Tuesday, July 8, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1494



তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-০৪

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৪


হাসপাতালের করিডোরে দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে ঈশা। চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে। আজ তার ভুলের জন্য এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো। সব কিছুর জন্য নিজে দায়ী। তার বাবা এসে তার মাথায় হাত দিতেই সে চোখ খুলে তাকাল। তার দিকে তাকিয়ে বলল
–কাদিস না মা। ইভান এখন ঠিক আছে।
বাবার কথা শুনে সে তার চাচির দিকে তাকাল। চাচির চোখে তার জন্য এক অজানা অভিমান। সে অপরাধীর মতো তার চাচির পায়ের কাছে গিয়ে বসলো।কোলে মাথা গুঁজে কাঁদতে লাগলো। চাচির দিকে তাকিয়ে বলল
–আমাকে মাফ করে দাও চাচি। আমার জন্য আজ তোমাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে।
চাচি তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমার ছেলেটাকে ভালো করে দে। তুই পারিস তাকে ভালো রাখতে।
চাচির কথা শুনে ঈশা আর কিছু না ভেবে উঠে ভিতরে চলে গেলো। ইভান ঘুমাচ্ছিল। তার বাম হাতে ব্যান্ডেজ। আসলে ঈশার সাথে আরাফকে কথা বলতে দেখে ইভান সহ্য করতে পারেনি। ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজের বাম হাতের পালস কেটেছে। অনেকটা রক্ত ঝরে যাওয়ায় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। দরজা ভেঙ্গে তাকে বের করে হসপিটালে আনা হয়। ঈশা তখন ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। কারন ঈশা জানতো ইভান তাকে অন্য কারও সাথে কথা বলতে দেখলে এমন কিছু করে বসবে। ঈশার সাথে কাউকেই ইভান সহ্য করতে পারেনা। এটা নতুন কিছু না। আগেও অনেক বার ইভান এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়েছে ঈশার উপরে রাগ করে। কিন্তু এই বারের বিষয়টা বেশ সিরিয়াস।ইভানের শরীর থেকে অনেক টা রক্ত পড়ে গিয়েছে। বেশি দেরি হলে তার জিবনও চলে যেতে পারতো। তাই তো সবাই এতো ভয় পেয়েছে। আর ঈশার মধ্যে অপরাধ বোধটা একটু বেশিই। কারন সব কিছু তার ভাবা উচিৎ ছিল। ভাবতেই চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো ঈশার। ইভানের মুখের দিকে তাকিয়ে সে ভাবতে লাগলো আগের কথা।
…………………………………………………
ঈশা ইভান ছোট বেলা থেকেই দুজন একসাথে বড় হয়েছে। ইভান খুব জেদি। তার রাগও অনেক বেশি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল ইভান ঈশার সাথে কখনও জেদ করতনা। এমন কি তাকে রাগও দেখাতনা। তার ক্ষেত্রে ইভানের আচরণ সব সময় আলাদা ছিল। ঈশার উপরে রাগ হলে নিজের ক্ষতি করত। কিন্তু ঈশাকে কিছুই বলতনা। ঈশার জেদ চাওয়া পাওয়া সব কিছু পুরন করত ইভান। তার মনে সেই ছোট্ট ঈশা তখনি জায়গা করে নেয়। তখন হয়ত ইভান ভালোবাসার মানে বুঝতনা। কিন্তু সেই ছোট বেলার অনুভুতি গুলো তার কাছে অনেক মুল্যবান ছিল। সেগুলো সে সবার সামনেই প্রকাশ করত। ধিরে ধিরে দুজন বড় হতে থাকে।ইভান ঈশার মায়ের কাছে নিজের ছেলের মতো হয়ে উঠে। ঈশার মা বাবা দুজনি ইভান কে খুব ভালবাসে। ইভান কে তার বাবা ভালো পড়ালেখা করার জন্য ঢাকায় পাঠায়। ইভান সেখানে গিয়ে নিজের পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়। ঈশা তখন স্কুলে পড়ে।সে খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিল। কিন্তু ইভানের মনে ঈশার জন্য অনুভূতির পরিবর্তন হতে থাকে। যত বড় হতে থাকে ইভান বুঝতে পারে ঈশার প্রতি তার অনুভুতি ভাইয়ের মতো না। সে ঈশাকে ভালবাসে। ঈশা তার জীবন। কিন্তু ঈশা অনেক ছোট তাই তার অনুভুতি সে নিজের ভিতরেই আবদ্ধ রাখে। সে ভাবতে থাকে ঈশাকে একবারে বিয়ে করে বউ করে ঘরে তুলে নিবে। তাই সে নিজের পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়। নিজের পড়ালেখা শেষ করে তারপর বাড়ি ফিরে বিয়ের কথা জানাবে। কারন ঈশার প্রতি তার অনুভূতির কথা কারও অজানা নয়। কিন্তু এই দিকে ঈশা স্কুল শেষ করে। কলেজে ভর্তি হয়। সেই সময় কলেজে যাওয়া আসার পথে ঈশার বাবার বন্ধুর ছেলে আরাফ ঈশাকে দেখে পছন্দ করে ফেলে। কোন ভাবে এসব ইভানের কানে যায়। তখন ইভানের শেষ পরিক্ষা। সে ভাবে আর দেরি করা ঠিক হবেনা। বাসায় গিয়েই তাদের বিয়ের কথা বলবে। সে পরিক্ষা শেষ করে বাড়িতে আসে। কিন্তু বাড়িতে এসে জানতে পারে। ঈশার বিয়ে ঠিক হয়েছে আরাফের সাথে। কথাটা শুনে সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। ইভানের মনে হচ্ছিলো তার জীবন হারিয়ে যাচ্ছে তার কাছ থেকে। সে অনেক বড় শক খায়। সে তখন সিধদান্ত নেয় ঈশার সাথে কথা বলার। কারন এক মাত্র ঈশার মতামতই এই মুহূর্তে সব কিছু ঠিক করতে পারে।

ইভান ঈশাকে ফোন করে আসতে বলে তাদের বাড়িতে। ঈশা ইভানের সাথে দেখা করতে যায়। ঈশা তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখে ইভান ছাদে দাড়িয়ে আছে। ঈশা তার পিছনে দাড়াতেই ইভান তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। ইভানের চেহারা দেখে ঈশা আতকে উঠে। চোখ মুখ সব লাল হয়ে আছে। ইভান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা ভয় পেয়ে ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে
–ভাইয়া তোমার কি হয়েছে?
ইভান ঈশার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে
–তুই বিয়ে করছিস?
ইভানের কথা শুনে ঈশা ভয় পেয়ে যায়। কারন ইভানের আচরণ ঈশার জানা আছে। সে রেগে গেলে কি করতে পারে তা ঈশা জানে। তাই খুব শান্ত ভাবে বলল
–বাবা ঠিক করেছে।
–আর তুই?
–আমি আবার কি বলব।
–তোর কিছুই বলার নাই ঈশা?
–কেন বলছ এসব?
–তুই কি কিছুই বুঝিস না। এতদিন ধরে তোকে ঘিরে আমার সমস্ত অনুভুতি এসব কি ছিল ঈশা?
ঈশা এবার ইভানের চোখের দিকে কৌতূহলী চোখে তাকায়। ইভানের কথার মানে বুঝতে। ইভান এবার ঈশার এক গালে আলতো করে হাত দিয়ে বলে
–আমার জিবনের প্রথম মেয়ে তুই। আমার জিবনের প্রথম অনুভুতি তোকে ঘিরে। ভালোবাসা যখন বুঝতে শিখেছি তখন তোকেই ভালবাসি।
ইভানের কথা গুলো শুনে ঈশা তার কাছ থেকে একটু দুরে সরে দাঁড়ায়। নিস্পলক তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইভান ঈশার চাহুনি দেখে বুঝতে চায় তার মনে কি চলছে। ঈশা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলে
–অনেক দেরি হয়ে গেছে ভাইয়া। আমার বিয়ের সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। ৭ দিন পর বিয়ে।
ইভান এবার রেগে বলে
–তুই ভাবলি কি করে এসব? তুই না করে দে ঈশা।
ঈশা ইভানের দিকে খুব শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–সম্ভব না। সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। এখন আর কারও হাতে কিছু নাই।

কথাটা বলতেই ঈশার চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি ঝরে পড়লো। ঈশা আর ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলনা। উলটা দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। ইভান নিজেকে আর সামলাতে পারলনা। হাঁটু গেড়ে নিচে বসে বলল
–তুই আমার জীবন। তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবোনা। আমাকে ছেড়ে যাস না জান। আমি মরে যাব।

ইভানের কথা গুলা ঈশার বুকের ভিতরে তোলপাড় করে দিলো। ঈশা সেখানে আর থাকতে পারলনা। বাড়ি চলে এলো। নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো। একি রকম অনুভুতি ঈশার মনেও ইভানের জন্য। কিন্তু ইভান কখনও মুখ ফুটে না বলায় ঈশা সাহস করে বলতে পারেনি। বিয়ের কথা শুনে ঈশারও এমনি মনে কষ্ট হয়েছিলো। কিন্তু ইভান তাকে ভালবাসে কিনা তা সে জানতোনা। তাই কিসের আশায় বিয়েটা সে না করে দিবে। আজ ইভানের কথা গুলো তাকে ভেঙ্গে দিয়েছে। ইভানের উপরে ঈশার আজ খুব অভিমান। ইভান এতদিন যদি বলত তার ভালোবাসার কথা তাহলে এমন কিছুই হতনা। ইভানের সাথেই হয়ত তার বিয়েটা হয়ে যেত। কিন্তু অনেক দেরি করে ফেলেছে ইভান। ইভানের প্রতি তার অভিমান যেন বেড়েই চলেছে। সে চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে নিয়ে বলল
–তুমি অনেক দেরি করে ফেলেছ। এখন সব ভাগ্যের উপরে। হয়ত এটাই আমাদের ভাগ্যে লেখা ছিল। এখন আর কারও কিছুই করার নেই। নিজের অনুভূতির চেয়ে কর্তব্যটাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মুহূর্তে। তাই আমাকে সব ভুলে নিজেকে স্বাভাবিক করতেই হবে।


আজ ঈশার গায়ে হলুদ। অনেক আত্মীয় সজন এসেছে। সারা বাড়ি সাজানো হয়েছে। সবাই ব্যস্ত নানা কাজে। আরাফদের বাড়ি থেকে ঈশার জন্য হলুদের তত্ত এনেছে। কিছুক্ষন পর ঈশাকে স্টেজে বসানো হবে। সে ঘরে রেডি হচ্ছে। ইরাকে তার মা বলল
–তোর আপুকে ডেকে আন।
ইরা আপু আপু বলে ডাকতে ডাকতে ঘরে গেলো। কিন্তু ঘরের দরজা খুলে দেখল ঈশা নেই। ছোট্ট ইরা দৌড়ে নেমে এসে তার মাকে বললো
–মা আপু নেই।
তার মা তার কথা বুঝতে নে পেরে উপরে চলে গেলেন দেখতে। গিয়ে তিনিও তার মেয়েকে খুজলেন।কিন্তু কোথাও পেলেন না।সারা বাড়িতে সোরগোল পড়ে গেলো। ঈশাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সবাই অনেক রকম কথা বলতে লাগলো। সবাই চিন্তিত হয়ে গেলো। তার পরিবারের লোকজন ভাবতেই পারছেনা যে ঈশা পালিয়ে যেতে পারে। কারন ঈশার কারও সাথে কোন সম্পর্ক নেই। যদি থাকতো তাহলে কেউ না জানুক অন্তত ইভান জানতো। কিন্তু ইভানের কাছেও সেরকম কোন কিছু জানা যায়নি।

একটা অন্ধকার ঘরে ঈশা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। ইভান ঈশার পাশে বসে আছে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুই আমার কাছে আর কোন উপায় রাখলিনা জান। শেষ পর্যন্ত তুলে আনতে বাধ্য করলি।সেদিন ভালো করে কথা শুনলে আর আমাকে এসব করতে হতনা। তুই আমাকে সাধারন প্রেমিক দের মতো ভেবেছিলি। তুই বলবি অনেক দেরি হয়ে গেছে আর আমি তোকে ছেড়ে দিবো। তুই বলবি তোকে ভুলে যেতে আর আমি তোকে ভুলে যাব। তুই বলবি এসব ভাগ্য আর আমি মেনে নিবো। আমার ভাগ্যে শুধু তুই আছিস আর তোর ভাগ্যে আমি আছি। তুই আমার জান। আর আমি তোকে কিছুতেই হারাতে পারবোনা। কি ভেবেছিলি তুই অন্য কারও সাথে সংসার করবি আর আমি বসে বসে দেখব। আমি বেঁচে থাকতে তুই অন্য কারও হতে পারবিনা। তোর ভাগ্য আমার সাথে বাধা।
কথা গুলা শেষ করেই ইভান ফোনটা তুলে ঈশার বাবাকে ফোন দিলো। ঈশার বাবা ফোন তুলেই বলল
–ইভান কই তুই? এইদিকে ঈশাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
–ঈশা আমার কাছে বড় বাবা।
ইভান খুব শান্ত ভাবে কথাটা বলল। তার কথা শুনে ঈশার বাবা কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে বললেন
–তোরা কোথায় আর না বলে কোথায় গিয়েছিস? তাড়াতাড়ি আয় কিছুক্ষন পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে।
–হসপিটালে আসো বাবা।
কথাটা শেষ করেই ফোনটা রেখে দিলো ইভান। একটু বাকা হেসে ঈশা কে কোলে তুলে হসপিটালে নিয়ে গেলো।

সবাই হন্তদন্ত করে হসপিটালে চলে আসলো। সবার চোখে কৌতূহল ঈশা কোথায়? ইভান কে দেখতে পেয়ে সবাই জিজ্ঞেস করলো ঈশা কোথায়। ইভান চুপ করে বসে আছে। সেই সময় ডাক্তার বের হয়ে এলো। ঈশার বাবা জিজ্ঞেস করলো
–ঈশার কি হয়েছে? কেমন আছে?
ডাক্তার আশ্বস্ত করে বলল
–ওনাকে ক্লোরফরম দিয়ে সেন্সলেস করে দেয়া হয়েছিলো। এখন সুস্থ আছেন।
সবাই এসব কথা শুনে এবার ইভানের দিকে ঘুরে তাকাল। কি হয়েছিলো জানার জন্য। ইভান খুব শান্ত ভাবে বলল
–ঈশাকে কিডন্যাপ করেছিলো।
ইভানের বাবা জিজ্ঞেস করলো
–কে করেছিলো এই জঘন্য কাজ। আর কেনই বা করেছিলো।
–এই সব কিছুর থেকে এই মুহূর্তে ঈশার অবস্থা নিয়ে ভাবা বেশি গুরুত্ব পূর্ণ। এসব নিয়ে আমরা পরে কথা বলব।
ইভান সবার উদ্দেশ্যে কথাটা বলল। সবাই তার কথা শুনে চুপ করে গেলেন। কিন্তু ঈশার মা বলে উঠলো
–এখন আমার মেয়ের কি হবে? তার বিয়ে…
কথাটা শেষ না করেই তিনি থেমে গেলেন। সবাই তার কথা শুনে চিন্তিত হয়ে গেলো। কাল তার বিয়ে। তার শশুর বাড়ির লোকজন এসব কিভাবে নিবে। ইভান একটু বাকা হাসল।
–কি হয়েছে আঙ্কেল?
আরাফের কথা শুনে সবাই তার দিকে ফিরে তাকায়। আরাফ সবার দিকে তাকিয়ে আছে তার প্রশ্নের উত্তর জানতে। ইভান তার দিকে তাকিয়ে উঠে বলে
–ঈশা কে কেউ কিডন্যাপ করেছিলো।
কথাটা শুনে আরাফের মাথায় বাজ পড়লো। সে কি বলবে ভেবে পেলনা। কিন্তু আরাফের পরিবার সব শুনে একটু অন্য রকম আচরণ করলো। আরাফের বাবা বলল
–ঈশা সুস্থ হলে আমরা বিয়ে নিয়ে ভেবে দেখব।
বলেই সবাই চলে গেলো। সবার মুখে চিন্তার ছাপ থাকলেও একজন এই মুহূর্তে বেশ নিশ্চিন্ত। কারন সে এমনি চেয়েছিল। সব কিছুই যে তার প্ল্যান মতো হচ্ছে। নার্স এসে বলল ঈশার জ্ঞান ফিরেছে। সবাই ঘরে চলে গেলো। ইভানও গেলো ঘরে। এক পাশে দাড়িয়ে দেখছিল সে ঈশাকে। ঈশার এই অবস্থার জন্য তার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু এই মুহূর্তে ঈশাকে পাওয়ার এই একটাই উপায় তার কাছে ছিল। সে ঈশাকে হারাতে পারবেনা।
চলবে………।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-০৩

