিন্তু মায়া ম্যাম এসব জানলে মেরে দিবে আমাকে ৷”

“তোকে স্যাফ রাখা আমাদের দায়িত্ব ৷ কিন্তু তুই যদি না বলিস তো আজ আমিই তোকে মেরে দিব ৷ সো এখন ইচ্ছাটা তোর ৷”

“কি বলবো? সেটা বলুন ৷”

“অরূপকে মায়া ভুল বুঝিয়েছে না? কিন্তু কীভাবে? সেটা জানতে চাই আমি ৷”

“কাকে কিভাবে বুঝিয়েছে সেটা জানি না আমি ৷ ম্যাম শুধু আমায় ভিডিও বানাতে বলেছে ৷”

“ভিডিও?”

“হুম ফেইক ভিডিও আর ছবি যেখানে অাপনি একটা ছেলের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলেন ৷”

ছেলেটার দুইগাল শক্ত করে চেপে ধরে রাগে বলে উঠলাম,,,,,

“তোর বিবেকে একটুও বাঁধলো এরকম একটা জঘন্য কাজ করতে? শেষমেষ আমার ফেইক ভিডিও বানালি?”

বলেই ওর গালে কয়েকটা থাপ্পর মারলাম ৷ রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে ৷ মায়া আপুকে যদি এই মূহুর্তে পেতাম মেরে ফেলতাম একেবারে ৷ একটা মেয়ে হয়ে কি করে পারে এরকম কাজ করতে ৷ তুহিন ছেলেটাকে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

“সেই ভিডিও আর ছবিগুলা কই? দাও আমাকে ৷”

ছেলেটা বলে উঠল,,,,,,,,,,

“ওগুলা একটা পেনড্রাইভের মধ্যে সুরক্ষিত আছে ৷”

“পেনড্রাইভটা বের করো ৷”

“মায়া ম্যাম জানলে মেরে দিবে ৷”

“তুই না বের করলে এখন আমি মারবো তোকে ৷”

শ্রেয়া কথাটা বলে ছেলেটার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে তুহিন ওকে আটকে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“শ্রেয়া শান্ত হও ৷ আমি দেখছি ৷”

তারপর তুহিন ছেলেটাকে আবার বলতে লাগলো,,,,,,,

“মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও তুই মায়া মায়া করছিস? এটা ভাবছিস না? যে তুই না দিলে আমরাই তোকে মেরে দিব ৷ বের কর ওটা ৷”

ছেলেটা মাথা নিচু করে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইল ৷ তুহিন চেঁচিয়ে বললো,,,,,,,,,

“কি হলো বের কর?”

ছেলেটা কাঁপাকাঁপা হাতে নিজের শার্টের পকেট থেকে পেনড্রাইভটা বের করে তুহিনের হাতে দিল ৷ তুহিন সেটা হাতে নিয়ে বললো,,,,,,,,,,,,

“বাহ এগুলা সঙ্গে করে নিয়ে ঘুরিস নাকি তোরা?”

ছেলেটা মাথা নিচু করে ফেললো ৷ তুহিন পেনড্রাইভটা উল্টে পাল্টে দেখে শ্রেয়ার হাতে দিতে নিলে শ্রেয়া ওকে থামিয়ে বললো,,,,,,,,,,,

“ইডিট করে রিয়েল ভিডিও বের করতে দিয়েন সঙ্গে ছবি গুলাও ৷ এসব আমার দেখে কাজ নেই ৷ ভালো লোকদের কাছে দিবেন যারা ভিডিও খুব ভালো ইডিট করে রিয়েলটা বের করতে পারে ৷ আর এই ছেলেটাকে আপাতত হসপিটালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন ৷ আজকের দিনটা চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাক ৷”

“তারপর?”

তুহিন বললেন ৷ আমি ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,

“মায়ার মুখে সব সত্যিটা তোকে বের করতে হবে ৷”

ছেলেটা মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,

“মানে? কিভাবে করবো?”

“কাল সকালে মায়াকে তোর সাথে দেখা করতে ডাকবি ৷ তারপর এখানেই ওর সঙ্গে কথা বলে জানবি ও কেন এসব করেছে ৷ পুরোটা জানবি বাট মায়া যেন এটা জানতে না পারে যে তুই আমাদের হয়ে কাজ করছিস ৷ আমরা কিন্তু তোর কাছাকাছিই থাকবো ৷ সো চালাকি করারও চেষ্টাও করবি না ৷”

তারপর তুহিনের সঙ্গে করে নিয়ে আসা ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,,,,

“ওকে হসপিটালে নিয়ে যাও ৷ এক মূহুর্তও চোখের আড়াল করবে না ৷ চোখেচোখে রাখবে সবসময় ৷ এখন নিয়ে যাও ওকে ৷”

ওরা ওদেরকে নিয়ে চলে গেলে আমি আর তুহিন ক্লাব থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে বসলাম ৷ মাথার ওড়নাটা খুলে হাতের মধ্যে পেঁচাতে পেঁচাতে তুহিনকে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,,,,

“অনেক রাত হয়ে গেল নাকি? আব্বু বাসায় এসে আমাকে না দেখলে আমার খবর আছে ৷ গাড়ি স্টার্ট দিন তাড়াতাড়ি ৷”

“খুব বেশি না মাত্র ১০ টা বাজে ৷”

“১০ টা বাজে এটা বেশি না? আচ্ছা কথা না বলে তাড়াতাড়ি চলুন ৷”

উনি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,,,,

“কিছুটা বিষয় তাহলে পরিষ্কার হলো ৷ বাকিটার জন্য কাল পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে ৷”

“হুম কালকের কাজটা পুরোটা আপনি করবেন ৷ মায়া আপুকে তো আমি সবার সামনে অপমান করবো যেভাবে ও আমায় করেছে ৷ এখন ওর সামনে গেলে ও অন্য কোনো চাল চালবে ৷ ওকে বুঝতে দিলে হবে না যে আমরা সবটা জেনে গিয়েছি ৷”

“হুম আচ্ছা ৷”

তুহিন আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন ৷ আব্বু এখনো আসে নি তাই আমি সোজা রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিলাম ৷

_______________________

একটা অন্ধকার রুমে বসে গিটারে সুর তুলছে অরূপ ৷ সুর বললে ভুল হবে এটাকে বেসুর বলা যেতে পারে ৷ সব গুলো সুর এলোমেলো আর মৃত শুনাচ্ছে ৷ অরূপ নিজেও জানেনা হঠাৎ ওর কি হলো ৷ গিটারের সুর তো ও ভালোই তুলতে পারে ৷ কিন্তু আজ চেষ্টা করেও পারছে না কেন জানি ৷ কেন এই গিটারটাও আজ ওকে কষ্ট দিচ্ছে ৷ গত কয়েকদিন যাবত ওর কিচ্ছু ভালো লাগছে না ৷ ওর সব কিছুতেই যেন বিষন্নতা ছেয়ে রয়েছে ৷ মন মস্তিষ্কের বোঝা পড়ায় ও নিজেই খুব বিরক্ত ৷ মায়ার সঙ্গেও ইদানিং তেমন একটা কথা বলে না তার কারনটা ওর কাছে অজানা ৷

হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে অরূপ কিছুটা চমকে উঠলো ৷ ঘাড় বাকিয়ে পিছনে দরজার দিকে তাকাতেই মায়াকে দেখতে পেল ৷ একপলক দেখে চোখ ফিরিয়ে নিল ৷ মায়া রুমের ভিতরে ঢুকে রুমের লাইট অন করে অরূপের পাশে গিয়ে বসলো ৷ অরূপ এখনো তাকায়নি ওর দিকে ৷ ও কোনো কথা বলছে না দেখে মায়া বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“এভাবে লাইট বন্ধ করে একা বসে কি করছো?”

অরূপ কোনো উত্তর দিল না মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে বসলো ৷ মায়া আবার বললো,,,,,,,

“কি হয়েছে বলবে? কয়েকদিন ধরেই তুমি আমার সঙ্গে এরকম করছো ৷ কথা বলছো না বলতে দিচ্ছোও না ৷ অরূপ কি হয়েছে?”

“কিছু না তুমি যাও এখান থেকে ৷”

“কিন্তু কেন? দেখো তোমার এরকম ইগনোর করাটা আমি সহ্য করতে পারছি না ৷ তুমি বুঝতে পারছো না? প্লিজ কথা বলো না!”

বলেই মায়া অরূপের হাতের উপর হাত রেখে কিছু বলতে যাবে তার আগে অরূপ মায়ার হাত সরিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“আমার মাথা গরম করো না মায়া ৷ আমাকে একা ছেড়ে দাও ৷ তুমি যাও এখান থেকে ৷”

“তুমি এভাবে বলছো কেন…”

অরূপ রেগে উঠে দাঁড়ালো ৷ হাতের গিটারটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“ওকে ফাইন তুমি থাকো এখানে ৷ আমি নিজেই বের হয়ে যাচ্ছি ৷”

বলেই ও চলে যেতে নিলে মায়া অরূপের হাত ধরে আটকে দিল ৷ আর সেটা দেখে অরূপের রাগ আরো দ্বিগুন বেড়ে গেল ৷ ও মায়ার হাত ঝাঁটা মেরে সরিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“কথায় কথায় কেন হাত ধরাধরি করো? তুমি জানো না? আমার ভালো লাগে না এসব ৷ তবুও কেন শুনো না ৷ যাও এই রুম থেকে বেরিয়ে যাও এখনি ৷”

“আমি তোমার হাত ধরলেই দোষ? আর শ্রেয়া ধরলে কিছু না?”

“গেট আউট ফ্রম হেয়ার!”

অরূপের চিৎকারে কেঁপে উঠলো মায়া ৷ আগে কখনো ওকে এতোটা রাগ করতে দেখেনি ও ৷ আজ ওকে এভাবে দেখে মায়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না ৷ তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ মায়া যাওয়ার পর অরূপ নিজের চোখ মুখ চেপে ধরলো ৷ ও নিজেই জানেনা কেন আজ ও মায়ার সাথে এরকম বিহেভ করলো ৷




মায়া রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলো ৷
ওর এখন অরূপকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে ৷ আগে কখনো অরূপ ওর সাথে এমন ব্যবহার করে নি ৷ তবে আজ কি হলো? ‘সব সত্যিটা কি তাহলে অরূপ জেনে গেছে ৷ না সেটা কি করে হতে পারে ৷ ধূর কি সব ভাবছি আমি হয়তো ওর মুড অফ তাই এমন করছে ৷ কিন্তু কিসের জন্য ওর মুড অফ? উফ পাগল হয়ে যাবো আমি ৷ কার কখন কি হয় বোঝা মুশকিল ৷ তবুও একবার ফোন করে দেখে নি ৷’

মায়া ওর ফোন বের করে একটা নাম্বার ডায়াল করে কল দিল ৷ কিন্তু ওপাশ থেকে একটা বিরক্তিকর মহিলা বলল ‘এই মূহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না’ ৷ রাগ লাগছে এখন মায়ার ৷ কাজের সময়ই ফোন বন্ধ থাকে ৷ একটাও কাজের না ৷ এসব বিড়বিড় করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই বাড়ির বেল বেজে উঠলো ৷ মায়া সেটাকে উপেক্ষা করে নিজের রুমে চলে গেল ৷ কিন্তু বেল বাজানো বন্ধ হচ্ছে না ৷ কেউ দরজা খুলছে না আর যে এসেছে সেও থামছে না ৷ বারবার বাজিয়েই যাচ্ছে সে ৷

এক প্রকার বিরক্ত হয়ে রুমের থেকে বেরিয়ে নিচে চলে গেল মায়া ৷ আশেপাশে কেউ নেই যে দরজা খুলবে অথবা মায়া কাউকে কিছু বলবে ৷ ওর নিজেরই খুলতে হবে এখন ৷ তাই তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে গিয়ে কোনো রকমে দরজা খুলে দিল ৷ রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সামনের ব্যাক্তিকে দেখে মায়া অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে ৷ এটা কি সত্যি নাকি কোনো হ্যালুসিনেশন!”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১১

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১১
#অদ্রিতা_জান্নাত

কোনো রকমে রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম ৷ কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে ৷ গাড়ি থেকে নেমে আশপাশটা হালকা চোখ বুলিয়ে ভিতরে চলে গেলাম ৷ ভিতরে যেতেই সামনের একটা টেবিল তুহিনকে দেখতে পেলাম ৷ ওনার কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে ওনার সামনে বসে বললাম,,,,,,,,

“কখন এসেছেন? আমার আসতে একটু দেরি গেল ৷”

“সমস্যা নেই কি খাবে বলো?”

