Sunday, June 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1468



তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-৪+৫+৬

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৪

কিছুক্ষনের মধ্যে দুজনে ই প্রিন্সিপালের রুমে গেলো।

মিহি সামনে তাকাতে ই দেখে সব টিচাররা মিহি আর অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে পাশে হাত বেন্ডেজ করা অবস্থা ইমরান দাড়িয়ে আছে।

—অভ্র তুমি ইমরানকে মেরেছো কেনো। আমি জানতাম তুমি খুব ভালো স্টুডেন্ট,এতোটা অভদ্রতা পরিচয় দিবে ভাবতে পারিনি।

— সরি স্যরি কিন্তু অ মিহিকে মারতে গিয়েছিলে।

–কেনো মিহিকে মারতে যাবে কেনো।

–মিহি..

–জ্বি স্যার

–তোমাকে কী ইমরান মারতে গিয়েছিলো।

—……..

–কথা বলছো না কেনো।

মিহি মাথা নিচু করে উওর দিলো

–না স্যার
এতে অভ্রের বেশ রাগ হলো। মিথ্যেটা কেনো বললো।
রাগে দুটো চোখ রক্তবর্ণ ধারন করে আছে।

–অভ্র ওয়ার্নিং দিলাম নেক্সট টাইম এমন কিছু হলে তোমাকে টি. সি দেওয়া হবে।

অভ্র আর কিছু বললো না সোজা প্রিন্সিপালের রুম থেকে বরে হয়ে বাইক নিয়ে সর্বোচ্চ স্পিডে চালানো শুরু করলো।

মিহি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে বারান্দায়। মিথ্যে বলে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে কিন্তু মিহির তো কিছু করার ছিলো না। এখন যদি সত্যি টা বলে দিতো তাহলে সবার সামনে চলে আসতো একটা চরিত্রহীন ছেলেকে মিহি ভালোবাসতো।

–মিহি মা চলো তোমাদের বাসায় যাবো আজ।

রেহনুমা ম্যাম এর কথায় কল্পনা ছেড়ে বাস্তবে ফিরলো।
মিহি খুশি হয়ে উওর দিলো,

–চলুন ম্যাম।

রেহনুমা ম্যাম মিহিকে বাসায় দিয়ে আসার কারণ আছে। জানে অভ্র রাস্তায় মিহির সাথে খারাপ আচরণ করতে পারে কারন মিহির কারনে আজকে অভ্রকে সবার সামনে ছোট হতে হলো। শুধু যে অভ্র ছোট হয়েছে তা কিন্তু নয় রেহনুমা ম্যামকে ও বেশ কথা শোনিয়েছে প্রিন্সিপাল।

রেহনুমা ম্যাম আর মিহি বেশ গল্প করতে করতে ই বাসায় গিয়ে পৌছে। বাসার সামনে যেতে ই রেহনুমা ম্যাম বলে উঠলো,

–এখন তুমি বাসায় যাও। তুমি বাসায় ডুকলে আমি বাসায় চলে যাবো।

–কেনো ম্যাম

–আজকে বাসায় যাবো না অন্য একদিন। নিজের খেয়াল রেখো।

–না ম্যাম আপনাকে যেতে ই হবে।

মিহি অনেক রিকুয়েষ্ট করে রেহনুমা ম্যামকে ভিতরে নিয়ে গেলো।

রেহনুমা ম্যাম মিহির বাবা মা কে সালাম দেয় এবং কেমন আছে তা জিজ্ঞেস করে। সোফায় উনারা বসে গল্প করছে মিনতি মুহূর্তে মধ্যে ই নাস্তা রেডি করে দেয়।

রেহনুমা ম্যাম মিনতির দিকে একদৃষ্টিতে কতোক্ষন তাকিয়ে থাকে মনে মনে বলে,
দুবোনকে ই আল্লাহ সৌন্দর্যতে ডুবিয়ে দিয়েছে।

–আচ্ছা তাহলে এবার উঠি অন্য দিন কথা হবে।

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রেহনুমা ম্যাম চলে গেলেন।

মিহি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে ক্লান্ত লাগছে খুব। বিছানায় শুয়ে পড়তে ই ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।

________________________

—মিহি সকাল সাড়ে নয়টা বাজে উঠ, কলেজ যাবি না।

মিহি ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে বললো,

–আম্মু মিথ্যা বলো না তো।

–কে মিথ্যা বলে। উঠে তো দেখ।

–আম্মু যাও তো ঘুমাতে দেও রোজ রোজ মিথ্যে বলে ঘুম থেকে উঠাও তুমি।

এবার মিহির আম্মু রেগে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর মিহি চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখে নয়টা পয়তাল্লিশ বাজে। মিহি দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে কোনো রকম নাস্তা করে বাহিরে বের হতে হতে দশটা দশ বেজে গিয়েছে। সাড়ে দশটা থেকে ক্লাস বাসা থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় অনেকটুকু ই যেতে ত্রিশ মিনিটের মতো লাগে।

কিন্তু আজকে কী হলো একটা গাড়ি ও তো পাচ্ছি না।

—গাড়ি পাবে না উঠে এসো।

পিছনে ফিরে তাকাতে ই দেখলাম অভ্র শয়তানের নানা।

–যাবো না।

–আজকে গাড়ি পাবে না বল্লাম তো। ফার্স্ট ক্লাসে যে এক্সাম আছে তা কিন্তু দিতে পারবে না।

–আপনার কথা ই হবে নাকি, যাবো না আমি আপনার সাথে।

–আমি সব গাড়িকে নিষেধ করে দিয়েছি আগামী দুইঘন্টা ই রাস্তায় কোনো গাড়ি আসবে না। তাদের দু-ঘন্টা ভাড়া আমি দিয়ে দিবো।

–ইসসস কী আমার বিল গেইটস।

–এর অপেক্ষা ই আছি, এতো টাকা থাকলে তো তোমাকে বিয়ে ই করে ফেলি।

–আপনার এই বাকা খোমা দেখে কে বিয়ে করবে আপনাকে।

–এই কার বাকা খোমা(মুখ), তুৃমি জানো আমার পিছনে কতো মেয়ে ঘুরে।

–তাই তো বলি আপনাকে দেখতে পাবলিক টয়লেট এর মতো লাগে কেনো।

–মিহি।

–আমার কানে প্রবলেম আস্তে বলুন।

–ভয়রা, যাবে নাকি ক্লাস মিস দিবে।

মিহি এক্সাম এর কথা ভেবে উঠলো বাইকে।

–ধরো না কেনো পড়ে যাবা তো।

–পড়লে আপনার কী।

–বাইক থেকে পড়ে যেতে রাজি আছো তাও তুমি আমাকে ধরতে পারবা না।

–না।

–ওকে স্টার্ট দিলাম কিন্তু।

–কেনো বাইক স্টার্ট দিতে এখন আপনাকে দাওয়াত দিতে হবে নাকি।

–ওকে।

মিহি অভ্রকে না ধরে ই বসেছে। কী একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব পুরো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে।

অভ্র বাইক স্টার্ট দিয়ে স্পিড বাড়াতে ই মিহি ভয়ে অভ্রকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসেছে।

–আস্তে চালান এতো জোড়ে চালালে পড়ে যাবো তো।

অভ্র এতো স্পিড আর বাতাসে কারনে গাড়ি চালাচ্ছে মিহির কথা কানে যাচ্ছে না। অভ্র মিহির কথা শোনছে না বলে অভ্রের কানের কাছে গিয়ে বলতে গেলো

–আস্তে চালান পড়ে যাবো।ভয় পাচ্ছি।

প্রতিটি কথা অভ্রে কানকে বার বার মিহির ঠোট জোড়া স্পর্শ করেছে।মিহি অবশ্য বুঝতে পারেনি এমন হবে।
অভ্র সাথে সাথে বাইক থামিয়ে দেয়। শরিরে কী এক শিহরণ বয়ে গেছে। প্রথম কোনো মেয়ের এভাবে স্পর্শ করা।

—আস্তে চালাতে বললাম, থামিয়ে দিলেন কেনো।

অভ্র মিহির দিকে একনজর তাকিয়ে আবার বাইক স্টার্ট দেয়।
ঠিক সময় মতো পৌছে যায় মিহি।

–স্পিডে চালাম বলে ই ঠিক সময় মতো আসতে পারলে।

মিহি কোনো কথা না বলে ই চলে গেলো।

__________________

রাতের বেলা,

মিহি সোফায় বসে বসে পড়ছিলো।

–রুমে বসে পড় এখানে পড়লে পড়া মুখস্ত হবে না।

–রুমে একা একা ভালো লাগে না মা।

হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ আসলো,

–যা দরজা খুলে দিয়ে আস।

–আমাকে শুধু কাজ দেও।

–চোখের সামনে থাকলে কাজ দিবো ই,

মিহি বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলে দেখে অভ্র। মিহির ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে বাসায় বাবা সহ সবাই আছে কী বলতে বসলো অভ্র। আবার কোন বিপদ আসছ….

চলবে

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৫

মিহি বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলে দেখে অভ্র। মিহির ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে বাসায় বাবা সহ সবাই আছে কী বলতে বসলো অভ্র। আবার কোন বিপদ আসছ।

–ভেতরে যেতে দিবে না নাকি।

–কেনো এসেছেন আপনি।

–তোমাকে নিয়ে যেতে।

কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি দরজা অফ করে দেয়। অভ্র মেকি হাসি দিয়ে আবার কলিং বেল বাজানো শুরু করে।

–মিহি কী হয়েছে দরজা খুলছিস না কেনো।

–মা ডাকাত এসেছে মনে হয় এইজন্য দরজা খুলতে ভয় লাগে।

–বেদ্দপ মেয়ে দরজা খুলে তো দেখ। তুই খুলতে ভয় পেলে তোর বাবাকে ডাক।

–না আম্মু আমি ই খুলছি।

অভ্র কলিং বেল বাজাতে ই চলছে।

–এই আপনি এতো অভদ্র কেনো।

–তাতে তোমার কী।

–যান এইখান থেকে।

–তোমাকে না নিয়ে যাবো না।

হঠাৎ মিহির মা বলে উঠলো,

–এই তুই কার সাথে এতো কথা বলছিস রে।

–বললাম তো মা ডাকাত এসেছে।

–হে মাকে বলো ডাকাত এসেছে তোমার ছোট মেয়ের মন চুড়ি করতে। (অভ্র)

–লজ্জা থাকলে আর কলিং বেল বাজাবেন না।

–কাপড় তো পড়ে ই আসছি।

–ইচ্ছে হলে খুলে ফেলুন।

কথাটা বলে ই মিহি আবার দরজা বন্ধ করে দিলো।
এবার অভ্র কলিং বেল বাজাচ্ছে দরজা ও ধাক্কাচ্ছে।

মিহির মা এবার এসে মিহিকে সরিয়ে দরজা খুলে দিলো।

দরজা খুলতে ই দেখে রেহনুমা ম্যাম সাথে দুইটা ছেলে।

মিহির মা হাসি মুখে ভেতরে ডুকতে বললেন। মিহি হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এ কী হলো। উনারা ই বা কেনো আসলেন।
সাথে অনেকগুলো মিষ্টি ফল মিহির জন্য চকলেট। সবগুলো মিহির হাতে দিতে ই মিহি ভেতরে নিয়ে যায়।

মিহির মা সবাইকে নাস্তা দিয়েছে।

মিহির মা বাবা, রেহনুমা ম্যাম, অভ্র, তিব্র সবাি এক সাথে বসে বিভিন্ন গল্প করছে।

—ভাইজান আসল কথাটা বলে ই ফেলি(রেহনুমা)

–কী আসল কথা আপা(মিহির বাবা)

-এই হলো আমার ছেলে তীব্র,পাশেরটা ছোট ছেলে অভ্র। আপনার বড় মেয়েকে আমার বড় ছেলের জন্য দিতে হবে।আপনি কী বলেন।

—আলহামদুলিল্লাহ, এটা তো খুশির খবর।

–জ্বি ভাইজান এখন মেয়েকে নিয়ে আসেন আমরা দেখি।

–জ্বি আপা আপনারা বসেন আমি এখন ই মেয়েকে নিয়ে আসছি।

___________

মিহি বসে বসে চকলেট খাচ্ছে। মিনতি পাশে ই বসে আছে।মিহির মা দ্রুত রুমে ডুকে বলে,

–মিনতি রেডি হয়েনে তো।

মিহি চকলেট খেতে খেতে বলে,

–রাতের বেলা করে কী নানুর বাসায় যাবে আম্মু। আমি চকলেট খেয়ে রেডি হচ্ছে ওয়েট করো।

–তুই রেডি হবি কেনো আর কীসের নানুর বাসা।

–তাহলে তুমি মিনতিকে রেডি হতে বললে কেনো।

–তোর রেহনুমা ম্যাম এর বড় ছেলে তীব্রের জন্য মিনতির বিয়ের কথা বলতে এসেছে।

মিহি চকলেট খাওয়া অফ করে মিটমিট করে তাকিয়ে আছে। এ কী শোনলাম।

মা মিনতিকে রেডি করে দিচ্ছে। মিহি শুধু ভাবছে এটা কী হচ্ছে।

মিনতিকে নিয়ে গেলে। মিহি একা রুমে বসে আছে হাতে ফোন। অভ্র মেসেজ করেছে। মিহি কোনো উওর দেয়নি।

মিনতির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তীব্র, অভ্র এ অবস্থা দেখে পায়ে জোরে আঘাত করে।এতে তীব্রের ঘোর কাটলো।
তীব্র অভ্রের দিকে রাগি চোখে তাকাতে ই অভ্র বললো,

–সবার সামনে ই শুভদৃষ্টি সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস নাকি।

–চুপ কর তুই।

–মুরব্বিরা আছে একটু বুঝে শোনে তাকাস।

দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা বলতে বলতে মিনতি ভেতরে চলে গেলো।

–এই যা চলে গেলো।(তীব্র)

— তুই ও যা সাথে।

–ভাই একটা কাজ করে দে।

–কী বল।

–ওর সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দে আলাদা।

অভ্র বড় বড় চোখ করে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছে।

–দে না প্লিজ।

–আচ্ছা ওয়েট মাকে বলে দেখি।

–তুই পারবি আমি জানি।

–মা বলছিলাম কী ভাইয়া আর মিনতি আপুকে একটু কথা বলতে দেওয়া হক।(অভ্র)

–হে তাও ঠিক।

রেহনুমা মিহির বাবা সাইফুল সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলেন ভাইজান আপনি কী বলেন।

–এখনকার যে রীতি মানে। তাদের ও তো দুজনের কথা থাকতে পারে তাই না।যাও বাবা কথা বলে এসো।

____________________________
মিনতি মিহির হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। অভ্র আর তীব্র বিছানায় বসে আছে। তীব্র অভ্রের দিকে কিছুটা ঝোঁকে বললো,

–তোরা দুইজন থাকলে কিভাবে কথা বলবো।

–কী নিয়ম রে ভাই খাইতে দিলে ঘুমাইতে চাস। সব কিছু রেডি করে দিলাম আমি এখন আমি থাকলে তোর সমস্যা।

–তুই একা না সাথে ওর বোন ও আছে।

অভ্র উঠে গিয়ে বিনা বাক্যে মিহির হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে মিহি মিনতির হাত জোর করে ধরে রাখে।

–ভাবি আপনারা কথা বলুন তো আমি আর মিহি এখনে আপনাদের ডিস্টার্ব করতে চাই না।

–আমার বোন একা থাকবে না।

–তুমি বললে ই হলো নাকি। একা কথা বলতে দেও।

–আপনি চলে জান।

–কথা না শোনলে কিন্তু অন্য ব্যবস্থা করবো।

–কী করবেন আপনি।

অভ্র মিহির কাছের কাছে এসে বললো,

–কোলে তোলে নিয়ে যাবো।

কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি হাত ছাড়িয়ে নিলো।

অভ্র হাসি মুখে মিহিকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।৩৩

দরজাটা হালকা চাপিয়ে অভ্র মিহি দুজন ই বাহিরে দাড়িয়ে আছে। মিহি একটু পর পর দরজায় কান পাতে কী বলে শোনার জন্য।

–এই তুমি ওদের কথা শোনো কেনো।

–আপনার ইচ্ছে হলে আপনি ও শোনতে পারেন।

অভ্র দেওয়ালের একসাইডে সুন্দর করে দাড়িয়ে ছিলো।
মিহিকে এক হাত ধরে টান দিয়ে একবারে অভ্রের খুব কাছে নিয়ে আসে। মিহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
মিহির চোখ বন্ধ দেখি অভ্র হালকা ফু দেয় মুখের উপর এতে মিহি চোখ খুলে তাকায়।
অবাধ্য চুলগুলো সরিয়ে কানের সাইডে দিয়ে অভ্র মিহির কানের কাছে গিয়ে বললো,

–তীব্র আর মিনতি আপুর সাথে যদি তোমার আর আমার বিয়ে হয় তাহলে কেমন হবে টিয়াপাখি……

চলবে

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৬

তীব্র আর মিনতি আপুর সাথে যদি তোমার আর আমার বিয়ে হয় তাহলে কেমন হবে টিয়াপাখি।

অভ্রের প্রতিটি কথায় মিহির ভেতর শিহরণ সৃষ্টি করছে। এরকম কাছে আসাটা মিহি নিতে পরছে না। জোরে ধাক্কা দিয়ে অভ্রকে সরিয়ে দিয়ে মিহি রুমে ডুকে যায়।
মিহি রুমে ডুকতে ই তীব্র ভয় পেয়ে যায়। মনে হচ্ছে মিহির রুমে ডুকাটা আশা করেনি। মিহি হাত আগের ন্যায় শক্ত করে ধরে আছে মিনতি।

–অনেক কথা বলা হইছো এখন চল বাকি কথা বিয়ের পর(মিহি)

তীব্র লজ্জায় কোনো কথা ই বলছে না।

———————–

বাসায় আসা পর,
রেহনুমা আহমেদ ঘুমাতে চলে গেলেন। অভ্র ফ্রেশ হয়ে বের হলো। তীব্র অভ্রের সাথে কথা বলছে না তা দেখে অভ্র জিজ্ঞেস করলো,

–কী হলো ভাই কথা বলছিস না কেনো।

–আচ্ছা আমাকে বল তো ঐ টাইমে ওর বোন রুমে ডুকলো কীভাবে।

— কেনো তোদের বাসর রাত ছিলো নাকি যে রুমে ডুকা যাবে না।কী শুরু করেছিস, আর কী জীবনে কথা বলতে পারবি না নাকি।

–মিনতির নম্বরটা ও আনতে পারিনি। আনলে তো এখন কথা বলতাম।

–ওয়েট আমি ম্যানেজ করে দিচ্ছি।

–তুই কীভাবে মিনতির নম্বর পাবি(তীব্র)

–ভাবির বোন মিহির কাছ থেকে।

–আরে বাহ্ তোর গতি তো দেখছি 5G আমি যা পারলাম না তুই তা করে আসলি।

(তোর মিনতির সাথে বিয়ের কথা বলার আগে থেকে মিহিকে আমি ভালোবাসি) কথাটা মনে মনে বললো অভ্র।তাও তীব্র যেনো না বুঝতে পারে তার জন্য বললো,

–হলো তো যার জন্য চুরি করি সে ই বললো চোর। তোর জন্য ই তো মিহির নম্বরটা নিলাম যেনো তুই ভাবির সাথে কথা বলতে পারিস।

তীব্র আর কিছু বললো না। অভ্র বারান্দায় গিয়ে মিহির নম্বরে কল দিলো,

মিহি কল না দেখে ই রিসিভ করলো,

–জানপাখি কী করো,

–সরি রং নম্বর
কথাটা বলে ই মিহি কল কেটে দিলো।

অভ্র আবার কল দিলো। অভ্র বুঝতে পেরে মিহি আর কল রিসিভ করলো না।
অভ্র বেশকিছুক্ষন কল দেওয়ার পর একটা মেসেজ পাঠালো,

–এখন যদি কল না ধরো তাহলে কালকে তোমার বাসায় গিয়ে বলবো তুমি আমাকে ভালোবাসো বিয়ে করতে চাও।

মেসেজটা দেখার পর সাথে সাথে কল রিসিভ করলো মিহি,

–টিয়াপাখি।

— আমি টিয়াপাখি না।

–হুম আমার জান।

–এইজন্য ই বললাম রং নম্বর।

–হে হয়েছে ভেবো না তোমার সাথে কথা বলার জন্য কল দিয়েছি। মিনতি আপুর সাথে কথা বলবো দেও।

মিহি আর কোনো কথা না বলে মিনতিকে ফোনটা দিতে গেলো।

–আমি ফোন দিয়ে কী করবো।

–কথা বলে দেখ।

মিনতিকে ফোন দিয়ে চলে আসলো। রুমে এসে নিশ্চিতে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।

___________________

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে দাতে নখ কাটতে কাটতে সোফায় বসে আছে মিহি। প্রবলেম একটা ই মিহিট ক্ষুধা লেগেছে কিন্তু মিহির আম্মু কাজ করতেছে খাওয়ানের সময়টুকু তার কাছে নেই। অনেক কাজ যে আজকে অভ্রদের বাসা থেকে সব মুরুব্বীরা আসবে ডেট ফিক্সড করতে।

মিহির হাতে খেতে একদম ভালো লাগে না তাই আর খাওয়া ও হলো না।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, অভ্রদের বাসা থেকে সবাই চলে এসেছে। মিনতিকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছে মিহি।

অভ্র আসার পর থেকেই দুচোখে শুধু তার ভালোবাসাকে খুজতেছে কিন্তু কোথাও খুজে পাচ্ছে না। বার বার ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করবে তা ই খুজে পাচ্ছে না। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করলে মিনতিকে নিয়ে আসা হলো। এই সুযোগে অভ্র মিহিকে খুজতে গেলো। মিহির মা সামনে পড়তে ই সকল লজ্জা ত্যাগ করে জিজ্ঞেস করলো,

–আন্টি সবাইকে দেখলাম মিহিকে তো দেখি নাই। উনি কী অসুস্থ।

–না বাবা। আসলে সকালে কাজের জামেলার জন্য মিহিকে খাইয়ে দিতে পারিনি। তাই এখন ও না খেয়ে বসে আছে রুম থেকে ও বের হয় না। বড্ড রাগি মেয়ে আমার জামেলা শেষ হলে আমার কলিজারটার রাগ ভাঙ্গাতে হবে।(মিহির মা)

–আন্টি আমাকে খাবার দিন আমি দিয়ে আসি।

–খাবে না বাবা।

–আমি চেষ্টা করে দেখি। আপনি খাবার রেডি করে দেন।

মিহির মা কিছু একটা ভেবে অভ্রকে খাবারের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

–পাশের রুমে আছে দেখো খায় কি না।

অভ্র খাবারের প্লেট নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে বললো,

–আসতে পারি ম্যাম

–না।

–তুমি না করলে ই আমি শোনবো।

–তাহলে প্রথমে ডুকে যেতে অনুমতি নিতে গেলেন কেনো।

–আমার ইচ্ছে তাই।

মিহি অভ্রের কথা শোনে আরো রেগে গেলো।

অভ্র টি টেবিল এর উপর খাবার প্লেটটা রেখে মিহির সামনে চেয়ার টেনে বসে বললো,

–আচ্ছা বলো টিয়াপাখি তুমি কী নিজ হাতে খাবে নাকি আমি খাইয়ে দিবো।

–আমি খাবো না।

–ওকে খাবো না মানে হচ্ছে আপনি খাইয়ে দেন।

–আমি এটা কখন বললাম।

–তাহলে নিজ হাতে খাও নয়তো আমি খাইয়ে দিবো।

মিহি একরাশ বিরক্ত নিয়ে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো।

অভ্র বিরক্ত না করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে বলে গেলো আবার দেখতে আসবে খেয়েছো কি না।

মিনতিকে দেখে সবার ই পছন্দ হয়েছে। তাই তারা বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে আগামী শুক্রবার।

মিহি শুনে লাফালাফি শুরু করে দেয় একমাত্র বোনে বিয়ে। কতো মজা শপিং করা,হলুদ,মেহেদি, বিয়ে, বৌভাত ওফফ ভাবতে ই কতো আনন্দ লাগছে। অভ্র দূর থেকে দাড়িয়ে দেখছে আর হাসতেছে।

___________

রাতে ঘুমের মধ্যে ই মিহির শরীরের কেউ কোথাও আটকে রেখে এমন মনে হচ্ছে। মিহি ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। মিহি কথা বলতে পারছে না মুখ বাধা, হাত পা ও বাধা মিহি এমন অবস্থায় চিৎকার ও দিতে পারছে না। চোখ দিয়ে শুধু অনবরত পানি পড়ছে….

চলবে

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-২+৩

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২

–কালকে আমি হাতে চুমু খেয়েছি তাই হাত বিমবার দিয়ে ধুয়েছো। আজকে যদি অন্য কোথাও দেই তাহলে তো ধুতে গিয়ে খেতে হবে।

কথাটার মানে বুঝতে পেরে মিহি ভয় পেয়ে যায়।

অভ্র আস্তে আস্তে মিহির দিকে আসতে থাকে। মিহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।

–অভ্র…

কারো বজ্রকন্ঠ শোনে মিহি ও চোখ ফুলে ফেলে অভ্র ও পেছনে ঘুরে তাকায়। পেছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখে অভ্রের মা রেহনুমা অাহমেদ এই কলেজের ইংরেজি টিচার।

–তুমি মেয়েদের বিরক্ত করছো কেনো।এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোমাকে, এতো অবক্ষয় হয়েছে তোমার। মিহি মা চলো আমার সাথে

এই বলে মিহিকে নিয়ে কলেজে প্রবেশ করে রেহনুমা আহমেদ।

অভ্র মিহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

–মা আমি কাউকে তো ডিস্টার্ব করি না শুধু মিহিকে ছাড়া।

মনে মনে কথাটা বলে বাইক নিয়ে চলে গেলো অভ্র।

——————————-

–তুমি কী কলেজে নতুন এসেছো।

–জ্বি ম্যাম নতুন বলতে একমাস তো হয়ে ই গেছে।

–ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার?

