Sunday, July 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1516



তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০৪

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ০৪

সাজ্জাদের কথা শুনেই শোভনের মাথায় রক্ত চরে যায়,
রেগে জোরে মেঘলার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,
— “বার বার না করেছি তোমার মুখে আমি অন্য ছেলের কথা শুনতে চাই না তাও তুমি ওই সাজ্জাদের কথা বলছো?
এর পরিনাম কত ভয়াবহ হবে তুমি জানো?
ওই সাজ্জাদ কে আমি শেষ করে দিবো, বাঁচতে দিবো না…

বলেই আরো বেশি রেগে মেঘলার মুখ চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে, মেঘলা হাত দিয়ে সরাতে চাইলে হাত মুচড়ে পেছনে ধরে বলে,
— ” খুব তেজ হয়েছে?
এই তেজ আমি শেষ করবো৷
কতবার বলেছি তুমি শুধু আমার,
হ্যাঁ তুমি শুধু এই শোভনের৷ আমার থেকে পালানোর চেষ্টা করো না মারবো না তোমায় কারন তোমায় মারলে নিজেই শেষ হয়ে যাবো৷
তোমায় শাস্তি দিবো কঠিন ভাবে৷ ”

মেঘলা এমন আর দাড়াতে পারছে না ব্যাথায় কুকরে উঠছে ডুকরে কেঁদে উঠে বলে,
— “শোভন ভাইয়া আমার লাগছে৷ ”
বলেই জোরে জোরে কেঁদে উঠে, শোভন উত্তেজিত হয়ে ছেড়ে দিয়ে বুকে চেপে ধরে৷

মেঘলা ছিটকে শোভন কে দূরে সরিয়ে বলে,
— “ভেবেছিলাম তুমি অনেক ভালো,
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম প্রতিবার কারন তুমি ভালো না যে খুন করতে পারে সে কখনো ভালো হতে পারে না৷
কেন এমন করছো?
কেন এতোটা কষ্ট দিয়ে আবার নিজেই বুকে টেনে নিচ্ছো?”

শোভন কিছু না বলেই কোথাও একটা বেড়িয়ে যায়৷
মেঘলা ধপ করে নিচে বসে কাঁদতে থাকে,
কেন এমন করছে শোভন?
কখনো ওর চোখে এতোটা হিংস্রতা মেঘলা দেখেনি যে চোখে তাকালে সবসময় মায়ায় পরে যেতো সেই চোখ দেখলে মেঘলার আজ ঘৃনা হচ্ছে, সেই চোখে আজ কোনো মায়া নেই আছে শুধু হিংস্রতা৷

রাত ১০টা,,,,,
মেঘলা এখনো মাথা নিচু করে মেঝেতেই বসে আছে,
শোভন কোথাও থেকে এসে কয়েকটা ব্যাগ মেঘলার সামনে ছুরে দিয়ে বলে,
— “কাল দুপুরে আমাদের বিয়ে রেডি হয়ে থাকবি,
এর বাইরে কোনো কথা বললে খারাপ হয়ে যাবে৷ ”

মেঘলা ব্যাগ গুলো ছুরে ফেলে বলে,
— “শুনবো আমি তোমার কথা,
থাকবো না এখানে আমি চলে যাবো৷ ”

শোভন মেঘলার সামনে বসে ঘাড়ের নিচ দিয়ে চুল গুলো মুঠি করে ধরে বলে,
— “হুর পরি, আমার কথার খেলাপ করো না
আগেই বলেছি পরিনাম খারাপ হবে৷ ”

মেঘলা ঘৃনার দৃষ্টিতে শোভনের দিকে তাকিয়ে ওর পাশ কেটে ওয়াশরুমে চলে যায়৷
মেঘলা এখন আর কিছু বলতে চায় না যা করার কালই করবে৷
ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে শোভন খাবার নিয়ে বসে আছে৷
মেঘলা বিছানায় উঠে শুয়ে পরতে নিলেই শোভন বলে,
— “খেয়ে ঘুমো৷ ”

মেঘলা রাগ দেখিয়ে বলে,
— “আমি তোমার আনা কিছুই খাবো না৷ ”

শোভন উঠে হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে মেঘলাকে উঠিয়ে এনে সোফায় বসিয়ে বলে,
— “ভালো করে বলছি খেয়েনে৷ ”

— “খাবো না আমি বললাম তো৷ ”
শোভন খাবার হাতে নিয়ে মুখ চেপে ধরে মুখে খাবার পুরে দেয়৷
মেঘলা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে৷

শোভন জোরে ধমক দিয়ে বলে,
— “চোখ মুছ৷”

মেঘলা তাও কাঁদছে, শোভন আবার রেগে বলে,
— “চোখ মুছ বলছি,
আজকের পর থেকে চোখে পানি যেন না দেখি৷ ”

মেঘলা তাও কেঁদেই যাচ্ছে আবার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,
— “আমার হাতের চড় না খেলে তোর ভালো লাগে না তাই না?”

মেঘলা আর কিছু না বলে চুপ চাপ খেয়ে নেয়৷
খেয়ে বিছানায় গিয়ে শুতেই চোখে ঘুম নেমে আসে,
আজ সারাদিন অনেকটা ধকল গেলো তাছাড়া শোভনের এলোপাথাড়ি থাপ্পড় তো আছেই৷

মেঘলা ঘুমাতেই শোভন গিয়ে মেঘলার পাশে বসে,
গাল টা লাল হয়ে আছে সারাদিন অনেক শাস্তি দিয়েছে৷ ও নিজেই বা কি করবে রাগ টা কিছুতেই সামলাতে পারে না, না করা শর্তেও ওই ছেলেটার নাম বলছিলো৷
ওকে উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে গালে কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে দেয়৷


আরো এক ঘন্টা আগে মেঘলা ঘুম থেকে উঠেছে,
শোভন আবার ব্যাগ গুলো হাতে দিয়ে করা ভাবে বলে গেছে রেডি হয়ে থাকতে৷
শোভন বাড়িতে গেছে কিছু প্রয়োজনে আর নিচে অনেকগুলো গার্ড রেখে গেছে মেঘলার জন্য৷
মেঘলা কনে সেজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মুখে বাকা হাসি৷

মেঘলা বিড়বিড় করে বলে,
— “কনে তো সাজলাম কিন্তু তোমার না সাজ্জাদের৷ ”
বলে জোরে জোরে হাসতে থাকে৷
আয়না থেকে সরে বারান্দায় গিয়ে দেখে নেয় গার্ডরা কোথায় কিন্তু দেখেই মন টা খারাপ হয়ে যায় অনেকগুলো সুঠাম দেহের গার্ড এদের সাথে জীবনেও পেরে উঠবে না৷

কিছু একটা ভেবে সিড়ি বেয়ে ছাদের দিকে হাটা দেয়৷ এই বাড়িটির ছাদ ঘেসে আরেকটা ছাদ আছে এখান থেকে যেতে মেঘলার খুব একটা কষ্ট হবে না৷
শাড়ির আচলটা কোমরে বেধে ছাদ টপকে অন্য ছাদ দিয়ে নেমে যায়,
নিচে এসে কোন মতো বাড়ির বাইরের গার্ড গুলো চোখ এড়িয়ে একটা দোকানে ঢুকে
সাজ্জাদ কে ফোন করার জন্য৷
মেঘলাকে কনে বেশে দেখে প্রথমত দোকানের মালিক ফোন দিতে চায়নি পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে দিয়েছে৷
অনেকবার ফোন করার পরেও সাজ্জাদ কে পায় না তাই ভাবে সাজ্জাদের বাড়িতেই যাবে৷
কিন্তু কি করে যাবে?
দোকান থেকে বেড়িয়ে হাটা ধরে, কিছুদূর যেতেই প্রিয়াকে দেখে একটা রেস্টুরেন্ট এর ভিতর৷
প্রিয়াও মেঘলাকে দেখে বেরিয়ে এসে বলে,
— “কিরে মেঘু তুই এখানে?
আর কনের সাজে কেন?”

এতোদূর হাটায় মেঘলা হাপাচ্ছে, হাপাতে হাপাতে প্রিয়াকে বলে,
— “পরে সবটা বলবো আগে সাজ্জাদের ফ্লাটে নিয়ে চল আমায়৷ ”

প্রিয়া বলে,
— “আমি এখানে একটা কাজে এসেছি যেতে পারবো না তোকে গাড়ি করে দেই তুই যা,
কিন্তু কি হয়েছে এটাতো বল৷ ”

মেঘলা প্রিয়াকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,
— “এখন না পরে সবটা বলবো৷ ”

প্রিয়া গাড়ি করে দেওয়ার পরই মেঘলা উঠে সাজ্জাদের বাড়িতে আসে৷
ফ্লাটের সামনে এসে দেখে দরজাটা খোলা ভিতরে যেতেই দেখে সোফায় বসে বসে ড্রিংক করছে৷
মেঘলাকে এই সময় এখানে দেখে কিছুটা ভরকে যায় মেঘলা বলে,
— “কি করছো তুমি?
ড্রিংক করছো?”

সাজ্জাদ হকচকিয়ে কিছু বলবে এর আগে মেঘলা বলে,
— “তোমাকে তো আমি ভালো ভেবেছিলাম আর তুমি?”

হেলে দুলে মেঘলার হাত ধরে নিজের কাছে এনে বলে,
— “ও বেবি এটা কিছুই না একটু আধটু এমন হয়েই থাকে৷ ”

মেঘলা ধাক্কা দিতে সরিয়ে দিতে চাইলে সাজ্জাদ আরো বেশি জোরে চেপে ধরে বলে,
— “অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো তোমাকে কাছে পাওয়ার দুইবছর কতই না ঘুরেছি তোমাকে ভালোবাসার জালে ফাসানোর জন্য কিন্তু সব বৃথা গেছে৷
আর আজ তো নিজ থেকেই ধরা দিলে পাখি৷ ”

বলেই মেঘলার উরনাটা সরিয়ে দিবে তখনি পিছন থেকে কেও সাজ্জাদের পিঠ বরাবর গুলি করে আর সাজ্জাদ নিচে ঢলে পরে৷
শোভন এসে মেঘলাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে আরো কয়েকটা গুলি সাজ্জাদের বুকে করে৷
চোখের সামনে এমন খুন দেখে মেঘলা থম মেরে নিচে বসে পরে৷

বর্তমান,,,,,

মেঘলা এখনো বসে বসে কাঁদছে৷
কিভাবে মানুষ এমন খুন করতে পারে?
সাজ্জাদের ভুল ছিলো কিন্তু ভুলের শাস্তি এমন? এটা কি ঠিক?

কিছুক্ষন পর এসে মেঘলার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে এনে বসিয়ে আবার ওই বাড়িতে নিয়ে আসে৷


মেঘলা মাথা নিচু করে বসে আছে,
আর শোভন বার বার একটা কথাই বলছে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করো৷
মেঘলার উত্তর প্রতিবার একই “শোভন কে বিয়ে করবে না”
এই পর্যন্ত অনেকগুলো থাপ্পড় খেয়েছে তাও মেঘলা নিজের কথা পালটায় নি গাল বেয়ে রক্ত পরছে৷
শোভন রেগে চিৎকার করে বলে,
— “সাইন করতে বলছি নয়তো তোমার জন্য খুব একটা ভালো হবে না৷ ”

মেঘলা বলে,
— “কি করবে মেরে ফেলবে মেরে ফেলো৷ ”

শোভন বাকা হেসে মেঘলার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
— “পেছনে তাকাও৷ ”

পিছনে তাকিয়ে আতকে উঠে প্রিয়াকে অচেতন অবস্থায় একটা চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে পাশেই রিভালবার নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছে৷
শোভন বলে,
— “এবার করবে তো?”

মেঘলা কাপা কাপা হাতে সাইন টা করে দেয়৷ শোভন ও বেহায়ার মতো খুশি খুশি সাইনটা করে দেয়৷
কি অদ্ভুত একটা সাইনেই জীবন টা পালটে গেলো কয়েকটা দিকে জীবনটা কেমন অগোছালো হয়ে গেলো৷
যার বুকে মাথা রেখে শান্তিতে থাকতে পারতো মেঘলা আজ তাকে দেখলেই ভয় করে৷

চলবে,,,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০৩

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ০৩

[ স্নিগ্ধা নামটা পাল্টিয়ে মেঘলা দিলাম❤️ শোভনের সাথে অন্য কোনো মেয়ের নাম কারোরি হয়তো ভালো লাগতাছে না আমারো ভালো লাগতাছে না তাই শোভন আর মেঘলা❤️😌]

কনে বেশে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে মেঘলা পাশেই সাজ্জাদের লাশ পরে আছে,
শোভন বসে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে৷
এ কান্না শোভনের সহ্য হচ্ছে না৷
অন্য ছেলের জন্য কেন কাঁদবে?
শোভন আর বসে থাকতে পারলো না,
বসা থেকে উঠে মেঘলার হাত চেপে ধরে উঠিয়ে টানতে টানতে একটা রুমে নিয়ে ছুরে বিছানার উপর ফেলে বলে,
— ” খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?
আমারো কষ্ট হচ্ছে ঠিক এইখান টায় (বুকের বা পাশে আঙুল ইশারা করে বলে)
যখন আমার না বলা শর্তেও ওই ছেলেটার সাথে পালিয়ে বিয়ে করতে গিয়েছিলি৷ ”

মেঘলা শোভনের দিকে ঘৃনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— “আমি ওকে ভালোবাসি৷ ”

শোভন তেরে এসে মেঘলার মুখ চেপে ধরে বলে,
— ” বুলি ফুটেছে মুখে তাই না?
কিসের ভালোবাসা হুম?
তুই আমার এই মুখ দিয়ে অন্য ছেলের কথা আনলেও শাস্তি কঠিনতম হবে৷ ”
বলেই ছিটকে ফেলে দরজা লক করে বাইরে চলে যায়৷

মেঘলা বসে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে আর এই দুই দিনের কথা মনে পরতেই ডুকরে কেঁদে উঠছে৷

ফ্ল্যাশব্যাক,,,,,,,,,,,

চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে তাও কাউকে ডাকতে পারছে না,
হাত দিয়ে টপ টপ করে রক্ত পরছে৷

ধারালো জিনিসটা ফেলে ব্যাক্তিটি মেঘলা কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলে,
— “সরি হুর পরি,
ওভাবে ছেলেটাকে না জড়িয়ে ধরলে তোমাকে এতোটা শাস্তি পেতে হতো না৷
দোষটা তোমারই ছিলো,
তোমাকে ভালোবাসার শাস্তি মৃত্যুই সে নিজ থেকে মরতে গেছে,
কিন্তু তুমি তাকে বাঁচিয়েছো আপাদত তোমায় শাস্তি টা দিলাম৷ ওই ছেলেকে তো আমি ছাড়বো না,
তোমাকে ভালোবাসার শাসন করার অধিকার শুধু আমার৷
ছাড়বো না ওকে আমি ছাড়বো না৷ ”

মেঘলা ধস্তা ধস্তি করে ছারিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
— “আপনি কারো কিছু করতে পারবেন না৷ ”

ব্যাক্তিটি কিছু না বলে মেঘলার ঘাড়ে ঠোঁট ছুইয়ে বেরিয়ে যায়৷
হাতের দিকে তাকাতে পারছে না মেঘলা, পুরো খারাপ অবস্থা পোড়া আর কাটার কারনে হাতের তালুটা কেমন থেতলে গেছে৷
হাত বেয়ে টপ টপ করে রক্ত পরছে শরীর টা নিশক্তি লাগছে, তাও কাপা কাপা পায়ে হেটে নিচে আসে৷
কলেজ থেকে বেরিয়ে দেখে শোভন গাড়ি থেকে নামছে৷
শোভন মেঘলাকে এমন দেখে এগিয়ে এসে উত্তেজিত সরে বলে,
— “কি হয়েছে পাখি?
হাতের এমন অবস্থা কেন?”

মেঘলা শোভন কে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে, শোভন মেঘলাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে আলতো হাতে বুকে জড়িয়ে বলে,
— “কি হয়েছে পাখি বল? কাঁদছিস কেন?”

মেঘলা ফুপিয়ে কেঁদে বলে,
— ” লোকটা ভালো না ভাইয়া!
একটুও ভালো না, ও মেরে দেবে সাজ্জাদ কে৷ ”

— “সাজ্জাদ?
কে সাজ্জাদ?”

মেঘলা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাটা বলেই ফেললো,
— “ভাইয়া আমি সাজ্জাদ কে বিয়ে করতে চাই৷ ”

কথাটা বলার সাথে সাথেই যেন হাত টা আলগা হয়ে যায়,
মেঘলা আবার বলে,
— “আমি জানি তুমি আমার কথা রাখবে৷
হ্যাঁ আমি সাজ্জাদ কে বিয়ে করতে চাই নয়তো যে ও মেরে দিবে সাজ্জাদ কে,
শোভন ভাইয়া প্লিজ আমার কথাটা রাখো৷ ”

শোভন কিছু উত্তর না দিয়ে মুখ গম্ভীর করে গাড়ি থেকে নেমে পাশের ফার্মেসি থেকে স্যাভলন আর ব্যান্ডেজ এনে চুপ চাপ হাতটা ওয়াশ করে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে৷
শোভনের এমন গম্ভীরতা যেন মেঘলা কিছুই বুঝতে পারছে না৷

মেঘলা আবার বলে,
— “ভাইয়া ও আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমিও ওকে ভালোবাসি ,,,,,৷”

মেঘলা আর কিছু বলতে পারলো না স্ব-জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো শোভন,
আচমকা এমন হওয়ায় মেঘলা গালে হাত দিয়ে শোভনের দিকে ঘুরে তাকায়৷ চোখ দিয়ে যেমন অগ্নিকান্ড হচ্ছে এমন লাল হয়ে আছে৷
আর রাগে ফুসছে৷
সামনে এসে মুখ চেপে ধরে বলে,
— ” বলে ছিলাম এই মুখে অন্য কোনো ছেলের নাম বললে কঠিনতম শাস্তি হবে?
তবে আবার কেন ওই সাজ্জাদের নাম নিলে?”

মেঘলা বিস্ফরিত চোখে শোভনের দিকে তাকায়৷
আজ শোভনের চোখে আগের মত মায়া দেখতে পারছে না যা দেখতে পারছে শুধুই হিংস্রতা৷
এই শোভন মেঘলার অচেনা৷
তাহলে শোভনই নিজের আপন চাচাতো ভাই এর খুন করেছে?
আজ কলেজের ওই রুমটায় শোভনই ছিলো?
কাল বাগানেও শোভনই ছিল?

এতোসব প্রশ্ন মেঘলার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর চোখ দিয়ে টপ টপ করে নোনা জল বেয়ে পরছে৷
শোভন মেঘলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে গালে থাপ্পড়ের যায়গায় হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে,
— “হুর পরি, তুমি আমাতেই সীমাবদ্ধ!!
তুমি শুধু আমার তোমাকে ভালোবাসার, আদর করার শাসন করার, ছোয়ার অধিকার শুধু আমার৷
ভালোবাসলে আমাকেই ভালোবাসতে হবে তোমার৷
তোমাকে ছুলে কেন তাকালেও তার অবস্থা,,,,,

একটু থেমে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
— ” আকাশের মতো হবে৷ ”
বলেই জোরে জোরে হাসতে থাকে,

মেঘলা কাপা কাপা গলায় বলে,
— “তুমি আকাশ ভাইয়া কে খুন করেছো?
কেন? ”

— ” ও তোমায়ে বাজে ভাবে ছুয়েছে তা আমি দেখেছি৷
সেদিন রাতে ধস্তাধস্তি করেছে, বললাম না তোমাকে ছোয়ার অধিকার শুধু আমার৷ ”

মেঘলা ঘৃন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলে,
— “তুমি আর নিজের মধ্যে নেই,
তুমি নর পিচাশ হয়ে গেছো আমি তোমার কাছে থাকবো না৷ ”

শোভন রেগে হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে মুখ চেপে ধরে বলে,
— “বেশি কথা বললে ঠ্যাং ভেঙে খুরো করে সারা জীবন বসিয়ে রাখবো৷ ”
বলে মুখের উপর কিছু একটা স্প্রে করে আর মেঘলা শোভনের বুকে ঢলে পরে শোভন বাকা হেসে এক হাতে মেঘলাকে বুকে জড়িয়ে আরেক হাতে ড্রাইভিং করে কোথাও একটা যায়৷

রাত আটটা,,,,,,,
বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফির ধোয়া উঠা মগে চুমুক দিচ্ছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে৷
হঠাৎ কিছু পরার শব্দ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকায় যা ভেবেছিলো ঠিকি তাই হয়েছে মেঘলার মাত্রই জ্ঞান ফিরলো অচেনা কোথাও আছে দেখে ছোটা ছোটি করছে বের হওয়ার জন্য কিন্তু দরজার লকটাই খুলছে না৷
শোভন বারান্দায় দাঁড়িয়ে এতোক্ষন সব দেখছিলো,
ঘরের জিনিস পত্র ছুরছে তাই এবার মেঘলার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,
— “এভাবি ছোটাছুটি করছিস কেন?”

মেঘলা রেগে চেচিয়ে বলে,
— “আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো কেন?
আমি বাড়ি যাবো সাজ্জাদের কাছে যাবো৷ ”

সাজ্জাদের কথা শুনেই শোভনের মাথায় রক্ত চরে যায়,
রেগে জোরে মেঘলার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,,

চলবে কি??????🙄🙄

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০২

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ২

এ কেমন নেশায় জড়ালে আমায়? আমি তো এক মূহুর্তে ও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না ইচ্ছে করছে বন্দী পাখির মতো তোমাকেও আমার নিজের খাচায় বন্দী করে রাখি৷
ভালোবাসি হুর পরি খুব বেশি ভালোবাসি,,,,,,,৷ ”

থর থর করে কাপছে স্নিগ্ধা ব্যাক্তিটির হাত একটু আলগা হতেই স্নিগ্ধা স্ব-জোরে “শোভন ভাইয়া ” বলে চেচিয়ে উঠে সামনে থাকা ব্যাক্তিটি আর দাঁড়ায় না দৌড়ে কোথাও একটা চলে যায়৷
স্নিগ্ধা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না, পা জোরা কাপছে পরে যেতে নিলেই কেউ এসে ধরে ফেলে৷ মোবাইল এর ফ্লাস লাইটের আলোয় শোভন কে দেখে যেন স্নিগ্ধা প্রান ফিরে পায়৷
শোভন কিছুটা উত্তেজিত হয়ে স্নিগ্ধার গাল ঝাকিয়ে বলে,
— “পাখি, কি হয়েছে তোর?
এমন করছিস কেন?
বল কি হয়েছে?”

হঠাৎ করে আবার সব আলো চলে আসে৷
শোভন স্নিগ্ধা কে উঠিয়ে স্নিগ্ধার ঘরে এনে শুয়াই, ভয়ে কাতর হয়ে শোভনের শার্ট খামছে বুকে মুখ গুজে আছে৷ শোভন সরে যেতে চাইলেই আরো জোরে খামছে ধরছে৷
শোভন মিহি কন্ঠে বলে,
— ” স্নিগ্ধা পাখি!!
আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি৷ ”

স্নিগ্ধা আরো জোরে ধরে বলে,
— “না তুমি কোথাও যাবে না, ও আবার আসবে৷
ও ভালো না খুব খারাপ৷ ”

— “কে আসবে?”

স্নিগ্ধা উত্তেজিত হয়ে আরো জড়িয়ে নেয় শোভন কে৷
উষ্ক খুষ্ক এলোমেলো চুল গুলো সামনে এসে আছে স্নিগ্ধার, ভয়ার্ত চেহারায় যেন সৌন্দর্যটা আরো বেশি লাগছে৷
এমনিতে স্নিগ্ধা অনেক মায়াবি ডাগর ডাগর ঘন পাপড়ি ওয়ালা হরিণি চোখ, আর গোলাপের পাপড়ির মতো মিহি ঠোঁট৷
ঠোঁটের নিচে লাল একটা তিল খুব কাছে না গেলে তিলটা কেউ দেখতে পায় না৷
বাকা দাঁতের কারনে হাসিটা আরো বেশি মায়াবি লাগে কিন্তু অতোটা ফর্সা নয় তাও যেন অপ্সরি দেখতে লাগে৷
এখন ভয়ার্ত চেহারায় ও সৌন্দর্যটা বেশ লাগছে৷
কান্না করার কারনে চোখ অনেকটা ফুলে আছে গাল আর নাকটা লাল হয়ে আছে৷
শোভন কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখটা বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অন্য দিকে ঘুরে তাকায়৷

তিন দিন যাবত স্নিগ্ধা না খাওয়া এখন ওকে খাওয়াতে হবে কিন্তু এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে উঠতেই পারছে না৷
এর মধ্যেই রাজি বেগম আর রেহানা বেগম এসে হাজির৷
রেহানা বেগম ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখে রক্ত চরে বসে মাথায় রাগ দেখিয়ে বলে,
— “শোভন এখানে কি করছো?
আর এই মেয়েটা জড়িয়ে আছে কেন?”
— “মা,
স্নিগ্ধা কিছু দেখে ভয় পেয়েছে তাই এমন করছে৷ ”

রাজি ঠেস মেরে বলে,
— “দেখেছো ভাবি এই মেয়ে কতটা নিচ?
আমাদের বড় ছেলেটাকে এখন হাত করতে চাইছে, কেন যে এই মেয়েকে এই বাড়িতে রেখেছো এটাই বুঝতে পারছি না৷ ”

শোভন রেগে বলে,
— “কাকি মনি ফের তুমি একি কথা বলছো?
ও ছোট ফুপি মনির মেয়ে তা ভুলে গেছো? আর ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে যে এখনো অপয়া দোষ এইসব মানে সে কতটা মুর্খ হতে পারে বলো তো?”

রাজি রাগে ফুসতে ফুসতে আবার বেরিয়ে যায়,
রেহানা বেগম স্নিগ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে নিচে চলে যায়৷
শোভন কাজের লোক দিয়ে খাবার আনিয়ে খাইয়ে এখানেই শুয়ে থাকে৷


সকাল হতেই হুরমুরিয়ে উঠে স্নিগ্ধা, সারা রাত শোভনের বুকেই ছিলো ভয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে৷ কিছু একটা ভেবে শরীর এর দিকে তাকায়, শরীরের জামাটা ঠিক নেই তারাতারি পায়ের নিচ থেকে উরনাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শোভনের দিকে তাকায়৷
শোভন এখনো ঘুমে বিভর চেহারাটা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে রাতে ঘুমাইনি তাই৷
কিছুক্ষন তাকিয়ে মুচকি হেসে কাধ ঝাকিয়ে বলে,
— “শোভন ভাইয়া উঠো৷ ”

দু-বার ডাকতে শোভন পিট পিট করে তাকায়, উঠেই মেঘলা কে দেখে মুচকি হেসে বলে,
— “গুড মর্নিং পাখি৷ ”

— “মর্নিং!!
তুমি রাতে ঘুমাও নি?
সরি আমার জন্য তোমার সারা রাত এখানে থাকতে হয়েছে, ইসসস বাড়ির সবাই কি ভাবছে হয়তো৷
ছোট মামি এখন নিচে গেলেই কথা শোনাবে৷ ”

— “তুই ভাবিস না তা আমি দেখে নিবো৷ অনেক দিন হলো কলেজ যাওয়া হয় না যাবি তো?
শরীর খারাপ থাকলে বিশ্রাম কর৷ ”

স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলে,
— “না ঠিক আছি আমি,
রেডি হয়ে নিচে আসছি তুমি যাও৷ ”

শোভন নেমে দরজা অব্দি গিয়ে আবার ফিরে আসে,
স্নিগ্ধার সামনে বসে সফট ভাবে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে মুচকি হেসে চলে যায়৷
শোভনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে স্নিগ্ধা৷

___________________________

সাজ্জাদ কলেজের বড় মাঠটায় কলেজ ভর্তি স্টুডেন্ট এর সামনে ১৪৩ টা গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে স্নিগ্ধা কে৷
কলেজের সবাই হা করে তাকিয়ে দেখছে,
স্নিগ্ধার যেন এইসব একদম বিরক্ত লাগছে৷ এই ছেলেটা কে স্নিগ্ধা কখনোই পছন্দ করে না৷
অথচ এই ছেলেই দুই বছর ধরে ওর পিছনে ঘুর ঘুর করে৷
সাজ্জাদ হাটু গেরে হাতে এতো গুলো গোলাপ নিয়ে বলে,
— “দু-দুটো বছর ধরে তোমার পিছন পিছন ঘুরছি এতো এতো কথা বলে বোঝাই তাও কি বুঝো না সত্যি তোমায় কতটা ভালোবাসি?
কেন বুঝো না?
কবে বুঝবে মরে গেলে?
তবে আজ তাই হবে তুমি আমার ভালোবাসা গ্রহন না করলে আমি আজ আত্মত্যাগ করবো৷ হ্যাঁ, আত্মহত্যা করবো”

স্নিগ্ধা বিরক্ত নিয়ে বলে,
— “শুনো সাজ্জাদ ভাইয়া আত্মত্যাগ করা মুখের কথা না৷
আর এসব চিন্তা যদি মাথায় এনেও থাকো ঝেড়ে ফেলে দাও আমি তোমায় মানতে পারবো না৷
কলেজে তো আরো কতো মেয়ে আছে তাদের থেকে কাউক ভালোবাসো তারা তোমার ভালোবাসা গ্রহন করবে৷
শুধু শুধু আমাকে বলে সময় নষ্ট করছো৷ ”
বলেই উল্টো পায়ে ক্লাসের দিকে হাটা দেয় স্নিগ্ধা সাথে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড প্রিয়া৷

সাজ্জাদ চেচিয়ে বলে,
— “তবে তাই হোক আমি আমার কথাই রাখলাম আজ কলেজের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আমার ভালোবাসার জন্য আত্মত্যাগ করবো৷ ”

বলে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে যেতে লাগে৷
কলেজের সবাই উত্তেজিত হয়ে একবার স্নিগ্ধাকে ডাকছে আরেকবার সাজ্জাদকে৷ প্রিন্সিপাল সহ সব স্যার সাজ্জাদ কে ডাকছে৷
প্রিয়া বলে,
— “স্নিগ্ধা প্লিজ এতোটা নির্ধয় হোস না ছেলেটা উল্টো পালটা কিছু করলে কি করবি?
নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি?
তা ছাড়া সাজ্জাদ ভাইয়া খুব ভালো এটা সবাই জানে দেখতে সুদর্শন তাহলে কিসের জন্য তুই এমন করছিস?”

স্নিগ্ধা অসহায় ভাবে একবার ছাদের দিকে একবার প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে বলে,
— “কিন্তু?”

প্রিয়া স্নিগ্ধাকে থামিয়ে বলে,

— “ফ্যামিলির জন্য?
তুই তো বলিস শোভন ভাইয়াকে তুই যা বলিস তাই সে করে তাহলে এটা কি মানবে না?
তুই বললে নিশ্চয়ই শুনবে৷ ”

স্নিগ্ধা কিছু একটা ভেবে একবার প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে ছাদের দিকে ছুটে যায়৷
ছাদে এসে দেখে সাজ্জাদ এখনি লাফ দিতে যাবে৷
স্নিগ্ধা ঝাপটা দিয়ে ধরে গালে থাপ্পড় বসিয়ে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,
— “কিছু দিন সময় দেওয়া যাবে আমায়?
এতো সহজে তো আর ভালোবাসা যায় না বলো?
কিন্তু সত্যি আমি তোমায় ভালো বাসতে চাই৷ ”
সাজ্জাদ মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে৷

ছাদে উঠার সময় সাজ্জাদ পা হাত অনেকটা ছিলে গেছে তাই ওর বন্ধুরা ধরাধরি করে নিচে নিয়ে যায়৷
প্রিয়ার ফোন আসায় তারাহুরো করে নিচে নেমে যায় আগেই৷
৭ম তলায় নতুন মেরামতের কাজ চলছে শেষের রুম গুলোতে মিস্ত্রিরা ছাড়া পুরো খালি৷
স্নিগ্ধা মাঝ বরাবর রুম গুলোর সামনে আসতেই আচমকা হাত ধরে কেউ রুমের ভিতরে নিয়ে যায়৷
রুমটা পুরো অন্ধকার দরজার ফাক দিয়ে আবছা আলো এসে পরছে তাও ব্যাক্তিটি কে দেখতে পারছে না৷
সামনে থাকা ব্যাক্তিটি যে রাগে ফুসছে তা ভালোই বুঝতে পারছে৷
ব্যাক্তিটি রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
— “সাহস কি করে হয় ওই ছেলে কে ছোয়ার? ”
বলেই হাতে থাকা সিগারেটটা হাতে চেপে ধরে৷
জলজলে সিগারেটটার আগুনে ঝলসে যায় স্নিগ্ধার হাতের তালু ব্যাথায় কাতরাচ্ছে তাও চেচাতে পারছে না৷ মুখ চেপে ধরে আছে৷
স্নিগ্ধা ধস্তাধস্তি করে ছুটে আসতে নিলেই সেই ব্যাক্তিটি হেচকা টান মেরে হাতের পোড়া জায়গায় ধারালো কিছু দিয়ে চেপে ধরে৷
চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে তাও কাউকে ডাকতে পারছে না৷ হাত দিয়ে টপ টপ করে রক্ত পরছে৷

চলবে,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০১

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#ক্যাটাগরিঃ সাইকো থ্রিলিক
#Tafsia_Meghla
#সূচনা পর্ব

ভাইয়ের রক্ত মাখা লাশের সামনে বসে আছে স্নিগ্ধা, পাশেই চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে মাথা নিচু করে বসে আছে শোভন৷ শোভনের পাশেই নিচে বসে কান্না করছে রেহানা বেগম (শোভনের মা)!!!
চারোপাশে আত্মীয় স্বজনের ভীর বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করছে৷
লাশটা বিচ্ছিরী হয়ে আছে, মনে হচ্ছে কেও খুব খারাপ ভাবে মেরেছে আকাশকে, যার কারনে এমন ভয়াবহ অবস্থা৷
কিন্তু পুলিশ বলেছে এটা এক্সিডেন্ট লাশটা একটা খাদে পেয়েছে৷
স্নিগ্ধার আপন ভাই না হলেও আকাশ ভালোবাসতো স্নিগ্ধাকে৷
ভালোবাসা বললে হয়তো ভুল হবে মুখে ভালোবাসি বলতো কিন্তু স্নিগ্ধা ছিলো আকাশের মোহো৷ মোহো না হলে কাল রাতে ওভাবে স্নিগ্ধা কে একা পেয়ে ধস্তাধস্তি করতো না, কিন্তু স্নিগ্ধা সবসময় নিজের ভাইয়ের মতই দেখতো আকাশ কে৷ অনেকবার স্নিগ্ধা কে প্রেম নিবেদন করেছে স্নিগ্ধা ” না ” করে দিয়েছে প্রতিবার৷
স্নিগ্ধা আকাশেকে বরাবরই অপছন্দ করে কিন্তু এভাবে মৃত্যুটা স্নিগ্ধা ও মানতে পারছে না৷ স্নিগ্ধা ভাবনায় মগ্ন,
—“আকাশের এমন কি করে হলো? এক্সিডেন্ট? সত্যি কি এক্সিডেন্ট এটা?
নাকি খুন? কিন্তু খুন করবে কে? বডিটা কে দেখে পুরোপুরি এক্সিডেন্ট ও বলা যাচ্ছে না খুন ও বলা যাচ্ছে না৷
তাও এমন বিচ্ছিরী ভাবে, হাতের একটা আঙ্গুলও নেই চোখ গুলো খুটিয়ে উঠিয়েছে ঠোঁট গুলো নেই বললেই চলে চেহারা ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে শরীরটাও কোনো দিক ঠিক নেই
ভালো সুস্থ মানুষ হাসি মুখে বের হলো সারা রাত পর সকালে লাশ হয়ে ফিরে এলো৷ ”

স্নিগ্ধা আর এভাবে বসে থাকতে পারছে না লাশটা দেখলেই শরীর শিউরে উঠছে হঠাৎ করে গা ছেড়ে নিচে ঢলে পরে৷
শোভন উত্তেজিত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে স্নিগ্ধার গাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে,
— ” এই স্নিগ্ধা, কি হলো তোর? স্নিগ্ধা?”
স্নিগ্ধার কোনো সারা না পেয়ে উঠিয়ে রুমে নিয়ে আসে৷

চোখ খুলেই স্নিগ্ধা নিজেকে নিজের ঘরে আবিষ্কার করে আশে পাশে কেউ নেই, আশেপাশেও পিনপতন নীরবতা, পরক্ষণেই আকাশের ভয়াবহ লাশের কথা মনে পরতে ভয়ে কুকড়ে উঠে কাপাকাপা পায়ে বিছানা ছেরে উঠে বাইরে আসে৷
খালি বাড়ি দেখে স্নিগ্ধার আরো ভয় করছে৷
— “কোথায় সবাই? আকাশ ভাইয়ার লাশ দাফন কাফন করতে গেলে বাড়ির ছেলেরা যাবে কিন্তু বাকি সবাই কোথায়?”

স্নিগ্ধা এবার কিছুটা সাহস জুগিয়ে নিচে যায় গিয়ে কাউকেই দেখতে পায় না , আবার উপরে এসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াবে তখনি ছাদে কিছু পরার আওয়াজ পেয়ে আতকে উঠে৷
ভয়ে ভয়ে এক পা দুপা করে সিরি বেয়ে চিলে কোঠার দিকে গিয়ে দেখে ছাদের দরজা টা খোলা৷ স্নিগ্ধা ভেবেছে বাড়ির কোন কাজের লোক আছে তাই ছাদের ভিতরে আসে কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না পিছনে ফিরে ছাদ থেকে বের হবে তখনি রক্ত মাখা একটা কাগজ স্নিগ্ধার উপর এসে পরে৷

কাগজটা দেখে কাপা কাপা হাতে নিয়ে লেখাটি পরে আতকে উঠে৷ কাগজটিতে লেখা,
— ” হুর পরি!! নেশা তুমি আমার তিক্ত নেশা, যে নেশা মাদকের চেয়ো প্রখোপ তুমি আমার সেরকম নেশা পৃথিবীর সব নেশা থেকে মুক্তির পথ আছে তোমার নেশা থেকে মুক্তির পথ নেই আমার৷ আমি আমার #তিক্ত_ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আপন করবো তুমি শুধু আমার!! তোমার শরীরে হাত কেন তোমার দিকে তাকালেও এর থেকে ভয়াবহ অবস্থা করবো সে যেই হোক না কেন৷ ”

__ তোমার পাগল প্রেমিক❤️

রক্ত মাখা কাগজ টা ছুরে ফেলে জোরে “শোভন ভাইয়া” বলে ডেকে ফুপিয়ে কেদে উঠে তখনই বাগান থেকে মালি চাচা শুনতে পেয়ে দৌড়ে এসে বলে,
— “কি হয়েছে ছোট মা?”

স্নিগ্ধা ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বলে,
— “শ শোভন ভাইয়া কোথায়?”

মালি চাচা বলে,
— “বড় বাবায় তো সবাইরে নিয়া আস্রমে গেছে আশ্রমের পাশেই ছোট বাবারে দাফন করা হইছে আজ ছোট বাবার মৃত্যুর তিনদিন হইলো তাই সবাই ওইখানে আশ্রমের বাচ্চাদের খাবার আর পোষাক বিতরন করতে গেছে৷ ”

মালি চাচার কথা শুনে স্নিগ্ধা অবাক, তিন দিন অচেতন ছিলো?
স্নিগ্ধা উঠে চোখ মুখ মুছে কাগজ টা নিয়ে রুমের দিকে হাটা দেয়, সন্ধ্যা গরিয়ে এলো বাড়ির সবাই এখনো আসেনি৷ মন মরা হয়ে বসে আছে স্নিগ্ধা৷
— “কে করলো এমনটা? কে এই পাগল প্রেমিক? কি চাইছে? আকাশের ওই ভুলের জন্য এতো বড় স্বাস্থি?
যে মানুষ কে এমন করে খুন করতে পারে সে আর যাই হোক কাওকে ভালোবাসতে যানে না সে তো নর পিচাশ৷ ”

হঠাৎ দরজার আওয়াজে ধ্যান ভাঙে স্নিগ্ধার দরজায় থাকা ব্যাক্তি টিকে দেখে ঝাপটে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কেদে উঠে৷ শোভন স্নিগ্ধাকে সামনে ঘুরিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলে,
— “কি হয়েছে স্নিগ্ধা? এভাবে কাদছিস কেন?”