“আগে আপনি বলুন কোনো খোঁজ পেয়েছেন?”

“আস্তে ধীরে কথা বলি ৷ কি খাবে সেটা বলো? তারপর মেইন কথায় আসছি ৷”

“উম আচ্ছা অামার জন্য একটা কোল্ড কফি হলেই হবে আপনি কি নিবেন সেটা আপনিই বলে দিয়েন ৷”

“জাস্ট কফি?”

আমি মাথা নাড়ালে উনি ওয়েটারকে ডেকে দুটো কোল্ড কফি ওর্ডার করলেন ৷ কিছুক্ষন পর একটা ছেলে এসে কফির গ্লাস আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেল ৷ আমি স্ট্র দিয়ে কফি খেতে খেতে বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“এবার বলুন ৷”

উনি গ্লাসে স্ট্রটা নাড়াতে নাড়াতে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

“এই মায়াকে আমার অনেক সন্দেহ হচ্ছে ৷”

“যেমন?”

“একটা কথা কি ভেবে দেখেছো? অরূপ কেন খালি তোমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে? আমার মনে হচ্ছে ওকে তোমার ব্যাপারে কেউ ভুল বুঝিয়েছে ৷”

“অরূপ কি বাচ্চা যে ওনাকে যে যেটা বোঝাবে উনি সেটাই বুঝে যাবেন ৷”

“হয়তো কোনো প্রমান দেখিয়েছে ৷”

“আপনি কি শিউর?”

“একদম শিউর না আমি ৷ তবে অনেকটাই শিউর ৷ কাল সারা রাত এই বিষয়গুলো নিয়ে ভেবেছি আমি ৷ দেখো কেউ কাউকে এমনি এমনি ভুল বুঝে না ৷ তার পিছনে কোনো বড়সর কারণ তো অবশ্যই থাকবে তাই না? আর অরূপও ঠিক তাই ৷ কেউ ওকে এমনভাবে বুঝিয়েছে যে ও মিথ্যাটাকেই সত্যি ভেবে নিয়েছে ৷ হয়তো ওর জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও এরকম করতো ৷”

তুহিনের বলা কথা গুলো পুরোটাই ঠিক আর যুক্তিসংগত ৷ কিন্তু অরূপের উচিত ছিল কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা যাচাই করার ৷ তুহিন আবার বলে উঠলো,,,,,,,,

“সবকিছু জানতে হলে আমাদের মায়াকে ফলো করতে হবে ৷”

“আপু না মানে মায়াকে?”

“হ্যাঁ সব কিছুর মধ্যে ও নিজেই জড়িত মনে হচ্ছে আমার ৷ তাই সবকিছুর জন্য আমাদের মূল টার্গেট হিসেবে মায়াকে ধরে নিতে হবে ৷ ও কি করে না করে সবটা জানলে তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর ঠিক পাবে৷”

“আপনার যেটা ভালো মনে হয় আপনি সেটাই করুন ৷ মায়া কোথায় কি করছে না করছে সবটা আমাকে জানাবেন ৷”

“আচ্ছা ৷”

“অরূপকেও নজরে রাখতে হবে আমার ৷ ওনাকেও সুবিধার লাগছে না আমার কাছে ৷”

“আচ্ছা অরূপের বিষয়টা তুমি দেখো ৷”

“হুম আচ্ছা ৷ চলুন উঠি ৷”

বলেই আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম ৷ উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে উঠে গেলেন ৷ একটা ওয়েটারকে ডেকে টাকা দিতে গেলেই উনি বলে উঠলেন,,,,,,,,,

“আমি দিচ্ছি তোমার দেয়া লাগবে না ৷”

“আপনি দেয়া আর আমি দেয়া একি কথা ৷ পরেরবার নাহয় আপনি দিয়ে দিয়েন ৷”

তুহিন হালকা হাসলেন ৷ আমি বিল পে করে দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে তুহিনের সাথে বের হতেই অরূপের সামনে পরলাম ৷ উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে তুহিনের দিকে তাকালেন ৷ সাথে সাথে ওনার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো ৷ আমি ওনাকে দেখিয়ে তুহিনের হাত জড়িয়ে ধরে অরূপকে বললাম,,,,,,,,,

“আপনি কি করছেন এখানে? নতুন গার্লফ্রেন্ডের জন্য এসেছেন বুঝি?”

অরূপের হাত শক্ত হয়ে এলো ৷ কপালের রগও ফুলে গেল রাগে ৷ আমি একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,,,,,,,,

“যা ইচ্ছা করুন ৷ আমাকে ডিস্টার্ব না করলেই হলো ৷ অসহ্যকর!”

বলেই তুহিনের হাত ধরে টেনে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলাম ৷ এবার দেখুক কেমন লাগে ৷ খুব শখ না আমার চরিত্র নিয়ে খোঁটা দিতে ৷ এখন প্রতিনিয়ত আমি আপনার চরিত্র নিয়ে খোঁটা দিব ৷ অামাকে অন্যের সঙ্গে দেখলে রাগ হয় নাকি জেলাস? সে যাইহোক দুই নৌকায় ভর দিয়ে দুই নৌকা পাওয়ার আশাটা ছেড়ে দিন ৷ একবার ধরা দিয়েছি দেখে বারবার কখনোই দিব না ৷ এই শ্রেয়া কি জিনিস তা আপনি এখন থেকে হাড়ে হাড়ে টের পাবেন ৷

এদিকে শ্রেয়া চলে যাবার পর অরূপ নিজের পা দিয়ে দেয়ালের উপর লাত্থি দিলো বার কয়েক ৷ প্রচুর রাগ লাগচ্ছে ওর ৷ আর কিছু না ভেবে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে অন্যদিকে চলে গেল ৷

তুহিনের হাত ছেড়ে দিয়ে আমি বললাম,,,,,,,,

“সরি আসলে তখন…”

“সমস্যা নেই বুঝেছি আমি ৷ তো তুমি কোথায় যাবে?”

“কলেজ যাবো ৷ অনেকদিন হলো যাওয়া হয় না ৷ বাড়ি থেকে কলেজে যাবো বলেই বের হয়েছি ৷”

“আচ্ছা তাহলে তোমাকে পৌঁছে দি আমি ৷”

“না থাক আপনার কষ্ট করতে হবে না আর ৷ এমনিতেই অনেক সাহায্য করছেন আমাকে ৷ কিন্তু আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারছি না ৷ গাড়ি নিয়ে এসেছি আমি ৷ চলে যেতে পারবো ৷”

“এভাবে বলছো কেন শ্রেয়া? আমার একটুও কষ্ট হবে না ৷ আর সাহায্যের কথা বলছো? তোমাকে আজ আমি সাহায্য করছি নিজ ইচ্ছায় ৷ তুমিও না হয় একদিন আমার এই সাহায্য গুলো পূরন করে দিও ৷”

“কিন্তু কীভাবে?”

“সেটা সময় আসলে আমি নিজ থেকেই চেয়ে নিবো ৷ এখন চলো নাহলে দেরি হয়ে যাবে ৷”

আমি আর কিছু না বলে তুহিনের সাথে কলেজে চলে গেলাম ৷ তুহিন আমাকে কলেজে ড্রপ করে দিয়ে চলে গেলেন ৷ অনেকদিন পর এলাম এই কলেজে ৷ আগের বার তো মায়া আপুর সাথে এসেছিলাম ৷ সে যাইহোক এতোদিন পর এলাম পুরো কলেজ ঘুরে দেখবো আগে ৷

________________

রুমের মধ্যে বিছানায় বসে মোবাইল এদিক থেকে ওদিক ঘোরাচ্ছে মায়া ৷ গতকাল শ্রেয়ার বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবছে ও ৷ ‘শ্রেয়া যেটা বলবে সেটা করেই ছাড়বে ৷ তাহলে তো আমার আরো বিপদ বেড়ে যাবে ৷ কি করে আটকাবো ওকে? কি করেই বা তখন সবাইকে বোঝাবো? কিছু একটা তো করতেই হবে এভাবে চুপ করে থাকলে হবে না কিছু ৷’

এসব ভেবেই একজনকে ফোন করলো মায়া ৷ ওপাশে রিসিভ হলে কিছুটা গম্ভীর গলায় মায়া বললো,,,,,,,,

“সব ঠিক আছে তো?”

ওপাশের ব্যাক্তির কথা শুনে মায়া আবার বলে উঠলো,,,,,,,

“সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেই ভালো ৷ সাবধানে সব কাজ করবে ৷ এই একমাস আমি ছিলাম না ৷ কি করেছো না করেছো জানা নেই আমার ৷ কিন্তু এখন জানতে হবে ৷ রাতে বের হতে পারি কি না দেখি ৷ আর আরেকটা বিষয়ের খবর দিতে হবে আমাকে ৷”

ওপাশ থেকে আবার কেউ কিছু বললে মায়া বললো,,,,,

“এই একমাস আমাকে আটকে রাখার পিছনে কে ছিল? সেটা জানতে চাই আমি ৷ সব তথ্য ক্লিয়ারলি দিবে আমায় ৷”

ওপাশ থেকে কিছু কথা শুনে ও নিজে আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিল ৷ কিছু একটা গভীরভাবে ভাবতে লাগলো ও ৷ খুব গভীর ভাবে চিন্তা করছে আসলে ওকে সরানোর পিছনে ছিলটা কে? আর তাও ওর বিয়েরদিন ৷ বিয়েটা হওয়ার পর হলেও হতো ৷ কিন্তু না সেই -ই বিয়ের দিনই হতে হলো ৷ আবার এখন এটাও শুনেছে যে অরূপ আর শ্রেয়ার বিয়ে হয়ে গেছে ৷ সবটা মিলিয়ে ও নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছে ৷ কোনটা রেখে কোনটা কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ৷

___________________________

ক্লাস শেষে কলেজ থেকে বের হতেই অরূপের সামনে পরলাম ৷ বুঝতে পারছি না কেন এই ছেলেটা আমার পিছু পিছু ঘুরছে ৷ আমাকে এতো কিছু বলার পরও শান্তি হয়নি ওনার? আরো কি কিছু বলার বাকি আছে? যেটা বলার জন্য আমার পিছে পরে আছেন ৷ আমি সরে অন্যদিক দিয়ে যেতে নিলে উনি আবারও পথ আটকে দাঁড়ালেন ৷ এবার রাগ হচ্ছে আমার ৷ জোরে চেঁচিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“সমস্যাটা কি আপনার? কেন বারবার আমার পিছে পিছে আসছেন? কেন ডিস্টার্ব করছেন আমাকে?”

উনি কিছু বললেন না ৷ আমার চেঁচানোতে আশে পাশের অনেকেই চলে এলেন ৷ পাশ থেকে রিয়া আমার ফ্রেন্ড একটা গুঁতা মেরে বললো,,,,,,,,

“কি করলি? দেখ রাস্তার সবাই চলে এসেছে তোর চেঁচানোতে ৷ এখন জিজুকে তারা ধরে পিটাবে ৷”

চোখ রাঙিয়ে ওর দিকে তাকাতেই ও চুপ হয়ে গেল ৷ দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,,,,,,,,

“আরেকবার যদি তোর মুখে ওই জিজু শব্দটা শুনি তাহলে তোর গালে পর পর কয়েকটা থাপ্পর বসিয়ে দিব৷”

তারপর সামনে অরূপের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,

“সমস্যা কি আপনার? কেন বিরক্ত করছেন আমাকে?”

“বিরক্ত করছি আমি তোমাকে?”

আমি কিছু বলবো তার আগেই পাশের থেকে একটা লোক আমার কাছে এসে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“কি হয়েছে এখানে? ছেলেটা কি বিরক্ত করছে আপনাকে?”

“হ্যাঁ!”

অরূপ অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে হয়তো এই উত্তরটা আশা করেন নি তিনি ৷ পাশ থেকে আরেকটা মহিলা বলে উঠলো,,,,,,,,

“এসব ছেলেদের কাজই এটা ৷ কলেজের সামনে এসে মেয়েদের টিজ করে খালি ৷ একে তো গণধোলাই দেয়া দরকার ৷ নাহলে এদের সাহস আরো বেড়ে যাবে ৷”

ওই মহিলাটির কথায় আরো কয়েকজন তাল মিলালেন ৷ অরূপ চিৎকার করে বলে উঠলো,,,,,,,,

“আমি আমার বউকে টিজ করেছি তাতে আপনাদের সমস্যা কি?”

আমিসহ সবাই অবাক হয়ে তাকালাম অরূপের দিকে ৷ অরূপ কি বললেন? অামাকে তার বউ বললেন? কিন্তু পরক্ষনেই ওনার সব অপমানের প্রত্যেকটা শব্দ মাথায় বাজতে লাগলো ৷ অরূপ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলে একটা লোক অরূপকে আটকে দিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“প্রমান কোথায় যে মেয়েটা আপনার স্ত্রী?”

