Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1492



তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-২৪

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৪

৫৫
সকাল সকাল চায়ের সাথে আড্ডায় মেতে উঠেছে পুরো বাড়ির সবাই। সাথে যুক্ত হয়েছে ঈশার ফুপু আর তার মেয়ে সিমানা। ইরার বিয়ের আলোচনায় মেতে উঠেছে সবাই। ইভান সদ্য শাওয়ার নিয়ে একটা ডার্ক ব্লু রঙের শার্ট পরেছে। ইন করা শার্টটার হাটা ফোল্ড করা। ভেজা চুলের মধ্যে দুই হাত চালাতে চালাতে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। ঈশার চোখ তার উপরে পড়তেই আটকে গেলো। আজ একটু হলেও ইভান কে অন্য রকম মনে হচ্ছে। ঠোটের কোনের ক্ষীণ হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেজাজ বেশ ফুরফুরে। একটু ভাবতেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। ইভানের এমন মেজাজের কারন উদ্ধার হতেই ঈশার এবার চোখ পড়লো শার্টের দিকে। এই রঙটা ঈশার খুব পছন্দ। ইভান এমন রঙ সচরাচর পরেনা কিন্তু ইভান কে এই রঙ পরলে যে অনেক সুন্দর লাগে সেটা ঈশা ছোট বেলায় একবার ইভান কে বলেছিল। তারপর থেকে কয়েকবার এমন রঙের পাঞ্জাবি পরতে দেখেছে। কিন্তু এই প্রথমবার শার্ট পরতে দেখল। ঈশা হালকা হাসি নিয়ে তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
–আরে ভাইয়া তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে!
সিমানার কথাটা কানে আসতেই ইভান সামনের দিকে তাকাল। সবার আগে ঈশার দিকেই চোখ পড়লো। ঈশার অমন দৃষ্টির মানে ইভান একটু বুঝতে চেষ্টা করলো। তারপর নিজের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরে একটু হাসল। ঈশা ততক্ষনে চোখ নামিয়ে চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান হালকা হেসে ঈশার পাশের চেয়ারটাতে বসতে বসতে সিমানার কথার উত্তর দিলো।
–থ্যাঙ্ক ইউ!
ঈশা ইভানের দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিলো। চায়ে একটা চুমুক দিতেই তার ফুপু বলল
–বিয়ের ডেটটা আর কিছুদিন পর করলে হতোনা। ইরার বয়স কম। এখনি সংসারের দায়িত্ব নিয়ে সব সামলে উঠতে পারবে?

–কেন ফুপু আমারও তো ছোটবেলায় বিয়ে হয়েছে। আমি সামলে উঠতে পারিনি? আমার যখন বিয়ে হয়েছে তখন আমি আরও ছোট ছিলাম। বিয়ের বিষয়ে কিছুই বুঝতাম না। ইরা তো এখন সেই অনুযায়ী অনেক বড়। তাহলে এতো চিন্তা কিসের?
ঈশা কথাটা বলতেই তার ফুপু কঠিন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। যেন মস্ত বড় একটা পাপ করে ফেললো। কঠিন গলায় বলল
–অযথা কথা বলিস না। বিয়ে যখনি হোক সংসারত আর তখন করিস নি। তখন তো এসবের ছিটে ফোটাও পাস নি। এই বুড়ো বয়সে সংসার করছিস।
কথাটা শুনে ঈশা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কি বলবে বুঝতে না পেরে মাথা নামিয়ে নিলো। তিনি আবার হতাশার সূরে বললেন
–বেচারা স্বামীটাকেও এতো বছর কাছে ঘেষতে দিস নি।
এই কথার পর সবাই মুখ চেপে হাসতে লাগলো। আর ঈশা অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়ে গেলো। ঈশার অবস্থা আন্দাজ করেই ইভান চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার জন্য ঠোটের কাছে ধরেও চুমুক দিতে পারল না।ঠোঁট চেপে হাসি আটকাতে চেষ্টা করলো। চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে শেষ পর্যন্ত নিঃশব্দে হেসে ফেললো। ঈশাকে আর একটু অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলতে খুব শান্ত কণ্ঠে বলল
–আমাদেরকে বের হতে হবে মনে আছে। আমি নিচে আছি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো মিসেস ইভান মাহমুদ।
সবাই ইভানের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সেদিকে কোন পাত্তা না দিয়ে সে ফোনে ব্যস্ত। ঈশার এবার চরম অস্বস্তি হচ্ছে। সে আর বসে থাকতে পারল না। উঠে চলে গেলো। ইভান আড় চোখে একবার ঈশাকে দেখে ব্যস্ত ভঙ্গিতে সবার উদ্দেশ্যে বলল
–আমি গেলাম।
বলেই নিচে চলে গেলো। গাড়িতে বসে পড়লো। ঈশার জন্য অপেক্ষা করছে। ঈশাকে নিয়ে রিহাব দের বাড়িতে যাবে। সব কিছু আলোচনা করে নিয়ে শপিং করবে। সময় যেহেতু খুব কম তাই অনেক কাজ বাকি। একবার ঘড়িটা দেখে নিয়ে সামনে তাকাল। ঈশা এতো দেরি করছে কেন কে জানে। কি যে করছে মেয়েটা। ভাবতেই পাশে তাকাতেই তার চোখ আটকে গেলো। ঈশা একটা লাল রঙের জামা পরেছে। লাল ওড়নাটা মাথায় টেনে দিয়েছে। ইভান তাকে নিস্পলক দেখছে। নিজের হাতে পার্সের মাঝে কি যেন হাতড়াতে হাতড়াতে এসে ইভানের পাশের সিটে বসলো। নিজের কাজ শেষ করে ইভানের দিকে তাকাতেই তার অমন চাহুনি দেখে নিজের ভ্রু কুচকে নিয়ে বলল
–আমাকে দেখার অনেক সময় পাবে। এখন অনেক কাজ যেগুলো শেষ করতে হবে।
ইভান চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখ খুলে একটা হতাশা ভরা শ্বাস ছেড়ে সামনে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। ঈশা বুঝতে পেরে একটু হাসে। ইভান আড় চোখে তাকে দেখে বলে
–আজকাল দেখি আমাকে ইম্প্রেস করার চেষ্টায় থাকিস!
ঈশা নিজের ভ্রু কুচকে নিয়ে বলল
–তখন ওভাবে বললে কেন সবার সামনে?
ইভান শব্দ করে হেসে ফেললো। ঈশার দিকে না তাকিয়েই বলল
–ফুপুর কথাতে লজ্জায় তোর চেহারার যা অবস্থা হয়েছিলো। সেটা দেখেই সেই চেহারার লজ্জাটা আর একটু বাড়িয়ে দেয়ার লোভ টা সামলাতে পারলাম না। তুই জানিস তোকে ওই অবস্থায় কত কিউট লাগছিলো?
ঈশা ইভানের কথা শুনে রেগে গেলো। একটু কঠিন হয়ে বলল
–ফুপু না বুঝেই অমন কথা বলেছে আর তুমি ইচ্ছা করে আমাকে অমন অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেললে।
ইভান একটু মন খারাপ করে বলল
–সরি!
ঈশা বিরক্তি নিয়ে বলল
–আচ্ছা তুমি তো এমন ছিলেনা। এখন কথায় কথায় এতো অভিমান রাগ কোথা থেকে আসে।
ইভান স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–ওই যে ফুপু বলল এতো বছর কাছে ঘেষতে দিস নি। তাই প্রতিশোধ নিচ্ছি।
ঈশা রেগে গেলো। ঈশার রাগ করা দেখে ইভান এক হাত দিয়ে ঈশার হাত আলতো করে ধরে নিজের কোলের উপরে রেখে বলল
–সরি জান! মন খারাপ করিস না। এমনিতেই দুষ্টুমি করে বললাম। তোর মন খারাপ দেখলে আমারও মন খারাপ হয়ে যায়।
ঈশা ইভানে দিকে তাকাল। সে সামনে তাকিয়েই কথা গুলো বলল। ইভানের মনটা আজ খুব ভালো। ঈশা সেটাকে কোন ভাবেই খারাপ করতে চায়না। তাই বলল
–এতো ইমোশন যে কোথা থেকে আসে। আমি কি বলেছি আমার মন খারাপ।
বলেই একটু হেসে ইভানের ঘাড়ে মাথা দিলো। কিছুক্ষন পরেই চমকে উঠে বলল
–আমরা কোথায় যাচ্ছি?
ইভান কোন কথা বলল না। এতো স্বাভাবিক আচরণ করলো যে ঈশার কথা তার কানেই যায়নি। ঈশা আবারো জিজ্ঞেস করলো
–কি হল? আমাদের তো রিহাব ভাইয়াদের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমি যতদূর জানি এই রাস্তা তাদের বাড়ি থেকে উলটো দিকে।
ইভানের দিকে উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকলো। কিন্তু ইভান তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে একটা হাসি দিলো। সেই হাসির অর্থ বোঝার ক্ষমতা ঈশার নেই। তাই সে চুপচাপ দেখে বোঝার চেষ্টা করছে কোথায় যাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে না। ইভানও আর কোন কথা বলছে না। বেশ কিছুদুর যাওয়ার পর গাড়ি থেমে গেলো। ইভান গাড়ি থেকে নেমে ঈশার দরজা খুলে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। ঈশা কোন কথা না বলে তার হাত ধরে ফেললো। ইভান একটু হেসে তাকে নিয়ে ভিতরে গেলো। ঈশা ভিতরে ঢুকেই বুঝতে পারল এটা একটা রেস্টুরেন্ট। কিন্তু শহর থেকে অনেক দূরে। দিনের বেলাতেও পুরো জায়গাটা অন্ধকার। কিছুই তেমন দেখা যাচ্ছেনা। পাশ ফিরে কিছু বলতে যাবে দেখে ইভান নেই। একটু ঘাবড়ে গেলো সে। চার পাশে ইভান কে খুজতে লাগলো। এক কোনায় হালকা নীল আলো জলে উঠলো। সেদিকে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো। সেদিকে মনোযোগ দিতেই পুরো ঘরে আলো জলে উঠলো। ইভান ঈশার সামনে হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে। হাতে ফুলের তোড়া। ঈশা একটু ভ্রু কুচকে তাকাল। ইভান হেসে বলল
–হ্যাপি এনিভারসারি জান।
ঈশার মুখ হা হয়ে গেলো। আজ থেকে ঠিক ৬ বছর আগে এই দিনে ইভানের সাথে তার বিয়ে হয়েছিলো। কিন্তু এতো বছর ধরে ঈশা কখনও এই দিনটা ছেলিব্রেট করেনি। এমন কি মনেও রাখেনি। কিন্তু ইভানের ঠিকই মনে আছে। ঈশা খুব অবাক হয়। ইভানের হাত থেকে ফুলটা নেয়। কিন্তু তার চোখে পানি চলে আসে। ইভান উঠে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে। ঈশা কেঁদে ফেলে। ইভান ইশাকে শক্ত করে ধরে কোমল কণ্ঠে বলে
–প্লিজ জান। এভাবে কেঁদে আমার দিনটা নষ্ট করিস না।
ঈশা চোখের পানি মুছে ফেললো। সামনে তাকাতেই দেখল তাদের এনিভারসারির কেক। ঈশা নিস্পলক সেটার দিকে তাকিয়ে আছে।ইভান ঈশার মুখটা তুলে বলল
–আরও অনেক সারপ্রাইজ বাকি। এখানেই সব সময় নষ্ট করিস না।
ইভানের কথা শুনে ঈশা তার দিকে তাকাল। ইভান ছুরিটা হাতে নিয়ে ঈশার হাত ধরে দুজন মিলে কেকটা কেটে ফেললো। দুজন দুজন কে খাইয়ে দিলো। ইভান ঈশার গালে হাত দিয়ে বলল
–আমি যদি তোর কাছে আজকের জন্য গিফট চাই দিবি?
ঈশা একটু হেসে বলল
–কি চাও বল?
–তোর দুইটা দিন আমি আমার মতো করে চাই। তোর সাথে যে মুহূর্ত গুলো কাটানোর স্বপ্ন দেখেছি সেগুলো সত্যি করতে চাই। এই দুইটা দিন শুধুই আমার হবে। এর মাঝে আর কিছুই থাকবে না।
ঈশা কিছু না ভেবেই বলল
–আমার জীবনের সব দিনগুলোই তো তোমার। তবুও তোমার জন্য দুইটা দিন। শুধুই তোমার জন্য।
ইভান ঈশার চোখে চোখ রেখে বলল
–এই দুইটা দিনেই আমি আমার জীবনের এতো বছরের সব না পাওয়া পেতে চাই। সব অপূর্ণতা পুরন করতে চাই। এতো বছরের জমানো সব স্বপ্ন সত্যি হতে দেখতে চাই।
ঈশা কোন কথা বলতে পারল না। ইভান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ইভানও ঈশাকে শক্ত করে ধরে বলল
–আমি কোন সময় নষ্ট করতে চাইনা। আমার কাছে ৪৮ ঘণ্টা অনেক মুল্যবান। প্রতিটা সেকেন্ড আমি আমার মতো করে অনুভব করতে চাই।
ঈশা মাথা তুলে বলল
–তা বুঝলাম। কিন্তু এখন কি করবে?
ইভান একটু হেসে বলল
–প্রথম সারপ্রাইজ শেষ। এখন দ্বিতীয়টা শুরু।
–মানে?
–একটু পরেই সব বুঝতে পারবি।
ঈশা অসহায়ের মতো মুখ করে বলল
–বলনা!
ইভান একটু হেসে বলল
–আমি যদি এখানেই সব ডিটেইল বলতে শুরু করি তাহলে আমরা ফ্লাইট মিস করে ফেলব। তাই আর কথা না বাড়িয়ে আমাদের এখনি এয়ারপোর্ট যেতে হবে।
ফ্লাইট আর এয়ারপোর্ট এর কথা শুনে ঈশার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বেশ অবাক হয়ে বলল
–আমরা কোথায় যাচ্ছি?
ইভান একটু বিরক্ত হয়ে বলল
–তোকে বিদেশে বিক্রি করে দিবো।
বলেই উলটা ঘুরে হাটতে লাগলো। ঈশা তার কথায় বিরক্ত হয়ে গেলো। কিন্তু কিছুই করার নেই। তাই ইভানের পিছনে পিছনে চলে আসলো। গাড়িতে বসে পড়লো। কিন্তু কোন কথা বলছে না। ইভান গাড়ি চালাতে চালাতে ঈশাকে একবার দেখে নিয়ে অভিমানের সূরে বলল
–এতো ধৈর্য কম কেন তোর? বললাম তো সব বুঝতে পারবি। আমি এতো বছর অপেক্ষা করলাম আর তুই দুই এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারিস না।
ঈশা নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–আচ্ছা বাবা আর জিজ্ঞেস করবো না। ঠিক আছে? যা হবে চুপচাপ পুতুলের মতো দেখবো।
ঈশার কথা শুনে ইভান একটু দুষ্টুমির সূরে বলল
–ইশ!!!! সারা জীবন এমন থাকলে কি যে ভালো হতো।
ঈশা শুনতে পেয়ে বলল
–কি বললে?
ইভান একটু হেসে বলল
–কিছু না।
কিছুক্ষন পরেই গাড়ি এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছে। সব ফর্মালিটি শেষ করে দুজনি প্লেনে উঠে যায়। প্লেনে বসেই কিছুক্ষন পর ঈশা বলে
–আমরা কোথায় যাচ্ছি? আর ইরার বিয়ে? বাসায়ও তো বলা হয়নি।
ঈশার কথা শুনে ইভান চোখ বন্ধ করে ফেলে। তারপর রাগ করে বলে
–তোকে প্লেন থামিয়ে নামিয়ে দেই। তুই ইরার বিয়েতে যা। আমি একাই যাবো।
বলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। ঈশা অসহায়ের মতো চেয়ে থাকে।

চলবে……।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-২৩

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৩

৫৩

রিহাবের বাবা মা এসেছে ইরা আর রিহাবের বিয়ে নিয়ে কথা বলতে। আজ তারা ইরাকে আংটি পরাবে আর বিয়ের ডেট ঠিক করবে। রিহাবের কাজ আছে তাই সে আসতে পারবে না। রিহাবের বাবা মা চায় তাদের বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাক। কারন বিয়ে শেষ হয়ে গেলেই তারা আবার লন্ডনে ফিরে যাবেন। ইরা ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। তার কেন জানি খুব টেনশন হচ্ছে। এর মধ্যে ঈশা এসে বলল
–কি রে তুই এখনো রেডি হস নি? এতক্ষন ধরে ঘরের মধ্যে কি করছিস?
ঈশার ধমকে ইরা কাদ কাদ গলায়
–আপু আমার না খুব ভয় করছে।
তাদের কথোপকথনের মাঝেই ইভান এসে বলল
–আঙ্কেল আনটি ডাকছে। তোরা বাইরে আয়।
তাদের মুখ দেখে ইভান আবার থেমে বলল
–কি হয়েছে? কোন সমস্যা?
ইরা আবার কাদ কাদ গলায় বলল
–আমার ভয় করছে ভাইয়া!
ইভান একটুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। একটু ভেবে গম্ভীর মুখে বলল
–তাহলে বিয়ে ক্যানছেল।
ইরা আর ঈশা দুজনি তার দিকে ঘুরে তাকায়। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে
–আমার বোনের থেকে কোন কিছুই ইম্পরট্যান্ট নয়। ইরা ভয় পাচ্ছে আর জেনে শুনে তাকে এই সম্পর্কের মধ্যে জড়াতে কিভাবে বাধ্য করি।
–কি বলছ এসব?
ঈশা চিল্লিয়ে বলে। ইভান ইরার দিকে তাকিয়ে বলে
–তোকে আমি এমন কোন সম্পর্কে জড়াতে দিতে পারিনা যেটা ভয় থেকে শুরু হয়। জেটার সাথে তোর কোন অনুভুতি জড়িত নয়। আমি বাইরে গিয়ে না করে দিচ্ছি। তুই ভাবিস না।

ইরা ইভানের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–থাক ভাইয়া সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে। এখন আঙ্কেল আনটিও এসে গেছে। এই মুহূর্তে বিয়ে ভেঙ্গে দিলে কেমন হয়। ভালো দেখাবে না। তাছাড়া বড় দের কথাও তো ভাবতে হবে।

কথা শেষ করে আর কারও উত্তরের অপেক্ষা না করে ইরা কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ঈশা আর ইভান দুজনেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরা ওয়াশ রুমে ঢুকে যাওয়ার পর ইভান একটু হাসল। ইভানের হাসি দেখে ঈশা তার দিকে তাকাল। ইভান তার দিকে তাকিয়ে বলল
–মেয়ে মানুষের স্বভাব! সহজ কথা সহজ ভাবে বলতে পারেনা।
ঈশা তার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকাল। ইভান ঈশাকে একটু কাছে টেনে এনে বলল
–তুইও এমন কথাই বলেছিলি। কিন্তু সিচুয়েশনটা আলাদা ছিল।
ঈশা ইভানের কলার টেনে ধরে বলে
–সিচুয়েশন যেমনি থাক ভেবে দেখ এক্সপেকটেশনটা কিন্তু তোমার কাছেই ছিল। সেটাই আছে। আর ভবিষ্যতেও থাকবে।
ইভান রাগী লুক নিয়ে বলল
–তাই না। আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবি সেটার এক্সপেকটেশনও আমার কাছেই করিস আর আমি তোর সেই এক্সপেকটেশন পুরন করবো ভাবলি কি করে।
–সেটা ভেবেই তো নিশ্চিন্তে ছিলাম। জানতাম তুমি এটা হতে দিবেনা।
ইভান ঈশার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। ঈশা একটু হেসে ইভানকে জড়িয়ে ধরল। ইভানও দুই হাতে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–তুই শুধুই আমার।
ঈশা একটু হেসে বলল
–জানি তো। কিন্তু এখন এভাবে ধরে রাখলে বাকি কাজ কে করবে?
ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে একটা চুমু দিয়ে বলল
–ইরাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি আয়।

ইরা রেডি হয়ে বের হলে তাকে নিয়ে ঈশা বাইরে যায়। সবাই বাইরে বসে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ইরাকে রিহাবের মা পাশে বসিয়ে নেয়। ইরা মাথা নিচু করে বসে আছে। এক রাশ লজ্জা ঘিরে ধরেছে তাকে। আবার মনের মধ্যে ভয়ও কাজ করছে। এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে এভাবে কেন বিয়ে করে। শুধু শধু এতো গুলা মানুষের সামনে লজ্জার একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। রিহাবের উপরে খুব রাগ হচ্ছে তার। নিজে তো এখানে না এসে লজ্জা থেকে বেঁচে গেলো। কিন্তু তাকে এরকম একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিলো। রিহাবের মা ইরার অবস্থা বুঝতে পেরে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন
–এই সময়টাতে এরকম মনে হওয়া স্বাভাবিক। একবার বিয়ে হয়ে গেলে সমস্ত ভয় কেটে যাবে।

তার কথা শুনে ইরা লজ্জায় আরও আড়ষ্ট হয়ে গেলো। এখন মনে হচ্ছে ওই জায়গা থেকে পালাতে পারলে বাঁচে। কাদ কাদ মুখ নিয়ে চোখ তুলে ঈশার দিকে তাকাতেই ঈশা তার অগ্নি দৃষ্টি ফেলে বুঝে দিলো যে সে একটু বেশি বেশি করছে। তাই আর সাহস করলো না কিছু বলার। পুনরায় মাথা নিচু করে বসে থাকলো। রিহাবের মা ইরার হাত টেনে নিয়ে আংটি পরিয়ে দিলো। এতে ইরার ভয় যেন আরও বেড়ে গেলো। এখন সে রীতিমতো কাঁপছে। রিহাবের মা তার অবস্থা বুঝতে পেরে মাথায় হাত দিয়ে শান্ত সরে বলল
–তোমার আর এখানে দরকার নেই। তুমি এখন ঘরে যাও। আমরা কথা বলে বিয়ের ডেট ঠিক করে ফেলব।

কথা শুনে ইরা হাফ ছেড়ে বাচল। ঈশা উঠে ইরাকে ঘরে নিয়ে এলো। ইরা ঘরে এসে কয়েকবার জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো। তারপর নিজের হাতের আংটিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।

৫৪
ঈশা সব কাজ শেষ করে ঘরে ঢুকে দেখে ইভান বারান্দায় বসে আছে। অন্ধকার ঘরে চাঁদের আবছা আলোয় তার ছায়া পড়ছে। ঈশা ঘরের দরজা বন্ধ করে একটু দুরেই দাড়িয়ে বলল
–ওখানে কি করছ?
ইভান কোন কথা বলল না। ঘুরেও তাকালনা। হাতটা পিছনে বাড়িয়ে দিলো। ঈশা হেসে হাতে হাত রাখে। হাত ধরেই তার পাশে গিয়ে বসে। ইভান হাত ছেড়ে দিয়ে তাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে। ঈশা ইভানের ঘাড়ে মাথা রাখে। ইভান তাকে আরও শক্ত করে ধরে সামনে তাকিয়ে থাকে। ঈশা সামনে তাকিয়েই বলে
–সারাদিন এতো কাজ করে টায়ার্ড লাগছেনা? চল ঘুমাবে।
ইভান একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
–বিয়েটা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। বিষয়টা মোটামুটি এগিয়ে গেলো। এখন খুব ভালো লাগছে। বিয়েটা হয়ে গেলেই সব চিন্তা শেষ।
–কি করে পার এতো কিছু ক্লান্তি আসেনা।
আবেগি সরে ঈশা বলল। ইভান ঈশার কথা শুনে একটু হাসল। তারপর দুষ্টুমির সূরে বলল
–এতো বছর নিজের ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছি। তোর বোঝা উচিৎ আমার কত ধৈর্য।
ঈশা বুঝতে পেরে বলল
–আমি তো ধৈর্যের পরীক্ষা নেইনি। তুমি নিজেই দিয়েছ। এখন আমার উপরে দোষ চাপিয়ে দিলেই তো আমি নিবনা।
ইভান একটু হেসে বলল
–আমি তোকে কখনই কোন দোষ দেইনা জান। আমি জানি তুই যা কিছু করেছিস বা করিস সব কিছুই পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে।
ইভানের কথা শুনে ঈশার মন খারাপ হয়ে গেলো। এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা কি তার আসলেই আছে। ঈশার চুপ করে থাকা দেখে ইভান বলল
–কি ভাবছিস?
ঈশা কোন কথা না বলে ইভান কে জড়িয়ে ধরল। তার যে মন খারাপ সেটা বুঝতে পেরে ইভান তাকে আরও শক্ত করে ধরে বলল
–তুই এভাবে মন খারাপ করে আমার মনটাও খারাপ করে দিচ্ছিস সেটা কি মাথায় আছে?
ইভানের কথা শুনে ঈশা একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল
–সারাদিন সবার খবর রাখো। নিজের জন্যও তো একটু সময় রাখতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে শরীর খারাপ করবে। অসুস্থ হয়ে গেলে তখন আর কারও খোঁজ খবর রাখতে পারবে না।
ঈশার কথা শুনে ইভান একটু হেসে বলল
–আমার খবর রাখতে তো তুই আছিস। তাই আর নিজেকে নিয়ে ভাবিনা। ঈশা তার হাত দিয়ে ইভানের মুখ মুছে দিতে দিতে বলল
–হেয়ালি না করে যা বলছি শোন। আমার কথা না শুনলে আমার খুব রাগ হয় সেটা তো জানো নাকি?
ইভান একটু দুষ্টুমির সূরে বলল
–তা জানি। আর রাগ কিভাবে ভাঙ্গাতে হয় সেটাও জানি।
কথা শেষ করেই ঈশাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে আসলো। বিছানায় শুয়ে দিলো। ঈশা একটু বিরক্ত হয়ে বলল
–কি করছ?
বলেই উঠতে গেলে ইভান তাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলে
–কি করছি বুঝতে পারছিস না? অবশ্য না পারলেও অসুবিধা নেই একটু পরেই সব পরিস্কার বুঝতে পারবি।
ইভানের কথার মানে বুঝতে পেরে ঈশা তাকে সরাতে চেষ্টা করে বলল
–সর! আমার ঘুম পাচ্ছে।
ঈশার গলায় কিস করতে করতে বলল
–এতো সহজ না জান। আমি যতক্ষণ ঘুমাতে দিবনা ততক্ষন তুই চাইলেও ঘুমাতে পারবি না। তাই আর সময় নষ্ট না করে যা হচ্ছে মেনে নে। নাহলে তোর ঘুমাতে দেরি হয়ে যাবে আমাকে কিছু বলতে পারবি না।
ঈশা অনুরধের সূরে বলল
–ছেড়ে দাওনা প্লিজ!

ইভান আর কোন কথা না বলে ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পড়লো। ঈশা উঠে বসলো। নিজের কাপড় ঠিক করতে করতে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান যে তার উপরে রাগ করেছে বেশ বুঝতে পারল। তাই ইভানের পাশে শুয়ে পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল। ইভান এক ঝটকায় তার হাত সরে দিলো। কিন্তু ঈশা কিছুতেই হার মানার পাত্রি না। আবারো তাকে জড়িয়ে ধরল। এবার ইভান রাগ করে হাত সরিয়ে দিয়ে বলল
–বিরক্ত করিস না ঘুমাতে দে।
ঈশা উঠে শরীরে হালকা ভর দিয়ে নিজের থুতনি রেখে আদুরে কণ্ঠে বলল
–শোননা!
ইভান ঘুরে রাগী চোখে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–মাঝরাতে কি থাপ্পড় খাওয়ার সখ জেগেছে? সখ নাহলে চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো শুয়ে পড়।
ঈশা নাছোড়বান্দার মতো নিজের মুখটা ইভানের মুখের অনেকটা কাছে এনে একটু হেসে বলল
–তুমি আমাকে থাপ্পড় মারবে?
ইভান ঈশার কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারলনা। কারন ঈশা ভাল করেই জানে সে শুধু মুখেই বলবে কখনই তাকে থাপ্পড় মারবে না। ইভান ঈশার কপালে একটা আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে তার মুখটা সরিয়ে দিতে দিতে গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–নাটক বাদ দিয়ে শুয়ে পড়। আর আমাকেও ঘুমাতে দে।
ঈশা উঠা বসে পাশ ঘুরে বলল
–ঠিক আছে ঘুমাচ্ছি কিন্তু তুমি আমাকে ভুলেও টাচ করবে না। যদি করেছো তাহলে খুব খারাপ হবে কিন্তু। মনে রেখো।
বলেই শুতে যাবে তখনি ইভান তাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে দাতে দাঁত চেপে বলল
–আমার যখন ইচ্ছা হবে তখন তোকে টাচ করবো। সেটার জন্য আমার কারও পারমিশন নেয়ার প্রয়োজন নেই।
–মগের মুল্লুক পেয়েছ? তোমার ইচ্ছা মতো সব হবে? ছাড়ো আমাকে।

ঈশার এমন উত্তপ্ত কথা শুনে ইভান রেগে তাকে আরও জোরে চেপে ধরে তার ঠোঁট দুটোতে রুডলি কিস করতে শুরু করলো। কিন্তু কিছুক্ষন পর ইভানের সব রাগ পানি হয়ে গেলো। সে ঈশার ঠোঁট দুটো পরম ভালবাসায় অনুভব করছে। ঈশাও চোখ বন্ধ করে ইভান কে অনুভব করছে। কিছুক্ষন পর ঈশার ঠোঁট ছেড়ে তার গালে নাক ঘোষতে ঘোষতে বলল
–আমাকে কিভাবে কন্ট্রোল করতে হয় সেটা খুব ভালভাবেই আয়ত্ত করেছিস।
ঈশা মুচকি হেসে ইভানকে জড়িয়ে ধরল।

চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-২২

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২২

৫১
গোধূলি বেলায় আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে। চারিদিকে সূর্য তার লাল আভা ছড়িয়ে দিগন্তের মাঝে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নারিকেল গাছের মাথায় লাল সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে একটু একটু করে। তার আশে পাশেই পাখি উড়ছে। ইরা নিস্পলক সেদিকে তাকিয়ে আছে। সূর্য ডোবা দেখার ভাগ্য এভাবে আগে কখনও হয়নি। প্রতিটা সেকেন্ডে সূর্যটা একটু একটু করে অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে। কি অদ্ভুত দৃশ্য। প্রকৃতি সত্যিই মনোরম। শত মন খারাপের মাঝেও প্রকৃতি মন ভালো দেয়। ইরা মাথা তুলে আরও উপরে তাকাল। পুরো আকাশের দিকে তাকিয়ে ইরার মনটা ভীষণ করে কারও শুন্যতা জানিয়ে দিলো। কিন্তু কে সে? ইরা মাথা নামিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কারও অস্পষ্ট অবয়ব দেখা যাচ্ছে। তার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে আবার ভাবনায় ডুব দিলো। ঈশা ধির পায়ে ইরার পাশে এসে দাঁড়ালো। ইরাকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলল
–তোর কি মন খারাপ?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইরা ছোট্ট করে না বলল। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি জানি তোর মন খারাপ। কিন্তু যদি বলতে না চাস তাহলে বলিস না আমি জোর করবো না।
ইরা সামনে তাকিয়ে বলল
–আচ্ছা আপু ভালোবাসা কিভাবে হয়?

ইরার প্রশ্ন শুনে ঈশা স্ট্যাচু হয়ে গেলো। এই প্রশ্নের উত্তরে তার কি বলা উচিৎ সেটা সে জানেনা। ইভানের প্রতি তার অনুভুতি গুলো ধিরে ধিরে তৈরি হয়েছিলো। সেই ছোট বেলা থেকেই। তার সমস্ত কিছু ঘিরে শুধু ইভানই ছিল। এই অনুভুতি কবে কিভাবে তৈরি হয়েছে তা নিয়ে সে কখনই ভাবেনি। তার এই সুপ্ত অনুভুতি প্রকাশ পেয়েছে যখন অন্য কারও সাথে বিয়ের কথা হচ্ছিলো। কিন্তু তার আগে এই পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছেছে তা সে জানেনা। ইরা আবারো বলল
–তুমি তো ভাইয়া কে ভালবাস তাহলে বল কিভাবে ভালোবাসা হয়?
ইভান সিঁড়ি থেকেই দুজনের কথা শুনছিল। ঈশার অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে গিয়ে বলল
–কাকে জিজ্ঞেস করছিস? তোর বোন যে আমাকে ভালবাসে সেটাই বুঝতে পেরেছে যখন অন্য কাউকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলো। তার আগে তো এসব মাথাতেই ছিলোনা।
ঈশা রেগে ইভানের দিকে তাকাল। ইরা ইভানের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–কি বলছ ভাইয়া? এতো ভালবেসেও বুঝতে পারেনি কেন?
–বোঝার জন্য মাথায় বুদ্ধি থাকতে হয়। সেটা নেই তাই।
ইভানের কথা শুনে ঈশা চরম রেগে গেলো। চলে যেতে নিলে ইভান হাত টেনে ধরে বলে
–আমি তোকে বোঝার সুযোগ দেইনি। আমার ভালোবাসার বৃত্তে আবদ্ধ করে রেখেছিলাম যাতে ভালোবাসার মধ্যে থাকা কোন কষ্টই তোকে ছুঁতে না পারে।
ইভানের কথা শুনে ঈশার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ইভানও একটু হাসল। ইরা ইভানের কথার মানে বুঝতে চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না। ঈশা একটু হেসে বলল
–আমি একটু আসছি।
ইভান তার হাত ছেড়ে দিলো। ইরা আবার সামনে তাকাল। তাকে এভাবে ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে ইভান তার মাথায় হাত দিয়ে বলল

–আমি জানি তুই কি ভাবছিস। যে কোন সম্পর্কের মাঝে ভালো থাকার প্রধান শর্ত হচ্ছে বিশ্বাস। আর বিশ্বাস থাকলে ভরসা আপনা আপনিই চলে আসে। আর এই দুইটার সমন্বয় হল ভালোবাসা। ভালবেসে যেমন ভালো থাকা যায় তেমন ভালো থেকেও ভালোবাসা যায়। আসলে ভালোবাসার ধরনটা ওই দুইটা মানুষের উপরে নির্ভর করে যারা একসাথে থাকতে চায়। তারা কিভাবে ভালবাসতে চায় সেটা তাদের উপরে নির্ভর করে। সবার ভালোবাসার ধরন এক না। একেক জনের মনের অনুভুতি একেক রকম। সেটা প্রকাশ করার ধরনও একেক রকম। তুই তোর মনের অনুভুতি কিভাবে প্রকাশ করবি সেটা সম্পূর্ণ তোর উপরে নির্ভর করে।

একটু থেমে আবার বলল
–যে কোন সম্পর্ক তোকে নিজে থেকে কিছুই দেবেনা। নিজের জায়গাটা নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হয়। যে কোন একজনকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে অপরজনের অপেক্ষা করতে হয়। তা নাহলে সুপ্ত অনুভুতি দিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে যায়না। এক কথায় তোর অনুভুতি সামনের মানুষটার প্রতি যেমনই হোক না কেন সেটা প্রকাশ করাটাই ইম্পরট্যান্ট অনুভূতির ধরনটা না।

ইরা সামনে তাকিয়েই বলল
–আমি বুঝব কিভাবে তার প্রতি আমার অনুভুতি আছে কিনা?
ইভান সামনে রেলিঙ্গে কনুইয়ের উপরে ভর দিয়ে বলল
–সেই মানুষটার কোন কথা যখন তোর মনের উপরে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে তখন বুঝবি তার প্রতি তোর অনুভুতি আছে। এই অনুভুতি গুলো খুব সূক্ষ্ম হয়। এগুলো বলে বোঝানো সম্ভব না। অনুভব করতে হয়। তুই জানতে চাইলি এতো ভালোবাসার পরেও ঈশা কেন বুঝতে পারেনি। আসলে আমি ওকে এসব অনুভুতি বোঝার সুযোগ দেইনি। আমাকে প্রয়োজন হওয়ার আগেই কাছে পেয়েছে। মিস করার আগেই সামনে এসেছি। আমার কোন কথায় কষ্ট পেলে বা রাগ করলে সেটা মনে কোন রকম প্রভাব ফেলার আগেই আমি তার সেই কষ্ট বা রাগ মন থেকে দূর করে দিয়েছি। আমার অনুভুতি প্রকাশের ধরন এটাই।

ইরা কিছুক্ষন ইভানের দিকে তাকিয়ে থেকে সামনে তাকাল। ইভানের কথা তার মাথায় ঢুকলেও এখনো কোথাও একটা কনফিউশন কাজ করছে। আদৌ তার মনে কোন অনুভুতি আছে কিনা সেটা সে বুঝতে পারছেনা। আর এটাই খুব স্বাভাবিক। কারন এই মুহূর্তে সে বুঝতে চাইছে যে এটা যদি ভালোবাসা হয় তাহলে আগের অনুভূতিটা কি ছিল? সেটা জতক্ষন সে বুঝতে পারেনি ততক্ষন তার কাছে কিছুই স্পষ্ট না। বেশ কিছুক্ষন দুজনে চুপ থাকার পর নিরবতা ভেঙ্গে ইভান বলল
–ডিসিশন নেয়াটা খুব কঠিন হয়ে গেলো তাই না?
ইরা তার দিকে তাকাল। ইভান কি বলতে চাইছে সেটা বুঝতে পারল না। আবার এই মুহূর্তে সে কি ভাবছে সেটাও বুঝতে দিতে চাইছেনা। তাই খুব ম্লান গলায় বলল
–কিসের ডিসিশন ভাইয়া?
ইভান সামনে তাকিয়েই একটু হাসল। তারপর বলল
–তুই এখন যার কথা ভাবছিস আমিও তার কথাই বলছি।
ইরা অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। কাপা কাপা গলায় বলল
–কাকে নিয়ে ভাবছি?
ইভান আগের অবস্থা থেকেই বলল
–বলেছিলাম না কোন কিছুই আমার চোখ এড়ায় না। তোর এই অনুভুতি গুলোও আমার চোখে ভালভাবেই পড়েছে। তুই নিজে যেটা বুঝতে পারিস নি সেটাও আমার বুঝতে বাকি নেই। নিজের অনুভুতি গুলো প্রকাশ করতে হয়। দেরি হয়ে গেলে তখন সেগুলোর কোন মুল্য থাকেনা।

ইরা অবুঝের মত তাকিয়ে থাকে। ইভান একটু হেসে ইরার মাথায় হাত দিয়ে বলে
–আচ্ছা তোর জন্য একটু সহজ করে দেই। সবাই কিন্তু রাজি। রিহাব কে সবার খুব পছন্দ হয়েছে।

ইভানের কথা শুনে ইরা একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। নিচে তাকিয়ে থাকে। কি বলবে বুঝতে পারেনা। ইভান কোন কথা না বলে নিচে চলে যেতে নিলে ইরা মন খারাপ করে বলে
–রিহাব ভাইয়ার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে?
এমন অবুঝের মত প্রশ্ন শুনে ইভান খুব বিরক্ত হয়। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুরে তাকিয়ে বলে
–সিরিয়াসলি ইরা! তুই কি সত্যিই এতো বোকা।
ইরা ইভানের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
–কাল বিয়ে। তোকে দাওয়াত দিয়েছে। তোর সুযোগ মতো ওর হসপিটালে চলে যাস। সেখানে গেলেই সব দেখতে পাবি। আমি এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।

বলেই ইভান চলে যায়। ইরা গভীর ভাবনায় ডুবে যায়। ইভানের কথার মানে বুঝতে চেষ্টা করে। সে যতই বোকা হোক হসপিটালে যে কারও বিয়ে হয়না সেটা খুব ভালো মতো বুঝতে পারছে। কিন্তু ইভান ওকে কেন যেতে বলল? বেশ কিছুক্ষন ভাবার পর ইরার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে ইভানের কথার মানে বুঝতে পেরেই হাসি মুখে এক দৌড়ে নিচে চলে গেলো।

৫২
ইরা রিসিপশনে দাড়িয়ে আছে। একজন মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো
–হাউ মে আই হেল্প ইউ ম্যাম?
–ডাক্তার রিহাব আছেন?
মেয়েটা ইরাকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলল
–ওনার সাথে কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?
ইরা মাথা নাড়িয়ে না বলল। মেয়েটি বলল
–স্যার আজকে সারাদিন বিজি থাকবেন। ওনার সাথে দেখা হবেনা।
ইরা তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলল
–উনি এখন কি করছেন?
মেয়েটি ইরার উপরে বিরক্ত হয়ে বলল
–স্যার এখন রাউন্ডে আছেন। কিন্তু দেখা হবেনা ওনার সাথে।

ইরা মেয়েটির দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে কোন কথা না বলে সোফায় বসে ওয়েট করতে লাগলো। কাজ শেষ করে রিহাব ওই দিক দিয়েই যাচ্ছিলো। হঠাৎ ইরার দিকে চোখ পড়তেই দাড়িয়ে গেলো। তার এখানে থাকার কারণটা রিহাবের বোধ গম্য হলনা। ইরার সামনে দাঁড়ালো। কিন্তু ইরা গভীর ভাবে ফোনের মাঝে ডুবে আছে। রিহাব ইরাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো
–তুমি এখানে?
রিহাবের কথা শুনে ইরা খানিকটা চমকে গেলো। তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পাশে ব্যাগটা হাতে নিয়ে দাঁড়ালো। সামনের ছোট ছোট চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল
–অন্য কারও আসার কথা ছিল কি?
রিহাব তার কথা শুনে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। তারপর রিসিপশনের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি একটু বিজি থাকব। কিছুক্ষনের জন্য আমাকে ডিস্টার্ব করবে না।
ইরার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল
–আমার সাথে আসো।

ইরা মেয়েটার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রিহাবের সাথে চলে গেলো। রিহাব ইরাকে তার কেবিনে আনল। তারপর সামনে সোফায় বসতে বলল। ইরা চারিদিকে ভালো করে দেখে নিয়ে সোফায় বসে পড়লো। রিহাব তার পাশে বসে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–কখন এসেছ?
ইরা ফোনের দিকে চোখ রেখেই বলল
–১৫ মিনিট হবে।
–কি খাবে?
ইরা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে রিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল
–কফি।
রিহাব দুইটা কফি দিয়ে যেতে বলল। পানির গ্লাস হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়েই বলল
–তুমি এখানে হঠাৎ?
ইরা কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–তার মানে আমি আসাতে আপনি খুশি হন নি?
রিহাব পানিটা শেষ করে গ্লাসটা রেখে বলল
–আমি সেরকম কিছুই বলিনি বা ইঙ্গিতও করিনি। আবার এভাবে তোমাকে এখানে এক্সপেক্টও করিনি। তাই একটু কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইছি কারণটা।

ইরা একটু হেসে বলল
–কেন কোন কারন ছাড়া কি আমি আপনার কাছে আসতে পারিনা?
রিহাব খুব সোজা সাপটা উত্তর দিলো
–আমার মনে হয়না কোন কারন ছাড়া আমার কাছে তোমার আসা উচিৎ।

রিহাবের কথা শুনে ইরার মন খারাপ হল। ফোনটা বন্ধ করে রিহাবের দিকে মনোযোগ দিলো। সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ইরা খুব শান্ত গলায় বলল
–রিহাব ভাইয়া একটা মানুষ যখন তার ভুল বুঝতে পেরে নিজে থেকেই মাফ চায় তখন আমার মনে হয় তাকে মাফ করে দেয়া উচিৎ।
রিহাব ইরার দিকে তাকাল। একটু হেসে স্বাভাবিক ভাবে বলল
–তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?
ইরা রিহাবের দিক থেকে চোখ নামিয়ে মিন মিনে কণ্ঠে বলল
–বিষয়টা ঠিক……।
ইরা কথা শেষ করতে পারেনা। থেমে যায়। রিহাব তার দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করে
–বিষয়টা কি ইরা?
ইরা এবার কঠিন হয়ে বলল
–না বোঝার তো কিছু নেই। আমি এখানে এতো আয়োজন করে নিশ্চয় আপনার বিয়ের দাওয়াত খেতে আসিনি।
রিহাব একটু হেসে বলল
–তাহলে কেন এসেছ?
ইরা চোখ নামিয়ে নিল। এক রাশ হতাশা নিয়ে বলল
–যে অনুভুতি বুঝে তাকে অপেক্ষা করানো ঠিক না আর যে বোঝেনা তাকে বোঝানো কি আপনার দায়িত্ব না?
ইরার কথার মানে বুঝতে পেরে রিহাব খুব শান্ত গলায় বলে
–আমি তো সব দায়িত্বই নিতে চেয়েছি। কিন্তু তুমি তো চাওনি।
ইরা ছল ছল চোখে কাপা কাপা গলায় বলল
–এখন কি সম্ভব না?

ইরার কথা শেষ হতেই দুই ফোটা পানি গাল বেয়ে পড়লো। সে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারল না। রিহাব তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে এক হাতে তার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলে
–কষ্ট পাচ্ছ তবুও নিজের মনের কথাটা বলতে পারছনা।

রিহাবের এমন আদুরে কণ্ঠে ইরা নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না। তার চোখ বেয়ে আরও দ্রুত পানি ঝরতে লাগলো। কিন্তু এতো কষ্টের মাঝেও রিহাবের কাছেই তার ভাললাগছে। সে এই মুহূর্তটাকে মিস করতে চাইছেনা। তাই নিজেও সব সংকোচ পেরিয়ে রিহাবকে জড়িয়ে ধরল। রিহাব ইরার এভাবে জড়িয়ে ধরায় তাকে নিজের সাথে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলল
–আমি আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলেছি। কাল তোমাদের বাসায় যাবে সবার সাথে কথা বলতে।

কথাটা ইরার কানে আসতেই সে বাস্তবে ফিরে আসে। নিজের এমন কাণ্ডে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। রিহাব কে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে যায়। রিহাব নিঃশব্দে হেসে বলে
–এভাবে লজ্জা পেলে সারাজীবন আমার সাথে থাকতে পারবে তো?
ইরা তার কথায় আরও লজ্জায় মিইয়ে যায়। মাথা নামিয়ে হাসে। তার সেই সম্মতির হাসি রিহাবের মনকে শান্ত করে দেয়।

চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-২১

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২১

৪৮
চেয়ারে হেলানি দিয়ে স্থির দৃষ্টিতে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে ইভান। দরজায় নক করতেই ওই অবস্থা থেকেই বলল
–কামিং!
বলেই চোখ তুলে তাকাতেই দেখল রিহাব অগ্নি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে ইভান একটু হাসল। তারপর খুব শান্ত ভাবে বলল
–বস।
রিহাব রেগে বলল
–আমি যা জানতে এসেছি সেটা বল।
ইভান একটু হেসে বলল
–আগে তো বস। তারপর বলি। অনেক কথা তো। বলতে সময় লাগবে।
রিহাব সামনের চেয়ারে বসে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–তোর এলোমেলো কথায় আগেই সন্দেহ হয়েছিলো কিন্তু এরকম কিছু সেটা বুঝতে পারিনি।
ইভান শব্দ করে হাসল। রিহাব রেগে বলল
–তুই কি জানিস ওখানে কি হতে যাচ্ছিলো? কোন ধারণা আছে আমি একটু লেট করলে কি হতো?
ইভান শান্ত দৃষ্টিতে রিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল
–তোর কি মনে হয় আমি কোন প্রস্তুতি ছাড়াই এরকম একটা কাজে হাত দিবো। তোর সাথে সেদিন কথা বলেই আমি সব খবর নেই। শোভনের সাথে ইরার প্রেমের সম্পর্ক হয়ত এখনো হয়ে উঠেনি তবে ইরার অনুভুতি গুলো তার প্রতি ধিরে ধিরে গভীর হতে শুরু করেছিলো। শোভন সব কিছুই খেয়াল করছিলো। আর সে অল্প কিছুদিনেই ইরাকে প্রপোজ করত। আর ইরা যেহেতু ওকে পছন্দ করে তাই না বলার কোন প্রশ্নই উঠে না। শোভনের আচরণ সম্পর্কে ইরা কিছুই জানেনা। আর জানালেও সে বিশ্বাস করত না। উলটা আমাকেই ভুল বুঝত। যে বোকামিটা তুই করেছিস। তাই তো ছোট একটু নাটক করতে হল।
রিহাব হতাশ হয়ে বলল
–তুই তো নিজেও এটা করতে পারতিস আমাকেই কেন পাঠালি?
ইভান মুখ চেপে হেসে বলল
–নাহলে এই ভুল বুঝাবুঝির অবসান হতে আরও দেরি হতো। কিন্তু আমি আর সময় নষ্ট চাইনা। আমি চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হয়ে যাক।
রিহাব এবার রেগে চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল
–তুই যা ভাবছিস তা কখনই হবে না। ইরা এই বিয়েতে রাজি না। আর আমি ওকে জোর করে বিয়ে করবোনা।
কথা শেষ করেই রিহাব চলে যাওয়ার জন্য যেতে নিলেই ইভানের কথায় থেমে যায়।
–যদি ইরা রাজি হয় তাহলে?
রিহাব এবার নিজেকে শান্ত করে আবার ইভানের সামনের চেয়ারে বসে খুব শান্ত ভাবে বলল
–তুই আসলে কি চাইছিস বল তো?
–আমি চাইছি তোর আর ইরার বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়ে যাক।
–কিন্তু আমি এই বিয়ে করতে চাইছিনা।
–তুই তো ইরাকে পছন্দ করিস তাহলে কেন চাইছিস না?
–আমি ইরাকে পছন্দ করি ঠিকই কিন্তু ইরা আমাকে পছন্দ করেনা। তাই আমি জোর করে কিছুই করতে চাইছিনা।
–ইরা খুব ইমোশনাল। ওর ইমোশন ক্যাপচার করা খুব একটা কঠিন ব্যাপার না।
রিহাব একটু রেগে বলল
–তুই কি বলছিস সেটা বুঝতে পারছিস নাকি না বুঝেই বলছিস? সব জায়গায় তোর এই নাটক কাজে দেয়না ইভান। এটা আমার লাইফ! সারাজিবনের একটা সম্পর্ক। আমি এখানে কোন রিস্ক নিতে চাইনা। আমি এমন কিছুই করতে চাইনা যাতে এটার প্রভাব ভবিষ্যতে পড়ে। তুই কি আবার সেই ৫ বছর আগের ঘটনা তৈরি করতে চাইছিস? তোর অনেক ধৈর্য তাই তুই সব কিছু মেনে নিয়েছিলি। কিন্তু আমার অতো ধৈর্য নেই। আমি আমার জীবনের এতগুল বছর সামান্য একটা ভুল বুঝাবুঝির অবসান হওয়ার অপেক্ষায় নষ্ট করতে পারিনা।
ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–আমার আর ঈশার বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। তুই সবটা জেনেও এমন কথা কেন বলছিস? আমাদের মধ্যে আদৌ কি কোন ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো? ঈশার মধ্যে আমাকে বোঝার ভুল থাকতে পারে কিন্তু আমার মধ্যে ঈশার প্রতি কোন মান অভিমান কিছুই ছিল না। আমাদের সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্য অনেক কিছুই করা হয়েছিলো। আর আমি এতো বছর ঈশার উপরে অভিমান করে যে দূরে ছিলাম না সেটা তুই জানিস। কারণটাও ভালো করেই জানিস। তাই এরকম ভাবার কোন কারন নেই। আর এখানে ভুলের কোন জায়গা নেই রিহাব। ইরাকে শুধু ওর ভুলটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। যা হয়েছে সেটা আজ নাহলেও পরে তো হতোই। তখন কি হতে পারতো ভেবেছিস একবারও।
রিহাব একটু ভেবে বলল
–আমাকে নিয়ে ইরার মনে এমনিতেই অনেক খারাপ ধারনা আছে। কিছু করতে গিয়ে বিষয়টা যদি আরও খারাপ হয়ে যায় তাহলে?
ইভান একটু হেসে বলল
–ওই সিচুয়েশনে তুই শোভনের থেকেও ওর কাছে বেশি অপরিচিত ছিলি। কিন্তু শোভনের কাছ থেকে বাঁচতে তোকে জড়িয়ে ধরা মানে বিশ্বাসটা কত বেশি সেটা বোধ হয় আর বলার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া তুই নিজেই তো শোভন কে বলেছিস যে তোর বুকেই ইরা নিজেকে সেফ মনে করছে।
ইভানের কথা শুনে রিহাব একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কারন এতো টেনশনের মাঝে এই বিষয়টা রিহাবের মাথাতেই ছিলোনা। ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–সব কিছু গুছিয়ে রেখেছিলিস আগে থেকে। তুই যে কি……।
ইভান তার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বলল
–সব কিছু গোছানো ছিল কিন্তু এটা ছিলোনা। আমি আসলে এটাই দেখতে চেয়েছিলাম ইরার চোখে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি দেখতে পাব তা ভাবিনি। এখন শুধু ইরাকে রিয়েলাইয করানোর পালা।
রিহাব ইভানের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেয়ার থেকে উঠে বলল
–আমার কাজ আছে। আমি যাচ্ছি।
বলেই দরজা খুলতে গেলেই পিছন থেকে ইভান আবার বলল
–তোর হবু বউকে বিয়ের দাওয়াত টা কাল বাসায় এসে দিয়ে যাস। পাত্রির নামটা নাহয় গোপন থাকলো।
রিহাব বিরক্ত হয়ে বলল
–তোর যা মনে চায় কর। আমাকে এসব বলিস না।
ইভান একটু হেসে বলল
–ঠিক আছে। আমিই নাহয় সব করবো। তোর কিন্তু দাওয়াত থাকলো কাল। কাজ শেষ করে আসিস।

৪৯
অনেক রাত হয়েছে। ঈশা ইভানের জন্য অপেক্ষা করছে। আসতে এতো দেরি হচ্ছে কেন? খুব চিন্তা হচ্ছে তার। ভাবনার মাঝেই কলিংবেল বেজে উঠলো। ঈশা দরজা খুলে কঠিন ভাবে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান শান্ত ভাবে বলল
–সরি জান। দেরি হয়ে গেলো।
ঈশা কোন কথা না বলে ঘরে চলে এলো। ইভানও ঈশার পিছনে ঘরে চলে এলো। ঈশা কোন কথা বলছেনা। ইভান তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
–আজকে একটা খুব জরুরী মিটিং ছিল। কিছু নতুন স্টাফ জয়েন করলো। তাদের জন্যই মিটিং। তাই শেষ করতে দেরি হয়ে গেলো।
ঈশা এমন ভাব করলো যেন ইভানের কথা তার কানেই গেলনা। ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিলো। একটু দূরে দাড়িয়ে আছে হাত গুঁজে। বেশ কিছুক্ষন ইভানের উপস্থিতি না পেয়ে ঈশা পিছনে ঘুরে তাকায়। ইভান তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা রেগে গিয়ে বলল
–তুমি খুব খারাপ একটা মানুষ।
ইভান হাসতে চেয়েও চেপে গিয়ে একি অবস্থা থেকেই বলল
–এটা পুরাতন কথা। নতুন কিছু বল।
ঈশা আরও রেগে বলল
–তোমার মতো বাজে দুনিয়াতে আর একটাও নেই। আমার কাছে আসবেনা একদম। দূরে যাও।
ইভান নিজের হাসি চেপে রেখে বলল
–মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে গেছে। চোখে কি কম দেখছিস? আমি আমার জায়গাতেই আছি। কাছে যাইনি তো।
কথাটা শেষ হতেই ঈশার মেজাজ চরম খারাপ হয়ে গেলো। সে বের হয়ে যাবে তখনি ইভান তার হাত টেনে তাকে দেয়ালের সাথে আটকে দেয়। ঈশা নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে। ইভান কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
–এভাবে অকাজে নিজের শক্তি প্রয়োগ করে লাভ নেই। তুই নিজেকে ছাড়াতে পারবিনা।
ঈশা থেমে গেলো। মাথা নিচু করে মুখ কাল করে দাড়িয়ে থাকলো। ইভান ঈশার সামনের চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে কোমর টেনে তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। ঈশা ইভানের শার্টের কিছু অংশ খামচে ধরে। ইভানের ভারি নিশ্বাস ঈশার মুখে পড়ছে। মাতাল করা পারফিউমের সেই ঘ্রান ঈশাকে আরও কাছে টানছে। ইভান ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুই কি সত্যিই চাস আমি তোর কাছে আসবনা। ঠিক আছে। তাহলে আসবো না।
বলেই ঈশাকে ছেড়ে দিলো। ঈশা রেগে আগুন হয়ে গেলো। সে ইভানের কাছে এসে তার শার্টের কলার টেনে ধরে মুখের কাছে নিজের মুখ এনে বলল
–তুমি চাইলেও আমার কাছ থেকে দূরে যেতে পারবে না। তোমাকে আমি আমার কাছে আসতে বার বার বাধ্য করবো।
ঈশার কথা শেষ হতেই ইভান তার ঠোঁট ঈশার ঠোটের মাঝে ডুবিয়ে দিলো। ইভানের মোহময় স্পর্শে ঈশার সব রাগ পানি হয়ে গেলো। সে চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে। ইভান দুই হাতে তাকে জড়িয়ে নিলো। ঈশাও ইভানের পিঠের শার্ট খামচে ধরল। কিছুক্ষন পর ইভান তার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
–সরি জান। আমি চাইলেও তোর রাগ ভাঙ্গাতে পারতাম না। কারন আমি জানি তোর রাগের থেকে জেদটা একটু বেশি। তাই আরেকটু সেটা বাড়িয়ে দিলে তুই জেদ করে নিজে থেকেই আমার কাছে আসবি আর আমার রাগ ভাঙ্গাতেও সহজ হয়ে যাবে। দেখ তাই হল।
ঈশা কোন কথা না বলে ইভান কে জড়িয়ে ধরল। ইভান নিশব্দে হেসে ঈশার মাথাটা তার বুকে চেপে ধরে বলল
–তোকে কখন কিভাবে কন্ট্রোল করতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি।
ঈশা বুকের ভিতরে মাথা রেখেই বলল
–ফ্রেশ হয়ে এসো। খাবে না।
–তুই খেয়েছিস?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। ইভান ঈশার চুলের ভাজে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
–মিটিং ছিল আজকে। তাই খেয়ে এসেছি।
ঈশা আর কিছু বলল না। ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
–আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ঈশার কপালে একটা চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

৫০
সবাই মিলে টেবিলে বসে খোশ গল্পে মশগুল। চায়ের সাথে আড্ডা বেশ জমিয়ে উঠেছে। ছোট বেলার কথা গুলো মনে করে সবাই হাসতে লাগলো। ইভান বারবার ঘড়ি দেখছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে কারও জন্য অপেক্ষা করছে। ঈশা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো
–কার জন্য এতো অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছ?
ইভান তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো। মুখের হাসিটা প্রশস্ত করে বলল
–রিহাব এসেছে।
বলেই ইরার দিকে তাকাল। ইরার কানে কথাটা যেতেই সে দরজার দিকে ঘুরে তাকাল। ঠোটের কোণে ক্ষীণ হাসি ইভানের চোখ এড়াল না। ইলহাম দরজা খুলে রিহাবকে ভিতরে ঢুকতে সাইড দিলো। রিহাব ঢুকেই ইরার দিকে তাকাল। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঘটনাটা বাড়ার আগেই ইভান বাধা দিয়ে বলল
–তাড়াতাড়ি আয়। তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
ইরার ঘোর কাটতেই সে মাথা ঘুরিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। রিহাব ইভানের পাশে এসে বসে। ইভান একটু হেসে রিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল
–ঈশা রিহাব বিয়ে করছে তোকে বলেছে?
রিহাব ইভানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে নিলো। ঈশা কৌতূহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো
–সত্যি ভাইয়া! কই আমি তো জানিনা।
ঈশার কথার উত্তরে রিহাব কি বলবে বুঝতে পারল না। অগ্নি দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান হালকা হেসে দুষ্টুমির সূরে বলল
–কি বলিস তোকে জানায় নি এখনো? ছি রিহাব! তুই ঈশাকে বলিস নি? আচ্ছা ঠিক আছে এখন বল।
রিহাব রেগে গেলো ইভানের কথায়। পাশ ফিরে ইরার দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো ইরার মুখও ভঙ্গি আগের মত নেই। মুখটা কাল করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটা যে তার পছন্দ হয়নি সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। রিহাব তার দিকে তাকিয়েই বলল
–আর কত অপেক্ষা করবো। তাই এবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম।
ইলহাম খুশি হয়ে বলল
–কবে বিয়ে হচ্ছে?
রিহাব একটু হেসে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–কথা চলছে। সব ঠিক থাকলেই এই সপ্তাহেই বিয়ে।
ইভান নিঃশব্দে হেসে ফেললো। ঈশা অবাক হয়ে বলল
–এতো তাড়াতাড়ি কেন?
–আসলে আব্বু আম্মু সামনে সপ্তাহে লন্ডন চলে যাবে। প্রায় ৬ মাসের জন্য। তাই তাদের তাগিদেই তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হচ্ছে। আর আমিও ভাবলাম যে অনুভূতির মুল্য বোঝে তাকে বেশিদিন অপেক্ষা করানো ঠিক না। নাহলে একবার সেই মানুষটা হারিয়ে গেলে শত চেষ্টায়ও আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না।
রিহাব কথাটা বলে মাথা নিচু করে হাসল। ইরা রিহাবের কথা শুনে তার দিকে তাকাল। রিহাবের কথাটা তাকে কোথাও একটা খুব করে আঘাত করলো। সেই আঘাতের মানেটা ইরার কাছে স্পষ্ট না। কারণটা সে এখনো বুঝতে পারছে না। রিহাবের সেই হাসি ইরার শরীরে একটা অদ্ভুত জ্বালার সৃষ্টি করছে। ইভান ঠোঁটে বাকা হাসি নিয়ে নিস্পলক ইরার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ইরা রিহাবের দিকে।

চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-২০

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২০

৪৬
ইরা খুব কষ্টে ঠেসে নাস্তা মুখে পুরছে। সকাল সকাল তার খেতেই ইচ্ছা হয়না। কিন্তু কি আর করার ভার্সিটি যেতে হবে। মা না খেয়ে যেতে দিবেনা। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। ইরার মা দরজা খুলে দিয়েই সহাস্যে বললেন
–আরে তুই। এই বাসায় তো আসাই বাদ দিয়ে দিয়েছিস। ঈশা যাওয়ার পর থেকে তোর ছায়াও দেখা যায়না এখন।
–এভাবেই বকতে থাকবে নাকি ভিতরেও যেতে বলবে।
ইভান অসহায়ের মতো বলল। একটু হেসে তিনি সাইড দিলেন ভিতরে ঢুকতে। ইভান ভিতরে ঢুকে টেবিলে বসে পড়লো ইরার সামনে। ইরাকে দেখে বলল
–তোর ক্লাস কখন?
ইরা অবাক হয়ে তাকাল। তারপর ধির গলায় জিজ্ঞেস করলো
–তুমি কিভাবে জানলে আমার এখন ক্লাস আছে?
ইভান সামনে থাকা গ্লাসে পানি ঢেলে একটু খেয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল
–কোন কিছুই আমার চোখ এড়ায় না।
ইভানের কথা গুলো ইরার শরীরে রীতিমতো ভয়ের আভাষ তৈরি করে দিলো। ইভান পানিটা শেষ করে বলল
–তুই রেডি?
ইরা মাথা নাড়াল। ইভান তার দিকে কঠিন ভাবে তাকিয়ে বলল
–চল।
ইরার বুঝতে বাকি থাকলো না যে ইভান তাকে আজ ভার্সিটি নিয়ে যেতেই এসেছে। কিন্তু কারণটা সে বুঝতে পারছেনা। তবুও কোন কথা না বলেই ব্যাগ গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তার দাঁড়ান দেখে ইভানও উঠে গেলো। একটু হেসে বলল
–আসি বড় মা। ইরাকে নামিয়ে দিয়ে আমি অফিসে যাব।
ইরার মা বলল
–কিছু খেয়েছিস সকালে? খেয়ে যা।
–তোমার মেয়ে কি আমাকে না খেয়ে বের হতে দিবে? এখন আর কিছু খাবনা। আসলাম।
ইভান হেসে ইরার পিছনে পিছনে নামতে শুরু করলো। ইরা নেমে গাড়ির পাশে দাড়িয়ে থাকলো। ইভান গাড়ির দরজা খুলে ইরাকে বলল
–ওঠ।
ইরা উঠে পড়লো। ইভানও গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলো। ইরা কোন কথা বলছে না। চুপচাপ সামনে তাকিয়ে আছে। ইভান নিরবতা ভেঙ্গে বলল
–তোর ক্লাস কখন শেষ হবে?
–১.৩০ এ ভাইয়া।
–আমি নিতে আসবো।
ইভানের দিকে একটু অবাক হয়ে তাকাল ইরা। ইভানের এমন আচরণ ইরার খুব একটা ভালো মনে হচ্ছেনা। এরকম করার কারন কি? তাহলে কি রিহাব কিছু বলেছে ইভান কে? তাই হবে। নাহলে ইভান এমন আচরণ কখনই করত না। ইরার রিহাবের উপরে খুব রাগ হল। গাড়ি থেমে যেতেই ইরার ঘোর কাটে। ইরা চমকে উঠে চার পাশে তাকায় ভার্সিটিতে চলে এসেছে। দরজা খুলে নেমে যায়। ইভান তার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে
–এখন থেকে আমি তোকে নিয়ে আসবো আর আমিই নিয়ে যাব। অন্য কারও সাথে যাওয়ার কোন দরকার নেই।

ইভানের কথা শুনে ইরা স্বাভাবিক ভাবেই মাথা নাড়াল। ইভান চলে গেলো। রাগে ইরার চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেলো। সে ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে সে যে শোভনের সাথে আসে আর তার সাথেই যায় এসব ইভান জেনে গেছে। আর সেই জন্যই এরকম আচরণ করছে তার সাথে। আর এটা রিহাব ছাড়া কেউ বলেনি। কারন এতদিন তো ইভান কিছুই জানতে পারেনি। তাহলে এখন কিভাবে জানলো।
ইভান একটু দূরে গাড়ি দাড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নাম্বারে ফোন দিলো। খুব শান্ত ভাবে বলল
–ইরা আর রিহাবের বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেছে। আজ থেকে ৪ দিন পর। এখন কি করতে হবে তা কি নতুন করে বলতে হবে?
ওপাশে ফোনটা ধরে রাশিক একটু হেসে বলল
–তার দরকার হবে না। আমি বুঝে গেছি।
ইভান সশব্দে হেসে ফোনটা কেটে দিলো। ফোনটা হাতে ধরেই সামনে তাকিয়ে বলল
–আমি তোর উপরে কখনও জোর করে কিছুই চাপিয়ে দিতাম না ইরা। কিন্তু তুই যা করছিস তা তোর জন্য বিপদ ছাড়া আর কিছুই ডেকে আনবে না। আমি বেঁচে থাকতে তোর বিপদ কিভাবে হতে দেই। কিন্তু এই মুহূর্তে শোভনের সম্পর্কে তোকে কিছু বলেও লাভ হতোনা। তুই যে ওর জালে ফেসে গিয়েছিস। এখন তোর চোখে ওর খারাপ কিছুই পড়বে না। কিন্তু আজ তুই ওর আসল চেহারা দেখতে পাবি। তারপর তুই নিজে থেকেই এই সম্পর্ক ভেঙ্গে দিবি। আমি তো শুধু প্রতিনিধি হয়ে কাজ করবো। বিয়েটা তোর রিহাবের সাথেই হবে। এতেই তোর ভালো ইরা।

কথা শেষ করেই মুচকি হেসে রিহাবের নাম্বারে ফোন করলো ইভান। রিহাব ফোন ধরেই বলল
–তুই এই সময়? সব ঠিক আছে তো।
ইভান একটু হেসে বলল
–সব ঠিক আছে। তোকে একটা কাজ দিলে করতে পারবি?
–কি কাজ বল?
–ইরা ভার্সিটিতে অপেক্ষা করছে। আমার একটা কাজ আছে আনতে যেতে পারবোনা। তুই একটু যাবি?
ইভানের কথা শুনে রিহাব আকাশ থেকে পড়লো। কথাটা তার মাথায় ঢুকল না। ইভান আবার ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল
–আর কারও উপরে ভরসা করতে পারছিলাম না। তোর কথা মনে হতেই ফোন দিলাম।
রিহাব আর প্রশ্ন না করে চিন্তিত ভঙ্গিতে “হুম” বলল। ইভান তার সম্মতি পেয়েই ফোনটা কেটে দিলো। কারন বেশিক্ষন কথা বললেই রিহাব প্রশ্ন করবে যার উত্তর সে এখন দিতে পারবে না। তাই ফোন রেখেই বলল
–যা নিজের হবু বউকে গুণ্ডার হাত থেকে বাচিয়ে নিয়ে আয়।
তারপর আবার রাশিকের নাম্বারে ফোন করে বলল
–রিহাব আসছে। যা করার তাড়াতাড়ি কর। কিন্তু খেয়াল রাখিস ইরার যেন কোন ক্ষতি না হয়।
বলেই সে সোজা অফিসে চলে গেলো। রিহাব ভাবছে ইভানের হঠাৎ এমন কথার মানে কি? সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি আর করার দায়িত্ব যখন নিয়েছে পালন তো করতে হবেই। তাই মোবাইল আর গাড়ির চাবিটা নিয়ে বের হয়ে গেলো।

৪৭
ইরা ধির পায়ে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকছে। এমন সময় শোভন তার সামনে এসে দাঁড়ায়। সে শোভনের দিকে তাকায়। রাগে চোখ লাল হয়ে আছে। ইরা তার রাগের কারন বুঝতে না পেরে বলল
–কি হয়েছে? এমন রাগ করে আছো কেন?
শোভন চোখ মুখ শক্ত করে বলল
–তোমার সাথে কথা আছে।
–বল।
–এখানে না। আমার সাথে এসো।
ইরা বিরক্তি নিয়ে বলল
–আমার ক্লাস আছে শোভন। দেরি হয়ে যাচ্ছে। পরে কথা বলি?
শোভন দাতে দাঁত চেপে বলল
–আগে কথা শুনবে। পরে ক্লাস করবে।
কথা শেষ করে ইরাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সে ইরার হাত ধরে টানতে টানতে একটা ফাকা রুমে নিয়ে গেলো। তারপর ইরাকে ছেড়ে দিয়ে তার সামনে দাড়িয়ে বলল
–বিয়ে করছ তাহলে? এখন আমার প্রয়োজন শেষ তাই না।
ইরা ভ্রু কুচকে রেগে বলল
–কি সব বলছ? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে?
শোভন ইরার এক হাত শক্ত করে ধরে বলল
–ও ড্রামা কুইন এইসব আমার কাছে চলবে না। এতদিন ধরে আমার সাথে প্রেম করেছো আর এখন অন্য কাউকে বিয়ে করছ? আমাকে তো হাতও ধরতে দাওনি। আর ওই ডাক্তার কে সব দিয়ে দিবে।

শোভনের মুখে এমন নোংরা কথা শুনে ইরা নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না। কারন শোভন কে তার ভালো লাগতো ঠিকই কিন্তু তার সাথে এখনো গভীর প্রেমের সেরকম কোন সম্পর্কই তৈরি হয়নি। আর শোভন এরকম নোংরা কথা কিভাবে বলতে পারল? নিজের রাগটাকে দমন করতে না পেরে ইরা সজোরে শোভনের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। তারপর কঠিন গলায় বলল
–মুখ সামলে কথা বল। তোমার সাথে আমার কোন প্রেমের সম্পর্ক নেই। আমরা শুধুই বন্ধু ছিলাম। কিন্তু তোমার এই নোংরা কথা শোনার পর থেকে আর এই বন্ধুত্ব আমি রাখবো কিনা সেটা নিয়ে আমাকে ভাবতে হচ্ছে এখন।
–ও তাই নাকি। তো কত গভীর বন্ধুত্ব ছিল তোমার সাথে আমার তাই না? তাই তো সারাক্ষন আমার সাথে চ্যাটিং করতে। আমার জন্য অপেক্ষা করতে রাস্তায় দাড়িয়ে। আমার সাথে ভার্সিটি আসতে আমার সাথে যেতে। আমার দেয়া সমস্ত গিফট যত্ন করে রাখতে। আরও তো বন্ধু আছে। তাদের সাথেও কি এরকম সম্পর্ক ছিল?

ইরা কোন জবাব দিতে পারল না। কারন সত্যিই সে শোভন কে বন্ধুর চেয়ে একটু বেশিই ভাবতো। এই কারনেই তার প্রতি একটু দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। কিন্তু আজ এই অবস্থায় তার সমস্ত দুর্বলতা রাগে পরিণত হয়েছে। ইরা রেগে বলল
–শোভন তুমি কিন্তু বেশি বেশি করছ। তোমার সাথে কথা বলে নষ্ট করার মত সময় আমার নেই। আর তোমাকে বিয়ের কথা কে বলেছে? আমি কোন বিয়ে করছিনা।
শোভন ইরার অনেকটা কাছে চলে এলো। ইরা অপ্রস্তুত হয়ে দূরে সরে যেতেই তার ফোন বেজে উঠলো। হাতে থাকা ফোন উঠে নাম্বার টা চোখে পড়তেই একটু স্বস্তি পেলো সে। ফোনটা ধরেই বলল
–রিহাব ভাইয়া।
ইরা রীতিমতো হাপাচ্ছে। রিহাব একটু চিন্তিত হয়ে বলল
–তুমি কোথায় ইরা? আমি তোমার ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে আছি।
ইরা এবার আরও সাহস পেয়ে গেলো। একটা ঢোক গিলে বলল
–আমি ১০২ নাম্বার রুমে। এখনি আসছি।
ইরা ফোন কেটে দিয়ে তাড়াতাড়ি বের হতে যাবে তার আগেই শোভন তার হাত ধরে টেনে বলল
–তোমার নায়ক এসেছে বুঝি? তার কাছে যাবে? তাহলে আমার কি হবে? আমি তোমার জন্য এতদিন অপেক্ষা করলাম তার প্রতিদান কি শুধুই একটা থাপ্পড়?
ইরা এবার ভয় পেয়ে গেলো। শোভন একটু হেসে ইরাকে নিতেই পিছন থেকে বজ্র কণ্ঠের হুঙ্কারে থেমে যায়।
–হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ হার?
রিহাবের দিকে ঘুরে তাকায় দুজনি। ইরা শোভনের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সে তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। ইরা শত নড়াচড়া করেও পারছে না নিজেকে ছাড়াতে। রিহাব খুব শান্ত ভাবে বলে
–তোমার সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই আর আমি তৈরিও করতে চাইনা। ওকে ছেড়ে দাও।
শোভন স্বাভাবিক ভাবে বলল
–এক্সাকলি! আমিও সেটাই বলছি। আপনি কি জানেন ওর সাথে আমার কত দিনের প্রেমের সম্পর্ক। এতো কিছু জানার পরেও কিভাবে ওকে বিয়ে করবেন। আর জানতে চাইবেন না সম্পর্ক কতটা গভীর।
ইরা চিৎকার করে বলল
–তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। রিহাব ভাইয়া ঠিক ছিল। আমিই তোমাকে চিনতে পারিনি। পারলে কোন দিন তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতাম না।
কথা শেষ করে ইরা এক ঝটকায় নিজের হাত ছেড়ে নিলো। এক দৌড়ে এসে রিহাবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। রিহাব এক হাতে ইরাকে ধরে আরেক হাতের আঙ্গুল শোভনের দিকে তাক করে বলল
–এতদিনে যা করেছো সেই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু আজ বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো। এটার জন্য তুমি মাফ পাবে না। মনে রেখো।
শোভন খুব শান্ত ভাবে বলল
–কেন শুধু শুধু আমার গার্ল ফ্রেন্ডকে নিজের বউ বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ছেড়ে দিন না আমার হাতে।
রিহাব একটু হেসে বলল
–গার্ল ফ্রেন্ড তোমার কিন্তু তোমার থেকে আমার বুকেই নিজেকে বেশি সেফ মনে করে। দেখতে পাচ্ছ তো কত নিশ্চিন্তে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।

রিহাবের কথা শুনে ছলছল চোখে ইরা তার দিকে তাকাল। একটু অপ্রস্তুত হয়ে রিহাব কে ছেড়ে দিতেই সে আরও শক্ত করে ইরাকে জড়িয়ে ধরল নিজের সাথে। ইরা তার এরকম কাণ্ডে অবাক হয়ে দেখছে তার দিকে। রিহাব তার দিকে না তাকিয়েই ইরাকে জড়িয়ে ধরেই নিয়ে চলে গেলো। গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে ইরাকে বসিয়ে দিলো। তারপর নিজে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ইরা কেদেই যাচ্ছে। সে মেনেই নিতে পারছে না তার সাথে এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে যাবে। রিহাব একটু দূরে ফাকা জায়গায় গাড়িটা দাড় করাল। পানির বোতলটা ইরার কাছে এগিয়ে দিলো। ইরা মাথা নিচু করেই বোতলটা হাতে নিয়ে একটু পানি খেলো। তারপর রিহাবের হাতে বোতলটা দিয়ে বলল
–রিহাব ভাইয়া আ…।
ইরার কথা শেষ হওয়ার আগেই রিহাব ধমক দিয়ে বলল
–শাট আপ! এই সব কিছু তোমার নিজেকে বেশি বুদ্ধিমতি ভাবার ফল। কেমন সব ছেলের সাথে তোমার বন্ধুত্ব এখন বুঝতে পারছ তো? নাকি এখনো আমিই খারাপ আর সেই সব বন্ধুই ভালো। অদ্ভুত একটা মেয়ে তুমি। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর পরেও তোমার মাথায় কিছুই ঢুকে না। অবশ্য তুমি তো ভাবো আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্য ব্যস্ত হয়ে আছি। তাই এই সব নাটক করছি। ভুল ভাবছ ইরা। আমি তোমার বন্ধুর মত না যে জোর করে তোমাকে বিয়ে করবো।

ইরা কোন কথা বলল না। মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে। রিহাব ইরার অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–বি স্ট্রং! এতো ভেঙ্গে পড়ার কিছুই নেই। অনেক কিছুই হতে পারতো আমি সময় মত না পৌঁছালে। কিন্তু হয়নি। ভুলে যাও সবটা। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা কর।
তার কথা শুনে ইরা চোখ মুছে কাপা কাপা গলায় বলল
–আপনি এই সময় আমার ভার্সিটিতে কি করছিলেন? আর আমাকেই বা কেন ফোন দিয়েছিলেন?
তার কথায় রিহাবও একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কোন উত্তর না দিয়েই সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে। বিষয়টা তার কাছেও একটু অন্য রকম লাগছে। এতো সূক্ষ্ম ভাবে সবটা কোন কো-ইন্সিডেন্স হতে পারেনা। সে গভীর চিন্তায় ডুবে গেলো। আর ইরা তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখছে। এই মানুষটা আজ ফেরেস্তার মত তাকে বাঁচাতে এসেছে। না থাকলে অনেক কিছুই হতে পারতো। এই মানুষটাকে সে কত অপমান করেছে ওই শোভনের কথায়। ভাবতেই তার মধ্যে অপরাধবধ তৈরি হল। সে খুব শান্ত গলায় বলল
–রিহাব ভাইয়া সরি!
রিহাব ইরার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে তাকাল। তারপর গম্ভীর গলায় বলল
–তোমার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে থাকলেও আমি একি কাজ করতাম। তুমি এমন স্পেশাল কেউ না।
ইরা চোখ ঘুরিয়ে নিলো। বুঝতে পারল রিহাব তার উপরে রাগ করেছে। করবেই না বা কেন সব দোষ তো তার। সে রিহাব কে অপমান করেছে। রিহাব কি তাকে মাফ করবে?

চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-১৯

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৯

৪৪
ভেজা চুল হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে ইভান বাইরে এলো। ঈশা টেবিলে বসে চায়ে চুমুক দিয়ে ফোনে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে। ইভান ঈশার পাশের চেয়ারে বসে বলল
–বাসায় কেউ নেই?
–আমরা ছাড়া ইরা আর ইলহাম আছে। মা আর চাচি ফুপুর বাসায় গেছে। সবাই মিলে কোথায় যেন যাবে। আসতে সন্ধ্যা হবে।
–ওহ আচ্ছা!
ইভানের কথা সম্পূর্ণ না হতেই ইরা পিছন থেকে বলল
–ভাইয়া এভাবে বোরিং টাইম পাস করতে ভালো লাগছেনা। বিরক্ত লাগছে।
বলেই ইভানের পাশের চেয়ারে বসলো। ইভান কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো। ইরা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে ইরাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ঈশা ভিতর থেকে একটু মাথা বাকিয়ে দেখে হাস্যজ্জল চেহারা নিয়ে বলল
–আরে রিহাব ভাইয়া কেমন আছেন?
রিহাব একটু হেসে বলল
–ভালো আছি।
ইরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
–আমাকে দেখা শেষ হয়ে গেলে আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
রিহাবের এমন কথা শুনে ইরা বিরক্ত হল। একটু সরে দাঁড়ালো। রিহাব ভিতরে এসে চেয়ারে বসলো। ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমার চা কোথায়?
ঈশা একটু হেসে বলল
–আনছি।
ইরা দরজা লাগিয়ে একটা চেয়ার টেনে এনে বসে পড়লো। রিহাব ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুই এখন কেমন আছিস? রেস্ট নিচ্ছিস নাকি অফিসে জয়েন করেছিস?
ইভান খুব শান্ত গলায় বলল
–ভালো আছি। এখনো জয়েন করিনি। সাহিল সব সামলে নিচ্ছে।
রিহাবের দিকে একটু সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–তুই কি আমাকে দেখতে এসেছিস?
রিহাব একটু হেসে বলল
–তোদেরকে!
ইভান তার কথা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে ইরার দিকে তাকাল। ইরা চোখ নামিয়ে বসে আছে। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। রিহাবের আসাতে যে সে খুশি হয়নি তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ইভান বিষয়টাকে স্বাভাবিক করতে বলল
–ইরা তুই কি যেন বলছিলি?
ইরা চমকে উঠে তাকাল। একটু ভেবে বলল
–কই না তো!
ইভান তার আচরণে একটু অবাক হল। একটু আগেই খুব স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছিল কিন্তু এখন চুপ হয়ে গেলো। তাহলে কি রিহাবের আসাতে ইরা বিরক্ত হচ্ছে। আর হবেই বা কেন? রিহাব তো তাকে বিরক্ত করেনি। এমন সময় ল্যান্ড ফোন বেজে উঠলো। ইভান উঠে গেলো ফোনটা ধরতে। ইরা মাথা নিচু করেই আছে। রিহাব তার দিকে তাকিয়ে বলল
–ইরা।
ইরা মাথা না উঠিয়েই বলল
–কিছু বলবেন?
–কোন কারনে তুমি কি আমার উপরে বিরক্ত?
একি অবস্থা থেকেই বলল
–না তো।
–তাহলে কথা বলছনা যে।
–এমনি।
রিহাব এবার একটু ধমক দিয়ে বলল
–লুক এট মি!
ইরা ভ্রু কুচকে তাকাল। একটু কড়া গলায় বলল
–কি বলতে চান ক্লিয়ার করে বলুন। এতো হেয়ালি করার কোন প্রয়োজন নেই তো। এখানে আমি আর আপনি ছাড়া কেউ নেই। আমি খুব স্পষ্ট কথা বলতে এবং শুনতে পছন্দ করি।
রিহাব ভ্রু কুচকে তাকাল। ইরা রিহাবের দিকে তাকিয়ে থেকে কঠিন গলায় বলল
–বুঝতে পারছেন না তো আমি কি বলছি? আপনি আমার জীবনে ইন্টারফেয়ার কেন করছেন? আমি এখন আগের মত ছোট না। আমি কিছু করলে সেটা বুঝেই করি। আর আমাকে কেউ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করুক সেটা আমি কোন ভাবেই মেনে নিবনা।
কথা গুলো বলেই ইরা উঠে গেলো। ইভান দরজায় দাড়িয়ে তাদের কথা শুনছিল। ইরার কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারল না। ইরা যে কারও সাথে এভাবে কথা বলতে পারে সেটাও ইভানের ধারণা ছিলোনা। সে রিহাবের কাছে এসে বলল
–ইরা কি বলে গেলো?
রিহাব একটা ছোট শ্বাস ছেড়ে বলল
–আমি ইরার ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এক বন্ধুর সাথে ইরার খুব ভালো সম্পর্ক আছে। আমি সেই ছেলের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেই। নিয়ে জানতে পারি সেই ছেলে ইরাকে পছন্দ করে। কিন্তু ইরা তার সম্পর্কে যা কিছু জানে সে সেরকম না। তাই আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সেই ছেলের সাথে কথা বলে তাকে ইরার কাছ থেকে দূরে থাকতে বলি। কিন্তু সে ইরাকে গিয়ে আমার সম্পর্কে অনেক মিথ্যা কথা বলে। এই জন্যই ইরা আমার উপরে রেগে আছে।

ইভান তার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। ইরার আচরণ এক রকম আর রিহাবের কথা এক রকম। দুইটার মধ্যে অনেকটা পার্থক্য। যদি রিহাবের কথা ঠিক হয়ে থাকে তাহলে ইরা অবুঝের মত আচরণ ইচ্ছা করে করছে। কিন্তু এভাবে সবার কাছে নিজেকে অবুঝ প্রমান করার কারন কি? ইভানের গভীর ভাবনার মাঝেই ঈশা চা নিয়ে আসলো। ঈশা টেবিলে চা রাখতেই ইভান একটু নড়েচড়ে বসলো। রিহাব আর ঈশা কথা বলছে। কিন্তু ইভান গভীর ভাবে ভাবছে। কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসল। তারপর ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–বাইরে যাবি?
ইভানের কথায় ঈশা কি বলবে বুঝতে পারল না। ইভান একটু হেসে বলল
–আজ আমরা সারাদিন ঘুরব। বাইরে খাবো। রিহাবও থাকবে আমাদের সাথে। বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি। এখন একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার।
ঈশা আর কিছু না বলে একটু হেসে বলল
–ইরা আর ইলহাম কে বলি।
ইভান হাসল। ঈশার কথা শেষ হতেই রিহাব কিছু একটা বলতে যাবে তখনি ইভান তার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। তার ইশারা বুঝতে পেরে রিহাব বলল
–আমি আজ ফ্রি। সারাদিন সময় দিতে পারব।
কথা শুনেই ঈশা উঠে গেলো। ইভান আর রিহাব দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসল। এর মাঝেই ইরা এসে বলল
–ভাইয়া আমি বাইরে যাবনা। আমার ইচ্ছা করছে না।
–সারাদিন বাসায় বসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। একটু তো ঘুরে আসা দরকার। তুই যদি না যেতে চাস তাহলে থাক অন্যদিন না হয় যাব।
হতাশার সূরে বলল ইভান। ইরা তার কথায় না বলতে পারবে না সে জানে। কারন ইভান তাকে খুব ভালবাসে। আর তার সব কথাই প্রায় রাখে। ইরা একটু হতাশ হয়ে বলল
–অন্যদিন না ভাইয়া। আজকেই যাব। আমি রেডি হয়ে আসছি।
সবাই রেডি হয়ে নিচে নামছে। ইরা ইভানের গাড়ির কাছে এসে দাড়াতেই ইভান বলল
–রিহাব একটা কাজ কর তুই ইরা আর ইলহাম কে নিয়ে যা। আমার আর ঈশার একটু কাজ আছে আমরা শেষ করেই আসছি।
কথা শেষ করেই ইলহামের দিকে তাকাল ইভান। ইলহাম মাথা নাড়ল। দুজনে পিছনে বসতে যাবে তখনি ইলহাম বলল
–তুই সামনে বস। আমি পিছনে শুয়ে যাব। আমার ঘুম হয়নি।
ইরা বিরক্ত হয়ে বলল
–আমি সামনে বসব না। আমি পিছনেই বসব। তুমি সামনে যাও।
–বেশি কথা বলছিস তুই। আমি তোকে পিছনে বসতে দিবনা।
বলেই ইলহাম পুরো সিট দখল করে শুয়ে পড়লো। ইরা বিরক্তি নিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–ভাইয়া দেখ না। আমি এই গাড়িতে যাবনা। তোমাদের সাথে যাব।
–আহা তোরা এভাবে ঝগড়া করিস না তো। শান্ত হয়ে বস।
একটু রাগ করে ইভান বলল। ইভানের রাগ করা দেখে ইরা আর কিছু বলল না। গিয়ে সামনে বসে পড়লো। কিন্তু মুখ ফুলিয়ে। রিহাব সিটে বসেই গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো। ইভান পিছনে শুয়ে কানে হেড ফোন গুঁজে দিলো। বাইরের কোন কথাই তার কানে যাবে না এখন। এসব আসলে তাকে ইভানই বলে দিয়েছে। সেই অনুযায়ী সে সব কিছু করছে।
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–কেন মিথ্যা বললে?
ইভান একটু হেসে বলল
–তোকে নিয়ে হানিমুনে যাব তো তাই।
–তুমি কি কখনও সিরিয়াস কথা বলতে পারনা?
–বিয়ের পর প্রথম তোকে নিয়ে বের হয়েছি। ওই দুইটাকে সাথে রাখলে সারাক্ষন বক বক করে মাথা খারাপ করে দিত। রিহাব এখন ওদেরকে কিছুক্ষন সামলাক। আমরা একটু প্রেম করি কি বলিস!
ঈশা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। ইভান একটু বাকা হেসে গাড়িতে উঠলো।

৪৫
গাড়ি চলছে আপন গতিতে ইরা ফোনের মাঝে ব্যাস্ত। রিহাব আড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকাল। তারপর কঠিন গলায় বলল
–তোমাকে আমি আশে পাশের মানুষকে সময় কম দিতে বলেছিলাম। ভুলে গেছো?
রিহাবের কথা শুনে ইরা ঘাড় বাকিয়ে ইলহামের দিকে তাকাল। সে চোখ বন্ধ করে হেড ফোন লাগিয়ে আছে। রিহাবের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল
–শুনুন রিহাব ভাইয়া। আমি আমার উপরে খবরদারি পছন্দ করিনা। আর বাইরের কেউ হলে সেটা তো কোনভাবেই আমি মেনে নিবনা। আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো। কাউকে এসবের কইফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই।

রিহাব খুব জোরে গাড়ি ব্রেক করলো। গাড়ি ব্রেক করা দেখে ইলহাম চমকে উঠে বলল
–আমরা কি এসে গেছি?
রিহাব তার দিকে তাকিয়ে বলল
–খুব গরম পড়েছে কোল্ড ড্রিঙ্কস হলে কেমন হয়?
ইলহাম হ্যা বলে মাথা নাড়াল। রিহাব তাকে টাকা বের করে দিয়ে আনতে বলল। ইলহাম বের হয়ে গেলো। রিহাব ইরার দিকে কঠিন ভাবে তাকিয়ে বলল
–তুমি কি ভাবছ আমি জোর করে তোমার জীবনে হস্তক্ষেপ করছি। তাহলে ঠিক ভাবছ। আমি তাই করছি। আর হ্যা তুমি যার সাথে সব সময় এভাবে মেসেজিং করছ সে তোমার সম্পর্কে কি ভাবে তা কি যান? আমি জানিনা তুমি কত টুকু জানো। কিন্তু যদি জেনেও তার সাথে যোগাযোগ রাখতে চাও তাহলে খুব ভুল করবে।
তারপর সামনে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলে বলল
–ইরা আমি তোমাকে আগেও জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমার কোন বয় ফ্রেন্ড আছে কিনা। কিন্তু তুমি না বলেছিলে। তাই আমি আমার দিক থেকে এগিয়ে গিয়েছি। যদি সেরকম কিছু থাকতো আমি কখনও তোমাকে জোর করতাম না। আমি যখন নিজে থেকেই এগিয়ে গিয়েছি তখন তোমার সাথে খারাপ কিছু হোক তা আমি কিভাবে মেনে নিবো। যাই হোক। তবুও তোমার যদি খারাপ লাগে তাহলে আই এম সরি!
রিহাবের কথা শুনে ইরা তার দিকে তাকাল। সেই সময় ইলহাম ড্রিঙ্কস নিয়ে এলো। সবার ক্যান সবার হাতে দিয়ে দিলো। নিজের টা নিয়ে পিছনে বসে পড়লো। ইরা ক্যানটা ভালো করে দেখে নিয়ে বলল
–ভাইয়া এটা কেন এনেছ? আমার এটা ভালো লাগেনা।
রিহাব একবার ক্যানটার দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভাবে বলল
–না লাগলে ফেলে দাও। রেস্টুরেন্টে গিয়ে যেটা ভালো লাগে সেটা অর্ডার করবে।
ইরা ক্যানটা সযত্নে পাশে রাখল। ফাকা একটা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে। ইরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আশে পাশে তেমন গাড়ি নেই। কোথায় যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না। কিন্তু তবুও কোন প্রশ্ন করছে না। রিহাব গাড়িতে উঠার পর থেকেই আড় চোখে তাকে কিছুক্ষন পর পর দেখছিল। এখন তাও দেখছে না। ইরা গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। রিহাবও সামনে তাকিয়ে ভাবছে। তার মনের কথা কি ইরা বুঝবে?

চলবে…………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-১৮

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৮

৪১
বারান্দায় সামনে তাকিয়ে ভাবছে ইভান। এই কয়দিনে ঈশার সাথে ভালো করে কথাই হয়নি তার। এমন কি ঈশা যে একবারেই তার কাছে চলে এসেছে সেটাও তাকে জানায়নি। আজ সকালে হসপিটাল থেকে বাসায় এসে জানতে পেরেছে। সে এখন পুরপুরি সুস্থ। তবে রিহাব বলে দিয়েছে কয়দিন বাসায় রেস্ট নিতে। এখনি যাতে অফিসে না যায়। তাই কয়দিন বাসাতেই থাকবে। ভাবতেই তার মুখে এক প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। এই কয়দিন ঈশার সাথেই কাটাবে।
ঈশা মাত্র ওয়াশ রুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। চুল গুলো ভালো করে মুছে ভেজা টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দিতে গিয়ে দেখে ইভান বারান্দায় হাত গুঁজে দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা শান্ত ভাবে বলল
–কিছু বলবে?
ইভান গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–তুই উপর থেকে একবারেই চলে এসেছিস আমাকে বলিস নি কেন?
ঈশা টাওয়ালটা মেলে দিতে দিতে বলল
–বাসায় এসে তো দেখতেই। তাই বলিনি।
ইভান কঠিন গলায় বলল
–আর যদি মরে যেতাম তাহলে তো জানতেই পারতাম না।
ঈশা কঠিন দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–জীবনের হিসাব না মিটিয়েই মরে যাবে? হার মেনে গেলে?
ঈশার কথা শুনে ইভান তার কাছে এসে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে
–তোর সাহস খুব বেশি হয়ে গেছে। আমার কথার জালে আমাকে ফাসাতে চাস?
–এমন কথা বল কেন যেটাতে নিজেই ফেসে যাও।
ইভান ঈশার হাতের বাধন আলগা করে দিয়ে তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ঘাড়ে নাক ঘোষতে ঘোষতে বলে
–তুই আমাকে তোর জালে অনেক আগে ফাসিয়েছিস। এখন আমি চাইলেও সেখান থেকে বের হতে পারবোনা। আর আমি চাইওনা।
ঈশা ইভানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিলো। ঈশা একটু দূরে গিয়ে বলল
–আমি তোমাকে ফাসাইনি। তুমি নিজেই ফেসেছ।
ইভান ঈশাকে আবার ধরে উলটা ঘুরিয়ে নিজের বুকের সাথে তার পিঠ লেপটে নিয়ে বলল
–তোর মাঝে এক অদ্ভুত মায়া আছে। যেখান থেকে বের হওয়া আমার সাধ্যের বাইরে। কি করেছিস আমাকে বল তো! কেন এমন হয়? কেন তোকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারিনা।
এমন সময় ইভানের মা ঈশাকে ডাকে। ইভান আলতো করে ঈশার গালে একটা চুমু দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। ঈশা ছাড়া পেয়ে তার কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে উলটা ঘুরে বলল
–জাদু করেছি। যাতে সারা জীবন এভাবে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে পারি। আমার এই মায়ার জাল কেটে বের হওয়া এতো সহজ না মিস্টার ইভান মাহমুদ।
ঈশার কথা শুনে ইভান ভ্রু কুচকে একটু চিল্লিয়ে বলল
–কি বললি তুই?
ঈশা তার দিকে মাথা ঘুরিয়ে একটু হেসে চলে গেলো। তার হাসি দেখে ইভান হেসে ফেললো। দেয়ালের সাথে হেলানি দিয়ে বলল
–তোর মায়ার জাল থেকে আমি কখনই বের হতে চাইনি। আর তোকেও আমার মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছি। তাই তো আজ তুই আমার কাছে। তোকে আমি অনেক সুখে রাখব জান। তোর জীবনে কষ্ট বলে কিছুই থাকবে না।

৪২
বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের বিশাল চাঁদটার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে আছে ইভান। গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। ঈশা পিছনে দাড়িয়ে বেশ বুঝতে পারছে ইভান কোন বিষয় নিয়ে ভাবছে। ঈশা ধির পায়ে পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। সামনে তাকিয়েই বলল
–কি ভাবছ?
ইভান ঈশার কথা শুনে চমকে উঠলো। পাশে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আর তো ভাবার কিছু নেই। সব ভাবনা আজ থেকে শেষ। তুই এখন আমার কাছে।
ঈশা ইভানের কথার গুরুত্ব না দিয়ে একটু হেসে বলল
–কি এমন কথা যা আমাকে বলতে চাইছনা?
ইভান ঈশার কথা শুনে একটু ভাবল। সত্যিই এমন কিছু কথা আছে যা সে ঈশাকে বলতে চায়না। হয়ত এটা ঈশার সাথে অন্যায়। কিন্তু তারই বা কি করার আছে। ঈশা যে তার অনেক সাধনার প্রাপ্তি। তাকে সে যে কোন উপায়েই ভালো রাখতে চায়। আর সবটা দিয়েই ভালো রাখবে। তাই তো এতো লুকচুরি। ঈশার দিকে ঘুরে একটু হেসে বলল
–তুই জানিস আমি কোন কারন ছাড়া কিছুই করিনা। কখনও যদি জানতে পারিস কিছু লুকিয়েছি তাহলে সেটারও কারন আছে। বিশ্বাস করিস তো আমাকে?
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
–তোমাকে আমি কতটা বিশ্বাস করি সেটা বোধ হয় এখনো বলার প্রয়োজন নাই। বিশ্বাস করেই এতো বছর ছেড়ে দিয়েছিলাম।
ইভান ভ্রু কুচকে বলল
–বিশ্বাসের কত টুকু মর্যাদা রাখতে পেরেছি সেটা তুই কিভাবে সিউর হচ্ছিস?
ঈশা একটু হেসে বলল
–তোমার একটা বান্ধবি ছিল তন্নি। মনে আছে?
ইভান মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। একটু ভেবে বলল
–কিন্তু তার সাথে অনেক দিন কোন যোগাযোগ নেই।
–কত বছর হল বলতে পারবে?
–প্রায় ৪ ব……।
কথাটা শেষ না করেই ঈশার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাল। ঈশা সামনে তাকিয়ে আছে। ইভান গম্ভীর গলায় বলল
–এই তন্নির সাথে যখন আমার বন্ধুত্ব হয়েছিলো তার কিছুদিন পরেই তোর সাথে আমার বিয়ে হয়। আর তারপর পরিস্থিতির স্বীকারে আমি তোকে ওর কথা বলতে পারিনি। কিন্তু হঠাৎই ও আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমন কি আমি করার চেষ্টা করলেও ও কোন রকম রেসপন্স করেনা। কিন্তু তুই জানলি কিভাবে?
ঈশা একটু হেসে ইভানের কাছে আসে। তার কপালে ছোট ছোট চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। সেগুলো আলতো করে সরিয়ে দেয়। তারপর শান্ত কণ্ঠে বলে
–আমার বর কোথায় কি করছে সেটা আমাকে জানতে হবেনা? নাহলে বউ হলাম কিভাবে?
ইভান ঈশার কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। একটু ভেবে বলে
–এই তোর বিশ্বাসের নমুনা! বড় বড় লেকচার দিলি তো ঠিকই কিন্তু পরক্ষনেই আবার সন্দেহও করলি।
ঈশার মুখের হাসি বন্ধ হয়ে চোখ মুখ কুচকে গেলো। রাগ নিয়ে বলল
–বিশ্বাস করেছি বলে কি মেয়েদের মাঝে তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আসবো? এটাই কি আশা করছ? মোটেই না।
ইভান মুখ টিপে হাসল। ঈশার কোমর আঁকড়ে ধরে বলল
–কি করেছিস মেয়েটার সাথে?
ঈশা নরম গলায় বলল
–নাম্বার খুঁজে বের করে ফোন করে হুমকি দিয়েছি। আমার বরের কাছে আমি কোন মেয়েকে এলাউ করিনা। তোমার থেকে যেন দূরে থাকে।
ইভান অবাকের সূরে বলল
–কি মেয়ে রে বাবা! তোকে বিয়ে করে কি জীবনের সব সখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছি? কি যে ভুল করলাম এখন বুঝতে পারছি।

ঈশা রেগে ইভানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো। ইভান মুচকি হেসে ভিতরে এসে দরজাটা লক করে দিলো। পিছন থেকে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে। পকেট থেকে চেনটা বের করে ঈশার গলায় পরিয়ে দেয়। তারপর সামনে ঘুরিয়ে লকেট টাতে একটা চুমু দেয়। লকেটে আই লেখা আছে। ঈশা নিজের ওড়নার মাথা মুঠ করে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইভান ঈশাকে কোলে তুলে নিলো। বিছানায় শুয়ে দিলো। ঈশা উঠে বসতে চেষ্টা করতেই ইভান তাকে চেপে ধরল বিছানার সাথে। ঈশার মুখে ফু দিয়ে সামনের চুল গুলা সরিয়ে দিলো। ঈশার গলা শুকিয়ে আসছে। সে চোখ বন্ধ করে শুকনো ঢোক গিলে ফেললো। ইভান ঈশার গলায় কিস করতে লাগলো। ঈশা আর সহ্য করতে না পেরে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। ইভান তাকে আরও জোরে চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল
— পৃথিবীর সব সুখ তখনি নিজের মনে হয়, যখন ভালোবাসার মানুষটি ভালোবেসে পাশে থাকে। আর তখনি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয় যখন ভালোবাসার মানুষটি বিশ্বাস দিয়ে বিশ্বাস রাখে। আজ আমার সুখের শেষ নেই। কিন্তু এই মুহূর্তটা আরও সুখের করতে চাই। আমাকে একটু ভালোবাসা দিবি? যে ভালোবাসায় থাকবে না কোন দুঃখ । থাকবে না কোন,না পাওয়ার যন্ত্রনা। থাকবে না মায়া কাঁন্না। থাকবে শুধু সীমাহীন অনুভূতি । যেই অনুভূতি কে সাথি করে কাটিয়ে দিবো সারাটা জীবন।

ইভানের কথা শুনে ঈশা লজ্জায় মিইয়ে গেলো। ইভান ঈশার সম্মতি বুঝতে পেরে তাকে ভালোবাসার স্পর্শে ভরিয়ে দিতে লাগলো। আজ দুজন দুজনকে ভালোবাসার পরম স্পর্শে ভরিয়ে তুলছে। দুজনের ভালোবাসার মাঝে তারা একে অপরকে বিলিন করিয়ে দিচ্ছে। সারা ঘরময় ছড়িয়ে পড়া তাদের ভারি নিশ্বাস অফুরন্ত ভালোবাসার সিমাহিন অনুভূতির সাক্ষ্য দিচ্ছে আজ।

৪৩
ইভান ঘুম থেকে উঠে দেখে ঈশা নেই। পাশে পড়ে থাকা টি শার্টটা পরে নিয়ে বাইরে গেলো। পুরো বাড়ি কেমন নিস্তব্ধ। কেউ নেই। রান্না ঘরে চোখ পড়তেই দেখল ঈশা কিছু একটা করছে খুব মনোযোগ দিয়ে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষন আগেই গোসল করেছে। চুলের পানিতে কোমরের নিচে ভিজে গেছে। ইভান ধির পায়ে তার কাছে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। ঈশা চমকে উঠতেই বলল
–রিলাক্স জান। আমি।
ঈশা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
–এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে। আমি ভয় পেয়েছিলাম কত।
–আমি ছাড়া তোকে এভাবে কেউ ধরবে সেই সাহস কারও নেই। সেটা মাথায় রাখলেই এতো ভয় পেতিনা।
ঈশা ইভান কে একটু ধাক্কা দিয়ে তার দিকে ঘুরে বলল
–ফ্রেশ হয়ে এসো চা খাবো।
ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে হাসল। এক আঙ্গুল দিয়ে ঘামে লেপটে থাকা কপালের ছোট ছোট চুল গুলো সরিয়ে দিলো। ঈশা ইভানের চোখের দিকে তাকাল। কিন্তু তার চোখে আজ পূর্ণতা। ঈশাকে পুরপুরি ভাবে পাওয়ার প্রশান্তি। সেই শান্তির দৃষ্টি ঈশাকে অস্থির করে দিচ্ছে। বেশিক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না। চোখ নামিয়ে নিলো। ইভান বুঝতে পেরে নিশব্দে হাসল। তারপর হাতের পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে দিয়ে বলল
–আমি তোর এই ভালবাসাটাই সব সময় দেখতে চেয়েছিলাম। জোর করে নিতে চাইনি। চাইলে অনেক আগেই অধিকার ফলাতে পারতাম। তুই আটকাতেও পারতিস না।
তার কথায় ঈশার রাগ করার কথা থাকলেও আশ্চর্য জনক ভাবে সে ইভানের কাছে এসে বলল
–আমি আটকাতাম না। তোমার ভুল ধারণা।
ইভান একটু হেসে ঠোঁটে কিস করার জন্য তার মুখ ঈশার মুখের কাছে নিয়ে যেতেই পিছন থেকে ইরা বলল
–ভাইয়া তুমি কি করছ?
ইভান তার গলার আওয়াজ পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে পিছনে ঘুরে বলল
–কিছুনা। চা খেতে এসেছিলাম।
ইরা ভ্রু কুচকে বলল
–ওঃও চা খাবে তো কাপে নিয়ে বাইরে যাও। এখানে তো অনেক গরম। আর তুমি আপিকে ওভাবে কেন ধরে রেখেছিলে। এমনিতেই অনেক গরম ওভাবে ধরে রাখলে আরও গরম লাগবে। তুমি বের হয়ে যাও তো এখান থেকে।
বলেই ইরা চলে গেলো। ইভান তার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। তারপর ভ্রু কুচকে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–সিরিয়াসলি! ইরা এতো বোকা না অভিনয় করে। আমি তোকে জড়িয়ে ধরে কি করছিলাম সেটা একটা ছোট বাচ্চাও বুঝতে পারে। আর ও বুঝতে পারল না নাকি বুঝতে চাইলো না। অবশ্য তোর বোন। একটু হলেও জিন গত ব্যাপার তো থাকেই। বুঝেও অভিনয় করে।
ঈশা এবার রেগে গেলো।
–কি বলতে চাচ্ছ?
ইভান একটু হেসে বলল
–এই যে এই দিনটার জন্য আমি সেই কবে থেকে অপেক্ষা করছি। আর এতো বছর পর এসে তুই বুঝলি। তাও আমার কাছে আসলে লজ্জা পাস। আল্লাহ জানে এতো লজ্জা কোথায় থেকে আসে।
ঈশা কিছু না বলে ঘুরে যায়। ইভানও বের হতে যায় রান্না ঘর থেকে তখনি ঈশা বলে
–এতদিন তো আমি অপেক্ষা করতে বলিনি। অনেক আগেই চান্স দিয়েছিলাম। তুমিও যদি এখন ইরার মত অবুঝ হও তাহলে তো আমার কিছুই করার নেই।
ঈশার কথা শুনে ইভান থেমে ঘুরে অবাক হয়ে তাকায়।

চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-১৭

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৭

৩৮
অনুভূতিহীন নিরব দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে ঈশা। তার দৃষ্টিতে আজ কোন অনুভুতি নেই। হয়ত মানুষের সব থেকে কষ্টের সময় অনুভুতি শুন্য হয়ে যায়। আশে পাশে সবাই কাঁদছে। কিন্তু ঈশার চোখে কোন পানি নেই। ইভানের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তাই সবাই বেশ চিন্তিত। সবাই কান্নাকাটি করছে। কিন্তু ঈশা কোন কথাই বলছেনা। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে। নার্সের ব্যস্ত কণ্ঠ শুনে তার ধ্যান ভাঙ্গে
–এখনি আরও এক ব্যাগ রক্ত লাগবে। তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করেন।
ঈশা ফিরে তাকায়। রাশিক আর সাহিল রক্ত ম্যানেজ করতে বের হয়ে যায় দ্রুত। ঈশা খুব শান্ত কণ্ঠে নার্স কে জিজ্ঞেস করে
–আমি কি একবার ইভান কে দেখতে যেতে পারি?
নার্স তার দিকে একবার তাকায়। ঈশার মনের অবস্থা বুঝতে পারে তিনি। হালকা হাতে তার মাথা স্পর্শ করে বলে
–আমার হাতে কিছুই নেই মা। তুমি দোয়া কর। আমি তোমাকে অনুমতি দিতে পারবোনা।
নার্সের কথা শেষ হতেই একজনের কণ্ঠ শুনে দুজনেই পিছনে ফিরে তাকায়।
–ওকে যেতে দিন।
কথাটা বলতে বলতে রিহাব সামনে এগিয়ে আসে। ঈশা অসহায়ের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। নার্স কিছু না বলে চলে যায়। রিহাব ঈশার সামনে দাড়িয়ে বলে
–আমাকে চিনতে পেরেছ ঈশা?
ঈশা রিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে
–আপনি এতদিন পর?
রিহাব একটু হেসে বলে
–পড়ালেখা শেষ করতে এতদিন দেশের বাইরে ছিলাম। শেষ করে গত সপ্তাহে ফিরেছি। বাবার হসপিটালের দায়িত্ব গুছিয়ে নিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এর মাঝে শুনলাম ইভান এসেছে। ভেবেছিলাম একটু গুছিয়ে নিয়ে তোমাদের সাথে দেখা করতে যাব। কিন্তু আজ সাহিল ফোন দিয়ে খবর দিলো। তখনি আমি তাড়াতাড়ি ওকে এখানে আনতে বলি।

রিহাব ইভানের ছোটবেলার বন্ধু। খুব ভালো সম্পর্ক দুজনের মধ্যে। রিহাব ডাক্তারি পড়ার জন্য দেশের বাইরে চলে যায়। তাই তাদের মধ্যে মাঝখানে তেমন যোগাযোগ ছিলোনা। পড়া শেষ করে ফিরে এসে নিজের বাবার হসপিটালের দায়িত্ব নিয়ে নেয় সে।

ঈশা অসহায়ের মতো বলে
–আপনাকে দেখে মনের মাঝে একটু হলেও স্বস্তি পেলাম রিহাব ভাইয়া।
রিহাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–তুমি ভিতরে যাও। তোমার ওকে এই মুহূর্তে খুব দরকার। তবে হ্যা কিছু রুলস আছে জেগুলা তোমাকে মানতে হবে।

ঈশা মাথা নাড়িয়ে আই সি ইউর পোশাক পরে ভিতরে চলে গেলো। ভিতরে ঢুকেই দেখল ইভানের জ্ঞান শুন্য দেহটা বিছানায় ছড়িয়ে দিয়ে আছে। ঈশার চোখ ভরে আসলো। কিন্তু সে কাঁদতে পারবেনা। রিহাব স্ট্রিক্টলি বলে দিয়েছে ঈশাকে। চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে ইভানের পাশে বসলো। তার হাত ধরে বলল
–আমি জানি তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও।

৩৯
সবার চোখে মুখে খুশির ছটা ইভানের জ্ঞান ফিরেছে। কিছুক্ষন পরেই তাকে কেবিনে শিফট করা হবে। সবাই তার সাথে দেখা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে আছে। নার্স এসে বলল
–রুগিকে কেবিনে দেয়া হয়েছে। আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন।
সবাই ঘরে গেলো। ইভান কে দেখে সবাই খুব খুশি। তার সাথে এক এক করে কথা বলছে। রিহাব এসে রুমে ঢুকতেই ঈশার বাবা বলল
–আমরা এখন বাইরে যাই। ওর রেস্ট দরকার।
তার কথা শুনে সবাই বাইরে চলে গেলো। রিহাব এসে ইভানের পাশে বসলো। রিহাব কে দেখে ইভান অবাক হয়ে বলল
–তুই?
রিহাব রেগে বলল
–আমিই তোর ট্রিটমেন্ট করেছি।
ইভান খুব শান্ত কণ্ঠে বলল
–তুই কবে এসেছিস? আর আমার সাথে দেখা করিস নি।
রিহাব বলল
–১ সপ্তাহ হল এসেছি। সব গুছিয়ে নিয়ে ভেবেছি তোর সাথে দেখা করবো। কিন্তু তার আগেই তো তোর এই অবস্থা!
ইভান খুব শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলো
–ঈশা কোথায়?
রিহাব একটু হেসে বলল
–তোর কাছেই সারা রাত ছিল। তাই আমিই একটু রেস্ট নিতে বাসায় পাঠিয়েছিলাম। চলে আসবে।
ইভান চিন্তিত হয়ে বলল
–ঠিক আছে তো?
–ভাবিস না। প্রথমে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলো। পরে ওর অবস্থা বুঝতে পেরে ওকে তোর কাছে থাকার পারমিশন দেই। তারপর একটু শান্ত হয়।
তাদের কথার মাঝেই রাশিক আর সাহিল ঢুকে পড়লো। দুজনি তাদের দিকে তাকাল। সাহিল এসে রিহাবের ঘাড়ে হাত রেখে বলল
–তুই না থাকলে যে কি হতো?
রিহাব ওকে হালকা হাতে মেরে বলল
–এতদিন পর দেখা হল বলে পর ভাবছিস তাই না? তাই তো এরকম কথা বলছিস। আমি বিপদে পড়লে কি তোরা আমাকে ফেলে চলে যেতিস?
তার কথা শুনে সবাই একটু হাসল। রাশিক ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–ঠিক করে বলত কিভাবে হল এটা?
ইভান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল
–যা ভেবেছিস তাই। কিন্তু এই বিষয়ে আর কোন কথা না। কারও কানে যেন কিছুই না যায়। মনে রাখিস।
ইভানের কথা শেষ হতেই ইরা ভিতরে ঢুকে এক গাল হেসে বলল
–ভাইয়া কেমন আছো?
তাকে দেখে ইভান হেসে হাতের ইশারায় কাছে ডাকল। ইরা তার কাছে আসতেই বসতে বলল। সে পাশে চেয়ারে বসে পড়লো। ইভান তার হাত ধরে বলল
–আমি ভালো আছি। কিন্তু তোর কথা বল। কেঁদে কেঁদে কি অবস্থা বানিয়েছিস?
ইরা একটু মন খারাপ করে বলল
–খুব ভয় পেয়েছিলাম। তুমি কিভাবে বুঝবে তুমি কি দেখেছ নিজের অবস্থা?
ইরার এমন অবুঝের মতো কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। ইরা একটু লজ্জা পেলো। ইভান ইরাকে জিজ্ঞেস করলো
–খেয়েছিস?
ইরা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। তারপর আবার জিজ্ঞেস করলো
–ইলহাম কে দেখছিনা?
–ভাইয়া আপুকে নিয়ে বাসায় গেছে। চলে আসবে এখনি।
রশিক আর সাহিল তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে গেলো। ছেলে গুলো খুব খেটেছে। তাই একটু বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবে। ইভান কিছু বলতে যাবে রিহাব কে তাই পাশে মাথা ঘুরিয়ে দেখল রিহাব নিস্পলক ইরার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন রিহাবের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
–এটা হসপিটাল তাই ডাক্তার এর মন সব সময় পেশেনটের উপরেই থাকা উচিৎ।
ইভানের কথা শুনে রিহাব ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাল। ইভান কঠিন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইভানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রিহাব তার কথার মানে বুঝতে চেষ্টা করলো। কিছুক্ষন ভাবার পর রিহাবের বুঝতে বাকি থাকলো না সে কি বুঝাতে চেয়েছে। তাই একটু হেসে বলল
–ডাক্তার হওয়ার আগে আমি একজন মানুষ। হসপিটালে আসার সময় নিজের অনুভুতি গুলো বাসায় রেখে আসিনি। সাথে করে এনেছি।
ইভান তার কথা শুনে হাসল। ইরা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–ভাইয়া তুমি রেস্ট নাও। আমি একটু আসছি। আপু আসলে আবার আসবো।
বলেই বের হয়ে গেলো। রিহাব ইরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
–ভেবেছি প্রতিদিন একবার তোর বাসায় চা খেতে যাব। নিয়ম করে।
ইভান কঠিন গলায় বলল
–আমি ওর বড় ভাই এখনো বেঁচে আছি।
রিহাব তার দিকে তাকিয়ে বলল
–প্রেমিক পুরুষেরা এসবের ভয় করেনা।
–ও কিন্তু ঈশার মতো নয়। খুব স্ট্রিক্ট।
–আমি ডাক্তার। স্ট্রিক্ট কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি।
তাদের কথার মাঝেই ঈশা আর ইরা ঢুকল। ঈশাকে দেখে রিহাব তার দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি এতো তাড়াতাড়ি এলে কেন? তোমাকে আমি রেস্ট নিতে পাঠিয়েছিলাম।
ঈশা ধির কণ্ঠে বলল
–আমার রেস্ট নেয়া হয়ে গেছে ভাইয়া।
রিহাব চোখ ফিরিয়ে ইভানের দিকে তাকাল। সে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি বস আমি যাই।
বলেই উঠে পাশে দাঁড়ালো। ঈশা চেয়ারে বসে পড়লো। ঈশাকে বসতে দেখে রিহাব ইরার সামনে দাড়িয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে স্থির কণ্ঠে বলে
–ওরা কথা বলুক। তুমি আমার সাথে আসো।
রিহাবের কথা শুনে ঈশা আর ইভান দুজনেই তার দিকে তাকাল। রিহাব তাদের দিকে একবার তাকিয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে ধমকের সূরে বলল
–কি হল চল!
ইরা রিহাবের ধমকে একটু হকচকিয়ে গেলো। তারপর কোন কথা না বলে ঈশা আর ইভান কে একবার দেখে নিয়ে বাইরে চলে গেলো। রিহাব ইভানের দিকে তাকিয়ে হাসল। তাদের দুজনের বাইরে যাওয়ার দিকে ঈশা তাকিয়ে থাকলো। ইভান ঈশার দিকে তাকাতেই ঈশাকে ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে বলল
–এতো টেনশন করার কিছুই নেই। তুই জানিস রিহাব কেমন ছেলে! তাছাড়া আমি আছি তো এসব নিয়ে ভাবতে। তোর এই মলিন মুখটা আমাকে খুব কষ্ট দেয় জান।
ইভানের কথা শুনে ঈশা তার দিকে তাকাল। ইভানের দিকে তাকাতেই ঈশার চোখ ভরে এলো। চোখ নামিয়ে নিতেই দুই ফোটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। ইভান তার হাত শক্ত করে বলল
–আমার শারিরিক কষ্টের চেয়ে তোর চোখের পানিটা আমাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তুই কি বুঝতে পারিস না?
ইভানের কথা শুনে ঈশা চোখের পানি মুছে ফেললো। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছেনা কিছুতেই। আবার দু চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। ইভান আবার বলল
–তুই জানিস তুই ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি। তুই এভাবে ভেঙ্গে পড়লে আমি কিভাবে ঠিক থাকি বল।
ঈশা দুই হাতের পিঠ দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল
–কত ভয় পেয়েছিলাম জানো?
–কি ভেবেছিলি আমি মরে গেছি!
ঈশা রাগ করে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি কি কখনও ভালো কথা বলতে পারনা?
ইভান একটু হেসে বলল
–পারিনা যে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। পারলে এতদিনে কবেই তোকে পোটেই ফেলতাম।
ঈশা এবার আরও রেগে গেলো। কঠিন দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভান মুচকি হেসে বলল
–আমার এই ঈশাকেই বেশি ভাললাগে। জেদি রাগী কিন্তু ইনোসেন্ট! ইমোশনাল ঈশা আমার একেবারেই পছন্দ না।
ঈশা খুব বিরক্ত হয়ে বলল
–আমি তোমার উপরে বিরক্ত হচ্ছি।
–জানি তো! তোর আর আমার সম্পর্কটাই এরকম। আমি বিরক্ত করবো আর তুই বিরক্ত হবি।
ইভানের কথা শুনে ঈশা কি বলবে বুঝতে পারলনা। কিন্তু না চাইতেও হেসে দিলো। কারন সত্যিই ইভান আর ঈশার সম্পর্কটা এরকমই। ভালবাসাময় খুনসুটিতে ভরা এই মিষ্টি সম্পর্ক।

