Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1465



ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-২২+২৩

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২২

অনেকদিন পর আজ স্কুলে যাব,তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে একদম রেডি হয়েই নিচে নামলাম।বাবা আর আপু ডাইনিং টেবিলে বসে আছে,মা খাবার বেড়ে দিচ্ছে।আমি হাসিমুখে বাবার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ি,বাবা আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে বসে রয়েছে।বাবা গতকাল আপুদের বিয়েটা মেনে নিলেও আমার উপর অভিমান করে আছে।তাই বাবা কাল থেকে একটা কথাও বলে নি আমার সাথে।আমি এবার মুখটা ছোট করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াই।তখন আপু বলে উঠে,,,

“এই কই যাস তুই না খেয়ে?খেয়ে যা।”

“আপু আমি খাব না,স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম।”

“হেনা তোমার মেয়েকে বলে দাও না খেয়ে স্কুলে যাওয়া যাবে না।”

বাবার কথাশুনে আমার খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু আপাতত হাসি কন্ট্রোল করে বাবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মাকে বললাম।

“মা বলে দাও,তোমার মেয়েকে কেউ খাইয়ে দিলে খাবে,নয়ত না খেয়ে চলে যাবে।”

“আল্লাহ তায়া’লা আমাদের দুটো হাত দিয়েছে কাজে লাগানোর জন্য,তাই হাতদুটো কাজে লাগাতে শেখাও তোমার মেয়েকে।”

“হাতদুটো আপাতত পকেটে আছে তাই কাজে লাগাতে পারছি না,ত মা বলে দাও খাইয়ে দিতে নয়ত খাব না।”

এবার মা আমার কান টেনে ধরে বলে উঠে,,,

“দুই বাপ,বেটি মিলে কী শুরু করেছিস হুম!দুজন সামনা সামনি রয়েছিস তারপরও আমার মাধ্যমে কথা চালান করছিস কেন?”

“মা লাগছে ছাড়ো ত,আর আমার কী দোষ বলো ত সব ত আমার হিটলার বাবার,,,

বাকিটা না বলে জিভ কামড়ে ধরি,আর ভয়ে ভয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি সেটা দেখে বোকার মত হাসার চেষ্টা করি।আর মার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দেই এক দৌড়,আর এক দৌড়ে একদম গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম।বাপরে আজ জোড় বাঁচা বেঁচে গেছি,কার সামনে কী বলে ফেললাম উফফ!সাবিহা তুই দিনদিন বাচাঁল হয়ে যাচ্ছিস নিজেকে সামলা সাবিহা।নয়ত কবে যেন এত কথা বলার জন্য মাইর খাস।নিজের মনে এসব বকবক করে চললাম স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্য।

____________________________________

হঠাৎ করেই গাড়িটা থেমে যায় মাঝ রাস্তায়,আমি সেটা দেখে ড্রাইভার চাচাকে জিজ্ঞেস করি।

“গাড়ি থামালেন কেন চাচা?”

“সামনে ত সাদাফ স্যার দাঁড়ায়ে আছে গাড়ি লইয়া,এমন ভাবে রাখছে কোনদিকেই যাইতে পারমু না।”

আমি চাচার কথাশুনে উঁকি দিয়ে দেখি সাদাফ ভাই ফোন হাতে নিয়ে ড্রাইভিং সিটে দরজা খুলে বসে আছে।এক পা নিচে আরেক পা গাড়িতে দিয়ে,
ভাবখানা এমন যেন কোন সিনেমার হিরো।উনার পাশেই নিলয় ভাইয়া বসে আছে,সাদাফ ভাইয়ের দৃষ্টি আমার গাড়িতেই আবদ্ধ।উনি এবার গাড়ি থেকে নেমে আমার দিকে এগিয়ে আসে।কিন্তু উনার সাথে এখন কথা বলতে চাইছি না আমি।এখন কথা বললেই ঝামেলা হবে,গতকালকের ঘটনা এখনও ভুলি নি আমি।রাগটা আগের মতই আছে,এখন আসছে হয়ত রাগ ভাঙ্গাতে কিন্তু সেটা ত হতে দেয়া যায় না।কয়দিন শাস্তি পাক কালকের ঘটনার জন্য।তাই ড্রাইভার চাচাকে বললাম গাড়ি পিছনে নিয়ে অন্য রাস্তায় যেতে।আমার কথামত চাচা গাড়ি স্টার্ট দেয় আর পিছনে ঘুরাতে নিলেই সামনে এসে দাঁড়ায় সাদাফ ভাই।আমার সেটা দেখে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে,কিন্তু তারপরও রাগটা কন্ট্রোল করে গাড়ি থেকে নেমে উনার সামনে দাঁড়ালাম।আর হাত গুজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,,,

“কী চাই?গাড়ি থামানোর কী মানে?”

“তোমাকে চাই।”

“রাস্তাঘাটে রোমিওগিরি কম কইরেন,নয়ত পাবলিক দিয়ে মাইর খাওয়াতে আমার বেশি সময় লাগবে না।”

“মাইর খেতেও রাজি আছি,কিন্তু তোমার এইরকম অবহেলা মানতে পারছি না।কাল থেকে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছি কলই ধরছো না।তোমার বাড়িতে গেলাম দেখাও করলা না,দরজা বন্ধ করে বসে ছিলা।এসবে খুব পুড়ছি আমি,কালকের পুরো ঘটনাটা ত আমাকে বলতে দাও।আমার কথা না শুনেই এভাবে শাস্তি দিচ্ছো আমাকে।”

“এক্সকিউজ মি!আপনাকে আমি কী অবিশ্বাস করেছি?”

“না সেটা করো নি,কিন্তু,,,

” যতটুকু জিজ্ঞেস করছি ততটুকু বলবেন এর বেশি কথা বলবেন না।আমি আপনাকে অবিশ্বাস করি নি আমি জাস্ট আপনার ভুলটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি।আপনাকে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে ছিল আপনি তাকে সাথে সাথে সরিয়ে না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন।আমাকে দেখার পর সরিয়েছেন,এই কাজটা কী আপনার আগে করা উচিত ছিল না?আবার আপনারই সামনে একটা মেয়ে আমার মৃত্যু কামনা করছিল আর আপনি তাকে কিছুই বললেন না।তার জন্য কী আমার রাগ করা জায়েজ নয়?”

“সাবিহা আমি,,,

” চুপ একদম চুপ,কোন কথা নয়।পথ ছাড়ুন আমার লেট হচ্ছে।”

“না আগে তুমি আমার কথা শুনবে তারপর যাবে।”

“আপনার কথাতে চলবে নাকি?”

“দরকার পড়লে আমার কথাতেই চলবে,কারন সে অধিকার আমার আছে।”

“আপনার সাথে কথা বলে লাভ নেই,আপনি কথা শোনার মানুষ নন।”

কথাটা বলেই গাড়িতে উঠে বসলাম,আর চাচাকে ড্রাইভ করতে বললে উনিও তাই করে কিন্তু গাড়ি চলছে না।সেটা দেখে সাদাফ ভাই হাসতে হাসতে বলে উঠে,,,

“গাড়ি কী চাকা ছাড়া চলবে নাকি!আর চাকা কী হাওয়া ছাড়া চলে নাকি!”

কথাটা বলেই উনি আবারও হাসিতে মেতে উঠে।আমি আবারও গাড়ি থেকে নেমে চাকা চেক করে দেখি উনার কথাই সত্যি।আর কাজটা যে উনিই করেছে সেটা বুঝতেও বাকি নেই আমার।অসম্ভব রকম রাগ লাগছে,তাই রেগে উনার কলার টেনে ধরে বলে উঠলাম।

“এটা কী করলেন?এসব করে কী প্রমান করতে চাইছেন আপনি?”

“তোমার সাথে কথা বলতে চাইছি,সেদিনের ঘটা সবটা তোমাকে বলতে চাইছি।”

“আমি শুনতে চাই না,তাই ভালোয় ভালোয় পথ ছাড়ুন।”

উনি একটু সাইড হয়ে বলে উঠে,,,

“তোমাকে ত শুনতে হবেই আর তুমি কই যাবে যাও কে আটকে রেখেছে!আমি ত আটকাই নি।”

উনার কথাশুনে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।তাই উনাকে আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে ব্যাগটা নিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছি।আর সাদাফ ভাইয়ের গুষ্টি উদ্ধার করছি বকে।কিন্তু বেশিক্ষণ বকতে পারলাম না পাশ থেকে কেউ বলে উঠে।

“আমার বউটা রূপে রূপবতী,আর রাগে লঙ্কাবতি।কিন্তু যেমনই হোক আমারই ত বউ তাই না।আমার লক্ষী বউটা,রাগটা একটু কমাও না।”

আমি সামনের থেকে চোখ সরিয়ে উনার দিকে একপলক তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠি,,,

“চোখটা একটু বন্ধ করুন।”

উনি অবাক হয়ে বলে উঠে,,,

“কেনো?কেনো?কেনো?”

“আগে করুন না তারপর দেখতেই পাবেন।”

“ঠিক আছে করছি কিন্তু কোন দুষ্টুমি করা যাবে না।”

কথাটা বলেই উনি চোখ বন্ধ করে ফেলেন,আর আমি সেই সুযোগে দেই এক দৌড়।আর একটা চলন্ত বাসে উঠে পড়ি,বাসে উঠেই হাসিতে মেতে উঠি আমি।কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হলো আমি হাওয়ায় ভাসছি,পড়ে যাব এখনি।তাই চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেলি,তখন কেউ বলে উঠে।

“মিসেস সাদাফ কী ভেবেছেন আমাকে বোকা বানিয়ে এভাবে পালিয়ে যাবেন হুম?কিন্তু সেটা ত হবার নয়,যতদিন আমি আছি ততদিন আমার থেকে পালাতে পারবে না।তাই পালানোর চেষ্টা করেও লাভ নেই।”

সাদাফ ভাইয়ের গলা শুনে আমি চোখ খুলে দেখি উনি আমাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর বাসের সবাই আমাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু উনাকে দেখো কেমন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।যেনো আশেপাশের লোকজনের তাকানোতে উনার কিছুই যায় আসে না।আমি এবার আস্তে করে বলে উঠি,,,

“নামান আমাকে,সবাই দেখছে।”

“উুহু নামাবো না,যে দেখার দেখুক তাতে আমার কী?আমি ত অন্য কোন মেয়েকে কোলে নেই নি,আমার একমাত্র বউকে কোলে নিয়েছি।”

“প্লিজ এমন করবেন না,নামান আমাকে।আমার লজ্জা করছে।”

“ইসসস্ লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেছে গো,ইচ্ছে করছে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দিতে।”

আমি উনার কথা শুনে চমকে তাকাই উনার দিকে,আর উনি চোখ টিপ মারে।উনার লক্ষ্মণ আমার ভালো লাগছে না।

“প্লিজ এমন করবেন না,এটা পাবলিক প্লেস।ছোট বড় অনেকে আছে এভাবে থাকাটা মোটেও শোভনীয় লাগছে না,নামান আমাকে।”

উনি একটু ভেবে ফট করে বলে উঠে,,,

“ওকে ছাড়ব কিন্তু আমি ত কোন কাজ এমনি এমনি,,,

” এমনি এমনি করেন না আর আপনার একটা শর্ত আছে তাই ত!মেনে নিলাম যা বলবেন সেটাই করব কিন্তু এখন নামান আমাকে।”

“ভেবে বলছো ত?”

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠি,,,

“হ রে ভাই ভেবেই বলছি,এবার নামা আমারে।”

উনি আমার কথা শুনে বাঁকা হেঁসে কোল থেকে নামায়,আমি আর কোন দিকে না তাকিয়ে বাস থামাতে বলে তাড়াতাড়ি নেমে যাই।আমার পিছন পিছন উনিও নেমে যায়,আর আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে লজ্জা পাওয়ার মত ভাব নিয়ে বলে উঠে,,,

“বউ ও বউ,,,আমার না প্রেম প্রেম পাচ্ছে।”

উনার কথাশুনে আমি ধামধুম কয়টা কিল বসিয়ে দেই উনার পিঠে।আর উনি খিলখিলিয়ে হেঁসে চলেছে।শালা বজ্জাত কাজটা করল কী আজ!এতগুলো মানুষের সামনে,ছিঃ ছিঃ ছিঃ।

______________________________________

দেয়ালের সাথে দুই হাত চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে কাব্য ভাই আমাকে।উনি আমাকে বারবার বলে চলেছে আমার সাথে কথা বলতে চায় উনি।কিন্তু আমি সে কথা না নিয়ে প্রতিনিয়ত ছোটার চেষ্টা করে চলেছি উনার থেকে কিন্তু উনি ছাড়ছে না।

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৩

“আরে এভাবে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,ছাড়ুন আমাকে।”

সাদাফ ভাই আমার হাত ধরে টেনে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আমি আমার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছি কিন্তু উনি ছাড়ছেও না কিছু বলছেও না।কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে।রেস্টুরেন্টে এসে দেখি নিলয় ভাইয়া বসে আছে,আমি ভ্রু কুঁচকে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই।সেটা দেখে সাদাফ ভাই ইশারায় বলে বসো,আমিও বসে পড়ি।আমি এবার ভদ্রতার খাতিরে নিলয় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করি।

“কেমন আছেন ভাইয়া?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো সাবিহা?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।”

“নিলয় তুই গিয়ে ওর্ডার দিয়ে আয়।”

“কেন?ওয়েটার ত এখানেই আসবে ওর্ডার নিতে।উনি শুধু শুধু ওখানে কেন যাবে কষ্ট করে?”

“তুমি বড্ড বেশি কথা বলছো,চুপ করে বসো।”

নিলয় ভাইয়ার সামনে আমাকে এভাবে ধমক দিয়ে কথা বলাতে আমি গাল ফুলিয়ে চুপ করে বসে রই।সেটা দেখে নিলয় ভাইয়া আমাকে হাসানোর জন্য মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,

“সাবিহা একটা প্রশ্ন করি?”

আমি একবার সাদাফ ভাইয়ের দিকে তাকাই উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি এবার নিলয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠি,,,

“জি ভাইয়া বলুন না কী বলতে চান?”

“ওয়েটার নাম কেন রাখা হয়েছে জানো?”

এটা আবার কেমন প্রশ্ন!আমি ভাবনায় পড়ে যাই,সেটা দেখে সাদাফ ভাইয়া আর নিলয় ভাইয়া মুচকি মুচকি হাসছে।আমি এবার গাল ফুলিয়ে বলে উঠি,,,

“জানি না ত।”

নিলয় ভাইয়া হাসল সাথে বজ্জাত সাদাফ ভাইটাও হাসল।আমার রাগ লাগল,উওর জানা নাই থাকতে পারে তার জন্য এমন হাসা লাগে নাকি!”

“ওয়েটার ওয়েট করায় বলেই ওয়েটার বলা হয়।”(আমার এক বড় ভাইয়ের বলা সংজ্ঞা🤭)

আমি কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠলাম,,,

“মানেহ?”

“মানে হল আমরা রেস্টুরেন্টে এসে কিছু ওর্ডার করলে ওয়েটার কিন্তু সেটা আমাদের ওয়েট করিয়েই দেয়।”

আমি নিলয় ভাইয়ার এমন কথায় হু হা করে হেঁসে উঠি,কী যুক্তি বাপরে বাপ।ওয়েটার ওয়েট করায় বলে নাকি নাম রাখা হয়েছে ওয়েটার।কথাটা ভেবেই আরেকদফা হাসিতে মেতে উঠলাম।তখন নিলয় ভাইয়া সাদাফ ভাইয়ার কানে বলে উঠল,,,

“নে ভাবির মুড ঠিক করে দিলাম,এবার তুই সামলা।আর সবসময় ধমক দিয়ে কিংবা রাগ দেখিয়ে কথা বলা বন্ধ কর।নয়ত তোর কপালে দুঃখ আছে,কারন সাবিহা অবলা নারী নয়।এখন আমি আছি বলে তকে কিছু বলল না নয়ত তোর মাথায় চুল থাকত কী না সন্দেহ আছে আমার।তাই সময় থাকতে থাকতে সাবধান হয়ে যা নয়ত কপালে দুঃখ আছে।”

নিলয় ভাইয়া কথাটা বলেই চলে যায়,আর সাদাফ ভাইয়া নিলয় ভাইয়ার কথাশুনে হাসল।কিন্তু কিছু বলল না,নিলয় ভাইয়া যাওয়ার পর সাদাফ ভাই আমার হাতটা উনার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে।

“সরি সাবিহা,গতকালকের ঘটনার জন্য।”

আমি হাতটা সরাতে চাইলাম কিন্তু উনি ছাড়লেন না।

“হাত ছাড়ুন আমার,এমন হুটহাট হাত ধরাধরি আমার একদম পছন্দ নয়।”

“সাবিহা আমি জানি তুমি রাগ করেছো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সে সময়টাই পাই নি লিজাকে সরানোর জন্য।তার আগেই তুমি চলে আসো।”

“কেন সরাতে কী চব্বিশ ঘণ্টা লাগত নাকি!”

“সাবিহা প্লিজ বাঁকা বাঁকা কথা বলো না,রাগটা কমিয়ে বুঝার চেষ্টা করো একটু।তখন লিজা আমার রুমে এসেই হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তুমি চলে আসো।”

“আচ্ছা মানলাম উনি আপনাকে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরেছে,আপনি সরানোর সময় পান নি।কিন্তু আপনার সামনে যে আমাকে এতগুলো কথা বলল তার জন্য ত আপনার কিছু বলার উচিত ছিল।তখন ত কিছু বলেননি,তখন ত মুখে গোল আলু ডুকিয়ে রাখছিলেন।”

“সাবিহা আমি মানছি আমি ভুল করেছি,কিন্তু এবারের মত মাফ করে দাও প্লিজ।সামনে থেকে এমন কিছুই হবে না,প্লিজ রাগ করে থেকো না।তুমি যে রাগ করে আমার সাথে কথা বলছো না এটা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।প্লিজ এবারের মত মাফ করে দাও আমাকে,আর কখনও এমনটা হবে না।”

“করব তবে একটা শর্ত আছে।”

“তোমারও শর্ত আছে!”

“হ্যাঁ আছে,আপনার থেকেই এই শর্ত দেয়া নেয়া শেখা।এবার আপনার ট্রিকস আপনার উপরই ট্রায় করব।রাজি থাকলে বলুন নয়ত আমি আসি।”

“না না বলো কী শর্ত আছে?”

“আমার শর্ত হল গরিলা মার্কা মহিলার আশেপাশে যাতে আর না দেখি আপনাকে।যদি উনার ছায়া ও আপনার পাশে দেখি তবে উস্টা মাইরা উগান্ডা নিয়ে ফেলব আপনাকে।”

“পাগলি একটা(গাল টেনে),রাজি আমি।”

আমি একগাল হেঁসে উনারও গাল টেনে বলে উঠি,,,

“গুড বয়।”

“আমার গুলুমুলু বউটা,পুরাই কিউটের ডিব্বা,দয়ার সাগর বেগম রোকেয়া,ডাকাত বউ আম,,,

কথাটা বলেই উনি জিব কামড়ে ধরে।

” কী😒?”

“হে হে,কই কিছু না ত।”

“আমি ডাকাত?”

“হে হে(বোকার মত হেসেঁ)তুমি ডাকাত হতে যাবে কেন?ডাকাত ত আমি,আমি ডাকাত হয়ে তোমাকে কেন ডাকাত বলব!আমি একদমই তোমাকে ডাকাত বলি নি,আমি ত বলেছি আমার বউটা খুব ভালো,খুব,,,

” হয়েছে হয়েছে আর মূলাপাম মারতে হবে না,আপনি যে কী কী বলতে পারেন সেটা আমার অজানা নয়।নেহাত এটা রেস্টুরেন্ট নয়ত আপনার খবর আছিল।”

“খবরা খবর পরে নিবে এখন নাও খেয়ে নাও সবাই।”

টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে নিলয় ভাইয়া কথাটা বলে উঠল।আমি সাদাফ ভাইয়ের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করলাম,তিনজনেই খেয়ে নিলাম।খাওয়ার পর নিলয় ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করে,,,

“সাবিহা এখন ত সবই ঠিক আছে,তোমার গলাও ত ঠিক হয়ে গেছে।এবার বলো ত সেদিন তোমার সাথে কী হয়েছিল?”

“আপুর বিয়েটা হোক তারপর এসব নিয়ে কথা বলব।এখন এসব নিয়ে কথা বললে ঝামেলা হবে আর আপুর বিয়ের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে তাই এখন এসব বাদ দিন।আপুর বিয়ের পর সব বলব আমি,ততদিন আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।
আর আমি এখন উঠি,আমাকে যেতে হবে।আপুর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মামুর বাড়িতে আছে সেগুলো আনতে যেতে হবে।”

মামুর বাড়িতে যেতে হবে কথাটা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে সাদাফ ভাই।

“তোমাকে যেতে হবে না,কাব্য সেখানে আছে।ত যাওয়ার দরকার নাই।”

“কাব্য যেখানে থাকবে তার ভয়ে কী আমি সেখানে যাব না নাকি!কাব্যর ভয়ে কী আমি ঘর বন্দি হয়ে বসে থাকব?”

“আমি সেটা বলি নি কিন্তু এখন সেখানে না যাওয়াই ভালো।কখন কী করে বসে ঠিক নেই তাই যেও না।”

“আমার যাওয়াটা প্রয়োজন,চাইলে আপনিও সাথে আসতে পারেন সমস্যা নাই।কিন্তু তারপরও আমার যেতে হবে।”

কথাটা বলেই আমি বেরিয়ে আসি রেস্টুরেন্ট থেকে।আমার পিছন পিছন সাদাফ ভাই আর নিলয় ভাইয়াও আসে।তারপর তিনজনে মিলেই চললাম মামুর বাড়িতে।

_____________________________________

মামুর বাড়িতে ঢুকেই মামিমাকে দেখতে পাই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে,আমি মামিমাকে দেখে দৌড়ে জড়িয়ে ধরি।

“কেমন আছো মামিমা?”

“আমার মা টা এসে গেছে না আমি একদম ভালো হয়ে গেছি।”

“কেমন আছেন আন্টি?” (সাদাফ ভাইয়া)

“আরে সাদাফ বাবা যে,আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”

“আমিও ভালো আছি।”

“তোমার সাথে কে?চিনলাম না ত,সেদিনও হসপিটালে দেখেছিলাম।”

“আমার ফ্রেন্ড নিলয়।”

“ওহহ,তুমি কেমন আছো বাবা?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।”

“আচ্ছা মামিমা তোমরা কথা বলো আমি উপর থেকে আপুর লাগেজটা নিয়ে আসি।আর হিয়া স্কুল থেকে আসে নি?”

“না আসে নি ত,এখনই এসে পড়বে।তুই যা লাগেজটা নিয়ে আয়।”

“আচ্ছা মামিমা।”

তারপর আমি উপরে চলে আসি,আর মামিমা সাদাফ ভাইয়াদের সাথে কথা বলছে।আমি ধীরে সুস্থে হেঁটে যাচ্ছি মেঘ ভাইয়ার রুমে।কিন্তু হঠাৎ করে কেউ আমাকে টেনে আনে একটা রুমে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সামনে থাকা মানুষটা আমার হাতটা দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।

“চিৎকার করিস না সাবিহা,তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

কাব্য ভাইয়ার কথাশুনে আমি চোখ খুলি,আর উনাকে দেখে রেগে যাই খুব।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি উনি ছাড়ছেই না।

“প্লিজ তুই শান্ত হ আমি তোর কোন ক্ষতি করব না।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।কথা শেষ হলেই ছেড়ে দিব,প্লিজ আমার কথাটা শোন।”

আমি তারপরও উনার কোন কথা কানে না নিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি।উনি এবার আমার হাত ছেড়ে আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।আমি রেগে উনার দিকে তাকাই,উনি সেটা দেখে বলে উঠে।

“ভালো করে বলছিলাম শুনছিলি না,তাই গায়ে হাত তুলতে হল।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে,আমার কথাটা শোন প্লিজ।অনেক কিছু বলার আছে তকে,প্লিজ শান্ত হ।”

আমি উনাকে কিছু না বলে উনার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে রেগে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।আর কাব্য গালে হাত দিয়ে চোখের পানি ফেলছে।

#চলবে,,,

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-২০+২১

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২০

কাব্য হেলেদুলে গেট দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছে।কাব্যকে দেখে যে কেউ বলতে পারবে কাব্য নেশা করেছে।কাব্য হেঁটে যাচ্ছে আর বিরবির করে বলে চলেছে,,,

“সাবিহার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।ভাইয়ার ভালবাসা তার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।”

এই কথাগুলোই কাব্য প্রতিনিয়ত বলে চলেছে,হঠাৎ করে কাব্য একটা টবের সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় আর সেখানেই বসে পড়ে।

সাদাফ ভাইয়ের হাতের উপর এক হাত আর আরেক হাত গালে দিয়ে বসে আছি,উনার দৃষ্টি আকাশের দিকে।কিন্তু আমার মনে চলছে বাবাকে কীভাবে মেনেজ করব সেই ভাবনা।কিন্তু হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে দুজনেই চমকে উঠি।

“কী যেন একটা পড়ার আওয়াজ হল না!”

“হ্যাঁ আমিও ত শুনলাম,কেউ কী জেগে গেছে?”

“হতে পারে,আপনি এখান থেকে যান তাড়াতাড়ি কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”

“আরে দাঁড়াও দেখতে দাও আগে,কোন চোর ডাকাতও ত হতে পারে।”

“আপনি এখান থেকে যান ত আপনার চোর,ডাকাত খুঁজতে হবে না।চোর,ডাকাত হলেও ভালো কিন্তু যদি সেটা না হয় অন্য কেউ হয় তবে তাদের সামনে পড়ে গেলে দুজনেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ব।”

“আরে শান্ত হও তুমি আর দেখতে দাও আমাকে।”

অতঃপর উনি আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই গটাগট পা ফেলে আওয়াজটা যেদিক থেকে আসছে সেদিকে চলে যায়।আমিও গাল ফুলিয়ে উনার পিছন পিছন যাই,কিন্তু একটু সামনে যাওয়ার পরই সাদাফ ভাইয়া থেমে যায়।উনাকে থেমে যেতে দেখে আমিও থেমে যাই,আর আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করি ঠিক কী হয়েছে!পরক্ষণেই একটা জায়গায় আমার চোখ আটকে যায়,এটা দেখার জন্য আমি একটুও প্রস্তুত ছিলাম না।আমদের সামনে কাব্য ভাই কেমন অস্বাভাবিক আচরন করছে মাটিতে বসে থেকে।একা একাই আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে, আর হাসছে।সাদাফ ভাই আমার কাছে এসে আস্তে করে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,,

“উনার এ অবস্থা কেন?নেশা টেশা করে নাকি?”

সাদাফ ভাইয়ার কথা শুনে আমি মাথা তুলে অবাক চোখে উনার দিকে তাকাই।মানুষ ত নেশা করলে আর পাগল হলেই এমন অস্বাভাবিক আচরন করে।তবে কাব্য ভাই কী সত্যি নেশা করেছে,কিন্তু উনাকে ত কখনও নেশা করতে দেখি নি আমি।সাদাফ ভাইয়ের কথায় আমার ঘোর কাটে।

“কোথায় হারিয়ে যাও বলো ত!একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে আর তার উওর না দিয়ে একদম চুপ করে গেলে।”

“আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“এখানে দাঁড়িয়ে থাকলেও কিছু বুঝবে না।বাড়ির সবাই কে ডাকো,তারপর উনাকে ঘরে নিয়ে তেঁতুল গুলিয়ে খাওয়ায়।নির্ঘাত নেশা করে এসেছে,তুমি একদম উনার কাছে যাবে না।কে জানে আবার কী করে ফেলে!উনাকে আমার একদম বিশ্বাস হয় না।”

“আহ্ আপনি একটু থামুন আর দেখতে দিন আমাকে।”

কথাটা বলেই কাব্য ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম আমি,সেটা দেখে সাদাফ ভাই আমার হাত টেনে ধরে দাঁড় করিয়ে রেগে বলে উঠে।

“এই তোমাকে না এইমাত্র বললাম উনার কাছে না যেতে,আর তুমি এখনই চলে যাচ্ছো!”

“সাদাফ ভাই ছাড়ুন আমাকে দেখতে দিন কী হয়েছে?এখন এত কিছু ভাবলে চলবে না,আর আপনি ত এখানেই আছেন কিছু হলে আপনি আটকাইয়েন।”

কথাটা বলেই সাদাফ ভাইয়ার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কাব্য ভাইয়ের কাছে যাই।উনি আমাদের দেখতে পান নি,আমি উনার পিছনের দিকটায় বসি।।আর শুনতে পাই উনি একটা টবের দিকে আঙুল তুলে বলে যাচ্ছে,,,

“তুই আবার বাঁধা হলি কেন আমার চলার পথে হুম!চলার পথে ত এমনিতেই বাঁধার শেষ নাই,আবার তুই বাঁধা হয়ে দাঁড়ালি।”

উনার কথাশুনে আমি শিয়োর হয়ে গেলাম উনি নেশা করেছে,সেটা দেখে আমি সাদাফ ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলে উঠি।

“উনি ত সত্যি সত্যি নেশা করেছে।এখন কী করব?”

“আমি ত তোমাকে আগেই বলেছি উনি নেশা করেছে।রুমে নিয়ে তেতুল গুলিয়ে খাওয়াতে,কিন্তু তুমি ত বিশ্বাস করলে না।”

“ভাইয়া এখন কী এসব বলার সময় নাকি?আপনি তাড়াতাড়ি যান এখান থেকে আমি মামুকে ডেকে আনছি।”

“ঠিক আছে চলে যাচ্ছি,তুমি নিজের খেয়াল রেখো।আর কাব্যর থেকে দূরে দূরে থাকবে,একদম কাছে ঘেসবে না বলে দিলাম।আর কাল সকালে বাড়িতে যাওয়ার আগে আমাকে একটা কল দিও,আঙ্কেলকে মেনেজ করতে তোমাকে হেল্প করব নে।”

আমি মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে ঘুরে যেই না যাব ওমনি সাদাফ ভাই আমাকে টেনে উনার সামনে দাড় করিয়ে দেয়।আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি আমার কপালে একটা চুমু একে দেয়।তারপর আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই বেরিয়ে যায়।আমিও আর ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম না,ভিতরে চলে এলাম মামুকে ডাকতে।

____________________________________

বাবার সামনে অপরাধীদের মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।আর বাবা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলছি বারবার,আর মনে মনে সাদাফ ভাইয়ের গুষ্টির ষষ্ঠী করছি।শালা বদ আমাকে হেল্প করবে বলে এখনও তার পাত্তাই নাই।সকালে আসার সময়ই ফোন করে জানিয়েছি বাড়িতে আসছি,আর সে নাকি আসছে।কিন্তু কই এখনও ত তার কোন নাম গন্ধও নাই,অনেকক্ষন উনার অপেক্ষা করার পরও যখন আসে না।তখন আমি আর উনার আশায় না থেকেই বাবাকে আপুর বিয়ের কথাটা বলে দেই।তারপর থেকে বাবা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে আর একটু পর পর ধমকে জিজ্ঞেস করছে,”কাজটা করার আগে কার পারমিশন নিয়েছি”।
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রেখেছি,কী বলব কিছুই বুঝতে পারছি না।বাবা এবার খুব রেগে যায়,আর সোফার একটা কুশন ছুড়ে মারে আমার দিকে।আমি সেটা ধরে বাবার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাই সেটা দেখে বাবা বলে উঠে,,,

“বড়দের কথা অমান্য করে তুই এত বড় সিদ্ধান্তটা কীভাবে নিলি সাবিহা?কাকে বলে এত বড় একটা কাজ করেছিস তুই?”

“আআআসলে ববাব,,,

” চুপ একদম চুপ,তোর থেকে কোন কথাই শুনতে চাই না আমি।আমি এখনই ঐ বাড়িতে যাব আর শীলাকে নিয়ে আসব।ঐ মানুষটার বাড়িতে আমার মেয়েকে আমি কিছুতেই রাখব না।”

পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে দেখা যায়,কিন্তু তার আগেই আমাকে কিছু করতে হবে নয়ত ঝামেলা আরো বাড়বে।আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে সাহস নিয়ে বাবাকে বলে উঠি,,,

“বাবা প্লিজ তুমি শান্ত হয়ে বোঝার চেষ্টা করো,যা করার কাব্য ভাইয়া করেছে মেঘ ভাইয়া ত কিছু করে নি।আর আপু,মেঘ ভাইয়া দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে।মেঘ ভাইয়া আপুকে সুখে রাখবে,কোন কষ্ট পেতে দিবে না দেখো।”

“তুই আর একটা কথাও বলবি না,আমি তোর কোন কথাই শুনব না।আমি এই মুহূর্তে শীলাকে নিয়ে আসব ঐ বাড়ি থেকে আর এসে তোর ব্যাবস্থা করব।”

বাবা কথাগুলো বেশ রেগেই বলে,আর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আমি বাবার পিছন পিছন দৌড়ে আসি বাবাকে আটকাতে।কিন্তু ড্রয়িং রুমে আসার পর আমার চোখ বড়বড় হয়ে যায়।কারন শীলা আপু,মেঘ ভাইয়াকে নিয়ে সাদাফ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুজে।আর বাবা সেটা দেখে দাঁড়িয়ে যায়,আর তখন সাদাফ ভাইয়া বলে উঠে,,,

“আঙ্কেল অনেকক্ষণ ধরে শুনছিলাম আপনি শীলাকে নিয়ে আসবেন,কিন্তু দেখুন আমি আপনার মনের কথাটা আগেই বুঝতে পেরেছি।আর তাই শীলাকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে জামাই সহ তুলে আনলাম।এবার রেখে দিন নিজের মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে আপনার বাড়িতে।”

“আমি এই বিয়ে মানি না,আর না মেঘকে এই বাড়ির জামাই হিসেবে মানি।তাই মেঘকে বলো আমার মেয়েকে রেখে চলে যেতে।”

“আপনার না মানাতে এখন কিছুই হবে না আঙ্কেল,কারন তারা কোন টিনেজার নয় যে আপনি মানলেন না তাই বিয়ে ভেঙ্গে গেলো।তাদের বয়স 18 & 21 পেরিয়ে গেছে তাই তাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার সম্পূর্ণ রয়েছে।”

“সাদাফ তুমি কী জানো না কাব্য সাবিহার সাথে কী কী করেছে?আর কাব্যর বাবা কেমন প্রকৃতির মানুষ!ঐ বাড়িতে আমার মেয়ে থাকলে এমনিই মরে যাবে।আর কোন বাবা জেনে বুঝে তার মেয়েকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে পারে?”

“আপনার ত কাব্য আর তার বাবাকে নিয়ে সমস্যা?মেঘ ভাইয়াকে নিয়ে ত কোন সমস্যা নেই,তবে আপনি আপনার মেয়ে সহ মেয়ের জামাই আপনার কাছেই রেখে দিন।এতে করে আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকলেন আর আপনার মেয়ে তার ভালবাসার মানুষের সাথে সুখে সংসার করতে পারল।”

“তুমি কী পাগল হয়েছো!আমি কখনও আমার মেয়েদের ঘর জামাই করব না।এতে করে সমাজের লোক অনেকে অনেক কথা বলবে।আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে।”

“তবে আপনি যে আপনার মেয়েকে তার বিয়ের পরের দিন তার শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে চাইছেন তাতে কী আপনার মান সম্মান বাড়বে!”

সাদাফ ভাইয়ের কথাশুনে এবার বাবা চুপ করে যায়,এতক্ষণ আমরা সবাই বাবা আর সাদাফ ভাইয়ার কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।উনি কায়দা করে ঠিক বাবাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।এবার নিশ্চয়ই বাবা আপুদের মেনে নিবে,উফফ ভাবতেই খুব আনন্দ হচ্ছে আমার।এই খুশিতে সাদাফ ভাইয়াকে দুইটা চুমা দিতে ইচ্ছে করতাছে।পরক্ষনেই নিজের বলা কথাটা ভেবে নিজের মাথায় দুইটা চাপড় মেরে বলে উঠি,,,”পাগল ছাগলের মত লজ্জার মাথা খেয়ে কী বলে ফেললাম ইস্।”

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২১

দুপুর ২ টা বেজে ৭ মিনিট,আপুর সাথে বসে বসে অনলাইনে কিছু ড্রেস দেখছি।আপুর গায়ে হলুদ আর বিয়েতে পড়ার জন্য।সেদিন ত কিছুই কিনতে পারলাম না কাব্য ভাইয়ের জন্য তাই এখন শপিংটা অনলাইনেই করব ভাবছি।
আর হে বাবা বিয়েটা মেনে নিয়েছে।তখন বাবা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ করেই বলে উঠে বিয়েটা মেনে নিবে।আর বাবা আজ মেঘ ভাইয়াদের বাড়িতে গেছিল,সাদাফ ভাইয়াকে সাথে নিয়ে।আর মামা,মামুর সাথে কথা বলে ওদের আবারও বিয়ে দিবে ধুমধাম করে ঠিক করে এসেছে।আর সেটা সামনের সপ্তাহেই,আর ততদিন আপু আমাদের বাড়িতে থাকবে।কথাটা শুনে সবাই খুশিতে আটখানা,আমি ত আপুকে জড়িয়ে ধরে রীতিমতো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিলাম।অবশেষে আপুর জীবনটা স্বাভাবিক হল আপুর ভালবাসা পূর্নতা পাবে,ভাবতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
আর এই সবটা সম্ভব হয়েছে সাদাফ ভাইয়ার জন্য,কিন্তু তাকে ত ধন্যবাদই জানানো হয় নি।কথাটা ভেবেই আপুকে বলে তার রুম থেকে দৌড়ে এসে পড়লাম আমার রুমে,আর সাদাফ ভাইয়াকে ফোন লাগালাম।কিন্তু ভাইয়া ধরল না,তাই আমি ভাবলাম উনার বাড়িতে যাব গিয়ে সরাসরিই ধন্যবাদ জানাব।তাই ঝটপট নেভি ব্লু কালারের একটা গাউন পড়ে,মাথায় হিজাব বেঁধে,সাইডে একটা উর্না ফেলে দিলাম।তারপর হালকা একটু লিপস্টিক আর চোখে কাজল দিয়ে তৈরি হয়ে বাবাকে বলে বেরিয়ে পড়লাম।উদ্দেশ্য এখন সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে যাওয়া।

আধা ঘন্টা পর এসে পৌঁছালাম সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে,আর গেট দিয়ে ঢুকার সময় দেখি আন্টি বাগানে দাঁড়িয়ে কার সঙ্গে যেন রেগে কথা বলছে ফোনে।আমি আন্টির কাছে গিয়ে উনাকে পিছন থেকে চোখে ধরলাম,ছোট থেকেই এ অভ্যাস আমার।আন্টিকে দেখলেই এভাবে পিছন থেকে চোখে ধরব।আন্টি এবার ফোনটা রেখে আমার হাতের উপর হাত রেখে কিছুটা রেগে বলে উঠে,,,

“কে এভাবে ধরেছে আমাকে?”

“তোমাকে এভাবে আর কে ধরতে পারে হুম!”

আমার এই কথাটা শুনে আচমকা আন্টির চেহারা থেকে রাগটা বিলীন হয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে।

“আরে আমি কী সত্যি শুনছি নাকি এটা,আমার সাবিহা মামনি এসেছে।”

আমি এবার আন্টির চোখ থেকে হাত সরিয়ে অভিমানি স্বরে বলে উঠি।

“হুম হয়েছে হয়েছে আর মামনি মামনি বলতে হবে না,তুমি ত আমাকে চিনতেই পারলে না।”

“আমার মামনিটার অভিমান হয়েছে বুঝি,ওলেলে আমার কিউট মামনিটার অভিমান হয়েছে!”(গাল টেনে)

“সরো একদম কথা বলবে না আমার সাথে।”

“সরি মামনি এমনটা আর কখনও হবে না,আসলে ফোনে কথা বলছিলাম ত তাই বুঝতে পারি নি।”

“হুম ঠিক আছে,ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই,এবারের মত ছেড়ে দিলাম।কিন্তু তুমি রেগে ওভাবে কার সাথে কথা বলছিলে?”

আমার কথা শুনে আন্টির চেহারার রং আবারও পাল্টে যায়।

“কোন সমস্যা হয়েছে?”

“আরে না না,কোন সমস্যা হয় নি।”

“আচ্ছা আন্টি পারসনাল কোন বিষয় হলে বলতে হবে না।”

“আরে না তেমন কিছুই নয়,তুই এসব নিয়ে ভাবিস না কিছু হয় নি।তুই বরং ভিতরে যা আমি আসছি ফোনে কথা বলে।”

“আচ্ছা আন্টি সাদাফ ভাইয়া কী বাড়িতে আছে?”

“হে হে ঐ পাগলটা ভিতরেই আছে,তুই যা।”

“আচ্ছা আন্টি।”

তারপর আমি ভিতরে চলে এলাম,আর ঐদিকে আন্টির হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে পড়ে যায়।আর দৌড়ে উনিও ভিতরে আসার জন্য দৌড় দেয়।

_______________________________________

সাদাফ ভাইয়াকে খুঁজতে খুঁজতে উনার ঘরের সামনে চলে এলাম,আর যখনি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করব তখন আমি যা দেখি তার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলাম না।আমার দৃষ্টি স্থীর হয়ে আসে একটা জায়গায়, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।আমি দরজার সামনেই ঠায় দাড়িয়ে আছি,সাদাফ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আছে একটা মেয়ে।মেয়েটার গায়ে খুব ছোট একটা পোশাক যেটা দেখে আমি নিজেই লজ্জায় পড়ে যাচ্ছি।ভিতরে যাব নাকি চলে যাব সেটা ভাবতে ভাবতেই সাদাফ ভাইয়ের চোখ পড়ে আমার উপর।আর উনি সেটা দেখে গাবড়ে গিয়ে মেয়েটাকে একটা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।আমি সেটা দেখে বেরিয়ে আসতে নিলেই সাদাফ ভাই আমার সামনে এসে কাঁধে হাত দিয়ে অস্থির হয়ে বলে উঠে,,,

“সাবিহা তুমি যা দেখেছো তা সত্যি নয়,তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।আমার পুরো কথাটা শুনো তুমি,অর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।আমি তোমাকে ভালবাসি সাবিহা,তুমি আমার সব।তুমি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না,তুমি ভুল বুঝলে আমি মরে যাব।তুমি ছাড়া আমি অন্য কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানো ত দূরে থাক ভাবতেই পারি না।তুমি আমাকে,,,

কথাগুলো এক নিশ্বাসে চলেছে উনি,আমি এবার উনাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেই।

“গতরাতে মাত্র বললাম ভালবাসতে চাই আপনাকে,আর আজকেই আপনার নিজের নিকৃষ্টতম রূপ দেখিয়ে দিলেন।কাব্য ভাইয়ের থেকেও জঘন্য মানুষ আপনি।কাব্য ভাই যা করে তা সরাসরি করে কিন্তু আপনি ত মিচকা শয়তান।আপনার প্রতি ঘৃনা হচ্ছে,আর কখনও আমার সামনে আসবেন না আপনি।”

সাবিহার কথাশুনে সাদাফের চোখের কোনে জল জমা হয়,চোখের পানিগুলো টলমল করছে।যেকোন সময় তা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে।সাদাফের মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে,সে যে ভয়টা পেয়েছে সেটা সত্যি হল।সাবিহা তাকে ভুল বুঝেছে,এবার কী সাবিহা তার থেকে দূরে সরে যাবে।তবে সাদাফের কী হবে?এমন অনেক কথা নিজ মনে ভেবে চলেছে সাদাফ।

আমি সাদাফ ভাইয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এবার মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াই মেয়েটার মুখে কেমন একটা তৃপ্তির হাসি।আমি বাঁকা হেঁসে মেয়েটার গায়ে আমার উর্নাটা পেঁচিয়ে দিতে দিতে সাদাফ ভাইয়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠি।

“কী ভেবেছেন এমনটাই বলব আমি!”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাই চোখে জল নিয়ে অবাক চোখে তাকায় আমার দিকে।

“এত অবাক হওয়ার কী আছে!এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক নয় কী!আপনারা যেভাবে ছিলেন তাতে ত এসব বলাই স্বাভাবিক।কিন্তু আমি আপনাকে বিশ্বাস করি,আপনার ভালবাসার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।তাই চোখের দেখাটাকে বিশ্বাস করলাম না,আমি জানি আপনি কেমন।আর এই আপুটাও যে কেমন সেটাও বুঝা হয়ে গেছে আমার।উনি যেরকম পোশাক পড়েছে তাতে করে যে কেউ বলতে পারবে উনি কেমন?”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাইয়ের মুখে হাসি ফুটে উঠে,আর উনি হাসি মুখে কিছু বলতে নিলেই।আমি উনাকে হাত দিয়ে থামিয়ে রেগে বলে উঠি,,,

“অবিশ্বাস করি নি ঠিকই কিন্তু রাগ হচ্ছে খুব আপনার উপর।একটা মেয়ে আপনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে আর আপনি তাকে কিছুই বললেন না।আমি আসার পর যেভাবে দূরে ঠেলেছেন সে কাজটা আগে করতে পারলেন না!

সাদাফ ভাই কিছু বলবে তার আগেই আমি বলে উঠি,,,

“আপনার সাথে পরে কথা বলব আগে বলুন এই গরিলা মার্কা মহিলা কে?”

এবার মেয়েটা রেগে ফোঁস করে উঠে।

“এই মেয়ে তুই কী বললি আমাকে?আমি গরিলা মার্কা মহিলা?আমি?”

“এখানে আপনি আর আমি ছাড়া কোন মেয়েকে ত দেখছি না যাকে মহিলা বলব।আর আমি নিজেকে নিজে ত এই কথাটা অবশ্যই বলব না তাই না!”

“How dare you!তোর সাহস হল কী করে আমার সাথে এভাবে কথা বলার?তুই জানিস আমি কে?”

“এই গলা নিচে,আরেকটা উঁচু আওয়াজে কথা বললে গলা কেটে হাতে ধরিয়ে দিব।আর আপনি নিজেই ত জানেন না আপনি কে ত আমি জানব কীভাবে?”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাই মুচকি হাসেঁ আর মেয়েটা রাগে ফেটে যাচ্ছে।আমি কিছু বলব তখন সেখানে উপস্থিত হয় সাদাফ ভাইয়ার মা,উনাকে দেখে আমি বলে উঠি।

“আন্টি এই মেয়েটা কে?”

“মামনি শান্ত হ,আমি তকে সব বলছি।তুই আমার সাথে আয়,মাথা ঠান্ডা কর।”

“আন্টি আমার মাথা ঠান্ডাই আছে,আর তুমি এখন এখানেই বলবে এই মেয়েটা কে?”

“এটা সাদাফের ক্লাসমেট লিজা।”

“ওহহো চিনতে পেরেছি ত,এই লিজাই ত সাদাফ ভাইয়ার সাথে আমাকে ছোট বেলায় দেখলেই মারার জন্য তেড়ে আসত তাই না!এখন বুঝলাম ব্যাথাটা কোন জায়গায়।”

“হ্যাঁ আমি সেই,যে তকে শয্য করতে পারত না একদমই।তকে মেরে ফেলতেও আমার হাত কাঁপবে না কারন তুই আমার থেকে সাদাফকে কেড়ে নিয়েছিস।তোর জন্য সাদাফ আমাকে সবসময় এড়িয়ে চলেছে,তোর জন্য সাদাফ আমার ভালবাসার,,,

ঠাস করে একটা আওয়াজ হওয়াতে লিজা চুপ করে যায়।লিজা আর কিছু বলার আগেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই আমি,লিজার না সাদাফ ভাইয়ের।সাদাফ ভাই গালে হাত দিয়ে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে,আন্টি আর লিজা দুজনেই খুব অবাক।আমি এবার রেগে বলে উঠি,,,

” কী ভাবছেন থাপ্পড়টা গরিলা মার্কা মহিলাকে না মেরে আপনাকে কেন মারলাম?আপনাকেই থাপ্পড়টা মারা দরকার আপনারই সামনে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে আর আপনি চুপচাপ শুনে চলেছেন!আপনার ত উচিত ছিল এই মহিলার গালে একটা দেয়ার কিন্তু আপনি?”

“এই মেয়ে তুই বারবার কাকে গরিলা বলে যাচ্ছিস আর সাদাফের গালে থাপ্পড় দিয়েছিস কেন?তকে ত আমি,,,”

কথাটা শুনে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই সাদাফ ভাইয়ের আরেক গালে।লিজা এবার কিছুটা ভয় পেয়ে যায় আর চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে।আমি সেটা দেখে সাদাফ ভাইকে বলে উঠি,,,

“আমাকে এতগুলো কথা বলল আর আপনি চুপ করে শুনছেন?এসেছিলাম ধন্যবাদ জানাতে কিন্তু এখন ধন্যবাদ দেয়ার বদলে আপনাকে জ্যান্ত চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এখন সেটা করাও সম্ভব নয় কারন এই গরিলা মার্কা মহিলার ছোয়া লেগে আছে আপনার গায়ে।”

কথাটা বলেই লিজাকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এলাম।এই লিজা ছোট বেলায় আমাকে অকারনে মারত তাই আপু বলে ডাকি না।এই মেয়েকে এখানে রাখা মানেই আবার কখন কী ঝামেলা করে ঠিক নেই তাই বের করে দিচ্ছি।এটা ত আমারই শ্বশুর বাড়ি তাই একে বের করার জন্য আমার ২য় বার ভাবতে হবে না।আর এই গরিলা মার্কা মেয়ে ছোটার চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু ছুটতে পারছে না।

অন্যদিকে সাদাফ গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে সাবিহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাফের মার যেন চোখ বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা।কিন্তু পরক্ষনেই তিনি হাসিতে ফেটে পড়ে,সেটা দেখে সাদাফ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,,

“এভাবে হাসছো কেন?”

“বাপরে বাপ আমার মামনিটা পুরাই আগুন,উফফ এমন একটা মেয়ে যে আমার বাড়ির বউ ভাবতেই মজা লাগছে।আমার পাগল পোলার জন্য উপযুক্ত জীবনসঙ্গী।”

কথাগুলো হেঁসে বলতে বলতে উনি রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর সাদাফ মুচকি হেসে বলে উঠে,,,

“হায় ম্যা মার জাওয়া😍,,,আবারও প্রেমে পড়ে গেলাম তোমার।তোমার মত মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে ধন্য আমি।”

পরক্ষনেই সাদাফের মুখের হাসি গায়েব হয়ে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে।

“সবই ত ঠিক আছে কিন্তু যেভাবে রেগে বেরিয়ে গেলো তাতে ত রাগ ভাঙ্গানোর জন্য আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।”

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-১৮+১৯

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৮(ধামাকা স্পেশাল পর্ব)

সাদাফ ভাই কোমড়ে হাত দিয়ে আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে,আর আমি নিচে পড়ে গিয়ে ভালোই ব্যাথা পেয়েছি কোমড়ে।তবে ততটাও ব্যাথা পাই নি যে কাঁদব কিন্তু সাদাফ ভাইয়ের নাকে কামড় দিয়ে এখন নিজেরই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।তাই এই বিষয়টা ঘুরানোর জন্য কেঁদে বলে উঠি,,,

“আল্লা গো আমার কোমড়টা গেলো গো।ও বাবা গো,তোমার মেয়ের কোমড়টা আজ ভেঙ্গেই গেলো গো।এখন আমাকে কে বিয়ে করবে গো😭।”

কথাটা বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করে দেই,আর আড়ে আড়ে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই।দেখি উনি এখন কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে,নাটকটা কী কাজে লাগল না নাকি!কথাটা ভেবেই আরো জোড়ে জোড়ে কেঁদে ফেললাম।আর উনি একবার আশেপাশে তাকিয়ে আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছু না বলেই নিচু হয়ে আমাকে আবারও কোলে তুলে নেয়।আমি কান্না ভুলে চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই,কিন্তু উনি আমার দিকে তাকাচ্ছেই না।আমি উনাকে কিছু বলব কিন্তু কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা ভেবে চুপ করে যাই।এবার আর ছোটার জন্য কোন কায়দা করি নি,কে জানে আগের মত এবারও পড়ে গিয়ে না সত্যি সত্যি কোমড়টা ভাঙ্গি।এসব ভেবে সাদাফ ভাইয়ের গলাটা চেপে ধরি,উনি সেটা দেখে মুচকি হাসে।কিন্তু সে হাসিটা আমার দৃষ্টিগোচর হলো না।
কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে নিয়ে বাইরে চলে আসে লুকিয়ে,আর মামুদের বাগানে একটা বেঞ্চে আমাকে বসিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আমার সামনে।তারপর উনি শান্ত গলায় বলতে শুরু করে,,,

“খুব ব্যাথা পেয়েছো?”

উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠে,আমিও উনার চোখের দিকে তাকাই।কত মায়া লুকিয়ে আছে ঐ চোখে।উনার চোখের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটা অনুভব হচ্ছে,ইচ্ছে করছে না মিথ্যা বলতে।তাই আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝাই যে ব্যাথা পাই নি।উনি সেটা দেখে আমার গালে হাত দিয়ে আবারও বলে উঠে,,,

“সত্যি!”

আমি আবারও মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বুঝাই,উনি এবার দাঁড়িয়ে ধমকে বলে উঠে আমাকে,,,

“ত তখন ওভাবে কাঁদছিলে কেন?তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম!কিন্তু তখন কেউ জেগে যাওয়ার ভয়ে কিছু বলতে পারি নি।”

উনার ধমকটা আমার ঠিক হজম হল না,তাই আমিও রেগে বলে উঠি,,,

“আপনাকে ত কেউ বলে নি আমার জন্য এত চিন্তা করতে,তবে এত চিন্তা কেন করছেন?”