স্নিগ্ধা ফুপিয়ে কেদে বলে,
— “শোভন ভাইয়া আকাশ ভাইয়ার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ি, আমায় শাস্তি দাও৷ ”

শোভন অবাক হয়ে বলে,
— “কি বলছিস?”

স্নিগ্ধা রক্ত মাখা চিরকুট টা শোভনের হাতে দেয় শোভন দেখে চোয়াল শক্ত করে বলে,
— “এর জন্য তুই নিজেকে কেন শাস্তি দিতে বলছিস কেন? তোর কোনো দোষ নেই আর যারা এসব করেছে তারা ঠিক শাস্তি পাবে কিন্তু আপাদত আমাদের কাছে কোনো প্রমান নেই প্রমানের ভিত্তিতেই পুলিশ ইনবেষ্টিগেশন শুরু করে, প্রমান আগে জোগার করতে হবে তুই চিন্তা করিস না পাখি আমি আছি তো৷ ”

শোভনের কথায় অনেকটা স্বস্তি পেলো এখনো শোভন কে জরিয়ে আছে স্নিগ্ধা আপাদত এই যায়গাটা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ লাগছে৷
স্নিগ্ধা ছোট বেলা থেকেই মামার বাড়িতেই বড় হয়েছে ছয় বছর থাকা কালিন আকাশের বাবা-মা আর স্নিগ্ধার মা এক্সিডেন্ট এ মারা যায় সেই থেকে স্নিগ্ধা এখানেই থাকে স্নিগ্ধার বাবা কাজের জন্য দেশের বাইরে থাকে মাসে একবার ও মেয়ের সাথে কথা বলার সময় পায় না৷
আর এই বাড়িতে সবার থেকে বেশি কেয়ারিং পার্সন যদি কেও হয় তাহলে শোভনই এই বুকে মাথা রেখে হাজারো বছর পার করে দিতে পারবে স্নিগ্ধা৷

রাত ঘনিয়ে এসেছে বাড়ির সবাই মাত্রই ফিরলো স্নিগ্ধা নিচে এসে দেখে সবাই বসে আছে৷ স্নিগ্ধা নিচে আসতেই স্নিগ্ধার ছোট মামি রাজি ঠেস মেরে বলে,
— “হুস ফিরেছে নবাব জাদির? আচ্ছা স্নিগ্ধা তুই কি সত্যি বেহুস ছিলি নাকি বাড়িতে কাজ করতে হবে তাই ভান করে সুয়ে ছিলি?”

শোভন পানি খাচ্ছিলো পানির গ্লাস টা জোরে টেবিলের উপর রেখে বলে,
— “ছোট কাকি মনি তোমার কি ওর সাথে এভাবে কথা না বললে পেটের ভাত হজম হয় না?”

শোভনের এমন রেগে যাওয়ায় রাজি জেন আরো তেলে বেগুনে জলে যাচ্ছে রাজি ঠেস মেরে বলে,
— “বুঝি না বাবা এই অপয়া মেয়ে কে কিছু বললে তোর এতো লাগে কিসে, জন্মের পর থেকে তো একের পর এক অনর্থ হয়েই যাচ্ছে এই মেয়ের বাপ তো এই মেয়ের মুখটা ঠিক মতো দেখেছে কিনা এটাই সন্দেহ জন্মের পর বাপ বাহানা দিয়ে দেশের বাইরে চলে যায়, এর ছয় বছর পর মা টা মারা যায় কে যানে এই মেয়ের দোষেই বোধহয় আকাশের এমন এক্সিডেন্ট হয়েছে৷ ”

শোভন রেগে গিয়ে বলে,
— “কাকি মনি আকাশ খু,,,৷ ”

শোভনের মা রেহানা বুঝতে পেরেছে ছেলে ঢের রেগে গেছে রাজি কে না থামালে তিন নাম্বার বিশ্ব যুদ্ধ হয়ে যাবে সবারই শোভনের রাগ সম্পর্কে ধারনা আছে তাই নিজেই শোভনকে থামিয়ে রাজি কে উদ্দেশ্য করে বলে,
— ” আহ রাজি, এখন অশান্তি না করলে হয় না? দেখছো কারো মন ভালো না ছেলেটার মৃত্যুর এক সপ্তাহ ও হলো না শুরু করে দিলে অশান্তি৷ ”
রাজি রাগ দেখিয়ে ফুসতে ফুসতে উপরে চলে যায়৷

শোভন ও উপরে চলে যায় একে একে সবাই উপরে চলে যায় স্নিগ্ধা ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বাগানের দিকে চলে যায়৷
বাগানের বেঞ্চিটায় বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে, উপর থেকে শোভনের গিটারের টুং টাং শব্দ হচ্ছে৷ এই গিটারের শব্দ প্রতিবারই স্নিগ্ধার মন ভালো করার কারন হয়৷ হঠাৎ করে বাড়ির সব লাইট নিভে যায়৷
ঘুটঘুটে অন্ধকার চারো পাশ কিছুই দেখতে পারছে না স্নিগ্ধার অজানা ভয় কাজ করছে কাপা কাপা পায়ে একপা দুপা এগোতে হঠাৎ কেউ মুখ চেপে আরেক হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে স্নিগ্ধার গলায় মুখ ডুবায়৷
স্নিগ্ধা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে তাও ব্যাক্তিটি ছারছে না জোরে স্নিগ্ধার গলায় কামড় বসিয়ে দিয়ে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে,
— “হুরর পরি,,,,,,
এ কেমন নেশায় জরালে আমায়? আমি তো এক মূহুর্তে ও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না ইচ্ছে করছে বন্দী পাখির মতো তোমাকেও আমার নিজের খাচায় বন্দী করে রাখি৷
ভালোবাসি হুর পরি খুব বেশি ভালোবাসি,,,,,,,৷ ”

চলবে,,,,,,,

তোকে খুব ভালোবাসি পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0

#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_৭(শেষ)
#জাফিরাহ_জারিন

আজকে রিদি-শুভ আর নিধি-নিরবের গায়ে হলুদ।সকাল থেকেই পুরো বাড়ি ভরা লোকজন।কিন্তু কেউ বসে নেই।সবাই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত।রিদি আর কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠেছে। বিয়ে উপলক্ষে অবশ্য রিদি আর নিধির খুব যত্ন করা হচ্ছে।মাত্র দুই একটা কাজ বাদে তাদের বেশিরভাগ কাজই অন্যরা করে দিচ্ছে।ঠিক তেমনই সকালের খাবারটাও তাদের ছোট ফুপ্পি খাইয়ে দিয়েছে।রিদি আর নিধিকে এখন রেডি করা হচ্ছে গায়ে হলুদের জন্য।রিদি ও নিধি দুইজনকেই কাচা হলুদ রঙের শাড়ি পরানো হয়েছে।শাড়িটা নিরব আর শুভ দুইজন পছন্দ করে কিনেছে।হলুদ শাড়ি,ফুলের গহনা আর মুখে হালকা মেকাপ। এতেই তাদের দুইজনকে অপরুপ সুন্দরী লাগছে।এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হলো গায়ে হলুদের জন্য।তাড়াতাড়ি গায়ে হলুদ শেষ করতে হবে।কারণ সন্ধ্যার সময় আবার মেহেন্দি অনুষ্ঠান আছে।হলুদের আয়োজন আলাদাভাবে করা হয়েছে।রিদি আর নিধির হলুদ এক রিসোর্ট এ হবে।আর নিরব আর শুভর হলুদ আরেক রিসোর্ট এ।কিন্তু মেহেন্দি এর ফাংশন একসাথে একই রিসোর্ট এ আয়োজন করা হয়েছে।রিদি আর নিধির গায়ে হলুদ শেষ হওয়ার পর তার দুইজন নিজেদের রুমে গেল।রিদির রুম ছোট বাচ্চাদের দিয়ে ভরা।ছোটরা সবাই তার রুমে বসে আছে।রিদি ছোটদের বলে বাহিরে পাঠালো।তার এখন একটু একা থাকতে ইচ্ছে করছে।কালকে থেকে সব মানুষের ভিড়ে সে একটু শান্তিতে একা থাকার সুযোগও পায় নি।তাই সে এখন একটু একা থাকতে চাই।কিছুক্ষণ পর আবার মেহেন্দি এর জন্য রেডি হতে হবে।রিদি বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার ফোনে মেসেজ আসলো।রিদি ফোন হাতে নিয়ে দেখে শুভর মেসেজ।শুভ তাকে গায়ে হলুদের ছবি পাঠাতে বলেছে।রিদি তার গায়ে হলুদের সময় তোলা কিছু ছবি শুভকে পাঠালো এবং শুভর কাছে তার গায়ে হলুদের ছবি চাইলো।শুভ কিছুক্ষণ পর নিজের ছবি দিল।শুভর ছবি দেখে রিদি হেসে ফেলল।কারণ শুভকে তার বন্ধুরা হলুদ মাখিয়ে ভুত বানিয়ে দিয়েছে।শুভকে কোনোমতেই চেনা যাচ্ছে না।
______________________________________
নিধি রুমে এসে দেখে যে তার রুম ফাকা।তা দেখে নিধি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল।কালকে থেকে একমুহুর্তের জন্যেও সে একা থাকতে পারে নি।এখন সে একটু একা থাকবে।যাতে কেউ আবার তার রুমে ঢুকে পরে তার আগেই নিধি তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমের দরজা আটকে দিল।তারপরেই সে এসে নিজের মোবাইল হাতে নিল।মোবাইল হাতে নিয়ে নিধি ভাবতে লাগল যে সে কি নিরবকে ফোন দেবে নাকি না।নিধি ভাবল যে নিরব হয়ত এখন গায়ে হলুদ নিয়ে ব্যস্ত আছে।তাই নিধি ফোন না দিয়ে মোবাইলটা রেখে দিল।রেখে দিতেই মোবাইলটা বেজে উঠল।নিধি দেখল নিরব ফোন দিয়েছে।নিধি মুচকি হেসে ফোন ধরল।
নিরব: কি খবর তোমার?? হলুদ শেষ??
নিধি: হুম।আপনাদের ওখানে কি খবর??
নিরব: আর খবর।একেকটা বজ্জাতের লিডার।সব মিলে আমাকে হলুদ দিয়ে একেবারে ভুত বানিয়ে ফেলেছে।
নিরবের কথা শুনে নিধি হেসে ফেলল।
নিরব:তুমি হাসছো?? হেসে নাও।আজকে সন্ধ্যায় তো দেখা হবেই।তখন সব সুদে আসলে উসুল করে নেব।
নিরবের এই কথা শুনে নিধি চুপ মেরে গেল।কারণ সে জানে যে নিরব যা বলবে তা ঠিকই করে ছাড়বে।আর নিরব সে জানে যে নিধি এখন স্ট্যাচু অব লিবার্টি এর মত হয়ে থাকবে।তাই সে কথা না বাড়িয়ে ফোন কেটে দিল।
______________________________________
ওদের চারজনের মেহেন্দি ফাংশন করা হয়েছে বড় একটা রিসোর্ট এ।এখানে রিদি,নিধি,শুভ আর নিরবের পরিবারের সবাই,বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়রা সবাই আছে।রিদি পরেছে গাড় গোলাপি আর নীলের সংমিশ্রণের একটা লেহেঙ্গা। চুলগুলো কার্ল করে ছেড়ে রাখা।আর মুখে হালকা মেকাপ।তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।শুভ রিদির সাথে ম্যাচ করে নীল কালার পাঞ্জাবি পড়েছে। নিধি লাল আর সবুজের মিশ্রিত একটি লেহেঙ্গা পড়েছে।নিধির চুল খোপা করে তাতে গাজরা পরানো।মুখে হালকা মেকাপ।নিধিকেও সুন্দর লাগছে।নিরবও নিধির সাথে ম্যাচ করে সবুজ কালার পাঞ্জাবি পরেছে।মেহেন্দির ফাংশন শুরু হতেই তাদের চারজনকে নির্ধারিত জায়গায় বসিয়ে মেহেদি লাগানো শুরু করল।মেহেদি পরানো শেষ হতেই স্টেজে গান শুরু হলো।নিধি-রিদির ফ্রেন্ডরা তাদেরকে ঠেলে স্টেজের উপর পাঠিয়ে দিল।রিদি আর নিধিই বা কম কিসের।তারাও গানের তালে নাচতে শুরু করল।
🎶Bol chudiyan bol kangana
Hai mein ho gayi tera sajana(2)
Tere bin jiyo naiyo lagda
Mein to mar gaiya……
Leja leja soniya leja leja
Dil leja leja ho oooo…🎶
ছেলেরাও বা কম কিসের।শুভ আর নিরবও স্টেজে উঠে গাইতে শুরু করল।
🎶Hai mein mar jawa mar jawa tere bin
Ab to mere raatein kat ti taaren gin 🎶
রিদি আর নিধিও গেয়ে উঠল,
🎶Bas tujhko pukara kare
Meri bindiya ishara kare🎶
এবার সব ছেলেরা একসাথে গাইল,
🎶Lashkara lashkara….
Teri bindiya ka lashkara
Aise chamke jaise Chamke
Chand ke paas sitara🎶
রিদি শুভর কাছে আর নিধি নিরবের কাছে গিয়ে গাইতে লাগল,
🎶Meri payal vulaye tujhe
Jo ruthe manaye tujhe
O sajan ji O sajan ji…
Kuch socho kuch samjho mere baat ki🎶
এবার সবাই একসাথে গেয়ে উঠল,
🎶Bol chudiyan bol kangana
Hain mein ho gayi tera sajana
Tere bin jioy naiyo lagda
Main to mar gaiya….
Leja leja soniya leja leja
Dil leja leja ho oooo…….🎶
এভাবেই খুব সুন্দর মত তাদের মেহেন্দি অনুষ্ঠান শেষ হলো।মেহেন্দি এর শেষে নিধি ওয়াসরুমে যায় ফ্রেশ হতে।বের হয়ে দেখে যে নিরব সেখানে রয়েছে।আর ওয়াশরুমের মেইন গেট আটকানো।নিধি বুঝে যায় যে নিরব তার বলা কথা সত্যি করতে এসেছে।নিরব নিধির দিকে আগাতে থাকে আর নিধি পিছাতে থাকে।একসময় নিধির পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায় এবং নিরব তার হাত দুইপাশে দিয়ে নিধিকে আটকে দেয়।তারপর নিধির কানের কাছে গিয়ে বলে,
নিরব:খুব হাসছিলে না তখন।এখন কোথায় গেল সেই হাসি??
এই বলে নিরব নিধির কানে হালকা করে একটা কামড় দিয়ে ছেড়ে দেয় আর বলে,
নিরব:আপাতত ছেড়ে দিলাম।শাস্তিটা নাহয় বাসর রাতের জন্য তোলা রইল।
এই বলে নিরব নিধিকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে বেরিয়ে যায়।নিধিও সেখান থেকে চলে যায়।
বিয়ের দিন,
রিদি আর নিধি দুইজনই আজকে লাল রঙের লেহেঙ্গা পরেছে।মুখে ভারী মেকাপ।দুইজনকেই সুন্দর লাগছে।শুভ আর নিরব লাল কালার শেরওয়ানি পরেছে।তাদেরকেও কোনোদিক থেকে হিরোর থেকে কম লাগছে না।অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হলো।রিদি ও নিধি দুইজনই বিদায়ের সময় অনেক কান্না করেছে।শুভ আর নিরব কোনোমতে তাদেরকে সামলে গাড়িতে তুলেছে।
বাসর রাতে,
অন্যের বাসর ঘরে উঁকিঝুঁকি মারা খারাপ কাজ।আমি এইসব অনৈতিক কাজ করি না।তাই জানিও না যে ওরা বাসর রাতে কি করছে।সবাই নিজেদের মত করে ভেবে নেন।
এভাবেই সুখে থাকুক রিদি-শুভ আর নিধি-নিরব।সবাই তাদের জন্য দোয়া করবেন।
————-সমাপ্ত————————–

তোকে খুব ভালোবাসি পর্ব-০৬

0

#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_৬
#জাফিরাহ_জারিন

আজ একসপ্তাহ পর ভার্সিটিতে যাচ্ছে রিদি আর নিধি।এই একসপ্তাহ রিদি বাড়িতেই ছিল।নিধি আর রিদি সারাদিন প্রচুর মজা করেছে।রিদি আর নিধি গেট দিয়ে ঢুকছে ঠিক তখনই নিধিকে কেউ পিছের থেকে ডাক দেয়।রিদি আর নিধি দুজনেই পিছে ঘুরে দেখে নিরব দাঁড়িয়ে আছে।নিরবকে দেখে রিদি বাকা হেসে আড়চোখে নিধির দিকে তাকালো।রিদিকে এভাবে তাকাতে দেখে নিধি বলল,
নিধি: কি হইছে তোর??ত্যারা হয়ে গেছিস নাকি??এমন করে তাকাস কেন??
রিদি: তুমি জানো না কি হয়েছে??বাই দ্যা রাস্তা আমি গেলাম ক্লাস করতে।তোমার রোম্যান্স করা শেষ হইলে তুমিও আইসো।
এই বলে রিদি চলে গেল।আর নিধি বোকার মত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকল।রিদির কথা তার মাথার বারো হাত উপর দিয়ে গেছে।রিদি চলে যেতেই নিধিও সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য হাটা শুরু করল।তখনই নিরব পিছের থেকে ডাকল,
নিরব: দাঁড়াও মিস ধানিলঙ্কা।
নিরবের মুখে এই ডাক শুনে নিধি চট করে পিছনে ঘুরল।দেখল নিরব তার দিকে এগিয়ে আসছে।নিরব তার কাছে এগিয়ে আসতেই নিধি জিজ্ঞাসা করল,
নিধি:আপনি কি আমাকে বললেন??
নিধির প্রশ্ন শুনে নিরব আশেপাশে তাকাতে লাগল।নিরবকে এরকম করতে দেখে নিধি বলল,
নিধি: কি দেখছেন??
নিরব: এখানে আশেপাশে দূরদূরান্ত পর্যন্ত আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।
নিধি: তো??
নিরব: তার মানে কথাটা আমি আপনাকেই বলেছিলাম।
নিধি:আমাকে এই নামে ডাকার মানে কি?? আর আপনি আমাকে ডাকলেনই বা কেন??
নিরব:প্রেমালাপ করতে।
নিধি:মানে??
নিরব:দেখো ওইসব ফিল্মি ডায়লগ মারার মত মানুষ আমি নই।তাই ডিরেক্টলি বলছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নিধি: কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
নিধির এই কথা শুনে নিরবের প্রচন্ড রাগ হলো।তবুও সে শান্তভাবে আবার জিজ্ঞাসা করল,
নিরব:ভেবে চিন্তে বলছো তো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না।
নিধি: এতে ভাবার কি আছে??
নিরব: লাস্ট বারের মত বলছি ডু ইউ লাভ মি অর নট??
নিধি: আচ্ছা লোক তো আপনি।আমি আপনাকে বল….উমম….উমম
নিধি আর কিছু বলবে তার আগেই নিরব তার ঠোটজোড়া নিজের আয়ত্তে করে নেয়।নিধি যে নিরবকে বাধা দেবে সেই শক্তিটুকুও নিধির নেই।সে যেন পাথরের মত জমে গেছে নিরবের এরুপ কান্ডে।আর নিরব, তার তো কোনোদিকে হুশ নেই।সে তখনও নিধির ঠোটের স্বাদ গ্রহণে ব্যস্ত।কিছুক্ষণ পর নিরব নিজের থেকেই নিধিকে ছেড়ে দেয় আর বলে,
নিরব: নেক্সট টাইম যদি উত্তরটা হ্যা ছাড়া অন্য কিছু হয় তাহলে ডোজটা কিন্তু আরো ভয়ানক হবে।
এই বলে নিরব সেখান থেকে চলে যায় আর নিধি স্ট্যাচুর মত সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
_______________________________________
কলেজের করিডোর দিয়ে হেটে যাচ্ছে রিদি।নিধিকে তো সেখানে নিরবের সাথে রেখে এসেছে সে।হঠাৎ করেই কেউ রিদির হাত ধরে টান মারে আর পাশের একটি ফাকা রুমে নিয়ে যায়।আচমকা এমন হওয়ায় রিদি অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।রিদি সামনে তাকিয়ে দেখে শুভ তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।রিদি সেখান থেকে চলে যেতে নিলে খেয়াল করে যে সে শুভর বাহুডোরে আবদ্ধ।রিদি শুভর দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখনও তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
রিদি: এভাবে কি দেখছেন??
শুভ:তোমাকে।জানো তোমাকে দেখলে নিজেকে ঠিক রাখা কতটা কঠিন??
রিদি:তাই বুঝি??
শুভ: হুম তাই।
রিদি: আমার ক্লাসে দেরী হচ্ছে।যেতে হবে।
শুভ আর কথা বাড়ালো না।এমনিতেই এই ৭ দিনে রিদির অনেক ক্লাস মিস গেছে।তাই শুভ রিদিকে ছেড়ে চলে যেতে লাগল।আবার কি মনে করে ফিরে এলো।এসে রিদির ডান গালে থাকা তিলে একটা কিস করে চলে গেল।রিদি কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে থেকে হেসে ফেলল।তারপর সেও ক্লাসে চলে গেল।
_____________________________________
ক্লাসে বসে শুভর কথা ভাবছে আর হাসছে রিদি।হাসতে হাসতেই তার চোখ গেল নিধির দিকে।নিধির দিকে চোখ যেতেই রিদির মুখের হাসিটা উড়ে গেল।মেয়েটা সেই কখন থেকে স্ট্যাচুর মত বসে আছে।নড়েও না চড়েও না।
রিদি: এই নিধি বল না কি হয়েছে।
নিধির কোনো উত্তর নেই।রিদি আশা ছেড়ে দিয়েছে।নিধি একধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।নিরবের করা কিসের শক থেকে সে এখনও বের হতে পারে নি।তাই এরকম স্ট্যাচু অব লিবার্টি সেজে বসে আছে।
______________________________________
পরের দিন ভার্সিটি শেষ করে বাসায় ফিরতেই রিদি আর নিধির চোখ গেল তাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির উপর।একটা গাড়ি গাড়ি তাদের চেনা।গাড়িটা শুভর।শুভ আর নিরব ভার্সিটিতে এই গাড়িতে করেই যায়।আরেকটা গাড়ি তারা কিছুতেই চিনতে পারল না।নিধি না চিনলেও রিদি ঠিকই চিনেছে আরেকটা গাড়ি।গাড়িটা সেই মহিলার যাকে রিদি সেইদিন রাস্তায় সাহায্য করেছিল।রিদি আর নিধি একবার একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল।তারপর তারা বাড়ির ভিতরে গেল।বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখে একসোফায় তাদের বাবা মা বসা।আর ঠিক তার সোজাসুজি অপর সোফায় শুভ,নিরব আর মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ ও মহিলা বসা।মহিলাটিকে রিদি চিনতে পেরেছে।তিনি আর কেউ নন,তিনি হচ্ছেন নোরা আহমেদ।কিন্তু এরা কেন এখানে এসেছে তা বুঝতে পারছে না রিদি বা নিধি।রিদি কিছু জিজ্ঞাসা করবে তার আগেই দেখে নিধি আবার আগের মত স্ট্যাচু হয়ে গেছে।নিধির কোনো হেলদোল নেই।রিদি নিধির দৃস্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই দেখতে পাই রিদি একদৃস্টিতে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে।রিদির চোখ নিরবের পাশে যেতেই দেখে যে শুভ তার দিকেই তাকিয়ে আছে।রিদি শুভর দিকে তাকাতেই শুভ তাকে চোখ টিপ মারে।রিদি তা দেখে হেসে ফেলে।রিদির বাবা রিদি ও নিধিকে ডেকে তাদের পাশে বসায়।
নোরা:আমাদের ছেলে যে কখনও কারোর প্রেমে পরবে সেটা আমাদের কল্পনার বাহিরে ছিল।কালকে যখন ও এসে বলল যে ও রিদিকে ভালোবাসে তখন আমরা নিজেদের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।তাই আমরা শুভ কাজে আর দেরী করতে চাই না।আমরা চাই আগামী শুক্রবার রিদি-শুভ আর নিধি-নিরবের বিয়েটা সেরে ফেলতে।
রিদির মা: আপনারা যা ভালো বুঝেন। আমাদের কোনো সমস্যা নেই।আগামী শুক্রবারই বিয়ে হবে।
নোরা: আমার মনে হয় এখন ওদেরকে আলাদাভাবে কথা বলতে দেওয়া উচিৎ।
এরপর রিদি শুভকে নিয়ে নিজের রুমে গেল আর নিধি নিরবকে নিয়ে নিধির রুমে গেল।আসলে নিধি নিরবকে নয় বরং নিরবই নিধিকে টানতে টানতে তার রুমে নিয়ে গেছে।নিরবের এরুপ কান্ড দেখে সেখানে উপস্থিত সকলে হেসে ফেলল।
রিদির রুমে,
শুভ:তুমি তো আগে বলো নি যে তুমি আমার মাকে চেনো।
রিদি:আমি তো জানতাম না যে উনি আপনার মা হন।
শুভ: তুমি এই বিয়েতে খুশি তো??
রিদি: কেন নয়। আমি নিজেও চেয়েছি আমাদের বিয়েটা হোক।
শুভ মুচকি হেসে রিদিকে জড়িয়ে ধরল।শুভ রিদির কানে ফিসফিস করে বলল,”আই লাভ ইউ”।রিদিও বলল,”আই লাভ ইউ টু”।
নিধির রুমে,
নিধি চুপচাপ খাটের উপর বসে আছে।সে চোখের পলকও ফেলছে না।নিরব এতক্ষণ যাবত এটা সহ্য করলেও এখন তার রাগ উঠছে।সে নিধির কাছে গিয়ে বলল,
নিরব: এই মেয়ে সেই কখন থেকে এইভাবে সং সেজে বসে আছে কেন?? তখনকার ডোজটা কি কম পরেছে??
নিরবের এই কথা শুনে নিধি দ্রুততার সহিত হাতের উল্টাপিঠ দিয়ে নিজের ঠোট ঢেকে ফেলল।নিধিকে এরকম করতে দেখে নিরব ফিক করে হেসে ফেলল।
নিরব: আমাকে বিয়ে করবে না?? দেখো তুমি যদি চাও তবে এই বিয়েতে মানা করতে পারো।আমার সমস্যা নেই।আমি শুধু শুধু তোমার জীবনের কাটা হতে চাই না।
নিরবের এই কথার মধ্যে যে চাপা কস্ট ছিল তা নিধি বুঝতে পারল।তারও নিরবের জন্য খারাপ লাগল।কারণ সে যতই না বলুক সে তো নিরবকে ভালোবাসে।তাই নিধি আর দেরী না করে নিরবের বুকে ঝাঁপিয়ে পরল।নিরবও পরম যত্নে নিধিকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করল।
চলবে…………

তোকে খুব ভালোবাসি পর্ব-০৫

0

#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_৫
#জাফিরাহ_জারিন

গভীর চিন্তায় মগ্ন শুভ।কিন্তু তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে যে সে রিদিকে নিয়ে নয় বরং অন্যকিছু নিয়ে চিন্তায় আছে।নিরব সেটা খুব ভালোমতোই বুঝতে পারছে।
নিরব:কিরে শুভ, কি এত চিন্তা করছিস তুই??
শুভ: ডক্টরের বলা কথাগুলো।
নিরব:কোন কথা??
শুভ নিরবের দিকে একবার তাকালো।তারপর আবার রিদির কেবিনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল,
ফ্ল্যাশব্যাক,
নার্স যখন এসে ডক্টরকে ডেকে নিয়ে গেল তার কিছুক্ষন পরে ডক্টর রিদির কেবিন থেকে বাইরে এসে বলল,
ডক্টর: পেশেন্টের অবস্থা খারাপ।ইমারজেন্সি ব্লাড লাগবে।যেভাবেই পারেন রক্তের ব্যবস্থা করুন।
শুভ:ব্লাড গ্রুপ কি??
ডক্টর: এ পজিটিভ।
নিধি: আমার ব্লাড গ্রুপও এ পজিটিভ। আমি ওকে ব্লাড দেব।কিন্তু আপনি যেভাবে পারেন ওকে বাচান।
ডক্টর: ঠিক আছে।আপনি ওনার সাথে যান।সিস্টার ওনাকে নিয়ে যান।
নার্স: আপনি আমার সাথে আসুন।
এরপর নিধি রিদিকে রক্ত দেয়।রক্ত দেওয়ার পর রিদির অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়।প্রায় ১ ঘন্টা পর ডক্টর এসে শুভকে নিয়ে যায়।বলে যে তার শুভর সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।এরপর তারা ডক্টরের কেবিনে যায়।
শুভ: এমন কি কথা ডক্টর যে আপনি সবার সামনে না বলে আমাকে কেবিনে ডেকে আনলেন??দেখুন আপনার যা করার হয় করুন।কিন্তু আমার রিদির যেন কিছু না হয়।
ডক্টর: দেখুন আপনি প্যানিক হবেন না।আমি এখন যে কথাগুলো বলব সেগুলো মন দিয়ে শুনুন।
শুভ: বলুন।
ডক্টর: আচ্ছা রিদিকে যেই মেয়েটা রক্ত দিল সেই মেয়েটা রিদির কি হয়??
শুভ: ওরা দুইজন বেস্টফ্রেন্ড।
ডক্টর: গুড।তাহলে এবার আপনি এই রিপোর্টটা দেখুন।
শুভ সেই রিপোর্টটা নিলো এবং পড়তে শুরু করল।পুরো ফাইলটা পড়ে শুভ অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছে।
শুভ: কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব??
ডক্টর: আমিও ঠিক সেটাই ভাবছি।আর সে জন্যই আপনাকে এখানে আনলাম।আপনিই বলুন যে ওরা যদি শুধুমাত্র বেস্টফ্রেন্ড হয় তাহলে ওদের ডিএনএ কিভাবে মিলতে পারে??এটা শুধু তখনই সম্ভব যখন ওরা আপন দুই বোন হবে।আমার যা বলার ছিল আমি বলে দিয়েছি।এবার বাকিটা আপনার হাতে।
এই বলে ডক্টর কেবিন থেকে চলে গেল।
বর্তমান,
নিরব সবকিছু শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে।শুভর মত তার মাথায়ও এখন একই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।হঠাৎ কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে পিছনে ঘুরে তাকায় নিরব আর শুভ।পিছনে ঘুরে দেখে নিধি দাঁড়িয়ে আছে আর নিচে ভাঙা মগের টুকরা পড়ে রয়েছে।তার মানে নিধি তাদের সব কথা শুনে নিয়েছে।এই মুহুর্তটার জন্য যেন একদমই প্রস্তুত ছিল না নিরব আর শুভ।আসলে নিরব আর শুভ কালকে থেকে অনেক দৌড়াচ্ছে রিদির জন্য।তাই নিধি তাদের জন্য কফি এনেছিল।কিন্তু নিরব আর শুভ কাছে আসতেই সে শুনতে পায় যে তারা কিছু নিয়ে আলোচনা করছে।আর আলোচনার টপিক হচ্ছে রিদি আর নিধি।তাই নিধি সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতে থাকে।তাদের পুরো কথা শোনার পর নিধি যেন স্তব্ধ হয়ে যায়।নিধির হাত কাঁপতে শুরু করে আর তার হাত থেকে কফির মগ পড়ে যায়।
____________________________________
রিদির বাবাকে ঘিরে বসে আছে নিধি,শুভ আর নিরব।রিদির বাবা কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।রিদির বাবা অন্তত এতটুকু বুঝেছেন যে শুভ নামক ছেলেটা তার মেয়েকে প্রচন্ড পরিমাণে ভালোবাসে।এই কথাটা রিদির বাবা এই ২ দিনে অনেক ভালোমতো বুঝে গেছেন।আর নিধি তো রিদির বেস্টফ্রেন্ড। তাই রিদির বাবা ভাবলেন ওদেরকে সব সত্যি বলে দেওয়া উচিৎ। তাই রিদির বাবা ওদেরকে সব সত্যি বললেন।সব সত্যি শুনে তিনজনই অবাক।রিদির জীবনে যে এত বড় একটা অতীত আছে তা সবার কল্পনার বাহিরে ছিল।রিদির বাবার মুখে সবকিছু শোনার পর সবাই অন্তত এতটুকু বুঝে গেছে যে ডক্টরের কথা আর রিদির অতীতের সম্পর্ক কি। এখন শুধু সিউর হওয়া বাকি।সেটার একমাত্র উপায় হচ্ছে নিধি যে আশ্রমে বড় হয়েছে সেখানে যাওয়া।
______________________________________
একটি বড় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিরব,নিধি,শুভ।বাড়িটি দেখতে পুরোনো জমিদার বাড়ির থেকে কোনো অংশে কম নয়।গেটের সামনে বড় করে লিখা আছে “শান্তির নীড় অনাথ আশ্রম”।ওরা তিনজন সেখানে গেল।আশ্রমের ম্যানেজার বাগানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।তিনি নিধিকে দেখেই চিনে ফেললেন।নিধি “বাবাই” বলে দৌড়ে গিয়ে লোকটিকে জড়িয়ে ধরল।ম্যানেজারও নিধিকে জড়িয়ে ধরল।দুইজনের চোখেই পানি।শুভ আর নিরব শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিরব দর্শকের মত দেখছে।
নিধি: বাবাই আজকে আমি তোমাকে যা জিজ্ঞাসা করব সত্যি করে উত্তর দিবে।
ম্যানেজার: কি প্রশ্ন মা??
নিরব: নিধিকে আপনি কিভাবে পেয়েছিলেন??
ম্যানেজার যেন এই প্রশ্ন আশা করে নি।
শুভ: দেখুন,দয়া করে সত্যি কথা বলবেন।আমরা নিধির সত্যিটা জানতে চাই।ওকে আপনি কিভাবে পেয়েছেন এই প্রশ্নেত উত্তরের সাথে অনেকগুলো জীবন জড়িয়ে আছে।তাই দয়া করে মিথ্যে বলবেন না।
ম্যানেজার: বেশ তবে বলছি।আসলে আজ থেকে ১৩ বছর আগে আমি সেদিন এই আশ্রমের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে একটা পার্কে গিয়েছিলাম।তখন আমি নদীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি দেখতে পাই যা নদীর তীরে একটা বাচ্চা পড়ে আছে।কাছে গিয়ে চেক করে দেখি বাচ্চাটি বেচে ছিল।পরে আমি সেই বাচ্চাটিকে নিয়ে আসি এবং ওকে এখানেই বড় করে তুলি।সেই বাচ্চাটি আর কেউ নয় বরং নিধি ছিল।
শুভ,নিরব,নিধি সবার চোখে জল।এটা কস্টের নয়,খুশির জল।হঠাৎ করে নিধির মোবাইলে কল আসে।নিধি কল রিসিভ করে।অপরপাশ থেকে কিছু একটা বলে আর নিধি বলে যে সে আসছে।এই বলে নিধি কল কেটে দেয়।
নিরব: কার ফোন ছিল??
নিধি:হসপিটাল থেকে ফোন দিয়েছিল।
শুভ: কি বলল??
নিধি: বলল যে রিদির সেন্স ফিরেছে।আমাদের যেতে হবে।
এরপর তারা ম্যানেজারকে বিদায় দিয়ে চলে গেল।
হসপিটালে,
রিদির এইমাত্র জ্ঞান ফিরল।রিদি নার্সের সাহায্য নিয়ে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসল।তখনই নিধি দৌড়াতে দৌড়াতে কেবিনে প্রবেশ করল আর এসেই রিদিকে জড়িয়ে ধরল।
রিদি: আরে আস্তে জড়িয়ে ধর।মেরে ফেলবি নাকি আমাকে??
নিধি:একটা থাপ্পড় মারব।আর একবার যদি মরার কথা বলিস।উপস সরি,ছোট বোন হয়ে বড় বোনকে কিভাবে মারব??
রিদি:মানে??
—মানেটা আমি বলি।
রিদি তাকিয়ে দেখে শুভ দাঁড়িয়ে আছে।রিদি শুভকে আশা করে নি।যদিও রিদি চেয়েছিল যে শুভ হসপিটালে আসুক তাকে দেখতে।রিদি প্রশ্নসূচক দৃস্টিতে শুভর দিকে তাকিয়ে ছিল।শুভ তা বুঝতে পেরে রিদির কাছে এগিয়ে এল এবং সব ঘটনা খুলে বলল।রিদি সব শুনে কাদতে কাদতে বলল,
রিদি:তার মানে নিধিই আমার ছোট বোন।
শুভ:হুম।
রিদি নিধিকে জড়িয়ে ধরল।রিদি আর নিধি দুজনেই কাঁদছে। আর শুভ আর নিরব তাদের কান্ড দেখে হাসছে।দুজনে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে।মনেই হচ্ছে না যে তারা হসপিটালে আছে।মনে হচ্ছে তারা নিজেদের বাসায় বসে গল্প করছে। ডক্টর বলেছে যে রিদি এখন সুস্থ আছে।কালকে ওকে রিলিজ দেওয়া হবে।
পরের দিন,
আজকে রিদিকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে।রিদিকে নিয়ে নিধি বাড়িতে যাবে।শুভ আর নিরব ওদেরকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসবে।রিদির মা বাবাকে নিধির ব্যাপারে এখনও কিছু জানানো হয় নি।বাড়িতে গিয়ে ওনাদেরকে সবকিছু খুলে বলবে।রিদি আর নিধিকে বাড়িতে ছেড়ে শুভ আর নিরব চলে গেল।রিদিদের বাসায় ড্রইংরুমে বসে আছে রিদি,নিধি ও তাদের বাব মা। কিভাবে তাদেরকে সবকিছু বলবে সেটা বুঝতে পারছে না রিদি আর নিধি।অবশেষে রিদি বলতে শুরু করল।রিদি প্রথম থেকে শুরু করে সব ঘটনা তাদেরকে বলল।রিদির বাব মা তো অবাক।রিদির বাবা উঠে এসে নিধিকে জড়িয়ে ধরল।নিধিও তাকে “বাবা” বলে জড়িয়ে ধরল।
রিদির মা: তুই আমার রিমি?? আয় মা।
নিধি:খবরদার তুমি আমাকে মা বলবে না।এতদিন তুমি আপুর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছো।আগে রিদির কাছে ক্ষমা চাও।ও যদি ক্ষমা করে দেয় তবেই আমি তোমাকে “মা” বলে ডাকব।অন্যথায় নয়।
রিদির মা রিদির দিকে করুন দৃস্টিতে তাকাল।সত্যিই তো।এতদিন মেয়েটার উপর কম অত্যাচার করে নি সে।রিদির মা রিদির কাছে গিয়ে বলল,
রিদির মা: এতদিন তোর উপর কম অত্যাচার করি নি।যদিও আমি ক্ষমার অযোগ্য।তবুও পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।
রিদি: এসব কি বলছো তুমি?? তুমি আমার মা।
রিদির মা রিদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।নিধিও এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরল। অবশেষে রিদির সব কস্ট দূর হলো।নিধিও একটি পরিবার পেল।
চলবে…………….

তোকে খুব ভালোবাসি পর্ব-০৪

0

#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_৪
#জাফিরাহ_জারিন

নিজের রুমে বসে আছে রিদি।চোখ থেকে তার অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছে।রিদির চোখের পানি যেন থামার নামই নিচ্ছে না।থামবেই বা কি করে আজ যে রিদি তার জীবনের সবথেকে বড় সত্যিটা জেনেছে।এতবছর ধরে যাকে রিদি মা বলে জেনে এসেছে,যার এত অত্যাচারের পরেও তার প্রতি শ্রদ্ধা,সম্মান দেখিয়ে এসেছে সেই মানুষটা তার আসল মা না।যাকে সে মা বলে জেনে এসেছে সে তার সৎ মা। এমনকি রিদির একটি সৎ বোনও আছে।নিজের জীবনের এরকম সত্যি জানার পর কে ঠিক থাকতে পারে।
ফ্ল্যাশব্যাক,
রিদি তার মা বাবার রুমের দিকে যাচ্ছে তার বাবার সাথে গল্প করতে।রুমের দরজার সামনে যেতেই রিদি শুনতে পেল তার মা বাবা কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে।রিদি তাই আর রুমে না গিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতে লাগল।
বাবা: রিদির সাথে এমন কেনো করছো তুমি??
মা:কি করেছি আমি??
বাবা: তুমি জানোনা তুমি কি করেছ??রিদি আমাকে না বললেও কিন্তু আমি জানি যে তুমি রিদির সাথে ঠিক কি রকম ব্যবহার করো।
মা:যা করি ঠিকই করি। তোমার ওই অপয়া মেয়ের সাথে এরকমই করা উচিৎ।
বাবা:মিনতি!!!ভুলে যেও না যে আমি তোমাকে এখানে রিদির মা হিসেবে এনেছি।
মা: অপয়া বলব না তো কি বলব।জম্মের সময় নিজের মাকে খেয়েছে আর তারপরে আমার মেয়েটাকে খেয়েছে।ওই মেয়েতো অপয়াই।
আর বেশি কিছু শোনা সম্ভব হয় নি রিদির পক্ষে।সে তখনই সেখান থেকে দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দেয়।
বর্তমান,
রিদি: আচ্ছা জম্মের সময় আমার মা মারা গিয়েছে সেটা নাহয় বুঝলাম।কিন্তু আমার যে একটা বোন ছিল তার কি হয়েছে??আর কিছু হওয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক??
এই প্রশ্ন মাথায় আসার সাথে সাথে রিদি উঠে দাঁড়াল। এখন মাত্র একজনই আছে যে তার এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।রিদি হাটতে হাটতে স্টাডি রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তার ধারণা ঠিক।রিদির বাবা এখন স্টাডি রুমে আছে।
রিদি: আসব বাবা??
বাবা: আরে আয়।এতে পারমিশন নেওয়ার কি আছে??
রিদি: বাবা আমার কিছু প্রশ্ন ছিল।আশা করি তুমি সত্যি বলবে।
বাবা: বল মা।
রিদি: আমার যে বোন ছিল তার কি হয়েছিল?? আর সে এখন কোথায়??
রিদির বাবা নিজের মেয়ের থেকে এই প্রশ্নটা একদমই আশা করেন নি।কিন্তু একদিন না একদিন তো তাকে রিদিকে সব সত্যি বলতেই হতো।হয়ত সেই দিনটা আজ।
বাবা:আজ তোকে সব সত্যি বলব মা।আমি তোর থেকে তোর অতীত লুকিয়েছি।এরপর রিদির বাবা বলতে শুরু করল।
অতীত,
রিদির জম্মের সময় রিদির মা মারা যায়।রিদি বড় হওয়ার সাথে সাথে তার মায়ের প্রয়োজন বাড়তে থাকে।তাই রিদির বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন।রিদির বয়স যখন ৩ বছর তখন রিদির একটা বোন হয়।রিদি তার বোনকে খুব ভালোবাসতো।রিদির বয়স যখন ৫ বছর আর রিমির ( রিদির ছোট বোন) বয়স যখন ২ বছর তখন তারা সবাই মিলে একটা পিকনিক স্পটে ঘুরতে গিয়েছিল।রিদির বাবা ও মা বসে ছিল আর রিদি ও রিমি খেলতে খেলতে নদীর পাড়ে চলে গেছিল।হঠাৎ করেই রিমি পা পিছলে নদীতে পড়ে যায়।রিদি তাকে বাঁচাতে পারে নি।বাচাবেই বা কি করে?? রিদির নিজের বয়সই তো তখন ৫ বছর। রিদি সেখানে বসে কান্না করতে থাকে।রিদির কান্না শুনে যখন সবাই সেখানে আসে এবং বুঝতে পারে যে রিমি নদীতে পড়ে গেছে তখনই রিদির মা তাকে থাপ্পড় মারে।এরপর থেকেই রিদি উপর শুরু হয় তার সৎ মায়ের অত্যাচার।রিদির বাবা এসব সহ্য করতে না পেরে বিদেশে চলে যান।কিন্তু এটাই তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।উনি রিদিকে নিজের সাথে নিয়ে যান নি।
বর্তমান,
রিদির বাবার চোখে পানি।রিদি কান্না করছে।
রিদি: মা ঠিকই বলে।আমার জন্যই আজ আমার বোন বেচে নেই।
রিদির বাবা: না রে মা। তোর এতে কোনো দোষ নেই।
রিদি তার বাবার কথা না শুনেই সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসে।
______________________________________
রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে রিদি।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।উদ্দেশ্য তার ক্যাফেতে যাওয়া।নিধিকে সেখানে আসতে বলেছে রিদি।এই নিধিই একমাত্র মানুষ যে কিনা সবসময় রিদির সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে।যদিও মেয়েটা সবকিছু নিয়েই আনসিরিয়াস থাকে তবুও কিভাবে যেন রিদির সব সমস্যার সমাধান নিধির কাছে থাকে।নিধিকে রিদি কোনো অংশে নিজের আপন বোনের থেকে কম মনে করে না।নিধির মা বাব নেই।সে ছোট বেলা থেকে একটা অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে।রাস্তা দিয়ে আজকে সকাল থেকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ভাবতে ভাবতে হাটছিল রিদি।হাটতে হাটতে যে কখন রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছে রিদি খেয়ালই করে নি।পিছের থেকে একটা ট্রাক দ্রুতবেগে আসছে।ট্রাকটি অনেকবার হর্ণ দিলেও তা রিদির কানে যায় নি।ট্রাকটি চেস্টা করেও থামাতে পারে নি ট্রাকের ড্রাইভার।ট্রাকটি রিদিকে ধাক্কা মেরে তার উপর দিয়ে চলে যায়।ট্রাকটি চলে যাওয়ার সাথে সাথে রাস্তায় ভিড় জমে।সেখানকার লোকেরা রিদিকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যায়।একজন লোক যে রিদির মোবাইলটি পেয়েছিল সে রিদির মোবাইলে লাস্ট যে নাম্বারটি ছিল সেটাতে ফোন দিয়ে বলে রিদিকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে।সেই ব্যাক্তিটি যেন দ্রুত হসপিটালে আসে।রিদির মোবাইলে লাস্ট নাম্বারটি ছিল নিধির।রিদির এক্সিডেন্ট এর খবর পেয়ে নিধি দ্রুত হসপিটালে আসে।নিধির পক্ষে হসপিটালের একা সামলানো সম্ভব নয়।তাই নিধির কাউকে দরকার।এই মুহুর্তে নিধির মাথায় একটাই নাম আসছে আর সেটা হলো শুভ।নিধি দ্রুত শুভকে কল করে এবং রিদির কথা জানায়।রিদির এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে পাগলের মত হসপিটালে ছুটে আসে শুভ।তার সাথে নিরবও আসে।
(নিরব হচ্ছে শুভর চাচাতো ভাই।নিরব আর শুভ সমবয়সী। নিরবের বাবা-মা আমেরিকায় থাকে আর নিরব দেশে শুভদের সাথে থাকে।)
শুভ যেভাবে ছুটে এসেছে তা দেখে যে কেউ বলতে পারবে যে শুভ রিদিকে ঠিক কতটা ভালোবাসে।
শুভ: রিদি কোথায় নিধি??
নিধি:ও….ওটিতে।
শুভ দেখল ডক্টর ওটির থেকে বের হচ্ছে।শুভ দ্রুত ডক্টরের কাছে গেল।
শুভ: রিদি কেমন আছে??
ডক্টর: দেখুন উনার অনেক ব্লাড লস হয়েছে।আমরা যথাসাধ্য চেস্টা করছি উনাকে বাচানোর।বাকিটা আল্লাহ্‌র ইচ্ছা।
শুভ এইকথা শুনে ধপ করে পাশে থাকা চেয়ারে বসে পরে।রিদির কিছু হলে যে শুভ ঠিক থাকতে পারবে না।তখনই একজন নার্স দৌড়াতে দৌড়াতে আসে আর ডক্টরকে বলে,
নার্স: ডক্টর তাড়াতাড়ি চলুন।মিস রিদি কেমন যেন করছে।এটা শুনে ডক্টর দ্রুত ছুটে যায়।আর নিধি,নিরব,শুভর মনে এক অজানা ভয় এসে ভর করে।
চলবে………….

তোকে খুব ভালোবাসি পর্ব-০৩

0

#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_৩
#জাফিরাহ_জারিন

নিধি অনেক্ষণ ধরে খেয়াল করছে যে রিদির মনযোগ ক্লাসে নেই।সে অন্যকিছু একটা ভাবছে আর কিছুক্ষন পরপর মুচকি হাসছে।
নিধি:কিরে রিদি!! গায়ে প্রেমের হাওয়া লেগেছে নাকি??
রিদি:কি যা তা বলছিস তুই??
নিধি: ঠিকই তো বলছি। ক্লাসে অন্যমনস্ক থাকা,কিছু ভেবে মুচকি হাসা এগুলো তো প্রেমেরই লক্ষণ গো বান্ধুবি!!
রিদি: আরে না।
নিধি: তাহলে কি ভাবছিস?? তুই নিজেই বল।
রিদি: আসলে আমি ওই ছেলেটার কথা ভাবছি।
নিধি: কোন ছেলে??
এরপর রিদি নিধিকে সব কিছু খুলে বলল।
নিধি: এত কিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে এখন বলছিস।এই দুনিয়ায় কারো কাছে আমার দাম নেই গো!! ( ন্যাকা কান্নার ভান করে)
রিদি: শেষ হয়েছে তোর নাটক?? এইবার তুই বল যে ওই ছেলেটা আমার নাম জানল কি করে??
নিধি: হুম।এটা তো গভীর চিন্তার বিষয়।লেট মি ভাবিং ভাবিং।
রিদি: তোর ভাবতে ভাবতেই দিন চলে যাবে।
নিধি: আরে প্যাঁচাল পারিস না তো। আমাকে ভাবিং করতে দে।
রিদি: আল্লাহ!! আমি এই মেয়েকে নিয়ে কই যাবো??
নিধি: শ্বশুরবাড়ি!! তুই আমাকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে পারিস।আমি মাইন্ড করব না।
নিধির কথা শুনে রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এই মেয়েকে সিরিয়াস করার ক্ষমতা আর যাই হোক অন্তত রিদির নেই।
______________________________________
ক্লাসে বসে বসে রিদির কথা ভাবছে আর হাসছে শুভ।শুভর মুখে নিজের নামটা শোনার পর রিদির মুখটা দেখার মত ছিল।বেচারা হয়ত এখনও ভেবে চলেছে যে শুভ তার নাম কি করে জানল।
ফ্ল্যাশব্যাক,
শুভ: আমাকে একটা মেয়ের ইনফরমেশন দিতে হবে।পারবে??
নিহা:কোন মেয়ে??
শুভ: মেইবি কলেজে পড়ে।গায়ের রং ফর্সা।উচ্চতা ৫’৩” এর কাছাকাছি।আর হ্যা ওর ডান গালে একটা তিল আছে।
নিহা:মেইবি আমি চিনি।আমি তোমাকে কালকে ওর ইনফরমেশন দিব।
শুভ: ওকে ডান।
পরের দিন সকালে,
নিহা: শুভ ভাইয়া!!!
শুভ: আরে নিহা। পেয়েছো ইনফরমেশন??
নিহা:হুম।
শুভ:দ্যাটস গ্রেট।কে সে??
নিহা: ওর নাম রিদি রহমান।ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ে।
শুভ:থ্যাংক ইউ সো মাচ।
নিহা:ইটস ওকে ভাইয়া।
________________________________________
ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে বের হচ্ছে নিধি।হঠাৎ করে সে কারোর সাথে ধাক্কা খেল।
নিধি: এই কোন কানা বগির ছা আমাকে ধাক্কা দিল রে??
ছেলে: মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ।
নিধি:তোর ল্যাংগুয়েজ নিয়ে তুই থাক।আমার মুখ,আমার কথা।আমি যেভাবে খুশি সেভাবে বলব।তোর কি??
ছেলে: আচ্ছা মেয়ে তো আপনি।
নিধি:আচ্ছা বাদ দেন।এখন আমাকে সরি বলেন।
ছেলে: কেন??
নিধি: কেন মানে?? এই যে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে আপনি আমার এত্তওওওওও মুল্যবান সময় নষ্ট করলেন তাই।
ছেলে: আমি কোনোমতেই সরি বলব না।
নিধি:ওকে। তবে এর শোধও আমি সুদেআসলে তুলব।
এই বলে নিধি চলে গেল।
ছেলে:এতো পুরাই ধানিলঙ্কা।
শুভ: আরে নিরব তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন??আর ওইদিকে কি দেখছিস তুই??
নিরব:ধানিলঙ্কা।
শুভ:মানে??
নিরব: ক্যান্টিনে চল।সেখানে গিয়ে সব বলছি।
_____________________________________
রিদি:আরে তুই আমাকে এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস??
নিধি:আরে চলতো।গেলেই দেখতে পাবি।
কিছুক্ষন আগে,
নিজের রুমে বসে বসে পড়ছে রিদি।বাবা-মা রিদির ফুফুর বাসায় গেছে।কালকে আসবে।হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠল।রিদি গিয়ে দরজা খুলে দেখে নিধি দাঁড়িয়ে আছে।রিদি নিধিকে ভেতরে বসতে বলল।
রিদি:এই সময় এলি যে??
নিধি: কেন আসতে পারি না??
রিদি: আরে তা না।কোনো বিশেষ কারণ আছে??
নিধি:হুম।তুই আগে রেডি হয়ে আয়।
রিদি:কেন??
নিধি:তুই আগে যা।
এই বলে নিধি রিদিকে ঠেলে পাঠালো রেডি হতে।রিদিকেও তাই অগত্যা যেতে হলো রেডি হতে।রিদি রেডি হয়ে এলে নিধি গেটে তালা দিয়ে রিদিকে নিয়ে যাওয়া শুরু করে।সারা রাস্তায় নিধি একটা কথাও বলে নি।রিদি অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছে যে তারা কোথায় যাচ্ছে।কিন্তু নিধি কিছুই বলে নি।কিছুক্ষন পরে তারা এসে একটি স্টেডিয়ামে পৌছাল।সেখানে উপচে পড়া ভিড়।
রিদি:এখানে কেন আনলি??কি আছে এখানে??
নিধি:তেরা হিরো।
রিদি:মানে??
নিধি:সামনে তাকা।নিজেই মানেটা বুঝতে পারবি।
রিদি সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।কারণ সামনে আর কেউ নয় বরং শুভ দাঁড়িয়ে। শুভকে দেখে রিদি অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে
গেছে।
রিদি: এই লোকটা এখানে কি করছে??
নিধি: এখন আর এই লোকটা বলা লাগবে না জানু।আমি তোমার এই লোকটার সম্পর্কে সব তথ্য পেয়ে গেছি।
রিদি: কি তথ্য??
নিধি: এনার নাম শুভ আহমেদ।অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে। আহমেদ গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্ট্রি এর সিয়াম আহমেদের একমাত্র ছেলে হচ্ছে শুভ আহমেদ।
রিদি: ওহ।
এই বলে রিদি ও নিধি দুজনেই সামনে তাকালো।
_______________________________________
শুভ স্টেজে উঠে সামনে থাকা দর্শকদের দেখছিল।হঠাৎ করে তার চোখ যায় রিদির উপর।প্রথমে সে ভেবেছিল মনের ভুল।পরে শুভ খেয়াল করল যে রিদি সত্যিই ওখানে আছে।রিদিকে এখানে দেখে শুভ খুব খুশি হয়েছে।শুভ একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাইতে শুরু করল,
🎶Main zameen tu asman
Main daag hu tu chand sa
Tu baarish hai main ret hu
Main dhun koi tu raag sa
Mainu apna banale meri heriye(2)
Aya hai ada karke……
Boohe bariya hay Boohe bariya…
Boohe bariya ena le kanna tapke
Tu aja bhi hawa banke….
Boohe bariya hay boohe bariya..
Chulu tujhe jaise koi
Chand ko chuna cahe…
Chahu tujhe jaise koi
Baccha khelona cahe…
Fikar ki raat mein
Tu sukoon ki nind hai
Patzhar ke mausam me tu
Barish ki pehli boond hai..
Nirmaan aj eid tere vaste..
Aya hay ada karke…..
Boohe bariya hay boohe bariya…🎶
পুরো শুভ রিদির দিকে তাকিয়ে গেয়েছে।রিদি সেটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসল।
চলবে……………