৪০
রিহাব ইরার সামনে দাড়িয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো
–তুমি এখন কি করছ ইরা?
ইরা এতক্ষন নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিল। তার কথা শুনে মাথা তুলে বলল
–অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি ভাইয়া।
–খুব ভালো। পড়া শেষ করে কি করবে ভাবছ?
–আপাতত তেমন প্ল্যান নেই। সময় হলে ভাববো।
রিহাব হাত গুঁজে ভালো করে দাড়িয়ে বলল
–আর বিয়ে নিয়ে কিছু ভেবেছ?
ইরা রিহাবের কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়। একটুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে
–ভাবার কি আছে? যখন সময় হবে তখন ভাববো।
–কেমন ছেলে পছন্দ তোমার?
ইরা এবার আরও অবাক হয়ে তাকায়। কি বলবে বুঝতে পারেনা। তার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে রিহাব বুঝতে পারল ইরা তার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। তাই পরিস্থিতি সামলাতে বলে
–জাস্ট কিউরিসিটি থেকেই জিজ্ঞেস করলাম।
ইরা আবার ফোনে মনোযোগ দিলো। তারপর কি মনে করে মাথা তুলে জিজ্ঞেস করল
–ইভান ভাইয়াকে আমরা কবে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারব?
–একটু সুস্থ হলেই নিয়ে যেতে পারবে।
ইরা আবার ফোনের মাঝে চোখ ডুবিয়ে দিলো। রিহাব কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
–তোমার কি কোন বয় ফ্রেন্ড আছে?
ইরা চোখ তুলে রিহাবের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাল। এমন প্রশ্ন করার কারন বুঝতে চাইলো। কিন্তু না বুঝেই মাথা নাড়িয়ে না উত্তর দিলো। রিহাব ইরার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু কঠিন গলায় বলল
–তাহলে এতো মনোযোগ দিয়ে কার সাথে চ্যাটিং করছ?
ইরা এবার একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। রিহাব এভাবে তাকে জেরা করছে কেন? আর সেই বা বুঝল কিভাবে যে ইরা চ্যাটিং করছে? রিহাবের এমন আচরনের মানে বুঝতে না পেরে ইরা তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। রিহাবও ইরার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিন্তু কেউ কোন কথা বলছেনা। এমন সময় নার্স এসে বলল
–স্যার আপনাকে একটু ৬ নাম্বার রুমে ভিজিটে যেতে হবে।
রিহাব নার্সের দিকে তাকিয়ে ইশারায় যেতে বলল। তারপর ইরার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল
–এখন থেকে আশে পাশের মানুষকে সময়টা একটু কম দিবে। কথাটা মাথায় রেখো!
কথাটা শেষ করেই সে সামনের দিকে চলে গেলো।

চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-১৬

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৬

৩৫
সকাল থেকে ঈশা খুব ব্যাস্ত। একবার এই ঘরে তো একবার ওই ঘরে। তার মা আর ইরা দাড়িয়ে তাকেই দেখছে। সে ভ্রু কুচকে নিজের সব জিনিস খুঁজে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু জিনিস খুঁজে পাচ্ছেনা তা খুজতে খুব ব্যস্ত। ঘরের মধ্যে ঈশা নিজের সব প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র দুইটা লাগেজে ভোরে নিচ্ছে। এই বাড়িতে ওর যত জিনিস পত্র আছে সব কিছুই গুছিয়ে নিচ্ছে। কিছুই বাদ রাখছেনা। কিন্তু তাকে কেউ কোন প্রশ্ন করার সাহস পাচ্ছেনা। সে মনোযোগ দিয়ে লাগেজের দিকে তাকিয়ে আছে।
–ঈশা তুই কি কোথাও যাচ্ছিস?
চাচির আওয়াজে সবাই তার দিকে ঘুরে তাকায়। ঈশা ছোট্ট করে হ্যা বলে। এবার তার মা তার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে
–আমিও এই প্রশ্নটাই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই রাগ করবি তাই করতে পারিনি।
ঈশা আবার ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলে
–বললাম তো যাচ্ছি।
–কোথায়?
ঈশার মা জিজ্ঞেস করে। ঈশা উঠে দাড়িয়ে তার মায়ের সামনে এসে বলে
–মা আমার বিয়ে হয়েছে। আর কতদিন তোমাদের বাসায় থাকব। ৫ বছর হল তো।
ঈশার কথা তার মা আর চাচির মাথার উপর দিয়ে গেলো। দুজনি একবার ঈশার দিকে তাকাল। তারপর একে অপরের দিকে তাকাল। ঈশার চাচি শান্তভাবে বলল
–তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এখন কই যাচ্ছিস তা এখনো বুঝতে পারলাম না।
ঈশা বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি ইলহাম এসে বলল
–আপি তুমি ডেকেছ?
ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–হ্যা।আমাকে একটু হেল্প কর!
–কি হেল্প আপি?
–এগুলা আমার সাথে নিচে নিয়ে চল।
–কোথায়?
ঈশা বিরক্ত হয়ে বলল
–তোদের বাসায়।
সবাই ঈশার কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা এবার খুব বিরক্ত বোধ করে বলল
–এভাবে তাকানোর কি আছে? বিয়ের পর মেয়েরা তো শ্বশুর বাড়িতেই যায়। নাকি সারাজীবন আমি বাসায় বসে থাকব।
ঈশার চাচি তার দিকে হা করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
–কোথায় যায়?
ঈশা বিরক্ত হয়ে কোন কথার উত্তর না দিয়ে ইলহাম কে বলল
–তুই কি আমাকে হেল্প করবি নাকি আমি নিজেই নিয়ে যাব?
ইলহাম কিছু না বলে তাড়াতাড়ি করে তার একটা বড় লাগেজ আর ছোট একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে নিচে নেমে গেলো। ঈশা অন্য লাগেজ টা চেন লাগিয়ে বন্ধ করে ইরা কে ডাকতে লাগলো। ইরা দৌড়ে এসে বলে
–কি হয়েছে আপু?
ঈশা লাগেজটা দেখিয়ে দিয়ে বলল
–এটা নিতে আমাকে হেল্প কর।
–কোথায় নিতে আপু?
ঈশা রেগে বলল
–বেয়াদব কথাকার বেশি কথা বলিস! আমার সাথে ধরে নিয়ে চল!
বলেই লাগেজ টা ঈশা ধরে টানতে লাগলো। ইরা কি করবে বুঝতে না পেরে সেও এসে ধরে ফেললো। তারা দুজনে লাগেজ নিয়ে বের হয়ে গেলো। ইভানের মা ঈশার মাকে বলল
–ভাবি আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা গণ্ডগোল আছে!
ঈশার মা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। তারপর ইভানের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
–যদিও কিছু বুঝতে পারছিনা কিন্তু আন্দাজ করতে পারছি। তাড়াতাড়ি নিচে চল।
তারপর দুজনেই নিচে চলে গেলো দেখতে। নিচে গিয়ে দেখে ঈশা তার সমস্ত জিনিস পত্র এক এক করে ইভানের ঘরে আনপ্যাক করছে। সবাই দরজায় দাড়িয়ে ঈশাকে দেখেছে। সে কাউকে দেখছে না। নিজের কাজে ভীষণ ভাবে ব্যস্ত। এমন সময় ঈশার মার হাতে থাকা ফোন বেজে উঠে। ফোনের শব্দে সবাই চমকে যায়। ঈশা তার মায়ের দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন ফোন বাজাতে তার বিরাট কোন কাজের ব্যঘাত ঘটেছে। তার মা ঈশার দিকে তাকিয়ে ফোন ধরে ফেলে।
–হ্যালো
ঈশার বাবা অপর পাশ থেকে বলে
–শোন আমি আজ দুপুরে বাসায় আসবনা।
ঈশার মা বলে
–না আসলে দেখেবে কিভাবে তোমার বড় মেয়ের কি হয়েছে।
ঈশার বাবা বিচলিত হয়ে বলে
–কি হয়েছে ঈশার?
–জানিনা। শরীর খারাপ হবে হয়ত।
–কি বলছ? ঠিক করে বল?
–বাড়ি থেকে নিজের সব জিনিস এনে ইভানের ঘরে গুছিয়ে রাখছে।
ঈশার বাবা তার মায়ের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন। তারপর শব্দ করে হেসে বললেন
–কিন্তু ইভান তো বাসায় নেই।
–তাতে কি? অফিস থেকে আসবে তো। একবারে তো আর যায়নি।
তিনি আরও শব্দ করে হাসলেন। ঈশা তার মায়ের কথা শুনে বললেন
–কি হচ্ছে এখানে? সবাই এমন জটলা পেকে রেখেছ কেন? নিজের কাজে যাও। আর আমাকেও আমার কাজ করতে দাও। তোমাদের জন্য কাজে মনোযোগ দিতে পারছিনা।
বলেই সে নিজের মতো কাজে মনোযোগ দিলো। কিন্তু কেউ কোথাও গেলো না। সবাই চুপ করে দাড়িয়ে তার কাজ দেখছে। সে ইভানের আলমারি খুলে তার সমস্ত কাপড় এক পাশে ঠিক ভাবে গুছিয়ে রাখল। তারপর এক পাশে নিজের কাপড় গুছিয়ে রাখল। ড্রেসিং টেবিলে তার সমস্ত কসমেটিক্স এক এক করে গুছিয়ে রাখল। পুরো ঘর গোছানো শেষ হলে সে মাথা তুলে দেখে সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে বিরক্ত হয়ে বলে
–এখানে কি সিনেমা চলছে?
সবাই মাথা নাড়িয়ে না বলে। তাদের এভাবে মাথা নাড়ানো দেখে সে বিরক্ত হয়ে বলে
–তাহলে তোমরা কেন নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে আমাকে দেখছ?
বলতেই যে যার মতো চলে গেলো।

৩৬
ঈশা বারান্দায় দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। বিকেল হয়ে গেছে। ইভান রাতে দেরি করে আসে। কারন ঈশা থাকেনা জন্য। ঈশা এসেছে শুনলে হয়ত এখনি চলে আসবে। কিন্তু ঈশা তাকে বলতে চায়না। ইভান কে সারপ্রাইজ দিতে চায়। আর সবাইকে স্ট্রিক্টলি নিষেধ করে দেয়া হয়েছে যাতে কেউ ইভান কে কিছু না বলে। তাই তো কেউ তাকে কিছুই বলেনি। কিন্তু ইভান জানেনা বলেই রাতে হয়ত দেরি করে আসবে। ঈশার যে অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছেনা। এই টুকু সময় অনেক বেশি মনে হচ্ছে। অথচ ইভান তার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করে আছে। কোন অভিযোগ করেনি কখনও। তাকে না পাওয়ার যে ক্ষত তার মাঝে তৈরি হয়েছে সেটাও সে কখনও বুঝতে দেয়নি। সব সময় তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছে। তার ভালো থাকার মাঝেই নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছে। ভাবতেই ঈশার চোখ ভরে এলো। আর অপেক্ষা করতে না পেরে ইভান কে ফোন দিলো। ইভান ল্যাপটপে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলো। ফোন বাজতেই পাশে রাখা ফোনের স্ক্রিনের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল। ভাবল কাজের সময় ফোন ধরবেনা। কিন্তু স্ক্রিনে ঈশার নামটা দেখে তার সমস্ত টেনশন ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। একটু হেসে ফোন ধরেই বলল
–কি ব্যাপার মিসেস ইভান মাহমুদ আমাকে মিস করছেন বুঝি?
ঈশা ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল
–আমি তো আর তোমার বাসায় তোমার ঘরে থাকিনা যে ফোন করে জিজ্ঞেস করবো কখন আসছ। তুমি সময় বলবে তারপর আমি অধির আগ্রহে বসে অপেক্ষা করবো।
ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–আর কত আমাকে অপেক্ষা করাবি বল?
ঈশা হেসে বলল
–যে জিনিস সহজে পাওয়া যায় তার মুল্য থাকেনা। ধৈর্যের ফল সব সময় মিষ্টি হয়।
–এতো বছর ধরে ধৈর্য ধরেই আছি। কবে যে এর শেষ হবে!
ইভান অসহায়ের মতো কথাটা বলল। ঈশা তার কথা শুনে নিজের হাসি চেপে রেখে বলল
–তুমিই না বল আমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবে। তাহলে এখন কি হল?
ইভান সিরিয়াস হয়ে বলল
–ভয় পাই। তোকে পেয়ে মরে গেলেও কোন আফসোস থাকবেনা। কিন্তু তোকে পাওয়ার আগেই যদি মরে যাই! তোর ভালোবাসা অনুভব করার আগেই যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে তুই খুব কষ্ট পাবি। আর তোকে কষ্টে থাকতে দেখলে আমি মরেও শান্তি পাবনা।
–কোথায় থেকে আসে এতো ভালোবাসা?
ঈশা আবেগি হয়ে জিজ্ঞেস করলো। ইভান একটু হেসে বলল
–যেখান থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে ঠিক সেখান থেকেই।
ঈশা হেসে ফেলে। তার হাসি শুনে ইভানের মন ভালো হয়ে যায়। সে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলে
–তোর এই হাসির মাঝেই আমার সব কষ্টের শেষ। তুই এভাবে হাসতে থাকলে আমি মৃত্যু পর্যন্ত তোর জন্য অপেক্ষা করতে পারব।
ইভানের কথা ঈশার মন ছুয়ে যায়। এতোটা ভাললাগা কাজ করে যে চোখ ছলছল করে উঠে। ঈশা চুপ করে থাকে। কারন কথা বলতে গেলেই সে কেঁদে ফেলবে। ঈশার অবস্থা ইভান বুঝতে পারে। ঈশাকে শান্ত করতে বলে
–ভাবিস না এতো সহজে মরবনা। আমি মরে গেলে তোকে কে বিরক্ত করবে বল।
ঈশা একটু হাসল। ইভান বলল
–সন্ধার মধ্যেই চলে আসবো।
বলেই ফোনটা রেখে দিলো। ঈশা ফোন রেখে বেশ কিছুক্ষন মুখে হাত দিয়ে হাসল। ইভান বুঝতেও পারছেনা তার জন্য কত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

৩৭
সন্ধ্যা হয়ে এলো তার পরেও ইভানের কোন খবর নেই। কিন্তু সে তো বলেছিল যে সন্ধ্যার মধ্যেই চলে আসবে। কিন্তু এখনো এলনা। তাহলে কি আরেকবার ফোন দিবে। না এতবার ফোন দিলে ইভান সন্দেহ করবে। কারন ঈশা তাকে কারন ছাড়া খুব কমই ফোন করে। ঈশা ঘরে বসেই ভাবছে এতোটা সময় অপেক্ষা করলো আর একটু অপেক্ষা করুক। চলেই আসবে। ভেবে বাইরে গেলো। তার চাচি রান্না ঘরে চা বানাচ্ছে। ঈশা রান্না ঘরে ঢুকে পাশে তাকের উপরে বসে বলল
–আমাকে ডাকনি কেন চাচি?
ইভানের মা একটু হেসে বলল
–তুই রেস্ট নিচ্ছিলি তাই ডাকি নি।
–নিচ্ছিলাম না। এমনিতেই বসে ছিলাম।
ইভানের মা ঈশার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–জানিস তুই এসেছিস আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা। মনটা আজ ভরে গেলো তোকে দেখে।
ঈশা তাকের উপর থেকে নেমে ইভানের মাকে জড়িয়ে ধরে বলে
–আসতে তো আমাকে হতোই। তোমার ওই জেদি ছেলেকে দূর থেকে আর সামলাতে পারছিলাম না। তাই তো বাধ্য হয়ে এই বাড়িতে আসতে হল।
ইভানের মা চোখ মুছে কিছু বলতে যাবে তখনি ঈশার ফোন বেজে উঠলো। অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। ধরবে কি না একটু ভেবে ফোনটা ধরেই ফেললো। ফোনটা ধরেই ওপাশের থেকে কিছু একটা শুনে ঈশার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। ইভানের মা জিজ্ঞেস করলেন
–কি হয়েছে?
ঈশা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
–তোমার ছেলে এক্সিডেন্ট করেছে।
কথাটা শুনেই ইভানের মা কাঁদতে শুরু করে দিলো। ঈশা নিজেকে শক্ত রেখে বলল
–আমাদের হাতে সময় নেই। এখনি হসপিটাল যেতে হবে।
বলেই ঈশা নিজের বাসায় ফোন করে দিলো। সবাই উপর থেকে নেমে এলো। হসপিটালে যাওয়ার জন্য বের হল। রাস্তায় ঈশা তার বাবা আর ইভানের বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিলো। কিছুক্ষন পর সবাই হসপিটালে পৌঁছে গেলো। হন্তদন্ত করে সবাই ইভান কে খুজতে লাগলো। সামনে দেখল রাশিক আর সাহিল দাড়িয়ে আছে। পাশে তাকাতেই ঈশার চোখ পড়লো ইভানের দিকে। হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। আকাশি রঙের শার্টটাতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগে বেগুনি বরন ধারন করেছে। ঈশা দৌড়ে গেলো ইভানের কাছে। একটু ঝুকে ইভানের মুখে হাত দিয়ে বলল
–তোমার কিচ্ছু হবেনা। তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
ইভানের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও সে জোর করে খুলে ইশাকে দেখছে। মন ভরে দেখছে। আর কখনও দেখতে পাবে কিনা জানেনা। ঈশা ইভানের চোখ বন্ধ হওয়া দেখে বলল
–চোখ খুলে রাখো। তোমার কিচ্ছু হবেনা। ইভান! আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? প্লিজ ইভান! তোমাকে ছাড়া আমি বাচবনা। তোমাকে ছাড়া আমি শুন্য। আমার জন্য হলেও তোমাকে বাঁচতে হবে। আমি তোমাকে আমার ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবো। তুমি যে ভালোবাসার জন্য এতদিন অপেক্ষা করে ছিলে সবটা আমি তোমাকে দিবো। প্লিজ ইভান চোখ খোল।

ইভানের চোখ বন্ধ হয়ে গেলো। সে ঈশার মুখ থেকে শুধু নিজের নামটা পর্যন্ত শুনতে পেয়েছিল। তার পরের কথা গুলো তার কানে যাওয়ার আগেই তার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। প্রিয়তমার যে ভালোবাসা টুকু অনুভব করার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছিলো। যে ভালবাসাটা তার চোখে নিজের জন্য দেখতে চেয়েছিল সেটা ঈশা প্রকাশ করলো ঠিকই কিন্তু ইভানের দেখার ভাগ্য হলনা। ইভান ঈশাকে বলেছিল যে তার মনে জমিয়ে থাকা ভালোবাসা প্রকাশ করার আগেই যদি ইভানের কিছু হয়ে যায় তাহলে সব থেকে বেশি কষ্ট পাবে ঈশা। তার আফসোসের শেষ থাকবেনা। সেটাই কি হতে যাচ্ছে ঈশার জীবনে? ঈশা ইভান কে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে নিজেই অনেক বড় সারপ্রাইজের সম্মুখীন হয়ে গেলো।
চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-১৫

