তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-০৭

0
1520

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৭

১৫
ঈশা আর রিমা তার ঘরে বিছানায় বসে গল্প করছে। ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দে দুজনি সেদিকে তাকায়। ইভান ওয়াশ রুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে মাথা মুছছে। অফ হোয়াইট টি শার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজারে ইভান কে দেখে রিমা ক্রাশ খেলো। সে হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ঈশা ভ্রু কুচকে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভানের চোখ ঈশার উপরেই আগে পড়ে। ঈশার এভাবে ভ্রু কুচকে তাকানোর মানে ইভান বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো
–হোয়াট?
ঈশা চেচিয়ে বলল
–তুমি আবার আমার ওয়াশ রুমে?
ইভান এবার খুব শান্ত ভাবে উত্তর দিলো
–এই রুমে এই ওয়াশ রুমে আমি যখন তখন ম্যানারস মেইনটেইন না করেই ঢুকতে পারি। ইটস মাই রাইট। আফটার অল ইউ আর মাই লিগাল ওয়াইফ!
বলেই হাতের ভেজা টাওয়াল টা ঈশার মুখে ছুড়ে মারল। একটু মুচকি হেসে ঘর থেকে বের হতে গিয়েই আবার ঘুরে তাকাল। ঈশা টাওয়াল টা মুখ থেকে সরিয়ে বিরক্ত নিয়ে তার দিকে তাকাল। ইভান রিমার দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি রিমা?
রিমা এতক্ষন হা করে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। তার কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে বলল
–হ্যা। আমিই রিমা।
ইভান একটু হেসে বিছানার উপরে এসে আরাম করে বসে পড়লো। তারপর রিমার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল
–নাইচ টু মিট ইউ!
রিমাও হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো। ইভান আর রিমা নিজেদের মতো গল্পে মশগুল। সেখানে যে ঈশা বসে আছে তা তাদের মাথাতেই নেই। ঈশা খুব বিরক্ত হল। রাগ হল ইভানের উপরে। এতো কি গল্প রিমার সাথে তার। এমন ভাব করছে যেন তার ছোট বেলার কোন বান্ধবির সাথে দেখা হয়েছে। কিছুক্ষন পর ইরা এসে সবাইকে খেতে ডাকল। রিমা ইরার সাথে বের হয়ে গেলো। ঈশা উঠে দাঁড়ালো। মুখটা কাল করে দাড়িয়ে আছে। তার মুখ কাল করার কারন ইভান বেশ বুঝতে পারছে। সে একটু হেসে উঠে দাঁড়ালো। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে রাগি সরে বলল
–রিমা বাইরে চলে গেছে। তুমি এখানে এখনো কি করছ?
ইভান তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল
–ওয়াশ রুমে নিজের ব্যাক্তিগত জিনিস গুলো আমাকে দেখানোর জন্য ফেলে রেখেছিস?
ঈশা একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
–কি সব আজে বাজে কথা বলছ?
ইভান তার মুখটা ঈশার একদম কাছে এনে চোখে চোখ রেখে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলল
–তোর কোন কিছুই আমার অজানা নয়। এই তোকে আমি পুরোটাই জানি। কিন্তু অন্য কেউ এসব জানুক তা আমি সহ্য করবোনা।
গলাটা হালকা করে চেপে ধরে বলল
–বি কেয়ার ফুল। নাহলে জানে মেরে ফেলব।
ঈশা তার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে ফেললো। ইভান আলতো করে গালে একটা চুমু দিয়ে তাকে ছেড়ে দিলো। ঈশা ছাড়া পেয়ে বাইরে যেতে নিলেই ইভান আবার বলে
–আর ইউ জেলাস?
ঈশা বেশ বিরক্ত নিয়ে ঘুরে তাকিয়ে বলল
–আর ইউ ম্যাড?
ইভান একটু বাকা হেসে দেয়ালের সাথে হেলানি দিয়ে হাত গুঁজে বলল
–তোমার এই অনুভুতি গুলো অন্য কারও কাছে লুকাবে। আমার কাছে নয়। চাইলেও পারবেনা। আমি তোমার শিরায় শিরায় বিরাজ করি মিসেস ইভান মাহমুদ।
ইভানের শেষের লাইনটা শুনে ঈশার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। তার রাগ করার কথা থাকলেও আশ্চর্য জনক ভাবে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে চেয়েও হাসি চেপে রাখতে পারলনা। শেষ লাইনটা ঈশার কানে বেজেই যাচ্ছে। ঈশার অবস্থা বুঝতে পেরে ইভান একটু হেসে বাইরে গেলো। ঈশা দাড়িয়ে ভাবছে। ইভান আবার ফিরে এসে বলল
–খেতে আসো।
ইভানের কথা শুনে ঈশা উলটা ঘুরেই ঠোঁট কামড়ে হাসল। সেই হাসি দেখে ইভানের মনটা একদম শান্ত হয়ে গেলো।

১৬
রিমা বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল
–তোর বর যা হ্যান্ডসাম! আমি তো প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়েছি। উফফ…।
রিমার কথা শুনে ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে একটু হেসে বলল
–বাইরে থেকে দেখতে হ্যান্ডসাম কিন্তু ভিতর থেকে পুরাই আগুন। যে কোন সময় জালিয়ে দেবে।
তার কথার মানে রিমা বুঝতে পারলনা। উঠে বসে বলল
–আরমান ভাইয়ার কথা ভেবে খারাপ লাগছে। বেচারা তোকে খুবই পছন্দ করত। তোর বিয়ের কথা শুনে তার মন ভেঙ্গে যাবে।
ঈশা একটু নিশ্বাস ছেড়ে বলল
–আরমান ভাইকে আমি অনেক বার বোঝাতে চেষ্টা করেছি। যত বার কথা হয়েছে আমি তাকে ততবার বলতে চেষ্টা করেছি। উনি আমার কোন কথাই শুনতে চাননি। লোকটা ততটাও খারাপ না।
ঈশা রিমার দিকে মুখ ঘুরে দাড়িয়ে ছিল। কথাটা শেষ করে সামনের জানালায় থাই গ্লাসে চোখ পড়ে। ইভান পানির গ্লাস হাতে নিয়ে উলটা দিকে ঘুরে দাড়িয়ে আছে। তাদের সব কথা সে শুনেছে। ঈশা ভয় পেয়ে যায়। তার দিকে ঘুরে তাকাবে তার আগেই আওয়াজে চমকে উঠে।পিছনে ঘুরে এক দৌড়ে ইভানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতে থাকা গ্লাসটা জোরে চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলায় কাচের টুকরো ইভানের হাতে ঢুকে যায়। সবাই দৌড়ে আসে। ঈশা হাত ধরতে চাইলে ইভান তার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়। সবাই বুঝতে পারে সে ঈশার উপরে কোন কারনে রাগ করেছে। হাত থেকে রক্ত টুপটুপ করে নিচে পড়ছে। ঈশা নিস্পলক সেদিকে তাকিয়ে চোখ থেকে পানি জরাচ্ছে। কিন্তু ইভানের সেদিকে খেয়াল নেই। সে রাগে কাঁপছে। ইরা ইভান কে টেনে বেসিনের কাছে নিয়ে গিয়ে হাত থেকে কাচ বের করে হাত ধুয়ে দিলো। তারপর চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। কেউ কোন কথা বলছেনা। কারন সবাই জানে এখন কথা বললেই ইভান আরও রেগে যাবে। ইরার ব্যান্ডেজ করা শেষ হতেই ইভান ঘরে চলে যায়। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকে। রিমা কিছুই বুঝতে পারেনা কি হল। সে ঈশার ঘাড়ে হাত রাখে। তাকে দেখে ঈশা চোখের পানি মুছে ফেলে।

বিকেলে রিমা চলে গেলো। ঈশা দুই পায়ের ভাজে মুখ গুঁজে বিছানায় বসে আছে। ইলহাম এসে বলল
–আপি কি হয়েছে?
তার কথায় মুখ তুলে তাকাল ঈশা। সামনে বসতে বলল ইশারা করে। তারপর জিজ্ঞেস করলো
–তোর ভাইয়া কি করছে?
–ঘুমিয়ে আছে?
ঈশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে
–এখনো?
–একটু আগেই ঘুমাল। হাত ব্যাথা করছিলো। ঘুমাতে পারছিল না। জর এসেছে হালকা।
তার কথা শুনে ঈশার চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি বেয়ে পড়লো। ঈশা কে কাঁদতে দেখে ইলহাম বলল
–একটা কথা বলব আপি।
ঈশা মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।
–তুমি আজ রাতে ভাইয়ার কাছে থাকবে? আমি পাশের রুমে থাকব। ভাইয়া অনেক অসুস্থ। কাউকে বলবে না। কিন্তু তোমাকে না বললেও তুমি বুঝতে পারবে।
তার কথা শুনে ঈশা করুন চোখে তার দিকে তাকাল। ভাইয়ের কষ্ট সেও আজ সহ্য করতে পারছেনা। মোটামুটি বাধ্য হয়েই কথাটা ঈশাকে বলল। ঈশা একটু হেসে বলল
–আগে থেকে কাউকে কিছু বলিস না। তোর ভাইয়া জানতে পারলে তোকে আর আমাকে সারা রাত বাড়ির বাইরে রাখবে।
ইলহাম একটু হেসে বলল
–আমার কি মাথা খারাপ। জেনে শুনে আগুনে ঝাপ দিবো?
কথাটা বলেই ইলহাম ঈশার কাধে মাথা রাখল। ঈশা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

১৭
ঈশা ইভানের পাশে বসে নিঃশব্দে কেদেই চলেছে। মুখে হাত দিয়ে কান্না চেপে ধরে রেখছে। ইভান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। জেগে থাকলে হয়ত ঈশাকে ঘর থেকে বের করে দিত।ইভানের জর এসেছে। ঈশা তার মাথায় জল পট্টি দিয়ে দিলো কিন্তু এসবের কিছুই ইভান বুঝতে পারলনা। সারা রাত সেবা করার পর ভোর বেলা ইভানের জর কমে। তখন ঈশার একটু চোখ লেগে যায়। ইভানের এক পাশে সে গুটি সুটি মেরে শুয়ে পড়ে।
ঈশা ঘুমিয়ে পড়ার কিছুক্ষন পরেই ইভানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। জরের কারনে খুব খারাপ লাগছিলো কিন্তু এখন বেশ ভালো লাগছে তার। জর টাও নেই। পানির পিপাসা পেয়েছে। পানি খেতে উঠতে যাবে দেখে ঈশা তার পায়ের কাছে গুটি সুটি মেরে শুয়ে আছে। তাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ইভান অবাক হয়। ঈশার মুখটার দিকে দেখে ইভানের কষ্ট হয়। কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে করুন সরে বলল
–আমার কষ্ট সহ্য করতে পারিস না কিন্তু আমাকে কষ্ট দিতেও ছাড়িস না। আমি একি কথা সেই ছোট বেলা থেকে বলে এসেছি। তোর সাথে কাউকে সহ্য করতে পারিনা। তবুও তুই অন্য কারও সাথে কথা বলিস। অন্য কারও কথা ভাবিস। অন্য কারও জন্য কষ্ট পাস। কিন্তু তোর এই কষ্ট চিন্তা ভাবনা সব আমাকে ঘিরে হওয়ার কথা ছিল। আমার ভালবাসায় কি এমন কমতি আছে জান।
ঈশার ঠাণ্ডা লাগছে। একটু কেঁপে উঠলো। ইভান কাঁথাটা ঈশার গায়ে দিতেই ঈশা সেটা জড়িয়ে নিয়ে ভালো করে শুয়ে পড়ল।এবার ইভান ঈশাকে কাথা সহ তুলে নিয়ে তার পাশের বালিশে শুয়ে দিলো। ঈশা আরামে ঘুমে গেলো। ইভান ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আলতো করে তার ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ে দিলো। তারপর উঠে গিয়ে পানি খেয়ে নিলো। ঈশার পাশে শুয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভানের চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি বেয়ে পড়লো। ঈশার দিকে তাকিয়েই বলল
–তুই আমার অস্তিত্ব। কিন্তু তোর মাঝে আমি কোথায় রয়েছি বলতে পারিস? আমি জেদিন নিজেকে তোর মাঝে খুজে পাব সেদিন তোকে আর কোন কষ্ট দিবনা জান। কিন্তু সেদিন টা কি কখনও আসবে আদৌ।
বলেই ঘুমিয়ে গেলো ইভান।
সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে ঈশা দেখল সে বালিশে শুয়ে আছে। কিন্তু কাল রাতে তো সে ইভানের পায়ের কাছে শুয়ে ঘুমিয়েছিল। তাহলে ইভান তাকে রাতে ঠিক মতো শুয়ে দিয়েছে। ঈশা বেশ আশ্চর্য হল। কারন ইভান তার উপরে যত রাগ করেছিলো তাতে তাকে ঘরের বাইরে বের করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেসবের কিছুই হয়নি। বরং যত্নে তাকে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে দিয়েছে। ইভানের মুখটার দিকে তাকাল সে। খুব শান্ত লাগছে তাকে। ঈশা মনে মনে বলল ”সব সময় যদি এমন শান্ত থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো। আমাকে আর কষ্ট পেতে হতনা।” ভেবেই উঠে গেলো।রাতে ঘুম না হওয়াতে মাথাটা ব্যাথা করছে। ঈশা মাথা চেপে ধরে ঘর থেকে বের হচ্ছে। বের হয়েই দেখে বাড়ির সবাই তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন পর পুরুষের ঘরে সারা রাত কাটিয়ে বের হল সে। তার চাচি রাগি ভাব নিয়ে এগিয়ে এসে ধমক দিয়ে বললেন
–তুই ইভানের সাথে ঘুমিয়েছিস আমাদের বলেছিস?
তার চাচির কথা শুনে ঈশা আকাশ থেকে পড়লো। এখন কি ইভানের সাথে ঘুমাতে তাকে সবার কাছে অনুমতি নিতে হবে। সে না তার বিয়ে করা বর। তার সাথে থাকেনা বলে এতদিন সবার এতো সমস্যা। আজ ছিল বলে এভাবে জেরা করছে। ঈশা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলল
–অনেক রাত হয়েছিলো তোমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলে। আর ইভানের অনেক জর এসেছিলো তাই সারা রাত ওখানে ছিলাম। ভোর বেলা ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম কখন বুঝতে পারিনি।
তার চাচি আবার বজ্র কণ্ঠে বললেন
–তুই আরামে ঘুমাচ্ছিস আর ভোর বেলা তোকে ঘরে না পেয়ে সারা দুনিয়া আমরা খুজে বেড়াচ্ছি। বললেই পারতিস তাহলে এতো চিন্তা করতাম না।
ঈশা এবার বেশ অবাক হল। একটু রেগেই বলল
–এভাবে খোঁজার কি আছে? কি ভেবেছ তোমরা আমি কি পালিয়ে যাব?
–সেই সুযোগ নেই।
ইভানের কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকায়। ঈশা পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়। ইভান তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার চেচামেচিতে ইভানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঈশার মা জিজ্ঞেস করে
–তোর নাকি জর? এখন কেমন আছিস?
–ভালো আছি তোমার মেয়ে সারা রাত আমার সেবা করেছে। জর না কমে যাবে কোথায়?
ইভান ঈশার দিকে তাকিয়েই কথাটা বলল। এবার সবার মাথায় ঢুকল বিষয়টা। সবাই ঈশাকে এভাবে জেরা করার জন্য একটু লজ্জা পেল।কারন ঈশাকে খুজে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো সবাই। আবেগের বসে সে আবার কিছু করে যেন না বসে তাই নিয়েই সবার এতো চিন্তা।সবাই যে যার মতো চলে গেলো। ইভান এবার ঈশার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
–কি বললি তুই?
ঈশা এবার খুব বিরক্ত হয়ে বলল
–সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাটক আর ভালো লাগছেনা। এমনিতেই ভালো করে ঘুম হয়নি। তার উপর সবাই এভাবে জেরা করতে শুরু করেছে। তুমি এখন আবার নতুন করে কি বলবে?
ইভান ঈশার কথা শুনে বুঝতে পারল রাতে ঘুম না হওয়ায় তার মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। মাথাও ধরেছে। তাই কারও কথাই সহ্য হচ্ছেনা। তবুও একটু রাগি লুক নিয়ে বলল
–আমি কি ঠিক শুনলাম তুই মাত্র বললি ইভানের জর এসেছিলো…।
বলেই থেমে গেলো ইভান। ঈশা এবার তার মুখের ভঙ্গি স্বাভাবিক করে ফেললো। বুঝতে পারল সে এই প্রথমবার ইভানের নাম বলেছে। আগে ভাইয়া ডাকত। কিন্তু বিয়ের পর থেকে কিছুই বলেনা। আজ প্রথম বার ইভান তার মুখে নিজের নামটা শুনেছে। কিন্তু ঈশার খুব মেজাজ খারাপ লাগছে। এতো ছোট বিষয়ে রিয়াক্ট করার কি আছে? সে রেগে বলল
–হ্যা বলেছি তো কি করবে? এখন কি এটার জন্যও শাস্তি দিবে? কি শাস্তি দিবে ঠিক করেছো? নাকি আরও সময় লাগবে ঠিক করতে? ঠিক করে আমাকে জানিয়ে দিও কেমন?
কথাটা বলেই ঈশা চলে গেলো। ইভান হা করে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা যে তার কথায় এই রকম রিয়াক্ট করবে সে ভাবেওনি। খুব অবাক হয়ে গেলো। বুঝতে পারল ঈশার উপরে মানসিক চাপটা একটু বেশিই পড়েছে। আর পর পর দুইবার ইভানের এরকম ঘটানোয় ঈশার মনে তাকে হারানোর ভয় তৈরি হয়েছে। ইভান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। মনে মনে বলল “মুখ ফুটে একবার বলেই দেখতিস তোর সব কষ্ট দূর করে দিতাম। কিন্তু তুই তো সেটা করবিনা। খুব ইগো তোর!”

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে