Thursday, June 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1452



তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

1

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ১২(শেষ)
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

মিনি কি করবে?ভেবে পাচ্ছেনা।ধুর….শাওয়ারটা নিয়েই নি।এরপর যা হওয়ার হবে।মিনি শাওয়ার নিচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাইছে।একবার ফ্লোরে তাকাচ্ছে তো একবার পানির ট্যাপের দিকে তাকাচ্ছে।আবার আয়নায় নিজের দিকে তাকাচ্ছে।হঠাৎ ঘাড়ের দিকের দাগটা নজরে পড়তেই লজ্জায় মিইয়ে গেলো মিনি।ইশ কি লজ্জা।কাল রাতের কথা মনে পড়তেই মিনি যেন আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকাতেও লজ্জা পাচ্ছে।দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো মিনি।

অনেক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও যখন মিনি ওয়াশরুম থেকে বেরুচ্ছে না।কি করছে কি মেয়েটা এতোক্ষণ?তারপর স্পর্শ বার কয়েক মিনিকে ডাকলো।কিন্তু সাড়া পেলো না।এবার দরজার সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।

মিনি ভেতর থেকে চিৎকার করে বলছ,
কি সমস্যা আপনার?দরজা ধাক্কাচ্ছেন কেন?শান্তিতে কি গোসল ও করতে দিবেন না?

স্পর্শের মেজাজ বিগড়ে গেলো।এতোক্ষণ ধরে ডাকছে সাড়া দিচ্ছে না এখন আবার উল্টো রাগ দেখাচ্ছে?স্পর্শ কিছুটা শক্ত কন্ঠেই বলল,

এতোক্ষণ লাগে গোসল করতে?তাড়াতাড়ি বের হও।

মিনি বলল,আমার জামাকাপড় দেন আগে।তারপর বের হবো।

স্পর্শ যেন এই কথাটার অপেক্ষায়ই ছিলো।মুখে দুষ্টু হাসি নিয়েই বলল,আমি পারবোনা।তুমি এসে নিয়ে যাও।

মিনি মনে মনে বলতে লাগলো বেটা বদের হাড্ডি তুই যে এরকম কিছুই বলবি সেটা আমার আগে থেকেই জানা ছিলো।এবার দেখ আমি কি করি।

কিছুক্ষণ কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে স্পর্শ আবারো দরজা ধাক্কাতে যাবে ভেতর থেকে জোরে কিছু পড়ার শব্দ হলো।সাথে সাথে ভেসে এলো মিনির চিৎকার।

স্পর্শ বিচলিত কন্ঠে বলল,মিনি?মিনি কি হয়েছে?তুমি ঠিক আছো তো?দরজা খোলো।

মিনি ব্যথাতুর কন্ঠে বলল,পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছি।আপনি জামাকাপড় দিন আমি বেরিয়ে আসছি।ও,,,মা,,,গো।

তুমি একটু কষ্ট কর আমি আসছি
জামাকাপড় নিয়ে।বলল স্পর্শ।

মিনি চিৎকার করে বলল,নাহহহহ।না মানে আপনাকে আসতে হবে না।আপনি শুধু জামাকাপড় দিয়ে দিন।আমি বেরোবো আমার কষ্ট হচ্ছে।

স্পর্শ আর কথা না বলেই দরজা হালকা খুলে মিনির হাতে জামাকাপড় দিয়ে দিলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মিনি চেন্জ করে বেরিয়ে আসলো।কি সুন্দর হেলে দুলে হাটছে মিনি।স্পর্শ হন্তদন্ত হয়ে মিনির পা চেক করছে।

দেখি কোন পায়ে লেগেছে?(স্পর্শ)

পায়ে আবার কি হবে?(মিনি)

কি হবে মানে?তুমি না পড়ে পায়ে ব্যথা পেলে?অবাক হয়ে বলল স্পর্শ।

মিনি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,ঢপ দিলাম এসব না করলে তো আপনি আমাকে জামাকাপড়ই দিতেন না।এরপর মিনি হলরুমে চলে গেলো।

স্পর্শ বোকার মতো চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ।তারপর নিজেই নিজের কপাল চাপড়ে বলল,হায়রে স্পর্শ এতোদিনেও এই মেয়েকে চিনলি না?

ব্রেকফাস্ট শেষে মিনি স্পর্শ দুজনেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।লুকিং গ্লাসে মিনির নজর যেতেই দেখলো ওর গলার,ঘাড়ের বাইটের দাগ গুলো দেখা যাচ্ছে।যেগুলো গতকাল রাতে স্পর্শ দিয়েছিলো।মিনি আৎকে ওঠে কলেজে গিয়ে এগুলো দেখা গেলেতো প্রচন্ড লজ্জায় পড়তে হবে।এইসব ভেবে ওড়না দিয়ে ভালোভাবে নিজেকে আবৃত করে নিলো মিনি।

মিনির অবস্থা দেখে স্পর্শ মিটিমিটি হাসছে।শেষে বেশ শব্দ করেই হাসলো।

মিনি স্পর্শের হাসির কারণ খুঁজে না পেয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো স্পর্শের দিকে।

স্পর্শ দুষ্টু হেসে বলল,সবাইকে তো দেখতে হবে তোমার হাজবেন্ড তোমায় কতোটা ভালোবাসে।

মিনির মাথায় যেন ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।একে তো নিজে মিনির এই হাল করেছে।এখন আবার পিঞ্চ করে কথা বলছে?

মিনি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,সবাইকে দেখানো উচিৎ রাইট?

স্পর্শ মাথা নাড়ালো।

মিনি এবার স্পর্শকে গাড়ি থামাতে বলল।

স্পর্শ গাড়ি না থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেন?

মিনি রাগি কন্ঠে বলল,আপনি গাড়ি থামাবেন কি-না?

স্পর্শ গাড়ির গতি কমিয়ে গাড়ি থামায়।গাড়ি থামাতেই মিনি ঝাপিয়ে পড়ে স্পর্শের উপর।স্পর্শের ঠোঁট কামড়ে দিয়ে সরে আসে।এরপর বলে,সবার দেখা উচিৎ মিশান চৌধুরী স্পর্শের বউ তাকে কতোটা ভালোবাসে।

স্পর্শ থম মেরে বসে রইলো।ও ভাবতেই পারেনি মিনি এরকম একটা কাজ করবে।এরপর স্পর্শ মিনির কোমরে এক হাত ও ঘাড়ের পেছনে একহাত দিয়ে মিনির ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরে।মিনি প্রথমে ছাড়াতে চাইলেও পরে স্পর্শের সাথে রেসপন্স করে।মিনিট দুয়েক পর স্পর্শ মিনিকে ছেঁড়ে দিতেই মিনি জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।স্পর্শ মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

হাসপাতালের করিডোরে সবাই পায়চারি করছে।মাইশার ডেলিভারি পেইন উঠেছে।দেখতে দেখতে মাইশার প্রেগ্ন্যাসির দশমাস কেটে গেছে।এখন মাইশা অপারেশন থিয়েটারে আছে।শাওন ওটির সামনে পায়চারি করছে।টেনশনে চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে।বাবা মা ও টেনশনে আছেন।স্পর্শ মাথা নিচু করে একটা বেঞ্চে বসে আছে।আমি স্পর্শের কাঁধে হাত রাখতেই স্পর্শ আমার হাতটি আঁকড়ে ধরে।

একটুপরই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা গেলো।খুশিতে সবার চোখেমুখের দুশ্চিন্তা কেটে গিয়ে একরাশ আনন্দ এসে ভর করলো।ডক্টর বেবিকে শাওন ভাইয়ার কোলে দিয়ে বলল,

কংগ্রাচুলেশনস মিঃশাওন আপনি ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছেন।

বেবিকে কোলে নিয়ে শাওন ভাইয়া ডক্টর কে জিজ্ঞেস করলেন,আমার ওয়াইফ কেমন আছে?

ডক্টর মুচকি হেসে বললেন,
আপনার ওয়াইফ সুস্থ আছেন,একটুপর কেবিনে শিফট করা হবে।

মাইশা আপুকে কেবিনে শিফট করা হলো।সবাই একে একে বেবিকে কোলে নিচ্ছে।আমিও কোলে নিলাম।বেবিকে আদর করে মায়ের কোলে দিলাম।হঠাৎ আমার সবকিছু অন্ধকার হয়ে এলো।সবকিছুই ঝাপসা আর এলোমেলো লাগছে।হুট করেই চোখ দুটো বুজে এলো।আমি ঢলে পড়ছি।স্পর্শ চিৎকার করে মিনি বলে আমাকে ধরলো।আর কিছুই মনে নেই।

জ্ঞান ফিরতেই হাতে স্যালাইনের সুচ গাথা দেখলাম।সবাই আমার পাশেই আছে।সবার
মুখে হাসি।মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।সবাই বাইরে চলে গেলেন স্পর্শ ছাড়া।আমি স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছি।তার চোখের কোনে পানি কিন্তু মুখে হাসি দেখে আমি মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলাম,কি হয়েছে?

আমার শোয়া অবস্থাতেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন,আমি আজ অনেক খুশি।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ আজ তুমি আমায় দিয়েছো।বিশ্বাস করো জীবনে আমি আর এরকম খুশি হইনি।

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।স্পর্শের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।

আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্পর্শ বলল,আমি বাবা হতে চলেছি আর তুমি মা।

স্পর্শের কথা শুনে চোখ দুটো পানিত ভরে উঠলো।এটা দুঃখের নয় সুখের কান্না।নিজের হাতটাকে পেটের উপরে রেখে ডুকরে কেঁদে উঠলাম।স্পর্শ আমাকে আবারো নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।

বাড়িতে আজ আনন্দের বন্যা।একসাথে দুটো খুশির খবর।মাইশা আপুকে তিনদিন পর ডিসচার্জ করবে।মা আর শাওন ভাইয়া হাসপাতালে থাকবেন এই তিনদিন।স্পর্শ আমাকে নিয়ে বাসায় চলে এলেন।মা মাহিরাকে বারবার সাবধান করে দিয়েছেন আমি যাতে কোনো কাজ না করি।রান্নার জন্য কাজের লোক আছে।আর বাকিটুকু যেন মাহিরা করে নেয়।মাহিরাও মায়ের কথায় সম্মতি জানায়।

হসপিটাল থেকে বাসায় পৌঁছে স্পর্শ আমাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যায়।

কি করছেন কি?ছাড়ুন আমি নিজেই যেতে পারবো।(মিনি)

চুপচাপ থাকো।এখন থেকে তোমার কোনো কথাই চলবেনা।তাই কথা না বলাটাই তোমার জন্য শ্রেয়।(স্পর্শ)

মিনি ও আর কিছু বললো না।ও ভালো করেই জানে স্পর্শ ওকে ছাড়বেনা।

রুমে গিয়ে মিনিকে সাবধানে খাটে শুইয়ে দিলো স্পর্শ।এখানেই বসে থাকবে একদম নড়াচড়া করবেনা।আমি আসছি।

মিনি মনে মনে বলল,এখন থেকে এরা তোর কোনো কথাই শুনবেনা মিনি।তোর কথার কোনো দাম নেই এদের কাছে।

স্পর্শ একপ্লেট কাটাফল নিয়ে আসলো।মিনিকে উদ্দেশ্য করে বললো,ফিনিশ ইট।

মিনি করুন চোখে স্পর্শের দিকে
তাকিয়ে আছে।বেবি আসতে না আসতেই অত্যাচার শুরু।

স্পর্শ মিনিকে বলল,এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই।এগুলো সাভার করো।যদি এমনি এমনি না খাও তো আমি অন্যপথ অবলম্বন করতে বাধ্য হবো।

স্পর্শ ঠিক কি মিন করে কথাটা বললো মিনির আর বুঝতে বাকি নেই।তাই চুপচাপ সব ফল খেয়ে নিলো।ফল খাওয়া শেষ করতেই মিনির বাবা,মা,ভাই,ভাবি এলো মিনিকে দেখতে।মূলত মামুন চৌধুরীই আসাদ জামানকে কল করে খুশির সংবাদটা জানায়।ওরা আসতেই স্পর্শ ওদেরকে প্রাইভেসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।মিনির মা,বাবা,ভাই,ভাবি মিনিকে কংগ্রেস করলো।মিনির বাবা মেয়ের মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিলেন।

“চারবছর পর”

আজ স্পর্শ ও মিনির একমাত্র মেয়ে মিশকাত চৌধুরী ছোঁয়ার তৃতীয় জন্মদিন।পুরো বাড়িটা খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা হয়েছে।মাহিরার বিয়ে ঠিক হয়েছে রিজুর সাথে।রিজু গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করলেই ওদের বিয়ে হবে।মাইশা আপু আর শাওন ভাইয়ার ছেলে মাহিন আরহামের এখন চার বছর।আমার ভাই,ভাবির ও একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।ওর নাম আদিবা, দু’বছর বয়স।সবাই আজ একসাথ হয়েছে।

প্রেগ্ন্যাসির পুরোটা সময় স্পর্শ আমাকে চোখে চোখে রেখেছে।যখন যা আবদার করতাম তা পূরন করেছে।মাঝরাতে উঠে কান্না করতাম।স্পর্শ আমাকে বুকে জড়িয়ে নানা কথা বলে কান্না থামানোর চেষ্টা করেতো।মাথায় স্বযত্নে বিলি কেটে দিতো।কতো শতবার উনার গায়ে বমি করেছি।কিন্তু উনি বিরক্তি বোধ করেন নি।আমাকে সামলিয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে নিতেন।মাঝেমাঝে খুব অপরাধ বোধ হতো তার কষ্ট দেখে।আমার জন্য ঠিক মতো ঘুমাতে পর্যন্ত পারতোনা।আমার মুখে অপরাধ বোধ দেখলে উল্টো উনি আমাকে বলতেন সন্তানটা আমাদের দুজনেরই।তুমি কেন একা কষ্ট করবে?তাছাড়া এসব করতে আমার মোটেও কষ্ট হয়না।বরং ভালো লাগে।দীর্ঘ দশমাস পর নরমাল ডেলিভারিতেই আমাদের মেয়ের জন্ম হয়।ডেলিভারির সময় স্পর্শ আমার হাত ধরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।আমার চিৎকারে উনি কেঁদে কেটে সবএক করেছেন।অবশেষে সব কষ্ট দূর হয়ে আমাদের কোল আলোকিতো করে এলো আমাদের মেয়ে ছোঁয়া।বাবা আর দাদা-দাদির চোখের মনি ছোঁয়া।

বর্তমানে বাবা,মেয়ে দুজনে মিলে আমার শাড়ির কুচি ঠিক করতে ব্যস্ত।আমার শাড়ি পড়া শেষ হতেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে এলাম তিনজনে।সেইম কালার ড্রেস পড়েছি আমরা।আমি ব্লু কালার শাড়ি,ছোঁয়া ব্লু কালার গ্রাউন আর স্পর্শ ব্লু কালার সুট পরেছে।

ছোঁয়া কেক কাটলো।আমি আর স্পর্শ ছোঁয়ার হাত ধরে রেখেছি।কেক কেটে,স্পর্শ, আমাকে তারপর দাদা-দাদি, নানা-নানি সবাইকে খাওয়ালো ছোঁয়া।

“রাতে”

স্পর্শ ব্যালকনিতে বসে আছে।আমি ছোঁয়াকে ঘুম পাড়িয়ে স্পর্শের পাশে গিয়ে বসলাম।

স্পর্শ আমার হাত টেনে নিজের কোলে নিয়ে বললো,সারাজীবন এভাবে তোমার সাথে কাটাতে চাই প্রেয়সী।ভালোবাসি খুব।

আমি বললাম,এতো কেনো ভালোবাসেন?

স্পর্শ মুচকি হেসে বলল,”#তোমাতেই পূর্ণ আমি ❤”আমার সব পূর্ণতাই যে তোমাকে আর আমাদের মেয়েকে ঘিরে।

আমি স্পর্শের কাঁধে মাথা রাখলাম।কিছু বললাম না।থাকনা কিছু সময় নিরবতা।
এভাবেই বেঁচে থাকুক হাজারো ভালোবাসা।

#সমাপ্ত।

তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-১১

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ১১
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

স্পর্শকে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে মিনি জিজ্ঞেস করলো,

কি হয়েছে মুখটাকে এরকম বাংলার সাত বানিয়ে রেখেছেন কেন?

স্পর্শ মুখ ফুলিয়ে রেখেই বলল,
সব হয়েছে তোমার জন্য।আদিল ভাইয়া না জানি কি ভাবছে?ছিঃ,আমি কিনা বড়ো সালার বাসরে বাগড়া দিতে গিয়েছিলাম?

ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,

প্যারা নাই চিল।ভাইয়া কিছুই মনে করবেনা আপনার ব্যাপারে।ভাইয়া ভালো করেই জানে এগুলো তার বোনের কাজ।

স্পর্শ বলল,

সিরিয়াসলি?যেসব কাজ বন্ধুদের করার কথা সেগুলো কি-না ছোট বোন করছে?হাউ,,,,,

ডিজিটাল সিস্টার বলেই মিনি সটান হয়ে শুয়ে পড়লো।স্পর্শ ও মিনিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

মিনির কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।মিনি অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,

ক,,,কি করছেন কি?ছাড়ুন।

চুপচাপ ঘুমাতে দাও।সারাদিন আমাকে দিয়ে আকাম-কুকাম করানোর শাস্তি এটা।বলেই স্পর্শ মিনিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।

মিনি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছুতেই সফল হচ্ছে না।অনেক ধস্তাধস্তির পরও যখন স্পর্শের সাথে পারলোনা,তখন চুপ করে যায়।

স্পর্শ পিঞ্চ মেরেই বলল,
কি?শক্তি শেষ?শুধু শুধু শক্তি টুকু খরচ করলে।

মিনি রাগে কথা বলতে পারছেনা।ইচ্ছে তো করছে বেটার চুল গুলো ছিড়ে টাক বানিয়ে ফেলি।ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে স্পর্শ আর মিনি।

এদিকে আদিল রক্তচক্ষু নিয়ে রিয়ার দিকে এগোচ্ছে।রিয়া ভয়ে পেঁচাচ্ছে।এক পর্যায়ে রিয়ার দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায়।আর পেছানোর জায়গা নেই।আদিল রিয়ার দুবাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলল,আমার সাথে মজা করা তাইনা?দেখাচ্ছি মজা করার ফল।বলেই রিয়াকে কোলে তুলে নেয়।রিয়া শক্ত করে আদিলের শার্ট খামছে ধরে।তারপর রিয়া আর আদিল হারিয়ে যায় ভালোবাসার অতল সমুদ্রে।

সকাল সকাল মিনির ঘুম ভাঙে দরজার কড়াঘাতে।বিরক্তিতে মিনির কপাল কুচকে যায়।এতো সকালে কে দরজা ধাক্কাচ্ছে।স্পর্শের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বিরক্তি নিয়েই দরজা খোলে মিনি।

দরজা খুলেই মিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কারণ দরজার সামনে মাহিরা দাঁড়িয়ে আছে।এতো সকালে এই মেয়ে এখানে কি করছে?ভেবেই কপাল কুচকে যায় মিনির।

কুচকানো কপাল শীতল না করেই জিজ্ঞেস করলো,

কি ব্যাপার মাহিরা?তুমি এতো সকালে এখানে?কোনো দরকার?

মাহিরা আমতা আমতা করেই বলল,আ’ম সরি ভাবি এতো সকালে তোমাদের ডিসটার্ব করলাম।আসলে কালকে রাতেই আসতাম বেশ রাত হয়ে যাওয়ায় আসিনি।

মিনি বলল,ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাসাপটা বলো,কি বলতে চাও?

রিজু আমার সাথে ব্রেকআপ করেছে কাল রাতে।ছবি দিনাই বলে।আমি বলেছি সুন্দর করে ইডিট করে কালকে দেবো।ও শুনলোইনা।বলেই ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কেঁদে ফেলে মাহিরা।

মিনি এবার প্রচন্ড বিরক্ত।সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে ওর আরামের ঘুমটা নষ্ট করলো।অসহ্য।কিন্তু মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে বলল,তুমি ছবি গুলো ইডিট করে এখনই পাঠিয়ে দাও দেখবে রিজুর রাগ পানি হয়ে গেছে।

সত্যি বলছো তো ভাবি?মাহিরা বলল।

মিনি বলল,হ্যাঁ সত্যি বলছি।যাও তাড়াতাড়ি য়াও।

মাহিরা চলে যেতেই মিনি দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়ে।এই মেয়ের আর কাজ নেই এই সামান্য বিষয়ে কেউ প্যানিক করে?

সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।মিনি স্পর্শের পাশেই বসেছে।আদিল রিয়ার পাশে।রিয়া খাবার সার্ব করতে গেলেই মিসেস জামান রিয়াকে খেতে বসিয়ে দেয়।উনি বলেন,

সংসারটা তো তোমারই।এসব কাজ পরেও করতে পারবে।আগে কিছুদিন নিজেকে সময় দিয়ে সবার সাথে নরমাল হও।

মিসেস জামানের কথায় রিয়ার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়।এখানে এসে ও আরেকটা মা পেলো।সবার খাওয়া শেষ।যে যার কাজে চলে গেলো।

কোত্থেকে মাহিরা দৌঁড়ে মিনিকে ঝাপটে ধরে গালে একটা চুমু দিয়ে বলে,থ্যাংক ইউ ভাবি!রিজুর রাগ কমে গেছে ছবি দেওয়ার পর।তারপর মিনিকে ছেড়ে দিয়ে খুশি মনে উপরে চলে যায়।

মাহিরার কান্ডে মিনি মুচকি হাসে।পাগলি মেয়ে একটা।

“কিছুদিন পর”

মিনিদের বাসা থেকে সবাই এসেছে কিছুদিন হলো।মিনি আর স্পর্শের সম্পর্ক এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।দুজনেই দুজনের জন্য কিছু একটা ফিল করে।এখন শুধু বলার অপেক্ষা।

স্পর্শ আজ অফিসে যায় নি।মিনিকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে।সারাদিন ঘোরাঘুরির পর আসার পথেই একটা মেয়ে দৌঁড়ে এসে স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে।স্পর্শ মেয়েটিকে ছাড়িয়ে বলল,কেমন আছো?

মেয়েটি জবাব দিলো,
ভালো,এতোদিন কোথায় ছিলে তুমি?জানো?কতো খুজেছি তোমায়।

মিনির চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।স্পর্শ মেয়েটার সাথে বেশ হাসি খুশি ভাবেই কথা বলছে।দেখে মনে হচ্ছে এখানে মিনি নামের কেউ নেই।মিনি ভাবলো স্পর্শ হয়তো মেয়েটাকে ভালোবাসে।তাই ওদের মাঝে না থাকাটাই বেটার হবে।মিনি ওখান থেকে চলে এলো।

স্পর্শ বলল,আমিও তো আর তোমার দেখা পাই নি।

মেয়েটি বলল,তোমার সাথে মেয়েটি কে ছিলো?

ওহ মিনি?মিট মাই ওয়াইফ,,,,

একি?মিনি কোথায় গেলো?মিনি?মিনি?

ও তোমার ওয়াইফ?মেবি ভুল বুঝেছে আমাদের দেখে।তাই হয়তো চলে গেছে।এনিওয়ে আমার বিয়ে সামনের মাসের ২তারিখ।ছেলে আমেরিকায় সেটেল।বিয়ের পর আমাকেও নিয়ে যাবে।তোমার ওয়াইফকে নিয়ে আসবে কিন্তু।

স্পর্শ বলল,অবশ্যই আসবো।আচ্ছা আমি যাই হ্যাঁ?মেয়েটা বড্ডো অবুঝ।মানাতে হবে।বায়।

মিনি একটা অটো ধরে বাড়ির সামনে এসে থামলো।মেয়েটা এতো ইমপরটেন্ট উনার কাছে?আমি কিছুই না?একটাবার আমার পেছনে আসলোও না।কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে মিনি।

স্পর্শ দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করছে।মেয়েটা নিশ্চয়ই কেঁদে কেটে সমুদ্র বানিয়ে ফেলেছে।এতোক্ষণ স্পর্শ যে মেয়েটির সাথে কথা বলছিলো?সে স্পর্শের কলেজ ফ্রেন্ড।এতোদিন যোগাযোগ থাকলেও বেশ কয়েকমাস কোনো যোগাযোগ নেই।ওরা একে অপরকে কলেজ লাইফ থেকেই
তুমি বলে এসেছে।আগের অভ্যাস ছাড়তে পারেনি তাই এখনো তুমি করেই বলে।

স্পর্শ বাসায় এসে হন্তদন্ত হয়েই রুমে ঢুকে।স্পর্শের কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে।কারণ মিনি দুই হাটি ভাজ করেই হাটুতে মাথা ঠেকিয়ে কান্না করছে।

স্পর্শ ধীর গতিতে মিনির সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।মিনির মাথা তুলে দুই হাতে আলতো করে মিনির গাল চেপে ধরে।মিনি নিজেকে স্পর্শের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কান্না জড়িত গলায় বলে উঠলো,

ছাড়ুন আমাকে।এখান থেকে যান কেন এসেছেন এখানে?সরুন আমার সামনে থেকে।

স্পর্শ বুঝলো তার বউটার বড্ডো অভিমান হয়েছে।তাই মিনিকে না ছেড়েই স্পর্শ বলতে লাগলো,

এই মেয়ে তুমি কেন বোঝনা আমার মনের কথা?তুমি কি সত্যিই এতোদিনেও বুঝতে পারোনি আমি কি চাই?তোমার একটিবারের জন্যেও মনে হয়নি?আমি তোমাকে ভালোবাসি?

স্পর্শের কথায় মিনি ছলছল চোখে তাকায় স্পর্শের দিকে।

স্পর্শ বলল,হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি।কখন কিভাবে ভালোবেসেছি জানিনা।যদি বলো কেনো ভালোবাসি?সেটাও জানিনা।কারণে অকারনে ভালেবাসি।আমার জীবনের শেষ মূহুর্তটাও তোমার সাথে কাটাতে চাই।তুমি কি?আমাকে সেই সুযোগটা দিবে?

মিনি এবার ফুপিয়ে উঠেই বলল,

তাহলে ঐ মেয়েটি কে ছিলো?আর কেনোই বা আপনাকে জড়িয়ে ধরলো?

স্পর্শ জবাবে বলল,ও আমার ফ্রেন্ড।অনেকদিন পর দেখা হয়েছে তো তাই আবেগটাকে কন্ট্রোল করতে পারেনি।আমরা একে অপরকে কলেজ লাইফ থেকেই তুমি বলে সম্বোধন করে এসেছি।তাই এখনো তুমিই বলি।

আরেকটা কথা ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।সামনের মাসেই বিয়ে।তোমাকে আর আমাকে ইনভাইট করেছে।

এবার মিনি স্পর্শকে ঝাপটে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর বলছে,আমিও আপনাকে ভালোবাসি।তাইতো ওই মেয়েটার সাথে আপনাকে দেখে আমার খুব রাগ হয়েছিলো।

স্পর্শ যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা।মিনি ওকে ভালোবাসি বলেছে।তাই স্পর্শ বলল,কি বলেছিলে? আবার বলো।

মিনি এবার বেশ লজ্জা পেল।

স্পর্শ বলল,কি হলো?বলছো না কেন?আমি কিন্তু শুনিনি তুমি কি বলেছো।

মিনি মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে আবারো বলল,আমি আপনাকে ভালোবাসি।

স্পর্শ যেন হাতে চাঁদ পেলো।ও মিনিকে শক্ত করেই বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।কিছুক্ষণ পর স্পর্শ আদুরে কন্ঠ বলল,

মিনি?

হুম

আমি যদি আজ তোমাকে একেবারে নিজের করে চাই?আমার ভালোবাসায় তোমাকে রাঙাতে চাই? তাহলে কি খুব ভুল হবে?

মিনি পারছে না লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যায়।ও স্পর্শকে আরেকটু শক্ত করে আকড়ে ধরে।

স্পর্শ তার উত্তর পেয়ে গেছে।সে মিনিকে পাঁজা কোল করে খাটের দিকে এগিয়ে যায়।মিনি লজ্জায় স্পর্শের বুকে মুখ লুকায়।

আজ পূর্ণতা পাবে দুটি হ্রদয়ের ভালোবাসা।একে অপরকে সম্পূর্ণ উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসে খুঁজে নিক তাদের পূর্ণতা।

সকালে মিনির ঘুম ভাঙতেই ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে স্পর্শকে দেখতে পায়।মাত্রই শাওয়ার নিয়ে এসেছে।হাত দিয়ে চুলের পানি ঝারছে।মিনি কাঁথা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রেখেছে।
ওর কাল রাতের কথা মনে হতেই প্রচন্ড লজ্জা লাগছে।

স্পর্শ আয়নার দিকে তাকিয়েই বলল,কাল রাতে এতো কিছুর পরেও আমি তোমার লজ্জা ভাঙতে পারলাম না?আফসোস।
মিনি এবার আরো লজ্জা পেলো।স্পর্শ একটানে কাঁথাটা সরিয়ে মিনির ওপর আধশোয়া হয়ে শুয়ে পড়ে।

মিনির যেনো যায় যায় অবস্থা।বেচারী উঠতে ও পারছেনা।স্পর্শ মিনির ছটফটানি দেখে মিনির অধর যুগল দখল করে নেয়।মিনির দম বন্ধ হয়ে আসছে।স্পর্শকে সরানোর চেষ্টা করছে।না পেরে স্পর্শের বুকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করলো।আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে মরেই যাবে।পাক্কা দুইমিনিট পর স্পর্শ মিনিকে ছাড়লো।ছাড়া পেতেই মিনি এক দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।স্পর্শ হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।

মিনিতো ওয়াশরুমে জামাকাপড় আনেনি।এখন কি হবে?এখন রুমেও যেতে পারবেনা মিনি।কারণ ওর পরনে শুধু স্পর্শের টি-শার্ট।
এদিকে স্পর্শ বেশ আয়েশ করেই খাটে হেলান দিয়ে আছে।আর মিটিমিটি হাসছে।কারণ মিনি জামাকাপড় ছাড়াই ওয়াশরুমে ঢুকে গেছে।

চলবে…..

তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-১০

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ১০
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

আজ আদিলের গায়ে হলুদ।মিনি আর স্পর্শ সকালেই চলে এসেছে মিনিদের বাসায়।ওদের সাথে মাহিরা ও এসেছে।মামুন চৌধুরী আর তাহমিনা চৌধুরী বিয়ের দিন আসবেন।মিনি ছোটাছুটি করছে একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।সবকিছুর তদারকি করছে।লাইটিং কিভাবে করবে? কোন জায়গায় কোন ফুল দিয়ে সাজাবে?সবকিছু ডেকোরেশনের লোকেদের বুঝিয়ে দিচ্ছে মিনি।

স্পর্শ ও এটা ওটা করছে।আবার একটু পর পর মিনিকে এসে দেখে যাচ্ছে।

মিনি স্পর্শকে ডেকে বলল,
এই যে শুনুন।

স্পর্শ বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।হ্রদ স্পন্দন বেড়ে গেছে।
উফ এই মেয়েটা মনে হয় আমাকে হার্ট এ্যাটাক করিয়ে মেরেই ফেলবে।এতো মিষ্টি করে কেউ ডাকে?

এর মাঝে আবারো মিনির ডাক পড়লো,,,কি হলো?শুনতে পাচ্ছেন না?সেই কখন থেকেই ডাকছি।বলছিলাম কি একটু পর তো হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।ভাইয়াকে কোথাও দেখছিনা।একটু ভাইয়াকে ডেকে বলুন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে।সাথে আপনিও রেডি হয়ে নিন।

দেখো তোমার ভাই হয়তো লুকিয়ে বউয়ের সাথে ফোনে প্রেমালাপ করছে?বলল স্পর্শ।

মিনি মুখ বাকিয়ে বলল,আমার ভাইতো প্রেমালাপ করতে পারে।আপনিতো সেটাও পারেন না।তারপর ওখান থেকে চলে যায়।

স্পর্শ কিছুক্ষণ বোকার মতো দাঁড়িয়ে থেকে আনমনে বলে উঠলো, এটা কি আমাকে গ্রিন কার্ড দিয়ে গেলো নাকি।তারপর মাথা চুলকে মুচকি হেসে ওঠে।

আদিলকে রেডি করিয়ে স্টেজে নিয়ে এসেছে ওর বন্ধুরা।হলুদ পাঞ্জাবি,সাদা পায়জামা,চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা,ফর্সা গালে খোচা খোচা দাঁড়ি।অনেকটা হিরোর মতোই লাগছে।

স্পর্শ ও রেডি হয়ে নিয়েছে।ও ও আজকে হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে সাথে কালো প্যান্ট।মিনি এখনো আসছেনা দেখে স্পর্শ মিনির রুমের দিকে হাটা ধরলো।দরজাটা লক করা তাই স্পর্শ নক করে উঠলো।

ভেতর থেকে মিনির আওয়াজ, কে?

আমি।স্পর্শ জবাব দিলো।

মিনি বলল,আমার এখনো শাড়ি পড়া হয় নি আপনি এখন যান।

তাড়াতাড়ি আসো বলে স্পর্শ স্টেজের কাছে চলে এলো।বেহায়া মেয়ে গুলো স্পর্শকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।কেউ কেউ তো স্পর্শের আসপাশ ঘিরে রেখেছে।

স্টেজের কাছে এসে এগুলো দেখে মিনির গা দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।বেদ্দপ মাইয়া আমার জামাইরেই তোগো চোখে পড়ে?আর পোলা চোখে দেখচ না?কথা গুলো মনে মনেই বলল মিনি।

তারপর স্পর্শের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,আপনাকে আমি সারাবাড়ি খুজছি আর আপনি এখানে কি করছেন?

আর এই যে আপুরা অন্যের জামাইয়ের দিকে চোখ দেন কেনো?দুনিয়ায় আপনাদের জন্য ছেলের অভাব পড়েছে?একটা বিবাহিত পুরুষকে যে ভাবে ঘিরে রেখেছেন?

মেয়েগুলো মিনির কথায় বেশ লজ্জা পেল।ওরা তো আর জানতোনা স্পর্শ বিবাহিত।তারপর সবাই ওই স্থান থেকে কেটে পড়ে।

এবার মিনি স্পর্শের চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়।পাঞ্জাবির একটা বোতাম খোলা ছিলো সেটাও আটকে দিয়ে বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে স্পর্শকে বলল,এতো সুন্দর করে সেজেগুজে থাকতে কে বলেছে আপনাকে?আমি বলেছি?তারপর ওখান থেকে চলে যায়।

স্পর্শ এতোক্ষণ চুপচাপ মিনির কার্যক্রম দেখছিলো।সকাল থেকেই এরকম উদ্ভট ব্যবহারের কারন এখন উপলব্ধি করতে পারলো।তারমানে আমার বউটাও আমার প্রেমে পড়ে গেছে।এবার শুধু বলার অপেক্ষা।বলেই ঠোঁটের কোনে লম্বা হাসির রেখা ফুটিয়ে তোলে স্পর্শ।

একে একে সবাই হলুদ লাগাচ্ছে আদিলকে।প্রথমে আদিলের মা-বাবা পরে মুরব্বিরা হলুদ লাগিয়েছে।এখন ছোটোদের পালা।আদিলের বন্ধুরা হলুদ দিয়ে আদিলকে পুরো ভূত বানিয়ে ফেলেছে।বেচারা কিছু করতেও পারছেনা।অপেক্ষায় আছে কবে তার এরকম সময় আসবে?এখনতো পাজিলগুলো মুখে মেখেছে আদিল ডিরেক্ট গোসল করিয়ে দেবে।এবার মিনির পালা।মিনি হলুদ নিয়ে আলতো হাতে ভাইয়ের গালে হলুদ ছোঁয়ায়।তারপর স্টেজ থেকে নেমে ছাদের এক কোনে গিয়ে দাঁড়ায়।হঠাৎ কোমরে ভেজা কিছুর ছোঁয়া পেয়ে চমকে উঠলো মিনি।পিছনে ঘুরে স্পর্শকে দেখলো দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এবার মিনি কোমরে হাত ছুঁইয়ে সামনে এনে দেখলো হলুদ লেগে আছে।রেগে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো স্পর্শের দিকে।স্পর্শ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যেতে লাগলো।মিনি পেছন থেকে স্পর্শের হাত শক্ত করে চেপে ধরে নিজের হাতে লেগে থাকা হলুদ স্পর্শের গালে,পাঞ্জাবিতে লেপ্টে দেয়।এবার মিনি ভ্রুকুটি করে ডেবিল হেসে বলল,কেমন লাগে?

স্পর্শ মিনির কোমর জড়িয়ে নিজের দিকে একটু টেনে নিয়ে বলল,এরকম করে যদি বউয়ের হাতের ছোঁয়া পাওয়া যায়।তাহলে ব্যাপারটা বেশ ভালোই লাগে।তারপর মিনির কানে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায়।

স্পর্শের ছোঁয়াতে মিনি কেঁপে ওঠে।স্পর্শকে ধাক্কা দিয়ে কোনো মতে ওখান থেকে সরে আসে।মিনির এভাবে ছুটে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে স্পর্শ হেসে ফেলে।

এদিকে মাহিরা রিজুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে শেষ।বেচারা ভেবেছিলো রিজু আদিলের বিয়েতে আসবে।তখন দুজনে চুটিয়ে প্রেম করবে।বিধি বাম রিজু সিলেট তার বোনের বাসায় বেড়াতে গেছে।তাই আর বিয়েতে আসা হলো না, প্রেম ও করা হলো না।

আদিলের এক হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে মিনি,অন্য হাতে মিনির কাজিন।মিনির প্রচুর খিদে পেয়েছে।খিদেয় পেট চো চো করছে।মেহেদী লাগানো মাঝ পর্যায়ে তাই উঠতেও পারছেনা।এদিকে স্পর্শ প্লেটে খাবার নিয়ে মিনির মুখের সামনে এক লোকমা তুলে বলে,হা কর।

মিনি স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আবার চারপাশে তাকাচ্ছে।স্পর্শ বলল,এতোদিকে না তাকিয়ে খাবারটা খেয়ে নাও।আমি জানি তোমার অনেক খিদে পেয়েছে।তাই চুপচাপ খাও।

মিনিও আর দ্বিমত করলো না।এমনিতেই প্রচুর খিদে পেয়েছে।

আদিল তাকিয়ে দেখছে।স্পর্শ পরম যত্নে মিনিকে খাইয়ে দিচ্ছে।এরকম একজনকেই তো চেয়েছিলো নিজের বোনের জন্য যে কিনা তার ছোট্ট পরীর সব খেয়াল রাখবে,কেয়ার করবে।এসব ভেবেই একটা প্রশান্তির হাসি দেয় আদিল।মিনির খাওয়া শেষে স্পর্শ পরম যত্নে নিজের রুমাল দিয়ে মিনির মুখ মুছে দেয়।চলে যেতে নিলেই মিনি বলল,আপনিও এখন খেয়ে নিন।অনেক রাত হয়েছে।আর আমি মাহিরাকে খাবার দিয়ে এসেছি।

উত্তরে স্পর্শ মুচকি হেসে চলে গেলো।

“বিয়ের দিন ”

একটু পরই বরযাত্রী বেরিয়ে পড়বে মেয়েপক্ষের বাড়ির উদ্দেশ্যে।সবাই রেডি হয়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো।স্পর্শ আজকে একটা কালো কালার পেন্ট,গাঢ় খয়েরি রঙের টি-শার্ট, উপরে কালো ব্লেজার পড়েছে, হাতে সিলভার কালার ঘড়ি পড়েছে।চুলগুলো স্পাইক করা।গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।মুখে লেগে আছে মিষ্টি হাসি।

স্পর্শের চোখ পড়লো দরজা দিয়ে নেমে আসা মিনির দিকে।স্পর্শ হা করে তাকিয়ে আছে মিনির দিকে।মিনি গাঢ় খয়েরী রঙের একটি শাড়ি পরেছে।সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি,হাতে খয়েরী কাঁচের চুড়ি।চুলগুলো মাঝখানে সিতি করে পেছন দিকে একটা খোঁপা করে তাতে তিনটা তাজা গোলাপ গেঁথে দিয়েছে।মুখে হালকা মেকাপ,ঠোঁটে খয়েরী লিপস্টিক,আজ চোখে মোটা করে কাজল ও পড়েছে।স্পর্শতো ঘোরের মধ্যে চলে গেছে।

মিনিও দূর থেকে স্পর্শকে তাকিয়ে দেখছে।কি সুন্দর লাগছে স্পর্শকে।তারপর স্পর্শের সাথে চোখাচোখি হতেই নিজের চোখ নামিয়ে নেয় মিনি।

একে একে সব গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।মিনি,স্পর্শ, মাহিরা ওরা সবার শেষে স্পর্শের গাড়ি নিয়েই রওনা দেয়।মিনি ফ্রন্ট সিটে বসেছে আর মাহিরা পেছনের সিটে।স্পর্শ বারবার আড়চোখে মিনিকে দেখছে।মিনিও দেখছে স্পর্শকে।

রিয়াদের বাড়িতে এসেই গেইটে আদিলের সালিরা টাকার জন্য ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না আদিলকে।দশ হাজার টাকা দিতে হবে।আদিলও তার প্রেয়সীর থেকে দূরে থাকতে চায় না তাই টাকাটা দিয়েই ঢুকে পড়ে।মিনি এখানে এসে তাহমিনা চৌধুরী আর মামুন চৌধুরীর সাথে কথা বলে নেয়।আসার সময় তারা বরের পরের গাড়িতে আসায় মিনি তাদের সাথে কথা বলতে পারে নি।তাই এখন কথা বলে নেয়।

কাজী বিয়ে পড়াচ্ছেন।রিয়াকে কবুল বলতে বলল কাজী।রিয়া লজ্জায় চুপ করে আছে।কিছুসময় চুপ থাকার পর ওর মা যখন স্বায় দিলো তখন রিয়াও কবুল বলে দেয়।আদিলকে কবুল বলতে বললে,আদিল এক নিঃশ্বাসে তিনবার কবুল বলে দেয়।এ নিয়ে একদফা সবাই হেসে নেয়।বেচারী রিয়া লজ্জায় পড়ে গেছে।লোকটার কি একটুও লাজ লজ্জা নেই না-কি?

বিদায়ের বেলায় রিয়া বাবা মাকে জড়িয়ে অনেক কান্নাকাটি করে।আদিল রিয়ার দিকে টিস্যু বাড়িয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল টিস্যু লাগবে?নাকি শাড়ির আঁচল দিয়েই চোখের পানি মুছে নেবে।রিয়া কটমট চোখে তাকায় আদিলের দিকে।লোকটা আজ এতো বেসরম হয়ে গেলো কেনো?বিয়ে করে কি লাজ,লজ্জা বিসর্জন দিয়েছে নাকি?

আদিল বাসর ঘরে ঢোকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।কিন্তু তার বিচ্যু বোন ও কাজিনরা ঢুকতে দিচ্ছে না।তারা পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করেছে।শালিরাতো ভালোই ছিলো।এই ভাই-বোন গুলো দেখি আমাকে ফকির বানিয়ে ছাড়বে।মনে মনে বলল আদিল।তারপর নিজের ক্রেডিট কার্ডটা মিনির হাতে দিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে।

আদিল আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে খাটের দিকে।তারপর রিয়ার ঘোমটা তুলতে গেলেই রিয়া পিছিয়ে যায়।আদিল ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,কি হলো তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো?আজ রাতের পর আর লজ্জা থাকবেনা।সব লজ্জা আমি ভেঙে দেবো বলেই ঘোমটা তুলতে য়ায়।স্পর্শ ঘোমটা খুলে এক চিৎকার দেয়।স্পর্শকে দেখে আদিল ও চিৎকার দেয়।

ভাইয়া আমার কোনো দোষ নেই।সব দোষ মিনির।মিনিই আমাকে জোর করে এখানে বসিয়ে দিয়ে গেছে।একদমে বলে শেষ করলো স্পর্শ।পরনের শাড়িটা ছুড়ে ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

মিনি আর রিয়া দরজার পাশে দাঁড়িয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।আদিল চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই মিনি রিয়াকে রুমে দিয়ে বেরিয়ে যায়।বেচারা আদিল প্রচন্ড লজ্জা পেয়েছে।নিজের ছোট বোনের হাজবেন্ড কে কিনা বউ ভেবে কিসব বলেছে?ভাগ্যিস উল্টাপাল্টা কিছু করেনি।

হাসতে হাসতে মিনি রুমে এসে দেখে স্পর্শ মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।

চলবে……..

তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-০৯

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ০৯
লেখিকাঃ জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

পরীক্ষা শেষে মিনি বেরিয়ে পড়ে।আজ বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিলো।বান্ধবীদের সাথে পরীক্ষার বিষয়ে ডিসকাস করতে করতে গেইটের সামনে এসে দেখে স্পর্শ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এখন মাঝেমধ্যেই স্পর্শ সময় বের করে মিনিকে বাসায় পৌঁছে দেয়।স্পর্শকে দেখে মিনির ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।মিনি বান্ধবীদের বিদায় জানিয়ে স্পর্শের দিকে এগিয়ে যায়।স্পর্শ ফ্রন্ট সিটের পাশের দরজা খুলে দেয়।মিনি ও গাড়িতে উঠে পড়ে।স্পর্শ ড্রাইভ করছে আর মিনিকে পর্যবেক্ষণ করছে।মুখ দেখে বোঝা যাচ্চে পরীক্ষা ভালো হয়েছে।তাই আর স্পর্শ কিছু জিজ্ঞেস করলো না।কিছুদূর গিয়ে স্পর্শ একটা লেকের পাশে গাড়ি থামিয়ে দিলো।মিনি ভ্রু কুচকে বলল,

গাড়ি থামালেন যে?কোনো সমস্যা হয়েছে?

মিনির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্পর্শ মিনিকে জিজ্ঞেস করলো,

আইসক্রিম খাবে?মিনি উপর নিচ মাথা দুলালো।যার অর্থ হ্যাঁ আমি আইসক্রিম খাবো।

মিনির উত্তর পেয়ে স্পর্শ গাড়ি থেকে নেমে আইসক্রিম আনতে যায়।এই সুযোগে মিনি গাড়ি থেকে নেমে লেকের পানিতে পা ভিজায়।

স্পর্শ এসেও মিনির পাশে লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পড়ে।মিনির দিকে আইসক্রিম বাড়িয়ে দেয়। মিনি আইসক্রিম খেতে খেতেই স্পর্শকে জিজ্ঞেস করলো আপনি আইসক্রিম খান না?

স্পর্শ বলল,খুব একটা খাইনা।তবে এখন কেউ দিলে না করবো না।

উত্তরে মিনি বলল,তাহলে একটা আইসক্রিম কেনো আনলেন?দুটো আনলেতো আপনি একটা আর আমি একটা খেতে পারতাম।এখন আপনিতো আর আমার এঁটোটা খাবেন না।

মিনির বলার দেরি স্পর্শ ছোঁ মেরে মিনির হাত থেকে আইসক্রিম নিতে দেরি হয় না।
নিয়েই খেতে শুরু করে।

মিনি বোকার মতো চেয়ে আছে।তারপর মিনি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

আপনি আমার আইসক্রিম নিলেন কেনো?এখন আমি কি খাবো?

স্পর্শ বলল,তোমাকে আরো কিনে দেবো।আপাতত এইটা আমার।

মিনি চুপ করে আছে।মনে মনে বলল,সালা খাদক,তোর আমার আইসক্রিমই খেতে হলো?তুই একটা কিনতে পারলিনা?আবার বলে তোমাকে আরো কিনে দেবো?(মুখ ভেংচি কেটে)।তুই না বললেও আমি তোর থেকে আইসক্রিম উসুল করে নিতাম।বেটা খবিশ।

স্পর্শ বলল,আর বকো না তোমাকে আইসক্রিম কিনে দিয়েই আমি অফিস যাবো।তারপর দুজনেই উঠে পড়ে।স্পর্শের অফিসে কাজ আছে।মিনিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আবারো অফিসে যাবে।

গাড়ির দিকে এক পা এক পা করে এগোচ্ছে আর মিনি ভাবছে,আচ্ছা উনি আমার মনে মনে বলা কথা গুলো কিভাবে বুঝেন?শুনেছি মনের টান আর ভালোবাসা থাকলে অন্যের মনের কথা বোঝা যায়।তাহলে কি উনি আমাকে ভালোবাসেন?ধুর উনি কেন আমাকে ভালোবাসবেন?উনার মাঝেতো সেরকম কিছুই আমি দেখছিনা।

স্পর্শের আওয়াজ কানে আসতেই মিনি জোরে পা চালিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।স্পর্শ মিনিকে বাসায় পৌঁছে আবারো অফিসে চলে যায়।

বাসায় এসে মিনি তাহমিনা চৌধুরীকে সোফায় বসে থাকতে দেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।কি করছো মা?

তাহমিনা চৌধুরী বলল,হামাগুড়ি দিচ্ছি।

তুমিতো সোফায় বসে আছো,তাইলে হামাগুড়ি কিভাবে দিচ্ছো?কৌতুহল কন্ঠে বলল মিনি।

দেখতেই পাচ্ছো সোফায় বসে আছি।তাহলে জিজ্ঞেস করচো কেনো?তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো।আমি তোমার জন্য না খেয়ে বসে আছি।

অবাক কন্ঠে মিনি বলল,সে কি তুমি বাবার সাথে খাওনি?এখন আবার আমার সাথে খাবে?

তাহমিনা চৌধুরী কটমট চোখে তাকালো।মিনি ছোট্ট একটা ঢোক গিলে উপরে চলে গেলো।মিনি বেশ বুঝতে পারছে শাশুড়ী মা রেগে আছে।এটাও বুঝতে পারছে ওর শশুরের সাথেই ঝগড়া করেছে।আজ স্বামীর রাগ ছেলে,মেয়ে,বউ সবার উপর ঝাড়বে।এসব ভেবেই মুচকি হাসলো মিনি।

তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে আবার রুমে চলে আসে মিনি।এখন একটু রেষ্ট নিবে।তারপর আবারো পড়তে বসবে।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে
ভাইয়া নামটি জ্বলজ্বল করছে।মুখে হাসির রেখা টেনে মিনি কল রিসিভ করে।

কিরে পুচকি কেমন আছিস?(আদিল)

ভালো আছি ভাইয়া।তুমি কেমন আছো?বাবা মা কেমন আছে? বলল মিনি।

আমি ভালো আছি।বাবা মাও ভালো আছে।তোর তো পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।ঠিক মতে পড়াশোনা করিস।(আদিল)

হুম।ছোট্ট করে জবাব দেয় মিনি।

তোকে একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছি।(আদিল)

কি?(মিনি)

রিয়াদের বাসায় আমাদের বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাবা মা।রিয়ার পরিবার ও রাজী।বিয়ের ডেইট ঠিক করেছি তোর বিয়ের এক সপ্তাহ পর।(আদিল)

আদিলের কথা শেষ হতেই মিনি এক চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে।ফাইনালি রিয়া আপু আমার ভাবি হচ্ছে।আ’ম সো এক্সাইটেড।ইচ্ছে তো করছে সময়টাকে বাড়িয়ে পরীক্ষার এক সপ্তাহ পরটা এখনই নিয়ে আসি।(মিনি আদিল আর রিয়ার সম্পর্কের কথা জানতো)।

হয়েছে আর এক্সাইটেড হতে হবে না।খুশির চোটে আবার পরীক্ষার কথা ভুলে যাস না।এখন রাখছি,নিজের খেয়াল রাখিস।(আদিল)

তুমিও নিজের খেয়াল রেখো।(মিনি)

সন্ধ্যার পর অফিস থেকে বাসায় ফেরে স্পর্শ।এসেই মিনিকে পড়ার টেবিলে দেখে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।

স্পর্শ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে খাটে বসে পড়ে।মিনি পড়ার টেবিল থেকে ছুটে এসে স্পর্শের সামনে দাঁড়ায়।

স্পর্শ শান্ত স্বরে বলল, কিছু বলবে?

মিনি এক্সাইটেড হয়ে একদমে বলতে থাকে,জানেন?ভাইয়ার না বিয়ে ঠিক হয়েছে রিয়া আপুর সাথে।রিয়া আপু আর ভাইয়া দুজন দুজনকে ভালোবাসে।রিয়া আপু ভাইয়ার ভার্সিটির জুনিয়র ছিলো।আমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরই বিয়ের ডেইট ফিক্সড করেছে।

স্পর্শ মিনির কথা শুনে বলল,এবার একটু শ্বাস নাও।তারপর আবার বলা শুরু করিও।

মিনি মুখ ভেংচি কেটে আবার পড়তে বসে গেলো।স্পর্শ মিনির চুলের দিকে তাকিয়ে বলল,যতদিন পরীক্ষা থাকবে এই মেয়ে চুলগুলো ও ঠিক করে আঁচড়াবে না।এ কয়দিন স্পর্শই আচড়িয়ে দিতো।এখনও চিরুনি হাতে
এগিয়ে গেলো মিনির দিকে।উদ্দেশ্য চুলগুলো আছড়ে বিনুনি করে দেওয়া।

হঠাৎ মিনি চুলে চিরুনির স্পর্শ পেতেই ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালো স্পর্শের দিকে।স্পর্শ একমনে চুলগুলো আছড়িয়ে বিনুনি করছে।ইদানীং মিনির মনে হচ্ছে স্পর্শ একটু বেশিই কেয়ার করছে ওর।মিনির কাছে যে স্পর্শের কেয়ার গুলো খারাপ লাগে তা নয়।বেশ ভালোই লাগে।স্পর্শ আশেপাশে থাকলে মনটা শান্ত হয়ে থাকে।মিনি আবারও পড়ায় মনোনিবেশ করে।

মিনির পরীক্ষা প্রায় শেষের দিকে।সব পরীক্ষাই ভালো হয়েছে।আজ উচ্চতর গনিত ২য় পত্র পরীক্ষা।আজ হলেই পরীক্ষা শেষ।পরীক্ষা শেষ করে বেরিয়ে মিনি দেখলো আজ স্পর্শ নয় ড্রাইভার এসেছে মিনিকে নিতে।মিনিকে দেখে ড্রাইভার বললো,স্যার আমারে পাঠাইছে।স্যারের নাকি ইম্পরট্যান্ট একটা মিটিং আছে।তাই আমারে বলছে আপনারে বাসায় পৌঁছাইয়া দিতে।

স্পর্শ না আসায় মিনির মন খারাপ হয়ে যায়।তারপর ওহ বলে মিনি গাড়ির পেছনের সিটে বসে পড়ে।

আজ আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে আছে।মনে হয় বৃষ্টি নামবে।মিনি গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে রেখেছে।বৃষ্টি ওর অনেক ভালো লাগে।কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজলেই দুতিনদিন বিছানা থেকে উঠতে পারেনা।প্রচন্ড জ্বর এসে চেপে ধরে।মিনি গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতর যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি নামে।আস্তে আস্তে বৃষ্টির গতি কমার বদলে বেড়েই চলেছে।মিনি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে স্পর্শের কথা ভাবছে।এখন ওই মানুষটার কথা ভাবতে ও মনে একটা অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়।স্পর্শর অনুপস্থিতিতে আজকাল নিজেকে কেমন ফাঁকা ফাঁকা মনে হয় মিনির।

“রাত আটটা বাজে ”

স্পর্শ কাকভেজা হয়ে ঘরে ঢুকে।মিনিকে একপলক ব্যালকনিতে দেখে নিয়ে কাবার্ড থেকে জামাকাপড় তুলে তাড়াতাড়ি ওয়াসরুমে ঢুকে পড়ে।দরজা লাগানোর শব্দে ঘোর ভাঙে মিনির।এতক্ষণ স্পর্শের কথাই ভাবছিলো।রুমে এসে স্পর্শের অফিসের ব্যাগ দেখে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকালো।
পানির আওয়াজ আসছে ওয়াশরুম থেকে।তারমানে স্পর্শ ওয়াশরুমে।মিনি তাড়াতাড়ি কিচেনে চলে গিয়ে দু মগ কফি করে নিয়ে আসে।মিনি রুমে আসার মিনিট দুয়েক পর স্পর্শ ওয়াশরুম থেকে বের হয়।স্পর্শের চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।দেখে মনে হচ্ছে শাওয়ার নিয়েছে।মিনি স্পর্শের দিকে একটা কফির মগ এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,এখন শাওয়ার নিলেন যে?

অফিস থেকে ফেরার পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।বাড়ি থেকে বেশি দূরে না পাঁচ মিনিটের পথ।বৃষ্টিতে ভিজেই বাসায় এসেছি।তাই শাওয়ার নিয়ে নিলাম।হাইচ্ছু।বলতে না বলতেই স্পর্শের হাঁচি শুরু হয়ে গেলো।হাইচ্ছু,,,,,,হাইচ্ছু।

মিনি বলল,তাড়াতাড়ি করে কফিটা খেয়ে নিন।ডিনার করেই শুয়ে পড়বেন।

কফি শেষ করে রাত নয়টায় সবাই ডিনার করে শুয়ে পড়ে।শুয়ে পড়লেও ঘুম নেই চোখে মিনি স্পর্শের।

রাতে উষ্ণ তাপে ঘুম ভেঙে যায় মিনির।চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে স্পর্শ ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।মিনি নিজের একটা হাত স্পর্শের হাতের উপর রাখতেই চমকে ওঠে।তারপর স্পর্শের কপালে,গালে,গলায় হাত ছুঁইয়ে দেখে স্পর্শের গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।এখন আমি কি করবো?ওনারতো গায়ে প্রচন্ড জ্বর।মাথায় জলপট্টি দিতে হবে।মিনি স্পর্শের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।স্পর্শ ছাড়ছে না বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে।এভাবে হলে চলবেনা মিনি অনেক কষ্টে স্পর্শের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।রান্নাঘর থেকে একটা বাটি এনে রুমাল ভিজিয়ে স্পর্শের কপাল বারবার ভিজিয়ে দিচ্ছে।জ্বর যেন কমার নামই নেই।অনেক্ষণ জলপট্রি দেওয়ার পর ড্রয়ার খুলে একটা ঔষধ বের করে স্পর্শকে ধরে খাইয়ে দেয়।স্পর্শের শরীর প্রচন্ড বেগে কাঁপছে।মিনি স্পর্শের গায়ে কাথা টেনে দেয়।তারপর ও কাজ হয় না।এবার আলমারি থেকে দুইটা কম্বল নামিয়ে স্পর্শের গায়ে দেয়।কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছে না।এবার মিনি নিজেই কম্বলের ভেতর ঢুকে স্পর্শকে
জড়িয়ে ধরে।স্পর্শ মিনিকে নিজের ভেতর যেন ঢুকিয়ে ফেলবে।

সকালে ঘুম ভাঙতেই স্পর্শ নিজেকে মিনির বুকে আবিষ্কার করে।গতরাতের কথা মনে করেই আলতো হাসে।মিনি একটু নড়েচড়ে উঠতেই স্পর্শ আগের মতো চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে পড়ে থাকে।মিনি চোখ খুলে প্রথমে স্পর্শের কপালে হাত ছোঁয়ায়।জ্বর নেই।কাল রাতে কি ভয়টাই না পেয়েছিল মিনি।এবার স্পর্শের থেকে সরে আসতেই স্পর্শ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিনিকে।মিনি উঠতে না পেরে ওভাবেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো।

চলবে………

হ্যাপি রিডিং💞

তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-০৮

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ০৮
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

পার্টিতে এক কোনে সোফায় বসে আছে মিনি।হাতে জুসের গ্লাস।মাহিরা ফ্রেন্ডদের সাথে এনজয় করছে।কেউ কেউ নাচতেছে।দূর থেকে কেউ একজন মিনিকে দেখে মুখে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বলল,আরিব্বাস!মালটা দেখি এখানে।একটুতো মজা নেওয়াই যায়।

এই ছেলেটা হচ্ছে সেদিন গাড়িতে বসে মিনি যার বডি নিয়ে মন্তব্য করেছিল সেই ছেলে।

চুপচাপ বসে আছে মিনি হঠাৎ সামনে কারো উপস্থিতি লক্ষ্য করে সামনে তাকিয়ে চমকে যায় এটাতো সেই ছেলেটা যার বডি দেখে আমি ইয়াক থু বলেছিলাম।খাইছে?এখন আমারে কি করবে আল্লাহ ভালো জানে।

ছেলেটি লালসার দৃষ্টি মিনির দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলে,আমি কি তোমার সাথে ডান্স করতে পারি সুন্দরী? ছেলেটার কথা মিনির ভালো লাগলোনা।তাই বলল,নাহ আমি এমনিই ঠিক আছি।

ছেলেটি বলল,আরে চলনা বেবি।লেটস এনজয়।

মিনি এবার বিরক্ত হয়ে বলল,
কতোবার বলবো আপনাকে আমি ডান্স করবোনা? কথা কানে যায় না?

এরকম একটা সুন্দরী সামনে থাকলে কথা কানে যাবে কি করে বলেই মিনির হাত চেপে ধরে।

মিনি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু একটা ছেলের শক্তির সাথে কি আর একটা মেয়ে পারবে?হাত ছাড়াতে না পেরে মিনি কষিয়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ছেলেটির গালে।

ছেলেটি বাঁকা হেসে বলল মামনির দেখছি অনেক তেজ?আই লাইক ইট।তারপর মিনিকে টেনে বাড়ির বাহিরে নিয়ে যায়।মিনি যেহেতু এক কোনায় ছিল তাই এতোক্ষণ কেউ ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করে নি।

এদিকে মাহিরা মিনিকে খুজছে।বাহিরে স্পর্শ ওয়েট করছে।মাহিরাকে কল করে জানিয়েছে।মিনিকেও কল করেছে মিনি ফোন তুলছেনা।

স্পর্শ অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন মাহিরা আর মিনিকে আসতে দেখলো না।তখন সে ভেতরে যাওয়ার প্রস্তুুতি নেয়।গেইটের ভেতর ঢুকতেই দেখলো একটা ছেলে একটা মেয়েকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর মেয়েটি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।স্পর্শ এগিয়ে গেল।কাছাকাছি আসতেই স্পর্শের চোখ রক্তবর্ণ ধারন করে।কারণ মেয়েটি মিনি।স্পর্শ আর দেরি না করেই ছেলেটির মুখ বরাবর পাঞ্চ করে।মিনি স্পর্শকে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পায়।দৌঁড়ে স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।ওর সারা শরীর কাপছে।যা স্পর্শ বুঝতে পারছে।স্পর্শ মিনিকে একপাশে দাঁড় করিয়ে ছেলেটিকে বেধরম মারতে থাকে।মাহিরা আর তিশা মিনিকে খুঁজতে বাহিরে এসে ছেলেটিকে স্পর্শ মারছে দেখে তিশা দৌড়ে এসে ছেলেটিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।স্পর্শ ছাড়ছেনা,মারতে মারতেই বলতে লাগলো,

তোর সাহস কি করে হয় ওকে টাচ করার?ওর সাথে মিসবিহেভ করার?বল।তিশা আর মাহিরা স্পর্শ কথা শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে মিনি কাঁদছে।ওরা বুঝে গেল এখানে কি হয়েছে।তিশা হাত জোর করে বলল,প্লিজ ভাইয়া আর মারবেন না।ও আমার কাজিন হয় এখনি ওকে এখান থেকে বাসায় পাঠিয়ে দেবো।আর কোনো মেয়ের সাথে মিসবিহেভ করার সাহস করবেনা ও।ছেলেটিকে ছেড়ে দিয়ে স্পর্শ বলে মনে থাকে যেন।পরের বার আমার হাতে পড়লে ও আর বেঁচে থাকতে পারবে না বলে মিনিকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।

আর ভয় নেই তোমার।আমি আছিতো।তারপর মাহিরাকে কিছুক্ষণ বকাবকি করলো ও কোথায় ছিলো।এগুলো কিভাবে ঘটলো।মাহিরা ভয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে।কোনো কথা বলছে না।তারপর ওদের দুজনকে নিয়ে স্পর্শ বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।

এদিকে তিশা ছেলেটির দিকে ঘৃণার দৃষ্টি দিয়ে বলতে লাগলো,
ছিঃ ভাইয়া ছিঃ আমি ভাবতেও পারছিনা তুই এরকম একটা কাজ করবি?আমি এক্ষুনি খালামণিকে সবটা বলবো।

ছেলেটি তিশার হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বলল,প্লিজ মাকে কিছু বলিস না।মা অনেক কষ্ট পাবে।আই,আই প্রমিস আমি ভালো হয়ে যাবো।

ঠিক আছে বলবনা আমি খালামণিকে।(তিশা)।

থ্যাংকস(ছেলেটি)।

বাড়িতে পৌঁছে কলিং বেল টিপ দিতেই তাহমিনা চৌধুরী দরজা খুলে দেন।মিনির চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে মিনি তোমার চোখ মুখ এরকম লাগছে কেনো?

কেউ কিছু বলার আগেই স্পর্শ বলল,ওর মাথা ব্যথা একটু রেষ্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।স্পর্শ ওর মাকে টেনশন দিতে চায় না তাই আর কিছু বললোনা।

সে কি তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?মেয়েটাকে উপরে নিয়ে যা।বলল তাহমিনা চৌধুরী।

মাহিরা নিজের রুমে,স্পর্শ মিনি ওদের রুমে চলে যায়।মিনিকে ফ্রেশ হতে বলে স্পর্শ ড্রেস নিয়ে গেস্টরুমের ওয়াশরুমে চলে যায়।মিনি থম মেরে বসে আছে।স্পর্শ না আসলে আজ কি হতো ওর সাথ?কিভাবে মুখ দেখাতো সবাইকে?নিশ্চয়ই মরা ছাড়া উপায় থাকতোনা।এসব ভেবেই চোখের পানি ছেড়ে দেয় মিনি।স্পর্শ চেঞ্জ করে রুমে এসে দেখে মিনি এখনো আগের জায়গায় বসে কাঁদছে।ফ্রেশ হয়নি।স্পর্শ মিনির কাছে গিয়ে মিনিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে দুহাতে মিনির গাল দুটো আলতো হাতে ধরে নরম কন্ঠে বলল,

কাঁদছো কেন তুমি? তুমি কি কোনো দোষ করেছো? দোষতো ওই জানোয়ারটা করেছে।তাহলে তুমি কেন কাঁদছো?নিজেকে শক্ত করো।তুমি যতো দুর্বল হয়ে পড়বে আশেপাশের মানুষ রুপি পশুরা ততো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।তুমি দুর্বল নও,একা নও,তোমার পাশে আমি আছি।

মিনি এতোক্ষণ ছলছল চোখে তাকিয়ে স্পর্শের কথা গুলো শুনছিলো।এবার স্পর্শের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে শব্দ করে কেঁদে উঠে।স্পর্শ থামায়না কিছুক্ষণ কেঁদে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।ঠিকই মিনি কিছুক্ষণ কেঁদে শান্ত হয়ে যায়।

স্পর্শ বলল,যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।খেয়ে ঘুমাবে।মিনি এতোক্ষণ চুপচাপ থাকলেও এখন বেশ লজ্জা লাগছে ও কিনা এতোক্ষণ স্পর্শের বুকে ছিলো?ছিটকে সরে আসে মিনি তারপর দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
মিনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসে স্পর্শ। মেয়েটা যে লজ্জা পেয়েছে সেটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যায়।

“পরেরদিন সকাল”

ভোর পাঁচটা।চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ।আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।মিনি কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে ফুল গুলো কুড়িয়ে দুষ্টুমি করছে।স্পর্শের ও আজ তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায়।পাশে তাকিয়ে মিনিকে না দেখে বুঝতে পারে মিনি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই
আছে।কারণ ভোরে ঘুম ভাঙলেই মিনি গাছটার নিচে চলে যায়।স্পর্শ ও গেলো সেখানে।পেছনে দাড়িয়ে মিনি করা দুষ্টুমি গুলো মনযোগ দিয়ে দেখছে।মিনি পেছন দিকে ফিরতেই স্পর্শকে দেখে মুচকি হাসলো।

স্পর্শ বলল,যাবে আমার সাথে?

মিনি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই স্পর্শ মিনির হাত ধরে টেনে নিয়ে হাটতে শুরু করে।রাস্তায় মানুষ জন নেই। ঢাকা শহরে এতো ভোরে কেউ ওঠে না।গ্রাম হলে হয়তো মানুষের আনাগোনা দেখা যেতো।বেশ অনেক্ক্ষণ নিরবতা পালন করার পর মিনি বলল,সকালের এই স্নিগ্ধ বাতাসের ছোঁয়াটা আমার খুব ভালো লাগে।আগে মাঝেমধ্যেই বাবা/ভাইয়ার সাথে হাটতে বের হতাম।বিয়ের পর আজ আপনার সাথে বের হলাম।

স্পর্শ জবাব দিলো, আমি ও মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হই।তপাৎ হচ্ছে আগে একা বের হতাম,এখন বউ নিয়ে।তারপর শব্দ করেই হেসে দিলো। সাথে মিনি ও হেসে উঠলো।

রোদের টুকরো গুলো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে।আস্তে আস্তে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে।স্পর্শ আর মিনি অনেকটা পথ চলে এসেছে।এখন ফিরে যাবে।পাশাপাশি হেঁটে চলেছে দুজন।

মিনি স্পর্শের টি-শার্ট পেছন দিকে খামছে ধরে রেখেছে।স্পর্শ ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলল,এমন ভাবে খামছে ধরে আছো কেনো?পরে কোনো অঘটন ঘটলে আমার দোষ দিবা।

মিনি দুহাত কচলে আমতা আমতা করে বললো,আসলে ওখানে একটা কুকুর দাঁড়িয়ে আছে।

স্পর্শ কুকুরটির দিকে তাকিয়ে মিনির ভয়ে জড়োসড়ো মুখের দিকে তাকায়।তারপর হু হা করে হেসে ওঠে।তারমানে তোমার সিকরেট ভয় পাওয়ার জিনিস হচ্ছে কুকুর?

মিনি অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।এখনো নখ দিয়ে স্পর্শকে খামছে ধরে রেখেছে।এবার স্পর্শ শক্ত করে মিনির হাত ধরে বলল,কুকুর তোমাকে কিছুই করবেনা।দেখো ও দূরে দাঁড়িয়ে আছে।মিনির ভয়টা কিছুটা কেটে যায়।দুজন মিলে বাসায় চলে আসে।

“গভীর মনোযোগ দিয়ে পদার্থ বইটির ভেতর মুখ ডুবিয়ে রেখেছে মিনি।টেষ্ট পরীক্ষার আর মাত্র কিছুদিন বাকি।মিনি সারাবছর আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দেয়।পরীক্ষার ১০/১৫ আগ থেকেই ওর পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াসনেস বেড়ে যায়।স্পর্শ ল্যাপটপ নিয়ে কিছু একটা করছে।মাঝেমধ্যেই মিনির দিকে নজর দিচ্ছে।কিন্তু মিনির এতোদিকে খেয়াল নেই সে পড়ছে তো পড়ছেই।বিয়ের চার মাস কেটে যাওয়ার পরও মিনির কোনো হেলদোল নেই।যেন কোনো অনুভূতি ওকে গ্রাস করতে পারছেনা স্পর্শের এতো কাছে থেকে ও।”

রাতে ঘুমাতে গিয়েও স্পর্শ দেখল মিনি আসছেনা।এখনো বইয়ের ভেতর মুখ গুজে আছে।ডিনার ও করবে না বলে দিয়েছে।পরে স্পর্শই খাইয়ে দিয়েছে।এবার স্পর্শ বলল,,

সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসো।এখন ঘুমিয়ে পড়ো।

মিনি আসছি বলে বই গোছাতে লাগলো।বই গুছিয়ে স্পর্শের অপর পাশে শুয়ে পড়লো।স্পর্শ অপেক্ষায় আছে কখন মিনি ঘুমিয়ে পড়বে আর ও মিনিকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাবে।কিছুক্ষণের মধ্যেই মিনি ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।স্পর্শ আলতো হাতে মিনিকে বুকে টেনে কপালে অধর যুগল ছুঁইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।কবে বুঝবে এই মেয়ে আমার ভালোবাসা।তুমি কি সত্যি বোঝনা?নাকি বোঝার চেষ্টা ও করো না?

দেখতে দেখতে মিনির পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এলো।একদিন পুরো দমে মিনি বইয়ের ভেতর ডুবেছিলো।আজ পরীক্ষার প্রথম দিন।স্পর্শ মিনিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।মিনি গাড়ি থেকে নেমে স্পর্শকে বায় জানিয়ে কলেজের ভেতর ঢুকে গেলো।স্পর্শের ইচ্ছে হলো মিনির কপালে একটা চুমু একে দিতে।আপাতত ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখে গাড়ি ঘুরিয়ে অফিসে চলে যায়।

কলেজে ঢুকেই মিনি আর ওর ফ্রেন্ডরা নিজেদের সিট খুঁজতে থাকে।মিনির সিট যে রুমে পড়েছে ওই রুমে ওর কোনো ফ্রেন্ডর সিট না থাকায় মিনি মন খারাপ করে সিটে বসে পড়ে।সব কিছুই পড়ে এসেছে তাও প্রথম দিন তাই একটু টেনশন হচ্ছে।

চলবে……..

তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-০৭

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ০৭
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মিনি।চোখ দুটো লাল হয়ে পানিতে টলমল করছে।চোখের পাতা বুঝলেই টুপ করে গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়বে।

কিছুক্ষণ আগে,,,,,,
স্পর্শের একটা মিটিং ছিলো মিনির কলেজ থেকে একটু এগিয়ে গেলে সামনের একটা রেস্টুরেন্টে।ডিলটা অনেক বড় আর স্পর্শ ডিলটা পেয়ে ও গেলো।সেই খুশিতে স্পর্শ ভাবলো মিনিকে কলেজ থেকে নিয়ে একটু ঘুরে আসবে।গাড়ি চালিয়ে স্পর্শ মিনির কলেজের দিকেই যাচ্ছে।গাড়ি চালাতে আশেপাশের গাড়ি দেখছে।হঠাৎ পাশের একটা আইসক্রিম পার্লারের সামনে রাস্তার অপর পাশে মিনিকে দেখলো স্পর্শ।ওরতো এখন ক্লাসে থাকার কথা এখানে কি করছে।

এদিকে মিনি আর তার ফ্রেন্ডরা ক্লাস বাঙ্ক দিয়ে আইসক্রিম খেতে বেরিয়েছে।মাত্রই আইসক্রিম পার্লারের সামনে এসেছে।এবার রোড ক্রসিং করেই পার্লারে ঢুকবে।মিনির ফ্রেন্ডরা ওর পিছনেই আছে।মিনি রাস্তার মাঝখান দিয়ে ছুটলো পার্লারের দিকে।সামনে দিয়ে একটা গাড়ি আসছে মিনির সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।স্পর্শের তো মনে হচ্ছে কেউ কলিজা ছিড়ে ফেলছে এরকম অবস্থা।কোনোরকম দৌঁড়ে গিয়ে মিনির হাত ধরে টেনে রাস্তার পাশে আনে।এনেই সজোরে মিনির গালে থাপ্পড় মেরে দেয়।

“বর্তমান ”

স্পর্শ হাত মুষ্টি বদ্ধ করে চোখ মুক লাল করে দাঁড়িয়ে আছে। মিনির ফ্রেন্ডরা মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক্ষুনি কি হয়ে যেত ভেবেই।মিনি এখনো গালে হাত দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।

চুপ,একদম কাঁদবেনা ধমক দিয়ে বলল,স্পর্শ। তারপর মিনির হাত শক্ত করে ধরে পার্লারের ভিতর যায়।মিনির ফ্রেন্ডরা স্পর্শের রাগ দেখে সামনে এগোচ্ছে না।মিনি ও খুব ভয় পেয়ে আছে।
স্পর্শ মিনিকে নিয়ে একটি টেবিলে বসে ভেনিলা,চকলেট ফ্লেভারের কতোগুলো আইসক্রিম ওর্ডার করে।এতো গুলো আইসক্রিম ওর্ডার করায় মিনি স্পর্শের দিকে তাকায়।মিনিকে তাকাতে দেখে স্পর্শ শান্ত কন্ঠে বলল,আইসক্রিম খাবে তাইনা?কোনো সমস্যা নেই রিল্যাক্স মুডে বসে আইসক্রিম খাবে।সবগুলো কিন্তু তোমার জন্যই।

স্পর্শের কথাগুলো যতটানা শান্ত তারচেয়ে বেশী ভয়ঙ্কর লাগছে মিনির কাছে।তাই ভয়ে ঢোঁক গিলছে মিনি।

ওয়েটার এসে কতোগুলো আইসক্রিম দিয়ে গেলো।স্পর্শ বলল,শুরু করো,আরো আছে।এগুলো শেষ করলেনা বাকিগুলো খেতে পারবে।

এবার মিনি শব্দ করেই কেঁদে উঠে।মিনির কান্না দেখে স্পর্শ বলল,,
স্টপ ক্রায়িং।একদম কান্না করবে না।তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করো।
মিনির কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলো।লোকটা এতো নিষ্ঠুর।মনে কোনো দয়া,মায়া নেই।এইভাবে শাসিয়ে যাচ্ছে আমাকে।

আশেপাশে টেবিলের কয়েকটা ছেলে তাকিয়ে দেখছিল মিনির কান্না মাখা মুখের দিকে।স্পর্শ চায়না তার প্রেয়সীকে এইরুপে সে ছাড়া অন্যকেউ দেখুক,তাই নিজের রুমাল দিয়ে মিনির চোখ-মুখ মুছে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল,

এবার কান্না অফ করো।আর তুমি যতটুকু খেতে পারবে ততটুকুই খাও আমি কিছু বলব না।

এবার মিনি হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,আপ,,,নি,,,আমা,,কে,, মে,,রে,,ছেন,,ধমক,,দি,,,য়ে,,ছেন।

ওকে আ’ম সরি।প্লিজ আর কেঁদো না।লোকে কি বলবে?সবাই বলবে,ওই দেখো একটা বাচ্চা মেয়ে আইসক্রিমের জন্য কান্না করছে।(মুখটা ইনোসেন্ট করে বলল স্পর্শ)।
মিনি চেঁচিয়ে বলল,আমি আইসক্রিমের জন্য কান্না করছি?

না।একদম না।কিন্তু কি বলোতো সবাই তো তাই ভাববে।(চোখ দুটো ছোটে করে বলল স্পর্শ)।

মিনি আশেপাশে তাকিয়ে স্পর্শকে বলল,আমি শুধু দুটো চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম খাবো।

স্পর্শ বলল,ঠিক আছে।

মিনি আইসক্রিম খাচ্ছে আর আশেপাশে তাকাচ্ছে।স্পর্শ তার প্রেয়সীকে দেখতে ব্যস্ত।মিনি মাঝেমাঝেই এক ব্রু কুচকে তুলছে।মিনির এই এক অভ্যাস খাওয়ার সময় আশেপাশে তাকানো যার ফলে মিনির নাকে, ঠোঁটের পাশে আইসক্রিম লেগে গেছে।স্পর্শ আবারো নিজের রুমাল বের করে মিনির নাক,মুখ মুছে দেয়।আইসক্রিম খাওয়া শেষ করে মিনি আর স্পর্শ গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।মিনি অনেকবার স্পর্শকে জিজ্ঞেস করলো আমরা কোথায় যাচ্ছি।কিন্তু স্পর্শ বলছেনা।চুপ করেই আছে।স্পর্শ কথা বলছেনা বলে মিনি গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।যা দেখে স্পর্শ মুচকি হাসে আর কিচুক্ষণ পরপর মিনিকে দেখছে।এক সময় গাড়ি এসে থামে একটি নদীর ধারে।মিনি এতোক্ষণ গাল ফুলিয়ে থাকলেও এখন বেশ উচ্ছাসিত হয়েই গাড়ি থেকে নামে।

স্পর্শ হালকা হেসে বলল,জায়গাটা পছন্দ হয়েছে?

মিনি এক্সাইটেড হয়ে বলল,,খুব পছন্দ হয়েছে।তারপর দৌঁড়ে নদীর পাড়ে গিয়ে দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির স্বাদ নিতে থাকে।এখানে যে কেউ আছে সেই খেয়াল মিনির নেই।স্পর্শ বুকের সাথে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে মিনিকে দেখছে।

কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো।মিনি এখানে একা নয় এই কথা মাথায় আসতেই মিনি লজ্জায় মিইয়ে যায়।স্পর্শ শক্ত কন্ঠে বলল,লজ্জা পেতে হবেনা তুমি তোমার নিজের মতো করে সময়টাকে উপভোগ করো।এবার মিনি একটু স্বাভাবিক হয়।
তারা দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে।এভাবে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর লাঞ্চ টাইম হয়ে যাওয়ায় দুজনে একটা রেস্টুরেন্টে এসে লাঞ্চ সেরে নেয়।আবারো ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে মিনি,স্পর্শ।সারাদিন বাইরে কাটিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে দুজনে।

স্পর্শ ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।তাই মিনি মাহিরার ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই মাহিরা মিনিকে বলল,ভাবি কাল আমার ফ্রেন্ডর বার্থডে পার্টি আছে।তুমি কিন্তু আমার সাথে যাবে।

এই মাসে দেখি সবার বার্থডে। আমার ফ্রেন্ডের ও এই মাসেই বার্থডে গেছে।তো তুমি একাই যাওনা আমার যাওয়ার কি দরকার।(মিনি)

প্লিজ ভাবি না করো না।দেখো বাবা,মা আমাকে একা যেতে দিবে না।ভাইয়াতো একদমই যেতে দেবে না।প্লিজ ভাবি,প্লিজ,প্লিজ।(করুন সুরে বলল মাহিরা)

আচ্ছা ঠিক আছে।আমি এখন যাই অনেক টায়ার্ড লাগছে বলে মিনি নিজেদের রুমে চলে আসে।এসে দেখে স্পর্শ ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে কাজ করছে।আজকে সারাদিন ঘোরাঘুরির কারনে কাজ করতে পারেনি স্পর্শ।তাই কিছুটা কাজ এখন বসেই করে নেবে।স্পর্শকে কাজ করতে দেখে মিনি এক মগ কফি করে এনে স্পর্শর সামনে রাখে।স্পর্শ চোখ তুলে তাকিয়ে এক মগ কফি দেখে মুচকি হেসে কফির মগটা হাতে নেয়। এখন এক মগ কফি খুব প্রয়োজন ছিলো স্পর্শের।কফির মগে এক চুমুক দিয়ে ল্যাপটপের দিকে নজর রেখেই স্পর্শ বলল,নিজের জন্য বানালে না যে ?

হাই তুলে মিনি বলল,
আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে।আমি ঘুমাবো তাই আর নিজের জন্য কফি করি নি।তারপর মিনি খাটে এসে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

রাত এগারোটা বাজে।মিনি এখনো ঘুমাচ্ছে।স্পর্শ অনেকবার ডেকেছে ডিনার করার জন্য।মিনির বারবার এক কথা ও এখন ঘুমাবে,স্পর্শ যাতে ওকে ডিসটার্ব না করে।স্পর্শ সবার সাথে ডিনার করে মিনির খাবারটা উপরে নিয়ে এসেছে।সেই কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু মিনির ওটার নাম নেই।

হাতে হ্যাঁচকা টানে ঘুম থেকে উঠিয়ে মিনিকে বসিয়ে দিলো স্পর্শ।বিরক্তিতে চোখ,মুক কুচকে ফেলে মিনি।ওর এখন ইচ্ছা করছে স্পর্শের সব চুল ছিড়ে ফেলতে।

স্পর্শ বলল,আমার চুল পরে ছিড়তে পারবে আগে খেয়ে নাও বলে মিনির মুখের সামনে ভাতের লোকমা তুলে ধরে স্পর্শ।মিনি একটুও অবাক হয়না এই ভেবে যে স্পর্শ কিভাবে ওর মনের কথা বুজলো।কারণ মাঝেমধ্যেই এরকম হয়।প্রথম প্রথম অবাক হলেও এখন বিষয়টা ওর কাছে স্বাভাবিক লাগে।কোনো কথা না বলে ভাতের লোকমা মুখে তুলে নেয় মিনি।ও জানে স্পর্শ এখন ওকে খাবার খাইয়েই ছাড়বে।তাই শুধু শুধু গায়ের জোর খাটিয়ে লাভ নেই।খাওয়া শেষ হতেই স্পর্শ মিনির মুখ মুচে দেয়।আগে থেকে মিনি আর স্পর্শ সম্পর্কটা শত্রু থেকে বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।মিনি ভাবে স্পর্শ হয়তো বন্ধুত্বের খাতিরে ওর কেয়ার করে।মিনি তো আর জানে না স্পর্শ তাকে ভালোবাসে।স্পর্শ খাবারের প্লেট রান্নাঘরে রেখে এসে মিনির পাশে শুয়ে পড়লো। এখন দুজন দুই প্রান্তে হলেও পরে দেখা যায় ঠিকই মিনি স্পর্শের বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।

“সকাল”

রান্নাঘরে সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে মিনি।তাহমিনা চৌধুরীর কাছ থেকে মোটামুটি রান্নাটা শিখে নিয়েছে।যদিও রান্না সবসময় তাহমিনা চৌধুরী নিজেই করেন,মাঝেমধ্যে মিনিও অবসর পেলে মিনিও রান্না করে।
ব্রেকফাস্ট তৈরি করে রুমে যায় মিনি,ঘামে পুরো চিপচিপে হয় আছে।স্পর্শ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মিনির অবস্হা দেখে তাড়াতাড়ি খাটে বসিয়ে দিয়ে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দেয়।

মিনি আর স্পর্শ বেরিয়ে পড়ে।মিনি কলেজে আর স্পর্শ অফিসে যাবে।

সন্ধ্যায় মিনি আর মাহিরা বেরিয়ে পড়ে মাহিরার ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে।তাহমিনা চৌধুরী স্পর্শকে বলে দিয়েছে ওদেরকে আসার সময় বাসায় নিয়ে আসতে।স্পর্শ এখনো অফিসে তা না হলে স্পর্শই ওদের দুজনকে ড্রপ করে দিতো।মাহিরা একটা লাল রঙা গ্রাউন পড়েছে।চুলগুলো উঁচু করে ক্লিপ দিয়ে আটকানো।মুখে ভারী মেকাপ।ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে জুয়েলারি পড়েছে।মেয়েটা এমনিতেই সুন্দরী,এখনতো সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে।রিজু এখানে থাকলে নির্ঘাত তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলতো।মিনির কথা আর কি বলল,,ও একটা ব্রাউন কালার গ্রাউন পড়েছে, স্ট্রেট চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া।ম্যাচিং জুয়েলারি,মুখে হালকা মেকাপ,এতেই যেন মিনির সৌন্দর্য উপছে পড়ছে।তাহমিনা চৌধুরী দুজনকেই নজর টিকা লাগিয়ে দিলেন,কারো নজর যেন না লাগে আমার মেয়েদের উপর।তারপর দুজন গাড়িতে চড়ে বসে।গাড়ি গিয়ে থামে মাহিরার ফ্রেন্ডের বাসায়।বাড়িটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।মিনির হাত ধরে মাহিরা ভেতরে নিয়ে যায়।বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে।হাতের গিফট বক্সটি তিশার(মাহিরার ফ্রেন্ড) হাতে ধরিয়ে দিয়ে মিনির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

মিট মাই সুইস ভাবি।আর ভাবি ও হচ্ছে আমার বেষ্টু তিশা(মাহিরা)।

হায়,,, (মিনি)
হ্যালো ভাবি(তিশা)

তারপর ওরা সবাই কথা বলতে লাগলো।একটু পরই কেক কাটা শুরু হবে।

চলবে…….

(বিঃদ্রঃ রিচেইক করা হয় নি।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং💞)

তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-০৬

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ০৬
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের একমাস কেটে গেছে।সারা বাড়ি রান্নার ঘ্রাণে ম-ম করছে।আজ বাসায় অনেক পদের রান্নার হচ্ছে।তার কারণ মাইশা আপু আর তার হাসবেন্ড আজ স্পর্শদের বাসায় আসছে।শাওন (মাইশার হাজবেন্ড) ভাইয়া দুসপ্তাহ আগেই ব্যবসায়িক কাজ চুকিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন।মাইশা আপু আর শাওন ভাইয়ার স্পর্শদের বাড়িতে আসার পেছনে একটা কারণ আছে সেটা কি আমরা কেউই জানিনা।আপুরা আসলে বলবেন কারণটা কি…..?মেয়েদের বাবার বাড়িতে আসতে কোনো কারণ লাগে না।কিন্তু মাইশা আপুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন।আপু হুটহাট বাবার বাসায় আসেনা।

রান্নার কাজ প্রায় শেষ গিয়ে গোসল করে নাও মিনি।শাওন প্রথম বার তোমাকে সামনে থেকে দেখবে।(তাহমিনা চৌধুরী)।

ঠিক আছে মা(মিনি)।

স্পর্শ আজ দুপুরের আগেই বাসায় ফিরেছে,মাইশা আসবে বলে।রুমের দরজা খুলেই স্পর্শ বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো।মিনি একটা খয়েরী রঙের শাড়ি পড়েছে।আজ চোখে কাজল ও পড়েছে সাথে খয়েরী লিপস্টিক স্পর্শ বিয়ের দিন ছাড়া কখনো কাজল পড়তে দেখেনি।হাতে খয়েরী কাঁচের চুড়ি ও পড়েছে।ভেজা চুল দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা মাত্রই শাওয়ার নিয়েছে।শাড়ি পড়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে কোথাও কোমর,পেট দেখা যায় কিনা।স্পর্শের সামনে যেন কোনো অপ্সরা দাড়িয়ে আছে।স্পর্শ যেন দিন দিন মেয়েটার মাঝে হারিয়ে যায়।

মিনি সাজ কমপ্লিট করে রুম থেকে বেরুতে নিলেই দরজার সামনে স্পর্শকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

আপনি কখন এলেন।আচ্ছা বাদ দিন,অফিস থেকে এসেছেন আগে শাওয়ার নিয়ে নিন।আমি আপনার কফি দিয়ে যাচ্ছি বলে মিনি রান্না ঘরের দিকে যায়।
স্পর্শ মুচকি হেসে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।

স্পর্শের কফি এখন মিনিই বানায়।স্পর্শের কড়া নির্দেশ তার কফি মিনিই বানাবে।প্রথম প্রথম মিনি নাকচ করলেও শেষে স্পর্শের জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে।মিনি কফি খাটের পাশে ছোট টেবিলের উপর রেখে মাহিরার রুমের দিকে যায়।মাহিরা প্রথমে মিনির সাথে তেমন কথা না বললেও এখন বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে মিনির সাথে।মাহিরা সবার সাথে খুব সহজে মিশতে পারেনা,কিন্তু একবার কাউকে ভালোবাসলে সহজে তাকে ছাড়েনা।

মিনি মাহিরার রুমে গিয়ে দেখে মাহিরা ভিডিও কলে রিজুর সাথে কথা বলছে।এই এক মাসে অনেক কিছু বদলেছে।মিনির ফ্রেন্ড রিজুর সাথে মাহিরার রিলেশন চলছে।স্পর্শ আর মিনির রিসিপশনের দিন থেকেই রিজু,মাহিরা একে অপরকে চিনে।বিয়ের কিছুদিন পর বাগানে মাহিরার বার বার রিজুর প্রসংশা করা,তার সম্পর্কে জানতে চাওয়ার কারণ এটাই ছিলো।

কিরে সালা দিন দিন ড্রাম হইতাছোস কেন…..?(মিনি)।

তুই আমারে সবসময় ড্রাম বলিস কেনো…?আমি গুলুমুলু,কিউট নট ড্রাম।প্রসংশার সৎ ব্যবহার করতে শিখ বেয়াদপ।এজন্যইতো তুই শুটকি হয়ে আছিস(রিজু)।

আম নট শুটকি।আমাকে দেখলে সবাই বলে পারফেক্ট।আর বাকি রইলো তোর কথা তুই সারাজীবন আমার কাছে ড্রামই থাকবি।(মিনি)

নিচ থেকে কথার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।মাইশা আপুরা বোধহয় চলে এসেছে।মাহিরা তাড়াতাড়ি নিচে এসো।আপুরা মনে হয় এসে গেছে।(মিনি)

আচ্ছ বাবু এখন রাখছি হ্যাঁ।লাভ ইউ(মাহিরা)।

লাভ ইউ টু বাবু।বায়(রিজু)।

মিনি মাইশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
কেমন আছো আপু।কতোদিন পর দেখলাম তোমাকে।(মিনি)

মাইশা ও হেসে দিয়ে মিনিকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো…?

এমনিতে ভালো ছিলাম এখন তুমি আসাতে আরো ভালো লাগছে বলে মাইশাকে ছেড়ে পাশে দাড়িয়ে থাকা শাওনকে উদ্দেশ্য করে মিনি বলল,,

আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ভালো আছেন…?

উত্তরে শাওন মুচকি হেসে বলল,,

আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো..?

জ্বি ভাইয়া ভালো।(মিনি)।একে একে স্পর্শ, মাহিরা, বাবা,মা সবার সাথে কুশল বিনিময় করে সোফায় গিয়ে বসে পড়লো মাইশা আর শাওন।

মিনি মাইশাকে বলল,,

আচ্চা আপু এতগুলো মিষ্টি কিসের জন্য…?

মিনির কথায় সবাই কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকালো মাইশা আর শাওনের দিকে।

মাইশা লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে।তাই শাওন কিছুক্ষণ চুপ থেকে মা-বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

আপনারা নানা-নানু হতে চলেছেন।

শাওনের কথা বোধগম্য হতেই মামুন চৌধুরী ও তাহমিনা চৌধুরী ছলছল চোখে মাইশার দিকে তাকিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন।স্পর্শ আর মাহিরা ও যেন খুশিতে আটখানা হয়ে যায়। হবে নাই বা কেন..?পরিবারে নতুন সদস্যের আগমনে যে কেউ খুশি হয়।আমার মুখে ও চওড়া হাসির রেখা।সবাই নতুন সদস্য আসার খুশিতে মেতে ওঠে।

মাইশার বিয়ে হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর।এই পাঁচ বছরে একটা সন্তানের জন্য কতো কি করেছে।শেষে আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন।

বিকালে মিনি,স্পর্শ,মাহিরা,মাইশা,শাওন ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে।হঠাৎ শাওন মিনি আর স্পর্শকে উদ্দেশ্য করে বলল,আমরাতো তোমাদের মামা-মামী হওয়ার সুযোগ করে দিলাম এবার তোমরাও আমাদের ফুপা-ফুপি হওয়ার সুযোগ দাও।শাওনের কথায় স্পর্শ আর মিনি অস্বস্তিতে পড়ে যায়।অস্বস্তি কাটিয়ে স্পর্শ বলল,,,
মিনি এখনো বাচ্চা।আগে ওর আরেকটু বুঝ হোক তখন না হয় ভেবে দেখব।

স্পর্শের কথায় মিনির লজ্জা যেন আরো এক ধাপ বেড়ে গেলো।এবার মাহিরা মিনিকে চেপে ধরলো গান গাওয়ার জন্য।মাহিরার সাথে মাইশা আর শাওন ও সম্মতি দিলো।কিন্তু বাধা দিলো স্পর্শ ও কিছুতেই মিনিকে গান গাইতে দেবে না।যে ফাঁটা বাঁশের মতো গলা,গান গেয়ে মান ইজ্জত সব হারাবে।তাই স্পর্শ নানাভাবে মিনির গান গাওয়া আটকাতে চাইছে কিন্তু মাহিরা,মাইশা,শাওন এর সাথে পারলোনা।পারবে কিভাবে মিনি নিজেও গান গাইতে ইচ্ছুক।যদি মিনির সম্মতি না থাকতো তাহলে কিছু একটা করা যেত।
শেষ মেষ ঠিক হলো মিনি গান গাইবে আর স্পর্শ গিটার বাজাবে।মাহিরা নিচে নেমে স্পর্শের গিটারটা নিয়ে আসে।
স্পর্শ আল্লাহ আল্লাহ করে গিটারে সুর তোলে,

মিনি গান গাইতে শুরু করে।

♪♪Har lamha meri akhe
Tujhe dekh nahi cahe
Har ra….s..ta..mera
Teri tarafhi jaye…♪♪

Bepanah pyaar tujche Tu Kew janena..
Hiya ekrar tujche Tu Kew mane na…(2)
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)

গান শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়ে প্রসংশা করে।

ওয়াও ভাবি তুমি এতো সুন্দর গান গাও।আমিতো তোমার গানে ফিদা হয়ে গেছি।

স্পর্শ হা করে তাকিয়ে আছে।ও বুঝতে পারছে না ও কি জেগে আছে নাকি স্বপ্ন দেখছে।এই মাত্র কি মিনিই গান গাইলো।আরে নাহ এটা মিনি হতেই পারেনা ও তো সারাদিন বেসুরা গলায় গান গায়।

স্পর্শকে মিনির দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে শাওন স্পর্শকে খোঁচা মেরে বলল,মুখটা বন্ধ করো সালাবাবু,বউকে ঘরে গিয়ে ও দেখতে পারবে এখানে আমরা সবাই আছি এদিকেও একটু নজর দাও।

দুলাভাইয়ের কথায় স্পর্শের ধ্যান ভাঙতেই ও চট করে মিনিকে প্রশ্ন করলো, তুমি কোথাও রেকর্ডিং চালু করে রাখোনিতো।

স্পর্শের এরকম প্রশ্নে মিনি রেগে গিয়ে বলল,,

মানে…? আপনি কি বলতে চাইছেন।আমি গানটা নিজে গাই নি…..?

স্পর্শ বলল,
যদি এই গানটা তুমিই গেয়ে থাকো তাহলে প্রতিদিন রুমে বেসুরা গলায় কাউয়ার মতো কা কা করে যে সে কে…..?

মিনিকে কাউয়া বলায় রেগে গেলেও নিজেকে সামলে বলল,সুন্দর করে গান গাইতে হলে অনেক কষ্ট করতে হয়।কষ্ট হওয়ার ভয়েতো আমি নিজের গান গাওয়ার ইচ্চেটাকে মাটি চাপা দিতে পারিনা।তাই বেসুরা গলায় গান গেয়ে নিজের ইচ্ছে পূরন করি।

মিনির কথা শুনে স্পর্শ সহ সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।

রাত ০২ঃ৪৫ মিনিট।মিনি ঘুমিয়ে আছে,স্পর্শের ঘুম ভেঙে গেছে।একধ্যানে তাকিয়ে আছে মিনির মায়াজড়ানো মুখের দিকে।স্পর্শ ভাবছে কি আছে এই মেয়েটার মাঝে যা আমাকে প্রতি খনে খনে টানছে।অফিস থেকে এসে ওকে না দেখলে কেন আমার শ্বাস আটকে আসে,নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে।মেয়েরটার পাগলামি গুলো,মাঝেমাঝে উল্টো পাল্টা কথা বলা সব কিছু আমার এতো কেন ভালো লাগে…?।মেয়েটা যতক্ষণ আমার আশেপাশে থাকে অদ্ভুত এক অনুভুতি কাজ করে আমার মধ্যে।আচ্ছা এই অনুভুতিটার নাম কি…..?ভালো লাগা নাকি ভালোবাসা।জানিনা,কিচ্ছু জানিনা শুধু জানি আমার সারাটা জীবন এই মেয়েটার সাথে কাটাতে চাই।এই মেয়েটার হাত ধরে হাজার বছর বাঁচতে চাই,ওর পায়ের সাথে পা মিলিয়ে কোনো এক গভীর রাতে হাটতে চাই,ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই,এগুলো যদি ভালোবাসা হয় তবে আমি ভালোবাসি।হ্যাঁ তাকে আমি ভালোবাসি।নিজের জন্য ভালোবাসি,নিজের ভালোথাকার জন্য ভালোবাসি।

তারপর মিনির কপালে ভালোবাসার উষ্ণ পরশ একে দিয়ে মিনিকে বুকে টেনে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।এটাই স্পর্শ ভালোবাসার প্রথম পরশ।এর আগে স্পর্শের এরকম অনেক ইচ্ছে হলেও ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখেছে স্পর্শ। কারণ এতোদিন স্পর্শ শিওর ছিলো না ও কি চায়।আজ যেহেতু ও জেনেছে ও কি চায় তাই আজ আর নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখেনি।

স্পর্শ গাড়ি নিয়ে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে মিনির জন্য।অফিস যাওয়ার পথে মিনিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যাবে।প্রতিদিন মিনিকে স্পর্শ কলেজ ড্রপ করে দেয় আর আসার সময় ড্রাইভার নিয়ে আসো মিনিকে।কারণ স্পর্শ তখন অফিসে থাকে।

এতোক্ষণ কি করছে মেয়েটা বলে হাত ঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ সরাতেই স্পর্শের চোখ আটকে গেলো মিনির উপর।ব্লু ও ব্ল্যাক কালার কম্বিনেশনের একটা গোল জামা পড়েছে মিনি চুলগুলো সামনে হালকা একটু ফুলিয়ে পেছনে ছেড়ে দিয়েছে,মুখে হালকা লাইট মেকাপ,গায়ে জড়ালো ব্ল্যাক ওড়নাটা ঠিক করতে করতে এগিয়ে আসছে মিনি।আজকে এতো সাজগোজের কারন ওর বান্ধবী প্রিয়ার আজ বার্থডে।এগিয়ে এসে মিনি তাড়াহুড়ো করে বলল,,
সরি একটু লেইট করে ফেল্লাম।তারপর দুজনেই গাড়িতে উঠে বসলো।স্পর্শ ড্রাইভ করছে আর বারবার মিনিকে দেখছে।
স্পর্শ ওর দিকে তাকাচ্ছে বুঝতে পেরে মিনি বলল,আজকি আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে যে বারবার তাকাচ্ছেন।

মিনির কথার উত্তরে স্পর্শ বলল,আজ তোমাকে পেত্নীর মতো লাগছে তাই তাকাচ্ছিলাম।মিনি মুখ ফুলিয়ে বলল,মোটেই আমাকে পেত্নী লাগছে না হুহ।তারপর তারা কলেজে এসে পড়ে।মিনি নেমে যায় কলেজে আর স্পর্শ গাড়ি ঘুরিয়ে অফিসের দিকে চলে যায়।

মিনি আর ওর কিছু ফ্রেন্ড শপিংমলে এসেছে।এমনিতে প্রিয়ার জন্য সবাই সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে তারপরও সবাই আলাদা আলাদা কিছু গিফট করবে প্রিয়াকে।মিনি ড্রেস দেখছে কিন্তু পচন্দ হচ্ছে না।মলের একটি ছেলে বলল ম্যাম আপনি কি ধরনের ড্রেস চান আমাদেরকে বলুন।
মিনি বলল,,
এই ধরুন হঠাৎ কালার,আচমকা ডিজাইনের কোনো ড্রেস হবে…?
মিনির কথা শুনে ছেলেটি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।মনে মনে বলল,মেয়েটা নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে।কিন্তু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,না ম্যাম এরকম কোনো ড্রেস হবে না।তারপর মিনি ড্রেসের বদলে একটা হ্যান্ড ব্যাগ কিনে নেয়।

চলবে……..

(বিঃদ্রঃরিচেইক করা হয় নি।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং💞)

তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-০৫

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ০৫
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

মিনি এতোদিন ধরে এই বাড়িতে আছে অথচ বাড়িটাই ঘুরে দেখা হয়নি।তাই ঠিক করেছে আজ বাড়িটা ঘুরে দেখবে।বাড়িটা ঘুরে দেখতে দেখতে মিনি সকালের কথা ভাবতে লাগলো।স্পর্শের গায়ে পানি ফেলার পর স্পর্শ রেগে খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়ে। গটগট করে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়।মিনি ভয়ে আর রুমের দিকে পা বাড়ায়নি।রুমে গেলেই স্পর্শ সমস্ত রাগ মিনির উপর ঝাড়বে।

বাড়িটা ঘুরে দেখে এবার গেলো বাগানে।বাগানের এক পাশে নানা রকমের ফুলের গাছ। অন্য পাশে ছোট একটা গোল টেবিল সাথে চেয়ার।মিনি গাছের ফুল গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে।দেখতে দেখতে শেষ প্রান্তে গিয়ে মিনির নজর আটকে য়ায একটা গাছে।গাছটা কৃষ্ণচূড়া ফুলের।মিনির সবচেয়ে প্রিয় ফুল কৃষ্ণচূড়া আর কাঠগোলা।খুশিতে মিনি গাছটির দিকে এগোতেই পেছন থেকে ডাক পড়লো।

ভাবি,,,,,, কি করছো…..?(মাহিরা)

মিনি পেচনে তাকিয়ে মাহিরাকে দেখে একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল,বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।কিন্তু তুমি এখন এখানে কেন তোমার তো এখন স্কুলে থাকার কথা।

মাহিরা আমতা আমতা করে বলল ওই এমনি ভালো লাগছিলো না তাই চলে এলাম।তাছাড়া তোমার সাথে ও তো তেমন কথা হয়নি,তাই ভাবলাম আজ তোমার সাথে গল্প করবো।

মিনি ভ্রুকুটি করে তাকায় আজ হঠাৎ আমার সাথে গল্প করতে কেন চাইছে মেয়েটা….?তারপর নিজের মনে বলে ওঠে কিজানি আমার এতসব বুঝে কাজ নেই।

তারপর মিনি আর মাহিরা বাগানটা ঘুরতে ঘুরতে গল্প করতে লাগলো।গল্প করার মাঝেই মাহিরা মিনির ফ্রেন্ডদের কথা জিজ্ঞেস করে, কয়টা ফ্রেন্ড, ক’জন ছেলে,ক’জন মেয়ে।মিনি ও তার উত্তর দিচ্ছে।মাহিরা শুধু মিনির ফ্রেন্ড রিজুর কথাই বারবার বলছে,প্রসংশা করছে।
মিনি কিছু একটা আন্দাজ করে নিঃশব্দে হাসলো।

আজ স্পর্শ নাক চুলকোবার সময় পাচ্ছে না।বিয়ের কারনে অফিসে আসতে পারেনি তাই প্রচুর কাজ পেন্ডিংপড়ে আছে।সেগুলোই করছে।পিয়ন কফি দিয়ে গেছে প্রায় ত্রিশ মিনিট হবে।কফি ঠান্ডা বরফ হয়ে আছে।

ড্রাইভার মিনির সব বই এনে দিয়েছে।মিনি সেগুলোই গুছিয়ে রাখছে স্পর্শর রুমে কর্নারে রাখা একটি টেবিলে।বই গুলো গুছিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিচে গেলো।মা,মাহিরা,আর মিনি লাঞ্চ করছে।বাবা কোনো এক ফ্রেন্ডর বাসায়, স্পর্শ অফিসে। খাওয়া শেষ করে মিনি রুমে এসে মোবাইল নিয়ে গেমস খেলতে লাগলো।এটা ওর বিয়ের আগের মোবাইল।বিয়ের কিছুদিন আগেই আদিল কিনে দিয়েছিল।গতকাল ও বাড়ি থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছে।গেমস খেলতে খেলতে মিনি ঘুমিয়ে পড়ে।

স্পর্শ বেশ রাত করেই বাসায় এসেছে।কাজ শেষ করতে দেরি হয়ে যায়।রুমে ঢুকেই স্পর্শ শুনতে পেলো কেউ ফাটা গলায় গান গাইছে,

“Tomame la mano que tu eres cosa buena
Esta nocha quiero bailar sobre la arena”

“No say una ajena,no say nada mal
Ven paka,ven paka,y ahora”

স্পর্শ অনেক টায়ার্ড, এরমাঝে এরকম ফাটা বাঁশের গলায় গান শুনে প্রচন্ড বিরক্ত।অফিসের ব্যাগ রেখে স্পর্শ ফ্রেশ হতে চলে যায়।স্পর্শ এসেছে দেখেও মিনি ভ্রুক্ষেপ করলোনা।খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে মিনি সেদিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায়।স্পর্শের মুখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি টপটপ করে পড়ছে।হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি,মুখের সেই লাল তিল, চোখের পাপড়ি গুলো পানিতে ভিজে আছে,ঠোঁট দুটি গোলাপি হয়ে আছে।সিল্কি ভেজা চুলগুলো কপালের উপর আছড়ে পড়েছে।পরনে একটা ব্লু কালার স্লিভলেস গেঞ্জি আর অফ হোয়াইট ট্রাউজার।সব মিলিয়ে মিনির কাছে মনে হচ্ছে সে যেন স্বপ্নে কোনো হিরোকে দেখছে।চোখ বুজলেই যেন স্বপ্ন ভেঙে যাবে।সে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে স্পর্শের দিকে, চোখের পলক ফেলছেনা।

এদিকে মিনিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্পর্শ বেশ জোরেই বলল
এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেন..?মনে হচ্ছে আমাকে চোখ দিয়েই গিলে খাবে।তোমার আমাকে গেলা হলে এবার আমাকে গিলতে দাও।

স্পর্শের কথায় মিনি বেশ লজ্জায় পরে যায়।সত্যিই তো ও কিরকম বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলো স্পর্শের দিকে।কিন্তু স্পর্শের শেষের কথাটা মিনি ঠিক হজম করতে পারলোনা।ওনাকে গিলতে দিবো মানে কি..?

মিনি হকচকিয়ে গিয়ে বলল,
ম,,মানে….?

স্পর্শ বলল,মানে আমিকি খাবোনা..?দুপুরে ও কাজের চাপে খেতে পারিনি।তাড়াতাড়ি ডাইনিং এ খাবার দাও।

মিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,ওহ,,,,,

স্পর্শ ভ্রুকুটি করে বলল,কেন…?তুমি কি ভেবেছিলে।

নাহ কিছু না।আমি আবার কি ভাববো(মিনি)।

মিনি যে কি মিন করেছে তা বুঝতে পেরে দুষ্টু হেসে বলল,তুমি যা ভেবেছো সেটা হলে ও খুব একটা খারাপ হতো না।

অসভয় লোক বলে মিনি এক মূহুর্তের জন্য না দাড়িয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।মিনি বেরুতেই স্পর্শ হু হা করে হেসে ওঠে।মেয়েটাকে ভালোই জব্দ করতে পেরেছে সে।

আজ খুব ভোরেই মিনির ঘুম ভাঙে।কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর মিনির মনে হলো ও কোনো শক্ত কিছুর উপর শুয়ে আছে।জিনিসটা কি দেখতে গিয়ে মিনি অবাক কারণ ও স্পর্শের বুকে স্পর্শকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে শুয়েছিলো,স্পর্শের একহাত ওর পিঠে।মিনি আস্তে আস্তে সরে এলো।ইস স্পর্শ জেগে থাকলে কি লজ্জাতেই না পড়তে হতো মিনিকে।

ঘড়িতে সকাল ০৭ঃ০০ টা বাজে। স্পর্শ ঘুম থেকে উঠে পাশে মিনিকে দেখলো না।হয়তো ওয়াশরুমে আছে।কিন্তু না আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ওয়াশরুম, ব্যালকনি কোথাও দেখতে পেলো না মিনিকে।পাশেই ছোট্ট টেবিলটায় এক মগ কফি রাখা।প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই কফি খাওয়া স্পর্শের ডেইলি রুটিনের মধ্যে পড়ে।কফির মগটা হাতে নিয়ে খুব সফটলি চুমুক দেয় স্পর্শ।চুমুক দিয়েই স্পর্শ ভ্রু-কুচকায়।কারণ আজ কফির স্বাদটা অন্যরকম।কফিটা বেশ ভালোই লাগলো স্পর্শের কাছে।কফির স্বাদ অন্যদিনের চেয়ে আলাদা হওয়ায় স্পর্শের বুঝতে বাকি নেই কফিটা কে বানিয়েছে।মায়ের হাতে বানানো কফির স্বাদ স্পর্শ খুব ভালো করেই চিনে।বাকি রইলো মাহিরা সে এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবেনা। তারমানে কফিটা নিশ্চয়ই মিনি বানিয়েছে।ব্যালকনিতে দাড়িয়ে খুব আয়েশ করেই কফির মগে চুমুক দিচ্ছে স্পর্শ সাথে আশপাশটা দেখছে।হঠাৎ ওর চোখ যায় বাগানের এক কোনায় কৃষ্ণচূড়া গাছের ডালে কেউ ঝুলে আছে।জামা দেখে মনে হচ্ছে এটা মিনি।মেয়েটা ওখানে কি করছে…?

এদিকে মিনি ঘুম থেকে উঠেই বাগানে এসে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে।এক কাপ কফি হলে ভালো হয়।তাই ছুটে রান্না ঘরে এসে কফি বানিয়ে নেয়।কফি বেশি হওয়ায় দুটো মগে ঢেলে এক মগ নিজের জন্য রেখে অন্য মগ স্পর্শের জন্যে রেখে আসে।তাড়াতাড়ি জেগে গেলে খেয়ে নিতে পারবে।আর যদি ঠান্ডা হয়ে যায় তাহলে তো খাওয়া যাবে না।
নিজের জন্য রাখা মগটা হাতে নিয়ে আবার বাগানের দিকে যায় মিনি।কফি শেষ করে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে গিয়ে ঝরে যাওয়া ফুল গুলো কুড়িয়ে নেয়।তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবে এখন যদি বাতাসে ওর গায়ে ফুল ঝরে পড়ে তাহলে ব্যাপারটা দারুন হবে।কিন্তু এখনতো কোনো বাতাস নেই। আচ্ছা আমি যদি একটা ঢাল ঝাঁকুনি দি তাহলে তো আমার গায়ে ফুল পড়বে।যেইভাবা সেই কাজ,সবচেয়ে নিচু ঢালটা দেখে মিনি লাফিয়ে ঢালটা ধরার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।পরে একটা চেয়ার টেনে তার উপর দাঁড়িয়ে মিনি ঢালটা ধরতে সক্ষম হয়।কিন্তু বিপত্তি বাধলো চেয়ারটা পড়ে গিয়ে।এখন আর মিনি নামতে পারছে না,গাছের ঢাল ধরেই ঝুলে আছে অনেক্ক্ষণ।

হঠাৎ করে কেউ কোমর জড়িয়ে ধরায় মিনি হকচকিয়ে যায়।তাকিয়ে দেখে স্পর্শ।মিনিকে নামাতে নামাতে স্পর্শ দাঁতে দাঁত চেপে মিনিকে জিজ্ঞেস করলো,,
এই সাত সকালে এখানে এসে ঝুলে আছো কেন…?সমস্যা কি তোমার।
মিনি আমতা আমতা করে বলে,
ওই আসলে হাটতে বেরিয়েছি।তারপর গাছ থেকে ফুল নিতে গিয়ে চেয়ারটা পড়ে যায়,আর আমি ঝুলে যাই।

সিরিয়াসলি,,,,,?তুমি ফুল নিতে গাছে উঠেছো..?এগুলো তোমার দ্বারাই সম্ভব বলে স্পর্শ হাটা ধরলো বাসার ভিতর।

সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করছে।আজ আর স্পর্শ রেডি হয়ে আসেনি।যদি আজো মিনি পানি ঢেলে দেয়….?ব্রেকফাস্ট শেষ করে উঠতে নিলেই মামুন চৌধুরী স্পর্শকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, মিনিকে আজ কলেজে পৌঁছে দিতে।
স্পর্শ বলল,আগে তো একাই যেত।
মামুন চৌধুরী বললেন, আমি এতো কথা শুনতে চাইনা।আগে ও কিভাবে কলেজ যেতো তা আমার জানার দরকার নেই।এখন ও এই বাড়ির বউ তাই ওর সমস্ত রেসপনসেবলিটি আমাদের।

স্পর্শ মিনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,আমার সাথে যেতে হলে ১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নাও।মিনি খাবার ছেড়ে দৌঁড়ে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো রেডি হতে।স্পর্শ রুমেই রেডি হয়ে নেয়।তারপর দুজন একসাথে বেরিয়ে পড়ে।স্পর্শ ড্রাইভিং সিটে বসেছে,আর মিনি ফ্রন্ট সিটে।
গাড়ি চলতে শুরু করলো তার আপন গতিতে।মিনি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।স্পর্শ মাঝেমাঝে আড়চোখে মিনিকে দেখছে।গাড়ি এসে থামলো কলেজর সামনে।মিনি নেমে সোজা কলেজের ভেতর ঢুকে গেলো।স্পর্শ ও গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

কলেজের ভেতর গিয়ে মিনি তার ফ্রেন্ডদের একজায়গায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল।ক্লাসের বাকি আর পাঁচ মিনিট আছে তাই সবাই ক্লােস চলে গেলো।মিনি যে আজ কলেজে আসবে তা ওর ফ্রেন্ডরা জানে।মিনি সকালেই ফোন করে সবাইকে জানিয়েছে।

ফাস্ট পিরিয়ডে ইংরেজির ক্লাস।ইংরেজির টিচার একমাসের জন্য ট্রেনিং এ গেছে।তাই একজন গেস্ট টিচার মিনিদের ইংরেজি ক্লাস নেয়।ক্লাস শেষ করে স্যার যাওয়ার সময় মিনি দাড়িয়ে বলল,
এক্সকিউজ মি স্যার,,!জিলাপির ইংরেজি কি….?
প্রত্যুত্তরে স্যার বলল,তোমার কি এখন জিলাপি খাইতে মন চায় নাকি।আর কোনো কথা না বলেই স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন।ক্লাসের সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।মিনি ভ্যবলার মতো তাকিয়ে আছে স্যারের যাওয়ার পানে।তারপর নিজের মনকে বুঝালো,,,,কামন মিনি কি এতো ভাবছিস,স্যার নিজেও জানে না জিলাপির ইংলিশ কি তাইতো তোকে বলতে পারেনি।(এই ঘটনাটি আপনাদের লেখিকার সাথে ঘটেছে🙈)

চলবে…….

(বিঃদ্রঃরিচেইক করা হয় নি।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং 💞)

তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-০৪

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি❤
পর্বঃ০৪
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

হঠাৎ দরজা বন্ধ করার আওয়াজ কানে আসতেই মিনি পেছন ঘুরে দেখে স্পর্শ ওর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

এইরে এবার কি হবে…? লোকটাতো আমায় চিবিয়ে খাবে মনে হচ্ছে ( মনে মনে বলল মিনি) জোরপূর্বক হেসে মিনি বলল,ওমা আপনি চলে এসেছেন।

আমি কি এসেছি…? আমি তো এখনো হলরুমেই আছি ভাবুক ভঙ্গিতে বলল স্পর্শ তারপর শক্ত দৃষ্টিতে দাঁতে দাঁত চেপে মিনির দিকে এগোতে এগোতে বলল আমাকে ওই বিচ্যু বাহিনীর মাঝে দেখে খুব মজা পেয়েছো তাই না…?

মিনি ভয়ে পেঁচাচ্ছে
এখন কি করি এই লোক কি আমাকে মারবে…? নানা কিসব ভাবছি আমি, মারবে কেনো,
এদিকে স্পর্শ ক্রমশ এগিয়ে আসছে দেখে মিনি তোতলানো কন্ঠে বলল,

আপনি এগোচ্ছেন কেন…?

তুমি পেঁচাচ্ছ কেন…?

দেখুন মিঃটাচ আর এক পা এগোলে ভালো হবে না বলে দিলাম।

স্পর্শ ভেবাচেকা খেয়ে গেলো কি বলে এই মেয়ে মিঃটাচ🤔
এই তুমি কাকে মিঃটাচ বলছো….?

কেন আপনাকে….?

হোয়াট….? আমার নাম টাচ..? স্পর্শ বিষ্ময়ে থ,,,

তা নয় তো কি টাচ মানে স্পর্শ,,, স্পর্শ মানে টাচ(মিনি)

এবার স্পর্শ দুষ্টু হেসে বলল,তাহলে তুমি কি বিড়াল…? না মানে বিড়ালকেই তো মানুষ আদর করে মিনি বলে ডাকে।

এই এই একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না আমি বিড়াল হতে যাবো কেন,,আর আপনিতো দেখছি কিছুই জানেন না কিভাবে বাবার ব্যবসা সামলান..?মিনি মানে ছোট,, আপনি দেখেন না যেকোনো জিনিসের মিনি প্যাক থাকে..? যেমনঃশ্যাম্পু,

ওওওহ তাহলে তুমি বলছো তোমাকে মিনি প্যাক বলে ডাকতে…?

মিনি রেগে কটমট করে কিছু বলবে তার আগেই দরজার অপর পাশ থেকে মিনির মা ডেকে উঠেন,,

কিরে মিনি এতক্ষণ লাগে…? জামাইয়ের নাস্তা করা লাগবে না তাড়াতাড়ি নাস্তা নিয়ে যা।

স্পর্শ গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বলল,যাও যাও
হাসবেন্ডের একটু খাতির যত্ন করো।
তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।

এদিকে মিনির রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে,লোকটা আস্ত একটা অসভ্য,তারপর ধপাধপ পা ফেলে স্পর্শের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে মায়ের কাছে গেলো নাস্তা আনতে।

দুপুরে সবাই এক সাথে লাঞ্চ করে যে যার রুমে রেষ্ট নিচ্ছে এমন সময় মিনির কাজিনরা সবাই মিনির রুমে ঢুকে স্পর্শকে চেপে ধরে ট্রিট দেওয়ার জন্য। ট্রিট না দিলে ওরা স্পর্শকে ছাড়বেনা।বেচারা স্পর্শ এসেছে একটু রেষ্ট করবে তা না এখন এদেরকে ট্রিট দিতে হবে।কিছু করার নেই তাই উঠে পড়লো। মিনিকে যাওয়ার কথা বলতেই মিনি না করে দেয়।স্পর্শ ও আর কিছু না বলে ব্যাটেলিয়নদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

সূয্যি মামা পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে অনেক আগেই। লাল আভা ছড়িয়ে অস্ত যাওয়ার অপেক্ষা। লম্বা সিল্কি চুলগুলো কোমর অব্দি ছাড়িয়ে ছাদের রেলিং হাতলে দাড়িয়ে আছে মিনি। একটু আগে শাশুড়ীর সাথে ফোনে কথা বলে নিয়েছে।
স্পর্শ আর ওর কাজিনরা এখনো ফেরেনি।মিনির কাজিন গুলো প্রচন্ড দুষ্টু।এখানে যারা আছে সবাই মিনির ছোট।মিনি ভালোই বুঝতে পেরেছে এরা আজ স্পর্শের হাল বেহাল করে ছাড়বে।

নিচে যেতেই মিনি দেখলো ওর কাজিনরা সব হলরুমে সোফায় বসে আছে।মিনিকে দেখেই বলল,আপি ভাইয়া অনেক ভালো জানিস আমরা যা বলেছি তাই শুনেছে।ওদের কথায় মন না দিয়ে মিনি চলল নিজের রুমে।
রুমে গিয়ে দেখে স্পর্শ শাওয়ার নিয়ে কোমরে তোয়ালে পেঁচিয়ে বেরিয়েছে মাত্র খালি গায়ে দাড়িয়ে হাত দিয়ে ভেজা চুল গুলো নাড়ছে।মিনি এক নজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।

অন্যদিকে তাকিয়ে স্পর্শকে উদ্দেশ্য করে বলল আপনি এখন শাওয়ার নিলেন যে…?

তোমার বিচ্যু ভাইবোন গুলো আমাকে দিয়ে যা ইচ্ছা হয়েছে পূরন করে নিয়েছে না করতে ও পারলাম না।আমাকে পাগল করে ছেড়েছে।অস্হির হয়েই এখন শাওয়ার নিলাম বলতে বলতে মিনির দিকে তাকিয়ে বলে তুমি ওই দিকে তাকিয়ে আছো কেন…?

মিনি ইতস্তত কন্ঠে বলল, আপনি ড্রেস পরে নিন।

নিজের দিকে খেয়াল হতেই স্পর্শ তাড়াতাড়ি একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে পরে ফেলে।

আদিল হসপিটাল থেকে বাসায় এসে সোজা মিনির ঘরে ঢুকে।উদ্দেশ্য তার কলিজার টুকরা বোনকে দেখা।স্পর্শকে বসে থাকতে দেখে ওর সাথে কথা বলে মিনির কথা জিজ্ঞেস করতেই স্পর্শ ব্যালকনিতে দেখিয়ে দিলো।

পিছন থেকে দুটি হাত মিনির চোখ চেপে ধরার দেরি মিনির বুঝতে দেরি হয়না হাত দুটি কার।চোখ থেকে হাত দুটি ছাড়িয়ে মিনি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদিলকে।ভাই-বোনের কিছুক্ষণ খুনসুটির পরেই আদিল মিনির হাতে দুটো চকলেট ধরিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে।ব্যস্ততার কারনে রিয়াকে টাইম দিতে পারছেনা এখন একটু মেয়েটার সাথে কথা বলবে।(রিয়া আদিলের ভালোবাসার মানুষ অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে)।

ফ্রেশ হয়ে এসে মোবাইল হাতে নিয়েছে আদিল উদ্দেশ্য রিয়াকে কল করা।হঠাৎই আকাশ থেকে ঝপাঝপ বৃষ্টি পড়া শুরু হয়।এতক্ষণ বৃষ্টি হওয়ার কোনো আভাস ছিলোনা হঠাৎই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।আদিল রিয়াকে কল দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে নেয়।এক পর্যায়ে রিয়া বলল,কবে বিয়ের কথা বলবে বাসায় বাবা তো পারে না আমাকে আজই বিয়ে দিয়ে দেয়।ওর কথায় আদিল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল আমি খুব শীঘ্রই বাবা মাকে নিয়ে তোমাদের বাসায় যাবো বিয়ের কথা বলতে।এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয় আদিল।

বৃষ্টির তোড়জোড় যেন বেড়েই চলেছে।মিনি ব্যালকনিতে এখনো দাড়িয়ে আছে। স্পর্শ ঘুমিয়ে আছে। জোরে জোরে বাজ পড়ার শব্দে ঘুম ভাঙলো স্পর্শর পাশে তাকিয়ে মিনিকে না দেখেই কপাল কুচকে যায় স্পর্শের। তারপর কিছু একটা ভাবতেই স্পর্শ দৌড়ে ব্যালকনিতে যায়। গিয়ে দেখে মিনি দিব্যি দাড়িয়ে আছে। স্পর্শ ভেবেছিলো মিনি হয়তো ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকবে।কিন্তু না এই মেয়ে তো কি সুন্দর করে দাড়িয়ে আছে।

মিনি পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে বুঝলো এটা স্পর্শ।কারণ এতো রাতে অন্য কেউ ওর রুমে আসবেনা।স্পর্শের দিকে না তাকিয়েই মিনি বলল,উঠে পড়লেন যে….?

স্পর্শ মিনির কথার জবাব না দিয়ে অবাক কন্ঠে মিনিকে উল্টো প্রশ্ন করলো,

এতো জোরে বাজ পড়ছে তুমি ভয় পাচ্ছো না….?

বাজ পড়লে ভয় পাওয়া কি বাধ্যতামূলক নাকি…?

স্পর্শ ভেবাচেকা খেয়ে গেলো মিনির প্রশ্নে,তারপর আমতা আমতা করে বলল,না মাহিরা অনেক ভয় পায় বাজ পড়লে তাছাড়া অন্যান্য মেয়েরাও ভয় পায় তাই আমি ভাবলাম তুমি ও হয়তো,,,,,

স্পর্শকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মিনি বলল,আমি বাজ পড়া ভয় পাই না বাট অন্য কিছু ভয় পাই।

স্পর্শ কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইলো সেটা কি,,,

উত্তরে মিনি বলল,বলা যাবেনা “সিকরেট”

“পরেরদিন বিকাল”

মিনি আর স্পর্শ রওনা দিয়েছে স্পর্শদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম হওয়ায় স্পর্শদের গাড়ি সহ আরো অনেক গাড়ি থেমে আছে।বিরক্তি নিয়ে বসে আছে মিনি আর স্পর্শ।হঠাৎ মিনি বলল,গাড়ির গ্লাসটা নামিয়ে দিন,স্পর্শ কোনো রকম দ্বিরুক্তি না করেই গ্লাস নামিয়ে দিলো।মিনি মাথা বের করে চারপাশ দেখতে থাকে।

পাশের গাড়ির একটা ছেলে বারবার মিনির দিকে তাকাচ্ছে যা মিনি ছেলেটির দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারলো।এবার মিনি ছেলেটির দিকে নজর দিতেই ছেলেটি মিনির দিকে তাকিয়ে গায়ের টি-শার্ট খুলে নড়েচড়ে নিজের বডি দেখাচ্ছে।

ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে মিনি বলল,বডি শো করে আমাকে ইমপ্রেস করতে চাইছেন…?ইচরে আপনার বডি একটুও সুন্দর নাই কেমন পেটের দিকে ঝুলে আছে,ইয়াক থু।

মিনির কথায় ছেলেটি রেগে বোম।হবে নাই বা কেন ওর কতো সুন্দর বডি আর এই মেয়ে বলে কিনা ইয়াক থু।

আসলে মিনি যা বলেছে সবটা ইচ্ছে করেই বলেছে।হয়তো ছেলেটার একটু সিক্সপ্যাক বডি আছে তাই বলে মিনিকে কেন দেখাবে……?

স্পর্শ এতক্ষণ সবকিছু খুব মনোযোগ সহকারে
পর্যবেক্ষণ করছিলো আর মিনির কান্ডে মিটিমিটি হাসছিলো।জ্যাম ছেড়ে দেওয়ায় স্পর্শ গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।মিনি ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে খেতে লাগলো। এগুলো কাল আদিল দিয়েছে।

মিনি আপন মনে চকলেট খাচ্ছে।স্পর্শ গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে মিনিকে দেখছে আর মনে মনে বলছে এই মেয়েটা নিজেকে যতটা ম্যাচিউর দেখাতে চায় তার ছিটে ফোঁটা ও ওর মধ্যে নেই সবটাই বাচ্চামি।

গাড়ি থেকে নেমেই মিনি তাহমিনা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি হেসে বলে,কেমন আছেন মা….?

তাহমিনা চৌধুরী ও মিনিকে দুহাতে আগলে বললেন, তোকে ছাড়া ভালো ছিলাম না এখন ভালো আছি।মিনি মাহিরার কথা জিজ্ঞেস করতেই তহমিনা চৌধুরী বলল ও ঘরেই আছে।

মিনি ভাবতে থাকে এই মেয়েটা দিনের বেশির ভাগ সময়ই ঘরে থাকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নিচে আসে না। সারাদিন ঘরে করেটা কি ভাবতে ভাবতেই রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

কাল থেকে স্পর্শকে অফিস যেতে হবে। এ কয়দিনের অনেক কাজ জমা হয়ে আছে। তাই সময় নষ্ট না করে শুয়ে পড়ে।মিনি ও ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে ঘুম ভাঙতেই স্পর্শ তার বুকে ভারি কিছু আবিষ্কার করে।
মাথাটা নিচু করে দেখতে পায় মিনি ওর বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। অবাক হয়না স্পর্শ কারণ একই ঘটনা কাল মিনিদের বাসায় ও ঘটেছে। স্পর্শ কিছু বলে নি চুপচাপ মিনিকে তার বালিশে শুইয়ে উঠে পড়েছে। আজও তার ব্যতিক্রম নয়।

মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে এই অবস্থা দেখলে ঘুমের রেশ ধরেই স্পর্শকে উল্টোপাল্টা কিছু বলে দিবে।হয়তো সেই দিনের ধাক্কাটা পূনরায় রিপিট করবে ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্পর্শ। ও মেয়েটাকে ৩/৪ দিনে ভালোই চিনেছে।

স্পর্শ ওয়াশরুমে ঢোকার কিছুক্ষণ পরই মিনি উঠে পড়ে।স্পর্শ বেরুতেই মিনি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।

সবাই ব্রেকফাস্ট করছে।স্পর্শ একেবারে সুট-বুট পরেই নিচে নেমে এলো।খেয়েই অফিসের জন্য
বেরিয়ে পড়বে।খাওয়ার এক পর্যায়ে মামুন চৌধুরী মিনিকে বলে উঠলো কাল থেকে কলেজ যাওয়ার জন্য।বই পত্র সব ড্রাইভারকে পাঠিয়ে নিয়ে আসতে।

কলেজ যাওয়ার কথা শুনে মিনিতো খুশিতে আত্মহারা।কি ভাবছেন পড়ালেখা করতে পারবে বলে খুশি…?উহু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারবে বলে খুশি। যদিও মিনি এতটা খারাপ স্টুডেন্ট নয় আবার টপার ও নয় মাঝামাঝি সারির স্টুডেন্ট।মিনি এতোটাই খুশি যে খুশির চোটে গ্লাস ভেঙে ফেলে।গ্লাসের সব পানি ছিটকে স্পর্শের গায়ে পড়ে।

স্পর্শ রাগে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে মিনির দিকে যেন এখানে কেউ না থাকলে মিনিকে চিবিয়ে খেতো।
ওদের কান্ড দেখে মা,বাবা, মাহিরা মিটিমিটি হাসছে।

চলব………

তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব-০৩

0

গল্পের নামঃতোমাতেই পূর্ণ আমি ❤
পর্বঃ০৩
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

রাতের আধারে লক্ষ-কোটি তারার মাঝে চাঁদটার দিকে তাকিয়ে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে মিনি,মন খারাপ থাকায় ব্যালকনিতে এসেছে, কিছুক্ষণ আগেই ওর বাবা,মা,ভাই সবাই বাসায় ফিরে গেছে তাই মন খারাপ মিনি আর স্পর্শ কাল যাবে মিনিদের বাসায়।
মিনি কাল রাত থেকে একবারও ব্যালকনিতে যায়নি, এখন ব্যালকনিতে এসে ভারাক্রান্ত মনটা হালকা হলো

স্পর্শ ঘরে এসে দেখে পুরো ঘর ফাঁকা,মেয়েটা গেলো কই ওয়াশরুমের দরজা খোলা তারমানে ওয়াশরুমে নেই,ব্যালকনির দরজায় নজর দিতেই হালকা একটু চুল আর শাড়ির আঁচল দেখতে পেয়ে বুঝলো মিনি ব্যালকনিতেই আছে

স্পর্শ ফ্রেশ হয়ে ধূসর রঙের একটা টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজার পড়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে,চোখে ঘুম ধরা দিতেই কারো কড়া গলার স্বরে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে মিনি কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
স্পর্শ বিরক্তি কন্ঠে ভ্রু কুচকে মিনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,সমস্যা কি তোমার….?
সমস্যা আমার না আপনার (মিনি)
মিনির দিকে প্রশ্ন বোধক চাহনি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো স্পর্শ,,,

মানে…?

মানে আপনি বিছানায় কেনো (মিনি)
স্পর্শ বিরক্তি কন্ঠে বলল,দেখো ঘ্যানঘ্যান করবা না ঘুম আসছে ঘুমাতে দাও

আশ্চর্য আমি কি আপনাকে আটকে রেখেছি নাকি আপনার ঘুম আসছে আপনি ঘুমান কিন্তু বিছানায় না(মিনি)

আমার ঘর, আমার বিছানা আর আমাকেই বিছানায় ঘুমোতে দিবেনা.,,,,,হাউ ফানি,,,,শোনো মেয়ে কাল আমি কোন সিনক্রিয়েট করতে চাই নি তাই চুপচাপ সোফায় ঘুমিয়েছি তাই বলে যে আজও সেরকম হবে এরকম ভেবে ভূল করো না

তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো আমি কিন্তু সোফায় বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারিনা ঘাড়,কোমর ব্যাথা হয়ে যায় মুখ ছোট করে বলল মিনি

মিনির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে স্পর্শ বলল,বিছানার একপাশে শুয়ে পড়ো ভয় নেই আমি ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছুড়িনা।
তারপরও যদি তোমার সন্দেহ হয় তাহলে মাঝে কোলবালিশ দিয়ে রাখো বলে স্পর্শ নিজেই মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে দিলো,
মিনিও আস্তে আস্তে হেঁটে অপর পাশে শুয়ে পড়লো, সারাদিন দু’জনের উপর অনেক ধকল যাওয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজন ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

সকালে আগে মিনির ঘুম ভাঙে হাই তুলতে তুলতে পাশে তাকিয়ে দেখে মাঝের কোলবালিশ নেই স্পর্শ ওর খুব কাছে এসে ঘুমিয়ে আছে কিছু সময় যাবত স্পর্শকে পরোখ করে নিতেই মিনির টনক নড়ে উঠলো,এই বেডা আমার এত কাছে কি করে বলেই স্পর্শকে এক ধাক্কায় খাটের নিচে ফেলে দেয়।

খাট থেকে আচমকা পড়ে গিয়ে স্পর্শ ঘাবড়ে যায় পরোক্ষণে ও নিচে কি করে পড়লো বুঝতে পেরে মেজাজ প্রচন্ড বিগড়ে গেল, সকাল সকাল এরকম কিছু হলে কার না মেজাজ খারাপ হবে।

কোমরে অনেকটা ব্যাথা পেয়েছে একে তো বিয়ের দিন রাতে সোফায় ঘুমিয়েছে তারউপর এখন ধাক্কা খেয়েছে, রাগে চোখ লাল করে দাঁতে দাঁত চেপে উঠে মিনির দুবাহু শক্ত করে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,সমস্যা কি তোমার…..?
বিয়ের দিন থেকে তোমার সবকিছু সহ্য করেছি,কিচু বলছিনা বলে মাথায় উঠতে চাইছো….?আমাকে ধাক্কা দিলে কেনো..?এনসার মি,,,, ড্যাম ইট,,

স্পর্শ বেশ শক্ত করেই মিনির বাহু চেপে ধরেছে মিনির মনে হচ্ছে এই বুঝি শরীর থেকে হাত দুটি আলাদা হয়ে গেলো কিন্তু কিছু বলতে পারলো না স্পর্শের ভয়ে,গত দুদিনে স্পর্শের এরকম রাগ দেখেনি মিনি,ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না

মিনিকে চুপ থাকতে দেখে স্পর্শের রাগ যেন কয়েকগুন বেড়ে গেলো মিনিকে জোরে ঝাকিয়ে চিংকার করে বলে উঠলো স্পর্শ কি হলো উত্তর দিচ্ছোনা কেন…?

মিনি এবার ভয় জড়ানো কন্ঠে মুখ খুলে তোতলানো স্বরে বলতে থাকলো,
আ,,,স,,,স,,,লে ঘু,,ম,,থ,,থ,,থে,,কে

এই চুপ একদম তোতলাবেনা সুন্দর করে কথা বলো যদি তোতলাতে দেখেছি তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না

আসলে ঘুম থেকে
উঠে দেখি মাঝে কোলবালিশটা নেই আর আপনি আমার পাশ ঘেষে ঘুমিয়ে আছেন তাই কিছু না বুঝেই ধাক্কা দিয়ে ফেলি চোখ মুখ খিচে একদমে বলে শেষ করলো মিনি।

স্পর্শ তাকিয়ে আছে চোখ মুখ খিচে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মিনির দিকে, স্নিগ্ধতার ছোঁয়া লেগে আছে মেয়েটার মুখে, তৈলাক্ত চেহারা,এলোমেলো চুল, চোখ মুখ ফোলা তারউপর খিঁচে চোখ বন্ধ করে রেখেছে,স্পর্শ যেন অদ্ভুত এক ঘোরে চলে গেছে

মিনির ডাকে হুস ফেরে স্পর্শের

হাত ছাড়ুন, আমার লাগছে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল মিনি

মিনির কথায় হাতের বাধন হালকা করে স্পর্শ কিন্তু ছাড়ে না
কি বলছিলে তুমি মাঝে কোলবালিশ ছিলো না লুক কোলবালিশ তোমার সাইডে মানে তুমি সরিয়েছো আর বাকি রইলো কাছে ঘেষে ঘুমানো আমি না তুমি আমার কাছে ঘেঁষেছো যদি আমিই তোমার কাছ ঘেষতাম আর কোলবালিশ সরাতাম তাহলে বালিশ আমার পাশে থাকতো আর আমাকে ধাক্কা দেওয়াতে আমি খাটের ওই পাশেই পড়তাম

স্পর্শের কথা শুনে মিনি বুঝলো এটা তার নিজেরই দোষ বাসায় একা একা ঘুমাতো তাই খাটের এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি করলেও কোনো সমস্যা হতো না কিন্তু এখনতো আর একা না তাই আমতা আমতা করে বলল, আ’ম সরি!
স্পর্শ কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে
মিনি বসে বসে ভাবতে থাকে কি করলাম এটা আমি, আমি সত্যি একটা ডাফার বলে মনে মনে নিজেকে হাজার খানেক গালি দিতে থাকলো

স্পর্শ বেরুতেই মিনি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে, ফ্রেশ হয়ে এসে রুম খালি দেখে নিচে চলে যায় মিনি।

রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে তাহমিনা বেগম ব্রেকফাস্ট রেডি করছে আর কাজের মেয়েটি সাহায্য করছে, শাশুড়ীর পিছনে দাড়িয়ে মিনি বলল আমি হেল্প করি…

পিছনে ঘুরে মিনিকে দেখে তহমিনা চৌধুরী বলল ওমা মামনি উঠে পরেছো, যাও ডাইনিং এ গিয়ে বসো আমি নাস্তা দিচ্ছি আর তোমাকে কোনো হেল্প করতে হবে না আমার রান্না শেষ।

আচ্ছা তাহলে আমি সব ডাইনিং এ নিয়ে যাই

তাহমিনা চৌধুরী তাকাতেই মিনি কিউট ফেস করে বলল,প্লিজ মা

মিনির কিউট ফেস দেখে তহমিনা চৌধুরী হেসে দিয়ে বললেন ঠিক আছে

উত্তরে মিনি ও খিলখিল করে হেসে ওঠে

মামুন চৌধুরী এতক্ষণ ঘরে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন এখন ডাইনিং এর দিকেই আসছেন

গুড মর্নিং মামনি
গুড মর্নিংবাবা

তারপর মাহিরা ও নেমে এলো।
মাইশা কাল রিসিপশনের পরপরই শশুর বাড়ি চলে গেছে ওর শাশুড়ী অসুস্হ শশুর নেই,বেশি আসতে পারে না পরশু বাবা-মায়ের অনেক রিকোয়েস্ট এর ফলে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য হাসবেন্ড পারমিশন দিয়েছিলো তারপরও ভাইয়ের বিয়ের সুবাদে আরো একটা দিন থেকে গেলো,
মাইশার হাজবেন্ড ব্যাবসার সুবাদে কিছুদিন আগে ঢাকার বাইরে গিয়েছে যার দরুন একমাত্র সালার বিয়েতে থাকতে পারলোনা।

মিনি একে একে ডাইনিং এ সব নিয়ে এসেছে এর মাঝে স্পর্শ ও চলে এসেছে সবাই চুপচাপ খাচ্ছে কেউ কোনো কথা বলছেনা,ডাইনিং এ পিনপিনে নিরবতা শুধু চামচ নাড়ার শব্দ হচ্ছে যেন কথা বললেই মহাভারত অসুদ্ধ হয়ে যাবে

মিনি নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে আজ আর আশেপাশে তাকাচ্ছে না যা করেছে যদি স্পর্শের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়..? তাহলে তো লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে বেচারি।

কিহলো মামনি খাচ্ছো না কেনো (মামুন চৌধুরী)

আমার খাওয়া শেষ

সেকি তুমিতো কিছুই খেলেনা ভাবি (মাহিরা)

আমি এরকমই খাই

তাই বললে কি হবে নাকি আমাদের বাড়িতে এসব চলবে না বলে তাহমিনা চৌধুরী খাবার তুলে মিনিকে খাইয়ে দিতে থাকলেন

আমি কি নদীর জ্বলে ভেসে এসেছি নাকি আমাকে ও খাইয়ে দাও (মাহিরা)

তাহমিনা চৌধুরী আর মিনি হেসে দিলো
তারপর মাহিরাকে ও খাওয়াতে লাগলো।

স্পর্শের খাওয়া শেষ ও রুমে চলে গেলো।

গাড়িতে বসে আছে মিনি আর স্পর্শ উদ্দেশ্য মিনিদের বাসা
কথা ছিলো আদিল এসে ওদের দুজনকে নিয়ে যাবে যেহেতু স্পর্শ কখনো মিনিদের বাসায় যায় নি তাই চেনার কথাও না।
আদিলের হসপিটালে কাজ থাকায় স্পর্শকে অ্যাড্রেস দিয়ে দিলো তাছাড়া মিনিতো চিনেই তাই কোনো সমস্যা হবে না।

দীর্ঘ একঘন্টা সময় পেরিয়ে গাড়ি এসে থামলো মিনিদের বাসার সামনে, আদিলের দেওয়া অ্যাড্রেস অনুযায়ী চলে এসেছে স্পর্শ তাই মিনিকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন পড়ে নি।
পুরো রাস্তা কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।

গাড়ি থামতেই মিনি দরজা খুলে এক দৌড়ে বাসার সামনে গিয়ে কলিং বেল টিপ দিলো।মিনির কান্ডে স্পর্শ কিছুক্ষণ ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে থেকে নিজেও গেলো মিনির পেছন পেছন।

অনবরত কলিংবেল বেজেই চলেছে বিরক্ত হয়ে মিসেস জামান(মিনির মা)গেলো দরজা খুলতে,দরজা খুলতেই বিরক্তি চলে গিয়ে ঠোঁটের কোন প্রসারিত হলো।
মাকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করেই মিনি ঘরে ঢুকে গেলো কারণ ও জানে ওর মা এখন ওর চেয়ে স্পর্শকে পাত্তা দিবে বেশি, শুধু মিনির মা নয় বাঙালি নারীরাই এরকম তাই দাড়িয়ে থেকে নিজেকে অপমান করতে চায় না মিনি

স্পর্শ এতক্ষণ মা মেয়ের ভালোবাসা দেখছিলো
কেমন আছো বাবা….? ভেতরে এসো।
বাসার ভেতর ঢুকতে ঢুকতেই স্পর্শ জবাব দিলো ভালো আছি আন্টি আপনি কেমন আছেন…?
ভালো বলেই জামাইয়ের খাতির যত্নের কাজে লেগে পড়লেন মিনির মা।

বাসার ভেতর ঢুকতেই মিনির কাজিনরা ঝাপটে ধরলো একটুর জন্য বেচারি পড়েই যাচ্ছিলো।ওদেরকে ছাড়িয়ে মিনি সোজা বাবার ঘরে গেলো, আদিল হসপিটালে

স্পর্শকে দেখে এবার মিনির কাজিনরা ওকে ঘিরে ধরলো, স্পর্শ পড়লো মাইনকার চিপায়, অল্প সময়ের মধ্যেই স্পর্শ হাপিয়ে গেলো
ও মনে মনে বলতে লাগলো এদের চেয়ে তো মিনির দুষ্টমি গুলো সহ্য করাই ভালো

বাবার সাথে কথা বলে বেরিয়ে এসে মিনি হলরুমের দিকে তাকিয়ে দেখে
একমাত্র সোয়ামি ব্যাটেলিয়নদের কব্জায় আটকা পড়েছে আর তার একমাত্র সোয়ামি যে প্রচন্ড বিরক্ত সেটা তাহার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

হঠাৎ স্পর্শের নজর পড়লো মিনির উপর তাই মিনিকে ইশারা করে বোঝালো ওকে এখান থেকে উদ্ধার করতে কারন মিনিই শেষ ভরসা।
স্পর্শের আশায় এক বালতি পানি ঢেলে শয়তানি হাসি দিয়ে চলে গেলো মিনি।

স্পর্শ যখন হতাশ তখনই তার জন্য দূত হয়ে এলো তার শশুর মশাই, আসাদ জামান সবাইকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে স্পর্শকে মিনির ঘরে পাঠিয়ে দেন রেষ্ট নেওয়ার জন্য,,,,,,,

চলবে…….