Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1491



ভালোবাসি পর্ব-০৪

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_৪
#সুমাইয়া_জাহান

আমি বেলকনিতে চলে আসার পর তিহাও আমার পিছু পিছু বেলকনিতে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে আমার কাঁদে ওর দুই হাত রেখে আমাকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো,

—- ” তুই এতোটা নিষ্ঠুর কবে থেকে হয়ে গেলি? একটা লোক তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে আর তুই তাকে বারবার ফিরিয়ে দিস!উনার জন্য তোর বিন্দুমাত্র ফিলিংস নেই তাই না!কিভাবে পারলি উনাকে এইভাবে কষ্ট দিতে?জানিস উনি তোকে কতোটা ভালোবাসে?তুই আজ ওখান থেকে চলে আসার পর কি হয়েছে জানিস?”

আমি অন্য দিকে মুখ ফিরেয়ে বললাম,

—- ” যা খুশি হোক তাতে আমার কিছু আসে যায় না।”

তিহা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

—- ” হ্যা তোর কেন আসবে যাবে!একটা লোক তোকে ভালোবাসে তার প্রানটাই দিয়ে দিলো তাতে তোর কি তুই তো তাকে ভালোই বাসিস না।আমার একটা অনুরোধ রইলো তুই মানুষ টাকে নাই ভালোবাাসতে পারিস কিন্তু একটা মানুষ হিসেবে শেষ ইচ্ছে টা পুরোন করতে পারিস!”

ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

—- ” শ শ শেষ ই ইচ্ছে মানে?”

তিহা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

—- ” থেকে চলে আসার পর রেহান ভাইয়া নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন।এক কথায় আত্মহত্যা করছেন।বুঝতে পেরেছিস তুই!শেষ নিশ্বাস ফেলার আগে উনি বলেছেন একবার তুই উনাকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে চান।একটা মৃত মানুষ কে একটি বার ভালোবাসি কথাটা বলতেও কি তোর সমস্যা! ”

ওর কথা শুনে ধপ করে ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। আমার দিকবিদিক শুন্য হয়ে হয়ে গেছে। উনি এমন কিছু করবেন আমি কখনো ভাবতেও পারিনি। আমি তো উনার সাথে এমন ব্যবহার করেছি যাতে উনি আমার থেকে দুরে চলে যান।কিন্তু উনি যে এতো দুরে চলে যাবেন…..না না না উনি কোথাও যাবেন না! উনার কিচ্ছু হবে না!দই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ওঠে দাঁড়ালাম আর তিহাকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- “উনি কি এখনো ওখানেই আছেন?”

তিহার হ্যাঁ বলার সাথে সাথে দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম।চারিদিকে বারবার চোখ বোলাচ্ছি একটা কোনো গাড়ি পাওয়ার আশায়। কিন্তু পুরো রাস্তা ফাঁকা একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে না।কথায় আছে না বিপদ আসলে সব দিক থেকেই আসে।আমার হয়েছে ঠিক সেই অবস্থা! কোনো কিছু না পেয়েে পায়েই হাঁটা ধরলাম।কিছুক্ষণ হাটার পর পায়ে ব্যাথা অনুভব করলাম পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তারাহুরোই আসতে গিয়ে জুতাই পরা হয়নি।আর খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটার রাস্তার ইট পাথরের সাথে ব্যাথা পাচ্ছি। আমি ওদিকে তোয়াক্কা না করে আবার হাঁটার দিকে মন দিলাম।

পাঁচ মিনিটের রাস্তা পনেরো মিনিটে পৌঁছালাম। পার্কের ভিতর ঢুকেই চারিদিকে তাকাতে লাগলাম।একটু আগে যেখানে বাচ্চাদের হইচইতে ভরপুর ছিলো সেখানে এখন একদম ঠান্ডা পরিবেশ। কোনো শব্দ নেই কোনো আওয়াজ নেই শুধুই শুন্যতায় ভরা।সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি যেখানে রেহান একটু আগে আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলেছিলো সেখানেই চোখ বন্ধ করে শুইয়ে আছেন।

দৌড়ে রেহানের কাছে গেলাম।উনাকে এভাবে পরে থাকতে দেখে আমার চারিদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলাম।উনার পাশে বসে পরলাম।কিছুক্ষণ ফেলফেল করে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।কিছুক্ষণ পর শান্ত গলায় বললাম,

—- ” এভাবে কেন শুইয়ে আছেন আপনি? তারাতাড়ি উঠে তিহাকে আচ্ছা মতো বকা দিয়ে দেন তো ও আপনাকে নিয়ে কি সব বলছে!আপনার ঘুম পাচ্ছে! তাই ঘুমিয়ে আছেন! কিন্তু কেউ কি পার্কের ভিতর এভাবে ঘাসের উপর ঘুমায়?কেউ আপনাকে এভাবে দেখলে কিন্তু পাগল বলবে।তারাতাড়ি উঠুন!”

এতো বার করে বলার পরও উনি উঠছেন না।মেজাজটা এবার গরম হয়ে গেলো।তাই রাগের সাথে উনার শার্ট খামছে ধরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলাম,

—- ” উঠতে বলছি না আমি! শুনতে পাচ্ছেন না আপনি!উঠুন বলছি!নাহলে কিন্তু খারাপ হবে বলে দিলাম।আমার সাথে মজা করছেন আপনি!আমি কিন্তু এখন একদম মজা করার মুডে নেই।ওকে আমার সাথে মজা করতে চাচ্ছেন তো?দেখুন আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি। এবার তো উঠুন!প্লিজ উঠুন না!আমার ভিষন ভয় করছে……..ওকে ফাইন আপনি জানতে চান তো আমি আপনাকে ভালোবাসি কি-না! হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসি।এবার তো আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন প্লিজ এবার উঠুন! ”

কথা গুলো বলতে বলতেই উনার বুকের উপর মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।হঠাৎ আমার মাথার উপর একটা হাতের স্পর্শ পেলাম আর সাথে সাথেই কারো দমফাটানো হাসির শব্দ কানে এলো।দুটো জিনিস একসাথে হওয়ার অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেলাম।মাথা তুলে দেখি রেহান এমন ভাবে হাসছে।আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি শোয়া থেকে উঠে বসে কিছুক্ষণ দমফাটা হেসে নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে বললো,

—- ” সিরিয়াসলি মিহু তুমি এমন রিয়েক্ট করবে আমি ভাবতেও পারিনি।তুমি তো সিনেমাকেও হার মানিয়ে দিলে।এতোক্ষণ বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছিলাম।”

কথাটা বলেই আবারও উনার দমফাটানো হাসিতে মেতে উঠলেন।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এতোক্ষণ সব কিছু সাজানো নাটক ছিলো।তবে এটা জেনে খুশি হয়েছি যে উনার কিছু হয়নি।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।আমার সাথে এমন ফাজলামো করার যোগ্য জবাব তো এদের দিতে হবে।ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,

—- ” মশকরা হচ্ছে! আমাকে কি আপনি জোকার পেয়েছেন যে আমার সাথে এমন নাটক করছেন?এসব নাটকের মানে কি?”

উনি ভ্রু উঁচু করে বললেন,

—- ” তাহলে কি সত্যি কারে মরে গেলে ভালো হতো!”

উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনার মুখ চেপে ধরলাম আর চোখ রাঙিয়ে বললাম,

—- ” কি শুরু করেছেন আপনি?একবার এসব নাটক করছেন তো আরেকবার এসব উল্টো পাল্টা কথা বলছেন!আর একবার যদি এমন করেন তাহলে কিন্তু একদম ভালো হবে!”

রেহান ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বললো,

—- ” আমার কি দোষ তুমি তো বললা নাটক কেন করছি তাই তো ভাবলাম সত্যি কারে হলে তুমি খুশি হতা!”

একে তো প্রচন্ড মাথা গরম হয়ে আছে তার উপর উনার এমন কথা বার্তার রাগ আমার সপ্তম আকাশে চলে গেছে। দাতে দাত চেপে চোখ বন্ধ করে রাগটাকে কন্ট্রোল করে শান্ত গলায় বললাম,

—- ” একটু আগে দেখে নিয়েছেন তো আমার কিরকম অবস্থা হয়েছিলো।সো নেক্সট টাইম এরকম মজা আর করবেন না।”

কথাটা বলেই উঠে দাড়াতে লাগলাম।কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর আগেই রেহান আমার হাত টা ধরে আবার বসিয়ে দিলো আর বলতে লাগলো,

—- ” যাকে পাগলের মতো ভালোবাসো। যার কোনো কিছু হলে পুরো পাগল হয়ে যাও তাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছো?আর এবার কিন্তু বলতে পারবে না ভালোবাসো না একটু আগেই কিন্তু নিজের মুখে শিকার করেছো আমায় কতোটা ভালোবাসো।তাহলে কেন ছেড়ে যেতে চাচ্ছো?”

আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।তার পর বলতে লাগলাম,

—- ” আমি তোমার মতো বড়োলোক বাড়ির মেয়ে না।আমি খুবই মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।আমরা দু বোন।ছোট থেকেই দেখে এসেছি বাবা খুব কষ্ট করে আমাদের দুবোনের পড়ালেখা চালিয়েছে।বাবার টাকা কম থাকলেও আমাদের কোনো ইচ্ছেই কখনো অপুর্ন রাখেন নি।সবসময় আমরা কিসে খুশি থাকবো তা চিন্তা করেছেন।নিজের স্বপ্ন গুলো কে জলাঞ্জলি দিয়েও আমাদের স্বপ্ন গুলোকে সফল করার পথে এগিয়ে দিয়ে গেছেন।এমনি আমাকে এখানে ভর্তি করাতেও বাবার অনেক কষ্ট হয়েছে তবুও হাসি মুখে আমায় এখানে ভর্তি করিয়েছেন।কখনো নিজের কষ্ট গুলোকে আমাদের বুঝতে দেননি। সবসময়ই হাসি মুখে আমাদের থেকে কষ্ট গুলো কে আরাল করে রাখেন।তাই আমিও ঠিক করেছি বাবার পছন্দেই আমি বিয়ে করবো।নিজের পছন্দে নয়।তাই আমি আপনাকে ভালোবাসলেও তার পুর্নতা দিতে পারবো না।”

আমার কথা শুনে রেহান হাসতে লাগলো।আমি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নত্মাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে বললেন,

—- ” এই একটা কারনে তুমি আমায় প্রতিদিন রিজেক্ট করতে?তোমার কোন দিক থেকে মনে হয় তোমার বাবার আমাকে পছন্দ হবে না?আমি কি এতোটাই খারাপ বলে তোমার মনে হয়।”

—- ” এখানে আপনাকে পছন্দ হওয়ার না হওয়ার প্রশ্ন আসছে না।আসলে আমাদের গ্রামেরই একটা ছেলেকে আমার জন্য পছন্দ করে রেখেছেন বাবা।আর আমার ভার্সিটি শেষ হলেই উনার সাথে আমার বিয়ে ডেট ঠিক করে রেখেছেন।”

রেহান আমার কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বললেন,

—- ” ওকে নো প্রবলেম।আমি তোমার বাবাকে পটিয়ে ফেলে ওই বেটাকে তোমার আমার মাঝখান থেকে সরিয়ে ফেলবো।তাতে তো আমাকে ভালোবাসতে কোনো সমস্যা নেই।”

কথাটা বলেই উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।আমিও আর না করতে পারলাম না।কারণ আমি তো উনাকে ভিষণ ভালোবেসে ফেলেছি।তাই আমি উনার হাতের উপর হাত রেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নারিয়ে সম্মতি জানালাম। তাতেই উনার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।

একটু আগেই রেহান আমাকে হোস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে।এখন আমি বসে আছি আমার মহামান্য বেস্টির সামনে।উনি এখন এমন একটা ভাব করে চিপস গিলছেন যেন এতোক্ষণ কিছুই হয়নি আর উনি কিছুই জানেন না।

—- ” তুই কি করে আমার সাথে এমন টা করতে পারলি?তুই কি আমার বন্ধু না উনার?”

গম্ভীর গলায় কথাটা বলে ওর উত্তরের অপেক্ষায় ওর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছি আমি। আর উনি তো উনার মতো করে চিপস গিলতে ব্যাস্ত জেন আমার কথা উনার কান পর্যন্ত পৌছাছেই না।তাই ওর হাত থেকে চিপসের প্যাকেট টা ছোঁ মেরে নিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললাম,

—- ” আমার কথা তোর কানে যাচ্ছে না?নাকি কানা হয়ে গেছিস!”

ও আবারও আমার হাত থেকে চিপস টা নিয়ে পুরো প্যাকেট শেষ করে হাত জেরে বললো,

—- ” হ্যাঁ কি জেনো বলছিলি?”

আমি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই একটা বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” আমি তো দুটো ভালোবাসার মানুষ কে এক করলাম।কোথায় আমায় থ্যাংকস দিবি ট্রিট দিবি তা না…..”

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো।তাকিয়ে দেখি স্কিনে রেহানের নাম টা ভেসে উঠছে তা দেখে তিহা বলতে লাগলো,

—- ” যাও যাও এখন তো বেস্টু কে ছেড়ে প্রেমিকের সাথে প্রেম আলাপ করতে ব্যাস্ত থাকেবি।”

—- ” তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো।”

চোখ গরম করে তিহা কে কথাটা বলেই ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলাম।

চলবে,,,,,,,আমি বেলকনিতে চলে আসার পর তিহাও আমার পিছু পিছু বেলকনিতে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে আমার কাঁদে ওর দুই হাত রেখে আমাকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো,

—- ” তুই এতোটা নিষ্ঠুর কবে থেকে হয়ে গেলি? একটা লোক তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে আর তুই তাকে বারবার ফিরিয়ে দিস!উনার জন্য তোর বিন্দুমাত্র ফিলিংস নেই তাই না!কিভাবে পারলি উনাকে এইভাবে কষ্ট দিতে?জানিস উনি তোকে কতোটা ভালোবাসে?তুই আজ ওখান থেকে চলে আসার পর কি হয়েছে জানিস?”

আমি অন্য দিকে মুখ ফিরেয়ে বললাম,

—- ” যা খুশি হোক তাতে আমার কিছু আসে যায় না।”

তিহা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

—- ” হ্যা তোর কেন আসবে যাবে!একটা লোক তোকে ভালোবাসে তার প্রানটাই দিয়ে দিলো তাতে তোর কি তুই তো তাকে ভালোই বাসিস না।আমার একটা অনুরোধ রইলো তুই মানুষ টাকে নাই ভালোবাাসতে পারিস কিন্তু একটা মানুষ হিসেবে শেষ ইচ্ছে টা পুরোন করতে পারিস!”

ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

—- ” শ শ শেষ ই ইচ্ছে মানে?”

তিহা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

—- ” থেকে চলে আসার পর রেহান ভাইয়া নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন।এক কথায় আত্মহত্যা করছেন।বুঝতে পেরেছিস তুই!শেষ নিশ্বাস ফেলার আগে উনি বলেছেন একবার তুই উনাকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে চান।একটা মৃত মানুষ কে একটি বার ভালোবাসি কথাটা বলতেও কি তোর সমস্যা! ”

ওর কথা শুনে ধপ করে ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। আমার দিকবিদিক শুন্য হয়ে হয়ে গেছে। উনি এমন কিছু করবেন আমি কখনো ভাবতেও পারিনি। আমি তো উনার সাথে এমন ব্যবহার করেছি যাতে উনি আমার থেকে দুরে চলে যান।কিন্তু উনি যে এতো দুরে চলে যাবেন…..না না না উনি কোথাও যাবেন না! উনার কিচ্ছু হবে না!দই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ওঠে দাঁড়ালাম আর তিহাকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- “উনি কি এখনো ওখানেই আছেন?”

তিহার হ্যাঁ বলার সাথে সাথে দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম।চারিদিকে বারবার চোখ বোলাচ্ছি একটা কোনো গাড়ি পাওয়ার আশায়। কিন্তু পুরো রাস্তা ফাঁকা একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে না।কথায় আছে না বিপদ আসলে সব দিক থেকেই আসে।আমার হয়েছে ঠিক সেই অবস্থা! কোনো কিছু না পেয়েে পায়েই হাঁটা ধরলাম।কিছুক্ষণ হাটার পর পায়ে ব্যাথা অনুভব করলাম পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তারাহুরোই আসতে গিয়ে জুতাই পরা হয়নি।আর খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটার রাস্তার ইট পাথরের সাথে ব্যাথা পাচ্ছি। আমি ওদিকে তোয়াক্কা না করে আবার হাঁটার দিকে মন দিলাম।

পাঁচ মিনিটের রাস্তা পনেরো মিনিটে পৌঁছালাম। পার্কের ভিতর ঢুকেই চারিদিকে তাকাতে লাগলাম।একটু আগে যেখানে বাচ্চাদের হইচইতে ভরপুর ছিলো সেখানে এখন একদম ঠান্ডা পরিবেশ। কোনো শব্দ নেই কোনো আওয়াজ নেই শুধুই শুন্যতায় ভরা।সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি যেখানে রেহান একটু আগে আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলেছিলো সেখানেই চোখ বন্ধ করে শুইয়ে আছেন।

দৌড়ে রেহানের কাছে গেলাম।উনাকে এভাবে পরে থাকতে দেখে আমার চারিদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলাম।উনার পাশে বসে পরলাম।কিছুক্ষণ ফেলফেল করে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।কিছুক্ষণ পর শান্ত গলায় বললাম,

—- ” এভাবে কেন শুইয়ে আছেন আপনি? তারাতাড়ি উঠে তিহাকে আচ্ছা মতো বকা দিয়ে দেন তো ও আপনাকে নিয়ে কি সব বলছে!আপনার ঘুম পাচ্ছে! তাই ঘুমিয়ে আছেন! কিন্তু কেউ কি পার্কের ভিতর এভাবে ঘাসের উপর ঘুমায়?কেউ আপনাকে এভাবে দেখলে কিন্তু পাগল বলবে।তারাতাড়ি উঠুন!”

এতো বার করে বলার পরও উনি উঠছেন না।মেজাজটা এবার গরম হয়ে গেলো।তাই রাগের সাথে উনার শার্ট খামছে ধরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলাম,

—- ” উঠতে বলছি না আমি! শুনতে পাচ্ছেন না আপনি!উঠুন বলছি!নাহলে কিন্তু খারাপ হবে বলে দিলাম।আমার সাথে মজা করছেন আপনি!আমি কিন্তু এখন একদম মজা করার মুডে নেই।ওকে আমার সাথে মজা করতে চাচ্ছেন তো?দেখুন আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি। এবার তো উঠুন!প্লিজ উঠুন না!আমার ভিষন ভয় করছে……..ওকে ফাইন আপনি জানতে চান তো আমি আপনাকে ভালোবাসি কি-না! হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসি।এবার তো আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন প্লিজ এবার উঠুন! ”

কথা গুলো বলতে বলতেই উনার বুকের উপর মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।হঠাৎ আমার মাথার উপর একটা হাতের স্পর্শ পেলাম আর সাথে সাথেই কারো দমফাটানো হাসির শব্দ কানে এলো।দুটো জিনিস একসাথে হওয়ার অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেলাম।মাথা তুলে দেখি রেহান এমন ভাবে হাসছে।আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি শোয়া থেকে উঠে বসে কিছুক্ষণ দমফাটা হেসে নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে বললো,

—- ” সিরিয়াসলি মিহু তুমি এমন রিয়েক্ট করবে আমি ভাবতেও পারিনি।তুমি তো সিনেমাকেও হার মানিয়ে দিলে।এতোক্ষণ বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছিলাম।”

কথাটা বলেই আবারও উনার দমফাটানো হাসিতে মেতে উঠলেন।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এতোক্ষণ সব কিছু সাজানো নাটক ছিলো।তবে এটা জেনে খুশি হয়েছি যে উনার কিছু হয়নি।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।আমার সাথে এমন ফাজলামো করার যোগ্য জবাব তো এদের দিতে হবে।ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,

—- ” মশকরা হচ্ছে! আমাকে কি আপনি জোকার পেয়েছেন যে আমার সাথে এমন নাটক করছেন?এসব নাটকের মানে কি?”

উনি ভ্রু উঁচু করে বললেন,

—- ” তাহলে কি সত্যি কারে মরে গেলে ভালো হতো!”

উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনার মুখ চেপে ধরলাম আর চোখ রাঙিয়ে বললাম,

—- ” কি শুরু করেছেন আপনি?একবার এসব নাটক করছেন তো আরেকবার এসব উল্টো পাল্টা কথা বলছেন!আর একবার যদি এমন করেন তাহলে কিন্তু একদম ভালো হবে!”

রেহান ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বললো,

—- ” আমার কি দোষ তুমি তো বললা নাটক কেন করছি তাই তো ভাবলাম সত্যি কারে হলে তুমি খুশি হতা!”

একে তো প্রচন্ড মাথা গরম হয়ে আছে তার উপর উনার এমন কথা বার্তার রাগ আমার সপ্তম আকাশে চলে গেছে। দাতে দাত চেপে চোখ বন্ধ করে রাগটাকে কন্ট্রোল করে শান্ত গলায় বললাম,

—- ” একটু আগে দেখে নিয়েছেন তো আমার কিরকম অবস্থা হয়েছিলো।সো নেক্সট টাইম এরকম মজা আর করবেন না।”

কথাটা বলেই উঠে দাড়াতে লাগলাম।কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর আগেই রেহান আমার হাত টা ধরে আবার বসিয়ে দিলো আর বলতে লাগলো,

—- ” যাকে পাগলের মতো ভালোবাসো। যার কোনো কিছু হলে পুরো পাগল হয়ে যাও তাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছো?আর এবার কিন্তু বলতে পারবে না ভালোবাসো না একটু আগেই কিন্তু নিজের মুখে শিকার করেছো আমায় কতোটা ভালোবাসো।তাহলে কেন ছেড়ে যেতে চাচ্ছো?”

আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।তার পর বলতে লাগলাম,

—- ” আমি তোমার মতো বড়োলোক বাড়ির মেয়ে না।আমি খুবই মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।আমরা দু বোন।ছোট থেকেই দেখে এসেছি বাবা খুব কষ্ট করে আমাদের দুবোনের পড়ালেখা চালিয়েছে।বাবার টাকা কম থাকলেও আমাদের কোনো ইচ্ছেই কখনো অপুর্ন রাখেন নি।সবসময় আমরা কিসে খুশি থাকবো তা চিন্তা করেছেন।নিজের স্বপ্ন গুলো কে জলাঞ্জলি দিয়েও আমাদের স্বপ্ন গুলোকে সফল করার পথে এগিয়ে দিয়ে গেছেন।এমনি আমাকে এখানে ভর্তি করাতেও বাবার অনেক কষ্ট হয়েছে তবুও হাসি মুখে আমায় এখানে ভর্তি করিয়েছেন।কখনো নিজের কষ্ট গুলোকে আমাদের বুঝতে দেননি। সবসময়ই হাসি মুখে আমাদের থেকে কষ্ট গুলো কে আরাল করে রাখেন।তাই আমিও ঠিক করেছি বাবার পছন্দেই আমি বিয়ে করবো।নিজের পছন্দে নয়।তাই আমি আপনাকে ভালোবাসলেও তার পুর্নতা দিতে পারবো না।”

আমার কথা শুনে রেহান হাসতে লাগলো।আমি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নত্মাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে বললেন,

—- ” এই একটা কারনে তুমি আমায় প্রতিদিন রিজেক্ট করতে?তোমার কোন দিক থেকে মনে হয় তোমার বাবার আমাকে পছন্দ হবে না?আমি কি এতোটাই খারাপ বলে তোমার মনে হয়।”

—- ” এখানে আপনাকে পছন্দ হওয়ার না হওয়ার প্রশ্ন আসছে না।আসলে আমাদের গ্রামেরই একটা ছেলেকে আমার জন্য পছন্দ করে রেখেছেন বাবা।আর আমার ভার্সিটি শেষ হলেই উনার সাথে আমার বিয়ে ডেট ঠিক করে রেখেছেন।”

রেহান আমার কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বললেন,

—- ” ওকে নো প্রবলেম।আমি তোমার বাবাকে পটিয়ে ফেলে ওই বেটাকে তোমার আমার মাঝখান থেকে সরিয়ে ফেলবো।তাতে তো আমাকে ভালোবাসতে কোনো সমস্যা নেই।”

কথাটা বলেই উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।আমিও আর না করতে পারলাম না।কারণ আমি তো উনাকে ভিষণ ভালোবেসে ফেলেছি।তাই আমি উনার হাতের উপর হাত রেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নারিয়ে সম্মতি জানালাম। তাতেই উনার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।

একটু আগেই রেহান আমাকে হোস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে।এখন আমি বসে আছি আমার মহামান্য বেস্টির সামনে।উনি এখন এমন একটা ভাব করে চিপস গিলছেন যেন এতোক্ষণ কিছুই হয়নি আর উনি কিছুই জানেন না।

—- ” তুই কি করে আমার সাথে এমন টা করতে পারলি?তুই কি আমার বন্ধু না উনার?”

গম্ভীর গলায় কথাটা বলে ওর উত্তরের অপেক্ষায় ওর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছি আমি। আর উনি তো উনার মতো করে চিপস গিলতে ব্যাস্ত জেন আমার কথা উনার কান পর্যন্ত পৌছাছেই না।তাই ওর হাত থেকে চিপসের প্যাকেট টা ছোঁ মেরে নিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললাম,

—- ” আমার কথা তোর কানে যাচ্ছে না?নাকি কানা হয়ে গেছিস!”

ও আবারও আমার হাত থেকে চিপস টা নিয়ে পুরো প্যাকেট শেষ করে হাত জেরে বললো,

—- ” হ্যাঁ কি জেনো বলছিলি?”

আমি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই একটা বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” আমি তো দুটো ভালোবাসার মানুষ কে এক করলাম।কোথায় আমায় থ্যাংকস দিবি ট্রিট দিবি তা না…..”

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো।তাকিয়ে দেখি স্কিনে রেহানের নাম টা ভেসে উঠছে তা দেখে তিহা বলতে লাগলো,

—- ” যাও যাও এখন তো বেস্টু কে ছেড়ে প্রেমিকের সাথে প্রেম আলাপ করতে ব্যাস্ত থাকেবি।”

—- ” তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো।”

চোখ গরম করে তিহা কে কথাটা বলেই ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলাম।

চলবে,,,,,,,

ভালোবাসি পর্ব-০৩

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_৩
#সুমাইয়া_জাহান

আমি ভালো করে তিহা কে একবার পরক করে।ওর গায়ে তাপমাত্রা চেক করে বললাম,

—- ” সব তো ঠিকই আছে! তাহলে এমন বিহেভ কেনো করছিস?”

তিহা আমার দিকে তাকিয়ে একটা জোর পূর্বক হাসি দিয়ে আমতা আমতা করে বললো,

—- ” কে কেমন বিহেভ করছি?আ আরে আজ একটু তোকে নিয় ঘুরতে ইচ্ছে করছিলো তাই শাড়ি পরতে বলেছিলাম!একদিনই তো ভার্সিটি বাদ দিচ্ছি এতে কি এমন হয়েছে?এমন করছিস মনে হয় আমি মানুষ না রোবূট যে কোনো দিন ভার্সিটি বাদ দিবে না!”

কথাটা বলেই মুখ ফুলিয়ে বসে পরলো তিহা।কিন্তু ওর কথা আমার কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না।তারপরও নিজের মন কে বুঝিয়ে ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে তিহার পাশে ধপাস করে বসে চোখ বন্ধ করে বললাম,

—- ” ঠিক আছে তুই যখন সেই সকাল থেকে আদা জল খেয়ে লেগেছিস শাড়ি পরানোর জন্য, তো ঠিক আছে আমি শাড়ি পরবো।তবে….”

আমার কথা টা শোনা মাত্রই তিহা লাফ দিয়ে উঠে বাঁদর নৃত্য শুরু করে দিয়েছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও কোনো বিশ্ব জয় করে ফেলেছে।কিন্তু শাড়ি পরা নিয়ে এমন ওঠে পরে লেগেছে কেন?সে পরে দেখা যাবে এখন তো এই বাঁদর নৃত্য বন্ধ করতে হবে! আমি এক হাত দিয়ে টেনে ওকে আবার বসালাম।তারপর চোখ রাঙিয়ে বললাম,

—- ” এমন বাঁদর বাঁদর নৃত্য শুরু করলি কেন?জীবনে কাউকে কোনোদিন শাড়ি পরতে দেখিসনি?আর পুরো কথা না শুনে লাফাচ্ছিস কেন?আমি আজ শাড়ি পরবো একটা শর্তে!”

—- নো প্রবলেম তোর সব শর্তেই রাজি!

মুখে চওড়া হাসি রেখেই কথাটা বললো।আমি একবার ভ্রু কুঁচকে ওকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” ভেবে বলছিস তো?”

ও মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বললো হুম মানে ও ভেবেই বলছে।আমিও মুখে একটা চওড়া হাসি এনে পাশ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দিয় বললাম,

—- ” আমি যদি শাড়ি পরি তাহলে তোকেও পরতে হবে। এই শর্তেই আমি শাড়ি পরবো নাহলে পরবো না।”

আমি খুব ভালো করেই জানি ও কোনো দিনও শাড়ি পরতে রাজি হবে না।কারণ ও শাড়ি পরতে একদমই পছন্দ করে না।আজ অবদি ওকে কোনো দিন শাড়ি পরাতে পারিনি।তাই জেনে শুনেই এই শর্ত দিয়েছি।আমি একশো তে একশো সিউর ও আমার শর্তে রাজি হবে না।কিন্তু আমার ভাবনাকে পুরো পুরি পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে বললো,

—- ঠিক আছে আমি তোর শর্তে রাজি।

কথাটা ও চোখ মুখ কুঁচকে বললো।ওর এই একটা কথা শুনে আমার মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেলো।যে মেয়ে কে জীবনে কোনো দিন শাড়ি পরাতে পারিনি সেই মেয়ে আজ এককথায় শাড়ি পরতে রাজি হয়ে গেলো।ওকে আবার জিজ্ঞেস করলাম সত্যি ও রাাজি কিনা বললো হ্যা সত্যিই শাড়ি পরতে রাজি। আজ মনে হয় আমার অবাক করার দিন সবকিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে।

দুজনেই শাড়ি পরে রেডি হয়ে নিলাম।তিহা একটা নীল রঙের শাড়ী আর আমি পরেছি মেরুন রঙের একটা শাড়ি। তারপর ওর কথা মতো ওর সাথে যেতে লাগলাম।কিন্তু কোথায় যাচ্ছে এখনো বলেনি শুধু বলেছে সারপ্রাইজ! তাই কথা না বাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের চুপচাপ ওর সাথে যাচ্ছি।

—- এই ওর আসার কিন্তু সময় হয়ে এসেছে সব কিছু আরেকবার রিচেক করে নে।

রেহানের কথায় সবাই ভালো করে চেক করতে লাগলো সব কিছু প্লান মতো আছে কিনা!রেহান একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আবার সামনের রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে।

তিহা আমাকে নিয়ে একটা পার্কের সামনে আসলো।রিকশার ভাড়া মিটিয়ে আমাকে নিয়ে পার্কের ভিতর ঢুকলো।আমরা পার্কে ঢুকতেই কতো গুলো বাচ্চা আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো।আর প্রতিটা বাচ্চার হাতেই একটা করে রেড বেলুন।ওরা একজন একজন করে এগিয়ে এসে আমার হাতে একটা একটা করে বেলুন দিতে লাগলো।আর বেলুন গুলোতে বড়ো বড়ো করে লেখা ” ভালোবাসি “।আমি অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি মনে হচ্ছে কোনো পরির রাজ্যে এসে পরেছি।আমার চারিপাশে ছোট্ট ছোট্ট পরিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।

আমি এমনিতেও বাচ্চাদের খুব ভালোবাসি তাই ওদের পেয়ে ওদের সাথেই খেলতে শুরু করে দিয়েছি।আমি ওদের পেয়ে এতোটাই খুশিতে মেতে উঠেছি যে আশেপাশের কোনো কিছুই খেয়াল করিনি।একটু সমনে তাকালেই খেয়াল করতাম রেহান কে দেখতে পেতাম।

রেহান মিহির এমন কান্ড দেখে নিজের অজান্তেই একটা মুচকি হাসি দিলো।তারপর এগিয়ে গেলো মিহির দিকে।মিহির সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে একটা ” ভালোবাসি ” লেখা বেলুন ধরে বললো,

—- ” ভালোবাসি মিহি খুব ভালোবাসি তোমায়!প্রতিদিন তো ফিরে দেও প্লিজ আজ আর ফিরিয়ে দিয়ো না!

রেহানের সাথে সাথে ছোট্ট বাচ্চা গুলোও বসে পরলো আর ওর সাথে সাথেই বলতে লাগলো,

—- প্লিজ প্রিন্সেস ফিরিয়ে দিও না প্লিজ!

ওদের সবার কথায় আমি বাকরূদ্ধ কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি না।এতোদিনে আমার মনেও রেহানের জন্য একটু একটু করে ফিলিংস তৈরি হয়েছে।কিন্তু আমি তা বাইরে প্রকাশ করতে দেইনি।আজ যেভাবে বলছে এতে আমি ওকে সত্যি আমি ফিরিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।না পারছি ফিরিয়ে দিতে না পারছি স্বিকার করতে।চোখ বন্ধ করে নিলাম।চোখ বেয়ে পানি পরার আগেই সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসলাম।

মিহি এভাবে দৌড়ে চলে যাওয়াতে রেহানের হাসি মুখ টা মলিন হয়ে গেলো।তিহা আস্তে আস্তে রেহানের কাছে এসে দাড়ালো। একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,

—- ” চিন্তা করবেন না ভাইয়া আমি জানিও আপনাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু ও মুখে তা স্বিকার করছে না।মাঝে মাঝে নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ হয়।মিহি যদি আপনাকে নাই ভালোবাসতো তাহলে ও আপনার মুখের উপরই না করে দিতো।কিন্তু ও তা করেনি এখান থেকে চলে গিয়ে কিন্তু ও বুঝিয়ে দিয়েছে ও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে।ওর চোখে আমি আপনার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। ”

তিহার কথা গুলো রেহানের বেশ পছন্দ হয়েছে।ওর মলিন মুখে আবার হাসি ফুটে উঠলো। এ হাসি আনন্দের ভিষন আনন্দের। এতোদিনের প্রচেষ্টা আজ সফল হলো।

—- ” থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ তিহা তুমি আজ আমায় হ্যাল্প না করলে তো এতো কিছু হতোই না!”

—- ” শুধু থ্যাঙ্কস এ চলবে না ভাইয়া! আমার ডাবল গিফট দিতে হবে। এক মিহি কে আপনার কথা মতো শাড়ি পরিয়ে আপনার সামনে আনার জন্য আর দ্বিতীয় টা হলো আপনাকে হ্যাল্প করার জন্য। ”

রেহান তিহার কথায় একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,

—- ” হুম পেয়ে যাবেন শালি সাহেবা!”

তারপর দুজনেই হেসে দিলো।তিহার মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো।

—- ভাইয়া শুনুন আপনি তো মিহুর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে চান?

রেহান মাথা নেরে বলললো ” হ্যাঁ “।তিহার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

ওখান থেকে এসে দৌড়ে ওয়াস রুমে ডুকে শাওয়ার এর নিচে বসে একনাগাড়ে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি। আদা ঘন্টা পর তিহা ওয়াস রুমের দরজা ধাক্কালো।

—– ” মিহু! মিহু!তারাতাড়ি বের হো আমি আমারও তো ফ্রেশ হতে হবে শুধু তুই একা ফ্রেশ হলেই হবে!তারাতাড়ি বের হো!”

বুঝলাম এতোক্ষণে ও ফিরেছে।ওর কথায় কোনো জবাব না দিয়েই চোখের পানি মুছে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।

আমি বের হতেই তিহা আমার সামনে দাড়িয়ে বললো,

—- ” তুই এই ভাবে ওখান থেকে চলে আসলি কেন?”

ওর কথার কোনো উত্তর না দিয়েই ওকে পাস কাটিয়ে বেলকনির দিকে চলে গেলাম।ও আবার আমার সামনে এসে দাড়ালো। এবার ও যা বললো তাতে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।

চলবে,,,,,

ভালোবাসি পর্ব-০২

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_২
#সুমাইয়া_জাহান

—- ” কিরে এতোক্ষণ লাগে একটা ফোন ধরতে? কোথায় কোথায় থাকিস?বারবার বলি যেখানে যাবি ফোনটা হাতে নিয়ে যাবি!আমার কোনো কথা কানেই নিস না।দাঁড়া এবার বাড়ি এলে আর যেতে দিবো না।জানিস কতো চিন্তায় থাকি সারাদিন! এই একটা সময়ই তোর সাথে কথা হয়।তারপরও তুই তাড়াতাড়ি ফোন ধরিস না!”

—- ” শেষ হয়েছে?”

একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম।এতোক্ষণ যিনি একনাগাড়ে কথাগুলো বলছিলেন উনি আমার মা জননী।ফোন ধরতে এক সেকেন্ডও দেরি হলে এমন শুরু করে দেন।আর কথায় কথায় হুমকি দিতে থাকবেন বাড়ি নিয়ে যাওয়ার।ফোনের ওপাস থেকে অভিমানী সুরে মা আবারও বলে উঠলেন,

—- ” হুম! তোর কাছে তো আমার দুশ্চিন্তার কোনো দামই নাই!আমি এখানে চিন্তায় চিন্তায় মরে যাই আর তুই ওখানে বসে বসে মজা কর!”

—- ” মা তুমি কিন্তু শুধু শুধু এতো চিন্তা করছো।ফোন টা ধরতে একটু তো টাইম লাগে!এইটু সময় তো দিবা।”

—- ” হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো আমার কথা খারাপ লাগবেই! যখন বিপদে পড়ি তখন বুঝবি এতো চিন্তা কেন করি!ওসব এখন বাদ দে আগে বল আজ কারো সাথে কোনো ঝামেলা করিস নি তো!তুই কিন্তু তোর বাবাকে কথা দিয়েছিস ওখানে কারো সাথে কোনো ঝামেলা করবি না সেটা ভুলে যাস না কিন্তু!”

আমার মা জননী মনে করেন আমি কারো না কারো সাথে সব সময় ঝামেলা করতে থাকি।তাই বাড়ি থেকে এখানে আসার আগে বাবাকে দিয়ে কথা দিয়ে নিয়েছেন এখানে কোনো ঝামেলা না করি।তাই তো কিছু বলে প্রতিবাদ টুকুও করতে পারি না।যেমন আজ সকালে রেহান কে এক লাথিতে উগান্ডা পাঠানোর ইচ্ছে টা মাটি চাপা দিতে হয়েছে।কি৷ আর করার বাবা কে কথা দিয়েছি বলে কথা রাখতে তো হবে!আর মাও প্রতিদিন নিয়ম করে এই কথাটা জিজ্ঞেস করবেই করবে।নিজের খাবার খেতে ভুলে যাবেন কিন্তু এই কথাটা কোনোদিন জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না!তাই আজও সেই নিয়মের অন্যথা হলো না! বিরক্ত হয়ে ঠোঁট উল্টে বললাম,

—- ” তোমার মেয়ের উপর কি একটুও বিশ্বাস নেই?আমায় দেখে কি তোমার মনে হয় সবসময় ঝামেলা করতে থাকি? ”

—- ” কি জানি বাপু!আমি কাল সাপকেও বিশ্বাস করতে পারি কিন্তু তোকে কেন জানি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না।সবসময়ই মনে হয় তুই কোনো না কোনো ঝামেলা ঠিক করবি!কি করবো বল মন তো আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই যে তাকে বলবো তোকে একটু বিশ্বাস করতে!”

একটা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বললাম,

—- ” তোমার মনকে আর বলতে হবে না!এবার বলতো বাবা ঠিক মতো ঔষধ খেয়েছে কিনা?

—- হ্যাঁ তা খেয়েছে।না খেলে তো তোর পেট ভরা বকা খেতে হবে তাই ঠিক সময়ের আগেই ঔষধ খেয়ে বসে থাকেন।”

মায়ের কথা শুনে মৃদু হাসলাম।তারপর আবার জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” মা মাহি এখনো কোচিং থেকে ফেরেনি?”

—- ” তুই নাম নিলি মহারানীর আর হাজির না হয়ে পারেন! এই নে কথা বল!”

মাহি হলো আমার দুষ্টু মিষ্টি ছোট্ট বোন।এবার ক্লাস নাইনে পড়ে।আমি বলতে ও পাগল।এইতো যখন আমার এখানে আসার কথা হয়েছিলো তখন পুরো বাড়ি কেঁদেই ভাসিয়ে দিয়েছে। ও কিছুতেই আমাকে ছাড়া থাকবে।যদি যেতে হয় তাহলে দুজন এক সাথো আসবে। নাহলে কেউ আসতে পারবে না! অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে বলে এসেছি যে ওর এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করলে আমার সাথে এখানে নিয়ে আসবো।তারপর থেকে যে মেয়ে জীবনে বইয়ের পাতা উল্টে দেখে না সে মেয়ে এখন বই ছাড়া কিছুই বোঝে না সারাক্ষণ বই নিয়েই বসে থাকে।

—- ” আপুই আমাদের মা টা না দিনদিন কেমন স্টার জলসার শ্বাশুড়ি দের মতো হয়ে যাচ্ছে। ভাগ্যিস আমাদের কোনো ভাই নেই নাহলে আমাদের না হওয়া ভাবি অকালেই উপরে চলে যেতো!”

মাহির কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম।তারপর মনে হলো মায়ে পাশে দাড়িয়ে এমন কথা বলে আস্ত দাঁড়িয়ে আছে কিভাবে?এতোক্ষণে তো তুলকালাম কান্ড হয়ে যাওয়ার কথা।কিন্তু পরিস্থিতি এতো শান্ত কেন?একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” এই মা কি এখনো তোর পাশেই আছে?”

মাহি ভাব নিয়ে বললো,

—- ” আমি মাকে ভয় পাই নাকি! ”

—- ” তাই!”

মাহি আস্তে আস্তে বললো,

—-” মা একটু আগে রান্না ঘরে গেছি। নাহলে তো এতোক্ষণে আমার ভোলা ভালা মাথা টা মাটিতে পরে হামা গড়ি খেতো।”

—-” তাই তো বলি মেয়ের এতো সাহস হলো কি করে মা জননী কে নিয়ে কথা বলার!যে মেয়ে মায়ের সামনে সামান্য একটা কথা বলতে গেলো হাত পা কাঁপতে থাকে সে বলবে এমন কথা!”

কথাটা বলেই হাসতে লাগলাম।আর ওপর পাস থেকে মাহি ইনোসেন্ট ভাবে বললো,

—- ” আপুই একটু মানসম্মান তো রাখ! ভুলে যাচ্ছিস কেন আমরা এখন ফোনে কথা বলছি! ”

আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- ” ফোনে কথা বলছি তো কি হয়েছে?”

—- ” আরে আপুই তুই তো দেখি কিছুই জানিস না! তুই কি করে যে আমার বড়ো হলি আল্লাই ভালো জানে?শুনেছি ফোনে আমরা যা বলি সব নাকি রেকর্ড হয়।আর ওই অফিসের লোকজনরা সব শুনতে পায়।এখন ওদের সামনে আমার প্রেস্টিজ এবাবে ধুলোই মিশিয়ে দিলে পরে আর আমার জামাই খুঁজে পাওয়া যাবে?একটু ভাব!”

ওর কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছি না।এই বলে কি এসব?মাহি আবারও বলে ওঠলো ওঠলো,

—- ” যাগগে বাদ দে ওসব তোর ওই মাথায় ঢুকবে না!এখন বল কবে আসবি?”

—- ” এখন কোনো ছুটি নেই রে বোন আমার! তাই এখন আর আসা হবে না।”

এবাবে আরো কিছু কথা বলে ফোন কাটলাম।এর মধ্যেই তিহা বই হাতে নিয়ে বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

—- ” কথা শেষ হলো অবশেষে?”

আমি মাথা নেরে বললাম ” হুম “।তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তারাতাড়ি উঠে গিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলাম।তিহাও আমার পিছু পিছু রান্না ঘরে ঢুকলো। এসেই আমরা দুজন রাতের জন্য রান্না করতে লাগলাম।কথা বলতে বলতে কখন যে রাত হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি।

ওদিকে রেহান নিজের ফোনে মিহির একটা ছবি নিয়ে বারবার দেখছে আর বলছে,

—- ” মিহু পাখি কদিন আমার থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবা?ধরা তো পরতেই হবে তোমায়!দেখা হচ্ছে কাল তৈরি থেকো মিহু পাখি!”

কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দিলো রেহান।ফোন থেকে কাকে যেন একটা কল করে বললো,

—- ” সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে করছিস তো?”

ফোনের ওপাস থেকে কিছু একটা বলতেই রেহানের ঠোঁটের কোনায় মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আর মুখে বললো,

—- ” গুড!একদম নিখুঁত ভাবে যেন সব কাজ হয়।”

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো। তারপর ফোনটা খাটের এক কোনায় ছুরে ফেলে খাটের উপর ওপর হয়ে শুয়ে পরলো।

সকাল বেলা উঠে তিহা আজ তারাতাড়ি ভার্সিটি না গিয়ে আমাকে শাড়ি পরাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।আমি বারাবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছি সুর্য আজ ঠিক জায়গাতে উঠেছে কিনা?কিন্তু বারবারই দেখছি সুর্য ঠিক জায়গাতেই আছে!

—- ” বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই সুর্য প্রতিদিন যেই দিক থেকে উঠে আজও সেই দিক থেকেই উঠেছে।”

শাড়ি সিলেক্ট করতে করতেই কথাটা বললো তিহা।কিন্তু ও আমার মনের কথাটা বুঝলো কি করে?মনে হয় আমি স্বপ্ন দেখছি।বিছানার দিকে এগোতে এগোতেই বললাম,

—- ” তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি তারপর এই স্বপ্ন থেকে জেগে আবার ভার্সিটি যেতে হবে! ”

তিহা আমার হাতটা খপ করে ধরে একটা চিমটি কেটে রাগী গলায় বললো,

—- ” এবার বিশ্বাস হয়েছে এটা স্বপ্ন নয় সত্যি! ”

মুহূর্তেই আমার চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেলো। সে মেয়ে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে হলেও আগে সকাল বেলা ভার্সিটি গিয়ে সামনের বেঞ্চ দখল করবে।এ কাজ থেকে ঝড় বৃষ্টি আজ অব্দি থামতে পারনি সেই কাজ বাদ দিয়ে আমাকে শাড়ি পরাতে ব্যস্ত আজ এটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।জাস্ট ইম্পসিবল!

আমি ভালো করে তিহা কে একবার পরক করে।ওর গায়ে তাপমাত্রা চেক করে বললাম,

—- ” সব তো ঠিকই আছে! তাহলে এমন বিহেভ কেনো করছিস?”

চলবে,,,,,

ভালোবাসি পর্ব-০১

0

#ভালোবাসি
#পর্ব_১
#সুমাইয়া_জাহান

আমার সঙ্গে এখন পৃথিবীর সবচাইতে বিরক্তিকর ঘটনা ঘটছে।একটা ছেলে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমার দিকে একটা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলছে,

—- ” আমি তোমায় খুব ভালোবাসি ”

এটা নতুন নয়!প্রতিদিনই এরকম দুই তিনটা প্রপোজ করতে থাকে আর আমি প্রত্যেক টাকেই রিজেক্ট করতে থাকি।যা আমার কাছে বিরক্ত নয় চরম বিরক্ত লাগে।এক কথায় বলতে গেলে একদম অসহ্য। এদেরকে আমি প্রতিদনই ফিরিয়ে দেই আর এরা প্রতিদিনই গোলাপ হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলতে থাকবে “ভালোবাসি”। উফ!একদম অসহ্য!আমি বুঝিনা এরা জানে আমি প্রতিদিন এদের রিজেক্ট করবো তারপরও গোলাপ হাতে নিয়ে হাজির হয়ে যাবে।বিশেষ করে এই ছেলেটা!এ প্রতিদিন নিয়ম করে আমি ভার্সিটি ঢুকলেই এমন হাটু গেড়ে বসে প্রপোজ করবে।ইচ্ছা তো করছে এক লাথিতে উগান্ডা পাঠিয়ে দেই কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য আর এর সৌভাগ্য বাবাকে কথা দিয়ে এসেছি যে কারো সাথে কোনো রকম ঝামেলায় জড়াবো না।তাই মনের ইচ্ছে টাকে মনেই মাটি চাপা দিয়ে মনটাকে একটু শান্ত করে সামনে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,

—- ” আপনি খুব ভালো করেই জানেন আমি আপনার প্রপোজাল টা এক্সেপ্ট করবো না।তারপরও কেন বারবার আমাকে এভাবে বিরক্ত করেন।প্লিজ সরুন আমি ক্লাসে যাবো আমার দেরি হচ্ছে। ”

ছেলেটা মুখে হাসি হাসি ভাব নিয়েই উঠে দাড়িয়ে আমার পাশে এসে বললো,

—- ” জানেমান তুমি যতোই বিরক্ত হওনা কেন আমি প্রতিদিনই তোমার সামনে এসে এভাবে প্রপোজ করতে থাকবো।আমার বিশ্বাস একদিন না একদিন তুমি ঠিক আমায় এক্সেপ্ট করবে।আর এটা খুব শীগ্রই হবে মিলিয়ে নিও। ”

আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,

—- ” আপনার এই বিশ্বাস সারাজীবন আপনার কাছেই থেকে যাবে।সেটা কখনোই বাস্তবে ফলবে না।আমার কথাটাও মিলিয়ে নিবেন।”

কথাটা বলেই আমি হাটা ধরলাম আমার ক্লাসের দিকে।আর পিছন থেকে ছেলেটা বলতে লাগলো,

—- ” সেটা সময়ই বলে দেবে। ”

ও এরকম আরো অনেক কিছু বলতে লাগলো।আমি ওর কথা গায়ে মাখলাম না।আমি আমার আমার মতো করে হেঁটে যাচ্ছি।

ওহ্ আপনাদের তো পরিচয় টাই দেওয়া হয়নি!আমি মিহি এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ি।আমি মধ্যবৃত্ত পরিবারের মেয়ে।আমার বাড়ি এই ঢাকার শহর থেকে অনেকটাই দুরে।এই ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর এইখানেই একটা হোস্টেলে থাকি কয়েকজন মেয়ের সাথে।

আর এতোক্ষণ যেই ছেলেটার সাথে কথা বলছিলাম ওর পরিচয় এককথায় বলতে গেলে ভার্সিটির কিং।ওর ভয়ে পুরো ভার্সিটি কাঁপে।ওর একটা দল আছে যাদের কাজ হলো রেগিং করা।প্রত্যেক টা জুনিয়র স্টুডেন্টই ওদের রেগিং এর শিকার হয়েছে।আমার দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য জানি কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত ওদের রেগিং এর শিকার হইনি।হয়তো ওদের দলের লিডার মানে রেহান আমায় পছন্দ করে তার জন্য।

হাঁটতে হাঁটতে আমি কখন যে ক্লাসে চলে এসেছি খেয়ালই করিনি।তিহার ডাকে আমার হুস ফিরলো।

—- ” মিহু! এই মিহু! দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি এতো ভাবছিস?এখানে এসে বস।সেই কখন থেকে তোর জন্য জায়গা নিয়ে বসে আছি।তুই জানিস না আআমি কতো কষ্টে এই জায়গাটা ধরে রাখি।সব শকুন গুলোর নজর এই বেঞ্চের উপর।আর তোর এতোক্ষণে সময় হলো আসার!”

তিহা কথাটা বলেই মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।তিহা হচ্ছে আমার বেস্টু।একেবারে আমরা দুজন হরিহরাত্মা। একজন আরেক জন কে ছাড়া চলতেই পারি না।তিহাও আমার সাথে হোস্টেলে একসাথে থাকে। ও প্রতিদিন সবার আগে ভার্সিটি এসে ফাস্ট বেঞ্চে জায়গায় নিয়ে বসে থাকবে।ওর মতে ফাস্ট বেঞ্চে না বসতে পারলে পড়ালেখায় একদমই মন বসবে না।তাই নিজেও বসবে আর আমার জন্যও জায়গা নিয়ে বসে থাকবে।কেউ যদি এই বেঞ্চে বসতে আসে তাহলে সে পানি ছাড়াই ধোলাই হয়ে যাবে।তাই ভয়েও কেউ এই বেঞ্চের দিকে পা বাড়ায় না।ওর এমন কান্ড গুলো আমি ভিষণ এনজয় করি।আমার ভাবনার মধ্যেই ও আবারও বললো,

—- এই তুই বসবি নাকি জামাইয়ের স্বপ্ন দেখতে দেখতেই সারাদিন কাটিয়ে দিবি!”

ওর কথায় আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওর পাশে বসলাম।ও একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

—- “এতোক্ষণ কই ছিলি?তুই তো আরো আধা ঘণ্টা আগে বের হয়েছিস!”

—- ” তিহা তুই তো জানিসই প্রতিদিন ভার্সিটি ঢোকার সাথে সাথেই রেহান ওর সিনেমার শুটিং শুরু করে দেয়।”

খুব বিরক্তি নিয়ে কথাটা বললাম।তিহা আমার কথায় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,

—- ” মিহু আমার মনে হয়কি রেহান ভাই তোকে সত্যিই ভালোবাসে।দেখ পুরো ভার্সিটি যার ভয়ে কাঁপে সেকিনা প্রতিদিন তোর সামনে হাটু গেড়ে প্রপোজ করে।”

আমি ওর কথা শুনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললাম,

—- ” আমার মতে কারো সামনে গোলাপ হাতে নিয়ে হাটু গেড়ে বসে ভালোবাসি বললেই কেউ কাউকে সত্যি কারে ভালোবাসা হয় না।সত্যি কারে ভালোবাসা হয় মন থেকে যা লোক দেখানো হয় না।আর যুগের কয়টা ভালোবাসা সত্যি কারে হয়?যেগুলো উপর থেকে দেখে মনে হয় সত্যি কারে ভালোবাসা। সেগুলোইর ভিতরে ঢুকে দেখবি ভালোবাসার নাম দিয়ে নোংরামি করা ছাড়া আর কিচ্ছু না।এ-যুগের কিছু কিছু মানুষ ভালোবাসার মতো পবিত্র শব্দ টাকে অপবিত্র বানিয়ে দিয়েছে। তাই আমি এ-যুগের ভালোবাসায় বিশ্বাস করিনা।তার থেকেও বড়ো কথা আমি ঠিক করেছি বাবার পছন্দেই আমি বিয়ে করবো।সো এসব রেহান ফেহান কি করলো না করলো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না।”

তিহা গালে হাত দিয়ে বললো,

—- ” বোইন তোর সাথে আমি জীবনেও পারবো না।একটা কইছি কি তাতেই ইতনা বড়ো ভাষন শুনাইয়া দিলি!বোইন আমার মাফ চাই তোর কাছে আর ভাষন দিস না।”

ওর কথায় ফিক করে হেসে দিলাম।কোনো সিরিয়াস কথার মধ্যেও এমন কথা ওর দ্বারাই সম্ভব।মানুষ কে হাসাতে ওর দুমিনিটও লাগে না।ও এমনই।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে গেলো।

ওদিকে রেহান মন খারাপ করে ওর বন্ধুদের কাছে গেলো। রেহান আসছে দেখে ওর বন্ধুরাও এগিয়ে আসলো।ওদের মধ্যে শিহাব বললো,

—- ” কি রে ভাই কাজ হলো?”

রেহান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথা নেরে বললো,

—- ” নাহ আজ ও এক্সেপ্ট করেনি।”

রেহানের আরেকজন বন্ধু রনিত বিরক্ত হয়ে বললো,

—- ” রেহান আমি কিছুতেই বুঝতে পারিনা তুই ওই মেয়ের পিছনে এতো সময় নষ্ট করছিস কেনো?তোর পিছনে হাজার হাজার মেয়ে লাইন দিয়ে আছে আর তুই কিনা……”

আরেক জন বন্ধু বললো,

—- ” হ্যাঁ ভাই তুই শুধু একবার বল আমরা মেয়েটাকে নিয়ে এসে তোর পায়ের কাছে ফেলবো।কত্তো বড়ো সাহস তোকে বারবার রিজেক্ট করে!এই মেয়ের এতো দেমাক! শুধু মাত্র তোর কথায় আমরা এখনো চুপ করে আছি। নাইলে ওকে বুঝিয়ে দিতাম আমরা কি জিনিস!”

রেহান ওদের সবার কথায় বিরক্ত। সবসময়ই ওরা এমন কথা বলতে থাকে।যা শুনতে রেহানের একদমই বিরক্ত লাগে।

—- ” হয়েছে ওদের কথা শেষ! কোথায় আমায় ভালো ভালো বুদ্ধি দিবি কিভাবে মিহিকে পটানো যায়।তা না এসব উল্টো পাল্টা বকে যাচ্ছিস তোরা আমার বন্ধু না শত্রু বুঝতেই পারছি না।”

কথা গুলো বিরক্ত নিয়ে বললাম রেহান।ওর কথা শুনে রনিত বললো,

—- ” তোর কি মনে হয় ও তোকে কোনোদিনও তোর হবে?তুই এভাবে সময় নষ্ট করতে থাক আর ওদিকে দেখবি এই মেয়ে একদিন অন্য কারো হাত ধরে চলে যাবে। ”

রেহান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” এতোই সহজ!রেহানের নজর একবার যখন ওর উপর পরেছে তখন তো ওকে নিজের করেই ছাড়বে।”

ক্লাস শেষ করে আমি আর তিহা হোস্টেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।ভার্সিটি থেকে হোস্টেল বিশ মিনিটের পথ।বিশ মিনিটের মধ্যেই হোস্টেলে পৌঁছে গেলাম।রুমে গিয়েই তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলাম।ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাস থেকে একনাগারে বলতে লাগলো……

চলবে,,,,,,

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

2

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
শেষ পর্ব

৭০
ঈশা দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। তার সামনে দাড়িয়ে আছে ইভান। দুজনের দৃষ্টি দুজনের উপরে। কিন্তু মাঝখানে বাধা হয়ে দাড়িয়ে আছে লোহার কয়েকটা শিক। ইভানের এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে সকল বাধা পেরিয়ে ঈশাকে জড়িয়ে ধরতে। কিছু সময় তার এই প্রান পাখিটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিজের প্রানের অস্তিত্ব জানান দিতে। কারন তাকে ছাড়া যে ইভান নিষ্প্রাণ। সকল নিরবতা ভেঙ্গে ঈশাই বলে উঠলো
–সব কিছু আমাকে আগে থেকে বললে কি হতো? রাশিক ভাইয়া আমাকে সব সত্যিটা না জানালে আমি তো কিছুই জানতে পারতাম না।
ইভান সামনের লোহার শিক গুলো শক্ত করে দুই হাতে চেপে ধরে বলল
–তোকে টেনশন দিতে চাইনি জান পাখি।
ঈশা দাতে দাত চেপে বলল
–এখন তাহলে কি করছ? খুব ভালো লাগছে আমার তাই না? খুব আনন্দে আছি আমি।
ঈশার অবস্থা বুঝতে পেরে ইভান কিছু বলল না। কারন ঈশার মানসিক অবস্থা ভালো না। তারপর এই মুহূর্তে ইভানের উপরে খুব রেগে আছে। সে এখন যা বলবে তাতেই আরও রেগে যাবে। এতে হিতের বিপরিত হতে পারে। তাই সে চোখ নামিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। ভাবছে সব ঝামেলা মিটিয়ে তারপর ঈশার সাথে ভালো করে কথা বলবে। ইভানের এমন চুপ করে থাকা দেখে ঈশার খুব রাগ হল। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন পিছন থেকে বলল
–সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কিন্তু সরি একটু দেরি হয়ে গেলো।
তার কথা শুনে দুজনি তার দিকে তাকায়। কিন্তু সেই মানুষটাকে দেখে ঈশা অবাক হয়। এটা কিভাবে সম্ভব? এই মানুষটা এখানে কিভাবে থাকতে পারে। আর কিসেরই বা ব্যবস্থার কথা বলছে? কি হচ্ছে এসব সে কিছুই বুঝতে পারছেনা। সব কিছু এতো রহস্যময় লাগছে ঈশার কাছে। ইভান এতো কিছু তার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে কেন? সে অগ্নি দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকায়। ইভান হালকা হেসে সামনে দাড়িয়ে থাকা আরমানের দিকে তাকিয়ে আছে। আরমান এগিয়ে এসে বলল
–তোর জামিন হয়ে গেছে। আমরা তোকে এখনি বাসায় নিয়ে যেতে পারব। কিন্তু আমি সত্যিই সরি। এতো দেরি হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। আমার দেরির জন্য আজ তোকে এই অবস্থায় দেখতে হচ্ছে। নিজের কাছেই অপরাধী লাগছে।
ইভান হাত বাড়িয়ে আরমানের হাত ধরে বলল
–তুই যা করেছিস তার কোন তুলনা হয়না। আর এই সামান্য একটা বিষয়ে এতো অপরাধ বোধ রেখে আমাকে ছোট করিস না।

তাদের এসব কথার মানে ঈশা কিছুই বুঝতে পারল না। কিসের উপকার আর ওরা এমন ভাবে কথা বলছে যেন অনেক আগে থেকে দুজন দুজন কে চেনে। ঈশা অগ্নি দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে হাজারো প্রশ্ন। ইভান বুঝতে পারছে ঈশার সেই চাহুনির মানে। তার দিকে তাকিয়ে অসহায়ের দৃষ্টিতে বলল
–সব বলব জান। আগে কয়েকটা কাজ শেষ করতে দে।
ঈশা কোন কথা বলল না। ইভান কে বের করে কয়েকটা কাগজে সই করে নিলো। ইন্সপেক্টর ইভানের কাছে এসে বললেন
–সরি মিস্টার ইভান আমাদের ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত। তবে আপনার গোপন ক্যামেরা আপনাকে বাচিয়ে দিয়েছে।
ইভান হাসল। ঈশা ইভান আর আরমান তিনজনে পলিশের গাড়িতে উঠে বসলো। এখন উদ্দেশ্য হসপিটাল। গাড়ি হসপিটালে এসে দাঁড়ালো। সবাই ভিতরে গেলো। ভিতরে ঢুকেই ইভান দেখল রিমা বেশ চেচামেচি করছে তাকে ভিতরে যেতে দেয়া হচ্ছেনা জন্য। সবাই দাড়িয়ে তার কাজ কর্ম দেখছে। রিমা চিৎকার করে বলল
–কেন আমি দেখা করতে পারবোনা?
–আমি নিষেধ করেছি।
ইভানের গলার আওয়াজ শুনে সবাই ঘুরে তাকাল। ইরা আর ইলহাম দৌড়ে এলো। তাদের চোখে মুখে খুশির ঝলক। ইভান তাদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে রিমার কাছে গেলো। কিন্তু রিমা ইভান কে দেখে খুশি হলনা। মুখ ঘুরিয়ে বলল
–আপনি তাহলে অবশেষে ছাড়া পেলেন।
তার কথায় ইভান বাকা হেসে বলল
–এখন ভিতরে যেতে পার। বোনের সাথে শেষ কথা বলে নাও। আবার কবে বলতে পারবে তার তো কোন ঠিক নেই।
কথা গুলো রিমার মাথায় বাজ পড়ার মত অনুভুতি তৈরি করলো। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল
–কি বলতে চাইছেন?
ইভান কিছু বলল না। ইশারা করে ভিতরে যেতে বলল। রিমা ভিতরে চলে গেলো। সে পিছনে ঘুরে ঈশার দিকে তাকাল। ইলহাম এসে বলল
–ভাইয়া কি হচ্ছে খুলে বলবে?
রিহাব এগিয়ে এসে বলল
–আসলে সবাই যা ভাবছে সেরকম কিছুই হয়নি।
–মানে?
ইরা আর ইলহাম দুজনেই একসাথে বলল। ইভান একটু হেসে বলল
–রিনি সম্পূর্ণ সুস্থ।
তাদের প্রশ্নবিধ্য চাহুনি ইভান বুঝতে পেরে খুব ধির কণ্ঠে বলল
–সবার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। কিন্তু এটা সঠিক সময় না। সঠিক জায়গাও না। সময় মতো সব জানতে পারবি।
ইভান ঈশার সামনে এসে তাকে পাশের চেয়ারে বসাল। তার পায়ের কাছে বসে দুই হাত মুঠের মধ্যে আবদ্ধ করে নিয়ে খুব শান্ত ভাবে বলল
–তোর অনেক কিছুই জানার বাকি আছে জান। আমি সবটা তোকে জানাবো। কিন্তু তার আগে নিজে থেকে কোন প্রশ্ন করিস না। যা হচ্ছে হতে দে। আমাকে বিশ্বাস করিস তো? আমি কারন ছাড়া কিছুই করিনা তুই তো জানিস। ধিরে ধিরে সব জানতে পারবি জান। প্লিজ রাগ করিস না। আমাকে বুঝতে চেষ্টা কর।
ইভানের এমন আকুতি শুনে ঈশার রাগ দমে গেলো। কিছু বলতে যাবে তার আগেই দুইজন মহিলা পুলিশ রিনিকে ধরে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনল। সাথে রিমাও আসলো। রিমা ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–এসব কি ঈশা? কোন জন্মের শত্রুতা দেখাচ্ছিস।
ঈশা কোন কথা না বললেও তার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। নিজের বোনের বোকামির জন্য আজ তাকেও ভুগতে হচ্ছে। ইভান উঠে রিমার সামনে গিয়ে বলল
–শত্রুতা কোন জন্মের সেটা তুমি না জেনেই এসবে যুক্ত হয়ে গেছো? বিষয়টা মানতে পারলাম না।
রিমা তার কথা শুনে একটু ভয় পেলো। ইভান কি ইঙ্গিত করেছে তা হয়ত বুঝতে পেরেছে সে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। রিনিকেও পুলিশ নিয়ে গেলো।

৭১
ইভান রিনির সামনে দাড়িয়ে আছে। তার পাশেই বসে আছে ইন্সপেক্টর। সে কিছুতেই কথা বলছেনা। সব রকম চেষ্টা করা শেষ। ইন্সপেক্টর বলল
–শেষ বারের মতো বলছি কেন এমন করলে আর কার কথায় সেটা না বললে এবার যে শাস্তিটা তুমি পাবে সেটা কিন্তু অসহনীয়।
এটা শুনেও রিনির তেমন কোন ভাবান্তর হলনা। সে নিচের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইন্সপেক্টর পিছনে ঘুরে ইশারা করতেই একজন পুলিশ এসে পাশে দাঁড়ালো। রিনির দুই গাল চেপে মুখটা উপরে তুলে উপর থেকে গরম পানি ঢেলে দিলো। চোখ বন্ধ করে তা হজম করে নিলো রিনি। ইভান এবার বেশ অবাক হল। এই মেয়েকে যেমন ভেবেছিল তেমন নয়। সে শক্ত পক্ত ভাবেই এসেছিলো তাকে ফাসাতে। সেটা তার বিচক্ষন্তার কারনে পারেনি ঠিকই কিন্তু এখন ইভানের বেশ চিন্তা হচ্ছে। কারন এই মেয়ে যদি মুখ না খুলে তাহলে বাকি শত্রুদের সে কিভাবে শাস্তি দিবে। সে সব কিছু জানলেও তার কাছে কোন উপযুক্ত প্রমান নেই যে তারা তার পরিবারের ক্ষতি করতে চায়। আর প্রমান ছাড়া সে কোনভাবেই তাদেরকে শাস্তি দিতে পারবে না। তাই চিন্তিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। তাকে এতো ভাবতে দেখে আরমান বলল
–যদি মুখ না খুলে তাহলে কি করবি কিছু ভেবেছিস?
চিন্তিত মুখেই ইভান বলল
–আমি এতদিন ধরে অপেক্ষা করেছি এরকম একটা সময়ের যখন ওরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলে আঘাত করার চেষ্টা করবে। তাই তো আমি এতদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু প্রস্তুত ছিলাম সব রকম আঘাতের জবাব দিতে। এই সময় এসে হেরে যাবো তা কিভাবে হয়?
কিছুক্ষন চুপ থেকে বাকা হেসে বলল
–রিমাকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর। তারপর দেখি কিভাবে মুখ বন্ধ রাখে।
মুহূর্তের মধ্যে পুলিশের কাছে রিমাকে আনা হল। রিনির সামনে বসিয়ে দেয়া হল। রিমাকে দেখে রিনি কোন কথা না বললেও সে যে ভয় পাচ্ছে সেটা বুঝতে কারও বাকি থাকলো না। মহিলা পুলিশ রিমাকে টর্চার করতে শুরু করলো। সবাই বাইরে থেকে দেখছিল। আরমান রিনির মুখ দেখে একটু হেসে বলল
–এবার মনে হচ্ছে কাজ হবে।
ইভান একটু হেসে বলল
–ওরা ওদের কাজ করুক। আমরা যাই চল।
বলেই তারা সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে বসে রওনা দিলো।

৭২
গাড়ি এসে তাদের বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। ভিতরে ঢুকে সোজা ঈশাদের বাড়িতে গেলো। সেখানে সবাই ছিল। সবাই ইভান কে দেখে খুব খুশি হল। কিন্তু আরমান কে দেখে খুব অবাক হল। আরমান যে ঈশাকে বিরক্ত করত সবাই জানে। ইভান সামনে সোফায় বসে পড়লো। চোখের ইশারায় আরমানকেও বসতে বলল। আরমান বসতেই ইভান ঈশার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–বড় বাবা তোমার যে জমিটা নিয়ে সমস্যা ছিল সেটার কতটুকু সমাধান করতে পেরেছ?
ঈশার বাবা ইভানের মুখে এই সময় এমন কথা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ইভান এই কথা কিভাবে জানলো। ঈশার বাবা তার দিকে প্রশ্ন বিধ্য চোখে তাকিয়ে আছে। ইভান একটু রাগী লুক নিয়ে বলল
–তুমি কি জানো আজ তোমার এই বোকামির জন্য কত বড় মাশুল দিতে হচ্ছে। যা কিছু হচ্ছে সব কিছু ওই একটা কারনেই। আমার সাথে যা কিছু হোক তাতে কোন আফসোস নেই। কিন্তু আমার ঈশার সাথে হলে আমি সহ্য করবো না।
ঈশার বাবা আঁতকে উঠলেন। সবাই তাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশার বাবা বললেন
–আমি তো শুধু……।
ইভান রেগে বলল
–তুমি যা করেছো ঠিক করনি। আজ তোমার জন্য তোমার মেয়ের জীবন নিয়ে অন্য কেউ নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে। আর তুমি কিনা সেই ছেলের সাথেই তার বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলে। নিজের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য। একবারও মেয়ের কথা ভাবলে না।
ঈশার বাবা কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন
–বিশ্বাস কর বাবা আমার কোন উপায় ছিল না। ওরা আমাকে হুমকি দিয়েছিলো।
–তুমি তো আমাকে সবটা খুলে বলতে পারতে। সেটাও করনি। বাবাকেও বলনি।
–আমি বলতে পারিনি। ভয় ছিল জানাজানি হয়ে গেলে তারা আমার পরিবারের ক্ষতি করবে। তাই তো তুই যখন ঈশাকে বিয়ে করলি আমি কোন কথা না বলেই মেনে নিয়েছিলাম। কারন নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম যে আমার ঈশাকে নিয়ে আর ভাবতে হবেনা।
ঈশা এবার রেগে চিল্লিয়ে বলল
–কেউ কি আমাকে সব টা বলবে কি হচ্ছে?
ইভান ঈশার দিকে তাকায়। তার রাগ এই মুহূর্তে অনেক বেশি। ইভানের পক্ষেও এই ঈশাকে সামলানো প্রায় অসম্ভব। তাই ইভান ঈশার কাছে গিয়ে বসলো। তার দিকে তাকিয়ে বলল
–বড় বাবা আরাফের বাবার সাথে ব্যবসা করত। কিন্তু তাদের ব্যবসার মুল উদ্দেশ্য ছিল অবৈধভাবে জমি দখল করে সেগুলো নিজের নামে করে বিক্রি করে দেয়া। বড় বাবা এতো কিছু না জেনেই ব্যবসায় যোগ দেয়। কিন্তু যখন ভিতরের সব কিছু জানতে পারে তখন তিনি এই ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে চায়। আরাফের বাবা বড় বাবাকে দিয়ে অনেক কিছু করানোর প্ল্যান করে রাখে তাই তিনি বড় বাবাকে ছাড়তে চান নি। তিনি বড় বাবাকে তার নামে এক জমি দিয়ে ফাসিয়ে দেন। এমন ভাবে প্ল্যান সাজান যাতে বড় বাবা সেখান থেকে বের হয়ে আসতে না পারে। কারন সেই সময় বড় বাবার পরিচিত লোকজন গুলকে সে টার্গেট করে ফেলেছে। আর বড় বাবা সেখান থেকে সরে আসলে সেগুলো হাত ছাড়া হয়ে যাবে। সেটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়। বড় বাবা তার এই সমস্যার কথা কাউকে বলতে পারেনা। কারন এটা অবৈধ ছিল। উলটা নিজেই সেটা ঠিক করতে চান কিন্তু পারেন না। সেই জমির কেস মিটাতে তার অনেক টাকা দরকার হয় যা তখন আরাফের বাবা তাকে দেয়। বড় বাবার সেই সময় এই টাকার দরকার ছিল বলেই কিছুই বলতে পারে নি। কিন্তু আসল সমস্যা বাধে তখনি যখন আরাফের তোর উপরে চোখ পড়ে। সে তোকে বিয়ে করতে চায় বিনিময়ে এই সব কিছু থেকে বড় বাবাকে মুক্তি দেয়ার কথা দেয়। প্রথমে বাবা আপত্তি করলেও পড়ে তারা সব রকম সমস্যা আরও জটিল করে দেয় আর অনেক ধরনের হুমকি দেয়। যা থেকে মুক্তি পাওয়ার এক মাত্র উপায় ছিল তোর বিয়ে। আর তোর বিয়ে আমাকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণটাও এটাই যে আমি জানলে এই বিয়ে হতে দিবনা। আরাফ সবই জানতো তোর প্রতি আমার অনুভূতির কথা। তাই তো সে নিজেই আমাকে জানাতে নিষেধ করেছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে আমি জেনে যাই। আর তোকে জোর করে বিয়ে করায় আমাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করতেই সে সেদিন সবার সামনে প্রমান নিয়ে আসে।
ঈশা এবার সব কথা শুনে বলল
–এতো কিছু হয়ে গেলো বাবা আমাদের কিছুই জানালেনা।
ঈশার বাবা অপরাধির মত বসে থাকলো।
ঈশা আবার ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–সেসব নাহয় বুঝলাম। কিন্তু এখন এসবের সাথে সেই ঘটনার কি সম্পর্ক?
ইভান একটু হেসে বলল
–আরাফ কখনই চায়নি তোর সাথে আমার সম্পর্ক ঠিক হোক। আমি যখন রাগ করে চলে গিয়েছিলাম তখন আরাফ খুব খুশি হয়েছিলো। কিন্তু আমি তোর উপরে রাগ করে চলে যাইনি। বড় বাবার এই ভাবে আমাকে না জানিয়ে তোর বিয়ে দেয়াটা ঠিক মনে হয়নি। তাই আমি তার কারন জানতে উঠে পড়ে লাগি। কিছুদিন পরেই সবটা স্পষ্ট হয়ে যায়। আমি এটাও জানতে পারি যে আরাফ চায় আমাদের সম্পর্ক টা ভেঙ্গে যাক। তাই আমি সব ভেবে সিদ্ধান্ত নেই দূরে চলে যাওয়ার। যাতে তারা আমাদেরকে নিয়ে আর মাথা না ঘামায়। আর আমি সব কিছু নিজের মত গুছিয়ে নিতে পারি। তাই তো এতদিন তোর সাথে মান অভিমানের নাটক করে দূরে থাকতে বাধ্য হয়েছি। আমি এখানে ছিলাম না ঠিকই কিন্তু ভেবেছিস কি আমি না থাকার পরও তারা তোকে ছুঁতেও পারেনি। এই ক্ষেত্রে আরমান আমার চোখ হয়ে ছিল। সে আমার হয়ে তোকে আগলে রেখেছে। তোর আশে পাশেও কাউকে ভিড়তে দেয়নি। কিন্তু ওরা জানতোনা আরমান আমার বন্ধু। যখন জানতে পারে আরমান তোকে পছন্দ করে তখন আমাদের সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্য আরমান কে ব্যবহার করে। আর আরমান তাদের সাথেই কাজ করতে শুরু করে। এর ভিতরে আমি সব গুছিয়ে নিয়ে এক বারেই চলে আসার সিদ্ধান্ত নেই। এতে তাদের খুব অসুবিধা হয়। এই জন্যই আমি হয়ে যাই তাদের সব থেকে বড় শত্রু। আর তার ফলেই আমাকে পদে পদে এভাবে ফাসান হচ্ছে।
ঈশা ভ্রু কুচকে বলে
–তাহলে আরমান ভাইয়ের কথা শুনে ওভাবে রিয়াক্ট করেছিলে কেন?
ইভান একটু হেসে বলে
–তোর সাথে যে সব সময় রিমা থাকে তুই কি জানিস ওর পরিচয়?
–হুম! আরমান ভাইয়ের কাজিন।
আরমান একটু হেসে বলে
–আমার দূর সম্পর্কের কাজিন কিন্তু আরাফের খুব কাছের লোক। ওকে তোমার আশে পাশে থাকতে আরাফই বলেছিল।
ইভান বলল
–রিমা সেদিন আমাদের সম্পর্কের গভীরতা মাপার জন্যই আরমানের কথা বলেছিল। কিন্তু আমার ওভাবে রিয়াক্ট করা দেখে বুঝতে পারল আমাদের মধ্যে আগের মত কিছুই নেই। মাঝখানে একবার ওরা আরমানের উপরে সন্দেহ করেছিলো। তখন আমাকে আরমানের এক্সিডেন্টের অভিনয় করতে হয়েছিলো। যাতে বিষয়টা তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বোকামিটা তখনি করেছিলো আরমান কে বিশ্বাস করে। তাই তো আজ সব কিছুতেই হেরে যাচ্ছে। আর হ্যা আমার এক্সিডেন্টের পুরো প্ল্যানটা তাদের সাজানো। আমার গাড়ির ব্রেক ফেল করে দিয়েছিলো। সেদিনও যদি আরমান না থাকত তাহলে আমি আজ বেঁচে থাকতাম না।
ইভান ঈশার গলার লকেট টা ধরে বলল
–এটার জন্য আমি সেদিন তোকে থাপ্পড় মেরেছিলাম। আন্দাজ করতে পারিস কেন?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে না বলল। ইভান একটু হেসে বলল
–আমি জখন তোর কাছে ছিলাম না তখনো তোর সব কথা শুনতে পেতাম।
লকেট টা খুলে তার ভিতরে থাকা মাইক্রো চিপটা বের করে ঈশাকে দেখাল। ঈশা অবাক হয়ে দেখছে। এতো বছর ধরে সে ওই লকেট গলায় ঝুলিয়ে বেড়াচ্ছে কিন্তু বুঝতে পারেনি কখনও। ইভান একটু হেসে ঈশাকে বলল
–আমি তোকে এমনি এমনি মারিনি। এই মাইক্রো চিপটার কারনেই তুই কখন কি করিস আমি সব জানতে পারতাম। আর তোর উপরে আসা সব বিপদ আটকাতে পারতাম। তুই সেদিন যখন এটা খুলেছিলি তখন আমি কোন রেসপন্স না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বাসায় এসে দেখি তুই বাসাতেই আছিস। কিন্তু রাগ টাকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। আর তুই কি জানিস এই বাড়ির ভিতরে আর বাইরে ঠিক কতগুল ক্যামেরা লাগান আছে।
সবাই তার কথা শুনে হা হয়ে যায়। এতদিন যাবত সবাই ক্যামেরার মধ্যে চলাফেরা করছে অথচ কেউ জানতেই পারল না। ঈশা আবার ইভানের দিকে তাকায়। ইভান তার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে বলে
–আমার অফিসেও এমন অনেক ক্যামেরা লাগান আছে যা আমি ছাড়া কেউ জানেনা। রিনির সাজানো নাটক যে আমার সেই গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়বে সে জানতোনা। কিন্তু দেখ ওর দুর্ভাগ্য।
ইভানের সব কথা শুনে সবাই যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। ইভান এতো কিছু করেছে অথচ কাউকে কিছুই জানতে দেয়নি। সবাই এখন বাক রুদ্ধ। রিহাব ইভান কে উদ্দেশ্য করে বলে
–আমার একটা বিষয় মাথায় ঢুকছে না এটা নাটক হলে রিনির পেটে নেশা জাতীয় দ্রব্য পাওয়া গেলো কিভাবে।
ইভান একটু হেসে বলল
–এটার ক্রেডিট অবশ্য পুরোটাই ঈশার। সে যদি সকালে হঠাৎ করে আমার অফিসে না যেত তাহলে সেই নেশা জাতীয় পানি আমার পেটে যাওয়ার কথা ছিল।
আরমান চিন্তিত হয়ে বলল
–ঈশার অফিসে জাওয়াতে তাদের প্ল্যানে চেঞ্জ করতে হয়েছে। তবে সেটা যদি না হতো তাহলে কিন্তু আমাদের খুব অসুবিধা হতো প্রমান করতে।
এমন সময় আরমানের ফোন বেজে উঠলো। সে ফোনটা রিসিভ করে একটু সময় কথা বলে ইভানের দিকে তাকাল। তারপর হাসি মুখে বলল
–তোর প্ল্যান কাজ করেছে। ওরা দুই বোন সব স্বীকার করেছে। এখন আসল অপরাধির খোজে পুলিশ।
ইভান একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। এতো বছরপর সে নিশ্চিন্ত হল। একবার ওরা ধরা পড়ে গেলে আর কোন ভয় নেই।

৭৩
কলিং বেল বাজতেই ঈশা দরজা খুলে দিলো। ইভান তার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা বাকিয়ে ঈশার পিছনে তাকাল। ঈশাও মাথা ঘুরে সেদিকে তাকাল। ইভান ধির পায়ে ঢুকে হাঁটু মুড়ে নিচে বসে পড়ল। সামনে থেকে একজন আলতো পায়ে এসে তাকে দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে আধো আধো কণ্ঠে বলল
–পাপা তুমি এসেছ?
ইভান একটু হেসে বলল
–আমার প্রিন্সেস আমার জন্য অপেক্ষা করছে আর পাপা না এসে পারে।
বলেই পকেট থেকে দুইটা চকলেট বের করলো। ঈশা হেসে ফেললো। ইভান প্রতিদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে আসার সময় দুইটা একি চকলেট আনে। একটা মায়ের জন্য আর একটা মেয়ের জন্য। কারন দুই জনেরই একি চকলেট পছন্দ। ইনায়া কে কোলে নেয় ইভান। চকলেটের প্যাকেট খুলে তার হাতে দেয়। এটা তার প্রতিদিনের রুটিন। সে মুগ্ধ হয়ে দেখে ইনায়ার চকলেট খাওয়া। মেয়েটার মাঝে মায়ের সব বৈশিষ্ট্য আছে। ইনায়া একদম ঈশার মতো। ইভান ইনায়া কে নিয়ে ঘরে চলে যায়। ঈশা তার পিছনে পিছনে ঘরে গিয়ে দাঁড়ায়। ইভান ইনায়ার গালে একটা চুমু দিয়ে ঈশার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। ঈশা একটু হেসে তার হাতে হাত দেয়। এক হাতে ঈশাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে
–তোদের দুজনের মাঝেই আমার দুনিয়া। তোরা দুজনি আমার জীবন।
ঈশা ইভান কে ছেড়ে দিয়ে হাত বাড়িয়ে ইনায়াকে কোলে নেয়। তারপর ইভান কে বলে
–ফ্রেশ হয়ে এসো আমরা এক সাথে খাবো।
ইভান দুই হাতের মাঝে দুজনকে জড়িয়ে ধরে দুজনের গালেই চুমু দেয়। ইনায়াও ইভানের গালে চুমু দিয়ে বলে
–লাভ ইউ পাপা।
ইভান একটু হেসে বলে
–লাভ ইউ টু মাই প্রিন্সেস।
বলেই ওয়াশ রুমের দিকে যায়। কি মনে করে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ঈশা আর ইনায়া কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে। ইভানের মন ভরে যায়। এই দুইটা মানুষের মুখে হাসি দেখলে ইভানের মনে হয় সে যেন জীবিত আছে। এই দুইটা মানুষ তার প্রানের অস্তিত্ব জানিয়ে দেয়। একটু হেসে ওয়াশ রুমে চলে যায়।

সমাপ্ত
(ধৈর্য নিয়ে যারা গল্পটা পড়েছেন তাদের সবার জন্য আমার আন্তরিক ভালোবাসা। আসলে পাঠকরাই লেখকের অস্তিত্ব। পাঠক না থাকলে লেখক হয়ে উঠা সম্ভব না। তাই আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই গল্পে আমি দুজন মানুষের সিমাহিন ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি ফুটে তুলতে চেয়েছি। যেখানে জীবনের অনেক বাধা বিপত্তি পার করেও তারা একসাথে থাকার প্রয়াশ করে। ধন্যবাদ সবাইকে। )

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-২৯

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৯

৬৮
ঈশা হন্তদন্ত করে হসপিটালে এসে দেখে ইভান কার সাথে যেন খুব বিচলিত হয়ে কথা বলছে। ঈশা দৌড়ে গিয়ে ইভান কে জড়িয়ে ধরে। ইভানও তাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত দিয়ে বলে
–রিলাক্স জান। সব ঠিক আছে।
ঈশা ইভান কে ছেড়ে দিয়ে ভালো করে দেখে নিলো। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। বেশ রকমের চিন্তিত। চিন্তার কারনি তো। তার অফিসের স্টাফ মিস রিনিকে কেউ রেপ করেছে। তার অবস্থা আসংকা জনক। এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ইভান ঈশার গালে হাত দিয়ে হালকা স্পর্শ করে বলে
–ভাবিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
ঈশা অবাক হয়ে তাকে দেখছে। এই মানুষটা কি দিয়ে তৈরি। এতো বড় একটা বিপদের মাঝেও ঈশাকে বিচলিত হতে দেখে তার টেনশন কমানোর জন্য শান্তনা দিচ্ছে। অথচ এই জিনিসটা তারই প্রয়োজন। তার মাথার উপরে অনেক বড় বোঝা কিন্তু সেদিকে কোন খেয়ালি নেই। ঈশাকে নিয়েই সে ব্যাস্ত। ঈশা তাকে আসস্ত করে তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল
–আমি জানি সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি সব ঠিক করে ফেলবে।
ঈশার কথা শুনে শত বিপদের মাঝেও ম্লান হাসল ইভান। এই হাসির মানে ঈশার বুঝতে বাকি থাকলো না। সত্যিই সে যে বড় বিপদে তা ঈশাকে বুঝতে না দেয়ার জন্যই সে হাসি। রিহাব রুম থেকে বের হয়ে বলল
–জ্ঞান ফিরেছে।
সবাই তার কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। ইভানের দিকে তাকিয়ে রিহাব বলল
–মেনটালি শকড। একটু সময় লাগবে ঠিক হতে।
এমন সময় রিমাকে কাঁদতে কাঁদতে হসপিটালে আসা দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। ঈশা এগিয়ে গিয়ে তাকে ধরে বলে
–কি হয়েছে? তুই এখানে এভাবে?
রিমা কাঁদতে কাঁদতে বলে
–রিনি আমার বোন।
তার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকায়। ঈশা কিছু বলেনা। কারন এটা কাররি জানার কথা না। ঈশার সাথে রিনির দেখা হয়েছিলো আজই। তেমন কথাও হয়নি। আর ইভানও তেমন ভাবে রিমার সম্পর্কে সব জানেনা। রিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল
–আমি ভিতরে যেতে চাই।
রিহাব শান্ত ভাবে বলল
–কোন সিন ক্রিয়েট করা যাবেনা। খুব শান্ত ভাবে কথা বলতে হবে।
রিমা তার সব কথা শুনে মাথা নাড়ল। রিহাব তাকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিলো। সবাই বিচলিত হলেও একজন খুব শান্ত ভাবে প্রতিটা বিষয় পর্যবেক্ষণ করছিলো। ঈশা ইভানের দিকে তাকাল। ইভান খুব শান্ত দৃষ্টিতে সামনে রিমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা ইভানের আচরণ ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করছে। ইভানের মুখ দেখে এই মুহূর্তে তেমন কিছুই আন্দাজ করা যাচ্ছেনা। কিন্তু এটা খুব স্পষ্ট যে সে বড় কোন হিসাব মিলাচ্ছে। রিমা ভিতরে যেতেই রিহাব ইভান কে উদ্দশ্য করে বলল
–এটা পুলিশ কেস। পুলিশ আসছে।
ইভান রিহাবের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে চোখের ইশারায় কিছু একটা বোঝাতে চেষ্টা করলো। রিহাব তার সেই চোখের ইশারা বুঝে এক মুহূর্তও দেরি করলো না। ঈশা কৌতূহলী চোখে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান ঈশার সামনে এসে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গালে হাত দিয়ে ধরে বলল
–আমি বলেছিলাম তোকে কখনও কষ্ট দিবনা। কিন্তু সরি জান।
ঈশা ইভানের কথার মানে বুঝতে না পেরে তাকিয়ে থাকলো। ইভান তার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
–এইভাবেই সারা জীবন বিশ্বাস রাখিস। আমি সব কিছু সামলে নিবো। তুই পাশে থাকলে আমার আর কিছুই দরকার নেই।
ঈশা ইভান কে আশস্ত করলো যে সে তার পাশে আছে। কিন্তু নিজে শান্ত হতে পারছেনা। কি হচ্ছে এসব। তার ভাবনার মাঝেই পুলিশ এসে বলল
–আমরা রিনির সাথে একটু কথা বলতে চাই।
সবাই পুলিশের দিকে তাকাল। ইভান তাদের ভিতরে যেতে বলল। সেই সময় রিহাব এসে ইভানের সামনে দাঁড়ালো। তার দিকে একবার তাকিয়ে ইভান দেয়ালের সাথে হেলানি দিয়ে হাত গুঁজে খুব শান্ত ভাবে দাঁড়ালো। ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে ইভানকে সব থেকে শান্ত মনে হচ্ছে। তার মুখে এখন আর আগের মত চিন্তার ছাপটাও নেই। একদম নিশ্চিন্ত শান্ত দৃষ্টি স্থির রেখেছে মেঝেতে। তার আচরনে ঈশা বেশ বুঝতে পারছে এর পরে কি হবে তা সে জানে। নাহলে এভাবে শান্ত থাকার কথা না। পুলিশ বের হয়ে এসে বলল
–মিস রিনি কিছুই বলতে পারছেন না। ওনাকে রেপ করার আগে নেশা জাতীয় কিছু একটা খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছিলো। কে খাইয়েছে সেটাও বলতে পারছেন না। আমরা আপনার অফিসের সি সি টিভি ফুটেজ দেখতে চাই।
ইভান সাহিল কে ইশারা করে বলল দেখাতে। সাহিল তাদেরকে দেখাতে নিয়ে গেল। ইভান তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। রাশিক কে উদ্দেশ্য করে বলল
–পুলিশ চলে যাওয়ার পর রিনির সাথে কেউ যেন দেখা করতে না পারে। কেউ না। সেটা তোর দায়িত্ব।
রাশিক মাথা নাড়াল। তারপর বলল
–আর রিমা…।
ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–রিমাকে সামলানোর দায়িত্ব তোর। ভালো ভাবে খেয়াল রাখিস ওর। পারবি তো?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে। ঈশা তার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকলো। ঈশার এই চাহুনি ইভান কে এই মুহূর্তে যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দিবে। তাই সে ঈশার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা। মাথা নামিয়েই ঈশাকে উদ্দেশ্য করেই বলল
–নিজের খেয়াল রাখিস জান।
ইরা আর ইলহাম এতক্ষণ পর আসলো। ঈশার কাছে গিয়ে ইরা জিজ্ঞেস করলো
–কি হয়েছে আপু?
ইভান খুব শান্ত ভাবে বলল
–আমার ফোনে একটা ফোন আসে অফিসের নাম্বার থেকে। আমি ফোন ধরতেই আমাকে বলে অফিসে একটা ঝামেলা হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি করে অফিসে চলে যাই। গিয়ে দেখি অফিসে কেউ নেই। আমি চারিদিকে খুঁজে দেখি কাউকে দেখতে পাইনি। কনফারেন্স রুমের এক দিকে দেখি মেঝেতে রিনি অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। আমি সেখানে গিয়ে তাকে উঠানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এক পর্যায়ে বুঝতে পারলাম কিছু একটা হয়েছে। যা হয়েছে তা ভালো কিছু না। তাই তাড়াতাড়ি তাকে তুলে হসপিটালে নিয়ে এলাম। এসে জানতে পারি যা ভেবেছিলাম তাই ঠিক। রিনিকে রেপ করা হয়েছে।
সব কথা শুনে ইলহাম বলল
–এখন কি হবে ভাইয়া?
ইভান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
–যা হওয়ার কথা ছিল তাই হবে।

৬৯
হসপিটালের করিডোরে সবাই বসে অপেক্ষা করছে। রিমা কেদেই চলেছে অনবরত। ঈশা তাকে সামলে রাখছে। ইরা ইলহাম সবাই অপেক্ষা করছে। ইভান অনেক্ষন যাবত কার সাথে যেন কথা বলছে ফোনে। ঈশা মাঝে মাঝে তাকে দেখছে। এর মাঝেই রাশিক এসে বলল
–ঈশা আমার সাথে একটু আসো।
খুব শান্ত ভাবে কথাটা বললেও ইভানের কান এড়াল না। সে কান থেকে ফোনটা কিঞ্চিত সরিয়ে একবার ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা তার দিকে একবার তাকিয়ে রাশিকের সাথে যাবে তখনি রিমা তার হাত ধরে ফেলে। করুন চোখে তাকিয়ে বলে
–আমাকে রেখে যাস না।
ইভান রিমা আর ঈশার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা রিমার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–আমি এখনি আসছি।
ইরাকে ইশারা করে তাকে দেখার দায়িত্ব দিয়ে চলে গেলো। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিক তাকে পাশেই এক রুমে নিয়ে গেলো। বেশ খানিকক্ষণ পর ঈশা বের হয়ে এলো। ইভানের সামনে দাঁড়ালো। তারপর রিনির সাথে দেখা করতে ভিতরে গেলো। রিনি চোখ বন্ধ করে আছে। ঈশা তার পাশে বসলো। তার উপস্থিতি টের পেয়ে রিনি চোখ খুলে তাকাল। সে খুব দুর্বল। ঈশা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ডুকরে কেঁদে উঠলো। তার মনের ভিতরে ভীষণ কষ্ট। ঈশা তার কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারছে। একটা মেয়ের কাছে তার সম্ভ্রম কতটা দামি সেটা একটা মেয়েই বুঝতে পারে। ঈশা বুঝতে পারছে তাকে সামলানো সহজ হবেনা। তার বোন তো তার কাছেই আছে। সে ঠিক বোন কে সামলে নিবে। এই মুহূর্তে একজন আপনজনের শান্তনাই পারে বিদ্ধস্ত মানুষটাকে সামলাতে। ঈশা তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল
–কেদনা। আমি বুঝতে পারছি তোমার উপরে কি চলছে। এতো বড় একটা ঘটনা মেনে নেয়া এতো সহজ না। তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ?
ঈশার কথা শুনে রিনি তার দিকে তাকাল। সে একটু হলেও স্বস্তি পেলো। মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। ঈশা আবার তাকে জিজ্ঞেস করলো
–একটু মনে করে বলবে ঠিক কি হয়েছিলো?
রিনি একটা বড় করে শ্বাস নিয়ে বলল
–আপনারা চলে যাওয়ার পর আমি নিজের ডেস্কে বসেই কাজ করছিলাম। কিছুক্ষন কাজ করার পর ওয়াশ রুমে যাই। সেখান থেকে এসে পানির পিপাসা পায়। ডেস্কের সামনে পানির বোতলটা দেখতে পাই। সেখান থেকেই পানি খাই। অনেক টা সময় কাজ করার পর মাথাটা ঝিম ঝিম করে। শরীর টা ঝিমিয়ে আসে। আমি স্যারকে ফোন দিয়ে বলি আমার শরীর খারাপ লাগছে তাই আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে চাই। সব কিছু গুছিয়ে রেখে আমি ওয়াশ রুমে যাই মুখে পানি দিতে। কিন্তু মুখে পানি দিতে পারিনা। তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর আমার আর কিছুই মনে নেই। যখন জ্ঞান ফেরে তখন আমি হসপিটালে জানতে পারি আমার সাথে কি হয়েছে।
বলেই আবার ডুকরে কেঁদে উঠে। ঈশা তার কথা শুনে বুঝতে পারে তার পানির সাথে কেউ নেশা জাতীয় কিছু একটা মিশিয়ে দিয়েছিলো। তার জন্যই সে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায় আর সেই সুযোগেই কেউ তাকে কনফারেন্স রুমে নিয়ে যায়। ঈশা আবার একটু ভেবে তাকে জিজ্ঞেস করে
–অফিসের কারও আচরনে তোমার কি কাউকে কখনও সেরকম মনে হয়েছে? মানে কাউকে কি তোমার সন্দেহ হয়?
রিনি না সূচক মাথা নাড়ায়। ঈশা তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে
–তুমি রেস্ট নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।
বলেই রুম থেকে বের হয়ে আসে। ইভান সাহিলের সাথে কথা বলছিল। ঈশাকে বের হতে দেখে তার দিকে শান্তভাবে তাকায়। ঈশা তার একটু কাছে আসে। ঈশাকে খুব ধির কণ্ঠে বলে
–রিমাকে রিনির সাথে দেখা করতে দিস না। বিষয়টা খেয়াল রাখিস।
ঈশা অবাক হয়। এই সময় কাছের মানুষের খুব দরকার। কিন্তু ইভান এই কথা কেন বলল? ঈশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুলিশ চলে এলো। ইভানের সামনে দাড়িয়ে বলল
–মিস্টার ইভান! মিস রিনির এই অবস্থার জন্য যে দায়ী আমরা তার সব প্রমান পেয়েছি। শুধু তাকে এরেস্ট করা বাকি আছে।
সবাই নিশ্চিন্ত হল এই কথা শুনে। কিন্তু ইভানের দৃষ্টি অন্য কথা বলছে। সে অপেক্ষা করছে পরের কথাটা শোনার জন্য। পরের কথাটা তার জানা। সে মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছে। তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ইন্সপেক্টর বলল
–মিস রিনির রেপ করার জন্য আপনাকে এরেস্ট করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি মিস্টার ইভান।
সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ইভান এমন কাজ করতে পারে সেটা কেউ ভাবতেই পারেনা। ইন্সপেক্টর আবার বললেন
–আমরাও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু সব প্রমান দেখার পর আমরা বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি। আপনি এই জঘন্য কাজ কিভাবে করলেন?
কথা গুলো সবার মাঝে তিরের মত বিধলেও ইভানের কোন ভাবান্তর হল না। সে চোখ তুলে একবার ঈশার দিকে তাকাল। খুব শান্ত তার সেই দৃষ্টি। কিছুই বলছেনা তার দু চোখ। ঈশাও তার দৃষ্টি স্থির রেখেছে তার দিকে। কিন্তু ইভান বেশিক্ষন ঈশার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না। চোখ নামিয়ে ইন্সপেক্টর কে উদ্দেশ্য করে বলল
–চলুন।
বলেই আর দাঁড়ালো না। ঈশা খুব শান্ত ভাবে ইভানের যাওয়া দেখছিল। ইরা কেঁদে ফেললো। রিহাব তাকে বুকে নিয়ে শান্তনা দিচ্ছে। ইলহাম ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশার ভিতরে কি চলছে? এতো কিছুর পর তারা দুজন কাছে আসতে পেরেছে। কিন্তু এই ঝড় কি তাদের জীবনের শান্তি নষ্ট করে ফেলবে? কি হবে এর শেষ পরিণতি?

চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-২৮

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৮

৬৫
দরজা ঠেলে রুমে ঢুকেই ঈশা দেখল ইভান ফাইলে মুখ ডুবে ভ্রু কুচকে ভাবছে আর তার সামনে চেয়ারে বসে এক সুন্দরি মেয়ে তাকে দর্শন করে যাচ্ছে। আচমকা এমন দরজা খুলে কাউকে ঢুকতে দেখে দুজনেই অবাক হয়ে তাকাল। কারন ইভানের কেবিনে কেউ কখনও নক না করে ঢুকেনা। ইভান ঈশাকে দেখে আরও বেশি অবাক হল। কারন সে যে আসবে কোন ভাবেই ইভান জানতোনা। হা করে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে সে। ঈশা একটু বিরক্ত হয়ে ধির পায়ে এগিয়ে এলো। ইভান ফাইল বন্ধ করে রেখে সামনে থাকা মেয়েটাকে বলল
–আমি এই ফাইল গুলা পরে দেখবো। এখন আপনি আসুন।
মেয়েটা ইভানের কথা শুনে কিছু বলল না ঠিকই কিন্তু খুশিও হতে পারলো না। ঈশার দিকে তাকাল। তার চোখে এক রাশ বিরক্তি। সে ঈশাকে ভালো করে দেখে নিলো। ঈশার মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো। সে ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে তাকাল। ঈশার যে মেয়েটাকে পছন্দ হয়নি তা ইভান ভালো করে বুঝতে পেরে একটু হেসে বলল
–মিস রিনি মিট মাই ওয়াইফ মিসেস ঈশা ইভান মাহমুদ।
ঈশার রাগ করার কথা থাকলেও আশ্চর্য জনক ভাবে সব রাগ কোথায় হারিয়ে গেলো। ঈশা শান্ত দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকাল। কিন্তু মিস রিনি অবাকের সুর টেনে বলল
–স্যর আপনার ওয়াইফ মানে?
তার কথায় দুজনি তার দিকে ঘুরে তাকায়। ইভান একটু হেসে বলে
–ইয়েস মাই ওয়াইফ!
রিনির কথাটা যে পছন্দ হয়নি সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রিনি আর কথা না বলে চলে গেলো। ইভান নিজের চেয়ারে বসেই ঈশাকে তর্জনী আঙ্গুলে ইশারা করলো তার কাছে আসতে। কিন্তু ঈশা আসলো না। পাশেই দাড়িয়ে থাকলো। ইভান হালকা চেয়ার থেকে উঠে ঈশার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনল। তারপর তার কোলে বসিয়ে নিলো। ঈশা নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। ইভান আরও শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–রাগ করার কারণটা জানতে পারি?
ঈশা মুখটা ফুলিয়ে বলল
–রাগ করিনি তো।
ইভান একটু হেসে ঈশার মুখটা তার দিকে ঘুরিয়ে বলল
–তাহলে আমার হৃদয়ের আকাশে পূর্ণিমার বদলে ঘোর অমাবস্যা কেন?
ইভানের কথা শুনে ঈশা একটু হাসল। ইভান আলতো করে ঈশার গালে চুমু দিয়ে বলল
–তুই এখানে হঠাৎ?
ঈশা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–কেন আমি আসায় খুব অসুবিধা হল বুঝি?
ইভান চিন্তিত হয়ে বলল
–বেশ না হলেও একটু হয়েছে।
ঈশা রাগ করে উঠে যেতে নিলে ইভান ঈশার চুল খুলে দেয়। ঈশা খুব বিরক্ত হয়ে যায়। তার চুলে মুখ ডুবিয়ে ইভান ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে
–তুই আমার কাছে থাকলে আমি কিভাবে কাজে মনোযোগ দিবো। আমার সমস্ত মনোযোগ তো তোর উপরেই।
ঈশা নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল
–ইরার বাসায় যেতে হবে।
ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো
–কেন? কি হয়েছে? ইরা ঠিক আছে তো।
ঈশা মুচকি হেসে বলল
–সব ঠিক আছে মাই ডিয়ার হাসবেন্ড!
ঈশার মুখে এমন কথা শুনে ইভানের মুখের হাসি প্রশস্ত হয়ে গেলো। হাসি মুখে ঈশার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ঈশা আর একটু হেসে বলল
–আজ ইরার জন্মদিন। ভুলে গিয়েছ? আমরা সারপ্রাইজ দিতে যাব।
ইভান চোখ বন্ধ করে ভ্রু উচিয়ে কিছুক্ষন ভাবল। তারপর বলল
–কাজের চাপে ভুলেই গিয়েছিলাম।
ঈশা সামনের টেবিলে থাকা তার ছবিটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। এক রাশ ভালো লাগা সারা শরীরে ছড়িয়ে গেলো। এতো কিছুর মাঝেও ঈশার ছবিটা যত্ন করে সামনে রাখতে সে ভুলেনি। সেটা হাতে নিয়ে বলল
–চিন্তা নেই। এসবের জন্য আমি আছি তো।
ঈশার কথা শুনে ইভানের মনে তৃপ্তির জোয়ার বয়ে গেলো। ভালো করে চেয়ারে হেলানি দিয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ঈশা ছবিটা তার জায়গায় রেখে দিয়ে বলল
–ইলহাম কে আমি ফোন করে দিয়েছি। ক্লাস শেষ করে সোজা চলে যাবে।
ইভান ঈশার দিকে তাকিয়েই থাকলো। ঈশা ইভানের এভাবে চুপ করে থাকা দেখে বলল
–আমাকে দেখা শেষ হয়ে গেলে এখন আমরা যেতে পারি?
–তোর এই রুপ সারাজীবন নিস্পলক দেখেলেও শেষ হবেনা।
ইভান একটু হেসে রিনি কে ফোন করে সব মিটিং ক্যান্সেল করে দিতে বলে। তারপর সামনের টেবিলে থাকা সব প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ঈশার সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে
–চল।
ঈশা একটু হেসে তার হাতে হাত রাখে।

৬৬
ইরার খুব মন খারাপ। আজ তার জন্মদিন অথচ কেউ মনে রাখেনি। রাতে একবার শুকনো মুখে রিহাব উইশ করেছিলো শুধু। মন খারাপ করে তাই রান্না করছিলো রান্না ঘরে। বাড়িতে এই মুহূর্তে সে রিহাব আর একজন কাজের লোক আছে। তার শ্বশুর শাশুড়ি দুইদিন হল চলে গেছে। যাওয়ার সময় বলে গেছে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। আজ রিহাব হসপিটালে যায়নি। ইরা সকাল থেকে অনেক বার কারন জিজ্ঞেস করেছে সে এক কথায় উত্তর দিয়েছে
–শরীর ভালো লাগছেনা।
ইরা আর কথা বাড়ায় নি। রান্না করতে রান্না ঘরে চলে গেছে। কারও উপস্থিতি বুঝতে পেরে পিছনে ঘুরতেই দেখতে পায় রিহাব দাড়িয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরা একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
–কিছু লাগবে?
রিহাব পানির বোতল হাতে নিয়ে ইরার কাছে ধির পায়ে এগিয়ে আসছে। ইরা একটু শুকনো ঢোক গিলে আবার জিজ্ঞেস করলো
–কিছু কি লাগবে?
রিহাব তার কাছে এসে থেমে গিয়ে বলল
–যা লাগবে সেটা কি দিবে?
ইরা তার কথা মানে বুঝতে পেরে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। একটু পিছিয়ে গিয়ে তাকের সাথে লেগে গেলো। রিহাব একটা ছোট নিশ্বাস ফেলে বলল
–আমাকে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? তুমি বউ হয়ে আমাকে যতটা ভয় পাও আমার হসপিটালের নার্স রাও আমাকে এতোটা ভয় পায়না।
রিহাবের কথা শুনে ইরার লজ্জা সংকোচ ভয় কিছু সময়ের জন্য উধাও হয়ে গেলো। কঠিন গলায় বলল
–তাহলে হসপিটালেই জান। বাসায় থাকার কি দরকার।
রিহাব আর একটু কাছে এসে বলল
–হসপিটালে তো আর বউ থাকেনা। বাসায় থাকে।
–কিন্তু বউয়ের কাছে তো কিছুই পাওয়া যায়না। হসপিটালে চাইলেই পেতে পারেন।
ইরার কথা শুনে রিহাব নিশব্দে দাঁত বের করে হাসল। মুখটা আরও একটু কাছে এনে বলল
–বউটা একটু কষ্ট করলেই আমার আর এতো কষ্ট হয়না।
ইরা রিহাবের কথা শুনে একটু হাসল। রিহাব কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল
–আমাকে আমার কাজ করতে দিন আর নিজেও নিজের কাজ করেন।
রিহাব ইরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। ভয়ে ইরার ঠোঁট কাঁপছে। রিহাব সেই ঠোটের দিকে তাকিয়ে বলল
–তোমার কম্পমান ঠোঁট আমাকে দুর্বল করিয়ে দিচ্ছে।
ইরা রিহাবের কথা শুনে দুই হাতে মুখ চেপে ধরল। রিহাব ভ্রু কুচকে বলল
–তুমি কি ভাবছ আমি তোমার ঠোঁটে কিস করবো? একটু বেশিই ভাবছ।
রিহাবের কথা শুনে ইরা আশস্ত হয়ে ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে নেয়। রিহাব দেরি না করে ইরার ঠোঁট দুইটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। আচমকা এমন হওয়াতে ইরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে। কিন্তু ইরার এমন নড়াচড়ায় রিহাব তাকে দুই হাতে দেয়ালের সাথে জোর করে চেপে ধরে। দুজনের নিশ্বাস ভারি হয়ে যায়। ইরা নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে শান্ত হয়ে যায়। তার হাত পা অবশ হয়ে আসে। রিহাব বেশ কিছুক্ষন পর তাকে ছেড়ে দেয়। ইরা চোখ বন্ধ করে হাপাতে থাকে। রিহাব তাকে ভালো করে দেখে নিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। ইরা চোখ খুলে রিহাব কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। রিহাব একটু কাছে এসে নিশব্দে দাঁত বের করে হেসে বলল
–তুমি একদম ঠিক ভাবছিলে।
ইরার গালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বলে
–হ্যাপি বার্থ ডে সুইট হার্ট!
রিহাবের কথায় ইরার সারা শরীর কেঁপে উঠে। কাল রাতেও সে উইশ করেছিলো কিন্তু এভাবে না। এক অন্যরকম অনুভুতি। এই অনুভূতির নাম তার জানা নেই। এক অদ্ভুত রকমের ভালো লাগা কাজ করে তার মাঝে। রিহাবেরর প্রতি এক অন্য রকম আকর্ষণ। এই মানুষটাকে আজ চোখের আড়াল করতে ইচ্ছা করছেনা। ইরা কিছু না ভেবেই রিহাব কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রিহাব ইরার এরকম স্পর্শে বিচলিত হয়ে যায়। একটু ভেবে সেও ইরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কলিং বেলের তীব্র আওয়াজে দুজনেরি ঘোর কাটে। ইরা লজ্জা পেয়ে রিহাবকে ছেড়ে দেয়। উলটা ঘুরে যায়। রিহাব একটু হেসে বলে
–তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
ইরা ঘুরে রিহাবের দিকে তাকায়। ভ্রু কুচকে বলে
–কি সারপ্রাইজ?
–সারপ্রাইজ কেউ বলে নাকি বোকা মেয়ে।
বলেই দরজা খুলতে গেলো। ইরা গ্যাসের চুলাটা অফ করে রিহাবের পিছে পিছে বেরিয়ে এলো। রিহাব দরজা খুলে একটা হাসি দিলো। ইভান রিহাব কে জড়িয়ে ধরল। ইরা পিছন থেকে দেখে অবাক হয়ে বলল
–ভাইয়া তুমি?
ইভান রিহাব কে ছেড়ে দিতেই ইরা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। ইভান তাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–হ্যাপি বার্থ ডে ডিয়ার সিস্টার!
ইরা খুব খুশি হল। মাথা বাকিয়ে একটু দেখতেই ঈশাকে দরজায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে দৌড়ে গেলো। তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। ঈশাও কেঁদে ফেললো। তারপর তাদের সবাইকে নিয়ে ভিতরে এলো। ইরা ভালো করে দেখে নিয়ে বলল
–ইলহাম ভাইয়া কোথায়?
–ক্লাসে। শেষ করে সোজা চলে আসবে।
সোফায় বসতে বসতে ঈশা কথাটা বলল। ইরা একবার রিহাবের দিকে তাকাল। ইভানের সাথে গল্পে ব্যস্ত। সত্যিই মানুষটা তার খুশির কথা ভাবে। এই মুহূর্তে তার কি প্রয়োজন ছিল তা সে ঠিকই বুঝে নিয়েছে।

৬৭
বাসার মাঝখানে সোফায় বসে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। এক রাশ গল্প আর হাসাহাসিতে মশগুল সবাই। শুধু ইভান নেই। একটু আগেই অফিস থেকে এক জরুরী কাজের জন্য ফোন আসে। তাড়া হুড়ো করে বের হতে হতে বলে সে এসে ঈশাকে নিয়ে যাবে। অল্প কাজ আছে। বেশি সময় লাগবেনা। তাই তারা সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে আর ইভানের জন্য অপেক্ষা করছে। ইরা খুব খুশি। রিহাব তার দিকে তাকাতেই ইরার চোখে চোখ পড়ে। ইরার তখনের কথা মনে পড়তেই এক রাশ লজ্জা নিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে। রিহাব বুঝতে পেরে একটু মুচকি হাসে। ইলহাম ইরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই যে এতো ভালো রান্না করতে পারিস আমার সত্যিই ধারনা ছিলোনা।
ইরা এক গাল হেসে বলল
–ভালো লেগেছে?
ইলহাম মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে। ইরা হেয়ালি করে বলল
–বিয়ে করে বউ কে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। রান্না শেখাব।
তার কথায় সবাই হেসে ফেললো। এর মাঝেই রিহাবের ফোন বেজে উঠলো। বিরক্তিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল
–ছুটি নিয়ে একদিন বাসায় বসে থেকেও শান্তি নেই।
ঈশা একটু হেসে বলল
–ছুটি নিয়ে কয়েকদিন দূর থেকে ঘুরে আসেন ভালো লাগবে।
রিহাব ইরার দিকে তাকিয়ে বলল
–তাই ভাবছি। কয়েকদিন ছুটি নিয়ে হানিমুন সেরে আসি।
ইরা লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো। কি মানুষ রে বাবা। সবার সামনে এমন কথা কেউ বলে। লজ্জা বলতে কিছুই নেই। আবার ফোনের শব্দে চরম বিরক্তি নিয়ে ফোন নিয়ে উঠে গেলো রিহাব। একটু দূরে গিয়ে কি যেন কথা বলে বিচলিত হয়ে এলো। তার আসা দেখে সবাই তার দিকে তাকাল। ঈশা জিজ্ঞেস করলো
–রিহাব ভাইয়া কোন সমস্যা?
রিহাব ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমাদের তাড়াতাড়ি হসপিটালে যেতে হবে ঈশা।
সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। তার এমন কথার মানে বুঝতে। রিহাব ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–হসপিটাল থেকে ফোন করেছিলো ইভানের…।

চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-২৭

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৭

৬২
গত দুইদিন ধরে যত কিছু দিয়ে বাড়িটা সাজানো হয়েছিলো সব কিছু খুলে ফেলা হচ্ছে। সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে লোকজন। ইভান সেগুলই দেখছে। আশে পাশে চোখ ফেরাতেই চোখ পড়লো ঈশার বাবা এক পাশে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টিতে শুন্যতা। বাবার কাছে মেয়েরা একটু বেশিই আদুরে হয়। মেয়েদের বিদায় একজন বাবাকে ভিতর থেকে কতটা শুন্য করে দিতে পারে তা ইভান এই মুহূর্তে আন্দাজ করতে পারছে। সে ধির পায়ে পাশে দাড়িয়ে বলল
–বড় বাবা তোমার কি মন খারাপ?
ঈশার বাবা ভাবনায় ডুবে থাকায় একটু চমকে উঠলো। ইভানের দিকে তাকিয়ে মলিন মুখে বলল
–এই বাড়িতেই আমার দুই মেয়ে বড় হয়েছে। সারা বাড়ি জুড়ে দুজনের খুনসুটি। কিন্তু আজ পুরো বাড়ি শুন্য হয়ে গেলো।
ইভান ঈশার বাবার কাধে হাত রেখে বললেন
–মন খারাপ করোনা। রিহাব খুব ভালো ছেলে। ইরা খুব সুখে থাকবে বাবা। তোমার ওকে নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না।
ঈশার বাবা তার আবেগ ধরে রাখতে পারল না। ইভান কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। ইভানও তাকে জড়িয়ে ধরল। কাদ কাদ কণ্ঠে বলল
–আজ থেকে ৬ বছর আগে আমি ঈশার বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম অন্য কোথাও। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি সেই সময় ঈশাকে নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারিনি। খুব ভয় ছিল মনের মাঝে। কিন্তু তুই যখন ঈশাকে বিয়ে করলি তখন আমি একদম নিশ্চিন্ত হয়ে গেলাম। আর কোনদিন ঈশাকে নিয়ে আমার মধ্যে ভয় হয়নি। তুই ওর কাছ থেকে দূরে চলে গেলি তখনও আমার একটুও ভয় হয়নি। কারন আমি জানতাম তুই যেখানেই থাক নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমার ঈশাকে ভালো রাখবি।
ইভান কে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাড়িয়ে বলল
–আমাকে মাফ করে দিস। আমি তোর সাথে অন্যায় করেছি। অনেক বড় অন্যায়।
কথাটা বলেই তিনি আর দাঁড়ালেন না। ইভান দাড়িয়ে দেখছে। উনি চলে যাওয়ার পর চোখ বন্ধ করে একটা ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে বলল
–তুমি হয়ত জাননা বড় বাবা তোমার এই কথার মানে আমার কাছে স্পষ্ট। তোমার এই অপরাধ বোধ কেন আর ঠিক কোথায় থেকে তৈরি হয়েছে তা আমার অজানা নয়। আমি এটার শেষ করেই ছাড়ব তুমি ভাবিওনা। আমি বেঁচে থাকতে কারও কোন ক্ষতি হতে দিবনা।

৬৩
হালকা ঘুমে বন্ধ থাকা চোখের উপরে মাঝে মাঝেই একটা ছায়ার মতো নড়াচড়া করছে। রিহাব একটু ভ্রু কুচকে নিয়ে পিটপিট করে তাকাল সামনে। ইরা নিজের ভেজা চুলগুলো আঁচড়াতে ব্যস্ত। কিন্তু বার বার চিরুনি সেটার গিট্টুর মাঝে আটকে যাচ্ছে। আর সে বেশ বিরক্তি নিয়ে খোলার চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে চিরুনি রেখে হাত দিয়ে খোলার চেষ্টা করছে। রিহাব ঠোটের কোণে ক্ষীণ হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে। এবার ইরা বিরক্ত হয়ে জোরে টানতেই একটা চুল ছিঁড়ে যায়। ব্যথায় আহ শব্দ করতেই রিহাব একটু ভারি গলায় বলে
–সব চুল কি টেনে ছিঁড়ে ফেলবে নাকি?
ইরা চমকে উঠে। পিছন ঘুরে তাকায়। রিহাবের চোখে চোখ পড়ায় দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আবার সামনে তাকায়। রিহাব একটু হেসে উঠে বসে। নেমে ধির পায়ে ইরার কাছে যায়। হাত থেকে চিরুনি নিয়ে বলে
–আর চিরুনি করতে হবে না।
ইরা বিরক্ত মুখে বলে
–কাল অতো গুলো কাঁটা লাগানোর পরেই চুলের এই অবস্থা হয়েছে।
রিহাব চিরুনি টা রেখে ওয়াশ রুমের দিকে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বলল
–কি দরকার ছিল অতো সাজগোজ করার। অতো মেকাপ খাওয়ার পরে আমি কতটুকু সুস্থ থাকতে পারব সেটা নিয়েই এখন ভাবছি।
বলেই ওয়াশ রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। ইরা চোখ বড় বড় তাকাল সেই দিকে। আর কোন কথা না বলে নিচে চলে গেলো। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখল তার শ্বশুর শাশুড়ি দুইজনি টেবিলে বসে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। একটু লজ্জা পেলো। দেরি করে ফেলেছে। আর একটু আগে উঠলেই এই লজ্জায় পরতে হতোনা। শাড়ীর আচলটা মাথায় টেনে দিয়ে মাথা নিচু করেই নেমে এলো। সালাম দিয়ে এক পাশে দাঁড়ালো। রিহাবের বাবা বুঝতে পারলেন মেয়েটা অস্বস্তি বোধ করছে। তাই একটু স্বাভাবিক করতে বললেন
–বস।
ইরা সামনে চেয়ারে বসে পড়লো। শান্তা নামের মেয়েটা খাবার নিয়ে এলো। রিহাবের মা উঠতে যাবে তখনি ইরা বলল
–আপনি বসেন মা। আমি দিচ্ছি।
কথা শেষ করেই উঠে দাঁড়ালো। আর কারও কথার অপেক্ষা না করেই সবার প্লেটে খাবার দিয়ে দিলো। রিহাবের মা বলল
–তুমি বস। রিহাব কোথায়?
কথাটা কানে আসতেই কেন জানি লজ্জা ঘিরে ধরল ইরাকে।মাথা নত করে ধির কণ্ঠে বলল
–আসছে।
তাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই রিহাব নামছে। তার মা দেখে বলল
–ওই তো এসে গেছে।
ইরা চোখ তুলে উপরে তাকাল। মেরুন রঙের একটা টি শার্ট পরে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। সামনের চুল গুলো হালকা উড়ছে। রিহাব চোখ তুলতেই ইরা চোখ নামিয়ে নিলো। ইরার পাশের চেয়ারে এসে বসলো। ইরা তার প্লেটে খাবার দিলো। রিহাব মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে। রিহাবের দিকে তাকিয়ে তার বাবা বলল
–আজকেও কি হসপিটালে যাবে?
রিহাব খেতে খেতেই বলল
–নিজের মরার আগে পর্যন্তও আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তার কণ্ঠের অসহায়ত্ব শুনে বাবা মা দুজনি মুখ টিপে হাসতে লাগলো। কিছুক্ষন পর রিহাবের মা বলল
–না গেলে হয়না? খুব বেশি কাজ কি?
রিহাব একটু ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলল
–বেশি না। তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
খাবার শেষ করে ঘরে এসে রিহাব রেডি হচ্ছে। ইরা ঘরের এক কোনায় বসে একবার রিহাবের দিকে তাকাচ্ছে আবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। রিহাব কে কিছু বলতে চায়। কিন্তু বলতে পারছে না। রিহাব আয়নায় তার দিকে ভালো করে দেখে নিলো। কিন্তু কিছু বলল না। কারন মেয়েটার মধ্যে এখনো জড়তা আছে। সে চায় এইসব জড়তা ইরা কাটিয়ে উঠুক। তাদের সম্পর্ক টা স্বাভাবিক হোক। তাই তার সাথে একটু অস্বাভাবিক আচরণ করছে। রিহাব এপ্রনটা হাতে নিয়ে বের হতে যাবে তখন ইরা পিছন থেকে বলল
–কখন আসবেন?
রিহাব তার কথা শুনে থেমে গেলো। একটু হেসে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে পিছনে ঘুরে বলল
–জানিনা। কেন?
ইরা ভাবেনি যে সে এমন প্রশ্ন করবে। তাই একটু অপ্রসতুত হয়ে গেলো। মাথা নামিয়ে বলল
–এমনি।
রিহাব আর কিছু না বলে চলে গেলো। নিচে নামতে নামতে ভাবল এমন আচরণ না করলে মেয়েটা এমনি থেকে যাবে। তাই এমন কিছু করতে হবে যাতে সে নিজে নিজেই তার মনের কথা বলতে পারে। নিচে নেমেই তার বাবা বলল
–তাড়াতাড়ি আসো ইরা একাই আছে।
ইরাও পিছন পিছন নামছিল। আড় চোখে ইরাকে দেখে নিয়ে বলল
–বাড়িতে এতো মানুষ একা থাকবে কেন?
ইরার খুব মন খারাপ হল। একদিনেই মানুষটা কেমন বদলে গেলো। এমন তো ছিলোনা। চোখ ছল ছল করে উঠলো। রিহাব বের হয়ে গেলো। ইরা রান্না ঘরে গেলো। তার শাশুড়ি রান্না করছে। রান্না ঘরে পা দিতেই উনি বললেন
–তুমি এখানে কেন? নতুন বউ রান্না ঘরে আসেনা।
ইরা মাথা নিচু করে বের হয়ে যেতেই উনি আবার পিছন থেকে ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন
–রিহাব চলে গেছে?
ইরা মাথা নাড়াল। উনি বুঝতে পারলেন রিহাব চলে যাওয়ায় ও একা হয়ে গেছে। তাই এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছে। উনি ইরাকে ভিতরে ডাকলেন। ইরা মাথা নিচু করেই ভিতরে গেলো। একটু হেসে বললেন
–তুমি রান্না করতে পার?
ইরা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। উনি হেসে বললেন
–আমি যখন থাকবনা তখন তাহলে তোমার কোন অসুবিধা হবেনা।
ইরা মাথা তুলে বলল
–কবে যাবেন মা?
–পরশুদিন।
–যেতেই হবে?
অসহায়ের মতো মুখ করে ইরা জিজ্ঞেস করলো। তার শাশুড়ি মাথায় হাত দিয়ে বলল
–হ্যা মা যেতেই হবে। তোমার বাবার কাজ আছে। শেষ করেই আবার চলে আসবো।
ইরা মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেললো। সবাই চলে গেলে এই বাড়িতে একা হয়ে যাবে সে। রিহাবও থাকবে না। রিহাবের মা আবার বলল
–শান্তা থাকবে। কোন অসুবিধা হলে ওকে বলবে।
তারপর একটু দুষ্টুমির সূরে বলল
–আর চেষ্টা করবে রিহাবকে বাসায় রাখার।
ইরা লজ্জা পেয়ে একটু হেসে ফেললো।

৬৪
দুপুরের খাবার শেষ করে ইরা ঘরে চলে এলো। তার শাশুড়ি বলেছে রেস্ট নিতে। রিহাব এখনো আসেনি। ইরা বিছানায় বসে ভাবছে। ফোনের শব্দে তাকিয়ে দেখে ইভান। খুশি হয়ে ফোনটা রিসিভ করলো
–হ্যালো ভাইয়া।
–কি করছিস?
–কিছুনা রেস্ট নিচ্ছি।
–খাওয়া দাওয়া করেছিস?
–হ্যা করেছি।
–তুই ঠিক আছিস তো?
–হ্যা ভাইয়া আমি একদম্ ঠিক আছি।
–রিহাব কোথায়?
ইরা একটু হতাশ হয়ে বলল
–হসপিটালে গেছে।
–ওহ আচ্ছা!
বলেই শান্ত গলায় বলল
–ইরা তুই ভালো আছিস তো?
ইভানের কথার মানে বুঝতে পেরে ইরা একটু হেসে বলল
–আমি ভালো থাকব তুমি জানতে ভাইয়া। আর না জানলে তুমি এই বিয়েতে কখনও সম্মতি দিতে না।
ইরার কথা শুনে ইভান একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
–ঠিক আছে রাখছি। পরে আবার ফোন দিবো।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো। ইরার শরীরটা ঝিমিয়ে আসছিল। ঠিক হয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলো। রিহাব এসে ঘরে ঢুকেই দেখে ইরা ঘুমাচ্ছে। সে নিঃশব্দে ওয়াশ রুমে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে ইরার পাশে বসে তাকে দেখেছে। হালকা একটু গালে হাত দিতেই সে চমকে উঠে রিহাব কে জড়িয়ে ধরল। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। রিহাব একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। সে ইরার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–কি হয়েছে? ভয় পেয়েছ?
রিহাবের গলা শুনে ইরা স্বস্তি পেলো। একটা জোরে শ্বাস ছেড়ে বলল
–স্বপ্ন দেখেছিলাম।
রিহাব কে এভাবে জড়িয়ে ধরায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে তাকে ছেড়ে দিলো। রিহাব একটু হাসল। ইরা মাথা নামিয়েই বলল
–কখন এসেছেন?
রিহাব গম্ভীর গলায় বলল
–অনেকক্ষণ হল।
–আমাকে ডাকেন নি কেন?
–তুমি কি আমার অপেক্ষা করছিলে? করলে তো শুয়ে পড়তে না। আমি কখন আসবো সেটা ভেবে বসে থাকতে।
ইরা ভ্রু কুচকে তাকাল। রাগ করে বলল
–আমাকে ব্লেম করার আগে নিজেই একটু ভেবে দেখেন। বিয়ের পরের দিনে বউকে রেখে কাজে গিয়েছিলেন। একবার ফোনও করেন নি।
–তুমিও তো করনি? দায়িত্ব টা কি আমার একার?
রিহাবের এমন কথা শুনে ইরা উলটে কাদ কাদ গলায় বলল
–বিয়ের আগে তো কত মিষ্টি কথা। আমার সব দায়িত্ব নিবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শত্রুকে বিয়ে করেছি আমাকে আর সহ্যই করতে পারছেনা।
ইরার কথা শুনে রিহাব একটু হেসে তাকে এক টানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লো। ইরা একটু অপ্রস্তুত হয়ে উঠতে গেলে আরও জোরে চেপে ধরে। কোমল সরে বলে
–এক্সপেকটেশন প্রকাশ করতে হয় নাহলে কিছুই পাওয়া যায়না।

চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-২৬

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৬

৫৯
আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। রিহাব আর ইরার বিয়ে। ঈশা আর ইভান ৩ দিন হল ফিরেছে। এই তিনদিনে সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছে। খুব একটা কষ্ট হয়নি কারন খুব ছোট করে ঘরোয়া একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে। তবে ইভান খুব ব্যস্ত। আসার পর থেকে সে একরাতও ঘুমায়নি। দুই হাতে একটা প্লেট ধরে উপরে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে ঈশা। ভ্রু কুচকে সেই প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্য মনস্ক হতেই পা এলোমেলো ভাবে সিঁড়িতে পড়তেই পড়ে যেতে নিলে কেউ একজন তার কোমর জড়িয়ে ধরে। একটু ভয় পেয়ে উঠতেই হাতটা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। পাশে ঘুরে তাকাতেই ইভানের রক্তিম চোখ দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলো। ইভান কে কিছু বলতে না দিয়েই চোখে চোখ রেখে আবেগি কণ্ঠে বলল
–আমি তো জানতাম তুমি ধরবে।
ইভান রাগ করে ঈশাকে সোজা করে দিয়ে বলল
–একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিবো গালে। এখান থেকে পড়ে গেলে কি হতো?
–পড়তাম না তো! তুমি আছো যে।
ইভান আরও রেগে গেলো। ঈশার চুল ধরে মুখটা নিজের কাছে এনে দাতে দাঁত চেপে বলল
–আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু তোকে নিয়ে কোন হেয়ালি আমি কোন ভাবেই সহ্য করবো না। কথাটা মাথায় রাখিস।

বলেই ঈশার চুল ছেড়ে দিলো। কিন্তু ঈশা এক চুলও নড়ল না নিজের জায়গা থেকে। ইভান একটু বিরক্ত হল। ভ্রু কুচকে নিতেই ঈশা তার মুখটা কাছে এনে আলতো করে ইভানের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিলো। কিছুক্ষনের জন্য ইভান থমকে গেলো। ঈশা যে এমন কিছু করবে সেটা তার ধারনাও ছিলোনা। একটু হেসে ঈশা চলে যেতে নিলে ইভান তার হাত ধরে তাকে টেনে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। ঈশা চারিদিকে তাকিয়ে মুখে লজ্জা মাখা হাসি নিয়ে ফিস ফিস করে বলল
–কি করছ? এটা সিঁড়ি যে কেউ যেকোনো সময় এসে যাবে।
ইভান ঈশার কথার গুরুতু না দিয়ে বলল
–তুই আমার বিয়ে করা বউ। এসব আমার অধিকার। কারও উপস্থিতি আমাকে এসব থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।
কথা শেষ করে ইশার দিকে আগাতেই নিচ থেকে কথা বলতে বলতে ঈশার বাবা উপরে উঠছিলেন। ইভান তার গলার আওয়াজ পেয়ে সরে এক পাশে দাঁড়ালো। ঈশা একটু হেসে বলল
–এরকম সাহস না দেখানোই ভালো যার জন্য হাসির পাত্র হতে হয়।
ইভান তার কথায় রেগে গেলো। ঈশা এক দৌড় দিয়ে উপরে চলে গেলো। ইভান তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।

৬০
ঈশা অনেকক্ষণ যাবত আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলের খোপায় ফুল লাগাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন ভাবেই পারছেনা। ইভান দরজায় দাড়িয়ে ঈশাকে দেখছে। একটু হেসে কাছে এসে তার চুলে ফুলের গাজরাটা আটকে দিলো। ঈশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে বলল
–কার জন্য এতো সাজগোজ?
ঈশা আয়নায় ইভানের চোখে চোখ রেখে বলল
–আমাকে বউ সাজতে দেখতে ইচ্ছা করেনা তোমার?
ঈশার কথা শুনে ইভান তাকে ছেড়ে দিলো। স্থির দৃষ্টিতে আয়নার মাঝে ঈশাকে দেখে নিলো। নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল
–একটা সময় এই ইচ্ছাটা খুব করে ছিল জানিস। কিন্তু এই ইচ্ছাটার অপেক্ষায় তোকেই হারিয়ে ফেলছিলাম। যদি তোকেই হারায়ে ফেলি তাহলে এসব চাওয়ার কি মানে? তাই এখন তোকে পাওয়ার পর এসব ভাবিনা। ভাবি কোন অপূর্ণতা নাই আর জীবনে।
ঈশা ইভানকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। ইভান বুঝতে পারে ঈশার মনের অবস্থা। তাকে জড়িয়ে ধরে বলে
–আমার সব চাওয়া পাওয়া তুই পর্যন্তই শেষ জান।
ঈশার চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি বেয়ে পড়ে। ভাবতে থাকে “একটা মানুষ এতোটা কিভাবে ভালবাসতে পারে। ক্লান্তি আসেনা তার? নাকি তার জন্মই আমাকে ভালোবাসার জন্য?”
ঈশার ভাবনার মাঝেই ইভান তার মুখ তুলে চোখ মুছে দিয়ে বলে
–আজ ইরার বিয়ে। এখনি কেঁদে সব মেকাপ নষ্ট করে ফেলবি? আর কিছুক্ষন থাক তারপর কাদিস।
ইভানের কথা শুনে ঈশা আয়নায় তাকাল। আসলেই তো চোখের পানিতে কাজলের এক অংশ লেপটে গেছে। টিস্যু দিয়ে সযত্নে মুছতে মুছতে বিরক্তি নিয়ে বলল
–তুমি আমার মেকাপ নষ্ট করে দিলে কেন?
ইভান রেগে বলল
–একটা থাপ্পড় লাগাব। আমি তোকে কাঁদতে বলেছি।
ইভানের কথা শুনে ঈশা একটু ভাবল। তারপর বুঝতে পারল ঠিকই তো। সে নিজেই ইভানের কথা শুনে কেঁদে ফেলেছে। অসহায়ের মতো মুখ করে বলল
–কেন এভাবে ইমোশনাল কথা বল।
ঈশার কথা শুনে ইভান তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিয়ে বলল
–তাড়াতাড়ি বাইরে আয়। রিহাবরা এখনি এসে যাবে।
ঈশা মাথা নাড়াল। ইভান বাইরে যেতে নিয়ে আবার থেমে গেলো। পিছনে ঘুরে বলল
–ঈশা
ইভানের আবেগি কণ্ঠে নিজের নাম শুনে ঈশার সারা শরীরে এক তৃপ্তির শিহরণ বয়ে গেলো। পিছনে ঘুরে তাকাল। ইভান একটু হেসে বলল
–অনেক সুন্দর লাগছে জান।
ঈশা হেসে দিলো। ইভান বাইরে চলে গেলো।

৬১
বিয়ে শেষ হল। বিদায়ের পালা। ইরা কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিচ্ছে। তার সাথে তার মাও। বাকি সবাই ছল ছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা ধির পায়ে সামনে এগিয়ে গেলো। ইরার মাথায় হাত রাখতেই ডুকরে কেঁদে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরল। ঈশা আর কিছু বলতে পারলনা। চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়লো। ইলহাম এগিয়ে এসে ইরার দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে ধরা গলায় বলল
–পেত্নি এতোই যখন কাদবি তাহলে বিয়ে করার কি দরকার ছিল।
তার কথা শুনে কষ্টের মাঝেও সবাই হেসে দিলো। ইরাও নিজের চোখের পানি মুছে ইলহামকে জড়িয়ে ধরে বলল
–আমাকে বিরক্ত করতে আসবে কিন্তু ভাইয়া।
ইলহাম পরম যত্নে তার মাথায় হা বুলিয়ে দিয়ে বলল
–আসবো রে। তোর সাথে ছোট বেলা থেকেই কত খেলেছি। খেলার ছলে অনেক মেরেছি। পারলে তোর এই ভাইকে মাফ করে দিস।
তার আবেগি কথা শুনে ইরার কান্নার মাত্রা বেড়ে গেলো। ইভান ইরার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–এতো কাদছিস কেন? আমরা তো যাবোই তোর বাড়িতে। এক বারেই তো আর চলে যাচ্ছিস না।
ইরা এবার ইলহাম কে ছেড়ে দিয়ে ইভান কে জড়িয়ে ধরল। ইভান ধির পায়ে তার সাথে কথা বলতে বলতেই গাড়ির সামনে এনে দাড় করিয়ে দিলো। গাড়ির দরজা খুলে তাকে ভিতরে বসিয়ে দিলো। ইরা দুই হাতে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। ইভান রিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল
–সাবধানে যাস। পৌঁছে ফোন করিস।
রিহাব সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো। গাড়ি নিজ গতিতে চলছে। ইরা জানালার কাচে মাথা ঠেকিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। রিহাব একবার তাকে দেখে নিয়ে বলল
–একেই তো পরিবারের কাছ থেকে এভাবে নিয়ে যাচ্ছি তারপর আবার এতো কাদলে নিজের অপরাধ বোধ টা বেড়েই যাচ্ছে। সেটা রাখার জায়গা আমার নেই।
রিহাবের এমন কথা শুনে ইরার মায়া হল। মনে হল সত্যিই একটু বেশি করে ফেলছে। সে তো জেনেই বিয়ে করছে যে তাকে শ্বশুর বাড়িতে যেতে হবে। তাহলে এতো কান্না কিসের? চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। রিহাব সামনে থাকা পানির বোতল টা এগিয়ে দিলো। ইরা সেটা হাতে নিয়ে একটু পানি খেয়ে নিলো। তারপর সেটা সামনে রেখে জানালা দিয়ে আবার তাকাল। রিহাব ধির কণ্ঠে বলল
–এখন ভালো লাগছে?
মন খারাপের মাঝেও এক রাশ ভালো লাগা ছুয়ে গেলো। মাথাটা আলতো নাড়িয়ে হ্যা বলল। খানিকবাদে গাড়ি এসে দাঁড়ালো বাড়ির সামনে। তারা গাড়ি থেকে নামল। সবাই তাদেরকে দেখার উদ্দেশ্যে বাড়ির সামনে ভিড় করেছে। ইরার শাশুড়ি তাকে বরন করে নিলো। তারপর ভিতরে একজন কে উদ্দেশ্য করে বলল
–ওকে ঘরে নিয়ে যাও।
ইরার দিকে তাকিয়ে বলল
–ঘরে গিয়ে এসব চেঞ্জ করে ফেল। অনেক টায়ার্ড লাগছে তাই না?
শাশুড়ির কথা শুনে ইরার মায়ের কথা মনে পড়লো। শাশুরিকে জড়িয়ে ধরল। তার শাশুড়ি পরম আদরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
–আমিও একদিন বউ হয়ে এসেছি এই বাড়িতে। আজকের দিনটা কতটা কষ্টের তা আমার খুব ভালো মত জানা আছে।
ইরা চোখ থেকে দু ফোটা পানি ফেললো। তার শাশুড়ি মুখ তুলে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল
–আর যেন চোখে পানি না দেখি। এখন যাও।
ইরা একটু হেসে মাথা নাড়িয়ে ঘরে চলে গেলো। সামনের ঘরের দরজাতে লাগান এক গুচ্ছ ফুল। দরজা খুলে ভিতরে যেতেই চোখে পড়লো সাজানো খাট। মেয়েটি ইরাকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল
–ভাবি আমি আসি। ভাইয়া এখনি চলে আসবে।
বলেই একটা হাসি দিলো। ইরা খুব শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো
–তোমার নাম কি?
–শান্তা।
ইরা একটু হাসল। মেয়েটি চলে গেলো। ইরা একা একা সব ঘুরে দেখছিল। ঘরটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। আচমকা দরজা খোলার আওয়াজে চমকে উঠলো ইরা। রিহাব রুমে এসে ঢুকল। তারপর দরজাটা লক করে দিলো। ইরার এখন ভয়ে বুক কাঁপছে। হাত পা রীতিমতো কাঁপছে। এক হাতে শাড়ীর আচল মুঠ করে ধরে এক পাশে দাড়িয়ে আছে। রিহাব ইরার দিকেই আসছে। কিন্তু ইরার সাহস হল না চোখ তুলে তার দিকে তাকাতে। সে মাথা নামিয়ে দাড়িয়ে আছে। রিহাব তার অনেকটা কাছে এসে পড়েছে। এবার তো ইরার মুখের কথাই বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু বলতে চাইলেও মুখ থেকে বের হচ্ছেনা। এই অবস্থায় রিহাব ইরাকে অবাক করে দিয়ে বলল
–এখনো চেঞ্জ করনি?
রিহাবের শান্ত গলার আওয়াজ শুনে ইরার একটু সাহস হল। হাতের মুঠোয় ধরে রাখা শাড়ী ছেড়ে দিলো। একটা শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–করতেই যাচ্ছিলাম।
রিহাব বিছানায় বসে পড়লো। ইরার দিকে তাকিয়ে বলল
–তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নাও।
ইরার এই মুহূর্তে রিহাবের মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো। কিন্তু শত সাহস সঞ্চয় করেও চোখ তুলে তাকাতে পারল না। তাই আর চেষ্টা না করে লাগেজ থেকে নিজের কাপড় বের করে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। রিহাব একটা ছোট শ্বাস ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ইরা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখে রিহাব চোখের উপরে হাত দিয়ে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে গেছে কিনা বুঝতে পারছে না। ধির পায়ে তার পাশে বসতেই রিহাব হাত সরিয়ে ইরার দিকে তাকায়। তারপর উঠে বসে খুব শান্ত গলায় বলে
–এখনো মন খারাপ?
ইরা চোখ নামিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বলল। তারপর একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
–আপনি চেঞ্জ করবেন না?
–করবো।
কিছুক্ষন এভাবেই চুপ করে থেকে রিহাব বলল
–তুমি রেস্ট নাও আমি চেঞ্জ করে আসি।
বলেই ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ইরা উঠে এবার পুরো ঘরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। ঘরে দেখা শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। রিহাব ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে ইরাকে রুমে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় গেলো। ইরা দাড়িয়ে আছে। থেমে থেমে ওঠা হাওয়ায় চুল গুলো অগছালোভাবে উড়ছে। রিহাব ইরার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। তার এক হাতের উপরে হাত রেখে অপর হাত দিয়ে কোমর ধরে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। আচমকা এমন হওয়ায় ইরা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠলো। সামনে তাকিয়ে বলল
–তোমার সাথে নতুন জীবনের পথ চলা শুরু করতে চাই। মৃত্যু পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে চাই। সঙ্গ দিবে আমাকে?
ইরা চুপ করে থাকে। তার কোন উত্তর না পেয়ে রিহাব তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে মুখটা আলতো করে তুলে তাকায়। ইরার অস্বস্তি হয়। চোখ বন্ধ করে ফেলে। তার ঠোঁট কাঁপছে অনবরত। রিহাব তার সেই ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলে
–আমার মনের সব টুকু ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে ভালবাসতে চাই। দিবে কি আমাকে সেই সুযোগ?
ইরা চোখ খুলে ফেলে। রিহাবের এই অদ্ভুত দৃষ্টি ইরার ভিতরে জমান সমস্ত আবেগকে অস্থির করে তুলছে। সে আর তাকিয়ে থাকতে পারল না। ইরা রিহাব কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। রিহাবও ইরাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।

চলবে…………

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-২৫

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৫

৫৬
সামনে থালার মতো শেষ বিকেলের লাল সূর্যটা দূর দিগন্তের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। পুরো আকাশ জুড়ে রঙের খেলা। কোথাও রক্তিম আভা, কোথাও গাড় নীল কোথাও আবার সাদা মেঘের ভেলা উড়ে বেড়াচ্ছে। শন শন আওয়াজ কানের পর্দা ভেদ করে যেতেই এক অদ্ভুত রকমের কাপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। এক অদ্ভুত গর্জনের সাথে নীল জলের উচ্ছ্বসিত ঢেউ পা ছুয়ে দিচ্ছে। পায়ের নিচে বালি সরিয়ে দিচ্ছে জলের তোড়। আশে পাশে কয়েক জোড়া কাঁকড়া ছুটাছুটি করছে। মাঝে মাঝে বালির মধ্যে লুকিয়ে পড়ছে। সামনে দূরে নীল আকাশ পানি ছুয়েছে। শিল্পির হাতে আকা নিপুন ছবির মতো দূরে নীল আকাশে অর্ধ ডোবা সূর্যের পাশে একটা নৌকা দুলছে। ঢেউয়ের সাথে সাথে ঝিনুক পায়ে এসে বাড়ি খাচ্ছে। খালি পায়ে নরম বালির উপরে দাড়িয়ে আছে ঈশা। তার দৃষ্টি সামনের সূর্যটার উপর স্থির। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সে। এমন একটা দৃশ্য ঈশা এভাবে দেখতে পাবে সেটা কল্পনাও করেনি। ইভান প্যান্টের পা গুটিয়ে পানিতে পা ডুবিয়ে পকেটে হাত গুঁজে পাশেই দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। ঈশার পায়ে একটা শক্ত কিছু বাড়ি খেতেই সে ঝুকে সেটা হাতে নিলো। ছোট মতন একটা শঙ্খ। হাতের তালুর উপরে রেখে সেটার দিকে দেখেই একটু হেসে বলল
–কি সুন্দর না!
ইভান ঈশার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল
–হুম!
তারপর আবার বলল
–এই মুহূর্তটা সত্যিই অনেক মনোরম। কিন্তু তুই সাথে থাকায় এখন ভয়ংকর সুন্দর হয়ে উঠেছে।

ঈশা তার কথা শুনে ঘুরে তাকাল। ইভানের মনের অবস্থাটা বুঝতে চেষ্টা করছে। ইভান সামনেই তাকিয়ে আছে। ঈশাও সামনে তাকাল। কিছুক্ষনের মধ্যে সূর্যটাও ডুবে গেলো। কিন্তু সূর্য ডুবার পর পুরো আকাশ জুড়ে কিছুটা রক্তিম আভা দেখা যাচ্ছে। ধিরে ধিরে চারিদিকে অন্ধকার ছেয়ে আসছে। সাথে নিস্তব্ধতা গ্রাস করে নিচ্ছে। আর তার মাঝেই সমুদ্র তার নিজের মতো গর্জন করেই যাচ্ছে। মিষ্টি ঠাণ্ডা বাতাসে ঈশা একটু কেঁপে উঠলো। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–চল এখন যাই। বেশ ঠাণ্ডা পড়ে যাবে।

দুজনে তাদের হোটেলে চলে এলো। সমুদ্রের পাশেই ইভান তাদের জন্য হোটেল বুক করেছিলো। রুমের দরজা খুলে ঢুকে ঈশা চারিদিকে ভালো করে দেখে নিলো। এসেই সাথে সাথে ইভান তাকে সমুদ্রের পাড়ে নিয়ে গেছে সূর্য ডুবা দেখতে। তাই ভালো করে রুমটা খেয়াল করতে পারেনি। ইভান ওয়াশ রুমে গেলো ফ্রেশ হতে। ঈশা সামনে জানালার পর্দা সরিয়ে হা হয়ে গেলো। বড় জানালা দিয়ে সম্পূর্ণ সমুদ্রটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ঈশা মুগ্ধ হয়ে দেখছে। ইভান ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ঈশার পাশে এসে জানালাটা হালকা খুলতেই সমুদ্রের গর্জন ভেসে এলো। কান যেন জুড়িয়ে দিলো। ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–ফ্রেশ হয়ে আয়।
ঈশা ওয়াশ রুমে গেলো। ইভান একটা চেয়ারে বসে সামনে জানালায় পা তুলে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে তেমন স্পষ্ট দেখা না গেলেও গর্জন করে যে ঢেউ গুলো আছড়ে পড়ছে আশে পাশে সেগুলোর কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। ঈশা ফ্রেশ হয়ে ইভানের পাশে দাঁড়ালো। ইভান ঈশাকে টেনে নিজের কোলে বসালো। ঈশা সামনে তাকিয়েই একটু ভেবে বলল
–আমার জীবনে কখনও কোন আফসোস থাকলো না। কোন অভিযোগ করার সুযোগ ও দিলেনা।
ইভান তার মুখ নিজের দিকে ঘুরে নিলো। ঈশার চোখে পানি। সযত্নে মুছে দিয়ে বলল
–জানিস যখন ছোটবেলায় তুই নিজের ইচ্ছা গুলো আমাকে বলতিস তখন আমি সেগুলো কল্পনা করতাম। নিজের মতো করে মনের মধ্যে গুছিয়ে নিয়েছিলাম। তখন তোর এই সব ইচ্ছা পুরন করার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না। কিন্তু কিছুই ভুলিনি।
ঈশা ইভান কে জড়িয়ে ধরল। ইভান তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
–কেন কাদছিস? এটা তো তোরই ইচ্ছা ছিল। ভাললাগেনি?
ঈশা কোন কথা বলতে পারল না। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। ছোটবেলায় একবার নিজের মনের ইচ্ছা জাহির করতে গিয়ে ইভানের সামনে বলেছিল কোন এক শরতের বিকেলে সমুদ্রের পানিতে পা ডুবিয়ে সূর্য ডোবা দেখবে। আজ এতো বছর পর ইভান সেটা ঠিকই মনে রেখেছে। শুধু মনেই রাখেনি সঠিক সময়টার অপেক্ষায় ছিল। আজ ঈশার নিজেকে সব থেকে সুখি মনে হচ্ছে। এই খুশি কিভাবে প্রকাশ করা সম্ভব তা ঈশার জানা নেই। ইভান ঈশাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঈশা কেদেই যাচ্ছে। কিন্তু এই প্রথমবার ইভান তাকে থামাতে চেষ্টা করছেনা। কারন সেও বুঝতে পারছে ঈশা তার জীবনের এই প্রাপ্তিটা চরম ভাবে অনুভব করছে। যার ফলে তার চোখে আজ পানি। আর এই মুহূর্তে ইভান তাকে একটুক্ষণ কাঁদতে দিতে চায়। কারন সব থেকে সুখের মুহূর্তে মানুষের যখন সব কথা হারিয়ে যায় তখন সে এভাবে কেঁদে নিজের মনের কথা প্রকাশ করে। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই আর ইভানের সহ্য হলনা।
–আর কাদিস না জান প্লিজ। এবার তো আমার উপরে একটু রহম কর।
ইভানের এমন অনুরধের সূরে বলায় ঈশার খুব মায়া হল। সে উঠে নিজের চোখ মুছে ফেললো। নাক টেনে কাদ কাদ গলায় বলল
–বাসায় সবাই চিন্তা করবে না?
ইভান একটু হেসে বলল
–তোর কি মনে হয় আমি তোকে কিডন্যাপ করে এনেছি? সবাই সব কিছু জানে। শুধু তুই জানিস না।
ঈশা এবার একটু রাগ করে বলল
–তার মানে সবাই জানতো? আমাকে কেউ কিছুই বলেনি।
–আমি যেখানে নিষেধ করেছি সেখানে কে তোকে কি বলবে।
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে ঈশাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইভান বলল
–কি হয়েছে? কিছু বলবি?
ঈশা কোমল কণ্ঠে বলল
–তোমাকে দেখে আমার খুব হিংসা হয়। এভাবে কেউ কাউকে ভালবাসতে পারে।
ইভান শব্দ করে হেসে ফেললো। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–কেন এতো ভালবাস?
ইভান ঈশার মুখটা আলতো করে তুলে একটু হেসে বলল
–কেন ভালোবাসি জানিনা শুধু জানি তুই আমার জীবন। তোর মাঝেই আমার অস্তিত্ব।
বলেই ঈশার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোটের মাঝে আবদ্ধ করে নিলো। এ এক অনাবিল সুখের মুহূর্ত। নিজের সব স্বপ্ন আজ চোখের সামনে বাস্তব হতে দেখে ঈশার নিজের প্রতিই হিংসা হচ্ছে। কিভাবে পারে এতো ভালবাসতে। এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা কি তার আছে।

৫৭
ঈশা ইভানের অনুপস্থিতি ভীষণ ভাবে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে। এই দুইজন মানুষ সব কিছু কত সহজে সামলে নিয়েছিলো। কিন্তু তাদের ছাড়া এই দুইদিন সব কিছু যেন থেমে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও সবাই চেষ্টা করছে তাদেরকে ছাড়া সব কিছু ঠিক ঠাক ভাবে করতে। কারন এই প্রথমবার তারা শুধু দুজন নিজেদের মতো একান্তে কোথাও সময় কাটাতে গেছে। তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে এতো বছর সবার মাঝে শঙ্কা থাকলেও এখন সবাই খুব খুশি। তারা নিজেদের মতো তাদের জীবন সাজিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ইরার খুব টেনশন হচ্ছে। সে এমনিতেই তার বিয়ে নিয়ে খুব ভয়ের মধ্যে আছে। তার উপরে সব থেকে বড় সাপোর্ট তার ইভান ভাইয়া পাশে নেই। যে সব সময় তাকে খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে সব সমস্যার সমাধান করে দেয়। এখন যে সে তার মনের কথা গুলোও কারও কাছে বলতে পর্যন্ত পারছে না। অসহায়ের মতো শুধু বসে বসে দেখছে। আর এইদিকে দুইদিন হল রিহাবেরও কোন খবর নেই। কি কাজে ব্যস্ত একবার ফোনও করার সুযোগ নেই। ইভানের মা এসে ইরাকে অমন ভাবে ভাবতে দেখে বলল
–কি রে? এতো কি ভাবছিস?
ইরা চমকে উঠলো। মলিন মুখে একবার তাকিয়ে বলল
–কিছু না চাচি।
তার চাচি পাশে বসলেন। মাথায় হাত দিয়ে বললেন
–মন খারাপ লাগছে?
ইরা তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। তার চাচি পরম আদরে মাথার চুল গুলো বিলি কেটে দিচ্ছে।
–চাচি ভাইয়া আপু কবে আসবে?
ইরা সামনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো। তার চাচি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
–কবে আসে আসুক। থাকুক না একটু সময় নিজেদের মতো। সবাই চায় ওরা দুজন ভাল থাক। সুখে থাক। অনেক কষ্ট পেয়েছে।
আবার একটু হেসে বলল
–ভাবিস না। তোর বিয়ের আগেই চলে আসবে।
ইরার এসব কথা কোন ভাবেই মনের উপরে প্রভাব ফেলতে পারল না। এই দুইটা মানুষ ছাড়া সে যে বড় অসহায় উঠেছে এই দুই দিনে। কিন্তু তাকে যে অন্য বাড়িতে গিয়ে থাকতে হবে। তখন কি করবে। কথাটা ভাবতেই এক রাশ কষ্ট মনে জমা হল। নিজের অজান্তেই দুই ফোটা পানি চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার রেশ তুলতেই তার চাচি বললেন
–কাদিস না মা। এটাই নিয়ম। মেয়েদের বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে যেতে হয়। এটার কোন বিকল্প নেই। তাই বলে ভাবিস না মেয়েরা পর হয়ে যায়। তুই সব সময় এই বাড়ির মেয়ে হয়ে থাকবি। তোর অধিকার সব সময় এই বাড়িতে থাকবে।
ইরা উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল
–আমি তোমাদেরকে খুব মিস করবো চাচি।
ইরার কান্না দেখে তার চোখেও পানি চলে এলো। হাজারো হোক এই বাড়ির মেয়ে। এই বাড়িতে বড় হয়েছে। কিন্তু এখন সমস্ত অধিকার ছেড়ে যেতে হবে। এটা খুব কষ্টের। এর মাঝেই ইরার ফোনের শব্দে দুজনি একটু চমকে উঠলো। ইরা চোখ মুছে ফোন হাতে নিয়ে দেখে রিহাবের নাম্বার। কষ্টের মাঝেও তার মুখে লজ্জার ছাপ ভেসে উঠলো। তার চাচি বুঝতে পেরে একটু হেসে থুতনি ধরে তুলে বলল
–অমনি সব কষ্ট ভুলে গেলি তাই না।
তার কথা শুনে ইরা আরও বেশি লজ্জা পেলো। তার চাচি একটু হেসে উঠে গেলেন। ইরা ফোনটা ধরে নরম গলায় বলল
–হ্যালো!
–কেমন আছো?
–এতদিন পর মনে পড়লো ভালো আছি কিনা?
রিহাব বুঝতে পারল এতদিন ফোন না করায় ইরা রাগ করেছে। একটু হেসে বলল
–সরি! খুব ব্যস্ত ছিলাম।
–থাকেন না আমি কি নিষেধ করেছি?
ইরা অভিমানের সূরে বলল। রিহাব খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
–আমাকে এতো মিস কর জানতাম না তো? কখনও বলনি তো।
ইরা এবার লজ্জা পেলো। রিহাবের প্রতি তার অনুভুতি গুলো এতো তাড়াতাড়ি তীব্র হবে সে নিজেও ভাবেনি। রিহাব কে তাহলে কি সে ভালবাসতে শুরু করেছে। তার ভাবনার মাঝেই রিহাব বলল
–কোথায় হারিয়ে যাচ্ছ? আমাকে এভাবে অপেক্ষা করিয়ে নিজে হারিয়ে গেলে আমি কিন্তু মেনে নিবনা।
ইরা একটু হেসে বলল
–একা এর কোথায় যাবো আপনাকে নিয়েই যাবো।
রিহাব তার কথা শুনে হাসল।

৫৮
শরতের শেষের দিকে একটু ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। আর সমুদ্রে ঠাণ্ডাটা খুব তাড়াতাড়ি পড়ে। এখনো অন্ধকারের রেশ কাটেনি। দূর সমুদ্রে মাঝে মাঝে মাছ ধরার জাহাজের লাইট চোখে পড়ছে। তেমন তীব্র আলো না হলেও অন্ধকারের কারনে সেগুলো ভালভাবেই চোখে পড়ছে। খুব কাছেই তীব্র গর্জনে ঢেউ আছড়ে পড়ছে। ইভান ঈশাকে পিছন থেকে চাদরে জড়িয়ে বসে আছে। নরম বালির উপরে দুজন বসে ভোর বেলার সমুদ্র দেখছে। তারা একা না আশে পাশে অনেকেই আছে তাদের মতো যারা রাতের সমুদ্র দেখতে উৎসুক। কথায় আছে এক সমুদ্রের নাকি হাজার রুপ। তাই তো প্রতিটা সময়ের রুপ দরশন করতেই তারা এখানে এসেছে। কারন ঈশার সমুদ্র খুব পছন্দ। ঈশা মাথা ঘুরিয়ে ইভানের দিকে তাকাল। নির্ঘুম চোখ দুটোতেও কি অনাবিল শান্তির ছাপ স্পষ্ট। সারা রাত জেগে থেকেও তার মুখে কোন ক্লান্তির ছাপ নেই। মাঝখানে ঈশা একটু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পড়লেও ইভান একটুও ঘুমায়নি। ঈশাকে নিজের সাথে জড়িয়ে আরাম করে ঘুমোতে দিয়েছে। ঈশাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার গালে এক আঙ্গুল স্লাইড করতে করতে বলল
–এই রোমান্টিক ওয়েদারে এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করি।
ঈশা একটু হেসে বলল
–সারা রাত যে ঘুমাওনি সেটা খেয়াল আছে। এর পর খারাপ লাগবে তো!
ইভান ঈশাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে তার ঘাড়ে থুতনি রেখে বলল
–ঘুমাতে তো সারা জীবনই পারব ম্যাডাম! কিন্তু এই সময়টা তো আর সব সময় আসবে না।
একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল
–এই একটা নির্ঘুম রাত আমার সারা জীবনের সুন্দর মুহূর্ত গুলোর সাক্ষী হয়ে থাকবে।
ঈশা ইভানের হাতটা শক্ত করে ধরল। তাদের জীবনে হয়ত অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তগুলো সব সময় থাকবে। এই স্মৃতি গুলো স্মরণীয় হয়ে থাকবে সারা জীবন।

চলবে………