Sunday, July 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1488



হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-১১+১২+১৩

0

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১১ #kiss
#নবনী_নীলা
“তোমার আর অভির মাঝে কিছু কি হয়েছে?” অর্পা আপুর কথায় আমি না সূচক মাথা নাড়লাম। অভি এখনও আমার উপর রেগে আছে তবে আপুকে বলার সাহস হয়ে উঠলো না। আজ রাতে আসার কথা ছিলো সে দুপুরে বাসায় এসে বলে এক্ষনি যাবে। ২ঘণ্টার রাস্তা আসতে আসতে বিকেল হলো। এতক্ষণে আপু সমস্যার আন্দাজ করে ফেলেছেন।

অভির বড়ো বোন অভির মতন না সে পুরো বিপরীত হাসি, খুশি, প্রাণ উজ্জ্বল তবে অসম্ভম সুন্দরী।

বাসার কাজের মহিলা এসে বললো,” আফা, দুলাভাই, ভাইজান আর মামাজান ঐডি খাইতাসে ছাদে বইসা।”

আমি আপুর দিকে তাকালাম। আপু কঠিন গলায় মতিনের মাকে বললো,” কি খাচ্ছে?”

আমি আর আপু ছাদে গিয়ে দেখি তিনটা বেতের চেয়ারে দোতলার ছাদে বসে wine টাইপ কিছু খাচ্ছে তারা। অভি মাথায় হাত দিয়ে গ্লাস হাতে বসে আছে। ব্যাপারটায় আমি অবাক হ়ইনি কারণ এদের বংশের মানুষদের অভ্যাস আছে।

অর্পা আপু দুলাভাইকে টেনে তুলতে তুলতে বললো,” মামা তুমি খাচ্ছো খাবে ওদের না খাওয়ালেই পারতে। অভি নিজেকে একটু হলেও সামলাতে পারবে। আমারটাকে আমি কি করবো? বাবা, মা,ফুফু আছে কি ভাববে যদি এ অবস্থায় এদের দেখে।”

অভির মামা বিয়ে করেনি মদ, উইসকি এইগুলো সে চায়ের মতন খায়।তাকে নেশায় খুব কম ধরে। তিনি হাসতে হাসতে বললেন,” তোর বাবা একটু আগে খেয়ে গেলো, প্রথমে না বললো শেষে ২গ্লাস খেয়ে নিলো।”

অর্পা আপু মামাকে আর কিছু না বলে আমায় অভিকে রুমে নিয়ে যেতে বললেন।আমি অভির হাত ধরে কাধে হাতটা রেখে উঠালাম।মামা আমাকে ডেকে বললেন,” একটু লেবুর শরবত দিও অভিকে বেশ ভালই খেয়ে নিয়েছে।”

আমি কোনো রকমে অভিকে রুমে নিয়ে এলাম। রুমে সে ভালো ভাবেই এলো। মুভিতে যেমন মাতাল দেখেছি ঢুলে ঢুলে যায় তেমন কিছুই করছে না। দরজার সামনে হটাৎ দাড়িয়ে পড়লো।
এবার সে দাড়িয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন মাতাল তো আমি কোনো মুভিতেও দেখিনি!

আমি বললাম,” কি দেখছেন আপনি?”
অভি ফ্লোর এ বসে পড়লো।
মনে হচ্ছে তার মাথা ব্যাথা করছে। মাথায় হাত দিয়ে আছেন।

” উঠুন আমি আপনাকে বিছানায় নিয়ে যাচ্ছি। আপনার মাথায় ম্যাসেজ করে দিবো।”

অভিকে নিয়ে আমি খাটে বসাতে চাইলাম যাতে তার মাথা ম্যাসেজ করতে পারি। সে খাটে শুয়ে পড়ল দুলতে দুলতে।
ব্যাথায় অভি নড়াচড়া শুরু করেছে। সহ্য করতে না পারলে খেতে কে বলেছে।
আমি অভির মাথা তুলে আমার কোলে রেখে ভালো ভাবে ম্যাসেজ করে দিচ্ছি। অভি চুপ করে চোখ বন্ধ করে আছে।
আমিতো শুনেছি এইগুলো খেলে মানুষ আরো বেশি কথা বলে উল্টা পাল্টা কথা। এর দেখি কথা বন্ধ হয়েগেছে।

অভি হটাৎ আমার হাত ধরে হাতটা বুকের কাছে নিয়ে ধরে রাখলো।

” আচ্ছা আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?”আমি প্রশ্ন করলাম।

অভি চোখ খুলে বাচ্চাদের মতন মাথা নাড়িয়ে হা বললো।বলেই সে উঠে বসার চেষ্টা করছে কিন্ত ঠিকমতো ব্যালেন্স করতে পারছে না। আমি অভিকে ধরে অভির পিঠের নীচে একটা বালিশ দিয়ে বসলাম।

অভি শক্ত করে আমার দুই বাহু ধরে বললো,” তুমি অন্য ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে কেনো? আমার সাথে কখনো হেসে কথা বলেছো।”

আমার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠল।
বলেই অভি আমাকে আরো শক্ত করে ধরলো। আমার ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছিলো পরে মনে হলো উনিতো একটা ঘোরের মধ্যে আছে এখন। মাতলামি করছে এগুলো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

আমি হেসে বললাম,”আচ্ছা আর কোনো ছেলের সাথে হেসে কথা বলবেনা শুধু আপনার সাথে হেসে কথা বলবো। এবার ছাড়ুন আমার হাত দুইটা খসে পড়বে নইলে।”

অভি আমাকে ছেড়ে আমার গাল টেনে বললো,” গুড গার্ল।” বলে আমার হাত ধরে বালিশে হেলান দিলো।

ওমা গো কথায় কাজ হইছে। একবার বললাম বুইঝ্যা গেসে এই জিনিস আগে কই ছিলো। এইটা তো আরো আগে খাওয়ানো উচিৎ ছিলো। অভি হাসছে প্রাণ খুলে হাসছে। মুখ থেকে হাসি সরছে না। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। অভিকে রোজ এই ছাই পাশ খাওয়ানো দরকার এভাবে হাসবে তাহলে।

আচ্ছা আমি যতদুর জানি এইগুলো খেলে কিছু মনে থাকে না মানুষ সত্যি কথা বলে। পরীক্ষা করে দেখলে কেমন হয়।

আমি বললাম,” আচ্ছা আপনি কি অথৈকে এখনো ভালোবাসেন?”

অভি চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে চিন্তায় আমার অবস্থা খারাপ।যদি হা বলে তখন তোর কি হবে নওরীন।
অভি মুখ গম্ভীর করে বললো,” না।”

বাহ্ এইটাই তো শুনতে চাচ্ছিলাম।” খুব ভালো খুবই ভালো। ওর চেহারাও কোনোদিন দেখবেন না ।”রাগী স্বরে বললাম।

অভি ভদ্র বাচ্চার মতন সম্মতি জানিয়ে দুলতে দুলতে মাথা নাড়ল। বাহ্ এমন একটা জিনিস উনি এর আগে খায় নি কেনো। আমিও একদিন খেয়ে দেখবো যে এইটা আবিষ্কার করেছে তাকে অস্কার দেওয়া উচিৎ।

তাহলে কি সেফুদা ঠিক বলতেন ” মদ খাও মানুষ হও।”

অভির পেট থেকে আরেকটা কথা বের করতে হবে।
আমি বললাম,” তাহলে বিয়ের আগে যে বললেন সে আপনাকে ছেড়ে গেছে কিন্তু আপনি ভুলেননি। ওইসব কি ছিলো।”

” ওইগুলো বলেছি জাতে আমাকে কোনো মেয়ে বিয়ে না করে। আমি কেনো ওই চিটারকে ভালোবাসবো।”অভি বলে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।

আমার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে সবার কানের পর্দা ফাটিয়ে দেই। খুশিতে আমি অভিকে জড়িয়ে ধরি। জড়িয়ে ধরে বুঝতে পরলাম অভির শরীর গরম। আমি মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম কিন্তু জ্বর নেই। তাহলে শরীর এমন গরম কেনো?

অভি নিজের শার্টের বোতাম বিরক্তি নিয়ে খুলে ফেলছে।
” আরে আরে করছেন কি?” বলে আমি অভির হাত ধরে ফেললাম।

” গরম লাগছে। শার্ট খুলবো”,বলে আমার হাত ছাড়িয়ে নিলো।

” এসি চলছে তারপরও আপনার গরম লাগছে? আমি এসি বাড়িয়ে দিচ্ছে শার্ট খুলবেন না।” ,বলে শেষ না করতে অভি শার্ট খুলে ফেলেছে।

এবার আমার অসস্তি লাগছে। মামার কথা মতন লেবুর শরবত খাওয়াতে হবে। আরো মারাত্বক কিছু করার আগে থামাতে হবে।

” আচ্ছা আমি একটু আসছি আপনি বসুন।”,বলে যেই আমি উঠতে নিয়েছি অভি আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে কাছে নিয়ে এলো।

আমার শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেছে। অভির দিকে আমি তাকাতেও পারছিনা, অভির গায়ে শার্ট নেই। একটু আগে বাচ্চাদের মতন করছিলো এখন আবার কি হলো? হটাৎ করে বড়ো হয়ে গেলো কিভাবে।

” তুমি এখানে থাকবে”,বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি একটা ঢোক গিললাম। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে আমার। মনে হচ্ছে আমি বরফ হয়ে গেছি।

” আচ্ছা থাকবো, আমাকে ছাড়ুন।”, গলা শুকিয়ে গেছে আওয়াজও বের হচ্ছে না। অভি আমার কাধ থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো।আমি অভির চোখের দিকে তাকাতে পারছি না।

অভি আমার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। কিছু সেকেন্ড আমি বুঝতেই পারিনি কি হলো।

মদ খেয়ে বউ পিটানোর কথা শুনেছি কিন্তু এটা কি হলো? জিনিসটা যত ভালো ভেবেছিলাম এতো ভালো না।

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১২ #কাল_রাতে_কি_হয়েছিলো
#নবনী_নীলা
অভির ঘুম ভেঙেছে সকাল ১০টায়।অভি উঠে বসতে বসতে খেয়াল করলো তার গায়ে শার্ট নেই। নওরীনকে রুমে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। অভি দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকালো ১০টা ২মিনিট।দেরিতে ঘুম থেকে উঠা অভির অভ্যাস নেই, মাথায় ঝিম ধরেছে।

অভির কাল রাতের কথা কিছু মনে নেই। অভি কিছুক্ষণ বসে মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু মনে পড়ছে না। অভি রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নীচে নামলো।

নওরীনকে খোঁজার জন্যে অভি কিচেন এ এলো। নওরীন কিচেনেই আছে কিন্তু অভি আসছে বুঝতে পেরেও তাকাচ্ছে না।

অভির নওরীনের সাথে কথা বলার প্রয়োজন।কিন্তু কিচেনে মা,ফুফু,আপু সবাই আছে। অভি কি বলবে বুঝতে পারছেনা। অভিকে দেখে নওরীন উল্টা দিকে ঘুরে কাজ করছে। কাল রাতে কি কিছু হয়েছে যার কারণে নওরীন রেগে আছে। অভি এইগুলো ভাবতে ভাবতে কিচেনে ঢুকলো।

অভি খেয়াল করলো মা, ফুফু, আপু সবাই মুচকি হাসছে অভিকে দেখে।অভির মা কিচেন থেকে চলে গেলো। অর্পা ছুরি দিয়ে লেবু কাটছিলো অভিকে দেখে বললো,” বাহ্ ঘুম থেকে উঠে সোজা কিচেনে চলে এলি।”

অভি একটা চেয়ার বসে বললো,” আপু আমাকে চা দে মাথা ধরে আছে।”

” তোকে আমি চা কেনো কিছুই দিবো না। নিজে খেয়েছিস আবার আমার জামাইটাকেও গিলাইসোস।”,অভির মুখের কাছে ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে বললো অর্পা।

” তোর জামাইকে আমি খাওয়াইনি সে নিজেই বসেছে। নতুন একটা এক্সপেরিয়েন্স করবে বলে।”,অভি হাই তুলে বললো।

” নতুন এক্সপেরিয়েন্স ছুটাচ্ছি আমি। কালকে রাতে কি করেছে জানিস বমি করে আমার জামা কাপড় ভরিয়ে দিয়েছে। বমি করলে নিজের গায়ে করতো কিন্তু না আমার গায়ে করেছে। ঘুম থেকে উঠুক আজকে তার একদিন কি আমার।”

অভি মুচকি হেসে বললো,” কার্টুনিস্ট কোথায় আমাদের?”

” প্রভাত মামার কাছে।”, বলে শেষ না করতে ফুফু উঠে এলো।

ফুফু এসে অভির পিঠে হাত রেখে বলল,” নওরীন মা একটু ছাদে গিয়ে দেখবা আমার আচার গুলোর উপর রোদ পড়ছে কিনা?”

নওরীন হাতের কাজ রেখে হা সূচক মাথা নেড়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অভির সামনে দিয়ে গেলো কিন্তু নওরীন তাকালো না। ব্যাপার টা অভি কিছুই বুঝছে না। ফুফু তাকিয়ে আছে নওরীনের যাওয়ার দিকে।

” সাবধানে যাইও।”, বলে ফুফু অভির দিকে তাকালো। অভির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” ভালা আসস?”

“হুম, তোমার কি অবস্থা ফুফু?” বলে অভি গ্লাসে পানি ঢাললো।

“সুসংবাটা পাইসোস?”হাসি দিয়ে বললেন ফুফু।

অভি গ্লাস হাতে নিয়ে বলল,” কিসের সুসংবাদ?”

” তুই বাবা হবি।”,বলেই অর্পার দিকে তাকিয়ে হাসছে ফুফু।

অভি বললো,” হুম সে তো একদিন হবো।”বলে পানি খেলো।

” আরে একদিন হবি মনে? কিছুদিনের মধ্যেই হবি হুজুরের ওষুধ কাম করসে।”ফুফুর কথা শুনে অভি বিষম খেলো।

অর্পা হাসতে হাসতে বললো,” ফুফু তুমি থামতো যখন হবে তখন দেখা যাবে।”

অভি কালকে রাত নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল।ফুফু হাসতে হাসতে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলেন। অভি একটা ঢোক গিলে বললো,” ফুফু এইগুলো কি বললো?”

” আরে সকালে ফুফু সবার জন্য পায়েস রেঁধেছিলো। নওরীন পায়েসটা খাবার সময় কিসমিস খেয়ে ফেলে তাই বমি হয়। বেচারি নাকি কিসমিস সহ্য করতে পারে না। ফুফু কি আর এইগুলা শুনে উনি শুরু করছে ওনার হুজুরের ওষুধ কাজ করছে।”

অভি শান্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,” ও আচ্ছা।”

” অভি তোর কি সন্দেহ হচ্ছে? টেস্ট করাবো নাকি?”,বলেই অর্পা হাসতে লাগলো।

” আপু তুই থামবি?”

” আচ্ছা যা, রুমে যা। আমি রুমে চা পাঠিয়ে দিবো। চিন্তা করিস না তোর বউকে দিয়েই পাঠাবো।”,বলে আবার হাসতে লাগলো অর্পা।
অভি আড় চোখে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।

______
আমি ছাদে এসে কোনো আচারের বক্স পেলাম না। নীচে গিয়ে ফুফুকে বলায় উনি বললেন,” আচ্ছা কোনো সমিস্যা নাই, তুমি যাও।”

কিচেনে আসতেই অর্পা আপু আমাকে চায়ের কাপ হাতে দিয়ে বললেন,” যাও তোমার বরকে চা দিয়ে এসো।”

আমি এখন অভির রুমে যাবো চা নিয়ে? আমার অভির সামনেই যেতে ইচ্ছে করছে না। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি বললাম,”আপু আমি নিয়ে যাবো?”

” তোমার বর তুমি নিয়ে যাবে না তো কি তোমার সতিনকে ডাকবো। এমন চেহারা করে লাভ নেই যাও অভিকে চা দিয়ে আসো।”,বলে অর্পা আপু ঠোঁট চেপে হাসলেন।

আমি পা টিপে টিপে দোতলায় উঠলাম দোতলার করিডোরের পাশের ঘরটা অভির। আমি অভির ঘরের সামনে গিয়ে একটা নিশ্বাস নিলাম। মনে হচ্ছে আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। না আমি কোনো পুটি মাছ না আর উনি কোনো হাঙ্গর না। নার্ভাস হওয়ার কিছুই নেই।

রুমে যাওয়ার আগে বাহির থেকে উকি মেরে দেখলে কেমন হয়? রুম ফাঁকা থাকলে সাই করে গিয়ে রেখে আসবো। আমি দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখার চেষ্টা করলাম। মনে হচ্ছে রুমে কেও নেই। নওরীন তোমার রাস্তা পরিষ্কার যাও সাই করে কাপ রেখে মিশন কমপ্লিট করো।

আমি যথা সম্ভব আস্তে আস্তে ঢুকলাম ঢুকে দেখি উনি খাটের এক পাশে বসে আছে। আমি কি দিন দিন অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। রক্ত মাংসের একটা মানুষকে দেখতে পারিনি। ইচ্ছে করছে নিজের গালে দুটো চর মারি।

আমি চায়ের কাপটা রেখে সূরা ফাতিহা পড়তে পড়তে বের হয়ে যেতে নিবো।অভি পিছন থেকে ডাকলো,” নওরীন দাড়াও।”

দরজা আমার থেকে দূরে আছে আমি খাটের সামনে দাড়িয়ে পড়লাম। অভি উঠে এদিকে আসতে আসতে বললো,” তোমার সাথে আমার কথা আছে।”

আমি একটা ঢোক গিললাম আবার কিসের কথা। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আমার অনেক কাজ আছে।”বলেই চলে যাবো অভি হাত ধরে ফেললো।

” আমি বললাম না কথা আছে।” , গম্ভীর স্বরে বলল।

আমার এবার কি হবে? আমার কপালটাই এমন। উনি এবার কি বলবে না কি বলবে? আমি অভির দিকে তাকাচ্ছি না।

” দরজার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? আমার দিকে তাকাও।” বলে অভি আমার চোখের সামনে এসে দাড়ালো।

অভির দিকে তাকানো আমার পক্ষে সম্ভব না। তাকালেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।

” কাল রাতে কি হয়েছিল?”, অভির প্রশ্ন আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল বোধ হয়। এখন কি উনি বলবে যে কাল রাতের কথা ওনার মনে নেই! হে আল্লাহ এবারের মতন বাঁচিয়ে দেও আগামী এক সপ্তাহ মিথ্যা কথা বলবো না।

এমন সময় প্রভাত মামা মামা বলে atসে পিছন থেকে অভিকে জড়িয়ে ধরলো। বাচ্চারা আসলেই ফেরেশতা। আল্লাহ সত্যি এক সপ্তহ আমি মিথ্যা বলবো না দেখে নিও।

অভি আমার হাত ছেড়ে প্রভাতকে কোলে নিয়ে বললো,” কি ব্যাপার কার্টুনিস্ট কোথায় থাকো তুমি?”

