Sunday, June 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1469



ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-২০+২১

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২০
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলা সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফিহাকে নিয়ে আদর করে খাইয়ে দিচ্ছে।পাশে হিয়াও কথা বলছে। মোল্লিকা কিচেনে থেকে মাঝে মধ্যে এসে ওদের সাথে কথা বলছে আবার রান্না ঘরে রান্না করছে।পরিচারিকা হেল্প করছেন তার কাজে। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠায় সবাই একটু অবাক হয়েই গেছে।

এসময় আবার কে আসলো।মা আপনাকে যেতে হবে না আমি যাচ্ছি।

নীলা ফিহাকে রেখে আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে দিলো।দরজা টা খুলতেই সে দেখলো একজন অচেনা মহিলা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
সে একজন এলিগেন্ট বিউটি ছিলো।তাকে দেখেই প্রথম যে চারটি শব্দ মাথায় আসে তা হলো
ভদ্র, মার্জিত, সুন্দরী, যুবতী। নীলা ফ্রিজ হয়ে গেলো।

পিছনেই শুভ্র এসে আস্তে আস্তে থেমে গেলো।
সে উচ্চ কন্ঠে ডেকে উঠলো —

তুহিনা——-কেমন আছিস তুহি।

তুহিনা সরকার আর কোনো দিকে না দেখে।শুভ্রর দিকে এগিয়ে গেলো।

নীলা সেই আগের ন্যায় তাকিয়ে ছিলো।মেয়েটির খোলা লম্বা কালো চুল গুলো বাতাসে উড়ে। অর ব্রাইট আর বিউটিফুল মুখটাকে দেখেই সুন্দরী, ভদ্র, মার্জিত রুপ দিয়েছিলো! ও একটা সাদা স্যুটেট জ্যাকেট পরে ছিলো। তার নিচে একটা গ্রে কালারের ড্রেস পরেছিলো। ওকে খুবই উজ্জ্বল!বুদ্ধিমতী, গ্রেসফুল আর দয়ালু মনে হচ্ছিলো।তাকে একনজরেই সবদিক থেকেই একজন সুন্দরী ধনী যুবতী বলে মনে হচ্ছিলো।

ওখানে থাকা সকলেই শুভ্রর মুখে তুহি নাম শুনেই বুঝে গেছে। যে কে এসেছে।

হিয়া আর মোল্লিকা এক সাথে সামনে থাকা মহিলার দিকে তাকালো।

আয় আয় ভেতরে আয়।তোরই অপেক্ষা করছি।

তুহিনা সরকার মিষ্টি করে হেসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো।

শুভ্রও তুহিনাকে জড়িয়ে ধরলো। সে ভুলেই গেছিলো যে সেখানে নীলা দাঁড়িয়ে ছিল।

নীলা এক মুহূর্তের মধ্যে থমকে গেলো। সে বুঝতে পারছিলো না তার এই মুহূর্তে কি করা উচিত।
সে একটা ঘোর লাগা চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সে বুঝতে পারছিলো যে তাকে খুবই বোকা বোকা দেখাচ্ছে । নীলার কাছে ওদের কে একদম পারফেক্ট ম্যাচ মনে হচ্ছে। সে অবভ্যিয়াসলী একজন ফ্যাসন্যাবল স্টাইলিস্ট ওমেন লাগছিলো। ওদের খুবই মানিয়েছে।

এখানে আর না থাকাই শ্রেয়।

নীলা ওখান থেকে চলে এসে ফিহার কাছে গিয়ে বসে পরলো। তার কেমন যেন অদ্ভুত লাগতে শুরু করলো।

আরে তুহিনা যে কেমন আছো মা।ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি। এসো ভেতরে এসো।

তুহিনা শুভ্রকে ছেড়ে দিলো।

তুহিনা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে মোল্লিকার কাছে গেলো।

জি আন্টি আমি ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো।

হ্যাঁ মা ভালো আছি।তোমার বাবা মা কেমন আছেন। উনাদের অনেক দিন দেখি না। একদিন সময় করে আসতে বলো।

জি আন্টি আব্বু আম্মু ভালো আছে। আমি আসতে বলবো উনাদের।

ওখানে থাকা সবার দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নীলা আর ফিহার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো।

তারপর এগিয়ে গিয়ে—-

আরে হিয়া তুমি কেমন আছো। তোমার পায়ের ব্যাথা কেমন!

হিয়া মিষ্টি করে হেসে বললো। ভালো আছি তুহিনা আপু তুমি কেমন আছো।

তুহিনা সবার সাথে কথা বলতেই নীলার দিকে তাকালো। তুহিনার সুন্দর নরম চিবুক টা খানিকটা উপরে উঠে গেলো। এবং সে একটা এরোগেন্ট এক্সপ্রেশন নিয়ে নীলার দিকে তাকালো। নীলার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সে চোখ ফিরিয়ে নিলো এবং শুভ্রর উপর তার দৃষ্টি রাখলো।

শুভ্র কে ও আর বাচ্চাটি আংগুল দিয়ে ইশারা করে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে—

আরে তুহি কি তুই কি এইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবি চল বসে কথা বলি।

ওকে ঠিক আছে চল।

মা দু কাপ কফি দিও তো।

ঠিক আছে তোরা বস আমি আনছি।

তুহিনা আর শুভ্র কিছুটা দুরে থাকা সোফায় বসে পরলো।

নীলা চোখে পানি চলে এসেছে। সে ফিহাকে বলল —

এঞ্জেল মা তুমি অই দিকে গিয়ে খেলা করো।আন্টির সাথে।

ফিহা কোনো কথা না বলে দৌড়ে হিয়ার কাছে চলে গেলো। হিয়াও ফিহার সাথে খেলছিলো।

কেউ নীলার মনের অবস্থা বুঝতে পারলো না। নীলা বুঝতেই দিলো না।

নীলা সেখানে আর বসে থাকতে পারলো না।দোঁড়ে ঘরে চলে গেলো।

নীলাকে এইভাবে দৌঁড়ে চলে যেতে দেখে শুভ্র মাথা তুলে একটু তাকালো আর ভ্রু কুচকালো। হঠাৎ এই মেয়ের কি হলো এরকম ভাবে চলে গেলো কেন।

শুভ্র আর তুহিনা বসে গল্প করছিলো।মোল্লিকা এসে কফি দিয়ে আবার চলে গেলো।

এখন বল কে অই বাচ্চা আর মেয়েটা।এই কি তোর বউ।
শুভ্র তুহিনাকে সবটা খুলে বললো।

তোকে যে আমি ম্যাসেজ দিয়েছিলাম তুই কি সেগুলো দেখিসনি।পরিস্থিতি এমনি ছিল যে আমাকে বিয়ে টা করতে হয়েছে।তাছাড়া আমি ওকে ভালোবেসে ফেলি প্রথম দেখায়।আর কেউ কোনো ক্ষতি করবে সেটা তো আমি আর বসে বসে দেখতে পারি না তাই না।

ওমাই গড তোর সাথে এতো কিছু হয়ে গেছে আর আমাকে তুই কাল সব কিছু জানালি।

ঠিক আছে। তো আমাকে যা করতে হবে তা না হয় বুঝলাম। আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো।আমি আমার প্রান টাও দিয়ে দিতে পারি তোর জন্য। তুই আমার সেই ছোট বেলার বন্ধু।

তো তোর বউ এর সাথে আলাপ করালি না তো।
একে তো না জানিয়ে বিয়ে করছিস। আর এখন বউয়ের সাথে আলাপ অব্দি করালি না।

তুই তো অনেক কেই হেল্প করিস। আর আমি জানি তুই ছাড়া আমাকে কেউ এই কাজে হেল্প করতে পারবে না।।
ওর সাথে আলাপ করিয়ে দিবো। ও আসুক। তারপর।

নীলা ঘরে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পরল। কেন জানি না তার খুব খারাপ লাগছিলো।তার চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগলো। এটা কেন হচ্ছে বুঝতে পারলাম না। আমি কেন উনার সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারছি না। আমি কি তাহলে শুভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছি তাই এরকম হচ্ছে। দাদি বলতো বিয়ের পর নাকি স্বামীর স্ত্রী একে অপরের প্রতি এমনি ভালোবাসা হয়ে যায়।আল্লাহ তায়ালা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন।

আমারও কি তাই হলো। যাকে চিনতাম না জানতাম না তার প্রতি এই মায়া কেন কাজ করছে।আর তাছাড়া স্বামী স্ত্রীর যেমনই হোক না কেন।নিজের স্বামীর সাথে অন্য কাউকে দেখলে সবারই খারাপ লাগে। না না উনারা তো বন্ধুও হতে পারে আমি শুধু শুধুই ভাবছি।

তখনি ফিহা কোত্থেকে দৌড়ে আসলো। নীলাকে পিছনে থেকে পা জাপ্টে ধরলো।

নীলা পিছনে ঘুরে তাকালো। আরে এঞ্জেল তুমি।

মা তোমার কি মন খারাপ। তুমি কি কাদছো।

না তো মা আমার তো মন খারাপ না।তোমাকে কে বললো আমার মন খারাপ।

আমি তো দেখলাম।তুমি কাদছিলে।

না এঞ্জেল মামুনি। মুখে একটা হাসি টেনে। চোখ মুঝে বললো।কয় দেখ তো আমি তো হাসছি।
চলো আমরা এখানে বসে গল্প করি।

মা তুমি।কি জানো তুমি যখন ছিলে বাবা আমাকে বকে ছিলো।আমার খুব ব্যাথা লেগেছিল।

আহারে কোথায় ব্যাথা লেগেছিল এঞ্জেল সোনার।

এইইই খানে ব্যাথা লেগেছিলো।হার্টের কাছে হাত দিয়ে দেখালো ফিহা।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার বাবাকে বকে দিবো।আমার এঞ্জেল সোনাকে বকেছে।খুব করে বকে দিবো।আর এখন তো আমি আছি কার সাদ্ধি যে আমার এঞ্জেলকে বকে।

তুমি চলো এক্ষুনি বকে দিবে যাতে আর আমাকে না বকে।চলো না মা।

ফিহা এক প্রকার নীলার এক হাতের আঙুল টেনে নিয়ে আসছে।

নীলা সেখানে আসা মাত্রই তার কানে একটা কথায় আসলো। তুহিনা আর শুভ্র ডিভোর্স পেপার রেডি করার কথা বলছে। নীলা এই কথা টা শুনা মাত্রই সেখানেই কিংবর্তবিমূড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো পাথরের ন্যায়।

ফিহা নীলার হাত ধরে টান দিতেই সে কিছুটা নড়ে উঠলো।

এঞ্জেল এখন তোমার বাবা ব্যাস্ত আছে। আমি পড়ে তোমার বাবার সাথে কথা বলবো।

নীলা দেখলো শুভ্র আর তুহিনা এখনো খুবই সুন্দর ভাবে হেসে হেসে কথা বলছে। তারপর ওদের দিক থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিলো।

ঠিক আছে মা। তুমি কিন্তু বকে দিও পরে মনে করে।

ঠিক আছে মা এই বলে ফিহার গাল টেনে দিয়ে কোলে তুলে নিলো।

নীলা সোফায় গিয়ে ফিহাকে নিয়ে বসে পরলো।

আমি তোর কথা মতো সব কিছু দেখে নিবো।আর হ্যাঁ আমাকে এখানেই থাকতে হবে। তাহলে আমার কাজের সুবিধা হবে।

ঠিক আছে তুই এখানেই থাকবি। আমি মাকে বলে দিচ্ছি। তুই এখানেই থাকছিস।

নীলা এক ধ্যানে শুধু সেই কথায় ভেবে যাচ্ছে। আচ্ছা উনি আমাকে কি সত্যিই ডিভোর্স দিয়ে দিবে।কিন্তু আমি যে উনার চোখে ভালোবাসা দেখতে পেলাম।

ফিহা এটা সেটা করছে। হিয়া ডাকতেই দৌঁড়ে ওর কাছে চলে গেলো ।

নীলাকে মুখ কালো করে বসে থাকতে দেখে একজন পরিচারিকা এসে নীলার সামনে বসলো।

মেডাম কি ভাবছেন। স্যার তুহিনা ম্যাম সেই ছোট বেলা থেকেই বন্ধু। উনাদের মধ্যে আলাদা কোনো সম্পর্ক নেই।আসলে আপনার আগে স্যার এক মাত্র তুহিনা ম্যাম এর সাথেই শুধু কথা বলতেন।তাছাড়া আর অন্য কোনো মেয়েলি ব্যাপার কিন্তু স্যার এর নেই। আর সে জন্যই তো সেদিন এতো কিছু হয়ে গেলো। উনাদের বন্ধুত্ব একদম পবিত্র। যেখানে কোনো খাত নেই।আপনি স্যারকে ভুল বুঝবেন না প্লিজ। আমি সেই ছোট বেলা থেকেই উনাকে দেখছি। তুহিনা ম্যাম খুবই ভালো মনের মানুষ।

আচ্ছা উনারা দুজন যদি বহু বছর থেকেই পরিচয় থাকে উনি কোথায় ছিলেন।

মেডাম আপনি তো জানেন স্যার কেমন মানুষ। উনার মতো সৎ চরিত্রের লোক কিন্তু একটাও পাবেন না। কিন্তু আমরা ছাড়া বাইরের মানুষ জন খুব কম জানেন উনাদের বন্ধুত্বের বিষয় টা।

নীলা এতক্ষন পরিচারিকার সব কথায় শুনছিলো কিন্তু কিছুই বললো না।সে চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেলো।

মোল্লিকা সবে মাত্র রান্না ঘর থেকে আসছিলো এসেই দেখলেন নীলা মুখটা শুকনো করে চলে গেলো। উনি হয়তো ব্যাপারটা ধরতে পারলেন।মায়েরা হয়তো সব কিছুই বুঝতে পারেন সন্তানদের কখন কি হয়।

চলবে—–

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২১
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলা সোফায় বসে বসে নিজের মনে পা দুটো তুলে বসে গপগপ করে খাবার খাচ্ছে।নীলার যখন মন খারাপ থাকে বা রেগে থাকে তখন সে ইচ্ছে মতো খাবার খাই আর তার রাগ কমে। মাঝে মাঝে সে যখন রেগে থাকতো বা মনে আঘাত পেতো কিছু বলতে পারতো না রিশিকার উপর সে তখন দাদির ঘরে বসে এইভাবে খাবার খেতো। তাহলে তার রাগ বা মন খারাপ তা দুর হয়ে যেতো। তার মনে হতো খাবার খেতে খেতে সে রাগ টাকেও চিবিয়ে খেয়ে ফেলতো। তার এই রাগ না কমা অব্দি সে খেতেই থাকবে। আর দাদি নীলার এসব বাচ্চাদের মতো কান্ড দেখে হাসতেন।

শুভ্র দেখলো যে নীলা সোফায় বসে খুব বিস্রি ভাবে পা তুলে কিভাবে খাবার খাচ্ছে।

শুভ্র বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে বললো তুমি কি একটু হাইজিনিক হতে পারো।

নীলা মাথা তুলে তাকালো সে কটমট করছে রাগে।আমি হাত ধুয়েই খাচ্ছি। আপনাকে কে বললো আমি হাইজিনিক নয়। বলেই আবার খেতে শুরু করল।

শুভ্র ওর খাওয়ার দিকে তাকালো নীলা যে হাত দিয়ে খাচ্ছিলো তার সারা হাতে এটো লেগেছিল।
শুভ্রর ভ্রু দুটো আরও গভীর হলো।

তুমি কি কোনো ম্যানার্স জানো না। ঠিক করে খাও। এইভাবে কেউ খাবার খাই।

নীলা আবারও মাথা তুললো আর বললো—
হ্যাঁ সবাই আপনার ওই তুহিনার মতো ভদ্র আর মার্জিত হয়না।

ইউ আর রাইট। আমার খাবার দাবার ব্যাপারেও কোনো ম্যানার্স নেই।আমি আমার জন্মের পরই আমার মা মারা যায়। আর আমার বাবা সে তো আমাকে কোনো দিন তার নিজের মেয়ের মতো ট্রিট করেন নি।আর আমার সৎমা তো আমায় টাকার জন্য বিক্রিই করে দিতে চেয়েছিলেন। সো কেউ আমাকে কোনো ম্যানার্স বা এডিকেট শেখায়নি।

ওয়েট ওয়েট এক্ষুনি তুমি কি বললে আরেক বার বলো।বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন মানে।

নীলা চোখ বড় করে ফেলে। এটা আমি কি বলে ফেলেছি। মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে।এখন কি উত্তর দিবো আমি।

কি হলো চুপ কেন। বলো এটা তুমি কি বললে।
বিক্রি করতে চেয়েছিলেন মানে টা কি।

কয় না তো আমি কিছু বলি নি।আপনি যান আমি খাচ্ছি। আমাকে খেতে দিন।

হাউ ইভার আপনার মতো সকলের জীবনে এতো সময় ও থাকে না।ম্যানার্স বা এডিকেট,এতো বদোর করার মতো। আমার কাছে জীবনের মানে হলো নিজেকে সম্মান করা।তাই আমি এসব কিছু জানি না। আর আমি কোনো দিন মিস তুহিনা সরকার ও হবো না। ওকে আপনার যদি আমাকে খেতে দেখতে আনকম্ফোর্টেবল লাগে আমি চেষ্টা করবো তোমার সামনে না খাওয়ার। তাছাড়া এখন আমার দিকে তাকানোর মতো আপনার টাইম ও নেই। আপনার তুহিনা আছে না।আমি তো দেখলাম আজ সারা দিন আমার সাথে একটা কথাও বলেন নি।

শুভ্র ক্রব্ধ হয়ে বললো।ইয়েস দ্যাটস রাইট। তুহিনা সত্যিই একটা ভদ্র মার্জিত ভালো মেয়ে।আর তুমি এতো বলো কিভাবে এক সাথে হ্যাঁ। এটলিস্ট ও তোমার মতো এভাবে হাত দিয়ে গপগপ করে খাই না।

এটা বলতে বলতেই শুভ্রর চোখ নীলার এটো লাগা নোংরা হাতের দিকে চলে গেলো।

আর তুমি কথা ঘুরাচ্ছো কেনো। আমি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি।তোমাকে তোমার সৎমা বিক্রি করতে চেয়েছিলেন কেন বলো।

নীলা নিজের দিকে তাকালো । ওর ও একটু ইম্ব্যারেস ফীল হলো। কিন্তু ও এটা তে ইউসড ছিলো। তাই এতে ওর খুব বেশি এলো গেলো না। আর নীলা শুভ্রর প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ার জন্য কুইকলি ওর একেকটা আঙুল চাটতে শুরু করলো।

নীলা মাথা তুললো এবং শুভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর চোখ রাগে গরম হয়ে আছে। সে এক দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তার চোখ লাল হয়ে গেছিলো। সে এমন ভাবে নীলার দিকে তাকিয়ে ছিলো যে দেখে মনে হচ্ছিল সে তাকে এক্ষুনি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।

নীলা জানে এখন এখানে থাকলে বিশ্বের দ্বিতীয়যুদ্ধ বুঝি এক্ষুনি শুরু হয়ে যাবে। রাগ করবেন না আমি আর আপনার সামনে খাবো না। নীলা ভয়ে ভয়ে হাসলো।আর সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে আসলো।

শুভ্র নীলার এরুপ কান্ডে হাসবে না রাগবে বুঝতে পারলো না। তবে সে একটা বিষয় নিয়ে খুব বিষন্য হয়ে পরলো নীলার মুখ থেকে কথা বের করতে পারলো না। তুমি যতই কথা ঘুরাও কেন আমি তো এর রহস্য ভেদ করবই।এট এনি কোস্ট।

শুভ্র আর কিছু না ভেবে ভেতরে চলে গেলো।

নীলা ও ফিহার কাছে গিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে আর মোল্লিকার সাথে কথা বলছে।হিয়াও কথা বলছে।টুকটাক।

নীলা এই কদিনে বেশ ভালো ভাবেই লক্ষ্য করেছে যে হিয়া মেয়েটার চোখ মুখে জুরে সব সময় একটা বিষন্যতার ছাপ আছে।খুব প্রয়োজন না হলে মেয়েটি কথা বলে না। কিন্তু মেয়েটা যে মনের দিক থেকে একেবারে খাটি একটা মানুষ নীলা এটাও বুঝেছে।

তার মনে হঠাৎ করেই একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো।হিয়ার পা কি জন্ম থেকে এমন নাকি কোনো এক্সিডেন্ট ওর জীবন টা এই ভাবে তছনছ করে দিয়েছে। আমি কি একবার জানতে চাইবো।নীলা ফিহার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আর ভাবছে প্রশ্নটা করা কি ঠিক হবে। করেই ফেলি যা হবার হবে।

এদিকে মোল্লিকা দেখতে পেলো নীলা গভীর ভাবে কি যেনো ভাবছে।

কি ভাবছো মা।কি হয়েছে।

মা কিছু মনে করলে একটা কথা জানতে চাইবো।

হিয়া এগিয়ে এসে বললো আরে ভাবি এতো কিন্তু কিন্তু করছো কেন বলো না কি বলবে।

হ্যাঁ মা বলো কি কথা জানতে চাও।

আসলে মা হিয়ার পা কিভাবে এরকম হলো।

প্রশ্নটা শুনা মাত্রই হিয়া কিছুটা দুরে চলে গেলো। ওর চোখে পানি চলে এসেছে।

মোল্লিকার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো মুহূর্তেই।

নীলা কথাটা বলেই আহাম্মক হয়ে গেলো। সেতো ভাবেনি যে এরকম একটা সিচুয়েশনে পরবে।

নীলা হিয়ার কাছে এগিয়ে গেলো —-

আ্যম স্যরি হিয়া আমি বুঝতে পারিনি তুমি হার্ট হবে।আমি সত্যিই তোমাকে হার্ট করতে চাইনি।বিলিভ মী। আ্যম এক্সট্রেমলী স্যরি। প্লিজ বোন তুমি কেদো না।

হিয়া প্রতিউত্তরে কিচ্ছু বললো না। চোখ মুছে নিলো হাতের উল্টো পাশ দিয়ে।

মোল্লিকা মুখ গম্ভীর করেই বললো। বউমা সময় হোক সবটা জানতে পারবে।এখন তুমি যাও।

নীলার তার শাশুড়ী মায়ের গম্ভীর মুখ দেখে আর কোনো কথা না ঘরের দিকে পা বাড়ালো।আর তাছাড়া শুভ্র এখন তার সাথে রেগে আছে। না জানি কি হয় আজ ঘরে গেলে। নীলার মন চাইছিল না আসতে। হিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে চলে আসলো।সে কি নিজের অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেললো। হিয়ার পায়ের বিষয়ে জানতে চেয়ে ভুল করে ফেললো না তো।

নীলা খুব সাবধানে ভয়ে ভয়ে এক পা এক পা করে শুভ্রর ঘরে ঢুকতেই দেখলো তুহিনা আর শুভ্র বসে আছে। খুব গভীর ভাবে কিছু নিয়ে ডিসকাশন করছে কিছু না।

নীলা নক না করেই ভেতর ঢুকে পরে।

আর শুনতে পাই শুভ্র বলছে কাজ কত দুর পেপার কি রেডি করছিস।

না বেশ কিছু দিন টাইম লাগবে পেপার রেডি করতে।

নীলার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায় সে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তাহলে কি শুভ্র সত্যিই ডিভোর্স পেপার রেডি করার কথায় বলছে।শুভ্র কি তাকে ডিভোর্স দিয়ে অই তুহিনা কে বিয়ে করবে।

নীলা একটু সরে আসতে একটা ফ্লাওয়ার ভ্যাস এর ওর সাথে হাত লেগে যায়।

অমনি শুভ্র আর তুহিনা দুজনের হাতে নীলার দিকে তাকায়।

হ্যেই ঘরের ভেতর যদি কেউ থাকে তাহলে যে নক করতে হয় জানো না।আমি জানতাম না তোমার মধ্যে এই সামান্য ম্যানার্স টুকুও নেই। শুভ্র রেগে বললো।কারণ তখন কার রাগ শুভ্রর মধ্যে এখনো পুষে রেখেছে। যা এখন নীলার উপর উগ্রে দিলো।

নীলার চোখ থেকে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরল।

আহ শুভ্র তুই ওর সাথে এমন ভাবে কথা বলছিস কেন। ও বুঝতে পারে নি। তুই ওর সাথে এরকম ব্যবহার করতে পারিস না। আমি যাচ্ছি তোরা কথা বল।

না না ম্যম আমি চলে যাচ্ছি। আপনারা কথা বলুন
আমার সত্যিই নক করে আসা উচিত ছিল। স্যরি স্যার আর হবে না।এরকম ভুল।আমি এক্ষুণি চলে যাচ্ছি।

স্যার কথা টা শুনে শুভ্রর যেন বুকের মধ্যে তীরের বেগে লাগলো। নীলা ওকে স্যার বলছে।

তুহিনা ওকবার শুভ্র আর একবার নীলার দিকে তাকিয়ে বললো–+

আরে না না তুমি কেন চলে যাবে।আমি চলে যাচ্ছি।আমাদের তো প্রায় কাজ শেষ। বাকি যা আছে সেটা কাল করে নিবো।

এই বলেই তুহিনা নীলার দিকে মুচকি হেসে চলে গেলো। নীলা বাইরে বেরিয়ে আসতে নিচ্ছিলো।তখনি তার হাতে টান অনুভব করলো।

শুভ্র নীলার হাত টেনে ধরেছিলো।

কোথায় যাচ্ছো।যাও চুপটি করে গিয়ে বসো। আরএকটা কথাও আমি শুনতে চাই না।

নীলা নিজের হাত শুভ্রর হাত থেকে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে খাটের উপর গিয়ে বসে পরলো।

শুভ্র কিছু একটা মনে করে নীলার অনেক টা কাছে চলে গেলো। নীলা হঠাৎ শুভ্র তার এতো কাছে আসায় পিছিয়ে খাটের সাথে লেপ্টে গেল।
নীলা কনফিউজ ভাবে শুভ্রর দিকে তাকালো।

একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো।এই আপনি কি করছেন। পিছিয়ে যান বলছি।আমি কি ভয় পাই নাকি আপনাকে।

আচ্ছা তাই ভয় পাও না বুঝি।তো এই ভাবে পিছিয়ে গেলে কেনো।

আপনি হঠাৎ করে এইভাবে কাছে আসলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।হুটহাট করে আমার কাছে আসবেন না।

আর এরকম ভাবে ক্যাজুয়ালী জিব বের করে আর কোনো দিন আঙুল চেটো না। স্পেশালি একটা যুবক পুরুষ মানুষের সামনে তো নয় ই।

হোয়াট নীলা চট করে মুখটা শুভ্রর দিকে এগিয়ে এনে বললো আপনি ঠিক মীন করছেন হুহ্। নীলা সত্যিই বুঝতে পারলো না শুভ্র ঠিক কি মীন করলো।

তুমি কি জানো সে দিন যখন তোমার কাছে গেছিলাম তোমার ফেস টা কিরকম ভাবে লাল হয়ে গেছিলো। মনে হচ্ছিলো যেনো এক্ষুনি ফেটে রক্ত বের হবে। ইউ আর সো ব্লাসিং ইউ নো। যেমন টা এখন হচ্ছো।

নীলার মুখ ইমিডিয়েটলী আরোও বেশি লাল হয়ে উঠলো। নীলার কানের লতি লজ্জায় গরম হয়ে উঠলো।

শুভ্র নীলার আরোও কিছুটা কাছে চলে এলো।সে যখন নীলার লাল হয়ে যাওয়া মুখ টা দেখলো সে এতটাই কোমল। তার নারী সুলভ কোমনীয়তা তার আশেপাশে ছড়িয়ে পরেছিলো। নীলার গভীর কালো চোখ দুটো তে একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।
নীলা একেবারে খাটের সাথে আধো শোয়ার মতো হেলে গেলে।

নীলা শুভ্রর চোখ দেখেছিল। ওর চোখ দুটো কোনো অতুল কহরের মতো গভীর। এই কাছাকাছি আসা রুমের ভেতরের পরিবেশকে হঠাৎ করেই উত্তপ্ত করে তুলেছিল। মনে হচ্ছিলো কোনো একটা স্যাসপিসাস ঘটনা ঘটতে চলেছে।

শুভ্রর শরীরের উষনতা নীলার শরীরে ছড়িয়ে পরেছিলো।

আর একজন সত্যিকারের পুরুষ হিসেবে তার শরীরের হাড় যেনো কেপে উঠেছিলো।
শুভ্র আজ আবারও নীলার প্রেমে পড়ে গেছে।এই মেয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে তবেই ছাড়বে।

দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব গভীর ভাবে।

এমন সময় তুহিনা হুট করেই রুমে চলে আসে।
শুভ্র আমি আমার ফোন টা ফে–লে গে—

সে আর কিছু বলতে পারলো না। সে তারাতাড়ি করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

শুভ্র আর নীলার দুজনের ই ধ্যান ভেঙে গেল। শুভ্র তারাতাড়ি করে সরে আসলো।

নীলা নিজের ঠিক করে বসলো।

স্যরি স্যরি আমি আসলে আমার ফোন টা ফেলে গেছিলাম।আ্যম রিয়্যালি স্যরি।

আরে তুহিনা অল রাইট। এই নে তোর ফোন।
শুভ্র তুহিনা কে ফোন টা দিতেই তুহিনা প্রায় দৌড়ে চলে এলো সেখানে থেকে।

এর আবার কি হলো। শুভ্র নির্লিপ্ত ভংগীতে একবার তুহিনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে তারপর পরক্ষনেই সে বুঝলো তুহিনার এই ভাবে দৌড়ে পালানোর কারণ টা।

নীলা তো পারলে এক্ষুনি মাটির নিচে চলে যাবে।সে নীল ডাউন করে বসে রইলো। রুমের ভেতর কার সেই উষন্বতা এখনো যেনো রয়েই গেছে।

শুভ্র আর কিছু না ভেবে সোফায় গিয়ে বসে পরলো নিজের ল্যাপটপ টা নিয়ে।

চলবে —–

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-১৮+১৯

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব১৮
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

শুভ্র গিয়ে দেখে তার কেবিনে থাকা এক্যুইরিয়াম টা ভেঙে পড়ে আছে। কাচের একটা টুকরো নিয়ে
নীলা নিজের হাত কাটার জন্য বসিয়েছে ।

নীলাআ এটা তুমি কি করছো। হাত থেকে ওটা ফেলে দাও। (বিচলিত হয়ে)

নীলা শুভ্রর ডাক শুনে মাথা তুলে তাকায়। এগোবেন না– একদম আমার কাছে আসবেন না। দুরে থাকুন হাতে থাকা কাচ টা দিয়ে ইশারা করে।আমি কিন্তু কেটে ফেলবো হাত কাছে আসবেন না।
শুভ্র আর কাকন দুজনেই হতদরিদ্রের মতো হয়ে দাঁড়িয়ে পরল ।

ঠিক আছে আমরা আসছি না।তুমি প্লিজ ওটা ফেলে দাও। হাত থেকে ফেলো।

শুভ্র একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে নীলার দিকে।

দেখুন ভাবি এমন করবেন না প্লিজ কাচ টা সরান প্লিজ। আল্লাহর দহায় লাগে সরান।

তুমি কি পাগল হয়ে গেছো। আর ইউ ম্যাড ফেলো বলছি হাত থেকে ওটা।নীলা এমন পাগলামো করো না প্লিজ ফেলে দাও।

এর মধ্যেই নীলা নিজের হাতে কাচ বসিয়ে দিয়েছে কাটার জন্য শুভ্র প্রায় লাফিয়ে গিয়ে নীলার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে। হাত থেকে কাচটা নিয়ে ফেলে দেই।

ছাড়ুন আমাকে আমি বাঁচতে চায় না। মরে যাবো আমি বাঁচব না। শুভ্রর হাত থেকে ছুটার চেষ্টা করছে।জোরাজোরি করছে ছোটার জন্য।

নীলা একদম পাগলের মতো করছে। নীলা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে শুভ্রকে ধরে বসে পরে। হাউমাউ করে কেদে যাচ্ছে।

কাকনকে চোখ দিয়ে ইশারা করে চলে যেতে বললো শুভ্র।কাকন লম্বা একটা স্বস্তীর নিশ্বাস ফেলে মাথা নাড়লো তারপর সেখান থেকে চলে গেলো।

শুভ্র নীলাকে শক্ত করে জাপ্টে ধরেছে। তুমি কি পাগল হয়ে গেছো হ্যাঁ। এরকম কেউ করে। আমি যদি আসতে আর একটু দেরি করতাম কি হতো তাহলে। আমি তোমাকে ছাড়া কি করে থাকতাম বলো। আমার কথা কি একবারও মনে পরলো না।

নীলা শুভ্রর বুকের মধ্যে মুখ গুজে কেদে যাচ্ছে। বলতে পারেন শুভ্র আমার সাথেই কেন এমন হয় সবসময়। ছোট বেলা থেকেই এতো যন্ত্রণা আর কষ্ট সহ্য করে আসছি। একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে কত লোকের বাজে নজর উপেক্ষা করে চলেছি।আচ্ছা একটু ভালো দেখতে হওয়া টাও আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। টর্চার– হ্যারাসমেন্টে মানুষের কুদৃষ্টির স্বীকার হতে হয়েছে। আজ নিজের সৌন্দর্য টাকেও নিজের কাছে অভিশপ্ত মনে হচ্ছে। আমাকেই কেন আল্লাহ এতো কষ্ট দিচ্ছে। আজকের এই অপবাদ টা কি করে মানবো কি করে। নিজের জীবনটা বিস্বাদময় হয়ে উঠেছে। বাঁচার ইচ্ছে টাই মরে গেছে।রাস্তায় চলাচলের সময় যুবক থেকে একটা বুড়ো লোক পর্যন্ত শুকনের দৃষ্টিতে দেখেছে।আমি আর কত সহ্য করবো। এই টুকু লাইফে এতো কিছু দেখেছি যে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে নিজেকে খুবই তুচ্ছ মনে হচ্ছে। বলতে বলতেই হুহুকার করে কেদে উঠে নীলা।

নীলা এখনো একটা ছোট্ট বাচ্চার মতো শুভ্রর বুকে গুটিয়ে আছে। সে তার মধ্যে থাকা এতো দিনের জমানো কষ্টগুলোকে যেনো এক সাথে উগরে দিচ্ছে।

চুপ —চুপ একদম চুপ করো আর একটাও কথা না। কিচ্ছু হয়নি আমি আছি তো। আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হতে দেবো না। শুভ্রর থেকে টপটপ করে পানি পরছে।শুভ্র খুব ভয় পেয়ে গেছিলো। সে তার ভালোবাসার মানুষ টাকে হারাতে বসেছিল। কেউই তার ভালোবাসার মানুষের এমন করুন পরিনতী দেখতে পারে না। শুভ্রর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে সে কিছুতেই মানতে পারছে না।

শুভ্র নীলার মুখ দুই হাত দিয়ে তুলে সমানে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। কপালে গালে ঠোঁটে এলোপাতাড়ি ভাবে চুম যাচ্ছে।

নীলা কেবিনের সবকিছু ভাঙ্গচুর করেছে। কেবিনের সবকিছু ভেঙে ফেলেছে। শুভ্র আর কাকন এসে দেখে নীলা কেবিনের টেবিলের উপরে যা কিছু ছিলো সবকিছু তছনছ করে ফেলেছে।

কোনো মেয়েই নিজের সম্মানে আঘাত লাগলে তা সহ্য করতে পারে না।প্রত্যেক মেয়ে তার নিজের সম্মানের বিষয়ে খুবই অবগত। যদি তার সম্মানে কেউ বিনা দোষে কেউ আঘাত হানে তাহলে সেই নারী যতই শান্ত সৃষ্ট মেয়েই হক না কেন তার রুপ ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর হয়ে উঠে। একটা মেয়ের কাছে তার সেল্ফ রেস্পেক্ট টাই সবচেয়ে বড়। সে আঘাত সহ্য না করতে পেরে কেউ নিস্তেজ হয়ে নিজের জীবন দিয়ে দেই আর না হলে হয়ে উঠে হিংস্র। যেমন নীলার ক্ষেত্রেও হয়েছে।

নীলাকে একদম পাগল পাগল লাগছে। চুল গুলো উস্কোখুসকো হয়ে গেছে। চোখ গুলো রক্ত বর্ন ধারণ করেছে। কেদে কেটে একেবারে একাকার হয়ে গেছে। খুবই অসহায় লাগছে মেয়েটাকে।

নীলা আর চোখ খুলে রাখতে পারলো না। কিছু একটা অস্ফুট স্বরে বলেই চোখ বন্ধ করে ফেলে নিস্তেজ হয়ে যায়। শরীর ছেড়ে দেই।

শুভ্র দেখলো নীলা শরীর ছেড়ে দিয়েছে। শুভ্র নীলার গালে আস্তে আস্তে চাপর দিলো মুখ হালকা ভাবে ঝাকালো।

নীলা চোখ খুলো প্লিজ। শুভ্র অস্থির হয়ে কাকন কে জোরে জোরে ডাকতে থাকে।

কাকন কেবিনের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল। শুভ্রর ডাকে সে তড়িঘরি করে ভেতরে ঢুকে।

কি হয়েছে শুভ্র ডাকছিস কেন। ভাবির কিছু হয়েছে।

ও অজ্ঞান হয়ে গেছে তারাতাড়ি ডক্টরকে বাসায় আসতে বল কুইক।শুভ্র আর বসে ন থেকে নীলাকে কোলে তুলে নেই।

ঠিক আছে তুই জলদি ভাবিকে গাড়িতে নিয়ে যা আমি ডক্টর কে ডাকছি।
শুভ্র আর দেরি না করে নীলাকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসাই।

কাকন ডক্টরকে ফোন করে চৌধুরী বাড়িতে ডাকে।সেও গাড়িতে বসে পরে।
ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়ে বাসায় চলে আসে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা বাসায় চলে আসে। কাকন কলিং বেল বাজায় কয়েকবার এক সাথে।

মোল্লিকা এসে দরজা খুলে দেই। তারপর নীলার এই অবস্থা দেখে তিনি অনেক বিচলিত হয়ে যায়।
কি হয়েছে নীলার। ও অজ্ঞান হলো কি করে

সব বলছি মা ওকে আগে ঘরে নিয়ে যায়। শুভ্র তারাতাড়ি নীলাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দেই।

মোল্লিকাও ছেলের পিছনে যায় তার ঘরে।
আজকে সারাদিন তিনি যে কিভাবে ফিহাকে সামলেছে তিনিই জানেন।মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য একেবারে কান্নাকাটি করে খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছে। অনেক কষ্টে কিছুক্ষণ আগে ঘুম পাড়িয়েছেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তরিঘরি করে মাঝ বয়সি একজন ডক্টর শুভ্রর ঘরে ঢুকলেন সাথে কাকন উনার চিকিৎসার ব্যাগ নিয়ে আসছে।

ডক্টর নীলার বিপি দেখলেন। ডক্টর দেখে বললেন উনার শরীর খুব দুর্বল। বিপি খুব লো। উনি নিশ্চয়ই আজ কিছুই খাননি। সারাদিন না খেয়ে থাকায় আর ব্রেইনের অতিরিক্ত চাপ ও মানসিক ভাবে খুবই প্রেসারাইস হয়েছেন। উনাকে সব সময় হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করবেন। আমি একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে দিচ্ছি।কিচ্ছুক্ষণ পর উনার জ্ঞান ফিরবে।আর কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি এগুলো আনিয়ে নিবেন।

ঠিক আছে মিস্টার চৌধুরী তাহলে আমি আসি।আপনার ওয়াইফ খেয়াল রাখবেন।উনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব কিন্তু আপনার।

থ্যাংক ইউ ডক্টর আপনি এতো কষ্ট করে এসেছেন। চলুন ডক্টর আমি আমি আপনাকে এগিয়ে দিচ্ছি।

কাকন ডক্টর কে এগিয়ে দিতে গেলেন।

মোল্লিকা গিয়ে নীলার পাশে বসে আছে। নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

শুভ্র কোনো কথায় বলছে না। আজকের এই ঘটনার জন্য কোনো না কোনো ভাবে তো আমিই দায়ী। আমার সচেতন হওয়া উচিত ছিলো।
আর আজ যদি নীলার কিছু হয়ে যেতো কি করে ক্ষমা করতাম নিজেকে।

তবে তোমাকে যারা কষ্ট দিয়েছে আমি তাদের প্রত্যেক কে তাদের ভুলের শাস্তি পাইয়েই ছারবো।কাউ কে ছারবো না। এইসব ভেবেই শুভ্রর চোয়াল শক্ত করে নেই।

চলবে—–

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব১৯
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

মোল্লিকা সবটা শুনে থমকে যায়।তিনি আজকে সারাদিন ফিহাকে নিয়ে এতো টাই ব্যাস্ত ছিলেন যে টিভির সামনে বসেন নি। হিয়াকে ফিহার কাছে রেখে এসেছে। আর হিয়া তো আগে থেকেই টিভি দেখে না।তাই কোনো ভাবেই এত কিছু ঘটে গেছে জানতে পারেন নি।অনেক কান্নাকাটি করলেন তিনি।

শুভ্র একটু আগে তার মাকে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছি অনেক রাত হয়েছে। নীলার জ্ঞান ফিরলে আমি ওকে সামলে নিবো। শুভ্র নীলার মাথার কাছে বসে আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

কাকন কিছুক্ষন আগে চলে গেছে নিজের বাসায়।ওর মা একা একা আছে । অর বাবা নেই। শুভ্রর বাবা আর কাকনের বাবা খুব ভালো বন্ধু ছিলেন।কাকন মাকে নিয়ে একাই থাকে। অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছে ছেলেটা। শুভ্র ওকে প্রানের থেকেও বেশি ভালোবাসে আর কাকন ও।তাই শুভ্র তাকে নিজের পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট বানিয়ে নিজের কাছেই রেখেছে।

শুভ্র নিজের চোখ বন্ধ করে মাথা উপর করে নীলার এক হাত ধরে আছে আর এক হাত মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।

নীলা পিটপিট করে চোখ খুলছে। জ্ঞান ফিরে চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে।বুঝার চেষ্টা করছে সে এখন কোথায়।তার বুঝতে একটু সময় লাগছিল সে এখন বাড়িতে আছে।
পরক্ষণেই সে দেখতে পেলো তার হাত কেউ শক্ত করে ধরে আছে।আর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।
নীলা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তার পাশে থাকা মানুষ টাকে। দেখেই সে অবাক হয়ে গেলো শুভ্রর চোখে পানি কেন। আমি তো কোম্পানিতে ছিলাম। এখানে আমাকে কে নিয়ে এলো।হঠাৎ মাথায় একটা কিঞ্চিৎ ব্যাথা অনুভব করছে আর সন্ধ্যার ঘটে যাওয়া ঘটনা মাথায় আসতেই সে জোরে উঠে বসলো।

শুভ্র হঠাৎ নিজের হাতে টান পরতেই সে চোখ খুলে দেখলো নীলা উঠে বসে হাপাচ্ছে।শুভ্র ভয় পেয়ে গেল আর অস্থির হয়ে কি হলো কিচ্ছু হয়নি তুমি উঠছো কেন তোমার শরীর এখন ঠিক নেই।।
রিলেক্স নীলা।
তুমি প্লিজ শুয়ে পড়ো উঠবে না।

পানি খাবো পানি দিন প্লিজ। হাঁপাতে হাঁপাতে পানি চাইলো শুকনো একটা ঢোক গিলে।

ওকে দিচ্ছি তুমি শান্ত হও। শুভ্র জলদি গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে নীলার সামনে ধরলো।
আস্তে,, আস্তে খাও

নীলা পানি নিয়ে ঢকঢক করে গিলে খেয়ে ফেললো।খেয়েই গ্লাস টা এগিয়ে দিলো।

শুভ্র নীলাকে দেখছিলো।তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না শুভ্র। সে আচমকা গিয়ে নীলাকে জড়িয়ে ধরলো।

আচমকা এরকম হওয়ায় নীলা বেশ ঘাবড়ে গেলো।নীলার অদ্ভুত একটা শিহরণ ফীল করতে লাগলো। হঠাৎ নীলা তার কাধে তরল কিছু পরতেই বুঝলো শুভ্র কান্না করছে।কিন্তু কেন শুভ্র কি তবে আমাকে ভালোবাসে!!নীলা না চাইতেও শুভ্রর পিঠে হাত দিলো।

তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।আমার ঠিক কি অবস্থা হয়েছিল। মনে হচ্ছিল আমি আমার সবচেয়ে দামী জিনিস হারাতে বসেছিলাম। তোমার কিছু হলে আমি কীভাবে বাঁচতাম বলো তো।কান্না জড়ানো কন্ঠে কথা গুলো বললো শুভ্র।

নীলা শুভ্রর কান্না ভেজা কন্ঠ শুনে বুঝলো শুভ্র সত্যিই খুব চিন্তায় ছিলো। এরকম একটা মানুষকে এইভাবে কাদতে দেখতে একদম ভালো লাগে না। উনাকে দেখে যা মনে হয় একদমই সেরকম নয়। বাইরে থেকে যেমন টা কঠিন মনে হয় ভেতরে ভেতরে ততটাই নরম।তাহলে কি আমি ঠিকই ভাবছি শুভ্র আমাকে ভালোবাসে।

নীলা হাত শুভ্রর পিঠ থেকে হাত সরিয়ে আস্তে আস্তে কাধ ধরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে শুভ্রর চিবুকে আলতো করে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিলো।

শুভ্রকে একদম বাচ্চাদের মতো দেখতে লাগছে। কান্নার ফলে চোখ কিছুটা লাল হয়ে গেছে।

কি হলো কাঁদছেন কেন। আমি ঠিক আছি তো। এইত আমি আপনার সামনে একদম সুস্থ আছি।

শুভ্র ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে। আজকে তার একদমই কোনো সংকোচ লাগছে না। মনে হচ্ছে নিজের মনের কথা গুলো বলে দিই এক্ষুনি।

শুভ্র নীলার থেকে সরে আসলো কিছুটা। উঠে দাঁড়ালো।।নিজেকে সামলে নিলো। দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করল।
খুব নরমালী বললো —-ডক্টর বলেছে নীলাকে হাসি খুশি রাখতে।তাই সে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।
আর ইউ ওকে। এখন তোমার কেমন লাগছে।
নীলার দিকে হালকা হাসি দিয়ে।

নীলা নিজের পেটে হাত বোলাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে তার পেটে ছুচোড়া ছোটাছুটি করছে। খিদে পেয়েছে তার বাট সে বলতে পারছে না কিছু একটা ভেবে।

ইয়াহ আম ওকে। স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো নীলা।

ঠিক আছে তুমি বসো আমি আসছি। একদম উঠবে না বিছানা থেকে।

আপনি কোথায় যাচ্ছেন? নীলা শুভ্রর দিকে হালকা একটু তাকিয়ে বললো।

বললাম তো তুমি বসো আমি আসছি। চুপচাপ বসে থাকবে। ঠিক আছে।

এই বলেই সে চলে গেলো।

নীলা শুভ্রর যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।মাথাটা ভার ভার লাগছে তার।

শুভ্র বুঝতে পেরেছে নীলার খিদে পেয়েছে। তাই সে তারাতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো একজন পরিচারিকা জেগেই আছে।সে পরিচারিকা কে খাবার দিতে বললো। পরিচারিকা টি খাবার বেরে দিলো।

শুভ্র তারাতাড়ি খাবার টা নিয়ে উপরে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো নীলা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

নীলা শুভ্রর উপস্তিতি টের পেয়ে চোখ খুলে তাকালো। হাত দুটো খাটের উপর হালকা ভর দিয়ে উঠতে যাবে তখনি শুভ্র এসে ওকে ওর কাধ ধরে সুন্দর করে বসিয়ে দিলো।

বসো শান্ত হয়ে!। আমি খাবার এনেছি খেয়ে নিবে। শুভ্র চোখের পাতা হালকা নিচের দিকে করে।
খেয়ে নাও আমি আসছি। এদিকে শুভ্র ভাবছে নীলা তার সামনে খেতে সংকোচ করতে পারে। তাই সে উঠে আসতে নেই।

আমি খেতে পারবো না নিজের হাত দিয়ে।আমি তো অসুস্থ আমাকে একটু খাইয়ে দিন না।

আপনি খাইয়ে দিলে খাবো না হলে খাবো না বলে দিলাম। যদিও নীলার এই মুহূর্তে খুবই খিদে পেয়েছে তবুও সে এই কথাটা বললো। এখন যদি শুভ্র না খাইয়ে দেই তো আমাকে যে না খেয়েই থাকতে হবে তখন।

শুভ্র চুপ করে আছে।কিছুই বলছে না। সে এর আগে কখনো কাউকে খাইয়ে দেইনি আজকে কি করে। তবুও ট্রাই করতে কি সমস্যা। নীলার এই ছোট্ট একটা আবদার রাখাই যায়।

কি হলো খাইয়ে দিবেন না বুঝি। ঠিক আছে তাহলে নিয়ে যান এগুলো। খাব না আমি।মুখ গোমড়া করে অন্যদিক মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

হা করো।

নীলা একটু চমকে তাকায়। সত্যিই খাওয়াতে এসেছে দেখি। নীলা মনে মনে অনেকটা খুশি বাট প্রকাশ করলো না।

কি হলো হা করো। আমি কতক্ষন এভাবে খাবার ধরে থাকবো।

নীলা হা করে খাবার টা মুখে নিয়ে নিলো।

আর কোনা চোখে শুভ্রকে দেখতে থাকলো।

শুভ্র খুবই সুন্দর করে ভাত মেখে নিচ্ছে। বাট মনে হচ্ছে না সে কোনো দিন কাউকে খাইয়েছে।

সোজা হও অই দিকে মুখ করে রাখলে খাওয়াতে অসুবিধা হয়।

নীলা সোজা হয়ে বসলো।

শুভ্র আবার আরেক লোকমা দিতেই তরল কিছু ওর হাতে লেগে যায়। ওর অদ্ভুত লাগছে।বাট কিছুই বললো না। চুপচাপ নীলাকে খাইয়ে দিলো। নীলাও সুন্দর মতো সবটা খাবার খেয়ে নিলো।

পানি খাইয়ে দিয়ে শুভ্র নিজের হাত ধুয়ে নিলো।

নীলা শুভ্রর পানে চেয়ে আছে অপলক নয়নে।
এই মানুষটার মধ্যে সে এখন অনেক কেয়ারিং আর ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে।

এখন তুমি শুয়ে পড়ো। তোমার রেস্টের প্রয়োজন আছে।

আর আপনিও শুয়ে পরুন।আপনারও রেস্টের প্রয়োজন। আর হ্যাঁ বিছানায় শুবেন ঠিম আছে।

ঠিক আছে তুমি শুয়ে পড়ো আমিও শুয়ে পরছি।

নীলা শুয়ে পড়লো।

শুভ্র লাইট অফ করে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে একজনকে ফোন করলো।

রিং হতে অপর পাশের মানুষটি ফোন রিসিভ করলো।

হ্যাঁলো তুহি তুই কিছুদিনের জন্য আমার বাসায় আসতে পারবি।

হ্যাঁ আসবো। বাট কি হয়েছে তোর হঠাৎ এতো রাতে ফোন করেছিস।

তোকে আমার কিছু কাজ করে দিতে তার জন্য তোর এখানে আসা খুব দরকার। তুই আয় তারপর সবটা বলবো কি কি কর‍তে হবে।

ওকে ওকে আমি কালই সকালেই চলে আসবো।রাখছি।

এই বলে সে ফোন রেখে দিলো।

শুভ্র এসে দেখলো নীলা সাউন্ড স্লিপে ঘুমাচ্ছে।সে গিয়ে আর বিছানায় না শুয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।

—————–+++++——–

এদিকে জীনিয়া বাসায় এসে নিজের ঘরের সবকিছু ভেঙে তছনছ করে ফেলেছে।রাগে গজগজ করছে। এই চোখ দিয়ে যেন কাউকে ভষ্স করে দিবে।

রিশিকা ভাংচুরের শব্দ পেয়ে জীনিয়ার রুমে চলে এসেছে।

আরে জীনিয়া বেটা কি হয়েছে। তুমি এরকম করছো কেন কি হয়েছে। ফাহিম কিছু বলেছে তোমাকে।আমি ফাহিমকে বুঝিয়ে বলবো যাতে তোমার সাথে ভাব করে নেই।

জীনিয়া বড় বড় শ্বাস ফেলে বলে। না আমার ফাহিমকে নয় এখন আমার শুভ্রকে চাই।মম তুমি আজকের টিভি নিউজ দেখো নি হ্যাঁ কি হয়েছে। আর এর পরেও তুমি বলছো কি হয়েছে।

হ্যাঁ আমরা সবাই দেখেছি।ওই নীলার মতো মেয়েকে শুভ্র চৌধুরীর মতো একজন লোক কি করে বিয়ে করতে পারলো।আর কিভাবেই হলো সবকিছু আমাকে জানতেই হবে।তবে তোমার বাবাকে দেখে মনে হলো তিনি খুব খুশি হয়েছে আর তোমার ছোট বোন আর অই বুড়িটাও খুব খুশি।

বাট জীনিয়া ফাহিমের সাথে তো তোমার এঙ্গেজম্যান্ট ডেট ফিক্সড হয়ে আছে।সেটার কি হবে।আর তোমার বাবাও কথা দিয়েছেন ফাহিমের বাবাকে।উনাদের সাথে আমাদের বিজনেসের একটা ডিল হয়েছে। ডিল টা ফাইনাল না হলে আমাদের কোম্পানির অনেক লস হবে।

নো মম অই লোকটা আমার বাবা নয়।তাই অই লোকটার কিসে লাভ কিসে ক্ষতি আমার তাতে কিচ্ছু না।আমার বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছে। আমি মন থেকে কোনো দিনও অই লোকটাকে বাবা বলে মানি না।আর আজকে নীলা যেখানে সেখানে শুধুই আমাকে মানায়।আমি অকে কিছুতেই সুখি হতে দিবো না কিছুতেই না।ফাহিমকে আমি বুঝিয়ে বলবো।সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও ওকে কি করে বুঝাতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানি।
বাকা হেসে চোখ থেকে পানি মুছে ছিটকে ফেলে দিলো সে।

ছোট বেলা থেকেই জীনিয়ার সব আবদার রিশিকা পুরন করছে। আর আমি কি তোমার কোনো কিছুতেই কখনো বাধা দিয়েছি।আর আমিও চাই না ওই নীলা সুখি হোক।আমি তোমার সাথে আছি বেটা।
তুমি কেদো না শুধু। শুভ্র চৌধুরীর তোমাকে রিজেক্ট করতেই পারবে না জীনিয়া বেটা। রুপে গুনে তুমি নীলার থেকে অনেক বেটার।

কাধে হাত রেখে বললো রিশিকা।ওকে গুড নাইট বেটা ঘুমিয়ে পরো তুমি নিশ্চিন্তে।
এই বলে রিশিকা চলে গেলো।

আজ আমার ঘুম আসবে না। আমি ততো দিন ঘুমোতে পারবো না যতো দিন তুই সুখে আছিস। আমি আসছি তোর সংসারে আগুন লাগাতে। এই বলেই শয়তানি হাসি হাসে সে।

চলবে—–

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-১৬+১৭

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

হঠাৎ আমাদের দুজনের সামনে এতো বড় গাড়ি এসে থামায় আমরা দুজনেই চমকে যায়! তারপর আমি আর প্রাপ্তি দুজনেই রেগে লোকটা কে বকা দিতে যাবো তখনি লোকটার মুখ আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছিলো। লোকটা গাড়ি থেকে নেমেই আমাদের দিকে এগিয়ে এলো —

প্রাপ্তি আর নীলা দুজনেই লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। খুবই সুন্দর সুদর্শন একটা যুবক। কালো কোট ভেতরে সাদা শার্ট। চোখে চশমা। দেখতে বেস হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং লাগছে!!

প্রাপ্তি তো বিশ্ময়ে মুখ হা করে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে।

আপনি কি নীলা? নীলার দিকে তাকিয়ে —-

★হাই আমি ইস্তিয়াক আহমেদ কাকন।

ওদের দুজনের ধ্যান ভেঙে যায় লোকটার কথায়।

আর নীলা আর প্রাপ্তি দুজনেই দুজনের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে অবাক হয়ে!

তারপর নীলা উত্তর দিলো —-

— হ্যাঁ আমি নীলা বাট আমি আপনি কি করে আমাকে চিনলেন।কে আপনি?

আপনি শুভ্র চৌধুরীর ওয়াইফ তো।শুভ্র আমাকে পাঠিয়েছে আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি শুভ্রর বেস্ট ফ্রেন্ড।

প্রাপ্তি এখনো হা করেই তাকিয়ে আছে উনার দিকে।

আমি ওকে ধাক্কা দিতেই প্রাপ্তি হকচকিয়ে গেল। আর আমার দিকে তাকালো। আমরা দুজনেই জোর পুর্বক হাসলাম।

কাকন ওদের ব্যবহারে খুবই অবাক । তারপর হঠাৎই তার চক্ষু জোরা আটকে গেলো প্রাপ্তির দিকে। কাকন প্রাপ্তির দিকে তাকাতেই দেখলো একটি মিষ্টি মেয়ে মাথাটা নিচু করে তাকিয়ে আছে এখন। কাকন যেনো কিছুক্ষনের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।

হঠাৎ নীলা খেয়াল করলো কাকন প্রাপ্তির দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে।

নীলা কিছু একটা ভেবে হেসে দিলো। তারপর নিজের গলাটা খেকিয়ে পরিষ্কার করলো।

উম হুম উমহু এই যে ভাইয়া সত্যিই কি শুভ্র আপনাকে পাঠিয়েছে।

কাকনের ধ্যান ভেঙে যায়। সে চোখ ফিরিয়ে নিলো প্রাপ্তির দিকে থেকে।

হ্যাঁ আপনি চলুন আমার সাথে। গাড়ির দিকে ইশারা করে বললো।

আপনাকে আমরা কি করে বিশ্বাস করবো। আর আমিই যে নীলা সেটা আপনি জানলেন কি করে।

ওয়েট ভাবি শাহেবা।তারপর কাকন নিজের ফোন টা বের করে শুভ্র কে ফোন দেই।
শুভ্রর সাথে কথা বলে লাউড স্পিকার অন করে।

নীলা বিশ্বাস করে নিলো কাকন কে। আর কাকন কে দেখে একেবারেই খারাপ মনে হয়নি। বা খারাপ কোনো লক্ষ্যন ও দেখতে পেলো না নীলা।

চলুন যাওয়া যাক ভাবি। একটা সোজন্যমূলক হাসি টেনে মুখে। আর উনি কি আপনার ফ্রেন্ড।

উনি প্রাপ্তির দিকে ইশারা করে বললেন —উনি যাবেন না। আমি কিন্তু উনাকেও নামিয়ে দিতে পারি যদি উনার কোনো প্রব্লেম না থাকে।

হ্যাঁ ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড প্রাপ্তি। হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি ওকেও নামিয়ে দিন এইতো সামনেই অর বাড়ি।

এর মধ্যে প্রাপ্তি কোনো কথায় বলেনি মাঝে মধ্যে আড় চোখে কাকনের দিকে তাকিয়েছে।

তারপর নীলা আর প্রাপ্তি দুজনেই মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ির পিছনের সীটে বসে পরলো। কাকন গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

কাকন গাড়ি চালাতে লাগলো। মাঝে মধ্যে গাড়ির মিরোর এ প্রাপ্তি কে দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।

নীলা সব টাই খেয়াল করেছে। ভাইয়া দেখে গাড়ি চালান হ্যাঁ ।

কাকন কিছুটা লজ্জা বোধ করলো। হ্যাঁ দেখেই চালাচ্ছি ভাবি।

প্রাপ্তি মাথা নিচু করে আছে। অর কেমন যেনো খুবই লজ্জা করছে। কথা বলছে না সে জন্য চুপ করে আছে।

নীলা মাঝে মধ্যে প্রাপ্তি কে পিঞ্চ করছে এটা সেটা বলে।

আর প্রাপ্তি কটমট করে তাকাচ্ছে নীলার দিকে।

তারপর প্রাপ্তির বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো কাকন একবার প্রাপ্তির দিকে তাকালো।

প্রাপ্তি গাড়ি থেকে নেমেই কোনো কথা না বলে সজা প্রায় দৌড়ে বাসায় চলে গেলো নীলার সাথেও কথা বললো না।

এদিকে নীলা তো হাসতে হাসতে শেষ প্রাপ্তির এই অবস্থা দেখে।

চলুন ভাইয়া।

হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি ভাবি।

কোম্পানির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো কাকন।

ভাইয়া এখানে কেন গাড়ি থামালেন।

শুভ্র আপনাকে এখানেই আনতে বলেছে।

কিন্তু কেন।আমি তো ভাবলাম বাসায় যাবো।

জানি না ভাবি চলুন ভাবি ভেতরে যাওয়া যাক।

তারপর দুজনেই মিলে ভেতরে চলে গেলো।

ভেতরে গিয়ে নীলা থমকে যায়।এতো বড় কোম্পানি দেখে নীলা খুবই অবাক।নীলা চারিদিকে তাকিয়ে দেখছে।

চৌধুরী ফ্যামিলি এতোটা রিচ ছিলো যে এতো বড় একটা বিল্ডিংয়ের প্রত্যেক ফ্লোরে আলাদা আলাদা লোক ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানে বিজনেস করতো।

চৌধুরী একটা ওয়েল নুন এবং একটা মিস্ট্রিয়াস ফ্যামিলি। কেউ ঠিক মতো জানেও না ওরা ঠিক কতটা ধনি এবং পাওয়ারফুল।

নীলা হাটতে হাটতে চোখ পরলো জীনিয়া আর ফাহিমের দিকে। ওর পুরো এটেনশন চলে গেছিলো ওদের দুজনের উপর।

যারা একি সঙ্গে তার দিকে এগিয়ে আসছিলো।

জীনিয়া খান ছিলো স্লিম আর গ্রেসফুল এবং ফাহিম শেখ ছিলো লম্বা এবং হ্যান্ডসাম। তারা যখন পাশাপাশি হেটে আসছিলো সকলের নজর তাদের দিকেই পরলো।

ওয়াও জীনিয়া খান!!! উনার সঙ্গে নিশ্চয়ই উনার ফিয়্যান্সে। আমি শুনেছি উনারা নাকি খুব শীঘ্রই এঙ্গেজড হচ্ছেন। আর উনার ফিয়্যান্সির ফ্যামিলি খুবই রিচ আর উনি উনার ফ্যামিলির পুরো প্রপার্টির এক মাত্র উত্তরাধিকারী। উনার ফিয়্যান্সি সত্যিই খুব হ্যান্ডসাম!!! ওরা একদম পারফেক্ট ম্যাচ। জীনিয়া খান সত্যিই খুব লাকি।
—কাকন বললো।

নীলা শুধু একটু হাসলো আর বললো চলুন তবে শুভ্রর কেবিনে যায়।এখানে না দাঁড়িয়ে।
নীলা আর কাকন যেই না চলে যেতে নেই তখনি পিছনে থেকে শুনতে পেলো ফাহিমের কন্ঠস্বর। নীলা পিছন ঘুরে তাকালো। আর কাকন কে বললো আপনি যান আমি আসছি।

কাকন ও আর কিছু না বলে মুখ টা উল্টিয়ে ওকে বলে চলে গেলো।

নীলা না তুমি কি করছো এখানে?

নীকা কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সেদিনের কথা মাথায় আসতেই নীলার যেনো রাগে গা ফেটে যাচ্ছিলো তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে — একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললো

হ্যাঁ আসলে আমার এখানে একটা কাজ আছে তাই এসেছি।

নীলা দেখলো জীনিয়া তার দিকে বিরক্তিকর ভাবে তাকিয়ে আছে।

ফাহিম নীলার জামা কাপড়ের দিকে তাকালো। নীলাকে দেখে সে ভাবছিলো নীলাকে তার ইউজুয়াল মার্জিত বেপরোয়া ভাব ভঙ্গি থেকে অনেক টাই ডিফারেন্ট লাগছে।ওকে অনেক বেশি রিফ্রেশিং লাগছিলো!!!
আর ইভেন ওর মধ্যে একটা মেয়েলি কারিশমা ফুটে উঠেছে!!!

কোথায় গেছিলে তুমি। তোমাকে আংকেল কত খুজে জানো।

ফাহিম আসলে তো এতো কিছুই জানতো না সে শুধু জানতো খান ফ্যামিলি একটা ক্যাওয়াসের মধ্যে আছে।

নীলা একটা তেতো হাসি হেসে জীনিয়ার অহংকারি মুখের দিকে তাকালো।

আমি ঠিক আছি। আর আমি ফিউচারে আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে থাকবো। আমি আর খান বাড়িতে কোনো দিন ও ফিরবো না।

জীনিয়া ফাহিমকে অভিযোগ জানিয়ে বললো—-
আহা ফাহিম তুমি জানো না। আমাদের ফ্যামিলি কতটা চিন্তায় রয়েছে কিন্তু ও কি রকম ইন্সেন্সিবল দেখো!!আমার মা সারারাত দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারে না!!! আর ও কি না—-

নীলা নাকি আওয়াজ করলো। ওর সৎ মা প্রবাবলী ঘুমাতে পারছেন না এই রাগে যে উনি আমাকে বিক্রি করতে পারলেন না মনে মনে বললো নীলা।

ইশরে তাই নাকি। সত্যিই আমার এটা করা একদম উচিত হয়নি। উনার কথা মতো আমাকে ওই প্রতিবন্ধী ছেলেকে বিয়ে করে নেওয়া উচিত ছিলো তাই না জীনিয়া আপু!

নীলা জীনিয়ার এই নাটক টা আর দেখতে চাইছিলো না। সে ঠান্ডা ভাবে বললো আমার কাজ আছে ফাহিম ভাইয়া আমি তাহলে আসছি।

হঠাৎ নীলা পিছনে কিছু সরগোল শুনে তাকালো আর দেখতে পেলো শুভ্রকে এক সারি বডিগার্ড ভেতরে আসার জন্য জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে। সে অন্ধকার রাতের মতো একটা কালো কোট পরে ছিলো তাকে রহস্য আর নিস্বঙ্গতায় ঘিরে রেখেছিলো।

নীলা পুরো বুকা বনে গেছিলো। শুভ্রকে দেখে নীলার মনে হলো ও কোনো স্বপ্ন দেখছিলো।

জীনিয়ার চোখ অলরেডি শুভ্রর দিকে আটকে গেছিলো। লম্বা হ্যান্ডসাম লোকটি তার দিকে একবার আড় চোখে তার দিকে না দেখে গটগট করে তার পাশ দিয়ে চলে গেলো । তার এর‍্যোগেন্ট এক্সপ্রেসন আর তার ঠান্ডা দৃষ্টির সাথে তাকে একজন উদ্ধতো সম্রাটের মতো দেখাছিলো যিনি তার ধারে কাছে কাউকেই ঘেশতে দেন না।

আহ ফাহিম ও কে?? ওকে বেশ চেনাচেনা লাগছে। জীনিয়া ফাহিম কে জিজ্ঞেস করলো। জীনিয়া নিজের কৌতুহল চেপে রাখতে পারছিলো না।

উনি সবচেয়ে বড় বিজনেস শুভ্র চৌধুরী।
উনারই বিল্ডিংয়ের একটা ফ্লোরে আমার বাবা বিজনেস করেন।

অন্যদিকে নীলার নিজেকে মাটিতে পুতে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো।কারন সে দেখতে পেয়েছিলো শুভ্র তার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখছিলো।

জীনিয়া এক্সক্লেমিনেশন ইন্সটেন্টলী নীলার ঘোর কাটিয়ে দিলো।

নীলা দেখতে পেলো জীনিয়া মাথা নিচু করে বললো শুভ্র চৌধুরী আমার দিকে দেখছে।

নীলা আর ওখানে একটুও থাকতে পারলো না।নীলার কথা টা শুনে কেন যানি খুব কষ্ট হচ্ছিল।

সে চলে যেতে নিলে জীনিয়া নীলাকে আটকে দিয়ে বললো—

নীলা তোর জন্য এটাই ভালো হবে যে তুই বাড়ি ফিরে চল।

নীলা মাথা ঘুরে তাকালো আর ঠান্ডা ভাবে উত্তর দিলো— আমি আর কোনো দিনই ফিরবো না তোমাকে তো বললাম।

জীনিয়া রুদ্ধ ভাবে নাকে আওয়াজ করলো —
হুহ তুই ভাবিস না তোর আমি তোর আর ফাহিমের মটিভের ব্যাপারে কিছু জানি না।তুই কোনো দিকে থেকেই ফাহিমের যোগ্য নশ। আর কিছু দিনের মধ্যেই ওর সাথে আমার এঙ্গেজম্যান্ট হয়ে যাবে। আর ও তোর জামাই বাবু হবে। তুই যদি মানুষ হস ফাহিমের সাথে ফ্লার্ট করার চেষ্টা আর করবি না। নিজের স্ট্যাটাস টা দেখ তুই একটা অবৈধ বাচ্চা।

নীলার বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো।
নিজেকে সামলে নিয়ে–+

তোমার কথা শেষ হয়ে থাকলে এবার যেতে পারি। আর হ্যাঁ সেদিন আমি নয় ফাহিম আমার সাথে নোংরামো করার চেষ্টা করছিলো। তোমার কি মনে হয় আমি তোমার ফিয়্যান্সের দিকে তাকিয়ে আছি।হুহ তাহলে তুমি ভুল ভাবছো। হাউ এইভার আমাকে যেতে হবে।

হঠাৎ শুভ্র নীলার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে ভেতরে দিকে নিয়ে গেলো—–

এদিকে জীনিয়া তো খুবই অবাক যে শুভ্র চৌধুরীর মতো একজন লোক সে না নীলাকে নিয়ে যাচ্ছে। নীলা ওকে চেনে। দ্যাটস ইম্পসিবল।

না না আমি কিছুতেই নীলাকে শুভ্রর কাছাকাছি আসতে দিতে পারি না। নীলার কোনো যোগ্যতায় নেই।

জীনিয়া অলরেডি ভেবে নিয়েছিলো যে ফাহিম সবচেয়ে ধনী কিন্তু আর তার জন্য পারফেক্ট। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে শুভ্রই ওর জন্য পারফেক্ট। ফাহিমের থেকে বেশি বড় লোক আর হ্যান্ডসাম ছিলো। আর জীনিয়া জানতো যে শুভ্র যে হ্যান্ডমেট ইটালিয়ান স্যুট টা পরে আছে অটা খুব রিচ কেউ ‘না হলে কিনতে পারবে না।ফাহিম ও এই কোট কিনতে গেছিলো বাট ওর সামর্থ্য হয়নি।
জীনিয়া মনে মনে বললো আজ থেকে তুমি আমার টার্গেট মিস্টার চৌধুরী। আমি কিছুতেই তোমাকে নীলার হতে দেবো না।কারণ ওর পাশে শুধু আমার মতো মেয়েকেই মানায় এই বলেই সে বাকা হাসি হাসলো।

চলবে—

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব১৭
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

কোম্পানির ভেতরে গমগমে আওয়াজে ভড়ে গেছে। এতো স্বরগোল তৈরি হয়ে গেছে মুহূর্তেই। গার্ডসরা চেয়েও আটকাতে পারছে না।ভীড় জমে গেছে। ভেতরে প্রেস মিডিয়ার লোকে ভরে গেছে হৈহৈ রৈরৈ পরে গেছে। শুভ্র চৌধুরীকে এই প্রথম কোনো মেয়ের সাথে দেখতে পাওয়া গেছে।এই খবর টা পেয়ে যেনো চিলের মতো উড়ে এসেছে।

শুভ্র কেবিনের ভেতরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।তারই সামনে তারই ভালোবাসার মানুষের দিকে সবাই আঙ্গু্ল তুলছে। শুভ্র কি করে মানবে। এখানে নীলাকে নিয়ে বাজে কথা বলা হচ্ছে। শুভ্র কিছুতেই এইভাবে বসে থাকতে পারেনা।

তাই সে কাকনকে তার বাসায় পাঠিয়েছে বিয়ের সব ডকুমেন্টস আনতে। সে নীলার উপর আসা সকল দাগ মুছে দিবে আজই। সব অপমান থেকে আগলে রাখবে।কোনো আচ আসতে দিবেনা নীলার উপর।

মূলত শুভ্র চেয়েছিলো আজ অফিসে সবার সাথে নীলার পরিচয় করিয়ে দেবে। কিন্তু এই ভাবে যে এতো কিছু হবে সে তো চাইনি। সে চেয়েছিলো নীলাকে তার যোগ্য সম্মান দিতে। এইভাবে অপমানিত হতে দেওয়ার জন্য না।

সবাই ভাবছে নীলা শুভ্রর কাছে গিয়েছে। কারণ শুভ্র চৌধুরীর কোনো দিন কোনো মেয়েলি ব্যাপার ছিলো না। আর আজকে এই খবর পেয়ে চারিদিকে টানটান উত্তেজনায় ভরে গেছে।

এর আগেও শুভ্র চৌধুরীর জন্য অনেক মেয়েই পাগল হয়েছে। কিন্তু শুভ্র চৌধুরী কোনো দিন কোনো মেয়েকে তার কাছে ঘেঁষতে দেইনি।হঠাৎ কেন এই মেয়েকেই তার সাথে দেখা গেলো।

শুভ্র ভাবছে প্রেস কে জানালো কে কথা টা।
কোনো ভাবেই তো এই কথা টা বাইরের কেউ জানার কথা না। —-

নীলা এক কোনায় দাঁড়িয়ে থেকে টপটপ করে চোখের পানি ফেলছে। তার জীবন টা কি শুধুই দুঃখের জন্য। সবে মাত্র একটু সুখের আলো দেখেছে। আর সবাই কি না ভাবছে আমি কোনো বাজে মেয়ে । এই অপবাদ টা কি করে মেনে নিবো।এই কথা টায় কি শুনা বাকি ছিল। আমি নাকি শুভ্রকে চৌধুরীর মতো এতো বড় লোককে ফাসাতে এসেছি। তাকে দেখে নিজের লোভ সামলাতে পারিনি।

কিছুক্ষন আগে—–

নীলাকে শুভ্র টানতে টানতে নিজের কেবিনে নিয়ে যায়।

তুমি আমাকে দেখেও ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন।
কি করছিলে তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। অই মেয়েটা কে? তোমার চোখ মুখ এমন কেন দেখাচ্ছে।

নীলার চোখের নিচে অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই কালি পরে গেছে। কান্নার ফলে এরকম লাল হয়ে গেছে। একটা ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে খুবই টেন্সড।

না না আমি ঠিক আছি। আমাকে নিয়ে এতো ভাববেন না।

ও আমার সৎ মায়ের মেয়ে জীনিয়া। আপনি হইতো জানেন না জীনিয়া আপুর ফিয়্যান্সি আপনার অফিসের একটা ফ্লোরে বিজনেস করে উনারা। আর জীনিয়া আপু তার ফিয়্যান্সির সাথেই এখানে এসেছে। আর আমাকে দেখে রেগে গেছে যে আমি এতো বড় অফিসে কি করে।

হুম তো এই ভাবে অপমান কেন করবে। শুভ্র চৌধুরীর ওয়াইফ কে অপমান করার সাহস হয় কি করে ওর। হাউ ডেয়ার ইজ শি।
(নীলার কাধ ধরে ঝাকিয়ে)

ওই মেয়েটা তোমার বোন হোক বা যা কিছু হোক আমি কিন্তু ওকে ছেড়ে কথা বলবো না আমাদের বাড়ির বউকে কেউ অপমান করুক সেটা মানবো না কিছুতেই।

নীলা শুধু ভাবছে এর কি হলো হঠাৎ। এমন করছে কেন। উনি আমাকে নিয়ে এতোটা ডেস্পারেট হচ্ছে কেন।নীলার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে।

আচ্ছা আপনি একটু শান্ত হন। আমি তো বলেই দিয়েছি আমি আর ফিরবো না ওই বাড়িতে।

ফিরতে চাইলেই ফিরতে দিবো নাকি আমি। ওই নরকে আমি আর কোনভাবেই তোমাকে ফিরতে দিবো না।আর তোমাকে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে আমি কঠিন শাস্তি দিবো ।
(মনে মনে)
আর তুমি আমাকে আসতে দেখেও ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওই মেয়েটার কথা শুনছিলে।

নীলা শুধু শুভ্র দুই চোখ ভরে দেখে যাচ্ছে। যে শুভ্র চৌধুরী কোনো দিন কোনো মেয়েকে পাত্তা দেইনি সেই মানুষ আমার মতো একটা সাধারণ মেয়েকে নিয়ে এতো ভাবছে কেন। কিসের এতো ভাবনা উনার আমাকে নিয়ে।

শুভ্র নীলাকে একটু ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।

নীলাও কিছু না বলে একটু চোখে মুখে পানি দিয়ে আসে।

নীলা ফ্রেশ হয়ে বের হতেই শুভ্র নীলার দিকে তাকিয়ে থাকে। খুব সুন্দর লাগছে নীলাকে।মুখে হালকা হালকা পানি লেগে আছে। সেদিনের সেই বৃষ্টিতে ভেজার সেই মুখটা দেখতে পাচ্ছে সে।শুভ্রর চোখে নেশা ধরে গেছে ঠিক সেদিনের মতো। শুভ্র আস্তে আস্তে নীলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

নীলা দেখলো শুভ্র এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। নীলা একি যায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

শুভ্র নীলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

নীলা এবার একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায়। আর পিছনে পিছিয়ে যেতে থাকে।

শুভ্র শুধু এগিয়েই যাচ্ছে কোনো কথা না বলে। পঁলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে সে।

নীলা শুভ্রর চক্ষু দ্বয়ে এক অন্যরকম কিছু দেখতে পারছে।যেখানে এই মুহূর্তে নেশা কাজ করছে।

নীলা পিছিয়ে যেতে যেতে একটা চেয়ারে বসে পরে।

শুভ্র চেয়ারের দুই পাশে নিজের দুই হাত রেখে ঝুকে যায়। আর নীলার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

দুজনেই চুপ করে থাকে। চোখের সেই না বলা ভাষা বুঝার চেষ্টা করছে। নিজেদের মনকে বুঝার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

শুভ্র আস্তে আস্তে নীলার ঠোঁটের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে ঠোঁট দুটো নিজের একটি আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিলো।

নীলা চোখ বন্ধ করে চেয়ারের কোনা চেপে ধরে আছে। আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। শুভ্রর এতো কাছে আসায় সে একটু ঘাবড়ে গেছে।

হঠাৎ কি হলো শুভ্রর সে নিজেই জানে। শুভ্র তার নিজের মধ্যে নেই।

ওকে থামাতে হবে। নীলা কাঁপাকাঁপা গলায় বললো— ককক্ককি করছেন আপনি। মিস্টার চৌধুরী একটু জোরে।

শুভ্রর ধ্যান ভেঙে গেল। শুভ্র বুঝতে পারলো এক্ষুনি সে কি করতে যাচ্ছিলো। শুভ্র সরে আসলো নীলার কাছ থেকে।

তারপর শুভ্র নিজের পকেটে হাত দিয়ে একটা রুমাল বের করে দিয়ে নীলার মুখ মুছার জন্য এগিয়ে দিলো।

মুখ টা মুছে নাও। অফিসের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো তোমাকে।

নীলার শুভ্রর কথা শুনে চোখ খুলে দেখলো শুভ্র অন্য দিকে ঘুরে তার দিকে রুমাল এগিয়ে দিচ্ছে।

নীলা রুমাল নিয়ে মুখ টা মুছে নিচ্ছিলো।তখনি বাইরে থেকে আওয়াজ শুনতে পেলো। বাইরে কিসের এতো আওয়াজ হচ্ছে মিস্টার চৌধুরী।

শুভ্রও বাইরে তাকায় কি হলো। আঙ্গুল দিয়ে দেখায় যে কি হলো বাইরে। হঠাৎ এতো স্বরগোল কেন হচ্ছে।

তখনি কাকন কেবিন হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে এসে বলে বাইরে প্রেস মিডিয়ার লোকে ভরে গেছে।

নীলা ভাবিকে নিয়ে সবাই বাজে কথা বলছে শুভ্র চল তারাতাড়ি।
পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কাকন বাইরে যায়।
বাট কোনো কাজ হইনা। তাই সে শুভ্রকে জানাতে আসে।
——-
কাকন কোনো মতে কষ্ট করে বাইরে থেকে ভেতরে আসে। আর ডকুমেন্টস গুলো শুভ্রর হাতে দেই।

কাকন কে আসতে দেখে শুভ্র উঠে দাঁড়ায়। আর এক হাতে বিয়ের ডকুমেন্টস আর এক হাত দিয়ে নীলার হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে আসে লম্বা লম্বা পা ফেলে।

শুভ্রকে এই মূহুর্তে খুবই ভয়ার্ত লাগছে শুভ্র কে।নীলা কোনো কথা না বলে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে আর হেটে যাচ্ছে সে।

কি করতে চাচ্ছেন উনি আমাকে এইভাবে কেন নিয়ে যাচ্ছে।

প্রেসের হৈহৈ করে হুমরি খেয়ে দৌড়ে আসছে শুভ্র বেরিয়ে আসতে দেখে।
————–★★★★★
অন্যদিকে জীনিয়া এসব কিছু উস্কে দিয়েছে প্রেসকে কল করেছে। নীলাকে খারাপ বানাবে।।শুভ্রর থেকে দুরে করে দিবে।শয়তানি হাসি হেসে সব কিছু দেখে যাচ্ছে।। এবার শেষ নাটক দেখার মিস্টার চৌধুরী। এবার দেখবো কি করো তুমি।
আমি তোমার সেই অসহায় হয়ে যখন বসে থাকবে আমি তোমার কাছে বন্ধু হয়ে তোমার পাশে দাঁড়াবো।আস্তে আস্তে তোমার মনে যায়গা করে নিবো।
★★★★★
প্রেসের সামনে যেতেই একেকজন একেক প্রশ্ন করছে। সবাই ঘিরে ধরেছে।ক্যামেরা হাতে সবাই এগিয়ে আসছে।

নীলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
এখনো শুভ্র নীলার হাত ধরেই রেখেছে।

একে একে অফিসের সকল মানুষ জোরো হয়েছে।স্টাফরা,, সার্ভেন্টরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নীলা শুভ্রর দিকে। একে বারে ভীড় জমে গেছে।

আমি জানি না আপনারা কোথা থেকে এসব বাজে খবর পান।আপনারা হইতো জানেন না আমি ঠিক কি করতে পারি। আমাকে এইভাবে হ্যারাসমেন্ট করার জন্য।

দেখুন আপনারা হইতো জানেন না শি ইজ মাই ওয়াইফ । আর আপনারা তাকে নিয়ে বাজে কথা বলছেন সত্যি টা না জেনে। আপনারা কি ভেবেছেন টা কি যে শুভ্র চৌধুরীর ওয়াইফকে নিয়ে যা খুশি বলে যাবেন আমি চুপ করে থাকবো।আর আমি কোনো দিন কোনো মেয়ের সাথে থাকি নি বলে যে আজ থাকতে পারি না।নাকি সেই অধিকার ও আমার নেই।বিয়ের ডকুমেন্টস সব দেখিয়ে দিলো সবাইকে উরিয়ে সবার সামনে এই নিন আপনারায় দেখে নিন। আর আমি ঠিক কি কি করতে পারি আপনারা ঠিক ধারণাও করতে পারবেন না।

ওয়াইফ কথা টা শুনে জীনিয়া শকড হয়ে যায়। এটা কি বলছে শুভ্র চৌধুরী ওয়াইফ মানে। ওয়াইফ আর যায় বলো আগুন তো আমি লাগিয়ে দিয়েছি সেই ঠেলা সামলাও এবার
হুহ্।

সবাই একদম চুপ করে যায়। কারোর মুখে কোনো কথা নেই।

নীলা ভাবছে এসব কেন করছেন উনি।শুধু কি আমার সম্মান বাঁচানোর জন্য নাকি অন্য কিছু।

একজন এগিয়ে এসে বললো — স্যার স্যার আমরা খবর পেয়েছি মেয়েটি নাকি প্রস্টীটিউট।আপনার মতো একজন বড় মাপের লোক কি করে একজন এরকম মেয়েকে বিয়ে করতে পারে।

আরেক জন এসে বলে তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে এরকম মেয়েকে কেন বিয়ে করলেন স্যার নাকি শুধু মাত্র টাকার জোরে এসব করছেন। এসব বিয়ের সব নাটক করছেন যাতে আপনার রেপুটেশন নষ্ট না হয়।

শুভ্রর চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে যায়।

নীলার কাছে মনে হচ্ছে তার জীবন টা এখানেই যদি শেষ হয়ে যেতো। দু পা পিছিয়ে যায়। নীলা হতভম্ব হয়ে গেছে। আজ এটাও শুনার বাকি ছিল। নীলার যেনো চোখ ফেটে কান্না আসছে।

হঠাৎ শুভ্রর চোখ যায় অই দিকে দাঁড়িয়ে থাকা জীনিয়ার দিকে যে এখন সব কিছু দাঁড়িয়ে থেকে দেখছে আর হাতের ফোন টা ঘুরাচ্ছে আর বাকা হাসছে। শুভ্রর আর বুঝতে নাকি নেই কে এসব করেছে।

শুভ্র নীলাকে এক হাতে দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেই। সবার সামনে। জীনিয়ার দিকে বাকা হেসে। তুমি হইত জানো না তুমি কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছো জীনিয়া খান এইবার তুমি দেখতে পারবে শুভ্র চৌধুরী আসলে কি।

শুভ্র আস্তে আস্তে নীলাকে নিজের কাছে টেনে নেই।

নীলা হতভম্ব হয়ে যায়। শুভ্রর এহেন কান্ডে।

এটা কি করছেন আপনি।

শিহ– একদম কোনো কথা বলবে না। শুধু দেখতে থাকো কি হয়।

সবার এটেনশন শুধু সামনে থাকা ওদের দুজনের দিকে।

শুভ্র নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। গালে হাত দিয়ে নীলার মুখের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শুভ্রর হাত নীলার চুল ভেদ করে ঘারে পৌঁছে গেছে।

নীলা চোখ বন্ধ করে নেই। হঠাৎ নিজের ঠোঁটে কারোর কোমল ঠোঁটের স্পর্শ টের পাই নীলা সঙ্গে চোখ খুলে ফেলে বড় বড় করে ফেলে।

শুভ্র নীলার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেই।
নীলা বাধা দিতে চেয়েও পারলো না। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে শুভ্রর গলা ধরে।

সবাই হতভম্ব হয়ে যায় একদম।
সব সাংবাদিক মিডিয়ার লোকেরা মাথা নিচু করে নেই।

জীনিয়া তো পুরো আগুন হয়ে গেছে।
এটা কি করে ফেললো শুভ্র চৌধুরী। রাগে নিজর হাতের মোবাইল টা জোরে ছুরে মারে। আর গটগট করে চলে আসে সেখান থেকে।ফাহিম জরুরি কোনো কাজে গেছে আর তার মধ্যেই জীনিয়া এতো কিছু করে ফেলে।

পুরো এক মিনিট পর নীলাকে শুভ্র ছেড়ে দিল।

নীলা ছাড়া পেয়ে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে দৌঁড়ে ভেতরে চলে আসে কাঁদতে কাঁদতে।

কি হলো সবাই চুপ কেন কথা বলুন। পেয়ে গেছেন আপনারা প্রমান। দেখলেন তো ওই মেয়েটা নয় আমি নিজে ওর কাছে গিয়েছি। আই লাভ হার। আমি ওকে ভালোবাসেই বিয়ে করেছি। এর পর নিশ্চয়ই আপনাদের আর কোনো প্রশ্ন থাকার কথা না। আর যে এই কাজ করেছে আমার ওয়াইফ কে বদনাম করার চেষ্টা করেছে তাকে আমি তার প্রাপ্য সাজা দিয়ে দিব এটা আমার প্রতিজ্ঞা। খুব শীঘ্রই সে তার শাস্তি পাবে। নাও গেট আউট মাই অফিস।গেট লস্ট।

জোরে চেচিয়ে কথা গুলো বললো শুভ্র।
কাকন এসে শুভ্রর দুই কাধে হাত শান্ত হতে বলছে।

সব জায়গায় ছড়িয়ে গেছে এই খবর শুভ্র চৌধুরী ইজ ম্যারিড। এই খবর শুনে ঠিক কত মেয়ের মন ভেঙ্গেছে জানা নেই।
একে একে সব প্রেসের লোকেরা চলে যায়।

হঠাৎ কোনো কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজে শুভ্র দৌঁড়ে নিজের কেবিনে যায় নীলার কথা মাথায় আসতেই সে ঘাবড়ে যায়।

গিয়ে যা দেখে শুভ্র তার জন্য প্রস্তুত ছিলো না—

চলবে—

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-১৪+১৫

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলা দেখতে পেলো শুভ্র একদল লোক নিয়ে স্বরগোল করতে করতে হেটে যাচ্ছে। শুভ্র লোক গুলো কে লিড করছে। নীলা আরও ভালো করে দেখলো শুভ্র ওদের সাথে কিছু জরুরি আলোচনা করছিল। হইতো বিজনেস বিষয়ে আলোচনা হবে।

শুভ্রর দীর্ঘ রিজু দেহ দেখে নীলার মনে হলো এক পাল মুরগীর বাচ্চা আগে একটা সারস হেটে যাচ্ছে। তার নীডলি টেইলার প্যান্টস দিয়ে তার লম্বা পা দুটো ঢেকে ছিলো। আর তার বড় বড় পদক্ষেপ গুলো ছিলো স্মুদ আর এলিগেন্স!

শুভ্রর চলাফেরার মধ্যে একটা নিজস্বতা এবং চোখে উদাসীন ভাব ছিলো! যেটা শুভ্রর সুঠাম চেহেরাকে আরও বেশি ফুটিয়ে তুলেছিলো। যাকে বলে অন্যমাত্রায় সুন্দর দেখতে লাগছিলো!

শুভ্র ধীরে সুস্থে ডাবল ডোর গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।নীলার মনে হলো শুভ্র এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে।

নীলা তারাতাড়ি করে ছুটে আসছিলো আর শুভ্রকে ডাকতে থাকে জোরে জোরে মিস্টার চৌধুরী দাঁড়ান,,, দাঁড়ান— আমার জন্য একটু দাঁড়িয়ে যান প্লিজ!

নীলার ডাক শুনে শুভ্রর কঠোর এক্সপ্রেসন চেঞ্জ হয়ে গেলো। শুভর আই ব্রু দুটো এক সাথে জোরো হয়ে কুচকে গেলো!

শুভ্র পিছনে ঘুরে দেখতে পেলো নীলা তার দিকে দৌঁড়ে আসছে। নীলা কোমরে ফিতে বাধা একটা চোটপদার পোশাক পরেছে। সে পাগলের মতো তার দিকে ছুটে আসছিলো।

শুভ্রর ভ্রু দুটো আরও বেশি কুচকে গেলো। সে দেখতে পেলো নীলার রেশমি কালো লম্বা চুল গুলো তার ফর্সা স্কিনে এমন ভাবে উছলে পরছিলো যেনো দেখে মনে হচ্ছিল সে কোনো রুপকথার রাজকন্যা!! নীলাকে আরও বেশি সুন্দরী আর পরিপাটি দেখাচ্ছিলো।

শুভ্র একটা লম্বা শ্বাস টানলো। অন্যদিকে নজর ঘুরিয়ে নিলো এবং হেটে বাইরে বেরিয়ে যেতে থাকলো।

ততক্ষনে নীলা চলে এসেছে। নীলা শুভ্রর পিছনে হেটে হেটে যেতে যেতে বললো— মিস্টার চৌধুরী আমাকে একটু কলেজ ড্রপ করে দিবেন প্লিজ। গত কয়েক দিন আমি কলেজ যায়নি।

আমি কাউকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমাকে ওখানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। শুভ্র সামনের দিকে তাকিয়ে ভদ্র ভাবে উত্তর দিলো।

ওহ ওকে। আপনি কি আমাকে যাস্ট বাস স্টপ অব্দি নিয়ে যেতে পারেন। আমার গাড়ির কোনো দরকার নেই।

শুভ্র আবার ভ্রু কুচকে পিছনে ফিরে তাকালো।

তা দেখে নীলা দাঁড়িয়ে গেলো।মাথা নিচু করে আছে সে।

চৌধুরী ফ্যামিলি এতোটা গরিব নয় যে তাদের বাড়ির বউ কে ট্রান্সপর্টের পয়সা বাচানোর জন্য পাবলিক বাসে যাতায়াত করতে হবে।

তার পর শুভ্র কিছুক্ষন নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো—গাড়িতে বসো আমি নামিয়ে দিচ্ছি। শুভ্র গাড়ির দরজার লক খুলে দিলো।

নীলা উঠে পরলো। শুভ্র উঠে গাড়ির সীট বেল্ট বাধতে বাধতে দেখলো নীলা সীট বেল্ট বাধে নি।
তাই বললো সীট বেল্ট পড়ে নাও।

নীলা শুভ্রর কথা শুনে নিজের সীট বেল্ট পড়ে নিলো। ছোট বেলায় যখন নীলার বাবা তাকে গাড়িতে করে স্কুল দিয়ে যেতো তখনও সে ভুলে যেতো সীট বেল্ট পরতে। ভুলে যেতো না বরং নীলা ইচ্ছা করেই নিজের সীট বেল্ট বাধতো না। যাতে নীলা তার বাবার থেকে একটু ভালোবাসা আর কেয়ারিং পেত।

তখনি শুভ্র দেখলো নীলা কিছু একটা ভাবছে। তার বললো তাহলে যাওয়া যাক!

নীলার ঘোর কাটলো সেও বললো —হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন

শুভ্র মনে মনে এটাই চাইছিলো। যেনো নীলা ওর সাথেই যায়।কিন্তু নীলাকে কোনো ক্রমেই বুঝতে দিচ্ছিলো না।

শুভ্রর গাড়িটা ছিলো বিরাট বিলাস বহুল নজর কারার মতো। যার ভেতরের সীট গুলো লেদারের তৈরি ছিলো! আর গাড়িতে সুন্দর ফ্রেশ একটা স্মেল ছিলো।

শুভ্র হঠাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে নীলার ময়লা লাগানো জুতোর দিকে খেয়াল করলো!
তোমার জুতো গুলো এতো নোংরা কেনো? ( শুভ্র খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো)

নীলাও নিচে তাকালো আর সে একটা বিচ্ছিরি পায়ের দাগ দেখতে পেলো নিজের জুতোর উপর।

তারপর নীলা একটা এম্বারেসমেন্টে হেসে ফেললো আর বললো আমার তো এই একটাই জুতো আর কোনো জুতো নেই!!

শুভ্র বুঝতে পারলো । তাই তো নীলার আর জুতো থাকারও কথা না। সে তো এক পাটি জুতো নিয়েই এসেছে।

নীলা আবারও আপনার কি কোনো অসুবিধা হচ্ছে মিস্টার চৌধুরী । এটা আমার কি দোষ আমি তো এটা ইচ্ছে করে পরিনি।এটা আমার অনলি প্যায়ার অফ সুজ!

শুভ্র নীলার দিকে তাকালো। নীলা অগোছালো ভাবে পোশাক পরে ছিলো এবং সে শুভ্র নীলার পোশাকটা ভালো করে দেখলো। এটা সেই সেইম জামাটা যেটা নীলা সেদিন বৃষ্টিতে পড়ে ভিচ্ছিলো।এবং তাকে ক্রীটিকিউলাসলী হ্যাভি দেখাচ্ছিলো।

শুভ্র নীলাকে বললো আমি তোমাকে আগে কিছু জামা কাপড় কিনে দিতে নিয়ে যাবো।

এটা শুনে নীলা সঙ্গে সঙ্গে বললো না না আমার জামা কাপড় একদম ঠিক আছে নতুন জামা কাপড়ের দরকার নেই।ইটস যাস্ট দ্যাট আমি আমার জামা কাপড় গুলো সব সঙ্গে আনতে পারিনি। দুটো এনেছি তো অতেই হয়ে যাবে।

হোয়াট? দ্যা গ্রেট বিজনেস ম্যান শুভ্র চৌধুরীর ওয়াইফ কিনা দুটো ড্রেস পরবে। হ্যাভ ইউ লস্ট ইউর সেন্স। ভ্রু কুচকে বললো শুভ্র।

বাট শুভ্র অলরেডি ড্রাইভারকে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছিল। সবচেয়ে বড় শপিংমলে নিয়ে চলো। মেডামের জন্য ড্রেস কিনতে হবে।

ড্রাইভার ইমিডিয়েটলি গাড়ি ইউটার্ন নিয়ে নিলো।

নীলা খুবই লজ্জিত বোধ করছিল। এসবের কিন্তু কোনো প্রয়োজন ছিল না মিস্টার চৌধুরী। এসব আপনার জন্য খুবই ঝামেলার হয়ে যাচ্ছে আর তাছাড়া আমার কলেজ লেট হয়ে যাচ্ছে তো।

শুভ্র নীলার জামা কাপড়ের উপর দিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।সে জানতো না নীলা কোথা থেকে এই ড্রেস কিনেছিলো।কিন্তু এটা যে বহু পুরনো আর বহু বার কাচা হয়েছে তা বুঝা যাচ্ছিলো। সেটা এই ড্রেস টা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ও নিশ্চয়ই এই জামা টা প্রচুর বার পরেছে।

তোমার জামাটা ভীষণ নোংরা আমি তাকাতে পারছি না। না মানে আমি দেখেই আনকম্ফোর্টেবল ফীল করছি।

ওকে ফাইন দ্যান এতে যদি উনি আনকম্ফোর্টেবল ফীল করেন উনি যা খুশি কিনুক আমার জন্য। নীলার মনে হচ্ছিল শুভ্র হইতো ভালো ভাবছে।

হুম হুম একে বলা হয় হিসেবি হয়ে চলা বুঝলেন। এর আপনি কি জানেন।

তো তুমি সাবি হয়ে চলাফেরা করা কে হিসেবি বলে ট্রিট করছো। কিন্তু সেটা আমার হ্যাবিট নয়। শুভ্রর চোখ গুলো এজ ইউজুয়ালি নির্বিকার।

নীলা বললো ইয়েস অফকোর্স বড় লোক হওয়া তো ভালো। তাই তো এভরিডে নিজের জামা কাপড় চেঞ্জ করতে পারেন। আমার তো আর এতো জামা কাপড় নেই। তাই আমার যা আছে আমি সেগুলোই একেক দিন ধরে অনেক দিন পরি। এটা আমি কতবার পরেছি বলে আপনার মনে হয়।

এটা দের হাজার টাকা দাম নিয়েছিল। আর আমি এটার পুরো দাম উসুল না করে তো আমি পরা ছেড়ে দিবো না। তাছাড়া এই ড্রেস টা আমাকে আমার দাদি কিনে দিয়েছিলো। তাই আমি ভালোবেসেই পরি।

শুভ্র নীলার দিকে তাকালো। আমি তো জানতাম খান ফ্যামিলি এতোটা গরিব নয়।

নীলা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে হেসে বললো তাহলে আপনি আমার ব্যাপারে ভালোই খোঁজ খবর নিয়েছেন দেখছি।

ন্যাচারালি! তোমার কি মনে হয় আমি একটা মেয়েকে এমনি এমনি বিয়ে করে নিবো।তার কোনো খোঁজ খবর নেবো না।

কিহ তার মানে আপনি আমার ব্যাপারে সবটা জানতেন। আমি যে বাড়ি থেকে পালাচ্ছিলাম এটাও জানতেন।

শুভ্র এবার বুঝতে পারলো সে কি বলে ফেলেছে। শুভ্র নিজের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো তোর মুখে কি কিছুই আটকায় না।বিড়বিড় করে।

কিছু বললেন মিস্টার চৌধুরী?

না না কি বলবো। আচ্ছা তুমি কি চুপ করে থাকতে পারো না।

কিন্তু আপনি কি এটা জানতে পারেন নি আমি খান বাড়ির যাস্ট একটা অবৈধ সন্তান। আমার বাবা আমাকে খান ফ্যামিলির একজন মেম্বার হিসেবে কখনো ট্রিট করেন নি।

হুম জানতাম না আগে তবে খোঁজ নিয়ে নিয়েছিলাম। আর তোমার ব্যাপারে জানা টা শুভ্র চৌধুরীর কাছে কোনো ব্যাপারই না।

জানেন মিস্টার চৌধুরী ছোট বেলা থেকে আমি আমার দাদির কাছেই থাকতাম। আমার দাদিই একমাত্র যিনি আমাকে মন থেকে স্নেহ করতেন ভালো বাসতেন।

আর একটা কথা কি জানেন ছোট বেলায় আমার সৎ বোন জীনিয়ার পুরনো জামা কাপড় পরতে দেওয়া হতো।

অই জামা কাপড় গুলো অনেক বার কাচার ফলে ছিড়ে যেতো সেগুলো দাদি আমাকে সেলাই করে দিতেন। আর যখন বড় হলাম দাদিই নিজে যা টাকা জমিয়ে রাখতেন তা দিয়ে আমার জামা কাপড় কিনে দিতেন।

ইভেন আমার যখন একটা প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছিল দাদিই আমাকে পালাতে সাহায্য করে।

কথা গুলো বলে নীলা লম্বা একটা শ্বাস ফেললো। নীলার চোখে পানি ছলছল করছিল যা সে শুভ্রর থেকে আড়াল করতে চাইছিলো।

বিস্ময়ে শুভ্রর চোখ কপালে উঠে গেলো। শুভ্রর চোখেও পানি চলে এসেছে। নীলার দিকে তাকিয়ে অর দৃষ্টি আস্তে আস্তে সেটল হলো।

শীঘ্রই তারা একটা ব্র‍্যান্ডের ফ্যাশন সো এর সামনে চলে আসলো। তারপর গাড়ি থেকে অরা দুজনেই নেমে ভেতরে প্রবেশ করলো। ——————————————————–

ড্রইংরুমে বসে আছে ইমরান খান আর রিশিকা।

রিশিকা মিস্টার খানকে বলছে নীলা যদি তোমার সম্মান এর কথা না ভেবে পালিয়ে যেতে পারে তাহলে তুমি কেন অর কথা ভাবছো ইমরান।

আহ তুমি বেশি কথা বলবে না। একটা মেয়ে তো আর এই ভাবে রাতারাতি উধাও হয়ে যাবে না।আর নীলা তো ঠিক করেছে পালিয়ে গিয়ে। তুমি একটা প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে অর বিয়ে কি করে ঠিক করলে। জীনিয়া আর মুন্নির সাথেও কি তুমি এটা করতে পারতে।

বাহ ইমরান। তোমার তো দেখছি অর জন্য একে বারে দরদ উতলে পরছে।এর আগে তো তুমিই অকে দেখতেই পারতে না।হঠাৎ এত দরদ।

হুম ঠিক বলেছো তুমি আমি মেয়েটার সাথে অন্যায় করেছি।তা শুধু মাত্র তোমার কথায়। আজ যদি আমি তোমার কথা না শুনতাম তাহলে আজ এই দিন টা দেখতে হতো না।

মিস্টার খান খুবই অনুতপ্ত এই দুই মিস্টার খান নীলাকে অনেক খুঁজেছে। কিন্তু পায়নি।

মিসেস শাহানা খান সবটাই শুনছেন। আর টেনশনে আছেন। মেয়েটার কোথায় আছে কেমন আছে একটু যদি জানতে পারতাম। আল্লাহ মেয়েটাকে তুমি দেখো। যাতে ভালো থাকে সব সময়।

চলবে——

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব১৫
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলা আর শুভ্র দুজনেই একটা বড় ব্র‍্যান্ডেড ফ্যাশন স্টোর এর ভেতরে প্রবেশ করলো।
ভেতরে ঢুকেই শুভ্র চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।

এবং তাদের পিছন পিছন আসা সেলসপার্সনকে বললো উনার সাইজের সমস্ত জামা কাপড় নিয়ে আসুন।
শুভ্রকে এতো খানি সিদ্ধান্ত মুলক দেখে
সেলস পার্সনের চোখ আনন্দে চকচক করে উঠলো।

সেলসপার্সন কুইকলি নীলাকে আরও ভেতরে নিয়ে গেলো।

নীলা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। এটা ওর জীবনের প্রথম বার যখন ও এক্সপেরিয়েন্স করছে বড় লোকরা কিভাবে শোপ করে। এই প্রথম নীলা এতো বড় শপিং মলে এসেছে।

নীলা ওর ড্রেস টা চেঞ্জ করে একটা বিউটিফুল স্কার্ট পরে নিলো।ওটা নীলার বডির চারপাশ টা ঘিরে রেখেছিলো!!!খুবই দারুন ভাবে অর শরীরে ড্রেস টা স্যুট করেছিলো!!! আর ইন্সটেন্টলী তার এপিয়ারেন্সটাকে দারুন ভাবে উজ্জ্বল করে তুললো।

ভেতরে গিয়ে নীলা একটা একটা করে সব গুলো জামা পড়ে দেখছিল।

সেলসপার্সনটি খুবই ভালো ব্যবহারের সাথে তাকে এসিস্ট করতে থাকলেন।

ওপর পাশে শুভ্র এলিগেন্টলি একটা চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছিলো এবং নিউস পেপার পড়ছিলো।

যদিও নীলা প্যুলাইটলি অস্বীকার করেছিলো তবুও এটা ক্লিয়ার যে সে জীবনে কখনো এরকম দৃশ্য দেখে নি!!!সে অবাক হয়ে স্টোরের চার পাশ টা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।
দেখে মনেই হচ্ছিল যে সে জীবনে কখনো ভালো জামা কাপড় পড়ে নি।

হাউ-ইভার শুভ্র যখন মাথা তুলে তাকালো নীলা তখন একটা পান্না সবুজ গাউন পড়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। সেটা নীলার ধবধবে ফর্সা স্কিনে খুবই সুন্দর ভাবে মানিয়েছিলো।এবং ওই ড্রেস টা প্রায় ওর গায়ের সঙ্গে মিশে গেছিলো। ওকে বর্ষার জলে ভরা একটা নদীর মতো দেখাচ্ছিলো!!! সতেজ আর উজ্জ্বল!! নীলার লম্বা কোমল পা দুটো প্রায় এক্সপোস্ট ছিলো। সবটা মিলিয়ে ওকে সুন্দর আর আকর্ষণীয় লাগছিলো। উইথ এ হিন্ড অফ কিউটনেস!!!

সেলসপার্সন মহিল টি কম্পলিমেন্ট দিতে গিয়ে হেসে বললেন এই পিস টা আপনার জন্য একদম পারফেক্ট মেডাম! আপনাকে দারুন দেখাচ্ছে।

নীলা প্রশংসা শুনে লজ্জিত বোধ করলো!!

শুভ্র এখনো নীলার দিকে তাকিয়েই আছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে ওকে এই ড্রেসটাই সত্যিই অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।

যদিও নীলা খুবই সিম্পল ভাবে চলাফেরা করে। সাধারণত ওকে অগোছালো আর আনকালচার দেখায় কিন্তু কারেন্টলী নীলা সত্যিই গ্রেসফুল আর ন্যানিসুলভ কমনীয়তায় ভরপুর দেখাচ্ছিলো!!
শুভ্র আরও বার দুয়েক নীলার দিকে না তাকিয়ে থাকতে পারলো না! শুভ্র যেনো আবারও নীলার প্রেমে পড়ে গেলো।

শুভ্র যখন নীলাকে মাথা ঘুরাতে দেখলো তখনী শুভ্র চট করে নিজের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিলো। শুভ্র খুবই সেটিসফায় হয়েছিলো। নীলাকে কিছুতেই বুঝতে দিলো না শুভ্র যে সে নীলার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।

সেই স্টোরের অপর পাশেই জুতা দেখতে পেলো। নীলা নিজের গাউন এর সাথে ম্যাচ করে এক জোরা জুতা নিয়ে নিলো। নীলা যথেষ্ট লম্বা তাই সে হাই হীল নিলো না।

তারপর শুভ্র একজনকে ইশারা করে বীল টা পাঠাতে বললো। এই স্টোরের যা যা জিনিস উনাকে স্যুট করে তার সব গুলো ড্রেস র‍্যাপ করে দিন আর চৌধুরী বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। শুভ্র চৌধুরী এর আগে সব সময় এই শপিং মল থেকেই শোপ করে।

নীলা পুরো দমে শকড হয়ে গেছিলো। সে শুভ্রর দিকে তাকালো। তার চোখ থেকে আলো ঠিকরে বেরচ্ছিল।

শুভ্র চৌধুরী খুবই রিচ ছিল। ন্যাচারেলী সেলসপার্সনটি খুবই খুশি ছিলেন। তিনি প্যুলাইটলি তাদের দরজা অব্দি এগিয়ে দিলেন।

তারপর সোজা নীলা কে তার কলেজ নামিয়ে দিলেন। নীলা নামতেই শুভ্র নীলার দিকে না তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললেন ড্রাইভারকে।।

শনশন করে গাড়ি চলে গেলো।
নীলা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এ কেমন লোক রে বাবা একটা বার তাকালো না অব্দি।ভালো মন্দ কিছুই বললো না।

নীলা আর কিছু না ভেবে ভেতরে প্রবেশ করলো। ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে সবাই তার দিকে তাকালো। সবাই যেনো আকাশ থেকে নেমে আসা একটা পরি দেখছে আর সাথে খুবই অবাক হয়েছে। কারণ এর আগে নীলা কখনোই এরকম সোজন্যমুলক ড্রেস পরে কলেজ আসে নি।
নীলা সবার নজর উপেক্ষা করে ক্লাসে গেলো।

গিয়েই দেখলো প্রাপ্তি মন খারাপ করে বসে আছে। নীলা প্রাপ্তি কে ডাকলো।প্রথমে প্রাপ্তি অতোটা খেয়াল করেনি।যখন সে খেয়াল করলো নীলাকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে গেলো। এবং আনন্দে তার চোখ চিকচিক করে উঠলো। প্রাপ্তি দোঁড়ে এসে নীলাকে জড়িয়ে ধরলো।

নীলাও প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো।
কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে তারপর নীলা প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিলো।

প্রাপ্তি নীলাকে খুব নিখুঁত ভাবে দেখছিল। আর ক্লাসের বাকি সবার নজর ছিলো নীলার দিকে।কারণ তাকে আজ অন্যান্য দিনের থেকে অনেকটা মহনীয় লাগছে যা ছিলো খুবই মনোমুগ্ধকর। সবাই কে নীলার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীলা কিছু টা লজ্জা পেলো!

তারপর দুজনেই বসে পরলো নিজেদের সীটে। প্রাপ্তিকে সবকিছু বললো নীলা এতো দিনে কি কি হয়েছে।

প্রাপ্তিকে দেখে মনে হচ্ছিল যেনো প্রাপ্তি আগে থেকেই সব কিছু জানতো

কারণ নীলা প্রাপ্তির মধ্যে অবাক হওয়ার মতো কোনো ভাবান্তর দেখতে পেলো না। প্রাপ্তিকে কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত দেখাচ্ছিলো।

প্রাপ্তি কিছু একটা ভাবছে সেটা দেখে নীলা অকে একটা ধাক্কা দিতেই প্রাপ্তির ধ্যান ফিরলো।

নীলাঃ কি রে কি ভাবছিস এতো। আমি এতো কিছু বললাম তুই তো কিছুই বললি না।

প্রাপ্তিঃ হ্যাঁ না মানে আমি তো সবটা শুনছি।তুই বল না।কি বলছিলি।

নীলাঃ সবটা তো শুনলি।এই কারণে কলেজ আসতে পারিনি।তোর নোটস গুলো দিস তো আমাকে। আর সাত দিন পর এক্সাম।জানি না কেমন হবে।

প্রাপ্তি এখনো কিছু একটা ভাবছে। অকে দেখে নীলার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না

কিরে কি হয়েছে তোর প্রাপ্তি তুই কি কোনো বিষয় নিয়ে আপসেট।

নীলাকে কিছুই বুঝতে দিলে চলবে না যে আমি আগে থেকেই সব টা জানতাম।।আর কি নিয়ে আপসেট।

প্রাপ্তি নিজেকে সামলে নিয়ে বললো আরে না না তেমন কিছু না। আমি খুব খুশি হয়েছি তোর যে শুভ্র চৌধুরীর মতো একজন ভালো মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে। উনাকে কে চেনে না বলতো। এই নে নোটস গুলো তুই কাভার করে নিস।

নীলাঃ ঠিক আছে। তোর ফোন টা একটু দে তো বাড়ির লেন্ড লাইনে ফোন দিব।দাদির সাথে কথা বলাটা খুব জরুরি। এসময় বাড়িতে কেউ থাকে না তাই যদি ফো্নটা ধরার সম্ভাবনা দাদির ই বেশি।আর স্যার আসতে এখনো দেরি আছে ১০ মিনিট।

প্রাপ্তি স্বাভাবিক ভাবে আলতো হেসে নীলাকে ফোন টা এগিয়ে দিলো। তারপর নীলা বাড়ির লেন্ড লাইনে ফোন দিলো একবার রিং হয়ে কেটে গেলে নীলা আবার দেই।এরপর ফোন রিসিভ হয়।

হ্যালো বলার সাথে সাথেই নীলা বুঝতে পারে যে দাদিই ফোন টা তুলেছে।

কিছুক্ষন কথা বলে দাদিকেও সবটা বললো। নীলা। দাদি খুব খুশি হয়েছে আমি ভালো আছি শুনে।

কিছুক্ষন পর স্যার ক্লাসে চলে আসলো।
তারপর প্রাপ্তি আর নীলা দুজনেই ক্লাসে মনোযোগ দিলো।

এক্সাম এর জন্য ফিজ এর কথা বললেন স্যার। নীলা আর প্রাপ্তির দুজনেই ফিজ এর কথা শুনে চিন্তায় পরে গেছে।অনেকটা ফিজ ধরেছে।

প্রাপ্তি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অর এতো টাকা ফিজ দেওয়া খুবই কষ্টের। আর তাছাড়া ওর ছোট দুজন ভাইবোন আছে।

নীলা ভাবছে কি ভাবে কি করবো।

তারপর বাকি ক্লাস গুলো করে দুজনেই বেরিয়ে আসলো।

বাইরে আসার পর নীলা আবারও খেয়াল করলো প্রাপ্তি কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করছে।
এবার নীলা প্রাপ্তিকে জোর করে ধরে।

নীলাঃ কি হয়েছে বলবি তুই। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুই কিছু একটা নিয়ে টেনশনে আছিস কি হয়েছে বল আমায় তুই কি আমাকে এতটা পর ভাবিস।

এইবার প্রাপ্তি আচমকা নীলাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

নীলা প্রাপ্তিকে শান্তনা দিচ্ছে কি হয়েছে তুই কাদছিস কেন বল আমায়।

প্রাপ্তি নীলাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে নিলো।

প্রাপ্তিঃ বাবা খুব অসুস্থ রে নীলা। এই স্যার এক্সাম এর জন্য এতো টাকা ফিজ কিভাবে জোগাড় করবো। আর তুই তো জানিস বাবা যে টুকু রোজগার সেটা বাবা করে । হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে পরে বাবার ঔষধ কিনতে হচ্ছে কত টাকার।

এক দমে কাদতে কাদতে বললো প্রাপ্তি।

নীলাঃ ধুর পাগলি এই জন্য তুই কাদছিস। আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো। তুই কোনো চিন্তা করিস না। আর আংকেল কেমন আছেন এখন।

প্রাপ্তিঃ তুই কিভাবে ব্যবস্থা করবি তোরও তো ফিজ দিতে হবে। আর বাবা কিছু টা ভালো আছেন।

নীলাঃ তুই চিন্তা করিস না আমি সবটা ব্যবস্থা করবো।

নীলা প্রাপ্তি দুজনেই গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল তখনি অদের সামনে একটা বড় বিলাস বহুল গাড়ি এসে থামলো —-

নীলা আর প্রাপ্তি দুজনেই চমকে তাকালো। তাকিয়েই অবাক হয়ে যায় দুজনেই ——

চলবে——

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-১২+১৩

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ(১২)
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

আজকে সারাদিনে এক বার ও নীলার মনে হয়নি যে আলাদা একটা বাড়িতে এসেছে। এক দিনেই যেনো। মনে হচ্ছে এটা আমার নিজের সংসার।আমার শাশুড়ী মা! বোনের মতো ননদ সবাই তাকে এক দিনেই কতটা আপন করে নিয়েছে।এঞ্জেল তো নীলাকে ছাড়তেই চাইছিল না। শাশুড়ী মা জোর করে নিজের কাছে রেখে দিলেন ঘুমিয়ে পরেছে এখন সে।

নীলার সব কিছুই বলেছে সে যে বাড়ির অবৈধ সন্তান সেটাও বলেছে তার সাথে কি কি হতো । সব কিছুই জানার পর তাকে তার শাশুড়ী অনেক স্নেহ করেছেন। অনেক শান্তনা দিয়েছেন।

শুধু একটা কথায় বলতে পারেনি সেটা হলো নীলা ফিহার সত্যি কারের মা নয়।কেন যেনো এই কথাটা বলতে পারেনি ফিহার মুখের দিকে তাকিয়ে।এই টুকু বাচ্চা তো আর এতো কিছু বুঝে না। তবে সময় হলে নীলা নিজে থেকেই সবটা বলবে।

নীলা স্বপ্নেও ভাবে নি যে এতো টা সুখ পাবে সে। ছোট বেলা থেকেই লাথি গুরি খেয়েই বড় হয়েছে। আর এক দিনেই জীবন টা এতো টা বদলে গেলো। এতো টা সুখ ভালোবাসা সয়বে তো আমার কপালে।

শুভ্র এখন ও অফিস থেকে আসে নি সকালে ব্রেক ফার্স্ট করে চলে গেছেন উনি।এখন হইতো চলে আসবে।আমি ঘরে বসে উনার আসার জন্য অপেক্ষা করছি।একটু আগেই হিয়ার সাথে গল্প করেই রুমে এসে বসে আছি। আমার ব্যাগটা উনি সকালে অফিস যাওয়ার আগে দিয়েছিলেন। সামনে এক্সাম তাই বই নিয়ে পড়তে বসেছি।এই ক’দিন একটুও পড়া হইনি।

কিছুক্ষণ পর শুভ্র অফিস থেকে ফিরে নিজের রুমে ঢুকলো। এসেই তার চোখ পরলো নীলার দিকে। মেয়েটা মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। শুভ্র আর কিছু বললো না। কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

নীলা সবটাই লক্ষ্য করেছে কিন্তু কিছুই বললো না। যেনো সে দেখেই নি শুভ্র এসেছে। বইয়েই মুখ গুজে আছে।কি জানি কেন জানি উনার সাথে কথা বলতেই বা তাকাতেই সংকোচ লাগছে।

শুনেছি স্বামীরা অফিস থেকে আসলে সব মেয়েরাই তাদের যত্ন করে। আর আমি মুখ গুজে আছি কোনো খেয়াল নেই।ধুর বাবা আমি কেন এতো কিছু ভাবছি।এতো সব ভাবনা আসছে কেন মাথায়।

উনি ফ্রেশ হয়ে নিজের চুল গুলো তোয়ালে দিয়ে মুঝতে বের হলেন। না চাইতেও উনার দিকে আমার চোখ চলে গেলো।

নীলার ইনফেচুয়েট চোখ গুলো শুভ্রর অসাধারণ সুন্দর মুখে তাকিয়ে অবাক হয়ে রইলো। ও আর অন্য দিকে তাকাতেই পারছিলো না।

হোয়াট এ হ্যান্ডসাম ম্যান!শুভ্রর গভীর চোখ দুটোই একটা সহযাত এরোগেন্সের ছাপ আছে!তার মুখ যেনো বরফের মতো ঠান্ডা! আর তার স্ট্রিট নাক তার পরিষ্কার মুখের উপর খাড়া হয়ে আছে।

তার সাদা ধবধবে স্কিন!!! নীলার যার নিজের দারুন সুন্দর ফর্সা স্কিন ছিল। তার মনেও একটু হিংসা জাগিয়ে তুললো। অনেক সুন্দর এই ছেলের গায়ের রং। এই ছেলেকে দেখে যে কোনো মেয়ে একেবারে কুপোকাত হয়ে যাবে।

নীলা এর আগে কোনো দিন এইভাবে কোনো ছেলেকে দেখে নি।

হঠাৎ শুভ্রর মাথা মুঝতে মুঝতে নীলার দিকে চোখ পরলো। নীলার অর দিকেই তাকিয়ে আছে। শুভ্র বুঝতে পারলো। তাই শুভ্র নীলার সামনে গিয়ে হাত থেকে বইটা টান দিয়ে নিয়ে নিলো।
কি হচ্ছে এসব হ্যাঁ — কি দেখছো এইভাবে।

শুভ্রর এহেন কাজে নীলার ধ্যান ভেঙে গেল। খানিকটা চমকে গেলো সে।পরক্ষনেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো হিহি আমি তো আপনাকে দেখছিলাম না।আমি তো অই ফুল দানিটা দেখছিলাম।

আমি কখন বললাম যে তুমি আমাকে দেখছিলে।

নীলা এবারে জিহ্বাই কামর দিয়ে এইরে সেরেছে কি বলে ফেললাম।সকাল থেকে এসব কি হচ্ছে আমার সাথে।

না আপনি বলেন নি তো কি হয়েছে আপনার কথায় তো এটাই প্রকাশ পাচ্ছে।
যাক গে বাদ দিন আমাকে আমার বইটা দিন। আমি পড়বো।

না না মেডাম এখন তো বইটা পাবে না।আগে বলুন সত্যিটা কি।তারপর দিবো।

হুহ্ দেখছিলাম আপনাকে তো কি হয়েছে আমি তো আমার বরকেই—– এতোটুকু বলেই ভেবাচেকা খেয়ে গেলো এইরে —– নিজের মাথায় নিজেই একটা গাট্টা দিলাম আবার কি বলে ফেললাম রে।

কি বললে—কি বলছিলে কথাটা পুরোটা শেষ করো,,,

কয় কিছু বলি নি তো —আপনি এতো কথা কেন বলছেন দিন না বইটা প্লিজ।

শুভ্র এই বারে বই টা দিয়ে দিলো। এই নিন ধরুন।

নীলা খপ করে বইটা নিয়ে নিলো।তার তারাতাড়ি করে অন্য দিকে ঘুরে বইটা রেখে দিলো।

শুভ্রও আর কিছু না ভেবে নিজের লেপটপ টা নিয়ে সোফায় বসে পরলো। তারপর শুভ্র কিছু একটা ভেবে নীলা কে বললো এক কাপ কফি দিতে পারবে।

নীলা বললো ঠিক আছে আপনি বসুন আমি আনছি।

শুভ্র আবার তার কাজে মনোযোগ দিলো।

কিছুক্ষন পর এক কাপ কফি এনে দিলো নীলা। এই নিন আপনার কফি একটা মিস্টি হাসি দিয়ে এগিয়ে দেই শুভ্রর সামনে।

শুভ্র বিনিময়ে একটা হাসি দিয়ে কাপ টা নিলো।
কফি তে চুমুক দিতেই বুঝলো এটা তো তার বাড়ির কোনো সার্ভন্ট বানায়নি।

কফিটা কি তুমিই বানিয়েছো?

হুম আমিই বানিয়েছি? কেন ভালো হয়নি না মুখটা বেকিয়ে বললো নীলা।

শুভ্র কিছুই বললো না। চুপচাপ খেয়ে নিল।

নীলা এবাবা এটা কেমন ছেলে। ভালো মন্দ কিছুই বললো না।

এর মধ্যে দুজনের আর কথা হয়নি নীলা নিজের মতো পড়ছিলো।
আর শুভ্র লেপটপ নিয়ে কাজ করছিল।
শুভ্র মাঝে মাঝে আড় চোখে নীলাকে দেখেছে।

রাত প্রায় ১টা সময় নীলা বই টা রেখে দেই। শুভ্র লেপটপ টা রেখে শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আজকেও কি সোফায় ঘুমাতে হবে রে শুভ্র ভাবছে।

তখনই নীলা এসে বললো আপনি বিছানায় ঘুমান আমি সোফায় শুয়ে পরছি। তাছাড়া আমরা তো এক বিছানায় ঘুমাতেই পারি। বিছানাটা তো যথেষ্ট বড় তাই না।

শুভ্র মনে মনে ভাবছে হ্যাঁ তোমার সাথে ঘুমায় এক বিছানায় তাহলে আমি কি জানি কি করে ফেলব নিজেও বুঝতে পারবো না।

কোনো প্রয়োজন নেই তুমি বিছানায় ঘুমাও আমি সোফায় শুয়ে পরছি।শুভ্র নীলার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো।

শুভ্র নিজেকে একজন জেন্টলম্যান মনে করে তাই নীলার প্রস্তাব টা অস্বীকার করা টা এখন তার কাছে উচিত বলে মনে করলো।

নীলা যেকোনো যায়গা তেই ঘুমিয়ে পরতে পারবে কিন্তু শুভ্রর মতো একজন যে এরকম একটা বিরাট প্রাসাদে থাকতে অভ্যস্ত সে ইনকনভিনিয়েন্সর সাথে সহজে এডজাস্ট করতে পারবে না।

না ঠিক আছে আমি শুয়ে পরছি সোফায় তাহলে আপনার শোয়ার দরকার নেই।

সত্যিই বলছি আমি আমার বাড়িতেও অভ্যস্ত ছিলাম। আমি তো আমার বাবার অবৈধ ছিলাম। ছোট বেলা থেকেই অই বাড়িতে কাজের মেয়ের মতোই বড় হয়েছি।

তারপর নীলা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো যাক গে বাদ দিন এসব কথা।
আর তাছাড়া সোফায় শোয়া টা আপনার হাইটের জন্য খুবই আনকমফর্টেবল হবে। নীলা বললো।

সে শুভ্রর পাশে দাঁড়িয়ে পরল এবং শুভ্রর কনুই ধরে টানতে যাচ্ছিলো।

কিন্তু নীলা ওকে টাচ করার আগেই শুভ্র ওকে কনুইয়ের ধাক্কায় সরিয়ে দিলো।

নীলা সোজা গিয়ে মেঝেতে পরলো—এবং সে মুখ তুলে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখলো তার সমস্ত শুভ চিন্তায় পানি ঢেলে দিয়েছে।
নীলা তাকে বিছানায় শুতে দিতে চেয়েছিলাম।এছাড়া তো আলাদা কোনো পার্পোস ছিল না। আর উনি এইভাবে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন।

এদিকে শুভ্র ভাবছে এটা কি করে ফেললাম আমি। নীলা যখন অর ব্যাপারে বলছিলো। যে ও ছোট বেলা থেকেই কতটা কষ্টে বড় হয়েছে তখনি অর রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় আর যার রাগ টা সে নীলার উপর দেখিয়ে ফেলেছে ——–

চলবে—–

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

শুভ্র কিছুতেই নীলাকে এইভাবে আঘাত করতে চাইনি। কারন শুভ্র খুব ভালো করেই জানে যে নীলার সৎ মা কিভাবে টর্চার করেছে।আর নীলা যখন অই সব কথা বলছিল তখন ওর নীলার সৎ মায়ের কথা মনে হতেই রাগে ফেটে যাচ্ছিলো।আর তখনি নীলা আমাকে টাচ করতেই সেই রাগ আমি নীলার উপর দেখিয়ে ফেলেছি। শুভ্র চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।

নীলা রেগে উঠে শুভ্রর উপর রাগ দেখাতে যাবে তখনি ওর চোখ গেলো একটা ইঁদুরের উপর। চোখ গুলো বড় বড় করে হঠাৎ নীলা শুভ্রর পিঠের উপর ঝাপিয়ে পরলো।
আর চিৎকার করে বলতে লাগলো ওমাগো ইঁদুর! ইঁদুর! ইঁদুর আমার প্রচন্ড ভয় লাগে

আচমকা এরকম হওয়ায় শুভ্র বেশ হতভম্ব হয়ে যায়। শুভ্র নীলাকে যতই নিজের থেকে দুরে করতে চাইছিলো ততই নীলার ওর কাছে চলে আসছিল।

শুভ্র একটু টেন্সড হয়ে পরলো। শুভ্র তো ভেবেছিল যে নীলা উঠে এসে ওর সাথে রাগ ঝারবে। কিন্তু এটা কি হলো।

নীলার সফট সুগন্ধি শরীর যখন শুভ্রর সাথে একেবারে চেপকে লেগে ছিলো তখন শুভ্র ভেতর ভেতর শিহরণ ফীল করতে লাগলো।

শুভ্র নিজেকে সামলে নিয়ে একটু ঝাকুনি দিয়ে রেগে বললো…… এখানে ইঁদুর কোথায় পেলে ছাড় আমায়! ছাড়ো বলছি—

শুভ্র নিজের হাত দুটো পিছনে নিয়ে ঠেলতে লাগলো! কিন্তু অর পিঠে নীলার দুটো নরম গোলকের চাপ যেনো শুভ্রর শরীরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিলো।

নীলা যদিও প্রায় পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চি লম্বা তবুও ছয় ফিট দুই ইঞ্চির শুভ্রর কাছে খুবই ছোট খাটো।

একজন পুরুষের তুলনায় নীলার শরীরও অন্য রকম ছিলো। সেটা সিল্কের মতো সফট! আর বেতের মতো ফ্লেক্সিবেল ছিলো– নীলা একটা হিলহিলে সাপের মতো শুভ্রর গলা জড়িয়ে ধরে ছিল।

শুভ্র রিয়েলাইজ করছিলো নীলা অনেকটা লম্বা হলেও সে অনেক টা ছিপছিপে ছিলো নীলার ফর্সা আংগুল গুলো শুভ্রর দুই বাহু জোড়িয়ে ছিল। হাত গুলো ঠান্ডা হলেও খুবই নরম আর কম্ফোর্টেবল ছিলো। শুভ্র একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পরছিলো। কোনো রকম নিজেকে সামলে নিলো।

শুভ্র নিজের চোয়াল শক্ত করে বললো তুমি কি আমাকে ছাড়বে নাকি ফেলে দিবো ছাড়ো বলছি।

নীলার আরো জোরে চেপে ধরে বললো — না না আমি ছাড়বো। এখানে ইঁদুর আছে আমি ইঁদুর ভীষণ ভয় পাই।

নীলা শুভ্রকে কিছুতেই ছাড়ছে না অকে চেপে ধরেই থাকলো।আর কিছুতেই ছাড়তে চাইলো না।

এরকম টা চলতে থাকলে শুভ্র আরোও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে।আর সে এখনি নীলার সাথে এমন কিছুই করতে চাই না।

হঠাৎ নীলা ফীল করলো যে শুভ্র পিছনে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওর কোমর ধরার জন্য।

শুভ্র পিছনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে নীলাকে ওর পিঠ থেকে নামিয়ে ঠেলে ফেলে দিতে গেলো
সেই মুহূর্তেই নীলা শুভ্রকে চেপে ধরলো আর তারা দুজনেই মেঝেতে পড়ে গেলো।

শুভ্র যখন নিজেকে সামলে নিয়েছে! তখনই ওর চোখ গেল নীলার নরম গোলাপি ঠোঁটের দিকে! তার সাদা মুক্তোর মতো দাতের সারিও দেখতে পেলো সে। যে এখন চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।

শুভ্র এবার আরো নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেললো তার গলা শুকিয়ে গেলো—

শুভ্র নিজেকে চোখ বন্ধ করে সংবরন করার চেষ্টা করছে।।

শুভ্র নীলাকে নিজের উপর থেকে ঠেলে সরিয়ে দিলো।

নীলার পার্টিকুলারলি নিজের সবচেয়ে সফটেস্ট যায়গায় চাপা চাপা ব্যাথা অনুভব করলো। নীলা অন্যদিকে ঘুরে যায় কারণ অর বুকে ব্যাথা টা এতই বেশি ছিল যে নীলা কান্না করে দিলো।

শুভ্র যাস্ট নিজেকে রিলেক্স করছিলো তখনি উঠে বসেই দেখতে পেলো নীলা অন্যদিকে ঘুরে আছে মেঝেতে বসেই।

শুভ্র নীলার সামনে গিয়ে দেখে নীলা তার বুকে হাত দিয়ে আছে আর অর মোমের মতো গাল বেয়ে অশ্রু ঝরছিল

আশ্চর্য ভাবে শুভ্রর বুকের ভেতর কুকিয়ে উঠলো। যখন নীলার থরথর করে কাপতে থাকা কাধটা তার চোখে পরলো। কিছুটা ফ্রাস্ট্রেটেড হয়েই সে তার বিচার বুদ্ধি ফিরে পেলো। এবং নিজেকে ধিক্কার দিতে শুরু করলো। সে খুবই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।

যে কিনা শুধু মাত্র একটা ১৭-১৮ বছর বয়সের মেয়ে। বাধ্য হয়ে ভালোবাসাহীন একটা বিয়েকে ফর্সফুলি নীলাকে এই বিয়েটা এক্সেপ্ট করতে হয়েছে। আর তাকে কিনা শুভ্র দুঃখ দিয়েছে। কিভাবে পারলো সে এটা।

নীলার চোখের পানি শুভ্রকে একেবারেই গলীয়ে দিয়েছিলো। এই সময় একটা মেয়েকে কিভাবে শান্তনা দিতে হয় সত্যিই শুভ্রর জানা নেই। সে শুধু নীলার পাশে থাকতে পারতো।

তারপর শুভ্র লম্বা একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো—- আই এম এক্সট্রেমলি স্যরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি। সত্যিই খুব দুঃখীতো। প্লিজ তুমি কেদো না। আসলে অনেস্টলি আমার সত্যিই খুব খারাপ লাগছে।

নীলা অবাক চোখে তার ছলছল চোখে শুভ্রর দিকে তাকালো। নীলা কি বলবে। সে শুধুই তাকিয়ে আছে শুভ্রর অনুনয় ভরা মুখটার দিকে। শুভ্র যে এতে খুবই অনুতপ্ত নীলা সেটা বুঝতে পারছে।

তাই নীলা বললো ইটস ওকে। এখন আপনি যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।

আমি শুয়ে পরছি। নীলা গিয়ে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়।
শুভ্র নিজের হাত মুস্টি বদ্ধ করে সোফায় চলে গেলো।
নীলা চুপ করে লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে রইলো।

শুভ্রও গুটিশুটি হয়ে সোফায় শুয়ে পরলো। শুভ্রর কিছুতেই ঘুম আসছিলো না।সে সোফায় শোয়া টা এডযাস্ট করার চেষ্টা করছিল। শুভ্রও খেয়াল করল নীলা বিছানার উপর এপাশ ওপাশ করছে।

নীলার কিছুতেই ঘুম আসছে না। এসে এপাশ ওপাশ করছে। তারপর সে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পারে নি।

শুভ্র আর নীলার দিকে তাকালো না। সে উঠে বারান্দায় যেতে নেই তখনই ওর পায়ের সাথে কিছু একটা বেজে যায়। শুভ্র লাইট জ্বালাতে যাবে তারপর নীলার কথা ভেবে আর জ্বালালো না। নিজের ফোনটা নিয়ে ফ্লাস অন করেই দেখতে পেলো একটা খেলনা সো পিছ যেটা ছিলো ইদুরের।

শুভ্রর কাছে এতক্ষনে পুরো ব্যাপার টা ক্লিয়ার হলো। বাট এটা এখানে রাখলো কে।
শুভ্র আর কিছু ভাবলো না। তার মানে নীলার ভয়টা স্বাভাবিক ছিলো না। শুভ্রর এখন নিজের আরো বেশি গিল্ট ফীল হচ্ছে। সে সো পিছ টা ছুরে ফেলে দিলো। তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অনেক্ষন সে দাঁড়িয়ে থেকে রুমে এসে শুয়ে পড়লো।

সকালে নীলা ঘুম থেকে উঠেই দেখতে পেলো শুভ্র রুমে নেই। সে ভাবলো হইতো ফ্রেশ হতে গিয়েছে। কিন্তু না বাথরুমে কেউ নেই। নীলা ভাবলো নিচে হবে হইতো। নীলাকে আজ কলেজ যেতেই হবে। আর একটু তারা তারাতারি গিয়ে প্রাপ্তির সাথে কথা বলতে হবে।

তাই সে তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলো। ফিহা হইত এখনো ঘুম থেকে উঠেই নি। আর হিয়া বা শাশুড়ী মা ওরাও হইতো উঠে নি।

একজন সার্ভেন্টকে এসে নীলা জিজ্ঞেস করলো আপনার স্যার কে দেখেছেন।

হ্যাঁ মেম স্যার তো এখনি বের হয়ে গেলো। আর মেডাম স্যার কে দেখে তো মনে হলো উনি সারারাত ঘুমান নি। একটা কথা বলবো মেডাম।

জি বলুন— নীলা বললো। নীলা মহিলা দিকে তাকিয়ে রইলো। নীলা দেখতে পেলো যে মহিলা টি একটা কিছু বলতে চাইছে বাট পারছে না।
নীলা বললো আপনি নিস্বংকচে বলুন।

তারপর মহিলাটি বললো যে মেডাম স্যারকে অনেক রোমান্টিক। উনাকে দেখে মনে হলো উনি সারারাত ঘুমাননি।

নীলা জোর পুর্বক হেসে বললো আমার লেট হয়ে গেছে আমি আসছি আর মা কে বলবেন।

আচ্ছা মেডাম বলে মাথা নাড়লো আর মুখ টিপে হাসছিল মহিলা সার্ভেন্ট টি।

নীলা তারাতারি বেরিয়েই দেখলো শুভ্রকে দুই সাড়িতে দুইদল দেহরক্ষী কে সাথে নিয়ে ——

চলবে—

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-১০+১১

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ(১০)
#লেখিকা রাদিয়াহ রাফা রুহি

আমার বান্ধুবী আমাকে নেম প্লেট দিয়েছে। জানলেন তো তাই না। এবার আমার ব্যাগটা আনার ব্যবস্থা করুন প্লিজ। আমি এই ভাড়ি বেনারশী পড়ে আর থাকতে পারছি না।

শুভ্রঃ ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করবো কিন্তু এতো রাতে আর হবে না মেডাম।সারারাত কি জেগেই থাকবেন ঘুমাবেন না। কাল কে দিবো আপাতত একটু ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর শুয়ে পড়ুন।

আমি ভাবছি এখন অন্য কথা তাহলে ওই বাচ্চা মেয়েটি কে। মাথায় তো আরও কত্ত গুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।প্রথম দিনই কি এই প্রশ্ন টা করা ঠিক হবে।না না এটা উনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার কিন্তু এখন তো আমি উনার স্ত্রী তাহলে। বিয়েটা যেভাবেই হক আমি মানি এই বিয়েটা। ভাবছিলাম মনে মনে আমার ভাবনার ছেদ ঘটলো কারোর তুরির আওয়াজে।

উনি আমার দিকে একটু ঝুকে আমার মুখের সামনে হাত নাড়লেন।

শুভ্রঃ কি ভাবছেন মেডাম।আচ্ছা আপনি বাসা থেকে পালাচ্ছিলেন কেন? মনে তো হচ্ছিল বিয়ের আসর থেকে পালাচ্ছিলেন।

যদিও শুভ্র জানে নীলা কেন পালাচ্ছিলো তাও প্রশ্নটা করে ফেললো। কারণ শুভ্র চাই না নীলা তার সম্পর্কে আগেই সবকিছু জানুক।আগে আমার জন্য ওর মনে ফীলিংস তৈরি করতে হবে। তারপর সব বলবো ওকে।

নীলা শুভ্রর প্রশ্ন শুনে একটুও অবাক হয়নি কারন ও জানতো শুভ্র অকে প্রশ্নটা করবে।

নীলাঃ সে অনেক কথা। মিস্টার শুভ্র আ্য্যএএ— আপনার পুরো নামটা যেনো কি?

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকয়ে আছে নীলা/

শুভ্রঃ এই জন্যই তো বলেছিলাম মেডাম—সবকিছু জানতে চাইলেন কিন্তু আমার বিষয়ে কিছুই জানতে চাইলেন না।
আরে মিসেস চোধুরী আপনি যে এখন আমার বউ সেটা কি মনে আছে নাকি নেই।

নীলাঃ হুম বুঝলাম তার মানে আপনার পুরো নাম শুভ্র চৌধুরী রাইট। ওকে আমার ব্যাপারে কাল কে সবকিছুই বলবো। এখন আমি ঘুমাবো। আমি বেডের এক কোনায় শুয়ে পড়লাম। চুপটি করে আর ভাবছি উনি কি আমার পাশেই শুবেন।এইটা ভেবেই কেমন অদ্ভুত ফিলিং হচ্ছে। হালকা হালকা কাপছি আমি।অমনি জোর করে কাপুনি থামিয়ে জোড়োসড়ো হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম। যদিও এখন ঘুম ধরবে বলে মনে হয় না।

এদিকে শুভ্র ভাবছে এ কেমন মেয়েরে বাবা।আমাকে একটু বললোও না শুয়ে পড়লো একাই। শুভ্র শুতে যাবে তখনি কিছু একটা ভেবে আর বিছানায় গেলো না।যদি বিছানায় শুইলে নিজের কন্ট্রোল হাড়িয়ে ফেলে।সে সরে গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো কোনো রকম।

——————————————————–
সকালে জানালার কাচ ভেদ করে সূর্যের স্নিগ্ধ আলো নীলার মুখে পরতেই সে নড়ে উঠলো। চোখ মুখ খিচে মুখের সামনে হাত দিয়ে মুখটাকে আড়াল করছে রোদ থেকে। তারপর পরক্ষনেই তার মনে হলো কাল কের কথা। চোখ খুলে ঝাপিয়ে উঠে বসলো নীলা।
আর চোখ পরলো সোফায় থাকা লোকটার দিকে।একি উনি তার মানে সোফায় ঘুমিয়েছেন। এটা কি ঠিক হলো। উনার বাড়িতে উনিই সোফায় আর আমি উনার বিছানায়।

একদম দানব লাগছে। জিম করা বডি। এতো লম্বা। মনে হয় ছয় ফিট দুই থেকে তিন ইঞ্চি।
খুব কষ্টেই উনি সোফায় শুয়ে আছেন।মুখুটা এতো সুন্দর লাগছে কিছু চুল উনার কপাল লেপ্টে আছে।

এতো সুন্দর একটা হাসবেন্ড পাবো ভাবি নি।কথাটা জোরেই বললো নীলা।

তখনি কেউ বললো খবর দার আমার চেহেরার দিকে নজর দিবেন। লুকিয়ে দেখা বন্ধ করুন। আমার বুঝি লজ্জা করে না।

আমার চোখ গুলো যেনো ছানাবড়া হয়ে গেলো। উনি নিজের মুখে কুশন চেপে কথাটা বললেন। তার মানে উনি ঘুমান নি। সকাল সকাল কি একটা কথা বলে ফেললাম।এখন উনি কি ভাববেন।

তখনি দরজা ধাক্কানোর শুব্দ এলো কানে। আল্লাহ এতো বেলা হয়ে গেছে এখনো আমি উঠিনি। কি ভাববে সবাই। —- বেনারশী টা ঠিক করে নিলাম।

তারপর গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম একজন সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা শাড়ি।

মেডাম আপনার জন্য পাঠিয়েছেন। এটা পড়তে বলেছেন আপনাকে।

আমি বুঝতে পারলাম উনি মেডাম কাকে বলছেন।

উনি মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে শাড়িটা এগিয়ে দিলেন।

বিনিময়ে আমিও মুখে একটা মেকি হাসি দিয়ে উনার হাত থেকে শাড়িটা নিলাম তারপর উনি চলে গেলেন।দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে আমি ফ্রেশ হতে যাওয়ার আগে উনার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম। উনি এখনো মুখে কুশন চেপেই রেখেছেন। অজান্তেই একটা হাসি চলে আসলো মুখে। তারপর আমি সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলাম।

শাড়িটা কালো খয়েরী। ইন স্টক যরী বুটিক জর্জেট এর । নীলার শাড়ি টা খুব ভালো লেগেছে শাড়িটা পরে আয়নায় দেখলাম বাহ খুব মানিয়েছে আমাকে।

আমি চুল গুলো বিনুনি করে নিবো কিছুটা করেছি। হঠাৎ করে চেয়ে দেখি উনি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে।

উনার চোখে কেমন নেশা লেগে আছে। উনি আস্তে আস্তে আমার আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে আমার চুলে হাত দিলেন।

আমি উনার প্রত্যেক টা স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছি। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি। নিশ্বাস যেনো বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

উনার স্পর্শ ক্রমশ বাড়ছে।উনি আমার অর্ধেক করা বিনুনি টা আস্তে আস্তে খুলছেন। এর মধ্যে একটাও কথা বলেন নি উনি। আমি কিছু বলতেই পারছি না। কথা বের হচ্ছে না আমার মুখ থেকে। চোখ খুলতেই পারছি না শাড়িটা হাত দিয়ে চেপে ধরে আছি।

তারপর হঠাৎ উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন ভেজা চুল বাধতে নেই মেডামজানেন না এটা। আর চুল টা খোলায় থাক।

এই কথা বলেই উনি আমার কাছ থেকে সড়ে গেলেন।

আমি ফট করে চোখ খুলে আয়নার দিকে তাকালাম। দেখলাম উনি আমার দিকে একটা মিস্টি হাসি দিয়ে চলে গেলেন।
উনার কথা গুলোর মধ্যে একটা নেশা কাজ করছিলো। কি অসম্ভব মহো উনার কন্ঠে!

তারপর আমি কিছুক্ষন অইভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম আর ভাবলাম কি হচ্ছিলো একটু আগে।

তারপর আর দাঁড়িয়ে না থেকে আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসলাম।

আর দেখলাম একটা বাচ্চা দৌঁড়া দৌঁড়ি করছে।একটা সার্ভেন্ট মেয়েটাকে ধরার জন্য ওর পিছু পিছু ছুটছে।

কিছু একটা বলছে খাবে না খাবে না এইটাই বলে দৌঁড়াচ্ছে মেয়েটা।

হঠাৎ মেয়েটি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো।
———————————————————
এদিকে কোনো একজন মহিলা ফোনে কথা বলছে।
হ্যাঁলো—- কাজ কতো দুর কতো জন মেয়ে জোগার হয়েছে!

ফোনের অপর পাশ থেকে বলে উঠলেন দশ জনের মধ্যে নয় জন মেয়ে হয়েছে মেডাম।আর একজন বাকি আছে।

—-ঠিক আছে! অই একজন হয়ে যাবে খুব শীঘ্রই। যদি পালিয়ে না যেতো —- এই বলে রাগে গজগজ করতে থাকে। ফোনটা কেটে দেই।
তোকে তো আমি ঠিক খুজে বের করবো। আমার থেকে তর এতো তারাতাড়ি মুক্তি নেই।এই বলে হাতের কাছের ফুল দানিটা এক ঝটকায় ভেঙে ফেলে। ঘর কাপানো শয়তানি হাসি হাসতে থাকে জোরে শব্দ করে।

চলবে——

#ভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

বাচ্চা মেয়েটি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরল। আমি হাটু গেড়ে বসলাম মেয়েটির সামনে। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম কি অদ্ভুত মায়া ভরা মুখটা।

যে কেউ এই মেয়েটিকে দেখলে কাছে টেনে নেবে। আমি অবাক পানে চেয়ে আছি মেয়েটির দিকে। আর ভাবলাম এই মেয়েটিই হইতো মিস্টার চৌধুরীর মেয়ে।

হঠাৎ মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো —কে তুমি?

একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে অতি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটি।

নীলা ভাবছে কি বলবো আমি অকে ;।আমি কি বলবো যে আমি অর নতুন মা। বুঝতে পারছি না কি বলা উচিত।

নীলা জানে যে একটা বাচ্চা তার মাকে ছাড়া কতটা অসহায়। সেটা নীলার থেকে ভালো আর কে জানে।

ছোট বেলা থেকেই সে শুধু কষ্টই পেয়ে এসেছে। মায়ের আদর কি সেটা নীলার জানা নেই। নীলার সাথে অর সৎ মা যা করেছে সেটা এই বাচ্চা মেয়েটির সাথে কিছুতেই হতে দেবে না।

নীলা ফিহার চিবুকে আলতো করে ছুঁয়ে একটা মিস্টি হাসি দিয়ে বললো—

—উমম বলবো তার আগে তুমি বলো —তুমি ছুটছিলে কেন হুমম! ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো!

ফিহা নিজের মুখ টা আলতো একটু বেঁকিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে বললো দেখো না আমার রোজ রোজ দুধ খেতে ভালো লাগে তবুও জোর করে আমাকে খাওয়াবে অই পঁচা আন্টিটা! তাই তো ছুটছিলাম।অসহায় মুখ করে কথা গুলো বললো।

অই মহিলা সার্ভেন্ট কে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ফিহা।

নীলাও ফিহার দেখানো মহিলার দিকে তাকালো। মহিলাটি ভয়ে মুখটা শুকনো করে রেখেছে।

ওহ আচ্ছা তো এই ব্যাপার! আমার একটা ম্যাজিক দেখবে তুমি এঞ্জেল!

তুমি আমাকে এঞ্জেল বললে—তাহলে আমি তোমাকে কি বলবো —–(ফিহা)

নীলা নিজের অজান্তেই ফিহাকে বলে ফেললো –আমি—আমি হলাম তোমার মা—

ফিহার চোখ মুখ আনন্দ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। মেয়েটির চোখে মুখে আনন্দের আভাস মনে হলো যেনো হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে। সে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে বললো সত্যিই তুমি আমার মা!!!! —-

নীলা এতক্ষণে খেয়াল হলো কি বলে ফেলেছে। এই বাচ্চা মেয়েটার খুশি আমি কিছু তেই নষ্ট করতে পারি না

—-নীলা বসা থেকে উঠে ফিহার দুই কাধে হাত রেখে বললো —

হুম আমি তোমার মা! এখন চল আমি তোমাকে একটা মজার জিনিস দেখায়।দেখবে তুমি?

কথা গুলো বলছে আর হাটছে আস্তে আস্তে ফিহাকে ডাইনিং টেবিলের সামনে নিয়ে গিয়ে বসালো!

ফিহা বললো কি ম্যাজিক! দেখাও নীলার দিকে তাকিয়ে —-

আচ্ছা দেখাবো তবে তোমাকে তো আমার একটা কথা শুনতে হবে।

ঠিক আছে মা শুনবো!

নীলার যেনো ফিহার মুখ থেকে মা ডাক শুনে অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করছে! কি মিস্টি মেয়ে!নিজেকে মা মা লাগছে মেয়েটির কাছে! এসব ভাবছে নীলা/

তখনই কেউ অর হাত ধরে বললো কি হলো মা বলো । আমি তোমার সব কথা শুনবো।

তো তুমি এখানে চুপটি করে বসো হ্যাঁ। কোথাও যাবে না কিন্তু। আমি এই যাব আর এই আসবো ঠিক আছে।

ঠিক আছে মা। এই বলে ফিহাও লক্ষী মেয়ের মতো চুপটি করে বসে রইলো।

নীলা তখন কার সেই মহিলা সার্ভেন্টের কাছে গেলো।
সার্ভেন্ট টা তো ভয় পাচ্ছে না জানি কি বলে এখন তাকে।

সার্ভেন্ট টি নীলার দিকে এক পলক চাবে তাকিয়ে রয়েছে এতো সুন্দর গায়ের রং এতো মায়াবিনী। চুল গুলো কি লম্বা। পুরো পিঠ জোরে আছড়ে পড়েছে। শাড়িতে খুব মানিয়েছে মেয়েটিকে।যেনো আকাশ থেকে কোনো পরীর আগমন হয়েছে।

নীলা কাজের মেয়েটির সামনে আসার পর দেখে এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
নীলা গলা পরিস্কার করে বললো —

এক্সকিউজ মি মেডাম!তখন মেয়েটির জন্য যে দুধটা খাওয়াতে চেয়েছিলেন আমাকে দিন সাথে চকলেট দিন প্লিজ! আর আমি কিছু বানাতে পারি এখন।

আপনি রান্না করবেন মেডাম। আপনি নতুন বউ। মেডাম যদি জানতে পারে আমার চাকরি টা চলে যাবে।আপনি আমাকে বলুন কি করতে হবে বানিয়ে দিচ্ছি।

কেউ কিছুই বলবে না আপনি শুধু দেখিয়ে দিন কোথায় কি আছে প্লিজ। আর আমি এক্টু কাজ করবো।

ওকে মেডাম আমি সবকিছু রেডি করে দিচ্ছি কি বানাবেন বলুন।

নীলা মাথা নেড়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। তারপর দুধের সাথে কিছু চকলেট এর মিস্ট্রি মিশিয়ে দিলো আর নুডলস রান্না করে নিয়ে আসলো কিছুক্ষণের মধ্যেই।

এসে দেখে ফিহা একি ভাবে বসে আছে। যেভাবে বলেছিলো নীলা।

বাহ আমার এঞ্জেল সোনা তো খুব লক্ষী যেমন টা বলেছি সেভাবেই আছে।

এই দেখো আমি তোমার জন্য কি এনেছি।

নুডলস —-দেখেই ফিহা খুশিতে চোখ গুলো বড় করে — আমার তো খুব প্রিয় । বাট আমাকে তো খেতে দেই না এটা দাদুন অসহায় মুখ করে।

ঠিক আছে এঞ্জেল আমি তোমাকে খাইয়ে দিই। কেউ কিছু বলবে না। আর একটা স্পেশাল জিনিস আছে তোমার জন্য এটা আগে খেতে হবে।তারপর চকলেট দিয়ে দুধ টা ফিহার সামনে ধরে।

ফিহা বললো দুধ মিস্ট্রি। দাও দাও।তারপর ফিহাও নীলার হাতে থেকে খেয়ে নেই খুব তৃপ্তি করে।

নীলা ফিহাকে খুব যত্ন সহ কারে খাইয়ে দিচ্ছে। আর গল্প করছে! হাসছে দুজনেই।

শুভ্র ফ্রেশ হয়ে নিচে নামছিলো তখনি এসে দেখে দুজনকে দেখছে সিড়িতেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে । আর অবাক হচ্ছে কতটা মিশুক মেয়েটা। এক দিনেই কেমন আপন করে নিয়েছে বাচ্চা মেয়েটি কে।

সেদিন বাচ্চাটির সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর অনেক আফসোস হয়েছিল শুভ্রর। সেদিন বকার ভয়েই আর ফিহা শুভ্রর কাছে যায়নি। খুব খারাপ লেগেছিল তার।

নীলা আর ফিহার এসব কিছু আরও দুজন মানুষ দেখছে। মোল্লিকা আর হিয়া। কি যত্ন করে খাওয়াচ্ছে। তাই ওরা আর কোনো কথা বলেনি। এই কদিন ফিহা কত বায়না করেছে খাবে না বলে। আর আজ অনায়েসেই খেয়ে নিচ্ছে। হিয়া বললো অর মা কে।

তারপর নীলা হঠাৎ খেয়াল করলো কালকে রাতের সেই মহিলা আর মেয়েটার দিকে।উনারা ওখানে দাঁড়িয়ে আছে।

নীলা উনাদের দেখে দাঁড়িয়ে পরল। কি বলব এখন বুঝতে পারছি না।

মোল্লিকা নীলার দিকে এগিয়ে এসে বললো—-
মোল্লিকাঃ কি হলো মা দাঁড়িয়ে পরলে কেন। আমি জানি মা তোমার অসস্তি হচ্ছে। মা মেয়েকে খাওয়াবে এটাই তো স্বাভাবিক। এতে সংকোচ করার কি আছে।

নীলাঃ না আসলে আন্টি এঞ্জেল কিছু খেতে চাইছিল না তাই আমি কিছু খাবার বানিয়ে অকে খাওয়াচ্ছিলাম।

হিয়াঃ আরে ভাবি তোমার মেয়েকে তুমি খাওয়াবে না। এতে সংকোচ করছো কেন।
আর তুমি এঞ্জেল কাকে বলছো অকে তো আমরা ফিহা ডাকি।

তার মানে উনারা সত্যিই আমাকে এঞ্জেল এর মা ভাবছেন এখনো। নীলা ভাবছে কি বলবো এখন আমি।

না আসলে আমি তো অকে এঞ্জেল বলেই ডাকি— নীলা কিছুটা ভাবলেশহীন ভাবে কথা টা বললো।

হিয়াঃ ওহ আচ্ছা। হাই আমি হিয়া। তোমার এক মাত্র ননদ। আর উনি তোমার শাশুড়ী মা।কাল রাতে তুমি অসুস্থ ছিলে বলে কিছু বলতে পারি নি।

নীলাঃ অহ আচ্ছা।

নিজেকে কেমন যেনো লাগছে সবার মধ্যে। তাই নীলা মাথা নিচু করে রেখেছে।

মোল্লিকাঃ আরে বৌমা তুমি এতো লজ্জা পাচ্ছ কেন আমরা তো সবাই ফ্যামিলি। আজ থেকে আমি তোমার আরেক মা বুঝেছো। এটা হলো তোমার নিজের সংসার।

নীলা মাথা তুলে তাকালো মোল্লিকার দিকে ছলছল চোখে!

নীলাঃ আচ্ছা। আমি আপনাকে মা বলতে পারি!

মোল্লিকাঃ কেন নয় মা! আমি কি তোমার মা হতে পারি না।নিজের মা কে ছেড়ে এসেছো বলে কি কষ্ট হচ্ছে তাই না। আমি জানি বিয়ে হলে সবার এরকম হয়।নিজের মা বাবা ছেড়ে থাকতে। মাকে মনে পরছে বুঝি খুব
নীলার মুখে আলতো করে ছুয়ে।

নীলাঃ আমার মা নেই আন্টি। আপনারা তো কিছুই জানেন না আমার ব্যাপারে।

কেদে কেদে বললো নীলা

মোল্লিকাঃ আরে পাগলি মেয়ে কাদছে কেমন করে।আমি না তোমার মা তাহলে আমাকে আন্টি বলছো কেন। তোমার মা নেই তো কি হয়েছে আমি আছি তো।

নীলাঃ ঠিক আছে মা । আর বলবো না এই বলে নীলা মোল্লিকাকে জড়িয়ে ধরলো। মোল্লিকাও আবেসে নীলাকে আগলে নিলো।

হিয়া শুভ্র এসব কিছু দেখে যাচ্ছে।

হিয়া বললো বাহ মা ভাবিকে পেয়ে তো আমাদের ভুলেই গেছ।

শুভ্রও হিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে বললো হুম তাই তো দেখছি।
আমরা এখানে থেকে কি করবো চল।

মাঝ খান থেকে ফিহা বলে উঠলো আর আমি। আমাকে তো দাদুন একেবারেই ভুলে গেছে মনে হচ্ছে এক বার তাকালাও না।
নীলাকে ছেড়ে দিয়ে মোল্লিকা সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো তোরা তো খুব হিংসুটে হয়েছিস হ্যাঁ। এই বলে সবাই হেসে দিলো নীলাও সবার সাথে হেসে দিলো।

এর মধ্যে শুভ্রর চোখ পড়লো নীলার দিকে । এই বাড়িতে আসার পর এই প্রথম নীলাকে হাসতে দেখলো শুভ্র।কি মিষ্টি লাগছে মেয়েটিকে। হাসলে মেয়েটির ডান গালে একটা ছোট্ট টোল পরে।

হাসতে হাসতে নীলারও চোখ পরলো শুভ্রর দিকে। নীলা খেয়াল করলো শুভ্র অর দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে —

Naino ki to baat….
To Naino jaane hay..
sapne ki raaz tu naina jaane hay….
Deel ki baate dhadkan jaane hay..
Jispe gujhre wo teene jaane hay….

আসলে কি ওরা জানে হৃদয়ের ইশারাতেই চোখ কাজ করে। দুজনের মনের ও নয়নের গভীর সেই চাহনীতে হারিয়ে গেছে ——

চলবে —–

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-৮+৯

0

#গল্প_ভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব (৮)
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

ভাড়ি বেনারশী পড়ে বসে আছি বাসর ঘরে।এই বেনারশির তাড়নায় নিজেকে নিজের কাছে বুঝা মনে হচ্ছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ এমন হবে তা বুঝি নি। যার সাথে শুধু মাত্র এক দিনই দেখা হয়েছে আজ সে আমার সামী। হ্যাঁ আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আর আমার কোনো উপায় ছিলো না এই বিয়েটা করা ছাড়া। এখনো মাথাটা ভাড় হয়ে আছে। সেদিনের পর থেকে এই ছয় দিনের মধ্যে আজকে অব্দি যা কিছু আমার সাথে হয়েছে সব কিছু ভাসছে চোখের সামনে—-

———-+++++————-+++++————-
ফ্লাস ব্যাক
—————

নীলাকে রিশিকা ঘরে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় শাহানা খান দেখে ফেলে। তারপর তিনি বুঝতে পারে কিছু একটা হতে চলেছে।

শাহানাঃএতো দিন সব মুখ বুজে সহ্য করেছি। ওই রাক্ষসী টার ভয়ে ইমরানকে কিছু বলতে পারিনি। আর আজও যদি আমি চুপ করে থাকি এই বাচ্চা মেয়েটার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে আমি নিজেকে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারবো না। এতে আমার যা হওয়ার হোক। উনি এসব পাচকান না ভেবে বাড়ির লেন্ড লাইন থেকে ফোন করলেন মিস্টার খান কে।

উনি তারাতারি মিস্টার খানকে বাড়ির লেন্ড লাইন থেকে ফোন করে আসতে বলেন।

ফোন ধরেই ব্যাস্ততা দেখান।উনি প্রথমে আসতে চাননি। সব মিথ্যা বলে বিশ্বাস করেনি।

তারপর দাদি(শাহানা খান) ধমক দিয়ে বলে তুই তোর মাকে মিথ্যা বাদী বলছিস এইটা দেখার জন্যই তোকে মানুষ করেছি। এক্ষুনি যদি বাসায় না আসিস তাহলে অনেক বড় কিছু হয়ে যাবে। আমি তোকে হুকুম দিচ্ছি।

অগ্যতা মিস্টার খান আসতে বাধ্য হয়। এসে আমার চিল্লানো শুনে দরজা ধাক্কা দেই আর আমাকে এরকম অবস্থায় দেখেন। উনি নাকি মিসেস খান একটা থাপ্পড় ও মেরেছেন।আর আমাকে এই অবস্থা দেখে অনেক নাকি চিন্তায় পরে গেছিলেন। তারপর হসপিটাল নিয়ে আসেন।

জ্ঞান ফিরে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি। এতো বছরে যাকে আমায় নিয়ে চিন্তিত দেখি নি আজ নাকি তিনি আমার জন্য এতো টা ডেস্পারেট হয়ে পরেছেন ভাবতেই অবাক লাগছে।। আর আমার জন্য নাকি মিসেস খানকে চর ও মেরেছেন। এটা শুনে তো আমি আরও অবাক।

তারপর হসপিটাল থেকে দু দিন পর বাড়ি ফিরি। আর এসেই জানতে পারি মিস্টার খান দুজন সার্ভেন্ট রেখেছেন। সার্ভেন্ট দুজন হাসবেন্ড ওয়াইফ।

এই ছয় দিন আমাকে একটা কাজও করতে দেইনি। আমার তাদের সাথে খুব ভাব হয়ে গেছে এই ছয় দিনে। এই কদিন দাদিও আমাকে খুব যত্ন করেন বয়স্ক মানুষ আমার জন্য আর কতই করবে।
আর মিসেস খানের মধ্যে কোনো প্রকার অনুতপ্ত নেই।

সার্ভেন্ট রেখেছেন জন্য মিসেস খান এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা করেছেন।

এর মধ্যে আমার আর কলেজ যাওয়া হয়নি।
প্রাপ্তিকে বাড়ির লেন্ড লাইন থেকে লুকিয়ে একবার ফোন করেছিলাম। সব নোটস গুলো যেনো আমাকে দিয়ে দেই।

হঠাৎ দাদি এসে আমাকে আরও চমকে দেওয়ার মতো আরও একটি খবর দেই আজই নাকি আমার বিয়ে। সেটাও মিস্টার খানও জানেন। উনিও রাজি আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। আর দাদি এটাও জানতে পারেন মিসেস খানকে কথা বলার সময়।

আমাকে যার সাথে এরা বিয়ে দিতে চাইছে সে নাকি একটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। আর এই কথা টা মিস্টার খান জানেন না যে মিসেস খান আমাকে একটা প্রতিবন্ধীর সাথে ঠিক করেছে। আর ছেলেটা প্রতিবন্ধী হওয়াই আমার ছবি দেখেই ছেলের বাড়ির লোক বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায় আমার সাথে।

আর এই কথা শুনে আমি যেনো আরও ভেঙে পড়ি। আমি দাদিকে বলি দাদি যে করেই হোক বিয়েটা বন্ধ করো। দাদি কিছু বলেন নি তখন।

আর বিয়ের বেনারশী পরে ঘরে বসে আছি আর চোখের পানি ফেলছি।

বর আসার এক ঘন্টা আগে দাদি এসে আমাকে বাড়ি থেকে পালানোর । তারপর দাদি আমাকে পালাতে সাহায্য করে। আর আমার উদ্দেশ্য হলো প্রাপ্তির বাসায় যাওয়া। একবার আমি ওর কাছে থেকে ওর বাসার ঠিকানা নিয়েছিলাম।

সবাই যখন বর এসেছে শুনে বর নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে তখনই দাদি আমাকে চিলেকোঠার ঘর থেকে সবার অগচরে বের করে দেন বাড়ির পিছন দরজা দিয়ে । দাদি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই। এই বাড়িতে দাদিই একমাত্র যে কি না আমাকে ভালোবাসেন। তারপর আমি দাদির থেকে দ্রুত বিদায় নেই।

——-আমি দৌঁড়চ্ছি আর ভাবছি এতক্ষনে হয়তো সবাই জানতে পেরে গেছে আমি পালিয়ে এসেছি। আর ভাবছি এখন যদি জানতে পারে দাদি আমাকে পালাতে সাহায্য করেছে তাহলে দাদির কি হবে। না আর ভাবতে পারছি না।

–দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় আর অজ্ঞান হয়ে যায়।

তারপর যখন জ্ঞান ফিরে তখন আমি নিজেকে সম্পুর্ন আলাদা একটা জায়গায় দেখতে পায়। তারপর আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি একটা মাঝ বয়সি মহিলা আর একটা মেয়ে হুইল চেয়ারে বসা আমার দিকে অতুল আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন।

আর কতক গুলো সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে আছে।

আমি উঠতে যাবো ——-তখনি মহিলাটি বলে একি মা উঠছো কেন। তোমার শরীর ঠিক নেই তুমি শুয়েই থাকো।
আমি শুয়ে পড়ি।

আর পরক্ষনেই আরেক জনের দিকে চোখ পড়ে একি এটা তো সেদিনের সেই লোকটা। আমি উনার বাসায় কি করে। উনাকে দেখে তো আমার চোখ গুলো ছানাবড়া হয়ে গেছে।

আমি আনমনেই বলে উঠি আপনি।

লোকটা আমার কথার উত্তর না দিয়ে
আমাকে জিজ্ঞেস করে এখন কেমন লাগছে।

নীলাঃ আগে বলুন আমি এখানে কেনো।

শুভ্রঃ প্রশ্নটা আমি আগে করেছি তাই আপনি আগে বলুন এখন আপনার শরীর কেমন।

নীলাঃ আমি এখন ঠিক আছি । এখন বলুন আমি এখানে কিভাবে এলাম।

শুভ্রঃ দেখুন যেহেতু আপনি আমার বাড়িতে সেহেতু আমিই আপনাকে এখানে এনেছি তাই না।

আমি কিছু বলার আগেই হুইল চেয়ারে বসা মেয়েটা বলে উঠে—-

হিয়াঃ আহ ভাবি এতো কথা বলো না তো তুমি অসুস্থ। এখন তুমি বিশ্রাম নাও।

মেয়েটির মুখে ভাবি ডাক শুনে আমি তো পুরো অবাক কি বলে মেয়েটা।

সাথে সাথেই অই লোকটার দিকে তাকায় আর লোকটাও তাকায় আমার দিকে—

নীলাঃ এসব আপনারা কি বলছেন। আর ভাবি মানে।

শুভ্রঃ আরে তোমরা আমার কথা তো শুনো।
আমি তোমাদের সব কিছু বলছি।

উনি আরও কিছু বলতে যাবেন তার আগেই ভদ্র মহিলাটি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন —-

মোল্লিকাঃ তোমার নাম কি নীলা। আর তুমি অজ্ঞানই বা কি করে হলে। মা তুমি ভয় পেয়ো না আমি আছি তো আমি তোমাদের আবার বিয়ে দেবো।কোনো চিন্তা করো না। তুমি অজ্ঞান থাকা অবস্থায় আমরা কাজি ডেকে রেখেছি।আমি আবার তোমাদের বিয়েটা দেখতে চাই। যাতে শুভ্র আর কিছু বলতে না পারে আর আমি অকে কিছু বলতেও দিবো না।

নীলাঃ আপনি আমার নাম কি করে জানলেন।আর আপনারা এসব কি বলছেন বিয়ে মানে।আমি কেনো বিয়ে করতে যাবো।
আমি হাত জোর করে বললাম প্লিজ আন্টি আমাকে যেতে দিন।

উনাদের কতো করে বুঝালাম কিন্তু আমার কথা কিছুতেই শুনলেন না। উনারা ভাবছেন আমি এই লোকটা কে দেখে ভয় পেয়ে নাকি এখান থেকে চলে যাওয়ার কথা বলছি।

শুভ্রকে কিছুই বলতে দিলো না অর মা আর না আমাকে।

এতক্ষনে যেনে গেছি লোক টার নাম শুভ্র আর হুইল চেয়ারে বসা মেয়েটা তার বোন।

শুভ্র অনেক বার বলার চেষ্টা করলো সত্যিটা কিন্তু কিছুতেই শুনলো না। উনি বলে দিলেন উনার সিদ্ধান্তই শেষ কথা।

আমাদের রেজিষ্ট্রেশন করালেন আর কাজি দিয়ে বিয়ে দিয়ে দিলেন। আমি কবুল বলতে চাচ্ছিলাম না বলে কি উপায় আছে।

আমি কান্না করতে করতে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

জ্ঞান ফিরে আমি নিজেকে বিছানায় দেখি আমার বুঝতে অনেক টা সময় লেগে গেলো আমার সাথে আজকে কি হয়েছে।
—————————————————–
বর্তমান
———-
কারোর দরজা খুলার আওয়াজে আমি কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসি আর চমকে যায় কারণ আমি আজকের ঘটনায় ভাবনায় মগ্ন ছিলাম!

চলবে——-

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব ( ৯ )
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে চমকে যায়।
।তারপর দেখি শুভ্র বাবু আসছেন।
উনি দরজা টা লাগিয়ে দিলেন।

আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। প্রথম কোনো ছেলের ঘরে অন্য রকম লাগছে। এই অনুভূতি টা ঠিক বুঝানোর মতো না। এর আগে তো কোনো দিন কোনো ছেলের সাথে কথা অব্দি বলিনি। আর আজকে কিনা এই ছেলের সাথে রাত কাটাতে হবে। এমন কেন ফিল হচ্ছে। কি অদ্ভুত আর নিতে পারছি না। রীতি মতো কাপছি আমি কেন এমনটা হচ্ছে নিজেও জানি না।

আর একটা কথা ভেবে খুব রাগ হচ্ছে।
আর রাগ করেও বা কি করবো। এখানে উনারও তো কোনো দোষ নেই।কিন্তু আমাকে জানতে হবে যে ওই মেয়েটা আমাকে কেনো ভাবি বললো। আর ওই মহিলাই বা কিভাবে আমার নাম জানলো।
এই ব্যাপার টাই আমার মাথায় ঢুকছে না।প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানা আমার খুব দরকার।

আমি উনার দিকে একটু তাকালাম।
দেখলাম উনি আস্তে আস্তে
দরজা টা বন্ধ করে মাথাটা নিচু করেই ঢুকছেন। আমিও মুখটা নিচু করেই রাখলাম। কারণ আমার খুব নার্ভাস লাগছে।এই নার্ভাসনেস টা আমাকে কাটাতেই হবে। আর যতো গুলো প্রশ্ন ভেবে রেখেছি করবো। আর উনাকে উত্তর দিতে হবে।

শুভ্র ঘরে ঢুকে ভাবছে কি বলবো এই মেয়েটাকে। পায়চারি করে যাচ্ছে শুভ্র। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে পায়চারি করেছে। শুভ্র খুব ঘামছে। এইটা কি হচ্ছে। আমি ওর সামনে যেতে পারছি না কেন। কেনো এইরকম অনুভুতি হচ্ছে।

আমি দেখলাম উনি পায়চারি করেই যাচ্ছে।
নিরবতা ভেঙে বললাম কি সমস্যা আপনার এতো রাতে পায়চারি করছেন কেনো। উনি শুধু আমার দিকে তাকালেন একটু। তারপর স্থির হয়ে দাড়ালেন কোনো কথা বললেন না।

আমার খুব রাগ হলো আমি উনার সাথে কথা বলছি আর উনি কোনো কথায় বললেন না।
আমি খাট থেকে নেমে কিছুটা সামনে যেতেই আমার মাথাটা ঘুরছিল আর আমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলাম– একি আমি এখন পরলাম না কেন। — আমি চোখ পিটপিট করে তাকালাম। প্রথমে এক চোখ পরে আরেক চোখ।খুলেই দেখি উনি আমাকে ধরে আছেন—-

আমি উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছেন।
অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে গেলো।

উনার সেই অদ্ভুত চোখ যুগল এতো মহনীয় কেন লাগছে।হালকা মৃদু আলোই উনার মুখ দেখা যাচ্ছে! কি অসম্ভব ভালো লাগছে উনাকে। আমি উনার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। আর গলাটা একটু খেকিয়ে বললাম —আ-আ আমাকে কি এই ভাবেই ধরেই রাখবেন নাকি-!

উনি আমার দিকে তাকিয়েই আছে। আমি আর একটু জোরে কাশি দিলাম আর নড়লাম সোজা হওয়ার জন্য। উনি টের পেয়ে পরক্ষণেই আমাকে সোজা করে দিলেন।আর উল্টো দিক মুখ করে দাড়ালেন।

শুভ্র এতোক্ষন নিজের মধ্যে ছিল না কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে এই মেয়ে কি আমাকে অকালেই মারতে চাই নাকি!

নীলা আর চুপ করে থাকতে পারলো না। তার যে আর ভালো লাগছে না।

নীলাঃ এই যে শুনছেন —-আমার আপনাকে কতক গুলো প্রশ্ন করার আছে।কিন্তু আমাকে আপনি প্রশ্ন করার সুযোগই দিচ্ছেন না। অনেক প্রশ্ন করার আছে— সেগুলো জানা আমার খুব দরকার।

শুভ্রঃ আমি জানি আপনি কি জানতে চান— কিন্তু আপনি আগে সুস্থ হোন আমি সব কিছু বলবো আপনাকে। এখন আপনি শুয়ে পড়ুন— ডক্টর আপনাকে রেস্ট নিতে বলেছে—শান্ত মৃদুস্বরে বললো শুভ্র।অন্য দিকে মুখ ফিরিয়েই।

নীলা যেনো এই রিনরিনে মিষ্টি কন্ঠের মহোতে পড়ে গেলো। কি সুন্দর কন্ঠ।নীলা নিজেকে সংযত করলো।

নীলাঃ না না আমি এক্ষুনি সব জানতে চাই। প্লিজ বলুন প্লিজ —

আমি উনার কথা কোনো ভাবেই মানলাম।না আমি জেদ ধরে বসলাম।শুনবো বলে।

শুভ্রঃ ঠিক আছে। বলুন কি কি জানতে চান আপনি —–

নীলাঃ আমি কিভাবে আপনার বাড়ি আসলাম — আমি একটা গাড়ির সামনে পরেছিলাম। তাহলে আপনি আমাকে কি করে পেলেন।আর ওই মেয়েটাই বা আমাকে ভাবি কেন বললো আর ওই মহিলা মানে আপনার মা উনি আমার নাম জানলেন কি ককরে বিয়েই বা কেনো দিলেন —-

এক সাথে সব প্রশ্ন করে ফেললাম উনাকে—- এতো কথা বলার ফলে আমি একটু জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলাম —

শুভ্রঃ আরে আরে রিলেক্স! উনি আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিলেন দুই বাহু ধরে –এতো গুলো প্রশ্ন এক সাথে করলে কোনটার আন্সার আগে দিবো —

-তারপর উনি এসে আমাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন। আমি পানি নিয়ে ঢকঢক করে গিলে খেয়ে ফেললাম।

শুভ্রঃ সব কিছু জানতে চাইলেন কিন্তু আমি কে সেটাই জানতে চাইলেন না শুধু।
মেডাম আমি কিন্তু আপনার বর —আর আমার ব্যাপারে জানতে চাইলেন না।

নীলার দিকে একটা দুস্টু হাসি দিয়ে—- কি হলো মেডাম—চুপ কেনো

নীলাঃ না এমনি ।। আচ্ছা বলুন সবকিছু না জানা অব্দি আমার শান্তি হবে না।

শুভ্রঃ ওকে শুনুন তবে — আপনি দোঁড়ে এসে আমার গাড়ির সামনেই পড়েছিলেন। আর ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। আপনাকে ডাকি কিন্তু আপনার জ্ঞান ফিরে নি তারপর আপনাকে আমার বাড়ি নিয়ে আসি। আর এখন আমার গাড়ির সামনে একজন পরেছে তাকে তো আর আমি ফেলে রেখে আসতে পারি না তাই আপনাকে আমার বাসায় নিয়ে আসি।

— ডক্টর এসে আপনাকে দেখে চলে যায়—আর আমি আমার মা—আর বোন অদের কিছু বলবো তার আগেই আপনার জ্ঞান ফিরে আসে।

নীলাঃ তাহলে ওই মেয়েটা মানে আপনার বোন আমাকে ভাবি কেনো ডাকছিল।

শুভ্রঃ সে অনেক কাহিনি—-শুনুন তবে–
তারপর শুভ্র নীলাকে সবকিছু খুলে বলে অর সাথে হওয়া এইক’দিনের সব কিছু।

আর আমার মা বোন ওরা ভেবেছে আপনিই আমার সেই বাচ্চার মা আর আমার বউ। আর সময় টাও ছিলো সাত দিনের দিন আর আপনাকেও আমি সে দিনই আনি তাও
আবার কোলে করে তার ওপর অজ্ঞান আপনি আমি ঘাবড়ে যায় অতো কিছু মাথায় ছিলো নাকি।তাও আমি বলতে চেয়েছি। অরা আমার কোনো কথা শুনে নি—-

নীলা এতক্ষনে সবটা বুঝতে পারলো কেনো অই মেয়েটা আমাকে ভাবি বলছিল।

নীলাঃ হুম সব টা বুঝলাম।—-কিন্তু উনারা আমার নাম কি করে জানলেন?

শুভ্রঃ কারোর ব্যাগে যদি সুন্দর করে নেম প্লেট ঝুলানো থাকে তাহলে কি নামটা জানা খুব কঠিন মেডাম।

শুভ্র নীলার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো কথাটা।

নীলা এতো কিছুর মধ্যে ভুলেন গেছিলো যে ও ওর ব্যাগ টা এনেছিল। যার মধ্যে ওর কিছু বই আর দুই তিন টা জামা কাপড়।

নীলাঃ অহ হ্যাঁ আমি তো ব্যাগ এনেছিলাম।এতো কিছুর মধ্যে ভুলে গেছি। আমার ব্যাগ টা কোথায় বলুন তো।

শুভ্রঃ আগে বলুন যে ব্যাগে কেন আপনার নেম প্লেট। এই প্রথম দেখলাম কেউ তার ব্যাগে নেম প্লেট রাখে।

নীলাঃ ওই নেম প্লেট টা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড প্রাপ্তি আমাকে দিয়েছে। মেলা থেকে আমার জন্য নিয়ে এসেছিলো। আর ওর ইচ্ছে যে আমি যেনো নেম প্লেট টা ব্যাগের সাথেই রাখি।

চলবে—

গল্পভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-০৭

0

#গল্পভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব (৭)
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলাকে ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে গেলো রিশিকা তারপর দরজা আটকে দিলো।রাগের চোটে রিশিকার বুকটা যেনো প্রায় ফেটে যাচ্ছিলো।

নীলাঃ। মিসেস খান আপনি আমাকে এই ঘরে কেন আনলেন। আমি কি করেছি আর আমি এক্ষুনি বেরিয়ে যাবো এই ঘর থেকে। আর আজ যদি আপনি আমার গায়ে আবারও হাত উঠান এর পরিনাম কিন্তু ভালো হবে না।

নীলা ঘর থেকে যেই বের হতে যাচ্ছিলো রিশিকা তার কাধটা ধরে এক হেচকা টান মারলেন আর ধাক্কা টা এতোই জোরে ছিলো যে ধাক্কাটা না সামলাতে পেরে কিছুটা ছিটকে দুরে পড়ে গেলো। আহ বলে কাতরে ওঠে! নীলার চোখ ফেটে কান্না আসছে। আজকেও কি তাকে বিনা দোষে মার খেতে হবে।

রিশিকাঃ তুই কি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখিস নি হ্যাঁহ– কোন সাহসে তুই ফাহিমের কাছে গিয়েছিস। আমরা এতো বছর ধরে – এতো আগলে রেখেছি তোকে আর তুই আমার মুখের উপর কথা বলিস। যেখানে তুই জানিস আমরা তোকে কোথা থেকে কোথায় এনেছি । আমরা যদি তোকে আশ্রয় না দিতাম তাহলে এতো দিনে রাস্তায় পচে মরতি। আমার থালাতে খেয়ে আমার থালায় ছিদ্র করছিস। আর বলছিস আমি তোকে মারলে পরিনাম খারাপ হবে।

নীলার গলায় সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে মার্কস গুলো। গলায় জোরে হেচকা টান দেওয়ার জন্য কেটে গেছে রিশিকার নখ দিয়ে। ফর্সা গলাটা খুব বাজে ভাবে কালচে লাল হয়ে গেছে।

নীলা উঠে গিয়ে রিশিকার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো —-

নীলাঃ আমি আপনার মেয়ের উডবি হাসবেন্ডের কাছে যায় নি অই ছেলেটা আমার কাছে এসেছিলো।আমি নই! এখানে আমার কি দোষ বলতে পারেন মিসেস খান। প্রথম থেকেই অই ছেলেটা আমার দিকে কুনজরে তাকাচ্ছিলো — আর আমি তো রান্না ঘরে কাজ করছিলাম অই ছেলেটা ওখানে কেনো গিয়েছিল আমি তো ডাকি নি আর না অই ছেলেটার সাথে আমি কোনো কথা বলেছি।
এক নাগারে কথা গুলো বলে থামলো নীলা মিসেস খানের চোখে চোখ রেখে।

রিশিকাঃ ওয়েল! ওয়েল –নীলা– আমি জানতাম আমাদের খান বাড়ির প্রোপার্টির প্রতি তোর খারাপ ইন্টেইনশন আছে। তুই এক দম তোর মায়ের মতোই হয়েছিস যেমন টা তোর মায়ের ছিল এক সময়। তোর শরীরে তো তোর মায়েরই রক্ত বয়ছে। তোরা শুধু জানিস এদিক সেদিক গিয়ে কি করে পুরুষ মানুষকে সিডিউস করতে হয়। আর তোর যদি কাউকে সিডিউস করতেই হয় যা না অন্য কারোর কাছে যা রাস্তায় অনেককেই পেয়ে যাবি। আমাদের বাড়িতে থেকে নিজেকে ইম্বারেস করিস না।

নীলাঃ আপনি মুখ সামলে কথা বলুন আপনি আমাকে নিয়ে যা খুশি বলুন কিন্তু আপনি আমার মরা মাকে তুলে কথা বলবেন না। একদম বাজে কথা বলবেন না আমার মাকে নিয়ে।। কোনো মেয়েই তার মাকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বলুক সেটা সে মানতে পারে না তা সেটা তার মা যেমনি হক না কেনো।

রিশিকাঃ তোর মা যেমন তেমনই বলেছি আর বলবো। আর তুই কি ভেবেছিস তুই ফাহিমের মতো ছেলেকে তুই পটাতে পারবি তোর এই বেহেনজি মার্কা চেহেরাটা দেখি। আর কি বললি ফাহিম তোর কাছে এসেছিলো তুই বললি আর আমাকে সেটা মানতে হবে।ফাহিম তোর দিকে ফিরেও তাকাবে না আর তুই কি না বলছিস ফাহিম তোর কাছে এসেছিলো বাহ ভালোই চাল চেলেছিস তুই।

রিশিকার হাতে মার খেয়েও নীলা এতো টা দুঃখ পাইনি কিন্তু এই কথা গুলো তার মনে পাহাড় সমান কষ্ট দিয়েছে তার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নীলা হাসতে লাগলো। নীলা জোরে একটা শ্বাস ফেলে নিজের জামাটা ঠিক করে বললো —

নীলাঃ আপনি যদি মনে করে থাকেন আমি উনার জন্য গুড ওনাফ নয় আর এতো টাই অযোগ্য যে তিনি আমার দিকে ফিরেও তাকাবেন না। তাহলে আপনি এতো চাপ নিচ্ছেন কেনো।

রিশিকা নীলাকে আবার মারতে শুরু করে। তোর সাহস তো কম না আবার আমার মুখের উপর কথা বলিস।–একে তো অন্যায় করেছিস তার উপর বড় বড় কথা।

এই বলে ঘারে হাত দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে মাটিতে জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। এতো জোরে ধাক্কা দেওয়ায় নীলা ওখানে থাকা খাটের সাথে লেগে তল পেটে আঘাত লাগে নীলা তল পেটে হাত কুকরে চিৎকার উঠে। তার আজই পিরিয়ডের ডেট ছিলো। আর আঘাত টা এতোই জোরে ছিলো যে অনেক ব্লিডিং শুরু হয়ে যায়— মিনিটের মধ্যে সাদা টাইলস করা ফ্লোর টা রক্তে লাল হয়ে গেলো!!! এতো ব্লিডিং দেখে নীলা ঘাবড়ে গিয়ে চিৎকার করতে শুরু করে।

রিশিকাও ঘাবড়ে যায় আর নীলার মুখ চেপে ধরতে যাবে তখনি বাইরে থেকে কিছু আওয়াজ শুনতে পেলেন

— নীলাও দরজার দিকে তাকালো আর আনমনে বলে উঠে দাদি–

রিশিকা নীলার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে কাপা কাপা হাতে দরজা খুলে শকড হয়ে যায় কারণ দরজার বাইরে মিস্টার খান আর শাহানা খান দাঁড়িয়ে আছেন —– তারপর আমতাআমতা করে বলে ইমরান ত-তু-তুমি——

ইমরান হাত দুটো বুকের উপর ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে আর রিশিকার দিকে রেগে তাকিয়ে আছেন।

মিস্টার খানঃ কি হচ্ছিল এখানে এতক্ষন এখানে চিৎকার করছিলো কেনো নীলা।
রিশিকাকে আরও কিছু বলতে যাবেন তখনি চোখ গেলো নীলার দিকে।
তিনি অনেকটা ঘাবড়ে যায়।

এর মধ্যেই মুন্নি আর জীনিয়াও চলে এসেছে সেখানে। মুন্নিও ঘাবড়ে গেছে আমার এই অবস্থা দেখে।

জীনিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে না তার মধ্যে কোনো ভাবান্তর হয়েছে।

আর দাদি আমার কাছে এসে আমাকে শক্ত করে ধরে-।-আমার দু চোখ অন্ধকার হয়ে যায়। আমি লুটিয়ে পরি দাদির কোলেই। দাদি শুধু দাদিকে বলতে শুনলাম ইমরান ধর মেয়েটাকে। আমি একটু আপসা ঝাপসা দেখতে পেলাম— মিস্টার খান আমার দিকে এগিয়ে আসছেন দৌঁড়ে। ব্যাস আমার আর কিছুই মনে নেই আমি অজ্ঞান হয়ে যায়!!

———————————————————
সদ্য যুবতী একটা মেয়ে হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে ভেতরে আসলো। মেয়েটা আর কেউ না শুভ্রর ছোট আদরের বোন হিয়া।

আস্তে আস্তে তার মুখটা স্পষ্ট হচ্ছে।
গায়ের রং কিছুটা চাপা। শ্যামলা গড়নের একটি মেয়ে!চুল গুলো ঘার পর্যন্ত! মিষ্টি একটা হাসি মেয়েটার মুখে! কতই না মহনীয় লাগছে মেয়েটিকে। কালো কুর্তি আর সাদা পালাজ্জো পরা মেয়েটি।

শুভ্র হিয়াকে দেখে ফিহাকে কোল থেকে নামিয়ে দেই।

শুভ্রঃ আরে বোন তুই — আয় ভেতরে আয় কিন্তু তুই একা একা কেনো হুইল চেয়ার ঠেলে আসছিস বাড়িতে কি সার্ভেন্ট অভাব হয়েছে নাকি। এতো গুলো সার্ভেন্টকে মুখ দেখার জন্য রেখেছি। তোকে যে দেখা শুনা করে সে কোথায়। আজকেই সব কোটাকে বের করে দিবো। এই বলে শুভ্র সার্ভেন্টকে ডাকতে যাবে–

হিয়াঃ আরে ভাইয়া কাউকে ডাকতে হবে না আর না কাউকে বের করে দিতে হবে।
আমাকে তো কিছু বলতে দিবি নাকি তা না নিজেই একা একা বক বক করে যাচ্ছিস। আমি ঠিক আছি। আসলে ফিহা আমার সাথেই খেলছিল দৌঁড়ে তোর ঘরে চলে এসেছে। ওকেই নিতে এসেছি।

শুভ্রঃ হুম নিয়ে যা তো বাবা বাবা বলে মাথাটা খেয়ে ফেললো মেয়েটা।

হিয়াঃ এইভাবে কেনো বলছিস ভাইয়া। আর হ্যাঁ আমি কিন্তু খুব রাগ করেছি তোর সাথে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে —

শুভ্রঃ কেন বোন আমি কি কিছু করেছি। তোর কোনো কথা রাখি নি বল আমায়।

হিয়ার সামনে হাটু গেড়ে বসে বিচলিত হয়ে!

হিয়াঃ হুম করেছিস তো অনেক কিছু করেছিস।তুই বিয়ে করেছিস একটা বাচ্চা হয়ে গেছে এতো দিনেও আমরা কিচ্ছুটি জানতে পারলাম না কেনো ভাইয়া। আমাকে না হয় না ই বললি মা — মাকে তো অন্তত বলতে পারতিস আমরা কি তোর কাছে এতোই পড় হয়ে গেছি!
এক নাগারে কথা গুলো বলে থামলো হিয়া।

শুভ্রঃ বিশ্বাস কর বোন আমি সত্যিই জানি না এই কি হচ্ছে আমার সাথে আর আমি যদি বিয়ে করেই থাকি সেটা তোদের থেকে কেনো লুকাতে যাবো এখানে তো আমার কোনো পার্পোজ নেই বল। ইভেন এই বাচ্চা টি কিভাবে কোত্থেকে এলো আমি কিচ্ছু জানি না। আমি সব জায়গায় চিরুনি তল্লাশি করিয়েছি আমার লোকজনদের দিয়ে। কিচ্ছু পাইনি।

হিয়াঃ কিন্তু তুই তো এই বাচ্চা টাকে অস্বীকার করতে পারিস না। তার জলজ্যান্ত প্রমান আছে। সেটা তুমিও ভালো করেই জানো। ওই রিপোর্টে যা আছে সেটা যে মিথ্যা না তুমি তো নিজেও জানো!

কথা গুলো বলে শুভ্রর দিকে তাকালো হিয়া।

শুভ্রঃ হুম এইখানে তো সব কিছু আটকে আছে। কার -কার এতো বড় সাহস যে আমাকে নিয়ে এতো বড় গেম টা খেলছে! কে –কে? উঠে গিয়ে দেয়ালের সাথে হাত বারি দিয়ে। আমি তো তাকে খুঁজে বের করবই। এট এনি কোস্ট। আর এক বার শুধু খুঁজে পাই তারপর দেখাবো আমি কি করতে পারি।
রেগে দাতে দাত চেপে।

হিয়াঃ ভাইয়া রিলেক্স। শান্ত হো। আচ্ছা মানছি তুই জানিস না কিছুই কিন্তু মা কি বলেছে তোর কি মাথায় আছে সেটা।

শুভ্রঃ হ্যাঁ আছে— কিন্তু সেটা তো আমার পক্ষে পসিবল না। আরে তোরা কেন বুঝতে পারছিস না আমি সাত দিনের মধ্যে বাচ্চার মা কে কোথায় পাবো।

এতো কিছু কি আর এই ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটি বুঝে এতোক্ষন সে চুপটি করে বসে ছিলো।

ফিহা শুভ্রকে বাবা বাবা বলে ডেকে উঠে। বাবা ও বাবা হাত দুটো বাড়িয়ে শুভ্রর দিকে এগিয়ে দেই কোলে উঠার জন্য।

শুভ্র ফিহার দিকে তাকিয়ে রেগে যায় সেই মুহুর্তে । রেগে গিয়ে জোরে চেচিয়ে বলে এই মেয়ে এই তুমি আমাকে বাবা ডাকবে না যাও এখান থেকে। যাও বলছি।

ফিহা শুভ্রর ধমকে ভে ভে করে চিৎকার করে কেঁদে দেই।

হিয়াও কিছুটা কেঁপে উঠলো কারন শুভ্র খুব রেগে কথা গুলো বলেছে। সে জানে তার ভাইয়া রেগে গেলে। রাগের মাথায় কি করে না করে কিছুই খেয়াল থাকে না।
আমিই ভয় পেয়ে গেছি আর
সেখানে এই এক রত্তি মেয়েটা কাঁদবে না।

হিয়াঃ ভাইয়া এটা কি ধরনের ব্যবহার করছ বাচ্চা মেয়ে ও কি এতো কিছু বুঝে। এটা তুমি ঠিক করো নি। একটা বাচ্চার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে।

এই বলে হুইল চেয়ারের চাকা কিছু টা জোর ঘুরিয়ে ফিহাকে শান্ত করার জন্য এগিয়ে যায়। আলে আলে ফিহা সোনা মা আমার কাঁদে না মামুনি টা!

ফিহা কেদেই যাচ্ছে। ফিহার কান্না শুনে মিসেস চৌধুরী দৌড়ে এখানে চলে এসেছে। এসেই ফিহা কে কোলে তুলে নিয়েছেন। কি হয়েছে আমার ফিহা দাদু মনির। কাঁদছে কেন!

শুভ্র গম্ভীর হয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

হিয়াঃ মা দেখো না ভাইয়া ফিহাকে বকছে

মোল্লিকা ফিহার কান্না থামাতে থামাতে কিছুটা রেগে —

মোল্লিকাঃ হিয়া তুই তোর ভাই কে বলে দে আমার নাতনির সাথে ফারদার যদি এমন করেছে তার ফল ভালো হবে না। আর হ্যাঁ আমার সর্তের কথাটা মনে না থাকলে আবার মনে করিয়ে দে। আর তা যদি না করে তাহলে আমাকে মা বলে ডাকতে বারন করবি।
কথা গুলো বলেই তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন।

শুভ্র তার মায়ের চলে যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।
তারপর হিয়ার কাছে গিয়ে বললো বোন তুই একটু মা কে বুঝা না আমি কোথায় পাবো বাচ্চার মাকে যেখানে আমি জানিই না বাচ্চা টা কে। আর দেখছিস মা আমার সাথে কথায় বলছে না।আমি মায়ের সাথে কথা না বলে কি করে থাকবো বল বোন।
অনুনয় করে বললো শুভ্র।

হিয়া কিছুই বলতে পারছে না। সে তার ভাইয়ার এই অসহাত্বটা দেখতে পারছে না। আমি কিচ্ছু করতে পারবো না। এতেই যে তোর ভালো হবে রে ভাইয়া। মনে মনে ভাবছে হিয়া।

হিয়াঃ ভাইয়া তুই মার কথা মেনে নে না। তাহলেই তো হয়ে যায়।

শুভ্রঃ বোন তুইও। যাহ এখান থেকে আমাকে তোদের বিশ্বাস করতে হবে না
কাদতে কাদতে বললো শুভ্র!!আমাকে একা ছেড়ে দে যাহ এখান থেকে।

হিয়া কাদতে কাদতে চলে গেলো হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরাতে ঘুরাতে।

শুভ্র মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো খাটের উপর। তারপর চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।

চলবে—

(কাল থেকে জানি না কি হচ্ছে গল্প শুধু ডিলিট হয়ে যাচ্ছিলো আর পেস্ট করলে দুই বার করে হচ্ছিল তাই গল্প দিতে পারছিলাম না। জানি না কি হচ্ছে 🥺🥺🥺 একটু কষ্ট করে বুঝে নিয়েন। নিচের টুকু ডিলিট করতে গেলে পুরোটা ডিলিট হয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে কিছু টা কেটেছি)

রিশিকাঃ ওয়েল! ওয়েল –নীলা– আমি জানতাম আমাদের খান প্রতি তোর খারাপ ইন্টেইনশন আছে। তুই এক দম তোর মায়ের মতোই হয়েছিস যেমন টা তোর মায়ের ছিল এক সময়। তোর শরীরে তো তোর মায়েরই রক্ত বয়ছে। তোরা শুধু জানিস এদিক সেদিক গিয়ে কি করে পুরুষ মানুষকে সিডিউস করতে হয়। আর তোর যদি কাউকে সিডিউস করতেই হয় যা না অন্য কারোর কাছে যা রাস্তায় অনেককেই পেয়ে যাবি। আমাদের বাড়িতে থেকে নিজেকে ইম্বারেস করিস না।

নীলাঃ আপনি মুখ সামলে কথা বলুন আপনি আমাকে নিয়ে যা খুশি বলুন কিন্তু আপনি আমার মরা মাকে তুলে কথা বলবেন না। একদম বাজে কথা বলবেন না আমার মাকে নিয়ে।। কোনো মেয়েই তার মাকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বলুক সেটা সে মানতে পারে না তা সেটা তার মা যেমনি হক না কেনো।

রিশিকাঃ তোর মা যেমন তেমনই বলেছি আর বলবো। আর তুই কি ভেবেছিস তুই ফাহিমের মতো ছেলেকে তুই পটাতে পারবি তোর এই বেহেনজি মার্কা চেহেরাটা দেখি। আর কি বললি ফাহিম তোর কাছে এসেছিলো তুই বললি আর আমাকে সেটা মানতে হবে।ফাহিম তোর দিকে ফিরেও তাকাবে না আর তুই কি না বলছিস ফাহিম তোর কাছে এসেছিলো বাহ ভালোই চাল চেলেছিস তুই।

রিশিকার হাতে মার খেয়েও নীলা এতো টা দুঃখ পাইনি কিন্তু এই কথা গুলো তার মনে পাহাড় সমান কষ্ট দিয়েছে তার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নীলা হাসতে লাগলো। নীলা জোরে একটা শ্বাস ফেলে নিজের জামাটা ঠিক করে বললো —

নীলাঃ আপনি যদি মনে করে থাকেন আমি উনার জন্য গুড ওনাফ নয় আর এতো টাই অযোগ্য যে তিনি আমার দিকে ফিরেও তাকাবেন না। তাহলে আপনি এতো চাপ নিচ্ছেন কেনো।

রিশিকা নীলাকে আবার মারতে শুরু করে। তোর সাহস তো কম না আবার আমার মুখের উপর কথা বলিস।–একে তো অন্যায় করেছিস তার উপর বড় বড় কথা।

এই বলে ঘারে হাত দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে মাটিতে জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। এতো জোরে ধাক্কা দেওয়ায় নীলা ওখানে খাটের সাথে লেগে তল পেটে আঘাত লাগে নীলা তল পেটে হাত কুকরে চিৎকার উঠে। তার আজই পিরিয়ডের ডেট ছিলো। আর আঘাত টা এতোই জোরে ছিলো যে অনেক ব্লিডিং শুরু হয়ে যায়— মিনিটের মধ্যে সাদা টাইলস করা ফ্লোর টা রক্তে লাল হয়ে গেলো!!! এতো ব্লিডিং দেখে নীলা ঘাবড়ে গিয়ে চিৎকার করতে শুরু করে।

রিশিকাও ঘাবড়ে যায় আর নীলার মুখ চেপে ধরতে যাবে তখনি বাইরে থেকে কিছু আওয়াজ শুনতে পেলেন

— নীলাও দরজার দিকে তাকালো আর আনমনে বলে উঠে দাদি–

রিশিকা নীলার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে দরজা খুলে শকড হয়ে যায় কারণ দরজার বাইরে মিস্টার খান আর শাহানা খান দাঁড়িয়ে আছেন —– তারপর আমতাআমতা করে বলে ইমরান ত-তু-তুমি——

ইমরান হাত দুটো বুকের উপর ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে আর রিশিকার দিকে রেগে তাকিয়ে আছেন।
মিস্টার খানঃ কি হচ্ছিল এখানে এতক্ষন এখানে চিৎকার করছিলো কেনো নীলা।
রিশিকাকে আরও কিছু বলতে যাবেন তখনি চোখ গেলো নীলার দিকে।
তিনি অনেকটা ঘাবড়ে যায়।

এর মধ্যেই মুন্নি আর জীনিয়াও চলে এসেছে সেখানে। ওরা মুন্নি ঘাবড়ে গেছে আমার এই অবস্থা দেখে।
জীনিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে না তার মধ্যে কোনো ভাবান্তর হয়েছে।

আর দাদি আমার কাছে এসে আমাকে শক্ত করে ধরে-।-আমার দু চোখ অন্ধকার হয়ে যায়। আমি লুটিয়ে পরি দাদির কোলেই। দাদি শুধু দাদিকে বলতে শুনলাম ইমরান ধর মেয়েটাকে। আমি একটু আপসা ঝাপসা দেখতে পেলাম— মিস্টার খান আমার দিকে এগিয়ে আসছেন দৌঁড়ে। ব্যাস আমার আর কিছুই মনে নেই আমি অজ্ঞান হয়ে যায়!!

———————————————————
সদ্য যুবতী একটা মেয়ে হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে ভেতরে আসলো। মেয়েটা আর কেউ না শুভ্রর ছোট আদরের বোন হিয়া।

আস্তে আস্তে তার মুখটা স্পষ্ট হচ্ছে।
গায়ের রং কিছুটা চাপা। শ্যামলা গড়নের একটি মেয়ে!চুল গুলো ঘার পর্যন্ত! মিষ্টি একটা হাসি মেয়েটার মুখে! কতই না মহনীয় লাগছে মেয়েটিকে। কালো কুর্তি আর সাদা পালাজ্জো পরা মেয়েটি।

শুভ্র হিয়াকে দেখে ফিহাকে কোল থেকে নামিয়ে দেই।

শুভ্রঃ আরে বোন তুই — আয় ভেতরে আয় কিন্তু তুই একা একা কেনো হুইল চেয়ার ঠেলে আসছিস বাড়িতে কি সার্ভেন্ট অভাব হয়েছে নাকি। এতো গুলো সার্ভেন্টকে মুখ দেখার জন্য রেখেছি। তোকে যে দেখা শুনা করে সে কোথায়। আজকেই সব কোটাকে বের করে দিবো। এই বলে শুভ্র সার্ভেন্টকে ডাকতে যাবে–

হিয়াঃ আরে ভাইয়া কাউকে ডাকতে হবে না আর না কাউকে বের করে দিতে হবে।
আমাকে তো কিছু বলতে দিবি নাকি তা না নিজেই একা একা বক বক করে যাচ্ছিস। আমি ঠিক আছি। আসলে ফিহা আমার সাথেই খেলছিল দৌঁড়ে তোর ঘরে চলে এসেছে। ওকেই নিতে এসেছি।

শুভ্রঃ হুম নিয়ে যা তো বাবা বাবা বলে মাথাটা খেয়ে ফেললো মেয়েটা।

হিয়াঃ এইভাবে কেনো বলছিস ভাইয়া। আর হ্যাঁ আমি কিন্তু খুব রাগ করেছি তোর সাথে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে —

শুভ্রঃ কেন বোন আমি কি কিছু করেছি। তোর কোনো কথা রাখি নি বল আমায়।

হিয়ার সামনে হাটু গেড়ে বসে বিচলিত হয়ে!

হিয়াঃ হুম করেছিস তো অনেক কিছু করেছিস।তুই বিয়ে করেছিস একটা বাচ্চা হয়ে গেছে এতো দিনেও আমরা কিচ্ছুটি জানতে পারলাম না কেনো ভাইয়া। আমাকে না হয় না ই বললি মা — মাকে তো অন্তত বলতে পারতিস আমরা কি তোর কাছে এতোই পড় হয়ে গেছি!
এক নাগারে কথা গুলো বলে থামলো হিয়া।

শুভ্রঃ বিশ্বাস কর বোন আমি সত্যিই জানি না এই কি হচ্ছে আমার সাথে আর আমি যদি বিয়ে করেই থাকি সেটা তোদের থেকে কেনো লুকাতে যাবো এখানে তো আমার কোনো পার্পোজ নেই বল। ইভেন এই বাচ্চা টি কিভাবে কোত্থেকে এলো আমি কিচ্ছু জানি না। আমি সব জায়গায় চিরুনি তল্লাশি করিয়েছি আমার লোকজনদের দিয়ে। কিচ্ছু পাইনি।

হিয়াঃ কিন্তু তুই তো এই বাচ্চা টাকে অস্বীকার করতে পারিস না। তার জলজ্যান্ত প্রমান আছে। সেটা তুমিও ভালো করেই জানো। ওই রিপোর্টে যা আছে সেটা যে মিথ্যা না তুমি তো নিজেও জানো!

কথা গুলো বলে শুভ্রর দিকে তাকালো হিয়া।

শুভ্রঃ হুম এইখানে তো সব কিছু আটকে আছে। কার -কার এতো বড় সাহস যে আমাকে নিয়ে এতো বড় গেম টা খেলছে! কে –কে? উঠে গিয়ে দেয়ালের সাথে হাত বারি দিয়ে। আমি তো তাকে খুঁজে বের করবই। এট এনি কোস্ট। আর এক বার শুধু খুঁজে পাই তারপর দেখাবো আমি কি করতে পারি।
রেগে দাতে দাত চেপে।

হিয়াঃ ভাইয়া রিলেক্স। শান্ত হো। আচ্ছা মানছি তুই জানিস না কিছুই কিন্তু মা কি বলেছে তোর কি মাথায় আছে সেটা।

শুভ্রঃ হ্যাঁ আছে— কিন্তু সেটা তো আমার পক্ষে পসিবল না। আরে তোরা কেন বুঝতে পারছিস না আমি সাত দিনের মধ্যে বাচ্চার মা কে কোথায় পাবো।

এতো কিছু কি আর এই ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটি বুঝে এতোক্ষন সে চুপটি করে বসে ছিলো।

ফিহা শুভ্রকে বাবা বাবা বলে ডেকে উঠে। বাবা ও বাবা হাত দুটো বাড়িয়ে শুভ্রর দিকে এগিয়ে দেই কোলে উঠার জন্য।

শুভ্র ফিহার দিকে তাকিয়ে রেগে যায় সেই মুহুর্তে । রেগে গিয়ে জোরে চেচিয়ে বলে এই মেয়ে এই তুমি আমাকে বাবা ডাকবে না যাও এখান থেকে। যাও বলছি।

ফিহা শুভ্রর ধমকে ভে ভে করে চিৎকার করে কেঁদে দেই।

হিয়াও কিছুটা কেঁপে উঠলো কারন শুভ্র খুব রেগে কথা গুলো বলেছে। সে জানে তার ভাইয়া রেগে গেলে। রাগের মাথায় কি করে না করে কিছুই খেয়াল থাকে না।
আমিই ভয় পেয়ে গেছি আর
সেখানে এই এক রত্তি মেয়েটা কাঁদবে না।

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-৫+৬

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি_পর্ব_৫
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পরছে নীলা আর প্রাপ্তি ভিজেই যাচ্ছে। ভিজে একেবারে একাকার হয়ে গেছে দুজনেই। ওদের ব্যাগ দুটো একটা দোকানের ব্রেঞ্চে রেখে ভিজে যাচ্ছিল।

নীলার প্রথম প্রাপ্তির কথা রাজি না হলেও এখন বেশ উপভোগ করছে সে বৃষ্টি। একবার জোরে হচ্ছে আবার আস্তে বৃষ্টির পানিতে যেন সাথে তার জীবনটাও পাল্টে যাবে। সব দুঃখ-কষ্ট যেনো ধুয়ে মুছে যাচ্ছে।

নীলা দুহাত মেলে চোখ দুটো বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে । বৃষ্টি হওয়ার জন্য বেশি গাড়ি ছিলো না রাস্তায়। মাঝে দু একটা গাড়ি শনশন শব্দ করে জোরে চলে যাচ্ছে।

শুভ্র জোরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলো। এতো বৃষ্টির কারনে শুভ্রর গাড়িটা ঠিক মতো চালাতে পারছিলো না তাও চালিয়ে যাচ্ছিলো তখনি একটা গর্তের মধ্যে শুভ্রর গাড়িটা আটকে পরে।

শুভ্র কিছুতেই গাড়িটা তুলতে পারলো না। বৃষ্টির কারনে তেমন কোনো লোক ও দেখা যাচ্ছে না।শুভ্র বিরক্তি নিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং এ জোর একটা ঘুশি দিলো আর বললো এই গাড়িটাকেও এখনি গর্তে পরতে হলো। ডেম ইট।

শুভ্র কিছু না ভেবে গাড়ি থেকে নেমে পরে সামনেই একটা দোকান দেখা যাচ্ছে।

। ওখানে যায় যদি কাউকে পায় তাহলে হেল্প নেওয়া যায়। শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে দেখলো রাস্তার পরিবেশ টা তো খুব সুন্দর যাকে বলে দেখার মতো।

শুভ্র প্রায় দৌড়ে চলে গেলো ঔ দোকান টাই।গিয়ে নিজের শরীর থেকে পানি গুলো ঝারছিলো।

তখনি একটা জায়গায় তার চোখ আটকে যায়। রাস্তার অপর পাশে দুটো মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। শুভ্রর যেনো পাশের মেয়েটার দিকে চোখ আটকে যায়।ব্যঞ্জনহীন ভাবে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি তার দিকে। এই প্রথম কোনো মেয়েকে দেখে আমার পৃথিবীটা যেনো থমকে গেছে!!!

এক সাইড করে বিনুনি করা।কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চোখ দুটো বন্ধ করে আছে মেয়েটা।কপাল,চোখ, ঠোঁট চুইয়ে পানি পরছে। মেয়েটার ঠোঁটের দিকে তাকাতেই যেনো আমার নিশ্বাস আটকে যাচ্ছে।

হঠাৎ পাশের মেয়েটা ধাক্কা দিতেই সে দৌড়ে চলে আসছে। একি মেয়ে দুটো তো এদিকেই আসছে। এখন কি করবো। শুভ্র এতোই মুগ্ধ ভাবে দেখছিল যে সে নরতে পারছিল না সে যে কখন বসে পরেছে নিজেও খেয়াল করেনি।মেয়ে দুটো সামনে এসে বলে—

এক্সকিউজ মি ভাইয়া পাশের মেয়েটা বলে –আমি এখনো সেই মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে আছি এক ধ্যানে।

প্রাপ্তিঃএইযে মশাই সামনে হাত নেড়ে হ্যাঁলো মিস্টার,,এই যে–

নীলাঃআজব লোক তো বাবা। কখন থেকে ডাকছিস শুনছে না কেনো কালা নাকি।

শুভ্র সেই এক ভাবে তাকিয়েই আছে।হটাৎ কারোর জোরে চিল্লিয়ে ডাকায় তার ধ্যান ভাঙে।

নীলাঃ এই যে মিস্টার -সেই কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাননি নাকি উঠুন আমরা চলে যাবো।

শুভ্র দেখলো মেয়েটা তার কমল ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে।শুভ্রর যেনো নেশা লেগে যাচ্ছে ওই কোম্ল ঠোঁট জোড়ায়।

শুভ্র নিজেকে সামলে নিয়ে হালকা গলাটা কে খেকিয়ে নিয়ে কলারের টাই ঠিক করলো আর বললো

শুভ্রঃ তো যান আপনাদের কি আমি আটকে রেখেছি নাকি আজব তো একটা ভাব নিয়ে শুকনো ঢুক গিলে।

নীলাঃ হ্যাঁ – আটকে রেখেছেন তো –উঠুন

শুভ্রঃ এই মেয়েটা কি বুঝতে পেরে গেলো নাকি যে আমি চাইছি না যে মেয়েটা এখান থেকে যাক (মনে মনে) তারপর একটু নড়েচড়ে –তা কিভাবে আপনাকে আটকে রেখেছি বলুন তো–

প্রাপ্তিঃ আরে মিস্টার আগে আপনি উঠুন তারপর বলছি।

নীলা কমড়ে হাত দিয়ে চোখ কোনা করে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে

শুভ্র এতোক্ষনে বুঝতে পারলো যে সে কিছু একটার উপর বসে আছে তারপর সে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো যে সে একটা ব্রেঞ্চে উপর দুটো ব্যাগের উপর বসে আছে। শুভ্র তারাতারি করে উঠে দাঁড়িয়ে —

শুভ্রঃ স্যরি–আ-আ-সলে খে-খেয়া-ল করিনি। তোতলাতে তোতলাতে বললো শুভ্র। নীলার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থেকে ব্যাগ দুটো এগিয়ে দিলো নীলার দিকে–এই নিন আপনার ব্যাগ।

প্রাপ্তি তখন থেকে খেয়াল করে যাচ্ছে লোকটা নীলার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে –তাই সে বললো—

প্রাপ্তিঃ হুম তাই তো কিভাবে খেয়াল করবেন।আপনি তো তাকিয়ে থাকতে ব্যাস্ত ছিলেন। এই বেটা আপনার মতলব টা কি হ্যাঁ বলুন তো। আমার বান্ধুবীকে ওইভাবে দেখছেন কেনো —

শুভ্রঃ মানে ক -ক-কি বলতে চাইছেন আপনি আমি কেনো আপনার বান্ধুবীকে দিকে তাকিয়ে থাকতে যাবো।

প্রাপ্তির কথা শুনে নীলা ফট করে প্রাপ্তির দিকে তাকালো —

নীলাঃ-এই তুই এসব কি বলছিস হ্যাঁ।তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি।আমরা আজই লোকটা কে দেখলাম আর তুই এসব কি আবল তাবল বকছিস। বাজে কথা বাদ দে- এখান থেকে চল এখন —
প্রাপ্তির কিছুটা কাছে ঘেসে চাপা স্বরে বললো নীলা।

প্রাপ্তিঃএই তুই চুপ কর দেখছিস না এই লোকটা তকে কেমন কেবলার মতো দেখছে।
এই বেটা কি হলো কথা বলছেন না কেনো। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো– প্রাপ্তি

শুভ্র চোখ নামিয়ে ঢোক গিলে মনে মনে বললো শুভ্র এদেরকে বুঝতে দিলে হবে না কন্ট্রোল কন্ট্রোল।।

শুভ্রঃ দেখুন আপনি কিন্তু একটু বেশিই বলছেন আপনি জানেন আমি কে? কাকে কি বলছেন।

নীলাঃ এই প্রাপ্তি তুই কি যাবি নাকি আমরা এখানে ব্যাগ নিতে এসেছি ওই অচেনা লোকটার সাথে ঝগড়া করতে নয় এই চল এইবার আর কথা না। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে এরপর যদি আরও দেরি হয় তাহলে খুব খারাপ হবে।

এই বলে নীলা প্রাপ্তিকে এক প্রকাত টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো তখনি— পিছনে কারোর ডাকে তাকালো দুজনেই

শুভ্রঃ আসলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি আপনারা চাইলে আমি আপনাদের লিফট দিতে পারি সামনেই আমার গাড়ি আছে।

নীলা আর প্রাপ্তি দুজনেই অবাক এই লোক টা বলে কি।

নীলাঃ আমরা আপনার গাড়িতে কেন যাবো আপনাকে চিনি না জানি না আজব তো। নীলা একটু বিরক্ত হয়ে বললো।

প্রাপ্তিঃ দেখেছিস তোকে বললাম না এই লোকটার মতলব ভালো না । এখন আবার নিজের ইচ্ছায় বলছে লিফট দিবে।
নীলাঃনা লাগবে না– থ্যাংক ইউ। আমরা চলে যাবো
এই বলে দুজনেই হাটা ধরে জোরে জোরে।

আর শুভ্র ওদের দুজনের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।

শুভ্র মনে মনে ভাবতে লাগলো যে করেই হক এই মেয়েটার খোঁজ আমাকে নিতেই হবে।

এই বলে সে গাড়ির দিকে যাবে তখনি একটা লোক আসলো আর বললো —

লোকঃ আজ্ঞে স্যার মহাসয় আপনার কি কোনো সমস্যা হয়েছে? প্রশ্ন করে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে।

লোকটা মনে হয় দোকানের মালিক হবে শুভ্র মনে মনে বললো।

শুভ্রঃ হ্যাঁ আসলে সামনে আমার গাড়িটা আটকে গেছে একটা গর্তে একটু যদি ধাক্কা দিতেন তাহলে খুব উপক্রিত হতাম।

লোকঃ ঠিক আছে স্যার চলুন।
শুভ্র আর লোকটা চললো গাড়ির দিকে।

শুভ্র গাড়ির কাছে যেতেই গাড়ির চাবিটা ঢুকিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে।

লোকটার সাথে শুভ্রও ধাক্কা দিয়ে গাড়িটা তুলে ফেললো আর গাড়িতে গিয়ে বসে পরে।
লোকটা চলে যেতে নিলে শুভ্র লোকটাকে ডেকে বেশ কিছু টাকা দিলেন।

আরে আরে কি করতেছেন স্যার টাকা লাগতো না মানুষই তো মানুষের উপকারে আসে।

শুভ্রঃ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আমি আপনাকে এই জন্য টাকা দিচ্ছি না। ওই দোকান টা কি আপনার। আপনাকে একটা ইনফরমেশন দিতে হবে পারবেন

লোকঃ হ্যাঁ ওই দোকান টা আমার কিন্তু স্যার কি ইনফরমেশন দিতে হবে বলুন।

শুভ্র লোকটার হাতে জোর করে টাকা গুলো হাতে ধরিয়ে দিলো—আর বললো একটা মেয়ের খোঁজ দিতে হবে আমার মনে হয় এই দিক দিয়েই মেয়েটা কলেজ বা ভার্সিটি যায়। মেয়েটির লাল খয়েরী রঙের একটি ব্যাগ আছে। আর খুব সাদা সিদে সাধারণ মেয়েটি দেখবেন শুধু কখন কোথায় যায়।

লোকঃ ওকে স্যার রাখবো।

শুভ্রঃ থ্যাংকস!! এই নিন আমার কার্ড রেখে দিন যেকোনো খবর আমাকে দিবেন। মেয়েটা কোথায় থাকে এভরিথিং সব খবর আমাকে জানাবেন ঠিক আছে। এই বলে শুভ্র চলে গেলো।

লোকটা খুব খুশিই হলো তার এই টাকা উপকার হলো। লোকটা শুভ্রর গাড়ির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ দেখা যাচ্ছিলো।
——————————————————— নীলা তরিঘরি করে প্রায় কাপতে কাপতে ঘরে ঢুকছে আর ভাবছে আজকে হবে তার। আজকেও নিশ্চয়ই তাকে মার খেতে হবে। এই সব ভেবে ভেবে ঘরে ঢুকতে যাবে তখনি নীলার চোখ পরলো একটা ছেলের দিকে।

খুব সুন্দর দেখতে ছেলেটা দেখেই মনে হচ্ছে খুব আভিজাত্য পরিবার থেকে বিলং করে। এই নিশ্চয় জীনিয়া আপুর ফিয়্যেন্সি হবে সাথে জীনিয়া আপুও আছে ছেলেটার হাত জড়িয়ে ধরে ।

মিসেস খানও আছেন। হেসে হেসে কথা বলছেন ছেলেটার সাথে

নীলা কিছুটা শব্দ করে গলাটা পরিষ্কার করে ঘরে ঢুকছে অমনি সবাই গল্প করা বাদ দিয়ে দরজার দিকে তাকায়–

মিসেস খান তো অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকায় নীলার দিকে।

আর ফাহিমও নীলার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে রইলো। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে ফাহিম নীলার দিকে মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খাবে —

নীলা বুঝতে পারছে তার কপালে শনি আছে। না জানি কখন এসেছে ছেলেটা আস্তে আস্তে নীলা ঘরে ঢুকছে —

তখনি ফাহিম বলে মিসেস খানকে জিজ্ঞেস করে আন্টি এই মেয়েটা কে — নীলার দিকে তাকিয়ে—

চলবে—–

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ(৬)
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

ফাহিমঃ আন্টি এই মেয়েটা কে? একে তো চিনতে পারলাম না। কে এই মেয়েটা ? নীলার দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো ফাহিম।

রিশিকাঃ আরে বেটা তুমি বাদ দাও তো এসব কথা। ও আমাদের বাড়িতেই থাকে ছোট বেলা থেকেই।
ওই মেয়েটা এই বাড়ির অবৈধ সন্তান। আমাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছি। খেতে পারতো না রাস্তায় থাকতো যদি আমরা আশ্রয় না দিতাম। তুমি তো জানোই ফাহিম বেটা তোমার আংকেল কেমন মানুষ । উনি নিজের দায়িত্ব কখনো এড়িয়ে যায় না। লেখা পড়া খাওয়া থাকা সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েছেন তোমার আংকেল ওর। এক সাথে সব কথা বলে থামলো রিশিকা।

ফাহিমঃ এই মেয়েটা আংকেলের অবৈধ সন্তান । বাট দেখে তো মনে হচ্ছে না। আবার লেখাপড়াও করাচ্ছেন আংকেল। বাহ আজকাল আশ্রিতদেরও কি কপাল।জীনিয়া বেব তুমি তো এর কথা আগে কোনদিন বলো নি!!জীনিয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো জিজ্ঞেস করলো ফাহিম।

জীনিয়াঃ অফফহ জান তুমি এসব নিয়ে ভেবো না তো। তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো। আর ও কে এই বাড়ির? অবৈধ সন্তান অর কথা তোমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি। আর তুমি শুধু আমাকে নিয়ে ভাববে আর কাউকে নিয়ে ভাবতে হবে না।আমরা বসি না চলো জান। বসে কথা বলি।

ফাহিমঃ ওকে বেব চলো আমরা বসি এখন।

নীলা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সবকিছু। বাড়ির অবেধ সন্তানের সাথে এখন আশ্রিতাও হয়ে গেলাম। হাইরে কপাল। ওদের আর কি দোষ। আসলেই তো আমি এই বাড়িতে কাজের লোকের মতো থাকি। এই ভেবে নীলার চোখ পানিতে ভরে উঠছে বার বার কিন্তু সামলে নিচ্ছে নিজেকে।

রিশিকাঃ এই কি হলো তুই কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি যাহ। ভিজে গেছিস দেখছি । যাহ গিয়ে চেঞ্জ করে নিচে আয়। ফাহিমকে কফি দে। ছেলেটা অনেক্ষন হলে এসেছে।

ফাহিম বেটা তোমরা গল্প করো আমি উপরে যাচ্ছি। ফাহিমের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে চলে গেলো রিশিকা।

নীলাও কিছু বললো না বিনিময়ে। তারপর উপরে তার চিলেকোঠার ঘরে চলে গেলো আস্তে আস্তে। নীলা উপরে গিয়ে চেঞ্জ করে নিলো। তারপর নিচে এসে রান্না ঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে আসে জীনিয়া আর ফাহিমের দিকে এগিয়ে দেই কফির কাপ দুটো।

নীলাকে ফাহিম এখনো সেই বাজে ভাবে দেখছিল শকুনের দৃষ্টিতে এক ধ্যানে । এমন ভাবে দেখছিল যে মনে হয় কোনো দিন মেয়ে দেখেনি এর আগে। মনে হচ্ছিল চোখ দিয়েই গিলে খাবে

নীলার রুপ যেনো দিগুন হয়ে গেছে। চুলগুলো ভেজা থাকার কারনে ছেড়ে দিয়েছে । মায়া ভরা সেই চোখ। আর কমল গোলাপি ঠোঁট। কি যে অপুর্ব লাগছিল।

নীলা ফাহিমের দৃষ্টি বুঝতে পেরে দ্রুত ওখান থেকে চলে আসে রান্না ঘরে।

জীনিয়াঃ কি হলো ফাহিম খাও কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।

ফাহিমঃ হ্যাঁ হ্যাঁ খাচ্ছি তুমিও খাও।

এদিকে জীনিয়াও কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবছে সেও খেয়াল করেছে ফাহিমকে নীলার দিকে বাজে ভাবে তাকিয়ে থাকতে।

না না ফাহিমের নজর যেনো ওই বেগডেটেড মেয়েটার দিকে কোনো ভাবেই না পড়ে। আমাকেই কিছু একটা করতে হবে এইসব ভাবছে মনে মনে।

ফাহিমঃ জীনিয়া এখন আবার তোমার কি হলো।কি ভাবছো এতো। আচ্ছা তুমি আন্টিকে ডাকো কথা বলেই চলে যাবো।

জীনিয়াঃ না কিছু না তো কি ভাববো। তুমি বলা আমি মমকে ডেকে দিচ্ছি। এই বলে জীনিয়া চলে গেলো।

জীনিয়া যাওয়ার সাথে সাথেই ফাহিম সেই সুযোগ বুঝে নীলাকে খুজতে থাকলো। উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখলো কোথায় গেলো মেয়েটা। রান্না ঘরে দেখতে পেলো তারপর এগিয়ে গেলো নীলার দিকে।

নীলা এক মনে কাজ করছিলো তখনি কেউ তার পেটে হাত দিলো খুব জোরে চেপে ধরেছে। সেটাও খুব বাজে ভাবে নীলা চমকে যায়। পিছনে ঘুরে সে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় আর বলে— একি আপনি এটা কি করছেন। ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন আমাকে।

নীলার কথা না শুনেই ফাহিম নীলাকে জোরে নিজের কাছে টেনে নিলো জোর করে নীলার মুখের দিকে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে

ফাহিমঃ আরে সুন্দরী এতো কথা কেন বলছো। যেটা করছি করতে দাও না। তোমাকে পুষিয়ে দিবো। এইযে তোমার এতো কষ্ট কোনো টাই থাকবে না। তোমাকে শুধু আমার কথা মতো চলতে হবে।

নীলা নিজেকে ছাড়ানোর বৃথাই চেষ্টা করছে সে কিছুতেই নিজেকে এই লোকটার কাছ থেকে ছাড়াতে পারলো না । হাত দিয়ে বুকে কিল ঘুশি দিচ্ছে। কিন্তু একটা ছেলের কে কি একটা মেয়ের শক্তি কিছুই না।এই নোংরা লোকটার বাজে কথা গুলো শুনে চোখের পানি চলে এসেছে টপটপ করে পানি পরছে নীলার চোখ দিয়ে।

ফাহিম নীলার দিকে জোর করেই তার মুখ এগিয়েই নিয়ে যাবে তখনি তখনি—

হঠাৎ নীলার হাত চলে যায় ফাহিমের গালে।নীলা সপাটে একটা থাপ্পড় মেরে ফেলেছে।

ফাহিম নীলার দিকে রেগে আবার জোর করতে যাচ্ছিল তখনি—-

জীনিয়াঃ নীলা– জোরে চেচিয়ে এসব কি হচ্ছে এখানে হ্যাঁ!
নীলা তুই এসব কি করছিস। এই তুই আমার ফাহিম কে নিজের কাছে টানার চেষ্টা করছিস। তোর সাহস তো কম না এই বলে একটা চর মারতে যাবে

তখনি ফাহিম জীনিয়ার হাত ধরে ফেলে।

ফাহিমঃ তুমি ভুল বুঝছো –আমরা তো যাস্ট একটু পরিচিত হচ্ছিলাম আর কিছু না।

ঘাবড়ে গেলেও বুঝতে দিলো না জীনিয়াকে।

জীনিয়া ফাহিমকে আরও কিছু বলতে যাবে তখনি–

মিসেস খান রান্না ঘরে সামনে গিয়ে বলে আহ জীনিয়া কি হচ্ছে কি হুম তুমি ফাহিমকে ভুল বুঝছো।

জীনিয়া চুপ করে যায় আর রাগ করে গটগট করে উপরে চলে যায়। নীলার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে থেকে

রিশিকাঃ ফাহিম বেটা তুমি জীনিয়ার কথায় কিছু মনে করো না। আমার মেয়েটা এমনি।
একটু পরেই আবার তোমার কাছে ঠিক ফোন করে স্যরি বলবে।

ফাহিমঃ না না আন্টি আমি জানি তো। ওকে আন্টি আমি আজ আসছি।

এই বলে ফাহিম নীলার দিকে একবার দেখে চলে গেলো।

নীলা গুটি শুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখ মুখ কুচকে অনেক ভয় পেয়েছে সে
নীলার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরে যাচ্ছে।

রান্না ঘরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে কাপছে সে ভয়ে।সে যেনো ফ্রিজড হয়ে গেছে কোনো রকম নড়ে ঘুরে যেই সেই চলে যেতে নেই তখনি তার গালে অনেক জোরে চর খেলো!
নীলা মাটিতে পরে যেতে নিলে সামলে নেই কোনো রকম।

নীলার গালটা যেনো জলে যাচ্ছে।

ফাহিম যেতেই রিশিকা নীলার কাছে গিয়ে এতো জোরে নীলাকে চর মারে। সেই অবস্থাতেই রিশিকা নীলাকে চেপে ধরে একটা ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে গেলো। দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে রিশিকা ঘুরে দাড়ালো এবং নীলার দিকে রাগী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন।
———————————————————
শুভ্রর এখনো যেনো সেই ঘোর লাগানো মুহুর্তের মধ্যেই ডুবে আছে। শুভ্র বাড়িতে এসেই ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে বসে আছে। আর ভাবছে সেই চোখ সেই ঠোঁট এখনো যেনো শুভ্রর নেশা কাটেনি। দ্যা শুভ্র চৌধুরী — যে কি না একটা মেয়েকে ভুলতে পারছে না। যে কিনা কোনো দিন কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নি আর আজ কি না সামান্য একটা মেয়েকে নিজের মন থেকে সরাতে পারছে না। কি হচ্ছে তার সাথে — সব কিছু যেনো হঠাৎ হঠাৎ করেই হয়ে আজকাল তার সাথে

তখনি বাবা বাবা বলে ছুটে আসে ফিহা। ফিহা শুভ্রর কোলে উঠে বসে।

শুভ্রর ধ্যান ভেঙে যায়। আর বলে –একি একি কি করছো তুমি আমার কোলে কেনো উঠছো।

শুভ্র মেয়েটার দিকে তাকায়। কি মায়াবী মেয়েটার মুখে।

শুভ্র কিছুতেই বুঝতে পারে না এই বাচ্চা মেয়েটার প্রতি অদ্ভুত মায়া কেনো কাজ করে। সে কিছুতেই বুঝতে পারে না।

এই মেয়ে কি চাই তোমার।কি সমস্যা তোমার ? তুমি আমাকে কেনো বাবা ডাকছো।

ফিহা খটখট শব্দ করে হেসে উঠে আর বলে বাবা তুমি তো আমার বাবা। তাই বাবা ডাকছি। আর কেনো এই বলে আবার হাসতে থাকে।

শুভ্র ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে। কি মিস্টি মেয়েটা কি সুন্দর লাগছে মেয়ে টা কে হাসছে। হাসিটা কি সুন্দর।

ফিহা হাসিটা থামিয়ে শুভ্রকে বলে কেনো বাবা তুমি খুব পচা আমাকে একটুও ভালোবাসো না। তুমি কি খুশি হও নি আমাকে পেয়ে। মুখ টা বাকিয়ে গোমড়া করে —

তিন বছরের এই বাচ্চাটি এতো কথা কি ভাবে জানে এই এক রত্তি মেয়েটা– যেন কথা গুলো অকে কেউ শিখিয়ে দিয়েছে। শুভ্র কিছু একটা বলতে যাবে

তখনি কেউ ফিহা ফিহা বলে ডেকে ঘরে ঢুকছে ইজি হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকছে —-

চলবে—

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-৩+৪

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব_৩
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

স্যার বাচ্চাটির গায়ে একটা ডিএনএ রিপোর্ট আছে!!!!

রিপোর্ট খুলে নিয়ে দেহরক্ষী রিপোর্ট টা শুভ্রের কাছে দিলো।

-তারপর রিপোর্টে যা দেখলো শুভ্র তার জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না।।
—তার চোখ গুলো যেন লাল হয়ে যাচ্ছিলো”! –ইম্পসিবল এটা কি করে হতে পারে না কিছুই ভাবতে পারছে না

শুভ্র—-শুভ্র রক্ষীকে হুকুম করলো যে এই জায়গা টা সেল করে বন্ধ করুন।
-আর ইমিডিয়েটলি খোঁজ নিন –বাচ্চার মা কে!
খুজে বের করুন যতো তারাতারি সম্ভব । আর তার সাথে এটাও দেখুন ডিএনএ রিপোর্ট টা নকল কিনা।।

ইয়েস স্যার বলে —রক্ষীরা খোঁজ নেওয়ার জন্য বেরিয়ে পরলো

শুভ্র আর কিছু না ভেবে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিলো।।কারণ এই বাচ্চা মেয়ে টাকে তো আর এখানে এইভাবে ফেলে রেখে সে চলে যেতে পারে না। উপরে নিজের রুমে গিয়ে বসে পরে বাচ্চাটিকে নামিয়ে দিয়ে আর ভাবতে পারছে না শুভ্র কিচ্ছু —।
———————————————————-




–নীলা এইবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। কিছু দিন পর তার এক্সাম।

তাকে অনেক কষ্টে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে যে করেই হোক। আজ যদি মা বেঁচে থাকতো তাহলেও কি তাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হতো! কখনোই না।

—সে এসব ভাবছে বাসে বসে বসে।।–কিছুক্ষন পর বাস থামলো তার গন্তব্যের কাছে।

— বাস থেকে নেমে হাটতে শুরু করলো নীলা একটু সামনেই তার কলেজ সামনেই কলেজের বড়ো গেট টা দেখা যাচ্ছে।

–নীলার পাবলিক ট্রান্সপর্টে চলাচলের অভ্যাস হয়ে গেছে। সে রোজ সবকিছুই মানিয়ে নিতে পারে পরিস্থিতি সাপেক্ষে।

—তার ছোট বেলার কথা মনে পরছে!
যখন বাবা রোজ তাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যেতো গাড়ি করে আবার নিয়েও যেতো।

— খুব একটা আদর করে বা ভালোবেসে যে তাকে তার বাবা স্কুল দিয়ে যেতো তা কিন্তু না। ছোট জন্যই হইতো তাকে দিয়ে যেতো।

তাও নীলা সেই ছোট বেলার মতোই চাই!! যদি বাবা তাকে এখনো কলেজ দিয়ে যেতো। ভাবতে ভাবতেই সে গেটের ভেতর প্রবেশ করলো ।

কলেজের অনেকই তাকে দেখতে পারে না।
সে যে এতো বড় বাড়ির মেয়ে সেটা তো কেউ জানে না।
সবাই তাকে গাইয়া বলে!! কারণ তার ড্রেসআপই এমন তাকে দেখে তো বুঝা যাবে না। -কারন নীলা খুবই সিম্পল ভাবে চলাফেরা করে।

কলেজে অনেকেই আছে নীলার একটু ভালো লাগলো দেখে। সে আস্তে আস্তে তার ক্লাসে চলে গেলো সেখানেই তার বন্ধু প্রাপ্তি বসে আছে সেই একমাত্র মেয়ে যাকে কিনা নীলা প্রথম দিন থেকেই তার পাশে পেয়েছে।।

—নীলাকে দেখেই প্রাপ্তি বললো আয় বস –নীলা গিয়ে প্রাপ্তির পাশে বসে পরলো।

–প্রাপ্তিঃতকে এমন দেখাচ্ছে কেন। কাল কি কিছু হয়ে ছিলো বাসায় নিশ্চয়ই তোর অই হিটলার সৎমা তোকে আবার মেরেছে!!

প্রশ্নাত্তক চোখে তাকিয়ে রইলো সে নীলার দিকে —

নীলাঃহুম মেরেছে তুই তো জানিস তবে আমিও মিসেস খান কাল কে কিছু কথা বলে দিয়েছি —–তারপর কালকের সব ঘটনা বললো প্রাপ্তিকে—

প্রাপ্তিঃঠিক হয়েছে। সব সময় তাকে কারনে অকারণে মারে মাঝে মাঝে এরকম প্রতিবাদ করতে হই।।– তুই যে ওই কুটনি বুড়িকে কেন সহ্য করিস আল্লাহ জানে।।।আমি হলে তো অই মহিলার চুলের মুঠি ধরে শায়েস্তা করতাম।।। ডাইনি রাক্ষসী মহিলা একটা।

দাতে দাত চেপে কথা গুলো বললো প্রাপ্তি।

তখনি স্যার আসলেন ক্লাসে নীলা প্রাপ্তিকে বললো স্যার আসছেন চুপ কর এই বার। প্রাপ্তি চুপ করে একটু নরেচরে ঠিক করে বসলো।আর ক্লাসে মনোযোগ দিলো দুজনেই।
—————————————————–


–বিল্ডিংয়ের টপ ফ্লোরে প্রেসিডেন্সির অফিস বিশাল ঘরটার কন্ট্রাস্টিং সাদা কালো ফার্নিস দেখতে বেশ অভিজাত লাগছে।
কিন্তু এই মুহুর্তে সেই বিশাল জায়গাটা থমথমে হয়ে আছে।।
এসি রুমে বসেও শুভ্র তরতর করে ঘামছে। তার এই মুহুর্তে কিছুই ভালো লাগছে না অস্থির হয়ে আছে সে। যেনো একটা দম বন্ধিকর অস্বস্তিকর অবস্থা।।
যে কেউ মাথা তুলে তাকানোর সাহসই পেলো না

—-
—-কিছুক্ষন পর একটা রক্ষী শুভ্রর কাছে এসে বলে

—-মিস্টার চৌধুরী আমরা আশেপাশে সবাইকে জিজ্ঞেস করেছি।।
কিন্তু কেউই বলতে পারলো না বাচ্চাটা কোথা থেকে এসেছে বার কার —আর না এখানকার কারোর বাচ্চা হারিয়ে গেছে।। আর সিসিটিভি ক্যামেরাতেও কিছু পাওয়া যায়নি।

বাচ্চা টা যেনো হঠাৎ করেই শুন্য থেকে উরে এসেছে কোনো ট্রেস ছাড়াই।।

—-শুভ্রঃ হোয়াট–(জোরে চেচিয়ে) কিছুই খুজে পাননি এটা কি করে হতে পারে।

মিস্টার চৌধুরীর হিমশিতল গলার আওয়াজে সবাই একদম শিউরে ওঠে কেউ আর কথা বলার সাহস পাই না।সবাই ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গেলো।
শুভ্র ডিএনএ রিপোর্টটা হাতে তুলে নিয়ে ধপ করে টেবিলের উপরে ছুরে ফেললো

এতো ছোট একটা বাচ্চা তো আর নিজে থেকে এখানে আসতে পারে না তাই না।

—তবে ডিএনএ রিপোর্ট টা যে অথেনটিক তার বেপারে আমরা নিশ্চিত স্যার।।
আপনার কথা মতো রিপোর্ট টাও চেক করে দেখেছি আর এখানে সবচেয়ে বড় ডক্টর কে দিয়ে চেক করিয়েছি।।। ডিএনএ টা যে আপনার সেটা সিউর স্যার।। —-দেহরক্ষী বেশ সাবধানে কথাটি গুলো বললো।

অর্থাৎ ওই ছোট্ট ফুটফুটে পুতুলের মতো মেয়েটা সত্যিই তার সন্তান।।

বিশাল ঘরটা তখনো যেনো পাথরের মতো কঠিন নিরবতা যেনো চারিদিকে ছেয়ে গেলো।

শুধু ওই ছোট্ট নিস্পাপ মিস্টি একরত্তি বাচ্চা মেয়েটাই এই পরিবেশ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।।সে তার গোল গোল চোখে চারিপাশটা দেখছে।
তারপর বাচ্চাটা শুভ্রর দিকে গুটি গুটি পায়ে হেটে এগিয়ে গেলো। কোলে উঠার জন্য তার ছোট্ট ছোট্ট হাত বাড়িয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে আর মিষ্টি কোমল কন্ঠে ঠোট ফুলিয়ে আলতো করে ডেকে উঠে —-
বাবাআআ—

শুভ্র যেনো তার বুকের মধ্যে একটা চাপা কিছু অনুভব করলো –এই ডাকটা যেনো তাকে মায়াই জড়িয়ে ফেললো।।

যেনো তার হার্টের দূবদূবানি নিমিষেই বেড়ে গেলো ঠিক বলে বুঝানো যাবে না–

-তারপর শুভ্র কিছু একটা ভেবে বাচ্চাটির কাছে গিয়ে হাটু গেরে বসলো সেই বাচ্চার সামনে।
—আর বাচ্চা মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে শুভ্র চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো –মুখটা প্রায় অবিকল তার নিজের মতো।

কেনো যেনো তাকে খুব টানছে মেয়েটির মায়া ভরা মুখ দেখে শুভ্র একটা উতলে উঠা আবেগ সামলালো।
—–হঠাৎই ছোট্ট মেয়েটি তার কোলে উঠে তাকে এমন ভাবে জাপ্টে ধরে আর বলতে থাকে—খিদে— খিদে বাবা খিদে পেয়েছে!!
ছোট্ট মেয়েটি তোতলাতে তোতলাতে বলে——শুভ্র প্রথমে একটু স্থির হয়ে নিলেন।।
পরের মুহুর্তেই সে কিছু না ভেবে মেয়েটির কচি মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মোয়েটি হা করে হেসে যাচ্ছে।
——————————————————–

–জীনিয়া এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে।
মুন্নি অকে ডাকতে এসেছে এর আগেও বার কয়েক অকে ডেকে গেছে কিন্তু উঠে নি সে–।


মুন্নিঃ এই আপু উঠ বলছি।। আজ কে তোমার ফাহিম ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা আর কতো ঘুমাবে।
এর পর দেরি করলে তো ফাহিম ভাইয়া রাগ করবে তোমার সাথে—

জীনিয়াঃউফফফ সকাল সকাল জালাস না তো যাহ ফাহিম কে আমি বুঝিয়ে বলবো সে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।

মুন্নিঃএখন ক’টা বাজে তোর কোনো আইডিয়া আছে এখন বারোটা বেজে যাচ্ছে আর তুই বলছিস সকাল সকাল তকে জালাচ্ছি।

জীনিয়াঃপ্রায় লাফিয়ে উঠলো কিহ বারোটা —আমাকে আর একটু আগে ডাকবি তো এই,,,,,

মুন্নিঃএখন বুঝো–আমি তোমাকে সেই কখন থেকেই ডেকে যাচ্ছি আপু আর তুমি বলছো যে আগে ডাকিনি কেন। হুম এখন যাও ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো মম ডাকছে।

জীনিয়াঃ হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি যাহ এতো কথা বলতে হবে ডাকতে এসে। এই বলে সে বাথরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

মুন্নিও জীনিয়ার কথায় কর্নপাত না করে চলে আসলো—

চলবে—-

#গল্পভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব:(৪)
#লেখিকা: রাদিয়াহ রাফা রুহি

লাইট ব্লু ডেনিম,, কালো শার্ট। চুল গুলোকে পনিটেইল করা । ঠোঁটে গাড়ো গোলাপি রঙের লিপস্টিক।। ব্র্যান্ডের কালো ওয়াচ। চোখে ব্র‍্যান্ডের কালো চশমা। পায়ে দামি স্টীলেটো পরে খটখট আওয়াজ করে নিচে নামছে জিনীয়া।

আজ কে তার বফ ফাহিম শেখ এর সাথে দেখা করতে হবে কালই লন্ডন থেকে এসেছে সে। তখনি রিশিকা জিনীয়া কে দেখে বললো ওয়াও বেবি তোমাকে কি সুন্দর লাগছে বেটা।

জিনীয়াঃ —থ্যাংকস মম। আচ্ছা মম আমাকে যেতে হবে। আমার লেট হয়ে গেছে।
রিশিকাঃ আরে বেটা খাবার খাবে না নাকি খেয়ে যাও।

জীনিয়াঃ অফফহো মম আমার অলরেডি লেট হয়ে গেছে আই হ্যাভ গো নাউ। আমি বাইরে খেয়ে নিবো।

রিশিকাঃ ওকে বেটা তুমি যাও ফাহিমকে আমার সাথে দেখা করতে বলো একদিন।

জীনিয়াঃওকে মম বলে দিবো এখন যায় টাটা মম এই বলে জীনিয়া রিশিকা কে হালকা জড়িয়ে ধরে চলে গেলো।

জীনিয়া লন্ডন থেকেই স্ট্যাডি কমপ্লিট করে এসেছে। জিনীয়ার ফাহিমের সাথে লন্ডনেই পরিচয় হয়

জীনিয়ার যখন দশ বছর বয়স তখন তার বাবা মারা যায় কার এক্সিডেন্টে!
আর তার মা রিশিকা বিয়ে করে ইমরান খানকে।

———————————————————

বাচ্চাটি কেদেই যাচ্ছে খিদেই আর শুভ্র কিছুতেই থামাতে পারছে না বাচ্চাটির কান্না।

শুভ্র বাচ্চা টাকে নিয়ে ভাবছে কি করবে। কারন তার সত্যিই জানা নেই একটা বাচ্চা কে কিভাবে থামাতে হয়।

তখনি তরিঘরি করে একজন মাঝ বয়সি মহিলা ঢুকছে তার কেবিনে আর এসেই বলছে শুভ্র বাচ্চাটি কে?

কোথা থেকে এসেছে বাচ্চাটা।
তুমি কি আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করেছিলে কি হলো বলো??

শুভ্রঃ কি বলবে সে তার মাকে। সে তো নিজেই জানে যে বাচ্চাটা আসলে কে? আর মাকেই বা কে জানালো কথাটা মনে মনে। এখন আমি কি বলবো মা কে।
মা তো আমাকে ভুল বুঝছে— মাকে ম্যানেজ করতে হবে কিছু একটা বলে।

মাআআ,,(মিসেস মোল্লিকা চৌধুরী) আ-স-লে আমতা আমতা করে বলে মা আমি এই বাচ্চাটাকে চিনি না কোথা থেকে এলো কি করে এলো তাও জানি না।

মোল্লিকাঃ দেখো শুভ্র আমাকে মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই সত্যিটা আমি জানি এই বাচ্চাটি যদি তোমাদের না হবে তাহলে এর সাথে তোমার ডিএনএ কিভাবে মিলে যায় বলো আন্সার মি আর আমার বৌমা কে কোথায় রেখেছো বাচ্চার মাকে কোনোদিন বাচ্চায় থাকতে পারে না তুমি জানো না আর তুমি তো আমাকে একবার বলতে পারতে তুমি বিয়ে করছো তাহলে কি আমি মেনে নিতাম না।। আমি নিজেই তো কতো বার জিজ্ঞেস করেছি কোনো মেয়েকে পছন্দ কি না আর এখন বাচ্চার বাবাও হয়ে গেছো আর নিজের বাচ্চাকে অস্বিকার করছো। একদমে কথাগুলো বলে থামলেন মোল্লিকা শুভ্রকে কিছু বলতে না দিয়ে ।।

শুভ্র কিছু বলতে যাবে তখনি বাচ্চাটি আবার কেদে উঠে শুভ্র আর কিচ্ছু বলতে পারলো না।

আর মোল্লিকার চোখ পরলো বাচ্চাটির দিকে এতক্ষন সে খেয়ালই করেনি যে তার ছেলের কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে।

ছেলেকে বকতে গিয়ে সে খেয়াল করে নি। কি নিস্পাপ এই মুখটা! আর বাচ্চাটিও যেনো মোল্লিকাকে দেখে যাচ্ছে যেনো কতো দিনের চেনা মোল্লিকা তার।

একজন খুব চেনা মানুষকে দেখলে যেমন করে —বাচ্চাটি মোল্লিকাকে দেখে কান্না থামিয়ে দিয়েছে।।

মোল্লিকা হাত বাড়িয়ে দেই বাচ্চাটিকে নেওয়ার জন্য। বাচ্চা মেয়েটাও যেনো হাতে চাদ পাওয়ার মতো খুশি হয়ে গেছে।। মোল্লিকা হাত বাড়াতেই বাচ্চাটি প্রায় লাফিয়ে তার কোলে চলে গেলো।

মোল্লিকা বাচ্চাটিকে নিয়ে আদর করতে থাকে অনেক গুলো চুমু খেতে থাকে গালে মুখে কপালে আর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে কারন বাচ্চাটির মুখের সাথে শুভ্রর অনেক মিল।

—শুভ্র তার মাকে দেখে যাচ্ছে যে কিভাবে বাচ্চাটিকে আদর করছে যেনো বাচ্চাটিকে আরও অনেক আগে থেকেই চিনে।

শুভ্র নিরবতা ভেঙে বললো মা বাচ্চাটি বলছিলো অর নাকি খিদে পেয়েছে তুমি অকে কিছু খাওয়াও।।

মোল্লিকাঃকিহ ফিহা কাদছিলো! অস্ফুট সুরে বলে ফেলে।

এই বলেই মোল্লিকা জিব্বাহ কামর দেই এটা কি করে ফেললাম।

শুভ্র যেনো অবাকের সপ্তম আকাশ থেকে পরলো এটা কি বললো মা —সে তার মা কে জিজ্ঞেস করলো মা তুমি কি বললে –ফিহা মানে অকে তুমি চেনো প্রশ্ন করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে —

মোল্লিকাঃ এইরে এখন আমি কি বলবো ফিহাকে পেয়ে আমি ভুলেই গেছিলাম আদর করছিলাম করতেই কি বলে ফেললাম মনে মনে ভাবছে মোল্লিকা।

শুভ্রঃকি হলো মা বলো তুমি কি অকে চেনো
আমার এমন কেনো মনে হচ্ছে তুমি অকে চেনো।

মোল্লিকাঃ না –না আ-আমি অকে কি করে চিনবো ।
আমতা আমতা করে। আসলে অকে আদর করতে করতেই অর একটা নাম ভাবছিলাম যে কি নামে ডাকবো তখনি তুই বললি তাই নাম টা ধরেই ডাকলাম।অকে আমি ফিহা বলেই ডাকবো আর ও আমার কাছেই থাকবে।

শুভ্রর যেনো বিশ্বাস করতে মন চাইছে না কেনো মনে হচ্ছে মা কিছু লুকাচ্ছে আমার থেকে। তারপর শুভ্র বললো–
ওহ আচ্ছা।।

এদিকে মোল্লিকা ভাবছে শুভ্র কিছু সন্দেহ করলো না তো।

মোল্লিকাঃ তুই অকে কি বলে ডাকিস।মানে অর নাম কি?আর অর মা ই বা কোথায়।

শুভ্রঃআমি কি করে জানবো অর নাম কি আমি কি এর আগে অকে কোনদিন দেখেছি।
মোল্লিকাঃআবার মিথ্যা বলছিস।

তখনি ফিহা শুভ্রকে ডেকে উঠলো বাবাআআ।

মোল্লিকাঃ চিনিস না তুই অকে তাই না তাহলে এই মেয়েটি তোকে বাবা কেন বলছে।

শুভ্রঃআমি সত্যিই জানি না মা মেয়েটি আমাকে কেনো বাবা বলছে। আজই আমি মেয়েটাকে দেখি এর আগে কোনোদিন দেখি নি ট্রাস্ট মি মা। অসহায় ভাবে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো– শুভ্র

মোল্লিকাঃওকে ঠিক আছে এখন আমি আমার নাতনিকে নিয়ে যাচ্ছি আমার সাথে আর হ্যাঁ তোমার কাছে এক সপ্তাহ সময় আছে তুমি ফিহার মাকে নিয়ে আসবে মানে আমার বৌমাকে দেখতে চাই ।আর না হলে আর কোনদিন আমার সামনে আসবে না এই বলে দিলাম।এই বলে তিনি গটগট করে চলে গেলো।

শুভ্র পিছন থেকে তার মাকে মা মা বলে ডাকলো আর বললো মা আমি অর মাকে কোথায় পাবো আরে মা আমার কথাটা তো শুনো।

মোল্লিকা শুভ্রর কোনো কথা শুনলো না চলে গেলো।

শুভ্র টেবিলের উপরে জোরে একটা পাঞ্চ করলো আর বললো অহ শিট এখন মাও আমাকে ভুল বুঝছে।

কি করবো আমি কোত্থেকে পাবো বাচ্চার মা কে —-কিচ্ছু ভাবতে পারছি না!

শুভ্র একজন দেহরক্ষীকে বললেন গাড়ি বের করুন আমি বের হবো।

দেহরক্ষী মাথা নাড়লো অকে স্যার এই বলে বের হয়ে গেলো।
শুভ্র গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করে বেরিয়ে পরে।

——————————————————–
নীলা আর প্রাপ্তি ক্লাস শেষ করে বের হচ্ছে।দুজনেই ঠিক করেছে আজ ফুচকা খাবে তাই হেটে হেটে সামনের দিকে যাচ্ছে।

নীলা খেতে চাইছিলো না কারণ তার কাছে বাস ভাড়া ছাড়া আর কোনো টাকা নেই তাই সে না করছিলো কিন্তু প্রাপ্তি নাছর বান্দা কিছুতেই মানতে রাজি না আজকে খেতেই হবে।

প্রাপ্তি নীলাকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। আর নীলার কিচ্ছু করার নেই এই মেয়ে যখন বলেছে খাইয়েই ছারবে। নীলা আর প্রাপ্তি হেটে হেটে ফুচকাওয়ালার কাছে যাচ্ছে।

প্রাপ্তিঃএই তুই কি শুরু করেছিস রে হ্যাঁ তুই কি ভয় পাচ্ছিস তোর অই হিটলার মায়ের কথা ভেবে ভ্রু কুচকে বললো প্রাপ্তি।
নীলাঃ না তা নয় আজকে কি খেতেই হবে অন্য দিন খেলে হতো না।।

প্রাপ্তিঃআজকেই খাবো তোর কি কোনো সমস্যা তুই না খেলে বলে দে খাবি না আমার সাথে এতো ভাবার কি আছে। একটু রেগে😤

নীলাঃআরে এতো রাগ করছিস কেনো। ঠিক আছে খাবো।। চল এই বলে অর হাত ধরে হাটতে লাগলাম।

প্রাপ্তিঃ রাগ করব না ইতি মধ্যে তুই ঠিক কত আর না করেছিস যে খাবি না।

এই বলে আমার থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিলো।

নীলাঃআরে বললাম তো যে খাবো।রাগ করিস না বান্ধুবি প্লিজ।

প্রাপ্তিও হেসে দিলো ঠিক আছে আয় আর ঢং করতে হবে না।


—–এদিকে শুভ্র ফুল স্পিডে গাড়ী চালিয়ে আসছে। আর ভাবতে পারছে না শুভ্র কি থেকে কি হয়ে গেলো মাথা কাজ করছে না তার । কি হচ্ছে তার সাথে এসব —
————_————

নীলা আর প্রাপ্তি ফুচকা খাওয়া শেষ করে দুজনেই হেটে হেটে বাড়ি যাচ্ছে।দুজনের কাছে যা টাকা ছিল সব গুলো দিয়ে ফুচকা খেয়েছে যার জন্য এখন হেটেই যেতে হচ্ছে।।।।।

তাঁর মধ্যেই আকাশ টা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আসছে।।।।নীলা আর প্রাপ্তি দ্রুত হেটে যাচ্ছে।

নীলা রেগে গজগজ করে হেটে যাচ্ছে আর প্রাপ্তি কে বকছে।।।

যাহ বাবা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো এখন
তো নীলা একটা দোকানে দিকে যেতে নিলে প্রাপ্তি নীলার হাত টেনে ধরে,,,,,,,,দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে নীলা আমার জানু চল না বৃষ্টি তে ভিজি।

নীলা যেইনা কিছু বলতে যাবে প্রাপ্তি কোনো কথা না শুনে বৃষ্টি তে ভিজতে শুরু করে।

প্রাপ্তি মুচকি হেসে বলে উঠলো নীলা রাগ করিস না। দেখ না কতো সুন্দর ঝমঝম বৃষ্টি কার না ভালো লাগে আর তুই কি রাগ করছিস

নীলাঃ সব তোর জন্য ফুচকা খেতে না গেলে তো আর না দেরি হতো আর না ভিজতে হতো। এখন ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

আচ্ছা জানু সরি।, এখন তো বৃষ্টি টা উপভোগ কর তারপর দুজনেই ভিজতে থাকে।

চলবে—-