Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1466



ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-০৬

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৬

শীলা পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে,আর তার সামনেই মেঘ কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কারন মেঘ আজ শীলার সাথে দেখা করতে সাত মিনিট লেট করেছে তাই মেঘকে শীলা শাস্তি দিয়েছে যে সাত মিনিট কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে।বেচারা মেঘ অনিচ্ছা সত্বেও কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আশেপাশের সবাই মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে,কেউ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর কেউ হাসছে।সেটা দেখে মেঘ নিজেকে যতটা সম্ভব লুকাতে চাইছে।আর এসব কিছু শীলা বেশ এনজয় করছে।এভাবে সাত মিনিট কেটে যাওয়ার পর মেঘ শীলার হাত ধরে বলে উঠে,,,

“চলো এখান থেকে,জায়গা গরম হয়ে গেছে এখানে আর থাকা যাবে না।”

“কেন?কী হয়েছে এখানে?এখানে যথেষ্ট ঠান্ডা লাগছে।”

“বইন আমার চুপচাপ এখান থেকে চল,সাত মিনিট কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে ত সেলিব্রিটি বানাইয়া ফেলছো।মানসম্মান সব ইনজেকশন হয়ে গেছে।সবাই কীভাবে তাকিয়ে আছে দেখেছো তুমি,চলো এখান থেকে।”

মেঘের কথা শুনে শীলার খুব হাসি পাচ্ছে,তাই মেঘকে আরেকটু জ্বালানোর জন্য বলে উঠল,,,

“না আমি যাব না,জায়গাটা খুব সুন্দর আর খুব ভাল্লাগতাছে আমার কাছে।”

“যাবে না তুমি?”

“উহু যাব না,তুমিও যাবে না।চুপচাপ আমার পাশে বসো ত,কথা না বলে।”

“ওকে।”

কথাটা বলে মেঘ শীলার পাশে গিয়ে শীলাকে কোলে তুলে নেয়,হঠাৎ এমনটা হওয়াতে শীলা ঘাবড়ে যায়।আর তাড়াতাড়ি মেঘের শার্ট আঁকড়ে ধরে,সেটা দেখে মেঘ শয়তানি হাসি দিয়ে বলে উঠে,,,

“এখন যদি তোমাকে আমি ফেলে দেই তবে আমার সম্মানের মত তোমার সম্মানও ইনজেকশন হয়ে যাবে।”

কথাটা বলেই মেঘ আবার খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে,সেটা দেখে শীলা রেগে বলে উঠে,,,

“খালি ফেলো তারপর দেখো না কী করি তোমাকে,একদম ডিভোর্স দিয়ে দিব😤।”

“বাপরে বিয়ে না হতেই ডিভোর্স,ত চলো বাসরটাও সেরে ফেলি।”

মেঘ শীলার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে উঠল,শীলা সেটা দেখে বলে উঠল,,,

“উস্টা মাইরা পঁচা পানিতে নিয়ে ফেলব,আরেকবার এই কথাটা বললে।সেদিন সাবিহার সামনেও এমনটা বলেছো আর এখনও!লজ্জা সরম কী সব নদীর জলে ভাসিয়ে দিছো নাকি হে?”

“হে নদীর জলেই ভাসিয়ে দিয়েছি,আর এখন তোমাকেও ভাসিয়ে দিব।”

কথাটা বলেই মেঘ শীলাকে ফেলে দেয়।শীলা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে আল্লা বলে হালকা চিৎকার করে উঠে,কিন্তু শীলা কোন ব্যাথা না পাওয়ায় চোখ খুলে দেখে সে গাড়িতে বসে আছে।আসল কাহিনি হল শীলা তখন কথা বলতে এতটাই ব্যাস্ত যে মেঘ গাড়ির দরজা খুলে ফেলেছে খেয়ালই করে নি।শীলাকে গাড়িতে বসিয়ে মেঘ সিট বেল্ট লাগিয়ে দেয় আর শীলার ঠোঁটে হালকা একটু চুমু খায়।সেটা দেখে শীলা চোখ বড়বড় করে তাকায় মেঘের দিকে।আর মেঘ শীলাকে চোখ মেরে নিজের সিটে বসে ড্রাইভ করা শুরু করে।

____________________________________

“খাব না,কিচ্ছু খাব না আমি।মামুকে রাজি না করালে কিছু খাব না আমি।”

“সাবিহা একদম পাগলামি করবে না,চুপচাপ খেয়ে নাও মেডিসিন নিতে হবে তোমাকে।”

“বাবা তুমি একটু মামুর সাথে কথা বলো না,আমি হিয়াকে ছাড়া নতুন স্কুলে ভালো নেই।হিয়াকে খুব মিস করছি আমি।”

“নতুন স্কুলে তোমার কারো সাথে বন্ধুত্ব হয় নি?”

“হয়েছে ত অনেকগুলো ফ্রেন্ড হয়েছে।”

“তবে তাদের সাথে সময় দেও দেখো আস্তে আস্তে ভালো লাগবে।”

“ভালো লাগবে না বাবা,আমার হিয়াকেই চাই।প্লিজ বাবা তুমি মামুকে রাজি করাও না।”

“হিয়া কোন স্কুলে পড়বে সেটা অর পরিবারের ব্যাপার আমরা জোড় করার কে সাবিহা?”

“বাবা জোড় কোথায় করছো?শুধু বলবে আমার একা ভালো লাগছে না নতুন স্কুলে তাই হিয়াকে চাইছি আমি।ত হিয়াকে যাতে আমার সাথে নতুন স্কুলে ভর্তি করায়।”

“তবে তুমিই তোমার মামুকে বলো সবটা।”

“মামুর সাথে কথা বলতে ভয় করে,নয়ত তোমাদের কাউকে বলতাম না আমি।তুমি মামুকে বলো নয়ত এখান থেকে যাও আমি খাব না কিছু।”

“সাবিহা তুমি এখনও ছোট বাচ্চা নও যে এমন মর্জি করবে আর তোমার মর্জি মত আমাদের চলতে হবে।তোমার মাকে পাঠাচ্ছি তখন বুঝবে তুমি।ভালো করে বুঝালাম কিন্তু বুঝলে না,তোমার মা এসে যখন পিঠে দুইটা দিবে তখন ঠিকই খাবে।আমি এখনই তোমার মাকে পাঠাচ্ছি দাঁড়াও।”

কথাটা বলেই বাবা চলে যায় রুম থেকে,আর আমি জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠি,,,

“হে যাও যাও,আমাকে কেউ ভালবাসে না।আমাকে মারলেও আজ আমি খাব না।”

কথাটা বলেই পিছন থেকে চিপস নিয়ে চিপস খাওয়া শুরু করি আর ফোনটা আড়াল থেকে বের করে হাসিমুখে বলে উঠি,,,

“দেখলি বনু আমার বাপটা কেমন হিটলার হয়ে গেছে,কত করে বললাম কোন কাজ হইল না।”

“হ রে বইন সবই ত দেখলাম ভিডিও কলে,এখন কী করবি ভাবছিস?”

আমি মুখে আরেকটা চিপস দিয়ে চিবুতে চিবুতে বললাম,,,

“তুই মামুকে একটু বল না বনু,আমি না হয় মামুকে ভয় পাই কিন্তু তোর ত বাবা তুই বলে দেখ না।”

“না বাবা না আমি এটা পারব না,বাবার সাথে আমি ভয়ে ঠিক করে কথাই বলি না আর সেখানে বলব আমি স্কুল চেন্জ করব।তবে ছোট বেলার মত আবার আছাড় দিয়ে ব্যাংঙ বানাইয়া ফেলব।”

“উহুম,উহুম কেউ একজন বলেছিল সে কিছু খাবে না কিন্তু এখন ত অন্য কিছুই দেখছি।”

কারো গাল শুনে আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি সাদাফ ভাইয়া হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি সঙ্গে সঙ্গে চিপসের প্যাকেটটা লুকাতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় ফোনটা লুকিয়ে ফেলি।ফোন লুকিয়েছি কথাটা মাথায় আসতেই আবার তাড়াহুড়ো করে ফোনটা সামনে এনে চিপসের প্যাকেটটা লুকিয়ে ফেলি পিছনে।আমার কাহিনী দেখে হিয়া শয়তানটা মিটমিটিয়ে হাসছে,আর সাদাফ ভাইয়াও হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে।সাদাফ ভাইয়াকে দেখে আমি হালকা হেঁসে বলে উঠি,,,

“ভাইয়া আপনি আমার রুমে?আপু ত এখানে নেই।”

সাদাফ ভাইয়া রুমের ভিতরে ডুকে বলে উঠে,,,

“আমি ত শীলার সাথেই দেখা করতে এসেছিলাম কিন্তু এসে শুনি তুমি খাবে না।তাই দেখতে এলাম কেন খাবে না,কিন্তু এসে ত দেখি আরেক কাহিনি।তা মেম এসব করার কারনটা কী বেস্টুকে নিজের সাথে নতুন স্কুলে নিয়ে আসা?”

“না মানে,,,

আমার কথা শেষ করার আগেই ফোনে হিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠল

” হ্যা ভাইয়া একদম ঠিক ধরেছেন,আসলে ছোট কালের বান্ধবী ত তাই আলাদা স্কুলে কারোরই ভালো লাগছে না।তাই সাবিহা আর আমি মিলে প্ল্যান করছিলাম কীভাবে একসাথে হওয়া যায় আবার?”

“ওও এই ব্যাপার,সেটা ত আমাকে বললেই হয় আমিই সবটা মেনেজ করতে পারতাম।তোমাদের আর এত কষ্ট করার কোন প্রয়োজন হত না।”

“মানেহ?আপনি কী করবেন?”

“আমি আঙ্কেল কে রাজি করাতে পারব তোমার মামুর সাথে কথা বলার জন্য।”

“সত্যি!”

“হুম সত্যি।”

“তবে ভাইয়া আপনি প্লিজ বাবাকে রাজি করান না!”

“রাজি করাতে পারি কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”

শর্তের কথা শুনেই আমার মুখটা কালো হয়ে গেলো,তাই সমস্ত উত্তেজনা দমিয়ে বলে উঠলাম,,,

“এর জন্য শর্তও মানতে হবে?”

“শর্ত বলতে তেমন কিছু নয় শুধু আমার সাথে একটা জায়গায় যাবে।”

“কী?”

“ভাইয়া রাজি রাজি সাবিহা রাজি,আপনি প্লিজ মামুকে রাজি করান।”

“এই হিয়ার বাচ্চা হিয়া আমি রাজি তুই এটা বলছিস কেন?”(রেগে)

“তুই চুপ কর,আর ভাইয়া আপনি প্লিজ ফুপাকে রাজি করান।আর সাবিহাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।”

“খুব খুশি হলাম তোমার কথা শুনে,তুমি তবে সাবিহাকে রাজি করিয়ে রেডি হতে বলো।আমরা আধা ঘন্টার মধ্যে বের হব।ততক্ষণে আমি আঙ্কেলকে রাজি করিয়ে আসি।”

কথাটা বলেই সাদাফ ভাইয়া বের হয়ে যায়,আর আমি রেগে হিয়াকে বলে উঠি,,,

“শয়তান মাইয়া,বজ্জাত মাইয়া এসব কী কইলি তুই?আমি সাদাফ ভাইয়ার সাথে যাব মানে?”

“আরে এটা করলে আমাদেরই লাভ,কারন সাদাফ ভাইয়া ফুপাকে রাজি করাবে আর ফুপা বাবাকে।তারপর আমরা দুজন আবার একসাথে উফফ ভাবতে পারছিস তুই,আমরা আবার একসাথে স্কুলে যাব,ক্লাস করব আরো কত কী করব!আর তকে ত শুধু উনার সাথে যাওয়ার জন্যই বলছে,আর কিছু করতে ত বলছে না।”

“কিন্তু,,,

” কোন কিন্তু নয় তাড়াতাড়ি রেডি হ,নয়ত তোর সাথে কাট্টি তেরো দিনের জন্য।”

বলেই হিয়া ফোনটা কেটে দেয় আর সাবিহা বেচারি ফোনটা হাতে নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুব দেয়।

_____________________________________

কাব্যর আর সাবিহা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে,সাবিহা ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।আর কাব্য চোখে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,কাব্যর কাছে সবকিছু অগোছালো লাগছে।এমনটা কী হওয়া খুব প্রয়োজন ছিল,এভাবে সবটা কেন ধ্বংস হয়ে গেলো।

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-০৫

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৫

সাদাফ এসে দেখে সাবিহা দুইটা ছেলের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে,আর তার পাশেই শীলা বসে আছে।সাদাফের খুব রাগ হল,ছেলেদের সাথে এত হেঁসে হেঁসে কথা বলার কী আছে বুঝে না সাদাফ।সাদাফের সাথে কথা বলার সময় ত মুখে এমন হাসিটা থাকে না,তবে কেন অন্য ছেলের সাথে কথা বলার সময় এই হাসি থাকবে?এসব ভেবে সাদাফের খুব রাগ হচ্ছে,তাই সে গটগটিয়ে সাবিহার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

নিশান ভাইয়া আর রিয়ান ভাইয়ার সাথে আমি আর আপু কথা বলছিলাম তখন সেখানে উপস্থিত হয় সাদাফ ভাইয়া।উনাকে দেখে আপু বলে উঠে,,,

“আয় বস এখানে,পরিচিত হ উনারা হলেন,,,

“তোমার না শরীর ভালো না তবে রেস্ট না নিয়ে এখানে বসে কী করছো?”

সাদাফ শীলাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে সাবিহাকে গম্ভীর হয়ে কথাটা বলে উঠল।সাদাফের হঠাৎ এমন আচরনে উপস্থিত সবাই অবাক।সাবিহা একবার শীলার দিকে তাকাল,তাকিয়ে দেখে শীলাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তাই সাবিহা হালকা হেঁসে বলে উঠল,,,

“ভাইয়ারা এসেছে তাই ওদের সাথে কথা বলছিলাম,বসুন না আপনি।”

“কে উনারা?চিনলাম না ত!”

“আরে উনারা হলেন কাব্যর বন্ধু নিশান আর রিয়ান।সাবিহাকে দেখতে এসেছে।আর এটা হচ্ছে সাদাফ আমার ফ্রেন্ড।” (শীলা)

শীলার কথা শুনে নিশান,রিয়ান আর সাদাফ হাত মেলাল।তখন নিশান বলে উঠল,,,

“আমাদের এখন আসতে হবে,একটু কাজ আছে।”

“ভাইয়া এখনই চলে যাবেন?রাতের ডিনারটা করে গেলে হয় না!”

“না বোন,খুব জরুরি একটা কাজ আছে।আমরা এখন আসি,অন্য একদিন আসব।তখন পেট ভরে খেয়ে যাব,আসি এখন আর নিজের খেয়াল রেখো।”

সাবিহা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে নিশান আর রিয়ান বেরিয়ে যায়।তখন সাদাফ বলে উঠে,,,

“কাব্য ভাইয়া এমন একটা কাজ করার পরও তোমরা কীভাবে অর ফ্রেন্ডদের এলাও করলে বাড়িতে?”

“সাদাফ দোষ কাব্য করেছে,অর বন্ধুরা করে নি।অরা বরং সাদিয়াকে অনেক স্নেহ করে,আর তাই তারা খবরটা পেয়ে ছুটে এসেছে সাবিহাকে দেখতে।”

“দেখ গিয়ে এর পিছনেও হয়ত ঐ কাব্য আছে,হয়ত কোন নতুন ফন্দি আটতাছে।”

“ভাইয়া সবাইকে এত সন্দেহ করার রোগ আপনার কবে হল?”

“আশেপাশে যা হচ্ছে তাতে সন্দেহ করাটা স্বাভাবিক।”

“অরে আমার গোয়েন্দা পুলিশ আসছে রে,এত গোয়েন্দা গিরি যখন জানিস তখন গোয়েন্দা গিরিটাই কর।পুলিশে জয়েন কর,তাতে করে আমাদের বাংলাদেশ অনেক উপকৃত হবে।”

“শীলা আমি একদমই মজা করছি না,আর না মজা করার মুডে আছি।ভালো লাগছে না এখন এসব,আসছি আমি।”

কথাটা বলেই সাদাফ বের হয়ে গেলো।আর বেচারি শীলা বোকার মত তাকিয়ে রয়েছে সাদাফের যাওয়ার দিকে।শীলা ত একটু মজা করেছে তার জন্য এত রাগ দেখানোর কী হল বুঝতে পারছে না শীলা।আর সাদাফ এখন এখানে কেন এল সেসবও ত জানা হল না তার আগেই রেগে ফায়ার হয়ে চলে গেছে।এসব ভেবে শীলা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে,আর সাবিহা কাউকে কিছু না বলে গুটিশুটি মেরে সোফায় শুয়ে পড়ে।শরীরটা ভালো লাগছে না,তাই চুপচাপ শুয়ে পড়ে।

______________________________________

কাব্য একটা নির্জন জায়গায় এসে গাড়ি থামায়,কাব্য গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা দূরে এসে হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“সব ধ্বংস করে দিব আমি,সাবিহা তকে আমি ছাড়ব না।তোর কত বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলিস তুই,তোর ঐ হাত যদি আমি না ভেঙ্গেছি ত আমার নামও কাব্য নয়।আজ আমি যতটা একা হয়েছি ঠিক ততটাই একা করে দিব তকে।আমার ভালো থাকার সমস্ত কারন তুই কেড়ে নিয়েছিস তকে ত আমি ছাড়ব না।”

এভাবে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর কাব্য নিজের গাড়িতে গিয়ে বসে।আর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ২৩+ কল এসেছে ইশার ফোন থেকে।কাব্য সঙ্গে সঙ্গে কল ব্যাক করল,কয়েকবার রিং হওয়ার পর ইশা কল ধরল।আর সাথে সাথে ইশা রেগে বলে উঠল,,,

“এখন কল দেয়ার সময় হয়েছে তোমার?এখন কল না দিলেও পারতে,বিকালে শপিং করানোর নাম করে কোন দুনিয়ায় চলে গেছো?”

কাব্যর এমনিতেই মেজাজ খারাপ তার উপর এই ডংঙ্গি রাগ দেখাচ্ছে।কাব্যর খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু কাব্য তার রাগটা কন্ট্রোল করে ইশাকে বলে উঠল,,,

“সরি আসলে একটু বিজি ছিলাম।”

“কী এমন কাজ করছিলা যে এতটাই বিজি ছিলা আমার ফোনটাই ধরতে পারো নি?”

“আরেকটা মেয়ের সাথে ছিলাম,তার জন্য বিজি ছিলাম।আর কিছু বলবি তুই?”(ধমকে)

ইশা এবার ন্যাকা কান্না করে বলে উঠল,,,

” বেবি তুমি আমাকে তুই করে বলতে পারলে!আমাকে ধমক দিতে পারলে তুমি!যাও আর,,,

ইশা আর কিছু বলার আগেই কাব্য ফোনটা কেটে বন্ধ করে দেয়।কাব্যর এসব কিছুই ভালো লাগছে না,কাব্য এবার তার সমস্ত রাগ ঝাড়ে তার গাড়ির উপর।খুব স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে কাব্য,মনে হচ্ছে আধা ঘন্টার পথ পাঁচ মিনিটেই শেষ করে ফেলবে।

অন্যদিকে ইশা ভাবছে হঠাৎ হলো কী এই ছেলের,যে ছেলে ইশা বলতে পাগল আর আজ তার সাথে এমন করল কেন?তবে কী ইশার প্রতি কাব্যর ভালবাসা কমে গেলো?না না এমন হলে ত চলবে না,তবে ত সোনার ডিম পারা হাসঁ হাত ছাড়া হয়ে যাবে।যেটা ইশা চাইছে না,তাই মনে মনে শয়তানি ফন্দি আটা শুরু করে দেয়।কীভাবে কাব্যকে নিজের পায়ের কাছে এনে ফেলা যায় সে ফন্দি।

_______________________________________

সাদাফ বাড়িতে এসে মুখটা কালো করে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।সাদাফকে এভাবে বসে থাকতে দেখে সাদাফের মা তার পাশে বসে বলে উঠে,,,

“কী হয়েছে এভাবে বসে আছিস কেন?”

“মা আমি বিয়ে করব।”

“মানেহ?” (অবাক হয়ে)

“মানে হল আমি বিয়ে করব,তুমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলো।”

“হঠাৎ এই কথা কেন বলছিস সাদাফ?সাবিহার ত এখনও বিয়ের বয়স হয় নি আর তুই ত বলেছিলি তোর প্রতি সাবিহার মনে ফিলিংস হলে তারপর বিয়ে করবি।কিন্তু এখন হঠাৎ এ কথা কেন বলছিস বুঝিয়ে বল আমাকে?”

“মা আমার মনে হচ্ছে সাবিহাকে আমি হারিয়ে ফেলব।আমি জানি সাবিহার মনে আমার জন্য কোন ফিলিংস নেই।এতদিন সেটা মেনে নিলেও এখন মেনে নিতে পারছি না।ভয় হচ্ছে খুব,আমি কিছুতেই সাবিহাকে আমার ভালবাসাটা বুঝাতে পারছি না।তুমি প্লিজ আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলো।বিয়েটা না হলেও এনগেজমেন্ট করে রাখলাম,তাতে করে আমি একটু নিশ্চিন্ত হতে পারব।তারপর যখন সাবিহা বিয়ের উপযুক্ত হবে তখন না হয় বিয়েটা হল।”

“সাদাফ এতে করে হীতে বিপরীত হয়ে যাবে,সাবিহা কিছুতেই সবটা এত সহজে মেনে নিবে না।তুই নিজেকে একটু সময় দে,আর ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর।হার না মেনে সাবিহাকে তোর ভালবাসাটা বুঝা।হার মানা মানেই হেরে যাওয়া তাই হার না মেনে এগিয়ে যা,সফলতা একদিন আসবেই।”

“মা তুমি প্লিজ এখন এসব বলো না,তুমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলো তারপর বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।”

“আমার ছেলেটা বিয়ে পাগল হয়ে গেছে,কেউ আমার ছেলের জন্য পাবনায় একটা সিট বুকিং করো।”

“মা তুমিও মজা করছো?”

“ত কী করব?তুই কী বুঝতে পারছিস না এখনের পরিস্থিতিটা উপযুক্ত নয় তোর আর সাবিহার বিয়ের।সাবিহা কদিন হল একটা ধাক্কা খেয়েছে সেটা সামলে উঠার আগেই তুই আবার আরেকটা ধাক্কা দিবি তখন মেয়েটার কী অবস্থা হবে বুঝতে পারছিস?এত অস্থির না হয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাব কী করা যায়?আর সাবিহা ত তোরই,সেটা তুইও জানিস আমরাও জানি।”

কথাটা বলেই সাদাফের মা চলে যায় আর সাদাফ কিছুতেই নিজের মনকে বুঝাতে পারছে না সাবিহা তার।সাদাফের খালি মনে হচ্ছে সাবিহাকে হারিয়ে ফেলবে।এতদিন সাবিহা কাব্যর কাছে ভালবাসার দাবী করেছে তখন যে মনের ভিতর কী হত সেটা সাদাফই জানে।কিন্তু তখন নিজেকে শান্ত রেখেছে এটা ভেবে যে সাবিহা সাদাফের।
সাদাফ কিছু একটা ভেবে দৌড়ে তার রুমে চলে আসে।আর এসে ড্রয়ারে কিছু একটা খুঁজছে,একটু খুজার পরই পেয়ে যায়।সেটা দেখে সাদাফের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে।আর সাদাফ মনে মনে বলে উঠে,,,

“তুমি হয়ত আমাকে বিয়ে করতে চাইবে না,কিন্তু আমিও তোমাকে আমি ছাড়া অন্য কারো বউ হতে দিব না।ভালবেসে আমার কাছে রাখব,অন্য কারো হতে দিব না।”

_____________________________________

গাড়িতে বসে আছি আমি,পাশেই বাবা বসে আছে।দৃষ্টি আমার বাইরের দিকে,মাঝে কেটে গেছে কয়েকদিন।আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ,আর আজ যাচ্ছি নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য।নতুন স্কুলে ভর্তি হব,নিজেকে নতুন রূপে গড়ব ভেবেই আনন্দ লাগছে।কিন্তু এই আনন্দের মাঝেও কিছু খারাপ লাগা কাজ করছে।হিয়াকে খুব মিস করছি আজকে,কতদিন ধরে দেখা হয় না হিয়াটার সাথে।হঠাৎ চোখ আটকে যায় একটা জায়গায়,ইশা আপু এখানে কী করছে?আর ইশা আপুর সাথেই বা কে আছে ওটা?আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে ওখানে কী হচ্ছে তাই বাবাকে বললাম গাড়ি থামাতে।বাবাও কথামত ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করল,,,

“কী হয়েছে?”

“বাবা দেখো ইশা আপু একটা ছেলের সাথে।”

“ত কী হয়েছে?”

“কিছু না,তুমি একটু দাঁড়াও আমি আসছি।”

“এক পাও গাড়ি থেকে নিচে নামবে না।চুপচাপ বসে থাকো এই মেয়ের জন্য তোমার সাথে কী হয়েছে আশা করি সেটা ভুলে যাও নি।”

কথাটা বলেই বাবা ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে,আমিও আর কিছু না বলে চুপ করে বসে আছি।

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-০৪

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৪

কাব্য ভার্সিটি থেকে ফেরার পর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ার পর কাব্যর ফোনটা বেজে উঠে।কাব্য ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নিশান ফোন করেছে।কাব্য ফোনটা রিসিভ করে বলে উঠে,,,

“রাগ কমছে তোর?নাকি আরো রাগ দেখানোর জন্য এখন ফোন দিলি?”

“তোর সাথে রাগ দেখালে যে তোর কিছু যায় আসে না সেটা আমার থেকে ভালো আর কেউ বুঝে না।তাই ঠিক করেছি তোর সাথে আর রাগ দেখাব না।সব শেষ করে দিব,তোর সাথে বন্ধুত্ব রাখা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়।”

“মানেহ!এসব কী বলছিস তুই?বন্ধুত্ব রাখবি না মানে কী এসবের!নিশান আমরা সেই ছোট থেকে বন্ধু আর তুই হঠাৎ এসব কেন বলছিস?”

“হে রাখব না কোন অমানুষের সাথে আমি বন্ধুত্ব রাখতে চাই না।আজকের পর থেকে আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ করবি না তুই।আমি জানতে পেরেছি তুই সাবিহাকে ঠিক কতটা নির্যাতন করেছিস।বাচ্চা মেয়েটাকে ওভাবে না মারলেও পারতি,তোর মধ্যে মনুষ্যত্ব বলতে কিচ্ছু নেই।”

“তুই কী ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চাইছিস?”

“অন্যকে থার্ড ক্লাস বলার আগে নিজের ক্লাসের কথা ভেবে নিস।”

কথাটা বলেই নিশান ফোনটা রেখে দেয়,আর কাব্য রাগে ফুঁসছে।

“ছাড়ব না আমি তকে,তোর জন্য আজ আমার বন্ধু আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিয়েছে।এর শোধ আমি নিয়েই ছাড়ব।”

কাব্য কথাটা বলেই গাড়ি নিয়ে গটগটিয়ে বের হয়ে গেলো।

___________________________________

বিছানায় বসে বসে গল্পের বই পড়ছিলাম তখন মা হাতে কিছু ফল নিয়ে রুমে আসে।আমি সেটা দেখে নাক,মুখ কুঁচকে বলে উঠি,,,

“মা তুমি আবারও এসব নিয়ে এসেছো!আমি এসব খাই না জানো তুমি,তারপরও এসব নিয়ে এলে।”

“ফল না খেলে মাইর খাবি,চুপচাপ এসব খা।”

“মা তুমি এখনও আমাকে বকবে!”

“হে বকব,দরকার পড়লে মারবও।তাই বেশি কথা না বলে খা আর খেয়ে তোর বাবার কাছে যা একটু।তোর স্কুল চেন্জ করবে বলছে,সেটা নিয়েই কথা বলবে তোর সাথে।”

আমি মার কথা শুনে ত খুবই অবাক হয়েছি আমি।আমার স্কুল চেন্জ করবে মানে কী?

“মা আমার স্কুল হঠাৎ বাবা চেন্জ করতে চাইছে কেন?”

“সেটা তোর বাবাকে জিজ্ঞেস কর,এখন ফলগুলো সব শেষ কর।”

আমি মুখটা কাচুমাচু করে বলে উঠলাম,,,

“ফলটা কী খেতেই হবে?”

“জি খেতেই হবে,কিন্তু না খেতে চাইলেও সমস্যা নাই তখন মাইর খাওয়াব,তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নে কী করবি!” (ধমকে)

“আচ্ছা খাচ্ছি,তুুমি রান্নাঘরে যাও এবার,কীসের যেন পোড়া গন্ধ আসছে!”

“কানের নিচে দুইটা দিব,বোকা পাইছত আমাকে।আমি এখান থেকে যাই আর ফলগুলো ফেলে দিস।আর আমি চুলায় কিছু বসিয়েও আসি নি তাই নাটক না করে চুপচাপ খা।”

আমি মার কথা শুনে চুপচাপ গাল ফুলিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।অনেক কষ্ট ফলগুলো শেষ করলাম,তারপর মাকে একটা ভেংচি দিয়ে বাবার রুমের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।
বাবার রুমে গিয়ে দেখি বাবা ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।আমি চুপচাপ খাটে গিয়ে বসি,আর বাবার কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করি।একটু পর বাবার কথা শেষ হলে বাবা বলে উঠে,,,

“দুপুরের খাবার খেয়েছিস?”

“হে বাবা খেয়েছি।”

“ঔষধ খেয়েছিস?”

“আরে বাবা হে সব খেয়েছি,এখন বলো ত তুমি হঠাৎ আমার স্কুল নিয়ে কেন পড়লে?আর দেড় মাস পর আমার এসএসসি পরীক্ষা এখন স্কুল চেন্জ করা মানে নির্ঘাত পরীক্ষায় চশমা পাব।”

“আমি তোর ভালোর জন্যই স্কুল চেন্জ করতে চাইছি।”

“বাবা একটু বুঝিয়ে বলো।”

“মানে হল তোর এই স্কুলে তায়কোয়ন্দো শেখানো হয় না তাই তোর সুবিধার জন্য স্কুল চেন্জ করছি, যেখানে তায়কোয়ন্দো শেখানো হয়।বুঝতে পেরেছিস এবার আমি কেন স্কুল চেন্জ করব!”

“আমার সুইট বাবাটা কত্ত ভালো।ধন্যবাদ বাবা আমার তায়কোয়ন্দো শেখার ব্যাপারটা এতটা গুরুত্ব দেয়ার জন্য।”

বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,বাবাও আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে দিল।

“আমাকে ত কেউ ভালইবাসে না,আমাকে কেউ আদরও করে না,আমায় সত্যি সত্যি কুড়িয়ে পাইছে মনে হচ্ছে এখন!”

শীলা ঘরে ডুকতে ডুকতে গাল ফুলিয়ে কথাটা বলল।সেটা দেখে আমি বাবাকে ছেড়ে আপুকে জ্বালানোর জন্য বলে উঠলাম,,,

“মনে হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না,তোমাকে ত সত্যি সত্যি কুড়িয়ে পাইছে তাই না বাবা!”

