Thursday, June 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1453



তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-০২

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি❤
পর্ব:০২
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

মিনি হেলতে দুলতে রুমে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে চুল আছড়াতে থাকে হঠাৎ চোখ যায় স্পর্শের দিকে স্পর্শ ওর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে তখনি মিনি মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো,

আমার কি রূপ বেয়ে বেয়ে ঢক পড়ে যাচ্ছে নাকি,যদি তাই হয় তো একটা বোতলে ভরে রাখেন

মিনির কথায় ধ্যান ভাঙে স্পর্শের ধ্যান ভাঙতেই স্পর্শ বলল,কি আমার রূপের বাহার যেই রূপে মানুষ হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে নেহাৎ আমার হার্ট স্ট্রং বলে বেঁচে আছি।

😡😡😡(মিনি)

ভাবি মা ডাকছে তাড়াতাড়ি নিচে আসো তোমরা কেউ এখনো ব্রেকফাস্ট করেনি বলে মাহিরা আর দাঁড়ালো না
আসছি বলে মিনি বেরুতে গেলেই স্পর্শ বলে বিছানা গুছিয়ে তারপর যাও

মিনি চোখ দুটি সরু করে বলল যে পরে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম অনুযায়ী তাকেই বিছানা গোছাতে হয়,সো বিছানা গুছিয়ে তারপর নিচে আসবেন,,,,,ওকে…..?

আমি কি ঘুমিয়েছি নাকি আমি তো যাষ্ট কোমরটা সোজা করতে একটু শুয়ে ছিলাম (স্পর্শ)
So what…..?বিছানা আপনি গোছাবেন বলেই মিনি গটগট করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে

এদিকে স্পর্শ রাগে ফেটে পড়ছে এই পুচকে মেয়ের এত সাহস আমাকে মিশান চৌধুরী স্পর্শকে আদেশ দিয়ে যায় এর ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে আর বিছানা তুমিই গোছাবে বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
মিনি নিচে নামতেই তাহমিনা চৌধুরী বলে উঠলো একি মামনি তুমি সাজোনি কেনো….?
ভালোলাগছে না পরে সাজবো আন্টি
কে তোমার আন্টি….?মা বলে ডাকবে বুঝতে পেরেছো(তাহমিনা চৌধুরী )
জ্বি
স্পর্শ কই…..?বলে উপরে তাকাতেই স্পর্শকে নামতে দেখলো তাহমিনা চৌধুরী

সবাই এক সাথে খেতে বসেছে স্পর্শ চুপচাপ খেয়েই যাচ্ছে কোনো কথা বলছেনা আর মিনি একটু খাচ্ছে তো একটু সবার দিকি তাকাচ্ছে
কিছুক্ষণ নিরবতার পর স্পর্শের বাবা মিনিকে উদ্দেশ্য করে বললেন এখানে তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো মামনি….?সমস্যা হলেই আমাকে বলবে
উত্তরে মিনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো জ্বী না আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না আর কোনো সমস্যা হলেই তোমাকে অবশ্যই জানাবো।
খাবারের পর্ব শেষে তাহমিনা চৌধুরী বলে উঠলো মিনি মামনি তুমি আমার ঘরে এসো
মিনিও সম্মতি দিয়ে তাহমিনা চৌধুরীর পেছন পেছন ওনার ঘরে গেলেন
তহমিনা চৌধুরী একটা লাল রঙা কালো পাড়ের একটা সিল্কের শাড়ি আর কিছু গহনা মিনিকে দিয়ে বললেন,
এগুলো পড়ে রেডি হয়ে নাও একটুপর তোমাকে অনেকেই দেখতে আসবে।
মিনি ও সায় জানিয়ে নিজেদের ঘরে এসে আগে নিজের সমস্ত জামাকাপড় আলমারিতে রেখে দিয়ে শাড়ি আর গয়না গুলো পরে চোখে আইলাইনার আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিয়ে রেডি হয়ে যায় মিনি কাজল খুব কমই পড়ে।

নিচে নামতেই কতগুলো মহিলা এসে মিনিকে ওনাদের মাঝখানে বসিয়ে দেন। কেউ কেউ প্রসংশা করছে আর কেউ খোঁচাতে ব্যাস্ত

ওমা মেয়ের গায়ের রং দেখি চাপা
আর স্পর্শ ফকফকা ফর্সা ওর সাথে কি এই মেয়েটাকে মানাবে…..? (পাশের বাসার এক মহিলা বলে উঠলো)
মাইশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিনি বিরক্তি হয়ে মুখে হাসি রেখে বললো আন্টি তাহলে আপনার মেয়েকেই বিয়ে দিতেন।
আরেক মহিলা বলল ওমা মেয়ে দেখি মুখে মুখে তর্ক কর
মাইশা বলল আন্টি ও তো ঠিকি বলেছে
মহিলাটি বলে উঠলো এখন এসব বলে মাথায় উঠাচ্ছো পরে দেখবে এই মেয়ে তোমাদের নাক কান কাটবে
মিনি এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও গরমে অবস্থা খারাপ এই মহিলাদের ঘ্যানঘ্যান তো আছেই তাই মাইশাকে চিৎকার করে বললো আপু আমাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাওতো
সবাই বিষ্ময়ে হা করে আছে যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখছে
এই মেয়ে বড় ননদকে পানি দিতে বলছে কি ডেঞ্জারাস মেয়ে
মাইশা বলল,আন্টি আপনাদের তো বউ দেখা শেষ এবার আসতে পারেন

মহিলাগুলো অপমানে নাক সিটকে চলে গেলো
তুমি কিছু মনে করো না ওনাদের কথায় (মাইশা)
মিনি বললো,ধুর উনাদের কাজই এটা বলে হেসে দিলো
সাথে সাথে মাইশা ও হেসে উঠলো।আচ্ছা তুমি গিয়ে রেষ্ট করো বিকেলে তোমাকে সাজাতে পার্লার থেকে লোক আসবে সন্ধ্যায় রিসিপশন
ঠিক আছে বলে মিনি ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়তে গিয়ে দেখলো স্পর্শ বিছানা গোছায়নি ও আর কিছু না করেই এক ঘুম দিলো।

স্পর্শ সকালে ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়েছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে,বন্ধুরা কেউ জানেনা বিয়ের কথা ও ভেবেছিলো বলবে না কিন্তু একদিন না একদিন ঠিকই জানবে তখন আর ওর রক্ষে থাকবেনা তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব বললো,
বন্ধুরা সবাই ওকে চেপে ধরলো পার্টি দেওয়ার জন্য, ওর বন্ধু রেহান বললো,পার্টি পরে হবে আগে ভাবি দেখবো চল
স্পর্শ বলল,রাতে রিসিপশন তখন দেখতে পারবি
সবাই সম্মতি দিলো

ঘুম থেকে উঠেই মিনি অবাক কারণ ওর সব জামাকাপড় নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,ও বুঝতে পারলো এটা কার কাজ
ও স্পর্শ বলে চিৎকার করে উঠলো। স্পর্শ এতক্ষণ শাওয়ার নিচ্ছিলো মিনির চিৎকারে বুঝতে বাকি নেই মিনি কেনো চিৎকার করছে
স্পর্শ আস্তে আস্তে গোছল সেরে প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বেরিয়ে আসে, এর মাঝে মিনি অনেকবার দরজা ধাক্কা দিয়েছে।
স্পর্শ বেরুতেই মিনি তেড়ে গেলো স্পর্শের সামনে, গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল আমার জামাকাপড় নিচে ফেললেন কেন….?
আমার আলমারিতে তুমি জামাকাপড় রাখলে কেন…..?(স্পর্শ)
তো আমি কোথায় রাখবো (মিনি)
ফ্লোরে,ব্যালকনিতে যেখানে ইচ্ছা সেখানে রাখো আমার কিছু যায় আসে না (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল স্পর্শ)
মিনি রেগে গিয়ে বলল,আমার কথা আমাকেই শোনাচ্ছেন…?
😁😁😁
এবার মিনি তেড়ে গিয়ে আলমারি থেকে স্পর্শের সব জামাকাপড় নিচে ফেলে দিয়েছে

স্পর্শ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলেছে চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে, মিনি এতক্ষণ রেগে গেলেও এখন স্পর্শকে দেখে প্রচুর ভয় করছে।স্পর্শ আচমকা মিনির৮
হাত মুচড়ে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয়।হাতের ব্যাথায় কুকড়ে উঠে “আহহ” বলে মৃদু চেঁচিয়ে উঠে মিনি
স্পর্শের তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই এবার আর সহ্য করতে না পেরে স্পর্শের পায়ে হিল দিয়ে চেপে ধরলো
পায়ের ব্যাথায় স্পর্শ সিটকে সরে গেল,রেগে ক্রুদ্ধ হয়ে স্পর্শ বলে তোমার সাহসের তারিপ করতে হয় তুমি আমার সাথে পাঙ্গা নিতে চাইছো।
সাহসের কিছুই এখনো দেখেননি সবেতো শুরু তাই ভালো হবে আমার সাথে লাগতে না আসলে (মিনি)
স্পর্শ অবাক হচ্ছে এই মেয়ের সাহস দেখে রেগে রুমের সব জিনিস ভাংচুর করতে শুরু করে

মিনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের জামাকাপড় তুলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে যেন কিছুই হয়নি
স্পর্শের এখন নিজের উপরই রাগ লাগছে কেন যে এই মেয়ের জামাকাপড় ফেলতে গেলো…?
মাথার চুল দু’হাতে চেপে খাটে বসে পড়লো।
মিনি একঘন্টা সময় ধরে শাওয়ার নিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুচতে মুচতে ঘরে প্রবেশ করে স্পর্শকে উদ্দেশ্য করে বলল এগুলো পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করুন যে কেউ রুমে চলে আসতে পারে ।
স্পর্শ কিছু না বলে উঠে ব্যালকনিতে চলে যায় আপাতত এই মেয়েটার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নাই

বিকালে
পার্লার থেকে লোক এসেছে মিনিকে সাজাতে পার্পল কালার গর্জিয়াস শাড়ি,ভারি গয়না,চুল গুলো স্টাইল করে সেট করা,সাথে ভারি মেকাপ,যেহেতু আজ রিসিপশন তাই গর্জিয়াস সাজে আপত্তি করেনি মিনি।
সাজানো শেষে মাহিরা বলল,ওয়াও ভাবি তোমাকে যা লাগছে না ভাইয়াতো চোখই ফেরাতে পারবেনা।
উত্তরে মিনি লজ্জা মাখা হাসি দিলো আর মনে মনে বলল আমার বয়েই গেলো তোমার ভাইকে আমার রুপ দেখাতে,,,হুহ

অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে মেহমানরা সবাই এক এক করে চলে এসেছে। বাকি আছে মিনির বাড়ির লোকজন মিনি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কখন ওর ফ্যামিলি আসবে
হঠাৎ চোখ গেলো সিড়ির দিকে
স্পর্শ নেমে আসছে, মিনির সাথে ম্যাচিং করে পার্পল কালার সেরোয়ানি পরেছে বুকের দিকে কালো সুতার ডিজাইন, ব্ল্যাক সুজ,ব্ল্যাক ব্র্যন্ডেড ওয়াচ,চুল সেট করা,ফর্সা ত্বক,সরু নাক,পাতলা ঠোঁট, নাক বরাবর একটা লাল তিল মনে হচ্ছে কোরিয়ান হিরো

ও মাই গড !ও মাই গড! মেরা হার্ট ব্রেক হোগেয়া বলে বুকের ডান পাশে হাত দিয়ে পরে যেতে নেয় মিনি
তখন দু’হাতে কোমর পেচিয়ে ধরে ফেলে স্পর্শ
স্পর্শ বলল ঠিক করে দাড়াতে পারো না
আরে আপনাকে দেখেইতো আমার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম তাহলে নিজেকে সামলাবো কি করে (মিনি)
ওওও আচ্ছা! তো তোমার হার্ট কি ডান পাশে থাকে..?(ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলল স্পর্শ)
মিনি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে জিবনে প্রথম ক্রাশ খাইচিতো তা
ওর কথা শুনে স্পর্শ হেসে দিলো
এনিওয়ে তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে
থ্যাংকস

মিনির পরিবারের সবাই চলে এসেছে সবাইকে দেখে আর রাগ করে থাকতে পারলো না মা বাবা ভাইকে জড়িয়ে ধরে কথা শুরু করে দিলো ওর বান্ধবীরাও এসেছে এসেই শুরু করেছে বাসর ঘরে কি কি হয়েছে
মিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব বলল,মিনির বান্ধবীরা হাসতে হাসতে শেষ ওরা একটু ও অবাক হয়নি কারণ মিনি কিরকম ওরা খুব ভালো জানে। এর মাঝে স্পর্শ ওর বন্ধুদের সাথে মিনির পরিচয় করিয়ে দেয় সবাই বলে উঠলো ভাবিতো মাশাল্লাহ।
মিনির বান্ধবীরা স্পর্শকে দেখে আফসোসের শুরে বলল,এত সুন্দর,হ্যান্ডসাম জিজুর সাথে এসব করা তোর একদম উচিত হয়নি মিনি

ফটোগ্রাফার ছবি তোলার জন্য মিনি আর স্পর্শকে একেকবার একেক পোজ দিতে বলছে, এবার মিনি বলল স্পর্শের গলা জরিয়ে দরতে মিনি একেবারে শক্ত করে স্পর্শের গলা ধরে রেখেছে
গলা পেঁচিয়ে ধরায় স্পর্শের যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে
মিনির দিকে তাকিয়ে বলল গলাটা হালকা করে ধরতে
মিনি দাঁত কেলিয়ে আছে এর অর্থ ও গলা ছাড়বে না

স্পর্শ তখনকার ঘটনায় ওর প্রসংশা করাতে ভেবেছিলো মেয়েটা মনে হয় আর কোনো জামেলা করবেনা স্পর্শতো ভুলেই গেছে ও একটা দস্যি মেয়ে বিয়ে করে এনেছে……..

চলব………

(বিঃদ্রঃ রিচেইক করা হয় নি। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং 💞)

তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-০১

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্ব‌:০১
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

বিয়ে করেছেন কিন্তু খাটে ঘুমাতে দিবেন না এটাতো হতে পারেনা।এটা কোনো সিনেমা না যে আপনি আমাকে ধমকে বলবেন আর আমি ভয়ে শুড়শুড় করে ফ্লোরে গিয়ে শুয়ে পড়বো জ্বি না আমি কোনো সিনেমার হিরোইন না আমি আর্শিয়া জামান মিনি সো আমি খাটেই ঘুমাবো,,, হুহ
ইউ ইডিয়ট তুমি আমার ঘরে এসে আমার উপর হুকুম চালাচ্ছো,,,,,?এক্ষুনি খাট থেকে নামো আমার খাটে তোমার মতো বেয়াদব মেয়ের কোনো জায়গা নেই(রেগে ক্রুদ্ধ হয়ে কথা গুলো বললো স্পর্শ পুরো নাম মিশান চৌধুরী স্পর্শ)।
আপনি বেয়াদব বেয়াদব না হলে কেউ মেয়েদের সাথে এরকম অভদ্রতামি করে…….?(মিনি)
হোয়াট………? আমি তোমার সাথে কি অভদ্রতামি করেছি(স্পর্শ)
কি করেন নি…..?ঘরে ঢুকেই আমাকে লোভী মেয়ে উপাধি দিলেন আমি নাকি লোভে পড়ে আপনাকে বিয়ে করেছি আরো যাচ্ছে তাই বলেছেন।শেষে কিনা আমাকে খাটে ঘুমাতে দিবেন না এটা কি অভদ্রতা নয়….?(মিন)
বেশ করেছি তোমাকে কথা শুনিয়েছি ধৈ ধৈ করে নাচতে নাচতে বিয়ে করে নিয়েছো একবারো জানার প্রয়োজন মনে করো নি যাকে বিয়ে করছো সে রাজি কিনা(দাঁতে দাঁত চেপে বলল,স্পর্শ)
বিয়েতে যেহেতু রাজি না তাহলে ফ্যামিলিতে জানাতে পারেন নি..?আমার সাথে এখন ঘ্যানঘ্যান করছেন কেনো…..?(মিনি)
এই মেয়ে শুনো আমি বাবা- মাকে বলেছি কিন্তু তারপরে ও আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে তারমানে এই না যে তোমাকে আমি নিজের স্ত্রী হিসেবে মানবো আর তোমার কথা শুনবো(স্পর্শ)
নিজেরটা ষোলোআনা ঠিকই বুঝেন(মিনি)
মানে….?(স্পর্শ)
মানে আমিও কি আর ইচ্ছে করে বিয়ে করেছি…?বাবা-মাই তো জোর করে বিয়ে দিয়েছে না হলে আপনার মতো খাটাশ কে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে আমার ছিলোনা(মিনি)
এই তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে খাটাশ বলেছিস…?চড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দেবো, আর তখন কি বলছিলি আমি তোকে খাটে ঘুমাতে দিচ্ছি না কেনো,,? তুই খাটে ঘুমালে আমি
কোথায় ঘুমাবো….?(অতিরিক্ত রেগে গিয়ে বললো স্পর্শ)
তুই ফ্লোরে,সোফায়, বেলকনিতে যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুমা আমার কিচ্ছু যায় আসেনা(রেগে গিয়ে বললো মিনি)
আমাকে তুইতোকারি করা…..?(দাঁতে দাঁত চেপে বলল স্পর্শ)
আগে যে নিজে বললি সেই বেলায়..?(মুখ ভেংচি কেটে বলল মিনি)
আমি তোমার বড় তাই তোমাকে তুই বলতেই পারি তাই বলে তুমিও আমাকে তুই বলবে….?(অবাক হয়ে বলল স্পর্শ)
ছোটো হয়েছি তো কি হয়েছে ছোটোদের কি কোনো সম্মান নাই….?আপনি আমার সাথে যরকম ব্যবহার করবেন ঠিক সেরকম ব্যবহার আমার কাছ থেকে পাবেন।গট ইট..?(ভাব নিয়ে বলল মিনি)
তুমি তো আচ্ছা ঝগড়ুটে মেয়ে,তোমার সাথে আর কথা বলতে চাই না খাট থেকে নামো আমি ঘুমাবো (বিরক্তি নিয়ে বলল স্পর্শ)
বললাম তো আমি খাটেই ঘুমাবো চুপচাপ সরুন এখান থেকে (আয়েশ করে বসে বলল মিনি)
এবার স্পর্শের প্রচন্ড রাগ চেপে বসলো,
প্রচুর পরিমাণে ঘাড়ত্যাড়া এই মেয়েটা স্পর্শ বলল,এবার কিন্তু সত্যি চড় মেরে সোজা করে দেবো তোমাকে
ওমা আমি কি আপনাকে ছেড়ে দেবো নাকি(মিনি)
তেড়ে এসে স্পর্শ বলল কি করবে তুমি আমাকে মারবে নাকি…?
ইনোসেন্ট ফেস করে বলল মিনি নাতো আমি কেনো চড় মারবো আপনাকে
আচ্ছা তো কি করবে..? (স্পর্শ)
আমি তো যাষ্ট চিৎকার চেঁচামেচি করে সিনক্রিয়েট শুরু করবো বলেই এক শয়তানি হাসি দিলো মিনি
স্পর্শ অনেক ক্লান্ত সারাদিন অনেক ধকল গেছে তাই আর কথা বাড়ালো না চুপচাপ গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো,চোখ বন্ধ করতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো চোখে
এদিকে মিনি বিশ্বজ্বয় করা হাসি হাসছে বেটাকে জব্দ করা গেলো সারা জীবন শুনেছে বউকে ফ্লোরে বা সোফায় ঘুমাতে হয় শয়তান জামাই গুলোর কারনে আর আজ সে ইতিহাস পাল্টে দিয়েছে ভেবেই খুশিতে আটখানা হয়ে নিজেকে বাহবা দিতে থাকলো।
তারপর আজকের ঘটনা গুলো এক এক করে মনে করতে থাকলো,
মিনি আর স্পর্শের পরিবার
একটা বিয়ে বাড়িতে যায়।
স্পর্শের বাবা মামুন চৌধুরী সেখানে গেয়ে তার কলেজ ফ্রেন্ড
আসাদ জামান দেখা পান। খুশিতে আটখানা হয়ে দুই বন্ধু(মামুন চৌধুরী ও আসাদ জামান)কোলাকুলি করেছেন।
কলেজ লাইফে মামুন চৌধুরী তার বন্ধু আসাদ জামানকে কথা দিয়েছে আসাদের মেয়েকে তার ছেলের বউ বানাবে।
মামুন চৌধুরীর দুই মেয়ে এক ছেলে, বড় মেয়ে মাইশা বিবাহিত, তারপর ছেলে অর্থাৎ স্পর্শ, আর ছোট মেয়ে মাহিরা ক্লাস টেনে পড়ে।
আসাদ জামান এর এক ছেলে এক মেয়ে, ছেলে বড় পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তারের পেশায় আছে নাম আদিব জামান,আর মেয়ে আর্শিয়া জামান মানে মিনিই হচ্ছে আসাদ জামানের মেয়ে।
এত বছর পর দেখা হওয়ার পরেও মামুন চৌধুরীর বন্ধুকে দেয়া কথা মনে আছে এখন যেহেতু এখানে একটা বিয়ে চলছে তাই মামুন চৌধুরী বন্ধু আসাদ জামান এর সাথে কথা বলে ঠিক করছেন কাজি যেহেতু আছে আজই ছেলের বউকে ঘরে নিয়ে যাবেন। এদিকে এসব শুনে মিনি,স্পর্শ দুজনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে, স্পর্শ কিছুতেই এখন বিয়ে করবেনা ও মাত্র পড়াশোনা শেষ করে বাবার অফিসে বসেছে একমাস ও হয় নি আর এখন কিনা বিয়ে করতে হবে ও সাফ সাফ না করে দিয়েছে ও বিয়ে করবেনা কিন্তু ওর মা সাফিয়া চৌধুরী ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে অনেক কষ্টে ওকে রাজি করিয়েছে।
অপরদিকে মিনি মাত্র ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে কিছুদিন হলো আঠারোতে পা দিয়েছে ও এখন বিয়ে করতে চায়না এখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া বয়স এখন কিসের বিয়ে।একপ্রকার চিৎকার চেঁচামেচি করা শুরু করে মিনি কিন্তু লাভ হলো না ওর মা থাপ্পড় মেরে ওকে নিয়ে যায় কাজির সামনে। মিনি মাকে একটু ভয় পেলেও বাবাকে মোটেও ভয় পায় না।বাবাকে বলে কিছু হবেনা বাবা যেহেতু নিজেই রাজি তাই চুপচাপ বিয়ে করে নিলো স্পর্শ ও দাঁতে দাঁত চেপে কবুল বলে দিলো।বিয়ে শেষ এবার বিদায়ের পালা মিনি একটুও কাঁদলো না আর না মা -বাবার দিকে তাকালো অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। তারপরও ওর বাবা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি একদিন ঠিকই বুঝবে,ওর মা ওকে ধরে কাঁদছে মিনি কিছু বলছেনা এর ভেতর আদিল দৌঁড়ে এলো ওর হসপিটালে কাজ থাকায় আসতে পারেনি যখন বাবা ফোন করে বললো ওর ছোট্র পরীটার বিয়ে তখন ছুটে এসেছে ভাইকে দৌঁড়ে আসতে দেখে মিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে ভাইয়ের বুকে অঝোর ধারায় কাঁদছে মিনি, আদিলের চোখে ও পানি এটা মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে করুন দৃশ্য। ছেলেদের কাঁদতে নেই যখন তাদের সহ্য করার ক্ষমতা শেষ হয়ে যায় তখন কাঁদে।মামুন চৌধুরী এগিয়ে এসে মিনির মাথায় হাত রেখে বললো মনে করো আজ থেকে আমি তোমার আরেকটা বাবা আর তুমি আমার মেয়ে তোমার কোনো সমস্যা হবে না মা। তারপর মিনিকে নিয়ে মামুন চৌধুরী ও তার পরিবারের সবাই রওনা দেয়, স্পর্শের মা আগেই চলে গেছেন বাসায় সব ঠিকঠাক করতে হবে।স্পর্শ কোনো মতে কবুল বলেই বেরিয়ে গেছে ওখান থেকে রাত বারোটায় বাসায় ফিরতেই কাজিনরা আর ওর বোনেরা জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়।স্পর্শের মা বাসায় ফিরেই কাছের আত্মিয়-স্বজনদের জানিয়ে দেয় বাকিদের রিসিপশনের সময় ইনভাইট করবে।
ঘরে ঢুকেই বিছানায় সটান হয়ে মিনিকে শুয়ে থাকতে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় স্পর্শের তাই মিনিকে বিছানা থেকে তুলেই লোভী, খারাপ মেয়ে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করে শেষে বলে উঠে মিনি যাতে ওর খাটে না ঘুমায়, তারপরের ঘটনাতে আপনারা জানেনই।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমে তলিয়ে গেলো মিনি বুঝতেই পারলো না।

সকালের স্নিগ্ধ ছোঁয়া,সূর্যের আলো অনেক আগেই ফুটেছে, অনেক বেলা হয়ে গেছে, রাতে জানালার পর্দা টানা হয়নি তাই রোদ টুকরো গুলো এসে পড়ছে মিনির মুখে, বিরক্তিতে ছেয়ে আছে মুখটা, কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও লাভ হলো না তাই উঠেই ওড়লো।

ঘুম থেকে উঠেই জানালার দিকে বিরক্তির নজর
চোখ ফেরাতেই নজর পড়লো সোফায় বাকা ত্যাড়া হয়ে শুয়ে থাকা স্পর্শের দিকে আস্তে আস্তে উঠে সোফার দিকে এগিয়ে এসে স্পর্শের দিকে ঝুঁকে হাত দুটি স্পর্শের মুখের কাছে নিয়ে বলতে লাগলো বেটা খারুশ ইচ্ছে তো করে খামছে টকটকে লাল গাল দুটোও টেনে ছিড়ে ফেলি কাল রাতে জানালার পর্দা টানালি না কেনো এখন আমার স্বাদের ঘুমটা ভেঙে গেলো।তারপর রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

এদিকে স্পর্শ হতভম্ব হয়ে আছে, মেয়েটার মাথায় মনে হয় সিট আছে কি বলে গেলো এসব।স্পর্শ মিনির আগেই ঘুম থেকে উঠে,সোফায় ঘুমানোর কারনে কোমর ব্যথা হয়ে আছে তাই পা টান টান করে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিলো, চোখ খুলতে যেয়ে টের পেলো মিনি এদিকে আসছে তাই আর চোখ খোলে নি মিনি কি করে সেটাই দেখতে চেয়ে ছিলো কিন্তু মিনি যে এরকম কিছু করবে স্পর্শ তা মোটেই আশা করেনি।

সোফা ছেড়ে কোমর সোজা করতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো স্পর্শ।

ওয়াশরুমের দরজা খুলে মিনি একটা শাড়ি পরে বেরিয়ে আসে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ের রং মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে, টানাটানা চোখ, চোখের মনি কুচকুচে কালো, পাতলা ঠোঁট, ঠোঁটের পাশেই বাম গালে একটা ছোট্ট তিল, মায়াবী মুখ,ঘন কালো কোমর ছড়ানো চুল। একেবারে সুন্দরী না হলেও যে কেউ এক দেখাতেই মুখ থেকে মাশাল্লাহ শব্দটি বেরিয়ে আসবে
এতক্ষণ ধরে স্পর্শ মিনিকে পর্যবেক্ষন করছিলো মেয়েটার চেহারা মাশাল্লাহ হলেও স্বভাব আসতাগফিরোল্লাহ,আস্ত একটা জংলী, ঘাড়ত্যাড়া মাইয়া……..

চলবে………

In Depths of Love Part-08

0

#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০৮ || [ লাস্ট পার্ট ]
__________________________________________

রিমি চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে। রিমির এত জোরে চিৎকারে রোমানের ঘুম ভেঙে যায়। রিমিকে ঘাবড়াতে দেখে রোমান পাশের টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে রিমিকে দেয়। রিমি এক নিমিষেই গ্লাসের পুরো পানি ঢকঢক করে খেয়ে ফেলে।

রোমান রিমির কাঁধে হাত রেখে বলল,
–‘কি হয়েছে? এত জোরে চিৎকার কেন করলে? খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখছিলে না-কি?’

রিমি রোমানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আর বলে,
–‘পারব না, আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না।’

–‘কি হয়েছে সে-টা তো আগে বলবে?’

–‘খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। না, না অনেক খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।’

–‘কি এমন দেখেছো? যার এত ভয় তোমার!’

রিমি রোমানকে পুরোটা খুলে বলল। রিমির কথা শুনে রোমান হু হা করে হাসতে থাকল। রোমানের এত সিরিয়াস মুহুর্তে হাসি দেখে রিমির প্রচুর রাগ হলো। রিমির দিকে তাকিয়ে রিমিকে রাগে ফুসতে দেখে অনেক কষ্টে তার হাসি দমন করে বলল,
–‘আরে পাগলী! এটা তো একটা স্বপ্ন ছিল। বাস্তব তো আর না। এত ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।’

–‘আপনার সাথে আমার আর কথা নেই। যান!’

–‘আরে রাগ করো না। আচ্ছা, তোমাকে একটা কথা বলি। আমি চাই না এই ঘটনাটা পরবর্তীতে আমার জীবনে কোনো প্রকার প্রভাব ফেলুক।’

রিমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
–‘কি ঘটনা?’

রোমান ওর ফোন নিয়ে গ্যালিরে ঢুকল। সেখান থেকে একটা মেয়ের ছবি বের করে রিমির হাতে ফোনটা দিল।

–‘এইযে, এই মেয়েটা হলো তিথী! যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু এই মেয়েটাই আমার নামে পুলিশ কেস করেছিল যে, আমি না-কি প্লে বয়। অনেক মেয়ের সাথে না-কি রাত কাটিয়েছি। কিভাবে ও পারল আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে এভাবে নষ্ট করে দিতে? কিভাবে? ওর এই ধোঁকার জন্য আমি ভয় পাই, যদি তুমিও আমাকে ধোঁকা দেও। তাই তোমার সাথে এত খারাপ বিহেভ করেছি এতদিন। আই’ম সর‍্যি, রিমি! পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।’

–‘আপনার সর‍্যি বলার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার জায়গায় আমি থাকলে আমিও নিশ্চয় এমনটাই করতাম। আমি কেন? যে কারো করাটা স্বাভাবিক। আর আই’ম সর‍্যি, আমি জানতাম না আমার বোন আপনার সাথে এত বাজে একটা কাজ করেছে! জানলে ওকে ঠিক শাস্তি দিতাম।’

–‘ওয়েট! ও তোমার বোন মানে?’

–‘তিথী আমার খালাতো বোন হয়।’

–‘তাই তো তোমার গুনগান করলে ও এত জেলাস ফিল করত।’

–‘মানে?’

–‘মানে, তোমার মনে আছে! তুমি একদিন তোমার গাড়ি নিয়ে তাড়াহুড়োয় কোথাও যাচ্ছিলে। তখন তোমার গাড়ির সাথে লেগে এক পিচ্চির হাত-পা ছিলে যায়। তখন লোকজন তোমায় যেতে দেয় না। তখন আমিই তো ওদের বুঝিয়ে তোমাকে যেতে সাহায্য করি।’

–‘ওটা আপনি ছিলেন?’

–‘হ্যাঁ! তোমাকে ওদিন প্রথম দেখাতে ভালোবেসে ফেলি। আমি গাড়িতে এসে যে-টা তিথীকে বলি। ও তখন একবারো বলে নি, তুমি যে ওর বোন। বরং যতবার তোমার কথা তুলতাম, ও জেলাস হত। আমি তো ভেবেছিলাম তোমায় আমি কখনো পাব না। তাই তো তোমার সাথে দেখা হয় না আমার আর। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস! ওইদিন রিধি আর রোহানের বিয়েতে তোমাকে দেখি। আমি আর দেরি করতে চাইতাম না। যদি তুমি হারিয়ে যাও। তাই ও দিন তোমার মা-বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেই। এজন্য দেখো, আজ আমরা একসাথে।’

–‘ওহ, আসল মিস্ট্রি তাহলে এখানে। যাক গে, এইসব বাদ! তিথী আর যখন আপনার সাথে এত বাজে একটা কাহিনী ঘটাল। আপনি তাহলে ওরে শাস্তি কেন দিলেন না? কেন ছেড়ে দিয়ে রেখেছেন?’

–‘বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল ও আমার। কিভাবে ওকে শাস্তি দেই? বলো! চাইলেও যে পারতাম না।’

–‘আই আন্ডারস্ট্যান্ড। আসল বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো এমনই হয়। কিন্তু আমি ওর থেকে জেনেই ছাড়ব, কেন ও আপনার সাথে এমনটা করল?’

–‘তা নাহয় জেনে নিও। কিন্তু তাই বলে আমাদের ঘুরাঘুরি টা যেন স্পয়েল না হয়। সে-টা জানি মাথায় থাকে।’

–‘হুম, থাকবে।’

–‘আচ্ছা, তাহলে এখন ঘুমাও। সকালে আমরা ঘুরার জন্য বের হব!’
___________________🍁🍁

দু’জনে সকালে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রেডি হয়ে নিল। দু’জনে আজ মেচিং ক্লথস পড়েছে। দু’জনের গায়েই সাদা রঙের পোশাক।

রিমি খুশিতে খুশিতে বলল,
–‘চলেন, এবার আমরা যাই।’

–‘হ্যাঁ, যাব তো। রূপা আর হৃদয়কেও ফোন করে একসঙ্গে গেলে কেমন হয়?’

–‘উফফ! সেই দারুন হয়। তাহলে আর দেরি কিসের? আমি রূপাকে কল দিচ্ছি।’ বলে রিমি ফোন নিয়ে রূপাদের নিচে রিসেপশনে যেতে বলল।
.
.
.
চারজনে রিসেপশনে একসাথে হওয়ার পর ওরা সবাই মিলে ঘুরতে গেল। সমুদ্রের ধারে গিয়ে রিমি হাত ছড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করছে। সমুদ্রের ঢেউয়ে পানি এসে রিমির শাড়ি ভিজিয়ে দিচ্ছে। প্রচন্ড বাতাসে রিমির খোলা চুলগুলো মুক্তভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে। রিমি এতে উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। রিমিকে এত খুশি দেখে সবাই খুব খুশি। রিমি হঠাৎ তার আনন্দ উপভোগ করা বাদ দিয়ে পিছনে তাকাল। সবাইকে এক জায়গায় স্থির থাকতে সে দৌঁড়ে তাদের দিকে আসছে। রোমানসহ বাকিরা রিমিকে আস্তে আসতে বলছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা? রিমি ওর মত দৌঁড়ে আসছে। আসার সময় একটা মেয়ের সাথে খুব জোরে ধাক্কা লাগে রিমির। রিমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সবার কাছে এসে উপস্থিত হলো।

–‘এই তোমাকে বারবার বলছি না আস্তে ধীরে আসতে? কথা কি কানে যায় না? বেশি বুঝো কেন সবসময়?’ (ধমক দিয়ে রোমান বলল)

–‘ঘুরতে এসেও বকা দিবেন? যান, আপনার সাথে আর কথা নেই। আড়ি!’

রিমিকে মুখ ফোলানো দেখে সবাই ফিক করে হেসে দিল। রোমান রিমির সামনে গিয়ে কান ধরে বলল,
–‘সর‍্যি! আর বকব না। প্লিজ কথা অফ করো না!’

–‘আচ্ছা! বাট আমাকে অনেক চকলেট আর আইসক্রিম কিনে দিতে হবে। নাহলে আবার আড়ি!’

–‘জাস্ট এটুকুই?’

–‘হ্যাঁ!’

–‘আচ্ছা দিব কিনে। এবার হ্যাপি?’

–‘অনেক।’

সবাই যে যার মত করে উপভোগ করছে। কিন্তু রিমির চোখ বারবার চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটার দিকে! কারণ অনেকক্ষন ধরে মেয়েটা রিমির উপর নজর রাখছে। রিমি মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছে না। কারণ মেয়েটার মুখ ঢাকা!

রিমি রূপাকে বলে মেয়েটার কাছে যেতে লাগল। রিমিকে দেখে মেয়েটা তার বসা থেকে উঠে হাঁটতে শুরু করে। রিমিও পিছু নিতে থাকল। এক টাইম তারা রিসোর্টের ছাদে চলে আসে। মেয়েটা ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি মেয়েটার কাঁধে হাত রাখতেই মেয়েটা তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।

–‘আমি খেয়াল করছিলাম আপনি অনেক সময় ধরে আমার দিকে লক্ষ্য রাখছেন! কিন্তু কেন?’

রিমির কথা শুনে মেয়েটা তার মুখ বের করল। মেয়েটার মুখ দেখে রিমি অবাক হয়ে বলল,
–‘তুই? তুই এখানে কেন?’

–‘তোকে শেষ করতে এসেছি।’

–‘আমাকে? কিন্তু কেন? কি করেছি আমি?’

–‘কি করিস নি, তাই বল!’

–‘দেখ, তিথী! কথা না ঘুরিয়ে সোজাসাপটা উত্তর দে।’

–‘তাহলে শোন। রোমানের সামনে আমি যাই না কারণ, ওকে মিথ্যা কেসে আমি ফাঁসিয়েছি। আর কেন ফাঁসিয়েছি জানিস?’

রিমি মাথা ঝাঁকিয়ে না উত্তর দিল। তিথী আবার বলা শুরু করল,
–‘মনে আছে, তুই একদিন গাড়ি এক্সিডেন্ট করছিলি। সেদিন রোমান তোকে হেল্প করেছিল। আমি তোকে দেখেছিলাম ওইদিন, বাট তুই তাড়াহুড়ো থাকায় তোকে ডাকি নি আর। রোমান যখন তোর কথা বলল, তখন ওরে বলতে চেয়েছিলাম ওইটা আমার বোন হয়। কিন্তু ও তোর এত প্রশংসা করল, যা আমার সহ্য হয় না। তাই আর বলিনি তোর কথা। আর সহ্য হবে কি করে? আমি যে ওকে বড্ড ভালোবাসতাম।’

–‘ভালো যদি বাসতি! তাহলে মিথ্যা মামলা কেন দিলি?’

–‘ওইদিনের পর রোমান সবসময় তোর কথা বলত। একদিন তো বলেই ফেলে তোকে অনেক ভালোবাসে ফেলেছে। আমি যে ওরে ভালোবাসি, এটা তো ও জানে না। ওইদিন জানাতে চেয়েছিলাম, বাট তুই সেদিন পথের কাঁটা হয়ে আসিস। তাই যখন দেখলাম, রোমান আমার থেকে বেশি তোর কথা বলে। তখন ডিসিশন নেই, ওকে শেষ করে দিব আমি। ও যখন আমার হবে না, তখন আর কারো হবে না। তাই মিথ্যা মামলায় ফাঁসাই। কিন্তু দেখ, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সে-ই রোমানের বউ তুই আজ। কিন্তু এটা স্থায়ী হতে দিব না আমি।’ বলে তিথী রিমির গলা চেঁপে ধরে।

রিমি বারবার চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারে না নিজেকে। ওর শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে। ওইসময় রোমান এসে রিমিকে তিথীর হাত থেকে ছাড়ায়। আর পুলিশ ডেকে ওকে ধরিয়ে দেয়। যাওয়ার সময় শুধু তিথী বলে,
–‘খুব খারাপ হবে! রিমি খুব খারাপ হবে।’ তারপর পুলিশরা তিথীকে ধরে নিয়ে গেল।

রোমান রিমিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–‘রিমি তুমি ঠিক আছো তো?’

–‘হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। বাট আপনি এখানে কিভাবে?’

পাশ থেকে রূপা বলে উঠে,
–‘তুই আমাকে বলে গিয়েছিলি না তুই ওই মেয়ের পিছে যাচ্ছিস। তার কিছুক্ষন পর রোমান তোকে খুঁজে না পেয়ে আমার কাছে আসে। আমি তখন বলে দেই। আর আমরা খুঁজতে খুঁজতে উপরে এসে দেখি এই কাহিনী!’

রিমি রোমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘আপনি সব শুনেছেন?’

–‘হ্যাঁ! ভাবতে পারছি, শুধুমাত্র এই জন্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ডটা এত খারাপ হয়ে যাবে।’

–‘যা হওয়ার গেছে গেছে। এখন আমাদের নতুন লাইফ শুরু করার টাইম। আগের সব কিছু ভুলে যান।’

রোমান মুচকি হেসে রিমিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
–‘অনেক ভালোবাসি তোমাকে রিমি। আমার মৃত্যুর আগ অব্দি তোমার সাথে কাটাতে চাই আমি।’

–‘আমিও অনেক ভালোবাসি আপনাকে। আমিও তো এটাই চাই।’

এভাবেই বেঁচে থাকুক তাদের ভালোবাসা।

_____________সমাপ্ত 💖💖

In Depths of Love Part-07

0

#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০৭ ||
____________________________________________

–‘রিমি! কোথাও তুমি?’

রোমানের গলা শুনে রিমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রোমান রুমে প্রবেশ করছে। রোমানকে দেখে রিমি বলল,
–‘আরে আপনি এখানে!’

–‘হ্যাঁ, নিচে অনেকক্ষন ধরে তোমার জন্য ওয়েট করছি। কিন্তু তোমার আসার তো নাম-গন্ধ কিছুই নেই। লাগেজ নিয়ে আসতে বুঝি এত টাইম লাগে?’

–‘আমি তো কথা বলছিলাম। তাই নিচে যেতে দেরি হচ্ছিল।’

রোমান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
–‘কার সাথে কথা বলছিলে?’

–‘এইতো….!’ রিমি বাকিটুকু বলার আগেই পিছন ফিরে তিথীকে কোথাও দেখতে পেল না। এমনটা যে হওয়ার কথা, রিমি ভালোই জানত। কিন্তু ওর ভাবছে অন্য কথা! রোমান আসার কিছুক্ষন আগেও তো তিথী ছিল। তাহলে এত তাড়াতাড়ি ও কোথায় গেল?

–‘ওহ, ম্যাডাম! বাকিটুকু না বলে কোন ভাবনার সাগরে ডুব দিলেন আপনি?’

রোমানের কথায় রিমির হুঁশ ফিরে।

–‘কই? কিছু ভাবছিলাম না তো। আমি আসলে ফোনে কথা বলছিলাম।’

–‘আচ্ছা, তো চলো এখন বাসায় যাওয়া যাক। লাগেজটা কই তোমার?’

রিমি হাত দিয়ে ইশারা করতেই রোমান লাগেজ বের করে নিয়ে আসল। তারপর দু’জনে নিচে নেমে আসল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে দু’জনে গাড়িতে গিয়ে বসলে রোমান গাড়ি স্টার্ট দিল। আপন গতিতে গাড়ি চলা শুরু করল।

আর এদিকে, উপরে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একজন রোমান আর রিমিদের গাড়ি যাওয়ার অপেক্ষা করল। তারপর ডেভিল হাসি হাসতে হাসতে বলল,
–‘কি ভেবেছিলি রিমি? এত তাড়াতাড়ি তো আমি রোমানের সামনে যাব না। গেলে আমার বানানো সব প্ল্যান যে ভেস্তে যাবে! তখন কি হবে? আমার খেলা যে শুরু হতে না হতেই সব শেষ হয়ে যাবে। না, এটা কখনোই হতে দিব না আমি।’ বলে তিথী আবার হাসিতে মেতে উঠল।
____________________🍁🍁

পরদিন সকালে রিমি আর রোমান উদ্যত হলো কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য।

রোমান ড্রাইভিং সিটে আর রিমি তার পাশের সিটে। গাড়ির কাঁচ খুলে রাখার ফলে বাতাসে রিমির চুলগুলো বারবার ওর মুখে আঁচড়ে-মুচড়ে পড়ছে। রিমি বিরক্ত হয়ে লাগাতে নিলে রোমান লাগাতে দিল না। রিমিও আর লাগাতে চাইলো না। পুরো ১০টা ঘন্টা দু’জন ওভাবেই ছিল। রিমি চিন্তায় বিভোর আর রোমান ড্রাইভে! বেশি যে কথা বলা, সে-টা তাদের মাঝে ছিল না। খালি মধ্যে রোমান স্বেচ্ছায় রিমিকে খাবার এনে খাওয়ার জন্য দিয়েছিল। সে সময় একটু কথা হয়েছিল। ব্যাস, এটুকুই!

–‘আচ্ছা, আর কতক্ষন টাইম লাগবে পৌঁছাতে?’

–‘এইতো, আর বেশি না। প্রায় এসেই পড়েছি।’

–‘ওহ আচ্ছা।’ বলেই রিমি আর নীরবতার চাদরে আবৃত হয়ে গেল।

গাড়ি ড্রাইভ করার এক পর্যায়ে রোমান খুব জোরে ব্রেক কষে! ব্রেক না করলে আজ তারা হয়ত চলেই যেত ওই আকাশে। অল্পের জন্য এক্সিডেন্ট হয়নি সামনের গাড়িটার সাথে তাদের।

–‘তুমি ঠিক আছো রিমি?’

–‘হ্যাঁ!’

–‘তুমি গাড়িতে বসো। আমি একটু বাহির থেকে দেখে আসি সামনের গাড়িটার কি অবস্থা!’

–‘আচ্ছা, যান!’

রোমান বেরিয়ে সামনের গাড়িটার কাছে গেল। কাঁচের সামনে ঠকঠক করতেই কাঁচ খুলে গেল। ভিতরে থাকা মানুষটাকে দেখে রোমান অবাক, সাথে খুশিও।

–‘হেই! হোয়াট’স আপ?’

–‘এইতো। তোমার কি খবর? আর রূপা (রূপাকে ইশারা করে) তোমার?’

রূপা বসা থেকেই উত্তর দিল,
–‘ভালো। তো জিজু আপনি এখানে? রিমি কই?’

–‘আমি আর রিমি একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। তোমরাও নিশ্চয় তাই এসেছ?’

রূপা হেসে বলল, ‘হ্যাঁ!’

–‘ওহ, দেট’স গ্রেট। তো কোন রিসোর্টে উঠছো হৃদয় (রূপার হাসবেন্ড)?’

–‘রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্টে! ওটা সমুদ্র সৈকতের কাছে আছে। সুযোগ-সুবিধাও অনেক ভালো। তাই ওটাতেই ওটা।’

–‘আমরাও। তো রিসোর্টে গিয়ে দেখা হচ্ছে না-কি?’

–‘নিশ্চয়!’

রোমান ওদের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে এসে বসতেই রিমি উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করল,
–‘এত লেট কেন হলো? গাড়ির লোকজন ঠিক আছে তো?’

–‘হ্যাঁ, সবাই ঠিক আছে। আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কথা, হৃদয়রা ছিল ওই গাড়িতে।’

–‘কিহ? রূপা আর হৃদয় ভাইয়া আসছে? তাহলে তো এখন অনেক মজা হবে। উয়াহু!’

রিমির মুখে এত হাসি দেখে রোমানের মুখের কোণেও হাসি ফুটে উঠে। এই হাসিটাই তো রোমান সারাজীবন দেখতে চায়। কিন্তু এটা দেখার সৌভাগ্য কি তার দীর্ঘস্থায়ী হবে?
.
.
.
প্রায় আধঘন্টা পর তারা রিসোর্টে গিয়ে উঠল। রিসেপশন থেকে তাদের বুক করা রুমের চাবি নিয়ে গেল। মূলত তাদের রুমটা ৫ম ফ্লোরে পড়েছে। ৫ম ফ্লোরে উঠ তারা সবার শেষ রুমটার দরজা খুলে ভিতরে গেল। লাগেজ ঠিক করে রেখে রোমান টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। রোমান আসতেই রিমি ঢুকল।

মাথা মুছতে মুছতে ব্ল্যাক কালারের লং ড্রেস পড়ে বের হলো রিমি। রোমান ল্যাপটপে তখন কিসের জানি কাজ করছিল। রিমিকে দেখে কাজ বাদ দিয়ে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। রোমানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিমি লজ্জা পেয়ে যায়। তবুও অনেক কষ্টে বলে,
–‘ওভাবে কেন তাকিয়ে আছেন?’

রোমান বসা ছেড়ে উঠে রিমির দিকে এগোতে লাগল। আর রিমি পিছন দিকে পিছাতে লাগল। এক সময় আর পিছানোর জায়গা নেই। তখন রিমির পিঠ দেওয়ালের সাথে একেবারে লেগে যায়। রোমান ওর মুখ রিমির কানের কাছে নিয়ে বলে,

–‘ভালোবাসি! অনেক ভালোবাসি তোমায় প্রেয়সী।
প্লিজ কখনো আমায় ছেড়ে যেও না। আমায় যদি তুমি ছেড়ে যাও, তাহলে আমি মরে….!’ আর বলতে পারল না রোমান। তার আগে রিমি ওর হাতের আঙুল রোমানের ঠোঁটের উপর রাখে। আর বলে,

–‘কখনো যাব না। এই প্রাণ থাকতে আপনায় রেখে আমি কখনো যাব না। সবসময় আপনার পাশে থাকব।’

–‘সত্যি তো! আমি কিন্তু আজ অব্দি আমার মনের কথা বলিনি। কেন জানি আজ না বলে থাকতে পারলাম না! বলেই দিলাম।’

–‘আপনি কি জানেন? এই কথাটা শোনার জন্য যে আমি অনেক অপেক্ষা করে ছিলাম।’

–‘সর‍্যি, এত অপেক্ষা করানোর জন্য।’

–‘ইট’স ওকে!’
____________________🍁🍁

রাতে ঘুমিয়ে আছে দু’জন। হঠাৎ কোনো কিছুর শব্দে রিমির ঘুমটা আলগা হয়ে যায়। চোখ মেলে তাকাতে শব্দটা আবারো পেতে থাকে। পাশে তাকিয়ে দেখে রোমান বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। তাই আর রোমানকে ডাক দিল না রিমি। আস্তে ধীরে রোমানের পাশ কাটিয়ে উঠে এল। রুমের দরজা খুলে বাহিরে এদিক-ওদিক উঁকি-ঝুঁকি দিতেই কোনো কিছু একটা ছায়া দেখতে পেল সে। রিমি সে-ই ছায়া অনুসরণ করতে থাকল। আস্তে আস্তে সে-ই ছায়াটা ছাদের দিকে যেতে থাকে। রিমিও পিছু নিতেই থাকে। ছাদে গিয়ে রিমি দেখে কেও একজন কালো কাপড় পরিহিতা ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি একপা-দু’পা করে সেই মেয়েটার দিকে এগিয়ে যায়। রিমি মেয়েটার কাঁধে হাত রাখতেই মেয়েটা রিমির দিকে ঘুরে দাঁড়াল। কিন্তু রিমি মেয়েটার চেহারা দেখতে পেল না। কাপড় দিয়ে তার পুরো মুখ পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে। মেয়েটা রিমিকে টান দিয়ে তার স্থানে এনে সে রিমির স্থানে চলে গেল। রিমির ভয়ে বুক ধকধক করছে। নিচে তাকিয়ে দেখে অনেক গভীর! এখন যদি মেয়েটা তার হাত ছেড়ে দেয়, সে একেবারে নিচে পড়ে যাবে।

–‘কে তুমি? কেন আমার সাথে এমন করছো? আমাকে ছেড়ে দেও।’

রিমির কোনো কথাই যেন মেয়েটার কান অব্দি পৌঁছালো না। সে আস্তে আস্তে করে এক টাইম রিমির হাতটা পুরোপুরি ছেড়ে দেয়। রিমি তো চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।

চলবে…..☘️☘️

~বি.দ্র: রিচেক করা হয়নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং~

In Depths of Love Part-06

0

#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০৬ ||
___________________________________________

রাত প্রায় ২টা! পশ্চিম আকাশে রুপালি রঙের থালার মত চাঁদ উঠেছে। মাঝে মধ্যে উত্তর দিক থেকে দমকা হাওয়া বইছে। সে-ই হাওয়াতে রিমির খোলা চুলগুলো লুটোপুটি খাচ্ছে। বাতাসে তার ফুল গাছগুলোর থেকে মিষ্টি সুভাস ভেসে বেড়াচ্ছে। রিমি চোখ বন্ধ করে বেলকনিতে বসে রাতের সে-সব সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

–‘কি অপরূপ সৃষ্টি সৃষ্টিকর্তার! এসব মনোমুগ্ধকর সৃষ্টি দেখলে মন-প্রাণ ভরে যায়। মানুষও তার সৃষ্টি! কিন্তু মানুষ তার মনের ভিতরে অনেক কিছু লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে। বাহিরে প্রকাশ করতে চায় না। কত অদ্ভুত তাই না? সত্যিই বড় অদ্ভুত! তার চেয়ে অদ্ভুত হলো রোমান। সবাই জানে উনি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। কিন্তু সে আমাকে কখন, কোথায় প্রথম দেখছে। তা আজও আমি জানি না। কখনো উনি স্বেচ্ছায় মুখ ফুটে বলেনও নি। আবার মিতু, যে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসত। সে আজ আমার থেকে অনেক বড় সত্য লুকিয়েছে। কিন্তু কেন? কেন আমি সমাধান করার বদলে বারবার গোলক ধাঁধার ভিতরে ফেঁসে যাচ্ছি।’
_______________________🍁🍁

সকালে গাঁয়ে ভেজা কিছু অনুভব করতেই লাফ দিয়ে উঠে বসে রিমি। জামায় হাত দিয়ে খেয়াল করে তার পুরো জামাটা পানিতে ভিজে রয়েছে। তিথীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
–‘এই তিথুর বাচ্চা, আমার গাঁয়ে পানি এলো কোথা থেকে?’

–‘কোথা থেকে আবার আসবে? জগ থেকে এসেছে।’ বলে খিলখিল করে হাসতে শুরু করল।

তিথীর হাসি দেখে রিমির রাগ যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল। কড়া গলায় সে তিথীকে বলল,
–‘হাসা বন্ধ করবি তুই? এখন বল পানি কেন ঢেলে দিয়েছিস আমার উপর?’

–‘ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ ক’টা বাজে! এত বেলা অব্দি কেও ঘুমায়? শ্বশুড় বাড়িতেও নিশ্চয় এভাবেই এত বেলা অব্দি ঘুমাস। তোরে কেও বকে না?’

–‘আজ্ঞে না, ম্যাডাম! কাল রাতে দেরি করে ঘুমানোর ফলে সকালে আমার ঘুম ভাঙে নি। তাছাড়া তুই জানিস, আমি কখনো লেট করে ঘুম থেকে উঠি না। বরং, সবার আগে উঠি।’ (ভেংচি কেটে বলল)

–‘হইছে, মহারানী! আপনার আর নিজেরে নিয়ে গুনগান গাওয়া লাগব না। আপনি এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।’

–‘আচ্ছা!’
.
.
.
ড্রাইনিং টেবিলে বসে সবাই খাবার খাচ্ছে। এর মধ্যে হঠাৎ রিমির বাবা (আমির) আহানাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
–‘রিমি, তিথী ওরা যখন এখানে আছে। তাহলে অধরা (তিথীর মা) ওদেরও আসতে বলো। রিধিকেও আসতে বলো, মেয়েটার সাথেও তো অনেক দিন দেখা হয় না। সবাই নাহয় এখন একসাথে কিছু দিন টাইম স্পেন্ড করি। কেমন হয় বলো?’

–‘খুব ভালো প্রস্তাব! আমি এখনি ওদের কল করে আসতে বলছি।’

মিসেস আহানা উঠে যেতে নিলে রিমির ফোনের টোনটা বেজে উঠে। রিমি স্ক্রিনের উপর নাম না দেখেই তাড়াহুড়ো করে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কারো নরম গলা ভেসে আসল।

–‘হ্যালো, রিমি! কেমন আছো?’

–‘ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’

–‘এইতো আছি! একটা কথা বলার ছিল। জানি তোমার খুব খারাপ লাগবে। বাট আমার কিছু করার নেই।’

–‘কি কথা? আগে সে-টা তো বলবেন।’

–‘আসলে, আমার এখন অফিসে কাজ কম। তো তাই আম্মু বলছে আমাদের এখন দু’জনের কিছু টাইম একা স্পেন্ড করা উচিত। তোমাকে কোথাও নিয়ে যেতে বলছে। কয়দিন পর আবার তো আমার কাজের চাপ বাড়বে। সেজন্য আম্মু বলছে এখনি কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য।’

–‘কিন্তু, আমি তো গতকাল কেই আসলাম। আজ-ই আবার চলে যাব? এটা কেমন কথা হলো?’

–‘আরে বাবা! আমার এখন কাজ কম বলে আম্মু বলেছে। আর তাছাড়া আমরা ঘুরে আসার পর নাহয় আবার যেও।’

–‘বাট…!’

–‘আচ্ছা তুমি যদি রাজি না হও, তাহলে আম্মুকে আমি মানা করে দিচ্ছি।’

–‘এই না, না! আমি যাব। আম্মুকে মানা করা লাগবে না।’

–’এটাই তো সুযোগ, আপনার মুখ থেকে কথা বের করানোর। এরপর মনে হয়না এত ভালো সুযোগ পাব!(মনে মনে)

–‘ওকে, ডান! আমি তাহলে বিকেলে পিকাপ করতে আসব নি। এখন রাখছি।’

–‘আচ্ছা!’

–‘কিরে রিমি? কি হয়েছে রে? জিজু কল করেছে না-কি?’

–‘হ্যাঁ, আসলে আম্মু চাচ্ছে আমরা দু’জন একটু বাহিরে ঘুরে আসি। রোমানের এখন কাজের চাপ কম তাই!’

–‘সবে মাত্র তো আসলি রে! এখনি?’

–‘তিথু, আমি ঘুরে এসে আবার আসব।’

–‘কি আর করার? পরিস্থিতিকে এখন তো মেনে নিতেই হবে।’
____________________🍁🍁

বিকেলে বাহিরে গাড়ির হর্ন বাজতেই রিমি বেলকনি থেকে রোমানের গাড়ি দেখে নিচে নেমে আসে। দরজা খুলে দিলে রোমান গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে আসে। কিছুক্ষন গল্প-গুজব, খাওয়া-দাওয়া হওয়ার পর রোমান যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। রিমিকে উপরে লাগেজ আনতে পাঠায়। রিমি উপরে গিয়ে দেখে তিথী কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। রিমির কোনো সন্দেহ নেই, তিথী কেন নিচে যায় নি? রিমি যাওয়ার সময় বারবার তিথীকে জোড় করেছে নিচে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তিথী বাহানা দিয়ে কথাটা এড়িয়ে গেছে। এখন তো রিমির রহস্যটা জানা আরো জরুরি হয়ে গেছে।

–‘তিথু! নিচে এলি না কেন?’

তিথী গান শোনাতে বিভোর। যার করুন, রিমির কথাটা তার কান অব্দি পৌঁছায় নি। এবার রিমি ক্ষিপ্ত হয়ে তিথীর হেডফোন খুলে দিয়ে বলল,

–‘তিথী, আমি তোকে কিছু বলছি!’

–‘হুম, তো বলনা! কে মানা করেছে?’

–‘নিচে আসলি না যে!’

–‘ভালো লাগছিল না তাই।’

–‘রোমানকে তো তুই দেখিস নি। তোর তো আবার মানুষ দেখার কৌতুহল অনেক! তাহলে আজ না যাওয়ার কারন?’

তিথী কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিমি তার হাত উঁচু করে তিথীকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
–‘ওহ, প্লিজ! এটা বলিস না, যে তোর ভালো লাগেনি বলে যাস নি। কারন আমি তোকে খুব ভালো করেই চিনি।’

–‘এতই যখন চিনিস, তাহলে বলনা কেন আমি গেলাম না নিচে? আছে উত্তর? আছে? আছে তোর কাছে?’

–‘যদি বলি আছে!’

রিমির কথা শুনে তিথী একটা শুকনো ঢোক গিলল। ওর হাত-মুখ ভয়ে ঘেমে যাচ্ছে! রিমি সিউর, তিথী কিছু একটা তো করেছে। যার জন্য এতটা ভয় পেয়ে আছে।

–‘কি হলো? তুই এত ঘামছিস কেন?’

–‘কই? আমি ঘামছি না তো। এখন তুই বল, আমি কেন যাই নি?’

রিমি একটা ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে স্ট্রেইট কাট বলে দিল,
–‘তুই কোনো কিছু নিয়ে ভয়ে যাস নি। অ্যাম আই রাইট?’

–‘কিসের ভয়? আর আমি কেন ভয় পেতে যাব?’

–‘এটা তুই খুব ভালো করেই জানিস।’

তিথী আর কিছু বলতে পারল না। তার আগেই রুমে রোমানের আগমন!

চলবে….☘️☘️

~বি.দ্র: রিচেক দেওয়া হয়নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং~

In Depths of Love Part-05

0

#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০৫ ||
___________________________________________

দেখতে দেখতে কেটে যায় দু’দিন! এ দু’দিনে রিমি বারবার চেষ্টা করেছে রোমানের মুখ থেকে সত্যিটা বের করার। কিন্তু রোমান তো রোমানই! মুখ দিয়ে একটা কথাও বের করে নি।
.
.
.
সকাল সকাল লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসল রিমি। নীল রঙের সোনালী পাড়ের শাড়ি পরেছে সে। সাথে ম্যাচিং ইয়ারিংস, চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক! এটুকুতেই তাকে দেখতে ভয়ানক সুন্দর লাগছে। সবার সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করার জন্য রেডি হয়ে নিচে গেল রিমি। রিমিকে নামতে দেখে রিসান (রোমানের কাজিন) জোরে জোরে বলে উঠল,

–‘এই তিন্নি, রাকিব! দেখ, দেখ ভাবীকে আজ কত সুন্দর লাগছে।’

রিসানের কথা শুনে সবাই সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে রিমিকে দেখে হা হয়ে গেছে। অন্য দিনের থেকে আজ রিমিকে বড্ড বেশি সুন্দর লাগছে। লাগারই কথা! নীল শাড়িতে যে কাওকে সুন্দর লাগে। সেখানে রিমিকে লাগাটা অস্বাভাবিক কোনো কিছু না।

রিমি এসে ড্রাইনিং টেবিলে বসতেই তিন্নি বলে,
–‘অও, ভাবী! তোমাকে না আজ খুব খুব সুন্দর লাগছে।’

–‘ধন্যবাদ, তিন্নি!’

পাশ থেকে চিমটি কেটে রিসান বলল,
–‘হ্যাঁ, ভাবী! তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। আরেকটু কম সাজলেও পারতে। দেখো না, ভাইয়া সেই কখন থেকে এখনো তোমার দিকে তাকিয়ে আছে! চোখের পলক ফেলতেই পারছে না।’

রিসানের হঠাৎ এমন কথা শুনে রোমান ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খেয়ে গেল। আর উপস্থিত সবাই একগাল হেসে দিল।

খাওয়ার এক পর্যায়ে রিমি বলে উঠে,
–‘আম্মু! আসলে অনেক দিন তো হয়ে গেলো মা-বাবার সাথে দেখা হয় না। তো আমি ভাবছিলাম তাদের কাছে গিয়ে কয়দিন একটু থেকে আসতে।’

–‘খুব ভালো চিন্তা! তারাও হয়তো তোমাকে অনেক মিস করছে। তাহলে কবে যাবে?’

–‘যদি সম্ভব হয়, তাহলে আজকেই যেতে চাচ্ছি আম্মু।’

–‘আচ্ছা! তাহলে খেয়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফেলো। আর রোমান তুই ওকে পৌঁছে দিয়ে অফিসে যাস কেমন!’

পাশ থেকে রোমান বলল,
–‘কিন্তু আমার তো কাজ আছে আম্মু। ওকে পৌঁছে দিতে গেলে তো অনেক লেট হয়ে যাবে।’

–‘আমি কোনো কিছু শুনতে চাচ্ছি না। ওকে ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছে দিয়ে, তারপরেই তুই অফিস যাবি। এটা আমার ফাইনাল ডিসিশন!’

রোমানের আর কিছু করার নেই। মায়ের আদেশ বলে কথা! তাই বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে গেল।
___________________🍁🍁

ড্রাইভিং সিটে বসে আছে রোমান। আর তার ঠিক পাশের সিটে বসে আছে রিমি। দু’জনের কারো মুখে কোনো সাড়াশব্দ নেই। মনে হচ্ছে কোনো কিছুর নীরবতা পালনে ব্যস্ত তারা! এই নীরবতার বাঁধ ভেঙে রিমি বলল,
–‘আচ্ছা আপনি কি আমাকে সত্যি ভালোবাসেন?’

আকস্মিক এমন কথায় রোমান গাড়ি ব্রেক করে।

–‘এ-কি আপনি গাড়ি কেন থামালেন?’

–‘হঠাৎ তোমার এমন প্রশ্ন করার কারণ?’

–‘এমনিতেই! আপনি তো আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। যতদূর আমি শুনেছি। তো সেই খাতিরেই আমি আপনার মুখ থেকে কথাটা শুনতে চাই।’

রোমান রিমির কথায় পাত্তা না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। আপন গতিতে গাড়ি চলতে শুরু করল। এতে রিমি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়। কিন্তু এখন সে-টা প্রকাশ করার টাইম না। কারণ সে এখন অন্য কিছু নিয়ে ভাবনায় ব্যস্ত। আবার দু’জনের মধ্যে নীরবতা ছেয়ে গেল।

রিমিদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামল। রিমি গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল,
–‘ভিতরে আসবেন না আপনি?’

–‘না, আজ আর না। এমনিতেই অনেক কাজ পরে আছে অফিসে। তাও মায়ের কথা রাখতে তোমায় পৌঁছে দিয়ে গেলাম। ভিতরে গেলে আরো টাইম ওয়েস্ট হবে।’

–‘তাই বলে সামান্য সময়ের জন্যও আসবেন না? আপনি না আসলে যে আম্মু-বাবা অনেক কষ্ট পাবে।’

–‘তুমি উনাদের একটু বুঝিয়ে বলো। আমি এখন যাই।’ বলে রোমান গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেল।

রিমি রোমানের যাওয়ায় পানে চেয়ে থেকে ভাবল, “একটা মানুষ কিভাবে এমন হতে পারে? একটু ভিতরে আসলে তো উনার বেশি ক্ষতি হত না।”

পরক্ষণে সব ভাবনা-চিন্তার ইতি টেনে সে তার লাগেজ নিয়ে বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজালো। কতক্ষন বাজতেই রহিমা এসে দরজা খুলে দিল। রহিমা রিমিদের বাসায় কাজ করে।

–‘আরে রহিমা খালা! কেমন আছেন আপনি?’

–‘এইতো ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? অনেক দিন পর তোমায় দেখলাম মামনি!’

–‘আমিও ভালো আছি খালা। বাকিরা সব কই?’

–‘তুমি ভিতরে আসো। সবাই ভিতরেই আছে। এত দিন বাদে তোমায় দেখলে সবাই অনেক খুশি হবে।’

আহানা শেখ ভিতর থেকে চিল্লিয়ে বললেন,
–‘কে কলিং বেল বাজালো রে রহিমা? কে আসলো এ সময়?’

–‘আপা! রিমি মামনি এসেছে।’

–‘রিমি এসেছে? তো ওকে ভিতরে না এনে দরজায় দাঁড়িয়ে কেন গল্প জোড়া দিছিস?’ (বসা থেকে উঠে আসতে আসতে বলল)

আহানাকে দেখে রিমি দৌঁড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–‘আম্মু কেমন আছো তুমি? কত মিস করছি তোমাদের জানো?’

–‘ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? আর হ্যাঁ তুই একা আমাদের মিস করিস নি, আমরা তোকে অনেক মিস করেছি।’

–‘জানি জানি! কত মিস করেছো? খুব ভালো করেই জানি।’ (মুখ ফুলিয়ে)

–‘আচ্ছা এখন এসব বাদ। তুই বল কার সাথে আসলি?’

–‘রোমান দিয়ে গেলেন।’

–‘কি বলিস? রোমান দিয়ে গেল, ওকে ভিতরে আসতে বলবি না? এভাবে দিয়ে কেও চলে যায় না-কি?’

–‘আমার কি দোষ? আমি তো উনাকে বারবার বললাম, ভিতরে আসার জন্য। উনি উনার কাজের অযুহাত দিয়ে চলে গেলেন।’

–‘আচ্ছা থাক! আজকে যখন চলেই গেছে, আমাদের আর তো এখন কিছু করার নেই। এরপর যখন আসবে, তখন বুঝাবো নি মজা!’

–‘আম্মু বাবা কই? দেখছি না যে!’

–‘ওহ, তোর বাবা একটা জরুরি কাজে গেছে। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে।’

–‘এটা ঠিক না? আমি আসলাম আর সবার কাজের ধুম পরে গেছে।’

–‘তুই এখন বল, কি খাবি? কি বানাবো তোর জন্য?’

–‘আমি এখন কিছু খাব না। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি, দেন একসাথে বসে আড্ডা দিব। এটাই জানি শুধু!’

–‘পাগলী মেয়ে! তা বললে কি হয়? এত দিন বাদে মায়ের কাছে এসে খাবি না? আমি তোর জন্য তোর ফেভারিট খাবার রান্না করছি।’

–‘কিন্তু……!’

–‘কোনো কিন্তু না, যা ফ্রেশ হয়ে নে গিয়ে।’

রিমি ফ্রেশ হয়ে এসে তার মায়ের সাথে খেতে বলল। দু’জনে কথা বলছে আর মাঝেমধ্যে একটু আকটু খাচ্ছে। তাদের খাওয়ার মাঝে হঠাৎ তাদের বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠল।

রিমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
–‘এ সময়ে আবার কে আসল আম্মু?’

–‘জানি না তো! রহিমা, যা তো গিয়ে দেখ। কে আসলো আবার?’

দরজা খোলার সাথে সাথে বাহিরে থাকা মেয়েটা দ্রুত বাড়িতে ঢুকে রিমিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। রিমি মেয়েটাকে ওর সামনে নিয়ে এসে ওর মুখ দেখে প্রচন্ড খুশি হয়।

–‘তুই? তুই কবে আসলি?’

–‘আজকেই এসেছি। ফ্লাইট থেকে নেমে সোজা তোদের বাসায় চলে আসলাম। খালামনির কাছে শুনেছিলাম, তুই না-কি আমাকে বড্ড মিস করছিস! তাই ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দিতে চলে আসি।’

–‘ভালো করেছিস মিতু সোজা আমাদের বাসায় চলে এসে। বাট তুই জানলি কি করে আমি এখানে?’

–‘খালামনিকে কল করেছিলাম ফ্লাইট থেকে নেমে।’

–‘আম্মু তুমি জানতে ও আসবে?’

–‘হ্যাঁ!’

–‘তাহলে আমাকে কেন বলো নি?’

–‘ও কাম অন রিমি! আমি ফ্লাইট থেকে খালামনিকে কল দিয়ে বলি তোকে বাসায় আসার জন্য। আর এখানে দেখি মেঘ না চাইতেই জল। শুনি তুই আজই বাসায় এসেছিস। তাই তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এসে পরলাম। আর খালামনিকে আমি মানা করে দিয়েছিলাম তোকে যেন কোনো কিছু না বলে।’

–‘আমি তোমাদের দু’জনের সাথে রাগ করেছি। যাও আর কথা নাই তোমাদের সাথে।’

–‘ও আমার জানটুস, রাগ করে না। যদি রাগ করিস, তাইলে আমি চলে যাচ্ছি।’

–‘এই না, না! আমি রাগ করি নি। কোথাও যাওয়া লাগবে না তোর!’

–‘এইনা হলে আমার জানটুসটা! আচ্ছা আমি যাই এখন ফ্রেশ হয়ে নেই। তারপর কিছু খেয়ে বসে আড্ডা দিব নি।’

–‘আচ্ছা যা!’
______________________🍁🍁

বিকেলে ছাদে বসে থেকে গল্প করছে রিমি আর মিতু।

–‘আচ্ছা মিতু লন্ডনে তোর কেমন কাটছিল?’

–‘তোকে কতবার বলব, আমাকে তিথী নামে ডাকতে। আমার ক্লজ মানুষ সবসময় তিথী নামে ডাকবে, এটাই আমি চাই। মিতু তো জাস্ট কলেজে।’

–‘অভ্যাস হয়ে গেছে রে। পাল্টাতে পারি না।’

–‘পাল্টাতে শিখ রিমি। আমার পছন্দ হয় না এটা।’

–‘আচ্ছা, রাগ করিস না। আমি চেষ্টা করব। এখন তুই বল তো তোর লন্ডনে কেমন কাটলো?’

–‘সত্যি বলতে জাস্ট অসাম! জানিস আমি যেদিন ফাস্ট কলেজে যাই, সেদিন কিছু ফ্রেন্ড বানিয়েছিলাম। ওরা অনেক ভালো, সাথে অনেক মিশুকও।’

–‘ওহ, তাইলে তো আমাকে দরকার নেই?’

–‘সে-টা কি একবারো আমি উচ্চারণ করেছি? এমন আজগুবি কথাবার্তা বলবি না। এখন তুই বল তো, তোর তো বিয়ে হলো। তো বর কেমন? মানে কি করে? তোকে নিশ্চয় অনেক ভালোবাসে তাই না?’

–‘আছে আমার বরটা ভালো। বাট একটা জিনিস ভালো লাগে না। তার অতীতে কি জানি হয়েছে, যার জন্য সে মাঝেমধ্যে অদ্ভুত বিহেভ করে। আমি যদি জানতে চাই। আমাকে একটুও বলে না।’

–‘এটা আমার কেমন কথা? নিজের লাইফ পার্টনারের থেকে কেন লুকায়? এটা তো ঠিক না।’

–‘সে-টা ওরে বুঝায় কে?’

–‘তো নাম কি তোর বর মানে আমার দুলাভাইয়ের?’

–‘রোমান! রোমান খান ওর নাম।’

রোমানের নাম শুনে মিতুর কাশি উঠতে থাকে।

–‘আরে, তোর আবার কি হলো মিতু? হঠাৎ কাশি উঠলো কেন?’

–‘না, তেমন কিছু না। এখন ঠিক আছি আমি।’

–‘গুড। চিনিস নাকি রোমানকে?’

–‘চিনব না কেন? দেশের এত বড় বিজনেসম্যানের ছেলে বলে কথা! পত্র-পত্রিকায় তো তার নামও ছাপে।’

–‘ওটা না! রিয়েল লাইফে তোর সাথে পরিচয় নাকি? মানে কথা বলেছিস, একসাথে থেকেছিস। এমন!’

–‘হ্যাঁ, আমি যে ভার্সিটিতে পড়তাম। রোমানও ঠিক ওই একই ভার্সিটিতে পড়ত। তুই তো ঢাকা ভার্সিটিতে চাঞ্জ পাস নি। তাই তো তোকে অন্য কলেজে চলে যেতে হলো। তখন আমার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলি।’

–‘হুম! তো এখন তাইলে রোমান যখন তার ভার্সিটির ফ্রেন্ডকে দেখবে, অনেক খুশি হবে তাই না?’

–‘উমহু! তুই ভুল বললি। আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড না, বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।’

–‘ওহ, আচ্ছা তোর আর রোমানের মধ্যে কি কোনো কিছু নিয়ে মিস আন্ডারেস্টিমেট আছে?’

–‘কই না তো!’

–’মিতু আমাকে মিথ্যা কেন বলছে? যদি না-ই থেকে থাকে, তাহলে রোমান এত ঘৃণা কেন করবে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে? মিতু তো লুকাচ্ছে কিছু একটা!’ (মনে মনে)

–‘ওহ, চল এখন নিয়ে যাই। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়!’

–‘চল!’

চলবে…..☘️☘️

In Depths of Love Part-04

0

#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০৪ ||
_________________________________________

–‘মিতু! মিতুর ছবি কেন এখানে? মিতুর সাথে রোমানের কি সম্পর্ক? উফফ! আবার কি নতুন কাহিনী এটা? কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি। আম্মুও বলছে না রোমান মানা করেছে বলে। রোমানও কিছু বলছে না। এখন সব সত্যিটা জানার একটাই উপায়! সে-টা হলো মিতু। হ্যাঁ, মিতুই পারে একমাত্র আমাকে সব খুলে বলতে।’

রিমি ডায়েরিটা ঠিক আগের জায়গায় রেখে ফোনটা হাতে নিল। তার মায়ের নাম্বার বের করে ডায়াল করল। কিছুক্ষন রিংটোন-টা বাজতেই ওপাশ রেখে ফোনটা রিসিভ হলো।

–‘ আসসালামু আলাইকুম আম্মুজান!’

–‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম আমার সোনাপাখি। মায়ের কথা তাহলে মনে পড়েছে এত দিনে? আমি তো ভেবেছিলাম ভুলেই গেছেন আপনি!’ (কিছুটা অভিমানী সুরে)

–‘কিহ যা তা বলছো আম্মু? মেয়ে কি কখনো তার মা-কে ভুলতে পারে?’

–‘নাহ! কিন্তু তুই নিজেই ভেবে দেখ কতদিন বাদে কল করলি? মায়ের কথা মনে পরলে নিশ্চয় ফোন করতি।’

–‘আচ্ছা সর‍্যি, আম্মু! ভুল হয়ে গেছে তোমার এই সোনাপাখির। এরপর প্রতিদিন তোমায় ফোন করে গল্প জুড়ে দিব। এখন হ্যাপি?’

–‘হুম, এই না হলে আমার মেয়ে। তা বল, কেমন আছিস?’

–‘আমি আছি ভালো। তুমি কেমন আছো? আর বাবা কেমন আছে?’

–‘আমিও ভালো আছি আর তোর বাবাও।’

–‘আম্মু একটা কথা জানার ছিল!’

–‘হ্যাঁ, বল।’

–‘মিতু এখন বর্তমানে কোথায় আছে? না মানে, পড়াশোনার জন্য তো বিদেশে চলে গিয়েছিল! রিধি আপুর বিয়ের কিছুদিন আগেই তো চলে গেল। চলে যাওয়ার পর পরই তো আপুর বিয়েটা হয়ে গেল। কয়দিন পরে আমারও। থাকতে পারল না কারো বিয়েতে। অনেক মিস করছি ওকে। দেশে কি খালামনিদের কাছে আসছে?’

–‘না, আসেনি। কিন্তু তোর খালার কাছে শুনেছিলাম দু-এক দিনের ভিতর না-কি দেশে আসতে পারে।’

–‘ওহ আচ্ছা! ও আসলে আমাকে খবর দিও আম্মু। ওর সাথে অনেক আড্ডা বাদ আছে।’

–‘অবশ্যই!’

–‘আম্মু, তাহলে এখন ফোন রাখছি। কাজ করতে হবে। নিজের খেয়াল রেখো।’

–‘তুইও নিজের খেয়াল রাখিস।’

–‘হ্যাঁ!’ বলে ফোনটা রেখে দিল রিমি।

–’কিছু তো একটা আছে মিতু আর রোমানের মধ্যে। তারা হয়ত দু’জন দু’জনকে অনেক ভালো করে চিনে। নাহলে মিতুর এতগুলো ছবি রোমানের ডায়েরিতে!না চিনলে এতগুলো ছবি থাকত না। আবার তিথী, তিথী নাম তো বাসার লোকজন আর ওর ক্লজ ফ্রেন্ডরা ছাড়া কেও জানে না। এই সমস্ত কিছুর সমাধান আমাকে বের করতেই হবে।’
__________________________🍁🍁

–‘হেই! আর ইউ ব্লাইন্ড? চোখে দেখেন না না-কি?’

–‘আই’ম রিয়েলি রিয়েলি সর‍্যি! আমি আসলে তাড়াহুড়োয় ছিলাম। খেয়াল করতে পারি নি আপনাকে। সর‍্যি!’

–‘ইট’স ওকে।’ বলে মিতু উঠলে নিলে রোমান তার হাত তার দিকে বাড়িয়ে দেয় উঠার জন্য। মিতুও রোমানের হাতটা ধরে উপরে উঠে পরে। আর হেল্প করার জন্য তাকে বলে,
–‘ধন্যবাদ আপনাকে।’

–‘ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম!’

–‘বাই দা ওয়ে, আপনি কোথাও যাচ্ছিলেন তাই না?’

–‘হ্যাঁ, আসলে আমি এই ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছি। তো ক্লাসরুম খুঁজছিলাম। এমনিতে লেট হয়ে গেছে, তাই তাড়াহুড়োয় থাকায় আপনাকে খেয়াল করি নি।’

–‘কোন ইয়ার? ফাস্ট ইয়ার না-কি?’

–‘জ্বী! ফাস্ট ইয়ারের সাইন্স বিভাগে।’

–‘ওহ, দেট’স গ্রেট! আমিও সেম। তাহলে চলো একজন সাথে রুম খুঁজি।’

–‘আচ্ছা চলুন।’

–‘উমহুহ! চলুন নয়, চলো। আমরা সেম ইয়ারে না? তাহলে তুমি করে বলা যেতেই পারে।’

–‘হুম, চলো।’

দু’জনে একসাথে রুম খুঁজতে লাগল। ফাস্ট ইয়ারের ক্লাসরুম খুঁজে পেলে দু’জনে ভিতরে ঢুকল। নিজেদের জন্য সিট খুঁজে নিয়ে বসে পড়ল।

এভাবেই তাদের বন্ধুত্ব আরো গভীর হতে থাকে। একদিন মিতু ভার্সিটির মাঠে রোমানকে দেখা করতে বললে রোমান ঠিক সময়মত চলে আসে। মিতুও চলে আসলে দু’জন একসাথে কফি খেতে যায়। কফি খাওয়ার এক পর্যায়ে মিতু বলে উঠে,
–‘রোমান তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।’

–‘হুম, তা বলো।’

–‘আমরা তো বন্ধু! তো তুমি কি আমার আরো ভালো বন্ধু মানে বেস্ট ফ্রেন্ড হবে?’

–‘বেস্ট ফ্রেন্ড?’

–‘হবে না বুঝি? তোমার নিশ্চয় বেস্ট ফ্রেন্ড আছে তাই না? ইট’স ওকে। ফ্রেন্ড হয়েই থাকব তাহলে।’

–‘দূর পাগলী! কেন হবো না? আর তাছাড়া আমারও কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড নেই।’

–‘তাইলে আজ থেকে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড।’

–‘ডান!’

–‘হুম! আমরা যখন এখন বেস্ট ফ্রেন্ড, তাহলে আমরা কেও একে অপরের থেকে কিছু লুকাবো না কখনো। সব কিছু শেয়ার করব। ঠিক আছে? আর এখন থেকে তুই করে বলব আমি আর তুইও আমায় তুই-ই বলবি।’

–‘ঠিক আছে।’

–‘আচ্ছা, শোন না! আমার না আরেকটা নাম আছে। সে-টা শুধু বাড়ির সবাই জানে আর সবাই ও নামেই ডাকে। তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই এখন থেকে তুই আমায় ও নামেই ডাকবি। ও-টা আমার ফেভারিট নেম। আমার দাদুর দেওয়া।’

–‘ওয়াও! সো নাইস। তো ওই নামটা কি?’

–‘তিথী!’

–‘অনেক কিউট নেম তো।’

–‘ধন্যবাদ।’

–‘ইউ আর ওয়েলকাম ম্যাডাম!’ রোমানের বলা এই কথা শুনে দু’জনেই হাসতে শুরু করে।

____________________________🍁🍁

অফিসে বসে অতীতের চিন্তায় মগ্ন ছিল সে। কারো শব্দে তার ভাবনার মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে।

–‘স্যার, আসতে পারি?’

–‘ওহ, মিলন! ভিতরে আসো।’

–‘স্যার, আপনি যে বাকি ফাইলগুলো চেয়েছিলেন? সেগুলো নিয়ে এসেছি।’

–‘টেবিলের উপর রেখে তোমার কাজে যাও।’

মিলন ফাইলগুলো রেখে তার কাজে চলে গেল। এদিকে রোমান বিরবির করে বলতে লাগল,
–’কত ভালো ছিল সে দিনগুলো! যখন আমরা কত মজা করতাম, কত আড্ডা দিতাম। কিন্তু কেন? কেন তিথী? কেন আমার সাথে এরকমটা করলি? এমনটা না করলেও পারতি তুই!’

চলবে……☘️☘️

~বি.দ্র: রিচেক দেওয়া হয় নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন~

In Depths of Love Part-03

0

#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০৩ ||
_________________________________________

–‘রোমান আমি আপনার থেকে কিছু জানতে চাই!’

–‘বলে ফেলো।’

–‘তিথী কে? আর কি এমন ঘটনা যার জন্য আপনি পাল্টে গেছেন?’

রোমান খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
–‘তুমি তিথীর কথা কি করে জানলে? ওয়েট, তিথীর কথা তো শুধুমাত্র আম্মু জানে। আর কেও না। তার মানে আম্মু তোমাকে বলেছে। এম আই রাইট?’

–‘আম্মু আমাকে তিথীর ব্যাপারে তেমন কিছুই বলে নি। জাস্ট এটুকু বলেছে তিথীর জন্য তোমার পাল্টে যাওয়া।’

–‘ওহ, ভালোই। আম্মুকে বারবার নিষেধ করার পরেও এতদিন পর তিথীর ব্যাপারটা তুলল তাইলে!’

–‘প্লিজ আম্মুকে ভুল বুঝবেন না। তিনি এটুকুই বলেছেন, এর বাহিরে আর কিছু বলেন নি। আমি অনেক জোরাজোরির পর এটাই উত্তর দিছে, যদি আমি জানতে বেশি ইচ্ছুক তাহলে যেন আপনার থেকে জেনে নেই। সে আর কিছু বলতে পারবে না। আম্মু আর কিছু বলতে না চাওয়ায় আমি আপনার থেকে শুনতে এসেছি বাকিটা। দয়া করে আমাকে সবকিছু খুলে বলুন।’

–‘রিমি, প্লিজ! এখন আমাকে এইসব ফালতু বিষয় নিয়ে ডিস্টার্ব করো না তো। এমনি অফিসে কাজের অনেক চাপ। তার উপর ফাইল বাসায় ভুলে ফেলে গেছি। যদি পারো তাইলে ফালতু কথাগুলো স্কিপ করে আমার ফাইলটা খুঁজতে হেল্প করো আমায়। আর না পারলে চুপচাপ বসে থাকো।’

–‘আচ্ছা আমি ফাইলটা খুঁজে দিচ্ছি। কিন্তু তার মানে এটা নয়, আমি তিথীর ব্যাপারে জানার জন্য তোমাকে আর ফোর্স করব না। রাতে বাসায় আসো, তখন না হয় তোমাকে আবার আস্ক করব।’ বলে রিমি ফাইল খুঁজতে লাগল। ওদিকে রোমানও আলমারিতে খুঁজতে শুরু করল।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর দু’জনের কেও ফাইলটা পেল না। রোমান হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পরলো। রিমি রোমানকে কিছু বলতে যাবে তার আগে টেবিলের দিকে চোখ পরতেই সে সেখানে একটা ফাইল দেখতে পেল। মুখে হাসি বিরাজ করে টেবিল থেকে ফাইলটা নিয়ে যে-ই রোমানকে দিতে আসবে, ঠিক সে সময় রিমির শাড়ির আঁচলের সাথে বেঁধে কিছু একটা নিচে পড়ে যায়! রিমি তুলতে নিলে রোমান বসা ছেড়ে দ্রুত এসে নিচে পড়ে যাওয়া ডায়েরিটা তুলে নেয়।

রিমি ভ্রু কুঁচকে কতক্ষণ রোমানের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর জিজ্ঞেস করল,
–‘ডায়েরিটা তো আমি তুলছিলাম। তাহলে এভাবে তুলে নেওয়ার মানে কি?’

–‘আমার ডায়েরি! আমি কি করব না করব? কাকে ধরতে দিব আর না দিব? ইট’স টোটালি মায় উইস।’

–‘ঠিক আছে। বাট আমি তো জাস্ট তুলতেছিলাম, আর কিছু তো নয়।’

–‘আর যাই করো, তাই করো। বাট এই ডায়েরিটা কখনো তুমি ধরবে না। এটা আমার পারসোনাল ডায়েরি। আজ অব্দি কেও এটা ধরার সাহস পায় নি। আশা করি, তুমিও ধরবে না।’

–‘বাহ রে! কেও ধরার সাহস না পেলেও আমি ধরার রাইট রাখি। আমি আপনার বউ হিসেবে অবশ্যই আপনার পারসোনাল জিনিস সম্পর্কে জানতেই পারি।’

–‘না! সব রাইট থাকলেও, এই রাইট-টা নেই তোমার। মাথায় থাকে জানি কথাটা।’

রিমি কিছু বলতে যাবে তার আগে রোমান হাত উঁচু করে রিমিকে থামিয়ে দিয়ে নিজে আবার বলল,
–‘আমি আর এইটা নিয়ে কোনো প্রকার কথা শুনতে চাচ্ছি না।’ বলে ডায়েরিটা আলমারিতে গিয়ে রেখে দিল।

–‘আমার ফাইলটা!’

–‘হুম….!’

–‘আমার ফাইলটা কি দিবে না? অফিসে যেতে লেট হয়ে যাবে তো।’

–‘ওহ, সর‍্যি! এই নিন আপনার ফাইল।’ (ফাইলটা রোমানের দিকে এগিয়ে দিয়ে)

রোমান ফাইল হাতে নিয়ে গড়গড় করে বেরিয়ে গেল। আর রিমি ওর যাওয়ার পানে চেয়ে রইল। তারপর ধপ করে বিছানায় বসে ভাবতে লাগল,
–’আম্মু বললেন তিথীর জন্য রোমানের বদলে যাওয়া! তিথীর কথা শুধুমাত্র আম্মু-ই জানে। আর সে-টা কাওকে বলতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন? কি এমন ঘটেছে রোমানের সাথে? কি এমন করলো তিথী? সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। ওয়েট, রোমানের পারসোনাল ডায়েরি! হ্যাঁ, রোমান তো বললো এই ডায়েরি ধরার সাহস আজ অব্দি কেও পায় নি। আবার আমাকেও বারবার মানা করা হচ্ছিল ধরার জন্য। তার মানে আমার সব প্রশ্নের উত্তর ওই ডায়েরিতে পাব আমি? পেতেও পারি।’

রিমি দ্রুত উঠে আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে ডায়েরিটা খুঁজতে লাগল। সব জামা-কাপড় সরিয়েও পেল না। কিন্তু ওর যথেষ্ট খেয়াল আছে রোমান আলমারিতেই ডায়েরিটা রেখেছে। তাহলে ডায়েরিটা কই গেল? আলমারি বন্ধ করতে যাবে, তখন চোখ আলমারির এক কোণায় যায় তার। সেখানকার কাপড় সব সরিয়ে দেখতে পেল একটা ছোট লকার। এই লকারের কথা রিমি জানে না!

–‘লকার তো পেলাম, মনে হচ্ছে এটাতেই ডায়েরিটা রাখা। বাট লক তো আমি জানি না। এখন কি হবে? এক মিনিট, একদিন রোমানের ফাইগুলোর ভিতর ছোট্ট কাগজে কিছু সংখ্যা লিখা ছিল। আমি দেখামাত্র রোমান হাত থেকে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছিল। সে-টা ট্রাই করে দেখব? একবার করেই দেখি।’

লকারটার কাছে গিয়ে রিমি মনে করতে থাকল৷ কি লিখা ছিল।

–‘হ্যাঁ,মনে পড়েছে।’

রিমি ট্রাই করতেই লকারটা খুলে গেল। রিমি তো সেই খুশি। ভিতরে সেই ডায়েরিটাও পেয়ে গেল। ডায়েরি হাতে নিয়ে আলমারি লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। আবার সে পড়ল আরেক বিপদে! ডায়েরিটাতেও লক। এবার?’

বলে ভাবনার মাঝে ডুব দিল। কি হতে পারে লক?

–‘নাহ, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না। আম্মুকে একবার আস্ক করব? হ্যাঁ, তাই করি। বাট ডাইরেক্ট না করে ইন- ডাইরেক্টলি করতে হবে।’

সায়রার রুমের কাছে এসে দরজায় নক করল রিমি।
–‘আম্মু আসতে পারি?’

সায়রা তখন রুম গুছাচ্ছিল। রিমিকে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
–‘নক করার কি আছে? ভিতরে চলে আসো। রোমান কি চলে গেছে?’

রিমি ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
–‘হ্যাঁ,আম্মু! উনি চলে গেছেন। আম্মু আমার একটা প্রশ্ন ছিল!’

–‘বলো।’

–‘আচ্ছা, রোমান তার পাসওয়ার্ড কি দিতে পারে? মানে তার ভালো লাগার কোনো কিছু না-কি খারাপ? কোনটা আম্মু?’

–‘হঠাৎ এমন প্রশ্ন যে!’

–‘না, মানে আম্মু এমনিই। জানার খুব ইচ্ছে হলো।’

–‘খারাপ লাগার জিনিস বলতে তো ওর বেশি কিছু নেই। বাট ও যখন আমার সাথে গল্প করতে আসত, তখন বলত আম্মু আজ এই জিনিসটা আমার খারাপ লেগেছে। এটা আমি সবসময় মনে রাখব, কোনো না কোনো কিছু ভাবেই। তো সেই ক্ষেত্রে সেই খারাপ লাগাটাকে মনে রাখার জন্য হয়ত পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। আমি সিউর নই।’

–‘এটুকুই যথেষ্ট আমার জন্য। ধন্যবাদ!’

রিমি চলে যেতেই সায়রা বিরবির করে বলল,
–‘আমি বুঝতে পারতেছি রোমান তোমাকে কিছু বলেনি। আর বলবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু তুমি রোমানের ব্যাপারে জানতে চাও। তাই আমাকে এত কিছু আস্ক করছো। ভালো, খুব ভালো।’

রিমি ডায়েরি নিয়ে ফাস্টে তিথীর নামে লিখে দিল। কিন্তু খুলল না। পরে মনে করতে থাকল সায়রার বলা কথাগুলো ভালো করে। তারপর অনেক ভেবে সে “Tithi, I hate you” দিল। সাথে সাথে খুলে গেল। রিমি যেন হাতে গুপ্তধন পেল। এতটা খুশি সে! ডায়েরি খুলে ফাস্টে বড় বড় করে লিখা তিথী। কয়েক পেজ যেতেই একটা মেয়ের ছবি দেখতে পেল রিমি। ছবিটা দেখে রিমির চোখ ছানাবড়া!

চলবে…..☘️☘️

In Depths of Love Part-02

0

#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০২ ||
___________________________________

রোমানের ঘুম ভেঙে গেলে পাশে রিমিকে দেখে এক আকাশ পরিমাণ অবাক হয়! কেননা কাল যে ব্যবহার করেছে, তার পরে রিমি যে ওর কাছে আসবে; সে-টা রোমানের কল্পনার বাহিরে ছিল। কিন্তু রিমিকে দেখে রোমানের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। তার ভালোবাসা যে তাকে ভুল না বুঝে, তার কাছে এসেছে এটাই তার কাছে অনেক বড় পাওয়া।

রিমি রোমানের মুখের সামনে হাতের তুরি বাজিয়ে বলে উঠে,
–‘ওহ হ্যালো! ওভাবে কি তাকিয়ে আছেন? ভূত-প্রেত দেখলেন নাকি আবার?’

–‘ভূত-প্রেত নয়, বরং একটা পরী দেখেছি। কি অপরূপ মায়ায় ভরা তার চেহারা!’

–‘আপনার কি মাথাটা গেছে? না-কি কাল রাতে বেশি ড্রিংকস করার ফলাফল এটা? কোনটা?’

–‘উহুহহহ! আমার মাথা একদম ঠিক আছে।’

–‘যদি ঠিকই থাকত, তাইলে আপনি এই দিন-দুপুরে পরী কই দেখলেন? শুনি!’

–‘চোখের সামনে যদি এত রূপসী মেয়ে থাকে, তাহলে কি করব? বলো! মেয়েটা তো আর পরীর চেয়ে কম না!’

রিমি চারদিক ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। রোমান রিমির কর্মকাণ্ডে হু হা করে হেসে দিল। রোমানের এরূপ হাসি দেখে রিমি বলল,
–‘কি হলো কি আবার? আপনি এভাবে পাগলের মত কেন হাসছেন?’

–‘তোমার কাজ দেখে!’ বলে আবার অট্টহাসিতে মেতে উঠল

–‘আমি আবার কি করলাম? যে এত হাসা লাগবে আপনার!’

–‘তুমি নিশ্চয় এতক্ষন আমার কথাটা শুনে পরী খুঁজছিলে?’

–‘ইইয়ে মানে….!’

–‘কি তাইতো?’

–‘হুম।’

রোমান বসা থেকে উঠে এসে রিমির পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল। আচমকা এমন হওয়ায় রিমি খানিকটা ঘাবড়ে যায় এবং শুকনো একটা ঢোক গিলে।
রিমিকে রোমান তার কাছে টেনে নিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
–‘এইযে! এই মেয়েটা হলো পরী। আমার ছোট্ট রাজ্যের পরী!’

রোমানকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল,
–‘আপনার পাগলামি কথাবার্তা আপনার কাছেই রাখুন। এখন আমার প্রশ্নের জবাব দিন তো! বেলকনির এই অবস্থা কি করে?’

–‘তেমন কিছু না! কাল রাতে মাথায় অনেক রাগ, সাথে কষ্ট হয়েছিল তাই একের পর এক ড্রিংকসের বোতলগুলো ভেঙেছি।’

—’যত্তসব ন্যাকামো! আমারে কাল ওভাবে বকে, হার্ট করে এখন বলতেছে তার রাগ আর কষ্টের জন্য নাকি বোতল ভেঙেছে। লাইক সিরিয়াসলি? আপনি আর কষ্ট! যদি কষ্টটা বুঝতেন তাহলে এভাবে আমাকে এত কষ্ট দিতেন না। দেওয়ার আগে অনেক বার ভাবতেন।’
(বিরবির করে কথাগুলো বলল)

–‘কিছু কি বললে তুমি?’

–‘ক…কই…কিছু বলি নি তো আমি!’

–‘মনে হলো কিছু বললে। যাই হোক সার্ভেন্ট ডেকে এগুলো পরিষ্কার করিয়ে নিও। আমি ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম।’

রিমি দু’দিকে মাথা দুলিয়ে “হ্যাঁ” জবাব দিল। রোমান ওয়াশরুমে যেতে রিমি সার্ভেন্টকে ডেকে বেলকনি পরিষ্কার করতে বলে নিজে অন্য রুমে ফ্রেশ হতে গেল।
.
.
.
ড্রাইনিং টেবিলে বসে সবাই খাবার খাচ্ছে। খেতে খেতে সায়রার চোখ রিমির হাতের দিকে যায়। রিমির হাতে ব্যান্ডেস দেখে রিমিকে প্রশ্ন করল,
–‘রিমি মা! তোমার হাতে কেটে গেছে কিভাবে?’

প্রশ্ন শুনে রিমির কাশি উঠে যায়। হঠাৎ এমন প্রশ্নের সম্মুখীন সে হবে ভাবতে পারে নি! সে রোমানের দিকে তাকিয়ে দেখল সে নিশ্চিন্তে বসে খাচ্ছে। তার কাছে কোন ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে না।

–‘আসলে আম্মু, কাল রূপার রিসিপশনে গিয়েছিলাম না? ওখানে কাঁচের গ্লাস হাত থেকে পড়ে ভেঙে যায়। ওই ভাঙা কাঁচ হাতের ভিতর ঢুকে এই অবস্থা!’

–‘আমাকে আগে কেন বলো নি? এতটা কেয়ারলেস হলে কি হয়? এরপর থেকে সমসময় খেয়াল রাখবা নিজের। মনে থাকে জানি?’

–‘হ্যাঁ, আম্মু! মনে থাকবে এরপর থেকে।’

খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে রোমান বলল,
–‘আম্মু, আমি তাহলে কাজের জন্য বের হচ্ছি।’

–‘আচ্ছা বাবা! সাবধানে দেখে যাস।’

রোমান মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল। আর এদিকে সবাই যার যার মত খাওয়া শেষে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

রিমি উপরে যেতে নিলে পিছন থেকে সায়রা ডেকে বলল,
–‘রিমি মা! তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তাই তুমি আগে আমার সাথে আমার রুমে চলো।’

–‘আচ্ছা চলেন আম্মু।’

দোতলায় এসে সবার প্রথমের রুমে ঢুকে সায়রা দরজা লাগিয়ে দিল। রিমির পাশে গিয়ে বসে বলতে লাগল,
–‘আমি তো তোমার মা-ই তাই না? তাহলে আমার থেকে মিথ্যা লুকিও না।’

–‘আ..আমি কি লুকালাম আপনার থেকে আম্মু?’

–‘তোমার হাত কিভাবে কেটেছে? আমি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছি। রোমানের জন্যই তোমার হাত কেটে গেছে তাই না?’

–‘না, আম্মু! রোমানের জন্য আমার হাত কাটে নি।’

–‘মিথ্যা কেন বলছো? সত্যিটাই বলো। নিজের ছেলে বলে যে তুমি তার নামে আমার কাছে বিচার দিতে পারবা না বা সে তোমাকে কষ্ট দিলে সে-টা বলতে পারবা না! এমনটা কিন্তু নয় রিমি।’

–‘সর‍্যি আম্মু। আমি এই কথা বলে আপনাকে টেনশনে ফেলতে চাই নি।’

–‘সর‍্যি বলতে হবে না আর। আমি বুঝতে পেরেছি। আর একটা কথা তোমায় বলি। অবশ্য আমি পুরো কাহিনিটা তোমায় বলতে পারব না, নিষেধ আছে। বাট সামান্য একটু বলতেই পারি।’

রিমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
–‘কি কাহিনী আম্মু?’

–‘আসলে আমার ছেলে আগে একদম এরকম ছিল না। কিন্তু তিথী নামের এক মেয়ের জন্য এমন হয়ে গেছে। আমার ছেলের মেয়েদের প্রতি কোনো প্রকার নেশা ছিল না। কিন্তু ও তোমাকে প্রথম দেখে অনেক ভালোবেসে ফেলছে। প্লিজ ও রাগের মাথায় কিছু বললে তুমি একটু মানিয়ে নিও। দেখো তোমার ভালোবাসা পেয়ে অতীতের সব ঘটনাগুলো ভুলে যাবে।’

–‘কি ঘটনা আম্মু?’

–‘সর‍্যি মা! এটা আমি তোমাকে বলতে পারব না। রোমান নিষেধ করে দিছে আমায় এই ঘটনাগুলো কাওকে বলতে। যদি জানার বেশি ইচ্ছে থাকে তাহলে রোমানের কাছে থেকে জেনে নিও।’

–‘আম্মু প্লিজ আপনি বলেন আমাকে। রোমান এই বিষয়ের কোনো কিছু জানতে পারবে না।’

–‘আমাকে জোর করো না রিমি। আমি বলতে পারব না।’

–‘প্লিজ আম্মু, আমাকে বলেন ঘটনাটা!’

–‘আমি পারলে বলতাম। বাট আমি পারব না।’

–‘আম্মু প্লিজ!’

হঠাৎ দরজার পাশ থেকে কেও একজন উঁচু গলায় বলল,
–‘কি হচ্ছে এখানে? কি জানার ব্যাপারে এত রিকুয়েষ্ট করা হচ্ছে?’

রিমি আর আহানা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রোমান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে।

–‘রোমান তুই না অফিসে গেলি কাজে? আবার এলি যে?’

–‘আসলে আম্মু আমি একটা ফাইল ভুলে গেছি। সে-টাই নিতে এসেছিলাম। বাট যাওয়ার সময় রুমে এত চ্যাঁচামেচি শুনে দাঁড়ালাম। বাই দা ওয়ে, তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছিলে?’

–‘কই? কিছু না তো। তুই তোর কাজে যা, নাহলে লেট হয়ে যাবে।’

–‘হ্যাঁ যাচ্ছি।’

রোমান রুমে চলে গেলে রিমিও সায়রাকে বলে রোমানের পিছুপিছু রুমে চলে আসে।

চলবে……☘️☘️

In Depths of Love Part-01

0

#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| সূচনা পর্ব ||

রিমির ঠোঁট দিয়ে অঝোরে রক্ত বেরিয়েই যাচ্ছে! হাতের অবস্থাও খুব একটা ভালো না! রিমি কোনো কিছু করতে পারছে না, শুধু বসে থেকে নিজের চক্ষু জোড়া দিয়ে অজস্র অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। রিমির চোখের সামনে কিছুক্ষন আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভাসতেই ওর গাঁ কেঁপে উঠছে!

ফ্ল্যাশব্যাক………..🍁🍁

রিমি আর রোমান রূপার রিসিপশনে গিয়েছিল। রূপা হলো রিমির বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর বিয়ের কোনো ফাংশনে রিমি এটেন্ড করতে পারে নি। পারবে কি করে? রোমান তো ওকে আসতেই দেয় নি। রিসিপশনেও আসতে দিবে না! কিন্তু রূপার এত জোরাজোরির কাছে হার মেনে রোমান রিমিকে নিয়ে আসে। এসেই তো ঘটে বড় এক বিপত্তি! তার চেয়ে না আসায় মনে হয় শ্রেয় ছিল!

রিমি একটা কাতান শাড়ি পরেছে। রিমি দেখতে এমনিই সুন্দর। আর সে হালকা সাজ দিয়েছে। যাতে করে ওকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কিছু ছেলে রিমির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিল, যেটা রোমানের চক্ষুগোচর হয় নি। তার উপর ছেলেগুলো বলাবলি করছিল মেয়েটা সেই! এতে রোমানের মেজাজ বিগড়ে যায়। সে সেখানে ছেলেগুলোকে বেধরম মারে। এক পর্যায়ে ছেড়ে দেয় আর রিমিকে নিয়ে অনুষ্ঠান ছেড়ে গাড়িতে নিয়ে এসে বসায়। নিজেও বসে পরে আর ফুল স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। রাস্তায় দু’জনের একজনো “টু” শব্দটি পর্যন্ত করে নি।

বাসায় পৌঁছাতেই রিমিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসতে লাগে। অনেক রাত হওয়ায় সবাই ঘুমিয়ে পরেছিল আর রোমানের কাছে বাড়ির আরেকটা চাবি ছিল। তার জন্য কোনো প্রবলেম হয় নি। রিমিকে টেনে একেবারে রুমে নিয়ে এলো রোমান। এসে ওকে বিছানায় ছুড়ে মেরে দরজা লাগিয়ে দিল। আকস্মিক ঘটনায় রিমি ঘাবড়ে গেল। কেন জানি ওর মন বলছিল, “আজ অনেক বড় বিপদ হতে চলেছে ওর সাথে”। রোমান দরজা লাগিয়ে সোজা রিমির দিকে এগিয়ে এসে ওর চুলের মুঠি ধরে ওকে টেনে তুলল। এতে রিমি ব্যথায় কুকিয়ে উঠে। রোমান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কড়া গলায় ওঠে,

–‘বেশি বার বেড়েছিস তাই না? কে বলেছে তোকে এই পাতলা শাড়ি পরতে? দেখলি না ছেলেগুলো কিভাবে তোর দিকে তাকিয়ে ছিল? এত শখ কেন নিজের শরীর অন্যদের দেখানোর? বল!’

রিমি কোনো রকমে বলে,
–’আ…আমি তো পা…পাত….পাতলা শাড়ি পরি ন……..!’

রিমি ওর পুরো কথা শেষ করতে পারল না! তার আগেই রোমান টেবিলে থাকা গ্লাস ছুড়ে ফেলে। গ্লাসটা পরে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। রিমি তো একদিকে ভয়ে, অন্যদিকে ব্যথায় মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। রোমান রাগে রিমিকে ধাক্কা দিয়ে বাহিরে বেরিয়ে যায়! ধাক্কাটা খুব জোরে মারায় রিমি টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায় আর ওর ঠোঁট, হাত সেই ভাঙা গ্লাসের টুকরোর সাথে লেগে কেটে যায়।

বর্তমানে…………🍁🍁

রিমি অনেক কষ্টে উঠে ড্রেসিং টেবিলের দিকে হাঁটতে লাগল। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় রিমির চোখ পরতেই ও দেখল, ওর ঠোঁটের রক্তগুলো জমাট বেঁধে ঠোঁটটা ফুলে উঠেছে। কান্না করার ফলে রিমির চোখের কাজলটা লেপ্টে গেছে, চোখ জোড়াও ফুলে গেছে। রিমি আর না ভেবে ড্রেসিং টেবিলের উপরে থাকা ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে ওর ঠোঁট আর হাতের রক্তগুলো পরিষ্কার করে ফেলল। সাথে মলমও লাগিয়ে নিল। তারপর আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে ড্রেস বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে ঢুকে গেল।

(চলুন এবার পরিচিত হয়ে নেওয়া যাক, কে এই রিমি? আবার কে এই রোমান?

রিমি হলো আমির শেখ আর আহানা শেখের মেয়ে। রিমিরা দুই বোন। রিমির বড় বোনের নাম রিধি, ওর কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়ে গেছে। আর রিমি হলো ছোট, যার বিয়ে হয়েছে এই রোমানের সাথে।

এদিকে, রোমান হলো সাজ্জাদ খান আর সায়রা খানের একমাত্র ছেলে। রোমানদের পরিবার হলো যৌথ পরিবার মানে ওর মা-বাবা, দাদী, চাচা-চাচি, তাদের ছেলে-মেয়ে, ফুপি সবাই মিলে একসাথে থাকে। আপাতত এটুকুই যথেষ্ট! বাকিটা গল্পে ধীরে ধীরে জানতে পারবেন)

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে রিমি। কিছুটা রাগে আর ক্লান্তিতে সে না খেয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষন বাদে সে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।
.
.
.
এদিকে, রোমান বারে বসে ড্রিংকস করছে আর ওই ছেলেগুলোর কথা ভেবে রাগে কটমট করছে। করাটাই স্বাভাবিক! রোমান যে রিমিকে না অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারে, না কেও ওর দিকে চোখ তুলে তাকায় সেটা পারে! গ্লাস চুমুক দিতেই খেয়াল করে ওর গ্লাসের ড্রিংকস শেষ। বারে থাকা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে খানিকটা চেঁচিয়ে বলে,

–‘এই আমার গ্লাস ফাঁকা দেখতে পাচ্ছিস না? তাড়াতাড়ি আমার গ্লাসে ড্রিংকস দে!’

রোমানের চেঁচানো শুনে সামনে থাকা ছেলেটা ঘাঁবড়ে যায়! সে দ্রুত বোতল থেকে রোমানের গ্লাসে ড্রিংকস ঢেলে দেয়।

রোমান গ্লাসে কয়েক চুমুক দিতেই ওর চোখটা হঠাৎ ওর হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে যায়। ও খেয়াল করে দেখল ১১:৪৭ বাজে! কি জানি ভেবে ড্রিংকস এর গ্লাস হাত থেকে রেখে কোর্ট কোন রকমে কাঁধে ঝুলিয়ে টলতে টলতে বাহিরে বেরিয়ে আসে। এসে গাড়ির দরজা খুলে সে ভিতরে বসে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। সামনে তাকিয়ে সবকিছু ঝাপসা দেখতে পায় রোমান। তাই মাথাটা নাড়িয়ে, চোখ জোড়া হাত দিয়ে কচলে নেয়। পরে যখন ঘোলাটে ভাব কমে গিয়ে চারদিকে স্পষ্ট দেখতে পেল, তখন গাড়ি স্টার্ট দিল। আপন গতিতে গাড়ি চালাতে থাকে রোমান। একেবারে বাড়ির গেটের সামনে এসে গাড়িটা দাঁড় করায়।

বিরবির করতে করতে সে তার রুমে গিয়ে পৌঁছাল। দরজা লাগিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে কেও একজন বিছানায় ঘুমিয়ে রয়েছে। রোমান ভালো করে খেয়াল করে দেখল মেয়েটা আর কেও না, বরং রিমিই! রোমান বেডের কাছে গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসল। রিমিকে ভালো করে পরক করে দেখতে লাগল সে। রিমির হাতের দিকে চোখ যেতেই দেখল হাত ব্যান্ডেজ করা। ব্যান্ডেজের উপরে রক্তগুলো ভেসে উঠেছে। আনমনেই রোমান বলে উঠে,

–‘ আই’ম সর‍্যি, রিমি! আমি তো তোমাকে হার্ট করতে চাই নি। ওই ছেলেগুলো যেভাবে বলাবলি করছিল, আবার তার উপর অতীতের ঘটনা! দু’টো মিলিয়ে আমি আমার রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারি নি। আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি রিমি। কিন্তু সে-টা আমি প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। যদি তুমিও আমাকে চিট করো! না, এ কিছুতেই আমি হতে দিব না।’ বলে রোমান সোজা বেলকনিতে গিয়ে সেখানে থাকা রকিং চেয়ারে বসে আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
_______________🍁🍁

জানালা ভেদ করে করে আসা রোদটুকু রিমির চোখে পরতে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে সে। হাত দিয়ে মুখটা আড়াল করতে চাইলেও পারে না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই শোয়া থেকে উঠে বসল। চোখ কচলিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কাওকে পেল না। কিন্তু চোখগুলো তো বড্ড অবাধ্য! খুঁজেই চলেছে বারবার। একপ্রকার বিরক্তি নিয়েই রিমি বেলকনির দিকে পা বাড়ালো। সেখানে রকিং চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে যেন রিমির চোখে জোড়া তৃষ্ণা মেটাল। কিন্তু বেলকনির আর রোমানের এই রকম অবস্থা দেখে রিমির কেমন যেন ভয় বিরাজ করতে লাগল!

চলবে…..☘️☘️