Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1493



তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-১৪

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৪

৩১
চোখে আলো পড়তেই ঈশা বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে ফেলে। কিন্তু চোখ খুলে যা দেখল সেটা দেখেই সে শক খেলো। ইভান তাকে আস্টে পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হল। ইভান খালি গায়ে শুয়ে আছে। ঈশার এবার হার্ট বিট বেড়ে গেলো। সে কিছুই বুঝতে পারছেনা। একটু সময় নিয়ে আগের কথা মনে করতে চেষ্টা করলো কিন্তু সে কাল চিপস খাওয়া পর্যন্তই মনে করতে পারল। তারপর কি হয়েছে কিছুই মনে পড়ছেনা। সে একটু শুকনো ঢোক গিলে ইভান কে আবার ভালো করে দেখে নিলো। খালি গায়ে ঈশা কে ধরে সে উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে। ঈশা এবার নিজেকে দেখল। তার কাপড় ও এলোমেলো। ওড়না কোথাও খুজে পাচ্ছেনা। ঈশার শরীর ঘামতে শুরু করলো। কি করবে বুঝতে পারছেনা। সে এক ঝটকায় ইভান কে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো। ইভানের ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় রাগ করে বলল
–হচ্ছেটা কি?
ঈশা একটু ভয় পেয়ে চমকে উঠলো। কিন্তু তারপরে কাদ কাদ হয়ে বলল
–তুমি এখানে কেন?
ইভান ঈশার কথার উত্তর না দিয়ে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
–কাল সারা রাত ঘুমাতে দিস নি। এখন আবার সকাল সকাল উঠে কেন নাটক করছিস?
ইভানের কথা শুনে ঈশা শুকনো ঢোক গিলে বলল
–সারা রাত ঘুমাতে দেইনি মানে? কি করেছি?
ইভান এবার মাথা তুলে অবাক চোখে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–সিরিয়াসলি ঈশা! তোর কিছুই মনে নেই!
ঈশা অসহায়ের মতো মাথা নাড়াল। ইভান এবার সোজা হয়ে শুয়ে পা নাড়াতে নাড়াতে বলল
–কি করেছিস সেটা মুখে কিভাবে বলব। প্রাক্টিক্যালি রাতে করে দেখাব। তখন দেখে নিস। এখন ঘুমা আর আমাকেও ঘুমাতে দে।
ঈশা এবার চোখ বড় বড় করে বলল
–কি বলছ এসব?
ইভান এবার বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো। ঈশাকে পুরোটা ভালো করে দেখে নিয়ে বলল
–নিজের অবস্থা দেখেও বুঝতে পারছিস না নাকি বুঝতে চাইছিস না।
ইভানের কথা শুনে ঈশা নিজের দিকে ভালো করে দেখে নিলো। চুল গুল এলোমেলো। কাপড় ও এলোমেলো। ইভানের গলায় হালকা ঈশার কাজলের কালির অংশ লেগে আছে। মাথার পিন গুলো বিছানায় ছড়ানো। একটু ঘুরতেই চোখে পড়লো তার ওড়না আর ইভানের শার্ট মেঝতে পড়ে আছে। পাশে থাকা বিয়ারের ক্যান টা চোখে পড়তেই ঈশা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে চিৎকার করে বলল
–ওই যে ওই ড্রিঙ্কস টা আমি খেয়েছিলাম। কিন্তু তার পরে আর কিছু মনে নেই কেন?
ইভান বিয়ারের ক্যানের দিকে তাকিয়ে বলল
–ওটা ড্রিঙ্কস না বিয়ার ছিল। আর ওটা খেয়েই তো তুই আমা……।
বলেই থেমে গেলো ইভান। ঈশা চোখ বড় বড় করে বলল
–বিয়ার মানে? তুমি আমাকে বিয়ার খাইয়েছ?
ইভান এবার রাগি চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–একটা থাপ্পড় মেরে সোজা বানিয়ে দিবো। আমি তোকে কখন খাওয়ালাম। আমি যদি ঠিক সময় মতো না আসতাম তাহলে তুল কালাম কাহিনি ঘটিয়ে ফেলতিস। আমার সাথেই যা করেছিস। আল্লাহ জানে আমি না থাকলে কি হতো!
ঈশা এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল
–ওটা খেয়ে আমি কি করেছি?
ইভান ঈশার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–কি করিস নি সেটা জিজ্ঞেস কর। অবশ্য তোর এই নতুন রুপের সাথে পরিচিত হয়ে ভালই লেগেছে। খারাপ হয়নি। নিজের সমস্ত আবেগ দিয়ে তোকে ভালবেসেছি। মন ভোরে আদর করেছি সারা রাত।
ইভানের কথা শুনে ঈশা এবার ঘাবড়ে গেলো। একটু ভেবে বলল
–কিন্তু তুমি যে বলেছিলে আমাকে জোর করবেনা। তাহলে?
ইভান এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলল
–জোর করিনি তো! তুই তো বললি ভালবাসিস তাই আদর নিবি। আর তুই আমার কাছে কিছু চাইলে সেটা আমি তোকে না দিয়ে থাকতে পারি না। তুই তো জানিস।
ঈশা ইভানের কথা শুনে চমকে গেলো। এরকম কথাও কি ঈশা বলেছে। বিশ্বাসই হচ্ছেনা তার। সামনে তাকিয়ে ভাবতে ভাবতে বলল
–আমি কি এরকম বলেছি?
ইভান একটু হেসে ঈশার একদম কাছে চলে আসে। তার কানে আসতে করে একটা কামড় দিয়ে বলে
–এখন এখানে এভাবে বসে থাকলে যে কোন সময় আমার মুড চেঞ্জ হতে পারে। তখন কিন্তু তুই চাইলেও আমি তোকে ছাড়বনা।
ঈশা ইভানের কথা বুঝতে পেরে এক দৌড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। দরজা বন্ধ করে দরজায় হেলানি দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ভাবতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই কিছু মনে পড়ছেনা। আবার ইভানের কথা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাসও করেত পারছেনা। মনে একটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। সামনে থাকা আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে নিলো। চোখের কাজল লেপটে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছুই বুঝতে পারছেনা। মাথাটাও প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। বেশ খানিকটা সময় ওয়াশ রুমে বসে থাকলো ঈশা। বাইরে ইভান মুচকি মুচকি হাসছে। ঈশার এতোটা সময় ওয়াশ রুমে থাকায় ইভান এবার চিৎকার করে বলল
–এতক্ষণ ওয়াশ রুমে কি করছিস? তুই নিজে বের হবি নাকি আমি বের করে আনবো?
ইভানের কথা শুনে ঈশা বের হয়ে এলো ওয়াশ রুম থেকে। ইভান তার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে আছে। ইভানের ওভাবে তাকানো দেখে ঈশা নিচে পড়ে থাকা ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। ঈশাকে আর একটু বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে ইভান বলল
–সারা রাত এতো কিছু হল তখন তো লজ্জা পেলিনা। বরং মজা নিলি। আর এখন লজ্জা উপচে পড়ছে?
তার কথা শুনে ঈশার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে।

৩২
সারা শরীর কাপুনি দিয়ে জর আসছে। অনেকটা দুর্বল ও লাগছে। খাবার রুচি নেই একদম। ঈশা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। সব কিছু কেমন অসহ্য লাগছে। এর মাঝে ইরা খাবার নিয়ে আসলো। কিন্তু সে খুব বিরক্ত হল। ধমক দিয়ে বলল
–এভাবে বিরক্ত করলে কিন্তু আমি বাড়ি থেকে চলে যাব।
ইরা তার আচরনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
–কই যাবে আপু?
চোখ বন্ধ করেই ঈশা বলল
–কেন আমার যাওয়ার জায়গা নেই? তোরা কি ভাবিস আমি এই বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে পারব না।
–কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে একটু শুনি?
ইভানের ভারি গলার আওয়াজ শুনে ঈশা চমকে উঠে বসলো। ইরা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–আরে ভাইয়া তুমি! অফিস থেকে কখন এলে?
–মাত্র এলাম।
ইরার মাথায় হাত দিয়ে একটু হেসে বলল
–ওটা আমাকে দে। আমি খাইয়ে দিবো। তুই যা।
ইরা ইভানের হাতে খাবার দিয়ে চলে গেলো। ইভান ঈশার সামনে খাবারের প্লেট ধরতেই ঈশার উকি আসলো। ঈশা মুখ চেপে উকাতে লাগলো। ইভান প্লেট টা সরিয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে । ঠোঁটে তার সেই ডেভিল হাসি। ঈশা নিজেকে সামলে নিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে তার হাসি দেখে একটু অবাক হল। তারপর চোখ ফিরিয়ে নিয়ে একটু ভাবল তার হাসির কারন। একটু ভেবেই ইভানের দিকে তাকাল। সে তখনও হাসছে। ঈশা এবার একটু চিন্তিত হয়ে বলল
–হাসছ কেন?
ইভান তার হাসিটা বন্ধ করে বলল
–এতো বড় একটা খুশির খবর আর আমি হাসবনা।
ঈশা বুঝতে না পেরেও ভ্রু কুচকে বলল
–কিসের খুশির খবর?
ইভান হতাশা নিয়ে বলল
–তুই কি সব ভুলে গেলি?
ঈশা এবার ভয় পেয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল
–কি বলতে চাইছ তুমি?
ইভান নিরুত্তর হাসল। ঈশা আবার জিজ্ঞেস করলো
–ঠিক করে বলত তুমি কি নিয়ে কথা বলছ?
ইভান খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–সেই দিন রাতের পর থেকে তোর খাবারে অরুচি হয়। বমি পায়। এসব তো আর এমনি এমনি হয়নি।
ঈশা একটু ভেবে আনমনে বলে
–হ্যা।
বলেই ইভানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইভান ঈশার একটু কাছে এসে সামনের চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলে
–তুই কি এখনো কিছুই বুঝতে পারছিস না?
কথাটা শুনে ঈশার মাথা ঘুরে উঠে। সে ঘামতে থাকে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। তার অবস্থা বুঝতে পেরে ইভান পানির গ্লাসটা ঈশার সামনে ধরে। ঈশা পুরো গ্লাসের পানিটা একবারে শেষ করে ফেলে। ভয়ে ভয়ে ইভানের দিকে তাকায়। ইভান তার হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে টেবিলে রেখে দেয়। তারপর ঈশার একটু কাছে এসে প্লেট থেকে খাবার নিয়ে ঈশার মুখে ধরে বলে
–খেয়ে নে। তোর জন্য না হলেও আরেক জনের কথা তো ভাবতে হবে।
ঈশা ইভানের কথা শুনে হা হয়ে গেলো। আর ইভান তার মুখে জত্নে খাবার দিতে লাগলো। ঈশাকে সব খাবার খাইয়ে দিয়ে ইভান উঠে গেলো। খাবার প্লেট টা বাইরে রেখে হাত ধুয়ে আবার এলো। ঈশা আনমনেই ভাবছে। ইভান ঔষধের বক্স থেকে ঔষধ টা বের করে ঈশার সামনে ধরল। ঈশা ঔষধের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে সরে গেলো। ইভান খুব শান্ত ভাবে বলল
–আমি খাইয়ে দিবো?
ঈশা ইভানের দিকে একবার তাকিয়ে বলল
–না না। আমি একাই খেতে পারব।
–তাহলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।
ঈশা আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলো। সাথে সাথে ইভান তার হাতে চকলেট টা ধরে দিলো। ঈশা প্যাকেট টা খুলে চকলেট টা মুখে নিয়ে নিলো। তারপর ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–রেস্ট নে।
ঈশা কোন কথা না বলে বসে থাকলো। ইভান এবার ঈশার পাশে বসে তার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–শুয়ে পড়! মাথা টিপে দিবো?
ঈশা ইভানের দিকে ঘুরে তাকাল। মাত্র অফিস থেকে এসেছে। তার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। আবার সেই কিনা তার মাথা টিপে দিবে। এই মানুষটা এতো এনার্জি কোথায় পায়। ঈশার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে ইভান একটু হেসে বলল
–তোর এই চেহারাটা দেখলেই আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
ঈশার গালে হালকা স্পর্শ করে বলল
–আমার সব এনার্জি এখান থেকে আসে।
ঈশা অবাক হয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। একটা মানুষ কিভাবে এতো নিখুঁত ভাবে আরেকটা মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে। এটাও কি সম্ভব। ইভান ঈশাকে বিছানায় শুয়ে দিলো। তারপর তার মাথা টিপে দিতে দিতে বলল
–নিজেকে সব সময় ভালো রাখার চেষ্টা করিস। তাহলেই আমিও ভালো থাকব।
ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইভান একটু হেলে ঈশার কিছুটা কাছে গেলো। ইভানের মাতাল করা সেই পারফিউম ঈশাকে আজও সেদিনের মতো তার কাছে টানছে। এভাবে বেশিক্ষন থাকতে না পেরে ঈশা বলল
–তুমি ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও। আমি ঘুমিয়ে যাব।
ইভান আর কিছু না বলে উঠে গেলো। দরজার কাছে গিয়ে ঈশার দিকে একবার ঘুরে বলল
–শুধু নিজের খেয়াল রাখলেই কি হবে? আরেকজনের খেয়ালও তো রাখতে হবে!
ইভানের কথা শুনে ঈশা চোখ খুলে বড় বড় করে তার দিকে তাকাল। ইভান একটু হেসে বের হয়ে গেলো।

চলবে………।
(ইভান এটা কি বলল🙄🙄)

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-১৩

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৩

২৯
সকাল বেলা বেশ চেচামেচিতে ঈশার ঘুম ভাঙ্গল। ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে দেখে সে। এতো সকালে কি নিয়ে জোরে জোরে কথা বলছে সবাই। ভাবতে ভাবতে আবার চোখ লেগে এলো। চেচামেচির শব্দ বাড়তেই লাগলো। ঈশা উঠে বসলো। দুই হাতে চোখ ঘষে ঘুম কাটানোর চেষ্টা করলো। তারপর পাশে রাখা ওড়নাটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। সবাই কি যেন নিয়ে খুব চিন্তিত। ঈশা ঘুম ঘুম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো
–কি হয়েছে?
ঈশার চাচা বলল
–গ্রামে যে ফারুক মামা ছিল উনি মারা গিয়েছে রাতে।
ঈশা মরার খবর শুনে দোয়া পড়ে নিলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো
–এখন কি করবে?
ঈশার বাবা বললেন
–উনি গ্রামের এক মাত্র মুরুব্বি ছিলেন। আমাদের যেতে হবে।
সবাই যাওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। সবার কথা শেষ হলে ঈশার মা বলেন
–আমরা সবাই যাব। ঈশা ইরা তোমরা থাকবে। ইলহাম ইভান ও থাকবে। আজ রাতে হয়ত আমরা আসতে পারবোনা। রাতে তোমরা ৪ জন বাসায় থাকবে।
ঈশা মায়ের কথা শুনে আর কিছু বলতে পারলনা। মেনে নিলো। সবাই চলে গেলো। ঈশার খুব মাথা ব্যাথা করছিলো। রাতে ভালো ঘুম হয়নি। আর অনেক সকালে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো। এই মুহূর্তে একটু ঘুমান দরকার। নাহলে আবার ব্যথাটা বাড়বে। তাই সে নাস্তা খেয়ে শুয়ে পড়ল। সব রান্না করা আছে। তাই তাকে আর কষ্ট করে রান্না করতে হবেনা। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম ভাঙ্গল ঠিক ১১ টায়। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পাশে থাকা মোবাইলটা নিয়ে ঘড়ি দেখল। অনেক বেলা হয়ে গেছে। এতক্ষন ঘুমিয়েছে ভাবতেই ঈশা অবাক হয়ে গেলো। উঠেই ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হয়ে টেবিলে বসলো। চারিদিকে ঘুরে দেখল কেউ নেই। এমন সময় পাশের ঘর থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসলো। কি হচ্ছে বুঝতে উঠে গিয়ে দেখে ইলহাম আর ইরা কি নিয়ে ঝগড়া করছে। ঈশা এক ধমক দিয়ে বলল
–ঝগড়া করছিস কেন?
ইরা কাদ কাদ কণ্ঠে বলল
–ইলহাম ভাইয়া আমার ফোনের সব ছবি ডিলিট করে দিয়েছে।
ঈশা ইলহামের দিকে তাকাতেই সে বলল
–আমি ইচ্ছা করে করিনি আপি।
তার কথা শেষ হতেই ইরা বলল
–ইচ্ছা করে করেছো। তুমি মোটেই ভালো না।
বলেই দুজন আবার চেচামেচি শুরু করে দিলো। ঈশার খুব বিরক্ত লাগতে শুরু করলো। অনেক বুঝিয়ে দুজনের ঝগড়া থামিয়ে দিলো। ঝগড়া থামিয়ে বেশ স্বস্তি পেলো ঈশা। তারপর ইভানের কথা মনে পড়ে গেলো। ইলহাম কে জিজ্ঞেস করলো
–ইলহাম তোর ভাইয়া কোথায় রে?
–ভাইয়া তো অফিসে গেছে। তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই তোমাকে ডিস্টার্ব করতে নিষেধ করে গেছে।
–কখন গেছে?
–অনেক সকালে।
–খেয়েছে কিছু?
–না।
ঈশার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সে জেগে থাকলে হয়ত ইভান কে খাওয়াত। সে ঘুমিয়ে গেছে বলে না খেয়ে চলে গেলো। কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে গেলো। কিন্তু ইভানের কথা তার মাথা থেকে বের হচ্ছেই না। কে জানে এখন অব্দি কিছু খেয়েছে কিনা। ভাবতে ভাবতেই ফোনটা হাতে তুলে নিলো। কি মনে করে ইভানের নাম্বারে ফোন দিলো। কিন্তু রিং বেজে গেলো ফোনটা ধরলনা। তার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কি এমন ব্যস্ত যে তার ফোনটাও ধরতে পারল না। তার ভাবনার মাঝেই বজ্র কণ্ঠে ফোনটা বেজে উঠলো। সে চমকে ফোনটা হাতে নিয়ে থমকে গেলো। ইভান ফোন করেছে।রাগ হল তার। একবার ভাবল সেও ফোনটা ধরবেনা। কিন্তু ফোনটা কেটে যাক সেটাও সে চাচ্ছেনা। অবশেষে ফোনটা ধরে ফেললো। ঈশা কিছু বলার আগেই ইভান বলল
–কি হয়েছে জান? কোন সমস্যা?
আসলে ঈশা ইভান কে ফোন দেয়না। আর হঠাৎ ঈশার ফোন করা দেখে ইভান ভয় পেয়ে যায়। কারন সকালে অফিসে আসার সময় সে দেখেছে বাসায় কেউ নেই। ঈশা ইভানের চিন্তার কারন বুঝতে পেরে বলল
–আরে না না কিছু হয়নি।
ইভান এবার খুব আশ্চর্য হল। কোন কারন ছাড়াই ঈশা তাকে ফোন দিয়েছে বিষয়টা তার হজম হলনা। খুব শান্ত কণ্ঠে বলল
–তাহলে ফোন করেছিস কেন?
এবার ঈশা খুব বিপদে পড়ে গেলো। কি কারনে ফোন করেছে বলবে? একটু ভেবে বলল
–ইলহাম বলছিল তুমি নাকি সকালে না খেয়ে গিয়েছ। তাই খেয়েছ কিনা জানতে ফোন করতে বলল।
ইভান একটু হেসে বলল
–তুই ঘুম থেকে ওঠার একটু আগেই ইলহামের সাথে আমার কথা হয়েছে। তখন তো এমন কিছু জিজ্ঞেস করেনি। এখন কি মনে করে তোকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতে বলল।
ঈশা এবার অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। ঈশার অবস্থা বুঝতে পেরে ইভান বলল
–মিস করছিস আমাকে?
ঈশা খুব শান্ত ভাবে বলল
–তোমাকে মিস করার মতো সুযোগ তুমি আমাকে দাও?
ইভান একটু হেসে বলল
–এই যে এখন দিলাম।
ইভানের কথা শুনে ঈশা চুপ হয়ে গেলো। তার চুপ করে থাকা দেখে ইভান বলল
–যা জানতে ফোন করেছিস জিজ্ঞেস করবিনা?
ঈশা ছোট করে একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–খেয়েছ?
–হুম।
ইভানের ছোট শব্দটা ঈশার মনে কেন জানি একটা চাপা কষ্টের অনুভুতি সৃষ্টি করলো। তাই তার সাথে আর একটু শব্দ জুড়ে দিয়ে বলল
–কখন আসবে?
এবার ঈশার কথা ইভানের মন ছুয়ে গেলো। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
–এভাবে বললে তো এখনি চলে যাব। কিন্তু অনেক কাজ আছে।
ঈশা মুচকি হেসে বলল
–শেষ করেই আসো।
–তাড়াতাড়ি আসবো। সাবধানে থাকিস। নিজের খেয়াল রাখিস।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো। ইভান তার চেয়ারে হেলানি দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবল ঈশার সাথে তার সম্পর্ক ঠিক থাকলে এই সময়টা তার জীবনে অনেক আগেই আসত। দেরি করেই হোক তবুও ঈশা তার প্রতি নিজের অনুভুতি গুলো প্রকাশ তো করছে। এতেই সে অনেক খুশি।

৩০
ইলহাম ঈশা আর ইরা বসে সোফায় টিভি দেখছিল। ইভান এখনো আসেনি। তারা চিপস খাচ্ছিল। ঈশা একটা চিপস মুখে দিয়ে বলল
–ড্রিঙ্কস হলে ভালো হতো।
ইলহাম বলল
–ফ্রিজে থাকতে পারে আপি। আমি ভাইয়াকে দেখেছি কাল দুইটা ক্যান ফ্রিজে রাখতে।
ঈশা চিপস এর প্যাকেট টা টেবিলে রেখে ফ্রিজে দেখতে গেলো। হাঁটু গেড়ে বসে দেখল দুইটা ক্যান ফ্রিজের এক কোনায়। সে দুইটা বের করে আনল। টেবিলে একটা রেখে বলল
–এই টা তোরা দুইজন ভাগ করে খাবি আর এটা আমি একাই খাবো।
ইলহাম আর ইরা দুজনেই ভ্রু কুচকে তাকাল। সে একাই খাবে মানে। তাদের সেসবে পাত্তা না দিয়ে ঈশা ক্যান টা খুলে খাওয়া শুরু করে দিলো। প্রথমে খেতে বাজে লাগলেও পরে ঠিক হয়ে গেলো। ঈশা খেয়েই যাচ্ছে তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো। ইলহাম দরজা খুলে দিলো। ইভান ভিতরে ঢুকে টেবিলে রাখা ক্যান টাতেই আগে চোখ পড়লো। ভ্রু কুচকে তাকাল ক্যানটার দিকে। তারপর ঈশার দিকে তাকিয়ে ভালো করে দেখল সে একটা ক্যান হাতে ধরে আছে। ইভান রেগে
–ঈশাআআ…।
তার চিৎকারে ঈশার হাত থেকে চিপসের প্যাকেট আর ক্যান দুইটাই পরে গেলো। সবাই ভিত চোখে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। সে ঈশার দিকে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে নিচে পরে থাকা ক্যানের দিকে তাকাল। অবশিষ্ট কিছুই নেই সেটাতে। ঈশার দিকে তাকাতেই সে ঢুলু ঢুলু চোখে ইভানের দিকে তাকাল। চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করলো
–চেচাচ্ছ কেন? আসতে ডাকলেও তো শুনতে পাই।
ইভান এবার রেগে ইলহাম কে বলল
–ফ্রিজ থেকে এসব কে বের করেছে?
ইভানের রাগ দেখে ইলহাম ভয়ে ভয়ে বলল
–আপি ড্রিঙ্কস খাওয়ার জন্য ফ্রিজে দেখতে গিয়ে এই দুইটা ক্যান পেয়েছে। আমাদেরকে একটা খেতে বলে নিজে একটা খেয়ে নিয়েছে।
ইভানের এবার রাগ চরম পর্যায়ে উঠে গেলো। টেবিলে থাকা ক্যান টা হাতে নিয়ে ঈশা কে হাত ধরে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। ঈশার হাত ছেড়ে দিতেই সে হেলে দুলে পরে যেতে লাগলো। ইভান আবার তাকে ধরে বলল
–ড্রিঙ্কস আর বিয়ারের মধ্যেও পার্থক্য বুঝিস না ইডিয়েট! খাওয়ার আগে ক্যানের গায়ের লেখা গুলা ভালো করে দেখলে কি খুব ক্ষতি হতো।
ঈশা হেসে বলল
–আমি সব বুঝি।
বলেই জোরে হাসতে লাগলো। ইভান বুঝতে পারছে এভাবে বিয়ারের পুরো একটা ক্যান খেয়ে ফেলার পর ঈশা যথারীতি পাগলামি করবে। কিন্তু এখন ওকে সামলাবে কিভাবে। ঈশা নিচে বসে পড়লো। ঈশার সাথে ইভানও নিচে বসে পড়লো। ইভান ঈশাকে দেখছে। ঈশা ঢুলু ঢুলু চোখে ইভানের টি শার্ট টা খামচে ধরে তার একটু কাছে মুখটা এনে বলল
–তুমি বাজে লোক ! শুধু বকো আমাকে। ভালো করে বললে কি হয়? আমি তো তোমার কথা বুঝতে পারি।
ঈশার কথা শুনে ইভান একটু ভ্রু কুচকাল। পরক্ষনেই কি মনে করে বলল
–এই বাজে লোকটাই তোকে নিজের জিবনের থেকেও বেশি ভালবাসে। সেটাই আজ পর্যন্ত ভালো খারাপ সব ভাবেও বলে বোঝাতে পারিনি।
ঈশা আগের অবস্থায় থেকেই বলল
–জানি তো। আমিও ভালবাসি।
ঈশার কথা শুনে ইভান অসহায় চোখে তার দিকে তাকাল। এই কথাটা সে ঈশার কাছ থেকে শোনার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করেছে। আজ শুনতে পেলো কিন্তু মাতাল অবস্থায়। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সে ঈশার দুই হাত তার কাছ থেকে ছেড়ে নিয়ে বলল
–বাজে লোকটা তোর জীবনটা বদলে দিয়েছে। তাহলে কেন ভালবাসিস এই লোকটাকে?
ঈশা এবার একটু মন খারাপ করে বলল
–দিয়েছে তো। কেন বলল না আগে আমাকে ভালবাসে?
–তুইও তো বলিস নি?
–আমি তো বলিনি ভয়ে। যদি রাগ করে।
— তোকে কি কখনও রাগ দেখিয়েছি?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে না বলে। ইভান তার দিকে তাকিয়ে বলে
–তাহলে?
–জানিনা। ভয়ে বলিনি। কিন্তু তুমি তো আমাকে ভয় পাওনা তাহলে কেন বলনি?
–বলতাম। সেটার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি যে সময়ের অপেক্ষা করতে করতে দেরি হয়ে যাবে। তাই বলে তুই আমাকে ভালবেসেও অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবি?
–রাজি হইনি তো। বাবার ব্যবসায় লস হয়ে গিয়েছিলো। ওরা অনেক টাকা দিয়েছিলো বাবাকে। আর বলেছিল আমার সাথে ওই আরাফের বিয়ে হলে সেই টাকা ফেরত দিতে হবেনা। তাই তো বাবার কথা ভেবে রাজি হয়েছিলাম।
এবার ইভান খুব অবাক হল। এসব কথা এতদিন কেউ জানতোনা। ঈশার বাবা এসব কাউকেই বলেনি। আজ হয়ত ঈশা এরকম অবস্থায় না থাকলে জানাও হতনা। ইভান ঈশাকে দেখছে। ঈশা এবার ইভানের শার্ট চেপে ধরে বলল
–খুব রাগ হয়েছিলো। আমাকে তুলে কেন নিয়ে গিয়েছিলে? সবাই বলছিল আমাকে রেপ করেছে।
ইভান এবার আকাশ থেকে পড়লো ঈশার কথা শুনে। তার মানে এসব কথার কারনেই ঈশা তাকে ভুল বুঝেছিল। আর তার উপরে অভিমান করেছিলো। এসব নিয়ে ঈশা কখনও কথা বলেনি। বললে হয়ত সব ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়ে যেত। বিয়ের আগে ইভান ঈশাকে কখনও স্পর্শ করেনি। তাহলে ঈশা এটা মেনে নিলো কেন? প্রতিবাদ করলনা কেন? ইভান খুব শান্ত সরে জিজ্ঞেস করলো
–সেদিন কি আমি তোকে স্পর্শ করেছি?
–করনি তো সেটা আমি জানি। কিন্তু সবাই অন্য জানে।
–আমি বুঝতে পারিনি এরকম কিছু হয়ে যাবে। আমি শুধু চেয়েছিলাম তোকে পেতে। ওই মুহূর্তে আমার মাথায় আর কিছুই ছিলোনা।
হতাশা নিয়ে ইভান কথাটা বলল। কথা শেষ করে হাতে থাকা ক্যানটা খুলে একটা চুমুক দিলো। ঈশা এবার ইভানের বুকে আঙ্গুল দিয়ে ঠেলা দিয়ে বলল
–আমাকে আদর কর।
ইভান ঈশার কথা শুনে মুখে থাকা বিয়ার গিলে ফেলে। কিন্তু গিলে ফেলার সময় মনে হল তার গলায় আটকে যাচ্ছিলো। ঈশা যে এমন কিছু বলবে সেটা সে ভাবেইনি। তারপর ক্যানটা পাশে রেখে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে
–আমার কাছ থেকে আদর নিতে ইচ্ছা করে তোর?
ঈশা এবার ইভানের টি শার্ট টেনে তার মুখের কাছে নিজের ঠোঁট নিয়ে গিয়ে বলে
–তুমি আমার ঠোঁটে চুমু দিলে অনেক ভালো লাগে।
কথাটা শেষ করেই ঈশা অপেক্ষা না করে ইভানের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। ইভান ঈশার এরকম কাণ্ডে হা হয়ে যায়। কিছুক্ষন হা করে ঈশার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল
–আর কি কি ইচ্ছা করে তোর?
–তোমার কাছে থাকতে। তোমার সাথে গল্প করতে।
ঈশার কথা শুনে ইভান ঈশার গালে দুই আঙ্গুলে স্লাইড করতে করতে বলে
–কত ভালবাসিস আমাকে?
ঈশার চোখে পানি চলে আসে। মনের সমস্ত আবেগ দিয়ে বলে
–কত ভালবাসি তা বলতে পারবোনা। কারন সেটা প্রকাশ করার মতো যথেষ্ট শব্দ আমার জানা নেই। শুধু বলব এই জীবনের প্রাপ্তির হিসাবে শুধুই তুমি। আমি যার জন্য বাঁচি সেটাই তোমার ভালোবাসা।
“তোমার প্রতি এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি। তোমাকে ছাড়াতে গেলে আরো ক্রমশ জড়িয়ে যাই আমি। আমার কিছুই আর করার থাকে না। তুমি এভাবেই বেঁধে ফেলো যদি দূরে যেতে চাই। যেখানেই যেতে চাই, সেখানেই বিছিয়ে রেখেছো তোমার অনুভুতি। তোমাকে কি অতিক্রম করা কখনো সম্ভব!!”
ঈশার চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়তে থাকে। ইভান ঈশাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে
–তোর মুখ থেকে এই কথাটা শোনার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করেছি। সজ্ঞানে না হলেও বলেছিস তো। আমি আজ খুব খুশি জান।
ইভান কথা শেষ করে দেখে ঈশা ঘুমিয়ে পড়েছে। তাকে কোলে তুলে নেয়। বিছানায় শুইয়ে দেয়। নিজে পাশে শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। ইভানের চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আজ যে তার জীবনে পরম সুখের মুহূর্ত।

চলবে………

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-১২

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১২

২৭
ইভানের নতুন অফিস শুরু হয়েছে। সে খুব ব্যস্ত। সারাদিন প্রায় বাইরেই থাকে। মাঝরাতে আসে বাসায়। কখন আসে কখন যায় কোন ঠিক নেই। ঈশার সাথে কয়েক দিন ধরেই তার দেখা হয়না। বাড়ির সামনে এসে ইভান খুব সাবধানে দরজা খুলল। কারন এখন সবাই ঘুমাচ্ছে। শব্দ হলে ঘুমের ডিস্টার্ব হবে। ভিতরে ঢুকে টাই টা খুলে সোফায় বসে পড়লো। সামনে ঘড়িটাতে দেখল রাত ১ টা বাজে। ভীষণ টায়ার্ড! কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলানি দিয়ে থাকলো। তারপর উঠে ডাইনিং টেবিলে পানি খেতে গেলো। পানি খেয়ে গ্লাসটা টেবিলে রাখতেই ঈশার ঘরের দরজায় চোখ পড়লো। ঈশাকে এই মুহূর্তে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। ঈশা দরজা ভেতর থেকে দরজা লক করে ঘুমায়। তবুও কি মনে করে ইভান দরজার সামনে গিয়ে হাতলটা ঘুরাতেই দরজা খুলে গেলো। বেশ অবাক হল। কিন্তু মনে মনে খুশিও হল। একবার ঈশার ঘুমন্ত চেহারাটা দেখলে সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। ভিতরে ঢুকে দেখে সারা ঘরময় অন্ধকার। দরজাটা শব্দহীন ভাবে লাগিয়ে দিয়ে ঈশার পাশে বিছানায় খুব সাবধানে বসলো। ফোনের ফ্ল্যাশ অন করতেই ঈশার ঘুমন্ত চেহারাটা চোখে পড়লো। নিস্পলক তাকে দেখছে ইভান। কি অপূর্ব লাগছে। ঈশার কপালে গভীর একটা চুমু দিলো। তার গালে আলতো করে এক আঙ্গুল ছোঁয়াল। এতে ঈশা কিছুটা নড়ে উঠলো। ইভান একটু সরে গেল।জাতে ঈশার ঘুম ভেঙ্গে না যায়। কিন্তু ঈশা ঘুমের ঘোরেই ইভানের খুব কাছে এলো। ইভান ঈশার এতোটা কাছে আসা দেখে নিজেকে আটকাতে পারলনা। সেও ঈশাকে এক হাতে জড়িয়ে নিলো। ঈশা একদম ইভানের বুকের ভিতরে ঢুকে ঘুমের ঘোরেই আধো আধো কণ্ঠে বলল
–তোমার এই পারফিউমের ঘ্রান আমাকে পাগল করে দেয়।
ঈশার এমন কথা শুনে ইভান নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা। ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে ভালো করে তাকে দেখতে লাগলো। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর বুঝতে পারল ঈশা ঘুমের ঘোরেই এসব বলছে। ইভান এখনো ঈশার উপরে রাগ করে আছে। তার সাথে ঠিক মতো কথা বলেনা। কিন্তু তাকে দেখে ইভানের সমস্ত রাগ পানি হয়ে গেলো। যত রাগই থাকনা কেন এই মেয়েটা তার সাথে ভালবেসে কথা বললে সে কিছুতেই তার উপরে রাগ করে থাকতে পারেনা। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সে ঈশাকে আলতো করে ছুয়ে বলল
–আমাকে মিস করেছিস?
ঈশা আবারো আধ আধ কণ্ঠে বলল
–অনেক। তুমি তো আসইনা আমার কাছে।
–এতো মিস করিস তাহলে বলিস না কেন?
–তুমি বঝনা কেন?
–সবই বুঝি জান। তবুও তোর কাছ থেকে শুনতে চাই।
–বলবনা শুধু ভালবাসব।
ইভান এবার ঈশার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে বলে
–আমাকে আদর করতে ইচ্ছা করেনা তোর।
ঈশা মাথা নাড়াল। ইভান এবার বলল
–তাহলে এখনি আদর কর।
বলেই ইভান নিজের ঠোঁট ঈশার ঠোটের কাছে নিয়ে গেলো। আর ঈশা নিজে নিজেই কাছে এসে ইভানের ঠোঁটে তার ঠোঁট ছুয়ে দিলো। ইভান ভাবল ঘুমের মাঝেই নাহয় ঈশা তার প্রতি নিজের অনুভুতি তো প্রকাশ করলো। অনেকক্ষণ ঈশার রুমে থাকার পর সে উঠতে যাবে তখন ঈশা তার শার্টের হাত টেনে বলল
–যাবেনা।
ঈশার কথা শুনে ইভান একটু হেসে তার পাশে শুয়ে পড়লো। ইভান ভালো করে শুয়ে পড়তেই ঈশা আরও বেশি তার কাছে চলে এলো। একদম বুকের ভিতরে ঢুকে পড়লো। ইভান তাকে দুই হাতে জড়িয়ে বলল
–এভাবে ভালবেসে ডাকলে আমি কিভাবে তোর কাছ থেকে দূরে থাকব জান।
বলেই ঈশার মাথায় একটা চুমু দিলো। ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করে ফেললো। সারাদিনের ক্লান্তির কারনে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো ইভান।
সকালে ঈশার ঘুম হালকা হয়ে গেলে সে ঘাড়ের উপরে উষ্ণ অনুভূতির ছোঁয়া পেয়ে চোখ খুলে ফেললো। চোখ খুলে দেখল। ইভান তাকে পিছন থেকে নিজের বুকের সাথে তার পিঠ লাগিয়ে জড়িয়ে আছে। তার এক হাত ঈশার হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে। তার উষ্ণ নিশ্বাস ঈশার ঘাড়ে পড়ছে। মাথাটা হালকা ঘোরাতেই দেখল ইভান বেশ আরামে ঘুমাচ্ছে। একটু অবাক হয়ে গেলো। আরও ভালো করে খেয়াল করতেই দেখল সে ফর্মাল ড্রেসে। তার মানে অফিস থেকে সোজা তার ঘরে এসে ঘুমিয়ে গেছে। ইভান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঈশা নড়লেই তার ঘুম ভেঙ্গে যাবে। তাই সে নড়তেও পারছেনা। ওভাবেই শুয়ে ভাবছে। ইভানের এভাবে জড়িয়ে ধরাতে এক অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে। খারাপ লাগছেনা। একটু ভেবে তার ঠোটের কোণে একটা তৃপ্ত হাসি ফুটে উঠলো। ইভান জেগে থাকলে এই হাসি দেখে হয়ত ঈশার মনের কথা বুঝে যেত। কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর ইভান একটু নড়ে উঠলো। এতে ইভানের হাতের বাধন আলগা হয়ে গেলো। ঈশা উঠে বসলো। ইভানের চোখ খুলে গেল। সে ঈশাকে বসতে দেখে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। ঈশা তার দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো
–তুমি এখানে?
ইভান কোন কথা বলল না। নিস্পলক ঈশার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ঈশা তার চুপ করে থাকা দেখে আর কোন কথা বলল না। বিছানা থেকে নেমে ওয়াশ রুমের দিকে যেতেই ইভান বলল
–থ্যাঙ্ক ইউ জান!
ইভানের কথা বুঝতে না পেরে ঈশা পিছনে ঘুরে তাকায়। ইভান ঈশার বালিশটা জড়িয়ে ধরে তার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে। ঈশা ভ্রু কুচকে তাকাল। ইভান আবার বলল
–কাল রাতে এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত গিফট করার জন্য।
ঈশা কিছুই বুঝতে পারলনা। ইভানের দিকে কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে থাকলো। ইভান উঠে বসে বালিশটা জড়িয়ে ধরে একটু হেসে বলল
–তুই এতো রোমান্টিক আমার সত্যিই ধারনা ছিলোনা।
ইভানের কথা শুনে ঈশার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। ইভান উলটা পাল্টা কথা বলে তাকে জালাবে সেটা সে বুঝতে পেরে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–সকাল সকাল কি মাথাটা খারাপ হয়ে গেলো? উলটা পাল্টা কথা বলছ।
ইভান বালিশটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঈশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এক আঙ্গুল দিয়ে কপাল থেকে ছোট ছোট চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বলল
–আপনি যেভাবে আমাকে আদর করেছেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ!
ইভানের কথা শেষ হতেই ঈশা একটু জোরেই বলল
–মানে?
ইভান একটুক্ষণ ঈশার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
–তুমি যদি সত্যিই কাউকে এতো ভালবাস তাহলে সেটাকে সম্পূর্ণ ভাবে ভালবাস। নিজের সবটা দিয়ে ভালবাস। সব থেকে বড় কথা সেটাকে প্রকাশ করতে শেখ। দেখাতে শেখ যাতে সামনের মানুষটাও বুঝতে পারে যে তুমি তাকে কতটা ভালবাস।
ইভানের কথার মানে ঈশা কিছুই বুঝতে পারলনা। বিরক্ত হয়ে বলল
–এভাবে হেয়ালি না করে যা বলতে চাও স্পষ্ট করে বল।
ইভান একটু হেসে টেবিলে থাকা মোবাইল টা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বলল
–কিছুনা। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।
বলেই বের হয়ে যেতে নিলে কি মনে করে আবার পিছনে ঘুরে তাকায়। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখে এক অদ্ভুত হাসি। আজ প্রথমবার মনে হচ্ছে ইভানের ঈশাকে বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। ঈশার সেই হাসির মানে সে কিছুতেই বুঝতে পারছেনা। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। ঈশা তার হাসিটা প্রশস্ত করে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ইভান ভ্রু কুচকে দাড়িয়ে তার সেই হাসির রহস্য বুঝতে চেষ্টা করছে।

২৮
আজ ইভানের অফিস ছুটি। সে সারাদিন বাসায় বসেই অফিসের কাজ করছে। সকালে খেয়ে ঘরে গিয়েছে তারপর থেকেই কাজে ব্যস্ত। ঘর থেকে বের হয়নি। ঈশা ইভানের কথা ভাবছে। এই মুহূর্তে তার ইভানের সাথে কথা বলা দরকার। কারন ঈশা বুঝতে পারছে কাল রাতের পর ইভানের রাগ অনেক টা কমে গিয়েছে। কিন্তু তার অভিমানটা ভাংতে হবে। যতক্ষণ সে তাকে ওই চেনটা পরিয়ে দেয়নি ততক্ষন পুরপুরি তার অভিমান ভাংবেনা। সেটাই এখন ঈশার লক্ষ্য। ইভানের হাতে আবার সেই চেনটা পরিয়ে নেয়া। আর সেটার জন্য তাকে কি করতে হবে তা সে খুব ভালভাবে জানে। নিঃশব্দে হেসে সে ইভানের ঘরের দিকে গেলো। দরজায় দাড়িয়ে দেখছে। ইভান মনোযোগ দিয়ে বিছানায় হেলানি দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। ঈশা ধির পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইভানের সামনে বসলো। ইভান তার উপস্থিতি বুঝতে পেরে ঈশাকে দেখে মুচকি হেসে আবার কাজে মনোযোগ দিলো। ঈশা অবাক হল। সে এমন একটা আচরণ করলো যেন জানতো ঈশা আসবে। ইভান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বলল
–যেই ভালোবাসা যত গোপন সেই ভালোবাসা তত গভীর। তোরটাও কি এমন?
ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–কাল রাতে কি করেছি আমি?
ইভান ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে বলল
–শুনতে পারবি তো?
ঈশা একটু বাকা হেসে বলল
–তোমার হাতে প্রথম বার থাপ্পড় খেয়েও হজম করতে পেরেছি। এখন কি এমন বলবে যা শুনতে পারবোনা।
কথাটা শুনে ইভানের একটু রাগ হল। কিন্তু সে এই মুহূর্তে ঈশার উপরে রাগ করতে চাইছেনা। এমনিতেই কয়েকদিন রাগ করে ঠিক মতো কথা বলেনি। ইভান ল্যাপটপ টা বন্ধ করে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–থাপ্পড় টা কেন মেরেছি সেটা তুই খুব ভালো করেই জানিস। আর সেটার জন্য আমি কোন ভাবেই সরি না।
ঈশা একটু রাগ করে বলল
–আমি যেটা জানতে এসেছি সেটা বল।
সে ঈশার চোখে চোখ রেখে বলল
–তুই এখন আমার উপরে রাগ করে আছিস। কিন্তু আমি আমার কাজের জন্য তোকে সরি বলবনা। কারন তুই অপরাধ করেছিস আর আমি শাস্তি দিয়েছি। এটা ছাড়া আর কিভাবে তোর রাগ ভাঙ্গাতে পারি? তুই চাইলে নিজের জানটা বের করে তোর হাতে ধরিয়ে দিবো। লাগবে?
ইভানের কথাটা ঈশার হৃদয় ছুয়ে দিলো। এক রাশ ভাললাগা ছুয়ে গেলো সারা শরীরে। ইভানের দিকে নিস্পলক চেয়ে থাকলো। ইভানও তার দৃষ্টি ঈশার দিকে রেখেছে। ইভান একটু হাসল। তার হাসি দেখে ঈশা মুগ্ধ হয়ে গেলো। না চাইতেও ঈশার ঠোটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। ইভান একি অবস্থা থেকেই মুখে হাসি নিয়ে বলল
–একেকজনের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একেক রকম। কারওটা সফট। কারও বেলায় খুবই অ্যাংরি। কারওটা কখনও কখনও স্বেচ্ছাচারিতার পর্যায়েও পড়ে। কেউ অধিকার খাটায়। আবার কেউ নিরবে ভালবেসে যায়। আমার ভালোবাসা তোর প্রতি হয়ত একটু রুড। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে সবটা উজাড় করে ভালবাসি। তোর স্বপ্ন তোর অনুভুতি সবটা আমার জানা হয়ে গেছে। আমি তোর নিশ্বাস শুনেই বলতে পারি তুই কি ভাবিস। তোর চোখ দেখে বলতে পারি তোর সমস্ত না বলা কথা। তোর এই নিরব ভালোবাসা টাই নাহয় আমার জন্য বরাদ্দ থাকলো। বলতে হবেনা ‘ভালবাসি’। এই শব্দটা তোর অনুভূতির চেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ না। আমার প্রতি তোর সমস্ত অনুভুতি একটু প্রকাশ করলেই হবে। আমি তোকে আর তোর সেই অনুভুতি নিয়েই সারা জীবন কাটিয়ে দিবো।
ইভানের কথা শুনে ঈশা আর তার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলনা। চোখ নামিয়ে উঠে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইভানের কথা শুনে থেমে গেলো
–কাল রাতের অনুভুতি প্রকাশের ধরনটা কিন্তু সত্যিই অনেক ভালো ছিল। বেশি চাইনা। প্রতিদিন এরকম একবার করে ভালোবাসার স্পর্শ পেলেই আমার চলবে।

ঈশা তার দিকে ছোট ছোট চোখে তাকাল। ইভান ঈশার কাছে এসে দাঁড়ালো। ঈশা একটু রেগে বলল
–কি বলছ এসব?
–যা করেছিস তাই বলছি।
–কি করেছি?
ঈশা একটু কাপা গলায় বলল। ইভান ঈশার আরও একটু কাছে গিয়ে তার ঠোঁটে এক আঙ্গুলে স্লাইড করতে করতে বলল
–এই উষ্ণ ভালোবাসার প্রথম স্পর্শ আমাকে এক অন্য রকম নেশার জগতে নিয়ে গিয়েছিলো। যেখানে ছিল এক অনাবিল স্বর্গীয় সুখ। আর সীমাহীন ভালোবাসার অনুভুতি।
ঈশা অপ্রস্তুত হয়ে ইভানের কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল
–তু…তুমি মিথ্যা বলছ।
ইভান একটু কঠিন গলায় বলল
–জানতাম তুই বিশ্বাস করবিনা। সেই জন্যই বলতে চাইনি।
ঈশা কোন কথা বলল না। ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভান ঈশার আরও একটু কাছে এসে বলল
–তোর মাঝে জমে থাকা এই অনুভুতি গুলো প্রকাশ করলে ক্ষতি নেই তো। বরং লাভ আছে।
ঈশা ইভানের চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। তারপর নিজেই তার আর একটু কাছে আসলো। ঈশার এভাবে কাছে আসা দেখে ইভান একটু অবাক হল। বুঝতে চাইছে ঈশা ঠিক কি করতে চাইছে। ঈশা ইভানের মুখের কাছে নিজের মুখ এনে বলল
— এতোটা কাছে এসনা যাতে তোমার এই পারফিউমের ঘ্রান আমাকে পাগল করে দেয়।
কথাটা শেষ করেই ঈশা তার দিক থেকে উলটা ঘুরে দাঁড়ালো। দরজা খুলে একটু দাড়িয়ে মুচকি হেসে আবার তার দিকে ঘুরে বলল
–আর হ্যা! এভাবে রাতের অন্ধকারে ঘুমের ঘোরে ভালোবাসার স্পর্শ নেয়াটাকে সুযোগ নেয়া বলে। জাগ্রত অবস্থায় এইভাবে স্পর্শ করতে বাধ্য করাকে সাহস বলে। পারলে সাহস করে দেখাও।
বলে সেই সকালের রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই দিকে তার যাওয়ার পর ইভান ভাবতে লাগলো ঈশার কথার মানে। এসব কি বলে গেলো। সব তার মাথার উপর দিয়ে গেলো।

চলবে……।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-১১

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১১

২৫
ঈশা নিজের ঘরে তার কাপড় গুছিয়ে রাখছে। অনেক দিন আলমারিতে হাত দেয়নি সে। সমস্ত জিনিস পত্র এলোমেলো হয়ে আছে। এক এক করে সব ঠিক করছে। একটা কাপড় টানতেই পাশ থেকে একটা ওড়না পড়ে গেলো। ঈশা সেটা পরম যত্নে হাতে তুলে নিলো। এক দৃষ্টিতে সেটার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক দিন আগে এই ওড়নাটা ইভান তাকে দিয়েছিলো। সেদিন এই ওড়নাটা ইভান পরম যত্নে তার মাথায় পরিয়ে দিয়েছিলো। আর বলেছিল
–এই রঙটা শুধুই তোর জন্য। তোকে অসম্ভব লাগে এই লাল রঙটায়।
সেই কথাটার মানে সেদিন ঈশা না বুঝলেও কোথায় যেন সেটা ঈশাকে আঘাত করেছিলো। আজও সেই আঘাতের ক্ষত হিসেবে নিজের অপছন্দের লাল রঙটা নিজের সব থেকে প্রিয় হিসেবে জিবনের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। কথাটা ভেবে ঈশার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কারও উপস্থিতি বুঝতে পেরে পিছনে ঘুরে দাড়াতেই দেখল ইভান দাড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে ইভান কে দেখে তার মুখের হাসি আরও প্রশস্ত হয়ে গেলো। কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষন স্থায়ী হলনা। ইভান সজোরে ঈশার গালে একটা থাপ্পড় মারল। ঈশা ছিটকে পড়ে গেলো। গালে হাত দিয়ে থমকে গেলো কিছু মুহূর্তের জন্য। এই প্রথমবার ইভান তাকে থাপ্পড় মারল। কিন্তু কারণটা তার জানা নেই। ইভান ওর উপরে যত বেশি রাগ করুক না কেন হয় নিজেকে কষ্ট দেয় আর নাহলে তার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে কিন্তু ঈশার গায়ে কখনও হাত তোলেনি। ইভান ঈশার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। তারপর এক হাতে ঈশার দুই গাল চেপে ধরে দাতে দাঁত চেপে বলল
–তোর সাহস কি করে হয় আমার কথা অমান্য করার।
ঈশা ইভানের কথা বুঝতে পারলনা। হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ঈশার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো সে ব্যাথা পাচ্ছিলো। বুঝতে পেরে ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিলো। তারপর ঈশার সামনে একটা লকেট সহ চেন ধরে খুব শান্ত ভাবে বলল
–কেন খুলেছিস এটা?
ঈশা সেটার দিকে দেখে চমকে উঠলো। ইভান আবার বলল
–তুই আমাকে কোনদিনও বুঝবিনা তাই না। সব সময় নিজের জেদ আর ইচ্ছা টাকেই প্রাধান্য দিবি। আমার কোন কিছুর কোন মুল্য তোর কাছে নেই।
ঈশা কাপা কাপা গলায় বলল
–আমি ইচ্ছা করে খুলিনি। বিশ্বাস কর।
ইভান তার দিকে তাকিয়ে করুন সূরে বলল
–তুই জানিস ঈশা আমি আমার ভালোবাসা সব সময় তোর কাছে প্রকাশ করি তাই সেটাকে তুই তুচ্ছ ভাবিস। ভুলে যাস না। আমার এই ভালোবাসা শুধু একটা শব্দ না। আমার জীবন। আমার অস্তিত্ব!
কথা শেষ করেই উঠে দাঁড়ালো। দরজা পর্যন্ত যেতেই পিছনে ঘুরে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–ইউ নো ঈশা! তুই নিজেই জানিস না তুই আসলে কি চাস। আমার ভালোবাসা অনুভব করতে চাস। কিন্তু আমি জখন আমার ভালোবাসার অনুভুতি তোর কাছে প্রকাশ করি তখন সেগুলো তোর কাছে অসহ্য হয়ে যায়। আবার জখন আমি তোর কাছ থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখি তখনও তুই কষ্ট পাস। আমি তোর উপরে যত অধিকার খাটাই সব কিছু তোর কাছে অত্যাচার মনে হয়। কিন্তু তুই জানিস আমি কখনও কারন ছাড়া কোন কাজ করিনা। ভেবেছিলাম তুই আমাকে বিশ্বাস করিস।
একটু হেসে বলল
–এই অত্যাচারের পিছনেও অনেক কারন আছে। আমি চাইনা সেগুলো কখনও তোর কানে আসুক। কিন্তু যদি কোন ভাবে এসেই যায় তাহলে সেদিন বুঝতে পারবি আমার কোন আচরণ তোর উপরে কখনও অত্যাচার ছিলোনা। সবটাই আমার ভালোবাসা। তুই আমাকে ঘৃণা করিস তাই না। কিন্তু আমি তোকে নিজের জীবনের থেকেও ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা যদি তোকে এতোটাই কষ্ট দেয় তাহলে আমি দূর থেকেই তোকে ভালবাসব। শুধু তুই ভালো থাকিস। তাহলে তোর এই ঘৃণাটা নিয়েই আমি সারা জীবন কাটিয়ে দিবো। ভালবাসতে হবেনা আমাকে।

কথা শেষ করে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলো। ঈশা সেখানে বসে ভাবতে লাগলো। সকালে চেনটাতে চুল আটকে গিয়েছিলো আর সেটা খুলতে গিয়ে চেনটা গলা থেকে খুলে ফেলেছিল ঈশা। পরে সেটা পরতে ভুলে গিয়েছিলো। কিন্তু ইভান কিভাবে জানলো? ঈশার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ইভান কে কষ্ট দিতে চায়নি ঈশা। আজ সে খুব কষ্ট পেয়েছে।

ইভান যখন পড়াশুনা করতে এই শহর ছেড়ে বাইরে যায় তখন সে ঈশার গলায় এই চেনটা নিজে হাতে পরিয়ে দিয়েছিলো। আর বলেছিল
–যা কিছু হয়ে যাক এটা গলা থেকে কখনও খুলবি না। আমি বেঁচে থাকতে অন্তত না। আমি মরে গেলে তোর যা ইচ্ছা হয় করিস। কিন্তু প্লিজ আমার কথার অমান্য করিস না।
তারপর থেকে ঈশা সেটা কখনও খুলেনি। নিজের সাথে সব সময় রেখেছে যত্ন করে। কিন্তু আজ ঈশার মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো সেটার কথা। সে হয়ত নিজের অজান্তেই ইভান কে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। ঈশা মেঝেতে বসেই কাঁদছে। তার কান্না আজ বাধ মানছে না। কেন জানি আজ তার ভিতরে খুব কষ্ট হচ্ছে। ইভান বাইরে দাড়িয়ে দেখছিল। ঈশার কান্না সে সহ্য করতে পারেনা। কিন্তু আজ দাতে দাঁত চেপে সহ্য করছে। ঈশাকে কাঁদতে দেখে ইভান মনে মনে বলল “সরি জান। আমাকে মাফ করে দিস। আমি তোকে আঘাত করতে চাইনি। কিন্তু তুই আমাকে আজ বাধ্য করলি। আজ যা করেছিস খুব বেশি করেছিস। এটার শাস্তি তোকে একটু হলেও পেতে হবে জান।” কথা গুলো ভেবেই ইভান নিজের ঘরে চলে গেলো। ঘরে বসে গভীর ভাবনায় ডুবে আছে ইভান। সে এই প্রথম ঈশার গায়ে হাত তুলেছে। নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। নিজের উপরে এখন ইভানের খুব রাগ হচ্ছে। কিন্তু ঈশা আসলেই তাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। ইভান ঈশার ছোট ছোট পছন্দ অপছন্দ এসবের খেয়াল রাখে। ঈশারও উচিৎ ছিল ইভানের কথার গুরুত্ব দেয়া। কিন্তু ইভানের অনুভুতি গুলো সে সব সময় সহজেই প্রকাশ করেছে। তাই হয়ত ঈশা সেগুলোর মর্ম বুঝতে পারেনি। সেগুলো হয়ত ঈশার কাছে অতি সস্তা হয়ে গেছে।

২৬
সকাল থেকেই ইভান কে দেখা যাচ্ছেনা বাসায়। দুইদিন ধরে ঈশা ইভান কে মানাতে চেষ্টা করছে কিন্তু ইভান তার সামনেই আসছেনা। এমন কি ঈশাকে দেখলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ঈশা। ভাবছে কিভাবে ইভান কে মানাবে। ইভান কে মানানো এতো সহজ না। কিছু একটা ভেবে ঈশা একটু হাসল। তারপর আলমারি থেকে একটা লাল রঙের শাড়ী বের করে নিলো। তারপর মনে মনে বলল “এবার দেখি তুমি কিভাবে আমার কাছ থেকে দূরে থাকো।“ ওয়াশ রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে শাড়ীটা পরে বের হল। ঈশা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েই দেখে তার চাচি দাড়িয়ে আছে। ঈশা কে লাল শাড়ী পরতে দেখে তিনি ভালো একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলেন। তারপর বললেন
–কোথাও যাচ্ছিস?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে না বলল। তার চাচি একটু এগিয়ে গিয়ে বলল
–তাহলে?
–আলমারি গোছাতে গিয়ে এই শাড়ীটা চোখে পড়লো। তুমি দিয়েছিলে আমাকে। পরতে ইচ্ছা করলো তাই পরে ফেললাম।
ঈশার চাচি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। ওনার চোখে পানি এসে গেলো। ঈশা বুঝতে পেরে কাছে গিয়ে বলল
–কাদছ কেন চাচি?
তার মাথায় হাত দিয়ে বললেন
–আমি তোদের দুজনকে সুখি দেখতে চেয়েছি। তোরা দুজন সুখে থাকবি এটাই আমার শেষ চাওয়া। জানিস ঈশা এই শাড়ীটা ইভান পছন্দ করেছিলো তোর জন্য। ওর ইচ্ছা ছিল তুই এই শাড়ী পরে আমাদের বাসায় বউ হয়ে আসবি। আমি মন থেকে দোয়া করি তোরা সুখি হ।
ঈশা তার চাচির হাত ধরে একটু হেসে বলল
–আমার জন্য দোয়া কর চাচি তোমার ওই জেদি ছেলেটাকে যেন সারাজীবন সামলাতে পারি।
ঈশার কথা শুনে তার চাচি হেসে ফেললো। তাদের কথার মাঝখানে কলিং বেল বেজে উঠলো। ইরা দরজা খুলে দেখে ইভান দাড়িয়ে আছে। ইভান কে দেখেই ইরা বলল
–ভাইয়া তুমি এতো দেরি করলে কেন?
ইভান খুব শান্ত ভাবে বলল
–সরি রে একটু দেরি হয়ে গেলো।
ইভানের আওয়াজ শুনে তার মা ঈশাকে বলল
–ওই যে এসে গেছে। দেখ তার রাগ ভাঙ্গাতে পারিস কিনা।
ঈশা একটু হেসে বলল
–এটা শুধু আমিই পারব চাচি। তুমি ভেবনা।
বলেই দুজন হেসে দিলো। ইভানের মা বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। ইভান ডাইনিং টেবিলে এসে পানি গ্লাসে ঢেলে খেতে যাবে তখনি সামনের বেসিনের আয়নায় চোখ পড়তেই থেমে গেলো। ঈশা নিজের ঘরের দরজায় দাড়িয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান নিস্পলক সামনের আয়নায় তাকিয়ে আছে। পিছনে ঘুরে ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা তার তাকানো দেখে একটু মুচকি হেসে ঘরে চলে গেলো। ইভান বুঝতে পারল ঈশা তার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য এসব করছে। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সে। তারপর হাতে থাকা গ্লাসটার পানি শেষ করে গ্লাসটা সামনে রেখে মুচকি হাসল। হেসে চারপাশে ভালো করে দেখে নিলো। সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত। তারপর ধির পায়ে ঈশার ঘরের দিকে গেলো। দরজায় হেলানি দিয়ে দাঁড়ালো। ঈশা উলটা ঘুরে জানালায় দাড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ভালো করে ঈশাকে দেখে নিলো। আজ ঈশাকে একদম নিজের স্বপ্নের মতো লাগছে ইভানের। আজ চাইলেও সে নিজেকে ঈশার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারবেনা। তাকে কিভাবে কন্ট্রোল করতে হয় সেটা ঈশাই ভালো করে জানে। ঘরে ঢুকে দরজা লক করে দিলো। ইভানের মা বাইরে দাড়িয়ে দেখছিল। ইভান কে ঈশার ঘরে যেতে দেখে তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। দরজা লাগানোর শব্দে ঈশা পিছনে ঘুরে তাকায়। ইভান নেশা ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়েই বলল
–কেন এসেছ এখানে?
ঈশার কথা শুনে ইভান ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাল। ঈশা আবার বলল
–কি বলেছি শুনতে পাওনি?
ইভান এবার ঈশাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে এক হাতে গাল চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল
–তোকে কোন কইফিয়ত দিতে আমি বাধ্য না।
ঈশা ইভানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান ঈশার চোখের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলনা সে। ঈশার ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেললো। বেশ কিছুক্ষন পর ঠোঁট দুটো ছেড়ে ঈশাকে উলটা দিকে ঘুরিয়ে তার পিঠ নিজের বুকের সাথে ঠেকিয়ে দিলো ইভান। তারপর পিঠের চুল গুলো সরিয়ে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে দিলো। ঈশা একটু কেঁপে উঠলো। তারপর সামনে হাত দিয়ে তার গলায় স্লাইড করতে শুরু করলো। কিন্তু গলায় হাত পড়তেই ঈশার গলা ফাকা দেখে তার চেনের কথা মনে পড়ে গেলো। সে ঈশাকে এবার একটু শক্ত করে ধরে বলল
–কি ভেবেছিস এসব করে আমাকে ভুলিয়ে রাখবি। আমি এতো সহজে ভুলিনা সেটা তুই ভালো করেই জানিস।
বলেই ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। ইভান যাওয়ার পর ঈশা একটু হেসে বলল
–ভুলে তো গিয়েছিলেই। আমিও দেখি কতদিন মনে রাখতে পার।

চলবে………

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-১০

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১০

২২
ইভান দরজা খুলে ঢুকতেই তাকে দেখে সামনের মানুষটা চমকে গেলো। ইভান খুব শান্ত সরে বলল
–রিলাক্স! আপনার জন্য এতো উত্তেজনা ভালো না। এমনিতেই অনেক কষ্ট করে আপনার জ্ঞান ফেরান হয়েছে।
ইভানের কথা গুলো শুনে আরমান জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। ইভান সামনে একটা চেয়ার টেনে বসে বলল
–সো স্যাড! এভাবে দেখতে সত্যিই আমার খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু কি করবো তুই যে আমার কোন উপায় রাখলিনা।
আরমান নিস্তব্ধ হয়ে ইভানের কথা গুলো শুনছিল। কারন আরমানের এই এক্সিডেন্টের পিছনে যে ইভানের হাত আছে তা বুঝতে আর তার বাকি থাকলো না। সে ভয়ে চুপসে গেলো। ইভান কঠিন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আগেও তোকে ওয়ার্নিং দিয়েছি। তুই শুনিস নি। আমি বলেছিলাম এর পর খারাপ কিছু হলে সেটার জন্য আমি দায়ী থাকব না। দেখ তুই নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলি।
আরমান এবার ভিত কণ্ঠে বলল
–তোর এই রুপ ঈশা জানতে পারলে তোকে ঘৃণা করবে।
আরমানের কথা শুনে ইভান তার মুখ চেপে ধরল। তারপর দাতে দাঁত চেপে বলল
–ঘৃণা করুক আর ভালবাসুক ওকে আমার সাথেই থাকতে হবে। আমি ওকে কখনও নিজের থেকে আলাদা হতে দিবনা।
আরমান কে ছেড়ে দিয়ে ইভান উঠে দাঁড়ালো। তারপর আবার ঘুরে বলল
–শেষ বারের মতো তোকে বেঁচে রাখলাম। একি ভুল আবার করলে আর বাঁচার সুযোগ পাবিনা। ঈশা আমার জান। ওর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে আমি তাকে কখনও ছেড়ে দিবনা। তুই ঈশাকে নিয়ে যে নোংরা খেলায় মেতেছিস সেটা আমি হতে দিবনা। বলে দিস তোর গড ফাদারকে। আমার ঈশার থেকে দূরে থাকতে। নাহলে ওর অবস্থাও তোর মতই হবে।
বলেই সেখান থেকে বের হয়ে গেলো ইভান। বাইরে এসে সাহিল কে বলল
–ওর ট্রিটমেন্ট ঠিক মতো যেন হয়। খেয়াল রাখিস। আর ওর সাথে কেউ যেন দেখা করতে না পারে।
সাহিল কে সব বুঝিয়ে দিয়ে ইভান সেখান থেকে বাড়ির দিকে চলে গেলো।

২৩
কয়দিন ধরেই মাইগ্রেনের ব্যথাটা বেড়েছে ঈশার। আগে মাঝে মাঝে হতো। কিন্তু এখন প্রায় সময়ই হচ্ছে। তীব্র ব্যাথায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে বসে পাশের টেবিলে রাখা বোতল টা হাতে নিয়ে দেখল পানি নেই। দরজা খুলে বাইরে ডাইনিং টেবিলে জগ থেকে পানি ঢেলে খেয়ে নিলো। গ্লাস টা রেখে পাশে ঘুরতেই চোখে পড়লো সোফায় শুয়ে ইভান ফোনে গেম খেলছে। ঈশা ধির পায়ে গিয়ে পাশে দাড়াতেই ইভান তাকে দেখে উঠে বসে পড়লো।
–তুই এখানে?
ঈশা শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো
–তুমি কি করছ?
ইভান রেগে বলল
–তুই উঠেছিস কেন?
–ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাই পানি খেতে এসেছিলাম। তোমাকে দেখে এদিকে আসলাম। তুমি ঘুমাওনি।
ইভান উঠে ঈশার হাত ধরে টানতে টানতে তার ঘরে নিয়ে গেলো। ঘরের দরজা টা বন্ধ করে দিল। ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
–ঘরের চারিদিকে একটু চোখ বুলিয়ে দেখে নিলেই আর বাইরে যেতে হতনা।
ইভানের কথা শুনে ঈশা চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। টেবিলের এক পাশে পানি ভর্তি একটা বোতল রাখা আছে। সচরাচর যে পাশে থাকে তার বিপরিত পাশে আছে। তাই খুঁজে পায়নি। বোতলটার দিকে তাকিয়ে বলল
–এটা তুমি রেখেছ?
ইভান মাথা নেড়ে হ্যা বলল। তারপর ঈশাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। টেবিলে থাকা ঈশার ঔষধের বক্স টা হাতে নিয়ে খুলে ফেললো। সব ঔষধ একবার করে দেখে নিলো। একটা ঔষধের স্ট্রিপ হাতে নিয়ে বলল
–ঔষধটা খেলেই শান্তি মতো ঘু্মাতে পারতিস। খাস নি কেন?
ঈশা অসহায়ের মতো বলল
–তুমি জানো আমি ঔষধ খেতে পারিনা।
ইভান ঔষধের স্ট্রিপ টা হাতে নিয়ে ঈশার সামনে বসে বলল
–খেতে না পারলেও খেতে তো হবেই। নাহলে মাথা ব্যাথা কমবে কিভাবে?
এবার ঈশা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি কিভাবে বুঝলে আমার মাথা ব্যথা।
ইভান একটু হেসে ঈশার অনেকটা কাছে এসে চোখে চোখ রেখে বলল
–তোর চোখ দেখে।
ঈশা অবাক দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। এই ছেলেটা তাকে এতোটা কিভাবে বোঝে। ঈশা নিজেকে যতটা বুঝেনা তার থেকে বেশি ইভান তাকে বুঝে। একটা মানুষকে ঠিক কতটা ভালবাসলে তাকে এভাবে বোঝা যায় তা ঈশার জানা নেই। এই মুহূর্তে সে আন্দাজও করতে পারছেনা। হয়ত ইভানের ভালোবাসার গভীরতা বোঝার ক্ষমতা তার নেই। ঈশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইভান বলল
–কেন শুধু শুধু মাঝরাতে আমাকে এভাবে পাগল বানাচ্ছিস? এভাবে নেশা ভরা চোখে তুই তাকিয়ে থাকলে আমি কতক্ষণ আর নিজেকে সামলে রাখতে পারব জান? তুই কি বুঝিস না আমি তোর প্রতি কতটা দুর্বল।
আর একটু কাছে এসে নেশা ভরা কণ্ঠে বলল
–এবার যদি আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কিছু করে বসি তাহলে তার জন্য কিন্তু আমি দায়ী থাকবনা।
ইভানের কথা শুনে ঈশা একটু সরে গেলো। মাথা নিচু করে ইভানের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভান স্ট্রিপ থেকে ঔষধ খুলে ঈশার মুখের সামনে ধরল। ঈশা মুখ সরিয়ে নিলো। ইভান ঈশার কাছে এসে বলল
–ঔষধ তোকে খেতেই হবে। কিভাবে খাবি সেটা তোর ডিসিশন!
ইভানের কথা বুঝতে পেরে ঈশা মুখটা কাছে এনে ঔষধ টা মুখে নিয়ে নিলো। ইভান পানি খাইয়ে দিলো ঈশাকে। ঈশার ঔষধ খেতে খুব কষ্ট হয়। তাই ইভান অনেক গুলা চকলেট ঈশাকে দিয়েছে। যাতে সে ঔষধ খাওয়ার পর সেগুলা খেতে পারে। ঈশা তার বালিশের নিচে থেকে চকলেট বের করে মুখে পুরে দিলো। ইভান ঈশাকে দেখছিল। ঈশা চকলেট শেষ করে ইভানের দিকে তাকাল। ইভানের তাকানো দেখে ভ্রু কুচকে বলল
–কি দেখছ?
ইভান কোন কথা না বলে মুচকি হেসে ঈশাকে বিছানায় শুয়ে দিলো। ঈশা ভালো করে শুয়ে নিয়ে বলল
–তুমিও এখন ঘুমাও। অনেক রাত হয়ে গেছে।
ইভান কিছু বলল না। ঈশা আবার জিজ্ঞেস করলো
–না ঘুমিয়ে কি করছিলে এতো রাতে?
–ঘুম আসছিলনা। তাই গেম খেলছিলাম।
পাশে খোলা জানালাটা লাগিয়ে দিতে দিতে বলল। ঈশা ইভানের কথা শুনে আবেগি কণ্ঠে বলল
–মন খারাপ?
ইভান তার দিকে তাকাল। তারপর জানালার পর্দাটা সরিয়ে থাইয়ের বাইরের দিকে তাকিয়ে ছোট একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–সব দোষ তো এই মনটারই। এটাকে যদি নিজের আয়ত্তে আনতে পারতাম তাহলে কিছুই হতনা।
ঈশা এবার বিছানা থেকে উঠে বারান্দার দরজাটা খুলে বাইরে গিয়ে বসলো। ইভানও তার সাথে বারান্দায় বসে পড়লো। সামনে তাকিয়ে বলল
–ঘুমাবিনা?
ঈশা ইভানের দিকে তাকাল। সে সামনে তাকিয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়েই বলল
–এখানে একটু বস মন ভালো হয়ে যাবে।
ইভান সামনে তাকিয়েই হাসল। তারপর ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–তুই কি জানিস তুই আমার আশে পাশে থাকলেই মন ভালো হয়ে যায়।
–কই দেখতে পাচ্ছিনা তো?
ঈশার কথা শুনে ইভান তাকে এক টানে কাছে আনল। গালে নাক ঘোষতে ঘোষতে বলল
–এটা এমন একটা অনুভুতি যা দেখা যায়না। অনুভব করতে হয়। বুঝে নিতে হয়। কবে বুঝবি তুই?
ঈশা এতক্ষন চোখ বন্ধ করে ইভানের কথা শুনছিল। ইভান তাকে ছেড়ে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা ইভানের অনুভুতি বুঝতে না পেরে চোখ খুলে ফেললো। ইভানের দিকে তাকাতেই এক অদ্ভুত অনুভুতি হল। ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–মন ভালো হয়েছে?
ইভান একটু হেসে ঈশার গালে একটা চুমু দিয়ে বলল
–শুয়ে পড়। অনেক রাত হয়েছে। আমি তোকে সুস্থ দেখতে চাই। তুই ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকব।
বলেই ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলো। ইভান চলে গেছে কিন্তু ঈশা বারান্দায় বসেই তার দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবছে। আজ ইভানের কষ্টটা সে উপলব্ধি করতে পেরেছে। তার মনে যে ঈশাকে না পাওয়ার কষ্ট ক্ষত তৈরি করেছে সেটা ঈশার বুঝতে বাকি থাকলো না।

২৪
চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে ঈশা। দরজায় দাড়িয়ে তাকে দেখছে ইভান। ঈশা এখনো পুরপুরি সুস্থ না। একটানা ব্যথায় দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। কোন একটা বিষয় নিয়ে সে টেনশন করছে। যার কারনে মাইগ্রেনের ব্যথাটা কমছেনা। ঈশার রিলাক্সেশন দরকার। ইভান ঘরে ঢুকল। পাশে বসতেই ঈশা চোখ খুলে ফেললো। ইভান কে দেখে উঠে বসলো। ঈশা জন্ত্রনায় চোখ খুলে ঠিক মতো তাকাতে পারছেনা। ইভান তার দিকে তাকিয়ে বলল
–খুব কষ্ট হচ্ছে?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। ইভান তার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–বাইরে যাবি?
ঈশা খুব কষ্ট করে চোখ খুলে তাকাল তার দিকে। মিন মিনে কণ্ঠে বলল
–কোথাও যাবনা। ভালো লাগছেনা।
ঈশাকে এই অবস্থায় দেখে ইভানের খুব কষ্ট হচ্ছে। ঈশার গালে হাত দিয়ে বলল
–সবাই মিলে বাইরে থেকে ঘুরে আসি দেখবি ভালো লাগবে।
ঈশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইভান আবার বলল
–বাইরে যেতে না চাইলে জোর করবোনা। ছাদে তো যেতেই পারিস।
ঈশা আর কিছু বলতে পারল না। হেসে মাথা নাড়ল। ইভান ঈশাকে নিয়ে ছাদের দিকে গেলো। সিঁড়ি বেয়ে উঠছে দুজন। উপর থেকে গীটারের আওয়াজ কানে আসতেই ঈশা বলল
–উপরে কে?
–ইলহাম আর ইরা গীটার বাজিয়ে গান গাওয়ার চেষ্টা করছে।
ছাদে উঠে ঈশা দেখে ইরা বিরক্তি নিয়ে ইলহামের দিকে তাকিয়ে আছে আর ইলহাম এলোমেলো ভাবে গীটার বাজিয়েই যাচ্ছে। ইরা খুব বিরক্ত হয়ে কানে হাত দিয়ে বললো
–বন্ধ কর ভাইয়া। খুব বিরক্ত লাগছে। তুমি তো বাজাতেই পারনা।
ইরার কথা শুনে ঈশা শব্দ করে হেসে ফেললো। ইভান পাশে তাকিয়ে ঈশাকে দেখছে। অদ্ভুত সুন্দর হাসি। ঈশা হেসেই যাচ্ছে। ঈশার হাসি শুনে ইরা দৌড়ে ইভানের কাছে এসে বলে
–ভাইয়া দেখ না ইলহাম ভাইয়া কখন থেকে শুধু শব্দ দূষণ করেই যাচ্ছে। কিছুই পারছেনা। গান শুনতে আমাকে ডেকে নিয়ে আসলো। এখন তো আমার মনে হচ্ছে এখান থেকে পালাতে পারলেই বাঁচি।
ইরার কথা শুনে এবার ঈশা আর ইভান দুজনেই হেসে দিলো। ইলহাম খুব অপমান বোধ করলো। ইরা ইভানের দিকে তাকিয়ে করুন সূরে বলল
–ভাইয়া তুমি আর আপু আগে কত সুন্দর গান গাইতে। আজকে একটা গান গাও না।
ইরার কথা শুনে ইভান একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–অনেক বছর গান গাইনা। এখন আর ইচ্ছাও নেই। তোরা তোদের মতো কনটিনিউ কর।
বলেই সামনে এগিয়ে গেলো। পিছন থেকে ঈশা বলল
–আমি বললেও না বলবে?
ইভান তার কথা শুনে একটু চোখ বন্ধ করে ফেললো। পিছনে ঘুরে ঈশার কাছে এসে বলল
–তুই কিছু চাইলে আমি সেটা কখনও না বলব সেই ক্ষমতা কি আমার আছে? তবে আজ ইচ্ছা নেই। তোকে না বলতেও পারবোনা। এক কঠিন পরিস্থিতিতে ফেললি আমাকে।
বলেই ইলহামের কাছে গিয়ে বসে পড়লো। ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল তার মন কোন কারনে খুব খারাপ। কিন্তু সে নিজের কষ্ট গুলো কখনও কারও সাথে শেয়ার করেনা। এমন কি ইশাকেও বুঝতে দেয়না। ছোট বেলা থেকেই শুধু সুখটা সব সময় ঈশার সাথে ভাগ করে নিয়েছে। আজ এতো মন খারাপের মাঝেও সে ঈশার কথাই ভাবছে। তার মন ভালো করতে চেষ্টা করছে। ঈশাও ইভানের মন ভালো করতে চায় আজ। তাই একটু হেসে তার পাশে গিয়ে বসল। ইভান ইলহামের হাত থেকে গীটারটা নিয়ে বাজাতে শুরু করলো।

Duniya yeh jeet gayi dil haar gaya..
Nahi socha tha mil kar kabhi honge judaa..

ঈশাও তার সাথে গলা মিলিয়ে গাইতে শুরু করলো।

O Khuda
Bata de kya lakeeron mein likha
Humne toh
Humne toh bas ishq hai kiya
গান শেষ করে ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে একবার দেখল। ঈশা হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ধির কণ্ঠে ইভান জিজ্ঞেস করলো
–এখন ভালো লাগছে?
ঈশা তার হাসি প্রশস্ত করে সামনে তাকিয়ে বলল
–তুমি জানো আমার কখন কি প্রয়োজন!!

চলবে………

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-০৯

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৯

২০
ঈশা আর রিমা রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে। রোদের তেজ অনেক বেশি। ঈশার মাথা ধরে আসছে। বিরক্ত হয়ে ঈশা বলল
–চল এক পাশে ছায়ায় দাড়াই।
রিমা তার কথা শুনে পাশে থাকা একটা গাছের নিচে দাঁড়ালো। ঈশাও তার পিছু পিছু গিয়ে দাঁড়ালো।
–কেমন আছো ঈশা?
কিঞ্চিত পরিচিত কণ্ঠে দুজনি ঘুরে দাঁড়ায়। আরমান কে দেখে ঈশা একটু বিরক্ত হয়। ঈশা তাকে অনেক বার নিষেধ করার পরও সে তাকে বিরক্ত করে যায়। ঈশা বিরক্ত নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ঈশার এমন চাহুনি দেখে আরমান বলে
–আমি তোমাকে খুব বিরক্ত করি তাই না ঈশা। কি করবো বল। এই মনটা কে যে বোঝাতে পারিনা। মনের মধ্যে কোথাও একটা ক্ষীণ আশা এখনো থেকে গেছে। তোমাকে পাওয়ার আশা।
কথা শুনে ঈশা একটু চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করলো। তারপর বলল
–দেখুন আরমান ভাই আপনি আমার সম্পর্কে সবটা জানেন না। আমি জানাতে চেয়েছি কিন্তু আপনি আমাকে জানাতে দেন নি।
–আজও আমি জানতে চাইনা ঈশা। তোমার কোন কিছুই আমি জানতে চাইনা। আমার কোন প্রয়োজন নেই।
ঈশা এবার রেগে বলল
–আমাকে আর বিরক্ত করবেন না প্লিজ। আমি আপনার কাছে অনুরধ করছি।
বলেই ঈশা ওখান থেকে চলে এলো।রিমাও তার পিছু পিছু চলে এলো। আরমান তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ঈশা সামনে একটা রিকশা পেতেই ডাকল
–এই মামা যাবেন?
রিকশা এসে দাঁড়ালো। দুজনি রিক্সায় উঠে গেলো। রিমার ঈশার সাথে তাদের বাসায় যাওয়ার কথা। কিছুক্ষন দুজনি চুপ করে থাকার পর রিমা বলল
–আরমান ভাই যে কবে বুঝতে পারবে। কেন যে লোকটা এমন অদ্ভুত। কথা শুনলেই সব কিছু পরিস্কার হয়ে যায়। কিন্তু উনি তো কোন কথা শুনতেই রাজি না।
ঈশা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
–লোকটা কেন বুঝতে চায়না আমি তাকে এভয়েড করি। এভাবে উনি আমার সাথে নিজের বিপদ বাড়াচ্ছে।
রিকশা এসে দাঁড়ালো বাড়ির সামনে। দুজনি রিকশা থেকে নেমে সামনে তাকাল। ইভান কঠিন দৃষ্টিতে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা ভয় পেয়ে একটু ঢোক গিলে ফেললো। ঈশা ভয় পাচ্ছে আরমানের সাথে কথা বলা ইভান জেনে গেলো না তো। ঈশা ভয়ে ভয়ে জোরে নিশ্বাস ফেলছে। ঈশার অবস্থা ইভান বুঝতে পারল। ঈশার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ইভান রিমার দিকে তাকাল। একটু হেসে বলল
–কেমন আছো?
রিমা ইভানের কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে বলল
–খুব ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ভাইয়া?
–এতক্ষন ভালো ছিলাম কিন্তু তোমাকে দেখার পর খুব ভালো আছি।
এক গাল হেসে কথাটা বলল ইভান। রিমা খুশিতে আর কথা বলতে পারলনা। ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে। কিন্তু ইভান তার সাথে একটা কথাও বলল না। তার দিকে কঠিন ভাবে তাকাল। ইভানের সেই কঠিন দৃষ্টি ঈশার ভয় বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু তার এই দৃষ্টির কারন ঈশা বুঝতে পারলনা। ইভান ঈশাকে ভালো করে দেখে নিয়ে রিমাকে বলল
–তোমরা বাসায় যাও আমি আসছি।
বলেই ঈশার দিকে একবার দেখে চলে গেলো। ঈশা পিছনে ফিরে ইভানের যাওয়ার দিকে তাকাল। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঈশা রিমাকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো। ঈশারা ভিতরে যাওয়ার পর ইভান পিছনে ঘুরে তাকাল। একটু ভেবে পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নাম্বারে ফোন দিয়ে বলল
–বাড়াবাড়ি হওয়ার আগেই একটা ব্যবস্থা করতে হবে। বি কেয়ার ফুল।কেউ যেন কিছুই বুঝতে না পারে।
কথাটা শেষ করেই ঈশাদের বাড়ির দিকে একবার তাকিয়ে একটু বাকা হাসল ইভান।

২১
ঈশা আর রিমা বেশ হাসাহসি করছে কি নিয়ে। ইভান দরজায় দাড়িয়ে ঈশাকে দেখছে মুগ্ধ হয়ে। এই মেয়েটার হাসিতেই তার সমস্ত সুখ। ঈশাকে এমন হাসি খুশি দেখলে ইভান তার সমস্ত দুঃখ ভুলে যায়। নিজেকে দুনিয়ার সব থেকে সুখি মনে হয়। তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। ইলহাম ইভান কে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পাশে এসে দাড়িয়ে ধির কণ্ঠে বলল
–ভিতরে গেলে তোমাকে কেউ ফাসি দিবেনা।
তার কথায় ইভান একটু চমকে গেলো। তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল। ঈশার তাদের দিকে চোখ পড়তেই ইলহাম কে বলল
–ওখানে কি করছিস? ভিতরে আয়।
ঈশার কথা শুনে ইভান তার দিকে তাকাল। ঈশাও ইভানের দিকে তাকাল। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কত বছর পর দুজন কে দেখছে। ঈশার এভাবে তাকানো দেখে ইভান হেসে দিলো। রিমা ঈশাকে ধাক্কা দিয়ে বলল
–তুই এতো লাল পরিস কেন বলত? আলমারি খুললেই লালের ছড়াছড়ি।
বলেই একটা লাল ওড়না হাতে তুলে নিলো। ইভান ওড়নাটার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা আড় চোখে তাকাল ইভানের দিকে। ইভান ধির পায়ে এসে ওড়নাটা রিমার হাত থেকে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে বলল
–উত্তর টা দে ঈশা।
ঈশা ইভানের দিকে তাকাল। ইভান ওড়না থেকে চোখ ফিরিয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। তার উত্তরের অপেক্ষা করছে। ইভানের কথা শুনে ঈশার বুকের ভিতরে সব কেমন অস্থির হয়ে উঠলো। কি উত্তর দিবে ঈশার জানা নেই। চোখ নামিয়ে নিলো। ইভান একটু হেসে রিমার দিকে তাকিয়ে বলল
–এই রঙটা ওর মনের খুব কাছের।
বলেই ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা মাথা নামিয়ে বসে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছেনা। কারন ঈশার লাল রঙ কখনই পছন্দ ছিলোনা। কিন্তু ইভানের চোখে ঈশাকে লাল রঙ্গে অনেক ভালো লাগতো। সে সব সময় চাইত ঈশা তার সামনে লাল পরুক। তাই ছোট বেলা থেকে ইভান ঈশাকে যা কিছু দিয়েছে সব লাল রঙের। কিন্তু ঈশা এই কারনে ইভানের উপরে খুব বিরক্ত হতো। সে ইভানের জেদের কারনেই শুধু জোর করে লাল পরত। এই মুহূর্তে রিমার প্রশ্নের কারনে ঈশা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো। কারন সে তো লাল কখনই পছন্দ করত না। কিন্তু গত ৫ বছরে মনে হয় সে শুধু লাল রঙটাই আঁকড়ে ধরে আছে স্মৃতি হিসেবে। সেই সময়ে ইলহাম বলল
–কিন্তু আপি তোমার লাল রঙ তো পছন্দ না!
ইলহামের কথা শুনে ঈশা তার দিকে তাকাল। রিমা ইলহামের দিকে তাকিয়ে বলল
–পছন্দ না মানে? লাল ছাড়া তো আমি তাকে খুব কম সময়ই পড়তে দেখি।
ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা ইভানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো। ইভানের দৃষ্টিতে আজ হাজারো প্রশ্ন যার কোনটার উত্তর ঈশার কাছে নেই।
ঠিক সেই সময় ইরা এসে বলল
–রিমা আপু তুমি আমাকে না মেহেদি পরিয়ে দিবে।
–ওহ হ্যা একদম ভুলে গিয়েছিলাম।
বলেই রিমা উঠে গেলো। ইলহামও তাদের সাথে বেরিয়ে গেলো। ঈশা নিচের দিকে তাকিয়েই বসে আছে। ইভান মাথার নিচে একটা হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। তারপর ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–সত্যি কথা বলার সৎ সাহস টা রাখতে হয়। তাহলে অনেক কিছু পাওয়া যায় জীবনে।
ঈশা একটু কঠিন হয়ে বলল
–ঠিক তাই। মাঝে মাঝে এই সত্যি কথা বলার অভাবে অনেক মানুষের জীবন পরিবর্তন হয়ে যায়। আর সেটা কেউ বুঝতেও পারেনা।
কথাটা যে ইভান কে উদ্দেশ্য করে বলা সেটা বুঝতে ইভানের দেরি হল না। সে উঠে ঈশাকে বিছানার সাথে চেপে ধরল। তার দিকে চোখ মুখ শক্ত করে বলল
–সারা জীবন আমি বলে যাব আর তুই শুনবি তা হবেনা। এবার তোকেও বলতে হবে। আমি কাউকে ছেড়ে দেইনা। সবার সব কিছুর হিসাব সুদে আসলে ফেরত দেই। যতটা ভালবাসতে পারি ঠিক ততটাই কষ্ট দিতেও পারি। আমার কাছ থেকে তুই কিছু লুকাবি সেই সাধ্য তোর নেই। আর কখনও চেষ্টাও করিস না তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা।
ঈশাকে ইভান এতো জোরে চেপে ধরেছিল যে ঈশার ব্যাথা লাগছিলো কিন্তু ইভানের সেদিকে কোন খবর নেই। কথা শেষ করেই ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। ঈশা ইভানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। দুই ফোটা পানি চোখ বেয়ে পড়লো। মাঝে মাঝে ঈশার ইভান কে বুঝতে কষ্ট হয়। ঈশা জানে ইভান তাকে খুব ভালবাসে কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে তার আচরণ ঈশার প্রতি খুব কঠোর হয়। ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইলহাম কথা বলতে বলতে ঘরে ঢুকল
–আপি আজ বিকেলে ফুচকা খেতে যাবে?
ইলহামের কথা শুনে ঈশা নিজের চোখের পানি আড়াল করে মুছে ফেললো। খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
–ঠিক আছে যাব।
–আজ তোরা কোথাও বাইরে জাবিনা।
ইভান ফোনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতে বলতে ঘরে ঢুকল। ইভানের কথা শুনে ইলহাম জিজ্ঞেস করলো
–কিন্তু কেন ভাইয়া?
–আমি বলেছি তাই।
ইলহাম আর কিছু বলতে যাবে ইভান ফোন থেকে মুখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আর একটা কথা বললে রোদের মধ্যে ছাদে দাড়িয়ে রাখবো দুই ঘণ্টা।
ইভানের কথা শুনে ইলহাম ভয় পেয়ে গেলো। তার কোন বিশ্বাস নেই। এমনটা করতেও পারে। তাই সে আর কোন কথা না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। ইভান ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা মাথা নিচু করে বসে আছে। ইভানের আচরনে সে যে কষ্ট পেয়েছে সে ভালো করে বুঝতে পারছে। ঈশার মুখ দেখে ইভানের খুব কষ্ট হল। ঈশার সামনে বসে তার সামনের চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলল
–সরি জান। মেজাজ টা ঠিক নেই। আমার উপরে রাগ করেছিস?
ইভানের এমন কথা শুনে ঈশা তার দিকে তাকাল। একটু সময় তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়িয়ে না বলল। ইভান অসহায়ের মতো তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমার প্রতি তোর কত অনুভুতি ছিল। জেদ করতিস আমার সাথে। রাগ করতিস। আমি খুব যত্ন করে তোর রাগ ভাঙ্গাতাম। সেই ঈশাকে খুব মিস করি। খুব বেশি মিস করি।
ইভানের এমন কথা শুনে ঈশার মনে খুব কষ্ট হল। ইভান উঠে চলে যাচ্ছিলো। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–রাগ করিনি অভিমান করেছি। সেটা মুখে বলা যায়না। বুঝে নিতে হয়।
ঈশার কথা শুনে ইভান পিছনে ঘুরে তাকায়। একটু হেসে দরজার সাথে হেলানি দিয়ে হাত গুঁজে বলে
–আমার মান ভাঙ্গানোর স্টাইলটা অন্য রকম। আমি সেটা এই মুহূর্তে প্রয়োগ করতে গেলে মানতো ভাংবেই না উলটা তুই রাগ করবি।
ঈশা ইভানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। ইভান তার কাছে এসে বসে বলে
–কথাটা শুনেই রাগ করলি। আর ভাঙ্গাতে গেলে ফাসিই দিয়ে দিস কিনা!
ঈশা এবার খুব বিরক্ত হল। খুব শান্ত সরে বলল
–আমি যে তোমার উপরে বিরক্ত হচ্ছি সেটা কি বুঝতে পারছ?
ইভান ঈশার হাত ধরে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে তার আঙ্গুল গুলোতে আলতো স্পর্শ করতে করতে বলল
–তুই যে আমার কাছ থেকে বিরক্তই হতে চাস। এই জন্যই তো উঠে পড়ে লাগি তোকে বিরক্ত করতে।
ঈশা একটা বিরক্তিকর শব্দ করে বলল
–তুমি কি কখনও একটু সিরিয়াস হবেনা?
ইভান ঈশার হাত ছেড়ে দিয়ে ঈশার গালে এক হাত দিয়ে আলতো করে ধরে বলল
–তোর কি মনে হয় তোর ব্যাপারে আমি কখনও হেয়ালি করেছি।
তারপর নাকে নাক ঘোষতে ঘোষতে বলল
–ইউ আর মাই লাইফ অ্যান্ড আই এম ড্যাম সিরিয়াস এবাউট ইউ!
কথা শেষ করেই ঈশাকে ছেড়ে দিলো। কিন্তু ঈশা ততক্ষণে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। ইভান কিছুক্ষন ভালো করে ঈশাকে দেখে নিয়ে একটু হেসে বলল
–তোমার এই নিরব ভালোবাসার জালে আমাকে আর কতদিন জড়িয়ে রাখবে গো প্রেয়সী। একবার তো বল ভালোবাসি। আমিও অনুভব করি তোমার এই মনের গহিনে লুকিয়ে রাখা ভালোবাসা।
ইভানের কথা শুনে ঈশা চোখ খুলে ফেলে। তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখে একটা মিষ্টি হাসি নিয়ে ইভান তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই হাসির মায়ায় পড়ে গেছে ঈশা। ইভান নিজের হাসি একটু প্রশস্ত করে বলল
–আর বিরক্ত করবোনা।
বলেই উঠে গেলো। দরজা পর্যন্ত যেতেই ঈশা বলল
–প্লিজ করোনা। তোমাকে আমার অসহ্য লাগে।
ইভান পিছনে ঘুরে একটু হেসে বলল
–দূর থেকে ভালবাসলে সহ্য করতে পারবি তো?
ঈশা ইভানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। ইভান একি অবস্থাতে থেকেই বলল
–আমি যেদিন তোর কাছে অসহ্য হয়ে যাব সেদিন তুই নিজেই নিজের কাছেই আর সহ্য করার মতো থাকবিনা। কারন তোর মন প্রান সবটা জুড়েই আমার অস্তিত্ব।
ইভান নিজের কথা শেষ করে ঘরের বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো। রিমা হাপাতে হাপাতে এসে বলল
–আরমান ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে। হসপিটালে ভর্তি।
কথাটা শুনে ঈশা বাইরে দাড়িয়ে থাকা ইভানের দিকে তাকাল। সে ভাবলেশহীন ভাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটা তার কানে গেলো কিনা সেটাও ঈশা বুঝতে পারলনা।

চলবে……

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-০৮

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৮

১৮
ইভান ছাদে দাড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট জালাচ্ছে। ঈশা তার পিছনে এসে দাড়িয়ে বলল
–এসব অভ্যাস তো তোমার আগে ছিলোনা? কবে থেকে শুরু করেছো?
ইভান একটু হেসে বলল
–অনেক পরিবর্তনের পরেই আমি আজকের এই ইভান। জিবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনেক নতুন অভ্যেস তৈরি হয়েছে আবার পুরাতন কিছু জিনিস হারিয়ে গেছে যা হারানোর কথা ছিলোনা।
ঈশা ইভানের কথা শুনে ছাদের রেলিঙ্গের উপরে লাফ দিয়ে বসে পড়লো। ঈশার ওখানে বসা দেখে ইভান ভয় পেয়ে চিৎকার করে বলে
–ঈশাআআ…।
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বলে
–কি ভাবছ? এখান থেকে লাফ দিবো। আমি এতো বোকা না।
ইভান ঈশার উপরে বিরক্ত হল। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে লাগাতেই ঈশা সেটা নিয়ে নিলো। তারপর নিচে তাকিয়ে ফেলে দিলো। ইভান ভ্রু কুচকে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার ঈশা তার হাত থেকে পুরো প্যাকেট টা নিয়েই নিচে ফেলে দিলো। ইভান অসহায়ের মতো প্যাকেট টার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সেটা মাটিতে পড়তেই ইভান ঈশার হাত ধরে বলল
–কি করলি এটা?
–কেন দেখতে পেলেনা? নিচে ফেলে দিলাম।
–আমার কাছে আপাতত একটাই প্যাকেট ছিল।
–জানতাম। এই জন্যই তো ফেলে দিলাম।
ইভান এবার খুব রাগ করে বলল
–নিজেই আঘাত দিয়ে আবার সেটাতে মলম লাগাতে এসেছিস? খুব ভালো নাটক করতে পারিস তুই। আমার সামনে না করে মঞ্চে গিয়ে কর হাত তালি পাবি। এখান থেকে চলে যা।
ইভানের কথা শুনে ঈশা জেদ করে বলল
–যাবনা এখান থেকে কি করবে?
–আমি নিচে চলে যাব।
–যাও! যেখানে খুশি যাও। আমি এখানেই বসে থাকব।
ঈশার কথাটা শেষ হতেই আকাশে মেঘ ডেকে উঠলো। মেঘের গর্জন শুনে ইভান আকাশের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসল। তারপর ঈশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
–এখানেই বসে থাক। আমি যাচ্ছি।
বলেই সে পকেটে হাত গুঁজে ধিরে ধিরে হাঁটছে সিঁড়ির দিকে। আর হাসছে। কারন ঈশা মেঘের ডাক খুব ভয় পায়। ইভান জানে সে বেশিক্ষন থাকতে পারবেনা। ইভানের ভাবনার মাঝেই আবার জোরে মেঘ ডেকে উঠলো। আর ঈশা দৌড়ে এসে ইভান কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। ইভান দাড়িয়ে গেলো। এভাবে ঈশা তাকে জড়িয়ে ধরবে তা ইভান ভাবেনি। ঈশা ভয়ে কাঁপছে। ইভান ঈশার হাত ধরে তাকে সামনে এনে দাড় করাতেই ঈশা আবার ইভান কে জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষনের জন্য ইভানের মনে হল তার শুন্য বুকটা ভরে গেলো। প্রথম ঈশা তাকে জড়িয়ে ধরেছে। ইভানও কিছু না ভেবে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে ঈশাকে। তাদের মাঝে এই মুহূর্তে কোন বাধা নেই। চোখ বন্ধ করেই ইভান বলল
–ভয় পাস না জান। আমি আছি তো। সব কিছু থেকে তোকে রক্ষা করবো।
দুজন দুজন কে জড়িয়ে ধরে মুহূর্তটা অনুভব করছে। এমন সময় বৃষ্টি এলো। ঈশার মনে পড়লো ইভানের জর। বৃষ্টিতে ভিজলে আরও ঠাণ্ডা লাগবে। তাই ইভান কে ছেড়ে দিলো। তার পর সিঁড়ির দিকে চলে যেতে লাগলো। হঠাৎ হাতে টান অনুভব করলো। পিছনে ঘুরে দেখে ইভান তার হাত টেনে ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা কিছু চিন্তা না করেই বলল
–নিচে চল।
ইভানের তার কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–কোন এক দিন তুই জেদ করছিলি আমার সাথে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু সেদিন আমি তোর ইচ্ছাটা পুরন করতে পারিনি কারন তুই অসুস্থ ছিলি। আজ পুরন করতে চাই। দিবি?
ঈশা কিছু না ভেবেই বলল
–তোমার জর। বৃষ্টিতে ভিজলে ঠাণ্ডা লাগবে। আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।
ইভান একটু হেসে বলল
–তুই সেবা করবি। আমি ছোট বেলা থেকে তোর কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখিনি। এটাই বাকি ছিল। আর এরকম একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। আমাকে তোর ইচ্ছাটা পুরন করার সুযোগ দিবিনা? প্লিজ জান।
ইভানের কথা শুনে ঈশা চেয়েও আর কিছু বলতে পারল না। ইভান বুঝতে পারল ঈশার সম্মতি। তাকে টেনে এনে ঘুরিয়ে তার পিঠে নিজের বুক ঠেকিয়ে চুল গুলো খুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো। পিছন থেকে চুল সরিয়ে পিঠে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল। এক হাত ঈশার পেটে দিয়ে চেপে ধরল। ঈশাও চোখ বন্ধ করে ফেললো। সেই ছোটবেলার কথা। ঈশার খুব জর ছিল। তবুও সেদিন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছিল তার। কিন্তু সেদিন ইভান এভাবেই তার হাত টেনে আটকে রেখেছিল। ঈশা খুব জেদ করছিলো। তখন ইভান খুব শান্ত ভাবে বলেছিল
–তোর এই ইচ্ছাটাও কোন একদিন পুরন করবো। সেদিন তোর মনে হবে আজ এই ইচ্ছাটা পুরন না হয়ে ভালই হয়েছিলো। আজকের থেকে সেদিন অনেক বেশি কিছু পাবি।
তার কথা শুনে ছোট্ট ঈশা কিছু না বুঝলেও আজ বুঝতে পারছে। সত্যিই সেদিন ইচ্ছাটা পুরন না হয়ে খুব ভালো হয়েছে। সেদিন শুধু বৃষ্টিতেই ভিজতে পারতো। কিন্তু এভাবে ইভান কে কাছে পেতনা। আজ সব মিলে যেন মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সব থেকে সুখি। ইভান তাকে জড়িয়ে নিয়ে কানের কাছে মুখ এনে বলল
–বলেছিলাম না এমন অনেক কিছুই পাবি যাতে তোর মনে হবে সেদিন ইচ্ছাটা না পুরন হয়েই ভালো হয়েছে। তোর জীবনে আমি কোন কিছুর আফসোস রাখতে চাইনা। সময় মতো সব পাবি তুই।
ঈশা একটু হেসে বলল
–তোমার মনে আছে?
–আমার সব মনে আছে জান।
বলেই ঈশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিলো। ঈশা কি ভেবে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–আর না। তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে। নিচে চল।
ইভান একটু হেসে ঈশাকে কোলে তুলে নিলো। ইভানের এমন কাজে ঈশা অবাক হল। ঈশাকে নিয়ে গিয়ে রেলিঙ্গের উপরে বসিয়ে দিলো সামনে মুখ ঘুরে। তারপর তার দুই পাশে হাত দিয়ে ঘাড়ে নিজের থুতনিটা রাখল ইভান। ঈশার মাথার সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে বলল
–তোর সব ইচ্ছা পুরন করে আমি মরে গেলেও কোন আফসোস নেই। বরং শান্তিই পাব।
ইভানের কথা শুনে ঈশার খুব কষ্ট হল। কেঁদে ফেললো। কাদ কাদ গলায় বলল
–আমি নিচে যাব।
ইভান ঈশার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে দুই হাতে জড়িয়ে বলল
–কাদছিস কেন? আমি মরতে চাইলেই কি তুই আমাকে মরতে দিবি?
বলেই ঈশার গালে নিজের নাক ঘোষতে ঘোষতে বলল
–আমি যেখানেই থাকি । তোকে কখনও একলা ছাড়বনা। আমি তোর ছায়ার সঙ্গী হবো।
ঈশা মাথা নাড়ায়। ইভান সামনে তাকিয়ে বলে
–এই মুহূর্তটা সারা জীবন মনে রাখবো।
ঈশাও একটু হেসে বলল
–আমিও।
ইভান ঈশার গালে একটা চুমু দেয়।

১৯
ঈশা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে চোখ বড় হয়ে গেলো। অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখছে ইভান কে। সে ঈশার বিছানায় পা লম্বা করে শুয়ে মোবাইলে গেম খেলছে। ঈশা কে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকাল। ঈশা তার তাকানো দেখে তাড়াতাড়ি করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো। ঈশার এভাবে দরজা বন্ধ করা দেখে ইভান উঠে বসে পড়লো। ভ্রু কুচকে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–এমন ভাবে দরজা বন্ধ করছিস যেন আমি পর পুরুষ। কেউ দেখলে পাপ হয়ে যাবে।
ঈশা তার সামনে এসে বলল
–তুমি এতো রাতে কেন এখানে?
ঈশার কথা শুনে ইভানের খুব রাগ হল। ইভান এবার উঠে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো। এক হাতে দুই গাল চেপে ধরে বলল
–আমার যখন ইচ্ছা তখন আসবো। এসবের কইফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই। তুই আমার বিয়ে করা বউ।
ঈশা একটু ব্যাথা পাচ্ছিলো। সেটা বুঝতে পেরে ইভান তাকে ছেড়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমন করতে চেষ্টা করে। তারপর শান্ত ভাবে বলে
–টেবিলে ঔষধ আছে খেয়ে নে।
ঈশা তার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। একটু কাপা কাপা গলায় বলে
–কিসের ঔষধ?
–বিষ এনেছি তোর জন্য।
ইভান উলটা ঘুরে বিছানায় বসতে বসতে কথাটা বলে। ঈশা তার কথায় বিরক্ত হয়ে বলে
–ঠিক করে বল।
ইভান বিছানায় পা তুলে বসে তার দিকে তাকিয়ে বলে
–মাইগ্রেনের ঔষধ। খেয়ে নে ব্যথা ঠিক হয়ে যাবে।
ঈশার মুখ হা হয়ে যায়। সে হা করে ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকে। অবাক হওয়ারই কথা। ঈশার যে মাইগ্রেনের ব্যাথা তা ইভান কি করে জানলো। সে এখন পর্যন্ত কাউকেই কথাটা বলেনি। ইভানের জানাটা একদম অস্বাভাবিক। ইভান এবার বিরক্ত হয়ে বলে
–দেখে তো মনে হচ্ছে ঔষধ না, আমাকে খাওয়ার ইচ্ছা আছে।
ঈশা তার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে যায়। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে
–তুমি কিভাবে জানলে আমার মাথা ব্যাথা।
ইভান একটু হেসে বলে
–তুই আমাকে তোর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিস আমি না। আমি সব কিছুর খবর রাখি।
ঈশা তার কথা শুনে কষ্ট পায়। মন খারাপ করে। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে তার মন খারাপ হয়ে গেছে। ইভানের খারাপ লাগে। তাই তার মন ভালো করতে বলে
–ইরা বলল তোর শরীর খারাপ। ভাবলাম মাঝে মাঝে মাইগ্রেনের ব্যাথা হয় । এখনো হয়ত তাই হয়েছে। তাই ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিস। আর ঔষধ খেলে কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যাথা কমে যায়। কিন্তু এতো রাত অব্দি ব্যাথা কমেনি মানে তোর কাছে ঔষধ নেই। আর তুই তো ঔষধ খেতে পারিস না তাই কখনই ঔষধ আনতে বলবিনা নিজে থেকেই। তাই নিজের দায়িত্তেই নিয়ে আসলাম।
ইভানের সব কথা শুনে ঈশা সন্দিহান দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। তারপর চোখ ছোট ছোট করে বলল
–আমার মাইগ্রেনের ব্যাথা গত চার বছর থেকে। তখন তো তুমি ছিলেনা। জানলে কিভাবে মাঝে মাঝে হয়?
ঈশার প্রশ্ন শুনে ইভান একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। ঈশার মাথা থেকে বিষয়টা বের করতে উঠে গিয়ে ঔষধের স্ট্রিপ থেকে ঔষধ টা খুলে হাতে নেয়। ঈশা ভাবে ইভান তাকে জোর করে ঔষধ খাওয়াবে। কিন্তু সে ঔষধ খেতে পারেনা। তাই উলটা ঘুরে দেয়ালের সাথে দাঁড়ালো। ইভান তাকে নিজের দিকে ঘুরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল । ঈশা দেখল ইভান তার দুই ঠোটের মাঝে ক্যাপ্সুল টা আলতো করে চেপে ধরে আছে। এক হাতে ঈশার দুই গাল চেপে মুখটা হা করে ঔষধ টা নিজের মুখ থেকে তার মুখে ঢুকিয়ে দেয়। তার পর পানির বোতল থেকে তার মুখে পানি ঢেলে দেয়। একটু বেশি পানি পড়ায় ঈশার গলায় আটকে যায়। আর ঈশা কাশতে থাকে।ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে তার মাথায় হাত দেয়। ঈশা থেমে গেলে বলে
–ঠিক আছিস?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।কিন্তু পরক্ষনেই ঈশার বমি বমি ভাব হয়। সে উকাতে শুরু করে। ইভান তাড়াতাড়ি করে নিজের পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে মোড়ক টা একটু খুলে ঈশার মুখে দেয়। ঈশা একটু কামড় দিয়ে মুখে ধরে থাকে চকলেট। মুখে কিছুক্ষন ধরে থেকে ইভানের হাতে থাকা চকলেটটার দিকে তাকায়। চকলেট টা দেখে ঈশার চোখ ছলছল করে উঠে। এই চকলেট টা ঈশার খুব পছন্দ। ইভান তাকে প্রায় সময়ই এনে দিত। কিন্তু ইভান চলে যাওয়ার পর থেকে ঈশা এই চকলেট টা আর খায়নি। খুব মিস করত। ঈশার চোখে পানি দেখে ইভান বলল
–এতো পছন্দ করিস এই চকলেট টা তাহলে খাওয়া বাদ দিয়েছিলি কেন?
ঈশা ইভানের কথার উত্তর দেয় চকলেটের দিকে তাকিয়ে আনমনে
–সব সময় তো তুমিই এনে দিয়েছ। এতদিন দাওনি তাই খাইনি।
কথাটা বলেই ঈশা নিজেই চমকে উঠে। ইভান কিভাবে জানল সে চকলেট আর খায়না।ঈশা তার দিকে এবার অসহায়ের দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। সব কিছু কেমন ঘোরের মতো লাগছে। ইভানের কথা গুলো কেমন এলোমেলো। অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু কিছুই বলতে পারছেনা। ঈশার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে ইভান বলল
–আমার বুকের ভিতরে হার্ট বিট সব সময় তোর অস্তিত্ব জানিয়ে দেয়। তুই কি করিস কি করিস না সব কিছুই আমার জানা হয়ে যায়। আমি চোখ বন্ধ করেই তোকে দেখতে পাই জান।
ঈশা কিছু বলতে পারলনা। তার চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। ঈশার চোখের পানি যত্নে মুছে দিয়ে ইভান তাকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ঈশা উঠতে চেষ্টা করলে ইভান তাকে বিছানায় চেপে ধরে।তার চোখে চোখ রাখে। ঈশা তার চোখের মাঝে হারিয়ে যায়। এক অদ্ভুত আকর্ষণ কাজ করে। ঈশা যেন আজ সম্মহনের স্বীকার। ইভান ঈশার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দেয়। ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেলে। এতে তার চোখের পানি গাল বেয়ে কানে গড়িয়ে পড়ে। ইভানের গালেও তার চোখের পানি লেগে যায়। ইভান মুখ তুলে ঈশার দিকে তাকায়। সে চোখ বন্ধ করে আছে। আজ যদি ইভান তার ভালোবাসার অধিকার খাটায় তবুও ঈশা বাধা দিবেনা। কিন্তু ইভান তা করবেনা। সে তার মুখ ঈশার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিস ফিসিয়ে বলল
–আমি শুধু তোকে জোর করে বিয়েই করেছি। কারন আমি তোকে অন্য কারও হতে দিতে পারিনা। অন্তত আমি বেঁচে থাকতে এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারবোনা। আমি ছোট বেলা থেকেই তোকে শুধু আমার ভেবেছি। তাই তো এই অধিকার বোধ থেকে তখন জোর করেছি। কিন্তু আর কখনও কোন বিষয়ে তোর উপরে জোর করিনি। আজও করবোনা। আমার মাঝে যেমন তুই বিরাজ করিস তেমন তোর মাঝেও আমি আমাকে খুজি। যেদিন আমি তোর মাঝে পুরোটা বিরাজ করবো। যেদিন তুই ভালবেসে আমাকে স্পর্শ করবি সেদিন আমি তোকে আমার ভালোবাসার স্পর্শে ভরিয়ে দিবো। সেদিন তোর আর আমার মাঝে থাকবে শুধু ভালোবাসা। শুধুই ভালোবাসা!
ইভানের কথা শেষ হতেই ঈশা চোখ খুলে ফেললো। ইভান কে এভাবে তার উপরে শুয়ে থাকতে দেখে তার অস্বস্তি হল। সে কিছু বলতে পারলনা আবার ইভান কে সরাতেও চাইলনা। কিন্তু জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। তার এভাবে শ্বাস নেয়া দেখে ইভান নিজে থেকেই তার উপর থেকে সরে গিয়ে পাশে শুয়ে পড়লো। ঈশা উঠে বসতে চাইলে ইভান তাকে টেনে নিজের বুকে শুয়ে দেয়। পরম যত্নে তার চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে
–এখন ঘুমা জান।
ইভানের কথা শুনে ঈশা আর কিছু না বলে তার বুকের উপরে মাথাটা রেখে নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিলো। কি এক পরম শান্তি ইভানের বুকের মাঝে। কিছুক্ষন পর ঘুমিয়েও গেলো।

চলবে………

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-০৭

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৭

১৫
ঈশা আর রিমা তার ঘরে বিছানায় বসে গল্প করছে। ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দে দুজনি সেদিকে তাকায়। ইভান ওয়াশ রুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে মাথা মুছছে। অফ হোয়াইট টি শার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজারে ইভান কে দেখে রিমা ক্রাশ খেলো। সে হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ঈশা ভ্রু কুচকে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভানের চোখ ঈশার উপরেই আগে পড়ে। ঈশার এভাবে ভ্রু কুচকে তাকানোর মানে ইভান বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো
–হোয়াট?
ঈশা চেচিয়ে বলল
–তুমি আবার আমার ওয়াশ রুমে?
ইভান এবার খুব শান্ত ভাবে উত্তর দিলো
–এই রুমে এই ওয়াশ রুমে আমি যখন তখন ম্যানারস মেইনটেইন না করেই ঢুকতে পারি। ইটস মাই রাইট। আফটার অল ইউ আর মাই লিগাল ওয়াইফ!
বলেই হাতের ভেজা টাওয়াল টা ঈশার মুখে ছুড়ে মারল। একটু মুচকি হেসে ঘর থেকে বের হতে গিয়েই আবার ঘুরে তাকাল। ঈশা টাওয়াল টা মুখ থেকে সরিয়ে বিরক্ত নিয়ে তার দিকে তাকাল। ইভান রিমার দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি রিমা?
রিমা এতক্ষন হা করে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। তার কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে বলল
–হ্যা। আমিই রিমা।
ইভান একটু হেসে বিছানার উপরে এসে আরাম করে বসে পড়লো। তারপর রিমার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল
–নাইচ টু মিট ইউ!
রিমাও হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো। ইভান আর রিমা নিজেদের মতো গল্পে মশগুল। সেখানে যে ঈশা বসে আছে তা তাদের মাথাতেই নেই। ঈশা খুব বিরক্ত হল। রাগ হল ইভানের উপরে। এতো কি গল্প রিমার সাথে তার। এমন ভাব করছে যেন তার ছোট বেলার কোন বান্ধবির সাথে দেখা হয়েছে। কিছুক্ষন পর ইরা এসে সবাইকে খেতে ডাকল। রিমা ইরার সাথে বের হয়ে গেলো। ঈশা উঠে দাঁড়ালো। মুখটা কাল করে দাড়িয়ে আছে। তার মুখ কাল করার কারন ইভান বেশ বুঝতে পারছে। সে একটু হেসে উঠে দাঁড়ালো। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে রাগি সরে বলল
–রিমা বাইরে চলে গেছে। তুমি এখানে এখনো কি করছ?
ইভান তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল
–ওয়াশ রুমে নিজের ব্যাক্তিগত জিনিস গুলো আমাকে দেখানোর জন্য ফেলে রেখেছিস?
ঈশা একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
–কি সব আজে বাজে কথা বলছ?
ইভান তার মুখটা ঈশার একদম কাছে এনে চোখে চোখ রেখে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলল
–তোর কোন কিছুই আমার অজানা নয়। এই তোকে আমি পুরোটাই জানি। কিন্তু অন্য কেউ এসব জানুক তা আমি সহ্য করবোনা।
গলাটা হালকা করে চেপে ধরে বলল
–বি কেয়ার ফুল। নাহলে জানে মেরে ফেলব।
ঈশা তার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে ফেললো। ইভান আলতো করে গালে একটা চুমু দিয়ে তাকে ছেড়ে দিলো। ঈশা ছাড়া পেয়ে বাইরে যেতে নিলেই ইভান আবার বলে
–আর ইউ জেলাস?
ঈশা বেশ বিরক্ত নিয়ে ঘুরে তাকিয়ে বলল
–আর ইউ ম্যাড?
ইভান একটু বাকা হেসে দেয়ালের সাথে হেলানি দিয়ে হাত গুঁজে বলল
–তোমার এই অনুভুতি গুলো অন্য কারও কাছে লুকাবে। আমার কাছে নয়। চাইলেও পারবেনা। আমি তোমার শিরায় শিরায় বিরাজ করি মিসেস ইভান মাহমুদ।
ইভানের শেষের লাইনটা শুনে ঈশার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। তার রাগ করার কথা থাকলেও আশ্চর্য জনক ভাবে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে চেয়েও হাসি চেপে রাখতে পারলনা। শেষ লাইনটা ঈশার কানে বেজেই যাচ্ছে। ঈশার অবস্থা বুঝতে পেরে ইভান একটু হেসে বাইরে গেলো। ঈশা দাড়িয়ে ভাবছে। ইভান আবার ফিরে এসে বলল
–খেতে আসো।
ইভানের কথা শুনে ঈশা উলটা ঘুরেই ঠোঁট কামড়ে হাসল। সেই হাসি দেখে ইভানের মনটা একদম শান্ত হয়ে গেলো।

১৬
রিমা বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল
–তোর বর যা হ্যান্ডসাম! আমি তো প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়েছি। উফফ…।
রিমার কথা শুনে ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে একটু হেসে বলল
–বাইরে থেকে দেখতে হ্যান্ডসাম কিন্তু ভিতর থেকে পুরাই আগুন। যে কোন সময় জালিয়ে দেবে।
তার কথার মানে রিমা বুঝতে পারলনা। উঠে বসে বলল
–আরমান ভাইয়ার কথা ভেবে খারাপ লাগছে। বেচারা তোকে খুবই পছন্দ করত। তোর বিয়ের কথা শুনে তার মন ভেঙ্গে যাবে।
ঈশা একটু নিশ্বাস ছেড়ে বলল
–আরমান ভাইকে আমি অনেক বার বোঝাতে চেষ্টা করেছি। যত বার কথা হয়েছে আমি তাকে ততবার বলতে চেষ্টা করেছি। উনি আমার কোন কথাই শুনতে চাননি। লোকটা ততটাও খারাপ না।
ঈশা রিমার দিকে মুখ ঘুরে দাড়িয়ে ছিল। কথাটা শেষ করে সামনের জানালায় থাই গ্লাসে চোখ পড়ে। ইভান পানির গ্লাস হাতে নিয়ে উলটা দিকে ঘুরে দাড়িয়ে আছে। তাদের সব কথা সে শুনেছে। ঈশা ভয় পেয়ে যায়। তার দিকে ঘুরে তাকাবে তার আগেই আওয়াজে চমকে উঠে।পিছনে ঘুরে এক দৌড়ে ইভানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতে থাকা গ্লাসটা জোরে চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলায় কাচের টুকরো ইভানের হাতে ঢুকে যায়। সবাই দৌড়ে আসে। ঈশা হাত ধরতে চাইলে ইভান তার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়। সবাই বুঝতে পারে সে ঈশার উপরে কোন কারনে রাগ করেছে। হাত থেকে রক্ত টুপটুপ করে নিচে পড়ছে। ঈশা নিস্পলক সেদিকে তাকিয়ে চোখ থেকে পানি জরাচ্ছে। কিন্তু ইভানের সেদিকে খেয়াল নেই। সে রাগে কাঁপছে। ইরা ইভান কে টেনে বেসিনের কাছে নিয়ে গিয়ে হাত থেকে কাচ বের করে হাত ধুয়ে দিলো। তারপর চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। কেউ কোন কথা বলছেনা। কারন সবাই জানে এখন কথা বললেই ইভান আরও রেগে যাবে। ইরার ব্যান্ডেজ করা শেষ হতেই ইভান ঘরে চলে যায়। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকে। রিমা কিছুই বুঝতে পারেনা কি হল। সে ঈশার ঘাড়ে হাত রাখে। তাকে দেখে ঈশা চোখের পানি মুছে ফেলে।

বিকেলে রিমা চলে গেলো। ঈশা দুই পায়ের ভাজে মুখ গুঁজে বিছানায় বসে আছে। ইলহাম এসে বলল
–আপি কি হয়েছে?
তার কথায় মুখ তুলে তাকাল ঈশা। সামনে বসতে বলল ইশারা করে। তারপর জিজ্ঞেস করলো
–তোর ভাইয়া কি করছে?
–ঘুমিয়ে আছে?
ঈশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে
–এখনো?
–একটু আগেই ঘুমাল। হাত ব্যাথা করছিলো। ঘুমাতে পারছিল না। জর এসেছে হালকা।
তার কথা শুনে ঈশার চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি বেয়ে পড়লো। ঈশা কে কাঁদতে দেখে ইলহাম বলল
–একটা কথা বলব আপি।
ঈশা মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।
–তুমি আজ রাতে ভাইয়ার কাছে থাকবে? আমি পাশের রুমে থাকব। ভাইয়া অনেক অসুস্থ। কাউকে বলবে না। কিন্তু তোমাকে না বললেও তুমি বুঝতে পারবে।
তার কথা শুনে ঈশা করুন চোখে তার দিকে তাকাল। ভাইয়ের কষ্ট সেও আজ সহ্য করতে পারছেনা। মোটামুটি বাধ্য হয়েই কথাটা ঈশাকে বলল। ঈশা একটু হেসে বলল
–আগে থেকে কাউকে কিছু বলিস না। তোর ভাইয়া জানতে পারলে তোকে আর আমাকে সারা রাত বাড়ির বাইরে রাখবে।
ইলহাম একটু হেসে বলল
–আমার কি মাথা খারাপ। জেনে শুনে আগুনে ঝাপ দিবো?
কথাটা বলেই ইলহাম ঈশার কাধে মাথা রাখল। ঈশা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

১৭
ঈশা ইভানের পাশে বসে নিঃশব্দে কেদেই চলেছে। মুখে হাত দিয়ে কান্না চেপে ধরে রেখছে। ইভান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। জেগে থাকলে হয়ত ঈশাকে ঘর থেকে বের করে দিত।ইভানের জর এসেছে। ঈশা তার মাথায় জল পট্টি দিয়ে দিলো কিন্তু এসবের কিছুই ইভান বুঝতে পারলনা। সারা রাত সেবা করার পর ভোর বেলা ইভানের জর কমে। তখন ঈশার একটু চোখ লেগে যায়। ইভানের এক পাশে সে গুটি সুটি মেরে শুয়ে পড়ে।
ঈশা ঘুমিয়ে পড়ার কিছুক্ষন পরেই ইভানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। জরের কারনে খুব খারাপ লাগছিলো কিন্তু এখন বেশ ভালো লাগছে তার। জর টাও নেই। পানির পিপাসা পেয়েছে। পানি খেতে উঠতে যাবে দেখে ঈশা তার পায়ের কাছে গুটি সুটি মেরে শুয়ে আছে। তাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ইভান অবাক হয়। ঈশার মুখটার দিকে দেখে ইভানের কষ্ট হয়। কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে করুন সরে বলল
–আমার কষ্ট সহ্য করতে পারিস না কিন্তু আমাকে কষ্ট দিতেও ছাড়িস না। আমি একি কথা সেই ছোট বেলা থেকে বলে এসেছি। তোর সাথে কাউকে সহ্য করতে পারিনা। তবুও তুই অন্য কারও সাথে কথা বলিস। অন্য কারও কথা ভাবিস। অন্য কারও জন্য কষ্ট পাস। কিন্তু তোর এই কষ্ট চিন্তা ভাবনা সব আমাকে ঘিরে হওয়ার কথা ছিল। আমার ভালবাসায় কি এমন কমতি আছে জান।
ঈশার ঠাণ্ডা লাগছে। একটু কেঁপে উঠলো। ইভান কাঁথাটা ঈশার গায়ে দিতেই ঈশা সেটা জড়িয়ে নিয়ে ভালো করে শুয়ে পড়ল।এবার ইভান ঈশাকে কাথা সহ তুলে নিয়ে তার পাশের বালিশে শুয়ে দিলো। ঈশা আরামে ঘুমে গেলো। ইভান ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আলতো করে তার ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ে দিলো। তারপর উঠে গিয়ে পানি খেয়ে নিলো। ঈশার পাশে শুয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভানের চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি বেয়ে পড়লো। ঈশার দিকে তাকিয়েই বলল
–তুই আমার অস্তিত্ব। কিন্তু তোর মাঝে আমি কোথায় রয়েছি বলতে পারিস? আমি জেদিন নিজেকে তোর মাঝে খুজে পাব সেদিন তোকে আর কোন কষ্ট দিবনা জান। কিন্তু সেদিন টা কি কখনও আসবে আদৌ।
বলেই ঘুমিয়ে গেলো ইভান।
সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে ঈশা দেখল সে বালিশে শুয়ে আছে। কিন্তু কাল রাতে তো সে ইভানের পায়ের কাছে শুয়ে ঘুমিয়েছিল। তাহলে ইভান তাকে রাতে ঠিক মতো শুয়ে দিয়েছে। ঈশা বেশ আশ্চর্য হল। কারন ইভান তার উপরে যত রাগ করেছিলো তাতে তাকে ঘরের বাইরে বের করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেসবের কিছুই হয়নি। বরং যত্নে তাকে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে দিয়েছে। ইভানের মুখটার দিকে তাকাল সে। খুব শান্ত লাগছে তাকে। ঈশা মনে মনে বলল ”সব সময় যদি এমন শান্ত থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো। আমাকে আর কষ্ট পেতে হতনা।” ভেবেই উঠে গেলো।রাতে ঘুম না হওয়াতে মাথাটা ব্যাথা করছে। ঈশা মাথা চেপে ধরে ঘর থেকে বের হচ্ছে। বের হয়েই দেখে বাড়ির সবাই তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন পর পুরুষের ঘরে সারা রাত কাটিয়ে বের হল সে। তার চাচি রাগি ভাব নিয়ে এগিয়ে এসে ধমক দিয়ে বললেন
–তুই ইভানের সাথে ঘুমিয়েছিস আমাদের বলেছিস?
তার চাচির কথা শুনে ঈশা আকাশ থেকে পড়লো। এখন কি ইভানের সাথে ঘুমাতে তাকে সবার কাছে অনুমতি নিতে হবে। সে না তার বিয়ে করা বর। তার সাথে থাকেনা বলে এতদিন সবার এতো সমস্যা। আজ ছিল বলে এভাবে জেরা করছে। ঈশা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলল
–অনেক রাত হয়েছিলো তোমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলে। আর ইভানের অনেক জর এসেছিলো তাই সারা রাত ওখানে ছিলাম। ভোর বেলা ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম কখন বুঝতে পারিনি।
তার চাচি আবার বজ্র কণ্ঠে বললেন
–তুই আরামে ঘুমাচ্ছিস আর ভোর বেলা তোকে ঘরে না পেয়ে সারা দুনিয়া আমরা খুজে বেড়াচ্ছি। বললেই পারতিস তাহলে এতো চিন্তা করতাম না।
ঈশা এবার বেশ অবাক হল। একটু রেগেই বলল
–এভাবে খোঁজার কি আছে? কি ভেবেছ তোমরা আমি কি পালিয়ে যাব?
–সেই সুযোগ নেই।
ইভানের কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকায়। ঈশা পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়। ইভান তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার চেচামেচিতে ইভানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঈশার মা জিজ্ঞেস করে
–তোর নাকি জর? এখন কেমন আছিস?
–ভালো আছি তোমার মেয়ে সারা রাত আমার সেবা করেছে। জর না কমে যাবে কোথায়?
ইভান ঈশার দিকে তাকিয়েই কথাটা বলল। এবার সবার মাথায় ঢুকল বিষয়টা। সবাই ঈশাকে এভাবে জেরা করার জন্য একটু লজ্জা পেল।কারন ঈশাকে খুজে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো সবাই। আবেগের বসে সে আবার কিছু করে যেন না বসে তাই নিয়েই সবার এতো চিন্তা।সবাই যে যার মতো চলে গেলো। ইভান এবার ঈশার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
–কি বললি তুই?
ঈশা এবার খুব বিরক্ত হয়ে বলল
–সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাটক আর ভালো লাগছেনা। এমনিতেই ভালো করে ঘুম হয়নি। তার উপর সবাই এভাবে জেরা করতে শুরু করেছে। তুমি এখন আবার নতুন করে কি বলবে?
ইভান ঈশার কথা শুনে বুঝতে পারল রাতে ঘুম না হওয়ায় তার মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। মাথাও ধরেছে। তাই কারও কথাই সহ্য হচ্ছেনা। তবুও একটু রাগি লুক নিয়ে বলল
–আমি কি ঠিক শুনলাম তুই মাত্র বললি ইভানের জর এসেছিলো…।
বলেই থেমে গেলো ইভান। ঈশা এবার তার মুখের ভঙ্গি স্বাভাবিক করে ফেললো। বুঝতে পারল সে এই প্রথমবার ইভানের নাম বলেছে। আগে ভাইয়া ডাকত। কিন্তু বিয়ের পর থেকে কিছুই বলেনা। আজ প্রথম বার ইভান তার মুখে নিজের নামটা শুনেছে। কিন্তু ঈশার খুব মেজাজ খারাপ লাগছে। এতো ছোট বিষয়ে রিয়াক্ট করার কি আছে? সে রেগে বলল
–হ্যা বলেছি তো কি করবে? এখন কি এটার জন্যও শাস্তি দিবে? কি শাস্তি দিবে ঠিক করেছো? নাকি আরও সময় লাগবে ঠিক করতে? ঠিক করে আমাকে জানিয়ে দিও কেমন?
কথাটা বলেই ঈশা চলে গেলো। ইভান হা করে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা যে তার কথায় এই রকম রিয়াক্ট করবে সে ভাবেওনি। খুব অবাক হয়ে গেলো। বুঝতে পারল ঈশার উপরে মানসিক চাপটা একটু বেশিই পড়েছে। আর পর পর দুইবার ইভানের এরকম ঘটানোয় ঈশার মনে তাকে হারানোর ভয় তৈরি হয়েছে। ইভান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। মনে মনে বলল “মুখ ফুটে একবার বলেই দেখতিস তোর সব কষ্ট দূর করে দিতাম। কিন্তু তুই তো সেটা করবিনা। খুব ইগো তোর!”

চলবে………

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-০৬

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৬

১২
ঈশা জানালার গ্রিলে মাথা লাগিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তার মন খারাপ। সে গভীর ভাবনায় ডুবে আছে।পাশের টেবিলে রাখা ফোনটা উচ্চ শব্দে বেজেই যাচ্ছে। তাতেও তার কোন খেয়াল নেই। সে চিন্তায় এতোটা বিভোর। তার দরজার সামনে দিয়েই যাচ্ছিলো ইভান। ফোনের শব্দে ঘুরে তাকায়। ঈশাকে এভাবে থাকতে দেখে তার মনটাও খারাপ হয়ে গেলো। ঈশা মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে এটা ভেবেই তার সমস্ত রাগ অভিমান নিস্তেজ হয়ে গেলো। এই মুহূর্তে ঈশার প্রতি সমস্ত রাগ অভিমানের চেয়ে তার মন ভালো করাটা ইভানের কাছে বেশি গুরুত্ব পূর্ণ মনে হচ্ছে। ঈশার মন খারাপের কারন টাও ইভান জানে। কারন হসপিটাল থেকে আসার পর থেকে ইভান তার সাথে ভালো করে কথা বলেনি। খারাপ ব্যাবহার করেছে অনেক। ঈশা মুখ ফুটে না বললেও এসব যে তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে সেটা ইভান বুঝতে পারছে। ঈশা কে দেখে এই মুহূর্তে ইভানের খুব কষ্ট হচ্ছে। সে মনে মনে ভাবল “একবার আমাকে বলতে পারলিনা আমার সাথে এমন ব্যাবহার করোনা আমি সহ্য করতে পারছিনা। এতো জেদ কিসের তোর। বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটেনা।” আবারো ফোনের শব্দে ইভানের বিরক্ত এসে যায়। এতো কি ভাবছে মেয়েটা ফোনের শব্দ শুনতে পাচ্ছেনা। সে ঘরে ঢুকে ফোনটা হাতে নিয়ে বলে
–রিমা কে? তোর বান্ধবি?
ইভানের গলার আওয়াজ শুনে ঈশা ঘুরে তাকায়। ইভান তার ফোন হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখছে। ঈশা এভাবে ইভান কে দেখে একটু অবাক হল। তার কথার উত্তর না দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো।ইভান ফোনের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো
–পাশেই এতো জোরে ফোন বাজছিল সেটা শুনতে পেলিনা আর আমি একবার কথা বলতেই সেটা কানে গেলো?
ঈশা এবার বুঝতে পারে ইভান তাকে জালাতে এসেছে। ঈশা কোন কথা না বলে আবার সামনে তাকায়। ইভান এবার ঈশার ফেসবুকে ঢুকে পড়ে। তার আপলোড করা ছবি গুলা বের করে। একটা ছবিতে তার চোখ আটকে যায়। শুধু উপরের অংশের তোলা ছবি। দেখে মনে হচ্ছে ঈশা শাড়ী পড়ে আছে। নীল শাড়ী। ইভান ছবিটাকে ভালো করে দেখতে দেখতে বলল
–তোকে শাড়ী পড়তে কখনও দেখিনি। পরবি? নীল শাড়ী।
ইভানের কথা শুনে ঈশা অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। ইভান যে এমন কথা বলবে তা ঈশার ধারনার বাইরে। কিন্তু কেন জানি এক রাশ মন খারাপের মাঝে কোথাও একটা ভালো লাগা নাড়া দিয়ে উঠলো। আবার ঈশার ফোন বেজে উঠলো। ঈশা অপেক্ষা করছিলো ইভান তাকে ফোনটা দিয়ে দিবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ইভান ফোনটা রিসিভ করে ফেললো
–হ্যালো!
ঈশার ফোনে এরকম অপরিচিত একটা ছেলের গলা পেয়ে রিমা একটু ঘাবড়ে গেলো। একটু কাপা কাপা গলায় বলল
–হ্যা…হ্যালো। ঈশা নেই?
–আছে। তুমি কি ঈশার বান্ধবি?
–হ্যা। কিন্তু আপনি কে?
ইভান একটু হেসে বলল
–আমি ঈশার এক মাত্র হাসবেন্ড!
তার কথা শুনে রিমা যেন আকাশ থেকে পড়লো। কারন ঈশার বিয়ের কথা সে জানতোনা। একটু চেচিয়ে বলল
–কি? ঈশা বিয়ে করলো কবে?
–অনেক ছোট বেলায়। কেন তোমাকে বলেনি?
রিমা এবার ঈশার উপরে রেগে গেলো। ঈশার উপরে রাগ করে বলল
–না তো। এসবের কিছুই বলেনি।
ইভান এবার হেসে বলল
–এখন তো জানলে। তাহলে আমার সাথে কবে দেখা করতে আসছ?
রিমা ইভানের কথায় খুশি হয়ে বলল
–কালই আসবো আপনার সাথে দেখা করতে।
–ঠিক আছে বেবি! সময় মতো চলে এসো কেমন?
বলেই ফোনটা ইভান রেখে দিলো। তারপর ঈশার দিকে তাকাল। ঈশার দৃষ্টিতে ঠিক কি রকম এক্সপ্রেশন আছে সেটা ইভানের জন্য বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সে মনোযোগ দিয়ে ঈশার দৃষ্টি বোঝার চেষ্টা করছে। অবশেষে দুই একটা খুজে বের করতে সক্ষম হল। তার মধ্যে অবাক রাগ আর ভাললাগা। কিন্তু ইভানের এই মুহূর্তে ভালো লাগাটাই দরকার ছিল। সে বুঝতে পারল একটু হলেও ঈশার মন ভালো হয়েছে। তাই আর কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। ঈশা তার দিকে তাকিয়েই আছে। ইভান তার পিছনে চলে আসতেই ঈশা কি মনে করে হেসে দিলো। ইভান দরজায় দাড়িয়ে পিছনে ঘুরে ঈশার হাসি দেখে নিজেও হাসল। কিন্তু ঈশার সেটা চোখে পড়লনা।

১৩
সোফায় বসে ইভান ফোনে গেমস খেলছিল। পাশ থেকে ইলহাম বলে উঠলো
–ওয়াও!!
হঠাৎ তার এরকম কথার মানে বুঝতে ইভান তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। সে সামনে হা করে তাকিয়ে আছে। ইভান একটু বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি তার চোখের দৃষ্টি তাক করে সামনে তাকিয়ে তার মুখ হা হয়ে যায়। ঈশা নীল শাড়ী পরে ফ্রিজের দরজা খুলে মাথা নিচু করে ভ্রু কুচকে কি যেন খুজেই যাচ্ছে। চুল গুলো দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। মাত্র গোসল করে বেরিয়েছে সে। সামনের কাটা ছোট চুল গুলো বার বার সামনে চলে আসছে। আর ঈশা বার বার সেগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিচ্ছে। ইভানের মনে হচ্ছে সে যেন এক ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে। ঈশা যেন তাকে নেশার মতো টানছে। চোখ ফেরাতে ভুলে গেছে ইভান। আজ তার মনে হচ্ছে বুকের ভিতরে হার্ট খুব জোরে বিট করছে। সেটা যেন ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। আর এই মুহূর্তে তার এই অবস্থায় একটু শান্তি দিতে পারে ঈশা। তার সমস্ত জমান আবেগ আজ বাধ মানছে না। ইভান পারছেনা নিজেকে আটকাতে।
–আপি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
জোরে কথাটা বলে ইলহাম। তার কথায় ইভান বাস্তবে ফেরে। কিন্তু স্বাভাবিক হতে পারেনা। চোখ ফিরিয়ে নিতেই আবার আনমনে চোখ ঈশার উপরে চলে যায়। ইলহামের কথা শুনে ঈশা আর ইভানের মা দুজনেই ঈশার দিকে তাকায়। ঈশাকে শাড়ী পরতে দেখে তারাও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এবার ঈশা সবার দিকে একবার করে তাকায়। তাদের এভাবে তাকানো ঈশার খুব বিরক্ত লাগে। কিছু একটা বলতে যাবে তখনি ইভানের দিকে চোখ পড়ে তার। ইভানের দৃষ্টি যেন তাকে গ্রাস করে ফেলছে। তার দৃষ্টি দেখে ঈশার মনে হচ্ছে ইভান এখনি উঠে এসে তাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। সে ইভানের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারলনা। ঘুরে ঘরে চলে গেলো। ঈশার মা আর ইভানের মা দুজনি ঈশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে এতক্ষণ ইভান কে দেখছিল। ইভান কে দেখে তারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলো। ইভানের ওই দৃষ্টি কারও বুঝতে কষ্ট হলনা। ঈশা যাওয়ার পর ইভান চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিলো নিজেকে শান্ত করতে।

দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য সবাই টেবিলে বসে পড়লো। ঈশা একটা বাটি হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে টেবিলের কাছে আসলো। তারপর বাটিটা টেবিলে রাখতে রাখতে চেয়ারে বসে পড়লো। সামনে থেকে প্লেট টা নিয়ে পাশে থাকা গ্লাস টা নিতে যাবে দেখে ইভান তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঈশা যে ইভানের পাশের চেয়ারে বসেছে সেটা সে বুঝতে পারেনি। কিন্তু ইভানের এমন দৃষ্টির কারন কি। সে বুঝতে পারলনা কি এমন ভুল করেছে। কি আবার করলো যে এমন ভাবে তাকাচ্ছে। তার কথা মতই তো নীল শাড়ী পরেছে। ইভান ঈশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে প্লেটের দিকে তাকাল। কিছুক্ষন চোখটা বন্ধ করে মনে মনে ভাবছে “এতো জায়গা থাকতে এই মেয়েকে আমার কাছে এসেই বসতে হবে। এমনিতেই আজ তাকে দেখে মাথাটা নষ্ট হয়ে আছে। তার উপর আবার আমার পাশেই এসে বসতে হল। নিজেকে সামলাব কিভাবে আমি।” চোখ খুলে সামনে থাকা গ্লাসটা নিয়ে অর্ধেকটা পানি খেয়ে নিলো। তারপর সামনে গ্লাসটা রেখে নিজের প্লেটে মনোযোগ দিলো। ঈশা খাবার মুখে দিতেই সেটা গলায় আটকে গেলো। ইভান তাড়াতাড়ি করে তার গ্লাসটা তুলে নিয়ে ঈশার মাথায় হাত দিয়ে পানিটা তাকে খাইয়ে দিলো। একটু বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো
–তুই ঠিক আছিস তো?
ঈশা মাথা নাড়াল। ইভান এবার সামনে ঘুরতেই দেখল সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সে একটু বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে নিলো। তার বিরক্ত হওয়া দেখে সবাই যার যার খাবারে মনোযোগ দিলো। ইভান ঘুরে একবার ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে। এই গ্লাসে ইভান পানি খেয়েছে আর তাকেও সেই পানি খাওয়াল। ঈশার দৃষ্টি বুঝতে পেরে ইভান গ্লাসটা তুলে হাতে নিলো। ঈশা গ্লাসটাকেই দেখছে। ইভান একটু দেখে নিয়ে ঈশা যে পাশে ঠোঁট লাগিয়েছিল সে পাশে ঠোঁট লাগিয়ে বাকি পানি টুকু শেষ করে ফেললো। ঈশা একটু ভ্রু কুচকে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান তার দিকে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দিলো। ঈশা অপ্রুস্তুত হয়ে সবার দিকে তাকাল। কেউ বিষয়টা খেয়াল করেছে কিনা। কিন্তু সবাই নিজের খাবারে মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে। ঈশার ইভানের কাজে খুব বিরক্ত লাগলো। সব সময় এভাবে তাকে বিরক্ত করা যেন ইভানের পেশায় পরিণত হয়েছে। ঈশার এভাবে চুপ করে বসে থাকা দেখে ইভান ঈশার কানের কাছে এসে ফিস ফিসিয়ে বলল
–আমার হাতে খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিস বুঝি? সেটা মুখে বললেই হয়।
ঈশা ইভানের কথা শুনে তার দিকে তাকায়। তারপর আসতে করে বলে
–বাজে কথা না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দাও।
ইভান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
–খেতেই তো চাই। কিন্তু আফসোস সেই প্রসন্ন ভাগ্য আমার নেই। এখন পর্যন্ত টেস্টই করতে পারলাম না। খাওয়া তো দুরের কথা।
ইভানের কথা বুঝতে পেরে ঈশা চোখ বড় বড় করে সবার দিকে তাকাল। কেউ কিছু শুনেছে কিনা। সবাই নিজেদের মতো খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত।