প্রভাত সম্ভব সুন্দর ড্রয়িং করতে পারে। কার্টুন আকার প্রতি তার ঝোক তীব্র। বড়ো হয়ে কার্টুনিস্ট হতে চায়, সে ড্রয়িং এর ক্লাসও করে। ওকে দেখলে মাঝে মাঝে নিজেকে বলি আমি জীবনে করলামটা কি?একটাই কাম পারি কুম্ভকর্ণের মতন ঘুম।O_o

প্রভাত আমার দিকে তাকিয়ে বলে,” আমি তোমাদের কার্টুন ভার্সন একেছি। তোমরা দেখবে? প্রথমবার ভালো হয়নি কিন্তু এবার ঠিক হয়েছে।”

ছবিটা দেখে আমি হা করে আছি। এতো সুন্দর করে একেছে প্রভাত। অভি বললো,” এই হ্যান্ডসামটা বুঝি আমি? আমার পাশের পিচ্চিটা হা করে আছে কেনো?”
আমি আড় চোখে তাকালাম।

প্রভাত বললো,” ওটা মামী পিচ্চি না। মামী তোমাকে জোর করে পিকনিকে নিয়ে যাচ্ছে তাই তোমার মুখ রাগী। আর মামী গান গাইছে।”

” ঠিক বলেছো”, বলে আমি আর প্রভাত হাইফাইভ দিলাম।

[ চলবে ]

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১৩ #অনুভুতি
#নবনী_নীলা
“দরজার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? দরজা বন্ধ, ওদিকে তাকিয়ে লাভ নেই। So better আমার দিকে তাকাও।”অভির কথায় নওরীন দরজার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো কিন্তু অভির দিকে তাকালো না।

অভির ব্যাপারটায় ভীষণ রাগ হচ্ছে। আজ সারাদিন নওরীন একই কাজ করেছে। হয় তাকে দেখলে দৌড়ে পালাচ্ছে নয়তো ইগনোর করছে। তাই যাতে পালাতে না তাই রুমে আসার সাথে সাথে অভি দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।

নওরীন দেওয়ালের সাথে আতিসাটি মেরে দাড়িয়ে আছে। অভি নওরীনের সামনে হাত দুটো ভাজ করে দাড়িয়ে আছে। নওরীন ভেবেছিলো সুযোগ বুঝে রুমে এসে ঘুমের ভান করে শুয়ে পড়বে কিন্তু সে ফেঁসে গেছে।

” এই রকম weird behave করছো কেন তুমি?”, অভির প্রশ্নে নওরীন একটা ঢোক গিলে বললো,”আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো।”বলেই নওরীন চলে যাচ্ছিলো অভি নওরীনের ধরে আগের জায়গায় নিয়ে আসে। নওরীনের দুই পাশের দেওয়ালে হাত রেখে দাড়ায়।

” আমার কথা শেষ হয়নি আর যতক্ষণ পর্যন্ত না শেষ হচ্ছে তুমি এখানে থাকবে। কালকে রাতের পর থেকে তুমি এমন weird behave করে যাচ্ছে। কি হয়েছে কাল রাতে আমাকে বলো।”

নওরীন অভির দিকে তাকাচ্ছে না কিন্তু অভির কণ্ঠের গাম্ভীর্যতা বলে দিচ্ছে সে রেগে আছে। নওরীন কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। আজ মনে হচ্ছে কথা বের করেই ছাড়বে অভি।

” কিছু না”, নিচু স্বরে বললো নওরীন।

” কিছু না হলে এমন ইদুরের মতন করছো কেনো? সত্যি করে বলো।”, অভি নওরীনের কাছে ঝুঁকে দাড়ালো।

” বললাম তো তেমন কিছু হয় নি।”, ইদুর বলায় নওরীন রাগে জোরে বললো।

এখন ফেঁসে গেছে বলে, নইলে নওরীনকে ইদুর বলেছে আর সে ছেড়ে দিবে এতক্ষণে লংক্কা কান্ড লেগে যেতো। নওরীন রাগী চোখে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।

” তেমন কিছুটা কি সেটাই জানতে চাচ্ছি, যার জন্য এমন ভিজে বিড়াল হয়ে আছো।”, অভি মজা নিয়ে বললো।

নওরীন গাল ফুলিয়ে জানালার দিকে অগ্নী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অভি আরো বললো,” কাল তেমন কিছু হয়নি, আজ অনেক কিছু হতে পারে তাই না।”অভি একটু কাছে এসে বললো।

নওরীন অভির দিকে মুখ ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,” ওইসব ফালতু জিনিস খেয়েছেন আপনি উল্টা পাল্টা কাজ করেছেন আপনি আর আমাকে বলছেন বলতে? আমি কেনো বলবো? আপনি খেয়েছেন কেনো।” চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলল নওরীন। নওরীনের কথা শুনে অভি হেসে ফেললো।

অভির হাসির শব্দে নওরীন চোখ খুললো। অভির দিকে তাকাতেই অভির ঠোঁটের দিকে চোখ গেলো নওরীনের।নওরীন একটা ঢোক গিলে সাথে সাথে দুই হাতে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

অভি ব্যাপারটা খেয়াল করলো। অভির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নওরীনের লজ্জার কারণটা অভি বুঝতে পেরেছে।অভি মুখে বললো,” হাত সরাও মুখ থেকে।” নওরীন না সূচক মাথা নাড়ল।

অভি নওরীনের দুই হাত দেওয়ালের সাথে লক করে দিল। নওরীন চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় ভ্রু কুঁচকে ফেললো।
অভি নওরীনকে কিস করলো।নওরীন বুঝতে পেরে চোখ খুলে আবার বন্ধ করে ফেলে।

অভি নওরীনের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা এখনও চোঁখ বুঝে ঠোঁট কামড়ে দারিয়ে আছে। অভি নওরীনের হাত ছেড়ে দেওয়া মাত্র নওরীন দেওয়ালের দিকে ঘুরে চোখ খুলো। এমন ভাবে দাড়িয়েছে যাতে তার চেহারা দেখা না যায়।

অভি দেওয়ালের দু পাশে হাত রেখে নওরীনের কানের কাছে গিয়ে বলল,” তুমি কি সারারাত এখানে দাড়িয়ে থাকবে?”

নওরীন মুখ ফুলিয়ে হা সূচক মাথা নাড়ল।
” বাহ্ এভাবে তোমাকে চুপ করানো যায় সেটা তো আগে জানা ছিল না। আগে জানলে এতো কষ্ট করতে হতো না আমায়।”

নওরীনের উপায় নেই কারণ তার সাথে কি হচ্ছে সেটা সে নিজেও জানে না। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, হার্ট এমন ভাবে বিট করে যেনো এক্ষুণি বেরিয়ে আসবে। এ কেমন অনুভূতি তার জানা নেই। তবে নওরীন অভির দিকে তাকাতে পারছেনা কারণটা নওরীনের নিজেরও জানা নেই।

অভি নওরীনের হাত ধরে বললো,” অনেক হয়েছে ঘুমাবে এসো।”

নওরীন কোনো কথা না বলে হাত ছাড়িয়ে নিতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।

” তোমার কি মনে হয় তুমি আমার সাথে পারবে। নিজেই ব্যাথা পাবে।”,বলে অভি নওরীনের হাত ছেড়ে দিল।

” আমার ঘুম পাচ্ছে না।”, মুখ ফুলিয়ে বললো নওরীন।

” একটু আগে না খুব ঘুম পাচ্ছিল? তোমার ঘুম না পেলেও তুমি শুয়ে থাকবে। কারন রাত ১টার কাছাকাছি।”,বলে অভি নওরীনকে কোলে করে নিয়ে বিছনায় বসলো।

নওরীন আলুর মতন মুখ ফুলিয়ে রাগী স্বরে বলল,” সব কি আপনার ইচ্ছে মতন হবে?”

অভি ঘরের লাইট বন্ধ করতে করতে বলল,” হুম আমার কথায় হবে।”

নওরীন বিছনায় পা তুলে ঘাপটি মেরে বসে।অভি অপছা আলোর বাতি জ্বালিয়ে বলে,” তোমাকে কি এসে শুইয়ে দিতে হবে?”

” আপনা টাইম আয়গা “, মনে মনে বলে নওরীন আড় চোখে তাকিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে।

ঘরের পানির জগে পানি নেই দেখে পানি আনতে অভি নিচে যায়। এসে দেখে এর মধ্যেই নওরীন ঘুমিয়ে গেছে বাচ্চাদের মতন ঘুমাচ্ছে।বালিশের নীচে হাত রেখে ঘুমাচ্ছে।অভি আস্তে করে জগটা রেখে নওরীনের দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে।

[চলবে]

হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-০৯+১০

0

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৯ #অভির_চশমা
#নবনী_নীলা
তোমার কি পিরিয়ড হয়েছে?”, ব্যাস্ত হয়ে বললো অভি। আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। অভি মাঝে মাঝে খুব সহজেই আমাকে বুঝতে পারে। অভি বকা দিয়ে বললো,” এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে idiot!”

বলেই অভি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো যাওয়ার আগে দরজা চাপিয়ে দিয়ে গেলো।আমি টাওয়াল পেঁচিয়ে রুমে ঢুকে প্রথমে দরজাটা ভিতর দিয়ে লাগিয়ে নিলাম।
আমি জামা বদলে নিলাম কিছু জিনিসের প্রয়োজন লাগতো কাল সকাল পর্যন্ত চলতে পারবো, ভাল্লাগছে না। এখন আমার পক্ষে দোকানে যাওয়া পসিবল না।

অনেক tired লাগছে ঘুমও পাচ্ছে। আমি দরজাটা খুলে দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম। পেট ব্যাথা শুরু হয়েছে। পেটের ওপর একটা বালিশ চাপা দিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

রাত কটা বাজে বুঝতে পারছি না। ঘুম ভেগেছে আমার। মাঝে মাঝে আরমেও ঘুম ভেগে যায় আমার হয়েছে সেটা। অভির হাতের উপর আমি মাথা রেখে শুয়ে আছি। আমার মাথার কাছেই অভি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।
অভির নিশ্বাস এসে পড়ছে আমার ঘাড়ে। হালকা একটু সুরসুড়ি লাগছে কিন্তু ভালোও লাগছে।অভি আমার কোল থেকে বালিশ সরিয়ে হটপ্যাক এনে দিয়েছে এসিটা বাড়িয়ে দিয়ে গায়ে একটা কাথা দিয়েছে, আরাম লাগছে অনেক।

আমার ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় সব করেছে অভি। আমি ঘুমিয়ে থাকলেই এনার আমার প্রতি মমতাবোধ জাগ্রত হয়। আমিও গাজাখোরদের মতন ঘুমাই টের ও পাই না। রুমে আপছা আলোর বাতি জ্বলছে। অভি চশমা পরেই ঘুমিয়ে গেছে।
চশমাটা খুলে দিতে পারলে ভালো হতো। আমি আস্তে আস্তে চশমাটা খুলে টেবিলে রাখলাম।

টেবিলে চশমা রাখতে গিয়ে দেখি এক বাটি নুডুলস প্লেট দিয়ে ঢাকা। তার পাশে একটা আইস ক্রিমের বক্স। আমার মন ভালো না থাকলে আমি নুডুলস খাই। আমি একটু অদ্ভুত।
খিদে আমার পেয়েছিলো, হয়তো এই জন্যেই ঘুম ভেঙেছে,এইগুলো দেখে আমি চুপ করে রইলাম। এই সব অভি করেছে। এতো ভালো হয় কি করে কেউ? অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করছে মুখ থেকে হাসি সরছেই না।

আমি আস্তে করে উঠে ফ্রেশ হলাম রাত এখন ৩টা বেজে ২৩মিনিট। অনিচ্ছা থাকা সত্বেও নুডুলস পুরোটা শেষ করলাম, ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে না।
নুডুলস আমার বলতে গেলে প্রিয় কারন এইটা তৈরি করা সহজ। খাওয়া শেষ করে আইস ক্রিমের বাটি ধরলাম কিন্তু পেটে জায়গা নেই অল্প একটু খেয়ে রেখে দিতে হলো।

আমি অভির কাছে এসে শুয়ে পড়লাম। এতো নিষ্পাপ লাগছে অভিকে দেখতে। আমি অভির একটা হাত কোলবালিশের মতন জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে দেখি অভি নাস্তা নিজেই তৈরি করে অফিসে গেছে। আমাকে ঘুম থেকে তোলে নি আর আমিও মরার মতো ঘুমিয়েছি।
অভি শুধু নাস্তা তৈরি করেনি আমার প্রয়োজনের জিনিসগুলো এনে রেখে দিয়েছে আমার ড্রয়ারে। উনি জানলো কিভাবে? হটাৎ হটাৎ কি টেলিপ্যাথি কাজ করে নাকি? গরিলাটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে তো অফিসে।

সন্ধ্যা ৭টা বাজে কলিং বেল বেজে উঠলো এমন সময় অভি আসে। আমি দরজা খুলে দেখলাম অভি না একটা মেয়ে এসেছে। বুঝার বাকি রইলো না যে এই মেয়েই অথৈ চেহারায় কুটনি মার্কা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইচ্ছে করছে এ মেয়ের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেই। কিন্ত না রেগে গেলে চলবে না নওরীন ঠান্ডা মাথায় সামলাতে হবে।

” ভেতরে আসতে পারি?”, বললো অথৈ।

আমি মনে মনে বললাম না ভিতরে কিসের দরকার? এক্ষুণি চলে যা। কিন্তু এগুলো বলা যায় না আমি হা সূচক মাথা নেড়ে ভিতরে আসতে বললাম।

সোফায় আমার বরাবর অথৈ বসেছে। এই মেয়েকে আমি সোফায় বসিয়ে অ্যাপায়ন করছি ভাবা যায়।

” তা তোমাদের ডিভোর্স কতদূর এগিয়েছে?”কত বড় সাহস এই মেয়ের আমার বাসায় এসে নির্ভয়ে এইগুলো বলছে।
ইচ্ছে করছে ডাইনিটাকে রসুনের শরবত খাইয়ে মেরে ফেলি। আমি চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছি। এমন সময় আবার কলিং বেল বেজে উঠল।

অথৈ বললো,” অভি এসেছে মনে হয়।” আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখি অভি এসেছে। এখনই আসতে হলো তার। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ পর রাগে নিশ্বাসের সাথে আগুনের লাভা বের হবে।
আমি কিছু না বলে আগের জায়গা এসে বসে পড়লাম। অভি আমার নাম ধরে ডেকেছে কিন্তু আমি সারা দিচ্ছি না। কেনো সাড়া দিবো এই ডাইনিটাকে উনি এনেছেন।

অভি ড্রয়িং রুমে এসে অথৈকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো। অভি এমন ভাবে আমার দিকে তাকালো যেনো একে বাসায় ঢুকতে দিয়ে বিরাট অপরাধ করেছি আমি। অথৈ অভির দিকে তাকিয়ে বললো,” মনে হচ্ছে আমাকে দেখে তুমি খুশি হও নি।”

তুমি করে বলছে দেখো ওরে প্রেম একবারে উতলিয়ে উপচে পড়ছে। তুমি আমাকে দেখে খুশি হও নি? যত্তসব মনে মনে বললাম আমি।

অভি বললো,” অফিসে ঢুকতে দেইনি বলে তুমি বাসায় চলে আসবে। Self respect বলেও তো কিছু আছে তাই না।”

অভির কথায় আমার রাগ এবার একটু কমলো কিন্তু এই ডাইনি অফিসেও হামলা করেছে।

অথৈ বললো,” অভি তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।”

” বুঝতেই যখন পারছো দারিয়ে আছো কেনো, get out. তোমার ছায়াও আমি আমাদের আসে পাশে দেখতে চাই না। তোমার সাহস কি করে হয় নওরীনকে ডিভোর্সের কথা বলার। নিজের লিমিট বজায় রাখো।”রেগে গিয়ে বলল অভি।

অভির কথায় ডাইনিটার সাথে আমিও চমকে উঠলাম অভিকে তো আমি কিছু বলিনি। লান্ডলাইনের সাথে কি কোনো ভাবে অন্য কোনো ডিভাইসের সংযোগ আছে।

অথৈ হাসছে শয়তানি হাসি না।হালকা একটু হাসি ব্যার্থতার হাসি যাকে বলে।

অথৈ বললো,” অভি তুমি কি এখনও চশমা পড়ে ঘুমিয়ে যাও?”

অভি মুখ আরো শক্ত করে বললো,” just get out .”

অথৈ আর কিছু না বলে চলে গেল। আমার এতক্ষন খুব বেশী রাগ হয়নি। কিন্তু শেষের কথাটা শুনে রাগে আমার কান লাল হয়ে গেছে।
অভিকে ওই ডাইনি ঘুমাতে দেখেছে। আচ্ছা দেখেছিস ভালো কিন্তু না সে যে চশমা পড়ে সেটাও খেয়াল করেছে। অভিকে তখন দেখতে অন্য রকম সুন্দর লাগে অভির কাছে যেতে ইচ্ছা করে। ওই মেয়ের ও নিশ্চয় ইচ্ছে করেছে।

অভি রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ছিলো।

আমি কিছু টোস্ট বিস্কুট নিয়ে ডাব্লিউ ডাব্লিউ খেলা দেখতে বসেছি।
নিজের রাগ কমাতে হবে। বসে বসে শক্ত টোস্ট বিস্কুট চাবালে রাগ কমে। মনে হয় যার উপর রাগ তাকে চাবাচ্ছ।
ডাব্লিউ ডাব্লিউ খেলা দেখবো কারন এটা দেখলেও রাগ কমে। যে মার খায় সেটা যার উপর রাগ হয়েছে তাকে মনে করলেই আনন্দ। আর যে মারে সেটা আমি নিজে।

আমি যে রাগ করেছি বা জ্বলে যাচ্ছে আমার শরীর সেটা অভিকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। সে ভাববে আমি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। আমি টিভি দেখতে বসলে অভি এসে আমার পাশে বসে।
আজও সেটাই করলো কিছুক্ষণ পর আমার পাশে এসে বসলো।

অভি টিভির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো। আমার মুড কেমন সেটা বুঝার চেষ্টা করছে আমি এদিকে টোস্ট বিস্কুট চাবিয়ে যাচ্ছি।

“তোমার কি কাউকে মারতে ইচ্ছা করছে।”, অভি বললো।

আমি স্বাভাবিক আচরণ করতে চাচ্ছি। তাই শান্ত গলায় বললাম, ” আপনার এমন মনে হবার কারণ?”, বলেই অভির দিকে তাকিয়ে দেখি তার চশমা।

ওনার চশমা দেখে রাগ লাগছে আমি টিভির দিকে তাকিয়ে আরেকটা টোস্ট বিস্কুট নিলাম ৪,৫টা খাওয়া হয়ে গেছে আমার। পেটে জায়গা নেই তাও খাচ্ছি।

অভি বললো,” তুমি তো রোমান্টিক ড্রামা দেখো আজ হটাৎ ডাব্লিউ ডাব্লিউ খেলা দেখছো তাই জানতে ইচ্ছে করছে।”

” কেনো আমি কি এইটা দেখে খুব ভুল করেছি?”, রেগে বললাম।

অভি আমার হাত ধরে ওর কাছে নিয়ে গেলো। আমি হাত ছড়ানোর চেষ্টা করছি অভি দুই হাত দিয়ে পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি চুপ করে আছি। ওনার ফাঁদে পা দিবো না।

অভি আমার কানের কাছের চুল সরিয়ে দিয়ে বললো,” রাগ টা ঝেড়ে নিলেই পারো , শুধূ শুধু বসে বসে টোস্ট বিস্কুট চাবাতে হতো না।”

[ চলবে ]

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১০ #মান_অভিমান
#নবনী_নীলা
“আমি কারোর উপর রাগ করিনি। আমি কেনো রাগ করতে যাবো?”,বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
“সত্যিই রাগ করোনি?”, প্রশ্ন করলো অভি।
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।

অভি বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” এতো কথা শুনার পরও রিয়েক্ট করছো না। তোমার এসবের পর রাগ হচ্ছে না।”

” আমি রাগ করে কি করবো। আপনার জীবন আপনি যা ইচ্ছে করুন।”, নিচু স্বরে বললাম আমি।

” ওকে done। সেটাই করবো।”বলে অভি উঠে চলে গেলো। অভি রেগে গেছে। হটাৎ আমি কি এমন বললাম যে রাগ করলো।এভাবে রাগ দেখিয়ে গেলো কেন?

সকালে আমি ভার্সিটির জন্যে তৈরী হয়ে রওনা দিলাম। অভি সকালেও দরকারের বাহিরে একটাও কথা বললো না। ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস করতেও ভাল্লাগছে না। দুইটা ক্লাস করে আমি বাসায় চলে আসি।

আমি অনেক সময় ধরে রান্না করলাম। তাও সময় কাটছে না।
সারাদিন অভির জন্য অপেক্ষা করলাম অভি এলো অনেক রাতে তার নাকি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ ছিলো।
আমি আর কিছু বললাম না। সারাদিনে একবার আমাকে ফোনও দেয়নি হটাৎ এমন পরিবর্তন। মন মরা করে আমি পড়ার রুমে এসে বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করলাম।

এই রুমটায় একটা সিঙ্গেল খাট, পড়ার টেবিল বিশাল এক বুকশেলফ। বুকশেলফ এ এতো বই যে আমার চুল পেকে যাবে সবগুলো বই পড়ে শেষ করতে।

আগে প্রথম প্রথম আমি এই রুমে থাকতাম। একদিন ঘুমের মাঝে একটা বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুমের মাঝে চিৎকার করেছিলাম। অভি ছুটে নিজের রুম থেকে চলে এসেছিল। ভাগ্যিস সেদিন সে জেগে ছিলো। সারারাত কান্না করে কাটিয়েছিলাম আমি। স্বপ্নটা ভুতের স্বপ্ন ছিলো। পুরো ফ্ল্যাট এ বাতি জ্বালানোর পর আমি একটু শান্ত হয়েছিলাম।

আমি রুমের খাটে শরীর ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। কালকে থেকে আমি ঐ রুমে কম যাচ্ছি। হয়তো সোফার রুমে নয়তো এখানে আসি।
এই রুমটায় অনেক সুন্দর একটা গাছের পেইন্টিং আছে। গাছটার পাতাগুলো নীল এজন্যই পাইন্টিংটা আমার ভালো লাগে।

অভির রাগ কখন ভাঙবে? আমার কি উচিত ওর রাগ কমানোর চেষ্টা করা, জড়িয়ে ধরবো গিয়ে?যদি আমার হাত সরিয়ে দেয় অভি।
কি করেছি সেটাই বুঝতে পারছি না রাগ ভাঙ্গবো কিভাবে? আমি কি রেগে কথা বলেছি? না আমিতো শান্ত ছিলাম। তাহলে……..?

