Friday, June 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1449



আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-১১

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১১
লেখিকাঃমাহযাবীন

পরিবারের সবার সাথে প্রায় অনেকটা সময় কাটিয়ে রাত ১২ টায় নিজ কক্ষে ফেরে নাফিয়া।অনেক ভালো লাগছে তার নিজ পরিবারের সবার সাথে এতোটা দিন পর সময় কাটাতে পেরে।ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়ে চোখজোড়া বুঝতেই নাফিয়ার চোখের সামনে ভেসে ওঠে গত রাতে ছাঁদে আফিমের সাথে একসাথে নাচার কিছু মুহূর্ত।বিনে কারণেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে নাফিয়ার।সোজা হয়ে শোয়া থেকে ডান দিকে কাত হয়ে শুয়ে চোখজোড়া বুঝতেই আবারও নাফিয়ার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আজকের মুহূর্তগুলো।যেখানে হুট করেই আফিম তাকে নিজের কাছে টেনে এনেছিলো আর শেষে তার নাকে আফিমের ঠোঁট ছোঁয়ানোর মুহূর্ত টা!মনে পরতেই মনে একরাশ লজ্জা ও মুগ্ধতা এসে ভর করে।সাথে সাথেই সে পাশ ফিরে বাম দিকে কাত হয়ে শোয়।ঠোঁটে হাসি বজায়ে রেখেই আবারও চোখজোড়া বুজে নেয় সে।চোখ বুঝতেই তার চোখের সামনে সেই মুহূর্ত টা ভেসে আসে যখন আফিম প্রশ্ন করেছিলো,
“কোন অধিকারে আমাকে নিজের এতোটা কাছে আসার অনুমতি দেও?”
চটজলদি চোখজোড়া মেলে তাকায় নাফিয়া।আবারও এক অদ্ভুত অনুভূতি এসে জায়গা করছে তার মনে।এ অনুভূতিতে আছে লজ্জা,মুগ্ধতা সেই সাথে কিছুটা দ্বিধা।নাফিয়ার মনে হচ্ছে,সে হয়তো আফিমকে ভালোবাসতে শুরু করেছে কিন্তু তা কতটা ঠিক সেটি নিয়ে সে নিশ্চিত হতে পারছে না।হতেও তো পারে এসব শুধুই মুগ্ধতা বা আকর্ষণ।

বারান্দায় হাতে কফির মগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে আফিম।আকাশটা আজ অন্ধকার।না আছে চাঁদ আর না দেখা যাচ্ছে তেমন তারার সমাবেশ।তাও অন্ধকার সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে।নাফিয়া তার জীবনে আসার পর হতে এখন অব্দি ঘটা সকল স্মৃতি একের পর এক স্মৃতিচারণ করছে।
প্রথম দিনে নাফিয়ার চেহারার সেই মায়ায় আকর্ষিত হয় আফিম।তারপর আফিমের করা প্রতিটি অন্যায় এর জবাব দেওয়ার যে সাহসটা নাফিয়া দেখিয়েছিলো তাতে আফিম বাধ্য হয় নাফিয়াকে নিয়ে ভাবতে।সেই সাথে নাফিয়ার আচার-আচরণ,স্বভাব,চরিত্রের বৈশিষ্ট্য যা এই তিন মাসে ফুটে উঠেছে তাতে আফিমের মনে নাফিয়ার জন্যে তৈরি হয়েছে মুগ্ধতা।সেই সাথে নাফিয়াতে অভ্যস্তও হয়ে গিয়েছে সে।

!!
বিকেলে নাফিয়া ও তার বাবা সোফায় বসে টিভি দেখছে।সেই সাথে বাবা ও মেয়ের একটু-আধটু গল্পও হচ্ছে।এমন সময় সেখানে এসে উপস্থিত হন নয়না বেগম।নাফিয়ার পাশে বসে তিনি বলে ওঠেন,
-তোমায় কিছু বলতে চাইছি!
-বলো আম্মু।(গুরুত্ব না দিয়ে টিভিতে চোখ রেখেই বলে নাফিয়া)
-কথাটি গুরুত্বপূর্ণ।এই যে শুনছেন?(নাফিয়ার বাবাকে উদ্দেশ্য করে)টিভিটি অফ করুন তো!
এবার ঠিক হয়ে বসে নাফিয়া।হঠাৎ তার মায়ের কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা বুঝতে না পারায় কিছুটা গম্ভীরভাব নিয়ে মায়ের দিকে তাকায় নাফিয়া।নাফিয়ার বাবা টিভিটি অফ করতেই নয়না বেগম বলে ওঠেন,
-নাফিয়া একটি বিষয় তুমি ভালো করেই জানো, আমাদের আর্থিক কোনো সমস্যা নেই।ঢাকায় এই এক তলা বাড়ি এবং গ্রামে তোমার দাদার দুতলা বাড়িটি আমাদের।সেই সাথে তোমার বাবার জায়গা-জমি খুব যে কম তা কিন্তু নয়।
ব্রু কুঁচকে নাফিয়া বলে ওঠে,
-হটাৎ এসব কথা?
-আমার কথা শেষ হয়নি।তুমি এও জানো যে,তোমার চাচা বাটপারি করে তোমার বাবাকে তোমার দাদার বাড়ির কোনো অংশ না দিয়ে সে বাড়িটি বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন।আর নিজের পৈতৃক ভিটা বাঁচাতেই তোমার বাবা নিজের আপন ভাইয়ের থেকে নিজের বাবার বাড়ি ক্রয় করেন।আর এই বাড়ি কিনতেই তিনি এক বড় লোন নিজের কাঁধে তুলেছিলেন যার বোঝা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন।লোন না নিয়ে তিনি নিজের জমিও বিক্রি করতে পারতেন কিন্তু তা সে কোনোভাবেই করতে চায় নি।
-হ্যা মা,সব টাই জানি।হটাৎ আজ এগুলো নতুন করে বলার কি হলো?
-দেখো নাফিয়া,আমি জানি তুমি চাইছো দ্রুতই তোমার বাবাকে এ ঋণ দিয়ে মুক্ত করতে।যা সন্তান হিসেবে তোমার কর্তব্যও।কিন্তু তার আর প্রয়োজন নেই।ঋণ আর বেশি নেই।মাত্র ২ লাখের মতো আছে যা সামনের কিছু মাসের মধ্যে শোধ হয়ে যাবে।
-আলহামদুলিল্লাহ।কিন্তু এটিও তো আমি জানিই মা।
-এখন মূল কথাটি বলছি!আমাদের সমাজে এক প্রচলিত বাণী আছে,”মেয়েরা কুড়িতে বুড়ি”।সেথায় তোমার বয়স ২৮ বছর হয়ে গিয়েছে যা অতিরিক্ত।আমি এবং তোমার বাবা তোমার বিয়েটায় আর দেরি করতে চাইছি না।তাই তোমার আর চাকরি করতে হবে না সামনের মাস থেকে।এ মাসে তাদের জানিয়ে দিও।
মায়ের কথায় একদম চুপ হয়ে যায় নাফিয়া।মুহূর্তেই চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে যায় তার।এক তীব্র ভয় নিজের মাঝে অনুভব করছে সে।এ ভয়টি শুধুই আফিমকে হারানোর ভয়।টুপ করে নাফিয়ার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরতেই নয়না বেগম বলে ওঠেন,
-এভাবে কাঁদার কিচ্ছুটি নেই।পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই বিয়ে করে।তুমি প্রথম নও।তাই এতো ভয় না পেয়ে বিষয়টি সহজভাবে নেও।তোমার বাবার পরিচিত এক মুখে ডাকা ভাইয়ের ছেলেকে আমরা তোমার জন্যে পছন্দ করেছি।সে আগামী ১০/১৫ দিনের মাঝেই তোমার সাথে দেখা করবে।
-মা,এখনই কেনো বিয়ে করতে হবে?
-২৮ বছর বয়স কম নয় নাফিয়া।
-বাবা,তুমি কিছু বলো?
পত্রিকা হতে চোখ উঠিয়ে নিজের মেয়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে ওঠেন,
-তোমার মায়ের সাথে সহমত।আর দেরি করা ঠিক হবে না তবে একটি বিষয় বলতে চাইছি।তোমার কোনো পছন্দ থেকে থাকলে বলতে পারো!
-ওর আবার কিসের পছন্দ।আমরা যা সিদ্ধান্ত নিবো তাই ই ওর জন্য সঠিক।(নয়না বেগম)
-ভুল বললে নয়না।জীবন সঙ্গী ওর,সংসার করবে ও তাই ওর জন্য কোন মানুষটি উপযুক্ত হবে তা ও ই ভালো বুঝতে পারবে।
-আমাদের সময় তো বাবা-মাই বিয়ে ঠিক করছিলো আর সেই কালে বিয়ে টিকতো,এখনকার বাচ্চারা নিজের পছন্দে বিয়ে করে তারপরে তো হয় তালাক।
-আবারও ভুল বললে নয়না।আগের যুগে নারীরা ছিলো এমন যে মরে যাবো কিন্তু স্বামীর বাড়ি ছাড়বো না।তারা হাজারো অত্যাচার বা কষ্ট সহ্য করে সংসার করে গিয়েছিলেন দেখে বিবাহ বিচ্ছেদ তেমন হতো না।আর এখনকার নারীরা স্বাধীন।তারা এখন মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করে স্বামীর সংসারে পরে থাকে না।সেই সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ তখন মানুষ যেমন ভয় পেতো এখনকার সময়ে এটি তেমন কোনো ব্যাপারই না।আগের কালের থেকে এখনকার সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে কারণ যুগ পাল্টেছে। এর সাথে বড়রা বিয়ে ঠিক করা বা ছোটরা নিজেরা পছন্দ করা টা কোনোভাবে জড়িত নয়।
উত্তরে কিছু বলেন না নয়না বেগম।স্বামীর কথায় যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন তিনি।
নয়না বেগম নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে ওঠেন,
-পছন্দ আছে কেউ?
উত্তরে বলার মতো কিছুই পায় না নাফিয়া।কিই বা বলবে সে?আফিম তাকে পছন্দ করে কিনা, ভালোবাসে কিনা,বিয়ে করবে কিনা কিছুই তো জানে না সে।উত্তরে কিছু না বলে সোফা থেকে উঠে নিজের কক্ষের দিকে অগ্রসর হয় নাফিয়া।নয়না বেগম নাফিয়াকে থামাতে চাইলে নাফিয়ার বাবা ইশারায় নিষেধ করেন নিজ স্ত্রীকে।

!!
কেমন যেনো সব উলট-পালট লাগছে নাফিয়ার।আফিমকে ঘিরে তার এতো এতো অনুভূতিগুলোর কি নাম দেবে তা ই এখনো নিশ্চিত করে পারলো না সে।এরই মাঝে এতো গুলো চিন্তে এসে পরেছে তার উপর।একদিকে বাবা-মা বিয়ের কথা বলায় অদ্ভুত রকমের ভয় কাজ করছে নাফিয়ার।এই ভয়টাতে কেমন যেনো কষ্ট আছে,বিচ্ছেদ হবার আতংক আছে।সেই সাথে আফিমের মনে তার জন্য কিরূপ অনুভূতি কাজ করে তা নিয়েও ভীষণ চিন্তিত নাফিয়া।আফিম কি তাকে ভালোবাসে নাকি সাময়িক সময়ের মোহ এর জন্যেই কাছে আসা?
এসব চিন্তের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে নাফিয়া।তেমন করে আর কারো সাথে কথা বলছে না,রুম হতে দরকার ছাড়া বের হচ্ছে না।কেমন যেনো চুপচাপ হয়ে গিয়েছে সে।নয়না বেগম সহ বাড়ির সবাই বিষয়টি খেয়াল করে কিন্তু নাফিয়ার বাবা সবাইকে বলেছেন নাফিয়াকে কোনো প্রশ্ন না করে নিজের মতো করে কয়দিন থাকতে দিতে।কারণ সে উপলব্ধি করতে পারছেন তার মেয়ে কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত।আর তাই হয়তো নাফিয়া একান্তে সময় কাটাতে পারলে নিজেই নিজের সমস্যার সমাধান করতে পারবে।

নাফিয়া নিজের বাসায় আসার পর আজ ২য় রাত!বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকাতেই নাফিয়ার আফিমের সাথে কাটানো বেশ কিছু মুহূর্ত মনে যায়।দুজনার বেশির ভাগ স্মৃতিই এই আকাশের সাথে।রাতের আকাশ,চাঁদ,তারা!নাফিয়া আপন মনেই ভাবে আজ যদি তাদের মাঝে প্রেম নামক সম্পর্কটি থাকতো তবে বলা যেতো,
“আমাদের প্রেমের সাক্ষী এই আকাশ,বাতাস,ঐ চাঁদ ও তারা।”
ভাবতেই হেসে ওঠে নাফিয়া।এই বাক্যগুলো খুবই হাস্যকর লাগে তার কাছে।বাংলা সিনেমাগুলোতে নায়ক-নায়িকাদের প্রেমের সাক্ষী তো এই আকাশ,বাতাস,চাঁদ,তারাই হয়।আর আজ কিনা তারও একই অবস্থা,ভাবা যায়!
হটাৎই নাফিয়ার মুঠোফোনটি বেজে ওঠে।এতো রাতে কে কল দেবে ভেবে পায় না সে।ফোনটি হাতে নিতেই দেখে আননোন নাম্বার।ব্রু কুঁচকে ফোনটি রিসিভ করে কানে ধরে নাফিয়া বলে ওঠে,
“আসসালামু আলাইকুম”
কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসে না।নাফিয়া চুপ করেই আছে ওপাশের মানুষটির কিছু বলার অপেক্ষায়।কেউ কল দিয়ে এভাবে চুপ করে থাকবে কেন তা বুঝে উঠতে পারছে না সে।হটাৎই তার মনে হয় কলটি কি কোনোভাবে আফিম দিয়েছে!মনে হতেই ধীরে ধীরে নাফিয়ার হৃৎস্পন্দন বাড়তে শুরু করে।নাফিয়া মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-আ আ আফিম?
আর কিছু বলতে পারে না নাফিয়া।এক তো সে সন্দিহান আফিমই কল দিয়েছে কিনা!দ্বিতীয়ত হয়তো আফিমই কল দিয়েছে ভেবেই নাফিয়ার ভীষণ খুশি খুশি অনুভব হচ্ছে সেই সাথে তার হৃৎস্পন্দন বেড়ে চলছে।কিছুটা সময় উভয়ের নিরাবতার পর ফোনের ওপাশ হতে আলতো স্বরে একটি আওয়াজ আসে,
“মিস.শেখ”
শব্দটি শোনার সাথে সাথেই যেনো নাফিয়ার হৃৎস্পন্দন কয়েকশো গুণ বেড়ে গিয়েছে,অতিরিক্ত খুশি তার ঠোঁটের আলতো হাসিকে অনেকটা বৃদ্ধি করে দিয়েছে।খুশিতে নাফিয়া যেনো কিছু বলতেই পারছে না।কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে নাফিয়া কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলে ওঠে,
“আফিম?”
-হু।
-এতো রাতে!দাদী ঠিক আছে?
-আছে।
-ওহ।
আবারও দুজনেই চুপ।কিছুটা সময় নিরাবতাই চলে তাদের মাঝে।আফিম বলে ওঠে,
-I wanna see you tomorrow at home.
কথাটি বলেই ফোন কেটে দেয় আফিম।

চলবে।

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ স্পেশাল❤️
লেখিকাঃমাহযাবীন

এক হাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আফিম।নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে মৃদু স্বরে সে বলে ওঠে,
-Will you be my addiction Miss. Sheikh?
উত্তরে নাফিয়া শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
-উহু।

গল্পের একটা খন্ড অংশ তুলে ধরলাম।ভেবেছিলাম পুরো গল্পটা লিখে সকালে পোস্ট করবো। কিন্তু লিখতে পারলাম না চোখ ব্যথায়। সবাই ভাবেন নাফিয়া আফিমকে “না” উত্তর দিলো কেন!😁😁
[সবাই যা যা অনুমান করবেন তা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আমাকে জানাবেন💗]

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-১০

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১০
লেখিকাঃমাহযাবীন

“একসাথে থাকার চেয়ে,একসাথে ভালো থাকাটাই খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।একই সাথে রয়েও যদি সেথায় মানসিক প্রশান্তি না থাকে তবে একসাথে থাকাটা বৃথা নয় কি?” ২৪ বছর আগে এই প্রশ্ন জেগেছিলো সানিয়া বেগমের মনে।এর উত্তর খুঁজে পাওয়ার পরেই তিনি আফিমের বাবা আরহাম ইবনানের সাথে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
তাদের বিয়ে টা হয়ে ছিলো পারিবারিক ভাবে।বিয়ের আগে তারা শুধু একে-অপরের রুপ এবং কিছু গুণাবলী সম্বন্ধে জানারই সুযোগ পেয়েছিলেন।অতঃপর বিয়ের পর পরিলক্ষিত হয়,প্রতিটি জিনিসেই তাদের ভিন্ন মত,তাদের মুগ্ধতা ভিন্ন জিনিসে।সব জিনিসেই দুজনের ভিন্ন মত হওয়ায় একজনকে তো সমঝোতা করতেই হতো।আর সেই একজন টা ছিলেন সানিয়া বেগম।নিজের ইচ্ছে,চাওয়া-পাওয়া সব কিছু নিজের মাঝে চেপে তিনি আরহাম সাহেবের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন।হয়তো এটিই তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো।একটি সম্পর্কে যখন সবসময়ই একতরফা সমঝোতা হয় তখন সমঝোতা করা মানুষটির অনুভূতির মৃত্যু ঘটে।সে মানুষটি কখনোই সে সম্পর্কে থেকে খুশি থাকতে পারে না।আর যে মানুষটি নিজেই খুশি নয় সে অন্যকে কিভাবে খুশি রাখবে!আরহাম সাহেব স্ত্রী হিসেবে যেরূপ নারী চেয়েছিলেন তেমনটি তো মোটেও ছিলেন না সানিয়া বেগম।তাই মনের দিক দিয়ে সেও এই সম্পর্কে সুখে ছিলেন না।এর মানে এমনটি মোটেও নয় যে তিনি সানিয়া বেগমের সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করতেন বা সানিয়া বেগমকে স্ত্রী হিসেবে যোগ্য মূল্য বা সম্মান করেননি।
আফিমের বয়স যখন ১০ তখন সানিয়া বেগম একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নেন।একটিই তো জীবন!একে সমঝোতা বা বিনা সুখ,প্রশান্তিতে কাটিয়ে দেওয়াটা বোকামী মাত্র।তাই তিনি আরহাম সাহেবকে তালাকের প্রস্তাব দেন।এ প্রস্তাবে আরহাম সাহেব প্রথমে অবাক হলেও পরে সম্মতি দেন।অতঃপর নিজের বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছেতে বিদেশ গমন করেন।তার ২ বছর পর আরহাম সাহেব তার মাকে জানান তিনি ওখানের এক বাংলাদেশী মেয়েকে পছন্দ করেছেন এবং বিয়ে করতে চান।
সানিয়া বেগম এবং আরহাম সাহেবরের মাঝে পার্থক্য এতোটুকুই যে আরহাম সাহেব তার নতুন জীবন সঙ্গীর মাঝে সুখ খুঁজে নিয়েছেন এবং সানিয়া বেগম সুখ খুঁজে নিয়েছেন নিজের পুত্রের মাঝে।

