তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০২

0
1817

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ২

এ কেমন নেশায় জড়ালে আমায়? আমি তো এক মূহুর্তে ও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না ইচ্ছে করছে বন্দী পাখির মতো তোমাকেও আমার নিজের খাচায় বন্দী করে রাখি৷
ভালোবাসি হুর পরি খুব বেশি ভালোবাসি,,,,,,,৷ ”

থর থর করে কাপছে স্নিগ্ধা ব্যাক্তিটির হাত একটু আলগা হতেই স্নিগ্ধা স্ব-জোরে “শোভন ভাইয়া ” বলে চেচিয়ে উঠে সামনে থাকা ব্যাক্তিটি আর দাঁড়ায় না দৌড়ে কোথাও একটা চলে যায়৷
স্নিগ্ধা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না, পা জোরা কাপছে পরে যেতে নিলেই কেউ এসে ধরে ফেলে৷ মোবাইল এর ফ্লাস লাইটের আলোয় শোভন কে দেখে যেন স্নিগ্ধা প্রান ফিরে পায়৷
শোভন কিছুটা উত্তেজিত হয়ে স্নিগ্ধার গাল ঝাকিয়ে বলে,
— “পাখি, কি হয়েছে তোর?
এমন করছিস কেন?
বল কি হয়েছে?”

হঠাৎ করে আবার সব আলো চলে আসে৷
শোভন স্নিগ্ধা কে উঠিয়ে স্নিগ্ধার ঘরে এনে শুয়াই, ভয়ে কাতর হয়ে শোভনের শার্ট খামছে বুকে মুখ গুজে আছে৷ শোভন সরে যেতে চাইলেই আরো জোরে খামছে ধরছে৷
শোভন মিহি কন্ঠে বলে,
— ” স্নিগ্ধা পাখি!!
আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি৷ ”

স্নিগ্ধা আরো জোরে ধরে বলে,
— “না তুমি কোথাও যাবে না, ও আবার আসবে৷
ও ভালো না খুব খারাপ৷ ”

— “কে আসবে?”

স্নিগ্ধা উত্তেজিত হয়ে আরো জড়িয়ে নেয় শোভন কে৷
উষ্ক খুষ্ক এলোমেলো চুল গুলো সামনে এসে আছে স্নিগ্ধার, ভয়ার্ত চেহারায় যেন সৌন্দর্যটা আরো বেশি লাগছে৷
এমনিতে স্নিগ্ধা অনেক মায়াবি ডাগর ডাগর ঘন পাপড়ি ওয়ালা হরিণি চোখ, আর গোলাপের পাপড়ির মতো মিহি ঠোঁট৷
ঠোঁটের নিচে লাল একটা তিল খুব কাছে না গেলে তিলটা কেউ দেখতে পায় না৷
বাকা দাঁতের কারনে হাসিটা আরো বেশি মায়াবি লাগে কিন্তু অতোটা ফর্সা নয় তাও যেন অপ্সরি দেখতে লাগে৷
এখন ভয়ার্ত চেহারায় ও সৌন্দর্যটা বেশ লাগছে৷
কান্না করার কারনে চোখ অনেকটা ফুলে আছে গাল আর নাকটা লাল হয়ে আছে৷
শোভন কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখটা বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অন্য দিকে ঘুরে তাকায়৷

তিন দিন যাবত স্নিগ্ধা না খাওয়া এখন ওকে খাওয়াতে হবে কিন্তু এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে উঠতেই পারছে না৷
এর মধ্যেই রাজি বেগম আর রেহানা বেগম এসে হাজির৷
রেহানা বেগম ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখে রক্ত চরে বসে মাথায় রাগ দেখিয়ে বলে,
— “শোভন এখানে কি করছো?
আর এই মেয়েটা জড়িয়ে আছে কেন?”
— “মা,
স্নিগ্ধা কিছু দেখে ভয় পেয়েছে তাই এমন করছে৷ ”

রাজি ঠেস মেরে বলে,
— “দেখেছো ভাবি এই মেয়ে কতটা নিচ?
আমাদের বড় ছেলেটাকে এখন হাত করতে চাইছে, কেন যে এই মেয়েকে এই বাড়িতে রেখেছো এটাই বুঝতে পারছি না৷ ”

শোভন রেগে বলে,
— “কাকি মনি ফের তুমি একি কথা বলছো?
ও ছোট ফুপি মনির মেয়ে তা ভুলে গেছো? আর ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে যে এখনো অপয়া দোষ এইসব মানে সে কতটা মুর্খ হতে পারে বলো তো?”