তোকে খুব ভালোবাসি পর্ব-০২

0

#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_২
#জাফিরাহ_জারিন

রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে নোরা আহমেদ। তার উদ্দেশ্যে আহমেদ গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্ট্রি তে যাওয়া।গাড়িতে করেই যাচ্ছিল।কিন্তু হঠাৎ মাঝ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে যায়।আর মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্ব থাকায় নোরা আহমেদ বাকি পথটুকু হেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।কিন্তু যে গরম পড়েছে তাতে হেটে যাওয়াটা দুষ্কর হয়ে উঠেছে।তার উপর আবার নোরা আহমেদের সুগার ডাউনের সমস্যা আছে।তাই এই গরমে হাটতে হাটতে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে লাগে।ঠিক তখনই একটা মেয়ে এসে তাকে ধরে ফেলে।পাশেই একটা ফার্মসি থাকায় মেয়েটি তাকে সেখানে নিয়ে যায়।সেখানে থাকা লোকটি জানায় যে নোরার সুগার ডাউন হয়ে গিয়েছে।মেয়েটি তখন তার কাছে থাকা টাকা দিয়ে পাশের দোকান থেকে কিছু মিস্টি কিনে আনে এবং নোরাকে খাওয়ায়।মেয়েটির এরুপ ব্যবহারে নোরা খুবই মুগ্ধ হয়।নোরা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করে,
নোরা: তোমার নাম কি মা??
মেয়েটি: রিদি রহমান।
নোরা: খুব সুন্দর নাম তো।
রিদি:ধন্যবাদ আন্টি।আন্টি আপনি এইভাবে কেনো হেটে যাচ্ছিলেন?? আপনি তো জানেন যে আপনার সুগার ডাউনের প্রব্লেম আছে।
নোরা: আসলে আমার গাড়িটা মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে।আমি এই কাছেই যাব।তাই ভাবলাম এইটুকু রাস্তা হেটেই চলে যায়।
রিদি: ওহ আচ্ছা। আন্টি তাহলে আমি যায়।
নোরা: আমি তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি।চলো।
রিদি:ওকে আন্টি।
ততক্ষণে গাড়িও ঠিক হয়ে গিয়েছে।নোরা রিদিকে তার বাড়িতে পৌছে দিল।
রিদি: ধন্যবাদ আন্টি।আমাদের বাসায় আসুন।
নোরা: না থাক।অন্য আরেকদিন আসব।আর হ্যা, আমাকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।
রিদি মুচকি হাসি দিল।নোরা চলে গেল।রিদি তার হাত ঘড়িতে দেখল যে সে অলরেডি ৩০ মিনিট দেরী করেছে।আজকে তাকে মায়ের হাত থেকে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই বাঁচাতে পারে।রিদি ভয়ে ভয়ে বেল বাজালো।রিদির মা দরজা খুলে দিল।
রিদির মা: এত দেরী হল কেন??
রিদি: মা আসলে রাস্তায় একজন আন্টি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।তাই তাকে সাহায্য করতে গিয়ে দেরী হয়ে গিয়েছে।
রিদির মা: হুম।ভেতরে আয়।
এই বলে রিদির মা ভেতরে চলে গেল।আর রিদি তো তখনও অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। কারণ সে এত দেরী করা সত্ত্বেও তার মা তাকে কিছু বলল না। ভেতরে ঢুকেই রিদি যা দেখল তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। রিদি ছলছল চোখে বলে উঠল,
রিদি: বাবা!!!
রিদি দ্রুত গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরল।রিদির বাবা এতদিন পর তার আদরের মেয়েকে দেখতে পেয়েছেন।তার চোখেও জল জমে গেছে।সেও নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরল।
রিদির বাবা: কেমন আছিস মা??
রিদি: এতদিন পর তোমার আমার কথা মনে পড়ল??
রিদির বাবা: তোর ভালোর জন্যই তো বিদেশে থাকি।আমার সবটুকু তো শুধু তোর জন্যই।
রিদি: আমি খুব ভালো আছি বাবা।তুমি কেমন আছো??
রিদির বাবা: আমিও ভালো আছি মা। যা তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।আজ সবাই একসাথে লাঞ্চ করব।
রিদি: হুম যাচ্ছি।
এই বলে রিদি তার রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
_______________________________________
হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ঢুকল শুভ। বাড়িতে এসেই সোজা সে গেল তার মায়ের রুমে।রুমে গিয়ে দেখে তার মা শুয়ে আছে।শুভ তাড়াতাড়ি করে মায়ের কাছে গেল।
শুভ: মা তুমি ঠিক আছো??
নোরা: হুম। আমি ঠিক আছি।
শুভ: আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা তুমি কোন হিসাবে এভাবে রাস্তা দিয়ে হাটতে গেছিল।যদি কিছু হয়ে যেত।
নোরা: আরে হয় নি তো।আর তার আগে তুই বল যে তোকে কে বলল আমার কথা??
শুভ: ড্রাইভার কাকা ফোন করে বলেছে।আচ্ছা আসলে কি হয়েছিল বলতো??
নোরা তার ছেলেকে সব কিছু খুলে বলল।
নোরা: জানিস আমাকে একটা মেয়ে এসে ধরেছিল।তা নাহলে তো আমি সেখানেই পড়ে যেতাম।আর জানিস শুভ মেয়েটা না খুব মিস্টি দেখতে।মেয়েটার নাম রিদি।ওকে না তোর সাথে খুব ভালো মানাবে।
শুভ: উফফ মা!! তুমি আবার শুরু হয়ে গেলে?? তোমাকে কত বার বলেছি যে আমি বিয়ে করব না।
নোরা: মেয়েটাকে দেখলেই তুই প্রেমে পরে যাবি।
শুভ: তাহলে তুমিই বসে বসে সেই মেয়ের কথা ভাবো আর তার প্রেমে পরো।আমি গেলাম ফ্রেশ হতে।
এই বলে শুভ চলে গেল ফ্রেশ হতে।
নোরা: আল্লাহ আমার ছেলেকে তুমি হেদায়েত দাও।
_______________________________________
রাত বাজে ১১ টা। শুনশান নিরব রাস্তা।আশেপাশে কেউ নেই।এই রকম একটি রাস্তা দিয়ে নিজের জীবন বাঁচাতে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে একটি মেয়ে।তার ঠিক পিছনেই আসছে ৪-৫ জন বখাটে ছেলে।মেয়েটি আপ্রাণ চেস্টা করছে নিজেকে ওই ছেলেগুলোর হাত থেকে রক্ষা করার।হঠাৎ কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে মেয়েটি পড়ে গেল। মেয়েটি চেস্টা করেও উঠতে পারল না।সে ভাবল এখন হয়ত তাকে এই ছেলেগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।এই ভেবে মেয়েটি ভয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলল।কিন্তু অনেক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও যখন তার কিছু হলো না তখন মেয়েটি আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখল যে একটি ছেলে সেই বখাটেগুলোকে মেরে প্রায় আধমরা করে ফেলেছে। ছেলেটি মেয়েটির কাছে আসতেই মেয়েটি তাকে চিনে ফেলল।
মেয়ে: আরে তুমি শুভ ভাইয়া না??
শুভ: হ্যা। কিন্তু তুমি কে?? আর আমাকে চিনলে কি করে??
মেয়ে: আমি নিহা। প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়ে।তোমাদের ভার্সিটিতেই পড়ি।অনার্স ১ম বর্ষে।
শুভ: ওহ হ্যা।চিনতে পেরেছি।তুমি প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়ে।এত রাতে এখানে একা কি করছো??
নিহা: আসলে আমার এক বান্ধবীর বাসায় এসেছিলাম।ফিরতে দেরী হয়ে গেছে।আর রাস্তা ফাকা ছিল।তখনই ওই ছেলেগুলো চলে এলো।বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে থ্যাংকস ভাইয়া।যদি কখনও কোনো সাহায্য লাগে তাহলে অবশ্যই বলো।আমি চেস্টা করব আপনাকে সাহায্য করার।
শুভ: ইটস ওকে। আচ্ছা আমার একটা ছোট্ট হেল্প লাগবে।করতে পারবে??
নিহা: অবশ্যই ভাইয়া।বলুন।
এরপর শুভ নিহাকে কিছু একটা বলল এবং বাকা হাসি দিল।
_______________________________________
পরের দিন,
শুভ কলেজ গেট এ বসে আছে।উদ্দেশ্য তার মায়াবিনীর সাথে কথা বলা। শুভ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর দেখতে পেল মেয়েটি আসছে।শুভ এগিয়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়াল।
এদিকে,
রিদি তাড়াতাড়ি করে কলেজে আসছিল।হঠাৎ কেউ সামনে আসায় সে একটু ভয় পেয়ে যায়।সামনে তাকিয়ে দেখে কালকের ছেলেটা।রিদি এখন ভাবতে থাকে যে তাকে যেভাবেই হোক ছেলেটাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
শুভ: কালকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম।ওভাবে চলে গেলে কেন??আচ্ছা বাদ দাও।তোমার নাম কি??
রিদি:আ..আপনাকে কেন বলব??
শুভ:বলবে না তাই তো??
রিদি:হুম।
শুভ: ঠিক আছে। তবে এটা জেনে রাখো যে তোমার সম্পর্কে জানতে আমার খুব বেশী সময় লাগবে না।
রিদি: ঠিক আছে। তাহলে জেনে নিন যেভাবে পারেন।
এই বলে রিদি শুভকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
শুভ: মিস রিদি!!!
শুভর মুখে নিজের নাম শুনে থমকে গেছে রিদি।তার মাথায় এখন শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে যে এই ছেলেটা তার নাম জানল কি করে?রিদি তখনই ফিরে এস শুভর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল,
রিদি: আপনি আমার নাম জানলেন কি করে??
শুভ: ওই যে বললাম। আপনার নাম জানতে আমার খুব বেশি সময় লাগবে না।
রিদি: তাই বলে এত তাড়াতাড়ি!!
রিদির এরকম বাচ্চাদের মত কথা শুনে শুভ ফিক করে হেসে দিল।
শুভ: আগে আগে দেখো হোতা হ্যায় কেয়া!!
এই বলে শুভ চলে গেল।আর রিদি সেখানেই দাঁড়িয়ে শুভর কথা ভাবতে লাগল।
চলবে……………