তোকে খুব ভালোবাসি পর্ব-০২

0
1933

#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_২
#জাফিরাহ_জারিন

রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে নোরা আহমেদ। তার উদ্দেশ্যে আহমেদ গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্ট্রি তে যাওয়া।গাড়িতে করেই যাচ্ছিল।কিন্তু হঠাৎ মাঝ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে যায়।আর মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্ব থাকায় নোরা আহমেদ বাকি পথটুকু হেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।কিন্তু যে গরম পড়েছে তাতে হেটে যাওয়াটা দুষ্কর হয়ে উঠেছে।তার উপর আবার নোরা আহমেদের সুগার ডাউনের সমস্যা আছে।তাই এই গরমে হাটতে হাটতে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে লাগে।ঠিক তখনই একটা মেয়ে এসে তাকে ধরে ফেলে।পাশেই একটা ফার্মসি থাকায় মেয়েটি তাকে সেখানে নিয়ে যায়।সেখানে থাকা লোকটি জানায় যে নোরার সুগার ডাউন হয়ে গিয়েছে।মেয়েটি তখন তার কাছে থাকা টাকা দিয়ে পাশের দোকান থেকে কিছু মিস্টি কিনে আনে এবং নোরাকে খাওয়ায়।মেয়েটির এরুপ ব্যবহারে নোরা খুবই মুগ্ধ হয়।নোরা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করে,
নোরা: তোমার নাম কি মা??
মেয়েটি: রিদি রহমান।
নোরা: খুব সুন্দর নাম তো।
রিদি:ধন্যবাদ আন্টি।আন্টি আপনি এইভাবে কেনো হেটে যাচ্ছিলেন?? আপনি তো জানেন যে আপনার সুগার ডাউনের প্রব্লেম আছে।
নোরা: আসলে আমার গাড়িটা মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে।আমি এই কাছেই যাব।তাই ভাবলাম এইটুকু রাস্তা হেটেই চলে যায়।
রিদি: ওহ আচ্ছা। আন্টি তাহলে আমি যায়।
নোরা: আমি তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি।চলো।
রিদি:ওকে আন্টি।
ততক্ষণে গাড়িও ঠিক হয়ে গিয়েছে।নোরা রিদিকে তার বাড়িতে পৌছে দিল।
রিদি: ধন্যবাদ আন্টি।আমাদের বাসায় আসুন।
নোরা: না থাক।অন্য আরেকদিন আসব।আর হ্যা, আমাকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।
রিদি মুচকি হাসি দিল।নোরা চলে গেল।রিদি তার হাত ঘড়িতে দেখল যে সে অলরেডি ৩০ মিনিট দেরী করেছে।আজকে তাকে মায়ের হাত থেকে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই বাঁচাতে পারে।রিদি ভয়ে ভয়ে বেল বাজালো।রিদির মা দরজা খুলে দিল।
রিদির মা: এত দেরী হল কেন??
রিদি: মা আসলে রাস্তায় একজন আন্টি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।তাই তাকে সাহায্য করতে গিয়ে দেরী হয়ে গিয়েছে।
রিদির মা: হুম।ভেতরে আয়।
এই বলে রিদির মা ভেতরে চলে গেল।আর রিদি তো তখনও অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। কারণ সে এত দেরী করা সত্ত্বেও তার মা তাকে কিছু বলল না। ভেতরে ঢুকেই রিদি যা দেখল তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। রিদি ছলছল চোখে বলে উঠল,
রিদি: বাবা!!!
রিদি দ্রুত গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরল।রিদির বাবা এতদিন পর তার আদরের মেয়েকে দেখতে পেয়েছেন।তার চোখেও জল জমে গেছে।সেও নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরল।
রিদির বাবা: কেমন আছিস মা??
রিদি: এতদিন পর তোমার আমার কথা মনে পড়ল??
রিদির বাবা: তোর ভালোর জন্যই তো বিদেশে থাকি।আমার সবটুকু তো শুধু তোর জন্যই।
রিদি: আমি খুব ভালো আছি বাবা।তুমি কেমন আছো??
রিদির বাবা: আমিও ভালো আছি মা। যা তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।আজ সবাই একসাথে লাঞ্চ করব।
রিদি: হুম যাচ্ছি।
এই বলে রিদি তার রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
_______________________________________
হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ঢুকল শুভ। বাড়িতে এসেই সোজা সে গেল তার মায়ের রুমে।রুমে গিয়ে দেখে তার মা শুয়ে আছে।শুভ তাড়াতাড়ি করে মায়ের কাছে গেল।
শুভ: মা তুমি ঠিক আছো??
নোরা: হুম। আমি ঠিক আছি।
শুভ: আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা তুমি কোন হিসাবে এভাবে রাস্তা দিয়ে হাটতে গেছিল।যদি কিছু হয়ে যেত।
নোরা: আরে হয় নি তো।আর তার আগে তুই বল যে তোকে কে বলল আমার কথা??
শুভ: ড্রাইভার কাকা ফোন করে বলেছে।আচ্ছা আসলে কি হয়েছিল বলতো??
নোরা তার ছেলেকে সব কিছু খুলে বলল।
নোরা: জানিস আমাকে একটা মেয়ে এসে ধরেছিল।তা নাহলে তো আমি সেখানেই পড়ে যেতাম।আর জানিস শুভ মেয়েটা না খুব মিস্টি দেখতে।মেয়েটার নাম রিদি।ওকে না তোর সাথে খুব ভালো মানাবে।
শুভ: উফফ মা!! তুমি আবার শুরু হয়ে গেলে?? তোমাকে কত বার বলেছি যে আমি বিয়ে করব না।
নোরা: মেয়েটাকে দেখলেই তুই প্রেমে পরে যাবি।
শুভ: তাহলে তুমিই বসে বসে সেই মেয়ের কথা ভাবো আর তার প্রেমে পরো।আমি গেলাম ফ্রেশ হতে।
এই বলে শুভ চলে গেল ফ্রেশ হতে।
নোরা: আল্লাহ আমার ছেলেকে তুমি হেদায়েত দাও।
_______________________________________
রাত বাজে ১১ টা। শুনশান নিরব রাস্তা।আশেপাশে কেউ নেই।এই রকম একটি রাস্তা দিয়ে নিজের জীবন বাঁচাতে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে একটি মেয়ে।তার ঠিক পিছনেই আসছে ৪-৫ জন বখাটে ছেলে।মেয়েটি আপ্রাণ চেস্টা করছে নিজেকে ওই ছেলেগুলোর হাত থেকে রক্ষা করার।হঠাৎ কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে মেয়েটি পড়ে গেল। মেয়েটি চেস্টা করেও উঠতে পারল না।সে ভাবল এখন হয়ত তাকে এই ছেলেগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।এই ভেবে মেয়েটি ভয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলল।কিন্তু অনেক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও যখন তার কিছু হলো না তখন মেয়েটি আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখল যে একটি ছেলে সেই বখাটেগুলোকে মেরে প্রায় আধমরা করে ফেলেছে। ছেলেটি মেয়েটির কাছে আসতেই মেয়েটি তাকে চিনে ফেলল।
মেয়ে: আরে তুমি শুভ ভাইয়া না??
শুভ: হ্যা। কিন্তু তুমি কে?? আর আমাকে চিনলে কি করে??
মেয়ে: আমি নিহা। প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়ে।তোমাদের ভার্সিটিতেই পড়ি।অনার্স ১ম বর্ষে।
শুভ: ওহ হ্যা।চিনতে পেরেছি।তুমি প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়ে।এত রাতে এখানে একা কি করছো??
নিহা: আসলে আমার এক বান্ধবীর বাসায় এসেছিলাম।ফিরতে দেরী হয়ে গেছে।আর রাস্তা ফাকা ছিল।তখনই ওই ছেলেগুলো চলে এলো।বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে থ্যাংকস ভাইয়া।যদি কখনও কোনো সাহায্য লাগে তাহলে অবশ্যই বলো।আমি চেস্টা করব আপনাকে সাহায্য করার।
শুভ: ইটস ওকে। আচ্ছা আমার একটা ছোট্ট হেল্প লাগবে।করতে পারবে??
নিহা: অবশ্যই ভাইয়া।বলুন।
এরপর শুভ নিহাকে কিছু একটা বলল এবং বাকা হাসি দিল।
_______________________________________
পরের দিন,
শুভ কলেজ গেট এ বসে আছে।উদ্দেশ্য তার মায়াবিনীর সাথে কথা বলা। শুভ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর দেখতে পেল মেয়েটি আসছে।শুভ এগিয়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়াল।
এদিকে,
রিদি তাড়াতাড়ি করে কলেজে আসছিল।হঠাৎ কেউ সামনে আসায় সে একটু ভয় পেয়ে যায়।সামনে তাকিয়ে দেখে কালকের ছেলেটা।রিদি এখন ভাবতে থাকে যে তাকে যেভাবেই হোক ছেলেটাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
শুভ: কালকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম।ওভাবে চলে গেলে কেন??আচ্ছা বাদ দাও।তোমার নাম কি??
রিদি:আ..আপনাকে কেন বলব??
শুভ:বলবে না তাই তো??
রিদি:হুম।
শুভ: ঠিক আছে। তবে এটা জেনে রাখো যে তোমার সম্পর্কে জানতে আমার খুব বেশী সময় লাগবে না।
রিদি: ঠিক আছে। তাহলে জেনে নিন যেভাবে পারেন।
এই বলে রিদি শুভকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
শুভ: মিস রিদি!!!
শুভর মুখে নিজের নাম শুনে থমকে গেছে রিদি।তার মাথায় এখন শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে যে এই ছেলেটা তার নাম জানল কি করে?রিদি তখনই ফিরে এস শুভর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল,
রিদি: আপনি আমার নাম জানলেন কি করে??
শুভ: ওই যে বললাম। আপনার নাম জানতে আমার খুব বেশি সময় লাগবে না।
রিদি: তাই বলে এত তাড়াতাড়ি!!
রিদির এরকম বাচ্চাদের মত কথা শুনে শুভ ফিক করে হেসে দিল।
শুভ: আগে আগে দেখো হোতা হ্যায় কেয়া!!
এই বলে শুভ চলে গেল।আর রিদি সেখানেই দাঁড়িয়ে শুভর কথা ভাবতে লাগল।
চলবে……………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে