Thursday, June 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1450



আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০১

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০১
লেখিকাঃমাহযাবীন

-এক রাতের দাম কত?
কালো শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পরিহিত এক সুদর্শন যুবক নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলে ওঠে।
খুব ঝড় হচ্ছে।পুরো রাস্তা জনমানবশূন্য।এই শূন্য রাস্তায় ঝড় উপেক্ষা করে নিজ বাড়ির পথে অগ্রসর হচ্ছে নাফিয়া।হটাৎ একটা কালো গাড়ি এসে থামে তার সামনে এবং গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে একজন পুরুষ যাকে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে দেখে সুদর্শনই মনে হচ্ছে। কিন্তু যুবকটির করা প্রশ্ন নাফিয়ার কানে আসতেই নাফিয়ার কান গরম হয়ে গেলো।কিন্তু এমন ফাঁকা রাস্তায় ছেলেটির সাথে কোনো ধরনের ঝামেলা করা টা নিজের জন্যই কবর খোদার সমান মনে হচ্ছে নাফিয়ার।তাই সে কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে বলে ওঠে,
-আসসালামু আলাইকুম।আপনি আমাকে ভুল ভাবছেন।আমি এক রাতের জন্য কেনা কোনো পণ্য নই।
বলেই যেই নাফিয়া স্থান ত্যাগ করতে যায় ওমনি যুবকটি নাফিয়ার হাত ধরে ফেলে এবং বলে ওঠে,
-এতো রাতে হাইওয়েতে বোরকা পরিহিত কোনো ভালো মেয়ে রাস্তায় থাকে না।জীবনে এই প্রথম পতিতার সন্ধানে এলাম বলে আমায় বোকা ভাবছো?
-সীমা অতিক্রম করছেন আপনি।হাত ছাড়ুন আমার!
-পতিতা হয়েও এতো ভাব কেনো?বেশি টাকার অন্য কোনো কাস্টোমার আছে বলেই কি আমার সাথে আসতে এতো নকশা?
ব্যাস রাগের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলো নাফিয়ার।ঠাস করে একটি চর বসিয়ে দিলো ছেলেটির গালে।কিন্তু চর বসিয়ে দেবার পর সে বুঝতে পারছে আসলে সে কত বড় ভুল করে বসেছে।ছেলেটি রক্ত চোক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে যেনো এখনই আস্তো চিবিয়ে খেয়ে নিবে।নাফিয়া নিজের ভয়কে লুকাবার চেষ্টায় বলে ওঠে,
-লজ্জা থাকলে এবার আমার হাত টা ছাড়ুন।
এ কথায় যুবক টির রাগ আরো বেড়ে গেলো।সে নাফিয়ার হাত আরো শক্ত করে ধরে নিজের গাড়ির দিকে হাঁটতে আরম্ভ করলো।এদিকে,নাফিয়া অনুভব করছে তার হাত টি বোধহয় ছিঁড়েই যাবে।সে যুবকটিকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু লাভ হলো না।যুবকটি নাফিয়াকে গাড়িতে বসিয়ে সাথে নিজেও বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললো ড্রাইভারকে।নাফিয়া বারংবার বলে চলছে তাকে ছেড়ে দিতে কিন্তু ছেলেটি কানে হেডফোন গুঁজে চোখ বুজে আছে।অনেকটা সময় ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করেও যখন লাভ হলো না এবং যুবকটিও চোখ বুজে আছে সেই সুযোগে নাফিয়া নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফোনের লক খুলতেই যাবে ওমনি ছেলেটি ছো মেরে নাফিয়ার হাত থেকে ফোনটি নিয়ে নেয়।এতে চমকে নাফিয়া যেই যুবকটির দিকে তাকায় যুবকটি বলে ওঠে,
-খবরদার!যদি কোনো চালাকি করার চেষ্টা করো তবে খুব খারাপ হবে।
যুবকটির রক্তবর্ণ চোখ দেখে ভয়ে চুপসে যায় নাফিয়া।স্থির বসে চোখের নোনাজল ফেলতে থাকে।সেদিকে যুবকটি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে গাড়িতে হেলান দিয়ে বসে আবারও চোখবুঁজে নেয়।তাকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে সে চোখ বুজে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে চলছে।
কিছুটা সময় পার হতেই একটি দোতলা বাংলো বাড়ির সামনে এসে থামে গাড়িটি।জায়গাটি সম্পূর্ণ অচেনা নাফিয়ার।যুবকটি গাড়ি থেকে বেড়িয়ে নাফিয়ার সামনে এসে গাড়ির গেট খুলে নাফিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির দিকে এগোতে থাকে।এদিকে নাফিয়া কাঁদতে কাঁদতে বার বার তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করতে থাকে।কিন্তু যুবকটি যেনো কিছুই শুনছে না।
২য় তলার একটি বেড রুমে নাফিয়াকে এনে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দেয় যুবকটি।রাগান্বিত স্বরে চেচিয়ে যুবকটি বলে ওঠে,
-হাও ডেয়ার ইউ?হাও ডেয়ার ইউ টু স্লাপ আফিম ইবনান?ডু ইউ হেভ এনি আইডিয়া হু আই অ্যাম?ইউ হেভ টু পে ফর দিস স্লাপ!
-আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ।আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।
-হাহ্।টুডে ইউ ডিড আ বিগেস্ট মিস্টেক ইন ইউর লাইফ।সো ইউ হেভ টু পে বেবজ!
বলেই নিজের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আফিম এগিয়ে যেতে থাকে নাফিয়ার কাছে।নাফিয়া একটু একটু করে পেছাতে থাকে।আফিম দেরি না করে বিছানার কাছে যেয়ে নাফিয়ার পা ধরে নিজের কাছে টেনে এনে নাফিয়ার উপর ভর দিয়ে শুয়ে পরে।নাফিয়া চিৎকার করে বলে ওঠে,
-প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন আমি পতিতা নই।
কিন্তু আফিম এসব কথা কানে না নিয়ে নাফিয়ার নেকাবটি ধরে টান দেয় ফলে তা খুলে যায় এবং আফিমের সামনে ফুটে ওঠে এক মায়াবী চেহারা।যা দেখেই তার দিকে দৃষ্টি আটকে গিয়েছে আফিমের।ভাসা ভাসা চোখ,লাভের উপরের দিকে যেমন শেইপ ঠিক তেমন শেপের ঠোঁট,খাঁড়া নাক,গোলগাল চেহারা সেই সাথে উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং।যেখানে আফিম ব্যস্ত নাফিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে সেখানে নাফিয়া কেঁদেই চলছে।কান্নার মাঝে মাঝে নাফিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরছে।নাফিয়ার ঠোঁটগুলো আফিমকে খুব করে টানছে।আফিম যেনো একটি ঘোরে চলে গিয়েছে।তার চোখের সামনে শুধু ঠোঁটটিই ভাসছে।ঠোঁট দুটো এই মুহূর্তে ছুঁতে না পারলে যেনো বড্ড ক্ষতি হয়ে যাবে আফিমের।আফিম কোনো কিছু না ভেবেই নাফিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দেয়।প্রায় ৫ মিনিট অতিবাহিত হতেই নাফিয়ার ঠোঁট ছেড়ে মাথা উঠাতেই দেখতে পায় নাফিয়া অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।প্রায় সাথে সাথেই আফিম নাফিয়ার উপর থেকে উঠে পানির জগ এনে নাফিয়ার চোখ-মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।কিন্তু নাফিয়ার জ্ঞান ফেরে না।এতে বেশ ভয় পেয়ে যায় আফিম দ্রুত ডাক্তারকে ফোন করে আসতে বলার পর,সে নাফিয়ার পরিহিত বোরকা ও হিজাবটি খুলে নাফিয়াকে ঠিক করে বিছানায় শুইয়ে দেয়।আধ ঘন্টার একটু পরেই একজন মহিলা ডাক্তার এসে নাফিয়াকে এক্সামিন করে আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-ভয়ের কিছু নেই।মেয়েটি হয়তো প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল কোনো কিছুতে সেই সাথে হয়তো সকালের পর সারাদিনে কিছু খায়নি এবং পরিশ্রম করার ফলে দূর্বলতার জন্য অচেতন হয়েছে।সমস্যা নেই,জ্ঞান ফিরলে স্বাস্থ্যকর কিছু খাবার খেলে এবং রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
-ধন্যবাদ ডক্টর।
-ইট’স মাই ডিউটি মিঃআফিম।আজ তবে আসছি।
-ইয়াহ সিওর।
ডাক্তার বিদায় নিতেই আফিম নাফিয়ার কাছে যেয়ে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নাফিয়ার দিকে।মেয়েটির চেহারায় যেমন মায়া আছে ঠিক তেমনই একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব যেনো সে একদম নিষ্পাপ।আফিম বেশ কিছুটা সময় নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার পর হটাৎ ওঠে দাঁড়িয়ে কোনো একটি ব্যক্তিকে কল করে বলে ওঠে,
-আই ওয়ান্ট এভরি সিঙ্গেল ডিটেইলস এবাউট দি গার্ল হু ইজ ইন মাই বেডরুম রাইট নাও।
বলেই ফোনটি কেটে দেয় আফিম।কিছুটা সময়ের মাঝেই ফ্রেশ হয়ে এসে নাফিয়ার পাশে শুয়ে পরে সে।চোখ বন্ধ করতেই কেনো যেনো তার অস্থির লাগছে, ঘুমেরও আসার নাম গন্ধ নেই।তার মন চাইছে তার পাশে শুয়ে থাকা নারীকে এক নজর দেখতে।অবাধ্য মনের বাধ্য হয়ে আফিম তার চোখজোড়া মেলে তাকায় সেই মায়াবী চেহারায়।

!!
ঘুম ভাঙতেই আস্তে আস্তে চোখজোড়া মেলে তাকায় নাফিয়া।শরীরে দূর্বলতা বেশ ভালোই অনুভব করছে সে।সকালে উঠেই কালেমা তায়েবা পড়াটা অভ্যেস তার।তাই কালেমা পড়ে উঠে বসতেই এক অপরিচিত রুমে নিজেকে আবিষ্কার করে সে।সাথে সাথেই তার মনে পড়ে যায় গত রাতের ঘটনা গুলো।চটজলদি সে একরাশ ভয় নিয়ে নিজের দিকে তাকায়।অতঃপর দেখে তার কাপড় ঠিকই আছে এবং শরীর কোনো পরিবর্তন বা ব্যথা নেই।এতে কিছু টা শান্ত হলো নাফিয়া এবং মনে মনে বলতে আরম্ভ করলো,
“জানোয়াররা তো মৃত দেহের লোভ ও নিয়ত্রণ করতে পারে না।আর এই জানোয়ার সামান্য আমার অজ্ঞান হওয়াতে আমায় ছেড়ে দিলো?”
ঠিক এমন সময় কক্ষে প্রবেশ করে আফিম।চেহারায় রাগী ভাব আর কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে সে ডেকে ওঠে,
“মজনু”
নিচ থেকে আওয়াজ এলো,
“আইতাছি স্যার”
আর না দাঁড়িয়ে আফিম টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।জগিং এর ফলে সারা শরীর ঘর্মান্তক তার।
এতোটা সময় সব কিছুই নিরবে দেখে গেলো নাফিয়া।আফিম ওয়াশরুমে যেতেই সে মনে মনে বলে ওঠে,
“কি ভাব,অসহ্য”
কথাটি শেষ করতেই হটাৎ তার মনে পরে তার শরীরে তার বোরকা নেই।চটজলদি সে নিজের আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিজের বোরকা খুঁজতে আরম্ভ করে।বেশি বেগ পেতে হলো না তার।বেডের সামনের সোফাটাতেই তার বোরকা টা পরে আছে।নাফিয়া জলদি উঠে তার বোরকা টা পরে নেয়।ঠিক তখনি কক্ষের দরজায় টোকা পরার আওয়াজ হয়।নেকাব টা পরে নিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
“আসতে পারেন”
-মেডাম আফনের খাওন।
-আমি খাবো না।নিয়ে যেতে পারেন।
-স্যারের ওর্ডার মেডাম।আফনের খাওনই লাগবো।আর ডাক্তার কইছে আফনের শরীর দূর্বল,ভালো ভালো খাইতে হইবো।
-ডাক্তার?
-জ্বে।কাল আফনের জ্ঞান যাওনের পর স্যার ডাক্তার ডাকছেলো।
-ওহ আচ্ছা।
কথাটি বলেই নাফিয়া ভাবতে আরম্ভ করলো,
“সামান্য অচেতন হওয়ায় সেই রাতে ডাক্তার ডেকেছিলো!কিন্তু কেনো?একটা দেহ লোভী জানোয়ারের দ্বারা এটা আমার কাম্য ছিলো না।”
-এইখানে খাওন রাখলাম মেডাম।
-বললাম তো খাবো না।নিয়ে যান খাবার।
কথাটি বলার পর পরই নাফিয়া একটি ভারী,গম্ভীর ও শান্ত কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।
-এখানেই থাকতে চাইছো তবে?(আফিম)
চোখের ইশারা করতেই মজনু খাবার সোফার সামনের টেবিলে রেখে চলে যায়।
-কি বলতে চাইছেন?
-খাবার পুরোটা খেয়ে নিলে তোমায় ছেড়ে দেওয়া হবে নয়তো এখানেই থাকবে।
-আমার খাওয়া নিয়ে আপনাকে চিন্তা না করলেও হবে।
-শাট আপ ইউ মরন!দয়াকে চিন্তা ভাবছো কি করে?তোমার মতো মেয়ের জন্য আফিম ইবনান চিন্তিত হবে?আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?(বেশ চেচিয়ে কথাগুলো বলে ওঠে আফিম)
ভয়ে ও অপমানবোধে নাফিয়ার চোখে জল চিকচিক করে ওঠে।যা আফিমের চোখে পরতেই আফিম সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয় এবং মনে মনে বলে ওঠে,
“ঔ মায়াবী চোখজোড়ায় জল বড্ড বেমানান!”
-আমি খাবো না আমায় যেতে দিন।
-ঠিক আছে খেয়ো না।

চলবে

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#অন্তিম_পর্ব

সিসিটিভির ফুটেজ চেক করার জন্য বাহিরে বের হয়ে যায় নিদ্র।একরাশ চিন্তা নিয়ে রুমেই ‌বসে থাকি আমি।এক অজানা ভয় গ্রাস করে রেখেছে আমাকে।ভয়টা এই যে অনিক যদি টাকা খাইয়ে সিসিটিভি ফুটেজ ডিলিট করায় তাহলে সারাজীবন নিদ্রের পরিবারের চোখে কলঙ্কিনি হয়ে বেঁচে থাকতে হবে।মনে প্রাণে আল্লাহকে ডাকছি যেন সব ঠিক হয়।

এদিকে নিদ্র উপর থেকে নেমে ম্যানেজারের রুমে চলে যায়।ম্যানেজার তাকে দেখে বসতে বলে।নিদ্র ধপ করে চেয়ারের উপর বসে ফস করে মুখ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ে।নিদ্রের অবস্থা দেখে ম্যানেজার খানিকটা বিনয়ী গলায় বলে,
–“স্যার!কিভাবে আপনাকে সহায়তা করতে পারি?”
নিদ্র এবার এক দৃষ্টিতে তাকায় ম্যানেজারের দিকে।গোলগাল চেহারা,মাথা ইয়াবড় একটা টাক,গাল দুটো ফুলকো লুচির মতো,বয়স ৩৯-৪০ হবে।নিদ্রের এভাবে তাকানোর ব্যাপারটা বেশ অসস্থি যোগায় তার মধ্যে।তাই পুনরায় বলে,
–“স্যার!কিভাবে সহায়তা করতে পারি?”

লোকটা কথায় ঘোর কাটে নিদ্রের।কড়া দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আজকের সিসিটিভি ফুটেজটা দেখতে চাই আমি।২০২ নাম্বার রুমে কে প্রবেশ করেছিল সেটা দেখতে চাই?”
ম্যানেজার নিদ্রের দিকে তাকিয়ে কম্পিউটারটা অন করে।তারপর চালিয়ে দেয় ২০২ নাম্বার রুমের সামনের ক্যামেরার দৃশ্য।নিদ্র বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে সবকিছু।অনেকক্ষন কেটে যায় কেউ প্রবেশ করছে না রুমে।নিদ্র বেশ চিন্তিত হয় এই ভেবে যে,মিহি কি তাকে মিথ্যা বললো?

এইসময় হঠাৎ ক্যামেরায় দেখা যায় একটা মুখ।নিদ্র সাথে সাথে জুম করতে বলে ম্যানেজারকে।ম্যানেজার জুম করলে নিদ্র দেখতে পায় সেটা অনিক।বুঝতে বাকি থাকে না কে সত্য আর মিথ্যা?সে ম্যানেজারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয় রুম থেকে।অনেক খুশি লাগছে তার,অনেক।নাচতে ইচ্ছে করছে।তবেও রাগও হচ্ছে অনিকের প্রতি।প্রচুর রাগ,দেখা হলে তার অবস্থা খারাপ করে দিবে এই প্রতিজ্ঞা নেয় নিদ্র।

নিদ্র লিফট দিয়ে না উঠে সিড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করে।এমন সময় হঠাৎ একটা ভাবনা মাথায় চেপে বসে নিদ্রের।কিন্তু এই ভেবে ভাবনাটাকে বিদায় করার সিদ্ধান্ত নেয় নিদ্র যে,মিহিকে মিথ্যা বললে সে নিজের ক্ষতি করতে পারে।পরক্ষনে আবার মনে করে,চোখে চোখে রাখবো তাকে।শেষ পর্যন্ত নিদ্র সিদ্ধান্ত নেয় মিহিকে মিথ্যা বলবে।আজকের রাতটা,কালকের দিনটা ইগনোর করবে মিহিকে।প্রচুর ইগনোর,পরবর্তি দিনে নিদ্রের জন্মদিন,সেদিন সে মিহিকে মেনে নিবে।সেদিন সম্পুর্ন নিজের করে নিবে মিহিকে।

এসব ভাবতে ভাবতে রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় নিদ্র।আস্তে করে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে সে।তাকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসি আমি।নিদ্র বেশ গম্ভীর মুখ নিয়ে সোফায় বসে পড়ে।তার মুখ দেখে আমার চিন্তা বেড়ে যায় হরহর করে।যেখানে কিছুক্ষন আগে ৪০% ছিল সেখানে এখন ১৪০% হয়ে যায়।আমি বেশ ভয় ভয় নিয়ে নিদ্রকে বলি,

–“কি হলো?”

নিদ্র মাথা তুলে বেশ রাগী দৃষ্টিতে তাকায় আমার দিকে।আমি আরো বেশি ভয় পেয়ে যাই।নিদ্র কড়া গলায় বলে,
–“ছি.আই ডোন্ট বিলিভ ড্যাট যে,তুমি এত বাজে।তুমি কেন তোমরা দুজনই খুব বাজে?যদি তোমাদের প্লান এরকমই তাহলে শুধু শুধু আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলে?কেন আমাকে তোমাদের মাঝে এনে কষ্ট দিলে?”

তার কথা থামিয়ে দিয়ে আমি কথা বলতে ধরলেই সাথে সাথে সে বলে ওঠে,
–“থাক,তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না।সিসিটিভিতে আমি দেখেছি কোনটা সত্য কথা আর কোনটা মিথ্যা?ছি.আই হেট ইউ।ডিবোর্সটা হলেই ভালো হতো।”

এই বলে নিদ্র উঠে ওয়াসরুমে চলে যায়।আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তার যাওয়ার দিকে।শেষ পর্যন্ত নিদ্রও আমাকে ভুল বুঝলো।বিশ্বাস করলো না যে অনিক সত্ত্যিই এসেছিল এখানে।বুক ফেটে কান্না আসছে আমার।আমি সাথে সাথে শুয়ে বালিশ চেপে কান্না করতে শুরু করি।

এদিকে যে নিদ্র লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছে সেদিকে খেয়াল নেই আমার।আমি মুখে বালিশচাপা দিয়ে একাধারে চোখের পানি ফেলেই চলেছি।নিজেকে খুব একা লাগছে এই মুহুর্তে।কি করবো বুঝতে পারছি না আমি।

নিদ্র ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে পুনরায় সোফায় বসে পড়ে।আমি মাথা ঘুড়িয়ে তাকাই তার দিকে।নিদ্র একবার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
–“ডিবোর্স হবে এবার।একবার ভুল করেছি সেই ভুল দ্বিতীয়বার করবো না।”

নিদ্রের কথা শুনে আমি স্লান হেসে বলি,
–“একবার ডিবোর্সের কথা শুনে অনেক কষ্টে নিজেকে ঠিক রেখেছি।কিন্তু আরেকবার ঠিক রাখতে পারবো না।”
আমার এই কথাটা শুনে ঝট করে আমার দিকে তাকায় নিদ্র।আমি বুঝতে পারছি না আমি এটা কি বললাম?এটা কেমন কথা বললাম।কি করতে পারবো আমি?আত্মহত্যা?কিন্তু সেটা মহাপাপ।একালে সুখ না পেলেও পরকালে দুঃখ পেতে চাই না।মুখ বুজে সারাজীবন সহ্য করবো আমি তবুও আত্মহত্যা করবো না।

সেদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়ি আমি।নিদ্র কোথায় ঘুমিয়েছে সেটা জানতে পারি না আমি।জানার চেষ্টাও করি না।

পরেরদিন একটু দেরি করেই ঘুম ভাঙ্গে আমার।তারাতারি করে উঠে বসি আমি।চারদিকে তাকিয়ে নিদ্রকে খুঁজতে থাকে আমার চোখ দুটো।পর মুহুর্তে মনে পড়ে কালকের কথা গুলো।মনটা নিমিষে খারাপ হয়ে যায় আমার।আস্তে করে উঠে খুড়িয়ে খুড়িয়ে ওয়াসরুমে যাই।ফ্রেস হয়ে বের হই একেবারে।বের হয়ে দেখি সোফায় বসে আছে নিদ্র।তাকে উদ্দেশ্য করে বলি,

–“এই হোটেলের কি ছাঁদ আছে?থাকলে আমাকে একটু পৌঁছে দেবেন?”

নিদ্র বেশ খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“ওকে,আসুন।”
এই বলে নিদ্র আমাকে নিয়ে আগাতে থাকে।লিফটে করে একেবারে ছাদে উঠে যাই আমরা।অনেক সুন্দর করে সাজানো রয়েছে সবকিছু।ছাদে উঠেই নিদ্র আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে যায়।আমি আরেকদিকে এগোতে থাকি।এগোতে এগোতে একেবারে কোণায় চলে যাই আমি।আর এক পা আগালেই মৃত্যু নির্ঘাত।এমন সময় পিছন থেকে কেউ একজন টান দেয় আমাকে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরপর দুইটা থাপ্পড় পড়ে আমার গালে।ব্যাক্তিটার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠি আমি।নিদ্র।নিদ্র সাথে সাথে আমাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।সাথে বলতে শুরু করে,

–“আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলে কেন?আমি তোমাকে ভালোবাসি,তুমি চলে গেলে কাকে ভালোবাসবো বলো?”

আমি কিছু বুঝতে না পেরে মাথা তুলে বলি,
–“মানে?”

এবার নিদ্র আমাকে জড়িয়ে ধরে প্রথম থেকে সব কাহিনী বলতে শুরু করে।কিভাবে অভিনয় করেছে সেটাও?সবশেষে আমি তাকে বলি,
–“আপনি একজন বিরাট অভিনেতা মি.নিদ্র।এটা কি আপনি জানেন?”

নিদ্র আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–“দেখতে হবে না কার বর?”

আমিও এবার নিদ্রকে জড়িয়ে ধরে বলি,
–“আমি আজ চলে গেলে কেমন হতো?”

নিদ্র আমার ঠোটের কাছে নিজের ঠোট নিয়ে এসে বলে,
–“চলে যাবে?যেতে দিলে তো,চাইলে যেতে পারবে না।কারন তুমি যে আবদ্ধ আমার মধ্যে আমি #আবদ্ধ_তোমার মধ্যে।এই বাধন কখনো ভঙ্গুর নয়।সারাজীবন দুজন দুজনের মধ্যে আবদ্ধ থাকবো।”

এই বলে ঠোটের সাথে ঠোট মিলিয়ে দেয় ‌নিদ্র।

সমাপ্ত..

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#শান্তনা_পর্ব

কক্সবাজার থেকে ফিরে আসার পরও আমার পা পুরোপুরি ঠিক হয় না।সমস্যা বাধে সেখানেই।আমি অফিস যেতে পারবো না এটা সবাই মানবে কিন্তু নিদ্র সম্পুর্ন সুস্থ মানুষটা কেন অফিসে যেতে পারবে না।এটা নিয়ে প্রশ্ন জাগে সবার মনে।নিদ্র ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আমার পাশে এসে বসে।আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আপনি অফিসে যেতে পারবেন না কেন?”

নিদ্র আমার দিকে রাগী চোখে তাকায়।তারপর কড়া গলায় বলে,
–“সেটা বলা যাবে না।আগে বলো তুমি এখনো আমাকে আপনি বলো কেন?”
আমি এবার একটু অসস্থিতে পড়ে যাই।কিভাবে তাকে বলবো যে,আমি তুমি বলতে চাইলেও মুখটা আপনি বলে ফেলে।আমার কাছ থেকে কোনোপ্রকার উত্তর না পেয়ে নিদ্র আবার বলে ওঠে,
–“বলো,কেন আপনি বলো এখনো?”

আমি এবার চোখ বন্ধ করে কারনটা বলেই দেই।নিদ্র ৩সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে তারপর হো হো করে হেসে ওঠে।তার পাগলের মতো হাসার কারন আমি বুঝতে পারি না।নিদ্র হাসতে হাসতে আমাকে বলে,
–“তারমানে তোমার মনের কথা তোমার মুখ শোনে না।এটা বলতে চাইছো?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বলি হ্যা।নিদ্র হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায়।তারপর অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে শুরু করে।আমি এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছি।নিদ্র রেডি হয়ে আমাকে নিয়ে নিচে নেমে আসে।আগে থেকেই ব্রেকফাষ্টের টেবিলে বসে আছে বাবা-মা।আমরা বসতেই আমাদের দিকে নাস্তা এগিয়ে দেয় মা।আমি নাস্তা খেতে শুরু করলেই বাবা-মা একসাথে বলে ওঠে,
–“মিহিমা আমরা দুঃখিত।আসলে তোমাকে ওভাবে বলা ঠিক হয়নি।পরে নিদ্র আমাদের সব বলেছে।তুমি কিছু মনে করো না।”

আমি বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে তারাতারি করে বলি,
–“না না,কি মনে করবো আবার?”
মা এবার মুচকি হেসে আরো নাস্তা দেন আমার প্লেটে।নিদ্র নাস্তা শেষ করে উঠে দাঁড়ায়।সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হয় অফিসের পথে।এদিকে ব্রেকফাষ্ট শেষ করে মায়ের সাহায্য নিয়ে রুমে পৌছাই আমি।মা আমাকে রুমে নামিয়ে দিয়ে বের হতে ধরলে আমি মাকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“মা,একটা কথা বলতাম?”

মা মুচকি হেসে ঘুড়ে আসে আমার দিকে।তারপর আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত রেখে বলে,
–“বল মা!”
আমি কিভাবে বলবো বুঝতে পারিনা?তারপর চোখ বন্ধ করে বলি,
–“মা,নিদ্র বলেছে সে আর কখনো আমাদের বাসা যাবে না।আর যদি যায়ও তাহলে সাথে সাথে তার মৃত্যু হবে।এখন কি করবো মা?”

আমার কথা শুনে বেশ চমকে ওঠে মা।সাথে সাথে বলে ওঠে,
–“ও যদি এই ওয়াদা করে থাকে তাহলে তাকে নিয়ে যাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব না।আমরাও তাকে বলতে পারবো না কারন ছোটবেলা থেকে সে শিক্ষা পেয়েছে ওয়াদা করলে কখনো তা ভাঙ্গা যায় না।এতে আমি সাহায্য করতে পারছি না মা।”
এই বলে মা রুম থেকে বের হয়ে যায়।আমি বেশ চিন্তায় পড়ে যাই কি করবো?মনে হয় না পারবো নিদ্রকে আমাদের বাসা নিয়ে যেতে।

নিদ্রকে ছাড়া সময় গুলো কাটতেই চাচ্ছে না।১মিনিটকে ১ঘন্টা মনে হচ্ছে।শুয়ে শুয়ে বেশ বিরক্ত হয়ে গেছি আমি।নিজের নকিয়া ১২০০মোবাইলটা বের করে সাপ গেম খেলতে শুরু করি।সেখানে বারবার মারা যাওয়ার কারনে বেশ বিরক্ত হয়েই বন্ধ করে দেই।চোখ দুটো বেশ ঘুমে জড়িয়ে এসেছে।বালিশে হেলান দিতেই বন্ধ হয়ে যায় চোখ দুটো।ঘু‌মিয়ে পড়ি আমি।বাহিরে কি হচ্ছে জানতে পারে না আমার মন,মস্তিস্ক।ঘুমরাজ আমাকে নিয়ে চলে গেছে তার নিজ শহরে।

কারো দরজা খোলার আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি নিদ্র।চোখে ঘুম ভাব থাকার কারনে নিদ্রকে দেখতে পারলেও তার জামায় লেগে থাকা রক্ত গুলো দেখতে পারিনি।যখন নিদ্র আমার কাছে চলে আসে তখন তার জামায় রক্ত দেখে বেশ চমকে উঠি আমি।তড়িঘড়ি করে উঠে বসে ভালোভাবে দেখতে শুরু করি নিদ্রকে।সাদা শার্ট রক্তে লাল হয়ে আছে।আমি এবার ফ্যালফ্যাল করে তাকাই নিদ্রের দিকে।নিদ্র ধপ করে বসে পড়ে আমার পাশে।আমি নিদ্রের কাধে হাত রেখে বলি,

–“কি হয়েছে?তোমার শার্টে রক্ত কেন?”

নিদ্র ২সেকেন্ড ধরে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর দুহাত দিয়ে কপাল চিপে ধরে বলে,
–“অনিক তার প্রাপ্য শাস্তির থেকে অনেক বড় একটা শাস্তি পেয়েছে।”

আমি কিছু বুঝতে না পেরে নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“খুলে বলো তো!”
নিদ্র এবার বলতে শুরু করে,
–“আমি অফিস থেকে ফিরছিলাম,এমন সময় অনিককে দেখতে পাই।তার প্রতি একরাশ রাগ আগে থেকেই জমা ছিল আমার।আ‌মি গাড়ি সাইট করে তাকে ডাকি।সে আমার ডাক শুনে দৌড়াতে শুরু করে।দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে একটা গাড়ির সামনে।ব্যাস বিদায় নিয়ে নেয় দুনিয়া থেকে।সত্ত্যি খুব খারাপ লাগছে।খুব,যদিও তার প্রতি আমার অনেক রাগ তবুও খারাপ লাগছে।”

আমি বুঝতে পারি এখন নিদ্রের খারাপ লাগাটা ভালোবাসার টান।উপরে উপরে যতই ঘৃণা করুক মনে মনে ঠিকই টান ছিল।আমি আবার নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“তার লাশটা কি করলে?”
নিদ্র উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াসরুমে যেতে যেতে বলে,
–“পুলিশ নিয়ে গেছে।রোড এক্সিডেন্ট তাদের সন্দেহ হয়েছে তাই নিয়ে গেছে।শোনো এই কথাটা বাবা-মাকে বলবে না।”

আমি নিরবে মাথা নাড়িয়ে হা বলি কিন্তু আমার হা বলাটা নিদ্র দেখতে পায় না।সে তার আগেই ওয়াসরুমে প্রবেশ করে।আমি পুনরায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ি।অনিকের জন্য একটু খারাপই লাগছে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে একপর্যায়ে।নিদ্র আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।আমি নিদ্রের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছি আবার সাজিয়েও দিচ্ছি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“সবকিছুই আছে আমাদের জীবনে শুধু একটা জিনিসই নেই?তাইনা?”

আমি বুঝতে পারছি নিদ্র কিসের কথা বলছে।আমি সেই প্রসঙ্গে না গিয়ে তাকে বলি,
–“তুমি কি আমাদের বাসা যাবে?”
সাথে সাথে নিদ্র উঠে বসে।আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
–“আমি ওয়াদা ভাঙ্গার ছেলে না।”
এই বলে সে উঠে দাঁড়ায়।আমি তার হাতটা টেনে ধরে বলি,
–“আমাদের যেটা নেই সেটাকে আনতে হবে না।এভাবে চলে গেলে হবে নাকি?”

নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবার কোলে শুয়ে পড়ে।তারপর বলতে শুরু করে,
–“শোন,ওয়াদা ভঙ্গ করা ঠিক নয়।মহানবী (সাঃ) ওয়াদা ভঙ্গ কারীদের ঘৃণা করতেন এবং এখনো করেন।নবিজী (সাঃ) বলেছেন,-“আমার উম্মতের মধ্যে ওই ব্যাক্তি সবচেয়ে জঘন্য যে ওয়াদা দিয়ে ওয়াদা ভঙ্গ করে।”

আমি একবার ওয়াদা দিয়েছি সেটা কখনো ভঙ্গ করবো না।নিদ্রের কথা শুনে বেশ খুশি হই আমি।এই খুশির কারনটা কি জানা নেই?নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“শুরু করি মিশন!”
আমি বেশ লজ্জা পেয়ে বলি,
–“হু”

সমাপ্ত‌..

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-১৪

0

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#১৪তম_পর্ব

“হ্যালো গাইস,আজকের পার্টিটার মূল উদ্দেশ্য হয়তো সবাই জানেন না।সবাইকে বলে রাখছি আজকের পার্টিটার মুল উদ্দেশ্য আমাদের ডিবোর্স।”নিদ্র এই কথাটা বলার সাথে সাথে উপস্থিত সব মানুষই অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকায়।নিদ্র সবার তাকানো দেখে মুচকি হেসে বলে,
–“সবাই অবাক হচ্ছেন এই ভেবে,বিবাহের জন্য পার্টি হয়,বাচ্চার ভাতমুখে পার্টি হয় কিন্তু ডিবোর্সের জন্যও পার্টি।হুম,ডিভোর্স পার্টি।আজকের এই পার্টটার মধ্যে দিয়ে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখাবো আমি।বড় বড় করে লেখা থাকবে নিদ্র চৌধুরীর নাম।”

নিদ্রের কথা শুনে এখন তাকে সম্পুর্ন পাগল মনে হচ্ছে আমার।শুধু আমার না,স্টেজের নিচে বসে থাকা কিছু মানুষও যে তাকে পাগল ভাবছে সেটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছেনা আমার।আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকাই।নিদ্রও আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিচ্ছি,তারপর তুমি দেবে।”
আমি কি বলবো উত্তর খুঁজে পাই না।বাবা যে একটা পাগলের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে একটু।স্টেজের নিচের মানুষগুলো{২০-২১জন হবে}তারা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মাথা নাড়িয়ে বলি,
–“ওকে”

নিদ্র এবার একটা কাগজ আমার দিকে এগিয়ে দেয়।কাগজটার প্রথমেই বড় বড় করে লেখা আছে, ‘ডিভোর্স পেপার’

নামটা দেখে আমি রীতিমতো ভরকে যাই।নিজের অজান্তে চোখের কোণে পানি চলে আসে।সাথে মনের মধ্যে বাসা বাধে একরাশ সন্দেহ।হুম সন্দেহ।আমি বেশ অবাক হয়ে পেপারটার পাতা গুলো ওল্টাতে থাকি আর নিদ্রের দিকে তাকাতে থাকি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।আমার সন্দেহের কারণ হলো,আমার সামনে আমার অফিস কলিগের ডিবোর্স হয়েছিল এবং সেই পেপারটা আমি দেখেছিলাম।সেখানে এত বড় বড় করে ডিভোর্স শব্দটা লেখা থাকেনা।আমি এবার বেশ মনোযোগ সহকারে পরতে শুরু করি পেপারগুলো।স্টেজের নিচের মানুষগুলো উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

পেপার গুলোতে লেখা আছে,

‘ডিবোর্স পেপার’
**এতদ্বারা জনাবা মিহিমা চৌধুরীকে জানানো যাচ্ছে যে,আজ থেকে নিদ্রের চৌধুরীর সাথে তার সম্পর্ক আরো গভীর হলো।নিদ্র চৌধুরীর সবরকম বায়না,আবদার রাখিতে বাধ্য হইবে মিহিমা চৌধুরী।ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক লেখা ছিল।

শেষ পৃষ্টায় সবার নিচে লেখা ছিল দুজনের স্বাক্ষর।সেখানে নিদ্রের সাইন দেয়া আছে।আমি মাথা তুলে নিদ্রের দিকে তাকাই।তারপর এক এক করে তার বাবা মায়ের দিকে।সবার মুখে চওড়া হাসি বিরাজ করছে।আমার চোখে আনন্দের অশ্রু বইতে শুরু করে।আমি সাথে সাথে সাইন করে দেই পেপারটাতে।স্টেজের নিচের সবাই ভাবে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেল।নিদ্র মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

–“গাইস,আপনারা ভাবছেন আমাদের ডিবোর্স হয়ে গেল কিনা।তাদের সন্দেহ দুর করার জন্য আমি এখন সবার সামনে মিহিকে প্রপোজ করবো।”
নিদ্রের কথা শুনে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।এতটা বেলজ্জ মানুষ কেমনে হয়।নিদ্র ভারিক্কি চাল নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে হাটুগেরে বসে পড়ে।আমার দিকে একটা ডায়মন্ডের রিং এগিয়ে ধরে বলে,
–“সারাজীবন আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে রাজি আছো তুমি?”

আমার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে শুরু করে।মুহুর্ত দেরি না করে জড়িয়ে ধরি নিদ্রকে।নিদ্রও আমাকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলে,
–“পাগলি বউ আমার,কান্না করো কেন?”
আমি কোনো কথা না বলে তাকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতেই থাকি।সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টি আমাদের দিকে।অনেকেতো ছবি তুলা নিয়ে ব্যাস্ত।

এই মুহুর্তে স্টেজের নিচ থেকে কেউ একজন একটা ব্যাগ ছুড়ে মারে আমাদের দিকে।ব্যাগ থেকে কিছু ছবি বেড়িয়ে আছে।নিদ্র আমাকে ছাড়িয়ে দিয়ে কৌতুহল নিয়ে ব্যাগটা তুলে নেয়।তারপর ছবি গুলো বের করে দেখতে থাকে এক এক করে।আমি লক্ষ্য করছি,নিদ্র যত ছবিগুলো দেখছে ততই তার চোখ লাল টকটকে রং ধারণ করছে।তার এই অবস্থা দেখে বেশ ভয় পেয়ে যাই আমি।কি আছে ছবিগুলোতে দেখার জন্য আগ্রহ জন্মায় আমার মধ্যে।

ছবি গুলো দেখা শেষ করে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকায় নিদ্র।তার কাছ থেকে ছবিগুলো নিজের দখলে করে নেই আমি।তারপর এক এক করে ছবিগুলো দেখতে শুরু করি।ও মাই গড,এগুলো কি?আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।কখন এসব হলো?কিভাবে হলো?ছবিগুলো দেখা যাচ্ছে অনিক আমার উপরে শুয়ে আছে।পরের ছবিটাতে আমি অনিকের গালে চুমু খাচ্ছি।আমি বুঝতে পারছি না এসব কীভাবে হলো?ছবিগুলো দেখে আমার মাথা ঘুড়তে শুরু করে।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না আমি।ঢলে পড়ে যাই পিছনে থাকা চেয়ারটার মধ্যে।

জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আবিষ্কার করি নিজের রুমে।চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকি দেখি আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে নিদ্র,তার বাবা-মা।সবার চোখের মধ্যেই রাগ স্পষ্ট।আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকাই সবার দিকে।আমার তাকানো দেখে রুম থেকে বের হয়ে যায় নিদ্রের বাবা-মা।নিদ্র ধপ করে বসে পড়ে সোফায়।সে আমার দিকে তাকাচ্ছেনা একবারের জন্যেও।আমি খানিকটা ভয় নিয়ে নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি,

–“একটা কথা বলবো শুনবেন?”

আমার এই কথাটা নিদ্রের পুষে রাখা রাগগুলো বের করে আনে।নিদ্র বেশ রেগে সাথে চিল্লিয়ে বলে,
–“কি বলবে তুমি?কি বলবে?ছি আমি ভাবতে পারছি না এসব।তোমরা দুজন যদি এরকমই তাহলে আমাকে মাঝে টানলে কেন?কেন..”
তাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি উঠে বসে কান্না শুরু করে দেই।আমার কান্না নিদ্রের রাগ হালকা কমিয়ে দেয়।আমি কান্না করতে করতে বলি,
–“আমার কথাটাতো শুনেন!”

নিদ্র ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
–“কি,বলো?”
আমি এবার নিদ্রকে সব বলে দেই অনিক এসে কিভাবে আমাকে অজ্ঞান করেছিল।যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে কেমন অবস্থায় আবিষ্কার করি সব।আমার কথা শুনে নিদ্রের মধ্যে এক অন্যরকমের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই।নিজের ভাইকে বিশ্বাস করবে নাকি বউকে।তার চেয়ে বড় কথা অনিক কক্সবাজারে আসলো কেমনে।কিন্তু ছবিগুলাও তো এই রুমের মধ্যেই তোলা।নিদ্র বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।কি করবে ভাবতে শুরু করে মনোযোগ সহকারে?

একপর্যায়ে নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“তোমার কথা মিথ্যা হলে,এবার আর ডিবোর্স থেকে রক্ষা পাবে না।”

এই বলে নিদ্র সারা রুমটায় কি যেন খুঁজতে থাকে।একপর্যায়ে তার চোখ আটকে যায় কোণের সিসি ক্যামেরাটার দিকে।সে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।আমি একটু চিন্তায় পড়ে যাই এই ভেবে যে,অনিক যদি ম্যানেজারকে টাকা খাইয়ে সেই সময়ের ফুটেজটা ডিলিট করে দেয় তাহলে আমি শেষ।আর না দিলে তো বেশ।বেশ চিন্তায় পড়ে যাই আমি।কি হবে?শেষ হবো না বেশ থাকবো???

চলবে..

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-১২+১৩

0

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#১২তম_পর্ব

নিদ্রের কথা শুনে আমি তাকে সড়িয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ি।নিদ্রও আর কোনো কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়ে।কিছুক্ষন আগে বিরাট একটা ঘুম হওয়ার কারনে সহজে ঘুম চোখে ধরা দিতে চাচ্ছেনা।আমার প্রবলেম এটা,এই প্রবলেমটা কি নিদ্রেরও হচ্ছে,নাকি সে ঘুমিয়ে পড়েছে?এই ভাবনা আমার মাথায় বেশ ভালোভাবেই চেপে বসে।শেষ পর্যন্ত আমি উঠে বসে পড়ি নিদ্র ঘুমিয়েছে কিনা জেগে আছে দেখার জন্য।আ‌মি টের চোখে তাকাই নিদ্রের দিকে।সাথে সাথে নিদ্র উঠে বসে পড়ে।তার এভাবে বসে পড়ায় আমি বেশ চমকে উঠি।আমাকে এভাবে চমকে উঠতে দেখে নিদ্র হেসে ফেলে।মনের ভয় দূর করার জন্য আমি বুকের মধ্যে আলতো করে থু থু দেই।আমার কান্ড দেখে নিদ্র হো হো করে হেসে ওঠে।সে হাসতে হাসতে বলে,

–“তোমারও কি ঘুম আসছে না আমার মতো?”

আমি মাথা নাড়িয়ে হা বলি শুধু।নিদ্র এবার আমার দিকে ঝুঁকে নিজের গালে হাত রেখে বেশ চিন্তিত ভাব নিয়ে বলে,

–“এখন কি করা যায় বলোতো?”
আমি মাথা নাড়াই শুধু।এর একটা উত্তর যে আমি কিছু জানিনা।নিদ্র আমার মাথা নাড়ানো দেখে বলে,
–“চলো ছাঁদে যাই।কি বলো?”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না?আমার ভাবনাটা ধরে ফেলে নিদ্র।সে তার হাত নাড়িয়ে বলে,
–“চিন্তা করার কারন নেই,আমি কোলে করে নিয়ে যাব।”
তার কথায় খুশি হতে পারিনা তবে বেজারও না।নিদ্র উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে কোলে তুলে নেয়।হঠাৎ সবকিছু হয়ে যাওয়া বেশ অপ্রস্তুত ছিলাম আমি।সেই ঝোক সামলাতে বেশ সময় লাগে আমার।ততক্ষনে আমাকে নিয়ে ছাদে চলে আসে নিদ্র।সে আলতো করে আমাকে দোলনায় বসিয়ে দেয়।তারপর ধপ করে নিজে বসে পড়ে।

জ্যোৎনা রাত থাকার কারনে চারদিকের সবকিছু উজ্জলই দেখাচ্ছিল।নিদ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনের আকাশটার দিকে।আমার দৃষ্টি কিন্তু আকাশের দিকে নয়,আকাশের চাদঁটার আলো যেখানে পড়ছে সেদিকে।মানে আমার দৃষ্টি নিদ্র সাহেবের মুখটার দিকে।নিদ্র এবার আমার দিকে ঘুরে বসে।হঠাৎ এভাবে ঘুরে বসায় আমি খানিকটা চমকে উঠি।তারপর নিজেকে ঠিক করে নেই মুহুর্তের মধ্যে।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–“মিহি আজকে রাতটা অনেক সুন্দর তাই না?”

আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হা বলি কিন্তু মুখে কোনো কথা বলি না।আসলে এখন নিদ্রের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করেনা আমার।সবসময় ডিবোর্সের কথাটা মাথায় আসে।নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,

–“দুইদিন পর ঠিক এরকম একটা রাতেই আমরা দুজন দুজনের থেকে আলাদা হবো।চিরজীবনের জন্য আলাদা হয়ে যাব।কেমন লাগবে তোমার?আমাকে মিস করবে না?”

নিদ্রের এমন প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।তার প্রশ্ন শুনে আমি থতমত খেয়ে যাই।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে আমতা আমতা করে বলি,

–“কর-বো মি-স।অ-অ বস্যই করবো।”

নিদ্র সন্দেহ চোখে আমার দিকে তাকায়।তারপর ভ্রু-কুঁচকে বলে,

–“তু‌মি থোতলাচ্ছো কেন?”
আমি আমতা আমতা করে আবার বলি,
–“কই না-নাতো?তোমার শুনতে ভুল হচ্ছে।”

নিদ্র এবার ঝুঁকে আমার বেশ কাছে চলে আসে।আমি খানিকটা ভয় পেয়ে যাই হঠাৎ এরকম কাছে আসার কারনে।নিদ্র ভ্রু-নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

–“তুমি আমাকে তুমি করে বলছো কখন থেকে?দেখ এখন এসব বলে লাভ নেই।তারচেয়ে তুমি আমাকে ভাইয়া বলে ডাকিও!”

নিদ্রের কথা শুনে আমি সাথে সাথে চিল্লিয়ে বলি,
–“ভাইয়া”
নিদ্র তার ডান হাতটা দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে বলে,
–“হুম ভাইয়া।কয়েকদিন পরই আমরা আলাদা হয়ে যাব।বলতে গেলে ‌এখনি হয়েছি শুধুমাত্র সাইনটার কারনে হচ্ছি না।সো আগে থেকেই প্রাকটিস করো ভাইয়া ডাকার।পরে সহজ হবে।মনে রাখবে,প্রাকটিস মেকস অ্যা ম্যান পারফেক্ট।”

আমি এবার এক ঝটকায় তার হাতটা সড়িয়ে দেই।তারপর বেশ রেগেই বলি,
–“ফাজলামি শুরু করছেন,নিজের বরকে কেউ ভাইয়া ডাকে।পাগল হয়ে গেছেন আপনি।অন্যকেউ এই কাজ করতে পারলেও আমি পারবো না।”
এই বলে আমি উঠে দাঁড়াতে যাই।আমার যে একটা পা অকেজো সেটা ভুলেই গেছিলাম সেই সময়ে।ফলস্বরুপ ধপাস করে পড়তে গিয়ে বেঁচে যাই।নিদ্র নামক ব্যাক্তিটা তার শক্ত হাত দিয়ে আমাকে চেপে ধরেন।তারপর নিমিষে কোলে তুলে নেন আমাকে।

আমি তার দিকে তাকিয়ে বেশ লজ্জা পাই।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে,
–“রাগলে হুস,জ্ঞান সব কোথায় চলে যায় তোমার?এখনি পড়ে গেলে কি হতো?ও মাই গড,কত বড় বড় নখ।এখনি কেটে দিচ্ছি চলো‌..”

আমি এবার তাকে থামিয়ে দিয়ে বলি,
–“কিন্তু রাতে তো নখ কাটা যায় না।আমার দাদুমা বলতো রাতে নখ কাটলে গরীব হয়।”
নিদ্র আ‌মার দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়।তারপর হাটতে হাটতে বলে,
–“এসব কথা বাদ দাও তো।এখনকার চিন্তা করো,এই নখগুলো না কাটলে যদি কাউকে লাগে তার কত বড় ক্ষত হবে বুঝতে পারছো?”
আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হা বলি।নিদ্র আমাকে নিয়ে রুমে পৌঁছায়া।তারপর আস্তে করে আমাকে বিছানার উপর বসিয়ে দিয়ে নিজে বাহিরে যায়।আ‌মি এক দৃষ্টিতে সেই দিকেই তাকিয়ে থাকি।ছেলেটার মনে কি চলছে আল্লাহই জানে।কাল বাদে পরশু আলাদা হবো জেনেও কিরকম ব্যবহার করছে।সে কি বুঝতে পারছে না আমি আস্তে আস্তে তার প্রতি আরো দুর্বল হচ্ছি।

এই মুহুর্তে নিদ্ব একটা নেইলকাটার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।তারপর আমার সামনে এসে বসে পড়ে সে।আলতো করে আমার পা-টা নিজের কোলে তুলে নেয়।আর আঘাতপ্রাপ্ত পা-টা সড়িয়ে রাখে সে।তারপর গভীর মনোযোগ দিয়ে এক এক করে নখ কেটে দিতে শুরু করে।নিদ্র নখ কাটছে আর আস্তে আস্তে করে গান গাইছে।আমি টের চোখে তার দিকে তাকাই।এমন সময় বেজে ওঠে নিদ্রের ফোনটা।

নিদ্র বেশ বিরক্ত হয়ে ফোনটা তুলে নিয়ে কড়া গলায় বলে,
–“হ্যালো,কে বলছেন?”
ওপাশ থেকে কি বলে কিছুই শুনতে পারি না আমি।নিদ্র এবার আমার পা-টা নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায়।আমি এবার সরাসরি তাকাই তার দিকে।নিদ্র রুমে হাটতে হাটতে বলে,
–“ওকে,আমরা কালই রওনা দিব।৫টা টিকিট ম্যানেজ করো তুমি।”
এই বলে নিদ্র ফোন কেটে দিয়ে আমার দিকে তাকায়।আমি তার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বলি,
–“এতরাতে কাকে টিকিট কাটতে বললেন?”
নিদ্র পুনরায় আমার নখ কাটতে কাটতে বলে,
–“কক্সবাজার যাওয়ার টিকেট।কালকেই রওনা দিব।এখন ঘুমাও.!”

এই বলে নিদ্র আমার পা-টা নামিয়ে দিয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়ে।কিছুক্ষনের মধ্যে আমার চোখে ঘুম চলে আসে।ঘুমিয়ে পড়ি আমি।জানিনা নিদ্র কি করছে?ঘুমাচ্ছে নাকি না।

পরেরদিন সকালবেলা সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।নিদ্রের মা আমাকে রেডি করিয়ে দিয়ে যান।নিদ্র আমাকে ধরে নিয়ে যায় গাড়ি অবদি।কালকে মেডিসিন খেয়ে শোয়ার কারনে আজকে একটু হাটতে পারছি।এক এক করে সবাই বসে পড়ে গাড়িতে।চলতে শুরু করে গাড়ি।গাড়ি যতই এগোচ্ছে তত আমার মনের মধ্যে ভয় বাড়ছে।ডিবোর্সটা তাহলে সত্ত্যিই হচ্ছে??

চলবে..

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#১৩তম_পর্ব #{ডিবোর্স হবে কিনা}

গাড়ি যতই এগোচ্ছে ততই বুকের ভিতরের ভয়টা প্রখর হচ্ছে।নিদ্র একমনে ড্রাইভ করে চলেছে।তার পাশে বসে আছে তার বাবা।কারের পিছনে আমি আর মা।একপর্যায়ে আমরা এসে পৌঁছাই এয়ারপোর্টে।কিছুক্ষন পর সেখানে উপস্থিত হয় রুশা।সবাই একসঙ্গে উঠে পড়ি প্লেনের মধ্যে।কিছুক্ষনের মধ্যেই প্লেন রওনা হয় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।প্লেনে আমার আর নিদ্রের সিটটা পাশাপাশি।আমাদের সামনের সিটটাতে বসে আছে নিদ্রের বাবা-মা।তার সামনে রুশা ও একটা মেয়ে।মেয়েটাকে আমরা চিনিনা কেউই।

একপর্যায়ে নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“কেমন লাগছে?বাসে আসলে সম্পুর্ন একদিন লাগতো,আবার কষ্টও বেশি।তাই প্লেনের টিকিট কাটছি।টাকা যাক কিন্তু কষ্টটা কম হবে।ভালো না!”
আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হা বলি মুখে কোনো কথা বলি না।সত্ত্যি বলতে খুব খারাপ লাগছে আমার।মাথাটা ব্যাথা করছে প্রচুর পরিমাণে।মনের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করছে।আমি নিদ্রের দিকে না তাকিয়ে বলি,
–“ডিবোর্সের পর কি আমাকে সেখানেই রেখে চলে আসবেন?নাকি আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এসে পাঠিয়ে দিবেন?”

নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–“নিয়ে আসবো!তোমার জামা-কাপড় গুলা আছে না।সেগুলো নিয়ে পাঠিয়ে দেব।”
আমি নিদ্রের মুচকি হাসিটা দেখার জন্য তার দিকে ঘুরে বসতে চেষ্টা করি কিন্তু সিটবেল্টটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।নিদ্র আমার অবস্থা দেখে বলে,
–“পার্টিটা বেশ বড়ই হবে বুঝলে।নিদ্র চৌধুরীর ডিবোর্স পার্টি বলে কথা,একটু আলোকসজ্জা না হলে চলে বলো?”
আমি মাথা ঘুড়িয়ে চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকি।নিদ্র আমার তাকানো দেখে শুধু একটা হাসি দেয়।আমি মাথা ঘুড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকি।

দেখতে দেখতে কক্সবাজারে পৌঁছে যাই আমরা।সবার সামনে সিট থাকায় সবার আগে প্লেন থেকে নামে রুশা।তারপর নিদ্রের বাবা-মা।তারপর নিদ্র আমাকে ধরে আস্তে করে নামায় প্লেন থেকে।নিদ্রের বাবা একটা গাড়ি ডাকে।আমরা সবাই গাড়িতে উঠে বসি।গাড়ি এসে নামিয়ে দেয় একেবারে হোটেলের সামনে।আগে থেকে হোটেল বুক করে রাখার কারনে কোনো প্রকার সমস্যা হয় না নতুন করে।

একজন লোক আমাদের রুম দেখিয়ে দেয়।সবচেয়ে বেশি অবাক হই আমার আর নিদ্রের রুম আলাদা দেখে।নিদ্র আমাকে আমার রুমে রেখে নিজের রুমে চলে যায়।রুশা চলে যায় নিজের রুমে।রুশার সাথে কথা বলে জানতে পারি,তার বর আসবে কালকে।নিদ্র তার রুম থেকে কাপড় চেঞ্জ করে আমার রুমে চলে আসে।আমি বিছানায় শুয়ে ভাবছি,সত্ত্যি তাহলে ডিবোর্সটা হচ্ছে।নিদ্র এসে আমার সামনে বসে পড়ে।একই সাথে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্রের বাবা-মা।সবার শেষে নিদ্রের বাবা ভিতরে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।তারপে তারা দুজন এক এক করে বসে পড়ে সোফায়।

আমি শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ি।নিদ্র পা তুলে বিছানার উপর বসে পড়ে।নিদ্রের বাবার নজর মেঝের দিকে কিন্তু তার মায়ের নজর নিজের ছেলের দিকে।নিদ্র এবার তার বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“বলো কি বলবে?”
সাথে সাথে নিদ্রের বাবা বলে ওঠে,
–“মিহি মা,আমাদের সত্ত্যিই খুব খারাপ লাগছে।নিদ্র আমাদের বলেছে পার্টিটা কিসের।দেখ,তোমাদের সংসার তোমরা করতে না চাইলে আমরা কি করবো বলো?নিদ্র তোমার সাথে থাকতে চায় না।তাই ডিবোর্স দিচ্ছে।আমরা দুঃখিত তোমার জীবনটা নষ্ট করার জন্য।”

একই কথা বলে নিদ্রের মাও।তিনি আমার গলায় একটা সোনার হার পড়িয়ে দেন।তারপর আমার কপালে চুমু খেয়ে বলেন,
–“তোকে নিজের মেয়ে মনে করতাম।কিন্তু..”
আমি তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলি,
–“থাক,মা।আমিও তোমাকে নিজের মা মনে করতাম।মায়ের অভাবটা তোমাকে দিয়ে মেটাতে চেয়েছিলাম,কিন্তু সেটা আমার কপালে নেই।”

নিদ্রের মা আর বাবা দুজনে রুম থেকে বের হয়ে যায়।নিদ্রও বের হয়ে যায় রুম থেকে।বের হওয়ার আগে বলে যায়,
–“আমি ওদিকটা দেখছি,তুমি রেডি থেকো।”
আমি যতই নিদ্রকে দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।ডিবোর্সের সময়ও এতটা খুশি সে।নিদ্রের বাবা-মায়ের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।আমার জীবনটা নষ্ট করে এখন সরি বলছে।আমি বিছানায় শুয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলতে থাকি।মনের মধ্যে অনেক কষ্ট ভীড় জমিয়েছে।বুকটা চিনচিন ব্যাথা করছে।আমি মাথা তুলে পায়ের ব্যান্ডেজটার দিকে তাকাই।তারপর শোয়া থেকে আস্তে করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।প্রথম চেষ্টা আস্তে করে দাঁড়াতে পারি।অনেক কষ্টে এক পা খুঁড়িয়ে ব্যালকনিতে যাই।ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারটায় বসে পড়ি ধপ করে।এতক্ষন আরাম করে বসে থাকা বুলবুলিটা উড়ে যায় ব্যালকনির কাছ থেকে।যাবার সময় কিচিরমিচির করে আমাকে অভিশাপ দিয়ে যায় তার আরাম নষ্ট করার কারনে।

আমি একপানে তাকিয়ে থাকি খোলা আকাশটার দিকে।উপরে নীল আকাশ নিচে সমুদ্র।হঠাৎ আমার চোখ আটকে যায় একটা জায়গায়।নিদ্র কিছু লোককে দিয়ে কাজ করাচ্ছে।আমি সেদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পুনরায় তাকাই আকাশের দিকে।নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি চলে আসে।

হঠাৎ রুমে কারো উপস্থিতি টের পাই।ঝট করে মাথা ঘুড়িয়ে সেদিকে তাকাই।রুমের ভিতরে প্রবেশকারী ব্যাক্তিটিকে দেখে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায় আমার।অনিক…

অনিক দরজাটা বন্ধ করে দেয়।আমি চোখের পলকে উঠে দাঁড়াই চেয়ার থেকে।হঠাৎ উঠে দাঁড়ানোর কারনে প্রচন্ড ব্যাথা পাই পায়ের মধ্যে।নিজেকে সামলাতে না পেরে মেঝেতে পরে যাই।পলকের মধ্যে আমার সামনে এসে দাঁড়ায় অনিক।আমি উঠে দাঁড়ানোর আগেই আমার নাকে একটা রুমাল চেপে ধরে অনিক।মুহুর্তের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আমি।তারপর আমার সাথে কি হয়েছে মনে নেই?

যখন জ্ঞান ফেরে নিজেকে বিছানার উপর আবিষ্কার করি আমি।নিজের কাপড়-চোপড় সবকিছু ঠিকঠাকই রয়েছে,তাহলে অনিক আমার সাথে কি করলো?দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি দরজা খোলা রয়েছে।আমি বিছানায় শুয়ে থাকি সেই অবস্থায়।এমন সময় রুমে প্রবেশ করে নিদ্র আর রুশা।নিদ্র ভ্রু-কুচকে তাকায় আমার দিকে।তার তাকানো দেখে ভয় পেয়ে যাই আমি।আমার ভয় পাওয়া দেখে নিদ্র হো হো করে হেসে ওঠে।তারপর রুশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“রেডি করো তুমি।”

রুশা এসে আমাকে রেডি করতে শুরু করে।আমি রুশার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আচ্ছা পার্টিটা কালকে হওয়ার কথা ছিল না?”
রুশা মাথা নাড়িয়ে না বলে।আমি চুপ হয়ে বসে থাকি।রুশা আমাকে সাজাতে থাকে।আমার মনের মধ্যে একটাই চিন্তা অনিক আমাকে অজ্ঞান করে কি করলো?রুশা আমাকে রেডি করে নিদ্রকে ফোন দেয়।নিদ্র এসে আমাকে নিয়ে বের হয় রুম থেকে।আমরা পৌঁছে যাই সেই স্টেজে।ও মাই গড অনেক লোক এখানে।এত লোক আমি স্বপ্নেও আশা করি নি।

নিদ্র আমাকে বসিয়ে রেখে মাইকের সামনে দাঁড়ায়।সবার উদ্দেশ্যে বলে,
–“গাইস,প্রথমেই আমরা আমাদের আসল কাজটা সেড়ে ফেলবো।আমি ডিবোর্স পেপারে সাইন করছি।ও সাইন করলেই শেষ।”
এই বলে নিদ্র আমার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দেয়।সেখানে বড় বড় করে লেখা আছে,
‘ডিবোর্স পেপার’

চলবে…

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-১০+১১

0

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#১০ম_পর্ব

আমি বেশ চিন্তায় পড়ে যাই।আমার সামনে বসে থাকা নিদ্রও যে চিন্তিত সেটা বুঝতে পারছি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“এই অবস্থায় থাকতে পারবে না?”
আমি সাথে সাথে উত্তর দেই,
–“পাগল নাকি,এই অবস্থায় থাকা যায়।যেভাবেই হোক গোসল করতেই হবে।”

নিদ্র উঠে দাঁড়িয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য রওনা হয়।আমি তাকে পিছন থেকে ডেকে বলি,
–“আচ্ছা মা বাসায় নাই,তাকে ডেকে দিন না!”
নিদ্র স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়,
–“মা-বাবা কেউ‌ বাসায় নেই।বুঝতে পারছি না কোথায় গেছে।”

যেটুকু আশা জন্মেছিল মনে সেটাও উড়িয়ে যায় মন থেকে।আমি পুনরায় চিন্তিত হয়ে পড়ি।‌নিদ্র ঘুরে এসে আমার সামনে বসে বলে,
–“এক কাজ করি,আমি তোমাকে বাথটাবে বসিয়ে দিয়ে আসি পা-টা তুলে দিয়ে।তুমি গোসল শেষ হলে আমাকে ডাকিও আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।”
আমি তার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলি,
–“কাপড় চেঞ্জ করবো কেমনে?”

নিদ্র অন্যদিকে মুখ করে বলে,
–“আমি তো কয়েকদিন পর তোমার স্বামী থাকবো না।আমাদের ডিবোর্স হয়ে যাবে।সো আমি এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারবো না।”
হঠাৎ লোকটা সবকিছু পরিবর্তন হলো কেমনে সেটা বুঝতে পারছি না আমি।সকাল অবদি যে লোকটা আমাকে ভালোবাসতো‌ বিকেলে সে ডিবোর্সের কথা বলছে।আমি অবাক হয়ে নিদ্রকে বলি,

–“আপনি না আমাকে ভালোবাসেন,তাহলে ডিবোর্সের কথা বলতেছেন কেন?”
নিদ্র এবার আমার দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বলে,
–“একপক্ষের ভালোবাসায় সংসার হয় না।সংসার করার জন্য দুজনের ভালোবাসা প্রয়োজন।আমি ভালোবাসি কিন্তু তুমিতো বাসো না।তুমি যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে বলো,গোসল করিয়ে দিচ্ছি।ডির্বোসও দিব না।তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?”

কি উত্তর দিব বুঝতে পারছি না আমি?নিদ্র যে আমাকে ভালো ভাবেই প্যাঁচে ফেলেছে সেটা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি।নিদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।আমার মুখ থেকে কি উত্তর বের হয় সেটা শোনার জন্য চেয়ে আছে আমার দিকে।আমি বেশ চিন্তায় পড়ে যাই কি বলবো?সবশেষে মুখ ফুটে বলি,

–“একটু সময় দেন?”

আমার কথা শুনে নিদ্র দাঁড়িয়ে পড়ে সাথে সাথে।তারপর নরম গলায় বলে,
–“ওকে আমি ছাঁদে যাচ্ছি,এসেই তোমার উত্তর শুনবো।”
আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আমাকে বাথরুমে নামিয়ে দিয়ে যান!”
নিদ্র বের হতে হতে বলে,
–“উত্তর শোনার পরই সব করবো।”

এই বলে হরহর করে রুম থেকে বের হয়ে যায় নিদ্র।সে বের হয়ে যাওয়ার আগে আমাকে বেশ বড়সড় একটা চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়ে যায়।আ‌মি বসে বসে ভাবতে থাকি কি করবো এখন?গোসল করা ছাড়া এই অবস্থায় থাকা অসম্ভব কিন্তু গোসল করতে হলে যে কোন একটা উত্তর দিতেই হবে।

এবার আমি নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করি,
–“আচ্ছা আমি কি নিদ্রকে ভালোবাসি?নাকি না।”
আবার নিজেই নিজেই বলি,
–“অবশ্যই আমি নিদ্রকে ভালোবাসি।প্রথম থেকেই তাকে ভালোবাসি আমি।তার উপর আমি ক্রাশ খেয়েছি প্রথম দিনই।তাকে ভালোবাসি সেদিন থেকেই।মাঝখানের মনের মধ্যে অভিমান জমেছিল।কিন্তু এখন তো সে আমাকে ভালোবাসে।আমিও তাকে ভালোবাসবো তাহলে সংসার টাও নষ্ট হবে না আর কেউ কষ্টও পাব না।আমার উত্তর হবে হ্যা।

আমি এবার নিজের Nokia 1200 ফোনটা বের করে নিদ্রের ফোনে কল দেই।সে কল ধরার সাথে সাথে আমি তাকে নিচে আসতে বলে কলটা কেটে দেই।আর অপেক্ষা করি কখন সে নিচে আসে।এই মুহুর্তে দরজাটা খুলে যায়।ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্রের বড় ভাই অনিক।আমি তাকে দেখে চমকে উঠি।ভিতরে ভিতরে ভয় পেয়ে যাই প্রচুর পরিমাণে।সে দরজাটা লাগাতে ধরলে বাহিরে থেকে কেউ তাকে ঠেলে ফেলে দেয়।বেশ খানিকটা দৌড়ে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্র।অনিক নিদ্রকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

–“তোদের ডিবোর্স কোনদিন?”
নিদ্র কোনো কথা না বলে মুচকি একটা হাসি দেয়।তারপর অনিকের সামনে নিজের হাতটা তুলে বলে,
–“এইতো সামনের মাসে।ওনার পা-টা ভালো হলেই ডিবোর্স।”
নিদ্রের কথা শুনে অনিক হেসে ওঠে।তারপর তার হাতটা নিদ্রের ঘাড়ের উপরে রাখতে ধরলে নিদ্র তার হাতটা ধরে ফেলে।তারপর বেশ চিল্লিয়ে বলে,
–“তোমাকে ভাই হিসেবে মানতাম আমি।কিন্তু আজকের পর থেকে বাবার সাথে সাথে তুমিও আমার কাছে মরে গেছ।এখন থেকে ভাববো আমার কোন ভাই ছিল না।তুমি কিভাবে পারলে নিজের ছোট ভাইয়ের ঘরে খারাপ মতলব নিয়ে ঢুকতে।”

এই বলে নিদ্র অনিককে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয়।তারপর চিল্লিয়ে দারোয়ানকে ডাকে নিদ্র।দারোয়ান আসলে চিল্লিয়ে বলে,
–“তোমাদের এমনি টাকা দেয়া হয় নাকি,অপরিচিত মানুয বাসার ভিতরে ঢুকে কেমনে?আর একবার আসলে তোমাদের দুজনকেই বের করে দেয়া হবে।”
এই বলে নিদ্র চলে আসে।দারোয়ান দুজন তাকে ধরে বাহিরে বের করে দেয়।বাহির থেকে অনিক চিল্লিয়ে বলে,
–“কাজটা ভালো করলি না নিদ্র,তোকে দেখবো আমি।”

নিদ্র কোনো কথা না বলে রু‌মের ভিতরে প্রবেশ করে।আমি ভয় ভয় চোখে তাকাই তার দিকে।আমার ভয় পাওয়া দেখে নিদ্র হো হো করে হেসে ওঠে।তার হাসি দেখে অনেক খানি ভয় চলে যায় আমার মন থেকে।নিদ্র আমার সামনে বসে বলে,
–“বলো এখন?”

আমি চোখ বন্ধ করে বলতে শুরু করি,
–“আমি আপনাকে ভালোবাসি,আপনার সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চাই।আপনি কি আমাকে ভালোবাসবেন সারাজীবন?”
এই বলে আমি চোখ খুলে ফেলি।লজ্জা নিয়ে তাকাই নিদ্রের দিকে।তার উত্তর শোনার জন্য তাকাই তার মুখের দিকে।নিদ্র বেশ শান্ত গলায় বলে,
–“দেরি করে ফেলেছো।ডিবোর্স পেপার রেডি আর আমরা পরশু কক্সবাজারে যাচ্ছি।এই কথাগুলো আগে বললেই আজ এই দিনটা দেখতে হতো না।সরি,দেরি করে ফেলেছো তুমি।”

এই বলে নিদ্র উঠে দাঁড়ায়।আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকাই।কি বলবো বুঝতে পারছি না?ভাবতেও পারছি না এই মুহুর্তে আমার কি বলা উচিত?নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“পার্টিতে আমি আমার সব ফ্রেন্ডকে ইনভাইট করেছি।তুমি কি কাউকে ইনভাইট করবে?”

আমি এবার বেশ রেগে বলি,
–“ফাজলামো করেন আমার সাথে,ডির্বোস দিবেন তাও আবার পার্টি করে।শয়তানির চুড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করছেন আপনি।”
নিদ্র মুচকি হেসে বলে,
–“দেখতে পাবে।”

আমি এবার সত্ত্যি সত্ত্যি ভয় পেয়ে যাই।নিদ্র কি সত্ত্যি সত্ত্যি আমাকে ডির্বোস দিতে চলেছে নাকি?নাকি আমার সাথে মজা করছে।মনে তো হচ্ছেনা মজা করছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বলি,
–“আমি গোসল করবো কেমনে?”
নিদ্র রুম থেকে বের হতে হতে বলে,
–“মা আর রহিমাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
আমি চিল্লিয়ে বলি,
–“আপনি যে বললেন,মা,রহিমা খালা কেউ নেই?”
নিদ্র দরজা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“মিথ্যা বলেছি আপনার উত্তরটা শোনার জন্য।কিন্তু দেরি করে ফেললেন।একমিনিট আগে উকিল কল দিয়ে বললো সব রেডি।বাদ দিন,২দিন পর ডিবোর্স ওকে।”

এই বলে নিদ্র চলে যায়।আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি তার যাওয়ার দিকে।আমার এখনো মনে হচ্ছে সে মজা করছে।ওয়েট রুশাকে ফোন দেই সে জানবে সব কিছু আমার মনে হয়।কিন্তু রুশাকে কল করে এক তাজ্জব খবর পাই।কি করবো এখন বুঝতে পারছি না আমি..

চলবে..

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#১১তম_পর্ব

আমি নিদ্রের প্লানটা সম্পর্কে আগে থেকে জানার জন্য রুশাকে ফোন দেই।কয়েকবার রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ করে সে।আমার নাম্বারটা মনে হয় সেভ করা ছিল তার ফোনে।তাই আলাদা করে পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।রুশার সাথে কথা বলতে শুরু করি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।কথায় কথায় তাকে জানাই আমাদের কক্সবাজার যাওয়ার কথাটা।রুশা আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে,নিদ্রও তাকে কক্সবাজারের পার্টির কথা বলেছে।তবে সেটা কিসের পার্টি সেটা বলেনি।রুশার কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু জানতে পারি না।অবশেষে তাকে বিদায় জানিয়ে ফোনটা কেটে দেই।হতাশ হয়ে বসে থাকি বিছানার মধ্যে।নিদ্রের কথাটা কি সত্য হবে নাকি?

এই মুহুর্তের রুমে প্রবেশ করে মা আর রহিমা খালা।মা আমার সামনে এসে বসে পড়ে।আমার ব্যান্ডেজটার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“কেমন করে হলো এরকম?নিদ্র আমাকে কিছুই বললো না।”
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলি,
–“পড়ে গেছিলাম।সমস্যা নেই ডাক্তার দেখিয়েছি।ডাক্তার বলেছে কয়েকদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
মা সাথে সাথে বলে,
–“তাই যেন

মা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“নিদ্র তো বললো আমরা নাকি কয়েকদিনের মধ্যে কক্সবাজারে যাচ্ছি সবাই মিলে।সেখানে একটা পার্টি হবে।”
আমি খানিকটা আগ্রহ নিয়ে বলি,
–“কিসের পার্টি বলেছে?”
মা মাথা নাড়িয়ে বলে,
–“না,শুধু বলেছে পার্টি হবে।”

এই বলে রহিমা খালাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় মা।আমি হতাশ হয়ে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি।কারো কাছ থেকে কোনো প্রকার তথ্য পাওয়া গেল না।এই মুহুর্তের দরজার কাছে দেখা যায় নিদ্রের চাঁদবদন খানা।আমি তার দিকে তাকিয়ে তাকে পর্যবেক্ষন করতে শুরু করি।সে হাসি মুখে এসে আমার সামনে বসে।আমি তাকে কিছু বলতে যাব তার আগেই সে বলে ওঠে,
–“কোনো প্রকার তথ্য কিংবা উপাত্ত যোগাড় করার দরকার নাই।পার্টিটা ডিবোর্সেরই।আর পরশুই আমরা রওনা হব যদি তোমার পা ভালো হয়।”

আমি এবার জোড় দিয়ে বলি,
–“এখনতো আমি আপনাকে ভালোবাসি,আপনিও আমাকে ভালোবাসেন তাহলে আকাদা হতে চাচ্ছেন কেন?কেন দুজনের ভালোবাসাকেই কবর দিতে চাচ্ছেন?বলেন?আমার কথার উত্তর দেন?”
নিদ্র আমার সব কথা ধৈর্য্য সহকারে শ্রবনকরে এবং বুঝে।তারপর বেশ গম্ভীর গলায় বলে,
–“দেখ,আমিও তোমাকে ভালোবাসি ঠিকই।কিন্তু তুমি তোমার মত জানাতে দেরি করেছে।আমি ডিবোর্সের সব কিছু তৈরি করেছি।তাই সরি।আর সব ভালোবাসাই পূর্নতা পায় না।কিছু কিছু ভালোবাসা অপুর্নই থাকে।”

আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি সে মজা করছে কিনা।কিন্তু তার মুখে সেরকম কোনো চিহ্ন দেখতে পাই না।নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,
–“দুজন দুজনকে ভালোবাসি ঠিকই কিন্তু এখন আর একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়।”
আমি নিদ্রের কথা শুনে অবাকের চুড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করে যাই।পাগল হয়ে গেল নাকি লোকটা।ভালোবাসে বলছে আবার বলছে একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়।আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।নিদ্রও উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“একটুও ঘুমিয়ে নাও আরাম পাবে।”

এই বলে সে শুয়ে পড়ে।আমার এখনো অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।চোখের কোণে পানি চলে এসেছে।আমি বুঝতে পারছি না আমি কেন কাঁদছি।এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা নিদ্র সত্ত্যি সত্ত্যি আমাকে ডিবোর্স দিতে চলেছে।সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে নিদ্রের সেই প্রপোজের দৃশ্যটা।আমি আস্তে করে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ি।নিদ্র কি করতে চলেছে?

এসব ভাবতে ভাবতে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ি আমি।নিদ্রের গা ঝাঁকানিতে ঘুম ছুটে যায় চোখ থেকে।আমি চোখ খুলে দেখি নিদ্র একটা ভাতের প্লেট নিয়ে আমার সামনে বসে আছে।আমি আস্তে করে উঠে বসি।নিদ্র আমার মুখের সামনে ভাতের নোকমা ধরে বলে,
–“খেয়ে নাও,ঔষুধ খেতে হবে।”
আমি নিদ্রের এগিয়ে দেয়া নোকমাটা মুখে না নিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বলি,
–“কয়েকদিন পরই তো দুজনে আলাদা হয়ে যাব,তাহলে আমাকে এত মায়ায় জড়াচ্ছেন কেন?কেন নিজের প্রতি এত আকৃষ্ট করাচ্ছেন?”

আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে নিদ্র।আমি অবাক হয়ে তার হাসির কারন বোঝার চেষ্টা করি।নিদ্র তার নোকমাটা আমার দিকে থেকে সড়িয়ে প্লেটে রাখে।তারপর নতুন করে ভাত তুলে আমার মুখের সামনে ধরে।আমি অন্যদিকে মুখ করলে নিদ্র বলে ওঠে,
–“দেখ তুমি যদি আরেকটু আগে বলতে তাহলে এরকম হতো না।আমি নিদ্র চৌধুরী একবার যেটা বলি সেটাই করি।আমি আমার মুখ দিয়ে উকিলকে বলছি এখন যদি কথা ঘুড়িয়ে নেই তাহলে আমার মান-সম্মান শেষ হয়ে যাবে।”

আমি তার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলি,
–“মান-সম্মানটাই কি একটা সম্পর্কের চেয়ে বড়।আপনার এই কথাটার জন্য দুজনের ভালোবাসা কবর দিতে হচ্ছে।”
নিদ্র এবধর জোড় করে নোকটা আমার মুখে পুড়িয়ে দেয়।তারপর কড়া গলায় বলে,
–“এসব কথা বাদ দাও,আগে ভাতটা খেয়ে নাও।”

আমি কিছুক্ষন অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে খেতে শুরু করি।নিদ্র সমানতালে আমাকে ভাত খাওয়াতে থাকে।ভাত খাওয়া শেষ হলে সে পানির গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দেয়।আমি পানি খেয়ে শেষ করলে সে ঔষুধ ধরিয়ে দেয় আমার হাতে।আমি ঔষুধ খেয়ে পুনরায় শুয়ে পড়ি।নিদ্র এটো প্লেটটা রাখার জন্য বাহিরে বের হয়ে যায়।আমি সমানতালে তার যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে থাকি।

নিদ্র বের হয়ে যায় রুম থেকে।কিন্তু আমি সেদিক থেকে চোখ সড়াতে পারি না।নিদ্র প্লেট রেখে ফিরে আসলেও আমার দৃষ্টি সেদিক থেকে সড়ে না।নিদ্র এসে আমার সামনে বসে পড়ে।আমি এবার চোখ তুলে তাকাই তার দিকে।নিদ্রও আমার দিকে তাকায়।দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হয়ে যায়।দুজনের চোখের মধ্যেই এক অন্যরকম চাওনি।আমি করুন গলায় নিদ্রের দিকথ তাকিয়ে থেকে বলি,

–“প্লিজ আমাকে ডিবোর্স না দিলে হয় না!”

আমার চাহনি দেখে নিদ্র খানিকটা ইমোশনাল হয়ে পড়ে।সে আমার হাতদুটো ধরে বলে,

–“হ্যাঁ।কিন্তু তুমি আগে বললে হতো।”

তার উত্তর শুনে আমার খুব রাগ হয়।সাথে অভিমানও।যাক হোক ডিবোর্স।আর বলবো না আমি।আমি মুখ ঘুড়িয়ে শুয়ে পড়ি।নিদ্র হাসতে হাসতে আমার উপর শুয়ে পড়ে।তার হাসির কারনটা বুঝতে পারিনা।সে হাসতে হাসতে বলে,

–“তুমি ভাবছো আমি তোমাকে মিথ্যা বলছি।হুম আমি তোমাকে মিথ্যা বলি…”

চলবে..

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-৮+৯

0

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৮ম_পর্ব

অফিসের মধ্যে প্রবেশ করতেই‌ সবাই‌ আমাদের দিকে পার্টি স্প্রে নিক্ষেপ করতে শুরু করে।মুহুর্তে মধ্যে দুজনকে ভর্তি করে দেয় স্প্রে করে।আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকাই।নিদ্রের ঠোঁটের কোণে এক প্রকার অন্যরকম হাসি বিরাজ করছে।এই মুহুর্তে তার হাসির কারনটা বুঝে উঠতে পারছি না আমি।এবার আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় শুটকি আকৃতির মেয়ে রুশা।তার অবস্থা আমাদের চেয়ে আরো বেশি শোচনীয়।তার সমস্ত শরীর ভর্তি স্প্রের গোল্লগুলো দিয়ে।আমি এবার চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকাই।উপস্থিত সবার মনোভাবটা একটু আন্দাজ করার চেষ্টা করি।

এই মুহুর্তে নিদ্র রুশার হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।আমার এই ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগে না।বুঝতে পারছি না আমি যদি নিদ্রকে ভালো নাই বাসি তাহলে সে কি করে করুক এতে আমার কি?কিন্তু আমার ভালো লাগছে না কেন?তারমানে কি আমি নিদ্রকে ভালোবাসি!ধুর।

নিদ্র রুশার হাত ধরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“হেই গাইস,আজকে আমি তোমাদের একটা সংবাদ দিতে চলেছি।এতে অনেকে মনে মনে খুশিও হবে আবার অনেকে কষ্টও পাবে।তার মধ্যে একজন আপনি মিসেস.মিহিমা।”

নিদ্রের কথার আগা কিংবা মাথা কিছুই বুঝতে পারি না আমি।নিদ্র কি এমন কথা বলতে চলেছে যে আমি খুব কষ্ট পাব।তার মানে কি নিদ্র রুশাকে ভালোবাসার কথা বলবে।না না কি ভাবছি এসব?
নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,
–“গাইস,আজকে মিস.রুশা আমাদের অফিস থেকে চলে যাচ্ছে।যারা যারা রুশাকে ভালোবাসতেন তাদের জন্যে কষ্টের আর যারা যারা রুশাকে ভালোবাসতেন না তাদের জন্য আনন্দের।আর মিসেস.মিহি আপনিতো রুশাকে পছন্দ করতেন তাইনা।তাহলে নিশ্চয় আপনারও কষ্ট হচ্ছে?”

নিদ্রের কথা শুনে আমি রুশার দিকে তাকাই।রুশা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি মুচকি হেসে বলি,
–“হুম,অনেক মিস করবো তোমাকে।”
রুশাও এবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।নিদ্র এবার দৃঢ় গলায় ঘোষণা করে,
–“গাইস,আজকে অফিসে কোনো কাজ হবে না।আমরা কেক কাটবো তারপর রুশাকে বিদায় জানিয়ে যে যার মতো চলে যাব।”

সবাই নিদ্রের কথাতে রাজি হয়ে যায়।এই মুহুর্তে হাসি মুখে কেক নিয়ে ভিতরে আসে রহিম মিয়া।কেকটা রুশার সামনের টেবিলটাতে রেখে হলদে দাঁতগুলো বের করে বলে,
–“হ্যাডাম হেকটা কাইটা লন।”
রুশা তার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।তারপর আমাকে এগিয়ে আসতে বলে।আমি এগিয়ে গেলে নিদ্রও‌ এগিয়ে আসে।তারপর রুশা কেক কাটতে শুরু করে।তার দুপাশে দাঁড়িয়ে আছি আমি ও নিদ্র।রুশা কেক কেটে প্রথমে নিদ্রকে খাইয়ে দেয়।নিদ্র তারপর তাকে খাইয়ে দেয়।এরপর রুশা আমাকে খাওয়ায়।আমি তাকে খাইয়ে দেই।তারপর এক এক করে বাকি সবাইকে কেক খাওয়ায় রুশা।

এই মুহুর্তে অফিসে প্রবেশ করে নিদ্রের বাবা হালিম চৌধুরী।রহিম মিয়া দৌড়ে যায় তার কাছে।তার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম করতে ধরলে তিনি রহিম মিয়াকে তুলে দাঁড় করিয়ে দেন।তারপর হাসি মুখে বলেন,
–“কি খবর রহিম?কেমন আছো?”

খুশিতে বের হয়ে পড়ে রহিম মিয়ার হলদেটে দাঁত গুলো।সে হালিম চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“হার ভালাই আছি।আন্নি কেমন আছেন?”
হালিম চৌধুরি হাসি মুখে বলে,ভালো।এবার তিনি এগিয়ে যান রুশার সামনে।রুশা তাকে সালাম দেয়।তিনি সালামের জবাব দিয়ে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“যা করার তারাতারি কর,আমার একটু অন্য জায়গায় যেতে হবে।”

নিদ্র এবার রহিম মিয়াকে জিনিসটা নিয়ে আসতে বলে।রহিম মিয়া হাসতে হাসতে রওনা হয়ে পড়েন।নিদ্রের বাবা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলে,
–“বউমা কেমন কাটালে বাবার বাড়িতে?”
আমি মুচকি হেসে বলি,
–“একটা দিনও ভালোভাবে থাকতে পারলাম না বাবা।আমি পৌঁছার কিছুক্ষন পরই ওনি হাজির।আর আজকে তো ভয় দেখিয়ে নিয়ে এলেন।বললেন আজ না আসলে চাকরী শেষ।”

আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে হালিম চৌধুরী।তারপর আস্তে করে বলে,
–“ভালোই করেছে,তোমাকে ছাড়া বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।”

জোরে জোরে মিউজিক বাজানোর কারনে আমাদের দুজনের কোনো‌ কথাই অন্য কেউ শুনতে পারে না।রহিম মিয়া দুহাতে ধরে বিশাল একটা বাক্স নিয়ে আসে।বাক্সটা রঙ্গিন পেপার দিয়ে মোড়ানো রয়েছে।নিদ্র এবার তার বাবাকে বলে,গিফ্টটা রুশার হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সবাই তাকে বিদায় জানাবে।

ছেলের কথা মতো হালিম সাহেব গিফ্টটা তুলে দেন রুশার হাতে।তারপর এক এক করে সবাই তাকে বিদায় জানায়।হালিম সাহেব ওই মুহুর্তে ওখান থেকে চলে যান।বাকি সব কাজ শেষ করে দুপুরের মধ্যেই‌ বাসার পথে রওনা হই আমি আর নিদ্র।দুজনে ঘেমে একাকার হয়ে আছি।মুখে-চুলে জড়ি লেগে একাকার হয়ে আছে।গাড়ি চালাতে চালাতে নিদ্র হাসিমুখে বলে,

–“বিকেলে পার্কে যেতে চাই,যাবে!”
আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলি,
–“না।”

আমার ‘না’ উত্তর শুনে যে নিদ্রের মধ্যে বিন্দুমাত্রও প্রতিক্রিয়া হয়নি সেটা বেশ বুঝতে পারছি।নিদ্র হাসি মুখে গাড়ি চালাতে থাকে।একপর্যায়ে রাস্তার পাশের একটা আইসক্রিমের দোকান চোখে পড়ে আমার।আমি ‌নিদ্রকে গাড়ি থামাতে বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি।নিদ্র বেশ কড়া গলায় বলে,সাবধানে যেতে।

আমি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পড়ি সেখানে।নিদ্র গাড়িটা সাইট করতে যায়।এই মুহুর্তে আমার চোখ আটকে যায় একটা দৃশ্যের দিকে।এ আমি কি দেখছি?সেই লোকটা,মানে পাগল লোকটা।

ফ্লাসব্যাক..

“মিহি মা ড্রেসিনের উপরের কয়েনটা নিয়ে গিয়ে দিয়ে আয় তো ফকির টাকে”
রান্নাঘর থেকে বেশ বড় গলায় বলে আমার আম্মু।আমি আম্মুর কথা অনুযায়ী ভিক্ষা দিতে গেলে এই লোকটা পাগলের মতো ব্যবহার শুরু করে আমার সাথে।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি লোকটা আমাদের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ভয় পাচ্ছে।

আমি অবাক হয়ে লোকটাকে দেখি।লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বেশ ভয়-ভীতি নিয়ে বলে,
–“সাবধান,কালকে এই বাড়ির একজন মারা যাবে।কালকে,”এই বলে সে ভিক্ষা না নিয়ে পালিয়ে যায়।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে পাগল ভেবে সেই চিন্তা মাথা থেকে উড়িয়ে দেই।কিন্তু পরেরদিনই আমার মা মারা যায়।তখনই বুঝেছিলাম ওনি পাগল নন ।

বর্তমান..

নিদ্র গাড়ি সাইট করে এসে দাঁড়ায় আমার সামনে।আমি সেই লোকটার দিকে তাকিয়ে আছি।লোকটাও এবার আমার দিকে তাকায়।আমি তাকে দাঁড়াতে বললে সে দৌড়ে পালায়।আমি সেই ব্যাপারটা নিয়ে না ভেবে আইসক্রিম ওয়ালার দিকে রওনা হই।আমার পাশে যে নিদ্র আছে সেটা ভুলে যাই আমি।আমি‌ রাস্তা পার হতে ধরলে নিদ্র পিছন থেকে খুব জোড়ে একটা চিল্লান দেয়।আমি ঘুড়ে তাকালে দেখতে পাই একটা ট্রাক এগিয়ে আসছে আমার দিকে।আমার শরিরের সব অঙ্গ-প্রতঙ্গ থরথর করে কাঁপতে থাকে।এই মুহুর্তে তাকিয়ে দেখি নিদ্র দৌড়ে আসছে আমার দিকে।ট্রাকটাও অনেক কাছে চলে এসেছে আমার।আমি অনেক নড়ার চেষ্টা করছি কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ ‌আমাকে ধরে রেখেছে।আমি ভয়ে চোখটা বন্ধ করে নেই।অপেক্ষা করতে থাকি কখন ট্রাকটা পিশিয়ে দিয়ে চলে যায়।

চলবে..

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৯ম_পর্ব

আমি চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করছি কখন ট্রাকটা এসে পিশিয়ে দেয় আমাকে।একসময় খুব কাছে ট্রাকের হর্ন শোনা যায়।আমার হার্টবিট মুহুর্তের মধ্যে বেড়ে যায় কয়েকগুণ।মনের মধ্যে চলে আসে মৃত্যুর চিন্তা।সেই চিন্তাকে ঠেলে দিতে কেউ‌ আমাকে নিয়ে লাফ দেয়।সাথে সাথে চোখ খুলে দেখি নিদ্র আমাকে‌ নিয়ে লাফ দিয়েছে।ওই মুহুর্তে পাশ দিয়ে চলে গেল ট্রাকটা।নিদ্র একাধারে বকতেই আছে আমাকে।আমি ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে চেয়ে আছি।একপর্যায়ে অনুভব করি পায়ের মধ্যে প্রচুর ব্যাথা করছে।নিদ্র আমাকে তুলে দাঁড় করালে আমি হাটতে ব্যার্থ হই।বুঝতে পারি বেশ ভালোই আঘাত পেয়েছি।

আমি চিন্তায় পড়ে যাই কি করবো এই ভেবে?নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুহুর্তে মধ্যে কোলে তুলে নেয় আমাকে।ওই‌ মুহুর্তে ওখানকার সব লোকের নজর চলে আসে আমার দিকে।অনেকে মোবাইল বের করে ফটো তুলতে শুরু করে।লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার।নিদ্র আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে চলে যায়।

আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকি নিদ্র কোথায় যাচ্ছে?তো দেখি যে,নিদ্র আইসক্রিমের দোকানটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।তারপর প্রায় ১০ কিংবা ১২টা হবে,এরকম আইসক্রিম কিনে নেয়।বেশিদূরে না হওয়ার কারনে দেখা যাচ্ছে সবকিছু।নিদ্র আসতে ধরলে তার সামনে এসে দাঁড়ায় একটা মেয়ে।আমি আরো আগ্রহ নিয়ে তাকাই নিদ্রের দিকে।মেয়েটা নিদ্রকে হেসে হেসে কি যেন বলছে?নিদ্রও‌ তার জবাব হেসে হেসে দিচ্ছে।এই মুহুর্তে আমার প্রচুর রাগ হয়।কিন্তু আমি তো ‌নিদ্রকে ভালোবাসিনা তাহলে রাগ হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না?

নিদ্র এবার মেয়েটার পাশ কাটিয়ে চলে‌ আসে গাড়ির কাছে।গাড়িতে উঠে আমার হাতে ধড়িয়ে দেয় আইসক্রিমগুলো।আমি গুণে দেখি ১০টা আইসক্রিম।আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“এতগুলো আইসক্রিম কেন?”
নিদ্র গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,
–“আমরা এখন মেডিকেল যাচ্ছি।আগে তোমার পা দেখাবো ডাক্তারকে।তারপর ঔষুধ নিয়ে বাসা যাব।ততক্ষন তুমি বসে বসে আইসক্রিম খাও।”

আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে আইসক্রিমগুলোর দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আমার পায়ের ব্যাথা আস্তে আস্তে বাড়তেছে।এখন প্রচুর ব্যাথা করছে।মনে হয় ভেঙ্গে গেছে।”
আমার কথাটা শুনে নিদ্র তার বাম হাতটা দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে আর ডান হাত দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।তারপর শান্ত গলায় বলে,
–“এসব অলুক্ষোণে কথা যেন দ্বিতীয়বার না শুনি।”

আমি মাথা ‌নেড়ে হা বলি।তারপর আইসক্রিম খাওয়ায় মনোযোগ দেই।আস্তে আস্তে পায়ের ব্যাথা বেড়ে দ্বিগুন হচ্ছে।একপর্যায়ে আমরা এসে পৌঁছাই একটা মেডিকেলের সামনে।নিদ্র আমাকে কোলে তুলে নেয়।আমি তার দিকে রাগি চোখে তাকালে সে বলে,
–“হাটতে পারবে না,এটা ছাড়া উপায় নেই।”

আমি ভালো করে ভেবে দেখি তার কথা ১৬আনা ঠিক।তাই আর রাগ না হয়ে চুপ করে থাকি।নিদ্র আমাকে নিয়ে প্রবেশ করে এক ডাক্তারের চেম্বারে।ডাক্তারের কথামতো শুইয়ে দেয় আমাকে বেডের উপরে।ডাক্তার একটু চেক করে কিছু পরিক্ষা দেয় করার জন্য।তারপর সেই রিপোর্ট গুলো এনে তাকে দেখাতে বলে।

নিদ্র আমাকে নিয়ে সব পরিক্ষা করে এবং রিপোর্ট নিয়ে এসে ডাক্তারকে দেখায়।ডাক্তার রিপোর্টগুলো দেখে বলে,
–“ভাঙ্গেনি,তবে হাড় ফেটে গেছে।”
নিদ্র ডাক্তারের দিকে ঝুঁকে বলে,
–“এখন কি করতে হবে?”

ডাক্তার উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
–“আমি কাজগুলো করে দিচ্ছি,আপনি শুধু ঠিকমতো ঔষুধ খাওয়াবেন আর যত্ন করবেন।খেয়াল রাখবেন যাতে কোনো ‌মতেই তার পায়ে চাপ না পড়ে।”

নিদ্র মাথা ঝাঁকিয়ে হা বোধক উত্তর দেয়।ডাক্তার এসে আমার পায়ের মধ্যে প্লাটার করে দেয়।তার উপর ব্যান্ডেজ করে।সবশেষে নিদ্র তার বিল পরিশোধ করে দিয়ে আমাকে নিয়ে বের হয়ে আসে।আসার সময় তাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল।আমি অতশত না ভেবে তাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করি,
–“আপনি কি কোনো কারনে চিন্তিত?”

নিদ্র আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে গাড়িতে উঠে বসতে বসতে বলে,
–“তোমার শরিরের যে অবস্থা গোসল না করে থাকা যাবেনা।কিন্তু কিভাবে গোসল করবে?”
চিন্তাটা আমার মাথায়ও ধরে এবার।সত্ত্যিতো কিভাবে গোসল করবো?

নিদ্র মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।আমি একদৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমি একটা বিষয় দ্রুত সম্পাদন করতে চাচ্ছি।তোমার কি মত?”
আমি ভ্রু-কুঁচকে বলি,
–“কোন বিষয়টা?”
নিদ্র হাসি মুখে বলে,
–“আমাদের ডিবোর্সের।দেখ,ভালোবাসা ছাড়া সংসার করা খুব কঠিন।কখ‌নও এক তরফের ভালোবাসায় সংসার হয় না।প্রথমে তুমি আমাকে ভালোবেসেছিলে ঠিকই কিন্তু কোন কার‌নে আমি ভালোবাসতে পারিনি।কিন্তু এখন তুমি আমাকে ভালোবাসো না।এভাবে থেকে দুজনেরই কষ্ট হচ্ছে।তার চেয়ে আলাদা হওয়াই ভালো না কি বলো?”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না?বেশ ভালোভাবে ‌নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি কথাটা সে আসলেই বলছে না শয়তানি করে বলছে।কিন্তু তার মুখে সয়তানির কোনো‌ চিহ্ন দেখত পাইনা আমি।আমি তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হা বলি কিন্তু মুখ ফুটে কোনো কথা বলি না।নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,

–“চুক্তিপত্রটা আমরা দুজনে মানি না তাই না?তাহলে আট মাস পর কেন কয়েকদিন পরই হয়ে যাক ডিবোর্সটা।আমি সব ব্যবস্থা করছি।”

আমি পুনরায় মাথা নাড়িয়ে হা বোধক উত্তর দেই।মনটা প্রচুর খারাপ হয়ে যায়।নিদ্র না আমাকে ভালোবাসে তাহলে ডিবোর্সের কথা বলতেছে কেন?আমি কি ভুল করলাম তার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে?নানা রকম চিন্তা এসে ভিড় করতে থাকে মনের মধ্যে।নিদ্র আবার বলে ওঠে,

–“আমি আমাদের ডিবোর্স নিয়ে চমৎকার একটা প্লান করেছি।আমরা ডিবোর্স পেপারে সাইন করবো‌ একটা পার্টি করে।পার্টিটা হবে কক্সবাজারে।কেমন হবে বলো তো?”

আমি এবার কথা না বলে থাকতে পারি না।বেশ রেগেই বলি,
–“ডিবোর্স কেউ ইচ্ছা করে বা মজা করে দেয় নাকি।এটাতো দুঃখের কথা সুখের নয়।”
নিদ্র আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেলে।পরবর্তি আর কো‌নো কথা বলে না নিদ্র।

একপর্যায়ে গাড়ি এসে থামে বাসার সামনে।নিদ্র নিজে নেমে আমাকে না নিয়ে চলে যায়।আমি তাকে ডাকতে গিয়েও ডাকি না।মনের মধ্যে শত অভিমান জমে যায়।বাপরে,আমাকে রেখেই চলে গেল।আমি চুপ করে একপা খুঁড়িয়ে নামার চেষ্টা করি।এই মুহুর্তে আমার গালে একটা থাপ্পড় পরে।অবাক হয়ে মাথা তুলে তাকাই সেই ব্যাক্তিটার দিকে।নিদ্র রেগে বলে,

–“একা নামতে যাচ্ছিলে কেন?পড়ে গেল কি হবে?আসলেই তোমার কমনচেন্স নেই।”
এই বলে আমাকে কোলে তুলে নেয়।বাসায় প্রবেশ করে নিচে কেউ না থাকায় কোনো প্রকার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না আমাকে।নিদ্র আমাকে নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।এবার চিন্তা দেখা দেয় গোসল করা নিয়ে।নিদ্র বলে,
–“আমি তোমাকে বাথট্যাবে বসিয়ে দিয়ে আসছি,তুমি গোসল সেড়ে নাও।আমি আর বেশি কিছু করতে পারবো না।কারন কয়েকদিন পরই আমাদের ডিবোর্স।”

চলবে..

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-০৭

0

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৭ম_পর্ব

আমার কথা শুনে বেশ রেগে যায় নিদ্র।তার রাগকে ভয় না পেয়ে উল্টো আমারও রাগ হয়।কিন্তু যখন বুঝতে পারি তার রাগের অবস্থান ভালো না তখন আমার রাগ কিছুটা হলেও কমে যায় তবে সম্পুর্ন না।নিদ্র আমার হাত চিপে ধরে বেশ কড়া গলায় বলে,
–“কি বললে?কি বললে বলো?আমি চরিত্রহীন লম্পট!”

এক ঝটকায় তার কাছ থেকে নিজের হাতটা রক্ষা করে বেশ রেগেই বলি,
–“ভুল বললাম কোথায়?ঠিকই তো বলেছি।একটু আগে হাটু গেড়ে বসে আমাকে ভালোবাসার আহ্বান করলেন।তার কিছুক্ষন পরই দেখি ফোনে Baby kh ফোন দিয়েছে।বলি,একজনকে ভালোবেসে আরেকজনের সাথে নাটক করার কি দরকার?আপনার কোন উদ্দেশ্য থাকলে আমাকে বলুন আমি চেষ্টা করবো সম্পাদন করার তবুও অভিনয় করবেন না।”

আমার কথা শুনে যে নিদ্র প্রচুর অবাক হয়েছে সেটা বুঝতে পারি তার হা করে চেয়ে থাকা মুখটা দেখে।নিদ্র এবার বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়ায়।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে সুক্ষ্ম‌ গলায় বলে,
–“তুমি এজন্য আমার প্রস্তাবে রাজি হচ্ছো না?নাকি অন্য বিষয়।”

তার প্রশ্নটাতে মনটা খানিকটা এলোমেলো হয়ে যায়।ভাবনা চলে আসে,আমি কি জন্য তার প্রস্তাবে রাজি হলাম না?কি কারণ?এবার আমি মনটা শক্ত করে বেশ শক্ত ভাবে বলি,
–“দেখেন আমার রাজি না হওয়ার পিছনে এটাও একটা বড় কারন।তবে এটা বাদেও আরো কারন আছে।আমি সেগুলো বলতে চাইনা।এতে আপনি কিংবা আমি ছোট হয়ে যাব।”

নিদ্র বেশ সময় নিয়ে তাকায় আমার দিকে।তারপর হো হো করে হেসে ওঠে পাগলের মতো।এই মুহুর্তে হঠাৎ করে তার এই হাসির রহস্য বুঝতে পারি না আমি।বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।মনের মধ্যে ৫ শব্দের একটা বাক্য ভেসে ওঠে।’লোকটা পাগল হয়ে গেল নাকি?’

আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বেশ উত্তেজিত গলায় জিজ্ঞাসা করি,
–“আপনি পাগল হইলেন নাকি,এভাবে হাসতেছেন কেন?”

আমার কথা শুনে আমারই দিকে তাকায় ‌নিদ্র।হাসির পরিমাণ কমিয়ে সেই হাসিটা মুখের মধ্যে বজায় রেখে বলে,
–“পাগল তো তুমি?”
তার কথা শোনার সাথে সাথে আপনা-আপনি আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়,
–“আমি…”
নিদ্র এবার শান্তস্বরে বলে ওঠে,
–“হুম তুমি,পাগল না হলে কেউ খালাকে কারো প্রেমিকা ভাবে।আরো পাগল Baby Kh মানে বেবি খালা।ala এটা লেখতে পারি নি তখন।আর তুমি বেবি মানে অন্য কিছু ভেবে বসে আছো।বাদ দাও,আমি চলে যাচ্ছি।কালকে যদি তুমি অফিসে না যাও তাহলে আমি রুশার জায়গাটাতে তোমাকে না অন্য একজনকে নিব।বাকিটা তোমার উপর।আমি গেলাম..”

নিদ্র যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে দরজার কাছে যেতেই হঠাৎ আমি বলে উঠি,
–“রাত তো অনেক হলো,এতরাতে যাবেন।আজকে থাকলে হয় না!”
আমার কথা শুনে মুচকি হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকায় নিদ্র।তারপর আবার দুয়েক পা এগিয়ে এসে বলে,
–“আমার জন্য এই ভালোবাসাটা রাখার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।আমি থাকবো না।কারন এখানে ডাবল বেড বা সোফা নেই।আর আমি সেদিনই তোমার সাথে একসঙ্গে থাকবো যেদিন তুমি নিজে বলবে।”

চালাক প্রকৃতির ছেলে নিদ্র যে আমাকে বেশ বড়সড় একটা প্যাচে ফেলে দিয়েছে সেটা বুঝতে আর অসুবিধা হয় না আমার।আমিও বেশ চিন্তায় পড়ে যাই।নিদ্র রহস্যময়ী হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।আমি বুঝতেছিনা নিদ্র থাকতে বলবো নাকি যেতে।এতরাতে গ্রাম থেকে শহরে যেতে দেয়া ঠিক না সেটা আমি জানি।কিন্তু তার সাথে একসাথেও থাকতে পারবো না।অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নেই,আমি মেঝেতে থাকবো সে বিছানায়।আমার মনের কথা তাকে জানালে সে বেশ কড়া গলায় জানিয়ে দেয়,
–“তোমার বাড়িতে এসে তোমাকে মেঝেতে রেখে আমি বিছানায় থাকবো ‌এটা ভালো দেখায় না।তার চেয়ে আমি যাই বরং!”

এই বলে সে পা বাড়াতেই হুট করে আমি বলে উঠি,
–“ওকে আসেন,মাঝে কোলবালিশ দিয়ে রাখবো।”
বলার সাথে সাথে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে নিদ্র।লাইট অফ করতে বললে আমি নিষেধ করে দেই।কিন্তু তিনি বেশ কড়া গলায় আমাকে জানিয়ে দেন,লাইট জ্বালানো থাকলে তার ঘুম অসম্ভব।সো লাইট বন্ধ করতেই হবে।

জোর-যাবস্তি করে শেষ পর্যন্ত লাইট বন্ধ করে দেয় নিদ্র।অন্ধকারের মধ্যে একটা ভয় আসে মনের মধ্যে,এই মনে হয় নিদ্র ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার উপর।কিন্তু আমার মনের ভয়টাকে উড়িয়ে দেয়ার জন্য পূর্ব আকাশে দেখা দেয় সুর্য্যি মামা।বেশ খানিক্ষন পর ঝকঝকে হয়ে যায় চারদিকটা।

আমি বিছানা থেকে উঠে নিদ্রের তাকিয়ে বড় সড় রকমের একটা ক্রাস খেয়ে ফেলি।ও মাই গড,সারাজীবন শুনেছি মেয়েদের ঘুমন্ত অবস্থায় খুব সুন্দর দেখায়,এখন দেখছি অন্য।ছেলেদের ঘুমন্ত অবস্থায় এত সুন্দর দেখায় সেটা জা‌নতাম না।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি নিদ্রের দিকে।

তাকিয়ে থাকার একপর্যায়ে জেগে ওঠে নিদ্র।আমার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,
–“গুড মরনিং”
আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে গুড মরনিং বলে ‌চলে যাই।নিদ্র আমার লজ্জা পাওয়ার কারন না বুঝে উঠে ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।আমি বাহিরে বের হয়ে দেখি বাবা টেবিলে বসে আছে।তার সামনে নাস্তা এনে দিচ্ছে বুয়া।

আমি আর ওদিকে না গিয়ে আবার রুমে চলে আসি।রুমে এসে দেখি নিদ্র এখনো ওয়াসরুমেই রয়েছে।আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ি।চোখ চলে যায় নিদ্রের মোবাইল ফোনটার দিকে।ওয়াসরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে মোবাইলটা হাতে তুলে নেই আমি।লক করা নেই দেখে তারাতারি গ্যালারিতে চলে যাই।সেখানে বেশ কয়েকটা অ্যালবাম দেখতে পাই।তার মধ্যে একটা অ্যালবামে আমার ‌নজর আটকে যায়।আগ্রহ নিয়ে ভিতরে যাই আমি।সেখানে অনেক বিদেশী মানুষের ছবি।আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকি সব।শেষের দিকের কয়েকটা ছবি দেখে চমকে উঠি আমি।আমার ঘুমন্ত পিক..

চিলের মতো ছো‌ মেরে আমার হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নেয় নিদ্র।তারপর পকেটে পুড়ে দৃঢ় গলায় ঘোষনা করে,
–“আমি যাব নাকি তোমার জন্য বসে থাকবো।”
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে ওয়াসরুমে প্রবেশ করি।নিদ্রের ফোনে নিজের ছবিটা দেখে কেন জানি খুশি খুশি লাগছে।

আমি নাচতে নাচতে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখি রুমের মধ্যে নিদ্র নেই।আন্দাজ করে নেই সে আমাকে রেখে চলে গেছে বাহিরে।আমিও এবার বাহিরে চলে আসি।বাহিরে এসে দেখি বাবা আর নিদ্র নাস্তা করছে আর গল্প করছে।আমি যেতেই বাবা বেশ রেগে আমার দিকে তাকায়।তার এই রাগের কারনটা বুঝতে পারি না আমি।আমি বসার সাথে সাথে বাবা বেশ রেগে বলে,

–“তোকে আমি এই ‌শিক্ষা দিয়েছি।ছি.জামাই এত বলার পরও তোর চাকরী করাই লাগবে।বিয়ের পরেও চাকরী করতে চাস তুই।ছি.ছি.”

হঠাৎ বাবার কি হলো বুঝতে পারছি না আমি।আমি কিছু বলে ওঠার আগেই নিদ্র বলে,
–“বাবা থাক না।আমাদের অফিসই তো।সমস্যা নেই।”
নিদ্রের কথা শুনে বাবার রাগ কিছুটা কমে যায়।আমি মনযোগ নাস্তা করায়।নাস্তা শেষ করে রুমে এসে অফিসের জন্য রেডি হই।নিদ্রও রেডি হয়ে নেয়।রেডি বলতে কালকে যে গুলা পড়ে এসেছিল সেগুলা পড়ে নেয়।তারপর দুজনে বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেই অফিসের উদ্দেশ্য।

যাওয়ার পথে আমি নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“আমি এসেছি আপনিও বেসরমের মতো আমার পিছন পিছন চলে এসেছেন।”
আমার কথা‌ শুনে আমারই দিকে তাকায় নিদ্র।তবে এখন তার চোখে কোনো রাগ কিংবা কষ্ট কিছুই নেই।তার বদলে রয়েছে আলাদা এক চাহনি।আমি বুঝতে পারি না এটা কিসের চাহনি।নিদ্র কথা না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।

আমি বুঝতে পারছি না কথাটা বলা আমার ঠিক হলো ‌কিনা।মাঝপথে গিয়ে নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আজকে আমি নিদ্র চৌধুরী বলছি,আর জীবনেও তোমাদের বাড়িতে আমার পা পড়বে না।যদি পড়ে সেদি‌নই আমার মৃত্যু হবে।কথাটা মনে রেখ।”

নিদ্রের কথা শু‌নে অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে যাই আমি।আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“সরি,ভুল হয়ে গেছে।”
নিদ্র মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“নিদ্র চৌধুরি কথা ঘোরায় না।আজ থেকে তোমাদের বাড়ির কথা আমার সামনে তুলবে না।কখনও না।”

আমি বুঝতে পারছি কতটা ভুল করে ফেলেছি।কিন্তু এখন কি করবো?তাকে যদি নিয়ে যেতে না পারি কখ‌নো তাহলে গ্রামের মানুষের কান ফুসফুস কথাতে বাবা মরে যাবে।বেশ বড়সড় একটা চিন্তা আসে মনের মধ্যে।

এর মধ্যে আমরা অফিসে পৌছে যাই।নিদ্র আমাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করে আসে।তারপর দুজনে একসাথে অফিসে প্রবেশ করি।অফিসে প্রবেশ করতেই আমার উপর পড়তে শুরু করে অনেককিছু।কি হচ্ছে বুঝতে পারি না আমি?নিদ্র হাসিমুখে তাকায় চারদিক।

চলবে..

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-৫+৬

0

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৫ম_পর্ব

আমার এতক্ষন থেকে বলে যাওয়া কথাগুলো শুনে নিদ্র রাগার বদলে হো হো করে হেসে ওঠে।তার হাসির কারনটা বোঝার চেষ্টা করি আমি।নিদ্র তার কান থেকে এয়ারফোনটা খুলে আমার হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে নেয়।তারপর হাসতে হাসতে গোলাপটা মাটিতে ফেলে দেয়।আমি বুঝতে পারি তার উত্তর কি?লজ্জায় লাল হয়ে যায় মুখটা।আমি উঠে দাঁড়িয়ে নিচে নামার জন্য প্রস্তুত হই।এই মুহুর্তে আমার হাতটা টেনে ধরে নিদ্র।বেশ অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই আমি।নিদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,

–“ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে বলে এই না যে ভালোবেসে ফেলেছি।একটা মেয়ে কিভাবে এত বেহায়া হয়?আপনার ফ্যামিলি প্রবলেম আছে।মনে রাখবেন আট মাস পর ডিবোর্স।”

আমি তার কথা শুনে কোনো উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।সিদ্ধান্ত নেই কয়েকদিনের জন্য বাবার বাড়ি যাব।অনুমতি নেয়ার জন্য নিদ্রের বাবার রুমে গেলে তিনি অনুমতি দিয়ে দেন।নিদ্রকে আমার সাথে নিতে বললে আমি না করে দেই।এতে বেশ অবাক হন তিনি।অবশেষে ড্রাইভারকে আদেশ দেন আমাকে রেখে আসতে।

তার কথা মতো নিদ্রকে না জানিয়ে রওনা হয়ে যাই বাসার উদ্দেশ্য।ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশে সুর্য ডুবতে শুরু করে।চোখে পানি,বুকে একরাশ অভিমান নিয়ে চলেছি বাসার উদ্দেশ্যে।একপর্যায়ে সিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ি।ড্রাইভার আমাকে জাগিয়ে দেয় বাসার সামনে এসে।আমি গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারকে বিদায় দিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করি।আমাকে একা দেখে খানিকটা অবাক হন আমার বাবা।আ‌মি তার দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে যাই।

রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি।বাবা বাহিরে থেকে ডাকতে শুরু করে।আ‌মি খানিকটা চিল্লিয়ে তার উদ্দেশ্যে বলি,
–“বাবা,আমি একটু পরে বের হচ্ছি।”
বাবা আর কোনো কথা না বলে চলে যায়।আমি উপুর হয়ে বালিশে মাথা গুজে শুয়ে থাকি।চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে শুরু করে বিপুল পরিমাণে।কি ভুল করেছি আমি?কি ভুল করেছি?তাকে নিয়ে সংসার সাজাতে চেয়েছি।তার জন্যেই এত বেয়াহা হয়েছি।তার জন্যেই নিজের অবস্থা থেকে নিচে নেমেছি।শুধুমাত্র তাকে ভালোবাসি বলে।কিন্তু এটা ভাবিনি যে একপক্ষের ভালোবাসা দিয়ে কোনো কিছু হয় না।একটু ভালোবাসা চেয়েছিলাম শুধু।একটু,এতটুকু ভালোবাসাও কি দেয়া যায় না?

এই মুহুর্তে মাকে খুব মনে পড়ছে।মায়ের শান্তনা গুলো।সত্ত্যি মা যে আমার জীবনে কি ছিল সেটা এখন বুঝতে পারছি?চিৎকার করে মাকে ডাকতে চাচ্ছে এই বেয়াহা মনটা।মনে হচ্ছে কেউ নিরবে আমার ‌মাথায় হাত বোলাচ্ছে।মাথা তুলে তাকাই মাথার দিকে।মাকে দেখতে পাই সেখানে।তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,

–“পাগলি মেয়ে,মায়েরা সব স‌ময় সন্তানের পাশে থাকে।সন্তানের সব কাজ কর্মে তাদের সঙ্গে থাকে মায়েরা।মা জাতি এমন এক জাতি,যারা সন্তানকে ছাড়া কোথাও থেকে শান্তি পায় না।মা জাতি একটু বেয়াহা হয় রে।সন্তানের জন্যে তারা সব করতে পারে।আমি সব সময় তোর সাথে আছি আমার পাগলি মেয়ে।কান্না নয় সামনের বিপদটাকে তাড়ানোর চেষ্টা কর।খবরদার,নিজেকে কখনো বেয়াহা বলবি না?”

এই বলে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যান তিনি।আমি বালিশে মাথা গুজে নিরবে কাঁদতে থাকি।মনে হচ্ছে মা সত্ত্যি সত্ত্যি এসেছিল।তার কথাগুলো এখনো কানে বাজতেছে।তিনি বলে গেলেন,”পাগলি মেয়ে,মায়েরা সব স‌ময় সন্তানের পাশে থাকে।সন্তানের সব কাজ কর্মে তাদের সঙ্গে থাকে মায়েরা।মা জাতি এমন এক জাতি,যারা সন্তানকে ছাড়া কোথাও থেকে শান্তি পায় না।মা জাতি একটু বেয়াহা হয় রে।সন্তানের জন্যে তারা সব করতে পারে।আমি সব সময় তোর সাথে আছি আমার পাগলি মেয়ে।কান্না নয় সামনের বিপদটাকে তাড়ানোর চেষ্টা কর।খবরদার,নিজেকে কখনো বেয়াহা বলবি না?”

আমি এবার উঠে বসে পড়ি।মায়ের কথাটা মনে করি,কান্না নয় সামনের বিপদটাকে তাড়ানোর চেষ্টা কর।হুম আর কান্না করবো না।সামনের বিপদটা তাড়ানোর চেষ্টাই করবো।এর জন্য ভালো হতে হলে ভালো হবো,বেয়াহা হতে হলে বেয়াহা হব।চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়াই আমি।ব্যাগ থেকে সুন্দর একটা শাড়ি বের করে শাওয়ার নেয়ার জন্য ওয়াসরুমে প্রবেশ করি।

ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে সোজা গিয়ে বসে পড়ি আয়নার সামনে।আজ মনের মতো সাজবো।মা মারা যাওয়ার পর কখনো সাজিনি আমি।কিন্তু আজ সাজবো।নিজের এত বড় পরিবর্তন দেখে নিজেই অবাক হই।সবশেষে চোখে কাজল দিয়ে উঠে দাঁড়াই আমি।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিঁখুত ভাবে দেখতে শুরু করি।সত্ত্যি অনেক সুন্দর লাগছে আজকে আমাকে।

আমি দরজা খুলে বের হই রুম থেকে।বাবা সোফার মধ্যে বসে আছে কপালে হাত দিয়ে।আমি গিয়ে বাবার সামনের সোফাটায় বসতে বসতে বলি,
–“বাবা,তুমি কি কোনো কারণে চিন্তিত?”

হঠাৎ আমার কথা শুনে মাথা তুলে আমার দিকে তাকায় বাবা।আমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে বেশ অবাক হয়েছেন তিনি সেটা বুঝতে পারছি।আমি উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলি,
–“চা খাবে না কফি।”

বাবা এবার সোফায় হেলাম দিয়ে তার মুখের হাসিটা বজায় রেখে বলে,
–“চা”
আমি কিচেনে যাই যা তৈরি করতে।কিচেনে চা তৈরি করতে করতে একটু আঘাত লাগে ক্ষত স্থানটায়।গোসলের সময় ব্যান্ডেজটা খোলার পর আর ব্যান্ডেজ করা হয়নি এখনো।আমি চা তৈরি করে নিয়ে গিয়ে বাবার সামনে বসে পড়ি।সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি চা খেতে খেতে বাবাকে জানাবো ডিবোর্সের কথাটা।পরক্ষনে আবার ভাবি তিনি খুব কষ্ট পাবেন।শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেই যা হবার আমার উপর দিয়েই হোক,বাবাকে কষ্ট দেয়ার মানে নেই।আমিই বেয়াহা হব,আমি পার্সোনালিটি হীন হবো,তবুও বাবার যেন কোনো কষ্ট না হয়।

আমি একটা কাপে চা ঢেলে এগিয়ে দেই বাবার দিকে।বাবা হাসি মুখে চায়ের কাপটা নিয়ে খেতে শুরু করে।আমিও একটা কাপে চা নিয়ে খেতে শুরু করি।খাওয়ার সময় বাবার সাথে না বিষয়ে অনেক কথা হয়।পরিশেষে জানতে পারি,আজকে বুয়া আসবে না।সো,আমাকেই রান্না করতে হবে।

বাবা বাজারের পথে রওনা হয়ে পড়েন ব্যাগ নিয়ে।আমি ছাঁদে যাই আমার লাগানো গাছ গুলো দেখতে।রাতের বেলা ছাদে যাওয়ার অভ্যাস আমার নেই বললেই চলে।তবুও আজকে আসলাম।বাবা বের হয়ে রিকশা ডেকে তাতে চড়ে বসেন।রিকশাওয়ালা চলতে শুরু করে।আমি উপর থেকে সব দেখছিলাম।এমন সময় ‌একটা কার এসে থামে আমাদের বাড়ির সামনে।কারটা যে নিদ্রের সেটা বুঝতে পারছি।কিন্তু এতো রাতে নিদ্র কেন সেটা বুঝতে পারছি না।

নিদ্র গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে প্রবেশ করে।আমি তারাতারি করে নিচে নামতে শুরু করি।একপর্যায়ে সোফার ঘরে এসে দেখি নিদ্র সোফার উপরে পড়ে আছে।আমি তার কাছে যেতেই একটা বাজে গন্ধ পাই।সে যে ড্রিঙ্ক করেছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার।সে এখন অচেতন হয়ে পড়ে আছে।

দ্রুত ভাবনা চলছে আমার মাথায়।নিদ্রকে এই অবস্থায় দেখলে বাবা খুব কষ্ট পাবেন।তার একমাত্র মেয়ের জামাই কিনা রাত-দুপুরে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে শশুর বাড়ি আসে।এটা প্রত্যেকটা শশুরের জন্যই কষ্টের।আমি তারাতারি করে নিদ্রকে দাঁড় করাই।নিদ্র আমার কাধে মাথা দিয়ে এলোমেলো পা ফেলতে থাকে।অনেক কষ্ট করে তাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসি আমি।এখন একটাই চিন্তা গাড়িটা কোথায় রাখবো।

এর মধ্যে এসে উপস্থিত হন বাবা।তিনি গাড়িটা দেখে আমাকে জিজ্ঞাসা করে,
–“জামাই এসেছে?কোথায় ডাক?”
আমি আমতা আমতা করে বলি,
–“বাবা,ওনার খুব মাথা ব্যাথা করতেছে,তাই এসেই ঘুমিয়ে গেছে।কাল সকালে দেখা করিও।”

বাবা আর কোনো কথা না বলে বাজারের ব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে চলে যান।সেদিনের মতো খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে আসি আমি।নিদ্রকে বিছানায় রেখে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ি মেঝেতে।যখনই চোখে ঘুমটা আসবে আসবে ভাব ঠিক তখনই নিজের ঘাড়ে কারো নিখুঁত ছোয়া পাই আমি।

চলবে..ইনশাআল্লাহ

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৬ষ্ট_পর্ব

ধীরে ধীরে নিশ্বাসের বাতাসটা আরো প্রখর হতে থাকে আমার ঘাড়ের কাছে।আমি পিছনে তাকানোর চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হই।আমাকে পিছন থেকে খুব জোড়ে ধরে রেখেছে নিদ্র।একপর্যায়ে সে আমার ঘাড়ের মধ্যে এলো-পাতারি চুমু খেতে শুরু করে।দুহাত দিয়ে কোলে তুলে নেয় আ‌মাকে তারপর শুইয়ে দেয় বিছানার মধ্যে।আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি আদিলগ্ন থেকে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফল এসে দাড়াচ্ছেই ওই ব্যার্থতা।

নিদ্র এবার আমার উপরে উঠে হাতদুটো দুদিকে করে চিপে ধরে।তারপর মুখ আস্তে আস্তে এগিয়ে আনে আমার মুখের দিকে।একপর্যায়ে তার ঠোট দিয়ে আমার ঠোটটা ছুঁইয়ে দেয়।আমার শরিরের মধ্যে এক অজানা অনুভূতির শিহরণ বয়ে যায়।আমি আমার মাথাটা কাত করে ফেলি যাতে নিদ্র আর কিস করতে না পারে।এবার নিদ্র তার একহাত দিয়ে টেনে আমাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।তারপর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

–“অযাথা বিরক্ত করছো আমাকে,আমার কাজ আমাকে করতে দাও!”

তার কথা শুনে মাথায় রাগ উঠে যায় আমার।শয়তান পোলা আমারে থাপ্পড় মাইরা আবার আসছে ভাব জমাইতে।কিন্তু নিদ্র হঠাৎ আপনি থেকে তুমিতে চলে আসলো কেন বুঝতে পারছি না?পরবর্তিতে আবার ভাবলাম সে তো এখন মাতাল তাই হয়তো ভুলভাল বলছে।কালকে মাতাল থেকে ভালো হলে বলবে,
আপনি ইচ্ছা করে আমার সাথে এসব করেছেন।যাতে আমি আপনাকে ডিবোর্স দিতে না পারি।কিন্তু আপনার ধারনা ভুল,আমি আপনাকে ডিবোর্স দেবোই দেব।

সুতরাং আমি ভাবতে থাকি এখন কি করা যায়?এখনকার কথাটা নয় পরবর্তির কথা ভাবতে হবে।এদিকে নিদ্র একাধারে আমার উপর রোমান্টিক অত্যাচার করেই চলেছে।আমি ভাবছি এখন তার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করলে পরবর্তিতে বিশাল প্রবলেম হবে।যথারীতি আট মাস পর আমাদের ডিবোর্স হলে বাচ্চাটার কি হবে?

এবার নিদ্র আমার ঠোটের সাথে তার ঠোট মিশিয়ে দেয়।আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকি কিভাবে এখন নিজেকে রক্ষা করবো?অনেক বার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও নিদ্রের শক্ত হাতের সাথে পেরে উঠিনি।এবার অন্য বুদ্ধি বের করতে হবে সেটাও ভাবছি।কিন্তু কি বুদ্ধি?

আমি এবার হঠাৎ করেই নিদ্রকে নিচে শুইয়ে দিয়ে উঠে পড়ি।নিদ্র কিছুক্ষন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর মাথা নিচু করে বলে,
–“তুমি ভাবছো আমি এখন মাতাল,তোমার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করলে ডিবোর্সের পর বাচ্চাটার কি হবে?আজকে আমি নিজে শারিরিক সম্পর্ক করে,কাল সকালে উঠে ঠিকই চলে যাব তোমাকে দোষারোপ করে।এসবই ভাবছো তাই না?”

আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকাই।সে ঠিক আমার মনের কথাগুলো বলছে।আমি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিরবে মাথা নাড়াই।নিদ্র এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসি-মুখে বলে,
–“আমি এখন মাতাল নই,আমি সম্পুর্ন ঠিক আছি।”

তার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকাই তার দিকে।তারমানে এতক্ষন সে ইচ্ছা করেই এসব করছিল।কিন্তু সে তো আমাকে পছন্দ করে না,তাহলে এসব কেন করছিল?
নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,
–“এখন তুমি ভাবছো,আমি তো তোমাকে পছন্দ করি না তাহলে এসব কেন করছি?তাহলে শোন,আমি এখন তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি।”

এই বলে নিদ্র এসে আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে পড়ে।তারপর পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের রিং বের করে আমার দিকে এগিয়ে ধরে বলে,
–“সত্ত্যি এতদিন আমি তোমাকে নিয়ে যা যা ভেবেছি তা ভুলই ভেবেছি।আমি ভেবেছিলাম কিভাবে এতো তারাতারি কারো প্রেমে পড়ে যেতে পারে কেউ?কিন্তু আজ বুঝলাম তুমি ঠিকই ছিলে।এতদিন তোমাকে বেহায়া ভেবেছিলাম।আসলে আমি তখন বুঝিনি ভালোবাসা কি জিনিস?তুমি আমাকে ভালোবেসে ছিলে।কিন্তু আমি তখন সেটা অনুভব করতে পারিনি।আজ বুঝতে পারছি।তুমি যখন চলে আসলে আমি রুমে আসতেই রুমটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগতে থাকে।কিছুক্ষন থাকার পর নিজেকে খুব একা মনে হয়।ঠিক তখনই বুঝতে পারি তোমার কষ্টটা।আমি যেমন তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না,তেমনি তুমিও ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েও তাকে ছুতে পারছিলে না।তোমার বেহায়া হওয়ার কারন বুঝতে পারছিলাম তখন।শেষ কথা আমি এখন তোমাকে অনেক ভালোবাসি,নিজের থেকেও বেশি।আই লাভ ইউ।”

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি নিদ্রের দিকে।কয়েকঘন্টার মধ্যে একটা মানুষের মধ্যে এতটা পরিবর্তন কেমনে সম্ভব সেটা বুঝতে পারছি না।নিদ্র হাটুগেড়ে আমার সামনে বসে আছে রিংটা এগিয়ে ধরে।আমার মাথায় অন্য ভাবনা চলছে।এটা যদি নিদ্রের একটা প্লান হয়ে থাকে আমাকে তাদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার বা আমার সাথে সম্পর্ক করার,তাহলে আমার সেই ফাঁদে পা দেয়া উচিত হবে না।আর আমি ভুলে যাচ্ছি কেন একটা সময় আমিও তাকে ভালোবাসতাম কিন্তু সে আমাকে অপমান করেছিল।আমি তাকে অপমান করবো না কিন্তু তার এই প্রস্তাবে রাজিও না।

এসব ভাবার পর আমি নিদ্রের হাত থেকে আংটিটা নিয়ে তার হাতেই আবার দিয়ে দেই।তারপর নিজের মুখে রহস্যময়ী একটা হাসি নিয়ে এসে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“ভালোবাসা এতটা সোজা না মি.নিদ্র।মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যে ভালোবাসা বোঝা যায় না।আমি‌ একটা সময় আপনাকে ভালোবাসতাম তখন আপনি আমাকে অপমান করতেন।এখন আমি চাইলে আপনাকে অপমান করতে পারি কিন্তু করবো না।আপনি কি ভালোবাসা মানে কি জানেন মি.নিদ্র?কয়েকঘন্টা নিজেকে একা মনে করা মানে ভালোবাসা নয়।ভালোবাসা হলো…”

এবার নিদ্র উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে থামিয়ে দেয়।আমি অবাক হয়ে তাকাই তার দিকে।নিদ্র তার হাটু ঝাড়তে ঝাড়তে আমাকে বলে,
–“আমাকে ভালোবাসা মানে কি বোঝাচ্ছো।আমাকে,এই নিদ্র চৌধুরীকে।ওকে ডান,ভালোবাসা কাকে বলে,কত প্রকার ও কি কি,এবং তাদের নাতি-পুতি সহ সব কিছু তোমাকে বুঝিয়ে দেব আজকে।সাথে ভালোবাসার সংজ্ঞাটাও বলে দেব।”

এই বলে নিদ্র আমাকে ধরে ফেলে।নিজের অবস্থা যে ভালো পর্যায়ে না সেটা ঢেড় আন্দাজ করতে পারছি আমি।নিদ্র আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।আমি আর কোনো উপায় না পেয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আজকে মেয়ে বলে আপনার মতো শক্তি নাই।আপনার শক্তি আছে দেখে আ‌মার উপর জোড় খাটাচ্ছেন।এর জন্য দাবি থাকবেন।”

নিদ্র তার ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলো বের করে হাসি দিয়ে বলে,
–“শক্তি আর বুদ্ধিটাই তো আমার অহংকার।”
আমি তার এই কথাটার মানে বুঝতে পারি না।এই মুহুর্তের নিদ্রের মোবাইলে একটা ফোন আসে।নিদ্র মোবাইলটা বের করে পকেট থেকে।আমি তার মোবাইলের নাম্বারটা দেখে চমকে উঠি।ইংরেজীতে বড় বড় করে লেখা আছে,’Baby Kh’

দ্রুত ভাবনা চলতে শুরু করে আমার মগজে।নিদ্র অন্য একজনকে ভালোবাসে।তাহলে এতক্ষন আমার সাথে নাটক করছিল।তাতে কি আমিতো এখন আর তাকে ভালোবাসিনা।সে জাহান্নামে যাক।নিদ্র ফোনটা কেটে দিয়ে আমার দিকে তাকায়।তার চাহনি আএার রাগ বাড়িয়ে দেয় প্রচুর।আমি রাগি গলায় চিল্লিয়ে বলি,

–“ভালোবাসেন একজনকে সম্পর্ক করেন আরেকজনের সাথে।চরিত্রহীন লম্পট।ধুর হন।”

আমার কথা শুনে নিদ্র প্রচুর রেগে যায়।

চলবে..

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-৩+৪

0

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৩য়_পর্ব
..
নিদ্রের সাথে গাড়িতে করে রওনা দেই অফিসের পথে।অফিসে পৌছে নিদ্র গাড়িটা পার্কিং করে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ধমক দিয়ে বলে,
–“চলুন তারাতারি!”
এই বলে তিনি হাটতে শুরু করেন।আমিও তার পিছন পিছন হাটতে শুরু করি।অফিসের দরজায় যেতে দারোয়ান আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে।আমি ভালোভাবে লক্ষ করে দেখি,ওমা এটাতো আমার আগের অফিসটার থেকে ৪গুন বড়।

ভিতরে প্রবেশ করতেই শুটকি আকৃতির রুশা নামক ফালতু মেয়েটা এসে নিদ্রের সামনে দাঁড়ায়।তারপর নিদ্রের সাথে হাত মিলিয়ে খানিকটা সন্দেহ চোখে তাকায় আমার দিকে।রুশা এখনো নিদ্রের হাতটা ধরে আছে।নিদ্র এবার নিজ দায়িত্বে নিজের হাতটা সড়িয়ে নেয় রুশার কবল থেকে।নিদ্রের এই কাজ দেখে আমার মনটা বেজায় খুশি হয়।

–“নিদ্র,এইটা ওই মেয়েটা না।যে,নাইট ক্লাবে ঘুমিয়ে পড়েছিল।”কথাটা নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে রুশা।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,”হুম,ওই মেয়েটাই।”

রুশা সাথে সাথে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা কড়া গলায় বলে,
–“এখানে কেন এসেছো তুমি?”
আমার কথাটার উত্তর নিদ্রই দিয়ে দেয়।সে রুশার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“ও এখানে জব করবে।রুশা,তুমি তোমার কাজে যাও আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি আমার রুমে।”

রুশা আর কিছু না বলে চুপ করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।তার এরকম তাকানো মোটেও পছন্দ হয় না আমার।আমি তারাতারি নিদ্রের সাথে তার রুমের দিকে রওনা হই।রুশা কিছুক্ষন আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে রওনা হয়।

দরজা ঠেলে আমাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্র।আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকি সম্পুর্ন রুমটা।অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে সব কিছু।নিদ্র নিজে ডেক্সের ওপাশের চেয়ারটাতে বসে,আমাকে তার সামনের চেয়ারটাতে বসতে বলে।আমি তার কথামতো তারাতারি করে বসে পড়ি তার সামনের চেয়ারটাতে।নিদ্র এবার আমার দিকে ঝুঁকে খানিকটা নরম গলায় বলে,

–“যতদিন রুশা আছে ততদিন আপনার কোনো কাজ নেই।রুশা গেলে তার জায়গাটাতে আপনাকে দেয়া হবে।এখন কি করবেন বলেন?”

আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলি,
–“আপনি জানেন!”
নিদ্র এবার ঝোঁকা থেকে উঠে চেয়ারে হেলান দিয়ে রুবিক্স কিউবটা ঘোড়াতে ঘোড়াতে বলে,
–“আমি বাবাকে বলতে চাইছিলাম যে,পরের মাস থেকে এটেন্ড করতে।কিন্তু তিনিতো আমার কোনো কথাই শুনলেন না।আর মাত্র ১০দিন মাস শেষ হতে।আপনি একটু বুঝিয়ে বলবেন বাবাকে যে,পরের মাস থেকে জয়েন করবেন।অযাথা এখানে এসে বসে থাকার মানে হয়।”

আমি তার কথা শুনে নিজের মুচকি হাসিটা মুখের মধ্যে রেখে বলি,
–“না,আমি আপনার সাথে অফিসে আসবো প্রতিদিন।দরকার হলে আপনি কাজ করবেন আর আমি বসে বসে দেখবো।তবুও আসবো।”

নিদ্র আমার কথাটা শুনে হাল্কা রেগে যায়।সে একটু চিল্লিয়ে বলে,
–“থাকুন তাহলে বসে।আপনার ভালোর জন্য বলছিলাম আর আপনি।থাকুন বসে থাকুন”
এই বলে নিদ্র একটা ফাইল টেনে নিয়ে সেটা দেখায় মনোযোগ দেয়।আমি নিদ্রের রাগটা আরেকটু বাড়িয়ে দেয়ার জন্য শয়তানি করে বলি,
–“হুম,বসে বসে আমার বরকে দেখবো।”

কথাটা বলেই বুঝতে পারি কতটা ভুল করে ফেলেছি।নিদ্র বেশ রেগে তাকায় আমার দিকে।তারপর খানিকটা কড়া গলায় বলে,
–“ফালতু কথা বলবেন না।আমি আপনাকে স্ত্রী হিসেবে মা‌নি না।আর এমনিতে আটমাস পর আমাদের ছাড়া-ছাড়ি হবে।সো ডোন্ট কল মি হাসবেন্ড,ওকে।”

নিদ্রের কথা শুনে বুঝতে পারি সে কথাটা শুনে বেশি রাগেনি।উপরে উপরে রাগি ভাব ধরে রাখলেও নিচে বেশি রাগ নেই তার।তাই আমি উঠে দাঁড়িয়ে তার দিকে ঝুঁকে বলি,
–“নট ওকে,আমি আপনাকে বর বলেই ডাকবো।এতে যদি আপনার সমস্যা থাকে তাহলে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পানি খেয়ে আসুন।তবুও আমি আপনাকে বর ডাকবো।আর আপনি আমাকে বউ হিসেবে মানেন না তাতে কি হয়েছে?আমিতো আপনাকে বর হিসেবে মানি।”

নিদ্র রাগে দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় আমার দিকে।আমি তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দেই।আমার এই হাসিটা তার রাগ ১গুণ থেকে ৩গুণ বাড়িয়ে দেয়।নিদ্র কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে পিয়নকে ডাকে।পিয়ন আসতেই নিদ্র খানিকটা চিল্লিয়ে বলে,

–“কফি নিয়ে আসো!”

পিয়ন দৌড় দেয় কফি আনতে।আমি নিদ্রকে ধরে আস্তে করে বসিয়ে দেই নিজের চেয়ারে।তারপর নিজে গিয়ে বসে পড়ি নিজের চেয়ারে।নিদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।আমি নিদ্রের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে বলি,

–“দেখেন,আপনি আমাকে কেন স্ত্রী হিসেবে মানেন না একটা কারণ বলবেন?”

এমন সময় অনুমতি ছাড়া দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে রুশা।সে সন্দেহ চোখে তাকায় আমার দিকে।তারপর নিদ্রের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায় তার দিকে।নিদ্র মাথা তুলে রুশার দিকে তাকিয়ে রুবিক্স কিউবটা হাতে নেয়।রুশা এসে বসে পড়ে আমার পাশের চেয়ারটাতে।

নিদ্র হাসি মুখে তাকায় রুশার দিকে।রুশা নিদ্রের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলে,
–“নিদ্র,আমাকে আজকে বাসায় যেতে হবে।তাই ছুটি লাগতো!”
নিদ্র হাসি মুখে রুশাকে ছুটি দিয়ে দেয়।রুশা আরো একবার আমার দিকে সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে।

‌নিদ্র রুশার দেয়া ফাইলটা খুলতে খুলতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“আপনিও কি এখনি বাসা যাবেন?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বলি,না।আমি আমার বরের সাথে এসেছি বরের সাথে যাব।
আমার কথায় নিদ্র প্রচুর রেগে যায় কিন্তু কোনো কথা বলে না।আমি যে দিন দিন নিদ্রের প্রতি দুর্বল‌ হয়ে পড়েছি সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।নিদ্রের প্রতি জন্মাচ্ছে আমার ভালোবাসা।

এমন সময় পিয়ন এসে কফি দিয়ে যায়।নিদ্র এককাপ কফি আনতে বললেও পিয়ন দুইকাপ নিয়ে এসেছে দেখে নিদ্র অবাক হয়।সে অবাক হয়ে পিয়ন রহিম মিয়াকে জিজ্ঞাসা করে,দুইকাপ আনার কারন কি?

রহিম মিয়া তার হলদেটে দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“হার,আন্নি মোরে এককাপ আইনবার কইছেন কিন্তু মুই দুইকাপ লইয়া আইছি।কারন এইযে হ্যাডামটা আছে না,তার জইন্যে এককাপ আর আন্নের জইন্যে এককাপ।”

রহিম মিয়ার কথা বুঝতে অনেকক্ষন সময় লাগে আমার।নিদ্র রহিম মিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–“গর্দভ ওটা হার না স্যার হবে।আর হ্যাডাম নারে ম্যাডাম।যা দুইকাপ আনছোস ভালো করছিস।”

রহিম মিয়া পুনরায় তার হলদেটে দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“হার মুই তেইলে গেনু।হ্যাডাম গেনু মুই।”
এই বলে রহিম মিয়া রুম থেকে বের হয়ে যায়।রহিম মিয়া বের হইতেই আমি ‌নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“এনার কথা কেমনে বোঝেন।আমার বস হইলে কতদিনে বের করে দিত।”

নিদ্র কফির কাপটাতে চুমু দিতে দিতে বলে,
–“রহিমকে বাবা খুব পছন্দ করে।রহিমও বাবাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।আমারও রহি‌ম মিয়াকে ভালোলাগে।তার কথাগুলো শুনতে মন চায়।তাইতো শুরু থেকে বাবার সবাইকে চেঞ্জ করলেও রহিমকে রেখে দিছে অফিসে।”

এই বলে নিদ্র কফির কাপ রেখে উঠে দাঁড়িয়ে একটু বাহিরে যায়।আমি সাথে সাথে নিদ্রের কাপটা নিজে নিয়ে আমারটা নিদ্রের কাপের জায়গায় রেখে দেই।আমি এখন বেশ বুঝতে পারছি আমি নিদ্রকে সম্পুর্ন মনটা দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু আটমাস পর এই ভালোবাসাটা ছিন্ন হয়ে যাবে ভেবে খুব কষ্ট পাই।

নিদ্র রুমে প্রবেশ করে চেয়ারে বসে পড়ে।কফির কাপটার দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড রেগে যায় সে।হাত দিয়ে তুলে আছাড় মারে কাপটাকে।তারপর রাগি চোখ নিয়ে তাকায় আমার দিকে।একপর্যায়ে চিল্লিয়ে বলে,
–“গেট লষ্ট।বের হন আমার অফিস থেকে।”

হঠাৎ নিদ্রের এরকম রেগে যাওয়ার কারন বুঝতে পারিনা আমি।নিদ্রের চিৎকার শুনে অফিসের সবাই ‌এসে দাড়িয়েছে দরজার বাহিরে।কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা আমি?এমন সময় একটা কাজ করে ফেলি উজবুকের মতো।আমি নিদ্রের ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিশিয়ে দেই।দরজার বাহিরে দাঁড়ানো সবাই‌ সাথে সাথে সেখান থেকে চলে‌ যায়।নিদ্রের রাগের পরিমাণ চুড়ান্ত পর্যায় ছাড়িয়ে যায়।চোখ-মুখ লালটকটকে রং ধারন করে।

চলবে..ইনশাআল্লাহ

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৪র্থ_পর্ব

নিজেকে অনেক বেহায়া মনে হচ্ছে সাথে কমনসেন্সলেসও।কিভাবে এই কাজটা করতে পারলাম?নিদ্রর তো রেগে যাওয়া ঠিকই আছে।অফিসের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।নিদ্র আমাকে থাপ্পর মেরে বের করে দেয় রুম থেকে।তারপর সে গাড়ি নিয়ে রওনা দেয় বাসার উদ্দেশ্য।আমিও আর সেখানে না থেকে হাটতে শুরু করি।অফিস থেকে বের হওয়ার সময় রহিম মিয়া সামনে এসে এক গাল হেসে বলে,

–“হ্যাডাম,মন খারাপ করিয়েন না।হারের একটু রাগ বেশি।”

আমি রহিম মিয়ার কথায় স্লান একটা হাসি দিয়ে বের হয়ে আসি অফিস থেকে।হাটতে শুরু করি বাসার উদ্দেশ্যে।নিজেকে বেহায়া ভাবার কারন অনেক আছে।কিন্তু এই মুহুর্তের কারনটা খুবই বাজে।আমি এখনো বুঝতে পারছি না কেন তখন কিসটা করলাম।যদি কাউকে এই কথা বলি তাহলে সবাই পাগল বলবে এটা বুঝতে পারছি।কিন্তু সত্ত্যি আমি বুঝতে পারছি না তখন হঠাৎ করে আমার কি হলো?আজ যদি আমার বিয়েটা নিদ্র এর সাথে না হতো না হলে এই দিনটা দেখতে হতো না।সত্ত্যি আমি নিদ্রের প্রতি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছি।এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসি।

বাসার সামনে এসে দেখি নিদ্রের গাড়িটা বাহিরে দাঁড় কড়ানো।আমি মাথা নিচু করে ভিতরে প্রবেশ করি।নিচে কেউ নেই দেখে সোজা রওনা হই রু‌মের দিকে।রুমের সামনে গিয়ে দেখতে পাই দরজাটা লাগানো।হাত দিয়ে বুঝতে পারি শুধু আলগা করে আটকে দেয়।আমি হাত দেয়ার সাথে সাথে খুলে যায় দরজা।আস্তে করে রুমের ভিতরে প্রবেশ করি।রুমের চারদিকে তাকিয়ে নিদ্রকে দেখার চেষ্টা করি।কিন্তু নিদ্র রুমের কোথাও নেই।

আমি ধপ করে বসে পড়ি বিছানার মধ্যে।ঝট করে খুলে যায় ওয়াসরুমের দরজা।হাফপ্যান্ট পড়া অবস্থায় ওয়াসরুম থেকে বের হয় নিদ্র।আমি তার দিকে তাকাতে গিয়ে চোখ নামিয়ে নেই।আর তার প্রতি দুর্বল হওয়া যাবে না।আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে যাই।নিদ্র আমার দিকে তাকালো কিনা বুঝতে পারছি না।তবে কিছুক্ষন পর আলমারি খোলার আওয়াজ হয়।নিদ্র মনে হয় সেখান থেকে শার্ট বের করছে পড়ার জন্য।

আমার ধারনাই ঠিক।নিদ্র একটা শার্ট বের করে পড়ে ফেলে।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি নিদ্রের যাওয়ার দিকে।যে মানুষটা কালকে রাতে ভালো করে কথা বললো সে আজ কথাই বলছে না।খুব কষ্ট লাগছে।তবে এই ভেবে একটু ভালো লাগে যে,তার সাথে তো আট মাস পর ডিবোর্স হবে।কথা বলুক আর না বলুক আমার কি?তবুও কথা বলার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।যদিও বিরাট ভুল করে ফেলেছি।

আমি আবার ধপ করে বিছানায় বসে পড়ি।চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে শুরু করে।মনের মধ্যে চলে আসে আট মাস পরে কি করবো তার ভাবনা?বাসায় গিয়েও থাকতে পারবো না।বাবা থাকলেও মা অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে গেছে।মাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে ওই বাড়িতে থাকা কঠিন।তাইতো বাড়ি ছেড়ে শহরে এসে থাকতাম।আট মাস পর কোথায় থাকবো আমি?

এই মুহুর্তে মাথায় চাপ দেয় পুরনো একটা খারাপ অভ্যাস।কোনো কিছু বুঝতে না পারলে হাত কাটা।এটা আমার অনেক দিন আগের অভ্যাস।সামনে একটা ফলকাটা চাকু দেখতে পাই।চাকুটা হাতে নিয়ে আস্তে করে কাটতে শুরু করি হাতটা।চাকু দিয়ে লিখে ফেলি নিদ।র ফলাটা দেয়ার আগেই আমার কাছ থেকে চাকুটা নিয়ে নেয় কেউ একজন।

অবাক হয়ে ‌মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে নিদ্র নামক লোকটা।তার চোখ গুলো দেখে আমার মনটা পুনরায় ভয় পেয়ে যায়।নিদ্র তার হাতটা তুলে বসিয়ে দেয় গালের উপরে।একটু জোড়ে হওয়ায় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে আমার।

নিদ্র চাকুটা টেবিলের উপর রেখে কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে।এই অবস্থায়ও নিদ্র আমার সাথে কথা বললো না দেখে বুঝতে পারি সে প্রচন্ড রেগে আছে আমার উপর।হয়তো আর কখনো কথা বলবে না।এই মুহুর্তে একটা বাক্স নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্র।আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে পড়ে আমার সামনে।আমার কাটা হাতটা তার নিজের হাতে তুলে নেয়।তারপর গভীর মনোযোগ দিয়ে ওয়াস করতে শুরু করে হাতটা।মাঝে মাঝে একটু আধটু লাগছে আমার।তবে নিদ্রের মুখটা দেখে সবটা ভুলে যাচ্ছি আমি।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়েই পড়ছে।মনটা বলছে,এই ছেলেটা এত পাষাণ কেন?একবারও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।কথাও বলছে না।সে কি আমার মনটা বুঝতে পারছে না,বুঝতে পারছে না আমার কান্না করার কারণ।

আমি নিদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে।মনটাকে বোঝাতে পারছি না যে আটমাস পর আমরা আলাদা হয়ে যাব।

নিদ্র আমার হাতটা ব্যান্ডেজ করা শেষ করে মুখ তুলে তাকায় আমার দিকে।আমি তারাতারি নিজের চোখটা সড়িয়ে নেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“এসব কি?হাত কাটছেন কেন?”

নিদ্রর কথা শুনে আমি চোখ তুলে তাকাই তার দিকে।কোনো কথা না বলে ঢ্যাপঢ্যাপ করে দেখতে থাকি তাকে।নিদ্র আমার চোখের সামনে একটা আঙ্গুল তুলে ধরে বলে,
–“বাদ দিন।আর এরকম করবেন না।”

এই বলে উঠে দাঁড়ায় নিদ্র।তারপর এয়ারফোন আর মোবাইলটা নিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।আমি এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকি।নিদ্র বের হয়ে গেলে মনটা এক অজানা অনুভূতিতে ভরে যায়।আমি কতটা বেহায়া সেটা বুঝতে পারছি নাহলে এই কয়েকদিনের মধ্যে একটা ছেলের প্রেমে পড়ে যাই।

মুখে-ঠোটে কথা বলতে পছন্দ করি ছোটবেলা থেকেই।তাই সিদ্ধান্ত নেই মনের ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেব নিদ্রকে।রিজেক্ট করবে বুঝতে পারছি,তবুও বলেই দেখি।

মনের কথা বলার জন্য রওনা হই ছাদের দিকে।ছাঁদে গিয়ে প্রথমে চুপ করে একটা ফুল ছিড়ে নেই নিদ্রের বাগান থেকে।তারপর আস্তে আস্তে এগোতে থাকি নিদ্রের দিকে।একপর্যায়ে গিয়ে বসে পড়ি নিদ্রর ঠিক পিছনে।তারপর চোখ বন্ধ করে বলতে শুরু করি মনের কথাগুলো।

সব কথা শেষ হতেই ঘুড়ে দাঁড়ায় নিদ্র।আমি তার দিকে ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বলি,আই লাভ ইউ।
নিদ্র আমার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে এমন একটা কাজ করে যা আমি ভাবতেও পারিনি।হায় আল্লাহ..

চলবে..ইনশাআল্লাহ

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-১+২

0

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#১য়_পর্ব

বধু বেশে বরের ছোট ভাইয়ের বাসর ঘরে বসে আছি আমি।আমার সামনে ডিবোর্স পেপার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার বর্তমান বর মি.নিদ্র।তিনি ডিবোর্স পেপারটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বেশ শান্ত গলায় বলেন,
–“আপনার মতো নিচু ক্লাসের মানুষ এই জন্মে দেখিনি।কিভাবে নিজের বরের ছোট ভাইকে বিয়ে করতে পারলেন?যাই হোক,ডিবোর্স পেপারটাতে আর চুক্তিপত্রটাতে একটা সাইন দিন”


আমি মিহিমা।সবাই আদর করে মিহি বলে ডাকে।গ্রামের মেয়ে শহরে এসে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করি।কাল সকালে
বাবা হঠাৎ ফোন করে বলেন,

–“মিহি মা,আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি।তুই আজকেই চলে আয়।ছেলে খুব বড় পরিবারের।”
বাবার মুখের উপর কোনো‌ কথা বলতে না পেরে সব গুছিয়ে চলে যাই গ্রামে।বাড়িতে গিয়ে শুনতে পারি আজকেই বিয়ে।সবাই আমাকে হলুদ মাখাতে শুরু করে।দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ৭টা বাজলেও বরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।বাবা বেশ চিন্তিত হয়ে ঘটক আতাবুলকে ফোন করে।তার কিছুক্ষন পরই কয়েকটা গাড়ি আসে।গাড়ি থেকে নেমে একজন বৃদ্ধা বাবার কানে কানে কি যেন বলে?বাবা এসে আমাকে রেডি হতে বলে।সাথে এও বলে,বিয়েটা যার সাথে ঠিক হয়েছিল তার সাথে হচ্ছেনা।হচ্ছে তার ছোট ভাইয়ের সাথে।

তখন লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায় আমার।বান্ধবীরা ফিস ফিস করে নানা কথা বলতে শুরু করে।একপর্যায়ে বিয়ে শেষ হয়।বিয়ে পড়ানোর শেষ হলে আমার বরের ছোট সরি মি.নিদ্র একাই ড্রাইভ করে চলে আসেন আমাদের বাসা থেকে।পরবর্তিতে আমার শশুর-শাশুড়ী আমাকে নিয়ে আসে তাদের বাড়িতে।

“আপনার ইচ্ছা হলে চুক্তিপত্রটা পড়ে দেখতে পারেন!” কথাটা বেশ শান্ত স্বরে বলে নিদ্র।আমি তার দিকে তাকিয়ে স্লান হেসে বলি,
–“পড়ার দরকার নেই।কি আর লেখা থাকবে,সর্বোচ্চ আমার জীবন নিতে পারবেন।আর কি?”এই বলে আমি চুক্তিপত্রটাতে সাইন করে দেই।

ডিবোর্স পেপারটাতে সাইন করতে ধরলে নিদ্র আমাকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বলে,
–“এখনি সাইন করার দরকার নেই।চুক্তি অনুযায়ী আপনি ৮মাস আমার স্ত্রী।যদি সাইন করে দেন তবুও ডিবোর্স হবে না এত তারাতারি।আর ডিবোর্স পেপারে সাইন থাকলে এই চুক্তিপত্রটা আর কাজে লাগবে না।পরে সাইন করিয়েন।”

আমি নিরবে তার কথায় সম্মতি জ্ঞাপন করি।তিনি আমার হাত থেকে কলমটা নিয়ে গ্লাসের মধ্যে ফেলে দেন।তারপর সেটা বাম হাত দিয়ে তুলে নিয়ে টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে তারপর নিজের পকেটে ঢোকান।

তার এরকম ব্যবহারে আমি খুব লজ্জা পাই।হাতটা নিজের চোখের সামনে নিয়ে এসে বোঝার চেষ্টা করি কতটা নোংরা এই হাতটা।তিনি সোফায় বসে পড়েন ধপ করে।আমি তার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করি,
–“আমি কোথায় ঘুমাবো?”

আমার এই কথাটা তার রাগকে দ্বিগুণ করে দেয়।তিনি অগ্নিচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“মেঝেতে ঘুমাবেন।এত দামী বেড আপনাদের জন্য নয়।”

তার কথায় লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে নেই‌ আমি।মাথা নিচু করে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে শাড়িতে পা পেচিয়ে যায় আমার।সোফাটা সামনে থাকে ফলস্বরুপ ওনার গায়ে গিয়ে পড়ি আমি।চোখ তুলে তার দিকে তাকাতেই দেখতে পাই তার রক্তিম চোখ।তিনি এক ঝটকা দিয়ে আমাকে ফেলে দেন তার উপর থেকে।

খানিকটা উড়ে মেঝেতে পড়ে যাই আমি।হাতের কনুতে ব্যাথা পাই প্রচুর পরিমাণে।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করে নোনাজল।ব্যাথা নিয়ে দাঁড়িয়ে অশ্রুশিক্ত চোখে তাকাই তার দিকে।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে নিজের চোখটা ফিরিয়ে নেন।আমি মেঝেতে শুয়ে পড়ি বালিশ বিহিন অবস্থায়।

ঘুম নামক বস্তুটা কিছুতেই ধরা দিচ্ছেনা আমার চোখে।দেবেই বা কি করে,অনবরত এরকম পানি পরতে থাকলে কি আর ঘুম ধরা দেয়?আমি চোখ দিয়ে পানি ফেলছি আর ভাবছি,যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল,তার সাথে বিয়ে হলে নিশ্চয় এত কষ্ট পেতে হতোনা আমাকে।তিনি সোফায় বসে হাত দিয়ে কপাল চিপে ধরে বসে আছেন।আমি তার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলি,

–“পাশে আমার অফিস।আমি কি কালকে অফিসে যেতে পারবো?”

আমার কথা শুনে চোখ তুলে আমার দিকে তাকান মি.নিদ্র।তারপর বেশ কড়া গলায় বলে,
–“এজ ইউর উইস,আই ডোন্ট টক আব্যাউট ইট।”

আমি আর কোনো কথা না বলে ওই অবস্থায় শুয়ে থাকি।এখন বুঝতে পারছি বেহায়ার মতো কথা বলাটা আমার ঠিক হয়নি।নিজেকে শক্ত করার প্রবল চেষ্টা করে চলেছি।একসময় ঘুমিয়ে পড়ি আমি।সেই ঘুমেই কেটে যায় রাতটা।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে আটটা বাজে।ও মাই গড,অফিসের সময় পার হতে চলেছে।তারাতারি উঠে একটা টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে প্রবেশ করি।আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন মি.নিদ্র।আমি ফ্রেস হয়ে এসে তড়িঘড়ি করে রেডি হতে শুরু করি।আজকে অফিসে জরুরী একটা মিটিং আছে অন্য কোম্পানির সাথে।আজকে এই মিটিংটাতে সফল হতে পারলে আমার প্রমোশন হবে,না হলে বাদ দিয়ে দেবে।তারাতারি রেডি হয়ে নিচে নেমে আসি আমি।মি.নিদ্র অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে ‌নিচে ‌নেমে আসেন।

নিচে নেমে এক অবাক করা দৃশ্য দেখতে পাই আমি।যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাকে বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছেন আমার শশুর।লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক দৃষ্টিতে।এমন সময় আমার পাশে এসে দাঁড়ায় মি.নিদ্র।লোকটা কোনো‌ কথা না বলে চুপচাপ বের হয়ে যায় বাসা থেকে।

সবাই বসে পড়ে নাস্তার টেবিলে।আমি আর নিদ্র পাশাপাশি বসে পড়ি।তখন থেকেই একটা বিষয় লক্ষ করছি,নিদ্র আমার দিকে তাকাচ্ছে ঘনঘন।তবে কিছুটা অবাক হয়ে।তিনি নিশ্চয় ভাবছেন,কালকের ভিতু মেয়েটা কিভাবে আজকে এত চালু হয়ে গেল।

বিয়ের পরেরদিন অফিসে যেতে দিতে প্রচুর আপত্তি আমার শশুর বাড়ির লোকের।তাদের বোঝানোটা আমার পক্ষে অনেকটা কঠিনই ছিল।তবে শেষ পর্যন্ত তাদের বুঝিয়ে রওনা হই আমি।আমার সাথে বের হন মি.‌নিদ্র।তিনি গাড়ি নিয়ে চলে যান আর আমি রিকশায় বসে পড়ি।

অফিসে এসে জানতে পারি যে মিটিং এখনো শুরু হয়নি তবে যাদের সাথে মিটিং হবে তারা চলে এসেছে।আমি তড়িঘড়ি করে বসের সাথে মিটিং রুমে প্রবেশ করি।সেখা‌নে প্রবেশ করে বেশ চমকে উঠি আমি।মি.নিদ্র বসে আছেন সেখানে।তার পাশে বসে আছে শুটকি আকৃতির একটা মেয়ে।মেয়েটা বেশ চেপে বসেছে ‌নিদ্রের সাথে।তিনিও বেশ হেসেহেসে তার সাথে কথা বলছেন।

নিদ্রও যে আমাকে দেখে অবাক হয়েছে সেটা বুঝতে পারি আমি।সাথে এটাও বুঝতে পারি,আমার চাকরীটা আজকে চলে যাবে।
কিছুক্ষন পর সত্ত্যি হয়ে যায় ভাবনাটা।মি.নিদ্র মুখের উপর ডিলটা ক্যান্সেল করে চলে যায় সেই শুটকি মেয়েটাকে নিয়ে।ফলস্বরুপ বস আমাকে বের করে দেয় অফিস থেকে।আমি বসকে নানা ভাবে বোঝার চেষ্টা করলেও প্রতিবার ব্যার্থ হই।শেষ পর্যন্ত চাকরীটা চলে যায় আমার।মাথার উপর‌ আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।আট মাস পর ডিবোর্স তখন কি হবে আমার?

নিজের অজান্তেই চোখের কোণে নোনাজল জমে যায়।এক বুক কষ্ট নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে এলোমেলো পা ফেলে চলতে শুরু করি আমি।এই মুহুর্তে আমার পাশ দিয়ে চলে যায় নিদ্রের গাড়ি।গাড়ির মধ্যে নিদ্র আর সেই মেয়েটা বেশ হাসাহাসি করছে।আমি এলোমেলো পা ফেলে চলতে শুরু করি।মাথাটা খুব ঘুড়ছে,সাথে সমস্ত পৃথিবীটাও ঘুরছে মনে হচ্ছে।বহু কষ্টে ব্যাগটা চেক করে দেখি কত টাকা আছে?

সিদ্ধান্ত নেই আজকে নাইট ক্লাবে যাব।আমার এই সিদ্ধান্তটা যে মোটেও ঠিক ছিলনা সেটা ঢেড় বুঝতে পারছি।তবুও মনটাকে ঠিক করার জন্য রওনা হয়ে পড়ি নাইট ক্লাবের উদ্দেশ্য।
আগে থেকে এখানে থাকায় বেশ কিছু জায়গা চেনা ছিল।তাই নাইট ক্লাব খুঁজে বের করতে অসুবিধা হয় না আমার।

ক্লাবের সামনে নিদ্রের গাড়িটা দেখে বুঝতে পারি তারাও এখানে এসেছে।আমি ভিতরে প্রবেশ করে একটা টেবিলে বসে পড়ি।আমার ঠিক সামনের টেবিলটাতে বসে আছে নিদ্র আর সেই মেয়েটা।নিদ্র আমাকে দেখে বেশ অবাক হয়।দুজন দুজনের দিকে তাকানোর ফলে চোখাচোখি হয়ে যায় নিজেদের মধ্যে।আমি স্লান একটা হাসি দিয়ে চোখটা সড়িয়ে নিয়ে একটা ওয়েটারকে বলি বিয়ার দিতে।

ওয়েটার বিয়ার দিলে কয়েকগ্লাস খাবার পর মাথাটা ঝিম-ঝিম করতে শুরু করে।সামনের সব কিছু ঘোলা হতে শুরু করে।এমন সময় আমার সামনে এসে বসে একটা ছেলে।আমি বহু কষ্টে চোখ খোলা রেখে তাকাই নিদ্রের দিকে।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে এখনো।

ছেলেটা হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমি কি আপনার সাথে ড্যান্স করতে পারি?”

উজবুকটার কথায় আমার রাগ উঠে যায় সপ্তম আসমানে।হাত তুলে কষে একটা থাপ্পর মারি তার গালে।ছেলেটা অবাক হয়ে আমার থাপ্পর মারার কারন বোঝার চেষ্টা করছে।আমি এবার বেশ জোরে বলি,

–“আমি অন্য সবার মতো না যে,ঘরে স্বামী রেখে এসে অন্য পুরুষের সাথে ঢলাঢলি করবো।মনটা খারাপ তাই এসেছি।দুর হ আমার সামন থেকে।”

ছেলেটা আমার সামন থেকে চলে যায়।সামনের টেবিলে বসায় আমার সব কথা শুনতে পায় নিদ্র।আমি তার দিকে না তাকিয়ে টেবিলে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ি।

যখন ঘুম থেকে উঠি,দেখি আমি বসে আছি নিদ্রর গাড়িতে।আমার পাশে বসে গাড়ি চালাচ্ছে নিদ্র।জানালা খোলা থাকার কারনে বাতাস এসে উঠিয়ে দিচ্ছে তার চুলগুলোকে।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।

একপর্যায়ে তিনি গাড়ি‌ এনে থামান বাড়ি সামনে।আমাকে কাধে করে নিয়ে হাটতে শুরু করেন তিনি।ভাগ্যটা ভালো থাকার কারণে নিচে কেউ ছিলনা।নিদ্র আমাকে নিয়ে ‌রুমে যায় চুপ করে।রুমে যেতে আমি ‌নিদ্রকে বিছানায় ফেলে দিয়ে তার উপরে উঠে পড়ি।আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিদ্র।আমার নেশার ভাব যে এখনো কাটেনি সেটা বেশ বুঝতে পারছেন তিনি।

আমি একপর্যায়ে নিজের ঠোঁটটা মিশিয়ে দেই তার ঠোটের সাথে।তিনি আমাকে ঝটকা দিয়ে সড়িয়ে দেন।তারপরেও আমার মনের ভাব পাল্টে না।এবার বেশ শক্ত করে তাকে ধরে কিস করতে শুরু করি।তিনি অনেক চেষ্টা করেও আমাকে সড়াতে পারেন না।এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ হয়।

নিদ্র আমাকে ঝটকা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে দরজা খুলতে যায়।দরজা খোলার সাথে সাথে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্রের বড় ভাই,যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।নিদ্র বড়ভাইকে জড়িয়ে ধরে।আমি নেশালো ভাব নিয়ে কান্ডগুলো দেখছি।নিদ্র এবার তার ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“ভাইয়া,তোর বউকে তোর কাছে দিয়ে গেলাম।কি করে সামলাস সামলা।”

এই বলে নিদ্র বের হয়ে যায় রুম থেকে।সেই লোকটা আস্তে আস্তে আমার দিকে‌ এগিয়ে আসেন।কিছুক্ষন আগে নেশায় আশক্ত থাকা মেয়েটার নেশা কেটে যায় অনেকখানি।বুঝতে পারি লোকটা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আমার দিকে এগোচ্ছে।কিন্তু এনার সাথে তো আমার বিয়ে হয়নি।এই লোকটার সাথে কিছু হলে সেটা ঠিক হবেনা।আমি কি করবো বুঝতে পারি ‌না?কষ্টে বুকটা ফেটে যেতে শুরু করে।আমার বর কিভাবে পারলো তার ভাইয়ের কাছে আমাকে ফেলে যেতে?আট মাস পর তো আলাদা হবোই আমরা।এদিকে লোকটা খুব কাছে চলে এসেছে।কি করবো ভাবছি আমি?লোকটার হাত থেকে কি নিজেকে রক্ষা করতে পারবো?নিজের সত্তিত্বকে পারবো আগলে রাখতে?এক পর্যায়ে লোকটা আমার কাছে চলে আসে।

চলবে..ইনশাআল্লাহ

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#২য়_পর্ব

কোনো স্বামী কখনো এভাবে নিজের বউকে ভাইয়ের কাছে ফেলে যেতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না।এদিকে লোকটা আমার পাশে‌ চলে আসে।এমন সময় খট করে খুলে যায় দরজ।লোকটা সাথে সাথে পিছনে তাকায় অনেকটা ভয় নিয়ে।নিদ্র তারাতারি এসে দাঁড়ায় আমার আর লোকটার মাঝে।সে তার ভাইকে উদ্দেশ্য করে খানিকটা নিচু গলায় বলে,

–“অনিক ভাইয়া,তুই এখান থেকে চলে যা।বাবা আসতেছে আমার রুমে।বুঝলাম না কিভাবে টের পেল?”

নিদ্রের দিকে এবার বেশ খানিকটা সন্দেহ নিয়ে তাকায় অনিক।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটু জোড় গলায় বলে,
–“আমাকে তাড়ানোর বুদ্ধি করেছিস নিদ্র।রক্ষা করতে চাইছিস তোর বউকে।তুই মনে রাখিস,এই মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হবার কথা ছিল।”

নিদ্র শান্ত চোখে তাকায় অনিকের দিকে।তারপর পিছনে ঘুরে আমার দিকে তাকায়।তারপর আবার সামনে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–“তাহলে বিয়ে না করে পালালে কেন?”

নিদ্রের এমন প্রশ্নে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় অনিক।সে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,
–“নিদ্র,তুই জানিস আমি রুহিকে ভালোবাসি।আজ রুহিও আমাকে ছেড়ে চলে গেল..”
“তাই এখন বউয়ের দাবি নিয়ে এসেছো!” অনিকের বাকি কথাটা শেষ করে দেয় নিদ্র।সে অনিকের দিকে তাকিয়ে আবার বলে,

–“শোনো,তুমি পালিয়ে যাওয়ার কারনে ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।বিয়ে হয়েছে মানে সে আমার ওয়াইফ।যদিও ৮মাস পর আমাদের ডিবোর্স হবে,তবুও এখনতো সে আমার বউ।আর তুমি ভাবলে কি করে আমার বউকে আমি তোমার হাতে তুলে দেব এত সহজে।তোমাকে পরিক্ষা করলাম ভাইয়া,ছি.।আই হেট ইউর মাইন্ড।বাবা তোমাকে ত্যাজ্য করেছে।কারন তোমার মতো ছেলে বাবার চাই না।যে একটা মেয়ের জন্য নিজের বাবা-মাকে খুন করার প্লান করে,সেরকম ছেলে কো‌নো বাবা-মা চায় না।আমিও আজ থেকে তোমাকে ত্যাজ্য করলাম ভাই হিসেবে।বের হও নাহলে বাবাকে ডাকবো।”

বাবার কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় অনিক।সে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে চুপ‌ করে বের হয়ে যায়।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এসে সোফায় বসে পড়ে।আমি তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

–“নেশা কেটে গেছে আপনার।”

আমি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলি,
–“যে অবস্থায় ফেলে ‌গেছেন,আরো নেশা থাকে।নেশা বাপ বাপ করে পালিয়ে গেছে।”
নিদ্র আমার কথায় শুধু মুচকি একটা হাসি দেয় কোনো ‌বলে না।আমি মেঝেতে শোয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।এমন সময় নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“বিছানাটা বড় আছে,চাইলে এক সাইটে থাকতে পারেন।তবে মাঝে কোল বালিশটা রাখতে হবে।লাইট অফ করা যাবেনা।”

তার কথায় আমি এক আলাদা প্রশান্তি খুঁজে পাই।সাথে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে,আচ্ছা আমি কি তাকে স্বামী হিসেবে চাই?কেন তার সাথে শোয়ার কথায় মনটা এত খুশি হলো?তবে কি তার প্রতি আমার অনুভূতি জন্মেছে?

এতশত না ভেবে আমি অনেকটা খুশি হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি।কোল বালিশটা মাঝে রেখে তার দিকে চোখ করে শুয়ে থাকি।নিদ্র সোফা থেকে উঠে আমার পাশে শুয়ে পড়ে।এখন দুইজনে একই বিছানায় শুধু মাত্র কোল বালিশটা দিয়ে বর্ডার দেয়া।আমি বেহায়ার মতো নিদ্রের দিকে তাকিয়ে আছি।নিদ্র আমার এরকম তাকিয়ে থাকা দেখে নিজেও আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে থাকে।

প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় কে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারে?প্রতিযোগিতায় নিঃসন্দেহ জয় লাভ করে নিদ্র।তার এরকম তাকিয়ে থাকা দেখে লজ্জা পেয়ে চোখ সড়িয়ে নিতে বাধ্য হই আমি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

–“আপনার চাকরীটা চলে গেছে তাইনা?”

তার কথার উত্তরে আমি শুধু নিরবে মাথা নাড়াই কোনো কথা বলি না।সে মুখ দিয়ে এক অদ্ভুত ধরনের শব্দ করে।তারপর মুচকি হেসে বলে,
–“আপনাদের সাথে ডিলটা করলে আমাদের অনেক লস হতো।তাই আর ডিলটা করিনি।তার উপর রুশারও আপত্তি ছিল ডিলটা নিয়ে।তাই মুখের উপরই না বলে দিয়ে চলে আসি।”

আমি এবার নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আমার চাকরীটা তো গেল।চাকরী খুঁজতে হবে এখন আবার।আচ্ছা ওই শুটকি আকৃতির বেয়াদপ মেয়েটার নাম কি রুশা?”

নিদ্র মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“হুম।সে আমার পি.এ।অবশ্য এই মাস শেষ হলেই সে আমেরিকা চলে যাবে তার বরের কাছে।তখন পদটা ফাঁকা হয়ে যাবে।নতুন কোন মেয়েকে আনতে হবে আবার।”

আমি নিদ্রের মুচকি হাসিটার উপর বেশ বড়সড় ভাবে ক্রাশিত হই।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।আমার এরকম তাকানো দেখে নিদ্র উল্টো দিকে ঘুড়ে সুয়ে পড়ে।তারপর আর এদিকে না তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে।তার সাথে ঘুমিয়ে পড়ি আমিও।

পরেরদিন সকাল বেলা উঠে নিজেকে ঠিক জায়গায় আবিষ্কার করলেও নিদ্র তার জায়গায় দেখতে পাইনা।খানিকটা কৌতুহল নিয়ে চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকাই।একপর্যায়ে চোখ আটকে যায় ওয়াসরুমের দরজার সামনে।ওয়াও😍

সদ্য গোসল শেষ করে বের হয়েছে নিদ্র।পরনে হাফ প্যান্ট আর এক গেঞ্জি।মাথার চুল গুলো ভালো করে না মোছার কারনে চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে হালকা হালকা।সেই সাথে তার লাল টকটকে ঠোটটা তার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারছিনা।

নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে সোফায় বসে পড়ে।তার এই মুচকি হাসিটাই আমার মনটা কেড়ে নেওয়ার জন্য যতেষ্ট-এর থেকেও বেশি।আমি বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকি তার দিকে।নিদ্র সোফায় বসে ল্যপটপটা কোলে বসিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে শুরু করে।

আমি বিছানা থেকে উঠে বিছানা গোছাতে শুরু করি।আমি বারবার নিদ্রের দিকে তাকালেও সে একবারও আমার দিকে তাকায়নি।আমি ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হই।এমন সময় কাজের মেয়ে ফুলি এসে খবর দেয়,ব্রেকফাষ্ট করার জন্য নিচে ডাকছে সবাই।

নিদ্র হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পড়া অবস্থায় ল্যাপটপটা কোল থেকে নামিয়ে রেখে বের হয়ে যায় রুম থেকে।আমি অবাক হয়ে তার পিছন পিছন বের হই রুম থেকে।

সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে।আমরা দুজন গিয়ে পাশাপাশি বসে পড়ি।নিদ্র খাবার তুলে নিয়ে খেতে শুরু করে।আমিও তার দেখাদেখি খাবার তুলে নিয়ে খেতে শুরু করি।প্রথমের দিকে সবাই চুপ থাকলেও মধ্যবর্তি সময়ে আমার শশুর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“বউমা,তুমি আজকে অফিসে যাবে না!”

আমি মাথা নিচু করে বলি,
–“বাবা,আমার চাকরীটা চলে গেছে।এখন আরেকটা চাকরী খুঁজতে হবে।”
আমার এই কথাটা মনে হয় পছন্দ হয়নি আমার শাশুড়ির।তিনি খানিকটা রেগে বলেন,
–“আমাদের এত বড় একটা অফিস থাকতে তোমাকে কেন চাকরী খুঁজতে হবে।তুমি আজ থেকে নিদ্রের সাথে অফিসে যাবে।নিদ্র,বউমাকে অফিসে নিয়ে যাবি।”

নিদ্র এবার মাথা তুলে এর এই কথার প্রতিবাদ করতে শুরু করে।সে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে,যে অফিসে এই মুহুর্তে কোনো পদ ফাঁকা নেই।কিন্তু আমার অবুঝ শশুর-শাশুড়ি কড়া গলায় জানিয়ে দেন,পদ না থাকলে পদ বানিয়ে নিবি।তবুও তোকে অফিসে নিয়ে যেতেই হবে।

শেষ পর্যন্ত নিদ্র খাবার শেষ না করেই উঠে পড়ে।আমি নিদ্রের সাথে অফিসে যাব কথাটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।মনে মনে এত খুশি হয়েছি যা বলে বোঝানো কঠিন।কিন্তু কেন খুশি হলাম আমি?আর ৮মাস পরতো আমরা দুজন আলাদা হয়ে যাব।এই কথাটা ভেবে মনটা খানিকটা খারাপ হয়ে যায়।

সেদিনের মতো নিদ্রের গাড়িতে করে অফিসে যাই আমি।প্রথমদিন অফিসে গিয়েই এরকম কিছু করে ফেলবো সেটা আমি কখনো ভাবতে পারিনি।নিদ্র আমাকে সামনে বসিয়ে রেখে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।চোখ দিয়ে আগুনের ফিরকি ঝড়ছে।

চলবে..ইনশাআল্লাহ