রাজি রাগে ফুসতে ফুসতে আবার বেরিয়ে যায়,
রেহানা বেগম স্নিগ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে নিচে চলে যায়৷
শোভন কাজের লোক দিয়ে খাবার আনিয়ে খাইয়ে এখানেই শুয়ে থাকে৷


সকাল হতেই হুরমুরিয়ে উঠে স্নিগ্ধা, সারা রাত শোভনের বুকেই ছিলো ভয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে৷ কিছু একটা ভেবে শরীর এর দিকে তাকায়, শরীরের জামাটা ঠিক নেই তারাতারি পায়ের নিচ থেকে উরনাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শোভনের দিকে তাকায়৷
শোভন এখনো ঘুমে বিভর চেহারাটা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে রাতে ঘুমাইনি তাই৷
কিছুক্ষন তাকিয়ে মুচকি হেসে কাধ ঝাকিয়ে বলে,
— “শোভন ভাইয়া উঠো৷ ”

দু-বার ডাকতে শোভন পিট পিট করে তাকায়, উঠেই মেঘলা কে দেখে মুচকি হেসে বলে,
— “গুড মর্নিং পাখি৷ ”

— “মর্নিং!!
তুমি রাতে ঘুমাও নি?
সরি আমার জন্য তোমার সারা রাত এখানে থাকতে হয়েছে, ইসসস বাড়ির সবাই কি ভাবছে হয়তো৷
ছোট মামি এখন নিচে গেলেই কথা শোনাবে৷ ”

— “তুই ভাবিস না তা আমি দেখে নিবো৷ অনেক দিন হলো কলেজ যাওয়া হয় না যাবি তো?
শরীর খারাপ থাকলে বিশ্রাম কর৷ ”

স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলে,
— “না ঠিক আছি আমি,
রেডি হয়ে নিচে আসছি তুমি যাও৷ ”

শোভন নেমে দরজা অব্দি গিয়ে আবার ফিরে আসে,
স্নিগ্ধার সামনে বসে সফট ভাবে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে মুচকি হেসে চলে যায়৷
শোভনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে স্নিগ্ধা৷

___________________________

সাজ্জাদ কলেজের বড় মাঠটায় কলেজ ভর্তি স্টুডেন্ট এর সামনে ১৪৩ টা গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে স্নিগ্ধা কে৷
কলেজের সবাই হা করে তাকিয়ে দেখছে,
স্নিগ্ধার যেন এইসব একদম বিরক্ত লাগছে৷ এই ছেলেটা কে স্নিগ্ধা কখনোই পছন্দ করে না৷
অথচ এই ছেলেই দুই বছর ধরে ওর পিছনে ঘুর ঘুর করে৷
সাজ্জাদ হাটু গেরে হাতে এতো গুলো গোলাপ নিয়ে বলে,
— “দু-দুটো বছর ধরে তোমার পিছন পিছন ঘুরছি এতো এতো কথা বলে বোঝাই তাও কি বুঝো না সত্যি তোমায় কতটা ভালোবাসি?
কেন বুঝো না?
কবে বুঝবে মরে গেলে?
তবে আজ তাই হবে তুমি আমার ভালোবাসা গ্রহন না করলে আমি আজ আত্মত্যাগ করবো৷ হ্যাঁ, আত্মহত্যা করবো”

স্নিগ্ধা বিরক্ত নিয়ে বলে,
— “শুনো সাজ্জাদ ভাইয়া আত্মত্যাগ করা মুখের কথা না৷
আর এসব চিন্তা যদি মাথায় এনেও থাকো ঝেড়ে ফেলে দাও আমি তোমায় মানতে পারবো না৷
কলেজে তো আরো কতো মেয়ে আছে তাদের থেকে কাউক ভালোবাসো তারা তোমার ভালোবাসা গ্রহন করবে৷
শুধু শুধু আমাকে বলে সময় নষ্ট করছো৷ ”
বলেই উল্টো পায়ে ক্লাসের দিকে হাটা দেয় স্নিগ্ধা সাথে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড প্রিয়া৷