“নওরীন! নওরীন!”অভির গলা, অভি ডাকছে। আমি লাফ মেরে উঠে বসি। তাহলে কি রাগ কমেছে। যাই হোক আমাকে ডেকেছে এই ভেবেই আনন্দ লাগছে। আমার কথা মনে পড়েছে তাহলে।

আমি গিয়ে দেখি অভি পানির জগ থেকে গ্লাস এ পানি ঢালছে। আমি গিয়ে ডায়নিং টেবিলের একটা চেয়ার ধরে দাঁড়ালাম।

অভি ইশারায় জগের পাশে আমার ফোন দেখিয়ে বললো,” তোমার ফোন বাজছে।” আমি ফোনটা এইখানে রেখে হয়তো ভুলে গেছি।
ভাইব্রেশনের কারণে শুনতেও পাইনি। অভি আমাকে ফোনের জন্যে ডেকেছে ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ফোনটা বেজে না উঠলে কি ডাকতো না আমাকে। আমি ফোনটা নিয়ে আগের জায়গায় চলে এলাম।
ভেবেছিলাম অভি কিছু বলবে কিন্তু সে আর কিছুই বলেনি।

অভি নওরীনকে খুঁজতেই এসেছিলো। কারন বাসায় আসার পর থেকে নওরীন অভির আসে পাশে নেই।
অন্যদিন সোফায় বসে টিভি দেখতো আজ তাও করছেনা। রান্না ঘরে আছে কিনা দেখতে এসে দেখে নওরীনের মোবাইল ভাইব্রেট করছে।
নওরীনকে ডাকার ভালো একটা অজুহাত পাওয়া গেছে।
অভি কথা বলছেনা কারণ অভিমান হয়েছে। অথৈ নওরীনকে কম কিছু বলেনি এরপরও নওরীন শান্ত ছিলো।অন্য মেয়ে হলে হয়তো অভিকে নাকানি চুবানি দেওয়াত। অভি নওরীনকে ভালোবেসে ফেলেছে হয়তো কিন্তু নওরীন কি পেরেছে।

অভির একটু অভিমান হয়েছে। কারন সারাদিনে নওরীন তার আসে পাশে ঘুরেনি। টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে অভিকে বিরক্ত করেনি। উল্টা পাল্টা কান্ড কারখানা কিছুই সে করেনি। শান্ত হয়ে আছে।

অভি ফোনটার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে গেলো। ইমন ফোন করেছে। একবার না ৭টা মিসড কল উঠে আছে।
নওরীনের ফ্রেন্ড রচনা বলেছিলো ইমন নামের এই ছেলের নওরীনের প্রতি দুর্বলতা আছে, নওরীন ওর ভালো ফেন্ড তাই সে প্রকাশ করেনি। রচনা অভিকে প্রায়
এমন কথা জ্বালানোর জন্যে বলে।
অভি নওরীনকে এতক্ষনে ডেকেও ফেলেছে আগে এই নাম দেখলে সেটা হয়তো করতো না। নওরীনকে আসতে দেখে পানির জগ হাতে নেয়।

নওরীনকে ফোন হাতে অন্য রুমে যেতে দেখে অভির রাগ লাগলো। দুই গ্লাস পানি খেয়ে অভি রুমে চলে যাচ্ছিলো। যাওয়ার আগে নওরীনের রুমে যেতে ইচ্ছে হলো। কি এমন কথা যার জন্য ফোন রুমে নিয়ে যেতে হলো।

আমি রুমে বসে বিরক্তি নিয়ে ইমনকে ফোন দিলাম। ইমন সঙ্গে সঙ্গে ফোন ধরলো।
” কিরে ফোন ধরিসনি কেনো এতক্ষন?”, ওপাশ থেকে বললো ইমন।

” কি জন্য ফোন দিয়েছিস সেটা বল।”

” ৩দিন পর আমাদের একটা অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। তুই তো ক্লাস না করে চলে গেছিস তাই জানানোর জন্য ফোন দিয়েছি। তোর ইমেইল চেক করলে পেয়ে যাবি সব।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।”, নিচের ঠোঁট উল্টে বললাম।

অভি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদিকে জানালার দিকে তাকিয়ে ফোন হাতে নওরীন বসে আছে। ইমন কথা বলছে, ইমন মাঝে মাঝে মজার কথা বলে।
কথাগুলো সত্যি না মিথ্যা নওরীন জানে না কিন্তু শুনে হাসি থামানো যায় না।

ইমন বলছে,” জানিস আজকে কি হয়েছে? আজকে রিক্সাওয়ালার টায়ার গেলো ফুটো হয়ে। বাধ্য হয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম জানিসই তো আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটি। ইটের সাথে ঊষ্ঠা খেয়ে একটা মহিলা কুকুরের লেজে একটু পারা পরে। বিশ্বাস করবি না বউ জামাই মিলে আমাকে তাড়া করেছে। ১০ মিনিটের রাস্তা ৪মিনিটে এসেছি। বউয়ের প্রতি কুকুরের ভালোবাসা দেখে আমি বিমোহিত।”

নওরীন হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো। শুয়ে পড়তেই তার চোখ গেলো দরজার দিকে অভি বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
নওরীন হাসি থামিয়ে উঠে বসলো। অভির চোখ মুখ শক্ত।
অভির কথায় নওরীনকে সে এভাবে কখনো হাসতে দেখেনি। অভির রাগ হচ্ছে কিন্তু রাগ সে দেখাতে পারছে না বলে আরো রাগ হচ্ছে। নওরীন ফোন কেটে দিয়ে উঠে দাড়ালো।

নওরীন বুঝতে পারছেনা অভি কখন থেকে এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
অভি ভারী গলায় বললো,” কালকে রাতের বাসে আমরা বাড়ি যাচ্ছি। জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখো অফিস থেকে ফিরে তোমাকে নিয়ে যাবো।”

নওরীন ক্ষীণ গলায় বললো,” হটাৎ কালকে!”

” জানি না মা যেতে বলেছে।”

” কয়দিনের জন্য যাচ্ছি?”

” দুইদিন “, বলেই অভি মুখ ঘুরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

নওরীন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না কারণ অভি নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। নওরীনের কান্না পাচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে অভির সামনে বসে কাদতেঁ তখনও কি সে রাগ করে থাকবে?

[চলবে]

হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-৬+৭+৮

0

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৬ #রাগী_অভি
#নবনী_নীলা
রচনাকে শাকিলের পাশে বসিয়ে পিছে ফিরতেই দেখি অভি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা হলুদ রঙের পাঞ্জাবির সাথে সাদা প্যান্টে সুদর্শন যুবক লাগছে তাকে। অভি হাত ভাঁজ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব মনযোগ সহকারে আমাকে দেখছে। আসে পাশের সবার দৃষ্টি আমাদের দিকে। আমার অসস্তিবোধ হলো আমি রচনার পাশে গিয়ে বসলাম।

অভি এগিয়ে এসে শাকিলের সাথে হ্যান্ডশেক করলো। শাকিল দাড়িয়ে অভিকে জড়িয়ে ধরলো। রচনা আর আমি একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি। এরা মনে হয় আগে থেকেই একে অপরকে চিনে।

অভি বলে,” তাহলে শাকিল শেষমেশ বিয়ে করছো। কড়া মেজাজের একটা বউ পেয়েছো।”

” আমাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কিছু বললে তোমাদেরই বিপদ। বুঝে শুনে কথা বলো।”, রাগ করার ভান করে বললো রচনা।

” নাহ্ তোমাকে কি আমরা কিছু বলেছি?”,শাকিল বললো।

একটা প্রজেক্টের কাজে শাকিল আর অভির দেখা হয় তখন থেকেই ভালো বন্ধু তারা। হোটেলের ছাদে আমরা সবাই। যেই ফ্লোর এ হলুদের অনুষ্ঠান হবে সেখানে কিসের আয়োজন চলছে বড়রা আমাদের সেখানে যেতে দিচ্ছে না।

আমি আমাদের কিছু ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম। ঋতু,নীলিমা, শৌভিক ওরা সবাই এসেছে। ওদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি। আমরাএকটু আছি সুইমিং পুলের কাছে।
হটাৎ আমার মোবাইল বেজে উঠলো অভীর কল। উনিমনে হয়আমাকেখুঁজছে।
এদিকে এতো গান চলছে আমি তাই দূরে আসলাম যাতে কল রিসিভ করতে পারি। উষ্ঠা খেয়ে ফোনটা হাত থেকে পড়ে সুইচ অফ হয়ে গেছে। আমি ফোনটা তুলে ঠিক করার চেষ্টা করছি।

এদিকে সবাই নিচে যাচ্ছে সেদিকে আমার খেয়াল নেই আমার ফোন কেনো অন হচ্ছে না এটাই আমার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সমস্যা।
সামনে তাকিয়ে দেখি রাহাত ভাই এদিকেই আসছে। উনি আমার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে আছেন। ওনাকে পাত্তা দেয় কে?

” কি করছো নওরীন?”,বললেন রাহাত ভাই। একে আমার দেখতেই ইচ্ছে করে না অসহ্য।

” আমি নৌকা চালাচ্ছি,দেখতেই যখন পাচ্ছেন আবার জিজ্ঞেস করছেন কেনো?”,রেগে বললাম আমি।

” মনে হচ্ছে তুমি রেগে আছো। আজকে তোমাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।”,বলেই একটু হাসলেন রাহাত ভাই।

অন্যরকম সুন্দর জিনিসটা কি? যখন থেকে সেজেছি সবাই এসে একই কথা বলছে অন্যরকম সুন্দর, আগের থেকে সুন্দর হয়ে গেছিস। রাহাত ভাই আবার বলছে, ওনার কথা শুনে মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে। আমি ওনাকে পাত্তাই দিলাম না ফোনটা খুলার চেষ্টা করছি।

” তোমার থেকে চোখ সরাতে পারছি না। তোমার বরের একটা ব্যাবস্থা করতে পারলে তোমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।”, নির্ভয়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছে রাহাত ভাই। ওনাকে আমি পড়ে দেখে নিচ্ছি আগে আমার ফোনটা ঠিক হোক।

আমি কিছু বলার আগে দেখি রাহাত ভাই ভয়ে একটা ঢোক গিলছেন। আমি পিছে ফিরতেই অভির বুকে ধাক্কা খেলাম। অভি মুখ আর হাত শক্ত করে দাড়িয়ে আছে। অভি কি সবটা শুনেছে। এমন রাগী চেহারা আমি দেখিনি অভির।

অভি আমাকে টেনে দূরে সরিয়ে রাহাত ভাইয়ের সামনে গেলো। পাঞ্জাবির হাতা গুঁজতে গুঁজতে বললো,” ভাই আপনি কি বলছিলেন যদি আরেকবার বলতেন। একটু স্পষ্ট করে আমার সামনেই বলুন।আমার নাকি আপনি ব্যাবস্থা করবেন।”, অভির কথার গাম্ভীর্য ভাবেই আমি ভয় পাচ্ছি।

আমি একটু চিন্তা করলাম আমি ভুল ভাল কিছু বলেছি কিনা কারণ শেষ বোমাটা তো আমাকেই মারবেন উনি। নাহ্ চিন্তা করে আমার কোনো দোষ খুজে পেলাম না।
রাহাত ভাই একটু বেশি কথা বলে উনি পারে না এক আনা কথা বলে দশ আনা।

রাহাত ভাই হেসে ব্যাপারটা সামলে নিতে চাইলেন কিন্তু অভির মুখের গাম্ভীর্য ভান যায় নি। পরে রাহাত ভাই বললো,” মজা করছিলাম।” আসছে মজা করেছি বলবে আর অভি বিশ্বাস করে নিবে এই বলদ লোকটা আবার এটা ভাবছে।

অভি বললো,” রাতে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কখন মার খেয়েছেন। কখনো বস্তায় ভরে কেউ মেরেছে আপনাকে?”

রাহাত ভাই আবার ঢোক গিললেন। আমি অভির কথা শুনে অবাক এইরকম গুন্ডা মার্কা কোথাও বলতে পারেন উনি।

অভি পাঞ্জাবির হাতা নামতে নামতে বললো,” আপনাকে যেনো আমি আর কোনোদিন আমার ওয়াইফের আসে পাশে না দেখি। রাস্তায় তো বের হতেই হয় কখন কি হয়ে যায় বলাতো যায় না।”

রাহাত ভাই এই প্রচন্ড বাতাসে ঘামিয়ে শেষ।
অভি আরও বললো,”যা বলেছি সেটা বুঝতে পারলে আসুন এবার।”

রাহাত ভাই ঘাম মুছতে মুছতে চলে গেলেন। অভি আমার দিকে ফিরে আমার হাত ধরে এনে নিজের সামনে দাড় করালো। আমার দুইপাশের রেলিং ধরে আমার দিকে ঝুঁকে বললো,”তুমি এতক্ষন কি করছিলে?”অভির মুখের গাম্ভীর্য ভাব এখনও কাটেনি। ধুরো আমি কেনো ভয় পাচ্ছি আমি তো কিছু করিনি।
আমি নির্ভয়ে বললাম,” আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম।”

” আচ্ছা, তা কোথায় তোমার ফ্রেন্ডরা?”

আমি আসে পাশে তাকিয়ে দেখি পুরো ছাদ ফাঁকা আমি আর অভি ছাড়া কেউ নেই। আমার মুখ হাঁ হয়ে গেলো আমি বলে উঠলাম,” কোথায় সবাই?” অভি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,” তোমার ফোনের কি হয়েছে?”

আমি বললাম,” হাত থেকে পড়ে ফোন অজ্ঞান হয়ে গেছে।”

অভি মুখ শক্ত করে আছে। এবার আমি একটা ঢোক গিললাম।বাতাসে আমার চুল গুলো উড়ছে কয়টা চুল গিয়ে অভির মুখে পড়েছে আমি তাড়াতাড়ি চুলে একটা খোঁপা করে ফেললাম। এর মাঝে অভি কোন কথা বলল না আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে। কেমন কেমন জানি লাগছে।

অভি সোজা হয়ে দাড়িয়ে দুই হাত বুকের কাছে ভাজ করে দাঁড়ালো। আমি একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়লাম। অভি আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,” এতো সেজেছো কেনো?”

এটা আবার কেমন কথা? এমন কথা আমি এর আগে শুনিনি। আমি প্রশ্ন করলাম,” মানে, আমাকে কি খারাপ লাগছে দেখতে?”

অভি বললো,” হুম বাঁদরের মতন লাগছে।”

” কি বললেন আপনি! বাঁদরের মতন লাগছে? রাহাত ভাই আর সবাই যে বললো ভালো লাগছে।”, মন খারাপ করে বললাম।

” হ্যা এক বাঁদরের তো আরেক বাদরকে ভাল্লাগবে এটাই স্বাভাবিক।”, বললো অভি।

” আপনি আমাকে বাঁদর বললেন তো আমি বাঁদর হলে আপনি কি,আপনি গরিলা। আপনার সাথে আমি কথাই বলবো না।”,বলে আমি চলে যেতেই অভি আমার ওড়না ধরে ফেললো।

আমি ওড়না ছড়ানোর চেষ্টা করছি অভি ওড়না ধরে আছে। আমি বললাম,” অসভ্যতা করছেন কেনো? ছাড়ুন আমার ওড়না।”

অভি আমার কোমর ধরে ওর কাছে নিয়ে বলে,” অসভ্যতা কি দেখতে চাও? দেখবো তোমাকে।”

[ চলবে ]

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৭ #I_Love_You
#নবনী_নীলা
অভি আমার কোমর ধরে ওর কাছে নিয়ে বলে,” অসভ্যতা কি দেখতে চাও? দেখবো তোমাকে।”
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। আমাকে বাঁদর বলা হয়েছে ইচ্ছে করছে বাঁদরের মতন এনার চুল ধরে টান মারি। দাড়ি থাকলে বেশি সুবিধা হতো। ইনি তো আবার ক্লিন শেভ করেন। অভি একহাত দিয়ে আমার মুখ ধরে নিজের দিকে ঘোরালো।

এমন সময়ে রচনা এসে হাজির মনে হয় আমাদেরকে খুঁজতেই এসেছে। রচনা একটু কেশে উঠে বললো,” বর বউয়ের প্রেম শেষ হলে যদি একটু নিচে এসে আমার গায়ে হলুদে মনযোগ দেওয়া হয় তাহলে বড় খুশী লাগতো।” বলেই রচনা ঠোঁট টিপে হাসছে।

এই লোকটাকে আমি অসভ্য বলেছি এবার তো দেখি নিলজ্জও বটে। একখনো আমাকে ধরে আছে। আমি ওনাকে একটা ঠেলা মেরে চলে আসি রচনার সাথে।

অনুষ্ঠান শেষ হতে প্রায় রাত 2টা বেজে গেছে সবাই বেশ tired। রচনা আর শাকিলকে কাল অনেক ধকল সামলাতে হবে এইসময় আবার জার্নি করে বাড়ি ফেরা ওদের জন্যে কষ্টের হবে তাই কয়েকজন গার্জিয়ান ওদের সাথে হোটেল এ থেকে গেলো।
আমি রচনার সাথে রুমে এলাম।
এদিকে অভি,শাকিল আর তাদের সাথে এক বড় ভাইকে দেওয়া হয়েছে রুমে।

গোসল সেরে রিলাক্স হয়ে দেখি ২টা ৪৫মিনিট। পুরো অনুষ্ঠানে আমি অভির থেকে যত সম্ভব দূরে দূরে থেকেছি। তাকে পাশ কাটিয়েও চলে গেছি। রাহাত ভাইকে আমার আসে পাশে তো দূর অনুষ্ঠানেও দেখা যায়নি। রচনা গোসল সেরে এসে বললো,” ওই ছাদে যাবি?”

আমি বললাম,” তোর কি মাথা খারাপ এতো রাতে ছাদে যাবো। এখন ছাদে গিয়ে করবিটা কী?”

” শাকিল আমাকে অনেকবার করে বলেছে রাতে যেনো ছাদে যাই।আমি না বলে মোবাইল সুইচ অফ করে রেখেছি।”, শান্ত গলায় বললো রচনা।

” কিন্তু আবার জামা বদলাতে হবে আমার।”, বিরক্ত নিয়ে বললাম আমি।

” কেনো ভালোই তো লাগছে জিন্স আর শার্ট পরে আছিস। এভাবেই যাবো আমরা।”

” আমি বিয়ের পর এইগুলা পরিনি। এখন যদি অভি ওখানে থাকে কেমন আজব লাগবে না?”,একটু চিন্তিত হলাম বলে।

” জামাইর সামনে এইডি পইরা যাইতে পারো না, বাচ্চা পয়দা করবা কেমনে?”

রচনার কথা শুনে আমি ভ্রু কুঁচকে ফেললাম।রচনা মাঝে মাঝে বয়স্ক দাদিদের মতন কথা বলে। এই ধরনের কথা আমার একদম পছন্দ না।
রচনা আরও বললো,” ভাল্লাগে নাই কথা শুনে? তোর ভাগ্য ভালো অভিদার মতন জামাই পাইসস নইলে এতো দিনে…”

রচনাকে আমি আর কিছু বলতে না দিয়ে বললাম আচ্ছা চল। আমি না গেলে এই মেয়ে আমাকে আরো কথা শুনাইতো।

লিফট ছাদে এসে থামলো। আমার ধারণা ঠিক অভি আর শাকিল দুজনেই আছে। রচনা স্বাভাবিক ভাবে শাকিলের সামনে গিয়ে বললো,” কি জন্যে আসতে বলেছো তাড়াতাড়ি বলো।”

অভি নিজের ফোন নিয়ে ব্যাস্ত এতো বড়ো ছাদ ফাঁকা শুধু আমরা চারজন। শাকিল আর রচনা কথা বলতে বলতে অনেকটা দূরে গেলো। অভি আমার দিকে তাকিয়েছে কিন্তু কিছু বলেনি।
এবার আমার ভয় লাগছে রাত ঘড়িতে ৩টা বেজে ২০ মিনিট। উপায় না পেয়ে অভির কাছে গিয়ে দাড়ালাম। পুরো শহরটা দেখা যাচ্ছে চারিদিকে শুধু অন্ধকার মাঝে কিছু রাস্তার লাম্পগুলোর আলো।

ধুরো আর দাড়িয়ে থাকতে পারছি না।আমি ছাদে অভির পায়ের কাছে বসে পড়লাম। অভি ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি করছো তুমি?”
” দাড়িয়ে থাকতে ভাল্লাগছে না।”,বলেই আমি পিছনের রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে অভিকে দেখতে লাগলাম।

আমার শাশুড়ি বিয়ের আমাকে যা বলেছে সেটা যদি সত্যি হতো আমি খুশি হতাম। উনি আমাকে ডেকে অভি আর অথৈর কথা বলেছে। আমি চুপ করে শুনেছি সব।

” wife হিসাবে এইগুলো জানা তোমার দরকার। আমার ছেলে তোমাকে এইগুলো হয়তো কোনদিন বলবে না। সে বিয়ের আগে প্রতিটা মেয়েকে একই কথা বলেছে যাতে কোনো মেয়ে অভিকে বিয়ে করতে রাজি না হয়। তোমার ক্ষেত্রে তুমি কেনো রাজি হয়েছো সেটা একটা বিস্ময়। হয়তো ছেলেমানুষী করে ফেলেছো। কিন্তু সত্যি কথা হলো অথৈয়ের প্রতি অভির কোনো পিছুটান নেই। বিয়ে নিয়ে সে আমাকে সোজাসুজি না করবে না কারণ তাতে আমি কষ্ট পেতাম। তাই সে প্রতিটা পাত্রীকে সত্যের সাথে কিছু মিথ্যা বলেছে।”

আমি কথা গুলা মূর্তির মতন শুনছিলাম।তিনি আরো বলেন,” অথৈয়ের বিয়ে আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো।একদিন অথৈয়ের হবু বর অভির অফিসে গিয়ে অভিকে সবটা বলে। তারপরের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে অথৈকে অভি ভালোবাসে না মা হিসাবে আমি তোমাকে এতটুকু আশ্বাস দিতে পারি।”

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবতে লাগলাম। আকাশে কি সুন্দর তারা, চাঁদটাকেও কি সুন্দর লাগছে। হটাৎ অভি আমার পাশে বসে পড়লো। শাকিল আর রচনার কথা শেষ হচ্ছেই না। এরা আজ সারারাত জেগে থাকার প্ল্যান করেছে নাকি।

অভি হটাৎ আমার কাঁধের উপর নিজের এক হাত দিয়ে অন্য হাতে আমার আরেক হাত ধরে আমার কাছে এসে বললো,” ভয় পেয় না।”

আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই টাস টুস শব্দ হলো। হটাৎ এমন আওয়াজে আমি চিৎকার দিয়ে অভির গলা জড়িয়ে ধরি। আমি হার্ট বিট দৌড়াচ্ছে রীতিমতন। অভি আমার পিঠে হাত রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” সামনে তাকাও।”

আমি কিছু না বুঝে গলা জড়ানো অবস্থায় সামনে তাকিয়ে দেখি আকাশে রং বেরঙের আতশবাজি। আমি মুকগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। তারমানে এই আতশবাজির কথা অভি জানত তাই আমাকে ভয় পেতে না করেছে।

সবশেষে আকাশে I Love You কথাটা লেখা উঠলো। কি যে সুন্দর লাগছিল বলে বোঝানো যায় না।আমি হা করে তাকিয়ে আছি। সামনে তাকিয়ে দেখি রচনা শাকিলকে জরিয়ে ধরলো।

আমি চমকে উঠে অভির দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম আমি এখনও তার গলা জড়িয়ে ধরে আছি। আমি তাড়াতাড়ি সরে গেলাম।
অভি বলে উঠলো,” এতো রাতে এমন পাগলামির কোনো মানে আছে? শাকিলের মাথায় মাঝে মাঝে উল্টা পাল্টা চিন্তা আসে এমন।”

” কিসের পাগলামি? কত রোমান্টিক ছিলো ব্যাপারটা, কিউটও ছিলো। ” বললাম।

” Really! তোমার কাছে এতো রাতে ঘুম নষ্ট করে, মশার কামড় খেয়ে এইটা রোমান্টিক লাগছে?”, আমার দিকে তাকিয়ে বলল অভি।

” হ্যা, কত সুন্দর ব্যাপারটা। সবাই পারে না রোমান্টিক হতে।”, বলেই আমি হাসলাম।

” বাহ্ এইগুলা তো দেখি ভালোই বুঝো।”

কথাটা শুনে আমি একটু লজ্জা পেলাম। অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।

সকালে ঘুম ভেগে দেখি ১১টা বাজে।কিন্তু আমি তো ছাদে ছিলাম রুমে এলাম কি করে? রচনা মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। আমি উঠে বসতে বসতে বললাম,” আমি এখানে এলাম কি করে?”

” তোর জামাইয়ের কোলে করে।” বলেই রচনা শয়তান মার্কা হাসি দিচ্ছে। আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি।

” তুই তো অভিদার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলি। পরে তোকে কোলে করে রুমে শুইয়ে গেছে।”

আমি বুঝি না আমি ঘুমালেই এই লোকটা আমাকে কোলে নেয় কেন?আজ পর্যন্ত আমি সেটা নিজের চোখে দেখলাম না আমাকে কোলে নিতে দুনিয়ার সবাই দেখে বসে আছে। আমি এমন কুম্রপটাসের মতন ঘুমাই কেনো? একটা মানুষ আমাকে ঘুমের মধ্যে কোলে নিলো অথচ আমি জানি না।

[ চলবে ]

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৮ #পিরিয়ড
#নবনী_নীলা
জামার পিছনের চেইনটা কিছুতেই পুরোটা লাগতে পারছি না, হাত পৌঁছাচ্ছে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক্ষন চেষ্টা করলাম। রুমে হাটাহাটি শুরু করেছি এবার। রচনাটাও নেই ওকে রুমী, স্বর্ণা পার্লার এ নিয়ে গেছে। উফফ হাত ব্যাথা হয়ে গেছে আমার। আমার পিঠ প্রায় অর্ধেকের মতন খোলা। রচনার ছোটো বোন রুহিকে ফোন করে আসতে বলি রুমে, এভাবে বের হবো কি করে। আমি ফোন হাতে নিয়ে কানে দিতেই মনে হলো পিছন থেকে কেও আমার জামার চেইনটা লাগিয়ে দিয়েছে।

রচনা কি চলে এসেছে কারণ রুমের পাসওয়ার্ড আমি আর ও ছাড়া কেউ জানে না। আমি পিছনে তাকিয়ে রিতিমত একটা শক খেলাম।

অভি দাড়িয়ে আছে তারমানে অভি চেইনটা লাগিয়েছে। আমার পিঠ দেখেছে নিশ্চই ভেবেই আমি একটা ঢোক গিললাম।
একটা মেয়ের ঘরে ঢুকে না বলে তার জামার চেইন লাগিয়ে দেওয়ার মতন অন্যায় করেও অভি স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে।

“আপনি এটা কি করলেন?” নিচু গলায় বললাম আমি।

” যেটা তুমি করতে পারছিলে না।”, এমন একটা ভাব যেনো কিছুই করেনি।যেনো এই কাজ সে প্রতিদিন করে।

” আমি একবারও আপনার কাছে হেল্প চেয়েছি?”, অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম। লজ্জায় তাকাতেই পারছি না।

” আচ্ছা আমার হেল্পের তোমার দরকার ছিলো না? তাহলে এইদিকে এসো আগের মত খুলে দিচ্ছি।”, বলেই অভি দুইপা এগিয়ে এলো। সত্যিই কি এমন করবে ? কি বিপদে পরলাম। আমি দেওয়ালের সাথে ভয়ে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালাম। নিজেকে এবার একটু সুরক্ষিত মনে হচ্ছে।

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,” আপনি এই রুমে এলেন কিভাবে? পাসওয়ার্ড আপনাকে কে দিয়েছে? কোনো মেয়ের ঘরে আসার আগে নক করে আসতে হয় জানেন না?” কথাগুলোতে বিরক্তির সাথে রাগও প্রকাশ পেয়েছে।

অভি আমার দিকে এগিয়ে এলো। এবার আমি কোথায় যাবো এমনেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দারিয়ে আছি। এভাবে বলা ঠিক হয় নি এবার যদি সত্যি সত্যি চেইন খুলে দেয়। অভি আমার দুই পাশের দেওয়ালে হাত দিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে দাড়ালো।

এবার আমার ভয় লাগছে। অভি হাত দিয়ে আমার মুখের সামনের চুল গুলো কানের পাশে সরিয়ে দিয়ে বলল,” এই রুমের পাসওয়ার্ড কিভাবে পেলাম জানতে চাও। কালকে রাতের কথা মনে আছে।” এতটুকু বলে অভি তাকিয়ে আছে।

লজ্জায় আমি লাল টমেটো হয়ে গেছি। আমাকে কোলে করে রুমে রেখে গিয়েছে তখন হয়তো পাসওয়ার্ড জেনেছে।

অভি আমার কানের কাছে এসে আরও বললো,” অন্য মেয়ের রুমে যাওয়ার প্রয়োজন আমার নেই, তাই নক করার প্রশ্নও উঠছে না। আর নিজের বউয়ের রুমের দরজায় নক করে আসার প্রয়োজনতো একদমই নেই।”বলে আমার দিকে তাকালো।

নিজের বউয়ের রুমে নক করার দরকার নেই কেনো প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি তাকালাম একবার। তাকানোর পর আবার চোখও সরিয়ে নিলাম।

” তোমাকে ওইদিন মেরুন রঙের শাড়িটা দিলাম ওটা পড়নি কেনো?”, আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো অভি।

” এক মিনিট আপনি দিয়েছেন মানে? আপনি না বললেন ঐটা আম্মু দিয়েছে।”, সত্যি কথা পেট থেকে আজ বের করতেই হবে।

” কিন্তু তোমার হাতে তো আমি দিয়েছি তাই বললাম।”অভি প্রচুর চালাক। কিন্তু আমিও কম না আমি বললাম,” তাহলে বুঝলেন কি করে শাড়িটা মেরুন রঙের।”

মনে হয় কাজ হয়েছে অভি দেওয়াল থেকে একটা হাত সরিয়ে নিজের চশমা ঠিক করলো,” একচুয়ালি মা বলেছিল আমাকে।”

বাহ্ আবার মিথ্যা কথা বলছেন, আমার নামও নওরীন আফরোজ একদিন না একদিন কথা ঠিক বের করে ছাড়বো।

” আচ্ছা বুঝেছি আপনি কি জন্যে এসেছেন সেটা বলুন।”, বিরক্ত নিয়ে বললাম।

” আমার ফোনের চার্জ শেষ হতে চলেছে তোমার চার্জার লাগবে আমার।” এটা কোনো অজুহাত কিনা বুঝতে পারলাম না। আমি আড় চোখে তাকিয়ে নিজের ব্যাগের কাছে গেলাম।

ব্যাগের ভেতর থেকে চার্জার নিয়ে ওনাকে দিলাম। অভি চার্জার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু ভাবছে মনে হলো।
আমি বললাম,” কি ব্যাপার আপনি যাচ্ছেন না কেনো?”

” একচুয়ালি আমি ভুলে গেছি ইম্পর্ট্যান্ট একটা কথা যেটা তোমাকে বলব বলে এসেছি।” বলেই বেডে বসে পড়লো।

” আপনি গিয়ে বাদাম কিনে বাদাম খান। খাওয়া শেষ হলে যদি মনে পড়ে তখন আমাকে এসে বলবেন। এখন আমি রেডি হবো আপনি যান।”, বলে অভির হাত ধরে টানতে লাগলাম।

” তুমি আমাকে অর্ডার দিচ্ছো কেনো?”, বলে এবার শুয়ে পড়লেন।এই লোকটা খালি কথা বাড়াচ্ছে। সমস্যাটা কি বুঝি না?

” আচ্ছা থাকুন। আমার অনেক কাজ আছে এখানে আপনার সাথে কার শক্তি কতো দুর খেলার সময় নেই।”,বলে আমি আয়নার সামনে চলে আসি।

অভি কিছুক্ষণ পর চুপ করে বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বলে উঠলো,” আজকে তুমি ঝগড়া করছো না কেনো?”

আমার মুখ হাঁ হয়ে গেল।আমি অভির দিকে তাকিয়ে বললাম,” আজকে ঝগড়া করছি না মানে? আমি কোনদিন আপনার সাথে ঝগড়া করি। সবসময়তো আপনি আমাকে রাগ দেখান।”

অভি ফোনটা চার্জ থেকে খুলে সময় দেখতে দেখতে বললো,” এই যে আবার ঝগড়া শুরু করেছো। কপালে এমন ঝগড়ুটে বউ জুটবে ভাবিনি।”,বলে ঠোঁট চেপে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

দিয়েছে আমার পুরো মুডটাই নষ্ট করে দিয়েছে। আমি কবে ঝগড়া করেছি কেও বলতে পারবে? আমাকে ঝগড়ুটে বলে গেলো! ঝগড়া কাকে বলে সেইটা উনি জানে।আমি চিরুনি হাতে আয়নার সামনে বসে পড়লাম। সবসময় আমাকে রাইগিয়ে দেয় এই লোকটা।

আমি সারাদিন অভির সাথে কথাই বলিনি। রচনা আর শাকিলের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সবাই মিলে আমরা হই হুল্লোড় করেছি। সন্ধায় অনুষ্ঠান শেষ করতে হলো তা না হলে ওদের বাড়ি যেতে অনেক রাত হয়ে যেত। এখন রাত সাড়ে আটটার কাছাকাছি। জামের মাঝে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে গাড়িতে বসে থাকতে আমার অসহ্য লাগছে।

অবশেষে ১ঘণ্টায় জ্যাম ছাড়লো।বাসায় আসতে আসতে বাজলো রাত সাড়ে ১০টা। আমার অসহ্য লাগছে গোসল করতে হবে।তাহলে যদি শান্তি লাগে। আমি এসেই গোসল করতে গেলাম। গোসল করতে গিয়ে বুঝলাম আমার পিরিয়ড হয়েছে।

এবার আমি কি করবো? আমি সাথে করে কিছুই আনিনি, জানলেই না আনতাম সব আছে আমার ওয়ার্ডরোবে। আমি কি করে কি করবো বুঝতে পারছি না। প্রথমত অভিকে রুম থেকে বের করতে হবে।তারপর আমি যা করার করতে পারবো।

সবচেয়ে বড় সমস্যা টাই তো ওই লোকটাকে রুম থেকে বের করা। আমি ওয়াশরুমের দরজা একটু খুলে উকি দিলাম। রুমে অভি নেই আমি রুমে পা দিবো এমন সময় মনে হলো যদি বারান্দায় গিয়ে থাকে আবার ওয়াসরুমে ঢুকে গেলাম।

ওনাকে ডাকলে কেমন হয়, বুঝিয়ে বলতে পারলে ঠিক বুঝবে। কি বলে ডাকবো নাম ধরে ডাকা যাবে না তাহলে কি ওগো শুনছো এইগুলো বলবো। ওগো শুনছো এইগুলো অতিরিক্ত মখন মারা নাম।
এইগুলা শুনতে কেমন কেমন লাগে। না না পারবো না।

আমি বললাম,” এই নওরীনের জামাই এই নওরীনের জামাই।”, এই ডাকটা ভালো বলতে বেশ মজা লাগছে।
অভি হা করে বারান্দা থেকে রুমে এলো। ভাগ্যিস রুমে নেই ভেবে ঢুকে পড়িনি। উনি এমন ডাকে বেশ অবাক হলেন। তার বউ তাকে এভাবে ডাকবে সে হয়তো কল্পনাও করেনি।
অভি নিজের হতভম্ব ভাব কাটিয়ে উঠে বললো,” কি হয়েছে কিছু লাগবে?”

আমি না সূচক মাথা নেড়ে বললাম,” আপনি একটু রুম থেকে বের হবে আমার একটু দরকার ছিলো।” এই কথা গুলো বলতেও লজ্জা লাগছে আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম।

” তোমার কি পিরিয়ড হয়েছে?”, ব্যাস্ত হয়ে বললো অভি। আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। উনি মাঝে খুব সহজেই আমাকে বুঝতে পারে। অভি বকা দিয়ে বললো,” এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে idiot!”

[ চলবে ]

হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-০৫

0

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৫ #এটা_কি_আমার_জন্যে?
#নবনী_নীলা
আমি আগে রেডি হয়ে গাড়ীতে এসে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর অভি নিজের সীটে এসে বসে আমার দিকে ঝুঁকে আসলো। আমি একটা ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে ওড়নাটা শক্ত করে ধরলাম।
সকালে যা হয়েছে তারপর আবার উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছে কেনো এমনেই ওনার দিকে তাকালে নিজেকে হার্টের রোগী মনে হয় বুক ধুকপুনি শুরু হয় আমার। আমি অনেক্ষন হলো চোখ বন্ধ করে আছি কিন্তু কিছু হচ্ছে না কেনো?

আমি চোখ খুলে দেখি অভি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এদিক সেদিক তাকাতে লাগলাম। অভি আমার সিট বেল্ট লাগিয়ে দিতে একদম কাছে চলে এলো।
অভির চেহারা একদম আমার মুখের সামনে।আমি জোরে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলাম। অভি সিটবেল্ট লাগিয়ে নিজের সীটে চলে গেছে। আমার কেনো এমন অবস্থা হয় এর আসে পাশে থাকলে। অভি কি সুন্দর স্বাভাবিক থাকে আমি এমন তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতন হয়ে যাই। আমি গাড়ির ড্রয়ার খুলে পানির বোতলটা বের করে পানি খেলাম। অভি মনযোগ দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছে, যেনো গাড়ী চালানোটাই তার আসল কাজ।

রচনা বাসার সামনে আমি নেমে পরি। আমি আর কিছু বলতে গিয়েও বললাম না।

” নওরীন দাড়াও।”, অভির আওয়াজ শুনে পিছে ফিরলাম।

অভি গাড়ি থেকে নেমে পিছনের সিট থেকে রাপিং পেপার এ মুড়ানো কিছু বক্স এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,” এতে রচনার জন্য কিছু গিফট আছে ওকে দিয়ে দিও।”

আমার বেস্টফ্রেন্ড রচনা ওর সাথে অভির গলায় গলায় খাতিল। অনেকটা মামা ভাগ্নির মতন। রচনাকে গিফট দিচ্ছে এতে আমার খুশি হবার কথা কিন্তু কেনো জানি মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কই আমাকে একবার চকলেট ছাড়া তো আজ পর্যন্ত কিছু দেয়নি। আমাদের বিয়ের দুমাস হতে চললো।

আমি আচ্ছা বলে বাড়ির দিকে ঢুকতেই অভি আবার আমাকে ডাকলো। অনিচ্ছা নিয়ে ওনার দিকে ফিরলাম।
আমার দিকে আরেকটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললেন,” এটা নেও।”
বাহ্ আরেকটা গিফট।আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,” এটাও রচনার জন্য?”
অভি না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” এটা মা তোমাকে দিতে বলেছে।”

বলেই আর দারালোনা না সাই করে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।
রাগ এবার আমার মাথায় উঠেছে। আমার শাশুড়িই ভালো এনার মতো নাকি। চিরতার রসের মতন জামাই পেয়েছি। এর নাকি এককালে প্রেম ছিলো।
অবশ্য আমার জন্যে কেনো কিছু কিনবেন আছে না অথৈ ওনার। ফিরে আসবে ওনার অথৈ ওনার কাছে যত্তসব। অসহ্য লাগে, ব্লক মেরে রেখেছি ওই ডাইনির নাম্বার আমি। আমাকে হুমকি দেয় এদের দুই জনের নামে আমি মামলা করবো, অসহ্য।

রাগে গজগজ করে উপরে উঠতেই একটা ধাক্কা খেলাম। হাতে আবার এতো কিছু অনেক কষ্টে পরে যাওয়া থেকে নিজেকে সামলে নিলাম। যার সাথে ধাক্কা খেলাম তার চেহারা দেখে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল। রাহাত ভাইয়ের সাথে ধাক্কা খেয়েছি। রাহাত ভাই রচনার কাজিন এই ব্যাটা আমাকে বহুত জ্বালিয়েছে। ফুল নিয়ে আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। একবার বারান্দা দিয়ে ময়লা পানি মাথায় ঢেলে দিয়েছিলাম কিন্তু তাও শিক্ষা হয়নি।

আমাকে দেখে হাসলেন,” কি ব্যাপার নওরীন কেমন আছো? ”

আমি জ্বি ভালো আছি বলে হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু হাসি আসলো না।

” আমাকে মনে আছে তোমার?”, এমন ভাবে বলছে দেখো মনে হচ্ছে এনার সাথে কতো জনমের পরিচয়। কম সমস্যায় ফেলেছে যে একে ভুলে যাবো।

” ভাইয়া আপনার সাথে পরে কথা বলবো রচনা রেগে আছে ওর সাথে দেখা করে আসি।”, বলেই কেটে পরলাম।
কোনো কথা বলার সুযোগ দিলাম না। রাহাত ভাই দেখতে ভালো কিন্তু ওনার সেন্টি মার্কা অভ্যাস। অ্যাটিটিউড কম, ছেলেদের অ্যাটিটিউড না থাকলে কেমন পানসে পানসে লাগে।

রচনার রুমে এসে দেখি সে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আণ্টি বলেছে আজ সারারাত জাগবে তাই নাকি ঘুমিয়ে পড়ে আছে। ওকে অনেক কষ্টে জাগিয়ে তুলে ওকে গিফট গুলা দিলাম।

রচনা চোখ ডলতে ডলতে বললো,” এইগুলো তুই এনেছিস?”

আমি ওর পাশে বসে বললাম,” নাহ, আমার জামাই দিয়েছে। আমার গিফট বিকালে আসবে ”

” তা আমার জামাইবাবু আসেনি?”

আমি বললাম,” না।”

” কখন আসবে কিছু বলেছে?”

আবার বললাম,” না।”

রচনা আমাকে একটা ধাক্কা মারলো ,” কি শুরু করেছিস তখন থেকে। না ছাড়া কিছু বলতে পারিস না।”

“রাহাত ভাই এখানে কেনো বলবি একটু আমাকে।”, আমি রেগে বললাম।

” আরে ওনাকে না বলে পারি? তারউপর বিয়ে বলে কথা ওনাকে আমারও পছন্দ না।গায়ে পড়ে কথা বলতে আসে।”রচনা আমার হাতের প্যাকেটা টান মেরে নিয়ে বললো,” এইটা কি?” বলে খুলে দেখলো মেরুন রঙের একটা শাড়ি। শাড়ীটা ভীষণ সুন্দর। আমারও খুব পছন্দ হয়েছে।

” বাহ্ তোর জামাইতো দেখি খুব রোমান্টিক।”, রচনা দুষ্টামি করে বললো।

” ফালতু কথা বলিস না, এটা আমার শাশুড়ি দিয়েছে।”বলে আমি শাড়িটা দেখতে লাগলাম।

“তোর শাশুড়ি তোকে দিয়েছে আর তুই এটা না দেখে এখানে নিয়ে এলি।”,প্রশ্ন করলো রচনা।

” আরে না, আসার সময় আমাকে এটা দিয়েছে উনি, আমি খোলার সময় পাই কি করে।”, মন খারাপ করে বললাম।

রচনা হাসতে লাগলো। যেনো আমি ওকে কোনো ফানি জোকস বলেছি।

” তুই হাসি থামবি রচনা।”, ওর হাসি দেখে আরো রাগ হচ্ছে আমার।

রচনা কিছুক্ষনের জন্য হাসি থামিয়ে বললো,” তোর মাথায় যে ঘিলু নেই সেটা আমার জানা ছিলো না। এটা যদি তোর শাশুড়ি দিয়ে থাকে তাহলে অভি তোকে আমার বাসার সামনে এসে দিবে কেনো? বাসায় থাকতেই দিতে পারতো না।”

রচনা কি বলতে চাচ্ছে বুঝতে না পেরে বললাম,” ভুলে গেছিলো হয়তো।”

” জ্বি না ম্যাডাম, আপনার জামাই আপনার জন্যই কিনেছে। কি বলে দিবে বুঝতে না পেরে তোর শাশুড়ির কথা বলেছে। তুই আস্ত একটা গাধা।”, বলে ঠোঁট টিপে হাসছে রচনা।

আসলেই তো আম্মু যদি এটা এনে থাকে তাহলে সেটা নিজেই দিবে আমাকে অভিকে দিয়ে কেনো পাঠাবে। একটা ভালোলাগা কাজ করছে কেনো জানি। নিজের অজান্তেই মুখে হাসি এসে গেলো। রচনা এই নিয়ে আমাকে আরো লজ্জা দিচ্ছে।

রচনার ফোন বেজে উঠতেই আমি ফোনটা রিসিভ করলাম। শাকিল ফোন করেছে, রচনার সাথে যার বিয়ে হতে যাচ্ছে। রচনা শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি ফোন কানে দিয়ে বললাম,” হেলো ”
ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,” রচনাকে দেওয়া যাবে?”। আমি ফোনটা loudspeakers এ দিলাম, রচনাও শুনছে।

” আমি রচনা, বলুন কি বলবেন।”,বলেই আমি মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলাম। রচনা বসে আমার কান্ড দেখছে।

” ভয়েসটা অপরিচিত মনে হচ্ছে আমার।”, ওপাশ থেকে বললো শাকিল।

” আমার ঠান্ডা লেগেছে তাই হয়তো আপনার এমন মনে হচ্ছে।” এটা বলার সাথে সাথে ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ পেলাম। আমি আর রচনা কিছু না বুঝে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি।

“কি হলো হাসছেন কেনো?”, আমি আবার বলতেই শাকিল বললো,” প্রথমত আমি ফোন দিলে রচনা সবসময় বলে কি চাই তোমার? আর সে আমাকে আপনি করে বলে না। এতো মিষ্টি করেও বলে না আমাকে তাই তুমি যেই হও না কেনো, অভিনয়টা খারাপ করেছো সেটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে।”

ফোনটা রচনার হাতে দিয়ে আমি চুপ করে বসে পড়লাম। এভাবে ধরা খাবো বুঝতে পারিনি। রচনা ফোন কানে নিয়ে বলে,” তোমার কোনো কাজ নেই সারাদিন ফোন দেও কেনো?”

আমি ওদের কোথায় মনযোগ না দিয়ে শাড়ীটা হাতে নিলাম। সত্যিই কি অভি এটা আমার জন্য কিনেছে? যদি আমাকেই দিবে তাহলে সোজাসুজি বললো না কেনো।
কি লেভেল এর আনরোমান্টিক হলে নিজ শাড়ি কিনে মা দিয়েছে বলে কেউ। আমার এবার কেনো রাগ লাগছে না? উল্টো হাসি পাচ্ছে।
শাড়ির প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দেখি ভিতরে একজোড়া ঝুমকাও রয়েছে। বাহ্ ভালোই উন্নতি হয়েছে উনার কিন্তু আমি এগুলো আজ পড়বো না। অন্য একদিন এইগুলো পড়ে অবাক করে দিবো। সে নিশ্চয়ই ভাবছে আজ ওনার দেওয়া শাড়ি গয়না পড়বো কিন্তু তা হচ্ছে না।

[ চলবে।]

হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-০৪

0

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৪ #কাছে_আসার_মুহূর্ত
#নবনী_নীলা
অভি আমার দুপাশে হাত রেখে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি পিছাতে পিছাতে সোফার হ্যান্ডেল এর সাথে ঘেঁষে আছি। অভি আমার দিকে ঝুঁকে আসছে এইটা দেখে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। ভয়ে মনে হচ্ছে ভিতরের আত্তা বেরিয়ে আসবে, বুকটা ধুক ধুক করছে।আমি চোখ খুলে দেখি অভি একদম আমার মুখের কাছে নিজের মুখ রেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি এর আগে এত কাছ থেকে অভিকে কখনো দেখিনি। আমার জামাইটা এত সুন্দর কেনো? দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করে। নিজে নিজে ভেবে হাসছি।

অভি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো,” হাসছো কেনো তুমি?”

অভির গলা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। আমি এতো বলদ এভাবে কেনো হাসছিলাম। উফফ ভালো লাগে না।
” কিছু না আপনি সরুন।” বলে আমি উঠে যেতেই অভি আমার কাধ ধরে আমাকে শুইয়ে দিলো সোফায়।

অভি শোচারচর এমন করে না। আমার কাছে চলে এলে নিজেকে সামলে নেয়। হটাৎ এমন করছে কেনো? আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। অভি আমার খুব কাছে এসে বললো,” তুমি যা করেছো এরপর তোমাকে আমি তোমাকে এমনেই ছেড়ে দিবো ভাবছো।”

অভির কোথায় আমি ঢোক গিললাম। হায় হায় বলে কি এমনেই ছাড়বে না মানে? আমি কি বলবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এনার সাথে আবার জ্বীন নেই তো এইটা তো স্বাভাবিক আচরণ না। আমি চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলাম।
চোখ খুলে দুইহাত দিয়ে অভির গাল স্পর্শ করলাম। অভি অবাক হয়ে আমার হাতের দিকে তাকালো আমার হাত রীতিমতন কাপছে।

” শুনুন বন্ধু আছেন বন্ধুর মতন থাকেন, হাসব্যান্ড হবার কোনো প্রয়োজন নেই।” বলেই অভির গাল থেকে হাত নামিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলাম। অভি ভ্রু কুঁচকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,” মানে?”

আমি মাথা নিচু করে বললাম,” আপনিই তো বলেছিলেন আপনি বন্ধুর চেয়ে বেশী কিছু হতে পারবেন না ভুলে গেলেন।”

অভি চুপ করে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর উঠে স্বাভাবিক ভাবেই নিজের রুমে চলে গেল। কি হলো ব্যাপারটা? হুট করে কি হয় এই লোকটার। যাক যা হয়েছে ভালো হয়েছে কিন্তু রাগ করেছে নাকি। ধুরো রাগ করুক, আমাকে যে সারাদিন রাগায় এইবার বুঝুক কেমন লাগে।
খাবার সময়ে অভি তেমন কথা বললো না নিজের ফোন দেখতে দেখতে খাওয়া শেষ করলো। আমার ওষুধ এনে পানিসহ আমার সামনে রেখে গেলো।
নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে।

আমি আমার ফোনটা হাতে নিয়ে রুমের বাহিরে এলাম অভি নিজের রুমে বসে ল্যাপটপ এ কাজ করছে।ফোন ধরে দেখি মা, রচনা কল করেছে অনেকবার। ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো তাই বুঝিনি। রচনা ২১বার ফোন করেছে আর এত্তগুলো ম্যাসেজ। আমি ওকে কল ব্যাক করতেই একগাদা কথা শুনতে হলো আমাকে কারন আগামীকাল রচনার গায়ে হলুদ। আমি তো একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম। যা কথা শুনিয়েছে সেটা আমার প্রাপ্য ছিল।

অনেক কষ্ট করে রচনাকে বুঝলাম মাফ চাইলাম। আমার কাজে রচনা যে কষ্ট পেয়েছে সেটা বুঝাই যাচ্ছে। কিন্তু এবার আরেক সমস্যা অভিকে কিভাবে বলি। আমার সাথে তো সে কথা বলছে না। আমি নিজে থেকে নিলজ্জের মতন গিয়ে কথা বলতে পারবো না তাই রচনার সাথে কথা বলাতে আমি আমার ফোনটা নিয়ে অভির সামনে ধরলাম।

অভি আমার দিকে একপলক তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,” কি হয়েছে?” তারপর ফোন নিয়ে কানে ধরলো। তারপর তারা কি বলেছে বুঝিনি। অভি শেষে হেসে দিয়ে বললো,” আচ্ছা নওরীনকে আমি ড্রপ করে দিবো। আর আমি চেষ্টা করবো নিজেও যাওয়ার।”

কথা শেষ করে অভি ফোনটা পাশের টেবিলে রাখলো। আমি বললাম,” আপনি যাবেন না রচনার গায়ে হলুদে?”

অভি কাজ করতে করতে বলল,” I’m not sure but I’ll try.”

” কিন্তু আপনি না আমার জন্যে দুইদিন ছুটি নিয়েছেন।”, প্রশ্ন করে ফেললাম।

অভি আমার দিকে তাকালো না তার সব মনোযোগ এখন লেপটপে,” যার জন্যে নিয়েছিলাম আমারতো মনে হচ্ছে না তার কোনো প্রয়োজন আছে।”

আমি আর কথা বললাম না আমার দিকে একবার তাকাচ্ছেও না, আমাকে রাগ দেখাচ্ছে। আমি চুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম রাত ১২ বেজে ৩৯ মিনিট। আমি অভির দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

অভি সাথে সাথে রুমের বাতি নিভিয়ে লেপটপে নিজের কাজ করতে মনোযোগ দিলেন। আমার অসুবিধা হয় লাইট জ্বালিয়ে রাখলে তাই লাইট বন্ধ করেছেন। ওনাকে কে বলেছে আমার সুবিধা অসুবিধা নিয়ে ভাবতে। আমি জামাও বদলালাম না শাড়ি পরেই শুয়ে আছি অস্বস্থি বোধ হচ্ছে। এসি চলছে তাও আমার গরম লাগছে তাও আমি ঘাওড়ামি করে শুয়ে আছি।

খুব সকালে ঘুম ভাঙলো আমার শীত লাগছিলো তাই গায়ে জড়ানোর জন্য শাড়ির আঁচল খুঁজছিলাম।চোখ খুলে দেখি আমার গায়ে উপর আঁচলটা নেই। লজ্জায় আমি লাল হয়ে গেলাম। যদিও অভি উল্টো দিকে মুখ করে ঘুমাচ্ছে। আমাকে এ অবস্থায় দেখেনিতো।

আমি খেয়াল করলাম আমার শাড়ীর আঁচলটা অভির পিঠের নিচে। নিশ্চয় আমি রাতে এটা ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। আমি শাড়ীর আঁচলটা দিয়ে কোনমতে নিজেকে ঢেকে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। এক হাতে আঁচলটা গায়ে ধরে অন্য হাতে অভির পিঠের নিচ থেকে আঁচলটা টেনে আনার চেস্টা করছি আর আল্লাহকে ডাকছি যাতে অভির ঘুম না ভাঙ্গে। আমাকে এ অবস্থায় দেখলে কি ভাববে কে জানে।

আঁচলটা অনেকখানি নিয়ে এসেছি কিন্তু পুরোটা বের করার আগে অভি আমার দিকে ফিরতেই আমার কাছের আঁচলটুকুও চলে গেলো। আমি হেচকাটান সামলাতে না পেরে অভির গায়ে পড়ে গেলাম। অভির ঘুম ভেঙে গেলো। অভি আমার দিকে তাকাতেই আমি চোখ বন্ধ করে অভির বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললাম। অভি প্রথমে কিছু বুঝেনি আমি ভয় পেয়েছি ভেবে আমাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে আমার কোমরে স্পর্শ করায় আমি কেপে উঠি। অভি সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে হাত দুটো সারেন্ডার করে রাখে।

অভি বড়ো রকমের একটা শক খেয়েছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বিষয়টা বুঝতে পেরে আঁচলটা ছাড়িয়ে সেটা দিয়ে আমাকে মুড়িয়ে দিলো। আমি আঁচলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে উঠে বসলাম। অভি কিছু না বলে ফ্রেশ হতে গেলো।

অভিও ভীষণ লজ্জা পেয়েছে কিন্তু সে প্রকাশ করেনি। আমারতো ইচ্ছে করছে মুখটা একটা কিছুর মাঝে ঢুকিয়ে বসে থাকি। আমি মনে হয়না কোনোদিন আর অভির চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারবো। লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে গেছে। এ জীবনে আর কোনোদিন শাড়ি পড়ে ঘুমাবো না। আমার শিক্ষা হয়েছে।

[ চলবে ]

হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-০৩

0

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৩ #you_are_beautiful
#নবনী_নীলা

আমি অভির কাছ থেকে সরে যেতেই অভি আমার হাত ধরে ফেললো। এতক্ষন কি তাহলে অভি ঘুমের ভান করেছিলো? আমি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকিয়ে আছি। সে আমাকে পাত্তা না দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে গেল। এনার শক্তির সাথে কি আমি পারি?

” আপনি কি করছেন?” বিরক্ত হয়ে বললাম।

” সাঁতার কাটছি। দেখতে পাচ্ছো না।”

” না আমার চোখে তো ছানি পরেছে আমি কিভাবে দেখবো? আচ্ছা আপনি সাতার কাটুন আমাকে ছাড়ুন। আমি সাঁতার জানি না ডুবে যাবো।” নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করছি কারন অভির সাথে আমি কখনোই পারি না।

” আমি থাকতে ডুববে না।”, এই লোকটা আবার মজা নিচ্ছে।

” এই আপনি থামবেন?কি বলতেছেন এইগুলা? এইটা আপনার পুকুর মনে হচ্ছে? এইভাবে বিছানায় শুয়ে কে সাঁতার কাটে?”

” তুমি যখন দেখতেই পাচ্ছিলে আমি শুয়ে আছি তুমি আমাকে প্রশ্ন করলে কেনো আমি কি করছি?”

” হে আল্লাহ তুমি আমাকে ধৈর্য্য দেও এই লোকটা কে সহ্য করার ক্ষমতা দেও।” অভি একটু ঠোঁট টিপে হাসছে। হাসবেই তো কারো পৌষ মাস তো কারোর সর্বনাশ। আমি নিজেকে ছড়িয়ে উঠে দেখি আমাদের রুমের দরজা ভিতর থেকে লাগানো। হটাৎ দরজা ভিতর থেকে লাগানোর কি দরকার পড়লো এই বাসায় তো আমি আর শুধু অভি থাকি। আমি দরজার সামনে এসে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।

” আপনি হটাৎ দরজা লাগলেন কেন?”

অভি নিজের কাঁধ ঠিক করে উঠে বসতে বসতে বললো,” দরজা খুলে দেখো নিজেই বুঝতে পারবে।”

আমি দরজা খুললাম কিন্তু কিছুই তো দেখছি না আমাকে কি আবার বোকা বানালো এই লোকটা। আমি হেঁটে রান্নাঘরে এলাম পানি নিতে এসে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো অভির মা আর পিসি এসেছে। ওনারা কখন আসলো, কালকে এসেছিলো? অয়হায় আমি তো বাসায় ছিলাম না কি বিচ্ছিরি একটা ব্যাপার।

অভির মা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। উনি আমাকে একটু বেশী আদর করে। আজ পর্যন্ত নিজের শাশুড়ির কাছে বকা না খাওয়ার রেকোর্ড আছে আমার।

” এখন কি একটু বেটার ফিল করছো ?” আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন।

” হ্যা একদম ঠিক আছি। আপনি চলে আসছেন আমি একদম সুস্থ এবার।” ভাগ্য করে এমন একটা শাশুড়ি পেয়েছি।
অভির ফুফু ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে উনি আজগুবি কথা বার্তা বলেন।

উনি কি জানি খাচ্ছিলেন আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,” ভালা আছো?”

” জ্বি ভালো। আপনি ভালো আছেন?”, বললাম।

” হ্যা আছি। এই বয়সে আর যেমন থাকে মানুষ। তোমার জ্বর কমসে অখণ?”, পান মুখে দিয়ে বললেন।

” হ্যা জ্বর নেই তো আমার।”

” হুঁ থাকবো কমনে জ্বর হুইন্যা আমাগো অভি যেমনে দৌড়াইয়া গেছে, আবার কোলে কইরা নিয়া আসছে যাতে তোমার ঘুম না ভাঙ্গে।”

অভির এই ফুফু যা মুখে এসে বলে দেয়।লজ্জায় আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।

” লজ্জা ফাইতে হইবো না, থাক”, বলেই উনি পান মুখে নিয়ে হাসতে লাগলেন।

কি এমন অবস্থায় পরলাম আমি। সব ওই লম্বুটার জন্যে হয়েছে। অভির মা আমার অস্বস্থি বুঝতে পেরে আমাকে নিয়ে করিডর এসে বসে।

” কি ? তোমার ভার্সিটিতে যাওয়া হয়?”,
বললেন অভির মা।

” না দুদিন যাইনি। দেখি কাল পরশু যাবো।”

” জানো নওরীন আমি না অনেক খুশী আজকে, তোমার জন্যে হয়েছে সব। আমি জানতাম তুমি পারবে। আমি সেদিনই বুঝেছিলাম তুমি পারবে যেদিন তোমার সাথে দেখা করে এসেছিলো অভি। তোমার কথা জিজ্ঞেস করতেই ছয়মাস পর আমি আমার ছেলের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখেছি। আমি আমার ছেলের জন্য যোগ্য মেয়ে খুঁজে পেয়েছি।” বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

” আমার কথা জিজ্ঞেস করায় হেসেছিলো কিন্তু আমিতো হাসির কোনো কথা বলিনি সেদিন।” সেদিন ঠিক কি কি হয়েছে সেটা নিয়েই ভাবতে লাগলাম। নিজের অজান্তেই মানুষকে খুশী করে দিয়েছি বাহ্ ভালো প্রতিভা আছে আমার মাঝে।

” সেটা বলতে পারছিনা। তবে যখন বলি নওরীনকে কেমন দেখলি তখন ঠোঁটের কোন হাসি রেখে বলেছিলো out of the box।”

” এটা আবার কেমন কথা?out of the box!”

” সেটা অভি ভালো বলতে পারবে।”

আম্মু আর ফুফু বিকালে চলে যায় তারা নাকি আমাকে দেখতে এসেছিলো। আমার অবস্থা ভালো আছে দেখে চলে গেছে। কিন্তু অভির ফুফু এক কাণ্ড ঘটিয়েছে। উনি যাবার আগে দোয়া পড়া পানি বলে আমাকে এক গ্লাস পানি খাইয়েছেন। আমি সরল মনে খেয়েও নিয়েছি।

খাওয়া শেষ করার পরে উনি হেসে দিয়ে বললেন এবার কাজ হবে। হুজুর থেইক্কা বাচ্চা হওয়ার ওষুধ নিয়ে আসছিলো সে সেটাই পানিতে গুলায়ে সূরা ফাতিহা ৩বার পড়ে ফু দিয়ে আমাকে খাইয়েছেন। আল্লাহ যদি চায় এরপর জলদি বাচ্চা হবে। আমাকে কেও বলুক যে যেইখানে বাচ্চা হওয়ার কোনো প্রচেষ্টা নেওয়াই হচ্ছে না সেইখানে বাচ্চা কি আকাশ থেকে টুপ করে আমার কোলে এসে পড়বে।

আমি মাথা ধরে খাটের কোণে বসে আছি। ওয়াশরুম এ গিয়ে বমি করার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অভি রুমে এসে আমার এমন অবস্থা দেখে ভেবেছে আমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছি। অভি আমার মাথায় হাত দিয়ে জ্বর আসছে কিনা দেখতে এলো।

” আরে আমি ঠিক আছি এতো ব্যাস্ত হবেন না ।”

” তাহলে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছো কেনো?”

” আপনার ফুফু যা করেছে এরপর আমি মাথায় হাত দিবো নাতো কি মাথায় পা দিয়ে বসবো।”

” ফুফু আবার কি করলো?”

” উনি আমাকে কোন হুজুরের দেওয়া ওষুধ পানির সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছেন।”

” What? কিসের ওষুধ।”

” বাচ্চা হওয়ার ওষুধ।”

আমার কথা শুনে অভি হাসতে লাগলো। মনে হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ মজার গল্প তাকে শোনানো হয়েছে। রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।

” আপনি হাসি থামাবেন?”

অভি ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো
,” জিনিসটা কিন্তু খারাপ না, আমার আর কোনো কষ্টের প্রয়োজন হবে না। কোনো কষ্ট ছাড়াই আমি বাবা হবো। I think that’s great.”

” আপনার খুব মজা লাগছে তাই না?”

অভি আবার হেসে ফেললো। আমি রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে টিভি ছেড়ে দিলাম। আমার সাথেই পৃথিবীর আজগুবি ঘটনা ঘটে। আমি বসে এখন ড্রামা দেখবো। আমি রুমের লাইট বন্ধ করে আমার প্রিয় ড্রামা দেখতে শুরু করলাম, নিজের মুড ঠিক করতে হবে।

কিছুক্ষণ পর অভি এসে আমার পাশে বসে। আমি কোনো কথা বলিনা।

” এটা কি দেখছো তুমি ”

” Ask laftan Anlamaz ” বলেই আমি ড্রামার দিকে মনযোগ দিলাম। এইটা দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।

” What?”, বলে অভি গল্পের কাহিনী বোঝার চেষ্টা করছে।

” এটা টার্কিশ ড্রামা আপনি বুঝবেন না।

“না বুঝার কি আছে By the way তুমি টার্কিশ ভাষা পারো?

আমি টার্কিশ ভাষার ট ও পারি না। কিন্তু আমি ভাব নিয়ে বললাম,” আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আমি টার্কিশ পারি কিনা? আরে আমি তো এক্সপার্ট টার্কিশ ভাষায়।”

অভি হাতভাজ করে আমার দিকে সন্দেহর চোখের তাকালো।

“güzel görünüyorsun”,( you’re looking beautiful) এটা বলেই মুচকি হাসলো।

” এইগুলা আবার কি?”

” তুমি না টার্কিশ ভাষার এক্সপার্ট এইটা বুঝতে পারছো না।”

আমি না শুনার ভান করলাম।

” বসে বসে হিন্দি ডাবিং দেখছে সে নাকি আবার টার্কিশ এক্সপার্ট।”কথা শুনে আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমাকেও পাগলে ধরসে মাঝে মাঝে বেশি কথা বলতে গিয়ে নিজের মান ইজ্জত ডুবিয়ে বসি।

আমি অভির হাতটা ধরে নিজের মুখের সামনে এনে হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম। বাহ্ এবার শান্তি লাগছে। কিন্তু ভয়ে অভির দিকে তাকাতে পারছি না।

[ চলবে ]

হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-০২

0

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ2 #প্রথম_দেখা
#নবনী_নীলা

“জামাই,নওরীনের গায়েতো জ্বর রয়েছে তার উপর ওর ঘাড় তেরামির অভ্যাস আবার সাথে ওটাও আছে। তুমি ওকে সামলাতে পারবে তো?” এইটা আমার মা নাকি আমার সতীনের মা, আমি নাকি ঘাড়তেড়া আমার সাথে নাকি ঐটা আছে।

-“আপনি চিন্তা করবেন না আমি দুদিনের ছুটি নিয়েছি। আর আমি থাকলে জ্বীন ওর কাছে আসে না।” বুঝাই যাচ্ছে অভি মজা নিচ্ছে , আবার আমার দিকে তাকাচ্ছে দেখো। এই জ্বিনের অপবাদ কি সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে আমাকে?

” তুমি থাকলে আমার চিন্তা নেই, আমার মেয়েটা তো একটা বদের হাড্ডি।”

বাহ্ কি সুন্দর আমার সামনেই আমার বদনাম করা হচ্ছে। মায়ের কাছে এলাম কোথায় একটু শান্তিতে থাকবো কিন্তু না আমার কি এতো ভালো ভাগ্য। আজকেই আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। এমন তো না যে আমাকে না দেখলে ওনার রাতে ঘুম আসে না, হুদাই আমাকে নিয়ে গিয়ে জ্বালাতন করবে। বিয়ের আগে আমার মা আমার জীবনটাকে তেজপাতা বানিয়েছে বিয়ের পর এবার এই লোকটা আমার জীবনটা তেনা তেনা করে দিচ্ছে।

” নওরীন তোমার হলো? চল বের হই এবার।” বলেই নিজের চশমা পরে উঠে দাড়ালো অভি।

সব লম্বা ছেলেদের কি চশমা পড়লে এতো সুন্দর লাগে। অভি এমনেই এতো সুন্দর চশমা পড়লে আরো তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে, মনে হয় চশমা জিনিসটা আবিষ্কার হয়েছে হয়তো ওনার জন্যই। একি! আমি এই লোকটার প্রশংসা করছি কেনো? মনে মনে হলেও এই লোকের প্রশংসা করা যাবে না। আমাকে কি কম জ্বালিয়েছে এই লোকটা? ছি ছি নওরীন তুই আবার মনে মনে এর প্রসংশা করছিস? পুরা মান ইজ্জত সব গেলো।

চুলে একটা খোঁপা করে, আঁচলে সেফটিপিন টা লাগিয়ে গাড়িতে এসে বসলাম। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আজ যথাসম্ভব নড়াচড়া কম করবো আর কম কথা বলবো। অভি এসে আমার পাশের ড্রাইভিং সীটে বসে নিজে সিটবেল্ট পরে নিলো গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে একবার আমার দিকে তাকালো চেক করছে আরকি আমি সিটবেল্ট পড়েছি কিনা। আমি নিজে নিজে সিটবেল্ট পরে ভদ্র মেয়ের মতন বসে আছি ব্যাপারটা ওনার হজম হয়নি বুঝাই যাচ্ছে। কিছু না বলে অভি গাড়ি স্টার্ট দিলো।

” বাহ্ আজকে সিটবেল্ট পড়ার সময় দেখি আমার তোমার কাছে যেতে হলো না আগে থেকেই পড়ে নিয়েছো।”

-” কাছে আসতে হলো না মানে?”

” I mean আমার হেল্প নেও নি।”বলেই আমার দিকে তাকালো তারপর আবার গাড়ি চালানোতে মনযোগ দিলেন।

-” আপনি তো আর সারাজীবন আমার সিটবেল্ট লাগিয়ে দিবেন না তাই নিজেই শিখে নিয়েছি।”

“হটাৎ তোমার এটা কেনো মনে হলো?”

-” এমনেই ” বলেই আমি চোখ বুজে ঘুমের ভান ধরলাম। প্রতিবার সিট বেল্ট লাগানো নিয়ে আমাদের মাঝে ছোটো খাটো একটা ঝগড়া হয়ে যেতো।

সিটবেল্ট পড়াটা আমার একদমই পছন্দ না মনে হয় দড়ি দিয়ে সিটের সাথে কেও বেধে রেখেছে।তাই এটা পড়তে না পারার ভান করতাম আর অভি জোড় করে আমাকে পড়াতো। আমার হটাৎ এমন আচরণের পরিবর্তনে হয়তো ওর অন্য রকম লাগছে।

আমার আর অভির বিয়েটা এতো ধুমধাম করে দেওয়া হয়েছে যে লোকে ভেবেই নিয়েছে এরা চিরসুখী।
একদিন সকালে আমাকে দেখতে অভির বাবা, অভির বড়ো বোন আর বোনের জামাই আমাদের বাড়িতে এসে। কেউ দেখার জন্য খবর পাঠালেই বাবা না করে দিতো কারণ আমার পড়ালেখা শেষ না হলে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো না তার। এরা এসেছিলো আগাম কোনো খবর না দিয়ে।

কিন্তু কি এমন হলো আমি রুমে থাকা অবস্থায় খবর পেলাম বাবার নাকি ছেলে পছন্দ হয়েছে। স্বর্ণা আমার মাথায় বেণী করে দিচ্ছিলো কথাটা কানে আসতেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো। এযুগের প্রেম, ভালোবাসার উপর বিশ্বাস আমার অনেক আগেই উঠে গেছিলো। বিয়ের প্রতি তাই কোনো আগ্রহ ছিল না। বিয়ে মানে আমার কাছে ছিলো অনিশ্চয়তার এক যাত্রা।

তাদের সামনে আমাকে বসানো হলো মনে হচ্ছিলো একটু পর আমার মৃত্যুদণ্ডের তারিখ ঘোষণা করা হবে। তারা আমাকে কোনো প্রশ্ন করেনি। আমার মা আমাকে এতো বছর যত আজগুবি ট্রেনিং দেওয়ার চেষ্টা করেছে আফসোস তা কাজে লাগেনি। আমি নিজের রুমে এসে চুল খুলে দিয়ে ফ্যানের নীচে বসলাম। রচনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কিছুক্ষণ পর নাচতে নাচতে আমার ঘরে এলো ছেলের ছবি নিয়ে।

” কিরে ছবি দেখবি না ? কি যে সুন্দর! দেখলে প্রেমে পড়ে যাবি।”বলেই রচনা আমার পাশে বসলো।

” তোর এতো পছন্দ হলে তুই বিয়ে করে ফেল। আমার ভালো লাগছে না।”

” কি হয়েছে তোর? ”

” আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা হুট করে এভাবে সব হওয়ার মানে কি? আমার মনে হচ্ছে আমার লাইফটা এখানেই শেষ।”

” তোকে ধরে একটা চর লাগবো। উল্টা পাল্টা কথা ভেবে বসে আছিস। সব গল্প একরকম হয় না। কারো কারো গল্প স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর হয়। তোর সাথেও এমন হবে দেখিস।” বলে রচনা আমাকে জড়িয়ে ধরে।

কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না একটা মানুষ কি করে এত পারফেক্ট হয়। নিশ্চই কোনো খারাপ অভ্যাস আছে ছেলেটার নয়তো ব্যাবহার ভালো না। আর যদি সব ঠিক থাকে তাহলে এই ছেলে কেনো আমাকে বিয়ে করবে? এইগুলো ভেবেই আমার দিন কাটছিলো।

হটাৎ একদিন শুনলাম অভি আমার সাথে সামনা সামনি কথা বলতে চায়। শুনেই আমার মনে হয়েছিলো বিয়ে ঠিক হয়েছে এবার আসল চেহারার সন্ধান মিলবে দেখা করতে গিয়ে যদি উল্টা পাল্টা কিছু দেখি ব্যাস এই আপদ থেকে বিদায়।

রচনা দেখা করতে যাবো শুনে এককান্ড বাধিয়েছে আমাকে নাকি ওই রেস্টুরেন্ট এ শাড়ী পরে যেতে হবে আমার মাও জোট বেঁধেছে রচনার সাথে। এদের আলগা পিরিত কমে না। ইচ্ছে করছে রচনাকেই এইগুলো পড়িয়ে পার্সেল করে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু আমি যার তার জন্য কেনো শাড়ি পড়বো। শাড়ি পরার মাঝে একটা আবেগ কাজ করে।

অনেক কষ্ট করে তাদের বুঝিয়ে একটা সেলোয়ার কামিজ পরে রিক্সা দিয়ে ওই রেস্টুরেন্ট এ যাই। রাস্তায় জামের কারণে দেরি হয় একটু।

আমি গিয়ে দেখি অভি আগে থেকেই বসে আছে। আমি ফোনের রেকর্ডটা অন করে সেখানে গিয়ে বসলাম। সব কথবার্তা রেকর্ড করে নিবো প্রমাণ লাগবে আমার।

” Sorry actually রাস্তায় জ্যাম ছিলো তাই দেরি হয়েছে।”, ফর্মালিটি রক্ষার্থে বলতে হয় আমায়।

” Not a Big deal it’s ok. তুমি কি খাবে অর্ডার দেও।”

” তেমন কিছুই না।একটা আইস ক্রিম খাওয়া যেতে পারে।” আমি ice cream খাওয়া নিয়ে না বলি না।

” Ice cream! Just এটাই।”, আমার ice cream খাওয়া শুনে চমকানোর কিছু আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না।

আমি মাথা নাড়লাম। অভি আর কিছু বললো না। একটা কফি আর আইস ক্রিম অর্ডার দিলো। কিছুক্ষণ পর সেইগুলো চলেও এলো। অভি কফি খাচ্ছে আর কিছু ভাবছে। এতো ভালো ব্যাবহার আমার হজম হচ্ছে না।

” একচুয়ালি আমি তোমাকে কিছু কথা জানতে চাই। যেহেতু তোমার আর আমার বাসায় আমাদের বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে। তাই যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছ তার সমন্ধে সবটা জানটা তোমার অধিকার।” খুব সাবলীল ভাবে কথাগুলো বলল অভি। আমি তো মনে মনে মহা খুশি এইবার এই চান্দুর আসল চেহারার সন্ধান পাবো।
আমি তাকিয়ে রইলাম কিছু বললাম না।

” তোমার জানতে ইচ্ছে না করলেও কিছু জিনিস তোমাকে জানানো আমার দায়িত্ব।” বলে অভি একটু বাহিরে দেখলো।
আবার বলতে শুরু করলো।

” প্রতিটা মেয়ের নাকি নিজের বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে সেটা নষ্ট করার কোনো অধিকার আমার নেই তবে আমি হাসব্যান্ড হিসাবে হয়তো কখনও তোমাকে সুখী করতে পারবো না।”

” আপনার কথা গুলো আমি ঠিক বুঝলাম না।”

” আমার মা আমাকে বিয়ে দিতে চায় যাতে আমি আমার পুরোনো প্রেম ভুলে জীবনে এগিয়ে যেতে পারি। সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু আমি তাকে ভুলিনি আর হয়তো কোনো দিন ভুলতেও পারবনা। আমাকে বিয়ে করলে তোমায় কম্প্রোমাইজ করে কাটাতে হবে সারা জীবন। তোমার ভালো বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু হতে পারবো না আমি।”

” আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে বিয়ের পর আপনি আমি বন্ধু হয়ে থাকবো আর আপনার পার্সোনাল মাটার এ আমি ঢুকবো না আর আপনিও। মানে বিয়ের পর সিঙ্গেল থাকবো?” আমার কথা শুনে অভি একটু চমকালো তারপর নিজের মাথা নাড়লো। অভির মাঝে একটা guilt কাজ করছে সেটা চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
আমি তো মহা খুশি,বিয়ের পর সিঙ্গেল থাকার সুযোগ কয়জন পায়।

“Ok, deal done. আমি আপনাকেই বিয়ে করছি। বিয়ে জিনিসটার প্রতি আমার বিন্দু মাত্র আগ্রহ ছিলো না কিন্তু এই রকম অফার তো পাওয়া যায় না।” আমার কথা শুনে অভি হতবাক এমন মেয়েও পৃথিবীতে আছে সেটা তার জানা ছিলো না। অভির বিস্ময়ের সীমা রইলো না। সে চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। চোখ খুলে দেখি আমি গাড়ীতে নেই আমাদের রুমে আমি। অভির বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম এতক্ষন। উনি আমাকে নিয়ে এসেছেন। বুঝিনা এই লোকটার থেকে দূরে যেতে চাইলে মনে হয় যেনো আরও কাছে চলে আসি। আমি অভির কাছ থেকে সরে যেতেই অভি আমার হাত ধরে ফেললো।

[ চলবে ]

হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-০১

0

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১ #এটা_গল্প_কার?
#নবনী_নীলা

হালকা ঠান্ডা বাতাসে আমার ঘুম ভাঙ্গলো।চোখ খুলে বাম পাশে তাকাতেই দেখি অভি আমার পড়ার টেবিলের পাশের চেয়ারটায় বসে আছে। খুব মনযোগ দিয়ে কিছু পড়ছে। কিন্তু অভি আমার ঘরে কি করে আসবে? আমি তো গতকাল সকালে মায়ের বাসায় চলে এসেছি। আমি তাহলে জ্বরের ঘোরে ভুল কিছু দেখলাম। আমি চোখ খুলে আবার অভির দিকে তাকালাম। তারমানে অভি সত্যি আমার রুমে আছে। তাহলে কি আমার জ্বর হয়েছে শুনে আমাকে দেখতে এসেছে। আমি চোখ বন্ধ করে এই ধাক্কাটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু মনযোগ দিয়ে অভি কি পরছিলো আমার টেবিল এ এমন কোনো বোরিং বইতো নেই যার প্রতি অভি আগ্রহ বোধ করবে।

চোখ বন্ধ করে অভির হাতের বইটার কথা ভাবছি, কালো রঙের বই একচুয়ালি বই না একটা ডাইরি। ডাইরি মানে আমার ডাইরি। কি! আমার ডাইরি পড়ছে অভি, ভেবেই ঝড়ের গতিতে সোয়া থেকে উঠে লাফ মেরে বসে পড়লাম। কত বড় সাহস আমার ডাইরি পড়ছে!

আমার হটাৎ এমন উঠে পড়ায় অভি হতভম্ব হয়ে গেছে, একটু ঘাবড়ে গিয়েছে। অভি হুরো হুরি করে আমার পাশে এসে বসলো। তারপর দুইহাতে আমাকে জড়িয়ে নিয়ে আমার মাথা নিজের বুকে রেখে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। উনি হয়তো ভেবেছেন আমার সাথের জ্বীন ঘুমের মাঝে আমার গলা চেপে ধরেছে।

আমার বাসার সবাই বিশ্বাস করে আমার সাথে জ্বীন আছে। একবার ছোটো বোনকে ভয় দেখাতে বলেছিলাম। ব্যাস নিজের অজান্তেই ভূত, জ্বিনের সাথে আমার বসবাস। বাসায় সবাই জেনে গেলো তার উপর আমাকে নিজের সাথে কথা বলতে দেখে এই বিষয়ে তাদের প্রখর ধারণা তৈরি হয়েছে। কম ঝাঁটার বাড়ি, ধোঁয়ার ঘন্ধ সহ্য করিনি আমি। ওই ভুয়া ফকির বাবা গুলাকে পেলে কি যে করতাম। বিয়ের পর ঘুমের মাঝে অভিকে একটা লাথি মেরে ছিলাম মাঝের কোলবালিশটা ছিলো না তাই লেগেছে অভির গায়ে।
এই কথা মজা করে ছোটো বোনকে বলেছিলাম ব্যাস অভির কানেও জ্বিনের কথা ভরে দিয়েছে আমার বোন। অভি যদিও সেদিন একটু হেসেছিলো কথাটা শুনে। না না ফ্ল্যাশ ব্যাক এ যাওয়ার সময় এটা না।

-” তুমি কি খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছ? ভয় পেয়ো না আমি আছি।”

বাহ্! যাক তাইলে জীনে গলা টিপে ধরেছে এইটা ভাবিনি সে। একটা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়া আমার ডাইরি কেনো ধরবে। আমি মাথা তুলে অভির দিকে তাকিয়ে বললাম,
” আপনি আমার ডাইরি কেনো পড়ছিলেন?”

-” আচ্ছা তোমার সাথের জ্বীন কি ঘুমের মধ্যে আসে পাশে কি হয় সেটাও তোমাকে বলে দেয়।” অভি খুব ভালো করে জানে জ্বীন টপিকটা আমার খুবই অসহ্য লাগে। তাও আমাকে এইগুলো বলে।

আমি রেগে বললাম,”টপিক ঘুরবেন না, আপনি আমার ডাইরি ধরেছেন কেনো?”

অভি আমার কথায় কান দিলো না। আমার কাছে আসতে লাগলো। আমার মাথায় হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করছে। কেমনটা লাগে? কি সাবলীল ভাবে আমার কথা ইগনোর করে সে বললো,” জ্বর কমেছে কিন্তু পুরোপুরি সেরে যায় নি।”

টেবিল থেকে পানি নিয়ে আমার সামনে ধরলো।”পানি খাও তোমার ভালো লাগবে।”

-” খাবো না। আগে বলুন আমার অনুমতি ছাড়া আমার ডাইরি কেনো ধরেছেন? ”

অভি সুন্দর করে পানির গ্লাসটা নিজের হাতে নিলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো তারপর বললো,” নওরীন আমাকে রাগিও না। You Know right রাগলে আমি কি কি করতে পারি। আমাকে না রাগানোটা তোমার জন্যই ভালো তাই নয় কি?”

একে বলে ঠান্ডা মাথায় সুন্দর করে proper way তে বাঁশ দেওয়া। এর আগে একদিন বলেছিলো রাগাতে না আমি যে জন্মগত ঘাওড়া একবারে শুনি নাকি। আমিও ঘাওরমি করেছি,আমাকে টেনে নিয়ে পানি ভর্তি বাথটাব এ ভিজিয়ে দিয়েছে। এবার আবার কি করবে কে জানে। এতো সকালে বাথটাব এ ভিজার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই অনেক ঠান্ডা থাকবে পানি।

” হ্যা আমাকে নিরীহ পেয়ে মানুষ খালি আমাকে হুমকি দিয়ে যায়। আজ আমি অসুস্থ বলে, আপনা টাইম আয়েগা। হুহ!” বলে পানিটা খেয়ে ফেললাম এক ঢোকে পরে বুঝলাম পানির নাম করে স্যালাইন খাওয়ানো হয়েছে আমাকে।

আমি কোথায় মায়ের বাসায় আসলাম একটু শান্তিতে থাকবো বলে কিন্তু এই লোকটা এখানেও জ্বালাতন করতে চলে আসছে। কোথাও আমাকে শান্তিতে থাকতে দেয় না।

“আপনি এখানে কেনো এসেছেন?”, প্রশ্ন করে অভির চোখের দিকে তাকালাম।

” তুমি যা শুরু করেছ না এসে উপায় ছিলো,পরে তো শুনতে হবে আমি খেয়াল রাখিনি তাই এমন হয়েছে। আর তুমি যে আসবে আমাকে তো বলোনি।”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না অথৈ এর বলা কথাগুলো মনে হতে লাগলো। অথৈ ফিরে আসতে চায় অভির জীবনে। গতকাল অথৈ ফোন দিয়েছিলো আমাকে । আমাকে বলেছে অভিকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে, অভি নাকি কখনো নিজের দায়িত্ববোধের কারণে আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইবে না। আমাকে আরো বলেছে ওদের মাঝে একমাত্র কাটা এবার আমি।

অভি আর অথৈ এদের ভালোবাসার গল্প কে না জানে? এই পাড়ার সব ছেলে মেয়ে জানে। ওদের এই গল্পে আমি কে? এই গল্পে আমি কেনো জড়িয়েছি? আমার উপস্থিতি অভির জিবনে কোনো প্রয়োজন নেই। আমাকে কি সরে যেতে হবে?নিজের অজান্তে এইগুলো ভাবতে ভাবতে কখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো আমি বুঝলাম না। হটাৎ অভির হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম অভি আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে উঠে যেতেই অভির আমার হাত ধরে টেনে আমাকে নিজের কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

আমি অনেক চেষ্টা করেও চোখের পানি আটকে রাখতে পারছি না। কেনো জানি খুব কষ্ট হচ্ছে।

” নওরীন কি হয়েছে তোমার? কালকে আমকে না বলে চলে এলে, রাস্তায় বৃষ্টিতে বিজেছ শুনলাম এখন আবার কাঁদছো। আমাকে বলো।” বলে আমার খোলা চুলে মুখ ডুবিয়ে একটানিশ্বাস ছাড়লো অভি। এই নিঃশব্দের ভাষাটা আমি বুঝি। এটা একপ্রকার অনুরোধ, অভি চায় আমি যেনো ওকে আমার কষ্টের কারণটা বলি। অভি কখন আমার মন খারাপ থাকলে মন খারাপের কারণ জানার জন্য জোর করে না। কারো মন খারাপ হলে কি করতে হয় সেটাও অভি জানে না।

এই গল্পটাই যখন অন্য কারোর তাহলে কিসের এত পিছুটান। অথৈকে পেলে হয়তো আমার কোনো প্রয়োজন থাকবে না তখন। আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। অভি খানিকটা অবাক হয়ে গেলো। কিন্তু কিছু বলতে গিয়েও বললো না।

যেই জিনিসটা তোমার না তার প্রতি মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই নওরীন। একদিন তোমাকেই সরে যেতে হবে। আমি বুঝেছি এবার আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আমি পিছে না তাকিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। নিজেকে সামলে নেওয়ার সময় চলে এসেছে।

[চলবে]

🍁কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।🍁

গল্পের নাম: ফিরে আসার প্রতীক্ষায় লেখিকা: সুমাইয়া আফরীন

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_এপ্রিল_২০২১
গল্পের নাম: ফিরে আসার প্রতীক্ষায়
লেখিকা: সুমাইয়া আফরীন

বাহিরে আজ মুশল ধারে বৃষ্টির ধারা বইছে । তাই সুভার কেমন যেন গা ছমছম অবস্থা । সে অনুভব করতে পারছে একটু পরপর শরীরের অবাধ্য লোমকূপগুলোও তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে । এ যেন এক ভিন্ন রকম খেলায় তারা নিজে থেকেই মেতে উঠেছে ।
কিছুক্ষণ আগেও সুভার ভীষণ ইচ্ছে করেছিল অনেকটা সময় নিয়ে ভারী বর্ষণে ভিজতে । কিন্তু না সে ভিজতে গেলো না বরং সে তার ইচ্ছেটা যেন মনের ভিতরেই পুষে রাখলো । কারণ সে জানে একটু পরে নিহান ভাইয়া এসে তাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখলে খুব বেশি রাগ করবে । কিন্তু সুভা বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যখন জানালার ওপাশ থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই দেখছিল । ঠিক তখনই বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে দেখার লোভ জন্ম নিতে থাকে তার সেই কিশোরী মনে । না! এ লোভ যে খুব ভয়ংকর লোভ যা অন্য সব সাধারণ লোভ কেও অনায়াসে হার মানিয়ে দেয় ।
অতঃপর সুভা কি একটা ভাবতে ভাবতেই বাসার ভিতরে চলে গেলো । আবার খুব শীঘ্রই ফিরে আসলো হাত ভর্তি চুড়ি পরে । আর বলে উঠলো,

‘ইশ! কতদিন পর বৃষ্টিমুখর দিনে চুড়ি পরেছি হাতে,
আজকের প্রকৃতিও যেন অপরূপ রূপে সেজে উঠেছে আমার-ই সাথে ।’

অতঃপর সুভা মনের আনন্দে সু-বিশাল আকাশে মুক্ত পাখির ডানা মেলে উড়ে চলার সুখকর অনুভূতির মতো আপন মনে বৃষ্টির সাথে অদ্ভূত খেলায় মেতে উঠলো । এ যেন সুভার ছোঁয়া পেতেই বৃষ্টির সৌন্দর্য আরও বহুগুন বেড়ে গেলো । কোনো কবি যদি উক্ত দৃশ্য নিজ চোখে অবলোকন করত । তবে নির্দ্বিধায় বলতে পারি সে এতক্ষণে কবিতা না লিখে থাকতেই পারতো না ।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো । সুভার মনে এখন যেন উপচে পরছে খুশির ঢেউ ।
হঠাৎ করেই সে ভাবলো না এখন আর ভিজলে চলবে না বাসার ভিতরে চলে যেতে হবে । আর তা না হলে আজকে আর রক্ষা নেই নির্ঘাত ঠাণ্ডা লেগে যাবে । এছাড়া নিহান ভাইয়া এসে এইসব দেখলে নির্ঘাত আমায় বকা খেতে হবে । আর তখন তার ওই ভীষণ সুন্দর চোখ দুটো লাল রক্ত বর্ণ ধারণ করবে । সুভা এইসব ভাবতে ভাবতেই তড়িঘড়ি করে ছাদ থেকে নামতে যাচ্ছিল । আর তখনই কারো সাথে ধাক্কা লেগে ছিটকে পরে যাচ্ছিল সুভা । কিন্তু না সুভাকে কেউ একজন নিজের সাথে আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে এ যাত্রায় পা ভাঙ্গার হাত থেকে আবারো রক্ষা করেছে । হ্যাঁ সেই চেনা স্পর্শ, সেই নিরাপদ বুক যেখানে বেশ কয়েকবার এর আগেও জায়গা হয়েছিল তার । তাই সেই মানুষটিকে চোখ বন্ধ করেও বুঝতে অসুবিধা হয়নি সুভার । ওইদিকে ভয় পেয়ে ও ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়ে নিহানের শার্ট এখনো যে সুভা খাঁমচে ধরে আছে সেই দিকে যেন কারো হুশ-ই নেই । কারণ শুধু সুভাই নয় নিহানও যে তার বৃষ্টি বিলাসীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে সেই কখন থেকেই তাকিয়ে আছে । যার দিকে সে সচরাচর তাকায় না । কারণ নিহান এই এক বছরে এইটুকু বুঝতে পেরেছে যে,
‘এই মেয়ে যেই সেই মেয়ে না এর মাঝে অদ্ভূত এক নেশা আছে যার কারণে সে বারবার তাতে আকৃষ্ট হয়ে যায় ।’

নিহান নিজেকে সামলে নিয়ে সুভাকে ছেড়ে দিলো আর একটু রাগী রাগী ভাব নিয়ে বললো,
এই সুভা তুমি এই সময়ে ছাদে কেন? আর বৃষ্টিতে ভিজে নিজের এ কি অবস্থা করলে? এখন যদি জ্বর বাঁধে তবে তো পড়াশুনার পাট চুঁকিয়ে মহা আনন্দে থাকবে আমি বুঝি কিছু বুঝিনা ভাবছো ।
এখুনি নিচে যাও আর তাড়াতাড়ি ভিজে কাপড় পাল্টে বই নিয়ে বস । আমি তোমার পিছু পিছুই আসছি । অতঃপর সুভা যেতে নিলো কিন্তু পায়ে ব্যথায় ওখানেই বসে পরে । আর নিহান উপায় না দেখে তাই সুভাকে কোলে তুলে নিলো । নিহান শাসনের সুরে কত কি বলতে বলতে সুভাকে নিয়ে রুমে গেলো ঠিকই কিন্তু সুভা সেদিকে কর্ণপাত করলো না । সুভাকে ওয়াশ রুমের সামনে নামিয়ে দিয়ে বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকলো নিহান । সুভাও অর্ধেক ভেজা জামা কাপড়গুলো পাল্টে বাহিরে আসলো । এরপরে নিহান সুভাকে কোলে করে খাট পর্যন্ত নিয়ে গেলো ।

মুন আন্টি এসে সুভাকে এভাবে দেখে প্রথমে একটু বকা দিলেও আবার পর মুহূর্তেই আদর করে বুকে টেনে নিলেন । এরপরে সুভার পায়ে বরফ লাগাতে লাগাতেই আমার সাথে তিনি টুকটাক কথা বললেন ।কিছুক্ষণ পর সুভার পায়ের ব্যথা একটু কমে আসলে আমাকে পড়াতে বলে চলে গেলেন ।
-‘আচ্ছা আন্টিকে দেখছি না যে, সে কি বাসায় নেই?’ -‘আসলে নিহান ভাইয়া আম্মু আজকে সকালেই কি একটা প্রয়োজনে গ্রামের বাড়িতে গেছে । আমাকে সাথে নিয়ে যায়নি আমি মুন খালামুনির সাথেই বাসায় থেকে গেছি ।’
-‘ওহ আচ্ছা । যাই হোক এখন তবে পড়তে বস এমনিতেই অনেকটা সময় চলে গেলো ।’
-‘ মন থেকে ইচ্ছে না করলেও মুখে ঠিক আছে বলে পড়া শুরু করলো সুভা । কারণ সে জানে সামনে বসে থাকা লোকটা একটা নিম পাতা । যেমন উপকারী তেমনি তিতা ।’
পড়ানো শেষ করে নিহান চলে যেতেই সুভা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো ।

আর নিহান বাসায় ফিরেই বসে পড়ে কাগজ কলম নিয়ে তার বৃষ্টি বিলাসীকে নিয়ে কিছু লিখতে । লিখলেই যেন ফিরে পাবে অদ্ভূত এক প্রশান্তি ।
তাই আর দেরি না করে শুরু করলো…

ওহে বৃষ্টি বিলাসী! দেখতে দেখতে ঠিকই একটা বছর গেলো কেটে,
মন আঙিনায় তোমায় নিয়ে লুকিয়ে রাখা অনুভূতিটুকুর খোঁজ তুমি নাই বা পেলে ।
কিন্তু যদি কখনো জানতে-
কেউ একজন তোমায় ভালোবাসে থেকে অন্তরালে,
তবে কি তুমি তাকে গ্রহণ করতে?
নাকি ফেলতে জীবন থেকেই ছেঁটে?
ভয় হয় তাই আজও পারিনি হয়তো বলতে;
‘ভালোবাসি ঠিক কতটা ।’
তাই বলে ভেবো না কিন্তু;
দেই নি তোমায় ‘আমার এই মনটা ।’
বলিনি হয়তো তাতে কি?
প্রতিটা মুহূর্ত আমি তোমায় নিয়ে ভেবেছি,
আজকের বৃষ্টি মুখরদিনে তোমায় ক্ষণিকের জন্য হলেও পেয়েছি ।
হয়তো আজ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকোনি আমার বুকে,
আচ্ছা, এ বুক ছাড়া অন্য কারো বুকে থাকবে কি তুমি সুখে?

নিহান এমনি কত শত প্রশ্ন ছুড়ে রাখে বৃষ্টি বিলাসীর পানে । কিন্তু উত্তর কোনোদিন মিলবে কিনা তা জানেনা নিহান ।

সুভা বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসে । হয়তো তার বাবা- মায়ের থেকেই বই পড়ার নেশাটা তার মাঝে জায়গা পেয়েছে । কারণ ছোটো থেকে আমরা আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখে বড় হতে থাকি সেইসব আমাদের জীবনে খানিকটা হলেও জায়গা পায় । সুভার ক্ষেত্রেও হয়তো এমনটাই ঘটেছে । মা বাবা বই প্রেমি হওয়াতে সুভার মনেও বই পড়ার প্রতি তীব্র নেশা তৈরি হয়েছিল সেই ছোটো থেকেই । যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে এখন ক্রমশই বাড়ছে বলেই মনে হয় পরিচিত সবার ।

বিকালের পর সুভার শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে যায় । আর বৃষ্টিতে ভেজার কারণে ঠাণ্ডা সে তো বিনা নিমন্ত্রণেই সুভার কাছে চলে এসেছে । জ্বর জ্বর ভাব আর ঠাণ্ডা লাগার কারণে কিছুই যেন ভালো লাগছিল না সুভার । তাই সুভা মনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে তার সংগ্রহে থাকা বইগুলো একের পর এক উল্টে পাল্টে ছুঁয়ে দেখে । অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও সুভা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এতগুলো বইয়ের ভিতর থেকে ঠিক কোন বইটা সে এখন পড়বে I আর ঠিক তখনই হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় নিহানের কথা । হ্যাঁ নিহান ভাইয়া সেই উপকারী নিম পাতা যার ভিতর আবার একটা সাহিত্যিক ভাব ও আছে । তবে তাকে দেখে কেউ তা মনে করবে কিনা সেটা নিয়ে অবশ্য বেশ সন্দেহ আছে সুভার মনে ।
সুভা সাত পাঁচ না ভেবে চলে গেলো নিহানের থেকে কোনো একটা ভালো বই আনতে । ভাগ্যিস নিহান সুভাদের বাসার উপর তলায় থাকে । তা না হলে বাহিরে যা আবহাওয়া আজকে শত ইচ্ছে করলেও মুন আন্টি সুভাকে যেতে দিত না ।

সুভা গিয়ে কয়েকবার কলিং বেল বাজালে দরজা খুলে দেয় নিহান । তবে দরজা খুলে সুভাকে দেখে কিছুটা হতবাক হয় সে । কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করলো না বরং একটা মুচকি হাসি দিয়ে ভিতরে আসতে বললো । অতঃপর নিহানের এই হাসি দেওয়ার সময়ে গালে যে টোল পরে তা যে সুভার বহু দিনের গোপন দুর্বলতা তা আবারো অনুভব করলো ।

হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো । বর্ষাকালে এই এক সমস্যা যখন তখন কারেন্ট চলে যায় । সুভা অন্ধকারে ছোটো থেকেই ভয় পেতো তাই অন্ধকারে ভয় পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিহানের বুকে । নিহানও গত এক বছরে সুভার এইসব খুঁটিনাটি বিষয় খুব ভালো করেই খেয়াল করেছে । তাই তার বাহু বন্ধনে জড়িয়ে নিলো সুভাকে আর ভাবলো, ‘ইশ! পৃথিবীটা যদি হঠাৎ করেই অন্ধকারে ঢেকে যেতো তবে কি এই বুকে এমন করেই সারাজীবন লেপ্টে থাকতো এই মেয়েটা ।’

পিনপতন নীরবতা থেকে বেরিয়ে এসে নিহান মোম জ্বালিয়ে সুভাকে চোখ মেলে তাকাতে বলে । মোমের আলোয় চারিদিক কেমন যেন একটা রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে এমনি মনে হচ্ছিল সুভার । তা দেখে সুভা নিহানকে ছেড়ে দেয় আর লজ্জা পায় এইভেবে এতক্ষণ সে কিভাবে নিহানের বুকে লেপ্টে ছিল ।
নিহান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সুভার থেকে জানতে চাইল সে এই সময়ে কেন বাসায় আসলো । সুভা কারণটা বললো যে একটা ভালো বই নিতেই সে এসেছিল যেন তা পড়লে মনটা এক নিমেষে ভালো হয়ে যাবে ।

নিহান জানে সুভা কোন ধরণের বই পড়তে বেশি পছন্দ করে তাই তেমন একটা বই বুক সেল্ফ থেকে আনতে বুক সেল্ফের দিকে এগিয়ে গেলো । ওই দিকে সুভার চোখ আটকে গেলো পাশের টেবিলের উপর পরে থাকা একটা সুন্দর নীল ডায়েরির উপর । সে নীল ডায়েরিটা গিয়ে হাতে নিলো আর বলে উঠলো,
-‘ইশ! কি সুন্দর এই ডায়েরিটা ।’
কিন্তু আগে তো কখনো চোখে পরে নি । তবে কি এটা নতুন কিনেছে? নাকি আমি আগে খেয়াল করি নি? কিছু একটা এমনি হতে পারে । পরের জিনিস যেহেতু না বলে দেখতে নেই তাই সুভা যেখানে ছিল সেখানেই ডায়েরিটা রেখে দিতে নেয় । কিন্তু এরই মাঝে নিহানের চলে আসায় ডায়েরিটা হাত থেকে নিচে পড়ে যায় । সুভা দ্রুত নিচু হয়ে ডায়েরিটা তুলতে গেলো । আর তখনই ডায়েরির ভিতর থেকে পড়া নিজের বেশ কিছু ছবি দেখতে পায় । ছবিগুলো দেখে কিছুটা বিস্মিত হয় সুভা । কারণ এইগুলো সে নিজে কখনো তুলেনি । তার মানে কি নিহান লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখে আর তখনই এই ছবিগুলো তুলেছিল সেটাই ভাবতে ছিল সুভা । সুভার হাত থেকে নিহান ডায়েরিটা নিতে গেলে সুভা বাঁধা দেয় । এরপরে ডায়েরিটা নিয়ে নিহানকে কিছু না বলেই সুভা বেরিয়ে গেলো । সুভা বুঝতে পেরেছিল ওর মনে যে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে তা কেবল এই ডায়েরিটা পড়ে দেখার পরেই শেষ হবে । তাই দেরি না করে ডায়েরিটা অধীর আগ্রহ নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতেই খুলল । ডায়েরিটা খুলতেই সুভার চোখদুটো আটকে গেলো দুটি নামের উপর । কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো নিহান রাজ ও সুভাসিনী রায় নামের সেই লেখার উপর ।
লেখাটা দেখেই মুহূর্তের মধ্যে সুভার হৃদয় কোণে টনক নড়ে উঠলো । মস্তিস্কের স্নায়ুকোষগুলো তখন তাকে জানান দিলো কতটা গভীরভাবে কাউকে ভালোবেসে থাকলে এমন করে লেখায় ফুটে উঠে তার প্রকৃত ছাপ । এরপরেই সুভা ছুঁয়ে দেখে নিচের লাইনগুলো;

যদি হুট করে কোনো একদিন পেয়ে যাও তোমাকে ঘিরে লেখা অনুভূতিতে পূর্ণ এই নীল ডায়েরিটা । সেদিন তুমি এই লেখাগুলো ঠিক কি হিসেবে নিবে? তোমায় ঘিরে আমার লেখা অনুভূতিগুলো পড়ার পরে সম্বোধন করবে কি কবি বলে? নাকি বুঝবে…

‘সুভাপ্রেমী এই নিহানেরও একটা মন আছে,
আছে সেই মনে তোমায় নিয়ে ঘিরে থাকা
কিছু একান্ত অনুভূতি ।
যা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি নিজস্ব শব্দ চয়ণে,
কিংবা তোমায় নিয়ে লেখা প্রতিটা কবিতার চরণে চরণে ।’

এদিকে সুভা একের পর এক ডায়েরির পৃষ্ঠা উল্টে খুঁজে পেতে থাকে নিহান কতটা ভালোবাসে সেই সব অনুভূতির প্রকাশ । যা দেখে সুভার চোখের জল যেনো কিছুতেই মানছে না বাঁধ । তবে এ কান্না সুখের, এ কান্না নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখা উল্লাসের । তাই সুভা আটকাচ্ছে না বরং আপন গতিতে বয়ে যেতে দিচ্ছে । আর ওদিকে নিহান টেনশন করে যাচ্ছে সুভা সবটা দেখার পর কি না কি করবে এইসব ভেবেই । যদিও নিহান নিজেও অনুভব করে যে সুভাও তাকে ভীষণ ভালোবাসে । কিন্তু সুভার যে সামনের মাসেই বিয়ে সেটা তো অস্বীকার করতে পারব না । এইসব ভেবে মন ভালো নেই নিহানের আর তাই লিখতে বসেছিল । কিন্তু কিছুতেই যেন লিখতে পারছিল না। অবশেষে…

সুভা! তুমি না রাতের আকাশে ওঠা চাঁদ কিংবা তারা নয়,
তুমি তো কারো পৃথিবীর বুকে থাকা ওই রহস্যময়ী সূর্য ।
যাকে দূর থেকে শুধু দেখা যায়,
যার উত্তাপে হওয়া যায় উত্তপ্ত ।
যাকে কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন বুনতেই স্বপ্নগুলোও-
এক নিমেষেই কেমন যেন পুড়ে হয়ে যায় নিঃশেষ ।
যার সাথে ঘর বাঁধতে গেলেই- তাসের ঘরের মত হয়ে যায় মুহূর্তেই বিলীন ।

আবার তুমি সেই রহস্যময়ী সূর্য!
যে কিনা একদিন না উঠলে- পৃথিবীর বুকে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার,
হারিয়ে যায় সবটুকু সজীবতা,
বুকের ভিতর উত্থাল পাতাল ঢেউ বয়ে যায়,
অথচ বাহিরটা কেমন মরুভূমি হয়ে রয় ।

তুমি সেই রহস্যময়ী সূর্য!
যে কিনা পৃথিবীর থেকে অনেকটা দূরে থেকেও –
তার দিকে ছুঁড়ে দিতে পারো শুধু তাপ আর তাপ ।
কিন্তু তোমার থেকেও একদা বৃষ্টি পাব,
তোমায় নিয়ে ডুব সাঁতারে সেদিন আমি মগ্ন হব,
মগ্ন হয়ে তোমার ওই নগ্ন পায়ে আমি বুঝি পা মেলাবো;
সেদিন কিন্তু আমি কোনো মানব না কো বারণ!

করলেও বারণ! তাতে কি?
আমি কিন্তু ঠিকই সেদিন –
নগ্ন গায়ে গা মেলাবো,
ঠোঁটের কোণে চুঁয়ে পরা জলরাশির বিন্দুগুলো আমি ঠিকই শুষে নিব ।
এই স্বপ্ন বুকের ভিতর বুনতে বুনতে-
তোমার কাছে বারবার ছুটে গিয়ে বুঝলাম শেষে;
মরুভূমির বুকে মিথ্যা মরিচিকাকে পানি ভেবে তার পিছু ধরে,
অবশেষে দৃষ্টিভ্রম ভেবেই সবাই যেমন শূন্য হাতে ফেরে
আমিও হব তাদেরই দলে ।

সুভা সেদিন ডায়েরিটা পড়া শেষ করে নিজের কাছেই খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছিল । এরপরে অনেকদিন নিহানের সাথে সামনাসামনি দেখা করেনি সুভা । নিহানও আর সেদিনের পর পড়াতে আসেনি । এভাবেই একটা মাস কেটে গেলো ।

আজ সুভার বিয়ে । সুভার বান্ধবীরা যখন হাসি ঠাট্টায় ব্যস্ত তখনও সুভা ভাবতে থাকে কত কষ্ট করে আজকের এই দিনটি সুভা পেতে চলেছে সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো । একটু পরেই বর চলে আসবে । হ্যাঁ তার সেই উপকারী নিমপাতাকে তখন মন ভরে বরের বেশে দেখবে সেই প্রতীক্ষায় সুভা বসে আছে কনের সাজে সেজে ।

বিয়ে বাড়ির খুশির আমেজ একটু পরেই কেমন শোকের চাদরে মুড়ি দিলো । এখন সানাই এর স্থলে ভেসে আসছে কান্নার আর্তনাদ । আর এই নিম পাতা উঠোনা আজকে না আমাদের বিয়ে এটাই যেনো সেদিন থেকে সুভার আশেপাশের বাতাসে মিশ্রিত হয়ে ভাসতে থাকে ।

শূন্য অনুভূতি পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”এগারো(শেষ পর্ব)”

আজ আমাদের কোম্পানির পঁচিশ বছরের পূর্তিতে অফিসে একটা গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়েছে।পুরো অফিস ডেকোরেট করা হয়েছে।অফিসের স্টাফরা সবাই নিজেদের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।ইতিমধ্যেই গেস্ট রাও সবাই আসতে শুরু করে দিয়েছে।কিন্তু এতো সব কিছুর মাঝেও আমার চোখ শুধু একজন কেই খুঁজছে।আমি রেডী হয়ে আসার পর একবারের উনাকে দেখতে পাইনি।গেল কোথায় লোকটা।আমি ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক উনাকে খুঁজছি।এমন সময় আমার নজর গেল অফিসের অন্যপাশে।ওখানে দাঁড়িয়ে উনি গেস্ট দের সাথে কথা বলছেন।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এটা যে উনি কথা তো বলছেন অন্য কারো সাথে কিন্তু দৃষ্টি আমার দিকে রয়েছে।আমার বুক টা ধক করে উঠল।কেন জানি না উনার এই চাহনি আমাকে এলোমেলো করে দেয়।আমি উনার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।তবে যাই হোক,উনাকে আজ সত্যিই অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।চোখ সরানোই দায় হয়ে পরেছে।আমি আবার আড়চোখে ওনার দিকে তাকালাম।
“এ কি সৃষ্টি!তুমি আজও সেই শাড়ি পরেই চলে এসেছ।”
হঠাৎ করে কথাটা কানে আসতেই আমি পেছনে ফিরে তাকালাম।মায়া দাঁড়িয়ে আছে।একটা ব্ল্যাক হাঁটু বের করা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে।আমি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাতেই ও আবার বলে উঠল,
“ইউ নো না,সাহিত্য আধুনিক যুগের ছেলে।এসব শাড়ি টারি ওর মোটেও পছন্দ নয়।তোমার উচিৎ ছিল ওর বউ হিসেবে ওর মন রেখে সাজার তাই না?”
কথাটা বলেই মায়া তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে হাসতে আমার পাশ কাটিয়ে উনার কাছে চলে গেল।আর লক্ষ্য করলাম উনিও বেশ তৃপ্তি নিয়ে ই মায়ার সাথে কথা বলছেন।উনার রাগ চরম পর্যায়ে পৌছালো।শাড়ি যদি পছন্দ ই না হয় তো সেটা আগে বললেও তো পারতো।তাহলে আর এতো কষ্ট করে উনার জন্য শাড়ি পরতে হতো না আমায়।আমি ছলছল চোখে আবার উনার দিকে তাকালাম।ছোট ছোট কাপড় পড়া মেয়েদের খুব পছন্দ উনার তাই না?তাহলে উনার বউ হয়ে আমি ই বা কী করে উনার পছন্দের বাইরে যেতে পারি।আমি আমার শাড়ি ছড়ানো আঁচল গুটিয়ে নিলাম।বিষয় টা আমার জন্য অসস্থিদায়ক হলেও উনার জন্য হয়তো স্বস্তি দায়ক।আমি ওভাবেই চিত্রার কাছে গিয়ে ওর সাথে কথা বলা শুরু করলাম।আর বারবার উনার দিকে তাকাতে লাগলাম।
উনি গেস্টদের সাথে কথার ভাঁজে আমার দিকে তাকাতেই এবার উনার চোখ মুখ পাল্টে গেল।মনে হলো খানিক টা রেগে গেছেন।ভ্রু ভাঁজ হয়ে এসেছে।আমি ওনার দিকে লক্ষ্য করতেই উনি গেস্ট দের ছেড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।উনাকে এভাবে আসতে দেখে আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম।এখনি কিছুতেই উনার হাতে ধরা পরা চলবে না।তাই আমি চট জলদি চিত্রার কাছ থেকে সরে অন্য জায়গায় এসে দাড়ালাম।বলতে গেলে এরকম পালিয়ে বেড়াতে লাগলাম।এরই মাঝে হট স্টেজে কারো এনাউন্সমেন্ট শুনে থমকে গেলাম।স্টেজে তাসরিফ মাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রথমে ই নিজের গলা পরিষ্কার করে নিল।তার পর কিছুটা সংকোচ বোধ নিয়েই বলে উঠল,
“আব,আমি আজ আপনাদের সবার সাথে আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত শেয়ার করতে চাই।যদি….যদি স্যার আমায় অনুমতি দেন তো?”
কথাটা শেষ হতেই স্টেজ থেকে দূরে থাকা সাহিত্যের ওপর লাইটের আলো এসে পরল।উনি সময় নষ্ট করে বলে উঠলেন,
“হুম!কান্টিনিউ…..।”
কথাটা বলেই উনি আবার এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন।আমি জানি উনি আমাকেই খুঁজছেন।কিন্তু আমি অন্য পাশে স্টেজের সামনে ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছি।আর এই মূহুর্তে আমি তাসরিফের কথায় বেশি মনোযোগ দিলাম।তাসরিফ পেছনের মাথা চুলকোতে চুলকোতে বলে উঠল,
“বুঝতে পারছি না কথাটা কী করে শুরু করবো।কারণ এতোদিন যাবৎ আমি শুধু ওর ভুল দিকটাই ওর সামনে তুলে ধরেছি যদিও ওর ওই ভুলটাই আমার জীবনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এক মূহুর্ত বলে মনে হতো।জানি না আমার এই কথাটা বলার পর ওর মুখের অবস্থা কি হবে তবে আমি জানতে চাই।”
কথাটা বলেই তাসরিফ হালকা দম নিল।এরই মাঝে আমাদের অফিসের সবাই তাকে চিয়ার আপ করতে লাগল।সবার মুখেই হাসির ঢেউ খেলে যাচ্ছে।তাসরিফ একটু দম নিয়ে আবার বলে উঠল,
“চিত্রা…….. আই লাভ ইউ।”
কিছুক্ষণ এর জন্য সবকিছু থমকে ছিল।কিন্তু পরক্ষণেই সবার করতালিতে পুরো অফিস ভরে উঠল।কিন্তু অবাক করার কথা হচ্ছে চিত্রা কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।সবাই এদিক ওদিক খোঁজার পর ও কোথাও খুঁজে পেল না।এমন সময় হঠাৎ করেই অফিসের এক কোনে লাইটের আলো জ্বলে উঠল।চিত্রা অফিসের এক কোণে হুটু মুড়ে বসে কাঁদছে।লাইটের আলো পরায় সে চোখ তুলে সবার দিকে তাকালো।চিত্রাকে এভাবে কাদতে দেখে তাসরিফ স্টেজ থেকে নেমে এসে চিত্রার থেকে কিছুটা দূরত্বে এসে দাঁড়ালো।ততক্ষণে অশ্রু জড়িত চোখে চিত্রাও উঠে দাঁড়িয়েছে।তাসরিফ প্রশ্নবোধক চোখ নিয়ে তার দিকে তাকালে চিত্রা কাদো কাঁদো হয়ে বলে উঠল,
“আমি ভেবেছিলাম আপনি অন্য কাউকে প্রপোজ করতে যাচ্ছেন।”
চিত্রার এমন কথায় হঠাৎ ই ফিক করে হেসে উঠল তাসরিফ।
_____________________________________
অফিসের পঁচিশ তম বছরের উৎযাপনে সবার সাথে কেক কাটা হলো।এই কেক কাটার ভীড়ের মাঝেই হঠাৎ করে কেউ একজন আমার কোমড় বাজে ভাবে স্পর্শ করে চলে গেল।আমি চট করে এদিক ওদিক তাকিয়ে সন্দেহ জনক কাউকে না পেয়েই আমি ওখান থেকে সরে পরলাম।কেক কাটার অনুষ্ঠান শেষ হতেই সবাই কাপল ডান্সে মেতে উঠল।কিন্তু আমি খুজছি উনাকে।উনি কোথায় গেলেন।আমি প্রায় অনেক্ষন ধরে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ ই আমার চোখে গেল অফিসের এক জনশূন্য স্থানে উনি নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে কাউকে একটা মেরেই চলেছেন।এরকম একটা ঘটনা গান বাজনার কারণে কেউ টের ও পায় নি।আমি দৌড়ে তাদের কাছে গেলাম।লোকটা রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পরে আছে।
“কী করছেন কি?আপনি উনাকে এভাবে মারছেন কেন মরে যাবেন তো উনি।ছাড়ুন উনাকে।ছাড়ুন বলছি।”
আমি উনাকে আটকাতে গেলাম।কিন্তু উল্টো ফ্যাসাদে আমিই পড়ে গেলাম।উনি ওই লোক টাকে ছেড়ে আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালেন।আমি ভয়ে দুই কদম পিছিয়ে যেতেই উনি ওই লোকটার উপর থেকে উঠে এসে আমার এক হাত শক্ত করে ধরে আমায় টানতে টানতে অফিসের বাইরে নিয়ে এসে গাড়িতে এক রকম ভাবে ছুড়ে দিলেন।আমি কোনোরকম গাড়ির সিটে বসতেই উনি ড্রাইভিং সিটে বসে ফুল স্পীডে গাড়ি চালাতে লাগলেন।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে।জানি না উনার এই রাগের পরিমান কত বড় হয়ে আমার ওপর এসে পরবে।আমি মনে মনে হাজার বার আল্লাহ কে ডাকতে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বাড়ি চলে এলাম।উনি কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে আমার দিকে এসে দরজা খুলে সোজা আমায় ঘাড়ে তুলে নিলেন।উনার এমন কাজে আমি সপ্তম আকাশে।বাড়িতে বাবা আছে আর উনি আমায় এই অবস্থায় বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন।আমি পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলাম।
“আপনি পাগল হয়ে গেলেন নাকি।কি করছেন এসব আপনি।ছাড়ুন আমায়।বাবা ভেতরে আছে প্লিজ ছাড়ুন আমায়।”
কিন্তু আমার এতো ছোড়াছুড়ি করেও কোনো লাভ হলো না।উনি আমায় নিয়ে সোজা ঘরে চলে এলেন।ভাগ্যিস বাইরে বাবা ছিল না।আমাকে ঘরে এনেই সোজা বেডে ছুড়ে দিলেন।মূহুর্তের মধ্যেই আমার চারিদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলাম।নিজেকে সামলে যখন সামনে তাকালাম দেখি উনি দরজা বন্ধ করে শার্ট খুলতে খুলতে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।আমি ভয়ে মৃত প্রায়।উনাকে আজ হিংস্র হিংস্র লাগছে আমার।আমি পিছিয়ে গেলাম।
“আআআ আপনার কী হয়েছে?আপনাকে এমন লাগছে কেন।প্লিজ এভাবে এগোবেন না আমার ভয় করছে।”
বলেই আমি কেঁদে দিলাম।কিন্তু আমার কান্না উনার ব্যবহারের কোনো পরিবর্তন ঘটলো না।উনি নিজের শার্ট খুলে ছুড়ে ফেলে বেডের ওপর এক পা রেখে এক হাতে আমার পা টেনে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে গেলেন।আমি উঠে সরে আসতে যাবো তখনই উনি আমার শাড়ির আচল টেনে ফেলে দিলেন।এবার আমি কোনো উপায় না পেয়ে আচমকা উনাকেই নিজের আত্মরক্ষার জন্য জড়িয়ে ধরলাম।বলা হয় ভয় যেখানে ভয়ের নিষপত্তি ও সেখানেই।আমি উনাকে জড়িয়ে ধরেই আমি জোড়ে শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।আমার এমন হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় উনিও কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলেন।তারপর ধীরে ধীরে আমার কানে নিজের মুখ নিয়ে এসে জোড়ালো কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“এ রকম স্পর্শ তোমার খুব পছন্দের তাই না।এজন্যই তো ওভাবে নিজের শরীর খোলামেলা রেখে দিয়েছিলে যাতে এরকম স্পর্শ পেতে পারো।”
ওনার কথায় আমি থ মেরে গেলাম কি বলছেন উনি।
“কিন্তু একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো তোমাকে আমি ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ তো দূরের কথা চোখ তুলে তাকানোর সাহস করলেও আমি তার চোখ উপড়ে ফেলবো।”
কথাটা বলেই উনি আমাকে বেডে ছুড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ালেন।আমি ধীরে ধীরে উঠে বসে শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিয়ে উঠে দাড়ালাম।
“কেনো?আমাকে অন্য কেউ স্পর্শ করলে আপনার কী।আপনি তো আমায় ভালোবাসেন না।বাবার পছন্দে আমায় বিয়ে করে এনেছেন আপনি এই যা।তাহলে আমায় কে স্পর্শ করল না করল তাতে …….”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি আমার দিকে ফিরে আমার দুই বাহু চেপে ধরে বলে উঠলেন,
“সহ্য হয় না আমার তোমার দিকে কেউ বাজে নজরে তাকালে।ইচ্ছে করে সবকিছু ধ্বংস করে ফেলি।হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তোমাকে ডেডের পছন্দে বিয়ে করে এসেছিলাম।কিন্তু এখন তুমি আমার প্রয়োজন হয়ে উঠেছ।তোমাকে আমার প্রয়োজন।আমার ভালো থাকার জন্য তোমাকে আমার প্রয়োজন।”
কথাটা বলেই উনি আমায় খুব শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
“আমি চাই না তোমার ক্ষতি হোক।আমি আমি খুব বেশি রেগে গিয়েছিলাম অফিসে তোমাকে ওভাবে দেখে।আম সরি।”
আমার এক ফোঁটা জল উনার বুকে গড়িয়ে পরল।বুকের ভেতর শীতল বাতাস বয়ে গেল।আমি পেছন থেকে উনাকে জড়িয়ে ধরে উনার খালি বুকে মাথা রেখে উনার হৃদ স্পন্দন গুনছি।আজ থেকে স্পন্দন গুলো গোনার অধিকার শুধুই আমার।বাবা ঠিকই বলেছিলেন,যখন সত্যি ই কাউকে ভালোবাসবো তখন বুঝবো উনি কেন মায়ের জায়গায় অন্য কাউকে বসাননি।কারন ভালোবাসার মানুষটার জায়গায় অন্য কাউকে বসানো সুখের থেকে অনেক বেশি কষ্ট দায়ক।আমি একটু নড়তেই উনি আরো গভীরভাবে আমায় জড়িয়ে ধরলেন।উনার এমন কাজে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।
……………..সমাপ্ত…………………