সানিয়া বেগম,আফিমকে শিখিয়েছেন সৎ মাকেও সম্মান করতে এবং নিজের সৎ বোনকেও আদর করতে।সানিয়া বেগম কখনোই আফিমের কাছে এসব বিষয়ের জটিলতা উপস্থাপন করেননি বরং এসকল বিষয় তিনি যথেষ্ট চতুরতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে আফিমের কাছে সহজ এবং স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন।সেই সাথে তিনি কখনোই আফিমকে নিজের কষ্টের প্রত্যক্ষদর্শী করেন নাই।বরং আফিমের মনে তার পিতার প্রতি সম্মানটা যেনো বজায় থাকে সে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখেছেন।এসবের একটিই কারণ।তা হলো সানিয়া বেগম কখনোই চান নি তার ছেলে কোনোভাবে কষ্ট পাক বা তার ছেলের মনে এসব বিষয় কোনোভাবে দাগ কাটুক।মায়ের কষ্ট কোনো সন্তানই সহ্য করতে পারে না।তাই হয়তো আফিমের তার পিতার প্রতি ক্ষোভ বা বিরূপ ধারণা তৈরি হতো যা একটি শিশু মনের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।আফিমের মায়ের বুদ্ধিমত্তা এবং সচেতনতার জন্যেই আফিমের শৈশবে তার পিতা-মাতার আলাদা হওয়ায় তেমন গাঢ় এবং বাজে প্রভাব পরেনি এবং সেই সাথে আফিমের এসব বিষয় মেনে নিতে তেমন কষ্টও হয়নি।
আফিম যেমন তার সৎ মা ও বোনকে ভালো জানে ঠিক তেমনই তার সৎ মা,বোনও তাকে যথেষ্ট ভালো জানে।তাদের সবার মাঝেই একটা ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান।সেই সাথে সম্পত্তি নিয়েও কোনো ভেজাল নেই।কারণ আরহাম সাহেব তার বাংলাদেশের কোম্পানি আফিমের নামে করে দিয়েছেন এবং ইউএসএ তে তার চলমান ব্যবসার উত্তরাধিকারী তার কন্যা সন্তান।

!!
আফিমের অফিসে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকায় সে বলতে গেলে সারাদিনই ব্যস্ততায় কাটায়।যেখামে সন্ধ্যেতেই বাড়ি ফেরে সে সেখানে আজ রাত ৮ বাজার পর বাড়ি ফিরেছে।গোসল সেরে নিচে আসতেই আফিমের মনে পরে আজ নাফিয়ার নিজের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো।মনে হতেই আফিম দ্রুত দাদীর রুমের দিকে অগ্রসর হয়।কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে তার।নাফিয়াকে শেষ একটি বারের জন্যে হলেও সে দেখতে চায় নাহলে আগামী ৪/৫ দিনের এ দূরত্ব যেনো তার জন্যে অসহনীয় হয়ে উঠবে।তড়িৎগতিতে দাদীর কক্ষে প্রবেশ করতেই এক শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে আফিমের হৃদয়টাকে মুহূর্তেই শান্ত করে দেয়।
বিছানায় দাদীর পেছনে বসে দাদীর মাথায় তেল দিতে দিতে গল্প করছে নাফিয়া।অর্থাৎ নাফিয়া এখনো যায়নি।আফিম শীতল চাহনিতে তাকিয়ে রয় তার দিকে।
হটাৎ আফিমকে দেখে চমকে যায় নাফিয়া।সেই সাথে আফিমের চাহনিতে কেমন যেনো একটু লজ্জাও লাগে তার।সে নিরবে দাদীর পেছন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আফিমের দিকে অগ্রসর হয়।নাফিয়া উঠতেই চোখ খুলে তাকান দাদী।দেখেন তার পোতা এসেছে কিন্তু নাফিয়াকে আফিমের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে সে আর কিছু বলেন না।
নাফিয়া আফিমের একটু কাছে গিয়ে বলে ওঠে,
-আফিম,আপনি কি আমায় একটু আমার বাড়ি অব্দি পৌঁছে দিবেন?আসলে আমি নিজেই যেতে পারতাম কিন্তু এখন তো রাত হয়ে গিয়েছে!
এতোটুকু বলে একটু থেমে সে আবারও বলে ওঠে,
-বিকেলেও যেতে পারতাম কিন্তু ভাবলাম আজের দিনটা শেষ করেই যাই!
নাফিয়ার কথায় একটি চোরামো ভাব বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে আফিম।নাফিয়া যে তার সাথে দেখা না করে যেতে চায়নি বলেই রাত অব্দি অপেক্ষা করেছে তা বুঝতে আফিমের বেশি বেগ পেতে হলো না।সে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
-ইয়াহ শিউর,মিস.শেখ।

!!
গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আফিম,পাশের সিটেই নাফিয়া।আফিমের গাড়ি চালানোর গতি কিছুটা এমন যে,
“এ পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হবে,তুমি বলো তো!”
বিষয়টি নাফিয়ার বেশ ভালোই লাগছে।জানালা খোলা থাকায় ফুরফুরে বাতাস এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে সেই সাথে রাতের শহরে একা একই গাড়িতে প্রিয় মানুষটির সাথে।সময়টি উপভোগ করার মতো।আফিম গাড়ি চালানোর মাঝেই আড়চোখে বেশ ক’বার দেখে নিয়েছে নাফিয়াকে।নাফিয়াও এর বিপরীত নয়।সে ও লুকিয়ে লুকিয়ে ক’বার দেখে নিয়েছে আফিমকে।
হটাৎ নাফিয়ার কানে সঙ্গীতের শব্দ ভেসে আসে।

“এখন তো সময় ভালোবাসার,
এ দুটি হৃদয় কাছে আসার,
তুমি যে একা আমিও যে একা,
লাগে যে ভালো,
ও প্রিয় ও প্রিয়”

এ মুহূর্তের জন্যেই যেনো এ গানটি তৈরি করা হয়েছিলো।এই মুহূর্তে এমন গানে নাফিয়ার বেশ ভালো লাগছে যার বহিঃপ্রকাশ তার ঠোঁটে বিরাজ করছে।সে ঠোঁটে এক চিলতে হাসি নিয়েই আফিমের দিকে তাকায়।আফিমও একই সময় তাকায় নাফিয়ার দিকে।উভয়ের চোখাচোখি হতেই নাফিয়া খানিকটা লজ্জা নিয়ে জানালার বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।আর আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে ড্রাইভিং এ মনোনিবেশ করে।

অবশেষে পৌঁছে যায় তারা নাফিয়ার বাড়ির সামনে।নাফিয়া গাড়ি হতে নামতেই আফিমও গাড়ি হতে বেরিয়ে আসে।নাফিয়া,আফিমের কাছে এসে ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
-ধন্যবাদ আফিম।
-হাও বরিং!
ব্রু কুঁচকে তাকায় নাফিয়া।আফিম বলে ওঠে,
-আই ডোন্ট ওয়ান্ট থ্যাংকস লাইক দিস।
-তো কিভাবে চাইছেন?
নাফিয়ার প্রশ্ন শুনে আফিম বাঁকা হেসে নাফিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে নাফিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।চকমে আফিমের দিকে বেশ বড় বড় চোখ করে তাকায় নাফিয়া।আফিম বাঁকা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলে ওঠে,
-ঠিক এতোটা কাছে এসে (ঠোঁটের দিকে ইশারা করে)এখানে স্পর্শ এঁকে ধন্যবাদ বলতে হয়।
চোখ আরো বড় করে নাফিয়া বলে ওঠে,
-ছিঃ আফিম! কতোটা লুচু আপনি।
-আমি লুচু?(এক ব্রু উঁচু করে বলে আফিম)
-একদম।(মজা করেই বলে ওঠে নাফিয়া)
-তাহলে তো একটু লুচুগীরি করতেই হয়।
বলেই নাফিয়ার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতে আরম্ভ করে আফিম।আবারও নাফিয়ার হৃৎস্পন্দন ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে।নাফিয়া মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-কোন অধিকারে?
-হু?(নাফিয়ার ঠোঁটের অনেকটা কাছে থেকেই বলে ওঠে আফিম)
-কোন অধিকারে এতোটা কাছে আসা?
ঠোঁটে হাসি রেখেই আফিম বলে ওঠে,
-আমার আগে অন্য কোনো ছেলের সাথে মিশেছো?অন্য কোনো ছেলের সাথে রাতে একা ছাঁদে থেকেছো?ঘোড়ায় চড়েছো?ড্যান্স করেছো?
-উহু।
-অন্য কোনো ছেলের এতোটা কাছে এসেছো?
-উহু।
-তবে কোন অধিকারে আমাকে নিজের এতোটা কাছে আসার অনুমতি দেও?
আফিমের করা প্রশ্নে নিশ্চুপ হয়ে যায় নাফিয়া।এর উত্তর কি?এর উত্তর কি এই যে,আফিমের কাছে আসা টা তার ভালো লাগে!আফিম তার কাছে আসলেই তার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবং সে এক অন্য রকম আনন্দানুভূতি অনুভব করে!সে এ সময় গুলো খুব করে উপভোগ করে!আফিম কাছে আসায় তার যে অনুভূতি হয় সে অনুভব সে বারংবার চায়।কিন্তু এসব অনুভূতির কারণ কি?
নাফিয়াকে নিশ্চুপ দেখে আফিম আর কিছু বলে না।টুপ করে নাফিয়ার নাকে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
-টেক কেয়ার।
কথাটি বলে নাফিয়াকে ছেড়ে দিয়ে আফিম নিজ গাড়িতে যেয়ে বসে পরে।নাফিয়ার ঘোরের মাঝেই যেনো সব হলো।ঘোর কাটতেই দেখে আফিম গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে ঠোঁটে আলতো একটা হাসি নিয়ে নাফিয়াকে ইশারা করে বাড়ির ভেতরে যেতে বলে।নাফিয়া কিছুটা সময় আফিমের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করেই উল্টো দিকে ঘুরে নিজের বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়।ঠোঁটে ফুটে ওঠে আলতো লজ্জারাঙ্গা হাসি।

চলবে।

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০৯

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০৯
লেখিকাঃমাহযাবীন

দাদীকে রাতের শেষ ঔষধটি দিয়ে কাজ শেষ হতেই নিজের কক্ষে ফিরে আসে নাফিয়া।গায়ে জড়ানো ওরনাটি খুলে বিছানায় ছুড়ে ফেলে নিজেও বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।আজ ৩ মাস ১৫ দিন পূর্ণ হলো তার এ বাড়িতে পদার্পন করার।তারপরেও মনে হয় এইতো ব্যাস কয়েকদিনই হয়েছে এ বাড়িতে সে পদার্পর করেছে।সেই সাথে এ বাড়ির মানুষগুলো এতোটাই ভালো যে এ মানুষগুলোর সাথে থাকলে নাফিয়ার মনে হয় সে তার পরিবারের সাথেই আছে।
হটাৎ নাফিয়ার পাশে পরে থাকা তার ফোনটি বেজে ওঠে।ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় “আম্মু” লিখে সেভ করা নম্বরটি দিয়ে কল আসছে।নাফিয়া ঠোঁটে হাসি টেনে কলটি রিসিভ করে।ফোনের ওপাশ হতে নয়না বেগম বলে ওঠে,
-কেমন আছো,মা?
-সকালে সেই সাথে দুপুরেও তো এই একই প্রশ্ন করেছ আম্মু।আর গত ৩ মাস ১৫ দিনে প্রতিদিন ৩ বেলা করে এই একই প্রশ্ন করে আসছো!তুমি বিরক্ত হও না?
-মোটেই না।মা হলে বুঝতে,এখনো মা হও নাই তো তাই এমন প্রশ্ন জাগে!
উত্তরে একটু হাসে নাফিয়া।অতঃপর বলে ওঠে,
-আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ।সন্তান এতোটা দিন ধরে দূরে থাকলে কোন মা ভালো থাকে?
-দূরে কোথায়!মাত্র ৪০ মিনিটের রাস্তা।
-আর এই ৪০ মিনিটের রাস্তাই তুমি গত ৩ মাসে অতিক্রম করে নিজ মায়ের সাথে দেখা করতে আসতে পারলে না!
উত্তরে চুপ থাকে নাফিয়া।নয়না বেগম আবারও বলে ওঠেন,
-নিজের মা-বাবা,বোন কারো কথাই কি তোমার মনে পরে না?একটি বারও এসে তাদের দেখে যেতে ইচ্ছে হয় না?
-উফ আম্মু,বড্ড বেশি বোঝো!এখানে আমি কাজের জন্যেই থাকি।আর মাত্র তিন মাস হলো,জয়েন করেছি।এখনই যদি ছুটি চাই তবে তারা কি ভাববে?নিশ্চয়ই এটাই যে আমি কাজে ফাঁকি দেওয়া মেয়ে?
-এতো কিছু বুঝতে চাইছি না।২/৩ দিনের মাঝেই তোমায় বাসায় দেখতে চাই।
-কিন্তু!
-নাফিয়া,এটি আদেশ।
-ঠিক আছে মা।
-রাখছি,কাল সকালেই জানাবা কখন আসছো!
-আচ্ছা।
ফোন রেখে কিছুটা চিন্তিত হয় নাফিয়া।

!!
জানালার ধারে এসে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নাফিয়া।আজ আকাশে চাঁদ নেই তবে তারার সমাবেশ দৃশ্যমান।চাঁদে যেমন মুগ্ধতা আছে, প্রশান্তি আছে তারায় তা না থাকলেও তা দেখতে বেশ লাগে।নাফিয়া নিজের গায়ে ওরনা পেঁচিয়ে চাঁদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের কক্ষ ত্যাগ করে।
ছাঁদে আসতেই চমকে যায় নাফিয়া।ছাঁদে এসে যে তার এমন কিছু দেখতে হবে তা তার ভাবনাতিত ছিলো।ছাঁদের দরজার ধারে চুপটি করে দাঁড়িয়ে পরে সে।
আফিম কোনো একটা স্লো মিউজিকে স্লো মোশন ড্যান্সে মত্ত হয়ে আছে।বাইরের জগতের কোনো কিছুই তাকে প্রভাবিত করছে না।সে যেনো নিজের অন্য কোনো একটা দুনিয়ায় আছে এই মুহূর্তে।প্রায় ৭ মিনিট মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আফিমের নৃত্য দেখার পর নাফিয়া অনিচ্ছাকৃতই বলে ফেলে,
“ওয়াও,অসাধারণ!”
নাফিয়ার কন্ঠস্বর কানে আসতেই তার দিকে তাকিয়ে থেমে যায় আফিম।হাঁপিয়ে যাওয়ায় নিঃশ্বাস কিছুটা ঘন হয়ে গিয়েছে তার।নাফিয়া আফিমের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে,
-একদম ইন্ডিয়ার রাঘাব জুয়েলের মতো স্লো মোশন ড্যান্স করেন আপনি!এতোটা সুন্দর স্লো মোশন ড্যান্স কোত্থেকে শিখেছেন?
প্যান্টের পকেট হতে নিজের রুমালটি বেরিয়ে মুখ-মন্ডলে বিন্দু বিন্দু জমা হওয়া ঘাম মুছে নেয় আফিম।অতঃপর নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-ছোট্ট বেলা থেকেই নৃত্যের প্রতি বেশ অনুরাগী ছিলাম।একা একাই নিজের মন মতো নাচতাম।এভাবেই কিছুটা বড় হবার পর আমার স্কুলে একজন নৃত্যে পন্ডিত বলা চলে এমন শিক্ষকের খোঁজ পাই।তাকে অনুরোধ করার পর তিনিই আমায় নাচ শিখিছিলেন।
এসব বলতে বলতে নাফিয়া এবং আফিম উভয়ই ছাঁদের রেলিং এর ধারে এসে দাঁড়ায়।আফিমের কথার উত্তরে নাফিয়া বলে ওঠে,
-বাহ,আপনার তো প্রফেশনাল ড্যান্সার হওয়া উচিৎ ছিলো!
উত্তরে কিছু না বলে একটু হাসি ঠোঁটে টেনে আনে আফিম।এরপর কিছুটা সময় নিরবে কাটাবার পর নাফিয়া বলে ওঠে,
-আফিম?
-হু!
-আমার কিছু দিনের ছুটি প্রয়োজন।
নাফিয়ার কথাটি শুনে তার দিকে ফিরে তাকায় আফিম।বলে ওঠে,
-কেনো?
-বাসায় যেতে চাইছি।
-যদি না দেই ছুটি?
-আম্মুর আদেশ যেতেই হবে।
উত্তরে আফিম কিছু বলে না।নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সে।নাফিয়াও আফিম হতে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।বিন্দু পরিমাণ ভালো লাগছে না নাফিয়ার।বাসায় গেলে আগামী কিছু দিন এই মানুষটাকে ও আর দেখতে পারবে না।কিন্তু নাফিয়া বুঝে উঠতে পারছে না এই মানুষটাকে না দেখলেও ওর তো কিছু যায়-আসার কথা না তবে কেন খারাপ লাগা কাজ করছে?নাফিয়া কেনোই যেনো খুব করে চাইছে আফিম বলুক,”মিস.শেখ আই উইল মিস ইউ”।ঠিক ঐ মুহূর্তেই আফিম বলে ওঠে,
-উইল ইউ ড্যান্স মিস.শেখ?(চোখ মেঝের দিকে রেখে আলতো স্বরে বলে)
অবাক হয় নাফিয়া।সেই সাথে কিছুটা খুশিও হয় সে।কিন্তু সে তো নাচতে পারে না!এটি মনে হতেই মন খারাপ হয়ে যায় নাফিয়ার।সে মন খারাপ করেই বলে ওঠে,
-আমি নাচতে পারি না।
উত্তরে আলতো হেসে আফিম তার ডান হাতটি নাফিয়ার দিকে বারিয়ে দেয়।একবার আফিমের হাতের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে আফিমের চোখের দিকে তাকায় নাফিয়া।আফিমের দৃষ্টিও নাফিয়ার দিকেই।গাঢ় খয়েরী রঙের এ চোখজোড়ায় একটা ভরসা খুঁজে পাচ্ছে নাফিয়া।নাচ পারুক বা না পারুক এই মানুষটির হাত কোনোভাবেই ফিরিয়ে দিতে পারবে না সে।আর না ভেবে আফিমের হাতের উপর হাত রাখে সে।আফিম এক হেঁচকা টানে তাকে নিজের বুকে নিয়ে আসে।এক হাতে নাফিয়ার কোমর ও অপর হাত নাফিয়ার হাতে আঙুলের মাঝে আঙুল দিয়ে ধীরে ধীরে নাফিয়াকে নিয়ে দুলছে আফিম।আগের থেকেই আফিমের ফোনে স্লো মিউজিক চালু করা ছিলো।বেশ কিছুটা সময় দুজনে এ স্লো ড্যান্সে মত্ত থাকে।আসলে ড্যান্সের কোনো স্টেপই নাফিয়ার করতে হচ্ছে না।প্রতিটি স্টেপ আফিম নিজে করছে এবং নাফিয়াকে দিয়ে করাচ্ছে।নাফিয়া খুব উপভোগ করছে বিষয়টি।সেই সাথে উভয়ই উভয়ের এতোটা কাছে থাকায় তাদের দুজনের মাঝেই এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছে।এ অনুভূতিটি উভয়ই খুব করে উপভোগ করছে।অতঃপর নৃত্য শেষ হতেই আফিম ও নাফিয়া উভয়ই কিছুটা হাঁপিয়ে যাওয়ায় জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে সেই সাথে উভয়ের ঠোঁটেই হাসি।নাফিয়া,আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-ধন্যবাদ আফিম।এটি আমার জীবনের ২য়তম শ্রেষ্ঠ অনুভূতি ছিলো।
ঠোঁটে আলতো হাসি নিয়েই আফিম জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-প্রথমটি?
-ঘোড়ায় ওঠা।
এক ব্রু উঁচু করে আফিম বলে ওঠে,
-ইট মিন্স,তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দু’টি অনুভূতিই আমার সাথে?
-জ্বি।
বাঁকা হেসে আফিম বলে ওঠে,
-হোয়্যার ইজ মাই রিটার্ন গিফ্ট?
-কি চাই আপনার?
-যা চাইবো তাই ই দিবে?
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে একটু একটু করে নাফিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে আফিম।নাফিয়া ইতস্ততবোধ করায় একটু একটু পেছাতে থাকে।মৃদু স্বরে সে বলে ওঠে,
-চেষ্টা করবো।
-উহু।চেষ্টা করবো বললে হবে না!
-আমার ঘুম আসছে।(পালাবার উদ্দেশ্যে)
বলতে বলতেই ছাঁদের রেলিং এ গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরে নাফিয়া।সামনে থেকে নাফিয়ার দু’পাশ হতে দু’হাতে রেলিং চেপে ধরে আফিম বলে ওঠে,
-আগে বলো যা চাইবো তাই দেবে!
ভীত কন্ঠে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আচ্ছা।
ঠোঁট কামড়ে একটু হেসে আফিম বলে ওঠে,
-তোলা থাকলো।
এবার যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচে নাফিয়া।সে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
-আচ্ছা।
-কবে যেতে চাইছো বাসায়?
-কালই।
উত্তর শুনে কিছুটা সময় নাফিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে আফিম।নাফিয়াও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আফিমের চোখের দিকে।উভয়ের চোখজোড়াই অবক্ত অনেক কথাই বলতে চাইছে এবং তারা উভয়ই একে-অপরের চোখের ভাষা বুঝবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নাফিয়ার চোখের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকায় আবারও আফিমের মাঝে এক ঘোর লাগা অনুভূতি কাজ করছে যা এই মুহূর্তে চাইছে না সে।ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সে নাফিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে নাফিয়ার থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়।আফিমের কাছে থাকাটা বেশ ভালো লাগছিলো নাফিয়ার।হটাৎ আফিমের এভাবে দূরে সরে যাওয়াটা ভালো লাগে না তার।সে কিছু না বলে চুপচাপ চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই আফিম ডেকে ওঠে,
-মিস.শেখ?
-জ্বি।
-আরো কিছুটা সময় থাকবে?
মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যায় নাফিয়ার।ঠোঁটে হাসি টেনে সম্মতি দিয়ে রেলিং ধরে আফিমের পাশেই দাঁড়ায় সে।আফিম,নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-সে সামথিং এবাউট ইউ।
-উম,কি বলবো?
কথাটি বলে কিছুটা সময় নিয়ে নাফিয়া নিজেই বলে ওঠে,
-আমি তো খুব সাধারণই।বিশেষভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবার মতো কিছুই নেই।সাধারণ অন্য সব মেয়েদের মতোই একটি মেয়ে তবে যে সকল জিনিস অন্য সব মেয়েদের থেকে আলাদা আমায় “নাফিয়া” বানায় তা হলো আমার চিন্তাধারা।আমি কখনোই নিজেকে অন্য কারো সাথে তুলনা করি না তাই আমার মাঝে হিংসে নেই।আমি কখনো নিজেকে নিয়ে গর্ব করি না বা নিজের বুদ্ধিমত্তা বা অর্জনসমূহ নিয়ে গৌরব অনুভব করি না।সব কিছুই আল্লাহর নিয়ামত মনে করি তাই আমার মাঝে অহংকার নেই।আমার মাঝে নিরাশা বা হতাশা কাজ করে না কারণ আমি জানি আমার ভাগ্যে যা আছে তা হবেই।রাতের পরে দিন আসবেই।নিয়ত সৎ থাকলে বিপদ কাটবেই।আমি কখনো কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করি না কারণ আমি বিশ্বাস করি “karma” বলে একটি জিনিস আছে।আমার এসব গুণাবলিই আমাকে অন্যান্য মেয়ের থেকে আলাদা “নাফিয়া” বানায়।
কিছুটা সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় আফিম নাফিয়ার দিকে।এই মুহূর্তে নাফিয়াকে,আফিমের বড্ড অসাধারণ মনে হচ্ছে।হয়তো নাফিয়া অতি সাধারণ তবে কিছু ক্ষেত্রে অতি সাধারণ হওয়াটাই অসাধারণ বিষয়।আফিম ঠোঁটে আলতো হাসি রেখে বলে ওঠে,
-তবে তোমাকে অতি সাধারণ বলা উচিৎ নাকি অসাধারণ?
-অতি সাধারণ।(ঠোঁটে হাসি রেখে বলে নাফিয়া)
আবারও দু’জন চুপ।নিরাবতা কাটিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-অনুমতি পেলে একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে চাইছি?
-কি প্রশ্ন?
-আপনি এখনো আপনার প্রাক্তনকে মনে করেন?
-ও আমার ভালোবাসা ছিলো না।
-মানে?
-ও আমার বিজনেস পার্টনার ছিলো।ওদের কোম্পানি টা আমাদের মতো এতো বড় এবং প্রভাবশালী ছিলো না।ব্যবসায় লোস করে এবং ব্যাংক ওদের নামে কেস করে।ওদের এমন দুঃসময়ে আমি ওদের কোম্পানির প্রজেক্টে টাকা ইনভেস্ট করি এবং নিজের কর্মচারী এবং শ্রম দিয়ে প্রজেক্টটা সফল করি।ফলে ওর এবং আমার উভয়েরই ব্যবসায় লাভ হয়।হয়তো এতে ওর আমার প্রতি দূর্বলতা তৈরি হয়।তারপর ও ই আমাকে প্রথম প্রপোজ করেছিলো।রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম।কিন্তু ও পিছু ছাড়েনি।পুরো মাস পেছনে পরে থেকে অনুরোধ করে আমি যেনো ওকে একটি সুযোগ দেই।আমার জীবনেও কেউ ছিলো না তাই ভেবে দেখলাম ওকে একটা সুযোগ দেওয়াই যায়।তারপর ওর সাথে সম্পর্ক।কথায় কথায় গায় ঢলে পরা,স্পর্শ করা, লাগাম ছাড়া কথা এসবে খুব বিরক্ত ছিলাম।ওকে সহ্য করাই কঠিন হয়ে পরেছিলো।তাই জন্যে ওকে ব্রেকআপের কথা বলি।আর সেদিনই নিজের চরিত্রের দোষ ঢাকতে আমায়…
কথাটি আর শেষ করতে পারে না আফিম।শেষ বাক্যটি বলার সময় আফিমের কন্ঠস্বরের পরিবর্তন লক্ষ্য করে নাফিয়া।এ বাক্যটি বলার সময় ভীষণ রেগে যায় আফিম।নাফিয়া প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে ওঠে,
-বাহ!মানুষ আপনার সাথে জোর করে প্রেম করে এদিকে আমি জন্মগত সিঙ্গেল!
ঠোঁট উল্টে কথাটি বলে নাফিয়া।আফিম নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-প্রেম করোনি?(শান্ত কন্ঠে)
-উহু।
-ছেলে বন্ধু ছিলো?
-একটাও না।
-কেনো?
-ছেলেদের সাথে মিশা টা আমার পরিবার পছন্দ করতো না আর আমিও ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করি।
অবাক হয় আফিম তবে কিছু বলে না।

!!
সকালে দাদীকে পত্রিকার কিছু প্রতিবেদন পড়ে শুনাবার পর নাফিয়া সানিয়া বেগমের সাথে ছুটির বিষয়ে কথা বলতে তার কক্ষের দিকে অগ্রসর হয়।দরজার বাইরে হতে অনুমতি নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করতেই সানিয়া বেগম তাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-কি ব্যাপার,আজ হটাৎ আমার কক্ষে?আগে কখনোই তো এ মুখো হওনি!
ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-একটি বিষয়ে অনুমতি নিতে এলাম সেই সাথে একটু গল্প করতে যদি সম্মতি দেন?
-দিচ্ছি,বসো।
নাফিয়া,সানিয়া বেগমের পাশে সোফায় বসে বলে ওঠে,
-আসলে আমার কিছু দিনের জন্যে ছুটির প্রয়োজন।আম্মু খুব করে বললো কাল রাতে,তাকে না করতে ব্যর্থ হয়েছি।
-স্বাভাবিক,৩ মাসের বেশি হয়ে গেলো এসেছ আর একদিনের জন্যেও দেখা করতে যাওনি!কবে যেতে চাইছো?
-আজ অথবা কাল?
-আজই যেয়ো।
-জ্বি আচ্ছা।(ঠোঁটে হাসি নিয়ে)
-তবে ছুটি কিন্তু বেশি দিনের পাবে না বলে দিচ্ছি।এ তিন মাসেই আমাদের পরিবারের একজন সদস্যে পরিণত হয়েছো।খুবই লক্ষী একটা মেয়ে তুমি!
ঠোঁটে হাসি নিয়ে নাফিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে কথাটি বলেন সানিয়া বেগম।নাফিয়াও ঠোঁটে হাসি টেনে নেয়।
-ধন্যবাদ আন্টি।আপনারা সবাই অতিরিক্ত ভালো হওয়ায় সবাইকেই আপন করে নেন।ভালো মানুষগুলো তাদের আশেপাশের মানুষগুলোকেও ভালো ভাবে।
ঠোঁটে হাসিটা অব্যাহত রাখেন সানিয়া বেগম।হটাৎ নাফিয়া কিছু একটা মনে হতেই বলে ওঠে,
-আন্টি,যদি কিছু মনে না করেন তবে একটি প্রশ্ন ছিলো?
-হ্যা,বলো।
-আঙ্কেলকে একবারের জন্যেও দেখলাম না।আসলে..
নাফিয়ার কথা শেষ হবার আগেই সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,
-ইউএসএ তে আছেন উনি।নিজের বউ ও কন্যা সন্তানকে নিয়ে।
-জ্বি?
-ভালো বনিবনা না হওয়ায় আফিম ছোট থাকতেই আমরা আলাদা হয়ে যাই।কিন্তু আফিমের সাথে তার বাবার সম্পর্ক খুবই ভালো কারণ আমি কখনোই চাইনি আমার সন্তানের উপর আমার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো প্রভাব পরুক।আফিমকে সবসময়ই তার বাবার ভালো দিকগুলো বলেছি এবং কখনো ওর বাবার প্রতি ক্ষোভ জমতে দেইনি।
-আপনার মতো এতো ভালো মানুষের সাথে কারো বনিবনা না হয়েও থাকতে পারে?
উত্তরে আলতো হেসে সানিয়া বেগম বলে ওঠে,
-তুমি যতই ভালো হও না কেনো পৃথিবীর যেকোনো মানুষের জন্যে তুমি উপযুক্ত হবে না।উনিও খুব ভালো একজন মানুষ কিন্তু তার জন্যে আমি এবং আমার জন্যে সে উপযুক্ত জীবন সঙ্গী না।
উত্তরে কিছু বলে না নাফিয়া।সানিয়া বেগমের কথায় যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে সে।কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে সে গভীরভাবে ভাবতে চায়।

চলবে।

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০৮

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০৮
লেখিকাঃমাহযাবীন

সন্ধ্যে নেমে এসেছে।আকাশ টা ধূসর রঙ ধারণ করেছে এবং সূর্যের তাপ জানিয়েছে বিদায়। চারিদিকে বয়ে চলছে ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস।
আফিমদের পুরান বাড়িটি ঠিক পুড়নো দিনের বাড়ি গুলোর মতোই,নেই কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া।বাড়ির সামনেই এক মস্ত বড় উঠোন।সেই উঠোনের চারপাশ দিয়ে আছে বিভিন্ন গাছগাছালী।জায়গাটায় গাছগাছালী বেশি থাকায় বাতাস যেমন বেশি ঠিক তেমনই দূষণমুক্ত ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ নির্মল নিঃশ্বাস মুগ্ধতার সাথে নিজের মাঝে টেনে নেওয়া যায়।ভুতের ভয় পাবারও সুযোগ নেই কারণ আফিমদের বাড়ির সামনেই ছোট্ট মোটামুটি পাকাপোক্ত একটি রাস্তা এবং রাস্তার ওপাশেই আরেকটি বাড়ি আছে।আফিমদের বাড়ির দুপাশেও দুটো বাড়ি আছে কিন্তু মধ্যবর্তী দুরত্ব অনেক।
রাতে মাছের বিবিকিউ খাওয়া হবে আগের থেকেই পরিকল্পিত ছিলো।তাই এ সন্ধ্যে দিয়েই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।বাড়ি থেকে মেরিনেট করা মাছ নিয়ে এসেছিলেন সানিয়া বেগম।আর যা যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করছেন রবি চাচা।বিবিকিউ তৈরির সময় সবাই উঠোনে বসেই আড্ডা দিবে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী উঠোনে ছোট্ট ছোট্ট বেশ কয়টি বসার জন্য মোড়া পাতানো হয়েছে।
আফিম একটি হাতা কাটা গেঞ্জি পরে বিবিকিউর জন্যে উঠোনে চুলা ঠিক করছে।বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার মুখে ও শরীরে।চুলগুলো এলোমেলো এবং কিছু অবাধ্য চুল তার কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।এই মুহূর্তে আফিমকে কেউ দেখলে মুগ্ধ হতে বাধ্য।নাফিয়া আফিমের থেকে কিছুটা দূরে ঠিক সামনে বরাবরই একটি মোড়ায় বসে আছে।তার পাশেই দাদী ও সানিয়া বেগম গল্প করছে।সে গল্পে নাফিয়ার মনোযোগ নেই।সে তো তার সামনে বরাবর চুলা সেট করতে থাকা এক সুদর্শন পুরুষকে দেখতে ব্যস্ত।চুলা ঠিক করার মাঝেই আফিম হটাৎ চোখ তুলে তাকায় নাফিয়ার দিকে।দেখে নাফিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।আফিমের চোখে চোখ পরতেই চোখ সরিয়ে নেয় নাফিয়া।আবারও এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হলো তাকে।নিজের উপরই রাগ হচ্ছে নাফিয়ার।কেনো সে বিনা কারণে আজকাল এতোটা দেখছে এই পুরুষ টাকে!কই সে তো ইচ্ছে করে দেখে না,অনিচ্ছাকৃতই তো বার বার চোখদুটো এই পুরুষটাতেই আঁটকে যাচ্ছে! নিজের উপরই বিরক্ত হচ্ছে সে।এদিকে,নাফিয়ার তাকিয়ে থাকাটা বেশ কিছুটা সময় ধরেই বুঝতে পারছিলো আফিম।তাই সে ইচ্ছাকৃতই হুট করে তাকায় নাফিয়ার দিকে যেনো চোর হাতেনাতে ধরা পরে।চোখে চোখ পরতেই নাফিয়ার চোখ সরিয়ে নেওয়া ও লজ্জা পাওয়ার বিষয়টি বেশ উপভোগ করে আফিম।ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে আবারও নিজের কাজে মনোনিবেশ করে সে।

আফিমরা এ বাড়িতে দীর্ঘ কয়েক বছর কাটিয়েছে বলে প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক বেশ ভালো তাদের।আফিমরা এসেছে জেনে প্রতিবেশী দু’জন মহিলা ও দু’টি মেয়ে আসে তাদের সাথে দেখা করতে।সানিয়া বেগমের অনুরোধে রাতের খাবার সেড়েই যাবেন বলে ঠিক করেন তারা।সবাই গোল করে বসে গল্পে মেতে আছে।নাফিয়াও গল্পে যোগ দিয়েছে কিন্তু আফিমের এদিকে বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ নেই।সে ব্যস্ত রবি চাচার সাথে খাবারের ব্যবস্থা ও অন্যান্য কাজ নিয়ে।আজকের খাবার তালিকায় যা আছে তার কিছু কিছু পদ আফিম রান্না করবে।আফিমের রান্না বেশ মজা হয় তাই সানিয়া বেগম এবং দাদী উভয়ই নিশ্চিন্তে আছেন।আফিম ও নাফিয়া দু’জনে দু’জনার মতো ব্যস্ত হলেও ফাঁকে ফাঁকে আঁড়চোখে একে-অপরকে একটু একটু দেখে নিচ্ছে।ভাগ্যক্রমে এবার আর একে-অপরের চোখেচোখ পরে না।

বেশ লম্বা সময় ধরে গল্প চলার পরে ঠিক ৯ টা বাজতেই রবি চাচা আসেন সবাইকে খেতে ডাকতে।সবাইও আর দেরি না করে খাওয়ার জন্য উঠানে বিছানো বড় একটি পাটিতে যেয়ে বসে পড়ে।উঠানেই খাবার ব্যবস্থা করার কারণ হলো উঠোনের পরিবেশটা বেশ সুন্দর।ঠান্ডা বাতাস তো বইছেই সেই সাথে বেশ কয়েকটা হারিকেন জ্বালিয়ে রাখার ফলে জায়গাটি হলদে বর্ণ ধারণ করেছে এবং হারিকেনগুলো দেখতেও বেশ সুন্দর লাগছে।সেই সাথে সেকেলে একটা অনুভূতি আসছে যখন বিদ্যুৎ ছিলো না এবং মানুষ আগুন দিয়েই রাতে কাজ করতো।মাথার উপরই আছে প্রকাণ্ড আকাশ এবং তার বুকে ঝুলে আছে মস্ত বড় চাঁদ।বাতাসে গাছপালাগুলো নড়ছে এবং শব্দগুলোও মনে অন্য রকম অনুভূতি জাগাচ্ছে।মশার জন্যে রবি চাচা ধূপ ব্যবহার করেছেন ফলে মশা তেমন নেই আর ২/৪ টা যা আছে তার কামড় এই পরিবেশের মুগ্ধতার কাছে অতি নগন্য।বলে রাখা ভালো,মশা, মাছি তাড়ানোর প্রাচীন একটি পদ্ধতি হলো ধূপ। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় শরীরের ক্ষতি করে না। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ধূপগাছ জন্মে। গাছের কাণ্ড থেকে যে নির্যাস বা আঠা পড়ে,তা দিয়েই তৈরি হয় ধূপ।
এই পরিবেশে নাফিয়ার মনে হচ্ছে সে যেনো আধুনিকতার যুগ হতে অনেক পিছিয়ে প্রাচীন কালে পৌঁছে গিয়েছে।ভালোলাগা,মুগ্ধতা গ্রাস করছে তাকে।কিছুটা সময়ের মাঝেই সকলের সামনে খাবার উপস্থিত করা আরম্ভ হয়।রবি চাচা ও আফিম উভয়েই একে একে খাবার এনে পাটির মধ্যখানে রাখছে।খাবারের তালিকায় আছে,কোরাল মাছের বিবিকিউ,নান,মুরগী ঝাল করে রান্না,গরুর মাংস ভুনা,স্যালাদ সাথে সাদা ভাতও আছে।যারা নান খাবে না তারা সাদা ভাত খেতে পারবে।অতঃপর সবাই মিলে খাওয়ার পাট চুকিয়ে প্রতিবেশীরা বিদায় নেয়।প্রতিবেশীদের বিদায় দিয়ে সবাই যে যার কক্ষে ঘুমুতে চলে যায়।
এ বাড়িতেও নাফিয়াকে দাদীর পাশের রুমটি দেওয়া হয় ঘুমাবার জন্যে।কিন্তু রাত ১২ টা বাজতে চললো,নাফিয়ার বিন্দু পরিমাণ ঘুম আসছে না।তার ইচ্ছে করছে উঠোনে যেয়ে আরো কিছুক্ষণ নিস্তব্ধে বসে থাকতে।কিন্তু একা যেতে ভয়ও লাগছে তার।সে শুয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠে জানালার ধারে যায়।জানালা দিয়ে বাইরের উঠোন দেখা যাচ্ছে।হারিকেনের হলদে বর্ণের আলোতে একজন পুরুষকে স্পষ্ট দেখতে পায় নাফিয়া।ঠোঁটে হাসি টেনে চুল হতে কোমর অব্দি কাপড় দিয়ে আবৃত করে সে উঠোনের উদ্দেশ্য অগ্রসর হয়।
আফিম ফোনে স্লো মিউজিক ছেড়ে এক হাত মাথার নিচে ও অপর হাত বুকের উপর রেখে শুয়ে আছে।নয়ন তার চন্দ্রিমার দিকে।নাফিয়া এসে আফিমের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-আমিও যদি আপনার সাথে এখানে বসি তবে কি খুব বিরক্ত হবেন?
হটাৎ কারো কন্ঠস্বর কানে আসতেই উঠে বসে আফিম।নাফিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সে।নিজ স্থান থেকে একটু সরে নাফিয়াকে বসার জায়গা করে দিতেই নাফিয়া ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে আফিমের পাশে বসে পরে।নাফিয়া, আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-এতো রাতে এখানে?
-এ বাড়িতে এলে হয় ছাঁদে নাহয় এখানেই রাত কাটে আমার।
-বাহ!
কথার আর কিছু না পেয়ে উভয়ই কিছুটা সময় নিরব থাকে।নিরাবতা ভেঙে আফিম বলে ওঠে,
-তুমি জেগে আছো যে?
-ঘুম আসছিলো না।এই মুগ্ধতা টা মিস করছিলাম।
উত্তরে কিছু বলে না আফিম।নাফিয়া বলে ওঠে,
-এখানে আপনার কোনো বন্ধুমহল নেই?
-“বন্ধু” নামক সম্পর্কটি আমার জীবনে নেই।
অবাক হয় নাফিয়া।বিস্মিত কন্ঠেই নাফিয়া জিজ্ঞেস করে,
-কেনো?
-গম্ভীর,কথা কম বলা আর আলাদা ব্যক্তিত্বের হওয়ায়।
-তাতে কি হয়েছে?আমার তো মনে হয় আপনি অনেক ভালো বন্ধু হওয়ার যোগ্য।
এতোক্ষণ অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলেও এ কথায় নাফিয়ার দিকে দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে আফিম।আফিমের চোখে চোখ রেখে নাফিয়া তার ডান হাতটি আফিমের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
-বন্ধু হতে পারি?(ঠোঁটে আলতো হাসি)
একবার নাফিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নাফিয়ার চোখের দিকে তাকায় আফিম।ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে নাফিয়ার বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরে এক হেঁচকা টানে নাফিয়াকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে আফিম।উভয় একে-অপরের এতোটা কাছে যে উভয়ের ঠোঁটজোড়ার মধ্যবর্তি দুরত্ব ব্যাস কয়েক ইঞ্চির।আফিমের এমন কাজে নাফিয়া চমকে যায়,সেই সাথে আফিমের এতোটা কাছে আসায় তার হৃৎস্পন্দন কয়েকশো গুণ বেরে গিয়েছে।আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়েই মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
“আর কি কি হওয়ার যোগ্য আমি?”
মুহূর্তেই একরাশ লজ্জা ও অদ্ভুত অনুভূতিতে ছেয়ে গেলো নাফিয়ার হৃদয়।আফিমের দিকে তাকিয়ে থাকাটা বেশ দুষ্কর মনে হচ্ছে তার কাছে তাই চোখজোড়া নামিয়ে নেয় সে।হারিকেনের এই হলদে আলোতে নাফিয়ার লজ্জারাঙ্গা চেহারাটা এতোটাই মোহনীয় লাগছে যে আফিম নিজের অজান্তেই একটি ঘোরের মাঝে বিলীন হয়ে যেতে আরম্ভ করে।কিছু না ভেবেই আফিম একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকে নাফিয়ার ঠোঁটের দিকে।আফিমের ঘন নিঃশ্বাস নিজের মুখের উপর অনুভব করতেই নাফিয়া আধো আধো চোখে আফিমের দিকে তাকায়।আফিম ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার ঠোঁটের দিকে।নাফিয়া খুব করে চাচ্ছে আফিমকে আটকাতে কিন্তু কেনোই যেনো সে অনুভব করছে তার পুরো শরীর অবশ হয়ে গিয়েছে।সে কোনোভাবেই পারছে না আফিমকে বাঁধা দিতে।তবে কি কোথাও না কোথাও সেও চায় এটি?
আফিম আর নাফিয়ার ঠোঁটজোড়ার মাঝে ঠিক ২ ইঞ্চির দূরত্ব অবশিষ্ট ঠিক এমন সময় হুট করে হারিকেনের কেরোসিন শেষ হয়ে আলো নিভে যায় এবং পুরো জায়গাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পরে।ওমনি ভয়ে আফিমকে জড়িয়ে ধরে নাফিয়া।হটাৎ ঘোর কেটে যাওয়ায় আফিম একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরলেও নিজের বুকে নাফিয়ার অস্তিত্ব অনুভব করায় অনেকটা অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করে তার।একহাতে নাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে অপর হাতে ফোনের লাইটটি জ্বালায় সে।আলোর উপস্থিতি টের পেয়ে আফিমের বুক হতে আলতো করে মাথা তুলে আফিমের দিকে তাকাতেই দেখে আফিম তার দিকেই চেয়ে আছে ঠোঁটে সেই বাঁকা হাসি নিয়ে।ভীষণ লজ্জা এসে ভীর জমায় নাফিয়ার মনে সে আর দেরি না করে আফিমকে ছেড়ে নিজের কক্ষের দিকে দৌড়ে পালায়।এদিকে নাফিয়ার কাজ দেখে হেসে দেয় আফিম।

!!
সকালে আফিম,দাদী,সানিয়া বেগম,নাফিয়া সবাই প্রস্তুত হয়ে বের হয় পুরন বাড়ির আশপাশ টা ঘুরে ঘুরে দেখতে।আজ গাড়ি নিয়ে বের হয়নি তারা।সানিয়া বেগম ও দাদী তাদের পুরোনো স্মৃতিগুলো নিয়ে কথা বলতে বলতেই হাঁটছে।এদিকে তাদের পেছনেই আফিম ও নাফিয়া নিরবে হাঁটে চলছে।হাঁটার মাঝে আঁড়চোখে একে-অপরকে একটু দেখছেও।অনেকটা হাঁটার পর নাফিয়া দেখে বেশ বড় একটি খালি মাঠ এবং এর এক কিনারায় ৫/৬ টির মতো ঘোড়া বেঁধে রাখা।একজন লোক এই ঘোড়াগুলোর সাথে দাঁড়ানো।নাফিয়া ঘোড়া দেখে বেশ উত্তেজিত হয়ে দ্রুত পদে ঘোড়াগুলোর কাছে চলে যায় এবং লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-এই ঘোড়া গুলো কি জন্য রাখা হয়েছে?
-এই ঘোড়া গুলো দ্বারা প্রতিদিন ঘোড়ার গাড়ি চালানো হয়।
-ওহ!আলাদাভাবে ঘোড়া চালানো যাবে?
-নাহ,এ নিয়ম নেই।
মন খারাপ হয়ে যায় নাফিয়ার।এই মন খারাপ নিয়েই বাকিদের কাছে ফিরে আসে সে।সবাই দূর থেকেই নাফিয়ার এ বিষয়টি খেয়াল করে।সানিয়া বেগম এবং দাদী উভয়ই নাফিয়াকে মন খারাপ না করার জন্য সান্তনা দিয়ে নিজেদের মতো করে আবারও হাঁটা আরম্ভ করে।আফিম এতোক্ষণে কিছু না বললেও এবার বলে ওঠে,
-ঘোড়া চড়াতে পারো?
নাফিয়া মাথা ডানে-বামে হেলিয়ে বুঝায় যে পারে না।আফিম এবার বলে ওঠে,
-তাইলে এতো মন খারাপের কি আছে ইডিয়ট!
আফিমের কথায় সাথে সাথেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় নাফিয়ার।সে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে ওঠে,
-নিজে এতো পারলে যান না চালান,অ্যারোগেন্ট![Arrogant]
আফিম উত্তরে কিছু না বলেই উল্টো হেঁটে সেই ঘোড়ার গুলোর কাছে যায়।নাফিয়া বিষয়টি খেয়াল করে না।সে তো আছে তার মন খারাপ নিয়ে।
কিছুটা সময় পার হতেই আফিম একটি ঘোড়ায় চড়ে তা নিয়ে নাফিয়ার কাছে আসে।নাফিয়ার চোখ আফিমের উপর পরতেই তার চোখগুলো রসগোল্লার ন্যায় বড় হয়ে যায়।অবাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে সে আফিমের দিকে।আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে তার দিকে চেয়ে আছে।আফিম ঘোড়া চড়াতে পারে দেখে নাফিয়া বেশ খুশি হয়ে আফিমের কাছে যেয়ে বলে ওঠে,
-প্লিজ আফিম,আমার ছোটো বেলা দিয়ে সখ ঘোড়া চড়ানোর।প্লিজ আমাকেও সাথে নিন।
-নো,আই ওন্ট!
-প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ!
-কিছুক্ষণ আগেই কেউ একজন আমাকে অ্যারোগেন্ট বলেছিলো!
-স্যরি।প্লিজ ক্ষমা করে দেন।
সানিয়া বেগম এবং দাদীও আফিমকে বলে ওঠে নাফিয়াকে ঘোড়াতে উঠাতে।অবশেষে আফিম নাফিয়াকেও উঠায় ঘোড়াতে।অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করছে নাফিয়ার।এই প্রথম সে ঘোড়াতে উঠলো।অবশ্য একপাশেই পা রেখেছে সে,ছেলেদের মতো আর বসেনি।আফিম ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ধীরে ধীরে চালানোর মাঝেই নাফিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে ওঠে,
-আমাকে ধন্যবাদ বলা উচিৎ তোমার মিস.শেখ!
আফিমের দুবাহুর মাঝে আবদ্ধ হয়ে আছে নাফিয়া।সেই সাথে আফিমের এতোটা কাছে এসে মৃদু স্বরে কথা বলায় কেমন যেনো আলাদা রকমের অনুভূতি হচ্ছে নাফিয়ার।এ অনুভূতিটার কোনো নাম নেই।আর অনুভূতি কিভাবে ব্যক্ত করতে হয় তাও জানা নেই নাফিয়ার।কিন্তু সে এ অনুভূতিটি বারংবার অনুভব করতে চায়!
কিছুটা কাঁপা কাঁপা স্বরে নাফিয়া বলে ওঠে,
-থ্যাংক ইউ।
-উহু,এভাবে না।
-তবে?
উত্তরে কিছু না বলে ঠোঁটে আলতো হাসি ঝুলিয়ে নেয় আফিম।

চলবে

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০৭

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০৭
লেখিকাঃমাহযাবীন

বাচ্চাদের কাছে খুব প্রিয় একটি দিন হচ্ছে শুক্রবার।ঠিক তেমনই কিছু আরাম প্রিয় মানুষের কাছে শুক্রবারের আরেক নাম “প্রেম”।বাচ্চারা শুক্রবার পছন্দ করে পড়াশোনা দিয়ে একটি দিন রেহাই মিলবে বলে আর আরাম প্রিয় মানুষেরা শুক্রবারে প্রেম খুঁজে পায়।তাদের প্রেম হয় সকালের এক লম্বা ঘুমের সাথে।আহা,সকালের ঘুমটা সে যে কি শান্তিময়!
নাফিয়া আরাম প্রিয় মানুষের কাতারেই পরে।আজ শুক্রবার!সে তো কোনোভাবেই ১০ টার আগে বিছানা ছাড়তে রাজি নয়।কিন্তু ৫ টা ৪০ মিনিটেই তার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।এমন প্রেমময় ঘুমের মায়া কাটিয়ে দরজার ওপাশের ব্যক্তিকে সাড়া দেওয়ার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে তার নেই।ওদিকে দরজার ওপাশের মানুষটি কয়েক সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে নিয়ে দরজার কড়া নেড়ে চলছে।একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজা খোলে নাফিয়া।চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ ফেলে বলে ওঠে,
-আজ শুক্রবার,আমি ঘুমবো!
নাফিয়ার উক্তি শুনে গৃহ পরিচারিকা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
-ম্যাম,আপনি এখন ছাত্রজীবনে নেই যে শুক্রবার ছুটির দিন উদযাপন করবেন।
বিরক্তিভাব বজায়ে রেখে নাফিয়া বলে ওঠে,
-কি বলতে চাইছেন?
-দাদী ডাকছেন আপনায়।
এবার ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আসছি!
অতঃপর তৈরি হয়ে সে দাদীর কক্ষে উপস্থিত হয়।দাদীর কক্ষে সানিয়া বেগম এবং দাদী উভয়ই বড় এক জানালার ধারে পাতানো দু’জোড়া সোফায় দুজনে বসে আছেন।নাফিয়া তাদের সালাম দিয়ে তাদের কাছে গিয়ে বসে।
সানিয়া বেগম নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-নাফিয়া,পায়ের ব্যথা তো মনে হয় এখন আর নেই?
-জ্বি আন্টি।
-শুক্রবার আর শনিবার আফিম অফিসে যায় না।ওর আলাদা কিছু কাজ থাকে তার জন্য এই দু’দিন বরাদ্দকৃত।ভাবছি ওকে বলবো আজ কাজ বাদ দিয়ে আমাদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে!
ঘুরতে যাবার কথা শোনা মাত্রই সকালে হওয়া তার প্রেমের বিচ্ছেদের সব শোক ভুলে গেলো নাফিয়া।তার মুখে ফুটে ওঠা সেই লম্বা হাসিটি সাক্ষ্য দিচ্ছে সে কতোটা উচ্ছ্বসিত।নাফিয়া,সানিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-কখন যাবো আমরা?
নাফিয়ার এমন আগ্রহ দেখে আলতো হাসেন সানিয়া বেগম এবং উত্তরে বলেন,
-দেখি আফিম কি বলে!
সাথে সাথেই মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেলো নাফিয়ার।সে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-গোমড়ামুখো নিয়ে যাবে বলে মনে হয় না।
-কিছু বললে?(সানিয়া বেগম)
-নাহ আন্টি।দাদী রাজি তো যেতে?
-হ্যা।(দাদী)

!!
নীল পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা পরিহিত আফিম সিঁড়ি বেয়ে নিজ কক্ষ হতে হল রুমের উদ্দেশ্যেই আসছে।হল রুমের সোফাতে বসে ছিলো নাফিয়া ও দাদী।পায়ের শব্দ পেয়ে নাফিয়া সিঁড়ির দিকে তাকায় ।এলোমেলো ভেজা চুল,নীল পাঞ্জাবির হাতাটি কনুই অব্দি উঠানো সেই সাথে সাদা পায়জামা পরিহিত এই সুদর্শন যুবকটিতে চোখ আঁটকে যায় নাফিয়ার।
আফিম খুব বেশি লম্বা না হলেও ৫ ফিট ৮ ইঞ্চি কম নয়।দুধে আলতা গায়ের রং তার।মুখে চাপ দাড়ি।চোখ গুলো খুব বড় না হলেও পাপড়ি গুলো বেশ ঘন।সেই সাথে চোখের মনি একদম গাঢ় খয়েরী রঙের।ঠোঁট টা নাও পাতলা নাও মোটা একদম “সম্পূর্ণ ঠোঁট” যাকে বলে।চেহারাটা কিছুটা লম্বাটে।স্বাস্থ্য নাও মোটা,নাও হ্যাংলা।
আফিমকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখতে এতোটাই মগ্ন ছিলো নাফিয়া যে যখন তার ধ্যান ভাঙে দেখতে পায় আফিম এক ব্রু উঁচু করে তার দিকেই চেয়ে আছে।অপ্রীতিকর এক পরিস্থিতিতে পরে যায় নাফিয়া।আফিমের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মনে মনে নিজেকে কঠিন কঠিন কিছু গালি শুনিয়ে দেয়।সেই সাথে তার মনে প্রশ্ন জাগে এতো দিন ধরে দেখছে লোকটাকে কই আগে তো এভাবে চোখ আঁটকে যায়নি তার উপর তবে আজ কি হলো?
নিজের মনে মনেই উত্তরটি বানিয়ে নিলো সে,হয়তো আফিমের সৌন্দর্য এতোদিন তার মনে জমে থাকা সেই ঘৃণানুভূতিই আড়াল করে রেখেছিলো।
সোফায় বসে আফিম একজন সার্ভেন্টকে কফি আনার আদেশ করে।সার্ভেন্টটি আদেশ পেয়ে রান্নাঘরে যেতেই নাফিয়া কিছু একটা ভেবে বলে ওঠে,
-আমি একটু আসছি।
বলেই উঠে যায় সে।নাফিয়ার হুট করে এভাবে উঠে যাওয়ার বিষয়টি আফিমের কাছে সন্দেহের মনে হলো।
রান্নাঘরে এসে নাফিয়া সার্ভেন্টটিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-কফিটি আমি বানিয়ে দিচ্ছি আপনি ততক্ষণে আমার রুমের বিছানাটি পরিষ্কার করে দিয়ে আসুন।একটু বিশ্রাম নিতে চাইছি কিন্তু বিছানাটি অপরিষ্কার।
-ঠিক আছে ম্যাম আমি অন্য কেউকে বলছি আপনার বিছানাটি পরিস্কার করে দিতে।শুধু শুধু কষ্ট করে আপনর কফি বানাতে হবে না।
-যা বলেছি তাই করুন।কফি বানানো শেষ হলে আপনাকে ডেকে নিবো,যেয়ে কফিটা দিয়ে এসেন।
মেয়েটি আর কিছু না বলে রান্নাঘর ত্যাগ করে।এদিকে মেয়েটি যেতেই নাফিয়া ঝটপট কফিটি বানিয়ে নেয়।অতঃপর ঠোঁটে এক শয়তানি হাসি ফুটিয়ে লবণের ডিব্বাটি হাতে নিয়ে বলে ওঠে,
“স্যরি আফিম কিন্তু আপনাকে একটু না জ্বালালে শান্তি পাবো না।বদ অভ্যেস হয়ে গিয়েছে আপনাকে জ্বালানো!”
কথাটি শেষ করে নাফিয়া যেই কফিতে লবণ ঢালতে যাবে ওমনি কেউ একজন তার হাত ধরে নেয়।চমকে হাতের মালিকের দিকে তাকাতেই আফিমকে দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে যায় তার।আফিম নাফিয়ার হাত থেকে লবণের ডিব্বাটি নিয়ে জায়গা মতো রেখে নাফিয়ার দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হতে বলে ওঠে,
-তো কি বলছিলেন মিস.শেখ?আমায় না জ্বালালে আপনি শান্তি পাবেন না?
উত্তরে কিছু না বলে এক পা এক পা করে পিছিয়ে যায় নাফিয়া।আফিম অগ্রসর হতে হতেই আবারও বলে ওঠে,
-আমায় জ্বালানোর বদ অভ্যেসে পরে গিয়েছেন?
কথাটি শেষ করে এক হাতে নাফিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে নাফিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে আফিম।আফিমের কাছে আসতেই নাফিয়া এক অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করতে আরম্ভ করে যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি।আফিম,নাফিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-যদি বলি,এ বদ অভ্যেসে আমিও অভ্যস্ত?(ঠোঁটে বাঁকা হাসি তার)
আফিমের শরীরের মাতাল করা ঘ্রাণে নাফিয়া আবেশে নিজের চোখজোড়া বুজে নিয়ে মুগ্ধ হয়ে তা নিজের নিঃশ্বাসের সাথে নিজের মাঝে টেনে নিচ্ছে সেই সাথে আফিমের মৃদু কন্ঠস্বর ও তার বলা উক্তিটি নাফিয়ার হৃৎস্পন্দন কয়েকশো গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।আর একটু বাড়লেই হয়তো মরে যাবে সে ঠিক এমনটিই অনুভব করছে নাফিয়া।
এরই মাঝে সার্ভেন্টির পায়ের শব্দ কানে আসতেই আফিম নাফিয়াকে ছেড়ে কিছুটা দুরত্ব বজায়ে রেখে দাঁড়ায়।নাফিয়াও ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে কফিটি হাতে নিয়ে আফিমের দিকে এগিয়ে দেয়।সার্ভেন্টটি রান্নাঘরে প্রবেশ করে আফিমকে দেখে ঘাবড়ে যায় এবং বলতে আরম্ভ করে,
-ক্ষমা করুন স্যার।আসলে আমিই কফি বানাতাম কিন্তু ম্যাম…
মেয়েটির কথা শেষ হওয়ার আগেই আফিম বলে ওঠে,
-ইট’স অলরাইট!
মেয়েটি যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।অতঃপর নাফিয়া এবং আফিম উভয়ই হল রুমে এসে বসে।এতোক্ষণে সানিয়া বেগমও হল রুমে এসে বসেছেন।আফিম আসতেই তিনি আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-আফিম!
-ইয়াহ মম।
-আজ বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতে চাইছি।
-যাওয়া যায়।
-ভাবছি আমাদের পুরান বাড়িটায় যাই?দু’বছর হলো যাওয়া হয় না।
-ঠিক আছে।রবি মামাকে বলে দিচ্ছি বাড়িটি পরিষ্কার করিয়ে রাখতে।
-বেশ।(ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলে ওঠে সানিয়া বেগম)

!!
গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসলো আফিম।আজ সে ই ড্রাইভ করবে।তার পাশের সিটে বসলো সানিয়া বেগম এবং পেছনের সিটে দাদী এবং নাফিয়া।ঠিক ৩ টা বাজতেই রওয়ানা হলো তারা আফিমদের পুরোনো বাড়ির উদ্দেশ্যে।প্রায় ২/৩ ঘন্টার রাস্তা।শহর ছাড়িয়ে একটি মফস্বল এলাকাতেই আফিমদের পুরোনো বাড়িটি অবস্থিত।
শহর পেরিয়ে সেই এলাকাটির কাছাকাছি আসতেই দেখা যায় রাস্তার দুপাশে জনবসতিহীন বিরাট জায়গা জুড়ে শুধু হরেকরকমের গাছপালা।রাস্তাটি একদম পাকাপোক্ত হলেও আশেপাশের দৃশ্যমান সব কিছুই নাফিয়াকে গ্রামের অনুভূতি দিচ্ছে।এতোগুলা বছর পর সে গ্রামের মতো একটি জায়গায় যাচ্ছে ভাবতেই একরাশ ভালোলাগা এসে নাফিয়ার মনে জায়গা করে নেয়।বাইরের দৃশ্য নাফিয়ার ভেতরে যে মুগ্ধতা সৃষ্টি করছে তার বহিঃপ্রকাশ তার ঠোঁটের হাসির মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।লুকিং গ্লাসের সাহায্যে আফিম ও নাফিয়ার সেই মুগ্ধতার হাসির সাক্ষী হয়ে রয়।

চলবে।

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০৬

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০৬
লেখিকাঃমাহযাবীন

কিছুটা মাথা ব্যথা নিয়েই শুয়া থেকে ধীরে ধীরে উঠে বসে নাফিয়া।কপালটা ৩ আঙুলে আলতো করে চেপে ধরে চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নেয় সে।জানালা খোলা থাকায় সূর্যের কিরণে কক্ষ আলোকিত হয়ে আছে।সকাল হয়ে গেছে দেখে বেশ অবাক হয় নাফিয়া কারণ গত রাতে আফিম তার কক্ষ ত্যাগ করার পর সে নিজের পায়ে বিঁধে থাকা কাঁচের টুকরো গুলোকে নিজ হাতে তোলার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু ব্যথায় তা ঠিক করে পেরে উঠছিলো না সে।ধীরে ধীরে মাথা ব্যথা আরম্ভ হতে থাকে তার এবং কিছুটা সময়ের মাঝেই নিস্তেজ হয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়।এরপর আর কিছুই মনে নেই তার।নাফিয়া সকাল হয়েছে দেখে যতটা অবাক হয় তার থেকেও বেশি অবাক হয় এ দেখে যে তার পায়ে খুব সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করা।সেই সাথে পুরো রুমটা পরিপাটি আগের ন্যায় গোছানো।নাফিয়ার এসব পর্যবেক্ষণের মাঝেই একজন গৃহ পরিচারিকা এসে উপস্থিত হয়।নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে সে বলে ওঠে,
-এখন কেমন আছেন ম্যাম?
-আলহামদুলিল্লাহ কিন্তু আমার পায়ে ব্যান্ডেজ এবং রুমের গোছগাছ কে করলো?
-আমি এবং অন্য একজন সার্ভেন্ট।
-আপনারা জানলেন কি করে যে আমার সাহায্য প্রয়োজন?
-আফিম স্যার কাল রাতে আমাদের দু’জনকে আপনার পায়ের ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার জন্যে পাঠান।স্যারকে দেখে তখন খুবই রাগান্বিত মনে হচ্ছিলো।তিনি আমাদের বেশ তাড়া দিয়েই বলেছিলেন,আপনার রুমে এসে পায়ে ব্যান্ডেজটি দ্রুত করে দিতে।আমরাও দেরি করিনি,এসে আপনাকে অচেতন অবস্থায় পাই।
-ওহ আচ্ছা।আন্টি,দাদী তারা জেনেছে?
-তাদের কাঁচের কথাটি বলা হয়নি শুধু বলেছি পায়ে ব্যথা পেয়েছেন।
-বেশ করেছেন।
-আপনার এখনই কিছু খেয়ে নেওয়া উচিৎ,ম্যাম।আগামী যে ক’দিন আপনি পুরোপুরি সুস্থ না হন সে পর্যন্ত স্যার আপনার দায়িত্ব আমায় দিয়েছেন।
-কোনো প্রয়োজন নেই। আমি নিজের খেয়াল রাখতে পারবো।
-এমনটি করবেন না ম্যাম।স্যারের রাগ সম্বন্ধে আপনি হয়তো অবহিত নন।তিনি ১ সেকেন্ডও সময় নেবেন না আমায় চাকরি হতে বের করে দিতে।
নাফিয়া উত্তরে আর কিছু বলে না।আফিমের রাগ এ ক’দিনেই বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করেছে সে।নিরাবতাকেই সম্মতি ভেবে নিয়ে মেয়েটি নাফিয়ার নাস্তা আনতে রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হয়।
এদিকে নাফিয়ার ঘুম ভেঙেছে খবর পেয়ে দাদী এবং সানিয়া বেগম উভয়ই নাফিয়ার কক্ষে এসে জিজ্ঞেস করেন সে কেমন আছে এবং পায়ে ব্যথা পেলো কি করে!উত্তরে নাফিয়া বলে,
-আসলে রাতে একটু গলা খুসখুস করায় গরম পানি করতে রান্না ঘরে গিয়েছিলাম।গরম পানিটা গ্লাসে ঢালার সময় অসাবধানতা বসত তা হাত থেকে পিছলে পায়ের উপর পরে সবটা!
-বয়সে বড় হলেও এখনো বাচ্চাটি রয়ে গিয়েছো।এ বয়সে এমন বেখেয়ালি হলে চলে?(সানিয়া বেগম)
-তোমার থেকে এমনটা আশা করেছিলাম না।ক’দিন বিশ্রামেই থাকো।(দাদী)
-দুঃখিত।যেহেতু আমি এ পা নিয়ে কাজ করতে পারবো না সেহেতু সুস্থ হওয়া অব্দি কি নিজের বাড়িতে যেয়ে থাকবো?
-নাহ তার প্রয়োজন নেই।এ অবস্থায় যাওয়াটাও যেমন তোমার জন্যে কষ্টসাধ্য তেমন তোমার পরিবার বিষয়টি জেনে শুধু শুধুই চিন্তিত হবেন।(দাদী)
-অনেক ধন্যবাদ দাদী এতোটা ভাবার জন্যে।(ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে নাফিয়া)
দাদী উত্তরে আর কিছু না বলে তিনিও ঠোঁটে হাসি টেনে আনেন।

!!
দু’টো দিন পাড় হয়ে গেলো।এ দু’দিন নাফিয়া সম্পূর্ণ বিশ্রামে ছিলো।নিজ কক্ষ হতেও বের হতে পারেনি পায়ে ব্যথার জন্যে।স্কুলেও নিজের অসুস্থতার ব্যাপারটি জানিয়ে দিয়েছিলো সে এবং প্রায় ১ সপ্তাহের ছুটি মঞ্জুর করিয়ে নিয়েছে।আর এ দু’দিনে আফিম ও নাফিয়া একবারের জন্যেও একে-অপরের মুখোমুখি হয়নি।কিন্তু আফিম যাকে নাফিয়ার সেবায় নিয়োজিত করেছিলো তার থেকে ঠিকই নাফিয়ার খবর জেনে নিচ্ছিল।
৩য় দিনে,একটু ব্যথা থাকলেও হাঁটতে পারছে নাফিয়া।ব্যাস,এখন কি আর তাকে বসিয়ে রাখা সম্ভব!সে সকালে উঠে পায়ের ব্যথাটা কম অনুভব করাতে আবারও নিজের কাজে লেগে যাবে বলে মনস্থির করে নেয়।নিজের সকালের কাজ সেরে সে ধীরে ধীরে কদম ফেলে দাদীর কক্ষে উপস্থিত হয়।
-আসসালামু আলাইকুম দাদী।শুভ সকাল!
-কি ব্যাপার,তুমি বিশ্রাম না নিয়ে এখানে কি করছো?(কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে বলে ওঠেন দাদী)
-আমার পা এখন অনেকটাই ঠিক হয়ে গিয়েছে দাদী।এখন আমি মোটামুটি হাঁটাহাটি করতে পারবো!
-ভেবে বলছো?
-জ্বি।
-ঠিক আছে বসো এখানে।পত্রিকার এই খবরটি পড়ে শোনাও তো চোখে ঠিকভাবে দেখছি না আমি।
-জ্বি দাদী অবশ্যই কিন্তু ৬ টায় আপনার হাঁটতে বেরোতে হবে তাই চা বা দুধ যেটি চান একটু খেয়ে নিতে পারেন।
-আচ্ছা।(ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলেন দাদী)
পায়ে ব্যথা থাকায় দাদীর সাথে হাঁটতে যেতে পারবে না নাফিয়া।আবার দাদীকে একাও যেতে দেওয়াটা ঠিক হবে না।এসব যখন ভাবছিলো নাফিয়া ঠিক তখনই দাদীর কক্ষে প্রবেশ করেন সানিয়া বেগম।নাফিয়াকে দেখে তিনি বলে ওঠেন,
-পায়ের ব্যথা কিছুটা কমেছে?
-জ্বি আন্টি।(ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে নাফিয়া)
উত্তরে সানিয়া বেগম ও ঠোঁটে হাসি টেনে আনেন।সানিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে নাফিয়া বলে ওঠে, -আজ বৌমা শাশুড়িকে সঙ্গ দিলে কেমন হয়?
-অর্থাৎ?(সানিয়া বেগম)
-আজ দাদীর হাঁটতে যাওয়ায় আপনি তাকে সঙ্গ দিবেন,আন্টি?জানি যে কোনো সার্ভেন্টকে বললে তারা দাদীর সঙ্গে যাবে কিন্তু তাতে দাদী সঙ্গ পাবে না।চুপচাপ হেঁটে বাড়ি ফিরতে হবে কিন্তু আপনি গেলে দাদী ও আপনি উভয়ই বিভিন্ন গল্প বা স্মৃতিচারণ বা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সময়টা উপভোগ করতে পারবেন।
নাফিয়ার কথায় বেশ খুশি হয়ে দাদী বলে ওঠেন,
-যথার্থ বলেছো।বৌমা আজ যেহেতু নাফিয়া যেতে পারছে না সেহেতু তুমি যাবে তো আমার সাথে?
-জ্বি মা অবশ্যই।(ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলেন সানিয়া বেগম)
নাফিয়ার কথাটি শাশুড়ী-বৌমা উভয়েরই পছন্দ হয় কারণ বেশ অনেক দিনই হলো তারা শাশুড়ি-বৌমা মন খুলে কথা বলেন না।

!!
ছাঁদের রেলিং ধরে সূর্যের আলোর অনুপস্থিতিতে কালো বর্ণ ধারণ করা আকাশ পানে তাকিয়ে আছে নাফিয়া।সূর্যের আলো যে সবটাই অনুপস্থিত তা কিন্তু নয়।চাঁদের পেছনে লুকিয়ে নিজের আলো জোৎস্না রুপে পৃথিবীতে প্রেরণ করছেন সূর্য মামা।আর নাফিয়া মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে জোৎস্না বিলাস করছে।একা একা নির্জন রাত ও সেই সাথে শীতল হাওয়া ও জোৎস্না।এ অনুভূতিটি ভাষায় প্রকাশ করবার মতো নয়।কিছুটা সময় এভাবেই কাটানোর পর হটাৎ নিজের পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করে নাফিয়া।পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে আফিম দাঁড়িয়ে আছে।আফিমের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে স্থান ত্যাগ করার উদ্দেশ্য পা বাড়াতেই আফিম বলে ওঠে,
“স্যরি”
হটাৎ এক অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ কানে এসে পৌঁছাতেই নাফিয়া অবাক চাহনি নিয়ে আফিমের দিকে ফিরে তাকায়।আফিম নাফিয়ার দিকে না তাকিয়ে নিজের সামনে বরাবর দৃষ্টি রেখেই আবারও বলে ওঠে,
“আই এম স্যরি”
উত্তরে কিছু বলে না নাফিয়া।সে কল্পনাও করেনি আফিম তাকে স্যরি বলবে!অবাক হওয়ার সীমা অতিক্রম হওয়ার পরেও চেহারায় স্বাভাবিকতা বজায়ে রাখে নাফিয়া।কিছুটা সময় নিয়ে সে বলে ওঠে,
-আমি জানি আপনি অনুতপ্ত।নাহয় প্রতিদিন আমার খবর নিতেন না।
অবাক হয় আফিম।এ বিষয়টি নাফিয়া কিভাবে জানলো!সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নাফিয়ার দিকে তাকায়।
-যাকে জিজ্ঞেস করতেন সেই বলেছে।
উত্তরে আর কিছু বলে না আফিম।নাফিয়ার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আকাশ পানে তাকায়।নাফিয়াও একই কাজ করলো।কিছুটা সময় নিরাবতা চলার পর নাফিয়া বলে ওঠে,
-আপনি খুব বদমেজাজী বা বদরাগী হলেও মানুষটা খারাপ নন তা উপলব্ধি করেছি।
নাফিয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আফিম।মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-হু?
-আপনি সত্যিই খারাপ হলে,প্রথম দিন শুধু মাত্র অচেতন হওয়ায় একজন অপরিচিত মেয়ের জন্যে সেই রাতে ডাক্তার ডেকে আনতেন না।আর সেদিন রাতে আপনার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করার পরও, অনেকটা রেগে থাকার পরও আমার পায়ে ব্যান্ডেজ করবার জন্যে সার্ভেন্ট পাঠাতেন না।
উত্তরে কিছুই বলে না আফিম।কিছুটা সময় নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকার পর দৃষ্টি সরিয়ে আকাশ পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।অবাক হচ্ছে আফিম।মেয়েটি ওর জন্যে এতোটা কষ্ট পাবার পরও ক্রোধান্বিত না হয়ে উল্টো ওর ভালো দিকগুলো নিয়ে ভাবছে!
কিছুটা সময় নিরাবতায় কাটিয়ে দেয় উভয় একে-অপরের পাশাপাশি।অতঃপর নাফিয়া তার কক্ষে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়িয়েও থেমে যেয়ে বলে ওঠে,
-কারো কথায় নিজেকে বিচার করা বোকামো।আপনি জানেন আপনি অক্ষম নন তবে আপনি সত্যিই অক্ষম নন,আফিম!
বলে আর দাঁড়ায় না নাফিয়া।সে নিজের কক্ষের পথে অগ্রসর হয়।এদিকে নাফিয়ার কথায় আলতো এক হাসি ফুটে ওঠে আফিমের ঠোঁটে।

চলবে।

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০৫

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০৫
লেখিকাঃমাহযাবীন

সন্ধ্যায় সবাই হল রুমে বসে টিভি দেখছে।আফিমও অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে হল রুমে এসে পত্রিকা টি নিয়ে বসে।কিছুটা সময় পত্রিকায় মুখ ডুবিয়ে থাকার পর আফিম নাফিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে নাফিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে টিভিতে বাংলা নাটক দেখছে।নাফিয়ার এতো শান্তি তার সহ্য হওয়ার নয়।সে নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-মিস.শেখ আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসবেন কি?
-ও কফি আনতে যাবে কেনো এতো সার্ভেন্ট থাকতে।দাঁড়া কোনো একজন সার্ভেন্টকে বলছি!(সানিয়া বেগম)
-না না আন্টি।আমিই আনছি কোনো সমস্যা নেই।(নাফিয়া)
সানিয়া বেগম উত্তরে কিছু না বলে মুচকি হাসেন।এদিকে নাফিয়া যেন আফিমের মুখ থেকে এটি শোনার জন্যেই অপেক্ষারত ছিলো এতোক্ষণ।ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে নাফিয়া চলে যায় রান্নাঘরে কফি বানাতে।আর এদিকে কিছুটা সন্দিহান চোখে আফিম তাকিয়ে রয় নাফিয়ার যাওয়ার পানে।মেয়েটির মতলব তার কাছে ঠিক সুবিধের লাগছে না।
কিছুটা সময় পার হতেই নাফিয়া কফি হাতে ফিরে আসে।আফিমকে কফিটি এগিয়ে দেয় ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে।নাফিয়ার ওর দিকে তাকিয়ে হাসাটা ঠিকমতো হজম হলো না আফিমের।সে ব্রু কুঁচকে এক বার নাফিয়াকে দেখে নিয়ে একটু করে কফিতে চুমুক বসায়।কফির টেস্ট একদম ঠিক দেখে আফিম খানিকটা অবাক হয়।কারণ সে ভেবেছিলো নাফিয়া কফিতে কিছু একটা মিশিয়েছে।কিন্তু এমনটি না হওয়ায় আফিম আরো একবার নাফিয়ার দিকে তাকায় দেখে নাফিয়া টিভিতে মনোযোগ নিবেশ করেছে।আফিম আর বেশি না ভেবে কফিটি এক এক চুমুক করে পুরোটা শেষ করে নেয়।
খাওয়ার কিছুটা সময় পেরোতেই পেট কেমন জানি শব্দ করে ওঠে।আফিমের মনে হচ্ছে সে এখনই ওয়াশরুমে না গেলে বিরাট বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।পত্রিকাটা কোনো মতে রেখে আফিম দ্রুত গতিতে নিজের কক্ষের ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়।দ্রুত পদে ওয়াশরুমে ঢুকতেই পা পিছলে ঠাস করে ওয়াশরুমের মেঝেতে পরে যায় সে।ভালো করে মেজেতে দৃষ্টিপাত করতেই সে দেখে পুরো ফ্লোরটায় সাবান পানি।পায়ে প্রচুর ব্যথা পাওয়া সত্ত্বেও কোনো মতে উঠে কাজটি সেরে নেয়।কাজ শেষ হতেই যেই সে বেরোতে যাবে তখন দেখে ওয়াশরুমের গেটটা বাইরে দিয়ে আটকানো।আফিম বেশ বুঝতে পারছে এইসব কাজের পেছনে কার হাত!রাগে পুরো মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে তার।জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে হাত বার বার মুঠোবন্দী করে এবং খুলে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা চালিয়ে চলছে সে।এরই মাঝে আবারও পেট শব্দ করে ওঠে তার।এভাবেই চলতে চলতে দুই ঘন্টা পার হবার পর নাফিয়া গিয়ে আফিমের ওয়াশরুমের দরজা বাইরে থেকে খুলে দিয়েই এক দৌড়ে দাদীর কাছে চলে আসে।
শরীর টা ভিষণ ক্লান্ত লাগছে আফিমের।ওয়াশরুমের দরজা খোলা পেয়েই বেরিয়ে আসে সে।কক্ষ পুরোটাই খালি দেখে আর কোনো কিছুতে মনোযোগ না দিয়ে টাওয়ালটি নিয়ে আবারও ওয়াশরুমে চলে যায় সে।ক্লান্ত শরীরেই গোসলটি সেরে কক্ষে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় এবং একজন সার্ভেন্টকে ডেকে স্যালাইন দিয়ে যেতে বলে।সেই রাতে আফিম আর নিজের কক্ষ হতে বের হয় না।
এদিকে নাফিয়ার যেনো ঈদ।সে তো মহা খুশি।আফিমকে তার উচিৎ শিক্ষা দিতে পেরে নিজের কাছেই বড্ড ভালো লাগছে তার।রাতে নিজের রুমের দরজা এবং জানালা টাও পর্যন্ত ভালোভাবে আটকিয়ে এসি ছেড়ে শুয়ে পরে নাফিয়া।আগের রাতে আফিম এক্সট্রা চাবি ব্যবহার করে ওর কক্ষে প্রবেশ করেছিলো তা বুঝতে পেরে আজ দরজার ছিটকিনি টাও লাগিয়েছে সে।অতঃপর বিছানায় আরাম করে শুয়ে সে কল্পনা করতে আরম্ভ করে আজ আফিমকে দেওয়া শাস্তিতে আফিম কেমন অনুভব করছিলো।ভাবতেই চরম আনন্দ হচ্ছে নাফিয়ার।সে মনে মনে বলে ওঠে,
“কাল সকালে মিঃআফিম ইবনানের অবস্থাই বলে দেবে নাফিয়ার সাথে টেক্কা দেওয়ার ফল কেমন হয়”
ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি টেনে চোখজোড়া বুজে নেয় নাফিয়া এক শান্তিময় ঘুমের আশায়।

!!
সকাল হতে দাদীর সাথে সাথেই আছে নাফিয়া।এক মুহূর্তের জন্যেও কোথাও একা থাকছে না সে।বলা তো যায় না আফিম কখন আবার তার উপর হামলা করে বসে।তার উপর আজ আবার স্কুল ও বন্ধ!স্কুলে থাকলেও চিন্তামুক্ত থাকা যেতো।
সকালে যখন দাদী ও নাফিয়া উভয়ই খাবার টেবিলে বসে গরম গরম চায়ে চুমুক বসাচ্ছিলো তখন দেখা মিললো আফিমের।গত কাল পিছলে পরায় পায়ে ব্যথা হয় তার।তাই জন্যে ঠিকমতো হাঁটতে পারছে না সে।আফিমকে এভাবে হাঁটতে দেখে মনে মনে খুবই খুশি হয় নাফিয়া এবং বলে ওঠে,
“এতোটুকু ডোজে ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না আর আসছে নাফিয়ার সাথে টেক্কা দিতে।”
নাফিয়ার দিকে চোখ পরতেই আফিম দেখে নাফিয়ার ঠোঁটে হাসি।সাথে সাথেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার।হাত মুঠোবন্দি করে আফিম চুপচাপ হেঁটে নিজের পত্রিকাটি নিয়ে একজন সার্ভেন্টকে আদেশ করে খাবার তার রুমে পাঠিয়ে দিতে।অতঃপর নিজের রুমে চলে যায়।
এরপর থেকে সারাদিনে আফিমের দেখা মেলে না।আজ অফিসেও যায় না সে।সারাটি দিন নিজের কক্ষেই থাকে।এদিকে আফিমের ভয়ে ভয়ে নাফিয়া পুরো দিনে এক মুহূর্তও একা থাকেনি, সবসময় কারো না কারো সাথেই ছিলো।কিন্তু আফিমকে এভাবে সারাদিন রুমে থাকতে দেখে কেনো যেনো খারাপও লাগছে নাফিয়ার।সার্ভেন্ট যারা আফিমের রুমে গিয়েছিলো তাদের দাদী জিজ্ঞেস করেছিলেন আফিমের কথা।সবার উত্তর,”স্যার চুপচাপ শুয়ে আছেন।হয়তো স্যারের শরীর ভালো না”।সারাটি দিন আফিম নিজেকে এভাবে বন্দী করে রেখেছে সেই সাথে শরীরটিও ভালো নেই এগুলো দেখে নাফিয়ার খুব খারাপ লাগছে।রাতে নিজের কক্ষে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে থাকে হয়তো সে অতিরিক্ত করে ফেলেছে।এতোটা না করলেও পারতো!মনে মনে সে এও ভেবে নেয় যে সে আফিম কে স্যরি বলবে।

!!
আফিম যেহেতু নিজ কক্ষ হতে বের হচ্ছে না তাই নাফিয়াও দরজা লাগানোর দিকে তেমন গুরুত্ব আরোপ করেনি।সে গোসল সেরে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।এমন সময় হটাৎ তার কানে কোনো কাঁচের জিনিস ভাঙার আওয়াজ আসে।ব্রু জোড়া কুঁচকে নিজের কক্ষে প্রবেশ করতেই দেখে আফিম এক এক করে কাঁচের আসবাবপত্রগুলো মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলছে।অবাক হয়ে আফিমের এমন উদ্ভট কাজের দিকে তাকিয়ে আছে নাফিয়া।আফিম বেশ ক’টি আসবাবপত্র ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার পর নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-Walk on it!
আফিমের কথায় অবাকের চরম শীর্ষে পৌঁছিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-মানে?
-কানে শুনতে পাও না?হাঁটো এর উপর!(বেশ চেচিয়ে বলে ওঠে আফিম)
রাগে আফিমের শুধু চোখ দুটিই নয় দুধের ন্যায় ফর্সা মুখটিও রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।আফিমকে দেখে ভয়ে কাঁপা কাঁপা ভাব নাফিয়ার।
নাফিয়াকে তার জায়গায় স্থির থাকতে দেখে আফিমের রাগ আরো বেড়ে যায় এবং সে বলে ওঠে,
-যা বলেছি তা যদি এখনই না করো তবে এরপর যা হবে তার জন্যে দায়ী থাকবে কেবল তুমি।
অতিরিক্ত রাগের বসে এখনই যে আফিম যেকোনো কিছু করে বসতে পারে তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে নাফিয়া।সে আর না ভেবে ধীরে ধীরে কাঁচের টুকরো গুলোর উপর একটি পা রাখে।সাথে সাথেই বেশ কয়টি কাঁচের টুকরো নাফিয়ার পায়ে ঢুকে যায়।ব্যথায় চোখে পানি চলে আসে নাফিয়ার।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চোখের জল আটকে রাখার বৃথা চেষ্টা করে দ্বিতীয় পা কাঁচের টুকরোগুলোর উপর রাখতেই দ্বিতীয় পায়েও কাঁচের বেশ ক’টি টুকরো বিঁধলো।ব্যথায় চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে নাফিয়ার।সে কোনো ভাবেই তৃতীয় কদম ফেলার সাহস যোগাতে পারছে না।
এদিকে নাফিয়া যে সত্যিই কাঁচের উপর পা দেওয়ার মতো সাহস করবে তা চিন্তাই করেনি আফিম।নাফিয়ার পায়ের দিকটি রক্তে ধীরে ধীরে ভরে যাচ্ছে।আর নাফিয়ার চোখে জলগুলোও কেনোই যেনো আফিমের সহ্য হচ্ছে না।আফিম আর দেরি না করে নাফিয়াকে কোলে তুলে নেয়।এতোটা সময় চোখ বুজে ছিলো নাফিয়া হটাৎ এভাবে আফিমের কোলে তুলে নেওয়ায় চমকে চোখ মেলে তাকায় সে। আফিম,নাফিয়াকে বিছানায় পা তুলে বসিয়ে দিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসে নাফিয়ার পায়ের কাছে বসে।যেই আফিম ঔষধ লাগাতে যাবে ওমনি নাফিয়া পা সরিয়ে বলে ওঠে,
-অনেক হয়েছে মিঃইবনান।করেন করেছেন আপনি!প্রথমত পতিতা বলে আমায় অপমান করলেন তারপর রেগে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেওয়ার অপরাধে আমায় তুলে নিয়ে যেয়ে অসভ্যতা করলেন।কিচ্ছু বলিনি।ভাগ্যে হয়তো এটিই ছিলো বলে মেনে নিয়েছিলাম আর আমায় ধর্ষণ না করায় কৃতজ্ঞ ছিলাম।কিন্তু তারপরও আপনার থাপ্পড়ের জবাব দেওয়া বাকি রয়ে গিয়েছিলো দেখে আমাকে এই চাকরি দিলেন এবং হুমকি দিলেন যেনো আমি এই চাকরি টা না ছাড়ি।আপনি কি মনে করেন আফিম?আমি আপনার হুমকির ভয়ে এখনো এখানে আছি বা আপনার অত্যাচার আমি ভয় পাই?যদি এমনটি ভেবে থাকেন তবে এটি আপনার ভুল ধারণা। আমি এখানে আছি আমার পরিবারের স্বার্থে।তাদের আর্থিক সহায়তা করার জন্যে।আর আপনার এই অত্যাচার যদি ভয়ই পেতাম তবে আপনাকে পাল্টা জবাব দেওয়ার সাহস দেখাতাম না।তাই আমাকে দয়া দেখাতে আসবেন না।
এতোক্ষণ ধরে নাফিয়ার কথাগুলো চোয়াল শক্ত করে চুপচাপ শুনছে আফিম।নাফিয়ার পায়ের অবস্থা অতোটা ভালো না।আরো কিছুক্ষণ ধরে রক্ত এভাবে পরলে নাফিয়া জ্ঞান হারাবে।আফিমের যথেষ্ট রাগ উঠা সত্ত্বেও সে এখন কিছু বলতে চাচ্ছে না।নাফিয়া আবারও বলে ওঠে,
-এক মিনিট এক মিনিট!আপনার মাঝে আদৌও দয়া নামক কোনো অনুভূতি আছে নাকি সব নাটক?আমার তো মনে হয় নাটকই।কারণ যে ছেলে দিনের আলোয় সফল বিজনেসম্যান, রাতের অন্ধকারে সে এক পতিতা সন্ধানী।দেহ লোভী কোনো ব্যক্তির মানবীয় গুণাবলি থাকে না।আপনারও নেই।
ব্যাস এতোক্ষণ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও এখন আফিমের সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গিয়েছে।সে নাফিয়ার মুখ একহাতে শক্ত করে চেপে ধরে বলে ওঠে,
-হু দা হেল আর ইউ টু জাজ্ মি?কি জানো তুমি আমার সম্পর্কে?কতোটুকু জানো আমার সম্পর্কে?হ্যা?কোন সাহসে আমায় নিয়ে মন্তব্য করলে?আমার বাসার চাকর হওয়ার ও যোগ্যতা তোমার নেই সেখানে তুমি আমায় বিচার করছো?আমি যদি দেহ লোভীই হতাম তবে আমার গার্লফ্রেন্ড তাকে স্পর্শ না করার অপরাধে আমার পুরুষত্বের উপর প্রশ্ন তুলে আমায় ছেড়ে যেতো না!আমি যদি দেহ লোভীই হতাম তাহলে এতোদিন তোমার সতীত্ব অক্ষত থাকতো না!ইউ ব্লাডি ইডিয়ট।
বলেই নাফিয়াকে ছেড়ে দিয়ে আফিম দ্রুত পদে নাফিয়ার কক্ষ ত্যাগ করে।

চলবে।

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০৪

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০৪
লেখিকাঃমাহযাবীন

বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টির শব্দ,তার মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ ও ঠান্ডা বাতাসের পরশ মানুষের মন,মস্তিষ্কে শান্তি এনে দেয় এবং উপহার দেয় চরম আরামদায়ক নিদ্রা।নাফিয়াও আরামের ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।হটাৎ সে তার মুখে তরল জাতীয় কিছু অনুভব করে।ঘুম ভেঙে যায় তার।পিট পিট করে চোখ মেলতেই তার মুখের উপর বেশ খানিকটা পানি এসে পরে।তাৎক্ষণিক উঠে বসে সে।কিছুটা পানি তার নাক অব্দি উঠে গিয়েছে।কিছুটা সময় নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে নাফিয়া তার সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির দিকে তাকায়।আফিম ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে আছে।একে তো এতো আরামের ঘুমটা পানি হলো দ্বিতীয়ত পানিতে শরীরের বেশ কিছুটা অংশ ভিজে গিয়েছে ফলে ঠান্ডা বাতাসের জন্য ঠান্ডা লাগছে আর তৃতীয়ত যে এই মহান কাজটি করেছে সে ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে।রেগে নাফিয়া বলে ওঠে,
-কি চাই আপনার?এতো অসভ্য কেনো আপনি?এভাবে মধ্য রাতে একটি মেয়ের রুমে ঢুকে অত্যাচার করছেন!আর রুমে ঢুকলেন কি করে আমি তো দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলাম?
নাফিয়ার কথা শেষ হতেই আফিম নাফিয়ার হাত ধরে এক হেঁচকা টানে দাঁড় করিয়ে বলে ওঠে,
-আমি অসভ্য?তোমার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছি না।প্রথমত ইচ্ছে করে আমার পায় পারা দিয়েছ!
কথাটি বলেই আফিম নাফিয়ার হাত মুচড়ে ধরে।ব্যথায় “আহহ” শব্দ করে ওঠে নাফিয়া।আফিম আবার ও বলতে আরম্ভ করে,
-দ্বিতীয়ত এখন আমায় অসভ্য বলছো!আফিম ইবনানের অসভ্যতা কাকে বলে তা এখন টের পাবে তুমি।
হাত জোরে মুচড়ে ধরায় বেশ ব্যথা পাচ্ছে নাফিয়া।সেই সাথে আফিমের রাগান্বিত চেহারা ও উক্তি শুনে ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার।সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে,
-আমি কিন্তু এখন চিল্লাবো!
তাচ্ছিল্যের একটি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-এ বাড়ির সব ক’টি রুম সাউন্ডপ্রুফ।
-ছেড়ে দিন প্লিজ ভুল হয়ে গেছে।আপনি অসভ্য নন।(ভয়ে ভয়ে)
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে আফিম নাফিয়ার মুচড়ে ধরে রাখা হাত টি ছেড়ে দিয়ে নাফিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
-ভুল যখন করেছ শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে।
নাফিয়া যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি আফিম তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
-শাট আপ।
ব্যাস মুখ বন্ধ হয়ে যায় নাফিয়ার।আফিম ধীরে ধীরে নাফিয়ার ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।এটি দেখে নাফিয়া ভাবে হয়তো প্রথম দিনের মতো আজও আফিম একই কাজ করবে তাই সে চটজলদি নিজের ঠোঁট হাত দিয়ে চেপে ধরে।কিন্তু লাভ হয় না আফিম ধীরে ধীরে তার দিকে অগ্রসর হচ্ছেই।ভয়ে চোখজোড়া বুজে নেয় নাফিয়া।চোখ বুজা অবস্থায়ই সে অনুভব করে কেউ কামড়ে তার ঘাড়ের মাংস তুলে নিচ্ছে।যন্ত্রণায় চেচিয়ে উঠে আফিমকে নিজের থেকে দূরে সরাবার চেষ্টা করে নাফিয়া কিন্তু সে সফল হয় না।ব্যথায় কেঁদেই দেয় নাফিয়া।কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই নাফিয়াকে ছেড়ে দেয় আফিম।ঘাড়ের যে জায়গা টায় কামড় বসিয়েছে সে জায়গাটিতে দাঁতের দাগ বসে খানিকটা রক্ত বেড়িয়ে এসেছে।নাফিয়ার চোখে পানি দেখে আফিম বলে ওঠে,
-এতোটুকু ব্যথা সহ্য করতে পারো না আর আফিম ইবনানের সাথে টেক্কা দিতে আসো!(ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি)
ভিষণ রাগ উঠা সত্ত্বেও চুপ করে থাকে নাফিয়া কারণ সে জানে এখন কিছু বলাটা তার জন্যে হিতকর হবে না।নাফিয়ার কোনো উত্তর না পেয়ে আফিমও তার সময় অপচয় করে না।ঠোঁটে জয়ের হাসি ঝুলিয়ে নাফিয়ার কক্ষ ত্যাগ করে সে।আফিম যেতেই নাফিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ক্ষত টা দেখে নেয়।জায়গা টাতে ব্যথাও করছে।মনে মনে নাফিয়া বলে ওঠে,
“এর উত্তর তুমি পাবে আফিম ইবনান।”

!!
সকালে ঠিক ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিজের ইবাদত শেষ করে দাদীর কক্ষে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয় নাফিয়া।দাদীর পাশের রুমটিই দেওয়া হয়েছে তাকে থাকার জন্যে।দাদীর কক্ষে প্রবেশ করতেই নাফিয়া দেখে দাদী পত্রিকা পড়ছেন।দাদীকে উদ্দেশ্য করে সে বলে ওঠে,
-আসসালামু আলাইকুম দাদী।শুভ সকাল!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।উঠে পরেছ!
-জ্বি।এখন বলুন হাঁটতে যাওয়ার আগে কি খাবেন?
-এক কাপ দুধ চা হলে মন্দ হয় না!
-এক কাপ দুধ চা নয়।হয় এক কাপ দুধ নাহয় এক কাপ চা।
-এখন কি আমায় রং চা খেতে হবে?
-জ্বি অবশ্যই।যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ঠিক তাই খেতে হবে।
-আচ্ছা তবে এক কাপ রং চা।(মুচকি হেসে বলেন দাদী)
-আচ্ছা আনছি।
বলেই নাফিয়া দাদীর কক্ষ ত্যাগ করে রান্না ঘরে প্রবেশ করে।রান্নাঘরে দু’জন রাঁধুনি সকালের নাস্তা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে।নাফিয়া তাদের একজনকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-আপু দাদী রং চা চেয়েছেন।এখনই বানিয়ে দিতে পারবেন তো?
-জ্বি অবশ্যই ম্যাম।
-ম্যাম বলার প্রয়োজন নেই আপনি আমার বড় তাই নাফিয়াই বলুন।
-জ্বি আচ্ছা।
-আর আরেকটি কথা!আজ থেকে দাদীর তিন বেলার খাদ্য তালিকায় কি কি খাবার থাকবে তা আমার থেকে অবশ্যই জেনে নিবেন।
-ঠিক আছে।
-আজ তার সকালের নাস্তার জন্যে দুটি রুটি,এইযে এই বাটির এক বাটি গরুর কলিজা এবং ডিম তৈরি করবেন।আছে তো সব?
-জ্বি আছে।তৈরি হয়ে যাবে।
-ধন্যবাদ।
বলেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দাদীর কক্ষের দিকে অগ্রসর হয় নাফিয়া।
ঠিক ৫ টা ৩০ মিনিটে দাদী ও নাফিয়া দু’জনই বেরিয়ে পরলো হাঁটার জন্যে।বাড়ির কাছেই একটি পার্ক আছে।সেই পার্কটিতেই দু’জন হাঁটার সাথে সাথে বিভিন্ন গল্পও করলো।প্রায় ১ ঘন্টা হাঁটার পর দুজন বেশ ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এলো।বাড়িতে প্রবেশ করতেই সানিয়া বেগম ঠোঁটে হাসি টেনে তাদের উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-হাঁটা হলো আপনাদের?
নাফিয়া ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে সম্মতি জানালো আর দাদী বলে ওঠলো,
-তোমারও হাঁটা উচিৎ বৌমা।বয়স তোমার ও হয়েছে সেই সাথে ওজন টাও তো তোমার কম নয়!
শাশুড়ির এমন উক্তি শুনে মূহুর্তেই মুখটি কালো হয়ে গেলো সানিয়া বেগমের।তিনি শাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন,
-মন্দ বলেননি মা।
সানিয়া বেগমের মন খারাপ হতে দেখে নাফিয়া বলে ওঠে,
-কি যে বলেন না দাদী!আন্টি এখনো ইয়াং আছে।তাকে দেখে কেউ বলবে নাকি তার এতো বড় ছেলে আছে!আমিই তো প্রথম দেখে অবাক হয়েছিলাম।যার শাশুড়িকেই এখনো বার্ধক্য কাবু করতে পারলো না সেখানে তার বয়স তো অনেক কম!
নাফিয়ার কথায় সানিয়া বেগমের চেহারা খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠে এবং তার ঠোঁটের হাসিটি আবারও ফিরে আসে।দাদী নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-শাশুড়ি-বৌমা দু’জনকেই পটানো হচ্ছে দেখছি!
নাফিয়া হেসে বলে ওঠে,
-মোটেই না যা সত্যি তাই বলছি।
নাফিয়ার কথায় দাদী একটু হেসে সানিয়া বেগমকে বলে ওঠে,
-বৌমা আমার খাবার প্রস্তুত করো ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-আচ্ছা মা।
অতঃপর নাফিয়া ও দাদী উভয়ই চলে গেলো নিজ নিজ কক্ষে ফ্রেশ হতে এবং সানিয়া বেগম রান্না ঘরে।

!!
আফিমের সকাল হয় ৬ টায়।উঠেই বেরিয়ে পরে জগিং এর উদ্দেশ্যে।টানা ১ ঘন্টা ওয়ার্ক আউট করে বাড়ি ফেরেন তিনি।বাড়ি ফিরে গোসল সেরে একদম অফিসে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত হয়ে নিজের কক্ষ হতে খাবার ঘরে এসে নিজের সকালের নাস্তা শেষ করেন।তারপর কিছুটা সময়ের জন্য পত্রিকায় মুখ ডুবান।অফিস ৯ টায় হওয়ায় ৮ টা ৪০ মিনিটেই অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
এই ছিলো আফিমের প্রত্যেক দিনের সকালের নিয়মিত কার্যকর্মের সূচি।আজও এর ব্যতিক্রম হলো না।অফিসে যাওয়ার জন্যে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে খাবার ঘরে এসে চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নেয় সে কিন্তু নাফিয়ার দেখা মেলে না।তাই খাওয়া টা শেষ করে আফিম তার দাদীর কক্ষে যায় হয়তো নাফিয়া সেখানেই আছে এই ভেবে।কিন্তু দাদীর কক্ষেও নাফিয়ার খোঁজ মেলে না।আফিমকে সকাল সকাল নিজের কক্ষে আবিষ্কার করে বেশ বিস্মিত হন দাদী।তিনি কৌতুহল দমিয়ে না রেখে জিজ্ঞেস করে বসেন,
-আজ এতো সকাল সকাল আমার রুমে?
-এমনিই দেখতে এলাম কেমন আছ!
-এতো বছরে তো কখনো সকাল সকাল তোমার আমার কথা মনে পরেনি তবে আজ হটাৎ?
-উফ দাদী!ডোন্ট বিহেভ লাইক মম!
-আচ্ছা আচ্ছা।(হেসে বলে ওঠেন দাদী)
-মিস.শেখ ঠিকমত নিজের কাজ করছে তো?
-খুবই দ্বায়িত্ববান মেয়েটি।এখন অব্দি তার একটি কাজেও ত্রুটি হয়নি।মাত্র কালই এলো কিন্তু কাজ এমনভাবে করছে যেনো খুব অভিজ্ঞ।
-একটু বেশিই সুনাম করলে।(কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে আফিম)
-কমই করেছি।
-তা যাই হোক,এখন কই মহারানী?তোমাকে একা ফেলে নিজেতে মত্ত হয়ে আছে আর তুমি বসে তার সুনাম করছো!
-ওর স্কুলে ক্লাস শুরু হয় ৭ঃ৩০ এ।তাই স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।
কথাটি শুনে আফিম মনে মনে বলে উঠলো,
“ইশ!ভুলেই গিয়েছিলাম।সকাল সকাল এক ডোজ দিয়ে যাবো তা আর হচ্ছে না।”
নাফিয়ার খবর মিলতেই আফিম উঠে দাঁড়িয়ে তার দাদীকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-আচ্ছা দাদী আমি যাই।তুমি নিজের খেয়াল রেখো।
কথাটি শেষ করে দাদীর দিকে একটি ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে কক্ষ ত্যাগ করে সে।

!!
৭ টা ৩০ হতে ৯ টা অব্দি ৩ টে ক্লাস নেয় নাফিয়া১ম,৩য় এবং ৪র্থ এই তিনটি শ্রেণির ৩ টি বিষয়ের ক্লাস নেয় সে।৯ টা বাজে ক্লাস নেওয়া শেষে বাসায় এসে পৌঁছায় নাফিয়া।ফ্রেশ হয়ে দাদীর কক্ষে যেতেই দেখে দাদী ঘুমিয়ে আছেন।তাই আবার নিজের কক্ষে ফিরে আসে সে।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠে গত রাতে আফিমের করা কাজটি।আফিমের এ কাজটির একটি পাল্টা জবাব তার দিতেই হবে।কিন্তু কিভাবে দিবে তাই ভাবনার বিষয়।শুয়ে শুয়ে এটি ভাবতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো নাফিয়া।

চলবে

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০৩

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০৩
লেখিকাঃমাহযাবীন

-মা আমার এই চাকরি টা প্রয়োজন।বোঝার চেষ্টা কেনো করছো না?(নাফিয়া)
-কিছু বুঝতে চাইছি না আমি।এ চাকরি টি তুমি করছো না এটিই আমার শেষ সিদ্ধান্ত।
-তোমার সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করি কিন্তু তুমি শুধুই এক তরফা ভাবছো মা!তুমি শুধুই আমার সেফটির কথা ভাবছো কিন্তু এটি একবারও ভাবছো না যে এ চাকরিটি করলে আমাদের বিপদ কতোটা কেটে যাবে।থাকা,খাওয়া ফ্রীতে সেই সাথে মাস গেলে ২৫ হাজার টাকা!আর আমার কাজ টা কি?শুধু একজন বৃদ্ধার সাথে সারাদিন থাকা এবং তার ঔষধ থেকে শুরু করে তার যাবতীয় সব দিকে খেয়াল করা।ভাবতে পারছো এই প্রস্তাবটি আমাদের জন্য কতোটা লাভজনক?
-বোকার মতো কথা বলছো নাফিয়া।শুধু মাত্র একজন বৃদ্ধার দেখাশোনা করবা সেজন্যে মাস গেলে ২৫ হাজার টাকা?আবার শর্ত রাতেও থাকতে হবে!এটা কোনো ফন্দিও তো হতে পারে।
-বৃদ্ধ মানুষ!হুটহাট রাতেও অসুস্থ হয়ে পরতে পারে সেজন্যই হয়তো ঔ শর্তটি।আর ওরা অনেক বড়লোক মা!যে লোকটি কথা বলতে এসেছিলেন সে তাদের কর্মচারী কিন্তু সেই কর্মচারীকে দেখতেই লাখো পতি মনে হচ্ছিল।এখন তুমিই ভাবো,ওদের কাছে মাসে ২৫ হাজার কোনো ব্যাপার?
-ওরা তোমায় কোথায় পেলো?আর এই প্রস্তাব তোমাকেই কেনো দিলো?
-লোকটা বলেছিলো আমার কোনো এক স্টুডেন্টের প্যারেন্টস তাদের আমাকে এ কাজটি দেওয়ার জন্যে পরামর্শ দিয়েছে।
-তোমার স্কুলের চাকরিটার কি হবে?
-তা অব্যাহত থাকবে।আমি কথা বলে নিয়েছি লোকটির সাথে।স্কুলে আমার ৩ টি ক্লাস পরাপর আছে যা দের ঘন্টার ব্যাপার এতোটুকু ছাড় দিবেন তারা।
-তাও আমার মন সায় দিচ্ছে না।
-উফ মা!!
বলেই নাফিয়া তার মাকে জড়িয়ে ধরে।কন্ঠে একটু আহ্লাদীভাব এনে বলে ওঠে,
-মা প্লিজ না করো না।আমি সেফ থাকবো ইন শাহ আল্লাহ।আর তুমি নাহয় ৩ বেলা নিয়ম করে কল দিও।আর আল্লাহ না করুক কোনো সমস্যা হলে ব্যাস ৩৫/৪০ মিনিটের পথ।রাজি হয়ে যাও না?
-আচ্ছা করো যা ইচ্ছা।আমার কথা কি আর কেউ দাম দেয়!বাবাসহ মেয়ে দুটো ও তাই ই করবে যা তাদের মন চাবে।(বলতে বলতেই নাফিয়ার বাহুবন্ধনী হতে নিজেকে ছাড়িয়ে নাফিয়ার কক্ষ ত্যাগ করেন নয়না বেগম)

!!
সকাল সকাল নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগ ভর্তি করে নিজে প্রস্তুত হয়ে নেয় নাফিয়া।অতঃপর পরিবারের সকলের থেকে বিদায় নিয়ে রওয়ানা হয় নিজের নতুন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে।
বিশাল জায়গা নিয়ে ঘেরাও করা একটি তিন তলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নাফিয়া।মুগ্ধ হয়ে বাড়িটি দেখছে সে।সাদা এবং কমলা রং এর বাড়ি টির চারপাশ উঁচু দেওয়ালে ঘেরা।দেওয়ালের ভেতরের দিকটা বিভিন্ন ফুল গাছ দ্বারা সজ্জিত।মেইন গেইটি যেমন বড় তেমন এর উপর করা কারুকাজগুলোও আকর্ষণীয়।মুগ্ধতা নিয়ে নাফিয়া বাড়ির সদর দরজার বেল বাজাতেই একটি ২১/২২ বছরের মেয়ে দরজা খুলে বলে ওঠে,
-আসসালামু আলাইকুম ম্যাম।কাকে চাই?
-জ্বি আমাকে এ বাড়ির একজন বুজুর্গ ব্যক্তির পরিচর্যার দ্বায়িত্বে নিয়োগ করা হয়েছে।
-ওহ ভেতরে আসুন।
মেয়েটি নাফিয়াকে সোফার দিকে ইঙ্গিত করে বলে ওঠে,
-এখানে বসুন।আমি ম্যামকে দেকে দিচ্ছি।
-জ্বি।
মেয়েটি যেতেই নাফিয়া পুরো হল রুমটিতে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।একটি বেশ বড় সাইজের টিভি দেওয়ালে লাগানো।সেই সাথে আরো অনেক আকর্ষনীয় আসবাবপত্র দিয়ে পুরো হল রুমটি সাজানো।এসব দেখার মাঝেই আফিমের মা সানিয়া বেগম এসে হাজির হন।তিনি নাফির সামনের সোফায় বসে যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি কারো কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
-হোয়াট’স ইউর নেম?
কন্ঠস্বরটি কানে আসতেই চোখজোড়া রসগোল্লার ন্যায় বড় বড় হয়ে যায় নাফিয়ার।সে নিজের জায়গায় একদম স্থির হয়ে থাকে।আফিম সিড়ি দিয়ে নামতে নামতেই প্রশ্নটি করেছিলো।এখন তার মায়ের পাশে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আফিম বলে ওঠে,
-কি হয়েছে? শুনতে পাওনি আমার প্রশ্ন?
আফিমকে নিজের সামনে দেখে একই ভাবে রসগোল্লার ন্যায় চোখ করে তাকিয়ে আছে নাফিয়া।সে এতোটাই অবাক হয়েছে যে বুঝে উঠতে পারছে না তার আসলে কি প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিৎ।নাফিয়ার এমন অস্বাভাবিক আচরণটা সানিয়া বেগমের বোধগম্য হয় না।তিনি কিছু বলতেই যাবে ওমনি আফিম বলে ওঠে,
-মম,তুমি একটু দাদীকে নিয়ে এসো আমি ততক্ষণে ওর সাথে কথা বলছি।
সানিয়া বেগমও আর কথা বাড়ান না।চলে গেলেন তার শাশুড়ি মাকে নিয়ে আসতে।সানিয়া বেগম যেতেই আফিম নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-হোয়াই আর ইউ স্টেয়ারিং (staring) লাইক দিস?(রাগান্বিত ও শান্ত কন্ঠে)
-আআআপনি এএএখাননে?
-আমারই বাসা।আর হ্যা খবরদার!যদি ভুলেও এই চাকরিটি না করার কথা চিন্তা করো তবে বেশ বড় ভুল করে বসবে।কারণ তোমার ঔ স্কুলের চাকরি যার টাকা দিয়ে তুমি চলো সেই চাকরিটি তোমার হাত ছাড়া করতে আমার জাস্ট একটা আদেশই যথেষ্ট।এছাড়াও তোমার এবং তোমার পরিবারের সদস্যদের জীবন নরক বানিয়ে দেওয়াও তেমন কোনো কঠিন কাজ নয় আমার জন্যে।
নাফিয়া বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে সে খুব বাজেভাবে ফেঁসে গিয়েছে।সে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আফিমকে বলে ওঠে,
-প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন সেই অপরাধ টার জন্যে! আমি সত্যিই ইচ্ছে করে করি..
নাফিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই আফিম বলে ওঠে,
-শাট আপ মরন।মাই মম এন্ড গ্রানী মাস্ট বি কামিং সুন।বিহেভ নরমাল!
সাথে সাথেই নাফিয়া নিজেকে ঠিকঠাক করে নেয় স্বাভাবিক না হয়ে ও স্বাভাবিক আচরণ করার জন্যে।
তার একটু পরেই আফিমের মা ও দাদী এসে পরেন।দু’জনে বসে প্রথমে নাফিয়ার সম্পর্কে জানতে চায় এবং পরে সারাদিনে দাদীর কি কি ঔষধ আছে সেগুলো এবং নাফিয়ার কাজ বুঝিয়ে দেন।কথার পর্ব চলাকালীনই চা-নাস্তাও সেরে নেওয়া হয়।সব শেষে,সেই মেয়েটিকে ডেকে বলা হয় নাফিয়াকে গেস্ট রুম কোথায় তা দেখিয়ে দিতে।
নাফিয়া গেস্ট রুমটায় প্রবেশ করে দেখে এ রুমটিও সুন্দর,বেশ পরিপাটি।কিন্তু এখন চেয়েও মুগ্ধ হতে পারছে না সে।কারণ তার মধ্যে মুগ্ধতার ‘ম’ ও কাজ করছে না,মন-মস্তিষ্ক সব জায়গায় আফিম নামক বড্ড ভয়ংকর প্রাণীটি ঘুরছে।যা হচ্ছে তা হতে দেওয়া ছাড়া যেহেতু আর কোনো উপায় নেই তাই নাফিয়া বেশি না ভেবে নিজের পরিহিত বোরকা খুলে ফ্রেশ হয়ে নেয়।অতঃপর তৈরি হয়ে সে অগ্রসর হয় দাদীর রুমের দিকে।পথে আফিমের চোখে পরে যায় নাফিয়া।নাফিয়া একটি হাতা লম্বা লং ড্রেস পরেছে সেই সাথে এমনভাবে ওড়না পরেছে যে মাথার চুল থেকে কোমড় অব্দি পুরোটাই ঢেকে আছে।না চাইতেও নাফিয়ার এই শালীনতাটি ভালো লাগে আফিমের।এক পলক দেখেই চোখ সরিয়ে নেয় আফিম এবং অগ্রসর হয় সদর দরজার দিকে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।আফিন দরজার কাছাকাছি যেতেই তার দিকে চোখ পরে নাফিয়ার। আফিমকে দেখেই নাফিয়া মনে মনে বলে ওঠে,
“যতই ভয়ংকর প্রাণী হও না কেন মিঃআফিম ইবনান আমিও এবার তোমায় দেখাবো আমি কি জিনিস।”

!!
আফিমের অফিসে যাওয়ার পর দিয়ে নিশ্চিতে দাদীর সাথে সময় পার করেছে নাফিয়া।প্রথম দিনেই দাদীর সাথে বেশ গল্প জমে তার।তারপর দুপুরে দাদীকে সময় মতো ঔষুধ খাওয়ানো,খাবার খাওয়ানো,বিকেলে দাদীর সাথে বাড়ির সামনের বিশাল বড় বাগান টায় হাঁটা সব কিছুই খুব উপভোগ করেছে নাফিয়া।তার এখানে এসে ভালোই লাগছে শুধু আফসোস সেই ভয়ংকর প্রাণীটিকে নিয়ে!
সন্ধ্যায় দাদীকে সোফায় বসিয়ে দাদীর ঘাড় ম্যাসাজ করে দিচ্ছিলো নাফিয়া ঠিক এমন সময় আফিম এসে হাজির হয়।এক নজর নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আফিম সোজা নিজের কক্ষে চলে যায়।আফিমকে দেখার পর থেকেই ভয়ে নাফিয়ার হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে চলছে।না জানি কি করে!
কিছুটা সময় অতিক্রম হতেই নিচে নেমে আসে আফিম।সোফায় আয়েশ করে বসে নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-ইউর নেম?শেখ নাফিয়া রাইট?
-জ্বি।
-ব্রিং আ কাপ অফ কফি ফর মি।
-আমি?
-তো?
-আচ্ছা আনছি।
বলে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে নাফিয়া মনে মনে বলে ভাবে,
“এই কাজ তো আমার না তাহলে আমি কেনো করছি! করবো নাকি করবো না?ধুর না করলে আবার না জানি কি শাস্তি দেয় তার চেয়ে এক কাপ কফি বানালে ক্ষতি নেই।”
কফি বানিয়ে আফিমের কাছে এসে কফির মগটি তার দিকে এগিয়ে দেয় নাফিয়া।আফিম কফির মগটি নেওয়ার সময় হুট করে মগটি তার হাত থেকে পিছলে পড়ে যায় ফলে গরম কফি ছিটকে গিয়ে পড়ে নাফিয়ার পায়ের উপর।সোফাতেই বসে ছিলেন দাদী।নাফিয়ার পায়ে গরম কফি পরতে দেখে তিনি দ্রুত উঠে টি-টেবিলে রাখা পানির জগ হতে কিছু পানি নাফিয়ার পায়ে ঢেলে দিলেন।নাফিয়ার পা টা জ্বলছে,সে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সহ্য করছে।দাদী নাফিয়াকে আফিমের পাশে বসিয়ে একজন গৃহ পরিচারিকাকে ডেকে মলম আনতে বললেন।মলম আনা হলে তা নাফিয়ার পায়ে লাগাবার কিছু টা সময় পরই জ্বলা টা কমে যায়।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই দাদী আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-তোমার ভুলে মেয়েটা ব্যথা পেলো তাকে একটি স্যরি পর্যন্ত না বলে তুমি পত্রিকায় মুখ গুঁজে আছো?এ কেমন ভদ্রতা?
-আই এম স্যরি মিস.শেখ।(আফিম)
আফিমের দিকে তাকাতেই নাফিয়া দেখে আফিমের ঠোঁটে বাঁকা হাসি যা দাদীর নজরে পরেনি।আফিমের এ হাসিটির অর্থই হচ্ছে কাজটি আফিম ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে।দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগটি নিয়ন্ত্রণ করে নাফিয়া বলে ওঠে,
-দাদী আমি নিজের রুমে যেতে চাচ্ছি।যাবো?
-হ্যা হ্যা যাও।
নাফিয়া সোফা থেকে উঠে আফিমের সামনে থেকে যাওয়ার সময় ইচ্ছে করে এমন ভাবে আফিমের পায়ের উপর পারা দিলো যেনো এটি অনিচ্ছাকৃত হয়েছে।পায়ে উঁচু জুতো থাকায় আফিমের পা খানিকটা কেটে যায়।পত্রিকা পড়ার মাঝেই ব্যথা অনুভব হওয়ায় “আহহ” শব্দ করে ওঠে আফিম।নাফিয়া চমকে যাওয়ার নাটক করে বলে ওঠে,
-স্যরি স্যরি স্যরি,আমি খেয়াল করিনি।
এদিকে আফিমের দাদী তার আদুরে পোতার পায়ে সামান্য রক্ত দেখে অস্থির হয়ে ওঠেন।এ সবের মাঝে আফিম চোয়াল শক্ত তাকিয়ে থাকে নাফিয়ার দিকে।সে বেশ বুঝতে পারছে নাফিয়া এটি ইচ্ছে করেই করেছে।আফিমের এমন রাগান্বিত চাহনিতে নাফিয়ার হৃৎস্পন্দন থেমে থেমে যাচ্ছে।সে মনে মনে ভাবে,
“আমার হয়তো এই কুমারী অবস্থায়ই মরতে হবে।”

চলবে

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০২

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০২
লেখিকাঃমাহযাবীন

-ঠিক আছে খেয়ো না।এখানেই থাকতে চাইছো?গত রাতে আমার ঠোঁটের মায়ায় পড়ে গিয়েছো বোধহয়!
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে কথাগুলো বলতে বলতেই নাফিয়ার দিকে এগিয়ে যায় আফিম।আফিমকে নিজের কাছে আসতে দেখে নাফিয়া বলে ওঠে,
-খেয়ে নিচ্ছি আমি।
বলেই সোফায় বসে যেই খাবারে হাত দিতে যাবে ওমনি আফিম বলে ওঠে,
-ইডিয়ট!এট ফার্স্ট ব্রাশ ইউর টিথ এন্ড ওয়াশ ইউর হ্যান্ডস।
আফিমের কথায় ঠোঁট উল্টে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয় নাফিয়া।ওয়াশরুমে ঢুকেই সে মনে মনে বলে ওঠে,
“নিজের ফালতু কথায় আমার মাথা নষ্ট করে আবার নিজেই আমায় এভাবে অপমান করলো।কি ভাবে নিজেকে?কোনো মহাপুরুষ নাকি দুনিয়ার সবথেকে পরিষ্কার ব্যক্তি?হুহ্!”
হাত-মুখ ধুয়ে সোফায় বসে নিজের খাবার শেষ করে নিলো নাফিয়া।আড়চোখে নাফিয়ার কার্যকলাপ বেশ ভালোভাবেই পর্যবেক্ষণ করছে আফিম।খাওয়া শেষ হতেই নাফিয়া আর দেরি করতে চায় না।আড়চোখে একবার তাকায় আফিমের দিকে।আফিম বিছানায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কিছু একটা করছে।গত রাত হতে এই পর্যন্ত আফিমের আচরণে নাফিয়া ওকে ঘৃণাই করে।তাই আফিমের সাথে কোনো কথা বলার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই নাফিয়ার।তাই সে আফিমকে কিছু না বলেই নিজের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে কক্ষ হতে বেরোতেই যাবে ওমনি আফিম বলে ওঠে,
-হেই মরন![Moron=বোকা/হাবা]
আফিমের এই ডাকে ভিষণ রেগে যায় নাফিয়া।সে রেগে আফিমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
-আমার একটি সুন্দর নাম আছে,”নাফিয়া”।
-আচ্ছা তাই!তাহলে “মরন” বলে ডাকাতে তুমি সারা দিলে কেনো?এতে এটাই প্রমাণ হয় যে তুমি স্বীকার করেছো তুমি “মরন”।(বাঁকা হেসে বলে আফিম)
আফিমের কথায় যেমন রাগ হচ্ছে নাফিয়ার ঠিক তেমন নিজের বোকামোর জন্যেও।তাকে এই ডাকে সাড়া দিতে বলেছিলো কে!
নাফিয়া আর কিছু না বলে আবারও দরজার দিকে অগ্রসর হতেই আফিম বলে ওঠে,
-কথা শেষ হয়নি আমার।এক পাও আগাবার দুঃসাহস করবে না।
দাঁড়িয়ে যায় নাফিয়া।নিজের ভেতর ভিষণ ভয় অনুভব করছে সে।আফিম কি আদৌও তাকে যেতে দিবে?
-এদিকে এসো।(আফিম)
একরাশ ভয় নিয়ে আফিয়া ধীরে ধীরে এক পা এক পা এগিয়ে আফিমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
আফিম বলে ওঠে,
-যেতে দিচ্ছি বলে ভেবো না ছেড়ে দিচ্ছি।আফিম ইবনানকে থাপ্পড় মারার মতো ভয়ানক দুঃসাহস করেছো তুমি এবং এর ভয়ংকর পরিনতির জন্যে প্রস্তুত থেকো।(স্বাভাবিক ও শান্ত স্বরে কথাগুলো বললেও এর পেছনে আফিমের ভয়ংকর রাগ ঠিকই আঁচ করতে পারছে নাফিয়া।)
কথা শেষ হবার পরও নাফিয়াকে হাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আফিম বলে ওঠে,
-জাস্ট গেট লোস্ট ফ্রম মাই রুম,ইডিয়ট।
আফিমের উচ্চস্বর শুনে ভয়ে কেঁপে ওঠে নাফিয়া।সে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে দ্রুত পদে আফিমের রুম ত্যাগ করে।

!!
বাড়িতে পৌঁছিয়ে দরজায় কড়া নাড়তে সময় লাগলে ও নাফিয়ার মা নয়না বেগমের দরজা খুলতে সময় লাগলো না।মেয়ের অপেক্ষায় যেনো সে দরজার ধারেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।নাফিয়াকে দেখে তিনি কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে কিচ্ছুটি না বলেই মেয়ের গালে একটি চর বসিয়ে দেন।নাফিয়া এতে বিন্দু পরিমাণ অবাক নয়।সে গালে হাত দিয়ে মেঝেতে তাকিয়েই বলে ওঠে,
-স্যরি আম্মু।জানি সারা রাত অনেক টেনশন করেছ।কিন্তু কি করবো!রাতে ফোনে টাকা ছিলো না তাই তুবার বাসায় যাওয়ার আগে তোমাদের কেউকে জানাতে পারিনি আর ওখানে যেতেই আন্টির সে কি আপ্যায়ন!সব শেষে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।তোমাদের কারো কল রাতে ঘুমের জন্যে টের পাইনি তাই রিসিভ ও করতে পারিনি।সকালে ফোনে টাকা ঢুকিয়েই তোমাকে ম্যাসেজ করেছিলাম যে,আমি ঠিক আছি।
-তুবার ফোন ছিলো না?ওর বাসার অন্য কারো ফোনও কি ছিলো না?কোনোভাবেই আমাদের জানানো যেতো না?আমাদের এখানে এভাবে টেনশনে ডুবিয়ে রেখে তুই ওখানে শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলি?(নয়না বেগমের চোখে জল এবং কন্ঠে একরাশ অভিমান)
-স্যরি মা!জানোই তো কত পরিশ্রম করতে হয় সারাটি দিন আমায়।ওদের বাসায় যেয়ে এতোটাই ক্লান্ত ছিলাম যে মাথায় কিচ্ছুটি আসেনি।ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।কাজটি সত্যিই অন্যায় করেছি। মাফ করে দেও।
নয়না বেগম উত্তরে কিছু না বলে চোখের জল মুছতে মুছতে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে যান।ভিষণ অভিমান জমেছে তার নিজের মেয়ের প্রতি।নাফিয়া বেশ বুঝতে পারছে তার মায়ের অভিমান অল্পতে কমবে না।সে বাসায় ঢুকে নিজের কক্ষে আসতেই দেখে তার ছোট বোন অবনী মুখ গোমড়া করে বসে আছে।বোরকা টা খুলে বিছানায় ফেলে আলমারি থেকে কাপড় বের করতে করতে অবনীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-কিরে দেখিস নাই আমি আসছি?
উত্তর না পেয়ে নাফিয়া আবারও বলে ওঠে,
-বাহ!বড় বোন যে গত রাতে বাড়ি ফেরেনি সে খবর আছে?
-এসেছ কেনো?যেখানে ছিলে সেখানেই থাকতে।
-আচ্ছা চলে যাবো।(মন খারাপের নাটক করে বলে ওঠে নাফিয়া)
অবনী নাফিয়ার কথা শুনে পেছন ফিরে তাকায় তার দিকে।অবনীর দিকে তাকাতেই নাফিয়া দেখে মেয়েটা কাঁদছে।নাফিয়া দ্রুত পদে বোনের কাছে যেয়ে বলে ওঠে,
-কাঁদছিস কেনো?
-তুমি জানো গত রাতে আমরা সবাই কতোটা চিন্তায় ভুগেছি!মা-বাবা,আমি সারা রাত ঘুমাইনি।বাবা তো চেয়েছিলেন সকালেই থানায় যাবেন আর আম্মু তো কেঁদে অস্থির। আমি তোমার সব ফ্রেন্ডদের কল দিয়েছি তাদের মধ্যে শুধু তুবা আপু এবং অরিন আপু কল ধরেনি।
-আচ্ছা স্যরি।
বলেই নিজের ছোট বোনকে বুকে জরিয়ে নেয় নাফিয়া এবং মনে মনে বলে ওঠে,
“ভাগ্যিস তুবা কল ধরেনি।”

!!
নাফিয়া নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পর পরই আফিমও রওয়ানা হয় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাড়িতে পৌঁছিয়ে নিজের রুমের দিকে যাওয়ার সময় আফিমের মা সানিয়া বেগম তাকে দেখে বলে ওঠে,
-আফিম,সারা রাত কোথায় ছিলে?
-বাংলোতে মম।
-কেনো?
-এমনিই।
-এমনিই মানে কি?এভাবে না জানিয়ে হটাৎ বাংলোতে কেনো গেলে?
-ওহহো বউমা!আমার পোতাকে এতো প্রশ্ন কেনো করছো যেনো সে কোনো ক্রিমিনাল?(আফিমের দাদী)
-আম্মা ছোটবেলা থেকে ওকে এভাবেই আদর দিয়ে বাঁদর বানাচ্ছেন।
-খবরদার আমার পোতাকে নিয়ে একটিও বাজে বকবে না।যাও ওর জন্য খাবার প্রস্তুত করো।
সানিয়া বেগম শাশুড়ির আদেশে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।মায়ের প্রশ্নের ভান্ডার থেকে রেহাই পেয়ে আফিম খুশিতে তার দাদীকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
-লাভ ইউউউউ।
-লাভ ইউ ঠু।(আলতো হেসে)
-তোমার শরীর কেমন এখন?
-মোটামোটি।তোর বাবা বললো আমার পরিচর্যা, দেখা-শোনার জন্যে একজন লোক রাখবে।
-বাহ!কোনো লোক ঠিক করেছে?
-এখন অব্দি না।
কথাটি শোনা মাত্র বাঁকা হাসে আফিম।কিছু একটা ভেবে সে তার দাদীর গালে চুমু বসিয়ে তার থেকে বিদায় নিয়ে নিজ কক্ষে প্রবেশ করে।তার মুঠোফোন টি বের করে তাতে একটি নাম্বার ডায়াল করে কানে ধরে,
-আসসালামু আলাইকুম স্যার।(ফোনের ওপাশের ব্যক্তি)
-তোমায় গত রাতে একজনের ডিটেইলস জেনে আমায় জানাতে বলেছিলাম!
-জ্বি স্যার।মোটামুটি জেনেছি কিন্তু পুরোপুরি সবটা এখনো জানতে পারিনি।
-ইউ পিপল আর সাচ্ আ লুজার!ডু ইউর ওয়ার্ক অন টাইম আদারওয়াইজ ইউ অল উইল লস ইউর জব।
-স্যরি স্যার।
-আই হেইট স্যরি!
-আজ রাতের মধ্যেই সব ডিটেইলস রেডি করে ফেলবো স্যার।
-ফাইন।মেয়েটি কি মধ্যবিত্ত?
-জ্বি স্যার।সেই সাথে তাদের একটি বড় ঋণ নেওয়া আছে।
-কিসের ঋণ?
-তা এখনো জানতে পারিনি স্যার।
কথা শোনা মাত্রই রাগ উঠে যায় আফিমের কিন্তু কোনো মতে সে রাগ চেপে বলে ওঠে,
-বাবা দাদীর জন্যে একজন কেয়ার টেকার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।আই হোপ ইউ নো,হোয়াট ইউ হেভ টু ডু নাও।
-জ্বি স্যার জানি।
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে ফোনটি কেটে দেয় আফিম।

চলবে।