১৪
ইরা রান্না ঘরে যাচ্ছে চা বানাতে। ইভান কে পানি খেতে দেখে বলল
–ভাইয়া চা খাবে?
ইভান একটু ভেবে বলল
–তুই বানাবি?
–হুম।
–খাবো।
ইরা রান্না ঘরে চলে গেলো। পানি খেয়ে গ্লাস টা হাতে নিয়েই ইভান একটু ভেবে গ্লাসটা রেখে ঈশার ঘরে গেলো। দরজায় ঢুকেই ঈশা কে দেখে থেমে গেলো। ঈশা ইভানের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন সে তার অপেক্ষা করছিলো। ইভান মনে মনে ভাবল “আমি আসবো এই মেয়ে কিভাবে জানলো। আর এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন। আমাকে পাগল তো আগেই বানিয়েছে এখন পাগলা গারদে পাঠিয়ে তবেই শান্ত হবে। এরকম আচরণ করলে কেউ কি ঠিক থাকতে পারে।” ভেবেই চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল
–ইরা কোথায়?
ইভানের দিকে তাকিয়েই ঈশা বলল
–রান্না ঘরে। চা বানাচ্ছে।
ইভান কথা শেষ করেই উলটা দিকে ঘুরে গেলো। ঈশা তার দিকে তাকিয়েই বলল
–কি দরকার ইরার?
–এমনি
উলটা দিকে ঘুরেই উত্তর দিলো ইভান। তারপর এক ধাপ ঘরের বাইরে বাড়াতেই ঈশা বলল
–সত্যিই কি ইরাকে খুজতে এসেছিলে?
ঈশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে ইভান অপ্রুস্তত হয়ে গেলো। বুঝতে পারল ঈশা তার আর ইরার কথা শুনেছে। পিছনে ঘুরে ঈশার দিকে তাকাল। তার দিকে তাকাতেই আবার সে হারিয়ে গেলো তার মাঝে। ঈশার দিকে এগিয়ে এসে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল
–তোর কি মনে হয়?
ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমার মনে হওয়াতে তো সত্যি মিথ্যা হয়ে যাবে না।
ইভানের এবার নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয়ে গেলো। সে ঈশাকে আরও জোরে চেপে ধরে বলল
–আমার সামনে আর কখনও শাড়ী পরে আসবিনা।
ঈশা একটু হেসে বলল
–কেন? সখ মিটে গেছে? নাকি সামলাতে পারছনা নিজেকে?
কথাটা শুনে ইভান ঈশার গলাটা হালকা চেপে ধরে বলল
–৫ বছর ধরে নিজেকে সামলে রেখেছি। এটা আমি ভালই পারি।
–সেটা আজ দেখতেই পাচ্ছি।
কথাটা ঈশার মুখ থেকে শুনে ইভান তাকে ছেড়ে দেয়। কারন তার চোখের ভাষা যে ঈশার বুঝতে বাকি নেই সে বুঝতে পারছে। ঈশা চলে যেতে নিলে সে ঈশার হাত ধরে টেনে এনে ঈশাকে আবার দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। এক হাতে ঈশার দুই গাল চেপে ধরে তার ঠোঁটে রুডলি কিস করতে শুরু করে। কিছুক্ষন পর ইভানের স্পর্শ কোমল হয়ে যায়। সে যেন ভালবেসে তার ভালোবাসার মানুষকে স্পর্শ করছে। ঈশা প্রথমে আচমকা এমনটা হওয়ায় একটু বিব্রত হলেও এখন আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। তবে সে এখন কাঁপছে। ভয়ে নয়। ভালোবাসার প্রথম ছোঁয়ায়। এক হাতে নিজের শাড়ীর আচল খামচে ধরে ঈশা। জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। ইভানের এমন ভালবাসায় ভরা স্পর্শ ঈশাকে এক অন্য জগতে নিয়ে যাচ্ছে। ইভানও চোখ বন্ধ করে ফেলে। দুজনি এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এক পরম সুখের মুহূর্ত। রান্না ঘর থেকে আওয়াজ আসতেই ইভানের ঘোর কেটে যায়। সে ঈশা কে ছেড়ে দেয়। ঈশা এখনো ঘোরের মধ্যেই আছে। চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। পরম সুখের এই অনুভূতিটাকে সে হারাতে চাইছেনা। ইভান কিছুক্ষন ঈশাকে দেখে চলে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই দেখে ইরা চা হাতে দাড়িয়ে আছে। সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। বুঝতে চেষ্টা করে ইরা কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে কিনা। ইরা তার দিকে তাকিয়ে বলে
–ভাইয়া তুমি এখানে? কিছু লাগবে?
ইরার কথা শুনে ঈশা চোখ খুলে ফেলে। ইভান বুঝতে পারে ইরা কিছুই বুঝতে পারেনি। তাই ইরার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিতে নিতে খুব শান্ত সরে বলে
–এই মুহূর্তে নিজের মনকে শান্ত করতে যা সব থেকে বেশি প্রয়োজন ছিল সেটা তোর আপুর কাছ থেকে নিয়েছি। এখন আপাতত আর কিছু না হলেও চলবে।
চায়ের কাপটা নিয়ে ঈশার দিকে ঘুরে তাকায়।ইভানের চাহুনিতে আজ মানসিক প্রশান্তির ছোঁয়া। ঈশা একটা ঢোক গিলে উলটা দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। সে ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেনা। উলটা দিকে ঘুরে ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে ঈশা। তাকে এই অবস্থায় দেখে ইভান একটু হাসে। ইভানের হাসির মানে বুঝতে ইরা অবুঝের মতো প্রশ্ন করে বসে
–ভাইয়া আপুকে দেখে এভাবে হাসছ কেন?
ইভান এবার ইরার দিকে তাকিয়ে তার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে
–কিছু মুহূর্ত সব কিছুর উপরে হয়। কিছু অনুভুতি এমন কিছু মানসিক প্রশান্তি দেয় যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। তখন মানুষ এভাবে হেসে নিজের মনের অনুভুতি প্রকাশ করে। বুঝলি?
তার কথা ইরার মাথার উপর দিয়ে যায়। সে বোকার মতো দৃষ্টি নিয়ে বলে
–কিসব কঠিন কথা বল কিছুই বুঝিনা।আমার বেশ সন্দেহ হয় তোমার কথা তুমি নিজেই বোঝো কিনা।
তার কথা শুনে এবার ঈশা আর ইভান দুজনেই শব্দ করে হেসে দেয়। ইভান হাসতে হাসতে চলে যায়। ইরা ভ্রু কুচকে ভাবতে থাকে। ঈশা পিছনে ঘুরে ইভানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসতে থাকে।

চলবে………

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-০৫

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৫

১০
ঈশাকে আজ হসপিটাল থেকে বাসায় আনা হয়েছে। ঈশা এখন বেশ সুস্থ। কিন্তু তার বিয়ে নিয়ে কোন কথা বলছেনা কেউ। আরাফের বাবার সাথে কথা বলতে চাইলে তারা সময় নিয়েছেন। তাই সবাই চুপচাপ আছে। কিন্তু ইভানের প্ল্যান অন্য রকম ছিল। একদিন সকালে প্রতিবেশীরা আসে ইশাদের বাড়িতে। তখন ঈশা সকালের খাবার খাচ্ছিল। তারা বিভিন্ন রকম কথা বলছিল ঈশাকে নিয়ে। ঈশার বাবা মা দুজনে চুপ করে শুনছিল। আসলে তাদেরও কিছু বলার নাই। কারন তারাও জানেনা কে ঈশাকে তুলে নিয়ে গেছিলো আর কি হয়েছে ঠিক তার সাথে। ঈশার ভবিষ্যৎ নিয়ে তারাও শঙ্কিত। সবার কথার তীক্ষ্ণ তির ঈশার চরিত্রের দিকে আঘাত করছে। সতীত্ব নিয়ে কথা হচ্ছিলো। এমন সময় ইভান এসে বলল
–আমি ঈশাকে বিয়ে করবো এই মুহূর্তে।
ইভানের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেলো। কেউ ভাবেনি যে ইভান এমন কথা বলবে। আর এসব নিয়ে কেউ কখনও ভাবেনি। সবাই কিছুক্ষন চুপ থেকে ভাবল। ঈশার বাবা নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠলো
–ইভানের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিতে পারলে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারব।
তার কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকাল। ঈশার বাবা ইভানের কাছে গিয়ে দু ফোটা চোখের জল ফেলে বলল
–আগেই বলতি কথাটা। তাহলে আজ এই পরিস্থিতির স্বীকার হতে হতনা। আর তোর কাছে মেয়েকে দিতে পারলে আমার যে আর কোন চিন্তা থাকতো না। তোর থেকে ভালো আমার মেয়েকে কেউ রাখতে পারবে না। সেই ছোট বেলা থেকে তুই ওকে আগলে রেখেছিস।
ঈশার বাবার কথা শুনে তার মাও এগিয়ে এলেন। ঈশার দিকে তাকিয়ে বললেন
–আমার মনের ইচ্ছা ছিল কিন্তু তুই কি ভাববি তা ভেবেই বলা হয়ে উঠেনি। আজ দেখ তোর ভাগ্যে ঈশা লেখা আছে।
কথাটা শুনে ইভানের মনে অপরাধ বোধ জেগে উঠলো। তার মানে সবার মনে একি কথা ছিল। আর ঈশার চোখেও তার জন্য একি অনুভুতি সে দেখেছে। তাহলে সে এতদিন না বলে ভুল করে ফেলেছে। সহজে যে বিষয়টা হয়ে যেত তার ভুলের কারনে আজ এতো কিছু করতে হল।

অবশেষে তাদের বিয়ে হয়ে গেলো। সবাই খুব খুশি। কিন্তু এই খুশি বেশিক্ষন স্থায়ী হলনা তাদের জীবনে। সেই মুহূর্তে আরাফ এসে হাজির হল। ঈশার সাথে ইভানের বিয়ের কথা শুনে সে আকাশ থেকে পড়লো। সেই দিন ইভান নিজে ঈশাকে কিডন্যাপ করেছে তার সমস্ত প্রমান সে নিয়ে এসেছে। সব প্রমান সবার সামনে দেখিয়ে বলল
–আপনারা এতো বড় ভুল কিভাবে করলেন? কিভাবে না বুঝে ওই ছেলের সাথেই বিয়ে দিলেন যে আপনাদের মেয়েকে সবার কাছে অসম্মান করেছে।
ইভানের বাবা তার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মারলেন। ইভান মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। সবাই তার দিকে প্রশ্নবিধ্য চোখে তাকিয়ে।সে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমি ঈশা কে ভালবাসি। আর আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা। আমি ভেবেছিলাম তোমরা সব কিছু বুঝতে পেরেছ এতদিনে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। তোমরা আমাকে না জিজ্ঞেস করে ওর বিয়ে দিচ্ছিলে। বড় বাবা তুমি তো নিজেই বললে আমার থেকে ভালো কাউকে তোমরা ঈশার জন্য পাবেনা। তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস না করে কেন এই আয়োজন? আমি আমার এই অনুভূতির কথা এতদিন বলিনি কারন ভেবেছিলাম নিজের পড়ালেখা শেষ করে তারপর ঈশাকে বিয়ে করে ঘরে তুলব। আর ঈশাও ছোট ছিল। তাই এতদিন সব কিছু ছেড়ে পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু পড়ালেখা শেষ করে এসে দেখি যার জন্য এতো কিছু করলাম তাকেই হারাতে বসেছি। সেটা কিভাবে মেনে নেই বল। ঈশা কে সব কিছু বলেছিলাম। কিন্তু সে সবার কথা ভেবে আমাকে ভুলে যেতে বলে। কিন্তু যার মাঝে আমার অস্তিত্ব আমি তাকে কিভাবে ভুলে যাই বল। আজ তাই তো ঈশাকে নিজের করে পেতে এতো কিছু করতে হয়েছে। আমি তোমাদের সবার অপরাধী। তোমরা আমাকে যা শাস্তি দিবে তা আমি মেনে নিবো।
সব কথা শুনে ঈশার মা বলল
–একবার বলতি আমরা খুশি হয়ে তোর হাতে ঈশাকে তুলে দিতাম। কেন বলিস নি?
ঈশার বাবা এতক্ষণ গম্ভীর ভাবে সব শুনছিল। তিনি ঈশার দিকে একবার তাকালেন। ঈশা ভাবলেশ হিন ভাবে দাড়িয়ে আছে। তার স্থির দৃষ্টি ইভানের উপরে। সে নিস্পলক ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশার বাবা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–যা হয়েছে এখান থেকেই শেষ। আজকের পর থেকে এসব নিয়ে আর কোন কথা উঠবেনা।
আরাফের দিকে তাকিয়ে বললেন
–বাবা তুমি যা করেছো তা নিসন্দেহে আমাদের জন্য উপকার। কিন্তু এটা আমাদের পরিবারের বিষয়। আমরা বুঝে নিবো।
তার কথা শুনে আরাফ চলে গেলো। সবাই সেদিন ইভানের ভালোবাসাটা বুঝতে পেরে তার অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছিলো। এসব নিয়ে কেউ আর কোন কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। কিন্তু এতো কিছুর পরেও একজন বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি। ঈশা ইভান কে মাফ করতে পারেনি। ঈশার বিষয়টাকে মানতে খুব কষ্ট হয়েছিলো। ইভান যে তাকে ভালবাসে সেই কথাটা আগে বললেই এতো কিছু হতনা। আজ ইভানের জেদের কারনে ঈশাকে সমাজের কাছে কথা শুনতে হয়েছে। তার চরিত্র নিয়ে কথা উঠেছে। কিন্তু ইভান এতো কিছু না করে যদি তার পরিবারের কাছে নিজের মনের কথাটা বলত কেউ না করত না। ইভান তার মনের কথা না জানিয়ে যে ভুল করেছে তার মাশুল ঈশাকে দিতে হয়েছে পদে পদে।আজ ইভান নিজের জেদের বসে যে ভুল টা করে বসেছে তার কারনে ঈশার বাবাকে অনেক বড় মাশুল দিতে হবে। ঈশা জানে তিনি মেয়ের সুখের কথা ভেবে কিছুই বলবেন না কিন্তু ইভানের জন্য আজ তাকেও বিপদে পড়তে হল। তাই তো আজ মনের মাঝে ভালোবাসার চেয়ে অভিমানটাই বেশি জমা হয়ে গেছে। না বুঝেই ইভান আজ তাদের অনেক বড় ক্ষতি করলো। এতো কিছুর পর সে আর ইভান কে মাফ করে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেনি তার সাথে। এইদিকে ইভানও পারেনি ঈশাকে মাফ করতে। কারন ঈশার উপরেও তার অভিমান ছিল। ইভান তার ভালোবাসার কথা ঈশা কে বলেনি ঠিকই কিন্তু ঈশাও যে ইভান কে ভালবাসতো সেটাও সে বলেনি।আর এতো কিছুর পরও ঈশা বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো। ইভান কে না জানিয়ে বিয়ে করতে যাওয়াটা ঈশার বড় অপরাধ ছিল। কারন ইভান না বললেও তার অনুভুতি গুলো ঈশার সামনে সব সময় প্রকাশ করেছে। আর যেহেতু ঈশাও ইভান কে ভালবাসত তাহলে তার বোঝা উচিৎ ছিল। কয়েক মাস পর ইভানের বাবা ঢাকায় ব্যবসা শিফট করেন। এখানকার সব কিছু তিনি বিক্রি করে চলে জাওয়ার সিদ্ধান্ত নেনে। তাদের পুরো পরিবার সেখানে চলে যায়। ইভান ঈশাকে শুধু একবার বলেছিল তার সাথে যেতে। কিন্তু ঈশা যেতে রাজি না হওয়ায় সে ঈশার উপরে জেদ করে চলে যায়। তখন সে ঈশাকে বুঝতে চায়নি। নিজের জেদ টাকেই প্রাধান্য দিয়েছিলো আগে। ঈশার খুব অভিমান হয়েছিলো তার উপরে। কিন্তু ঈশাও তখন ইভানের অভিমানটা বুঝতে চায়নি। তাই তো সেদিন ঈশার না বলায় ইভান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সে ঈশার কাছ থেকে দূরে থাকবে। তাই তো নিজের জেদ টাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে দূরে থেকেছে ৫ বছর। এই ৫ বছর সে শুধু ঈশার সামনেই আসেনি। কিন্তু ঈশার সব রকম খোঁজ খবর রেখেছে। সব প্রয়োজন মিটিয়েছে দূর থেকে। কিন্তু আজও ঈশার অভিমানের কাছে তার জেদ টাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে ঈশাকে কখনও বুঝতেও চায়নি। ছোটবেলা থেকে ইভানের কাছে সব কিছুর আগে ঈশার গুরুত্ব ছিল কিন্তু আজ সে নিজের জেদটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে। তাই তো সে নিজের ভিতরে কষ্ট পায়। এই কষ্টের কারনে সে ইভানের কাছে যেতে পারেনা। আর ইভানের কাছে না আসার জন্য সে ঈশা কে মাফ করতে পারেনা। তার সকল কষ্টের জন্য সে ঈশা কে দায়ী করে।

১১
দরজা খোলার আওয়াজে ঈশা ভাবনা থেকে বের হয়। রাশিক ঈশা কে দেখে জিজ্ঞেস করে
–কি অবস্থা ঈশা?
ঈশা খুব শান্ত ভাবে উত্তর দেয়
–এখন ঠিক আছে। ঘুমোচ্ছে।
তাদের কথোপকথন শুনে ইভানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে চোখ খুলে সামনে রাশিক কে দেখতে পায়। কার সাথে রাশিক কথা বলছিল তা দেখার জন্য পাশে তাকিয়ে ঈশাকে দেখতে পায়। সোফায় বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক কেঁদেছে। কিন্তু পরক্ষনেই তার আরাফের কথা মনে পড়ে যায়। সে ঈশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। রাশিক সামনে এগিয়ে এসে বলে
–এখন কেমন আছিস?
–এমন ভাবে জিজ্ঞেস করছিস মনে হয় মরে গেছি। ভাবিস না এতো সহজে মরবনা। জিবনের সাথে অনেক হিসাব বাকি। সেসব না মিটিয়ে শান্তিতে মরতেও পারবোনা।
এসব কথা যে সে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলছে তা ঈশার বুঝতে বাকি নেই। তাই সে এসব কথা শুনে বাইরে চলে গেলো। তার যাওয়া দেখে রাশিক বলল
–এই মেয়েটা না থাকলে আজ তুই সত্যিই মরে জেতি সেটা কি মানিস!
ইভান একটু হেসে বলল
–কি অদ্ভুৎ! যাকে মুক্তি দিতে আমি মরতে চাই আজ সেই আমাকে বাচিয়ে দিলো।
রাশিক তার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
–কেন এসব করছিস বল তো? দেখ মেয়েটার কেঁদে কেঁদে কি অবস্থা হয়েছে। অযথা কেন কষ্ট দিচ্ছিস মেয়েটাকে?
–ভালবাসা অদ্ভুত জিনিস। তোকে শান্তি মতো বাচতেও দিবেনা আবার মরতেও দিবেনা। আমি বেঁচে থাকতে ওকে মুক্তি দিতে পারবোনা। তাই মরে জেয়েই মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে নিজেই আমাকে বাচাল। ভুল করলি। মরতে দিলেই তুই বেঁচে জেতি জান।

–ইভান তুই কি এখনও ছোট আছিস? তুই কি বুঝতে পারছিস এসবের জন্য সম্পর্ক টা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? তোরা দুজন দুজন কে ছাড়তে পারবিনা আবার কাছেও আসতে পারবিনা। এর শেষ পরিনতি কি হবে?
–এর কোন পরিনতি হবেনা বন্ধু! কারন আমরা বেঁচে থাকলে কখনই একজন আরেকজনকে মাফ করতে পারবোনা। আর যতক্ষণ দুজন বেঁচে থাকব কেউ কাউকে মরতে দিবনা। না কাছে আসতে পারব না মুক্তি দিতে পারব। তাই এই সম্পর্কের কোন শেষ নেই।

একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কথাটা বলল ইভান। তার কথা শুনে রাশিক তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তাদের কথোপকথনের মধ্যেই ঈশা ভিতরে ঢুকে গেলো। ইভান ঈশা কে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলো। ঈশা ঔষধ হাতে নিয়ে ইভানের দিকে একবার তাকিয়ে বলল
–ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
–এতো বছর নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পেরেছি। এখনো পারব। কারও দয়ার প্রয়োজন নেই।
ইভান তার দিকে না তাকিয়েই বলল। ইভানের এরকম ব্যবহার ঈশাকে ভিতর থেকে কষ্ট দিচ্ছে। না চাইতেও চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো ঈশার। সে ঔষধ রেখে বাইরে চলে গেলো। তার যাওয়ার পর ইভান চোখ বন্ধ করে ফেললো। ঈশার কষ্ট সে সহ্য করতে পারেনা। কিন্তু এই মুহূর্তে তার কাছে আর কোন উপায় ও নাই। কারন ঈশা তাকে কষ্ট দিয়েছে। সে আরাফের সাথে কথা না বলে বাড়িতে চলে আসলেই এতো কিছু হতনা। কিন্তু সে তা করেনি। ইভান কে বুঝতে চায়নি।

চলবে………