Sunday, July 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1514



অপ্রিয় সে পর্ব-০৩

0

#- অপ্রিয় সে
#- সানজিদা সন্ধি
#- পর্ব -৩

রায়হান খানের কিছু করার ছিলোনা। তার ছেলের ইচ্ছে তার বউকে যেন সবচেয়ে বেশি স্পেশাল লাগে। তাই পার্লার থেকে রিমুকে সাজানোর জন্য লোক আসে।

বিয়ের ঝক্কি ঝামেলা আর নানান টেনশনে এসি রুমের মধ্যে থেকেও ঘামতে থাকে রিমু। এসময় যদি সাদিয়াকে কোনোভাবে কাছে পেত তাহলে বড্ড উপকার হতো তার। সাদিয়া রিমুর বেস্ট ফ্রেন্ড। পারিবারিক যান্ত্রিকতা থেকে বেরিয়ে এই বন্ধুমহলেই সে একটু স্বস্তির প্রশ্বাস ছাড়তে পারে। রিমুর সব বন্ধুরা বিয়ের দিনই অ্যাটেন্ড করবে বলে জানায়। রিমুর ভীষণ মনখারাপ হয়। কিন্তু কিছু বলতে পারে না সে। জোর করে কিছু পাওয়াতে বিশ্বাসী নয় সে।

পার্লারের মেয়েগুলো রিমুর মুখের মধ্যে যখন মেকাপের দুই ইঞ্চির প্রলেপ লাগাতে ব্যাস্ত তখনই সাদিয়া, প্রাপ্তি, আহানা, সাজ্জাদের আগমন। হুট করে এসে চমকে দিলো তারা। রিমু তাদেরকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি। কীসের সাজ কীসের কী! বিছানা ছেড়ে সাদিয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয় সে। সাদিয়া রিমুর পিঠের মধ্যে কষিয়ে একটা থাপ্পড় দেয়। রিমু ব্যাথায় ” কুত্তিইইই” বলে চেঁচিয়ে ওঠে। সাজ্জাদ টিটকারি করে বলে যাক শেষ অবধি তুইও ময়দার সাগরে ডুব দিলি। খুব তো বড় বড় কথা বলেছিলি। কী হলো এখন?

সাজ্জাদের কথা শুনে রিমুর মুখে যেন আষাঢ়ের মেঘ নেমে এলো। সাহস করে পার্লার থেকে আসা মেয়ে দুটোকে ঘর থেকে বেরিয়ে বাকিদের দেখতে বলে ঘরের দরজা আটকে দিলো সে। রিমুর বন্ধুরা একপ্রকার আঁতকে উঠেই বললো, ” রিমু রূপম ভাইয়া জানলে তোর কিন্তু অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে।” সবার মুখে একপ্রকার দুশ্চিন্তা দেখা গেলেও সাদিয়াকে বেশ খুশিই মনে হলো।

সে উচ্ছ্বসিত গলায় বললো, ” রূপম ভাইয়ার জন্য নিজের ইচ্ছে আর বিসর্জন দিসনা রিমু। আর কত সহ্য করবি তুই? ছোট থেকে রূপম ভাইয়ার জ্বালাতন সহ্য করতে করতে এই পর্যায়ে এসেছিস। এখন বিয়েটাও নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে করছিস। এ বিয়েতে তোর মত নেই সবাই জানে। কতবার বললাম পালিয়ে চলে যা। থানায় জিডি কর। তুই এখন প্রাপ্তবয়স্ক। এখন কেউ কী করে তোকে জোর করতে পারে? হ্যাঁ রে! তোর কী আত্মসম্মান বলতে কিচ্ছু নেই? যেখানে বিন্দুমাত্র কদর পাসনা সেখানে আজীবন থাকবি কী করে? ”

রিমু ফোঁপাতে লাগলো। ভাঙাভাঙা গলায় বললো, ” আমি এখনো বলছি করতে চাইনা এই বিয়েটা। কিন্তু বাড়ির লোক তো কথা শুনবে না। তাহলে আমি কী করতে পারি বল? তোর কী মনে হয় আমি রূপম ভাইকে বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা করি? তার প্রতি সমস্ত শ্রদ্ধা আমি কবেই হারিয়ে ফেলেছি। নিজের আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে গিয়ে যতটা সম্ভব তাকে এড়িয়ে চলেছি। কিন্তু একটা কথা কী জানিস? যারা নিজের চেয়ে অন্যদেরকে বেশি ভালোবাসে তাদের অহেতুক কষ্টই পেতে হয়। এই বিয়েতে হাজার বার না বলা স্বত্তেও কেউ শুনলো না। আত্মহত্যার ভয় দেখালাম তাও মানলো না। কারণ তারা জানে আমি তাদেরকে কতটা ভালোবাসি। এই ভালোবাসার জন্য তারা যা বলবে আমি ঠিক সেটাই করবো। আরেকটা বিষয় আত্মসম্মান থাকলেও অনেক সময় পরিবারের কথা ভেবে চুপ হয়ে ছিলাম। এখনও বিষয়টা ঠিক সেরকমই আছে। আমি এমন কিছু করবোনা যাতে তাদের অসম্মান হয়। এখন তুই হয়তো বলতে পারিস যারা আমার কথা ভাবে না আমি তাদের কথা কেন ভাববো? ওই একটাই উত্তর আমার। ভালোবাসি যে তাই। এই ভালোবাসাটা আমার অকারণে আসে। তাদের মুখ থেকে একটু ভালো কথা শুনলে আমার আবেগে কান্না পায়। তারা যদি আমার ভালো চাইতোই তাহলে কখনোই জোর করতো না। ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতোনা আমার। কখনোই না। যেহেতু তারা সেটা করেনি তাদের ইচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে। আর আমিও তো সবটা বললাম! আশা করি সবাই বুঝেছিস সবটা।”

সবার মনটা বিষিয়ে গেলো। তারা চোখের সামনে তাদের বন্ধুর সর্বশেষ ভালো থাকার লেশ টুকু হারানোর আশঙ্কায় বিমর্ষ।

টপিক ঘোরাতে আহানা বলে উঠলো, ” রূপম ভাইয়াকে দুই শব্দে ব্যাখা কর। আর হ্যাঁ ব্যাখাটা সেভাবে করবি যেভাবে তুই তাকে দেখিস। তার জন্য অনুভব করিস। ” আহানা ভেবেছিলো রিমু হয়তো রাক্ষস জল্লাদ টাইপের উত্তর দিবে আর সেও কথা ঘুরিয়ে নেবে। কিন্তু বিষয়টা হলো পুরোপুরি ভিন্ন।

রিমু জোর গলায় বললো রূপম ভাই ইজ ইকুয়াল্টু ” অপ্রিয় সে “।

সবাই বুঝলো বিষয়টা অনেক সিরিয়াস পর্যায়ে গড়াচ্ছে। সাজ্জাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার হালকা চেষ্টা করলো। মুখ চোখের ভঙ্গিমা ব্যাঙ্গাত্বক করে বললো, তুই কী এই চোখের জলে প্যাতপ্যাতা হওয়া মেকাপ নিয়ে হলুদের স্টেজে যাবি? ইশ এমন পেত্নী সেজে স্টেজে গেলে মানসম্মান থাকবে না আমাদের বন্ধু সমাজের। যা মুখ ধুয়ে আয়!”

সাজ্জাদের চেষ্টা সফল হলো। ফিক করে হেসে দিয়ে রিমু ফ্রেশ হতে গেলো। হাজার মনখারাপ তার খানিকক্ষণের জন্য কেটে গেলো। আসলেই বন্ধু থাকলে সব সম্ভব।

বিউটি শিয়ান দুজনকে ঘর থেকে বের হতে দেখে রূপম তাদের কাছে গিয়ে বললো, ” বাহ্ এতো তাড়াতাড়ি সাজানো শেষ? ” রূপম এ ঘরের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো।

মেয়ে দুজন মেঝের দিকে চোখ নামিয়ে বললো,” ম্যামের বন্ধুরা আসায় তিনি আমাদেরকে অন্য কাউকে সাজাতে বললেন স্যার। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো তিনি সাজবেন না। তিনি কাঁদছিলেনও। আমার মনে হয় তাকে জোর করা ঠিক নয়। ”

রূপম সবটা শুনে হালকা হেসে অন্য রুমে যেতে বললো তাদের। কিন্তু ভেতরে ভেতরে রাগে গজগজ করতে লাগলো। রিমুর ইদানীং বড্ড সাহস বেড়েছে। তার কথা, তার ইচ্ছে অমান্য করার সাহস সে কী করে পেলো? এর শাস্তি তো রিমু পাবেই। কী শাস্তি দেবে সেটা ভেবে সে চলে গেলো।

বিয়েবাড়ি সেজে উঠেছে আলোকসজ্জা আর নানান রকম ফুলের বাহারে। ক্যামেরা,আলো, মিডিয়ার লোকজন, ফটোগ্রাফার সবকিছু মিলিয়ে এক অন্যরকম অবস্থা। সবাই এসেছে বিশিষ্ট গায়ক রূপম খানের গায়ে হলুদের সন্ধ্যাকে ক্যামেরায় বন্দি করতে।

রূপমের মনের রাগটা ক্রমাগত বাড়তে লাগলো। কিন্তু তারপরেও হাসিমুখে সবটা সামলাতে লাগলো। খানিকটা পরে রিমুর আগমন হলো। হলুদ একটা শাড়ি, মাঝখানে সিঁথি করে সমস্ত চুলগুলো পিঠ জুড়ে ছড়ানো। কপালে কালো টিপ, চোখে কাজল। ব্যাস এটাই তার সাজ। রিমুর ঠোঁট গুলো এমনিতেই গোলাপি। তাই মনে হচ্ছে লিপস্টিক লাগিয়েছে সে। এই হালকা সাজেই তাকে অসম্ভব স্নিগ্ধ লাগছে। রূপমের চোখে চোখ পড়তেই চোখদুটো নামিয়ে নিলো রিমু। ভয়ে একটা ঢোক গিললো। সে জানে অবাধ্যতার জন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে। সেই শাস্তি কতটা ভয়ানক হবে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। জেদ দেখিয়ে নিজের মনমতো সেজে তো নিলো। কিন্তু এরপর মায়ের মনখারাপ মিশ্রিত খোঁচানো কথা কেউ সহ্য করতে পারবে তো?

রিমুকে স্টেজে নিয়ে আসা হলো। ক্যামেরার আলো আর অতিরিক্ত ভীড়ে সে অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো। কিন্তু কিছু করার নেই। মিষ্টি জাতীয় খাবার একদমই পছন্দের নয় রিমুর। তাকেই এখন মিষ্টি, পায়েস এসব গিলতে হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পরে রিমুর গায়ে হলুদ ছোঁয়াতে রূপম এলো। সাথে তার বন্ধুরা। এদের মধ্যে একজনকে দেখে খানিকটা ভালো লাগলো রিমুর। ঋষি চৌধুরী এসেছেন। সেলিব্রিটিদের পছন্দ না হলেও তাদের গুণকে সম্মান জানাতে জানে রিমু। ঋষি চৌধুরির গানের গলা তার ভীষণ ভালো লাগে। ঋষি রিমুর গায়ে হলুদ ছোঁয়ানোর পরে রূপমকে বললো, ” মাম্মা ভাবী তো হেব্বি। পুরাই আগুন। ”

কমপ্লিমেন্টটা পছন্দ হলো না রিমুর। এ কেমন ধরনের কথা? সুন্দরভাবেও তো বলা যেত। ঋষির কথার ধরন এমন হবে ভাবেনি রিমু। এর আগে সে অনেকবার এ বাসায় আসলেও রিমু কখনো তার সামনাসামনি যায়নি। রূপমের কোনো কিছুতেই রিমুর আগ্রহ নেই।

রূপম গায়ে হলুদ ছোঁয়াতে নিলেই হুট করে লোডশেডিং হলো। জেনারেটর চালু করার আগেই রূপম টুপ করে রিমুর গালে একটা চুমু খেয়েই হাতের মধ্যে জোরে একটা চিমটি দিয়ে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিলো।

তাজ্জব বনে গেলো রিমু। চিমটি কেউ কাউকে দেয়? ছোট বাচ্চা হলে মানা যেন কিন্তু রূপম! তাছাড়া চুমু কেন দিলো সে? রিমুর গা গুলিয়ে এলো। হাতের চিরকুটটা শক্ত করে মুঠোবন্দি রাখলো।

এদিকে রূপম মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো। কিছুক্ষণের জন্য হলেও রিমুকে জব্দ করেছে সে। আহা শান্তি! শান্তি!

চলবে,,,,,,

অপ্রিয় সে পর্ব-০২

0

#- অপ্রিয় সে
#-সানজিদা সন্ধি
#-পর্বঃ২

রিমুকে গায়ে হলুদের জন্য তৈরি হতে বলে রূপম চলে যেতে উদ্যত হলেই রিমু তাকে থামালো। মিনমিনে গলায় জানতে চাইলো, ” আমার বুকে যে তিল আছে একথা তুমি কী করে জানলে রূপম ভাই? এ কথা তো আমি ছাড়া কেউ জানে না।”

রূপম এক ভ্রু কুঁচকে অদ্ভুত গলায় বললো, ” কী ব্যাপার রিমু? বুদ্ধিশুদ্ধি কী সব লোপ পেয়েছে? যেহেতু কথাটা তুই ছাড়া কেউ জানে না তারমানে আমি তোর মাধ্যমেই জেনেছি। ওই যে সেদিন! ” এটুকু বলে রূপম ফোনে কল রিসিভ করার ভান করে চলে গেলো।

রিমু স্পষ্ট বুঝতে পারলো কেউ ফোন করে নি। রূপম তাকে জ্বালানোর জন্যই সবটা না বলে ফোন রিসিভ করার ভান করে চলে গেলো ।

রিমুর স্বভাব হলো অতি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো। কোনো বিষয় তার মাথায় একবার ঢুকলে যতক্ষণ না ওই বিষয়ে সে নিষ্পত্তি করতে পারছে ততক্ষণ সে শান্ত হতে পারে না। কিছুতেই না। আর বুকের তিলের বিষয় রিমুর কাছে মোটেই কোনো সামান্য বিষয় নয়। হওয়া সম্ভবও নয়। এই বিষয়টা রূপম কী করে জানলো সেটা ভাবতে ভাবতেই রিমু অস্থির হয়ে যাবে। রিমু ভালোই জানে তাকে অস্থির দেখলে,অশান্তিতে থাকতে দেখলে রূপম এক অন্যরকম শান্তি পায়। আর সে কারণেই আবারও রিমুর মাথায় বড়সড় জট পাকিয়ে দিয়ে সে উধাও হলো।

রিমু বুঝতে পারে না যেই ছেলে তার অশান্তিতে শান্তি পায়, তাকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দিতে পারলে শান্তি পায় সেই ছেলে কেন কদিন আগে তাকে বিয়ে করবে বলে হল্লা জুড়ে দিয়েছিলো। আর বাড়ির মানুষগুলোও বটে। রূপম বললো আর ওমনি তারা ঢ্যাংঢ্যাং করে বিয়ের আয়োজন করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। বিরক্তিকর।

রিমুর এই বিরক্ত প্রকাশের গন্ডিটা নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভুলক্রমেও সে কখনো কাউকে বিরক্তি বা রাগ দেখায় না। তবে অভিমান আর জেদ তার ভালোই আছে। বিষয়টা সম্পর্কে বাড়ির সকলেই অবগত। তবে কেউ এই অভিমান,জেদকে বিশেষ পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। একমাত্র রূপমের কারণেই রিমুর ভাগ্যে এতো অবহেলা।

রিমু বুঝে গিয়েছে আর যাইহোক না কেন রূপমের সাথেই তার বিয়েটা হবে। তাই চুপচাপ করে অবাধ্য নোনাজলের টুপটাপ পতনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার সিদ্ধান্ত নিলো সে।

ওড়না খুঁজে ওয়াসরুমের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কোথা থেকে যেন রূপম ঝড়ের বেগে এলো তারপর গম্ভীর স্বরে বললো, গোসল করার পর তোয়ালে পড়ে বের হলে বুকের তিল তো দেখাই যাবে তাইনা? কেয়ারলেস মেয়ে কোথাকার। কখন কী করছে সে বিষয়ে যেন কোনো হুসই নেই। না জানি কাকে কাকে ঠিক কী কী দেখিয়ে বেড়িয়েছে। ” কথাগুলো বলে ঠিক যেমন ঝড়ের গতিতে সে এসেছিলো তেমনই ঝড়ের গতিতেই চলে গেলো। আর পেছনে রেখে গেলো হতবুদ্ধি এক যুবতীকে।

রূপমের কথা শুনে রিমুর কান্না পাচ্ছে। তার জানামতে সে জীবনেও তোয়ালে পড়ে বাহিরে আসেনি। তাহলে রূপম জানলো কী করে? তবে কী সে মিথ্যা বলছে? রূপম মিথ্যা বলছে ভেবে যদিওবা স্বস্তির প্রশ্বাস ছাড়তো রিমু তাও হলোনা। মাথার ভিতরে প্রশ্নেরা আন্দোলন শুরু করেছে। রূপম মিথ্যা বললে সে জানলো কী করে? আর রিমুর জানামতে রূপম সবকিছু নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস৷ ফাজলামি তার দ্বারায় কমই হয়।

অশান্ত মন আর নিরব অশ্রুপাতের মধ্যে দিয়ে রিমুর জীবনের ধারাবাহিকতা শুরু হলো।

নিজেদের মধ্যে বিয়ে হওয়ায় আত্মীয়স্বজনও নিজেদেরই। এর বাহিরে যার যার বন্ধুমহল আর আত্মীয়দের আত্মীয়।

রূপম বর্তমান সময়ের একজন জনপ্রিয় সিঙ্গার। দেশ বিদেশে তার খ্যাতি। হাজার হাজার মেয়ের ক্রাশ অথবা ভালোবাসা।

রূপমের এতো জনপ্রিয়তা রিমুর কাছে তাকে আরো বেশি অপ্রিয় করে তুলেছে। জনপ্রিয়তা কোনোকালেই রিমুর সহ্য হয়না৷ সাদামাটা জীবন তার ভীষণ পছন্দের। একজন মানুষকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষের পদচারণা, হাহাকার কেমন যেন লাগে রিমুর৷ সবাই যেখানে জনপ্রিয়তার জন্য পাগল সেখানে রিমু ব্যাতিক্রম৷ সেলেব্রিটিদের ভীষণ নির্দয় লাগে তার কাছে। মানুষ পছন্দের কিছু বোধহয় কমই পায়৷ আর অপছন্দের সবকিছু নিয়ে চলতে হয়। বিষয়টা একেকজনের জন্য একেকরকম ভাবে প্রযোজ্য ।

ভেজাচুলে গায়ে কোনোরকম করে একটা শাড়ি পেঁচিয়ে গোসল করে বের হলো রিমু। ঘন কালো কেশ তার সারা পিঠে ছড়িয়ে পড়েছে। চুলের পানিতে সারা পিঠ ভিজে একাকার। রিমু আক্ষরিক অর্থে ভীষণ সুন্দরী। ফর্সা টকটকে তার গায়ের রং। একরাশ ঘন কালো কেশ, চোখগুলো বড়বড় আর চোখের পাপড়িগুলো মনোমুগ্ধকর। কেউ এক দেখাতেই অপলক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে চাইবে৷ রূপের প্রসংশা অনেকের কাছে শুনলেও রূপম তাকে বরাবরই পেত্নী বলে ডেকে এসেছে। সাদা পেত্নী। রূপমের উপমা শুনে রিমুর মনে হতো নদীতে ঝাপ দিয়ে মরে যাক সে৷ পেত্নীও সাদা হয় না কি? রূপমের কথানুযায়ী রিমু হলো সাদা মুলা। এমনিতেই ফর্সা তবে আহামরি কিছু নয়। তবে রিমুকে দেখলে হয়তো শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ ” মায়াবতী ” উপমাটা শুধু শ্যামবর্ণের মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য রাখতেন না।

লম্বা চুল আর এলোমেলো শাড়ি নিয়ে নাজেহাল অবস্থা রিমুর। একটা মানুষ নেই যে তাকে একটু সাহায্য করবে। পার্লার থেকে লোক আসার অপেক্ষায় সবাই যেন বসে আছে। অসহ্যকর। অন্যদিকে হয়তো দেখা যাচ্ছে রূপমের পিছনে ধরা বাঁধা বিশজন রয়েছে।

লম্বা চুলগুলো ভীষণ পছন্দ রিমুর। অথচ সেই চুলের উপরের কম অত্যাচার চালায়নি রূপম।
ক্লাস এইটে টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করার পরে রূপম ঘোষণা দিলো ফেল করার শাস্তি স্বরূপ রিমুর চুল কেটে দেওয়া হবে। কথাটা শুনে রিমুর সে কী কান্না। তার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিলো কেউ যেন তার গর্দান নেওয়ার হুকুম করেছে। রিমু সেদিন আকাশ- পাতাল কাঁপিয়ে কেঁদেছিলো। প্রতিজ্ঞাও করেছিলো ভালো রেজাল্ট করবে। কিন্তু রূপমের ইচ্ছে রাখতে ধরে বেঁধে তার চুল কাঁধ অবধি কেটে দেওয়া হয়েছিলো। রিমুর জন্য চুল কেটে দেওয়া হচ্ছিলো রূপম তখন তার সামনে একটা চেয়ারে বসে হাসিহাসি মুখ করে ছিলো। সেদিন বাড়ির সবার আর রূপমের প্রতি ভীষণ ঘৃণা জন্মেছিলো তার। তবে এর স্থায়ীত্ব কাল ততক্ষণ ছিলো যতক্ষণ না তার মা রেহনুমা বেগম এসে তাকে আদর করে দেয়। মায়ের একটু স্বান্তনা বাণীতে নিজের কষ্ট, ক্ষোভ সব মুছে দিয়ে স্বাভাবিক আচরণ করে। রিমু টা না ভীষণ অদ্ভুত। একটু ভালোবাসা পেলেই নিজেকে উজাড় করে দেয়। তবে সেই একটুখানি প্রকৃত ভালোবাসাই তার খুব কম পাওয়া হয়েছে।

রিমুর নাজেহাল অবস্থায় অবসান ঘটাতে আগমন হলো রূপমের মা রায়হান খানের। রিমু খালামনি বলে জাপ্টে জড়িয়ে ধরলো তাকে । এই মানুষটাই রিমুর শত শত মন খারাপের মাঝে একটু হাসির কারণ হয়েছে। তাকে দিয়েছে স্বস্তি। ছেলের বিরুদ্ধে তার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলেও রিমুকে সে খানিকটা আগলেছেই। নয়তো ভালোবাসাহীন রিমু হয়তো কবেই মরে যেতো।

রায়হান খান রিমুর খোঁজ নিতে এসে দেখেন সে নাকানিচুবানি খেয়ে বসে আছে। তিনি মৃদুস্বরে ধমকে উঠে বললেন, ” কী ব্যাপার রিমু? একটুপরে তো আবার গায়ে হলুদ ছোঁয়ানোর পরে গোসল করবিই৷ এখন শুধু শুধু গোসল না করলেই হতো না? ঠান্ডা লেগে যাবে তো। ”

রিমু আমতাআমতা করে বললো, ” আসলে খালামনি মেঝেতে গড়াগড়ি খেয়েছি তো তাই কেমন যেন লাগছিলো। তাছাড়া গোসল না করে মেকাপ নিতে পারবোনা আমি। ”

রায়হান খান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তিনি জানেন রিমুর মতই নেই বিয়েতে তারপরেও। কথা ঘোরাতে তিনি বললেন” তুই মেকাপ করবি?”

এবার যেন রিমুর খারাপ লাগা আরো বেশি করে বাড়লো। সে নিম্নস্বরে বললো, ” খালামনি তুমি যদি রূপম ভাইকে একটু ম্যানেজ করতে। আমি পারবোনা আটা ময়দা মাখতে। ”

রিমুকে সাজলে মানায়না খুব একটা। তাই রায়হান খানও চাচ্ছিলেন না সে সাজুক। কিন্তু কিছুই তার করার নেই।

রায়হনা খানের মাথায় এখন একটাই চিন্তা। যে বিয়ের আগাগোড়া অসম্মতি সে বিয়ে টিকবে তো?

চলবে,,,

অপ্রিয় সে পর্ব-০১

0

# অপ্রিয় সে
# সানজিদা সন্ধি
# পর্ব ১z

সুন্দরী মেয়েদের বুকে না কি তিল থাকে! তোর বুকেও তো তিল আছে। কিন্তু তুই তো সুন্দরী না রিমু। একদম পেত্নীর মতো দেখতে লাগে তোকে। কথাগুলো বলেই ফোনে মনযোগী হয়ে পড়লো রূপম। আর এদিকে রিমুর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না রূপমের এক কথাতেই যেন মুহুর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেলো।

কয়েকমিনিট আগেও, ” মা আমি রূপম ভাইকে বিয়ে করবোনা ” বলে কেঁদে কেঁদে মেঝের এপাশ থেকে ওপাশে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো রিমু। তার মা রেহনুমা বেগম ভ্রু কুঁচকে ভীষণ বিরক্তিকর ভঙ্গিতে খাটে বসে তার কাহিনি দেখছিলো। আর রিমুর বাবা রিয়াজুল করিম অসহায়ের ভঙ্গিতে মেয়েকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলো। রিয়াজুল করিম কাছে যেতেই রিমুর কান্নার বেগ যেন চক্র হারে বাড়তে থাকে। তাই একপর্যায়ে তিনিও হাল ছেড়ে চুপচাপ বসে পড়েন। স্বামী, স্ত্রী দুজনের মনে এখন একটাই ভয়। কোনো ভাবে যদি রিমুর পাগলামির কথা রূপমের কানে যায় তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।

আজকে রিমুর গায়ে হলুদ। তার খালাতো ভাইয়ের সাথে। কিন্তু রিমু কিছুতেই তাকে বিয়ে করতে চায় না। বিয়েতে রিমুর সম্মতি নেই সবাই জানে এটা। তারপরও রূপমের সাথেই রিমুর বিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর তারা। কারণ সবাই জানে রূপম যা চায় সেটাই নিজের করে নেয়। রিমুর চাচ্চু, বড় আব্বু, ফুপিরাও বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। কারণ রূপম তাদের ভাগিনা বলে কথা। রিমুর মা আর বাবা পরস্পর চাচাতো ভাইবোন। তাই রূপম রিমুর একহিসেবে তার ফুপাতো ভাই আর এক হিসেবে খালাতো ভাই।

রিমুর বাবা মাকে আর বেশিক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হলো না। ঘরের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো রূপম। আর তখনই রিমুর কথা তার কানে আসে। সব কাজকর্ম ফেলে ঘরে আসে সে। রূপমকে দেখেই রিয়াজুল করিম আর রেহনুমা বেগম ঘর থেকে বের হয়ে যান। এদিকে রিমু এককাধ হয়ে মেঝেতে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকায় খেয়ালই করেনি ঘরে কী হচ্ছে।

রিমু মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর বারবার চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে, ” আম্মু, আব্বু তোমরা আমাকে রূপম ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিও না। আমি বিয়ে করবোনা ওই রাক্ষসটাকে। এর চেয়ে ভালো আমাকে কোনো রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও।”

বিছানার এককোণে বসে রিমুর কথা চুপচাপ হয়ে শুনছে রূপম। একপর্যায়ে রূপম রিমুর বুকের মধ্যে থাকা তিলের কথা বলে উঠতেই রিমুর কান্না থেমে যায়। আর তারমধ্যে জেঁকে বসে একরাশ আতঙ্ক।

রিমু তড়িঘড়ি করে পাশ ফিরে রূপমকে দেখতে পায়। রূপম অন্য পাশে তাকিয়ে বলে, ” ওই! বুকে ওড়না থাকে না কেন তোর ? বাড়ির মানসম্মান তো ডুবিয়ে ছাড়বি। এতোবড় মেয়ে হয়েছিস অথচ নিজের দিকে খেয়াল রাখতে পারিস না? আমি বলেই তোকে বিয়ে করছি। নয়তো আজীবন তোকে ওই সিঙ্গেলই থাকতে হতো। ”

মেঝেতে গড়াগড়ি করতে গিয়ে অসচেতনতায় নিজের ওড়ানা যে কোন মুলুকে রেখেছে জানেই না রিমু। তাই চট করে বসে দুহাটু একসাথে করে নিজেকে আড়াল করতে চেষ্টা করলো সে। লাভের লাভ কিছুই হলোনা। উল্টে রূপমের কথা শুনে আরো বেশি লজ্জায় পড়ে গেলো রিমু। রূপম মিনমিনে হেসে বললো, “কালকের দিনটা এলেই তুই সম্পূর্ণভাবে আমার। এতো কাহিনি করার দরকার নেই।”

সেসব কথাকে পাত্তা না দিয়ে বিয়ে ভাঙার ছুঁতো খোঁজায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো রিমু। আজীবন সিঙ্গেল থাকার কথা শুনে সে চট করে বলে উঠলো, ” আমি আজীবন সিঙ্গেলই থাকতে চাই রূপম ভাই৷ তুমি আমাকে বিয়ে করে নিজের জীবনটা নষ্ট করিও না৷ আমাকে বিয়ে করে তোমার কোনো লাভ হবে না বুঝলে? আমার বাবা তোমাকে টাকাপয়সাও দিবে না। তুমি বরংচ একটা সুন্দর মেয়ে বিয়ে করে নাও। আমাকে বিয়ে করিওনা রূপম ভাই। ”

রিমুর কথা শুনে রূপম বিরক্ত হলো। ভীষণ রকম বিরক্ত হলো। যেখানে সব মেয়েরা তার জন্য পাগলের মতো পাগল সেখানে এই রিমু টা কেন তাকে এতো ভয় পায়? সে কি বাঘ না কি ভাল্লুক যে খেয়ে ফেলবে রিমুকে। সবসময় রূপমকে এড়িয়ে চলে রিমু। রূপমের ছায়াও মারাতে চায়না। যেন রূপমের ছায়ার মধ্যে বিষ আছে।

রূপম মুখে থাকা সেন্টার ফ্রেশটা চিবোতে চিবোতে বললো, ” তোর বাপের টাকা দিয়ে আমি কী করবো হ্যাঁ? ফাজিল মেয়ে। আমার আর আমার বাবার কী টাকার অভাব পড়েছে? যে তোর বাপের থেকে টাকা নিতে হবে আমায়? যেদিন থেকে তোর আর আমার বিয়ের কথা ঠিক হয়েছে সেদিন থেকে তুই বিয়ে করবোনা, বিয়ে করবোনা বলে চেঁচাচ্ছিস কেন বলতো? আর খালামনি, মামাকে এতো বিরক্ত করিস কেন? আমার সামনে তো বলিস না কখনো। তখন তো ঠিকই লক্ষ্মী হয়ে থাকিস। তবে আমি চলে গেলেই কেন সবার মাথা খারাপ করিস? তোর মাথায় কোনো গণ্ডগোল আছে না কি রে? তাহলে তো মহা সমস্যা। একেই পেত্নী আর তারউপর পাগল বউ নিয়ে সংসার করতে হবে আমাকে।”

রিমু বুঝে গেলো আর যাই হোক না কেন রূপম তাকে বিয়ে করবেই। রূপমের সাথে এক ছাঁদের নিচে থাকতে হবে ভেবেই রিমু চিৎকার করে উঠলো। এরপর আবার শুরু হলো তার কান্নাকাটি। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে সবাইকে জড়ো করলো। তারপর বুকে প্রচন্ড সাহস নিয়ে রূপমের সামনে থেকেই বললো, ” রূপম ভাই আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা। তোমাকে কখনো ভাই ছাড়া অন্য কোনো ভাবে দেখিনি। তাছাড়া তোমার মতো ফেমাস পারসনকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা। ফেমাস সবকিছুতেই আমার এলার্জি আছে। ”

এই প্রথমবার রূপমের সামনে বিয়ে না করার কথা তুললো রিমু। এখন সে ভয়ে আছে না জানি কী হয়ে যায়।

রূপম ধীরপায়ে উঠে এসে কষিয়ে থাপ্পড় বসালো রিমুর গালে। রিমুর ফর্সা টকটকে গাল লাল বর্ণ ধারণ করলো। রূপমকে রাগতে দেখে ঘরে যারা এসেছিলো সবাই হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো। যেন এখান থেকে বেরোতে না পারলে মহাবিপদ সংঘটিত হবে।

রিমু আর রূপম ঘরে একা এখন। রূপম আস্তে করে বললো, ” তোর ভালোই সাহস রে। আমি ভেবেছিলাম তুই আস্ত একটা ভীতুর ডিম। কিন্তু না! তুই তো মহা সাহসী। আমাকে বিয়ে করতে না চাওয়ার ইচ্ছে টা আমার সামনেই প্রকাশ করে শুধুশুধু থাপ্পড় টা খেলি। আমাকে রাগালে তো এমনটা হবেই। অস্বাভাবিক কিছু নয়। যাইহোক কান্নাকাটি রেখে গায়ে হলুদের জন্য রেডি হয়ে নে। ”

এক বাড়িতে ছোট থেকে মানুষ হয়েছে রিমু আর রূপম। কারণ রূপমের মায়ের বিয়ে তাদের এলাকাতেই হয়। রূপম ছোট থেকে নিজের বাড়িতে থাকার চেয়ে এখানেই পড়ে থাকতো। রিমু রূপমের তিন বছরের ছোট। রিমুর জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই সে দেখছে রূপমের আধিপত্য ঠিক কতটা৷ রূপম যা চেয়েছে সবকিছুই পেয়েছে। রূপমের ইচ্ছের বিরূদ্ধে কেউ কখনোই যায় না। আর যার ফলে ভুগতে হয়েছে রিমুকে। কোনো এক অজানা কারণে রূপম সেসবই চেয়েছে যা চাইলে রিমুর অসুবিধা হয়।

সেবার রিমু ক্লাস এইটে। সামনে মডেল টেস্ট পরীক্ষা থাকায় মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া করছে। ছাত্রী হিসেবে রিমু মাঝারি। অঙ্কে ভীষণ কাঁচা। দেখতে দেখতে পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসলো তার। রিমুর যেদিন ম্যাথ এক্সাম সেদিন রূপমের ইচ্ছে হলো পিকনিক করবে। রূপমের ইচ্ছে মঞ্জুর হলো৷ পুরো বাড়িতে গান-বাজনা হই হুল্লোড় ভরে গেলো । রিমু পরীক্ষার টেনশন আর গান বাজনায় জ্ঞান হারিয়ে পরেরদিন এক্সামে খারাপ করলো৷ ফলাফল পরীক্ষার ফেল করে বসলো।

ফেল করার দরুন সবার কথা শোনা আর রূপম তাকে ফেলটুস ট্যাগ লাগিয়ে দিলো। এরকম অসংখ্য ঘটনার সমন্বয় রূপম আর রিমু।

রিমুর প্রতি হওয়া নানান ঘটনার কারণে রূপমের প্রতি একপ্রকার বিতৃষ্ণা কাজ করে রিমুর। কিন্তু কিছু বলার বা করার সাহস হয়ে ওঠেনি তার। যার ছায়াতেও রিমুর অস্বস্তি হয় তার সঙ্গে আজীবন কাটাবে কী করে?

চলবে,,,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-২২ এবং অন্তিম পর্ব

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ২২ (শেষ)

বিয়ে বাড়ি যেমন মরা বাড়িতে পরিনত হয়েছে৷
তবে এটা শুধু রাজি বেগমের জন্য, দুপুর থেকে মরা কান্না জুরে দিয়েছে কাল মেহেন্দির পর একবার ও ছেলেকে দেখেনি৷

রাজি বেগমের এমন মরা কান্না দেখে রেহানা বেগম বিরক্ত নিয়ে বলে,
— “আহহ রাজি!!
এমন করছিস কেন? তুই তো জানিস তোর ছেলে দু-দিন এর বেশি ঢাকা থাকে না হ্যাঁ মানলাম সে মেঘলা আর শোভনের বিয়ে খেতে এসেছিলো৷
হয়তো আর ভালো লাগছে না তাই চট্টগ্রাম চলে গেছে৷ ”

রাজি বেগম আবার জোরে জোরে কান্না করে বলে,
— “মানলাম চলে গেছে কিন্তু ফোন কেন ধরছে না৷ ”

— “তোর ছেলে কবেই বা তোর ফোন ধরেছে?
থাকে তো সারাদিন রাজনীতি নিয়ে তোকে কতদিন দু-দন্ড সময় দিয়েছিলো৷ ”

শোভনের এবার বেশ বিরক্ত লাগছে এমন ভরপুর হলুদের অনুষ্ঠানে মা আর চাচি মিলে এমন শুরু করেছে৷
আর চাচি তো মরা কান্নাই জুরে দিয়েছে৷
শোভন এতোক্ষন স্টেজে বসে ফোন টিপছিলো মেঘলাকে এখনো স্টেজে আনা হয়নি শোভন বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলে,
— “কি শুরু করেছো তোমরা?
এইসব নাটক এখন এখানে বন্ধ না করলে আমি এখান থেকে চলে যাবো, আমি চাই না আমার বউ এর এসব নিয়ে মন খারাপ হোক৷ ”
বলেই স্টেজ থেকে নেমে মেঘলার রুমের উদ্দেশ্যে পা বারায়৷

মেঘলার সাজ প্রায় শেষ আলতা পরানো বাকি, বাসন্তি রাঙা লাল পারের শাড়ি পরানো হয়েছে মেঘলাকে কাচা ফুলের গয়না রুপ মহিনী লাগছে মেঘলাকে৷ মেঘলার পরনের সব জিনিস নিজ হাতে কিনেছে শোভন৷
শোভন রুমে প্রবেশ করতেই সারা, ঐশী সহ সবাই বেরিয়ে যায়৷ আলতা পরানো ও হয়নি৷
প্রথমবার হলুদের কনে সাজে শোভনের সামনে মেঘলা একটু বেশি লজ্জা পাচ্ছে লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলে,
— “আলতা না পরিয়েই চলে গেলো এবার পরবো কি করে৷ ”

মেঘলার লজ্জা নুয়ে থাকতে দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসে শোভন, এইভাবে তার হুর পরি তাকে দেখে কতই না লজ্জা পাচ্ছে৷
ধীর পায়ে হেটে মেঘলার সামনে গিয়ে পা বরাবর বসে শোভন, শোভন কে বসতে দেখে মেঘলা চাপা স্বরে বলে,
— “এখানে বসলে কেন?
উপরে বসো৷”

মেঘলার কথার উত্তর না দিয়ে আলতাটা হাতে নিয়ে মেঘলার পায়ে লাগিয়ে দিতে থাকে৷ মেঘলার এবার অসস্তি হচ্ছে এমন টা কেউ করে ও পায়ে হাত দিবে কেন? তা ভেবে মেঘলা বলে,
— “তুমি এভাবে পায়ে হাত দিচ্ছো কেন?
ওটা রাখো আমি একাই দিতে পারবো৷ ”

মনে হলোনা মেঘলার কথায় শোভনের মধ্যে কোনো ভাবান্তর বা প্রতিক্রিয়া হয়েছে সে নিজের মতো মেঘলার পা চেপে ধরে আলতা দিতে ব্যাস্ত মেঘলা অসহায় ভাবে আবারো বলে,
— “কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে৷ ”

তাও শোভন রাখলো না৷ পা দুটো আলতা দিয়ে রাঙিয়ে আলতাটা সাইডে রেখে ঘোর লাগা চাওনি দিয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,
— “কে কি ভাবলো কে কি বললো তা নিয়ে পরোয়া আমি করি না হুর পরি,,, আমার জন্য সবার আগে তুমি নামক মানুষটা প্রিয় আর মূল্যবান৷
এতোটা প্রিয় যে বাকি সব কিছু আমার কাছে তুচ্ছ৷ ”

শোভনের কথায় মেঘলার মনে অদ্ভুত এক শিহরন বয়ে গেলো, অদ্ভুত অনুভূতি মনের কোনে নারা দিচ্ছে৷
ভালোবাসার মানুষের মুখের ভালোবাসা মাখা কথা কি এতোটা শিহরন জাগিয়ে দেয়?
ভালোবাসার মানুষটার কথা গুলো এতো ভালো লাগা কাজ করে?
এ অনুভূতি যে সব কিছু অগোছালো করে দিচ্ছে মেঘলা কে তা কি শোভন বুঝে না?

মেঘলা লজ্জা মাখা চোখে শোভনের দিকে তাকিয়ে আছে৷
শোভন দুষ্টু হেসে দাঁড়িয়ে মেঘলাকে দাড় করিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফিস ফিস করে বলে,
— “এমন ভাবে তাকিয়ে থাকলে কালকে রাত অব্দি আর অপেক্ষা করতে পারবো না আজই,,,,৷ ”

শোভন আর কিছু বলতে পারলো না মেঘলা মুখ চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলে,
— “তুমি বড্ড বেশি নির্লজ্জ হয়ে গেছো জানো?
যা মুখে আসে তাই বলো৷ ”

শোভন হেসে বলে,
— “অন্য কাউকে তো আর বলি না নিজের বউ কেই বলি৷ ”

মেঘলা শোভন কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে,
— “উপরে সবাই অপেক্ষা করে আছে৷ ”

শোভন পকেট থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে তার থেকে হলুদ বের করে আবার মেঘলার কোমর চেপে ধরে নিজের কাছে এনে কপালে আলতো করে হলুদ লাগিয়ে দেয় তারপর মুক্ত কোমরে কিছুটা লাগিয়ে বলে,

আমার ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিয়ে
রং তুলি দিয়ে আকবো ছবি
যতন করে বুকের গভীরে লুকিয়ে রাখবো আপন করে💜

_তাফসিয়া মেঘলা

শোভন মেঘলাকে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে দাড় করিয়ে বলে,
— “আমি চাইনি আমার হুর পরিকে আমার আগে কেউ হলুদ দিয়ে রাঙাক তাই আমি আগে দিয়ে দিলাম৷ ”

মেঘলা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে শোভন কে জড়িয়ে ধরে,
শোভনও পরম আবেশে নিজের প্রেয়সীকে বুকে মুশিয়ে নেয়৷

________________

খোলা আকাশের নিচে উচু বেঞ্চিটিতে বসে চন্দ্র বিলাশ করছে শোভন মেঘলা,
বিয়ের অনুষ্ঠান একটু আগেই শেষ হলো, ভালো করেই সব কিছু মিটলো৷ বাড়িতে সবাই নাচতে উঠেছে৷
আর বেশি সোর সারাবার জন্য মেঘলার মাথা ব্যাথা
করছিলো আর দুই দিন যাবত রাজি বেগমের ফ্যাচকা কান্না তো ছিলোই৷
শোভন চায় না এসব নিয়ে মেঘলার আজকের দিনটা নষ্ট হোক তাই নিজেদের মতো একা সময় কাটানোর জন্য এখানে নিয়ে এসেছে৷

চৈত্র শেষ হতে আর কয়েকটা দিনই বাকি গরম টা বেরেছে কিন্তু খোলা আকাশের নিচে প্রান প্রেয়সীর সাথে চন্দ্র বিলাশ সবারি বেশ মোহনীয় লাগে৷
আবছা আবছা বাতাস বইছে৷
লেক পার্কটা বাড়ি থেকে একটু দূরে জায়গাটা বরাবরই মেঘলার খুব প্রিয়,
বেঞ্চি থেকে লেক পার্কটার শেষ বরাবর একটা চায়ের টং যেখানে বয়ষ্করা নিজেদের আড্ডায় মেতে উঠেছে৷
পাশেই একটা ফুচকা আর আইস্ক্রিমের স্টল৷

দুজনের মাঝেই পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিলো নিরবতা ভেঙে মেঘলা মৃদু স্বরে শোভনকে প্রশ্ন ছুরে দেয়
— “ছোট ভাইয়া কোথায়?”

মেঘলার এমন প্রশ্নে শোভন একটুও অবাক হলো না বরং মুখে বাকা হাসির রেখা ঝুলিয়ে বলে,
— ” মেরে দিয়েছি৷

শোভনের খোলা মেলা উত্তরে মেঘলার কোনো ভাবান্তর হলো না বরং দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কারন সে জানে যত দিন বেঁচে থাকবে শোভনের #তিক্ত_ভালোবাসা নিয়ে থাকতে হবে৷

নীল আকাশে অজস্র তারার ভিড়ে, মন শুধু সারাক্ষন তোমাকেই খোজে ফেরে৷ সেই অনীল আকাশে তোমাকে নিয়ে মেতে থাকতে চাই চন্দ্র বিলাশী হয়ে, কিছু কথন বানিয়ে দিক না আমায় প্রেমবিলাশি৷ তোমাকে নিয়ে হারাতে চাই ভালোবাসার মায়ায়, যে মায়া করে দিবে আমায় তোমার ভালোবাসার মায়াবিনী৷ শীতের সকালে দুটিতে হাটবো হাতে হাত রেখে শিশির ভেজা ঘাসের উপর৷ কোন এক বর্ষনের রাতে তোমায় নিয়ে ভিজবো আমি বৃষ্টি বিলাশি হয়ে৷ গূধুলির আলো-আধার মাখা শেষ প্রহরে জড়িয়ে ধরে বলবো আমি থাকবেতো তুমি আমার হয়ে৷ সীমাহীন ভালোবাসার অসীম আগ্রহ নিয়ে বলবে আমায়, “ওহে প্রেয়সী আমিও যে ভালোবাসি তোমায়”৷ ❤️

_তাফসিয়া মেঘলা

আচমকা মেঘলার এমন কথায় কেঁপে উঠে শোভন৷
মেঘলা একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবার বলে,
— ” ভালোবাসি,
খুব বেশি ভালোবাসি হয়তো তোমার মতো করে নয় তবে তোমার চেয়েও কম নয়৷ সারা জীবন তোমার #তিক্ত_ভালোবাসা নিজেকে রাঙিয়ে রাখতে চাই৷

শোভন আচমকা মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে কয়েক বার জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে,
— “ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি৷ ”
এভাবেই কতক্ষন দুজন দুজনকে জড়িয়ে ছিলো তাদের খেয়ালি নেই, কিছুক্ষন পর মেঘলা নিরবতা ভেঙে
মিষ্টি হেসে ফুচকার দোকানটা দেখিয়ে শোভন কে বলে,
— “ফুচকা খাবো৷ ”

শোভন একবার ফুচকার দোকান টা দেখে মেঘলার দিকে ব্রু কিঞ্চিত কুটি করে তাকিয়ে কিছু বলবে এর আগেই মেঘলা বলে,
— “প্লিজ না করো না৷ ”

এমন পরির মতো বউ সাজা অবস্থায় এতো সুন্দর করে কেউ যদি আবদার করে তা কখনো কেউ কি ফেলতে পারে?
শোভন দাঁড়িয়ে মেঘলাকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
— “চলুন মহারানী আপনার খুকুম শীরধার্য৷ ”

৪ বছর পর,,,,,,

বিচ্ছিরি রক্ত মাখা লাশের সামনে দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপছে মেঘলা,
পাশেই হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে তার তিন বছরের ছেলে নূর৷
বাগানেই ছেলেকে নিয়ে খেলছিলো মেঘলা আর সারা৷
ছেলে ছোট বিড়ালের পিছে ছুটতে ছুটতে পাশের বাড়ির গেটের সামনে এসে পরে৷
আর এখানে লাশের সামনে বসে কাঁদছে মৃত ছেলেটির মা৷
ছেলেটি নাকি এক্সিডেন্ট করেছে গাড়ি সহ খাদে পরে গিয়েছিলো৷
এই ছেলেটা প্রতিদিন ছাদে গেলে পাশের বাড়ির ছাদ থেকে তাকিয়ে থাকতো কাল তো ছাদে কিছু লিখে কাগজ দিয়ে মুড়ে মেঘলা কে পাঠিয়েছিলো কিন্তু এর এমন অবস্থা কি করে?
কে এমন করলো?
সত্যি কি এটা এক্সিডেন্ট? পাঁচ বছর আগে আকাশের এমন অবস্থা হয়েছিলো তাহলে কি শোভন? কিন্তু শোভন তো এসব করে না আর ছেলে হওয়ার পর বদলে গেছে,
মেঘলা ঘাম গুলো আচল দিয়ে মুছে ছেলেকে নিয়ে চলে আসে৷
বাড়িতে আসতেই নূর কে নিয়ে সারা ছাদে চলে যায়, আনমনে হাটছিলো হঠাৎ কেউ হাতে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে খামছে মেঘলার কোমর চেপে ধরে৷
মেঘলা জানে এটা শোভন তার তিক্ত প্রেমিক৷
মেঘলা চোখ বন্ধ রেখেই বলে,
— “মেরেছো কেন?”

শোভন বাকা হেসে বলে,
— “বলেছি না? তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও তাকে বাঁচতে দিবো না৷”

বলেই জোরে জড়িয়ে ধরে৷
মেঘলাও কিছু বললো না সে জানে শোভন কখনোই পাল্টাবে না ওর #তিক্ত_ভালোবাসা দিয়ে সবসমই জড়িয়ে রাখবে৷

—————— সমাপ্ত——————–

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-২১

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ২১

হাজারো রঙের মাঝে রঙিন তুমি,
তাইতো,,,,,
সাত রাঙা ফুলের ভিরেও
শত শত বার তোমাতেই মুগ্ধ আমি❤️

_তাফসিয়া মেঘলা

উষ্ঠ জুগল কিঞ্চিত সরু করে মিষ্টি মাখা মুচকি হেসে মেঘলা বলে,
— “বাহহ বেশ তো, তা কবি হলে কবে থেকে?

ধুসর রাঙা আকাশ পানে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— ” আমি কবি নই,
তবে তোমার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কবি হতে ক্ষতি কি?
আমি যদি কবি হই তবে তুমি হবে কি আমার পরন্ত বিকেলের কাব্যের হৃদ মহিনী?
হবে কি আমার নীল আকাশের অনীল নীলাঞ্জনা? হবে কি আমার অন্ধকার আকাশের হাজার তারাত এক চিলতে চাঁদ?”

হাজারো মুগ্ধতা নিয়ে মুগ্ধ নয়নে শোভনের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘলা৷
মনের সুপ্ত অনুভূতিরা বলছে,
— “এটাই কি #তিক্ত_ভালোবাসার #তিক্ত_প্রেমিক?
এতোটা পরিবর্তন? ”

অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু কাছে এসে কোমরে হাত দিয়ে আরেক হাতে মেঘলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে প্রশান্তিময় হাসি টেনে বলে,
— “এভাবে তাকিয়োনা হুর পরি,,,,,,
এমন চাওনিতে আমি ব্যাধিগ্রস্ত হই৷ মনে হয় বুকের পিঞ্জিরায় ঢুকিয়ে রাখি,
মনে অদ্ভুত ইচ্ছে জাগ্রত হয়৷
কিন্তু সে ইচ্ছে যে আপাদত চাপা দিয়ে রাখতে হয়৷ ”
শোভনের এমন কথায় মেঘলা লজ্জায় নুয়ে যায়৷

— “রোমান্স হচ্ছে বুঝি?”
হঠাৎ মেয়েলী কন্ঠ পেয়ে দুজনে দুদিকে সরে সামনে তাকিয়ে দেখে ঐশী আর সারা দাঁড়িয়ে আছে৷

শোভন ওদের দেখে মাথা নিচু করে বিরবির করে বলে,
— “হায় আল্লাহ কি বোন দিয়েছো, বোন আর শালির জন্য বউ এর সাথে ঠিক মতো রোমান্স ও করা যায় না৷ ”
বলেই বিস্ফোরিত চোখে ঐশী আর সারার দিকে একবার তাকিয়ে সাইড কেটে নিচে চলে যায়৷

মুখ কালো করে গুটি শুটি মেরে বসে আছে ঐশী, কখনো বিরবির করে হায়াত কে বকছে কখনো নিজেকে বকছে কখনো মেঘলাকে বকছে একা একাই৷
ওর এমন বাচ্চামো পাশে বসে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে হায়াত৷ এমন করার কারন সবার সাথে আড্ডার মাঝখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসে ছাদে বসিয়ে রেখেছে হায়াত৷ আর নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে মেঘলা৷
বেচারা হায়াত শোভনের সাথে বোনের বিয়ের কাজ কর্ম করতে করতে একটুও কাছে পায় না সারাদিন ঐশীকে তাই এখন এখানে নিয়ে এসেছে৷
হায়াত কিছুক্ষন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে ঐশীকে দেখে এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় কারন এবার ওর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে৷
হায়াত দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ঐশীর হাত ধরে উঠিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে রক্ত চক্ষু নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— “এমন করছো কেন?আমার কাছে আসলেই তোমার যত বিরক্ত আছে এসে ভর করে?
কেন এমন করো?

হায়াতের এমন রেগে যাওয়া দেখে ঐশীর বিরক্ত আভাটা কেটে চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠে৷ শুকনো ঢোক গিলে বলে,
— ” আসলে তা নয় আপনি ভুল বুঝছেন৷

হায়াত ঐশীর এমন ভয় পাওয়া দেখে কিছুটা স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
— “তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য কতটা বেকুল বুঝো না?
ভালোবাসি তোমায়, কাছে পেতে চাই সবসময় তোমায়৷ ”

বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে৷
ঐশীর কি হলো সে নিজেও জানেনা সে ও আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে, কিছুক্ষন পর ছেড়ে এক হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে ঘারের চুল গুলো সরিয়ে আলতো ঠোঁট ছোয়ার৷
আরেকটু নিজের কাছে টেনে কপালে গভির ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷

বারান্দার চেয়ারে বসে টুং টাং করে গিটারে শব্দ তুলছে শোভন৷
টিয়া পাখিটাকে খাবার দিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মেঘলা শোভনের দিকে৷
এ শোভনকে যেন UK যাওয়ার পর থেকে অচেনা লাগছে আগের মতো হুট হাট রেগে যায় না নিজের হিংস্রতা দেখায় না৷
মেঘলাকে এমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ব্রু কিঞ্চিত উচু করে বলে,
— “কি দেখছেন হুর পরি?”

মেঘলা হকচকিয়ে বলে,
— “কই কিছু না তো৷ ”

এইটুকু উত্তর দিয়েই আবার চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে৷
আবার দু জনের মধ্যে পিনপতন নীরবতা, নিরবতা ভেঙে শোভন এসে মেঘলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে বলে,
— “ভালোবাসি৷ ”
উত্তরে মেঘলা মুচকি হাসে৷

________________________

দুই হাতে ভরে মেহেন্দি পরে উসখুস করছে মেঘলা৷ না পারছে উঠতে না পারছে ঠিক মতো বসতে লেহেঙ্গার আচলটা খুলে গেছে যার কারনে পেটটা দৃশ্যমান৷ নিলয় কু-দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷
ঐশী টা কেউ সময় মতো পাওয়া যায় না সবার সাথে নাচতে নেমে গেছে৷ আর শোভনকে তো সেই সকাল থেকে একবার চোখের দেখা ও দেখতে পারেনি, হঠাৎ হায়াতকে দেখতে পেয়ে ইশারা দিয়ে ডাকে৷
হায়াত কাছে এসে বলে,
— “কিছু লাগবে বোন?”

মেঘলা অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলে,
— “ভাইয়া তোমার বউটা কে একটু ডেকে দাও না কাজ আছে৷ ”

মেঘলার কথা শুনে হায়াত ঐশীর দিকে এগিয়ে যায়৷
হায়াত কে এতো কাছে আসতে দেখে ঐশী ব্রু কুটি করে বলে,
— “দেখুন এখন যদি একা কোথাও নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে হয় তাহলে আপনার ইচ্ছে টা কে মাটি চাপা দিন আমি কিছুতেই এখন কোথাও যাবো না৷ ”

এই মেয়ে সব সময় এক লাইন বেশি বুঝে৷
হায়াত রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— “সব সময় এতো বেশি বুঝো কেন?
মেঘলা তোমাকে ডাকছে তাই এসেছি, সব সময় কি তোমার মাথায় ওই সব চিন্তাই ঘুরে?”

হায়াতের কথা শুনে ঐশী জীব কেটে বলে,
— “সরি,
আমি ভেবে ছিলাম,,,৷ ”

ঐশীকে থামিয়ে হায়াত বলে,
— “যা ভেবেছো বুঝেছি,
এখন আমার বোনের কাছে যাও৷ ”

ঐশী যেতেই মেঘলা অসহায় ভাবে তাকিয়ে লেহেঙ্গা টা দেখিয়ে বলে,
— “এটা ঠিক করে দে না৷ ”

এক দৃষ্টি তে তাকিয়েই বাকা হাসছে নিলয়৷ নিলয় কে দেখে বিরক্ত নিয়ে ঐশী মেঘলাকে রুমে নিয়ে আসে৷
কিন্তু মেঘলার রুমে একটাও সেফটি পিন নেই লেহেঙ্গার টা কোথায় যেন পরে গেছে তাই ঐশী গেছে এখানে মেঘলাকে রেখে সেফটি পিন আনতে৷
তখনই রুমে নিলয় প্রবেশ করে নিলয় কে দেখে বিরক্ত নিয়ে মেঘলা বলে,
— “এখামে কেন এসেছো? যাও এখান থেকে”

বলে মেহেন্দির হাত দিয়েই উরনাটা ঠিক করে৷ কিন্তু নিলয় শুনছেই না, বেশ অসস্তি হচ্ছে এ ছেলে যে এমন খারাপ মেঘলা জানতো৷
নিলয় মুখে বাজা হাসির রেখা ঝুলিয়ে মেঘলার দিকে এগোচ্ছে

মেঘলা বলে,
— “ভাইয়া এখান থেকে যাও৷ ”

নিলয়ের কানে কথাই ঢুুকছে না যেন৷ নিলয় মেঘলার একেবারে কাছে এসে মেঘলার কোমরে হাত দেয়৷
রাগে কষ্টে বিরক্ত অসস্তি তে মেঘলার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে,
তখনই দরজা জোরে ধাক্কা দিয়ে কেউ প্রবেশ করে শোভন দাঁড়িয়ে আছে পিছনে ঐশী, শোভন কে দেখে নিলয় কে ধাক্কা দিয়ে ওর বুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে৷
শোভন কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক রেগে আছে, আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে৷
শোভন গম্ভীর কন্ঠে নিলয় কে বলে,
— “এখান থেকে যা৷ ”

নিলয় কিছু না বলে এখান থেকে বেরিয়ে যায়৷
মেঘলাকে মাথায় হাত দিয়ে শান্ত করে নিজের কাছে বসায়৷ শোভনকে শান্ত দেখে মেঘলা নিজেও অবাক, নিলয় ওর কোমরে হাত দিয়েছে শোভন কি করে এতোটা শান্ত আছে? শোভন কি সত্যি আর আগের মতো নেই পালটে গেছে?
এতোটা বদল? সত্যি কি বদল হয়েছে?
নাকি এমন নিস্থব্দতা কোনো ঝরের পূর্বাভাস?

চলবে,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-২০

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ২০

মাত্রই প্লেনে উঠলো মেঘলারা৷
শোভনের পাশের সিট টাই মেঘলার, আর হায়াত ঐশী এক সাথে৷
হায়াত পাশে তাই ঐশী কাচুমাচু করে বসে আছে, আর মনে মনে মেঘলাকে হাজার গালি দিচ্ছে৷ এমন করে বসে থাকতে দেখে হায়াত মুখ চেপে হাসছে, মেয়েটা মাত্রাতিরিক্ত ভয় পায় ওকে এতোটা ভয় পায় কেন এটাই হায়াত বুঝতে পারে না৷

হায়াত বাকা হেসে ঐশীকে বলে,
— “এভাবে মুখ করে আছো কেন?
আর আমাকে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?
আমি তোমার উডবি হাসবেন্ড কোনো বাইরের ছেলে না৷”

উডবি হাসবেন্ড কথাটা শুনে ঐশীর বুকটা ধক করে উঠলো, কেন এমনটা হলো তা ঐশীর অজানা৷
সত্যি তো হায়াত তো ওকে আর এখন বকছে না তাহলে ভয় পাচ্ছে কেন?
ও মানুক আর নাই মানুক এই মানুষ টার সাথেই তো বিয়ে ঠিক হয়েছে, আর না মানারি বা কি আছে?
হায়াত কে দেখে যে কেউ নির্দিধায় বলবে ও একজন ভালো ছেলে, হয়তো মাঝে মাঝে একটু বকে কিন্তু ভালোবাসে বলেই তো বকে৷

ঐশী কে ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে হায়াত কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,
— “এভাবে তাকিয়োনা হৃদয় হরনী পাগল হয়ে যাবো৷
এমনি তোমার ওই চোখের মায়ার পরে দিনে দিনে পাগল হয়ে যাচ্ছি এখন এমন পাগল করো না যাতে সেই পাগলের পাগলামি তোমাকে সারা বছর সামলাতে হয়৷ ”

ঐশীর ভিত চেহারা নিমেষেই লজ্জায় ভরে যায়৷
লজ্জায় মাথা নিচু করে অন্য দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে, যেই হাসি হায়াতের চোখ এরায়নি৷ যে হাসির প্রেমে আগেও অনেকবার পরেছে যে হাসি ক্ষনে ক্ষনে ওকে পাগল করে তুলছে৷
সে হাসি আজও হায়াতের বুকে তীরের মতো হয়ে লাগছে, হায়াত মুচকি হেসে হ্যালান দিয়ে চোক বন্ধ করে তৃপ্তি মাখা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে৷

মেঘলা হেডফোন কানে গুজে চোখ বন্ধ করে গান শুনছে৷
আর শোভন মেঘলাকে দেখে তিন মাসের তৃপ্তি মোচন করছে, শোভন মেঘলার দিকে তাকিয়ে শত বছর পার করে দিতে পারবে৷ মেঘলাকে বুকে নিয়ে শত কষ্ট মোচন করে বছর পার করে দিতে পারবে৷


প্লেন মাত্রই বাংলাদেশে ল্যান্ড করলো,
সারা, নিলয় (রাজি বেগমের ছেলে) গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
মেঘলা নিলয় কে একটুও পছন্দ করে না ছেলেটা মোটেও ঠিক স্বভাবের না চট্টগ্রাম থাকে সবসময় এখন হয়তো ঢাকা এসেছে শোভন মেঘলার বিয়ের জন্য৷
নিলয় শোভন কে দেখেই এসে জড়িয়ে ধরে সারা মেঘলাকে জড়িয়ে বলে,
— “কত্তদিন পরে দেখলাম তোমায়,
জানো কতটা মিস করেছি৷ ”

মেঘলা হেসে বলে,
— “আমিও তোদের মিস করেছি৷ ”

নিলয় মেঘলার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে শোভনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— “ভাইয়া তোর সবসময় সুন্দর জিনিস টার উপরি নজর যায়?
দেখে দেখে মেঘলাকেই বেছে নিলি?”

শোভন রেগে কিছু বলতে যাবে মেঘলা থামিয়ে দিয়ে বলে,
— “ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন ছোট ভাইয়া আমি কোনো জিনিস না আর আমি তোমার সম্পর্কে ভাবি হই ছোট মামি কি তোমায় এটাও শিখায় নি বড় দের সাথে সুন্দর করে কথা বলতে হয়৷ ”

মেঘলার উত্তরে নিলয় বাকা হাসে, শোভন মেঘলার এমন উত্তরে বেশ খুশি হয়েছে৷
ভাবছে
“তার বউটা তাহলে আস্তে আস্তে তার মতই ডেঞ্জারাস হচ্ছে৷ ”

বাড়িতে আসতেই পরিবেশটা বেশ আমেজি হয়ে আছে,
এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে এখন থেকেই বাড়ি সাজানো শুরু হয়ে গিয়েছে৷ শোভনের মা মাথা নিচু করে আছে নিজের কাছে নিজেরই এখন লজ্জা লাগছে৷
মেঘলা উনার সামনে যেতেই জোরপূর্বক হাসি টেনে মেঘলাকে নিজের কাছে বসিয়ে বলে,
— “আমার পাগল ছেলেটা যে তোকে ছাড়া অচল এটা আমি তখন ভুলেই গিয়েছিলাম, আমি জানি তখন তোর সাথে ওইরকম করা ঠিক হয় নি তাই কি আমাকে ক্ষমা করা যায় না?”

মেঘলা জড়িয়ে ধরে বলে,
— “ক্ষমা চাওয়ার কিছুই নেই তুমি তোমার জায়গায় সঠিক ছিলে তোমার জায়গায় যে কেউ থাকলে একি কাজ করতো৷ ”

রেহানা বেগমের কিছুটা শান্তি লাগছে এখন লজ্জার আভাটা কেটে প্রশান্তির হাসি মেখে মেঘলাকে এক হাতে জড়িয়ে বলে,
— “আমার ছেলেটাকে ভালোবেসে আগলে রাখিস মা ও যে তোকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে৷ ”

রেহানা বেগমের উত্তরে মেঘলা মুচকি হাসে৷
রাজি বেগম মেঘলা আসার পর থেকেই লোক দেখানো খাতির করছে আর মনে মনে দুরছাই করছে৷
নিচে সবার সাথে কথা বলে মাত্রই উপরে এসে ফ্রেস হয়ে বসলো নিজের রুমে৷
এই রুমটা ছোট থেকে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে কত দিন পর আবার এলো, বিছানায় বসে বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করতে কেউ এসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে৷
তাকিয়ে দেখে শোভন কোথা থেকে এসে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে৷
তারাতারি নিজের দিকে তাকাতেই দেখে উরনাটা নেই উরনার উপরি শুয়ে আছে শোভন৷
মেঘলা আমতা আমতা করে বলে,
— “আমার উরনাটা দাও৷ ”

শোভন টান দিকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে শুইয়ে চোখ বন্ধ রেখেই বলে,
— “আমার সামনে এতো ফরমালেটির কিছু নেই বাইরের কেউ না আমি৷
এখন কথা বলো না প্লিজ ঘুমাতে দাও৷ ”

মেঘলা শোভনের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলে,
— “তোমার রুমে যাও এখানে কেউ দেখলে কি ভাববে?”

— “তুমি আমার বউ, কে আবার কি ভাববে?
এখন কথা না বাড়িয়ে ঘুমাও আমাকেও ঘুমাতে দাও প্লিজ৷ ”

বলে মেঘলার বুকে মুখ গুজে আরেক হাতে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরে৷ শোভন এমন ভাবে মেঘলার বুকে মুখ গুজে শোয়ায় বেশ অসস্থি হচ্ছে মেঘলার৷ কিন্তু কিছু করার নেই এই ছেলে যা ঘার ত্যারা জীবনেও সরবে না, তাই আর সরতে বলে না মেঘলা৷
চোখ খিচে বন্ধ করে নিজেও ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তা আর হচ্ছে না কেউ এভাবে শুয়ে থাকলে কি আর ঘুম হয়?
এ লোক সারা জীবন যে উঠতে বসতে মেঘলাকে জ্বালাবে তা মেঘলা বুঝে গেছে৷
বেশ অনেকক্ষন পর মেঘলার চোখ লেগে আসে৷

চৈত্রের শেষ সপ্তাহ চলছে, রোদে যেন পুরো শরীর পুরে যায় বাইরে এলে৷ প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেঘ ছেয়ে যায় আকাশে বৃষ্টি আসবে বলেও আসে না যার কারনে আরো ভাপ্সা গরম লাগে৷
বিকেল চারটা বাজে তাও রোদের উত্তাপ কমবে বলে যেন আরো বারছে, বাড়ি ভর্তি লোকজন বাড়ি আরো বেশি গরম হয়ে আছে আর দুদিন পরই বিয়ে তিনদিন হলো UK থেকে এসেছে প্রথম দুইদিন সবসময় মেঘলার কাছে কাছেই ছিলো৷
কিন্তু বিয়ে যত না ঘনিয়ে আসছে শোভন আরো ব্যাস্ত হয়ে পরছে, নিজের বিয়ের কাজে নিজেই ব্যাস্ত৷
মেঘলা ছাদে বসে কফি খাচ্ছে, গরমের জন্য ছাদে এসেছিলো খোলা বাতাসে কিন্তু আরো বিপত্তি ঘটলো রোদ কমার নামই নেই যেন৷
ঐশী বেরিয়েছে সারার সাথে৷
আপাদত মেঘলা ছাদে একাই আছে,

শোভন কাজ সেরে নিচে মেঘলাকে না দেখতে পেয়ে ছাদে আসে দেখে দক্ষিনা আকাশ পানে মুখ করে ধোয়া উঠা কফিতে চুমুক দিচ্ছে৷
রোদের মধ্যেও মেঘলার কফি খেতে বেশ লাগে, এই জিনিসটার প্রতি একটু বেশি আকৃষ্ট, কফির প্রতি নেশা টা মেঘলার বরাবরই বেশি৷
শোভন ক্লান্ত হয়ে ঢুলু ঢুলু পায়ে মেঘলার দিকে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘারে আলতো ভাবে ঠোট ছোয়ায়৷
শোভনের এমন কান্ডে মেঘলা একটুও অবাক হয় নি সে জানে আর কেউ না এটা ওর শোভনি৷
পিছনে ঘুরে মুচকি হেসে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,
— “কোথায় ছিলে?
এখন তো তোমায় দেখাই যায় না৷ ”

উত্তরে শোভন মিষ্টি হাসে ক্লান্ত শরীরেও তৃপ্তি মাখা হাসি দেয় এই ভেবে তার প্রেয়সি তাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে শুধু মুখে বলার অপেক্ষা৷
শোভনের কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো উরনা দিয়ে মুছে দিয়ে বলে,
— “এই প্রথম কাউকে দেখলাম নিজের বিয়ের কাজ নিজে করছে৷ ”

শোভন ব্রু কিঞ্চিত উচু করে বলে,
— “কেন?
নিজের বিয়ের কাজ কি নিজের করতে নেই?”

মেঘলা বলে
— “আমি কি বলেছি নেই? আমি বলেছি তোমাকেই প্রথম করতে দেখলাম৷ ”

শোভন মুচকি হেসে বলে,
— “আমার জন্য তুমিটা এতো স্পেশাল যে তোমার জন্য নিজ দায়িত্বে সব কিছু স্পেশাল ভাবে করছি হুর পরি৷
ভালোবাসি যে তোমায়৷
আমার এ ভালোবাসার অসীমতা আছে কিন্তু সীমা নেই৷ আমার অনুভূতি জুরে তোমার কথা মিশে থাকে প্রতিক্ষন৷

চলবে কি???🙄

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৯

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৯

হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে দুজনেই তাকিয়ে দেখে হায়াত দাঁড়িয়ে আছে৷
মুখে বাকা হাসি, হায়াত কে দেখে ঐশী শুকনো ঢোক গিলে মেঘলার দিকে তাকায় মেঘলাও শয়তানি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷
যাওয়ার আগে ফিসফিসিয়ে হায়াত কে বলে,
— “তোমার ভালোবাসা ও দেখে না তোমার ভালোবাসা টা দেখিয়ে দাও৷ ”
বলেই মেঘলা চলে যায়৷

হায়াত ঐশীর দিকে এগোতে এগোতে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
— “বুঝোনা কতটা ভালোবাসি তোমায়?
বুঝোনা তোমার উপর কেন এতোটা অধিকার দেখাই?
আমি যে তোমায় ভালোবাসি অনেকটা বেশি, সব কি বুঝিয়ে বলতে হয়?
কিছু কথা তো নিজের থেকেও বুঝে নিতে পারো তাই না?

ঐশী মাথা নিচু করে পিছনের দিকে এগোচ্ছে হঠাৎ হায়াত ঐশীর কোমর ধরে নিজের কাছে এনে বলে,
— ” ভালোবাসি ❤️”

হায়াতের প্রশ্নের উত্তর নেই ঐশীর কাছে তাই মাথা নিচু করেই আছে৷
হায়াত আবার বলে,
— “কাল আমাদের সাথে বাংলাদেশ যাবে তুমি,
তোমার সব ব্যাবস্থা আমি করবো৷
তোমার মা আর বড় ভাই কে ও আমি ম্যানেজ করবো৷ ”

মেঘলার সাথে যাওয়ার কথা শুনে, ঐশীর লজ্জা আর ভয় টা কেটে মুখে আনন্দের আভা ফুটে উঠে৷
উচ্ছাসিত কন্ঠে লাফিয়ে উঠে বলে,
— “সত্যি আমি যাবো?”

— “হুম”
হায়াত ছোট উত্তর দিয়ে ঐশীর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷


মেঘলা আনমনে হাটতে হাটতে কিছু ভাবছিলো৷
হঠাৎ হাতে টান পরায় ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে আসে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে শোভন মিষ্টি হেসে দাঁড়িয়ে আছে৷

মেঘলা ফিরতেই শোভন মেঘলাকে প্রশ্ন ছুরে দেয় যা শুনে মেঘলা কিছুটা হকচকিয়ে যায়৷
শোভন বলে,
— “ভালোবাসো আমায়?”
আচমকা এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য মেঘলা সত্যি অপ্রস্তুত ছিলো৷
মেঘলা চায় না এমন করে এই উত্তর টা শোভন কে দিক৷ স্পেশাল কিছুর উত্তর তো স্পেশাল ভাবেই দেওয়া যেতে পারে৷

শোভনের কথা এরিয়ে গিয়ে শোভন কে পালটা প্রশ্ন করে বসে মেঘলা,
— “মামি রাজিতো বিয়েতে?
আমি গেলে কিছু বলবে না তো?”

শোভন বুঝতে পারে মেঘলা প্রশ্নটা এরিয়ে গেলো৷
মেঘলার এমন এরিয়ে যাওয়া দেখে শোভনের মনে ভুল ধারনার একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে, শোভন ভাবছে হয়তো মেঘলা এখনো তাকে ভালোবাসেনি৷ এতোদিন যা দূরত্ব ছিলো এমনটাই হয়তো হওয়ার কথা ছিলো৷
তার মায়ের কারনে আজ এমনটা হয়েছে, ও নিজের মা কে কখনই ক্ষমা করতে পারবে না৷
এতোদিন এমনটা না হলে মেঘলার মনে হয়তো একটু হলেও ভালোবাসা জন্মাতো তা ভাবলো শোভন৷
তিনটা মাস পাগলের মতো কাটিয়েছে৷ জ্ঞান ফেরার পর মেঘলাকে না দেখতে পেয়েতো সব ভাঙচুরই শুরু করে দিয়েছিল৷
মেঘলা এখনো যদি না ভালোবেসে থাকে না বাসবে তাতে শোভনের কিছু আসে যায় না৷
এসব ভেবেও হাল ছারবে না শোভন৷
না ছারবে মেঘলা কে কেননা মেঘলা যে ওর জীবনে প্রথম ও শেষ কথা, কিন্তু মেঘলা যে শোভন কে ভালোবাসে তা শোভনের অজানা৷
না জেনেই কত কিছু ভেবে ফেলছে৷

শোভন নিজে আর প্রশ্ন করে না দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মেঘলার প্রশ্নের উত্তর দেয়,
— “মা রাজি,
কিন্তু রাজি না হলেও আমার কিছু আসে যায় না এমনকি তুমিও যদি না করতে আবার জোর করে হলেও তোমাকে নিয়ে যেতাম কারন তুমি আমার৷ ”

এ ছেলে কখনো সোজা সাপটা উত্তর দিবে না৷
সবসময় ঘুরিয়ে পেচিয়ে উত্তর দিবে,
তাই আর কথা বাড়ালো না৷ এই ঘার ত্যারা মানুষ টা কে সারা জীবন কি করে সামলাবে তা নিয়েই মেঘলা ভাবছে৷

হঠাৎ শোভনের ফোন আসায় রিসিভ করে অন্য দিকে যেতে নিলেও ফোনটা হাত দিয়ে চেপে ধরে মেঘলার কাছে এসে বলে,
— “বিকেলে রেডি হয়ে থেকো বিয়ের শপিং করতে যাবো৷
সাথে হায়াত আর ঐশীও যাবে৷ ”

মেঘলা উত্তরে মুচকি হাসলো৷
মেঘলা ভাবছে সারা থাকলেও ভালো হতো, কিন্তু দেশে গিয়ে যেহেতু এক সপ্তাহ মধ্যেই বিয়ে ওখানে এতো ঝামেলা না করাই ভালো এখানে যখন আছে এখান থেকেই সবার জন্য কিনে নিয়ে যাবে৷
দেশে গেলেই হয়তো রাজি বেগম কথা শোনাবে৷
কিন্তু এবার মেঘলা মুখ বুজে শোনার পাত্রি না আগে ওদের বাড়িতে থাকতো বাবা ভাই কেউ কাছে ছিলো না তখন বিয়েটাও মানতো না এবার ওটা ওর নিজের বাড়ি৷
কেউ কিছু বললে শুনিয়ে দিবে৷

বিকেল চারটায় শপিং এ বেড়িয়েছিলো এখন রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিট মাত্রই আসলো ক্লান্ত হয়ে যে যার রুমে চলে গেছে৷
কাল ঐশী মেঘলাদের সাথে যাবে তাই দুপুরে গিয়ে হায়াত আর মেঘলার বাবা গিয়ে ঐশীকে নিয়ে এসেছে৷
হায়াত আর ঐশীর বিয়ের কথাও বলেছে,
মেঘলার বিয়ের একমাস পরেই ওদের বিয়ে৷ কয়েকদিন পর ঐশীর ভাই আর মা দেশে ফিরবে৷
বিয়েতে ঐশী এখনো নিজের মতামত জানায় নি কিন্তু ভাই আর মা রাজি৷
ঐশীকে মেঘলার সাথেই ঘুমাতে বলেছিলো কিন্তু পরক্ষনে সবাই ঘুমাতেই শোভন এসে নিজের কাছে নিয়ে যায়৷

শোভন মেঘলাকে জড়িয়ে শুয়ে ছিলো হঠাৎ মেঘলা বলে,
— “আচ্ছা ওইদিন তোমাকে গুলি করেছিলো কে?”

শোভন বলে,
— “তা আমার আজো অজানা সব কিছু ভালোয় ভালোয় মিটুক ওইটা বের করবো ওইদিন কে এই কাজ করেছিলো৷ ”
মেঘলা আর কথা বাড়ায় না ঘুমের দেশে পারি জমায়৷ অনেক দিন পর এই বুকে ঠাই পেয়েছে আজ ভালোভাবেই ঘুম হবে৷
কতদিন এখানে ঘুমানোর জন্য মনটা বেকুল ছিলো৷

ফোনের এলার্ম এ ঘুম ভাঙে মেঘলার,
চার মাস আগে UK এসে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর এলার্মটা দিয়েছিলো এই চার মাস এলার্ম এর নিয়মেই ঘুম থেকে উঠতো৷
এই এলার্ম টা কাটতে ভুলে গিয়েছিলো তাই আজ এলার্মের নিয়মেই ঘুম ভাঙলো৷
বাংলাদেশ হলে পাখির কিচির মিচিরেই ঘুম ভেঙে যেতো৷
কিন্তু এখানে? সচারাচর পাখি চোখে পরে না আর গাছপালাও বাড়ির আসে পাশে খুব একটা নেই যে পাখি এসে বসবে৷
চোখ খুলে নিজের রুমে ঐশীর পাশে নিজেকে পায়৷
এটা দেখে মেঘলা খুব একটা অবাক হয় নি কারন জানে এটা হয়তো শোভনেরই কারসাজি৷
সে এসে হয়তো সকালে এখানে দিয়ে গেছে৷
এলার্ম টা এখনো বন্ধ না করে ভাবছিলো কথা ঐশী কানে বালিশ চেপে বিরক্ত মাখা কন্ঠে মেঘলাকে বলে,
— “উফফ মেঘু এলার্মটা বন্ধ কর না৷
নিজেতো সারা রাত ভালো করে বরের সাথে ঘুমিয়েছিস আমার তো একা ভয়ে ঘুমি আসেনি এখন প্লিজ ঘুমাতে দে না৷ ”

ঐশীর কথায় মেঘলা কিঞ্চিত হেসে এলার্মটা বন্ধ করে আরমোরা ভেঙে উঠে৷
নিচে নেমে ফ্রেশ হয়ে লাগেজ গোছাতে থাকে৷
আবার যে শোভনের সাথে দেশে ফিরবে তা মেঘলা ভাবতেই পারেনি৷
আবার ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে পারবে এটা ভেবেই মেঘলার মনটা আনন্দে ভরে যায়৷

চলবে,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৮

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৮

হসপিটালে সারা শরীরে ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় শুয়ে আছে ইরিনা৷
পাশেই শোভন বসে আছে কালকে রাতে কেউ ইরিনার চোখ বেধে খুব বাজে ভাবে মেরেছে৷
হাত পা তো পুরো ভেঙেই গেছে মাথাতেও অনেক চোট পেয়েছে৷
ইরিনার এখনো জ্ঞান ফিরেনি৷
ইরিনার বড় বোন ছাড়া UK তে আর কেউই নেই, বোন ওর পাশে বসে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়েছে৷
সকাল থেকে শোভনের মোবাইলে মেঘলা ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু শোভনের কোনো খবরি নেই, মেঘলা জানে শোভন হসপিটালে আছেন তাই মেঘলাও হসপিটালে আসে৷
ইরিনার কেবিনে ঢুকেই বাকা হাসে মেঘলা৷

মেঘলা কে দেখে শোভন বলে,
— “তুমি এখানে?”

— “তোমাকে সেই সকাল থেকে ফোন করছি,
তুললে না কেন?”

— “ফোন তোলার প্রয়োজন মনে করিনি তাই তুলি নি৷ ”

শোভনের এমন কথায় বেশ খারাপ লাগে মেঘলার৷
তাই না দাঁড়িয়ে রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে পরে, শোভন ও মেঘলার পেছন পেছন ছুটে আসে৷
মেঘলার বাহু ধরে আটকিয়ে বলে,
— “তুমি ইরিনাকে মেরেছো?”

মেঘলা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
— “হুম তো?
আমার দিকে যখন কোনো ছেলে তাকায় ছোয় তাকে তো তুমি জানে মেরে দাও ওর ভাগ্য ভালো যে ওকে আমি জানে মারিনি৷ ”

শোভন রেগে বলে,
— “এটা একটু বেশি হয়ে গেলো না?”

— “বেশি হয়েছে মানে?”

মেঘলা রেগে বলে,
— “বেশি হয়ে যাচ্ছে মানে ও তোমার ফ্রেন্ড বলে?”

শোভন কিছু বলবে এর আগেই মেঘলা থামিয়ে বলে,
— “ইরিনাকে আমি একে বারে মেরে দেইনি,
কিন্তু তুমি? আকাশ ভাইয়া কে তো একে বারেই মেরে দিয়েছিলে তাও খুব বাজে ভাবে৷
ইরিনা তোমার ফ্রেন্ড কিন্তু আকাশ ভাইয়া তো তোমার ভাই ছিলো৷ ”

শোভন রেগে মেঘলার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,
— “আমার কথা না শুনেই নিজের মতো বকে যাচ্ছো আমি একবারো বলেছি ও আমার ফ্রেন্ড বলে না মারতে?”
মেঘলা গালে হাত দিয়ে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে অনেক মানুষ তাকিয়ে আছে৷
ছলছলে চোখে একবার শোভনের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়৷
শোভনও বুঝতে পারছে একটু বেশি করে ফেলেছে এটা করা ঠিক হয় নি৷

ভালোবাসার মানুষটাকে কেউই অন্যের সাথে দেখে সহ্য করতে পারে না৷
মেঘলাকে যদি এমন করে কেউ জড়িয়ে ধরতো এতোক্ষনে শোভন তাকে জানে মেরে দিতো৷ কিন্তু মেঘলা এমন করায় শোভন অকারনেই মেঘলাকে মারলো, নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে শোভন মেঘলার পিছনে ছুটে যায়৷
কিন্তু নিচে এসে মেঘলাকে পায় না৷
তাই গাড়ি নিয়ে নিজেই বেরিয়ে পরে৷

মেঘলার বাড়িয়ে এসে মেঘলার রুমের দরজা অনবরত ধাক্কাচ্ছে কিন্তু মেঘলা খুলছেই না, হায়াত ও বেশ রেগে গেছে শোভনের উপর৷
শোভন দিশা না পেয়ে রাতের মতো পাইপ বেয়েই মেঘলার রুমে আসে৷
রুমে ঢুকে দেখে নিচে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে৷
মেঘলার সামনে গিয়ে বসে বলে,
— “হুর পরি,,,,৷ ”

মেঘলা তাও কোনো কথা বলছে না৷
শোভন আবার বলে,
— “সরি ভুল হয়ে গেছে একটু বেশি করে ফেলেছি৷ ”
বলেই মেঘলার হাত ধরতে যাবে মেঘলা হাত ছিটকে ফেলে বলে,
— “ছোবে না আমায়,
কোন অধিকারে ছোও? অকারনে মারলে নিজের বেলা হলে তো আমায় শাস্তি দেও৷ ”

— “সরি বললাম তো৷ ”

— “কেন সরি বলছো লাগবে না কারো সরি,
চলে যাও এখান থেকে৷ ”

— “এবার একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সরি বললাম তো৷ ”

মেঘলা রেগে বলে,
— “প্রয়োজন নেই তোমার সরি,
আর সরি বলছো কেন?আমি তো তোমার স্টুডেন্ট, আমি তো তোমার বোন৷ ”

এবার আরো রেগে যায় শোভন রেগে আবারো থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
মেঘলা রেগে বলে,
— “কেন এসেছো আবার আমার জীবনে?
মারতে? এতোদিন দূরে ছিলাম শান্তিতে ছিলাম আমি আবার চলে যাবো প্রয়োজন নেই তোমার৷ ”

মেঘলার মুখ চেপে ধরে বলে,
— “অনেক বুলি ফুটেছে মুখে?
এতোদিনের শাস্তির কথা কিন্তু আমি ভুলিনি৷
আর ওই মেয়ের জন্য তোমায় মারিনি আমি, আমি চাই নি তোমার হাতে কোনো কারো ক্ষতি হোক তা ছাড়া আমি অন্য কারনে রেগে ছিলাম কাল এতো রাতে ওখানে গিয়েছিলে তোমার ও বিপদ ঘটতে পারতো৷
আর হ্যা কি বললে? তুমি আমার স্টুডেন্ট? এর মানে কি?”

মেঘলা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
— “এর মানে তুমি জানো না?
তুমি তো ইরিনার কাছে পরিচয় দিয়েছো আমি তোমার স্টুডেন্ট, বাংলাদেশে তোমার বন্ধুর কাছে পরিচয় দিয়েছিলে আমি তোমার বোন৷”

শোভন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,
— “তখনতো তুমি আমায় এবং বিয়েটা মানতেই না তাই বলেছিলাম,
আর কলেজে তুমি আমার স্টুডেন্ট তাই ইরিনা কে বলেছিলাম, আর তোমার এই জেলাস টা দেখার জন্যই বলেছিম৷
আর তুমি বলো ওকে কি এভাবে মারা ঠিক হয়েছে? এতো রাতে কেউ যদি দেখে ফেলতো বা অন্য বিপদ হতো তোমার? তখন কে সামলাতো? আর আমি জানতাম ও না৷ ইরিনা কে মারার জন্য তোমায় মারিনি তোমার উপর রাগ হচ্ছিলো যে তোমাকে ও কিছু করে দিলে ও যেই রকম মেয়ে৷
প্লিজ সরি আম রেলি সরি জান৷ ”

মেঘলার কিছুটা রাগ কমেছে সত্যি কাল যদি ওর কিছু হয়ে যেত তখন কে বাঁচাতো? শোভন ও ছিলো না৷
আর সত্যি তো তখন ও বিয়ে টা মানতো না তাই হয়তো তখন বোন বলেই পরিচয় দিয়েছিলো৷
কিছু না বলে শোভনের সামনে থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে শোভনের সাথে কোন রকম কথা না বলে শুয়ে পরে৷



সকাল হতেই ফ্রেস হয়ে মেঘলা নিচে এসে দেখে হায়াত আর শোভন বেশ হেসে হেসে কথা বলছে৷ পাশে ঐশী মুখ গোমরা করে বসে আছে ভাবলো হায়াত হয়তো কিছু বলেছে৷
কিন্তু এতো সকালে ঐশী এখানে কি করছে? কলেজও তো কিছুদিন অফ৷
আর হায়াতেরি বা কি হলো শোভনের সাথে এমন হেসে হেসে কথা বলছে, পাশেই মেঘলার বাবা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে৷
নিচে আসতেই ঐশী এসে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,
— “মেঘু আমাকে ছেড়ে চলে যাবি?
আমি তোকে ছাড়া থাকবো কি করে?”

মেঘলা ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না তাই ব্রু কিঞ্চিত উচু করে বলে,
— “কোথায় যাচ্ছি আমি?”

হায়াত হেসে বলে,
— “বিয়ের পরে এতোদিন কেউ বাপের বাড়ি থাকে নাকি?
আমরা বাংলাদেশে যাচ্ছি আবার শোভন আর তোর বিয়েটা দিয়ে ওখানেই রেখে আসবো৷ ”

মেঘলা বেশ অবাক হয়ে শোভনের দিকে তাকায়, শোভন মিষ্টি হেসে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে৷
মেঘলার বাবা ফোন রেখে মেয়ের সামনে এসে বলে,
— “তোমার মামা আর মামির সাথে কথা বললাম ওনারাও চাচ্ছে তোমাদের বিয়েটা আবার হোক তাছাড়া আমাদের তো বয়স হয়েছে তাই না এবার তো নাতি নাতনি দের সাথে খেলার সময়, তোমরাও নিজেদের ভুল শুধরে নতুন ভাবে শুরু করবে৷ ”

বাবার এমন কথায় মেঘলা বেশ লজ্জা পেয়ে যায়৷
তাই এখানে আর দাঁড়ায় না ঐশী কে নিয়ে উপরে হাটা দেয়৷
মেঘলা ঐশীকে বলে,
— “আমাদের সাথে তুইও চল৷
আমার সাথে তোর বিয়ে টাও হয়ে যাবে৷ ”

মেঘলার কথায় যেন ঐশী বোকা বনে গেলো ব্রু কুটি করে বলে,
— “আমার বিয়ে?
তুই কি পাগল হয়ে গেছিস আমি কাকে বিয়ে করবো?”

মেঘলা মিষ্টি হেসে বলে,
— “কেন আমার ভাই টা কে কি তোর চোখে পরে না?
ওর ভালোবাসা তোর চোখে পরে না?”

ঐশী মুখ ফুলিয়ে মেঘলাকে বলে,
— “তোর ভাই আমাকে ভালোবাসেন?
কখনোই না ও তো পারেই শুধু বকতে৷ ”

— “ও তাই নাকি?”

হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে দুজনেই তাকিয়ে দেখে হায়াত দাঁড়িয়ে আছে৷
মুখে বাকা হাসি, হায়াত কে দেখে ঐশী শুকনো ঢোক গিলে মেঘলার দিকে তাকায় মেঘলাও শয়তানি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷
যাওয়ার আগে ফিসফিসিয়ে হায়াত কে বলে,
— “তোমার ভালোবাসা ও দেখে না তোমার ভালোবাসা টা দেখিয়ে দাও৷ ”

চলবে,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৭

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৭

মেঘলা লিখছিলো হঠাৎ বাইরে থেকে একটা মেয়ে এসে শোভন কে জরিয়ে ধরে বলে,
— “ও মাই গড শোভন?
এতোদিন পর UK?”

মেঘলা ব্রু কিঞ্চিত উচু করে মেয়েটার দিকে তাকায়৷
শোভন মেয়েটাকে উঠিয়ে একবার মেঘলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— “ইরিনা তুই?
কেমন আছিস৷ ”

— “ভালো ছিলাম না তোকে দেখে ভালো হয়ে গেছি৷
উপস কি হ্যান্ডসাম হয়ে গেছিস আগের থেকে৷ ”

মেঘলা শোভনের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে আর বিরবির করে বলে,
— “ইসস এতোদিন নাকি ভালো ছিলো না এখন ভালো হয়ে গেছে৷
আমার হাসবেন্ড হ্যান্ডসাম হয়েছে তাতে তোর কিরে সাক চুন্নি?
দাড়া তোর ব্যাবস্থা করছি পরে আগে আমারটাকে দেখে নিচ্ছি৷ ”

বলেই রাগে এটা ওটা জোর করে ফেলতে থাকে৷
মেয়েটা মেঘলাকে দেখে অবাক হয়ে শোভনকে বলে,
— ” কে ওই মেয়ে?”

— “স্টুডেন্ট৷ ”

শোভনের মুখে স্টুডেন্ট কথা শুনে আবার রাগে চরে যায় মাথায়৷
উঠে রেগে কিছু বলবে এর আগেই ইরিনার ফোন এসে পরায় রিসিভ করে বাইরে চলে যায়৷

ইরিনা চলে যাওয়ার পর শোভন আবার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে থাকে৷
মেঘলা রেগে সব রেখে উঠে শোভনের সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়৷ সেই দিকে শোভনের খেয়ালই নেই ফোনে কি যেনো করছে৷
মেঘলা এবার চেয়ার নিজের দিকে ঘুড়িয়ে আবার কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়৷
শোভন ব্রু কুটি করে তাকিয়ে বলে,
— “হোয়াট?”

মেঘলা রাগে ফুসছে কিছু বলছে না শোভন আবার বলে,
— “কি হয়েছেটা কি?
এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

মেঘলা এবার সামনে থেকে সরে এসে নিজের ব্যাগ থেকে স্টিলের একটা স্কেল বের করে অনবরত শোভনের বাহুতে মারতে থাকে৷
মেঘলার এহেম কান্ডে শোভন তো পুরাই হতবম্ব রাগে ফুসছে আর মারছে৷
শোভন যেই না থামাতে যাবে হাতেও কয়েকটা দিতে থাকে স্টিলের স্কেল হওয়ায় অনেক জায়গা কেটেও গছে৷

মেঘলা মারতে মারতে বলে,
— “আমার আশে পাশে কেউ ঘেসলে তো তুই শাস্তি দিস এখন তোকে তো আমি মেরেই ফেলবো৷
ওই মেয়ে তোকে জড়িয়ে ধরেছে কেন?
আমাকে কেউ জড়িয়ে ধরলে তো আমায় মারিস তো এখন তোকে কি করবো?”

শোভন শুকনো ঢোক গিলে বিরবির করে বলে,
— “এই রে এবার আমার বাচ্চা বউ রনচন্ডি রুপ নিয়েছে৷
একে না থামালে তো আমায় মেরেই ফেলবে৷ ”

বলেই স্কেল সহ মেঘলাকে ধরে ফেলে৷
মেঘলা কঠিন ভাবে রেগে গেছে ফুসতে ফুসতে বলে,
— “হাত ধরলি কেন?
ছার বলছি৷ ”

শোভন বলে,
— “কি তুমি থেকে ডিরেক্ট ‘তুই’?
সাহস অনেক বেরেছে তাই না?”

শোভনকে ছিটকে ফেলে বলে,
— “সাহসের কি দেখলি তুই?
আর ওই সাকচুন্নিকে কি বললি তুই?
আমি তোর স্টুডেন্ট? তোকেতো সত্যি আজ মেরেই ফেলবো৷ ”

এবারো স্কেলটা বাড়ায় মারার জন্য শোভন হ্যাচকা টান দিয়ে ফিছনে ঘুরিয়ে নিজের কাছে এনে বসায়৷
মুচকি হেসে বলে,
— “কোথায় যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি,
আমার বউ কি জ্বলছে?”

— “আমি কারো বউ না ছার বউ বলবি না আমায় তুই৷ ”

শোভন মেঘলার কোমর চেপে ধরে বলে,
— “হুর পরি কতবার আর তোমার রুপে ঘায়েল করাবে আমায়?
তোমার এই রুপেও আজ আমি ধায়েল হয়ে গেছি৷
কিন্তু দেখ কত জায়গা কেটে রক্ত পরছে৷ ”

— “পরুক বেশি করে পরুক তুই খারাপ,
ওই মেয়ে তোকে জড়িয়ে ধরবে কেন?”

শোভন কিছু বললো না মুচকি হেসে চুল থেকে ক্লিপটা খুলে মেঘলার চুলে মুখ ডুবায়৷
কতদিন পর আবার ভালোবাসার মানুষ টা কে কাছে পেল৷
শোভনের এমন করায় বেশ অবাক হলেও চোখ বন্ধ করে স্পর্শ অনুভব করছে৷
হঠাৎই আবার কেউ এখানে প্রবেশ করতে মেঘলা ছিটকে সরে আসে৷
আবার ও ইরিনা এসেছে৷
এইবার শোভনও বেশ বিরক্ত হয়৷
মেঘলা এসে নিজের জায়গায় বসে রাগি লুক নিয়ে শোভনের দিকে তাকায়৷

শোভন মেঘলার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে ইরিনা কে বলে,
— “ইরিনা তুই এখন যা পরে দেখা হবে এখন আমার কাজ আছে৷ ”

ইরিনা আবার শোভন কে জড়িয়ে ধরে চলে যায়৷



রাত ১২টা,
শোভন মেঘলার রুমে অনেক্ষন ধরে শুয়ে আছে কিন্তু মেঘলা নেই৷
নিচে গিয়ে দেখতেও পারছে না কেউ দেখতে প্রব্লেম হবে, বেশ অনেক্ষন পর টি-শার্ট এর হাতা ফোল্ড করতে করতে বারান্দা থেকে আসছে৷
পরনে ব্লেক টি-শার্ট ব্লেক জিন্স আর কোমরে জ্যাকেট বাধা মুখে মাস্ক৷
অবাক দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকায়, কারন শোভন বারান্দা দিয়েই এসেছে তখন বারান্দায় কেউ ছিলো না৷ শোভন কে দেখেই মেঘলা হকচকিয়ে যায়৷

শোভন ব্রু কুচকে বলে,
— “তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
আর বারান্দা দিয়েই কেন এলে?”

মেঘলা হকভকিয়ে বলে,
— “প পার্টি হ্যা পার্টিতে গিয়েছিলাম৷ ”

শোভন ব্রু কুচকে বলে,
— “পার্টিতে আর তুমি?
স্ট্রেঞ্জ আর এসব কি পরেছো?
মিথ্যা বলবে না সত্যি বলো৷ ”

— “সময় আসুক জানতে পারবে
বলেই বাকা হাসে, আর এই বাকা হাসির কারন শোভনের অজানা কিন্তু শোভন এটা ঠিক বুঝতে পেরেছে এই মেয়ের মাথায় কিছু চলছে৷
তাও সাংঘাতিক কিছু৷

চলবে,

তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৬

0

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৬

খালি ক্লাসে মেঘলা কান ধরে উঠবস করছে, আর শোভন বসে বসে ভিডিও করছে৷
১০ মিনিট যাবৎ উঠবস করেই যাচ্ছে আর শোভনের গুষ্টি উদ্ধার করছে৷
এতোক্ষনে নাকে চোখে পানিয়ে একাকার করে ফেলেছে শোভন বসে মজা নিচ্ছে৷

মেঘলা এবার রেগে গজগজ করতে করতে বলে,
— “আর পারবো না করতে৷ ”

শোভন এগোতে এগোতে বলে,
— “কেন পারবে না?”

মেঘলা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— “তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম এর শাস্তি এভাবে দিচ্ছো?”

এবার শোভনেরো রাগ উঠে যায় রেগে মেঘলাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে,
— “আমাকে ছেড়ে আসার শাস্তি তো অনেক ভয়ানক,
এটা তো ক্লাসে কথা বলার শাস্তি৷
খুব ভুল করেছো কথা টা মনে করিয়ে দিয়ে, কি ভেবেছিলে?
পার পেয়ে যাবে? এতো সহজেই সম্ভব?”

মেঘলা ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে কাপা কাপা গলায় বলে,
— “আ আমি,,,,৷ ”

মেঘলাকে থামিয়ে দিয়ে শোভন বলে,
— “আমি কিছু শুনতে চাই না,
তুমি যা করেছো এর শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে৷ ”

বলেই রাগে গজগজ করতে বেরিয়ে যায়৷

শোভনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মেঘলা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,
— “উফফ এই লোকটা কখনই নিজের ছাড়া অন্যেরটা শুনে না৷
আব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া থুরি মেঘলা৷ ”
বলে মুখ ফুলিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়৷

নিচে এসেই দেখে হায়াত ওর গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
এর অন্য পাশে শোভন ওর গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে হায়াতের গাড়ির সামনে যেতেই শোভন এসে মেঘলার হাত চেপে ধরে বলে,
— “অনেক থেকেছো বাবার বাড়ি চার মাস কিছু বলিনি আজ আমার সাথে আমার ফ্লাটে যাবে কিছুদিন পর বাংলাদেশ ব্যাক করবো আমরা৷ ”

হায়াত বলে,
— “কোনো প্রয়োজন নেই মেঘলা তোমার কাছে যাবে না, আর বাংলাদেশ? প্রশ্নই উঠে না৷
তোমার,,,,৷ ”

হায়াত কে থামিয়ে শোভন বলে,
— “আমার বউ কোথায় থাকবে না থাকবে এটা নিশ্চয়ই আপনি বলবেন না?
ও আমার সাথেই থাকবে নাহয়৷ ”

— “না হয় কি হুম?
আবার শাস্তি দিবে?
তা আর হওয়ার নয় আমার বোন কে আর তোমার সাথে যেতে দিবো না৷ ”

মেঘলা চেয়েও কিছু বলতে পারছে না৷
কিন্তু কেন?
ও তো চেয়েছিলো শোভন আসুক ওকে ফিরিয়ে নিতে, তবে আজ কিসের জরতা?

শোভন রেগে বলে,
— “ওকে নো প্রব্লেম
আমার বউ কে আমার কাছে নিয়ে যেতেই এখানে এসেছি আর আমি নিয়ে যাবই৷ ”

বলেই শোভন ওর গাড়ির দিকে হাটা দেয়, কিছুটা গিয়ে আবার ফিরে এসে মেঘলার কানে ফিস ফিস করে বলে,
— “শাস্তি পাওনা রয়ে গেলো সেটা নাহয় রাতে,,,৷ ”
বলেই বাকা হেসে সিতি বাজাতে বাজাতে চলে যায়৷



ডিনার করে মাত্রই রুমে এলো মেঘলা,
এসে রুমের লাইট জালাতেই চমকে উঠে৷ ওর বিছানায় শোভন শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে৷
শোভন কে দেখে চেচিয়ে বলে,
— “তুমি এখানে?”

শোভন উঠে মেঘলার মুখ চেপে ধরে বলে,
— “চুপ!!
চেচাবে না৷ ”

বলে মেঘলাকে ছেড়ে দরজাটা লাগিয়ে আসে৷
মেঘলা বলে,
— “এখানে এসেছো কেন?”

শোভন বাকা হেসে বলে,
— “শাস্তি দিতে৷ ”
বলেই মেঘলাকে নিজের কাছে টেনে উষ্ট জোরা দখল করে অনবরত কামড় দিতে থাকে৷
মেঘলা ছোটাছুটি করছে তাই হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরে৷
এতো শক্ত ভাবে হাত চেপে ধরায় আর এমন ঠোটে অত্যাচার করায় চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে তাও শোভনের সেই দিকে খেয়াল নেই৷
হঠাৎ মেঘলা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে, শোভন শুনে পিছিয়ে আসে ওর চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে এতো দিনের রাগ সব মেঘলার উপর ঝারছিলো৷

শোভন রেগে জানালা দিয়ে নিচে নেমে বেরিয়ে যায়৷
মেঘলা সেখানে বসেই ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে৷

সকাল সকাল কলেজে আসতেই মেজাজটা গরম হয়ে গেলো মেঘলার৷
কলেজে আসার পরই একগাদা এসাইনমেন্ট করতে দিয়ে বসে আছে শোভন, আর সামনে বসে রাগে ফুসছে আর পেপারটা এদিক ওদিক করছে৷
গত চার মাসে ভালো করে কিছুই করেনি পড়া লেখাটাও না এসাইনমেন্ট করবে কি করে মেঘলা তাও বুঝতে পারছে না৷
এতো গুলো এসাইনমেন্ট এখানে বসেই করতে হবে বাড়িতেও নিয়ে যেতে পারবে না৷

মেঘলা বলে,
— “শোভন আমি তো এগুলো কিছুই পাড়িনা কি করে করবো?

এই প্রথম মেঘলা শোভন কে ভাইয়া না বলে শোভন বললো,
শোভন কিছুক্ষন বাকা হেসে বলে,
— ” বাহ বেশ উন্নতি ‘শোভন’
হুম গুড ভেরি গুড কিন্তু এগুলো যে করতেই হবে কিছু করার নেই কলেজে আমি তোমার টিচার তাই কোনো রকম হেল্প ও করতে পারবো না৷
আর এগুলো না করে তুমি যেতেও পারবে না৷ ”

মেঘলা আর কিছু না বলে রেগে বই বের করে দেখে দেখেই করতে শুরু করে৷
শোভন তার হুর পরিকে এক ধ্যানে দেখছে শোভন কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
— “এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

— “আমার চোখ আমার যেখানে ইচ্ছা তাকাবো তাতে তোমার কি?”

মেঘলা কিছু না বলে রেগে আবার লিখতে শুরু করে৷
মেঘলা লিখছিলো হঠাৎ বাইরে থেকে একটা মেয়ে এসে শোভন কে জরিয়ে ধরে বলে,
— “ও মাই গড শোভন?
এতোদিন পর UK?”

মেঘলা ব্রু কিঞ্চিত উচু করে মেয়েটার দিকে তাকায়৷

চলবে,