Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1464



প্রিয় অভিমান পর্ব-০৫

0

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৫|

রনক ভয়ে ভয়ে রুহানির বাড়ির ভেতরে পা রাখল। রুহানি সামনে আর রনক পেছনে। রনক থমকে দাঁড়িয়ে রইল। এত বড় বাড়ি আর এমন চোখ ধাঁধানো লাইটিং আর দামী দামী আসবাবপত্র এর আগে ও দেখে নি। রনকের কেমন ভয়ও লাগছে। বুক ঢিপঢিপ করছে। বারবার শার্ট টেনে ঠিক করছে। পায়ের দিকে তাকিয়ে ওর পিলে চমকে গেল। সেলাই করা পুরনো জুতার মধ্যে ধুলোমাখা পা। ধুলো পায়ে এত চকচকে ফ্লোরে পা রেখেছে যদি নোংরা হয়ে যায় আর যদি কেউ বকে। রনকের ভয় লাগছে। আর ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে যেতে। গলা শুকিয়ে আসছে। নিজেকে এই পরিবেশে বেমানান লাগছে। রুহানির বাবা-মা কি বলবে ওকে দেখে সেটাও ভাবছে। যদি অপমান করে? নাটক-সিনামায় তো তাই করে।

রুহানি রনককে সামনে না পেয়ে পেছনে ঘুরে দেখে ও দাঁড়িয়ে আছে। রুহানি রনকের সামনে গিয়ে বলল,
“দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

রনক ভয়ে ভয়ে বলল,
“আমার ভয় লাগছে।”

রুহানি অবাক হয়ে বলল,”কেন?”

রনক কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলল,
“আচ্ছা তোমার বাবা-মা কি জানে আমার ব্যাপারে? তারা রাগ করবে না তো আমাকে দেখে?”

রুহানি চিন্তিত মুখ করে বলল,
“তাই তো! বাবা-মাকে তো বলি নি তোর কথা। এখন কি হবে? যদি রাগ করে?”

রুহানির চিন্তিত মুখ রনকের আতংক বাড়িয়ে দিল। রনকের মুখটা চুপসে গেল।
রুহানি বেশ মজা পাচ্ছে। তারপর বলল,
“আমার মা কিংবা বাবা দেখলে বলব আমি চিনি না। তারপর আর কি চোর মনে করে তোকে ইচ্ছেমতো ধোলাই করবে তারপর পুলিশে দেবে।”

রনকের বুকটা রুহানির কথা শুনে কেঁপে উঠল। তাহলে এই ছিল রুহানির মনে। এইজন্য এত খাতির করেছে। এভাবে ফাসাবে?
রুহানি রনককে ধমক দিয়ে বলল,
“চল! আমার বাবা-মা কি তোকে গিলে ফেলবে না-কি? আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

রুহানি একজন সার্ভেন্টকে সব বুঝিয়ে দিয়ে কোথায় যেন চলে গেল। সার্ভেন্ট রনককে একটা রুমে নিয়ে ওয়াশরুম দেখিয়ে বলল,
“স্যার, আপনি হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। আপনার লাঞ্চ আসছে। লাঞ্চ শেষে স্টাডি রুমে যাবেন।”

সার্ভেন্ট চলে গেল। রনক হা করে আছে। এত সুন্দর একটা মেয়ে ওকে স্যার বলে গেল। রনকের মাথা ঘুরছে সব দেখেশুনে। রনক ফ্রেশ হয়ে বের হতেই টেবিলের উপর খাবার দেখল। কিছুক্ষণ ইতস্তত করলেও ক্ষুধা পেয়েছে তাই খেয়ে নিল।

রুহানিকে পড়াতে গিয়ে পড়ল আরেক বিপাকে। কোন কিছুই মাথায় ঢুকাতে চায় না। বারবার রনককে দোষারোপ করে বলে ও না-কি ইচ্ছে করে ওকে কঠিন কঠিন পড়া পড়াচ্ছে। পড়া শেষ করতেই রুহানি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলল,
“এডভান্স দিলাম। আর ড্রাইভার তোকে দিয়ে আসবে।”

রনক জোর করে হেসে বলল,
“তার দরকার হবে না। আমি যেতে পারব।”

রুহানি চোখ পাকিয়ে তাকাতেই রনক চুপ হয়ে গেল।

মেসে গিয়ে গা এলিয়ে দিল রনক। ভাবছে কত শান্তির একটা টিউশনি পেয়েছে। গাড়িতে করে যাচ্ছে, গাড়িতে করে মেসে আসছে। আগে পায়ে হেঁটে যেত আবার পায়ে হেঁটে ফিরত। রনক ভাবছে কিছু টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে আর বাবাকে বলবে রূম্পা, টুম্পাকে কিছু যেন কিনে দেয়। উঠে গোসল করতে গেল। আবার টিউশনিতে যেতে হবে।

রুহানি আর ওর মা বাবার সাথে একটা বিজনেস পার্টিতে গিয়েছে। গাড়ি থেকে নামার সময় পাশের সাদা গাড়ি থেকে ফালাককে নামতে দেখল। স্যুট কোর্ট পরা। ওর গেটাব দেখে মনে হচ্ছে কোনো কোম্পানির হাই পোস্টে আছে আর সে কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছে। কিন্তু ও তো স্টুডেন্ট। রুহানির কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
রুহানি ভেতরে গিয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চোখ দিয়ে ফালাককে খুঁজতে লাগল। ও ভুল দেখেছে কি-না সেটা কনফার্ম হতে চায়। অনেক মানুষই থাকতে পারে যাকে কিছুটা ফালাকের মতো দেখতে লাগে।

রুহানি ফালাককে খুঁজে না পেয়ে হাল ছেড়ে দিল। বাবা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর হাতে কোল্ড ড্রিংক।

ফালাক একজনের সাথে কথা শেষ করে সামনের দিকে যাচ্ছিল। হটাৎ করে ও থমকে দাঁড়িয়ে গেল। রুহানি হাতে গ্লাস নিয়ে হেসে হেসে মধ্যবয়সী একজনের সাথে কথা বলছে। তবে এ রুহানিকে চেনা যাচ্ছে না। পার্পল কালার ড্রেস, ম্যাচিং করে কানে এয়ারিং, গলায় চিকচিক করছে ছোট একটা লকেট, হাতে ব্রেসলেট, মুখে হালকা মেকাপের সাথে চোখে কাজল আর ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক। চুলগুলো কার্লি করা। আজ প্রথম ওকে মেয়ে লাগছে। ভার্সিটিতে জংলী মেয়ের মতো লাগে। ছেড়া ফাটা জিন্স, শার্ট, টপসের সাথে এলোমেলো চুলে ওকে কখনো মেয়ে লাগে নি। কখনো মোহনীয় লাগে নি। রুহানির হটাৎ ফালাকের চোখে চোখ পড়ল। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। রুহানি চেয়ে চেয়ে ভাবছে তাহলে ভুল দেখে নি, ওকেই দেখেছে। আর ফালাক অন্যরকম রুহানিকে অবাক চোখে দেখছে। হটাৎ ফালাকের হুশ হলো ও কি করছে।
ফালাক দ্রুত চোখ সরিয়ে ওকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। রুহানি ওকে ফলো করছে। নামি-দামি বিজনেসম্যানদের সাথে কথা বলছে। রুহানির খটকা লাগছে।

পার্টি শেষে রুহানি বাবা-মায়ের সাথে বাড়িতে ফিরছে। বাড়িতে ওর ভাই একা আছে। ফালাকও চলে যাচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। ফালাক গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে। তখন পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে আর একটা গাড়ি যাচ্ছে।

রুহানির দিকে আরেকবার চোখ পড়ল। গাড়ি স্লো করে যাচ্ছিল তাই বেশ দেখা যাচ্ছিল। রুহানি জানালার গ্লাস বন্ধ করে দিল।
ফালাক ড্রাইভ করছে আর ভাবছে রুহানির কথা। একটা মেয়ের কত রুপ তাই ভাবছে।
“আচ্ছা, রুহানিকে শাড়ি পরলে কেমন লাগবে? আর সেলোয়ার-কামিজে? নিশ্চয়ই অন্য রকম লাগবে। চেনা যাবে না। হয়তো ভয়ংকর সুন্দরী লাগবে।”
ফালাক কল্পনা করার চেষ্টা করছে। তারপর ওর খেয়াল হলো ও কি করছে।

নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“ফালাক কি করছিস! পাগল হয়েছিস! কল্পনা করছিস? কল্পনার ঠেলায় সোজা উপরে চলে যাস না। মন দিয়ে ড্রাইভ কর।”
তারপর নিজের অজান্তেই মুচকি হাসল।

ফালাক আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোর্ট খুলছে। আর ভাবছে ওর এই গেটাবের সাথে রুহানিকে কি মানাত? এক সাথে দাঁড়ালে কেমন লাগত।

তারপর আবার নিজের উপর বিরক্তি প্রকাশ করল।
“ওই অসভ্য, পাগল, তারছেড়া মেয়েকে নিয়ে কি ভাবছিস? ও তো মেয়ের ক্যাটাগরিতেই পড়ে না। বেয়াদব, অহংকারী, নিষ্ঠুর একটা মেয়ে। ওকে নিয়ে কি ভাবছি! ও আমার ভাবনার যোগ্যই না। উফফ, মাথা খারাপ করে দিল।”

ফালাক জোর করে নিজের ভাবনা আর কল্পনা থেকে রুহানিকে বের করে শক্তপোক্ত লক করে নিল নিজের মনের।

রুহানি বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আজকে কাকে মুরগী বানানো যায় তাই ভাবছে। রুহানি রনককে দেখতে পেয়ে ডাক দিল। রুহানির বন্ধুরা রনকের সাথে মেলামেশাটা একদম পছন্দ করে না। কিন্তু রুহানিকে খুলাখুলি কিছু বলতেও পারছে না।

রনক রুহানির সামনে এসে গুটিশুটি হয়ে দাঁড়ায়।
“বস! এখন তো ক্লাস অফ।”

রনক ওদের সাথে বসল। ফালাক ভার্সিটিতে তরিঘটি করে ঢুকছে। রুহানি ফালাককে দেখে বলল,
“কাল এটাকে পার্টিতে দেখেছি। একদম অন্য গেটাবে। ওকে দেখলেই আমার হাত ইসপিস করে।”

রনক শুনে বলল,
“কেন?”

“কারণ ও একটা ফাজিল।”

“ফাজিল! কই ছেলেটাকে তো যথেষ্ট ভদ্র মনে হয়।”

“ভদ্র না ছাই! ও যে কি তুই জানিস না।”

“কিন্তু সেদিন তো আমার সাথে কথা বলল। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। উনি যথেষ্ট ভদ্র, মার্জিত একটা ছেলে।”

রুহানি ক্ষেপে গিয়ে বলল,
“ওই তুই আমার ফ্রেন্ড না-কি ওর? তুই জানিস ও আমাকে কি বলেছে? আমাকে বিল্লি রাণী বলেছে। আমার চোখ নাকি বিড়ালের মতো। কতবড় বেয়াদব। ওর চোখ যে খাটাশের মতো তা কি দেখেছে? আমি তো বলে দিয়েছি। আর তুই যদি আর একবার ওর সুনাম করিস তোর হাড়-গোড় ভেঙে দেব।”

রনক আর কিছু বলবেও না। সেদিন রনক ওকে এই বিড়ালের চোখের কথাটা বলেছে আর সেটাই রুহানিকে বলেছে। ভাগ্যিস নামটা বলে নি।
রুহানি যদি জানতে পারে ওকে আস্ত রাখবে না। মেরে একদম গেড়ে দেবে। তাই রনক চুপ করে গেল।

রুহানির বন্ধুরা খুশি হলো। রনককে রুহানি বকেছে। রনককে শুধুমাত্র ওর জন্য সহ্য করছে নয়তো আশেপাশে ঘেঁষতে দিত না।

তায়েফ রুহানিকে এসে বলল একটা জুনিয়র মেয়ে ওকে অপমান করেছে। ওর নামে কমপ্লেইন করেছে। মেয়েটাকে অন্যদিনের মতো র‍্যাগিং দিয়েছিল। রুহানির রাগ লাগছে আজকাল সবাই জবাব দিতে শিখে গেছে। সেদিন ফালাক জবাব দিল আর আজকে জুনিয়র মেয়ে! না এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। ডানা গজানোর আগেই ভেঙে দিতে হবে।

রুহানি গেল ওই মেয়েকে শায়েস্তা করতে। দুটো মেয়ে এক সাথে বসে আছে। দুজনেরই মুখ ভার।
রুহানি ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু ওরা খেয়াল করে নি। রুহানি টেবিলে চাপট মেরে বলল,
“এখানে তুলি কে?”

ওরা দুজনেই ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। রুহানির দিকে ভয়ে ভয়ে চেয়ে আছে। রুহানি বিরক্তি নিয়ে বলল,
“কানে সমস্যা না-কি? ”

একটা মেয়ে হাত ঘষতে ঘষতে নিচু স্বরে বলল,
“জি আপু আমি।”

রুহানি ভ্রু কুঁচকে মেয়েটাকে দেখে নিয়ে বলল,
“এতবড় স্পর্ধা! আমার গ্যাংয়ের নামে কমপ্লেইন করেছো?”

তুলির পাশের মেয়েটা বলল,
“আপু এতে ওর দোষ নেই। ও কমপ্লেইন করে নি। আমি করেছি।”

রুহানি অবাক হয়ে বলল,
“তুমি! এক জনের জন্য আরেকজন? কেন?”

মেয়েটা কথা বলছে না। আর তুলি মেয়েটা বারবার হাতের এক জায়গায় অন্য হাত দিয়ে ডলছে। ব্যাপারটা রুহানির চোখে পড়েছে। মেয়েটার চোখ পানিতে পূর্ণ হচ্ছে। মনে হচ্ছে এখুনি অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়বে।

তুলি ধরা গলায় বলল,
“ওই ছেলেটা আমার হাত ধরেছিল। আমি নতুন তাই চুপ করে ছিলাম। আড়ালে চোখের পানি ফেলেছি। কিন্তু ও সহ্য করতে না পেরে কমপ্লেইন করেছে। গায়ে হাত দেওয়া কি ধরনের র‍্যাগিং?”

রুহানির মাথায় আগুন জ্বলে গেল তুলির কথা শুনে। ভরা মজলিসে তায়েফের সামনে গিয়ে ঠাটিয়ে চড় মারল। সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। ফালাক কফিতে চুমুক দিতে দিতে ওদের কাহিনী দেখছে। ঘটনা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তাই দেখার অধীর অপেক্ষা।

তায়েফ গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে রুহানির দিকে চেয়ে আছে।

রুহানি ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
“র‍্যাগিং! মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া র‍্যাগিং? এরপর যদি কারো গায়ে হাত দিস, মেয়েদের অসম্মান করিস তাহলে আমি তোর হাত ভেঙে দেব। শুকরিয়া কর একটা চড় মেরেছি।”
রাগে রুহানির শরীর থরথর করে কাঁপছে।

চলবে….!

প্রিয় অভিমান পর্ব-০৪

0

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৪|

রুহানি যেতেই রনক বই খুলে বসেছে। ওকে বড় হতে হবে, অনেক বড়। পড়াশোনা ছাড়া অন্যকিছুকে প্রায়োরিটি দেওয়া যাবে না। রনক এক পৃষ্ঠা শেষ করে পরের পৃষ্ঠায় চোখ দিতেই ফালাক চেয়ার টেনে রনকের বরাবর বসল। রনক একবার ফালাকের দিকে চেয়ে বইয়ে মনোযোগ দিল।

ফালাক রনককে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে জিজ্ঞেস করল,
“কোন ইয়ার?”

রনক ফালাকের দিকে তাকাল। ফালাকের পড়নে এস কালার শার্ট, কালো চুলগুলো পরিপাটি করে আঁচড়ানো। শার্টে সানগ্লাস ঝুলানো। চেহারায় ইনোসেন্ট ভাব। সব মিলিয়ে ফালাককে ভদ্রলোক মনে হলো রনকের। তাই নিশ্চিন্তে কথা বলার সাহস পেল।

রনক স্নিগ্ধ হেসে বলল,
“জি ভাইয়া, থার্ড ইয়ার।”

ফালাক বুঝতে পারল ও রুহানির ক্লাসমেট। তারপর বলল,
“ওহ! গুড। কি নাম তোমার?”

রনক আবারও একটু হেসে বলল,
“রনক হাসান।”

“ওহ,সুন্দর নাম। রুহানির ফ্রেন্ড?” ফালাক উত্তরের আশায় ভ্রু উঁচিয়ে চেয়ে আছে।

রুহানির নাম শুনে রনকের পিলে চমকে গেল।
“জি না, ক্লাসমেট। আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি ওর ফ্রেন্ড হতে পারি?”

“না আসলে তোমাদের এক সাথে বসে আড্ডা দিতে দেখলাম তাই।”

রনক বই বন্ধ করে বলল,
“আড্ডা না ভাই। ও তো আমাকে টাইট দিতে এসেছিল। বিলাই চক্ষুর হাত থেকে বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। কখন যে ওর মাথায় কি চলে বুঝা মুশকিল।”

ফালাক বুঝতে না পেরে বলল,
“টাইট! টাইট মানে? ওয়েট ওয়েট তার আগে বলো বিলাই চক্ষু মানে কি?”

রনক ইতস্তত করছে। মুখ ফস্কে কি বলে ফেলল।
রনক আমতা আমতা করে বলল,
“আপনার, আমার চোখের মণি কালো। সাধারণ সবার চোখের মণি কালো হয় কিন্তু রুহানির চোখের মণি বাদামি রঙের। আমাদের গ্রামে কারো চোখের মণি বাদামি হলে তাকে বলে বিলাই চক্ষু। মানে বিড়ালের চোখ।”

ফালাক এতক্ষণে কাহিনি বুঝতে পারল। তারপর বলল,
“ওহ! আচ্ছা!”
তারপর মনে মনে বলল,”বিল্লি রাণী!” তারপর মুচকি হাসল। রনক ওর মুখের দিকে অবাক চোখে চেয়ে আছে।

ফালাক সেটা খেয়াল করে স্বাভাবিক হয়ে বলল,
“ওর থেকে সাবধানে থেকো। তারছিড়া ডেঞ্জারাস একটা মেয়ে।”

রনক শুকনো হেসে বলল,
“সে উপায় নেই।”

ফালাক প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি নিয়ে তাকাল। তারপর রনক সব খুলে বলল। সব শুনে ফালাক বলল,
“সাবধানে থেকো আর পারো তো একটু মানুষ বানানোর চেষ্টা কর।”

“আমি মানুষ বানাব ওকে? ও আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। আমাকে এই শহরে দশবার বিক্রি করে কিনে আনতে পারবে।”

ফালাক ওর কথা শুনে আলতো হেসে পিঠে চাপট মেরে বলল,
“কথা ঠিক। সাবধানে থেকো আর পড়া কেরি অন কর। আমি উঠি।”

ফালাক উঠে গেল আর রনক আবারও বই খুলে বসল।

রুহানি নুশার সাথে বসতে গিয়েও ফিরে এসে রনকের বেঞ্চের সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর খাতা দিয়ে রনকের পিঠে হালকা করে মেরে বলল,
“সর বসার জায়গা দে।”
রনক তরিঘটি করে সরে বসল। একদম কিনারে গিয়ে বসল। মনে হচ্ছে এই বুঝি পড়ে যাবে। রুহানি বসে বসে চুল ঠিক করছে। ওর সেদিকে খেয়াল নেই।

রুহানি রনকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই তুই আমাকে পড়াবি? মানে টিউশন। পড়াবি? স্যালারি যা চাইবি তাই দেব। তবে কম কম পড়াবি। যাতে পাসটা করে যেতে পারি। বাবা যেসব টিউটর রেখে দেন সবগুলো রাক্ষসের মতো খায় আর বস্তা ভরে পড়া দিয়ে যায়।”

রনক বুঝতে পারছে না কি বলবে। রুহানিকে পড়াতে ইচ্ছে করছে কিন্তু ওর আচরণের জন্য ভয় পাচ্ছে।
“ওই ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি কি তোকে খেয়ে ফেলব?”

রনক আমতা আমতা করছে। না করার বাহানা খুঁজছে। রুহানি ধমক দিয়ে বলল,
“খবরদার! না করবি না। তুই আমাকে আজ থেকে পড়াচ্ছিস ব্যাস। ছুটির পর আমার সঙ্গে যাবি আমাকে পড়িয়ে তারপর তোর বাসায় ফিরবি।”

রনক কিছু বলার মতো খুঁজে পাচ্ছে না। রুহানি রনকের খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ও একটা মেসে থাকে। একটা টিউশনি করে মেসের ভাড়া, খাওয়ার খরচ, পকেট খরচ বহন করে। রোজ হেঁটে ভার্সিটি আসে যায়, টিউশনিতেও হেঁটে যায়, সিংগাড়া,পুরি দিয়ে সকালের নাস্তা করে। একটা টিউশনিতে ওর টানাটানি পড়ে যায় তাই আরো টিউশনি খুঁজছে। রুহানি ওকে সাহায্য করতে চায় কিন্তু রনককে যতটুকু চিনেছে তাতে এটুকু তো জেনেছে ও কারো কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নিবে না। তাই এই ব্যবস্থা।

রনক মাথা নাড়িয়ে বলল,
“ঠিক আছে।”

রুহানি নড়েচড়ে বসে বলল,
“তাহলে সব ক্লিয়ার করি। যে চারদিন ভার্সিটিতে ক্লাস আছে সে চারদিন এক ঘন্টা করে আমার বাসায় গিয়ে পড়াবি। স্যালারি দেব দশ হাজার।”

রনক চোখ বড়বড় করে বলল,
“এত! আমি এত স্যালারি নেব না।”

রুহানি ভেবেছিল কমই বলেছে কিন্তু রনকের কাছে তো অনেক।
“আমাকে কি তোর নরমাল স্টুডেন্ট মনে হয়? আমাকে পড়াতে হলে অনেক ঝামেলা সহ্য করতে হবে, দেখা গেল এক ঘন্টার জায়গায় তোর তিনঘণ্টা চলে গেল তাই… নয়তো আমার কি টাকা বেশি হয়ে গেছে যে তোকে দেব।”

রনক মেনে নিল রুহানির শর্ত। রুহানি আরো হাজারটা শর্ত জুড়ে দিল।

রুহানি আজকে রনককে ট্রিট দিবে। রনক পড়েছে জ্বালায়। রুহানির সব কথা ভয়ে মেনে নেয়। রুহানি ফালাককে সামনের টেবিলে দেখল। কানে ফোন। কারো সাথে গম্ভীর সুরে কথা বলছে।
ঠোঁটের নড়াচড়া, চোখের পলক, চেহারার ভঙ্গি বলছে কারো সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে।
“এই সিনিয়র তো দেখি সারাক্ষণ কানে ফোন গুজে রাখে। এত কার সাথে কথা বলে? গার্লফ্রেন্ড না-কি? এই লোকের গার্লফ্রেন্ড? মাই গড! বেচারি!”

ফালাক কানে ফোন রেখেই কফির অর্ডার করল। রুহানি উঠে গেল। ফালাকের কফি রেডি। ফালাক বেখেয়ালি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। রুহানি মরিচের গুঁড়োর কৌটা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ফালাক মাথা চুলকে সিরিয়াস ভঙ্গিতে কিছু বলছে। রুহানি সুযোগের অপেক্ষায় আছে। ফালাক অন্যদিকে ঘুরতেই কফির উপর মরিচের গুঁড়ো দিয়ে দিল। অনেকেরই চোখে পড়েছে কিন্তু কেউ টু শব্দ করার সাহস করে নি। ফালাক কাপ নিয়ে টেবিলে রেখে চেয়ার টেনে বসে। রুহানি শুধু অপেক্ষায় আছে কখন মুখে তুলবে আর মনে মনে প্রার্থনা করছে ফালাক যেন বেখেয়ালি ভাবেই মুখে দেয়। ফালাক চামচ দিয়ে নেড়ে মুখে দেয়। এক চুমুক দিয়ে টেবিলের উপর রাখে। ফোনে কথা বলছে। রুহানি ভ্রু উঁচিয়ে চোখ বড়বড় করে রেখেছে। ফালাকের কোন রিয়েকশন নেই। ফালাক আবার আরেক চুমুক দিল। তারপর কফির দিকে সন্দেহের দৃষ্টি দিল। কেমন ঝাল ঝাল লাগছে। কিন্তু কফি তো এমন লাগার কথা না। গলাটা জ্বলে যাচ্ছে। ফালাক ট্রাই করার জন্য কফি মুখের সামনে এনেও সরিয়ে ফেলে। ওর প্রচন্ড ঝাল লাগছে। সাংঘাতিক ঝাল। ফোন কেটে দিল। ওর কেমন খটকা লাগছে। তারপর কফি নিয়ে গবেষণা করতে লাগল। কিন্তু যেই হারে ঝাল লাগছে তাতে আর সম্ভব হলো না। দ্রুত পানি খেল। তারপর রাগে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়াল। ঝাল কফি কে চেয়েছে? ওর সাথে ফাজলামি করছে না-কি?

তখনই চোখ পড়ল রুহানির দিকে। রুহানি ঘনঘন চোখের পলক ফেলে টেডি স্মাইল দিল। এই কাজ রুহানির তা বুঝতে সময় লাগল না। রুহানি পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলল, কফিটা কেমন লাগল জানাবেন।

ফালাক বিল পে করে রুহানির পিছু নিল। রুহানি ফালাককে খেয়াল করে নি। পুকুর পাড়ে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে উদাসীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে কেউ নেই। এই জায়গাটা বরাবরই নীরব। স্নিগ্ধ বাতাস বইছে। রুহানির চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তবে বিষয়টা উপভোগ করছে। কারো পায়ের শব্দে পেছনে ঘুরে দাঁড়াল। ফালাককে দেখে ঘাবড়ে গেল। ফালাক হিংস্র চোখে চেয়ে আছে। যেন চোখে আগ্নেয়গিরি বইছে। ফালাক রুহানির দিকে এগুচ্ছে। রুহানি প্রথমে অটল ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও পরে পেছনে সরতে বাধ্য হলো। যতই হোক একটা মেয়ে। একটা ছেলেকে এতটা কাছে আশার পারমিশন দিবে না। স্বাভাবিকভাবে ভয়টাও কাজ করছে।

রুহানি পিছনে সরে বলল,
“অসভ্যের মতো আগাচ্ছেন কেন? নূন্যতম কমন সেন্স নেই?”

“তুমি ভয় পাচ্ছো কেন?” (বিদ্রুপ করে)

“কারণ আমি একটা মেয়ে। আর কোন মেয়েই চাইবে না যাকে অপছন্দ করে সে তার ছায়া মারাক।”

ফালাক অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
“মেয়ে! সিরিয়াসলি! তুমি মেয়ে? কোনদিক দিয়ে?”

রুহানি ফালাকের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল।
“মানে কি? আমি মেয়ে নই তো ছেলে?”

ফালাক বলল, “দাঁড়াও ভেবে বলি।”
ফালাক রুহানিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ভাবার ভান করছে। রুহানি চোখ মুখ শক্ত করে ওর দিকে চেয়ে আছে যেন এখুনি ওকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।

ফালাক হুট করে বলল,
“ছেলেই তো মনে হচ্ছে। মেয়ের কোন গুণ তোমার মধ্যে বিদ্যমান নেই। ছেলে মনে হলেও তুমি বিল্লি রাণী।”

রুহানি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
“বিল্লি রাণী মানে?”

“বিড়ালদের রাণী। তোমার ওই বিড়ালের মতো চোখ তার প্রমাণ।”

রুহানি অপমানিত বোধ করল। ফালাক ওর চোখ নিয়ে কথা বলছে। তাও বিড়ালের চোখ! রুহানি ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
“আর আপনি খাটাশ। খাটাশের সর্দার। আপনার চোখ খাটাশের মতো। যা রহস্য আর শিকারের নেশায় ভরপুর।”

ফালাক রুহানির কথা শুনে অবাক হলো। ভিষণ অবাক হলো। ওর চোখের এমন অদ্ভুত সজ্ঞা আজ পর্যন্ত কেউ দেয় নি। রুহানি হনহন করে হেঁটে চলে গেল। ফালাক তখনও দাঁড়িয়ে আছে। রুহানির যাওয়া দেখছে।

চলবে…..

প্রিয় অভিমান পর্ব-০৩

0

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৩|

মাগরিবের আজান শেষ হয়েছে। ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসছে। আলোক সজ্জিত বাড়িতে রুহানি সোফায় বসে ক্যানে চুমুক দিচ্ছে আর দৃষ্টি নুশার দিকে। তায়েফ, তুরানি হাতে হাত ঘষছে। ওদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা। নুশা ফালাকের নাম্বারে ফোন করছে।

তায়েফ এরি মধ্যে বলল,
“আগামীকাল দেখবি এই নাম্বার কি করে ছড়িয়ে দেই। শহরের অলিতে-গলিতে সব জায়গায় ফালাকের নাম্বার। উফফ! কি যে মজা হবে! ব্যাট শায়েস্তা হবে খুব।”

তুরানি ওর কথা শুনে বলল,”ভাবতেই শান্তি লাগছে। দেখ কি করে হয়রানি করি। পাগল করে ছাড়ব।”

নুশা হুট করে মুখ কালো করে ফেলল। রুহানি নুশার মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। নুশা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে ঠোঁট নাড়াচ্ছে।

তারপর রুহানির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাদের বোকা বানিয়েছে।”
তারপর ফোন রেখে ফ্লোরের দিকে চেয়ে আছে চোখমুখ শক্ত করে।

রুহানি ব্যাপারটা বুঝতে পারল না। তায়েফ আর তুরানির উত্তেজনা নিমিষেই উবে গেল। এখন নতুন কৌতূহল জেগেছে।
তায়েফ নুশার আরেকটু কাছে গিয়ে বলল,
“বোকা বানিয়েছে মানে কি? ভুল নাম্বার দিয়েছে?”

নুশা তায়েফের দিকে চেয়ে বলল,
“ভুল নাম্বার কি-না জানি না। তবে ১০ডিজিট। একটা ডিজিট মিসিং।”

রুহানি ঠাস করে ক্যানের বোতল টেবিলের উপর রাখল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“যা এবার শহরের অলিতে-গলিতে গিয়ে ছড়িয়ে দিয়ে আয়। যত্তসব! যখন নাম্বার নিয়েছিস দেখিস নি?”

নুশা দাঁড়িয়ে বলল,”আমার উপর রাগ করছিস কেন? আমি কি জানি দশ ডিজিটের নাম্বার দিয়েছে?”
রুহানি ভেবে পাচ্ছে না ফালাককে কি করে শায়েস্তা করবে। ফালাক একের পর এক বাজিমাত দিয়ে যাচ্ছে।
“এভাবে হার মেনে নেব?”

ওরা সবাই মাথা নিচু করে নিল। ফালাক যে এভাবে বোকা বানাবে ভাবনার বাইরে।

রুহানি মা-বাবার রুমের পাশ দিয়ে যেতেই বাবার উচ্চ কন্ঠস্বর শুনে থমকে গেল। কথা শুনে যা বুঝলো তা হলো মামা কোন গন্ডগোল করেছে। যার কারণে বাবা ক্ষেপে গেছে। ওর মা ফোন হাতে ভাইয়ের সাথে কথা বলছে।

রুহানি নিজের রুমে যেয়ে যেতে ভাবছে,
“এই মামার আবার কি সমস্যা? মনে তো হচ্ছে বিশাল ঝামেলা করেছে। বাবার টাকায় বড়লোক হয়ে বাবাকেই চিনছে না। অকৃতজ্ঞ।”

রুহানি দলের মাঝে বসে ব্যাগ থেকে সরঞ্জাম বের করছে। চাকু, বড় পিন, ছোট প্যারেক। এ-সব দেখে কেউ অবাক হয় নি। কারণ মেয়েদের ব্যাগে সাজগোজের জিনিস থাকলেও রুহানি ব্যাগে এসব নিয়েই ঘুরে। মাঝেমধ্যে দু’একটা বই আনে।
“কোনটা ব্যবহার করা যায় রে?”

“এগুলো দিয়ে কি করবি? খুন করবি না কি?”

“হ্যাঁ, খুন করব। খুন না করা পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছি না।”

“মাথা ঠান্ডা কর। উল্টা পাল্টা কথা বলিস না। এগুলো ব্যাগে রাখ। কেউ দেখলে সমস্যা হবে।”

রুহানি ব্যাগ গোছালো। তখন তুরানির চোখ গেল সামনের দিকে। সেই মেয়েটা যার মাধ্যমে নাম্বার নিয়েছিল।
তুরানি মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মেয়েটা ওকে দেখেই ভয়ে চুপসে গেল। দাঁড়িয়ে কাচুমাচু করছে।

“ভুল নাম্বার দিয়েছো কেন? ফাজলামি করেছো? আমাদের সাথে?”

মেয়েটা কাচুমাচু করতে করতে বলল,
“আমি কিছু জানি না। আমার হাতে যা লিখে দিয়েছিল তাই দিয়েছি। আপু আমি কি করে বুঝব ভুল না-কি ঠিক।”

রুহানি দূর থেকে বলল,
“ওকে ছাড়। ওর উপর রাগ দেখিয়ে কি হবে? যদি পারিস আসল মানুষের সাথে লাগ।”

তুরানি রুহানির কথা শুনে ছেড়ে দিল। মেয়েটাও দ্রুত চলে গেল আর মনে মনে দোয়া করছে এদের সাথে যেন ভুল করেও দেখা না হয়।

রুহানি উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ কাঁধে নিল। তারপর ক্লাসরুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কোথায় থেকে ফালাক এসে হাজির।
রুহানিকে আশ্চর্য হওয়ার সুযোগটাও দিল না। এসেই ঝাড়তে শুরু করল,
“এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? তোমাকে তো বলেছি মেন্টাল হসপিটালে যাও আর ভালো থাকো। বাকিদেরও ভালো থাকতেও দেও।”

রুহানির এই ঝাঁঝালো কথাগুলো সহ্য হচ্ছে না। ফালাকের সাথে এই মুহুর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তবে জবাব দেওয়া জরুরী কিন্তু কি জবাব দেবে ভেবে পাচ্ছে না।
“এই স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে? না, আমার সাথে কথা বলার অজুহাত খুঁজছ? দুম করে সামনে এসে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো যা খুশি বলে যাচ্ছো আর আমাকে পাগল বলা হচ্ছে। পাগল তো তুমি।”

“আমার সবই ঠিক আছে। ঠিক নেই তোমার। গতকাল আমার গাড়ির চাকার হাওয়া কে ছেড়েছে?”

রুহানি চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“আমি কি তোমার এসিস্ট্যান্ট? গাড়ির পাহারাদার? না সিসি ক্যামেরা? আমার কি ঠেকা পড়েছে তোমার গাড়ির দেখভাল করা? হাহ!”

ফালাক আঙুল তুলে বলল,
“একদম ড্রামা করবে না। আমি জানি তুমি করেছো।”

রুহানি হেসে বলল,
“প্রমাণ কি? প্রমাণ দেখাতে হবে ভাইয়া।”

ওর কথা শুনে ফালাকের গা জ্বলে যাচ্ছে। “ভাইয়া” শব্দটাও ব্যাপকভাবে বিঁধছে। রাগে গজগজ করতে করতে ফালাক চলে গেল। রুহানি মুখ ভেংচি কেটে ক্লাসের দিকে গেল।

ক্লাসের দিকে রুহানির মন নেই। লেকচার চলছে আর ও ওর মতো নুশার সাথে গল্প করছে আর ফোন ঘেটে কি জানি দেখাচ্ছে। হটাৎ রুহানির মনে হলো পুরো ক্লাস হুট করেই শান্ত হয়ে গেছে।
আর মোটাসোটা কেউ ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বইয়ের উপর তা ছায়া পড়েছে। চোখ গেলে সামনের মানুষের দিকে। স্যারকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল রুহানি।

স্যার ধমক দিয়ে বলল,
“কি হচ্ছে এ-সব রুহানি? ক্লাসে কি করছো? ক্লাসের দিকে তো মনোযোগ নেই-ই গল্প করছো আবার ফোন ইউজ করছো? দু’জন দাঁড়াও।” নুশাও দাঁড়িয়ে গেল।

রুহানি দ্রুত বলল,
“সরি স্যার। আর এমন হবে না।”

স্যার আর আজকে রুহানির কথায় গলল না। ধমক দিয়ে বলল,
“তোমার এই নাটক রোজ রোজ চলবে না। কি রেজাল্ট করেছ তুমি ভুলে গেছো? কি বলেছিলে তুমি? তুমি ঠিক করে পড়াশোনা করবে। এই তোমার পড়াশোনার নমুনা? তোমাদের দুজনকে আমি এক সাথে বসতে যেন আর না দেখি।”

তারপর স্যার রুহানিকে ডেকে নিয়ে একটা ছেলের সাথে বসাল। তারপর এক প্রকার হুমকি দিয়ে বলল,
“তুমি প্রতিদিন রনকের সাথে বসবে। ওর সাথে থেকে যদি কিছু শিখতে পারো। যদি অন্য কোথাও বসেছো তো ক্লাস থেকে বের করে দেব।”

তারপর রনককে দেখিয়ে বলল,
“এই ছেলেটাকে দেখো। ওর তোমার বাবার মতো এত টাকা না থাকলেও সময়ের মূল্য দিতে জানে। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ, একাগ্রতা দেখে অবাক না হয়ে পারি না। জীবনে কিছু হওয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ওর আছে। আর তোমাদের টাকা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা করো না, অবহেলা করো সবকিছু। যথেষ্ট নম্র,ভদ্র একটা ছেলে। সব পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়। ওর সাথে কথা বললে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। কি সুন্দর করে কথা বলে। প্রতিটি কথা সম্মান, ভালোবাসা দ্বারা জড়ানো। ওর সাথে থেকে যদি কিছু শিখতে পারো। ”

রুহানি ভেতরে ভেতরে রাগে ফেটে গেলেও উপরে স্বাভাবিক আছে। এই গাইয়া ছেলের সাথে না-কি প্রতিদিন বসতে হবে। ওর কাছ থেকে না-কি শিখতে হবে। কি শিখবে? কিভাবে ধান লাগাতে হয়? অদ্ভুত!

ক্লাস শেষে রুহানি রনককে বলল,”চল।”

রনক রুহানির চল কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। রুহানি যে কি জিনিস সেটা তো জানেই।
“কোথায়?”
“ঘুরতে। ফ্রেন্ডশিপ যখন করেছিস পালন তো করতে হবে। চল চল।” (তাড়া দিয়ে)

রনক কিছু বলতে না পেরে রুহানির পেছনে পেছনে গেল। রুহানি অনেকগুলো খাবারের অর্ডার করল। একে একে খাবার আসতে লাগল। রুহানি বলল,
“নে খা।”
রনক ভয়ে ঢুক গিলছে। রুহানি কি ওকে খাইয়ে এ-সব খাবারের বিল ওকে দিতে বলবে? পুরো মাসের হাতখরচের টাকা দিয়ে দিলেও বিলের টাকা হবে না। এখন কি করবে?

রনকের কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। রুহানি ধমক দিয়ে বলল,
“কিরে? খাচ্ছিস না কেন? আরে ভয় পাস না বিল তোকে দিতে বলব না।”

রনক লাজুল ভঙ্গিতে বলল,
“না আসলে তা নয়। আমি খাব না। এসব খাবারে আমি অভ্যস্ত নই।”

“অভ্যস্ত হয়ে যাবি। নে খা। নয়তো সব বিল তোকে দিয়ে দেওয়াব।”

বিলের কথা শুনে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও খেতে শুরু করল। রুহানি মনে মনে হাসছে।

খাওয়া শেষে রুহানি বলল,
“তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুই গ্রাম থেকে এসেছিস।”

রনক মাথা নিচু করে বলল,
“হ্যাঁ।”

“তোর বাবা কি করে? ”

“গরিব কৃষক।”

“তা তোকে দেখেই বুঝা যায়। স্কলারশিপ পেয়েছিস তাই না?”

“হ্যাঁ।”

রুহানি ক্ষিপ্র হয়ে বলল,
“পেয়েছিস ভালো কথা। এত পড়াশোনা করার কি দরকার? নিজে পড়ছিস অন্যকেও জ্বালাচ্ছিস। তোর জন্য আমাদের প্যারায় পড়তে হয়। কই ঘুরাঘুরি করবি, মজ-মস্তি করবি তা না বই নিয়ে পড়ে থাকিস। এত পড়ে কি হবে? বিদ্যাসাগর হবি? একটা সার্টিফিকেট পাবি। তারপর কি হবে? তারচেয়ে শোন তোকে আমি রোজ এইসব খাবার খাওয়াব, আর তোর এই দু’টাকার জামাকাপড় পড়ে ভার্সিটিতে কি করে আসিস? আমি তোকে দামি দামি জামাকাপড় কিনে দেব। টাকা দেব, ভালো ফোন কিনে দেব। তুই আমাদের মতো আসবি, যাবি, খাবি, ঘুরবি ব্যাস। আজকের পর তুই আর এত পড়াশোনা করবি না।”

রনক মৃদু হেসে বলল,
“সব ছেড়ে দিতে পারি কিন্তু বাবার স্বপ্নটা ছেড়ে দিতে পারি না। তুমি আমাকে পুরো পৃথিবী এনে দিতে পারো কিন্তু আমার বাবার খুশি এনে দিতে পারো না। তোমার অনেক টাকা-পয়সা আছে, বাড়ি-গাড়ি আছে কিন্তু আমার এসব কিছু নেই যা আছে সেটা হলো সুন্দর একটা স্বপ্ন। বাবা-মায়ের দেখা স্বপ্ন। যাকে কেন্দ্র করে আমরা বেঁচে আছি। আমার বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়াশোনা করিয়েছে। তার অনেক স্বপ্ন। আমি অনেক পড়াশোনা করব। বড় চাকরী পাব। আমার অনেক নাম হবে। আমি শহরের চাকচিক্যতায় গা ভাসিয়ে দিতে নয় পড়াশোনা করতে এসেছি। অনেক কষ্ট করেছি এই স্কলারশিপ পেতে। এই সুযোগটা আমি হাতছাড়া করতে পারব না। তোমার বাবার টাকা আছে। তোমার ভবিষ্যত তোমার বাবা গড়ে দেবেন কিন্তু আমার ভবিষ্যত আমাকেই গড়তে হবে। নয়তো বাবার মতো কৃষি কাজ করে আজীবন পাড় করতে হবে। আমি পারব না বাবার স্বপ্নটা ভেঙে দিতে, বাবার মুখের হাসিটা কেড়ে নিতে। তার মুখের হাসিটা আমার কাছে অনেক দামি। এই হাসির জন্য আমি সব করতে পারি। দিন-রাত এক করে খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা করি শুধু তার মুখে হাসি ফুটাতে। তুমি প্লিজ আমার বাবার সে হাসিটা কেড়ে নিও না।” (হাতজোড় করে)

রুহানি রনকের দিকে তাকিয়ে দেখল ওর চোখ ছলছল করছে। রুহানির মায়া হলো। কেউ বাবার স্বপ্নকে, পরিবারের স্বপনকে এত প্রায়োরিটি দেয়?
রুহানিকে দূর থেকে ফালাক দেখছে। এমন গেটাবের একটা ছেলের সাথে এক সাথে বসে আছে দেখেই অবাক লাগছে। রুহানি অহংকারী একটা মেয়ে। যার তার সাথে মিশে না। ওর ক্লাস দেখে মিশে।

রুহানি রনককে বলল,
“যা পূরন কর তোর বাবার স্বপ্ন। কোন হেল্প লাগলে বন্ধু হিসেবে বলবি। আমি আমার বাবাকে অনেক ভালোবাসি। তাই কারো মুখে বাবাকে ভালোবাসার কথা শুনলে, সম্মান করার কথা শুনলে ভালো লাগে খুব।”
রনক রুহানির কথা শুনে মনে মনে খুশি হয়ে গেল।

চলবে…..

প্রিয় অভিমান পর্ব-০২

0

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব~২|

রুহানি চুইংগাম চিবাতে চিবাতে দু’হাতে কাঁধের ব্যাগের বেল্ট ধরে ভার্সিটির ভেতরে ঢুকল। ঢুকেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ফালাক গাড়ি থেকে নামছে। রুহানি দ্রুত আড়ালে লুকিয়ে গেল। লুকিয়ে ফালাককে দেখছে। ফালাক গাড়ি থেকে নেমে চাবি হাতে ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছে। রুহানি বের হয়ে গাড়ির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে কিছু একটা ভাবল। তারপর ব্যাগ থেকে একটা পিন বের করে গাড়ির চাকায় বসিয়ে দিল। কিন্তু পিন বেশি গভীরে যাচ্ছে না। সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে পিন ঢুকালো। তারপর আবারও কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ভালো মেয়ের মতো বন্ধুদের সাথে যোগ দিতে গেল।

ফালাক ক্লাস রুমের সামনে যেতেই দু’জন ছেলে এগিয়ে এল ওর দিকে। হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে দিল।
একজন হাত বাড়িয়ে বলল,
“হ্যালো আমি শুভ।”

ফালাক ভ্রু কুঁচকে শুভকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিল। ফালাক সহজে কারো সাথে বন্ধুত্ব করে না। মানুষের সাথে কম মিশে। কিন্তু ভার্সিটিতে নতুন। কাউকে চিনে না তাই কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া আবশ্যক।

ফালাক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আমি জুনায়েদ ফালাক। আমাকে ফালাক বলে ডাকতে পারো।”

ফালাক, শুভ আর সোহানের সাথে পরিচয় পর্ব সেরে এক সাথে ক্লাস রুমে গেল। ক্লাস শেষে বাইরে বসে ওরা নিজেদের সম্পর্কে বলার পাশাপাশি ভার্সিটির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছে।

রুহানি ওর গ্যাংয়ের সাথে কেন্টিনে যাচ্ছে। ঝুঁটি করা চুল খুলে ছেড়ে দিল। তারপর মাথা নাড়িয়ে চুলগুলো ভালো ভাবে ছাড়িয়ে নিয়ে হাত দিয়ে চুল ঠিক করে নিল। ওর মাথায় যেন পোকারা কামড়াচ্ছে। কিছু একটা না করা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না। ফালাক মাঠে ওর নতুন বন্ধুদের সাথে গল্প করছে। দুজনের চোখাচোখি হলো। রুহানি পানির বোতল বের করে এক ঢুক পানি পান করল। তারপর চোখ গেল এক মেয়ের দিকে।

.
সোহান বলল,
“এই ভার্সিটিতে না এলে জানতাম না মেয়েদের আচরণ এমন হয়। ভুল বললাম ও কোনো মেয়ে না। মেয়েরা এমন হয় না, পুরাই গুন্ডি। কাউকে শান্তি দেয় না। যা খুশি করে বেড়াচ্ছে।”

ফালাক হাত দিয়ে চুলে ব্রাশ করতে করতে বলল,
“আমাকে টার্গেট করেছিল উলটা পাগল বানিয়ে ছেড়েছি।”

শুভ আর সোহান ওর কথা শুনে চমকে গেল। বিস্ময় দৃষ্টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে বলল,
“টার্গেট মানে?”

ফালাক বারান্দার দিকে যেতে যেতে বলল,
“যা করে তা-ই।”

ফালাক বারান্দার দিকে চলে গেল। শুভ আর সোহান কিছুই বুঝতে পারল না। ফালাক দোতলার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। রেলিঙে হাত রেখে নিচের দিকে ঝুঁকে আছে। একটা মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। মেয়েটার দিকে একবার দৃষ্টি দিয়ে আবারও নিচের দিকে তাকাল। মেয়েটা তখনও দাঁড়িয়ে আছে। ফালাকের মনে হচ্ছে কিছু বলবে। কিন্তু কি বলবে, আর কেই-বা মেয়েটা?
ফালাক সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিল। মেয়েটা কাচুমাচু করছে। মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়। কিন্তু কি বলতে চায়? আর এমনই বা করছে কেন?
মেয়েটা ফালাকের দিকে তাকাল। তারপর আবার দৃষ্টি নামিয়ে নিল। বাম হাতে ডান হাতের আঙুল ঘষছে।
“আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।”

ফালাক গম্ভীরমুখে বলল,
‘হ্যা, বলো।”

মেয়েটা আবারও কাচুমাচু করছে। হটাৎ চোখ বন্ধ করে নিল। চোখ বন্ধ করে বলল,
“আই লাভ ইউ।”

ফালাক বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে। মেয়েটা তখনও চোখ বন্ধ করে আছে। মনে হচ্ছে কেউ ওর মাথায় পিস্তল ধরে জোরপূর্বক বলিয়েছে।

“এই মেয়ে চোখ খোল।” ফালাকের গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে পিলে চমকে যাচ্ছে।
ফালাক আবারও বলল,
“চোখ খোল।”

মেয়েটা ধীরে ধীরে চোখ খুলে নিল। কিন্তু ফালাকের দিকে তাকাল না। দৃষ্টি নত করে রেখেছে।
“কে পাঠিয়েছে তোমাকে?”

ফালাকের কথা শুনে চোখ তুলে তাকাল। তারপর ফুপাতে ফুপাতে বলল,
“একটা দল। ওরা আমাকে টাস্ক দিয়েছে আপনাকে প্রপোজ করার। বিশ্বাস করুন আমি এ-সব বলতে চাই নি।”

ফালাক শান্তনা দিয়ে বলল,
“ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি বুঝতে পেরেছি। একটা কাজ করো তোমার হাত দেও।”

মেয়েটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল ফালাকের কথা শুনে তারপর ভয়ে ভয়ে হাত দিল। ফালাক কলম বের করে ওর হাতে একটা নাম্বার লিখে দিয়ে বলল,
“ওদের দেখাবে আর বলবে আমি তোমাকে আমার নাম্বার দিয়েছি। আশা করি ছেড়ে দিবে। ভয় পেও না।”

মেয়েটা চলে গেল। ফালাক শিওর এই কাজটা রুহানির। একটা মেয়েকে হয়রানি করছে আর পাশাপাশি ওকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। রুহানিকে ও সোজা করে ছাড়বে।

রুহানি বন্ধুদের সাথে অপেক্ষা করছে। মেয়েটা কাচুমাচু হয়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। রুহানি ওর সামনে এসে দাঁড়াল। মেয়েটা হাত বাড়িয়ে বলল,
“আমাকে নাম্বার দিয়েছে।”

রুহানি চমকে গেল। তারপর হাতের দিকে চেয়ে ফোন নাম্বার দেখে বলল,
“দেখেছিস কি ধড়িবাজ ছেলে! একটা মেয়ে প্রপোজ করল আর তাকে নিজের নাম্বার দিয়ে দিল। থার্ডক্লাশ ছ্যাচড়া।”

নুশা মেয়েটার হাত দেখে নাম্বারটা টুকে নিল।
“নাম্বার পেয়েছি। এইবার মজা হবে।”

মেয়েটাকে বিদায় করে দিল। মেয়েটা হাফ ছেড়ে বাঁচল।

~রুহানি ইন্ডাস্ট্রি~
রুহানির বাবার সাথে রুহানির মামার ব্যাপক তর্ক হচ্ছে।
“আমি দুধ-কলা দিয়ে তোর মতো কালসাপ পুষছি। আমি তোর বোনের জামাই ভুলে গেছিস?”
রুহানির বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে রুহানির মামাকে বলল।

রুহানির মামা দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিল,
“আপনিও তো ভুলে গেছেন আমি আপনার স্ত্রীর একমাত্র ছোট ভাই। আপনি ভুললে দোষ নেই। আমি ভুললেই দোষ। নিজের বেলায় ষোল আনা আর বাকি সবাই ফাও?”

রুহানির বাবা চেঁচিয়ে বলল,
“সাহেদ!! এর ফল ভালো হবে না।”

সাহেদ আঙুল তুলে বলল,
“এর ফল আসলেই ভালো হবে না। আপনার শেষ না দেখে আমি স্থির হয়ে বসব না। আপনার এত অহংকার! আপনার এই অহংকার আমি মাটির সাথে মিশিয়ে দেব। সব ধ্বংস করে দেব।”

“বের হয়ে যা তুই আমার চোখের সামনে থেকে।”

“আপনার ধ্বংসের কারণ সাহেদ হবে মনে রাখবেন।”

“আরে যা যা। তোর মতো পুঁটি মাছ আমার করবে কি? তুই কি করতে পারিস আমার জানা আছে।”

সাহেদ ফুসফুস করতে করতে চলে গেল। রুহানির বাবা টেবিলের উপর থেকে পানিভর্তি গ্লাস নিয়ে একবারেই পুরোটা শেষ করে দিল। গ্লাস রেখে কপালে হাত দিল। কপালে তার চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে। নিজের শালক বেইমানি করতে শুরু করেছে।

ফালাক ফোনে কথা বলছে,
“হ্যা, সব রেডি রাখুন। আমি পনেরো মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব। সময় মতো জয়েন করব চিন্তা করবেন না।”

অপর পাশ থেকে বলল,
“স্যার, আপনি পারবেন তো?”

ফালাক আশ্বস্তের সুরে বলল,
“হ্যা অবশ্যই পারব। পারতে হবে। নয়তো কোম্পানির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। বাবা এমনি অসুস্থ। তার টেনশন বাড়াতে চাই না।”

“ওকে স্যার।”

ফালাক ফোন কেটে দিল। দ্রুত গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল। কিন্তু গাড়ি আগাচ্ছে না। ফালাক বারবার ট্রাই করেও পারছে না। ওকে দ্রুত যেতে হবে। কিন্তু এই গাড়ির কি হলো। ফালাক গাড়ি থেকে নেমে চেক করল। একটা চাকা হেলে আছে। আর চাকার গায়ে একটা পিন গাঁথা। ফালাক টান দিয়ে পিন বের করল।
তারপর বিড়বিড় করে বলল,
“রুহানি!”

ফালাক উঠে দাঁড়াল। রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে। হাতের মুঠো শক্ত করে বলল,
“রুহানি, যদি আমি সময় মতো পৌছাতে না পারি তবে যে আমি কি করব নিজেও জানি না। তোমাকে অনেক ছাড় দিয়েছি আর না। শুধু আজ আমার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হোক তারপর তুমি দেখবে ফালাক কি করতে পারে।”

ফালাকের হাতে সময় নেই। ট্যাক্সি বুক করে যেতেও সময় লেগে যাবে। অফিসে পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে।

শুভ দূর থেকে ফালাককে চিন্তিত দেখে সামনে এসে বলল,
“কোনো সমস্যা? ”

ফালাক শুভের দিকে চেয়ে বলল,
“আমার খুব জরুরী একটা কাজ পড়ে গেছে। পনেরো মিনিটের মধ্যে যেতে হবে কিন্তু কেউ একজন গাড়ির চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।”

শুভ সেদিকে তাকাল। চাকার অবস্থা খুবই খারাপ।
“ডোন্ট ওরি, আমার সাথে গাড়ি আছে। কোথায় যাবে বলো।”

“ধন্যবাদ শুভ। আমি ড্রাইভ করছি। তুমি তাড়াতাড়ি উঠ।”

ওরা গাড়িতে উঠে বসে। ফালাক স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগলো।
“যাচ্ছো কোথায়?” শুভ আবার প্রশ্ন করল।

ফালাক সামনে দৃষ্টি রেখে বলল,
“অফিসে যাচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং আছে।”

শুভ ফালাকের কথা শুনে বলল,
“অফিস!”

ফালাক মুচকি হেসে বলল,
“বাবা হটাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে তারপর সব দায়িত্ব আমার উপর বর্তায়। মূলত এই জন্যই এই ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছি। যাতে অফিসে যেতে পারি। অফিস থেকে এই ভার্সিটিটাই সামনে। আমার আগের ভার্সিটিটা অফিসের উল্টো দিকে। অনেক দূর হয়ে যায় তাই আর কি।”

শুভ হালকা হেসে বলল,
“বুঝতে পেরেছি। বেস্ট অফ লাক।”

রুহানির ক্লাস টেস্টের খাতা ওর চোখের সামনে ধরে রেখেছে স্যার।
“এই তোমার টেস্টের মার্ক? ছয় পেয়েছো। ছিহ!”

রুহানি মাথা নিচু করে রেখেছে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। এতগুলো মানুষের সামনে এভাবে না বললে হতো না। মনে মনে স্যারের চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করছে।

“কি হলো রুহানি? টেল মি। ঠিক আছে এই খাতা তোমার বাবার কাছে যাবে।”

রুহানি স্যারের কথা শুনে বলল,
“নো নো স্যার। এটা করবেন না। তাহলে বাবা আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দেবে। প্লিজ স্যার আমার এত বড় ক্ষতি করবেন না। আমি আজ থেকে মন দিয়ে পড়ব। সত্যি বলছি। ” (কিছুটা ড্রামা করে)

স্যার ওর ড্রামায় ফেসে গিয়ে বলল,
“ঠিক আছে। তবে নেক্সট টাইম ছাড়াছাড়ি হবে না। মনে থাকবে?”

“জি স্যার একশো পার্সেন্ট মনে থাকবে।”

রুহানি পুরো ক্লাসের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বসে পড়ল।
বিড়বিড় করে বলল,
“আমার বাপও আমাকে পড়াতে বসাতে পারবে না। আর আজ থেকে না-কি পড়ব আমি! হুহ!”

চলবে…

প্রিয় অভিমান পর্ব-০১

0

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব~১|

ডিপার্টমেন্টের হেডের রুমে দাঁড়িয়ে রাগে গজগজ করছে রুহানি। কিছুক্ষণ পর পর ফালাকের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিচ্ছে। এই দৃষ্টিতে যেন আগুন ঝড়ছে যা ফালাককে পুড়িয়ে দিতেও সক্ষম। কিন্তু ফালাক ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দু-হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। রুহানির এই দৃষ্টি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার মতো ছেলে সে নয়। সব পরিস্থিতি কি করে সামাল দিতে হয় সে তার ভালো জানা আছে।
রুহানির সঙ্গে ওর দুজন ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে আছে। রুহানি শুধু মনে মনে বলছে একবার এখান থেকে বের হই তারপর মজা দেখাবে ফালাককে।

“রুহানি যা শুনলাম তা কি সত্যি? তুমি সিনিয়রের সাথে এমন একটা কাজ কি করে করলে?” আফজাল হোসেন রুহানির দিকে উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। তার কপালে বিরক্তির রেখা ফুটে ওঠেছে।

রুহানি একবার স্যারের দিকে চেয়ে বন্ধুদের দিকে তাকাল। তারপর বলল,
“স্যার এটা একটা দুর্ঘটনা। কোনটাই ইচ্ছাকৃত নয়। আমাকে এখানে উনি ইচ্ছে করে হেরেজ করার জন্য এনেছেন।”

রুহানির ফ্রেন্ড নুশা আর তায়েব বলল,
“জি স্যার। রুহানির কোন দোষ নেই।”

ফালাক ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে তাকাল। তারপর বিড়বিড় করে বলল,
“শয়তানের ছানাপোনা।”

আফজাল হোসেন ফালাকের দিকে তাকাল। ফালাক ওদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মার্জিতভাব বলল,
“এই ভার্সিটিতে আজকে আমার প্রথম দিন। প্রথম দিনেই এমন একটা ঘটনা একটা স্টুডেন্টের উপর কি প্রভাব ফেলতে পারে সেটা আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আর সেটা যদি হয় জুনিয়রদের সাথে। প্রথম দিনেই অপমানিত হলাম তা-ও জুনিয়রদের কাছে। সিনিয়র হিসেবে কি নূন্যতম রেস্পেক্ট পেতে পারি না? প্রথম দিনেই যদি স্টুডেন্ট এমন বিভ্রান্তির স্বীকার হয় তবে ভার্সিটির রেপুটেশনের কি হবে? বাইরের মানুষ জানতে পারলে ভার্সিটির নূন্যতম রেপুটেশন থাকবে না। আমি এখানে সঠিক বিচারের আশায় এসেছি। বাকিটা আপনার হাতে।”

রুহানি ফালাকের কথা শুনে দাঁত কিটমিট করে তাকাল। ছেলেটা যে প্রচুর চালাক সেটা বোধগম্য হয়ে গেছে।
নুশা রুহানির কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“এই ছেলে তো দেখছি ভারি সেয়ানা।”

রুহানি কিছুটা হেলে ফালাকের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে নুশাকে বলল,
“এখান থেকে বের হতে দে। তারপর দেখ কি করি।”

রুহানি আবারও সোজা হয়ে দাঁড়াল।

আফজাল হোসেন রুহানিকে বলল,
“দুর্ঘটনা হোক আর যাই হোক। ভুল যখন করেছো তোমাকে সরি বলতে হবে।”

রুহানিও মুচকি হেসে বলল,
“অবশ্যই সরি বলল।”
রুহানির বন্ধুরা রুহানির কথা শুনে শকড। রুহানি সরি বলবে এটা কি করে সম্ভব?

রুহানি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“তবে উনাকেও সরি বলতে হবে।”

রুহানির এই কথা শুনে ওর বন্ধুদের পাশাপাশি ফালাক আর আফজাল হোসেনও শকড।

ফালাকের তীক্ষ্ণ চাহুনি দেখে রুহানি আলতো হেসে বলল,
“কেন ভাইয়া, ভুলে গেলেন আপনার তেতো মুখের কথাগুলো?”

ফালাক চোখ মুখ শক্ত করে রুহানির দিকে দৃষ্টি দিল। রুহানির এই হাসি একদম সহ্য করতে পারছে না।

~ফ্ল্যাশব্যাক~
রুহানি এই ভার্সিটির একটা আতংকের নাম। পুরো ভার্সিটিতে যার রাজত্ব চলে। ওর বিশাল এক গ্যাং আছে। কেউ ওদের সাথে টক্কর দেওয়ার সাহস করে না। তবে রুহানির সাথে টক্কর দেওয়ার জন্য আরেকটা দল আছে ইশার দল। তবে রুহানির সাথে পেরে উঠে না। তবুও হাল ছেড়ে দেয় নি। রুহানিকে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা বারবার করে যাচ্ছে। রুহানি অনার্স থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। পড়াশোনার প্রতি বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। ভার্সিটিতে মূলত আসে নিজের ক্ষমতা দেখাতে, দূর্বলের উপর জুলুম করতে, আড্ডা দিতে। প্রতিদিন উদ্ভট কিছু না কিছু করবে নয়তো ওর শান্তি লাগে না। তবে কোন কাজের প্রমাণ রাখে না আর না কেউ সাহস পায় কমপ্লেইন করতে।
অপর দিকে ফালাক ভার্সিটিতে নতুন। কিছুদিন আগে এম.বিএ এডমিশন নিয়েছে। আজ এসেছিল প্রথম ক্লাস করতে। তাতেই বাঁধে বিপত্তি।

রুহানি দুতলা থেকে সিড়ি দিয়ে নামছে। তখনই নুশা রুহানিকে ইশারা করল।
“দোস্ত আজকের মুরগী পেয়ে গেছি। দেখতে একদম নাদান বাচ্চা। আমাদের নয়া শিকার।”

ওরা দলবল নিয়ে দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে আছে। ফালাক গলায় হেডফোন ঝুলিয়ে ফোন টিপতে টিপতে ওদের দিকে যাচ্ছে। ফোনে ব্যস্ত থাকায় কিছুটা বেখেয়ালিই ছিল। রুহানি মুচকি হাসল। ফালাক কাছে আসতেই আড়াল থেকে পা বাড়িয়ে দিল। ফালাক খেয়াল না করায় রুহানির পায়ে বেঁধে পড়ে যেতে নিলেও নিজেকে নিজের দক্ষতা দ্বারা সামলে নেয় কিন্তু হাতের ফোনটাকে বাঁচাতে পারে নি। ফ্লোরে বারি খেয়ে দূরে ছিটকে পরে যায়। ফালাক হা করে সেদিকে চেয়ে আছে। কি করে কি হলো কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।
ফালাকের সবটা বোধগম্য হলো যখন পাশ থেকে হাসির শব্দ পেল। কয়েকটা ছেলে ও মেয়ে এক সাথে দাঁড়িয়ে হাসছে। ফালাক ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে তাকিয়ে ফ্লোর থেকে নিজের ফোনটা তুলে নিল। রুহানি ফালাকের সামনে এসে দাঁড়াল।

ফালাক ফোন তুলে দাঁড়াতেই রুহানি নিজের চুলের ঝুটি পেছনে নিয়ে ভাব নিয়ে বলল,
“এই ছেলে নাম কি?”

ফালাক রুহানিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল,
“তোমাকে কেন বলব? কে তুমি?”

রুহানির পাশ থেকে তায়েফ বলল,
“নয়া না-কি? রুহানিকে চিনোস না?”

ফালাক তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“তোমাদের মতো অসভ্য, বেয়াদবদের চিনা কি খুব জরুরী?”

রুহানিসহ ওদের গ্রুপের সবাই রাগে ফেটে যাচ্ছে ওর কথা শুনে।
রুহানি ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
“আমার সাথে পাংগা নিতে এসো না বাছা। দু’দিনেই ভার্সিটি থেকে দৌড়ে পালাবে।”

ফালাক আরেকটু কাছে গিয়ে বলল,
“আচ্ছা, ভার্সিটি কি তোমার বাপ-দাদার? ফাজিল, বেয়াদব মেয়ে। পড়াশোনা করতে এসেছে না এইসব থার্ডক্লাশ কাজকর্ম করতে এসেছো?”

রুহানি আঙুল তুলে বলল,
“বড্ড বাজে কথা বলছো। এর ফল কতটা ভয়ানক…

ফালাক রুহানির কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল,
” চুপ! একদম চুপ! দলবল নিয়ে এমন অসভ্যপানা করতে লজ্জা লাগে না? আবার ফল দেখানো হচ্ছে।”

রুহানির ছেলে বন্ধুরা তেড়ে এলো। ফালাকও শার্টের হাতা গুছিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেল।
“কি গায়ে হাত তুলবে? তুলে দেখো। সোজা থানায় চলে যাবে। সেখানে র‍্যাগিং কেইসও হবে। নাও স্টার্ট।”
ফালাক হাত দিয়ে ইশারা করল আসতে। ফালাককে যতটা দূর্বল মনে হয়েছিল ততটাও না। তাই ওরা দাঁড়িয়ে গেল।

রুহানি রাগে ফুসফুস করতে করতে পানির বোতল হাতে নিয়ে ছিপি খুলতে লাগল। ফালাক বোতলের দিকে তাকিয়ে আছে। যেই ফালাককে পানি ছুড়ে মারতে যাবে ফালাক ধরে ফেলে।
“একদম না। চেষ্টাও করো না। পরে দেখা যাবে এই পানি দিয়ে তোমার গরম মাথা ঠান্ডা করে দিয়েছি।”

রুহানি ফালাকের কথা শুনে নাক ফুলিয়ে ফুসফুস করছে। এই প্রথম কেউ ওকে হারিয়ে দিচ্ছে। মেনে নিতে পারছে না কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
ফালাক পানির বোতল দূরে ছুড়ে মারল। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এই তোমাদের সমস্যা কি হাহ? ল্যাং মারলে কেন? কথা বলছো না কেন?”

সবাই উত্তর না দিয়ে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। কারো উত্তর না পেয়ে রুহানিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মাথায় সমস্যা না-কি? চেনা নেই জানা নেই ল্যাং মারলে আবার পানি মারতে যাচ্ছিলে। তোমার না হয় মাথায় গন্ডগোল কিন্তু বাকিদের। ওহ! হ্যাঁ। পাগলে তো পাগলই চিনে। যত্তসব পাগল ছাগলের দল। কার মুখ দেখে উঠেছিলাম যে ভার্সিটিতে ঢুকেই এই পাগল-ছাগল মিলেছে। সবই কপাল।”

রুহানি আর সহ্য করতে পারছে না। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। আচমকা ফালাকের কলার চেপে ধরে।
“অনেক বলেছিস, অনেক। তোর এত বড় স্পর্ধা আমাকে পাগল বলিস। তুই জানিস আমি কি করতে পারি?”

ফালাকের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
সবার দিকে তাকাল। তারপর বলল,
“তোমাদের লিডার নিজেই প্রমাণ করে দিল ও যে পাগল। এখানে রেখেছো কেন? ওকে মেন্টাল হসপিটালে পাঠিয়ে দেও। নয়তো যেকোন সময় কামড়ে দিতে পারে।”

রুহানি ফালাকের কলার আরো শক্ত করে চেপে ধরল। ফালাক এক টানেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“নিজেকে যতটা শক্তিশালী মনে করো ততটাও নয়। নেক্সট টাইম বিপদজনক জায়গায় দেখা হচ্ছে।”

ফালাক এ কথা বলে চলে গেল।

রুহানি রাগ সামলাতে পারছে না। মান-সম্মান বলতে কিছুই রইল না। আজ একা একটা ছেলে এভাবে অপমান করে গেল। আর ও কিছুই করতে পারল না। পাইচারি করছে আর ভাবছে কি করা যায়। কি করে শায়েস্তা করা যায়। তখনই পিয়ন এসে জানাল আফজাল স্যার ওদের ডাকছে। তায়েফ পিয়নের কাছে কারণ অনুসন্ধান করে জানতে পারল রুহানি নাকি এম. বিএ পড়ুয়া এক ছেলেকে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছে পাশাপাশি খুবই দুর্ব্যবহার করেছে।
তায়েফের কথা শুনে রুহানি হাই বেঞ্চ থেকে নেমে দাঁড়াল। তারপর বিস্ময় নিয়ে বলল,
“এম. বিএ! তার মানে সিনিয়র? তোরা জানতি?”

নুশা আতংকিত কন্ঠে বলল,
“এই ছেলেকে দেখে কোন দিক দিয়েই সিনিয়র মনে হয় না। সিনিয়রের সাথে এমন ব্যবহার করেছি আর সেটা স্যারের কানে চলে গেছে। এবার আর আমাদের রক্ষে নেই রুহানি।”

রুহানি ধমক দিয়ে বলল,
“চুপ কর তো। এত ভয় পাস কেন? ভাবতে দে কি করা যায়। কোন ভাবে স্যারের রুম থেকে বের হয়ে আসি তারপর এই সিনিয়রকে দেখে নেব।”

~বর্তমান~
“স্যার, আমি আসলে আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে মজা করছিলাম। ওর সাথে মজা করার জন্য আমরা লুকিয়ে ছিলাম। ও ক্লাসের দিকেই আসছিল। বাট ইনি কোথায় থেকে চলে এলো আর ও কোথায় চলে গেল কিছুই বুঝতে পারি নি। আসার কথা তো ছিল আসিফের তাই পা বাড়িয়ে দিয়েছি। আর পরে দেখলাম উনি। অনেক বড় গরবড় হয়ে গেছে। সেটা বুঝতে পেরে আমরা সরি বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু উনি তো আমাদের সেই সময় সুযোগ দেয় নি। তিনি আমাদের অসভ্য, বেয়াদব, পাগল ছাগলের দল যা নয় তাই বলল। এমনকি আমাকে বলেছে আমার না-কি মাথায় গন্ডগোল। আমাকে মেন্টাল হসপিটালে পাঠানো দরকার ব্লা ব্লা ব্লা। তিনি যদি আমাদের সুযোগ দিতো তবে এখানে আসার প্রয়োজন ছিল না। ওখানেই সব মিটে যেত।”

ফালাক গম্ভীরভাবে বলল,
“শাট আপ! একদম মিথ্যা কথা বলবে না। তোমরা সব জেনে বুঝে করেছো। আমি পড়ে যাওয়ার পর সবাই মিলে উচ্চস্বরে হাসছিলে কেন? আমাকে পানি ছুড়তে কেন চেয়েছিলে? এটা যদি এক্সিডেন্ট হতো তাহলে কিছুতেই এ-সব হতো না। স্যার ওরা বাঁচার জন্য মিথ্যা গল্প বানাচ্ছে।”

অতঃপর রুহানি আর ফালাকের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। আফজাল হোসেন ওদের কান্ড দেখে জোরে ধমক দিয়ে বলল,
“শাট আপ! তোমাদের স্পর্ধা তো কম নয়। অসভ্য, বেয়াদবের দল। আমার সামনে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছো? চিৎকার করছো?গেট আউট। গেট আউট ফ্রম দ্যা রুম।”

ওরা সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেল। রুহানি দ্রুত পায়ে কেন্টিনে চলে গেল। মিনারেল ওয়াটার নিয়ে দ্রুত গলা ভিজিয়ে নিল তারপর বোতল ছুড়ে ফেলে দিল। রাগে ওর শরীর কাঁপছে।
চেয়ার টেনে বসে পড়ল। তায়েফ কোল্ড ড্রিংক এনে ওর সামনে রেখে বলল,
“মাথা ঠান্ডা কর। নে এটা খা।”

রুহানি কোল্ড ড্রিংকের বোতলের দিকে একবার তাকিয়ে তায়েফের দিকে তাকাল। তারপর পুরো কোল্ড ড্রিংক তায়েফের মাথায় ঢেলে দিল।
তায়েফের বন্ধুরা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছে। তায়েফ রুহানির দিকে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে।
রুহানি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“হয়েছে তোর মাথা ঠান্ডা? তুই তোর মাথা ঠান্ডা কর। আবাল কোথাকার।”

তায়েফ উত্তর দিল না। রুহানি হনহন করে হেঁটে চলে গেল। হেঁটে চলেছে কিন্তু কোথায় গন্তব্য জানা নেই। কিছুতেই অপমানগুলো ভুলতে পারছে না। বারবার ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

রুহানি হটাৎ দাঁড়িয়ে গেল। কিছুটা দূরে ফালাককে দেখা যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ওর গলা চেপে ধরতে। ফালাকের চোখ পড়ল রুহানির দিকে। কেমন অদ্ভুতভাবে চেয়ে আছে রুহানির দিকে।
ফালাক রুহানির দিকে এগিয়ে আসছে। রুহানি ওর আসার অপেক্ষা করছে কিন্তু ফালাক ওকে অবাক করে দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। রুহানে পেছনে ঘুরে কিছুটা জোরে বলল,
“এই ভার্সিটি তোমার জন্য জাহান্নাম বানিয়ে দেব। যদি না পারি তো আমার নাম রুহানি না।”

ফালাক পেছনে তাকিয়ে বলল,
“চ্যালেঞ্জ একসেপ্টেড। আর হ্যা তোমার নতুন নাম কিন্তু আমি দেব।” বলেই বাকা হাসল।

রুহানি হনহন করে হেঁটে চলে গেল।

চলবে…..

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৩১(অন্তিম পর্ব)

কাব্য আর লিজাকে ইচ্ছেমত মেরে চলেছে সাদাফ আর সাবিহা।আর এমন দৃশ্য নিলয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।এভাবে অনেকক্ষণ মারার পর সাদাফ আর সাবিহা দুজনেই হাঁপিয়ে উঠে।অন্যদিকে লিজা আর কাব্য রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে।সাবিহা এবার হাটু গেড়ে তাদের সামনে বসে আর কাব্যর গাল চেপে ধরে বলে উঠে।

“ভেবেছিলাম তদের বিয়ে দিয়ে ছেড়ে দিব কিন্তু তোরা আজ যা করেছিস তার জন্য তোদের মারতেও আমার হাত কাঁপবে না।বল আপুকে কই রেখেছিস?নয়ত এখানেই মেরে পুঁতে ফেলব।”

“আআআমি জা-জানি না।”

সাবিহা এবার নিলয়ের কোমড় থেকে গানটা নিয়ে কাব্যর মাথায় ধরে।কাব্য সেটা দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে।সাবিহা এবার রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“ভালোয় ভালোয় বলে দে আপু কোথায়?”

“ববলছি,শী-শীলা কোথায় আ-আছে সেটা ল-লিজা জানে।”

আমি এবার লিজার সামনে গিয়ে দাঁড়াই,আর লিজার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই।

“আপুকে কোথায় রেখেছিস?”

লিজা আমার কথার কোন উওর না দিয়ে হেঁসে উঠে।

“বলব না,তোর যা করার করে নে।”

“শেষবারের মত জানতে চাইছি আপু কোথায়?” (চিৎকার করে)

“তোর কপাল ভালো তোর বোনকে এখনও খুন করি,,,
আহহহহ।”

লিজা আর কিছু বলার আগেই লিজার পায়ে সুট করি আমি।আর লিজা ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে,নিলয় ভাইয়া আমার থেকে গানটা নিতে আসলে সাদাফ ভাইয়া আটকে দেয়।আমি এবার লিজার পায়ের ক্ষতস্থানে দাঁড়াই,লিজা যন্ত্রণায় ছটফট করছে।

“আমাকে মেরে ফেলার কথা বলে পাড় পেয়েছিস বলে আমার বোনকে নিয়ে এমন কথা বলবি সেটা কিছুতেই মেনে নিব না আমি।তাড়াতাড়ি বল আপু কোথায়?”

“আ-আমার বাড়িতে।”

লিজার বাড়িতে আপু আছে শুনে আমি নিলয় ভাইয়ার দিকে তাকাই।তখন উনি আমাকে আস্বস্ত করে উনি লোক পাঠাচ্ছেন সেখানে আপুকে নিয়ে আসতে।আমি এবার কিছুটা নিশ্চিন্ত হই এটা ভেবে যে আপু ঠিক আছে।

“আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাও তাড়াতাড়ি,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না,প্লিজ বাঁচাও আমাকে।”

“মৃত্যুকে এতটা ভয় পাস তবে মৃত্যুর পরের জীবনটাকে কেন ভয় পাস না।মৃত্যুর পরের জীবনটা ভয় করলে ত তোর দ্বারা এতগুলো খারাপ কাজ হত না।”

“আমাকে মাফ করে দেও,আমি আর কখনও এমন করব না।দয়াকরে বাঁচাও আমাকে,আমাকে হসপিটালে নিয়ে চলো কেউ।”

লিজার কথাশুনে আমি লিজা আর কাব্যর দিকে তাকাই।দুজনের শরীরের অবস্থাই নাজেহাল, দুজনকে হসপিটালে পাঠাতে হবে।তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনকে হসপিটালে পাঠিয়ে দেই।আর আমরা আমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা হই।গাড়িতে সবাই চুপচাপ বসে আছি,নিরবতা ভেঙ্গে নিলয় ভাইয়া বলে উঠে,,,

“আমি ত কিছুই বুঝলাম না,শীলাকে কিডন্যাপ করল কেন অরা?আর তোরাই বা বুঝলি কীভাবে যে অরা কিডন্যাপ করেছে?”

তখন সাদাফ ভাইয়া বাঁকা হেঁসে বলে উঠে,,,

“এসবই সাবিহার কান্ড,আসলে কাব্য আর লিজাকে সাবিহার কথাতে আমি আটকে রেখেছিলাম তাদের বিয়ে দিব বলে।কিন্তু কাব্য আর লিজা পালিয়ে যায় কোনভাবে,আর শীলাকে কিডন্যাপ করে নেয়।।যাতে করে তারা সাবিহাকে ব্যাক মেইল করে যা খুশি তাই করাতে পারে আর তার থেকে প্রতিশোধ নিতে পারে।শীলাকে যখন খুঁজে পাওয়া যায় না তখন সাবিহা কাব্য আর লিজার খোঁজ লাগায়।আর সাবিহা যখন জানে যে কাব্য আর লিজা পালিয়েছে তখন তার প্রথমেই সন্দেহ হয় কাব্য আর লিজার উপর।তাই ত তোর সাহায্য নিয়ে ওদের খুঁজে বের করে ইচ্ছেমত কেলাইছি।আর যার ফল শীলাকে খুঁজে পেলাম আমরা।”

“মানতে হবে বস,সাবিহা কিন্তু মহিলা ভয়ংকরী।”

কথাটা বলেই দুজনে হেঁসে উঠল,আর আমি চুপ করে বসে আছি।

____________________________________

দেখতে দেখতে আপু আর মেঘ ভাইয়ার বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে যায়।খুব ভালো করেই ওদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হল।আপুকে বিদায় দিয়ে আমি আর সাদাফ ভাইয়া আমাদের বাড়িতে চলে এলাম।বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে আমি ব্যালকনিতে চুপচাপ বসে আছি।পিছন থেকে সাদাফ ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমি সেটা বুঝতে পেরেও কিছু বললাম না।উনি এবার আমাকে উনার দিকে ঘুরিয়ে বলে উঠে,,,

“তখন থেকে দেখছি এমন মনমরা হয়ে আছো।কী হয়েছে তোমার?”

“মানুষ কতটা খারাপ হলে নিজের ফুপাত বোনদের সাথে এমন করতে পারে!”

“এটা নিয়ে যত ভাববে তত খারাপ লাগবে।ত এসব নিয়ে একদম ভেবো না,শুধু এটা ভাবো কীভাবে ওদের শাস্তি দিবে।”

“ওদেরকে আমি পুলিশের হাতে তুলে দিব।”

“অরা এতগুলো অন্যায় করল আর তুমি ওদের নিজে কোন শাস্তি দিবে না!”

“না দিব না,এ পর্যন্ত যতটুকু ওদের শাস্তি দিয়েছে ততটুকুই যথেষ্ট।বাকিটা চৌদ্দ শিকের ভিতরেই পেয়ে যাবে অরা।আর আমি যদি ওদের মত ছলনা করে অন্যায় করি তবে ওদের আর আমার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না।”

“ওরে আমার বউটারে কত কিছু আছে যে এই ছোট্ট মাথায়।”

“হুম,ধন্যবাদ আপনাকে এভাবে আমার পাশে থাকার জন্য।”

“ধন্যবাদে আজ কাজ হচ্ছে না মেডাম,আমার ত অন্যকিছু চাই।”

“কী চাই বলুন!”

“ভালবেসে কাছে রাখতে চাই।”

আমি লজ্জায় উনার বুকে মুখ লুকাই।উনিও আমাকে উনার বুকে আগলে নেয়।

____________________________________

তিন বছর পর,,,

ওটির সামনে সাদাফ সমানে পাইচারি করে চলেছে।একটু পরপর নিলয়কে জিজ্ঞেস করছে।

“দোস্ত আমার সাবিহার কষ্ট হচ্ছে খুব।ওদের বল না আমাকে সাবিহার কাছে যেতে দিতে।”

আর নিলয় প্রতিনিয়ত সাদাফকে শান্ত করার চেষ্টা করে চলেছে।

আজ সাবিহার ডেলিভারির জন্যই সবাই হসপিটালের ওটির সামনে জড়ো হয়েছে।এখানে সবাই উপস্থিত আছে,সাবিহা আর সাদাফের পুরো পরিবার।নিলয় আর হিয়াও আছে এখানে,তাদের বিয়ে হয়েছে দুই বছর আগে।তাদের কোন সন্তান নেই।অন্যদিকে মেঘ আর শীলার একটা দুই বছরের ছেলে আছে।
কাব্য আর লিজা বর্তমানে জেলে আছে,জেল থেকে বের হবার মত কোন পথ খোলা রাখে নি সাদাফ।তাই তারা আপাতত জেলেই রয়েছে।

দীর্ঘ এক ঘন্টা পর ডাক্তার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।এবং তার পিছনে একটা নার্স সাদা তোয়ালো জড়িয়ে ফুটফুটে একটা মেয়েকে নিয়ে এসে সাদাফের কোলে দেয়।খুশিতে সাদাফের চোখে পানি চিকচিক করছে।সাদাফ তার মেয়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারকে বলে।

“আমার বউ মানে সাবিহা কেমন আছে?”

“উনি ভালো আছে,দেখা করতে পারবেন উনার সাথে।”

ডাক্তার কথাটা বলতে দেরি কিন্তু সাদাফের যেতে দেরি হয় নি।সাদাফ তার মেয়েকে কোলে নিয়ে সাবিহার কাছে আসে।এসে দেখে সাবিহা শুয়ে আছে,সাদাফ সাবিহার পাশে বাবুকে শুইয়ে দিয়ে সাবিহার সারামুখে ভালবাসার পরশ একে দেয়।সাবিহা সাদাফের এমন কাজে মুচকি হাসে।

“ধন্যবাদ আমার জীবনে এসে জীবনটা এত সুখের করার জন্য,ধন্যবাদ ভালবেসে আমার পাশে থাকার জন্য,ধন্যবাদ আমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ দেয়ার জন্য।”

সাদাফের কথার পরিবর্তে সাবিহা শুধু একটা কথাই বলল,,,

“ভালবাসি আপনাকে।রাখবেন কী আমাকে ভালবেসে আপনার কাছে?”

সাবিহার মুখে ভালবাসি কথাটা শুনে সাদাফ খুব খুশি হয়ে যায়।কারন এই তিন বছরে আজ এই প্রথম সাবিহা তাকে ভালবাসি বলল।আজকের দিনটা সাদাফের জীবনে শ্রেষ্ঠ একটা দিন হয়ে থাকবে।সাদাফ খুশিতে সাবিহাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে উঠে।

“আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি।আর সারাজীবন তোমাকে ভালবেসে রাখব কাছে।”

★★★★★★★★সমাপ্ত★★★★★★★★

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-৩০

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৩০(রহস্যভেদ পর্ব)

“উনাকে মেরে নিজের নাম খুনিদের খাতায় কেন লিখবেন?উনার জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যাবস্থা করেছি আমি।যাতে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙ্গবে না।”

“মানেহ?”

“মানে হল উনার সাথে আমি গরিলা মার্কা মহিলার বিয়ে দিব।যাতে অরা দুজন আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে।”

“কাকে বিয়ে করব আমি?”

“গরিলা মার্কা থুক্কু লিজাকে,যার সাথে সকালে আমাদের বাড়িতে গিয়ে ঝামেলা করেছিলেন তার সাথে।”

“না আমি ওকে বিয়ে করব না।আমি তকে বিয়ে করতে চাই সাবিহা।প্লিজ এমনটা করিস না আমার সাথে।”

“তবে পুলিশের হাতে তুলে দিব।”

“না না আমি রাজি,আমি লিজাকে বিয়ে করতে রাজি।”

কাব্য ভাইয়ের কথাশুনে আমি বাঁকা হেঁসে সাদাফ ভাইয়ের দিকে তাকালাম।

“উনি নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝে না।কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয় না,আবারও সেটা প্রমানিত হল।উনি আমাকে ভালবাসে নি আর ভালবেসে বিয়েও করতে চায় নি।উনি এ কয়দিন নাটক করেছে যাতে উনাকে পুলিশের হাতে তুলে না দেই।আর উনার পরিবারের সবাই যাতে উনাকে আগের মত কাছে টেনে নেয়।”

“আমি ত ভেবেছিলাম অয় তোমাকে ভালবেসে ফেলেছে।”

“বাদ দিন ত এসব,চলুন এখান থেকে।কাল আপু আর মেঘ ভাইয়ার বিয়ের পর ওদের বিয়ে দিব আমি।আপাতত উনি এখানেই থাকুক,আর লিজাকে এখানে আনার ব্যাবস্থা করুন।”

“ওদের কী আর কোন শাস্তি দিবে না!”

“আগে বিয়েটা হতে দিন তারপর দেখুন কী হয়।”(বাঁকা হেঁসে)

তারপর আমি আর সাদাফ ভাই চলে এলাম সেখান থেকে।আর কাব্য মনে মনে বলছে,,,

“নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম।কেন যে সাবিহা আর সাদাফের মাঝে আসতে চাইলাম!এসব না করলে হয়ত ঐ লিজা শয়তান মেয়েটাকে বিয়ে করতে হত না।”

_______________________________________

সাদাফ ভাই গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আঁড়চোখে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে।আমি সেটা দেখে মুচকি হেঁসে সিটবেল্ট খুলে সাদাফ ভাইয়ের কোলে বসে উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম।উনি আমার কাজে এতটাই অবাক হয়েছেন যে গাড়ি থামিয়ে চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

“এভাবে গাড়ি থামালেন কেন?আর এভাবে তাকিয়েই বা আছেন কেন?”

“তুমি ঠিক আছো ত?মানেহ জ্বর ট্বর আসে নাই ত?”

কপালে আর গলায় হাত দিয়ে কথাটা বলে,আমি বিরক্ত হয়ে উনার হাত ধরে বললাম।

“আনরোমান্টিক বেডা মাইনষের লগে বিয়া করাডাই ভুল হইছে।”

উনি কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।আমি কিছু না বলে উনার কোল থেকে নেমে আসতে চাইলে উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে উঠে।

“এসেছো নিজের ইচ্ছেতে যাবে আমার ইচ্ছেতে।”

কথাটা বলেই গাড়ি স্টার্ট দেয়,আমিও আর কিছু না বলে এক হাতে উনার গলা জড়িয়ে ধরি।আরেক হাতে উনার চুলগুলো একবার এলোমেলো করছি আরেকবার ঠিক করে দিচ্ছি।

“একটা কথা বলব?”

“একটা কেন যতটা মন চায় ততটা বলো।”

“আপনি কিন্তু এখনও বললেন না সেদিন ওমন আচরন কেন করেছিলেন?”

“কোনদিন?”

“ডং করবেন না ত,বলুন না।”

“সময় হলে সব বলব।”

আমি এবার দুই হাতে উনার চুল টেনে ধরি।উনি ব্যাথায় আহহ করে উঠে।

“সময় হলে বলব,সময় হলে বলব।কথাটা শুনতে শুনতে কান পঁচে গেলো আমার।এখন চুপচাপ বলুন সেদিন এমন কেন করেছেন আর আমার লাইফ রিস্ক আছে মানে কী?”

“আগে চুল ছাড় বইন আমার তারপর কইতাছি।”

আমি উনার চুল ছেড়ে দিলাম,উনি এবার একটা ফাঁকা জায়গায় গাড়ি থামালেন।উনি গাড়ি থেকে নেমে আমাকেও নামালেন।তারপর আমাকে গাড়ির উপরে বসিয়ে দুই হাত দিয়ে আমাকে আটকে আমার দিকে ঝুঁকে গেলেন।আমি ভ্রু কুঁচকে একটু পিছন দিকে সরে গেলাম।উনি বাঁকা হেঁসে বললেন,,,

“জানতে চাইছিলে না সবকিছু ত এখন এমন করো কেন?”

“জানতে চেয়েছি আপনাকে আমার দিকে ঝুঁকতে বলি নি এভাবে।”

“আমার বউয়ের দিকে ঝুঁকেছি তাতে কার কী?আর আমার বউয়ের সাথে যা খুশি তাই করব তাতে কার কী হুম?”

“এটা পাবলিক প্লেস,ত পাবলিক প্লেসে এমন করলে না দাঁত ভেঙ্গে ফেলব।বন্ধ ঘরে যা খুশি করার কইরেন এখন সরুন।”

কথাটা বলেই জিহ্বা কামড়ে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম।সাদাফ ভাই দুষ্টু হেসে বলে উঠে,,,

“সত্যি!”

আমি চুপ করে আছি,তখন মুখ ফসকে কী বলে ফেললাম সেটা ভেবেই লজ্জার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।আমি কিছু বলছি না বলে উনি টুপ করে আমার হাতের উপর একটা চুমু খেলেন।উনার ঠোটের স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি।উনি এবার মুচকি হেঁসে আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে আমার হাতটা উনার বুকে চেপে ধরলেন।আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি উনি কী করতে চাইছে?

“আজ তোমাকে সব বলব সাবিহা,আজ আর কিছু লুকাব না তোমার থেকে।”

আমি আগ্রহ নিয়ে উনার দিকে তাকাই জানার জন্য।

“তুমি জানতে চেয়েছিলে না কার থেকে তোমার লাইফ রিক্স আছে!কেন সেদিন ওমন পাগলামি করে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করলাম?আর কেনই বা সেই ছোট বেলার বিয়ে করেছি তোমাকে?”

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝাই,উনি এবার আমাকে উনার বুকে টেনে নেয়।আর এক হাত দিয়ে আমার মাথাটা উনার বুকে চেপে ধরে।আরেক হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে।

“এসবের পিছনে শুধু একটা মানুষই দায়ী আর সে হল লিজা।”

গরিলা মার্কা মহিলার কথাশুনে আমি অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে যাই।গরিলা মার্কা মহিলার জন্য মানে কিছুই ত বুঝতে পারছি না।

“কিছু বুঝতে পারছো না ত,তবে শোন।আমাদের বিয়ে হয় যখন তুমি ক্লাস ফোরে তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি এটা ত জানোই?”

আমি আবারও মাথা নাড়িয়ে বুঝাই জানি।উনি আবারও বলতে শুরু করে।

“শীলার সাথে বন্ধুত্ত আমার অনেক আগে থেকেই।শীলা যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন থেকে।আর তখন থেকেই তোমাদের বাড়িতে আমার আসা যাওয়া।
তখন থেকেই তোমার প্রতি মনে অন্য রকম একটা ফিলিংস কাজ করত।তুমি কোন ছেলের সাথে কথা বললে শয্য হত না।তুমি ব্যাথা পেলে আমার খুব কষ্ট হত।
এভাবে কেটে যায় এক বছর,তারপর পরিচয় হয় লিজার সাথে।লিজা,আমি,শীলা আর নিলয় খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।কিন্তু লিজা আমাকে ভালবাসত সেটা আমি জানতাম না।বন্ধু হওয়ার খাতিরে লিজাও তোমাদের বাড়িতে আসত।আর তখন আমি লিজা,শীলা আর নিলয় ওদের কে ছেড়ে তোমাকে সময় দিতাম।সেটা লিজা মেনে নিতে পারত না তাই প্রায় সময়ই তোমাকে লিজা আঘাত করত।এটা যখন আমি জানতে পারি তখন আমি লিজার সাথে খুব খারাপ আচরন করে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেই।তখন লিজার সব রাগ গিয়ে পড়ে তোমার উপর।আর লিজা একদিন সুযোগ বুঝে তোমাকে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে যায়।ছোট ছিলে তখন তাই ভালো মন্দ বুঝতে শিখো নি তখনও।লিজা তখন যা বুঝিয়েছে তুমি তাই বুঝে অর সাথে চলে গেছিলে।তোমাকে না পেয়ে তখন পাগল হয়ে গেছিলাম আমি।খুব ভালবাসি তোমাকে,অনেক চেষ্টার পর তোমাকে ফিরে পাই।আর তোমাকে হারানোর ভয়টা আমার তখন থেকেই।তাই জেদ ধরি তোমাকে বিয়ে করব,আর তাই করি।কাউকে না জানিয়ে খেলার ছলে তোমাকে বিয়ে করি।পরে সেটা আমার বাড়িতে জানালে তারা তোমার বাড়িতে জানায়।আর তারা মেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তুমি বড় হলে আবারও নতুন করে বিয়ে দিবে আমাদের।
লিজা এখনও তোমাকে শয্য করতে পারে না তাই এখনও চেষ্টায় আছে তোমার ক্ষতি করার জন্য।সেদিন সকালে ওভাবে পাগলামি করার পিছনেও লিজা রয়েছে।ঐদিন ভোরে আমার ফোনে একটা আনানোন নাম্বার থেকে কল আসে।আর সেটা লিজার কল ছিল,লিজা আমাকে জানায় লিজাকে মেনে নিতে নয়ত তোমার ক্ষতি করে ফেলবে।আমি সেদিন খুব ভয় পেয়ে যাই আর যার ফল সেদিন সকালে ত দেখলেই।
তোমাকে রক্ষা করার জন্য তোমার পাশে থাকার জন্য এত তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে ফেলি।আর বিয়ের দিন লিজা আর কাব্যকে কিডন্যাপ করি যাতে তারা কোন বাঁধা দিতে না পারে।”

কথাগুলো বলতে গিয়ে সাদাফ ভাইয়ের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল।উনি এখন আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।আমি চুপ করে উনার কথা শুনে চলেছি।নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে এমন একজনকে নিজের জীবনে পেয়ে।অনেক বেশিই ভালবাসে উনি আমাকে।আমিও এবার উনাকে জড়িয়ে ধরি,উনি সেটা বুঝতে পেরে আমাকে আরো জোড়ে চেপে ধরে।যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাব আমি।এভাবে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর সাদাফ ভাই আমাকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে প্রশ্ন করে।

“সবই ত জানলে এবার বলো ত তুমি তখন ওখানে পৌঁছালে কীভাবে?”

আমি এবার বোকার মত হেঁসে বলে উঠি,,,

“আপনাকে ফলো করতে করতে এসেছি এখানে।”

উনি আমার কথাশুনে অবাক হয়ে যায়।

“তোমাকে না বেঁধে এসেছি আমি।”

“আমার শ্বাশুড়ি আম্মা আছে কী করতে হুম?”

কথাটা বলেই হেঁসে ফেললাম আমি।

“পাগলি একটা।”

কথাটা বলে আবারও উনার বাহুডোরে আগলে নেয় আমাকে।

#চলবে,,,

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-২৮+২৯

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৮

আমি ওয়াশরুম থেকে চেন্জ করে বের হওয়ার সাথে সাথে সাদাফ ভাই আমাকে কোলে তুলে নেয়।পড়ে যাওয়ার ভয়ে সাদাফ ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরি আমি।তখন সাদাফ ভাই হাসতে হাসতে বলে উঠে,,,

“সাবুপরি কী ভেবেছো তুমি,আমি একা একা বাসর রাত পালন করব হুম?”

“ছাড়ুন আমাকে।”

“নাও ছেড়ে দিলাম।”

কথাটা বলেই সাদাফ ভাই আমাকে খাটে ধপাস করে ফেলে দেয়।আমি ভয়ে পেয়ে হালকা চিৎকার করে উঠি।সাদাফ ভাই এবার আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।

“আরে করছেনটা কী?সরুন এখান থেকে।”

“বাসর রাত পালন করছি,আজ সারারাত দুজন গল্প করব এভাবেই।”

কথাটা বলে উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে,আমি শিউরে উঠি।পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে উনাকে সরানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ি।

“আমি সারারাত এভাবে বসে থাকতে পারব না,উঠুন বলছি।নয়ত ঘুসি দিয়ে নাক ফাটিয়ে ফেলব।”

“ঘুসি দেও আর লাথি দেও তারপরও উঠছি না আমি।এভাবেই বসে থাকবে বুঝেছো!”

“আমার ওত বুঝে কাজ নেই,আপনাকে উঠতে বলেছি উঠুন।আপনার মত হাতি আমার কোলে শুয়ে আছেন আর আমি মশা হয়ে সে ভার বহন করিতে পারিতেছিনা।অতএব জনাব আপনি আমার কোল থেকে উঠুন নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

“এমন কেন করো সাবুপরি?তুমি সবসময় আমার সাথে এমন কঠোর হয়ে কথা বলো।একটু নরম হতে পারো না আমার জন্য।আমারও ত ইচ্ছে করে আমার বউটা আমার সাথে সবসময় মিষ্টি স্বরে কথা বলবে।মিষ্টি করে ওগো,হেগো এভাবে বলে ডাকবে।কিন্তু তুমি ত সবসময় আমার সাথে রেগে কথা বলো,নয়ত ঠাস ঠুস লাগিয়ে দাও।”

সাদাফ ভাই কথাগুলো নরম গলায় বলেছে।আমার উপর করা উনার অভিযোগ গুলো একটাও মিথ্যা নয়।সত্যি আমি বড্ড বেশি কঠোর হই উনার প্রতি।

“আজ এমন একটা স্পেশাল দিনে তোমার কাছে একটা অনুরোধ করব,রাখবে?”

“এভাবে কেন বলছেন?আপনি বলুন না কী বলতে চান।”

“বলব তার আগে বলো রাখবে।”

“হুম রাখব বলুন।”

“একটাবার ভালবাসি বলবে!জানি তুমি আমাকে ভালবাসো না তারপরও একটা বার মিথ্যে করেই ভালবাসি বলো না সাবুপরি।”

আমি উনার কথাশুনে থমকে যাই।কী করব আমি?মিথ্যে করেই কী ভালবাসি বলা যায়?

“তোমার মুখ থেকে ভালবাসি কথাটা শুনতে বড্ড বেশি ইচ্ছে করছে সাবুপরি।প্লিজ একটাবার বলো,আর কখনও বলব না ভালবাসি বলো।শুধু আজ একটাবার বলো না।”

কী এক মুসিবতে পড়লাম আমি,ভালবাসি কথাটা বলা কী এতই সহজ?
কিছুক্ষন ধরে আমি এসবই ভাবছি যে বলব নাকি বলব না!একটা সময় সাদাফ ভাই আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।আর চুপচাপ ব্যালকনিতে চলে যায়,আমার চুপ থাকাটা উনাকে কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু আমিই বা কী করব,হঠাৎ করেই মাথায় একটা কথা আসে আর আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।আমি খাট থেকে নেমে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াই ঠিক উনার পিছনে।আর গিয়েই উনাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আস্তে করে বলে উঠি,,,

“ভালবাসতে চাই আপনাকে।ভালবেসে আপনার কাছে-পাশে থাকতে চাই।রাখবেন কী আমায় ভালবেসে আপনার কাছে?”

উনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমাকে টেনে উনার সামনে দাঁড় করিয়ে আমার নাকে উনার নাক ঘসে মুচকি হেসে বলে।

“ভালবেসে রাখব কাছে,
থাকব তোমার পাশে।
বাসব অনেক ভালো,
সারাজীবন ধরে।”

(কবিতা লেখার ট্রায় করছি কিন্তু হয় নাই🤧)

উনার কথাশুনে আমার ঠোঁটের কোনের হাসিটা চওড়া হয়।উনি এবার আমাকে বুকে আগলে নেয় শক্ত করে।

______________________________________

সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে চেঁচামেচির আওয়াজে,ঘুম থেকে উঠে দেখি সাদাফ ভাই পাশে নেই।হয়ত নিচে গেছে,আমিও গায়ে উর্নাটা জড়িয়ে নিচে নামি।আর নিচে নেমেই সকাল সকাল মাথাটা গরম হয়ে যায়।গরিলা মার্কা মহিলা আর কাব্য ভাই সকালে পুলিশ নিয়ে হাজির আমাদের বাড়িতে।গরিলা মার্কা মহিলা আর কাব্য ভাইকে দেখেই মাথা গরম হয়ে যায় আমার।কিন্তু এখানে কী হচ্ছে সেটা ঠিক ঠাহর করতে পারছি না।সাদাফ ভাই আর উনার বাবা এক পাশে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।আর এক পাশে সাদাফ ভাইয়ের মা দাঁড়িয়ে আছে।আমি ধীর পায়ে শ্বাশুড়ি আম্মুর পাশে গিয়ে দাঁড়াই।

“আম্মু এই দুই শয়তান এখানে কেন?”

আমার কথা শুনে আম্মু চোখ দুইটা বড়বড় করে তাকায় আমার দিকে।আমি সেটা দেখে আবারও বলে উঠি,,,

“আম্মু এখন এমন রিয়েকশন না দিয়ে কাহিনী কী সেটা বলো।”

আমার কথা শেষ হওয়ার পরই আম্মু আমাকে টেনে একপাশে নিয়ে দাঁড় করায় আর ফিসফিসিয়ে বলে উঠে।

“আরে এই দুইজনকে নাকি সাদাফ কাল কিডন্যাপ করেছে তাই পুলিশ নিয়ে এসেছে বাড়িতে।”

আম্মুর কথাশুনে আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।দুজনকে কিডন্যাপ করেছে মানে?কাল তবে এর জন্য এই দুই শয়তানকে চোখে পড়ে নি।কিন্তু সাদাফ ভাই ওদের কিডন্যাপ কেন করল?আমার ভাবনার মাঝেই কাব্য ভাই আমার কাছে এসে আমার গালে হাত দিয়ে বলে।

“সাবিহা তুই ঠিক আছিস?এই বদমাইশটা তোর কোন ক্ষতি করে নি ত?তকে আর কিছু করতে পারবে না এই বদমাইশটা।আমি এসে পড়েছি এবার তকে এখান থেকে নিয়ে যাব।চল আমার সাথে,এখানে আর এক মুহুর্তও না।”

কথাটা বলে কাব্য ভাই আমার হাত ধরে টান দেয়।তখন সাদাফ ভাই আমার পাশে এসে অন্য হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে উনার বুকে ফেলে।আর এক হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে উনার সাথে মিশিয়ে নেয়।আর রাগমিশ্রিত স্বরে বলে উঠে,,,

“তোর সাহস হল কী করে আমার বাড়িতে এসে আমারই বিয়ে করা বউকে টাচ করার?”

সাদাফের কথা শুনে কাব্য অবাক হয়ে যায়।বউ মানে কী বলছে এসব সাদাফ?

“বউ মানেহ?”

“বউ মানে সাবিহা আমার বিয়ে করা বউ।”

“সাদাফ তুই বিয়ে করেছিস?আর এই মেয়েটাকে!তুই কী জানিস না আমি তকে কতটা ভালবাসি?তারপরও তুই এই মেয়েটাকে কীভাবে বিয়ে করলি?”

“আমি কাকে বিয়ে করব না করব সেটা কী তুই বলে দিবি?আর এই মেয়েটা এই মেয়েটা করছিস কেন?অর একটা সুন্দর নাম আছে নাম ধরে ডাকবি নয়ত ভাবি বলবি।”

আমি অবাক চোখে সবার কথা শুনে যাচ্ছি।কাব্য ভাইকে নতুন রূপে দেখছি,তার সাথে গরিলা মার্কা মহিলার প্রেম প্রেম পাগলামি।আর সবার উপরে আছে আমার একমাত্র হাসবেন্ড যে কী না আজ পুরো ফাটিয়ে দিচ্ছে।আমি আজ কিছু বলব না শুধু নিরব দর্শকের মত সবটা দেখব।ইস্ পপকর্ন হলে জমত ভালো,কিন্তু আমি ত ফ্রেশই হই নি ঘুম থেকে উঠে।দেৎ ভাল্লাগে না,আমার এমন বোকা বোকা ভাবনার মাঝেই কাব্য ভাই আমার দিকে এগিয়ে এসে কিছু বলতে নিলে সাদাফ ভাই হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।

“যেখানে আছিস সেখানেই থাক একদম আমার বউয়ের কাছে আসার চেষ্টা করবি না।”

“সাদাফ সাবিহাকে ছাড়,সাবিহা তকে বিয়ে করতে পারে না।সাবিহা ত আমাকে ভালবাসে,সাবিহা এমনটা করতে পারে না।তুই নিশ্চয়ই সাবিহাকে জোড় করে বিয়ে করেছিস?অফিসার আপনি কিছু বলছেন না কেন?দেখতে পারছেন না একটা মেয়েকে কীভাবে জোড় করে আটকে রেখেছে!কিছু করুন আপনারা,আর সাবিহাকে মুক্ত করুন অর থেকে।”

“এই চুপ,একদম চুপ সাবিহা তকে ভালবাসত কিন্তু এখন আর বাসে না।আর অফিসার কী বলবে?আমি আমার বউকেই বিয়ে করেছি,দুজনের মতেই বিয়েটা হয়েছে।তুই এসবে নাক গলাচ্ছিস কেন?ভালো চাস ত চুপচাপ তুই আর লিজা চলে যা এখান থেকে।নয়ত যে পুলিশ নিয়ে তরা এসেছিস সে পুলিশের হাতেই তদের ধরিয়ে দিব।তরা নিশ্চয়ই এমন কোন কাজ করিস নি যে পুলিশ তদের কোলে বসিয়ে আদর করবে?তাই চুপচাপ এখান থেকে যা নয়ত তদের আসল রূপটা ওদের সামনে আনতে বাধ্য হব।”

তারপরও কাব্য ভাই আর লিজা আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।সেটা দেখে সাদাফ ভাই আমার হাত ধরে সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে অফিসারদের বলে।

“ওদের যে আমি কিডন্যাপ করেছি তার কোন পাকাপোক্ত প্রমান আপনাদের কাছে নেই।তাই এই দুই জনকে নিয়ে এখান থেকে চলে যান।নয়ত আমিও আইন একটুআকটু জানি।”

কথাটা বলেই সাদাফ ভাই আমাকে নিয়ে রুমে চলে আসে।রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কোমড়ে হাত দিয়ে আমার সামনে দাঁড়ায়।আমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি ধমকে বলে উঠে,,,

“তোমাকে যে কাব্য স্পর্শ করল তারপরও তুমি কাব্যকে কিছু বললে না কেন?আমি চাই না আমি ব্যাতীত অন্য কোন পুরুষ তোমায় স্পর্শ করুক।তারপরও কেন তোমাকে কাব্য স্পর্শ করল?আর তুমি কেন কিছু বললে না?”

আমি উনার প্রশ্নের কোন উওর না দিয়ে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি,উনি সেটা দেখে রেগে দেয়ালে একটা ঘুসি দেয়।আমি আৎকে উঠি,আর উনার হাত ধরতে গেলে উনি আরো রেগে যায়।

“একদম ছুবি না আমাকে।তুই ঐ কাব্যকে নিয়ে পড়ে থাক।”

কথাটা বলেই উনি রেগে রুম থেকে চলে যায়,আর আমিও উনার পিছন পিছন ছুটি।হাতটা হয়ত থেতলে গেছে ঔষধ না লাগালে সমস্যা হবে।

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৯

সাদাফ ভাই একটা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।আমি বাইরে থেকে ধাক্কাচ্ছি কিন্তু খুলছে না।

“সাদাফ ভাই দরজাটা খুলুন,হাতটা দেখতে দিন আমাকে।”

উনার কোন সারা শব্দ নেই,আমি বারবার ডেকে চলেছি উনি কিছু বলছেও না দরজাও খুলছে না।

“দরজা খুলবেন না ত আপনি!ওকে ফাইন থাকুন আপনি এই বদ্ধ ঘরে।আমি চললাম আপনার বাড়ি ছেড়ে,থাকুন একা।আর বিরক্ত করতে আসব না।”

কথাটা বলেই আমি সেখান থেকে চলে এলাম।আমি শিয়োর উনি এবার দরজা খুলে বের হবে।তাই একটু নাটক করতে হল,নয়ত সারাদিনেও বের হত না।

অন্যদিকে সাদাফ এতক্ষণ সাবিহার কথা শুনেও দরজা খুলে নি।সে খুব রেগে আছে,কেন তার বউকে অন্য কেউ টাচ করবে?তার বউয়ের উপর শুধু তার অধিকার অন্য কেউ কোন অধিকারে তার বউকে টাচ করবে?আর যাই হোক এটা মেনে নেয়া যায় না।

কিছুক্ষণ পর যখন সাবিহার কোন সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না তখন সাদাফের সাবিহার বলা শেষ কথাটা মনে পড়ে।আর সাথে সাথে সাদাফ দৌড়ে দরজা খুলে বাইরে আসে।আসেপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও সাবিহা নেই।সাদাফ ছুটে তাদের রুমে গেলো কিন্তু সেখানেও সাবিহা নেই।সাদাফের বুকের ভিতরটা এবার মোচড় দিয়ে উঠল।সাবিহা কী সত্যি তাকে ছেড়ে চলে গেছে?সাবিহা চলে গেলে সাদাফ থাকবে কীভাবে?
এসব ভেবে সাদাফ আবারও পাগলের মত দৌড়ে বাড়ির বাইরে আসে।এসে দেখে সাবিহা পিছনে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছে।এমন ভাবে হাঁটছে যেন পিঁপড়াদেরকেও হার মানাবে।সাদাফ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাবিহার কাছে গিয়ে সাবিহাকে কোলে তুলে নেয়।

সাদাফ ভাই কোলে নেয়ার পর মুচকি হাসলাম।আমি জানতাম উনি আসবে,তাই কিছু না বলে আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কিন্তু উনি ভুলেও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।জামাই আমার ক্ষ্যাপছে ভালো।
সাদাফ ভাই আমাকে ঘরে এনে খাটে বসিয়ে দিয়ে বের হতে নিলে আমি উনার হাত ধরে আঁটকে বসিয়ে দেই খাটে।আর আমি উঠে উনার সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়াই।শাসনের স্বরে বলে উঠি,,,

“এখান থেকে এক পা নড়লে না একদম ভালো হবে না।চুপ করে বসে থাকবেন এখানে নয়ত সত্যি সত্যি চলে যাব।”

আমার কথার পরিবর্তে উনি দাঁতে দাত চেপে বলে উঠে।

“চলে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াও একদম জানে মেরে দেব।”

“রাগ করবে ঠিকই কিন্তু ভালবাসা একটুও কমবে না।আর না ছাড়তে পারবে আমাকে,না পারবে আমাকে ছেড়ে থাকতে।”

উনি কিছু বললেন না,চুপ করে বসে রইলেন।আমিও আর কিছু না বলে উনার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসি,আর উনার হাতটা হাতে নিয়ে দেখি অনেকটা ফুলে আছে।বরফ লাগাতে হবে,তাই আমি উঠে দাঁড়াই ফ্রিজ থেকে বরফ আনার জন্য।উনি তখন আমার হাতটা চেপে ধরে আমি সেটা দেখে উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠি।

“কিচেনে যাচ্ছি,এখনই এসে পড়ব।”

তারপর উনার থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে চলে আসি বরফ নিতে।আর সাদাফ ভাই কাউকে ফোন করে।

“এক ঘন্টার মধ্যে কাব্যকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই।এক ঘন্টা মানে এক ঘন্টা,তার এক মিনিট বেশি হলে কী করব জানোই!”

কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দেয়।একটু পর সাবিহা এসে বরফ নিয়ে।সাবিহা বরফ লাগাতে লাগাতে বলে উঠে,,,

“ব্রেকফাস্ট কী নিচে গিয়ে করবেন নাকি এখানে নিয়ে আসব?”

সাদাফ ভাই কিছু বলল না,আমিও আর কিছু জিজ্ঞেস না করে নিচে চলে এলাম।আর একটা প্লেটে খাবার নিয়ে উপরে চলে এলাম।এসে দেখি উনি ফোনে কিছু একটা করছে।আমি খাটে খাবারটা রেখে উনার হাত থেকে ফোনটা নেই।

“খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নিন,খাওয়া শেষ হলে ফোন হাতে পাবেন।”

উনি এবারও কিছু বললেন না।আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে,চুপ করে বসে রইলেন।এরকম চুপ করে থাকলে কী ভালো লাগে?রাগ লাগছে খুব,ইচ্ছে করছে বেটাকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে ফেলতে।কিন্তু এখন রাগ দেখালে চলবে না,দুজন একসাথে রেগে গেলে সমস্যা।তাই একজনকে ত চুপ করে থেকে ত আরেকজনের রাগ ভাঙ্গাতেই হবে।এভাবে নিজের মনকে বুঝিয়ে খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে খাবার উনার মুখের সামনে ধরলাম।উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলেন।খেয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন,বেটায় একবারও বলল না তুমিও খাও।

খাবারের প্লেট নিচে রেখে ঘরে এসে দেখি টেবিলে খাবার বেড়ে রাখা কারো জন্য।আর তার পাশেই একটা চিরকুট।আমি কৌতুহল বশত সেখানে গিয়ে চিরকুটটা খুলি।আর সেটা পড়ে আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।চিরকুটটাতে লেখা,,,

“প্লেটে যেন একটা খাবারও অবশিষ্ট না থাকে।”

আমি মুচকি হেঁসে খাবারটা খেয়ে নেই।আমার খাওয়া শেষ হওয়ার একটু পরেই উনি ঘরে আসে।ঘরে এসেই আলমারি খুলে শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আমার দিকে একবার তাকালও না।
গতকাল বলেছিল বাবার অফিসে জয়েন করবে।তাই হয়ত এখন রেডি হতে গেলো অফিসে যাওয়ার জন্য।উনি ওয়াশরুম থেকে বেরোলে আমি উনার সামনে টাই নিয়ে দাঁড়াই।

“বাবার অফিসে যাবেন তাই না!প্রথম অফিসে যাবেন আজ।চলুন আজ আমি আপনাকে রেডি করিয়ে দিব।”

উনার গলায় টাইটা বাঁধতে গেলে উনি আমার হাত ধরে আটকে দেয়।আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি আমার হাত থেকে টাইটা নিয়ে সরে দাঁড়ায়।যার অর্থ সে পড়বে না,কিন্তু আমিও ছাড়ার পাত্রী নই।আমি আরেকটা টাই নিয়ে উনার সামনে দাঁড়াতেই উনি আবারও একই কাজ করে।আমি গাল ফুলিয়ে আবারও আরেকটা টাই নিতে গেলে উনি পিছন থেকে দুইটা টাই এক করে সেটা দিয়ে আমাকে আটকে টান দেয়।আমি উনার বুকের উপর গিয়ে পড়ি,আমার পিঠ উনার বুকের উপর।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি আমাকে টাই দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিয়ে চলে যায়।কিছুক্ষণ পর সবটা বুঝতে পেরে ছোটার জন্য ছটফট শুরু করি।

“আরে ঐ ফুলাইন্না,আমারে বাঁধলেন কেন?খুলে দিয়ে যান আমাকে।”

চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে এসব বলছি আর ছোটার চেষ্টা করছি।কিন্তু ছুটতে পারছি না,বজ্জাতটা এমন ভাবে বেঁধেছে যে খুলতেই পারছি না।

______________________________________

কাব্যর হাত,পা বাঁধা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে।আর তার সামনেই সাদাফ রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে।

“তকে কাল ছেড়ে দিয়ে খুব বড় ভুল করেছিরে।তকে ছেড়ে দেয়া একদমই উচিত হয় নি আমার।তকে না ছাড়লে হয়ত সকালের ঘটনা গুলো ঘটতই না।কিন্তু এখন এসব ভেবে কী লাভ?যা হওয়ার তা ত হয়েই গেছে।”

“তুই চাচ্ছিস টা কী?কেন আমার সাথে এমন করছিস?কেন সাবিহাকে আর আমাকে আটকে রেখেছিস?ছেড়ে দে আমাকে আমি সাবিহাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব।সাবিহার ভালবাসা আমি এতদিনে বুঝতে পেরেছি।এখন তুই আর আমাদের আলাদা করিস না প্লিজ।সাবিহাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে।”

কাব্য কথা শেষ করতেই সাদাফ কাব্যর পেটে একটা লাথি মেরে দেয়।

“আমার সামনে বসে আমারই বউকে নিয়ে চলে যাওয়ার কথা বলছিস তুই?তোকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।তুই বেঁচে থাকলে যখন তখন ঝামেলা করতে পারিস আমাদের মাঝে।যেটা আমি একদমই চাই না,তাই আজ এই মুহুর্তে তকে আমি পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় দিব।”

সাদাফের কথাশুনে কাব্য রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছে।সাদাফ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর হাতে একটা রড নেয়।যখনই সাদাফ রডটা দিয়ে কাব্যকে আঘাত করবে তখন কেউ পিছন থেকে আটকায়।সাদাফ রেগে পিছনে তাকায়,আর যা দেখে তা দেখার জন্য সাদাফ একটুও প্রস্তত ছিল না।সাদাফের চোখে এবার রাগের পরিবর্তে ভয় ফুটে উঠে।সাদাফের মুখ থেকে আপনা-আপনি বেরিয়ে আসে,,,

“সাবিহা!”

#চলবে,,,

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-২৬+২৭

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৬

আর মাত্র তিনদিন পর আপুর বিয়ে,আর সাদাফ ভাইও পাগলামি করছে আপুর বিয়ের দিন বিয়ে করার জন্য।কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছে না,এখনই বিয়ে করতে চাইছি না আমি।উনি প্রতিনিয়ত আমাকে বিয়ের জন্য পেশার দিচ্ছে।উনি এত কথা বলে চলেছে কিন্তু আসল কথাই বলছে না।আমার লাইফ রিস্ক আছে মানে কী?কে আমার ক্ষতি করতে চায়?গরিলা মার্কা মহিলা নাকি কাব্য ভাই?মাথায় কিছু ধরছে না আমার।আমি যখন এসব ভাবনায় মগ্ন তখন কেউ আমার রুমে প্রবেশ করে।আমি তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাই,উনাকে দেখেই রাগটা মাথা চারা দিয়ে উঠে।

“আপনার সাহস কী করে হল আমার রুমে আসার?বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে,নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

“সাবিহা আমি তোর কোন ক্ষতি করব না,তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।ত দয়াকরে আমার কথাটা ঠান্ডা মাথায় শোন।আমি কথাটা বলেই চলে যাব, প্লিজ আমার কথাটা শোন।”

“আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না,চলে যান এখান থেকে।”

“দুই মিনিট শুধু দুই মিনিট সময় দে আমাকে।আমি আমার কথা শেষ করেই চলে যাব।প্লিজ দয়াকরে আমার কথাটা শোন।”

আমি কিছুক্ষণ ভেবে,বলে উঠলাম।

“বলুন কী বলতে চান?”

আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া খুশি হয়ে যায়।আর হাসিমুখেই বলে উঠে।

“থ্যাংকস ইয়ার,অবশেষে তোর সাথে কথা বলার সুযোগ পেলাম।এ কয়টা দিন খুব চেষ্টা করেছি তোর সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু প্রতিবারই তুই কিছু না কিছু করে আমাকে বলার সুযোগই দিস নি।”

“এসব বলার জন্য এখানে এসেছেন আপনি?”

“আরে না,আমি ত,,,,

” বেশি কথা না বলে কাজের কথা বলুন।”

“আসলে,আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।এতদিন তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি তার জন্য আমি অনুতপ্ত।তোকে এতটাই কষ্ট দিয়েছি যে এখন আমি প্রতিনিয়ত শাস্তি পাচ্ছি।আমার পরিবার থেকেও নেই,যাকে ভালবেসেছিলাম সেও ধোঁকা দিলো আমাকে।আমাকে তুই ক্ষমা করে দে,নয়ত আমি মরেও শান্তি পাব না।”

কাব্য ভাইয়ের কথাশুনে আমি হু হা করে হেঁসে উঠলাম।কথাগুলো বলার সময় উনার চোখে পানি টলমল করছিল।আমার হাসির আওয়াজে চোখে জল নিয়েই তাকায় আমার দিকে।

“তুই হাসছিস?”

“ত কী করব?নাচব নাকি কাঁদব?আপনার এসব ফালতু নাটক দেখার সময় নেই আমার।আপনি আসতে পারেন।”

“আমি কোন নাটক করছি না সাবিহা।বিশ্বাস কর আমাকে আমি সত্যি অনুতপ্ত।দয়াকরে ক্ষমা করে দে আমাকে।”

“আমি এত দয়ালু নই যে আপনার মত অমানুষ, পাষানকে ক্ষমা করে দিয়ে সবকিছু ভুলে যাব!আপনি কী ভাবছেন আপনার করা এত অন্যায় শুধু ক্ষমা চাওয়াতেই সেটা ভুলে গিয়ে ক্ষমা করে দিব?এমনটা ভাবলে ভুল ভাবছেন আপনি।আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করব না, আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না আপনার মুখে।বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে।”

আমার কথাশুনে কাব্য ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসে আর আমার হাত তার মুঠোয় নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে।

“ক্ষমা করতে না পারিস,অন্তত আমাকে একটা সুযোগ দে ভালো হওয়ার।আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিস না,আমি জীবনটা গুছিয়ে নিতে চাই।”

উনি হাতটা বেশ ভালো করেই ধরেছে যার জন্য ছাড়াতে পারছি না।তারপরও হাত ছাড়াবার চেষ্টা চালাচ্ছি।

“হাত ছাড়ুন আমার,হাত ছেড়ে কথা বলুন।”(রেগে)

” না আমি ছাড়ব না,আগে তুই বল আমাকে একটা শেষ সুযোগ দিবি?”

“হাতটা ছাড়ুন আমার।”

“তুই ত আমাকে ভালবাসিস,ত ভালবাসার মানুষটাকে একটা শেষ সুযোগ কী দেয়া যায় না?তুই আমাকে এই শেষ সুযোগটা দিয়ে দেখ আমি আমার করা সব অন্যায় শুধরে নিব।জীবনটা নতুন করে সাঁজাব তোর সাথে।ভালবাসব তকে,ভালবেসে রাখব কাছে।প্লিজ একটা সুযোগ দে আমাকে।”

আমি কাব্য ভাইয়ের কথার পরিবর্তে কিছু বলব তার আগেই সাদাফ ভাই হাত তালি দিতে দিতে ঘরে প্রবেশ করে।আমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাই উনার দিকে,আর কাব্য ভাই আমার হাতটা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

“বাহ!বাহ!বাহ!ভালোই ত চলছে রোমান্টিক সিন।তা বন্ধ করলে কেন চালিয়ে যাও।”

“বাজে কথা কম বলুন।”

“তোমরা এখানে হাত ধরাধরি করে রোমান্টিক কথা বলছো,ভালবাসার কথা বলছো আর আমি কিছু বললেই বাজে কথা হয়ে গেলো!”

“পুরো কথা শুনে তারপর কথা বলুন,না জেনে কথা বলবেন না।”

“একদম চুপ,একটা কথাও বলবা না তুমি।এখন আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি তুমি কেন আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো না।আমারই বুঝার উচিত ছিল যে মেয়ে কাব্য বলতে পাগল সে মেয়ে হঠাৎ আমাকে ভালবাসতে চাইবে কেন?তার পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে নয়ত সে এত তাড়াতাড়ি একজনকে ভুলে গিয়ে আরেকজনকে ভালবাসতে চাইবে কেন?আমার অনুভূতি নিয়ে খেলছো তুমি।আমাকে ঝুলিয়ে রেখে আরেকজনের সাথে প্রেমালাপ করছো।আমি তোমাকে সেফ রাখার জন্য এতকিছু করছি আর তুমি কী না এসব করছো?নেহাত তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না নয়ত তোমার মুখও দেখতে চাইতাম না আমি।কিন্তু সেটা ত পারব না তাই তোমাকে সারাজীবনের মত নিজের করে নিব আজ।যাতে আমি ছাড়া আর কারো হতে না পারো তুমি।”

কথাটা বলেই সাদাফ ভাই আমার হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছে,কাব্য ভাই আটকাতে চাইছে কিন্তু উনি ছাড়ছে না।

“সাদাফ সাবিহাকে নিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো?ছাড়ো সাবিহাকে।ফুপি,ফুপা দেখে যাও সাবিহাকে নিয়ে সাদাফ কোথায় যেন যাচ্ছে!”

সাদাফ ভাই কোন দিকে পাত্তা না দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আমি ছাড়াতে চাইলে উনি আমাকে কোলে তুলে নেয়।

“ভুল করছেন আপনি,ছাড়ুন আমাকে।”

উনি কোন কথা না বলে হেঁটেই চলেছে।উনি আমাকে গাড়িতে বসিয়ে আমার গলার উর্না দিয়ে হাত বেঁধে দেয়,আর উনার রুমাল দিয়ে মুখ বেঁধে দেয়।পিছন থেকে আপু আর কাব্য ভাই ছুটে আসছে আটকাতে।আর বাবা বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে থেকে সবটা দেখছে,পাশেই মা দাঁড়িয়ে আছে।তাদের ভাব এমন যেন কিছুই হচ্ছে না।

অনেকক্ষণ পর সাদাফ ভাইয়া একটা কাজি অফিসের সামনে গাড়ি থামায়।সেটা দেখে আমার চোখ বড়বড় হয়ে যায়,আমি উনার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝাচ্ছি এমনটা না করতে।কিন্তু উনি কোন কথা কানে না নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আমার হাতের বাঁধন খুলে উর্নাটা গায়ে দিয়ে আবারও কোলে তুলে নেয়।আমি উনাকে কিল,ঘুসি দিয়েই চলেছি ছাড়ানোর জন্য কিন্তু উনি ছাড়ছেই না।সাদাফ ভাই আমাকে ভিতরে নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসিয়ে দু’পাশে হাত দিয়ে বলে উঠে।

“একদম ছটফট করবে না,চুপচাপ বিয়েটা করে নিবা।”

উনার কথাশুনে এবার ঠাস করে উনার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই।

“একবার বাল্যবিবাহ করে কী তোর শখ মিটে নি,আবার বাল্যবিবাহ করতে তুলে নিয়ে এসেছিস।”

কথাটা বলেই উনাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম বাইরে আসার জন্য।কিন্তু উনি এবার আমার হাত ধরে আটকে দেয়,আর টান দিয়ে উনার বুকের উপর ফেলে,জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।আমি ছোটার জন্য ছটফট করলে উনি আমার গাড়ে কিছু একটা করে।আমি গাড়ে হাত দিয়ে উনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ডলে পড়ি উনার বুকে।উনি সেটা দেখে আমাকে বুকে আগলে নিয়ে কপালে একটা চুমু একে দেয়।আর আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,,,

“জানতাম তুমি এখন বিয়ে করতে কখনও রাজি হবে না।তাই আজ বাড়ি থেকে প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়েছি। তুমি আজ বিয়েতে রাজি না হলে তুলে নিয়ে বিয়ে করব এমনটা ভেবেই এসেছিলাম।কিন্তু এসেই কাব্যর সাথে তোমাকে ওভাবে দেখি,আর তাতে করে মেজাজ আরো বিগড়ে যায়।আর কাব্যর বলা কথাগুলো শুনে তোমাকে হারানোর ভয়টা আবারও ঝেকে বসে মাথায়।তাই আজ যেভাবেই হোক তোমাকে নিজের করেই নিব।তুমি আমার আর আমার কাছেই থাকবে।হোক সেটা ভুল রাস্তার,কিন্তু আমি তোমার জীবন নিয়ে আর কোন রিস্ক নিতে পারব না।আর না পারব তোমাকে হারাতে।আর তখন রাগ দেখিয়ে অনেক কথা বলে ফেলেছি,তার জন্য হয়ত তুমি আমার উপর খুব রাগ করে আছো।কিন্তু আপাতত আমার কিছু করার নেই,এখন আমার একটাই কাজ তোমাকে নিজের করে নেয়া।”

কথাগুলো বলে সাদাফ সাবিহার কানের লতিতে আরেকটা চুমু দিয়ে কোলে তুলে নেয়।আর একটা চেয়ারে বসে সাবিহাকে নিজের বুকে আগলে নেয়।ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে ফোন লাগায় আর সাবিহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,

“তিন ঘন্টার জন্য নিশ্চিন্ত তার মধ্যে সব রেডি চাই।”

কথাটা বলেই সাদাফ ফোনটা পকেটে রেখে দেয়।আর সাবিহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।

#চলবে,,,

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৭

যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে বউ সাজে সাদাফ ভাইয়ের রুমে আবিষ্কার করি।আমি হুরমুরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসি,আর সামনেই দেখতে পাই সাদাফ ভাই একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে।উনার দৃষ্টি আমাতেই আবদ্ধ,আমাকে উঠে বসতে দেখে উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে পাশে বসে।

“এসবের মানে কী?আমি এখানে কেন?আর এই সাজেই বা কেন?”

“বউ সাজে না তোমাকে খুব হট লাগছে,ইস্ ইচ্ছে করছে বিয়ের আগেই বাসরটা সেরে ফেলি।”

“বাজে কথা না বলে যেটা জানতে চেয়েছি সেটা বলুন।”

“এখনও বুঝতে পারছো না সাবুপরি?”

“হেয়ালি না করে ভালোয় ভালোয় উওর দিন আমি এখানে আর এই সাজে কেন?”

“আজ ত আমাদের বিয়ে,আর বিয়ের দিন বউ ত বউ সাজেই থাকবে তাই না!”

“মানেহ?”

“এত মানে টানে বুঝাতে পারব না।এখন উঠো ত তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

“আবার কীসের সারপ্রাইজ?”

“চলো গেলেই দেখতে পাবে।”

“আমি যাব না আপনার সাথে।আর না আপনাকে বিয়ে করব আমি।আপনি ত আমাকে বিশ্বাসই করেন না ত আপনাকে বিয়ে করে লাভ নেই।”

“তুমি কী ভেবেছো তুমি না করলে আমি শুনব?মোটেও নয় আমি যখন বলেছি আজ আমাদের বিয়ে ত আজই আমাদের বিয়ে।”

কথাটা বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে নেয়,আর বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে আমাকে।আমি বাইরে এসে অবাকের চরম সীমানায়।বাগানটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল আমার পরিবার,সাদাফ ভাইয়ের পরিবার,মেঘ ভাইয়ার পরিবার আরো অনেকে এখানে উপস্থিত রয়েছে।তার মানে সবটা আগেই প্লান করা ছিল?আমাদের এভাবে আসতে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।আমিও লজ্জার মাথা খেয়ে সবার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার বাবা কানে হাত দিয়ে সরি বলল।আমি কিছু না বলে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেই।সাদাফ ভাই আমাকে সোফায় বসিয়ে আমার পাশে বসে।

“কী কেমন লাগল সারপ্রাইজ?”

আমি কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে বসে আছি।উনি সেটা দেখে বাঁকা হেঁসে কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে উঠল।

“এখন চুপ করে থাকো সমস্যা নাই কিন্তু কবুল বলার সময় কবুলটা বলে দিও।”

আমি উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে চুপ করে বসে আছি।তখন কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে আর আমি তাকিয়ে দেখি হিয়া আর অর পাশেই নিলয় ভাইয়া দাড়ানো।

“বইনরে বইন তুমি তলে তলে বিয়ে অবধি এগিয়ে গেছো আর আমি কিছুই জানলাম না?আজ সাদাফ ভাই বিয়ের দাওয়াত না করলে ত জানতেই পারতাম না।”

আমি হিয়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে উঠলাম,,,

“তুমিও ত তলে তলে টেম্পু চালাইতাছো সেটা কী আমাকে বলছো?”

আমার কথা শুনে হিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়,আমতা আমতা করে বলে।

“ককী বলছিস এএসব?”

“কী বলছি তুই ভালো করেই বুঝতে পারছিস,তুই যে নিলয় ভাইয়ের সাথে রিলেশনে আছিস সেটা আমি জানি না ভেবেছিস?”

আমার কথা শুনে নিলয় ভাইয়ার কাশি উঠে যায়,উনি কাশতে কাশতে সেখান থেকে টুপ করে সরে যায়।আর হিয়া লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে কেটে পড়ে।হিয়া ভাবতেও পারে নি আমি কথাটা বলে ফেলব।।আসলে নিলয় ভাইয়া হিয়াকে হসপিটালে সেদিন দেখে প্রেমে পড়ে যায়।আর হিয়াকে সেটা জানালে হিয়াও রাজি হয়ে যায়।কিন্তু আমাকে সেসব কিছুই জানায় নি,আমি অবশ্য গোপন সূত্রে কথাটা জেনেই ফেলেছি।

“দিলে ত দুজনকে ভাগিয়ে,বেচারি একটু আসছিল মজা করতে আর তুমি ওদের লজ্জা দিয়ে ভাগিয়ে দিলা।”

আমি কিছু না বলে চুপ করে আছি,যাই হয়ে যাক উনার সাথে আমি কথা বলছি না।উনি আমাকে তখন কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো সবটা না জেনে।আমার উওর না পেয়ে উনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমার বাবার কাছে গিয়ে কিছু একটা বলে।আর বাবা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে।

“মামনিটা রাগ করেছে আমাদের উপর তাই না?”

“একদম কথা বলবে না আমার সাথে।আমাকে তাড়ানোর জন্য যদি এতই তাড়া তোমাদের,আমাকে বলতে আমি চুপচাপ চলে যেতাম।এসব করার কী খুব প্রয়োজন ছিল?”(অভিমানও স্বরে)

“হ্যাঁ রে মা প্রয়োজন ছিল,তুই হয়ত এখন বুঝবি না কিন্তু সময় হলে ঠিক বুঝবি যে আমরা ভুল কিছু করি নি।শুধু জেনে রাখ কোন বাবা মা চায় না তাদের সন্তানের ক্ষতি হোক।তেমনি আমরাও চাই না,ত আমাদের কথা ভেবে বিয়েটা করে নে মা।এতে তোরও ভালো,আমাদেরও ভালো।”

কথাটা বলে বাবা চলে যায়,আর আমি হিসেব মেলাতে ব্যাস্ত।সবাই কেমন রহস্য রেখে রেখে কথা বলছে আমার সাথে।কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা সবাই জানে শুধু আমি জানি না?আমি জানলে কী ক্ষতি হবে?কিছুই মাথায় আসছে না আমার।

“এই যে ভাবনা কুমারি এত ভেবে লাভ নেই সময় মত সবটা জেনে যাবেন।এখন ছোট্ট মাথায় এত চাপ দিয়ো না ত।”

সাদাফ ভাই পাশে বসতে বসতে কথাটা বলল।আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে আবারও ভাবনার জগতে পা বাড়াই।কিছুক্ষণ পর কাজির কথায় ধ্যান ভাঙ্গে আমার।কবুল বলার জন্য বলছে কিন্তু আমি শুনেও না শোনার ভান করে বসে আছি।তখন সাদাফ ভাই আমার কানের কাছে এসে বলে।

“কবুল বলে দাও সাবুপরি,নয়ত সবার সামনে চুমুতে ভরিয়ে দিব তোমাকে।”

আমি উনার কথাশুনে চোখ বড়বড় করে তাকাই উনার দিকে।উনি সেটা দেখে চোখ টিপ মারে,আমি আর কিছু না ভেবে কবুল বলে দেই।বেশ ভালো ভাবেই বিয়েটা সম্পন্ন হয় আমাদের।কিন্তু পুরো সময়টাতে কোথাও কাব্য ভাই কিংবা গরিলা মার্কা মহিলাকে দেখতে পাই নি।সবাই যখন আছে ওদেরও ত থাকার কথা কিন্তু নেই কেন?

___________________________________

বাসর ঘরে বউ সাজে বসে অপেক্ষা করছি সাদাফ ভাইয়ার জন্য।রাত ১২ টা বাজতে চলল তার খবর নেই,মহাশয় আজ আসুক অনেক কাজ বাকি আছে।আজ যদি উনাকে আলুর বর্তা না বানাইছি তবে আমার নামও সাবিহা না।

বেশ অনেকক্ষণ পর সাদাফ রুমে আসে,সাবিহা সেটা ঘোমটার ভিতরে থেকেই আড়চোখে সাদাফের দিকে তাকায়।সাদাফকে দেখেই মনে হচ্ছে ভয় পেয়ে রুমে ডুকছে।অবশ্য ভয় পাওয়ারই কথা যার সাবিহার মত বউ আছে সে ভয় না পেয়ে যাবে কোথায়।তার উপর আবার তুলে এনে জোর করে বিয়ে করেছে।সাদাফের কপালে দুঃখ লিখা আছে বাসর রাতে।

সাদাফ ভাইকে দেখে আমি ধীরে ধীরে খাট থেকে নামি।আর লজ্জার পাওয়ার মত মুখ করে উনার সামনে দাঁড়াই আর উনার পায়ের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসি সালাম করার জন্য।উনি সেটা দেখে খুশি হয়ে যায় আর বলে উঠে।

“আরে আরে সালাম করতে হবে না,আমার দোয়া এমনি তোমার উপরে সবসময়,,,

আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই সাদাফ ধপাস করে নিচে পড়ে যায়।আর সাবিহা খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে।আসলে সাবিহা সাদাফের পায়ে টান দিয়ে ফেলে দেয়।সাদাফ কোমড়ে হাত দিয়ে কাচুমাচু মুখ করে বলে উঠে,,,

” এই ছিল তোমার মনে?শেষমেষ বাসর রাতে নিজের একমাত্র জামাইকে সালাম করার নামে এভাবে ফেলে দিলে?আমার কোমড়টা ভেঙ্গে গেলো গো,কেউ আমারে উঠাও।”

আমি হাসতে হাসতেই সাদাফ ভাইয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দেই,উনি আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত না ধরেই উঠার চেষ্টা করে।তারপর আমি জোড় করেই উনাকে তুলে খাটে বসাই আর উনার পাশেই পা ঝুলিয়ে বসে পড়ি।

” কী ভেবেছিলেন অন্য সবার মত সুন্দর করে সালাম করব আপনাকে?তেমনটা ভাবলে ভুল,কারন সাবিহা মানেই নতুনত্ব।তাই নিউ স্টাইলে সালাম করলাম আপনাকে।”

কথাটা বলেই আবারও হেঁসে ফেললাম আমি,উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি হাসি থামিয়ে আবারও বলে উঠি,,,

“আমাকে বিয়ে করার খুব শখ ত আপনার তাই না?এবার সেই শখটা সুধে আসলে পূরন করব আমি।সারাজীবন জ্বালিয়ে মারব।”

“তুমি আমার কাছে সারাজীবন থাকলে আমি তোমার সবকিছু হাসিমুখে মেনে নিব,খুব ভালবাসি তোমাকে।”

“হুম জানি জানি কতটা ভালবাসেন আপনি।ভালবাসলে তখন ওভাবে রিয়েক্ট করে তুলে আনতেন না আমাকে।”

“সাবিহা আমি তোমাকে সত্যি খুব ভালবাসি,আর তোমাকে কাব্যর সাথে ওভাবে দেখে আমি রাগ করি নি।রাগ করেছি কাব্য তোমার হাত ধরেছিল বলে,আমি ছাড়া অন্য কোন পুরুষ তোমাকে ছুঁলে আমার শয্য হয় না।বুকের ভিতর আগুন জ্বলে তাই ওভাবে রিয়েক্ট করেছি।আর তুলে এনে বিয়ে করার কথা বললে বলব ওটা আগে থেকেই প্লান করা ছিল।এটার জন্য তুমি আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিব কিন্তু আমাকে ছেড়ে যেও না।”

“শাস্তি ত অবশ্যই দিব তবে সেটা তখনকার বাজে আচরনের জন্য,তুলে এনে বিয়ে করার জন্য নয়।তুলে এনে বিয়ে করার জন্য আপনাকে এত্তগুলা থানকু।”

“মানে?”

“মানে হল আমার স্বপ্ন ছিল আমার যে স্বামী হবে সে আমাকে তুলে এনে জোড় করে বিয়ে করবে।সাইকো টাইপের গল্প পড়তে পড়তে এই ইচ্ছেটা জাগে আমার।”

উনি আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকায়,আমি উনার অবস্থা দেখে টুপ করে উনার গালে একটা চুমু দিয়ে দেই।উনি এবার অবাকের চরম পর্যায়ে,গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক চোখে।আমি এবার আমার কাজে নিজেই বোকা বনে যাই,কী করে ফেললাম এটা?লজ্জা সরম কই গেলো আমার,ছিঃ সাবিহা তুই কীভাবে পারলি এটা করতে?নিজেকে নিজে বকে চলেছি,তখন সাদাফ ভাইয়া আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে শয়তানি হাসি হেঁসে বলে উঠে।

“আমার বউটা ত হেব্বি রোমান্টিক,তা বউ বাসরটা সেরেই ফেলি হুম!”

আমি উনাকে এক ঝটকায় নিজের থেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়াই।

“বাসর করার খুব শখ না আপনার,এবার করুন বাসর একা একা।তখন বাজে আচরন করার শাস্তি হল একা একা বাসর রাত পালন করা।আর সেটাই করুন,নয়ত দাঁত ভেঙ্গে ইঁদুর দের খাওয়াব।”

তারপর আমি মিটিমিটিয়ে হাসতে হাসতে একটা থ্রি পিছ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই।অন্যদিকে সাদাফ গালে হাত দিয়ে বসে ভাবছে,,,

“কপাল করে একখানা বউ পাইছি,জল্লাদ বউ একটা।কেন যে তখন রাগ দেখিয়ে ওসব বলতে গেলাম!তখন ওভাবে না বললে হয়ত একা একা বাসর রাত পালন করতে হত না।ফিলিং দুঃখু দুঃখু,বাসর রাত বউ বীহিন পালন করিন।”

#চলবে,,,

ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-২৪+২৫

0

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৪

কাব্য ভাইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।আমাকে এভাবে রেগে বেরোতে দেখে মামিমা,সাদাফ ভাইয়া পিছন থেকে অনেক ডাকল।আমি কারো কথা না শুনেই রেগে হেঁটে চলেছি।কাব্য পেয়েছেটা কী?শালার হাতির নাতিকে ভাই বলতেও লজ্জা লাগছে।যখন তখন হাত ধরে টানাটানি,গায়ে হাত তোলা,প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কিডন্যাপ করা,ব্লা ব্লা।এতকিছু আর শয্য হইতাছে না,ইচ্ছে করতাছে খুন করে ফেলতে।এসব ভেবে রেগে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছি,কিন্তু হঠাৎ করেই কেউ পিছন থেকে আমার হাত ধরে আটকে ফেলে।পিছনে তাকিয়ে দেখি সাদাফ ভাই,এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে তার উপর আবার উনিও এসে সেই টানাটানি শুরু করছে।তাই এবার আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না।

“এই কী পেয়েছেন টা কী আপনি?যখন তখন এমন হাত ধরে টানাটানি করেন কেন?আপনাকে বলছি না এমন হাত ধরে টানাটানি করা আমার পছন্দ নয়।তারপরও একই কাজ কেন করছেন বারবার?মানছি আপনার সাথে আমার ছোট বেলা বিয়ে হয়েছে তাই বলে কী যা খুশি তাই করবেন?নিজের লিমিটে থাকুন,নয়ত ভালো হবে না।হাত ছাড়ুন আমার,আর একদম পিছন পিছন আসবেন না আমার।”

কথাটা বলেই রেগে হনহনিয়ে চলে এলাম,পিছন দিকে একবার ফিরেও তাকাই নি।পিছন ফিরলে হয়ত সাদাফ ভাইয়ের চোখের জলটা দেখতে পারতাম।

এইদিকে সাবিহার কথা শুনে সাদাফের চোখে জল চলে আসে।সে ত এসেছিল জানতে যে কাব্য কিছু করেছে কী না যার কারনে ওভাবে রেগে বেরিয়ে এসেছে।কিন্তু সাবিহা যে এতকিছু বলে ফেলবে সাদাফ ভাবতে পারে নি।সাবিহার কথায় সাদাফ খুব কষ্ট পেয়েছে,সাদাফ তার চোখের জল মুছে চলে আসে।

____________________________________

কাব্য ফ্লোরে বসে বেডে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছে,আর নিজের করা সমস্ত খারাপ কাজগুলো মনে করছে।কাব্যর চোখ দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি ঝড়ছে।

“ভালবাসায় অন্ধ হয়ে আমার আপন মানুষদেরকে কতই না কষ্ট দিয়েছি।হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কত কষ্টই না দিলাম,বিশেষ করে সাবিহাকে।মেয়েটার সাথে কী কী না করেছি আমি,কিন্তু তারপরও মেয়েটা কেমন শক্ত রয়েছে।যাকে কষ্ট দিয়ে এতদিন পৈশাচিক আনন্দ পেতাম আজ তার কথা ভেবেই কষ্ট পাচ্ছি।কাউকে কষ্ট দিয়ে হয়ত সাময়িক সুখ পাওয়া যায়,কিন্তু সেটা ক্ষনস্থায়ী নয়।কাউকে কষ্ট দিলে তার থেকে শতগুণ কষ্ট পেতে হয় নিজেকে, কথাগুলো যে কতখানি সত্যি সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি।।তাই কাউকে কষ্ট না দেয়াই ভালো,তাতে আল্লাহ তায়ালা নারাজ হবেন না,আর আমার মত অবস্থাও কারো হবে না।
সাবিহা মেয়েটা খুব ভালো,নয়ত দুইজন ভালবাসার মানুষকে এক করার জন্য ওভাবে কিডন্যাপ করে বিয়ে দেয় নাকি?যেখানে আমার জন্য ভাইয়ের বিয়েটা ভাঙ্গল,আর আমি কিছুই করতে পারলাম না সেখানে সাবিহা ঠিকই তাদের বিয়েটা করিয়ে দিলো।সাবিহার সাহস আছে বলতে হবে,আগে ভীতু ছিল কিন্তু এখন অনেক সাহসী হয়েছে।কিন্তু এই সাহসের জন্য ত আমি মাফ চাওয়ার সুযোগটাই পাচ্ছি না,সামনে গেলেই ত ঠাস আর ঠুস করে মেরে দেয়।কিন্তু যেভাবেই হোক সাবিহার কাছে আমার ক্ষমা চাইতেই হবে।”

কথাগুলো ভেবে কাব্য হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে নিশানকে ফোন লাগায়।নিশানের সাথে কাব্য সবটা মিটমাট করে নিয়েছে,কারন কাব্য নিশানকে কথা দিয়েছে সাবিহাকে আর কষ্ট দিবে না।
একবার রিং হতেই নিশান ফোন ধরে।

“দোস্ত কেমন আছিস?”

“ভালো আছি,তুই কেমন আছিস?”

“আর ভালো থাকা!” (মন খারাপ করে)

“কেন আবার কী করেছিস তুই?সাবিহাকে কিছু বলিস নি ত?”

“আরে না সেসব কিছুই না,আসলে আজ সাবিহা আমাদের বাড়িতে এসেছিল।”

“ত কী হয়েছে?”

“ত আমি অর সাথে কথা বলার জন্য টেনে আমার রুমে নিয়ে আসি ক্ষমা চাওয়ার জন্য।কিন্তু সাবিহা আমার কোন কথাই শুনছিল না,তাই একটা থাপ্পড় মারি।ভেবেছিলাম ঠান্ডা হয়ে যাবে থাপ্পড় খেয়ে তারপর মাফ চাইব।কিন্তু উল্টা সাবিহা রেগে আমার গালে থাপ্পড় মেরে চলে যায়।”

“একদম ঠিক করছে।তুই কী মানুষ হবি না কাব্য?কথায় কথায় এত গায়ে হাত কেন তুলিস?আর ওভাবে টেনে এনে মাফ চাওয়ারই বা কী মানে?ভালো করে বলে সাবিহার সাথে কথা বলতে পারতি,মাফ চাইতে পারতি।কিন্তু তুই ত তুই ই,সবসময় তুই এমন গায়ে হাত তুলিস।আর সবার আগে নিজের রাগটাকে প্রাধান্য দিস বেশি,আর তোর মুখের আগে হাতটা বেশি চলে।তাই হাতটাও সামলা নয়ত এমন করলে সাবিহা তকে এই জন্মে মাফ করবে না উল্টা তরে বিনা নোটিসে অন্য গ্রহে পাঠাইয়া দিব,যেখানে কোন মানুষ থাকবে না থাকবে শুধু তোর মত এলিয়েন।”

“এখন কী করব?”

“কী করবি আবার!রাগ কমা,হাত পা কন্ট্রোল কর আর একটু মাথা খাটিয়ে কাজ করতে শিখ।”

“কিন্তু সাবিহা ত আমার সাথে কথা বলতেই চাইছে না।”

“তুই যে আচরন করিস তাতে কথা না বলাই স্বাভাবিক।দেখি আমি কোন ব্যাবস্থা করতে পারি কী না!”

“ঠিক আছে।”

কথাটা বলে নিশান ফোনটা রেখে দেয় আর কাব্য ভাবতে থাকে কীভাবে সাবিহার সাথে দেখা করে মাফ চাইবে।

____________________________________

বিকাল ৩টা বেজে ৫৬ মিনিট,রুমে পায়চারি করছি আর ভাবছি তখন সাদাফ ভাইয়ার সাথে রাগ দেখানোটা বারাবাড়ি করে ফেলছি।সাদাফ ভাইয়া নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছে,আমিও না রেগে গেলে কিছু মনে থাকে না।যে আচরন করেছি তার জন্য ক্ষমা চাইতেই হবে।নয়ত আমিও শান্তি পাব না আর ঐদিকে সাদাফ ভাইও কষ্ট পাবে।উনাকে বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলি আমি,নাহ উনাকে আর কষ্ট দিব না।কথাগুলো নিজ মনে বিড়বিড় করেই সাদাফ ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম।ফোনও দিতে পারতাম কিন্তু ফোনে কথা বলাই একরকম আর সরাসরি কথা বলাই আরেক রকম।বাড়িতে যাওয়াই ভালো আমার মনে হয় তাই বাড়িতেই যাব।

সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে এসে আন্টির সাথে একটু কথা বলে সাদাফ ভাইয়ের রুমে চলে এলাম।উনি ত ঘরে নেই,তাই সারাবাড়ি খুঁজতে খুঁজতে ছাঁদে চলে এলাম।এসে দেখি উনি একটা দোলনায় বসে আছে,আমিও ধীরে ধীরে উনার পাশে গিয়ে বসি।উনি আমার উপস্থিতি টের পেয়েছে কিন্তু কথা বলছে না।খুব কষ্ট পেয়েছে আর খুব রাগ করে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে,তাই আমি এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠলাম।

“সাদাফ ভাইয়া তখন রাগ দেখানোর জন্য সরি,আসলে তখন মেজাজ খুব খারাপ ছিল।আর আপনি ত জানেনই আমার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না।তাই প্লিজ রাগ ক্ষমা করে দিন আমাকে।”

উনি কিছু না বলে দোলনা থেকে উঠে ছাদের কিনার ঘেসে দাঁড়ায়।আমিও উনার সামনে দাঁড়িয়ে কানে হাত দিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে উঠি।

“সরি বলছি ত,প্লিজ ক্ষমা করে দিন।”

উনি এখনও কিছু বললেন না ঘুরে অন্যদিকে চলে গেলেন,সেটা দেখে আমার খুব রাগ লাগল।তাই আমি ছাদের উপরে একটা আম গাছে চড়লাম,আর কিছুটা চেঁচিয়ে বললাম।

“এই ফুলাইন্না,কথা বলবেন নাকি এখান থেকে ঝাপ দিয়ে শহীদ হয়ে যাব!”

উনি এবার পিছন ফিরে আমাকে গাছে দেখে ঘাবড়ে গেলেন,আর ছুটে গাছের নিচে দাঁড়ালেন আর রেগে বললেন।

“কী করছো এসব?নামো ওখান থেকে,পড়ে গেলে দাঁত আর দাঁতের জায়গায় থাকবে না।”

আমি গাছের ডালে হাত পা ছড়িয়ে ভালো করে বসি।আর একটা আম পেরে সেটাতে কামড় দিয়ে চিল মুডে উনার দিকে তাকিয়ে বলি।

“যাক বাবা মুখের কস্টেপ ত খুলল,,,উফফ এতক্ষণ ভালো করে বলছিলাম কিন্তু আপনি কথাই বলছিলেন না।আর এখন কী সুন্দর করে কথা বলছেন,এবার বলেন মাফ করে দিছি।”

“বেশি কথা বলবে না একদম,তাড়াতাড়ি নিচে নামো।”

“নামব না আগে বলুন,মাফ করে দিছি।”

“থাপ্পড় খেতে না চাইলে নিচে নামে এক্ষুনি।”

“আজিব ত!আমি বলি কী আর উনি বলে কী?”

“সাবিহহহহহহা,নামবে তুমি নাকি আমি উপরে আসব?আমি আসলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”

“এত রাগ করার কী আছে নামছি ত!”

কথাটা বলেই গাছ থেকে দুইটা আম পেড়ে নিচে নেমে পড়লাম,আর উনার সামনে দাঁড়িয়ে জামা আর হাত থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে উঠলাম।

“এবার বলুন মাফ করে দিছেন,আপনি আমার উপর রেগে নেই।আর মাফ করে দিলে আপনাকে এত্তগুলা কিউট কিউট আম দিব।”

“এই মেয়েটা না পুরাই শয়তানের ডিব্বা,গাছে উঠে থ্রেট করে আমার গাছের আম দিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গাতে চাইছে।কই একটু রোমান্টিক ভাবে রাগ ভাঙ্গাবে।তা না করে এভাবে থ্রেট করল,আল্লাহ আর কতকিছু দেখতে হবে আমাকে।”(মনে মনে)

“আমার গাছের আম দিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গানো তাই না!”

“হি হি হি,,,গাছে কী নাম লেখা ছিল এটা আপনার গাছ?”

“তবে রে দুষ্টু দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”

কথাটা বলেই সাদাফ হেঁসে সাবিহাকে তাড়া করে আর সাবিহাও হেঁসে দৌড় লাগায়।

#চলবে,,,

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৫

সকাল ৬ টা বেজে ৪ মিনিট,,,বজ্জাত ফোনটা সক্কাল সক্কাল এক নাগাড়ে বেজেই চলেছে,হাজারও বিরক্তি নিয়ে চোখ ডলতে ডলতে ফোনটা ধরি।আর সাথে সাথে ওপর পাশ থেকে কেউ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে।

“সাবিহা মামনি তুই জলদি আমাদের বাড়িতে আয়,সাদাফের কী যেন হয়েছে?ঘুম থেকে উঠে কাঁদছে আর কী যেন বিড়বিড় করে চলেছে একনাগাড়ে।কী বলছে কিছুই বুঝতে পারছি না শুধু এতটুকু বুঝতে পেরেছি তোর নাম নিয়ে কিছু বলছে।মা না ভালো তাড়াতাড়ি আয় তুই।”

আন্টির কথাশুনে আমার চোখ থেকে ঘুম ছুটে গেলো,আর একরাশ চিন্তারা এসে ভর করল মস্তিষ্কে।কী হয়েছে সাদাফ ভাইয়ার?উনি এমনটা কেন করছে?নাহ এখানে বসে এসব ভাবলে চলবে না,আমাকে এক্ষুনি উনার বাড়িতে যেতে হবে।তাই শোয়া থেকে উঠে চুলগুলো হাত খোঁপা করে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে।বাগানে এসে দেখি বাবা গাছে পানি দিচ্ছে,বাবা আমাকে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে।

“সাবিহা তুই এত সকালে গাড়ির চাবি নিয়ে কই যাচ্ছিস?”

“বাবা সাদাফ ভাইয়ার কী যেন হয়েছে?আন্টি ফোন করে বলল আমাকে যেতে।”

“সে কী?কী হয়েছে সাদাফের?”

“সেটাই ত জানি না,এখন এত কথা বলতে পারব না বাবা আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।আমি এখন আসি বাবা এসে সবটা বলব তোমাকে।”

“আরে দাঁড়া আমিও যাব।”

“বাবা তোমাকে যেতে হবে না,আমি আগে গিয়ে দেখি তারপর তুমি যেও।”

কথাটা বলেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,খুব দ্রুত ড্রাইভ করছি আমি।মনটা কেমন অস্থির হয়ে আছে,যতক্ষণ না নিজের চোখে উনাকে দেখব ততক্ষণ শান্তি নেই।সাদাফ ভাইদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে ছুটে গেলাম বাড়ির ভিতরে।এসে দেখি আন্টি আর আংকেল চিন্তিত মুখে সাদাফ ভাইয়ার পাশে বসে আছে।কিন্তু সাদাফ ভাইয়ার কোন ভাবাবেগ নেই,উনি উনার মত একমনে কী যেন বিড়বিড় করে চলেছে।উনাকে এমন অবস্থায় দেখে বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা ব্যাথা অনুভব হল।আমাকে আসতে দেখে আন্টি আমার কাছে ছুটে আসে আর আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

“মা রে আমার ছেলেটাকে ঠিক করে দে না,দেখ না আমার ছেলেটা কেমন যেন করছে?ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু এত সকালে ফোন তুলছে না।না পেরে তকে ফোন দিয়েছি,কারো সাথে কোন কথা বলছে না এভাবেই রয়েছে সেই তখন থেকে।তুই আমার ছেলেটাকে ঠিক করে দে না রে মা।”

“আন্টি আপনি শান্ত হন,সাদাফ ভাইয়ার কিছু হয় নি।আমি দেখছি,আপনি শান্ত হন একটু।”

আন্টির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমি সাদাফ ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যাই।সাদাফ ভাইয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসি আমি,আর কাঁপা কাঁপা হাতে সাদাফ ভাইয়ের গালে হাত রাখি।সাদাফ ভাইয়ের কোন ভাবাবেগ নেই,আমি এবার নরম স্বরে সাদাফ ভাইকে বলে উঠি।

“সাদাফ ভাই।”

সাদাফ ভাই এবার মুখ তুলে আমার দিকে তাকায়,আমাকে দেখার সাথেসাথে উনি আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে।

“আমার সাবিহা ফিরে এসেছে,আমার সাবিহা আমার কাছে ফিরে এসেছে।কাব্য,লিজা আমার থেকে সাবিহাকে কেড়ে নিতে পারে নি।মা,বাবা দেখো সাবিহা আমার কাছে ফিরে এসেছে।এই সাবিহা আমাকে ছেড়ে কিন্তু একদম যাবে না।আমি মরে যাব তোমাকে ছেড়ে,প্লিজ যেও না আমাকে ছেড়ে।খুব ভালবাসি তোমাকে,প্লিজ আমাকে একা করে চলে যেও না।না না এভাবে বললে হবে না,চলো আমরা পালিয়ে যাই এখান থেকে।কাব্য আর লিজার থেকে অনেক দূরে চলে যাব তোমাকে নিয়ে।তবে আর অরা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।আর আমার থেকে দূরে সরাতেও পারবে না।চলো আমার সাথে,সবার আড়ালে অনেক দূরে চলে যাব তোমাকে নিয়ে।তাড়াতাড়ি চলো,নয়ত কাব্য আর লিজা চলে আসবে।”

উনি কথাগুলো একনাগাড়ে বলে উঠে দাঁড়িয়ে আমার হাত ধরে বসা থেকে উঠায়।আর দরজার দিকে হাঁটা ধরে,আমি উনার আচরনে এতটাই অবাক যে উনাকে যে আটকাবো সেটাও মাথায় নেই।উনি আজও সেদিনের মত পাগলামি করছে যেদিন কাব্য ভাই আমাকে কিডন্যাপ করেছিল।আর আজও এমন করছে,কী হয়েছে উনার?কী সমস্যা হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।সাদাফ ভাইয়ার বাবার কথায় হুস আসে আমার।

“সাদাফ তুই কী শুরু করেছিস?কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস সাবিহাকে?দাড়া সাদাফ,কথা শোন আমার।”

সাদাফ ভাই কারো কথা না শুনেই হেটে চলেছে।কিন্তু আমি এবার দাঁড়িয়ে যাই আর সেটা দেখে সাদাফ ভাই পিছন ফিরে বলে উঠে,,,

“থামলে কেন?চলো তাড়াতাড়ি,নয়ত কাব্য আর লিজা চলে আসবে।”

“হ্যাঁ ভাইয়া আমরা যাব ত,কিন্তু যাওয়ার আগে একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে।”

“কী কাজ করতে হবে তাড়াতাড়ি বলো,নয়ত অরা চলে আসবে।”

আমি এবার সাদাফ ভাইকে বিছানায় বসাতে বসাতে বলে উঠি।

“আচ্ছা আপনি একটু বসুন আমি আসছি।”

“না না,তুমি কোথাও যাবে না।তুমি গেলে যদি আর না আসো।না একদম কোথাও যাবে না তুমি আমাকে ছেড়ে।আমার পাশে বসো তুমি,আর কী করবে তাড়াতাড়ি করো নয়ত অরা চলে আসবে।”

আমি উনার অবস্থা দেখে বুঝতে পারছি উনি খুব ভয় পেয়েছেন,যার জন্য উনি এমন আচরন করছে।তাই আন্টিকে ইশারায় বললাম কিছু খাবার আর ঘুমের ঔষধ নিয়ে আসতে।একটু ঘুমালেই উনি ঠিক হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।আন্টি আমার কথামত ঔষধ আর খাবার নিয়ে আসে।আমিও উনাকে নানা ধরনের কথা বলে খাইয়ে দিয়ে ঔষধটা খাইয়ে দেই।খাওয়ার পর উনি আমার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।সেটা দেখে আন্টি আর আংকেল কিছুটা নিশ্চিন্ত হন,আর তারা বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
সাদাফ ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আমি আর ভেবে চলেছি উনি এমন কেন করছে?কোন খারাপ স্বপ্ন দেখে কী এমন পাগলামি করছে?কিন্তু স্বপ্ন দেখে কী কেউ এতটা পাগলামি করে?অন্য কোন ঘটনা নেই ত এসবের পিছনে।আর উনি বারবার কাব্য ভাই আর গরিলা মার্কা মহিলার কথা কেন বলল?তারা কী কিছু করেছে?উফফ মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে,কিছু বুঝতে পারছি না আমি।না মাথায় এত চাপ দিয়ে লাভ নেই,আমার সমস্ত প্রশ্নের উওর সাদাফ ভাই ই দিতে পারবে।ত উনার ঘুম থেকে উঠার অপেক্ষা করি,তারপর সবই জানতে পারব।

___________________________________

দুপুর ২ টা ছুঁইছুঁই,সাদাফের ঘুম ভাঙ্গে আর চোখ খুলে নিজেকে কারো কোলে আবিষ্কার করে।সাদাফ তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়ে,আর তাকিয়ে দেখে সাবিহা বেডে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু সাদাফ তাড়াহুড়ো করে উঠাতে সাবিহার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।

আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি সাদাফ ভাইয়া জেগে গেছে সেটা দেখে মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,

“এখন ঠিক আছেন আপনি?”

সাদাফ ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে বুঝায় সে ঠিক আছে।পরক্ষনেই আবার বলে উঠে,,,

“তুমি এখানে?আর তোমার কোলে,,,

” সকালে কী পাগলামি করেছেন মনে নেই আপনার?আচ্ছা এটা বলুন ত লিজা আপু আর কাব্য ভাই কী করেছে?যার কারনে সকালে এতটা পাগলামি করেছেন?”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাইয়ের মুখে ভয়ের ছাপ আবারও দেখা দেয়।উনাকে এমন ভয় পেতে দেখে এবার আমারও কেমন যেন একটা লাগছে।কী এমন হয়েছে যার জন্য উনি এভাবে এতটা ভয় পেয়ে রয়েছে?আমি উনার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠি,,,”

“সাদাফ ভাইয়া কোন সমস্যা হয়েছে?”

সাদাফ ভাইয়া আমার দিকে টলমল চোখে তাকিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,,,

“আমি এখন তোমাকে কিছু বলতে পারব না সাবিহা,সময় হলে সব বলব তোমাকে।কিন্তু তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না,আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না আমি,প্লিজ কখনও ছেড়ে যেও না।”

উনার এমন অবস্থা দেখে আমি শুধু অবাকই হচ্ছি।কিছুই বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে এসব?কী আছে এসবের পিছনে যার জন্য উনি এতটা পাগলামি করছে?

“শীলার বিয়ের দিন চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।”

সাদাফ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে আমার গালে হাত দিয়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে উঠে কথাটা।উনার কথা শুনে চমকে উনার দিকে তাকাই,কী বলছে উনি এসব?আপুর বিয়ের দিন আমাদের বিয়ে মানে?কীভাবে কী?”

“মানেহ?”

“এত কিছু জানি না আমি,তুমি শুধু বলো আমাকে বিয়ে করবে আর সেটা এ সপ্তাহেই।আমি সারাক্ষণ তোমার আশেপাশে থাকতে চাই,যাতে কেউ তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে না পারে।প্লিজ সাবিহা আমাকে ফিরিয়ে দিও না,রাজি হয়ে যাও প্লিজ।”

“আপনার থেকে কে কেড়ে নিবে আমাকে সেটা ত বলুন।”

“আমি এখন কিছু বলতে পারব না সাবিহা,তুমি আমার কাছে কিছু জানতে চেও না দয়াকরে।শুধু তুমি বলো আমাকে বিয়ে করবে আর সেটা এ সপ্তাহেই।”

উনার কথাশুনে মাথায় আবার নতুন চিন্তা এসে ভর করল।

“সাবিহা কিছু ত বলো।”

“আমাকে একটু ভাবার সময় দিন।আমি আপনাকে পরে জানাচ্ছি।”

কথাটা বলেই উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।
অন্যদিকে সাদাফ বেডে বসে দুইহাত দিয়ে চুল আকড়ে ধরে আর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে।

“তোমাকে হারাতে পারব না আমি,তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না আমি।আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।কেড়ে নিবে আমার থেকে তোমাকে,তোমার লাইফ রিক্স আছে সাবিহা।ছয় বছর আগে যেমনটা আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল ঠিক এখনও তাই করা হচ্ছে।কিন্তু আমি ত পারব না তোমাকে ছেড়ে থাকতে, আমার তোমাকে চাই সারাজীবনের জন্য।তোমাকে হারানোর ভয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।তোমাকে ছেড়ে বাঁচতে পারব না আমি,বাঁচতে পারব না।”

কথাটা বলেই সাদাফ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

#চলবে,,,