–জ্বি ম্যাম। গ্রুপ সাইন্স।

–তাহলে আমার ক্লাস আছে তোমাদের। এতোদিন ছুটিতে ছিলাম। আচ্ছা আসি আমি ক্লাসে দেখা হবে। আমার ছেলেকে ক্ষমা করো মা ও একটু এমন ই।

এটুকু বলে ই রেহনুমা আহমেদ চলে গেলো। মিহি ওর তার ক্লাসের চলে গেলো।

মিহি এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। বড় বোন মিনতি অনার্স শেষ করেছে। এখন আপাতত কিছু ই করে না। অভ্র, ইমরান অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। ইমরানের সাথে অবশ্য ই একবছর আগে থেকে পরিচয়। কিন্তু ইমরানের মিহিকে দেওয়ার মতো সময়ের বড় অভাব এতে মিহি অভাস হয়ে গিয়েছে কিন্তু মনের ভেতর লুকোনো অনেক অনুভুতি আছে ইমরানকে নিয়ে।

ক্লাসের ঘন্টা পরতে ই ক্লাসে মনোযোগ দিলো মিহি।

_______________________

টিফিন টাইম হতে ই মিহি রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইমরান আসার কথা ছিলো কিন্তু আসেনি। হয়তো আবার কোনো কাজ নিয়ে ব্যসত হয়ে আছে।

–কী এতো ভাবছো টিয়াপাখি

অভ্রকে দেখে ই চলে যেতে নিলে অভ্র মিহির সামনে এসে দাড়ালো।

–সমস্যা কী তোমার, আমাকে দেখলে ই পালাতে ইচ্ছে হয় নাকি।

–আপনার সমস্যা কী। আপনি সামনে আসেন কেনো।

–ভালোবাসি
“” তুমি আমার ভালোবাসা
স্বপ্নের কাছে আসা
অন্ধকার মিলিয়ে যাওয়া আবেগ
দূর থেকে স্পর্শ করা অনুভূতি
হয়তো নিশ্চিত জীবন সঙ্গী”

–হয়েছে এখন আমাকে যেতে দিন।

–হয়নি হবে একদিন তোমার মতো মিষ্টি একটা বেবি।

ছিঃ আপনি একটা অসভ্য। এটা বলে ই মিহি চলে আসতে নিলে
ই দেখলো রেহনুমা ম্যাম এর সাথে মিহির বাবা কথা বলছে। এটা দেখে মিহি হা করে তাকিয়ে আছে। ম্যাম এর সাথে বাবা আবার কী বলছে। মিহিকে দেখে ই সাইফুল সাহেব কথা শেষ করে মিহির দিকে আসে।

–বাবা তুমি কলেজে।

–ম্যাম এর সাথে কথা বললাম, আজকে বিকেল থেকে ম্যাম এর বাসায় প্রাইভেট পড়তে যাবি।

–আজকে থেকে ই।

–হে।

–বাবা তুমি অন্য কাউকে দেখলে না, এই ম্যাম এর কাছে কেনো।

–তোর সমস্যা কী।

–কিছু না বাবা।

–তাহলে আমি যাই। তুই প্রাইভেট পড়ে সাবধানে বাসায় ফিরিস।

আমি মাথা নাড়ালাম। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে ই সন্ধ্যা হয়। রেহনুমা ম্যামদের বাসা মানে অভ্রদের বাসা। এটা কেনো হলো। অভ্র তো এমনি আমাকে শান্তিতে থাকতে দেয়না তারউপর ওদের বাসায় গেলো তো আমার অবস্থা কী হবে ভাবতে ই আমার কান্না পাচ্ছে।

আল্লাহ বাচাও আমাকে।

হঠাৎ নীরা এসে জিজ্ঞেস করলো কী হলো বান্ধবী কী এতো ভাবছিস।

–বাবা প্রাইভেট ঠিক করে গিয়েছে ইংরেজি।

–প্রাইভেট না পড়লে তো তুই ইংরেজিতে ডাব্বা ও মারতে পারিস তাই চাচা আগে থেকে ই সতর্ক হচ্ছে।

–থাপ্পড় খাবি, আমি ডাব্বা মারলে তো তুই ও মারবি আমি যদি আমার খাতায় ক লিখি তুই তো আমার কাছ থেকে দেখে সেই ক টা ই খাতায় লিখিস।

–আস্তে বল মানুষ শুনবে।

–ইসসস কী লজ্জা।

–তুমি লজ্জা ছাড়া নাকি

সামনে তাকাতে ই দেখে নাহিদ।

–আবার আপনি আমার সামনে আসছেন।কালকে আপনার জন্য আমি থাপ্পড় খাইছি।

–যান, আপনি আমার সামনে থেকে।

–মিহি আমার কথাটা তো শোনো।

–আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।

–তো কী হইছে, আমরা বন্ধু তো হতে পারি।

–প্রথমে বন্ধু পরে অন্য কিছু জানি আমি দূর হন এখান থেকে।

একটু রাগ দেখাতে ই নাহিদ চলে গেলো। মিহি এবার নীরাকে নিয়ে ক্লাসরুমে চলে গেলো।

–তুই যার জন্য সবাই কে ফিরিয়ে দিস সে কী সত্যি তোকে ভালোবাসে।

–ইমরানকে নিয়ে কোনো কথা বলিস না প্লিজ। ইমরান ব্যস্ত থাকে তাই আমাকে সময় দিতে পারে না।

–তোর লাইফ তুই ই ভালো জানিস।

বলে ই নীরা চুপ হয়ে গেলো, জানে মিহিকে এখন শত বুঝালে ও ইমরানকে ভুল বুঝবেনে কারণ আবেগের মোহতে পড়ে আছে মিহি। তাই অযথা সময়টা নষ্ট করলো না। ক্লাসে মন দিলো।

______________________________

ক্লাস শেষে একরাশ ভয় নিয়ে বের হলো। যদি অভ্র সামনে পড়ে তাহলে তো শেষ। একটা রিকশা নিলো ঠিকানা অনুযায়ী বাসার সামনে গেলো।
বাসার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল চাপতে ই একজন কাজের লোক এসে দরজা খুলে দিলো

–ম্যাম বাসায় নেই, আপনি বসেন। আমি একটু বাগানে যাচ্ছি

বলে ই কাজের লোজটা চলে গেলো।

সোফায় গিয়ে বসার সাথে সাথে ই রুমের ভেতর থেকে কেউ একজন মা মা বলে চিল্লাতে থেকে।

মিহি বেশ কিছুক্ষন এই ডাক শোনে ও কোনো উওর দেয়নি। কিন্তু এবার আর সহ্য হচ্ছে না কানের পর্দা মনে হয় ফেটে যাচ্ছে তাই মিহি বিরক্ত হয়ে নিজে ই যে দিক থেকে শব্দ আসছে ঐদিকে যেয়ে রুমের বাহির থেকে ই বলে।।

–ম্যাম বাসায় নেই।

হয়তো মিহির কথা শোনেনি আবার ডাকা শুরু করলো,

এবার মিহি রুমে ডুকতে গেলো অভ্র ও বের হতে গেলো দুজনের ই ধাক্কা লেগে অভ্রের উপরে পরে।
রেহনুমা ম্যাম বাসায় এসে অভ্র বলে ডাকতেছে। মনে হচ্ছে অভ্রের রুমের দিকে ই আসছে।
মিহি ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ও অভ্র ছাড়ছে না….

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩

এবার মিহি রুমে ডুকতে গেলো অভ্র ও বের হতে গেলো দুজনের ই ধাক্কা লেগে অভ্রের উপরে পরে।
রেহনুমা ম্যাম বাসায় এসে অভ্র বলে ডাকতেছে। মনে হচ্ছে অভ্রের রুমের দিকে ই আসছে।
মিহি ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ও অভ্র ছাড়ছে না.

মিহি কান্না করে দেওয়ার অবস্থা দেখে অভ্র ছেড়ে দেয়। মিহি দ্রুত উঠে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুম থেকে বের হয়ে সোফায় গিয়ে বসে রেহনুমা ম্যাম মনে হয় ফ্রেশ হতে গেছে নয়তো আজকে রক্ষা ছিলো না।

কিছুক্ষনের মধ্যে ই ম্যাম চলে আসে।

–সরি আমার একটু লেইট হয়ে গেছে।

–ইটস ওকে ম্যাম।

–তুমি কী অসুস্থ।

–না ম্যাম

–তাহলে এমন দেখাচ্ছে কেনো। অসুস্থ হলে আজকে বাসায় চলে যেতে পারো।

–না ম্যাম আমি ঠিক আছি।

ম্যাম আর কিছু না বলে পড়ানো শুরু করলো।

পড়ানো শেষ হওয়ার পর আমি বাসা থেকে বের হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এর মধ্যে ই অভ্র হনুমানটা বাইক নিয়ে হাজির।

—উঠে বসো।

–নাহ্।

–উঠে বসতে বলছি।

জোরে দমক দিয়ে বললো,

–এভাবে কেনো বলেন আমি ভয় পাই না।

–ওকে, টিয়াপাখি ওঠে বসো।

–যাবো না।

–তুই যে আমার কথা শোনিস না এই জন্য ই মেজাজ খারাপ হয়।

–আমি আপনার বিয়ে করা বউ নাকি আমি আপনার কথা কেনো শোনবো।

–আর একদিন যদি এই কথা বলছো একেবারে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।

এর মধ্যে ই একটা রিক্সা চলে আসে। মিহি বিনা বাক্যে রিক্সাতে গিয়ে বসে। অভ্র আর ডিস্টার্ব না করে বাইক নিয়ে মিহির রিক্সার পিছনে পিছনে যেতে থাকে।

মিহি একেবারের জন্য ও পিছনে তাকায় না।

__________________________

পরের দিন কলেজে যেতে ই নীরা দৌড়ে এসে বললো,

–মিহি চল।

–আরে এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো।কী হয়েছে।

–আগে চল পরে সব বলবো।

–যাবো না আমি ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।

–মিহি তোর দুইটা পায়ে পড়ি চল না প্লিজ।

এমন করে নীরা রিকুয়েষ্ট করায় মিহি নীরার সাথে গেলো।একপ্রকার দৌড়ে ই গেলো মনে হলো,
গিয়ে যা দেখলো এতে মিহি জ্ঞান হারানোর অবস্থা। ইমরান খুব আপত্তি কর অবস্থায় একটা মেয়ের সাথে।

মিহি এ দৃশ্য দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। ইমরান বলে জোরে চিৎকার দিতে ই ইমরান পিছনে তাকিয়ে দেখে মিহি।

–মিহি তুমি এখানে,

–আশা করোনি তো।

–সরি মিহি আমাকে ভুল বুঝো না।

কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি সজোরে একটা থাপ্পড় মারে ইমরানকে।
ইমরানের গায়ে হাত তুলায় ইমরান ও মিহিকে থাপ্পড় মারতে গেলে অভ্র এসে ইমরানকে লাথি মারে। লাথি এতোটা ই জোরে লাগে ছিটকে গিয়ে দেওয়ালের সাইডে পড়ে। অভ্র ইমরানের কলারে গিয়ে চেপে ধরে বলে,

–তোর সাহস কম না আমার জানের গায়ে হাত তুলতে যাস। তোর জীবন আজকে ই ইতি ঘটবে।এতোদিন কিছু বলি কারণ মিহি তোকে ভালোবাসতো এটাকে ভালোবাসা কী করে বলি তোর ক্ষনিকের মোহতে পড়ে ছিলো।

হঠাৎ নীরা জোরে চিৎকার করে অভ্র ভাইয়া। মিহি কী হয়েছে দেখেন না মিহি তো চোখ খুলছে না।

অভ্র দৌড়ে গিয়ে মিহিকে কোলে তোলে নেয়।কলেজের মেইন গেইট দিয়ে মিহিকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসায়। নীরা ও সাথে ছিলো।

অভ্রের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।

মিহিকে একটা হসপিটালে এডমিট করা হয়। মিহিকে ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়েছে। কাউকে ডুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বেশকিছু ক্ষন পর ডক্টর বেরিয়ে এসে বললো,

–তেমন কিছু না জ্ঞান হারিয়েছে। ভয় পেয়েছে খুব যার কারনে এমন হয়েছে। ঔষুধ লিখে দিচ্ছি । পেশেন্ট কে নিয়ে যেতে পারেন।

–অসংখ্য ধন্যবাদ ডক্টর।

অভ্র মিহির সামনে যেতে ই মিহি মুখ ফিরিয়ে নেয়।

–আমি কী করলাম।আমার সাথে এমন করছো কেনো টিয়াপাখি।

–সব ছেলেরা ই তো এক।

–এটা ভুল বললে টিয়াপাখি।

–এতো টিয়াপাখি টিয়াপাখি করেন কেনো।

–ভালোবেসে ডাকি।

–প্রয়োজন নেই। আমার থেকে দূরে থাকবেন।

— কী প্রয়োজন আছে আর কী প্রয়োজন নেই সেটা আমি বুঝবো।

–বাসায় যাবো আমি।

–আমি দিয়ে আসবো।

মিহি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,

–বললাম তো আমি একা ই যাবো।

–জানপাখি রাগ করো না প্লিজ।

এবার মিহি রাগি চোখে অভ্রের দিকে তাকায়।

—আমি তুমি ছাড়া কাউকে ই চাইনা মিহি।

–এগুলো আমার বুঝা হয়ে গেছে। এখন ফোন ধরলে ই চেট লিস্ট গার্লস স্কুলের হাজিরা খাতা বের হবে।

–এই নেও ফোন নিজে ই দেখে নেও।

ফোনের স্ক্রিনে তাকাতে ই দেখে,
রেহনুমা ম্যাম অভ্রকে অনেকগুলো কল দিয়েছে। অভ্র এতোক্ষণ তা খেয়াল করেনি।
যখন ই দেখেছে তখন ই কল করেছে অভ্র।

–মা এতোগুলো কল কেনো দিয়েছো।

–মিহি তোর সাথে আছে।

–হে মা।২০

–মিহিকে নিয়ে এখন কলেজে আসবি।

–কেনো মা কী হয়েছে।

–এতো কেনো কেনো করবি না। প্রিন্সিপাল স্যার ডেকেছে।

অভ্র বুঝতে পারলো মা অনেক রেগে আছে তাই কিছু বললো না।

মিহির পাশে দাড়িয়ে অভ্র কথা বলছিলো। মিহি সবটা শোনেছে।

–দেখলেন তো আপনার জন্য সব হলো।

–আমি কী করলাম।

–আপনি ই তো জামেলা করলেন।

–ওহ্ ইমরানের হাতের চড় খেতো খুব ভালো লাগছিলো। তাহলে চলো ইমরানের কাছে দিয়ে আসি। একটা চড় খেয়ে এসো।

–এখন যদি বাবাকে ডাকে , বাবা আমার কলেজ বন্ধ করে দিবে।

–আরে এতো টেনশন করছো কেনো টিয়াপাখি আমি আছি তো।

–হে আপনি আমার জীবনে যতদিন থাকবেন আামর লাইফে ঠিক এমনটা ই হবে।

অভ্র কথাটায় অনেক কষ্ট পেলো তাও কিছু বললো না।

কিছুক্ষনের মধ্যে দুজনে ই প্রিন্সিপালের রুমে গেলো।

মিহি সামনে তাকাতে ই দেখে……

চলবে

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-০১

0

#তোমাতে আসক্ত (সিজন ২)
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১

কলেজের সবার সামনে আমাকে থাপ্পড় মারলো অভ্র একটা ছেলের সাথে কথা বলার অপরাধে, সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আমি গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকালাম। চোখ থেকে কয়েকফোটা জল নিচে গড়িয়ে পরলো।

—কতবার নিষেধ করেছি, ছেলেদের সাথে কথা বলবি না। তোর কোনো ছেলে ফ্রেন্ড থাকবে না।

–আমি ইমরানকে ভালোবাসি জানেন আপনি তাও ডিস্টার্ব করেন কেনো।

এটা বলার সাথে সাথে আরেকটা থাপ্পড় মুখে পড়লো।

এবার মিহি ও চোখ মুচে চড় মারতে যাবে তার আগে ই অভ্র হাত ধরে ফেললো। হাত ধরে হাতে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,

–যতটা আঘাত করেছি ঠিক ততটা ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবো এই কষ্ট। আই প্রমিস টিয়া পাখি।

বলে ই অভ্র তার বন্ধুদের নিয়ে গেইটের বাহিরে চলে গেলো।
মিহি শুধু অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।মিহি ঘোরে মধ্যে আছে মনে হচ্ছে কিছুক্ষন আগে শরিরে ইলেক্টিক শকট লেগেছে। কী হলো এটা।
এটা রোজকার ঘটনা অভ্র আসে মিহিকে কতক্ষণ ভালোবাসার বাণি শোনিয়ে চলে যায়। কিন্তু এই প্রথম অভ্র স্পর্শ করেছে মিহিকে।

সবাই দাড়িয়ে এতোক্ষণ শুধু দেখেছে। একটা টু শব্দ করার সাহস নেই কারো। কারন জানে অভ্র শোনতে পারলে জীবন নিয়ে নিবে। কলেজে এতো মানুষ নেই তাও একজন দেখলে ই হাজার জনের কানে পৌঁছাতে সময় কম ই নেয়।

মিহির আর পিছু ফিরে না তাকিয়ে সোজা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে গেলো।

বাসায় গিয়ে ই মিহি দ্রুত কিচেনের দিকে ছুটলো। মিহির মা আর বোন দুজনে ই মিহির পিছনে পিছনে গেলো,

–এই মেয়ে কথা বলিস না কেনো কি হয়েছে বলবি তো।

–বললে কী হবে।

–এই তুই হাতে বিমবার দিয়ে এভাবে মাজতেছিস কেন।

–আমার হাত আমি যা ইচ্ছে করবো তোর কীরে মিনতি।

–কথার কী স্টাইল দেখো। থাপ্পড় লাগাবো একদম।

–হে, একজন মেরেছে তাতে হয় নাই এখন তোর মারার বাকি আছে।

— কী বললি কে মেরেছে তোকে।

মিহি হাত ধুয়ে চলে গেলো রুমে। কি উওর দিবে তা জানা নাই তাই দৌড়ে পালালো।

বিছানায় বসতে ই আবার অভ্র কল দিলো।
মিহি বিরক্তি নিয়ে ফোন রেখে ই বাহিরে চলে গেলো। কী যে একটা জ্বালা এই ছেলেটা আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।

বাহিরে যেতে ই মিহির আম্মু ভাত নিয়ে আসলো।খাবারের প্লেট দেখে মিহি দৌড়ে বাহিরে চলে যেতে নিলে। মিনতি ধরে এনে সোফায় বসিয়ে দেয়। সাথে একটা কান মলা ও খেয়েছে।

–তুই কী বাচ্চা নাকি এখনো মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হয়।কই আমাকে তো মা একদিন ও খাইয়ে দেয় না।

–বিয়ে হলে তখন শ্বশুর বাড়ির লোকজন তোকে খেইয়ে দিবে। মা দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করো প্লিজ মিনতির বিয়েতে আমি কতো মজা করবো একমাত্র বোন আমার।

–তোর বিয়েটা আগে ই দিতে বলবো মাকে।

–তুই বড় তোর আগে।

কথা বলছে আর মিহির মা তার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। মিহি একদম ই খেতে চায়না। দেখতে খুব ই চিকন লম্বা তাছাড়া ও দেখতে খুব সুন্দর।

–মিহি তোর ফোন বাজছে দাড়া নিয়ে আসি।

বলে ই মিনতি ফোন আনতে গেলো। ফোন আনার কথা শুনতে ই মিহি পানি খেয়ে দৌড়ে রুমে চলে যায়। মিনতির হাত থেকে টেনে নিয়ে নেয়।

–তুই এভাবে ফোন নিলি কেন।

–তোর ফোন আমাকে ধরতে দিস, তাহলে আমার ফোনে তুই হাত দিবে কেনো।

মিনতি আর কোনো কথা বললো না।

–এই যে আবার ফোন এসেছে রিসিভ করিস না কেন।

রিসিভ করবে কীভাবে তুই যদি জানতে পারিস আমাকে কোনো ছেলে ফোন দেয় তাহলে তো বাসায় মাইক দিয়ে বলবি। আর আমার ফোনটা ও আমার হাত ছাড়া হয়ে যাবে তাই রিসিভ করছি না। মনে মনে কথাগুলো। হঠাৎ দেখলো মিনতি চলে গেছে। তাই ফোন রিসিভ করলো।

–কী চাই কল কেনো দিয়েছে।

–বারান্দায় ঔষুধ রাখা আছে টিয়াপাখি।

–ঔষুধ দিয়ে কী করবো।

–খাবে।

–কেনো।

–থাপ্পড় মেরেছি, লাল হয়ে আছে দেখছি তাই ঔষুধ পাঠালাম।

–আদিখ্যেতা।

— কালকে কলেজে আসো তারপর দেখবো আদিখ্যেতা নাকি ভালোবাসা।

–যাবো না আমি কলেজে।

–তাহলে বাসায় চলে যাবো।

–বিরক্তিকর।

বলে ই কল কেটে দিলো মিহি।

_________________

রাতের বেলা,

বাসায় অনেক মেহমান এসেছে। মিহির তার ছোট্ট কাজিনদের নিয়ে ছাদে গেলো।এর মধ্যে আবার অভ্র কল দিলো। ব্লক করে ও শান্তি নাই বাসায় চলে আসার হুমকি দেয়।

মিহির মাথা এবার একটা বুদ্ধি আসলো এমন কাজ করবো যে আর কখনো আমাকে কল দিবা না।

–এই সানি এদিকে আস।(সানি মিহির খালাতো ভাই এর ছেলে।অনেক দুষ্ট)

—হিরো আলমের গান পারিস।

–হে পারি তো শোনাবো নাকি তোমাকে।

–হে দাড়া।

মিহি ফোনটা রিসিভ করে সানির মুখের সামনে দিতে ই সানি জোর গাওয়া শুরু করলো,

–তুমি হলে বাবু আমি তোমার হিরুরররররররররর অঅ।,,,অ অঅঅঅঅঅ

অভ্র কিছুক্ষণের মধ্যে ই ফোন কেটে দিলো। মিহি হাসতে হাসতে বসে পড়লো।

অভ্র আবার কল দিলো। সানি আবার গান শুরু করলো।
এসব গান শুনে অভ্রের গানের অবস্থা প্রায় শেষ।

রাত প্রায় বারোটা বাজে।মিহি সাধারণত এতো রাতে করে ঘুমায় না।

মিহিরা দুই বোন। ভাই নেই। বাবা কৃষক। কৃষক বলে কিন্তু গরিব না অনেক জমির মালিক সাইফুল মিয়া। এলাকার অনেক মানুষ তার জমিতে কাজ করে।

এসব ভাবতে ভাবতে ফোনের দিকে তাকাতে ই ইমরান নামটা ভেসে উঠলো। ফোনেটা রিসিভ করে মনটা শান্তি পেলো।অভ্র আর ইমরান এক ক্লাসে ই পড়ে। ইমরান আর অভ্রের মধ্যে বেশ কিছু বার ঝগরা হয়েছে মিহিকে নিয়ে। মিহি বার বার নিষেধ করে ঝগড়া করার জন্য কারণ ব্যাপারটা নিয়ে জামেলা করলে বাসায় শুনবে আর মিহির বাসায় শোনলে কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিবে। সারাদিন কাজে ব্যস্ত ছিলো। ব্যস্ততা শেষে মনে পরলো তাহলে। অানন্দ নিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম।কিন্তু যতটা আনন্দ নিয়ে কথা শুরু করলো ঠিক ততটা কষ্ট নিয়ে ফোনটা কেটে দিলো এই রাতের বেলা নাকি বড় ভাই কল দিয়েছে। মিহি সব ব্যস্ততা মেনে নেয়। মনটা খারাপ করে ই ঘুমাতে গেলো।

______________

সকালে কলেজে যেতে ই অভ্র সামনে এসে দাড়ালো।

–পথ ছাড়ুন।

–কেনো ইমরান ওয়েট করছে বুঝি।

–জানেন ই তো আবার পথ আটকাচ্ছেন কেনো।

–যেতে দিবো না তাই।আজকে তোমাকে বিমবার খাওয়াবো।

–মানে।

–কালকে আমি হাতে চুমু খেয়েছি তাই হাত বিমবার দিয়ে ধুয়েছো। আজকে যদি অন্য কোথাও দেই তাহলে তো ধুতে গিয়ে খেতে হবে।

কথাটার মানে বুঝতে পেরে মিহি ভয় পেয়ে যায়।

অভ্র আস্তে আস্তে মিহির দিকে আসতে থাকে। মিহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।

চলবে,

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

1

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব৩১অন্তিম_পর্ব
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

সাদিয়ার পেইন উঠার পর হিয়া একটু ঘাবড়ে যায়। একা একটা মেয়ে কিভাবে সামলাবে।এদিকে সাদিয়া ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।

হিয়া তারাতাড়ি শুভ্রকে অফিস থেকে বাড়ি
আসতে বলে।শুভ্র তখনই অফিস থেকে ছুটে আসে।আমাকেও কল করে আমিও অফিস থেকে বের হয়।শুভ্র গিয়ে দেখে সাদিয়ার অবস্থা খারাপ খুব।আর সাদিয়ার অনেকটা ওজন বেড়ে গেছে। যার জন্য শুভ্র একা একা সিড়ি দিয়েই নামতে পারছিলো না।হিয়াও ধরে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসে।শুভ্র ড্রাইভ করতে থাকে।এদিকে সাদিয়ার অনেক বেশিই কষ্ট হচ্ছে।কারন অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে।

শুভ্র ভয়ে তারাহুরো করে ড্রাইভ করছিলো আর পিছনে ঘুরে দেখছিলো তখনি ওদের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়।আর হিয়া সাদিয়াকে টেনে গাড়ি থেকে নেমে পরে বাট ওর পায়ে খুবই গুরুতর আঘাত লাগে।মুহুর্তেই সেখানেই ভীর জমে যায়।আমি অফিস থেকে ফিরছিলাম।বাসায় যাওয়ার পথের রাস্তায় ভীর দেখে নেমে যা দেখি তারপর সেখানেই বসে পরি।নিজের পরিবারের তিন জন মানুষকে দেখে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।তারপর সেখানে থাকা লোকেরা সবাইকে হসপিটাল নিয়ে যায়।আমি জামি কে ফোন করি।(শুভ্রর মামা)

এ আর ডক্টর দ্রিংক সাদিয়ার বাচ্চাকে বাঁচাতে পারলেও সাদিয়াকে বাঁচানো যায়নি।কন্ডিশন খুবই খারাপ ছিল। সাদিয়াও গাড়ি থেকে পরে ব্রেইন আঘাত লাগে।আর বাচ্চার এদিকে হার্ট ব্লক।

আর এদিকে শুভ্রর ঘাড়ের কাছে আর আগের ইনজুরি তে আঘাত লাগে আর মাথার পিছনে,, হাতে পায়ে অল্প চোট লেগেছিল।সীট বেল্ট বাধা ছিল যার জন্য শুভ্রর বেশি কিছু হয়নি।আর হিয়ার পায়ের অবস্থা ও খুব খারাপ। তারপর উনারা জানান হিয়ার পা আর কোনো দিন ঠিক হবে না।
এক নিমিষেই আমার সাজানো গোছানো পরিবার একদম তছনছ হয়ে গেছিলো।
কিভাবে এভাবে এক সাথে সবকিছু হলো আমি ভেঙে পরি।পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছিলো।আমি অজ্ঞান হয়ে যায়।জামি সেখানে না থাকলে হইতো আমরা কেউ বাচতাম না।

ডক্টর পার্কার যিনি এর আগেও শুভ্রকে দেখেছিলেন উনি জানান। শুভ্রর মাথায় আঘাত লাগার ফলে উনার স্মৃতি শক্তি ফিরে পাবেন। হইতো এসবের কিছুই মনে থাকবে না।
তারপর সবটা জামি কে ইংরেজিতে বলেন।

মাথায় প্রচণ্ড জোরে আঘাত লাগলে – যেমনটা
‘ট্রোম্যাটিক ব্রেইন ইনজুরি’ (টিবিআই) বলতে বোঝায় বাইরে থেকে প্রাপ্ত আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়া৷ আর বলা বাহুল্য, মস্তিষ্কে সামান্য আঘাতও জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে৷ তবে এটাও সত্য যে মানুষের মস্তিষ্ক রক্ষায় রয়েছে শক্ত খুলি৷ তাই মাথায় আঘাত লাগা মানেই মস্তিষ্কে আঘাত নয়৷

এ ধরনের আঘাতের প্রভাব মস্তিষ্কের উপর কতটা পড়ছে, তা খুব দ্রুত অনুধাবন করা সহজ নয়৷ মস্তিষ্কে বিপজ্জনক রক্তক্ষরণ কিংবা মস্তিষ্ক ফুলে

যেমন, রোগী কেমন আচরণ করছেন, কারো ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় তিনি চোখ খুলছেন কিনা, তিনি স্বাধীনভাবে হাঁটাচলা করছেন কিনা, রোগীকে হালকা আঘাত করা হলে তিনি কি সাড়া দিচ্ছেন আর আঘাতের পর রোগী কতক্ষণ অচেতন ছিল

‘ট্রোম্যাটিক ব্রেইন ইনজুরি’ অনেকক্ষেত্রে তেমন কোনো ক্ষতির কারণ নাও হতে পারে৷ আবার তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে৷ চিকিৎসকরা মস্তিষ্কের জখমের পরিমাণ বিবেচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায় নির্ধারণ করেছেন৷ প্রথম কিংবা হালকা পর্যায়কে বলা হয় ‘কনকাশন৷’ এর অর্থ হচ্ছে, প্রচণ্ড আলোড়ন, আঘাত বা উত্তেজনার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি৷

দ্বিতীয় পর্যায়ের আঘাতের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে চার সপ্তাহের বেশি সময় নিতে পারে।
এর মাত্রা তৃতীয় পর্যায়ের বিবেচনা করা হয়৷ আর রোগীর উপর এধরনের আঘাতের পরিণতি ভয়ংকর হয়।

মস্তিষ্কে মাঝারি বা তীব্র আঘাত পাওয়া রোগীদের হাসপাতালের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে’ রাখা হয়। তখন চিকিৎসকরা মাথার খুলিতে ফুটা করে মস্তিষ্কের চাপ কমানোর চেষ্টা করেন৷ এক্ষেত্রে রোগীকে ওষুধও দেওয়া হয়৷ অবস্থা একটু ভালো, তবে এখনও সংকটে ‘শুমি’

আর মিস্টার চৌধুরী কে যদি এখন স্মৃতি হাড়ানোর পরের সব কিছু মনে করাতে যান তাহলে লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে।প্লিজ খেয়াল রাখবেন এদিকে।এমনকি ওকে কোনো প্রকার চাপ দেওয়াই যাবে।মিস্টার চৌধুরীর যেহেতু স্মৃতি ফিরে এসেছে।তখন ওকে এইসব প্লিজ আর মনে করিয়ে দেবেন না।

আমার জ্ঞান ফেরার শুভ্রর কাছে যায়। গিয়ে দেখি সত্যিই শুভ্র ঠিক আগের মতো আচরণ করছিলো।খুশিই হয়েছিলাম অনেকটা।

এদিকে নিজের মেয়ে জীবন টা শেষ আর এদিকে নিজের ছেলের নবজাতক বাচ্চা হার্ট ব্লক সার্জারী। তখন শুভ্রর মামা ছাড়া আমার পাশে আর কেউ ছিলো না।বড্ড অসহায় লাগছিলো আমার।
হসপিটাল থেকে চলে আসি শুভ্র,, হিয়াকে নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর।ওখানেই হসপিটালে ফিহাকে রাখা হয় ছোট একটা বাচ্চার সার্জারী হয়েছে।আমি ওকে দেখে আসতাম রোজ।

কয়েক মাস পর আমরা চলে আসি।ফিহাকে ওখানেই রেখে আসি শুভ্রর মামার কাছে। জামি একটা কাজের লোক রাখে ফিহার দেখা শোনা করার জন্য। তারপর জামি জানাই যে ফিহার আবারও সেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।এই কথাটা ডক্টর আগেই জানিয়েছিলেন। আমি আর দেরি করিনি।একমাত্র নাতনিকে হারানোর একটা ভিয় হয়।আমার কথায় জামি এসে ফিহাকে রেখে যায়।আর সেদিনই ফিহাকে শুভ্রর অফিসে পাঠায়।কারন ফিহার সম্পুর্ণ অধিকার আছে বাবার ভালোবাসা পাওয়ার।আর ডিএনএ রিপোর্ট গলায় ঝুলিয়ে দেই।যাতে শুভ্র মানতে বাধ্য হয় যে ফিহা ওরই মেয়ে।আর এদিকে আসার পর শুভ্র একদম সাভাবিক হয়ে বিজনেস শুরু করে হিয়ার বিষয় জানতে চাইলেও বলিনি।আর অনেক মেয়েকেই দেখিয়েছি কিন্তু ও তাকাই ও নি কারোর দিকে।ওকে বিয়ে দিয়ে ফিহার জন্য একজন মা আনতে চেয়েছি।কারণ আমার ফিহার কথাও ভাবতে হতো। ফিহা মা মা করতো সব সময়। তাই সেদিন নীলাকে দেখেই আমার পছন্দ হয় আর ওদের বিয়ে দিয়ে দিই। আর আমিও শুভ্রর চোখে নীলার জন্য একটা আলাদা কিছু দেখি।সেই সুযোগ টাই কাজে লাগালাম।বাকিটা তোমরা জানো।

————★★★★———–
★★বর্তমান★★

সবাই সবটা শুনেই বসে কেদে যাচ্ছে। এতো দিন থেকে একটা মানুষ একজন মা হিসেবে মোল্লিকা যা করেছে মোল্লিকার যায়গায় যেকোনো মা নিজের সন্তানের জন্য এটা করবে।
এদিকে নীলা কেদে কেদে বুক ভাসাচ্ছে।শুভ্র কোনো একদিন কাউকে ভালোবাসতো ভাবতেই কলিজাটা কেপে উঠছে।

সবাই নিস্চুপ হয়ে গেছে। এদিক শুভ্র মাথায় হাত দিয়ে সবটা মনে করার চেষ্টা করতে করতে কাতরাচ্ছে।সবাই খেয়াল হতেই দেখলো শুভর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।চোখেরজুত থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।শুভ্র আর না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলো।

নীলা দেখতেই চিৎকার করে উঠলো। হিয়া মোল্লিকা খুব ভয় পেয়ে গেছে।যার জন্য ভয় পাচ্ছিলাম তাই হলো। মা এখন কি হবে ভাইয়ার তারাতাড়ি করে হসপিটাল নিয়ে যায় শুভ্রকে।এদিকে নীলা পাগলের মতো করছে। কান্নায় হুহু করে উঠে সে।

হসপিটাল কাকন,,প্রাপ্তি,,নীলা তিন জন বসে আছে।নীলা কেদেই যাচ্ছে। থামার নাম নেই।মোল্লিকা আসেনি।নিজেকেই দায় করছেম এসবের জন্য।আর বাচ্চাদের এটা সেটা বলে সামলাচ্ছেন। হিয়াও মোল্লিকার পাশে বসে কেদে যাচ্ছে।কিন্তু একদিন না একদিন তো সব টা জানাতেই হতো তাই না।

ডক্টর বেরিয়ে আসতেই কাকন,প্রাপ্তি, নীলা উঠে দাঁড়িয়ে পরল।

ডক্টর বললেন শুভ্র ঠিক আছে। আপনারা উনাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। উনার কিচ্ছু হয়নি।আর আমার মনে হয় শুধু মাত্র ব্রেইন একটা প্রেসার ক্রিয়েট হয়েছিল নেক্সট টাইম এরকম যেনো না হয় প্লিজ খেয়াল রাখবেন।
—————★★★——————-
আরও পনেরো দিন কেটে গেছে।এখন শুভ্র একদম সুস্থ। শুভ্রর কিছুই মনে পরে নি।সাদিয়া বলে যে ওর লাইফে কেউ ছিলো সেটা ওর মনেই পড়ে নি।নীলা খুব খুশি যে শুভ্র ওকে ভুলে যায়নি।ও ভেবেছিলো যে হইত শুভ্রর সাদিয়াকে মনে পরবে কিন্তু না শুভ্রর কিছুই মনে পরেনি।কিন্তু সে সব টা মেনে নিয়েছে হইত মনে পরে নি কিন্তু আলাদা টানটা ফিহার প্রতি বেশিই হয়েছে এখন।

রাত ১০ টা।শুভ্র অফিস থেকে আসেনি। ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং এটেন্ড করতে হয়েছে। নীলা বসে আছে ফিহা আর ফুয়াদকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছে।নীলা বসে বসে ঝিমাচ্ছে। আজ ওর খুবই ঘুম পাচ্ছে। আজকে যে আর জাগতে ইচ্ছে করছেই না।সারে দশ টার দিকে শুভ্র অফিস থেকে এসেছে।এসেই দেখে নীলা ঘুমিয়ে গেছে।

শুভ্র গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আস্তে আস্তে বিছানায় গিয়ে উঠে বসলো। নীলার পাশ ফিরতেই শুভ্রর সাথে নিজের গা লাগলো। অমনি সে জেগে গেলো।নীলা উঠে বসে পরলো। নীলা বড় করে একটা হাই তুললো।আড়মোড়া ভেঙে বললো—

ওহ আপনি এসে পরেছেন।ডাকেন নি কেন?

হ্যাঁ এইতো এসেই ফ্রেশ হয়ে বসলাম।তুমি ঘুমাচ্ছিলে।তাই ডাকিনি।

ঠিক আছে আপনি বসুন আমি খাবার আনছি।

নীলা গিয়ে খাবার আনলো আর দুজনেই খেয়ে নিলো।আর বিছানায় গেলো।শুভ্র আজ আবারও সোফায় যেতে নিলে নীলা শুভ্রর হাত টেনে ধরলো।

আর কত দুরে থাকবেন শুভ্র।আজ থেকে আমরা এক বিছানায় ঘুমাবো।তাছাড়া আমি তো জানি এর আগেও আপনি আমার সাথে বিছানায় ঘুমিয়েছেন তাহলে আজ কিসের সংকোচ।

শুভ্র নীলার কাছে গিয়ে ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলো।

কি হলো আপনি নিচে কেন বসলেন।

শুভ্র আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে নীলার উড়ুতে নিজের মাথা রাখলো।আর দুই হাত দিয়ে নীলার কোমড় আঁকড়ে ধরলো।

নীলা শিউরে ওঠে অদ্ভুত এক ফিলিং হতে থাকে। নিজেকে সামলে নিয়ে শুভ্র মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

আচ্ছা তুমি কি জানো আমি যেদিন প্রথম তোমাকে দেখি বৃষ্টিতে ভিজতে দেখি সেদিনই তোমার প্রেমে পড়ে গেছিলাম।আমি বাড়ি এসে তোমাকে ভুলতে চাইতাম কিন্তু কিছুতেই তোমার মুখ টা ভুলতে পারতাম না।তোমাকে এক নজর দেখার জন্য ছটফট করতাম।আমার তখনই একটা কথায় মাথায় এসেছিলো।আমরা আজীবন যেনো রয়ে যাবো ভালোবাসা তুমি আমি এক হয়ে।যার সাথে আমার পুরো জীবন টা কাটাতে পারবো।

এতক্ষন শুভ্রর প্রতি টা কথা খুব মনোমুগ্ধকর হয়ে শুনছিলো।

আচ্ছা আমার একটা কথা জানার আছে।আপনি কি কোনো ভাবে জানতে পেরেছিলেন আমার বিয়ের ব্যাপারে। আপনি আমার বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে ছিলেন আর আমি আপনার গাড়ির সামনে এসেই পড়ি কি করে হলো এটা।

হুম গুড কুয়েশ্চন। আমি তোমার ব্যাপারে সব খোঁজ নিতে একজন লাগায় বাট উনি তো তোমাকে দেখতেই পাননি।তারপর আমিই গত দুই দিন দাড়িয়ে ছিলাম ওই দোকানের সামনে। তাও তোমার দেখা মিললো না।তারপর দেখা হলো প্রাপ্তির সাথে। ওর থেকেই সব কিছু জানতে পারি তোমার ব্যাপারে। হঠাৎ খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তোমার বিয়ে।আমি জানতাম যে তোমার বিয়েটা তোমার ইচ্ছেই হচ্ছে না।আমি ছুটে আসছিলাম।তারপর তুমি পালাতে গিয়ে আমার গাড়ির সামনে এসে পরলে।

ওহ আচ্ছা তার মানে প্রাপ্তি আগে থেকেই সবটাই জানতো আর আমাকে বলে নি।আজকে ওর হচ্ছে। আমি ওকে দেখে নিবো।

হুম প্রাপ্তি জানতো।ওর জন্যই আজ তুমি আমার।

তাহলে আপনি এতো দিন আমাকে বলেন নি কেন ভালোবাসেন আমাকে।আমি যদি আপনার প্রথম ভালোবাসা হয় তাহলে সাদিয়া আপু কি ছিলো।

ভালোবাসি বলিনি তো কি হয়েছে। তুমি কি বুঝতে পারোনি আমার ভালোবাসা।আমার চোখের সেই অব্যাক্ত কথা।সত্যি কথা বলতে সাদিয়ার কথা তো আমার মনেই পরেনি।সাদিয়া নামের কেউ যে আমার লাইফে ছিলো সেটা আমার মনে নেই।আর যদিও ছিলো আমার প্রথম ভালো তুমি।কারণ আমার সাদিয়াকে মনে নেই। যাকে আমি ভুলে গেছি। আর আমি তোমাকে কোনো দিন ভুলব না তুমি আমার স্মৃতি তে সারা জীবন থেকে যাবে যাকে আমি কোনো দিন ভুলতে পারবো না।

হুম আপনি উঠে আসুন উপরে।

শুভ্র উপরে বিছানায় গিয়ে বসে পরলো।

নীলা আবারও বললো এবার শুয়ে পড়ুন।

শুভ্রকে টেনে শুইয়ে দিয়ে নীলা নিজেও শুয়ে পড়লো।

দুজন দুজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। শুভ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীলা শুভ্র মুখে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলো। আর কথা বলতে বারন করলো। এখন শুধু ওদের নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।

শুভ্র যেন একটা নেশায় পড়ে গেছে।তার শরীরে যেনো নিজের পুরুষত্ব টা জেগে উঠেছে।

শুভ্র এক টানে নীলাকে নিজের কাছে টেনে নিলো।
এমন ছোয়াতে নীলার যেন দম বন্ধকর অবস্থা।
হঠাৎ নীলা অনুভব করলো ওর ঠোঁট জোড়া কেউ দখল করে নিয়েছে।নীলার শিরায় উপশিরার শিহরণ বয়ে যেতে থাকে।

নীলা আজ আর শুভ্রকে বাধা দেইনি।সেও তাল মিলিয়ে শুভ্রকে চুমু খেতে থাকে।দু’জনে দুজনকে ভালোবাসায় মুড়িয়ে দিতে থাকে।দুজনেই ভেসে যেতে থাকে নিজেদের মধ্যে। এভাবেই দুজনের ভালোবাসা অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকবে।#ভালোবাসায়_তুমি_আমি ❤❤পূর্নতা পেলো।নতুনভাবে নতুন করে জীবনের সবটা পথ পাড় করে দেবে ফিহা ফুয়াদ কে নিয়ে। পুরো সংসারকে নিয়ে।❤❤❤❤

সমাপ্ত।

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-২৯+৩০

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২৯
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

সব মেয়েরা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে।তুহিনা ওদের এক হাতে দিয়ে পিছনে আগলে রাখছে।সব মেয়েরা কান্নায় করছে ভয়ে। তারা প্রত্যকেই বাচতে চাই নিজের পরিবার পরিজন কে নিয়ে।কিন্তু এই রাহাতের মতো কিছু ক্রিমিনাল লোক ওদের বাঁচতে দিতে চাইছে না।

তুহিনাঃ রাহাত প্লিজ আমাদের যেতে দাও না হলে কিন্তু এর ফল ভালো হবে না।তুমি যা করছো সেটা অন্যায়।এখনো সময় আছে নিজেকে শুধরে নাও।আর পাপের বোঝা বাড়িয়ো না।

রাহাতঃ তোমার এতো বড় সাহস আমার ডেরার মেয়েদের নিয়ে পালাতে যাচ্ছো।আর শুভ্র চৌধুরী তুমি এখানএখানে কিভাবে এলে।আজ পর্যন্ত তো আমাদের এই ডেরাই কেউ ঢুকতেও পারে নি। তোমার হিম্মাত আছে বলতে হবে।নিজের বউ কে বাঁচাতে ঠিক চলে এসেছো দেখছি।তবে এসেছো যখন কাজীকে ডাকি।কি বলিস বোন।
মুখ বাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে।

জীনিয়াঃ অফফহো ভাইয়া আমি কি এভাবে বিয়ে করবো নাকি শুভ্রকে।আগে এই নীলার খেলা শেষ করো তারপর ধুমধাম করে পুরো শহরের মানুষ কে আমার আর শুভ্রর বিয়ের কার্ড দিয়ে ইনভাইটেশন দিয়ে আসবো। পুরো শহরের মানুষ জানবে জীনিয়া খান ওয়েডস শুভ্র চৌধুরী।

এতোক্ষন শুভ্র জীনিয়ার সব কথা শুনছিলো।কিছুই বুঝতে পারলো না সে। ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে ও আমাকে বিয়ে করতে চাই।শুভ্র মাথা ঠান্ডা কর। বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা করেই যা করার করতে হবে। শুভ্র চোখ বন্ধ করে নিজেকে সংবরন করার চেষ্টা করছে। এই জীনিয়াকে গুটি বানিয়ে ফেলি তাহলে।। মনে মনে।

নীলাঃ খবর দার জীনিয়া আপু তুমি আমার শুভ্রর দিকে যদি তাকিয়েছ তো ভালো হবে না।আমার হাসবেন্ড তোমাকে কোনো দিন ও বিয়ে করবে না।যদি আমি মরেও যায় তাও না।আর তোমরা আমার ক্ষতি করতে চাইলে কি আমার শুভ্র তোমাদের ছেড়ে দেবে ভেবছো।

কাকনঃ তোমরা হইতো ভুলে গেছো তোমরা কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছো। তোমাদের প্রত্যেকের যে কি হাল হবে তোমরা ভাবতেও পারছো না।ভুল করছো তোমরা।

রাহাতঃ এই তুই চুপ কর শুভ্রর চামচা।সারা জীবন তো তোকে চাকর বানিয়েই রেখেছে।তাও তুই ওর হয়ে সাফায় গাইছিস।

শুভ্র নীলার হাত ছেড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে জীনিয়ার দিকে।এমন ভাবে তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মনে হয় ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
নেশা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
যা জীনিয়ার চোখে পরতে সে একেবারে লজ্জায় মাথা নিচু করছে আবার মাথা উঠিয়ে শুভ্রকে দেখছে।

শুভ্রঃআগে যদি তোমার মতো এতো সুন্দরীকে পেতাম তাহলে ওই নীলাকে কিছুতেই বিয়ে করতাম না।আর না ওকে বাঁচাতে আসতাম।আসলে সেদিন তো তোমাকে দেখিনি ভালো করে। আজ যখন তুমি নিজেই আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো তখন তোমার মতো এতো সুন্দরী একজন মেয়েকে কার সাদ্ধি আছে যে না করবে। প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি। যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইড।

একেবারে সামনে গিয়ে একটু গা ঘেসে দাঁড়িয়ে পরল শুভ্র।

জীনিয়া একেবারে লজ্জায় লাল নীল হয়ে গদগদ হয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। সত্যিই তুমি আমাকে বিয়ে করবে শুভ্র।তুমি কি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছ।

শুভ্রঃ তা নয়তো কি আমি সারাটা জীবন ওই সেকেলে নীলার সাথে কি ভাবে কাটাবো বলো তো।আমার সাথে কি ওর যাই।আগে যদি তোমার সাথে দেখা হতো তাহলে কিছুতেই ওই বেহেনজি টাইপের মেয়েকে বিয়ে করতাম না। নেহাত মা জোর করে বিয়েটা দিলো না হলে তাও বিয়ে টা করতাম না।

জীনিয়াঃ হ্যাঁ তাই তো। এসব মিটে যাক আমি আর তুমি বিয়ে করে নিবো।

এদিকে শুভ্রর এহেন কান্ড দেখে নীলা তো পুরাই শকড। নীলার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে।এট সে কোন শুভ্রকে দেখছে।সুন্দরী কাউ কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলো।আমাকে সেকেলে বললো।আর আমার কথার একটু দাম ও দিলো না। দু কদম পিছনে পিছিয়ে গেলো নীলা।

কাকন আর তুহিনা হইতো একটু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে। শুভ্রর হঠাৎ বদলে যাওয়া টা।দুজনেই চুপচাপ হয়ে আছে।কিছুই না বুঝার ভান করে আছে।

এদিকে রাহাত ও ভাবছে শুভ্র এতো তারাতাড়ি হঠাৎ করেই ভোল বদল। তার একটু খটকা লাগলো।

রাহাতঃ বোন তুই ভুল করছিস।শুভ্র তোর সাথে নাটক করছে।ওর ফাদে পা দিস না।

জীনিয়াঃ ভাইয়া তুই দেখলি না শুভ্র আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এটা তে কোনো অভিনয় নেই।শুভ্র তো বললো ও বিয়ে টা করতে চাইনি।জোর করে ওর মা ওদের বিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া শুভ্র তো এটাও বললো ও আমাকে বিয়ে করবে।তাই না শুভ্র।

শুভ্রঃ হ্যাঁ ডার্লিং। আমি তো ঠিক করেই নিয়েছি তোমাকেই বিয়ে করবো।

সকল গার্ডস দের মনোযোগ সরে গিয়ে জীনিয়া আর শুভ্রর দিকে চলে গেছে। হা করে তাকিয়ে আছে সবাই।

নীলাকে এর মধ্যে শুভ্র চোখ মেরে ইশারায় বুঝিয়ে দিয়েছে।সে এখন একটু স্বাভাবিক হলেও উপরে উপরে ভেঙে পড়ার নাটক করছে।

সবাই একদম নিস্তব্ধ হয়ে আছে। এটা যেনো বড় কোনো ঝড় উঠার আগের পুর্ভাবাস।

শুভ্র সুযোগ একটা গার্ডসের কাছ থেকে একটা হেচকা টান দিয়ে একটা রাইফেল নিয়ে ফট করে জীনিয়ার মাথায় ধরলো।

আচমকা এমন হবে রাহাত ভাবেনি।জীনিয়া বেস ঘাবড়ে গেছে।

জীনিয়াঃ এটা তুমি কি করছো শুভ্র। তুমি তো একটু আগেই বললে আমাকে বিয়ে করবে।তুমি এটা মজা করছো তাই না।এরকম মজা করে না জান।

শুভ্রঃ তো তুমি কি ভেবেছো আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসবো। এমন কথা ভাবলে কি করে। তোমার সকল গার্ডস দের বন্দুক গুলো ফেলে দিতে বলো না হলে তোমার মাথায় চালিয়ে দিবো একেবারে।

জীনিয়াঃ ভাইয়া আমাকে বাঁচা। তোর গার্ডসদের বল বন্দুক ফেলে দিতে।

রাহাতঃ তোকে তো বললাম যে শুভ্র নাটক করছে।
শুভ্রঃ তারাতাড়ি ফেলে দিতে বল নইলে গুলি চালিয়ে দেব।

শুভ্র শুট করার জন্য ট্রিগার চাপ দিবে।

তখনি রাহাত নিজের বোনের প্রান বাঁচাতে তারাতাড়ি করে সবাইকে বন্দুক ফেলে দিতে বলে।

সবাই বন্দুক ফেলে দিলো।এদিকে রাহাত সুযোগ পেয়ে নীলার দিকে বন্দুক তাক করে শুট করে দেই।

সেটা তুহিনা দেখতে পেয়ে তুহিনা আর নীলা কাছাকাছি থাকায় তুহিনা সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।তুহিনার পেট এফোড় ওফোড় করে বন্দুকের গুলি বেরিয়ে গেলো।সে মাটিতে পড়ে গেলো। আহ করে চিৎকার করে উঠলো সে।

কিছু রক্ত নীলার গায়ে ছিটকে গিয়ে পরল।নীলা চোখ মুখ খিচে দান আছে। পরক্ষনেই আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে যা দেখলো সে যেন পাথরের মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো।

এতো তারাতাড়ি ঘটনা টা ঘটে গেলো। কেউ বুঝে উঠার আগেই সবটা হয়ে গেলো। সবটা যেন থেমে গেছে একবারে। জঙ্গলের গাছে পাখি গুলা উড়াল দিলো বন্দুকের আওয়াজে। এই বুঝি তুহিনার প্রান টাও এই পাখিদের মতো উড়াল দেবে। জঙ্গলে পরে থাকা শুকনো পাতা রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো।

পুলিশ বন্দুক চালানোর আওয়াজ পেয়ে দৌঁড়ে এদিকে ছুটে আসছে।পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে দেখে তাদের প্রান প্রিয় মহিলা পুলিশ অফিসার মাটিতে রক্তেমাখা শরীরে পড়ে আছে।ততক্ষনে যা ঘটার ঘটে গেছে।

বন্দুকের আওয়াজে বাকি মেয়েরা কানে হাত দিয়ে দুরে চলে গেলো।

কাকন আর নীলা তুহিনার কাছে ধপাস করে বসে পরল।

নীলা তুহিনার মাথা তুলে নিলো।এটা তুমি কি করলে তুহিনা আপু।হাউ মাউ করে কেদে উঠলো নীলা। এটা তুমি কেনো করলে। আমার জন্য নিজের জীবন টা এইভাবে শেষ করে দিলে।

এদিকে শুভ্র নিজের প্রিয় বন্ধুর এই অবস্থা দেখে যেনো স্তব্দ হয়ে গেছে। সে যে আর নড়তেই পারছে না। পা গুলো যেনো অষাঢ় হয়ে গেছে তার চোখ দিয়ে পানি পরছে তার।ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।হাত থেকে রাইফেলটা মাটিতে পড়ে গেলো।

শুভ্র তারাতাড়ি এদিকে আয়।তুহিনাকে বাঁচাতে হবে।

শুভ্রর যেনো ধ্যান ভেঙে গেল। সে দৌঁড়ে গিয়ে গেলো নিজের বন্ধুর এরকম বাজে অবস্থার কথা সে ভাবতে পারছে না।

রাহাত আর জীনিয়া ঘাবড়ে গিয়ে পালাতে যাবে তার আগেই পুলিশ ওদের সহ বাকি গার্ডসদের ধরে ফেলল।

আর বাকি মেয়েদের কেও পুলিশ নিয়ে গেলো।যার যার বাড়ি পৌঁছে দেবে।

স্যরি মিস্টার চৌধুরী আমাদের আসতে লেট হয়ে গেলো। আর যার জন্য আমাদের সবার প্রিয় মহিলা অফিসারের প্রান বিপন্নে।

তুহিনার চোখ দিয়ে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। সে হাত দিয়ে নিজের পেট ধরে আছে। আর গোঙ্গাচ্ছে।তার ছোট্ট ছেলেটার মুখটা যে তার সামনে ভেসে উঠলো।কি হবে তার ছেলের।

কাকনঃ শুভ্র তারাতাড়ি ধর ওকে হসপিটাল নিতে হবে।

শুভ্র স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

শুভ্রঃ আপনার চুপ করুন। আপনারা যদি আর একটু আগে আসতেন তাহলে এখন আমার বন্ধুর এই অবস্থা হতো না।শুভ্রর চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো।কেন করলি এটা তুই তুহিনা।কেন।

তুহিনাঃ আ-আ-মি য-দি এ-এটা না করতাম তাহলে নীলার আমার যায়গায় থাকতো। আর এটা আমি কিছুতেই হতে দিতে পারি না।ওর কিছু হলে তো তুই বাচতি না।আমি তোকে বলেছিলাম না আমি আমার বন্ধুর জন্য প্রান টাও দিয়ে দিতে পারি। অনেক কষ্টে কথা গুলো বললো তুহিনা।

নীলাঃ প্লিজ আপু তুমি আর কথা বলো না। তোমার কিচ্ছু হবে না।আমরা তোমার কিচ্ছু হতে দেব না।

তুহিনাঃন-নী–লা তু-তু-মি আ-আ-মা-র ছে-ছে-লে-কে দে-খে রে-খো। এইটুকু বলে তুহিনা নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো।তুহিনা নিজের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে ফেলেছে।

মায়েরা বোধই এরকমই হয়। নিজের শেষ ত্যাগ করার আগ মুহুর্তেও নিজের সন্তানের কথা ভুলেন না।অথচ নিজের প্রান পাখিটা উড়ে যাবে কিন্তু নিজের সন্তানকে ভুলে নি তুহিনা।

নীলা চিৎকার করে কেঁদে দিলো

শুভ্রঃ আমি তোর কিচ্ছু হতে দেবো না।তোকে মরতে দেব না আমি। এই বলে তুহিনাকে শুভ্র কোলে তুলে নিলো। এই চোখ খোল প্লিজ বোন চোখ খোল।এই সেই কত কিছু বলছে।পাগলের মতো করছে শুভ্র।

কাকন আর নীলা দুজনেই শুভ্রর পিছনে ছুটছে।
তারাতাড়ি গাড়ি করে তুলে কোলে করেই বসে পরলো।

কাকন গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।তাও যেনো গাড়ি এগোতে চাইছে না।পথ টা শেষ হতে চাচ্ছে না।

নীলা তুহিনার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে এটা সেটা বলছে।

কিন্তু তুহিনার যে প্রান পাখি টা উড়াল দিয়েছে সেটা কি তারা বুঝতে পারেনি।তার হৃদ স্পন্দন যে থেমে গেছে।

এটাই বুঝি বন্ধুত্ব। একজন প্রকৃত বন্ধু তার জীবনের পরোয়া না করে সব টা উজাড় করে দেই।যা তুহিনা আজ দেখিয়ে দিলো

চলবে–

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব৩০
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র অফিস থেকে ফেরে নি।আজ মা কিছু একটা বলবেন। শুভ্র কে তারাতাড়ি অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে বলে দিয়েছেন।

আজ তুহিনার মৃত্যুর পনেরো দিন হয়ে গেলো।সারা বিশ্বে একটি তুহিনার মৃত্যুর খবর এক দরুন দৃষ্টান্ত হয়ে স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে।যাকে পুরো বিশ্ব অনন্ত কাল মনে রাখবে।এই ত্যাগ নিজের সবটা দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করা।আমরা অনন্ত কাল তোমাকে ভুলবো না তুহিনা।আমাদের হৃদয় আজীবন বেচে থাকবে তুমি।শুভ্র খুবই ভেঙে পড়ে নিজের প্রান প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু সে এতো সহজে মেনে নিতে পারেন নি।

একজন সৎ অফিসার একজন কর্তব্য পরায়ন অফিসার তার দায়িত্ব ভুলে না।আর একজন ভালো প্রকৃত বন্ধু তার এক বন্ধুর জন্য সব টা উজাড় করে দিয়ে নিজের প্রান দিয়ে দেওয়া। যা সবার মনে দাগ কেটে গেছে। সেদিন হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার পর তুহিনাকে মৃত ঘোষণা করে ডক্টর। তুহিনা মৃত্যুতে সবার মন হাহাকার করে উঠে। সেখানেই তুহিনার মা নিজের মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান।আর ফুয়াদ সে তো একটা বাচ্চা ছেলে। ও কি বুঝে এই পৃথিবীতে ওর আর আপন বলতে কেউ নেই। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর কিছু নোংরা মানুষের জন্য সে একেবারে এতিম হয়ে গেল।

কিন্তু না নীলা এই কথাটা আর দ্বিতীয় বার বলতে দেই নি।না ফুয়াদ কে মনে বুঝতে দিয়েছে মায়ের অভাব।হইতো পুরো পুরি পারে নি।প্রকৃত অর্থে মায়ের অভাব টা আসলে পুরো পুরি ভাবে কেউ পুরন করতে পারে না।কিন্তু নীলা তুহিনার কথা রাখবে। সে ঠিক করেছে আর কোনো বাচ্চা নেবে না। কারণ সে চাই না কোনো ভাবে ফিহা বা ফুয়াদ তার মায়ের অভাব বুঝুক।নীলা নিজের স্বর্বস্য দিয়ে ফুয়াদ আর ফিহাকে আগলে রাখছে।হ্যাঁ সেদিনের পর থেকে ফুয়াদ কে তার মায়ের অভাব একেবারেই বুঝতে দেইনি। ফুয়াদকে প্রথম প্রথম সামলাতে একটু কষ্ট হয়ে গেছিলো।ফিহা ফুয়াদ এখন তার দুই ছেলে মেয়ে। দুজনেই দৌঁড়ে ছুটে খেলা করে পুরো বাড়িতে।ফিহাকে এক সপ্তাহ পর সুস্থ হয়ে বাড়ি আসে। শুভ্রও এখন ফিহা ফুয়াদকে চোখে হাড়ায় একেবারে। অফিস থেকে ফিরে না দেখতে পেলে তার আর ভালো লাগে না।ফিহা ফুয়াদ বলে অজ্ঞ্যান এখন সে।

আর যাদের জন্য ফুয়াদ সবটা হাড়িয়েছে তারা শাস্তি পাচ্ছে।সেদিন রিশিকা কেও সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেই।একজন পুলিশ অফিসার কে খুন,,নারী পাচার করার অপরাধে রাহাত,, রিশিকা আর জীনিয়াকেও যাবৎ কারাদণ্ড দিয়েছে কারন তারাও সমান ভাবে দায়ী ছিলো।ফাহিম কোর্টে সাক্ষি দিয়েছে সমস্ত টা প্রমাণ হয়ে গেছে।

নীলা তার বাবার ভালোবাসা প্রথম পায়। বার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছেন।ইমরান ও নিজের মেয়েকে বহু বছর পর বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেন।সব টা এখন যেনো আল্লাহ তায়ালা এক নিমিষেই ঠিক করে দিলেন। কাকন প্রাপ্তি রোজ আসে নীলার কাছে।ওরাও এসে ফুয়াদ ফিহাকে নিয়ে মেতে থাকে। শাশুড়ী মা ননদ তাকে এতো টাই ভালোবাসা দিয়েছেন। কিন্তু মাঝে মধ্যে শাশুড়ী মা গম্ভীর হয়ে থাকেন সেটা কি জন্য নীলার জানা নেই।

নীলা তুহিনার কথা ভাবতেই তার চোখের কোনে পানি চলে এসেছে।তুহিনা এমনই একজন মানুষ যাকে ভুলার নয়।

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলো। এসেই দেখে নীলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। এসে দেখল নীলা সেই একি ভাবে দাড়িয়ে আছে। শুভ্র পিছন থেকে নীলাকে জড়িয়ে ধরলো।

কি ভাবছো এতো।আমি এসে ঘরে ঢুকলাম তুমি কি বুঝতে পারো নি।স্বামীর একটু খেয়াল রাখো।সারাদিন তো তোমার আমার কথা মনেই পরে না।সারাদিন বাচ্চা সামলাও পাকা গিন্নি হয়ে গেছে একেবারে।

নীলা একটু নড়েচড়ে উঠলো। তারপর মুখ ঘুড়িয়ে বললো।

ওহ আপনি এসেছেন। নিচে যেতে হবে মা কিছু একটা বলবে। চলুন নিচে যায়। মাকে দেখে মনে হলো বেশ সিরিয়াস কিছু বলবেন।

দেখেছো আমি এতো কিছু বললাম। আর তোমার মধ্যে কোনো ভাবান্তরই নেই।ঠিক আছে চলো নিচে দেখি মা কি বলেন।

হ্যাঁ চলুন নিচে যাওয়া যাক।তারপর দুজনেই নিচে নেমে আসলো।

নিচে নেমেই দেখল কাকন, প্রাপ্তি, হিয়া, মা সবাই বসে আছে।

অন্য দিকে ফুয়াদ আর ফিহা বসে বসে ঝগড়া করছে।

ফিহাঃ মা আমাকে তোর থেকে বেশি ভালোবাসে।

ফুয়াদঃ না আমাকে বেশি ভালোবাসে।তুই যা এখান থেকে।

ফিহাঃ না আমি তোর থেকে ছোট তাই আমাকে বেশি।
ফুয়াদঃআমি তোর থেকে বড় তাই আমাকেই বেশি।তুই খুব ঝগড়া করছিস কিন্তু আমার সাথে।

ফিহাঃ তুই ও তো করছিস।তুই জানিস মা আমাকে কত্তো ভালোবেসে এঞ্জেল ডাকে।

ফুয়াদঃ মা আমাকেও সোনাই বলে ডাকে হুহ্।

এদের এসব দেখে সবাই একত্রে হেসে দিলো।নীলা এগিয়ে এসে বললো মাম্মাম তোমাদের দুজনকেই সমান ভালোবাসে ঠিক আছে। ঝগড়া করে না।ঝগড়া বাজে লোকেরা করে ঠিক আছে।

ঠিক আছে মা আমরা আর ঝগড়া করবো না।
এই বলেই দুজনেই নীলাকে জড়িয়ে ধরলো। নীলাও পরম যত্নে ওদেরকে নিজের বুকে আগলে নিলেন।

এতকিছুর মধ্যে নীলা তার শাশুড়ী মাকে গম্ভীর হয়ে বসে থাকতে দেখে ফিহা আর ফুয়াদকে অন্য দিকে গিয়ে। খেলা করতে বললেন।ফুয়াদ ফিহা দৌঁড়ে চলে গেলো ওই দিকে।

তারপর সবাই মনোযোগ দিলো মিসেস মোল্লিকার দিকে।শুভ্র আর নীলা সহ বাকি সবাই মোল্লিকার দিকে করে মুখ করে বসে পরলো।

আজ তোমরা এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে চলেছো।আর আমি জানি না এর প্রভাব ঠিক কতটা তোমাদের উপর প্রভাব ফেলবে।বিশেষ করে আমার ছেলে।যার কথা ভেবেই আজ তিন বছর থেকে এই কথা টা লুকিয়ে রেখেছি।

সবাই সবার দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। একমাত্র হিয়া ছাড়া তার মধ্যে চমকানোর কোনো আভাস নেই।যেখানে সবাই অবাক হয়ে গেছে সেখানে হিয়ার মধ্যে কোনো রকম কোনো ভাবান্তর নেই।মনে হচ্ছে যেন সে সব টা জানে আগে থেকে।

আমি ফিহার বিষয় টা নিয়ে কথা বলবো এখন।সে আমার নিজের একমাত্র ছেলে শুভ্রর মেয়ে।

শুভ্রঃ হ্যাঁ মা আমি তো ওকে নিজের মেয়ে বলে মেনেই নিয়েছি।তাহলে আবার এই কথা উঠেছে কেন।

নীলাঃ আমি একটা কথা বলতে চাই মা। আমি ফিহায় নিজের মা নয়।আপনারা ভেবেছেন আমি ওর নিজের মা।কিন্তু আমি আর শুভ্র জানি সবটা।শুভ্র নিজেও জানে যে ফিহা আসলে কে ।মাথা নিচু করে বললো কথা গুলো।চোখে পানি চলে এসেছে নীলার কথা গুলো বলতেই।শ

মোল্লিকাঃ না ফিহা শভ্রর নিজের মেয়ে।ওর রক্ত বয়ছে ওর শরীরে। আর আমি এটাও জানি যে তুমি ফিহার নিজের মা নয়।তবে তুমি তো ওকে ওর মায়ের অভাব বুঝতে দাওনি।আর এমনি একজন কে খুজছিলাম ফিহার জন্য। কিন্তু এই কথা টা একদম সত্যি যে ফিহা শুভ্রর নিজের সন্তান। আমি সেদিন ফিহাকে শুভ্রর অফিস পাঠিয়েছিলাম।

এই কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই যেন আকাশ থেকে পরলো।কেউ হইতো এই কথা টা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।

নীলা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো।তার বুকের ভেতর টা যেন মোচড় দিয়ে উঠলো।

শুভ্রঃ মা তুমি পাঠিছিলে ফিহাকে ওখানে কিন্তু
কেন মা।আমার সাথে কেন এমন টা করলে মা।

হিয়াঃ ভাইয়া মা একদম ঠিক কাজ করেছে তোর মেয়েকে তোর কাছেই তো পাঠাবে তাই না।আর কেন আমার পায়ের আজ এই অবস্থা আজ সবটা জানতে পারবি ভাইয়া। আমার পায়ের অবস্থার কথা তো তুই অনেক বার জানতে চেয়েছিলি কিন্তু কেন বলিনি জানিস। সেটাও তোর ভালোর জন্য। আজ তোকে সব সত্যির মুখোমুখি হতে হবে।তাতে যদি তোর কোনো কিছু হয় ও আমার বা মায়ের কিচ্ছু করার নেই।

সবাই যেন আরো একবার ঝটকা খেলো।
হিয়াকে এভাবে স্ট্রেইট কথা বলতে শুনেই বোঝা যাচ্ছে সে সবটা জানে।

নীলাঃ তুমি কি বলছো এসব। তোমার ভাইয়ার ক্ষতি হতে পারে মানে।

প্রাপ্তিঃ আন্টি এক্সাক্টলি কি এমন সত্যি যা জানলে ভাইয়ার ক্ষতি হতে পারে।

কাকনঃ হ্যাঁ আন্টি বলুন কি এমন সত্যি যা আমিও জানি না।বলুন আন্টি।

মোল্লিকাঃ তোমাদের সব প্রশ্নের উত্তর আজ তোমরা পাবে।কারন এখন শুধু আমার ছেলে নয় এখন নীলা ফিহা ফুয়াদ সবাই জড়িয়ে আছে।ওদের কথাও আমাকে ভাবতে হবে।
তবে শুনো সব টা কেনো এতো দিন আমি সবার থেকে আড়াল করে রেখেছি।

চার বছর আগের কথা।কাকন তোমার মনে আছে তোমার আংকেল মারা যাওয়ার পর সেই খবর শুনে শুভ্র কলেজ থেকে তারাহুরো করে আসার সময় একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে যার জন্য ওর মস্তিষ্কে আঘাত লাগে। তুমি ওকে নিয়ে গেছিলে ডক্টর এর কাছে।ডক্টর কি বলেছিলো মনে আছে তোমার।তারপর আমরা লন্ডনে চলে গেছিলাম শুভ্রর মামার বাসাই।আর শুভ্রর মাথায় গুরু তোড় ভাবে আঘাত লাগে স্মৃতি শক্তি হাড়িয়ে গেছিলো।তখন আমরা চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলাম।আমাদের

কাকনঃ হ্যাঁ আন্টি বাট এর সাথে ফিহার শুভ্রর মেয়ে হওয়ার কি সম্পর্ক।

মোল্লিকাঃ সম্পর্ক আছে বাবা।সেখানে যাওয়ার পর ডক্টর দেখায়।তারপর শুভ্র একেবারে স্বাভাবিক হলেও ওর কিছু মনে পরেনি।আমরা ওখানেই থেকে যায়।আমি চাকরি করি শুরু করি ওখানেই। শুভ্রর আর হিয়ার লেখাপড়া ভালোই চলছিলো।

তারপর সেখানে শুভ্রর পরিচয় হলো সাদিয়া নামের একটা মেয়ের সাথে। শুভ্র সাদিয়া বলতে একেবারে অজ্ঞাত ছিল যাকে ছাড়া শুভ্র এক মুহুর্তেও কিছু বুঝতে চাইতো না।ওদের বিয়ে দিয়ে দিই সেখানে।বিয়ের কিছুদিন পরেই জানতে পারি সাদিয়া প্রেগন্যান্ট। শুভ্র আর সাদিয়া আগেই লিভ ইন করে ফেলেছিলো।শুভ্র সাদিয়ার পুরো খেয়াল রাখতো।একেবারে মাথায় করে রাখতো।আমি অফিস থেকে এসে যে টুকু পারতাম। হিয়াও খেয়াল রাখতো যখন শুভ্র অফিস থাকতো এভাবেই কাটছিলো আমাদের সুখের সংসার।হঠাৎ সাদিয়ার লেবার পেইন উঠে।হিয়া বাসাই একা ছিলো। শুভ ওর মামার অফিসে ছিলো।আমিও অফিস ছিলাম।

চলবে——

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-২৭+২৮

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২৭
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

তুহিনা খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন একটা মহিলা। কিন্তু সে যে এইভাবে ধুকা খাবে সেটা তো আর বুঝতে পারে নি।যখন রাহাত এসে কান্না কাটি করে বলে যে ওর বাবা মা কেউ নেই। ওর অসহায় সেই ফেস দেখে বুঝার মতো কোনো উপায় নেই।এতো নিখুঁত অভিনয় বাস্তব জীবনে কেউ করতে পারে তুহিনার জানা ছিলো না।

জানো নীলা আমি বুঝতে পারিনি যে রাহাত আমাকে ঠকাবে আমি।

নীলা তুহিনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অতি আগ্রহ নিয়ে সব টা শুনার জন্য যে রাহাত আসলে কি করে তার কি কাজ। এতো মেয়েদের কেন তুলে আনে।না জানি কত মায়ের বুক খালি
করে দিয়েছে এই শয়তান টা।

ছোট বেলা থেকেই বাবার মুখে শুনতাম তিনি চাইতেন তার একটা ছেলে সন্তান হবে যাকে উনি বড় পুলিশ অফিসার বানাবেন।ছেলে তো আর হয়নি তাই আমাকে একদিন বললেন আমি যেনো তার ইচ্ছে পুরন করি তার মেয়ে হয়েই।বাবা অনেকটা শাসন আর করতেন। কড়া কথা বলতেন।মা আমাকে এসবের থেকে আগলে রাখতেন।

আমি ভাবতাম আমি মেয়ে সন্তান জন্যই বাবা আমাকে ভালোবাসেন না।কিন্তু এই কথা টা একেবারেই ভুল। বাবা আমাকে বকতেন ঠিকই কিন্তু ভালোবাসতেন।

তারপর বাবার ক্যন্সার এর মতো আরোগ্য রোগে মারা গেলেন।মনে হয়েছিল আমার মাথার উপর যে ছাদটা ছিলো সেটা আর নেই।আসলে বাবাদের ভালোবাসা হয় শামুকের খোলসের মতো উপরে শক্ত হলেও ভেতরে একেবারে নরম। আসলে বাবা দের বুঝা খুবই কঠিন। বাবার মৃত্যুর পর তার অস্তিত্ব আমি খুব অনুভব করতাম।

বাবার কথা রাখতেই পুলিশ অফিসার হয়ে বাবার স্বপ্ন করলাম।মা আর আমি অনেক ভালো ছিলাম।প্রথম মাইনে পেয়েই মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনি আর কিছু অনাথ বাচ্চাদের খাবার কিনে খাওয়ায়। ফেরার পথে একটা গাড়ি এসে আমাকে একদম পিসে দিতে যাচ্ছিলো তখন প্রথম রাহাতের সঙ্গে দেখা হয় আর সে দিন রাহাত ওকে বাঁচিয়েছিল। তাই তো রাহাতের এই ভালোবাসার নাটক ধরতে পারে নি।বিশ্বাস করেছিলো আর ওর এক কথায় রাহাতকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় আর নিজের বাড়িতেই রাখে। আর নিজের প্রিয় মানুষকে কেউ কখনো সন্দেহ করে না। চার বছরের সম্পর্কে সে দিন এক দিন ও ধরতে পারে নি যে রাহাত নারী পাচারকারী। একটা বেবিও কন্সিভ করেছিলাম এর মধ্যে। সারে তিন বছরের বাচ্চা ওকে মায়ের কাছেই রেখে আমি ডিউটি তে যেতাম। সারা দিন রাহাত কি করতো কিচ্ছু খেয়াল করতাম না।কারণ ওকে সন্দেহ করার মতো কারণ তো আমার কাছে ছিলো না।

এতো মেয়ে হাড়িয়ে যাচ্ছিলো ইনভেস্ট করছিলাম কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না।চোখের সামনেই সেই লোক ঘুরে বেরিয়েছে আমি ধরতেই পারিনি।টেনশনে মাথা কাজ করছিলো না।ঘুমোতে পারছিলাম না। রাহাত আমাকে শান্তনা দিতো সব ঠিক হয়ে যাবে বলে।তখনও ধরতেই পারিনি যে রাহাত এতো বড় একটা ক্রিমিনাল।

একদিন আমি ডিউটি থেকে তারাতাড়ি বাড়ি ফিরি।ঘরে ঢুকতে যাবো তখনি রাহাতকে৷ কোনো একজন মহিলার সাথে ফোনে কথা বলতে শুনি।আমি সব বলছিলো নয় জন মেয়ে হয়েছে আরো একজন লাগবে।আর আমার যেন কথা টা বিশ্বাস হতে চাইনি। আমার চোখ বেয়ে পানি পরছিলো।এটা শুনার জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না।সেদিন ওকে বুঝতেই দেইনি যে আমি সব টা শুনে নিয়েছি কারণ আমার জানার প্রয়োজন ছিলো এর সাথে যুক্ত থাকা সবার ব্যাপারে।

নীলার যেন এবার শুধু একটা কথা ম্য মাথায় আসছে সেটা হলো মিসেস রিশিকা খান।

মহিলা টি আর কেউ নয় আমার বাবার স্ত্রী রণশিক্ষা খান। আমাকে উনি বিক্রি করতে চাইতেন।বাবার সামনে কিছু না বললেও আড়ালে আমাকে নির্যাতন করতো। তাই আমি তার ওই কু-কীর্তির কথা জেনেও কিছুই বলতে পারিনি।

হ্যাঁ এই কথা টা আমি জানতে পারলাম তোমাদের বাড়ি গিয়ে।আমি শুভ্রকে জানায় সবটা রাহাতের বিষয়ে।আর তখনি শুভ্র এসে বলে তুমি নাকি মুখ ফসকে একটা কথা বলে ফেলেছিলে তোমার সৎমা তোমাকে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। আর তখনি সবটা ক্লিয়ার করার জন্য ইনভেস্টম্যান্ট শুরু করে দেই।খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সবটা। সব প্রমান ও জোগাড় করি শুভ্র আর আমি দুজন মিলে।সব টার পিছনে আরও দুজন আছে। জীনিয়া আর ফাহিম।আর দলের মেইন লিডার তোমার সৎমা।

যারা তোমাকে বার বার তুলতে চেয়েছিলো। কিন্তু পারে নি।আর চলে আসার সুযোগ নিয়ে তুলে আনলো আমিও ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে বেরিয়ে আসি মাঝ পথেই আমাকে তুলে আনে।

এবার যেনো আর নীলা নিজের কান্না চেপে রাখতে পারলো না।শুধু মাত্র আজ তোমার এই অবস্থা তুহিনা আপু।আমার জন্য তুমি তোমার জীবনটা ঝুঁকির মুখে কেনো ফেললে বলো তো।আচ্ছা তোমার ছেলে সে ঠিক আছে তো।ওর সাথেও কিছু করেনি তো।

না মনে হয়না কিছু করতে পেরেছে। কারণ রাহাত নিজের ছেলেকে যথেষ্ট ভালোবাসে।বড় হওয়ার পর কাজের অংশিদার বানাতে চাই কিনা। কিন্তু কিছু করার আগে আমাদের এখান থেকে বেরোতেই হবে যে করেই হোক। আমাদের মাথা ঠান্ডা করে সবটা ভাবতে হবে।

কিন্তু আমরা কিভাবে বের হবো এখান থেকে তুহিনা আপু কিছু ভেবেছো ।

আছে একটা ক্লু যেটা থেকে শুভ্র আমাদের ঠিক খুজে পাবে।তুহিনা নিজের ঘার ঘুরিয়ে একটা জিনিস দেখালো নীলাকে।

আমার ঘারের নিচে জামার সাথে একটা মিনি চিপ লাগানো আছে দেখতে পাচ্ছো। কথা গুলো খুবই আস্তে আস্তে বললো তুহিনা।

নীলা নিজের মাথা টা,কিছু টা উপরে করে দেখতে পেলো সেটা।হ্যাঁ আপু আছে। কিন্তু এটা দিয়ে কি হবে। নীলাও কথা গুলো সাবধানে বললো।

এটা তে লোকেশন ট্র্যাকিং করা আছে। শভ্রর মোবাইলের সাথে কানেক্টেড। আমি যেখানেই থাকি না কেন ও ঠিক খুজে পেয়ে যাবে।আমি জানতাম এরকম কিছু হতে পারে তাই আগে থেকেই এটা করে রেখেছিলাম।

নীলার চোখে মুখে একটা আনন্দের আভাস পাওয়া গেলো।এখান থেকে বেরোনোর একটা আশা আছে তবে আমাদের। শুভ্র আমাদের ঠিক পেয়ে যাবে বলো।

তুহিনা মাথা নাড়লো। তুমি শুধু চুপচাপ দেখতে থাকো কি হয়।এখান থেকে সবাই কে বের করতে হবে।
তারপর ওইভাবেই তারা বসে আলোচনা করতে থাকে।ভোরের দিকে দুজনের চোখ লেগে যায়।আর ঘুমিয়ে পরে। সকালের কিচিরমিচির শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেল দুজনেরই।

নীলা আর তুহিনা দুজনেই নড়াচড়া করছে। এতো শক্ত করে বাধা হয়েছে ওদের হাত পা। বেশি জোরে নরতেও পারছিল না।

তখনি দরজার খিরকি খোলার আওয়াজে দুজনেই চমকে যায় আর সামনের দিকে তাকায়।সামনে থাকা ছায়া মূর্তিকে দেখে বুঝার চেষ্টা জরে দুজনেই কে তারা।

আস্তে আস্তে তাদের মুখ স্পষ্ট হতে থাকে। দেখেই নীলা চমকে যায়। এটা কোন রুপ মিসেস খানের।

★★★★★

শুভ্র সেই থেকে তুহিনাকে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না। ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তুহিনার কোনো বিপদ হলো না তো।শুভ্রর মাথায় কথা টা আসতেই শুভ্রর কপালে চিন্তার ভাজ পরলো। তুহিনা বাসা থেকে বের হওয়ার পরই নীলার কিডন্যাপ তার মানে কোনো ট্র‍্যাপ ছিলো না তো তুহিনা কে বাসা থেকে বের করার।এক্ষুনি তুহিনার বাসায় যেতে হবে।

কাকন চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে ছিলো। শুভ্র কাকন কে আস্তে করে ডাকতেই কাকন হকচকিয়ে উঠলো। আর বাকি সবাই ও চোখ খুলে তাকালো।

মোল্লিকা কিছুক্ষন আগে ঘুমিয়ে পরেছিল।

কি হয়েছে শুভ্র বৌমার কোনো খোঁজ পেলি।
না মা তবে পেয়ে যাবো খুব তারাতাড়ি। সবাই জেগে থাকার ফলে চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।শুভ্র দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি।অনেক বার সে তুহিনাকে ফোন করেছে বাট পাইনি।ওর বাসার নাম্বার ও নেই। তখনি শুভ্র দেখলো

তুহিনার মা( রাবেয়া) ফুয়াদকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালের ভেতরে আসছেন।

সাথে মিস্টার খান,, দাদী (শাহানা খান)। মুন্নি সবাই চলে এসেছেন।

শুধু জীনিয়া আর রিশিকাই আসে নি।

রাবেয়াঃ শুভ্র বাবা কি হলো বলো তো তুহিনাকে কাল রাত থেকে ফোনে পাচ্ছি না। ও তো তোমার বাসায় ছিলো।তাই তোমার বাসাই গেছিলাম গিয়ে জানতে পারলাম তোমরা সবাই হসপিটালে তাই এখানে আসলাম।ফুয়াদ কে পারছিলাম না। মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছিল।কোথায় তুহিনা।

শুভ্রঃ কি বলছেন আন্টি তুহিনা আপনার ওখানে যায়নি। ও তো ফুয়াদ অসুস্থ সে জন্য সকালেই বেরিয়ে গেলো।

রাবেয়াঃ কি বলছো বাবা ফুয়াদ অসুস্থ মানে। ও একদম সুস্থ। এই দেখো ওখন ঘুমাচ্ছে।কান্নাকাটি করে কিছুটা আগে ঘুমিয়েছে।

তার মানে আমি যা ভাবছি সেটাই নয় তো।

হঠাৎ শুভ্রর কিছু একটা মনে হতেই ফোন রেখে কাকন কে বললো চল আমাদের এক্ষুনি বের হতে হবে।

তখনি সামনে মিস্টার খান (নীলার বাবা) এগিয়ে গেলো।

মিস্টার খানঃ তুমি শুভ্র তাই তো নীলা কোথায় বাবা। আমি ইমরান খান নীলার বাবা। আমরাও তোমাদের বাড়িতে গেছিলাম। ওয়াচ ম্যান হসপিটালের ঠিকানা দিলেন।তাই এখানে চলে এলাম।

শুভ্র এর আগে মিস্টার খানকে সামনে থেকে কখনো দেখেন নি। তাই বুঝতে একটু সমস্যা হলো তার। শুভ্র একবার সবাইকে দেখে নিলো।

শুভ্রঃ দেখুন আংকেল অনেকটা লেট হয়ে গেছে আমাদের এক্ষুনি বের হতে হবে। সবটা পরে শুনে নিবেন ওদের থেকে।

তোমরা এদিকে খেয়াল রেখো।প্রাপ্তি তুমি হিয়া আর মাকে দেখে রাখবে। এখন সকাল হয়ে গেছে তেমন সমস্যা হবে না আর এখানে আর কোনো বিপদ হবে বলে মনে হচ্ছে না।আমাদের ইমিডিয়েটলী খুজে বের করতে হবে।

কাকন আর শুভ্র বেরিয়ে এলো হসপিটাল থেকে।

মিস্টার খান, দাদী, মুন্নি,, সবাই ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো অবাক হয়ে।

শুভ্র আর কাকন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আর পুলিশ কে ফোন করলো। কাকন গাড়ি নিয়ে এসেছিলো। দুজনেই গাড়িতে উঠে বসলো। শুভ্র ড্রাইভিং করতে শুরু করলো।

আমরা বেরিয়ে তো এলাম কিন্তু যাবো কোথায়। আর পুলিশ কিভাবে জানবে আমরা কোথায় আছি।

আমি জানি ওরা কোথায় আছে। ট্র‍্যাক করে লোকেশন পেয়ে গেছি।আর পুলিশ কে লোকেশন পাঠিয়ে দিয়েছি।

কিন্তু তুই ট্র‍্যাক করলি কিভাবে।

শুভ্র নিজের মোবাইলটা দেখিয়ে বললো এইভাবে।আমরা আগেউ সন্দেহ করি। এরকম কিছু হতে পারে। তাই আমি তুহিনাকে একটা চিপ লাগিয়ে দিই যাতে কোনো বিপদ হলে আমরা সেখানে পৌঁছতে পারি।

ঠিক আছে তাহলে দেরি কেন করলি। এতক্ষনে আবার অঘটন ঘটতে পারে। নাকি ঘটেই গেছে কে জানে।আচ্ছা লোকেশন টা কোথায় দেখাচ্ছে।

লোকেশন টা কোনো জঙ্গলের ভেতর দেখাচ্ছে।আর তখনি আমার সন্দেহ হলো তুহিনা কোনো বিপদে আছে।এতো কিছুর মধ্যে আমি এই মিনি চিপের কথা ভুলেই গেছিলাম।

শুভ্র জোরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। লোকেশন অনুযায়ী।

চলবে,,,

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২৮
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

আমি ভাবতেই পারছিলাম না মিসেস খান এতো টা ভয়ংকর একটা খেলা খেলতে যাচ্ছিলো। সেদিন আমার সাথে যে লোকটার বিয়ে দিতে চাইছিলেন সে কোনো প্রতিবন্ধী ছিলো না। বরং একটা দাগী স্মাগলার ছিলো। ওই ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার নাম করে আমাকে পাচার করার প্ল্যান করেছিলো।

এসব আপনি কেন করছেন আমার সাথে।বলুন কেন করছেন আমি তো আপনার মেয়েরই মতো। সেই ছোট থেকে তো মানুষ করেছেন।না হয় মন থেকে কোনো কিছুই করেন নি।তাও এতো দিনে আমার উপর কি এতো টুকুও মায়া পরে নি।আপনি না একটা মা।আর একজন মা কি কপ্রে এতো টা নিষ্ঠুর হতে পারে ছিহ্!

তুই ঠিকই বলেছিস আমি একজন মা। তাই তো এতো কিছু করছি।আমার ছেলের ভবিষ্যৎ আর আমার ভবিষ্যৎ এর জন্য। আর তুই থাকলে তো এটা কোনো ভাবেই হতো না।খান বাড়ির কোনো কিছুই কি আমার ছেলে পেতো,,, না পেতো না।তাই আমাকে এসব করতে হচ্ছে।

ছেলে মানে? নীলার ভ্রু যুগল যেনো না চাইতেও কুচকে গেলো।এত দিন তো আমি জানতাম আপনার দুটোই মেয়ে আছে ।তাহলে ছেলে কোত্থেকে এলো।

কেন এই তো আমার ছেলে। রাহাত কে দেখিয়ে বললো।জীনিয়া আর রাহাত দুজনের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো।

জীনিয়া নিজের বুকের নিচে হাত গুলো ভাজ করে গুজে দাঁড়িয়ে আছে।

নীলা আর তুহিনা দুজনের অবাক হয়ে
আর একে অপরের দিকে তাকালো। আর দুজনেই বলে উঠলো।
রাহাত আপনার ছেলে।কিন্তু এতো দিন তো সেটা বলেন নি কখনো।

হ্যাঁ রাহাত আমার ছেলে। জীনিয়া আর রাহাত আমার ছেলে মেয়ে।ওদের আমি পেটে ধরেছি।তাই তো ওরা আমার মতোই হয়েছে।

অন্য মেয়েরা তোমার কি ক্ষতি করেছে।এই নোংরা খেলা টা কেন খেলছো তুমি। তুহিনা রেগে গজগজ করতে করতে বললো।আর ঠিকই বলেছো।তোমার ছেলে মেয়ে তোমারই মতো নোংরা হয়েছে। কথায় আছে না রক্ত কথা বলে।
ভুল করছো তোমরা এখনো সময় আছে রাহাত ভালো পথে ফিরে এসো।না হলে অনেক পস্তাতে হবে।

কোনো দিনই না। এটা তো আমাদের বিজনেস। এটা কি করে ছেড়ে দিতে পারি।আমার বংশ পরম্পরায় ছিলো এটা।

কি বলতে চাইছেন আপনি।তার মানে মিস্টার খান ও এই কাজের সাথে জড়িত। নীলা যেনো কথা টা ভাবতেই পারছে না।মিস্টার খান এরকম একটা কাজে যুক্ত থাকতে পারেন।

জীনিয়া একটু ওগিয়ে এসে বললো।তোর বাপ কেন হতে যাবে আমরা তো আমাদের বাবার কথা বলছি।

তুহিনা আর নীলা আরো বেশি অবাক হয়ে গেলো।

তোমার বাবা মানে। আমি তো জানতাম মিস্টার খানই তোমার বাবা জীনিয়া আপু।

উনি আমাদের বাবা নোন। উনি শধু মাত্র আমার বাবার খুনি।আর কিচ্ছু না। রাহাত রেগে চেচিয়ে বললো কথাটা। আর আমি এর প্রতিশোধ নেবো তোমাকে মেরে ফেলে।

খুনি মানে কি বলতে চাইছেন আপনি। পরিষ্কার করে বলুন আপনার কোনো কথায় বুঝতে পারছি না। নীলার যেনো রুহ টা কেপে উঠলো।

রাহাত ওর বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে।আমার থেকে আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে তোর বাবা ইমরান খান।আমার বাচ্চাদের অনাথ করে দিয়েছিলো তোর বাবা। তাই তো আমি প্রতিশোধ নিতে ইমরানকে বিয়ে করি। আর আমার প্রতিশোধ আজকে পুরন হবে তোকে মেরে ফেলে।

আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি না যে মিস্টার খান কাউকে খুন করতে পারে।হ্যাঁ ঠিক আছে উনি হইতো একটু কঠোর প্রকৃতির মানুষ কিন্তু কোনো খুনি হতেই পারেন না।

হ্যাঁ হ্যাঁ তোর বাবা ইমরান খান দায়ী ছিলো আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য।সেদিন যদি অই ইমরান আমার স্বামীর গোপন নারী পাচারের ব্যবসার কথা না ফাস করতো পুলিশের কাছে।তাহলে এতো কিছু হতো না। ইমরান আর আমার স্বামী ছিলো বন্ধু। কিন্তু ইমরান ছিলো সৎ। কোনো ভাবে আমার স্বামীর এই কাজের কথা ও জানতে পেরে যায়। আর পুলিশকে জানিয়ে সেই ডেরাই নিয়ে যায় যেখানে মেয়েদের রাখতো। আর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পালাতে গিয়ে এনকাউন্টারে মারা গেলো আমার স্বামী।সেদিন যদি ইমরান পুলিশ না নিয়ে যেতো তাহলে আমার স্বামী বেঁচে থাকতেন আর আমার ছেলে মেয়ে ওদের বাবার ভালোবাসা পেতো।

ইমরান খান তো ভুল কিছু করেন নি।আপনার স্বামী ছিলো একটা স্মাগলার।আর একটা স্মাগলার কে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ায় তো ন্যায়ের কাজ। তাই না। উনি একদম ঠিক কাজ করেছিলেন। আর তোমরা করছো৷ প্রতিশোধ নেওয়ার নেশায় ডুবে আছো। তোমরা ঠিকই এর শাস্তি পাবে। তুহিনা মুখ টা আলতো একটু বেঁকিয়ে হাসি দিয়ে বললো।

তুহিনা আপু থাক এদেরকে বলে কোনো লাভ নেই।তবে হ্যাঁ একটা কথা মাথায় রাখবেন মিসেস খান।পাপ কিন্তু বাপকেও ছাড়ে না।যেমন আপনার স্বামী কে ছাড়েনি। পাপীকে আল্লাহ তায়ালা ঠিকই তার প্রাপ্য শাস্তি দেবেন।আর আপনারাও পার পাবেন না।

এই চুপ বড্ড বেশি কথা বলিস তুই। যদি সেদিন তুই না পালাতে পারতিস না তাহলে অই শুভ্র চৌধুরীর সাথে তোর বিয়ে টা হতো না।বাই দ্যা ওয়ে তুই শুভ্র চৌধুরীর মতো একজন ধনী লোক কে কি দেখিয়ে ফাসালি বলতো।কি যাদু করেছিলি যে তোর মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করলো।

মম এর খেলে শেষ করো তো। একে মেরে দাও। আর আমি তখন শুভ্রকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবো।

হ্যাঁ শেষ করার জন্যই তো তুলেছি।মাঝ খান থেকে ওই ফাহিমটা বেগরবাই করছিলো। এই নীলার প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে। তাই তো ওই ফাহিম কে দল থেকে আউট করে দিয়েছি।এই মেয়ের কি দেখে যে এই ছেলে গুলো পাগল হয় বোকা ছেলে গুলোই জানে।

নীলার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
এতোটা খারাপ তোমরা ছিহ।আর কি বললি তুই আমার স্বামীর সাথে সংসার করবি।তো র এই জীবনে সে ইচ্ছে পুরন হবে না।আমি হতে দেবো না।আমার শুভ্রকে তুই কোনো দিনই পাবি না।নীলা রাগে ঝাঝালো কন্ঠে বললো।তুই তোর ওই ফাহিমকে নিয়েই থাক বুঝেছিস আমার স্বামীর দিকে নজর দিলে তোর চোখ উপরে দেবো। কাল নাগিনী একটা।

কোনো মেয়েই তার স্বামীর সাথে অন্য কাউকে ভাবতে পারে না।আর সহ্য করতে পারে।তেমন নীলারও এখন রাগে গা টা যেনো ফেটে যাচ্ছে।

জীনিয়া রাগে গজগজ করতে নীলাকে মারতে যাচ্ছিলো। রাহাত ওকে থামিয়ে দেই।

ভাইয়া মম ওকে থামতে বলো না হলে কিন্তু আমার হাত উঠে যাবে।নেহাত ভাইয়া আটকালো।না হলে আমার সাথে এই ভাবে কথা বলার কারনে ওকে এখানে শেষ করে দিতাম।

রিলেক্স বেটা। এর দম একটু পরেই শেষ। এখন চেচিয়ে নিক যত পারে।চলো আমাদের জীপ রেডি করতে হবে।বাকি মেয়েদের গাড়িতে তুলো।

জীনিয়া আর রাহাত রাগী চোখে তুহিনা আর নীলার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো।

আর রিশিকা নীলার সামনে বসে মুখের কাছে গিয়ে বললো তোর আর একটা সত্যি জানা দরকার। মরার আগে তোর একটা ইচ্ছে আমি পুরন করতেই চাই।

নীলার রেগে বললো আর কোন কুকীর্তির বাকি রেখেছেন আপনি।

তুহিনা মুখ ঘুড়িয়ে নিলো ঘৃণায়।আজ যদি আমার হাত পা বাধা না থাকতো না তোর মতো শয়তানি কুচকরী মহিলাকে আমার শায়েস্তা করতে এক মিনিট সময় লাগতো না।

রিশিকা জোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই তুহিনার গালে।এই তুই চুপ করবি। ভেবেছিলাম তুই আমার ছেলের বউ তোকে কিছুই করবো না আর আমার নাতি কে নিয়ে সংসার বানিয়ে দেবো।কিন্তু এখন দেখি তোর মুখ টাও বন্ধ করতে হবে।

খবর দার আমার ছেলের দিকে নজর ও দেওয়ার চেষ্টা করবি তো তোর অবস্থা রাস্তার কুকুরের মতো করে ফেলবো।একবার শুধু ছারা পায়।তোকে আমি দেখে নিবো।

আব্বে চুপ তুই কি দেখবি। তোর খেলা তো আজই খতম করে দেবো।

আর নীলা তুই কিন্তু তোর বাবার অবৈধ সন্তান নোস । হ্যাঁ তুই তোর বাবার বেধ সন্তান। তোর বাবা কিন্তু তোর মাকে বড্ড ভালোবাসতো। তাই তো লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিলো।আমি সেটা জানতে পেরেই তো অকে ব্ল্যাক মেইল করি। তোর দাদুকে বলে দিতে চেয়েছিলাম।আর সেই ভয় দেখিয়েই তো তোর বাপ কে বিয়ে করি।তোর দাদু যদি জানতো তাহলে তোর বাপ কে সম্পত্তি থেকে এক কানা কড়িও দিতো না।আর আমার হাতের পুতুল হয়ে গেলো।

নীলা যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।কি শুনছে সে এসব। সে কি তবে তার বাবাকে ভুল বুঝতো এত বছর ধরে ভুল বুঝে এসেছে। শেষ বারের মতো কি একবার ও বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারবো না। বাবাকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না। নীলার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো।

হ্যাঁ হ্যাঁ কেদে কেদে বুক একে বারে ভাসিয়ে নে।শেষে যদি কাদার সময় না পাশ।এই বলে শয়তানি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

নীলা কে কি বলে শান্তনা দেবে ভেবে পাচ্ছে না তুহিনা।তাও সে বলল প্লিজ নীলা তুমি কেদো না।শুভ্র ঠিক আসবে আমাদের কে নিতে।তুমি দেখো।

নীলা চোখ বন্ধ করে কাদছে।সে এইবার শব্দ করেই কেদে দিলো।

★★★★
এদিকে শুভ্র আর কাকন প্রায় গন্তব্যের কাছাকাছি চলে এসেছে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একটা কাচা রাস্তা আছে। সেটা ধরেই কিছু টা এগিয়ে যেতেই গাড়ি থামিয়ে দিলো শুভ্র।কারণ আর এগোনো যাচ্ছে না।তাদেরকে হেটেই যেতে হবে।

শুভ্র এবার কি হবে।এখন ত আরো লেট হবে আমাদের। এর মধ্যে কোনো অঘটন না ঘটে যায়।

না না কিচ্ছু হবে না।শুভ্র আর কাকন প্রায় দৌড়ে ভেতরে যাচ্ছে।লোকেশন অনুযায়ী। নর্থের দিকে যেতে হবে ওদের।ঝড়েরবেগে ছুটে যাচ্ছে দুজনেই। সামনে যেতেই দেখতে পেলো লোকেশন ম্যাগাজিনে লাল চিহ্ন টার শেষ মাথায় চলে এসেছে। শুভ্র আর কাকন কিছুটা থেমে সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কোনো কথা বলছে না।ইশারায় কথা বলছে।

সামনে যেতেই দুজনেই একটা ডেরা দেখতে পেলো। যেখানে একটা জীপ দেখা হয়েছে। তারা ওখানেই দাঁড়িয়ে পরল। কারণ গার্ডস দেখা যাচ্ছে। যাদের প্রত্যেকের কাছে রাইফেল আছে।
একটা সুযোগের অপেক্ষা করছে শুভ্র। দরজার কাছ থেকে লোক সড়ার।শুভ্রর মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই সেখানে থাকা একটা মড়া গাছের ডাল তুলে নিয়ে ওদের উল্টো দিকে ছুড়ে মারলো।

গার্ডস টি শব্দ শুনেই শুব্দ ঘুরে তাকালো।আর কে কে বলে এগিয়ে গেলো সেদিকে।

শুভ্র আর কাকন আস্তে আস্তে দরজার ওখানে গিয়েই ভেতরে হুট করেই ঢুকে পরলো।আর লুকিয়ে পরলো।

ভেতরে বেশ অন্ধকার । আর কিছু বস্তার গদি
ছিলো। দুজনেই খুবই সাবধানে ভেতর প্রবেশ করছে।হঠাৎ দেখলো কেউ আসছে তাদের দিকেই।দুজনের চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেলো।এই বুঝি ধরে ফেলবে।দুজনেই সেখানে থাকা বস্তার আড়ালে মুখ চেপে বসে পরলো।

রিশিকা এই পাশ দিয়েই আসছিলো।হঠাৎ ওর মনে হলো হলের ভেতর কেউ ঢুকেছে। রিশিকা এগিয়ে আসছিলো।

শুভ্র দেখতে পেলো যে কোনো এক মহিলা ওদের দিকেই আসছে। তাই সে আশেপাশে খেয়াল করে দেখলো তাদের পাশেই বস্তারর মুখের সাথে দড়ি বাধা। কাকনকে ইশারায় বুঝালো শুভ্র।কাকন একটা বস্তার আর শুভ্র একটা বস্তার দড়ি খুলে নিলো।শুভ্র তার পকেটে থাকা রুমাল বের করে হাতে রাখলো।

রিশিকা এদিকে আসার পর কিছু বুঝে উঠার আগেই শুভ্র আর কাকন সঙ্গে সঙ্গে ওর ওপর ঝাপিয়ে পরলো।মুখে টা রুমাল দিয়ে বেধে দিয়ে হাত পা কাকন বেধে দিলো।

আচমকা এমন আক্রমন হওয়ায় রিশিকা অনেকটা ঘাবড়ে গেলো।উম উম শব্দ করছে।রিশিকা।

রিশিকাকে বস্তার আড়ালে ফেলে দিয়ে শুভ্র ভেতরে রুমের দিকে পা বাড়ালো।এখানে মোট তিনটে রুম।টিনের ছাউনি দেওয়া। জঙ্গলের ভেতর হওয়ায় ঘরটা দিনের বেলাও অন্ধকার লাগে।

হঠাৎ শুভ্রর ভেতরের রুমের দিকে যেতেই শুভ্র আর কাকনের চোখ স্থীর হয়ে যায়।

দ্রুত তারা সেখানে গিয়ে নীলা আর তুহিনার হাত পায়ের বাধন খুলে দেই।

তুহিনা আর নীলার মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
নীলা অস্ফুটে বলে উঠে শুভ্র আপনি।

ছারা পেয়ে তুহিনার নীলা কিছু বলার আগে শুভ্র হাত দিয়ে না করে কথা না বলতে।

নীলা ছাড়া পেয়েই শুভ্রকে জাপটে ধরে। শুভ্র নীলাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেই।

শুভ্র যতটা দ্রুত সম্ভব আমাদের পালাতে হবে।এক্ষুনি ওরা জীপ আনতে গেছে।

কাকন মাথা নাড়লো চল তারাতাড়ি এখান।ওরা চার জন আস্তে আস্তে পা ফেলছে। হঠাৎ তুহিনা কি মনে করে থামলো।তারপর পাশের রুমে থাকা মেয়ের গুলোর কথা মনে পরতেই সে ওখানে চলে গেলো।

শুভ্র আর কাকন কিছুই বুঝতে পারলো না।
হঠাৎ তুহিনা বাকি মেয়ে গুলোকে ছাড়িয়ে বাইরে বের করতে দেখেই বুঝলো তুহিনা কি করতে চাইছে।

তারপর বাকি মেয়ে গুলোকে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডসকে সেখানে পড়ে থাকা একটা বাশ দিয়ে সজোরে আঘাত করে। আর অমনি সেখানেই লুটিয়ে পড়লো লোকটা।

সবাই তারাতাড়ি করে বেরিয়ে পরলো। কিছুটা দুরে যেতেই জীনিয়ে আর রাহাত গার্ডস দের নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো।

চলবে——

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-২৬

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২৬
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলার মুখের মধ্যে আচমকা পানির জোরে ঝটকা লাগায় তার হুস ফিরলো। নীলা পিটপিট করে চোখ খুলে বুঝার চেষ্টা সে করছে সে কোথায়। মাথায় হাত দিয়ে আস্তে আস্তে উঠে বসলো সে। একটা ছিপছিপে অন্ধকার ঘরের মধ্যে নিজেকে দেখেই মনে পড়ে গেলো তার সাথে ঠিক কি হয়েছে। নীলা শুকনো ঢুক গিললো। গলাটা তেষ্টায় ফেটে যাচ্ছে। সামান্য ঢুক গিলতেও তার গলায় বাজছে।নীলা উঠে দাঁড়াতে চাইলেই সে ব্যার্থ হয়ে পরে গেলো তার হাত আর পা বাধা যে সে কিভাবে উঠবে।

কেউ কি আছো। কেন নিয়ে এসেছো আমাকে।হালকা চেচিয়ে কান্না জড়ানো কন্ঠে ডেকে উঠলো নীলা। আরে কেউ আছো হেল্প প্লিজ।

হঠাৎ ফিহার কথা মাথায় আসতেই সে পাগলের মতো শুরু করে দেই।শেষ যে টুকু দেখেছিলো ফিহার হাত টা ওর হাত ছিটকে যায় আর মেয়েটা পরে গেছিলো।

আমার মেয়ে আমার এঞ্জেল এর কিছু হয়নি তো। ও এখন কোথায়। আমার এঞ্জেলের কিছু করেনি তো এই লোক গুলো। আর শুভ্র সে নিশ্চয়ই পাগলের মতো করছে আমাকে না পেয়ে।নাকি উনাকেও তুলে নিয়ে এসেছে এই লোক। অজানা এক ভয় কাজ করছে।চোখ ফেটে কান্না আসছে। হাই আল্লাহ এটা আমার এরা কেন এরকম করছে কেই বা করছে এসব।

হঠাৎ তার কানে শুকনো পাতা মাড়ানোর খচখচ আওয়াজ আসতেই সে বুঝলো এটা কোনো জঙ্গলের মধ্যে কোনো একটা জায়গায়। সে একটু আশার আলো দেখতে পেলো। যদি কোনো ভালো লোক বা কাঠুরিয়া হয় তাকে সাহায্য করতে পারে।

তাই সে জোরে শব্দ করে আবার ডেকে উঠলো কেউ আছেন হেল্প করুন প্লিজ আমাকে কেউ এখানে আটকে রেখেছে। প্লিজ বাঁচান।কান্নার কারণে গলা দিয়ে আওয়াজ আসছে না ঠিক মতো।
হঠাৎ তার পাশে কারোর গঙ্গানোর শব্দ পেলো। মনে হচ্ছে কারোর মুখ বাধা।এখানে পড়ে আছে। আর গঙ্গানোটা যে কোনো মেয়ের সে তা ঠিকই বুঝতে পারলো।

কি হলো এতো চেচাচ্ছো কেন কেউ নেই এখানে যে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে।এখানে যারা আছে তারা শুধুই আমার পাহারাদার। সো চেচিয়ে মাথা খাচ্ছো কেন।

আর সাথে সাথেই নীলা সামনে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছায়া মানব দেখতে পেলো। এই লোকটার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে আগে কখনো এর সাথে আমার কথা হয়েছে আর কোনো দিন দেখা হয়েছে।

ক-ক-ককে আ-আ-প-পনি?আমাকে এখানে কেন তুলে এনেছেন।কি ক্ষতি করেছি আপনার। আপনার আমার সাথে কিসের শত্রুতা।সামনে আসুন ভিতুর মতো মুখ লুকিয়ে অন্ধকারে কেন দাঁড়িয়ে আছেন। নীলা রাগী ক্ষীপ্ত কন্ঠে বললো।

অফহো বড্ড তারা দেখি তোমার। আমাকে দেখার আগে তোমার পাশে থাকা মেয়েটিকে দেখো তো চিনতে পারো। দাঁড়াও তোমার সুবিধার জন্য আলো টা জ্বালিয়ে দিই আগে।

আলো জ্বলতেই নীলা ভয়ে ভয়ে তার পাশে থাকা মহিলার দিকে আস্তে আস্তে তাকালো।তাকাতেই সে কিছুটা ছিটকে দুরে স্বরে গেলো অস্ফুট ভাবে বলে উঠলো তুহিনা আপু। উঠো– উঠো— তুহিনা আপু– উঠো।

আপনি তুহিনা আপুকে কেন তুলে এনেছেন। কি চান আপনি। তারপর ঝট করেই সে সামনে থাকা পুরুষটির দিকে দেখলো।

তাকিয়েই তার ভ্রু দুটো আপনাআপনি কুচকে গেল,,, কপালে ভাজ পরলো।এই পুরুষ টাকে তো সে আগে কোনো দিন দেখেছে বলে তো মনে হচ্ছে না।কে এই পুরুষ।

কে আপনি?? আর তুহিনা আপুর সাথে আপনার কিসের শত্রুতা।আর আমি তো আপনাকে চিনিও তাহলে কেন তুলে এনেছেন আমাকে।

লোকটা আমার কাছে এগিয়ে এসে হাটু গেড়ে বসে পরলো। আর মুখ দিয়ে উদ্ভট আওয়াজে বেঙ্গো করলো।

অপস ! আহারে আমার তোমার সাথে কোনো শত্রুতা নেই কিন্তু তোমার এই তুহিনা আছে না এর সাথে আছে।আর তোমরা ছাড়াও এখানে আরো মোট নয় জন মেয়ে আছে। কাউকে বলো না যেনো হ্যাঁ। তুমি আমার বউ এর বেস্ট ফ্রেন্ডের বউ বলেই তোমাকে বললাম।

নীলা যেনো অবাকের চরম সীমানায় পোঁছে গেছে। কি বলছে এই লোকটা তুহিনা আপু এই লোকটার বউ। এটা কি করে হতে পারে। এই কদিনে তো সে একবারের জন্যও শুনে নি তুহিনা আপুর হাসবেন্ড আছে। আমি কি তাহলে তুহিনা আপুর মতো একটা ইনোসেন্ট মেয়েকে ভুল বুঝতাম।

আপনার বউই যদি হবে তাহলে উনাকে এইভাবে নির্রম ভাবে বেধে রেখেছেন কেন।আপনি মিথ্যা বলছেন।

এই টাই— এই কথাটায় আমি ওকে অনেক বার বুঝিয়েছি।তুমি পুলিশ তুমি তোমার মতো গোয়েন্দা গিড়ি করো গে আমার কাজে বাধা দিও না।কিন্তু শুনলো না কি করব বলো। আমার কাজে যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাকে আমি সরিয়ে দিতে একবারও ভাবি না।তাই তো ছেলের অসুস্থতার কথা বলে মিথ্যা কল করে ওকে তোমাদের বাড়ি বের করে আনলাম আর সুযোগ বুঝে তোমাকে তুলে আনলাম।

নীলা যেনো এবারে আরও অবাকের সপ্তম পর্যায় পৌঁছে গেলো। আর বলে উঠলো পুলিশ। তুহিনা আপু পুলিশ।

হ্যাঁ হ্যাঁ পুলিশ। এর জন্যই আমি তোমাকে এতো দিন তুলতে পারিনি। এই তুহিনা তোমাকে বার বার প্রটেকশন দিয়েছে। আর সেটা তুমি বুঝতেও পারো নি।

হায় হায়রে আল্লাহ যে মানুষ টা আমাকে বাঁচানোর জন্য এতো কিছু করেছে আর আমি তাকে শুধু ভুলই ভেবেছি।কি করে পারলাম আমি এতো বড় একটা ভুল করতে।

আপনি এতো টা নির্দয় কি করে হলেন।আমার কথা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু অন্তত নিজের
স্ত্রীকে তো ছাড় দিতেন।আর আপনার মতো একটা লোক কে তুহিনা আপু কি করে বিয়ে করলো।

ও কি আর আমার আসল ব্যাপার জানতো নাকি।আমি তো ভালো ভোলাভালা সেজে ওকে আমার প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছি।বিয়ে চার বছর পর ও জানতে পারে আমার বিষয়ে।এতো দিনে ও আমার কিচ্ছু করতে পারেনি বোকা মেয়ে সে কিনা পুলিশ হয়েছে। আমি ওকে অনেক বার বলেছি জান আমাদের বাচ্চা ছেলে ফুয়াদের জন্য হলেও তুমি আমার পিছনে লেগো না।না ও কি করলো আমার নামে ডিভোর্স ফাইল করল আমাকে ডিভোর্স দেবে। তাই তো বাধ্য হয়ে তুলে আনতে হলো।

ছিহ আপনি এতো টা নিচ তাই বলে নিজের স্ত্রীকে এইভাবে তুলে আনলেন নিজের বাচ্চার কথাটা ভাবলেন না কেমন বাবা আপনি। কিন্তু আপনার আমাকে তুলে লাভ টা কি।কি হবে আমাকে দিয়ে আর আপনি যে বললেন আরো নয় জন আছে তাদেরকেই বা কেন তুলেছেন।

এই রাহাত নিজেদের কাজ হাসিল করতে সব করতে পারে সব। আর তোমার এতো কথা জেনে কি কাজ।আমিই বা কেন বলছি তোমাকে এসব।
আর একবার যদি চেচিয়েছো তো তোমার গলাটায় কেটে দেবো। একবার ও ভাববো না এটা করতে।এর মধ্যে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরে গেছো আমি ঠিক কি।

এই বলে লোকটা সেখান থেকে চলে গেলো।

নীলা কেপে উঠলো ভয়ে।লোকটার ঝাঝালো কর্কশ কন্ঠ শুনে নীলা ভয়ে জোরোসরো হয়ে গেলো।

তখনি কারোর অস্পষ্ট কথা শুনে পাশে ফিরে তাকায়। তুহিনা বিড়বিড় করে বলছে প্লিজ রাহাত আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ।

নীলা তুহিনাকে ডাকলো তুহিনা আপু উঠো তুহিনা আপু প্লিজ তাকাও।তুহিনা আপু চোখ খোলো।

আস্তে আস্তে তুহিনার জ্ঞান ফেরে।অনেক কষ্টে সে
তাকালো। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে বুঝার চেষ্টা করছে। সে কোথায় আছে।হঠাৎ তুহিনা একটি পরিচিত কন্ঠ পেয়ে পাশে তাকিয়েই চমকে যায়।৷ আর বলে উঠে নীলা তুমি এখানে।একি অবস্থা তোমার।তবে কি যেটার জন্য ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই হলো।

নীলা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো আগে তো নিজের কথা ভাবো আপু। এখনো তুমি আমার কথায় ভেবে যাচ্ছো।

স্যরি আমি তোমাকে বাচাতে পারলাম না নীলা। আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমি আমার কথা রাখতে পারিনি। কাদতে কাদতে বললো তুহিনা।

চোখের কাজল গুলো লেপ্টে আছে তুহিনা আপুর। চুল গুলো এলোমেলো। মাটি লেগে আছে।তাকানো যাচ্ছে না তুহিনা আপুর দিকে।

আপু তুমি আমার জন্য যা করেছো তা তো আমার নিজের বোন হলেও করত না।আর তুমি কিনা আমার কাছে ক্ষমা চাইছো।

তুহিনা কিছুটা নড়ার চেষ্টা করছে। সোজা হয়ে উঠে দুজনেই দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। দুজনের চোখ দিয়েই পানি গড়িয়ে পরলো। এই মুহুর্তে দুজনেই খুবই অসহায়।তাও কিছু একটা মনে পরতেই ছোট একটা আস্থা খুজে পেল তুহিনা।
★★★

ডক্টর বাইরে বেরিয়ে আসায় সবাই উঠে দাঁড়িয়ে পরল। শুভ্র আর মোল্লিকা এগিয়ে গিয়ে বললো ফিহা কেমন আছে ডক্টর এখন।

আমার নাতনি ঠিক আছে তো। ও ঠিক হয়ে যাবে তো। কাদতে কাদতে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

শুভ্র এগিয়ে গেলো ডক্টর ফিহার ব্লক কিভাবে হলো বলুন তো।

দেখুন আপনারা একটু শান্ত হয়ে শুনুন।আপাতত বাচ্চাটি ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা হলো মেয়েটিকে দেখে যা বুঝলাম ওর এর আগেও একবার হার্ট ব্লক এর জন্য সার্জারী করা হয়েছে।তাও সেটা বাচ্চাটির জন্মের পরই। আর আমার মনে হয় সেটা বাইরের কোনো ডক্টর করেছেন।

মোল্লিকা দু কদম পিছিয়ে গেলো।আর ভাবতে লাগলো না না আর কিচ্ছু লুকাবো না আমাকে শুভ্রকে সবটা বলতেই হবে।এখানে আমি শুধু নিজের ছেলের কথা ভেবে একটা ছোট্ট প্রানের সংশয়ে ফেলতে পারে না।কিন্তু আমি তো চেয়েছিলাম মেয়েটা তার বাবার আদর পাক।
প্রাপ্তি কিছু টা দৌঁড়ে এগিয়ে গিয়ে মোল্লিকাকে ধরলো।
আন্টি নিজেকে সামলান প্লিজ আপনি যদি এইভাবে ভেঙে পরেন তাহলে শুভ্র৷ ভাইয়ের কি হবে।

হিয়া ঠিকই বুঝতে পেরেছে তার মায়ের এভাবে ভেঙে পরার কারণ। এটা তো একদিন হওয়ারই ছিলো। সত্যিই টা আর কতদিন এইভাবে লুকিয়ে রাখা যায়।সে মুখ চেপে কান্না করছে।

কি বলছেন ডক্টর জন্মের পর মানে আমাকে একটু খুলে বলবেন প্লিজ কান্না করতে করতে শুভ্র বললো।

দেখুন আমি যা বুঝলাম মেয়েটিকে আগেও ঔষধ দেওয়া হয়েছে।আর হার্ট ব্লক এমন একটা জিনিস যা মায়ের গর্ভের থাকাকালীন শিশুর হয়ে থাকে।তারপর জন্ম হওয়ার পর বাচ্চাটির সার্জারী করে ফুটোটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।কিন্তু বাচ্চা বেড়ে উঠার সাথে সাথে আবার সেই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।মানে আবার ব্লক হতে পারে।সেখানে থেকে বেশি গভীর হলে কিডনির সমস্যাও হতে পারে। আর একটু বড় বাচ্চাদের যেমন আপনার মেয়ের যেমন টা হয়েছে। বুক ধড়ফড় করা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় শরীর নীল হয়ে যাওয়া। আর এটা অতিরিক্ত ভয়ে বা কিংবা উত্তেজনাতেও হতে পারে।

সবটা শুনে শুভ্র হতভম্ব হয়ে যায়। কি বলছেন এসব আপনি। তাছাড়া আমি তো জানিই না ফিহার হার্টে ব্লক আছে। মা তুমি কি জানতে এই বিষয় টা। এই বলেই শুভ্র তার মায়ের দিকে দৃষ্টি দিলো।
মোল্লিকা কোনো কথায় বলছে না।তিনি যেন একদম স্তব্ধ হয়ে গেছেন।

দেখুন এতো চিন্তা করবেন না এখন এসব নিয়ে ভাবার বিষয় না। আপনার মেয়ে শুধু অজ্ঞান হয়ে গেছিলো যে ওর অপারেশন করতে হবে না।নাকের একটা আঘাত পেয়েছে আমরা ঔষধ দিয়ে দিয়েছি।

আর হার্টে যে ব্লক আছে সেটা কি ভাবে ঠিক হবে অপারেশন না করলে।

একটু বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যেমন, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া,, বুক ধড়ফড় করা ,, বাতজ্বর এসব বিষয়ে
নিয়ে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করতে হয়।
প্রধানত দুই ভাবে চিকিৎসা করা হয় সার্জারী করে আর না হলে বিনা অপারেশনে।এটা বড় বাচ্চাদের জন্য। সঠিক ঔষধ ডিভাইস বা বোতাম দিয়ে ছিদ্র বন্ধ করা,,চিকন ভাল্ব বেলুনের মাধ্যমে খুলে দেওয়া জরুরী ভিত্তিতে হার্টের অপরের চেম্বার দুটির মধ্যে ছিদ্র তৈরি করা ও সাময়িকা বা স্থায়ী ভাবে পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা। এছাড়া সঠিক সময়ে শিশুকে সার্জারীর মাধ্যমে সম্পুর্ন সুস্থ করে তুলতে পারে।আর যেহেতু আপনার মেয়েকে ঔষধ দেওয়া হতো আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওর সার্জারী করবো। আর আপনার মেয়ে একবারে সম্পুর্ন ভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে।মুখে একটা হাসির রেখা ফুটিয়ে।

ডক্টরের কথা শুনে সবাই যেনো একটা সস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।

ডক্টর শুভ্রর কাধে হাত দিয়ে শান্তনা দিয়ে বললেন এখন আর চিন্তে নেই মিস্টার চৌধুরী আমরা আপনার মেয়েকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দিবো।

থ্যাংক ইউ ডক্টর। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
থ্যাংক আমাকে নয় আল্লাহ কে দিন। তিনি সহায় না থাকলে এতো বড় একটা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। সাধারণত এই ধরনের রোগীদের মৃত্যুর ঝু্ঁকি থাকে। আসছি ইয়াং ম্যান। আল্লাহ কে ডাকুন।

এই বলে ডক্টর চলে গেলেন।

এতো কিছুর মধ্যে তারা সবাই নীলার কথা ভুলেই গেছে।হঠাৎ শুভ্রর নীলার কথা মাথায় আসতেই আবার কাকন কে ধরে বসে পরলো।নীলা এখন কোথায় কে জানে।ওকে যে বা যারা তুলে নিয়ে গেছে তাদের আমি ছাড়বো না।

নীলা ভাবি কে তুলতে পারে বলতো। তোর কি কাউকে।সন্দেহ হয়।

হিয়া আর প্রাপ্তি চোখের পানি মুছে শুভ্রর দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে একটা উত্তরের আশায়।

শুভ্র যেনো এবার চোখ মুখে ফুটিয়ে তুলে আমি জানি আর ওরা যদি হয় আমি ওদের জ্যান্ত পুতে ফেলবো আমার নীলার যদি কিছু হয় আমি ওদের কে ছাড়বো না।কিছুতেই না।

শুভ্র জানে শুনে মোল্লিকা মাথা তুলে তাকালো শুভ্রর দিকে।আর বাকি প্রাপ্তি কাকন হিয়া সবাই চোখ বড় বড় করে ফেলেছে।

চলবে—-

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-২৪+২৫

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২৪
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

পরদিন সকালে নীলা সারা শরীরে তীব্র ব্যাথা নিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। মাথা টা হাত দিয়ে চেপে ধরে বিছানা থেকে নামলো এবং নিচের দিকে তাকালো। তাকিয়েই ওর চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়।নীলা একদম উলঙ্গো অবস্থায় ছিলো।

আমি উলঙ্গো কেন?নীলার মাথা টা প্রচন্ড ব্যাথায় দবদব করছিলো।কিন্তু ও সঙ্গে সঙ্গেই কিছুতেই মনে করতে পারলো না ওর সাথে ঠিক কি হয়েছে।
গতকাল রাত্রে ও এক্সাক্টলি ঠিক কি কি কান্ড ঘটিয়েছে। মাতাল অবস্থায় ও শুভ্রকে সমানে জড়িয়ে ধরিয়েছিলো। এবং ওর গায়ের উপর বমি ও করে দিয়েছিলো। ওই ঘটনা গুলো মনে পরতে ঝট করে নীলার ঘুমের রেশ কেটে যায়।
আর তারাতাড়ি করে নিজের জামা কাপড় গুলো নিয়ে সেগুলো পড়ে ফেলে। নীলা দৌঁড়ে ঘরে ঘর থেকে বেরোতেই যাচ্ছিলো তখনি সে দেখলো একজন পরিচারিকা এক বাটি হ্যাঙ্গোভার স্যুপ নিয়ে আসছে।

মেডাম আপনি উঠে গেছেন।আর আমার হ্যাঙ্গোভার স্যুপ টাও রেডি!

আচ্ছা আর আপনাদের স্যার কোথায়? নীলা নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো। কারণ ও গিল্টি ফীল করছিলো।

তুমি আর আমায় হাবি বলে ডাকছো না কেন?

নীলার পিছন দিক থেকে একটা স্পষ্ট গলার স্বর ভেসে এলো।

এবং নীলা ইমিডিয়েটলি মাথা ঘুরে তাকালো।

শুভ্র হঠাৎ করে লম্বা লম্বা পা ফেলে নীলার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। ওর দৃষ্টি ছিলো গভীর আর মনোমুগ্ধকর এবং ওর এক্সপ্রেশন ছিলো বরফের মতো শিতল। দেখে মনে হচ্ছিলো তা যেন যে কাউকেই পাথর করে তুলতে পারে।

নীলা মাথা নিচু করে আছে। লজ্জা করছে ওর খুব।কি কি করেছে সে গতকাল রাতে। সে পারলে এক্ষুনি যেন সেখান থেকে পালিয়ে যাবে।কিন্তু তা না করে সে মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে রইলো।

শুভ্র এসে নীলা সামনে দাঁড়িয়ে পরল। কি হলো বলো আমাকে আর হাবি ডাকছো না কেন।আর রাতে তুমি এ্যালকাহোল কোথায় পেয়েছিলে।

পরিচারিকা টি মিটিমিটি হাসছে। তা শুভ্রর চোখে পরতেই বললো তুমি স্যুপ টা আমাকে দাও।পরিচারিকা আর কোনো কথা না বলে শুভ্রর হাতে স্যুপ দিয়ে দিলো আর সেখান থেকে চলে গেলো।

আসো বসবে বিছানায় গিয়ে। শুভ্র স্পষ্ট দেখতে পারছিলো যে নীলা গতকাল রাতের বিষয় টা নিয়ে গিল্ট ফীল করছে।

নীলা কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করেই বিছানায় গিয়ে বসে পরলো।

শুভ্র স্যুপ টা নিয়ে চামচে করে নীলার মুখের সামনে ধরলো।

হা করো।খেয়ে নাও তোমার শরীর দুর্বল। নিজের তো অবস্থা খারাপ করেইছো সাথে আমারও।

নীলা তাও কোনো কথা বললো না।চুপচাপ স্যুপ মুখে পুরে নিলো।
স্যুপ খাওয়ানো শেষ করিয়ে শুভ্র স্যুপ বোল টা টি টেবিলে রেখে নিলার মুখ সযত্নে মুছিয়ে দিলো।

অন্যদিকে ঘুরেই আছে।

শুভ্র শান্ত দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমার দিকে ঘুরে তাকাও।

নীলা তাও তাকালো না।

কি হলো তাকাও। তাকাও বলছি।কিছুটা জোরে চেচিয়ে।

নীলা ভয়ে ভয়ে শুভ্রর দিকে তাকালো। ওর দিকে তাকিয়েই আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো।
নীলা কিছুতেই শুভ্রর চোখে চোখ রাখতে পারছিলো না।

চোখ খুলো। কি সমস্যা তোমার। তোমার সাহস করে হয় ওই সব জিনিস খাওয়ার আর তুমি পেলেই বা কোথা থেকে এই বাড়িতে তো কেউ ড্রিংক করে না।

নীলাকে চুপ থাকতে দেখে শুভ্রর রেগে যায়।

নীলা তুমি কি বলবে নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা নিবো।কোন টা চাও বলো। আর আমি যদি জানতে পারি তুমি কোথা থেকে পেয়েছো তার অবস্থা খুব খারাপ করে দিবো।আমি জানি তুমি নিজে এটা আনো নি। কারোর থেকে নিয়েছো।
কি হলো বলো। ডেম ইট।

শুভ্রর চেচানো শুনে নীলা ভয়ে কেদে দিলো। আর গড়গড় করে বলে দিল।

আসলে গতকাল রাতে আমি বাইরে কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজে বেরিয়ে দেখি দাড়োয়ান কাকা—–

দাড়োয়ান কাকা কি– শুভ্র ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো।

নীলা আমতা আমতা করে বললো দাড়োয়ান কাকা খাচ্ছিলো আর আমি জানতাম ওই বোতল টাই মদ আছে।এখানে দাড়োয়ান কাকার কোনো দোষ নেই আমিই জোর করে নিয়ে এসেছি। উনি আমাকে দিতে চান নি।

শুভ্রর চোয়াল নিমিষেই শক্ত করে ফেলে।আর বাইরে বেরিয়ে যেতে নিলে নীলা উঠে শুভ্রর হাত টেনে ধরে।

আপনি যাবেন না।আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে। প্লিজ আমার জানা খুব দরকার সেগুলো।

শুভ্র নীলার এরকম আকুতি ভরা কন্ঠে শুনে নিজেকে শান্ত করছে। লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করছে।

নীলা ভ্রু দুটো কুচকে আকুতি ভরা নয়নে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে।

শুভ্র পিছনে ফিরে তাকালো নীলার দিকে। বলো কি বলবে।

আপনি আমাকে ভালোবাসেন শুভ্র প্লিজ বলুন।

শুভ্র নীলার প্রশ্নের কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না।কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো—+

হঠাৎ এই প্রশ্ন করলে যে।

না বলুন। আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন না।আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাও একবার আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।

শুভ্র এটাই চাইছিলো যে একদিন নীলা নিজেই তাকে বলবে– তার কাছে জানতে চাইবে আমি ওকে ভালোবাসি কি না।শুভ্র নিজের মনে একটা উষ্ণ সুখ অনুভব করলো। আজ সে বলবে যে সে নীলাকে ভালোবাসে।কারণ সেও যে নীলার চোখে তার জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছে।

নীলা শুভ্রর কাছে উত্তরের আশা করছে।সে শুধু একবার শুনতে চাই ভালোবাসি কথা টা।

শুভ্রর এক নিমিষেই সব রাগ গলে একবারে জল হয়ে গেছে। শুভ্র মুচকি হেসে নীলার দিকে আরও কিছু টা এগিয়ে গেলো। তারপর আলতো করে নীলার নরম সফটেস্ট গালে হাত দিলো —

নীলা শুভ্রর হাতে নিজের হাত রাখলো। অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে।নীলার মনে হচ্ছে সে আজ কে পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষের একজন হতে চলেছে।

আমি তোমাকে ভা——-

শুভ্র আর কিছুই বলার আগে

তখনি তুহিনা প্রায় দৌড়ে এলো। শুভ্র— শুভ্র

শুভ্র নীলাকে ছেড়ে দিয়ে তুহিনার দিকে লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেলো।

কি হয়েছে তোকে এতো অস্থির দেখাচ্ছে কেনো। কি ব্যাপার। কি হয়েছে?

শুভ্র সর্বনাশ হয়ে গেছে।

কি হয়েছে বল আমায়।

শুভ্র আমাকে বাড়ি যেতে এক্ষুনি। ফুয়াদ খুব অসুস্থ হয়ে পরেছে।

কি হয়েছে ওর।তুই যাহ এতো টেনশন করিস না।আমি এদিক টা সামলে নিবো।

কিন্তু তুই তো জানিস এর মধ্যে প্রায় বেশ কয়েক বার নীলার উপর —-
কিছু বলার আগেই ওর চোখ গেলো নীলার উপর

শুভ্র মাথা নেড়ে না করলো।এখানে কিছুই না বলার জন্য।

তুহিনা চিন্তিত হয়েই বললো এখান থেকে একটু আয় প্লিজ। একবার নীলার কে দেখে শুভ্র কে প্রায় টেনে সেখাম থেকে নিয়ে গেলো।

নীলা চাতক পাখির মতো ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। ছলছল চোখে। কি হচ্ছে সব কিছু যেনো নীলার মাথার উপর দিয়ে গেলো। কি বলছিলো তুহিনা এক্ষুনি। ফুয়াদ কে? মনে তো হলো তুহিনার খুব কাছের কেউ। আর আমাকে নিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো।

নীলার চোখ থেকে জল গরিয়ে পরলো।
সে বিছানায় ধপাস করে বসে পরলো।

শুভ্র তুহিনা কে চলে যেতে বললো। একদিনে সব দেখে নিবে। তাছাড়া গার্ডসরা তো আছেই।তুহিনা চলে গেছে ওর বাসায়।

শুভ্র সোফায় বসে আছে চিন্তিত হয়ে।এমন সময় ফিহা খুব সাবধানে পা ফেলে উপরে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য নীলার রুমে যাওয়ার। এখানে শুভ্রকে দেখে ভয়ে ভয়ে সে উপরে উঠছে।যাতে শুভ্র একটুও বুঝতে না পারে।

সে কিছুটা উপরে উঠতেই দৌড়ে নীলার রুমের দিকে চলে গেলো।

শুভ্র সব কিছুই খেয়াল করেছে।ফিহার এহেন কান্ড দেখে শুভ্র এতো চিন্তার মধ্যেও হেসে ফেললো। এই বাচ্চা টির উপর এতো দিনে অনেক মায়া পরে গেছে।আর আমার ওর উপর এই আলাদা যে টান এটা কেন শুভ্রর এখনো অজানা।কে হয় মেয়েটা ওর কেন আমার এই অদ্ভুত টান। কেনো???শুভ্রর এর উত্তর টা সত্যিই জানা নেই।

ফিহা গিয়ে দেখে নীলা বসে আছে। সে একদম হাপিয়ে গেছে।তার মাঝে মাঝেই শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আর একটু দৌড়ানোর ফলে এখন সে অনেকটাই হাপাচ্ছে।

মা —- হাপাতে হাপাতে ডেকে উঠলো ফিহা।

নীলার একটা রিনরিনে কন্ঠে ধ্যান ভেঙে গেল। আর তার ভ্রু দুটো কুচকে গেল।সে ফিহাকে হাপাতে দেখে বললো।

আরে এঞ্জেল কি হয়েছে হাপাচ্ছো কেন। কি হয়েছে মা।নীলা তড়িঘড়ি করে উঠে ফিহাকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিলো।

নীলা ফিহা কে গ্লাসে করে পানি এগিয়ে দিলো।
মুখের সামনে ধরলো ফিহা পানি খেয়ে নিলো।

মা আমি তো বাবাকে ভয় পাই।তোমার কাছে আসছিলাম তখন দেখলাম নিচে বাবা বসে আছে। তাই দৌড়ে এসেছি।ফিহা এখনো অনেকটাই হাপাচ্ছে।

ঠিক আছে এঞ্জেল আর কথা বলতে হবে না।তুমি চুপটি করে বসো।নীলা ফিহাকে টেনে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে নিলো।

আর একটা চিন্তার ভাজ পরলো তার কপালে। এতো ছোট একটা বাচ্চা একটু দৌড়ানোর জন্য এতো টা হাপিয়ে গেলো।বুঝতে পারলো সে কিছু।সে তো সারাদিন বাড়ি থাকতো না।আর ফিহাকেও অতো টা সময় দেওয়া হয়নি।কিন্তু এই দুদিনে সে খেয়াল করেছে এঞ্জেল মাঝে মধ্যে জোরে শ্বাস নেই। আর শরীর রীতিমতো কেমন হয়ে যায়। সেদিন যখন ফিহার মধ্যে অন্যরকম লেগেছিলো শাশুড়ী মা প্রায় আমার থেকে ওকে জোর করে নিয়ে গেছিলো অন্য রুমে।আমি কিছু বলতেই পারিনি।

ফিহা কিছুটা চুপ থেকে বললো মা আমাকে একটু ঘুড়তে নিয়ে যাবে।আমার খুব ইচ্ছে বাবা তুমি আমি একটু ঘুরতে যাবো।আমাকে বাবা একটুও ভালোবাসে না মা। তোমার মতো।যেমন তুমি আমাকে ভালোবাসো।বাবা আমাকে কেনো ভালোবাসে না মা তুমি কি জানো। আমার তো খুব কষ্ট হয়।

ফিহা এখন কিছুটা স্বাভাবিক লাগছে।হাপাচ্ছে না।

নীলা ফিহার এরকম একটা কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলো। এতো টুকু একটা বাচ্চার মনেও যে এতো একটা কষ্ট রয়েছে সে এতো টা ভাবেই নি।নীলার ফিহার কথা ফেলতে পারলো না। সে জানে বাবা মার অভাব টা একটা বাচ্চার মধ্যে কি প্রভাব ফেলতে পারে।ছোট বেলা থেকে আমি যে কষ্ট পেয়েছি আমি এঞ্জেলকে পেতে দেব না। এঞ্জেল ওর বাবা মা দুজনেরই ভালোবাসা পাবে।আমি ওকে ওর বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতে দেবো না।

ঠিক আছে মা আমরা আজ কে সন্ধ্যায় ঘুরতে বেরোবো। ঠিক আছে।

সত্যিই আমরা ঘুরতে যাবো মা। ফিহা নীলাকে জড়িয়ে ধরেই বললো। কিন্তু বাবা যদি না যায় তখন।

হ্যাঁ আমি তুমি আর তোমার বাবাও যাবে। এটা এঞ্জেল এর কাছে তার মায়ের প্রমিস। নীলা ফিহার গালে আলতো করে ছুয়ে বললো।

আমাকে যে করেই হোক শুভ্রকে রাজি করাতেই হবে।এঞ্জেল কে দেওয়া কথা আমি রাখবই যে করেই হোক।

এদিকে দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে শুভ্র সবটাই শুনেছে।সে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো।ভেতরে আসার আগে ফিহার বলা সব কথায় শুনেছে।

চলবে—–

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২৫
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

শুভ্র দৌঁড়ে আসছে হসপিটালের ভেতরে একটা বছর তিন এক এর বাচ্চাকে কোলে করে নিয়ে।বুকের নিচে রক্তে লাল হয়ে যাওয়া একটা সাদা প্রিন্সেস গাউন। সাদা রক্ত হীন হয়ে যাওয়া একটা নরম মুখ।সারা শরীর নীল বর্ন ধারণ করেছে।আর গোল হয়ে কুঁকড়ে যাওয়া একটা শরীর । ঢুকেই ডক্টর ডক্টর বলে চেচাচ্ছে। শুভ্র একদম পাগলের মতো করছে।

ভেতর থেকে একটা নার্স এসে বললো।কি হয়েছে স্যার প্লিজ ডক্টর কে ডাকুন। এই মেয়েটা কে বাঁচান।

নার্সটি দেখেই বুঝে গেছে মেয়েটির হার্টে ব্লক আছে তাছাড়া তো কারোর শরীর এই ভাবে নীল হবে না।

তারাতাড়ি ডাকুন না। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছেন ডক্টর কে ডাকুন তারাতাড়ি।

নার্স বাচ্চা মেয়েটি কে একটা স্ট্রেচারে শুইয়ে দিতে বললো মেয়েটিকে।শুভ্র শুইয়ে দিয়েও ওর একটা হাত ধরে আছে।

নার্স টি ডক্টর কে ডেকে আনলেন। ডক্টর এসে দেখে বাচ্চাটির খুবই নাজেহাল অবস্থা। একি এই বাচ্চাটির তো দেখে হচ্ছে মনে ব্লক আছে।

শুভ্র এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলো। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো না চাইতেও। ব্লক—- অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো শুভ্র।

এতো কিছু বলার সময় নেই মিস্টার চৌধুরী। আমি আপনাকে পরে বুঝিয়ে বলছি সব টা।ওকে এক্ষুনি কেবিনের ভেতর শিফট করতে হবে।নার্স কুইকলি নিয়ে যান না হলে খুব মুশকিল হয়ে যাবে।তারাতাড়ি করুন।আপনারা খুব দেরি করে ফেলেছেন।

নার্স টি তারাতাড়ি বাচ্চাটিকে কেবিনের ভেতর নিয়ে গেলো।

শুভ্র তখনও বাচ্চাটির হাত ধরেছিলো হাতে টান পরতেই হাত টা শুভ্রর হাত থেকে ছেড়ে গেলো।

শুভ্র দেখা বসে পরলো।

দেখুন মিস্টার চৌধুরী আপনি এই ভাবে ভেঙে পরবেন না।বাচ্চাটি আপনার কি হয় তারাতাড়ি বলুন। আর না হলে আমরা অপারেশন শুরু করতে পারবো না।

শুভ্র কিছুটা অস্পষ্ট ভাবেই বলে দিলো বাচ্চাটি আমার মেয়ে। ওকে বাচান ডক্টর যে করেই হক ওকে বাচাতে হবে ডক্টর।

ডক্টর কিছু টা অবাক হলেও কিছুই বললো না।শুভ্রর একটা সাইন নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে চলে গেলেন।

শুভ্র সেখানেই বসে কেঁদে উঠলো হুহু করে।একটা পুরুষ মানুষ যে এইভাবে কাঁদতে পারে সেটা শুভ্রকে না দেখলে বুঝা যেতো না।

হ্যাঁ সেই বাচ্চা মেয়েটি আর কেউ নয় ফিহা।
ফিহারই হার্ট ব্লক আছে।

শুভ্র নিজেকে কিছুটা শান্ত করে নিজের বাসায় ফোন করে বাকি সবাইকে হসপিটাল আসতে বললো।

কি জবাব দেব আমি মা কে কি জবাব দেব ফিহার কিছু হলে যে নিজেকে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারবো না আমি।

শুভ্র নিজের মাথায় হাত দিয়ে কপাল চাপরাচ্ছে।তার নীলার কথা শোনা উচিত হয়নি আজ যদি নীলার কথা না শুনতো তাহলে এতো কিছু কক্ষনো হতো না। শুভ্রর চোখ দুটো কান্নার কারণে লাল হয়ে গেছে।চোখ গুলো ফোলা ফোলা হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে।

কতক্ষন পর মোল্লিকা,, কাকন,, প্রাপ্তি, হিয়া সবাই হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে দৌঁড়ে ছুটে আসছে।

হিয়াকে নিয়ে আসতে চাইনি কিন্তু সে জোর করেই চলে এসেছে। কাকন আর প্রাপ্তি ওরা হিয়ার হুইল চেয়ার ঠেলে আনছে।

মোল্লিকা এসেই শুভ্রকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেছে।

শুভ্র আমার নাতনি ফিহা কোথায়। মোল্লিকা কাঁদতে জিজ্ঞেস করলো।

শুভ্র বসে থেকেই অপারেশন থিয়েটারের দিকে আঙুল দিয়ে দেখালো।

মোল্লিকা সেখানে থাকা চেয়ারে বসে পরলো। এতো দিন যেটার জন্য ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই হলো এখন কি করবে। মোল্লিকা মুখে হাত চেপে কাঁদছে।

হিয়াঃ আর ভাবি,,ভাবি কোথায় ভাইয়া।তোরা তিন জন তো এক সাথে বেরিয়েছিলি।

শুভ্র এক ধ্যানে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এখনো সে কেদে যাচ্ছে।

প্রাপ্তিঃ শুভ্র ভাই প্লিজ বলুন নীলা কোথায়। ওকে দেখতে পারছি না কেন। প্রাপ্তি কাকনের দিকে তাকিয়ে বললো প্লিজ কাকন শুভ্র ভাই কে বলতে বলো।নীলার বড় কোনো বিপদ হয়নি তো।

কাকনঃ শুভ্র এই ভাবে চুপ করে থাকিস না। তুই যদি এইভাবে চুপ করে থাকিস তাহলে আমরা বুঝবো কি করে এক্সাক্টলি কি হয়েছে।

সবার চোখে মুখে বিষন্যতার ছাপ। সবার চোখেই পানি।সবার চোখেই পানি।

শুভ্র দুই হাটুর উপর দুই হাত রেখে মাথা নিল ডাউন করে বসে আছে। আর চোখ দিয়ে পানি ফেলছে।

কাকন গিয়ে শুভ্রর দুই বাহুতে হাত দিয়ে শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো ভাবি কোথায়??

মোল্লিকাঃ তোরা তিন জন তো খুব খুশি মনেই বেরিয়েছিলি। আমার নাতনি টা তো কত দিন পর বাবা মায়ের সাথে কত টা খুশি ছিলো। নীলা কোথায় শুভ্র বল।

মোল্লিকা একেবারেই ভেঙে পরেছে।

শুভ্র এবার কাকন কে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।

নীলাকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে।কান্না ভেজা গলায় শুভ্র বললো।আমি কিচ্ছু করতে পারিনি।কিচ্ছু না। আমি স্বামী হিসেবে নিজের স্ত্রীকে রক্ষা করতে অক্ষম। আমার নীলার কথা শুনা ঠিক হয়নি।আজ সন্ধ্যায় বেরোনো টায় যে আমাদের কাল হয়ে দাঁড়াবে আমি বুঝি নি।

কথা টা যেনো সবার কানে বিশের কাটার মতো গিয়ে লাগলো। মোল্লিকা হিয়া প্রাপ্তি সবাই এবার শব্দ করে কেদে দিলো।
———————-*———————*—————–
ফ্ল্যাসব্যাক—-

শুভ্র নীলার এরকম অনুরোধ ফেলতে পারেনি।আর নীলা যে ফিহাকে কথা দিয়েছিলো সেটা তো শুভ্র জানে। সে চাই না নীলা ফিহার কাছে ছোট হয়ে যাক। আর নীলা বিয়ের পর এক এই একটা আবদার করেছে আর শুভ্র সেটা ফেলতে পারেনি। তাই সে রাজি হয়ে যায়।

নীলা ফিহাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। একটা সাদা প্রিন্সেস গাউন পরিয়ে দিলো ফিহাকে।আজ ফিহা অনেক খুশি। ফিহাকে চুপ টি করে বসিয়ে দিল।সেও চুপ করে বসে বসে তার মাকে দেখে যাচ্ছে। আজ ফিহা কারনে অকারণে হেসে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে সে হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে।

নীলা আজকে একটা ব্ল্যাক শাড়ি পরেছে। হিয়ার কাছ থেকে একটু কাজল আর লিপস্টিক এনে পরে নিল। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক,চোখে কাজল।তাতেই তাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

নীলা তোমাদের কি হলো।বের হতে হবে তো নাকি।

হ্যাঁ আমি এবং আমার মেয়ে দুজনেই রেডি একদম।

শুভ্র নীলার দিকে তাকাতেই ওর চোখ যেনো স্থীর হয়ে যায়। ব্ল্যাক শাড়ি তে নীলা কে খুব সুন্দর লাগছে।আর আজ প্রথম নীলাকে সাজতে দেখলো।লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁট যেনো শুভ্রর চোখে নেশা লাগিয়ে দিচ্ছে। নীলার কমল নরম ঠোঁট তাকে কাছে টানছে।।
ওয়াও ওয়ান্ডারফুল! হোয়াট এ্যা বিউটি। এতো টা সুন্দর কেন তুমি কথা গুলো শুভ্র জোরেই বললো।

নীলা শুনতে পেয়েই বললো কি বললেন আবার বলুন।কিছু টা লজ্জা মিস্রিত কন্ঠে। আস্তে করে বললো। আর ওভাবে হা করে তাকিয়ে থাকার কি আছে। এর আগে কি দেখেন নি নাকি আমাকে।

উম হুম দেখিনি তো ঠোঁটে লিপস্টিক চোখে কাজল।ব্ল্যাক শাড়ি। একজন খুব রূপবতী তরুণীর কারিশমা ফুটে উঠেছে। নিজেকে সামলানো যে দায় হয়ে পরছে মেডাম।

শুভ্র সু্যোগে বুঝে নীলাকে এক টানে কাছে নিয়ে আসলো।

নীলা চোখ গুলো ইয়া বড় বড় করে ফেলে।সেদিনের কথা মাথায় আসতেই মুখ টা চেপে ধরলো সে। এখন কি সত্যিই শুভ্র ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়ার জন্য আমার ঠোঁটে—-

গতকাল রাতে তো বেশ আমাকে তুমি বলছিলে হাবিও বলেছো।আর এখন লজ্জা পাচ্ছো।
নীলার পেটে শুভ্র আস্তে আস্তে স্লাইড করছে।

এই আপনি কি করছেন কি।নীলা রীতিমতো কাপছে।

কেন দেখতে পারছো না কি করছি।বউকে আদর করছি।এত দিন অনেক ছাড় দিয়েছি।রাতের মতো জড়িয়ে ধরতে বলবে না।নাকি আমিই ধরবো।

ছাড় দিয়েছেন মানে।আপনি কিন্তু খুব অসভ্য হয়েছেন।ছাড়ুন বলছি।

নীলা শুভ্রর বুকে হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছে।

একটু জড়িয়ে ধরতে দাও।
আজ এসব বলতে শুভ্রর কোনো রকম কোনো দ্বিধা কাজ করছে না।

এদিকে যে ফিহা বসে আছে তাদের তো সে দিকে খেয়ালই নেই।

ফিহা এসব দেখছে।সে ভাবছে তার মাকে বাবা মাড়ছে।হুম আমাকে তো ভয় দেখানো হয় তাই না । দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।এক্ষুনি দাদুনকে ডেকে আনছি।আমার সামনে আমার মাকে মাড়ছো দুষ্টু বাবা একটা। সে চুপিচুপি পা ফেলে চলে গেলো।

এদিকে এরা এখনো নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত।শুভ্র দুষ্টু হাসি দিয়ে নীলার ঠোঁটের দিকে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

নীলা চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। এই লোকটার কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই। কি হয় মাঝে মাঝে এই লোকটার উনিই জানেন।

ক–ক্ক-ক্ক- কি করছে—-

নীলা আর কিছুই বলতে পারলো না।তার ঠোঁট জোড়া কারো ঠোঁটে আবদ্ধ হয়ে গেছে।তরল কিছু অনুভব হতে নীলা শুভ্রর কোর্ট টা খামচে ধরেছে।

শুভ্র নীলার গালে হাতে দিয়ে নীলাকে চুমু খেয়ে যাচ্ছে।নীলার মিষ্টি রসালো ঠোঁট শুষে নিতে থাকে।

নীলা শুভ্রর পেটে হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছে।মুখ দিয়ে উম উম শুব্দ ছাড়া কিছুই বের হচ্ছে না।

তার সারা শরীরে যেন একটা শিহরণ বয়ে গেলো।

শুভ্র এখনো নীলার ঠোঁট নিজের মুখে নিয়ে আছে।বেশ কিছুক্ষন পর সে নীলাকে ছেড়ে দিলো।

দুজনেই হাপাতে লাগলো।নীলা উল্টো দিকে ঘুরে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো।অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করছে তার।

শুভ্রর তারাতাড়ি নিচে নেমে আসলো। মুখে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে সে এখন।

এদিকে মোল্লিকা তো ফিহার কথা শুনে প্রায় ছুটে আসছিলো আর দেখলো শুভ্র নিচে নেমে আসছে।তিনি আর উপরে গেলেন না।হইতো তিনি বুঝতে পেরেছেন।উনি মুচকি হাসি দিয়ে বললো ফিহা তোমার বাবা তো এখানে। তোমার বাবা কি তোমার মাকে মাড়তে পারে।তোমার ভুল হয়েছে বুঝতে।

কিন্তু দাদুন আমি তো দেখলাম যে মাকে টেনে ধরেছে।

মোল্লিকা এবার আহাম্মক হয়ে গেলো। কথা ঘুড়ানোর জন্য বললো —আচ্ছা ফিহা তোমরা না আজ ঘুরতে যাচ্ছো।

এক মুহুর্তেই ফিহার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।হ্যাঁ দাদুন আমরা ঘুরতে যাচ্ছি।বাবা আমাকে আর মাকে নিয়ে যেতে রাজি হয়েছে।

তখনি নীলাকে নিচে নেমে আসতে দেখে শুভ্র হাটা ধরলো।

নীলা মাথাটা নিচু করে মোল্লিকাকে বিদায় জানিয়ে ফিহাকে নিয়ে বাইরে আসলো।

শুভ গাড়িতে উঠতে নিলে নীলা বলে উঠলো আমরা আজ গাড়িতে যাবো না প্লিজ। এখান থেকে পার্কে হেটে যেতে ২০ মিনিট লাগবে।আমরা কি হেটে যেতে পারি। আর নদীর পাড়ে হাটবো। গাড়ি নিয়ে কি করবেন।

না গাড়িতে যাবো আমরা উঠে এসো।

ও বাবা মা যেটা বলছে শুনো না।বলেই ফিহা মাথা নিচু করল।

অনেক অনুরোধ করায় শুভ্র আর কথা বাড়ালো না।আর বেশি দুরের পথ না।সব ইচ্ছা যখন রাখলাম এটা বাদ যায় কেন। আমি ওদের সাথে থাকতে কেউ কিছু করার সাহস পাবে বলে মনে হয় না।

চলো যাওয়া যাক তবে।

নীলা আর ফিহা শুভ্রর পিছনে হেটে হেটে যাচ্ছে।

তারা প্রথমে পার্কে আর নদীর পাশে দিয়ে হেটে বেরিয়েছে। সামনে একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে তিন জন বসেছে। ফিহা এটা সেটা বলছে।

খাবার খাওয়ার পর সেখান থেকে বেরিয়ে আবার হাটা ধরে।

এর মধ্যে নীলা একটাও কথা বলে নি।আর শুভ্র মাঝে মধ্যে টুকটাক কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।

হঠাৎ ওর হাতে কোনো নরম কচি হাতের স্পর্শ পেতেই নিচে তাকালো। দেখলো ফিহা অর হাত ধরে আছে।

একটা হাত দিয়ে নীলার আর একটা হাতে আমার একটা আঙুল ধরে আছে। কেন যেন এই মুহুর্তে সে ফিহাকে কিছুই বলল না বরং একটা মুচকি হাসি দিয়ে তিন জনেই হেটে যাচ্ছে।এই মুহূর্ত টা তিন জন খুবই উপভোগ করছে। নীলাও মুচকি হাসছে।

হঠাৎ ফিহা দাঁড়িয়ে পরল। আর আঙুল দিয়ে দেখালো বাবা আমি আইসক্রীম খাবো এনে দেবে।

নীলাও বললো হ্যাঁ শুভ্র জান না এই মুহুর্তে আইসক্রিম হলে মন্দ হয় না।

ঠিক আছে তোমরা এইখানে দাঁড়িয়ে থাকো আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি। এখান থেকে নরবে না।

ঠিক আছে আপনি নিয়ে আসুন।

এত আনন্দের মধ্যে শুভ্র কিছু একটা ভুলেই গিয়েছিল।

সাধারণত রাত নয়টার পর এই রাস্তায় বেশি লোকজন যায় না।

হঠাৎ ওদের সামনে একটা গাড়ি এসে এক টানে নীলাকে গাড়ির ভেতর তুলে নিলো। আচমকা এমন টা হওয়ায় নীলার হাত থেকে ছিটকে পড়ে
ফিহা।পরে নাক ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসে।আর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

নীলা চিৎকার করে একবার শুভ্রকে ডেকে উঠে।শুভ্র পিছনে ঘুরে যা দেখে তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। শুভ্রর পা যেনো নরতেই চাইছে না স্থীর হয়ে গেছে। ফিহা হাত বাড়িয়ে বাবা বাবা বলে ডাকছে।

শুভ্র দৌঁড়ে আসছে। ফিহার গায়ে রক্ত দেখে অনেক টা ঘাবড়ে যায়। সে ফিহাকে
কোলে তুলে নিলো।

যেন লোক গুলো এটারি অপেক্ষা করছিল কখন শুভ্র অদের থেকে দুরে যাবে আর কখন অরা তুলে নিয়ে যাবে।

—-+++++—–
সবটা শুনে সবাই একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে।

কে আমাদের এত বড় ক্ষতি করলো।হিয়া কেদে কেদে বললো।
সবাই কান্না করছে মোল্লিকা তো কপালে হাত দিয়ে কেদে যাচ্ছে।

তখনি ভেতর থেকে ডক্টর বেরিয়ে এল।

ডক্টর কে বেরিয়ে আসতে দেখে শুভ্র উঠে দাঁড়ালো।—–

চলবে—-

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-২৩

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২৩
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলার পরীক্ষা শেষ। এখন সে একদম ফ্রি।সব সময় সবার সাথে আনন্দ কাটলেও শুভ্রর সাথে একটা চাপা অভিমান কাজ করে তার। কারণ পরীক্ষার কয় দিন শুভ্র নীলাকে আনতে পর্যন্ত যাই নি। ইভেন বাসায় ও ঠিক করে কথা বলে না। সারাদিন অফিসে আর রাতে তুহিনার সাথে কাজ করেন থাকে। তবে সে এটা বুঝেছে তুহিনার সাথে শুভ্রর আলাদা বাজে কোনো সম্পর্ক নেই।শুভ্র বা তুহিনা কারোর মধ্যেই এরকম কোনো কিছুই তার চোখে পরে নি। উনাদের দেখে মনে হয় সিরিয়াস কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বাট কি সেটাই বুঝতে পারি না।

আর নীলা খুবই খুশি।নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে টা কোনো জাকজমক করে না হলেও খুব ভালো লাগছে। হইতো তেমন আনন্দ করতে পারিনি।তাতে কি ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করেছে সে। কজনের হয় এমন ভাগ্য!

সবচেয়ে বড় কথা হলো কাকন ভাইয়ার সাথেই প্রাপ্তির বিয়ে হয়ে গেছে। কাকন ভাইয়ার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর তাকে দেখার মতো কেউ ছিলো না। হঠাৎ করেই কাকন ভাইয়া প্রাপ্তির বাড়িতে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে যান। প্রাপ্তির বাবা মাও আপত্তি করেন নি। সিম্পল ভাবেই উনারা প্রাপ্তির বিয়ে টা দিয়ে দেন। তাছাড়া উনার সেরকম সামর্থ্যও ছিলো না যে নিজের মেয়ের বিয়ে একদম ধুমধামে দিবেন।তবে যেটুকু করেছেন খুব সুন্দর ভাবেই করেছেন।

কাকন ভাইয়া আমাকে রোজ আনতে যেতেন। আর প্রাপ্তির সাথে চোখাচোখি ইশারায় কথা বলতেন। দুজন যে দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছিল আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম।
উনার রোজ যাওয়া আসা সব টাই অবলোকন করতাম আমি।গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন আগে থেকেই।প্রাপ্তিও মুচকি মুচকি হাসতো। সময় কতো তারাতাড়ি চলে যায় তাই না।

এইসব ভাবছে নীলা নিজের ঘরে বসে। শুভ্র অফিস থেকে আসেন নি এখনো। আজ শুভ্র আসলে নীলা কিছু প্রশ্ন করবে ভেবেছে।কেন শুভ্র আমার সাথে এমন করছে। আমি কি উনার যোগ্য নয়। আমি তো উনার কাছে নিজের স্ত্রীর দাবী অব্দি করিনি কখনো। আমাকে উনি সত্যিই ভালোবাসেন তো।

নীলা বসে বসে ঝিমাচ্ছে। রাত ১১ টা । শুভ্রর এখনো আসার নাম নেই।

নীলা আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলো ঢুলতে ঢুলতে। পানি খেয়ে নিলো সে।

তারপর কিছু একটার আওয়াজ পেলো। নীলা ভ্রু দুটো কুচকে নিলো।এত রাতে কিসের আওয়াজ এটা। সে আস্তে আস্তে মেইন ডোর খুলে একটু সামনে গিয়ে দেখে কেউ একজন বসে হাতে বোতল নিয়ে কিছু একটা খাচ্ছে।

নীলা চোখ কচলে নিলো স্পষ্ট ভাবে দেখার জন্য। না সে তো সত্যিই দেখছে। কে এই লোক। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখে দাড়োয়ান কাকা হাতে একটা বোতল নিয়ে কিছু একটা খাচ্ছে। আর হাতের পাশেই আরও একটা বোতল রাখা।

নীলা সামনে গিয়ে দাড়োয়ান কাকাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো।

আরে দাড়োয়ান।কাকা আপনি কি খাচ্ছেন এসব এতো রাতে।

আরে মেম সাহেব এত রাতে আপনি এখানে কি করছেন। কিছুটা টুলতে টুলতে।

আপনার কথা এরকম কেন লাগছে। এইভাবে কেন কথা বলছেন।আর আপনার হাতে কি এসব।
দাড়োয়ান কাকার বয়স প্রায় 50 এর উপরে হবে।

আরে মেম সাহেব আমি যা খাচ্ছি এগুলো খেলে দুঃখ উপসম হয়। সে আপনি বুঝবেন না।

আচ্ছা এই গুলো খেলে দুঃখ থাকে না বুঝি।তা দেখি আমাকে একটু দাও তো খেয়ে দেখি।আমারও অনেক দুঃখ। এই বলে পাশে থাকা বোতল টা সে তুলে নিলো।

দাড়োয়ানের কিছুটা হুস আসে।আরে আরে মেম সাহেব কি করছেন।আপনি খাবেন না এগুলো। আপনার জন্য নয় এসব।দাড়োয়ান কাকা উঠে দাঁড়িয়ে পরল।

কিহ তুমি আমাকে খেতে না করছো।তুমি জানো আমি তোমার স্যার কে যদি বলি তোমার চাকরি টা আর থাকবে না।

না না মেম সাহেব এটা আপনি খাবেন না।দিয়ে দিন আমাকে।

এই তুমি কি ভয় পাও না। চাকরি হাড়ানোর।এতো বার যখন না করছো তাহলে তো খেতেই হয়।

কে শুনে কার কথা। দাড়োয়ান কাকা চেয়েও কিছু করতে পারলেন না।

না এখানে খাওয়া যাবে না।আমি বরং এটা নিয়ে ঘরে যায়।সে হাটা ধরলো।

মেম সাহেব আপনি খাবেন না এটা।দিয়ে দিন প্লিজ। এবার বুঝি সত্যিই নিজের চাকরি টা হাড়াতে হবে। দাড়োয়ান কাকা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো।

নীলা বোতল টার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিলো। তারপর অটা নিয়ে সোজা নিজের ঘরে সোফায় গিয়ে বসলো ।

রাত ১ টা ছুই ছুই।শুভ্র বাড়িতে আসলো। রুমে ঢুকেই সে দেখলো নীলা খুব বাজে ভাবে সোফায় শুয়ে আছে।

শুভ্রর কাছে ঠিক লাগছে না সবটা।

নীলা তুমি কি একটু ভদ্র ভাবে থাকতে পারো। শুভ্র নীলার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এলো। আর নীলাকে টেনে তুললো।

সাপকনস্যিয়াসলি নীলার ফ্ল্যার্ট তল পেটের দিকে নজর গেলো।

শুভ্র চোখ সরিয়ে নিয়ে শুভ্র দাত খিচিয়ে বললো—

নীলা একটু ভদ্র ভাবে থাকো।

নীলা মাথা নিচু করে তারপর শুভ্রর দিকে তাকালো —-

হ্যাবি তুমি আমার উপর খুবই নির্দয়।

শুভ্র নিজের রাগ টা কন্ট্রোল করে বললো-
আমি তোমার উপর আরোও নির্দয় হতে পারি।

হ্যাবি তুমি কি আমাকে ঘৃণা করো। ভালোবাসো না। নীলা শুভ্রর দিকে তাকালো।

শুভ্রর নীলার কথা শুনে খুব একটা ভালো লাগছে না।এরকম লাগছে কেন ওর ভোয়েস টা। নীলা কি ড্রাংক এখন।ওর বুঝতে আর অসুবিধে হয়নি। কিন্তু নীলা এখানে এ্যলকাহোল কোথায় পেলো।

ওর মুক্তোর মতো সাদা ঝকঝকে দাত দিয়ে নিজেই নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলো।আর তাতে শুভ্রর ঠোঁট কিছুটা লাল হয়ে গেলো।
অদ্ভুত ভাবে শুভ্রর হার্টবিট যেনো মীস হয়ে গেলো।

নীলার দিকে তাকিয়ে শুভ্র প্রথমে ওকে ইগনোর করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তাও শুভ্র ধৈর্য্য ধরে নীলাকে শান্তনা দিয়ে বললো।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমায় ঘৃণা করি না।
শুভ্র নীলাকে কোলে তুলে নিলো। খাটে শুইয়ে দিলো।

নীলা নিজের হাত আর পা ব্যবহার করে ইমিডিয়েটলি শুভ্রর উপর শুয়ে পড়লো।

নীলার এরকম করাতে শুভ্রর নিজেকে কন্ট্রোল করা অনেকটা কঠিন হয়ে পরলো।

সে নিচে তাকিয়ে নীলার মাথার দিকে দেখলো।সে বাধ্য মেয়ের মতো ওর কাধে মাথা রেখেছিলো।
ওকে দেখে মনে হলো ও ঘুমিয়ে পরেছে।এবং ওর চোখের পাতা গুলো একটা এংগেলে নড়াচড়া করছে।।

5 ফুট 6 ইঞ্চির উচ্চতায় ওকে ঠিক বেটে বলা যায় না। ও সত্যিই অন্য অনেক মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি লম্বা ছিলো।কিন্তু এখন যখন ও শুভ্রর উপর শুয়ে ছিলো ওকে খুবই ছোট দেখাচ্ছিলো।এটা সহজেই শুভ্রর ওকে প্রটেক্ট করতে উদৃতো করেছিলো।

নীলাকে শুইয়ে দেওয়ার পরেও ও শুভ্রর গলা জড়িয়ে ধরে ছিলো।

ওর ছোট্ট ফর্সা মুখটা যেটা এ্যালকাহোলের জন্য লাল হয়ে উঠেছিলো সেটা শুভ্রর খুব কাছাকাছি ছিলো। নীলার শরীরের গন্ধ ওর নাকে এসে লাগছিলো।একটা হালকা বিবোস ভাব ওর শরীরে ছড়িয়ে পরছিলো।

হাবি আমি কি তোমাকে হাগ করতে পারি।একবার হাগ করি না। ওই তুহিনা তো তোমাকে সেদিন হাগ করেছিলো আমি দেখেছি।

তুমি কি জানো তুমি কার সঙ্গে কথা বলছো আর কার সম্পর্কে।

কেনো আমি তো আমার হাবির সাথে কথা বলছি। নীলা একটা ঘোরের মধ্যে বললো। তুমি তো এই কদিনে আমার সাথে কথাও বলো নি ঠিক করে। সারাদিন অফিস,, অফিস থেকে বাড়ি এসে অই তুহিনার সাথে মিটিং।কি এতো কথা তোমার ওর সাথে। আমি কি একটুও সুন্দরী না।বরং আমি ওর থেকে বেশিই সুন্দরী।

এক মুহুর্তের জন্য শুভ্র সত্যিই স্পিচলেস হয়ে পরলো। সত্যিই সে নীলার সাথে কথা বলেনি। টুকটাক কথা বলতো। নীলার পরীক্ষার জন্য রাতে পড়তে বসতো আর আমি তুহিনার সাথে ইচ্ছা করেই বেশি কথা বলতাম।যাতে ওর পড়াই ব্যাঘাত না ঘটে।

ভালো ভাবে থাকো। আর তুমি এসব কেন খেয়েছো।আর পেলেই বা কোত্থেকে। কে দিলো তোমায়।

নীলা আর কিছুই বললো। শুভ্র নীলাকে ছেড়ে উঠতে চাইলো কিন্তু পারলো না। বাধ্য হয়ে সে শুয়ে রইলো। ও শুধুই নীলার নরম চুলে বিলি কাটতে থাকলো।

আমায় একটু হাগ করো না শুভ্র প্লিজ।
ও বিরবির করে এসব বলতে থাকলো।

শুভ্র কোনো উপায় না দেখে অকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিলো এবং ওকে তার কাধের খাজে মাথা রাখতে দিলো।এতে করে ওর বডি জমে পাথর হয়ে গেলো। আর ওর বডি ইন্সটেন্টলী শক্ত হয়ে উঠলো। যাস্ট শুভ্রর চোখের একটু নিচেই নীলার শ্বাসের আর গ্লিসারের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলো।

নট ব্যাড।শুভ্রর শরীর নরম হয়ে এলো।ফাইনালি শুভ্র ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলো আর তারপরেই নীলা চোখ বুজা অবস্থায় নীলার চিৎকার শুনতে পেলো।

আমার এখনো একটা হাগ চাই।

শুভ্র ভ্রু কুচকালো আর নিজের কপালে মাসাজ করতে লাগলো। এই মেয়েটা আমাকে এতো আকড়ে আছে কেনো।

এবং ঠিক তখনি নীলার বিছানা থেকে একটা জোরে আওয়াজ পাওয়া গেলো।

শুভ্র ঝট করে মাথা ঘুরিয়ে দেখলো নীলা অলরেডি বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে গেছে।
যদিও মেঝেতে মোটা কার্পেট পাতা ছিল তবুও সে দেখতে পেলো নীলা যথেষ্টই চোট পেয়েছে।

শুভ্র নীলাকে ধরে তুলতে যাবে তার আগেই নীলা উঠে দাঁড়িয়ে পরল।

নিজের কপাল টা চেপে ধরে নীলা উঠে দাঁড়ালো।আর ব্লেম দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকালো।

ও যখন সামনে শুভ্রকে দেখলো ও ভ্রু কুচকালো আর কনফিউজড হয়ে জিজ্ঞেস করলো —

কি হয়েছে শুভ্র আমি এখানে কেনো।

সো ফাইনালি নীলা আর শুভ্রকে হাবি বলছে না।

তুমি পুরো ড্রাংক। যদি জেগে গিয়ে থাকো তো উঠো। ঘুমোবার আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নাও।

নীলা একটা ও বলে রিপ্লাই করলো। যেনো সে অন্য কিছু ভাবছিলো। ও আবার বিছানায় গিয়ে উঠার জন্য মাটিতে খানিক হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলো। যাইহোক নীলার শরীর টা দুর্বল আর নিস্তেজ হয়ে গেছিলো।

হামাগুড়ি দিয়ে দুবার চেষ্টা করেও সে বিছানায় উঠতে পারলো না।

নীলাকে এরকম বিসৃঙ্খল ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে দেখে শুভ্রর মনে হলো যদিও সে অলরেডি একবছরের সমান ধৈর্য্য শেষ করে ফেলেছে তাও নিজেকে সাকসেসফুলি কনেভেন্স করলো নীলার দিকে যেতে। কোনো হ্যাজিটেশন ছাড়ায় সে নীলাকে কোলে তুলে নিলো।

নীলা শক্ত হয়ে গেলো আর ধীরে ধীরে ওর মুখ লাল হয়ে উঠলো।

শুভ্র নীলার দিকে তাকালো না। কিন্তু ও ফীল করতে পারলো নীলার দুটো হাতই ওর জ্যাকেটের কলার শক্ত করে ধরেছে।

ওর চোখের লম্বা লম্বা পলকগুলো সামান্য নাড়াচাড়া করে উঠলো। নীলাকে ক্যারি করার সময় শুভ্রকে মারাত্বক হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছিলো।ওর দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে থাকতে না পেরে নীলার প্রায় দম আটকে আসছিলো। ও শুভ্রকে শুধু শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে পেরেছিলো এবং খুবই ভয়ে ভয়ে ছিলো যে ভুল করে যেনো ও কোনো দীর্ঘ শ্বাস না ফেলে।

শুভ্রর কলার ধরে টানতে টানতে নীলা নিজের মুখ উচু করলো।এবং ধীরে ধীরে শুভ্রর মুখের খুব কাছে এগিয়ে গেলো।

শুভ্র মাথা নিচু করলো ও যখন নীলার উজ্জ্বল মুখ আর চোখের দিকে তাকালো ওর ভেতর কার আগুনে শুভ্রর সমস্ত বিচার বুদ্ধি সম্পুর্ন লোপ পেয়ে গেলো।

নীলার নরম লাল ঠোঁট দুটো দেখে ওর চোখ স্থির হয়ে গেলো। ওর ফোলা ফোলা রোসালো ঠোঁট দুটো যেনো চুমু খাওয়ার জন্যই বানানো হয়েছে।

শুভ্রর মাথায় কিছু একটা আসতে ওর ঠোঁটের এক কোনা বেকে গেলো। তখন শুভ্র এতোটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেছিলো যে নীলাকে কোলে নিয়ে আর নড়াচড়াও করতে পারছিল না।ওর চোখ তখনো শুধুই নীলার চোখের দিকেই আটকে ছিলো।

তারপর সে ধীরে ধীরে আরো নিচের দিকে তাকাতে শুরু করল।

ঠিক তখনি নীলা ওয়্যাক করে উঠলো —

শুভ্র শুধু ফীল করতে পারলো যে ওর গায়ে গরম কিছু পড়েছে। এবং সেটা গড়িয়ে পড়ছে।

নীলা শুভ্র গায়ে বমি করে দিয়েছে। শুভ্র আর সহ্য করতে পারছিলো না। আর সাথে সাথে নীলাকে তুলে বাথরুমে নিয়ে গেলো।

সে নীলাকে বাথটবের ভেতর নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো।
শাওয়ার স্প্রে টা তুলে নিলো আর সেটা ডিরেক্টলী নীলার মাথার উপর তুলে ধরলো।

শুভ্র নিজেই বাথটবে বসে ফোর্সফুলি ওকে পরিষ্কার করে দিতে লাগলো।

পানিতে ডুবে থেকে নীলা ভীষণ রকম রিফ্রেশ ফীল করতে লাগলো । ও একটা কম্ফোর্ট যায়গা খুজে নিয়ে তখনি সেখানে ডিরেক্টলি শুয়ে পড়লো। ও শান্ত হয়ে শুয়েছিলো শুভ্রর হাতে মাথা রেখে।ওর চোখ দুটো বুজা ছিলো আর মুখ টা সামান্য উপরের দিকে তুলা।

গরম পানিতে গোসল করে ওর ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠেছিল।।

যেনো কোনো দামী বেস্ট কোনো রুজ লাগানো হয়েছে। ওর দীর্ঘ চোখের পাতার উপর গরম পানির বাষ্প্য জমে শিশিরের ফোটার মতো দেখাচ্ছিলো।

শুভ্র ঢোক গিললো এবং খুব কষ্ট করে নীলার দিক থেকে নিজের দৃষ্টি সরালো। বাতাসে হাত নাড়িয়ে ওকে এখানেই ছেড়ে যেতে।এই ঝনঝাটের মেয়েটা ওকে সত্যিই খুব সমস্যায় ফেলছে।

যাইহোক ও যখন নীলাকে পানির মধ্যে দেখছিল ওকে ঠিক যেন একটা মৎস্যকন্যার মতোই দেখাচ্ছিলো। শুভ্র থমকে গিয়ে দুবার ভাবলো তারপর ধীরে ধীরে নীলার কাছে এলো এবং ঝোট করে ওকে তুলে নিয়ে বেড়িয়ে এলো।

চলবে—-

ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-২২

0

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২২
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

সকালের মিষ্টি রোদ জানালার কাচ ভেদ করে আছড়ে পরছে নীলার মুখে।নীলা নড়ে চড়ে উঠলো। হঠাৎ সে তার পেটে ভাড়ী কিছু অনুভব করলো। সে এদিকে পাশ ফিরে তাকালো। তাকাতেই সে চমকে গেলো।কারণ তার পাশেই শুভ্র শুয়ে আছে। আর তার একটা হাত তার পেটের উপর দেওয়া।

নীলার অদ্ভুত একটা শিহরণ হতে লাগলো।সে শুভ্রর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।নীলা আরো কিছু টা এগিয়ে গেলো খুবই সাবধানে।
সে শুভ্র একেবারে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো।মনে হয় সারাদিন এইভাবেই দেখতে থাকি।এই মানুষ টাকে তার না দেখতে পেলে ভালো লাগে না!!

আচ্ছা মানুষ টাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।। কেন তার সৌন্দর্য্য সব সময় আমাকে কাছে টানে। কেন ছটফট করতে থাকে এই চোখ দুটো উনাকে দেখার জন্য। এই তুহিনা আসার পর থেকে সে এটা ফীল করতে পেরেছে।

আসলে শুভ্র যে ভাবেই থাকুক না কেন ওকে সেভাবেই সুন্দর দেখতে লাগে। একটা এর‍্যোগেন্সের ছাপ রয়েছে। নীলার অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। নীলার হঠাৎ শুভ্রর লাল গোলাপি শুকনো ঠোঁটের দিকে চোখ আটকে গেলো।সে না চাইতেই শুভ্রর ঠোঁটে হাত নিজের কোমল হাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিলো। তার এই মুহুর্তে আর একটা কাজ করতে মন চাইছে। মনে হচ্ছে এই ঠোঁটে জোরে একটা বাইট বসিয়ে দেই। খুবই লোভনীয় লাগছে শুভ্রর ঠোঁট জোড়া যা নীলাকে আকৃষ্ট করছে।নিজের অবাধ্য মনকে শান্ত করতে পারছে না সে। তাই সে আস্তে আস্তে নিজের মুখটা শুভ্রর দিকে অগ্রসর করতে থাকলো আর আলতো করে শুভ্রর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছঁইয়ে দিলো।

আর সঙ্গে সঙ্গে শুভ্র হালকা নড়ে উঠলো। নীলা ঝট করেই উল্টো দিকে পাশ ফিরলো।আর নিজের মুখ চেপে ধরলো। এইরে টের পেলো নাকি।নিজের মাথায় নিজেই একটা গাট্টা দিলো।কি সব করে বসিস তুই নীলা। যদি জেগে যেতো তাহলে কি লজ্জাজনক একটা অবস্থায় পরতে হতো তাকে।ইশ ভাবতেই কেমন লাগছে।আর থাকা যাবে না আবার কখন কি করে বসি নিজেই বুঝতে পারবো না।

নীলা শুভ্রর হাত টা আস্তে আস্তে নিজের পেট থেকে সরিয়ে দিলো। আর উঠে পরলো বিছানা থেকে।

তারপর একটা ড্রেস হাতে নিয়ে চলে গেলো বাথরুমে।

নীলা যেতেই শুভ্র চোখ খুলে তাকালো।আর কিছুক্ষন আগের কথা ভাবলো।নীলা যে তাকে এইভাবে কিস করবে সে ভাবে নি।হ্যাঁ শুভ্র জেগে গেছিলো যখন নীলা ওর ওঠো হাত বুলাচ্ছিলো।আর সে ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে ছিলো।সে দেখতে চেয়েছিলো নীলা ঠিক কি করে। তাহলে কি আমি যা ভাবছি সেটাই।নীলাও আমাকে — কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিয়ে চোখ টা বন্ধ করে ফীল করতে লাগলো কিছুক্ষন আগের মুহুর্ত টাকে।

নীলা বিশ মিনিট পর বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো।সে একটা কালো রঙের চুরিদার পরে বের হলো। গীল্ডেন ওড়না আর গোল্ডেন চুরিঙ্গা আর কালো রঙের জামার উপর গোল্ডেন সুতার কাজ।খুবই নিঁখুত ভাবে কাজ টা করা হয়েছে।কালো রঙের ওপর গোল্ডেন কাজ আরও সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। সে কখনো সাজ গোজ করে নি।সব সময় খালি লিপস্টিকবিহীন ঠোঁটেই থেকেছে। আজ কে তার খুব করে মন চাচ্ছে নিজেকে একটু সাজাতে।বাট সে লিপস্টিক কোথায় পাবে।

কিচ্ছু করার নেই তার। কারণ সে এখন কোনো ভাবেই নিজের ইচ্ছে টা পুরন করতে পারবে না।
সে নিজের মনে চুল গুলো আচড়ে নিচ্ছে।

এদিকে শুভ্র তার প্রিয়সীকে দেখতে ব্যাস্ত। সে চোখ খুলে নীলাকে দেখে যাচ্ছে। ওর ফর্সা স্কিনে গোল্ড কালার যেনো নীলার স্কিনের সাথে একদম আরো বেশি সুন্দর ভাবে মিশে গেছে।

নীলা চুল গুলো আচড়ে পিছন দিকে ফিরে তাকালো। আর দেখলো শভ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা শুভ্র যে কালকে বললো সত্যিই কি আমি খুব ব্লাস করছিলাম। এটা ভেবেই সে লজ্জায় মিইয়ে গেলো।

শুভ্র আস্তে আস্তে বিছানা থেকে ধীর পায়ে হেটে এগিয়ে যাচ্ছে নীলার দিকে তাকিয়ে থেকেই।
সে যেনো নিজের হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে গেছে এই মুহুর্তে। সে হাড়িয়ে যাচ্ছে নীলার মাঝে। সেই নীল চোখে। ওর চোখ গুলো যেনো কোনো টলমল জলের স্বচ্ছ সরোবরের মতো। যাতে মাঝে মাঝে কাঁপন ধরছিল। তার মোমের মতো ফর্সা মুখ — তার কাপতে থাকা চোখের লম্বা লম্বা আই লেস গুলো নীলার সুন্দর মুখশ্রী কে আরও নিখুঁত করে তুলেছিল। তার লিপস্টিক বিহীন ঠোঁট দুটো ছিলো ঠিক কমলার লেবুর কোয়ার মতো!! ওগুলো দেখে যে কারোর মনে কামনা আর উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।ওবং হৃদয়ে ডিস্টার্বিং তৈরি হতে পারে।যেমন টা শুভ্রর এখন হচ্ছে।

নীলা দেখলো শভ্র তার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে একদম কাছে চলে এসেছে। নীলা শুভ্রর সেই নেশাতুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো শুভ্রর চোখ যেন আজ অন্য কিছু বলছে।

নীলা পিছিয়ে যাচ্ছে আর শুভ্র সে নিজের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। দুজনের কেউই কথা বলছে না।
নীলা এক সময় পিছনে থাকা আয়নার সাথে লেগে বসতেই ড্রেসিনের উপর রাখা জিনিস ফ্লরে পরে যায়। সেদিকে দুজনের কোনো খেয়াল নেই।তারা দুজনেই এখন কেউ কারোর মধ্যে নেই।

নীলা অস্ফুটস্বরে বললো—-কক্ক—কি করছেন শুভ্র।

শুভ্র নীলার কোনো কথায় না শুনে ওর একটা হাত চেপে ধরলো। নীলার হাতের আঙুলের ভাজে ভাজে নিজের আঙুলগুলো দিয়ে আরেকটা হাত আয়নার উপরে ভর রেখেছে।আস্তে আস্তে নিজের মুখটা অগ্রগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নীলার দিকে।

এদিকে নীলার তো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। শুভ্রর এইভাবে হুটহাট কাছে আসা। তার শরীরের শিরা উপশিরায় কম্পন সৃষ্টি করছে।সে শিহরিত হয়ে কেপে কেপে উঠছে। নীলা চোখ বন্ধ করে নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরেছে।

শুভ্র আর নীলার মাঝ খানে এক ইঞ্চি পরিমাণ গ্যাপও ছিলো না। একে অপরের নিশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ সেখানে নেই।

হঠাৎ শুভ্র নিজের মুখ টা নীলার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে নেশাত্বক কন্ঠে বললো তোমাকে লিপস্টিক বিহীন ঠোঁটেই বেশি সুন্দরী দেখায়।সো লিপস্টিক এর প্রয়োজন হবে না।আর যদি তুমি লিপস্টিক দাও তাহলে তোমার অই ঠোঁট জোড়ায় প্রচন্ড ভাবে কামড়ে দিবো।

নীলা চোখ খুলে দেখে শুভ্র ওর দিকে মুখ টা আলতো বাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। আর উনার কথায় এতটা মাদকতা কেন। এই কন্ঠই যথেষ্ট একটা মেয়ের উনার প্রেমে পরার জন্য।

শুভ্র নীলার হাত ছেড়ে দিয়ে ওখান থেকে চলে আসলো। আর বাথরুমে চলে গেলো
এমন ভাব করলেন যেনো কিছুই হয়নি।

শুভ্র চলে যেতেই নীলা যেনো হাপ ছেড়ে বাঁচলো।সে বুকে হাত দিয়ে বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে থাকে। আচ্ছা উনি কি করে বুঝলেন আমি লিপস্টিক দিতে চাইছিলাম।সে ভাবতে ভাবতে বিছানায় বসে পরলো।

কিছুক্ষন আগে যা হলো সেটা কি ছিলো। শুভ্রর মাঝে মধ্যে এহেন কান্ড কেন করে নীলা এখনো বুঝতে পারলো না। আচ্ছা উনি আমাকে ভালোবাসে নাকি না।আমি যে স্পষ্ট উনার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পেলাম আজ আবারও। তাহলে কাল রাতে কি আমি ভুল শুনলাম। উনাকে ভুল বুঝছি না তো আমি।অন্য কিছু আছে নিশ্চয়ই। আমি পুরো বিষয় না জেনে কিছুতেই শুভ্রকে ভুল বুঝবো না।আমাকে জানতে হবে আসলে ব্যাপার টা ঠিক কি।

নীলা আর বসে না থেকে নিচে নেমে আসে।এসে দেখে শাশুড়ী মা ফিহা কে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। বাট ফিহা খাচ্ছে না।

আরে এঞ্জেল মা খাচ্ছো না কেন।দুস্টুমি করে না মা খেয়ে নাও।

মা আমি তোমার কাছে খাবো।কখন থেকে বলছি তোমাকে যেনো ডাকে।আমি ডাকতে যাচ্ছিলাম আমাকেও যেতে দিচ্ছিলো না।

মা আপনি আমাকে ডাকতেন। আমি খাইয়ে দিতাম ওকে।

না মা আমি ভাবলাম তুমি ঘুম থেকে উঠনি।তাই ডাকিনি। শুধু ঘুম টা ভেঙে যেতো তোমার।তাছাড়া মা তুমি না থাকলে তো আমাকেই ওকে খাইয়ে দিতে হয়।

মা আমার অভ্যাস আছে সকালে ঘুম থেকে উঠার। আমি তো আমার বাড়ি তে খুব সকালে উঠে সব কাজ করে তবেই কলেজ যেতাম।

তাই বলে এখানেও ডাকতাম নাকি। আমি অমন দজ্জাল শাশুড়ী নয়। যে সকাল সকাল নিজের ছেলের বউ কে ডেকে তুলে বাড়ির সকল কাজ করাবো। আমি তো তোমাকে আমার হিয়ার থেকে আলাদা চোখে দেখি না।

নীলার চোখে পানি চলে এসেছে। এই ভাবে তার জন্য এই প্রথম কাউকে ভাবতে দেখলো।সে মাথা নিচু করে নিলো।

ফিহা বললো ও মা মা তুমি কি কাদছো।

আরে নীলা মা তুমি কাদছো কেন।

আসলে ছোট বেলা থেকে লাথি গুড়ি খেয়ে বড় হয়েছি তো এইভাবে আমাকে নিয়ে কেউ ভাবেনি আর কেউ ভালোবাসেনি।মায়ের আদর কি আমি জানতাম না।আজ মনে হচ্ছে আমি সবচেয়ে সুখী মানুষের মধ্যে একজন।এটা আমার যে আমার সুখের কান্না।

আচ্ছা ডোন্ট ওয়ারি মা। তাই বলে তুমি কাদবে। আমি কিন্তু এবার খুব বকবো।

আচ্ছা মা কাদবো না। এঞ্জেল সোনা এদিকে আসো আম্মু আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।

মোল্লিকা ফিহাকে নীলার দিকে পাঠিয়ে দিলো।
নীলা ফিহাকে কাছে নিয়ে খাওয়াতে খাওয়াতে বললো।আচ্ছা এঞ্জেল আমি যখন ছিলাম না তখন তুমি কার কাছে খেতে বলো তো।

কেনো দাদুনের কাছে।তখন তো তুমি ছিলে না তাই তো দাদুন আমাকে খাইয়ে দিতো।

তাহলে আমি তো বাড়িতে সব সময় থাকি না। আমার তো কাজ থাকে।তাহলে আমি যখন না থাকবো তখন তুমি আর কিন্তু না খাওয়ার বায়না করবে না।দাদুনের কাছে খেয়ে নিবে।
আর আমি যখন থাকবো তখন না হয় তোমাকে তোমার মা খাইয়ে দিবে ঠিক আছে।

কিন্তু আমার তো তোমার থেকে খেতেই ভালো লাগে।
আমি তো বললাম আমিই তোমাকে খাইয়ে দিবো।আমি না থাকলে লক্ষ্যি মেয়ের মতো দাদুনের কাছে খেয়ে নিবে। আর এঞ্জেল আমার কথা না শুনলে মাম্মাম তোমার সাথে আড়ি করে দিবে ।

ঠিক আছে মা আমি দাদুনের সব কথা শুনবো। তাও তুমি আড়ি করো না।

ঠিক তো। এইতো আমার এঞ্জেল গুড গার্ল।

এই বলে নীলা ফিহাকে জড়িয়ে ধরলো। ফিহাও আবেসে নীলাকে ধরে নিলো।

মোল্লিকা সবটা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো। কান্নায় ভড়ে উঠলো তার চোখ। তিনি আড়ালে নিজের চোখ মুছে নিলেন। তিনি তো এরকম একটা মেয়ে চাইছিলেন। যাতে তার নাতনী কে ভালোবাসবে নিজের মেয়ের মতো।মোল্লিকা নীলার মধ্যে সেই মাতৃত্ব টা দেখতে পেয়েছিলো প্রথম দিন দেখেই। মোল্লিকা দুরে দাঁড়িয়েই ওদের মা মেয়েকে প্রান ভরে দেখে যাচ্ছেন।

নীলা ফিহাকে খাইয়ে দিয়ে কলেজ যাওয়ার জন্য রওনা দিয়ে দিলো। ড্রাইভার কে বললেন। ড্রাইভার নীলাকে কলেজ দিয়ে গেলেন।নীলা চাইছিলো না শুভ্রর মুখোমুখি হতে। তার কেমন যেন অদ্ভুত ভাবে লজ্জা লাগছিলো ওর সামনে পরতে। তখন কার ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা ভেবে সে আনমনে হেটে কলেজের ভেতর চলে গেলো।
———————————————————–
জীনিয়া একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। ফাহিমের সাথে সে দেখা করতে এসেছে।আজ ওকে সবটা জানিয়ে দিবে যে ফাহিমকে সে বিয়ে করবে না।
জীনিয়ার ভাবনার মধ্যে ফাহিম সেখানে চলে আসলো।

হঠাৎ এতো সকালে ডেকে পাঠালে যে।কোনো প্রব্লেম।

জীনিয়া ফাহিমের দিকে তাকালো। আর বললো না। দেখো ফাহিম আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।

হোয়াট? তুমি জানো তুমি কি বলছো।তুমি কি মজা করছো আমার সাথে। তোমার সাথে আমার বিয়ে এটা প্রায় সবাই জেনে গেছে।আর এখন তুমি বলছো যে বিয়ে করবে না।

আমরা একটু ঠান্ডা মাথায় কথা বলি।আমি শুভ্র চৌধুরীকে প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি।আর আমি ওকেই বিয়ে করতে চাই।আর আমি এটাও জানি তোমার আমার প্রতি আর ভালো লাগা নেই। তুমি যে নীলাকে পছন্দ করো সেটাও আমি জানি। ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো সেই দিনই আমি বুঝেছি। আমি শুভ্র কে পেলে তুমি নীলাকে পেয়ে যাবে।

ফাহিম মাথা নিচু করে নেই।আসলেই সে নীলার প্রেমে পড়ে গেছিলো সেই দিন দেখেই।
তো এখন তুমি কি করতে চাইছো।শুভ্র চৌধুরী কি তোমাকে বিয়ে করবে নীলাকে ছেড়ে দিয়ে।এতোটা সহজ হবে না বুঝেছো। শুভ্র চৌধুরী অনেক পাওয়ারফুল আমরা পেরে উঠবো না।

আমি দেখে নিবো।সব টা প্লেন টা আমি তোমাকে জানিয়ে দিব।আর হ্যাঁ আজকের পর তোমার সাথে আমার আলাদা কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
আর এটা বলতেই তোমাকে ডাকা।

ঠিক আছে যা তুমি চাও। তবে মনে রেখো আমি নীলাকে পেতে চাই। সেটা যেভাবেই হক না কেন।

তুমি তোমার লক্ষ্য ঠিক রাখবে আর আমি আমার। বাই।

ফাহিম ও মাথা নাড়লো।

এই বলে দুজন দুজনের গাড়ি করে চলে গেলো।

চলবে——