Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1467



তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-২৫+২৬

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৫

এমন সময় বাসার টেলিফোন করে রেহনুমা । আবুল কল ধরতে ই রেহনুমা বেগম চিৎকার করে বলে উঠে,

–অভ্র কোথায় অভ্রকে ফোনটা দেও।

–ম্যাম অভ্র বাবা তো দরজা খুলছে না।

–কী বলছো এসব।

রেহনুমা আহমেদ ভয় পেয়ে যায় আজ তো মিহির বিয়ে আমার ছেলেটা কিছু করে বসেনি তো। অভ্রকে যতটা চিনি অভ্র তো এমন ছেলে না। তাও নিজের সন্তান তো কষ্ট তো হবে ই।

সকাল বেলা লোকজনের কথা বলার শব্দ ঘুম ভাঙ্গে মিহির।
ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম আজ আমার বিয়ে। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে তাকাতে ই দেখি কাজিনগুলো বসে বসে গল্প করছে। আমাকে উঠতে দেখে ই বললো,

—আপু এতো দেরি করে ঘুম ভাঙ্গলো তোমার। তা চা নাকি কফি।

–খাবো না।

–বোনের হাতে আজকে খেয়ে নেও কালকে না হয় জামাই এর হাতে খাবে।

কথাটা বলে ই সবাই হাসা শুরু করলো। আমাদের ঐদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। শুধু জানি আজকে আমার জীবনটা বলি দিতে হবে বেচে থাকতে হবে জীবন্ত লাশ হয়ে।

–এই আপু কী ভাবছো এতো।

মুখে হাসি রেখে উওর দিলাম কিছু না। বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে আবার ফোনটা নিলাম, এখনো যে আমার অনেক কাজ বাকি অভ্রকে সেদিনের ঘটে যাওয়া সত্যের মুখেমুখি না করতে পারলে যে আমার শান্তি হবে না।ফোনটা হাতে নিতে ই মেহেদী রাঙ্গা হাতটা চোখে পড়লো, হাতে বড় বড় অক্ষরে লিখা রক্তিম নামটা ও চোখে পড়লো। উঁহু এই হাত তো আমি অভ্রের জন্যে রাঙ্গাতে চেয়েছিলাম। এই বড় বড় অক্ষরে তো অভ্রের নামের থাকতো কিন্তু ভাগ্য আমাকে আজ এই নির্মম পরিস্থিতিতে ফেলেছে।এসব ভাবনা বাদ দিয়ে অভ্রের নম্বরে কল দিতে ই আবার সুন্দর কন্ঠে অসুন্দর সত্যটা কানে আসলো। এখন ও ফোন বন্ধ তাহলে কী এই সিম ইউস করে না।

–মিহি।

মায়ের ডাকে পেছনে ফিরে উওর দিলাম।

—বলো।

চলে আয় গোসল করবি এখন।

–কয়টা বাজে এখন। এখন গোসল করতে হবে কেনো।

–এগারোটা বেজে গেছে।

–তো

–পার্লার থেকে লোক এসে বসে আছে। গোসল সেরে নে।

–মা বলেছিলাম তো চমার এতো আনন্দ লাগছে না যে ডেং ডেং করে পার্লারে চলে যাবো সাজতে।

–তুই যাবি না বলে ই তো রক্তিম বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।

দুইটার দিকে,

ভারি লেহেঙ্গা আর গয়নার ভারে আমি মাঝখান থেকে ভেঙ্গে পড়বো মনে হচ্ছে। এতো প্যারা নিয়ে মানুষ বিয়ে করো কিভাবে। ভাবতে ই মন খারাপ হয়ে যায় একটু পর ই এই বাড়ির মেহমান হয়ে যাবো আমি। নিজের বেড়ে উঠার স্থানটা আজকে আমাকে বিদায় দিবে। আজকে তো অভ্র আসবে, অভ্রকে পাওয়ার অনেল ইচ্ছে ই বুকের মধ্যে পুষেছি আজ সেই ইচ্ছেগুলোকে মুক্ত করে দিবো। সত্যি অভ্র আসবে তো। অভ্র আসার পর আমি চেষ্টা করবো সব সত্যি বলে নিজে একটু হালকা করতে।

দরজা ভাঙ্গার মিস্ত্রি এনেছে আবুল, ভয়ে কলিজা ছটফট করছে। করবে না ই বা কেনো। সকাল গড়িয়ে যে দুপুর হলো এখনো যে অভ্র দরজা খুলছে না। এই শহরে মিস্ত্রি পাওয়া ও যে বেশ কষ্ট সাধ্য। খুব কষ্ট এই মিস্ত্রি খুজে পেয়েছে। দরজার তালা খুলতে যাবে ঠিক তখন ই অভ্র দরজা খুলে বের হলো।

কোথাও যাবে বলে মনে হচ্ছে, পুরো রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়েছে।

–অভ্র বাবা কোথায় ছিলে এতোক্ষণ সেই সকাল থেকে তোমাকে ডাকছি।

–কাকা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তাই শুনতে পারিনি। বাই দ্যা ওয়ে তুমি আর টেনশন করো না। আর উনি কে?

–উনি মিস্ত্রি তোমার দরজা ভাঙ্গার জন্য এনেছিলাম।

অভ্র মুখে হাসি টেনে বললাম,

–ওকে আমার লেট হয়ে যাচ্ছে এসে কথা বলবো।

–শুনো বাবা।

–হে,কাকা বলো।

–তোমার মা ফোন দিয়েছিলো।টেনশনে করছে খুব।
একটু কথা বলে নিও।

–হুম ওকে।

বলে ই আমি বাসা থেকে বেট হয়ে গেলাম। গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম মিহিদের বাড়ির উদ্দেশ্য।

অভ্রের গাড়ি এসে মিহিদের বাসার সামনে থামতে ই দেখলো, বরযাত্রী চলে এসেছে।
অভ্র মিহিদের বাসায় ডুকতে ই মিহির মা দৌড়ে আসলো, মিহি মাকে দেখে হাসি মুখে সালাম দিলো।

–কেমন আছো, বাবা।

–জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

–তুমি দেশে ই তো ছিলে তাহলে এই মায়ের কাছে একবার ও আসোনি কেনো।

–এই তো চলে আসলাম।

–হুম তা তোমার ভাবির সাথে কথা হয়েছে।

–ভাবির সাথে তো প্রয়োজন ছাড়া কথা হয়না।

–হে আমি ও অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু মেয়েটা নাকি অনেক বিজি আমার সাথে কথা বলার সুযোগ ই নাই।

–কী বলেন আন্টি, মিহি বিয়ে যে এটা ভাবি জানে না?

–হে বলেছিলাম একবার তারপর আর কথা হয়নি।

–ওহ্ আচ্ছা মিহি কোথায় আন্টি।

মিহি মা মিহির রুমটা দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো। অভ্র রুমে ডুকতে ই মিহি চোখ আটকে যায়। সাদা শার্ট এ কালো পেন্ট পড়নে হাতে ওয়াচ চুলগুলো স্পাইক করা।

–আজকে ও কী স্যার বলে ডাকতে হবে।

–সেটা আপনার ইচ্ছে।

–আপনার ইচ্ছে বলতে কী কিছু নেই নাকি।

–আমার ইচ্ছেগুলো অনেকদিন আগে ই মরে গেছে।

–কল দিয়েছিলাম ফোন অফ ছিলো কেনো।

–ঘুমাচ্ছিলাম তাই।

–ইম্পরট্যান্ট কথা ছিলো।

–বিয়ের আগে দিন কীসের ইম্পর্ট্যান্ট কথা, এতো মানুষের সামনে বলবেন। তাও বলতে চাচ্ছো যখন বলেন,

মিহি বলতে যাবে ঠিক তখন ই বাহির থেকে কান্নার শব্দ আসছে।

রুমে যা মানুষ ছিলো সবাই বাহিরে চলে গেছে। মিহি আর অভ্র ও দুজন বাহিরে গেলো কী হয়েছে দেখার জন্য।

–প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে বিয়ে করা আইন অনুযায়ী অপরাধ। (পুলিশ)

–প্রথম স্ত্রী মানে।(মিহির মামা)

মিহি মা পাশে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে, মিহি মামা পুলিশের সাথে কথা বলছে।

–আপনারা দেখতে চান এইযে দেখুন কাবিন নামা।(প্রথম স্ত্রী)

–মিহির মামা কাবিন নামা দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।

পুলিশ রক্তিমকে এরেস্ট করে নিয়ে গেলো। সবাই কানাঘুষা শুরু করলো,মিহিকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা শুরু করলো। এটা শুনে মিহি মা দৌড়ে গিয়ে অভ্রেকে বললো,

–বাবা তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে?

–আন্টি কী বলছেন এগুলো।

–আমার যা সম্পদ আছে তা আমি তোমার নামে লিখে দিবো।আজকে বিয়ে না হলে আমার মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে বলো।

–আন্টি আপনি শান্ত হন। আমার মা আছে। আমসর ফ্যামিলি ছাড়া৷ আমি বিয়ে করবো কীভাবে বলেন।

–বাবা আমি তোমার পায়ে পড়ছি,

কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি মা পায়ের ধরতে যাওয়ার আগে ই অভ্র উনাকে ধরে ফেলে।

–আন্টি আমি বিয়ে করবো।

কথাটা শুনার সাথে সাথে মিহির মা অভ্রকে আদর করে দেয়। কান্না ভেজা কন্ঠে মাথায় হাত দিয়ে ধুয়া করে দেয়।
মিহি অনবরত কান্না করছে যাচ্ছে।

কাজি ডেকে দুজনের বিয়ে পড়ানো হলো। মিহিদের বাসা থেকে বিদায় নিয়ে মিহিকে অভ্র গাড়িতে বসতে ই অভ্র গাড়ি স্টার্ট দিলো।

–বিয়ে করেছি ঠিক ই কিন্তু কোনো দিন স্ত্রীর মর্যাদা পাবে না। মাইন্ড ইট।

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৬

কাজি ডেকে দুজনের বিয়ে পড়ানো হলো। মিহিদের বাসা থেকে বিদায় নিয়ে মিহিকে নিয়ে গাড়িতে বসতে ই অভ্র গাড়ি স্টার্ট দিলো।

–বিয়ে করেছি ঠিক ই কিন্তু কোনো দিন স্ত্রীর মর্যাদা পাবে না। মাইন্ড ইট।

মিহি কোনো কথা বললাম না চুপ করে বসে আছে।বাহিরের দিকে তাকাতে ই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। জীবন এখন বৈঠা বিহীন নৌকা হয়ে গেছে। জীবনের স্রোত যেদিকে নিয়ে যায় ঐদিকে ই যেতে হবে। তাই ভাবলো অনেক তো হয়েছে,পরিবার, বা অন্য কারো কথা ভাব এবার একটু নিজের কথা ভাবতে হবে। মিহি বাহির থেকল চোখ ফিরিয়ে, এক হাত গালে ঠেকিয়ে অভ্রের দিকে মাথাটা বাকিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে আছে। অভ্রের চোখে কালো সানগ্লাস।
অভ্র আরচোখে তাকাতে ই দেখলো মিহি পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।

–এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?(অভ্র)

–নিজের বউকে আপনি করে বলে নাকি?(মিহি)

–তুমি এমন নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছেন কেনো।

–আমি তাকিয়ে থাকি আর যা ই করি আপনি তো আমার দিকে তাকাননি তাহলে কীভাবে বুঝলেন আমি তাকিয়ে আছি আপনার দিকে।তারমানে সানগ্লাস পড়েন আমাকে আড়চোখে দেখার জন্য।

—বেশি কথা বলেন কেনো আপনি।

–আপনি কম কথা বলেন তাই।

–ইডিয়ট।

–ভালোবাসা যা ই বলবেন শুনতে সেই লাগে।

অভ্র আর কোনো কথা বললো না। চুপচাপ ড্রাইভ করছে। জ্যামে পড়ার সাথে সাথে অভ্রের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠলো।কিছু না বুঝার আগে ই মিহি অভ্রের সানগ্লাসটা নিয়ে নিজের চোখে পড়লো।

–এটা কী করলেন।

–স্বামী স্ত্রীর জিনিস ভাগাভাগি করে পড়া যায়।

–দিন সানগ্লাস দিন।

–দিবো না।

–দিতে বলছি কিন্তু।

–দিবো না বললাম তো।

অভ্র সানগ্লাসটি আনার জন্য মিহির দিকে যায় মিহি পেছনের দিকে যায় না, স্থীর হয়ে বসে আছে।

–না দিলে কিন্তু এখন..

কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি অভ্রের শার্ট এর কলারে ধরে বললো,

–না দিলে কী হে।

–ছাড়ুন।

–আমার হাসবেন্ডকে আমি ধরেছি ছাড়বো কেনো।

বলে ই মুখে ফু দিতে ই চুলগুলো হালকা উড়ে।অভ্রের দিকে আগের ন্যায় তাকিয়ে বললো একে ই বুঝি কিলার লুক বলে।

গাড়িতে লাইট অন ছিলো আশেপাশে গাড়ির লোকজন তাকিয়ে হাসছে। অভ্র বেশ লজ্জায় পড়ে গেলো সাথে মিহি ও। চারপাশ খেয়াল করে অভ্রকে ছেড়ে দেয়। অফ সাথে সাথে গাড়ির লাইটা অফ করে ফেলে।

–লাইট অফ করেল কেনো।

এবার বেশ রাগ দেখিয়ে অভ্র বললো,

–ইচ্ছে আমার।

মিহি বেশ বুঝতে পারলো রেগে আছে তাই আর কিছু বললো না।

বাসার সামনে গাড়ি থামতে ই অভ্র নেমে আগে আগে চলে যায়। মিহি শাড়ি নিয়ে কোনোমতে দৌড়ে গিয়ে অভ্রের হাত ধরে। অভ্রের হাত ধরতে ই অভ্র ছাড়িয়ে নেয়। মিহি আবার অভ্রের হাত ধরে আবার ও ছাড়িয়ে নেয়। বেশ কয়েকবার এরকম করতে করতে বাসার ভেতরে ই চলে যায়। বাসার ভেতরে ডুকতে ই অভ্র চিল্লিয়ে বললো,

–আবুল চাচা উনাকে গেস্ট রুম দেখিয়ে দিন।

–ওমা কেনো আপনি বুঝি গেস্ট রুমে থাকে।

–আপনার জন্য বললাম গেস্ট রুম এর কথা।

–আপনার বউ হয়ে গেস্ট রুমে থাকতে যাবো কেনো।

–শুধু কাগজে কলমে বউ সময় মতো ডিভোর্স পেপারে পেয়ে যাবা।

এটা বলে ই অভ্র উপরে চলে গেলো। মিহি নিচে দাড়িয়ে আছে।

একজন কাজের লোক এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো তুমি কে আর এতো রাতে ছোট সাহেবের সাথে কী করো।

–আমি এই বাড়ির ছোট বউ। বুঝেন ই তো খালি একটু মনমালিন্য চলছে তাই অমন করে বললো।আপনি কে।

–আসসালামু আলাইকুম ছোট মেডাম।

— আরে আমাকে মেডাম বলতে হবে না। আমার নাম মিহি।নাম ধরে ডাকবেন।খালা একটা কাজ করতে পারবেন।

–হে বলো।

–আমাকে একটা শাড়ি দিতে পারবেন।

–হে বড় ম্যাম এর রুমে তো অনেক শাড়ি আলমারিতে।

–আমাকে একটা শাড়ি এনে দেন।

মিহি কিছুক্ষণ ওয়েট করতে ই চম্পা একটা মেরুন কালারের শাড়ি দিলো। মিহি গাড়িটা নিয়ে সোজা অভ্রের রুমে চলে যায়। অভ্র মিহিকে দেখে ই বলতে শুরু করে,

–এই আপনি এইখানে আসছেন কেনো?

মিহি কোনো উওর না দিয়ে ই টাওয়াল আর শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে।

–এই আমার টাওয়াল এটা।

মিহি ভেতর থেকে উওর দিলো,

–কালকে আরেকটা কিনে আনেবেন নয়তো এই টাওয়াল ই মাঝখান থেকে কেটে দুজনে ইউস করবো।

মিহি কোনো রকম শাড়িটা পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।

–এসে কুচি ধরেন।

–আমি এসব পাড়বো না।

–পারেনটা কী আপনি।

–কিছু না পাড়লে ও নিজের কাজের জন্য অন্যকে ডাকি না।

–তা অফিসে এতো স্টাফ রেখে কী করেন, আপনি আপনার কাজ একা ই করেন।

–এটা আপনার মতো বলদের না বুঝলে ও হবে।

মিহি শাড়ি ঠিক করতে করতে বললো,

–যাক আপনি যেমন বলদ আপনার বউ ও তেমন বলদ ই হলো। এটা সিম্পল বলদের বউ তো বলদ ই হবে।

–আমি বলদ।

–আমার কোনো সন্দেহ নাই। এখন কুঁচি ধরবেন নাকি বাহিরে যেয়ে কাজের লোকদের দেখাবো আপনার বউ এর গোপন রুপ।

কী জালায় পড়লাম বাবা।

এটা বলে ই অভ্র চোখ বন্ধ করে কোনো মতে কুচি ধরলো।

–হয়েছে আপনার কাজ এখন আমার রুম থেকে বেরোতে পারেন।

মিহি কোনো কথা না বলে চুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

অভ্র অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

–আপনি আমার বেডে শুবেন?

–আপনার কাছ অনুমোদন পত্র নিয়ে কী শুতে হবে নাকি।

–বিয়ে করেছি বলে মাথা কিনে নিয়েছেন নাকি।

–না শুধু মাথা না আপনার নাম পুরো জীবটাকে ই চাই।

–আপনার সাথে কথা বলা ই সময় নষ্ট।

–তাহলে কথা বলেন কেনো।

অভ্র মুখে বিরক্তি ভাব ফুটিয়ে মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়লো।

–ভাব্বাহ কী সীমান্তের প্রাচীর। প্রাচীর টপকে আবার আমার সীমানায় যেনো চলে না আসেন।

অভ্র কোলবালিশ মাঝখান থেকে ফেলে দিয়ে মিহি কাছে গিয়ে বললো,

–কী করবা সীমান্ত প্রাচীর টপকালে।

–এমা এই কী। কী রুপ নিয়েছে এ যেনো শীতকালে গ্রীষ্মের ছোয়া।

কথাটা বলে ই মিহি চোখ বন্ধ করে দেয়।

চলবে,

[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-২৩+২৪

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৩

–অফিসের কাজে আপনাকে আমার সাথে রাজশাহী যেতে হবে এবং ঐখানে থাকতে হবে। যদি জবটা করতে চান তাহলে যেতে ই হবে।

কথাটা শুনে ই থামকে গেলাম। মামা মামি আম্মু অনুমতি আমাকে দিবে কী অভ্রে সাথে যাওয়ার জন্য।

–শুনছেন।বাসায় যেয়ে অনেক ভাবার সময় পাবেন এখনে কাজ করতে আসছেন, ভাবনার জগৎ ডুব দিতে না কথাটা মনে রাখবেন।

–জ্বি স্যার।

–আসতে পারেন এখন আজকে রাতের মধ্যে আমাকে কল দিয়ে জানবেন।

আমি অভ্রের মুখের দিকে একবার তাকালাম, আমি তাকাতেই অভ্র অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে একটা ফাইলে চোখ দিলো।

–কী হলো দাড়িয়ে আছেন কেনো।

–হুম যাচ্ছি।

বলে ই চলে আসলাম। অরু ম্যাম এর কেবিনে যেতে ই ম্যাম আমাকে দেখে ই বললো,

–মিহি কোনো প্রবলেম হয়েছে।

–না ম্যাম।

–তাহলে হঠাৎ আমার কেবিনে।

–ম্যাম আপনি ও কী স্যারের সাথে রাজশাহী যাচ্ছেন।

–হে, আমাদের অনেক স্টাফ ই যাচ্ছে। কেনো বলো তো স্যার কী তোমাকে ও যেতে বলেছে।

–জ্বী ম্যাম।

–ওহ্ যাবে তাতে সমস্যা কী।সবাই এক সাথে যাওয়াতে আনন্দ ও হবে আবার কাজ ও হবে।

— হুম। আচ্ছা তাহলে এখন আসি ম্যাম।

রাতে,

নিজের রুমে ই শুয়ে শুয়ে ভাবছি কী করা যায়। ঠিক এই মুহুর্ত ই মা এসেছে।

–খেতে যাসনি কেনো?

–ক্ষুধ নাই তাই।

–আমার সাথে রাগ করিস কেনো। সৃষ্টিকর্তা তোর বাবাকে না নিয়ে আমাকে তো নিতে পারতো।

–মা।

–একদম চিল্লাবি না। বুঝিস না তো আমাকে। তোর মাথার উপরে এখন আর বাবা নামক ছায়াটা নেই বুঝিস তো। চাইলে ও ইচ্ছে অনুযায়ী ই কিছু করতে পারবো না। দেখ না লক্ষি মা আমার মামা যা বলে মেনে নে।

–মা সব সময় তো আমি মেনে ই নিলাম। কিন্তু সব মেনে নিয়ে বিনিময়ে আমি কী পেলাম বলো তো,যাও এবার ও মেনে নিলাম। কিন্তু মনে রেখো এটা ই শেষ পরবর্তী সময়ে আমি কখনো আর কারো আবদার মেনে নিবো না।

–হে , যা ইচ্ছে করিস।এখন আয় খেয়ে নিবি। না খেলে মনে করবো তুই রাগ করেছিস। তুই না খেলে আমি ও খাবো না।

মায়ের এমন কথা শুনে আর কিছু বললাম না, খেতে গেলাম। ভাত সামনে নিয়ে বসতে ই মামি ফোন দিলো কয়েক লোকমা মুখে তুলে ই মা বললো,

–কী বলেন কালকে ই বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে আসবে এতো দ্রুত।

কথাটা শুনে আর মুখে ভাত উঠলো না।বুঝলাম এবাড়িতে আমি আর বেশি দিন থাকছি না।খাবার টা রেখে উঠে চলে আসলাম। রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলাম। বাবার কথা অনেক বেশি মনে পড়ছে। বাবা থাকলে হয়তো এমন কখনো হতো না।

সকালে ঘুম ভাঙ্গে মামির ডাকে।

–আর কতো ঘুমাবি এবার উঠ কতো কাজ পড়ে আছে।

–আমি কী কাজ করবো।

–তা মেহমান হয়ে গিয়ে আমি এবাড়িতে এসে ঝি হয়ে কাজ করবো।

–আরে মামি এসব কী বলো।(আমার তো ইচ্ছে করছে তোরে দিয়ে সব কাজ করাই) মনে মনে বললাম।

এই মামি নামক কাল সাপ থেকে দূরে এসে মাকে জিজ্ঞেস করলাম,

–মামি আসছে কেনো?

–আজকে বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে আসবে।তার জন্য তোর মামি সব প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিয়ে আসছে।

–আমার বিয়ে হলে তো দেখছি সবাই ই খুব খুশি। এতো আপায়ন করে আপদ বিদেই করছো।

–মিহি

সাথে সাথে আমার গালে এসে একটা থাপ্পড় পড়লো।
মায়ের চিৎকার শুনে মামি দৌড়ে আসলো।

–আরে কী হয়েছে বল তো।

–রুমা এই মেয়েকে ভালো আমার সামনে থেকে যেতে।

–না বললে ও চলে যেতাম।

–আপা মিহি তো ভারি বেয়াদব হয়েছে। রক্তিম কাছে গিয়ে এমন করলে তো আমার মানসম্মান থাকবে না। এর সাত কপালে ভাগ্য যে রক্তিম ওরে পছন্দ করছে।

–আমার কী মনে হয় যানো মামি, আমার সাত কপালে ভাগ্য হলে মাম যে তোমাকে পছন্দ করেছে তা তোর চৌদ্দ কপালের ভাগ্য।

–আপা শুনলেন আপনি বেয়াদব মেয়ে কী বললো।

মা আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,

–তুমি ও দেও এক থাপ্পড়।

আমি আর দাড়ালাম না, চলে আসলাম। রুমা বেগমকে যে এক কথা বলেছি মহিলা যতক্ষণ এর সুধ না তুলতে পারবে ততক্ষণ শান্ত হবে কিনা সন্দেহ।

দুপুর বেলা আমার কয়েকটা কাজিন এসেছে। আমাকে কাতান একটা শাড়ি পড়িয়েছে, সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই সাজ এই পোশাক চমার শরীরে কাটার ন্যায় মনে হচ্ছে। বিদাতা এমন নিয়ম কেনো দিয়েছে, যদি এমন কোনো নিয়ম করে দিতো যাকেই মনে থেকে ভালোবাসবে আল্লাহ তার সাথে ই মিলিয়ে দিবে তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর হতো হয়তো।

–মিহি উঠে আস, সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

রুমা বেগমের শব্দটা কানে আসতে ই চোখ মেলে উপরে তাকাল।

–এভাবে না তাকিয়ে পা চালা দ্রুত।

কোনো কথা বললাম না বিনা শব্দে মামির আগে হেটে মেহমানদের সামনে গিয়ে বসলাম। আবার শুরু করো প্রশ্ন পর্ব। সব প্রশ্নের উওর না দিতে পারলে সমস্যা নেই আপনাকে দেখে পছন্দ হলে ই হয়। এখন শিক্ষা দিক্ষা থেকে গায়ের রংকে ই বেশি প্রাধান্য দেয়।

প্রশ্ন পর্ব শেষ করে রক্তিমের সামনে দাড়িয়ে আছি, যেদিন আসে ঐদিন ই এই বেহায়া ছেলেটার আমার সাথে কথা বলতে হয়।

–কী এতো ভাবেন আপনি বলেন তো(রক্তিম)

সব বিরক্তি লুকিয়ে উওর দিলাম

–কিছু না।

–তা আপনার ফোননম্বর টা কী দেওয়া যাবে। না মানে চারদিন পর ই তো আমাদের বিয়ে একটু নিজেরা কথা বলে নিলে ভালো হতো না।

–মামির কাছ থেকে নিয়ে নিয়েন।

এটা বলে ই আমি রুমে চলে আসলাম।

নিজের রুমে এসে বসতে ই কাজিনরা এসে পাশে বসলো, সবাই খুব খুশি বিয়ে তো আজ নিয়ে চারদিন পর।সব স্বপ্নগুলো এতোদ্রত ধুলিসাধ হয়ে যাবে।
মেহমানরা যাওয়ার পর ই ক্লান্ত শরির নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

___________________________

পরের দিন সকালে,

ফোনের শব্দ ঘুম ভাঙ্গলো। উঠে দেখলাম অরু ম্যাম এর ফোন।

–মিহি অফিসে আসবে না আজকে।

–এখন বলতে পারছি না ম্যাম বাসায় একটু প্রবলেম।

–স্যার তো তোমাকে আসতে বললো, তাই কল দিয়ে জানিয়ে দিলাম। রাখি, বায়।

অরু ম্যাম কল রাখতে ই দেখলাম প্রায় দশটা বাজে তার মানে অফিস টাইম অভার হয়ে গিয়েছে। বিছানা ছেড়ে উঠতে ই একটা কাজিন আসলো,

–আপু দেখো কেমন হয়েছে।

–কী এটা।

–বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র

–এতো দ্রুত কী করে করলি।

–মাম তো কালকে রাতে ই অর্ডার দিলো। এখন অর্ধেক দিয়ে গেলো। বাকিগুলো বিকেলের মধ্যে দিয়ে দিবে।

–ওহ।

আমি আর লেট করলাম না দ্রুত রেডি হয়ে নিলাম অফিসে যাওয়ার জন্য।

________________________

অভ্রকে নিমন্ত্রণ পত্রটা দিতে ই খুলে দেখলো,

–ওহ্ তাহলে বিয়ে করছেন।

–হে, আপনি আসবেন তো।

–পৃথিবীতে কারো বিয়েতে যাই আর না যাই আপনার বিয়েতে অবশ্য ই যাবো।

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৪

অভ্রকে নিমন্ত্রণ পত্রটা দিতে ই খুলে দেখলো,

–ওহ্ তাহলে বিয়ে করছেন।

–হে, আপনি আসবেন তো।

–পৃথিবীতে কারো বিয়েতে যাই আর না যাই আপনার বিয়েতে অবশ্য ই যাবো।

–তাহলে তো রাজশাহী যাওয়ার প্যানিংটা ক্যান্সেল করতে হবে।

–হুম তাই করবো, যা ই হয়ে যাক আমি আপনার বিয়েতে থাকছি।

কথাটুকু বলে ই নিজের কাজে মন দিলো অভ্র।আমি তাকিয়ে আছি অভ্রের দিকে,

শেষ দেখাটুকু দেখে নিই হয়তো আর কোনো দিন দেখা না ও হতে পারে। কিন্তু আমার ভালোবাসাটা আপনার জন্য নিতান্তই এইরকম থাকবে। হয়তো আমি আপনাকে আমার ভালোবাসা কথা কখনো প্রকাশ করতে পারবো না। যারা ভালোবেসে ও নিজের ভালোবাসার কথাটা প্রিয় মানুষকে বলতে পারেনা পৃথিবীর তাদের কষ্টটা কেউ উপলব্দি করতে পারে না।

এতোক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম অভ্রের কেবিনে অভ্র একেবারের জন্য ও চোখ তুলে আমার দিকে তাকায়নি।

চোখের কোনের পানিটুকু মুছে কেবিন থেকে বের হয়ে আসলাম।।

_____________________________________

রাতের বেলা,

ছাদে বসে কয়েক প্যাক সিগারেট শেষ করছে অভ্র। সিগারেট এর ধুয়ার সাথে নিজের অতীতকে যদি উড়ানো যেতে তাহলে জীবনে মিহি নামক অধ্যায়টা পুরোপুরি উড়িয়ে দিতো। ফোনের শব্দে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো, ফোনের স্ক্রিনে দিকে তাকতে ই দেখলো, ডিস্টার্ব নামটা ভেসে উঠছে। কিন্তু আজকে ডিস্টার্বকে ই ভালো লাগায় পরিনত করতে একবার কথা বলে দেখা যেতে পারে। কলটা রিসিভ করে কান ধরতে ই ওপাশ থেকে বেশ আলাদি কন্ঠ বেজে উঠলো,

–অভ্র আই মিস ইউ, প্লিজ আমাকে এভাবে ইগনোর করো না। আই লাভ ইউ প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।

–আর ইউ ওকে।

–হে আমি ঠিক আছি।

–তাহলে এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো।

–তুমি আমার কল ধরো না কেনো।

–টাইম পাই না।

–টাইম টা অযুহাত অভ্র।

মনে মনে বললাম তাহলে কল দেও কেনো।

–ওহ্ তাহলে আমার সাথে কথা না বললে ই পারো, আমি যেহেতু অযুহাত দেই।

এটুকু বলে ই কল কেটে দিলাম।

এই হলো মুন্নি, এই এক জ্বালা ফার্স্টে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারতো, কেমন আছি। তা না করে এসব বলা শুরু হয়েছে। মুন্নি অনেক অভার স্মার্ট যার কারনে আমার ভালো লাগে না। কথাটা শুনে ই সাথে সাথে কল কেটে দিলাম। এই মেয়ে সারাজীবন ডিস্টার্ব ই থাকবে। আর একজনেকে ভালোবাসলে অন্য কাউকে ডিস্টার্ব মনে হওয়াটা ই স্বাভাবিক।

__________________________

সকাল হতে ই মানুষ আসা শুরু করলো, হলুদে কে কোন শাড়ি পড়বে তা নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে। সবাই অনেক খুশি কিন্তু মিহির মা আচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে, তা দেখে রুমা বেগম বললো,

–কী হয়েছে আপা কাদছেন কেনো।

–কই কাঁদছি না। এই মেয়েকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকবো। এই মেয়ে চলে গেলে তো আমার আপন বলতে কিছু থাকবে না।

–আমাদের কী আপনার পর মনে হয় এমন ভাবে বলছেন কেনো।

–পর হবে কেনো, আজকে মিহির বাবা বেচে থাকলে খুব খুশি হতো।

মিহি আসাতে তাদের কথা বন্ধ হয়ে গেলো।

–মা এদিকে আস তো খাইয়ে দেই।

–ক্ষুধ নেই।

বলে ই চলে আসলাম। বাবার কথা বড্ড বেশি মনে পড়ছে। বাবা থাকলে হয়তো আজ এইরকম নিজের অমতে বিয়ে করতো হতো না। বারান্দায় দাড়াতে ই দেখলাম উঠনে খুব সুন্দর করে আলপনা দিচ্ছে। মামি একপ্রকার দৌড়ে এসে বললো,

–তুই রক্তিমের ফোন ধরিসনি কেনো।

আমি মামির দিকে না তাকিয়ে ই উওর দিলাম।

–ইচ্ছে হয়েছে তাই।

মিহি তুই না ভারি বেয়াদব।

–ওহ্ তুমি এতোদিনে বুঝলে আমি তো তোমারটা আগে ই বুঝেছিলাম।

–কী বললি তুই।

–মামকে বলো তো কানের ডক্টর দেখাতে। তুমি তো কানে কম শুনো।

–এসব বাদ দিয়ে রক্তিমের সাথে কথা বল। আজ বাদে কাল তুই রক্তিমের বউ হচ্ছিস।

–সে আমার হয়ে তুমি কথা বলেনি।

–একদম চুপ বেয়াদব মেয়ে। এই নে আমার কল দিয়েছে কথা বল।

আমি ফোনটা হাতে নিলাম ঠিক ই কিন্তু কথা বললাম না কেটে দিলাম।

সন্ধ্যা হতে ই, সাজগোজ এর ধুম পড়লো।আমাকে সাজিয়ে স্টেইজে বসিয়ে রাখা হলো। আমি এক প্রকার পুতুলের মতো বসে রইলাম। নিজের মধ্যে তো কোনো আবেক অনুভূতি কাজ করছে না। শুধু মনে হচ্ছে পরিবারের স্বার্থে নিজের মালিকানা অন্যকে দিয়ে দিচ্ছি।

সিগারেট এখন নিত্যদিনের সঙ্গি অভ্রের, আজ মিহির হলুদ। কালকে তো বিয়ে। এমন স্বার্থপর মেয়ে নিজরে জীবনের সাথে জড়ায়নি এটা ই ভাগ্য। যত ভালোবাসতো সব ভালোবাসা ঘৃনায় পরিনত হচ্ছে।
হাতের সিগারেট টা ফেলে দিয়ে রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালাম। ফোনটা সাইলেন্ট করে নিলাম। রুমে ডুকে ই স্লিপিং পিল খেয়ে নিলাম। আর ঘুমাতে কোনো সমস্যা হবে না। দরজাটা ভালো করে আটকে নিলাম। যদি বেচে থাকি তাহলে আগামীকাল আর মরে গেলে পরকাল।

আজ অভ্রের সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। খারাপ ব্যবহার করলে করুক তাও সত্যিটা অভ্রের জানা দরকার। গুটি গুটি পায়ে হেটে যেয়ে ব্যাগ থেকে ভিজিটিং কার্ডটা বের করলো। ভিজিটিং কার্ড থেকে অভ্রের নম্বরটা নিয়ে কল দিলাম। কিন্তু কল দিতে ই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ফোনটা অফ। আজ ফোনটা অফ না হলে ও পারতো সকল সত্য অভ্রের সামনে তুলে ধরে নিজেকে হালকা করতে পারতাম।

________________________
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ই আবুল কফি নিয়ে দরজায় নক করতে লাগলো কিন্তু অনেক্ষন নক করার পর ও অভ্র দরজা খুলছে না। বাড়ির সব কাজের লোকেরা অভ্রের রুমের সামনে এসে দাড়িয়ে আছে। এমন সময় বাসার টেলিফোন করে রেহনুমা । আবুল কল ধরতে ই রেহনুমা বেগম চিৎকার করে বলে উঠে,

–অভ্র কোথায় অভ্রকে ফোনটা দেও।

–ম্যাম অভ্র বাবা তো দরজা খুলছে না।

–কী বলছো এসব।

রেহনুমা আহমেদ ভয় পেয়ে যায় আজ তো মিহির বিয়ে আমার ছেলেটা কিছু করে বসেনি তো।

চলবে,

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-২১+২২

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২১

মিহি লিফটে উঠতে ই অভ্র ও ফোন টিপতে টিপতে লিফটে উঠে। লিফট থেকে মিহি আগে বের হতে ই ফ্লোরে পড়ে যায়।

অভ্র গিয়ে ধরতে ই কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু মিহি কোনো শব্দ করলো না। বুঝতে পারলো জ্ঞান হারিয়েছে। কপালে হাত ছুয়ে দিতে ই দেখলো অনেক জ্বর তাহলে কালকে বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় গিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে না চাইতে ও মিহিকে কোলে তুলে নিয়েছে।

গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দিলো কিন্তু জ্ঞান নাই বসে থাকবে ই বা কী করে। আশেপাশে কাউকে দেখছে ও না। মিহিকে কোনোমতে সিটে বসিয়ে দিয়ে অভ্র গাড়িতে বসলো। একহাত দিয়ে ড্রাইভ করছে অন্য হাতে মিহিকে ধরে আছে।

ডক্টরের চেম্বারে নিয়ে যেতে ই জিজ্ঞেস করে,

–উনি আপনাট কে হয়।

অভ্র চুপ করে আছে কোনো উওর দেয়নি।

ডক্টর আবার জিজ্ঞেস করলো,

–উনি আপনার কে হয়।

–উনি কে হয় না বললে কী ট্রিটমেন্ট করবেন না নাকি।

–রেগে যাচ্ছে কেনো মিস্টার অভ্র এটা তো জিজ্ঞেস করতে ই পারি। উনার অনেক প্রবলেম উনি মনে হয় খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করে না, সারাক্ষণ চিন্তিত থাকে গায়ে বেশ জ্বর কোনো ওষুধ ও খাননি বলে মনে হচ্ছে। তাই জিজ্ঞেস করলাম। পেসেন্টর জ্ঞান ফিরে এসেছে। ঔষধ লিখে দিলাম আপনি এখন নিয়ে যেতে পারেন।

জ্ঞান ফিরে আসার বেশকিছুক্ষন পর অভ্র আমার সামনে এলো, আমার দিকে না তাকিয়ে ই বললো,

–গাড়িতে উঠে আসুন।

–স্যার আমি তো আপনার একজন সাধারণ স্টাফ আমার জন্য এতো কিছু করতে যাবে না। অবশ্য মিস্টার অভ্রের চোখে সব স্টাফ এক সমান। আমকে আজকে হসপিটাল নিয়ে এসেছে কালকে সব স্টাফদের ও নিয়ে আসতে হবে তাই আমি চাচ্ছি না আপনাকে এতো কষ্ট দিতে।

–স্টুপিড। যেতে বলেছি যান।

–আমি একা ই যেতে পারবো।

আমি বেড থেকে উঠতে গিয়ে আবার পড়ে যেতে লাগলাম।

–দেখলেন তো বড়দের কথা না শোনলে কী হয়। ভালো হয় না কখনো

–ঐদিন ও তো বড়দের কথা ই শুনেছিলা কই আজ তো আমি ভালো নেই।

–গাড়িতে ওয়েট করছি চলে আসুন।

আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অভ্র চলে গেলো।

আমি চুপ করে গিয়ে গাড়িতে বসলাম, পিছনের সিটে বসতে ই অভ্র আমাকে বললো,

–আমাকে কী আপনার ড্রাইভার মনে হয়।

–কেনো। কী করলাম।

–পেছনে গিয়ে বসেছেন যে।

–তাহলে কোথায় বসবো?

–আমার কোলে।

–সে তো আমি বসতে চাই ই।

–চুপ করে সামনে এসে বসেন।

আমি গিয়ে বসে পড়লাম। আর চোখে দেখছিলাম আমার দিকে তাকায় কিনা। কিন্তু যে সানগ্লাস পড়া আছে জীবনে ও বুঝা যাবে না তাকিয়ে থাকলে ও।

দুজন ই নিরবতা পালন করলাম কেউ কারো সাথে কথা বলিনি, অভিমানের পাহাড় এতোটা ই উচু হয়ে আছে যে আমি ইচ্ছে করে কথা বলতে চাইলে ও এড়িয়ে চলে।

গাড়ি এসে বাসার সামনে থামতে ই আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম,

–মিস মিহি

অভ্রের ডাকটা শোনে ই পিছনে তাকালাম। গাড়ির গ্লাসটা খুলে বললো,

–আপনি আমার স্টাফ না হয়ে যদি অচেনা কেউ ও হতেন তাহলে আজকের সাহায্যটা করতে। আমার ভিতরে মানবতা আছে আপনার মতো ছলনা নয়।

কথাটা বলে অভ্র একমুহূর্তে জন্য ও গাড়ি নিয়ে দাড়ায়নি,চলে যায়। অভ্রের গাড়ি যতক্ষণ দেখা গিয়েছি আমি ততক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম।চোখের আড়াল হতে ই বাড়ির ভেতরে পা রাখলাম।

–এতো দেরি হলো কেন মা।

–অফিসে কাজটা একটু বেশি ছিলো তাই।

–আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।

মিহি মুখে একটা হাসি টেনে নিজের রুমে চলে গেলো, ঠিক তখন ই মনে পড়লো ফোনে চার্জ নাই। সাইড ব্যাগটা খুলে ফোন বের করতে যাবে তখন ই দেখে ঔষুধ, প্রেসক্রিপশন এর সাথে ছোট একটা চিরকুট ও পেলো। খুব উৎসাহ নিয়ে চিরকুট টা খুলতে ই দেখে লিখা,
“নিজেকে অনেক স্পেশাল ভাবো না তুমি আমার আশেপাশে আশার চেষ্টা করলে নিজের অস্তিত্ব ও খুজে পাবে না,তোমার কথা ই আমার সহ্য হয় না, আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখো এতে তোমার ই মঙ্গল

চিরকুট টা ভিজে গেছে চোখের পানিতে।কথাগুলো বুকের গভীরে গিয়ে ক্ষত করেছে কিন্তু এটা তো আমার ই কর্ম ফল। কথা মনে হতে ই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়ায়রুমে পা বাড়ালাম।

ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসতে ই মা জিজ্ঞেস করলো,

–নতুন জবটা কেমন রে মা।

আমি খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বললাম,

–অনেক ভালো মা।

–তোর কোনো অসুবিধা হয় না তো।

— না মা ঠিক আছি।

–বিয়ের কথা বললো তোর মা।

–আমি আমি বিয়ে করবো না আগে তুমি সুস্থ হও তারপর ভেবে দেখবো। তোমার অপারেশনটা আগে করিয়ে নেই।

–আমার জন্য তুই কী তোর নিজের জীবন নষ্ট করবি নাকি।

–কী বলো এসব মা জীবন নষ্ট মানে কী, চুপ করো এমন কথা আর কখনো বলবা না।

কথাটা বলে ই হাত ধুয়ে উঠে চলে আসলাম। মা অনেকবার পিছু ডাকলো কিন্তু রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।

__________________________

সকাল বেলা রেডি হয়ে অফিসে চলে আসলাম। কালকে অরু ম্যাম এর কথা অনুযায়ী কাজ করছি। হঠাৎ মায়ের ফোন আসতে ই দূত বাসায় দিকে রওনা দিলাম। আজকে আমি অভ্রের আশেপাশে ও যাইনি কারো ভালো লাগার কারণ না হতে পারি খারাপ লাগার কারণ তো হবো না।

বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে ই দেখলাম, বাড়িতে মেহমান অনেক।

–মা

–আরে এতো জোরে চিৎকার করছিস কেনো মেহমান আছে দেখছিস তো।

–কীসের মেহমান মা।

–তোর বিয়ের জন্য দেখতে এসেছে রেডি হয়েনে….

চলবে

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২২

বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে ই দেখলাম, বাড়িতে মেহমান অনেক।

–মা

–আরে এতো জোরে চিৎকার করছিস কেনো মেহমান আছে দেখছিস তো।

–কীসের মেহমান মা।

–তোর বিয়ের জন্য দেখতে এসেছে রেডি হয়েনে।

আম্মু আমি বলেছি তো বিয়ে করবো না।

–এতো উতেজ্জিত হচ্ছিস কেন। দেখলে ই বিয়ে হয়ে যাবে নাকি।

–তাহলে দেখতে ও হবে না।

–মিহি এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর কোনো কথা বলবি না রেডি হয়েনে।

–কী হয়েছে মা।

মামাকে দেখে মাথায় কাপড় টেনে বললাম,

–কিছু না মামা।

–তুুই এখনো এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো। ওরা আমাকে তাড়া দিচ্ছি।

মা আমাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসো। মা আলমারি থেকে সাদা রং এর একটা থ্রী পিছ বের করে পড়িয়ে দিলো। আমাকে রেডি করে ওদের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি এক বার উপরে তাকিয়ে দেখি ও নি কারা এসেছে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,

–তোমার নাম কি মা।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও উওর দিলাম।

–মিহি।

–শুধু মিহি আগে পিছে কিছু নাই।

মনে মনে বললাম আছে আপনার মাথা,ওদের সামনে বলতে ইচ্ছে করছে আমি বিয়ে করবো না।

আরো অনেক প্রশ্ন করে আমাকে চলে যেতে বললো। আমি চলে আসলাম। রুমে এসে বসতে ই মামি এসে বললো,

–মিহি ওরা নাকি তোকে শাড়ি পড়ে দেখবে।

–মামি।

মামি আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতে ই আমি চুপ করে গেলাম।

বাধ্য হয়ে নেভি ব্লু কালারের একটা শাড়ি পড়ে নিলাম। অবশ্য মামি পড়েয়ে দিয়েছে। ম্যাচিং জুয়েলারি ও মামি খুজে এনেছে। এমন সাজানো শুরু করলো মনে হচ্ছে আমার আজকে ই বিয়ে।

আবার নিয়ে যাওয়া হলো ওদের সামনে।

–মেয়ের কী চোখে সমস্যা আছে নাকি উপরে তাকাচ্ছে না যে।

কথাটা শোনার সাথে সাথে আমি চোখ তুলে উপরে তাকালাম।

–এই তো মেয়ের সব ঠিক আছে। উপরে তাকিয়েছে।

দুইজন মহিলা আর তিনজন পুরুষ দেখতে পেলাম। কিন্তু আমার কার সাথে বিয়ে হবার কথা চলছে তা ই বুঝতে পারছি না। সবগুলোর বয়স ই আর থেকে দিগুণ হবে।মনে হয় ছেলে আসেনি।

রুমে আসার পর অভ্রের কথা খুব মনে পড়ছে। জীবনে প্রথম অভ্র নামক ব্যাক্তিকে নিজের করতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিজের তো আর এতো সৌভাগ্য নেই। যার কাছ থেকে সব চেয়ে ভালোবাসা পাওয়ার কথা এখন তার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি।
মামির ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলাম।

— রক্তিম আসছে তো দেখতে।

–রক্তিম কে মামি।

–তোর হবু হাসবেন্ড।

–আজব আমি তো বিয়ে করবো না।

–একদম চুপ। তোর মায়ের কিছু হলে কী আমাদের ঘাড়ে বসে বসে অন্য ধ্বংস করতে দিবো নাকি।

–মামি?

এই থাম চিৎকার দিস না, রক্তিম আসছে ভালো করে কথা বলবি নয়তো আমরা আর তোদের পিছনে নাই।

–মামি তোমারা বোঝার চেষ্টা করো আমি তো জব করছি আর মায়ের কিছু হবে না। প্লিজ আমাকে এখন বিয়ের কথা বলো না।

–ন্যাকা কান্না করিস না। তোর মায়ের সব চিকিৎসার টাকা রক্তিম দিবে বলেছে
যদি রক্তিমকে কোনো উল্টাপাল্টা কিছু বলেছিস তাহলে বুঝবি আমি কে।

বলে ই চলে গেলো। দুচোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। কী করবো আমি। প্রথমে বোনের জন্য নিজের ভালোবাসা কোরবানি করলাম। তারপর সংসারের জন্য নিজের পড়ালেখা একপ্রকার বাদ দিয়ে টিউশন তারপর জব করতে লাগলাম এখন আবার মায়ের জন্য বিয়ে করতে হবে।

এই যে বাবা মিহি মায়ের রুম, তুমি কথা বলো আমি বাহিরে যাচ্ছি।

–জ্বি আন্টি।

রক্তিমকে রুমে দিয়ে ই দরজা টা হালকা চাপিয়ে দিয়ে মিহির মামি রুমা বেগম চলে গেলো।

কিছুক্ষণ দুজনই নিরবতা থাকার পর রক্তিম বলে উঠলো,

–আপনার সমস্যা না হলে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি।

আমি চুপ করে আছি কোনো প্রশ্নের উওর দিতে ই চাচ্ছি না।

–কী হলো কিছু বলছেন না যে।

মামির কথা মনে হতে ই বললাম,

–জ্বি বলুন।

–আপনার কী আমাকে পছন্দ হয়।

চোখ তুলে উপরে তাকাতে ই দেখলাম আমার থেকে বয়সে অতটা বড় হবে না। দেখতে মুটামুটি লম্বা আছে। গায়ের রং ফর্সা ই। তখন আমি দেখিনি কেনো এই পাবলিক তখন কোথায় ছিলো।

–কী ভাবছে।

–কিছু না।

–আমার কোনো পছন্দ নাই আমার মামা মামির পছন্দ ই আমার পছন্দ।

–কেনো আপনার কোনো পছন্দ নেই।

–যেখানে আমার পছন্দের কোনো মূল্য নেই সেখানে আমার ইচ্ছে প্রকাশ করাটা ই মূল্যহীন।

–তাহলে কী বুঝে নিবো আপনি আমাকে পছন্দ করেননি।

–তা কেনো হবে বাবা আসলে মিহি ছোট থেকে ই এমন , আমাদের পছন্দ ই তার শেষ পছন্দ।

–ওহ আচ্ছা।

মামি রক্তিমটাকে নিয়ে বের হয়ে গেলো। বের হয়ে যেতে ই আমি দরজা বন্ধ করে কান্না করা শুরু করলাম। এমন কেনো হয়ে গেলো আমার জীবনটা।

___________________

পরের দিন সকালে অফিসে আসতে ই অভ্র ডেকে পাঠালো। অভ্রের আবার কী হলো এসব ভাবতে ভাবতে অভ্রে কেবিনে উপস্থিত হতে ই বললাম,

–জ্বী স্যার বলুন।

–অফিসের কাজে আপনাকে আমার সাথে রাজশাহী যেতে হবে এবং ঐখানে থাকতে হবে। যদি জবটা করতে চান তাহলে যেতে ই হবে।

কথাটা শুনে ই থামকে গেলাম। মামা মামি আম্মু অনুমতি আমাকে দিবে কী অভ্রে সাথে যাওয়ার জন্য।

চলবে,

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-১৯+২০

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৯

সি.ভি টা দেখা শেষে হতে ই ফাইল সহ ছুড়ে দিতে ই মিহি মুখের উপর এসে পড়ে। মিহি বেশ অবাক হয় সামনে থাকা মানুষটা এতোটা পরিবর্তন যেনো মেনে নিতে পাড়ছে না। তিন বছর কী অনেকটা সময়। হে হয়তো, কারো কাছে না হলে ও মিহির কাছে ই তো অনেকটা সময় বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে চোখের রঙ্গিন চশমা খুলে ফেলতে হয়েছে। পরিবারের বড় ভাই না থাকায় সংসারের হাল নিজেকে ই ধরতে হয়েছে। চাকুরির ইন্টারভিউ দিতে এসে অভ্রেকে দেখবে তা কিন্তু কাম্য ছিলো না। অভ্রকে দেখে অবাক হলে ও তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে ব্যবহারে।

–অহ হ্যালো লিসেন,

মিহি চোখের কোনে থেকে পানি মুছে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,

–হুম।

— জ্বী বলুন।

–শিক্ষাগত যোগ্যতা অতটা ও পারফেক্ট না সো এই পোস্টের জন্য আপনাকে না নেওয়াটা ই বেটার। ওকে আপনি এখন আসতে পারেন। আপনাকে পড়ে জানানো হবে।

মিহি অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু অভ্র একটা বারের জন্য ও চোখ তোলে তাকায়নি।মিহি আর পিছু না ফিরে কেবিন থেকে বেড়িয়ে পড়লো।

অফিস থেকে বেড়িয়ে পা হেটে ই যাচ্ছি। তিনবছর আগে যখন আমার ই কারনে অভ্র কলেজ থেকে বহিষ্কার হয়েছিল ঐদিনের পর থেকে কখনো অভ্র সামনে আসেনি। ঐদিন অভ্র একা বহিষ্কার হয়নি নাহিদকে ও বহিষ্কার করা হয়েছিলো।

নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য মেন্টালি খুব টর্চার এর শিকার হই। কলেজে বেশ কয়েকদিন আমি যেতে পারতাম না মানুষের নোংরা কথার জন্য। আমি একজন ছিলাম কিন্তু আমাকে নোংরা কথা শুনানোর মানুষ ছিলো অহরহ। সবকিছু সামলে উঠার ঠিক আগ মুহুর্তে বাবাকে হারালাম। কাছের মানুষগুলোকে চিনতে শুরু করলাম। শুরু হলো জীবন যুদ্ধ। আস্তে আস্তে পরিবারের অবস্থা খারাপ হতে থাকে।বাবার শোকে মায়ের অবস্থা ও ভালো না কিনডিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাবার মৃত্যুর আগে ই মিনতি আপু চলে যায় কানাডা। মিনতি ফোন দেয় মাসে একবার। কালকে ও কল দিয়েছিলো। বলেছে সি.ভি নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য। এই তো এলাম কিন্তু জবটা হবে নাকি সন্দেহ। সবেমাত্র অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি এসময় জব পাওয়াটা ও কল্পনা। আমাদের দেশে কতোমানুষ মাস্টার্স কমপ্লিট করা তাও জব পায় না। হাটতে হাটতে চলে এলাম টিউশনিতে। উহু আপনি পড়ি না পড়াই। এই টিউশনগুলো ই আমার এখন সব কিছু।।

_______________________

রাতে খাবার খেয়ে ঘুমে যাবো এর আগে একটু ফোনটা হাতে নিলাম। মেসেজ চেক করতে ই জব কনফার্ম হয়েছে এমন একটা মেসেজ এসেছে। মা পাশে ই শুয়ে ছিলো মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

–জবটা পেয়েছি মা।

মা আদর করে বুকে টেনে নিয়ে কান্না করে দিলো,

–আমার জন্য তোর কষ্ট করতে হচ্ছে মা।

–মা তুমি এগুলো কী বলো মায়ের জন্য কষ্ট করবো না কার জন্য করবো। তা ছাড়া আমার কোনো কষ্ট ই হচ্ছে না।

–সাবধানে থাকিস মা।

–হুম তা তো অবশ্য ই। তুমি দোয়া করে দিও।

মায়ের চোখ মুছে দিয়ে ই শুয়ে পড়লাম।

সকালের রোদটা চোখে পড়তে ই ঘুম ভেঙ্গে যায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠে দৌড়ে কিচেনে গেলাম, নাকটা ফুলিয়ে মাকে বললাম,

–কতোদিন নিষেধ করেছি রান্নঘরে আসবে না।

–চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে খেতে আস। টিউশন যাওয়ার আগে খেয়ে নিবি।

–মা…

–আর ডাকতে হবে না ফ্রেশ হতে যা।

আমি আর কোনো কথা বললাম না। ফ্রেশ হতে চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে ফোনটা হাতে নিলাম কয়টা বাজে দেখার জন্য ঠিক সেই সময় আবার দেখলাম মেসেজ আসলো, মেসেজটা ওপেন করতে ই দেখলাম
অফিসে আজকে থেকে ই জয়েন করতে হবে সকল নিয়ম কারণ ও ডিটেইলস দেওয়া আছে।

খাবার খেয়ে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্য রিক্সায় উঠলো। অফিসের সামনে যেতে ই ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে অফিসের ভেতরে পা রাখলো। ভেতরে যেতে ই একজন ভদ্র মহিলা অভ্যর্থনা জানালো। আমাকে সোফায় বসতে বললো। আজকে আমার লাইফে ফার্স্ট কোনো চাকুরিতে জয়েন করেছি খুব নার্ভাস লাগছে।

অভ্র অফিসে ডুকতে ই সবাই সালাম দিলো। আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বললো,

–মিস মিহি আমার কেবিনে আসুন।
আমিও কথা মতো পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম। কেবিনে ডুকে ই বসে জিজ্ঞেস করলো।
–কম্পিউটার চালাতে জানেন।

–জ্বি একটা কথা বলার ছিলো আপনাকে।

–আপনার কোনো কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। অফিসের সব স্টাফরা স্যার বলে ডাকে আপনি ও স্যার ই বলবেন। কাজের বাহিরে কোনো কথা পছন্দ করি না।

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

-সরি স্যার। আসলে আমি বুঝতে পারিনি।

–ইটস ওকে। মিস অরু উনাকে সবটা বুঝিয়ে দিবেন।

–জ্বি স্যার। সো আসতে পারেন।

আমি কেবিন থেকে বের হওয়ার আগে একবার অভ্রের দিকে তাকলাম কিন্তু অভ্র একটা ফাইন নিয়ে ব্যস্ত।

অরু ম্যাম আমাকে নিয়ে আমার ডেস্ক দেখিয়ে দেয়। আমি ডেস্কে বসে নিজের কাজে মন দিতে লাগলাম। কিন্তু অভ্রের ব্যবহার প্রতিটা কথা হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করছে।

কাজ শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। অফিস থেকে বের হতে ই আকাশ অন্ধকার করা শুরু করেছে। অফসির প্রায় স্টাফরা চলে গিয়েছে। চারদিকে মানুষেজন নাই বললে ই চলে আমি বাহিরে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছি কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না। ভয় ও করছে এমন অবস্থায় বৃষ্টি শুরু হলে বাসায় যাবো কী করে।এসব ভাবতে ভাবতে পেছনে তাকাতে ই দেখি অভ্র…..

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২০

কাজ শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। অফিস থেকে বের হতে ই আকাশ অন্ধকার করা শুরু করেছে। অফসির প্রায় স্টাফরা চলে গিয়েছে। চারদিকে মানুষেজন নাই বললে ই চলে আমি বাহিরে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছি কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না। ভয় ও করছে এমন অবস্থায় বৃষ্টি শুরু হলে বাসায় যাবো কী করে।এসব ভাবতে ভাবতে পেছনে তাকাতে ই দেখি অভ্র।
অভ্র সোজা গিয়ে নিজের গাড়িতে বসে। আমার সামনে দিয়ে যেতে ই থামানোর জন্য সিগনাল দেই।

–সমস্যা কী?

–স্যার যদি আমাকে একটু বাসায় ড্রপ করে দিতেন।

–আপনাকে ড্রপ করে দিলে তো আমার অফিসের বাকি স্টাফদেরকে ও প্রতিদিন ড্রপ করে দিতে হবে। আমার কাছে সব স্টাফ সমান আর আপনার সাহস কী করে হয় আমার গাড়ি থামিয়ে আমাকে আদেশ করার।

আমি মাথা নিচু করে বললাম,

–সরি স্যার।

অভ্র সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট চলে যায়। মুহূর্তে ই বৃষ্টি নামা শুরু হয়। অফিসের সামনে ই দাড়িয়ে ভিজতে থাকে। মিহি আর দাড়ায়নি হাটতে থাকে। কতোদূর যেতে ই রিকশা পায়।
রিকশা বাড়ির সামনে আসতে ই ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভেতরে ডুকতে ই মিহি মা দৌড়ে আসে।

–মা তুই এইভাবে ভিজলি কেনো?

–ভাগ্য ছিলো তাই।

–আমার জন্য তোর সব কষ্ট করতে হয়। তোকে তো একা পেটে ধরিনি। আরেকটা পাশান ও পেটে ধরেছিলাম আজকের এই দূরদিনে আমার পাশে এই পাশানটা নেই , একটা বারের জন্য ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস ও করে না। আমাকে আল্লাহ নিয়ে যাক তোকে তাহলে তুই শান্তিতে থাকবি রে মা।

–চুপ করো মা, তুমি না থাকলে আমার কী হবে।

বলে ই মাকে ধরে কান্না করে দিলাম। মা আচল দিয়ে আমার মাথাটা মুচে দিয়ে বললো,

–জামাটা চেঞ্জ করেনে মা।

———————————————–

বেলকনিতে বসে সিগারেট ধোয়া উড়াচ্ছে অভ্র। একদৃষ্টিতে বাহিরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে তাকাতে ই দেখলো মা ফোন করেছে,

–বাবা কেমন আছো।

–জ্বি মা ভালো। তুমি কেমন আছো।

–এই তো ভালো, তুমি কানাডা চলে আসো।

–আমি দেশে ই ঠিক আছি।

–মায়ের কথা শুনতে হয় বাব। আর মুন্নি মেয়েটা তোমাকে কতো মিস করে বলো তো।

মুন্নি নামটা শোনার সাথে সাথে অভ্র কলটা কেটে দিলো। আর কোনো মেয়েকে জীবনে জায়গা দিতে চায় না।অনেক হয়েছে এসব, ভালোবাসা শব্দটা শুনলে এখন বড্ড ভয় হয়। যদি কেউ পরিপূর্ণ ভালোবাসা দিতে পারে তাহলে পৃথিবীতে বেচে থাকাট সুখময় হয় আর যদি সেই ভালোবাসা ছলনায় পরিপূর্ণ থাকে তাহলে যে বেচে থাকা ই অর্থহীন। একটা সময় অভ্রের কাছে ও পৃথিবী টা অর্থহীন মনে হয়েছিলো। এখন নিজেকে অনেকটাই সামলে উঠেছে আবেকটা ও বেশ কাটিয়ে উঠেছে। বার বার এটা অনুভব করে এসেছে আর যা ই হক আবেক দিয়ে জীবন চলে না।আবার আবেগশূন্য মানুষ দিয়ে সংসার চলানোটা কষ্ট সাধ্য বটে তাই তো বিয়ে থেকে দূরে থাকাটা ই মঙ্গল মনে করে।

অঝরে বৃষ্টি পড়ছে, খুব সুন্দর আবহাওয়া কিন্তু এতো বৃষ্টি থাকলে ও ভালো লাগে না।
হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে বেডে গিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। এসব জল্পনা কল্পনা জগৎ এ থাকতে ভালো লাগে না।

_______________________

সকালে ঘুম ভাঙ্গলল একটা স্টুডেন্ট এর আম্মু কলে ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে কল ধরতে ই ওপাশ থেকে শব্দ আসলো,

–কী ব্যাপার আসেন না কেনো, আপনি তো মাস শেষ হলে ঠিক ই টাকা নিবেন। এই যে কালকে বন্ধ করলেন না এর জন্য কিন্তু মাস শেষে পড়িয়ে দিতে হবে।

উনার কথা শুনে মোটেও অবাক হইনি। এমন কথা আগে ও শুনতে হয়েছে। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে উওর দিলাম,

–আন্টি আমি আজকে ও পড়াতে পারবো না কারণ

–এই শুনেন এতো প্রাইভেট মিস করলে কিন্তু টাকা দেওয়ার সময় টাকা কেটে রেখে দিবো।

— হয়েছে আন্টি আপনি থামুন। আমি আপনার বাচ্চাকে আর পড়াচ্ছি না। আমার নতুন জব হয়েছে। কতো দিন মাসে এক হাজার তো। এমাস যে কদিন পড়িয়েছি এটা আমি তো নিবো না আপনার কাছে রেখে দিয়ে আপনি ধনী হয়েন। আর নেক্সট টাইম একটা টিচারকে এভাবে কথা বলার আগে ভাববেন তার কেমন লাগে। শিক্ষা কখনো টাকা দিয়ে কেনা যায় না। যেমন আপনি আপনাকে একলাখ টাকা দিলে ও শিক্ষিত হতে পারবে না।

কথাটা বলে ই আমি কল কেটে দিলাম। যতদিন উনার বাচ্চাকে পড়িয়ে ঠিক এরকম ব্যবহার ই করেছে তাই আজ বলে দিলাম।

ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম নয়টা বেজে গেছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্য পা বাড়ালাম।

অফিসে ডুকে নিজের ডেস্কে বসতে ই পিছনে থেকে কেউ ডাকলো,

–মিহি।

অরু ম্যামকে দেখে দাড়িয়ে বললাম,

–গুড মর্নিং ম্যাম।

অরু হাসি মুখে বললো,

–গুড মর্নিং মিহি, স্যার একটা মিটিং এরেন্জ করেছো ঠিক এগারোটায় চলে এসো কেমন।

–জ্বি ম্যাম।

অরু চলে যেতে ই নিজের কাজ করা শুরু করলাম। ঠিক এগোটা বাজার পাচ মিনিট আগে ই মিটিং এর জন্য চলে গেলাম।মিটিং এর ফাকে ফাঁকে আর চোখে অভ্রকে দেখছিলাম। চোখ দুটো কখনো দেখতো পারি না সবসময় কালো সানগ্লাস পড়া থাকে।

–মিস মিহি আমার কথা শুনতে বলেছি আমার দিকে নজর দিতে বলিনি।

সবার সামনে এমন লজ্জা দিবে তা ভাবতে পারিনি,কথাটা শোনার সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললাম। বেশ লজ্জা লাগলো এতোগুলো মানুষের এটা কী করে ফেললাম। নিজের উপর রাগ হচ্ছে।

মিটিং শেষ করে সবার কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে অভ্র। আমি ইচ্ছে করে ই সবার পেছনে দাড়িয়ে আছি। যেনো সবার পিছনে কাজ বুঝে নিতে পারি।

–মিস মিহি।

–জ্বী স্যার।

–আপনার কাজ আমি মিস অরুকে বুঝিয়ে দিয়েছি। সো অরু আপনাকে বুঝিয়ে দিবে। আপনি আসতে পারেন।

আমি আর কোনো কথা বললাম না সোজা চলে আসলাম।

অফিস শেষ হয়েছে চারটা। এখন বাজে পাঁচটা। একঘন্টা লেইট করে অরু ম্যাম এর কাছ থেকে কাজ বুঝে নিলাম। উনি অন্য একটা কাজ নিয়ে বিজি ছিলো তাই লেইট হলো।

মিহি লিফটে উঠতে ই অভ্র ও ফোন টিপতে টিপতে লিফটে উঠে। লিফট থেকে মিহি আগে বের হতে ই ফ্লোরে পড়ে যায়…

চলবে

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-১৭+১৮

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৭

–আপু কিছু হয়নি তো আমি একা ই যেতে পারবো।

–আরে চল তো মিহি ও আমার সাথে রাগ করে আছে দেখি কী করে মেয়েটা।

–আপু এতো রাতে যাওয়ার কী দরকার ঘুমিয়ে আছে হয়তো।

–চুপ চল আমার সাথে।

মিনতি প্রিয়ার আগে ই যেতে লাগলো। রুমে ডুকে দেখে লাইট অফ। মিনতি দ্রুত গিয়ে লাইট অন করলো। লাইট অন করতে ই দেখলো মিহি বিছানায় শুয়ে আছে। ফ্যানের বাতাসে চুলগুলো মুখে পড়ে আছে। তাই মিনতি পাশে বসলো চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। বোনের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে ভালো করে কাঁথা উপরে দিয়ে চলে গেলো।

অভ্র খুব কষ্ট করে দরজার পিছনে লুকিয়ে ছিলো। আরেকটুকু হলে ই মিনতি অভ্রকে দেখে ফেলতো। ভাগ্য ভালো মিনতি সন্দেহ করেনি।

–ভাই রে ভাই বের হন আপনি। কী ভয়টা পেয়েছি জানেন আপনি।

অভ্র মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে প্রিয়াকে বললো,

–তোমার কেউ থাকলে ও আমাকে বলো, আমি ও হেল্প করবো।

–আমার কেউ না বের হন।

–আচ্ছা যাচ্ছি তোমার বোনকে খাবারটা খাইয়ে দিয়ো।

মিহি বেডের উপর বসে চোখ রাঙ্গিয়ে অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র মিহির এমন দৃষ্টি দেখে বললল,

–আরে টিয়াপাখি এতো রাগ করো কেনো যাচ্ছি তো।

অভ্র চলে যেতে ই মিহি লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো। কী যে হয়েছে এতোক্ষণ সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

______________________

সকালে বেলা মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো মিহির। মিহির মা টেনে তুলে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলো। মিহির বিছানাটা ঘুছিয়ে নিতে ই মিহি এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বসে পড়লো।

–কালকে রাতে খেয়েছিস।

–হে।

–কখন?

–রাতে ই।

–আমি কালকে ব্যস্ত ছিলাম তাই তোকে খাওয়াতে আসতে পারেনি। আজকে মিনতিকে নিতে আসবে আজকে ও কাজ ফেলে রেখে তোকে খাওয়াতে এসেছি নয়তো কালকের মতো না খেয়ে থাকবি জানি।

–আম্মু আমার ক্ষুধা নেই।

–সকাল সাড়ে নয়টা বাজে এখন ও তোর ক্ষুধা নেই তা কখন ক্ষুধা লাগবে শুনি।

কথাটা বলে ই সাইড টেবিল থেকে খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে মিহি মুখে খাবার তুলে দেয়।

–মিনতি কোথায় আম্মু।

–ওর শ্বশুর বাড়ি লোকজন নিয়ে পড়ে আছে।

–দেখলে তো তোমার মেয়ের আমার কথা মনে নেই। আমাকে পর করে দিয়েছে।

–সারাদিন রুমে শুয়ে না থেকে মেহমানদের একটু সময় দিতে পারিস। ছেলে মেয়েদের একটু আশেপাশে থেকে ঘুরিয়ে আনতে পারিস।

–হুম খেয়ে যাবো।

মিহি খাবার শেষ করে পানি খেয়ে সবাই যেখানে আড্ডা দিচ্ছো সেখানে চলে গিয়েছে।
মিহিকে দেখে ই অভ্র চোখ তুলে আর চোখে তাকায়।
–আরে আমার শালিকা যে। তা ঘুম ভাঙ্গলো নাকি।

তীব্র কথাটা বলতে বলতে মিহিকে টেনে নিয়ে পাশে বাসায়।
সবাই বিভিন্ন কথা বলছে কিন্তু অভ্র আর চোখে মিহিকে দেখায় ই ব্যস্ত।

________________________

মিনতি চলে গেছে আজকে দুইদিন। সেদিনের পর থেকে মিহি অভ্র থেকে দূরে রয়েছে। অনেক কল মেসেজ দিয়েছে তাও একবারের জন্য ও ফোন ধরেনি। মিহির খুব কষ্ট হয় অভ্রকে ইগনোর করতে কিন্তু এটা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই। দুইদিন কলেজে গিয়েছে ঠিক ই কিন্তু অভ্রের সামনে পড়েনি একবার ও। আগামী কাল কলেজে একটা অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে মিহি যেটাতে নৃত্য অংশগ্রহণ করবে। মিহি একদম ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু ফ্রেন্ডদের কথা রাখতো গিয়ে অংশগ্রহন করতে হচ্ছে।

এসব ভাবতে ভাবতে ই ঘুমাতে চেষ্টা করলো কিন্তু অনেক এক্সাইটেড এই অনুষ্ঠানেটি নিয়ে ঘুম ই আসছে না। তাও মিহি চোখ বন্ধ করে আছে।

খুব সকালে মিহি ঘুম থেকে উঠে। মিহি মা দেখে হাসে,

–কি হলো এতো সকালে ঘুম থেকে উঠলি যে।

মিহি ব্রাশ করতে করতে উওর দিলো,

–কলেজে ফাংশন আছে তুমি জানো না।

–ওহ হে কালকে বলছিলি, মিনতি ও যাবে কালকে আমার সাথে কথা হলো।

–ওহ্ আচ্ছা তাহলে তো ভালো ই হবে দুবোনের দেখা হবে মা।দ্রুত নাস্তা রেডি করো আমি আসছি।

বলে ই মিহি চলে গেলো।

মিহি বাসা থেকে নরমাল ভাবে ই কলেজে গিয়েছে অবশ্য নরমাল ভাবে কলেজে যাওয়ার কারন হচ্ছে কলেজের পাশে ই পার্লার আছে যেখানে গিয়ে রেডি হবে। মিহির সাথে প্রিয়া ও এসেছে।

মিহি পার্লারের ভিতরে প্রিয়া বাহিরে দাড়িয়ে আছে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। প্রিয়াকে দেখে অভ্র দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,

–মিহি কোথায়।

–এটার ভিতরে।

পার্লারটা দেখিয়ে বললো প্রিয়া।

–তাহলে ওয়েট করো আমি ভিতরে গিয়ে মিহির সাথে কথা বলে আসি।
অভ্র ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে ই প্রিয়া জোরে চিল্লাতে থাকে,

–আরে লেডিস্ পার্লার আপনি কোথায় যাচ্ছেন।

–আমি ভেতরে যাবো এতে সমস্যা কী।

–উপরে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখুন কী লিখা। শুধু মাত্র মেয়েরা ই প্রবেশ করতে পারবে।

অভ্র আর কিছু বললো না পার্লারের আশেপাশে ঘুরঘুর করেছে।

মিহি বের হওয়া মাত্র ই অভ্র হা হয়ে তাকিয়ে আছে,

নীল কালারের শাড়িতে খুব মানিয়েছে, দেখে চোখ ফেরানো দায়।

অভ্র মিহির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মিহি অভ্রের চোখের আড়াল হয়ে যায়।
অভ্র ও কলেজে প্রবেশ করে।

মিহি তার বান্ধবীদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। একটু পর ই মিহিরা স্টেইজে নাচ করবে৷ অলরেডি এনাউন্স করে দিয়েছে প্রস্তুত থাকার জন্য।

–আচ্ছা তোরা একটু দাড়া আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।

–মিহি এই টাইমে কী তোর যেতে ই হবে। পরে লেইট হলে তো প্রবলেম এতো কষ্ট করে প্র্যাক্টিস করেছি সব মাটি হয়ে যাবে।

–আরে বাবা এতো টেনশন করছিস কেন ওয়াশরুমে যাচ্ছি মরে যাচ্ছি না যে কেউ আমাকে নিয়ে চলে যাবে।

মিহি ওয়াশরুম দিকে যেতে ই কেউ একজন টান দিয়ে একটা ক্লাসরুমের ভেতরে নিয়ে গেলো,

–আপনি…

–আমার কল ধরো না কেনো।

–এমনি।

–যেতে দিন।

–কল ধরো নাই কেনো এটা উওর দেও।

হঠাৎ মিহিদের নাম এনাউন্স করা হয়েছে। মিহি যেতে চাইলে অভ্র দুহাত দিয়ে আটকে রাখে।

–যেতে দিন আমাকে।

–না, আজকে তুমি কিভাবে পার্ফম করো আমি দেখবো। তুমি অভ্রকে ইগনোর করো দেখো আমি তোমার কী হাল করি…

চলবে

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৮

–না, আজকে তুমি কিভাবে পার্ফম করো আমি দেখবো। তুমি অভ্রকে ইগনোর করো দেখো আমি তোমার কী হাল করি…

মিহি এবার হাত পা ছুড়াছুড়ি অফ করে দিয়ে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,

–যেতে দিবেন না তো।(মিহি)

–বললাম তো না।

কথাটা বলার সাথে মিহি অভ্রের হাতে জোরে কামড় বসিয়ে দেয়। অভ্র হাত ছেড়ে দিতে ই মিহি দৌড়ে চলে যায়।
অভ্র হাসবে নাকি কান্না করবে তা বুঝতে পারছে না মিহির এমন কান্ড দেখে।

মিহির পার্ফম করা শেষ হতে ই মিনতি গিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরলো,

–কেমন আছিস।

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো,ভুলে গিয়েছিস বিয়ে করে দুদিনে তো একবার কল ও দিস নাই।

–অনেক বিজি ছিলাম রে বোন।

–চল আমাদের সাথে ফুচকা খাবি।

মিহি, মিনতি, তীব্র, অভ্র, প্রিয়া, পাভেল সবাই ফুচকা খাওয়ার জন্য গেলো। অভ্র ফুচকা অর্ডার দেয়।

–মামা শুনেন(অভ্র)

–হে মামা বলেন(ফুচকাওয়ালা)

–একটা ফুচকায় বোম্বাই মরিচ দিয়ে বানাবেন অনেক জাল দিবেন।

–এতো জ্বাল দিলে তো খেতে পারবে না।

–সে আমি দেখে নিবো।

এটা বলে অভ্র দাড়িয়ে থেকে মিহির ফুচকাটা বানায়।সবাইকে ফুচকা দেওয়ার পর মিহিকে জ্বাল ফুচকাটা দেয়। মিহি হাসি মুখে ফুচকাটা নেয়।
অভ্র হাসি চেপে রেখে বলে যে আগে ফুচকা খেতে পারবে তাকে এক হাজার টাকা পুরুষ্কার হিসেবে দেওয়া হবে।

মিহি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

–ওকে আমি জিতবো।

–মিহি সত্যি ই অনেক ফুচকা খেতে পারে।(মিনতি)

–আচ্ছা দেখা যাবে। সুতরাং খাওয়া স্টার্ট করো।

পুরুষ্কারের কথা শুনে সবাই দ্রুত খাওয়া শুরু করলো। মিহি একটা মুখে দিতে ই মুখ জ্বলে যাচ্ছে।

অভ্র মিহি অবস্থা দেখে বললো,

–কী হয়েছে মিহি খাচ্ছো না কেনো একটু আগে তো বেশ আমি জিতবো আমি জিতবো করছিলে।

–নিজেরটা খান মানুষের দিকে নজর দেন কেনো।

–ওকে

মিহি তিনটা ফুচকা খাওয়ার পর অনবরত চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। চোখ মুখ লাল বর্নধারন করছে। মিহি প্লেটটা রেখে দূরে এসে দাড়িয়ে পড়লে। এবার অভ্র ভয় পেয়ে গেলো। দৌড়ে গিয়ে পানি কিনে এনে পানি খেতে দেয় কিন্তু মিহি পানি নেয় না।

–এটা ই চেয়েছিলেন তো আমি কষ্ট পাই হয়েছে তো শান্তি।

–টিয়াপাখি আমি বুঝিনি যে এমন হবে। প্লিজ মাফ করে দেও।

–লাগবে না মাফ চাওয়া।

–এই মিহি কী হয়েছে ফুচকার প্লেটটা এভাবে পড়ে আছে কেন । খাবি না নাকি।

–আমি খাবো না আপু।

বলে ই মিহি চলে গেলো। প্রিয়া ও পেছনে পেছনে যাচ্ছে। মিহি সোজা দোকানে চলে গেলো। দোকান থেকে পানি কিনে পানি খেয়েছে সাথে পানি মুখে ছিটিয়ে দিয়েছে।

____________________________

–খালামনি মিহি কী বাসায় গিয়েছে।(প্রিয়া)

–না তো মা কেনো?(মিহির মা)

–কিছু হয়েছে।

–আরে না খালামনি মিহি সাথে ই আছে আপনাকে কল দিয়ে এটা বলতে বললো, আপনার রিয়াকশন দেখার জন্য।

–পাঁজি মেয়েটাকে ফোনটা দে, আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।

প্রিয়া একটা হাসি দিয়ে বললো,

–বাসায় যাওয়ার পর আচ্ছা করে পিটুনি দিয়ো এখন রাখি।

ফোনটা রেখে দিয়ে ই অভ্রের দিকে তাকায়।

–আপনার জন্য তো মিথ্যে বললাম খালামনি কাছে এখন মিহিকে কোথায় খুজে পাবেন।

মিহি রাগ করার পর থেকে অভ্র মিহিকে খুজে পাচ্ছে না। কলেজের পুরো এরিয়া খুজে দেখেছে কোথাও নাই। মিনতির সাথে ও নাই তাহলে কোথায় গেলো।

অভ্র আর দেরি না করে মিহিকে খুজতে বেরিয়ে পড়লো।প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে কিন্তু অভ্র মিহিকে খুজে পাচ্ছে না। ক্লান্ত হয়ে কলেজে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়েছে।হঠাৎ মনে হলো কলেজের ক্লাসরুমগুলো তো খুজা হয়নি। অভ্র উঠে ক্লাসরুমের দিকে যেতে থাকে।

–ভাইয়া কোথায় যাচ্ছেন।

–ক্লাসরুমগুলো খুজে দেখি।

–আমি ও যাবো আপনার সাথে।

অভ্র কোনো কথা বললো না প্রিয়া অভ্রের পিছনে পিছনে যেতে থাকে।
অনেকগুলো ক্লাসরুমের ভেতরে খুজার পর যখন পাচ্ছে না তখন প্রিয়া চলে যায়। কিন্তু অভ্র হাল ছাড়েনি। এতো বড় ক্লাসরুমের প্রত্যেকটা ক্লাসরুম, হলরুম খুজতে থাকে।

–কী ব্যাপার মিহি হিরোর অপেক্ষা করছো যে হিরো এসে তোমাকে বাচাবে।

–নাহিদ এর পরিণাম কিন্তু ভালো হবে না।

–তাই নাকি কি করবে শুনি। অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু শোননি।

বলে ই মিহির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

–কাছে আসবেন না। পায়ে পড়ি আপনার।

মিহিকে কিছু না বলতে দিয়ে ই একটানে মিহির শাড়িটা খুলে ফেলে।

ঠিক সেই সময় ই নাহিদের পিছনে এলোপাতাড়ি ঘুসি পড়ে।

নাহিদকে মারার সাথে সাথে নাহিদের বন্ধুরা অভ্রকে মারার জন্য আসে।

অভ্র যেতে ই মিহি এসে জড়িয়ে ধরে। কোনোমতে শাড়িদিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখতে সক্ষম হয়েছে মিহি। তাও এ অবস্থায় মিহিকে এই জানোয়ারদের সামনে ছেড়ে দিতে মন সায় দিচ্ছে না।

অভ্র মিহিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। অন্য হাতে নাহিদের বন্ধুদের থেকে নিজেকে বাচাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু একা কী আর এতোগুলো মানুষের সাথে পেড়ে উঠা যায়।অভ্রের পিঠে নাহিদে বাশ দিয়ে আঘাত করে এতে অভ্র ব্যথা পেলে ও মিহিকে ছেড়ে দেয়নি।

হঠাৎ প্রিয়া আসতে ই প্রিয়ার কাছে মিহিকে দিয়ে অভ্র ওদের সাথে সংঘর্ষে নেমে যায়। প্রিয়ার সাথে সাথে অভ্রের বন্ধুরা ও এসেছে।

কোনো এক ক্লাসরুমে বিকট শব্দ শুনে অনুষ্ঠান রেখে ই সবাই ঐ জায়গায় ভির করে। এসব দেখে কলেজের টিচার এবং পুলিশরা এসে সবাইকে থামায়। এবং নাহিদ অভ্র মিহিকে প্রিন্সিপাল রুমে ডাকে।

–কী ব্যাপার অভ্র দুইদিন পর পর তুমি কলেজে জামেলা করবে এ কোন অসভ্যতা তোমার।

–স্যার ও মিহির সাথে খারাপ কিছু করতে চেয়েছে।

–তুমি আমাদের জানাতে পারতে তুমি কেনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে।আর মিহি তোমার কে যার জন্য তুমি দুইদিন পর পর এসব করো।

–আমি মিহিকে ভালোবাসি স্যার।মিহি ও আমাকে ভালোবাসে।

–এর সত্যতা না পেলে তোমাকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হবে।আর সত্যি মিহি তোমাকে ভালোবাসলে তোমাদের এখন ই বিয়ে করতে হবে।

–মিহি তুমি কী অভ্রকে ভালোবাসো।

মিহি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কোনো কথা বলছে না।

–মিহি তুমি চুপ করে আছো তাহলে কী আমি ভাববো মৌনতা সম্মতির লক্ষন।

–না স্যার আমি অভ্রকে ভালোবাসি না। আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নাই।

–অভ্র তুমি টিচারের ছেলে দেখে ভাববানা পার পেয়ে যাবা। তোমাকে এই মুহুর্ত থেকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হলো…..

চলবে

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-১৫+১৬

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৫

মিহি ভয়ে চুপ করে আছে কী বলবে, এখন যদি বিদ্যুৎ চলে আসে তাহলো তো রেহনুমা আহমেদ সচোখে সব দেখে নিবে।

বিদুৎ আসার সাথে সাথে অভ্র মিহিকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। অভ্র বুঝে উঠতে পারছে না হঠাৎ কী হলো, মিহি তো এ কদিন ভালো ই ছিলো। ভেবেছিলাম হয়তো আমার ভালোবাসা মিহির মনকে একটু হলে ও স্পর্শ করতে পেড়েছে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে মিহিকে নিয়ে খুব ভয় হচ্ছে।

বৌ ভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরার সময় অভ্র মিহিকে অনেক বার ইশারা করেছে অভ্রের সাথে বসার জন্য কিন্তু মিহি অভ্রের দিকে ভালো করে তাকায় ই নি। অভ্র রেগে আগুন হয়ে বাসায় এসে পড়েছে।

রেহনুমা আহমেদ খুব খুশি, মিহিকে ও আদর করছে। শুধু চায় ছেলের থেকে দূরে থাকুক আর তো কিছু চায়নি। মিহি গাড়িতে বসে বাহিরে দিকে তাকিয়ে আছে। কখন এ বাসা থেকে যাবে সেই চিন্তায় মগ্ন মিহি। এখানে দম আটকে আসছে।

_______________________

মিনতির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে মিহির। দ্রুত রেডি হতে বলছে। কালকে বৌ ভাতের জামেলার কারনে তাদের বাসায় যেতে পারেনি আজকে সকালে ই রওনা দিবে।

মিহি দ্রুত রেডি হয়ে নেয়।

রেহনুমা আহমেদ অভ্রকে নিষেধ করতে যাবে ঐ বাড়িতে না যাওয়ার জন্য এর আগে ই অভ্র রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। এখন ছেলেকে নিষেধ করলে কখনো শুনবে না। তাই আর রেহনুমা কিছু বললো না।

অভ্র আর অভ্রের কাজিনরা এক গাড়িতে বসেছে। মিহি আর মিহির কাজিনরা অন্য গাড়িতে তীব্র আর মিনতি অন্য গাড়িতে। অভ্র মিহিকে দেখে ও না দেখা ভাব করে গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করা শুরু করে এতে মিহি খুব কষ্ট পায়। আর চোখে বার বার অভ্রকে দেখছিলো। কিন্তু অভ্রের এমন ভাব দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

বেশ কিছুদূর যেতে ই মিহিদের গাড়ি থেমে গেলো। মিহি কপালে বিরক্ত ভাজ ভেলে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–কী হলো থামালেন কেনো।

–এমনি একটু সমস্যা হচ্ছে। আপনি একটু নামুন তো।

মিহি সামনের সিটে বসা ছিলো তাই নেমে দাড়ালো।মিহির কাজিনরা ও নামতে চেয়েছে কিন্তু মিহি বারন করে দিয়েছে।
অভ্রে গাড়ি এসে সামনে থামলো। অভ্র ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,

–কী হয়েছে চাচা।

–গাড়িতে ডিস্টার্ব দিয়েছে আশেপাশে গ্যারেজ আছে বলে ও মনে হচ্ছে না।

–ওহ্ আচ্ছা। কতো বার বলবো চাচা গাড়ির ঠিক আছে নাকি আগে দেখে নিবেন।

মিহি চলো আমার সাথে মেকানিক নিয়ে আসি।

–না আমি গাড়িতে বসি আপনি নিয়ে আসেন।

–তুমি না আসলে আমি ও যাবো না। আমি যাই তোমরা বসে থাকো।

–এই,,,এই দাড়ান। যাবো আমি।

মিহি অভ্রের পিছনে পিছনে দৌড়ে যায়। অভ্র ইশারা করতে ই দৃপ্ত আর অমি নেমে মিহিদের গাড়িতে গিয়ে বসে।

অভ্র গাড়িতে বসেতে ই মিহি পিছনে সিটে গিয়ে বসে।

–তোমার ড্রাইভার আমি?

–আমি এটা কখন বললাম।

–তাহলে পেছনে বসলে কেনো।সামনে আসো নয়তো গাড়ি চালাবো না।

মিহি অসহায় ভাব করে সামনে আসলো।
মিহি সামনের সিটে আসতে ই অভ্র ভালো করে ডোর লক করে দেয়। গ্লাসগুলো লাগিয়ে দেয়। মিহির দিকে এগিয়ে যেতে ই মিহি পিছনে যেতে থাকে।

–যতোই পেছনে যাও না কেনো আমার কাছে তো আসতে ই হবে টিয়াপাখি।

–আপনি মেকানিক আনতে যাবেন না।

–আমি ই তো মেকানিক। আমার রাজ্যে আমার রানি আমার উপর অভিমান করেছিলো। তাই রানীর রাগ ভাঙ্গিয়ে আমি ই মেকানিক হয়ে গেলাম।

–সরুন। তাহলে এই লুচুগিরি করার জন্য এই গাড়িরে নিয়ে এসেছেন।

–হোয়াট ইস দ্যা মিনিং অফ লুচুগিরি।

–এই যে এগুলো যা করতেছেন সব ই লুচুগিরি।

–তাই নাকি। তাহলে আরেকটু লুচুগিরি করি।

–এই না সরুন।

কিন্তু অভ্র কোনো কথা ই শোনছে না। মিহির অনেকটুকু কাছে যেতে ই মিহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে দেয়।

অনেক্ষন হয়ে গেছে কিন্তু অভ্রের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে মিহি হালকা করে এক চোখ একটু খুলে দেখে অভ্র ঠিক আগের ন্যায় মিহির দিকে তাকিয়ে আছে।

মিহি এমন অবস্থা দেখে অভ্র একটা হাসি দিয়ে নিজের সিটে ঠিক হয়ে বসে। মিহির হাতে একটা চুমু খেয়ে ড্রাইভ করতে থাকে। এক হাতপ ড্রাইভ করছে অন্য হাতে মিহির হাত ধরে আছে।

–বেশি সুখ করলে কপালে দুঃখ থাকে তা জানেন তো।(মিহি)

–হুম, সব দুঃখ মাথা পেতে নিব রানী। শুধু আপনি পাশে থাকবেন।

__________________________

মিনতি বাড়িতে আসার পর, সবাই বরন করে ঘরে নিয়েছে। মিনতি ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হতে ই মা এসে জিজ্ঞেস করলো,

—কিরে মা শ্বশুর বাড়ি কেমন? সবাই আদর করে তো।

–মা অনেক আদর করে। এই রকম শ্বশুর বাড়ি ভাগ্য করে পেয়েছি।

মিহির মা মুখট মলিন করে জিজ্ঞেস করলো,

–মায়ের থেকে কী বেশি আদর করে।

মিহি হাসি মুখে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

–মায়ের মতো কী কেউ আদর করতে পারে বলো। মা মায়ের জায়গায় অন্যরা অন্যদের জায়গায়।

— যেটা জানতে আসলাম,আচ্ছা মিহি কোথায়।

মিনতি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলে,

–আসেনি ও।

–না তো প্রিয়া রিয়াকে দেখলাম কিন্তু মিহিকে তো দেখিনি।

–কী বলো মা। এসেছি তো ঘন্টা খানিক হবে এখনো মিহি কোথায়।

রেহনুমা আহমেদ এই নিয়ে ছয়বার কল দিয়েছে। অভ্র কোথায় জানার জন্য। কী বলবে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো এখনো তো দুজনের খুজ নেই। রেহনুমা আহমেদ তো রেগে আগুন হয়ে আছে। অভ্র তো ফোন অফ করে রেখেছে। মিনতির ও প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আজকে বাসায় আসলে এর একটা বিহিত করে ছাড়বে…..

চলবে

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৬

রেহনুমা আহমেদ এই নিয়ে ছয়বার কল দিয়েছে। অভ্র কোথায় জানার জন্য। কী বলবে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো এখনো তো দুজনের খুজ নেই। রেহনুমা আহমেদ তো রেগে আগুন হয়ে আছে। অভ্র তো ফোন অফ করে রেখেছে। মিনতির ও প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আজকে বাসায় আসলে এর একটা বিহিত করে ছাড়বে।

মিনতিকে এতো উত্তেজিত হতে দেখে তীব্র বললো,

–সমস্যা কী তোমার বলো তো।মিহি অভ্র দুজন এক সাথে আছে হয়তো এতে এতো টেনশন করার কী আছে।

— কিছু না। (আপনার মা যে রাগ দেখাচ্ছে মনে তো হচ্ছে আমার বোন আর অভ্র বিয়ে করতে গেছে) কথাটা মিহি মনে মনে বললো।

–আবার কী ভাবছো।

–ভাবছি সব কথা তো আর সব জায়গায় বলা যায় না তাই না।

তীব্র মিহিকে টান দিয়ে পাশে বসিয়ে বলে।

–বাদ দেও না এসব। আমার দিকে মনোযোগ দেও অন্যগুলো বাদ দেও।

মিহি প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। এতোক্ষন যে কিভাবে চলে গেলো তা বুঝে উঠতে পারেনি। মনে হচ্ছে এই তো মাত্র গাড়িতে বসলো এতো দ্রুত ই যে সন্ধ্যা হয়ে যাবে তা ভাবতে পারেনি। ৫ঃ৫৬ বাজে একটু পর ই তো সন্ধ্যা হবে। বাড়িতে যাওয়া পর কী হবে ভাবছে।

–টিয়াপাখি।

–……

–টিয়াপাখি

–……

দুইবার ডাকলো মিহি কিছু বলছে না।এবার মিহির কানের কাছে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,

–টিয়াপাখি

মিহি চোখ রাঙ্গিয়ে উওর দিলো,

–আমার নাম আছে। মিহি।

–তাই বলে কী আমি আদর করে একটা নামে ডাকতে পারবো না।

–না।

–হাজার বার ডাকবো৷ এখন বলো কী নিয়ে চিন্তায় আছো।

–বাসায় যাবো না আমি আজকে।

–তাহলে চলো বিয়ে করে নেই।দুজন বহুদূর চলে যাবো। একটা কুঁড়েঘর থাকবো। আমি আইসক্রিম বিক্রি করবো, যে টাকা পাবো তা দিয়ে দিন শেষে বাজার করে আমি ই এসে রান্না করবো আর তুমি শুধু আমার পাশে থাকবে। আমার চোখের সামনে থাকবে। আর আমাকে ভালোবাসবে। ফিউচার প্ল্যান কমপ্লিট চলো পালিয়ে যাই।

মিহি মুখটা বাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

মিহি বাড়ির ভেতরে ডুকতে ই মিনতি বলে,

–তোর কাছে আমি জানতে চাবো না এতোক্ষন তুই কোথায় ছিলি কে তোর সাথে ছিলো,শুধু এইটুকু বলবো আজকের পর থেকে তোকে আর অভ্রকে যেনো একসাথে না দেখি। আরো অনেককিছু বলার ছিলো। বললাম না। শুধু এই কথাটা মনে রাখিস। বোনের সুখ দেখতে চাস তো অভ্রের সাথে মিলামেশা বন্ধ কর।

মিহিকে এইটুকু বলে ই মিনতি নিজের রুমে চলে গেলো।মিহি জানতো এমন কিছু একটা হবে তাই কথাগুলো শুনে অবাক হলো না।
নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুম ডুকলো।

রাতের বেলা,

সবাই খাবার টেবিলে খাবার খেতে বসলো কিন্তু মিহিকে দেখতে পাচ্ছে না অভ্র। বাসায় আসার পর তো একবারের জন্য ও দেখা মেলেনি মিহি। অভ্র বেশ কয়েকবার মিনতিকে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু আশানুরূপ কোনো উওর ই পায়নি।
অভ্র ভেবেছিলো খাওয়ার সময় হয়তো মিহিকে দেখতে পাবে কিন্তু তা হলো আর কোথায়। অভ্র শুধু খাবারটা খেলো না।

–অভ্র না খেয়ে উঠে যাচ্ছো কেনো।

–ভাবি একটা ফোন আসছে ইমারজেন্সি। খাবারটা রুমে দিয়ে দিয়েন।

ইমারজেন্সি ফোন মানে। মিনতি দ্রুত মিহির রুমে যায়। কিন্তু মিহি শুয়ে আছে ফোনটা চার্জে দেওয়া তার মানে অন্য কেউ কল দিয়েছে। অযথা ই মিনতি সন্দেহ করছে না তো। এসব ভাবতে ভাবতে খাবার টেবিলের দিকে যেতে থাকে মিনতি।

রাত সাড়ে বারোটা মতো বাজে হঠাৎ প্রিয়া এসে বললো,

–আপু এভাবে শুয়ে আছো কেনো।

–এমনি ভালো লাগছে না।

–উঠে একটা কথ বলবো।

–কালকে সকালে বলিস এখন ঘুমা।

–আপু প্লিজ উঠো। বললাম তো কথা আছে।

–প্রিয়া প্লিজ তুই এখন চুপ কর নয়তো আমি চলে যাচ্ছি এই রুম থেকে।

মিহি বেশ জোরে চিৎকার দিয়ে কথাগুলো বললো এতে প্রিয়া আর কোনো কথা বললো না।
বেশকিছুক্ষন পর,

–টিয়াপাখি রাগ করে আছো কেনো।

অভ্র মিহির কানে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কথাটা বললো। এতে মিহি লাফিয়ে উঠে বসলো।

–আপনি..

–হুম অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি।

–ফালতু কথা বলবে না কীভাবে এসেছেন।

–প্রিয়া হেল্প করেছে। মেয়েটার সাথে তুমি রাগ দেখালে কেনো।

–আমি জানতাম নাকি আপনি আসবেন।

–আমি আসবো জানলে কী রাগ দেখাতে না।বাহ তাহলে আমি তোমার হৃদয় আমার ভালোবাসার নামটা লিখাতে পেড়েছি।

–কখনো পাড়বেন না।

–শিকার করে নাও জানেমান। (অভ্র)

–কী শিকার করবো।

–এই যে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো।

–আমি কাউকে ভালোবাসি না(মিহি)

–আচ্ছা ভালোবাসতে হবে না। এখন খেয়ে নেও।

–আমার ক্ষুধা নেই।

–হয়েছে আর অভিমান করে থাকতে হবে না।

–ক্ষুধা নেই বললাম তো।

–আমি ও কিন্তু খাইনি। হা করো।

কথাটা বলে ই মিহির মুখে খাবার দিয়ে দিলো। অভ্র মিহির পাশে খাইয়ে দিচ্ছে নিজে ও খাচ্ছে।

প্রিয়া এই টাইমে তুই বাহিরে কী করছিস। মিহি কোথায়।

মিনতিকে দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায় প্রিয়া।

–ভয় পেলি কেনো। মিহি কী তোকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে।

–না আপু তেমন কিছু না।

–তাহলে চল তোকে রুমে দিয়ে আসি।

–আপু কিছু হয়নি তো আমি একা ই যেতে পারবো।

–আরে চল তো মিহি ও আমার সাথে রাগ করে আছে দেখি কী করে মেয়েটা।

–আপু এতো রাতে যাওয়ার কী দরকার ঘুমিয়ে আছে হয়তো।

–চুপ চল আমার সাথে….

চলবে।

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-১৩+১৪

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৩

মিহি এবার ভয় পেয়ে গেলো। এভাবে দুজনকে একরুমে দেখলে তো আজকে মানসম্মান শেষ। এভাবে ডাকছে কেনো যেনে ফেললো না তো আমি এই রুমে আছি।

মিহি অভ্রকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো

–এই শুনতে পাচ্ছেন। কেউ এসেছে হয়তো এখন কী হবে।

অভ্র মিহির কথায় বিন্দু পরিমান ও নড়লো না কোনো কথা ও বললো না। মিহি আরো কয়েকবার ডাকলো।

যখন দেখছে অভ্র উঠে ই না তখন মিহি উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে মুখে ঢেলে দিলো।

অভ্র উঠে রাগি চোখ নিয়ে মিহির দিকে তাকিয়ে আছি। মিহির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

–আমাকে ভিজালে এখন তোমাকে ও ভিজতে হবে।

–বাহিরে যে দরজা নক করছে কে ঐটা দেখুন আগে। এখন আমার কী হবে। কেউ জেনে ফেললো না তো?

–এতো ভয় পেয়ো না। তুমি আলমারি পেছনে দাড়িয়ে থাকো আমি দেখি কে আসলো।

মিহি কথা মতো আলমারির পেছনে দাড়াতে ই অভ্র দরজা খুলে দিলো।

–ফুপ্পি এতো জোরে চিৎকার করছো কেনো। ঘুমাতে দিবা তো।(অভ্ররে বড় ফুপ্পি দিলরুবা)

দিলরুবা বেগম কোনো কথা না বলে রুমে ডুকে পড়লো।

মিহি খুব ভয় পেয়ে যায় তাহলে কী তার ধারনা ই ঠিক।

–অভ্র বিছানা এমন ভিজে আছে কেন?

–পানি খেতে গিয়ে গ্লাস হাত থেকে পড়ে গিয়েছে।

–গ্লাস হাত থেকে পড়ে গেলো কেনো??

–উফফ ফুপ্পি এতো প্রশ্ন কেনো করো বলো তো।চলো তো আমরা বাহিরে যাই।

এটা বলে ই অভ্র টানতে টানতে দিলরুবা বেগমকে নিয়ে রুম ত্যাগ করে।

মিহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একমুহূর্ত আর এই রুমে না দাড়িয়ে সোজা গেস্ট রুমে চলে যায়।

গেস্ট রুমের দরজা খুলা ই ছিলো মিহি প্রিয়ার পায়ে শুয়ে পড়ে ভাগ্যিস কেউ ঘুম থেকে উঠেনি। কালকে অবশ্য অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে যার কারনে হয়তো উঠতে লেইট হয়েছে।

_____________________

প্রিয়া ঘুম থেকে উঠে ই জিজ্ঞেস করলে,

–আপু কখন এলে তুমি। রাতে একবার উঠে ওয়াশরুম গিয়েছিলা তোমাকে তো দেখিনি।

–রাতে ই এসেছি তুই খেয়াল করিসনি।

হাসি মুখে কথাটা বলে ই ওয়াশরুম ডুকে পড়লো মিহি।

অভ্র সোফায় বসে বসে দাতে নখ কাটতেছে।সকালের পর থেকে মিহিকে আর একবার ও দেখেনি সকালে ফুপ্পি জন্য ভালো করে কথা ও বলতে পারেনি। সকালে নাস্তাটা ও মিহি রুমে করেছে বাহিরে বের হয়নি।

একটু পর সবাই রং খেলবে তখন তো মিহিকে বের হতে ই হবে। এটা অভ্রদের বসার নিয়ম। ছেলে মেয়েরা বিয়ের পরের দিন রং আর হলুদ নিয়ে মজা করে। অবশ্য রিতীটা ছিলো হলুদ নিয়ে সময়ের পরিবর্তনে এখন রং নিয়ে মেতে উঠে।

সবাইকে সাদা ড্রেস দেওয়া হয়েছে। মিহি সাদা থ্রি পিসটা পড়ে বেডে বসে আছে। এখন বাহিরে গেলে ই অভ্রের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু অভ্রের সামনে যেতে চায়না মিহি।অভ্র নামের গভীর মায়ায় নিজেকে জড়াতে চায়না। আর অভ্র সামনে আসলে ও তাকে প্রতাখ্যান করার মতো ক্ষমতা মিহি যোগাতে পারেনা। অভ্র পাশে আসলে ই হার্টবিট বেড়ে যায়। অনুভূতিগুলো একান্তই উপভোগ্য কিন্তু মিহি চায়না সেই অনুভূতি গুলো উপভোগ করতে।খুব ভালো করে জানে অভ্রকে ভালোবাসলে কষ্ট পেতে হবে।

–টিয়াপাখি।

আবার সেই ডাক। তারমানে অভ্র এসেছে। এই ডাকটা শোনার পর নিজেকে দমিয়ে রাখা যায়না। তাও যতটা পারি প্রতাখ্যান করি।

–টিয়াপাখি ভয় পেয়েছো তুমি। সরি আমি তোমাকে সকালের পরিস্থিতিতে ফেলতে চাইনি।

মিহি কোনো উওর দিলো না অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

–রাগ করে আছো।

–চলে যান আপনি।

— তাই নাকি।

–আমার দিকে তাকিয়ে বললে চলে যাবো।

মিহি অভ্রের দিকে ঘুরে তাকাতে ই চোখ আটকে যায়।সাদা একটা পাঞ্জাবি পড়েছে। চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়তেছে। ঠোটগুলো হলকা গোলাপি হয়ে আছে। মুহুর্তের ই মিহির মন চেঞ্জ হয়ে গেলো।

মিহি উঠে দাড়িয়ে পড়লো।

–কী জানি বলছিলে টিয়াপাখি।

–কখন। কিছু বলেনি তো।

–তাই

বলে ই মিহির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মিহির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

–এভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেনো?

–তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো কেনো।

–আপনি এগিয়ে আসছেন তাই। সরে দাড়ান।

–তাহলে বলো ভালোবাসি।

–কেনো বলবো এই কথা।

–আমাকে ভালোবাসো তাই বলবে।

–আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

–সত্যি তো।

–হুম

অভ্র আস্তে আস্তে মিহির খুব কাছে চলে যায়। কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,

ভালোবাসি টিয়াপাখি।সময় থাকতে আগলে রাখো নয়তো হারিয়ে ফেলবে। একটু ভালোবেসে দেখো পৃথিবীর সব সুখ তোমার ই চড়নে থাকবে।

মিহি চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ মিহির গালে অভ্র হাত ছোয়ে দিলো। একাদা লাল রং মুখে দিয়ে অভ্র ছুটে পালালো।মিহি পিছনে ছুটতে যাবে ঠিক তখন ই রেহনুমা আহমেদ রুমে ডুকে।

রেহনুমা আহমেদ মুখখানা মলিন করে জিজ্ঞেস করলো,

–কি হচ্ছিল এখানে।

মিহি কী উওর দিবে বুঝতে পারছে না। তাও বললো,

–উনি রং ছোয়াতো আসছিলো।

— তুমি বাহিরে যাওনি কেনো।

–আসলে ভালো লাগছিলো না তাই যাওয়া হয়নি।

–ওহ্। তোমাকে একটা কথা বলি।

মিহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

–আমি চাইনা তোমার বোনের সংসার ভেঙে যাক। নিশ্চিয় তুমি ও চাওনা। তাই অভ্রের থেকে দূরে থাকবে কেমন….

চলবে

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৪

–ওহ্। তোমাকে একটা কথা বলি।

মিহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

–আমি চাইনা তোমার বোনের সংসার ভেঙে যাক। নিশ্চিয় তুমি ও চাওনা। তাই অভ্রের থেকে দূরে থাকবে কেমন।

মিহির মুখটা মুহূর্তে ই চেঞ্জ হয়ে যায়। বোনকে তো অনেক বেশি ভালোবাসে। নিজে জেনে বুঝে তো আর বোনকে কষ্ট দিবে না।

রেহনুমা তো মিনিটের জন্য ও আর দাড়ায়নি। মিহিকে কথাটা বলে যেনো মনে প্রশান্তি হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মিহি মোটে ও খারাপ না কিন্তু এক বাড়িতে দুইছেলের বিয়ে তো করাবে না। তার থেকে ও বড় কথা অভ্রের জন্য মিহির থেকে সুন্দর মেয়ে তিনি দেখে রেখেছেন। মেয়ে বিদেশে পড়ালেখা করে। লেখাপড়া পাঠ চুকিয়ে ই দেশে আসবে। তাই তো এতো অপেক্ষা।

মিহি বেডের এক কোনে বসে আছে। ভাবছে কী মন্ত্র পড়লে দূরে থাকা যাবে অভ্র নামক মায়া থেকে।চোখের কোনে তো অনেক জল ভীর জমিয়েছে, ঠিক মানতে পড়ছে না এতো দিন যাকে চোখে সহ্য করতে পারতো না আজ তাকে হারাবার ভয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অশ্রু বিসর্জনে কী কোনো ফল পাবে সেই তো দূরে থাকতে হবে। ভালোবেসে ও মুখে উচ্চারণ করতে পারবে না।

–এই মিহি শুনতে পাচ্ছিস না কী এতো ভাবছিস।

মিনতি এসেছে। মিহিকে অনেক্ষন ডাকার পর ও যখন কোনো সারা শব্দহীন ভাবে বসে ছিলো তখন মিনতি দু’হাত দিয়ে শরীর ঝাকিয়ে জানান দিলে মিনতি এসেছে। মিহির ভাবনার সুতোয় টান পড়লো তখন।

বোনের দিকে চোখ তুলে তাকাতে ই দেখলাম মুখে মিষ্টি হাসি। লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পড়ে আছে। মাথায় গামছা পেঁচানো কতগুলো চুল সামনে এসেছে পড়ে আছে। গামছাটা ভালো ভাবে পেচানো হয়নি এই বুঝি খুলে পড়ে যাবে।

মিহির চোখে যে পানি তা দেখে মিনতি বোনের পাশে বসলো। দুহাত দিয়ে মুখখানা উপরে তোলে কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–কী হয়েছে কান্না কেনো করছিস।

মিহির মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না। বোনকে জড়িয়ে ধরে সকল কষ্ট অশ্রু ধারার সাথে মিশিয়ে নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করছিলো।

ছোট বোন তো খুব আদরের, বোনকে কখনো এভাবে কাদতে দেখনি। ভয়ে আঁতকে উঠে মিনতি কী হলো, এমন ভাবে কাদছে কেনো।

ঠিক সেই মুহুর্তে রুমে ডুকলো তীব্র আর অভ্র। হাসিখুশি মুখটা মুহুর্তে ই চুপশে গেলো অভ্রের। মনে হচ্ছে নিজের কলিজে থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মিহির মন খারাপ ছিলো তা তো বিন্দু মাত্র ও টের পায়নি অভ্র। এতো ভালোবাসে অথচ মন খারাপ তা বুঝতে পারেনি। এ কেমন দায়সারা হয়ে পড়েছে।

–কী হয়েছে ভাবি?

অভ্রের প্রশ্নের কী উওর দিবে মিনতে জানে না কারন সে তো নিজে ই মিহির মন খারাপের কারন জানে না।

–আমাকে কিছু বলছে না তো। কী হলো হঠাৎ করে।

মিহি কারো কথা ই কানে নিচ্ছে না। নিজের কান্না নিজে করে ই যাচ্ছে। বড় বোনের আদরে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। মিনতি বোনকে কোলে শুয়ে বসে আছে।

অভ্র ও পাশে বসে আছে। ইচ্ছে করছে মিহির মাথায় বিলি কেটে দিতে নিজের উষ্ণতায় জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করতে কী হয়েছে তার প্রাণ পাখিটার।
মিনতির থেকে বেশি অস্থির অভ্র হয়ে যাচ্ছে কোনো ভাবে ই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।রাতে বউ ভাতের অনুষ্ঠান আছে। নতুন বউ সবাই ই দেখতে আসছে। মিনতি অনিচ্ছা সর্তে ও মিহিকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে চলে গেলো।
প্রিয়া বেড সাইডে বসে আছে। অভ্র প্রিয়াকে সরে যেতে বললে,

এতে প্রিয়া বেশ অবাক হয়ে বললো,

–আমি কেনো সরে যাবো। সরে যেতে হলে আপনি যান।

–লক্ষি বোন আমার কথা পেচিয়ো না দরজা লক করে দিয়ে বাহিরে চলে যাও। কেউ আসলে রুমে ডুকতে দিবে না।

–কেনে আপনি মিহি আপুর সাথে একা থাকবেন কেনো??

–তোমাকে পরে সব বলবো এখন যাও।

প্রিয়া আর কেনো প্রশ্ন করলো না। বাহির থেকে দরজা লক করে দাড়িয়ে আছে।

মিহি সাদা ড্রেসটা ই পড়ে আছে। চুলগুলো এলেমেলো হয়ে মুখে এসে পড়ছে। চোখের কাজলগুলো লেপ্টে গেছে চোখের পানিতে। মুখখানা মলিন হয়ে আছে। এ যেনো সব সময় ঝলমলে চাঁদটা আজকে কষ্ট মেঘের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে।

অভ্র পাশ থেকে গ্লাসটা নিয়ে মুখে হালকা পানি ছিটালো। এতে ই মিহির ঘুমে বাধা পড়লো। উঠে অভ্রকে দেখে নিজের সর্বস্ব দিয়ে জড়িয়ে ধরে আবার কান্না জুড়ে দিলো। অভ্র মাথায় বিলি কেটে দিয়ে খুব নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

–কী হয়েছে টিয়াপাখি। ভয় পেয়েছো কী তুমি। বলো আমাকে। তোমাকে এম অবস্থায় দেখতে আমার যে ভালো লাগে না। বলো প্লিজ কী হয়েছে।

মিহির ঘোর কাটার সাথে সাথে অভ্রকে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয়। একটুর জন্য অভ্র বেড থেকে পড়ে যায়নি।

–কেনো এসেছেন এখানে?

অভ্র নিজেকে স্বাভাবিক রেখে উওর দিলো।

–তোমার কী হয়েছে তা আগে জানতে চাই।

–কিছু হয়নি বের হন এই রুম থেকে নয়তো আমি এখন বাসায় চলে যাবো।

–টিয়াপাখি তুমি আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো কেনো।

–আপনি যাবেন নাকি আমি যাবো।১৬

অভ্র আর কিছু বললো না নিঃশব্দ বাহিরের দিকে পা বাড়ায়।

____________________________

চারদিকে মানুষে পুরোপুরি ভরা। মিহি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। অবশ্য বৌভাতের অনুষ্ঠানে আসার পর থেকে ই রেহনুমা আহমেদ মিহিকে নজরে রাখছে।

দূর থেকে অভ্র ও সুযোগ খুজচ্ছে কখন মিহির সাথে কথা বলবে আর তো দূরে থাকা সম্ভব না। মুখে বললে ও কাজে করে দেখানো খুব কঠিন। এই তো একটু আগে ই মনে মনে বেশ অভিমান জুগিয়েছিলো মিহির প্রতি কেনো করলো এমন। এতো ঘৃণ্য পাত্র যোগ্য কী অভ্র।

হঠাৎ লোডশেডিং হলো। অভ্রের সুযোগ হলো। মিহিকে টেনে নিয়ে একটা সাইডে দাড় করায়। মিহি স্মেল শুনে ই বুঝেছে এটা অভ্র।

–সমস্যা কী তোমার ইগ্নোর করছো কেনো।

মিহি ভয়ে চুপ করে আছে কী বলবে, এখন যদি বিদ্যুৎ চলে আসে তাহলো তো রেহনুমা আহমেদ সচোখে সব দেখে নিবে।

চলবে

[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-১১+১২

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১১

পাভেল বাহিরে এসে দাড়ালো সুযোগ খুজছে মিহির সাথে কথা বলার। মিহি রুম থেকে বের হয়ে মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছিলো হঠাৎ পাভেল হাত ধরে ফেলে। দূর থেকে অভ্র স্পষ্ট দেখতে পায় কেউ একজন তার টিয়াপাখির হাত ধরেছে।

মিহি বিদ্যুতের গতিতে হাতটা সরিয়ে নেয়।

–এতো অসভ্য কীভাবে আপনি, চেনেন না জানেন না একজন মেয়ের হাত ধরে ফেলেছেন।

মিহি আরো অনেক কিছু ই বলে যাচ্ছে কিন্তু পাভেল শুধু মিহিকে ই দেখে যাচ্ছে।
হঠাৎ অভ্র এসে বললো,

–মিহি রুমে যাও।

–কেনো।

বেশ জোরে চিৎকার করে বললো,

–আমি যেতে বলিছি তাই যাবে।

অভ্রের দিকে আশেপাশে লোকগুলো তাকিয়ে আছে। মিহি অভ্রের দিকে তাকাতে ই দেখে চোখগুলো লাল হয়ে আছে। মুখের মধ্যে রাগের ছাপটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। তাই মিহি আর কোনো কথা বলেনি সোজা রুমে চলে যায়।

–পাভেল এটা তোর ভাবি হয়। ওর থেকে দূরে থাকবি।( পাভেল অভ্রের কাজিন)

–ওহ্ আচ্ছা। সব যদি বড় ভাইয়ারা ই বুক করে ফেলে তাহলে আমাদের মতো ছোটদের কী হবে।

— মিহিকে ছাড়া অন্য যাকে ভালো লাগে তাকে খুজেনে।

–ভালো তো একজনকে বাসা যায়। সবাইকে তো না।

–সে তোর ব্যাপার কিন্তু মিহির আশেপাশে ও যেনো তোকে না দেখি মাইন্ড ইট ব্রো।

বলে ই অভ্র চলে যায়। পাভেলের সাথে এই মুহূর্তে জামেলা করলে পাভেল শিউর যে বাসায় বলে দিবো। এতো দ্রুত অভ্র বাসায় জানাতে চাচ্ছে না তাই এতো ভালো ব্যবহার করে বুঝালো।

এতো মানুষের মধ্যে মিহির সাথে একমুহূর্তে জন্য ও কথা বলতে পারেনি অভ্র। বিয়ের সকল কাজ সম্পূর্ণ করে চলে এসেছে। অভ্র বিদায়ের সময় মিহিকে খুজে ছিলো কিন্তু পায়নি।

গাড়ি এসে গেইটের সামনে থামতে ই। অভ্র মা, ফুফু, চাচি, খালামনিরা বরণ ডালা নিয়ে রেডি।

মিহি, প্রিয়া, রিয়া,অলি সবাই ই এসেছে মিনতির সাথে। খুব সুন্দর করে অভ্রের বাসাটা ও সাজানো হয়েছে। পুরো বাড়িতে রকমারি লাইটের আলোতে ঝলমল করছে।

অভ্র দূর থেকে মিহিকে দেখে শান্তিতে নিশ্বাস নিলো। কাজিনদের সাথে দাড়িয়ে আছে মিহি।

মিনতির পাশে এসে দাড়িয়েছে মিহি আর তীব্রের পাশে দাড়িয়েছে অভ্র। মিনতি আর তীব্রকে বরণ করার সময় অভ্র মিহির দিকে তাকিয়ে আছে। মিহি ডান দিকে তাকাতে ই অভ্রের চোখে চোখ পড়লো। মিহি দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এরকম ভাবে তাকিয়ে আছে তাই মিহি জিজ্ঞেস করলো, মিহি ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে।

অভ্র মেকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো কিছু না।

অভ্রেদের বাসায় ডুকতে ই তীব্র আর মিনতির সহ সকল কাজিনরা মিনতিকে নিয়ে বাসর ঘরে ডুকে যায়। ভেতর থেকে দরজা লক করে দেয়।

শুধু তীব্র একা বাহিরে। সবাই মিলে বিশ হাজার টাকা চেয়েছে। মিহিকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে সবাই ফ্লোরে নানা রকম গল্পে মেতে উঠেছে। অভ্র মিহি সাথে বসেছে। হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। অবশ্য মিহির শাড়ির জন্য তা কেউ বোঝার উপায় নেই।

মিহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু অভ্র ছাড়ছে না।

–আপনি এমন কেনো বলেন তো।

–আমি আবার কেমন।

–হাত ছাড়ুন।

–ছাড়ার জন্য কী ধরেছি নাকি।

–বিয়ে করে বউয়ের হাত ধরুন।

–তুমি তো আমার বউ ই।

–ইসসস বয়ে ই গেছে আপনার মতো আক্ষাম্মার বউ হতে।

–তাই নাকি। তোমার জন্য আমার খুব দুঃখ হচ্ছে।

মিহি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

–কেনো??

–এই যে এই আক্ষাম্মার বউ হতে হবে তোমাকে।

–ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কতো স্বপ্ন ই দেখা যায়।

এই আপু ভাইয়া দুজন কী এতো ফিসফিস করছো। মিহি দুষ্ট একটা হাসি দিয়ে বললো,

–এই যে তোমাদের ভাইয়ার নাকি পেট খারাপ হয়েছে তাই বলছে আমাদের বাসার খাবারে নাকি সমস্যা আছো।

অভ্র চোখ বড় বড় করে মিহির দিকে তাকিয়ে আছে।

–এই আমি অমন কথা কখন বললাম।

–আরে লজ্জা কিসের ওরা তো আপনার ই কাজিন।

–এই ওর কথা বিশ্বাস করিস না। আমার কিছু হয়নি।

–তাহলে কী কথা বলছিলে ভাইয়া আমাদের বলো।
মিহি দাতে দাত চেপে অভ্রকে বললো,

–নিন এখন বলেন কী বলতেছিলেন।

–কিছু না।

–ভাইয়া বলো কী বলেছো আপুকে?? আমাদের কে ফাকি দিয়ে কী তোমরা দুজন সব টাকা নিয়ে নিবে নাকি এই প্ল্যান ই চলছিলো তোমাদের মধ্যে তাই না।(অভ্রের কাজিন)

অভ্র ওদের কথা শোনে হতাশ কী বলে পুচকি গুলো।

— হে আমার পেটে সমস্যা হয়েছে এটা ই মিহিকে বলছিলাম। হয়েছে শুনেছিস তোরা।এবার থাম ভাই বোনেরা।

এই নে তোদের টাকা। এবার তো দরজা খোল।
বাহির থেকে তীব্র জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্চে আর বলছে।

মিহি দরজার পাশে গিয়ে বললো,

–বেশি স্মার্ট হয়েন না জিজু টাকা জানালা দিয়ে আগে দেন তারপর দরজা খুলবো।

তীব্র প্ল্যান টা ভেসতে গেলো। টাকা না দিলে দেখছি আজকে রুমে ডুকতে ই পারবে না। তাই জানালা দিয়ে টাকাটা দিয়ে দিলো।

সবাই রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসলো। তীব্র দরজা লাগানোর কিছুক্ষন পর অভ্র খুব সুন্দর করে দরজায় কান পাতলো। এটা দেখে মিহি জিজ্ঞেস করলো কী করছেন,

–আরে আস্তে বলো।

–হে বলবো, এখানে আবার কী করছেন।

–বিয়ে করবো তো কদিন পর তাই এক্সপেরিয়েন্স নিচ্ছি।

–তাই নাকি। শোনা যায়।

–কান পেতে দেখো।

মিহি ও দরজায় গান পাতলো। মিহি অভ্রকে দেখে বাকি কাজিন গুলো ও একে একে এসে কান পাতলো দরজায়। হঠাৎ তীব্র দরজা খুলে দিলো সবগুলো হুমরি খেয়ে রুমের ভেতরে মেজেতে পড়লো। মিহি একেবারে অভ্রের উপরে পড়েছে….

চলবে

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১২

মিহি ও দরজায় গান পাতলো। মিহি অভ্রকে দেখে বাকি কাজিন গুলো ও একে একে এসে কান পাতলো দরজায়। হঠাৎ তীব্র দরজা খুলে দিলো সবগুলো হুমরি খেয়ে রুমের ভেতরে মেজেতে পড়লো। মিহি একেবারে অভ্রের উপরে পড়েছে।
তীব্র আর মিনতি হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়েছে। একেক জন উঠে বসেছে। মিহি উঠতে গেলে অভ্র আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

___ছাড়েন নয়তো চিৎকার করবো।

—কেনো ছাড়বো তুমি এসে আমার উপর পড়েছো কেনো।

–আপনার কাছ থেকে কুবুদ্ধি নিয়ে ই পড়েছি।

–কিহ্ আমি কুবুদ্ধি দেই।

–তা নয়তো কী।

–এই আমি তোমাকে কী কুবুদ্ধি দিলাম।

–কান পাতার বুদ্ধিটা আপনার ই ছিলো।

–তুমি এতো ভালো তাহলে আমার কুবুদ্ধি কানে নিলে কেনো।

–এটা ই তো আমার দোষ।

–দোষ করেছো তাই শাস্তি পাচ্ছো।

এভার মিহি রেগে যাচ্ছে তাই অভ্র ছেড়ে দিলো। তীব্র আর মিনতি হাসতে হাসতে ই অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিক দিয়ে কী হচ্ছে তা তদের খেয়াল নেই। তীব্র হাসি থামিয়ে বললো,

–টাকা নিয়ে ও তোরা আমাকে শান্তি দিলি না।

–ভাইয়া এই জন্য আমাদের এভাবে ফেলে দিবেন।

–উচিত বিচার হয়েছে। আর কখনো কারো রুমে কানপাতবি না তোরা।

অভ্র উঠে এসে বললো,

–আমাকে তো একা ফেলিসনি আমার সাথে ছোট একটা ডাইনোসর এর বাচ্চা ও আমার উপরে ফেলেছিস কোমরটা ভেঙ্গে ব্লেন্ডার হয়ে গেছে।

মিহি চোখ বড় বড় করে অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র এটা দেখে আর মিহির দিকে তাকায়নি অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।

__আমার ভদ্র ভাইবোনেরা দয়া করে রুম ত্যাগ করুন। (তীব্র)

–আচ্ছা এই যে আমাদের ফেলে দিলে না এটা বিচারটা করবো। এখন যাচ্ছি।

–আচ্ছা যান। এমন কজিন যে আল্লাহ কাউকে দেয় না।

–শকুনের দোয়ায় গরু তো মরতে দেখিনি।

এটা বলে ই সবগুলো বের হয়ে আসলো।

মিহিদের জন্য দুইটা গেস্ট রুম রেডি করা হয়েছে। মিহি তার কাজিনদের গেস্ট রুমে পাঠিয়ে দিয়ে অভ্রকে খুজতে যাচ্ছে। যেহেতু ডাইনোসর এর ছোট্ট বাচ্চা বলেছে তার একটা বিহিত তো করতে ই হবে। রাগে, মাথা দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে। এমন হালকা পাতলা একটা মেয়েকে ডাইনোসর এর ছোট্ট বাচ্চা বলেছে।

মিহি বিদ্যুৎ এর গতিতে অভ্রের রুম খুজতেছে। হঠাৎ কেউ টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়।

–আপনি।

দরজা লক করতে করতে অভ্র উওর দিলো।

–আমাকে খুজছিলে জানি।

–আপনি দরজা লক করলেন কেনো।

–ওয়াশরুম যাচ্ছি এসে সব প্রশ্নের উওর দিবো।

–আপনি দরজা খুলে যান। আমি আপনার কাছে থাকতে আসি নাই।

অভ্র কোনো কথা না বলে ওয়াশরুম চলে গেলো। মিহি হাবলার মতো দাড়িয়ে আছে এটা কী হলো।

হঠাৎ অভ্রের ফোনটা বেডে উপর পড়ে থাকতে দেখলো।

মিহি গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়। ফোনটা হাতে নিতে ই ফোনের স্ক্রিনে নিজের ছবি দেখে চোখদুটো রসগোল্লা মতো করে তাকিয়ে আছে। এ কী দেখছে। ঘুমন্ত অবস্থায় মিহি অভ্ররে বুকে শুয়ে আছে। এটা তো তীব্র আর মিনতি রাতে দেখা করার সময়ের ছবি। মিহি ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তারপর অভ্র এই কাজটা করতে পারলো।

অভ্র খালি গায়ে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়েছে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতেছে। এটা দেখে মিহি অন্য দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দেয়।

–এই এই আপনি শার্ট না পড়ে এদিকে আসবেন না।

–যে জোরে চিৎকার দিছো মনে হচ্ছে আমি পেন্ট ও পড়িনি।

–আপনি খালি গায়ে বের হলেন কেনো।

–তোমাকে দেখানোর জন্য।

–ছিঃ আপনি এমন।

–হয়েছে ঘুরো এইদিকে শার্ট পড়েছি। ওয়াশরুম আমার শার্ট নিয়ে ডুকতে মনে নেই।

মিহি অভ্রের দিকে এগিয়ে এসে ফোন দেখিয়ে বললো,

–এই ছবি কেনো তোললেন।

–বলবো কেনো তোললাম।

–হুম

–শোনবে তুমি

খুব আস্তে আস্তে কথাগুলো বলে মিহির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মিহি পিছনে যেতে যেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। অভ্র আরো কাছে আসতে ই মিহি চোখ বন্ধ করে দেয়।

অচমকা অভ্র মিহিকে কোলে তোলে নেয়। বারান্দায় বেলকনির গ্লাসটা খুলে মিহিকে নিয়ে বসে। বেলকনিটা খুব সুন্দর ডেকোরেশন করা। একটা ড্রিম লাইট জালানো। পাশে কিছু ফুলেট টব। ফুলগুলো থেকে খুব সুন্দর একটা স্মেল আসছে। মিহি চারদিকে তাকিয়ে দেখছে।

–আমাকে এখানে আনলেন কেনো। আমি চলে যাবো।

–এই লকস্কিনে যে ছবিটা দেখছো এটা কী তোমার বোনকে দেখাবো।

মিহি জোরে চিৎকার দিয়ে বলে
–নাহ

–তাহলে বসে আমার সাথে গল্প করো।

–আমার কজিনরা রুমে একা আছে আমাকে খুজবে।

–সে যখন খুজবে তখন দেখা যাবে।

–সুযোগে সৎ ব্যবহার করছেন।

–আচ্ছা তাহলে যাও। আমি তোমার বোনকে তোমার ছবিটা দেখিয়ে আনি।

মিহি চুপ করে বসে আছে আর কোথাও যাওয়ার কথা একবার ও মুখ দিয়ে বের করেনি। মিহি কে চুপ দেখে অভ্র বললো,

–মিহি আমি চাই না আর পাঁচটা রিলেশন মতো আমকে তুমি কাছে টেনে নেও।তুমি শুধু আমার চোখের সামনে থাকো আমাকে ভালোবাসতে হবে না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সারাজীবন বুকে আগলে রাখতে চাই……

অভ্র কথা বলে ই যাচ্ছে কিন্তু মিহির কোনো শব্দ পাচ্ছে না তাই অভ্র মিহির দিকে তাকাতেই দেখে ফ্লোরে পড়ে ই ঘুমিয়ে আছে।

মিহিকে দেখে অভ্র হাসলো। কী ঘুম পাগলি। এতোটুকু সময়ের ভেতরে ঘুমিয়ে পড়লো। অভ্র কোলে তোলে নিয়ে বেডে বসলো। মিহিকে কোলে শুয়ে দিয়ে অভ্র বসে বসে মিহিকে দেখছে। ঘুমন্ত অবস্থায় একেবারে বাচ্চাদের মতো লাগছে।

______________________

—-অভ্র উঠ তো তোর সাথে কথা আছে।

দরজায় অনবরত নক করার শব্দে মিহির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ মেলে তাকাতে ই দেখে অভ্রের কোলে শুয়ে আছে। অভ্র বসা অবস্থা বলিশে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।

–অভ্র শোনতে পাচ্ছিস না নাকি।দরজা ভেঙ্গে আসতে হবে নাকি।

মিহি এবার ভয় পেয়ে গেলো। এভাবে দুজনকে একরুমে দেখলে তো আজকে মানসম্মান শেষ। এভাবে ডাকছে কেনো যেনে ফেললো না তো আমি এই রুমে আছি……

চলবে,

[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-৯+১০

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৯

অভ্র নাহিদকে ছেড়ে দিয়ে সোজা বাড়ির ভেতরে চলে যায়। ভেতরে গিয়ে মিহিকে খুজতে থাকে। মিহিকে খুজে পেয়ে ই টানতে টানতে বাড়ির পেছনে নিয়ে যায়। নিয়ে ই একটা থাপ্পড় মারে।

মিহি গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না।

–আমাকে তোর পছন্দ হয় না নাহিদের সাথে তো ঠিক ই প্রেম করে বাড়াচ্ছিস। কী আছে নাহিদের মধ্যে যা আমার মধ্যে নাই।

–অভ্র….

–আওয়াজ নিচে।

–কেনো কী করেছি আমি। কেনো মারলেন থাপ্পড় কীসের এতে অধিকার।

অভ্র মিহিকে এক হাতে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরেছে।অন্য হাতে মুখ চেপে ধরেছে।

–নাহিদ তোর বাসার সামনে কেনো। বল বিয়ে করবি নাহিদকে যা এখন ই চলে যা আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

মিহির আর এসব সহ্য হচ্ছে না শরিরের সব শক্তি দিয়ে অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

–কী ভাবেন আপনি আমাকে। নাহিদ কেনো এসেছে এটা আমি কী করে জানি। আপনি কী কখনো দেখেছেন আমি নাহিদ এর সাথে কোনো অপ্রয়োজনীয় কথা বলেছি বা কারো কাছ থেকে শুনেছেন যে আমার নাহিদের সাথে কোনো সম্পর্ক আছে।

–তাহলে নাহিদ বললো কেনো তুমি জানো নাহিদ এখানে এসেছে কেনো।

–তা আমি কী জানি। সব কিছু যেনে মানুষকে অপবাদ দিতে আসবেন।

এটা বলে ই মিহি চলে যেতে নিলে অভ্র হাত ধরে ফেলে।
মিহি রাগে হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।

–ছাড়ুন।

–সরি টিয়াপাখি।

–সরি বললে সব সমাধান হয়ে যায় নাকি। আমাকে যে কষ্ট দিয়েছেন যে থাপ্পড় দিয়েছেন সেই ক্ষতটা সরি বলে কি মুছে ফেলতে পারবেন।

— রাগের মাথায় বলে ফেলেছে।প্লিজ এমন করো না।

মিহি আর কোনো কথা বললো না। খুব কষ্ট হচ্ছে। এসব কথা শুনতে হবে কখনো ভাবতে পারেনি।

মিহি রুমে ডুকার সাথে সাথে মিনতে এসে জিজ্ঞেস করলো,

–কী হয়েছে তোর।

–কিছু না আপু।

–বল আমাকে কিছু না হলে মন খারাপ করে আছিস কেনো।

–এমনি ভালো লাগছে না।

অভ্র এখনো ও বাড়ির পেছনে দাড়িয়ে আছে কী করবে বুঝতে পারছে না। রাগ করে তো মিহির সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেললো। এখন নিজে ই নিজেকে মারতে ইচ্ছে করছে।

অভ্র আস্তে আস্তে স্টেইজের দিকে যায়। পুরো বাড়ি লাইটিং করা। লাল, হলুদ, গোল্ডেন মরিচ বাতি দিয়ে খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করেছে।ক্যামেরা ম্যান ব্যস্ত সবার ছবি নিতে। অভ্র দাড়িয়ে থেকে এসব দেখছে আর মিহিকে খুজতেছে।

হঠাৎ মিহিকে দেখে অভ্রের চোখ আটকে গেলো। এ কাকে দেখছে। এতোক্ষণ তো শুধু রাগ ই দেখিয়েছে। আসার পর এই প্রথম স্পষ্ট আলোয় মিহির মুখখানা দেখলে। পারপেল কালারের একটা শাড়ি পড়েছে। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি খোপায় গাজরার মালা। অভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। হাজার বছর এভাবে তাকিয়ে থাকলে ও মনে হয় তৃপ্তি আসবে না। যে যাকে ভালোবাসে সে দেখতে যতোই খারাপ হক না কেনে তার চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হয় তার প্রেয়সী।

—অভ্র.. এই অভ্র

–হে আপু বলো। (ইপ্তি অভ্রের কাজিন)

–কী দেখছিস ঐদিকে।

–কিছু না।

–ওহ্ বলতে চাচ্ছিস না।

–না আপু তেমন কিছু না।

–তা ভাই আমার প্রেমে পড়েছে বুঝি।

অভ্র মাথার চুলগুলো ঠিক করতে করতে মুচকি হাসি দিলো।

____________________________

পরের দিক সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠলো অভ্র। কথা অনুযায়ী আজকে তীব্রের গায়ে হলুদ। অভ্রের সব দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলে ও অভ্র পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। কালকের পর থেকে অভ্র আর কোনো কিছুতে ই মন বসে না। কেনো করলে মিহির সাথে এরকম। যতক্ষণ মিহি ক্ষমা না করছে ততক্ষণ শান্তি হবে না অভ্রের।
কালকে তো বেশ কয়েকবার ডেকেছে মিহিকে কিন্তু একবার ফিরে ও তাকায়নি। আজকে অবশ্য ই অভ্রদের বাসায় আসবে তখন কিছু একটা করতে হবে।

এসব ভাবতে ভাবতে অভ্র ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।

মিহির কালকে থেকে ই মন খারাপ। সব সময় কতো লাফালাফি করে এখন মেয়েটা কতো নিশ্চুপ হয়ে গেছে। মিহির মা তা লক্ষ করে মিহিকে কাছে টেনে নিলো। মা পরম আদরে জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–কী হয়েছে মা, আমার আম্মুর মন খারাপ কেনো।

–কিছু না মা।

–কিছু না কেনো বলছিস, কি লুকচ্ছিস।

–আমি ঠিক আছি মা টেনশন করো না।

–ঠিক আছে। মনে রেখো মা সবচেয়ে ভালো বন্ধু। কখনো কোনো বিষয় নিয়ে কষ্ট পেলে বা সিদ্ধান্ত হীনতায় পড়লে মাকে অবশ্যই যানাবে।

মিহির মা আর কোনে কথা বললো না। কালকে মেহমান কম ছিলো। আজ বেলা বাড়ার সাথে সাথে সব আত্মীয়রা আসা শুরু করেছে তাই আর মিহিকে বেশি সময় দিতে পারলো না। চলে গেলো নিজের কাজে।

আজকে মিহিরা অভ্রেদের বাসায় যাবে। সবাই সাজগোছ করতে ব্যস্ত কিন্তু মিহি মধ্যে তেমন উৎস নেই।
মিনতির দিকে তাকিয়ে মিহি শুধু অভ্রদের বাসায় যাচ্ছে নয়তো কখনো যেতো না।

_______________________

অভ্রদের বাসায় যাওয়ার পর, মিহির কাজিন প্রিয়াকে সাথে নিয়ে বসে আছে যেনো অভ্র কাছে আসতে না পারে।হঠাৎ একটা মেয়ে এসে বললো,

–তুমি মিহি না?

–হে।

–তোমাকে আমার সাথে যেতে বলেছে।

–কে?

–রেহনুমা ফুপ্পি

–ওহ্ আচ্ছা।

মিহি মেয়েটার সাথে সাথে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা রুমে নিয়ে যায় মিহিকে কিছু বলার আগে ই মেয়েটা দরজা বন্ধ করে চলে যায়।

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১০

মিহি মেয়েটার সাথে সাথে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা রুমে নিয়ে যায় মিহিকে কিছু বলার আগে ই মেয়েটা দরজা বন্ধ করে চলে যায়।
পুরে রুম অন্ধকার আমি তো ভয়ে পুরো কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছি। ফোনটা ও সাথে আনিনি প্রিয়ার কাছে দিয়ে এসেছি। এখন কী হবে।
হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম।এতে আরো ভয় পেয়ে গেলাম। হঠাৎ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি শত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ও এক বিন্দু পরিমাণ ও নাড়াতে পাড়ছি না। এই স্মেলটা আমার খুব পরিচিত।মানুষটা ও তো আমার খুব পরিচিত। কিন্তু এতো গভীর ভাবে ছোঁয়া টা আর নেওয়া যাচ্ছে না। শরিরে অন্যরকম শিহরণ সৃষ্টি হচ্ছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা ও বের হচ্ছে না। শরিরের সমস্ত শক্তি যুগিয়ে বললাম,

–ছাড়ুন আমি আপনার বিয়ে করা বউ না।

–চলে বিয়ে করি ফেলি।

–ছাড়তে বলেছি আপনাকে আমি কখনো বিয়ে করবো না।

–আপাতত ক্ষমা করে দাও।

–কিসের ক্ষমা।

–প্লিজ টিয়াপাখি ভুল করেছি।

–তো আমি কী করবো।

–ক্ষমা করে দেওয় নয়তো ছাড়বো না।

–থ্রেড দিয়ে ক্ষমা চাচ্ছেন।

–তুমি ক্ষমা না করলে কী করার।

–আচ্ছা ছাড়ুন ক্ষমা করে দিয়েছি।

অভ্র ছেড়ে দিয়ে লাইট অন করে।

রুমটা দেখে মনে হচ্ছে গেস্ট রুম। অভ্র বেডে উপরে বসে। মিহিকে টেনে নিয়ে কোলে বসায়। এক হাত দিয়ে মিহির মুখেটা অভ্রের দিকে করে রেখে খুব আদর মাখা কন্ঠে বললো,

–অনেক ভালোবাসি টিয়াপাখি। খুব দ্রুত আমরা বিয়ে করে নিবো।জানো তোমাকে কতোটা সুন্দর লাগছে। আমাদের যখন বিয়ে হবে তুমি রোজ নতুন একটা শাড়ি পড়ে আমার ঘুম ভাঙ্গাবে।ভেজা চুলে গুলো আমার পাশে এসে নাড়াচাড়া করবে, চুলের পানি আমার মুখে পড়তে ই বুঝবো আমার পরীটা আমার পাশে বসে আছে।আমি চাই আমার সকলটা শুরু হক আমার মিহির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে রাতটা শুরু হক আমার মিহিকে বুকে আগলে রেখে।
কথাটা শেষ করে ই হাতে একটা চুমু খেলো অভ্র। ঘোর লেগে যাচ্ছে।
মিহি অন্যদিকে তাকাতে ও পারছে না। অভ্র মুখে হাত দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে রেখেছে।
মিহি শুধু মুখ চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

—চলো তোমাকে দিয়ে আসি।

–একা ই যেতে পারবো।

–উহু তা হচ্ছে না। চলো।

মিহি নিচের দিকে তাকিয়ে বসে ই আছে। তাই অভ্র বললো,

–কি,কোলে করে নিয়ে যাবো নাকি।

কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি উঠে দাড়িয়ে যায়।
মিহি এমন অবস্থা দেখে অভ্র হাসতেছে।

–চলো।

অভ্র মিহিকে নিজের সাথে বাহিরে নিয়ে গেলে।

__যাও তুমি আমি তোমার আশেপাশে ই আছি। নিজের খেয়াল রেখো।

মিহি চলে গেলো। প্রিয়ার পাশে বসতে ই বললো,

–এই আপু আমাকে ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে।

–তুই আমার সাথে যেতে পারতি।

–তুমি তো একবার ও বলোনি। যে আমার সাথে আয়।

–হুম অন্যদিন নিয়ে যাবো l এখন থাম।

____________________

বিয়ের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি। উঠে ই দেখি মিনতির কানে ফোন। ফোনটা টান দিয়ে নিয়ে আসলাম।

–মিহি ফোনটা নিবি না প্লিজ।

–এই যে আমার জিজু আর তো একটু সময় পরে তো আপনার কাছে ই চলে যে এখন একটু শান্তি দেন। আপনাদের বাড়িতে নিয়ে সারাদিন কথা বলেন কিন্তু এখন আর নাহ্।

বলে ই ফোনটা কেটে দিলাম। আচ্ছা লজ্জা ছাড়া মানুষ তো দুজন। বিয়ের দিন আবার এতো কথা কিসের।

–মিহি কী করলি এটা বল তো।

–আজকের পর থেকে আমাদের আর চাইলে ও দেখা হবে না। সব সময় তোকে কাছে পাবো না তাই আমাকে টাইম দে। জিজুর সাথে তো এখন থেকে বাকি জীবনটা থাকবি ই। তাই এখন কথা বন্ধ।

মিহির মা আচলে মুখ গুঁজে দুচোখের পানি এক করছে। কতো কষ্ট করে ছোট থেকে বড় করেছে কিন্তু নিজের কাছে সারাজীবন রাখতে পারবে না। নিজের হাতে মেয়ে বিদায় এর আয়োজন করছে। আজ একজনকে বিদায় দিবে তারপর দু আরেকজনকে ও বিদায় দিতে হবে। কি করে থাকবে শূন্য বুক নিয়ে। মেয়েরা কাছে থাকলে মনে হয় পৃথিবীর সকল পূর্নতা নিজের কাছে।

—আম্মু আসো তো।

মিনতির ডাকে চোখ জোড়া মুছে রান্না ঘর থেকে পা বাড়ালো মিহির মা।

__________________________

অভ্র আর তীব্র এক সাথে দাড়িয়ে আছে। দুই ভাই মিলে জমিয়ে সেলফি তোলতে ব্যস্ত। দুই ভাই ই সাদা লুঙ্গি আর গায়ে টাওয়াল জড়িয়ে আছে। ক্যামেরা ম্যান সার্বক্ষণিকের ছবি তোলে রাখছে। দুই ভাইয়ের খুনসুটি দেখে রেহনুমা আহমেদ হাসছে।
রেহনুমা আহমেদ ভাবছে বিয়ে করলে কি চেঞ্জ হয়ে যাবে। থাকবে তো পরিবারের মধ্যে এতো ভালোবাসা। এসব ভাবতে ভাবতে চোখে জল এসে যায়।

গোসল করানোর আগে তীব্রকে হলুদ ছোয়ানো হয়েছে। অভ্রকে তো হলুদ দিয়ে সবাই মাখামাখা বানিয়ে দিয়েছে। সবার সাথে বেশ আনন্দ করছে অভ্র।

____________________________

মিহি অভ্রের পছন্দ করা শাড়িটা পড়েছে। এমনিতে সুন্দর দেখতে তার উপর ব্রাইডাল সাজে তো পরীর মতো লাগছে। সবাই মিহিকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।

বিয়ে পড়ানো শেষ করে বউ দেখতে রুমে প্রবেশ করতে পাভেল। রুমে প্রবেশ করতে ই বউ এর দিকে চোখ যাওয়ার আগে বউ এর পায়ে বসে থাকা মেয়েটার দিকে চোখ যায় আগে। দেখতে তো মাশাল্লাহ। একবার তাকালে চোখে ফেরানোটা যে দায়। এমন একটা মেয়ে ই তো এতোদিন বিয়ের জন্য খুজছিলো। আজকে বাসায় গিয়ে বলতে ই হবে আম্মু বউমা খুজে পেয়েছি। পাভেল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পাশে থাকা পাভেলের বন্ধু জিজ্ঞেস করলো,

—এক দেখাতে প্রেমে পরলি নাকি।

–প্রেমে পড়া বারন নাকি।

–তা না তুই একা তো আর প্রেমে পরলে হবে না তুই যার প্রেমে পড়েছিস তাকে ও তোর প্রেমে পড়তে হবে।

পাভেল বাহিরে এসে দাড়ালো সুযোগ খুজছে মিহির সাথে কথা বলার। মিহি রুম থেকে বের হয়ে মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছিলো হঠাৎ পাভেল হাত ধরে ফেলে। দূর থেকে অভ্র স্পষ্ট দেখতে পায় কেউ একজন তার টিয়াপাখির হাত ধরেছে।

চলবে

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-৭+৮

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৭

রাতে ঘুমের মধ্যে ই মিহির শরীরের কেউ কোথাও আটকে রেখে এমন মনে হচ্ছে। মিহি ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। মিহি কথা বলতে পারছে না মুখ বাধা, হাত পা ও বাধা মিহি এমন অবস্থায় চিৎকার ও দিতে পারছে না। চোখ দিয়ে শুধু অনবরত পানি পড়ছে।

অভ্র এতো খেয়াল করেনি মিহির দিকে। অবশ্য মিহির চোখ বাঁধা ছিলো। অভ্র কোলের উপর নিয়ে বসে বসে ফোন চাপছিলো। মিহি হাত পা নাড়া চাড়া করাতে ই অভ্র দ্রুত সব বাধন খুলে দেয়।

–প্লিজ জান এভাবে কান্না করো না।

মিহি কান্না ই করে যাচ্ছে।

অভ্র দুচোখ মুছে দিয়ে বুকে টেনে নিলো। তাও কান্না থামছে না এক হাতে অভ্রের শার্ট খামচে ধরে আছে। বুঝতে পারলো অভ্র খুব বেশি ভয় পেয়েছে। তাই আর কোনো কথা বললো না।

বেশকিছুক্ষন পর মিহি স্বাভাবিক হয়ে অভ্রকে রাগি চোখে জিজ্ঞেস করলো,

–আমি এখানে কেনো।

–তোমার বোন প্রেম করতে আসছে সাথে তোমাকে না আনলে নাকি আসবে না তাই তোমাকে এমন ভাবে নিয়ে আসা।

–এই রাতের বেলা??কয়টা বাজে বলুন তো।

–মাত্র সাড়ে বারোটা।

–এতো রাতে প্রেম করতে আসছে। কোথায় মিনতি।

–প্রেম কী আর সময় মানে বলো। এই তো দেখো সামনে তাকিয়ে দুজন বসে কী গল্প জুড়ে দিয়েছে।

মিহি কথাটা শোনে ই জিপ থেকে নেমে যেতে চাইলে ই অভ্র হাত ধরে ফেলে।

–কোথায় যাচ্ছো টিয়াপাখি।

–হাত ছাড়ুন। মিনতির কাছে।

–পাগল তুমি মাত্র আসলাম। বাদ দেও আমার সাথে কথা বলো ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দেও প্লিজ।

মিহি এবার অভ্রের দিকে তাকালো। ল্যাম্পপোষ্টের আলো এসে পড়েছে অভ্রের মুখে। ফর্সা গালে দাড়িগুলো চিক চিক করছে। নেভিব্লু শার্ট পড়নে কালো পেন্টে ক্রাশ খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। যে কেউ দেখলে ই প্রেমে পড়বে। কিন্তু মিহি কেনো দূরে রাখে অভ্রকে। চাইলে ই তো পারে ভালোবাসে আপন করে নিতে কিন্তু সে ও যদি ইমরানের মতো ধোকা দেয়।

—এতো দেখো না টিয়াপাখি প্রেমে পড়ে যাবে।

অভ্রের এমন কথা শোনে মিহি অন্য দিকে তাকিয়ে যায়।

এতো কাছ থেকে এতো গভীর ভাবে আর কখনো দেখা হয়নি অভ্রকে।

—আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।

–কেনো।

–এমনি ঘুম পাচ্ছে, ওদের প্রেম শেষ হলে বাসায় যাবে আমকে দিয়ে আসুন।

–বাসায় দিয়ে আসতে পারি একটা শর্তে।

–কী।

–আমাকে আই লাভ ইউ বলো।

–যাবো না বাসায় আমি।
আস্তে আস্তে মিহির দিকে ঝুকে আসতে মিহি পিছনে চলে যায়। গাড়ির ভেতর কোথাও পালানোর ও কোনো পথ নেই।
অভ্র মিহির অনেকটা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

–তাহলে কোথায় যাবে।

মিহি চোখ বন্ধ করে উওর দেয় কোথাও না।

অভ্র মন ভরে দেখে নিচ্ছে চোখ বন্ধ করলে তো আরো মায়া বেড়ে যায়।
অভ্র হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে জিপ থেকে নেমে যায়। এই মোহ লাগনো মুখখানা দেখতে থাকলে নিজেকে দূরে রাখা যায় না।

তীব্র আর মিনতি কী সুন্দর হাটতেছে আর কথা বলতেছে। এটা একটা রাস্তা। রাস্তার সাইডে ল্যাম্পপোস্ট দেওয়া পুরো দিনের মতো ই দেখা যায়। মিনতি আর তিব্র বেশ খানিকটা দূরে। অভ্র তীব্রের কাছে যেতে চাইলো। পরে আবার ভাবলো হয়তো ডিস্টার্ব ফিল করবে তাই কল দিলো, কয়েকবার কল বাজার পর রিসিভ করলো,

বেশ বিরক্ত নিয়ে তীব্র বললো,

–কী হয়েছে।

—আমি চলে যাচ্ছি মিহিকে নিয়ে তোরা থাক। প্রেম করা শেষ হলে বিয়ে করে বাসায় ফিরিস।

–আরে ভাই রাগ কেনো করছিস।

–আরে আর কতো মিহির ঘুম পাচ্ছে চল।

–আরেহ বাহ মিহির জন্য তো দেখছি ভালো ই চিন্তা হচ্ছে আপনার(তিব্র)

অভ্র কথা ঘুরানোর জন্য বললো,

–তুই যাবি নাকি বাসায় এটা বল।

–আরে দশ মিনিট। একটু ওয়েট কর ভাই।

অভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিপ গিয়ে বসতে ই দেখলো মিহি ঘুমিয়ে পড়েছে। অভ্র খুব আস্তে করে মাথাটা অভ্রে বুকে রাগলো। মুখে এসে বিরক্ত করতে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়েছে। কপালে বার বার ওষ্ঠদ্বয় ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছিলো তাও নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো।
ঘুমন্ত মিহির সাথে কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছে।

বেশকিছুক্ষন পর, দেখা যাচ্ছে মিনতি আর তীব্র আসছে তাই অভ্র মিহিকে নিজের থেকে সরিয়ে সিটে শুইয়ে দেয়।

মিনতি এসে মিহিকে নিজের সাথে নিয়ে বসে। অভ্র ড্রাইভার করতে থাকে আপন গতিতে।

__________________________

সকালে ঘুম থেকে উঠে ই মনে হলো কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিটমিট করে চোখ খুলে দেখলাম অভ্র।

—তাহলে ঘুম ভাঙ্গলো মহারানীর। উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিতে বলেন ভাবি,আপনার ঘুম পাগলি বোনকে।

মিহি তাকিয়ে দেখে বেড সাইডে বসে বেশ গল্প জুড়ে দিয়েছে মিনতির সাথে।

–আপু তুই রুম থেকে বের হ।

অভ্র মিহির ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

পড়নে টি-শার্ট ছিলো যার বেরিয়ে যেতে বললো।

মিহি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাস্তা করে নিলো।

সবাই বেড়িয়ে পড়লো বিয়ের শপিং করতে। রেহনুমা আহমেদ, অভ্র তিব্র আর মিহির মা। মিহি মিনতি।

শপিংমলে ডুকে অভ্র কয়েকবার ইশারে করে মিহিকে সাইডে যেতে বলেছে। এতে মিহির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
মিহি মিহির মতো শপিং করায় ব্যস্ত

হঠাৎ মিহির একটা ট্রায়াল রুমের সাইডে দিয়ে যেতে নিলে হঠাৎ কেউ একজন টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়।

–আপনি আমাকে এখানে আনলেন কেনো কেউ দেখতে পেলে কী হবে জানেন।

–দেখলে তো আমার ই ভালো বিয়ে করে নিবো।

–আমি আপনাকে কখনো বিয়ে করবো না।

–তাই নাকি, তখন ডাকছিলাম আসছিলে না কেনো।

–এমনি।

–তাই

কথাটা বলে ই অভ্র নেশা ভরা চোখ নিয়ে এগোতে থাকে এক হাত দিয়ে মিহিকে নিজের সাথে খুব ভালো ভাবে আটকে নিয়েছে।

হঠাৎ কেউ একজন বাহির থেকে দরজায় নক করছে।

–ভেতরে কে আছেন বের হন। আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো। এবার কিন্তু ম্যানাজারকে ডাকবো।

কন্ঠটা অভ্রের খুব চেনা কারণ নিজের মায়ের কন্ঠ চিনতে কেউ ভুল করে নাকি।

–সব আপনার জন্য হয়েছে। এখন কী করবো।

চলবে

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৮

কন্ঠটা অভ্রের খুব চেনা কারণ নিজের মায়ের কন্ঠ চিনতে কেউ ভুল করে নাকি।

–সব আপনার জন্য হয়েছে। এখন কী করবো।

অভ্রের এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আগের ন্যায় মিহিকে ধরে ই দাড়িয়ে আছে। অভ্রের হাতে একটা শাড়ি, লাল গোল্ডেন কম্বিনেশনে। মিহির মাথায় শাড়ির কতোটুকু অংশ রেখে মিহিকে সামনে দাড় করিয়ে অভ্র পিছনে দাড়িয়ে আয়নার দিকে তাকাতে বললো।
কী সুন্দর লালা টুকটুকে বউ মনে হচ্ছে। মুহুর্তে ই অভ্র মিহিতে ডুবে যেতে চাইলে ও মনে হলো মায়ের কথা

কিছুক্ষণ পর সুযোগ বুঝে অভ্র মিহিকে আগে বের করে দিলো। মিহি ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে অন্য এক দোকানে ডুকে পড়ে। মনে মনে অভ্রকে বকতে থাকে কী একটা বিপদে পরতো যদি কেউ দেখে ফেলতো।

রেহনুমা আহমেদ অনেক ডাকাডাকি পর ও যখন কেউ ট্রায়াল রুম থেকে বের হচ্ছিলো না তাই সময় নষ্ট না করে অন্য ট্রায়াল রুমে ডুকে পড়েছিলো।

রেহনুমা আহমেদ আর মিহির মা দুজন মিলে মিনতির জন্য শাড়ি লেহেঙ্গা পছন্দ করছে। মিহি এসে পিছনে দাড়াতে ই মিনতি জিজ্ঞেস করলো
— তুই এতোক্ষণ কোথায় ছিলি।

মিহি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে উওর দিলো,

____ একটা শাড়ি পছন্দ হয়েছিলো ট্রায়াল রুমে গিয়েছিলাম একটু পড়া দেখার জন্য। দেখতে কেমন দেখায়।

–তা তোর শাড়ি কোথায়।

–দ্রুত আসতে গিয়ে মনে হয় ট্রায়াল রুমে ই রেখে এসেছি।

–যা তো নিয়ে আস।

মিহি অসহায় ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কোনো শাড়ি ই তো পছন্দ করে নি।

–কী হয়েছে বল তো, এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো।

মিহি দাতে নখ কাটতে কাটতে শাড়ি দেখছে কোনটা নেওয়া যায়।
হঠাৎ অভ্র এসে হাতে শাড়িটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।

রাত প্রায় নয়টা বাজে।শপিং করতে করতে খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। সবার জন্য শপিং করা শেষ হয়েছে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তে ই দুচোখে ঘুম এসে ভর করে। চোখ মেলে আর তাকাতে পারেনি ঘুমিয়ে পড়েছে মিহি।
মিহির মা ও খুব ক্লান্ত।

___________________________

দেখতে দেখতে হলুদের দিন চলে এসেছে। অবশ্য বিয়ের দুইদিন আগে মিনতির হলুদ হবে। তারপরের দিন তীব্রের। দুইটা হলুদের অনুষ্ঠান এক সাথে হলে সব নিয়ম একসাথে পালন করলেও সব কাজ খুব দ্রুত করতে হয় তাই একটু সময় নিলো।আজ মিনতির হলুদ।
মিহি সকাল থেকে স্টেজ সাজাতে ব্যস্ত। মিহি সাথে আছে মিহির কাজিন অলি,রিয়া,প্রিয়া,রুহিত। সবাই মিলে খুব মজা করে কাজ করছে। স্টেজ সাজানোটা খুব সুন্দর হয়েছে।

মিহি কাপড় রেডি করছে, পার্লার থেকে মেয়ে এসেছে। মিনতিকে সাজাচ্ছে। এর পর ই মিহির পালা। এমন সময়
মিহির ফোনে বেজে উঠছে। নম্বরটা মিহি চিনে না। তাই একবার কেটে দিলো। পরের বার আবার কল করো। আবার মিহি কেটে দিলো। আবার কল আসলো। এবার মিহি কলটা রিসিভ করলো,

–মিহি তুমি কলেজে আসো না কেনো?

–কে আপনি।

–আগে বলো তুমি কলেজে আসো না কেনো

–দেখুন আপনার পরিচয় না দিলে আমি ফোন কেটে দিতে বাধ্য হবো।

–নাহিদ

নামটা শোনে ই মিহির রাগ হয় এমনি এ পাগলের যন্ত্রনায় বাচি না এখন আসছে আরেক আপদ।

–আপনাকে বলতে হবে আমি কেনো কলেজে যাই না।

–মিহি আমি তোমার বাড়ির সামনে বাড়িতে এতো সাজসজ্জা কেনো। তোমার কী বিয়ে নাকি।

–আমার বিয়ে হলেই আপনার কী আর না হলে ই আপনার কী।

–মিহি চলো আমরা পালিয়ে যাই।

–এই আপনাকে আমি চিনি ই বা কদিন হলো। আপনার সাথে আমি পালাতে যাবো কেনো।

–মিহি তোমাকে আমার চাই।

–আপনাকে তো আমার চাই না।

–তুমি যতোক্ষণ আমার সামনে না আসবে আমি এইখান থেকে যাবো না।

মিহি আর কোনো কথা বললো না।ফোনটা কেটে দিলো।

মিহি আপু তোমাকে ডাকছে, মিনতি আপু।

আসছি…..

মিহি এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে চলে গেলো।

_____________________________
সাজগোজ শেষ হওয়ার পর মিনতির ফোনে বার বার তীব্র কল দিচ্ছে। মিহি টান দিয়ে ফোনটা নিয়ে নেয়। রিসিভ করতে ই বলে।

–জান কী করো।

–আপনার জান বসে আছে।

তীব্র লজ্জায় কল কেটে দিলো। মিনতি ও বেশ লজ্জা পেয়েছে।

–মিহি ফোন দে।

–তা তীব্র ভাইয়ার জান এখন চলেন আম্মু রুমে। ফোনটা এখন দিবো না। আজকে নো ফোন নো টকিং।১০

মিহি মিনতি দুজন ই মায়ের রুমে যায়। মা তার দুই মেয়েকে দেখে কান্না করে দেয়। আজ এক মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে কয়দিন পর তো আরেক মেয়েকে ও দিতে হবে।

–আম্মু কান্না করছো কেনো।তুমি কান্না করলে কিন্তু আমি আর রুম থেকে বের ই হবো না(মিনতি)

চোখের পানি মুছে মেয়েদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে অন্য রুমে চলে যায় মিহির মা। মেয়েদের সামনে থাকলে কান্না চেপে রাখতে পারছে না।

অভ্রদের গাড়ি মিহিদের গেইটে এসে থামলো মাত্র। অভ্র গাড়ি থেকে নেমে ই চোখ যায় রাস্তা পূর্ব সাইডে। গাড়ির লাইটের স্পষ্ট আলোয় নাহিদ এর মুখটা দেখা যাচ্ছে। নাহিদকে দেখে ই অভ্রের রাগ মাথায় চেপে বসে।

অভ্র গিয়ে শার্ট এর কলার ধরে জিজ্ঞেস করে,

–তুই এখানে কী চাস।

–তা মিহিকে জিজ্ঞেস করলে ই জানতে পারবি।

অভ্র নাহিদকে ছেড়ে দিয়ে সোজা বাড়ির ভেতরে চলে যায়। ভেতরে গিয়ে মিহিকে খুজতে থাকে। মিহিকে খুজে পেয়ে ই টানতে টানতে বাড়ির পেছনে নিয়ে যায়। নিয়ে ই একটা থাপ্পড় মারে……

চলবে,