Sunday, July 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1515



তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৫

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৫

প্রিন্সিপাল বলে,
— “guys let’s get acquainted with ur new teacher,
he is Mr,,,,,

প্রিন্সিপাল এইটুকু বলতেই লোকটি সামনে আসে মেঘলা লোকটির দিকে অবাক হয়ে তাকায়৷
এই নতুন টিচার আর কেউ না শোভন৷
মুখে বাকা হাসির রেখা ঝুলিয়ে মেঘলার দিকে তাকায়, মেঘলা এখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না হ্যালুসিনেশন নাতো?
সত্যি কি শোভন?
প্রিন্সিপাল কি বললো মেঘলা কিছুই শুনেনি ও তো অবাক হয়ে শোভনের দিকে তাকিয়ে আছে প্রিন্সিপাল যাওয়ার পরই শোভন সবাইকে বসতে বলে৷
মেঘলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাই শোভন বাকা হেসে মেঘলার সামনে এসে ফিসফিস করে বলে,
— ” ইউর সাইকো ইস ব্যাক হুর পরিইইইইই,,,,৷ ”

শোভনের এই ফিসফিসানি কন্ঠে “হুর পরি” ডাকটা প্রতিবারই মেঘলার শরীরে অদ্ভুত শিহরণ জাগিয়ে দেয়, আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি৷
পরক্ষণেই কিছু ভেবে শুকনো ঢোক গিলে বাচ্চাদের মতো ফেস করে শোভনের দিকে তাকায়৷
শোভন মেঘলার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে ক্লাস করাতে ব্যাস্ত হয়ে যায়৷

শোভন যেতেই ঐশী বলে,
— “ইসসস স্যার টা কি হ্যান্ডসাম রে তাও আবার ব্যাঙ্গলি৷
উপস জমে যাবে পুরোই৷
আমি তো অলরেডি ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি৷ ”

মেঘলা ঐশীর দিকে বিস্ফরিতো চোখে তাকিয়ে বলে,
— “এই ঐশীর বাচ্চা যা খাওয়ার খেয়েছিস তা তারাতারি বের কর,
ওটা আমার জিনিস ওটার দিকে নজর দিবি না৷
হায়াত ভাইয়া মানে তোর হৃদয় কে বলবো তোমার জিনিস আমার জিনিসের দিকে নজর দেয়৷ ”

মেঘলার কথা শুনে ঐশী বোকা বনে গেলো ঐশী এখনো বুঝতে পারেনি এটাই মেঘলার শোভন৷
ঐশী ব্যাংচি কেটে বলে,
— “এমা মেঘু তুই এই শোভনের উপর ক্রাশ খেয়েছিস?
তোরনা একটা শোভন আছে?
যাই হোক ক্রাশ যখন খেয়েই ফেলেছিস কি আর করবো?
তোর মতো তো আর হৃদয় হীন না আমি যে বের করতে বলবো৷
আচ্ছা শোন সকালে আমার বিকেলে তোর চলবে?”

ঐশীকে চিমটি কেটে দাতে দাত চেপে মেঘলা বলে,
— “এইটাই আমার শোভন,
এটাই সাইকো এসেছে আমার পিন্নি চটকাতে আমার সুখের দিন টাটা বাই বাই হয়ে গেছে (বলেই শুকনো ঢোক গিলে আবার গলা ঝেরে বলে)
আর কি বললি?
সকালে তোর বিকেলে আমার? ইসসসিরে ও পুরোটাই আমার৷ ”

মেঘলার কথা শুনে ঐশী জীব কেটে কেবলাকান্তর মতো হেসে বলে,
— “থাক বইন মাফ করে দে৷
তাছাড়া তোর জামাই আমার জামাই আর আমার জামাই তোর ভাইয়া🙄”

মেঘলা তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— “তোরে শুধু শুধু গাধা বলি?
তোর জামাই তো আমার ভাইয়াই আর আমার জামাই তোরো ভাইয়া বুঝলি?”

— “হুম ঢের বুঝেছি৷ ”
বলেই ব্যাংচি কাটে ঐশী

কিছু একটা ভেবে ঐশী বলে,
— “আচ্ছা মেঘু শোভন ভাইয়া এখানে এলো কি করে?
আর এলোই বা কবে?
আর এলোই যখন তোর কাছে আগে যায় নি কেন?

মেঘলা ভেবে কিছু একটা বলবে এর আগেই শোভন মেঘলা আর ঐশী কে ইশারা করে বলে,
— ” hey girl’s stand up. ”

ঐশী আগে আগেই দাঁড়ায়৷ মেঘলা এখনো দাঁড়ায়নি বসেই আছে৷
শোভন মেঘলার সামনে এসে বলে,
— ” তুমি বসে আছো কেন?
তোমাকে কি কার্ড দিয়ে দাড়াতে বলতে হবে?”

ঐশী মেঘলা আর কয়েকজন ছাড়া কেউই বাঙালি না তাই বুঝতে পারছে না৷
শোভন এবার বেশ জোরেই বলে,
— “i said stand up. ”

এতো জোরে বলায় মেঘলা কেঁপে উঠে আর তারাতারি দাঁড়িয়ে যায়৷
শোভনের এমন ধমকেতো ঐশী ভয় পেয়ে যায় না জানি কি শাস্তি দেয়, কিছু সময় ভেবে শয়তানি হাসি দিয়ে একবার মেঘলার দিকে তাকিয়ে শোভনকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বলে,
— “ভাইয়া আপনি মেঘলাকে শাস্তি দিতে চানতো?
আমি আপনার পাশে আছি আপনি চাইলে আপনার পাশে থেকে আমিও ওকে শাস্তি দিতে পারি কিন্তু আমাকে বসিয়ে দিতে হবে৷ ”

শোভনও মেঘলার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলে,
— “ওক্কে শালি সাহেবা৷
আমার বউকে শাস্তি দিতে হবে না আমার বাচ্চা বউ আমার শাস্তিটা নাহয় আমি দিবো৷
আপনি আমার সাথে থাকবেন তাহলেই হবে৷ ”
বলেই মেঘলাকে চোখ টিপ মারে৷

মেঘলা শুকনো ঢোক গিলে একবার ঐশীর দিকে তাকিয়ে রাগি ভাবে তাকিয়ে উপরের দিয়ে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,
— “ইয়া আল্লাহ কি বান্ধবি দিলা তুমি,
এই সাকচুন্নি আমাকে ফাসাবে এখন৷
আল্লাহ একটা সুতা থুরি রসি ফালাও উঠে যাই৷ ”

শোভন গম্ভীর কন্ঠে ঐশীকে বলে,
— “sit down. ”
ঐশীও কিছু না ভেবে বসে যায়৷

মেঘলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— “hey come with me. ”
মেঘলা আর কিছু বলতে পারেনি৷

কান ধরে ক্লাস ভর্তি মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা৷
ঐশী বসে বসে হাসছে ওর হাসি দেখে মেঘলা বির বির করে বলে,
— ” ঐশীর বাচ্চা একা পাই তোকে মেরে আধ মরা বানাবো৷ ”

এর মধ্যেই ক্লাস শেষ হয়ে যায় মেঘলার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে ঐশী বেরিয়ে যায়৷
মেঘলা যেই যাওয়ার জন্য পা বারাবে তখনই শোভন বলে,
— “আমি তোমাকে যেতে বলেছি?”

মেঘলা আর কিছু বলে না মাথা নিচু করে বেরিয়ে পরে৷
সবাই ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যায় হঠাৎ শোভন দরজা ভেতর থেকে আটকিয়ে দেয় বাকা হাসির রেখা টেনে মেঘলার দিকে এগোতে থাকে৷

চলবে,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৪

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৪

আনমনে হাজারো কথা ভাবতে ভাবতে হাটছে মেঘলা৷
চার তালায় আসতেই হঠাৎ কেউ হেচকা টান দিয়ে অন্ধকার রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে মেঘলার হাত চেপে ধরে৷
ব্যক্তিটি এতোই কাছে যে মেঘলা ব্যক্তিটির শ্বাস প্রশ্বাস হার্ট বিট গুনতে পারবে৷
কিন্তু কে?
মেঘলা কাপা কাপা গলায় বলে,
— “ক কে আ আপনি? ”

পাশের ব্যাক্তি কোনো রেসপন্স না পেয়ে মেঘলা আবার বলে,
— “কে আপনি?”

হঠাৎ ব্যাক্তিটি মেঘলার হাতে সেই আগের মতো ধারালো কিছু চেপে ধরে আর মেঘলা “আহ” বলে শব্দ করে উঠে৷
পাশের ব্যাক্তি টি মেঘলার কোমর চেপে ধরে নিজের কাছে এনে মেঘলার ঘারে আলতো করে বাইট করে৷
মেঘলা ফিরে কেঁদে উঠে বলে,
— “শোভন ভাইয়া?”

মেঘলা বলার সাথে সাথে ব্যাক্তিটি যেনো অন্ধকারে ডুবে যায়৷ মেঘলা ডুকরে কেঁদে উঠে সেইখানেই জ্ঞান হারায়৷

চোখ খুলেই মেঘলা নিজেকে নিজের রুমে আবিষ্কার করে৷
পাশে হায়াত বসে আছে হায়াত কে দেখে মেঘলা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,
— “ভাইয়া আমার শোভন এসেছে৷ ”

হায়াত ব্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলে,
— “কি বলছিস মেঘু?
শোভন কি করে আসবে?”

— “হ্যাঁ ও এসেছে ওই তো অন্ধকার রুমে নিয়ে গিয়েছিলো৷ ”

হায়াত মুখ স্বাভাবিক করেই বলে,
— “কিসের অন্ধকার রুম?
কোন অন্ধকার রুম? ”

মেঘলা হায়াত কে সবটা বলার পরেও হায়াত স্বাভাবিক ভাবে বলে,
— “মেঘলা তোর কোথাও একটা ভুল হচ্ছে,
তুই আমার সাথেই ছিলি আর আমি বা কখন তোকে ইশারা করেছি ক্লাসে যাওয়ার জন্য?
আর বাকি রইলো এই কাটা দাগ?
ওই ছেলে গুলোকে যখন মারছিলাম তখন ছেলে গুলো আমার হাতে ছুড়ি বসিয়ে দিয়েছিলো তখনই তুই জ্ঞান হারাস আর নিচে কাচের টুকরো পরে ছিলো তা তোর হাতে অনেকটা ঢুকে যায়৷ ”

মেঘলা অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— “কি বলছো কি?
আমি জানি আমার শোভন এসেছিলো আর ওই এমন কেটেছে৷ ”

হায়াত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হায়াতের ব্যান্ডেজ করা হাতটা দেখিয়ে বলে,
— “দেখ এবার বিশ্বাস হচ্ছে তো?
ওইসব তোর ভুল ধারনা শোভন আসেনি তোর হ্যালুয়েশন ওটা৷ ”

বলেই হায়াত বেরিয়ে যায়৷
মেঘলা থম মেরে ভাবছে,
— “হ্যালুসিনেশন?
সত্যি কি হ্যালুসিনেশন? শোভন আসেনি?
ভাইয়াকি মিথ্যা বলবে? কিন্তু কেনই বা বলবে?”

মেঘলা হুরমুরিয়ে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়৷
ঘাড়ের সামনে কোনো বাইটের দাগ নেই, তারমানে সত্যি হ্যালুসিনেশন ছিলো?
এইসব ভাবতে ভাবতে মুখ চেপে জোরে কান্না করতে থাকে, হয়তো তখন শোভন কে একটু বুঝলে এই দিনটা আজ দেখতে হতো না৷
ভালোবাসার কষ্ট পৃথিবীর সব নিকৃষ্ট কষ্ট যা মনকে ক্ষনে ক্ষনে মন কে ক্ষত বিক্ষত করে৷
হৃদ স্ফন্দন যেমন থমকে যায়,শ্বাস প্রশ্বাস চললেও নিজেকে পাথর মনে হয় জীবিত থেকেও মৃত হয়ে বাঁচতে হয়৷
যা আজ মেঘলা পাচ্ছে একটা সময় শোভনও মেঘলার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এমন বেকুল ছিলো কিন্তু শোভন কে কখনো মেঘলা বুঝেনি, শোভনের ভালোবাসা মেঘলা বুঝেনি৷
বেঁচে থেকেও মৃত ছিলো৷

— “আমি চাই যে আজ!!
তোমায় খুব করে চাই যে, আমি তোমায় ছাড়া ভালো নেই৷
প্রতিক্ষন তোমাকে না পাওয়ার তৃষ্ণা আমায় কুরে কুরে খাচ্ছে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি৷ ”

হঠাৎ কেউ মেঘলার সামনে হাটু গেরে বসে মেঘলা কে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে৷
কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে শোভন৷
শোভন কে দেখে মেঘলা আতকে উঠে, মেঘলা এখনো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে চোখে যা দেখছে তা সত্যি কিনা মস্তিষ্ক দিয়ে বুঝার চেষ্টা কিরছে৷
হঠাৎ শোভন কে জড়িয়েই মেঘলা কেঁদে উঠে বলে,
— ” আমি জানি না তুমি হ্যালুসিনেশন নাকি সত্যি এসেছো৷
সত্যি যদি এসে থাকো প্লিজ যেয়ো না আমি পারছিনা তোমায় ছাড়া থাকতে আর ক্ষনে ক্ষনে শেষ হয়ে যাচ্ছি৷
আমার তৃষ্ণার্ত চোখ আমার বেকুল হয়ে আছে তোমাকে দেখার জন্য৷
আমার হাজারো ভাবনার ভিরে
তুমি আছো এই অবুঝ হৃদয় জুরে❤️”
বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে৷

— ” আমার ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিয়ে
রং তুলি দিয়ে আকবো ছবি
যতন করে বুকের গভীরে লুকিয়ে রাখিবো আপন করি৷ ”
বলেই আবার কোথায় একটা চলে যায়৷
মেঘলা সামনে তাকিয়ে দেখে এবারো কেউ নেই বারান্দায় গিয়েও কাউকে দেখতে পেলো না৷
তাহলে কি এবারও হ্যালুসিনেশন?
কেন এমন হচ্ছে?
মেঘলা আর পারছে না এমন শোভন কে ছাড়া থাকতে৷

নির্ঘুম একটা রাত কাটায় মেঘলা এইসব ভাবতে ভাবতেই৷
এখন হয়তো চাইলেও কিছু ঠিক করা যাবে না, সত্যি হয়তো শোভন ওকে ভুলে গেছে৷ আচ্ছা সত্যি কি ভুলে গেছে?
যে একটা মানুষ কে এমন পাগলের মতো ভালোবাসতো এতো সহজে ভুলে যেতে পারে?
মেঘলা কে ছাড়া কি শোভন ভালো আছে?
হয়তো ভালোই আছে৷

এসব ভাবতে ভাবতেই উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নেয়৷
চোখ যেন বন্ধ হয়ে আসছে ঘুমে, ফোনে এলার্ম দিয়ে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নেয়৷
আজকে কলেজে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে, কাল পরিক্ষাটা দিতে পারেনি৷

মেঘলা উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হয় আজ হায়াত ব্যস্ত তাই একাই যেতে হবে৷


কলেজে আসতেই ঐশীর সাথে দেখা হয়৷
মেঘলাকে দেখে মিষ্টি হেসে জড়িয়ে ধরে, মেঘলাও জোর পূর্বক হাসি টেনে জড়িয়ে ধরে
ঐশী মেয়েটা বরাবরই মিষ্টি একটা মেয়ে আর দেখতেও বাচ্চা বাচ্চা টাইপস সামনের চুল গুলো বাচ্চাদের মতো সবসময় কপালের চারপাশে, সবসময় রাউন্ড একটা হেয়ার ব্যান পরনে থাকে৷
মিনি ফ্রক আর জিন্স প্যান্ট পরনে আর চোখে চশমা৷
ঐশী মুখের হাসিটা গায়েব করে মুখটা অসহায়ের মতো করে বলে,
— “মেঘু জানিস কলেজের পাশে ওই জঙ্গলটায় ভ্যাম্পায়ার আছে৷ ”

ঐশীর কথা শুনে মেঘলা ব্রুটা কিঞ্চিত কুটি করে বলে,
— “ভ্যাম্পায়ার?
মানে?কেন কি হয়েছে?”

কালকে হৃদয় ভাইয়া (হায়াতের আরেক নাম হৃদয়) যে ছেলেদের মেরেছে আজ সেই ছেলেদের লাশ পরে আছে কলেজের ওই পারে জঙ্গলে৷
ঐশীর কথা শুনে মেঘলা কোনো উত্তর না দিয়েই সেইদিকে হাটা দেয়৷

মানুষের ভীরের জন্য দেখতে পারছে না৷
আস্তে আস্তে মানুষ ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখে সত্যি কি বিচ্ছিরিভাবে মারা হয়েছে৷
লাশ গুলোকে দেখেই আকাশের লাশের কথা মনে পরে যায় মেঘলার আকাশেরো এই অবস্থা করেছিলো৷
তাহলে কি শোভন?
সত্যি শোভন এসেছে?

এসব ভাবতে ভাবতেই ঐশী এসে ক্লাসে নিয়ে যায়৷
ক্লাসে এসে মেঘলাকে ভাবনায় মগ্ন হতে দেখে ঐশী বলে,

— “কি ভাবছিস এতো?
আর তখন এমন ছুটে গেলি কেনো?
ঠিকি হয়েছে ছেলেগুলো খুব পাজি ছিলো৷ ”

মেঘলা কাপা কাপা কন্ঠে বলে,
— ” সে এসেছে৷ ”

ঐশী কিছু বলবে এর আগেই প্রিন্সিপালের সাথে কেউ একজন ক্লাসে ঢুকে৷
লোকটি প্রিন্সিপালের পিছনে তাই ঠিক করে দেখতে পারছে না৷

প্রিন্সিপাল বলে,
— “guys let’s get acquainted with ur new teacher,
he is Mr,,,,,

প্রিন্সিপাল এইটুকু বলতেই লোকটি সামনে আসে মেঘলা লোকটির দিকে অবাক হয়ে তাকায়,,,,

চলবে,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৩

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৩ (এক্সট্রা)

প্রায় দুই ঘন্টা সাওয়ারের নিচে থেকে সব ঝাপসা হয়ে গেছে মেঘলার কোনো মতো ড্রেসটা পালটে দরজা খুলে বাইরে আসতেই শরীর আর সায় দিলো না নিচেই ঢুলে পরে গেলো৷
প্রায় তিন ঘন্টা হতে চললো মেঘলার দরজা খোলার খবর নেই এইবার হায়াতের মনে ভয় ঝেকে বসেছে মেঘলা আবার কিছু করে ফেললো না তো?
এসব ভেবে দরজা ভাংতে লাগে৷
দরজা ভেঙে রুমে এসেই দেখে মেঘলা নিচে পরে আছে, সামনে গিয়ে হাত ধরতেই দেখে হাত পা পুরো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে চোখ মুখ ফোলা৷
হায়াত বসে না থেকে মেঘলাকে উঠিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়৷

প্রায় আধ ঘন্টা পর হসপিটালে এসে পৌছায়, ঐশীকে ফোন করে দিয়েছিলো ঐশীও এসেছে৷
মেঘলার বাবা ব্যাবসার প্রয়োজনে বাংলাদেশ গেছে তাই আর ফোন করে নি৷
প্রায়ই সে বাইরেই থাকে নিজের মেয়ে কে ভালো করে সময়ই দেয় না, হায়াত এই চারটা মাস নিজের আপন বোনের মতো আগলে রেখেছে৷
আজ বোনের এই অবস্থা দেখে নিজেই অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে, মেঘলাকে এডমিট করা হয়েছে অনেকক্ষন ভেজার কারনে শরীর নিসক্তি হয়ে গেছে অনেকটা দুর্বল মেঘলা তাই স্যালাইন দেওয়া হয়েছে৷

রাত ১২টা,,,,,,
হঠাৎ কেউ মেঘলার কেবিনে প্রবেশ করে,
এই ঘ্রান যে মেঘলার চিরো চেনা৷ ব্যাক্তিটি কখনো মেঘলার গালে কখনো কপালে ঠোঁট ছোয়াচ্ছে৷
গত চার মাসে এইরকম স্বপ্ন অনেকবার দেখেছে তাই চোখ মেলতে ভয় হচ্ছে যদি আবারো স্বপ্ন হয় তাহলে তো তার প্রিয় মানুষটা কে দেখবে না৷

চোখ বন্ধ রেখে মেঘলা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে আর বলে,
— “প্লিজ শোভন ভাইয়া কোথাও যেও না,
আমি যে তোমায় ছাড়া ভালো নেই৷ ”

বলেই ডুকরে কেঁদে উত্তেজিত হয়ে বসে পরে৷
হঠাৎ কারো ঝাকোনিতে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে হায়াত চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে৷
মেঘলা এবার আরো উত্তেজিত হয়ে যায় তার আশে পাশে যাকে আশা করেছিলো তাকে দেখতে না পেয়ে৷
মেঘলাকে এমন উত্তেজিত হতে কখনোই দেখেনি হায়াত৷
এমন করতে দেখে খুব ভয়ে পেয়ে যায়৷ মেঘলা উত্তেজিত হয়ে হায়াত কে বলে,
— “ভাইয়া শোভন কোথায়?
ও তো এসে ছিলো তাই না?
হ্যাঁ আমি জানি এসেছিলো ও আমায় ছুয়ে ছিলো, ও রাগ করে আছে না আমার উপর? প্লিজ ডাকো ভাইয়া শোভন কে৷ প্লিজ ডাকো৷ ”

হায়াত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
— “শোভন আসেনি৷
শোভন আসবে কি করে?
শোভন তো বাংলাদেশে আছে ও তোকে ভুলে গেছে ৷
তাছাড়া আমি ছিলাম এখানে সেই বিকেল থেকে আমি আর ঐশী এখানেই বসে আছি শোভন আসবে কি করে? ”

হায়াতের কথা শুনে মেঘলা আরো উত্তেজিত হয়ে পরে যার কারনে হাতের ক্যানোলা টান লেগে রক্ত বের হতে থাকে৷
হায়াত দিসে না পেয়ে “চুপ” বলে ধমক দেয় মেঘলা চুপ হয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে ওখানেই ঘুমিয়ে পরে৷

বোন কে এমন করতে দেখে হায়াতের ও অনেক কষ্ট হচ্ছে এক হাত দিয়ে বুকে চেপে ধরে “সরি” বলে আবার ঠিক মতো শুইয়ে দেয়৷

________________

তিনটা দিন কেটে গেছে মেঘলা এখন পুরো পুরি সুস্থ৷
একদিন আগেই মেঘলাকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে৷ কিন্তু মেঘলা আর আগের মতো নেই বেশিরভাগ সময় চুপ চাপ থাকে৷
মেনে নিয়েছে সত্যি হয়তো শোভন ওকে ভুলে গেছে, কিন্তু শোভনের প্রতি ওর ভালোবাসা একটুও কমেনি বরং আরো বেরেছে৷
হায়াত এসে দেখে মেঘলা রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছে৷
হায়াত জানে তার বোনটা কি ভাবছে,
হায়াত মেঘলার সামনে গিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— “মেঘু কলেজে যাবি?”

— “হুম”
মেঘলা ছোট উত্তর দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ব্যাগ টা নিয়ে হায়াতের সামনে দাঁড়িয়ে “চলো” বলে রুম থেকে প্রস্থান করে৷


কলেজে আসতেই মেঘলা গাড়ি থেকে নেমে ক্লাসে উদ্দেশ্যে রওনা দেয়,
মাঠের সামনে আসতেই কিছু ছেলে পথ আটকে দাঁড়ায়৷

মেঘলা রেগে বলে,
— ” why are you standing in front? (সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?)

— “ও বেবি কুল কুল তুমি তো ব্যাঙ্গলি রাইট?”

— “হুম কেন?”

বাকা হেসে বলে,
— “তাহলে তো ফ্রেন্ড হতেই পারি? ”

বলেই হাতটা বাড়ায়৷ মেঘলা কিছু বলছে না ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ছেলেটি আবার বলে,

— ” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
খারাপ মতলব থাকলে ডিরেক্ট এখান থেকে বেডে নিয়ে যেতাম (বলেই চোখ টিপ মারে)
ভালো দেখেই বন্ধুত্ত করতে এসেছি৷ ”
বলেই জোর করে মেঘলার হাত ধরে৷

মেঘলা রেগে কিছু বলবে এর আগেই একটা ছেলে মেঘলার স্কার্ফ ধরে টান দেয়৷
তখনি পিছন থেকে কেউ এসে লাথি মারে ছেলেটিকে৷
মেঘলা উৎসুক হয়ে হাজারো আসা নিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে হায়াত৷
হায়াত মেঘলাকে ইশারা দিকে ক্লাসে যেতে বলে মেঘলা মন খারাপ করে ক্লাসের উদ্দেশ্য পা ফালায়৷
আনমনে হাজারো কথা ভাবতে ভাবতে হাটছে মেঘলা৷
চার তালায় আসতেই হঠাৎ কেউ হেচকা টান দিয়ে অন্ধকার রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে মেঘলার হাত চেপে ধরে৷
ব্যক্তিটি এতোই কাছে যে মেঘলা ব্যক্তিটির শ্বাস প্রশ্বাস হার্ট বিট গুনতে পারবে৷
কিন্তু কে?

চলবে,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১২

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১২

সেদিন মেঘলা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে ওর ফুপির বাড়িতে উঠেছিলো সেখান থেকে পনেরো দিন পর বাবার কাছে UK চলে আসে ফুপাতো ভাই এর সাথে৷

বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে পাখিটাকে নিয়ে ছাদে আসে, এটা ওর নিত্য দিনের কাজ দেশ থেকে আসার সময় টিয়া পাখিটাকেও নিয়ে আসেনি৷
আসার পর পাখিটাকে খুব মিস করতো তাই ওর ফুপাতো ভাই হায়াত ওকে এই পাখিটা কিনে দেয়৷
আজ ২৮ তারিখ বিয়ের আজ পাঁচ মাস পূর্ন হলো৷
শোভন কি ভুলে গেছে মেঘলাকে? এই বিয়ে নামক সম্পর্ক টা কি এমনি থাকবে সারা জীবন?
শোভন আর মেঘলার কি মিলন হবে না?

— “কি ভাবছিস?”
হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে ভাবনার ছেদ পরে মেঘলার৷

পিছনে তাকিয়ে দেখে হায়াত দাঁড়িয়ে আছে৷
হায়াত কে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
— “ভাইয়া আজ এতো তারাতারি যে?”

হায়াত মুচকি হেসে বলে,
— “ভাবলাম আমার মিষ্টি বাচ্চা বোনটা হয়তো একা আছে তাই চলে এলাম৷ ”

মেঘলা ব্রু কুচকে বলে,
— “একা তো আমি প্রতিদিনি থাকি৷
আজ হঠাৎ? ”

— “মেঘু তোকে আমি কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি ফোন তুলছিস না কেন?”

পিছনে তাকিয়ে ঐশীকে দেখে হায়াতের দিকে তাকিয়ে ব্রু কুচকে বলে,
— “ও তাই বলি আজ আমার গুনোধর ভাইয়ের আজ ছোট বোনের কথা মনে পরলো কেন৷
তা ভাইয়া তুমি জানলে কি করে ঐশী আসছে৷ ”

মেঘলার কথা শুনে হায়াত মেঘলার কানে ফিস ফিস করে বলে,
— “চুপ যা না বোন কেন ফাসাচ্ছিস?
তাছারা তোকে না পেয়ে ও মামাকে ফোন করে আর ভুল বসত সেই ফোন আমি ধরি আমিও তোকে ফোন করি কিন্তু তুই ফোন তুলছিলি না তাই ভাবলাম এসেই বলি৷ ”

মেঘলা বাকা হেসে বলে,
— “হ্যাঁ এসে বলা তো বাহানা তুমিতো ওকেই দেখতে এসেছো আমি জানি৷ ”

ঐশী ওদের এমন ফিসফিস করতে দেখে কোমরে হাত দিয়ে বলে,
— “এই তোরা কি বলছিস আমার নামে?
তোর জন্য এমনি অনেক দেরি হয়ে গেছে এখন চল প্লিজ৷ ”

হায়াত বলে,
— “কোথায় যাবি তোরা?”

মেঘলা ভুলেই গিয়েছিলো,
— “আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোকে যে শপিং করতে যাওয়ার কথা বলে এসেছিলাম৷ ভালোই হলো ভাইয়া আছে ভাইয়াও আমাদের সাথে যাবে৷ ”

হায়াতের যাওয়ার কথা শুনে ঐশী চুপসে যায়, এই ছেলে যা ধমক দেয় ওর সাথে কোথাও যেতেই ভয় করে৷
ঐশী মেঘলার সামনে এসে বিরবির করে বলে,
— “হায়াত ভাইয়া যাবে? তাহলে আমার কি দরকার?”

হায়াত ধমক দিয়ে বলে,
— “এতো কথা বলিস কেন? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক? যা গাড়িতে গিয়ে বস আমি আসছি৷ ”
ঐশী যাওয়ার আগে মেঘলা বাকা হেসে নেমে যায়, ঐশী যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তখনই হায়াত হাত ধরে কিছু বলতে গিয়েও ঐশীর ভয়ে চুপসে যাওয়া মুখ দেখে বাকা হেসে ছেড়ে দেয়৷
ছাড়া পেয়ে দৌড়ে নিচে এসে সস্থির নিশ্বাস ছারে৷

নিচে এসে মেঘলা ইচ্ছা করেই ব্যাক ছিটে বসে৷ হায়াত ড্রাইভিং সিটে বসে আছে ঐশী যখন ব্যাক ছিটে বসতে যাবে তখনই হায়াত ধমক দিয়ে বলে,
— “আমি কি তোদের ড্রাইভার নাকি? ”

মেঘলা বলে,
— “ঐশী প্লিজ ফ্রন্ট সিটে বস না আমার ওইখানে বসতে ভালো লাগে না৷ ”

ঐশী বিরবর করে মেঘলাকে কতগুলো বকে ফ্রন্ট ছিটে গিয়ে বসে৷

গাড়ি থেকে চলছে আপন গতিতে হায়াতের ভয়ে ঐশী চুপসে বসে আছে৷
হায়াত ঐশীকে বরাবরই পছন্দ করে কিন্তু ঐশী সব সময় হায়াত কে ভয় পায়, মেঘলা বসে হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনছে৷

বড় শপিংমলের সামনে গাড়ি থামতেই মেঘলা আর ঐশী গাড়ি থেকে বের হয় হায়াত গাড়ি পার্কিং করতে গেছে৷
মেঘলা ঐশীর সাথে দুষ্টামি করতে করতে শপিংমলের ভেতরে ঢুকবে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যায়৷
সেই চিরোচেনা শরীরের ঘ্রান,
সেই স্পর্শ?
মেঘলা হকচকিয়ে উঠে পিছনে তাকাতেই কাউকে দেখতে পায় না৷
কতটা আশা নিয়ে পিছনে তাকিয়েছিলো হয়তো সে এসেছে কিন্তু ধারনা পুরোপুরি ভুল মেঘলার মামি হয়তো কিছু বুঝিয়ে ছেলেকে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছে৷

পুরোটা শপিংমল মেঘলা মন খারাপ করে রেখেছিলো, আর প্রতিটা সময়ই এদিক ওদিক তাকিয়ে ছিলো যদি সত্যি শোভন হয়৷
বাড়িতে এসেই দরজা বন্ধ করে বসে আছে অনেকবার হায়াত ডেকেছে কিন্তু কোনো সারা দেয় নি৷
সাওয়ারের ঝর্নার নিচে নিজের বেহায়া চোখের পানি আড়ালের জন্য ব্যাস্ত হয়ে আছে মেঘলা৷ আজ যেনো চোখের পানি বাধাই মানছে না এই তিন মাসের সব কষ্ট যেনো আজ প্রকাশ হচ্ছে৷

মেঘলা ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বলে,
— ” ভালোবেসে ফেলেছি?
কেন এতো কষ্ট হয় তোমার জন্য?
কেন তোমার কথা মনে পরলে এতোটা কষ্ট অনুভব হয়?
কেন এমন অদ্ভুত অনুভূতি হয়? এ অনুভূতির নাম কি দিবো আমি? ভালোবাসা? নাকি মোহো? না এটা মোহো কি করে হতে পারে?
আজ যে তোমাকে পাওয়ার জন্য বেকুল আমি, তবে কি ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়?
হ্যাঁ সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি নিজের থেকে অনেকটা বেশি, আজ তোমার স্পর্শ পেতে খুব ইচ্ছে করছে যে৷
তোমাকে জরিয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে, শোভন আমি তোমার #তিক্ত_ভালোবাসার মায়ায় ফেসে গেছি৷ খুব বাজে ভাবে ফেসে গেছি৷ আজ নিজের জন্যই নিজে তোমার থেকে এতোটা দূর আজ হারিয়ে খুজছি তোমায়৷
আমি যে চাই তোমায় শোভন, খুব করে চাই নিজের করে চাই৷
তোমার #তিক্ত_ভালোবাসার ভালোবাসা মেশানো শাস্তি গুলোকে আপন করতে চাই৷
কি করে আছো তুমি আমার থেকে দূরে?
আমি সত্যি আর পারছি না, কি করবো এটাও জানি না যে৷ ”

বলতে বলতে মেঘলা ডুকরে কেঁদে উঠে৷
মানুষ হয়তো এমনি যখন যে জিনিসটা নিজের কাছে থাকে তখন তার বা সে জিনিসটার মূল্য দেয় না৷
কিন্তু পরে ঠিকই সে জিনিসটা পাওয়ার জন্য বেকুল হয়ে উঠে৷ আজ মেঘলাও বেকুল হয়ে উঠেছে শোভন কে পাওয়ার জন্য, কিন্তু শোভন?
শোভন কি মেঘলা কে ভুলে গেলো?
প্রায় দুই ঘন্টা সাওয়ারের নিচে থেকে সব ঝাপসা হয়ে গেছে মেঘলার কোনো মতো ড্রেসটা পালটে দরজা খুলে বাইরে আসতেই শরীর আর সায় দিলো না নিচেই ঢুলে পরে গেলো৷

চলবে,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১১

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১১

এখন মেঘলার শোভনের বলা কথাটাই মনে পরছে,
“আমি মরে গেলে খুশি হবে হুর পরি৷ ”

রাজি বেগম মেঘলার সামনে এসে বলে,
— “এখন খুশি হলি তো?
আমাদের বড় ছেলেটাকেও খেয়ে ফেললি, কতই না ভালোবাসতো তোকে কিন্তু তুই?
তুই ছেলেটাকে অবহেলা ছাড়া এই কয়েকদিন কি দিয়েছিস?
এটাই তো চেয়েছিলি তাই না?
কি করেছিলো ছেলেটা, ভালোবেসে জোর করে বিয়েই তো করেছিলো৷ ”

শোভনের মা বসা থেকে উঠে এসে বলে,
— ” কাল সকালেই এখান থেকে চলে যাবি৷
ওইদিন কতই না বুঝিয়েছি তোকে কিন্তু আমার কথার ও মান রাখলি না তুই? তোর জন্যই হয়তো বাইরে গিয়েছিলো তখন এই অবস্থা হয়েছে৷
নাকি তুই মেরেছিস এটা নিয়ে এখন আমার সন্দেহো হচ্ছে৷”

নিজের মামির মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বলে,
— “মামি৷ ”

মেঘলাকে থামিয়ে আবার বলে,
— “যা বলছি তাই করবি, তুই তো চেয়েছিলি এখান থেকে আমার ছেলে থেকে দূরে চলে যেতে কালই এখান থেকে তুই চলে যাবি আমার ছেলে সুস্থ হওয়ার পর যা হবে আমি দেখে নিবো৷ ”

শোভনের বাবা রেগে শোভনের মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
— “কি বলছো এসব?”

শোভনের মা রেগে চোয়াল শক্ত করে বলে,
— “আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি,
এই মেয়ে যদি ওই বাড়িতে যায় তাহলে আমি ওই বাড়িতে যাবো না৷ ”

শোভনের বাবা বলে,
— “তুমি জানো না তোমার ছেলে ওর জন্য কতটা পাগল?
তাও কেনো এমন করছো?”

— “আমি আমার কথা জানিয়ে দিলাম৷ ”

মেঘলা একা বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে,
— ” আমার জন্যই এমনটা হয়তো হলো৷
বিকেলে ওইরকম ভাবে অবহেলা না করলে হয়তো বের হতো না, কিন্তু আমি যতইটাই দূরে দূরে থাকি না কেন এমন টা তো চাই নি৷
তাহলে এমনটা কেন হলো? আমি চাই শোভন ভাইয়া ভালো থাকুক৷
মা মারা যাওয়ার পর শোভন ভাইয়াই একমাত্র মানুষ ছিলো যে এতোটা ভালোবেসে আমায় আগলে রেখেছিলো কিন্তু এই কয়েকটা দিনে সব যেন এলোমেলো হয়ে গেলো৷ ”

হঠাৎ নার্স এর ছুটে আসায় ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে মেঘলা৷
নার্স এসে বলে,
— “আপনাদের পেসেন্ট রেসপন্স করছে৷
কিন্তু কাউকে একটা খুজছে কেউ একজন চলুন৷ ”

মেঘলা উঠে যেতে নিয়েও থেমে যায়, কারন মেঘলাকে শোভনের সামনে যেতে না করেছিলো৷
রেহানা বেগম ডক্টর এর সামনে যেতেই ডক্টর বলে,
— “মেঘলা কে?
পেসেন্ট মেঘলাকে খুজছে৷ ”

ডক্টর কে রেহানা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— “মেঘলা নেই চলে গেছে৷ ”

— “কিন্তু৷ ”

— “আমি যাবো ও সুস্থ হলে আমি বুঝিয়ে বলবো আপাদত আপনি ওকে সুস্থ করুন৷”
ডক্টর কিছু না বলে চলে যায়৷

অন্ধকার রাত পোহাতেই দিনের আবছা আলো ফুটছে৷ তেমন শোভনও অন্ধকার মৃত্যুর মুখ থেকে একটু একটু করে ফিরে আসছে৷

আজান দিতেই হসপিটালে মেয়েদের নামাজের জায়গায় গিয়ে নামাজ পরে কেবিনের বাইরে থেকে এক নজর শোভন কে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে পরে৷
— “হয়তো আর দেখা হবে না, শোভনও হয়তো আর পাগলামি করবে না মায়ের কথা মেনে নিবে৷ সত্যি কি মেনে নিবে? ভুলে যাবে তার হুর পরি কে?
তাহলে এই বিয়ের কোনো ভবিষ্যত নেই?
আমার কাছে তো এই বিয়ের কোনো মূল্যই ছিলো না তাহলে আজ কেন আমি এই বিয়ের কথা ভাবছি?
আমি কি ভুলতে পারবো বিয়ের কথা?
ভুলতে পারবো শোভন ভাইয়ার এই #তিক্ত_ভালোবাসা কথা?
এতোদিন তো এসব আমার ভাবনার বাইরে ছিলো তবে আজ কেন ভাবছি? তাহলেকি শোভন ভাইয়ার #তিক্ত_ভালোবাসা নিকেকে অর্পণ করে দিলাম?
আজ মনের কোনে কেন এমন অদ্ভুত অনুভূতি নারা দিচ্ছে?
এ অনুভূতির নাম কি দিবো? #তিক্ত_ভালোবাসার তিক্ত অনুভূতি? ওর পাগল করা ভালোবাসা কি আমাকেও পাগল করে দিচ্ছে? কিন্তু কি লাভ?
আমার কারনেই হয়তো এই অনুভূতি, এই বিয়েটা সারা জীবনের জন্য দীর্ঘশ্বাস হয়েই রইলো৷ ”

______________________________________

ডাইরিটা বন্ধ করে করে ঐশী মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— ” ইসসস ইয়ার আমার তো শোভন কে দেখতে ইচ্ছে করছে,
তুই কি করে ৪ মাস এই সাইকো কে রেখে এই UK তে আছিস? ইসস আমি তো পরেই ওর উপর ফিদা হয়ে গেছি৷
কিন্তু জানিস ব্যাপার টা কেমন রহস্য রয়ে গেলো, কি হয়েছিলো চার মাস আগে?
কে শোভন ভাইয়াকে গুলি করেছিলো? আর বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিলো?
আচ্ছা মেঘু শোভন ভাইয়াকি জানে তুই UK আছিস তোর বাবার কাছে চার মাস ধরে?
জানলে হয়তো এখানেও এন্ট্রি নিতো যা সাইকো ছিলো৷ ”

ঐশীর কথা শুনে মেঘলা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জোরপূর্বক হাসি টেনে বলে,
— “হয়তো জানে মামি হয়তো সামলে নিয়েছে,
হয়তো আমায় ভুলে গেছে৷
আর ভুলবেই না কেন? আমি কম কষ্ট দিয়েছিলাম?
কতই না অবহেলা করেছি কিন্তু সে যা করেছে আমার জন্য৷
সবার ভালোবাসার ধরন এক হয় না কিন্তু আমি তো ওর ভালোবাসাই বুঝতে পারিনি৷ ”

ঐশী বলে,
— “সত্যি কি তাই?
আচ্ছা মেঘু তুই কি শোভন ভাইয়াকে ভালোবাসিস?

ঐশীর উত্তরে মেঘলা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,
এটা ছাড়া ওর জীবনে আর কিছুই নেই হয়তো৷ নিজের দোষে হারিয়ে এখন নিজেকেই পস্তাতে হচ্ছে৷
না পারছে ঠিক মতো বাঁচতে না পারছে মরতে, সারাক্ষন শোভনের ভালোবাসার স্পর্শ, ভালোবাসায় মাখা কথা সেই তিক্ত শাস্তি যে মেঘলাকে ধাওয়া করে কিন্তু কেন?
কেন ভুলতে পারছে না? তাহলে কি ও নিজেও ভালোবেসে ফেললো?

ঐশী আবার বলে,
— ” শোভন হয়তো জানে না তুই এখানে আছিস৷
জানলে হয়তো UK এন্ট্রি নিবে আবার তোকে শাস্তি দিবে ইসসস আমি তো তখন দেখবো আর শিতি বাজাবো৷ ”
বলেই হাতে তালি দেয়৷

মেঘলা কিছুখন ব্রু কুচকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বিরবির করে ” আই উইস” কথাটা বলে ঐশীর সামনে থেকে প্রস্থান করে

সেদিন মেঘলা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে ওর ফুপির বাড়িতে উঠেছিলো সেখান থেকে পনেরো দিন পর বাবার কাছে UK চলে আসে ফুপাতো ভাই এর সাথে৷

চলবে,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১০

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১০

কোনো রকম ভাবে হাতাটা উঠিয়ে সে জায়গাটা দেখেই বুকের ভেতর ছেত করে উঠে মেঘলার৷ জায়গাটা বেন্ডেজ করা বেন্ডেজের উপর দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে৷
কিন্তু কি হয়েছে?
শার্টের কয়েকটা বোতাম খোলা বাম পাশে কাধ থেকে কিঞ্চিত নিচে আবছা রক্তের দাগ বাকি বোতাম গুলো খুলে যায়গাটা উনমুক্ত করার পর মেঘলা আবার আতকে উঠে অনেকটা কাটা দাগ৷
শোভন বাড়ি থেকে অন্য শার্ট পরে বের হয়েছিলো কিন্তু এই শার্ট শরিরে কেন?
আর কি বা হলো এভাবে হাতে গুলি লেগেছে কি করে?
ও আরো তিন কি চার ঘন্টা আগে বের হয়েছিলো এতোখন কোথায় ছিলো?
ওর তো চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিলো তাহলে?
মেঘলার মাথায় কিছুই ঢুকছে না কি হয়েছেজ রাস্তায় কি কোনো বিপদ হয়েছিলো?
হাতের তালু দিয়েও রক্ত পরছে তখন ফ্লাওয়ার বাস্কটা ভেঙে নিজের হাতে চেপে ধরেছিলো যার কারনে অনেকটা কেটে গেছে৷
শোভনের এমন অবস্থা দেখে মেঘলার বুকের ভেতর কেমন চিন চিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে, কিন্তু কেনো?
শোভনের এই অবস্থায় মেঘলার কষ্ট হচ্ছে কেন?
মেঘলা হন্তদন্ত হয়ে ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে শোভনের রক্ত মুছে দিতে লাগে৷ কিন্তু রক্ত মুছার সাথে সাথে আরো বেরিয়ে আসছে৷ বুকের ক্ষতটা অনেক,
কি করবে মেঘলা বুঝতেই পারছে না৷
ডেস্কের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে শোভনকে পানির ছিটা দিচ্ছে কিন্তু চোখ খুলছেই না৷
মেঘলা ফুপয়ে ফুপিয়ে কাদছে আর বলছে,
— “শোভন ভাইয়া প্লিজ চোখটা খুলো৷ ”

মেঘলা এতো ডাকছে তাও শোভন চোখ খুলছে না৷ আবারো পানির গ্লাসটা নিয়ে পানির ছিটে দেয় কিন্তু কিছুই হচ্ছে না৷
এখন কাউকে ডাকতে হবে একা কিছু করতে পারছে না৷ মেঘলা ছুটে বাইরের দিকে যেতে নিলেই ওর ওরনায় টান পরে পিছনে তাকিয়ে দেখে শোভন ধরে আছে৷
চোখ পুরোপুরি খোলা না হাত দিয়ে ধরে আছে৷

শোভনের সামনে গিয়ে বসে বলে,
— “ভ ভাইয়া কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার?
বলো প্লিজ৷ ”

শোভন চোখ বন্ধ রেখেই জোর পূর্বক হাসি টেনে বলে,
— ” আমি মরে গেলে খুশি হবে হুর পরি?”

শোভনের এমন কাপা কাপা কন্ঠে এমন কথায় ধক করে উঠে বুকটা,
পুরো শরীর কেপে উঠে৷
শোভন আবার বলে,
— “আমি তো তোমায় এতোদিন কতই না কষ্ট দিলাম,
এই জন্য আজ আমার থেকে পালাতেও চাইছিলে তাই না?
চিন্তা নেই আর পালাতে হবে না৷
আমারি হয়তো আর বাচা হবে না এবার তুমি মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে উরতে পারবে বাধা দেওয়ার জন্য এই শোভন থাকবে না৷
এতো দিন তোমাকে অনেক মেরেছি পারলে ক্ষমা করে দিও৷ ”

শোভন একটু থেমে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে দেখিয়ে আবার বলে,
— ” অনেক কষ্ট হচ্ছে ঠিক এইখান টায়৷
তবে কষ্টটা এই ছুরি দিয়ে আঘাত করা এই দাগের নয় কষ্টটা তোমার দেওয়া৷
কেন যানো?
আমি খুব ভরসা করে তোমাকে এখানে রেখে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম৷ কিন্তু আমার ভরসা পুরো পুরি ভুল ছিলো৷
যাওয়ার আগে ভেবেছিলাম হয়তো আমার হুরপরি আমার রাগ গুলোকে আপন করতে শিখছে৷
আমার হুর পরি পালাবে না৷
কিন্তু আমি সম্পুর্ন ভুল ছিলাম তুমিতো কখনো আমাকে ভালোই বাসো নি হয়তো আর বাসবেও না তাই না?
তবে যে এই গুলিটা আর ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে সে অজান্তেই আমার অনেক উপকার করলো৷
এইসব না করলে হয়তো বাড়িতে আসতে পারতাম না আর তোমায় আটকাতেও পারতাম না৷
খুব ইচ্ছে ছিলো তোমায় নিয়ে বাচার জোর করে হলেও তোমাকে নিজের কাছে রাখতাম৷ হয়তো তা আর হওয়ার নয়৷
আমি যদি মরে যাই তুমি মুক্ত৷
কিন্তু কোনো মতে আমি যদি বেচে যাই তবে তোমাকে যে আবার আমার যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে হুর পরি৷ ”

বলেই বাকা হেসে শোভন আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে৷
মেঘলা এক ধ্যানে কথা গুলো শুনছিলো হঠাৎ থেমে যাওয়ায় শোভনের দিকে তাকায় দেখে শোভনের কোনো সারা শব্দ নেই৷
আবার পানির ছিটে দেয় কিন্তু না মেলছে না৷ হাতের থেকে অনেকটা রক্ত ক্ষরন হচ্ছে এখনো৷
মেঘলা শোভনের মুখ চাপরে বলে,
— “শোভন ভাইয়া চোখ খুলো৷
প্লিজ চোখটা খুলো৷ ”

শোভন আর এবার চোখ খুলছে না৷ তাহলে কি শোভনের কিছু হয়ে গেলো?
মেঘলা ছুটে বাইরে বেরিয়ে শোভনের মা আর বাবা কে ডাকতে লাগে৷ কিন্তু পরক্ষনেই মনে পরে বাড়িতে তো কেউ নেই৷
কি করবে একা এখন?
মেঘলা ড্রাইভ ও ভালো পারে না৷
নিচে গিয়ে ড্রাইবারকে ডেকে তুলে গাড়ি বের করে উপরে আসতে বলে৷
উপরে এসে দেখে আরো বেশি রক্ত পরছে৷

অপরেশন থিয়েটারের সামনে মেঘলা পাথরের ন্যায় বসে আছে৷
কি হয়ে গেলো কিছু জানে না৷
বাড়ির সবাইকে ফোন করেছে তারা আশ্রম থেকে বেরিয়েছে৷


শোভনের মা আসতেই কান্নাকাটি জুরে দিয়েছে৷
রাজি বেগম মেঘলার আসার পর থেকেই ঠেস মেরে মেরে কথা বলছে৷ বাড়ির সবাই বসে আছে৷
মেঘলা দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে৷

দীর্ঘ চার ঘন্টা পর অপরেশন থিয়েটার থেকে চিন্তিত মুখ নিয়ে বেরিয়ে আশে ডক্টর৷
ডক্টর কে দেখেই শোভনের বাবা বলে,
— “আমার ছেলে ঠিক আছে?”

ডক্টর গম্ভীরমুখে বলে,
— ” হাত আর বুক থেকে অনেকটা রক্ত ক্ষরন হয়েছে যার কারনে এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না৷
আদৌ কি বাচাতে পারবো কি না এটা নিয়েও বেস সন্দেহে আছি৷ আপাদত আইসিইউতে সিফট করে দিচ্ছি৷ ”

বলেই ডক্টর অন্য দিকে চলে যায়৷ মেঘলা দাঁড়ানো থেকে ফুপিয়ে কেদে উঠে সেখানেই বসে পরে৷
এখন মেঘলার শোভনের বলা কথাটাই মনে পরছে,
“আমি মরে গেলে খুশি হবে হুর পরি৷ ”

চলবে৷

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-৮+৯

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ০৮

শোভন মেঘলার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,
— “খাবারটা খেয়ে রেডি হয়ে নাও তারাতারি৷ ”

মেঘলা এক রাশ বিরক্ত নিয়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়৷
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে শোভন খাবার নিয়ে বসে আছে,
শোভন মেঘলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— “পাখি কাম ফাস্ট৷
দেরি হয়ে যাবে এখান থেকে গিয়ে আবার এয়ারপোর্ট এ যেতে হবে৷ ”
মেঘলা ইচ্ছা না থাকা শর্তেও শোভনের সামনে গিয়ে বসে৷


বাড়িতে এসেই দেখে কয়েকটা কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই, সবাই আশ্রমে গেছেন আজ কেউই আসবে না বাড়িতে শোভনের বাবা ছাড়া৷
রুমে গিয়ে মেঘলা ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় চলে যায় আপাদত শোভনের সামনে থাকতে বিরক্ত লাগছে৷
যেই মানুষটার জন্য এতোদিন মনে শ্রদ্ধা ছিলো সেই মানুষটার জন্য মনে এখন শুধু ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই নেই৷
শোভন রেডি হয়ে লাগেজ গুছিয়ে বারান্দায় গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— “এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে?”

মেঘলা জাঝালো কন্ঠে বলে,
— “তো কি করবো?”

শোভন, মেঘলার হাত ধরে রুমে নিয়ে এসে বিছানার এক কোনে বসিয়ে ও নিজে হাটু গেরে মেঘলার সামনে বসে বলে,
— “আমি জানি তুমি আমায় একটুও সহ্য করতে পারো না!!
কিন্তু আমি তো তোমায় খুব ভালোবাসি,
যাওয়ার সময় এভাবে মুখ ঘুরিয়ে রাখলে কি ভালো লাগে?
দু-দিন বাড়িতে থাকবো না নিজের খেয়াল রেখো৷ আর দু-দিন কলেজে যাওয়া লাগবে না, বাড়ি থেকে একদম বের হবে না বুঝলে?”
বলে মেঘলার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে উঠে বেরিয়ে যায়৷

১ঘন্টা হয়েছে শোভন বেড়িয়েছেন বাড়ির কাজের লোক গুলো ও নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত আপাদত মেঘলার বের হওয়ার রাস্তা খালি৷
একটা ব্যাগে কয়েকটা জামা নিয়ে রুমে এদিক ওদিক পাইচারি করছে মেঘলা আর ভাবছে
“বাড়ি থেকে বের হয়ে কোথায় যাবে?”
হাতে টাকাও নেই বেশি আছে প্রিয়ার বাড়ি অব্দি যেতে পারবে৷
প্রিয়া কি কোনো সাহায্য করবে?
আবার যদি প্রিয়ার কথা শোভন জানতে পারে তাহলে প্রিয়াকেও ছাড়বেনা৷
আগেরবার ওর জন্যই প্রিয়া প্রব্লেমে পরেছিলো এইবার হয়তো ছাড়বে না, কি করবে এখন?
মেঘলা কিছু আর ভাবতে পারছে না উশখুশ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে৷ মেইন গেট পেরিয়ে যখনি রিক্সায় উঠবে হঠাৎ কেউ পিছন থেকে এসে চুলের মুঠি ধরে ঘুরিয়ে গালে স্ব-জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় গালে৷
যার কারনে ছিটকে গিয়ে মেইন গেটের কোনায় লাগে আর মাথার কোনে লাগে৷
মেঘলা গালে হাত দিয়ে পিছে মুড়ে তাকাতেই আতকে উঠে৷
শোভন দাঁড়িয়ে আছে চোখ মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে, হাতের লাগেজটা ছুরে বাড়ির ভেতর ফেলে মেঘলার হাত ধরে রুমে এনে ছিটকে ফেলে৷

মেঘলা রাগি গলায় বলে,
— “যেতে দাও আমায়৷ ”

মেঘলার মুখ চেপে ধরে বলে,
— ” যেতে দাও মানে কি?
কোথায় যাচ্ছিলি? বলেছিলাম এমন দূর সাহস কখনো দেখাতে না বলে ছিলাম?”

কথাগুলো চেচিয়ে বলায় কেঁপে উঠে মেঘলা, শোভন মেঘলাকে হাত ধরে উঠিয়ে নিজের সামনে দার করিয়ে বলে,
— “কোথায় যাচ্ছিলি?
কার কাছে? আবার ওই প্রিয়ার কাছে?
নিজের ভুলের কারনে ওই মেয়েটার বড্ড ক্ষতি করে ফেললি৷ ”

মেঘলা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
— “ক কি ক করবে ওর?”

শোভন মেঘলাকে ছেরে বাকা হেসে বলে,
— “আচ্ছা প্রিয়ার কয়েকদিন পর বিয়ে না?
যদি বিয়ের আগেই বিয়েটা ভেঙে যায় তাহলে? তাহলে খুব ভালো হবে তাই না?
আচ্ছা রাস্তায় বের হলে যদি এমন কিছু হয় যেন পরবর্তীতে আর না বের হতে পারে তাহলে?”

মেঘলা ভয়ে ভয়ে বলে,
— “এ এসব ক কিছু ক করবে না তুমি,
আমি তো ভুল করেছি আমাকে শাস্তি দেও তাহলে ওর সাথে এমনটা করবে কেন?
ও তো কিছু করেনি৷ ”

শোভন কিছু বলছে না হাতে একটা বলের মতো কিছু একটা নিয়ে সোফায় বসে আছে আর ওইটা ঘুরাচ্ছে৷
মেঘলা হঠাৎ করে একটা ভয়ংকর কথা বলে উঠে যা শোভন শুনে এর থেকেও হাজার গুন বেশি রেগে গেছে৷
মেঘলা বলে,
— “আমি ডিভোর্স চাই,
আমি তোমায় ভালোবাসি না আর তোমার মতো সাইকোর সাথে থাকা আমার সম্ভব না৷
আর যা শাস্তি দেওয়ার দাও আমি তাও তোমার থেকে মুক্তি চাই৷ ”

শোভন উঠে মেঘলাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে জোরে জোরে অনেক গুলো থাপ্পড় দেয় যার কারনে মেঘলার ঠোঁটের কোনে কেটে রক্ত বের হচ্ছে তাও শোভনের হুস নেই এখনো মারছে৷
মেঘলা ডুকরে কাঁদছে আর বলে,
— “লাগছে আমার শোভন ভাইয়া৷ ”

মেঘলার কথায় শোভনের হুস আসে নিজেকে কিছুটা সামলে মেঘলার সামনে থেকে সরে হাতের সামনে ফ্লাওয়ার বাস্কেটটা ভেঙে নিজের হাতে চেপে ধরে৷

চলবে,,,,,,

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ০৯

মেঘলার কথায় শোভনের হুস আসে নিজেকে কিছুটা সামলে মেঘলার সামনে থেকে সরে হাতের সামনে ফ্লাওয়ার বাস্কটা ভেঙে নিজের হাতে চেপে ধরে৷
শোভনের হাত দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে সেইদিকে খেয়ালি নেই তার৷ মেঘলা গুটিশুটি মেরে এক কোনে বসে আছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে৷
শোভন মেঘলার সামনে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে,
— “স্টপ ক্রাইং মেঘলা৷ ”

শোভনের কথা মেঘলার কান অব্দিও পৌছাচ্ছে না৷
শোভন আবার বলে,
— “আই সেইড স্টপ ক্রাইং,
কাঁদছো কেন?”

শোভন মেঘলার দিকে গেলে মেঘলা ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে৷
মেঘলার ভয় পাওয়া দেখে শোভন বলে,
— ” যখন পালাচ্ছিলে তখন মনে ছিলো না এই ভয়ের কথা?
তুমি জানতে না তুমি যেখানেই যাও সেখান থেকে আমি তোমায় খুজে বের করবো?”

মেঘলা এখনো ভয়ে মাথা নিচু করে আছে৷ শোভন সামনে গিয়ে মেঘলার হাত ধরে নিজের কাছে এনে কোমর চেপে ধরে বলে,
— “কেন পালাচ্ছিলে?
আচ্ছা তুমি কি সব সময় আমার রাগ, হিংস্রতা এইসবি দেখতে পাও?
আমার ভালোবাসাটা তোমার নজরে আসে না? ”

মেঘলা এবার রেগে অন্যদিকে মুখ করে বলে,
— “ওইটা তোমার ভালোবাসা না মোহ,
ভালোবাসা হলে কখনো কষ্ট দিতে না আমায় কাউকে খুন করতে না৷
ভেবেছিলাম তুমি সেই আগের মতো নেই বড় হওয়ার পর পালটে গেছো কিন্তু ধারনা ভুল তুমি একি আছো৷ ”

শোভন মেঘলার দিকে ছলছলে চোখে তাকিয়ে বলে,
— ” মোহো?
তোমার এতো দিনে এটা মনে হলো?
সত্যি কি তাই?
মেয়েরা নাকি অদ্ভুত ধাচের হয় কেউ যদি তাদের দূর থেকে দেখে, তারা নাকি বুঝতে পারে৷
কিছু বলার আগেই নাকি তারা চোখের ভাষা বুঝতে পারে৷
কিন্তু তুমি?
চোখের ভাষা পরতে জানো? আমার চাওনিতে বোঝোনা তোমায় কতটা চাই আমি? আমার শাসনে ভালোবাসা খুজে পাও না?
আর্তনাদ দেখতে পাওনা?
তোমাকে পাওয়ার তীব্র আর্তনাদ৷ জ্বলন্ত শিখার মতো দাহ হচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে আমার মন!!
তোমাকে পাওয়ার তৃষ্ণা যে নেশা রুপ ধারন করেছে প্রখোপ নেশা মাদকের চাইতেও এ নেশা বিচ্ছিরি তোমার নেশা প্রতিক্ষন ধাওয়া করে যাচ্ছে আমি যে চাই তোমায় নিজের করে আপন করতে৷
ভালোবাসি কতটা তা কখনো পরিমাপ করা হয়নি কিন্তু এটা জানি আমি তোমায় ভালোবাসি৷
খুব বেশি ভালোবাসি যতটা এখনো নিজেকে বাসিনি তার চাইতে হাজার গুন৷
আর খুনের কথা বলছো? হ্যাঁ আমি খুনি আমি খারাপ তোমাকে একান্ত নিজের করে পাওয়ার জন্য হাজার বার খুনি হতে বাধ্য৷
তোমাকে নিজের কাছে বেধে রাখতে আমি খারাপ হতে বাধ্য৷
তোমার মন, শরীরে শুধু আমার ছোয়া থাকবে গভীর ভালোবাসার পবিত্র ছোয়া৷ তোমার মনে, তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিটা শিরায় উপশিরায় শুধু আমার নাম থাকবে৷ তুমি সর্বোক্ষন আমাতেই মেতে থাকবে কেননা তুমি একান্ত আমার৷
এর মাঝে যদি কেউ আসে তাহলে খুন করতে দু-বার ও ভাববো না৷

বলার পরই শোভন দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলে,
— ” আর কি বললে একি আছি? হ্যাঁ একি আছি আর থাকবো৷
আমি তো পালটে গিয়েছিলামি কিন্তু আবার তুমি তোমার ভয়ংকর মায়ার জড়িয়েছো৷
তুমি জানোনা তুমি আমায় কি ভয়ংকর মায়ায় জড়িয়েছো, আমি চেয়েও তোমার থেকে দূরে থাকতে পারিনি তুমি নিজ থেকে আমায় তোমার মায়ায় জড়িয়েছো৷
ছোট বেলা থেকেই তোমার কাছে কাউকে ঘেসতে দিতাম না,
তখন থেকেই তুমি আমার অন্য রকম নেশা ছিলে৷
সেদিন আকাশ তোমাকে ছোয়ার কারনে ছাদ থেকে ফেলে পা ভেঙে দিয়েছিলাম৷ দিন দিন তোমার জন্য আমার পাগলামি বারার কারনে US পাঠিয়ে দেয় আমায়৷
কিন্তু দেশে আসার পর তো তোমার থেকে দূরে দুরেই ছিলাম।
তুমি তো আমার কাছে আসতে দেশে আসার পর বৃষ্টিতে ভিজে লজ্জা মাখা চাওনি দিয়ে যখন আমায় জড়িয়ে ধরেছিলে সেদিন আবার নতুন করে তোমার নেশায় আসক্ত হই তোমার তিক্ত নেশা৷
কিন্তু আকাশ আবার সেই একি ভুল করে তোমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করে এবার ওকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না৷
তাই মেরেই দেই৷
এখন তুমি চাইলেও তোমাকে আমার কাছে থাকতে হবে না চাইলেও আমার কাছে থাকতে হবে৷
এখন থেকে তোমার সকাল শুরু হবে আমার #তিক্ত_ভালোবাসা দিয়ে,রাত পোহাবে আমার #তিক্ত_ভালোবাসা দিয়ে৷
বলেই মেঘলার কপালে ঠোঁটের পরশ দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়৷

মেঘলা থম মেরে বসে আছে৷ সত্যি তো তাই তাহলে কি এটাই মেঘলার জীবনের তিক্ত সত্যি? এ #তিক্ত_ভালোবাসা নিয়ে সারা জীবন থাকতে হবে?
খুনির সাথে থাকতে হবে?
কি করবে মেঘলা? এ #তিক্ত_ভালোবাসা মায়ায় নিজেকে শোভনের মায়াবতী করে তুলবে? নাকি অন্য কিছু?
আদৌ কি মেঘলা কখনো ভালোবাসতে পারবে শোভন কে?
নাকি সারাজীবন এমন ঘৃনাই করে যাবে?

এক এক জনের ভালোবাসার ধরন এক এক রকম৷
কেউ বা ভালোবাসার মানুষ কে ভালো থাকতে দেখে নিজের মনকে খুশি করে, কেউ বা নিজের জোর জবরদস্তিতে ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে রেখে নিজের মন কে খুশি করে৷
মনের পিপাসা বড় পিপাসা মন যা চায় তা না পেলে তৃষ্ণার্থ হয়ে থাকে৷
ভালোবাসা হলো মনের তৃষ্ণা মোচন করার এক মাত্র দিক৷ শোভন তার মনের পিপাসা মোচনে ব্যাস্ত মেঘলা কে যে বড্ড বেশি ভালোবাসে৷
ভালোবাসাটা হিংস্র হোক না সহজ তরো যেমনি হোক ভালোবাসাতো?

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে মেঘলা এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে৷
মেঘলাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলে,
— ” আচ্ছা আমাকে কি ভালোবাসা যায় না?
আমাকে একটু বিশ্বাস করা যায় না?
একটা বার ভালোবেসে দেখো তোমার ভালোবাসায় মাখানো প্রতিটা আবদার আমি পুরোন করবো তুমি যা চাও তাই হবে৷
তুমি যেভাবে করবে সেভাবেই হবে, যা বলবে সব করবো শুধু আমার কাছে থেকো৷
আমি জানি আমি অনেক খারাপ৷
এই খারাপ মানুষ টা কে একটুও ভালোবাসা যায় না?
আমি জানি আমি খুনি তাও তোমায় নিজের সবটা জুরে ভালোতোবাসি তাই না?
আমাকে তুমি নিজের ভালোবাসা দিয়ে নিজের করে নিতে পারবে না?
আমার কথা গুলো রাখতে পারবে না? তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমার রাগ গুলো ঠিক করতে পারবে না?
ভালোবাসি বলেই তোমার আশে পাশে কাউকে দেখতে পারি না৷
ভালোবাসি বলেই তোমাকে কেউ ছুবে তা সহ্য করতে পারি না,
আমি জানি হয়তো ভালোবাসতে সময় লাগবে অনেকটা সময়৷ যত না দিন নিজ মুখে ভালোবাসার কথা বলবে ততোদিন আমি তোমায় স্পর্শ করবো না৷
স্বামীর অধিকার চাইবো না৷
আই ওয়ান্ট ইউ হুর পরি, খুব করে চাই তোমায় আমার পথ চলার সাথি হিসেবে চাই

আমার ভালোবাসার পরি হিসেবে চাই৷ প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিও না৷ আমি যা করি সব তোমাতে ঘিরেই তবুও কেন বুঝোনা?
আমার কষ্ট কেন বুঝ না?
আমারো যে কষ্ট হয়, আমিও মানুষ৷ তোমার এ দূরে দূরে থাকা আর সহ্য হয় না৷
প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিও না৷
আমি যে এক ভালোবাসার পিপাসু পথিক৷ এ ব্যাস্ত শহরের নিস্তব্দ হাওয়ার
শূন্য বেড়াজালের পিপাসু পথিক আমি৷
তুমি আমার হয়েও আমার না৷ কাছে থেকেও হাজার গুন দূরে৷
খুব কষ্ট হচ্ছে হুর পরি তোমায় ছাড়া আমি সত্যি পারবো না বেঁচে থাকতে, আমার যে খুব করে প্রয়োজন তোমাকে ভালোবাসি যে খুব৷

কথাগুলো বলতে বলতে শোভনের চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গরিয়ে পরে৷ হঠাৎই মেঘলার বুকে ঢলে পরে৷ আচমকা এমন হওয়ায় মেঘলা ভয় পেয়ে যায় পরক্ষনে তাকিয়ে দেখে শোভন জ্ঞান হারিয়েছে৷
কপালে হাত দিয়ে দেখে অনেকটা জর এসেছে হাত দিয়েও অনেকটা রক্ত গরিয়ে পরছে৷
মেঘলা কিছু না ভেবে কোন মতো বিছানায় শুইয়ে ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে আলতো ভাবে ফু দিতে দিতে হাতে সেভলন লাগিয়ে ব্যন্ডেজ করে দেয়৷
এমন মনে হচ্ছে ব্যাথাটা শোভন পায় নি মেঘলা পাচ্ছে৷
থার্মোমিটার টা নিয়ে শোভনের মুখের ভিতরে দেয় কিছুক্ষন পর দেখে খুব জ্বর ১০৩ প্রায় মেঘলা কেমন ছটফট করছে এমন কেন করছে সে নিজেও জানে না৷

কি করবে বুঝতেও পারছে না ব্যান্ডেজের উপর দিয়েও রক্ত পরছে, প্রায় অনেকটা কেটে গেছে৷ হঠাৎ হাতের একেবারে উপরে চোখ যায় সেখানেইও কেমন রক্ত লেগে আছে৷
কোনো রকম ভাবে হাতাটা উঠিয়ে সে জায়গাটা দেখেই বুকের ভেতর ছেত করে উঠে মেঘলার৷

চলবে কি?🙄

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০৭

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ০৭

শোভন ঠিক করে শুয়ে মেঘলার মুখ মুছে কপালে, গালে, ঠোঁটে অজশ্র চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পরে৷

রাত ৩টা ছুই ছুই
মেঘলা গভীর ঘুমে মগ্ন, শোভনের বুকে শান্তির ঘুম দিচ্ছে৷
ভুলেই গেছে হয়তো এ মানুষটা কে যে সন্ধ্যা বেলায় ও কত বকা বকি করলো৷
শোভন খুব সাবধানে মেঘলাকে বুক থেকে সরিয়ে ড্রয়ের থেকে ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে আস্তে আস্তে মেঘলার পেটের রক্ত গুলো মুছে দেয়৷
খামছে ধরায় খুব বাজে ভাবে কেটে গেছে৷ রক্তটা মুছে গভীর ভাবে পেটে ভালোবাসার পরশ এনে দিয়ে ফোন টা নিয়ে বারান্দায় চলে যায়৷

বারান্দায় এসে কাউকে ফোন করে ফোন তুলতেই বলে,
— “কোথায় আছিস? যা বলেছি কাজ হয়েছে?”

— “হ্যাঁ বস আপনি চলে আসুন৷ ”

শোভন ফোন টা রেখে বারান্দা থেকে মেঘলার সামনে এসে ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলে,
— “ভালোবাসি হুর পরি,,,,,,,,৷ ”

বলে মেঘলার উপর কিছু একটা স্প্রে করে, ঠোঁটে আলতো চুমু দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে কোথাও একটা চলে যায়৷

______________________

রকিং চেয়ারে রিভালবার হাতে নিয়ে সামনে থাকা টেবিলে পায়ের উপর পা রেখে বসে রিভালবার টা মাথায় ঘসছে৷
মুখে বাকা হাসির রেখা চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে৷
পাশেই দাঁড়িয়ে আছে অহিল ওর মুখেও বাকা হাসি৷
ওহিল শোভনের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হলেও ওদের মধ্যে বন্ডিং অনেক ভালো৷
সামনে দুপুরের সেই তিনটে ছেলে বসে আছে হাত পা বাধা৷

শোভন উঠে ছেলেটির মাথায় রিভালবার চেপে ধরে বলে,
— “তুই আমার হুর পরিকে ছুতে গিয়েছিলি তাই না?”

ছেলেটি ভয়ে কাতর হপ্যে বলে,
— “স সরি ব বস আ আমি জ জানতাম না ও আপনার বউ হয়৷ ”

সেই ছেলেটিকে থামিয়ে পাশের অন্য ছেলেটি বলে,
— “আরে থাম তুই,
কি করবে ও? হাতটা খুল দেখ কি করছি৷
আজতো ছেড়ে দিয়েছি আরেকদিন সামনে আসলে ওই মেয়েকে ভোগ করবো৷ ”

ছেলেটি এই কথাটি বলতে দেরি হলেও শোভন মুখের ভিতর রিভালবার টা ঢুকিয়ে শুট করতে দেরি হয়নি৷
মুখের ভিতর কয়েকবার শুট করে পাশের অন্য ছেলেটি চোখে দুইটা গুলি শুট করে৷ দুই জনের এই অবস্থা দেখে সেই ছেলেটি থর থর করে কাপছে৷
শোভন বাকা হেসে সেই ছেলেটিকে বলে,
— “ভয় করছে?”

ছেলেটি মাথা দুলিয়ে “হ্যাঁ ” বোধক উত্তর দেয়৷
শোভন বাকা হেসে অহিলকে কিছু ইশারা, করে অহিল এ এসে ছেলের হাত পায়ের বাধন খুলে দেয়৷
শোভন ছেলেটিকে বলে,
— “ভয় পেয়েছিস, ভেরি গুড
ওকে যা তোকে ছেড়ে দিলাম ১০ সেকেন্ড সময় দিলাম এখান থেকে দরজা অব্দি যেতে পারলে শুট করবো না৷
কাউন্ট ডাউন শুরু৷ ”

বলেই রিভালবার টা নিচে ফেলে উল্টো দিকে ঘুরে গুনতে থাকে৷
— “৯, ৮, ৭, ৬, ৫, ৪, ৩, ২, ১,,,,,,, ”

বলেই ঘুরে নিখুত ভাবে ছেলেটির বুকে শুট করে৷
কারন ছেলেটি যাওয়ার সময় নিচ থেকে রিভালবার টা নিয়ে গিয়েছিলো৷
আর শোভন যানে এটাই করবে৷
কয়েকটা গুলি শুট করার পর ছেলেটার সামনে গিয়ে বাকা হেসে বলে,
— “বাহ তোকে পালাতে দিচ্ছিলাম আর তুই কিনা আমাকেই শুট করতে চেয়েছিলি?”

উঠে অহিলকে ইশারা করতে অহিল কাচের বোতলে কিছু একটা নিয়ে এসে ছেলেটার শরীরে ঢেলে দেয় আর ছেলেটি কাতরাতে থাকে৷
কিছুক্ষন পর দুজনেই এখান থেকে বেরিয়ে চলে যায়৷
বাড়িতে এসেই শার্টটা চেঞ্জ করে খুব সাবধানে ওয়াশরুমে গিয়ে শার্টটা পুরিয়ে দেয়৷
ফ্রেশ হয়ে এসে মেঘলাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরে৷

চোখে রোদের আলো পরতেই আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠে মেঘলা৷
সামনে তাকিয়ে দেখে শোভন এখনো ঘুমাচ্ছে,
চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে খোচা খোচা দাড়ি গুলো একটু বড় হয়েছে ঠোঁটটা বরাবরের মতোই গোলাপি হয়ে আছে মেঘলা কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে উঠে বাইরে চলে যায়৷


বারান্দায় কার্নিশ ঘেষে দাঁড়িয়ে বারান্দার রেলিং থেকে ধোয়া উঠা কফির মগটায় চুমুক দিচ্ছে আর কোলাহল মুক্ত গ্রাম্য পরিবেশটা গেখছে৷
ঢাকার ধুলোবালি আর কোলাহল ছেড়ে গ্রামের ভিতরটায় বাড়িটা৷
বাড়ির পাশেই বড় রকটা পুকুর, পুকুরে অনেকগুলো হাস এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে পাশেই একটা কাঠবেলি গাছ৷ এর পাশেই শিউলি ফুল আর কদম ফুল গাছ কদম গাছটা দু একটা ছোট ছোট কদম মাত্র হয়েছে৷
বারান্দার পাশ ঘেষেই একটা আম গাছ বেশ বড় গাছ টা৷
ঘড়িতে সারে এগারোটা বাজে বাইরে অনেক রোদ এই রোদের মাঝেও গাছ গুলো থেকে ঠান্ডা বাতাস আসছে৷
সব মিলিয়ে মন মেজাজ আজ ফুর ফুরে৷
ওর মুডে এক বালতি ড্রেনের পানি ঢেলে দিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো শোভন৷
ঠোঁট দিয়ে ঘারে স্লাইড করাতে প্রত্যেক বার কেপে কেপে উঠছে তাও দাতে দাত চেপে আছে কিছু বলছে না মেঘলা৷

আজ নিজ থেকেই ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না তাও বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে উঠে,
— “ছারো শোভন ভাইয়া অসস্থি হচ্ছে৷ ”

মেঘলা কথা যেন শোভনের কান অব্দি পৌছালেও মস্তিষ্ক অব্দি গেলো না আরেক কান দিয়ে বেড়িয়ে গেলো৷
মেঘলা কিছু বললো না চুপ করে আবার বাইরে তাকায়৷
শোভন মেঘলার শাড়িটা কিঞ্চিত উঠিয়ে শাড়ি নিচ দিয়ে মুক্ত পেটে হাত দেয়,
তাতে মেঘলা শিউরে উঠে শোভনের হাত কিছুটা খামছে ধরে বলে,
— “প্লিজ ছারুন ভালো লাগছে না আমার৷ ”

এবারের কথাটা মস্তিষ্ক অব্দি গেলেও শোভন নেশাক্ত কন্ঠে বলে,
— “হুর পরি প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!!
আমাকে আমার কাজ করতে দাও৷৷৷ ”

— “ছারুন প্লিজ৷ ”

মেঘলা ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলেই হাত দিয়ে আটকিয়ে সোজা পাজ কোলে নিয়ে বিছানায় যেতে যেতে বলে,
— ” বলেছিলাম ডিস্টার্ব করো না,
কিন্তু শুনলে না এবার শাস্তি দিবো৷ ”

মেঘলা কাপা কাপা গলায় বলে,
— “ক কি শ শাস্তি?”

শোভন বাকা হেসে বলে,
— “শাস্তি এই যে আমি যতক্ষন না চাইবো বিছানা থেকে উঠতে পারবে না৷
আমি একটু আদোর করে তোমাকে জড়িয়ে একটু ঘুমাতে চাই৷ ”

মেঘলা কিছু বলবে এর আগেই শোভন বলে,
— “প্লিজ না করো না, আই নিড এ ডিপ স্লিপ৷ ”

মেঘলা আর কিছু বললো না৷
শোভন মেঘলাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মেঘলার শরিরে আধ ভর দিয়ে মেঘলার গলায় মুখ গুজে এমতাবস্থায় মেঘলার শ্বাস বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম গলায় অনবরত ঠোঁট ছোয়াচ্ছে যার কারনে আরো অসস্তি হচ্ছে৷
কিছুক্ষন পর শোভন শান্ত হয়ে যায় মেঘলা তাকিয়ে দেখে শোভন ঘুমিয়ে পরেছে৷
কিছুক্ষন পর মেঘলার ও চোখ লেগে আসে৷

শোভনের আলতো ডাকে ঘুম ভাঙে মেঘলার,
তাকিয়ে দেখে শোভন মেঘলাকে ডেকে আয়নার সামনে চুল আচরাচ্ছে আর বলছে,
— “হুর পরি!!
রেডি হয়ে নাও দেরি হয়ে যাচ্ছে রাত ৮ টায় ট্রেন আছে৷ ”

— “কোথায় যাচ্ছি আমরা?
আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না৷ ”

শোভন মুচকি হেসে বলে,
— ” রিলেক্স!!
তুমি যাচ্ছো না আমি যাচ্ছি৷ ”

মেঘলার কোনো ইচ্ছা না থাকলেও জিগ্যেস করলো,
— “কোথায়?”

— “পার্টির কাজে চট্টগ্রাম ”

মেঘলা ব্রু কুচকে বলে,
— “কি?
কোথায়?”

— “না মানে অফিসের কাজে৷
রাখো আমার কথা হঠাৎ আমার বউ এর আমাকে নিয়ে জানার ইচ্ছে জাগলো?
প্রেমে ট্রেমে পরলে নাকি?”

বলেই চোখ মারলো৷
মেঘলা বিরক্ত নিয়ে বলে,
— ” যত্তোসব বাজে কথা”

শোভন মেঘলার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,
— “খাবারটা খেয়ে রেডি হয়ে নাও তারাতারি৷ ”

চলবে কি

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০৬

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ০৬

বলতে বলতে সামনে তাকাতেই দেখে মেঘলা নীল শাড়ি পরেই আছে৷
আয়নার দিকে তাকাতেই শোভনের ঘোর লেগে যায় ভেবেছিলো একটু বকবে কিন্তু তা আর হলো কই?
শোভন কে এভাবে এগোতে দেখে মেঘলা বলে,,
— “এভাবে এগোচ্ছো কেন?

শোভন ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
— ” এভাবে শাস্তিটা না দিলেও পারতে,
খুব কি দরকার ছিলো তোমার এই মারাত্মক রূপে আমার রুপমহিনী হতে?
খুব কি দরকার ছিলো শাড়ি পরার?
এখন যদি কোনো ছোট খাটো ভুল করে ফেলি? তখন আমায় কিছু বলবে না কিন্তু৷ ”

বলেই মেঘলার একেবারে কাছে গিয়ে মুক্ত কোমরে হাত রেখে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে ওষ্ঠ জোরা দখল করে নেয়৷
মেঘলা ধস্তাধস্তির পরেও ছাড়ছে না,
এবার অসস্থি হচ্ছে মেঘলার আর না পেরে জোরে ধাক্কা দিয়ে বিছানার উপর ফেলে হাতের পিছন দিয়ে ঠোঁট মুছে কান্না করতে করতে বলে,
— “কি করছেন কি?
হুস আছে আপনার? কেন এমন অসভ্যতামো করছেন?
কেন আমার থেকে দূরে থাকছেন না?”

শোভন রেগে কিছু বলতে গিয়েও বললো না৷
”নিচে আছি ১০ মিনিট এর মধ্যে নিচে না এলে কপালে দুঃখ আছে” বলেই নিচে চলে যায়৷
মেঘলার এখন কিছুতেই এই লোকটার সাথে যেতে ইচ্ছে করছে না,
কিছু করার নেই এই ছেলে যা ঘাড় বাকা না করলে তুলেও নিয়ে যেতে পারে৷
চোখ মুখ ঠিক করে নিচে যায়৷


মাত্রই গাড়ি কলেজের সামনে এসে থামলো৷
মেঘলা সারা রাস্তা চুপ ছিলো কোনো কথা বলেনি
কিন্তু শোভন এটা ওটা বলেছে তাও মেঘলা পুরো পুরি চুপ ছিলো৷

গাড়ি থেকে নামতেই একটা ছেলে শোভনের সাথে মেঘলা কে দেখে বলে,
— “কে এটা বস?”

— “বোন৷ ”
শোভনের ছোট উত্তর শুনেই ছেলেটি মুচকি হেসে চলে যায়৷

ছেলেটি যেতেই মেঘলা তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শোভনের দিকে তাকায়৷
কি চায় এ লোকটা? মুখে মুখে বলে এতোটা ভালোবাসে কিন্তু বোনের পরিচয় দিলো?
মেঘলা শোভন কে না বলেই অন্য দিকে চলে যায়৷
মেঘলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শোভন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে স্টেজের সামনে ওর বন্ধুদের সাথে গিয়ে দাঁড়ায়৷

মেঘলা যেতেই প্রিয়া ঝাপটে ধরে বলে,
— “মেঘু তুই ঠিক আছিসতো?
শোভন ভাইয়া তোকে কিছু করেনিতো?”

মেঘলা গম্ভীর মুখে বলে,
— “নাহ৷ ”

— “আমার মনে হয় শোভন ভাইয়া সবার সাথে যাই করুক তোকে কিছু করবে না কারন সে তোকে সত্যি ভালোবাসে৷ ”
প্রিয়ার শোভনকে নিয়ে এমন কথায় মেঘলা একটুও খুশি হয়নি মেঘলার চোখ মুখের বিরক্ত দেখেই বোঝা যাচ্ছে৷

মেঘলা বলে,
— “ভালোবাসুক আর নাই বাসুক তাতে আসে যায় না আমার৷ মুখে বলে ভালোবাসি মানুষের কাছে পরিচয় দেয় আমি তার বোন৷
কি চাইছে এই লোকটা বুঝতেই পারছিনা৷
আমার এই লোকটার সাথে থাকা সম্ভব না আর যাই হোক একটা খু,,,,৷ ”

মেঘলা বলতে গিয়েও থেমে গিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,
— “আমার সময় হলে আমি চলে যাবো থাকবো না ওনার সাথে৷ ”
বলে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে সে জায়গা থেকে প্রস্থান করে৷

শোভন সবার সাথে কথা বলছে কিন্তু চোখ মেঘলাকেই খুজছে৷
অনেকক্ষন হলো মেঘলাকে দেখতে পারছে না এবার সত্যি চিন্তা হচ্ছে,
সবার সাথে কথা শেষ করে এদিক ওদিক মেঘলাকে খুজতে লাগে৷
— “এই মেয়েটা আমার কোনো কথা শুনে না৷ আমার কথা শুনলে কি ওর অনেক ক্ষতি হয়ে যায়?
আমি যা বলি করি ওর ভালোর জন্যই, এই মেয়ের মতো ঘার ত্যারা মেয়ে আর একটাও দেখিনি৷
ভেবেছিলাম সহজ সরল একটা বউ পেয়েছি কিন্তু পুরো উল্টো এর জ্বালায় সারাটা জীবন আমার এভাবেই জ্বলতে হবে৷ ”
শোভন বিরবির করছে আর এদিক ওদিক মেঘলাকে খুজছে৷
এখানে এসে যা দেখলো রেগে চোয়াল শক্ত করে মেঘলার সামনে গিয়ে বলে,
— “ছেলেদের নিজের পেট না দেখালে ভালো লাগে না?
আমি ছুলেই তোমার শরীরে জ্বালা ধরে যায়?
আমি না আসলে কি হতো?”
শেষের কথা গুলো শোভন খুব রেগে চেচিয়ে বলেছে মেঘলা পুরো কেপে উঠেছে৷

স্টেজ থেকে অনেকটা দূর প্রিয়া মেঘলা আর কয়েকটা মেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো ভুলবসতো মেঘলার শাড়িটা সরে যাওয়ায় কোমর সহ পেটটা উন্মুক্ত হয়ে যায় আর সেটা কিছু ছেলে বাজে নজরে তাকাচ্ছিলো এর মধ্যে একজন মেঘলার কোমরে হাত দিতে গিয়েছিলো৷

শোভন মেঘলার দিকে তাকিয়ে বাহু শক্ত করে ধরে ধমক দিয়ে বলে,
— “গাড়িতে গিয়ে বসো৷ ”

মেঘলা ভয় পেয়ে কাপা কাপা গলায় বলে,
— “না যাবো না আমি৷ ”

— “আমি যেতে বলেছি৷ ”
এবারো বেশ জোরেই ধমক দেয় শোভনের এহেম কান্ডে সবাই ভয় পেয়ে এখান থেকে চলে যায় মেঘলা রাগে, কষ্টে অশ্রুসিক্ত চাওনি দিয়ে কান্না করতে করতে ছুটে বেড়িয়ে যায়৷

মেঘলা যাওয়ার পর ছেলেদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পৈচাশিক বাকা হাসি দিয়ে ফোন বের করে কাউকে একটা ফোন করে এখান থেকে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়৷

গাড়ির সামনে এসে দেখে মেঘলা নেই৷
এ মেয়ে যে এমন কিছু করবে তা শোভন আগেই বুঝেছিলো,
রেগে গাড়িতে উঠে বসে আবার কাউকে ফোন করে৷

রেগে তুমুল স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে শোভন ভেবেছিলো মেঘলাকে শাস্তি দিবে না কিন্তু এবার তো দিতেই হবে৷
আবার কথার অবাধ্য হয়েছে৷
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে শোভন মেঘলাকে খুজছে৷
হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখে মেঘলা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আর সামনে হাটছে শাড়িটার নাজেহার অবস্থা আরেকটু পরই বুক থেকে সরে যাবে৷

শোভন তা দেখে আরো রেগে যায় গাড়ি থেকে নেমে মেঘলার সামনে গিয়ে হাত ধরে বলে,
— “তোকে আমি গাড়িতে বসতে বলেছিলাম কিন্তু তুই?
আবার আমার কথার অবাধ্য হলি?
কেন?”

মেঘলা রেগে বলে,
— “আমি তোমার কথা শুনবো না৷
চলে যাবো এখান থেকে৷ ”

কথাটা বলার সাথে সাথেই শোভন মেঘলার গালের মধ্যে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ জোর করে টেনে গাড়িতে বসিয়ে রেগে গাড়ি চালাতে থাকে৷
গাড়িতে উঠে ডিক্কি থেকে একটা দড়ি নিয়ে মেঘলার হাত বেধে দেয় আর শাড়ির আচল দিয়ে মুখ৷
কারন শোভন জানে এই মেয়ে স্থির হয়ে বসবে না চেচাবে৷

আবার সেই বাড়িটির সামনে আসে৷
এই বাড়িতে আসতে আসতে অনেকটা রাত হয়ে গেছে কোলে তুলে মেঘলাকে ভিতরে নিয়ে এসে ছিটকে বিছানায় ফেলে হাত মুখের বাধন খুলে মুখ চেপে ধরে বলে,
— “খুব ভালো লাগে মানুষ কে শরীর দেখাতে?
আমি কিছু করলেই তোর যতো জ্বালা তাই না?”

মেঘলা শোভনের লাল চক্ষু দেখে চুপসে যায়৷
আজ আর কথা বলতে পারছেনা সব কথা যেমন গলায়ই আটকে আসছে৷
তাও কিছুটা সাহস জুগিয়ে কাপা কাপা গলায় বলে,
— “ভাইয়া ছেলেগুলো কে কি করেছো?”

শোভন মেঘলাকে উত্তর না দিয়ে উষ্ঠ জোরা দখল করে রুডলি কিস করতে থাকে৷
মেঘলা প্রতিবার ব্যাথায় কুকরে উঠছে৷
ওই অবস্থায়ই হাত দিয়ে শক্ত করে কোমর চেপে ধরে খামছে ধরে৷
মেঘলা এবার আর পারছে না শোভন কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় কোমরের জায়গাটা থেকে রক্ত পরছে মেঘলার৷
এমন ভাবে ধাক্কা দেওয়ায় যেন শোভন আরো রেগে যায়৷
মেঘলাকে নিজের কাছে টেনে গলায় কয়েকটা বাইট বসিয়ে দেয়৷
ধাক্কা দিয়ে আবার বিছানায় ফেলে দুই হাত চেপে ধরে গলায় মুখ ডুবায়৷
মেঘলা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে৷
কেন এতোটা কষ্ট দিচ্ছে শোভন?
কিছুক্ষণ পর শোভন শান্ত হয়ে বাইটের জায়গাগুলোতে ঠোঁট ছোয়াতে থাকে মেঘলা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছে৷
শোভন ঠিক করে শুয়ে মেঘলার মুখ মুছে কপালে, গালে, ঠোঁটে অজশ্র চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পরে৷

চলবে,,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০৫

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ০৫

মেঘলা কাপা কাপা হাতে সাইন টা করে দেয়৷ শোভন ও বেহায়ার মতো খুশি খুশি সাইনটা করে দেয়৷
কি অদ্ভুত একটা সাইনেই জীবন টা পালটে গেলো কয়েকটা দিকে জীবনটা কেমন অগোছালো হয়ে গেলো৷
যার বুকে মাথা রেখে শান্তিতে থাকতে পারতো মেঘলা আজ তাকে দেখলেই ভয় করে৷
মেঘলা অন্য দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— “জোর করে বিয়ে করে নিলেও তোমাকে কখনো ভালোবাসবো না আমি শোভন ভাইয়া,
এমনটা না করলেও পারতে৷ ”

শোভন বাকা হেসে বলে,
— “আমি কি করবো না করবো এটা নিশ্চয়ই তোমার কাছে শিখতে হবে না৷ ”
শোভন ইশারা করে লোকদের প্রিয়াকে ছারতে বলে৷


শোভন মাত্রই মেঘলাকে নিয়ে নিজের বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো,
মেঘলার ভেবেই খারাপ লাগছে বাড়ির ভিতরে গেলে সবাই কি রিয়েকশন করবে৷
বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখে সবাই সোফায় বসে আছে৷
আজ মেঘলার বাবাও এসেছে দেশের বাইরে থেকে, এতোদিন পর বাবা কে দেখে দৌরে গিয়ে ঝাপটে ধরে ফুপিয়ে কাদছে৷
শোভনের মা মাথা নিচু করে মেঘলা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
— ” এভাবে কাদিস না মা!!
আমার ছেলেটা একটু রাগী মানিয়ে নিস প্লিজ৷
যত যাই করুক ও তোকে ভালোবাসে একটু মানিয়ে নিস৷ ”

মেঘলা রেহানা বেগমের কথা শুনে অবাক তার মানে সবই জানে?
খুনের কথা কী জানে?
মেঘলা রেগে বলে,
— “মামি তুমি জানো না তোমার ছেলে খু,,,৷ ”

শোভন মেঘলা কে থামিয়ে রেগে কটমট করে বলে,
— “অনেক ধকল গেছে রুমে আয়৷ ”

বলে মেঘলার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়,
মেঘলা রেগে বলে,
— “এখানে নিয়ে এলে কেন?আর নিচে কিছু বলতে দেও নি কেন?”

শোভন বলে,
— “সব কৈফিয়ত কি তোকে দিতে হবে নাকি?
আর এসব কথা নিয়ে বারাবারি করলে পরিনাম খারাপ হবে৷
আর তুই আমার বউ এখানে থাকবি না তো কোন রুমে থাকবি?”

— “আমি তোমার সাথে কিছুতেই থাকবো না এক রুমে৷ ”

শোভন কিছু বলবে এর আগেই শোভনের মা রেহানা বেগম বলে,
— “ঠিক বলছে মেঘলা এখনো যথেষ্ট ছোট তা ছাড়া কয়েক মাস পরই ওর ফাইনাল পরিক্ষা৷
পরিক্ষা শেষে তোদের আমি আবার বিয়ে দিবো, ততোদিন তোমরা আলাদাই থাকবে৷ ”

রেহানা বেগমের কথায় যেন মেঘলা খুশি হয়ে গেলো৷
— “কয়েক মাস পর এই খুনিকে বিয়ে করবে কে?
আমি তো পালাবো৷ ” (মনে মনে)
মেঘলা বাকা হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷

রুমে গিয়েই জামাকাপর নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় এই কয়েকটা দিন কতোই না থাপ্পড় খেয়েছে৷
গাল গুলো এখনো লাল হয়ে আছে৷
লম্বা সাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াসরুমের বাইরে পা রাখতেই হেচকা টান দিয়ে হাত চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে কোমর চেপে ধরে বলে,
— “মায়ের সামনে কিছু বলিনি বলে মনে করিস না আমি আলাদা থাকবো, সময় হলে ঠিক তোর কাছে চলে আসবো আর কেও টেরও পাবে না৷ ”

মেঘলা ধাক্কা দিতে দিতে বলে,
— “আমি এক্ষুনি মামি কে বলছি দাড়াও৷
আর তুমি এতোটা নির্লজ্জ হলে কবে থেকে?
অন্য একটা মেয়ের সাথে ঘুমাতে তোমার লজ্জা করবে না?”

শোভন বাকা হেসে বলে,
— “তুই অন্য একটা মেয়ে হলি কি করে?
তুই তো আমার বউ৷
তাছাড়া ওইদিন রাতে ভয় পেয়ে কিন্তু আমায় জরিয়ে ছিলি মনে আছে?
ওইদিন তোর লজ্জা করেনি?”
বলেই চোখ টিপ দেয়, মেঘলার এখন সত্যি অসস্তি হচ্ছে৷ ওই দিন ভয় পেয়ে জরিয়ে ছিলো এখন এটা বলার কি আছে?

লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে শোভন কোমর চেপে আরেকটু সামনে এনে সামনে থাকা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
— ” হুর পরি!!
তোমার এই সামনে থাকা কাটা কাটা চুল থেকে টপ টপ করে পানির ফোটার উপর কতটা হিংসে হয় আমার জানো?
কেমন মুখ বেয়ে গোলাপের পাপরির মতো ঠোঁট গুলো কে বেহায়ার মতো ছুয়ে দেয়,
তোমার ঠোঁটের নিচে থাকা তিলটা কতটা আকৃষ্ট করে আমায় তা কি তুমি জানো? বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে কোমর ছাড়ানো চুল গুলো যখন দোলে বুকের মাঝে কতটা ঝড় সৃষ্টি হয় তুমি জানো?
খুশি হয়ে যখন ঝাপটে জরিয়ে ধরো আমার মনের উথাল পতন কি তুমি শুনতে পাও না?
তখন আমার প্রতিটা হৃদ স্ফন্দন যে বলে “ভালোবাসি হুর পরি”
তুমি যখন তোমার টিয়া পাখিটাকে হাতে নিয়ে আদর করো আর সে যখন তোমার ওই কাধে এসে বসে ওই পাখিটার উপর বড্ড রাগ হয় আমার,
কেননাও যে তোমায় ছোয়া দেয়৷
ইচ্ছে করে ওকেও শেষ করে দেই কারন তুমি যে পুরোটা আমার৷
তোমাকে ছোয়ার অধিকারও আমার তোমাকে ভালোবাসার অধিকারও আমার আমার ভালোবাসায় মেশানো শাস্তি গুলো দেওয়ার অধিকারও আমার৷
যেখানে একটা পাখি তোমাকে ছুলে সেটাও সহ্য করতে পারিনা কোনো ছেলে তোমাকে ছুলে সহ্য করবো কি করে?”

মেঘলা তিক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— “এই জন্য খুন করবে?
আকাশ ভাইয়া না তোমার আপন চাচাতো ভাই হয়?
এ কেমন ভালোবাসা শোভন ভাইয়া?
এ ভালোবাসা আমি চাই না যে ভালোবাসায় শুধুই হিংস্রতা বিরাজ করে৷
আমার কাছে আসবে না তুমি,
আমাকে ছোবে না তোমার ছোয়ায় আমার শরীর ঘিন ঘিন করে আমি ঘৃনা করি তোমায়৷ ”

শোভন রেগে শক্ত করে মেঘলার কোমর চেপে ধরে বলে,
— ” তুই আমার আমি তোকে ছুয়ে দিবো,
ভালোবাসবো শাস্তিও দিবো এতে তুই যাই বল তোর কথা আমি শুনবো না কারন তোর উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে৷
তুই আমার বউ৷ ”
বউ কথাটা শোনার সাথে সাথেই মেঘলার বুকটা ধক করে উঠলো,
মেঘলা মানুক আর নাই মানুক মেঘলা তো সত্যি শোভনের বউই৷

মেঘলা শোভন কে ধাক্কা দিয়ে বলে,
— “প্লিজ আমায় একা থাকতে দাও একটু৷ ”

শোভন সামনে গিয়ে কোমর ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে গভীর ভাবে ঘাড়ে ঠোট ছুইয়ে মুচকি হেসে বাইরে চলে যায়৷
রাতে বারান্দায় বসে ব্যস্ত শহরের কোলাহল পূর্ন পরিবেশ দেখছিলো আর জীবনের সমীকরণ মেলানোর চেষ্টায় ছিলো কিন্তু ফল সরুপ প্রতিবারই গভীর চিন্তায় পরে যাচ্ছে৷
কি হবে ভবিষ্যত?
এ বিয়ের ভবিষ্যত কী?
ভাবছে চলে যাবে কিন্তু তা কী আদৌ সম্ভব?
হ্যা সম্ভব হবে না কেন?
নিশ্চই হবে একজন খুনির সাথে কখনোই সংসার করা যায় না৷
কিন্তু পালাবেই বা কি করে? শোভন সাথে থাকলে কখনোই সম্ভব না৷

পিছন থেকে কেও জরিয়ে ধরায় মেঘলার ভাবনার ছেদ পরাতেই পিছে ঘুরে তাকায়, প্রথমত ভয় পেলেও পরক্ষনেই রেগে বলে,
— “এমন জরিয়ে ধরেছো কেন?
সরো পিছন থেকে অসস্তি হচ্ছে৷ ”

মেঘলার গলায় ঠোট ছোয়াতে ছোয়াতে শোভন বলে,
— “আগে যখন হুট হাট জরিয়ে ধরতি, আমার বুকে মাথা রেখে মন শান্ত করতি বুকের মাঝে যে ঝর তৈরি হতো তখন তো তোকে বলিনি সরতে৷
তাহলে কেন এমন করছিস?
তোর এমন দূরে দূরে থাকাটা আমার কতটা কষ্ট হয় তা কি তুই বুঝিস না?”

— “যে বুকে আমি সুখ খুজে পেতাম সে বুকে মাথা রাখলে ভয় হয় আমার শোভন ভাইয়া৷
তুমি যে আর আগের তুমি নেই৷ ”

শোভন কিছু না বলেই দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বাইরে চলে যায়৷
মেঘলা সেখানে বসেই ফুপিয়ে কাদতে থাকে৷
রেহানা বেগম শোভন কে এমন চলে যেতে দেখে ঘরে গিয়ে কিছু একটা নিয়ে মেঘলার রুমে আসে৷
মেঘলার সামনে বসে একটা বক্স থেকে দুটো চুরি আর নাকের ফুল মেঘলাকে পরিয়ে দিয়ে বলে,
— “আমি জানি আমার ছেলেটা আর আগের মতো নেই আর আকাশের মৃত্যুর জন্য ও কোনো না কোনো ভাবে আমার ছেলেটা জরিয়ে আছে৷
আমি আমার ছেলেকে নিরঅপরাধী বলবো না অপরাধী ও বলবো না৷
আমি জানি না কি করছে ও
কিন্তু একটা কথা কি জানিস মা সব কিছুর পিছনে কোনো না কোনো কারন থাকে, সেটা হয়তো তুই আমি বা কেউই জানি না যখন জানবো হয়তো ভুল গুলো বুঝতে পারবো৷
একটাই কথা বলতে চাই আমার ছেলেটা সত্যি তোকে খুব ভালো বাসে জানি না তুই কখনো ভালো বাসতে পারবি কি না কিন্তু ওর থেকে দূরে চলে যাস না মা ও মরে যাবে৷”

মেঘলা কোনো উত্তর দেয় না হয়তো রেহানা বেগমের কথাগুলো ওর ভালো লাগছে না৷


সময় কিভাবে চলে যায় বোঝাই জায় না,
ফাল্গুন মাস পেরিয়ে চৈত্র মাসের প্রথম দিক ভাপ্সা গরম পরেছে সকাল বেলা রোদ থাকলেও বিকেলের দিকটা আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে৷ বৃষ্টি আসবে আসবে করেও আসে না যার কারনে আরো বেশি গরম লাগে৷
গধুলির শেষ প্রহর মেঘলা ছাদে বসে পূর্ব দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে বিয়ের আজ তিন দিন হতে চললো প্রথম দিন শোভন সারাদিন বাড়িতে থাকলেও দুদিন যাবত ভালো করে দেখা হয় না৷
মেঘলা খুব শান্তিতেই আছে এই জন্য,
কিন্তু মেঘলার সব দিক দিয়ে খেয়াল রাখে ফোন করে আর মেঘলা ফোন দেখে বিরক্ত নিয়ে রেহানা বেগমের হাতে দিয়ে আসে৷
মেঘলার এমন ইগনোর শোভনের সহ্য হয় না কাল থেকে আবার কলেজে যাবে মেঘলা৷ হঠাৎ পিছন থেকে কেও চুল টেনে ধরায় আতকে উঠে মেঘলা কিছু বলবে এর আগেই দেখে দুটো মেয়ে সামনে দাড়িয়ে আছে মেয়ে দুটো কে দেখে খুশি হয়ে জরিয়ে ধরে বলে,
— “সারা, কাব্য তোরা?
কখন এলি?”

সারা শোভনের বোন আর কাব্য মেঘলার ছোট মামি রাজির মেয়ে,
সারা বলে,
— “এইতো ভাবিজি মাত্র এলাম৷ ”

মেঘলা ব্রু কুটি করে বলে,
— “ভাবিজি? কে ভাবি হুম?”

— “কে আবার তুমি৷ ”

মেঘলা হাত ভাজ করে বলে,
— “এই ভাবি টাবি বললে মারবো আপুই বলবি,
তো এতোদিন পর আসার কথা মনে পরলো তোদের?”

সারা বলে,
— “আমরা একা না কয়েক দিন পর ইরিনা আপু ও আসবে৷
তোমার জামাইটারে সামলে রেখো জানোই তো ইরিনা সাকচুন্নির আমার ভাইটা উপর নজর বেশি৷ ”

মেঘলা উত্তরে কিছু বললো না বাকা হাসলো৷
আজ কে রাত টা ওদের সাথে ভালোই কাটলো মেঘলার সাথে ওরা দুইজন সোয়াতে শোভনের জালা গুলো সহ্য করতে হয়নি৷


আজ সকাল সকাল উঠেই মেঘলা শাড়ি পরে রেডি হয়ে নেয়৷
কলেজে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দের নবীন বরন অনুষ্টান অতিথি হিসেবে শোভন দের ও ডাকা হয়েছে৷
শোভনের বাবার বন্ধু প্রিন্সিপাল আবার শোভনের ও রাজনীতি তে নাম ডাক আছে৷
শোভন নীল পাঞ্জাবি পরে চুল ঝারতে ঝাড়তে মেঘলার রুমে এসে বলে,
— “হুর পরি তারাতারি রেডি হয়ে নাও শাড়ি পরার প্রয়োজন নেই তুমি একদম শাড়ি সামলাতে জানো না৷ ”
বলতে বলতে সামনে তাকাতেই দেখে মেঘলা নীল শাড়ি পরেই আছে৷
আয়নার দিকে তাকাতেই শোভনের ঘোর লেগে যায় ভেবেছিলো একটু বকবে কিন্তু তা আর হলো কই?
শোভন কে এভাবে এগোতে দেখে মেঘলা বলে,,

চলবে,,