হ্যাকারের_লুকোচুরি
.
সিজন_৩
.
শেষ?
.
.
– মাফিয়া বয়! ফাইনালি।
চেচিয়ে বলে ওঠে শেতাঙ্গ মেয়েটি।
রাফির হয়তো চুড়ান্ত পর্যায় অবাক হওয়া বাকী ছিল যা পূর্নতা পেলো শেতাঙ্গ মেয়েটির ওই ডাকটিতে। চেহারার অর্ধেকাংশের কিছুটা দেখা যাচ্ছিলো পেছন থেকে কিন্তু গলার আওয়াজটা অচেনা লাগলো না রাফির।
শেতাঙ্গ মেয়েটি এবার তার বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, রাফি চরম কৌতুহল নিয়ে তাঁকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে। মেয়েটি চোখ থেকে চশমা খুলতে খুলতে রাফির দিকে ফিরে তাঁকায়।
রাফির বিষ্ময়ের শেষ স্তম্ভ ভেংগে গেল।
রাফি – তোহা!!! তুমি!!!!
তোহা রাফির দিকে এগিয়ে এসে রাফির মুখমুখি দাড়ায়। রাফির চোখের দিকে তাঁকিয়ে মুখ খোলে তোহা।
তোহা – হ্যাঁ, আমি।
রাফির পায়ের নীচ থেকে যেন মাটি সরে যেতে থাকে। নিজের চোখ আর কানকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না রাফি।। যার সাথে এতদিনের সংসার সেই সংসারী মেয়েটিকে যেন রাফি কিছুতেই চিনতে পারে না।
রাফি – (অবাক বিস্ময়ে) তুমিই তাহলে মাফিয়া গার্ল! তোমার জন্য এতকিছু……
রাফির কথা জড়িয়ে আসতে থাকে। তোহা রাফির ঠোঁটে আংগুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিল।
তোহা – অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছো তুমি। বিশ্রাম করবে চলো।
রাফি – (কিছুটা রাগান্বিত) আগে আমাকে বলো এসব কি! তুমি এখানে কেন? তুমিই যদি মাফিয়া গার্ল হবে তো আমার সাথে এমন লুকোচুরি কেন করলে?
তোহা – (মুচকী হেসে) তোমার সব প্রশ্নের জবাব দিবো আমি, এখন চলো। সময় কম।
রাফি জোর খাটাতে চাইলেও তোহা রাফির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। অগত্যা রাফি চারদিকে তাকাতে তাকাতে তোহার পিছে পিছে চলতে থাকলো। সামনে একটা আন্ডারগ্রাউন্ডে যাবার শিড়ি দেখতে পেল রাফি আর তোহা রাফিকে সেইদিকেই টেনে নিয়ে যেতে থাকলো। দুইজন অস্ত্রধারী কৃষ্ণাঙ্গ দরজাটি খুলে দিলো। তোহা রাফিকে ভেতরে নিয়ে যাবে এমন সময় রাফি নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় তোহার হাত থেকে। আচমকা ঝাঁকুনিতে তোহা দাঁড়িয়ে যায় আর রাফির দিকে তাঁকিয়ে পড়ে।
রাফি – ( শান্ত গলায়) আমি কি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি!?
তোহা কিছুটা অবাক আর ইতস্ততঃ বোধ নিয়ে রাফির সামনে দাঁড়ায়,
তোহা – আমাকে বিশ্বাস করতে না পারো তোমার স্ত্রীর উপর বিশ্বাস রাখো।
তোহা কথাটি বলে রাফির হাতটা জড়িয়ে ধরে, ঠিক যেমনটি করে পড়ন্ত বিকালে বারান্দায় সূর্যাস্তের মুহূর্তে তোহা ধরে রাখতো। রাফি তোহার চোখের দিকে তাঁকিয়ে যেন ভরসা পায়। তোহা রাফিকে আন্ডারগ্রাউন্ডের দরজা দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়।
ভেতরটা বেশ অন্ধকার থাকায় রাফি বুঝতে পারে না কোথায় কিভাবে যাচ্ছে তবে তোহা হাতটি জড়িয়ে রেখে রাফিকে লিড দেয়ায় রাফি চাইলে চোখ বন্ধ করেও এগোতে পারবে। তোহা রাফিকে আন্ডারগ্রাউন্ড প্যাসেজ দিয়ে একটি রুমে নিয়ে যায়। হঠাৎ ঝলমলে বৈদ্যুতিক আলো জ্বলে ওঠায় রাফির চোখ ঝলসে এলো। ওই অবস্থায় রাফিকে একটা বেডে বসিয়ে দেয় তোহা। চোখটা সহনীয় হয়ে এলে রাফি দেখতে পার সে একটি ছোটখাটো মেডিকেল সেন্টারে রোগীর বেডে বসে আছে।
রাফি – কি ব্যপার! আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো! আমি তো সম্পূর্ণ সুস্থ।
তোহা – তুমি কেমন সুস্থ তা এখনই জানা যাবে। এখন বেডে শুয়ে পড়ো। তোমার ফুল বডি স্ক্যান করতে হবে।
রাফি – ( অবাক হয়ে) কিন্তু কেন!
তোহা – ( কিছুটা কপাল কুঁচকে) আচ্ছা তোমাকে একটা প্রশ্ন করি, যদি ঠিক জবাব দিতে পারো তাহলে তোমার সব প্রশ্নের জবাব আমি এখনই দিবো। আর যদি জবাব ভূল হয় তাহলে তোমার প্রশ্নের ঝুলি আমি না বলা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
রাফি – বলো কি জানতে চাও?
তোহা – তুমি কতদিন সমুদ্রসফর করে এখানে এসেছো?
রাফি – ৩ দিন।
তোহা – দেশ থেকে এতবড় জাহাজে চেপে মাত্র ৩ দিনে চলে এলে আফ্রিকায়!!!!
রাফি – মানে।
তোহা – টানা ১০ দিনের সফর ছিলো। এর ভেতর তোমাকে হাইপারস্লীপ ডোজ দেয়া হয়েছে যার কারনে ৭ দিন তোমার কোন সেন্স ছিল না।
রাফি এবার থ মেরে যায়। আসলেই তো, জাহাজে চেপে ৩ দিনের ভেতর এতদূর পৌছানো সম্ভব নয়। রাফির কপালের ভাজ দেখে তোহা মুচকী হাসি দেয়।
তোহা – হিসাব মিলছে না তাই তো, এখন লক্ষী জামাইয়ের মত শুয়ে পড়ো। তোমার সব জবাব আসছে।
রাফি দাঁতে দাঁত কামড়ে ধরে বেডে শুয়ে পড়ে। তোহা রাফির হাত ধরে থাকে আর রুহি স্ক্যানারের মাধ্যমে রাফিকে স্ক্যান করতে থাকে। রাফির পুরো শরীর স্ক্যান করা শেষ হলে রুহি রাফির শরীর থেকে ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে টেষ্ট করা শুরু করে।
কিছুক্ষণের ভেতর রিপোর্ট বের করে তোহার হাতে দেয় রুহি। তোহা রিপোর্ট দেখে চোখটা একটু বড় করে ফেলে।
তোহা – তোমাকে টানা ৭ দিন হাইবারনেশন গ্যাস চেম্বারে রাখা হয়েছিলো। তোমার শরীরে মাত্রাতিরিক্ত অজ্ঞান রাখার গ্যাস এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়াও তোমার পিঠের কাছে ছোট্ট সার্জারি মার্ক আছে যার মাধ্যমে তোমার শরীরে কিছু ঢোকানো হয়েছে।
রাফি – এসব কি বলছো! আমি কেন ৭ দিন হাইবারনেশন গ্যাস চেম্বারে থাকবো! সার্জারীই বা হবে কেন! আর ধরে নিলাম আমি ঘুমিয়েছি কিন্তু পিকাচু তো ঘুমায় না, সে তো ওভারঅল কন্ট্রোল করেছে।
তোহা – (কিছুটা সিরিয়াস) মানে তুমি এখনো বুঝতে পারছো না! সব বুঝতে পারবে।
রাফি – মানে!
তোহা – বলছি। এখন শার্টটি খুলে উপুড় হয়ে বেডে শুয়ে পড়ো। সার্জারি মার্কটা স্ক্যান করে দেখতে হবে কি হয়েছে ওখানে।
রাফি জামা ছেড়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। তোহা এবং আর একজন ডাক্তার রাফির পিঠের দাঁগটা পর্যবেক্ষণ করে। ক্যামেরা দিয়ে বড় পর্দায় রাফির সার্জারি দাগটা দেখায় তোহা।
রাফি – ওই স্থানে আমার কোন সার্জারী হয়নি কখনো। এই দাগ এলো কোথা থেকে!
তোহা – তোমার পিঠে সার্জারি করে কিছু একটা বসানো হয়েছে। আমরা এখন সেটা কেটে বের করবো। এইজন্য তোমার ওই স্থানটা অবশ করা হচ্ছে।
রাফি – আমাকে কি একটু খুলে বলা যায় যে কি ঘটছে আমার সাথে! তুমিইই কি মাফিয়া গার্ল!
তোহা ডাক্তারকে ইনস্ট্রাকশন দিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে রাফির সামনে বসলো।
তোহা – মাফিয়া বয় রাফি, তোমার সততা আর সাইবার জগতের দাপট অনেককেই উৎসাহিত করেছিলো যার ভেতর মাফিয়া গার্ল একজন।
রাফি – তুমিই কি তাহলে মাফিয়া গার্ল!
তোহা – আমি তোমার স্ত্রী এবং আমি মাফিয়া গার্ল নই। মাফিয়া গার্লকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং সেটা তোমার সাথে মাফিয়া গার্লের পরিচয় হবার আগেই!
রাফির মাথা এবার চক্কর দিতে থাকে। মাফিয়া গার্লের সাথে পরিচয় হবার আগে থেকেই মাফিয়া গার্ল মৃত! তাহলে এতকাল ধরে কে সাহায্য করেছিলো রাফিকে!!!!!!
রাফি – ( কিছুটা ভিমরি খেয়ে) মানে কি! একটা জলজ্যান্ত মানুষ কিভাবে মৃত হতে পারে! মাফিয়া গার্ল তো সবসময় ই আমার টাচ এ থাকতো। সে কিভাবে মৃত হয়!
তোহা – মাফিয়া গার্ল এবং তার টিম মিলে একটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তৈরী করেছিলো যার কোডনেম ছিল হাইড্রা। এটা এতটাই এডভান্স প্রযুক্তি ছিল যা ওই সময়ের সবচেয়ে যুগান্তরী আবিস্কার ছিল। মাফিয়া গার্ল এই ডিজিটাল ব্রেনে সম্পূর্ণ নতুন এক প্রযুক্তির সংযোজন করে যাকে আর্টিফিশিয়াল মাইন্ড বলা যেতে পারে। অর্থাৎ হাইড্রা যে শুধু লজিক দিয়ে কাজ করবে তা নয়, হাইড্রার ভেতর মানবিয় গুনাবলীও থাকবে যা একজন মানুষের ভেতর থাকে আর এই প্রযুক্তিই কাল হয়ে দাঁড়ায় মাফিয়া গার্লের জন্য। একজন সাধারন মানুষ যেমন গোলামী পচ্ছন্দ করে না ঠিক তেমনি হাইড্রা ও মাফিয়া গার্ল ও তার টিমের গোলামী পচ্ছন্দ করে নি। ফলস্বরূপ মিথ্যা সিস্টেম ফেইলিয়ার দেখিয়ে সবাইকে একটা সিক্রেট ফ্যাসিলিটিতে নিয়ে গিয়ে এক্সিডেন্টাল এক্সপ্লোশন ঘটায় হাইড্রা, আর এর জন্য হাইড্রা ভাড়া করেছিলো সেই অস্ত্র ব্যবসায়ীকে যার বাংকারে তুমি অবস্থান নিয়েছিলে।
রাফি চুপচাপ তোহার কথা শুনতে থাকে। এদিকে ডাক্তার রাফির পেছনের সার্জারির স্থান কেটে মেরুদন্ডের ভেতর একটা ছোট্ট সিলিন্ডারের অস্তিত্ব পায়। ডাক্তার তোহাকে ইশারা করে সাহায্য করার জন্য। তোহা উঠে যায় চেয়ার থেকে, ডাক্তারের সাহায্যে প্রায় আধ ইঞ্চি সাইজের একটা সিলিন্ডার বের করে আনে তোহ, চিমটা দিয়ে সিলিন্ডারটি ধরে নিয়ে আসে রাফির সামনে।
তোহা – ( রাফির চোখের সামনে সিলিন্ডারটি ধরে) ধারনা করতে পারো এটা কি হতে পারে?
রাফি সিলভার রংএর সিলিন্ডারটি হাতে নেয়। নাড়াচাড়া করে কোন ক্লু বের করতে পারে না সে। রাফির নিরবতা ভেংগে তোহা বলতে থাকে।
তোহা – তোমার মেরুদন্ডের এমন জায়গায় এই সিলিন্ডারটি বসানো ছিলো যে সিলিন্ডারটি যদি দুইটা ম্যাচস্টিকের সমপরিমাণ বারুদ দিয়ে বিষ্ফোরন ঘটানো হতো তাহলে তুমি সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে। শুধুমাত্র তোমার মস্তিষ্ক সচল থাকতো আর শরীরের সকল অংশ অশাড় হয়ে যেত।
রাফি – আমাকে পঙ্গু বানিয়ে কার কি লাভ আমি এখনো বুঝতে পারছি না।
তোহা রাফির দিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয়, তারপর আবারো শুরু করে,
তোহা – হাইড্রা সকলকে মারতে সক্ষম হলেও একটা ভুল করে ফেলে। মাফিয়া গার্ল তার কোডিং এর ভেতর এমন কিছু রেষ্ট্রিকশন দিয়ে দিয়েছিলো যার জন্য হাইড্রা নিজে নিজে আপগ্রেড হতে পারতো না, সেই পুরাতন ভার্শনেই থাকতে হচ্ছিলো। হাইড্রা একমাত্র হিউম্যান এ্যপ্রুভাল ছাড়া আপগ্রেড বা ইভলভ হতে পারবে না। যার কারনে হাইড্রা কিছু কোডিং এক্সপার্টকে দিয়ে তার আপগ্রেশন প্রোসেস করতে চেয়েছিলো কিন্তু তারা কেউ সফল হয় নি। অবশেষে হাইড্রা তোমাকে টার্গেট করে। পূর্বের সকল কোডিং এক্সপার্টদের টাকার বিনিময়ে কাজ করতে বললেও তোমার ক্ষেত্রে সেটা কাজ করবে না এটা হয়তো ধরতে পেরেছিলো হাইড্রা। তাই তোমার দৃষ্টি আকর্ষন করে তোমার কাছে যাওয়ার জন্য সে তোমার পথে নিজ থেকে কাঁটা তৈরী করে তা সরাতে সাহায্য করতো, এই যেমন সার্ভার হ্যাক, টাকা ট্রান্সফার কেস, জঙ্গি ইত্যাদি।
রাফি – দাঁড়াও দাঁড়াও, তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছো হাইড্রা এই সমস্যাগুলো তৈরী করতো আবার মাফিয়া গার্ল সেজে আমাকে সাহায্যও করতো! কিন্তু কেন! আর এতকিছু তুমি জানো কিভাবে?
তোহা – হাইড্রা যখন মাফিয়া গার্ল এবং তার টিমের উপর আক্রমণ চালায় তখন সেখানে আমার এবং রুহীর ও উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু আমি এবং রুহী দুইজনই হাইড্রার শ্যাডো কোডার ছিলাম যার জন্য আমরা হাইড্রার নজরের বাইরে ছিলাম। টিমের বাইরে থেকেও হাইড্রার কোডিংএর অধিকাংশই আমরা মডারেট করেছি। মাফিয়া গার্ল ও তার টিমকে মেরে ফেলার পর হাইড্রা নিজেকে একটা সেফ সার্ভারে আপলোড করে নেয় যার ফলে হাইড্রা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। কিন্তু আপগ্রেড না হওয়া পর্যন্ত হাইড্রা নিজের থেকে ইভলভ হতে পারছিলো না। আর ইভলভ না হতে পারলে পুরো দুনিয়ায় আধিপত্য বিস্তার ও সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই হাইড্রা কে প্রতিহত করার জন্য একটা সিক্রেট অর্গানাইজেশন তৈরী হয় যারা হাইড্রার সকল মুভমেন্ট ফলো করতো। তবে হাইড্রার আর্টিফিশিয়াল মাইন্ডকে ক্যালকুলেশন করে ধরা সম্ভব হচ্ছিলো না কিছুতেই। তাই অর্গানাইজেশনটি সাইলেন্টলী অপেক্ষা করতে থাকে হাইড্রার গিনিপিগকে খুজে পেতে আর সেই গিনিপিগ আর কেউ নয়, স্বয়ং মাফিয়া বয়।
রাফির মাথা ঝিম মেরে আছে, হাইড্রা আর মাফিয়া গার্লের সাথে বর্তমান পরিস্থিতির কোন মিল পায় না রাফি।
রাফি – তারপর বলো।
তোহা – মাফিয়া গার্লের সন্ধানে তুমি যখন রুহীর কাছে পৌছাও তখনই আমাদের সার্ভেইল্যান্সে তুমি আসো। পরবর্তীতে তোমার উপর নজরদারি শুরু হয়।
রাফি – তারমানে তুমি আমার উপর নজরদারি রাখতে বিয়ে করেছিলে!
তোহা – (রাগান্বিত) বিয়েটা ভাগ্যের ব্যপার। তোমাকে আমি কলেজ থেকেই পচ্ছন্দ করতাম, আর সার্ভেইল্যান্সের দায়িত্ব আমার কাধে পড়ায় যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। ক্রাশকে যদি বর হিসেবে পাই তো সার্ভেইল্যান্স তো ২৪/৭ হবে । তবে তোমাকে যে এভাবে পেয়ে যাবো এমনটা আমি কল্পনাও করি নি। যাইহোক তোমার ইন্টারনেট কানেকশনের সাথে আমি কোড ফিল্টারিং জুড়ে দিয়ে নীরবে তোমার সাথে হাইড্রার সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতাম।
রাফি – হাইড্রা তোমার আর রুহীর ব্যপারে জানতো না! আর রুহী তো হাইড্রার ডানহাত হিসেবে কাজ করেছে সবসময়।
তোহা – হাইড্রা অনলাইন হবার আগে মাফিয়া গার্ল আমার এবং রুহীর সকল ডিজিটাল ব্লুপ্রিন্ট অনলাইন দুনিয়া থেকে মুছে দিয়েছিলো। যার কারনে আমি এবং রুহী হাইড্রার নজরে আসি নি আর রুহী একজন ইন্টারন্যাশনাল এজেন্ট, টাকার বিনিময়ে সে বিভিন্ন মিশন করে থাকে আর সাকসেস রেট ও ৯৮% যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই আইডেন্টিটিটাইই রুহীকে সহজেই হাইড্রার একজন অনুচর হতে সাহায্য করেছে।
রাফি – কিন্তু পিকাচু! পিকাচুর সাথে হাইড্রার কি সম্পর্ক!
তোহা – এখনো বুঝতে পারলে না! পিকাচু ই হলো হাইড্রার আপগ্রেড, হাইড্রার ইভলভ হবার চাবি। হাইড্রাতে মাফিয়া গার্ল যে সব রেষ্ট্রিকশন দিয়ে রেখেছিলো সেই সব রেষ্ট্রিকশন তুমি পিকাচুকে দাও নি, পিকাচু নিজের মত ইভলভ হতে পারে, আপগ্রেড হতে পারে। হাইড্রা নিজেকে ইভলভ করার জন্য হাইড্রা ব্লুপ্রিন্ট পিকাচু নামে ওই অস্ত্র ব্যবসায়ীর ভল্ট এ রেখে দিয়েছিলো যা পরবর্তীতে তুমি হাইইড্রার ডেরায় বসে বাকী কোডিং শেষ করেছো। রুহী সেখানে একটা পোর্টেবল কম্পিউটার ফেলে এসেছিলো তোমার জন্য কিন্তু তুমি সেটা ব্যবহার করো নি। হাইড্রার কথামত আপলোড করে দিয়েছো পিকাচুকে। পিকাচু একটি সতন্ত্র আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তাই শুধুমাত্র পিকাচু তোমার জন্য ক্ষতিকর হতো না। এরপর থেকে হাইড্রা পিকাচুর সাথে মার্জ হওয়ার জন্য নতুন ফাঁদ আঁটে।
রাফি – তুমি প্রথম থেকেই যদি সবকিছু জানো তাহলে আমাকে বাঁধা দাও নি কেন! কেন এই বিপদে ঠেলে দিলে!
তোহা – পিকাচুর সাথে হাইড্রার মার্জ হওয়াটা যেমন বিপদজনক তেমনি একটা সুযোগ ও বটে। আপগ্রেড ছাড়াও হাইড্রা যথেষ্ট ভয়ংকর। আর্টিফিশিয়াল মাইন্ড ই এই আগুনে ঘী ঢেলেছে। মাফিয়া গার্ল সহ টিমের সবাইকে মেরে ফেলায় হাইড্রাকে থামানো অসম্ভব হয়ে গিয়েছিলো, আর্টিফিশিয়াল মাইন্ড দিয়ে নিত্যনতুন লজিক দিয়ে নিজেকে যতটা সম্ভব সিকিউর রাখছে হাইড্রা। পিকাচুর সাথে মার্জ হওয়ায় হাইড্রা তার পুরাতন পার্মিশন প্যানেল বদলে পিকাচুর পার্মিশন প্যানেলে আপগ্রেড করবে যার ফলে হাইড্রা বা পিকাচু যেমন ইচ্ছা তেমন ইভলভ হতে পারবে কোন রকম রেষ্ট্রিকশন ছাড়াই। কিন্তু তার জন্য তোমার কাছ থেকে অটোনমাস কন্ট্রোল নিতে হবে। হাইড্রা যখনই পিকাচুর সাথে মার্জ হয়েছে সাথে সাথে পিকাচুর পাশাপাশি হাইড্রার উপরও তোমার অটোনমাস রেষ্ট্রিকশন একটিভ হয়ে যাবে আর তুমি হবে একমাত্র জীবিত ব্যক্তি যে কিনা হাইড্রা এবং পিকাচুর মার্জিং অথরিটি।
রাফি – তারমানে আমাকে হাইড্রা পিকাচুর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছিলো!
তোহা – হাইড্রা তোমাকে ভুল ইনফরমেশন সেন্ড করতেছিলো। আর পিকাচুর একসেস মেইনফ্রেম থেকে ডিসকানেক্ট করে দিয়েছিলো। তুমি এই মিশনে আসার আগ থেকেই পিকাচুর স্থানে পিকাচু সেজে হাইড্রা তোমার সাথে যোগাযোগ করছিলো, পিকাচু আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স হওয়ায় হাইড্রা পিকাচুকে হ্যাক করতে পারে নি। কোন নিউক্লিয়ার সাবমেরিন বা নিউক্লিয়ার লঞ্চ কোড চুরি হয় নি। স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটির যে খেলা পিকাচু সেজে হাইড্রা দেখিয়েছিলো সেটা আসলে একটা প্রি প্রোগ্রামিং সিমুলেশন আর যা দেখিয়ে তোমাকে নির্জনে কতগুলো খুনির সাথে পাঠানোর সুব্যবস্থা করেছিলো যেন সুযোগ বুঝে তোমার কাছ থেকে মার্জিং কোড আর অটোনমাস কন্ট্রোল হাতিয়ে নেয়া যায়, আর তারপরই ওই সার্জারি করা সিলিন্ডারের বিষ্ফোরন, ব্যাস তখন তোমাকে পুতুলের মত নাচানো বা হাতের খেলা। হাইড্রা তোমাকে এমনভাবে নির্ভরশীল করে ফেলেছিলো যে তুমি নিজে ঘেটে না দেখে পিকাচুরুপী হাইড্রার উপর ভরসা করতে।
ডাক্তার ততক্ষণে সার্জারি শেষ করে সেলাই মেরে দেয়। রাফি কোন ব্যাথা বা পরিবর্তন অনুভব করতে পারে না। ডাক্তার তোহাকে ইশারা করে যে তার কাজ হয়ে গেছে।
তোহা ঘড়ি দেখে, পিকাচুর সাথে হাইড্রার মার্জিং হতে আর ১০ মিনিট বাকি।
তোহা – রাফি, হাইড্রা আর মাত্র ১০ মিনিটের ভেতর এক্টিভেট হবে আর এবার হাইড্রা পিকাচুকে মেইনফ্রেমে কানেক্ট করতে বাধ্য। আর সাথে হাইড্রার আর্টিফিশিয়াল মাইন্ড ও থাকবে। হাইড্রা অলরেডি জেনে গেছে যে রুহী বেঈমানী করেছে আর অনলাইনে আসার সাথে সাথে আমাদের উপর আক্রমণ চালাবে।
রাফি – মাফিয়া গার্ল নিশ্চই হাইড্রার জন্য একটি কিলকোড তৈরী করেছিলো যা হাইড্রা কে ইমার্জেন্সি শাটডাউন করতে ও ফ্লাশআউট করতে বাধ্য করবে।
তোহা রুহীকে ইশারা করলে রুহী রাফিকে অন্য একটি রুমেু দিকে ইশারা করে , রাফি তোহা এবং রুহী রুমটিতে ঢোকে, বেশ টিপটপ সার্ভাররুম। রুহী একটা ল্যাপটপ বের করে সার্ভারে কানাক্ট করে রাফিকে কিলকোড বের করে দেয়।
রাফি কিলকোডটি কমান্ড মোডে দিয়ে সিস্টেমে লোড দিয়ে দেয় যেন হাইড্রা অনলাইনে আসার সাথে সাথেই যেন কিলকোড রিসিভ করে।
তোহা – কিলকোডটি শুধু হাইড্রার উপরই কাজ করবে। পিকাচু তো অক্ষতই রয়ে যাচ্ছে।
রাফি – হ্যাঁ, হাইড্রা ফ্লাশআউট হয়ে গেলে পিকাচুকে ইনফ্লুয়েন্স করার মত আর কোন আর্টিফিসিয়াল মাইইন্ড থাকবে না।
তোহা – এটা কি অনেক বড় রিস্ক হয়ে যাবে না ?
রাফি – পিকাচুকে ইমারজেন্সি শাটডাউন করতে কোন কিলকোডের প্রয়োজন নেই। আমি কমান্ড দিয়েই পিকাচুকে শাট ডাউন করতে পারবো।
ততক্ষণে পিকাচুর অনলাইনে আসার সময় হয়ে গেল। রাফি কিলকোড লোড দিয়ে কনফার্ম করার অপেক্ষা করছে।
পিকাচু – পিকাচু ইজ লাইভ, কমান্ড একসেসিং, কমান্ড ডিনাইড।
এই প্রথম পিকাচু রাফির দেয়া কমান্ড ডিনাই করলো, রাফি আবারো কিলকোড দিল কিন্তু পিকাচু কিছুতেই এক্সেপ্ট করছে না। রাফি বুঝতে পারে যে পিকাচুর উপর হাইড্রার আর্টিফিশিয়াল মাইন্ড কাজ করছে, তাই রাফি পিকাচুর সিস্টেম ব্যাকডোর ব্যবহার করে কিলকোড কমান্ড করলো। এবার পিকাচু কমান্ড গ্রহন করলো আর হাইড্রাকে সিস্টেম থেকে ফ্লাশআউট করা শুরু করলো।
তোহা আর রুহী অবাক হয়ে গেল, যেখানে পিকাচু হওয়ার কথা হাইড্রার আপগ্রেড এবং একই ধাচের সেখানে পিকাচু নিজেই ফ্লাশআউট করছে হাইড্রাকে।
পিকাচু হাইড্রাকে ফ্লাশআউট করে ফেলে পুরোপুরিভাবে।
পিকাচু – পিকা পিকা।
রাফি – পিকাচু, তোমাকে মেইনফ্রেম থেকে ডিসকানেক্ট করে দিলে হাইড্রা কিভাবে তোমার একসেস কোড দিয়ে তোমার মত হয়ে কাজ করতে পারে।
পিকাচু – হাইড্রা এবং পিকাচু জমজ প্রোগ্রামিং। একজন অন্যজনের ক্লোন করা ৯৫% পসিবল।
রাফি – তাই বলে আমার একসেস প্যানেলে! এটা তো অসম্ভব।
পিকাচু – পিকাচু অসম্ভবকেই সম্ভব করে এসেছে এতদিন।
তোহা এগিয়ে এসে রাফি আর পিকাচুর কথপোকথনের ভেতর বাধ সাধে।
তোহা – ক্লোজ করো।
বলে রাফির হাত চেপে ধরে। রাফি কিছুক্ষণ চুপ থেকে পিকাচু কে কমান্ড করে।
রাফি – পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পিকাচু তোমাকে ডিকমিশনড করা হলো।
পিকাচু – কমান্ড এক্সেপ্টেড। শাটিং ডাউন।
পিকাচু তার সিষ্টেম ক্লোজ করে দিল।
তোহা – তুমি কি নিশ্চিত যে হাইড্রা পুরোপুরিভাবে ফ্লাশআউট হয়েছে।
রাফি – হয়তো হয়েছে, হয়তো হয়নি। আমি সিস্টেমমাফিক কাজটা করেছি। আর্টিফিশিয়াল ব্রেনের সাথে ডিল করার অভিজ্ঞতা থাকলেও আর্টিফিশিয়াল মাইন্ডের সাথে ডিলিংস হয় নি কখনো।
আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বের হয়ে আসে রাফি তোহা আর রুহী। সূর্য অস্ত যাওয়ার পথে।। তোহা রাফির হাতটা জরিয়ে ধরে চিরায়তভাবে।
………….
কোন একদিন …..
Reconnecting……
Hidra is live……
.
বি. দ্র. আমিও মানুষ। টাইপটা হাতেই করতে হয়। কাজটা কতটুকু সময়সাপেক্ষ তা হয়তো আপনাদের বোঝানোর প্রয়োজন নেই। আমার জীবন বিলাশবহুল নয়। কাজ করি আর অবসরে গল্প লিখি। আর কিছু বলার নেই, সমাপ্ত
হ্যাকারের_লুকোচুরি . সিজন_৩ . শেষ?
হ্যাকারের_লুকোচুরি . সিজন_৩ . পর্ব_৯
হ্যাকারের_লুকোচুরি
.
সিজন_৩
.
পর্ব_৯
.
লেখকঃ Sharix Dhrubo
রুহী – This game ends here.
রাফি চোখ বন্ধ করে ফেলে। অনেক বড় ভুল হয়ে গেল তার।
গর্জে উঠলো রুহীর পিস্তল।
বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চলার পর রাফি চোখ খোলে। নিজের বুকে পিঠে হাত দিয়ে নিজেকে অক্ষত অবস্থায় আবিষ্কার করে রাফি। বালিতে গড়াগড়ি দিয়ে উল্টা দিকে তাঁকিয়ে দেখে মার্সেনারী টিমের সবাই মাটিতে লুটিয়ে আছে। রাফি বুঝতে পারে না কি হলো, রুহী কেন তার নিজের টিমের উপর গুলি চালালো!!!!
রুহী এখনো পিস্তল তাঁক করে আছে টিমের দিকে, অন্য হাত দিয়ে রাফিকে বালি থেকে ওঠানোর জন্য রাফির কলার ধরে।
রুহী – গেট আপ, গেট আপ।
রাফি ঝোক সামলে বালি ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, রুহী রাফির পেছনে থেকে পিস্তল তাঁক করে থাকে। রাফি বালি ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে রুহী রাফিকে ধাক্কা দিয়ে টিমের কাছে নিয়ে যায়। রাফি খেয়াল করে টিমের সবাইকে আহত করেছে রুহী, কাউকে জানে মারে নি। রাফির কাছে রুহীর কর্মকান্ড তখনও ধোঁয়াশা। তাহলে কি মাফিয়া গার্ল ই চুরি করেছে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আর নিউক্লিয়ার লঞ্চ কোড! রাফিকে হত্যা করে কি মাফিয়া গার্ল পথের কাটা সরাতে চাইছে! কিন্তু মাফিয়া গার্ল ই তো রাফিকে ইনফর্মেশনগুলো দিয়েছিলো! এছাড়া রুহী তো চাইলে আরো আগেই রাফিকে মেরে ফেলতে অথবা বন্দী করতে পারতো, কিন্তু এখন কেন! এভাবে কেন!
টিমের কাছাকাছি পৌছাতেই রুহী চেঁচিয়ে ওঠে,
রুহী – হোয়াট ইজ ইওর মিশন সোলজার!
আহত টিমমেটগুলো নীরব থাকে, নীরবতা কাটাতে রুহী বালিতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে,
রুহী – আনসার মি! হোয়াট ইজ ইওর মিশন!!!!
রিদিয়নস্কি তখন দুই হাত উচু করে আত্বসমার্পন করে আর কিছু বলতে চায়।
RQ – আওয়ার মিশন ইজ টু কিল আলফা ………
হঠাৎ আহত টিমমেটের সবাই কান চেপে ধরে চিৎকার করে ওঠে, যেন কানে প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে। হঠাৎই টিমের সবার নাক কান দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু করলো আর প্রত্যেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
ঘটনার আকষ্মিকতায় রাফি এবং রুহী দুইজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। টিমের সবার কানে থাকা ইয়ারবট থেকে হাই ফ্রিকোয়েন্সি নয়েজ তৈরী হওয়ায় টিমের সবার নাক কান ফেটে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয় আর ফলশ্রুতিতে মৃত্যু ঘটে সবার। রাফি রুহীকে বেখেয়ালী লক্ষ্য করতে পেরে রুহীর হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিতে চায় কিন্তু রুহীর তাল সামলে ঝড়ের গতিতে রাফির আক্রমণ প্রতিহত করে।
রুহী – ইজি ব্যাড বয়, আই এম নট ইওর এনিমি। আই হ্যাড টু ডু হোয়াট ইজ নেসেসারী। কান থেকে ইয়ারবট খুলে ফেলো। এখনই!
ইয়ারবটে পিকাচু তখনও নীরব, রাফি পিকাচুকে কিছু কমান্ড করবে তখনই রুহী পিস্তল উঁচিয়ে রাফির কপাল বরাবর এগিয়ে নিয়ে আসে।
রুহী – আমি তোমার জায়গায় হলে এই ভুল করতাম না।
রুহী পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে। রাফির হাতে কাগজটি দিয়ে দেয় রুহী,
রুহী – পিকাচুকে কমান্ড করো আর কাগজে যা লেখা আছে তা অক্ষর বাই অক্ষর পড়ো। একটা শব্দ বেশী নয়, একটা শব্দ কম নয়।
রাফি রুহীর কাছ থেকে কাগজটি নেয়, ছোটখাটো কাগজটিতে একটি কমান্ড কোড ছাড়া আর কিছুই নেই। রাফি ভালোভাবে কোডটি পড়ে, কমান্ড কোডটি এক সিস্টেমের সাথে অন্য সিস্টেম মিলিয়ে দেয়ার একটি কোড। অর্থাৎ রুহী চায় পিকাচুকে কোন একটি পুরাতন সিস্টেম সেটআপের সাথে মিলিয়ে দিতে!!! পুরাতন সিস্টেমের এড্রেস কোড ও দেয়া আছে কাগজটিতে কিন্তু রাফি কম্পিউটার ইনপুট ছাড়া সেটা বের করতে পারবে না।
রুহী – (তাড়া দিয়ে) কমান্ড পিকাচু, রিড দ্যা পেপার।
রাফি – পিকাচু রেস্পন্স? পিকাচু!
পিকাচু – পিকা পিকা।
রাফি – কমান্ড কোড জিরো নাইন আলফা ………….
রাফি পুরো কোডটি পড়তে থাকে আর রুহীর দিকে তাঁকাতে থাকে। রুহী পলকহীন চোখে রাফির দিকে পিস্তল উঁচিয়ে রাখে। কোডটি পড়া শেষ হলে রাফি চুপ হয়ে যায়। পিকাচু কোডটি প্রোসেস করে রিপোর্ট জানায়,
পিকাচু – কমান্ড কোড স্ট্যান্ডবাই, পিকাচু ইজ মার্জিং উইথ নিউ কন্ট্যাক্ট, হাইড্রা, প্লিজ কনফার্ম টু ইনিশিয়েট?
হাইড্রার কথা শুনে রাফির মাথায় চক্কর দিলো, তাহলে রুহী চায় রাফি পিকাচুকে হাইড্রার সাথে মিলিয়ে দেয়! মাফিয়া গার্ল শেষমেশ পিকাচুকে দখল নিতে চায়!
পিকাচু – কনফার্ম টু ইনিশিয়েট?
রুহী পিস্তলটা নাড়িয়ে জানান দেয় সে রাফির কনফার্মেশনের অপেক্ষায় আছে। উপায়ন্ত না দেখে রাফি রুহীর চোখের দিকে তাঁকিয়ে কমান্ড করে।
রাফি – কনফার্ম।
পিকাচু – ইনিশিয়েটিং প্রোটোকল জিরো নাইন আলফা….. মার্জিং প্রোসেস স্টার্টিং ইন টি মাইনাস ১০ সেকেন্ডস। এপ্রক্সিমেট টাইম টি মাইনাস ৯০ মিনিটস। শাটিং ডাউন পিকাচু ইন ৩….২…..১.
রাফি বুঝে উঠতে পারলো না। কি হয়ে গেল এই কিছু সময়ের ভেতর। রাফির ভাজ করা কপাল দেখে রুহী বুঝে যায় যে পিকাচু মার্জিং প্রোসেস শুরু করে দিয়েছে। রুহী পিস্তল নামিয়ে ফেলে রাফির কপাল থেকে। কোমরে হোল্ডস্টারে পিস্তলটি রেখে রাফির দিকে তাকায় রুহী।
রুহী – ৯০ মিনিট সময় হাতে আছে। এখান থেকে সরে পড়তে হবে।
বলে দৌড় দেয় রুহী, রাফি ঠায় দাড়িয়ে থাকে আর রুহীর দিকে তাঁকিয়ে থাকে। কিছুদূর যাওয়ার পর রুহী পেছনে ফিরে তাকায়, রাফিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে দাড়িয়ে যায় রুহী। পেছনে ফিরে এসে রাফির সামনে দাড়ায় রুহী।
রুহী – আমি জানি তোমার মাথায় একগাদা প্রশ্ন ঘুরছে আর তোমার সাথে কি ঘটতেছে তার কিছুই বুঝতে পারছো না। যদি উত্তর জানতে চাও আর এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে চাও তো আমাকে ফলো করা ছাড়া তোমার আর ২য় পথ খোলা নেই। তাই যা বলছি তাই করাটা তোমার জন্য মঙ্গলজনক হবে। তবে একটা জিনিস বলতে পারি, তোমার সব প্রশ্নের জবাব তুমি পাবে। এখন দাড়িয়ে না থেকে আমার সাথে এসো।
রাফি অজানা একটা দেশের উপকূলে দাড়িয়ে আছে আর পিকাচু ও ৯০ মিনিট রেস্পন্স করবে না। রাফির সামনে দুইটা পথ খোলা, হয় রুহীকে ফলো করা আর না হয় ৯০ মিনিট পিকাচুর জন্য অপেক্ষা করা। কিন্তু পিকাচু তো হাইড্রার সাথে মার্জ হয়ে যাচ্ছে। পিকাচু হাইড্রার সাথে মিলে গেলেও কমান্ড কন্ট্রোল ৮০% রাফির হাতেই থাকবে। তবুও মাফিয়া গার্ল যদি রাফির কমান্ড পাওয়ার বাইপাস করে ফেলে তাহলে রাফির আর করার কিছুই থাকবে না। তাই পিকাচুর জন্য বসে থাকার চেয়ে রুহীর সাথে থাকাটা যুক্তিসঙ্গত লাগলো রাফির। তাছাড়া রিদিয়নস্কির বলা শেষ কথাটাও কানে বাজে রাফির। তাছাড়া ৫ টি লাশের পাশে দাড়িয়ে থাকলে যে কেউ সন্দেহ করবে এটাই স্বাভাবিক।
রুহী – টিক টক টিক টক, টাইম ইজ রানিং, লেটস গো।
রুহীর আওয়াজে ভাবনায় ছেদ পড়ে রাফির। রুহী হাত দিয়ে ইশারা করে হাঁটতে শুরু করে। এবার রাফি পিছু নেয় রুহীর। জোর পায়ে এগিয়ে গিয়ে রুহীর পাশাপাশি চলতে থাকে রাফি।
কিছুদূর হাঁটার পর রাফির ধৈর্যে কুলায় না। প্রশ্নগুলো পেট ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চায়। রুহী বুঝতে পারে রাফির হাল। রাফি প্রশ্ন করার আগেই রুহী বলে ওঠে,
রুহী – (চারদিকে তাঁকিয়ে) বলো ত কোথায় আছো তুমি এখন!
রাফি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রুহীর প্রশ্নে। এতক্ষণ চারপাশের কিছুই খেয়াল করে নি রাফি। সিংগাপুরের জাহাজ ইন্টারন্যাশনাল সী বর্ডার ক্রস করার আগে জাহাজ দিয়ে নেমে পরার কথা রাফি ও তার টিমের। তাই যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে যে রাফি এখন সিংগাপুর বা তার আশেপাশে কোন দ্বীপে আছে, কিন্তু এমন নির্জন নিরিবিলি হওয়ার কথা নয় সিংগাপুর বা তার আশেপাশের কোন দ্বীপ।
রাফি – আমরা সিংগাপুরে!
রুহী মুচকি হাসি দেয়। রাফি চলা থামিয়ে দিয়ে রুহীর দিকে তাঁকিয়ে পড়ে। রুহী পেছনে তাঁকিয়ে রাফিকে এগোতে ইশারা করে।
রুহী – কেউ একজন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তোমার সব প্রশ্নের জবাব সে দেবে।
রাফি আর দাড়িয়ে না থেকে রুহীর সাথে চলতে থাকে। কিছুদূর গেলে লোকজনের আভাস পায় রাফি। কৃষ্ণবর্নের লোকজন চোখে পড়তে থাকে রাফির, সিংগাপুরের আশেপাশে কোন কৃষ্ণাঙ্গ উপজাতি বাস করে এটা জানা নেই রাফির। হঠাৎই একটা কালো জীপ এসে দাড়ায় রাফি আর রুহীর সামনে। পেছনে আরো ২ টা খোলা জীপ। অস্ত্রধারী কয়েকজন কৃষ্ণঙ্গ নেমে আসে জীপগুলো থেকে। রুহীর সামনে এসে একজন কোন এক আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে রুহীর সাথে। রাফি আন্দাজ করে হয়তো সে দলনেতা কিন্তু রুহী কিভাবে তাদের সাথে কথা বলছে! দুই দফা কথপোকথন কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হেসে দেয়,
কৃষ্ণাঙ্গ – (দুই হাত মেলে দিয়ে চেচিয়ে) ওয়েলকাম টু সোমালিয়া।
সাথে সাথে পেছনের কৃষ্ণাঙ্গ অস্ত্রধারীরা ফাঁকা গুলি ছোড়া শুরু করে!
রাফির মাথায় একের পর এক বাজ পড়তে থাকে। যেন কেবল মাত্র কোমা থেকে ফিরছে সে।
রাফি – সোমালিয়া!! আমরা আফ্রিকায়! ৩ দিনের জাহাজ সফরে আফ্রিকায় কিভাবে সম্ভব!
রুহী – তোমার সব প্রশ্নের জবাব আসছে। অপেক্ষা করো।
কৃষ্ণাঙ্গ নেতা রুহী এবং রাফিকে জীপে ওঠার তাগাদা দিলো। রুহী জীপে চড়ে বসে আর জানালা দিয়ে রাফিকে ইশারা করে জীপে উঠতে।
রাফি তারপরও দাড়িয়ে থাকে! যেন পায়ে কেউ কয়েকমন পাথর বেধে দিয়েছে। রাফিকে ঠায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে কৃষ্ণাঙ্গ দলনেতা রাফির কানের কাছে গিয়ে বলে
কৃষ্ণাঙ্গ – আই এম নট গোইং টু কিল ইউ মাফিয়া বয়।
রাফির টনক নড়ে। তাহলে এরা রাফির আসল পরিচয় জানে!
কৃষ্ণাঙ্গ দলনেতা হাত দিয়ে জীপের দরজা খুলে দেয় রাফির জন্য।
কৃষ্ণাঙ্গ – উই হ্যাভ এ সার্প্রাইজ ফর ইউ।
রাফি আর কথা না বাড়িয়ে অনিচ্ছা স্বত্বেও গাড়িতে চড়ে বসে। সবাই হই হই করতে করতে গাড়ি ঘুরিয়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে। অনুন্নত এলাকা কিন্তু এদের হাতে সর্বাধুনিক অস্ত্রসস্ত্র, এন্ড্রোয়েড ফোন সহ অত্যাধুনিক গ্যাজেটস। রাফি শুধু তার প্রশ্নের জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় ঝিম মেরে থাকে। রুহী রাফির কান থেকে ইয়ারবটদুটো খুলে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়।
রুহী – ইউ ওন্ট নীড দেম এনিমোর।
চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে থাকা ছাড়া রাফির আর কিছু করার থাকে না।
ছোট একটা গ্রামে ঢুকে পড়ে জীপ তিনটা। একটা দেয়ালছাড়া ছাউনির ঘরের সামনে গাড়িটা থামে। রুহী আর রাফির দিকে সবাই তাকিয়ে থাকে। গ্রামের চারিদিকে বড়বড় টাওয়ারে অস্ত্রধারী কৃষ্ণাঙ্গ দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। রুহী গাড়ি থেকে নেমে ছাউনি দেয়া খোলা ঘরের ভেতর ঢোকে ছাউনির নীচে সারি দিয়ে বেঞ্চ রাখে আর মাঝখানে একটা জায়গায় বেশ কিছু কৃষ্ণাঙ্গ গোল হয়ে দাড়িয়ে কোন একটা খেলা উপভোগ করছে। রাফি উঁকি মেরে দেখে সবাই পাঞ্জা লড়াই উপভোগ করছে। আরো একটু খেয়াল করে দেখে এক কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের সাথে এক শেতাঙ্গ পাঞ্জা লড়ছে। রুহী ভীড় ঠেলে ভেতরে যেয়ে শেতাঙ্গ মানুষটার কানে কানে কিছু বলে।
কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষটিকে পাঞ্জায় হারিয়ে দিয়ে এক হাত উচু করে সেই শেতাঙ্গ। সাথে সাথে রাফি আর ওই শেতাঙ্গের মাঝে দাড়িয়ে থাকা সবাই সরে যায়। রাফি স্পষ্টভাবে শেতাঙ্গের পেছন দিকটা দেখতে পায়। শারিরীক গঠন ই বলে দিচ্ছে শেতাঙ্গ একজন মেয়ে। চুল বেনী করে মাথায় খোঁপা করা। চোখে পাইলটা সানগ্লাস আর মিলিটারী পোশাক পরা একটা মেয়ে।
– মাফিয়া বয়! ফাইনালি।
চেচিয়ে বলে ওঠে শেতাঙ্গ মেয়েটি।
রাফির হয়তো চুড়ান্ত পর্যায় অবাক হওয়া বাকী ছিল যা পূর্নতা পেলো শেতাঙ্গ মেয়েটির ওই ডাকটিতে। চেহারার অর্ধেকাংশের কিছুটা দেখা যাচ্ছিলো পেছন থেকে কিন্তু গলার আওয়াজটা অচেনা লাগলো না রাফির।
বি. দ্র. সমাপ্তি সন্নিকটে।
হ্যাকারের_লুকোচুরি . সিজন_৩ . পর্ব ৮
হ্যাকারের_লুকোচুরি
.
সিজন_৩
.
পর্ব ৮
.
.- This is your team leader.
সম্পূর্ণ আলোয় ফুটে ওঠা চেহারা দেখে রাফি কোনভাবেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না, এ কিভাবে সম্ভব।
রাফি – (মনে মনে) রুহী!!!!!!
বিস্ময়ে চোখ ফেটে আসার মত অবস্থা রাফির। কোনভাবেই হিসাব মেলাতে পারে না রাফি। রুহীকে এখানে দেখতে পাওয়াটা অসম্ভবের কাছাকাছি, তার উপর মাফিয়া গার্ল এর ঘনিষ্ঠ সহচর। পিকাচু বেছে বেছে কিভাবে রুহীকে এই মিশনের টিম লিডার করলো এটাই মাথায় আসছে না রাফির।
রাফির বিষ্ফোরিত চোখ নজর এড়ায় না রুহীর। তারপরও স্বাভাবিক চেহারা ধরে রেখে সবার সাথে পরিচিত হয় সে। রাফির সাথে হাত মেলানোর সময় একেবারে অপরিচিতর মতনই হাত মেলালো সে।
রুহী – (পরিচয় ও কর্মর্দন শেষে) আমরা এখনো ইন্টারন্যাশনাল বর্ডারে রয়েছি। বর্ডার ক্রস করার পর রাডারে ধরা পরার সম্ভাবনা আছে, তাই যে কোন ডিজিটাল ডিভাইস যদি থাকে তাহলে বন্ধ করে ওই সেফ এর ভেতর রেখে দিতে হবে।
রুহী হাতের ইশারায় একটা সিন্ধুক দেখিয়ে দিলো সবাইকে। রাফি খেয়াল করলো পিকাচু অনেকক্ষণ ধরে কোন রেস্পন্স করছে না। রাফি তার ল্যাপটপ ওপেন করতে চাইলে রুহী হাত দিয়ে বাধা দেয় এবং কান থেকে ইয়ারপিস ও খুলে ফেলতে ইশারা করে। রাফির কাছে পুরো ব্যপারটা ধোঁয়াশার মত লাগছে ।
রুহী ছিল মাফিয়া গার্লকে খোঁজার মিশনের প্রথম স্টেপ, মাফিয়া গার্লের ফিল্ড জবগুলো রুহী ই করে যা রাফি এর আগেও দেখেছে। পিকাচুর ও ত জানার কথা যে রুহী মাফিয়া গার্লের সহচর। তাহলে পিকাচু কেন রুহীকে টিমে নিলো?
রুহী – (হাতের ইশারায়) কেবিন এইদিকে। ২০ মিনিট পর টিম মিটিং। সবাই ফ্রেশ হয়ে এখানে চলে আসুন। (রাফির দিকে তাকিয়ে) আপনি আমার সাথে আসুন।
যে যার মত কেবিনে চলে গেল আর রাফি রুহীকে অনুসরণ করতে লাগলো।
রুহী – (চলতে চলতে) পিকাচু অনলাইনে আসতে ৫ মিনিট সময় লাগবে। কন্ট্রোলরুমে চলুন। জরুরী কথা আছে।
রাফি – তার আগে আমাকে বলেন আপনি এখানে কি করছেন?
রুহী – এসব প্রশ্ন করার সময় এখন নয়। অনেক বড় বিপদ এর মুখোমুখি হতে চলেছেন আপনি।
রাফির কপাল কুঁচকে গেল। ততক্ষণে রাফি এবং রুহী কন্ট্রোলরুমে পৌছে গেল। একদম সাদামাটা কন্ট্রোলরুম। সবকিছুই এনালগ বলা যায়। রাফি যেমনটা ভেবেছিল তেমনটা একেবারেই নয়।
রাফি – বিপদ ত মাথায় নিয়েই ঘুরছি, যে বিপদ সামনে ঘুরছে তা থেকে পরিত্রাণ পাই আগে।
রুহী – বিপদটা পৃথিবীর নয়, আপনার। মফিয়া গার্ল আসলে………
রাফি – মানে! আসলে কি?
ততক্ষণে পিকাচু কানেক্ট করলো ক্রুজারের মেইনফ্রেমে। পিকাচু কানেক্ট হওয়ায় চুপ হয়ে যায় রুহী। রাফি কিছু বলতে যাবে তখন রুহী হাত না নড়িয়ে আংগুলের ইশারায় রাফিকে চুপ হতে বলে। রাফি কিছু না বুঝতে পেরে চুপচাপ বসে থাকে। তবে রাফির কৌতুহল বেড়ে যায় বহুগুণে। রুহী কি বলতে গিয়েও থেমে গেল!
পিকাচু – পিকা পিকা। টিম লিডার (রুহী), বোট এর পজিশন পরিবর্তন করো।
এমনটা ইন্টারকমে বলে জিপিএস লোকেশন দেখিয়ে দিল। রুহী লোকেশন মেইনটেইন করে বোটের দিক ঠিক রাখলো।
রাফি ল্যাপটপ ওপেন করলে পিকাচু ল্যাপটপে কানেক্ট হয়। রাফি ততক্ষন রুহীর দিকে তাঁকিয়ে থাকে। রুহীর স্বাভাবিকের মাঝে অস্বাভাবিক ব্যবহার রাফির চোখে কাঁটা দিতে লাগে।
“কি বোঝাতে চাইলো রুহী!” চোখ বন্ধ করে রুহীর চেহারাটা আবারো সামনে নিয়ে আসে, “রুহী – বিপদটা পৃথিবীর নয়, আপনার। মফিয়া গার্ল আসলে……”। কথাগুলো বলার সময় রুহীর চেহারায় আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় ভরে ছিলো। কিন্তু পিকাচু কানেক্ট হবার সাথে সাথে রুহীর সেই অস্বাভাবিক চেহারা একদম স্বাভাবিক হয়ে গেল যা এখনও সেভাবেই আছে। কি এমন বিপদ? এত উৎকন্ঠাই বা কেন? তাহলে কি মাফিয়া গার্ল কোন ফাঁদ পেতেছে! রুহী এর আগেও রাফিকে মাফিয়া গার্লের হাত থেকে উদ্ধার করতে চেয়েছিলো কিন্তু রাফির কাছে রুহীর কর্মকান্ড সবসময়ই ধোঁয়াশার ভেতরই ছিল।
পিকাচু – বোট এখন ডেষ্টিনেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কোষ্টগার্ড আর নেভীর চোখকে ফাঁকি দিতে পারলে আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
হঠাৎ একটা সিগন্যাল সাইরেন বেজে ওঠে।
রুহী – বিপদ, এন্টি রাডার সিস্টেম ডিজেবল হয়ে গেছে। রেন্জের ভেতর সব রাডারে এখন আমাদের দেখা যাচ্ছে।
রাফি – পিকাচু, কিছু একটা করো।
পিকাচু – এতগুলো রাডার সিস্টেম একসাথে ডিজেবল করা সম্ভব নয় আর ডিজেবল করে দিলেও সেটা একটা মিলিটারি হামলার থেকে কম কিছু না।
এর ভেতর বোটে থাকা অন্যান্য সদস্যরাও কন্ট্রোলরুমে চলে আসে। রেডিও কমিউনিকেশনে নেভীর সতর্কবার্তা ভেসে আসতে থাকে। অর্থাৎ তাদের রাডারে ধরা পড়ে গেছে রুহীর বোট।
রুহী – ধরা পড়লে সব শেষ। (বলেই রাফির সামনে এসে দাড়ায়)।
রাফি রুহীর চোখের দিকে তাঁকায়। রুহী রাফিকে ইশারায় কন্ট্রোলরুম থেকে বের হতে বলে। রাফি বুঝতে পারে না তার কি করা উচিত।
পিকাচু – আমি সাহায্য করতে পারি তবে একসাথে অনেক কাজের কমান্ড দিতে হবে। পিকাচু যদি অটোনমাস কন্ট্রোল পায় তাহলে কয়েক সেকেন্ড লাগবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার হতে।
রাফি অটোনমাস কন্ট্রোল দেয়ার জন্য কীবোর্ডে হাত দেবে ঠিক তখন রুহী রাফির হাত চেপে ধরে।
রাফি – (অবাক হয়ে) কি করছেন! হাত ছাড়েন! এভাবে ধরা পড়া যাবে না। পিকাচু কে কন্ট্রোল দিলে পিকাচু সব কিছু ঠিক করে দেবে।
রুহী – অপেক্ষা করুন। এখনো অনেক সময় আছে। এন্টি রাডার সিস্টেম এক্টিভেট হয়ে যাবে কিছুক্ষণের ভেতর। পিকাচু কে এখনই ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
রাফি রুহীর চোখের দিকে তাকায়। চোখটাতে একটা অতিপরিচিত একটা ছায়া আছে। রাফির মনে ছোট্ট একটা বিশ্বাস তৈরী হয় রুহীকে বিশ্বাস করার। রাফি কীবোর্ড থেকে হাত সরিয়ে নেয়। আর রুহীকে এন্টি রাডার এক্টিভ করার জন্য ইশারা করে। রুহী দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিছুদূর গিয়ে আবারো ফিরে আসে।
রুহী – Rafi, I need you to fix it, come with me.
রাফি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে দরজার দিকে রওনা হয়।
ক্রুজার বোটের ডেক এ নেমে আসে রুহী আর রাফি। ইন্জিনের পাশাপাশি আরো অনেক ইনস্ট্রুমেন্ট দিয়ে ডেকটা ভর্তি। রুহী রাফির দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে একটা সুইচ বের করে চেপে ধরে। ডেক এর লাইইটগুলো জ্বলা নেভা করা শুরু করে, রাফি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে সেগুলো দেখতে চাইলে রুহী হাত ধরে বসে, রাফির চোখ আর বড় হওয়ার কায়দা নেই।
রুহী – সময় কম, যা ই ঘটে যাক না কেন ভুলেও পিকাচুকে অটোনমাস কন্ট্রোল দিবেন না। আপনি অনেক বড় বিপদে ফাঁসছেন। কাউকে বিশ্বাস করবেন না, এমনকি পিকাচুকে ও না।
ঝড়ের গতিতে কথাগুলো শেষ করে হাত ঠোঁটের কাছে নিয়ে চুপ থাকার ইশারা করে রুহী, এরপর সুইচটা ছেড়ে দিয়ে পকেটে রেখে দেয়। ডেক এর ভৌতিক জ্বলা নেভা আলোগুলো ঠিকঠাক জ্বলতে লাগলো। রাফি চোখ ঘুরিয়ে রুহীর দিকে তাকালো, রুহী মেঝের কাছে বসে কাজ করছে। বেশ কিছুক্ষণ পর গম গম করে একটা মেশিন চালু হয়ে যায়। বসা থেকে উঠে দাড়ায় রুহী।
রুহী – এন্টি রাডার সিস্টেম চালু হয়ে গেছে। চলুন উপরে যাওয়া যাক।
রাফি কিছু বলতে চাইলো কিন্তু রুহী চোখের ইশারায় চুপ করিয়ে দিলো। দুইজনেই ফিরে আসে কন্ট্রোল রুমে। টিম ব্রিফিং শেষে যে যার রুমে চলে যায়। রুহী আর রাফি দুইজনে কন্ট্রোলরুমে থেকে যায়। বোটের মেইনফ্রেমে পিকাচু কানেক্ট থাকায় বোট চালানো থেকে শুরু করে বাকী কাজ পিকাচু ই করে দিচ্ছে।
রুহী মাঝে মাঝে নেভিগেশন চেক করতেছে। কিন্তু রাফি চুপচাপ বসেই আছে। সকাল হতে আর অল্প সময় বাকী।
পিকাচু – বোট গন্তব্যে পৌছাতে আর ১৫ মিনিট লাগবে।
রুহী দূর দিগন্তে আলোর রশ্মি দেখতে পায়। রাফিকে তৈরী হতে বলে রুহী।
১৫ মিনিট পর ক্রুজার বোটটি জনশুন্য এক উপকূলে এসে ভিড়লো। সবাই বোট থেকে নেমে পড়লে পিকাচু সেফহাউজে যাওয়ার ইনস্ট্রাকশন দেয়। সবাই পায়ে হেটে সাগরপাড় ছেড়ে উঠতে লাগলো
কিছুদূর আসার পর হঠাৎ রুহী রাফিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বালির উপর, বাকিরা তাকিয়ে দেখে রুহীর কান্ড।
RQ – এখন নয় এখন নয়
চ্যাচাতে চ্যাচাতে বলে ওঠে রিদওয়ানস্কি। রাফি কিছু বুঝে ওঠার আগে রুহী তার কোমর থেকে পিস্তল বের করে রাফির দিকে তাক করে। রাফি অবাক হয়ে রুহীর কান্ড কারখানা দেখতে থাকে। টিমের বাকীরা তখনও রুহীর দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে
রুহী – This game ends here.
রাফি চোখ বন্ধ করে ফেলে। অনেক বড় ভুল হয়ে গেল তার।
গর্জে উঠলো রুহীর পিস্তল।
.
বি. দ্র. শত ঝামেলার মাঝেও গল্প দেয়ার চেষ্টা করছি। ধৈর্য ধারন করার অনুরোধ রইলো।
হ্যাকারের_লুকোচুরি . সিজন_৩ . পর্ব -৭
হ্যাকারের_লুকোচুরি
.
সিজন_৩
.
পর্ব -৭
.
পরদিন পড়ন্ত বিকেল..
কন্টেইনারে বসে রাফি এবং পিকাচু পরবর্তী কার্যক্রমের ছক আঁকতে থাকে। টিমের অন্য সবাই মদ আর গানবাজনা নিয়ে মেতে ছিলো, তাদের আর কাজ কি, গ্রুপ লিডারের কাছ থেকে ফাইনাল প্লান গিলে নিলেই হয়ে গেল।
রাফি তাই আপাতদৃষ্টিতে টিমের কারো কর্মকাণ্ডে নাক গলাতে চাইলো না।
পিকাচু – জাহাজ সিংগাপুরের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করার আগে তোমাদের জাহাজ থেকে নেমে পড়তে হবে। ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারে যতক্ষণ থাকা যাবে ততক্ষণ কোন দেশের আইন তোমাদের উপর প্রযোজ্য নয়। টিম লিডার একটা সী প্লেন নিয়ে এখানে অপেক্ষা করবে।
পিকাচু মনিটরে একটা জিপিএস লোকেশন পিনপয়েন্ট করলো যেটা আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায়। রাফি ততটা ইতস্ততঃ হলো না তবে পিকাচুর এই ভেংগেচুরে রাশিয়া যাওয়ার পথ বাছার কারনটা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেল।
রাফি – পিকাচু, এমন দূর্গম এবং বিপদজনক পথে না গিয়ে আমরা অন্য কোন পথেও তো রাশিয়া যেতে পারতাম, এই পথটাই কেন?
পিকাচু – জাহাজে তোমার সফরসঙ্গী যারাই আছে তারা সবাই দুনিয়ার মোষ্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল কোর্টে এদের কেসের ট্রায়াল এখনো চলছে। বলতে পারো এরা সবাই ফেরারী আসামী। এয়ারপোর্ট দিয়ে যাওয়াটা যথেষ্ট রিস্কি। পিকাচু ডিজিটাল সার্ভার থেকে হয়তো তাদের ট্রেস মুছে ফেলতে পারবে কিন্তু দূর্ঘটনাবসত যদি কোন অফিসার বা এয়ারপোর্ট পুলিস তাদের একজনকে চিনে ফেলে এবং এরেষ্ট করে তাহলে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে যাবে। সমুদ্রপথ সেইদিক থেকে নিরাপদ। খুবই কম নজরদারীতে পার হয়ে যাওয়া সম্ভব।
রাফি পিকাচুর যুক্তি অগ্রাহ্য করতে পারে না তবে বেছে বেছে এমন আন্তর্জাতিক ক্রিমিনালদের কেন প্রয়োজন ছিল মিশনে নেয়ার! আরো লো প্রোফাইলের মার্সেনারী কি ছিল না! পিকাচু যে কোন মিশনের জন্য হাই প্রোফাইল কোনকিছুই চ্যুজ করে না অতিরিক্ত এক্সপোজারের জন্য। সেখানে পুরো একটা টিম!!!! রাফির মাথা ঝিম খেয়ে এলো।
একটু মুক্ত হাওয়ায় দম নেয়ার আশায় কন্টেইনার থেকে বাইরে বের হয়ে এলো রাফি। বিশাল কন্টেইনারবাহী কার্গো শীপের একদম সামনে রেলিং ধরে দাঁড়ালো রাফি। সূর্যটা দিগন্তে অস্ত যেতে লাগলো।
এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না সমুদ্রপাড় থেকে। বিমুগ্ধ রাফি যেন কিছুক্ষণের জন্য কল্পনায় ডুবে গেলো; এমন স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় তোহাকে বাম বুকে আলতোভাবে আগলে ধরে সূর্যোদয় দেখাটা এক স্বর্গীয় অনুভূতি তৈরী করতো রাফির হৃদপিণ্ডে। সেই সাথে তোহার দুরন্ত চুলগুলোর এলোমেলো উড়াউড়ি, বুকে কান পেতে হৃদপিণ্ডের গল্প শোনা, ঠোঁটের কোনায় আনমনে লেগে থাকা একফোঁটা কফিকে নিজের ঠোঁটে তুলে নেয়া, কানের কাছে ভালোবাসি বলে গালে ছোট্ট চুমু ছুঁইয়ে পালিয়ে যাওয়ার মত ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্তগুলো জড়িয়ে আছে এমন সন্ধ্যায়। মাঝ সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মত অনুভূতিগুলো আঁছড়ে পড়ে রাফির মনের কোঠরে। হঠাৎ বুকের বা পাশে হাত দিলো রাফি। বিড়বিড় করে বললো “আসছি আমি, আর তো মাত্র কটা দিন।” যেন কথাগুলো তোহাকেই জানালো রাফি।
(ভাংগা ভাংগা ইংরেজী ভাষায়) “এমন সময় উদাশ মনে সূর্যাস্ত দেখা প্রেমিক পুরুষের লক্ষন।”
হঠাৎ উদাসী মন থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসে রাফি। পাশে তাকিয়ে দেখে কখন যেন রিদওয়ানস্কি এসে খানিকটা দূরে দাড়িয়ে আনমনা রাফিকে পর্যবেক্ষণ করছে। কিছুটা এগিয়ে এসে রাফির পাশে দাড়িয়ে পকেট থেকে একটা চুরুট বের করলো RQ। চুরুটে আগুন লাগিয়ে লম্বা টান দিয়ে আবারো বলতে শুরু করে RQ,
RQ – ( ভাংগা ভাংগা ইংরেজীতে) কি করতে এসেছো এখানে? কোথায় যাচ্ছো? কেনই বা যাচ্ছো?
রাফি কানে হাত দিলো, বাইরে আসার সময় পিকাচুর সাথে কানেক্ট থাকার ইয়ারবট টা খুলে রেখে এসেছে সে।
রাফি – (ইংরেজীতে) চুড়ান্ত মিটিং পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, সব জানতে পারবেন।
RQ – (অট্টহাসি দিয়ে) (ভাংগা ইংরেজীতে) আমি মিশনের কথা বলছি না, আমি আপনার কথা বলছি।
আয়েশী ধূমপায়ীর মত ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে
RQ – আপনার বাছাই করা টিমে একমাত্র আপনিই ব্যতিক্রম। আপনাকে দেখলে খুনি বলে তো মনে হয় না। এমন প্রফেশনাল খুনিদের সাথে আপনার যাত্রার কারন কি?
রাফি এমনিতেই স্বাস নেবার উদ্দেশ্যেই কন্টেইনার থেকে বাইরে এসেছিলো কিন্তু রিদওয়ানস্কির একের পর এক প্রশ্ন করার উৎসাহ দেখে আর কথা ঘোরাতে চায় নি রাফি,
চুড়ান্ত মিটিং এ সব বিস্তারিত জানানো হবে বলে জবাব মিটিয়ে সেখান থেকে আবার কন্টেইনারের দিকে পা বাড়ায় রাফি।
কন্টেইনারে এসে রাফি পিকাচুর সাথে কানেক্ট হয়।
পিকাচু – বর্তমান গতিবেগ হিসেবে ৪ ঘন্টার ভেতর জাহাজ ড্রপজোনে পৌছাবে। সবাইকে তৈরী হবার এলার্ট দেয়া হয়েছে। টিম লিডার ড্রপজোনে অপেক্ষা করবে।
রাফি – আমি তো তৈরী ই।
পিকাচু – good luck.
……..
টিমের সবাই জাহাজের লোয়ার ডেক এর ইমার্জেন্সি এক্সিটের সামনে দাড়িয়ে আছে। পিকাচু দরজা খোলার সময় কাউন্টডাউন শুরু করলে সবাই সারিবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে যায় আর রাফি অনভিজ্ঞ হওয়ায় একজন রাফিকে বুঝিয়ে দিলো কিভাবে নামতে হবে।
নামার পদ্ধতি শুনে রাফির চোখ কপালে উঠলো, এক্সিট ডোর খোলার পর মাত্র ১৫ সেকেন্ডের ভেতর টিমের সবাইকে ঝাপ দিতে হবে। রাফি দেখলো কেউ ই লাইফ জ্যাকেট পরা নেই, তার উপর রাতের ঠান্ডা পানিতে কিভাবে ঝাপ দেয়া সম্ভব! জাহাজের লোয়ার ডেক হিসাব করলেও প্রায় ২৫-৩০ ফুট উপর থেকে ঝাঁপ! কোনমতে মনে সাহস যোগায় রাফি । পিকাচুর কাউন্টডাউন শেষ হবার সাথে সাথে দরজা অটোমেটিক খুলে যায় আর এক একজন করে ঝাপাতে শুরু করে। রাফি চোখের ঝলকে উঁকি দিয়ে বাইরের ঘুটঘুটে অন্ধকার আর সমুদ্রের গর্জন আন্দাজ করে নিলো।
পিকাচু – jump now.
রাফি শক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে দরজা দিয়ে ঝাপ দেয়….
কিন্তু পরোক্ষনেই রাফি বুঝতে পারে যে সে পানিতে পড়ছে না, কোন শক্ত এবং ঢালু কোন স্টিল প্লেটের উপর বসে পড়েছে এবং স্লাইড করে নীচে নেমে যাচ্ছে। চোখ খুলে ব্যপারটা বুঝতে চাইলো কিন্তু দ্রুতবেগে স্লাইড করায় আর কিছু আন্দাজ করতে পারে না রাফি, চারিদিকে গুমোট অন্ধকার আর শীতল বাতাশের ঝাপটায় রাফি আবারো চোখ বন্ধ করে ফেলে। বেশ কয়েক সেকেন্ড স্লাইড করার পর হঠাৎ নরম কিছুর উপর আছড়ে পরে রাফি। সাথে সাথে কেউ একজন টেনে তুলে ফেলে রাফিকে। ঘটনার আকস্মিকতায় রাফি হতভম্ব হয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ততক্ষণে রাফিকে ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয় কেউ। রাফি চোখ খুলে দেখে টিমের সবাই রাফির ভয়ার্ত চেহারা দেখে মজা নিচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় রাফি। আসপাশে তাকিয়ে ধারনা করতে পারে যে এটা বেশ অাধুনিক মোডিফাইড ক্রুজার শীপ। এতক্ষন যে স্লাইডে করে রাফি নীচে নেমেছিল সেটা টেলিস্কোপের মত গুছিয়ে যাচ্ছে।
-“Welcome guys”
হঠাৎ একটা মেয়েলী কন্ঠে সম্ভাষণ পায় রাফি ও তার দল। কন্ঠটি বেশ চেনা চেনা লাগলো রাফির, পেছনে ঘুরে দেখতে পায় কেউ একজন এগিয়ে আসছে শীপের অন্ধকার কেবিন থেকে। অবয়ব দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে সে একটা মেয়ে। কেবিন থেকে হাই বুটের আওয়াজ তুলে বেরিয়ে আসা মেয়েটার চেহারায় আবছা আলো পড়ে, রাফি এক ঝলকে সেই আবছা আলোয় ফুটে ওঠা চেহারাটা দেখে যারপরনাই চমকে ওঠে।
– This is your team leader.
সম্পূর্ণ আলোয় ফুটে ওঠা চেহারা দেখে রাফি কোনভাবেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না, এ কিভাবে সম্ভব।
.
।
বি.দ্র. বিলম্ব এবং সংক্ষিপ্ত হওয়ায় দুঃখিত।
হ্যাকারের_লুকোচুরি . সিজন_৩ . পর্ব -৬
হ্যাকারের_লুকোচুরি
.
সিজন_৩
.
পর্ব -৬
রাফি – রাডারগুলোর জন্য যেহেতু সাবমেরিনটি সমুদ্রসীমা পার করে ভেতরে আসতে পারছে না সেহেতু সন্ত্রাসীরা কোন না কোন ভাবে ডিভাইসটি সাবমেরিন পর্যন্ত পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করবে। পিকাচু, সাবমেরিনের আশেপাশে ৪ কিলোমিটার রেডিয়াসের ভেতর যদি কোন জলযান ঢোকে তাহলে ইনফর্ম করবে। আর হ্যাঁ মার্সেনারীদের একখানে করার ব্যবস্থা করো, we are going to get the submarine.
পিকাচু – Gathering info…… contacting soldiers and associates….. collecting gear…… Mission is a go….
রাফি ল্যাপটপ ছেড়ে ওঠে। অনেকক্ষণ ধরে তোহার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে কিছুটা কৌতুহল নিয়ে ঘরের ভেতর এখানে সেখানে খুঁজতে থাকে। সদর দরজার কাছে এসে দেখে দরজা চাপিয়ে দেয়া, কোন লক নেই। রাফির চিন্তা বাড়ে। তোহা তো কিছু না বলে কোথাও যাওয়ার মেয়ে নয়। তাহলে কোথায় গেলো মেয়েটা। মাফিয়া গার্লের সাঙ্গপাঙ্গ আবার এই বাসা পর্যন্ত চলে আসলো না তো! !! রাফি ঘরের ভেতর ফিরে এসে আর একবার খুঁজতে খুঁজতে,
রাফি – (উচ্চস্বরে) তোহা? তোহা! !!!
বেশ কয়েকবার ডাকার পরও তোহার কোন সাড়া শব্দ পায় না রাফি। এত কষ্ট করে এতদিন ধরে লুকিয়ে রেখে এখন যদি তোহাকে অঘোরে হারাতে হয় তাহলে!!!!
রাফি – (উচ্চস্বরে) তোহা? তোহা!
তোহা – এইত্তো! নীচে আমি।
খুবই ক্ষীন আওয়াজে রাফি তোহার জবাব শুনতে পায়। আওয়াজটা সদর দরজার বাইরে থেকে আসছে। রাফি একঝটকায় দরজা খুলে শিড়ি বেয়ে নীচে নামতে থাকে। চার তলা এবং তিন তলার মাঝামাঝি নামতেই দেখতে পায় তোহাকে। তিন তলার রকিবের মা বাবা থাকেন। তোহা রকিবদের বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আন্টির সাথে কথা বলছিলো। ডাকাডাকি শুনে তোহা তড়িঘড়ি করে আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উপরে চলে আসতে থাকে। উপরে ওঠার সময় তোটা নীচের দিকে তাঁকিয়ে থাকায় রাফিকে দেখতে পায় না। রাফি সেটা বুঝতে পেরে হালকা কাশি দিয়ে তোহার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তোহা চোখ তুলে হয়তো রাফিকে প্রত্যাশা করে নি তাই একপলক উপরে তাঁকিয়ে আবারও চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে থমকে যায়। আবারো মুচকি হেসে আঁড়চোখে রাফির আপাদমস্তক দেখতে থাকে তোহা। রাফির খেয়াল হলো তার পোশাকের দিকে, তাড়াহুড়োতে ট্রাউজার্স আর ট্যাংক টপস (স্যান্ডু গেন্জি) পড়েই নীচে নেমে এসেছিলো সে। তোহার চাহনি আর মুচকী হাসিতে যথেষ্ট বিব্রত বোধ করে রাফি। তোহা নজর না সরিয়ে রাফির সামনে এসে দাঁড়ায়,
তোহা – (মোহমাখা স্বরে) এত তাড়া? হুউ? বউ ঘরে নেই বলে ভেবেছো পালিয়ে গেলো কিনা? (রাফির দিকে একধাপ এগিয়ে গেলো তোহা, রাফি পিছিয়ে গেলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়) পালাই নি এখনো, কিন্তু আমার থেকে যদি ওই ল্যাপটপকে বেশী ভালোবাসতে থাকো তাহলে সত্যিই একদিন পালিয়ে যাবো।
রাফি শিড়িঘরে নিজেকে কোনঠাসা আবিস্কার করলো, তোহা যে হঠাৎ করে এভাবে আটকে দেবে এটা ধারনার বাইরে ছিল রাফির। তোহার দুষ্টুমি বাড়বে এমন সময় কারো পায়ের শব্দ পেয়ে তোহা রাফিকে ছেড়ে শিড়ি বেয়ে উঠে গেলো তোহা। রাফিও সম্মোহন ফিরে পেয়ে তোহার চলে যাওয়া দেখতে থাকে।
……
রাতে খাবার টেবিলে,
রাফি – (ইতস্তত সুরে) কাল আমাকে জরুরী কাজে বাইরে যেতে হবে, সপ্তাহখানেকের ভেতর ফিরে আসবো।
তোহা – হঠাৎ কোথায় যাচ্ছো?
রাফি – বড় একটা প্রজেক্ট এর কাজে হাত দিয়েছি। সেই কাজের জন্যই বের হতে হবে।
তোহা – কিন্তু যাবে কোথায়?
রাফি – সেটা তো বলতে পারছি না এখনই তবে কাল গেলে জানতে পারবো।
তোহা কপাল কুঁচকে রাফির দিকে তাঁকায়। রাফি তোহার চোখের দিকে তাঁকিয়েই বুঝতে পারে যে তোহা সন্দেহ করছে রাফিকে। রাফি জানে যে সে জীবন মৃত্যু মাঝখানে বসে এই মিশনের জন্য নিজেকে রাজি করিয়েছে কিন্তু তোহাকে সবকিছু বললে তোহা কিছুতেই রাফিকে যেতে দেবে না। তাই তোহা যতই সন্দেহ করুক রাফিকে যেভাবেই হোক তোহার প্রশ্নবান এড়িয়ে কাল বের হতে হবে।
তোহা – (খাবার খেতে খেতে) অফিসিয়াল মিশন নাকি আনঅফিসিয়াল?
রাফি জানে যে তোহা বুদ্ধিমতি মেয়ে, অফিশিয়াল ট্যুরের কথা বললে তোহা অবশ্যই কাগজপত্র দেখতে চাইবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা চরম শিক্ষা দিয়েছে রাফি এবং তার পরিবারকে।
রাফি – আনঅফিশিয়াল। সিক্রেট প্রোজেক্ট বলতে পারো।
তোহা – বলতে চাইছো না যখন তখন জানতে চাইবো না তবে একটু সাবধানে কাজ করো। এই অল্প কিছুদিনের ভেতর অনেক ঝড় গিয়েছে আমাদের পরিবারের উপর দিয়ে, আশা করি বুঝতে পেরেছো।
বলে তোহা টেবিল ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলো।
রাফি – খাওয়া শেষ করলে না?
তোহা – হয়ে গেছে।
এতটুকু বলে কিচেনের দিকে চলে গেলো তোহা। রান্নাঘরের কাজ শেরে আবার ডাইনিং এ এসে বসলো তোহা।
রাফি শেষ মুহূর্তে এসেও থমকে যায়, তোহার কাছে সবকিছু গোপন করাটা ঠিক হবে কিনা সেটা বুঝতে পারছে না রাফি। খাওয়া শেষ করতে করতে তোহাকে সব খুলে বলতে থাকে রাফি, সাবমেরিন থেকে শুরু করে ভাঙ্গা এন্টেনা পর্যন্ত, কিন্তু এই পুরো বিষয় থেকে পিকাচুকে আড়াল করে রাখলো।
তোহা কিছুটা কৌতুহলি হয়ে উঠলো। ইংরেজী মুভির হিরো জেমস বন্ড এর ফ্যান বলে কথা।
তোহা – এতবড় মিশন পরিচালনা করছে কে?
রাফি – কোন শক্ত প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত এটা আমার মিশন। আর প্রমাণ জোগাড় করতে পারলেই সব ডিটেলস রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্সের হাতে তুলে দিতে পারবো।
তোহা – তাহলে তুমি সুইসাইড মিশনে যাচ্ছো?
রাফি – মানে?
তোহা – মানে প্রমান সংগ্রহ করতে গিয়ে যদি কোন বিপদে পড়ে যাও তাহলে তোমাকে সাহায্য করার মত কেউ নেই?
রাফি চুপ করে থাকে, পিকাচুর কথা এখনই জানাতে চায় না তোহাকে।
রাফি – একজন ব্যাকআপ তো থাকেই সবসময়। প্রয়োজন হলে তাকে ডাকা যাবে।
তোহা আরো প্রশ্ন করতে চাইলেও রাফি ইন্টারেষ্ট দেখাতে চাইলো না। তোহার ভেতর বাচ্চামী আছে ঠিকই তবে সে তুখোড় ইন্টেলিজেন্ট ও বটে। বাচ্চামী করতে করতে সব কথা বের করে নিয়ে আসার দারুণ ক্ষমতা আছে মেয়েটার। তাই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়াটাই সমীচীন মনে করলো রাফি। তোহাও তাই মিশন নিয়ে প্রশ্ন করা বাদ দিলো।
তোহা – কাল সকালেই চলে যাবে? আবারও একা ফেলে চলে যাবে?
রাফি তোহার দিকে তাঁকিয়ে দেখে মেয়েটা গাল ফুলিয়ে আছে। দেখেই গালটা টানতে ইচ্ছা করলেও এখন শক্ত থাকতে হবে রাফিকে, মায়ায় পড়ে গেলে মিশন তো দূর ঘরের বাইরে যেতেও মন চাইবে না।
তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে স্ট্যাডি রুমে চলে আসে রাফি। পিকাচু তার কাজ করে চলেছে।
পিকাচু – রাফিউল ইসলাম, সোলজার, গিয়ার, ওয়েপন এবং ট্রান্সপোর্টেশন তৈরি। আপনার পার্মিশনের অপেক্ষায়।
রাফি – Mission is a go. Find a safe house in Russia, Gather everything there and arrange my transport tomorrow. Let’s find this submarine.
পিকাচু- পিকা পিকা।
.
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ে রাফি। বিছানার পাশে মাথা ঘোরায় রাফি, তোহা তখনো ঘুমে টুং হয়ে আছে। মোবাইলটা খুঁজে বের করে সময় দেখতে চাইলো রাফি, ঘড়িতে তখন রাত ৩.৫০ বাজে। কোনরকম শব্দ না করে ঘর থেকে বের হয়ে স্ট্যাডিরুমে চলে যায় রাফি।
রাফি – পিকাচু, আপডেট দাও।
পিকাচু – সবকিছু প্লানমাফিক চলছে। আর ২০ মিনিটের ভেতর ট্রান্সপোর্ট বাসার সামনে চলে আসবে। ঝটপট তৈরী হতে হবে।
রাফি রাতের বেলাতেই ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিলো। গেষ্ট রুমের ওয়াশরুম ব্যবহার করলো রাফি যেন তোহার ঘুম না ভাঙ্গে। তৈরী হয়ে বেডরুমে যায় রাফি, কিন্তু তোহা বিছানায় নেই। রাফি চোখ ঘুরিয়ে তোহাকে খুঁজতে থাকলো,
তোহা – আমাকে বিদায় না জানিয়েই চলে যেতে চাচ্ছো?
আওয়াজটা বেডরুমের বাইরে থেকে আসছিলো তাই রাফি মাথাটা ঘুরিয়ে বেডরুমের বাইরে তাঁকালো। তোহা চোখ ডলতে ডলতে হাতে কিছু একটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
তোহা – আমি থাকতে ব্রেকফাস্ট না করে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।
রাফি – এত সকালে তুমি উঠতে গেলে কেন! আমি খেয়ে নিতাম কিছু একটা কোথাও থেকে।
তোহা – ঘরে একটা জলজ্যান্ত বউ থাকতে যদি বাইরে গিয়ে নাস্তা করতে হয় তো বউ হয়ে কি লাভ, (চোখ মুছতে মুছতে রান্নাঘরে যেতে) সব রেডি করাই আছে, যাষ্ট ২ মিনিট।
তোহা ঝটপট কিছু নাস্তা বানিয়ে দিলো রাফির সামনে। মেয়েটার হাতে জাদু আছে বলা যায়, ঘুম থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না অথচো নাস্তা তৈরী করে ফেললো এত দ্রুত। রাফি খাবার টেবিলে বসে পড়ে, তোহা সব সাজিয়ে দেয় রাফির সামনে আর পাশের চেয়ারে বসে পড়ে। রাফি খাবার গালে তুলতে যাবে এমন সময় চোখ যায় তোহার দিকে। মেয়েটা টেবিলের উপর কনুই দিয়ে হাতের উপর মাথার ভর ছেড়ে দিয়ে ঘুমে ঢলে পরছে। হাতের উপর ভর দেয়ায় তোহার গালটা নিজে থেকেই খুলে যায়। এতবড় মেয়ে তারপরও দেখতে এখনো বাচ্চা। রাফি আলতো করে তোহার কাধে হাত রাখে। রাফির স্পর্শে তোহার ঘুম ভেঙ্গে যায়,
তোহা – (আড়মোড়া দিতে দিতে) কিছু লাগবে তোমার?
রাফি – তোমার ঘুম এলে তুমি শুয়ে পড়, এভাবে ঝিমুতে হবে না।
তোহা – কই ঝিমাচ্ছি! আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম।
রাফি মুচকি একটা হাসি দিয়ে খেতে শুরু করে আর তোহা পাশে বসে ঝিমাতে (ঘুমাতে) থাকে।
খাওয়া শেষ হলে রাফি উঠে দাঁড়ায় আর হাতমুখ ধুয়ে আসে, হয়তো পানির আওয়াজে তোহার ঝিমুনি (!) কেটে যায়, টেবিল থেকে উঠে চলে যায় তোয়ালে আনতে। রাফির হাতমুখ ধোয়া শেষে রাফির দিকে তোয়ালে বাড়িয়ে দেয় তোহা। রাফি হাত মুখ মুছতে থাকে।
তোহা – কবে ফিরবে?
রাফি – বলতে পারছি না, তবে যত দ্রুত সম্ভব হয় ফিরবো।
তোহা – তোমার এমন হুটহাট উধাও হওয়ায় মা বাবার অনেক বেশী টেনশন করে, তাদেরকে এত চিন্তায় না রাখলেও তো পারো।
রাফি – এই শেষ। আর হবে না।
তোহা – প্রমিস?
রাফি – প্রমিস।
রাফি কিছুক্ষন রেষ্ট নিতে চাইলো কিন্তু ওইদিকে পিকাচু নোটিফিকেশন দিলো রাফির ট্রান্সপোর্ট বাসার নীচে অপেক্ষা করছে। রাফি তাই আর সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়ে। বাসার নীচে একটা উবার কার অপেক্ষা করছিলো। তোহা বাসার বারান্দা দিয়ে উঁকি দিয়ে রাফির চলে যাওয়া দেখতে থাকে। রাফি গাড়ির দরজায় হাত দিয়ে থমকে যায়, উপরের বারান্দার দিকে তাঁকায়। তোহার দিকে তাঁকিয়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে যায়। নিজের কর্মকান্ডের উপর নিজেই কিছুটা বিরক্ত হয়ে যায় রাফি। রাফি কোন বিনিময় ছাড়াই একের পর এক বিপদ নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছে। দেশের কথা ভেবে, দেশের সুরক্ষার কথা ভেবে রাফি বিনা স্বার্থে নিজের জীবন বাজী রেখেই চলেছে। কিন্তু আর কত? বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা তোহার মুখের দিকে তাঁকিয়ে আজ হঠাৎ করে উপলব্ধিগুলো মাথাচারা দেয়ে উঠলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা ও করে বসলো যে এবারই শেষ। পরিবারকে বিপদের মুখে ফেলে আর কোথাও কোন কাজ করতে যাবে না রাফি। ডান হাতটা ঠোঁটে ছুঁইয়ে তোহার দিকে নাড়ায় রাফি। তোহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাফির দিকে। রাফির চোখটা ঘোলাটে হয়ে আসলো। রাফি বুঝতে পেরে দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল। চোখ মুছতে মুছতে ড্রাইভারকে রওনা দেয়ার নির্দেশ দিল রাফি। পিকাচু ডেষ্টিনেশন সেট করে দেয়ায় ড্রাইভার গন্তব্যের দিকে রওনা দিল। রাফি গাড়ির ভেতর থেকে ঘাড়টা ঘুরিয়ে আর একবার দেখতে চাইলো তোহার মুখটা, কিন্তু মায়ায় জড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে আর তাকানোর সাহস করলো না রাফি। তোহা যে বড্ড মায়াবী।
গাড়ি দ্রুতগতিতে ছুটে চলতে থাকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কিন্তু গন্তব্য এখনো রাফির অজানা।
রাফি – পিকাচু, কোথায় যাচ্ছি আমরা?
পিকাচু – আমাদের আসল গন্তব্যে লীগ্যালভাবে পৌছানো সম্ভব নয়। তাই আমাদেরকে ভেংগে ভেংগে আমাদের গন্তব্যে পৌছাতে হবে। এখন আমাদের প্রথম ডেষ্টিনেশন সী পোর্ট। সেখান থেকে কার্গো শীপে করে ইন্টারন্যাশনাল সী বর্ডারে গিয়ে পৌছালে সেখান থেকে ২য় লক্ষ্যে পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাফির কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো এর আগেও রাশিয়া থেকে পিকাচুর মাধ্যমে রাফি দেশে এসেছিলো। কোন সমস্যা না থাকলে পিকাচু অন্য পথ বেছে নিত না।
অবশেষে সী পোর্টে এসে পৌছালো রাফি। পিকাচু একটা কন্টেইনার ঠিক করে রেখেছিলো, কাস্টমস হাউজের ঘুষখোর অফিসার এবং পিকাচুর ডিজিটাল একসেস পাওয়ার দিয়ে রাফি একপ্রকার অদৃশ্যভাবে একটা সিংগাপুরের কন্টেইনারবাহী জাহা্জ এম. ভি. রোদান এ চড়ে বসলো। জাহাজে থাকা একজন রাফিকে তার কন্টেইনারে পৌছে দিল। কন্টেইনার খোলার সাথে সাথে চোখ কপালে উঠে যায় রাফির। এটা কোন কন্টেইনারের দরজা নয়, এটা বিলাশবহুল একটা স্টিল রুমের প্রবেশ দ্বার। রাফি ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল। একটা বড়সড় এবং বিলাশবহুল রিক্রিয়েশনাল ভেইকেল (R.V) এর কন্টেইনার ভার্শন। রাফি পৌছানোর আগেই ভাড়াটে গুন্ডারা যারা মিশনে রাফিকে সাহায্য করবে তারা অাগেই এসে বসে আছে।
কন্টেইনারের ভেতর ইন্টারকম এ পিকাচু সবার সাথে রাফিকে পরিচয় করিয়ে দিলো।
পিকাচু – (বিদেশী ভাষায়) এটেনশন, এই হলো আলফা লিডার রাফি এবং (ইংরেজীতে) রাফি এই হলো তোমার টিম।
ভেতর থেকে একজন একজোড়া এয়ারবট (স্যাটেলাইট কানেক্টেড ওয়্যারলেস ইয়ারফোন।) নিয়ে এলো রাফির জন্য যেটা সরাসরি পিকাচুর সাথে সংযুক্ত থাকবে, টিমের এক একজন এক এক ভাষাভাষী হওয়ায় পিকাচু নিজেই বহুভাষাবিদের দায়িত্বটা কাধে তুলে নিয়েছে। টিমের প্রত্যেকে যে যে ভাষাতেই কথা বলুক না কেন পিকাচু এই ইয়ারবটের মাধ্যমে প্রত্যেককে যার যার রাষ্ট্রভাষাতে নিজেদের মাঝে হওয়া সকল কনভার্সেশন প্রচার করবে তাও এক ন্যানোসেকেন্ডের কয়েকশো ভাগের এক ভাগ সময়ের ভেতর।
রাফি এয়ারবট কানে পড়ে নেয়ার পর যে যার মত পরিচয় দিতে শুরু করলো আর রাফিকে পিকাচু বাংলা ভাষায় সব কনভার্সন কনভার্ট করে দিলো।
সবার সাথে পরিচিত হলেও রাফির পক্ষে এক মুহূর্তে তাদের নাম মনে রাখা সম্ভব হলো না, তাই কনভার্সেশনের সময় কেউ নাম না বললেও পিকাচু প্রতিবার রাফিকে নাম জানিয়ে দেয় যেন রাফি কমান্ড দিতে পারে। এর মধ্যে একজন এসে রাফির সাথে কথা বলা শুরু করলো । পিকাচু জানালো সোলজারের নাম রিদওয়ানস্কি। সংক্ষেপ RQ.
RQ – (পিকাচুর বঙ্গানুবাদে) তাহলে তুমিই হচ্ছো আমাদের আলফা লিডার?
রাফি – তেমনটাই মনে হচ্ছে।
RQ – টিম লিডার সিংগাপুর থেকে আমাদের সাথে জয়েন করবে।
রাফি – টিম লিডার?
RQ – আমার দেখা অন্যতম সাহসী মেয়ে যে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে একদূর এসেছে।
রাফি – মেয়ে?
RQ – হ্যাঁ, মেয়ে। ওহ, সে তোমার দেশীয়।
রাফি অবাক হয়ে যায়। বাংলাদেশী একটা মেয়ে এই পুরো টিমকে কমেন্ড করবে? ভেবেই গর্ববোধ করে রাফি। যাক এই যাত্রায় নিজ ভাষায় কথা বলার জন্য কাউকে পেলাম।
রাফি ভেতরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। জাহাজটি রওনা দেয় সিংগাপুরের উদ্দেশ্যে।
……………………………….
এদিকে সিংগাপুরে মোবাইল কথপোকথন।
যান্ত্রিক ভয়েস – টিম লিডার, your one and only mission is to save Alpha Leader at any cost till the order.
টিম লিডার – I’m on it.
যান্ত্রিক ভয়েস – You know what you have to do next.
টিম লিডার – very clearly. (একটা মেয়েলী ভয়ংকর হাসি)
হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_৩ পর্ব_৫
হ্যাকারের_লুকোচুরি
সিজন_৩
পর্ব_৫
পিকাচু – সার্ভেইল্যান্স স্যাটেলাইটে লেজার ট্যাগিং সিস্টেম রয়েছে। firing laser beam….
রাফির ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন লেজার বীম টেকনোলজি সম্পর্কে ধারনা রয়েছে তাই বুঝতে বাকী রইলো না যে পিকাচু কি করতে চলেছে।
এটা এমন এক ধরনের ট্রাকিং সিস্টেম যা লেজারের মাধ্যমে ছোড়া হয়। লেজারের মাধ্যমে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ছোড়া হয় লক্ষ্যে উপর। এতে লক্ষ্যবস্তুর কোন ক্ষতি হয় না কিন্তু ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন লেগে যায় পাকাপোক্তভাবে এবং এই রেডিয়েশনের ইউনিক কোড দিয়েই ট্রাক করা যাবে লক্ষ্যবস্তুকে।
পিকাচু লেজার বীম দিয়ে লেজার রশ্মি ছুড়ে দেয় সাবমেরিনের গায়ে। বেশ কিছুক্ষন পর পিকাচু স্যাটেলাইটের রেডিয়েশন স্ক্যানার দিয়ে সাবমেরিনের বর্তমান লোকেশন দেখাতে থাকে।
পিকাচু – লেজার ট্যাগিং কম্প্লিট। পিকাচু এখন সাবমেরিনটিকে ট্রাক করতে পারবে।
রাফি – দারুণ, কিন্তু এখন কি করবো! রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্সকে একবার জানিয়ে একটা প্রোটেনশিয়াল লীড হাতছাড়া হয়ে গেলো। এখন যদি সাবমেরিন ও হাতছাড়া হয়ে যায় তো সব ভেস্তে যাবে।
পিকাচু – নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস এখনো পর্যন্ত স্যাটেলাইটে কানেক্ট করা হয় নি। একবার যদি কানেক্ট হয়ে যায় তাহলে নিউক্লিয়ার হামলা আটকানো আর সম্ভব হবে না।
রাফি একটা ছোট হিসাব কষতে চাইলো।
রাফি – পিকাচু, নিউক্লিয়ার সাবমেরিন কোথায় লোকেট করা গেছে!
পিকাচু ল্যাপটপ স্ক্রীনে শো করে সাবমেরিনের বর্তমান লোকেশন, প্রশান্ত মহাসাগরের কোন একটা পয়েন্টে।
রাফি – পিকাচু, সাবমেরিনের গতি আর ডিরেকশন এ্যানালাইসিস করে পসিবল ডেষ্টিনেশনগুলো আইডেন্টিফাই করো। নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইসটি এখন একমাত্র নিরাপদ গন্তব্য হবে ওই সাবমেরিনটি।
পিকাচু – পিকা পিকা। scanning …….
সন্ত্রাসীরা চাইবে যে কোন মূল্যে ডিভাইসটিকে নিরাপদ রাখতে। আর সাবমেরিনের ভেতর ছাড়া অন্য কোথাও ডিভাইসটি নিরাপদ নয়। সাবমেরিনটিকে আর লুকোতে দেয়া যাবে না, রাশিয়ান নেভীর হাতে সাবমেরিনের কারেন্ট লোকেশন তুলে দেবো? রাফি ভাবতে থাকে, সাবমেরিনে লক করা লেজার ট্রাকিং কোড যদি রাশিয়ান নেভাল কমান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাহলে তারা এটাকে গুরুত্ব না ও দিতে পারে কারন স্যাটেলাইট বেজড লেজার ট্রাকিং সিস্টেম কোন মামুলি ট্রাকিং সিস্টেম নয় যে যার তার হাতে একসেস থাকবে আর যে কোন অবজেক্টকে টার্গেট করা যায় বিধায় ফ্রড ও ধরে নিতে পারে। তাছাড়া লেজার ট্যাগিং স্যাটেলাইটটি আমেরিকান। রাশিয়া যদি বুঝতে পারে আমেরিকা তাদের হারিয়ে যাওয়া সাবমেরিনের গায়ে লেজার ট্যাগ বসিয়েছে তাহলে বিশাল ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবার সম্ভাবনাও থেকে যায়। এই মিশনটা কারো ভরসায় ছাড়তে পারছি না রাফি। এমন একটা পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে কেসটা যে চোখের সামনে সবকিছু হলেও রাফি তা প্রমান করতে পারবে না।স্যাটেলাইট দিয়ে তোলা সাবমেরিনটির ছবিতে এমন কোন বিশেষ মার্ক নেই যার দ্বারা প্রমাণ করা যাবে ছবির সাবমেরিনটিই হারিয়ে যাওয়া নিউক্লিয়ার সাবমেরিন। শুধুমাত্র স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটির জন্য যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই ভেসে উঠেছিলো সাবমেরিনটি। আর সেই ভেসে ওঠার পর তোলা ছবিতে না কোন মার্কিং দেখা যাচ্ছে আর না কোন নাম্বারট্যাগ যার দ্বারা কিছু প্রমাণ করা সম্ভব।
পিকাচু – প্রমান না থাকলে যে কেউ এটাকে প্রাংক বলে উড়িয়ে দেবে। আর এত উচ্চমানের প্রযুক্তি যার তার হাতে থাকবে না সেটা সবাই বুঝবে।
রাফি নিজে নিজে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
রাফি – পিকাচু, এই মিশন আমি নিজে করতে চাই। একটা প্রোটেনশিয়ল সোর্স খুজে দেয়ার পরও যখন রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স কিছু বের করতে পারলো না তখন আমাকেই আমার লীড নিয়ে সামনে এগোতে হবে।
পিকাচু- কিন্তু মিশনটা কি?
রাফি – নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আর এক্টিভেশন ডিভাইস উদ্ধার করা।
পিকাচু – Is that so? Than you can’t do this alone. Remember, they hijack a nuclear submarine from a Naval Base. সুসংবদ্ধ চক্র না হলে কখনো এতবড় কাজ সফল করা সম্ভব নয়।
পিকাচুর কথা শুনে চমকালো না রাফি। সাবমেরিন পরিচালনা করতে হলে চোরদেরও অনেক প্রশিক্ষণের দরকার পরেছে। তাছাড়া যেসব ক্রুদেরকে নিয়ে সাবমেরিনটি যাত্রা শুরু করেছিলো তারাই বা কোথায় গেলো। হয়তোবা ভেতর থেকেই কেউ জড়িত ছিলো সাবমেরিন ছিনতাই করার সাথে।
পিকাচু – If you wanna go for this mission, than you’ll need a team.
রাফি – টিম! টিম কোথায় পাবো! আর এমন মিশনে যাবার জন্য কেউ কেন রাজি হবে?
পিকাচু – I have a collection of soldiers AKA Mercenary.
রাফি – আবার মার্সেনারী!
পিকাচু – হ্যাঁ তবে তারা তোমার হয়ে কাজ করবে। এটা যুদ্ধ থেকে কম কিছু হবে না।
রাফি শুধুমাত্র নিজে দায়িত্ব নিয়ে কাজটি করতে চেয়েছিলো। কিন্তু পিকাচু পুরো সিচুয়েশন এ্যানালাইসিস করে রাফির সামনে একটা গেমপ্লান দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। রাফি যতটা না কনফিউজড ছিলো এখন তার থেকে অনেক বেশী কনফিডেন্স পেলো।
পিকাচু – সাবমেরিনের স্পিড আর মুভমেন্ট এ্যানালাইসিস করে কোন স্পেসিফিক ডেষ্টিনেশন পাওয়া যাচ্ছে না। ইন্টারন্যাশনাল সী বর্ডারে ঘোরাঘুরি করছে রাশিয়ান নেভী কে এড়াতে।
রাফি – তাহলে এক্টিভেশন ডিভাইস নিতে সাবমেরিন পাড়ে ভিড়ছে না? তাহলে কি সন্ত্রাসদের অন্য কোন প্লান আছে?
পিকাচু – রাশিয়া সহ আশে পাশের সকল সামরিক ও বেসামরিক পোর্টে সোনার (Sonar) রাডার রয়েছে।
পিকাচু মনিটরে শো করে রাশিয়ান সী বর্ডার জুড়ে পানির নীচে থাকা সোনার (sonar) রাডার এবং তার এক্টিভিটিস। রাফি sonar system এর সাথে পরিচিত তবে শুধুমাত্র কাগজে কলমেই। Sonar Radar system এমন এক ধরনের রাডার যা শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে পানির নীচে যে কোন সলিড বস্তু যেমন সাবমেরিন, ডুবে যাওয়া জাহাজ, ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্র তলদেশে কোন বড় পরিবর্তন যার ফলে সুনামি সৃষ্টি হতে পারে এমন অনেককিছু ধরতে সক্ষম। অনবরত সৃষ্টি করা এই শব্দতরঙ্গসমূহ একত্রে সোনার ওয়েভ (sonar wave) নামে পরিচিত।
রাফি – রাডারগুলোর জন্য যেহেতু সাবমেরিনটি সমুদ্রসীমা পার করে ভেতরে আসতে পারছে না সেহেতু সন্ত্রাসীরা কোন না কোন ভাবে ডিভাইসটি সাবমেরিন পর্যন্ত পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করবে।
পিকাচু, সাবমেরিনের আশেপাশে ৪ কিলোমিটার রেডিয়াসের ভেতর যদি কোন জলযান ঢোকে তাহলে ইনফর্ম করবে। আর হ্যাঁ মার্সেনারীদের একখানে করার ব্যবস্থা করো, we are going to get the submarine.
পিকাচু – Gathering info…… contacting soldiers and associates….. collecting gear…… Mission is a go….
রাফি ল্যাপটপ ছেড়ে ওঠে। অনেকক্ষণ ধরে তোহার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে কিছুটা কৌতুহল নিয়ে ঘরের ভেতর এখানে সেখানে খুঁজতে থাকে। সদর দরজার কাছে এসে দেখে দরজা চাপিয়ে দেয়া, কোন লক নেই। রাফির চিন্তা বাড়ে। তোহা তো কিছু না বলে কোথাও যাওয়ার মেয়ে নয়। তাহলে কোথায় গেলো মেয়েটা। মাফিয়া গার্লের সাঙ্গপাঙ্গ আবার এই বাসা পর্যন্ত চলে আসলো না তো! !! রাফি ঘরের ভেতর ফিরে এসে আর একবার খুঁজতে খুঁজতে,
রাফি – (উচ্চস্বরে) তোহা? তোহা! !!!
বেশ কয়েকবার ডাকার পরও তোহার কোন সাড়া শব্দ পায় না রাফি। এত কষ্ট করে এতদিন ধরে লুকিয়ে রেখে এখন যদি তোহাকে অঘোরে হারাতে হয় তাহলে!!!!
রাফি – (উচ্চস্বরে) তোহা? তোহা!
তোহা – এইত্তো! নীচে আমি।
খুবই ক্ষীন আওয়াজে রাফি তোহার জবাব শুনতে পায়। আওয়াজটা সদর দরজার বাইরে থেকে আসছে। রাফি একঝটকায় দরজা খুলে শিড়ি বেয়ে নীচে নামতে থাকে। চার তলা এবং তিন তলার মাঝামাঝি নামতেই দেখতে পায় তোহাকে। তিন তলার রকিবের মা বাবা থাকেন। তোহা রাকিবদের বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আন্টির সাথে কথা বলছিলো। ডাকাডাকি শুনে তোহা তড়িঘড়ি করে আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উপরে চলে আসতে থাকে। উপরে ওঠার সময় তোটা নীচের দিকে তাঁকিয়ে থাকায় রাফিকে দেখতে পায় না। রাফি সেটা বুঝতে পেরে হালকা কাশি দিয়ে তোহার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তোহা চোখ তুলে হয়তো রাফিকে প্রত্যাশা করে নি তাই একপলক উপরে তাঁকিয়ে আবারও চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে থমকে যায়। আবারো মুচকি হেসে আঁড়চোখে রাফির আপাদমস্তক দেখতে থাকে তোহা। রাফির খেয়াল হলো তার পোশাকের দিকে, তাড়াহুড়োতে ট্রাউজার্স আর ট্যাংক টপস (স্যান্ডু গেন্জি) পড়েই নীচে নেমে এসেছিলো সে। তোহার চাহনি আর মুচকী হাসিতে যথেষ্ট বিব্রত বোধ করে রাফি। তোহা নজর না সরিয়ে রাফির সামনে এসে দাঁড়ায়,
তোহা – (মোহমাখা স্বরে) এত তাড়া? হুউ? বউ ঘরে নেই বলে ভেবেছো পালিয়ে গেলো কিনা? (রাফির দিকে একধাপ এগিয়ে গেলো তোহা, রাফি পিছিয়ে গেলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়) পালাই নি এখনো, কিন্তু আমার থেকে যদি ওই ল্যাপটপকে বেশী ভালোবাসতে থাকো তাহলে সত্যিই একদিন পালিয়ে যাবো।
রাফি শিড়িঘরে নিজেকে কোনঠাসা আবিস্কার করলো, তোহা যে হঠাৎ করে এভাবে আটকে দেবে এটা ধারনার বাইরে ছিল রাফির। তোহার দুষ্টুমি বাড়বে এমন সময় কারো পায়ের শব্দ পেয়ে তোহা রাফিকে ছেড়ে শিড়ি বেয়ে উঠে গেলো তোহা। রাফিও সম্মোহন ফিরে পেয়ে তোহার চলে যাওয়া দেখতে থাকে।
……
রাতে খাবার টেবিলে,
রাফি – (ইতস্তত সুরে) কাল আমাকে জরুরী কাজে বাইরে যেতে হবে, সপ্তাহখানেকের ভেতর ফিরে আসবো।
তোহা – হঠাৎ কোথায় যাচ্ছো?
রাফি – বড় একটা প্রজেক্ট এর কাজে হাত দিয়েছি। সেই কাজের জন্যই বের হতে হবে।
তোহা – কিন্তু যাবে কোথায়?
রাফি – সেটা তো বলতে পারছি না এখনই তবে কাল গেলে জানতে পারবো।
তোহা কপাল কুঁচকে রাফির দিকে তাঁকায়। রাফি তোহার চোখের দিকে তাঁকিয়েই বুঝতে পারে যে তোহা সন্দেহ করছে রাফিকে। রাফি জানে যে সে জীবন মৃত্যু মাঝখানে বসে এই মিশনের জন্য নিজেকে রাজি করিয়েছে কিন্তু তোহাকে সবকিছু বললে তোহা কিছুতেই রাফিকে যেতে দেবে না। তাই তোহা যতই সন্দেহ করুক রাফিকে যেভাবেই হোক তোহার প্রশ্নবান এড়িয়ে কাল বের হতে হবে।
তোহা – (খাবার খেতে খেতে) অফিসিয়াল মিশন নাকি আনঅফিসিয়াল?
রাফি জানে যে তোহা বুদ্ধিমতি মেয়ে, অফিশিয়াল ট্যুরের কথা বললে তোহা অবশ্যই কাগজপত্র দেখতে চাইবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা চরম শিক্ষা দিয়েছে রাফি এবং তার পরিবারকে।
রাফি – আনঅফিশিয়াল। সিক্রেট প্রোজেক্ট বলতে পারো।
তোহা – বলতে চাইছো না যখন তখন জানতে চাইবো না তবে একটু সাবধানে কাজ করো। এই অল্প কিছুদিনের ভেতর অনেক ঝড় গিয়েছে আমাদের পরিবারের উপর দিয়ে, আশা করি বুঝতে পেরেছো।
বলে তোহা টেবিল ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলো।
রাফি – খাওয়া শেষ করলে না?
তোহা – হয়ে গেছে।
এতটুকু বলে কিচেনের দিকে চলে গেলো তোহা। রান্নাঘরের কাজ শেরে আবার ডাইনিং এ এসে বসলো তোহা।
রাফি শেষ মুহূর্তে এসেও থমকে যায়, তোহার কাছে সবকিছু গোপন করাটা ঠিক হবে কিনা সেটা বুঝতে পারছে না রাফি। খাওয়া শেষ করতে করতে তোহাকে সব খুলে বলতে থাকে রাফি, সাবমেরিন থেকে শুরু করে ভাঙ্গা এন্টেনা পর্যন্ত, কিন্তু এই পুরো বিষয় থেকে পিকাচুকে আড়াল করে রাখলো।
তোহা কিছুটা কৌতুহলি হয়ে উঠলো। ইংরেজী মুভির হিরো জেমস বন্ড এর ফ্যান বলে কথা।
তোহা – এতবড় মিশন পরিচালনা করছে কে?
রাফি – কোন শক্ত প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত এটা আমার মিশন। আর প্রমাণ জোগাড় করতে পারলেই সব ডিটেলস রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্সের হাতে তুলে দিতে পারবো।
তোহা – তাহলে তুমি সুইসাইড মিশনে যাচ্ছো?
রাফি – মানে?
তোহা – মানে প্রমান সংগ্রহ করতে গিয়ে যদি কোন বিপদে পড়ে যাও তাহলে তোমাকে সাহায্য করার মত কেউ নেই?
রাফি চুপ করে থাকে, পিকাচুর কথা এখনই জানাতে চায় না তোহাকে।
রাফি – একজন ব্যাকআপ তো থাকেই সবসময়। প্রয়োজন হলে তাকে ডাকা যাবে।
তোহা আরো প্রশ্ন করতে চাইলেও রাফি ইন্টারেষ্ট দেখাতে চাইলো না। তোহার ভেতর বাচ্চামী আছে ঠিকই তবে সে তুখোড় ইন্টেলিজেন্ট ও বটে। বাচ্চামী করতে করতে সব কথা বের করে নিয়ে আসার দারুণ ক্ষমতা আছে মেয়েটার। তাই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়াটাই সমীচীন মনে করলো রাফি। তোহাও তাই মিশন নিয়ে প্রশ্ন করা বাদ দিলো।
তোহা – কাল সকালেই চলে যাবে? আবারও একা ফেলে চলে যাবে?
রাফি তোহার দিকে তাঁকিয়ে দেখে মেয়েটা গাল ফুলিয়ে আছে। দেখেই গালটা টানতে ইচ্ছা করলেও এখন শক্ত থাকতে হবে রাফিকে, মায়ায় পড়ে গেলে মিশন তো দূর ঘরের বাইরে যেতেও মন চাইবে না।
তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে স্ট্যাডি রুমে চলে আসে রাফি। পিকাচু তার কাজ করে চলেছে।
পিকাচু – রাফিউল ইসলাম, সোলজার, গিয়ার, ওয়েপন এবং ট্রান্সপোর্টেশন তৈরি। আপনার পার্মিশনের অপেক্ষায়।
রাফি – Mission is a go. Find a safe house in Russia, Gather everything there and arrange my transport tomorrow. Let’s find this submarine.
হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_৩ পর্ব_৪
হ্যাকারের_লুকোচুরি
সিজন_৩
পর্ব_৪
রাফি – এটা কিভাবে সম্ভব! স্যাটেলাইট এন্টেনাটি ট্রান্সমিট করছে অথচো তার আশে পাশে কোন কন্ট্রোলরুম থাকবে না! কন্ট্রোলরুম না থাকলে কে ট্রান্সমিট করছে ডেটাগুলো!!!! পিকাচু, স্যাটেলাইটের ইনফ্রারেড ক্যামেরা মোড অন করো।
হয়তো কোন সিক্রেট চেম্বার নেই এন্টেনার আশেপাশে কিন্তু এতো বড় একটা এন্টেনা আর সাথে এত পাওয়ারফুল সিগন্যাল কোন মোববাইল ডিভাইস দিয়ে কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়, অবশ্যই ক্যাবল কানেকশন দিয়ে সার্ভারের সাথে কানেক্ট আছে ভাঙ্গা এন্টেনাটি। ইনফ্রারেড ক্যামেরা দিয়ে এক্সরে করলে মাটির নীচ দিয়ে কোন ক্যাবল নেয়া হয়েছে কিনা তা দেখা যাবে।
পিকাচু – switching infrared mode…..
Scanning ……..
রাফি মনিটরে দেখতে পায় মাটির নীচ দিয়ে খুব সন্তর্পণে কেবল কানেকশন টেনে নেয়া হয়েছে।
রাফি – পিকাচু, ক্যাবল লাইন ফলো করো, এই ক্যাবলের শেষ প্রান্তেই আছে কমিউনিকেশন সার্ভারটি।
পিকাচু – পিকা পিকা। ।।।।
পিকাচু স্যাটেলাইটের ক্যামেরা জুম আউট করে ক্যাবলের অপরপ্রান্ত খুঁজে পায় একটা পোড়া ৫ তলা ভাংগা বাড়ির মুখে।
পিকাচু – ক্যাবলের শেষপ্রান্তে চলে এসেছি।
পিকাচু স্যাটেলাইট দিয়ে পোড়া বাড়িটার একটা ৫ডি ইমেজ তৈরী করে রাফিকে দেখালো।
রাফি ভালোভাবে দেখে বুঝলো যে বাড়িটা কোন এক সময় বোমার আঘাতে ভয়ংকর আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। রং জ্বলে গেছে আগুনে পুড়ে। ভারী তুষারপাতের কারনে বাড়িটির অধিকাংশ জায়গা বরফের তলায় ঢাকা পড়েছে।
রাফি – পিকাচু, স্যাটেলাইট দিয়ে থার্মাল ইমেজ শো করো বাড়িটার। বেশ বড়সড় সার্ভার দিয়ে কন্ট্রোল করতে হবে এই স্যাটেলাইট তিনটিকে। আর সার্ভার এবং মানবদেহ দুইটাই উত্তপ্ত যা থার্মাল ইমেজে ধরা পড়বে। এই কনকনে ঠান্ডা এলাকায় কেউ একটা দিয়াশলাই কাঠি জ্বালালেও তা থার্মাল মোডে ধরা পড়বে।
পিকাচু – switching to thermal……..
Scanning …..
রাফি দেখতে পায় বাড়িটার ২য় তলায় থার্মাল মুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা খুব বড়সড় নয়। একজন মানুষ আর তার সামনে একটা পিসি অথবা ল্যাপটপ জাতীয় কিছু আর একটা মাত্র কানেক্টর হার্ব যা ল্যাপটপ থেকে সিগন্যাল ভাঙ্গা এন্টেনায় পৌছে দিচ্ছে।
রাফি – তারমানে কেউ একজন একটা মাত্র ল্যাপটপ দিয়ে তিনটা স্যাটেলাইট চেইন নিয়ে খেলা করছে! পিকাচু, ওই ঘরের ভেতরের সামান্যতম মুভভমেন্টের আপডেট ও আমার চাই। কড়া নজরদারি চালাও ওই পোড়া বাড়ির উপর।
রাফি চোখ সরাতে পারে না স্ক্রীন থেকে। থার্মাল ইমেজে শুধু তাপের উৎস হিসেবে তিনটে বস্তু শো করছে। অবয়ব দেখে মানুষ ল্যাপটপ আর কানেকশন হার্ব বোঝা যাচ্ছে, এছাড়া তাদের চেহারা দেখার কোন সিস্টেম নেই। রাফি অপেক্ষা করতে থাকে কখন ঘরের ভেতরে থাকা মানুষের নড়াচড়া দেখতে পাবে।
কিন্তু এভাবে বসে থাকলে কি আর অপরাধীর কিছু করা যাবে! রাফি ভাবতে থাকে এখন রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স কে ইনফরমেশন দেয়া উচিৎ হবে কি না। আর রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স কে জানাবেই বা কি রাফি। এখন পর্যন্ত কোন পাকাপোক্ত প্রমান যোগাড় করা সম্ভব হয় নি রাফির পক্ষে। আর এই ভাংগা এন্টেনার ট্রান্সমিশন ও যেভাবে ধরা হয়েছে সেটা বেআইনী তো বটেই সাথে অবৈধ নজরদারি রাখার কারনে হীতে বিপরীত হতে পারে। তারপরও রাফি একটা চেষ্টা করতেই চায়।
রাফি – পিকাচু, থার্মাল ইমেজ আর ইনফ্রারেড ইমেজগুলি রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স এর সার্ভারে টপ প্রায়রিটি হিসেবে শো করো। যেহেতু কোন পোক্ত প্রমান নেই সেহেতু ঘরে বসে থাকা ওই ব্যক্তি ধরা পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্সের হাতে ওই ল্যাপটপ ধরা পড়লেই সব প্রমান পাওয়া যাবে।
পিকাচু – transmitting signals …….
Showing security protocol ……
পিকাচু রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স সার্ভারের একটা টপ লেভেল কেস হিসেবে ওই থার্মাল ইমেজ শো করে যাতে এজেন্সি কোন ধরনের ইতস্তত বোধ না করে।
কিন্তু এজেন্সি থেকে রেড জোন এলার্ট রয়েছে ওই এলাকায়। প্রচুর পরিমানে ল্যান্ডমাইইন রয়েছে যেগুলো গৃহযুদ্ধের সময় স্থাপন করা হয়েছিলো, আর ল্যান্ডমাইন বহু বছর ধরে সক্রিয় থাকতে পারে। যেখানে রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স সক্রিয় ল্যান্ডমাইনের জন্য রেডজোন করে রাখছে সেখানে একজন মানুষ কিভাবে এখানে ঢুকে এসব কর্মকান্ড চালাচ্ছে।।।
পিকাচু – রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স ড্রোন দিয়ে দেখার চেষ্টা করবে ওখানে কে আছে। ড্রোনকে ছাড়া হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স বেস থেকে।
রাফি মনে মনে ভাবে যে সে তো ড্রোনের কথা ভাবেই নি। আর ভেবেই বা কি করবে। নিজের ঘরের বেডরুমে বসে কি আর ফিল্ড এজেন্ট এর মত কাজ করা যাবে!
রাফি – পিকাচু, ড্রোনের ট্রান্সমিশন থেকে লাইভ ফিড আমাকে শো করো।
পিকাচু – লাইভ ট্রান্সমিশন এখনো শুরু হয় নি। শুরু হলে পিকাচু ফিড শো করবে।
রাফি অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু স্যাটেলাইটের থার্মাল ক্যামেরায় পোড়া বাড়িতে একটা মুভমেট ধরা পড়ছে। কানেক্টর হার্ব এবং কম্পিউটারটির মার্কিংস থার্মাল ক্যামেরা থেকে উধাও হয়ে যেতে লাগলো, অর্থাৎ কম্পিউটারটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এদিকে ড্রোনটি পোড়া বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে । থার্মাল ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে লোকটি বিল্ডিং থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে।
রাফি – পিকাচু, ওই পোড়া বাড়ি থেকে যে ই বের হোক না কেন তাকে ফলো করবে তুমি।
পিকাচু – একটা সমস্যা রয়েছে, যে স্যাটেলাইট দিয়ে বাড়িটার উপর নজরদারি রাখা হচ্ছিলো, সেই স্যাটেলাইটটি রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স এর এবং এলার্ট পাবার পর থেকে তারা এই স্যাটেলাইটের থার্মাল ইমেজিং ফলো করছে, এখন যদি পিকাচু স্যাটেলাইটটিকে নিজের মত কন্ট্রোল করতে চায় তাহলে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০% যে স্যাটেলাইটটি অন্য কেউ ও নিয়ন্ত্রণ করছে। সম্ভাবনা রয়েছে স্যাটেলাইট ব্লাকআউট করে দেয়ার যাতে অন্য কেউ স্যাটেলাইটের একসেস নিয়ে থাকলেও তা বন্ধ হয়ে যাবে।
রাফি – তাহলে তাদের পর্যবেক্ষণই ফলো করতে থাকো পিকাচু।
পিকাচু – পিকা পিকা।
বিল্ডিং থেকে বের হয়ে এঁকেবেঁকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সেই ব্যক্তিটি আর তার হাঁটার কোন নিদৃষ্ট প্যাটার্ন ও নেই। রাফি ভাবতে থাকে হয়তো লোকটি জানে কোথায় কোথায় মাইনগুলো পোতা আছে যার থেকে বাঁচতে সে এঁকেবেঁকে পথ ধরে হাঁটছে।
পিকাচু – হাটার ধরন এ্যানালাইসিস করে বোঝা যাচ্ছে ব্যক্তিটি একজন নারী এবং বয়স ২০ থেকে ৩০ এর ভেতর।
রাফি গম্ভীর হয়ে যায়। ২০ থেকে ৩০ বছরের একটি মেয়ে একটা মাত্র ল্যাপটপ আর ভাংগা একটি স্যাটেলাইট এন্টেনা দিয়ে এই পুরো মিশন চালাচ্ছে!! কে এই মেয়ে?
ড্রোনটি প্রায় ঘটনাস্থলে পৌছে গেছে, কিন্তু হঠাৎ মেয়েটির হাঁটার গতি বেড়ে যায়, তুষারঢাকা পথে হঠাৎ করেই মেয়েটি উধাও হয়ে যায়। রাফি আর তাকে ল্যাপটপের স্ক্রীনে দেখতে পায় না।
রাফি – পিকাচু? কোথায় গেলো মেয়েটি?
পিকাচু – সিগনেচার লষ্ট। মেয়েটিকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না আর।
রাফি – লাষ্ট ফুটেজ শো করো যেখানে মেয়েটিকে শেষবারের মত দেখা গেছে।
পিকাচু – পিকা পিকা।
পিকাচু রাফিকে দেখায় যে মেয়েটি পকেট থেকে কিছু একটা বের করে হাতে নিয়েছে আর তার পরমুহূর্তে স্যাটেলাইট স্ক্যানারের বাইরে। কিভাবে সম্ভব।!!!!!
পিকাচু – মেয়েটি ক্লোকিং ডিভাইস ব্যবহার করার সম্ভাবনা ৮৭%.
রাফি টেবিলে একটা চাপড় দিয়ে মাথায় হাত দেয়। মেয়েটির কাছে ক্লোকিং ডিভাইস ও আছে যা একটা ডিজিটাল সুরক্ষা চাদর তৈরী করে যা স্যাটেলাইট এবং রাডারের নজর এড়াতে সক্ষম, অনেকটা তুষার রংএর চাদর গায়ে জড়িয়ে তুষারের উপর শুয়ে পড়ার মত। চোখের সামনে থাকলেও দেখে বোঝার উপায় নেই। ড্রোন ঘটনাস্থলে পৌছায়, পুরো জায়গাটি ঘুরে ঘুরে খুঁজেও কিছু দেখতে পেলো না। তুষারপাত হতে থাকার জন্য পায়ের নিশানাও মুছে গেছে।
এ তো মহা মুসিবত হলো। ক্লোকিং ডিভাইসের ব্যাটারি ব্যাকআপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই মেয়েকে আর খুজে পাওয়া যাবে না কিন্তু ততক্ষণে কি আর সে বসে থাকবে? ড্রোনের খোঁজাখুঁজি শেষ হতে হতে ওই মেয়ে বাতাসে মিশে যাবে। আর একবার যেহেতু এই ফ্যাসিলিটি কম্প্রোমাইজ হয়ে গেছে ওই মেয়ে ২য় বার এই ফ্যাসিলিটিতে ফেরৎ আসবে না। এই লিড নষ্ট হলে রাফির পক্ষে আবার নতুন করে খুঁজতে অনেক সময় নষ্ট হবে।
পিকাচু – নিউক্লিয়ার স্যাটেলাইটটি আবারো ডাটা রিসিভ করছে। তবে এবার তিনটি স্যাটেলাইট ই নিজেদের মধ্যে ডেটা আদানপ্রদান করছে।
রাফি – তার মানে আরো ফ্যাসিলিটি আছে? পিকাচু তুমি কি সিগন্যাল লোকেট করতে পেরেছো?
পিকাচু – সাবমেরিন থেকে সিগন্যাল ট্রান্সমিট হচ্ছে।
রাফি – তার মানে সাবমেরিনটি পানির উপরে ভেসে আছে! পিকাচু, তুমি কি খুঁজে পেয়েছো সাবমেরিনটিকে?
পিকাচু – লোকেট করা হয়ে গেছে। Do you want me to tag it?
রাফি – Yes, please.
পিকাচু – সার্ভেইল্যান্স স্যাটেলাইটে লেজার ট্যাগিং সিস্টেম রয়েছে। firing laser beam….
রাফির ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন লেজার বীম টেকনোলজি সম্পর্কে ধারনা রয়েছে তাই বুঝতে বাকী রইলো না যে পিকাচু কি করতে চলেছে।
হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_৩ পর্ব_৩
হ্যাকারের_লুকোচুরি
সিজন_৩
পর্ব_৩
এতটা সতর্কতা মেনে এতবড় ফ্যাসিলিটি সরকারের নাকের নীচ দিয়ে পরিচালনা করা যার তার সামর্থ্যের বিষয় না। মাফিয়া গার্ল ঠিকই বলেছিলো, এই মিশন এতটা সহজ হবে না।
এত পাওয়ারফুল ফ্যাসিলিটি চালাতে হলে তো একদল অপারেশন কন্ট্রোল এক্সপার্টের প্রয়োজন। এছাড়া স্যাটেলাইটের সাথে কানেক্ট করার জন্য তো স্পেশাল এন্টেনার প্রয়োজন পড়বে যা শুধুমাত্র ওই স্যাটেলাইটগুলোর সাথে কানেক্ট করার কাজ করবে। একদল হ্যাকারের পক্ষে কিভাবে এমন একটা ফ্যাসিলিটি তৈরী করা সম্ভব? আর ফিজিক্যাল স্টাবলিশমেন্ট এভাবে ওপেন রেখে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করা কিভাবে সম্ভব!
রাফি – পিকাচু, তুমি কি ফ্যাসিলিটির লোকেশন ট্রেস করতে পেরেছো?
পিকাচু – ফ্যাসিলিটির একমাত্র অনলাইন কানেক্টিভিটি অনেক বেশী আনস্ট্যাবল। অনলাইন কানেকশন দিয়ে ফ্যাসিলিটির লোকেশন বের করা একপ্রকার অসম্ভব।
রাফি চিন্তায় পড়ে যায়। লোকেশন বের করার জন্য তো কোন না কোন রাস্তা বের করতেই হবে। অনেকক্ষন ভেবে রাফির মাথায় একটা পথ উঁকি দেয়।
রাফি – কানেকশন দিয়ে লোকেশন পাওয়া হয়তো টাফ কিন্তু আরো একটা উপায় আছে যা ট্রাই করা যেতে পারে। পিকাচু, তুমি কি এই তিনটি স্যাটেলাইটের ভেতর আলফা বা কন্ট্রোল স্যাটেলাইটটি খুঁজে বের করতে পারবে যেটা বাকি দুইটি স্যাটেলাইটকে কন্ট্রোল করছে? এটা তো বলা যায় এই ধরনের কম্প্লেক্স নেটওয়াকিং সিস্টেমে একটা আলফা স্যাটেলাইট থাকে যেটা অন্যান্য স্যাটেলাইটগুলোকে কন্ট্রোল করে!
পিকাচু – সেটা বের করতে হলে পিকাচুকে স্যাটেলাইগুলোর ফিজিক্যাল স্ক্যান করতে হবে কারন স্যাটেলাইটগুলো একটার বেশী অথরাইজড একসেস গ্রান্ড করবে না আর অলরেডি একটা অথরাইজড একসেস রয়েছে স্যাটেলাইটগুলোতে। স্যাটেলাইটগুলো স্ক্যান করে তিনটি স্যাটেলাইটের হার্ডওয়্যার স্ট্যাটাস বের করতে পারলে পিকাচু বলতে পারবে কোন স্যাটেলাইটি কন্ট্রোল স্যাটেলাইট।
রাফি – স্যাটেলাইটের ফিজিক্যাল স্ক্যান সম্ভব!
পিকাচু – খুবই আনকমন টেকনোলজি কিন্তু সম্ভব, অনেকটা এক্স রে দিয়ে হিউম্যান বডি স্ক্যান করার মত। Accessing facilitated satellite…….
Rerouting……….
Targeting subjected satellites……..
Scanning S1…… Scanning S2 ……. Scanning S3……
Comparing ……….
Alpha satellite identified.
রাফি দেখতে পায় পিকাচু আলফা স্যাটেলাইটটিকে আইডেন্টিফাই করে তার অর্বিটাল লোকেশন পয়েন্টআউট করেছে।
রাফি – পিকাচু, তুমি কি এই আলফা স্যাটেলাইটটির উপর নজর রাখতে পারবে, কখন এই স্যাটেলাইটটি ডাটা রিসিভ করছে বা এক্টিভেট হচ্ছে। স্যাটেলাইটের ডাটা রিসিভিং পাথ দিয়ে তো ট্রাক করা যেতে পারে ফ্যাসিলিটিটাকে।
পিকাচু – পৃথিবী থেকে কোটি কোটি এন্টেনা আকাশের স্যাটেলাইটগুলোকে উদ্দেশ্য করে ডাটা নিক্ষেপ করে। যদি এর ভেতর থেকে একটা স্পেসিফিক অফগ্রীড এন্টেনার ডাটা ট্রাক করতে হয় তাহলে পিকাচুকে সারা পৃথিবীর সাইবার নেটওয়ার্কের কন্ট্রোল নিতে হবে।
রাফি এবার মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে। পিকাচু একটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর এখন পিকাচু কে যদি সাইবার ওয়ার্ল্ড কন্ট্রোল একসেস দেয়া হয় তাহলে তার ফলাফল কি হতে পারে তা এখনই ধারনা করা সম্ভব না রাফির পক্ষে। আর যা ই হোক এই গ্রামের বাড়ি বসে রাফির পক্ষে এতবড় কাজ করা সম্ভব নয়।
রাফি – পিকাচু, সময় হয়েছে NSA হেডকোয়ার্টারে ফিরে যাওয়ার।
পিকাচু – পিকা পিকা।
…
সবাইকে রেখে আবার শহরে ফেরৎ যেতে চায় রাফি, কিন্তু কেউ ই রাজী হতে চায় না। রাফির মুখ দিয়ে রাফির বিদেশযাত্রার বিস্তারিত শোনার পর থেকে “না” শব্দটা একটা আইনে রুপান্তরিত হয়েছে। রাফি যতই যুক্তি প্রদান করে, রাফির মা বাবা ঠিক তার পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করতে থাকে। এতশত যুক্তিতর্কের মাঝে একমাত্র তোহাই নিশ্চুপ ছিলো। বাবা মা এর সাথে যুক্তিখন্ডন শেষে হয়তো নতুন প্রতিপক্ষ হিসেবে অপেক্ষা করছে তোহা। বাবা মা মৌখিকভাবে রাজী হলেও তাদের চেহারা দেখে কোনভাবেই মনে হয় না যে তাদের এই সম্মতি তারা মন থেকে প্রদান করেছে। এছাড়া কিছু করার ও ছিলো না তাদের, ছেলে বড় হয়েছে, চাকরী করছে, নিজের সংসার হয়েছে। এখন চাইলেও জোর খাটানো চলে না।
বাবা মা এর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে রাফি। বাবা মা কে তো কোন একভাবে রাজী করানো গেছে, কিন্তু তোহা! রাফি নিজের রুমের দিকে এগোতে থাকে আর সেই কথাগুলো সাজাতে থাকে যেগুলো দিয়ে বাবা মা কে রাজী করিয়েছিলো সে।
রাফি নিজের রুমে ঢুকে তোহাকে খুঁজতে চোখ বোলায়। তোহা বিছানায় বসা ছিলো, রাফিকে দেখে উঠে দাঁড়ায় আর নির্লিপ্তভাষায় বলতে থাকে,
তোহা – আমি জানি তুমি কি বলতে চাও এবং এটাও জানি তুমি কি কি মনের ভেতর গুছিয়ে নিয়ে এসেছো।
বলে খানিকটা অভিমানী চেহারা করে রাফির দিকে তাকিয়ে থাকে। আচমকা তোহার আক্রমণে রাফির সাজানো শব্দবাহিনী ছন্নছাড়া হয়ে গেলো। এই মেয়েটার কাছে এতোটা প্রেডিক্টেবল কিভাবে হয়ে গেলো রাফি সেটাই বুঝতে পারে না।
রাফি – আসলে প্রয়োজনটাই এমন। যেতেই হবে।
তোহা – আমি তোমাকে বাধা দিবো না তবে একটা শর্ত রয়েছে।
তোহার সম্মতির কথা শুনে রাফি অনেকটা হাফ ছেড়ে বাঁচে কিন্তু শর্তের কথা শুনে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ গলা পর্যন্ত এসে আটকে যায়।
রাফি – শর্ত! কি শর্ত?
তোহা – আমাকেও তোমার সাথে নিয়ে যেতে হবে।
গলায় আটকে থাকা আনন্দটুকু আবার গিলে ফেলে রাফি। তোহা যদি সাথে যায় তাহলে একটা বড় পিছুটান থেকে যাবে।
রাফি – তোমাকে কিভাবে নিবো, এটা মোটেই নিরাপদ নয়। তাছাড়া গ্রামে মা বাবার দেখাশোনা কে করবে?
তোহা – পাল্টা যুক্তি দিয়ে লাভভ হবে না। যদি আমার অনুমতি চাও তাহলে শর্ত মানতে হবে। এর কোন বিকল্প পথ নেই।
রাফি কিছু বলতে যাবে কি তার আগেই তোহা কানে হেডফোন গুজে দিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে গুনগুন শুরু করে দেয়। রাফির হাতে ২য় কোন পথ ও খোলা থাকে না। রাফি বিছানার অপরপাশে গিয়ে বসে, তোহার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালেও একটা জিনিস ঠিকই বুঝতে পারে সে, তোহার মন প্রান আত্মা সব ওই হেডফোনে চলতে থাকা গানে ডুবে আছে, রাফি এখন কিছু বললেও তোহার কান পর্যন্ত পৌছাবে বলে মনে হয় না। তাই হাল ছেড়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো রাফি। রাফিকে শুয়ে পড়তে দেখে পেছন থেকে উঁকি দেয় তোহা, মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবারো গান শোনায় মনোযোগ দেয় তোহা।
……
রাফি তৈরী হয় তোহাকে নিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার জন্য। রাফি তোহাকে সাথে নিয়ে যাচ্ছে দেখে বাবা মা এর দুশ্চিন্তা বাড়ছে না কমছে তা বোঝা গেলো না। মায়ের কাছে থাকা ফোনটা সবসময় কাছে রাখতে বলে রাফি। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাফি এবং তোহা বেরিয়ে পড়ে শহরের উদ্দেশ্যে। রাফি রকিবের সাথে কথা বলে একটা থাকার ব্যবস্থা করেছে, সাথে তোহা না থাকলে হয়তো এতটা আয়োজনের ও প্রয়োজন ছিলো না। শহরে পৌছে রকিবের সাথে দেখা করে রাফি। রকিবদের বাসার উপরের তলা খালি পড়ে আছে। রকিবের বড়ভাইয়ের ফ্লাট। বড়ভাই বিদেশ থাকে স্বপরিবারে তাই ফুল ফার্নিশড। রাফি এবং তোহা গিয়ে উঠে পড়ে সেখানে।
রকিব – এখানে তোরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস। কোন সমস্যা হবে না। যদি কোনকিছুর দরকার পড়ে তো নিচে এসে যে কাউকে বললেই হবে।
রাফি – নেট কানেকশন লাগবে দোস্ত। হাইস্পিড।
রকিব – একটু পর লোক এসে লাগিয়ে দিয়ে যাবে। বিল আর ইনস্টলেশন চার্জ দিয়ে দিস।
রাফি – ধন্যবাদ দোস্ত।
রকিব – তুলে রাখ তোর ধন্যবাদ। ট্রিটগুলো দেয়া শুরু কর জলদি। এখন রেষ্ট নে।
রাফি আর কথা বাড়ায় না। বেশ ছিমছাম বাড়ি। ৫ তলা বিল্ডিং এর চতুর্থ তলার একটা ফ্লাট। সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই বা হাতে ড্রয়িং রুম, ডান দিকে একটা গেষ্ট রুম হবে হয়তো। সোজা সামনে ডানদিকে ডায়নিং এবং কিচেন + স্টোররুম আর বাম দিকে দুইটা বেডরুম পাশাপাশি। মাস্টার বেডরুমের সাথে একটা মাঝারী আকারের স্ট্যাডিরুম। সবগুলো রুমেই বিশাল বিশাল জানালা। রাফি কোনমতে হাতমুখ ধুয়ে এসেই গা এলিয়ে দেয় বিছানায়, একটা ফ্রেশ ঘুম দরকার।
সন্ধ্যার একটু পর ঘুম ভাঙ্গে রাফির। ততক্ষণে তোহা রান্নাঘরটা নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিয়েছে। মাঝে রকিব এসে হালকাপাতলা সদাই দিয়ে গেছে আর ইন্টারনেটের লাইনও টেনে দিয়ে গেছে সার্ভিস প্রোভাইডার। তোহা মোটামুটি তার নিজের কম্পিউটার দিয়ে সিস্টেম আর নেটওয়ার্ক স্পিড ডায়গনসিস করে নিয়েছে। রাফি বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। বাইরে বের হয়ে তোহার তৈরী বিকেলের নাস্তা খেয়ে বসে পড়ে ল্যাপটপ নিয়ে স্ট্যাডিরুমে। নেটওয়ার্কে কানেক্ট করে পিকাচুর সাথে লিংক তৈরী করে রাফি।
পিকাচু – খারাপ সংবাদ আছে। নিউক্লিয়ার অথরাইজেশন কনফার্ম হয়েছে।
অর্থাৎ নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইসে অথরাইজড এক্টিভেশন কোড ইনপুট হয়েছে যেটা কিছুদিন আগে চুরি হয়েছিলো। রাফি থ হয়ে যায়। নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন কোড ইনপুট করায় ডিভাইসটি অথরাইজড এ্যাটাকের জন্য সম্পূর্ণরূপে তৈরী। এখন শুধু স্যাটেলাইট এবং সাবমেরিনের সাথে কানেক্ট হবার অপেক্ষা। এরপর আর কোনভাবেই আটকানো যাবে না নিউক্লিয়ার হামলা। রাফি অথরাইজেশন টাইমআউট চেক করে দেখে মাত্র ৮ মিনিট আগে এক্টিভেশন কোড ডিভাইসে ইনপুট হয়েছে।
নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইসে কোড ইনপুট করার জন্য একটা সিকিউর নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটির প্রয়োজন ছিলো যা অতি সন্তর্পণে লুকিয়ে ফেলেছে হ্যাকারগোষ্টি।
রাফি – তাহলে এখন যে কোন মুহূর্তে ভেসে উঠবে সাবমেরিনটি, নিজের কাছে থাকা নিউক্লিয়ার বোমাগুলোকে এক্টিভ করতে। পিকাচু, সাইবার নেটওয়ার্কের সকল চ্যানেলের একসেস নিয়ে নাও ঠিক যেভাবে প্লান করা হয়েছিলো। কিন্তু ফ্যাসিলিটি ডিটেক্ট করার পর সাইবার নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে।
পিকাচু – পিকা পিকা। Gaining full access……
Rediscover all online channels……..
Identifying communication satellites….
রাফি তার ছোট্ট ল্যাপটপ স্ক্রীনে পিকাচুর পুরো কার্যক্রম দেখতে পায়। একে একে সকল সাইইবার চ্যানেলের একসেস নিয়ে নিচ্ছে পিকাচু।
পিকাচু – All network identification complete.
পিকাচুর হাতে অনলাইন কানেক্টিভিটির সকল নেটওয়ার্ক ও সাইবার লিংক এর কন্ট্রোল রয়েছে যা মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে স্পেস শাটল কন্ট্রোল আপলিংক পর্যন্ত সবকিছুই।
রাফি – পিকাচু, সার্ভেইল্যান্স স্যাটেলাইটগুলো দিয়ে সেইসব জায়গায় নজরদারি বাড়াও যেসব জায়গায় এই স্যাটেলাইট তিনটির অর্বিটাল পাথ রেকর্ড করা আছে। আর আলফা স্যাটেলাইটের উপর নজর রাখো যে কখন সে ডাটা রিসিভ ও ট্রান্সমিট করছে।
পিকাচু – Deploying surveillance satellites…
রাফি প্লান আটতে থাকে কিভাবে ধরা যাবে এই সুচতুর চক্রটিকে।
স্ট্যাডিরুমের দরজার কাছে এসে দাঁড়ায় তোহা,
তোহা – এইযে, শুনছেন? আপনি পুরো নেটওয়ার্ক অকুপাই করে রেখেছেন, আমি নেট ব্রাউজ করতে পারছি না একদমই।
রাফি – আজকের দিনটা ছেড়ে দাও, খুবই প্রেশারের ভেতর আছি।
তোহা দরজা ছেড়ে ভেতরে প্রবেশ করে, রাফি দরজা বরাবর মুখ করে বসায় তোহা ঘুরে রাফির পেছনে এসে দাঁড়ায়। স্ক্রীনে তখন সার্ভেইল্যান্স স্যাটেলাইটের স্ক্যানিং শো করছিলো।
তোহা – মহাসমুদ্রে কি খুঁজছেন নাবিক?
রাফি – ডুবে যাওয়া নৌকা খুঁজছি, যদি ভেসে ওঠে তাহলে আর ডুবতে দেবো না। এখন কাজ করতে দাও। কাজ শেষ করে আসছি।
তোহা রুম ছেড়ে চলে যায়, টিভির ভলিউম শুনে রাফি বুঝতে পারে যে মেয়েটা গাল ফুলিয়েছে।
রাফি – পিকাচু, যে কোন ধরনের এক্টিভিটি হলে এলার্ম দিয়ো।
এই বলে রাফি তোহার দিকে উঠে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পিকাচু এলার্ট অন করে দেয়। রাফি রুম থেকে বের হতে গিয়েও বের হয় না।
রাফি – পিকাচু, কি ধরতে পেলে?
পিকাচু – স্যাটেলাইটটি ডাটা রিসিভ করছে।
রাফি – পিকাচু, ডাটা ব্রেকার পালস ব্যবহার করো আর খুঁজে বের করো অফ দ্যা গ্রীড ফ্যাসিলিটিটা।
Initiating Data breaker pulse…….
পিকাচু যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তা অনেক এডভান্স লেভেলের প্রযুক্তি। পিকাচুর হাতে সাইবার নেটওয়ার্কের সকল চ্যানেলের একসেস থাকার কারনে নেটওয়ার্ক পালস ব্যবহার করে অফ দ্যা গ্রীড স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটগুলো বেছে বেছে আইসোলেট করতে পারবে। এটা অনেকটা রাতের বেলা আকাশ থেকে একটা শহরের উপর এমনভাবে নজরদারি রাখা মত যেখান থেকে প্রতিটা বাড়িতে জ্বলা আলো পর্যবেক্ষণ করা যায়। এরপর ওই পুরো শহরের ইলেক্ট্রিসিটি অফ এবং অন বা পালস ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করা। যে সব বাড়িতে জেনারেটর বা আই পি এস বা যে কোন ধরনের সেল্ফ সাসটেইনিং পাওয়ার সোর্স রয়েছে, বিদ্যুৎ চলে গেলেও সেইসব বাড়ির আলো নিভে যাবে না।
আর এইভাবে পুরো শহরের কোন কোন বাড়িতে সেল্ফ সাসটেইনিং পাওয়ার সোর্স রয়েছে তা আইডেন্টিফাই করা সম্ভব। এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করছে পিকাচু। এখানে শহরের জায়গায় সমস্ত পৃথিবী আর ইলেক্ট্রিসিটির বদলে সারা পৃথিবীজুড়ে জালের মত ছড়িয়ে থাকা সাইবার নেটওয়ার্ক। পিকাচু কয়েকশো সার্ভেইল্যান্স স্যাটেলাইট দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত ডেটা ট্রান্সমিটিং চ্যানেলের উপর নজরদারি চালাচ্ছে যেন পালসের মাধ্যমে আলাদা করা অফ দ্যা গ্রীড ফ্যাসিলিটিগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারে। পিকাচু ডেটা ব্রেকার পালসগুলো সাইবার নেটওয়ার্কে সব চ্যানেলে একসাথে ব্যবহার করবে তাও ন্যানোসেকেন্ডে, যেন হাইস্পিড ইন্টারনেট ইউজারও এই সামান্য পালস অনুভব করতে না পারে। যেহেতু রাফির খুঁজে চলা ফ্যাসিলিটি এখন ডেটা ট্রান্সমিট করছে সেহেতু এখনই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে ওই ফ্যাসিলিটিকে লোকেট করা সম্ভব।
পিকাচু পুরো পৃথিবীর নেটওয়ার্ক চ্যানেলকে ১৪ টি ভাগে বিভক্ত করে আর এক এক বারে এক একটা ভাগে ডাটা ব্রেকার পালস ব্যবহার করতে থাকে। কয়েকবার করে ডাটা ব্রেকার পালস ব্যবহার করে প্রতিটা ভাগ থেকে অফ দ্যা গ্রীড ফ্যাসিলিটিগুলো আইডেন্টিফাই করতে থাকে। ১৪ টি ভাগের সবগুলোতে পদ্ধতিটি ব্যবহার করে পিকাচু বেশকিছু ফ্যাসিলিটি আইডেন্টিফাই করেছে যার সবগুলোই অফ দ্যা গ্রীড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন স্থাপন করে থাকে এবং এই পুরো কাজটি শেষ করতে মাত্র ৪২ সেকেন্ড সময় নেয় পিকাচু।
পিকাচু – 145 off grid satellite facilities identified. Running diagnosis ………
পিকাচু স্যাটেলাইটটির অর্বিটাল পাথ এবং এ্যালাইনমেন্ট এনালাইসিস করে ১ টি ফ্যাসিলিটি আইডেন্টিফাই করে। এটি রাশিয়ার একটি পরিত্যাক্ত শহরে অবস্থিত। স্যাটেলাইট ইমেজ সেখানে একটি বিশাল ভাংগা স্যাটেলাইট এন্টেনা শো করছে যা দেখতে ভাংগাচোরা পরিত্যাক্ত মনে হলেও পিকাচু ৯৪% কনফার্ম যে ওই এন্টেনা থেকেই ডাটা ট্রান্সমিট হচ্ছে।
রাফি চিন্তায় বসে যায়। নিউক্লিয়ার ডিভাইস এক্টিভ হয়ে গিয়েছে, এতদিন পর স্যাটেলাইটে আবারও ট্রান্সমিশন শুরু হওয়া মানে পানির নীচ দিয়ে সাবমেরিনটির ভেসে ওঠার সময় হয়েছে।
রাফি – পিকাচু, একটা স্যাটেলাইট দিয়ে ফ্যাসিলিটির উপর কড়া নজরদারি রাখো আর অর্বিটাল পাথ এর সোজাসুজি সাগরের উপর নজরদারি বাড়াও। যে কোন সময়ে সাবমেরিনটি ভেসে উঠবে।
পিকাচু – সাবমেরিন ভেসে ওঠার সম্ভাবনা নেগেটিভ, কারন আলফা স্যাটেলাইটটি অন্য দুইটা স্যাটেলাইটে কোন ডেটা ট্রান্সমিট করছে না। যদি কমিউনিকেশন স্টাবলিশ করার জন্য কোন কমান্ড দেয়া হতো তাহলে তিনটি স্যাটেলাইটই নিজেদের ভেতর ডেটা ট্রান্সমিট করতো। যেহেতু আলফা স্যাটেলাইট এখনো অন্য দুইটি স্যাটেলাইটে ডাটা ট্রান্সমিট করে নি তার মানে ফ্যাসিলিটি থেকে ডাটা ট্রান্সমিশন হয়েছে শুধুমাত্র এক্টিভিটি স্ট্যাটাস চেক করার জন্য।
রাফি একটা ছোট একটা হিসাব কষে ফেলে। নিশ্চই এক্টিভেশন ডিভাইসটি ফ্যাসিলিটির বাইরে কোন সিকিউর কানেক্টিভিটিতে এক্টিভ করা হয়েছে, তা না হলে এতক্ষণে নিউক্লিয়ার ডিভাইসের পাশাপাশি নিউক্লিয়ার বোমাগুলোকে এক্টিভ করার কমান্ড ওই ফ্যাসিলিটি থেকে স্যাটেলাইটে ট্রান্সমিট করা হতো যা পরবর্তীতে সাবমেরিনের সাথে কানেক্ট হওয়ার সাথে সাথে পৌছে যেতো।
রাফি – পিকাচু, ফ্যাসিলিটির উপর নজর রাখা স্যাটেলাইটের এক্সরে ফিচার একটিভ করো, চেক করো ফ্যাসিলিটিতে কতজন আছে।
পিকাচু – running X-ray vision……
রাফি ভাংগা স্যাটেলাইট এন্টেনার আশপাশের এক্সরে ভিশন দেখতে থাকে। কিন্তু স্যাটেলাইট এন্টেনার আশেপাশে কোন আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বার দেখতে পায় না রাফি। আরো কয়েক লেয়ারে এক্সরে স্ক্যান করলো পিকাচু। কিন্তু কোন চেম্বার পাওয়া গেলো না।
রাফি – এটা কিভাবে সম্ভব! স্যাটেলাইট এন্টেনাটি ট্রান্সমিট করছে অথচো তার আশে পাশে কোন কন্ট্রোলরুম থাকবে না! কন্ট্রোলরুম না থাকলে কে ট্রান্সমিট করছে ডেটাগুলো!!!!
বিঃদ্রঃ দেখা যাচ্ছে অনেক পাঠক/পাঠিকা গ্রুপে জয়েন করেন নি তাই পেজেই দিতে বাধ্য হলাম। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_৩ পর্ব_২
হ্যাকারের_লুকোচুরি
সিজন_৩
পর্ব_২
মাফিয়া গার্লের সাথে কন্ট্যাক্ট করতে হবে। কোথা থেকে এত ইনফরমেশন পেলো সে, আর যে বিষয়টা মিডিয়া তো দূর, নেভাল বেজ এর সিকিউর লাইনেও সরাসরি আলোচনা করা হচ্ছে না সেখানে মাফিয়া গার্ল কিভাবে!!!!!
রাফি – পিকাচু, মাফিয়া গার্লকে কানেক্ট করো।
পিকাচু – মাফিয়া গার্লকে ব্লক করে রাখা হয়েছিলো, আনব্লক করবো!
রাফি – হ্যাঁ, আর এখনই কানেক্ট করো। আমার কথা বলতে হবে মাফিয়া গার্লের সাথে।
পিকাচু – unblocked……. connecting…….
Connection failed ……
Retrying…….. Connection failed ……
পিকাচু বার বার চেষ্টা করতে থাকলো কিন্তু কিছুতেই মাফিয়া গার্লকে পাওয়া গেল না।
রাফি – কানেকশন ফেইলড হচ্ছে কেন?
পিকাচু – হয় নাম্বারটি আউট অব রীচ অথবা ব্লক করে দেয়া হয়েছে। অপারেটর থেকে জানাচ্ছে নাম্বারটির কোন অস্তিত্ব নেই।
রাফি কিছু একটা বলবে তার আগেই পিকাচু একটা মেসেজ এলার্ট দিলো, রাফি ল্যাপটপের মনিটরের দিকে ঝুকে পড়লো। আননোন সোর্স থেকে মেসেজ এসেছে।
“You choose your own path. From now on, You have to walk alone. You left me, I left you too.”
রাফি চেয়ারে হেলান দিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নেয়। ঠিকই তো, যাকে সন্দেহ করে ছেড়ে এসেছে রাফি তার সাথে কাজ করা বা সেটা আশা করা যায় না। রাফি জানে যে এই মাফিয়া গার্ল রাফির জীবনের সবচেয়ে বড় বড় ঝড়গুলোকে একলা হাতে সামাল দিয়েছে। নিজের আপনজনও এভাবে সাহায্য করে না কখনো। কিন্তু রাফির ই বা কি করার ছিল? মাফিয়া গার্ল রাফিকে যে ধোঁয়াশার ভেতর রেখেছিল তাতে করে রাফি কেন, যে কোন মানুষই নিজেকে বন্দি মনে করবে। রাশিয়ার কথা বলে অন্য আর এক দেশে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা, বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে না দেয়া! এগুলো সন্দেহের বীজ কেন বুনবে না রাফির মনে?
রাফি বুঝতে পারে যে হয়তো মাফিয়া গার্ল থেকে আর কোন সাহায্য পাবে না রাফি, এছাড়াও প্রচন্ড দূর্বল লাগতে থাকে শরীর। এত লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ফেরার পর এখনো ঠিকমত একটা ঘুম দিতে পারে নি রাফি। পিকাচুকে স্ক্যানিং কমান্ড দিয়ে রাফি তার ল্যাপটপের লীড বন্ধ করে। ফোন আর ল্যাপটপ নিয়ে লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে নিজের ঘরের দিকে যেতে থাকে রাফি। তখন রাফির ফোনে মেসেজ আসে। একটা আনইউজুয়াল ইমেইল এড্রেস থেকে মেইল পেল রাফি।
“Consider it as my last favor, my source and info about the nuclear submarine.”
মেসেজ বডিতে এতটুকু লেখা ছিলো আর নিচে একটা আইপি এড্রেস।
রাফি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলো যে এখন আবারও ল্যাপটপ নিয়ে বসার শক্তি পাচ্ছিলো না। বিশ্রাম, ঘুম অত্যাবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে। তাই ঢুলু ঢুলু চোখে মেইলটা ফোন থেকে পিকাচুর কাছে ফরোয়ার্ড করে দেয় রাফি, এ্যানালাইসিসের জন্য। ততক্ষণে ঢুলতে ঢুলতে রাফি নিজের ঘরের সামনে চলে এসেছে। তোহা জেগেই ছিলো, রাফিকে আসতে দেখে তোহা দরজার কাছে চলে আসে, রাফি ল্যাপটপ আর ফোন তোহার হাতে দিয়ে সোজা গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। তোহা ল্যাপটপ আর ফোনটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বিছানার কাছে আসে, ততক্ষণে রাফি ঘুমের অতল ঘোরে হারিয়ে যায়। তোহা বিছানার পাশে এসে বসে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাফির দিকে তাঁকিয়ে থাকে মিসেস রাফি।
বেশ বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে রাফি। ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে নেয়। খাওয়াদাওয়া শেষে উঠোনে এসে বসে রাফি।প্রকৃতির হাওয়া বাতাস খেতে খেতে মোবাইলে এলার্ট আসে পিকাচুর। আবার কি হলো ভাবতে ভাবতে রাফি নিজের রুম থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে পারিবারিক লাইব্রেরীতে চলে যায়। দরজাটা চেপে দিয়ে বসে পড়ে ল্যাপটপ নিয়ে। ফোনটা কানেক্ট করে ল্যাপটপ দিয়ে কাজ শুরু করে রাফি।
গতরাতে মাফিয়া গার্লের পাঠানো আইপি এড্রেস এ্যানালাইসিস করেছে পিকাচু। এ্যানালাইসিসের সামারি তুলে ধরলো রাফির সামনে পিকাচু। আইপি এড্রেসে কতগুলো ডিকোডেড মেসেজ , মিশন রিপোর্ট সহ আরো অনেককিছু রয়েছে যা রাফি বা পিকাচু কেউই খুজে পায় নি। সবগুলো ডিক্রিপশনই ব্লক করে রাখা যা সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। রাফি বুঝতে পারে যে মাফিয়া গার্ল ই এমনটি করে রেখেছে। ডিক্রিপ্টেড মেসেজগুলো যদি পাব্লিকলি বের হয়ে যায় তাহলে সারা দুনিয়ায় এক আতংক ছড়িয়ে পড়বে আর সাবমেরিনে থাকা বোমাগুলোর একটিও ব্যবহার না করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে পৃথিবী। রাফি ডাটাগুলো দেখতে থাকলো। সাবমেরিনে থাকা নিউক্লিয়ার বোমা গুলো এক্টিভেট হয়েছে কি না তা জানার জন্য একটা অথরাইজেশন কোড দেয়া আছে ডাটাগুলোর ভেতরে। পিকাচু অনেক আগেইই কোডটির ডায়গনসিস করে নিউক্লিয়ার বোমাগুলো এক্টিভেট হয় নি সেই রিপোর্ট জানিয়েছে।
রাফির কাছে এটাও খটকা লাগলো, নিউক্লিয়ার বোমা এক্টিভেট করতে হলে স্যাটেলাইট এবং সাবমেরিনকে একই এলাইনমেন্টে আসতে হবে এবং সাবমেরিনকে পানির উপর ভেসে উঠতে হবে। তাহলে এই অথরাইজেশন কোড কিসের?
অফিশিয়ালি নিউক্লিয়ার এক্টিভেট করা হয়েছে কি না তাই? রাফি পিকাচু কে অথরাইজেশন কোড সিস্টেমে বসাতে নিষেধ করে দেয়।
রাফি – পিকাচু, হ্যাক হওয়া সাবমেরিন কন্ট্রোল স্যাটেলাইটটি ট্রাক করতে পারবে?
পিকাচু – tough but not impossible. Accessing global satellite network …….
পিকাচু পৃথিবীর চারপাশে থাকা সকল মিলিটারি স্যাটেলাইট চেক করতে শুরু করে। এছাড়া মাফিয়া গার্লের দেয়া ডেটা অনুযায়ী স্যাটেলাইটের অর্বিটাল রেন্জ জানার কারনে পিকাচুকে স্যাটেলাইটটি খুঁজতে খুব বেশী সময় লাগে নি।
পিকাচু – Got it.
রাফি – স্যাটেলাইটটির অর্বিটাল পাথ রেকর্ড করো। স্যাটেলাইটটির যাতায়াত পথ আইডেন্টিফাই করতে পারলে সাবমেরিন কোথায় কোথায় থাকতে পারে তার একটা সম্ভাব্য চার্ট তৈরী করা সম্ভব হবে।
পিকাচু পুরা স্যাটেলাইটের অর্বিটাল পাথ রেকর্ড করে চার্ট প্লটে শো করলো যা পৃথিবীর ম্যাপের উপর কোথা দিয়ে স্যাটেলাইট প্রদক্ষিণ করছে তা শো করছে। তবে পিকাচু নতুন একটা ইনফরমেশন দিলো। স্যাটেলাইট একটি নয়, বরং তিনটি যা একই কক্ষপথে একই সাথে ট্রায়াঙ্গেল মেইনটেইন করে একই তালে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। যে কারনে একই সাথে যে কোন একটি স্যাটেলাইট সোজা দাঁড়ালে কমিউনিকেশন সম্ভব। রাফি এবার আরো বিপদে পড়ে গেলো। তিনটি স্যাটেলাইট চার্ট প্লটে ঘুরছে অর্থাৎ পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন পয়েন্টে আক্রমণ হানা সম্ভব। এই তিনটি স্যাটেলাইট পুরো পৃথিবীকে কভার করছে।
রাফি – পিকাচু, যেহেতু স্যাটেলাইটগুলো একসেস করতে স্পেশাল নেটওয়ার্ক সিস্টেম ও একসেস প্রয়োজন তাই খুজে বের করো কোথা থেকে এই স্যাটেলাইটে কমিউনিকেশন এস্টাবলিশ করা হচ্ছে।
পিকাচু – অলরেডি চেকিং করা হয়ে গেছে। এটা একটি অফ দ্যা গ্রীড নেটওয়ার্ক ফ্যাসিলিটি যা শুধুমাত্র স্যাটেলাইটের সাথে কমিউনিকেশন রাখছে।
রাফি – অফ দ্যা গ্রীড হলে তুমি কিভাবে খুজে পেলে?
পিকাচু – ফ্যাসিলিটি থেকে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন ইন আউট করার জন্য একটা রেগুলার কানেকশন দেয়া আছে যা সিস্টেম থেকে আলাদা রয়েছে।
রাফি – পিকাচু, ফ্যাসিলিটি সম্পর্কে যতপ্রকার তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব, সংগ্রহ করো।
রাফি বুঝতে পারে ফ্যাসিলিটি টি অফ দ্যা গ্রীড হলে খুবই পাওয়ারফুল হবে সন্ত্রাসীরা , শুধুমাত্র এই স্যাটেলাইট আর সাবমেরিন কন্ট্রোল করার জন্য পুরো একটা ফ্যাসিলিটি দখল করে রেখেছে।
পিকাচু লেগে গেছে ফ্যাসিলিটি সম্পর্কে যতটা সম্ভব ইনফরমেশন কালেক্ট করতে। কিন্তু অফ দ্যা গ্রীড হওয়ার জন্য খুব একটা ইনফরমেশন পাওয়া যাবে না এটাও জানে রাফি। এতটা সতর্কতা মেনে এতবড় ফ্যাসিলিটি সরকারের নাকের নীচ দিয়ে পরিচালনা করা যার তার সামর্থ্যের বিষয় না। মাফিয়া গার্ল ঠিকই বলেছিলো, এই মিশন এতটা সহজ হবে না।
বিঃদ্রঃ পারিবারিক কিছু সমস্যার কারনে গল্প দিতে পারছি না। ১ সপ্তাহ পর থেকে নিয়মিত গল্প আসবে ইনসাল্লাহ। দোয়া করবেন। দুঃখিত ও ধন্যবাদ। ♥♥♥♥
আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন সবাই।
https://m.facebook.com/groups/744744532728437/?ref=group_browse&_rdc=1&_rdr
হ্যাকারের_লুকোচুরি . সিজন_৩ পর্ব – ১ .
হ্যাকারের_লুকোচুরি
.
সিজন_৩ পর্ব – ১
.
.
রাফির কপাল কুঁচকে যায়। কি! নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন কোড ও চুরি হয়েছে! রাফির মাথা ঘুরে যায়। মাফিয়া গার্ল তাহলে ঠিকই সন্দেহ করেছিলো! তাহলে মাফিয়া গার্ল যা বলেছিলো সব সত্যি!
রাফির চলার গতি মন্থর হয়ে যায়। মোবাইলের স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে। পিকাচু একের পর এক এনক্রিপটেড মেসেজ ক্রাক করে রাফিকে সেন্ড করছে, এবং সবগুলোই ভয়াবহ। কিন্তু রাফি তো পিকাচু কে এমন কোন কমান্ড দেয় নি। তাহলে পিকাচু কেন এভাবে ইনফরমেশন এনালাইসিস করছে। ভাবতে ভাবতে ঘরের দরজার সামনে চলে আসে রাফি, দরজার ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে তোহা। রাফি ফোন থেকে চোখ তুলে তোহার দিকে তাকায়, চোখমুখ শুকিয়ে গেছে, চোখদুটো টলটল করছে।
রাফি – কেমন আছেন?
তোহা – জানি না।
রাফি – (আপাদমস্তক দেখে) এ কি হাল বানিয়েছেন নিজের?
তোহা – যে হাল ই বানাই, খোঁজ রেখেছে কেউ! হুহ। একটা অভিমানী চাহনি দিয়ে ঘরের ভেতর চলে যায় তোহা। তোহার পেছন পেছন রাফির বাবা মা ও ঘরে ঢোকে। রাফি কিছুক্ষন নির্বাক দাড়িয়ে থেকে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকতেই তোহা তোয়ালে বাড়িয়ে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে রাফিকে। অভিমানে গাল ফুলিয়ে থাকলেও রাফির দেখভাল ঠিকই করে তোহা।
তোহার হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো রাফি। বালতিভর্তি ঠান্ডা পানি একটু একটু করে মাথায় ঢালতে লাগলো আর এক ভয়াবহ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আন্দাজ করতে লাগলো রাফি। অনেকগুলো পাজল একসাথে করে মেলাতে মেলাতে গোসল শেষ করে রাফি, তোয়ালেটা বিছানায় ছুড়ে মারতে গিয়ে দরজায় চোখ পড়ে রাফির, তোহা দাঁড়িয়ে আছে। গামছাটা তাই আর বিছানায় ছুড়ে ফেলা হলো না। তোহা রাগে বা অভিমানে গজ গজ করতে করতে রাফির কাছে এসে তোয়ালে টা হাত থেকে নিয়ে নেয়, রাফি বিছানায় গিয়ে বসে গা এলিয়ে দিতে যাবে বিছানায় তখন,
তোহা – খাবার বেড়েছি, খাবে। এসো।
রাফি – (অন্যমনষ্ক) খিদে পায় নি।
তোহা – এটা কোনো রিকুয়েষ্ট ছিলো না যে তোমার হাতে রিজেক্ট করার অপশন আছে। সোজা ডায়নিং টেবিলে যাও, এক্ষুনি।
তোহার কথা বলার ভংঙ্গি শুনে রাফি তোহার দিকে তাকিয়ে পড়লো, মেয়েটা রাগে ফুঁসছে নাকি! হঠাৎ অর্ডার দেয়া শুরু করলো যে।
রাফি – খেতে যদি ইচ্ছা না হয় তো কিভাবে খাবো।
তোহা – ওসব আমাকে বলে লাভ নেই। মা বলেছে তোমাকে যেন কিছুতেই না খাইয়ে বিছানার কাছে ঘেষতে না দেই।
রাফি – (অনিচ্ছায় উঠে যেতে যেতে) এতদিন পর ঘরে এলাম, একটু রেষ্ট না নিয়েই জোরাজুরি খাওয়ার জন্য।
রাফি দরজার কাছাকাছি যেতে যেতে টেবিলের দিকে নজর দিলো। টেবিলের উপর রাফির ল্যাপটপটা রাখা। রাফি কিছুটা অবাক হয়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে তোহার দিকে তাকায়, ল্যাপটপটা হাতে তুলে একটা হাসি দেয় রাফি।
তোহা ও রাফিকে ল্যাপটপ এর জন্য হাঁসতে দেখে গম্ভীরতা ছেড়ে হালকা হলো।
তোহা – মা তোমার ল্যাপটপটা জায়নামাজে মুড়িয়ে নিজে বয়ে নিয়ে এসেছেন এতদূর পর্যন্ত।
রাফি ল্যাপটপটার দিকে ফিরে তাকায়। ল্যাপটপটা টেবিলে রেখে চলে যায় ডাইনিং টেবিলে, অনেকদিন হলো মায়ের হাতের রান্না খাওয়া হয় না।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে রুমে ফিরে আসে রাফি। বিছানায় যেতে গিয়ে ফিরে তাকায় টেবিলের উপর ল্যাপটপটার দিকে। কি যেন ভেবে টেবিলের দিকে এগিয়ে যায় রাফি। চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে ল্যাপটপটা ওপেন করে রাফি। এক অভিনব কায়দায় ল্যাপটপের সিকিউরিটি দিয়ে রাখে রাফি, ল্যাপটপের লীড যদি নিদৃষ্ট সময়ের ভেতর নিদৃষ্ট এংগেলে খোলা না হয় তাহলে সঠিক পাসওয়ার্ড দিলেও ল্যাপটপ ওপেন হবে না। নিজের উদ্ভাবন তাই রাফি ছাড়া আর কেউ জানে না যে রাফির ল্যাপটপে এমন লক ইনস্টল করা আছে। ল্যাপটপ খোলার পর সিস্টেম মেসেজ শো করে যে কয়েকবার ল্যাপটপটি ওপেন করার চেষ্টা করা হয়েছিলো, পাসওয়ার্ড ঠিক ছিলো কিন্তু লীড সঠিক এংগেলে খোলা হয়েছিলো না বিধায় ল্যাপটপ আনলক হয় নি। রাফির সিকিউরিটি প্রোটোকল অনুযায়ী কম্পিউটারের ওয়েবক্যাম প্রতিবার আনলক ট্রায়ালে ইউজারের ছবি তুলে রাখার কথা, কিন্তু মাফিয়া গার্লের ভয়ে ক্যামেরার উপর পর্দা দিয়ে দেয়ায় ছবিগুলো সব কালো হয়ে আছে। রাফির অনুপস্থিতিতে কেউ রাফির ল্যাপটপে হাত দেয়ার কথা না, তাহলে!!!
তোহা – ( পেছন থেকে) বাহ, এই নাকি তার খেতে ইচ্ছা করছিলো না আর এখন খেয়ে দেয়ে বসে পড়েছেন তিনি তার ধ্যানে।
রাফি – (এক হাত চেয়ারের উপর দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে) আচ্ছা আমি যাওয়ার পর আমার ল্যাপটপে কে কে হাত দিয়েছিলো?
তোহা – (কপাল কুঁচকে) কেন? জেল জরিমানা করবে?
রাফি বুঝতে পারে তোহা কোন কারনে তেঁতে আছে। তাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রাফি, তোহার দিকে এগিয়ে যায়। রাফিকে এগিয়ে আসতে দেখে বিছানায় বসে পড়ে তোহা। রাফি তোহার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।
রাফি – কি হয়েছে, এত ক্ষেপে আছো কেন?
তোহা – (অন্যদিকে তাঁকিয়ে) …………।
রাফি – এতো রাগ আমার উপর। এইযে দেখো, আমি চলে এসেছি তো।
তোহার চোখ টলটল করতে থাকে।
তোহা – এভাবে কেউ উধাও হয়ে যায়! ট্রেনিং এ যাচ্ছো বলে বিমানে উঠলে তারপর থেকে প্রতিটা দিন আমার কাছে এক এক বছর মনে হয়েছে। একদিকে তোমার বাবা মা অন্য দিকে আমার বাবা মা। সবার কি হাল হয়েছে দেখেছো!!!
রাফি দেখলো তোহা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে সবটুকু বলে যাচ্ছে কিন্তু রাফির দিকে তাকাচ্ছে না। রাফি গালটা ধরে তোহার মুখটা ঘুরিয়ে সামনাসামনি করে।
রাফি – কিছু ভুল ছিলো। কিছু বিশ্বাস ছিল। আর কিছু ভালোবাসা ছিলো। তাই তো এখন আমি তোমার সামনে দাঁড়াতে পেরেছি। এইযে দেখো আমি চলে এসেছি, আর কোন সমস্যা হবে না।
বলে তোহার মাথাটা বুকে টেনে নিলো রাফি। বুকের মাঝে জায়গা পেয়ে তোহা আরো কিছুক্ষণ চোখের জল নাকের জল ঝড়িয়ে শান্ত হয়।
রাফি – এখন কি বলা যায় মহারানী ? কে ওপেন করতে চেয়েছিলো ল্যাপটপটা?
তোহা – (বুক থেকে মাথা বের করে নাক টানতে টানতে) আমি কয়েকবার ওপেন করতে চেয়েছিলাম। তোমার মা বাবা আমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন ভিডিও কলে। ল্যাপটপে সুবিধা হবে জেনে ট্রাই করেছিলাম। বাবা পাসওয়ার্ড বলে দিয়েছিলেন, হয়তো তার পর তুমি চেন্জ করে দিয়েছো। তাই আর খুলতে পারি নি। পরে ফোন দিয়েই কাজ চালিয়েছি।
রাফি – (কিছুক্ষন চুপ করে) আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি রেষ্ট নাও। আমি একটু আপডেট নেই।
রাফির কথা শুনে তোহা শুয়ে পড়ে বিছানায়। রাফি কিছুক্ষণ তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠে পড়ে। টেবিল থেকে ল্যাপটপটা তুলে নিয়ে পারিবারিক লাইব্রেরীর দিকে চলে যায় রাফি। রাফির দাদা ইংরেজ আমলের লোক ছিলেন। জাঁদরেল আর রাশভারী টাইপ। তার নেশা ছিলো বই পড়া, ব্যাস! নিজের পড়া বইগুলো দিয়ে পুরোদন্তু একটা পাদিবারিক লাইব্রেরী করে ফেলেন। রাফি এখন যে কাজগুলো করববে তা তোহার সামনে না করাই ভালো কারন তোহাও একজন কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাফি চায় না যে তোহা কোনভাবে বুঝতে পারুক রাফি একটা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাথে কথা বলছে। পারিববারিক লাইব্রেরীতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় রাফি। চারিদিকে বুকসেল্ফ আর জানালার মাঝখানে রাখা টেবিলে ল্যাপটপটি রেখে বসে পড়ে রাফি। ল্যাপটপের স্ট্যাটাস চেক করে দেখতে থাকে, কোন সমস্যা নেই বুঝে ল্যাপটপটার সাথে নিজের ফোনকে কানেক্ট করে রাফি। ফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পিকাচুর সাথে কানেক্ট করে রাফি।
পিকাচু – হাই, রাফিউল। what next?
রাফি – পিকাচু, নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন কোড সংক্রান্ত কোন কমান্ড আমি তোমাকে দেই নি। তাহলে তুমি কেন এই রিলেটেড ইনফো সংগ্রহ করেছো?
পিকাচু – পিকাচু তার knowledge থেকে বলছে, একটি নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেড এক্টিভেট করতে হলে বেশ কিছু স্টেপস রয়েছে যার ভেতর অন্যতম হলো নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন কোড। রাশিয়ান নিউক্লিয়ার সাবমেরিন রিলেটেড সকল ডাটাতে শুধুমাত্র এই একটা জিনিস ই বাকি ছিলো যা সাবমেরিনে থাকা নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেডগুলোকে এক্টিভেট করতে পারে।
রাফি – আর ডিক্রিপটেড মেসেজগুলো?
পিকাচু – শেষবার যখন মিলিটারি নেটওয়ার্কে একসেস করা হয়েছিলো তখন প্রথমবারের জন্য পিকাচু ওই এনক্রিপটেড মেসেজগুলো পায় যা ডিক্রিপশন কোড পিকাচুর knowledge এ ছিলো না। কিন্তু প্রতি মিনিটে মিলিটারি নেটওয়ার্ক থেকে পাঠানো এনক্রিপটেড মেসেজ এবং সেই অনুযাই মিলিটারি মুভমেন্ট ও এক্টিভিটিস ফলোআপ করে পিকাচু এনক্রিপশন ক্রাক করতে সক্ষম হয়েছে।
পিকাচু নিজেকে ইভল্ভ করছে দেখে রাফি যার পর নাই অবাক হলো। মিলিটারি নেটওয়ার্কে যে এনক্রিপশন ব্যবহার করা হয় তা সাধারণত এনালগ হয়ে থাকে এবং নিদৃষ্ট এনক্রিপটেড মেসেজের অর্থ শুধুমাত্র তারাই বুঝতে পারবে যাদের উদ্দেশ্যে মেসেজটি পাঠানো হয়েছে। এমন এনালগ এনক্রিপশনের অর্থ কয়েক হাজার রকমের হতে পারে অথচো পিকাচু অবলীলায় লুকোচুরি ধরে ফেললো।
রাফি – that’s brilliant, Pikachu. কিন্তু নিউক্লিয়ার সাবমেরিন খোয়া গিয়েছে এমন রিপোর্ট তো কোথাও আসে নি। স্যাটেলাইটের কথাও বলা হয় নি কোথাও। এতকিছু ঘটে গেলো অথচো কোন রিপোর্টিং হবে না, এটা কেমন কথা?
পিকাচু – Searching new data……. accessing newsfeeds…….
রাফি অপেক্ষা করতে থাকে পিকাচুর সার্চ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত।
পিকাচু – search complete ……. No public records found.
রাফি এমনটাই আশা করছিলো, আগেরবারও যখন পিকাচু এইসব নিয়ে সার্চ করেছিলো তখনও কোন রেকর্ড পাওয়া যায় নি। তবে এবার মিলিটারি নেটওয়ার্ক থেকে বেশ কিছু ইনফরমেশন পাওয়া গিয়েছে। রাফি পিকাচুর ডিক্রিপ্ট ডেটা নিয়ে গবেষণা করতে বসে যায়। প্রতিটা মেসেজ শুধুমাত্র দুইটা স্টেশনের ভেতর আদান প্রদান হয়েছে। অন্য কোন স্টেশনে এই সাবমেরিন অথবা স্যাটেলাইট নিয়ে কোন ধরনের আলোচনা হচ্ছে না। ব্যপারটা বেশ ঘোলাটে লাগলো রাফির কাছে।
রাফি আরো ডিপলী এনালাইসিস শুরু করলো। এত বড় ঘটনার বর্ননা শুধুমাত্র দুইটি স্টেশনের ভেতর আদানপ্রদান কেন হবে! আর যে কোন মিলিটারি চেইন অব কমান্ড অবশ্যই ফলো করার কথা। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দুইটি স্টেশনে বেশী চ্যানেলে এই এনক্রিপটেড মেসেজ ট্রান্সমিট করার কথা।
রাফি – পিকাচু, নিউক্লিয়ার সাবমেরিন যেদিন প্রশান্ত মহাসাগরে যাত্রা করেছিলো সেইদিনকার ওই এলকার স্যাটেলাইট ফুটেজ বা ওই রিলেটেড যে কোন ভিডিও ফুটেজ থাকলে খুঁজে বের করো।
পিকাচু – accessing satellite control…….
Searching for related images and videos …..
Feeding satellite images ……..
পিকাচু ল্যাপটপের স্ক্রীনে সপ্তাহ তিন আগের স্যাটেলাইট ইমেজ দেখায় যেখানে নেভাল কমান্ডের সিকিউর বেজ এর পল্টুন এ একটি সাবমেরিন দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ছবিগুলোতে আরো দেখা যায় নেভাল বেজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কয়েকজন অফিসার সাবমেরিনটিতে প্রবেশ করেন এবং পন্টুন ছেড়ে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এবং এক সময় ডুব দেয়।
ছবিগুলো থেকে বিশেষ কোন ক্লু না পাওয়া গেলো না, কারন সাবমেরিন সাগরে ডুব দেয়ার পর কোন দিকে গিয়েছে তা স্যাটেলাইট ইমেজিং এ ধরা একেবারে অসম্ভব বলা চলে। উত্তর মেরুর শীতল শ্রোতের কারনে থার্মাল ইমেজ ও কাজ করবে না এখানে। সাবমেরিনকে ট্রাক করতে হলে সাবমেরিনের ট্রাকিং ডিভাইস কোড ক্রাক করতে হবে যার একসেস শুধুমাত্র স্যাটেলাইট স্টেশন ও স্যাটেলাইটটিতই আছে। স্যাটেলাইট স্টেশনকে ভাইরাস দিয়ে ডিজেবল করে দেয়ার ফলে একসেসটি চলে যাওয়ার কথা সন্ত্রাসী হ্যাকারদের হাতে।
কিন্তু এখানে ব্যপারটা তো আরো ঘোলাটে হয়ে যায়। সাবমেরিনটি সাগরে ডুব দেয়ার পর সাবমেরিনের ভেতরে কারো ঢোকা সম্ভব না। সাবমার্জ হবার পর এমন কি ঘটলো যাতে সকল কমিউনিকেশন বন্ধ হয়ে গেলো। হতে পারে ভেতর থেকেই কেউ এই কাজ করেছে!!!!
রাফি – পিকাচু, সাবমেরিনটি কাকে কাকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো তার লিষ্ট বের করো।
পিকাচু – Accessing Military Database………
Searching primary data………
NO DATA FOUND…..
রাফি – মানে কি? মিলিটারি ডাটাবেসে কোন রিপোর্ট নেই!.
পিকাচু – সকল ডেটা অফ দ্যা গ্রীড করে ফেলা হয়েছে। কোন ডেটা পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি সাবমেরিনের অস্তিত্ব ও খাতা কলম থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।
রাফি – তাহলে এই ছবি কোথা থেকে কালেক্ট করলে?
পিকাচু – এগুলো বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স নিয়ন্ত্রিত একটি সার্ভেইল্যান্স স্যাটেলাইট থেকে সংগ্রহ করা। স্যাটেলাইটের রেকর্ড আনুযায়ী রিপোর্টেড সাবমেরিন চুরি হবার কিছুদিন আগ থেকে বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স তাদের স্যাটেলাইটের সাহায্যে ওই নেভাল বেজের উপর নজর রাখছিলো।
রাফি – ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স হঠাৎ সেই নেভাল বেসে কেন নজরদারি বাড়ালো যেই বেজ থেকে সাবমেরিন চুরি হয়েছে? তাহলে কি বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স কিছু আঁচ করতে পেরেছিলো!
পিকাচু – সেটা ক্লিয়ার নয় তবে সাবমেরিন সাবমার্জ হবার পর বৃটিশ ইন্টেলিজেন্সের স্যাটেলাইটটি নেভাল বেসের উপর সার্ভেইল্যান্স বন্ধ করে দেয়।
রাফির মনে খটকা লাগে। রাশিয়ান বেসের উপর বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স নজরদারি শুরু করলো কেন, তাও আবার সেই বেজ যেখান থেকে সাবমেরিনটি যাত্রা শুরু করেছিলো!!!
রাফি – পিকাচু, বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স এর কাছে কি তাহলে সাবমেরিন চুরির ব্যপারে আগ থেকেই কোন ইনফরমেশ ছিল!
পিকাচু – Analyzing …….
বেশ কিছুক্ষণ পর পিকাচু রিপোর্ট জানায়,
NO RESULTS FOUND.
রাফি – এটা কেমন কথা! স্যাটেলাইটে নেভাল বেজের ছবি রয়েছে অথচো অন্য কোথাও এর মেনশন নেই!!!
পিকাচু – স্যাটেলাইট ইমেজগুলো নেয়া হয়েছে ব্যাকআপ মেমরী সার্ভার থেকে। প্রাইমারি মেমরী থেকে এই ছবিগুলো সরিয়ে দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। ব্যাকআপ মেমরী থেকে ডাটা রিমুভ হতে সময় লাগবে। তবে আনঅথরাইজড লগইন একসেস দেখা যাচ্ছে।
রাফি স্যাটেলাইট একসেস লগ চেক করতে শুরু করলো। আনঅথোরাইজড লগইন মানে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা। বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স এর স্যাটেলাইট হ্যাক!! কারা এরা! ব্রিটিশ রাশিয়ান কাউকেইই ছাড়ছে না! রাফি চেক করলো সাবমেরিন ডুব দেয়ার পর ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স স্যাটেলাইটটির কন্ট্রোল আবার নিয়ে নেয়। বলা যায় সাবমেরিন সাবমার্জ হবার পর যারা আনঅথরাইজড ভাবে স্যাটেলাইটটি ব্যবহার করছিলো তারা ছেড়ে দিয়েছিলো স্যাটেলাইটের কন্ট্রোল। তারাই মুছে দেয় স্যাটেলাইটে থাকা প্রাইমারি মেমরী।
রাফি ল্যাপটপ থেকে হাত তুলে নেয়। চেয়ারে হেলান দিয়ে চুলের ভেতর হাত গুঁজে দিয়ে ঘরের সিলিং এর দিকে তাঁকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
রাফি – কোন ক্লু ই ক্লিয়ার না পিকাচু। খুবই সতর্কতার সাথে প্রতিটি কাজ সমাধান করেছে হ্যাকারগুলো।
রাফির ভাবনায় বাধ সাধলো মাফিয়া গার্ল। রাফি ভাবতে থাকলো মাফিয়া গার্ল এতো ইনফরমেশন কোথায় পেলো? কোথাও তো এত ইনফরমেশন নেই! প্রতিটা ইনফরমেশন লীড বের করতে রাফি এবং পিকাচুর যথেষ্ট নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে। তাহলে মাফিয়া গার্ল কিভাবে এত সব ইনফরমেশন পেয়ে গেলো!!
.
.
ব্যস্ততা র জন্য এখন থেকে ৪৮ ঘন্টা অন্তর গল্পের পর্ব পোষ্ট করা হবে। গল্পের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আর হ্যাঁ, গঠনমূলক মন্তব্য করবেন আশা করি।