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৩


–ইভান তুই আমাদের বাসাতেই থেকে যেতে পারিস। অযথা আলাদা বাড়ির কি দরকার? আমাদের নিচ তলার ভাড়াটিয়া দেরকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে দেই। তোরা ওখানে শিফট হয়ে যা।
ঈশার বাবা আজহার মাহমুদ কথাটা বলে উত্তরের জন্য ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। ইভান একটু ভেবে বলল
–না বড় বাবা। আমি আলাদা থাকতে চাই।
ঈশার মা এগিয়ে এসে বললেন
–তোর কথা না হয় বাদ দিলাম। তোর মা আর ইলহামের কথা ভেবেছিস? এখানে থাকলে সবাই এক সাথে থাকতে পারতাম। রাজি হয়ে যা বাবা।
সবাই ইভানের কথার অপেক্ষায় তার দিকে তাকিয়ে আছে।আর ইভান তার সামনে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা আনমনে সামনে থাকা ছুরি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। ইভান বেশ বুঝতে পারছে সে ছুরির দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার মন অন্যদিকে। কোন কিছু নিয়ে গভীর ভাবছে। যে কোন সময় তার হাত ছুরি লেগে কেটে যেতে পারে। তাই সে কিছুক্ষন ছুরিটার দিকে তাকিয়ে থেকে ঈশার হাত থেকে টান দিয়ে ছুরিটা নিয়ে নিলো। ঈশা সহ সবাই ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ঈশার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–আমি ভেবেছি বাবা। ৫ বছরে জিবনের থেকে এতো টুকু শিক্ষা নিতে পেরেছি যে দূরে থাকলে কষ্ট কম হয়। তাই দূরে থাকাই ভালো। তুমি ভেবনা। আশে পাশেই একটা বাড়ি নিবো।
ইভান কথা শেষ করে নিজের প্লেটে মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে। ঈশা চোখ তুলে ইভানের দিকে তাকাল। সবার দৃষ্টি এখন তাদের দুজনের উপর। ঈশা একটু ভেবে তার চাচির দিকে তাকিয়ে বলল
–চাচি তুমি আর ইলহাম এখানেই থাকবে। বাবা তুমি ভাড়াটিয়া দেরকে বলে দাও। চাচি কোথাও যাবেনা। দুই একজনের জেদের জন্য এতো মানুষের কষ্ট পাওয়ার কোন কারন হয়না।
ঈশার কথা শেষ হতেই ঈশার বাবা বলল
–আমি কালই বলে দিচ্ছি তাদেরকে সামনে মাসে বাড়ি ছেড়ে দিতে। ততদিন সবাই এই বাড়িতেই থাকবে।
সবাই ঈশার কোথায় স্বস্তি পেলো। কারন সবাই জানে তার কথা পছন্দ না হলেও ইভান কখনও না করবেনা। ইভান খাবার বন্ধ করে প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার খুব রাগ হচ্ছে। কারন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কথা বলা ইভানের পছন্দ না। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস আর অধিকার দুইটাই শুধু ঈশাই রাখে। ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে খাবার ছেড়ে উঠে যেতে। কিন্তু টা সে করতে পারবেনা। কারন সে উঠে গেলে ঈশাও আর খাবেনা।আর ঈশার শরীর এমনিতেই খারাপ। না খেয়ে থাকলে আরও খারাপ হয়ে যাবে। তাই সে চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমন করতে চেষ্টা করছে। সবাই ইভান কে দেখে ভালভাবে বুঝতে পারছে যে সে তার রাগ দমন করেত চেষ্টা করছে।পরিস্থিতি সামলাতে ইলহাম বলল
–কি মজা আমরা এখানেই থেকে যাব। আপির সাথে!
তার কথা শুনে ইভান তার দিকে রাগি চোখে তাকালে সে আর কিছু না বলে চুপসে যায়।ঈশা খাবার শেষ করে উঠে গেলো।
মাঝরাতে ইভান ফ্রিজ খুলে আইস্ক্রিম খাচ্ছিল আর বাটিতে ভালো করে ডেট চেক করে দেখছিল। আন্দাজ করতে চেষ্টা করছে কবে আনা হয়েছে।ইরাকে দেখে বলল
–আইসক্রিমটা কবে আনা হয়েছে রে?
ইরা বলল
–তোমরা আসার আগের দিন আপু এনেছে।
কথাটা বলে ইরা রান্না ঘরে গেলো। ইভান বাটিটা ফ্রিজে রেখে ঈশার রুমে দরজায় গিয়ে দারাল।ইশা বারান্দায় দরজার সাথে হেলানি দিয়ে বসে সামনে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। সে বুঝতে পারলনা যে ইভান এসেছে। ইভান তার পাশে এসে বসে সামনে তাকিয়ে বলল
–আমার জন্য আইস্ক্রিম তুই এনেছিস?
ঈশা ইভানের কথা শুনে চমকে উঠলো। একটু ঘুরে ইভানের দিকে তাকাল। সে সামনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা মাথা নিচু করে বলল
–বাসায় সব সময় আইস্ক্রিম আনা থাকে। শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই এনেছি।
–সিরিয়াসলি! ৫ বছরে আমাকে এতোটা মিস করেছিস যে আমার পছন্দ গুলোকে নিজের পছন্দ ভাবতে শুরু করেছিস।
ইভানের কথা শুনে ঈশা একটু বিরক্ত হয়ে বলল
–ওটা একটা সামান্য আইস্ক্রিম। এভাবে ভাবার কিছু নেই।
ইভান এবার ঈশার দিকে ঘুরে তার চুলের কাঁটাটা খুলে দিলো। ঈশার অবাধ্য চুলগুলো সব সামনে এসে তার মুখে পড়লো। ঈশা বেশ বিরক্ত হল। কিন্তু ইভান হাসল। ঈশা চুলগুলোকে হাত দিয়ে ঠিক করতে গেলে ইভান তার হাত ধরে ফেলে। আর এক হাতে এক পাশের চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে একটু কাছে আসে। নেশা ভরা কণ্ঠে বলে
–তুই কি সেই ঈশা যে জীবনেও এই বাড়িতে কোনদিন স্ট্র বেরি ফ্লেভার উঠতে দিস নি। ছোট বেলা থেকে তো তাই দেখে এসেছি। ৫ বছরে কি এমন চেঞ্জ হল যে স্ট্র বেরি ফ্লেভার তুই নিজে কিনে আনলি? বিষয় টা একটু অদ্ভুত না?
ইভানের কথা শুনে ঈশা একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কারন ইভান যা বলেছে একদম ঠিক। স্ট্র বেরি ইভানের পছন্দ কিন্তু ঈশার একদম পছন্দ না। ইভানের জন্য সব সময় এই বাড়িতে স্ট্র বেরি আইস্ক্রিম থাকতো। কিন্তু ঈশা সব সময় টা ফেলে দিত কারন এর গন্ধটা সে সহ্য করতে পারেনা। ঈশার কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে বলল
–আমি তো জানি তোর অপছন্দের কোন জিনিস এই বাড়িতে রাখিস না। তাহলে কেন সবাইকে এই বাড়িতে থাকতে দেয়ার ডিসিশন নিলি।
ইভানের কথা শুনে ঈশা কড়া গলায় বলল
–তোমার জেদ আমার সাথে কিন্তু এসবের মাঝে সবাইকে কেন জড়াচ্ছ? অযথা সবাইকে কেন কষ্ট দিতে চাইছ?
ঈশার এক গুচ্ছ চুল হাতে নিয়ে নাকের কাছে এনে তার ঘ্রান নিতে নিতে বলল
–আমি তো সব সময় তোমাতেই বিভোর থাকি বাকি সব কিছু ভাবার সময় আছে আমার?
ইভানের এসব কথা শুনে ঈশার এবার বিরক্ত লাগছিলো। ঈশা তার চুল ইভানের হাত থেকে ছেড়ে নিয়ে বলল
–তুমি কি এসব বলতে এসেছ?
–না। আমি যা জানতে এসেছি তার উত্তর পাইনি। তাই যতক্ষণ পাইনি আমি এখানেই বসে থাকব আর তোকে এসব সহ্য করতে হবে।
ঈশা একটু বিরক্ত হয়ে বলল
–কি জানতে চাও?
ইভান ঈশার একটু কাছে এসে বলল
–জানতে তো অনেক কিছুই চাই কিন্তু তুই তো এখন বলবি না। তাই আপাতত আইস্ক্রিম কেন এনেছিস সেটা জানতে চাই।
–বললাম তো শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই এনেছি।
–টা বুঝলাম কিন্তু সেটা স্ট্র বেরি কেন?
ঈশা এবার বিরক্ত হয়ে ইভানের দিকে তাকাল। ঈশার বিরক্তি দেখে ইভান তার এক হাত ঈশার চুলের ভাজে ঢুকিয়ে দিলো। হাতের আঙ্গুলের ভাজে চুলগুলো নিয়ে হাত টা চুলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে গেলো। তারপর এক আঙ্গুল দিয়ে ঈশার থুতনি ধরে মুখটা উপরে উঠিয়ে নিজের মুখটা তার কাছে নিয়ে গিয়ে বলল
–ছোট বেলায় তোকে সব সময় চুল বেধে রাখতে বলতাম কেন জানিস? কারন তোর এই খোলা চুল আমাকে খুব করে কাছে টানে।
ইভানের এমন কথা শুনে ঈশা একটু ভয় পেয়ে যায়। ইভানের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে
–আসা করি তুমি তোমার উত্তর পেয়ে গেছো এখন এখান থেকে চলে যাও।
ঈশার কথা শুনে ইভান মাথা নিচু করে একটু হাসল। তারপর নিচের দিকে তাকিয়েই বলল
–তুই কি সত্যিই চাস আমি এই বাড়িতে থাকি। আমি এই বাড়িতে থাকলে আমার অত্যাচার থেকে তুই বাঁচতে পারবিনা। ভেবে দেখিস।
বলেই ইভান উঠে গেলো। ঘরের দরজা পর্যন্ত গিয়েই ঈশার কথা শুনে থেমে গেলো
–তোমার অত্যাচার থেকে আমি বাচতেও পারবোনা। যতদিন বেঁচে ছিলাম সেটাই অনেক।
ইভান ঈশার দিকে ঘুরে তাকাল। ঈশা আড় চোখে ইভানের দিকে তাকাল। বুঝতে পারল না সে রাগ করেছে না খুশি হয়েছে। ইভান আবার ঈশার কাছে চলে এলো। হাঁটু গেড়ে বসে এক হাতে ঈশার গাল আলতো করে ধরে বলল
–যেটা তোর কাছে অত্যাচার সেটা আমার কাছে ভালোবাসা। আর আমার এই ভালোবাসা শুধু তোর জন্য। আমার এই হৃদয়ে শুধু তুই থাকিস। আর কারও জায়গা নেই। আমার নিজের জন্যও না।
বলেই ঈশার গালে আলতো করে চুমু দিলো। ইভানের উষ্ণ ছোঁয়ায় ঈশা কেঁপে উঠলো। ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে সানে তাকিয়েই বলল
–ঈশা অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড় জান।
বলেই ইভান চলে গেলো। কিন্তু এই শব্দটা ঈশার ভেতরে ঝড় তুলে দিলো। কত বছর পর ইভানের মুখ থেকে এই শব্দটা শুনল ঈশা। না চাইতেও তার মুখে আজ হাসি ফুটে উঠলো।


ঈশা আর তার ফুপুত বোন সিমানা মার্কেটে গিয়েছিলো। বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নেমেই দেখে ইভান দাড়িয়ে আছে। সিমানা ইভান কে দেখে বলে
–আরে ভাইয়া তুমি কই যাও?
ইভান একটু দাড়িয়ে তাদের দিকে ভালো করে দেখে বলে
–একটু বাইরে যাচ্ছিলাম। তোরা কই গেছিলি?
–মার্কেটে গিয়েছিলাম। তুমি তো আসার পর থেকে কোন খবরই নাই। এদিকে আসইনা।সারাদিন ওই বাড়িতে।
ইভান একটু হেসে ঈশার সামনে থাকা ছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলল
–জানিসি তো ওই বাড়িতে আমার জানটা পড়ে থাকে। ওটাকে ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছা হয়না।
সিমানা মুখ চেপে হেসে বলল
–তা জানি। কিন্তু তাই বলে আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে?
–আসবো। এখন তো এখানেই আছি। পরে কোন এক সময় আসবো।
বলেই চলে গেলো। সিমানা ঈশাকে বলল
–তুই আগে আমাদের বাসায় চল। তারপর বাসায় যাবি।
সিমানার জেদ রাখতে না পেরে ঈশা তার সাথে ফুপুর বাসায় গেলো। অনেকটা সময় সেখানে থাকলো ঈশা। সিমানাকে তার সব জিনিস পত্র বুঝে দিয়ে ঈশা বলল
–আমি বাসায় যাচ্ছি। খুব টায়ার্ড লাগছে।
ফুপু ঈশাকে দুপুরে খেয়ে যেতে বলল। কিন্তু ঈশা বলল সে বাসায় গিয়ে গোসল করে তারপর খাবে। তাই আর কথা বাড়ালনা তার ফুপু। কারন জানে এখন যত কথাই বলুক ঈশা শুনবেনা। তার যেটা ঠিক মনে হয় সে সেটাই করে। ঈশা বাসায় আসার জন্য রাস্তায় হাঁটছে। বাসার কাছাকাছি চলে আসতেই হঠাৎ তার সামনে একটা বাইক দাঁড়ালো। ইশা একটু চমকে গেলো। বাইক থেকে একজন নেমে বলল
–কেমন আছো ঈশা?
তাকে দেখে ঈশা যেন শক খেলো। এতদিন পর আবার আরাফ কে দেখবে এভাবে সে ভাবেনি। তার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছেনা। আরাফ আবার বলল
–কি হল ঈশা? কথা বলবে না আমার সাথে?
ঈশা খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–না বলার কোন কারন নেই তো? আপনি কবে এসেছেন?
–এই তো কিছুদিন হল। কিন্তু এভাবে তোমার সাথে যে দেখা হবে তা ভাবিনি? তুমি ভালো আছো তো?
ঈশা একটু ভেবে বলল
–হুম। ভালই আছি। আপনি কেমন আছেন?
আরাফ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
–ভালই আছি। তবে এর থেকেও ভালো থাকার কথা ছিল।
ঈশা তার কথার কোন উত্তর দিলনা।মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। আরাফ ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–অনেক বছর হল দেশের বাইরে ছিলাম। কিন্তু আসার পর এভাবে তোমার সাথে দেখা হবে এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। যাক গে এখন কি করছ তুমি?
–কিছু না। বাসায় বসে আছি।
–কেন? এতো ব্রাইট একটা স্টুডেন্ট ছিলে তুমি। পড়ালেখা শেষ করে বাসায় বসে আছো কেন?
ঈশা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
–সবই আমার ভাগ্যের দোষ।
আরাফ একটু ভ্রু কুচকে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–এভাবে ভাগ্যের দোষ দিয়ে কি সব ঠিক হয়ে যাবে? যা হয়েছে তাতে তোমার কোন দোষ ছিলোনা। আরেক জনের দোষ নিজের ঘাড়ে কেন নিচ্ছ? এখান থেকে বের হও ঈশা। এই সম্পর্কের কোন ভিত্তি নেই। জোর করে কোন সম্পর্ক হয়না।
ঈশা আর কোন কথা বলল না। মাথা তুলে বলল
–আমি খুব টায়ার্ড বাসায় যাব।
তার কথা শুনে আরাফও আর কিছু বলল না। চলে গেলো। আরাফ যাওয়ার পর ঈশা উপরে তাকাতেই দেখল ইভান বারান্দায় দাড়িয়ে তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইভানের দৃষ্টি কিছু বলতে চাইছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে ইভানের। ইভান ঈশাকে দেখে একটু বাকা হেসে ভিতরে চলে গেলো। ঈশাও চোখ নামিয়ে বাসার দিকে তাকাতেই তার বুকের ভিতরে এক অজানা ভয় গ্রাস করে নিলো। সে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। সে আবার ইভানের দাড়িয়ে থাকা দোতলা বেল্কুনিতে তাকাল। কিন্তু ভিতর থেকে সেটা বন্ধ। সে আর কিছু না ভেবে এক দৌড়ে বাড়ির দিকে গেলো। খুব তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। কিন্তু ভয়ে তার হাত পা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। সিঁড়ি ভেঙ্গে দোতলায় উঠতে যেন আজ অনেক সময় লাগছে। কিন্তু তাকে উঠতেই হবে। সে কোন রকমে উঠে কলিং বেল বাজাতে লাগলো। কেউ দরজা খুলছেনা। ঈশা বারবার সুইচ টিপেই যাচ্ছে। ঈশার বাবা দরজা খুলে দিলো। ঈশা হাপাতে হাপাতে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো
–ইভান কোথায়?
ঈশার এভাবে অস্থির হয়ে ইভান কে খোঁজার কারন বুঝতে পারলনা কেউ। সবাই এসে দরজার সামনে দাড়িয়ে ঈশা কে দেখছে। ঈশার এভাবে ইভানের নাম নেওয়াটাও জেন তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। ইলহাম বলল
–ভাইয়া ঘরে।
ঈশার হাত থেকে সমস্ত ব্যাগ পড়ে গেলো। সবার পাশ কাটিয়ে সে ইভানের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। খোলার চেষ্টা করতেই বুঝল ভিতর থেকে লক করা। দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে চিৎকার করে বলল
–ইভান দরজা খোল। প্লিজ ইভান। আমার কথা শোন।
সবাই ঈশার দিকে তাকিয়ে তার পাগলামো দেখছে।কারন বোঝার চেষ্টা করছে। ঈশা তার বাবার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–দরজা ভেঙ্গে ফেলতে হবে বাবা। ইভান কে ঘর থেকে বের কর।
তার কথা শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

চলবে…।

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-০২

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২

ঈশা পানি খেতে বের হয়ে দেখে ইলহাম টিভি দেখছে।সে ইলহামের কাছে বসলো। তাকে দেখে ইলহাম বলল
–আপি এখনো ঘুমাওনি?
–ঘুম আসছেনা। তুই এখনও ঘুমাস নি কেন?
–ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
তার কথা শুনে ঈশা ঘড়ির দিকে তাকাল। রাত ১ টা বাজে। চোখ ফিরিয়ে আবার টিভির দিকে তাকিয়ে বলল
–এতো রাতে কোথায় গেছে?
–এতো রাতে না তো।তখন থেকেই আসে নি।এখনও ছাদে।
কথাটা শুনে ঈশার খারাপ লাগলো। ইলহামের দিকে তাকিয়ে বলল
–ডেকে আন।
–গিয়েছিলাম আসেনি।
–কি বলে?
–বলেছে মন ভালো হলে নিজে থেকেই আসবে। কিন্তু আমি জানি তুমি গেলে আসবে।
ঈশা ইলহামের দিকে তাকাল। ইলহাম বুঝতে পারছেনা সে কথাটা বলে ভুল করলো কিনা। কিন্তু তার মনে হয়েছে এই মুহূর্তে ঈশাকে এই কথাটা বলা তার দরকার ছিল। তাই তো বলে ফেললো। ঈশা ইলহামের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে উঠে দরজা খুলে চলে গেলো। ইলহাম বুঝতে পারছে ঈশা ছাদে গেলো।
ইভান ছাদে দাড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট জালিয়ে যাচ্ছে। নিস্পলক সামনে তাকিয়ে আছে। অনেক গুলো সিগারেট খাওয়ার কারনে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। তবুও থামছেনা। আজ এতদিন পর আবার নতুন করে পুরনো ক্ষত গুলো কষ্ট দিচ্ছে ইভানকে। পারছেনা নিজেকে সামলাতে। ঈশা পিছনে দাঁড়ালো। কিছুক্ষন ইভানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল

–এতো রাতে এখানে কি করছ?

ইভান ঈশার আওয়াজ পেয়ে হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিলো। একটু চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে নিলো। কারন ইভানের মন মেজাজ কোনটাই ভালো নেই। আর ঈশার কথা শুনে এই মুহূর্তে তার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যাবে সেটা সে জানে। তাই ঈশার সব কথা হজম করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো। ঈশার দিকে না তাকিয়েই বলল
–কিছুনা।
–নিচে চল।
ঈশার কথা শুনে ইভান তার দিকে তাকাল। তারপর সামনে তাকিয়ে বলল
–আমি যেখানেই থাকি তাতে তোর কি কোন যায় আসে?
–ইলহাম না ঘুমিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। ও আমাকে পাঠাল তোমাকে ডাকতে।
ঈশার কথা শুনে একটু হেসে বলল
–সত্যি কি ইলহাম পাঠাল তোকে?
ঈশা আর কথা বলল না। তার চুপ থাকা দেখে ইভান বলল
–ঈশা তুই কি সত্যিই চাস জীবনটাকে এভাবে থেমে দিতে?
–তুমি কি চাও?
–আমি আগের ঈশা কে দেখতে চাই। নিজের জীবনটাকে সাজিয়ে নিতে দেখতে চাই।
ঈশা এবার ইভানের পাশে এসে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
–৫ বছর আগের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাও?
ইভান এবার ঈশার কথা শুনে তার দিকে ঘুরে তাকাল। ঈশা ইভানের চোখ মুখ দেখে চমকে উঠলো। সব কেমন লাল হয়ে গেছে। বুকের ভিতরে ঈশার কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। ইভান ঈশার এক বাহু ধরে দাতে দাঁত চেপে বলল
–আমি কোন ভুল করিনি।
ইভানের কথা শেষ হতেই ইলহাম আসলো। তার উপস্থিতি বুঝতে পেরে দুজনি ঘুরে তাকাল। ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিলো। ইলহাম বলল
–ইরা তোমাকে খুজছে আপি।
ঈশা আবার ঘুরে আবার ইভানে মুখের দিকে তাকাল। কিন্তু ইভান আর ঈশার দিকে না তাকিয়েই নিচে চলে গেলো। ঈশা ইলহামের সাথে নিচে গেলো। নিচে এসে দেখে ইভান পানি খাচ্ছে। ঈশা ইলহামকে বলল
–তুই শুয়ে পড়।
ইলহাম ঘরে চলে গেলো। ঈশা ইভানের সামনে গিয়ে বলল
–শুধু পানি খাচ্ছ কেন? রাতে তো কিছুই খাওনি।
–খিদে নেই।
ইভান কঠিন গলায় বলল। ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–এভাবে জেদ করে নিজেকে কষ্ট দেয়ার মানে কি?
–তাতে তোর কিছুই যায় আসেনা। এসব লোক দেখানো নাটক আমার সামনে করিস না।
বলেই ইভান ঘরে চলে গেলো। ঈশা কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে ঘরে চলে গেলো। বিছানায় শুয়ে ঈশার চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে। ইভানের এই জেদের কারনে আজ তাদের এই অবস্থা। দুজনেই কষ্ট পাচ্ছে। ইভান কি কখনই বুঝবেনা। কখনই কি এই কষ্টের শেষ হবেনা।


ইভানের ছোট বেলা এই শহরেই কেটেছে। তাই এখানে তার অনেক বন্ধু। ইভান সকাল সকাল বেরিয়েছে তাদের সাথে দেখা করতে। সেই পুরনো জায়গায়। যেখানে সব সময় তারা দেখা করত। সবাই ইভান কে দেখে বেশ খুশি। ৫ বছর পর প্রিয় বন্ধুর সাথে দেখা। সেই ৫ বছর আগে ইভান এই শহর ছেড়ে চলে যায়। তারপর আর দেখা হয়নি তার সাথে। ইভানকে দেখে তার বন্ধু রাশিক জিজ্ঞেস করলো
–তুই আবার কবে যাবি?
ইভান একটু হেসে বলল
–আমি এখানেই থাকব। আমাদের নতুন অফিস এর কাজ চলছে। এখানকার অফিস এর দায়িত্ব আমার উপরে।
রাশিক ইভানের কথা শুনে খুশি হল। তার ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল
–বাহ! এ তো ভালো খবর শোনালি। খুব খুশি লাগছে।
ইভান একটু অন্য মনস্ক হয়ে বলল
–এখানেই তো আমার সব কিছু পড়ে আছে। এতদিন ছেড়ে রেখেছিলাম কিন্তু এখন আর না। সব কিছুর হাল শক্ত হাতে ধরতে চাই।
রাশিক এবার জিজ্ঞেস করলো
–এখন ঠিক কি ভাবছিস? কি করবি?
–আপাতত অফিস নিয়েই ভাবছি। সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে তারপর বাকি বিষয় গুলা দেখা যাবে।
ইভানের কথা শুনে রাশিক একটু চিন্তিত হয়ে বলল
–ভবিষ্যতের কথা কিছু কি ভেবেছিস? এভাবে আর কতদিন চলবে?
ইভান একটু বাকা হেসে বলল
–কিছুই ঠিক হবেনা। যা যেমন আছে তা তেমনি থাকবে।
–ঈশার সাথে কথা বল। এতদিন পর আসলি।সব কিছু ঠিক করে নে।
–ঈশা বোঝার মতো মেয়ে নয়। ৫ বছর কম সময় না। সে বুঝলে এতদিনে বুঝে যেত। ইনফ্যাক্ট আমি নিজেই এখন চাইনা সব ঠিক করতে। ঈশা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমার সব কষ্টের হিসাব তার কাছে তোলা আছে। সেসব না মিটিয়ে এতো সহজে কিভাবে ছেড়ে দেই।
ইভান একটু বাকা হেসে কথাটা বলল। রাশিক ইভানের এই রুপ দেখে চিন্তায় পড়ে গেল।কারন সে জানে ইভানের আচরণ সম্পর্কে। ইভান যেমন সবটা উজাড় করে ভালবাসতে জানে তেমন শাস্তির বেলাতেও কাউকে মাফ করেনা। এই প্রতিশোধের খেলায় তার ভালোবাসার মানুষটার প্রতি ইভানের আচরণ কেমন হবে তা নিয়ে সে খুব চিন্তায় পড়ে গেলো। দুজনের জেদ আজ তাদের জিবনের সব থেকে বড় কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কাউকে বুঝতে চাইছেনা। এক অদ্ভুত দেয়াল তাদের দুজনের মাঝে দাড়িয়ে আছে। যা কেউ ভাংতে চায়না। রাশিকের ভাবনায় ছেদ পড়ে ইভানের ফোনের শব্দে। ইভান ফোনটা বের করে ইলহামের ফোন। সে ফোন ধরে
–হ্যালো
–ভাইয়া কই তুমি?সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
–আসছি।
কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে রাশিকের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল
–থাক আজ আসি। পরে দেখা হবে।
বলেই ইভান চলে গেলো।রাশিক তার দিকে দেখে ভাবছে। “কি হবে এদের ভবিষ্যৎ? কিভাবে সব ঠিক হবে? কেউ যে বুঝতে চাইছেনা।”


ঈশার রুম থেকে ইলহাম আর ইরার আওয়াজ কানে আসতেই ইভান দৌড়ে রুমের দিকে গেলো। সবাই বাথরুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আর ভিতরে ঈশা বমি করছে। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। তার এই অবস্থা দেখে ইভানের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তার এই কষ্টের এই মুহূর্তে ঈশার কাছে কোন দাম নেই। এই ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা মুখে পানি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। চোখ বন্ধ করে ওড়নার মাথা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মনে হল মাথাটাও ঘুরে উঠছে। তাই এক হাত মাথায় দিলো।
–কি হল আপি? খারাপ লাগছে?
ইলহাম ঈশার দিকে তাকিয়ে আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো। ঈশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইভান ইরাকে বলল
–ইরা ফ্রিজে মিষ্টি আছে?
ইভানের কথা শুনে ঘুরে সবাই তার দিকে তাকাল।সবাই একটু অবাক হল এই অবস্থায় ইভানের এই ধরনের কথা শুনে। ইরা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–আছে তো। খাবে?
ইভান ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা মুখে ওড়না ধরে ইভানের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে বেশ বুঝতে পারছে ইভান কিছু একটা বলবে। তার জন্য অপেক্ষা করছে। ঈশার দিকে তাকিয়েই ইভান বলল
–সিরিয়াসলি!! আসতে না আসতেই খুশির খবর! নিজের এই প্রতিভা সম্পর্কে আমারও এতদিন ধারনা ছিলোনা। বিষয়টা ভেবেই নিজের উপরে গর্ব হচ্ছে।
বলেই সেই ভিলেনি হাসি দিয়ে ঈশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে বলল
–বাসার সবাইকে মিষ্টি খাওয়া। বলিস আপু বমি করছে আর মাথাও ঘুরছে।
বলেই হাসতে হাসতে চলে গেলো। ঈশা ইভানের কথার মানে বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে নিলো। সে জানতো ইভান তাকে অপ্রস্তুত করার জন্য এমন কিছুই বলবে। কিন্তু কি বলবে সেটা তার ধারনা ছিলোনা। ইভানের কথার মানে ইলহাম আর ইরা কিছুই বুঝলনা। তারা ইভানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইলহাম ইরার দিকে তাকিয়ে বলল
–যা সবাইকে মিষ্টি দিয়ে বলে আয় আপি বমি করছে।
ঈশা তাদের দুজনের উপরে রাগ করে ধমক দিয়ে বলল
–বড় হয়েছিস কিন্তু মাথায় এখনও বুদ্ধি কিছুই হয়নি। স্টুপিড!
ইলহাম বুঝতে পারল ঈশা খুব রাগ করেছে তাই আমতা আমতা করে বলল
–ভাইয়া যে বলল…।
ঈশা এবার রাগ করে ওয়াশ রুম থেকে বিছানায় বসে বলল
–শুধু বড় হলেই হয়না। মাথায় বুদ্ধি থাকতে হয়। তোর ভাইয়া কি বলেছে তা বুঝলে এভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতিস না। বেয়াদব কথাকার।
ইলহাম আর ইরা বেশ বুঝতে পারছে ইভান এমন কিছু বলেছে যাতে ঈশা খুব রাগ করেছে। কিন্তু তাকে রাগ দেখাতে না পেরে তাদের উপরে রাগ দেখাচ্ছে। তাই তারা অসহায়ের মতো দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। বাইরে এসে দেখে ইভান সোফায় বসে টিভি দেখছে। ইরা আর ইলহাম দুজনে তার দুই পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো
–ভাইয়া আপির কি হয়েছে?
ইলহামের কথা শুনে ইভান ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাল। পিছন থেকে ইভানের মা বলল
–কি হয়েছে রে?
–মা আপি কেন জানি বমি করছে? আর ভাইয়া সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে বলল এই কথা শুনে আপি খুব রাগ করেছে।
সব কথা শুনে ইভানের মা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। তারপর ইভানের দিকে তাকাতেই দেখে সে মুচকি হাসছে।কাছে এসে গালে আসতে করে একটা মেরে বলল
–মেয়েটার সাথে কেন এমন করিস বল? কাল সারা রাত না খেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছে। আর তুই ওর সাথে এসব করছিস?
–তোমার মেয়েকে কি আমি খেতে নিষেধ করেছিলাম। এতো জেদ দেখালে এমনি হবে।
ইভান একটু রেগেই কথাটা বলল। ঈশা তার দরজায় দাড়িয়ে এই কথা গুলো শুনছিল। ইভানের মা তার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–তুইও তো কাল রাত থেকে কিছুই খাস নি।
কথাটা শুনে ঈশার মন টা বেশ খারাপ হল। সে বুঝতে পারছে যে ইভান যতই মুখে না বলুক সে খায়নি বলেই ইভানও খায়নি। ইভানের মা কথা শেষ করে চলে গেলো। ইভান এসব কথার গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো সামনে তাকিয়ে থাকলো। ইরার চোখ ঈশার দিকে পড়তেই সে একটু হেসে ইরাকে ইশারা করে ডাকল। ইরা তার কাছে আসতেই কাধে হাত রেখে ফিস ফিস করে বলল
–ফ্রিজে আইস্ক্রিম আছে। ভাইয়া কে দে। বলিস না আমি বলেছি।
ইরা ফ্রিজ থেকে আইস্ক্রিম বের করে ইভানের সামনে ধরল। ইভান আইস্ক্রিম এর বাটির দিকে ঘুরে ঘুরে দেখল। তার পছন্দের ফ্লেভার। তার বুঝতে বাকি থাকলো না এটা কে পাঠিয়েছে। আড় চোখে দেখল ঈশা দরজায় দাড়িয়ে দেখছে তাই সে একটু বিরক্ত হয়ে বলল
–কাটা জায়গায় লবন লাগিয়ে তারপর ফু দিয়ে আরাম দেয়ার কোন প্রয়োজন নাই। লবনের তেজ টা এখন আর আগের মতো কষ্ট দেয়না। সহ্য হয়ে গেছে।
বলেই উঠে গেলো। ইরা ইলহামকে জিজ্ঞেস করলো
–আমি আবার কখন কাটা জায়গায় লবন দিলাম।
–কি জানি বাপু। আমি তো কারও কথার কোন মানেই বুঝতে পারছিনা। তুইও বাদ দে। দে আইস্ক্রিম খেয়ে মাথাটা ঠাণ্ডা করি।
বলেই দুজন মিলে আইস্ক্রিম খেতে লাগলো।

চলবে………

তোর ছায়ার সঙ্গী হব পর্ব-০১

0

#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
সূচনা পর্ব


–সবাই এসে গেছে।
ইরার কথা শুনে ঈশা সামনে তাকায়। তিনটা গাড়ি বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নামছে। নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস ঠিক মতো নামাতে ব্যস্ত সবাই। সবার পিছনের কাল রঙের কারটা থেকে একজন নেমে গাড়ির দরজা টা ধরে দাড়িয়ে নিস্পলক ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশাকে এমন ভাবে দেখছে যেন নিজের তৃষ্ণার্ত চোখ গুলোকে তৃপ্ত করে নিচ্ছে। ঈশাও তার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে আছে।
–আপু!! নিচে চল। সবাই এসে গেছে তো।
ইরার কথায় এবার ঈশা তার দিকে ঘুরে বলল
–বাবা কোথায়?
–অফিসে
–কখন আসবে?
–তাড়াতাড়ি চলে আসবে। কি যেন জরুরী কাজ আছে। নাহলে নাকি আজ জেতনা।
কথা শেষ করে ঈশা নিচে নামতে যাবে তখনি ইরা তার দিকে তাকিয়ে পিছন থেকে বলল
–আপু তোমাকে কি নিতে এসেছে?
ঈশা তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল। তার কথার উত্তর না দিয়ে বলল
–নিচে চল। সবাই অপেক্ষা করছে।
দুজনে তিনতলার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে দেখল দোতলার সিঁড়ি বেয়ে সবাই এক এক করে উপরে উঠছে। চাচি ঈশাকে দেখে তার কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে বলল
–কেমন আছিস মা?
–ভালো আছি চাচি।তুমি কেমন আছো? একটু হেসে তার চাচিকে জড়িয়ে ধরে বলল।
–ভালো…
ঈশার চাচি রুবিনা বেগম কথা শেষ করতে পারলনা। তার ছোট ছেলে ইলহাম এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–মিস ইউ মাই ডিয়ার আপি!
ঈশা হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–দেখা হলেই মনে হয় আমার কথা। তাছাড়া তো একবারও খোঁজ নিস না। আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি।
–তুমি কেমন আছো তা তো আমি কাউকে দেখেই বুঝতে পারি। আলাদা করে তোমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন পড়েনা।
একটু হেসে কথাটা বলল ইলহাম। তার কথা শুনে ঈশা গম্ভীর হয়ে যায়। কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। সবাই তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে পরিস্থিতি সামলাতে বলে
–পাজি ছেলে খুব পেকেছ না!
–আরে আপি আর বলনা। তোমার সাথে অনেক কথা আছে। কানের কাছে মুখ এনে বলে
–সিক্রেট!!
ঈশা একটু হেসে তার গালে আসতে করে মেরে ভিতরে যেতে ইশারা করে। তারপর দাড়িয়ে থেকে এক এক করে সবার সাথে গলা মেলায়।ভিতরে ঢুকে যায়। সবাই সাথে কথা বলছে আর হাসছে। ঈশার মাও রান্না ঘর থেকে বের হয়ে এলো। সবাইকে দেখে হাসি দিলো। যেন এক উতসব মুখর পরিবেশ সারা বাড়িতে। ঈশার মা চারিদিকে দেখে বলে
–ইভান কোথায়?
নামটা শুনে ঈশা দাড়িয়ে যায়। মুখ ঘুরিয়ে কিছু একটা ভাবতেই পিছন থেকে আওয়াজ আসে
–আমাকে খুজছিলে বুঝি?
ঈশার মা ঘুরে তাকায়। হোয়াইট টি শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স পরে ইভান দাড়িয়ে আছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ৫বছর আগে ইভান যেমন ছিল এখন আর তেমন নেই। অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। ইভান দেখতে বেশ হ্যান্ড সাম। ইভান কে দেখে ঈশার মা নিজের খুশি ধরে রাখতে পারেনা। ইভান ঈশার চাচার ছেলে। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই সে ঈশার মায়ের কাছেই বড় হয়েছে। তার কোন ছেলে নেই বলে তিনি ইভান কেই নিজের ছেলের মতো দেখেন। তিনি এতদিন পর ইভান কে দেখে কেদে ফেললেন।ইভান তার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে
–কাদছ কেন? আমি এসেছি তো!
–কতদিন পর তোকে দেখলাম। কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বলল ঈশার মা।
ইভান এবার তাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
–তোমাদেরকে অনেক মিস করেছি।
ঈশার দিকে তাকিয়ে ইভান কথাটা বলল। কিন্তু ঈশা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভানের কথা তার কানে গেলেও মন পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারল কিনা তা ইভান বুঝতে পারলনা। তাদেরকে এভাবে কাঁদতে দেখে ইলহাম পরিস্থিতি সামলাতে ঈশার কাছে এসে তার গলা জড়িয়ে বলল
–তোমার বড়মা আছে আর আমার আপি আছে। তাই না আপি।
ঈশা এবার একটা হাসি দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–আমি সব সময় তোর জন্য থাকব। তুই আমার একটাই ভাই।
এই কথা শুনে ইরা এবার মন খারাপ করে বলল
–ওহ তাই নাকি! আর আমি…
তার কথাটা শেষ না হতেই ইভান বলে উঠলো
–তোর জন্য তোর ভাই আছে। ভাবিস না।
কথাটা শেষ হতেই ইরা ইভান কে জড়িয়ে ধরে বলল
–মাই ওয়ার্ল্ডস বেস্ট ব্রাদার!
তাদের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। যে যার মতো কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। ঈশা তার ঘরে চলে গেলো। ইভান সারা রাস্তা ড্রাইভ করেছে। খুব টায়ার্ড! ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশ রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর জোরে চিৎকার করে বলল
–আর কতক্ষণ ইলহাম?
–আর একটু ভাইয়া। তুমি অন্য ওয়াশ রুম ইউস কর।
ইভান কিছু একটা ভেবে ঈশার রুমের দিকে গেলো। ঈশা চোখ বন্ধ করে হেড ফোন কানে গুজে গান শুনছিল। ইভান অনেক্ষন দরজায় দাড়িয়ে তার দিকে দেখছে। ইরা এসে বলল
–ভাইয়া কিছু লাগবে?
ইরার কথা হালকা কানে আসতেই ঈশা চোখ খুলে সামনে তাকাতেই ইভানের চোখে চোখ পড়লো। সে চোখ নামিয়ে নিলো। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়েই বলল
–শাওয়ার নিবো। একটা টাওয়াল এনে দিতে পারবি?
ইরা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। ইভান ইশাকেই দেখছে। ঈশা মাথা নিচু করে বিছানাতেই বসে আছে। ইভান ঈশাকে মনোযোগ দিয়ে দেখছে। ঈশার অভাবে এতদিনে নিজের অতৃপ্ত চোখ গুলোকে তৃপ্ত করতে ব্যস্ত সে। ঈশা আগের থেকে একটু বেশি সুন্দর হয়েছে। বেশি বললে ভুল হবে। ছোট বেলা থেকেই বেশ দেখতে ঈশা। কয়েক বছর পর যেন অন্য রকম মনে হচ্ছে তার সৌন্দর্য। একটু মোটাও হয়েছে। ইভানের ভাবনার মাঝেই ইরা বলে
–ভাইয়া এই নাও টাওয়াল।
ইরার হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ঈশার ওয়াশ রুমে ঢুকে যায় ইভান। ঈশা এই বার একটু বিরক্ত হয়ে ওয়াশ রুমের দিকে তাকায়। ইভান দরজা লক করে দিয়েছে। ঈশার খুব অসস্তি হচ্ছে। আগে বলতেই পারতো ওয়াশ রুমে যাবে। এই ওয়াশ রুম ঈশা একাই ব্যবহার করে তাই অনেক ব্যক্তিগত জিনিস থাকতে পারে। কে জানে কোথায় কি আছে? ভাবতেই ঈশা বিরক্তি ভাব নিয়ে মাথায় হাত দিলো। কিছুক্ষন ওভাবে থাকার পর ঈশার মনে হল এরকম কোন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে যদি পড়তেই হয়ে তাহলে সেটা তারই দোষ। কারন সে জানতো আজ বাড়িতে অনেক মেহমান আসবে। তার সাবধান হওয়া উচিৎ ছিল। সে ওভাবেই ওখানে বসে ভাবছিল। ইলহাম দৌড়ে এসে বিছানায় বসে বলল
–আপি কি করছ?
ঈশা কিছু বলতে যাবে তখনি ইভান ওয়াস রুম থেকে বের হল। ইলহাম অবাক হয়ে একবার ইভান কে দেখে নিয়ে তারপর ঈশার দিকে তাকাল। সে ইভান কে এই ঘরে এভাবে দেখবে সেটা হজম করতে পারলনা। নিজের মনের প্রশ্নটা মুখে করেই ফেললো
–ভাইয়া তুমি এখানে কি করছ?
ইভান তার কথায় ভ্রু কুচকে বলল
–আমার কি এখানে আসা নিষেধ?
–তা বলিনি মানে…
বলেই ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সে ঈশা কে ভালো করে দেখে নিয়ে ইভানের দিকে ঘুরে বলল
–আচ্ছা যাই হোক। আমি একটু হাত ধুব। সরও ওখান থেকে।
বলেই উঠে ইভানের সামনে দাড়াতেই ইভান ওয়াশ রুমের দরজা টা টেনে দিয়ে বলল
–বাইরে বেসিনে হাত ধুয়ে নে।
–এখন বাইরে যেতে পারবোনা। সর না!
–না। এখানে যেতে পারবি না তাছাড়া যেখানে ইচ্ছা সেখানে যা।
–কেন? তুমিও তো মাত্র এখানেই শাওয়ার নিলে তাহলে আমি কেন যেতে পারবোনা? রহস্যময় ভঙ্গিতে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল।
–এই বাড়িতে আমার জায়গা আর তোর জায়গা আলাদা। বেশি কথা না বলে এখন যা এখান থেকে।
ইভানের কথা শুনে ঈশা চোখ বড় বড় করে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান ইলহাম কে আটকাতে চেষ্টা করছে। ঈশার এবার বেশ সন্দেহ হল। তার ধারনাই তাহলে কি ঠিক। নিশ্চয় ওয়াশ রুমে উলটা পাল্টা কিছু দেখেছে ইভান। তাই তো ইলহাম কে ওভাবে আটকাচ্ছে। ইলহাম ইভানের কথায় আরও জেদ করে বসলো। সে যাবেই।ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–আপি এটা তো তোমার ওয়াশ রুম। ভাইয়া এখানে যেতে পারলে আমি কেন পারবোনা? বলনা ভাইয়াকে।
ঈশা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে অসহায়ের মতো ইলহামের দিকে তাকিয়ে আছে। নাও বলতে পারছেনা আবার অনুমতিও দিতে পারছেনা। ইভান একবার ঈশার দিকে তাকাল।তার চাহুনি দেখে মনে হচ্ছে হয়ত কিছু আন্দাজ করতে পারছে। তাই এবার ইভান ইলহামকে এক ধমক দিলো
–মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলব। যা এখান থেকে।
ইভানের ধমকে ইলহাম বাইরে চলে গেলো। ইলহাম থেকে চোখ সরিয়ে ইভান ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা বড় বড় চোখে তার দিকে চেয়ে আছে। তার এরকম আচরনের মানে বুঝতে চেষ্টা করছে। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে একটা ভিলেনি হাসি দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে চলে গেলো। ইভান রুম থেকে বাইরে না যেতেই ঈশা বিছানা থেকে নেমে ওয়াস রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর সামনে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে ধরল। ইশ!! যা ভেবেছিল ঠিক তাই। কি একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির স্বীকার হতে হল। ইভান দরজায় দাড়িয়ে ঈশার কাণ্ড দেখছিল আর হাসছিল।
–ভাইয়া এভাবে হাসছ কেন?
ইরা জিজ্ঞেস করতেই ইভান তার দিকে তাকিয়ে দেখল। তারপর একটু হেসে তার মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল
–মেঘ না চাইতেই যখন বৃষ্টি পেয়ে যাস তখন তোর অনুভুতি টা কেমন হয়?
–অনেক জোস! না চাইতেই বেশি পায়ে গেলে সেটা কি আর বলে বোঝানো যায়।
–ভেরি গুড! তুই বড় হয়েছিস।
বলেই ইভান একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।ঈশা ইভানের কথা শুনে তার দিকে তাকাল। ইরা ভিতরে ঢুকে বলল
–ভাইয়া কি বলে গেলো?
–আমি কি ভাইয়ার পি এ যে কি বলে সব জানবো?
ঈশা রাগ করে কথাটা বলল। ইরা বুঝতে পারল কোন কারনে সে খুব রাগ করেছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। ঈশা চোখ বন্ধ করে একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে ভাবছে “কেন সব কিছু এমন হল? সবই তো ঠিক ছিল। সব সম্পর্ক কেমন হয়ে গেলো। কখনও কি ঠিক হবে সব?”


সবাই টেবিলে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে। ঈশা গিয়ে টেবিলের কাছে দাড়াতেই তাঁর চাচা মানে ইভানের বাবা আশফাক মাহমুদ বলল
–ঈশা তুই আমার কাছে বস মা।
ঈশা কোন কথা না বলে তার চাচার পাশে গিয়ে বসলো। ঈশাকে তার মা প্লেট বেড়ে দিলো। ঈশা খাবার তুলে নিচ্ছে প্লেটে। সেই সময় ইভান আসলো। সে ঠিক ঈশার সামনের চেয়ারটায় গিয়ে বসলো। ঈশা এক এক করে সব খাবার তুলে নিলো। মাথা নিচু করে খাচ্ছে সে। তার চাচা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–তোর তো পড়ালেখা শেষ। এখন কি করবি কিছু ভেবেছিস?
ঈশা খাবারের দিকে তাকিয়ে একটু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
–আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছ? আদৌ কি আমার জিবনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আমার আছে? ঠিক মানুষ কে জিজ্ঞেস কর তোমার কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেয়ে যাবে।
ঈশার কথা শুনে সবাই থেমে গেলো। তার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। ঈশা নিচের দিকে তাকিয়েও খুব ভালো করে বুঝতে পারল সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার খুব অস্বস্তি হল সাথে রাগও। রাগে চোখে পানি চলে এলো। সেখানে আর বসে থাকার মতো তার মানসিকতা নেই। তাই খাবার ছেড়েই উঠে গেলো। ঈশার মা পিছন থেকে বলল
–খাবার ছেড়ে এভাবে উঠতে নেই। খেয়ে যা।
কিন্তু ঈশা শুনলনা। সবাই নিশ্চুপ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশার এভাবে কথা বলা আর খাবার ছেড়ে উঠে যাওয়ায় ইভানের খুব রাগ হল। সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে সালাতের প্লেটে থাকা কাচা মরিচ একটার পর একটা চিবিয়ে যাচ্ছে। এবার সবাই ইভানকে দেখছে। ঈশার মা এসে ইভানের হাত থেকে মরিচ টা ফেলে দিলো। সামনে থেকে প্লেটটা সরিয়ে নিয়ে বলল
–তুই কি পাগল হয়ে গেলি? কি করছিস এসব? তুই তো অন্তত বুঝিস সব।
ইভান কোন কথা না বলে উঠে ছাদে চলে গেলো।
ছাদে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে “পাগল তো আমি আগেই হয়েছি। কিন্তু বোঝাতে পারিনি। আর কিভাবে বোঝাব।এতদিন ধরে নিজের ভিতরে সব কিছু চেপে রেখে একা একা পুড়ছি এই অপেক্ষায় কবে সব ঠিক হবে। কবে আমি সব কিছু ফিরে পাব।” তার চোখ মুখ ঝালে লাল হয়ে আছে। সে ঝালে কাঁপছে। চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি ঝরে পড়লো। কিন্তু ঝালের কারনে নয় ভিতরে জমে থাকা কষ্টের কারনে। কবে এই কষ্টের অবশান হবে।কবে ইভানের জীবনে সব কিছু ফিরে আসবে।

চলবে……।

রং বদল পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

1

#রং_বদল
#IH_Iman_Haque
#পর্ব_১৩ ও শেষ

বিকালের দিকে জান্নাতুন আর আমি চলে আসি আমাদের বাসাতে।এশা আমাদের দেখে বলতেছে,

ভাইয়া ভাবি তোমরা এসেছো,

দেখতেই তো পারতেছি তবুও বলতেছিস।

সামনে থেকে সর আমি তোকে বলি নি, আমার লক্ষী ভাবিকে বলেছি।ভাবি কেমন আছো,তোমাকে কতো মিচ করছি আমি জানো।

আলহামদুলিল্লাহ্ এবার এসেছি এখন আর আমাকে মিচ করতে হবে না।এশা মা-বাবা কই?

মা একটু আগে রুমের মধ‍্যে গেলো আর বাবা তো এখনো অফিস থেকে আসেনি।

ও তাহলে এশা চলো আগে মা সাথে রুমে দেখা করে আসি।

তোমরা দুইজন আমাকে একা রেখে কই যাচ্ছো।

কই যাচ্ছে মানে শুনতে পাও নাই তুমি,উপরে মার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।

আমিও যাবো তোমাদের সাথে।

ভাইয়া তুই যদি আমাদের সাথে উপরে মার রুমে যাস তাহলে এই ব‍্যাগ গুলো উপরে কে নিয়ে যাবে?

আমি এতো গুলো ব‍্যাগ একায় উপরে নিয়ে যেথে পারবো না,আমি বলি কি তোমরা দুইজনে আমাকে একটু সাহায্য করো ব‍্যাগগুলো উপরে নিয়েযেথে।

ছরি এগুলো আমাদের কাজ না।ভাবি তুমি চলো তো ভাইয়ার এমনিতে শক্তি বেশি একায় সব ব‍্যাগ নিয়ে যেথে পারবে।

তারপর ওরা দুইজনে চলে গেলো আমাকে রেখে।কি আর করার অনেক কষ্টে ব‍্যাগগুলো রুমে নিয়ে গেলাম।রুমের এক সাইটে ব‍্যাগ গুলো রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

আসসালামুআলাইকুম মা, কেমন আছেন?

আরে বউ মা তুমি কখন আসলে।

এই তো মা একটু আগে আসলাম।মা আপনি কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো বউমা।ঈমান কই বউমা?

আপনার ছেলে রুমে গেছে।

ও তাহলে বউমা তুমিও রুমে যাও ফ্রেস হয়ে একটু রেস্ট করো তারপর না হয় আমার সাথে গল্প করিও।

ওকে মা,চলো এশা তাহলে।

তারপর এশা আর আমি মার রুম থেকে বাহির হয়ে নিজ নিজ রুমে চলে গেলাম।আমি রুমে এসে দেখি আমার স্বামী বিছানার উপরে শুয়ে আছে।

কি বেপার তুমি এভাবে শুয়ে আছো কেনো,ফ্রেস হও নাই এখনো?

হুম যাচ্ছি একটু রেস্ট নেই আগে,

তুমি ফ্রেস হয়ে এসে রেস্ট করো যতো খুশি।

আচ্ছা যাচ্ছি,

এখনে যাও,

আরে গরম দেখাচ্ছো কেনো যাচ্ছি তো,

হুম যাও।

তারপর আমি বাথরুমে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।ফ্রেস হয়ে এসে আবারো বিছানায় শুয়ে পড়লাম।আমি ফ্রেস হয়ে আসার পরে জান্নাতুন ও ফ্রেস হতে চলে গেলো।কখন যে ঘুমাই গেছি নিজেই জানি না।ঘুম থেকে উঠি একবারে রাতে।রাতের খাওয়াদাও করে জান্নাতুন আর আমি বিছানায় শুয়ে আছি।

আমি তো কালকে থেকে অফিসে যাবো,আমাকে ছাড়া ভালো লাগবে তো তোমার।

ভালো লাগবে না কেনো তুমি তো আর একবারে যাচ্ছো না সকালে যাবে আর বিকালে আসবে।যখন খারাপ লাগবে তখন ফোনে কথা বলবো।আর সংসার করতে হলে তো কাজ করতেই হবে। যতোই স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবাসুক না কেনো স্বামী কাজ না করলে আজ হোক কাল বউ স্বামী কে ছেড়ে চলে যাবেই।

সেটাও ঠিক।আচ্ছা তাহলে এখন ঘুমাও আর কালকে আমাকে সকাল ৭ঃ০০ টায় ঘুম থেকে উঠে দিবে।

ওকে।

তারপর আমি জান্নাতুনকে জড়াই ধরে ঘুমানোর চেষ্ট করতেছি।কখন যে দুইজনে ঘুমাই গেছি জানি না।ঠিক ফজরের অজানের সময় ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।ওজু করে মসজিদে নামাজ পড়ে আসলাম।চারিদিকে এখনো হাল্কা অন্ধকার আছে।ঘড়িতে দেখি প্রায় ৫ঃ৩০ বাজতেছে অফিসের টাইম ৮ঃ00 তাই আবারো জান্নতুন এর পাশে শুয়ে পড়লাম কারন এখনো আটটা বাজতে অনেক টাইম আছে।

এই যে শুনচো,ঘুম থেকে উঠো সাতটা বাজতেছে তুমি না কালকে বললে তোমার অফিস আছে।

আরে এতো সকালে ডাকতেছো কেনো আর একটু ঘুমাই না।

সাতটা বাজতেছে আর বলতেছো এতো সকাল উঠো বলতেছি অফিসে না যাবে তুমি।

আর একটু ঘুমাই না।

আচ্ছা দাড়াও আমি বাথরুমে থেকে পানির বালতিটা আনতেছে।

তোমাকে আর পানির বালতি আনতে হবে না আমি উঠে পড়েছি।

এই তো ভালো ছেলে এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে আসুন নাস্তা করতে।

ওকে তুমি যাও আমি যাচ্ছি।

ওকে।

বিছানা থেকে ঢুলতে ঢুলতে বাথরুমের দিকে যাচ্ছি।চোখ দুটো খুলতেই পারতেছি না এতো ঘুম চোখে ধরেছে।তারপর বাথরুমে গিয়ে চোখে পানি দিতে চোখে ঘুম পালিয়ে গেলো।ফ্রেস হয়ে সোজা রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে অফিসের ড্রেসটা পড়ে নিচে যাচ্ছি।নিচে এসে দেখি বাবাও বসে আছে নাস্তার টেবিলে।আমিও বাবার পাশে একটা চেয়ারে বসলাম।তারপর জান্নাতুন আমাকে আর বাবাকে নাস্তা দিলো আমরা খেতে শুরু করলাম।

আজকে থেকে তুই তো অফিসে যাবি তাই না।

হুম বাবা।

ঠিক আছে দেখে শুনে কাজ করবি।

এমন ভাবে বলতেছো মনে হয় আজকে প্রথম অফিসে যাচ্ছি।

আজকে প্রথম যাচ্ছি না তবুও দেখে শুনে কাজ করতে বলতেছি এই আর কি?

ওকে।নাস্তা শেষ করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে যাচ্ছি।প্রায় তিরিশ মিনিট পরে অফিসে চলে আসলাম।অফিসের ভিতরে ঢুকতেই আমাকে সবাই দেখে সালাম দিচ্ছে আমারো ভালো লাগতেছে।অনেক দিন পরে অফিসে এসে ভালো লাগতেছে।সারাটা দিন চলে গেলো এর ভিতরে অনেকবার জান্নাতুন এর সাথে ফোনে কথা হয়েছে।সব সময় আমি খবর নিয়েছি কখন কি করতেছে?একজন স্বামীর দায়িত্ব সব সময় তার স্ত্রীর খবর নেওয়া।যে তার স্ত্রী বাসায় একা কি করতেছে?অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় রাস্তায় একটা ফুলের দোকার দেখতে পেলাম গাড়িটা এক সাইটে দাড় করিয়ে ফুলের দোকান থেকে বেশ কিছু ফুল কিনে নিলাম আমার বউকে উপহার দিবো দেখে।শুনেছিলাম বউকে নাকি মাঝে মাঝে গিপ্ট দিলে তাদের মনে স্বামী জন‍্য ভালো সৃষ্টিহয়।সেই জন‍্য নিয়ে যাচ্ছি আমার জন‍্য বউ এর মনে আরো ভালোবাসা সৃষ্টি করার জন‍্য।যাদের বউ আছে তাড়াও ট্রাই করতে পারেন।একটা মেয়ে কখনো বড় কিছু চায় না তার স্বামীর থেকে একটু ভালোবাসা আর একটু ছোট ছোট গিপ্ট দিবেন তাতেই তাড়া খুশি।
ফুলগুলো নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।ফুলগুলো লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছি কারন যদি আমার বোন দেখতে পায় তাহলে সব ফুল ও কেড়ে নিয়ে যাবে।লুকিয়ে লুকিয়ে ফুলগুলো নিয়ে রুমের ভিতরে চলে গেলাম।রুমের ভিতরে ঢুকে দেখে আমার মহারনি আয়নার সামনে গুন গুন করে গান গাইতেছে আর লম্বা কেসগুলো চিরনি দিয়ে ঠিক করতেছ।আমি পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলতেছি,

আমার বউটা কি করে?

আরে তুমি আগে বলবে না আমি তো ভয়ে পেয়ে গেছিলাম।আর কখন আসলে?

ভয় পাবে কেনো আর একটু আগেই আসলাম।

আচ্ছা বাদ দেও কিন্তু তোমার হাতে ওগুলো কি?

ও এগুলো হচ্ছে তোমার উপহার।

দেখি দেখি কি উপহার এনেছো আমার জন‍্য।

দাড়ায় এতো ব‍্যস্হ হচ্ছো কেনো তোমার উপহার তোমাকেই দিবো অন‍্য কাউকে দিবো না।

তাড়াতাড়ি দেখাও না আমার সহ‍্য হচ্ছে না।

আচ্ছা তুমি আয়নার সামনে দেখো আমি তোমাকে পড়িয়ে দেই।

ওকে।

তারপর আমি জান্নাতুন এর মাথায় বেলি ফুলের মালাটা গেথে দিলাম তারপর একটা গোলাপ মাথার খোপায় গেথে দিয়ে বলতেছি বাহ্ মাসআল্লাহ্ আমার বউকে তো অনেক সুন্দর লাগতেছে।

সত‍্যি,

হুম সত‍্যি।

দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ে হবার তিনটি বছর পার হ য়ে গেলো।যতো দিন যায় যততো আমাদের মধ‍্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি হয়।খুনশুটি ভালোবাসার মধ‍্যে দিয়ে সংসার চলতেছে।অনেক সুখে আছি জান্নাতুন এর মতো বউ পেয়ে।আমার মা -বাবাকে সবসময় নিজের বাবা-মার মতো দেখে।আজকাল কতো বউ আছে শশুর-শাশুরিকে দুচোখে দেখতেই পারে না।ও আর একটা কথা আমাদের একটা মেয়েও হয়েছে নাম তার রেখেছি মরিয়ম।আমার মেয়েটা হয়েছে একদম তার মা মতো অনেক দুষ্টু।মা যেমন মেয়েও তেমন।আবারো চেষ্টা করতেছি কিভাবে মরিয়মের খেলার সাথি আনা যায়।এখানেই শেষ গল্পটা।

গল্পটা শেষ করলাম তাড়াতাড়ি কেউ কষ্ট পেয়েন না কারন আমি একটু ঝামেলার মধ‍্যে আছি।যখন গল্প বাদে অন‍্যকিছু ঢুকে তখন গল্পলিখতে ইচ্ছা করে না তাই কালকে গল্পটা দিতে পাড়ি নি।প্রথম থেকে গল্পটা কেমন হয়েছে জানাবেন আর যদি আমার গল্পের কোন কথায় কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমাকে ক্ষমা করবেন।এই গল্পটায় অনেক কিছু শিখানোর বিষয় তুলে ধরেছি,শিখনিও বিষয়গুলো কে কতোটুকু মেনেছে জানি না।আপনাদের ধন‍্যবাদ।

#চলবে,,,?

রং বদল পর্ব-১২

0

#রং_বদল
#IH_Iman_Haque
#পর্ব_১২

বাথরুম থেকে গোসল করে এসে রুমে আসলাম।রুমে এসে দেখি জান্নাতুন রুমে কোথাও নেই।কই গেলো আমি বুঝতেই পারলাম না,আমার বউ ভুতনী নাকি হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায়।জান্নাতুন কে রুমে না পেয়ে আবারো আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম।সারারাত ঘুম না হওয়ার কারনে চোখে ঘুম ধরতেছে।চোখদুটো বন্ধ না করতেই কে যেনো আমাকে ডাকতেছে,চোখ খুলে দেখি এটা আর কেউ না,আমার বউ জান্নাতুন।

তুমি আবারো ঘুমাচ্ছো,একটু আগে না ঘুম থেকে উঠলে।

আর বলো না বউ,চোখের ঘুম পালাচ্ছেই না যে কি করবো বলো?আচ্ছা তুমি হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাও কেনো,তোমাকে আমি খুজেই পাই না।

কোথায় আবার যাবো নিয়ে গিয়েছিলাম আম্মা ডেকেছিলো সেই জন‍্য আর তুমি তখন বাথরুমে ছিলে দেখে তোমাকে বলে যাই নি।

তবুও আমাকে বলে যাবে না।

আচ্ছা এবার থেকে কোথাও গেল তোমাকে না বলে কোথাও যাবো না।এবার বিছানা থেকেউঠে আমার সাথে আসো।

কোথায় যাবো আবার,

আম্মা ডাকতেছে নিচে তোমাকে নাস্তা খেতে।

ও একটু পরে যাই,

ধূর উঠো তো এখনে যেথে হবে,

ওকে চলো তাহলে,

তারপর দুইজনে নিচে আসলাম।তারপ নাস্তা খেতে দিলেন আমাকে।নাস্তা খাওয়া প্রায় শেষ।আমি একটা জিনিস প্রথম থেকে লক্ষ‍্য করতেছি যে,,মনি নামের মেয়েটা কেমন রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে একটু একটু পর পর দেখতেছে আমি কিছুই বুঝতেছি না।তাহলে কি জান্নাতুন ওকে বলে দিয়েছে যে,ওর কথা সব বলে দিয়েছে।এগুলো বসে বসে ভাবতেছি খাওয়া তো শেষ।

জান্নাতুন মা শুন তুই জামাইকে নিয়ে একটু বাহিরে থেকে ঘুরে আয়।(আমার শাশুড়ি বলতেছে)

ওকে মা,কিন্তু তোমার জামাই যাবে কি ?

কি বাবা তুমি যাবে না,ঘুরতে জান্নাতুন এর সাথে?

ওকে মা যাবো।

আমিও যাবো আপু দুলাভাই এর সাথে (মনি নামের মেয়েটা বলতেছে )

তোকে যেথে হবে না,(জান্নাতুন মনিকে বলতেছে )

মনি তোদের সাথে যেথে চাচ্ছে যাগ সমস‍্যা কই?

ওকে আমাদের সাথে আমি নিয়ে যাবো না।

জান্নাতুন এগুলো তুমি কি শুরু করে দিলে মেয়েটা যেথে যাচ্ছে জাগ না সমস‍্যা কই?

ঠিক বলেছেন দুলাভাই?

আচ্ছা ঠিক আছে ওকে বাহির হতে বলো।

তারপর প্রায় বিশমিনিট পরে বাসা থেকে বাহির হলাম তিন জনে ঘুরতে।মনি মেয়েটা শুধু আমার গা ঘেসে হাটতে চাচ্ছে।যখনি আমার পাশে আসার চেষ্টা করতেছে তখনি দূরে সড়ে যাচ্ছি আমি।জান্নাতুনকে বুঝতে দিচ্ছি না আমি,যদি রাগ করে।আমি চাচ্ছি না বাহিরে কোন ঝামেলা হোক।দেখতে দেখতে অনেক জায়গায় ঘুরলাম।মনি আমার সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু জান্নাতুন কখনো আমাকে ওর থেকে একটুও আড়াল করে নি।দুপুরে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে গোসল করে দুপুরের মসজিদে নামাজ পড়ে আসলাম।তারপর সবাই মিলে দুপুরে খাবার খেলাম।আজকে আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা এখানে আর থাকবো না।খাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম রেস্ট করার জন‍্য।শশুর বাড়ি মানে হচ্ছে সুখের হাড়ি খাও দাও ঘুড়ে বেড়াও।একটু পর জান্নাতুন ও রুমে আসলো।

কি করো গো স্বামী?

দেখতেই তো পারতেছো সুয়ে আছি তবুও আবার প্রশ্ন করতেছো।

কেনো প্রশ্ন করতে পারি না বুঝি।

কেনো পারবে না,যখন ইচ্ছা আমাকে প্রশ্ন করতে পারো।আচ্ছা শুনো আজকে তো আমাদের বাসায় চলে যাবো তোমার কষ্ট হবে না,এখান থেকে যেথে।

স্বামীর বাড়িতে যেথে আবার কিসের কষ্ট।এতোদিন পরের বাড়িতে ছিলাম এখন যাবো নিজের বাড়িতে যেখানে থাকবো যতোদিন বেঁচে আছি।

হুম ঠিক বলছো গো বউ।

আচ্ছা আসো তুমিও আমার সাথে রেস্ট করো।

ওকে।

তারপর জাননাতুন ও বিছানায় শুয়ে পড়লো।আমিও সাথে সাথে জরিয়ে ধরলাম।বউ মানে হচ্ছে বিছানার কোলবালিস এদের জরিয়ে না ধরলে চোখে ঘুমে আসে না।
আচ্ছা তোমাকে যে হাদিসগুলো বলি সব মনে আছে তো তোমার।

হুম মনে রাখবো না কেনো,

তাহলে এখন তোমাকে আমি
স্ত্রীর উপর স্বামীর অনস্বীকার্য অধিকার,,এই বিষয়ে কথা শুনাবো।

আচ্ছা বলো আমি সব সময় শুনতে রাজি,কারন ইসলাম হচ্ছে এমন এক শান্তির ধর্ম যা পৃথিবীতে এমন ধর্ম খুজে পাওয়া যাবে না।অনেকে আছি এই ধর্ম করি কিন্তু সহজ জিনিস গুলো জানি না বা জানার চেষ্টাও করি না।আমিও অনেক কিছু জানতাম না তুমি আমাকে শিয়েছো।

ওকে এবা তাহলে শুনো,

স্ত্রীর প্রথম অধিকার হল বৈধ কর্মে ও আদেশে স্বামীর আনুগত্য। স্বামী সংসারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সংসার ও দাম্পত্য বিষয়ে তার আনুগত্য স্ত্রীর জন্য জরুরী। যেমন কোন স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক, অফিসের ম্যানেজার বা ডিরেক্টর প্রভৃতির আনুগত্য অন্যান্য সকলকে করতে হয়।

স্ত্রী সাধারণতঃ স্বামীর চেয়ে বয়সে ছোট হয়। মাতৃলয়ে মা-বাপের (বৈধ বিষয়ে) আদেশ যেমন মেনে চলতে ছেলে-মেয়ে বাধ্য, তেমনি শবশুরালয়ে স্বামীর আদেশ ও নির্দেশ মেনে চলাও স্ত্রীর প্রকৃতিগত আচরণ। তাছাড়া ধর্মেও রয়েছে স্বামীর জন্য অতিরিক্ত মর্যাদা। অতএব প্রেম, সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলতা বজায় রাখতে বড়কে নেতা মানতেই হয়। প্রত্যেক কোম্পানী ও উদ্যোগে পার্থিব এই নিয়মই অনুসরণীয়। অতএব স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে তা নারী-পরাধীনতা হবে কেন। তবে অন্যায় ও অবৈধ বিষয়ে অবশ্যই স্বামীর আনুগত্য অবৈধ। কারণ যাদেরকে আল্লাহ কর্তৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকে অবৈধ ও অন্যায় কর্তৃত্ব দেননি। কেউই তার কর্তৃত্ব ও পদকে অবৈধভাবে ব্যবহার করতে পারে না। তাছাড়া কর্তা হওয়ার অর্থ কেবলমাত্র শাসন চালানোই নয়; বরং দায়িত্বশীলতার বোঝা সুষ্ঠুভাবে বহন করাও কর্তার মহান কর্তব্য।

যে নারী স্বামীর একান্ত অনুগতা ও পতিব্রতা সে নারীর বড় মর্যাদা রয়েছে ইসলামে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا، دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ.

রমণী তার পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়লে, রমযানের রোযা পালন করলে, ইজ্জতের হিফাযত করলে ও স্বামীর তাবেদারী করলে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।

خَيْرُ النِّساءِ الَّتِي تَسُرُّهُ إذا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إذا أمَرَ ولا تُخالِفُهُ في نَفْسِها ولا مالِها بِما يَكْرَهُ.

শ্রেষ্ঠ রমণী সেই, যার প্রতি তার স্বামী দৃকপাত করলে সে তাকে খোশ করে দেয়, কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং তার জীবন ও সম্পদে স্বামীর অপছন্দনীয় বিরুদ্ধাচরণ করে না। স্ত্রীর নিকট স্বামীর মর্যাদা বিরাট। এই মর্যাদার কথা ইসলাম নিজে ঘোষণা করেছে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

স্ত্রীর জন্য স্বামী তার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।[

لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا.

যদি আমি কাউকে কারো জন্য সিজদা করতে আদেশ করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে।

مِن حَقِّ الزَّوجِ عَلَى زَوجَتِهِ إن سَالَ دَماً وَقَيحاً وَصَديداً فَلَحَسَتهُ بِلِسَانِهَا مَا أَدَّتْ حَقَّهُ.

স্ত্রীর কাছে স্বামীর এমন অধিকার আছে যে, স্ত্রী যদি স্বামীর দেহের ঘা চেঁটেও থাকে তবুও সে তার যথার্থ হক আদায় করতে পারবে না।

…فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَوْ تَعْلَمُ مَا حَقُّ زَوْجِهَا ، لَمْ تَزَلْ قَائِمَةً مَا حَضَرَ غَدَاؤُهُ وَعَشَاؤُهُ.

মহিলা যদি নিজ স্বামীর হক (যথার্থরূপে) জানতো, তাহলে তার দুপুর অথবা রাতের খাবার খেয়ে শেষ না করা পর্যন্ত সে (তার পাশে) দাঁড়িয়ে থাকতো।

…فَوَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّى الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى تُؤَدِّىَ حَقَّ زَوْجِهَا كُلِّهِ حَتَّى إِنْ لَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِىَ عَلَى قَتَبٍ أَعْطَتْهُ أَوْ قَالَ لَمْ تَمْنَعْهُ.

তাঁর শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে! নারী তার প্রতিপালকের হক ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার স্বামীর হক আদায় করেছে। সওয়ারীর পিঠে থাকলেও যদি স্বামী তার মিলন চায় তবে সে বাধা দিতে পারবে না।

اثْنَانِ لا تُجَاوِزُ صَلاتُهُمَا رُءُوسَهُمَا : عَبْدٌ آبِقٌ مِنْ مَوَالِيهِ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَيْهِمْ ، وَامْرَأَةٌ عَصَتْ زَوْجَهَا حَتَّى تَرْجِعَ.

দুই ব্যক্তির নামায তাদের মাথা অতিক্রম করে না (কবুল হয় না) ; সেই ক্রীতদাস যে তার প্রভুর নিকট থেকে পলায়ন করেছে, সে তার নিকট ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্যাচরণ করেছে, সে তার বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত (নামায কবুল হয় না।)

ثَلاَثَةٌ لاَ يُقبَلُ منهُم صَلاَةٌ وَلاَ تَصعُدُ إلَى السَّمَاءِ وَلاَ تَجَاوزُ رُءُوسُهُم : رَجُلٌ أَمَّ قَوماً وَهُم لَه كَارِهُونَ ، وَرَجُلٌ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ وَلَمْ يُؤمَر ، وَامرَأَةُ دَعَاهَا زَوجُهَا من اللَّيلِ فَأَبَتْ عَلَيه.

তিন ব্যক্তির নামায কবুল হয় না, আকাশের দিকে উঠে না; মাথার উপরে যায় না; এমন ইমাম যার ইমামতি (অধিকাংশ) লোকে অপছন্দ করে, বিনা আদেশে যে কারো জানাযা পড়ায় এবং রাত্রে সঙ্গমের উদ্দেশ্যে স্বামী ডাকলে যে স্ত্রী তাতে অসম্মত হয়।

إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ أَنْ تَجِيءَ لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ.

স্বামী যখন তার স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে (সঙ্গম করতে) আহ্ববান করে তখন যদি স্ত্রী না আসে, অতঃপর সে তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি কাটায়, তবে সকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন। অন্য এক বর্ণনায় যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশ্তা তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।

স্বামীর আনুগত্য স্ত্রীর জন্য আল্লাহ ও তদীয় রসূলের আনুগত্য। সুতরাং স্বামীকে সন্তুষ্ট করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। বলাই বাহুল্য যে, অধিকাংশ তালাক ও দ্বিতীয় বিবাহের কারণ হল স্বামীর আহ্বানে স্ত্রীর যথাসময়ে সাড়া না দেওয়া। উক্ত অধিকার পালনেই স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন মজবুত ও মধুর হয়ে গড়ে উঠে, নচেৎ না।

ধন‍্য আমি তোমাকে স্বামী হিসাবে পেয়ে।যে আমাকে সবসময় ভালো পথ দেখাবে,খারাপ পথ নয়।তুমি যা জানো সেটাই আমাকে বলবে শিখাবে।সেই অনুযায়ী আমি আমল করতে পারবো।

ওকে।আমিও ধন‍্য তোমার মতো জীবন সঙ্গী পেয়ে।

আচ্ছা একটা কথা বলি তোমাকে,সমাজের কিছু পুরুষ জাতি আছে কেমন জানো,

না তো,

বিবাহ করেছে কিন্তু স্ত্রীর সাথে সুখ দুঃখের আলাপ করে না শুধু রাতে বিছানায় স্ত্রীর নরম দেহ খুজে।যদি স্ত্রীর সাথে স্বামী না মিশে সংসার হবে কেমন করে।স্ত্রীর শুধু স্বামীর থেকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায় না তারা চায় তার স্বামী তাকে ভালোবাসুক, বুঝুক,সবসময় পাশে থাকুক যদি এগুলো একটা স্বামী ভেবে থাকে তাহলে স্ত্রী পাবে একটা প্রকৃত ভালো স্বামী।

আজকে গল্পটা ছোট করে দেওয়ার জন‍্য ছরি।আর কেউ ছোট বলে লজ্জা দিয়েন না প্লিজ।কেমন হয়েছে এটা শুধু কমেন্টে বলবেন।

(চলবে)

রং বদল পর্ব-১১

0

#রং_বদল
#IH_Iman_Haque
#পর্ব_১১

জান্নাতুন তুমি কি জানো একজন আদর্শ স্ত্রীর স্বামীর উপরে তার দায়িত্ব- কর্তব‍্য গুলো কি?

না তো,আমি জানি না,

তাহলে শুনো একজন আদর্শ স্ত্রীর কর্তব‍্যগুলো কি?

একজন আদর্শ স্ত্রীর কর্তব্যের মূল হলো স্বামীর প্রতি তার দায়িত্ব। তার উপর তার স্বামীর অধিকার অনেক বড়, যা তার পিতা-মাতার অধিকারের চেয়েও বেশি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার অধিকারের (হকের) পরেই তার অধিকারের শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থান। আর এই অধিকারের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে এসেছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ﴾ [ سُورَةُ النِّسَاءِ: 34 ]

“পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন…” – ( সূরা আন-নিসা: ৩৪ )

সুতরাং সে তার (স্ত্রীর) ব্যাপারে দায়বদ্ধ ও তার পরিচালক এবং তার সকল বিষয়ের তত্ত্বাবধায়ক। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« لا يصلح لبشر ان يسجد لبشر ولو صلح لبشر ان يسجد لبشر لأمرت المرأة ان تسجد لزوجها من عظم حقه عليها ». ( رواه أحمد ).

“কোন মানুষের জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা সঠিক নয়; আর কোন মানুষের জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা যদি সঠিক হত, তবে আমি নারীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য; কেননা তার উপর তার স্বামীর বিরাট অধিকার (হক) রয়েছে।”

উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« أيما امرأة ماتت وزوجها عنها راض دخلت الجنة ». ( رواه الترمذي و ابن ماجه ).

“নারীদের যে কেউ মারা যাবে এমতাবস্থায় যে তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

তাহলে আমিও একজন আদর্শ বান স্ত্রী হতে চাই।

তাহলে উপরে যেগুলো বললাম সব গুলো মেনে চললেই হতে পারবে ।যদি একজন আদর্শ স্ত্রী হতে পারো স্বামীর কাছে, তাহলে পরোকালে জান্নাত নির্ধারিত ।

ওকে আমি চেষ্ট করবো ইনসাআল্লাহ্ সব আল্লাহ্ ও নবী(সাঃ)এর বাণীগুলো।

আচ্ছা একটা কথা বলি জান্নাতুন তোমাকে রাগ করবে না,তো।

আচ্ছা বলো,স্বামীর কথায় কি কেউ রাগ করে নাকি?

তোমার খালাতো বোন কি যেনো নাম তার?

কেনো মনি,

বিকালে কি ওই মেয়ের দাড়ায় আমার কাছে কফি পাঠিয়েছিলে?

হুম কেনো তোমার সাথে কি ফাজলামি করছে আবার নাকি?

আরে না,কিন্তু ও আমাকে আজকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।আমি তো ওই মেয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে গেছিলাম।ওকে বুঝাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে বলে একদিনের টাইম দিলাম ভেবে উত্তর দিবেন।

কি ও তোমাকে প্রেমের প্রোস্তাব দিয়েছে,ওর বড় বোনে স্বামী কে,ওকে আজকে আমি মেরে ফেলবো?

আরে রাগ করো কেনো ছোট মানুষ ভূল করতেই পারে ওকে ভালো করে বুঝালে সব বুঝবে।

ওকে আমি শেষ করে দিবো আমার বাসায় থেকে আমার স্বামী কে প্রেমের নিবেদন দেয়।এরে আমি কি যে করবো আমি ভেবে পাচ্ছি না,

কিছু করতে হবে না শুনো,মাথা ঠান্ডা করো সব কিছুতে রাগ করলে ফলাফল ভালো আসে না।কিছু কিছু কাজে মাথা ঠান্ডাও রাখতে হয়।আর একজন মমিন ব‍্যক্তিদের ধর্য‍্য হচ্ছে মহত গুন।আল্লাহ্ বলেছেন,,আমার বান্দারার তোমরা ধর্য‍্য ধারন করো,যে ব‍্যক্তি ধর্য‍্য ধারন করতে পারবে তার সাথে আমি আছি।সেই জন‍্য আমাদের ধর্য‍্য ধারন করে মনিকে বুঝিয়ে বললে হবে।

ওকে তোমার কথা শুনে আমি চূপ রইলাম না হলে আমি ওকে মেরে ফেলতাম।

এতো ভালোবাসো আমাকে।

হুম নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি তোমাকে।সেই জন‍্য তো ওর উপর এতো রাগ হচ্ছে।

বুঝতে পারছি আমার বউ আমাকে অনেক ভালোবাসে।কখনো আবার ভূল বুঝে ছেড়ে চলে যেও না।

এদেহে প্রান থাকতে কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না।(জরিয়ে ধরে বলতেছি)

আচ্ছা বউ শুনো না,আজকে আমাদের কি হওয়ার কথা ছিলো?

কেনো কিছু কি হওয়ার ছিলো নাকি?

এত তাড়াতাড়ি ভূলে গেলে চলবে,আমাদের না আজকে বাসর হওয়ার কথা ছিলো।

হুম ছিলো তো,কিন্তু আমার লজ্জা করে যে।

ধূর কি যে বলো বউ,স্বামী-স্ত্রীর মাঝে লজ্জা থাকতে নেই।আচ্ছা শুনো আজকে তুমি সেই দিনের মতো নতুন বউ সেজে বিছানায় বসে থাকবে ।আমি এসে তোমার ঘোমটা তুলবো,

ঠিক আছে কিন্তু এখন বউ সাজার জিনিস কই পাবো।

রুমে যা আছে তাই দিয়ে সেজে বসে থাকো দশ মিনিট পরে আমি আসতেছি।

ঠিক আছে।

আমি সোজা রুমের বাহিরে এসে বেলকনিতে এসে দাড়িয়ে আছি।ভাবতেছি কখন রুমে যাবো আর বাসর করবো,

বউ তো সাজতে বললো কিন্তু শাড়ি কই পাবো।হঠাৎ করে মনে পড়লো আমার এক বন্ধু আমাকে নীল শাড়ি গিফ্ট করেছিলো কখনো পড়া হয় নি, আজকে মনে হয় শাড়িটা উপকারে আসবে।আমি আলমারিতে গিয়ে শাড়িটা বাহির করলাম।তারপর শাড়িটা পড়ে নিলাম কোনমতো করে,মুখে হাল্কা মেকাপ করলাম তারপর দৌড়িয়ে গিয়ে বিছানায় ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে বসে রইলাম।

কি বেপার দশমিনিট পার হয়ে গেলো,রুমে এখন যাবো কি?না একটা মেসেজ করে দেখি বউকে, কি বলে?তারপর বউ এর ফোনে মেসেজ দিলাম,

“” বউ আমি কি রুমে যাবো?””

প্রায় দুই মিনিট পরে উত্তর আসলো,

“” রুমে আসো তুমি।””
এই কথা শুনে এক মিনিট ও দাড়িয়ে থাকি নি বেলকনিতে।সোজা রুমের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।তারপর ভিতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।ধীরে ধীরে আগাচ্ছি,যতো সামনে যাচ্ছি যতোই হার্ডবিট বাড়তেছে আবার ভয়ও লাগতেছে।কেনো যে এমন হচ্ছে বুঝতেছি না,এভাবে আমি একদম বিছানার কাছে চলে আসলাম,দেখতেছি নতুন বউ এর মতো জান্নাতুন বিছানায় বসে আছে।হঠাৎ করে জান্নাতুন বিছানা থেকে নেমে এসে আমার পা ধরে সালাম করতেছে,আমি আমার পা দুটো সরিয়ে নিয়ে বলতেছি,

বউ তোমার স্থান আমার পায়ে না,আমার বুকে তোমার স্থান।(নিচ থেকে তুলে বলতেছি )

আমি আর কথা না বলে আবারো বিছানায় এসে ঘোমটা দিয়ে বসে পড়লাম।

এটা কি হলো আমার সাথে কথা না বলে আবার বিছানায় চলে গেলো?ও বুঝতে পারছি আমাকে গিয়ে ঘোমটা তুলতে হবে নতুন বউ বলে কথা।তারপর আমি বিছানার উপরে গিয়ে বউ এর ঘোমটা উপরে তুলে দিলাম,
মাস্আল্লাহ্ আমার বউকে অনেক সুন্দর লাগতেছে।

আমি এই কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচ করে আছি।

বউ তুমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচ করে থেকে না,চলো আমরা নতুন জীবনে পা রাখি।

আগে চলুন আল্লাহ্ কাছে দুইরাকাত নফল নামাজ পড়ে আসি তারপর নতুন জীবন শুরু করি।

ওকে।তারপর আমরা দুইজনে দুইরাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহ্ কাছে দোয়া করলাম।আমার জানা মতে প্রতিটা ভালো কাজ করার আগে নফল দুইরাকাত নামাজ প ড়ে আল্লাহ্ কাছে দোয়া করা উত্তম।যদি এমন করি তাহলে আল্লাহ্ র রহমত আমাদের উপরে পরবে।
নামাজ পড়া শেষ করে আবারো দুইজনা বিছানায় চলে আসলাম।

বউ এবার শুরু করা যাগ,

তুমি কি করবা সেটা তোমার বেপার?

এটা কি আমার একার কাজ?

না, দুইজনারী

তাহলে বলতেছো কেনো,

ওকে তুমি আগে রুমে লাইট অফ করে দেও।

তারপর আমি তাড়াতাড়ি লাইট ওফ করে আসলাম।তারপর শুরু হয়ে গেলো যুদ্ধ।আর কিছু বলবো না,এটা কোন যুদ্ধ আপনারা ভালো করে যানেন তাই কিছু আর বলবো না। আর যদি ইতিহাস পড়া ইচ্ছা থাকে বিবাহ করে ইতিহাস পড়েন।

সকালে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো চোখে মুখে পানির ছিটার কারনে।চোখ খুলে দেখি বউ আমার আয়নার সামনে দাড়িয়ে বড় বড় চূলগুলো ঝাড়তেছে।চূল ঝাড়ার পানিতাহলে আমার মুখে এসে পড়তেছিলো।আমি বিছানা থেকে উঠে সোজা জান্নাতুলকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম।জান্নাতুন এর শরীর থেকে সুন্দর একটা ঘ্রান আসতেছে,মাতাল করে তুলতেছে।

সকাল সকাল এগুলো কি শুরু করে দিলে?কালেকে তো রাতে অনেক যুদ্ধ করলে তবুই শখ মিটে নি।

এতো সুন্দর বউ ঘরে থাকলে এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে শখ মিটে বলো।

ছাড়ো তো যাও আগে গোসল করে এসো।তোমার গোসল করা এখন ফরজ।আগে গোসল করে এসো তারপর কতো শখ আছে মিটিও ওকে।

সত‍্যি তো,

হুম সত‍্যি রে বাবা যাও আগে গোসল করে এসো।কি পাগল স্বামী আমার?

আমি জান্নাতুন এর ঠোঁটে জোড় করে একটা চুমু দিয়ে পালিয়ে আসলাম বাথরুমে।প্রথমে চুমু দিতে দিচ্ছিলোই না তাই জোড় করে ঠোঁটে চুমু দিয়ে পালিয়ে আসলাম।এটা অবস‍‍্য সবাই জানেন রাতে আপনার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক করলে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে আপনাকে গোসল করতে হবে।সাধানত এই গোসলকে ফরজ করে দিয়েছেন আল্লাহ্ তায়ালা।তাই প্রতিটা স্বামী-স্ত্রীকে গোসল করতেই হবে।

গল্পটা আর বেশি বড় করবো না,পাঠকদের তেমন সাড়া পাচ্ছি না।আমি বুঝতেছিনা ইসলামিক জিনিসগুলো তুলে ধরার জন‍্য কি পাঠক দের সাড়া কম পাচ্ছি নাকি?যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে আর গল্পের মাঝে তুলে ধরবো না,পরের পর্ব থেকে।

চলবে

রং বদল পর্ব-১০

0

#রং_বদল
#IH_Iman_Haque
#পর্ব_১০

তুমি খাবার টেবিল থেকে না খেয়ে, চলে আসলে কেনো?

না,খেয়ে মানে আমি তো অনেক খেয়ে আসলাম।তবুও না খেয়ে আসলাম বলতেছো।

তোমার জন‍্য কতো কিছু রান্না করেছিলো আমার খালা-ফুপিরা আর তুমি না খেয়ে চলে আসলে ওরা কষ্ট পাবে না।

কষ্ট পাবে মোটেও না আজকে তো আমাকে ওরা খাওয়াতে খাওয়াতে মেরেই ফেলতো ওখান থেকে চলে না আসলে,আজকে আমি পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে বাধ‍্য হতাম।এমনিতে জোড় করে যেগুলো খাওয়াচে সেইগুলোই বেশি হয়ে গেছে দেখো না ঠিক মতো শুয়ে থাকতেও পারতেছি না,শুধু বমি বমি ভাব হচ্ছে।আমার কষ্ট হচ্ছে আর তুমি মজা নিচ্ছো বউ (মায়া লাগার মতো করে কথাগুলো বলতেছি )

আচ্ছা দারাও আমি তোমার জন‍্য লেবুর পানি এনে দিচ্ছি (হেসে হেসে বলতেছি আমার স্বামীর অবস্হা দেখে না হেসে পারলাম না।)

তুমি হাসতেছো ঠিক আছে আমারো একদিন আসবে হুম।

আচ্ছা আর হাসবো না,তুমি শুয়ে থাকো আমি লেবুর পানি নিয়ে আসতেছি তোমার জন‍্য।

আল্লাহ্ গো আমাকে মেরে ফেলছে শশুর বাড়ির লোকেরা আল্লাহ্ এত খাবার কেউ খাওয়ায়।

একটু পরে জান্নাতুন কোথায় থেকে এসে বলতেছে,

এই যে আমার প্রানের স্বামী ধন,এই নিন লেবুর পানি খেয়ে নিন ঠিক হয়ে যাবে।

আমি জান্নাতুন এর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে পানিগুলো খেয়ে ফেললাম।আচ্ছা তোমার বোন গুলো এতো শয়তান কেনো বলো তো ওরা আমাকে জোড় করে বেশি খাওয়াইছে।

কেনো তুমি না, তখন বললে তোমার শালিরা নাকি খুবেই সুন্দর,অনেক ভালো তাহলে এবার বুঝলে ঢেলাটা কাকে বলে।আমি আগে থেকে জানতাম ওরা এই রকমে,

উপরে সাদা চামরা দেখে মানুষকে ভালো মনে করে বোকামী করেছি গো বউ।আর তুমিও তো আমার অবস্হা দেখে মুচকি মুচকি হাসতেছিলে,আমার মনে হচ্ছে তুমিও ওদের সাথে হাত মিলিয়েছো।

আরে না,ওদের সাথে কেনো আমি হাত মিলাবো।শুধু এতোটুকু বলেছে যা হবে তা দেখে যেথে,তাই আমি চূপ করে দেখে গেছি,

তুমি বউ হয়ে স্বামী উপরে অত‍্যাচার হচ্ছে এটা দেখে থাকতে পারলে।যাও তুমি আমার বউ না,

ওলে আমার সোনা রে,আমার উপরে রাগ করেছো,আসো তোমার রাগ ভেঙ্গে দেই।

লাগবে না, আমার রাগ ভাঙ্গাতে,
.
সত‍্যি,

সত‍্যি না তো মিথ‍্যা,

ঠিক আছে আমিও দেখতেছি কেমন করে আমার উপরে রাগ করে থাকতে পারো।এই কথা বলে আমার স্বামীর বুকের উপরে বসে দুইহাত দুদিকে চেপে ধরে একদম ওনার মুখের কাছে আমার মুখটা নিয়ে গিয়ে বলতেছি,
তোমার আজকে সব লুটে ফুটে নিবো,

আরে এগুলো তুমি কি বলো,এটা তো ছেলেদের ডাইলোক তোমাদের না?মেয়ে হয়ে ছেলের কি লুটে নিবে আবার?

যা আছে তাই লুটে নিবো,

ঠিক আছে নিও, কিন্তু আমার বুকের উপর থেকে আগে নামো তো আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে।

নামবো না,

যদি আমি মরেরররররর,

এই কথা বলার আগে আমি আমার স্বামী ঠোঁট আর আমার ঠোঁট এক করে দিলাম।প্রায় পাঁচ মিনিট পরে ছেড়ে দিলাম।

বউ তুমি এইডা কি করলা?অবলা একটা ছেলেকে রুমে একা পেয়ে সব লুটে নিলে আল্লাহ্ আমাকে আর কেউ বিয়ে করবে না,আমার সব শেষ করে দিয়েছে এই মাইয়া।

ফাজিল ছেলে কোথাকার বউ পাশে আছে তারপরেও নাকি বলে কেউ বিয়ে করবে না।ঝাটা দিয়ে পিটালে তোমার শয়তান পালাবে।ঝাটাটা কি আনবো নাকি?

বউ এবা ক্ষেপে গেছে আর ফাজলামি করা যাবে না পরে কপালে শনি,রবি,রাহু সব চলে আসবে।টপিং চেন্জ করার জন‍্য বলতেছে,

বউ তোমার ঠোঁটে কি মধু আছে নাকি, আমার ঠোঁটগুলো মিষ্টি মিষ্টি লাগতেছে কেনো ?

জানি না,আর একবার খাবে নাকি।

সি সি মানুষ ভূল একবারে করে বারবার না,তোমার ঠোঁটের পচা লিপস্টিক খেলে আমার পেট নষ্ট হয়ে যাবে।

যদি আমার ঠোঁটের লিপস্টিক পচা হয় তাহলে যখন কিচ করলাম তখন বলো নি কেনো।

তখন বুঝতে পারি নি,

তুমি কিন্তু আমার রাগ উঠাচ্ছো এর ফল ভালো হবে না,

কি ভালো হবে না শুনি?ভাই এই কথা বলার সাথে সাথে বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো দুইজনার বালিস দিয়ে মারামারি।প্রথমে শুরুটা জান্নাতুন এ শুরু করেছিলো তারপর আমি। প্রায় বিশমিনিট ধরে বিশ্ব যুদ্ধ চললো,যুদ্ধ শেষ হলো চারপাশে আজানের ধ্বনি শুনে।যহরের আজান চারপাশে দিচ্ছে।

এই তুমি নামাজে যাবে না,

হুম যাবো তো,

তাহলে আসো তোমাকে পান্জাবি, টুপি,আতর মেখে রেডি করে দেই তুমি ওজু করে আসো।

আমি ওজু করে আসলাম বাথরুম থেকে।তারপর এক এক করে সুন্দর করে পান্জাবি, টুপি,আতর মেখে দিচ্ছে।আমি শুধু জান্নাতুনকে দেখতেছি কতো কেয়ার করতেছে।আমার মতে প্রতিটা স্ত্রীর এটা অধিকার বা করা দরকার যে তাদের স্বামীদের মসজিদে যাওয়ার জন‍্য তৈরি করে দেওয়া।একটা স্বামী তার বউকে যথেষ্ট সম্মান এবং ভালো বাসে।তাই প্রতিটা মেয়েকে স্বামীর ভালোবাসা আর সম্মানকে কাজে লাগিয়ে জোড় করে হলেও মসজিদে পাঠায় দিন।প্রতিটা নারী-পুরুষের নামাজ আল্লাহ্ তায়া’লা ফরজ করে দিয়েছেন।কিন্তু আমরা নামাজ না,পড়ে স্ত্রীর আচল ধরে শুয়ে থাকি।যাদের আবার নতুন বিয়ে হয়েছে রমাজান মাসে হারাম-হালাল কিছু বুঝে না।।বউ এর যদি ইসলাম সম্পের্কে ধারনা না থাকে, তাহলে স্বামী কিভাবে ভালো পথে আসবে,কিভাবে সংসার সুখ-শান্তি আসবে।এটা সব সময় মনে রাখবেন একজন মেয়ে তার স্বামী কে একমাত্র পারে ভালো পথ দেখাতে,খারাপ পথ থেকে ভালো পথে আনতে।তাই প্রতিটা নারীকে বলবো আপনাদের স্বামী দের নামাজ পড়তে বলুন না, যেথে না চাইলে জোড় করে পাঠান দেখবেন আপনার স্বামী কে ঠিকে হেদায়েত দিবেন আল্লাহ্।
কি হলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে এভাবে কি দেখতেছো আমাকে?

কিছু না,আচ্ছা বউ তুমি আমাকে এভাবে প্রতিদিন তৈরি করে দিবে আমি যখন নামাজে যাবো।

হুম দিবো,তুমি যাচ্ছো আল্লাহ্ ইবাদত করতে,আমি যদি তোমাকে মসজিদে যাওয়ার সময় সাহায‍্য করি তাহলে আমিও আল্লাহ্ থেকে একটুও হলেও সোয়াব পাবো।অনেক গল্প করলে এখন তুমি মসজিদে যাও।

তারপর আমি বাসা থেকে বাহির হয়ে সোজা মসজিদে যাচ্ছি।মসজিদটা বাসার পাশেই ছিলো তাই যেথে টাইম লাগে নি।মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আবার বাসায় আসলাম।বাসায় এসে আবারো জোড় করে খাবার খেতে বসালেন আমাকে।ইচ্ছা না থাকার শর্তে খেতে হলো।বেশি খাই নি অল্প খেয়েছি,এবার কেউ মজা করে নি।মনে হয় জান্নাতুন মজা করতে নিষেদ করেছে।খাওয়া শেষ করে আমরা দুইজনে রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।কখন যে ঘুমাই গেছি নিজেই জানি না।হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় ঘড়িতে দেখি ৫ঃ১০ বাজে আসরের আজান হয়ে গেছে তাহলে কেউ ডাকলো না।আরে জান্নাতুন আবার কই গেলো ও তো আমার সাথে শুয়েছিলো কোথায় গেলো আবার।মনে হয় নিচে গেছে কাজ করতে।আমি বাথরুম থেকে ওজু করে এসে রুমে আসরের নামাজটা পড়ে নিলাম।নামাজ পড়ার পড়ে ভাবলাম একটু ছাদে যাবো।তারপর রুম থেকে বাহির হয়ে সোজা ছাদে চলে আসলাম।ছাদে এসে দেখি পুরো ছাদে ফুলের টবে ভর্তি।ভিন্ন ভিন্ন ফুলের কাছে ভিন্ন ভিন্ন ফুল ধরেছে,ফুলগুলোর সুবাস পূরো ছাদে ছড়িয়ে পড়েছে।একবারে ফুলের সুবাসে মাতাল করে তুলতেছে।পশ্চিম দিকে দেখতেছি সূর্য লাল বর্ন ধারন করছে।দেখতে অনেক সুন্দর লাগতেছে।এখান থেকে প্রকৃতি উপভোগ করতে অনেক সুন্দর লাগতেছে।

দুলাভাই আপনি এখানে আর আমি পূরো বাসা খুজে বেড়াচ্ছি।

পিছনে ঘুরে দেখি,এইটা সেই মেয়েটা যে আমাকে চোখ টিপা দিয়েছিলো।

এই নেন আপনার কফি আপু পাঠিয়েছে আপনার জন‍্য।

আমি মেয়েটার হাত থেকে কফির গ্লাসটা হাতে নিয়ে চূপ করে আছি ।

আমার নাম মনি,আমি আপুর খালাতো বোন লাগি।আজকের শয়তানির জন‍্য ছরি।

আমি চূপ করে দাড়িয়ে আছি।কথা বলতেছি না কারন ওদের সাথে কথা বলতে নিষেদ করেছে।

কি দুলাভাই আপনার শালির সাথে কথা বলবেন না?

তবুও চূপ করে আছি।

কথা বলেন না হলে,আপুকে বলে দিবো আপনি আমাকে প্রেমের প্রোস্তাব দিয়েছেন।

এবার চূপ করে থাকতে পারলাম না।কথা বলতে বাধ‍্য হলাম,
আমি আবার কখন তোমাকে প্রোস্তাব দিলাম মিথ‍্যা বলতেছো কেনো।

বলেন নি কিন্তু আমি বলবো আর আপনার সাথে কিছু বলার ছিলো,

হুম বলো,

আমি সত‍্য কথা বলতে ভয় পাই না,তাই সোজাসুজি বলতেছি আপনাকে প্রথম দেখায় ভালো লেগেছে আমার তাই আপনি আমার সাথে প্রেম করবেন।আর এই কথা যদি আপুকে বলতেছেন তাহলে আপনার খবর আছে।

এটা সম্ভব না তোমার বোন শুনলে কষ্ট পাবে।

আমি জানি না কি করবেন,আপনাকে একদিন টাইম দিলাম ভাবার জন‍্য?

আরে মনি শুনো এই চলে গেলো ধুর কি ডেন্জার মেয়েরে বাবা লজ্জা-শরম কিছুই না।বড় বোনের জামাইকে প্রেমের প্রোস্তাব দেয়।কফি খাচ্ছি আর ভাবতেছি কি বলে গেলো মনি?

অনেকবার ভাবলাম একটা কথা গল্পটা বড় করতে গেলে ভিলেন দরকার।তাই আমি ভাবতেছি গল্পে একটা ভিলেন আনবো।গল্পের মধ‍্যে ভিলেন এনলে কেমন হয় পাঠকদের মন্তব‍্য দেখতে চাই।

চলবে।

রং বদল পর্ব-০৯

0

#রং_বদল
#IH_Iman_Haque
#পর্ব_০৯

শেষে চলে আসলাম জান্নাতুন এর বাসায়,মানে আমার শশুর বাড়িতে।বাসার ভীতরে ঢুকে আমি অবাক কারন এখানে অনেক মানুষ।আমাকে দেখতে আসছে নাকি, এনারা কি জন‍্য এসেজে বুঝতে পারতেছি না?আবার কিছু মেয়ে ও আছে বাসার ভিতরে।মেয়েগুলো কি যেনো বলা বলি করতেছে শুনতে পারতেছি না?হঠাৎ করে একটা মেয়ে আমাকে চোখ টিপা মেরে হাসতেছে, আমি তো অবাক চেনা নাই জানা নাই আমাকে চোখ টিপা মারতেছে।জান্নাতুন কে কি মেয়েগুলোর ব‍্যপারে বলবো,না বাবা যদি পরে ভূল বুঝে?এমনিতে মেয়েরা স্বামীকে সন্দেহ‍ বেশি করে।

জান্নাতুন জামাইকে নিয়ে রুমে যা,এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো।(আমার শাশুড়ি বলতেছে )

হুম যাচ্ছি মা।এই যে তুমি আমার সাথে আসো।

কোথাই যাবো।

কোথায় মানে রুমে যাবে না।

হুম যাবো তো।

তাহলে আমার পিছনে পিছনে আসো।

আমি জান্নাতুন এর পিছনে পিছনে যাচ্ছি।হঠাৎ করে মেয়েগুলো আমার সামনে এসে বলতেছে,

এই যে দুলাভাই কোথায় যাচ্ছেন,আমাদেও সাথে নিয়ে যান।

আপনাদের ঠিক চিনতে পারলাম না,কে আপনারা?

আপনি আমাদের চিনবেন না, কিন্তু আমরা সবাই আপনার চিনি আমরা সালি লাগি আপনার ।

কি আমার সালি ও আছে আগে তো জানতাম না,তাহলে তো ভালোই হলো কিউট কিউট সালি আছে শুনে?এই জান্নাতুন এদিকে আসো তো,(আমাদের থেকে একটু দূরে ছিলো তাই কাছে ডাকলাম )

হুম কি হয়েছে বলো?

এই মেয়েগুলোকে চিনো তুমি,

হুম ওরা আমার খালাত বোন-আর ফুপাতো বোন।

কি আগে বলবে না,আমাকে তোমার বোন আছে?কতো সুন্দর সালিগুলোর সাথে আগে পরিচয় করে দেও নি, তুমি কাজটা কিন্তু ভালো করো নি?

পরিচয় করিয়ে দেই নি ভালো হয়েছে,এখন এখানে না দাড়িয়ে থেকে আমার সাথে আসো বলতেছি (মেয়ে দেখতে মুখ দিয়ে লালা পড়ে তাই না।)

আরে তুমি রাগ করতেছো কেনো (আমি বুঝতে পারতেছি মেয়ে গুলোর সাথে কথা বলা দেখে জান্নাতুন রাগ করতেছে,ওকে আরো রাগার জন‍্য এমন করতেছি )

আপু তুই রাগ করতেছিস কেনো,তুই গেলে যা না আমরা সবাই দুলাভাই এর সাথে একটু আড্ডা দেই।(এক সাথে সবাই বলতেছে )

তোদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন‍্য এখানে আসে নি,চলো আমার সাথে বলতেছি।

বউ শুনো না,আর একটু সালিদের সাথে কথা বলি।

বললাম না তোমাকে আমার সাথে যেথে,এদের সাথে আড্ডাদিতে হবে না।(ওদের সবার কথা শুনে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।কোন মেয়ে চায় না, তার স্বামী অন‍্য মেয়ের সাথে কথা বলুক, সে যতোই নিজের বোন হোক )

দুলাভাই আপনি যান আপুর সাথে এমনিতে আপু রাগ একটু বেশি আমরা না হয় পরে আড্ডা দিবো।

ওকে পরে আড্ডা দিবো সালিকারা।

চলো আমার সাথে,

তারপর জান্নাতুন আমাকে জোড় করে একটা রুমে নিয়ে আসলো।রুমে ভিতরে ঢুকে অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখতেছি।কতো সুন্দর ভাবে গোছানো রুম টা।এটা মনে হয় জান্নাতুন এর রুমে।মেয়েদের রুম এত সুন্দর হয় আগে জানতাম না।

আমি দরজাটা লাগাই দিয়ে সোজা আমার স্বামীর কলার ধরে বলতেছি,
তোমাকে না বললাম ওদের সাথে কথা না বলতে। তুমিও কেমন বেহেয়ার মতো ঢলে ঢলে কথা বলতেছো ওদের সাথে হ‍্যা।তুমি জানো না বউ রেখে অন‍্য মেয়েকে দেখলে চোখে জেনা হয়।খুবেই তো নবী (সাঃ) এর আদর্শর কথা বলতে এখন তুমি কোথায় আছো হ‍্যা,

ওই তুমি আমার কলার ধরলে কেনো আর ওগুলো কি বলো তুমি,সালি গুলো কতো সুন্দর দেখতে কথা না বলে থাকা যায়, কি বলো?আমিও এটা জানি বউকে রেখে বেপর্দা নারীকে দেখলে চোখে জেনা হয়,এমনিতে শয়তানি করলাম একটু।

ঠিক আছে তুমি তোমার সালিদের নিয়ে থাকো,আমি তো কেউ না,ওরায় সব তোমার।

এই কই যাও তুমি আমার সব,কেউ না মানে।

আমি যদি তোমার সব হই, তাহলে আমাকে কথা দাও ওই মেয়েগুলোর সাথে কথা বলবে না।

মেয়েগুলো মানে তোমার তো বোন হয় ওরা।

বোন হোক যতোই, এক সময় বোন ও পর হয়ে যায়,তাই আমি চাই না তোমাকে কোন কারনে হারাতে কথা দাও আর কথা বলবে না ওদের সাথে।

বউ যখন বলেছে তাহলে কথা দিলাম আর কথা বলবো না।এবার হয়েছে।

হুম শুনো না, আমাকে একটু জরিয়ে ধরো না আমার কেমন কেমন যেনো লাগতেছে।

কি বলো তুমি আচ্ছা কাছে আসো জরিয়ে ধরতেছি?তারপর আমি জান্নাতুনকে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাচ্ছি।

শুনছো তোমার বুকে মাথা রাখলে আমার কেনো যে এতো শান্তি পাই আল্লাহ্ ভালো জানে।

তাই,

সব দুঃখ কষ্ট ভূলে যাই,

এটা হচ্ছে আল্লাহ্ তৈরী বন্ধন একে অপরকে মন থেকে ভালোবাসলে স্বামী বুকে মাথা রাখলে দুঃখ-কষ্ট সব ভূলা যায়।আচ্ছা শুনো আমার মাথাটা ব‍্যথা করতেছে তাই ফ্রেস হতে হবে।

ঠিক আছে তুমি বাথরুমে যাও,আমি তোমার কাপড় নিয়ে আসতেছি।

জান্নাতুন এর কথা শুনে বাথরুমের ভিতরে গেলাম।বাথরুম টাও বেশ সুন্দর।তারপর দশ মিনিট ধরে গোসল করলাম কিন্তু জান্নাতুন এর কোন খবর পাচ্ছিলাম না তাই বাথরুমের দরজা হাল্কা খুলে মাথা বাহির করে ডাকতেছি,..

ওগো বউ কই তুমি আমার কাপড় দেও,

এই তো আসতেছি,এই নেও তোমার কাপড়।

ওতো দূর থেকে কিভাবে নিবো,একটু কাছে আসো?

হুম যাচ্ছি এবার নিন।

কাপড় নেওয়ার ছলে জান্নাতুনকেও বাথরুমে ঢুকে নিলাম।

এই কি করতেছো, তুমি আমাকে কেনো বাথরুমে নিয়ে আসলে?

দুই জনে এক সাথে গোসল করবো দেখে।স্বামী-স্ত্রী এক সাথে জরিয়ে ধরে গোসল করা কতো যে মজা তুমি বুঝবা কি?

আচ্ছা তুমি হঠাৎ করে রোমান্টিক হয়ে যাও কেনো বলো তো।

রোমান্টিক সব সময় আমার মাঝে থাকে কিন্তু তুমি বুঝো না।

না, ঠিকে আছে তুমি কথা ভালোই বানাতে পারো।এবার গোসল করা হয়েছে তাই আমাকে ছেড়ে দেও।

তোমাকে না ভেজা কাপড়ে হেব্বি লাগতেছে গো বউ।

তাই বুঝি,

শুনো না বউ একটা কিচ হয়ে যাগ,

এখন কোন কিচ মিচ হবে না,যা করা রাতে করিও ওকে।

তুমি তো এখনো সুস্হ হও নাই।

আমি সুস্হ হয়ে গেছি,

তাহলে কি প্রথম বাসর আমার শশুর বাড়িতে হবে?

যা এগুলো কি বলো তুমি,আমার লজ্জা করে না বুঝি?

রাতে যাও তোমার সব লজ্জা ভেঙ্গে দিবো।

আচ্ছা দিও, কিন্তু এখন ভেজা কাপড় গুলোচেন্জ করতে হবে বেশিক্ষন ভিজে থাকলে অসুস্হ হবে।

ঠিক আছে চেন্জ করো তুমিও ।

ওকে।তারপর আমরা দুই জনে কাপড় চেন্জ করে বাথরুমে থেকে রুমে আসলাম।রুমে আসার পরে হঠাৎ করে রুমের দরজায় কে যেনো ঠক ঠক শব্দ করতেছে।

বউ দেখো তো কে জেনো দরজার ও পাশে।

তুমি বসো আমি দেখতেছি,

একটু পরে জান্নাতুন আমার কাছে আবার আসলো।ওর আসা দেখে আমি বলতেছি,

কে ছিলো গো বউ,

আমার ফুপাত বোন ছিলো,আম্মু খেতে নিচে ডাকতেছে।

ওকে তাহলে চলো আমারো খুদা লেগেছে।

ওকে।তারপর রুম থেকে নিচে চলে আসলাম।নিচে এসে দেখি তখনকার মেয়েগুলো আর কিছু মহিলা চেয়ারে বসে কার জন‍্য যেনো অপেক্ষা করতেছে দেখে বুঝা যাচ্ছে।ওনাদের কাছে যেথে বলতেছে,

এই তো আমাদের জামাই বাবাজি এসে পড়েছে।

এই কথা শুনে বুক ফুইলা গেলো শশুর বাড়িতে এতো জামাই এর সম্মান।তারপর জান্নাতুনকে আর আমাকে পাশা পাশি বসা বলো চেয়ারে।শুরু হয়ে গেলো আমার উপরে অত‍্যাচার।যে আসতেছে সেই আমার প্লেটে খাবার দিয়ে যাচ্ছে।যখন বলতেছি আর দিয়েন না ততোই আরো বেশি করে দিচ্ছে। বউ এর বোন থাকলে মনে হয় দুলাভাই এর কপাল খারাপ একটু পর পর এসে ওরায় খাবার প্লেটে দিয়ে যাচ্ছে।জান্নাতুন শুধু আমার কাহিনী দেখতেছে আর মুচকি হাসি দিচ্ছে।শেষে খেতে খেতে আর খেতে পারতেছিলাম না তবুও আরো খেতে বলতেছে আমি ওখানে আর বসে না থেকে সোজা রুমে দৌড় দিলাম।আমার দৌড় দেখে সবাই হাসতেছে।আমি সোজা রুমে এসে ফ‍্যান ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম বেশি খাইলে যা হয়,জামাই আদর এতো বেশি করেছে যে খিলাতে খিলাতে আমাকে মেরেই ফেলতো একটুর জন‍্য বেঁচে গেছি,

এখন আপনাদের কিছু বলি রোজা রেখে তিনটি কাজ করলে রোজা হবে না,সর্বদা মনে রাখবেন

১▪প্রথমতো মিথ‍্যা বলা যাবে না রোজা রেখে।

২▪দিনের বেলা স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক করা।এখন আপনারা বলতে পারেন ভাই এটা তো হালান জিনিস কিন্তু আল্লাহ্ এই রমজান মাসে হালাল জিনিসকেও হারাম করে দিয়েছেন।তাই কেউ রোজা রেখে স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক করতে চাইবেন না।যে মহিলার উপর রোজা ফরয হয়েছে, তার সম্মতিতে রমজানের দিনে স্বামী-স্ত্রীতে যৌনকার্য সংঘটিত হলে, উভয়ের উপর একই হুকুম কার্যকরী হবে (ক্বাযা করতে হবে ও কাফ্ফারা দিতে হবে)। আর স্বামী যদি জোর করে সহবাস করে তাহলে স্ত্রী শুধু ক্বাযা আদায় করবে, কাফ্ফারা দিতে হবে না। তবে স্বামীকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। যে সব পুরুষ লোক নিজেদেরকে সংযত রাখতে পারে না, তাদের স্ত্রীদের উচিত দুরে দুরে থাকা এবং রমজান দিবসে সাজ-সজ্জা না করা।

৩ ▪এক জনের কথা অন‍্যজনকে বলে বেড়া।কেউ আছে না,এক জনের কথা অন‍্যজনের কাছে বানায় বানায় অনেক মিথ‍্যা বলে মানে যে ব‍্যক্তি নাই কিন্তু তার বিষয়ে সমালোচনা করা এই রোজা রেখে করা যাবে না।

এই তিনটা বিষয় যদি না করেন তাহলে আপনার রোজা সঠিক হবে ইনসাআল্লাহ্।যদি গল্প নিয়ে কিছু বলার বা প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করে জানাবেন উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।

চলবে

রং বদল পর্ব-০৮

0

#রং_বদল
#IH_Iman_Haque
#পর্ব_০৮

আচ্ছা আমি কি পড়বো বলো না,শাড়ি নাকি বোরকা?

আমি যেটা বলবো সেই পড়বে তো।

তুমি যেটা বলবে সেটাই পড়বো।কারন তুমি তো আমার স্বামী, তোমার সব কথা শুনা বা মেনে চলা কর্তব‍্য তাই যেটা পড়তে বলবে সেটাই পড়বো।

ঠিক আছে আমার হিসাবে তুমি একটা থ্রিপিজ পড়ে তার উপরে বোরকা পড়ো।কারন আমাদের নবী (সাঃ) বলেছেন প্রতিটা নারীর পর্দা করা ফরজ।আরো বলেছে নারী তোমার সৌন্দর্য শুধু তোমার স্বামী দেখবে,অন‍্য কেউ নয়।সেই জন‍্য প্রতিটা নারীকে এমন ভাবে চলতে হবে যাতে করে পরপুরুষ তাদের শরীরে একটুও অংশ দেখতে না পাড়ে।

চলুন সবাই আমাদের নবী (সাঃ) এর আদর্শ নিয়ে জীবন গড়ি তাহলে আমরা আখিরাতেও শান্তি পাবো।সব সময় সবাই এটা ভাববেন সৎ পথে পৃথিবীতে বাঁচা কঠিন হলেও আখিরাতে শান্তী পাবে।কথায় আছে না,

কষ্ট করলে,কিষ্ঠ মিলে তেমনি আখিরাতে শান্তী পেতে হলে দুনিয়াতে সৎ পথে চলতে হলে,নবী(সাঃ) এর আদর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

এই তোমার কাপড় পড়া হয়েছি কি?

আমার তো হয়েছে,ছেলেদের বাহির হতে কি টাইম লাগে নাকি?যতো শত টাইম লাগে মেয়েদের আটা-ময়দা মাখতে।

ওই আমি কি আটা-ময়দা মাখি নাকি?

আটা-ময়দা যদি নাই মাখো তাহলে এভাবে কাপড় হাতে ধরে বসে আছো কেনো তাড়াতাড়ি পড়ে নেও,বলেই তো দিলাম কি কি পড়বে?

আমি ওই জন‍্য বসে আছি না,শুধু তোমার জন‍্য বসে আছি।

আমার জন‍্য কেনো বসে থাকবে তুমি,
.
কারন তুমি রুমের ভিতরে আছো তাই আমি কাপড় চেন্জ করতে পাড়ি নি।

আরে আমি রুমে আছি তো কি হয়েছে,আমার সামনে চেন্জ করলে কি সমস‍্যা বুঝতেছি না?

সমস‍্যা হচ্ছে আমি তোমার সামনে চেন্জ করতে পারবো না,লজ্জা করে।

বউ তোমার লজ্জা যে কবে শেষ হবে আল্লাহ্ ভালো জানে।(আগে সুস্হ তুমি তারপর বাসর টা করি আগে, দেখবো কেমন লজ্জা লাগে তোমার।)

তুমি বাহিরে একটু যাও না গো,আমি কাপড়টা পড়ে নেই।

আমি বাহিরে যেথে পারবো না,এই যে আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম আর যেথে পারবো না কোথাও ।চেন্জ করতে হলে আমার সামনে চেন্জ করো, না হলে আসো দুই জন দুইজনাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাই কোথাও যেথে হবে না।

তুমি খুব খারাপ (কি এক মছিবতে পড়লাম আবার বাবা-মা নিতে আসছে আমাদের দাড়িয়ে দাড়ি এগুলো ভাবতেছি )

বউ তুমি এতো বোকা কেনো বলো তো।

আমি বোকা মোটেও না,

আমি বলবো আমার বউ একটা বোকা,যে কিনা কাপড় চেন্জ করার জায়গা পাচ্ছে না,আবার আমার সামনে চেন্জ করলে নাকি লজ্জা করে।

তো রুমে ছাড়া কই চেন্জ করবো।

কেনো বউ তুমি তো বাথরুমে গিয়েও চেন্জ করতে পারো,তুমি শুধু রুম নিয়েই পড়ে আছো?

ধন‍্যবাদ, তোমাকে আমি তো বাথরুমের কথা ভূলেই গেছিলাম।

আরে বউ আসতে যাও দৌড়াচ্ছো কেনো পড়ে যাবে তো।তুমি পড়ে গিয়ে অসুস্হ হলে আবার আমার জ্বালা হবে।

আমি পড়বো না,তুমি শুয়ে থাকো আমি পাঁচ মিনিট পড়ে আসতেছি চেন্জ করে।

ওকে আমি শুয়ে শুয়ে তোমার জন‍্য ওয়েট করি।জান্নাতুন যতক্ষন না বাথরুম থেকে আসতেছে আপনাদের সাথে কিছু কথা শেয়ার করি,
গল্পটা আমার হচ্ছে নারীদের পিরিয়ড বিষয়ে তাই এক আপু আমাকে পিরিয়ড বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলো যে ভাই রমজান মাসে পিরিয়ড হলে আমাদের কি করোনিও, আমি বলেছিলাম আজকের পার্টে ওই বিষয়ে তুলে ধরবো তাই মাসায়ালাটা দিয়ে দিলাম,

মহিলাদের পিরিয়ড হওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আল্লাহ তায়ালা তাদের এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। এতে তাদের কোনো দোষত্র“টি নেই। পিরিয়ড অবস্থায় নামাজ মাফ। আর রোজা পিরিয়ড অবস্থায় রাখা নিষেধ। এ রোজা না রাখায় তাদের কোনো গোনাহ নেই। তবে পরে তা কাজা করতে হয়। এজন্য রমজান মাসে পিরিয়ড হলে তা নিয়ে মনঃক্ষুণœ হওয়ার কোনো যুক্তি নেই। তবে কেউ যদি শুরু হওয়ার আগেই ওষুধ-বড়ি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা রাখেন তবে সে রোজা সহিহ হয়ে যাবে। ফলে তা আর পরে কাজা করতে হবে না। (শামী ১/৫০৮, আলমগীরি ১/৩৮, বাদায়ে ১/৩৯, ফাতহুল কাদির ১/১৪৫, আপকে মাসায়েল ৩/২০৭)।

এই তুমি একা একা কার সাথে কথা বলতেছো।

আরে তুমি আসছো,কখন আসলে চেন্জ করে ,!

এই তো একটু আগে,এখন বলো একা একা কার সাথে কথা বলতেছিলে,

আমি এতোক্ষন কথা বলতেছিলাম পাঠক বন্ধুদের সাথে।

পাঠকদের সাথে আবার কিসের কথা বলতেছিলে?

ও তুমি বুঝবে না,পাঠকদের রোজার মাসায়ালা দিলাম।

কি মাসায়ালা দিলে আমাকে একটু বলো?

তোমাকে পরে বলবোবববব,

তোমার আবার কি হলো, পরে বলবো বলে আমার দিকে এমন করে কি দেখতেছো?

চূপ করে এক ধেনে দেখতেছি।

কি হলো বলো আমাকে এমন ভাবে দেখতেছো কেনো,আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগতেছে?

মোটেও খারাপ লাগতেছে না তোমাকে,অনেক সুন্দর লাগতেছে যে তোমার উপর থেকে আমি চোখ সরাতে পারতেছি না,।

তাই বুঝি।

হুম অনেক সুন্দর লাগতেছে।

ওনার এমন কথা শুনে লজ্জা শেষ আমি।

ওরে বাবা রে প্রংসা করলেও বুঝি মানুষ লজ্জা পায়।

তুমি এমন ভাবে বলতেছো লজ্জা পাওয়া ছাড়া আমার উপাই নাই।

আর লজ্জা পেতে হবে না,লজ্জাবতী বউ আমার এখন বোরকাটা পড়ে নেও তাড়াতাড়ি আমি চাই না আমার বউ এর সৌন্দর্য বাহিরের কেউ দেখুক।বউ এর সৌন্দর্য শুধু আমি দেখবো।

ঠিক আছে আমি বোরকাটা পড়তেছি।এই কথা বলে আমি বোরকাটা পড়তে শুরু করলাম।প্রায় পাচঁ মিনিট পরে বোরকাটা পড়া শেষ হলো।বোরকা পড়া শেষে আমি ওনাকে বলতেছি,

এই যে আমার পরানের স্বামী আমাকে বোরকা পড়ে কেমন লাগতেছে দেখো তো।

মাস্আল্লাহ্ অনেক সুন্দর লাগতেছে বোরকা পড়ে।

সত‍্যি,

হুম সত‍্যি,আচ্ছা তোমার পেট ব‍্যথা কমেছে?

হুম একটু একটু করে আছে পেট ব‍্যথা।

ও আর একটু ধর্য‍্য ধরো সব ঠিক হয়ে যাবে।

ওকে,তাহলে এখন বাহিরে চলুন বাবা-মার কাছে যাই।

এই দারাও তুমি আগে আমার কাছে আসো একটু কাজ আছে।

কেনো কি হয়েছে গো?

আরে আগে আমার কাছে আসো তো ,

হুম এই যে তোমার কাছে আসলাম,কি হয়েছে এবার বলো?

আমি জান্নাতুনকে কাছে ডেকে একটা চুমু দিলাম কপালে।

কি হলো কপালে চুমু দিলে কেনো?

নবী (সাঃ) এর সুন্নত পালন করলাম।বউ এর কপালে চুমু দিয়ে।

আলহামদুলিল্লাহ্ তোমাকে ধন‍্যবাদ নবী (সাঃ) এর সুন্নত পালন করার জন‍্য।

এবার চলো বাবা-মা আমাদের জন‍্য অপেক্ষা করতেছে।

হুম চলো তাহলে।তারপর আমরা দুই জনে রুম থেকে বাহির হয়ে নিচে নামলাম।নিচে এসে দেখি সবাই কি যেনো একটা বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করতেছে?আমাদের দেখে ওনারা হাসা বন্ধ করে দিলো।সবার মাঝে দেখতেছি আমার ছোট বোন এশায় আছে।আমরা দুই জনে ওনাদের পাশে গিয়ে দাড়ালাম।

তোমরা আসছো।(আমার মা বলতেছে )

হুম মা।

বিয়াই সাহেব আপনাদের মেয়ে জামাই বাহির হয়েছে, এখন আপনারা ওদের নিয়ে যেথে পাড়েন।

ওকে তাহলে আমরা মেয়ে জামাইকে নিয়ে যাচ্ছি।

তারপর সবাইকে বিদাই দিয়ে শশুবাড়িতে যাও পাড়ি দিলাম।শুনেছি শশুর বাড়ি মধুর হাড়ি,দেখি কতো মধু আছে শশুর বাড়ি।

কথা আছে না,

টাকা না থাকলে নাকি,বউ জালনা দিয়ে পালায় সেই দষা হয়েছে আমার।অভাব কাকে বলে বুঝতেছি।আজকে সারাদিন ফোন চার্জে লাগিয়ে রেখে ছিলাম কিন্তু একটুও চার্জ হয় নি,পরে চেক করে দেখি চার্জার নষ্ট হয়ে গেছে।চার্জার কি দিয়ে যে কিন্তু বুঝতেছি না,ভাবতেছি আমার তো দুইডা কিটনী আছে একটা বিক্রি করে দিবো ভাই আপনারা যদি আমার অচল কিটনী নিতে চান আমার সাথে যোগাযোগ করিয়েন,কিটনী বেচে ফোনের চার্জার কিন্তে হবে।অভাবে সভাব নষ্ট।

(চলবে)