অরূপ নিজের ফোন বের করে কিছু একটা দেখাতেই সবাই চলে গেল আস্তে করে ৷ অরূপ আমাকে নিয়ে যেতে নিলে আমি হাত টান মেরে ছাড়িয়ে নিলাম ৷ তারপর বললাম,,,,,,,,,,

“অপমান করতে নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? তো করুন না ৷ দেখি কত অপমান করতে পারেন আপনি ৷ কেউ কিছু বললে সেটা যাচাই করে দেখে নিতে হয় সেটা কতটা সত্যি ৷ কিন্তু আপনি তো তা করেন নি ৷ মিথ্যা প্রুভ দেখে আমার জীবনটা বিষিয়ে দিয়েছেন ৷ নড়ক বানিয়ে দিয়েছেন আমার জীবনটা আপনি ৷ তো কেন আবার সেই আমাকে নিয়ে টানাটানি করছেন? কেন আমাকে আপনার বউ বলে পরিচয় দিচ্ছেন? নামে মাত্র বউ আমি আপনার ৷ আর কয়েকদিন পর সেই নামও মুছে যাবে ৷ তখন ভালো থাকিয়েন আপনার সো কল্ড জিএফয়ের সাথে ৷ দয়া করে অামাকে অার ভাঙ্গবেন না ৷ অনেক কষ্টে সামলে নিয়েছি নিজেকে ৷ কিন্তু আর পারবো না ৷ তখন মরা ছাড়া আর কোনো উপায়ও থাকবে না আমার কাছে ৷”

বলেই চোখ মুছে অরূপকে কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেল শ্রেয়া ৷ শ্রেয়ার মুখে ওর মরার কথা শুনে অরূপের বুকটা ধুক করে উঠলো ৷ সত্যি কি ও অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে? সত্যি মিথ্যা না ভেবে শ্রেয়াকে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে? কিন্তু শ্রেয়ার কষ্ট দেখে ওর কেন কষ্ট হচ্ছে? সেটা ধরতে পারছে না অরূপ ৷ শ্রেয়াকে আজ ও ওর মায়ের জন্য ফিরিয়ে নিতে এসেছিল ৷ গতকালকে শ্রেয়ার কথা গুলো শুনে অরূপের মা অসুস্থ হয়ে পরেছিল ৷ শ্রেয়া থাকলে হয়তো সেই অসুস্থতা নিমিষেই কেটে যেতো ৷ কিন্তু অরূপ সেটা পারে নি ৷ তাই গাড়িতে উঠে বসে সোজা বাড়ির দিকে চলে গেল ৷





সারা রাস্তা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অবশেষে বাড়ি পৌঁছালাম ৷ বাড়িতে ঢুকতেই আব্বুর কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালাম আমি তার দিকে ৷ কান্নাটা যেন আরো বের হয়ে আসতে চাইছে ৷ তবুও কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,,,,

“কককি বববললে?”

আব্বু গম্ভীর সুরে আবার বললো,,,,,,,,,,

“অরূপের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেলে তুমি কানাডা চলে যাবে ৷ তোমার যাওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করে দিব আমি ৷ বাকি স্টাডিটা সেখানেই কমপ্লিট করবে তুমি ৷ আমি কিন্তু না শুনতে চাই না ৷ তোমার ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি আমি ৷ আশাকরি নিজের ভালোটা বুঝবে ৷”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-১০

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১০
#অদ্রিতা_জান্নাত

“তুহিন তাড়াতাড়ি চলুন ওই গাড়িটাকে ফলো করতে হবে আমাদের ৷”

“কিন্তু শ্রেয়া…”

“কোনো কিন্তু না তাড়াতাড়ি চলুন প্লিজ ৷”

“আচ্ছা চলো ৷”

আমি আর তুহিন গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ তুহিন ওই গাড়িটার পিছনে পিছনে যেতে লাগলেন ৷ অনেকক্ষন পর ওই গাড়িটা থামলে তুহিনও কিছুটা দূরে গাড়ি থামালেন ৷ আমি গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত ওই গাড়িটার কাছে চলে গেলাম ৷ গাড়ির ভিতরে চেক করেও কাউকে পেলাম না ৷ সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম ৷ এটা তো অরূপের বাড়ি ৷ তাহলে গাড়িটা অরূপের বাড়ির সামনে কেন? অরূপ যদি মায়া আপুকে কিডন্যাপ করে থাকেন তাহলে তো উনি আপুকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবেন ৷ নিজের বাড়ি কেন নিয়ে আসবেন? কিছু বুঝতে পারছি না উফ!

পাশ থেকে তুহিন বলে উঠলো,,,,,,,,

“বাড়িটার ভিতরে চলো!”

বাড়ির ভিতরে আজ অামাকে সবকিছু জানতে যেতেই হবে ৷ মায়া আপু আর অরূপ এক সাথে ওই বাড়ি কি করছিল? হ্যাঁ ওই বাড়িটা থেকে অরূপই আপুকে বের করেছিল ৷ ওনাকে চিনতে ভুল হয় নি আমার ৷ মনে সাহস নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলাম ৷ সদর দরজা খোলা দেখে অবাক হলাম ৷ ভিতরে যেতেই অরূপ আর মায়া আপুর সামনে পরলাম ৷ বাড়ির সবাইও আছে এখানে ৷ অরূপ আমাকে দেখে তাচ্ছিল্য স্বরে বললো,,,,,,,,

“জানতাম তুমি আজ আসবে এখানে ৷”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“মানে?”

“মানেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো ৷ মায়াকে এতোদিন আটকে রেখে কি লাভ হলো? সেই-ই তো ওকে খুঁজে বের করলাম আমি ৷ আফসুস তোমার সব প্ল্যান শেষ হয়ে গেল ৷”

“আমি বুঝতে পারছি না কিছু ৷ আপনি কি বলছেন ৷”

“বুঝতে পারছো না? নাকি না বোঝার ভান করছো? আর কত সাধু সেজে থাকবে? মায়াকে এতোদিন আমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেও শান্তি পাও নি?”

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম অরূপের দিকে ৷ মায়া আপুর দিকে তাকিয়ে ওকে ধরে বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“আপু? তুই তো জানিস আমি তোকে আটকিয়ে রাখি নি ৷ তাহলে কেন বলছিস না কিছু? আমি কেন তোকে আটকে রাখবো?”

“লোভে!”

হাত ছেড়ে দিয়ে হালকা পিছিয়ে দাঁড়ালাম আমি ৷ কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,

“ল…লোভে? আপু এ…সব কি বলছিস? আ…আমি কেন এরকম ক…করবো?”

“সেটা তো তুই জানিস ৷ এতো দিন আমাকে আটকে রেখে এখন নাটক করছিস?”

“তুই কি বলছিস এসব? আমি কেন তোকে আটকে রাখবো? আমি…”

অরূপ আমার কথার মাঝেই বলে উঠলো,,,,,,,

“তোমাকে আর কৈফিয়ত দিতে হবে না ৷ বের হয়ে যাও এই বাড়ি থেকে ৷”

“বিশ্বাস করুন আমি আপুকে সরাই নি ৷ ওকে আটকে রাখি নি ৷ এই তুই মিথ্যা কেন বলছিস? তুই কেন সত্যিটা বলছিস না সবাইকে? মায়া আপু বল না প্লিজ৷”

মায়া আপু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,,,,,

“বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে ৷ তোর মতো চরিত্রহীন মেয়ের এই বাড়িতে কোনো জায়গা নেই ৷”

সঙ্গে সঙ্গে মায়ার গালে একটা থাপ্পর পরলো ৷ সবাই অবাক হয়ে তাকালো শ্রেয়ার দিকে ৷ শ্রেয়া চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,

“হ্যাঁ আমার চরিত্রে দোষ আছে ৷ আর তোর চরিত্রে কোনো খুঁত নেই তাই না? তুই তো অনেক চরিত্রবান ৷ একটা মেয়ের ব্যাপারে এসব বলার আগে নিজের চরিত্রটা যাচাই করে দেখ ৷”

অরূপ শ্রেয়ার হাত ধরে টেনে ওকে সামনে ঘুরিয়ে ওর গালে থাপ্পর দিতে গেলেই তুহিন অরূপের হাত ধরে ফেললো ৷ অরূপ এক টানে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে শ্রেয়াকে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,,,,,,,,

“দেখো এই মেয়ের কত গুন ৷ একটা ছেলে দিয়ে হয় না ৷ আরো একটাকে ধরে এনেছে ৷”

তুহিন চেঁচিয়ে উঠলো ৷ অরূপ হাত উঁচু করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,,,,,

“গলা নামিয়ে ৷”

তারপর শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,

“যদি মান সম্মান বা লজ্জা বলতে কিছু থাকে তাহলে চলে যাও এখান থেকে ৷”

তৎক্ষনাৎ শ্রেয়া দৌঁড়ে এসে অরূপের কলার চেপে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“কার মান সম্মান বা লজ্জা নেই সেটা ঠিক একদিন জানবেন আপনি ৷”

বলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো অরূপকে ৷ এতে অরূপ কিছুটা পিছিয়ে গেল ৷ শ্রেয়া মায়ার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“স্বার্থপর তুই ৷ তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ আজ ৷ না তুই আমার বোন কখনো ছিলি না তুই আছিস ৷ তোর কাজের ফল পাবি তুই ৷ আর নিজেকেও নির্দোষ প্রমান করবো আমি ৷”

বলেই শ্রেয়া কিছুটা পিছিয়ে গেল ৷ সবাইকে এক নজর দেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“আজ আমার চরিত্র নিয়ে কথা উঠেছে এখানে ৷ একদিন আপনার চরিত্র নিয়েও কথা উঠবে অরূপ ৷ আপনার সো কল্ড গার্লফ্রেন্ডের চরিত্র আগে যাচাই করে দেখুন ৷ এই সব কিছুর পিছনে কার হাত আছে আর সে কেন করেছে সেটা আমি এই দুই মাসের মধ্যেই খুঁজে বের করবো ৷ ইট’স মাই প্রমিজ ৷ কে কতটা ভালো তা প্রমান করে দিব ৷ আর আজকের দিনটাও মনে থাকবে আমার ৷ নিজের ভুল কখনো বুঝতে পারলে এই থার্ড ক্লাস চরিত্রহীন মেয়ের কাছে ফিরে আসার চেষ্টাও করবেন না ৷ আর কখনোই আমি মেনে নিবো না আপনাকে ৷ আপনার জন্য আমার মনে যতটুকু ঘৃনা ছিল আজ তা দ্বি গুন হয়ে গেল ৷ আর যতটুকু ভালোবাসা অবশিষ্ট ছিল সবটা শেষ হয়ে গেল আজ ৷ আমার জীবনের সবচেয়ে ঘৃনিত ব্যাক্তিটি হচ্ছেন আপনি ৷”

কেউ কিছু বললো না সবাই কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ৷ শ্রেয়া নিজের চোখ মুছে দৌঁড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ৷ ওর পিছু পিছু তুহিনও ছুটে চলে গেল ৷

এদিকে অরূপের মা অরূপের সামনে এসে ঠাস করে ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো ৷ অরূপ গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকালো ওর মায়ের দিকে ৷ ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য স্বরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“তোকে আমি মানুষ করতে পারলাম না ৷ ছিহ তুই আমার ছেলে? তোকে আমি এই মানুষ করেছি ৷ এই দিনটাও দেখতে হলো আমার? গলা টিপে মেরে ফেলতে পারলি না আমাকে ৷ তাহলে আরো শান্তি পেতাম ৷”

বলেই সে রাগে সেখান থেকে চলে গেলো ৷ অরূপের বাবা গম্ভীর সুরে বলতে লাগলো,,,,,,

“তোর সাথে আমার সম্পর্কও শেষ আজ ৷ পারলে বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে ৷ নাহলে মায়াকে নিয়ে বাড়ির এক কোনায় পরে থাক ৷ আমাদের সাথে কোনো কথা বলতে আসলে আমরাই বেরিয়ে যাবো এই বাড়ি থেকে ৷”

ওনার কথার মাঝেই আশা বলে উঠলো,,,,,,

“তুই খুব ভুল করলি রে ভাইয়া ৷ সত্যি মিথ্যা যাচাই করে নেয়ার দরকার ছিল আগে তোর ৷ এভাবে ভাবিকে না বললেও পারতি ৷ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছিস তুই৷”

বলেই আশা ওর বাবাকে নিয়ে চলে গেলো ৷ অরূপ রাগে টেবিলে একটা লাত্থি মেরে হনহনিয়ে উপরে চলে গেল ৷ মায়া ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো ৷ ও নিজেই জানে না ওকে কে আটকে রেখেছিল ৷ কিন্তু শ্রেয়ার দোষ না দিলে অরূপ ভুল বুঝতো মায়াকে ৷ তাই ও এরকমটা বললো ৷ আপাততো এসব নিয়ে না ভেবে ও রেস্ট নিতে একটা রুমে চলে গেল ৷

______________________

রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমি ৷ অরূপের বলা কথা গুলো মাথায় বাজছে বারবার ৷ ওনার জন্য আজকের পর থেকে আমার মনের সব অনুভূতি গুলো শেষ হয়ে গেল ৷ নিমিষের মধ্যেই আমার ভালোবাসাটা ঘৃনায় পরিণত হয়ে গেল ৷ আচ্ছা এরকম হওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ছিল? মায়া আপু কেন এরকম করলো? নিজের সবটুকু দিয়েই তো তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি তবুও সেই দোষী হতে হলো আমাকেই? আসলেই কারো ভালো করতে নেই ৷ কারো ভালো চাইতেও নেই ৷ হঠাৎ তুহিন আমার হাত ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,,,,,,,,,

“শ্রেয়া প্লিজ নিজেকে সামলাও ৷ তোমার লড়াই বাকি আছে এখনো ৷ সব সত্যিটা সামনে আনতে হবে তোমায় ৷ সবার প্রশ্নের সব জবাব দিতে হবে ৷ কিন্তু তার জন্য তোমাকে শক্ত হতে হবে ৷ এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে না শ্রেয়া ৷”

নিজের চোখ মুছে চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস টেনে নিলাম ভিতরে ৷ তারপর চোখ খুলে হালকা হেসে বললাম,,,,,,,,

“হুম ঠিক বলেছেন ৷ আমি কেন অন্যের জন্য শুধু শুধু কষ্ট পাবো ৷ যার কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই ৷ কষ্ট পাওয়ার দিন শেষ ৷ কষ্ট দেয়ার দিন শুরু ৷ অরূপকে আমি আমার মূল্য বুঝাবো ৷ মায়া আপু নাহ… মায়া ৷ ওর সঙ্গে বোনের পরিচয় মরে গেছে আজ ৷ মায়ার সত্যিটা সামনে আনবো আমি ৷ মায়ার মায়াজাল থেকে সবাইকে বের করবো আমি ৷ সবার সব সঠিক জবাবও দিব ৷ কিন্তু…”

“কিন্তু কি?”

“আপনার সাহায্য লাগবে আমার তুহিন ৷”

তুহিন মুচকি হেসে বললেন,,,,,,,,,

“আমি সবসময় তৈরি আছি তোমার জন্য ৷”

আমিও হাসলাম হালকা ৷ তারপর বললাম,,,,,,,,,

“বাড়িতে যাই আগে ৷ এসব বিষয় নিয়ে কাল কথা বলবো আপনার সাথে ৷”

“আচ্ছা তুমি একটু দাঁড়াও আমি গাড়িটা নিয়ে আসছি৷”

আমি মাথা নাড়াতেই তুহিন চলে গেলেন ৷ গাড়ি নিয়ে আসলে আমি গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ তারপর উনি আমাকে বাড়িতে দিয়ে চলে গেলেন ৷ বাড়িতে এসে কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে এলাম আমি ৷ রুমে এসে অরূপের সব জিনিস বের করলাম প্রত্যেকটা ড্রয়ার থেকে ৷ অাগে কিছু কিছু জিনিস অরূপ গিফ্ট দিয়েছিলেন আমাকে ৷ আবার কিছু কিছু জিনিস নিজে চেয়েও নিয়েছিলাম ৷ অরূপের দেয়া একটা কাচের শোপিস হাতে নিয়ে ঠাস করে ফেলে দিলাম ৷ সেটা ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেলো ৷ ওনার সব ছবি গুলো কুচিকুচি করে ছিড়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেললাম ৷ আর যা যা আছে সব কিছু একই ভাবে নষ্ট করে ফেললাম ৷ নিজের মনের থেকে যেভাবে মুছে ফেলবো ওনাকে ঠিক সেভাবেই নিজের জীবন থেকেও মুছে ফেলবো ৷ কোনো কিছুর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো না আর ৷ অাজ থেকে অরূপ নামক বিষাক্ত চ্যাপ্টার ক্লোজ!”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-০৯

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৯
#অদ্রিতা_জান্নাত

অরূপ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ৷ শ্রেয়া যে ওকে এভাবে বলবে ও ভাবতেই পারে নি ৷ অরূপ শ্রেয়াকে কিছু বলতে গেলে শ্রেয়া চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“থাক! অনেক হয়েছে ৷ আর আপনার মানবিকতা দেখাতে হবে না ৷ অনেক দেখেছি আমি ৷ বেরিয়ে যান এই বাড়ি থেকে ৷ নাহলে লোক ডেকে বের করে দিতে বাধ্য হবো ৷ চলে যান প্লিজ!”

অরূপ আর এক মূহুর্তও দাঁড়িয়ে না থেকে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল ৷ শ্রেয়া ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলো ৷ নিজের মুখ চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

“কি করলাম আমি এটা? অরূপকে কেন বের করে দিলাম? ওনাকে ছাড়া থাকবো কি করে আমি? অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার ৷ কেন বোঝেন না আপনি আমাকে ৷ কেন আমাকে সব সময় দোষারোপ করেন ৷ কেন বুঝতে চান না আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি ৷ এতো অবহেলা সইবো কি করে আমি!”

___________________

খারাপ হোক বা ভালো সময় সময়ের গতিতে চলতে থাকে ৷ এই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কেটে গেছে প্রায় এক মাস ৷ এই এক মাসে অরূপের সাথে আমার একবারও কথা হয় নি ৷ একবারও দেখা হয় নি তার সাথে ৷ প্রত্যেকটা মূহুর্ত আমার কাছে বিষের মতো লেগেছে ৷ প্রত্যেকটা মূহুর্ত ছটফট করেছি তাকে একটু দেখার জন্য ৷ ভেবেছিলাম বিয়ে যখন হয়েছে তো একটু হলেও অনুভূতি থাকবে আমার জন্য তার মনে ৷ কিন্তু আমি এইবারও ভুল প্রমানিত হলাম ৷ তাই মনকে শক্ত করে নিয়েছি কখনোই যাবো না তার সামনে ৷ ওই বাড়ির সবাই আমাকে বলেছে ওই বাড়িতে আবার ফিরে যেতে ৷ কিন্তু আমি যাই নি ৷ অরূপের সাথে আমার কখনো কথা না হলেও ওনার বাড়ির সবার সাথেই কথা হয় আমার ৷ এই এক মাসে মায়া আপুর কোনো খোঁজও পাই নি আমি ৷ আপুকে খুঁজতে আমি সেই গোডাউনে গিয়েছিলাম কিন্তু পাই নি তাকে ৷ মোবাইলও এক মাস ধরে বন্ধ ৷ হয়তো কেউ কিছু বুঝতে পেরেছিল তাই আপুকে সরিয়ে দিয়েছে ৷ কিন্তু কে? সেটাই ধরতে পারছি না ৷

বিছানায় বসে এসব ভাবছিলাম আমি ৷ তখনি আম্মু রুমে এসে আমার পাশে বসে বললো,,,,,,,,,

“তোর সঙ্গে একজন দেখা করতে এসেছে ৷”

ভ্রু কুচকে আমি বললাম,,,,,,, “কে?”

আম্মু ইশারা করে দরজার দিকে দেখালো ৷ দরজার দিকে তাকাতেই নয়না আন্টিকে দেখতে পেলাম ৷ আমি হালকা হেসে ছুটে গেলাম তার কাছে ৷ সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,,,,,,,,,

“ভুলে গেছিস আমাদের তাই না?”

তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,,,,,,,

“কতদিন পর দেখছি তোমায় ৷ তুমিও তো ভুলে গেছো আমায় ৷ প্রতিদিন এই বাড়ি আসলে সমস্যা কি?”

“তুই আমার বাড়ির বউ শ্রেয়া ৷ তুই কেন থাকবি এখানে? অরূপের জন্য কেন তুই আমাদের কষ্ট দিচ্ছিস?”

আমি মাকে ছেড়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“তোমাদের কষ্ট দিতে চাই নি আমি ৷ তবে আমার কিছু করার নেই ৷ আমি ওই বাড়ি ফিরে যেতে পারবো না কখনোই ৷”

“আমার জন্যও না?”

“মাফ করে দিও ৷ কিন্তু আমার নিজেরও একটা আত্মসম্মান আছে ৷ অরূপ আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলবে আর আমি চুপচাপ সব মেনে নিব? পারবো না আমি ৷ আমাকে ওই বাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হলে অরূপ নিজেই আসতেন ৷ তোমাদের কাউকে বলতে হতো না ৷ সে তো চায়-ই না আমি ওই বাড়িতে আবার ফিরে যাই ৷ তো কেন যাবো আমি?”

“ঠিক বলেছিস অরূপ তোকে চায় না ৷ তোকে মানবেও না ৷ তুই কেন শুধু শুধু আমার ছেলের জন্য তোর নিজের জীবনটা নষ্ট করে দিবি? তুই তোর জীবনটাকে নিজের মতো গুছিয়ে নে ৷”

“ভুল বুঝো না মা ৷ আমার সত্যি কিছু করার নেই ৷”

“মা কখনো মেয়েকে ভুল বুঝতে পারে? তুই যেটা করেছিস ঠিক করেছিস ৷ অরূপের একটা শিক্ষা হওয়া প্রয়োজন ৷ তোকে জোর করবো না আমি ৷ অরূপ না মানলেও তোকে আমি আমার নিজের মেয়ে মানি ৷ তাই কোনো দরকার পরলে আমার কাছে চলে আসবি ৷”

“হুম আচ্ছা ৷ তুমি এদিকে এসো তো আর কত দাঁড়িয়ে থাকবে? বসো এখানে ৷”

তারপর নয়না মা আর আমি বসে বিভিন্ন গল্প জুড়ে দিলাম ৷

____________________

কালো রঙের হুডিওয়ালা জ্যাকেট পরে একটা বিল্ডিংয়ের ভিতরের লিফ্টে উঠলো একজন ৷ তার মুখটা কালো রঙের মাস্ক দিয়ে ঢাকা ৷ সেই মাস্কের আড়ালে তাকে চেনা যাচ্ছে না ৷ লিফ্ট থামতেই ভেতর থেকে বেরিয়ে সোজা সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেল ৷ আশেপাশে তাকাতে তাকাতে খুব সাবধানে বিল্ডিংয়ের ছাদের দিকে চলে গেলো ৷ বেশ কয়েকটা কালো পোশাক পরা ছেলে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে ৷ ছাদের একদম মাঝখানে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে মায়া ৷ কম পাওয়ারের ঘুমের ইনজ্যাকশানের কারণে ঘুমে বারবার নেতিয়ে পরছে ও ৷ একটুপর সেই হুডিওয়ালা লোকটি ছাদের মধ্যে প্রবেশ করলো ৷ সে সোজা গিয়ে বসলো মায়ার সামনে রাখা চেয়ারে ৷

মায়ার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে ধরলো সে ৷ মায়া আবছা আবছা চোখে লোকটিকে দেখার চেষ্টা করেও বুঝতে পারলো না ৷ তবুও কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,,,,,,,,,,

“ক…কে আপনি? ক…কেন অ…আটকে রেখে…ছেন আমা…কে? ছ…ছেড়ে দিন প্লি…জ!”

লোকটা নিজের হাত দিয়ে নিজের মাথায় স্লাইড করতে করতে গম্ভীর সুরে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“ভুলে গেলে আমাকে এতো তাড়াতাড়ি? কিন্তু এতো সহজে তো আমার থেকে ছাড়া পাওয়া সম্ভব না সুইটহার্ট ৷”

“কেন এ…রকম করছেন? আ…আমি চিনি না আ…আপনাকে ৷ ক…কে আপনি…”

বলতে বলতেই মায়ার চোখ লেগে এলো ৷ লোকটি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“ওকে নিয়ে যাও এখান থেকে ৷ কেউ যেনো খুঁজে না পায় কোনো ভাবে ৷ সাবধানে যাবে ৷ কেউ ওকে দেখে ফেললে তোমাদের কি অবস্থা করবো সেটা আর বললাম না ৷ আর ওর যেন কোনো অসুবিধা না হয় ৷ বেশি কিছু বললে অজ্ঞান করে রেখে দিবা ৷ গট ইট?”

সবাই তার কথায় মাথা নাড়ালো ৷ লোকটি একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো ৷

___________________

বিকালবেলা ছাদের দোলনায় বসে আছি আমি ৷ নয়না মা কিছুক্ষন আগেই চলে গেছেন ৷ আমি বসে বসে মায়া আপুর কথা ভাবছি ৷ যেই একটা ক্লু পেয়েছিলাম সেটাও হাত ছাড়া হয়ে গেল ৷ কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো ৷ ফোনের স্ক্রিনে তুহিনের নাম দেখে আরো বিরক্ত লাগলো ৷ এই একমাসে ওনার সাথেও একবারও কথা হয় নি ৷ ফোন কেটে দিলে একটা ম্যাসেজ আসলো ৷ ম্যাসেজটা এরকম,,,,,,”শ্রেয়া প্লিজ ফোনটা আজ অন্তত তুলো ৷ মায়ার ব্যাপারে কথা আছে আমার ৷ শ্রেয়া প্লিজ ৷”

আমি আর কিছু না বলে কল ব্যাক করে বললাম,,,,,,,,,

“হুম বলুন ৷”

“শ্রেয়া দেখা করতে পারবে আমার সাথে? একটু ৷”

“আপনি আবার শুরু করেছেন?”

“দেখো ফোনে এতো কথা বলা সম্ভব না ৷ তাই দেখা করতে চেয়েছি ৷ কথাটা কিন্তু মায়াকে নিয়ে ৷”

“যা বলার এখন বলুন ৷ দেখা করা সম্ভব না আমার পক্ষে ৷”

ওপাশ একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ পেলাম আমি ৷ কিছুক্ষন চুপ থেকে তুহিন বলে উঠলেন,,,,,,,,,

“মায়াকে দেখেছি আজ আমি ৷”

“কিইই?”

“হুম একটা গাড়িতে দেখেছি আমি ওকে ৷”

“গাড়িটার পিছু নিয়েছিলেন?”

“হুম ৷ কিন্তু কিছুটা পথ যেতেই অনেকগুলা গাড়ির ভিড়ে হারিয়ে ফেলি আমি ৷ তাই আর ধরতে পারি নি ৷ কিন্তু গাড়ির নাম্বারটা আগেই লিখে রেখেছিলাম ৷”

“তো এখন কি করা যাবে?”

“গাড়ির নাম্বারটা সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে ৷ যে দেখবে সেই-ই যেন আমাদের ইনফর্ম করে সেটা বলে দিতে হবে ৷ তাহলে মায়াকে খোঁজা সহজ হবে ৷”

“কিন্তু তাতে তো ওরা টের পেয়ে যাবে যারা আপুকে আটকে রেখেছে ৷”

“হুম আমি জানি সেটা ৷ একটু রিস্ক নিতেই হবে আমাদের ৷ শেষ রাস্তাটা অন্তত কাজে লাগাতে হবে ৷”

“ওকে আপনি তাহলে আপনার মতো করে খোঁজার ব্যবস্থা করুন ৷ ওই গাড়ির নাম্বারটা সব জায়গায় ছড়িয়ে দিন ৷ আমি আব্বুর সঙ্গে কথা বলে কয়েকটা লোকের ব্যবস্থা করছি ৷ তাহলে খোঁজাটা সুবিধা হবে ৷”

“হুম আচ্ছা তাহলে রাখি এখন ৷”

“থ্যাঙ্কিউ!”

“কেন?”

“আমাকে হেল্প করার জন্য ৷”

তুহিন মনে মনে হাসলো তারপর কিছু না বলেই ফোন রেখে দিয়ে শ্রেয়ার কথা অনুযায়ী কাজ করতে লাগলো ৷ এদিকে শ্রেয়া ছাদ থেকে নেমে সোজা ওর বাবার কাছে চলে গেল ৷ সবকিছু খুলে বললো তাকে ৷ কিন্তু ওর বাবার শ্রেয়ার কথাগুলো বিশ্বাস হলো না ৷ তবুও মেয়ের কথায় লোকজন ব্যবস্থা করে মায়াকে খোঁজার জন্য পাঠিয়ে দিলেন ৷

সন্ধ্যা হয়ে গেছে ৷ সূর্য প্রায় ডুবে গেছে ৷ শুধু সূর্যাস্তের পরে লাল রক্তিম আকাশটা রয়ে গেছে ৷ সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে কিছু একটা ভেবে চলেছে শ্রেয়া ৷ হঠাৎ কারো ডাকের শব্দ পেয়ে চমকে উঠলো ও ৷ নিচে তাকিয়ে দেখে তুহিন দাঁড়িয়ে আছে ৷ চাঁপা স্বরে ও বললো,,,,,,,,,,

“আপনি এখানে কি করছেন? তাও বাড়ির বাহিরে এভাবে ৷ বাড়ির ভিতরে আসেন ৷”

তুহিন নিচ থেকে হালকা চেঁচিয়ে বললো,,,,,,,,

“মায়ার খোঁজ পেয়েছি শ্রেয়া তাড়াতাড়ি বাইরে এসো ৷”

আমি অবাক হয়ে তাকালাম তুহিনের দিকে ৷ কিছুক্ষনের মাঝেই এতো সহজে খোঁজ পেয়ে গেল? আব্বু জানলে আপুকে খুঁজতে যেতে দিবে না কখনোই তাও একা একা ৷ না জানিয়েই যেতে হবে আমাকে ৷ কিন্তু আশেপাশে তো অন্ধকার হয়ে আসছে ৷ না আর দেরি করা চলবে না ৷ এমনিতেই মায়া আপু নিখোঁজ এক মাস হয়ে গেছে ৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে ওকে ৷ তাই আমিও কোনো রকমে রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম তুহিনের সাথে ৷ কাউকে বলে আসিনি তবে ফোন করলে বলে দিব ৷

একটা পুরাতন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর তুহিন ৷ বাড়িটা বেশ পুরাতন ৷ বাড়ির আশেপাশে শেওলা পরে আছে ৷ দেখে মনে হচ্ছে কয়েক বছর ধরে এর কোনো যত্ন নেয়া হয় নি ৷ রাত হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় বাড়িটা একটু হলেও দেখতে পারছি আমি ৷ আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই একটা কালো রঙের গাড়ি দেখতে পেলাম ৷ তুহিন বললো এটা নাকি সেই-ই গাড়িটাই ৷ এই গাড়িটা কোথায় দেখেছে এটা নাকি ওকে একজন জানিয়েছে ৷ কথাটা কি আদো সত্যি নাকি মিথ্যা জানা নেই আমার ৷

বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম আমরা ৷ অাশেপাশে হালকা করে চোখ বুলিয়ে নিলাম ৷ হঠাৎ একটা গুলির আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলাম আমি ৷ তুহিন আমাকে নিয়ে কিছুটা দূরে সরে আসলেন ৷ গুলির শব্দটা বাড়ির ভিতর থেকে পেয়েছি আমি ৷ কারো পায়ের আওয়াজও পেয়েছি ৷ মনে হচ্ছে কেউ দৌঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে ৷ কিছুক্ষন পর ওই বাড়ি থেকে দুইজনের মতো কেউ সেখান থেকে বের হলো ৷ তাদের দেখে বেশ চেনা চেনা লাগছিল আমার ৷ কিন্তু তাদের মুখটা ভালো করে দেখতে পারি নি আমি ৷

তাদের মধ্যে একজন আরেকজনকে ধরে ধরে নিয়ে গাড়িতে উঠলো ৷ স্পষ্ট মায়া আপুকে দেখতে পেলাম আমি ৷ কিন্তু তার পাশের লোকটাকে দেখতে পেলাম না ৷ আমি গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই তুহিন আমার হাত চেপে ধরে ‘না’ বোধক মাথা নাড়ালো ৷ লোকটি আপুকে গাড়িতে বসিয়ে কিছু একটা মনে হতেই বাড়ির দিকে পিছন ফিরে তাকালো ৷ লাইটের হালকা আলোয় তার চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো আমার কাছে ৷ তাকে দেখে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেলাম আমি ৷ সে দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(কে হতে পারে? দেখি কয়জন বলতে পারে😪)

ভালেবাসবে তুমিও পর্ব-০৮

0

#ভালেবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৮ (বোনাস)
#অদ্রিতা_জান্নাত

চোখ খুলতেই নিজেকে একটা রুমের মধ্যে পেলাম ৷ এটা অন্য কোনো রুম না ৷ আমার নিজেরই রুম ৷ কিন্তু আমি এখানে এলাম কি করে? আমি তো মায়া আপুকে খুঁজতে গিয়েছিলাম ৷ হ্যাঁ খুঁজেও পেয়েছিলাম ৷ কিন্তু তখন কে আমার মুখ চেপে ধরলো? আর কে-ই বা আমাকে এখানে আনলো? উফ মাথায় ঢুকছে না কিছু ৷ মাথা ধরে উঠে বসলাম আমি ৷ ঠিক তখনি আম্মু ঘরে আসলো ৷ আমাকে বসে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি করে আম্মু আমার সামনে এসে বসে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“শ্রেয়া তুই ঠিক আছিস? তোর কোথাও খারাপ লাগছে না তো?”

“আম্মু কি হবে আমার?”

আম্মু একটা জুসের গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“জুসটা শেষ কর আগে ৷ তারপর কথা বলিস ৷ নিজের একটুও খেয়াল রাখতে পারিস না ৷”

আম্মুর কথার মানে কিছুই বুঝলাম না আমি ৷ তবুও জুসটা নিয়ে খেয়ে নিলাম ৷ পিপাসা পেয়েছিল অনেক তার উপর আমাকে না খাইয়ে ছাড়বে না সে ৷ খালি গ্লাসটা আম্মুর হাতে দিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,

“এবার বলো আমি এখানে এলাম কি করে?”

“আচ্ছা তুই কি নিজের একটুও খেয়াল রাখতে পারিস না? তুই কি ছোট এখনো? রাস্তাঘাটে এভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলে কি হবে বল?”

“অজ্ঞান? আমি কখন অজ্ঞান হলাম ৷ যতোটুকু মনে আছে কেউ আমাকে অজ্ঞান করে দিয়েছিল ৷”

“এসব আলতু ফালতু কথা কম বল ৷ তোকে অজ্ঞান করবে কে? পাগল হয়ে গেছিস?”

” না আম্মু.. আচ্ছা বাদ দাও ৷ এখানে এলাম কি করে আমি? কে এনেছে আমাকে এখানে?”

“আকাশ!”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“কিহ?”

“এতো অবাক হবার কি হলো?”

“আকাশ ভাইয়া তো দেশের বাইরে ৷ এখানে কীভাবে আসবে?”

“ওর হয়তো কাজ শেষ তাই বিডিতে ব্যাক করেছে ৷ তাতে প্রবলেম কি তোর?”

“আমার আবার কি সমস্যা হবে? কিন্তু সে আমাকে কোথায় পেয়েছে?”

“তুই নাকি ওর গাড়ির সামনে পরে গিয়েছিলি ৷ তাই ও নিজেই বাসায় নিয়ে এসেছে তোকে ৷”

আমি আর কিছু বললাম না ৷ জানিনা কেন আকাশ ভাইয়া মিথ্যা বললো ৷ কি চান উনি? আকাশ হচ্ছে অরূপের চাচাতো ভাই ৷ বয়সে অরূপের থেকে অল্প ছোট কিন্তু দেখে সমবয়সী মনে হয় তাদের ৷ পড়াশুনা করতে দেশের বাইরে ছিল প্রায় ছয় বছর ৷ ছয় বছর পর দেশে আসলেন তিনি ৷ দেশে থাকতে প্রায়ই কথা হতো আমাদের ৷ কিন্তু তখন জানতাম না যে অরূপ ওনার ভাই ৷ নয়না মায়ের মাধ্যমেই আকাশ ভাইয়াকে চিনি আমি ৷ কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না ৷ মায়া আপু, তুহিন, অরূপ আর আকাশ ভাইয়া সেইম জায়গায় সেইম সময়ে কি করছিলেন? মায়া আপুকে আটকে রাখার মধ্যে তাদের কোনো হাত নেই তো আবার? কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না ৷ আকাশ ভাইয়াও মিথ্যা কেন বললেন? অরূপ কোথায়? বাসায় ফিরেছেন উনি?

আম্মু রুম থেকে চলে যেতে নিলেই তাকে ডেকে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“আম্মু? অরূপ কি বাসায় এসেছে?”

“না তো ৷ এখনো ফিরে নি ৷ তুই তো ওর সাথে গিয়েছিলি ৷ কোথায় গিয়েছে জানিস না?”

“না ৷ আচ্ছা আকাশ ভাইয়া কি বাসায় আছে এখন?”

“হুম ৷ ছেলেটাকে বলেছি তুই না উঠা পর্যন্ত অন্তত থাকতে ৷”

“আচ্ছা তুমি যাও ৷”

আম্মু চলে গেল ৷ আমি বিছানা থেকে নেমে অরূপের নাম্বারে ফোন দিলাম ৷ রিং হচ্ছে কিন্তু উনি ধরছেন না ৷ কয়েকবার দিলাম তবুও ধরলেন না ৷ টেনশান বেড়ে যাচ্ছে আমার ৷ অরূপ কোথায় আপনি? আমার এখন ভয় করছে অনেক ৷ ফোন রেখে নিচে চলে গেলাম ৷ নিচে গিয়ে দেখি আকাশ ভাইয়া নিচে একা একা সোফায় বসে আছেন আর মোবাইল দেখছেন ৷ আমি ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,,,,,,,,

“আপনি কেন মিথ্যা বললেন ভাইয়া?”

কপাল কুচকে ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন ৷ নিজের ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,,,,,,,,,

“ঠিক আছো তুমি? তোমার শরীর ঠিক আছে তো?”

“আমি একদম ঠিক আছি ৷ তার আগে আপনি বলুন আপনি কেন মিথ্যা বললেন?”

“মিথ্যা কোথায় বলেছি আমি?”

“আমি নাকি আপনার গাড়ির সামনে অজ্ঞানরত অবস্থায় পরেছিলাম ৷ কথাটা কি সত্যি?”

উনি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

“হ..হ্যাঁ মিথ্যা কেন হবে? যা সত্যি তাই বলেছি ৷”

“তো আপনি বিডিতে ফিরেছেন কবে? আজ নাকি আরো আগে?”

“তুমি আমাকে সন্দেহ করছো শ্রেয়া?”

“সন্দেহ না করার মতো কিছুই নেই ৷ আপনাদের সবাইকে সন্দেহ হচ্ছে আমার ৷ কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা নিজেই বুঝতে পারছি না আমি ৷”

“যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করো ৷ তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তোমার মধ্যেই আছে ৷ মমের সাথে দেখা করতে হবে ৷ আজ আসি তাহলে ৷ ভালো থেকো ৷”

বলেই চলে গেলেন তিনি ৷ আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ কিন্তু উনি বলে গেলেন কি? ‘আমার সব প্রশ্নের উত্তর আমার মধ্যেই আছে?’ কিন্তু কি করে?

___________________

সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে কিন্তু অরূপ এখনো বাসায় আসেন নি ৷ তার ফোন এখন বন্ধ ৷ ওই বাড়িতে ফোন করে জেনেছি যে উনি এখনো ওই বাড়িও যান নি ৷ চিন্তা হচ্ছে এখন ৷ কোথায় উনি? কি করছেন? কিচ্ছু জানি নাহ ৷ কিছুক্ষনপর কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে নিচে ছুঁটে চলে গেলাম ৷ দরজা খুলে অরূপকে দেখে শান্তি পেলাম ৷ কিন্তু ওনাকে অন্য রকম লাগছে আজ ৷ মাথার চুলগুলো পুরো এলোমেলো ৷ ফর্সা মুখটাও শুকিয়ে কেমন যেন হয়ে গেছে ৷ তার গায়ের সাদা রঙের শার্টে ধুলো লেগে রয়েছে ৷ আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমাকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলেন ৷ যাওয়ার সময় তার গাঁ থেকে সিগেরেটের গন্ধও পেয়েছি আমি ৷ আশ্চর্য উনি সিগেরেট খেয়েছেন? কিন্তু কেন?

আমি দরজা লাগিয়ে রুমে চলে এলাম ৷ কিছুক্ষন পর উনি লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলেন ৷ আমাকে একবার দেখে চুল মুছতে মুছতে ব্যালকনিতে চলে গেলেন ৷ আমিও তার পিছু পিছু গেলাম ৷ গিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“কোথায় ছিলেন আপনি সারাদিন?”

উনি কিছু বললেন না ৷ আমি আবার বললাম,,,,,,,,

“অরূপ প্লিজ বলুন ৷ কোথায় ছিলেন আপনি? কি এমন কাজ করেন সারাদিন?”

আচমকা উনি আমাকে দেয়ালে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,,,,,,,,,,,

“আমার পিছু কেন নিয়েছিলে?”

কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,,,,,

“কককোথায়? আআমি কেন আপনার পপপিছু নিবো ৷ ছছছাড়ুন অামাকে ৷”

“জানো? তোমাকে কত জায়গায় খুঁজেছি আমি? কিন্তু তুমি তো আকাশের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিলে ৷”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,,

“কিহ? আকাশ ভাইয়ার সাথে আমি কেন ঘুরবো? আমি তো আপনাকে খুঁজছিলাম ৷ কিন্তু পাই নি ৷ তাই…”

“তাই তুমি সময় কাটাতে আকাশের সাথে ঘুরে বেড়াবে?”

“আরে আজব তোহ! আমি বলছি তো আকাশ ভাইয়ার সাথে ঘুরি নি আমি ৷ আর কেনই বা ঘুরবো আমি?”

“আমি তোমাকে ভালো করেই চিনি ৷ ছেলে পাল্টানো তো তোমার স্বভাব ৷ আর স্বভাব কি সহজে বদলায় কখনো?”

“চুপ করুন প্লিজ ৷ কেন দোষ দিচ্ছেন আমাকে ৷ আমি কি কোনো প্লে গার্ল? যে ক্ষনে ক্ষনে ছেলে পাল্টাবো? আমি নিজেই বুঝতে পারছি না কার দোষ আমাকে দিচ্ছেন আপনি ৷ আর কেনই বা দিচ্ছেন? আমি কিছু করি নি কতবার বলবো আমি? আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়া তাই আমাকে বাড়িতে দিয়ে গেছে ৷ এর বেশি কিছুই না ৷”

“তুমি বললা আর আমি বিশ্বাস করবো? তোমার মতো মেয়েদের চিনি আমি ৷”

ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম অরূপকে ৷ রাগে চোখে পানি এসে পরেছে ৷ হাত পা কাঁপছে ৷ যার জন্য কিছু বলতেও পারছি না আমি ৷ তবুও কোনো রকমে চোখ মুছে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“আপনি আদো কোনো মানুষ নাকি জানা নেই আমার ৷ নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে এখন ৷ এটা ভেবে যে আমি আপনার মতো এতোটা নিচু মনের ছেলেকে ভালোবেসেছিলাম ৷ আজ থেকে আপনার আর আমার পথ আলাদা ৷ বেরিয়ে যান এই বাড়ি থেকে ৷ আর কোনো দিনও আসবেন না আমার চোখের সামনে ৷ আপনার কোনো কথা মানতে বাধ্য নই আমি ৷ এমন একদিন আসবে যেদিন আপনি আপনার কাজগুলোর জন্য আফসোস করবেন ৷ কিন্তু অতীত কখনো ফিরে আসে না তাই অতীতের ভুল গুলোও শুধরানো যায় না ৷ চলে যান আপনি এখান থেকে ৷ সময় মতো ডিভোর্স পেয়ে যাবেন!”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-০৭

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৭
#অদ্রিতা_জান্নাত

কোনো রকমে রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম ৷ বাহিরে যেতেই সামনে অরূপকে দেখতে পেলাম ৷ ওনার কাছে এগিয়ে গেলে উনি আমাকে এক পলক দেখে আমার সামনে তার হাত ধরে হাতের ঘড়ির দিকে ইশারা করে বললেন,,,,,,

“১০ মিনিট?”

“আরে আপনি হুট করে এসে বলবেন আর আমি চুপচাপ চলে আসবো? আমি কি রেডি হয়ে বসে ছিলাম আপনার জন্য?”

উনি কিছু না বলে গাড়ির বিপরীত পাশে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলেন ৷ আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ির দরজা খুলে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,

“তাড়াতাড়ি উঠো ওভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে ৷”

আমি চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ উনি গাড়ি স্টার্ট দিলে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,,

“কোথায় যাচ্ছি?”

“গেলেই দেখতে পাবে ৷”

আমি আর কিছু না বলে চুপ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ কিছুক্ষন পর অরূপের ফোন বেজে উঠলো ৷ উনি গাড়ি থামিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে দিলেন ৷ ওপাশের কোনো কথাই শুনতে পারলাম না আমি ৷ কিন্তু ওপাশের মানুষের কথাটা হয়তো অরূপের ভালো লাগলো না ৷ তার চোখ মুখ দেখে এটাই বোঝা যাচ্ছে ৷ কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন ৷ আমাকে একবার দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,,,,,,,

“আমি আসছি এক্ষুনি!”

বলেই ফোনটা কেটে গাড়ি থেকে নেমে গেলেন উনি ৷ আমার পাশে এসে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“তুমি বাসায় চলে যাও ৷”

“কি? কিন্তু কেন? আপনি কোথায় না নিয়ে যাবেন আমাকে ৷”

“অন্য একদিন নিয়ে যাবো ৷ আজ কাজ পরে গেছে একটা ৷ আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে ৷ তুমি সোজা বাসায় চলে যাও ৷”

বলেই উনি আশেপাশে কিছু একটা খুঁজতে লাগলেন ৷ আমি ওনার সামনে গিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“যখন যা বলবেন তা মেনে নিব আমি? আমার কোনো মতামত নেই? আপনি কোথায় যাবেন? সঙ্গে আমিও যাবো ৷ নিয়ে চলুন আমাকে ৷”

আমার হাত ধরে টেনে তার সামনে থেকে সরিয়ে দিলেন ৷ তারপর হাত বাড়িয়ে একটা অটোকে ডেকে আমাকে সেখানে ইশারা করে উঠতে বললেন ৷ আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“আমি অটোতে কেন যাবো? আপনি নিয়ে এসেছেন ৷ আপনি দিয়ে আসবেন ৷ আমি একা একা কোত্থাও যাবো না ৷ আপনার সঙ্গে যাবো আমি ৷”

বলেই ঘুরে চলে যেতে নিলে অরূপ আচমকা আমাকে কোলে তুলে নিলেন ৷ তারপর অটোর ভিতরে বসিয়ে দিয়ে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললেন,,,,,,,,

“চাচা ওকে সোজা ওর বাসায় পৌঁছে দিবেন ৷ আর তুমি ওনাকে বাড়ির রাস্তা বলে দিবা ৷ আমি ফোন করে জেনে নিব পৌঁছিয়েছো কিনা ৷”

আমি নামতে গেলে উনি হাত ধরে আটকে দিয়ে বললেন,,,,,,,,,

“থাপ্পর খেতে না চাইলে চুপচাপ বাসায় যাও ৷”

আমি ঠোঁট উল্টে বসে রইলাম ৷ অরূপ আমাকে দিকে একবার দেখে আবার বললেন,,,,,,,,,,

“এখান থেকে সোজা বাসায় যাবা ৷ আশেপাশে ঘোরাঘুরি করলে খবর আছে ৷”

বলেই আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলেন ৷ তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলেন ৷ অটো স্টার্ট দিতে গেলে আমি একপ্রকার চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,

“না না ৷ প্লিজ চালাবেন না ৷”

লোকটা আমার দিকে কপাল কুচকে তাকালো ৷ আমি হালকা হেসে কিছু একটা ভেবে বললাম,,,,,,,,,,,

“ওই যে গাড়িটা আছে না? ওই গাড়িটাকে ফলো করেন প্লিজ ৷ আমি আপনাকে দ্বি- গুন ভাড়া দিব প্লিজ গাড়িটার পিছে পিছে চলেন ৷”

“কিন্তু ছেলেটা যে কইলো আপনারে বাসায় পৌঁছায় দিতে ৷”

“আরে এতো কথা বলতে হবে নাকি আপনাকে? আচ্ছা আমি আরো বেশি ভাড়া দিব ৷ প্লিজ ওই গাড়িটার পিছে পিছে যান ৷ নাহলে হারিয়ে ফেলবো যে ৷”

লোকটা আর কিছু না বলে অরূপের গাড়িকে ফলো করতে লাগলো ৷ অরূপ কি লুকাচ্ছে আমার থেকে সেটা জানতে হবে ৷ এভাবে চলতে পারে না ৷ কিছুক্ষন পর অরূপের গাড়ি একটা গলির সামনে থামলো সেটা দেখে আমিও অটো ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম ৷ অরূপ গাড়ি থেকে নেমে গলির ভিতরে চলে গেলেন ৷ আমি তাড়াতাড়ি করে ভাড়া মিটিয়ে অরূপের পিছন পিছন যেতে লাগলাম ৷ এইখানে ওনার কি কাজই বা থাকতে পারে? জায়গাটা বেশ নির্জন ৷ আশেপাশে কোনো মানুষ নেই ৷ একটা গলি শেষ হতেই তার দুই পাশে আবার সামনে ঠিক সেইম গলি ৷ একদম চৌরাস্তার মতো ৷ পথ হারিয়ে ফেললে এখান থেকে বের হওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নাহ ৷ তবুও মনে সাহস নিয়ে অরূপের পিছনে পিছনে যাচ্ছি আমি ৷ জানিনা উনি জানলে কি করবেন আমার ৷ একটু পর একটা বড় রাস্তার মধ্যে ঢুকে পরলাম আমরা ৷ এতো ছোট ছোট গলি পেরিয়ে এতো বড় রাস্তা তাও এখানে? বেশ অবাক হলাম ৷ কিন্তু অরূপ যাচ্ছেটা কোথায়? কি করতে চাইছে সে? আমি আরেকটু তাড়াতাড়ি হেঁটে সামনে এগিয়ে গেলাম ৷

হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আমার হাত টেনে ধরলো ৷ কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম আমি ৷ একেই হয়তো বলে চুরি করতে গিয়ে ধরা পরে যাওয়া ৷ আরো একটু টেনে আমাকে তার দিকে ঘুরালো ৷ কিন্তু সামনের ব্যাক্তিকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম আমি ৷ আমার হাত ধরে সে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“শ্রেয়া? তুমি কি করছো এখানে?”

আমি কিছু না বলে পিছনে তাকালাম ৷ অরূপ অনেকটা দূরে চলে গেছেন ৷ এখন না গেলে হারিয়ে ফেলবো আমি ওনাকে ৷ তুহিনের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“হাত ছাড়ুন প্লিজ ৷ আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো ৷ এখন হাত ছাড়ুন নয়তো হারিয়ে ফেলবো আমি ৷ তুহিন হাতটা ছাড়ুন ৷”

“শ্রেয়া? কি হয়েছে তোমার? কি হারিয়ে ফেলবে? তুমি…?”

আমি পিছনে একবার তাকিয়ে দেখি অরূপ আরেকটা গলির ভিতর ঢুকে গিয়েছেন ৷ তুহিনের হাত ঝাটা মেরে সরিয়ে রেগে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,

“আপনার কি কোনো কাজ নেই? খালি আমার পিছেই পরে থাকেন কেন? আমাকে কেন ফলো করছেন আপনি? বলেছি না আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে ৷ তবুও কেন শুনছেন না? কি চান আপনি? আর এভাবে রাস্তায় হাত ধরার মানে কি? প্লিজ আপনি আমার পিছু নিবেন না ৷ আপনার কাজে আপনি যান ৷ দয়া করে আমার পিছু নিবেন না ৷”

বলেই পিছনে একবার তাকিয়ে আবার তুহিনের দিকে তাকালাম ৷ তারপর দৌঁড়ে সামনে চলে গেলাম ৷ তুহিন ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো ৷

“তুমি কখনোই বুঝবে না আমাকে ৷ শত কথা শোনার পরেও তোমার কাছে ছুটে আসি আমি ৷ কিন্তু তুমিই আমাকে প্রত্যেকবার ভুল বুঝো ৷ কেন বুঝো না আমাকে? কেন আমি এরকম করি সেটা জানতে চাও না শ্রেয়া?”

ব্যথিত চোখে শ্রেয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে পিছনে ফিরে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলো ৷





সামনে এসে আশেপাশে খুঁজেও কোত্থাও অরূপকে পেলাম না ৷ মূহুর্তের মধ্যেই কোথায় চলে গেলেন উনি? উফ আরেকটুর জন্য ধরতে পারলেন না ৷ কিন্তু গেলেনটা কোথায়? আশেপাশে কোনো বাড়ি ঘর দেখতে পাচ্ছি না ৷ সামনে পিছনে সব গলি দেখা যাচ্ছে ৷ এতো গুলো জায়গায় কোথায় খুঁজবো আমি তাকে? আবার আমি এখান থেকে বের হবো কি করে? কোথা থেকে কীভাবে এসেছিলাম সেটাও গুলিয়ে ফেলেছি ৷ পুরো জায়গাটা একটা গোলকধাঁধার মতো ৷ যেখানেই যাই না কেন অাবার সেই জায়গায়ই ফিরে আসি মনে হচ্ছে ৷ বের হবো কি করে আমি আবার অরূপকেও বা খুঁজবো কোথায়? উফ মাথা কাজ করছে না আমার ৷ এ কোন বিপদে পরলাম আবার ৷ আরেকটু সামনে এগিয়ে আশেপাশে খুঁজতে লাগলাম ৷

হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো ৷ চমকে উঠলাম আমি ৷ আশেপাশে একবার তাকিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম ৷ মায়া আপু আগে যেই নাম্বার থেকে ফোন করেছিল এটা সেই নাম্বারই ৷ আপু ফোন দিয়েছে তাহলে ৷ তড়িঘড়ি করে রিসিভ করে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“আপু কোথায় তুই? কাল সারাদিন ফোন কেন বন্ধ ছিল? কতবার ফোন করেছি জানিস? তুই কোথায়? ঠিক আছিস তো তুই?”

“শ্রেয়া শান্ত হ আগে ৷ এভাবে এতো গুলো প্রশ্ন একসাথে করলে আমি বলবো কীভাবে? ফোনটা অফ করে রেখেছিলাম আমি ৷ কারন কোনো ফোন আসলে শব্দ হবে পরে যারা আমাকে আটকে রেখেছে তারা জানতে পেরে যাবে ৷ আর গতকাল সারাদিন ওরা আমাকে অজ্ঞান করে রেখেছিল শ্রেয়া ৷”

“কারা তোকে আটকে রেখেছে?”

“আমি জানি না শ্রেয়া ৷ তাদের চেহারা দেখতে পাই নি আমি ৷ আমি বুঝতে পারছি না কি শত্রুতা ওদের আমার সাথে ৷ শ্রেয়া আমি মিথ্যা বলছি না ৷ বিশ্বাস কর ৷ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে এখানে ৷ বের কর আমাকে প্লিজ ৷”

“তুই কোথায় আছিস মায়া আপু? আমি তো নিজেই বুঝতেছি না কি করবো ৷ কোনো একটা উপায় তো বল ৷ জায়গাটার নামটা তো বল ৷ নাহলে খুঁজবো কি করে আমি?”

“শ্রেয়া এই ঘরের মধ্যে একটাও জানালা নেই ৷ একটা আছে কিন্তু সেটা অনেক উপরে ৷ আমার নাগালের বাহিরে ৷ আর দরজা বাহির থেকে লাগানো ৷ আমি নিজেও বের হতে পারছি না কোনো চেষ্টা করেও ৷ কিছু একটা কর প্লিজ ৷”

“কি করবো আমি? আমি নিজেও জানিনা ৷ আমি নিজেও একটা জায়গায় আটকে গেছি বের হতে পারছি না ৷ জায়গাটার নামও জানিনা ৷”

“তুই কোথায়?”

“জানি নাহ আমি ৷”

কিছু ক্ষন চুপ থেকে ভাবতে লাগলাম কি করবো? হঠাৎ কিছু একটা মাথায় আসতেই বলে উঠলাম,,,,,,,,

“মায়া আপু আছিস তুই?”

“কি হয়েছে?”

“তোর ফোনের লোকেশান অন কর কুইক ৷ লোকেশান ট্র্যাক করলে পাওয়া যাবে ৷ তাড়াতাড়ি কর ৷”

“কিন্তু তুই পারবি?”

“হ্যাঁ কীভাবে করতে হয় জানি আমি ৷ তুই একটু তাড়াতাড়ি কর প্লিজ ৷”

“হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি দেখ ৷”

“আচ্ছা ফোন কাটবি না আর লোকেশান অফ করিস না ৷ যেরকম বলবো সেরকমটা করিস প্লিজ ৷”

“আচ্ছা ৷”

কোনো রকমে বের করে দেখি আপুর লোকেশান আর আমার লোকেশান সেইম জায়গায় ৷ এটা কি করে হতে পারে? এখানে কোথাও তাহলে আপুকে আটকে রাখা হয়েছে? কিন্তু কে আটকে রেখেছে? একদিক দিয়ে আমার খোঁজাটা একটু সহজ হয়ে গেল ৷ এখন খুঁজে পেলেই হবে ৷ কিন্তু অরূপ গেল কোথায়? ওনার কথা পরে ভাবা যাবে ৷ আগে আপুকে খুঁজে এই জায়গাটা থেকে যে করেই হোক বের হতে আমাকে ৷

ফোন কেটে দিয়ে সামনে এগিয়ে খুঁজতে লাগলাম ৷ একটু সামনে যেতেই একটা গোডাউন দেখতে পেলাম ৷ কিন্তু তার সামনে বেশ কয়েকটা লোক পাহারা দিচ্ছে ৷ আমি আস্তে আস্তে পিছনের দিকে চলে গেলাম ৷ পিছনের দিকে আশেপাশে গাছপালা দিয়ে ভরা ৷ মায়া আপু যেমনটা বলেছিল এই গোডাউনের পিছনে ঠিক ওরকম একটা ছোট জানালা আছে ৷ তবে অনেক উপরে ৷ আশেপাশে তাকাতেই বেশ কয়েকটা বড় বড় ইট পেলাম ৷ সবগুলো সেই জানালার বরাবর নিচে রেখে উঁচু টুলের মতো বানালাম ৷

সাবধানে আস্তে আস্তে সেই ইটগুলোর উপর পা রেখে জানালাটা ধরে দাঁড়ালাম ৷ জানালা দিয়ে ভিতরে দেখতে যাবো ঠিক তখনি পিছন থেকে কেউ আমার মুখ চেপে ধরলো ৷ তাই চাইলেও ভিতরে কি আছে দেখতে পেলাম না ৷ ছটফট করে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম ৷ কিন্তু ছাড়াতে পারলাম না ৷ মুখের মধ্যে কিছু একটা স্প্রে করতেই চোখ বুজে আসলো ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-০৬

0

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৬
#অদ্রিতা_জান্নাত

গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি আমি ৷ পাশের সিটে অরূপ ড্রাইভ করছেন ৷ দুজনেই চুপচাপ বসে আছি ৷ মনটা আজ অনেক ভার হয়ে আছে ৷ ওই বাড়ি থেকে আমার বাড়িতে যাচ্ছি আজ ৷ হয়তো কিছু দিনের জন্য ৷ কিন্তু বারবার মনে হচ্ছে আর কখনো ওই বাড়িতে ফিরতে পারবো না আমি ৷ আজই হয়তো শেষ দিন ছিল ৷ জানিনা কেন মনে হচ্ছে এরকম ৷ কিন্তু মনে হচ্ছে ৷ মনটা বারবার কু গাইছে ৷ কিছু একটা তো হবেই কিন্তু কি? বাহিরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে অরূপের দিকে তাকালাম ৷ উনি মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছেন ৷ তাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে তার পাশে কেউ আছে ৷ চোখ ফিরিয়ে আবার বাহিরের দিকে চোখ রাখলাম ৷

কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামলো আমার বাড়ির সামনে ৷ অরূপ আমাকে নামতে বলে পাশের কয়েকটা দোকান থেকে বিভিন্ন রকমের ফল আর মিষ্টি কিনে নিলেন ৷ অবশ্য এগুলো কিনতে বলছে আমার শ্বাশুড়ি মা ৷ তাই হয়তো কিনছেন ৷ আমি গাড়ি থেকে নেমে ওনার জন্য দাঁড়ালাম ৷ উনি আসলে আমাকে রেখেই বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন ৷ আমি চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে তার পিছু পিছু যেতে লাগলাম ৷ কলিং বেল বাজাতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো ৷

আমাকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

“তুই ঠিক আছিস মা? ভালো আছিস? দেখি!”

বলেই আমার মুখটা তুলে কপালে একটা চুমু দিয়ে গালে হাত দিয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“কতদিন পর দেখছি তোকে ৷ কি যে ভালো লাগছে আমার বোঝাতে পারবো না ৷ আয় মা ভেতরে আয় ৷ এসো বাবা ভেতরে এসো ৷”

বলেই আমাকে ছেড়ে সামনে থেকে সরে গেলো আম্মু ৷ অরূপ আর আমি দুজনেই ভিতরে ঢুকলাম ৷ ভিতরে ঢুকে দেখি আব্বু সোফায় বসে পেপার পরছে ৷ আমাদের দেখে মুখে হাসি ফুঁটিয়ে আমাদের কাছে এসে বলতে লাগলো,,,,,,,

“কেমন আছো অরূপ বাবা?”

অরূপ মুখে হাসি ফুঁটিয়ে হালকা মাথা নাড়ালেন ৷ যার অর্থ ‘ভালো’ ৷ আব্বু অরূপকে হালকা দেখে আমাকে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“শ্রেয়া মা ভালো আছিস তো? তোর কষ্ট হচ্ছে না তো ওই বাড়িতে?”

“না অাব্বু সব ঠিক আছে ৷ আম্মু আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসি ৷ তারপর কথা বলছি ৷”

“আচ্ছা যা আমি গিয়ে দেখি রান্নার কাজ গুলো হলো নাকি ৷”

বলেই আম্মু কিচেনের দিকে চলে গেল ৷ আমিও আর কিছু না বলে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম ৷ নিচে নেমে দেখি আব্বু আর অরূপ কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে ৷ যাক আমার বাবা মায়ের সঙ্গে অন্তত খারাপ ব্যবহার না করলেই হলো ৷ আমি চাই না আমার জন্য তারা কষ্ট পাক ৷ আমাকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আব্বু বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“কি রে? ওখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? এখানে আয় ৷”

বলেই আমাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো সে ৷ অরূপ আমার দিকে তাকাতেই তার মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল ৷ লোকটা এরকম কেন? আমি সামনে গিয়ে আব্বুর পাশে বসলে সে আমার মাথায় হাত রেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“কি রে মা? মন খারাপ তোর?”

আমি ‘না’ সূচক মাথা নাড়লাম ৷ আব্বু আবার বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

“কি হয়েছে বল না? সব কিছু খুলে বল ৷ মনটা হালকা হবে ৷ তোকে এভাবে দেখতে আমার ভালো লাগে বল?”

জোর পূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,,,,,,,,

“কিছু হয় নি ৷ তুমি প্লিজ এসব ভেবে নিজের শরীর খারাপ করো না ৷ আমি ঠিক আছি একদম ৷”

“আচ্ছা চল তাহলে ৷ দুপুর হয়ে গিয়েছে ৷ আগে খেয়ে নে তারপর যা ইচ্ছা করিস ৷ আসো বাবা ৷”

বলেই আমরা গিয়ে টেবিলে বসলাম ৷ সবাই খেতে খেতে মাঝখানে হালকা কিছু গল্পও করলাম ৷ কিন্তু অরূপ আর আমি নিজেদের মধ্যে কোনো কথা বলি নি আর ৷

______________

“মায়ার কোনো খোঁজ পেলি?”

রাতের বেলা ব্যালকনিতে একা একা দাঁড়িয়ে ছিলাম ৷ আম্মুর কথা শুনে পাশে তাকালাম ৷ কিছু বললাম না ৷ চোখ ফিরিয়ে চুপ করে রইলাম ৷ আম্মু আবার বললো,,,,,,,,

“কি হলো? কিছু বলছিস না যে? অরূপ তোকে মেনে নিয়েছে?”

“বাদ দাও না ওসব কথা ৷ ভালো লাগছে না ৷”

আম্মু আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“তোদের সম্পর্ক একটুও ঠিক হয়নি জানি আমি সেটা ৷ আমার ভালো লাগছে না তোকে এভাবে দেখতে ৷ তুই অরূপের সাথে ভালো থাকবি না ৷ সেটা জানি আমি ৷ দুই পরিবারের সম্মান বাঁচিয়েছিস ৷ এখন আর ওই বাড়ি যাবি না তুই ৷”

ছলছল চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম ৷ আম্মু আবার বললো,,,,,,,,,,,

“আমার একমাত্র মেয়ের কষ্ট আমি সহ্য করবো না ৷ বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম দেখে এই নয় যে সারাজীবন সব কিছু চুপচাপ মেনে নিবো ৷ দীপ্ত ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলবো আমি ৷”

বলেই আম্মু চলে যেতে নিলেই আমি আম্মুর হাত ধরে আটকে ধরে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,

“দীপ্ত বাবাকে কিছু বলো না আম্মু ৷ ওই বাড়ির সবাই মেনে নিয়েছে আমাকে ৷ এখন এই কথা বললে কষ্ট পাবে তারা ৷ প্লিজ আম্মু এরকম কিছু করো না ৷”

“তাহলে কি চুপ করে থাকবো আমি?”

আমি মাথা নিচু করে বললাম,,,,,,,,,,

“আমাকে কয়েকটা দিন সময় দাও আম্মু ৷ এই কয়েকটা দিনে অরূপ আমাকে মেনে না নিলে তোমরা যা বলবে আমি তাই শুনবো ৷ শুধু কয়েকটা দিন ৷ আর এই কয়েকদিনের মধ্যেই আমি অরূপের মনের সব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিব ৷ দোষ না করেও দোষের বোঝা বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারবো না আমি ৷”

আম্মু আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস রে মা! তুই যেটা করার করে নে ৷ অরূপ ওর ভুল না বুঝলে, তোকে মেনে না নিলে তুই দূরে চলে যাবি ওর থেকে ৷ একটা নতুন জীবন শুরু করবি ৷ কেমন?”

“হুম আচ্ছা ৷”

“কলেজে যাবি না? ফাইনাল এক্সামটা তো দিতে হবে নাকি?”

“হুম ৷ দিব ৷”

“আচ্ছা আসি আমি তাহলে ৷ মন খারাপ করে থাকিস না ৷”

আমি মাথা নাড়ালাম ৷ আম্মু চলে গেল ৷ রুমে এসে বিছানায় বসলাম ৷ চিন্তা হচ্ছে, প্রচুর চিন্তা হচ্ছে ৷ মায়া আপুকে কোথায় খুঁজবো আমি? আর কি করেই বা খুঁজবো? আমি একা কি-ই বা করতে পারি? মোবাইলটা হাতে নিয়ে মায়া আপুর কল দেয়া নাম্বারে কল দিলাম ৷ কিন্তু ফোন বন্ধ ৷ কাল কথা বলার পর থেকেই এরকম ৷ এরকম হলে আমার পক্ষে খোঁজা তো সম্ভবই না ৷

কিছুক্ষনপর অরূপ রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন ৷ আমি পা তুলে বিছানার এক সাইডে শুয়ে রইলাম ৷ শরীর ও মন দুটোর একটাও ভালো লাগছে না আমার ৷ বেশ কিছুক্ষন পর উনি বেরিয়ে এলেন ৷ আমার দিকে একবার তাকিয়ে বিপরীত পাশে গিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,,,,,

“কোথায় শুবো আমি?”

কপাল কুচকে ঘাড় ঘুরিয়ে ওনার দিকে তাকালাম ৷ গত দুইদিন আমি অসুস্থ ছিলাম দেখে বিছানায় শুতে দিয়েছিলেন ৷ আর উনি সোফায় শুয়েছিলেন ৷ কিন্তু এখানে আমার রুমে শুধু একটা সিঙ্গেল সোফা রয়েছে ৷ যেটাতে শুধু বসা যাবে ৷ আমি ওনাকে বললাম,,,,,,,,,

“বেডের অার বাকি জায়গা গুলো কার জন্যে? এখানে তো আরো তিন জন শুতে পারবে ৷ আপনি পারবেন না?”

উনি বেডের সাইডে বসে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বললেন,,,,,,,,,,

“তোমার সাথে শুতে পারবো না আমি ৷”

“তো আমি কোথায় শুবো?”

“সেটা তুমি জানো ৷”

“আমার রুমে আমার বিছানায় আমি ঘুমাবো ৷ আপনার যেখানে ইচ্ছা আপনি যান ৷ আমি পারবো না ৷”

বলেই মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরলাম ৷ অরূপ আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন,,,,,,,,,,,,,

“আমি ঘুমাতে পারবো না তোমার সাথে ৷”

“আপনাকে আমি ঘুমাতে বলিও নি ৷ পারলে সারা রাত জেগে বসে থাকেন ৷ কিন্তু আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না একদম ৷”

বলেই লাইট নিভিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম ৷ অরূপ রেগে বললো,,,,,,,,,

“লাইট কেন অফ করলে?”

“আলোতে ঘুম আসে না আমার ৷ ওকে গুড নাইট!”

বলেই কাঁথা মুড়ু দিয়ে শুয়ে পরলাম ৷ অরূপ রেগে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরলেন ৷ তবে আমাদের মাঝে দূরত্ব এখন অনেক ৷ হয়তো মনের দূরত্বের থেকে এই দূরত্ব কিছুই না ৷

_______________________

পরেদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অরূপকে কোত্থাও পেলাম না ৷ আম্মুকে জিজ্ঞেস করলে সে বললো ‘অরূপ নাকি খেয়েই কোথায় চলে গেছে ৷ আর বলে গেছে তার কি যেন কাজ আছে’ ৷ বুঝি না প্রত্যেকদিন সকালবেলা কি এমন কাজ করে সে? দেখতে হবে আমাকে ব্যাপারটা ৷ সন্দেহ হচ্ছে এখন এই ছেলেটাকে ৷ এই ছেলেটার মাথায় চলছে টা কি?

হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় চমকে উঠলাম আমি ৷ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি তুহিন ফোন করেছে ৷ আমি ধরলাম না কেটে দিলাম ৷ আবার বেজে উঠলো ৷ কিছু করার নেই ধরতে হবে আমাকে এখন ৷ নাহলে শান্তি দিবে না জীবনেও ৷ ফোন ধরে বললাম,,,,,,,,,

“বলুন ৷”

“কি আর বলবো? তুমি তো আমার কথা শুনোই না ৷”

“শুনছি আপনি বলুন ৷”

“ওই দিন আমার কোনো কথা শুনো নি কেন?”

“সেটা আমার ইচ্ছা ৷”

“তোমার শ্বশুড়বাড়ির এড্রেসটা দাও ৷ দেখা করবো আমি তোমার সাথে ৷”

“পারবো না ৷ আমার শ্বশুড়বাড়ি আপনি কেন আসবেন? আর আমি ওই বাড়িতে নেই এখন ৷”

“তো কোথায় আছো?”

“প্লিজ এরকম করবেন না আপনি ৷ কোথায় আছি, কি করছি সেসব আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই ৷ এটা মনে রাখবেন আমি এখন অন্য কারো স্ত্রী ৷ দয়া করে আর ফোন দিবেন না ৷ কোনো ভুল বুঝাবুঝির কারণ হতে চাচ্ছি না আমি ৷”

বলেই ওনাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন রেখে দিলাম ৷ কিছুক্ষন পর আবার ফোন বেজে উঠলো ৷ সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে রেগে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,

“এই আপনাকে না বলেছি আর ফোন করবেন না আমায় ৷ ভালোভাবে কথা বললে বোঝেন না, না? আপনি…”

“তোমার সাহস তো কম না আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলছো ৷”

আমি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি অরূপের নাম্বার ৷ উফ কেন যে না দেখে রিসিভ করলাম ৷ ওপাশ থেকে অরূপ ঝাঝালো গলায় আবার বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,,,

“কিছু বলছো না কেন?”

“আআমি তো আআপনাকে বলি নি ৷ অঅঅন্য কাউকে বলতে চেয়েছিলাম ৷”

“অন্যকাউকে মানে? আর তুমি কার সাথে কথা বলছিলে? ফোন ওয়েটিংয়ে ছিল কেন?”

“উফ বাবা আমার ফোন যার সাথে মন চায় আমি কথা বলবো ৷ তাতে আপনার কি? আপনি কেন ফোন দিয়েছেন সেটা বলুন ৷ আর আপনি এখন কোথায়? প্রত্যেকদিন সকালে না বলে কোথায় যান আপনি?”

“আমার যেখানে ইচ্ছা আমি সেখানে যাবো ৷ তোমাকে কেন বলবো?”

“তো ফোন কেন দিয়েছেন?”

“ইচ্ছা হইছে তাই ৷ এখন বকবক বন্ধ করে বাড়ির বাইরে আসো ৷”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,,,,

“মানে?”

“বাড়ির বাহিরে আসতে বলছি ৷ এটাও কি বোঝো না তুমি?”

“হঠাৎ করে আমি কেন বাহিরে যাবো? আপনি পারলে ভেতরে আসেন ৷ আমি পারবো না ৷”

“ওকে আমি ভিতরে আসলে কিন্তু সবার সামনে তোমাকে কোলে নিয়ে বাহিরে এসে আছাড় মারবো একটা ৷ এখন তুমি জানো কি করবা? আছাড় খাবা নাকি বাইরে আসবা?”

মুখ বাঁকিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“হুহ আসতেছি আমি ৷ আপনি দাঁড়ান একটু ৷ ভালোভাবে বললেও তো হতো ৷ আমি না করতাম নাকি?”

“কথা কম বলে তাড়াতাড়ি বাইরে এসো ৷ ১০ মিনিটের বেশি হলে খবর আছে তোমার ৷”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,