Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1489



শূন্য অনুভূতি পর্ব-১০

0

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”দশ”

সাহিত্য বেশ কিছুক্ষণ ধরে বেলকণি তে দাঁড়িয়ে আছেন।উনাকে এভাবে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি ধীরে ধীরে উনার পিছনে গিয়ে দাড়ালাম।আমার উপস্থিতি উনি টের পেয়েছেন।কিন্তু তবু নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
“আচ্ছা,আপনার কী মনে হয় না বাবা সবার সামনে নিজেকে যতটা হাসি খুশি দেখাতে চান উনি ভেতরে ততটাও সুখী নন।আপনার কী মনে হয় না উনার একটা নতুন জীবনের প্রয়োজন উনার সুখে থাকা প্রয়োজন।”
আমার কথায় মনে হলো উনার কোনো পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে হলো ন। উনি এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছেন।তা দেখে আমি উনার পাশে গিয়ে দাড়ালাম।
“কী হলো কিছু বলছেন না যে।আপনার কষ্ট হয় না বাবাকে এভাবে একা থাকতে দেখে।”
এবার উনি আমার দিকে এক পলক শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে আমি উনার পথ আটকে ধরে চেঁচিয়ে উঠি,
“কিছু বলছেন না কেন আপনি?কষ্ট হয়না আপনার বাবার জন্য?”
আমার কথায় উনি এবার একটু বেশি ই রেগে গেলেন।চোখ মুখ লাল করে হঠাৎ করেই আমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন,
“না.না কষ্ট হয় না আমার।শুনতে পেয়েছ তুমি।”
“কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে।”
আমার এমন কথায় উনি কিছুটা ভড়কে গেলেন।আমি অসহায় অসহায় ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,
“আপনি সবসময় আমাকে শুধু কষ্ট দিয়েই কথা বলেন।কেন,একটু ভালোবেসে কথা বললে কী হয়?”
কথাটা বলতে বলতেই আমি উনার দুই হাত আমার বাহু থেকে সরিয়ে আমার কোমরে জড়িয়ে দিলাম।মূহুর্তেই উনার চোখের দৃষ্টি শান্ত হয়ে গেল।আমি হাল্কা হেসে দুই হাতে উনার গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম,
“হুম এবার বলুন।”
“হা…!”
কথাটা এমন ভাবে বলে উঠলেন যেন উনি সম্মিহিত হয়ে রয়েছেন।তাই আমি আবার বলে উঠলাম,
“বলুন,আপনার সত্যিই কষ্ট হয় না।”
এবার যেন উনার ধ্যান ভাঙল।আমার কোমর থেকে হাত সরিয়ে আমার আবার একই জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন।
“না কষ্ট হয় না আমার।”
ওনার কথায় আমি কিছুটা রেগে গিয়েই ওনার পাশে গিয়ে দাড়ালাম।
“কষ্ট হয় না?কষ্ট হয় না আপনার?তাহলে আমায় কেন বিয়ে করেছিলেন?এজন্যই তো কারণ আপনার বাবা আমায় পছন্দ করতেন।উনার মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য আপনি একটা অপরিচিত অজানা মেয়ে কে বিয়ে করেছিলেন যাকে আপনি ভালো পর্যন্ত বাসেন না।এতো সব কিছু কিসের জন্য তাহলে।যদি কষ্ট নাই হয় আপনার।”
আমার এমন কথায় উনি দম ধরে আমার দিকে তাকালেন।আমি আমার চোখে হাজার প্রশ্ন নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কিছুক্ষণ পরই উনি আমার দিক থেকে নজর সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“মম যখন এক্সিডেন্টে মারা যায় তখন আমি খুব ছোট ছিলাম।মমের মৃত্যুর পর ফ্যামিলির সবাই ডেড কে দ্বিতীয় বার বিয়ের জন্য প্রেসারাইজ করতে থাকে।কিন্তু ডেড আর বিয়ে করবে না বলে ফ্যামিলির সকল কে ছেড়ে আমায় নিয়ে অনেক দূরে চলে আসে।তখন বুঝতে পারিনি আমাদের কেন নিজেদের পরিবারের থেকে দূরে চলে আসতে হলো।ধীরে ধীরে যখন বয়স বাড়তে লাগল তখন বুঝলাম ভালোবাসা কী?ভালোবাসা একটা যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছু ই নয়।প্রতিদিনের ন্যায় হাসি খুশি ডেডকে যখন মধ্যরাতে মমের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে কাঁদতে দেখলাম।তখন বুঝতে পারলাম পরিবারের সবাই কেন ডেড কে দ্বিতীয় বার বিয়ের জন্য জোড় করছিল।একাকিত্বে থাকা যে বড়ই যন্ত্রণা দায়ক।তখন আমিও মনে প্রাণে চাইতে লাগলাম যেন ডেড আবার নতুন করে জীবন শুরু করে।কিন্তু আমি তার জীবনে থাকতে কখনোই এটা সম্ভব হবে না ভেবে আমি ধীরে ধীরে ডেডের সাথে নিজের দূরত্ব বাড়ালাম।কথায় কথায় কথা কাটাকাটি হতে লাগল। আমাদের মাঝের দূরত্ব বাড়তে লাগল।ভেবেছিলাম আমার উপর অতিষ্ঠ হয়ে হলেও ডেড আবার নিজের জীবনের কথা ভাবতে শুরু করবে।কিন্তু এমনটা হয়নি।উনি একা বাচতে শিখে গেলেন।এখন তো আমি উনার থেকে এতোটাই দূরে চলে এসেছি যে উনার কাছে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ ই আমার নেই।উনার চোখে চোখ মেলানোর সাহস টাও নেই।”
আমি উনার কথা শুনে অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
“আপনি কী জানেন আপনি যেমন আপনার ভাবনা গুলোও ঠিক তেমনি।”
আমার কথায় উনি আমার দিকে ফিরে তাকালেন।
“একবার ভাবুন যেই লোকটা চাইলেই নিজের জীবন নতুন করে শুরু করতে পারতেন সে শুধু মাত্র আপনাকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছে।তার জীবনে অন্য কারো নয় আপনার প্রয়োজন।আর বাবার কাছে যেতে হলে কোনো সাহসের প্রয়োজন হয় না।শুধু ছোট্টবেলার মতো বাবার পায়ে পা মিলিয়ে চলতে হয়।”
উনি আমার দিকে এক মুঠো আশাভরা চোখে তাকিয়ে রইলেন।আমি ধীরে ধীরে উনার কাছে গিয়ে উনাকে মৃদু জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম,
“বাবাকে একমাত্র আপনিই নতুন জীবন দিতে পারেন।দয়া করে পিছিয়ে আসবেন না।”
_____________________________________
আজ শুক্রবার।বাবা মাত্রই গোসল সেড়ে সাদা পাঞ্জাবী সাদা টুপি মাথায় দিয়ে নামাজের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি তে বসলেন।বাড়ি থেকে মসজিদ অনেকটা দূরে হওয়ায় উনাকে গাড়ি করেই মসজিদ অবধি যেতে হয়।কিন্তু আজ উনার এই যাত্রা কিছু টা ভিন্ন হতে চলেছে।উনি গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট করতে যেতেই ওনার পাশের দরজা খুলে সাহিত্য গিয়ে উনার পাশে বসে পরলেন।উনি সাহিত্য কে এভাবে দেখে কিছুক্ষণ এর জন্য থমকে গেলেন। তারপর চট করেই গাড়ির জানালা ভেদ করে উনরে বেলকণির দিকে তাকালেন।আমি বেলকণিতে মৃদু হেসে দাঁড়িয়ে রয়েছি।আজ সত্যি বুকের ভেতরে এক অদ্ভুত প্রশান্তির অনুভব হতে লাগল।বাবা মৃদু হেসে আমার দিক থেকে নজর সরিয়ে গাড়ি স্টার্ট করতে লাগলেন।আমি জানি এখন উনার বুকের ভেতরে কতটা তোলপাড় চলছে।উনারা যেতেই আমি লাঞ্চের সব কিছু টেবিলে সাজিয়ে রেখে আমি নিজেও নামায আদায় করে নিলাম।এরই মাঝে উনারা চলে এসেছেন।আমি নামায শেষ করে বসার ঘরে এসে দেখি দুই বাবা ছেলে একই সাথে টেবিলে বসে খেতে শুরু করে দিয়েছে।বাবা এটা ওটা ওর পাতে তুলে দিচ্ছেন।আর উনি খুব ভালোভাবেই তা অনুভব করছেন।আজ বাবা কে দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃত সুখী মানুষ।
চলবে❤

শূন্য অনুভূতি পর্ব-০৯

0

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”নয়”

“আরে,বাবা উঠুন না!”
“আহা: কি হয়েছে কি সেটা তো আগে বলবে।হঠাৎ একরকম অফিসে যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছো কেন বলো তো।”
“বলছি তো সেটা সারপ্রাইজ
বলে দিলে সারপ্রাইজ কেমনে থাকবে?”
“কি এমন সারপ্রাইজ যে অফিসে যেতে হবে?”
“উফফ, আপনি না খুব বেশি প্রশ্ন করেন।অনেক হয়েছে আর নয়।উঠুন তো এবার আপনি।উঠুন….। যান গিয়ে রেডী হয়ে আসুন।যান বলছি।”
বাবা কে ঠেলে ঠুলে রেডী হতে পাঠালাম।আজ বাবার জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে।বাবা হয়তো ভাবতেও পারছেন না যে অফিসে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে।আমি বসার ঘরে বাবার জন্য অপেক্ষা করছি।এরই মাঝে বাবা একেবারে স্যুট বুট পরে রেডী হয়ে বেরিয়ে এলেন।আরেহ বাহ,বাবা কে দেখে তো আমি নিজেই ক্রাশ।এবার বুঝতে পারছি ছেলের আসল সৌন্দর্যের রহস্য।
বাবা সিঁড়ি বেয়ে নামতেই আমি ওনার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম অফিসের উদ্দেশ্য।
.
.
.
.
.
অফিসে এসেই বাবা কে ঠেলে ঠুলে আগে থেকে রেডী করা অফিসের একটা ফাঁকা রুমে পাঠিয়ে দিলাম।রুমে মমতাজ আন্টি রয়েছে।আমি রুমের দরজার ফাঁকা দিয়ে উঁকি মারলাম।ভেতরে কি হচ্ছে তা তো আমার জানা দরকার।আসলেই বাবা কতটা রোমেন্টিক হতে পারে তা দেখতে হবে না আমায়!মন তো খচখচ করছে।
.
.
.
.
.
(পুরো রুম ফুল আর কিছু বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।নিয়াজ আহমেদ রুমের ভেতরে ঢুকে এমন সাজ দেখে প্রথম মূহুর্তে কিছুটা অবাক হলেও রুমে আগে থেকে বসে থাকা মমতাজ কে দেখে তার অবাক হওয়াটা কেটে যায়।
“আরেহ,মমতাজ তুমি?আর এসব কী!আজ কী কোনো দিবস টিবস আছে নাকি?”
মমতাজ প্রায় অনেক্ষন ধরেই মনের মধ্যে নানা ধরনের সংকোচ বোধ নিয়ে রুমের ভেতর বসে আছে।সে বুঝতে পারছিল না চিত্রা তাঁকে হঠাৎ কেন এভাবে এই ঘরে বসিয়ে রেখে গেছে।কিন্তু যখন নিয়াজ কে ভেতরে আসতে দেখল তখন বুঝতে বাকী রইল না এসব কিছু সৃষ্টি কর্মকাণ্ড।মনে মনে মেয়েটার এমন কাজের জন্য ভীষণ হাসি পেলেও কিছুটা অসস্থিবোধ ও গ্রাস করেছিল তাকে।নিয়াজের করা প্রশ্ন টা তাকে আরো বেশি অস্থিতে ফেলে দেয়।কোনোরকম কাপা কাপা গলায় বলে উঠল,
“না,আসলে,,,আব,,,দে দেখ না এসব কিছু সৃষ্টি করেছে।কেমন পাগল মেয়ে একটা।”
“হ্যা তা তো বটেই।আমার বৌ মা একটু পাগল ঠিকই কিন্তু তার পাগলামো গুলোর মাঝে তার মাঝে থাকা বাচ্চামো গুলো ফুটে উঠে।কিন্তু বুঝতে পারছি আজ হঠাৎ এমন সারপ্রাইজ এর কারন কী।আজ কী কোনো বিশেষ দিন।না মানে কারো জন্মদিন টন্মদিন নাকি।আচ্ছা আজ কি তোমার জন্মদিন?”
“ন নাহ,না তো।”
“তাহলে…..?”
“নিয়াজ….?”
“হুম বলো।”
“ভালোবাসি তোমায়।বিয়ে করতে চাই।”
বুকের মধ্যে একটা বড় ধরনের পাথর রেখে কথা টা বলে উঠল মমতাজ।নিয়াজ ঘরের চারিদিকের সাজ দেখতে দেখতে কথা বলছিল।এমন সময় মমতাজের এরকম একটা কথায় থমকে গিয়ে তার দিকে তাকালো।মমতাজ দম ধরে দাঁড়িয়ে আছে।নিয়াজ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“তুমি এই নিয়ে দ্বিতীয় বার এই কথাটা বললে।”
“আমি জানি।”
“তোমার কি করে মনে হলো যে এবার আমার উত্তর আলাদা হতে পারে!”
“কারণ,তখন তোমার জীবনে মোহনা ছিল।কিন্তু এখন আর নেই।”
মমতাজের এমন কথায় নিয়াজের চোখ মুখ লাল হয়ে এলো।যথাসম্ভব নিজেকে সংবরণ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
“কে বলেছে এখন আর আমার জীবনে মোহনা নেই।”
নিয়াজের এমন কথায় মমতাজ অবাক চোখে তার দিকে তাকালো।
“মোহনা আমার জীবনে কাল ও ছিল আজও আছে আগামী কাল ও থাকবে।হয়তো তার অস্তিত্ব আজ আর এই দুনিয়া তে নেই।কিন্তু সে আমার জীবনে আমার জীবন হয়েই বেঁচে রয়েছে।যতদিন আমি বাচবো আমার সাথে সাথে সে ও বাঁচবে।আর এখন জীবনে আমার ছেলে আর আমার বৌমা ছাড়া আমার জীবনে আর অন্য কারো প্রয়োজন আছে বলে।আশা করি তুমি আমার কথা টা বুঝতে পারছো।”
কথা টা বলে নিয়াজ রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেই মমতাজ বলে উঠল,
“আর কতদিন এভাবে বাঁচবে নিয়াজ।তোমার ছেলে তো তোমার দিকে ফিরেও তাকায় না।আর যার কোনো অস্তিত্ব ই এই পৃথিবীতে নেই তার স্মৃতিতে আর কতদিন নিজেকে এভাবে পোড়াবে।তোমার নিজের কী কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।
মমতাজের এমন কথা নিয়াজ গর্জন করে উঠল,
“না নেই।আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।আর তুমি দ্বিতীয় বার আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে এমন কোনো কথা বলো না যাতে তোমার প্রতি আমার সম্মান রাগ আর ঘৃণায় পরিণত হয়।”
কথাটা বলেই নিয়ে সশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।আর মমতাজ সেখানেই মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল।
“তুমি আজও আমায় ফিরিয়ে দিলে নিয়াজ।)”
.
.
.
.
.
আমি রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।বাবার এমন রুপ আমি এর আগে কখনোই দেখি না।একটা হাসি খুশি মানুষ মূহুর্তেই কী করে এতোটা বদলে যেতে পারে।আমার সাহিত্যের কথা মনে পরে গেল।তখনই আমি লক্ষ্য করলাম উনি আমার থেকে কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।আমার বুকটা ধক করে উঠল।আচ্ছা,আমি কি কোনো ভুল করলাম।বাবা আবার নতুন একটা জীবন শুরু করুক।আর সেই জীবনটা খুবই আনন্দ ময় হোক।এটা ভাবা কি আমার ভুল ছিল।আমার ভাবনার মাঝেই বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।বাবাকে দেখেই আমি ছলছল চোখে তার দিকে তাকালাম।আমাকে দেখে বাবা আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি বলে উঠলাম,
“আন্টি কিন্তু আপনাকে সত্যিই খুব ভালোবাসে বাবা।”
আমার কথায় বাবা আমার মাথায় এক হাত রেখে শান্ত গলায় বলে উঠলেন,
“যখন তুমি সত্যিই কাউকে মন থেকে ভালোবাসবে তখন বুঝতে পারবে আমার এরকম সিদ্ধান্তের কারণ কী।”
কথা টা বলেই বাবা চলে গেলেন।আমি তার যাওয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলাম।
চলবে❤

শূন্য অনুভূতি পর্ব-০৮

0

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”আট”

উনি আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছেন।তবে দৃষ্টি শান্ত হলেও বেশ তুখড়।আমি একটা বড়সড় ঢোক গিলে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি আমায় ডেকেছেন প্রায় আধঘণ্টার মতো হতে চলল।কিন্তু এতক্ষণ যাবৎ আমি আমার মাঝেই মেতে ছিলাম।জানি না এর জন্য আমায় কতগুলো কথা শুনতে হবে।নিজেকে ওনার কড়া কড়া কথা শোনার জন্য প্রস্তুত করতে লাগলাম।কিন্তু উনি আমায় অবাক করে দিয়ে কিছু না বলেই নিজের কেবিনে চলে গেলেন।উনার এমন কাজে আমি কিছুটা অবাক হয়েই ওনার পিছু পিছু চললাম।উনি কেবিনে গিয়ে সোজা নিজের সিটে বসে পরলেন।আমি উনার পিছু পিছু কেবিনে ঢুকতেই আমার মাথার রক্ত টগবগ করতে লাগল।উনার ঠিক সামনের চেয়ারেই মায়া বসে আছে।এই অফিসে এই একমাত্র মেয়ে যাকে আমি মোটেও সহ্য করতে পারি না।কেন জানি না।হয়তো এর সবসময় ওনার পেছনে লেগে থাকা টা আমার পছন্দের নয় এজন্য।আমি ওর দিকে তাকিয়েই ওর পাশে থাকা চেয়ারে গিয়ে বসে পরলাম।আমি বসতেই মায়া আমার দিকে তাচ্ছিল্যের নজরে তাকালো।যা দেখে আমি ভেংচি কেটে সাহিত্যের দিকে তাকালাম।উনি টেবিলের ওপর থেকে একটা ফাইল হাতে নিয়ে তাতে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে ফাইল টা মায়ার দিকে এগিয়ে দিল।
“আজ থেকে আমাদের নতুন প্রজেক্টের কাজ তুমি হ্যান্ডল করবে।এখানে কাজের সব ডিটেইলস দেওয়া আছে বুঝে নাও।”
ওনার এমন কাজে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।
“কিন্তু এই প্রোজেক্ট তো আমাকে হ্যান্ডওভার করার কথা ছিল তাই না?”
উনি আমার কথায় আমার দিকে না তাকিয়ে বসা থেকে ওঠে দুই হাত পকেটে রেখে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“যার টাইম সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তাঁকে বিশ্বাস করে আমি এই কোম্পানির ক্ষতি করতে চাই না।এটা নেহাৎই বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না।”
ওনার কথাটা যেন আমার বুকের ঠিক বা পাশে গিয়ে বিধল।উনি আমার থেকে বেশি ওই মায়া কে বিশ্বাস করেন।কথা টা মনে হতেই বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছে।চোখের জল অনেক কষ্টে আটকে রেখে কেবিন থেকে বেরোতে যাবো তখনই মায়ার বলা কথা আমার কানে ভেসে এলো।
“ওও,,,থ্যাংক ইউ সো মাচ সাহিত্য।”
কথাটা শুনেই আমি চট করে পেছনে ফিরে তাকালাম।মায়া ওনার গলা জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে।আমি আর এক মূহুর্ত ও ওখানে না দাঁড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে ওনার আর মায়ার মাঝ খানে ঢুকে চট করে উনার গলা জড়িয়ে ধরে টুপ করে ওনার গালে একটা চুমু একে দিলাম।এতে উনি বেশ অবাক চোখেই আমার দিকে তাকালেন।তবে আমি ওনার এই অবাক হওয়াটাকে সম্পূর্ণ ভাবে ইগনোর করে মায়ার দিকে তাকালাম।মায়া হা হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ওর সামনে হাল্কা তুরি বাজিয়ে বলে উঠলাম,
“মানছি তুমি সাহিত্য স্যারের কলেজ ফ্রেন্ড তাই বলে তুমি এটা ভুলে যেও না যে যাকে তুমি ‘ জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছিলে সে আরেকজনের হাজবেন্ড।লজ্জা করা উচিত তোমার।”
আমার এমন কঠোর গলায় বলা কথাটা মায়ার খুব বেশিই গায়ে লেগেছে।তাই তো সে চোখ মুখ বিকৃতি করে একবার সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।মায়া চলে যেতেই আমি ওনার দিকে তাকালাম।উনি শান্ত নরম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজেও কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলাম।
.
.
.
.
.
নিজের রাগ এখন আমার চরম সীমায় পৌছেছে।উনি কি করে পারলেন এটা করতে!উনি আমার কাজ ওই মায়া কে দিয়ে দিলেন।উনার জন্য এখন মায়া এতোটা ইমপোর্টেন্ট হয়ে উঠেছে।আমি এখন কিছুই নই ওনার জন্য তাই না।ঠিক আছে এবার উনিও দেখবেন আমি কি করতে পারি।আমি নিজের কেবিনে এসে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলাম।যাওয়ার সময় তাসরিফ কে বললাম ও যেন আমায় তার বাইকে করে বাড়ি পৌছে দেয়।
.
.
.
.
.
রাত প্রায় বারোটা বাজে।উনি এখনো বাড়ি ফেরেন নি।আমি বেলকনি তে দাঁড়িয়ে উনার আসার অপেক্ষা করছি।বুঝতে পারছি না উনি এখনো বাড়ি ফিরছেন না কেন।নাকি আমি অফিসে না থাকায় ওই মায়ার সাথে সময় কাটাতে খুব সুবিধাই হচ্ছে উনার।এ জন্যই কি বাড়ি ফিরতে এতো দেরী হচ্ছে।আমার মনে নানান ধরনের ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।এমন সময় উনার গাড়ি বাড়ির ভেতরে ঢুকলো।আমি সাথে সাথে দৌড়ে নিজের ঘরে এসে ফোন হাতে নিয়ে বেডের ওপর বসে গেম খেলতে লাগলাম।কিছুক্ষণ এর মধ্যেই উনি ঘরে এলেন।আমি উনাকে দেখেও না দেখার ভান করে বসে রইলাম।আর খুব ভালো করেই বুঝতে পারলাম উনি বিষয় টা লক্ষ্য করছেন।কিন্তু কিছু না বলেই হাতের ব্যাগটা বেডের উপর রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।বেশ কিছুক্ষণ পর উনি ওয়াশরুম থেকে বেরোলেন।আমি এখনো ওভাবেই বসে বসে গেম খেলছি।তার দেখে উনি হাতের ভিজে টাওয়াল টা বেডের ওপর ছুড়ে ফেলে আমার দিকে কিছু টা এগিয়ে এলেন।
“আমাকে না বলে অফিস থেকে চলে এসেছ কেন?”
ওনার কথা আমার কানে পৌছালেও আমি এমন ভাব করলাম যেন আমি কিছু শুনতেই পাইনি।আমার এমন খামখেয়ালি পনায় হয়তো উনি একটু বেশিই রেগে গেলেন।তাই উনি আবারো দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,
“আমি তোমায় কিছু জিজ্ঞাসা করছি।”
এবার আমি উনার দিকে এমন ভাবে তাকালাম যেন আমি উনার কথায় খুব বেশি বিরক্ত বোধ করছি।উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি আমার ফোন টা একপাশে রেখে বেড থেকে উঠে কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বেরোনোর জন্য উনার পাশ কাটাতে গেলেই উনি আমার এক হাত ধরে হেচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।উনার এমন কাজে কিছুটা চমকে গিয়ে ই উনার দিকে তাকালাম।উনি তীব্র দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলেন,
“আমি তোমায় একটা প্রশ্ন করছি তার উত্তর দাও।অফিস কী তোমার মামার বাড়ি যখন ইচ্ছে যাবে আর যখন ইচ্ছে আসবে।”
ওনার কথায় আমি রেগে কিছু একটা বলতে যাবো তার আগেই আমার ফোন বেজে উঠল।আমি চোখ বড় বড় করে ফোনের দিকে তাকালাম।সেখানে বড় বড় অক্ষরে তাসরিফ লেখাটা ভেসে আছে।মূহুর্তেই আমার সব রাগ পানি হয়ে গেল।আমি তাসরিফ কে ফোন করতে বলেছিলাম।ভেবেছিলাম ওর সাথে কথা বলে আমি উনাকে বোঝাবো নিজের ভলোবাসার মানুষকে যখন কেউ অন্যকারো সাথে ঘনিষ্ঠ হতে দেখে তখন আসলেই তার কতটা কষ্ট হয়।কিন্তু এখন এই মূহুর্তে বিষয় টা আমার জন্য বিপদজ্জনক হয়ে উঠেছে।এখন উনি একটু বেশি ই রেগে আছেন।তার থেকেও বড় কথা আমি এখন উনার হাতে বন্দি।।আমি একটা বড়সড় ঢোক গিলে উনার দিকে তাকালাম।উনি রক্ত চক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।বুঝলাম বউ এর ফোনে রাত একটার দিকে কোনো পরপুরুষ ফোন করলে স্বামীর মনের অবস্থা কী হয়।তবে এই মূহুর্তে আমার কী অবস্থা হবে তা ভাবতেই আমার গা শিউড়ে উঠছে।আমি কোনমতে কাপতে কাঁপতে উনার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ফোনের দিকে এগিয়ে গেলাম।ভাবতেই অবাক লাগছে উনি এতো সহজেই আমায় ছেড়ে দিলেন।
আমি হাঁটি হাঁটি পা পা করে ফোনের কাছে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বেলকণির দিকে এগোলাম।অঘটন টা সেখানেই ঘটল।উনি হঠাৎ করেই পেছন থেকে এসে আমায় টুপ করে কোলে তুলে নিলেন।সাথে সাথে ভয়ে আমি ফোন ছেড়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরেই বুঝলাম ভুল করেছি।এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো আমার ফোন ভাঙলো।নিজের মনেই নিজের কপাল চাপড়াতে লাগলাম।কিন্তু সেদিকে উনার কোনো খেয়াল ই নেই।উনি আমায় কোলে নিয়ে সোজা বেডের ওপর শুইয়ে আমার ওপর আধশোয়া হয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমার হার্টবিটের বারোটা বেজে গেল।কি করতে যাচ্ছেন কি উনি কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
“এসব কি করছেন আপনি!ছাড়ুন আমায়।”
কথা টা বলেই আমি উঠে আসতে চাইলে উনি আমার দুই হাত বেডের সাথে শক্ত করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে আমার দিকে তাকালেন।
“সেটাই যেটা অনেক দিন আগেই আমার করা উচিৎ ছিল।”
কথা টা বলে উনি আমার ঠোঁটের দিকে তাকালেন।উনার এমন চাহনিতে আমার বুকের ঢিপ ঢিপ শব্দটা দ্বিগুণ বেড়ে গেল।মহুর্তেই যেন শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেল।আমি আর সহ্য করতে পারলাম।দুই চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।আমার বুঝতে বাকি রইলো না এরপর কি ঘটতে চলেছে।আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবি নি আজ আমি উনাকে নিজের এতোটা কাছে পাবো।
চলবে❤

শূন্য অনুভূতি পর্ব-০৭

0

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”সাত”

অফিসের সময় গুলো খুব ভালোই কাটছিল।এরই মাঝে অফিসের অনেকের সাথেই আমার ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।তার মাঝে অন্যতম হলো মমতাজ আন্টি।লাঞ্চের সময় প্রায়ই আমাদের কথা হয়।উনার কথা শুনে বুঝতে পারলাম উনি এখনো বিয়ে করেননি।তার কারণ উনি এখনো কোনো একজনের অপেক্ষায় বসে রয়েছে।এক চিলতে আশা নিয়ে বেচে আছে যদি কোনো একদিন ভালোবাসার সেই লোকটার নজর তার ওপর পড়ে।একটু সহানুভুতি দেখায়।সেই সহানুভূতির আশ্রয়েই কাটিয়ে দেবেন সারাটাজীবন।ভাবতেই অবাক লাগে ভালোবাসা অনুভুতিটা সত্যিই অদ্ভুত।এর এক চিলতে ছোঁয়া যার মনে লাগে তার গোছানো জিবনটা ও অগাছালো হয়ে যায়।আবার কারো অগোছালো জীবন খুব সুন্দর ভাবে সেজে ওঠে।ঠোঁটের কোণে এক মুঠো হাসি এসে জমা হলো।আচ্ছা,উনি আমায় কতটা ভালোবাসেন!জানার খুব ইচ্ছে।মাঝে মাঝে মনের মধ্যে ভয়েরা জেকে বসে।উনি আমার জীবনটা গোছানোর বদলে অগোছালো করে দিয়ে যাবেন না তো।যখন কথা গুলো মনে করি তখন বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে।ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি যে উনাকে।তবে এই সব কথা ভাবার সময় এখন নয়।উনি আমাকে ওনার কেবিনে ডেকে পাঠিয়েছেন অনেকক্ষণ হলো।আমি ভাবনাতেই এতোটা বিলীন ছিলাম যে কেবিনে যাওয়ার কথাটা মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছে।আমি সামনে থাকা ফাইল টা বন্ধ করে উনার কেবিনে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।সেই মূহুর্তে চোখ পরল সামনের দুই মুর্তির দিকে।দুইজনে দুই দিকে তাকিয়ে একে অপরের দিকে হেঁটে আসছে।বুঝতে বাকি রইল না এরপর কী হবে।তাই মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবো তার আগেই তাঁদের একে ওপরের সাথে ধাক্কা লাগে।মেয়েটার হাতে থাকা সব ফাইল এলোমেলো হয়ে মেঝের ওপর ছড়িয়ে পরল।এই পুরো ঘটনায় চিত্রা যতটা না ভয় পেয়েছে তার থেকে বেশি চমকে উঠেছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তাসরিফ কে দেখে।যা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।চিত্রা তড়িঘড়ি নিজের চমক কে নিয়ন্ত্রণে এনে এক হাতে নিজের মোটা ফ্রেমের চশমাটা ঠিক করে মেঝেতে থাকা ফাইল তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরল।
“আগে তো জানতাম তুমি শুধু ঠিক মতো কথাই বলতে পারো না।কিন্তু এখন তো দেখছি ঠিক মতো চলতে ও পারো।চোখে এতো বড় চশমা টা কী লোক দেখানো পরে রেখেছ?”
তাসরিফের এমন কথায় চিত্রা হালকা মাথা তুলে তার দিকে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলে উঠল,
“স.স.সরি স্যার।আ…আর কখনো এরকম টা হ ..হবে না।”
“হুম,ঠিক করে কাজ করো।”
বলেই তাসরিফ অন্যদিকে চলে গেল।তার চলে যাওয়ার পর পরই আমি গিয়ে চিত্রার সামনে বসে তাঁকে ফাইল তুলতে সাহায্য করতে করতে বললাম,
“তুমি কি কোনো ভাবে তাসরিফ কে পছন্দ করো?”
আমার হঠাৎ করা এমন প্রশ্রে চমকে উঠল সে।তার এমন চমকানো দেখে আমিও চমকে উঠে বড় বড় চোখে তার দিকে তাকালাম।চিত্রা এদিক ওদিক একবার চোখ বুলিয়ে আমার কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
“কী করছো কী!এই কথা গুলো কেউ এতো জোড়ে বলে না কি?”
আমিও তার সাথে তাল মিলিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলাম।
“আচ্ছা,বলে না বুঝি!”
“না তো!কি বলছি কি তাহলে আমি।এই কথা গুলো যদি একবার তাসরিফ স্যারের কানে যায় না তাহলে নিশ্চিত উনি আমার গর্দান নেবেন।”
বলেই ছোট বাচ্চার মতো মুখ করে আমার দিকে তাকালো।আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
“এ মা,উনি কেন তোমার গর্দান নিতে যাবেন।”
আমার এমন কথায় এবার চিত্রা মুখ ফুলিয়ে মেঝেতেই ধপ করে বসে পরল।
“উনাকে প্রথম দেখার পর আমার মন উনার ওপর ক্র্যাশ হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু আজ অবধি মুখ ফুটে বলতেও পারলাম না।তুমি জানো,উনি কত শয়তান বিচ্ছু টাইপের লোক।বলে কি না আমি ঠিক মতো কথা বলতে পারিনা।চলতেও পারিনা।আর…আর আমায় দেখতেও নাকি বাংলা সিনেমার খলনায়িকার মতো।আচ্ছা তুমিই বলো কখনো বাংলা সিনেমায় আমার মতো দেখতে কোনো খলনায়িকা দেখেছ তুমি বলো দেখছো কখনও।তাহলে উনি কোন হিসেবে আমায় খলনায়িকা বলে বলো দেখি।আমি খলনায়িকার মতো দেখতে বলো আমি খলনায়িকার মতো দেখতে?”
কথাটা বলতে বলতেই ও আমার দিকে কিছু টা এগিয়ে এলো।আমি ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে চট জলদি না বোধক ইশারা করলাম।তা দেখে ও কাঁদো কাঁদো হয়ে আবার নিজ জায়গায় গিয়ে বসল।
“উনি আমাকে মোটেও পছন্দ করেন না।যাই করি না কেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ক্ষুদ বের করবে।কখনো কখনো ইচ্ছে হয় কি জানো ওনার মাথার চুল ধরে উনাকে কয়েক পাক ঘুরিয়ে দিই।তাতে যদি ওনার কিছু সুবুদ্ধি হয়।ব্যাটা আমার দিকে একটু ভালোবেসে তাকায় ও না।”
আমি একটা বড় সড় দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।বুঝলাম চিত্রার ভালোবাসা গভীরতা কতটা বেশি।বেচারি তো এটা বুঝতেই পারছে না যে তার বীপরীত পাশে দাঁড়িয়ে তার ক্ষুদ ধরতে থাকা লোকটার মনেও তার জন্য এক পাহাড় ভালোবাসা জমে রয়েছে।আমি খানিকটা হেসে উঠলাম।তবে এখানে বেশিক্ষণ থাকলে আমার পাগল হতে বেশি সময় লাগবে না।এই মেয়ে মূহুর্তেই তার কথার ছলে আমায় পাগল করে দিতে পারে।আমি আমার হাতে থাকা ফাইল গুলো তার হাতে দিয়ে এমন ভাব করলাম যেন তার কথায় আমি অনেক বেশি ভেঙে পড়েছি।তবে তার ট্রেন আবার চলতে শুরু করার আগেই আমি স্টেশনে নেমে পরলাম।কোনো মতে তার হাত থেকে রেহাই পেয়ে উনার কেবিনের দিকে যাবো তখনই কারোর সাথে ধাক্কা খেলাম।নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই ভয়ে আমার আত্মারাম উধাও।
চলবে❤

শূন্য অনুভূতি পর্ব-০৬

0

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”ছয়”

উনাকে এভাবে ডিমের দিকে তাকাতে দেখে আমার দারুণ হাসি পাচ্ছে।কী করতে যাচ্ছেন উনি এই ডিম নিয়ে তা দেখার জন্য উৎসুক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।এরই মাঝে রান্নাঘরের দিকে বাবাকে দেখা গেল।বাবা উনাকে রান্না ঘরে দেখে বেশ অবাক হয়েই সেদিকে এগিয়ে যান।
“সাহিত্য,তুই রান্না ঘরে কী করছিস।তোর কী কিছু লাগবে?”
বাবার প্রশ্নের জবাবে উনি মাথা নিচু করে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েই বললেন,
“না।”
“তাহলে তুই রান্নাঘরে কী করছিস?”
“সৃষ্টির মাথায় যন্ত্রণা করছে।ওর জন্য রান্না করছি।ওর বাইরের খাবার পছন্দ নয়।”
কথাটা শুনেই বার কয়েক কেশে উঠল বাবা।উনার প্রায় হার্ট ফেল করার উপক্রম।অন্যদিকে উনার মুখে এই ধরনের কথা শুনে আমার মন যেন আকাশে বাতাসে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে।ইচ্ছে করছে এখানেই সবকিছু ভুলে চিৎকার করে কাঁদি।মন খুলে কাঁদি।জানি কেন খুব বেশিই কাঁদতে ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে।অনেক কষ্টে নিজের অনুভূতি টা কে চেপে রেখে ওনার দিকে তাকালাম।বাবা নিজেকে সামলে নিয়ে ওনার দিকে কিছু টা এগিয়ে গিয়ে ফ্রাইংপেনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“আমি কী তোকে কিছু হেল্প করতে পারি?”
বাবার কথায় উনি বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“হুম।”
অনুমতি পেয়েই বাবা রান্নাঘরে ঢুকে পরলেন।অভিজ্ঞ সেফের মতো উনার হাত থেকে ডিম টা নিয়ে গ্যাসের দিকে এগোতে এগোতে বললেন,
“কী করছিস তুই?সামান্য অমলেট বানাতে এতো সময় লাগে নাকি।দেখ,আমি কি করে মূহুর্তেই অমলেট বানিয়ে ফেলি।”
কথাটা বলেই বাবা পাত্রের মধ্যে ডিম দেওয়ার জন্য তা ভাঙতে গিয়েই পুরো ডিম চুলোর ওপর ফেলে দিলেন।যা দেখে উনি ভ্রু কুঁচকে বাবার দিকে তাকালেন।বাবা আমতা আমতা করতে লাগল।
“ইয়েহ মানে,প্রথম বার তো তাই আর কি একটু খানি মিসটেক হয়ে গেল।তুই দাঁড়া আমি এক্ষুনি অমলেট বানিয়ে দিচ্ছি।”
কিন্তু পোড়া কপাল।উনি ডিম পাত্রের মধ্যে ফেলতে পারছেন না।এদের দেখে তো মনে হচ্ছে না এরা রান্নার “র” এর কাছেও কখনও ভিড়েছে বলে।
উনি বাবার অমলেট বানানোর পদ্ধতি দেখে চুপচাপ অন্যদিকে চলে গেলেন।ওখানে কি করছেন কিছুই বুঝতে পারলাম না।তবে বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে উনি অর্ধেক হাঁড়ি চাল নিয়ে এগিয়ে এলেন।এদের কাজ দেখে আমার নিজের ই নিজের চুল ছেঁড়ার ইচ্ছে করছে।এরা তো এটাও জানে না যে চাল বাড়ন্ত।এরা তো ভাতের সমান চাল দিয়ে দিয়েছে।এদের কর্মকাণ্ড দেখে এক মূহুর্তের জন্য আমার মনে হচ্ছে দৌড়ে গিয়ে নিজের রান্না ঘর টা কে এদের হাত থেকে রক্ষা করি।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো,থাক না দুই বাবা ছেলে কিছু মূহুর্তের জন্য এক সাথে।সময় টা কাটতে লাগল।ওরা নিজেদের মতো রান্নার কাজ চালিয়েই যাচ্ছে।অনেক চেষ্টার পর বাবা পাত্রের ওপর ডিম ফেলতে পেরেছে।এতেই যেন বাবা নিজেকে চ্যাম্পিয়ন ভেবে বসে আছে।অন্য হাঁড়ি ভর্তি ভাত উথলে ওঠে চারিদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরছে।অনেক হয়েছে আর না।নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না।সিঁড়ি বেয়ে নেমে আমি তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দিকে এগোলাম।আমাকে দেখেই বাবা উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন,
“আরে,সৃষ্টি মা!তোমার মাথার যন্ত্রণা এখন কেমন আছে?”
“ভালো বাবা,তবে আপনাদের কী রান্নাটা হলো?”
দুই হাত বুকের ওপর বেঁধে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম।আমার কথায় বাবা ফুল পাওয়ারে বলে উঠলেন,
“হ্যাঁ হ্যাঁ হয়ে গেছে রান্না।তবে বুঝতে পারছি না অমলেট টা এমন মিষ্টি মিষ্টি করছে কেন?”
“কারণ আপনি অমলেটে নুনের জায়গায় চিনি দিয়েছেন।”
চিনির বোয়ামটা হাতে নিয়ে কিছু টা রাগী কণ্ঠে কথা বললাম।আমার কথায় বাবার হালকা জিহ্বায় কামড় দিলেন।
“ওহ,তাই না কি।আমি ঠিক খেয়াল করিনি…..আমি বরং এখন আসি কেমন।”
কথাটা বলেই উনি মানে মানে রান্নাঘর থেকে কেটে পরলেন।বাবা চলে যেতেই আমি ওনার দিকে তাকালাম।উনি বাবার যাওয়ার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছেন।তা দেখে আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
“আপনাকে কী এখন ইনভিটেশন দিতে হলে এখান থেকে থেকে যাওয়ার জন্য।”
আমার হঠাৎ এমন চেচানোয় উনি চট করে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।আমি দুই হাত কোমরে রেখে ছোট ছোট চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি কিছু মূহুর্ত আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ই বলে উঠলেন,
“যাচ্ছি,এতো চেচানোর কী আছে!”
কথাটা বলেই উনি এদিক ওদিক তাকিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।উনি যেতেই আমি রান্নাঘরের অবস্থার দিকে খেয়াল করলাম।এতো যেন পুরো একটা ডাস্টবিনে পরিণত হয়ে গেছে।আমি সময় নষ্ট না করে চুলো থেকে ভাত নামিয়ে অনেক টা সময় নিয়ে পুরো জায়গাটা পরিষ্কার করে দিলাম।তারপর তিনজনের জন্য ডিমের অমলেট বানিয়ে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গিয়ে সব সাজিয়ে রেখে নিজের চেয়ার টেনে বসে পরলাম।উনি সোফায় বসে ফোনের মধ্যে মুখ গুঁজে রেখেছেন।আর তার ঠিক বীপরীত পাশে বাবা বসে সকালের পড়া পেপারে চোখ বোলাচ্ছেন।এদের এসব কর্মকাণ্ড এই মূহুর্তে আমার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।তাই কিছুটা উঁচু স্বরে বলে উঠলাম,
“কী হলো কেউ কি খেতে আসবে না নাকি?”
আমার কথায় বাবা চট করে সোফা ছেড়ে এসে নিজের চেয়ারে বসে চুপচাপ খেতে লাগলেন।আর উনি সোফা থেকে উঠে সোজা নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই আমি বলে উঠলাম,
“একি কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
আমার কথায় কিছু মূহুর্তের জন্য থমকে গিয়ে একবার আমার দিকে আরেকবার বাবার দিকে তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে বলে উঠলেন,
“নিজের ঘরে।”
বলে চলে যেতে নিলেই আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
“আপনি চলে গেলে আমায় খাইয়ে দেবে কে?”
কথাটা শুনেই বাবার নাকে মুখে উঠে কাশতে লাগলেন।আমি তাড়াতাড়ি বাবার দিকে পানি এগিয়ে দিলাম।আর উনি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আস্ফুট কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“হোয়াট!”
চলবে❤

শূন্য অনুভূতি পর্ব-০৫

0

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”পাঁচ”

“নিজেকে এতটা ইমপোর্টেন্ট কেন ভাবো তুমি?তুমি এটা কী করে ভেবে নিলে যে তুমি আমার সামনে ওই ছেলের গায়ে ঢলে পরলে আমি রেগে যাবো।তা দেখে আমি জেলাস ফিল করবো।লাইক সিরিয়াসলি?কে তুমি হ্যা?হু আর ইউ?নাথিং।তুমি আমার জীবনে কোনো ইমপোটেন্স ই রাখো না।তাই তুমি করা ওপর ঢলে পড়ছো না পড়ছো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না…..”
উনি সেই তখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছেন।উনার কথা গুলো শুনে আমার খারাপ লাগা প্রয়োজন।কিন্তু আমার মোটেও খারাপ লাগছে না।আমি হয়তো এই কথা গুলোই আশা করেছিলাম ওনার কাছে।তাই খারাপ লাগাটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে।তবে হাতের ব্যথা টা নিয়ন্ত্রণে নেই।সেই কখন থেকে উনি আমার হাত মুচড়ে ধরে আছেন।বার বার দাঁতে দাঁত চেপে কথা বলতে বলতে মোচড়ানো হাত আরো শক্ত করে ধরছেন।যার দরুণ ব্যথায় আমার প্রাণ যায় যায়।কি করবো না করবো কিছুই বুঝতে না পেরে উনার বুকে আলতো করে নিজের মাথা রাখলাম।আমার এমন কাজে উনি খানিকটা ভড়কে গেলেন।কিছুক্ষণের জন্য কথা বলা বন্ধ করে দম ধরে রইলেন।উনার ঘন হয়ে আসা হৃদস্পন্দন আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।ইচ্ছে করছে দুই হাতে ওনাকে জড়িয়ে ধরে সারাজীবন এই স্পন্দন শুনে যাই।কিন্তু উপায় নেই।উনি আমার এক হাত এখনো মুচড়ে ধরে রয়েছেন।যদিও এখন বাঁধন একটু হাল্কা হয়ে এসেছে।তবে যদি বেশিক্ষণ এভাবে থাকি তবে যে এই বাঁধন দ্বিতীয় বার মজবুত হবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই।তাই উনার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য উনার বুকে মাথা রেখে গোমড়া মুখে বলে উঠলাম,
“জানেন,আজ বিকেল থেকে আমার মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে।ভেবেছিলাম বাড়ি এসে একটু রেস্ট নেব কিন্তু দেখুন,বাড়িতে এসে সেই আপনি বকাঝকা শুরু করলেন।আমিও তো মানুষ।আমার কী খারাপ লাগে না বলুন।”
উনি এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন।তার সুযোগ নিয়ে আমি আরো বলে উঠলাম,
“শুনুন না,বলছি কি আজ একটু কম বকলে হয় না?কাল নাহয় আজকের টা মিলিয়ে শুনে নেব কেমন?”
কথাটা বলেই হাতের বাঁধন হালকা পেয়ে উনার কাছ থেকে সরে এলাম।আমাকে এভাবে সরে আসতে দেখে উনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি ওখান থেকে কেটে পরলাম।নিজের ঘরে এসে বেডের ওপর থেকে ব্যাগ নিয়ে কাবার্ডের দিকে এগোলাম এমন সময়,
“তোমার মাথায় কী খুব বেশি যন্ত্রণা করছে?”
কথাটা শুনেই আমার হাত থেকে ব্যাগ টা পড়ে গেল।অবাক চোখে ওনার দিকে তাকালাম।আচ্ছা আমি কী ভুল শুনলাম।”উনি আমাকে নিয়ে চিন্তিত” কথাটা ভাবতেই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল।মূহুর্তেই চোখ ছলছল করে উঠল।এরই মাঝে উনি আবার ও বলে উঠলেন,
“কী হলো,মাথায় কী খুব বেশিই যন্ত্রণা করছে?”
উনার কথায় আমার ভাবনার ছেদ ঘটল।উনার মুখ খানা কেমন জানি মূহুর্তেই শুকিয়ে গেছে।উনার মুখের দিকে তাকিয়ে কী বলবো কিছু বুঝতে না পেরে তাড়াহুড়ো করে পড়ে থাকা ব্যাগ টা উঠিয়ে কাবার্ডে রাখতে রাখতে বলে উঠলাম,
“হ্যাঁ তো,খুব যন্ত্রণা করছে মাথাটা।যন্ত্রণায় তো দাঁড়িয়েই থাকতে পারছি না।”
“তাহলে শুয়ে রেস্ট নাও এভাবে লাফিয়ে বেড়াচ্ছো কেন?”
উনার কথায় আমি চট করে গিয়ে বেডের ওপর শুয়ে মাথায় হাত দিয়ে গোঙাতে লাগলাম।
আমাকে এভাবে গোঙাতে দেখে উনি ড্রয়ারে থাকা ফাস্ট-এইড বক্স আনতে লাগল।তা দেখে আমি লাফিয়ে উঠলাম।
“খালি পেটে ঔষধ খাবো কী করে!”
আমার কথায় উনি ওখানেই দাঁড়িয়ে পরলেন।
“বাড়িতে তো কিছু রান্না করা নেই।আর আমি তো এই অবস্থায় মোটেও রান্না করতে পারবো না।এখন কী করবো?”
আমার কথায় উনি ফাস্ট-এইড বক্স রেখে নিজের ফোন বের করলেন।
“খাবার অর্ডার দিচ্ছেন?আমি কিন্তু ও সব খাবার খাবো না।বাইরের খাবার আমার মোটেও রুচে না।”
আমার এমন কথায় এবার হয়তো উনি কিছু টা রেগে গেলেন।
“বাইরের খাবার খাবে না তো এখন কী খাবে?আর না খেলে মেডিসিন নিবে কি করে?”
“কেন আমি নাহয় রান্না করতে পারবো না কিন্তু আপনি তো পারেন।”
“হোয়াট?আমি আর রান্না!”
“কেন,বউয়ের জন্য এতটুকু করতে পারবেন না।”
কথাটা বলেই ইনোসেন্ট মার্কা চেহারা নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার কথা শুনে রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।আর আমি অসহায় এর মতো বসে রইলাম।এখন যদি আমি মাথা ব্যথার বাহানা নিয়ে বসে থাকি তাহলে আর রাতে কারোর মুখের খাবার জুটবে না।বাবাকেও না খেয়ে থাকতে হবে।কথাটা ভেবেই আমি বেড থেকে নামতে যাবো তখন বাইরে থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ কানে এলো।শব্দ টা উৎস খুঁজতে আমি চট জলদি ঘর থেকে বেরিয়ে উপর থেকে নিচে বসার ঘরে তাকাতেই আমি থ মেরে গেলাম।বসার ঘরের সাথেই রান্নাঘর।উপর থেকে রান্না ঘর খুব সহজেই দেখা যাচ্ছে।কিছুক্ষণ এর জন্য মনে হলো আমি স্বপ্ন দেখছি।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো “না এ স্বপ্ন নয়।এটা সত্যি।”উনি আমার জন্য রান্না করতে গেছেন।বুক ফেটে কান্না বেরোনোর উপক্রম।বলে কী না উনার জীবনে আমার কোনো ইমপোটেন্সি নেই।হুহ,তার নমুনা তো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি।চোখের জলটা মুছে উনার দিকে তাকালাম।উনি প্রায় অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে ফ্রাইংপেন নিয়ে চুলোর ওপর বসালেন।তারপর আবার অনেক খোঁজা খুজির পর কিছু ডিম বের করে হাতে নিয়ে এদিক ওদিক করে সেটা দেখতে লাগল।
চলবে❤

শূন্য অনুভূতি পর্ব-০৪

0

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”চার”

আজ অনেক দিন পর এই অফিসে পা রাখলাম।না,আজ আর বাবার জন্য টিফিন নিয়ে আসিনি।বাবা অনেকদিন আগেই এই কোম্পানির জব ছেড়ে দিয়েছে।উনার ভাষ্যমতে,উনি নিজের মেয়ে জামাইয়ের আন্ডারে থেকে নিজের সংসার চালাতে পারবেন না।উনার সম্মান বলেও তো কিছু একটা আছে।আর এখন দিনরাত ফাইফরমাস খেটে নিজের সংসার চালান।আমার ভাই নেই যে সে ভ
এই সংসারের হাল ধরবে।তাই আজ আমি মেয়ে হয়ে উনার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এই সময় যদি আমি বাবার পাশে দাঁড়াতে না পারি তো এতদিন যে এতো কষ্ট করে আমায় শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুললেন তার সব জল মাটি কাদা হয়ে যাবে।আর আমিই বা সেটা কি করে হতে দিই?আর তার থেকে ও বড় কথা নিজের স্বামী কে চোখে চোখে রাখার এই সুবর্ণ সুযোগ টা আমি মোটেও ছাড়তে চাই না ।তাই তো উনাকে কিছু না জানিয়ে আমার শশুড় মশাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আজ থেকে অফিস জয়েন করছি।আমি জানি উনি আমায় অফিসে দেখেই রেগে যাবেন।যেই লোকটা আমায় বাড়িতেই সহ্য করতে পারে না সে আবার অফিসে কী করে সহ্য করবে আমায়।তবে উনার কিছু পারা না পারাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।আমি যেই কাজ করতে এসেছি তা করেই দম নেব।নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।
.
.
.
.
.
অফিসের ভেতরে ঢুকতেই আমি সোজা এম ডির কেবিনে চলে গেলাম।
“মে আই কাম ইন স্যার?”
“ইয়েস কাম ইন।”
ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আনমনে কথাটা বলেই কিছু একটা ভেবে চট করেই আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন।উনার এমন কাজে আমার ভীষণ হাসি পেলেও তা মনে প্রাণে দমিয়ে উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
“হোয়াট ননসেন্স!তুমি আমার অফিসে কী করছো?”
দাঁতে দাঁত চেপে হিসিহিসিয়ে কথাটা আমার দিকে ছুড়ে দিলেন উনি।
“হা-ডু-ডু খেলতে।খেলবেন আপনি?”
“হোয়াট দ্যা…”
আমার এমন জবাবে উনি কিছু রেগে গিয়ে ই নিজের চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালেন।তবে আমি ওনার রাগ সম্পূর্ণ ভাবে ইগনোর করে বলে উঠলাম,
“তা নয়তো কী!অফিসে মানুষ কি করতে আসে শুনি।”
“তোমার এসব ইললোজিক্যাল কথা শোনার মতো সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই আমার নেই।তাই ভালোভাবে বলছি বেরিয়ে যাও আমার অফিস থেকে।”
“আচ্ছা,আপনি কী আপনার সব স্টাফ দের সাথেই এরকম ব্যবহার করেন?”
আমার কথা উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি উনার সামনে আমার জয়েনিং লেটার এগিয়ে দিলাম।উনি কিছুটা অবাক হয়ে লেটার টা হাতে নিতেই আমি বলে উঠলাম,
“এখানে আমি আপনার বউ নই ওকে।আমি একজন এপ্লোয়ার।সো আমার সাথে এরকম ব্যবহার নোট এলাও ওকে না!”
আমার কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ওনার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে “ডেড”শব্দ টা বেরিয়ে।সাথে চোখে মুখে রাগে আভাসটাও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।যা দেখে আমি কোনোরকম নিজের হাসি আটকে ইনোসেন্ট মার্কা চেহারা বানিয়ে বলে উঠলাম,
“এখন তাহলে আসি স্যার কেমন।”
কথাটা বলে কোনো মতে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম।উফ বাবা,এ তো দেখি জলন্ত অগ্নি কাণ্ড।আজ অনেক বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছি।জানি না বাড়ি গিয়ে আমার অবস্থা কী হতে চলেছে।তবে যা হলে সব বাড়ি গিয়ে হবে এই মূহুর্তে আমি আমার কেবিন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
“আপনি ই কী মিসেস সৃষ্টি চৌধুরি?”
হঠাৎ কারো মুখে নিজের নাম শুনে পেছনে ফিরে তাকালাম।আমার থেকে কিছুটা দূরেই একটা সুদর্শন তরুণ আমার দিকে হাল্কা হেসে তাকিয়ে আছে।
“জ্বী,কিন্তু আপনি?”
আমার কথায় ছেলেটা আমার দিকে কয়েক কদম এগিয়ে এলো।
“আমি তাসরিফ।সাহিত্য স্যারের সেক্রেটারি।আজ সকালে নিয়াজ স্যার আমায় ফোন করে আপনার কথা জানালেন।আপনাকে আপনার কাজ বুঝিয়ে দেওয়া এবং আপনার প্রয়োজন অপ্রয়োজন সব আমার দায়িত্বে থাকছে।”
উনার শুনে কথা শুনে আমি হালকা হেসে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার নজর পরল উনার কেবিনের দিকে।উনি কাচের দেয়াল ভেদ করে আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছেন।আমাকে উনার দিকে তাকাতে দেখে এমন ভাব করলেন যেন উনি উনার কাজে খুব ব্যস্ত রয়েছে।সেদিনের ফোন ভাঙার ঘটনা টার পর আজ আমার এটা বুঝতে মোটেও সময় লাগল না যে উনি আমাদের এভাবে কেন দেখেছেন।আচ্ছা লোকটা যদি আমায় ভালোইবাসেন তাহলে তা প্রকাশ করছেন না কেন?এইভাবে সবসময় আমায় কষ্ট দিয়ে কেন কথা বলে।নিজের ভাবনার মাঝেই বিলিন আমি তাসরিফ এর কথায় কিছু টা চমকে উঠলাম।
“হ্যালো ম্যাডাম,কী এতো ভাবছেন আপনি?চলুন আপনাকে আপনার কেবিনে দেখিয়ে দিই।”
কথাটা বলে উনি সামনে এগোতেই অফিসের এক স্টাফ এসে জানালো,তাঁকে নাকি সাহিত্য স্যার ডাকছেন।যার কারণে উনি আমায় কেবিনে পৌছে দিতে পারলেন না।তবে তার হদিশ আমায় দিয়ে গেলেন।উনি চলে যেতেই আমি আমার কেবিনের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ ই কারো সাথে ধাক্কা লাগে।
“সরি সরি।”
কথা বলে সামনে তাকাতেই দেখি মধ্যবয়স্ক এক মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আমাকে তাকাতে দেখে উনি এক গাল হেসে বলে উঠলেন,
“তুমিই কী সাহিত্যের স্ত্রী?”
“জ্বী!”
“ওহ,আমি এই অফিসে একাউন্টিং ম্যানেজার।আর তোমার শশুড় মশাইয়ের খুব ভালো বন্ধুও।”
“ওহ,ভালো লাগল আপনার সাথে দেখা হয়ে।”
“ওকে,আমি একটু পর তোমার সাথে আবার দেখা করছি এই মূহুর্তে আমার কিছু কাজ আছে গো বায়।”
কথা টা বলেই তাড়াহুড়ো করে উনি চলে গেলেন।আর আমি আমার কেবিনের দিকে।আজ প্রথম দিন হওয়ায় তেমন কোনো কাজ নেই আমার।তাই তো উনাকে একটু রাগিয়ে দেওয়ার অজুহাতে বারবার তাসরিফের কাছে যাচ্ছি কাজ বুঝিয়ে নেওয়ার অজুহাতে।আর খুব ভালো ভাবেই বুঝতেই পারলাম যে,উনি আমার এমন কাজে আসলেই কতটা রেগে গেছেন।সারাটা দিন এভাবেই কেটে গেল।আমি একবারের জন্যে ও উনার কাছে যাইনি।তবে ভেবেছিলাম দুজনে একসাথে বাড়ি ফিরবো।কিন্তু ভাগ্য ততটাও ভালো নয়।উনি অনেক আগেই বাড়ি ফিরে গেছেন।যার কারণে আমায় টেক্সি ভাড়া করে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
.
.
.
.
.
বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে ঢুকতেই বুঝলাম উনি ঘরে নেই।গেলেন কোথায়?এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি উনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্মোক করছেন।উনি স্মোক ও করেন।আগে তো জানতাম না।নিজের ব্যাগ টা কাঁধ থেকে নামিয়ে শেডের ওপর রেখে আমি ও বারান্দার দিকে অগ্রসর হলাম।
“আপনি আমাকে না নিয়ে চলে এলেন কেন।আমাকে নিয়ে আসতেই পারতেন।জানেন কতক্ষণ ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম (ডাহা মিথ্যে কথা)।”
ওনার পেছনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বললাম ঠিক ই কিন্তু উনার কোনো হেলদোল হলো না।তাই বাধ্য হয়ে ওনার দিকে আরেকটু গিয়ে উনার সামনে এক হাত নাড়াচাড়া করতে করতে বলতে লাগলাম,
“কী হলো,আপনার ধ্যান কোথায় রয়েছে?”
তবে কথাটা শেষ করতে পারলাম না।তার আগেই উনি আমার হাত ধরে হেচকা টানে তা আমার পেছনে মুচড়ে ধরে আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে নেন।আমি সাথে সাথে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম।
চলবে

শূন্য অনুভূতি পর্ব-০৩

0

শূন্য_অনুভূতি
রোকসানা_ইয়াসমিন
পার্ট:”তিন”

আমার এমন কাজে উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন।
“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ!”
“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ!এই কথাটা তো আমার বলার প্রয়োজন ছিল তাই নয় কী।ওই ফোনটা আপনার টাকায় কেনা ছিল না যে যখন ইচ্ছে আছাড় মেরে ভেঙে দেবেন।আপনার সাহস হলো কি করে আমার ফোন ভাঙাআআ………”
আমার কড়া গলায় বলা কথা গুলোয় উনি হয়তো একটু বেশি ই রেগে গেছেন।যার কারণে উনি চোখ মুখ শক্ত করে হঠাৎ করেই আমার দিকে দুই পা এগিয়ে এলেন।উনার এমন আচমকা এগিয়ে আসায় ভয় পেয়ে আমি দুই পা পেছতেই টাল সামলাতে না পেরে বেডের ওপর ধপ করে বসে পড়লাম।আর উনি উনার এক পা আমার পাশে বেডের ওপর রেখে তাতে এক হাত রেখে আমার দিকে ঝুকে দাঁড়ালেন।উনাকে এভাবে কাছে আসতে দেখে ভয়ে আমার আত্মারাম হাওয়া হওয়ার পালা।কিন্তু আমার এই ভয়টা কে উনি সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করে দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“ফোন ভেঙেছে বলে এতটা কষ্ট পাচ্ছো নাকি ফোনের ওপাশে থাকা তোমার ওই সো ক কোল্ড বয়ফ্রেন্ডের জন্য।”
ওনার এমন দিকহীন কথায় আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি বলছেন উনি এসব।আমার বয়ফ্রেন্ড!এটা আবার কোথা থেকে উদয় হলো।আর উনিই বা এই বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে কোথা থেকে জানতে পারলেন।এবার আমার মাথা বৃত্তাকার ঘুরতে লাগল।হয় উনি পাগল হয়ে গেছেন নয়তো আমায় পাগল বানাচ্ছেন।আমার বয়ফ্রেন্ড অথচ আমি নিজেই তার কথা মনে করতে পারছি না।এ কেমন ধরনের কথা।
এ ধরনের হাজার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাওয়ার পর হঠাৎ আমার মনে হলো শরীফের কথা।আমার ক্লাসমেট ছিল।মায়ের সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ আগেই আমার তার সাথে কথ হলো।আমার এমন হঠাৎ বিয়ে হওয়া কারণ কী তা জানার জন্য ও নিজেই আমায় ফোন দিয়েছিল।কিন্তু ওর কথা ইনি জানলেন কী করে।জানার তো কথা নয়।আমি অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।উনি ইতিমধ্যেই আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে বেডের ওপর ল্যাপচপ নিয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন।ধুর,এই লোকটার মাথা মুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারি না।উনি শরীফের কথা কী করে জানলেন?আর আর যদি জানেন ও তাতে উনার কী।উনি তো আর আমায় ভালোবাসেন না যে আমার বয়ফ্রেন্ড থাকলে উনার জ্বলবে।তবে যদি ভালোই না বাসেন তাহলে বিয়ে করলেন কেন আমায়!এবার আমি সত্যি পাগল হয়ে যাবো।কনফিউশনের ওপর কনফিউশন তার ওপর আরেক কনফিউশন।ধুর,ভাল লাগে না।কিছুটা বিরক্তি নিয়েই কিছু না বলে উনার পাশেই কাঁথা মুড়ি নিয়ে শুয়ে পড়লাম।মাথা ঠিক থাকলে কাল সকালে দেখা হবে।
.
.
.
.
.
পরের দিন সকাল সকাল ই আমি নিজ হাতে ব্রেকফাস্ট বানালাম।এর আগে কখনও বানানো হয় নি।তাতে কী হয়েছে এখন থেকে বানাবো।নিজের শখের ব্রেকফাস্ট টেবিলে গুছিয়ে রেখে নিজের ঘরে চলে গেলাম।ঘরে ঢুকে উনাকে দেখতেই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল।এই লোকটা দিন দিন আরো বেশি জেন্টলম্যান হয়ে উঠছে।আমি সিওর অফিসের সব মেয়েরাই উনাকে চোখ দিয়েই গিলে খায়।কথাটা ভাবতেই নিজের ভেতরে হাজার রাগের কীট জন্ম নিতে লাগল।আমি আর এক মূহুর্ত ও দাঁড়িয়ে না থেকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে থাকা উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।আমাকে এভাবে দাড়াতে দেখে উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন।হুহ্ তাতে আমার কী?আমি উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুই পায়ে উঁচু হয়ে দাড়িয়ে উনার চুল এলোমেলো করে দিলাম।ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার থেকে লিপস্টিক বের করে উনার সাদা শার্টের বিভিনাংশে দাগ কেটে দিলাম।আমার এমন কাজে রাক্ষসটা ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে উঠলেন,
“এসবের মানে কী?”
“বারে প্রতিদিন তো একদম ফিটফাট হয়ে অফিসে যান।আজ একটা দিন না হয় এভাবেই গেলেন।”
আমার এমন কথায় উনি আরো দ্বিগুণ রেগে আমার দিকে এগোবেন তার আগেই আমি চট করে বলে বসলাম,
“আর হ্যা,আজ কিন্তু বাড়িতেই খেয়ে যাবেন।আমি নিজ হাতে আপনার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি।”
আমি কথাটা বলেই মানে মানে উনার পাশ কাটিয়ে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই উনি হেচকা টানে আমার এক হাত পেছনে মুচড়ে ধরে আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।হঠাৎ এমন হওয়ায় ঘটনা বুঝতে আমার প্রায় কয়েক সেকেন্ড লাগল।পেছনে হাত মুচড়ে ধরার কারণে আমি ব্যথায় কুকুড়ে উঠে উনার দিকে তাকালাম।উনার চোখ মুখ প্রায় লাল হয়ে এসে এসেছে।যা দেখে আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম।এরই মাঝে উনি আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে দাঁতে দাত চেপে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“দুই দিন হলো এ বাড়িতে এসেছ।আর তুমি আমার ওপর হুকুম জারি করছো?নিজের সীমার মধ্যে থাকার চেষ্টা করো যদি তা পার হয়ে যাও তো তার ফলাফল তোমার জন্য খুব একটা ভালো হবে না।মাইন্ড ইট।”
কথা গুলো বলেই উনি আমায় ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আর আমি অশ্রু শিক্ত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।যদি আমায় আমার অধিকার টা নাই তাহলে বিয়ে করলেন কেন আমায়।কেন সব কিছু ধোঁয়াশার মাঝে রাখছেন উনি।হঠাৎ আমায় এভাবে বিয়ে করার মানে কী?আর এসব ব্যবহারেই বা কারণ কী?তবে যাই হোক না কেন?যতই কড়া গলায় আমায় কথা শুনিয়ে যাক,গেল তো সেই আমার করা ডিজাইনার ড্রেস টাই।ভাবতেই ফিক করে হেসে দিলাম।
চলবে💞

শূন্য অনুভূতি পর্ব-০২

0

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”দুই”

ঠোঁট কামড়ে ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করতে করতে পিট পিট চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি ভ্রু কুঁচকে শান্ত দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ডানে বামে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে ভ্যা ভ্যা করে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলাম।আমার এমন কাণ্ডে উনার কুচকানো ভ্রু আরো বেশি কুঁচকে গেল।হাতের বাধন হালকা করে বলে উঠলেন,
“হোয়াট রাবিশ!”
উনার এই দৃঢ় কণ্ঠে বলা কথাটায় আমি কোনোরকম গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতোই কেদে গেলাম।কাঁদতে কাঁদতেই এক সময় হাঁটু ভাঁজ করে মেঝেতে বসে পরলাম।আমাকে বসতে দেখে উনি হাত ছেড়ে আমার সাথে সাথেই মাটিতে হাঁটু না লাগিয়ে আমার সামনেই বসলেন।উনার চোখে এই মূহুর্তে “কি হচ্ছে এসব”এরকম টাইপের কিছু একটা ফুটে উঠেছে।আমি উনার দিকে নজর না দিয়ে ন্যাকা কান্না কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠলাম,
“আপনি খুব খারাপ।খুব খারাপ একটা মানুষ আপনি।কোথায় এ বাড়িতে আমি নতুন এসেছি,উনি আমার আদর আপ্যায়ন করবেন তা না সেই তখন থেকে শুধু খেই খেই করেই চলেছে।ধুর ভাল লাগে না।আপনার সাথে কোনো কথা নেই।যান তো যান এখান থেকে।”
কথাটা বলে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি একনজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।ঠিক আমার দিকে নয় আমার ঠোঁটের দিকে।ব্যাপার টা বুঝতে পেরেই আমি চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে উঠলাম,
“এই কী দেখছেন কী আপনি হ্যা!”
কথাটা বলেই আমি দেয়ালের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিলাম।আমার এমন আচমকা চেঁচিয়ে ওঠায় উনি খানিকটা ভড়কে গেলেন।আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একবার ডান দিক আর একবার বাম দিকে চোখ ঘুরিয়ে আচমকা উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।উনি বেরিয়ে যেতেই আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।যাক বাবা বাঁচা গেল।রাক্ষস একটা।দেখলেই মনে হয় এই বুঝি খেয়ে ফেলবে।মনে মনে উনাকে কয়েকখানা কড়া কথা শুনিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে লাগলাম।ঠিক সেই সময় হঠাৎ করেই উনি কোথা থেকে এসে আমার এক হাত দেয়ালে চেপে ধরে অন্য হাত আমার কোমর জড়িয়ে আমায় দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিল।হঠাৎ ঘটা এই ঘটনায় আমি ভয় পেয়ে উনার বাহুর শার্ট খামচে ধরে উনার দিকে তাকালাম।কিন্তু কিছু বুঝতে পারার আগেই উনি আমার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলেন।উনার এমন কাজে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।বুকের ভেতরে হার্টবিট কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে।কী হচ্ছে এসব!স্বপ্ন দেখছি না তো!নিজের ভুল ভাঙানোর জন্য আমি একহাতে উনার বাহুতে হাল্কা চিমটি কাটলাম।এতে উনি আরো গভীর ভাবে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।সাথে সাথে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।এটা স্বপ্ন নয়!
.
.
.
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর উনি আমায় ছেড়ে আমার চোখের দিকে তাকালেন।কিন্তু পরক্ষেণেই উনি আবার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।ভাব এমন যেন এতক্ষণে উনি একটা ভ্রমের মাঝে ছিলেন।আমি থ মেরে ওখানে দাঁড়িয়ে রইলাম।এতক্ষণ যাবৎ কী ঘটে গেল তার মাথা মণ্ডু কিছুই মাথায় ঢুকলো না।আচ্ছা, লোকটা এরকম কেন?
.
.
.
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর নিজেকে স্বাভাবিক করে নিচে নামতেই জানতে পারলাম উনি না খেয়েই বেরিয়ে গেলেন।তবে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।মিঠুনের কাছ থেকে জানতে পারলাম উনি কখনো বাড়িতে খান না।বলতে গেলে বাবার সাথে বসে একসাথে খান না।মিঠুনের কথায় আমি খানিক টা অবাক ই হলাম।তবে সেই অবাক হওয়াটা বেশিক্ষণ রইল।বাবা মিঠুন এদের সাথেই গল্পে মগ্ন হয়ে গেলাম।
.
.
.
.
.
রাত প্রায় আট টা বাজে।মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছিলাম এমন সময় উনি অফিস থেকে ফিরলেন।কোনো কথা না বলে ল্যাপটপ বেডের ওপর রেখে নিজের মতো নিয়ে তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।আমি আর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মায়ের সাথে কথায় মনোযোগী হলাম।বেশ কিছুক্ষণ পর উনি স্নান শেষে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন।খালি গায়ে তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।উনাকে এই অবস্থায় দেখে এক মূহুর্তের জন্য আমার দম আটকে গেল।এই লোকটা আমায় খুন করবে নাকি?যখনই দেখি তখনই বুকের ভেতরটা কেমন যেন এলোমেলো অগোছালো হয়ে যায়।আমি অনেক কষ্টে নিজের অনুভুতিটা দমিয়ে উনার দিকে এগিয়ে গেলাম,
“হুম,মা আপনার সাথে কথা বলতে চান।”
হাতের ফোনটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।কথাটার শেষ হতেই উনি আমার হাত থেকে ফোনটা নিলেন।কিন্তু পরক্ষণেই কিছু ভাঙার শব্দে আমি চট করে নিচের দিকে তাকালাম।আমার ফোন ভেঙে পড়ে আছে।চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার পাশ কাটিয়ে বেডের দিকে চলে গেলেন।ভাব এমন যেন কিছুই হয় নি।উনার এই এটিটিউডে আমার পুরো গা জ্বলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে গেল।সাথেই যেন বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে লাগল নিজের অতি প্রিয় এই ফোন টার জন্য।ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো হয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি বেডের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের ফোনের পাওয়ার অন করছেন।ব্যাটা আমার ফোন ভেঙে এখন নিজের ফোনের মজা লুটছে।লুটাচ্ছি মজা তোকে।আমি রাগে গটগট করে গিয়ে উনার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিতে যাবো তখনই উনি হাত সরিয়ে নিলেন।আর আমি উনার সামনের গিয়ে পড়লাম।
চলবে💞

শূন্য অনুভূতি পর্ব-০১

0

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”এক”

পুরো বিয়ে বাড়ি স্তব্ধ হয়ে রয়েছে।আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অতিমাত্রায় সুদর্শন এই লোকটার কথায় আমার মাথা পুরো হ্যাং মেরেছে।আচ্ছা,এই লোকটার মাথা খারাপ টাইপ কোনো ওসুখ নেই তো?নয়তো একটা অজানা অচেনা মেয়েকে হঠাৎ কেউ কেন বিয়ের প্রস্তাব দেবে তাও আবার এভাবে।আমি অবাক করা দৃষ্টি উনার দিক থেকে সরিয়ে বাবার দিকে নিয়ে গেলাম।বাবাও অবাক চোখে লোকটার দিকেই তাকিয়ে আছে।শুধু বাবাই নয় বিয়ে বাড়ি সবাই উনার দিকেই তাকিয়ে আছে।লোকটা আমার বাবার অফিসের এমডি সাহিত্য চৌধুরি।বার কয়েক বাবাকে টিফিন দিতে গিয়ে উনার সামনে পরতে হয়েছে আমায়।যতবার ই উনার সামনে পরেছি ততবারই একটা দমবন্ধ কর অনুভুতির শিকার হয়েছি আমি।জানি না কেন?তবে যখনই উনাকে দেখতাম বুকের ভেতরটা কেমন যেন ধক করে উঠতো।কিন্তু উনি প্রতি বার স্বাভাবিক ছিলেন।উনার ব্যবহারে কখনো এমন কিছু প্রকাশ পায়নি যার কারণে আজ তার হঠাৎ দেওয়া এই প্রস্তাবটা আমার কাছে যৌক্তিক বলে মনে হতে পারে।না উনি আমার সম্পর্কে কিছু জানেন নাই আমি উনার সম্পর্কে বেশি কিছু জানি।আমাদের মাঝে কখনো কোনো কথা পর্যন্ত হয়নি।তাহলে হঠাৎ এমন কি হলো যার কারণে উনি আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।আমার এসব ভাবনার মাঝেই বাবা উনার দিকে কিছু টা এগিয়ে গেলেন,
“স্যার,এসব কি বলছেন আপনি?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
এবার সাহিত্য চৌধুরি আমার বাবার দিকে তাকালেন।
“বুঝতে না পারার মতো তো কিছু ঘটে নি মি. রায়হান।আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।এক্ষুনি আর এই মূহুর্তে।”
আমার বুকটা ধক করে উঠল।আমি নিশ্চিত এই লোকটার মাথা খারাপ আছে নয়তো এরকম কথা কেউ বলে।আমি অসহায় দৃষ্টিতে আমার বাবার দিকে তাকালাম।বুঝতে পারলাম না বাবার মাথায় কী চলছে!কিন্তু শেষমেষ আমার বড় বোনের সাথে সাথেই উনার সাথে আমার বিয়েটাও সম্পন্ন হলো।
.
.
.
.
.
বাসর ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।আজ যা ঘটল বা ঘটে চলেছে তা সত্যি ই একটা স্বপ্নের মতো।আচ্ছা,আমি স্বপ্ন দেখছি না তো!নিজের ভ্রম কাটানোর জন্য নিজেই নিজের হাতে চিমটি কেটেই ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম।ঠিক সেই সময়েই দরজা খোলার শব্দে চট করে পেছনে ফিরে তাকালাম।উনি দরজা লাগিয়ে সোজা কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলেন।উনার ভাব দেখে এমন মনে হচ্ছে যেন এই ঘরে আমি নামক কোনো অস্তিত্বই নেই।উনার এমন ভাব আমার মাঝে রাগের মাত্রা দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে গেল।নিজেকে আটকাতে না পেরে সশব্দে উনার দিকে এগিয়ে গেলাম।
“এসবের মানে কী মি.সাহিত্য চৌধুরি?হঠাৎ এভাবে অচেনা অজানা মেয়ে কে বিয়ে করার কোনো গুরুপ্ত পূর্ণ কারণ আছে কী?”
আমার এমন ঝাঁঝালো কণ্ঠে ও উনার মাঝে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটল না।উনি এক মূহুর্তের জন্য থমকে গিয়ে আবার নিজের মতো করে কাবার্ডের দিকে মনোযোগ দিলেন।উনার এমন কাজে এবার আমার নিজের চুল নিজেই ছেঁড়ার মতো অবস্থা হলো।নিজের রাগ যথাসম্ভব দমিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আবার বলে উঠলাম,
“কী হলো,কিছু বলছেন না কেন?হঠাৎ করে কেন এভাবে বিয়ে করলেন আপনি আমাকে?”
এবার আমার কথায় উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন।উনার এই তাকানোর মাঝে না জানি কী আছে মূহুর্তে ই বুকের ধুকপুকানি হাজার গুণে বেড়ে গেল।উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে তার সুমধুর গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“তার কৈফিয়ত আমি তোমাকে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না।”
কথাটা বলেই উনি কাবার্ড থেকে তাওয়াল বের করে কাবার্ড লাগিয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলেন।উনার এমন জবাবে আমার মাথার রক্ত টগবগ করতে লাগল।আমি আর এক মূহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে চট করে গিয়ে উনার সামনে দুই হাত ছড়িয়ে পথ আটকে দাড়ালাম।
“কৈফিয়ত চাইছি না আপনার কাছে।আমি শুধু জানতে চাই হঠাৎ এভাবে আমাকে বিয়ের করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ টা কী।আর এটা জানার অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে।”
আমার কথায় এবার উনি রেগে গিয়ে চট করে আমার দিকে দুই পা এগিয়ে এসে ডান হাত আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।হঠাৎ উনার এমন কাজে আমি কিছু ভয়ে পেয়েই পাশ ফিরে কাবার্ডের সাথে মিশে যাই।উনি উনার এক হাত আমার কাঁধের উপর দিয়ে কাবার্ডে রেখে আমার খুব কাছে চলে এলেন।ভয়ে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।উনি কিছুটা হেলে আমার মুখের খুব কাছে এসে কড়া গলায় বলে উঠলেন,
“অধিকার খাটাতে এসো না।এখানে আছো,থাকবে খাবে আর প্রয়োজনীয় যা যা জিনিস দরকার সব তুমি পেয়ে যাবে।এর থেকে বেশি কিছু আশাও করো না।”
কথাটা বলেই উনি অন্য দিকে তাকালেন।কিন্তু পরক্ষণেই আবার আমার দিকে তীব্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলেন,
“আর হ্যাঁ,চুপচাপ কোনো কথা ছাড়াই বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ো।এটা নিয়ে আমি কোনো ড্রামা ফেস করতে চাইছি না।”
দাঁতে দাঁত চেপে কথা টা বলেই আর একমূহুর্ত অপেক্ষা না করে উনি ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলেন।আর আমি হা করে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।এই লোকটা এমন কেনো।এক্ষুনি তো আমার আত্মারাম ফুস হয়ে যেত।উফ,,,নিজের বুকে হাত রেখে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলাম।উনার এতো কাছে আসায় যেন কিছুক্ষণের জন্য আমার হার্টবীট টাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর এখন যেন এই হার্টবীট ট্রেনের থেকে বেশি গতিতে চলছে।আমি এবার ভয়াতুর দৃষ্টিতে বেডের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম।
.
.
.
.
.
প্রায় ভোর রাত।চোখে এক ফোটা ঘুম ও নেই।উনি আমার পাশেই উবু হয়ে শুয়ে আছেন।সারারাত এই ভয়েই ঘুম হয়নি যে উনি একাকিত্বের সুযোগ না নেন।কিন্তু ভাগ্য ভালো ছিল রাতে শোয়ার পর উনি একবারের জন্য আমার দিকে ফিরেও তাকাননি।এ যাত্রায় বেঁচে গেছি।আমি শোয়া থেকে উঠে বেরকনির দিকে এগিয়ে গেলাম।জীবন টা যেন মূহুর্তের মধ্যেই পাল্টে গেল।কাল রাত অবধিও কি আমি এটা ভেবেছিলাম আজ ভোরে আমি সাহিত্য চৌধুরির বউ হিসেবে উনার ঘরের বেলকনি তে দাঁড়িয়ে থাকবো।আমি বেলকনি তে দাঁড়িয়েই বেডে শুয়ে থাকা সাহিত্যের দিকে তাকালাম।উনি এখনো ঘুমিয়ে আছেন।উনাকে এভাবে ঘুমোতে দেখে ঠোঁটের কোণ দিয়ে এক মুঠো হাসি খেলে গেল।এই লোক টা না কি আমার বর।ভাবতেই অবাক লাগছে।
.
.
.
.
.
দূর থেকে আজানের ধ্বনি কানে আসতেই আমি নিজের কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।স্নান সেড়ে ফজরের নামায আদায় করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।এই বাড়ির কিছুই আমি চিনি না।এক পা দু পা করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই লক্ষ্য করলাম সাদা পঞ্জাবি আর টুপি পরিহিত এক মধ্য বয়স্ক লোক বাড়ির ভেতর ঢুকছে।উনাকে চিনতে আমার বিন্দুমাত্র অসুবিধে হলো না।উনি সাহিত্য চৌধুরির বাবা নিয়াজ চৌধুরি।ইনার সাথে আমার আগেও অনেকবার কথা হয়েছে।ইনফেক্ট উনি আমাকে নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করেন।কাল ও যখন বউ সাজে এবাড়িতে এসেছিলাম তখন ছেলের কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করার কষ্টের চেয়ে উনার চোখে আনন্দ টাই বেশি ফুটে উঠেছিল।উনার সেই আনন্দের কারণ টা আমি বুঝতে পারিনি।
উনার স্ত্রী আজ অনেক বছর আগেই মারা যান।যতদূর উনার আর উনার ছেলির মাঝের সম্পর্ক টা বেশি ভালো নয়।সাহিত্য চৌধুরি তো উনার বাবার সাথে বেশি কথাও বলেন না।তবে আমার এই লোকটা কে বেশ লাগে।বেশ হাসিখুশি টাইপের লোক।সে যাই হোক এখন হয়তো মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরছেন।আমি উনার দিকে এগিয়ে গিয়ে উনাকে সালাম দিলাম।উনি হাসি মুখে আমার সালামের জবাব দিয়ে ভালো মন্দ দুটো কথা বলতে বলতে বসার ঘরে সোফায় গিয়ে বসলেন।আমি উনার আর আমার জন্য দুই কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে দুজনে বসে জমিয়ে আড্ডা দিতে লাগলাম।এরই মাঝে এই বাড়ির কাজের লোক মিঠুন এসে সকালের ব্রেকফাস্ট বানানো তে মনোযোগ দিল।আমি গিয়ে তার টুকটাক কাজে হাত লাগালাম।এতে সে আপত্তি করলেও আমি মানলাম না।আমি নিজেকে এখানে সবার সাথে মানিয়ে নেওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা চালালাম।
.
.
.
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর নিজের রুমে এসে দেখি উনি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে স্যুট বুট পড়ে অফিসে যাওয়ার জন্য একদম তৈরী।এই মূহুর্তে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছেন।আমি সেদিকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে বেডের নিচ থেকে আমার স্যুটকেস বের করে আমার জামা কাপড় সব কাবার্ডে উনার কাপড়ে পাশে গুছিয়ে রাখতে লাগলাম।এমন সময় হঠাৎ করেই কেউ একজন আমার এক হাত শক্ত করে ধরে পাশ ফেরালেন।হঠাৎ হওয়ায় আমি কিছুটা চমকে গিয়ে ই উনার দিকে তাকালাম।উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে তীব্র কণ্ঠে বলে,
“আমার কাবার্ডে হাত দেওয়ার পারমিশান কে দিল তোমায়?”
উনার এমন কথায় আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি তে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“আমার জিনিসে কেউ ভাগ বসাক তা আমার মোটেও পছন্দের নয়।বেডে শুতে দিয়েছি মানে এই নয় যে সব জিনিসেরই ভাগ দেব।আজকের মধ্যেই তুমি তোমার কাবার্ড পেয়ে যাবে।”
শান্ত গলায় কথাটা বলেই উনি উল্টো ঘুরে চলে যেতে চাইলে আমি দুই হাত কোমরে রেখে উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।চোখ ছোট ছোট করে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
“কেউ মানে কাকে বোঝাচ্ছেন আপনি হুম।শুনুন,আমি আপনার স্ত্রী।পাঁচ কালেমা পড়ে বিয়ে করেছেন আমায়।আপনার প্রত্যেকটা জিনিসের ওপরেই অর্ধেক অধিকার আমার।সো,আমি আমি এই কাবার্ডেই আমার জামা কাপড় রাখবো দেখি আপনি কী করেন।”
একনাগাড়ে কথা গুলো বলেই আমি উনার পাশ কাটিয়ে কাবার্ডের দিকে এগোতে গেলেই উনি চট করে আমার এক হাত ধরে হেচকা টানে নিয়ে গিয়ে পাশের দেওয়ালে চেপে ধরল।হঠাৎ এমন হওয়ায় ভয়ে ও ব্যাথায় আমি কুঁকড়ে উঠলাম।হাতটা দেয়ালের সাথে খুব শক্ত ভাবেই চেপে ধরেছেন উনি।ব্যথায় হাত অবশ হয়ে এলো।
চলবে💞