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৫

৩৩
ইলহাম আর ইরা এক এক করে সব জিনিস নিচে নামিয়ে রাখছে। আর ঈশা তার মা আর চাচি সেগুলো যত্ন করে গোছাচ্ছে। ইভান রা আজ ঈশাদের বাড়ির নিচ তলায় শিফট করছে। সবাই তাই খুব ব্যাস্ত। ঈশা ইভানের ঘর গুছিয়ে দিচ্ছিল। সব জিনিস পত্র বের করে সাজিয়ে রাখছিল। সব গোছানো শেষে ইভানের লাগেজ টা খুলল সে। সব জিনিস এক এক করে বের করতেই একটা প্যাকেট চোখে পড়লো। প্যাকেট টা খুলতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। সেই ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত তার সমস্ত ছবি। তার সাথে একটা ডাইরি। ডাইরিটা উলটে পালটে দেখতে লাগলো। পুরো ডাইরিটা ভর্তি লেখা। লেখার চাপে কয়েক গুন ওজন বেড়ে গিয়েছে তার। খুব যত্ন করে সেটা উলটে পালটে দেখতে লাগলো। একটা পাতায় লেখা “আমার স্বপ্ন তোকে লাল শাড়ী পরে ঘরে বউ করে আনবো। জানিনা কবে সেই স্বপ্ন পুরন হবে।” লেখাটা পড়েই একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ঈশা সব কিছু গুছিয়ে রাখল। কিন্তু সেই ডাইরিটা নিজের জন্য রেখে দিলো। পরে সময় করে পড়বে সেটা।
সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে ঈশা নিজের ঘরে চলে গেলো। ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো। ইভানের ডাইরিটা খুলে পড়তে শুরু করলো। সমস্ত ডাইরি জুড়ে ইভানের আবেগ ছড়িয়ে আছে। তার মনের সব না বলা কথা যেন আজ জীবন্ত হয়ে ধরা দিচ্ছে ঈশার কাছে। সে ইভান কে আজ অনুভব করতে পারছে।
ইভান অফিস থেকে এসে দেখে সব গোছানো শেষ। তার ঘরে ঢুকে একবার সব ভালো ভাবে দেখে নিলো। খুব সুন্দর করে গোছানো। ঠিক ও যেভাবে চায় সব সেই জায়গা মতই আছে। বিছানায় ল্যাপটপ টা রেখে একটু চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। ইলহাম এসে বলল
–ভাইয়া তোমাকে মা খেতে ডাকছে।
চোখ খুলে উঠে বসে বলল
–শুরু কর আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
সব কিছুর উপরে চোখ বুলাতে বুলাতে আবার বলল
–আমার ঘর কে গুছিয়েছে রে?
–আপি। কেন?
–না এমনি। যা আসছি।
ইভান একটু হাসলো। ওয়াশ রুমের দরজার কাছে যেতেই আবার ঘুরে এলো। এসেই তার লাগেজের সব জিনিস ভালো করে খুজে দেখতে লাগলো। সব আছে শুধু তার ডাইরি নেই। ইভান একটু ভাবল। তারপর একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–ভেবেছিলাম বিয়ের দিন বাসর রাতে তোকে সব দিয়ে দিবো। কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি। আজকে নিজে থেকেই সব কিছু তোর কাছে চলে গেলো।
খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে ফোনে কি যেন মনোযোগ দিয়ে দেখছে ইভান। কলিং বেল বাজতেই ইলহাম দৌড়ে গেলো। দরজা খুলে বলল
–আপি তুমি?
ঈশা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল
–চাচি কোথায়?
–ঘরে।
ঢুকেই সোফায় বসা ইভানের দিকে চোখ পড়লো তার। মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখছে ফোনে।তার দিকে একবারও তাকালনা। ঈশা তার চাচির কাছে গেলো।
–চাচি…।
–কি রে ঈশা? কিছু বলবি?
— তোমার তেল রেখে এসেছিলে।
–ও ভালো করেছিস। আমি উপরে যাব ভাবছিলাম। একটু কাজ আছে।
–আচ্ছা তুমি আসো আমি গেলাম।
বলেই ঈশা বাইরে চলে এলো। ইভান তখনও একি অবস্থায় আছে। সে ইভানের দিকে দেখতে দেখতে চলে গেলো দরজার কাছে। দরজা খুলতে যাবে তখনি ইভানের কথা কানে এলো
–কান্না ছাড়া আর কিছুই কি পারিস না তুই?
ঈশা পিছনে ঘুরে দেখে ফোনের দিকে তাকিয়েই ইভান কথাটা বলেছে। কিন্তু ঈশা আশ্চর্য হল। সে যে কেঁদেছে সেটা ইভান জানলো কিভাবে। ঈশা পরিস্থিতি সামলাতে বলল
–কিছু বললে?
ইভান আগের অবস্থা থেকেই বলল
–যা বলেছি শুনতেও পেয়েছিস আর বুঝতেও পেরেছিস।
ঈশা অবাক হয়ে দাড়িয়েই থাকলো। তার দাড়িয়ে থাকা বুঝতে পেরে ইভান আবার বলে উঠলো
–তোকে বুঝতে তোর দিকে তাকাতে হয়না। আমার বুকের ভিতরে যে হার্ট টা আছে সেটাই আমাকে সব জানিয়ে দেয়।
ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে ঈশা। ইভান এবার ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–এভাবে দূর থেকে দেখে কি মন ভরে? মন ভরানোর জন্য কাছে এসে অনুভব করতে হয়।
ঈশা কোন কথা না বলে চলে গেলো। আসলে ইভানের লেখা ডাইরি পড়ে ঈশা অনেক কেঁদেছে। কারন ইভানের সমস্ত ভালোবাসা আবেগ অনুভুতি যা কখনও সে ঈশার সামনে প্রকাশ করেনি সেই সব কিছুর সমষ্টি ওই ডাইরিটা। এতদিন ধরে এতো কষ্ট পেয়েছে ইভান ঈশা বুঝতে পারেনি। ঈশার জন্য ইভানের অনুভুতি গুলা এতোই গভীর ছিল যে ঈশা সেসব পড়ে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। নিজের মন কে শান্ত করতে অনেক কেঁদেছে। ইভান তাকে কতটা ভালবাসে তা ঈশা উপলব্ধি করতে পেরেছে।

৩৪
রাতের ফুরফুরে হাওয়ায় ইভান ছাদের রেলিঙ্গের উপরে বসে ছাদের বিপরিত দিকে পা ঝুলিয়ে নিচে তাকিয়ে আছে। হাতে সিগারেট। গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছে। ঈশা কখন এসেছে সে খেয়াল করেনি। বেশ কিছুক্ষন সে দাড়িয়ে ইভান কে দেখছে। তারপর আসতে করে গিয়ে ইভানের পাশে উলটা দিকে ঘুরে ছাদের দিকে পা ঝুলিয়ে বসলো। গভীর ভাবনায় ডুবে থাকায় ঈশার উপস্থিতি বুঝতে পেরে সে একটু চমকে উঠলো । একবার ঈশার দিকে তাকিয়ে হাতের কাল ঘড়িটা দেখে বলল
–তুই এতো রাতে এখানে?
ঈশা তার কথার উত্তর না দিয়ে সামনের আকাশে চাঁদটার দিকে তাকিয়ে বলল
–কি সুন্দর চাঁদ তাই না।
ইভান ঈশার কথা শুনে একটু অবাক হয়। মাথা ঘুরিয়ে একবার চাঁদ দেখে বলল
–হুম!
ঈশা এবার উপরে তাকিয়েই বলল
–তুমি এতো রাতে এখানে কি করছ?
ইভান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
–কিছুনা। কিন্তু তুই এতো রাতে কেন ছাদে এসেছিস?
–তুমি আছো তাই।
ঈশার কথা শুনে ইভান তার দিকে তাকাল। হাতের সিগারেট টা ফেলে দিয়ে তার দিকে ঘুরে বসলো। ঈশার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–তুই কিভাবে জানলি আমি এখানে আছি?
ঈশা একটু হেসে বলল
–আন্দাজ করেছি।
–যদি না থাকতাম।
–তাহলে চলে যেতাম।
–একা একা রাতে এভাবে ছাদে আর কখনও আসবিনা।
–আসিনা তো!
ইভান এবার বিরক্ত হয়ে বলল
–ঈশা আমি সিরিয়াস!
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি এতো রাতে একা ছাদে আসিনা। আজ আসতে ইচ্ছা হল। তখন মনে হল তুমি এই সময় ছাদে থাকতে পার তাই আসলাম।
ইভান ঈশার কথা শুনে খুব শান্ত ভাবে বলল
–যদি কখনও আসতে ইচ্ছা করে তাহলে আমাকে ফোন দিবি। আমি তোকে নিয়ে আসবো। এভাবে আন্দাজ করে আর কখনও আসবিনা।
ঈশা সামনে তাকিয়েই বলল
–আর ফোন দিতে হবেনা।
ইভান ঈশার কথার মানে বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে বলল
–কি বললি তুই?
ঈশা একটু হেসে বলল
–তুমি আমার কথার মানে বুঝতে পারনা এটা আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না।
ইভান ঈশার কথায় অবাক হয়ে গেলো। সে বুঝতে পারল ঈশা তাকে কিছু বলতে এসেছে। আর সে ততোক্ষণ পর্যন্ত বলবে না যতক্ষণ না তার মনে হইছে ইভান তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। তাই ইভান হেয়ালি না করে তার কথায় মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে। ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে। ঈশা ইভানের দিকে না তাকিয়েই একটু হেসে বলল
–আগের মতো অভ্যাস টা এখনও আছে। কথা শোনার জন্য মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা কর।
ঈশা যে ইভানের আচরণ বুঝে ফেলবে ইভান ভাবেনি। একটু হেসে বলল
–তোর কথা শোনার জন্যই আমি অপেক্ষা করে থাকি কিন্তু তুই বলিস না।
ঈশা কিছু বলল না। ইভান জিজ্ঞেস করলো
–এখন তোর শরীর কেমন আছে? জর কমেছে?
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–বুঝতে পারনা?
ইভান একটু হেসে বলল
–সে আমি না দেখেও বুঝতে পারি। কিন্তু তোর কাছ থেকে জানতে ইচ্ছা করলো।
–ভালো আছি।
দুজনি বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। ঈশা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ইভান ঈশার দিকে। ঈশা ভাবছে কিভাবে কথা শুরু করবে। আর ইভান অপেক্ষা করছে ঈশা কি বলবে সেটা শোনার জন্য। বেশ কিছুক্ষন পর ঈশা আকাশের দিকে তাকিয়েই বলল
–তোমার ফোনের ওয়াল পেপারে আমার যে ছবিটা আছে সেটা কোথায় পেলে?
ঈশার এমন কথায় ইভান একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কারন এই ছবিটা অল্প কিছুদিন আগের তোলা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল। ঈশার কাছে এরকম কোন ছবিই নেই। ইভান কথাটাকে এভয়েড করার জন্য একটু অবাক হয়ে বলে
–সিরিয়াসলি ঈশা! তুই আমার ফোন চেক করিস?
ঈশা ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–কেন? তোমার ফোনে কি এমন সিক্রেট আছে যা আমার জানা যাবেনা?
ইভান কি বলবে বুঝতে পারলনা। পরিস্থিতি সামলাতে বলল
–এভাবে চেক করার কি আছে। চাইলে আমি নিজে থেকেই দিয়ে দিতাম।
–এটা কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর না।
ইভান এবার ঠোঁট কামড়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে ভাবছে আচ্ছা রকম পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো। সে এই প্রশ্নের উত্তর টা আসলে দিতেই চায়না। কিন্তু সে এটাও জানে ঈশা নাছোড়বান্দা। একবার যদি মনে হয়েছে সেটা শুনেই তবে ক্ষান্ত হবে। একটু সাজিয়ে মিথ্যা বলল ইভান
–ইরার কাছে পেয়েছি।
ইভান যে মিথ্যা বলছে তা বুঝতে পেরে ঈশা একটু হাসল। আর সত্যিটা সে বলতে চাইছেনা তাই আর জোর করলনা। ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে ইভানও বুঝতে পারল ঈশা তার মিথ্যে ধরে ফেলেছে। তাই আর কথা বাড়ালনা। ইভান পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে আরেকটা সিগারেট জালানোর জন্য বের করলো। তখনি ঈশা সিগারেটের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি না বলেছ আমাকে পেলে আর সিগারেট খাবেনা।
ঈশার কথা শুনে ইভান ঈশার দিকে ঘুরে তাকায়। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে
–পেলে তো দুনিয়া ছেড়ে দিতেও একবার ভাবতাম না।
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–এখনও কি বাকি আছে?
ইভান ঈশার কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠল।তারপর নেমে একটু সামনে গিয়ে একটা সিগারেট হাতে নিয়ে বলল
–তুই কি ভাবছিস সেদিন রাতে সত্যি আমাদের মাঝে কিছু হয়েছে? আমি তোকে জালানোর জন্য এমনি বলেছিলাম। কিছুই হয়নি আমাদের মাঝে।
কথাটা শেষ করেই ইভান হাতে থাকা সিগারেট টা ঠোঁটে লাগিয়ে লাইটার টা জালাতেই ঈশা গিয়ে ইভানের পিঠে নিজের মাথাটা ঠেকিয়ে বলে
–সেটা আমি বিশ্বাসও করিনি।
ইভান লাইটার টা নিভিয়ে ঠোটের সিগারেট টা নিচে ফেলে দিয়ে ঈশার দিকে ঘুরে বলে
–তাহলে?
ঈশা একটু হেসে বলে
–যেদিন রাতে তুমি আমাকে ঔষধ খাওয়াতে আমার ঘরে এসেছিলে। চাইলেই অনেক কিছুই করতে পারতে। আর আমি বাধাও দিতাম না। ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলে আমি তোমার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম কিন্তু তবুও তুমি আমার মুখ থেকে শোনার অপেক্ষা করছিলে। আর মাতাল অবস্থায় তুমি আমার সুযোগ নিবে তা আমি কিভাবে বিশ্বাস করি বল।
ইভান ঈশার দিকে নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আজ ঈশা অনেক কিছু বলতে চায়। আর ইভান তাকে বলার সুযোগ দিতে চায়। ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি মজা করছিলে আমি সুযোগ দিয়েছিলাম।
বলেই ইভানের দিকে এগিয়ে গেলো তারপর তার টি শার্ট টা খামচে ধরে নিজেকে তার সাথে লেপটে দিয়ে বলল
–তাই বলে তোমার সব কথা বিশ্বাস করে নিয়েছি সেটা ভাবার দরকার নেই। আমি তোমার শিরায় শিরায় বিরাজ করি মিস্টার ইভান মাহমুদ।
ইভান ঈশার কথা শুনে কিছু বলতে পারলনা। অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভানের মুখের কাছে নিজের মুখটা এনে ঈশা বলল
— তোমার প্রতি এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি। তোমাকে ছাড়াতে গেলে আরো ক্রমশ জড়িয়ে যাই আমি। আমার কিছুই আর করার থাকে না। তুমি এভাবেই বেঁধে ফেলো যদি দূরে যেতে চাই। যেখানেই যেতে চাই, সেখানেই বিছিয়ে রেখেছো তোমার অনুভুতি। তোমাকে কি অতিক্রম করা কখনো সম্ভব!!
“এই জীবনের প্রাপ্তির হিসাবে শুধুই তুমি।“
ঈশার কথা শুনে ইভান এবার আকাশ থেকে পড়লো। ইভানের বুঝতে বাকি রইলনা যে ঈশা সেদিন যতটা মাতলামি করেছিলো ততটা মাতাল ছিলোনা। যা বলেছিল সব সজ্ঞানে। ইভান ঈশা কে ছেড়ে দিয়ে রেলিঙ্গের ধারে গিয়ে দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে বলল
–তাহলে সেদিনের সব কথা তোর মনে আছে।
ঈশা একটু হেসে বলল
–ভেবেছিলাম তুমি বুঝতে পারবে।
ইভান একটু হেসে বলল
–স্ট্রেঞ্জ! সেটাই ভাবছি আমি কেন বুঝতে পারলাম না। সেদিন রাতেও তুই যা করেছিলি সব জেগেই করেছিলি।
ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–মাঝে মাঝে না বুঝতে পারার সুবিধা আছে। সেদিন যদি বুঝতে তাহলে আজ কি আবার শুনতে পেতে?
ঈশার কথা শুনে কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকলো ইভান। দুজনের দৃষ্টি দুজনের উপরে স্থির। কেউ কোন কথা বলছেনা। ইভান এভাবে কিছুক্ষন থেকে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা বের করে নিচে ফেলে দিলো। তারপর ঈশার কাছে এসে তার কোমর ধরে এক টান দিলো। নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে তার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোটের মাঝে আবদ্ধ করে নিলো। আজ ঈশাও সাড়া দিয়ে ইভানের পিছনের টি শার্ট খামচে ধরল। বেশ কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে ইভান বলল
–এই নেশার কাছে ওই নেশাটা কিছুই না। ওটার সত্যিই আর দরকার নেই।
ইভানের কথা শুনে ঈশা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। ইভান ঈশার মুখটা আলতো করে তুলে বলল
–তোর এই লজ্জা মাখা মুখটা আমাকে আরও বেশি তোর কাছে টানে।
ঈশা এবার লজ্জায় ইভানের বুকে মুখ লুকাল। ইভানও পরম ভালবাসায় তাকে জড়িয়ে নিলো। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে। এর মাঝেই ইভান বলল
–এই মুহূর্তটার জন্য আমি এতো বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তুই যে আমাকে এতো বছর অপেক্ষা করালি তার শাস্তি কি হবে বল?
ঈশা ইভান কে ছেড়ে দিয়ে বলল
–তোমার এই শাস্তির লিস্ট কি এই জীবনে কখনও শেষ হবে?
ইভান ঈশাকে আবার জড়িয়ে ধরে বলল
–এই জীবনে আমার কোন শাস্তি থেকে তুই বাঁচতে পারবিনা।
ঈশার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলল
–আমার এই ভালবাসায় ভরা শাস্তি শুধুই তোর জন্য। ইনফ্যাক্ট আমার আবেগ অনুভুতি সবই শুধুই তোর।
ইভানের কথা শুনে ঈশা কেঁদে ফেললো। ঈশাকে কাঁদতে দেখে ইভান একটু বিচলিত হয়ে বলল
–কি হয়েছে জান? কাদছিস কেন?
ঈশা আরও জোরে কেঁদে ফেললো। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল
–তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। অনেক বেশি। কিভাবে সহ্য করেছো? আমাকে কিভাবে এতো সহজে মাফ করতে পারলে? আমি অনেক খারাপ। আমি শুধু তোমাকে কষ্ট দেই।
ইভান পরম যত্নে ঈশার চোখের পানি মুছে দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল
–আমি তোকে তোর মতো করেই ভালবেসেছি। শুধু তোর ভালোবাসা টা না তোর রাগ অভিমান ঘৃণা সবটাই আমার নিজের করে নিয়েছি। তুই আমাকে যতোই ঘৃণা কর না কেন তাতে আমার কোন আফসোস নেই। কারন এই সব কিছু তো আমারি হওয়ার কথা ছিল। তুই আমার অস্তিত্ব। আর থাকলো ভালবাসা সেটা নাহয় আমি আমার ভালোবাসা দিয়েই জয় করে নিবো।
ইভানের কথা শুনে ঈশা তাকে জড়িয়ে ধরল। ইভানও শক্ত করে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–তোকে খুব ভালোবাসি জান। নিজের থেকেও বেশি।

চলবে……।