“কারো জন্য চিন্তা করতে হলেও কী কারো পারমিশন নিতে হবে!আর আমরা যাকে ভালবাসি তার প্রতি চিন্তাটা এমনি এমনি এসে যায়।কারো বলার অপেক্ষায় থাকে না যে সে বলবে তারপর চিন্তা করব।”

” ভাইয়া ভালবাসি কথাটা আমার কাছে বলবেন না দয়াকরে,ভালবাসা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।আর ভালবাসা শব্দটার প্রতিও ঘৃনা জন্মে গেছে।আপনি আমাকে অনেক ভালবাসেন কিন্তু আমি আপনার ভালবাসার সঠিক দাম দিতে পারব না।সুতরাং আপনি আমাকে ভুলে নতুন কাউকে খুঁজে নিন আর তাকে ভালবেসে সুখে সংসার করুন।”

আমার কথা শুনে উনার চেহারার রং পাল্টে যায়, চোখের কোনে পানি জমা হয়।কিন্তু উনি নিজেকে সামলে ধরা গলায় বলে উঠে,,,

“আমি কী বখাটে ছেলে?আর ভালবাসা কী কোন পন্য যে একজন নিলো না আরেকজনকে দিয়ে দিব!আরে তুমি ভালবাসতে নাই পারো কিন্তু আমার ভালবাসা নিয়ে কথা কেন বলো?অন্তত আমার ভালবাসাকে সম্মান করো,আমাকে আমার মত ভালবাসতে দেও না তোমাকে।তুমি ত আমাকে ভালবাসো না তবে কেন এভাবে কষ্ট দেও?বিশ্বাস করো খুব কষ্ট হয় আমার।

কথাগুলো বলার পর উনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে,উনি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে এবার রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

” আর তুমি ত সারা দুনিয়ার কাছে বুঝদার মেয়ে আর আমার কাছে এসেই তোমার যত বাচ্চামি।তুমি আমার ফিলিংসটা বুঝেও বুঝতে চাইছো না।যে তোমাকে ভালবাসে তাকে দাম দেও না আর যাকে তুমি ভালবাসো সে তোমাকে দাম দেয় না।আর তুমি তারই পিছনে পড়ে থাকো যে তোমাকে কখনও ভালবাসবে না,কষ্ট ছাড়া কিছুই দিবে না।আর আমাকে দেখো তোমাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছি,কিন্তু পাত্তাই পাচ্ছি না।আমার ভালবাসার কোন দামই দিচ্ছো না,আরে একবার শুধু বলো তুমি আমার হবে দেখো সারাজীবন বুকে আগলে রাখব।ভালবাসার উপর থেকে ঘৃনার পর্দা সরিয়ে নতুন করে ভালবাসতে শিখাবো তোমায়।সারা পৃথিবীর সুখ এনে দিব তোমাকে।”

উনি একটু থেমে আবারও বলে উঠে,,,

“অবশ্য তুমি বলো আর নাই বলো,মানো আর না মানো তুমি অতীতেও আমার ছিলে,এখনও আছো,ভবিষ্যতেও থাকবে।তুমি আমার,শুধু আমার,আমার অর্ধাঙ্গিনী তুমি।”

শেষের কথাটা একটু জোড়েই বলে উনি।আর আমি এবার উনার কথাশুনে থমকে যাই,কী বলছে উনি এসব পাগলের মত!অর্ধাঙ্গিনী মানে?

“ভাইয়া আপনি পাগলের মত এসব কী বলছেন?”(অবাক হয়ে)

আমার কথাশুনে উনি খুব রেগে যায়,তেড়ে আসে আমার কাছে।আর গাল চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে বলে উঠে,,,

“এই এত কীসের ভাই ভাই করিস হে!আমি তোর কোন জন্মের ভাই লাগি?তোর এই কথায় কথায় ভাই বলাটা আমার মনে রক্তক্ষরণ করে প্রতিনিয়ত কিন্তু এতদিন শয্য করেছি।শুধুমাত্র এটা ভেবে যে তুই একদিন বুঝবি আমাকে,আমার ফিলিংস বুঝবি একদিন।কিন্তু তুই ত বুঝেও বুঝিস না,আমার ফিলিংসের কোন দামই দিস না।
আমি তোর কোন ভাই টাই লাগি না,স্বামী হই তোর।কান খুলে শুনে রাখ আমি তোর স্বামী হই।তুই যখন ক্লাস ফোরে পড়িস আর আমি ক্লাস নাইনে তখন তকে বিয়ে করেছি আমি।সেটা শুধু তোর বাবা,মা আর আমার পরিবারের লোক জানে আর কেউ জানে না।এতদিন তোর বড় হওয়ার অপেক্ষায় তকেও কিছু জানাই নি কিন্তু আর নয়।এবার তকে বউ সাজিয়ে ঘরে তুলব আমার,ভালবেসে রাখব কাছে খুব যত্ন করে।তোর এত অবহেলা আমার আর শয্য হচ্ছে না,বুকের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে রে।বুকের ভিতরে প্রতিনিয়ত তোকে হারানোর ভয় তাড়া করে।তখন ইচ্ছে করে তকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে,ভালবেসে রাখব কাছে দূরে যেতে দিব না তকে।কিন্তু পারি নি,আমি সেই সুখটা পাই নি রে।প্রতিনিয়ত তোকে হারানোর ভয়ে মনের আগুনে পুড়েছি আমি।যে আগুন নিভাতে তোর প্রয়োজন ছিল কিন্তু তুই কাছে থাকার পরও কাছে পাই নি।প্রতিনিয়ত তোর অবহেলার পাত্র হয়েছি,কিন্তু আর পারছি না আমি।পারছি না তোর অবহেলা শয্য করতে।এবার আমার ভালবাসা চাই তোর ভালবাসা চাই,তকে চাই নিজের করে।তোর ভালবাসা দিয়ে দূরে করে দে না আমার সমস্ত কষ্ট।আমি যে তোর ভালবাসার কাঙাল,একটু ভালবাস না আমায়।”

কথাগুলো বলেই উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।আমি এক পলকে উনার দিকে তাকিয়ে রয়েছি,আমার চোখেও পানি।উনি আমার স্বামী,আর উনি আমাকে এতটা ভালবাসে।কেউ কাউকে এতটা ভালো কীভাবে বাসতে পারে,মনের ভিতর কেমন যেন একটা সুখের হাওয়া বইছে।আমাকে কেউ এতটা ভালবাসে, আমাকে পাওয়ার জন্য এতটা মরীয়া হয়ে আছে!আমি ত ভাগ্যবতী উনার মত একজনের ভালবাসা পেয়ে।উনার ভালবাসার কাছে ত কাব্য ভাইয়ের প্রতি আমার ভালবাসা তুচ্ছ।উনি আমার এত অবহেলার পরও আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।আমি এমন একজনকে রেখে এতদিন মরীচিকার পিছনে ছুটে এসেছি।জীবনকে কী ২য় সুযোগ দেয়া যায় না! উনার ভালবাসায় কী আমি নিজেকে রাঙাতে পারি না!পারি না সবটা ভুলে উনার ভালবাসায় সারা দিতে?পারি না নতুন করে ভালবাসতে?

কথাগুলো ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম,উনাকে ফিরিয়ে দিব না।উনার ভালবাসায় সারা দিব আমি।কথাটা ভেবেই আমি উনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসি আর উনার গালে হাত দেই আর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠি,,,

“পারবেন আমাকে নতুন করে ভালবাসা শিখাতে?”

উনি আমার দিকে অবাক চোখে তাকায়,আমি সেটা দেখে আবারও বলে উঠি,,,

“ভালবাসতে চাই আপনাকে।”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাইয়ার মুখে এক চিলতে হাসির আবাস দেখা যায়।আর সাথে সাথে ঝড়ের গতিতে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।এই কান্না সুখের কান্না।আমিও চোখ বন্ধ করে উনাকে বাহুডোরে আগলে নেই।আমি আমার উওর পেয়ে গেছি।

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৯

সাদাফ ভাই এবার আমাকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে উঠে,,,

“কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না ত!”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই যে যাব না।সাদাফ ভাইয়া মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,

“আমাকে ছেড়ে যেতে চাইলেও যেতে দিব না তোমাকে,তুমি সারাজীবন আমার সাথে থাকবে,আমার পাশে থাকবে।কখনও ছেড়ে যাওয়ার কথা ভুল করেও ভেবো না তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

আমি উনার কথা শুনে এবার একটু মজা করে বলে উঠি,,,

“সম্মতি দিতে না দিতেই ঠান্ডা গলায় থ্রেট মারছেন?”

উনার সোজাসাপ্টা কথা।

“হু মারছি ত!”

“ত মানে কী!এমন করলে খেলব না আমি থুক্কু থাকব না আমি।”

“তোমাকে খেলতে কে বলেছে!আর তুমি চাইলে না থাকতেই পারো কিন্তু আমি ত রাখব।”

কথাটা বলে উনি এবার আমার কানের কাছে এসে আস্তে করে বলে উঠে,,,

“ভালবেসে রাখব কাছে।”

সারা শরীরে আলাদা এক শিহরন বয়ে গেলো আর উনার কথাটা কেমন নেশা ধরিয়ে দিয়েছে।আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলি,উনি এবার আমার কানে হালকা একটা কামড় বসিয়ে দেয়।আমার মুখ দিয়ে তখন বেরিয়ে আসে,,,

“আহহ্ সাদাফ ভাই লাগছে ত।”

উনি কথাটা শুনে আবারও একই কাজ করে,এবার একটু জোড়েই কামড় বসিয়ে দেয়।আমি এবার উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠি।

“বলছি ব্যাথা লাগছে তারপরও একি কাজ করে যাচ্ছেন আপনি?”

“বলছি ভাই ভাই না করতে তারপরও ভাই ভাই করে যাচ্ছো তুমি।”

মাটিতে বসে দুই হাত গালে দিয়ে গাল ফুলিয়ে সাদাফ ভাই কথাটা বলে উঠল।উনার কথাশুনে আমার বুঝতে বাকি রইল না যে উনি কেন এমন করেছে!আমি উনাকে আরেকটু রাগানোর জন্য বলে উঠি।

“বাহ্ রে এতবছর ভাই ভাই করে গলা শুকিয়ে ফেললাম আর আপনি এখন হঠাৎ করে এসে বলছেন ভাই না বলতে।সেটা ত হবে না,আমি ভাই বলেই ডাকব।”

সাদাফ ভাই এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়।

“এতদিন ত জানতে না আমি তোমার স্বামী হই কিন্তু এখন ত জানো ত এখন এত ভাই ভাই করবে না।তুমি ভাই বলে ডাকলে নিজের বাচ্চাদের মুখে মামা ডাক শুনতে হবে।নাউজুবিল্লাহ এমনটা আমি চাই না,তাই ভাই বলা বারন।নয়ত লাভ টর্চার চলবে তোমার উপর,সো সাবধান প্রেয়সী।”

উনি আমার গালে উনার নাক ঘসে কথাগুলো বলেছে।উনার এমন ছোয়ায় আমি একদম ফ্রিজড হয়ে রয়েছি।কিন্তু তারপর নিজেকে সামলে উনার থেকে ছোটার চেষ্টা করতে করতে উনাকে প্রশ্ন করি।

“সব কথা সবদিকে কিন্তু আমাকে এটা বলেন ত এত ছোট বয়সে আমাদের বিয়ে হল কেন?তখন ত দুজনেই খুব ছোট ছিলাম,আর আপু ত আমার বড়।ত সে অনুযায়ী আপুর আগে বিয়ে হত কিন্তু আপুর আগে বিয়ে না হয়ে আমার সাথে আপনার বিয়ে কেন হল?”

সাদাফ ভাইয়ের এবার আমার কথাটা শোনার পর উনার মুখের রং পাল্টে যায়।উনি আমাকে ছেড়ে পিছন ঘুরে দাঁড়ায়,আমি বুঝার চেষ্টা করছি কী চলছে উানর মনে।হঠাৎ এমন মুড চেন্জ হল কেন বুঝতে পারছি না।আমি উনার কাঁধে হাত রাখতেই উনি পিছন ফিরে বলে উঠে,,,

“এখন বলা যাবে না,এটা সিক্রেট তাই এই সিক্রেটটা স্পেশাল দিনে স্পেশাল ভাবেই বলব।”

“সেই স্পেশাল দিনটা কবে?”

“খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে,এবার তুমি শান্ত হয়ে বসো ত।ছোট মাথায় এত চাপ দিও না,সময়মত সব জানতে পারবে।”

আমি উনার কথাশুনে চুপ করে ভাবতে থাকি কী এমন কারন আছে যেটা উনি এখন বলতে চাইছে না।উনি এবার আমাকে বসিয়ে আমার পাশে বসে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে আমার হাত উনার মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে,,,

“তা মিসেস সাদাফ বড় বোনকে কিডন্যাপ করিয়ে বিয়ে দিলেন আর আমাকে জানালেন না কেন?”

আমি উনার কথাশুনে অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাই,উনি জানল কীভাবে?

“আপনি জানলেন কী করে?আমি যে আপু আর মেঘ ভাইয়াকে বিয়ে দিয়েছি।”

“আমি সব জানি মেডাম,কিন্তু তুমি আমাকে দাওয়াত না দিয়ে বিয়ে দিয়েছো এটা একদম ঠিক করো নি।পাঠকগনও অভিযোগ করেছে তুমি তাদের বিরিয়ানির ট্রিট দেও নি।”

“কথা না ঘুরিয়ে বলুন আপনি কীভাবে জানলেন?”

কথাটা হালকা রেগেই বলে উঠি,উনি সেটা দেখে আমাকে উনার আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে আমার হাতে একটা চুমু দিয়ে বলে উঠে।

“বলছি না বলেই কত রাগ আর বললে যে কী করবা সেটাই ভাবছি আমি।”

“কথাটা বলে দিলেই আমাকে রাগ দেখাতে হয় না।”

“আচ্ছা বলব,কিন্তু প্রমিস করো কথাটা বললে তুমি আবার তোমার তায়কোয়ন্দোর স্পেশাল আইটেম গুলো এপ্লাই করবে না আমার উপর।”

“তায়কোয়ন্দো এপ্লাই করার মত কাজ করলে অবশ্যই এপ্লাই করব,তাই তাড়াতাড়ি বলুন।”

“না বাবা তবে বলা যাবে না,মাইর খাওয়ার শখ জাগে নি এখন আমার।”

“বলুন বলছি,নয়ত নাকে ঘুসি দিয়ে নাক বোঁচা করে ফেলব।”

উনি হাসল আমার কথায়।আমি উনার হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে উনার বুকে হালকা করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম।

“বলুন বলছি।”

উনি আমার হাতটা উনার বুকে চেপে ধরে আকাশের দিকে স্থীর দৃষ্টিতে তাকায়,আমি ছাড়াতে চাইলে শক্ত করে চেপে ধরো।

“ছোটার চেষ্টা করে লাভ নেই,আমি না চাইলে,না ছাড়লে ছুটতে পারবে না।”

“এত কথা বলতে পারছেন আর যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটা বলতে পারছেন না!আমার রাগ হচ্ছে এবার,তাড়াতাড়ি বলুন নয়ত আমি রেগে গেলে ভালো হবে না একদম।”

“তোমার উপর ২৪ ঘন্টা একজন আড়ালে থেকে নজর রাখে।”

“মানেহ?কিন্তু কেন?”(অবাক হয়ে)

” আমি বলেছি তাই।”

“সেটাই কেন বলেছেন?”

“এমনি।”

আমার দিকে তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে কথাটা বলে উঠে।উনার এমন ভাব দেখে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।

“ঐ মিয়া ছাড়ুন ত আমাকে,আপনার এত হেয়ালি ভালো লাগছে না এখন।ভালো করে বলুন ত,এত রহস্য ভালো লাগছে না।”

“তবে শোন,তোমার লাইফ রিক্স আছে।আর তোমার সেফটির জন্যই এসব করা।তুমি হয়ত নিজেকে রক্ষা করতে পারবে কিন্তু তারপরও আমি চিন্তায় থাকি তোমাকে নিয়ে।তাই আমি যাতে তোমার সব খবর পেতে পারি তার জন্য লোক লাগিয়েছি।”

“লাইফ রিক্স!আমার?”

“হে তোমার,এখন দয়াকরে আর কোন প্রশ্ন করো না আমাকে।সময় হলে আমিই তোমাকে সবটা জানিয়ে দিব।তবে একটা কথা মনে রেখো আমি যা করব তোমার ভালোর জন্যই করব।আর আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না,তোমাকে কেউ আঘাত করতে চাইলে আগে আমাকে ফেস করতে হবে।”

উনার কথাশুনে চিন্তা হচ্ছে,কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।আমার লাইফ রিস্ক!কিন্তু কার থেকে?আর কেন!এমন অনেক প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরে চলেছে।সাদাফ ভাই আমাকে চিন্তা করতে দেখে কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠে,,,

“কাল বাড়িতে কীভাবে মেনেজ করবে?”

উনার কথাশুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসি,আর মাথায় নতুন করে অনেক চিন্তারা ভর করে।সত্যিই ত কাল বাবাকে কীভাবে মেনেজ করব?বাবা যে রাগী জানলে ত দু বোনকেই কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসাইয়া দিব।কিন্তু ঐদিক দিয়ে ত আপুকেও বড় মুখ করে বলেছি বাবাকে মেনেজ করে আপুর সাথে কথা বলিয়ে সব ঠিক করে ফেলব।কিন্তু এখন কী হবে?কী করব?কীভাবে বাবাকে মেনেজ করব?
সাদাফ ভাইয়া এবার আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে,,

“কোথায় হারালে?”

আমি আনমনেই বলে উঠি,,,

“না ভাবছি বাড়িতে কীভাবে মেনেজ করব?”

“মানেহ!তুমি ভাবো নি কীভাবে বাড়িতে মেনেজ করবে!”(অবাক হয়ে)

আমি মাথা নেড়ে না জানালে উনি এবার বসা থেকে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,,,

“না ভেবে এত বড় একটা কাজ কীভাবে করলে তুমি?আঙ্কেল জানতে পারলে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিবে।”

আমি চিন্তায় হাতের নখ কামড়াচ্ছি,সত্যি এত বড় একটা কাজ করার আগে আমার ভেবে নেয়া উচিত ছিল।এখন ত চিন্তার জন্য কিছু ভাবতেও পারছি না।কেউ একজন ঠিকই বলেছিল “ভাবিয়া করিও কাজ করিও না ভাবিও না”।কথাটা যে কতটা ঠিক তা এখন হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি।

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-১৬+১৭

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৬

কাব্য তার বারান্দায় বসে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে।কাব্য খুব ভেঙ্গে পড়েছে শীলা আর মেঘের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে।তার মা,বোন,ভাই তাকে দায়ী করছে বিয়ে ভাঙ্গার জন্য।তার জন্য প্রতিনিয়ত তারা কাব্যকে এড়িয়ে চলছে,বাড়িতে কারো মুখে কোন হাসি নেই।কাব্য এখন অপরাধ বোধে ভুগছে,সেদিন তার মায়ের বলা কথাগুলো আর মেঘের বিয়ে ভাঙ্গায় কাব্যর মনে ভালোই দাগ কেটেছে।যার ফল কাব্য এখন অপরাধ বোধে ভুগছে,কাব্য নিরবে চোখের পানি ফেলছে আকাশের দিকে তাকিয়ে।তখনই কাব্যর রুমে প্রবেশ করে তার বাবা।উনি কাব্যকে ঘরে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় আসে আর দেখে কাব্যর চোখে জল।উনি সেটা দেখে কাব্যর কাঁধে হাত রাখে,কাব্য কারো ছোঁয়া পেয়ে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে তাকায়।আর দেখে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে,সেটা দেখে কাব্য হাসার চেষ্টা করে বলে উঠল,,,

“বাবা কিছু বলবে!”

“এভাবে আর কত নিজেকে কষ্ট দিবি!হসপিটাল থেকে ফিরেছিস আজ চার দিন,আর এসেই নিজেকে আবারও ঘর বন্ধি করে রেখেছিস।তুই এভাবে থাকলে কী আমাদের ভালো লাগে!”

“বাবা আমি ত ঠিকই আছি,আর শরীরটা ভালো লাগছে না তাই ঘর থেকে বের হচ্ছি না।তোমরা প্লিজ আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।”

“আমাকে মিথ্যা বলিস না কাব্য,আমি বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থা।যেভাবে তোর মা,হিয়া আর মেঘ তকে এড়িয়ে চলছে তাতে করে তোর মন খারাপ হওয়ারই কথা।”

“বাবা তাদের কী এমনটা করা স্বাভাবিক নয়?”

“মানেহ?”

“মানে কিছু না,তুমি যাও এখান থেকে আমি একা থাকতে চাই।”

“কাব্য তুই কী কোন ভাবে তোর মা,হিয়া আর মেঘের মত নিজেকে দায়ী করছিস মেঘ আর শীলার বিয়ে ভাঙ্গার জন্য!”

“বাবা এটা ভাবার কী আছে!এটাই ত সত্যি আমার জন্যই ত ফুপা ভাইয়ার বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছে।ভাইয়া আর শীলা ত একে অপরকে খুব ভালবাসে আর তাদের ভালবাসাকে পূর্নতা দেয়ার জন্যই ত বিয়েটা ঠিক হয়েছিল।কিন্তু আমার কৃতকর্মের জন্য তারা আজ আলাদা।আমি জানি ভালবাসার মানুষটাকে হারালে ঠিক কতটা কষ্ট হয়।আর ভাইও যে কতটা কষ্ট পাচ্ছে সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি,আমার কর্ম ফল আমার ভাই পাচ্ছে।আমি যদি সাবিহার সাথে অমানুষের মত আচরনগুলো না করতাম তবে আজ এসব হত না।”

“কাব্য তুই যা বলছিস সেটা পুরোপুরি সত্যি নয়,তুই সাবিহাকে আঘাত করেছিা সেটা অন্যায় তার জন্য মেঘের সাথে বিয়ে ভাঙ্গার কোন সম্পর্ক দেখছি না আমি।”

“বাবা প্লিজ যাও এখান থেকে,এত সম্পর্ক খুজতে আমার ভালো লাগছে না।যাও এখান থেকে নয়ত আমি বেরিয়ে যাব।”

কাব্যর কথাশুনে তার বাবা চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে যায়,আর কাব্য তার ঘরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে নিশানকে ফোন লাগায়।কিন্তু ফোন বিজি বলছে,কাব্য বুঝতে পারছে নিশান তাকে ব্লক করেছে তাই বিজি বলছে।কাব্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ড্রয়ার থেকে নতুন একটা সিম কানেক্ট করে,আবারও ফোন লাগায় নিশানকে।কয়েকবার রিং হওয়ার পরই নিশান ফোনটা ধরে সালাম দিয়ে বলে উঠে,,,

“হ্যালো,,,আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?”

“ওয়ালাইকুম সালাম,,,দোস্ত আমি কাব্য।”

নিশান কাব্যর কথাশুনে রেগে যায় আর বলে উঠে,,,

“তকে না করেছি না আমার সাথে যোগাযোগ না করতে,তুই আবার আমাকে ফোন দিয়েছিস কোন সাহসে!”

“দোস্ত প্লিজ শান্ত হ,আর ফোনটা কাটিস না প্লিজ।আমার তোর সাথে অনেক কথা আছে,আমি খুব পেরায় আছি দোস্ত একটু সাহায্য কর আমাকে।”

অনুরোধ করে নরম গলায় বলে উঠে কাব্য,কাব্যর এভাবে বলার কারনে নিশানের কিছুটা খারাপ লাগে।তাই নিশান নিজেকে শান্ত করে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“কী হয়েছে তোর?”

তারপর কাব্য নিশানকে সবটা বলে যা যা করেছে সাবিহার সাথে আর মেঘের বিয়ে ভাঙ্গার কথাও বলে।সবটা শুনে নিশান খুব রেগে যায় আর বলে উঠে,,,

“ছিঃ কাব্য তুই খারাপ এটা জানতাম কিন্তু তুই যে এতটা খারাপ সেটা জানতাম না।তোর কী লজ্জা করছে না!এমন একটা কাজ কীভাবে করতে পারলি তুই?”

“দোস্ত আমি অন্যায় করেছি,খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি দোস্ত।আমি এখন প্রতিটা মুহূর্তে অপরাধ বোধে ভুগি,আমি কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।দোস্ত বল না আমার কী করা উচিত?আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না কীভাবে সবটা ঠিক করব!”

“তুই যা করেছিস তাতে করে সবটা ঠিক করা সম্ভবও নয়,তুই মানুষের কাতারেই পড়িস না।তুই ফোন রাখ আমাকে আর কল করবি না।”

“দোস্ত প্লিজ সাহায্য কর,বিপদে বন্ধুই ত বন্ধুকে সাহায্য করে,সঠিক পথ দেখায়।এখন তুই এভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি কী করব?”

“এতদিনে বুঝতে পারলি বন্ধুরা সঠিক পথ দেখায়!আরে আগে যখন চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতাম ইশা ভালো মেয়ে নয়,ইশার সাথে রিলেশন জড়াস না কিন্তু শুনেছিলি তখন আমাদের কথা?”

“দোস্ত প্লিজ আর অপরাধ বোধ বাড়াস না আমার,আমি পারছি না এভাবে অপরাধ বোধে ভুগতে।”

“তুই যা করেছিস তাতে করে তোর এটাই প্রাপ্য আর তকে সাহায্য করার কোন রাস্তা দেখছি না।কিন্তু বন্ধু হিসেবে একটা কথাই বলব তুই যার সাথে অন্যায় করেছিস তার কাছে ক্ষমা চা।”

কথাটা বলেই নিশান ফোনটা কেটে দেয়,আর কাব্য ফোনটা রাখার পর তার গাল বেয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।আর কাব্য সিদ্ধান্ত নেয় সে সাবিহার বাড়িতে যাবে,গিয়ে সাবিহার কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইবে।আর মেঘ আর শীলার বিয়েটা দেয়ার জন্য অনুরোধ করবে,তার জন্য তাকে যদি অপমানিত হতেও হয় তাই হবে।এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে কাব্য বেরিয়ে গেলো।

______________________________________

শীলা আর মেঘকে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে,আর তাদের সামনেই কালো হুডি পড়ে বসে আছে সাবিহা।শীলা আর মেঘের মুখও বাঁধা যার জন্য তারা কোন কথা বলতে পারছে না।শীলা রেগে সাবিহার দিকে তাকিয়ে আছে আর সাবিহা সেদিকে না তাকিয়ে মনযোগ দিয়ে ফোন টিপছে।এভাবে কিছুক্ষন কাটার পরও যখন কাজি আর আসে না তখন সাবিহা কাউকে ফোন দেয় আর ধমকে বলে উঠে,,,

“কাজিকে নিয়ে আসতে এতক্ষণ লাগে!এদিকে ত দুজনে ছোটার জন্য ছটফট করছে।তাড়াতাড়ি কাজি নিয়ে আয় আর বিয়েটা দিয়ে শান্ত করি দুজনকে,আর আমরা দুই বান্ধবীও শান্ত হই।”

সাবিহা কথাটা বলে অপর পাশের উওর পেয়ে মুচকি হেঁসে ফোনটা কেটে দেয়।আর মেঘ আর শীলার দিকে তাকিয়ে দেখে তারা দুজনে অবাক চোখে তাকে দেখছে।সাবিহা সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“আমি কথা বলতে পারছি এটা দেখে তোমরা খুব অবাক হয়েছো তাই ত!”

শীলা মাথা নেড়ে না বুঝায় যার অর্থ এর জন্য নয়,সাবিহা আবারও বলে উঠে,,,

“তবে কীসের জন্য এভাবে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছো আমার দিকে!”

মেঘ এবার সাবিহাকে ইশারা করে বলে মুখের বাঁধন খুলে দিতে সেটা দেখে সাবিহা বলে উঠে,,,

“মুখ খুলব তবে চিৎকার করা যাবে না,চিৎকার করলে তোমার বউয়ের উপর তেলাপোকা ছেড়ে দিব কিন্তু!”

মেঘ মাথা নেড়ে না বুঝায় যার অর্থ সে চিৎকার করবে না।সাবিহা তার উওর পেয়ে মেঘের মুখের বাঁধন খুলে দেয় আর মেঘ বলে উঠে,,,

“তোর সাথে কী হিয়াও যুক্ত আমাদের কিডন্যাপ করার পিছনে!”

“ইয়েস জিজু একদম,আমরা দুই বান্ধবী মিলেই তোমাদের বিয়ে দিব।তোমাদের ত ভালো করে বুঝাইলাম কিন্তু তোমরা ত বুঝলে না।পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করবে না তোমরা তাই এই পদ্ধতি।আমরা দুই বোন+বান্ধবী থাকতে একজোড়া চড়ুই আলাদা হয়ে যাবে সেটা ত হবে না।তাই এই পদ্ধতি,এখন বলো ত আমাদের সারপ্রাইজটা তোমাদের কেমন লেগেছে?”

“হাতের বাঁধনটা খুলে দে তারপর দেখাচ্ছি কেমন লাগছে?”

“দিব ত,হাতের বাঁধন অবশ্যই খুলে দিব।কিন্তু এখন নয় যখন কাজি আসবে আর তোমরা রেজিষ্ট্রি পেপারে সই করবে তখন।ততক্ষণ এভাবেই বসে থাকো এবং আপু আর তুমি দুজনে মিলে চোখে চোখে কথা বলো।”

কথাটা বলে সাবিহা মেঘের মুখ বাঁধতে গেলে মেঘ বলে উঠে,,,

“এক মিনিট,এক মিনিট দাঁড়া আমার আর একটা প্রশ্ন আছে।”

“আবার কীসের প্রশ্ন?”

“তুই কথা বলতে পারছিস কীভাবে?”

“মানুষ কথা বলে কীভাবে সেটাও জানো না তুমি!আপু দেখ তোর জামাই ডাক্তার হয়েও জানে না মানুষ কীভাবে কথা বলে!অবশ্যই ঠোঁট,জিহ্ব,,

” কথা না ঘুরিয়ে বল,নয়ত মাইর খাবি আমার হাতে।”

“আরে এত চাপ নিওনা আমার কথা বলা নিয়ে,আমি ত স্ট্রং গার্ল তাই নিজেকে সুস্থ নিজেই করেছি।কথা না বলাটা কতটা কষ্টের সেটা আমি হাড়েহাড়ে টের পেয়েছি এতদিন।তাই প্রতি সকাল,বিকাল,রাতে সবার আড়ালে কথা বলার চেষ্টা করতাম।আর সফলও হই গতরাতে,আর দেখো আমি এখন কথা বলতে পারছি।”

“কিন্তু এভাবে জোরপূর্বক কথা বলানোতে কিন্তু গলায় সমস্যা হতে পারে!”

“আহ্ জিজু এখন এত সমস্যা সমস্যা করো না ত,আমি কথা বলতে পারছি সেটা এনজয় করতে দাও।আর নিজেদের বিয়েটাও এনজয় করো বুঝতে পেরেছো।”

কথাটা বলেই সাবিহা মেঘের মুখটা আবারও বেঁধে দেয়,আর অপেক্ষা করতে থাকে কখন হিয়া আসবে কাজি নিয়ে।সাবিহার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হিয়া কাজিকে নিয়ে পৌঁছায়।হিয়াকে দেখে সাবিহা জড়িয়ে ধরে,হিয়াও জড়িয়ে ধরে সাবিহাকে আর বলে উঠে,,,

“বইন অবশেষে আমার বিয়াইন হব উফফ ভাবতেই কী যে মজা লাগছে আমার।”

“হুম বইনা আমদের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে এবার,বোন+বান্ধবী+বিয়াইন।মন চাইতাছে এই খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দিতে কিন্তু আপাতত এই ইচ্ছেটা ধমিয়ে রেখে তেনাদের বিয়ের কাজটা সারি চল।”

কথাটা বলে সাবিহা আর হিয়া,মেঘ আর শীলার সামনে যায়।শীলা মুখ ঘুরিয়ে নেয় সেটা দেখে সাবিহা বলে উঠে,,,

“আপু চুপচাপ বিয়েটা করে নে নয়ত জোড় করে তদের বিয়েটা দিব,যেভাবে জোড় করে কিডন্যাপ করে তুলে এনেছি তদের।”

তারপরও শীলা তাকায় না,সেটা দেখে সাবিহা মেঘের দিকে তাকায় আর বলে উঠে,,,

“জিজু তোমার বউকে বলো চুপচাপ বিয়েটা করতে নয়ত এখানে এই মুহুর্তে আমি আর হিয়া তোমাদের সামনে নিজেদের আঘাত করব।”

কথাটা শুনে হিয়া,শীলা আর মেঘ চোখ বড়বড় করে তাকায় সাবিহার দিকে।হিয়া সাবিহার কানে কানে বলে উঠে,,,

“বইন এইটা কী কছ?এটা ত কথা ছিল না।”

“চুপ কর আর দেখ কী হয়?”

হিয়া চুপ করে যায়,আর সাবিহা নিজের পকেট থেকে একটা ব্লেড বের করে সেটা দুইভাগ করে।একটা নিজের হাতে নেয় আরেকটা হিয়ার হাতে দেয়।হিয়া অনিচ্ছা স্বত্বেও ভয়ে ভয়ে ব্লেডটা হাতে নেয়,আর সাবিহা নিজের হাতের রগে ব্লেডটা সেট করে শীলা আর মেঘকে বলে উঠে,,,

“বিয়েটা করবে নাকি আঘাত করব?”

শীলা সাবিহার হাতের দিকে একবার তাকিয়ে মেঘের দিকে তাকায় আর তাড়াতাড়ি মাথা ঝাঁকিয়ে উওর দেয় সে বিয়ে করবে।আর মেঘও একই পদ্ধতি অবলম্বন করে জানায় তারা বিয়ে করবে।সাবিহা বাঁকা হেসে কাজিকে বিয়ে পড়াতে বলে শীলা আর মেঘের হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে জড়িয়ে ধরে।তারপর মেঘ আর শীলার বিয়েটা সম্পন্ন হয় খুব ভালো করেই।

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৭

বঁধুবেশে মুখটা কাচুমাচু করে মামুর বাড়ির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আছে আপু,তার পাশেই মেঘ ভাইয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আর তাদের সামনে মামা বুকে হাত গুজে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে,আর মামি মা গেছে বরনডালা সাজাতে।অন্যদিকে আমি আর হিয়া দুজনে আপুর ট্রলিব্যাগের উপর বসে বসে হাই তুলছি।আপুকে কিডন্যাপ করার আগে আপুর প্রয়োজনীয় সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিলাম এই ব্যাগে।আমাদের ভাব এমন যেন কিছুই হয় নি,কিন্তু মামুর মোটেও শয্য হচ্ছে না এসব কিছু তাই তিনি রেগে বলে উঠে,,,

“তোকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করছে আমার,ছিঃ তুই কীভাবে পারলি এভাবে পালিয়ে বিয়ে করতে?পরিবারের বিরুদ্ধে কীভাবে গেলি তুই!”

আমি এবার আরেকটা হাই তুলতে তুলতে বলে উঠলাম,,,

“মামা তুমি না অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেছো।এক চোখে নুন আরেক চোখে মরিচ দেখো।”

“কী বলতে চাইছিস তুই?”(রেগে চিৎকার করে)

“আহ্হা মামা এভাবে চেঁচাচ্ছো কেন?আমি ত কানে কালা না,সবই শুনতে পাই তাই আস্তে বলো।”

“বেশি কথা না বলে বল কী বলতে চাইছিস এক চোখে নুন আরেক চোখে মরিচ দেখি মানে কী?”

“সেটা এভাবে শান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেই পারো,এত চেঁচানোর কী আছে?”

“এবার কিন্তু কানের নিচে দিব একটা।”

“এত হাইপার হয়ো না ত,আমি কথাটা দিয়ে বুঝাতে চাইছি যে তুমি দুজনকে দুই চোখে দেখো।কাব্য ভাই এতকিছু করল সেটা তোমার চোখে পড়ে না,আর তুমি কাব্য ভাইকে কিছু বলোও না উল্টো সাপোর্ট করো।আর মেঘ ভাইয়া বিয়ে করছে তার জন্য ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতেই তোমার লজ্জা করছে!বাহ!বাহ!বাহ! মামু তোমার নামটা ত স্বর্নাক্ষরে লেখা দরকার।নিজেরই ত দুইটা ছেলে কিন্তু দুজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কাজকর্ম করে প্রকাশ করো যেন একজন পানিতে ভেসে এসেছে।আরেকজন সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে।কী রে ঠিক বলেছি না আমি?”

কথাগুলো আমি তাচ্ছিল্য হেঁসে বললাম,আমার কথাশুনে হিয়া বোকার মত একবার আমার দিকে তাকায় আরেকবার মামুর দিকে তাকায়।বেচারি পড়ে গেছে মহাবিপদে কার পক্ষ নিবে বুঝতে পারছে না।আমার পক্ষ নিলে মামা দোলাই দিব আর মামার পক্ষ নিলে আমি হিয়াকে ডিটারজেন্ট ছাড়াই ধুয়ে দিব।এসব ভেবে হিয়া আমতা আমতা করে বলে উঠল,,,

“আআআমি কককী বলব?”

“আছাড় দিয়া ব্যাঙ বানাইয়া ফেলমু তরে,যেটা বলতে বলছি তার উওর দে।”

এবার হিয়া ফিসফিসিয়ে আমার কানের কাছে এসে বলে উঠল,,,

“বইন ছাইড়া দে,আব্বুর পক্ষে কথা না বললে পরে আমাকে উস্টা দিয়ে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে ফালাইব।যেটা আমি একদমই চাইছি না,প্লিজ বইন মাফ কর আমারে।”

“কথাটা একবার যখন বলেই দিয়েছি তখন ত তকে বলতেই হবে রে বইনা,নয়ত তোরে আমি যে কী করব নিজেও জানি না।”

“হিয়াকে এত চাপ না দিয়ে তোর বোন আর জিজুকে বল ঠিক করে দাঁড়াতে বরন করতে হবে নাকি!”

মিসেস লতা বরনডালা নিয়ে এসে কথাটা বলল,সাবিহা বলে উঠল,,,

“মামি মা তুমি না এত্তগুলো ভালো,কী সুন্দর আপু আর ভাইয়া থুক্কু জিজুকে মেনে নিয়েছো।আমার মামার মত ভিটকেল মার্কা না তুমি।”

আমার কথাশুনে সবাই মুখ টিপে হাসছে আর মামা রেগে বলে উঠল,,

“এই তুই কী বললি আমাকে?আমি ভিটকেল?আমি?”

“তুমি চুপ করে ঘরে যাও ত,এখানে যত থাকবে তত বেশি বকবক করবে।যাও এখান থেকে,ভালো মুডটা নষ্ট করো না।”

মামিমার কথা শুনে মামা কিছু না বলে রেগে হনহনিয়ে তার ঘরে চলে যায়।আমি এবার মামিমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠি,,,

“মামাটা যে কেন তোমার মত এত ভালো হলো না গো!”

“হয়েছে ছাড় এবার,ভালবাসা পড়ে দেখাস আগে বরন ত করি।”

আমি হাসিমুখে সম্মতি জানিয়ে মামিমাকে ছেড়ে দাঁড়াই,আর মামিমা এক গাল হেঁসে বরন করে নেয় আপু আর জিজুকে।কিন্তু আপু আর ভাইয়ার মুখে কোন হাসির আবাস নেই,যেটা আমাকে বড্ড বেশি ভাবাচ্ছে।

“এভাবে মুখটা গোমড়া করে না থেকে একটু হাসি দে দুজনে।এতদিন ত দুজনের একজনও শান্তিতে ঘুমাতে পারিস নি,এখন যখন দুজনে এক হলি ত এভাবে ওপ করে আছিস কেন?”

মামিমার কথা শুনে আপু আর নিজেকে সামলাতে পারে না।মামিমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে,আর বলে উঠে,,,

“বববাবা মেনে ননননিবে না,ববাবা খখুব রাগ কককরবে।”

“এই পাগলী মেয়ে এভাবে কাঁদছিস কেন?শান্ত হ,তোর বাবার সাথে আমি কথা বলব।সব ঠিক হয়ে যাবে,কাঁদিস না মা আমার।”

আপুর কান্না দেখে আমার খুব খারাপ লাগে,আমি আপুর কাছে এগিয়ে গিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে বলে উঠি,,,

“আপু তুই কাঁদিস না,আমি বাবাকে মেনেজ করে নিব।আর বাবাকে মেনেজ করে দুইদিনের মধ্যেই তোর সাথে কথা বলিয়ে দিব।তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না আপু,নতুন জীবনটা সুন্দর করে সাজা।তোর এই বোন থাকতে কোন কষ্ট পেতে দিবে না তকে।”

আমার কথাশুনে আপু মামিমাকে ছেড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,,,

“তোর মত বোন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার,জীবনে হয়ত কোন ভালো কাজ করেছি যার ফল আল্লা আমাকে তোর মত একটা বোন দিয়েছে।তুই যে আমাকে কোন কষ্ট পেতে দিবি না সেটা আমি বুঝতে পেরেছি রে।তুই না থাকলে হয়ত আমার আর মেঘের বিয়েটা হত না।দুজনেই হয়ত গুমরে গুমরে মরতাম,কিন্তু পরিবারের দিকে তাকিয়ে কিছু করতে পারতাম না।তারপর তুই যেভাবেই হোক আমাদের দুজনকে এক করেছিস।কিন্তু বাবা মেনে নিবে না আমাদের,বাবা খুব রাগ করবে।হয়ত আমাকে মেয়ে বলে পরিচয়ই দিবে না,আর এমনটা হলে আমি বাঁচব না।”

“আপু প্লিজ বাজে কথা বলিস না,আমি তকে কথা দিচ্ছি এমন কিছুই হবে না।আমি বাবাকে রাজি করাব তদের যাতে মেনে নেয়।তুই এভাবে কাঁদিস না প্লিজ,এই জিজু আপুকে বলো না কান্না থামাতে।এভাবে কাঁদলে এবার আমিও আপুর দুঃখে দুঃখিত হয়ে হেঁসে ফেলব।”

আমার কথা শুনে আপু আমাকে ছেড়ে আমার পিঠে একটা চাপড় মেরে বলে উঠে,,,

“সিরিয়াস মোমেন্টেও তোর মজা না করলে চলে না তাই না!”

“এত সিরিয়াস মোমেন্ট টোমেন্ট আমি মেইনটেইন করতে পারব না,যখন মজা করতে ইচ্ছে করবে করব।আবার যখন হাসতে ইচ্ছে করবে তখন হাসব।”

“হয়েছে হয়েছে এবার থাম তোরা,মেঘ শীলাকে ঘরে নিয়ে যা।কোলে করে নিয়ে যাবি কিন্তু আর হিয়া ফোনটা নিয়ে ভিডিও কর।এমন একটা মুহুর্তের স্মৃতি হিসেবে রেখে দিব,পরে নিজেদের ছেলে মেয়েদেরও দেখাতে পারবি তোরা🤭।”

মামিমার কথা শুনে মেঘ ভাইয়া চোখ বড়বড় করে আপুর দিকে তাকায়।আপুও অবাক চোখে মেঘ ভাইয়ার দিকে তাকায় সেটা দেখে মামিমা বলে উঠে,,,

“এত অবাক হওয়ার কিছু নেই,এটা নিয়ম আমাদের বাড়ির।তাই তাড়াতাড়ি কাজ সার,আর হিয়া তকে ওখানে বসে থাকতে বলি নি এখানে আয়।”

অতঃপর মামিমার কথামত মেঘ ভাইয়া ইতস্তত করে আপুকে কোলে তুলে নেয়।আর আপু লজ্জায় লাল হয়ে ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে মাথা নিচু করে ফেলে।আর সবটা হিয়া ক্যামেরা বন্দি করে ফেলে,সব কাজ সম্পন্ন হলে আমি মামিমার কাছে গিয়ে বলি,,,

“মামিমা আমি এবার আসি,তুমি আপুকে একটু দেখো।”

“রাত ৯ টা বাজে,এত রাতে তুই বাড়িতে যাবি এখন!এত রাতে বাড়িতে গিয়ে কাজ নেই।আজ এখানেই থেকে যা,কাল সকালে চলে যাস।”

“মামিমা বাবা জানতে পারলে রাগ করবে,বাবা এখনও জানে না আপু আর ভাইয়ার বিয়ের কথা।বাবাকে বলেছি দুইবোন আজ রীতা আপু মানে আপুর বান্ধবীর বাসায় এসেছি।আর বাবা যদি আজ রাতের মধ্যে অন্য কারো থেকে বিয়ের কথাটা জানতে পারে তবে রাগ করবে খুব।তাই আমাকে তাড়াতাড়ি গিয়ে বাবাকে মেনেজ করতে হবে।”

“কাল করিস,এখন এত রাতে তকে একা ছাড়ব না আমি।তুই তোর বাবাকে ফোন দিয়ে বল তোরা কাল সকালে চলে আসবি।”

তারপর মামিমাকে শত জোড় করার পরও উনি যেতে দিবে না বলে দেয়।তাই বাধ্য হয়ে রয়ে যাই এখানে,আর বাড়িতেও ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি।কিন্তু তারপরও বাবা চিন্তা করছে,বড় দুইটা মেয়ে বাড়ির বাইরে আছে চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তারপরও বাবাকে মেনেজ করে নিয়েছি।আর এখানে আসার পর কাব্য ভাইয়ের কোন দেখাই মিলল না।বেচারা কী পালালো নাকি?কিন্তু নিলয় ভাইয়া ত বলেছে কাব্য ভাইকে একজন আড়ালে থেকে সবসময় ফলো করে।তবে কাব্য ভাই কই গেলো?দূর বাবা এতকিছু ভেবে লাভ নেই,আপুর বিয়ের ঝামেলাটা সারুক তারপর কাব্য ভাইয়ের ব্যাবস্থা করব।এখন খিদে পেয়েছে খুব,ত খেয়ে আসি।

_____________________________________

রাত ১ টা বেজে ১৩ মিনিট,সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার পাশে আছে,কেউ আমাকে গভীরভাবে দেখে চলেছে।কথাটা ভেবেই ভয়ে ভয়ে চোখ খুললাম,আর চোখ খুলে যেই না চিৎকার দিব ওমনি সাদাফ ভাই আমার মুখ চেপে ধরে।

“হুসসস,মুখ থেকে হাত সরাচ্ছি একদম চিল্লাবে না।”

আমি মাথা নেড়ে সায় জানালে সাদাফ ভাই আমার মুখ থেকে হাত সরায়।আর আমি উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠি,,,

“আপনি এত রাতে এখানে কী করছেন?আর ঘরেই বা আসলেন কীভাবে?”

“এখানে আসা কোন ব্যাপার না,আর এখানে এসেছি তোমাকে নিতে।চলো আমার সাথে!”

আমি উনার কথাশুনে অবাক হয়ে যাই,মানেহ!উনি এতরাতে আমাকে নিতে এসেছে কিন্তু কেন?

“আপনার মাথা ঠিক আছে?এতরাতে কী সব পাগলের প্রলাপ বকছেন?”

“আমার মাথা ঠিকই আছে আর কোন পাগলের প্রলাপও বলছি না।তাই কোন কথা না বলে চলো এখান থেকে।”

“আমি যাব না আপনার সাথে,আপনি এখান থেকে চলে যান নয়ত ভালো হবে না।”

“আর কী ভালো হওয়ার বাকি আছে!সিংহের গুহায় এসে পড়েছো আর এখানে নিজেকে সেফ মনে করে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছিলে!তুমি কী ভুলে যাচ্ছো এখানে কাব্য আছে,আর যখন তখন তোমার বিপদ হতে পারে।”

“আমি কিছু ভুলি নি,আর আমাকে নিয়ে আপনার এত চিন্তা করতে হবে না।আমি নিজের রক্ষা নিজেই করতে পারব তাই আপনি আসুন।”

“আমার সাথে তুমিও যাবে।”

“আপনি কী আমাকে জোড় করছেন?”

“তোমার যদি মনে হয় জোড় করছি তবে তাই,এখন চলো আমার সাথে।”

“আমি যাব না আপনার সাথে,আপনি এখান থেকে যান নয়ত আমি কী করব নিজেও জানি না।”

“আমি ভালো করেই জানি কী করবে তুমি,ত আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।তোমাকে নিতে যখন এসেছি ত নিয়েই যাব।”

কথাটা বলে সাদাফ ভাই আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই আমায় কোলে তুলে নেয়।আমি ছোটার চেষ্টা করে চলেছি কিন্তু উনি আমার দুই হাত উনার এক হাত দিয়ে চেপে ধরেছে,যার জন্য হাত কোন কাজে লাগাতে পারছি না।তাই পা দিয়ে উনাকে আঘাত করতে থাকি,কিন্তু তাতে উনার বিন্দুমাত্র ভাবাবেগ দেখা গেলো না।উনি দিব্যি আগের মতই হেঁটে চলেছেন,তাই আমি এবার আর কোন উপায় না পেয়ে উনার নাকে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দেই।আর তখনই উনি আমাকে ছেড়ে দেয়,আর আমি ধপাস করে নিচে পড়ে যাই।

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-১৪+১৫

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৪

কাব্য তার কেবিনে বসে আছে তখন তার কেবিনে হাতে খাবার নিয়ে প্রবেশ করে তার মা।কাব্য তার মাকে দেখে নড়েচড়ে বসে,কাব্যর মা কাব্যকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,

“খাবারটা রেখে গেলাম খেয়ে নিও!”

“মা তুমি আমার সাথে এভাবে কেন কথা বলছো!”

কাব্যর মা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,,,

“কীভাবে কথা বলছি!”

“তুমি কী আমার উপর রেগে আছো!”

“তোমার এমন মনে হল কেন?”

“তুমি যখন রেগে থাকো তখনই ত এভাবে তুমি করে ডাকো আমায় তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

“তোমার উপর রেগে থাকার কী যথেষ্ট কারন নেই!”

“মা তুমি প্লিজ এখন সবার মত আমাকে দোষী করো না,আমি কিছু ভুল করি নি।তুমি তোমার ছেলেকে বিশ্বাস কেন করছো না?”

মিসেস লতা তার ছেলের কথা শুনে রেগে কাব্যর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।কাব্য গালে হাত দিয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কাব্যর চোখে না আছে কোন অভিযোগ না আছে কোন অনুতাপ।কাব্যর চোখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠছে,সেটা দেখে কাব্যর মা কাব্যর গালে আবারও থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।কাব্য এবার রেগে কিছু বলবে তার আগেই মিসেস লতা রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“চোখ নামা একদম চোখ রাঙাবি না আমাকে।”

কাব্য তার মাকে আবারও কিছু বলতে চাইলে তিনি তার আগেই বলে উঠে,,,

“চুপ একদম চুপ,একটা কথাও বলবি না তুই।নিজের মাকে চোখ রাঙাচ্ছিস তুই ছিঃ।আমার ঘৃনা হচ্ছে তোর প্রতি,তুই যে আমার ছেলে সেটা ভাবতেই ঘৃনা লাগছে,থু।তোর থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না।
ছোট মেয়েটার সাথে এতকিছু করেও তুই বলছিস ভুল কিছু করিস নি!আর আমাকে চোখ রাঙানো ত তোর কাছে কিছুই না।সেদিন ছোট একটা কারনে মেয়েটাকে পশুর মত মেরেছিস,আর আজ মেয়েটার সাথেও নিশ্চয়ই ভালো কিছু করিস নি।তারপরও বলছিস তুই ভুল কিছু করিস নি,আরে মেয়েরা মায়ের জাত,আর তুই তোর নিজের মাকে চোখ রাঙাস।আবার তুই সে মেয়েকেই পশুর মত অত্যাচার করিস,ছোট মেয়েটাকে অপমান করিস কোন কারন না থাকা স্বত্বেও।তুই নিজেকে এতটাই প্রাধান্য দিচ্ছিস যে এত অন্যায় করার পরও মনে করিস তুই ভুল কিছু করিস না,করতে পারিস না যা করিস একদম ঠিক।কিন্তু মনে রাখিস নিজের কাছে ভালো থাকা মানে ভালো তুই নস।এতগুলো মানুষ তকে তোর অন্যায়টা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কিন্তু তুই ত চোখ থাকতেও অন্ধ।নিজের ভুলটা দেখতেই পারছিস না,এতদিন ভালবাসায় অন্ধ ছিল আর এখন রাগে,সাথে তোর বাপও যোগ হয়েছে।তকে আর তোর বাপকে ত একটা মানুষও ভালো বলে না।নিজের রাগ কমা,আর মানুষের মত ভাব যে তুই ঠিক কতটা জঘন্যতম কাজ করেছিস।তোর সাথে কথা বলতেও বাঁধছে আমার।”

কথাটা বলেই মিসেস লতা রেগে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়,আর কাব্য তার মায়ের কথাগুলো এতক্ষণ খুব মনযোগ দিয়ে শুনেছে।কাব্য তার মায়ের কথায় ভাবতে থাকে,,,

“আসলেই কী আমি ভুল করেছি?আমি কী সত্যিই সাবিহার সাথে অন্যায় করেছি?কিন্তু আমি ত অকারণে কিছু করে নি,সাবিহার সাথে আজ এমনটা হওয়ার পিছনে সাবিহা দায়ী তাই আজ এসব হয়েছে।সাবিহার জন্য আমার ভালবাসা আমার থেকে দূরে,আমার থেকে আমার বন্ধুরা দূরে আর আজ আমার মাও আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিয়েছে।সবকিছুর জন্য সাবিহা দায়ী।”

কথাগুলো কাব্য নিজ মনে আওড়ে আবারও নিজের মনকে প্রশ্ন করল,,,

“সত্যিই কী এসবের পিছনে শুধু সাবিহা দায়ী?তাতে কী আমার কোন হাত নেই!সাবিহা দোষ করত কিন্তু তার দোষের ক্ষেত্রে আমি ত সাবিহাকে তিনগুন বেশিই শাস্তি দিয়েছি।বাচ্চা মেয়েটার বয়সই বা কত?এই বয়সে ভুল হলে সেটা সুধরে দেয়ার দায়িত্ব ত বড়দেরই।সাবিহা অবুঝ কিন্তু আমি ত অবুঝ ছিলাম না,আমি ত ইচ্ছে করলেই ঠান্ডা মাথায় সাবিহাকে বুঝিয়ে সবটা ঠিক করতে পারতাম।কিন্তু আমি ত সেটা করি নি উল্টো মেয়েটাকে আঘাত করেছি।”

কাব্য আর ভাবতে পারছে না,এসব ভেবে কাব্যর মাথাটা ব্যাথা করে উঠল।কাব্য তার মাথা চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

______________________________________

ছাঁদে পা ঝুলিয়ে বসে আছি,দৃষ্টি আমার সুদূর আকাশপানে।আকাশে আজ তারা নেই,চাদটাও মেঘের আড়ালে,চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার।আমার মনের আকাশে যেমন আজ মেঘ জমেছে তেমনি এই আকাশেও মেঘ জমেছে।তাতে মনটা যেনো আরো বিষন্নতায় ঘিরে ধরেছে,হসপিটাল থেকে আজ বিকালেই বাড়ি ফিরেছি।
আর রাতে ডিনার করতে গিয়েই জানতে পারি আপুর বিয়েটা বাবা ভেঙ্গে দিয়েছে।কথাটা ভাবতেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।সব কিছু আমার জন্য হয়েছে,আমি কেন কাব্য নামের অমানুষকে ভালবাসলাম?কেন আমি তার কাছে ভালবাসার দাবী নিয়ে গিয়েছি?আমি তাকে ভাল না বাসলে ত আজ এত কিছু হত না।সবকিছুর জন্য আমি দায়ী,আমার জন্য আজ দুইজন ভালবাসার মানুষ আলাদা হওয়ার পথে।মেঘ ভাইয়া আর আপু ত দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে।কীভাবে থাকবে একে অপরকে ছেড়ে,আপু ত কথাটা শোনার পর থেকে এক নাগাড়ে কেঁদেই চলেছে।আমার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরছে কীভাবে আপু আর মেঘ ভাইয়ার বিয়েটা দেয়া যায়!কিন্তু মাথাতে কিছুই আসছে না।
হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকাই আর দেখি সাদাফ ভাই।উনাকে দেখে কোন রিয়েক্ট করলাম না,হাতটা সরিয়ে নিয়ে আবারও আকাশের দিকে তাকালাম।সাদাফ ভাই আমার হাতটা আবার নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো।আমি আবারও ছাড়াতে গেলে উনি ছাড়লেন না।উনি আমার গালে এক হাত দিয়ে তার দিকে ঘুরিয়ে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“শীলার বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে বলে মন খারাপ?”

আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম, ছাড়লেন না উনি আরো শক্ত করে ধরলেন।উনি মুচকি হেঁসে বলে উঠলেন,,,

“চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে,আমি আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলব।”

বাবার সাথে কথা বলবে শুনেই হঠাৎ আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল।উনিই পারবে বাবাকে রাজি করাতে,উনি ম্যাজিক জানে কী না সেটা জানা নেই কিন্তু এর আগে উনি বাবাকে কীভাবে যেন মেনেজ করেছিল হিয়াকে আমার সাথে নতুন স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য।তাই আমি খুশিতে গদগদ হয়ে নিজের গলার কাটা জায়গার কথা বেমালুম ভুলে কিছু বলব তার আগেই উনি আমার ঠোঁটে তার আঙুল বসিয়ে বলে উঠে,,,

“কথা বলার চেষ্টা করো না ব্যাথা পাবে।”

উনার কথা শুনে হাসিমুখটা নিমিষেই চুপসে গেলো।কথা না বলতে পারার কষ্টটা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি আমি।সাদাফ ভাই এবার বাঁকা হেসে আমাকে আবারও বলে উঠল,,,

“আমি কিন্তু এমনি এমনি কোন কাজ করি না বুঝেছো!তোমার বাবাকে মেঘ ভাইয়া আর শীলার বিয়েতে রাজি করানের জন্য কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।রাজি থাকলে বলো চুটকি মেরে আঙ্কেলকে রাজি করিয়ে ফেলব।”

উনার কথাটা শুনে এবার রাগ হল,ঐদিনও এমন করেছে আর আজও।এভাবে কারো দুর্বলতার সুযোগ নেয়া ঠিক না,লাগবে না উনার সাহায্য।দরকার পড়লে দুজনকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে দিব নয়ত মেঘ ভাইয়া আর আপুকে কিডন্যাপ করে বিয়ে দিব তারপরও উনার সাহায্য নিব না।কথাগুলো মনে মনে বলে হঠাৎ করেই চুপ করে গেলাম তারপর কিছু একটা ভেবে বাকাঁ হেসে সাদাফ ভাইয়ার নাকে আস্তে একটা ঘুসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।আমার কান্ডে সাদাফ ভাইয়া চোখ বড়বড় করে তাকায় আমার দিকে।আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে চলে আসতে নিলে সাদাফ ভাইয়া উঠে দাঁড়ায় আর বলে উঠে,,,

“তোমার মতিগতি ত আমার ঠিক লাগছে না,নিশ্চয়ই কোন শয়তানি বুদ্ধি করছো তাই না?তুমি কী জগাখিচুরি পাকাচ্ছো বলো ত আমাকে?কী চলছে তোমার মনে!কোন শয়তানি বুদ্ধি থাকলে ফটাফট বলে ফেলো নয়ত ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।”

আমি উনার কথা শুনে একবার নিচের দিকে উঁকি দিলাম।তারপর সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে উনাকে ধাক্কা দিলাম,উনি জোড়ে একটা চিৎকার করে ঠাস করে নিচে পড়ে যায়।আমি হাত দুইটা ঝাড়া দিয়ে হাসতে হাসতে নিচে চলে এলাম।

______________________________________

শীলা তার রুমে বসে থেকে মেঘের দেয়া সবগুলো গিফট দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে।মেঘের দেয়া প্রতিটা উপহার খুব যত্ন সহকারে তুলে রেখেছে শীলা।শীলার ফোনে সেই কখন থেকে মেঘ কল দিয়ে চলেছে তাতে শীলার কোন হুসই নেই।কিন্তু হঠাৎ জোড়ে কিছু পড়ার শব্দ শুনে শীলা ভয় পেয়ে যায়।আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে সে দরজা খুলে বের হয়ে যায় রুম থেকে।বাইরে এসে দেখে তার বাবা,মা দৌড়ে বাইরে যাচ্ছে।সেটা দেখে শীলার মনে কেমন একটা ভয় হল,শীলাও তাদের পিছন পিছন গেলো।অরা গিয়ে যা দেখল তার জন্য তারা কেউই প্রস্তুত ছিল না।সবাই এমনভাবে দেখছে যে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৫

হঠাৎ করেই শীলা জোড়ে হেঁসে উঠে,সেটা দেখে সাদাফ কটমট চোখে শীলার দিকে তাকায় আর বলে উঠে,,,

“এত হাসার কী হল!একদম হাসবি না,হাসলে তোর দাঁতগুলো হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গব বজ্জাত মাইয়া।”

“আমার দাঁত পড়ে ভাঙ্গিস কিন্তু এখন বল তোর এই অবস্থা কেন?”

“হ্যাঁ সাদাফ সত্যিই ত তোমার এ অবস্থা কেন?আর এমন একটা আওয়াজ হয়েছে আমরা ভাবলাম কী না কী পড়ল?কিন্তু এসে দেখি তুমি।”

সাদাফ শীলা আর মনির সাহেবের কথা শুনে একবার ছাদের দিকে তাকায় কিন্তু সাবিহা সেখানে নেই।সাদাফ আবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সাবিহাকে খুঁজে আর দেখতে পায় সাবিহা তার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিল মুডে চকলেট খাচ্ছে অর দিকে তাকিয়ে।সেটা দেখে সাদাফের মেজাজ বিগড়ে যায়,ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে এখন এমন ভাব ধরছে যেন কিছুই হয় নি।সাদাফ জোর পূর্বক হেঁসে বলে উঠে,,,

“খুব গরম লাগছে তাই গোসল করছি আঙ্কেল আর লাফ দিয়ে পানিতে নেমেছি তাই একটু আওয়াজ হয়েছে।”

“গোসল করছিস তাও এত রাতে আর সুইমিং পুলে!আর গোসলই যখন করবি তখন নাকে কালির মাখামাখি কেন করলি?”

সন্দেহ করে শীলা বলে উঠে আর শীলার কথাশুনে সাদাফ প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে শীলার দিকে তাকায়।শীলা সেটা বুঝতে পেরে বলে উঠে,,,

“নাকের মধ্যে কালি কেন?”

সাদাফ শীলার কথায় নাকে হাত দিয়ে হাত সামনে এনে দেখে সত্যি সত্যি কালি,তার মানে সাবিহা তখন নাকে কালি দিয়েছিল ঘুসি দিয়ে।কথাটা ভেবেই সাদাফের রাগ উঠে যায়,সে চুপচাপ পানি থেকে উঠে দাঁড়ায় আর মনির সাহেবকে বলে উঠে,,,

“আঙ্কেল কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি!”

“হ্যাঁ বলো না কী বলবে।”

“আমার জামা গুলো ত ভিজে গেছে ত যদি,,,

” হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি ভিতরে যাও আমি জামা কাপড় নিয়ে আসছি।”

মিসেস হেনার কথায় সাদাফ মুচকি হেঁসে হনহনিয়ে সাবিহার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে ভিতরে চলে আসে।

_____________________________________

আমার সামনে ভিজা অবস্থায় অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ ভাইয়া,আর আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চকলেট খাচ্ছি।আমার এমন ভাব দেখে সাদাফ ভাইয়ের গা জ্বলে যাচ্ছে রাগে,তাই তিনি হনহনিয়ে আমার কাছে গিয়ে আমার হাত থেকে চকলেটটা নিয়ে নেয়।আমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাই সাদাফ ভাইয়ের দিকে।সাদাফ ভাইয়া সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“তোমার সামনে যে কেউ রেগে দাড়িয়ে আছে সেটা কী দেখেছো!”

আমি উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে উনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে উঠে বারান্দায় আসার জন্য পা বাড়াই। আর উনি আমার হাত চেপে ধরে উনার সামনে দাঁড় করায় আর আমার দুই কাঁধে হাত দিয়ে রেগে ধমকে বলে উঠে,,,

“এই আমার কথা কী তোমার কানে যাচ্ছে না!আমি কিছু বলছি তোমাকে আর তুমি এমন ভাব নিচ্ছো কেন?”

সাদাফ ভাইয়ের কথাশুনে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে,
কতবড় সাহস আমাকে ধমক দেয়!শালা পঁচা কুমড়ো আজ খালি কথা বলতে পারছি না বলে নয়ত কয়টা কড়া কথা শুনিয়ে দিতাম।কিন্তু সেটা ত হওয়ার নয় এখন কিন্তু বেটাকে শিক্ষা দিতে না পারলেও শান্তি পাব না।তাই উনার হাত আমার কাঁধ থেকে সরিয়ে উনার বুকের উপর ক্রস আকারের মত করে উনার হাতটা পিছনে চেপে ধরে উনার পিছনে দাঁড়াই আমি।আমার কাজে সাদাফ ভাই হাতে ব্যাথা পেয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ছুটার জন্য ছটফট শুরু করে,আমি সেটা দেখে আরো জোড়ে চেপে ধরি।উনি এবার নরম গলায় বলে উঠে,,,

“সাবিহা কী করছো!ছাড়ো আমাকে লাগছে ত।”

লাগার জন্য ত তরে ধরছিই এইভাবে,আমাকে ধমক দেয়া তাই না এবার বুঝ কেমন লাগে।কথাগুলো নিজের মনে ভেবেই শয়তানি হাসি দিলাম।সাদাফ ভাই আবারও রেগে বলে উঠল,,,,

“সাবিহা আমার হাতটা ছাড়ো নয়ত আমি আঙ্কেলকে ডাকব,আর আঙ্কেল আসলে কিন্তু আমি উনাকে বলে দিব তুমি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে সুইমিং পুলে ফেলেছো।”

উনার কথাশুনে আমার হাওয়া ফুস হয়ে যায়,কারন বাবা এটা জানলে আমাকে আস্ত রাখবে না।সারা পৃথিবীর সাথে লড়তে পারব কিন্তু বাবার সামনে আমি কিছুই না।কথাগুলো ভেবেই উনার হাতের বাঁধন আলগা করতেই উনি পিছন ফিরে আমার গাল হালকা চেপে ধরে বলে উঠে,,,

“এবার কী করবে হুম!তখন আমি মজা করে বলেছি শুধু ফেলে দিব আর তুমি সত্যি সত্যি আমাকে ফেলে দিলে।নিচে যদি সুইমিং পুল না থাকত তবে ত আল্লার পেয়ারা বান্দা হয়ে যেতাম।তখন তোমাকে বিয়ে করার শখটা কীভাবে পূরন করতাম হুম!”

শালা হাতির নাতি তোর বিয়ের কাঁথায় আগুন,তোর মত গরুকে কে বিয়ে করব!আর তোরে ত সুইমিং পুল দেখেই নিচে ফালাইছি,আমার কী মাথা খারাপ নাকি যে মানুষ খুন করব হুহ।আমাকে থ্রেট করার শাস্তি এটা,কথায় কথায় থ্রেট মারো চান্দু এবার থেকে যতবার থ্রেট করবা ততবার এভাবেই শাস্তি দিব।একটু আগেও বাবাকে বলে দিবে বলে থ্রেট দিলি না এর শাস্তিও তকে দিব,একটু অপেক্ষা কর তারপর দেখিস।আমাকে চুপ থাকতে দেখে সাদাফ ভাইয়া আবারও বলে উঠল,,,

“কানে ধরো।”

আমি উনার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকাই,উনি সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“এত ভ্রু কুঁচকাও কেন হে!আমার সামনে এত ভ্রু কুঁচকাবা না,এমন করলে ইচ্ছে করে টুপ করে একটা মিষ্টি খাইতে।তাই সাবধান,নয়ত অঘটন ঘটে যাবে যেকোন সময়।আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি কানে ধরো,আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার জন্য।”

আমি উনার শেষের কথাটা ছাড়া একটা কথাও বুঝতে পারি নি তাই আবারও ভ্রু কুঁচকাই,উনি সেটা দেখে আমাকে উনার কাছে টেনে গালে একটা কামড় বসিয়ে দেয়,আমি ছোটার জন্য চেষ্টা করলে আমার দুই হাত চেপে ধরে।আর কামড় দেয়া জায়গায় চুমু দেয়।আমি উনার কাজে এবার রেগে যাই,কী পেয়েছে সে আমাকে এভাবে একটা মেয়েকে যখন তখন চুমু দিবে।তাই ছাড়া পাওয়ার জন্য এবার মাথা দিয়ে উনার মাথায় বারি দেই।আর উনি ব্যাথা পেয়ে দূরে সরে য়ায়,আমি উনার থেকে ছাড়া পেয়ে উনার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে যাই ঘর থেকে।আর সাদাফ ভাই উনার মাথায় আর গালে হাত ডলতে ডলতে গাল ফুলিয়ে বলে উঠে,,,

“এই মেয়েরে বিয়ে করলে আমার আর বাবা ডাক শুনতে হবে না।শান্তিতে একটু রোমান্সও করতে দেয় না,রোমান্স করতে গেলে ফাইট শুরু করে দেয়।এখন মনে হচ্ছে তায়কোয়ন্দো শেখানোটাই ভুল হয়েছে।আনরোমান্টিক,নিরামিষ,রোমান্সের বাধাঁ দেয়ার ভিলেন মার্কা মেয়ে একটা,দেৎ ভাল্লাগে না।”

____________________________________

মনির সাহেব আর উনার স্ত্রী তাদের রুমে বসে হাসছে,এমন ভাবে হাসছে যে হাসিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।মনির সাহেব এবার মিসেস হেনাকে বলে উঠে,,,

“তোমার মেয়েটা কিন্তু অনেক দুষ্টু হয়ে গেছে।”

“তা আর বলতে,কী কাজটা করল দেখেছো তুমি।”

“সাদাফের অবস্থা নাজেহাল করে ছাড়বে সাবিহা আজ যা বুঝলাম আমি।”

কথাটা বলেই মনির সাহেব শব্দ করে হেঁসে উঠল,মিসেস হেনাও উনার হাসির সাথে তাল মেলালো আর বলে উঠল,,,

“সে তুমি যাই বলো,সাদাফ কিন্তু সাবিহাকে খুব ভালবাসে আর আমাদের মেয়েকে আগলেও রাখবে।”

“হুম।”

কথাটা বলে মনির সাহেব আবারও হেঁসে উঠল,আর তখন তাদের ঘরে আসে সাবিহা।সাবিহা এসেই গাল ফুলিয়ে তার বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।সেটা দেখে মনির সাহেব হাসি থামিয়ে সাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“আমার প্রিন্সেসের কী শরীর খারাপ লাগছে!”

আমি মাথা নেড়ে না জানাই যার অর্থ শরীর খারাপ লাগছে না।তখন মা বলে উঠল,,,

“এবার বল সাদাফকে পানিতে ফেলেছিলি কেন?”

মায়ের কথা শুনে আমি শোয়া থেকে উঠে বসি,মানে কী?সাদাফ ভাইয়া কী বলে ফেলল নাকি যে আমি উনাকে ছাদ থেকে সুইমিং পুলে ফেলে দিয়েছি।কথাটা ভেবেই ভয়ে গুটিয়ে গেলাম,বাবা জানতে পারলে খুব রাগ দেখাবে।মা আবারও বলে উঠল,,,

“অবাক হয়ে লাভ নেই সব জানি আমরা।”

আমি মার দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালে মা মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,

“সাদাফ আর তুই যখন কথা বলছিলি তখনই শুনেছি।আমি সাদাফের জন্য পোশাক নিয়ে গেছিলাম,বেচারা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে।ত গিয়ে দেখি আপনি অর হাত চেপে ধরে আছেন,তখন আমি কিছু বলব তার আগেই সাদাফ বলে উঠে যে আপনি সাদাফকে নিচে ফেলেছেন।আর বেচারা তকে বাঁচানোর জন্য তখন মিথ্যা কথা বলেছে যে তার নাকি গরম লাগছে তাই গোসল করছে।”

আমি মার কথা শুনে ভয়ে ভয়ে বাবার দিকে তাকাই, তাকিয়ে দেখি বাবা গম্ভীর মুখ করে আছে।সেটা দেখে আমার প্রানপাখি যায় যায় অবস্থা,আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে বাবার থেকে সরে এসে ভো দোড় দেই আর এক দৌড়ে আপুর রুমে।আমার কান্ড দেখে বাবা আর মা দুজনেই হেঁসে উঠে।

______________________________________

হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসে আছে দুজন,আর তাদের সামনেই একজন হুডি ওয়ালা লোক বসে আছে।হুডি ওয়ালা লোকটা এবার ফোন বের করে কাউকে কল দেয় আর রেগে ধমকে বলে উঠে,,,

“ছোট একটা কাজ দিয়েছিলাম সেটা করতে এতক্ষণ লাগে!তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো নয়ত পাখি আরো ছটফট করবে।তাড়াতাড়ি কাজটা সেরে এদের ছটফটানিটা কমাতে হবে,সো তাড়াতাড়ি এসো।”

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-১২+১৩

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১২

কাব্য মাথায় ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় বেডে শুয়ে আছে,আর তার সামনেই তার মা আর মেঘ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে কাব্যর দিকে।কাব্য মাথা নিচু করে রেখেছে,তখন হিয়া কাব্যর হাতে হাত রেখে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“ভাইয়া তুমি সাবিহার সাথে কী করেছো?সাবিহার সাথে আবার কোন অন্যায় করে থাকলে বলো ভাইয়া।এভাবে চুপ করে থেকো না,এভাবে চুপ করে থাকলে কোন সমস্যা সমাধান হবে না।”

“কাব্য হিয়ার কথার উওর দে,কী করেছিস তুই সাবিহার সাথে!”

ধমকে বলে উঠে কাব্যর মা,কাব্য মাথা নিচু করেই রেখেছে।কারো কথার কোন উওর দিচ্ছে না,আর কী উওরই বা দিবে কাব্য!সে যা করেছে তা ত বুক ফুলিয়ে বলার মত কোন মহান কাজ করে নি।

“কাব্য রাগ উঠাস না আমার বলে দে কী করেছিস তুই?”

“মেঘ তোমরা মা,ছেলে কী শুরু করেছো!দেখছো কাব্যর মাথায় আঘাত পেয়েছে তার মধ্যে তোমরা এমন গোয়েন্দা গিরি শুরু করেছো!এখন এসব জিজ্ঞেস করার উপযুক্ত সময় নয়,কাব্য সুস্থ হোক তারপর এসব নিয়ে কথা হবে।এখন এসব বাদ দিয়ে ছেলেটাকে একটু রেস্ট নিতে দাও।”

কাব্যর বাবা দরজা দিয়ে ডুকতে ডুকতে কথাগুলো বলে সেটা দেখে কাব্যর মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।

“তোমার জন্য তোমার ছেলের আজ এই অবস্থা,তুমি ছেলেকে আস্কারা দিয়ে এমন অমানুষ তৈরি করেছো।না তুমি ছেলেকে শাসন করো না আমাদের করতে দাও।সময় মত যদি ছেলেকে একটু শাসন করতে তবে তোমার ছেলে এত,,,

আর কিছু বলার আগেই কাব্যর কেবিনে হুড়মুড়িয়ে ডুকে সাদাফ।সাদাফ কাব্যকে দেখেই কাব্যর দিকে তেড়ে যায় আর কলার চেপে ধরে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠে,,,

“তোর সাহস কী করে হল সাবিহার গায়ে হাত তোলার!সাবিহাকে আটকে রেখে কষ্ট দেয়ার?”

সাদাফের হঠাৎ এমন আক্রমনে উপস্থিত সবাই অবাক,কাব্য থাপ্পড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে সাদাফের দিকে তাকায়।কাব্য খুব রেগে যায়,যা তার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে,কাব্যর চোখ অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে রাগে।সাদাফ আবার কাব্যকে আঘাত করতে নেয় কিন্তু মেঘ গিয়ে আটকায় সাদাফকে।আর বলে উঠে,,,

“সাদাফ কী করছো এসব,শান্ত হও তুমি!”

সাদাফ মেঘের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আবার কাব্যকে মারতে যায়,তখন নিলয় আর সাদাফের বাবা আসে আর তারা দুজন মিলে সাদাফকে আটকায়।তারপরও সাদাফ শান্ত হয় না,সাদাফ ছুটার চেষ্টা করতে করতে রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“ছেড়ে দাও আমাকে,আজ আমি ওকে মেরে ফেলব।অর জন্য সাবিহা এতটা কষ্ট পাচ্ছে,আমি ওকে ছাড়ব না।সাবিহা যতটা কষ্ট পাচ্ছে তার থেকে দ্বিগুন কষ্ট আমি ওকে দিব,তোমরা ছাড়ো আমাকে।”

কাব্যর বাবা এবার রেগে বলে উঠে,,,

“তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি,তুমি আমার ছেলের গায়ে হাত তুলছো আমারই সামনে?তোমার সাহস ত কম নয়,তুমি কী জানো এর জন্য আমি তোমার বিরুদ্ধে কেস করতে পারি!”

“আপনি কী কেস করবেন?কেস অলরেডি হয়ে গেছে।আর আপনি ত নিজের বুঝটা ভালোই বুঝেন দেখছি।নিজের ছেলে এত অন্যায় করছে পিচ্চি একটা মেয়ের সাথে তার বেলা নিজের ছেলেকে শাসন করতে পারছেন না।আজ আপনার সামনে আপনার ছেলেকে দুইটা থাপ্পড় দেয়াতে আপনার এত কষ্ট হচ্ছে,আর ভাবুন ত আপনার বোনের কথা যার মেয়েকে আপনার ছেলে পশুর মত অমানবিক নির্যাতন করেছে।আবার আজও আপনার ছেলে ছোট্ট মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েছে।মেয়েটা কথা বলতে পারছে না,এতটা অত্যাচার করেছে আপনার ছেলে।আপনি তার জন্য নিজের ছেলেকে শাসন না করে উল্টো আপনি আপনার ছেলেকে আস্কারা দিচ্ছেন?আপনার মত বাবা থাকলে মানুষ পশু হতে বেশি সময় লাগবে না।”

কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে চলেছে সাদাফের বাবা। সাদাফের বাবার কথা শুনে কাব্যর বাবা খুব বেশি রেগে যায়।আর রেগে বলে উঠে,,,

“মুখ সামলে কথা বলুন,নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে,কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে যেকোন সময়।তাই নিলয় আর মেঘ ঠেলে ঠুলে সাদাফ আর সাদাফের বাবাকে কেবিন থেকে বের করে নিয়ে যায়।কাব্য আর তার বাবা রাগে ফুঁসছে,কাব্যর মা চোখে জল নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।সাদাফের বাবা যা বলেছে তা একটা কথাও মিথ্যা নয়,কাব্য আজ এতটা অমানুষে পরিনত হয়েছে তাতে তার বাবার গুরুত্ব অনেক।হিয়া তার মাকে বেরিয়ে যেতে দেখে সে ও পিছন পিছন যায়।

_____________________________________

নিলয় আর মেঘের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সাদাফ কোথাও যেতে নিলে মেঘ আর নিলয় বাঁধা দেয়।সেটা দেখে সাদাফ রেগে ওদের বলে উঠে,,,

“আমার পথ ছাড়ো,আমি ঐ কাব্যকে ছাড়ব না।জানে মেরে দিব,যে হাত দিয়ে আমার সাবিহাকে কষ্ট দিয়েছে সেই হাত আমি রাখব না।কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিব,তোমরা সরো,আমাকে যেতে দাও।”

“সাদাফ আইন নিজের হাতে তুলে নিস না,তাতে করে তোর জেল হবে।আর তুই সাবিহার থেকে দূরে থাকবি তাতে করে তুই ই বেশি কষ্ট পাবি।তাই তুই আমার উপর বিশ্বাস রাখ আমি কাব্যকে শাস্তি দিয়েই ছাড়ব।”

“সাদাফ তুমি শান্ত হও,আর মাথা ঠান্ডা করো।আমার ভাই তার উপযুক্ত শাস্তি পাবে।নিজের ভাই যে এতটা অমানুষে পরিনত হবে তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল।কিন্তু নিজের ভাই বলেও ছেড়ে দিব না তার উপযুক্ত শাস্তি পাইয়েই ছাড়ব,তুমি শান্ত হও।”

সাদাফ ওদের কথা শুনে কিছুটা শান্ত হয়,আর মনে মনে বাঁকা হাসে।যেটা মেঘ আর নিলয় দেখতে পায় না।সাদাফের এমন শান্ত হওয়া দেখে মেঘ আর নিলয় যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।কিন্তু তারা ত আর জানে না সাদাফ মনে মনে কী জগাখিচুরি পাকাচ্ছে!

★আমি একবার বেডে শুয়ে পড়ি আবার একটু পরেই বসে পড়ি।খুব অস্থির লাগছে ঐদিকে কী হচ্ছে কে জানে!বাবা ত যেতেও দিচ্ছে না আমাকে।বেড থেকে নামতে গেলেই আঙুল তুলে চোখ রাখিয়ে বলে শুয়ে পরতে।না তারা যাচ্ছে খবর নিতে না আমাকে যেতে দিচ্ছে।আমি বারবার এমন অস্থির হয়ে উঠছি আর শুয়ে পড়ছি সেটা দেখে মা,বাবা আর আপু বারবার জিজ্ঞেস করছে খারাপ লাগছে কী না?কিছু খাব কী না,এমন নানা প্রশ্ন করে চলেছে আমাকে।কিন্তু আমি মাথা নেড়ে না বুঝাই আর বারবার ইশারায় বুঝাচ্ছি যে খবর নিতে ঐদিকে কী হচ্ছে?কিন্তু তারা আমার কোন কথাই বুঝতে পারছে না,ঐদিকে কী হচ্ছে কে জানে!
এসব ভাবছিলাম তখন কেবিনে প্রবেশ করে সাদাফ ভাইয়া,নিলয় ভাইয়া আর মেঘ ভাইয়া।তাদের দেখে আমার অস্থিরতা কিছুটা কমে,সাদাফ ভাইয়া আমার সামনে এসে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“খারাপ লাগছে!”

আমি মাথা নেড়ে না বুঝাই যার অর্থ খারাপ লাগছে না।সাদাফ ভাইয়া মুচকি হেসে বাবার উদ্দেশ্য বলে উঠে,,,

“আঙ্কেল সাবিহার সাথে আমার একটু কথা আছে যদি একটু,,,

“হ্যাঁ কথা বলো তোমরা আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি,চলো সবাই।”

বাবা এক কথায় রাজি হয়ে যায়,সেটা দেখে আমি আর আপু দুজনেই খুব অবাক হই।আপু বাবাকে বলে উঠে,,,

“বাবা সাদা,,,

” শীলা কোন কথা না বলে চুপচাপ বাইরে আসো।”

কিছুটা রাগেই সাথেই কথাটা বলে বাবা কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়,আর পিছন পিছন মাও বেরিয়ে যায়।আর আপু গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকে সেটা দেখে মেঘ ভাইয়া আপুর কানে কানে বলে উঠে,,,

“ঘটনা কী গো,শ্বশুর মশাই এক কথায় এভাবে নিজের মেয়েকে একটা ছেলের সাথে একা ছেড়ে দিল!ব্যাপারটা কেমন রহস্যময় রহস্যময় লাগছে।”

এমনিতেই আপুর মেজাজ খারাপ বাবার এমন আচরনে।তার উপর মেঘ ভাইয়ার এমন কথা,বেচারি নিজেই যার কারন জানে না।কারন জানতে গিয়ে বাবার কাছে ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যায়।তার কাছেই কী না কারন জানতে চাইছে!আপু আর পারল না হাতে থাকা ফোনটা মেঘ ভাইয়ার উপর ছুড়ে মেরে গাল ফুলিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।মেঘ ভাইয়া ফোনটা ক্যাচ করে আপুকে ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে যায়।
এখন কেবিনে আছে নিলয় ভাইয়া,সাদাফ ভাইয়া আর আমি।সাদাফ ভাইয়া নিলয় ভাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠে,,,

“তকে কী বাইরে যাওয়ার জন্য দাওয়াত করতে হবে?”

নিলয় ভাইয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় আর কোন দিকে না তাকিয়ে তিনিও বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।আমি এতক্ষণ সবটাই নীরব দর্শকের মত দেখে গেলাম,অবশ্য এটা ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার আপাতত।আমি এবার আগ্রহ নিয়ে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই,তিনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমিও আগ্রহ নিয়ে উনার দিকে তাকাই কী বলবে সে আশায়।কিন্তু উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে অবাক করে দিয়ে কপালে একটা চুমু একে দেয়।আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই,এটা কী হল!

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৩

“বাবা আমি বিয়ে করব”

সাদাফ হসপিটাল থেকে এসেই তার বাবাকে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে কথাটা বলে উঠে।হঠাৎ এমন কথাশুনে সাদাফের বাবা অবাক চোখে তাকায়।কোন ছেলে যে তার বাবাকে এভাবে নিজের বিয়ের কথা বলতে পারে সেটা উনার ছেলেকে দেখে জানলেন।মনে মনে তার ছেলেকে কয়টা বকা দিয়ে দিলেন বাবার সামনে এমন নির্লজ্জের পরিচয় দেয়ার জন্য।সাদাফ তার বাবার কোন উওর না পেয়ে আবারও জোড়ে চিৎকার করে বলে উঠল,,,

“বাবা আমি বিয়ে করব,তুমি কী শুনতে পাচ্ছো?”

সাদাফের বাবার এবার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।উনি কী কালা নাকি যে শুনতে পায় নি,এভাবে জোড়ে বলার কী আছে!তাই তিনি এবার রেগে বলে উঠল,,,

“আমার কানে কোন সমস্যা আছে?”

সাদাফ তার বাবার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সাদাফের কথার প্রতিত্তোরে যে তার বাবা এমন একটা কথা বলবে সেটা সাদাফ ভাবতে পারে নি।তাই সাদাফ ভ্রু কুঁচকে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল,,,

“মানে?”

“মানে আমাকে কী তোর কালা মনে হয় যে কানের কাছে এসে এভাবে চিৎকার করে উঠলি!”

“ত কী করব!তুমি ত কিছু বলছিলেই না তাই ত চিৎকার করতে হল।তুমি যদি প্রথম বার সারা দিতে তবে ২য় বার কথাটা বলে তোমাকে কালার খাতায় তুলতাম না,আর না আমি নিজের হায়াত কমাইতাম বেশি কথা বলে!”

“তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা ত মেজাজ খারাপ করিস না।”

“বিয়েটা করিয়ে দিবা বলো তবে তোমার চোখের সামনে,পিছনে,ডান দিকে,বাম দিক সব দিক থেকেই সরে যাব।তুমি শুধু আমার বিয়েটা করিয়ে দাও বাবা প্লিজ।”

সাদাফের বাবা পারছে না মাটি ফাঁক করে ভিতরে ডুকে যেতে।কোথায় উনি তার ছেলেকে বিয়ে করানোর জন্য পাগল হবে তা না ছেলে বিয়ের জন্য পাগল হয়েছে।আর সেটা ড্যাং ড্যাং করতে করতে চলে এসেছে বাবাকে বলতে।আজকালের যুগের ছেলেমেয়েরা যে কী করে!তাদের সময়ে ত বিয়ের কথা শুনলেই লজ্জায় লাল,নীল,সবুজ হয়ে যেত।আর তার ছেলেকেই দেখো পুরো নির্লজ্জর ডিব্বা।

“পাবনায় একটু যোগাযোগ করে দেখো ত তারা বিয়ে পাগল ছেলেকে একটু চিকিৎসা দিতে পারবে কী না!”

হাতে চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে কথাটা বলে উঠল সাদাফের মা।সাদাফ তার মায়ের কথায় খুব বিরক্ত,আর তার বাবা যেন এতক্ষণে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।এতক্ষণ ছেলে ত বিয়ে করব বলে পাগল করে দিচ্ছিল তাকে এখন তার বউ এসেছে, নিশ্চিন্ত এখন!যে সাদাফের মা বিষয়টা সামলে নিবে। তাই তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন আর সাদাফ গাল ফুলিয়ে বলে উঠল,,,

“মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাচ্ছো তাই এমন মজা করছো ত তোমরা!”

“আমরা ত মেঘও চাই নি বৃষ্টিও চাই নি,তবে তুই যেচে বৃষ্টি দিচ্ছিস কেন?”

“মা প্লিজ মজা করো না,ভালো লাগছে না এসব।তোমরা একটু বুঝার চেষ্টা করো,আমি এমনি এমনি কিছু করছি না।এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে নয়ত আমি এমন কেন করব?”

“গলা ঝেড়ে কাশ,আর ফটাফট বলে ফেল কী কারনে বিয়ের জন্য এত পাগল হয়েছিস?”

“সাবিহা এসএসসি পরীক্ষার পর Abroad চলে যাবে পড়াশোনা করতে।”

“এটা ত ভালো খবর,মেয়েটা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই ত যাবে।এতে কী সমস্যা আছে যার জন্য বিয়ের জন্য পাগল হয়েছিস!”

“মা তুমি কী বুঝতে পারছো না,এখন কী সবটা খুলে বলতে হবে তোমাকে!লজ্জা সরমেরও ত একটা ব্যাপার আছে তাই না!”

“এহহহে আসছে রে আমার লজ্জাবতী লতা,বিয়ের কথা নিজের বাপের কাছে বলার সময় লজ্জা পাস নি ত এখন এত লজ্জা আসে কোথা থেকে?”

সাদাফ তার মাকে কীভাবে বলবে যে সাবিহার জীবন বিপদের মুখে।আর সাবিহাকে রক্ষা করার জন্যই সাদাফ সবসময় সাবিহার কাছেকাছে থাকতে চাইছে।আর সেটা সম্ভব একমাত্র বিয়ে হলেই,নয়ত সাবিহার কাছাকাছি থাকার সার্টিফিকেট আর সবাই দিলেও সাবিহা তাকে দিবে না।তাই সাদাফ ঠিক করল যা করার সে নিজেই করবে, কারন তার বাবা,মা এত সহজে তাকে এখন বিয়ে দিবে না।কারন সাবিহার এখনও বিয়ের বয়স হয় নি,তাই তারা ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছে না।সাদাফ তার মাকে আর কিছু না বলে দাপদুপ পা ফেলে চলে গেলো।সেটা দেখে সাদাফের মা আর বাবা দুজনেই হেঁসে ফেলল।

______________________________________

বেডে পা ঝুলিয়ে বসে উর্না দিয়ে গাল,কপাল,ঠোঁট মুছে চলেছি,আর রাগে ফুঁসছি।সাদাফ ভাই যে এতটা শয়তান সেটা আগে বুঝি নি।বজ্জাত বেডায় আমার কথা না বলার সুযোগ নিয়ে কী কী করে গেলো।এক ঘন্টা ধরে গাল,ঠোঁট আর কপাল মুছে চলেছি।আর এক ঘন্টা আগের কথা মনে হলেই শিউরে উঠছে সারা শরীর।

★ফ্লাসব্যাক★

সাদাফ ভাই আমার কপালে চুমু দিয়ে মুচকি হেঁসে আমার দিকে তাকায়,আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি সেটা দেখে চোখ টিপ দিয়ে আমার গালে আরেকটা চুমু বসিয়ে দেয়।আমি এতটাই অবাক যে কী রিয়েকশন দিব বুঝে উঠতে পারছি না।কিন্তু অসম্ভব রকম রাগ লাগছে এভাবে একটা মেয়েকে চুমু দেয়ার কী মানে!কথা বলবি মুখে বল এভাবে চুমু দেয়ার কোন মানে হয় না।তাই রেগে উনার গালে থাপ্পড় দেয়ার জন্য হাত তুলতেই উনি আমার হাতটা ধরে আটকে বলে উঠে,,,

“এই হাত দিয়ে অন্য কাউকে মেরো আমাকে নয়,এই হাতটা আমাকে আদর করার জন্য তুলে রাখো।

আমি উনার কথাশুনে রাগ ভুলে অবাক হই,কী বলছে উনি এসব!

“এখনই এত অবাক হয়ো না প্রিয়,মাত্র যাত্রা শুরু তোমার অবাক হওয়ার।প্রতিটা মুহুর্তে অবাক হবে তুমি,তার জন্য কিছু বাঁচিয়ে রাখো নয়ত আরো কয়টা চুমু দিয়ে দিব কিন্তু।”

উনার কথার সঠিক মানে আমি বুঝতে পারি নি,যে উনি আমাকে কী বুঝাতে চাইছে!কিন্তু আজ উনার হাবভাব,কথা বার্তায় বেশি সুবিধা লাগছে না আমার কাছে।উনার হাবভাবে ত মনে হচ্ছে ভালবাসে আমাকে,কিন্তু সন্দেহর বশে কী এতটা গভীরে ভাবা ঠিক হবে?আর আমি এটা সন্দেহর তালিকায় কেন ফেলছি!উনি আজ যতটা পাগলামি করলো আমার জন্য তাতে ত কোন অন্ধ ব্যাক্তিও বলে দিতে পারবে উনার মনে আমার জন্য আলাদা ফিলিংস কাজ করে।তবে আমি এত বোকাবোকা কথা কেন ভাবছি বুঝি না আমি।কথাগুলো ভেবেই নিজেকে বোকাদের তালিকায় ফেলে দিলাম ঠুস করে।
পরক্ষণেই মনে হল উনি যদি কখনও স্বীকার করে আমাকে ভালবাসে তখন আমি কী করব!ভালবাসা কথাটার প্রতিই ত আমার ঘৃণা জন্মে গেছে,তখন আমি কী করব!উনাকে কী ফিরিয়ে দিব,নাকি মেনে নিব?ভালবাসার মানুষটা যদি খালি হাতে কাউকে ফিরিয়ে দেয় তাতে কতটা কষ্ট হয় সেটা আমি জানি।কাব্য ভাই আমাকে সে কষ্টটা দিয়েছে,আমিও কী সাদাফ ভাইকে তখন এভাবেই কষ্ট দিব?না এভাবে কষ্ট দিলে কাব্য ভাই আর আমার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না।কিন্তু উনাকে কষ্ট দিতে না চাইলে যদি অনিচ্ছা স্বত্বেও উনাকে মেনে নেই,তবে কী কখনও ভালবাসা শব্দটার থেকে ঘৃনার পর্দা সরিয়ে ভালবাসতে পারব?আর নাকি উনাকে ভালবাসতে পারব নতুন করে?এসব ভেবে মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে আমার,আমি চুপচাপ এসব ভেবে চলেছি তখন সাদাফ ভাইয়া হুট করে বলে উঠল,,,

“বিয়ে করবে আমাকে?”

উনার কথা শুনে পুরা ৪৪০ ভোল্টেজের শক খাইলাম।আমি এতক্ষণ উনার ভালবাসা নিয়ে এত গবেষণা করে গেলাম ফিরিয়ে দিব নাকি মেনে নিব!আর উনি ছক্কা মেরে বিয়ে অবধি চলে গেলো।ভাবা যায় এসব,ভালবাসে স্বীকার না করে পুরো বিয়েতে চলে গেছে।মাথা ঘুরছে আমার,যেকোন সময় জ্ঞান হারাতে পারি।আমার ভাবনার মাঝে সাদাফ ভাই আবারও বলে উঠল,,,

“এত ভেবে কাজ নেই,তুমি চাইলেও আমার কাছে রাখব তোমাকে।আর না চাইলেও ভালবেসে রাখব কাছে আমারই পাশে।তুমি ভালো মত মেনে নিলে ভালো কিন্তু ঝামেলা করলেও সমস্যা নাই।ঝামেলা হলে ব্যাপারটা সমাধান করার ঔষধ আমার কাছে আছে।তাই নো চিন্তা,এতদিন তোমার প্রতি ভালবাসাটা মনের কোনে লুকিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু আর নয়।সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে করতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় যেমনটা হয়ে যাচ্ছিল প্রায়।আমার অনুভূতি গুলো যদি তোমার কাছে আগেই প্রকাশ করতাম তবে হয়ত তোমার মনে কাব্যর প্রতি ফিলিংস জাগত না।সেই ফিলিংস হয়ত আমার জন্য জাগত তোমার মনে।তবে আজকের দিনটা অন্য রকম হত।কিন্তু আর নয়,আজ তোমাকে হারানোর ভয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি।বুঝতে পেরেছি আমার কী করা উচিত,তাই আজ তোমাকে নিজের মনের অনুভূতি জানিয়ে দিলাম।এবার তুমি তৈরি হও আমার বউ হওয়ার জন্য।”

এতক্ষণ খুব মনযোগ দিয়ে সাদাফ ভাইয়ের কথাগুলো শুনছিলাম,কিন্তু উনার কার্যকলাপে সব কিছুতে পানি ডেলে এক বস্তা রাগ ভর করল মাথায়।উনি কথাগুলো বলেই টুপ করে আমার ঠোঁটে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।

★বর্তমান★

তখন থেকে এভাবে বসে রাগে ফুঁসছি আর মুছে চলেছি।কিন্তু ঘুরেফিরে উনার বলা কথাগুলো মনে পড়ছে।আর আমি পড়েছি আরেক চিন্তায়,কী করব ভেবে পাচ্ছি না।উনার কথা মেনে নিব নাকি ফিরিয়ে দিব?

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-১০+১১

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১০

সাদাফ সামনে থাকা মানুষটাকে ছেড়ে দাঁড়ায়।সামনে থাকা মানুষটি আর কেউ নয় সাদাফের বেস্ট ফ্রেন্ড নিলয়।আর নিলয় একজন সিআইডি অফিসার,সাদাফ নিলয়কে হাসিমুখেই বলে উঠে,,,

“দোস্ত তুই এসে আমার বিরাট বড় উপকার করলি,একটা ফোনে যে তুই চলে আসবি ভাবতেও পারি নি আমি।”

“তোর এত বড় বিপদ আর আমি আসব না সেটা কী হয় নাকি হুম!”

“দোস্ত তকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আসার জন্য।এখন বল না সাবিহার ফোনের লোকেশন ট্রাক করতে পেরেছিস কী না?”

“হুম পেরেছি আর ভাবির লাস্ট লোকেশন যেখানে ছিল সেখানেই তকে নিয়ে যাব এখন,চল আমার সাথে।”

সাদাফ তার বন্ধু নিলয়কে আবারও জড়িয়ে ধরল আর সাথে সাথে কেঁদে ফেলল।সাদাফ কেঁদে কেঁদেই বলে উঠল,,,

“তোর মত বন্ধু থাকা ভাগ্যের ব্যাপার,আমার সাবিহাকে খুঁজে দেয়ার জন্য তোর কাছে সারাজীবন ঋণী থাকব আমি।”

“আরে ভাই এখন মেয়েদের মত কাঁদিস না প্লিজ,আর এখনও ভাবিকে খুঁজে পাই নি।আগে খুঁজে পাই তারপর তোর এই সেন্টিমার্কা মুভি দেখব।এখন তাড়াতাড়ি চল নয়ত দেরি হয়ে যাবে।”

সাদাফ সম্মতি জানালে দুজন রওনা হয় সাবিহার খোঁজে।

_____________________________________

অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম কাব্য ভাইকে ছেড়ে দিব।তাই যেই ভাবা সেই কাজ,বারান্দা থেকে রুমে এসে কাব্য ভাইয়ের হাতে,পায়ের বাঁধন খুলছি আর বলছি উনাকে,,,

“ছেড়ে দিচ্ছি মানে এই নয় যে আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।এটা আপনার লাস্ট চান্স,সামনে থেকে আমার সাথে এমন কিছু করার আগে ২য় বার আজকের ঘটনাটা ভেবে নিবেন।নয়ত ২য় বার কোন ওয়ার্নিং দিব না,সোজা শাস্তি দিব।আর সেটা সম্পূর্ণ আমার নিয়মে,তাই সাবধান।”

কথাটা বলে কাব্য ভাইয়ের হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে বিছানায় চাদরটা রেখে ফিরতে গেলেই কাব্য ভাই আমার গলায় উনার এক হাত পেঁচিয়ে আরেক হাত দিয়ে আমার দুই হাত পিছনে মুচড়ে ধরে।আমি ছোটার চেষ্টা করতেই উনি বলে উঠে,,,

“এতক্ষণ অনেক ভালো মানুষের রূপ দেখিয়েছি কিন্তু আর নয় এবার একটু নিজের রূপটা দেখাই।”

গলায় এমন ভাবে চেপে ধরেছে যে ঠিক করে কথাও বলতে পারছি না।তাই ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললাম,,,

“ককুকুরের লেজজজ কখনওও সসোজা হয় না।”

“এই সাবিহা মুখ সামলে কথা বলবি নয়ত এখানেই শেষ করে দিব তকে।তখন থেকে আমাকে যা তা বলে অপমান করে শাসিয়েছিস।এবার একটা বাজে কথা বলবি আর গাড় থেকে গলাটা আলাদা করে ফেলব একদম।”

“ততুই একটা কাপুরুষ তততাই পিছন থথেকে হামলা করছিস,সসসাহস থাকে ত সসসামনা সামননি আয়।তোর চচোখ ততুলে হহাতে ধরিয়ে দিব।”

কাব্য সাবিহার কথা শুনে পকেট থেকে একটা ব্লেড নিয়ে সাবিহার গলায় চেপে ধরে,ধারালো ব্লেড হওয়ায় হালকা চেপে ধরাতেই কেটে রক্ত ঝড়ছে।সাবিহা চোখ বন্ধ করে নেয়,আর কাব্য বলে উঠে,,,

“আর একটা বাজে কথা বলবি সত্যি সত্যি লাশ ফেলে দিব তোর।”

সাবিহার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে,সাবিহা কাব্যর আচরনে একটুও অবাক হয় নি।সাবিহা এখন শুধু ভাবছে কীভাবে এর হাত থেকে ছুটবে।আগের সাবিহা হলে এতক্ষণে কেঁদে ভাসিয়ে দিত কিন্তু এখনকার সাবিহার সাথে আগের সাবিহার অনেক পার্থক্য।তাই সাবিহা নিজেকে শান্ত রেখে ভাবছে কীভাবে ছাড়া পাবে কাব্যর হাত থেকে।কাব্য আবারও বলে উঠল,,,

“তোর সত্যি পাখনা গজিয়েছে রে,অতিরিক্ত সাহস দেখানোর পাখনা।আর মেয়েদের পাখনা গজানোটা আমার একদম পছন্দ নয়।তাই তোর পাখনা কাটার জন্য এখানে তুলে নিয়ে আসা।
আমি তোর সাথে কোন বন্ধুত্ব ফন্ধুত্ব করতে তুলে নিয়ে আসি নি,আমি তর থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তোকে তুলে এনেছি।তুই মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আমার থেকে ইশাকে কেঁড়ে নিয়েছিস আমি সেটা বুঝিনি ভেবেছিস!কয়েকটা ছবি আর পেপারস দেখালেই আমার ভালবাসার উপর আমি অবিশ্বাস করব ভাবলি কী করে?কিছুক্ষণের জন্য আমার মনে হয়েছিল সেসবই সত্যি কিন্তু আমি গত তেরোদিনে সব হিসায় মিলিয়েছি আর এটাও বুঝতে পেরেছি সব তোর ষড়যন্ত্র।
তাই তকে এখানে তুলে এনেছি তোর বদনাম করার জন্য,তুই যাতে সমাজে কারো সামনে মুখ না দেখাতে পারিস তার জন্য তুলে এনেছি।এটাই হবে তোর শাস্তি আমার থেকে আমার ভালবাসাকে কেড়ে নেয়ার জন্য।
কিন্তু তুই উল্টো চাল চেলে দিলি তাই এতক্ষণ এত নাটক করতে হল।সত্যি তোরা মেয়েরা খুব বোকা,কিন্তু তোরা বোকা হলেও তোদের ভাবটা বেশি বুঝলি।আমি তোর কাছে মাফ চাই আর তুই ভাব দেখাস আমার সাথে!আমাকে তুই একটা মেয়ে হয়ে এভাবে শাসালি আর আমি সেটা মুখ বুঝে শয্য করব?কিন্তু আমি ত এত ভালো ছেলে নই যে সব শয্য করব মুখ বুঝে।এতক্ষণ হাত পা বাঁধা ছিল তাই কিছু করতে পারি নি।কিন্তু এখন সবকিছু গুনে গুনে শোধ তুলব।আর তুই কী করে ভাবলিরে তকে আমি এত ঘৃনা করতাম আর এই তেরোদিনে আমি এতটাই ভালো হয়ে যাব যে তোর কাছে ক্ষমা চাইব!”

“তততোর মমুখে থুথু দদদিতে খুবববই ইইচ্ছে কররছে রে,আআআর আআমি আমার ইচ্ছে অপূর্ণ রাখখখব ননা এএএকদমই।”

কথাটা বলেই সাবিহা কাব্যর হাঁটুতে একটা লাথি দেয় পা দিয়ে আর কাব্য টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে বসে পড়ে।আর সাবিহার গলা কিছুটা কেটে যায় কারন কাব্য নিচে পড়ে যাওয়ায় হাতটা সাবিহার গলা থেকে সরে যায় আর হঠাৎ সরে যাওয়ায় কেটে যায়।ভাগ্য ভালো কাব্য তেমন ভাবে ব্লেডটা ধরে নি নয়ত সাবিহার গলা মাথা থেকে সত্যি সত্যি আলাদা হয়ে যেত।সাবিহা তার এক হাত গলায় দিয়ে কাব্যর মুখে থুথু দেয় আর রেগে চিৎকার করে কাব্যর গলাচেপে ধরে বলে উঠে,,,

“তোর মত ছেলেকে একসময় ভালোবেসেছিল ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে নিজের প্রতি।তুই এতক্ষণ কী কী যেন বললি!যে মেয়েদের পাখনা গজানো তোর পছন্দ নয়,মেয়েরা বোকা তাই না!তুই ত মানুষ জাতির কলঙ্ক রে,তুই ত একটা মেয়ের গর্ভেই ছিলি দশমাস দশদিন।একটা মেয়ের জন্যই ত তুই এই পৃথিবীতে এসেছিস,আবার তুই একটা মেয়েকেই ভালবেসেছিস তবে তুই কীভাবে মেয়েদের এতটা ছোট করে কথা বলতে পারলি হে।”

কাব্য সাবিহার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু সাবিহা এমনভাবে ধরেছে যে ছাড়াতে পারছে না।সাবিহা এবার সাবিহার গলা থেকে হাতটা সরিয়ে কাব্যর গালে ঠাস ঠাস করে কয়টা থাপ্পড় বসিয়ে আবারও বলে উঠে,,,

“তুই আরো কী যেন বলছিলি যে ষড়যন্ত্র করে তোর ভালবাসাকে কেড়ে নিয়েছি তার জন্য আমার বদনাম করবি।আসলে তদের মত মানুষের উপকার করতে নেই,তোর ভালোর জন্য ঐ অসভ্য মেয়েটার বিরুদ্ধে জলজ্যান্ত প্রমান দিলাম কিন্তু তুই ভালবাসায় অন্ধ।বিশ্বাস নিয়ে বসে আছিস যে নিজের মনগড়া কথা নিয়ে আমার ক্ষতি করতে এসেছিস।ভালবাসায় এতটাও অন্ধ হওয়া ভালো নয় যেটাতে নিজের কিংবা অন্য কারো ক্ষতি হয়।এখন তোর আর গাধার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই,একটু বুদ্ধি থাকলে তুই আজকের মত জঘন্য কাজটা করতে পারতি না।সবটা আবেগ দিয়ে না ভেবে মাথা খাটাতি তবে আজ এসব হত না।কিন্তু তুই ত গাধার থেকেও অধম।
আর তুই যে তেরোদিনে ভালো হওয়ার ছেলে নয় সেটা আমি ভালো করেই জানি তাই তকে ক্ষমা করি নি আর না ক্ষমা করব।”

সাবিহা কথাটা বলেই কাব্যর গলা থেকে হাত সরিয়ে উঠাতে নিলেই কাব্য সাবিহাকে ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দেয় তখন সাবিহা গিয়ে খাটে পড়ে যায়।আর কাব্য সাবিহার দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু কাব্য কিছু করার আগেই সাবিহা কাব্যর পেটে লাথি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।আর ফ্লোর থেকে রডটা উঠিয়ে কাব্যর মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে।কাব্য সাথেসাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,সেটা দেখে সাবিহা কাব্যর ফোনটা পকেট থেকে বের করে ফোন লাগায় কাউকে।

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১১

হসপিটালের বেডে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে সাদাফ ভাইয়া,উনার পাশেই বসে আছি আমি আর একজন ডাক্তার আমার গলায় ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।অজ্ঞান অবস্থাতেও সাদাফ ভাইয়া আমার হাত খুব শক্ত করে আকড়ে ধরে আছে।যেন ছেড়ে দিলেই আমি তাকে ছেড়ে চলে যাবে।আমি একদৃষ্টিতে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি,এভাবে কত শান্ত দেখাচ্ছে তাকে।কিন্তু কে বলবে এই ছেলেই কিছুক্ষণ আগে তুলকালাম বাঁধিয়েছিল যার পরিনাম এখন সে অজ্ঞান।কথাটা ভেবেই আমি মুচকি হাসলাম,আর ভাবতে লাগলাম কিছুক্ষণ আগের ঘটনা?

★ফ্লাসব্যাক★

আমি কাব্য ভাইয়ের ফোন নিয়ে বাবাকে ফোন দিচ্ছিলাম তখন দরজায় শব্দ হওয়ায় আমি ফোনটা রেখে দরজার দিকে তাকাই।আমি গলায় হাত দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর ভাবছি কাব্য ভাই কী এখানে একা ছিল নাকি তার সাথে আরো কেউ ছিল যারা এখন দরজা ধাক্কাচ্ছে?
যে বা যারাই হোক না কেন আমি নিজের আত্মরক্ষা করবই করব।আমি এসব ভাবতে ভাবতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি,কিন্তু হঠাৎ করে দরজাটা ভেঙ্গে যায় আর দুজন লোক ভিতরে প্রবেশ করে।আমি তাদের মুখের দিকে না তাকিয়েই একজনের পেটে লাথি দিয়ে আরেকজনের নাকে ঘুসি দেই।দুজনেই ফ্লোরে ছিটকে পড়ে তখন আমি একজনকে ফ্লোর থেকে উঠাতে গেলে আমার চোখ আটকে যায়।কারন আমার সামনে সাদাফ ভাইয়া,আর সাদাফ ভাইয়ার নাকে ঘুসি দেয়াতে নাক দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছে।আমি অবাক হয়ে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর সাদাফ সাবিহাকে দেখে যেন দেহে প্রান ফিরে পায়।সাদাফের নাক দিয়ে যে রক্ত পড়ছে তাতে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।সাদাফ সাবিহাকে তার সামনে পেয়ে আর কিছু না ভেবেই সাবিহাকে টেনে বুকে আগলে নেয়।এতক্ষন সাবিহাকে হারানোর ভয়ে সাদাফ খুবই অস্থির হয়ে ছিল তাই সাবিহাকে দেখে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি।জড়িয়ে ধরে আর পাগলের মত কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে,,,

“সসসাবিহা আহমার সাবিহাকে খুঁজে পেয়েছি আমি,আমার সাবিহা সুস্থ আছে।আমার সাবিহাকে আমি খুঁজে পপপেয়েছি,আমি তোমাকে আর কোথাও যেতে দিব না।তুমি এএএবার থেকে আমার সাথেই থাকবে,আমি তততোমাকে আর একা কোথাও যেতে দিবনা।তুমি আমার সাথে থাকবে,আমার কাছে থাকবে।”

সাদাফ ভাইয়া কথাগুলো বলছে আর আমাকে শক্ত করে আকড়ে ধরেছে।আমি খুব অবাক হচ্ছি সাদাফ ভাইয়ার কথা শুনে,তার পাশাপাশি গলায়ও খুব ব্যাথা পাচ্ছি।আমি যে উনাকে বলব ছাড়তে সেটা বলতেও যেন কথা গলায় আটকে যাচ্ছে,এভাবে চেপে ধরায়।তারপরও আমি অনেক কষ্টে বলে উঠি,,,

“সসসাদাফ ভাই ছাড়্ড়ুন আমাকে,আআমার ব্যাথা ললাগছে।”

সাবিহার এমন দুর্বল গলা শুনতে পেয়ে সাদাফ হুসে আসে,সাদাফ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় সাবিহাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখায়।তাই সাদাফ হুসে আসার সাথে সাথেই সাবিহাকে ছেড়ে দেয়।

আমি ছাড়া পেয়ে গলায় হাত দিয়ে বড় করে কয়েকটা শ্বাস ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়াই।গলায় চাপ লাগার কারনে ব্যাথাটা খুব বেশিই করছে গলায় আর রক্তও পড়ছে অনেক।আমি চোখমুখ কুঁচকে ফেলি ব্যাথায়,দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা শয্য করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।অন্যদিকে সাদাফও সোজা হয়ে দাঁড়ায় আর সাদাফের চোখ যায় সাবিহার দিকে,সাবিহা কেমন যেন করছে।
সাদাফ এবার সাবিহার দিকে ভালো করে তাকায় আর চোখ আঁটকে যায় সাবিহার গলায় থাকা হাতের দিকে,যে হাত দিয়ে গলা চেপে ধরেছে সেখানে স্পষ্ট রক্ত দেখা যাচ্ছে।সাদাফ রক্ত দেখে ঘাবড়ে যায়।এক ঝটকায় সাবিহাকে নিজের কাছে এনে সাবিহার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে যেই হাতটা গলায় ছিল সাবিহার।আরেক হাত সাবিহার গালে দিয়ে পাগলের মত বলে উঠে,,,

“ররক্ত,এত রক্ত কেন?তোমার কী হয়েছে সাবিহা,এত রক্ত কেন?সাবিহা কথা ববলো,ককী হয়েছে ববলো না!ননিলয়,এএএই নিলয় দদেখ না সাবিহা আহমার সাথে কথা ববলছে না।সসাবিহা কেমন যেন ককরছে!”অঅঅনেক রক্ত পড়ছে,নননিল,,,

আর কিছু বলার আগেই সাদাফ ডলে পড়ে সাবিহার উপর,অতিরিক্ত চিন্তার ফলে সাদাফ জ্ঞান হারায়।সাবিহা কোন মতে নিজেকে সামলে নেয়,নিলয় এতক্ষণ নিরব দর্শকের মত তার বন্ধুর পাগলামি গুলো দেখছিল।তখন যে সাবিহার লাথি খেয়ে নিচে পড়েছিল এখনও সেখানেই বসে আছে আর সবটা দেখছিল।কিন্তু এখন আর চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না,তাই নিলয় গিয়ে সাবিহার থেকে ছাড়াতে নিলে সাবিহা সাদাফের উপরে পড়ে যায়।সাদাফ সাবিহার হাতটা এখনও খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে যার কারনে সাবিহাও সাদাফের উপরে পড়ে যায়।সাবিহা হাত ছাড়াতে চায় কিন্তু পারে না,নিলয় সেটা দেখে এমন একটা মুহুর্তেও মুচকি হাসে আর সাবিহাকে বলে,,,

” তুমি একটু সাথে সাথে এসো।”

সাবিহা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় আর নিলয় সাদাফকে পাঁজা কোলে করে নেয়।আর সাবিহাও আরেক হাত গলায় দিয়ে অনেক কষ্টে সাথে সাথে যায়।তারা বাড়িটা থেকে বেরিয়ে নিলয়ের গাড়িতে উঠে।সাদাফ আর সাবিহাকে নিলয় গাড়িতে বসিয়ে তার ড্রাইভারকে বলে তাদের হসপিটালের পৌঁছে দিতে,সে কাব্যকে নিয়ে আসছে।

(সাদাফের ফ্রেন্ড নিলয় আর শীলা যার কারনে সাবিহা নিলয়কে চিনে।আর নিলয়ও কাব্যকে চিনে শীলার মাধ্যমেই তাই চিনতে কারো কোন অসুবিধা হয় নি)

★বর্তমান★

সাদাফ ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে,ডাক্তার বলেছে অতিরিক্ত চিন্তার কারনে জ্ঞান হারিয়েছে।চিন্তার কোন কারন নেই,সাদাফ ভাইয়া এখন ঘুমাবে।আর আমাকে ডাক্তাররা কেবিনে শিফট করতে চেয়েছিল কিন্তু সাদাফ ভাইয়ার জন্য পেরে উঠা হয় নি।তাই তারা বাধ্য হয়েই আমাকে বসিয়ে রেখে গলায় ব্যান্ডেজ করে দেয়,এই কেবিনে ডাবল বেডও নেই যে একটু রেস্ট নিব।খুব ক্লান্ত লাগছে একটু ঘুমালে ভালো লাগত কিন্তু সেটা এখন সম্ভব নয়।ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে ডাক্তার চলে যায় আর কিছুক্ষণ পর ভিতরে প্রবেশ করে নিলয় ভাইয়া।নিলয় ভাইয়া আমার জন্য স্যুপও নিয়ে আসে,আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,

“সাবিহা তুমি স্যুপটা খেয়ে নাও।”

আমি কিছু বলতে গেলে গলার কাটা জায়গায় কেমন ব্যাথা অনুভব করি,যেন গলার রগ ছিড়ে যাবে। আর নিলয় ভাইয়া সেটা বুঝতে পেরে বলে উঠে,,,

“কথা বলো না তুমি,গলায় বেশ ভালোই জখম হয়েছে।কথা বললে সমস্যা হবে,আর ডাক্তারও বলেছে কথা না বলে চুপ থাকতে যতদিন গলার কাটা গা না শুকায়।কথা বললে সমস্যা আরো বাড়তে পারে তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।”

আমি নিলয় ভাইয়ার কথা শুনে চুপ করে যাই আর ইশারায় বুঝাই যে আমি স্যুপ খাই না।নিলয় ভাইয়ার সেটা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হল,কিন্তু বুঝার পর বলে উঠে উনি,,,

“এখন এটাই খেতে হবে ডাক্তার বলেছে এখন ভারী খাবার একদম খাওয়া যাবে না।তাই একটু কষ্ট করে খেয়ে নাও।”

আমি মেনে নেই নিলয় ভাইয়ার কথা,আর চুপচাপ খাওয়া শেষ করি।খাওয়ার পর আমি আবারও ভাইয়াকে ইশারায় কিছু একটা বলতে চাইছি কিন্তু উনি কিছুই বুঝতে পারছে না।তাই নিলয় ভাইয়া তার ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বলে উঠে টাইপ করতে যা বলতে চাইছি,আমিও টাইপ করে ভাইয়ার দিকে ফোনটা এগিয়ে দেয়।নিলয় দেখে সাবিহা তাকে বলেছে,,,

“বাবাকে জানিয়ে দিন ভাইয়া আমি ঠিক আছি,নয়ত চিন্তায় মরেই যাবে।”

“শীলাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু ধরে নি আর তোমার বাসার কারো ফোন নাম্বার ত আমার কাছে নেই।তাই আমি সাদাফের বাবা মানে আঙ্কেল কে জানিয়ে দিয়েছি তোমরা হসপিটালে আছো।আর উনি যাতে তোমার বাসার সবাইকে নিয়ে হসপিটালে চলে আসে।”

আমি উনার কথার পরিবর্তে ইশারায় ধন্যবাদ জানাই।কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে কাব্য ভাইয়ের কথা আর ফোনটা নিয়ে টাইপ করে ভাইয়ার দিকে বাড়িয়ে দেই যাতে লেখা,,,

“কাব্য ভাই কোথায়?উনার কী অবস্থা এখন?”

নিলয় ভাইয়া সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“কাব্য এই হসপিটালেই ভর্তি আছে,একটু আগে জ্ঞান ফিরেছে।কিন্তু তোমাদের দুজনের এই অবস্থা কীভাবে হল?”

নিলয়ের কথা শুনে আমি মাথাটা নিচু করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবারো টাইপ করি,,,

“অনেক কাহিনী কিন্তু সেটা ফোনে টাইপ করে বলা সম্ভব নয়।তাই যতদিন না আমি সুস্থ হচ্ছি,ঠিক করে কথা বলতে পারছি ততদিন কাব্য ভাইকে একটু নজরে রাখুন।”

আমার কথা শুনে নিলয় ভাইয়া খুব অবাক হয় কিন্তু উনি বেশি কিছু না ভেবে চলে যায় কাব্যর ব্যাবস্থা করতে।সাবিহা যখন বলছে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে,তাই তাকে এখন কাব্যর উপর নজর রাখতে হবে।

_____________________________________

দুই ঘন্টা পর সাদাফের জ্ঞান ফিরে,আর জ্ঞান ফেরার পর সাদাফ নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে।আর তার পাশে সাবিহাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পায়,তার হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।সাদাফ সেটা দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,কিন্তু পরক্ষণেই সাদাফের মনে পড়ে যায় তখন সাবিহার গলায় রক্ত দেখেছিল।তাই সাদাফ শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসে।

হাতে টান অনুভব হওয়ার ঘুমটা ভেঙ্গে যায় আমার।খুব বেশিই খারাপ লাগছিল আর কখন যে চোখ লেগে যায় বুঝতেই পারি নি।আমি ঘুম থেকে উঠে ছোট ছোট চোখ করে সামনে তাকিয়ে দেখি সাদাফ ভাইয়ের জ্ঞান ফিরেছে।আমি সেটা দেখে মুচকি হেঁসে কিছু বলব কিন্তু গলায় আবারও সেই ব্যাথা অনুভব হয়।তাই চুপ করে যাই আর সাদাফ ভাইয়া আবারও উত্তেজিত হয়ে আমার গলায় ব্যান্ডেজ করা জায়গায় হাত দিয়ে বলে উঠে,,,

“তুমি ঠিক আছো?গলায় কী হয়েছে তোমার?রক্ত কেন ছিল এখানে?এখন ব্যান্ডেজ করা কেন এখানে?”

আমি কী বলব এখন,কিছুই ত বলতে পারছি না।উফফ খুব বিরক্ত লাগছে এখন,কথা বলতে না পারলে কার ভালো লাগে!আমি চুপ করে আছি বলে সাদাফ ভাই আবারও বলে উঠে,,,

“এই সাবিহা তুমি আমার সাথে কথা কেন বলছো না?তোমার কী হয়েছে বলো আমাকে?”

সাদাফ ভাইয়া কথাটা কিছুটা জোড়েই বলে উঠে,যার ফলে বাইরে থেকে সাবিহার বাবা,মা,বোন,আর সাদাফের বাবা মা আর নিলয় ভিতরে প্রবেশ করে।সাবিহার পরিবার আর সাদাফের পরিবার অনেক আগেই এসেছে হসপিটালে কিন্তু তারা ঘুমাচ্ছিল বলে নিলয় তাদের জাগাতে বারন করে।তাই তারা বাইরে অপেক্ষা করছিল তাদের ঘুম ভাঙ্গার জন্য।কিন্তু এখন সাদাফের কথা শুনে সবাই ভিতরে আসে,সাদাফ তার বাবাকে দেখে বাচ্চাদের মত অস্থির হয়ে বলে উঠে,,,

“বাবা দেখো না সাবিহা আমার সাথে কথা বলছে না!বলছে না আমাকে সাবিহার কী হয়েছে?ও বাবা তুমি সাবিহাকে বলো না আমার সাথে কথা বলতে।বলো না বলতে অর কী হয়েছে!আমার যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে বাবা,একটু কথা বলতে বলো না আমার সাথে।”

সাদাফ ভাইয়ার কথাগুলো বলার সময় চোখের কোনে পানি জমা হয়।উনাকে এমন করতে দেখে আমি অবাকের উপর অবাক হচ্ছি।আজ নতুন করে সাদাফ ভাইয়াকে দেখছি।

“এমন পাগলামি কেন করছে উনি?উনি আমার জন্য এতটা চিন্তিত সেটা ত উনাকে আগে দেখে মনে হয় নি।আচ্ছা উনার মনে কী আমার জন্য কোন ফিলিংস আছে।ইস্ কী ভাবছি আমি এসব,দেৎ এমন কিছুই হবে না।”

মনে মনে এসব ভাবছি আর সাদাফ ভাইকে দেখছি,সাদাফ ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে আঙ্কেল মানে সাদাফ ভাইয়ের বাবা বলে উঠে,,,

“তুই একটু শান্ত হ সাদাফ,সাবিহা ঠিক আছে এখন।”

“সাবিহা ঠিক থাকলে অর গলায় ব্যান্ডেজ কেন আর আমার সাথে কথা কেন বলছে না,সাবিহা ঠিক নেই!

সাদাফ ভাই এবার আমার কাঁধে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে বলে উঠে,,,

“এই সাবিহা আমার সাথে কথা বলো তুমি।বলো আমাকে তোমার কী হয়েছে?একটু বলো না আমায় এমন চুপ করে থেকো না প্লিজ।তোমার চুপ থাকাটা আমার ভিতরটা ধুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে,প্লিজ কথা বলো আমার সাথে।”

ঝাঁকুনির ফলে আবারও গলায় ব্যাথা পাচ্ছি,তাই চোখটা বন্ধ করে ফেলি আমি।সেটা দেখে নিলয় ভাইয়া বলে উঠে,,,

“সাদাফ তুই শান্ত হ,আমি তকে সবটা বলছি সাবিহার কী হয়েছে?আর শীলা তুই সাবিহাকে নিয়ে পাশের কেবিনে যা,সাবিহার বিশ্রাম নেয়া দরকার।এতক্ষণ সাদাফের জন্য সেটা সম্ভব হয় নি এখন তুই সাবিহাকে নিয়ে যা।”

নিলয় ভাইয়ার কথা শুনে সাদাফ ভাইয়া এবার হাতের স্যালাইনের ক্যানেলটা একটানে খুলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,,,

“না সাবিহা কোথাও যাবে না,সাবিহা আমার কাছে থাকবে।তোমরা যাও এখান থেকে,সাবিহা আমার কাছেই থাকবে।আমি সাবিহাকে আর একা ছাড়ব না,আমার কাছে রাখব আমার সাবিহাকে।ছেড়ে দিলেই আবার হারিয়ে ফেলব,আমি যেতে দিব না সাবিহাকে।”

সাদাফ ভাইয়ের পরপর এমন অস্বাভাবিক আচরনে আমি খুবই অবাক হচ্ছি উনি এমন পাগলামি কেন করছে?আমার মাথা এসব ভাবনায় পুরো পাগল পাগল অবস্থা।

“সাদাফ সাবিহা তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে না,পাশের কেবিনেই আছে।সাবিহার শরীর ভালো নয় একটু রেস্ট নিতে দাও।”(মনির সাহেব)

” না সাবিহা কোথাও যাবে না,আমার সাথে থাকবে।আর সাবিহাকে পাশের কেবিনেও যেতে দিব না,আমার কাছেই থাকবে।”

কথাটা বলেই সাদাফ ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নেয় আর বেডে শুইয়ে দেয়।সেটা দেখে আমার চোখ বড়বড় হয়ে যায়,উপস্থিত সবাই অবাক চোখে সাদাফের দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাফ যে সাবিহার জন্য এতটা ডেস্পারেট হতে পারে সেটা সবার কল্পনার বাহিরে ছিল।সাদাফ ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,,,

“তুমি আমার কাছেই থাকবে,কোথাও যেতে দিব না।এবার একটু কথা বলো না আমার সাথে,তোমার গলার স্বরটা শুনতে খুব ইচ্ছে করছে।একটু কথা বলো না আমার সাথে,বলো না তোমার গলায় কী হয়েছে?”

সাদাফ ভাইয়ের কথা শুনে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,কিছুই বলছি না।আর সাদাফ ভাইয়া টলমল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কথাগুলো বলেছে।আমার এবার সাদাফ ভাইয়ের জন্য খুবই খারাপ লাগছে।আমার কথা শোনার জন্য উনি কতটা অস্থির হয়ে আছে অথচ আমি কথাই বলতে পারছি না।

“সাদাফ সাবিহা কথা বলবে না।”(শীলা)

“মানেহ?”

তারপর শীলা সবটা খুলে বলে যতটা নিলয় জানে।সবটা শুনে সাদাফ বলে উঠে,,,

“এসবের পিছনে ঐ কাব্য আছে।ঐ কাব্য সাবিহাকে আঘাত করেছে আমি জানি।কাব্যকে আমি ছাড়ব না জানে মেরে দিব একদম।আমার কলিজায় হাত দেয়া,ঐ হাত কেটে ফেলব আমি।”

কথাগুলো বলে সাদাফ বের হয়ে যায় কেবিন থেকে আর তার পিছন পিছন সাদাফের বাবা আর নিলয়ও যায়।

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-০৯

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৯

সাদাফ পাগলের মত এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছে,সারা শপিংমল খুঁজে চলেছে তন্নতন্ন করে।কিন্তু কোথাও সাবিহাকে পাচ্ছে না,সাদাফের অবস্থা খুবই খারাপ।সারা শরীর ঘেমে গিয়ে অবস্থা খুবই করুন, চোখগুলো কেমন অস্থির হয়ে এদিক সেদিক সাবিহাকে খুঁজে চলেছে।সাদাফের অস্থির চোখের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবে ঐ চোখে কতটা ভালবাসা লুকিয়ে আছে,কতটা ভালবাসলে কেউ এতটা অস্থির হয়ে খুঁজতে পারে কাউকে।সাদাফ এবার এক জায়গায় দাড়িয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোন লাগায় মনির সাহেবকে।ফোনটা ধরতেই সাদাফকে কিছু বলতে না দিয়েই মনির সাহেব উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,,,

“সাদাফ সাবিহার খোঁজ পেয়েছো!সাবিহার মা ত কান্নাকাটি করে অবস্থা খারাপ করে ফেলছে।”

সাদাফ কথাটা শুনে চোখ বন্ধ করে কয়েকটা শ্বাস ফেলে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“সাবিহাকে পাই নি আঙ্কেল,আমি পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছি।আপনি আন্টি আর শীলার দিকে খেয়াল রাখুন।চিন্তা করবেন না সাবিহাকে ঠিক খুঁজে পাব আমরা।”

কথাটা বলে সাদাফ মনির সাহেবকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ফোনটা রেখে দেয় আর একটা জায়গায় বসে পড়ে মাথা নিচু করে,চুলগুলো টেনে ধরে ভেজা গলায় বলে উঠে,,,

“কোথায় চলে গেলে তুমি?প্লিজ ফিরে এসো।এতটুকু সময়েই তুমি হীনা নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে।আমি পারব না তোমাকে ছেড়ে থাকতে,প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে।ভালবেসে যত্ন করে আমার কাছে রেখে দিব,কোথাও হারাতে দিব না তোমাকে।প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে।”

_______________________________________

কাব্য এখনও হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে,আর সাবিহা হাতে একটা রড নিয়ে কাব্যর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।কাব্য সেটা দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠে,,,

“তুই এটা দিয়ে কী করবি?”

সাবিহা কাব্যর কথা শুনে বাঁকা হাসল,তারপর রডটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলে উঠল,,,

“সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল টা বাঁকাতে হয়,কথাটা জানেন নিশ্চয়ই!”

“দেখ সাবিহা একদম বারাবাড়ি করবি না,তখন থেকে এমন শুরু করেছিস আমার সাথে।তুই হয়ত ভুলে যাচ্ছিস আমি বয়সে তোর বড় আর তোর মামাত ভাই।”

“ওহহ রিয়েলি!নিজের বেলায় ষোল আনা আমার বেলায় এক আনাও নয় তাই না!কিডন্যাপ করার সময় মনে ছিল না যে আমি ছোট,আপনার ফুপাত বোন।তখন এসব কোথায় ছিল হে,আপনার ঐ গার্লফ্রেন্ড ইশার কাছে?”

“সাবিহা দেখ কথায় কথায় কিডন্যাপ করেছি কথাটা টেনে আনবি না।তকে কিডন্যাপ করে নিজে কিডন্যাপ হয়ে গেছি তোর কাছে।এখন ইচ্ছে করেছে নিজের চুল নিজে টেনে ছিড়ি।আর ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটার কথা আমার সামনে বলবি না,ঐ মেয়ের কথা মনে হলেই গা গুলোয়,বমি আসে।”

“গিরগিটির থেকেও খুব তাড়াতাড়ি আপনি রং বদলান কাব্য ভাই।আপনার থেকে গিরগিটির প্রশিক্ষন নেয়া দরকার,যে কীভাবে এত দ্রুত রং পাল্টানো যায়।”

“মুখ সামলে কথা বলবি সাবিহা,নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”(ধমকে)

কাব্য ধমক দেয়ার সাথে সাথে সাবিহা কাব্যর মুখে রডটা ডুকিয়ে দিয়ে রেগে বলে উঠে,,,

“এই একদম ধমক দিবেন না,আপনার খাইও না পড়িও না যে ধমক দিবেন আমাকে।আর এত কথা আপনাকে বলতে বলি নি আমি।যেটা জানতে চাইছি সেটা বলুন নয়ত এখান থেকে বাড়ি ফিরতে হবে না সোজা কারাগারে ডুকাব।ত ভালোয় ভালোয় বলুন এখানে তুলে এনেছেন কেন?”

মুখে রড থাকার কারনে কাব্য কিছু বলতেও পারছে না।তাই মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করছে যাতে সাবিহা মুখ থেকে রডটা সরায় কিন্তু সাবিহা সেটা বুঝতে পেরেও সরায় না।

“এত সিগন্যাল দিয়ে কোন লাভ হবে না,আগে আমার উওর চাই কেন তুলে এনেছেন এখানে?মাথা নাড়িয়ে উওর দিন বলবেন কী বলবেন না!যদি বলেন ত সরাব নয়ত এই রড দিয়ে মাথা দুই ভাগ করে ফেলব।”

সাবিহার কথা শুনে কাব্যর চোখ বের হওয়ার উপক্রম,তাই কাব্য জলদি মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝায় সে বলবে কেন তুলে এনেছে!সেটা দেখে সাবিহা মুচকি হাসল তারপর ইশারা করল বলার জন্য।কাব্য এবার বলতে শুরু করে,,,

“তোকে সারপ্রাইজ দিয়ে এতদিনের করা সব খারাপ আচরনের জন্য সরি বলে তোর সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য তুলে এনেছিলাম।”

সাবিহা কাব্যর কথা শুনে বোকা বনে গেলো,এভাবে তুলে না এনে ভালো করে বললেই ত হত।এভাবে তুলে আনার কী মনে হয়?সাবিহা এবার রেগে কাব্যর পিঠে ধামধুম কয়টা কিল ঘুসি বসিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,,,

“ইচ্ছে করতাছে মেরে দাঁত ভেঙ্গে দিতে আপনার, পাগল আপনি?এভাবে তুলে এনেছেন সরি বলে বন্ধুত্ব করার জন্য?
Like seriously?ঐদিক দিয়ে আমার পরিবারের সবাই আমাকে খুঁজে না পেয়ে হয়ত চিন্তা করতে করতে অস্থির হয়ে পড়েছে।আর আপনি এমন বোকার মত কাজটা কীভাবে করতে পারলেন?আপনি ত আমার বাসাতেও যেতে পারতেন?”

কাব্য মাইর খেতে খেতে শেষ,কাব্য নিজেকে সামলে বলে উঠল,,,

“বইন আর মারিস না,আর তুই ত আমার সাথে দেখাই করতে চাইতি না তাই এই ব্যাবস্থা।”

মাথা নিচু করে কাব্য বলল,সেটা দেখে সাবিহা আরো রেগে বলে উঠে,,,

“তাই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমাকে এভাবে তুলে এনেছেন!আর কত ক্ষতি করবেন আপনি আমার?আপনাকে আমি পুলিশে দিব,আপনাকে আরো আগেই পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার দরকার ছিল।তবে আজ হয়ত এমন কিছু হত না,কিন্তু এবার আর কোন ছাড় নেই।এবার ছাড় দিলে দেখা গেলো ভবিষ্যতে আপনি আরো বড় কোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন তাই শাস্তি পাওয়ার জন্য তৈরি হন কাব্য ভাই।”

“সাবিহা দেখ এমন কিছুই করবি না তুই,আমি জাস্ট,,,

” একদম চুপ,আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাইনা,এবার যা করার পুলিশ করবে।কত্ত বড় সাহস ছোট একটা কারনে আমাকে তুলে এনেছে, আমার পরিবারকে মানসিক ভাবে কষ্ট দিচ্ছে।”

“আর আমি যে কষ্ট পাচ্ছি!তার কী হবে?”

কাব্য কথাটা কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে,সাবিহা এবার কাব্যর দিকে তাকায় আর বলে উঠে,,,

“আপনার কষ্ট ত আমাকে তুলে এনেছেন কেন?আপনার কষ্ট কমানোর ঔষধ ত আপনার ইশা বেপি,ত তার কাছে না গিয়ে আমাকে তুলে এনেছেন কেন?”

“সাবিহা তুই এতটাও অবুঝ নস যে বুঝতে পারছিস না আমার কষ্টের কারনটা কী?”

“আমি কোন কবিরাজ কিংবা বিজ্ঞানী না যে কষ্টের কারন জেনে তার ঔষধ দিব।”

“সাবিহা প্লিজ এতটা কঠোর হসনা আমার প্রতি।আমাকে ক্ষমা করে দে দয়াকরে,আয় না আমরা অন্য সব মামাত,ফুপাত ভাই বোনের মত স্বাভাবিক জীবন কাটাই।আমি পারছি না এত কষ্ট যন্ত্রণা শয্য করে বাঁচতে।ইশা যদি আমাকে না ঠকাত তবে হয়ত আমার মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধটাই আসত না।আগের মতই হয়ত পশুর মত আচরন করতাম কিন্তু এখন আমি হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি যে আমি কী কী করেছি?কতটা কষ্ট আমার পরিবারকে দিয়েছি,কতটা খারাপ আচরন করে তকে কষ্ট দিয়েছি।আমাকে তুই ক্ষমা করে দিয়ে নতুন করে বাঁচার সুযোগ করে দে দয়াকরে।”

কাব্য কথাগুলো বলতে গিয়ে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল,সাবিহার সেটা দেখে একটু খারাপ লাগছে না।ছেলে মানুষকে সহজে কাঁদতে দেখা যায় না।কিন্তু যখন তারা কাঁদে তখন সে দৃশ্য চোখে পড়লে খুবই খারাপ লাগে।কিন্তু সাবিহা নিজেকে যতটা সম্ভব কঠোর রাখার সেটা রাখতে চাইছে।সাবিহা কাব্যকে কিছু না বলে রুমটার বারান্দায় চলে যায়।

_____________________________________

সাদাফ পুলিশ স্টেশনে রিপোর্ট করে ফিরছিল তখন একটা জায়গায় সাদাফের চোখ আটকে যায়।সাদাফের মুখে অটোমেটিক হাসি ফুটে উঠে,সাদাফ দৌড়ে সেখানে যায় আর সামনে থাকা মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে।

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-০৮

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৮

সাদাফ ভার্সিটি থেকে বাড়িতে এসে খেতে বসেছে,এমন সময় সাদাফের ফোনটা বেজে উঠে।সাদাফ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মনির সাহেবের ফোন।সাদাফ এক গাল হেঁসে ফোনটা রিসিভ করল,কিন্তু সাদাফের কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে মনির সাহেব অস্থির হয়ে বলে উঠে,,,

“সাবিহাকে পাওয়া যাচ্ছে না সাদাফ।”

মনির সাহেবের কথা শুনে সাদাফের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল,সাদাফের হাত কাঁপছে।সাদাফ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল,,,

“সাবিহাকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কী বলছেন এসব?”

“আমরা সবাই শীলার বিয়ের শপিং করতে এসেছি,শপিং করতে করতে একটা সময় সাবিহা পানি খেতে যায় তারপর আর ফিরে আসে নি।সারা শপিংমল খুঁজে ফেলেছি কিন্তু কোথাও সাবিহাকে পাচ্ছি না।”

“শপিং মল থেকে একটা মেয়ে কীভাবে উদাও হতে পারে?সাবিহা হয়ত আশেপাশেই আছে,ভালো করে খুজে দেখুন সবাই।নয়ত কোথাও কাজে আটকে আছে এক্ষুনি এসে পড়বে।”

“কোথাও কোন কাজে গেলে আর কাউকে না বললেও আমাকে বলবে,কিন্তু সাবিহা ত কিছু বলে নি শুধু পানি খেতে যাবে এটাই বলেছে,আর সাবিহাকে খুজে পাচ্ছি না ঘন্টাখানিক হবে।পানি খেতে কী এতক্ষণ লাগবে বলো তুমি।আর ফোনটাও বন্ধ সাবিহার,আশেপাশে অনেক খুঁজেছি সবাই কিন্তু আমরা সাবিহাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।তুমি কিছু একটা করো সাদাফ।আমার মেয়েটাকে খুঁজে এনে দাও দয়াকরে।”

“আঙ্কেল আপনি শান্ত হন আমি এখনি আসছি,আমি সাবিহাকে খুঁজে আনবই।সাবিহার কোন ক্ষতি আমি হতে দিব না,আপনি শান্ত হন।

কথাটা বলে সাদাফ তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে বাড়ি থেকে বের হতে নিলেই সাদাফের বাবা বলে উঠে,,,

” এখন কই যাচ্ছো?খাবার ত খেয়ে যাও।”

“বাবা এখন খাওয়ার সময় নেই,আমাকে যেতে হবে এখুনি।তোমরা সাবিহার বাড়িতে যাও সবটা জানতে পারবে।”

কথাটা বলে সাদাফ এক প্রকার দৌড়ে চলে যায় সাবিহাকে খুঁজতে।সাদাফ হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে,সাদাফের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।সাবিহা কোথায় আছে?কেমন আছে?কেউ কোন ক্ষতি করে নি ত সাবিহার?সাদাফ কী সাবিহাকে খুঁজে পাবে না?সাদাফ কী চিরদিনের জন্য সাবিহাকে হারিয়ে ফেলল?এমন নানা ধরনের চিন্তা সাদাফের মাথায় ঘুরছে।সাদাফ এক হাতে গাড়ি ড্রাইভ করছে আরেকহাত বারবার নিজের মুখ মুচছে,গাড়িতে এসি চলছে তার পরও সাদাফ ঘেমে যাচ্ছে।

“সাবিহা তুমি কোথায় চলে গেলে?আল্লা তুমি সাবিহাকে সুস্থ রেখো।সাবিহার যাতে কোন ক্ষতি না হয়,তুমি রক্ষা করো সাবিহাকে।”

_____________________________________

সাবিহা একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে,আার তার সামনেই কাব্য হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে।কাব্যর খুব রাগ হচ্ছে সাবিহার উপর,একে ত সাবিহা কাব্যকে ইচ্ছে মত দোলাই করল,হাত পা বেঁধে বসিয়েও রেখেছে।যেখানে সাবিহাকে কাব্য বিছানায় শুইয়ে রেখেছিল,হাত পা বাঁধে নি কিন্তু এই মেয়ে ত কাব্যকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল।তার উপর এমন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে যেন কিছুই হয় নি।এসব ভেবে কাব্য নিজেকে নিজেই বকছে যে কেন এই বোম্বাই মরিচকে তুলে আনতে গেলো আর কিছুক্ষণ আগের কথা ভাবছে,,,

★ফ্লাসব্যাক★

সাবিহাকে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছে,সাবিহার এখনও জ্ঞান ফিরে নি।সাবিহার সামনে কাব্য চেয়ার নিয়ে বসে আছে,আর এক দৃষ্টিতে সাবিহাকে দেখছে।এভাবে অনেকক্ষণ পরও যখন সাবিহার জ্ঞান ফিরে না তখন কাব্য সাবিহার চোখে পানির ছিটা দেয়।সাবিহা টিপটিপ করে চোখ খুলে তার সামনে কাব্যকে দেখতে পায়।কাব্য সাবিহার দিকে ঝুঁকে আছে।

জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে একটা ঘরে বিছানায় আবিষ্কার করি,আর সামনেই কাব্য ভাইকে ঝুঁকে থাকতে দেখে ঘাবড়ে যাই।কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে যায় শপিংমলে কেউ আমাকে অজ্ঞান করেছিল। তারমানে কাব্য ভাই আমাকে কিডন্যাপ করে ছিল তখন।কাব্য কিছু বলবে কিন্তু তার আগেই সাবিহা তার দুই পা একসাথে করে কাব্যর পেটে লাথি দিয়ে দূরে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।কাব্য আবার সাবিহার কাছে এসে সাবিহাকে কিছু বলতে গেলে সাবিহা কাব্যর হাত মুচড়ে পিছনে নিয়ে কাব্যর পিঠে কনুই দিয়ে আঘাত করে।কাব্য মাটিতে পড়ে যায়,সাবিহা সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশে দরি খুজতে থাকে।কিন্তু আশেপাশে কিছু না পেয়ে বিছানার চাদর পেচিয়ে কাব্যকে বেঁধে ফেলে।তারপর যেই চেয়ারে কাব্য বসে ছিল সেই চেয়ারে সাবিহা বসে,আর হাত ঝাড়া দিতে দিতে বলে উঠে,,,

“কী ভেবেছেন আপনি হুম মেয়ে বলে দুর্বল আমি,সেদিন আঘাত করে পাড় পেয়ে গেছেন বলে কী আজও ছেড়ে দিব আপনাকে?যদি এমনটা ভেবে থাকেন তবে ভুল ভাবছেন।তখন কাপুরুষের মত পিছন থেকে আঘাত করেছিলেন তাই রক্ষা পেয়ে ছিলেন তখন কিন্তু এখন কী করবেন হুম?”

কাব্য ছোটার জন্য ছটফট করছে,কিন্তু ছুটতে পারছে না।কাব্য আপ্রান চেষ্টা করেও খুলতে পারছে না হাতে পায়ের বাঁধন।সেটা দেখে সাবিহা একটা তৃপ্তির হাসি হাসল,সাবিহা এবার বাঁকা হেঁসে বলে উঠল,,

“কী সমস্ত শক্তি শেষ নাকি,ছুটতে পারছেন না!আমি না চাইলে আপনি ছুটতেও পারবেন না আর না এখান থেকে এক পাও নড়তে পারবেন।এবার বলুন ত আমাকে কিডন্যাপ কেন করেছেন আপনি?কী স্বার্থ আছে এসবের পিছনে হুম?এবার কী মেরে গুম করে দেয়ার প্ল্যান এঁটেছিলেন?”

“সাবিহা আমার হাতে পায়ের বাধনঁ খোল।”(ধমকে)

সাবিহা রেগে বলে উঠে,,,

“একদম ধমকাবেন না আমাকে,চোরের মায়ের বড় গলা কথাটা আবারও প্রমানিত হল।আমাকে এখানে তুলে এনে আবার ধমকাচ্ছেন আমাকে!আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি এতকিছুর পরও কী আপনার মন ভরে নি কাব্য ভাই!আপনি আজ আমাকে এখানে তুলে এনেছেন কেন?আবারও মারার জন্য তুলে এনেছেন!কিন্তু সেটা ভেবে থাকলে ভুল ভাবছেন আপনি।কারন সাবিহা আর আগের মত নরম নয় যে চুপচাপ সেদিনের মত মার শয্য করে যাবে।”

“বেশি কথা না বলে ছাড় আমাকে।”

“ছাড়লে যাতে মারতে পারেন আবারও তার জন্য ছাড়ব আপনাকে?”

“আমি এসব কিছু করার জন্য তকে এখানে আনি নি।”

সাবিহা এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর কাব্যর গাল চেপে ধরে বলে উঠে,,,

“এখন ত ধরা পড়ে গেছেন তাই এসব বলছেন।আমাকে কী বলদ মনে হয় আপনার হুম?”

“সাবিহা ছাড় লাগছে আমার,মেয়েদের হাত মমতার হাত জানতাম কিন্তু তোর হাতের স্পর্শ পেয়ে মনে হচ্ছে সেটা ভুল।”

“চুপ একদম চুপ এত ডায়লগ দিবেন না।মেয়েদের বুঝার মত মন মানসিকতা আপনার নেই।তাই এসব ডায়লগ দিবেন না,কিন্তু জেনে রাখুন মেয়েরা প্রয়োজনে নরম,আবার গরমও। ”

“হুম সব জেনেছি এবার ছাড় আমাকে,আমার সারা শরীর ব্যাথা করছে।এত শক্তি তোর মধ্যে কোথ থেকে এলো রে!”

সাবিহা বাঁকা হেঁসে বলে উঠল,,,

“সবটা আপনার জন্য সম্ভব হয়েছে।এবার চুপচাপ মুখ খুলুন আর বলুন কেন এনেছেন আমাকে?”

সাবিহার এমন রূপ দেখে কাব্য কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।কে জানে কারনটা বললে রেগে আবার দুইটা লাগিয়ে দেয়,আগে ছাড়া পাই তারপর না হয় বলব তখন দুই একটা দিতে আসলে আটকাতে ত পারব।কিন্তু এখন ত সেটা পারব না,এসব মনে মনে ভেবে কাব্য বলে উঠল,,,

“আগে আমার হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দে তারপর সবটা বলছি।”

“আগে কারন বলবেন তারপর ছাড়ব।তার আগে আপনার মুক্তি নেই।”

★বর্তমান★

কাব্য কারনও বলে নি আর সাবিহা কাব্যর হাতে পায়ের বাঁধনও খুলে নি,তখন থেকে এভাবেই পড়ে আছে কাব্য।

#চলবে…

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-০৭

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৭(ধামাকা পর্ব😎)

হিয়ার অনেক জোড়াজুড়িতে রেডি হয়ে নিচে নামলাম।নিচে নামার পর আমি খুব অবাক হলাম,কারন সাদাফ ভাইয়া,বাবা আর কাব্য ভাইয়া ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে আছে।কাব্য ভাইয়া আমার সাথে দেখা করতে চাইছে কিন্তু সাদাফ ভাইয়া আসতে দিতে চাচ্ছে না।সেটা দেখে আমি জিজ্ঞেস করে উঠি,,,

“কী হয়েছে এখানে?আর কাব্য ভাইকে আটকাচ্ছেন কেন সাদাফ ভাইয়া?

আমার কথাশুনে সবাই আমার দিকে তাকায়।আর কাব্য ভাইয়া দৌড়ে আমার কাছে এসে আমার হাত তার হাতের মুঠোয় নিয়ে অস্থির হয়ে বলে উঠল,,,

“আমি কীভাবে তোর কাছে সাহায্য চাইব বুঝতে পারছি না।তোর সাথে আমি এতদিন যা করেছি সেসব একদমই ঠিক করি নি আমি।তোর সাথে অনেক বাজে আচরন করেছি,তোর গায়ে হাত তুলেছি তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।তোর পায়ে পড়ি আমি,তুই আমাকে ক্ষমা করে আমার ভালবাসার মানুষটাকে বাঁচা।”

কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে আমি একটুও অবাক হই নি।উনি আমার কাছে ক্ষমা চাইছে এটা হওয়ারই ছিল।আর উনি কাকে বাঁচানোর কথা বলছে?যে কী না উনাকে প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছে তাকে?

“আপনি কী বলতে চাইছেন সেটা বুঝিয়ে বললে সুবিধা হত!”

আমার কথাশুনে কাব্য ভাইয়া কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠল,,,

“ইইইশা,ইশার এক্সিডেন্ট হয়েছে।অঅনেক খারাপ অবস্থা,O Negative রক্ত লাগবে।অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নি,তাই তোর কাছে এসেছি রে।তোর ত O Negative রক্ত প্লিজ ইইশা কে বাঁচা।”

“কাব্য সাবিহা কোন রক্ত দিবে না,সাবিহা এখনও সুস্থ নয়,তুমি অন্য কোথাও চেষ্টা করতে পারো।আর সাবিহা সুস্থ থাকলেও আমি সাবিহাকে রক্ত দিতে দিব না,তুমি এখন আসতে পারো।”

“প্লিজ ফুপা এমন করো না,একটু দয়াকরো।সাবিহা তুই রক্ত দিয়ে দয়াকরে দুইটা জীবন বাঁচা।ইশার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচব না,প্লিজ সাবিহা তুই কিছু একটা কর।”

কাব্য ভাইয়ের এত আকুলতা দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।একটু পরে ত এই আকুলতা ঘৃনাতে পরিনত হবে।

“কাব্য ভাই আপনি আজ আপনার ভালবাসার মানুষটার জন্য যতটা অনুরোধ,অস্থিরতা দেখাচ্ছেন সেদিন সাবিহার পরিবারের লোকজনও ঠিক এভাবে আপনার কাছে অস্থির হয়ে অনুরোধ করেছিল তাদের মেয়েকে ছেড়ে দিতে।কিন্তু আপনি ছাড়েন নি,পশুর মত অত্যাচার করেছিলেন সেদিন।আর আপনি আজ কীভাবে নিজের স্বার্থের জন্য এখানে এসে দাঁড়িয়েছেন?”

“সাদাফ প্লিজ একটু দয়াকরো,আগে আমার ইশাকে বাঁচাও তারপর তোমরা আমাকে যা শাস্তি দিবে সবটা মাথা পেতে নিব।এখন প্লিজ ইশাকে বাঁচাও,সাবিহাকে বলো না আমার সাথে যেতে।”

“আপনি কার জন্য এত আকুলতা দেখাচ্ছেন যে কী না নাটক করে হসপিটালের বেডে পড়ে আছে তার জন্য!”

আমার কথা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক।কিন্তু কাব্য ভাই রেগে বলে উঠল,,,

“সাবিহা ইশাকে নিয়ে একটা বাজে কথাও বলবি না তুই,একটা মেয়ে হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আর তুই কী না এসব বলছিস।রক্ত দিবি না সেটা স্পষ্ট করে বললেই হয়।”

“এখন আমি বাজে কথা বলছি আপনার মনে হচ্ছে।কিন্তু কিছুক্ষণ পর আপনি কী করবেন সেটাই ভাবছি আমি!”

“সাবিহা তুমি এসব কী বলছো,কিছুই ত বুঝতে পারছি না।”

“সাবিহা তুই স্পষ্ট করে বল কেন এসব বলছিস।আর ইশা নাটক করছে মানে কী?”

“বাবা একটু অপেক্ষা করো,তোমার মেয়ের জামাইকে আসতে দেও তারপর সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”

“সাবিহা এখন মজা করার সময় নয়,একটা মিনিট দেরি করলেও যেকোন সময় যা কিছু হয়ে যেতে পারে।একটু দয়াকর আমার উপর,চল না আমার সাথে।”

“সাবিহা কোন মজা করছে না,মজা করছে তোর গার্লফ্রেন্ড নামের ডাইনিটা।”

মেঘের কথাশুনে সবাই দরজার দিকে তাকালে দেখতে পায় মেঘ আর শীলা দাঁড়িয়ে আছে।আর মেঘের হাতে কাগজ।কাব্য সময় নষ্ট না করে মেঘের কাছে গিয়ে বলে উঠে,,,

“ভাইয়া প্লিজ এভাবে বলিস না,তুই একটু বল না সাবিহাকে রক্ত দিতে।নয়ত ইশা বাঁচবে না,মরে যাবে ইশা।আর ইশার কিছু হয়ে গেলে আমিও বাঁচব না প্লিজ ভাইয়া কিছু একটা কর।”

“হুম অবশ্যই কিছু ত করবই,কিন্তু তার আগে এই কাগজগুলো আর এই ভিডিওটা দেখে নে।তারপর যা করার করব আমরা।”

কথাটা বলেই মেঘ তার হাতের কাগজ আর শীলার ফোনটা হাতে দেয় কাব্যর।কাব্য সেটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে কী আছে ঐ কাগজে।অনেকটা সময় নিয়ে কাব্য এসব দেখে,আর সবটা দেখে কাব্যর হাত থেকে কাগজ আর ফোনটা হাত থেকে পড়ে যায়।কাব্য হাটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে কাব্যর,এমনটা না হলেও পারত।এভাবে কেন সবটা ধ্বংস হয়ে গেলো কেন ইশা এভাবে তার সাথে গেম খেলল।কাব্যর এই অবস্থা দেখে মেঘও কাব্যর পাশে বসে কাব্যর কাঁধে হাত দেয় আর কাব্য মেঘকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।সেটা দেখে সাবিহা ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে সাদাফের কাছে গিয়ে বলে উঠে,,,

“ভাইয়া চলুন যাওয়া যাক,আপনি ত বলেছিলেন আধা ঘন্টার মধ্যে বের হবেন তাড়াতাড়ি চলুন।”

এমন মুহূর্তে সাবিহার এরকম কথায় সাদাফ খুব অবাক হয় একে ত কাব্য কাঁদছে,কিন্তু কেন কাঁদছে সেটা অরা কেউ জানে না।আর ইশাকে নিয়েই বা অরা কী বলছে সেটাও বুঝতে পারছে না তার উপর সাবিহা এখন তাড়া দিচ্ছে বের হওয়ার জন্য।সবটা সাদাফের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,আরেকটু হলেই বেচারা জ্ঞান হারাবে।সাদাফকে কিছু বলতে না দেখে সাবিহা বলে উঠল,,,

“আপনি কী যাবেন?বাকি আমি গিয়ে চেন্জ করে ফেলব!”

সাদাফ নিজেকে সামলে বলে উঠল,,,

“সাবিহা কী হয়েছে একটু বুঝিয়ে বলো,আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।কাব্য ভাইয়া এভাবে কাঁদছে কেন?কী আছে ঐ ফোনে আর কাগজে?”

“আপনি এসব নিয়ে গবেষণা করতে থাকুন আমি গেলাম রুমে।”

কথাটা বলেই সাবিহা ঘরে চলে যায়,আর সবাই অবাক চোখে সাবিহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।এমন একটা মুহূর্তে সাবিহার এমন গা ছাড়া ভাব দেখে সাদাফ আর সাবিহার বাবা বিরক্ত।তারা এবার শীলাকে জিজ্ঞেস করে উঠল কী হয়েছে?তখন শীলা বলে উঠল,,,

“ইশা মেয়েটা ভালো নয় বাবা,সে তার বয়ফ্রেন্ড রক্তিম দুজন মিলে বড়লোক ছেলে মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নানা রকমের কারসাজি করে টাকা নেয়।আজই ত এক্সিডেন্টের মিথ্যা নাটক করে কাব্য ভাইয়ের থেকে আঠারো লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়েছে।আর এসবের সাথে অনেকেই যুক্ত,যে হসপিটালে ইশাকে ভর্তি করা হয়েছে সেটাও ইশার চক্রান্ত।হসপিটালেও ইশার লোক আছে,তাই মিথ্যা অপারেশনের নাম করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে।”

“কিন্তু তোরা এসব কীভাবে জানলি?”

“বাবা আমি এসবের কিছুই জানতাম না,কয়দিন আগে সাবিহা আমাকে বলেছিল স্কুলে ভর্তি হতে যাওয়ার সময় কোন ছেলের সাথে নাকি ইশাকে দেখেছে।ত আমি সেটা মেঘের সাথে শেয়ার করার পর মেঘ জানায় ইশা মেয়েটা ভালো না।মেঘের পরিচিত একজনের কাছ থেকেও নাকি প্রেমের নামে মিথ্যা নাটক করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে।আর তার জন্য মেঘ ইশাকে দেখতে পারে না আর মেঘ কাব্য ভাইকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু বুঝে নি।উনি ভালবাসায় অন্ধ হয়ে ছিল।আর মেঘের কাছে কোন প্রমানও ছিল না তাই মেঘ অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছিল প্রমান যোগাড় করতে,তার জন্য লোকও লাগায় ইশার পিছনে লোক লাগিয়ে ইশার বয়ফ্রেন্ড রক্তিমের খোঁজ পাই,আর আজকের চক্রান্তের কথা জানতে পারি।কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে,ইশা টাকা নিয়ে পালিয়েছে।আর তার প্রমান ঐ ফোনে আর কাগজে আছে।”

সবটা শুনে সাদাফ আর মনির সাহেব অবাকের চরম সীমানায়।মেয়েটা খারাপ ছিল এটা অরা জানত কিন্তু এতটা যে খারাপ হবে সেটা বুঝতে পারে নি।কাব্য এখনও মেঘকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

______________________________________

সাবিহা আর তার পরিবার আজ একসাথে শপিং করতে বেরিয়েছে।আর কয়দিন পরেই মেঘ আর শীলার বিয়ে,সবাই আসলেও কাব্য আসে নি।ইশা টাকা নিয়ে পালিয়েছে আজ তেরো দিন,এই তেরো দিনে কাব্য না কারো সাথে কথা বলেছে আর না ঘর থেকে বেরিয়েছে।নিজেকে একদম ঘুটিয়ে নিয়েছে,কিন্তু এসবের মাঝেও কাব্য সাবিহার সাথে দেখা করতে চেয়েছে কিন্তু সাবিহা দেখা করে নি।সাবিহা এখন তার দৈনন্দিন জীবনে খুব খুশি,তার বেস্ট ফ্রেন্ড হিয়াও তার সাথে নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে।আর সাবিহা তার এক তরফা ভালবাসা নামক পেরা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে পেরেছে।নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে আর তায়কোয়ান্দো শিখছে,এতে সাবিহা আগে থেকে অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে।

সাবিহার খুব পানির তেষ্টা লাগে তাই সে তার বাবাকে বলে যায় পানি কিনতে কিন্তু পানির দোকানে পৌছানোর আগেই কেউ সাবিহার মুখটা রুমাল দিয়ে চেপে ধরে।এমন একটা জায়গায় আছে সাবিহা যেখানে আশেপাশে কোন লোকজনও নেই।সাবিহা ছোটার চেষ্টা করছে কিন্তু ছুটতে পারছে না,একটা সময় ধস্তাধস্তি করতে করতে সাবিহা জ্ঞান হারায়।

#চলবে…