Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1490



ভালোবাসি পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0

#ভালোবাসি
#অন্তিম_পর্ব
#সুমাইয়া_জাহান

হলুদের শাড়ি আর ফুল দিয়ে বানানো গহনা পড়ে স্টেজে বসে আছি।কিছুক্ষণ পর পর একজন করে এসে একটু হলুদ লাগিয়ে মুখের মধ্যে একটা করে মিষ্টি ঢুকিয়ে যাচ্ছে। আর আমি তাদের সবাই কে হাসি মুখে বিদায় জানাচ্ছি। অর্ক ভাইয়ের পরিবারের লোকেরা তো আছেই আমার অতিরিক্ত যত্ন করার জন্য। সবাই আমকে পুরো ঘিরে বসে আছে।নাচ গানও চলছে ভিষন ভাবে।এতো সব হইচই এর মধ্যে আমার ভিষণ মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে।আমি তো আবার অনুষ্ঠান শেষ না হওয়ার আগে এখান থেকে উঠতেও পারছিনা।কাউকে কিছু বলতেও পারছি না।আর এদিকে আমার মহামান্য বেস্টু আর বোন তাদের দেখা পাওয়ার সৌভাগ্য আমার এখনো হয়নি।আমাকে সাজিয়ে এখানে বসিয়ে দিয়ে যে সেই কখন গেছে এখনো লাপাত্তা! রেহানকেও আজ একবারের জন্য দেখিনি।মাথা ব্যাথা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কিন্তু এখন তো আর উঠতে পারবো না তাই দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করে যাচ্ছি। এছাড়াতো আর কোনো উপায়ও নেই।

ঘন্টা দুয়েক পর অনুষ্ঠান শেষ হলো।তখনই ওই দুই মহারানীর আগমন ঘটলো।দুজনেই শাড়ি পরার কারনে তারাতাড়ি হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে তাই দুই হাত দিয়ে শাড়ি কুঁচি ধরে ধরে হেঁটে আসছে।দুজনেই পরনে হলুদ রঙা শাড়ি দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে দুজনকে।রনিত ভাইয়ার কথা মতো তিহাকে বসন্ত পরির মতোই লাগছে এখন।সত্যি ভাইয়া নাম টা দারুণ দিয়ছে।ভাবতেই একটা মুচকি হাসি দিলাম ওরা কাছে আসতেই মুখ টাকে গম্ভীর করে রাখলাম।তিহা এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

—- ” সরি সরি রাগ করিস না বোইন আমার।বিশ্বাস কর আমরা ইচ্ছে করে করিনি।বিয়ে বাড়ির এতো কাজ ছিলো যে আন্টি পুরো হাঁপিয়ে গিয়েছিলো।তাই আমাদের কে বললো একটু সাহায্য করতে!আন্টিকে সাহায্য করতে গিয়েই তোর কাছে আসতে পারনি।বিলিভ মি!”

পাশ থেকে মাহিও তালে তাল মিলিয়ে বললো,

—- ” হ্যাঁ আপুই মায়ের জন্যই আমরা আসতে পারিনি।ট্রাস্ট করো আমাদের কোনো দোষ নেই!”

আমি সেই কখন থেকে একা বসেছিলাম।আর উনারা এখন এসে অযুহাত দেখাচ্ছে! আবার রাগ করতেও মানা করে।ওদের দিকে একটা রাগী লুক দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম।আর ওরা দুজনেই ফুস করে একটা শ্বাস ফেললো।

রুমে এসেই শাড়ি চেঞ্জ করে এই সন্ধেবেলাতেই আবার শাওয়ার নিলাম।মাথা ব্যাথাটা একটু কমানোর জন্য কিন্তু ফলাফল শূন একটুও কমেনি।ঔষধও খেয়েছি তবুও মাথা ব্যাথাটা একটু যাচ্ছে না।বরং আরো বেড়ে যাচ্ছে। মাথায় দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছি। তিহা রুমে এসে আমার এই অবস্থা দেখে আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে আমার কাঁধে হাত রেখে নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,

—- ” মাথা ব্যাথা করছে মিহু?”

একই ভাবে বসে মাথা নেরে বললাম,

—- ” হুম! ভিষণ মাথা ব্যাথা করছে।ঔষধও খেয়েছি তাতেও কিচ্ছু হচ্ছে না।”

—- ” তুই তাহলে ছাদে গিয়ে একটু দাঁড়া প্রকৃতির হাওয়াতে একটু ভালো লাগবে।আমি ততোক্ষণে তোর জন্য আন্টিকে বলে কফি করে আনছি।তাতে মাথা ব্যাথাটা কমবে অনেকখানি!”

—- ” ঠিক আছে আমি যাচ্ছি। তুই কিন্তু তারাতাড়ি চলে আসবি!”

আমি কথাটা বলেই ছাদের দিকে রওনা হলাম। আর তিহাও কফি বানাতে রান্নারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলো।মাঝ পথেই রনিত আর মাহির সাথে দেখা হয়ে যায় ওর।রনিত তিহাকে দেখে ভিষণ খুশি। মনে হচ্ছে ওর জন্যই অপেক্ষা করেছিলো।তিহাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

—- ” বসন্ত পরি আমাদের সাথে গ্রাম ঘুরতে যাবে?মাহি আর আমি এখন গ্রাম ঘুরতে যাচ্ছি। শুনেছি তুমিও নাকি গ্রাম ঘুরতে চেয়েছিলে।সন্ধেবেলা কিন্তু গ্রাম ঘুরতে ভিষন ইন্টারেস্টিং লাগে।আমাদের সাথে যাবে নাকি?”

তিহার সত্যি গ্রাম ঘুরতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু মিহির কথা ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

—- ” এখন যেতে পারবো না।অন্য সময় হলে যেতাম।মিহির খুব মাথা ব্যাথা করছে।তাই ওর জন্য কফি৷ বানাতে যাচ্ছি। আপনারা আজ যান আমি বরং অন্য দিন যাবো!”

—- ” ওহ্ এই ব্যাপার! মিহির খেয়াল রাখার জন্য একজন আছে।উনি উনার দায়িত্ব ঠিক পালন করবে। তোমার মিহিকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।তুমি আমাদের সাথে গ্রাম ঘুরতে চলো তো!”

মাহি তিহার হাত ধরে বললো,

—- ” রনিত ভাইয়া ঠিকই বলছে আপুই এর জন্য আমার জিজু আছে। তুমি এখন আমাদের সাথে চলো। ”

তিহা দ্বিধা দন্দ নিয়ে রনিতকে প্রশ্ন করলো,

—- ” কিন্তু রেহান ভাইয়া কি জানেন নাকি মিহি মাথা ব্যাথার কথা?”

রনিত একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

—- ” রেহানের নজর মিহির উপর চব্বিশ ঘণ্টাই আছে।আর তোমার সিউর হওয়ার জন্য বলছি হ্যাঁ রেহান জানে মিহি অসুস্থতার কথা!এবার তো চলো!”

তিহা তারপরও যেতে চাইলো না।ওরা একরকম জোর করেই নিয়ে গেছে ওকে।রনিত যতোই বলুক রেহানের কথা তিহার মনে মিহির জন্য একটা চিন্তা রইয়েই গেলো।

ছাদে এসে রেলিং ধরে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির ফুরফুরে হাওয়া গাঁ লাগাচ্ছি। প্রকৃতির ফুরফুরে হাওয়াতে মাথা ব্যাথা না কমলেও শরীর মন দুটোই ভালো হয়েছে।আজ প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।কেউ একজন ছাদে আসলো।আর আমার দিকেই হেটে আসছে।তিহাই হবে হয়তো।তাই আর চোখ খুললাম না।আমার পাশে এসে একটা মগ ছাদে রেলিং এর পর রেখে গম্ভীর গলায় বললো,

—- ” তারাতাড়ি কফিটা খেয়ে নেও!”

রেহানের গলার আওয়াজ পেতেই চট করে চোখ টা খুলে উনার দিকে অবাক হয়প তাকালাম। আমার কফি লাগবে উনি কি করে জানলেন?কৌতুহল মেটাতে প্রশ্নটা করেই ফেললাম,

—- ” আপনি কি করে জানলেন আমার কফি লাগবে?আর কফি বা পেলেন কোথায়?উমম….তিহার থেকে এনেছেন?তিহা নিজে না এনে আপনার হাতে পাঠালো কেন?ও তো বলেছিলো ও নিজে নিয়ে আসবে আমার জন্য! তাহলে?”

উনির আমার দিকে না তাকিয়ে আগের মতে গম্ভীর ভাবেই বললেন,

—- ” কফিটা এনেছিলাম তোমার ভালোর জন্য। এক মগ কফির জন্য যদি এতো কথা শুনতে হয় আগে জানলে কখনোই আনতাম না।তোমার যখন এটা ভালোই লাগছে না তখন আমিই খেয়ে নিচ্ছি। ”

কথাটা বলেই রেহান কফির মগটার দিকে হাত এগোতেই আমি এক ঝটকায় মগটা হাতে নিয়ে জোরপূর্বক হেসে বললাম,

—- ” আমি কখন বললাম আমার ভালো লাগেনি?আমার তো ভিষন ভালো লেগেছে।”

যা বজ্জাৎ লোক বিশ্বাস নেই সত্যি সত্যিই কফিটা খেয়ে ফেলতে পারে।এখন কিছু বলা যাবে না।তাহলে আমার বেচারা কফির মগ খানা উধাও হয়ে যেতে পারে।আর কিছু না ভেবে কফিটা খেতে লাগলাম।রেহান মিহির কান্ড দেখে মনে মনে হাসলো। আজ সারাদিনই আড়াল থেকে মিহিকে দেখেছে।তখনই বুঝতে পেরেছে ওর মাথা ব্যাথা!তাই সবার আড়ালে রান্না ঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে মিহির জন্য এনেছে।

কফিটা খাওয়াতে সত্যি ম্যাজিকের মতো মাথা ব্যাথা টা অনেকটা কমে গেলো।বেশ আরাম বোধ হচ্ছে এখন।কফির মগটা রেখে রেহানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

—- ” কফিটা আনার জন্য অনেক ধন্যবাদ!কফি টা……..”

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি হনহন করে ছাদ থেকে চলে গেলেন।আমি তো অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

—- ” একটা কফিই তো এনেছে?এতো ঢং দেখানোর কি আছে!এমন ভাব দেখাচ্ছে মনে হচ্ছে আমি কেউ না।একটা অচেনা মানুষের জন্য এটা করেছে।আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না?এর হিসাব আমি শুধে আসলে তুলবোই তুলবো!নাহলে আমি মিহিই না….. তাহলে আমি কে?সে পরে দেখা যাবে আমি কে হুম!”

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো মাহি আর তিহার একসাথে ডাকে।এই দুজন এখন সবসময় একসাথেই থাকে।যা করবে দুজন একসাথেই করবে।এখন একজন “আপুইইই” আরেকজন “মিহুহুহু” ডাকে আমার সাধের ঘুমটা ভাঙ্গলো।কানে হাত দিয়ে ওদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

—- ” সমস্যা কি তোদের সবসময় আমার পিছনে কেন লাগিস?আমার এতো সাধের ঘুমটা কেন ভাঙ্গালি?”

তিহা রাগী গলায় বললো,

—- ” ওই আজ তোর বিয়ে ভুলে গেছিস? বিয়ের দিনও পরে পরে ঘুমাবি?”

—- ” বিয়ের সাথে আমার ঘুমের কি কানেকশন? আরে বাবা বিয়ে কি এখন নাকি? বিয়েতো সেই কখন!এখন একটু আমাকে ঘুমাতে দে।ওহে বিয়ের আধা ঘণ্টা আগে ডেকে দিস তখন রেডি হয়ে একে বারে বিয়ের পিরিতে বসবো নে।মনে রাখিস আধা ঘণ্টা আগে!”

কথাটা বলে আবার শুয়ে পরলাম।ঠিক তখনই বইরে থেকে মা জননীর কন্ঠে ভেসে আসলো,

—- ” মাহি তিহা ঘুমের রানীর ঘুম ভাঙ্গছে নাকি আমাকে আসতে হবে?”

মা জননীর কন্ঠ পেতেই লাফিয়ে উঠলাম।কারণ মা যদি আসে তাহলে এক বালতি পানি দিয়ে আমাকে এখানেই গোসল করিয়ে ছাড়বে।তার থেকে ভালো আমি নিজেই উঠে যাই।আমার কান্ড দেখে মাহি আর তিহা ঘর কাঁপানো হাসিতে ফেটে পরলো। ওদের দিকে একটা রাগী লুক দিয়ে ওয়াস রুমের ঢুকে পরলাম।এতে ওদের হাসির মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখি ওরা চলে গেছে।মা হয়তো ডেকেছে!হঠাৎ অর্ক ভাইয়ার কথা মনে পরলো।তাই তারাতাড়ি ফোনটা হাতে নিয়ে অর্ক ভাইয়া কে একটা কল দিলাম।প্রথমবার দিতেই রিসিভ করলেন ভাইয়া।

—- ” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া ভালো আছেন?”

—- ” এতোক্ষণ ভালো ছিলাম না তোমার ফোন পেয়ে এখন আলহামদুলিল্লাহ দারুণ ভালো আছি।”

ওপাস থেকে অর্ক ভাইয়া বললো।আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,

—- ” ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি আমার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বিয়েটা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য। এরজন্য আপনাকে আমি বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না।”

—- ” তোমাদের দুজনের ভালোবাসার জোর টা বেশি ছিলো তাই তোমরা এক হতে পেরেছো।আর আমার ভালোবাসা টা এক পক্ষ ছিলো তাই হয়তো আমার সাথে তোমার বিয়ে হয়নি।আর এগুলো সব সৃষ্টিকর্তাই ঠিক করে রেখেছেন।এখনে আমি কিছুই করিনি সবই আল্লাহ ইচ্ছা! ”

—- ” হুম! আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন আপনাকে আপনার মনের মতো একজন জীবন সঙ্গী খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে দেন!”

—- ” আচ্ছা বাদ দেও ওসব। আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবে?ভয় নেই এমন কিছু চাই বো না যা তুমি দিতে পারবে না!”

—- ” না না না বলুন ভাইয়া আপনি যা চাইবেন আমি অবশ্যই দেওয়ার চেষ্টা করবো!”

—- ” তোমাকে তো জীবন সঙ্গী হিসেবে আল্লাহ তায়ালা আমার কপালে লেখেনি!আমি কি তোমার থেকে বন্ধুত্ব পেতে পারি?”

—- ” অবশ্যই কেন নয়!আমরা আজ থেকে খুব ভালো বন্ধু ওকে!”

রেহান আমার রুমের দিকে আসছে তা দেখে অর্ক ভাইয়া কে বললাম,

—- “ভাইয়া রেহান আসছে! আমি আপনার সাথে পরে কথা বলবো!”

ফোনটা কেটে দিয়ে কানে ধরে রেখেই রেহান কে না দেখার ভান করে বললাম,

—- ” আপনি বিয়ের পার হানিমুনে যেখানে নিয়ে যাবেন আমি সেখানেই যাবো।আপনার পছন্দই আমার প……”

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই রেহান আমার হাত থেকে ফোনটা কেরে এক আছারে ভেঙ্গে ফেললেন।আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বললেন,

—- আমি তোমাকে ভলো ভাবে সবাই কে বুঝিয়ে সবার মতে বিয়ে করতাম। কিন্তু তোমার সাহস এতো বেড়ে গেছে যে এই ছেলের সাথে……এবার আর কারো কথা ভাববো না।

কথাটা বলেই আমাকে জোর করে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন। গাড়িতে উঠিয়ে সোজা কাজি অফিসে নিয়ে গিয়ে রেজেস্টারি করে বিয়ে করে নিলেন।তারপর আবার বাড়ি এসে বাবার সামনে দাড়িয়ে মাথা নিচু করে বললেন,

—- ” আংকেল আমরা দুজন দুজন কে ভালোবাসি। আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার মিহি বিয়েতে রাজি হয়েছিলো।আর আজ এমন একটা পরিস্থিতি হয়ে ছিলো যে আমি বাধ্য হয়ে আপনাদের মত না নিয়েই ওকে বিয়ে করে ফেলেছি।আমায় ক্ষমা করবেন।”

পুরো বাড়িতে নিরবতার চাদরে ঢেকে গেলো।কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙ্গে বাবা রেহানের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

—- ” আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতা তাহলে এখানেই বিয়েটা হতো।কষ্ট করে কাজি অফিসে যাওয়া লাগতো না।মিহি মা একদিন আগে আমাদের সব বলেছে।আর আজকে বিয়ের যে আয়োজন গুলো দেখছো এগুলো তোমার আর মিহি মার জন্যই করা হয়েছে।তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য তোমাকে কেউ কিছু বলেনি।তবে এটা ভেবো না কাজি অফিসে বিয়ে করেই পার পাবে এখন আবার তোমাদের সবার সামনে বিয়ে হবে।”

রেহান আবার কথায় অবাকে হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

—- এগুলো সত্যি!

আমি মনমরা হয়ে বললাম,

—- হুম!

—- তাহলে ওইসব কি ছিলো?

—- সেগুলো পরে বলবো এখন আগে বিয়েটা হোক।

তারপর আমাদের সব নিয়ম মেনে আবার বিয়ে হলো।এতো কিছুর মধ্যে আমার সাধের ফোনটা দুই টুকরো হয়ে গেলো।সেই দুঃখে আমার মন এখনো খারাপ। অবশ্য আমারও দোষ ছিলো।আমি একটু বেশিই জ্বালিয়েছি রেহান কে।সব নিয়ম শেষ করতে করতেই সন্ধে হয়ে গেলো।তারপর রেহানের বাড়ি মানে আমার শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে আমারা বেরিয়ে পরলাম।সবাই অবশ্য থাকতে বলেছিলো আজ রাতটা কিন্তু উনি থাকেন নি।রনিত আর তিহাকে আগের গাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।পরের গাড়িতে আমরা দুজন এসেছি।মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নেমে পরলেন আর আমাকেও টেনে নামালেন।আমি নামতেই একটা গোলাপ হাতে নিয়ে আমার সামনে হাটু গেড়ে বললেন,

—- ভালোবাসি ভিষণ ভালোবাসি তোমায়! আজো কি আমার উত্তর টা বলবে না মিহু পাখি?

আমিও উনার সাথে হাটু গেড়ে বসে ফুলটা হাতে নিয়ে উনার কপালে কপাল রেখে বললাম,

—- ” ভালোবাসি ভিষণ ভালোবাসি!”

___________________সমাপ্ত____________________

ভালোবাসি পর্ব-১৩

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_১৩
#সুমাইয়া_জাহান

অর্কের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে অর্ককে হাসি মুখে বিদায় দিলো রেহান।অর্ক চলে যেতেই রেহান আমার হাতটা খপ করে ধরে বিদ্যুতের গতিতে একটা বড়ো গাছের কাছে এনে গাছটার সাথে আমাকে চেপে ধরে ঝাঁঝালো গালায় বলে উঠলেন,

—- ” ওই ছেলের সাথে হেসে হেসে বিয়ের কথা বলার সাহস কোথায় পেলে?আবার ওই ছেলে কে কি যেন বললে ওর ইচ্ছেই তোমার ইচ্ছা। খুব ডানা গজিয়েছে? শুধুমাত্র একটা কথার জন্য আমার ভালোবাসা কে মিথ্যে বলে ধরে নিলে?সত্যি টা জানার একটুও চেষ্টা করলে না!ওকে তুমি মনে করো তো আমি তোমায় সত্যিকারে ভালোবাসি না তাই তো?তবে শুনে রাখো আমি তোমায় ভালোবাসি আর নাই বাসি তোমাকে আমারই হতে হবে! আর কারোর না মাইন্ড ইট!”

কথাগুলো একনাগাড়ে বলেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে চলে গেলো।এতোকিছু এতো তাড়াতাড়ি হওয়ায় আমি কিছুটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলাম।যতখনে আমার হুস আসলো ততোক্ষণে রেহান অনেক দূর চলে গেছে।উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,

—- ” হ্যাঁ আমি জানি আপনি আমাকে সত্যি কারেই ভালোবাসেন!কিন্তু প্রথমে তো বন্ধুদের সাথে বাজি জেতার জন্যই আমাকে প্রপোজ করতে গিয়েছিলেন।সেদিন যদি সত্যি আমার জন্য ভালোবাসা কাজ না করে শুধু মাত্র বাজি জেতার নেশাটাই থাকতো তাহলে আমার কি হতো একবার ভেবে দেখেছেন?আর আপনার দ্বিতীয় অপরাধ টা হলো আমি আপনি আমাকে আগেই কেন এই সত্যি টা বলেন নি? কেন অন্যের মুখ থেকে সত্যি টা শুনতে হলো আমাকে?হ্যাঁ আমি আপনারই ছিলাম আর আপনারই থাকবো কিন্তু কয়েকটা দিন তো আপনাকে এই অপরাধ গুলোর জন্য শাস্তি পেতে হবে! তাই এখন সব সত্যি জেনেও না জানার ভান করে আমাকে জ্বালাবো!আর আপনাকে জ্বালানো সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে অর্ক ভাইয়া! ”

কথা গুলো বলেই একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বাড়ির ভিতরে ডুকলাম।

ফ্লাশব্যাক……..

—- ” মিহি আজ আমার কথাটা না শুনলে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে অনেক গুলো জীবন শেষ হয়ে যাবে।আমাকে দুটো মিনিট সময় দেও প্লিজ!”

কথাটা বলেই রনিত মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।তাহলে কি রেহান আর মিহির সম্পর্ক টা আর জোড়া লাগবে না?একটা ভুল বোঝাবুঝিই ওদের সম্পর্কের ইতি টানবে?আর রনিতেরও কি ওর বসন্ত পরিকে পাওয়া হবে না।সসব কি তাহলে এখানেই শেষ হয়ে যাবে?

রনিত ভাইয়া কথাগুলো শুনে সিড়ির দিকে পা বাড়াতে গিয়েও বাড়ালাম না।দু’মিনিটই তো চেয়েছে দু’টো মিনিট নাহয় কথা গুলো শুনেই যাতে তো ক্ষতি নেই। তাই আবার রনিত ভাইয়ার কাছে ফিরে আসলাম।

—- ” বলুন ভাইয়া কি বলবেন?তবে শুধু দু মিনিটই টাইম তারপর আমি আর আপনার একটা কথাও শুনবো না!”

মিহির কন্ঠ শুনে রনিতের মন খারাপ নিমিষেই মুছে গিয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। খুশিতে ওর চোখ চিকচিক করে উঠলো মিহির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,

—- হুম শুধু দু মিনিটই নিবো আর বেশি নিবো!

কথাটা বলেই পকেট থেকে ফোনটা বের করলো।আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তকাতেই রনিত ভাইয়া আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে শান্ত হতে বলে ফোনে একটা রেকডিং চালো করলেন।

রেকডিং……

একজন বলছে,

—- ” ভাই তোর সাথে আমি জীবনেও কোনোদিন কোনো বাজি জিততে পারলাম না!বাজি ধরে মিহির থেকে ঠিক ভালোবাসি কথাটা আদায় করে নিলি!মেয়েকে পুরো ভার্সিটির ছেলেরা প্রপোজ করে কোনো দিন হ্যা উত্তর আনতে পারলো না সেই মেয়ে এখন তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে! আমি ভাবতেই পারছি না।এটা শুধু তোর দ্বারাই সম্ভব! ”

হ্যাঁ এইটা সেই কন্ঠ যে কন্ঠটা আমি সেই দিন ভার্সিটিতে শুনেছি।আরেকজন বললো,

—- ” তো আর কয়দিন ওই মেয়ে কে নাকে দড়ি দিয়ে তোর পিছনে ঘুরাবি?যেইদিন ওই মেয়ে জানতে পারবে তুই ওকে ভালোবাসা টালোবাসা কিচ্ছু না শুধু মাত্র বাজি ধরে ওর সাথে প্রেমের নাটক করছোস সেই দিন ওর মুখ টা কেমন হবে আমার ভাবতেই আগাম হাসি পাচ্ছে। ”

তারপর অনেকগুলো হাসির আওয়াজ শোনা গেলো।

সেদিনের মতো আজও আর শুনতে পারলাম না।কানে দুই হাত চেপে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলাম,

—- ” ব্যাস বন্ধ করুন! আমাকে আবার এই কথাগুলো শুনিয়ে কি আনন্দ পাচ্ছেন আপনি? কেন শুনাচ্ছেন এগুলো? আমার কষ্ট টা আরো দ্বিগুণ করার জন্য? ”

আমাকে থামিয়ে রনিত ভাইয়া বললেন,

—- ” মিহি সেদিনও তুমি অর্ধেক কথা শুনে ভুল বুঝেছো আজও তাই করছো!পুরো রেকডিং টা একবার শোনো ! প্লিজ কর কোনো কথা বলো না এখনো কিন্তু তোমার দেওয়া দুই মিনিট শেষ হয়নি!”

আমি না চাইতেও চুপ করে রইলাম।তারপর রনিত ভাইয়া আবার রেকডিং টা চালু করলেন।

রেকডিং……..

অনেক গুলো হাসির শব্দের পর এক ধমক দিয়ে একজন ভিষণ রাগী গলায় বললেন,

—- ” চুপ একদম চুপ! আমি মিহিকে কোনো বাজি ধরে ভালোবাসিনি আমি ওকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি।হ্যাঁ এটা সত্যি আমি ওকে বাজি ধরেই প্রপোজ করে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওকে দেখার পর আমি ওকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি।আর আমি ওর সাথে যা যা করেছি সব কিছু ভালোবেসেই করেছি!আমার মিহিকে নিয়ে যদি আর একটা বাজে কথা কেউ বলিস তাহলে তার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো!আমাকে তো তোরা খুব ভালো করেই চিনিস আমি যা মুখে বলি তাই করে দেখাই!”

এই কথাগুলো আর কেউ নয় রেহানই বলেছে।কথাগুলো শুজনে আমার চোখ বেয়ে নোনা জল পরতে লাগলো।আমি আর একটু সেদিন দাড়ালে এতো বড়ো একটা ভুল হতো না।আমি পুরো কথা না শুনেই এভাবে উনাকে ভুল বুঝতে পারলাম?নিজের উপরই নিজের রাগ হচ্ছে! যে লোকটা আমাকে একমুহূর্ত না দেখে থাকতে পারে না পাগলের মতো হয়ে যায় সেই লোকটাকে আমি এতোগুলা দিন এভাবে কষ্ট দিতে পারলাম?

রনিত ভাইয়া রেকডিং টা বন্ধ করে মুচকি হেসে বললে লাগলেন,

—- ” সেদিন আমরা সব বন্ধুরা বারবার জোর করছিলাম রেহান কে একটা গান গাওয়ার জন্য। তুমি তো জানো রেহান খুব ভালো গান গায়। আমাদের সবার জোরাজুরিতে রেহান গান গাইতে রাজি হয়ে যায়।আর তখনই আমাদের মধ্যে কয়েটা বন্ধু এই এ কথা গুলো বলে। আর তুমি ওদের অর্ধেক কথা শুনেই রেহান কে ভুল বুঝেছো।আর ভাগ্যবশত আমি রেহানের গান রেকর্ড করার জন্য ফোনে রেকডিং টা চালো রেখেছিলাম।এতোদিন এই রেকডিং টার কথা আমার এক বিন্দুও মনে ছিলো না।তাই তোমার কাছে এসে কিছু বলতে পারিনি।তুমি আমার বা রেহান কারোই মুখের কথা বিশ্বাস করছিলে না!আজ হঠাৎ ফোনের দিকে তাকাতেই রেকডিং টার কথা মনে পড়লো! ”

আমি ছলছল চোখে মাথা নিচু করেই কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

—- ” সরি ভাইয়া আমি আপনাদের না জেনেই অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি!আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিন!”

—- ” এতে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। তোমার জায়গায় যে কেউ থাকলে এটাই করতো। তোমার জায়গায় তুমি ঠিক আর আমার জায়গায় আমাদের জায়গায় আমরা ঠিক ছিলাম।মাঝখানে ছিলো একটা ভুলবোঝাবুঝি! এখন সব কিছু ভুলে রেহান কে মেনে নিলেই সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।”

আমি চোখের পানি মুছে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললাম,

—- ” নাহ এতো সহজে আমি উনাকে ক্ষমা করবো না।উনার উচিৎ ছিলো আমাকে সব কিছু আগেই বলে দেওয়া। তাহলে আর এতো কিছু হতো না।আর উনি তো সত্যি সত্যিই প্রথমে বাজি ধরেই প্রপোজ টা করে ছিলেন।তাই আরো কয়টা দিন উনাকে শাস্তি পেতে হবে।আর ভাইয়া আমি যে সব জেনে গেছি তা উনাকে বলবেন না।কয়দিন নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে তারপর শাস্তি শেষ হবে তার আগে না!”

—- ঠিক আছে আমি কিছু বলবো না।কিন্তু তার বিনিময়ে বসন্ত পরিকে আমার সাথে মিলিয়ে দিতে হবে!

বসন্ত পরি নামটা শুনে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।তারপর রনিত ভাইয়া আমাকে আমাকে উনার বসন্ত পরির সব কিছু বললেন।আমি সব শুনে হাসতে হাসতে বললাম,

—- ” ওকে ডান! ”

বর্তমানে…….

বাড়িতে ডুকতেই মাহি আমাকে নিয়ে আমার রুমে চলে গেলো।সেখানে আগে থেকেই মা আর তিহা আছে।আর আমার খাটের উপর অনেক গুলো শাড়ি আর জুয়েলারি। ওগুলোই ওরা দুজন দেখতেছে।আমাকে দেখেই মা জননী এক গাল হেসে হাত দিয়ে ইশারা করে ডেকে বললেন,

—- ” আয় আয় ভিতরে আয়!”

আমি ওদের কাছে আসতেই একটা শাড়ি নিয়ে আমার গায়ে পেচিয়ে মা জননী আবারও বললেন,

—- ” দেখ তো তিহা মা ওকে এই শাড়িটাতে কেমন লাগছে? ”

মায়ের কথা শুনে তিহা আমার কাছে এসে আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বললো,

—- ” আন্টি আপনার কোনো জবাব নেই! একটা পেত্নীকে আপানার পছন্দের জিনিস দিয়ে বিশ্ব সুন্দরী বানিয়ে দিলেন।আমি তো ভাবতেই পারছি না!”

তিহার কথা শুনে মা জননীও হেসে দিলেন।হাসতে হাসতেই বললেন,

—- তা যা বলেছিস!

এভাবে অপমান করলো? না মেনে নেওয়া যায় না!শাড়ি টা এক ঝটকায় গাঁ থেকে ফেলে দিয়ে রাগী গলায় বললাম,

—- ” আমার পিছনে না লাগলে তোমাদের পেটের ভাত হজম হয় না!আর এখানে শাড়ির দোকানই বা কেন খুলেছো?”

তিহা আমার কাঁধে দুই হাত রেখে বললো,

—- ” এগুলো তোর বিয়ে আর গায়ে হলুদের শাড়ি গয়না। আর তুই ঠিকই বলেছিস তোর সাথে না লাগলে আমাদের পেটের ভাত একটাও হজম হয় না।”

চেখের পলক ফেলে অভয় দিয়ে শেষের কথা টা বললো তিহা।আমি কনুই দিয়ে ওকে একটা গুঁতো দিয়ে সরিয়ে দিলাম।

চলবে,,,,,,

ভালোবাসি পর্ব-১২

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_১২
#সুমাইয়া_জাহান

মানুষ অল্পতেই একজন আরেক জন কে বিশ্বাস করে নেয়।আবার বিশ্বাস যদি একবার ভাঙ্গে তাহলে তা পুনরায় ফিরিয়ে আনা ভিষণ কঠিন।

ঘরের এক কোনা থেকে আরেক কোনায় পায়চারি করেছে আর ভাবছে কি করে মিহির ভুল টা ভাঙ্গাবে।কিন্তু কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না।মিহি এখন কারো মুখের কথাই বিশ্বাস করবে না খুব ভালো করেই জানে রনিত।তাই ওকে এখন এমন কিছু একটা করতে হবে যাতে সত্যি টা মিহি নিজেই বুঝতে পারে।কিন্তু কি করবে রনিত?সেটাই ভেবে চলেছে এতোক্ষণ পর্যন্ত!
রেহান গ্রামটা একবার ঘুরতে বের হয়েছে তবে সেটা শুধু অজুহাত আসলে ও এখন অর্কের সাথে দেখা করতে গেছে।তাই এখন ঘরে শুধু রনিতই আছে।রনিত আরো কিছুক্ষণ এভাবেই ভাবতে লাগলো কিন্তু কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না!এবার মনে হচ্ছে সত্যি মিহির ভুল আর ভাঙ্গাতে পারবে না!তাই মনমরা হয়ে বসে পরলো।তখনই ফোনে একটা মেসেজ টুংটুং শব্দ ভেসে আসলো ওর কানে।ফোনটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো রনিতের!আর এক মিনিটও দেরি না করে বেরিয়ে পরলো মিহির উদ্দেশ্যে।

বাড়ির লোকদের কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো মিহি ছাদে গেছে।তাই ও ছাদের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।ছাদে উঠতেই মিহিকে পেয়ে গেলো।মিহি ছাদে থাকা কয়েকটা ফুল গাছে পানি দিচ্ছিলো।ওকে দেখেই ওর দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই ওকে ডাক দিলো,

—- ” মিহি! মিহি!”

আমাদের বাড়ির ছাদে আমি কয়েকটা ফুল গাছ লাগিয়েছিলাম।এতোদিন আমি বাড়ি না থাকায় ওগুলোর যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব ছিলো মাহির উপর! কিন্তু মাহি গাছ গুলো ঠিক মতো যত্ন নেয়নি তাই বেচারা গাছগুলোর একদম নেতিয়ে গেছে।আমার এমনিতে ফুল তেমন একটা ভালো লাগে না।কিন্তু ফুল গাছ লাগাতে ভিষণ ভালো লাগে।তাইতো বাড়ির বাগানে অনেক ধরনের ফুল গাছ লাগিয়েছি। আর এই কয়টা টবে করে ছাদে লাগিয়েছি।নেতিয়ে যাওয়া ফুল গাছ গুলো দেখে মনে মনে মাহিকে কয়েকটা জারি দিয়ে ফুল গাছ গুলোকে যত্ন নিতে লেগে পরলাম।গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছি তখনই কেউ একজন আমায় ডাক দিলো।পিছন ফিরে দেখি রনিত ভাইয়া। ভ্রু কুঁচকে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” রনিত ভাইয়া আপনি এখানে? কিছু বলবেন?”

—- ” হুম বলবো !রেহান কে নিয়ে বলবো। ও……”

রনিত ভাইয়ার মুখে রেহানের কথা শুনেই উনার কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে অন্য দিকে ফিরে বলে উঠলাম,

—- ” প্লিজ ভাইয়া আমি উনার সম্পর্কে একটা কথাও শুনতে চাই না!উনার কথা ছাড়া যদি অন্য কিছু বলার থাকে তাহলে বলতে পারেন নাহলে বলবেন না প্লিজ!”

—- ” প্লিজ একটা বার আমার কথাটা শোনো! তুমি অনেক বড়ো ভুল করছো। প্রতিটা সম্পর্কের মধ্যেই ভুলবোঝাবুঝি হয় তাই বলে কি সম্পর্ক টাকে একে বারে শেষ করে দিতে হবে।একবার তো ভুলটা ঠিক করার সু্যোগ দেওয়া উচিৎ! ”

—- ” ভুল কিসের ভুল!ওহে ভুল আমি করেছে উনাকে বিশ্বাস করে উনাকে ভালোবেসে।উনাকে সুযোগ দিবো?সুযোগ তখনই পাওয়া উচিৎ যখন মানুষ ভুল করে উনিতো কোনো ভুল করেননি।উনি শুধু একটা বাজি জেতার জন্য একটা মেয়ের পুরো জীবন টাই তছনছ করে দিয়েছেন। এটা ভুল নয় এটা হলো অপরাধ। আর অপরাধীর সুযোগ নয় শাস্তি পাওয়া উচিৎ!নেহাৎ আমি উনাকে মন থেকে সত্যিকারে ভালোবেসেছি তাই আমি উনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি কোনো শাস্তি আমি দেইনি।আর এখনো আপনারা আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে আবার আমাকে ঠকাতে এসেছেন।একবার চুপ থেকেছি বলে কি বারবার চুপ থাকবো এটা ভাববেন না।”

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে একটা দম নিয়ে ছাদ থেকে নামার জন্য সিঁড়ির দিকে এগোতে লাগলাম।পিছন থেকে রনিত ভাইয়া বললেন,

—- ” মিহি আজ আমার কথাটা না শুনলে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে অনেক গুলো জীবন শেষ হয়ে যাবে।আমাকে দুটো মিনিট সময় দেও প্লিজ!”

কথাটা বলেই রনিত মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।তাহলে কি রেহান আর মিহির সম্পর্ক টা আর জোড়া লাগবে না?একটা ভুল বোঝাবুঝিই ওদের সম্পর্কের ইতি টানবে?আর রনিতেরও কি ওর বসন্ত পরিকে পাওয়া হবে না।সসব কি তাহলে এখানেই শেষ হয়ে যাবে?

এদিকে রেহান অনেক খুঁজে অর্কের বাড়ি এলো।কিন্তু এখনানে এসেও নিরাস হতে হলো।কারণ অর্ক এখন বাড়ি নেই। আর ওর বাড়ির কেউ জানেও না ও কোথায় গেছে!কালকেই মিহির গায়ে আর তারপরের দিনই বিয়ে।হাতে এখন কোনো সময়ই নেই।যে করেই হোক আগে বিয়েটা ভাঙ্গতে হবে তারপর মিহির ভুলটা ভাঙ্গানো যাবে।তা ভেবেই আজ বিকেলে অর্কের সাথে দেখা করতে এসেছে। কিন্তু এখন অর্ককে পাবে কই!কিছুক্ষণ চিন্তা করে তারপর পর বাড়ির লোকেদের থেকে অর্ক কোথায় কোথায় যেতে পারে তা জেনে নিলো।ওরা যেকয়টা জায়গার কথা বলেছিলো সবকয়টাতেই গিয়ে তন্ন করে খুঁজেও অর্ক কে খুঁজে পেলো না।তাই ক্লান্ত হয়ে মিহিরদের বাড়ির রাস্তার দিকে এগোতে লাগলাম।

অর্ক আজ হুট করেই মিহিদের বাড়ি চলে এসেছে।এসেই মিহির বাবার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।আর বারবার আড় চোখে বারবার এদিকে ওদিক তাকাচ্ছে মিহিকে একটিবার দেখার জন্য। এখানে আসার কারণই মিহিকে দেখার! কিন্তু এসে থেকে একটিবারের জন্যও মিহিকে দেখতে পায়নি।তাই ওর মনটা ভিষণ খারাপ। এর মধ্যেই মিহির বাবা বলে উঠলেন,

—- ” তা বাবা তুমি হঠাৎ এখানে আসলে যে!না মানে তুমি তো সচরাচর এখানে আসো না!বিয়ের ব্যাপারে কি কিছু বলতে এসেছো?”

উনার কথায় অর্ক কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।একটু হাসি হাসি ভাব নিয়ে বললো,

—- ” না আংকেল তেমন কিছু না! আসলে কাল তো গায়ে হলুদ তো তাই মিহির সাথে একটু কথা বলতে এসেছি ওর কোনো কিছু বলার আছে কিনা!”

অর্কের কথায় মিহির বাবা বেশ খুশি হলেন।

এদিকে মা জননী আমাকে রান্না ঘরে নিয়ে এসে এক ট্রে খাবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওড়না টা দিয়ে মাথায় ভালোভাবে কাপড় টেনে দিয়ে এক গাল হেসে বললেন,

—- ” যা এবার যা!”

আমি অবাক হয়ে বললাম,

—- ” কোথায় যাবো?আর আমাকে এই ট্রে টাই বা কেন ধরিয়ে দিয়েছো?”

মা আমার কথা শুনে চিন্তিত ভাবে বলেন,

—- ‘ ওহ্ তোকে তো বলাই হয়নি !আসলে অর্ক এসেছে।তোর বাবার সাথে কথা বলছে। তুই গিয়ে খাবার গুলো ওদের দিয়ে আয়।”

—- ” আমি কেন দিবো?এতোদিন যেমন তুমি দিয়েছো এখনো তুমি দিলেই তো পারো। আর না হলে মাহি কে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।আমি এসব খাবার টাবার কাউকে দিয়ে আসতে পারবো না।সেটা তো তুমি ভালো করেই জানো।”

কথাগুলো বলেই ট্রে টা পাশে রাখতে লাগলাম।তখনি মা রাগী গলায় বলে উঠলো,

—- ” তোকে আজ বলেছি তুই দিবি তাহলে তুই দিবো আমি বা মাহি কেউ দিবো না।আর একটা কথাও বাড়াবি না সোজা গুয়ি ভদ্র ভাবে ট্রে টা দিয়ে আসবি।”

এমনিতেও মনটা আজ ভিষণ খারাপ তাই আর কথা না বাড়িয়ে ট্রে টা নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।শুধু ট্রে টাই তো দিতে হবে!সোজা গিয়ে ট্রে গিয়ে টেবিলে রেখে আবার চলে আসবো।যেই ভাবা সেই কাজ। তবে পুরোটা আর হলো না।সোজা গিয়ে ট্রে টা টেবিলে ঠিকই রেখেছি কিন্তু চলে আসার আগেই বাবা ডেকে বললেন,

—- ” মিহি মা এখানে আয় অর্ক তোর সাথে একটু কথা বলতে চায়!”

এমনিতে এই অর্কের সাথে কথা বলার আমার একদম ইচ্ছে নেই তারপরও আমারও একটু কথা আছেউনার সাথে। তাই বাবার কথায় সাই দিয়ে ওনাদের কাছে গেলাম।আমি কাছে যেতেই বাবা বললেন,

—- ” ঠিক আছে তোমরা কথা বলো আমি একটু আমার ঘরে যাই একটা ঔষধ খাওয়ার আছে!”

কথাটা বলেই চলে গেলেন বাবা।আর এদিকে অর্ক তো ভিষন খুশি এতোক্ষণ এটার অপেক্ষায়ই ছিলো।আমি অর্কের সামনে এসে বললাম,

—- ” বলুন ভাইয়া কি বলবেন।আমারও আপনাকে কিছু বলার আছে!”

প্রতি বারের মতো এইবারও আমার মুখ থেকে ভাইয়া ডাকটা শুনে বেচারার মুখ টা কালো হয়ে গেলো।তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না আমি ভাইয়া বলেই ডাকবো।বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম রেহানের উপর রাগ করে।তাই বলেকে উনাকে ভাইয়া বলা বন্ধ করে দিবো নাকি?কিছুতেই না!আমি ডাকলে ভাইয়াই ডাকবো তাতে খারাপ লাগলে আমার কিছু করার নেই।অর্ক আর কথা না বাড়িয়ে বললেন,

—- ” ঠিক আছে চলো আমরা বাইরে গিয়ে কথা বলি!”

আমি মাথা নেরে সম্মতি জানিয়ে উনার সাথে বাইরে চলে এলাম।আমাদের পুকুর পাড়ে এসে বললাম,

—- ” এবার বলুন ভাইয়া আমাকে কি বলতে চাচ্ছেন!”

—- ” তেমন কিছু না!কাল তো গায়ে হলুদ তারপরের দিন আবার বিয়ে তো তোমার কোনো ইচ্ছে আছে কিনা কিছু করার সেটাই জানতে আসলাম।আসলে আমি তোমার কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে চাই না।তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করতে চাই! ”

—- ” নাহ্ ভাইয়া আমার এসব বিষয় নিয়ে কোনো ইচ্ছে নেই। ”

—- ” ওহ্! তুমি কি যেন বলবে বলছিলে এবার তোমার টা বলো।”

আমি কিছু বলার আগেই দেখতে পেলাম রেহান কোথা থেকে যেন আসছে।আর আমাদের দিকেই আসছে।তাই পেটের কথা পেটেই রেখে দিলাম আর অর্কের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললাম,

—- ” আপনি বিয়েটা যেমন ভাবে চাচ্ছেন সেভাবেই করতে পারেন আমার কোনো সমস্যা নেই। এখন থেকে তো আপনার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা! ”

কথাটা আমি ইচ্ছে করেই রেহান কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম।আমার কথা শুনে উনি যে খুব রেগে গেছেন তা উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রেহান আমাদের কাছে এসে জোরপূর্বক হেসে অার্কের সাথে হাত মিলিয়ে বললো,

—- ” আপনি তো অর্ক তাই না!”

—- ” হুম! কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না!”

—- ” আমি মিহির বন্ধু। ”

—- ” ওহ্ নিশ্চয় বন্ধু বিয়েতে এসেছেন?”

অর্ক হেসে কথা টা বললো।রেহানও একটু হেসে বললো বললো,

—- ” হুম তা তো বটেই! আমি না থাকলে বিয়েটা হহবে কি করে আফটার অল আমি হচ্ছি এ বিয়ের প্রধান অতিথি। আমাকে ছাড়া কি বিয়ে সম্পুর্ন হবে!”

কথাটা বলে একবার আড়চোখে আমার দিয়ে তাকালো।অর্ক ভাবছে বন্ধু হিসেবে বন্ধুর বিয়ে নিয়ে একটু মজা করছে তাই অর্কও হেসে বললো,

—- ” হ্যাঁ আপনাকে ছাড়া আমাদের বিয়েটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।”

কিন্তু বেচারা অর্ক তো আর জানে না রেহান ঠিক কি বলতে চাইছে।কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি রেহানন কি বুঝিয়েছে।কিছুক্ষণ আরো কিছু কথা বলার পর অর্ক চলে যেতেই……..

চলবে,,,,,

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]

ভালোবাসি পর্ব-১১

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_১১
#সুমাইয়া_জাহান

দুহাত কোমরে রেখে চোখ ছোটো ছোটো করে আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে তাকিয়ে আছি। আর রেহান খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনে গেম খেলতেছেন আর এমন একটা ভাব করছেন যেন আমাকে তিনি দেখতেই পাননি।আমিও উনাকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ নজরে দেখতে লাগলাম তারপর রাগী গলায় বললাম,

—- ” আমার সাদাসিধা বোনটাকে কি বলেছেন আপনি? ও তো সবার সাথে কথা বলে না!সত্যি সত্যি বলুন কি বলেছেন ওকে? ”

রেহান ফোন দিকে তাকিয়েই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,

—- ” সেটা আমার আর আমার ছোট শালি সাহেবার ব্যাপার!বাইরের মানুষ কেন বলতে যাবো আমাদের ভেতরের কথা! আমার ছোট্ট শালি সাহেবার কথা শোনার তুমি কে ? ”

উনার কথা শুনে হা হয়ে গেছি।বলে কি এই লোক আমার বোনের কথা শোনার আমি কে?আবার ওকে শালি সাহেবাও বানিয়ে দিয়েছে!এবার রাগ আমার সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেছে।উনার হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলাম,

—- ” আমি কে মানে?আমি ওর একমাত্র বড়ো বোন আর আমাকে বলছেন আমি বাইরের মানুষ! বারবার শালি সাহেবা সাহেবা করছেন কেন হ্যাঁ?”

আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবার ভান করে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

—- ” তুমি আমার ছোটো শালি সাহেবার একমাত্র বড়ো বোন? ”

আমি চোখ ছোটো ছোটো করে বললাম,

—- ” সন্দেহ আছে আপনার? ”

রেহানের মুখে মুহূর্তে হাসি ফুটে উঠলো।যেন উনি এতোক্ষণ ধরে এই কথাটার অপেক্ষায়ই ছিলেন।

—- ” আমার ছোট্ট শালি সাহেবার তুমি একমাত্র বড়ো বোন। তুমি নিজের মুখেই শিকার করেছো মিহু পাখি! তাহলে এবার বলো তুমি আমার কে?”

কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আমার দিকে এগোতে লাগলেন উনি।কি বজ্জাৎ লোক রে বাবা আমাকে কথার জালে ফাঁসিয়ে ফেললেন?এইজন্যই কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন ” ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না”।এরপর থেকে কবির কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করমো। কিন্তু এখন তো বলেই ফেলছি এ লোক তো এটার সুযোগ নেবে।উনি আমার দিকে যতো এগোচ্ছেন আমি ততোই পিছচ্ছি। উনি আসতে আসতে একদম আমার কাছে এসে পরেছেন।এবার আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে!আমি এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।ভাগ্যিস পিছনেই দরজাটা ছিলো!নাহলে এতো সহজে৷ আসতে পারতাম না।

রেহান মিহির কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ। তখনই রুমে রনিত ঢুকলো। ও এখনো ওর বসন্ত পরি কে নিয়ে ভাবতেই ব্যাস্ত!রেহান রনিতের দিকে একবার তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বললো,

—- ” ওই কি এতো ভাবছিস?”

রনিত আনমনেই বলে ফেললো,

—- ” বসন্ত পরি!”

রেহান ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে আরেকবার ভালো ভাবে তাকিয়ে বললো,

—- ” ওই ব্যাটা কি বলছিস কি তুই? বসন্ত পরি আবার কি?”

রেহানের কথায় হুস ফিরলো রনিতের তারপর তখনকার সব খুলে বললো রেহানকে।রেহান সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রেহান কে এভাবে হাসতে দেখে রনিত ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

—- ” হাসছিস কেন?আমি কি তোকে কোনো জোকস শুনালাম নাকি?”

রেহান কিছুক্ষণ ওভাবেই হেসে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

—- ” জোকস মানে পৃথিবীর সবথেকে বড়ো জোকস আমি আজ শুনলাম আর হাসবো না!”

—- ” আমি কখন তোকে জোকস শুনালাম? ”

—- ” ও মাই গড! তুই শুনাসনি তাহলে কি এখানে রনিত নামের কোনো৷ জ্বিন আমাকে জোকসটা শুনালো?”

মুখে দুই হাত রেখে রেহান অবাক হওয়ার ভান করে কথাটা বললো।রনিত ভ্রু কুঁচকে বললো,

—- ” তোর কাছে আমার এই সিরিয়াস ব্যাপার টা জোকস মনে হচ্ছে। দেখ ভাই তোর ভালোবাসা মিলিয়ে দেওয়ার জন্য আমি তোর সাথে এতো দূর এসেছি।আর সেই তুই কিনা আমার ব্যাপার টাকে জোকস বলছিস!”

—- ” তো কি বলবো হ্যাঁ!যে ছেলে প্রেম ভালোবাসায় এক বিন্দু বিশ্বাস করে না। আবার মেয়েদের সহ্যই করতে পারে না সেই ছেলে যদি এসে বলে আমি এক দেখায় একটা মেয়ে কে ভালোবেসে ফেলেছি তখন সেটা জোকস নয় তো কি?”

রেহান কথা গুলো বলে আবারও হাসতে লাগলো।আর রনিত খুব সিরিয়াস ভাবে বললো,

—- ” দেখ ভাই আমি কিন্তু খুব সিরিয়াস। সত্যি আমি ওকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি! ”

রেহানও হাসি থামিয়ে খুব সিরিয়াস ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

—- ” তুই সত্যি ওকে একবেরই ভালোবেসে ফেলেছিস?”

রনিত মাথা নেরে সম্মতি জানাতেই রেহান আবার বললো,

—- ” তাহলে যা ওকে এখন গিয়ে মনের কথাটা বলে আয়!”

রেহানের কথায় রনিত এবার চুপসে গেলো।মুখে দুই হাত দিয়ে মনমরা হয়ে বললো,

—- ” আমি কি আর তোর মতো যে মনের কথা গিয়ে ভালোবাসার মানুষ টাকে বলে দিবো!আমি আর যাই করতে পারি না কেন কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কিছুতেই বেরোবে না ” আমি তোমায় ভালোবাসি “!ইম্পসিবল! আমার দ্বারা এইটা হবে না!”

রেহান রনিতের কাঁধে হাত দিয়ে বাঁকা হেসে বললো,

—- তোমার দ্বারা যে এটা সম্ভব না সেটা আমি খুব ভালো ভাবেই জানি!তুই বরং একটা কাজ কর তুই ওকে সরাসরি ভালোবাসার কথা না বলে ঘুরিয়ে কথাটা বল!

রেহানের কথায় রনিত খুশিতে লাফিয়ে ওঠে চিৎকার দিয়ে বললো,

—- ” ঠিক বলেছিস!এইজন্যই তো তোকে আমি এত্তো ভালোবাসি। আচ্ছা আমি এখুনি গিয়ে ওকে প্রপোজ টা করে আসি!ওকে বাই!”

আমি রেহানের ঘর থেকে তারাতাড়ি বেরিয়ে এসে মাহিকে খুজতেছি।এই মেয়েটার জন্য আমাকে আজকে উনার সামনে এভাবে অপদস্ত হতে হলো।ওকে তো আমি ছাড়বো না।এমনিতে তো কারো সাথে কথাই বলেন না!এখননি কি দরকার ছিলো রেহানের সাথে ভাব করার।শুধু একবার পাই হাতের কাছে তারপর মজা বুঝাবো ওকে!হাঁটতে হাঁটতে মাহির ঘরের দিকে গেলাম।বাহ!উনি তো দেখি খুব শান্তিতেই বসে বসে চকলেট খাচ্ছেন! আমি ওর কাছে গিয়ে রাগী গলায় বললাম,

—- ” তুই ওখানে কেন গেলি?”

মাহি চকলেট খেতে খেতেই বললো,

—- ” জিজুর সাথে দেখা করতে গেছিলাম।আমার এরকম জিজু বলে কথা দেখবো না উনি ঠিকঠাক আছি আছে কিনা!তুমি তো আর উনার খেয়াল রাখছো না তাই আমিই গেলাম!এতে কোথায় আমাকে ধন্যবাদ দিবে তা না…”

এতোক্ষণ মাহির কথা গুলো চোখ বন্ধ করে হজম করছিলাম।এবার থামিয়ে দিয়ে জোরে চিৎকার বললাম,

—- চুপপপপপ!একটা থাপ্পড় খাবি! তুই উনাকে জিজু কেন বললি?

—- ” ওমা জিজু কে জিজু বলবো না তো কি বলবো?আর জিজু আমাকে সব বলেছে তুমি আর জিজু দুজন দুজনকে ভালোবাসো। এখন তোমাদের মধ্যে একটা প্রবলেম হয়েছে তাই তো তুমি অর্ক ভাইয়া কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছো।কিন্তু চিন্তা করো না বিয়েটা তোমার হবেই তবে সেটা আমার জিজুর সাথেই! ”

—- মাহিহিহিহিহি!!!

আমার চিৎকারে মাহি দাঁত কেলিয়ে হাসি দিয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো।আর আমি রাগে ওর যাওয়ার দিকে একটা বালিশ ছুড়ে মারলাম।আমার বোনটাকেও শেষে উনার দলে নিয়ে গেলো।যে মেয়েটা আমার হ্যাঁ তেই হ্যাঁ আর আমার না তে না মিলাতো সে কিনা এখন উনার হয়ে কথা বলো!রাগে বসে বসে নিজের চুল নিজেই টানছি!

ওইদিকে তিহা এখনো বাগানেই হাঁটছে। হাঠাৎ করে রনিত এসে তিহার সামনে দাড়ালো।হঠাৎ করে আসাতে তিহা অনেকটাই চমকে গেছে।রনিত তিহার সামনে এসেই একহাত দিয়ে মাথা চুলকে বললো,

—- ” ইয়ে মানে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই!”

তিহা সকাল থেকেই রনিতের কর্ম কান্ডে অবাক।যে লোকটা আগে কখনো ওর সাথে একটা কথাও বলতো না সে কিনা আজ নিজে থেকেই এতোবার করে কথা বলতে আসছে! আবার কথা বলার জন্য অনুমতিও চাইছে!ভাববার বিষয় তো!তিহা বিস্ময়করতা নিয়েই মাথা নেরে বললো,

—- ” হ্যা বলনু কি বলতে চান।”

তিহার সামনে এসে সব ভুলে গেছে কি বলতে হবে।সকাল থেকেই ওর সামনে আসলে সবকিছু গোলমাল হয়ে যাচ্ছে রনিতের।তারপরও তো কথাটা বলতে হবে।ও কিছুতেই দেড়ি করতে চায় না।ওর আগে অন্য কেউ এসে যায়।না না না রনিত আর ভাবতে পারছে না তাই এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বললো,

—- ” শুনেছি তুমি খুব ভালো স্টুডেন্ট তো আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেও তো এখন!”

—- ” হুম বলেন!”

রনিত নিজেকে প্রস্তুত করে একটা শ্বাস নিয়ে বললো,

—- ” আমি তোমার ছোটো ভাই কে ভালোবাসি।আর তোমার ভাই তোমাকো ভালোবাসে।অতএব,যুক্তিবিদ্যার নিয়মে কি হয়?? বাকিটা তুমি বলো!!”

তিহা বুঝতে পারছে রনিত ঠিক কি বোঝাতে চাইছে!তারপরও একটু বাজিয়ে দেখার জন্য বললো,

—- ” সরি আসলে আমার কোনো ছোটো ভাই নেই। তাই আমি আপনাকে কিছু বলতে পারছি না!”

—- ” নো প্রবলেম বড়ো ভাই কে ধরে নেও!”

—- ” আসলে বড়ো ছোটো কোনো ভাই বোনই নেই।”

তিহার উত্তরে রনিত চুপসে গেলো।কোথায় ভেবেছিলো সরাসরি প্রপোজ না করে এভাবে করবে।কিন্তু তিহার কোনো ভাই বোনই নেই তাহলে এবার কিভাবে বলবে ভালোবাসার কথা।তিহা রনিতের চুপসে যাওয়া মুখ টা দেখে সিউর হয়ে গেলো ওকে ভালোবাসার কথাই বলছে।তাই নিজেই বলে উঠলো,

—- ” আমি বুঝতে পারছি আপনি কি বলতে চাচ্ছেন।কিন্তু আমি তাতে রাজি নই। আপনার বন্ধু বিশ্বাস করে মিহি অনেক বড়ো ভুল করেছে।এমনকি আমিও রেহান ভাইয়াকে বিশ্বাস করেছিলাম।তাই ওই ঘটনা আর আমি দ্বিতীয় বার রিপিট হতে দিবো না।আপনাকে কি করে বিশ্বাস করবো আপনিও আপনার বন্ধুর মতো বাজি ধরে আমাকে আমাকে প্রপোজ করতে আসেননি!”

কথাটা বলেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ওখান থেকে দ্রুত চলে গেলো তিহা।আর রনিত কিছু বলার সুযোগই পেলো না।ও ভালো করেই বুঝতে পারছে আগে মিহি আর রেহানের প্রবলেম টা সল্ভ না হলে ওকেও তিহা বিশ্বাস করবে না। তাই আগে মিহির ভুল টা ভাঙ্গাতে হবে!

চলবে,,,,,

ভালোবাসি পর্ব-১০

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_১০
#সুমাইয়া_জাহান

কাল আর কারো সাথে কারো দেখা হয়নি। এমনিতেই সবাই জার্নি করে এসেছি তাই সবাই ক্লান্ত ছিলাম। আমার ক্ষেত্রে অবশ্য শুধুই একটা কারণই না আমি তো রেহানের সামনে পরতে চাইনি যা রেগে ছিলেন সকাল ভাইয়া ডাকাতে না জানি সামনে পেলে কি করতেন!তাই ইচ্ছে করেই আর ঘর থেকে বের হইনি।দুপুরের আর রাতের খাবার কোনো একটা বাহানা বানিয়ে মাহিকে দিয়ে ঘরে এনে খেয়েছি।আমার অবশ্য রাতে একদম খেতে ইচ্ছে করে না কিন্তু মা জননীর বকা খাওয়ার থেকে খাবার খেয়ে নেওয়াই ভালো তাই রাতে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও খেতে হয়েছে। তারপর এক ঘুম রাত পার করে দিয়েছি।আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এ কয়দিন আমি রাতে চোখের পাতা দুটো হাজার চেষ্টা করেও এক করতে পারিনি কিন্তু আজ শোয়ার সাথে সাথেই রাজ্যের ঘুম এসে চোখ ভর করলো।

সকাল হতে না হতেই চোখের উপর সুর্যে আলো এসে পরলো।আলো চোখ পরতেই আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি তিহা জানালার পর্দা সরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এর জন্যই এতো সকালে সুর্য মামার আমার সাধের ঘুমটার বারোটা বাজাতে পেরেছে।উফ এতোদিন পর একটু শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলাম সেটা আমার সখির পরানে সইলো না!ওর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত নিয়ে বললাম,

—- ” এতো সকালে সুর্যি মামাকে ঘরে ঢুকানোর কি খুব প্রয়োজন ছিলো?”

—- ” আলবাত দরকার ছিলো!শুনেছি গ্রামের সকাল নাকি খুব সুন্দর হয়!আর তুই কিনা আমাকে সেই দৃশ্য দেখার থেকে বঞ্চিত করতে চাস কেমন বন্ধু রে তুই! কোথায় নিজের গ্রামে এনে সকাল বেলা উঠে বন্ধু কে নিয়ে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবি তা না পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস!”

তিহা দুই হাত ভাজ করে খুব সিরিয়াস মুডে কথা গুলো বলে আমার দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে আছে। আর আমি হাই তুলতে তুলতে ওর কথা শুনে বললাম,

—- ” নিজের জলজ্যান্ত দুইটা পা থাকতে আমাকে তোরে কোলে করে গ্রাম ঘুরাতে নিতে হবে কেন?ইচ্ছা যেহেতু তোমার তাই ঘুরতে যাওয়ার দায়িত্ব টাও তোমারই! ”

ওর দিকে তাকিয়ে দেখি এখনো এখনো হাত দুই টা৷ ভাজ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে।আসলে গ্রামের সকাল দেখার খুব ইচ্ছা। ও কখনো গ্রামে আসে নি তাই গ্রামের সকাল গুলো কেমন হয় ও জানে না।আমাকে বলেছিলো আমার সাথে গ্রামে আসলে সকাল বেলা গ্রাম ঘুরবে।তাই এতো রেগে আছে।ওর অবস্থা দেখে আমার ভিষণ হাসি পাচ্ছে। কপাল কুঁচকে একটু ভেবে বললাম,

—- ” তোর যখন এতোই ইচ্ছা গ্রামের সকাল দেখার তাহলে তুই বরং একটা কাজ কর আমাদের বাড়ির বাগানেই একটু ঘুরে আয়!কাল কে মাহি বা কাউকে বলে তোর গ্রাম ঘুরানোর একটা ব্যবস্থা করবো একদম পাক্কা! ”

তিহা চোখ বন্ধ করে কাঠ কাঠ গলায় বললো,

—- ” তুই আমায় বলেছিলি তোর গ্রামে আসলে তুই নিজে আমাকে ঘুরিয়ে দেখাবি এখন এতো খারাপ কি করে হইলি?”

আমি মুখ আঙুল দিয়ে কিছুক্ষন ভেবে বললাম,

—- ” আমি ভালো কবে ছিলাম যে আজ হঠাৎ খারাপ হইলাম?”

—- ” তুই জীবনে শোধরাবি না!”

বিরক্ত হয়ে তিহা কথাটা বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। আর এদিকে ওকে রাগাতে পেরে হাসতে হাসতে শেষ। তারপর উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।

রনিত ফ্রেস হয়ে এসে দেখে রেহান এখনো ল্যাপটপ কাজ করছে।রেহান পড়াশোনার পাশাপাশি ওর বাবার বিজনেসও জয়েন করছে। এই কয়দিন কোনো কাজই করতে পারেনি তাই আজ সকাল সকাল উঠে কয়েকটা কাজ করে নিচ্ছে।রনিত বিরক্ত হয়ে বললো,

—- ” তোর কি সারাক্ষণ কাজ করতেই ভালো লাগে?এখানে আমরা মাত্র কয়েক দিনের জন্য এসেছি একদিন তো কাজ টা বন্ধ রাখতে পারিস!”

রেহান ল্যাপটপে কাজ করতে করতেই বললো,

—- ” কাজ বন্ধ করে কি করবো? তোর সাথে ঘুরে বেড়াবো?”

রনিত নিরাস হয়ে রেহানের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,

—- ” তুই তাহলে আজ সারাদিন কাজই করবি?তুই কাজ নিয়েই থাক আর ওইদিকে তোর মিহু পাখি অন্যের হয়ে যাবে!”

কথা গুলো বলে বাইরের দিকে চলে গেলো রনিত।আর রেহান ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে রনিতের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” কে কার হবে সেটা সময়ই বলবে! ”

তিহা বেরিয়ে মিহিদের বাগানের দিকে গেলো।বাগানে এসেই ওর মনটা দারুণ ফুরফুরে হয়ে গেলো।কারণ এখানে অনেক ধরনের ফুল গাছ আছে আর প্রত্যেকটা গাছেই রঙ বেরঙের ফুলে ভরা।তিহার আর বুঝতে বাকি নেই মিহি কেন এখানে পাঠিয়েছে।ও মনে মনে মিহিকে হাজার টা ধন্যবাদ দিলো এতো সুন্দর একটা জায়গায় আসতে পেরে। চারিদিকে এতো ফুল যে তিহার পুরো পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আসলে তিহা ফুল ভিষণ পছন্দ করে।তাই মিহি ইচ্ছে করে ওকে এখানে পাঠিয়েছে।তিহা কয়েকটা ফুল নিয়ে ওর খোলা চুলে গুঁজে দিলো তারপর বাগানের ভিতর ঘুরে ঘুরে ফুল দেখতে লাগলো।

রনিতের চোখ আটকে গেলো বাগানের দিকে। কারন ওখানে একটা হলুদ থ্রিপিস পরা মেয়ে এদিক ওদিক ফুলের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেয়েটার চুলগুলো খোলা তাতে কয়েকটা ফুল গুঁজে দেওয়া আছে।পুরোই এক বসন্ত পরি মনে হচ্ছে। রনিত হাত দিয়ে ওর বুকের বাম পাস টা চেপে ধরে বিরবির করে বলতে লাগলো,

—- ” ওহ্ মাই গড! এ গ্রামে তো দেখি পরির দেখা পাওয়া যায়।”

মেয়েটা কে ভালো করে দেখে আবার বিরবির করে বললো,

—- ” এটা তো মিহির বান্ধবী! আমি এতোক্ষণ ওকে দেখে বসন্ত পরি ভাবছিলাম! যেই আমি মেয়েদের দেখতেই পারি না আজ হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে আমার এমন অবস্থা হচ্ছে কেন?আর ওকে তো আগেও দেখেছি তখন তো এমন হয়নি।উমমম তখন হয়তো ভালো করে তাকাইনি! আমি কি এখন রেহানের মতো ওর প্রেমে পরে গেলাম নাকি?হয়তো হ্যাঁ!”

রনিত আস্তে আস্তে তিহার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিহার সেই দিকে খেয়াল নেই ও তো এখন ফুল দেখতেই ব্যাস্ত।তিহা পিছোতে গিয়ে হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা লাগে।হাতে হালকা ব্যাথা পেয়েছে।হাত ডলতে ডলতে বললো,

—- ” কোন খাম্বারে এখানে?একটু আগে তো কোনো কিছু ছিলো না!হঠাৎ করে খাম্বা এলো কি করে?”

সামনে তাকাতেই রনিতকে দেখতে পেয়ে চোখ জোড়া একদম ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বললো,

—- আপনি এখানে কি করছেন?আর এমন খাম্বার মতো দাড়িয়েই বা কেন ছিলেন?আপনার কারনে আমি হাতে ব্যাথা পেলাম।

রনিত এখন নিজের মধ্যে নেই আনমনেই বলে ফেললো,

—- ” তুমি যে আমার হার্ট অ্যাটাক করে দিয়েছো বসন্ত পরি তার কি হবে?”

তিহা রনিতের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,

—- কিহহহহহ????

তিহার চিৎকারে রনিতের হুস ফিরলো একটা বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” আমি কি কিছু বলে ফেলেছি নাকি?তুমি কিছু শুনেছো? আচ্ছা বরং যাই রেহান ডাকছে!”

রনিত কথাগুলো বলেই কোনো রকমে ওখান থেকে কেটে পরলো।আর এদিকে তিহা কিছুই বুঝতে পারছে রনিত এগুলো কি বলে গেলো।বারবার কথা গুলো ভাবছে কিন্তু কোনো আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছে না।

আমি ফ্রেস হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে মাহিকে খুঁজতেছি কিন্তু কোথাওই পাচ্ছি না।কি ব্যাপার! কোথায় গেলো মেয়েটা?রেহানের রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম ওই রুমের দিকে একবার তাকাতেই চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।কারন ওখানে মাহি রেহানের সাথে বসে খেজুরি আলাপে মেতে উঠেছে।দুজনে কি হাসা হাসিই না করছে।এদের দেখে মনে হচ্ছে কতোদিনের পরিচিত। কিন্তু উনি মাহিকে এতো তারাতাড়ি পটালেন কিভাবে মাহিতো এতো সহজে কারো সাথে মিশে না।সম্ভব! সম্ভব! উনার দ্বারা সবই সম্ভব! আমার ভোলা ভালা বোনটাকেও এই ব্যাটা হাত করে নিলো।একে এবার ছাড় দেওয়া যায় না!আমি হনহন করে রুমের ভিতর ঢুকে পরলাম।মাহির দিকে তাকিয়ে বললাম,

—- ” মাহি তোকে মা ডাকছে!তারাতাড়ি যা!”

—- ” কেন ডাকছে মা?”

মাহি প্রশ্ন করায় আমি একধমক দিয়ে বললাম,

—- ” তোকে ডাকছে মানে ডাকছে!এখুনি যা এখান থেকে!”

মাহি ধমক খেয়ে তারাতাড়ি বেরিয়ে গেলো।ওর দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে একটা শ্বাস নিলাম।

চলবে,,,,

ভালোবাসি পর্ব-০৯

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_৯
#সুমাইয়া_জাহান

আমার রুমে গিয়ে আমি আর তিহা একটু রেস্ট নিতে যাবো এরমধ্যেই একজন এসে হাজির।আমি তার দিকে তাকাতেই অবাক।অবাক কন্ঠে বলে উঠলাম,

—- ” আপনি এখানে?”

আমার সামনে থাকা লোকটা আমার প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে গেছে।তারপরও নিজে সামলে ভ্রু কুঁচকে আমাকে বললো,

—- ” আমি একটা কাজে এখানে এসেছি! কিন্তু তুমি এখানে কি করছো মিহি?”

আমি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

—- ” এটা আমার বাড়ি রনিত ভাইয়া তাই আমি এখানে!কিন্তু আপনি আমার গ্রামে আমার বাড়িতে কি করছেন?”

সামনে থাকা রনিত ভাইয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার আমার দিকে একটা বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে আমতা আমতা করে বললো,

—- ” ব ব বললাম তো একটা কাজে এসেছি এখানে।”

** আপনারা তো এতোক্ষণে বুঝে গেছেন মিহির সামনে থাকা লোক টা রনিত।যারা বলেছেন লোকটা রেহান তাদের জন্য এক বালতি ঠান্ডা পানির সমবেদনা।😁**

আমি এখনো সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” এখানে আমার বাড়িতে? তো কি কাজ করতে এসেছেন এখানে?”

আমার কথার মাঝেই বাবা কারো একটার সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে আসছেন।এটা দেখে রনিত ভাইয়া যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।একটা নিশ্বাস নিয়ে বুকে হাত দিয়ে বিরবির করে বললো,

—- ” ছাড়বো তোকে রেহান!নিজের হবু বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে এসেছিস ভালো কথা এর মধ্যে আমাকে পাটার বলি বানাইলি কেন?সময় আমারও আসবে তখন এর হিসেব তোকে দিতে হবে বলে রাখলাম!”

রনিতের বিরবির করে বলা কথাগুলো আমার কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।আমি তো বাবার সাথে থাকা লোকটাকে দেখতে ব্যাস্ত!বারবার উঁকি মারতে কিন্তু বাবার কারনে লোকটার মুখ টা দেখতে পারছি না।বাবা লোকটা কে বাড়ির ভিতর ঢুকাতেই লোক মুখ টা স্পষ্ট দেখতে পেলাম।লোক টাকে দেখেই আমার মাথায় রাগে ফেটে যাচ্ছে কারণ লোকটা আর কেউ না ওয়ান এন অনলি রেহান।আমার পিছু পিছু এখানেও চলে এসেছে।আর দেখ বাবা উনার সাথে কিভাবে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।দেখে৷ মনে হচ্ছে কতো জনমের চেনা!কিন্তু বাবা তো জানে তার আদরের মেয়েকে এই ব্যাটা ভালোবাসার নাম দিয়ে ঠকিয়েছে!যার থেকে পালানোর জন্য এতো কিছু করছি আমি!

উনারা আসতে আসতে আমার সামনে এসে পরেছে।আমি তো রাগে ফুঁসছি। আর রেহান আমার সামনে এসে আমাকে একবার ভালো করে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,

—- ” তুমি তো মিহি তাই না!তা তুমি এখানে কি করছো?”

মহাশয় এমন একটা ভান করছে যেন আমাকে ভালো করে চিনেনই না।আহা কি অভিনয় টাই না পারেন!আহা দেখে চোখ টা জুড়িয়ে যায়।ব্যাটা বদের হাড্ডি একটা!কিন্তু এখন চাইলেও কিছু বলতে পারবো না বাবা সামনে আছে।তাই বাবার সামনে ভদ্রতার খাতিরে মুখ খুলে জবাব দিবো তার আগেই বাবা বলে উঠলেন,

—- ” আরে ও তো আমার বড়ো মেয়ে।কিন্তু তুমি ওকে কি করে চিনো? ”

বাবার কথায় রেহান একটু কপাল কুঁচকে একবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

—- আংকেল আমরা তো এক ভার্সিটিতেই পড়ি।ও আমার জুনিয়র। তাই না মিহি!

ইচ্ছা তো করছে এক ঘুসি দেই।হাতে কিছু করতে পারবো না তো কি হয়েছে কথা দিয়ে তো ব্যাটাকে শায়েস্তা করতে পারি।একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বললাম,

—- ” হ্যাঁ বাবা এই ভাইয়া আর আমি এক ভার্সিটিতেই পরি উনি আমার সিনিয়র। ভাইয়া আপনি হঠাৎ এখানে কি করছেন?”

আমার ভাইয়া ডাকাতে রেহানের মুুখ টা দেখার মতো হয়ে গেছে। ভিষন রেগে গেছে। রাগে চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালো আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইলাম।আমি ভয় পাই নাকি উনাকে?কিন্তু উনাকে দেখে মনে হচ্ছে একটু বেশিই রাগিয়ে দিয়েছি। মুখে প্রকাশ না করলেও ভিতরে ভিতরে ঠিক ভয় করছে উনার এমন রুপ দেখে।মিহিরে একটু সাবধানে থাকিস এই ব্যাটা তোকে একলা পেলে পুরো কাঁচা চিবিয়ে খাবে!এইজন্য বলে ” ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না ” কিন্তু এখন তো যা করার করেই ফেলেছি যা কপালে আছে তাই হবে।এর মাঝে বাবা আবার বলে উঠলেন,

—- ” মিহি মা রেহান বাবা এখানে একটা প্রজেক্ট নিয়ে এসেছে আমাদের গ্রামের জন্য ওইটার জন্যই এখানে এসেছে।(রেহানের দিকে তাকিয়ে) তা রেহান বাবা তুমি এখানে আমাদের বাড়ি থেকে যাও।আর পাঁচ দিন পরই মিহি মার বিয়ে একসাথে বিয়ে টাও খেয়ে যাবে!কি বাবা থাকবে তো?”

আমি ওদের কথার মাঝে মানে মানে কেটে পরলাম এখানে থাকলেই বিপদ।ওদিকে রেহানের মিহির বিয়ের কথা শুনে বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো। হৃদপিণ্ড টা ওর খান খান হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিহির বাবার শেষের কথাটা বেশ পছন্দ হয়েছে এই টার অপেক্ষাই তো ছিলো।প্রজেক্ট তো শুধু বাহানা এখানে ও মিহির জন্যই এসেছে।তবে প্রথমেই হ্যাঁ বললে তো খারাপ দেখায়।মনে মনে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” শ্বশুর মশাই আমি এখানে থাকার জন্যই এসেছি।আর বিয়েটা তো অবশ্যই হবে তবে সেটা আমার সাথে।জামাই হই আপনার একটু খাতির যত্ন ভালো করে কইরেন।”

মুখে একটু গম্ভীর ভাব এনে বললো,

—- ” না থাক আংকেল আপনাদের অসুবিধা হবে!আমরা নাহয় এখানে কোনো একটা হোটেলে উঠবো। আপনাদের শুধু শুধু অসুবিধায় ফেলতে চাই না।”

—- ” আরে কি বলো বাবা!আমাদের আবার কিসের অসুবিধা? তোমরা এখানে নিশ্চিন্তে থাকে পরো আমাদের বিন্দু মাত্রও অসুবিধা হবে না।আমি আর কোনো কথা শুনবো না তোমরা এখানে থাকছো এটা ফাইনাল!”

মিহির বাবার জোরাজোরিতে রেহান থাকতে রাজি হয়।অবশ্য এটা ওর নাটক ছিলো। তারপর উনি ওদের কে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে যান বাজার করতে।

রেহান রুমে এসেই ব্যাক টা মেঝেতে ছুরে মারে।রাহ একটু কমেনি ওর। একে তো এই কয়দিন মিথ্যে ভুল বুঝে মিহি এতো কিছু করছে তার উপর আজ ভাইয়া ডাকলো ওকে!এতো কিছু মেনে নিলেও এই ভাইয়া ডাক টা কিছুতেই মানতে পারছে না।এমনিতে রেহান রেগে গেলে ঘরে সব জিনিস ভাঙ্গচুর করে কিন্তু এখানে তো আর তা করতে পারবে না।তাই খাটের উপর বসে চোখ বন্ধ করে নিজের চুল নিজেই টানছে আর বলছে,

—- ” মিহু পাখি আজকাল তোমার বড্ড বড্ড সাহস বেড়ে গেছে।অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে গেলে?আবার আমাকে ভাইয়া বলে ডাকলে?আজকে যা করলে তার জন্য অনেক বড়ো মুল্য তোমায় দিতে হবে!তৈরি থেকো মিহু পাখি!”

রনিত রেহানের এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলো।রেহানের রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে।কিন্তু কোনো ভাঙ্গচুর করছে না দেখে একটা ছোট্ট করে শ্বাস নিলো যাক এ বাড়িতে এসে এইটুকু সম্মান অন্তত রাখলো।তারপর আস্তে আস্তে রেহানের পাশে গিয়ে বসলো।

—- ” রেহান মাথা ঠান্ডা কর! দেখ এখন মিহি তোর উপর রাগ করে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে।আমাদের হাতে কিন্তু একদম সময় নেই। বিয়ে পাঁচ দিন পর এর মধ্যে সব কিছু ঠিক করতে হবে।মিহির ভুল টা শোধরাতে হবে আর বিয়ে টাও আটকাতে হবে।তাই এখন রাগলে চলবে না মাথা টা একটু ঠান্ডা কর।”

—- ” ছেলেটার নাম অর্ক আহমেদ এই গ্রামেই বাড়ি মিহির থেকে আগে জেনেছিলাম।আধা ঘন্টার মধ্যে ছেলেটার সব ডিটেইলস আমার চাই!”

কথাটা বলেই একটা তোয়ালে নিয়ে রেহান হনহন করে ওয়াস রুমে ঢুকে পরলো।আর রনিত একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বেরিয়ে পরলো অর্কের খোঁজে। ও খুব ভালো করেই জানে এই আধা ঘণ্টার মধ্যে সব খবর না পেলে কি হতে পারে!

এদিকে আমি ওখান থেকে মানে মানে কেটে পরে নিজের রুমে ঢুকে তারাতাড়ি দরজা আটকে একনাগাড়ে শ্বাস নিচ্ছি। মনে হচ্ছে এতোক্ষণ দম আটকে ছিলো।তিহা রুমেই ছিলো তাই ও এতো কিছু জানে না।আমাকে এমন করতে দেখে কিছুক্ষণ পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে ভ্রু কুঁচকে বললো,

—- ” এমন করছিস কেন তুই? মনে হচ্ছে কোনো ভুত দেখে এসেছিস!”

আমি ভালো করে দম নিয়ে খাটে গিয়ে বসে ঘাম মুছতে মুছতে বললাম,

—- ” ভুত না ভুত না!তার থেকেও ভয়ংকর কিছু দেখেছি আমি! ”

আমাকে এমন ঘামতে দেখে আর আমার এমন অদ্ভুত কথা শুনে তিহা আমার কাছে এসে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখে চিন্তিত হয়ে বললো,

—- ” জ্বর তো নেই তাহলে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছিস কেন রেহান ভাইয়ার শোকে পাগল হয়ে গেলি নাকি!”

আমি ওর কথা চরম বিরক্ত একে তো ওই রেহান নামক টেনশন তারপর আবার তিহার এমন কথা বার্তা! আমি উঠে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম,

—- ” চুপ করবি তুই! এখনো পাগল হইনি তবে সত্যিই পাগল বানানোর জন্য ওই রেহান নামক পাগল বানানোর ডাক্তার টা চলে এসেছে।”

—- ” কিহহহহহ!!!রেহান ভাইয়া এখানে চলে এসেছে?”

অবাক হয়ে তিহা বললো।আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,

—- ” আগগে হ্যাঁ উনি চলে এসেছেন!”

—- ” আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে আমাদের! রেহান ভাইয়া তোকে মনে হয় সত্যি ভালোবাসে।তুই একটু ভালো করে ভাবতো সেদিন ঠিক শুনেছিলি তো!নাকি এর পিছনেও কোনো ব্যাপার আছে?”

তিহা আমার পাশে বসে কথা গুলো বললো।আমি গম্ভীর ভাবে বললাম,

—- ” এখানে ভাবার কিছু নেই আমি নিজের কানেই সব শুনেছি। এখন এসব নিয়ে একদমই ভাবতে চাই না”

তিহা একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো,

—- ” তুই যা ভালো বুঝিস তাই কর!”

চলবে,,,,

ভালোবাসি পর্ব-০৮

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_৮
#সুমাইয়া_জাহান

সারা রাত ট্রেনে জার্নি করার পর অবশেষে পৌছালাম নিজ গন্তব্যে। কাল বিয়েতে রাজি হওয়ার ঠিক এক ঘন্টা পর বাবা আবার ফোন দিয়ে বললো পাঁচ দিন পর বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে ।আর আজ রাতের ট্রেনেই আমাকে বাড়ি ফিরতে বলছেন।তাই একরকম বাধ্য হয়েই রাতের ট্রেনে উঠতে হলো।আমার সঙ্গে তিহাও এসেছে।একমাত্র বেস্টুর বিয়ে বলে কথা না এসে পারে।আর আমার উপর দিয়ে এখন কি যাচ্ছে সেটাও তো জানে তাই এসময় আমার পাশে থাকার জন্য আমার সাথে এসেছে।

সারারাত আমি নির্ঘুমে কাটিয়েছি।শুনেছি মানুষ ভালোবেসে ঠকলে রাতে ঘুমাতে পারে না।তখন কথাটা নিয়ে খুব হাসতাম কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কতোটা কষ্টের কারনে সেই মানুষ গুলো রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে আমার পাশে থাকা মহান ব্যাক্তিটি কে নিয়ে।উনি আসার সময় বুক ফলিয়ে খুব গর্ববোধ নিয়ে বলেছেন উনি আমার সাথে যাচ্ছেন আমাকে মানুষিক ভাবে সাপোর্ট করার জন্য। ট্রেনে উঠার সাথে সাথেই একটা হাই তুলে

—- ” মিহু একদম চিন্তা করিস না আমি আসি তো তোর সাথে!তোর এক বিন্দু ক্ষতিও আমি হতে দিবো না।কোনো রকমের অসুবিধা হলে শুধু একবার আমায় ডাকবি সাথে সাথে সব প্রবলেম সল্ভ হয়ে যাবে।খুব ক্লান্ত লাগছে রে আমি দুই মিনিট একটু ঘুমিয়ে নেই!”

এই বলে যে তখন ঘুমিয়েছে এখন বারো ঘন্টা হয়ে গেছে ওনার উঠার কোনো নাম নেই।মরার মতো ঘুমিয়েই যাচ্ছে। দেখে৷ মনে হচ্ছে শতোজনমের ঘুম এক সাথে ঘুমিয়ে নিচ্ছে।আমি ওকে হাত দিয়ে ঢেলছি আর জোরে জোরে ডাকছি,

—- ” তিহা! এই তিহা!উঠ আমারা পৌঁছে গেছি। এই দেখ ট্রেন অনেকক্ষণ আগে থেমেছে। সবাই নেমে গেছে।শুধু আমরা দুজনই ট্রেনে! আর কেউ নাই!এই উঠ বলছি উঠ!কি রে শুনতে পাচ্ছিস না? উঠ!”

আমার কথায় উনার কিছুই হলো না।আমার হাত টা সরিয়ে দিয়ে আবার আরামছে ঘুমাচ্ছেন। আমি মুখে বিরক্তি নিয়ে ভাবতে লাগলাম কি করে এই কুম্ভকর্ণ কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গানো যায়।সোজা কথায় যে এই ঘুম ভাঙ্গাতে পারবো না তা তো বুঝতেই পারছি।ভাবতে ভাবতেই আমার হাতের দিকে নজর পরলো।আমার হাতে একটা পানির বোতল।বোতল টাকে ভালো করে দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

—- ” সোজা আংগুলে ঘি না উঠলে তো আংগুল টা বাঁকাতেই হয়!সরি তিহু বেবি এখন তোমার একটু শাওয়ারের দরকার! ”

শেষের কথাটা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম।তারপর পানির বোতল টা বাঁকা করে ধরে তিহার মুখ বারার উপর থেকে শাওয়ারের মতো ছাড়লাম পানি গুলোকে।তিহার মুখে পানি গুলো পরতেই ও ধড়ফড়িয়ে উঠে চোখ মুখ থেকে পানি গুলো জেরে আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,

—- ” ওভাবে তাকালে লাভ নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন আমরা এই দুই এলিয়েন ব্যাতিত আর কোনো মানুষ আছে কি-না! অনেকক্ষণ ডাকার পরও কেউ যদি না উঠে তাহলে তো এমন টা করতেই হবে!”

আমার কথায় তিহা চারিপাশে ভালো ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে সত্যি আমরা ছাড়া আর কেউ নাই।তাই আমার উপর শতো রাগ হওয়া সত্বেও মুখে কিছু বললো না।কিন্তু ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আমার উপর চরম ক্ষেপে আছে।চোখমুখ খিঁচে চুপচাপ ব্যাগ উঠিয়ে বাইরের দিকে এগিয়ে গেলো। ওর কান্ড দেখে আমি মুখ টিপে টিপে হেসে ওর সাথে বেরিয়ে আসলাম।

মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো ট্রেন থেকে নেমে যে এর প্রথমেই এর সাথে দেখা হবে বুঝতে পারিনি।পারলে নামতামই না যত্তসব! আমার সামনে অর্ক আহমেদ মানে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।এই ব্যাটা ছোটো বেলা থেকেই আমার পিছনে আঠার মতো লেগে আছে।যেখানে যাই সেখানেই হাজির হয়ে যায়।কেন জানি একে আমার কিছুতেই সহ্য হয় না।দেখলেই গা জ্বলে যায়।আমাকে দেখেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো আর জিজ্ঞেস করলো,

—- ” কেমন আছো মিহি?”

মনে মনে বললাম,

—- ” এতোক্ষণ তো ভালাই ছিলাম তোরে দেইখা এখন বহুত খারাপ হইয়া গেছি।”

কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখে বললাম,

—- ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি ভালো আছেন তো অর্ক ভাইয়া?”

আমার মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনলে ছোটবেলা থেকেই উনার মুখ টা কালো হয়ে যেতে।আজও তাই হলো মুখ টা কালো করেই করুন গলায় বললো,

—- ” আমাদের বিয়ের ডেটও ঠিক হয়ে গেছে আর পাঁচ দিন পর বিয়ে তুমি এখনো আমাকে ভাইয়া ডাকবে?এখন তো এই ডাক টা না ডাকতে পারো!”

—- এখনো বিয়ে টা হয়নি। যখন হবে তখন দেখা যাবে ঠিক আছে অর্ক ভাইয়া!

আমার কথাটা শুনে অর্কের চুপসে যাওয়া৷ মুখ টা আরো চুপসে গেলো।তিহা অর্কের অবস্থা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে।এমন সময় বাবা চলে আসলো।এসেই আমাকে বলতে লাগলো,

—- ” কিরে মা তুই কখন নামলি?সবাই আরো কতো আগে নেমে গেছে! তোরা নামছিস না দেখে তোকে কতোবার ফোন দিয়েছি কিন্তু তোর ফোন বন্ধ। এতোক্ষণ ট্রেনে বসে কি করছিলি?আমি তো ভাবলাম তুই বোধহয় এই ট্রেনে আসিস নি!”

আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললাম,

—- ” সে অনেক লম্বা কাহিনি বাবা পরে একসময় শুনাবো।আর ফোনে চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই ফোন বন্ধ! ”

বাবা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

—- ” ঠিক আছে এখন তাড়াতাড়ি বাড়ি চল। তোর মা সেই কখন থেকে তোর জন্য রান্না করে বসে আছে।”

আমরা সবাই বাড়ি চলে এলাম।বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই মাহি দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আর খুশিতে গদগদ হয়ে বলছে,

—- ” আপুই কতো দিন পর তোর সাথে দেখা!আমি তো আজ খুব খুব খুব খুশি!”

আমি ওকে ওর মাথায় হালকা একটা বারি মেরে বললাম,

—- ” আমাকে কি মেরে ফেলার ধান্দায় আছিস নাকি?এতো জোরে কেন ধরেছিস আমি তো ব্যাথা পাচ্ছি। ছাড় আমাকে!”

মাহি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুই হাত ভাজ করে মুখ গোমড়া করে বললো,

—- ” ছোটো বোনটা কতো ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসা প্রকাশ করলো আর তুমি কিনা এইভাবে বলছো!আচ্ছা ছাড়ো তোমার থেকে এর থেকে বেশ কি বা আশা করবো!তোমাকে এখন আর লাগবে না আমার আরেক টা মিষ্টি আপু চলে এসেছে এখন আমি তাকেই ভালোবাসবো হুম! ”

কথাটা বলেই তিহার কাছে গিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” তুমি নিশ্চয় তিহা আপু তাই না!”

তিহাও একটা মিষ্টি করে হেসে মাথা নেরে হ্যা বললো।মাহি আবার একটা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” আমি মাহি নিশ্চয় আপুই তোমাকে আমার পরিচয় আগেই বলেছে!”

তিহা এবার দুহাত দিয়ে মাহির মুখ টেনে বললো,

—- ” হ্যা গো মিষ্টি বোনুটা তোমার কথা তোমার আপুই এর থেকে শুনতে শুনতে আমি তোমার ওপর ফিদা হয়ে গেছি।”

মাহি খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো,

—- ” সত্যি!!! ”

—- ” হুম সত্যি! সত্যি! সত্যি! তিন সত্যি। ”

মাহি আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাবা ওকে থামিয়ে বললো,

—- ” বাকি আলাপ ভিতরে গিয়ে করিস মাহি।মেয়ে দুইটা সারারাত জার্নি করে এসেছে।এখন ওদের আগে ঘরে ঢুকতে দে!”

বাবার কথায় মাহি চুপসে গেলো মনমরা হয়ে বললো,

—- ” ওকে বাবা।”

মাহির চুপসে যাওয়া মুখ টা দেখে আমার খুব হাসি৷ পাচ্ছে ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে রেখেছি খুব কষ্টে।তারপর আমরা বাড়িতে ঢুকলাম।আমার রুমে গিয়ে আমি আর তিহা ফ্রেশ হয়ে নিলাম।একটু পরই মা জননী আমাদের দুজন কে পেট ভরে খাবার খাইয়ে তারপর আমাদের ছেড়েছে।আমার রুমে গিয়ে আমি আর তিহা একটু রেস্ট নিতে যাবো এরমধ্যেই একজন এসে হাজির।আমি তার দিকে তাকাতেই অবাক।অবাক কন্ঠে বলে উঠলাম,

—- ” আপনি এখানে?”

চলবে,,,,,সারা রাত ট্রেনে জার্নি করার পর অবশেষে পৌছালাম নিজ গন্তব্যে। কাল বিয়েতে রাজি হওয়ার ঠিক এক ঘন্টা পর বাবা আবার ফোন দিয়ে বললো পাঁচ দিন পর বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে ।আর আজ রাতের ট্রেনেই আমাকে বাড়ি ফিরতে বলছেন।তাই একরকম বাধ্য হয়েই রাতের ট্রেনে উঠতে হলো।আমার সঙ্গে তিহাও এসেছে।একমাত্র বেস্টুর বিয়ে বলে কথা না এসে পারে।আর আমার উপর দিয়ে এখন কি যাচ্ছে সেটাও তো জানে তাই এসময় আমার পাশে থাকার জন্য আমার সাথে এসেছে।

সারারাত আমি নির্ঘুমে কাটিয়েছি।শুনেছি মানুষ ভালোবেসে ঠকলে রাতে ঘুমাতে পারে না।তখন কথাটা নিয়ে খুব হাসতাম কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কতোটা কষ্টের কারনে সেই মানুষ গুলো রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে আমার পাশে থাকা মহান ব্যাক্তিটি কে নিয়ে।উনি আসার সময় বুক ফলিয়ে খুব গর্ববোধ নিয়ে বলেছেন উনি আমার সাথে যাচ্ছেন আমাকে মানুষিক ভাবে সাপোর্ট করার জন্য। ট্রেনে উঠার সাথে সাথেই একটা হাই তুলে

—- ” মিহু একদম চিন্তা করিস না আমি আসি তো তোর সাথে!তোর এক বিন্দু ক্ষতিও আমি হতে দিবো না।কোনো রকমের অসুবিধা হলে শুধু একবার আমায় ডাকবি সাথে সাথে সব প্রবলেম সল্ভ হয়ে যাবে।খুব ক্লান্ত লাগছে রে আমি দুই মিনিট একটু ঘুমিয়ে নেই!”

এই বলে যে তখন ঘুমিয়েছে এখন বারো ঘন্টা হয়ে গেছে ওনার উঠার কোনো নাম নেই।মরার মতো ঘুমিয়েই যাচ্ছে। দেখে৷ মনে হচ্ছে শতোজনমের ঘুম এক সাথে ঘুমিয়ে নিচ্ছে।আমি ওকে হাত দিয়ে ঢেলছি আর জোরে জোরে ডাকছি,

—- ” তিহা! এই তিহা!উঠ আমারা পৌঁছে গেছি। এই দেখ ট্রেন অনেকক্ষণ আগে থেমেছে। সবাই নেমে গেছে।শুধু আমরা দুজনই ট্রেনে! আর কেউ নাই!এই উঠ বলছি উঠ!কি রে শুনতে পাচ্ছিস না? উঠ!”

আমার কথায় উনার কিছুই হলো না।আমার হাত টা সরিয়ে দিয়ে আবার আরামছে ঘুমাচ্ছেন। আমি মুখে বিরক্তি নিয়ে ভাবতে লাগলাম কি করে এই কুম্ভকর্ণ কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গানো যায়।সোজা কথায় যে এই ঘুম ভাঙ্গাতে পারবো না তা তো বুঝতেই পারছি।ভাবতে ভাবতেই আমার হাতের দিকে নজর পরলো।আমার হাতে একটা পানির বোতল।বোতল টাকে ভালো করে দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

—- ” সোজা আংগুলে ঘি না উঠলে তো আংগুল টা বাঁকাতেই হয়!সরি তিহু বেবি এখন তোমার একটু শাওয়ারের দরকার! ”

শেষের কথাটা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম।তারপর পানির বোতল টা বাঁকা করে ধরে তিহার মুখ বারার উপর থেকে শাওয়ারের মতো ছাড়লাম পানি গুলোকে।তিহার মুখে পানি গুলো পরতেই ও ধড়ফড়িয়ে উঠে চোখ মুখ থেকে পানি গুলো জেরে আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,

—- ” ওভাবে তাকালে লাভ নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন আমরা এই দুই এলিয়েন ব্যাতিত আর কোনো মানুষ আছে কি-না! অনেকক্ষণ ডাকার পরও কেউ যদি না উঠে তাহলে তো এমন টা করতেই হবে!”

আমার কথায় তিহা চারিপাশে ভালো ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে সত্যি আমরা ছাড়া আর কেউ নাই।তাই আমার উপর শতো রাগ হওয়া সত্বেও মুখে কিছু বললো না।কিন্তু ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আমার উপর চরম ক্ষেপে আছে।চোখমুখ খিঁচে চুপচাপ ব্যাগ উঠিয়ে বাইরের দিকে এগিয়ে গেলো। ওর কান্ড দেখে আমি মুখ টিপে টিপে হেসে ওর সাথে বেরিয়ে আসলাম।

মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো ট্রেন থেকে নেমে যে এর প্রথমেই এর সাথে দেখা হবে বুঝতে পারিনি।পারলে নামতামই না যত্তসব! আমার সামনে অর্ক আহমেদ মানে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।এই ব্যাটা ছোটো বেলা থেকেই আমার পিছনে আঠার মতো লেগে আছে।যেখানে যাই সেখানেই হাজির হয়ে যায়।কেন জানি একে আমার কিছুতেই সহ্য হয় না।দেখলেই গা জ্বলে যায়।আমাকে দেখেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো আর জিজ্ঞেস করলো,

—- ” কেমন আছো মিহি?”

মনে মনে বললাম,

—- ” এতোক্ষণ তো ভালাই ছিলাম তোরে দেইখা এখন বহুত খারাপ হইয়া গেছি।”

কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখে বললাম,

—- ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি ভালো আছেন তো অর্ক ভাইয়া?”

আমার মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনলে ছোটবেলা থেকেই উনার মুখ টা কালো হয়ে যেতে।আজও তাই হলো মুখ টা কালো করেই করুন গলায় বললো,

—- ” আমাদের বিয়ের ডেটও ঠিক হয়ে গেছে আর পাঁচ দিন পর বিয়ে তুমি এখনো আমাকে ভাইয়া ডাকবে?এখন তো এই ডাক টা না ডাকতে পারো!”

—- এখনো বিয়ে টা হয়নি। যখন হবে তখন দেখা যাবে ঠিক আছে অর্ক ভাইয়া!

আমার কথাটা শুনে অর্কের চুপসে যাওয়া৷ মুখ টা আরো চুপসে গেলো।তিহা অর্কের অবস্থা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে।এমন সময় বাবা চলে আসলো।এসেই আমাকে বলতে লাগলো,

—- ” কিরে মা তুই কখন নামলি?সবাই আরো কতো আগে নেমে গেছে! তোরা নামছিস না দেখে তোকে কতোবার ফোন দিয়েছি কিন্তু তোর ফোন বন্ধ। এতোক্ষণ ট্রেনে বসে কি করছিলি?আমি তো ভাবলাম তুই বোধহয় এই ট্রেনে আসিস নি!”

আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললাম,

—- ” সে অনেক লম্বা কাহিনি বাবা পরে একসময় শুনাবো।আর ফোনে চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই ফোন বন্ধ! ”

বাবা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

—- ” ঠিক আছে এখন তাড়াতাড়ি বাড়ি চল। তোর মা সেই কখন থেকে তোর জন্য রান্না করে বসে আছে।”

আমরা সবাই বাড়ি চলে এলাম।বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই মাহি দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আর খুশিতে গদগদ হয়ে বলছে,

—- ” আপুই কতো দিন পর তোর সাথে দেখা!আমি তো আজ খুব খুব খুব খুশি!”

আমি ওকে ওর মাথায় হালকা একটা বারি মেরে বললাম,

—- ” আমাকে কি মেরে ফেলার ধান্দায় আছিস নাকি?এতো জোরে কেন ধরেছিস আমি তো ব্যাথা পাচ্ছি। ছাড় আমাকে!”

মাহি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুই হাত ভাজ করে মুখ গোমড়া করে বললো,

—- ” ছোটো বোনটা কতো ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসা প্রকাশ করলো আর তুমি কিনা এইভাবে বলছো!আচ্ছা ছাড়ো তোমার থেকে এর থেকে বেশ কি বা আশা করবো!তোমাকে এখন আর লাগবে না আমার আরেক টা মিষ্টি আপু চলে এসেছে এখন আমি তাকেই ভালোবাসবো হুম! ”

কথাটা বলেই তিহার কাছে গিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” তুমি নিশ্চয় তিহা আপু তাই না!”

তিহাও একটা মিষ্টি করে হেসে মাথা নেরে হ্যা বললো।মাহি আবার একটা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” আমি মাহি নিশ্চয় আপুই তোমাকে আমার পরিচয় আগেই বলেছে!”

তিহা এবার দুহাত দিয়ে মাহির মুখ টেনে বললো,

—- ” হ্যা গো মিষ্টি বোনুটা তোমার কথা তোমার আপুই এর থেকে শুনতে শুনতে আমি তোমার ওপর ফিদা হয়ে গেছি।”

মাহি খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো,

—- ” সত্যি!!! ”

—- ” হুম সত্যি! সত্যি! সত্যি! তিন সত্যি। ”

মাহি আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাবা ওকে থামিয়ে বললো,

—- ” বাকি আলাপ ভিতরে গিয়ে করিস মাহি।মেয়ে দুইটা সারারাত জার্নি করে এসেছে।এখন ওদের আগে ঘরে ঢুকতে দে!”

বাবার কথায় মাহি চুপসে গেলো মনমরা হয়ে বললো,

—- ” ওকে বাবা।”

মাহির চুপসে যাওয়া মুখ টা দেখে আমার খুব হাসি৷ পাচ্ছে ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে রেখেছি খুব কষ্টে।তারপর আমরা বাড়িতে ঢুকলাম।আমার রুমে গিয়ে আমি আর তিহা ফ্রেশ হয়ে নিলাম।একটু পরই মা জননী আমাদের দুজন কে পেট ভরে খাবার খাইয়ে তারপর আমাদের ছেড়েছে।আমার রুমে গিয়ে আমি আর তিহা একটু রেস্ট নিতে যাবো এরমধ্যেই একজন এসে হাজির।আমি তার দিকে তাকাতেই অবাক।অবাক কন্ঠে বলে উঠলাম,

—- ” আপনি এখানে?”

কে হতে পারে মিহির সামনে থাকা লোক টা?🤔

চলবে,,,,,

ভালোবাসি পর্ব-০৭

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_৭
#সুমাইয়া_জাহান

প্রতিটা সম্পর্কের ভিতরেই ভুলবোঝাবুঝি নামক ব্যাপার টা ঢুকবেই ঢুকবে!এই ভুলবোঝাবুঝি নমক ব্যাপার না ঢুকলে কি এমন ক্ষতি হয়? সেটা নিয়েই রেহান ঘন্টা দুইয়েক ভার্সিটির বট গাছ টার নিচে বসে বসে গবেষণা করছে। কিন্তু কোনো উত্তরই বের করতে পারেনি ও।কোথায় ভেবেছিলো আজ ওর মিহু পাখি কে ওর মায়ের সাথে দেখা করাবে আর শ্বশুর বাড়ি উফ’স হবু শ্বশুর টাও দেখাবে তা-না এই ভুলবোঝাবুঝি টা তার ভিতর বাহাত টা ঢুকিয়ে দিলো।তবে ওর জানা নেই ভুলবোঝাবুঝি নামক ব্যাপার টার বাহাত বা আদেও কোনো হাত আছে কিনা! তবুও ঢুকেছে তো এটাই বড়ো ব্যাপার শুধু বড়ো না ইয়া বড়ো ব্যাপার হুম! এখন ওর ইচ্ছে করছে এই ভুলবোঝাবুঝি নামক ব্যাপার টাকে ক্রিকেট বল বানিয়ে ছক্কা মেরে দেয়ালের ওপারে পাঠাতে। কিন্তু আফসোস সেটা সম্ভব না।তাই মন খারাপ করে গাছের নিচেই বসে আছে।

রনিত রেহান কে মিহির ডিটেইলস দিয়ে দুই ঘন্টা যাবত মনের আনন্দে কয়েকটা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে।এই দুইদিনে মিহি নিখোঁজ হওয়ায় রেহানের অবস্থা দেখে রনিতও খুব কষ্টে ছিলো।বন্ধুর এমন অবস্থা দেখলে কোনো বন্ধু বন্ধু কি ঠিক থাকতে পারে?আজ অনেক কষ্টে মিহির খোঁজ নিয়ে রেহান দিয়েছে।আজ রেহান কে নিশ্চয় খুব খুশি থাকবে। বন্ধু কে খুশি করতে পেরে রনিতও আজ ভিষণ খুশি। তাই মনের আনন্দে জায়গায় জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। দু’ঘন্টা ঘোরাঘুরির পর ও এখন ক্লান্ত তাই ভার্সিটি ফিরে এসেছে।এখানে একটা কাজ আছে তাই!ভার্সিটি ঢুকতে ঢুকতে ও গান ধরলো,

” আহা কি আনন্দ আকাশে বাতা………”

রনিতের নজর বট গাছ টার দিকে যেতেই গান থেমে গেলো কারন ওখানে রেহান মন মরা হয়ে গালে এক হাত দিয়ে একধ্যানে বসে আছে।দেখে মনে হচ্ছে রেহান নয় রেহানের কোনো মুর্তি এখানে বসানো আছে এক বিন্দুও নড়াচড়া করছে না।রনিতের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে এটা রেহান তাই কয়েকবার হাত দিয়ে চোখ ডলে নিলো তারপর তাকিয়ে একই দৃশ্য দেখছে কোনো পরিবর্তন নেই।নাহ আবার মনে হচ্ছে এটা রেহানই।কিন্তু ও এখানে এমন ভাবে বসে আছে কেন?ওর তো এখন মিহির সাথে ওর বাড়িতে থাকার কথা আর তার থেকেও বড়ো বিষয় হচ্ছে ও এমন মনমরা কেন? ওর তো আজ সবথেকে বেশি খুশিতে থাকার কথা!এমন হাজার টা প্রশ্ন মননে নিয়েই চরম অবাক চোখেই রনিত রেহানের দিকে এগিয়ে গেলো।রেহানের কাছে যেতেই ওর কাঁধে আস্তে করে হাত রাখলো।

রেহানের কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া অনুভব করতেই ওই দি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।তাকিয়ে রনিত কে দেখে মনমরা হয়েই বললো,

—- ” ওহ্ তুই!”

রনিত অবাক চোখেই জবাব দিলো,

—- ” হ্যা আমি। কিন্তু তোর এমন অবস্থা কেন তোর তো এখন তোর মিহু পাখি আই মিন মিহির সাথে থাকার কথা।আর এমন মন খারাপ করে বসে আছিসই বা কেন?”

—- ” কি করবো বল ভাই ভুলবোঝাবুঝি নামক জিনিস টা যে আমার আর মিহু পাখির মধ্যে বাহাত ঢুকিয়ে বসে আছে। ”

রেহানে এমন দ্বারা কথা রনিতের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেছে।আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছে না ও।তাই কিছুক্ষণ ভেবে রেহানের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,

—- ” ওই ব্যাটা! আমাকে কি পাবনা পাঠাবি বলে ঠিক করে রেখেছিস?এই দুই দিনে প্রায় পাগল বানিয়ে দিয়েছিস।আজ ভাবলাম তোর থেকে মুক্তি পেয়ে গেছি।কিন্তু আমার ভাবনায় বালতি বালতি পানি ঢেলে আমাকে পাবনা পাঠানোর ব্যাবস্থা করছিস!যা বলবি সোজাসুজি ক্লিয়ার ভাবে বলবি নাহলে আজ থেকে আর কথাই বলবি না!”

কথাটা বলে রনিত রেহানের দিকে একটা রাগি লুক দিলো।ওর এমন করাতে ফুস করে একটা শ্বাস নিয়ে তখনকার সব বললো।বলেই রেহান মুখ ভার করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।এদিকে রনিত কিছুক্ষণ সবকিছু ভালোভাবে ভেবে রেহানের পাশে বসে বললো,

—- ” আমার মনে হয় দুদিন আগে মিহির সাথে ওর যেদিন শেষ দেখা হয়েছিলো মানে দুইদিন আগে আমরা সবাই তোর গান শোনার জন্য আড্ডা দিচ্ছিলাম তখনকার কিছু কথা মিহি শুনেছে আর অর্ধেক কথা শুনেই ও চলে গেছে তাই হয়তো ও তোকে ভুলবুঝেছে!”

রেহান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

—- ” হুম আমারও তাই মনে হয়।”

—- ” তাহলে তুই ওকে পুরো সত্যি টা বলছিস না কেন?তোর উচিৎ ছিলো ওকে সাথে সাথেই বলে দেওয়া!তা না করে এখানে বসে আছিস কেন?”

রনিতের কথা শুনে রেহান অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলতে লাগলো,

—- ” ও আমাকে তখন একটুও সময় দেয়নি কথা বলার আসলে ওর মুখ থে এসব শুনে আমি অবাক হয়ে গেছিলাম তাই কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।আর সেই সুযোগই ও ওখান থেকে চলে যায়।আর আমি ওকে খুব ভালো করেই চিনি ওর মনে একবার আমি যখন খারাপ হয়েছি তখন ও আর আমার একটাও কথা শুনবে না। ও এমনই খুব চাপা স্বভাবের নিজের মনের কষ্ট গুলো কাউকে বলবেও না আবার কারো কথা শুনবেও না।শুধু নিজে নিজেই কষ্ট পেয়ে যাবে।ও এখন মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু মুখে তা একবিন্দুও প্রকাশ করবে না।”

রনিত রেহানের কথা শুনে অবাক।ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়?একজনের মনে কি চলছে না চলছে সব জানতে পারে! আসলে রনিত ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না।তাই রেহানের মুখে এগুলো শুনে ও ভালোবাসার সংজ্ঞা খুজতে লাগলো। রেহান এর দিকে খেয়াল করতেই দেখে রেহানের চোখ গুলো প্রায় ভিজে উঠেছে।হয়তো প্রিয়সীর কষ্টে ওর চোখেও পানি চলে এসেছে।তাই রেহান কে শান্ত করতে তাড়াতাড়ি রনিত বলে উঠলো,

—- ” ঠিক আছে আমি মিহি কে সব বুঝিয়ে বলবো!দেখবি তোদের মধ্যের সব কিছু ঠিক হয়ে আগের মতো হয়ে যাবে।”

রেহান উঠে দাড়িয়ে একটা শ্বাস ফেলে বললো,

—- ” ও এখন কারো কথাই বিশ্বাস করবে না।কিন্তু আমি তো ওকে ছাড়বো না সব ভুলবোঝাবুঝির অবসান আমি ঘটাবোই!”

কথাটা বলেই হনহন করে হেটে গেলো।আর ওর যাওয়ার দিকে একপলাক ভাবে তাকিয়ে রইলো রনিত।

শাওয়ার নিয়ে বের হতে না হতেই ফোনটা বেজে উঠলো। তাই একরাস বিরক্তি নিয়েই ফোনটা রিসিভ করলাম।ওপাস থেকে একটা পুরুষালী কন্ঠে বলে উলেন,

—- কেমন আছিস মা?

মুহূর্তেই আমার বিরক্তি ভাবটা কেটে হাসি ফুটে উঠলো মুখে।কারন ওপাসের লোকটা আমার বাবা যাকে আমি সবথেকে বেশি ভালোবাসি। যাকে ভালোবাসা ভালোবাসলে কখনো ঠোকবো না।বাবাও আমাকে ভিষণ ভালোবাসে।আমি নরম গলায় জবাব দিলাম,

—- ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমি ভালো আছো বাবা? শরীর সুস্থ আছে ঠিক মতো!ঔষধ খাচ্ছো তো!”

ওপাস থেকে আমার একনাগাড়ে কথাগুলো বলাতে হেসে দিলেন।তারপর বললেন,

—- ” আমিও আলহামদুলিল্লাহ একদম ঠিক আছি ঔষধও ঠিক সময় মতো খাচ্ছি। নাহলে যে আমার মাটার হাতে আচ্ছামতো বকা খেতে হবে!”

কথাটা বলে আবারও হেসে দিলেন।আমিও একটা মুচকি হাসি দিলাম।হাসি বন্ধ করে আবারও বললেন,

—- ” শোন মা আজকে অর্ক আর ওর বাবা মা এসেছিলো বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে।

অর্ক হলো সেই ছেলে যার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা।কিন্তু সেটা তো আমার ভার্সিটি শেষ হওয়ার পর ওরা এখন কেন বিয়ের কথা বলতে এসেছে আর বিয়ের কথা শুনে বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো কৌতূহল মেটাতে বাবাকে প্রশ্ন করালাম,

—- ” কিন্তু বাবা বিয়ে তো আমার ভার্সিটি শেষ হওয়ার পরে হওয়ার কথা তাহলে ওরা এখন কেন কথা বলতে এসেছে?”

বাবা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন,

—- ” হ্যাঁ!কিন্তু অর্কের নাকি একটা কাজে বিদেশে যেতে হবে তিন বছরের জন্য।তাই বিয়েটা বিদেশ যাওয়ার আগেই বিয়ে টা দিতে চান উনারা।উনারা বলেছেন বিয়ের পরেই অর্ক বিদেশ চলে যাবে আর তুই এখানে থেকেই তোর পড়ালেখা চালিয়ে যাবি।ওর বিদেশ থেকে ফিরতে ফিরতে তোর ভার্সিটিও শেষ হয়ে যাবে।তুইকি এ বিয়েতে রাজি না?তুই রাজি নাহলে কিন্তু আমি এখনি ওদের না বলে দিবো।তোর অনিচ্ছায় আমি কিছু করতে চাই না! তোর যদি কাউকে পছন্দ থেকে থাকে তাহলে বল!তোর ইচ্ছা টাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি দামি!”

দুদিন আগে হলে আমি এখন রাজি হতাম না হয়তো এখনি রেহানের কথা বলতাম।কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস যখন আমার থেকে ভালোবাসার মানুষ কে পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে তখন আমি বলতেই পারছি না তার কথা।ওই দিনের কথাগুলো মনে পরতেই বাবাকে চোখ বন্ধ করে বললাম,

—- ” বাবা আমি এই বিয়েতে রাজি ওদের বলে দিও।”

কথা টা বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানার উপর ছুরে ফেলে দিয়ে কাঁদতে লাগলাম।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে আজ।

চলবে,,,,,,

ভালোবাসি পর্ব-০৬

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_৬
#সুমাইয়া_জাহান

দেখতে দেখতে দু’টো দিন কেটে গেলো।এই দু’দিনে জীবন টাকে নতুন ভাবে সাজিয়ে নিয়েছি।নতুন সিম কার্ড নতুন বাড়ি নতুন ভার্সিটি সব কিছুই নতুন ভাবে শুরু করেছি।পুরোনো সব খারাপ কিছু জীবন থেকে যে ধুয়ে ফেলতে চাই। তাই তো সব নতুন ভাবে শুরু করা!

এখানে আসার সাথে সাথেই নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।আমার সঙ্গে তিহাও ভর্তি হয়েছে।এতো সব খারাপের মধ্যেও তিহার মতো বন্ধু পেয়ে আমি ধন্য।এমন বন্ধু সবাই পায় না আমি পেয়েছি আল্লাহর অশেষ রহমত।শুধু মাত্র আমার জন্য ও নিজের জীবনটাও নতুন ভাবে শুরু করলো।

এরমধ্যে রেহান এর সাথে একবারও দেখা হয়নি।কি করেই বা হবে আমি যে আমার সব ঠিকানাই বদলে পেলেছি।এখন আমাকে খুঁজে পাওয়া এতো সহজ না।আর আমাকে খুঁজতে বা যাবে কেন?উনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন নি শুধু মাত্র বাজি জেতার জন্য ভালোবাসার নাটক করেছেন।হয়তো এখন খুশিই হয়েছেন! কষ্ট করে আর নাটক করে ব্রেকআপ করাতে হবে না।হয়তো এখন সেই খুশিতে বন্ধুদের সাথে পার্টি করে বেড়াছেন!আবার নতুন কোনো মেয়েকে উনার মিথ্যে ভালোবাসার জালে ফাসানোর জন্য জাল বুনছেন!আমি এসব কেন ভাবছি উনার মতো একজন প্রতারক কে নিয়ে আমার একদমই ভাবা উচিত না।কিন্তু কি করবো না ভাবতে চাইলেও উনার কথাই বারবার ভেবে চলেছি।দিনের বেলা সবার সামনে নিজে শক্ত দেখালেও রাতে ঠিকই সারারাত চোখের পানিতে বালিশ ভেজাতে থাকি।তিহা ঠিকই বুঝতে পারে কিন্তু কিছু বলে না।হয়তো কাঁদলে কষ্ট গুলো থেকে একটু হালকা হতে পারবো এই ভেবে কিছু বলে না!

এসব ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছি। তিহা আগেই রেডি হয়ে ব্যাগ গোছাচ্ছে। এখন আর ও আগের মতো আগে গিয়ে ফাস্ট বেঞ্চের জন্য বসে থাকে না।আমার সাথেই যায় যেখানে জায়গা পায় সেখানেই বসে।কতোটা পরিবর্তন হয়ে গেছে!সবসময় দুষ্টুমিতে ভরপুর মেয়েটা এখন একদম শান্ত একটা মেয়ে গেছে।একটা মানুষ আমাদের এতোগুলা জীবন ওলোট পালোট করে দিলো।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।পুরো পুরি রেডি হয়ে তিহার কাছে গেলাম। আমাকে দেখেই মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” রেডি হওয়া শেষ?”

আমিও একটা মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নেরে হ্যাঁ বললাম।তারপর দুজনে বেড়িয়ে পরলাম নতুন ভার্সিটির উদ্দেশ্য অবশ্য দুদিন হয়ে গেছে এই ভার্সিটিতে তারপরও নতুনই তো!এই বাড়ি থেকে কাছেই তাই হেঁটেই দুজন রওনা হলাম।হাঁটতে অবশ্য ভালোই লাগছে।

রেহান পুরো পাগল হয়ে গেছে মিহিকে খুঁজতে খুঁজতে! হাজার বার মিহিকে ফোন দিয়েছে কিন্তু প্রত্যেক বারই বন্ধ পেয়েছে।তিহার ফোনেও দিয়েছে কিন্তু সেটাও বন্ধ। হোস্টেলেও ওদের পায়নি।সেখান থেকেও ওরা চলে গেছে।কিন্তু কোথায় গেছে কেউই জানে না।পুরো ঢাকার শহর তন্নতন্ন করে খুজে ফেলেছে। মিহি যেই জায়গা গুলোতে যেতে পছন্দ করতো সেগুলোতেই খুঁজেছে কিন্তু ফলাফল শূন্যই এসেছে। রেহান কিছুতেই বুঝতে পারছে হঠাৎ করে মিহি এমন কেন করছে?কেন ওর থেকে পালিয়ে গেলো?কিছুই রেহানের মাথায় ঢুকছে না!

যে ছেলের মিহিকে এক মুহূর্ত না দেখলে দমবন্ধ হয়ে আসে সে ছেলে গোটা দুইদিন মিহি কে না দেখে কিভাবে ছিলো সেটা শুধু ওই জানে।এই দু’দিন এক টা দানা খাবার মুখে দেইনি।অনেক জোর করেও কেউ কিছু খাওয়াতে পারেনি।ওর বারবার মনে হচ্ছে মিহি হয়তো ওর কোনো কথায় কষ্ট পেয়েছে তাই মিহি এতো দুরে চলে গেছে তাই ও নিজেকে অনেক বার আঘাত করেছে।পুরো শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন! হাতে কয়েক জায়গায়ই ব্যান্ডেজ লাগানো।দু’হাতে দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে আছে আর ভাবছে মিহি ঠিক কোথায় যেতে পারে?এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো।রেহান তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করেই বলতে লাগলো,

—- ” কিরে আমার মিহু পাখি কে খুঁজে পেয়েছিস?ও ঠিক আছে তো?কিছু হয়নি তো ওর?কোথায় আছে ও আমি এখুনি আসছি!কিরে কিছু বলছিস না কেন?আজও খুঁজে পাসনি তাই না!তোকে বলছি না ওকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমাকে ফোন দিবিনা!”

ওপাস থেকে রনিত কে কিছু বলতে না দিয়েই রেহান একনাগাড়ে কথাগুলো বললো।আর শেষর কথাটা রেগে জোরে চিৎকার দিয়ে বলেই ফোন কেটে দেওয়ার আগেই রনিত ধমক দিয়ে বললো,

—- ” ওই একদম ফোন কাটবি না!আমি মিহিকে পেয়েছি আর তুই এখন একটাও কথা বলবি না আগে আমি বলবো তারপর তুই বলবি!তার আগে একদম না!”

রনিত কথাটা বলেই একটা দম নিলো।এ কদিনে রেহান কে যতো বার ফোন করেছে ততোবারই ও অন্য কে কিছু না বলতে দিয়ে নিজেই বকবক করে ফোন কেটে দিয়েছে।কিন্তু এবার রনিতের কথা শুনে রেহান অবস্থা এখন ঠিক আকাশের চাঁদ হাতে পেলে মানুষের যেমন অবস্থা হয় তেমন।খুশিতে ওর চোখে পানি এসে পরলো।ফোনটা আর কাটা হলো না
তবে আবারও অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে ওর কিন্তু রনিতের ধকমের কারনে কিছু না বলেই চুপ করে রইলো।ওপাস থেকে রনিতও একটা মুচকি হাসি দিলো।

—- ” মিহি ওই হোস্টেল থেকে এসে এখানে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ওর বন্ধু কি যেন নাম……ও হ্যাঁ তিহা নামের মেয়েটার সাথে থাকে। বাড়ি টার কাছেই একটা ভার্সিটি আছে ওখানেই ওরা দুজন ভর্তি হয়েছে।আর ওরা দুজনেই ফোন নাম্বার চেঞ্জ করেছে।এটুকু সময়ে এইটুকু ইনফরমেশনই কালেক্ট করতে পেরেছি।”

রেহান কপালে চিন্তার বাজ ফেলে বললো,

—- ” কি এমন হলো যে ও এমন কিছু করলো?”

রনিত ফুস করে একটা শ্বাস ফেলে বললো,

—- সেটা আমি কি করে জানবো তোদের ব্যাপার তোরাই জানবি!

—- ” হুম!এখন ঠিকানা টা দে!”

রেহান রনিতের থেকে ঠিকানা টা নোট করে নিলো।তারপর একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে নিজে নিজেই নিজেই বললো,

—- মিহু পাখি অনেক বড়ো ভুল করলে!আমি একয়দিন যা কষ্ট পেয়েছি সব সুদে আসলে ফিরিয়ে দিবো।রেডি থেকো মিহু পাখি! আসছি আমি!

কথাটা বলেই রেহান তারাতাড়ি রেডি হতে লাগলো।৷ তখনই রেহানের মা মিসেস আয়শা আসলেন।ছেলেকে দুদিন পর এতো খুশি দেখে নিজের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। তারপর খেয়াল করলো রেহান কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। এতো অসুস্থ শরীর নিয়ে বেড়োতে দেখে ব্যাস্ত গলায় বললেন,

—- “এতো অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”

রেহান চুল ঠিক করতে করতেই জবাব দিলো,

—- ” তোমার বউমাকে আনতে যাচ্ছি! ”

চুল ঠিক করা শেষ হলে মাকে একবার জড়িয়ে ধরে ” মা দোয়া করো” বলেই বেড়িয়ে পরলো বাইক নিয়ে।

ছেলের এমন কান্ড দেখে মিসেস আয়শা একটু হেসে বললেন,

—- ” পাগল ছেলে একটা!আল্লাহ তুমি দেখো আমার ছেলেটা যেন ওর ভালোবাসাকে ফিরিয়ে আনতে পারে।”

আমি আর তিহা হাঁটতে হাঁটতে ভার্সিটি পর্যন্ত এসে পরলাম।আর পাঁচ ছয় পা হাঁটলেই ভার্সিটির গেইট।আমি আর এক পা এগোতেই একটা বাইক এসে আমার আমাদের চারপাশে একবার চক্কর দিয়ে আমার সামনে এসে থামলো।বাইক থামিয়েই বাইক থেকে হেলমেট পরা লোকটা নেমে মাথা থেকে হেলমেট টা খুলে হাতে নিয়ে এলোমেলো চুল গুলোতে একবার ভালো করে হাত বুলিয়ে। আবার বাইকের উপর হেলান দিয়ে বসে মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।

এদিকে আমি লোকটা কে দেখে কিছুক্ষন থ হয়ে রইলাম।কারন আমার সামনে লোকটা আর কেউ না রেহান।রেহান কে দেখে আমার বুকের ভিতর টা ধক করে উঠলো। শরীরের কি হাল হয়েছে উনার এই দুইদিনেই অনেক টা শুকিয়ে গেছেন।হাতে কয়েক জায়গায়ই ব্যান্ডেজ করা।মুখ টা একদম শুকনো। দেখে মনে হচ্ছে ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করেন নি।কিন্তু উনার এমন অবস্থা কেন? উনার তো খুশি থাকার কথা!তাহলে? হয়তো কারো কোনো ঝামেলা হয়েছে তাই হয়তো….আমি কেন উনার বিষয় নিয়ে ভাববো?উনার প্রতারণার কথা মনে আসতেই নিজেকে সামলিয়ে ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললাম,

—- ” রাস্তা টা কি আপনার বাবার কেনা?মাঝ রাস্তায় অন্যের রাস্তা আটকিয়ে ফ্যাশন সো দেখাচ্ছেন?রাস্তা ছাড়ুন আমরা যাবো আমাদের দেরি হচ্ছে! ”

আমার কথায় রেহান কপাল কুঁচকে একই ভাবে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

—- ” আপনার পথ কে আটকিয়েছে মিস?আমি তো আমার ভবিষ্যৎ সন্তানের মায়ের পথ আটকিয়েছি মাত্র! আপনার পথ তো আটকাইনি! ”

রেহানের এমন দ্বারা কথা শুনে রাগ আমার সপ্তম আকাশে চলে গেছে।ব্যাটার কি সাহস আমি নাকি এর ভবিষ্যৎ সন্তানের মা!ইচ্ছে তো করছে একগাদা কথা শুনাই!তারপরও রাগ টা মুখে প্রকাশ করলাম না শান্ত গলায়ই আবার বললাম,

—- ” দেখুন আমার কিন্তু সত্যিই দেরি হচ্ছে! আমাকে যেতে দিন প্লিজ! ”

কথাটা বলেই পাস কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম।তখনই রেহান আমার হাতটা ধরে ফেললেন।দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছেন।হয়তো এভাবে ইগনোর করছি বলে এতো রাগ!আমি কম কিসে! ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

—- কোন অধিকারে আমার হাত ধরেছেন?

হাতটা এতোটাই শক্ত করে ধরেছেন যে আমি কিছুতেই ছাড়াতে পারছি না।তবুও হাত ছাড়ানো বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রেহান হাতটা আরো শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে বললো,

—- ” ভালোবাসার অধিকারে ধরেছি শুনতে পেয়েছো!”

আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,

—- ” ভালোবাসা!চিৎকার দিয়ে বললেই ভালোবাসা হয় না মিস্টার রেহান!আর আপনার এখন আর এই ভালোবাসার মিথ্যে নাটক চালোনোর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি সব জেনে গেছি। আপনি তো আমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথা টা আদায় করতে চেয়েছেন সেটা তো পেয়ে গেছেন অনেক আগেই তাহলে এখনো কেন এই নাটক চালাচ্ছেন।আপনার বাজি তো জেতা শেষ! এখন কি আমার জীবন শেষ করার আবার নতুন বাজি ধরেছেন নাকি!কিন্তু সেটা তো এবার হবে না মিস্টার রেহান! আমি তো সব জেনে গেছি তাই আপনার ওই ফাঁদে আমি আর দ্বিতীয় বার পা দিবো না।”

আমার থেকে এই কথা গুলো হয়তো আশা করেন নি তাই অনেক টাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।হয়তো ভাবছেন আমি এগুলো কিভাবে জানলাম।হাতের বাঁধন টা আগলা হয়ে গেলো। আর আলগা হতেই আমি সেখান থেকে চলে আসলাম।আজ আর ভার্সিটি যাবো না মুড টা খারাপ হয়ে গেছে।উনাকে কথা গুলো শোনাতে আমার ভিতর টাও যে পুরে ছাই ছাই হয়ে যাচ্ছে। তাই তিহাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।

ওদিকে রেহান ওখানেই দাড়িয়ে আছে। মিহি এসব কিভাবে জানলো?আর হ্যা এটা সত্যি যে ও বাজি ধরেই মিহিকে প্রপোজ করেছিলো।কিন্তু মিহিকে দেখা মাত্রই মিহি কে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে।আর এতোদিন যা করেছে সবই ওর সত্যি কারে ভালোবাসা ছিলো।কোনো নাটক ছিলো না এগুলো।যদি নাটকই হতো তাহলে তো যেদিন মিহির ” ভালোবাসি ” কথাটা বলেছে সেদিনই সব কিছু শেস করে দিতো।এরজন্যই তাহলে মিহি ওর থেকে এতো দুরে পালিয়ে এসেছে।না জানি মেয়েটা মনে মনে কতোটা কষ্ট পুষে রেখেছে!

চলবে,,,,,

ভালোবাসি পর্ব-০৫

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_৫
#সুমাইয়া_জাহান

ঠোঁট চেপে বারবার কান্না আটকানোর চেষ্টা করছি কিন্তু এতো চেষ্টা করেও কান্না আটকাতে পারছি না।কান্না ঠিক বেরিয়ে আসছে কিছুতেই বাধ মানতে চাইছে না।তবুও বৃথা চেষ্টা করেই চলেছি।খুব কষ্টে হোস্টেল পর্যন্ত এসেই নিজের রুমে ঢুকেই বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে এতোক্ষণ ধরে রাখা চোখের পানি গুলো ফেলতে লাগলাম। আর ভাবতে লাগলাম আমাদের এই একবছর সম্পর্ক সবটাই মিথ্যে ছিলো তাহলে?সবটাই নাটক ছিলো?কিন্তু আমার ভালোবাসা টা তো মিথ্যে বা নাটক ছিলো না!আমি তো রেহান কে সত্যিই ভালোবেসেছি!আমার ভালোবাসায় তো কোনো খাত ছিলো না।তবে কেন উনি আমার সাথে এমন ভালোবাসার নাটক টা করলেন?আমি তো ভালোবাসতে চাইনি নিজের সুপ্ত অনুভূতি টা নিজের মধ্যেই রাখতে চেয়েছিলাম। উনিই তো আমার সেই সুপ্ত অনুভূতি টাকে জাগিয়ে ভালোবাসতে বাধ্য করেছিলেন।ওহ্ উত্তর টা তো আমি জানি একটা চ্যালেন্জ জেতার জন্য উনি আমার সাজানো গোছানো জীবন টাকে তছনছ করে দিলেন!

আজ আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছিলো।আর আমি এবারের পরীক্ষায় টপ করেছিলাম।রেজাল্ট টা দেখিয়ে রেহানকে সারপ্রাইজ দিবো বলে উনার কাছে যাচ্ছিলাম।আসলে এই পরীক্ষার সময় আমি খুব অসুস্থ ছিলাম।তখন রেহান আমার পাশে থেকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছিলেন।আমি যাতে রাত জেগে পড়তে পারি তার জন্য উনি নিজের হাতে কফি বানিয়ে নিজে আমার সাথে রাত জেগে আমার পাশে বসে থাকতেন।যতক্ষণ না আমার পড়া শেষ তো ততোক্ষণ আমার পাশেই বসে থাকতেন।আমার পড়া শেষ হলে আমি ঘুমিয়ে পরার পর উনি নিজের বাড়ি যেতেন।আমার কোনো বারনই উনি শুনতেন না। কিছু বলতে গেলেই বলতেন,

—- ” তুমি যদি পাস না করতে পারো তাহলে ভার্সিটি আর হবু শ্বশুর বাড়ি দুই জায়গাতেই আমার মানসম্মান আর থাকবে না।তাই এখন আমাকে নিয়ে এতো না ভেবে আপাতত পড়ায় মনোযোগ দেয়।তাহলে অন্তত টেনে টুনে পাসটা করলেও আমার মানসম্মান টা ধুলোয় মিশবে না।”

আমি উনার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” ভার্সিটির মানসম্মান না-হয় বুঝলাম কিন্তু কিন্তু এর ভিতর শ্বশুর বাড়ির মানসম্মান আসলো কিভাবে? ”

উনি ভাব নিয়ে বললেন,

—- ” তুমি যদি এখন পাস না করো তাহলে আমার হবু শ্বশুর বাড়ি আই মিন তোমার বাড়ির লোকেরা বলবে না যে আমাকে ভালোবাসার জন্য তোমার পড়ালেখা সব জানালা দিয়ে আকাশে উড়াল দিছে।তখন আমার আর কোনো সম্মান থাকবে?”

উনার এমন কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে দিলাম। আর উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবার পড়ার জন্য তাগিদ দিয়ে বললেন,

—- ” পরে অনেক সময় পাবে হাসার গল্প করার কথা বলার কিন্তু এখন শুধুই পড়ায় মনোযোগ বসাও। ”

কথাগুলো ভাবতেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম। কিছুদূর এগোতেই দেখি রেহান গিটার নিয়ে বসে আছে আর উনার বন্ধুরা উনাকে ঘিরে বসে আছেন।রেহান খুব ভালো গান গায়।মাঝে মাঝেই উনার বন্ধুরা মিলে গানের আড্ডা বসান।আজও হয়তো এমনই আড্ডা বসিয়েছেন।আমি আর একটু এগোতেই ওদের কথা শুনে থমকে গেলাম।এক পা-ও আর এগোতে পারলাম না।

—- ” ভাই তোর সাথে আমি জীবনেও কোনোদিন কোনো বাজি জিততে পারলাম না!বাজি ধরে মিহির থেকে ঠিক ভালোবাসি কথাটা আদায় করে নিলি!মেয়েকে পুরো ভার্সিটির ছেলেরা প্রপোজ করে কোনো দিন হ্যা উত্তর আনতে পারলো না সেই মেয়ে এখন তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে! আমি ভাবতেই পারছি না।এটা শুধু তোর দ্বারাই সম্ভব! ”

আরেকজন পাশ থেকে বললো,

—- ” তো আর কয়দিন ওই মেয়ে কে নাকে দড়ি দিয়ে তোর পিছনে ঘুরাবি?যেইদিন ওই মেয়ে জানতে পারবে তুই ওকে ভালোবাসা টালোবাসা কিচ্ছু না শুধু মাত্র বাজি ধরে ওর সাথে প্রেমের নাটক করছোস সেই দিন ওর মুখ টা কেমন হবে আমার ভাবতেই আগাম হাসি পাচ্ছে। ”

কথাটা বলার সাথে সাথেই সবাই মিলে হাসিতে ফেটে পরলো।আমি আর শুনতে পারছিলাম না তাই কানে হাত দিয়ে একপ্রকার দৌড়ে ওখান থেকে চলে আসলাম।

স্মৃতি গুলো মনে করতেই চোখের পানি গুলো দু’হাত দিয়ে ভালো করে মুছে উঠে বসলাম।জামা কাপড় হাতে নিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকে একটা লম্বা শাওয়ার নিলাম।তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে দেখি তিহা খাটে বসে আছে। আমাকে দেখেই তারাতাড়ি ব্যাস্ত হয়ে ওঠে বলতে লাগলো ,

—- ” মিহু তুই হোস্টেলে চলে আসবি আমায় বলে আসবি তো!কতো ভয় পেয়ে গেছিলাম জানিস!সেই কখন রেহান ভাইয়াকে রেজাল্ট দেখাবি বলে গেলি। আমি তোভেবে ছিলাম তুই উনার সাথেই আছিস।পরে যখন ভাইয়া কে একা দেখে৷ তোর কথা জিজ্ঞেস করতেই বলে তুই নাকি উনার সাথে দেখা করিসনি।আর উনিও তোকে খুঁজছেন তখন তো আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। ভাইয়া তোর ফোনে অনেকবার ফোন করেছে তুই নাকি ধরিসনি?”

ওর কথা শুনে একটা মুচকি হাসি দিয়ে তোয়ালে রেখে ফোন হাতে নিয়ে দেখি রেহানে ছিয়ানব্বই টা মিস কল ফোন সাইলেন্ট থাকার কারনে বুঝতে পারিনি।তিহার দিকে তাকিয়ে ফোন দেখিয়ে বললাম,

—- ” ফোন সাইলেন্ট ছিলো। ”

কথাটা বলেই ফোন থেকে সিম কার্ড টা খুলে ভেঙ্গে দুই টুকরো করে বাইরের দিকে ফেলে দিলাম।তারপর বাইরে বের হওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলাম।তিহা আমার কান্ড দেখে এতোটাই অবাক হয়েছে যে মুখ টা হা হয়ে আছে। ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে রেডি হতে হতেই বললাম,

—- ” হা বন্ধ করবি নাকি মসা মাছির গোডাউন বানাবি মুখটাকে!”

নিজেকে সামলিয়ে আমার কাছে এসে বললো,

—- ” তুই ঠিক একটু আগে কি করলি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবি আমার না সব মাথার উপর দিয়ে গেছে।”

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—- ” কেন দেখলি না সিম টা ভেঙ্গে ফেললাম!”

ও ব্যাস্ত গলায় বললো,

—- ” হ্যা তা তো দেখেছি। কিন্তু কেন করলি এইটা?”

আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তখনকার সব ঘটনা বললাম।তিহা সব শুনে রীতিমতো হা হয়ে গেছে।নিজের হা হয়ে যাওয়া মুখে নিজেই হাত রেখে বললো,

—- ” রেহান ভাইয়া এতো খারাপ! ”

তারপর আমার দিকে একবার ভালো ভাবে তাকিয়ে আমার মুখের এক পাশে হাত রেখে বললো,

—- ” এতো বড়ে একটা ধাক্কার পরও তুই এতো স্বাভাবিক কিভাবে আছিস?ভিতরে ভিতরে খুব কষ্ট পাচ্ছিস তাই না!”

আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,

—- ” আমি শুধু শুধু ওই প্রতারকের জন্য কষ্ট পাবো?আমি কি কিছু করেছি নাকি?তবে প্রথমে ধাক্কা টা সত্যি সহ্য করতে পারিনি!খুব কেঁদেছি পরে ভাবলাম আমি কেন কাঁদছি আমি তো কিছু করিনি করেছে তো ওই লোকটা কাঁদলে কাঁদবে সে আমি না।তাই এখন নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছি।”

তিহা আমাকে জড়িয়ে ধরে প্রায় কাঁদতে কাঁদতেই বললো,

—- ” প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে!বিশ্বাস কর আমি একটুও বুঝতে পারিনি রেহান ভাইয়া এতো টা খারাপ। আমি তো ভেবেছিলাম উনি তোকে সত্যিই ভালোবাসে তাই তো উনাকে সাহায্য করেছিলাম।”

আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম,

—- ” ধুর পাগলি! তুই কেন ক্ষমা চাচ্ছিস? আমি উনার এতো কাছে থেকেও বুঝতে পারিনি উনার মিথ্যে নাটক টা আর সেখানে তুই কি করে বুঝবি।”

তারপর ওকে ছাড়িয়ে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে আবারও বললাম,

—- ” এখন ঝটপট রেডি হয়ে নে তো আমাদের বেরোতে হবে!”

—- ” কোথায়?”

তিহা অবাক হয়ে বললো কথাটা।আমি আবার রেডি হতে হতে বললাম,

—- ” সিম টা যে ভেঙ্গে ফেলেছি ভুলে গেছিস নাকি? এখন তো একটা নতুন সিম কিনতে হবে! তোর সিমটাও পাল্টিয়ে ফেলবি।আমি চাই না রেহান এর সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ থাকুক।আর একটা ভাড়া বাসাও খুঁজতে হবে।এখানে আর থাকবো না।”

তিহাও একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার সাথে রেডি হয়ে নিলো।তারপর আমরা বেরিয়ে পরলাম।

প্রথমে নতুন সিম কার্ড কিনলাম।তারপর বাড়ির খুঁজ করতে লাগলাম।কিন্তু একটাও মন মতো বাড়ি পেলাম না।কোনোটা বাড়ির ভাড়া বেশি তো কোনোটা বাড়ি একদমই ভালো না।এরকম করতে করতে একটা বাড়ি পেয়েছে। বাড়িটার পাশেই দেখলাম একটা ভার্সিটিও আছে।সব মিলিয়ে পুরোপুরি না হলেও মোটামুটি পছন্দ হয়েছে। তাই আর কিছু না ভেবেই বাড়ি টা নিয়ে নিলাম।

ওইদিন বিকেলের মধ্যেই আমরা নতুন বাড়িতে উঠেছি।আমি চাইনা রেহানের সাথে আমার আর দেখা হোক।আমি জানি আমার ফোন বন্ধ পেলে হোস্টেলে ঠিক আসবে তাই এতো তারাতাড়ি নতুন বাড়িতে উঠা।

সবার সামনে নিজেকে স্বাভাবিক দেখালেও আমি কি সত্যি স্বাভাবিক আছি?ভিতরে ভিতরে যে আমি পুরে ছাই হয়ে গেছি।নাহ!আমার একদম ভেঙ্গে পরা চলবে না।ওই লোকটাকে আমি এর যোগ্য জবাব দিবোই।তার জন্য তো আমাকে শক্ত থাকতে হবে!নিজেকে তৈরি করতে হবে!তাই আমি আর ওই৷ লোকের কথা ভাববো না।ধরে নিবো উনি আমার জীবনে একটা দুর স্বপ্ন ছিলো!

চলবে,,,,,,