“বাবা তোমার ছোট মেয়েকে কিছু বলো,নয়ত আমি কিন্তু অরে মেরে আলুর বর্তা বানাব।”

“সে গুড়ে বালি,তুমি আলুর বর্তা বানানোর জন্য পেয়াঁজ,মরিচ কাটতে থাকো আমি আর বাবা ততক্ষণে বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”

“পেয়াঁজ মরিচ কাটব আমি তাই না,দাঁড়া তকে দেখাচ্ছি মজা।”

কথাটা বলেই শীলা সাবিহাকে তাড়া করে, সাবিহাও দেয় ভো দৌড়,সেটা দেখে মনির সাহেব তৃপ্তির হাসি হাসে।শীলার বিয়ের পর হয়ত সবকিছু অন্য রকম হয়ে যাবে।এরকম দৃশ্য আবার কবে চোখে ধরা দেয় ঠিক নেই।কেন যে মেয়েদের বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে চলে যেতে হয়?এসব ভেবে মনির সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

কলিং বেলের আওয়াজে দুইবোন শান্ত হয়ে দাঁড়ায় আর সাবিহা যায় দরজা খুলতে আর শীলাও পিছন পিছন যায় কে এসেছে দেখার জন্য।সাবিহা দরজা খুলে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে।কাব্যর চোখ,মুখ অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে,দেখে বুঝাই যাচ্ছে খুব রেগে আছে।কিন্তু সাবিহা সেসবে পাত্তা না দিয়ে দরজা থেকে সরে আসতে নিলেই শক্ত হাতের চর পড়ে সাবিহার গালে।সাবিহা গালে হাত দিয়ে কাব্যর দিকে রেগে তাকায়,কাব্য কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই সাবিহা কাব্যর গালে ঠাস,ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।আর রেগে বলে উঠে,,,

“সবকিছুর একটা লিমিট থাকে,কিন্তু তুই সে লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস।তুই মানুষ নামের একটা অমানুষ,তোর ত সাহস কম নয়।আমার বাড়িতে এসে আমার গায়েই হাত তুলিস!সেদিন মেরেছিস কিছু বলি নি বলে কী ভেবেছিস আজও কিছু বলব না।যা ইচ্ছে তাই করতে পারবি আমার সাথে?আমি কী তোর খাই না পড়ি যে আমার গায়ে হাত তুলিস তুই!আমার বাবা মা ছোট থেকে এতটুকু বড় করেছে তারা কখনও আমার গায়ে হাত তুলে নি আর তুই কোন অধিকারে আমার গায়ে হাত তুললি?”

সাবিহার কথা শুনে কাব্য আর শীলা খুব অবাক হয়।কারন যে মেয়ে কাব্য বলতে পাগল ছিল সে মেয়ে আজ এভাবে কাব্যকে তুই তুকারি করে কথা বলছে।শুধু তাই নয় থাপ্পড়ও মেরেছে।সাবিহা আবারও বলে উঠে,,,

“এবার থেকে আমার গায়ে হাত তোলার আগে এই থাপ্পড়ের কথা মনে করে নিস।আমাকে তুই একটা দিবি আমি তকে তার ডাবল ফিরিয়ে দিব।বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে,তোর মুখের দিকে তাকাতেও ঘৃনা হচ্ছে আমার।”

কাব্য আর কিছু না বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বের হয়ে যায়,আর সাবিহা সদর দরজা আটকিয়ে হাঁটু মুড়ে নিচে বসে পড়ে।সাবিহার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।সেটা দেখে শীলা সাবিহাকে জড়িয়ে ধরে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“সাবিহা কাঁদিস না,বাবা আর মা এসব জানতে পারলে আবার ঝামেলা হবে,তুই প্লিজ শান্ত হ।”

“আপু আমি আজ কাব্য ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছি।কিন্তু আপু বিশ্বাস করো আমি এমনটা চাই নি,আমি ভালবেসে উনার পাশে থাকতে চেয়েছি কিন্তু উনি আমাকে এসব করতে বাধ্য করেছে।আমি ত উনাকে ভালবেসে ছিলাম,কিন্তু উনি আমাকে তার বিনিময়ে আঘাত ছাড়া আর কিছুই করে নি।তাই আজ আমাকে এতটা খারাপ হতে হলো।সেদিনের মারের পর থেকে উনার কথা মনে হলেই শরীরের প্রতিটা আঘাত আমার মনে করিয়ে দেয় যে উনি ঠিক কীভাবে আমাকে ক্ষত বিক্ষত করেছে।আর সেখানে উনি আজ আমার সামনে এসে আমার গায়ে আবারও হাত তুলেছে।তাই রাগটা আর কন্ট্রোল করতে পারি নি,আপু আমি কী ভুল করেছি?”

“না বোন তুই কোন ভুল করিস নি,যা করেছিস একদম ঠিক করেছিস।কাব্যর মত ছেলের সাথে এমনটাই করতে হয়।তুই এসব ভেবে নিজেকে আর কষ্ট দিস না,কাব্য তার কর্মফল ঠিকই পাবে।”

“উনার কর্মফল ত উনি পাবেই,আর আমি নিজে উনাকে তার পাপের শাস্তি দিব।”

________________________________

সাদাফ শীলাকে এক নাগাড়ে ফোন দিয়েই যাচ্ছে সাবিহার খোঁজ নেয়ার জন্য কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না।সাদাফের মাথায় নানা ধরনের খারাপ কথা ঘুরপাক খাচ্ছে?।সাদাফ আর কিছু ভাবতে পারছে না তাই আর কিছু না ভেবেই ছুটে চলল সাবিহাকে দেখার জন্য।কিন্তু গিয়ে যা দেখে তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিল না সাদাফ।

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-০৩

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৩

“কী রে তুই এখন এখানে কেন?”(শীলা)

“সাবিহাকে দেখতে এলাম কিন্তু সাবিহা কই যাচ্ছে?”

“বাড়ি যাচ্ছে,মেঘ বলল আজ বাড়িতে নিয়ে যেতে পারব।”

“আচ্ছা,সাবিহা এখন কেমন আছো তুমি?”

“জি আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।”

“আচ্ছা চলো আমি তোমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেই।”

“সাদাফ তার কোন প্রয়োজন নেই,আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি।” (মনির সাহেব)

“আঙ্কেল ত সাবিহা না হয় আমার সাথে আসুক,আপনি আর শীলা আপনার গাড়ি নিয়ে আসুন।আসলে সাবিহার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।” (ইতস্তত করে)

আমার সাথে কথা আছে শুনে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।সাদাফ ভাইয়াও আমার দিকে তাকিয়ে আছে,আপু তখন বলে উঠল,,,

“কীসের কথা তোর সাবিহার সাথে?”

“শীলা তুমি চুপ করো আর সাবিহা যাও সাদাফের সাথে,সাবধানে এসো।”

বাবার কথা শুনে আমি অবাক,একটা ছেলে আমার সাথে কথা বলার জন্য তার সাথে যেতে বলছে আর সেটা বাবা চুপচাপ মেনে নিল।ব্যাপারটা বেশ গন্ডাগোল লাগছে।বাবা কথাটা বলেই সামনে এগিয়ে যায় কিন্তু আপু তখনও দাড়িয়ে সন্দেহ চোখে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সেটা দেখে বাবা ধমকে বলে উঠল,,,

“শীলা তোমাকে আমার সাথে আসতে বলেছি দাড়িয়ে থাকতে বলি নি ওভাবে।”

“জি বাবা আসছি।”

তারপর আপু আর বাবা চলে যায়,আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকালে উনি বলে উঠে,,,

“চলো যাওয়া যাক!”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে সাদাফ ভাইয়া হাঁটা শুরু করে।আমিও তার পিছন পিছন হাঁটা ধরি।

_________________________________

কাব্য আর তার বন্ধুরা কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে,তখন সেখানে উপস্থিত হয় ডংঙ্গি ইশা।সেটা দেখে কাব্যর বন্ধু নিশান রিয়ানকে কাব্যর আড়ালে বলে উঠে,,,

“দোস্ত দেখ এই ডংঙ্গি আজও তেরো কেজি আটা, ময়দা মেখে আসছে।”

“ভালোই ত হয়েছে রে দোস্ত,আমাদের বন্ধুর আর আটা ময়দা কেনা লাগবে না,এই ডংঙ্গির মুখ থেকে আটা ময়দা দিয়েই লুচি+রুটি বানাতে পারবে।আটা কয়দা কেনার টাকা বেঁচে গেলো কাব্যর।”

নিশান রিয়ানের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে উঠল,,,

“তোর মাথা ছাগল একটা,ছাগলের মত দুইটা সিংই আছে কিন্তু গরুর মত গুতা দিতে পারবি না।কাব্যর সাথে এই ডংঙ্গির বিয়ে হলে কাব্য এই মাইয়ার জন্য আটা ময়দা কিনতে কিনতে ফকির হয়ে যাইব।”

“এভাবে ত ভেবে দেখি নাই রে বন্ধু,বড় লোক দোস্ত আমার ফকির হয়ে যাবে ভাবতেই কিমুন ফিলিং অশান্তি অশান্তি আসিতেছে রে।”

“চুপ কর আর দেখ এই ডংঙ্গি কী বলে!”

তারপর দুজনেই চুপ করে ইশা আর কাব্যর কথা শুনার চেষ্টা করে।কিন্তু অরা শুধু বাবু,সোনাই করে যাচ্ছে যেটা ওদের দুজনের একদমই শয্য হচ্ছে না।সিঙ্গেল হলে যা হয় আরকি,তাই অরা কিছু না বলে চুপচাপ চলে যেতে চাইলেই শুনতে পায়,,,

“বেবি তোমাকে বাড়িতে কেউ কিছু বলে নি ত ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য।”

“মা আর বাবা একটু রাগারাগি করেছে,এমনিতে সব ঠিকই আছে।”

“ওহহ,আর ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটা কেমন আছে?”

“জানি না আমি।” (বিরক্ত হয়ে)

“বেবি তুমি আমার কথায় বিরক্ত হলে,যাও আর কথাই বলব না।” (ডং করে)

“আরে জান রাগ করো না প্লিজ,আমি তোমার কথায় বিরক্ত হই নি বিরক্ত হয়েছি ঐ মেয়েটার কথা মনে করে।তুমি প্লিজ রাগ করো না জান।”

“ঠিক আছে রাগ করব না কিন্তু আমাকে আজ শপিং করে দিতে হবে কিন্তু।”(হেঁসে)

” ওকে আমার জান যা বলবে তাই হবে।এখন দেখি ত আমার জানের হাতটা কেমন আছে!”

তারপর কাব্য ইশার হাতটা দেখে হাতে একটা চুমু দিয়ে বলল,,,

“সেরে যাবে খুব তাড়াতাড়ি।”

“হুম বেবি,লাভ ইউ😘।”

“লাভ ইউ টু।”

“আচ্ছা বেবি আমি একটু আসি,পার্লারে যাব।বিকালে ত শপিং করতে হবে তার জন্য একটু সাজুগুজু করে আসি।”

“আচ্ছা জান আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি চলো।”

“না না আমি একাই যেতে পারব।”

“sure.”

“হুম বেবি sure,এখন আমি আসি।”

“সাবধানে যেও।”

“ওকে বেবি।”

তারপর ডংঙ্গি ডং করতে করতে চলে যায়,আর কাব্য ইশার যাওয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে অর বন্ধুদের দিকে তাকালে দেখতে পায় তারা অর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।সেটা দেখে কাব্য ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,,

“what?”

“তুই সাবিহার সাথে আবার কী করেছিস কাব্য?” (রিয়ান গম্ভীর হয়ে)

“তরাও এখন মা-বাবার মত শুরু করিস না প্লিজ।এসব নেকামি আর ভালো লাগছে না।” (বিরক্ত হয়ে)

“তুই একটু বেশিই বারাবাড়ি করছিস,বাচ্চা একটা মেয়ে,এখনও পৃথিবীটা ভালো করে চিনে উঠতে পারে নি।আবেগ হোক বা সত্যি ভালাবাসা হোক মেয়েটার বয়সই বা কী এখন!সারাক্ষণ তোর পিছন পিছন ঘুরে ভালবাসি ভালবাসি বলে,আর তুই সাবিহার সাথে কত খারাপ আচরনই না করিস।এমন খারাপ আচরন না করে ঠান্ডা মাথায় একটু বুঝালেও ত পারিস তা না করে তোর ঐ ডংঙ্গি গার্লফ্রেন্ডের কথায় নাচস।আর ছোট বড় সব কারনে সাবিহার সাথে খারাপ আচরন করিস।এত অন্যায় আল্লাহ সইবে না,তোর কর্মফল তুই ঠিকই পাবি।”

নিশান খুব রেগেই কথাগুলো বলে,তারপর সেখানে আর দাঁড়ায় না।নিশানের পিছন পিছন রিয়ানও চলে যায়,কারন তারা সবই জানে আর এটাও জানে যে কাব্য সাবিহার সাথে কেমন আচরন করে।
আর কাব্য নিশানের বলা কথাগুলো মন দিয়ে শুনেছে।তার মধ্যে কাব্যর একটা কথা খুব মনে ধরেছে,ঠান্ডা মাথায় বুঝানোর বিষয়টা।কিন্তু কাব্য ত তেমন কিছুই করে নি,ভালো করে বুঝালে হয়ত আজকের পরিস্থিতিটা অন্য রকম হত।
পরক্ষণেই কাব্য আবার ভাবে যে সে এসব কী ভাবছে!এত স্টুপিট মার্কা কথা তার মনে কীভাবে আসতে পারে?এসব ভেবে কাব্য নিশানের কথাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয়।

________________________________

শীলা গাল ফুলিয়ে গাড়িতে বসে আছে আর তার পাশেই বসে আছে মনির সাহেব।শীলা বারবার জানতে চাইছে তার বাবা তখন কেন সাবিহাকে চুপচাপ সাদাফের সাথে যেতে দিল।কেন কিছু বলল না উনি সাদাফকে!কিন্তু যতবারই জানতে চেয়েছে ততবারই মনির সাহেব ধমক দিয়ে শীলাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।তাই সে গাল ফুলিয়ে বসে আছে,সেটা মনির সাহেব দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে।এখন রাগ না দেখালে মেয়েটা তার মাথা খারাপ করে ফেলবে সবটা জানতে চাওয়ার জন্য।যেটা এখন উনি জানাতে চাইছে না, তাই চুপচাপ বসে ফোন টিপছেন উনি।

★★অন্যদিকে সাদাফ গাড়িটা একটা পার্কের সামনে দাঁড় করায়।হঠাৎ গাড়ি থামানোতে আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি একটা পার্কের সামনে আছি আমরা।আমি সেটা দেখে সাদাফ ভাইয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি নামতে ইশারা করে।

“এখানে নামব কেন?আমাদের ত বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল!”

“আরো একটা কথাও ছিল যে তোমার সাথে আমার কিছু কথাও আছে।”

“ত কী হয়েছে?”

“কী হয়েছে মানে,নামো গাড়ি থেকে।”(ধমকে)

আমি চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম,তারপর চুপচাপ একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম।সাদাফ ভাইয়া একটা দোকান থেকে দুইটা আইসক্রিম নিয়ে আমার পাশে বসলেন।আর একটা আইসক্রিম আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।আমি ভ্রু কুঁচকে উনাকে বলে উঠলাম,,,

” আমাদের কী আইসক্রিম খাওয়ার কথাও ছিল?”

“না ছিল না,আর ছিল না বলে কী আইসক্রিম খাবে না নাকি?”

“না খাব না আমি,আপনার যা বলার সেটা তাড়াতাড়ি বলুন,আমি বাড়িতে যাব।”

“বাড়িতে ত যাবেই,আইসক্রিম টা নাও তারপর দুজন খেতে খেতে কথা বলি না হয়!”

আমি আর কিছু না বলে উনার হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম,তারপর উনি বলতে শুরু করলেন,,,

“কালকের আচরনের জন্য আমি দুঃখিত,আমার ওভাবে তোমার সাথে রাগ দেখানোটা ঠিক হয় নি।আসলে তোমাকে ওভাবে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি।আর কাব্য ভাইয়ার উপরেও খুব রাগ হয়েছিল তাই রাগ দেখিয়ে ফেলেছি।এমনিতেই তোমার শরীরের এ অবস্থা তার উপর আমি রাগ দেখিয়ে একদমই ঠিক করি নি।আর এটা ভেবে গতকাল রাতে আমি ঘুমাতেও পারি নি।তাই সকাল হতে না হতেই ছুটে চলে এসেছি।”

“এটাই কী আপনার বলার ছিল?”

“হুম,I am sorry for everything”

“It’s ok,,,এবার চলুন বাড়িতে ফেরা যাক।”

“শুধু It’s ok,আর এখনই বাড়ি ফিরে যাবে?একটু বসি না হয় দুজনে,একটু সময় কাটাই এখানে!”

“আর কী বলব?আপনার কথা বলার ছিল কথা বলা হয়ে গেছে,সরি বলার ছিল বলেছেন।আমি তার উওরও দিয়েছি ত আর কী বলব ভাইয়া?আর আমার ভালো লাগছে না আমি এখনই বাড়ি ফিরব।”

“আচ্ছা ঠিক আছে চলো ফেরা যাক।”

উনি কিছুটা মন খারাপ করে কথাটা বললেন।কিন্তু আমি সেসবে পাত্তা দিলাম না।এখন এসব নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না।তাই আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলাম গাড়ির দিকে।অতঃপর গাড়ির কাছে এসে গাড়িতে বসে চললাম বাড়িতে যাওয়ার জন্য।

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-০২

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২

হসপিটালে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসছে একটা ছেলে,রিসেপশনিস্টের থেকে কিছু একটা জানতে চেয়ে আবারও দৌড় লাগাল।ছেলেটা দৌড়ে এসে একটা কেবিনের ভিতরে ডুকল।

সকাল বেলা বেডে আধশোয়া হয়ে বসে ফোন টিপছিলাম তখন কোথা থেকে একজন এসে আমার সামনে দাড়াল।আমি চোখ তুলে সামনে তাকালে দেখতে পাই শীলা আপুর ফ্রেন্ড সাদাফ ভাইয়া।উনাকে দেখে খুব অবাক হই আমি,কারন উনি একটা কাজে সিলেট গিয়েছিল।কিন্তু পরক্ষনেই আমি নিজেকে সামলে উনাকে প্রশ্ন করলাম,,,

“ভাইয়া আপনি এখানে!”

“তোমাকে দেখতে এলাম।শীলাকে কল দিয়েছিলাম তারপর এসব জানতে পারলাম।এখন কেমন আছো তুমি?”

“এইত আল্লা রহমতে ভালোই আছি,কিন্তু আপনি না সিলেট গিয়েছিলেন পরশু।তার জন্যই ত আপুর এনগেজমেন্ট পার্টিতে থাকতে পারলেন না।”

“হ্যা মানে কাল রাতেই ফিরেছি।”

“আপনার না এক সপ্তাহ পর ফিরার কথা ছিল!”(সন্দেহ করে)

“কাজ শেষ হয়ে গেছে তাই কাল রাতেই ফিরে এলাম কিন্তু এসব কীভাবে হল সাবিহা?এমন অমানুষের মত মারল তোমার ভাই আর তোমরা এখনও চুপ করে আছো কেন?”

“ভাইয়া এসব বাদ দিয়ে আমরা অন্য কথা বলি!”

“কেন বাদ দিব সাবিহা,যে তোমাকে এত নির্মম ভাবে অত্যাচার করল ছোট একটা বিষয়ে তাকে তুমি এমনি এমনি ছেড়ে দিবে?আর তুমি আংকেল কে বারন করেছো কেন কাব্যকে কিছু বলতে?”(উত্তেজিত হয়ে)

“আপনাকে এসব কে বলল?আমি বাবাকে বারন করেছি এটা আপনাকে কে বলল?”

“তোমাকে এত কথা বলতে বলি নি সাবিহা,যেটা বলেছি সেটার উওর দেও!”(রেগে)

সাদাফের ধমকে সাবিহা কেঁপে উঠে,সাবিহা চুপ করে আছে।সেটা দেখে সাদাফ আবারও ধমকে বলে উঠে,,,

” সাবিহা আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি উওর দিচ্ছো না কেন?”

“ভাইয়া আপনি ঠিক করে কথা বলুন,আমার সাথে এভাবে রাগ দেখাতে পারেন না আপনি।”

“আমি রাগ দেখিয়ে কথা বললে তোমার সেটা শয্য হয় না আর তোমার ভাই যে তোমাকে এত নির্মম ভাবে আঘাত করল সেটা তোমার শয্য হয়ে গেলো তাই না!”

“ভাইয়া প্লিজ আপনি এখন আসুন,আমি এটা নিয়ে আর একটা কথাও বলতে চাই না।”

সাবিহার কথা শুনে সাদাফ আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না।গড়গড়িয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে।
আমি বড় করে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে ভাবতে থাকি কালকে সন্ধ্যার কথা,,,

★ফ্লাসব্যাক★

সন্ধ্যা বেলা সাবিহাকে হসপিটালে ভর্তি করার কতক্ষণ পরেই সাবিহার জ্ঞান ফিরে।তখন সাবিহাকে একে একে সবাই দেখে বের হয়ে যায় কেবিন থেকে কিন্তু থেকে যায় সাবিহার বাবা মনির সাহেব।মনির সাহেব সাবিহার কাছে গিয়ে সাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“আমার ছোট্ট প্রিন্সেস এখন কেমন আছে?”

সাবিহা দুর্বল গলায় বলে উঠে,,,

“আমি ভালো আছি বাবা,কিন্তু তোমার চোখ এমন ফুলা লাগছে কেন?নিশ্চয়ই কেঁদেছ তুমি তাই না!”

মনির সাহেবের চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল সেটা দেখে সাবিহা অস্থির হয়ে বলে উঠল,,,

“বাবা তুমি কেঁদো না,তুমি কাঁদলে ত আমার খুব কষ্ট হয়।”

“আমি আমার প্রিন্সেসকে রক্ষা করতে পারি নি,একটা ছেলে আমার প্রিন্সেসকে এভাবে অমানুষের মত মারল কিন্তু আমি কিছুই করতে পারলাম না।ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি,ঘৃণা হচ্ছে যে আমি একজন বাবা হয়ে একটা অমানুষের হাত থেকে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না।”

“বাবা তুমি প্লিজ শান্ত হও,তোমারই বা কী করার ছিল তখন।তোমরা যাতে কিছু করতে না পারো তার জন্যই ত উনি ওভাবে দরজা বন্ধ করে মেরেছে আমায়।তুমি এসব ভেবে কষ্ট পেও না বাবা,আমি এখন ঠিক আছি দেখো।”

“আমিও ঠিক আছি মামনি,তখন কিছু করতে পারি নি ত কী হয়েছে কিন্তু এবার আর কাব্যকে আমি ছেড়ে দিব না।কাব্যকে তার কর্মের ফল দিয়েই ছাড়ব আমি।”

“বাবা তুমি কিছু করবে না কাব্য ভাইকে।”

“মানেহ?”

“মানে হল তুমি কাব্য ভাইকে কিছু করবে না,উনাকে কিছু বলবেও না তুমি।”

“তুই এসব কী বলছিস?যে তকে এভাবে মারল তাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব নাকি?অসম্ভব আমি এটা কিছুতেই হতে দিতে পারি না।”(রেগে)

“বাবা আমি তোমাকে কাব্য ভাইয়াকে ছেড়ে দিতে বলি নি।শুধু বলেছি তুমি উনাকে কিছু করবে না আর বলবেও না।যা করার আমিই করব,আমার সাথে যে অন্যায়,যে খারাপ আচরন এতদিন করে এসেছে তার প্রতিটা কনা পাথর দিয়ে ফিরিয়ে দিব।এতদিন ভালবাসার দাবী নিয়ে পাগলামি করেছি কাব্য ভাইয়ের সাথে।কিন্তু উনি প্রতিবারই আমার ছোট্ট হৃদয়ে প্রতিনিয়ত আঘাত করেছে।সেসব মনে ধরি নি কিন্তু আজ যা করেছে উনি আমার সাথে তা আমি কড়ায় গন্ডায় ফিরিয়ে দিব।”

“সাবিহা তুই এখনও অনেক ছোট,তুই কী করবি?তকে কিছু করতে হবে না যা করার আমিই করব।”

“বাবা আমি তোমাকে আমার কছম দিলাম তুমি কাব্য ভাইকে কিছু বলবে না আর করবেও না।আর আমি তায়কোয়ন্দো(মার্শাল আর্ট) শিখতে চাই।যেটা মাধ্যমে আমি নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রশিক্ষিত করে নিজের আত্মরক্ষা নিজেই করতে পারব।যাতে আর কোন কাব্য আমার উপর কোন নির্যাতন করতে না পারে।”

“আমার মামনিটা কবে এত বড় হয়ে গেলো বুঝতে পারি নি।মামনি তুই যা বলছিস তাই হবে কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”

“কী শর্ত বাবা?”

“তোর মামার বাড়ির সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।আমি ঠিক করেছি শীলার সাথে মেঘের বিয়েটা ভেঙ্গে দিব কারন যে পরিবারে কাব্যর মত একটা পশু আছে সে পরিবারে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিব না।”

“বাবা তুমি এসব কী বলছো?মেঘ ভাইয়া আর শীলা আপু একে অপরকে খুব ভালবাসে।আর মেঘ ভাইয়া কাব্য ভাইয়ের মত নয়,আর মামার বাড়ির সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলে আমি আমার প্রতিশোধ নিব কীভাবে?”

“কিন্তু আমি,,,

” বাবা কোন কিন্তু নয় এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই সবটা চলতে দাও।তুমি কাব্য ভাই+সবার সাথে ভালো আচরন করো।আমি সুস্থ হলে তায়কোয়ন্দো শিখব তারপর দেখাব ঐ কাব্য আহমেদকে।”

“ঠিক আছে তুই যখন বলছিস তবে তাই হবে।”

★বর্তমান★

সাবিহা আজ বাসায় ফিরবে সাবিহার বাবা আর শীলা এসেছে সাবিহাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে।সাবিহা তৈরি হয়ে কেবিন থেকে বের হতে গেলে সামনে এসে দাঁড়ায় সাদাফ।

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-০১

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১

একের পর এক বেল্টের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে সাবিহার শরীর।সাবিহা ব্যাথায় ছটফট করে কাঁদছে কিন্তু সেদিকে কাব্যর একদমই হুস নেই।দরজার বাইরে থেকে অনবরত সবাই বলছে সাবিহা কে ছেড়ে দিতে কিন্তু সেসব কিছুই কাব্যর কানে পৌঁছাচ্ছে না।সে ব্যাস্ত তার রাগ কমানোর জন্য,একসময় সাবিহা আর শয্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায়।সেটা দেখে কাব্য সাবিহার গাল চেপে ধরে বলে উঠে,,,

“আমার কথা শুনিস নি,আমি যেটা করতে বারন করেছি সেটাই করেছিস।প্রতিশোধ নিলি ত তাই না।আমার জানকে কষ্ট দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছিস তুই,এবার বুঝ কেমন লাগে।সারাক্ষণ কানের কাছে বলেই চলিস ভালবাসি কাব্য ভাই,আমি বারন করার পরও শুনিস নি।আর আজ যখন আমার ভালবাসার মানুষকে দেখলি তখন শয্য করতে পারলি না তাই না।বলেছিলাম ইশার থেকে দূরে থাকবি কিন্তু শুনলি না তুই।আমার ভালবাসাকে কষ্ট দিলি,শয্য করতে না পেরে ইশাকে কষ্ট দিয়ে দিলি এভাবে।তকে আজ মেরেই ফেলব আমি।”

তারপর আবারও কাব্য অমানুষের মত মারছে,কাব্য থামছেই না অনবরত মেরেই চলেছে,এভাবে অনেকক্ষণ নিজের ইচ্ছে মত নির্যাতন করে যায়।একটা সময় কাব্য ক্লান্ত হয়ে পড়ে,তখন সাবিহাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে যায় ঘর থেকে।তখনই হুরমুরিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন সবাই।এসে সাবিহাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে তাদের বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।তারা আর কিছু না ভেবে সাবিহাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।

___________________________________

অন্যদিকে কাব্য অনেক জোড়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে,তার পাশেই তার গার্লফ্রেন্ড ইশা হাতে ফু দিচ্ছে আর ন্যাকা কান্না কাদছে।কাব্য একবার অস্থির চোখে ইশাকে দেখছে ত আরেকবার সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে।ইশা এবার ন্যাকামি করে বলে উঠল,,,

“বেবি দেখো না হাতটা কত লাল হয়ে গেছে,খুব জ্বলছে আমার।”

“কিছু হবে না জান,সব ঠিক হয়ে যাবে।আরেকটুখানি পথই আমরা এখনই হসপিটালে পৌঁছে যাব।”

কিছুক্ষণ পর কাব্য ইশাকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে যায়।কাব্য দৌড়ে ভিতর থেকে ডাক্তার আর নার্সকে ডেকে নিয়ে আসে।ডাক্তার আর নার্সরা আসার পর কাব্য তাদের ইশার হাত দেখতে বলে।ডাক্তার আর নার্স ইশার হাত দেখে একে অপরের দিকে তাকায়।তাদেরকে কাব্য এমনভাবে ডেকে এনেছে যেন খুব সিরিয়াস কোন রুগি কিন্তু এখানে এসে তার উল্টোটাই দেখছে।ডাক্তারকে কিছু করতে না দেখে কাব্য রেগে ডাক্তারের উদ্দেশ্য বলে উঠল,,,

“আপনারা এখনও চুপ করে দাড়িয়ে আছেন কেন?দেখতে পাচ্ছেন না আমার জান কষ্ট পাচ্ছে আপনারা তাড়াতাড়ি কিছু করুন।”

ডাক্তার অবাক হয়ে বলে উঠল,,,

“আপনি কী আমাদের সাথে ফান করছেন?হাতে ত কিছুই হয় নি,আর আপনি আমাদের এমন ভাবে ডেকে আনলেন যেন কত সিরিয়াস কিছু হয়ে গেছে।”

“এই ডাক্তার দেখতে পাচ্ছিস না আমার জান কষ্ট পাচ্ছে,আর তুই এখানে সিরিয়াস বিষয় খুঁজছিস।এখনি অর কষ্ট কমিয়ে দে নয়ত তোর কষ্ট বাড়িয়ে দিব আমি।”

কাব্য রেগে ডাক্তারের কলার ধরে বলে উঠল,ডাক্তার ভয় পেয়ে যায় তাই চুপচাপ ইশার হাতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়।তখন কাব্য ইশার কাঁদে হাত রেখে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“আমার জানের কী এখনও কষ্ট হচ্ছে?”

ইশা মুচকি হেঁসে মাথা দুই পাশে নেড়ে না জানাল,কাব্যর মুখেও হাসি ফুটে উঠল।ইশা বলে উঠল,,,

“বেবি যার জন্য আমি এত কষ্ট পেলাম তুমি কী তাকে কিছু করবে না?”

“কে বলেছে করব না হুম!আমার জানকে যে কষ্ট দিবে তাকে তার থেকে দ্বিগুন কষ্ট ফিরিয়ে দিব আমি।আমার জানের হাতে চা ফেলে দিয়েছে ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটা আর আমি তাকে এমনি এমনি ত ছেড়ে দিব না।আমি তাকে তার উপযুক্ত শাস্তি দিয়েই এসেছি।”

কাব্যর কথা শুনে ইশার মুখের হাসিটা চওড়া হল,কাব্যও মুচকি হেঁসে ইশাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেলো।

★ফ্লাসব্যাক★

কাব্য আর সাবিহা মামাত আর ফুপাত ভাই বোন।সাবিহা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।সাবিহা তার বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান,সাবিহার বড় একটা বোন আছে নাম শীলা।সাবিহা এবার ক্লাস টেনে পড়ে,আর শীলা অনার্স ৩য় বর্ষে।সাবিহার বাবা একজন কলেজ প্রফেসর।
অন্যদিকে কাব্য বড়লোক বাবার সন্তান।কাব্যরা তিন ভাই বোন,সবার বড় ভাই মেঘ,তারপর কাব্য,আর ছোট বোন হিয়া,হিয়া আর সাবিহা একসাথেই পড়াশোনা করে।কাব্য অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে এবার।আর মেঘ একজন ডাক্তার।

আজ মেঘ আর শীলার এনগেজমেন্ট ছিল,সেই সুবাদে আজ সবাই এক হয়েছে।আর উপস্থিত ছিল কাব্যর গার্লফ্রেন্ড ইশাও।কাব্য আর ইশার রিলেশনের কথা সবাই জানে তাই ইশাকেও ইনভাইট করা হয়েছে।কাব্য ইশাকে পাগলের মত ভালবাসে।সবাই তাদের রিলেশনে রাজি থাকলেও রাজি নয় মেঘ আর মেঘের মা মিসেস লতা।মেয়েটাকে মেঘ আর মিসেস লতা একদমই পছন্দ করে না।কেন করে না তা আস্তে আস্তে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।সাবিহা আর হিয়া আজ মেরুন কালারের একটা গাউন পড়েছে।তার সাথে হালকা সাঁঝ তাতেই দুজনকে কোন পরীর থেকে কম লাগছে না।হিয়া আর সাবিহা একসাথে দাড়িয়ে কথা বলছিল তখন সাবিহার মা মিসেস হেনা এসে বলেন,,,

“সাবিহা যা ত তোর বাবাকে এই চা টা দিয়ে আয়,তোর বাবার নাকি মাথাটা ধরেছে।”

“আচ্ছা মা যাচ্ছি।”

কথাটা বলেই সাবিহা চায়ের কাপটা তার মায়ের হাত থেকে নিয়ে তার বাবার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।সাথে সাথেই ধাক্কা খায় ইশার সাথে,আর চা টা গিয়ে পড়ে ইশার গায়ে।চা টা ততটাও গরম ছিল না,কারন সাবিহার বাবা বেশি গরম চা খান না।ইশা রেগে কিছু বলবে সাবিহাকে কিন্তু পরক্ষণেই ইশার চোখ যায় কাব্যর দিকে।আর ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলে,সেটা দেখে কাব্য সহ সবাই এগিয়ে আসে।আর এসে দেখে ইশা হাত ধরে কাঁদছে আর সাবিহা অপরাধীদের মত মুখ করে দাঁড়িয়ে ইশাকে বারবার সরি বলছে।কাব্য সাবিহার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইশার হাত ধরে উত্তেজিত হয়ে পড়ে।বরফ দেয় কিন্তু ইশার কান্না থামে না তখন সাবিহা মলম নিয়ে আসে আর বলে উঠে,,,

“সরি আপু আমি তোমাকে খেয়াল করি নি।এই মলমটা লাগিয়ে নাও দেখো একদম সেরে যাবে।”

সাবিহার কথা শুনে কাব্য রেগে সাবিহার হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে যায়,তারপর কী হয়েছে সবাই জানেন।

★বর্তমান★

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে সাবিহা,পাশেই বসে আছে মেঘ আর শীলা।বাকি সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে অরা দুজন মিলে।সারা শরীরে বেল্টের দাগ হয়ে আছে যেটা খুব ভালো করেই ফুটে উঠেছে ফর্সা গায়ে।শীলা বসে বসে চোখের পানি ফেলছে সাবিহা আর মেঘ শীলাকে কান্না করতে বারন করছে,,,

“আজকের দিনে কত আনন্দ করার কথা ছিল আমার ছোট বোনটার।পরীর মত সেজে ছিল আজ কিন্তু এখন দেখো আমার বোনটা কীভাবে কষ্ট পাচ্ছে।কীভাবে অমানুষের মত মেরেছে আমার ছোট্ট বোনটাকে।”

“আপু তুমি কেঁদো না আমি ঠিক আছি এখন,আর ভুলটা ত আমারই তাই না।আমার জন্যই ত ইশা আপুর হাতটা ওভাবে পুড়ে গেলো।আমার ত শাস্তি পাওয়ার কথাই ছিল তাই না,আর সেটা কাব্য ভাই আমাকে দিয়েছে।যা আমার মনপ্রাণ ভরিয়ে দিয়েছে, ভবিষ্যতে কিছু করার আগে আজকের ঘটনা মনে করিয়ে দিবে।ভাইয়া তুমি আপুকে কাঁদতে না করো ত।কীভাবে কাঁদছে দেখো যেন আমি মরে গেছি।”

“একটা থাপ্পড় দিব তকে,এসব কেমন কথা হে?আরেকবার এমন কথা বললে দেখিস তোকে কী করি আমি।আল্লাহর কাছে এখন একটাই দোয়া করি তুই যাতে সুস্থ হয়ে উঠিস।এখন প্লিজ আর বাজে কথা বলিস না।”

“এত তাড়াতাড়ি মরব না গো,আমি মরলে ত মুক্তি পেয়ে যেতে সবাই তাই না।এত তাড়াতাড়ি মুক্তি দিচ্ছি না তোমাদের।”

“সাবিহা তুই কিন্তু অতিরিক্ত কথা বলছিস,এবার কানের নিচে একটা দিয়ে দিব সত্যি সত্যি।তুই এসব বাজে কথা বলছিস আর তোর বোন কান্না করে আমার হসপিটাল ভাসিয়ে দিচ্ছে।বইনেরা আমার অনেক কষ্টে হসপিটালটা বানাইছি পুরো তিন বছরের পরিশ্রম আমার এই হসপিটাল।এখন তরা দুই বোন মিলে একদিনেই আমার হসপিটালের তেরোটা বাজাইস না।”

“আমি কাঁদছি আর তুমি মজা করছো?তোমার সাথে বিয়ে ক্যান্সেল আমার।করব না তোমাকে বিয়ে,ডিভোর্স দিয়ে দিব তোমাকে।”

“আপু তরা থাম ত,চুপ কর এবার।”

“তোর বোনকে চুপ করা নয়ত এখনই তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলব।তারপর বুঝাব বিয়ের আগে ডিভোর্স দেয়ার কথা ভাবার কী মজা!”

মেঘ বাঁকা হেঁসে শীলাকে কথাটা বলল,সেটা দেখে শীলা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,,,

“দেৎ থাকবই না এখানে,এখানে থাকলেই পচাবে আমাকে।”

কথাটা বলেই শীলা বের হয়ে যায় ঘর থেকে,সেটা দেখে আমি বলে উঠি,,,

“ভাইয়া আপুর সাথে যাও না একটু,দেখো না কই গেলো।”

“তোর বোনের মন ভালো করার জন্য মজা করলাম,উল্টো তোর বোন আমার সাথে রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।এখন দেখব গিয়ে কোথাও হয়ত কাঁদছে,এত ইমোশনাল কেন তোর বোনটা?”

“আপু এমনই,আবার আমাকে খুব ভালওবাসে তাই আমার কষ্টটা শয্য করতে পারছে না।তুমি এবার প্লিজ যাও আর আপুর রাগ ভাঙ্গাও।”

“আচ্ছা,আচ্ছা যাচ্ছি আমি।তুই একটু রেস্ট নে কাল সকালে তোকে ডিসচার্জ করে দিব।”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে মেঘ ভাইয়া চলে যায়,আমি বেডে গা এলিয়ে দিয়ে দু ফোঁটা চোখের পানি বিসর্জন দিলাম।সন্ধ্যার কথা ভাবলেই বুকের ভিতরের ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

_________________________________

রাত ১১ টা বেজে ১৭ মিনিট কাব্য ইশাকে তার বাড়িতে ড্রপ করে নিজে বাড়িতে আসে।আর এসেই দেখে ড্রয়িং রুমে অর মা,বাবা,ফুপা,ফুপি,বোন বসে আছে।কাব্যকে বাড়িতে ডুকতে দেখে কাব্যর বাবা ফায়াজ কাব্যর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর শক্ত গলায় বলে উঠে,,,

“বাচ্চা মেয়েটাকে ছোট একটা কারনে এমন অমানুষের মত কেন মারলে কাব্য?”

“বাবা আমি অকারনে কিছু করি নি,আমার ইশার হাতে গরম চা ফেলে দিয়ে কষ্ট দিয়েছে।সেটা আমি কী করে মেনে নিব বলো!এটা মেনে নিলে আমার ভালবাসার সাথে অন্যায় করা হত।আর আমি সেটা হতে দিতে পারি না।”

কাব্যর কথা শুনে কাব্যর মা মিসেস লতা রেগে ফুঁসে বলে উঠল,,,

“কাব্য তুমি ভালবাসায় এতটাই অন্ধ হয়ে গেছো যে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছো।আর চা টা এতটাও গরম ছিল না যে তোমার ইশার হাত পুড়ে গিয়ে চামড়া খসে গেছে।তুমি হয়ত ভুলে যাচ্ছো তোমার ফুপা গরম চা খায় না,আর চা টা তোমার ফুপার জন্যই ছিল।দিক বিদিক না ভেবে ছোট মেয়েটাকে এমনভাবে মারলে যে সেন্সলেস হয়ে গেছে।”

এবার সাবিহার বাবা মনির সাহেব বলে উঠলেন,,,

“আপনারা শান্ত হন,আর কাব্য তুমি ঘরে যাও।আমার মেয়ের হয়ে তোমার কাছে আমি ক্ষমা চাইছি।আমার মেয়ে আর কখনও এমন ভুল করবে না।”

“ফুপা আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন,আপনি ত কোন ভুল করেন নি।যা করার আপনার মেয়ে করেছে,আর ক্ষমা চাইলে আপনার মেয়েই চাইবে।”

“কাব্য তুমি একটু বেশিই করছো,তুমি একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো ত তুমি আজ ঠিক কী কী করেছো।আর এখন তোমার ফুপা তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে কোথায় তুমি মাথা নত করবে তা না তুমি সাবিহার ভুলটা তুলে ধরে উঁচু আওয়াজে কথা বলছো এখনও?তোমাকে কী আমরা এই শিক্ষা দিয়েছি!”

“মা তুমি এভাবে,,,

” একদম চুপ আমার সাথে একদম কথা বলবে না,তোমার থেকে আমি এখন কিছু শুনতে চাই না ঘরে যাও।”

কাব্য আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে ঘরে চলে যায়।

#চলবে…

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-৩২ এবং শেষ পর্ব

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩২(অন্তিম পর্ব)

বিয়ের আজ দুমাস পূর্ণ হলো,রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। অভ্রের বুকের উপর গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে মিহি। অভ্র মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে আর ভাবছে। এই দুমাস জীবনের সবচেয়ে ভালো কেটেছে সারাজীবন যদি এমন কাটতো। চোখ বন্ধ করে নিজে ও ঘুমানোর চেষ্টা করলো। হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে সামনে তাকাতে ই মা বলে জোরে ডাকে।
জোরে শব্দ শুনে মিহি জেগে যায়। চোখ মেলতে ই রেহনুমা আহমেদকে সামনে দেখতে পেলো।

রেহনুমাকে দেখে মিহি একটু ভয় পায় না। চুপচাপ বসে আছে।

–অভ্র এই মেয়ে এইখানে কেনো।

–এই মেয়ে না মা, বলো বউমা।

অবাক হয়ে রেহনুমা আহমেদ বললো,

–একবার ও আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলি না।এই মেয়ে তোমাকে এতো ভয় দেখালাম তাও তুমি বিয়েটা করলেই।

–মা দেখো আমরা যেহেতু সুখে আছি এখানে তোমার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।

–তুই সুখে আছিস বাবা।

–দেখে মনে হচ্ছে না মা?

–আমার ইচ্ছে ছিলো দুইটা ছেলেকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বিয়ে করাবো। এতে আমার আত্মীয় বাড়বে।

–এই জন্য তুমি আমাদের আলাদা করতে চেয়ে ছিলে। তোমার এই ঠুকনো ইচ্ছে কাছে আমাদের সুখটা হেরে যেতো মা। সকল মান অভিমান ভুলে কী মা আমরা ভালো থাকতি পারি না?

–তুই ভালো থাকলে আমি সব পারবো।

রেহনুমা আহমেদ চোখ মুছতে মুছতে রুম ত্যাগ করলো।

আমি অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললাম,

–না বলে চলে আসলো হঠাৎ?

–হয়তো আমাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে। এসে নিজে ই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো।

–নিচে চলো। তোমার বোন ও এসেছে মনে হয়।

–এইরকম বোনের আমার কোনো প্রয়োজন নেই।নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝে না।মা কতো কান্না করে তাও এক মিনিট কথা বলার সুযোগ হয় নাই, এই মেয়েটার।

–হয়েছে বাদ দেও। কোলে করে নিবো না এমনি আসবা।

–সিরিয়াস মুডো ও তোমার এতো প্রেম কোথা থেকে আসে।

বলে ই উঠে নিচে গেলাম। নিচে যেতে ই দেখলাম আমার বোন আর অভ্রের মা দুজন ই খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা মগ্ন। আমাকে দেখে ই মিনতি আমার দিকে আসলো, রাগি চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন ই অভ্র বলে উঠলো।

–এখন আপনার বোনটা পড়ে আমার বউটা আগে। আপনার জ্যা হয় বুঝে শুনে কথা বলবেন।

–অভ্র

–চেচিয়ে লাভ নেই স্বার্থপর বোন আমার নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু ই বোঝে না।
আমার কথাটা শোনার পর, আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–সরি বোন আমাকে মাফ করে দে প্লিজ আমি এতোদিন বুঝিনি তুই আমার জন্য তোর ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে চলে যেতে চেয়েছিস। অথচ আমি নানা অযুহাতে তোদের সাথে কথাটা পর্যন্ত বলিনি।

মিনতির এমন কান্ডে আমি অভ্র দুজন ই বিস্মিত হলাম। এটা তো কাম্য ছিলো না।

–বোন তুই আমাকে মাফ করে দিস আমি মায়ের সাথে দেখা করে আসি।

–আরে এতো রাতে তুই একা কোথায় যাবে।

–কিছু হবে না তীব্রকে নিয়ে যাবো।

এটুকু বলে ই মিনতি তীব্র ভাইয়াকে নিয়ে চলে গেলো।
সোফায় চোখ পড়তে ই দেখলাম মা চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। অভ্র ইশারায় আমার আমাকে মায়ের সামনে যেতে বললো। আমি ও গেলাম। মায়ের পাশে বসে বললাম,

–মা আপনি বললে কিন্তু আমি অভ্রকে ছেড়ে চলে যাবো। শুধু একবার মুখ ফুটে বলুন।

এটা বলার পর মা কোনো কথা বললো না।তাই আমি আবার বললাম,

–মা আমি চলে যাবো। শুধু আপনি বলেন। প্রত্যেকটা মা ই সন্তানের ভালো চায় আপনি চান। তাই আপনি বললে ই আমি চলে যাবো।

এবার ও কোনো কথা বললো না।

–থাক মা বুঝলাম আপনার কিছু বলতে হবে না। চুপ করে থাকা সম্মতির লক্ষন। আমি চলে যাবো

এটা বলে উঠার সাথে সাথে বললেন,

–তোমার সাথে আমি যা করেছি তারপর কোন মুখে কথা বলবো বলো।

–মা আমি সব ভুলে গিয়েছি। আপনি ও ভুলে গিয়ে আমাকে মেনে নিন।

মা আমাকল জড়িয়ল ধরে কান্না করে দিলো। দূর থেকে তাকিয়ে দেখলাম অভ্রের চোখে ও পানি।

__________________

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে ই দেখি, মা আর মিনতি আপু খাবার বানাচ্ছে। অবশ্য অলরেডি দশটার মতো বাজে। আজকে অফিসে যাবো না অভ্র অনেক্ষন আগে ই চলে গেছে। আমি কিচেনে ডুকতে ই মিনতি আর মা চিল্লিয়ে উঠলো,আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

–কী হলো

–কিচেনে ডুকছিস কেনো।

–হেল্প করবো তোমাদের সাথে।

–আজকে আমরা দুজন রান্না করবো তুই খাবি।

–কেনো। তোমরা কালকে মাত্র এসেছো রেস্ট করো

–নাহ্ সোফায় গিয়ে বসে বসে রান্নার স্মেইল নে।

–আপু আমি রান্না করতে পারি।

–কিচেনে তো ডুকিস না চম্পার কাছ থেকে সব কিছু শুনেছি।

চম্মার দিকে তাকাতে ই দেখলাম ছত্রিশটা দাত বের করে খিলখিল করে হাসছে। আমি আর কি করবো সোফায় গিয়ে বসে বসে টিভি দেখতে লাগলাম।

রান্না শেষ হওয়ার সাথে সাথে অভ্র বাসা চলে আসে।
আমি খাবার টেবিলে বসতে ই আমার পাশে অভ্র বসলো,

–কী ব্যাপার আজকে এতো দ্রুত চলে আসলা।

–বউ ছাড়া ভাল্লাগে না।

–ঢং

–মায়ের রান্না মিস করা যাবো না। খেয়ে নেও।

সবাই এক সাথে খেতে বসলাম। অনেক হুল্লোড়েরে আমাদের দিন কাটতে লাগলো।
মনটা খুব ভালো লাগছে, এভাবে ই আল্লাহ সারাটা জীবন আমাদের পরিবারকে সুখে রাখুক।

সকাল বেলা,
আটটা বাজে আমি উঠেছি অনেক্ষন হলো অভ্র যেভাবে জড়িয়ে ধরে আছে। নিজেকে ছাড়ানো বৃথা চেষ্টা করতেছি।

–অভ্র

–প্লিজ ডেকো না আর একটু ঘুমাবো।

–তুমি ঘুমাও আমাকে যেতে দেও। সবার জন্য নাস্তা বানাতে হবে তো।

–সে চম্পা বানিয়ে নিবে।

–আরে আজব তো তোমার সমস্যা কী।

–আমার সমস্যা তুমি।আবার সমাধান ও তুমি।

–এসব প্রেম আলাপ বাদ দিয়ে একটা কথা বলো তো। ঐদিন যদি আমি সত্যি চলে যেতাম তাহলে তুমি কী আরেকটা বিয়ে করতে।

–তুমি ছাড়া কারো কথা কখনো ভাবিনি আর ভাববো ও না। আর তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্তে ও থাকতে পারি না। ভালোবাসা তুমি আমার, হৃদ স্পন্দন তুমি আমার, আসক্তি তুমি আমার তাই তো আমি তোমাতে আসক্ত।

কথাটা বলে ই আলতো করে ওষ্ঠদ্বয় কপালে স্পর্শ করলল।

সমাপ্ত।

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-৩১

0

#তোমাতে আসক্ত২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩১

সকালের সোনালি রোদ চোখে পড়তে ই বালিশ দিয়ে মুখ ডেকে নিলো মিহি। অভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো প্রেয়সী দিকে । অভ্র বিরক্ত হয়ে বালিশটা সরায়ে ফেলতে ই মিহি লজ্জায় চাদর দিয়ে মুখ ঢাকে। কালকে রাতের কথা মনে পরতে আরো লজ্জা লাগে, তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত ছিলো এটা, দুজন দুজনকে আপন করে নিয়েছে।
অভ্র ব্যাপারটা বুঝতে পেড়ে বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে বের হতে ই দরজার বাহির থেকে ডাক পড়লো,

–ভাইয়া আপনাকে খালামনি ডাকছে।

কণ্ঠটা শুনে বুঝলো মিনির কোনো কাজিন এটা। অভ্র দরজা খুলতে যাবে ঠিক তখন ই দেখলো দরজা বাহির থেকে নল করা।

–কী ব্যাপার লক করলো কে।

দরজার ওপাশ থেকে শব্দ আসলো,

–এতোগুলো শ্যালিকার কথা আপনি ভুলে গেলো ও কালকে রাতে আমাদেরকে ধোকা দেওয়ার কথা আমরা ভুলিনি। হয়তো টাকা দিন নয়তো রুমের ভেতরে বসে থাকুন। এটা ও মনে রাখবেন খালামনি আপনাকে ডেকেছে।

–দরজা না খুললে কী করে দিবো।

–নো চালাকি।

–চালাকি কই করলাম।

–কালকে রাতের কথা কেউ ভুলে যাইনি।

–আচ্ছা দরজা খোল টাকা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি।

–জানালা খুলে টাকা গুলো দিন, তাহলে ই দরজা খুলা হবে।

অভ্র আর উপায় না পেয়ে জানালা দিয়ে ই টাকা দিলো৷ আর দরজা ও খুলে দিলো।

অভ্র এই পিচ্চিগুলোর জন্য টাকা রেখেছিলো ঠিক ই কিন্তু একটু মজা করার জন্য টাকাটা রাতে দেয়নি।

মিহির মায়ের রুমের দরজায় দাড়িয়ে বললো,

–আসবো মা।

–আরে অভ্র বাবা আসো।

–কেমন আছেন মা। আপনি কর অসুস্থ।

–না বাবা তেমন কিছু না। মিহির বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ই আমার শরিরের অবনতি হচ্ছে। যা ই হক আমার মেয়েটাকে আমি ভালো মানুষ এর কাছে তুলে দিতে পেরেছি এখন আমি মরে ও শান্তি পাবো।

–কী বলেন মা এসব।

–ঐদিন যদি আমি ঠিক সময় না পৌঁছাতে পারতাম তাহলে হয়তো আজ ও তোমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি থাকতো।

(ফ্লাশব্যাক,

মিহির এসব কথা আর সহ্য করার মতো না নিজের মায়ের বিরুদ্ধে এসব কথা শুনতে কারো ই ভালো লাগবে না। রুম থেকে বের হতে ই অভ্র মিহির মাকে দেখতে পায়।

–আপনি।

–চলো বাবা নিচে গিয়ে কথা হবে।

নিজেকে স্বাভাবিক রেখে অভ্র উওর দিলো।

–কীসের কথা।মিহির সাথে দেখা করে নিন।

–না বাবা আসছিলাম, আমার মেয়েটার সাথে দেখা করতে কিন্তু এসে এমন পরিস্থিতি দেখতে হবে তা বুঝতে পারিনি।

— তাহলে সব শুনেছেন, আপনি। এভাবার ভাবুন তো আপনার মেয়েটা কতো নিচে নামতে পারে শেষ পর্যন্ত আমার মাকে নিয়ে এসব বললো।

–নিচে চলো বাবা তোমার সাথে আমি কথা বলবো।

অভ্র আর কোনো কথা না বলে নিচে গেলো।

–শুনো বাবা মিহি যা বলেছে সব ই সত্যি। তোমার কষ্ট লাগলে ও এটা সত্যি যে তোমার মা মিহিকে পিছন করতো না। চাইতো তোমাকে অন্য কাউকে বিয়ে করাতে যার কারণ এসব ঘটনা ঘটলো।

মিহির মা একে একে সব ঘটনা খুলে বললো। সব কিছু শুনে অভ্র বললো,

–মা এগুলো আপনি আগে বলেননি কেনো।

–বাবা কী করে বলতাম আমার আরেকটা মেয়ে যে তোমাদের বাড়িতে আছে। তোমার মা বলেছে যদি তোমার কানে টু শব্দটি ও যায় তাহলে মিনতি এ বাড়িতে থাকতে পারবে না। যার কারনে আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু এখন তো সময় হয়েছে বলার। আর চুপ করে থাকাটা আমার বোধহয় ঠিক হবে না। তুমি আমার মেয়েটার সাথে আর খারাপ ব্যবহার করো না বাবা।

এটা বলে মিহি মা কান্না করে দিলো। অভ্রের ও খুব খারাপ লাগলো। নিজের অজান্তেই মিহিকে অনেকটা কষ্ট দিয়েছে এবার ভালোবাসা দিয়ে সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে হবে।

–বাবা শুনো আমি যে এসেছি আর তোমাকে এসব কথা বলেছি তা কখনো মিহিকে বলবে না।

এটা বলে ই মিহির মা ঐদিন চলে আসে।)

চোখ মুছে বাস্তবে ফিরলো মিহি মা। অভ্র চলে গেলো নাস্তা করে তো এখন চলে যাবে। বাড়িটা আবার ফাকা হয়ে যাবে।
_________________________________

অভ্র রুমে ডুকতে ই দেখলো মিহি আগের ন্যায় চাদর দিয়ে মুখ ডেকে শুয়ে আছে। এটা অভ্র পাচকোল করে চাদর সহ ওয়াশের নিয়ে পানি ডেলে দিয়ে দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে চলে আসলো।

–এই দরজা খুলো।

অভ্র কোনো উওর দিলো না। তাই আবার ডাকলাম।

–দরজা খুলো।

এবার ও কোনো উওর দিলো না। আবার বললাম।

–দরজা খুলো।

এবার ও অভ্র কোনো শব্দ করলো না। এবার আমি জোড়ে চিৎকার দিয়ে বললাম,

—গোসল সেরে চাদর পড়ে বের হবো নাকি। আমার ড্রেস দিয়ে যাও।

অভ্র উঠে গিয়ে ড্রেস হতে নিলো। দরজা খুলে দিয়ে ড্রেস দিতে যাবে ঠিক তখন ই টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে গিয়ে আমি ও মাথায় পানি ডেলে দিলাম।

অভ্র রাগি মোড নিয়ে বললো,

–কী করলে এটা।আমি মাত্র গোসল করলাম।

–এতোক্ষন ডাকার পর ও কোনো রেসপন্স করোনও কেনো।

–এই জন্য ভিজিয়ে দিবে নাকি।

–প্রতিশোধ নিলাম।

অভ্র টান দিয়ে নিজের সাথে আমাকে একবারে মিশিয়ে নিয়ে বললো,

–প্রতিশোধ কিন্তু আমি ও নিতে পারি। অফিস লেট হয়ে যাবে তাই ছাড়া পেলে।

অভ্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কাপড় চেঞ্জ করে নিলো। আমি ও ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। দ্রুত রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে চলে গেলাম। নাস্তা শেষ করে, দুজন অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।

অফিসের সামনে এসে অভ্র আমাকে নামিয়ে গাড়ি পার্ক করতে গেলো। ঠিক তখন ই দুইটা মেয়ে আমার অপজিটে দাড়িয়ে আমকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলো।

–আমাদের স্যার তো কোনো মেয়ের দিকে চোখ ফিরে ও তাকাতো না হঠাৎ এই মেয়ের সাথে এতো মেশছে যে।

–অরু ম্যাম কী এসব দেখে না নাকি। কেউ স্যারের সাথে বেশি কথা বললে ও তো ঐ মেয়ের চাকরি নট করে দিতো, এখন কী এসব দেখে না নাকি।

–আরে কিছু মেয়ে আছে দেখবি গায়ে পড়ে থাকে সব সময় এই মেয়েটা ও এমন ই। ভালো মেয়ে হলে কী আর একটা ছেলের সাথে এভাবে দিন কাটায়। কে জানে রাত ও কাটায় নাকি। চরিত্র ঠিক আছে বলে তো মনে হয় না।

কথাগুলো শুনে আর সহ্য হলো না। সাথে সাথে গিয়ে মেয়েটাকে সজোরে কয়েকটঅ থাপ্পড় মারলাম।

অভ্র দূর থেকে দেখে দৌড়ে আসে।

–মিহি কী হয়েছে এমন করছো কেনো।

আমি আর কান্না আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। কান্না করতে করতে সবগুলো কথা অভ্রকে বললাম। কথাগুলো শোনার পর অভ্রের চোখগুলো লাল হয়ে গেছে।

সাথে সাথে অফিসের সব স্টাফ ডেকে এক সাথে করলো,

–সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছি। আপনারা আপনাদের লিমিট ক্রস করবেন না। আমার পাশে যাকে দেখছেন, মিহি উনি আমার বিবাহিতা স্ত্রী। আশা রাখি আজ থেকে কারো মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
এটুকু বলে ই অভ্র মিহিকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো।

_____________________________

বিয়ের আজ দুমাস পূর্ণ হলো,রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। অভ্রের বুকের উপর গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে মিহি। অভ্র মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে আর ভাবছে। এই দুমাস জীবনের সবচেয়ে ভালো কেটেছে সারাজীবন যদি এমন কাটতো। চোখ বন্ধ করে নিজে ও ঘুমানোর চেষ্টা করলো। হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে সামনে তাকাতে ই মা বলে জোরে ডাকে।
জোরে শব্দ শুনে মিহি জেগে যায়। চোখ মেলতে ই রেহনুমা আহমেদকে সামনে দেখতে পেলো।

চলবে,

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-২৯+৩০

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৯

আর কতোদিন এভাবে অভিমান করে থাকবে অভ্র। ভালোবাসা কেনো লুকিয়ে রাখছো। একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনীয় মনে করোনি আমি কেনো ঐদিন কেনো মিথ্যা বলেছিলাম। মনে মনে ভাবলাম যা ই হক আজ অভ্রের সাথে সকল মান অভিমান মিটিয়ে নিবো।

–অভ্র জানতে চাওনা আমি কেনে ঐদিন মিথ্যা বলেছিলাম?

–যে মিথ্যা বলে সে সব সময় ই মিথ্যা বলে বিনা কারণে।

–কিন্তু আমারটা কারণ ছিলো অভ্র।

— বানোয়াট কারণ শুনতে চাই না।

–আমি বলি তারপর যদি আপনার বানোয়াট মনে হয় তাহলে আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই।

–হুম।

–আচ্ছা আপনার কী একবার ও মনে হয়নি, মিনতি আপুর বৌভাতের দিন আমি হঠাৎ কেনো চেঞ্জ হয়ে গেলাম। হঠাৎ কেনো আপনার থেকে দূরে সরে আসার চেষ্টা করেছিলাম। আপনার একবার ও প্রশ্ন জাগেনি হঠাৎ আমি কেনো এমন করছি।

–আপনি ইচ্ছে করে আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, এসব প্রশ্ন কেনো জাগবে। তাও যখন আপনি নতুন করে নাটক সাজাতে চাচ্ছেন, সাজান। শুনি বলুন।

–সত্য কথাটা শুনতে তেতু হলে ও কিন্তু সত্য। ঐদিন আপনার মা আমাকে আপনার থেকে দূরে থাকতে বলেছে।এটাও ও বলেছে আপনার থেকে দূরে না সরলে আমার বোনের ডিভোর্স করে দিবে।

কথাটা বলার সাথে সাথে অভ্র সজোড়ে থাপ্পড় মারে। গালে হাত দিয়ে বেডে বসে পড়লাম দুচোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। কান্না করতে করতে বললাম।

–আরো একশত থাপ্পড় দিলে ও কি সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবে না।ইভেন কলেজে ঐদিন প্রিন্সিপালের সামনে ও আমাকে মিথ্যা বলতে বাধ্য করেছিলো আপনার মা।

–মিহি ভালোবাসি বলে যা নয় তাই কিন্তু বলতে পারো না।যেটা ইচ্ছা ঐটা দিয়ে নাটক সাজাও কিন্তু আমার মাকে এর মধ্যে টানবে না।

–আমার মা সব জানে এই ব্যাপারে। ঐদিন বিয়ের আসর থেকে রক্তিমকে পুলিশ এরেস্ট করার পর অন্য কাউকে কী মা বলতে পারতো না আমাকে বিয়ে করার কথা। ভেবে দেখুন তো আপনাকে ই কেনো বলেছে।

অভ্র আর কেনো কথা বললো না। ল্যাপটপটা একপ্রকার ছুড়ে মেরে রুম থেকে বের হয়ে যায়। অভ্রের অবিশ্বাস করাটা স্বাভাবিক কারণ অভ্রের সব বিশ্বাস আমি আরো কবছর আগে ই ভেঙ্গে দিয়েছি। যে বিশ্বাস একবার ভাঙ্গে তা কী আর জোরা লাগানো সম্ভব। কিছু ঘোলাটে মিথ্যের জন্য জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিলো। যদি সত্যি ভালোবাসো অভ্র তাহলে তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে।

বেশিক্ষণ পর,

অভ্র রুমে ডুকতে ই দেখে মিহি বেডের এক সাইডে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। কাছে গিয়ে বসে। বসতে ই মুখে দিকে চোখ পড়লো, ফর্সা গালে হাতের আঙুলে দাকটা স্পষ্ট হয়ে আছে। অভ্র কখনো ভাবেনি এভাবে মিহি গায়ে হাত তুলবে।

অভ্র আর বসে না থেকে একটা ওষুধের বাক্স নিয়ে আসে। সাইড টেবিলে বাক্সটা রেখে মিহি পাশে গিয়ে আবার বসে। মিহির মাথাটা কোলে নিয়ে ব্যাথা পাওয়ার স্থানে আলতো করে চুমু খায়। ঔষুধটা লাগাতে ই মিহি ঘুমের মধ্যে ই অভ্রের হাতটা টেনে জড়িয়ে ধরে।
অভ্র মুচকি হাসি দিয়ে মিহির দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।

_______________________________

মনে হচ্ছে হাত পা কেউ বেধে রেখেছে। দম আটকে আসছে এসব অস্থিরতা নিয়ে চোখ খুলতে ই দেখলাম অভ্র আামকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছি। আমি বিন্দু পরিমান নড়তে পারছি না। এখন আমার কী করা উচিত তা বুঝতেছি না।
কোনো উপায় না পেয়ে কোনো রকম অভ্রের কানের কাছে গিয়ে জোড়ে চিৎকার দিলাম।

–উফফ টিয়াপাখি প্লিজ এতো ডিস্টার্ব করো না।

হঠাৎ এতো পরিবর্তন আমাকে রীতিমত অবাকের চরম পর্যায় নিয়ে যাচ্ছে। এটা কী সত্যি ই আমার প্রতি ভালোবাসা নাকি অন্য কিছু। ঝড়ের আগে পরিবেশ শান্তি ই থাকে। আল্লাহ ই জানে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে।

–এভাবে ধরে আছেন কেনো।

–আমার বউকে আমি ধরেছি তোমার কী।

–আমাকে কপি করছেন।

–নাহ্

–আজকে কী অফিসে যাবেন না।

–তুমি জানো।

–আমি জানি মানে।

–কিছু না ঘুমাও তুমি।

–এই সরুন তো, উঠতে হবে।

বলে ই ধাক্কা দিয়ে উঠে বসলাম। একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পড়লাম। অলরেডি নয়টা বেজে বেজে গেছে হাতে টাইম নেই দ্রুত রেডি হতে হবে।

ওয়াশরুম থেকে বের হতে ই আমার চোখদুটো বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এটা কী অভ্র আমার জন্য নাস্তা নিয়ে রেডি। আমি বের হতে ই একটুকরো পরোটা মুখে পুরে দিলো।

–রেডি হও আস্তে আস্তে।

–কটা বাজে দেখেছেন আপনি।

–তোমার জামাই এর অফিস এতো তাড়া কিসের।

–সময়ের কাজ সময় মতো করতে শিখুন।

অভ্র আমার কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,

–পালাচ্ছো মনে হচ্ছে।

–ক..ক..কখন?

–পালাচ্ছো না তো?

–না।

–হে খালা আসছি।

–বোকা বানিয়ে লাভ নেই খালা ডাকেনি তোমাকে।

–প্লিজ রেডি হন, অফিসে যেতে লেট হবে অনেক। আপনি লেট করলে স্টাফরা ও লেট করবে।

অভ্র আমাকে ছেড়ে রেডি হয়ে নিলো। দুজন একসাথে বেড়িয়ে পড়লাম অফিসের উদ্দেশ্য।
হঠাৎ মনে একটা প্রশ্ন আসতে ই জিজ্ঞেস করলাম,

–এক সাথে যাচ্ছি, কেউ জিজ্ঞেস করলে কী বলবেন?

–বউকে কী একা ছেড়ে চলে আসবো নাকি।

–ওহ্ তাই নাকি, গতকাল একা ছেড়ে চলে আসছিলেন যখন।

–কালকে তো অভিমান ছিলো তাও তোমার জন্য রিক্সা ঠিক করে এসেছিলাম। না হয় তুমি কালকে রিক্সা ই পেতে না। তোমার দিকল সব থেকে বেশি খেয়াল আমার। শুধু একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো যার কারনে আমার দুজন ই কষ্ট পেয়েছি।

কথাটা শেষ করতে ই অফিসের সামনে এসে গাড়িটা থামলো, গাড়ি থেকে বের হয়ে দুজনে ই অফিসে ডুকলাম।
অভ্র কেবিনে ডুকে ই আমাকে ডাকলো।

–কী হলো, এসে ই ডাকছেন কেনো।

–এমনি ইচ্ছে হয়েছে, আমার বউকে আমি ডাকি এতে তোমার কী।

–আমাকে কপি করা বন্ধ করুন।
এটা বলে ই চলে যেতে লাগলাম।

–আরে যাচ্ছো, কোথায়।

–নিজের ডেস্কে যাচ্ছি।

–এখন থেকে আমার কেবিনে বসে কাজ করবে।

–আপনার কেবিনে বসে কাজ করলে সবাই কী ভাববে।

–সেটা তোমার না ভাবলে ও চলবে।

–কিন্তু

–আর একটা কথা ও শুনতে চাই না টিয়াপাখি।

কথাটা বলে ই একটা ফ্লাইং কিস দিলো।

আমি কেবিন থেকে বের হতে ই, অরু ম্যাম আমাকে একপ্রকার টেনেহিজরে নিজরে কেবিনে নিয়ে গেলো,

–বলেছিলাম বা তুই স্যারের সাথে এতো মিশবি না, দেখ এখন আমি তোর কি অবস্থা করি,

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩০

আমি কেবিন থেকে বের হতে ই, অরু ম্যাম আমাকে একপ্রকার টেনেহিজরে নিজরে কেবিনে নিয়ে গেলো,

–বলেছিলাম বা তুই স্যারের সাথে এতো মিশবি না, দেখ এখন আমি তোর কি অবস্থা করি,

আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে মুচকি হাসছি। হেসে হেসে জিজ্ঞেস করলাম,

–এই যে আপনার কেবিনে বসলাম। এখন কী করবেন করুন।

–এতো বেয়াদব মেয়ে আমার জীবনে কখনো দেখিনি।

–ওহ্ তাই, ভালো করে দেখে নিন।

–তোর লজ্জা করে না, সামান্য একটা স্টাফ হয়ে স্যারের দিকে হাত বাড়াস।

–হাত বাড়ায়নি শুধু, হাত দিয়ে স্যারকে ধরেছি ও।

এটা শুনার সাথে সাথে অরু ম্যাম কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। আমি বসে বসে হাসছি।

কিছুক্ষন পর,

ল্যান্ডফোনে কল আসলো, এক্ষুনি অভ্রের কেবিনে যাওয়ার জন। কেবিনে বিনা অনুমতিতে ই ডুকলাম। আমি ডুকার সাথে সাথে অরু ম্যাম বলতে শুরু করলো,

–দেখুন স্যার কতটো বেয়াদব আপনার রুমে অনুমতি পর্যন্ত নিয়ে আসে না এর পর ও কী এই মেয়েকে আপনি অফিসে রাখবে।

–কী বেয়াদব করেছে মিহি?

–আপনার সামনে ই তো করলো তা ও দেখলেন না।

–আমি বলেছি মিহি বিনা অনুমতিতে ই আমার কেবিনে ডুকার জন্য।

অরু মাথা নিচু করে বললো,

–সরি স্যার।

অভ্র এবার আমার দিকে তাকায়, তাকিয়ে ই ইশারায় চুমু দেখায়। আমাকে জিজ্ঞেস করে,

–তুমি নাকি বাজে ব্যবহার করেছো অরুর সাথে,

আমি হাসি আটকিয়ে রেখে উওর দিলাম

–আমি বাজে ব্যবহার করেছি এটা বলেছে কিন্তু কী বাজে ব্যবহার করলাম তা বলেনি?

অভ্র অরুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–এখন বলুন আপনার সাথে কী বাজে ব্যবহার করেছে।

অরু চুপ করে আছে কিছু বলছে না। অভ্র কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পর ও কোনো উওর না দেওয়াতে রেগে গিয়ে বললো,

–আর কখনো যদি মিহির নামে কোনো কমপ্লেন করতে আসেন। তাহলে আপনার জবটা থাকবে না। গেইট আউট।

আর একমুহূর্তে জন্য ও অরু দাড়ায়নি, হনহন করে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। অরু বের হতে ই অভ্র আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে কোলের উপর বসায়। একহাত দিয়ে কোমড় বরাবর জড়িয়ে ধরে , জিজ্ঞেস করে

–কী হয়েছে টিয়াপাখি।

–কিছু নাহ্।

–আবার কী লুকাচ্ছো।

–কিছু না বললাম তো।

–ছাড়ুন, আমার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো এই কেবিনে নিয়ে আসি।

–উঁহু তোমার আনতে হবে না আমি কউকে দিয়ে আনিয়ে নিবো।

–কেউ চলে আসবে।

–আসুক। তোমার এতো ভয় কিসের।

হঠাৎ অভ্রের ফোন আসায় অভ্র কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো এই সুযোগ চলে আসলাম।

অফিস শেষে, দুজন ই বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়তে ই অভ্রকে বললাম,

–এই শুনছেন

–বলো।

–চলেন না মায়ের বাসায় যাই।

কিছুক্ষ ভেবে বললো,

–যেতে পারি কিন্তু একটা শর্তে।

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

— কী শর্ত।

–আমাকে তুমি করে বলতে হবে।

–আপনি ডাকটা ই অনেক সুন্দর।

–তাহলে যাবো না।

–প্লিজ অভ্র।

–তাহলে বলো, তুমি আমাকে নিয়ে যাও।

–আপনি আমাকে নিয়ে যান।

–যাবো নাহ

–আচ্ছা তুমি আমাকে নিয়ে যাও। এবার খুশি তো।

–হুম, লাভ ইউ মাই টিয়াপাখি। যাও রেডি হয়ে নেও। এখন থেকে আপনি করে বললে তোমাকে কিন্তু নিয়ে যাবো না।

আমি মুখটা বাকিয়ে রেডি হতে চলে গেলাম।

রেডি হয়ে আসতে ই দেখি অভ্র হোয়াইট কালার একটা পাঞ্জাবি পড়েছে। আমি মেরুন কালারের একটা শাড়ি পড়েছি। অভ্র আয়নায় আমাকে দেখে বললো,

–তুমি ও হোয়াইট কালারের শাড়ি পড়তে পারতা বউ। তাহলে দুজন ড্রেস ই ম্যাচিং হয়ে যেতো।

–অন্য একদিন দুজন ম্যাচিং করে ড্রেস পড়বো। আজকে না এখন চলেন।

–তুমি করে না বললে যাবো না।

রাগ নিয়ে বললাম,

–আচ্ছা তুমি।

–ওয়েট করো একটু।

–তুমি তো মেয়ে মানুষ থেকে ও বেশি টাইম নিও দেখছি রেডি হতে।

— প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি একটু তো টাইম নিবো ই।

–আগে কখনো যাওনি মনে হচ্ছে।

–গিয়েছিলাম বাট মেয়ের জামাই হয়ে তো এই প্রথমবার যাচ্ছি।

আমি আর কিছু বললাম না চুপচাপ সোফায় বসে বসে অভ্রের কান্ড দেখছি।

–চলো রেডি হওয়া শেষ।

কথাটা বলতে ই আমি উঠে দাড়ালাম। আচমকা আমাকে কোলে তুলে নিলো।

–আরে আজব তো কী করছো

–হাটতে হবে না, শাড়িতে পা আটকে পড়ে যাবা।

–কী সব বলো হে, আমি কী বাচ্চা নাকি যে শাড়িতে পা লাগলে পড়ে যাবো। আমি কী আর কখনো শাড়ি পড়িনি নাকি।

–আগে কী করেছো জানি না, আমার ইচ্ছে হয়েছে কোলে করে গাড়ি অব্দি নিবো, সো এটা ই ফাইনাল তুমি আমার কোলে উঠে ই গাড়িতে বসছো।

–আরে কী করছো বলো তো, নিচে কাজের লোক আছে।ওরা দেখলে কী মনে করবে।

–আমি কী অন্যের বউ কোলে নিয়েছি নাকি নিজের বউ কোলে নিয়েছি, দেখলে দেখুক।

–তুমি একটা নির্লজ্জ কিন্তু আমি তো না।

–এই জন্য তোমাকে ও নির্লজ্জ বাননোর মিশনে নেমেছি।

আমার সাথে কথা বলতে বলতে গাড়ির সামনে চলে এলো। কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে গাড়িতে বসতে বললো।
আমি মুচকি হেসে গাড়িতে বসলাম। ড্রাইভ করছে আর আমার সাথে গল্প করছে।

আমাদের বাসার সামনে যেয়ে গাড়ির হর্ন দিতে ই মা দৌড়ে আসে। আমাকে জড়িয়ে ধরে কতোক্ষন কান্না করে। আমার পিচ্চি কাজিনগুলো বরন ঢালা সাজিয়ে নিয়ে আসে। বরন করা শেষে রুমে ডুকলাম। সবার সাথে কৌশল বিনিময় করে নিজের রুমে ডুকলাম। কজিনগুলো খুব সুন্দর করে রুমটা সাজিয়েছে। আমাকে ডুকতে দিয়ে অভ্রকে আটকে রেখেছে টাকা নেওয়ার জন্য।

–ভাইয়া টাকা দেন না হয় রুমে ডুকতে দিবো না, খুব কষ্ট করে ফুল এনে রুম সাজিয়েছি।

–আমার বউ আগে আমার বুকে ফিরিয়ে দেও তারপর টাকা খুজবা।

–আপনি আগে আমাদেরকে টাকা দেন, আপনার বউ ও আপনাকে দিয়ে দিবো।

–তোমরা তো কিডন্যাপার, আমার বউ নিয়ে বিনিময়ে টাকা খুজছো।

ওদেরকে কথা দিয়ে ভুলিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে অভ্র রুমে ডুকে, ফুলদিয়ে সাজানো বেডের উপর শুয়ে পড়লো।

–এটা কী করলা?

আমি কথাটা বলতে ই আমাকে টান দিয়ে অভ্রের উপরে ফেলে দেয়।

আমার কাজিনগুলো এই দৃশ্য দেখে দৌড়ে পালায়।

চলবে,

তোমাতে আসক্ত ২ পর্ব-২৭+২৮

0

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৭

অভ্র কোলবালিশ মাঝখান থেকে ফেলে দিয়ে মিহি কাছে গিয়ে বললো,

–কী করবা সীমান্ত প্রাচীর টপকালে।

–এমা এই কী। কী রুপ নিয়েছে শীতকালে গ্রীষ্মের ছোয়া।

কথাটা বলে ই মিহি চোখ বন্ধ করে দেয়।

–এই এখন চোখ বন্ধ করলা কেনো।

মিহি মিটমিট করে তাকিয়ে বললো,

–আমার চোখ আমি বন্ধ করছি আপনার কী।

–ঘাড়ত্যাড়া মাইয়া।

কথাটা বলে ই অভ্র কোলবালিশটা তুলে আবার মাঝখানে রাখলো।

মিহি শুয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লো দুইদিন ভালো করে ঘুৃমাতে পারেনি তাই হয়তো বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারলো না।

সকাল বেলা,

মিহি ঘুম থেকে উঠে অভ্রকে পাশে পেলো না। মিহি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে যেতে ই দেখলো অভ্র সোফায় বসে লেপটপ নিয়ে কাজ করছে।

মিহি অভ্রের পাশে গিয়ে বসলো এতে অভ্রের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তাই মিহি হালকা করে হাতে হাত লাগিয়ে ধাক্কা দেয়।
মিহি ধাক্কা দেওয়াতে অভ্র দূরে সরে বসে। মিহি আবার গিয়ে অভ্রের পাশে বসে।আবার ধাক্কা দিতে ই অভ্র রাগি চোখ নিয়ে মিহির দিকে তাকায়।

–সমস্যা কী আপনার?

–এমা এ কী হলো রাতে না তুমি করে বললেন। এখন আবার আপনি।

–ভুল হয়ে গেছে মাফ করবেন। এখন কাজ করতে দিন।

–এতো সুন্দর একটা বউ পাশে রেখে আবার আপনার কাজ করতে ইচ্ছে করে নাকি।

–কে সুন্দর আপনি!

মিহি কপালে ভাজ ফেলে উওর দিলো,

–কোনো সন্দেহ আছে।

–পুরো টা ই সন্দেহ। কী আমার চেহেরা বিড়াল দেয় পাহাড়া।

–কী বললেন এটা?

অভ্র বিনাবাক্য নিজের রুমে চলে গেলো।

–যা বললেন মনে রাখবেন এই কথাটা সুদ তুলবো একদিন না একদিন।

আমি উঠে কিচেনে যেতে ই দেখে চম্পা পরোটা বানাচ্ছে।

–খালা আপনি সরুন আমি পরোটা করে দিচ্ছি।

–এটা ই শেষ আর করতে হবে না। আর তুমি কিচেনে আসছো কেনো।

— এটা ই শেষ মানে, এই দুইটা পরোটা দিয়ে কী হবে আমি খাবো কী।

–তুমি জানো না, ছোট সাহেব তো নাস্তা করে চলে গেছে। তুমি ও নাস্তা করে নেও।

খুব ক্ষুধা পেয়েছে রাতে ও কিছু খাইনি। গত কালকে সকালে খেয়েছিলাম তাও অল্প। তাই আর কিছু না ভেবে নাস্তা করতে বসে পড়লাম।

নাস্তা শেষ করে উপরে যেতে ই দেখলাম অভ্র রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য।

–আমার চাকুরীটা কী আছে নাকি গেছে।

–যাবে মানে, কাজ না করে খালি বসে বসে খাওয়ার ধান্দা। ঠিক টাইমে অফিসে না গেলে, প্রতিদিনের জন্য একশত টাকা করে কাটবো।

–ধান্দা মানে কী,আমি অফিসে যাবো তো। ওয়েট করেন আমি রেডি হয়ে আসছি।

–এই যে কান খুলে শুনে রাখুন। অফিস এর কেউ যে বিয়ের ব্যাপারে না জানে।

আমি নিঃশব্দে মাথা নাড়ালাম।

মিনতির রুমে গিয়ে একটা শাড়ি বের করে পড়ে পড়ে নিলাম। অভ্রের রুমে আসতে ই দেখলাম অভ্র নাই। পার্সটা নিয়ে দ্রত নিচে গেলাম দেখাল নিচে ও গাড়ি নেই। তার মানে আমাকে না নিয়ে চলে গেছে।টাকা ও তো দিয়ে যায় নাই এখন কীভাবে অফিসে যাবো।

কিছুক্ষন গেইটের সামনে দাড়িয়ে থাকলাম হঠাৎ একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লাম। নিজের ফোন বের করে অভ্রকে মেসেজ করলাম” এক্ষুনি অফিসের গেইটের সামনে দাড়ান আমি রিক্সাতে আছি ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়ে যাবেন নয়তো অফিসের সবাইকে বলে দিবো আপনার আর আমার বিয়ের কথা।” এটা বলে ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিলাম।

অফিসের সামনে নামতে ই দারোয়ান এসে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে গেলো। আমি মিটমিট করে হাসতে হাসতে অফিসে ডুকলাম। ডুকে ই নিজের ডেস্কে বসে কাজ করতে লাগলাম।

দুপুরে ব্রেক দেওয়ার সাথে সাথে আমি অভ্রের কেবিনে চলে গেলাম। কেবিনে ডুকে ই দরজা বন্ধ করে দিলাম,

–এই কী হলো আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেনো।

–আমার হাসবেন্ড এর কাছে এসে দরজা বন্ধ করবে কী না এটা আপনাকে জিজ্ঞেস করবো।

–এটা অফিস মনে রাখবেন।

–ক্ষুধা লাগছে যদি খাইয়ে দেন ভালো আর যদি না খাইয়ে দেন তাহলে সবাইকে ডেকে বলবো যে আমর শুভ কাজটা সেরে ফেলেছি।

–থ্রেট করছেন।

–নাহ ভালোবাসা আদায় করার একটা ছোট্ট চেষ্টা মাত্র।

–এতো ভালোবাসা আগে কোথায় ছিলো।

–কষ্ট না করলে যেমন মানুষ সুখের মর্ম বুঝে না ঠিক আপনার শূন্যতা ছাড়া আমি আপনার ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারিনি।

–সময় থাকতে সময়ের মর্যাদা দিতে শিখুন।

–আপনি থাকতে আপনার মর্যাদা দিতে পারিনি তাই তো এখন কষ্ট পেতে হচ্ছে।

–এসব কথা না বলাটা ই শ্রেয়।

–হে ঠিক বলেছেন খাবার অর্ডার করুন।

–আমি আপনাকে খাইয়ে দিতে পারবো না।

–তাহলে আমি বলি আসি আমাদের গতকাল বিয়ে হয়েছে।

বলে ই আমি দরজা খুলতে যাবো ঠিক তখন ই পিছু ডাকলো,

–এই দাড়ান, আল্লাহ যে আমাকে কী বিপদে ফেলেছি।

–বসুন এখানে আমি খাবার অর্ডার করছি।

এর মধ্যে অরু ম্যাম কেবিনে ডুকলো,আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

–কী ব্যাপার তুমি এখানে,

–কেনো থাকতে পারি না নাকি।

–না তোমাকে তো স্যারের কেবিনে কম দেখি।

–এমনি স্যার ডেকেছে তাই এসেছি।

অরু ম্যাম আমাকে আর কিনা বললো না অভ্রের সাথে কথা বলে আড়চোখে আর দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। অরু ম্যাম চলে যেতে ই খাবার চলে আসে। কেবিনটা অনেকটা বড়, কর্নারে একটা টেবিল রাখা আছে। ছেলেটা খাবারটা দুটো প্লেটে সার্ভ করে চলে গেলো, অভ্র এসে চেয়ার টেনে আমার পাশে বসে।
খাবারের একটা প্লেট নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিতে থাকে। খুব বিরক্তি নিয়ে ই খাওয়াতে থাকে। তাও এই বিরক্তি মাঝে ও আমি ভালোবাসা খুজে পাই,

হঠাৎ একটা টেক্সট আসলো।

অভ্র ফোনের লক খুলে মেসেজ অপশনে গিয়ে টেক্সট টা দেখে ফোনটা টেবিলে উপর থাকতে ই আমি ফোন নিয়ে নেই।

ফোন নিতে ই দেখলাম, আমার আর অভ্রের একটা পিক ফোনের ওয়ালপেপারে দেওয়া।সেই অভ্রের বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছি। ল্যাম্পপোস্টোর আলোতে আমার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এটা দেখে চোখের পানি আটকে রাখা সম্ভব হয়নি।

অভ্রের দিকে তাকতে ই দেখলাম অন্য দিকে ফিরে আছে। উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।আমার কেনো জানি কান্না পাচ্ছে আটকে রাখতে পারলে না। জোরে কেদে উঠলাম। অভ্র একহাত আমার পিটে ছুয়াতেই যেনো আরো জোরে কান্না পাচ্ছে। অভ্র ও মনে হচ্ছে কান্না করছে। অভ্রের পানিগুলো আমার পিঠে পড়ছে।
এ অবস্থা ই জিজ্ঞেস করলাম,

–ভালোবাসেন তো কষ্ট কেনো দিন।

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত ২
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৮

অভ্রের দিকে তাকতে ই দেখলাম অন্য দিকে ফিরে আছে। উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।আমার কেনো জানি কান্না পাচ্ছে আটকে রাখতে পারলে না। জোরে কেদে উঠলাম। অভ্র একহাত আমার পিটে ছুয়াতেই যেনো আরো জোরে কান্না পাচ্ছে। অভ্র ও মনে হচ্ছে কান্না করছে। অভ্রের পানিগুলো আমার পিঠে পড়ছে।
এ অবস্থা ই জিজ্ঞেস করলাম,

–ভালোবাসেন তো কষ্ট কেনো দিন।

এটা বলতে ই অভ্র আমাকে ছেড়ে উঠে চলে গেলো।যাওয়ার সময় বলে গেলো,

–আমি কাউকে ভালোবাসি না।

আমি ও প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলাম

–তাহলে কান্না করলে কেনো?

উওরের আশা করলে ও অভ্র কোনো উওর না দিয়ে ই কেবিন ত্যাগ করে।
আমি চোখ মুছে টেবিলের খাবারগুলো সাইটে করে করতে লাগলাম।

হঠাৎ কেবিনে অরু ম্যাম ডুকলো। ডুকে ই আমাকে প্রশ্ন করলো,

–স্যারকে তুমি কী বলেছো এভাবে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো যে।

–ঐটা স্যরকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন ম্যাম।

–বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলছো না মিহি।

–তো সাহস দেখালে কী করবেন।

–তোমার চাকুরীটা আমি কেড়ে নিতে পারি তুমি মনে হয় জানো।

আমি মুচকি হাসি দিয়ে কেবিন থেকে চলে আসলাম। নিজের ডেস্ক বসে ইচ্ছে মতো হাসতে লাগলাম। আমার জবটা নাকি কেড়ে নিবে। যা ই হক অরু ম্যাম এমন করছে কেনো তা তো আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

অফিস শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমি গিয়ে অভ্রের গাড়ির সামনে দাড়িয়ে পড়লাম।অভ্র আমাকে দেখে ই জিজ্ঞেস করলো,

–কী হলো আপনি এখানে।

–সকালে আমাকে লেট হয়েছে বলে নিয়ে আসেননি। তাই এখন আমি আপনার আগে চলে আসলাম।এখন আমাকে গাড়ি ভেতরে না নিয়ে গেলে, গাড়ির ছাদে বসে হলে ও আমি যাবো।

অভ্র আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে গাড়িতে বসলো। সাথে দরজা খুলে দিতে আমি ও গিয়ে বসলাম।

বিকেলে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলাম। অভ্র আমাকে ড্রপ করে কোথাও একটা গিয়েছে।
রুমে এসে ই ফোন হাতে নিলাম। কালকে থেকে মা অনেকবার কল করেছে কিন্তু আমি ধরতে পারিনি।

–আসসালামু আলাইকুম মা।

–কেমন আছিস মা।এতোগুলো কল দিলাম কোথায় ছিলি ধরলি না যে।

–ফোন সাইলেন্ট ছিলো মা দেখেনি।

–অভ্রবাবা কেমন আছে।

–হে মা ভালো।

–নিয়ম তো বিয়ের দ্বিতীয় দিন বাবার বাসায় আসতে হয় তোর কী আসবি না।

একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বললাম,

–যেভাবে বিয়ে হয়েছে কোনো নিয়ম ই তো মানা হয়নি এই নিয়মটা ও মানা হবে না মা।

–এভাবে বলিস না মা সব ঠিক হয়ে যাবে।

–হুম, শুনো মিনতি আপু কল দিয়েছিলো?

–না এখনো কল দেয়নি।

–কল দিলে আমার আর অভ্রের বিয়ের কথাটা বলবা না। দেখা যাবে এই মেয়ে আমাদের বিয়ের কথাটা শুনলে আবার প্যাচ লাগানোর চেষ্টা করবে।

অভ্রের রুমে আাসার শব্দে আমি ফোন কেটে অভ্রের দিক তাকাতে ই দেখলাম হাতে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ।

–এভাবে ড্যাবড্যাব করে না তাকিয়ে কান খুলে শুনে রাখুন, কাল থেকে আর মানুষের শাড়ি পড়ে যেনো অফিসে না যাওয়া হয়।

–ভাব্বাহ এতো খেয়াল বউ এর প্রতি।

–সব সময় বেশি বকে।

শপিং ব্যাগগুলো বিছানার উপর রেখে বিনা শব্দে ওয়াশরুম ডুকে যায়।
আমি শপিং ব্যাগগুলো আলমারি রেখে বসে বসে ফোন টিপতেছি।

কিছুক্ষণ পর,
অভ্র ওয়াশরুম থেকে টাওয়াল পড়ে বের হয়। এটা দেখি আমি আমি জোড়ে চিৎকার করে বললাম,

–আপনি এভাবে রুমে ডুলেন কেনো।

–আজব তো কেনো কী হইছো?

–জানেন না একটা মেয়ে রুমে বসে আছে, আপনার এভাবে আসাটা ঠিক হয়নি।

–এমন করছেন, যেনো আমি কাপড় ই পড়ি নাই। আমার রুমে আমি কিভাবে ডুকবো এখন এটা আপনার কাছ থেকে জানতে হবে।

আলমারি সামনে গিয়ে ই আমার দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে বললো,

–ওহ্ পুরো আলমারিটা ই দখল করে রেখেছেন।আমার কাপড় না রাখলে ই সুন্দর হতো।

–তাহলে আমার কাপড়গুলো রাখবো কোথায়।

–জাহান্নামে রাখেন ঐটা আমার দেখার ব্যাপার নাহ।ড্রেসগুলো যে এনে দিয়েছি এটা ই অনেক।

–আমি কান্না করেছি নাকি ড্রেস এর জন্য।

–ঘাড়ত্যাড়া মাইয়া।

কথাটা বলে ই লেপটপ নিয়ে বসে পড়লো কাজ করার জন্য। আমি সোফার বসে বসে আগের ন্যায় ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
বেশকিছু পর মনে হলো অভ্র তো দুপুরে খাবার খায়নি।বাহিরে খেয়েছে বলে ও মনে হয় না।তাই নিচে গেলাম খাবার আনতে।

চম্পা আমাকে দেখে দৌড়ে আসে।

–কী হয়েছে, কোনো কাজ করা লাগবো আমাকে ডাকতে পারতা।

–না খালা খাবারটা নিয়ে যেতে এসেছি।

–কার খাবার? ছোট সাহেবর নাকি।

–হে।

–ছোট সাহেবের খাবার তো আমি ঐ যে প্লেটে বেড়ে রেখেছি, নিয়ে যাও তুমি।

আমি মুখে হাসি টেনে খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে উপরে চলে আসলাম।
দরজা খুলার শব্দই অভ্র আমার দিকে তাকায়,

–খাবার খেয়ে নিন।

–খাবো না।

আমি সামনে গিয়ে লেপটপটা নিয়ে আসলাম। ল্যাপটপটা নিয়ে এসে সোফায় রাখলাম।

অভ্র আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

–আমার ল্যাপটপ আনলেন কেনো।

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,

–ইচ্ছে হয়েছে তাই।

–ল্যাপটপ দেন।

–না দিবো না। খাবার খেয়ে নিন দিবো।

অভ্র আমার হাত থেকে ল্যাপটপটা জোর করে নিয়ে গেলো। এভাবার আমি আর দাড়িয়ে না থাকে খাবার প্লেটটা হাতে নিলাম, খাবার অভ্রের মুখের সামনে ধরতে ই অভ্র আবার বললো,

–খাবো না।

–খাবার না খেলে কিন্তু চুমু খেতে হবে?

–কী নির্লজ্জ মেয়েরে।

–এটা বলেন, কী নির্লজ্জ বউরে।

বলেই অভ্রের মুখে খাবার তুলে দিলাম। অভ্র আর না করলো না।অভ্র খাচ্ছে আর ল্যাপটপ এ কাজ করছে। আমি অভ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।

আর কতোদিন এভাবে অভিমান করে থাকবে অভ্র। ভালোবাসা কেনো লুকিয়ে রাখছো। একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনীয় মনে করোনি আমি কেনো ঐদিন কেনো মিথ্যা বলেছিলাম। মনে মনে ভাবলাম যা ই হক আজ অভ্রের সাথে সকল মান অভিমান মিটিয়ে নিবো।

–অভ্র জানতে চাওনা আমি কেনে ঐদিন মিথ্যা বলেছিলাম?

চলবে,