সাজ্জাদ চেচিয়ে বলে,
— “তবে তাই হোক আমি আমার কথাই রাখলাম আজ কলেজের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আমার ভালোবাসার জন্য আত্মত্যাগ করবো৷ ”

বলে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে যেতে লাগে৷
কলেজের সবাই উত্তেজিত হয়ে একবার স্নিগ্ধাকে ডাকছে আরেকবার সাজ্জাদকে৷ প্রিন্সিপাল সহ সব স্যার সাজ্জাদ কে ডাকছে৷
প্রিয়া বলে,
— “স্নিগ্ধা প্লিজ এতোটা নির্ধয় হোস না ছেলেটা উল্টো পালটা কিছু করলে কি করবি?
নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি?
তা ছাড়া সাজ্জাদ ভাইয়া খুব ভালো এটা সবাই জানে দেখতে সুদর্শন তাহলে কিসের জন্য তুই এমন করছিস?”

স্নিগ্ধা অসহায় ভাবে একবার ছাদের দিকে একবার প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে বলে,
— “কিন্তু?”

প্রিয়া স্নিগ্ধাকে থামিয়ে বলে,

— “ফ্যামিলির জন্য?
তুই তো বলিস শোভন ভাইয়াকে তুই যা বলিস তাই সে করে তাহলে এটা কি মানবে না?
তুই বললে নিশ্চয়ই শুনবে৷ ”

স্নিগ্ধা কিছু একটা ভেবে একবার প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে ছাদের দিকে ছুটে যায়৷
ছাদে এসে দেখে সাজ্জাদ এখনি লাফ দিতে যাবে৷
স্নিগ্ধা ঝাপটা দিয়ে ধরে গালে থাপ্পড় বসিয়ে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,
— “কিছু দিন সময় দেওয়া যাবে আমায়?
এতো সহজে তো আর ভালোবাসা যায় না বলো?
কিন্তু সত্যি আমি তোমায় ভালো বাসতে চাই৷ ”
সাজ্জাদ মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে৷

ছাদে উঠার সময় সাজ্জাদ পা হাত অনেকটা ছিলে গেছে তাই ওর বন্ধুরা ধরাধরি করে নিচে নিয়ে যায়৷
প্রিয়ার ফোন আসায় তারাহুরো করে নিচে নেমে যায় আগেই৷
৭ম তলায় নতুন মেরামতের কাজ চলছে শেষের রুম গুলোতে মিস্ত্রিরা ছাড়া পুরো খালি৷
স্নিগ্ধা মাঝ বরাবর রুম গুলোর সামনে আসতেই আচমকা হাত ধরে কেউ রুমের ভিতরে নিয়ে যায়৷
রুমটা পুরো অন্ধকার দরজার ফাক দিয়ে আবছা আলো এসে পরছে তাও ব্যাক্তিটি কে দেখতে পারছে না৷
সামনে থাকা ব্যাক্তিটি যে রাগে ফুসছে তা ভালোই বুঝতে পারছে৷
ব্যাক্তিটি রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
— “সাহস কি করে হয় ওই ছেলে কে ছোয়ার? ”
বলেই হাতে থাকা সিগারেটটা হাতে চেপে ধরে৷
জলজলে সিগারেটটার আগুনে ঝলসে যায় স্নিগ্ধার হাতের তালু ব্যাথায় কাতরাচ্ছে তাও চেচাতে পারছে না৷ মুখ চেপে ধরে আছে৷
স্নিগ্ধা ধস্তাধস্তি করে ছুটে আসতে নিলেই সেই ব্যাক্তিটি হেচকা টান মেরে হাতের পোড়া জায়গায় ধারালো কিছু দিয়ে চেপে ধরে৷
চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে তাও কাউকে ডাকতে পারছে না৷ হাত দিয়ে টপ টপ করে রক্ত পরছে৷

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে