Friday, June 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1448



সুখ পাখি পর্ব-০৪

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০৪

অপর দিকে, হসপিটালে মায়ার কেবিনে কেউ হুট করে ঢুকে যায়। মায়ার মা তখন মায়াকে আপেল কেটে দিচ্ছিল আর মায়া সেটা খাচ্ছিল আর ফোন চালাচ্ছিল হঠাৎ করে কারো কেবিন প্রবেশ করাতে মায়া ভয় পেয়ে যায়। ভেবে ছিল হয়তো তাদের প্লানটা ভেছতে গেলো কিন্তু মায়া যাকে দেখে সে খুশিতে দৌড়ে গিয়ে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে

—- Miss you jaan… সেই ব্যক্তিটাও মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে

— Miss you too…. মায়ার মা বলে

— বাবা তুমি এসেছ। জানো কাল কি হয়েছে একটুর জন্য আমারা বেঁচে গিয়েছি। কালকে যখন মাহির আসে আমি তো প্রথম খেয়ালই করিনি আর মায়াতো নিজের মতো নিজের চুল বাঁধতে ব্যস্ত। হঠাৎ করে আমি বাইরে এসে দেখি মাহির আসছে। আর আমি ব্যাপারটা কোন মতে সামলে নেই। আচ্ছা তোমরা গল্প কর আমি বাইরে দেখি মাহির আসে কিনা। মায়ার মা কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসে। মায়া সেই ব্যক্তিটাকে বলে

—- বাবু যানো মাহির কালকে কি যেন বলছিল। ও নাকি বদলা নিবে, আদারার থেকে। সে বলে

—- হুমম,,,। মায়া বলে

— এই মাহিরের থেকে নিজের পিছ ছাড়াতে গিয়ে আমরা যে ওর এত এত টাকা আর আদারাকে নিয়ে চালটা চাললাম সেটা কি কাজে লাগবে। আদারার জন্য আমার খারাপ লাগছে। সে বলে

— দেখ মায়া,,, সব কিছু এত ভাবতে হয় না। বর আমাদের আর কোন রাস্তা ছিল না। আর বাকি রইলো আদারার সে আমাদের প্লানিং এর একটা অংশ। আদারা যে দিন মাহিরকে প্রপোজ করে সেটা আমি আর তুমি দেখে ফেলি। আর তারপরই প্লানটা কাজে লাগাই। মাহির কিন্তু অনেক বোকা। মায়ার সাথে কিছু কথা বলে সে ব্যাক্তিটা চলে যায়।

অপর দিকে আদারা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে। মাহিরের দিকে তাকিয়ে একটা চওড়া হাসি দিয়ে বলে

— গুড মর্নিং পাতি নামক ডেভিল হাসবেন্ড। মাহির একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে

— হ্যা আমি ডেভিল। ঠিক বলেছ। যাও এখন নিচে যাও নাশতা বানাবে তুমি। আজ সার্ভেন্টদের ছুটি। আদারা কিছু না বলে মাহিরের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । মাহির বাঁকা হাসি দিয়ে এক চোখ মেরে নিজের টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো। তারপর ব্রাশ করে শাওয়ার নিতে লাগলো। অন্য দিকে আদারা মাহিরকে বকতে বকতে নিচে নামছে

—- হারামি, খারাপ, খচ্চর, শয়তানের নানা। আমার হাতের নাশতা খাবা। ভালো করে ভালোভাবে খেতে চাইলে তো কিছু বলতাম না কিন্তু এবার দেখ আমি কি করি। এমন নাশতা খাওয়াবো তোমাকে যে কিছু বলতেও পারবানা ইভেন করতেও না। আদারা নিচে কিচেনে গিয়ে সার্ভেন্ট দের হালকা সাহায্য নিয়ে নাশতা বানাতে লাহে। একটা সময় আদারা বলে

— আপনারা যান আমি একাই পারবো। কুকরা চলে যায়। আদারা বাকা হাসি দিয়ে ফ্রিজ থেকে কাঁচা ডিম নিয়ে আসে। আর সেটা মাহিরের জুসের সাথে মিক্সিং করে । কিন্তু কেমন মিক্সি হচ্ছে না তাই সে ব্লেন্ডার ব্যবহার করে। কিন্তু একটা বাজে গন্ধ আসছে।
আদারা টোস্ট, অমলেট, জুস আর ফ্রুট সালাদ তৈরি করে। মাহির নিচে আসে সবাই একসাথে খেতে বসে আদারা চালাকি করে আগে থেকেই মাহিরের গ্লাসটা সে জাগায় রেখে দিয়েছে যেখানে মাহির প্রতিদিন বসে। আজকেও মাহির ঠিক একই জায়গায় বসে। সবাই খেতে লাগে। আদারও মাহিরের পাশে বসে। খাচ্ছে আর দেখছে সে কি করছে। একসময় মাহির গ্লাসটা হাতে তুলে মুখের কাছে নিতেই মাহিরের কাছে একটা বাজে গন্ধ আসে। সে সেটা খেতে না চেয়ে উঠে যেতে চাইলে। আদারা বলে

— না খেয়ে যাবেন না প্লিজ। আপনার জন্যই তো নিজ হাতে নাশতা বানালাম আপনি খাবেন বলে। মাহিরের চাচি বলে

— আদারা তুমি নাশতা বানিয়েছ। মিলি বলে

— হ্যা আমি ভাবিকে কিচেনে কাজ করতে দেখেছি। মাহিরের মা বলে

— মাহির মেয়েটা তোর জন্য এত কষ্ট করে খাবার বানিয়েছে আর তুই না খেয়ে চলে যাবি? সেটা হয় না বস চুপচাপ আর সবটা শেষ কর। আদারা মাহিরের দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে চোখের ইশারায় বলে খেতে। মাহির পরেছে মহাবিপদে কারণ সবাই তৃপ্তি সহ কারে খাচ্ছে এখন যদি সে কিছু বলে তাহলে সবাই মাহিরকেই ভুল বুজবে। মাহির আবার নিজের জায়গায় বসে পরে। গ্লাসটা মুখের কাছে নিতেই মাহিরের বমি আসে। কিন্তু তাও চুপচাপ এক ঢুক খেয়ে নেয়। আর আদারা দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় আদারা তো চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে আর মিটমিট হাসছে। মাহির রাগে কটমট করতে করতে জুস নামক অখাদ্য টা খেয়ে নিল। তখনই মাহিরের বাবা বলে

—- আকাশ কোথায়, আকাশকে যে দেখছিনা? তখনই সদর দরজা দিয়ে আকাশ প্রবেশ করতে করতে বলে

— সরি চাচ্চু জগিং করতে বেরিয়ে ছিলাম। মিলি বলে

— এখন ১০টা বাজে তুই বেড়িয়ে ছিলি কখন? আকাশ বলে

— ৭টার দিকে। আকাশের বাবা বলে

— ১০টা যে আমাদের সকালের নাশতার সময় সেটা নিশ্চয়ই আকাশ তোমার অজানা নয়। আর তিন ঘন্টা কেউ জগিং করে। আকাশ বলে

— রাস্তায় এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়েছিল তাই লেট হয়েছে। আকাশের বাবা কিছু বলতে যাবে তখনই
আকাশের মা বলে

— আহহ চুপ করত। বাবা তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয়। খাওয়া শেষ করে মাহির, আকাশ, মাহিরের চাচা, আকাশ সবাই অফিসের জন্য বেড়িয়ে পরে। মাহির বরাবরই একা গাড়ি নিয়ে যায় এবারও সেম। আদারা নিজের রুমে গিয়ে দেখে মাহির ভেজা টাওয়ালেটা বিছানয় ফেলে রেখেছে। আদারা রেগে বলে

—কি ফালতু কাজ কর্ম, ধরু। বলেই সেটা বেলকনিতে মেলতে যায়। আর আদারার চোখ পরে মাহিরের ফোনের উপর। সে ফোনটা হাতে তুলে নেয় এটা ভেবে যদি কোনো প্রমান পাওয়া যায়। যেই ভাবা সেই কাজ সে টাওয়ালেটা বেলকনিতে রেখে দিয়ে ফোনটা নিয়ে রুমে আসে। ফোন লক করা। পাসওয়ার্ড কি হবে। প্রথমে সে মাহির লিখে কিন্তু কাজ হয় না, তারপর মায়া তাও কোন কাজ হয়না। তারপর আদারা মাহিরের বার্থডে ডেট টা লিখে আর সাথে সাথে ফোনের লক খুলে যায়। আর তখনই কেউ এক ঝটকায় ফোনটা তার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। আদারা সামনে তাকিয়ে দেখে মাহির। মাহির তো বেড়িয়ে গিয়েছিল। মাহির একটু দূরে যেতেই তার মনেপরে সে তার ফোন ভুলে বাসায় রেখে এসেছে তাই সে আবার গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। আর রুমে এসে দেখে আদারা মাহিরের ফোন নিয়ে কিছু করছে। আদারের সকালের সেই দুষ্টামি আর এখন ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো ছিল। আদারা মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহির আদারাকে বলে

— কি করছিলি ফোনে? আদারা কেন কথা বলে না। মাহির আদারা গাল চেপে বলে

— কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি। আদারা মাহিরের হাতটা ছাড়িয়ে বলে

— আপনি যে কথায় কথায় গায়ে হাত তুলেন জানেন এটা কারা করে? যারা কাপুরষ তারা এটা করে। মাহির আদারার মুখে কাপুরষ কথাটা শুনে কষিয়ে একটা চড় লাগিয়ে দেয় আদারার গালে। আদারা বিছানায় ছিটকে ওরে আর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে

—- আপনি সত্যি একটা কাপুরষ। নাহয় কথায় কথায় গায়ে হাত তুলতেন না। আপনি আমার উপর যে এত অত্যাচার করছেন সেটা কিসের জন্য মায়ার জন্য? আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে? নাকি প্রমাণ ছাড়াই আমার অপর এমন হিংস্র পশুর মতো অত্যাচার করছেন। মাহির নিজের ফোনটা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো আর সাথে সাথে ফোনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। মাহির আদারার চুলের মুঠি ধরে বলে
— মাহির আহনাফ আবিদ খান কখনো প্রমান ছাড়া কাজ করে না। মায়ার এক বন্ধ এসেছিল সেই পার্কে যেদিন তুই আমাকে সেখানে প্রপোজ করিস। আর সেটা দেখে মায়া দৌড় চলে যেতে চাইলে একটা গাড়ি এসে।। মাহিরকে থামিয়ে আদারা বলতে লাগে

—- এটা মায়ার কেমন ভালোবাসা যেখানে কোন বিশ্বাস নেই। আর সে একটা ছেলের সাথেই বা সেখানে কি করছিল? আর ও যে গাড়িতে এক্সিডেন্টে করে কই আমারওতো সেখানে ছিলাম। কোন ভির বা এক্সিডেন্ট হয়েছে দেখলাম না বর শুনালম না। আর আমার চুল ছাড়ুন। এটা রাবার না যে আপনি টানাটানি করবেন। কাপুরষ একটা বলেই আদারা রুমের দরজা খুলে বেড়িয়েছেন যায়। আর মাহির উপর দিকে ভাবতে লাগে আদারার এক একটা কথা সত্যি। তাহলেকি তার কোথাও ভুল হচ্ছে। সে যদি ভুল কিছু করে তাহলে!!!

চলবে

সুখ পাখি পর্ব-০৩

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০৩

আদারা দরজা খুলে দেখে মাহিরের চাচা-চাচি, আর মাহিরের চাচাতো ভাই বোন, আকাশ আর মিলি দাঁড়িয়ে আছে। আর তাদের পিছন থেকে দেখা যাচ্ছে মাহির আসছে হয়তো গাড়ি পার্ক করে আসছে। আদারাকে দেখে মাহিরের চাচি মুচকি হাসি দিয়ে বলে

— কি খবর আদারা মুনি? আদারা হালকা হাসি দিয়ে বলে

— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। তখন মাহির পিছন থেকে বলে

— বাসায় কি ঢুকতে দিবে? নাকি বাইরেই দাড়িয়ে থাকতে হবে আমাদের? আদারা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় আর ওদের ভিতরে আসতে বলে। মাহিরের চাচাতো ভাই আকাশ আদারার দিকে একপলক তাকিয়ে উপরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। মাহিরের চাচির বাবা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরে তাই তারা সবাই তাকে দেখতে যায়। আর আজকে তারা যখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বেক। তাদের বাসায় আসার একটু পরই মাহিরও অফিস থেকে চলে আসে। মিলি আদারকে জড়িয়ে ধরে বলে

— আদারা আপুই এবার তুমি আমার সাথে ঘুমাবা। তখনই মাহির বলে

— আদারা এখন তোর আপু না ভাবি লাগে, এই সব বাদ দে এইটা বল নানা ভাইয়া কেমন আছে?

ভাবি কথাটা শুনে মাহিরের চাচা চাচি সবাই অবাক। মিলির মাথা মনে হচ্ছে ঘুরছে। সবাই মাহিরের আর আদারার দিকে তাকিয়ে আছে । আর আদারা নিচের দিকে। মিলি বলে

—- নানা ভাইয়া ভালো আছে। কিন্তু তুমি আদারা আপুকে!!!! মাহির বলে

— বিয়ে করেছি। যাই হোক রাত হয়েছে ঘুমা যা। মাহিরের চাচি বলে

— কি বলছিস, কিভাবে? তখন মাহির তার মনগড়া সেই কাহিনী বলে। আদারা এবার রাগছে কিন্তু রাগটা প্রকাশ করছে না। মাহিরের চাচা বলে

—- যা হয়েছে ভালোই হয়েছে একদিক দিয়ে। আদারা একটা লক্ষ্মী মেয়ে। আকাশ ওদের কথা শুনে চলে যায়। আর মিলি হা হয়ে আছে। মাহির ও উঠে ওপরে চলে যায়। আর আদারাও মাহিরের পিছন পিছন গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলে

— কি হয়েছে আপনার এমন কেন করছেন আমার সাথে? মাহির নিজের টাইটা খুলতে খুলতে বলে

— তুই অনেক ভালো নায়িকা হতে পারতি একটিং টা অনেক পারিস। আদারা এবর রেগে গিয়ে মাহির গলার টাইটা অনেক টাইট করে লাগিয়ে দেয় আর মাহির গলায় সেটা অনেক বাজে ভাবে গেঁথে যায়। মাহিরের ব্যাথাও লাগছে। আদারা ধাক্কা দিয়ে মাহিরকে বেডে ফেলে তার উপর উঠে বসে টাইটা সেই আগের নেয় ধরে আদারা বলে

— আমাকে কি মনে করেন আর পাঁচটা মেয়ের মতো আমি মুখ বুজে সব সহ্য করব? কি করেছি আমি এখন বলবি। নয়তো জানে মেরে ফেলব তোকে। মাহির আদারার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আদারকে নিজের নিচে ফেলে তার উপর ঝুকে বলে

— আমার থেকে আমার মায়াকে কেড়ে নিয়েছিস। আদারা মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে বলে

— আমি কিছু করেনি আপনার মায়ার সাথে। মাহির বলে

— তোর জন্য মায়ার এই অবস্থা ঐদিন মায়াকে কিছু না বলতি তাহলে আজ মায়া আমার সাথে থাকতো, হসপিটালে না। আদারা এইবার অবাকের শীর্ষ পর্যায় আদারা বলে

— আমি কি করেছি.? আপনার মায়ার উপর বাস চালিয়েছি। নাকি ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি? কোনটা?? মাহির চিৎকার করে বলে

— ন্যাকামি করিস? তুই মায়াকে বলিসনি তোর আর আমার সম্পর্ক আছে? বলিসনি তোর আর আমার বিয়ে ঠিক? তোর এই কথা গুলো শুনে ও ভেঙে পরে। তারপর ও একটা গাড়ির সামনে গিয়ে সুসাইড করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভাগ্য ভালো থাকায় মায়া বেঁচে যায়। আদারাতো ভেবেকুল পাচ্ছে না সে কোনদিন কবেই বা এগুলো বললো?! আদারা বলে

— আপনার ভুল হচ্ছে, আমি কিছুই বলেনি। তখনই মাহির কিছু বলতে যাবে,,, তখনই মাহিরের ফোনটা কান্না করে দেয় মাহির সেটা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। আজও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে । মাহির বলকনিতে গিয়ে কথা বলতে দেখে। আদারও পিছন পিছন যায় আর বেলকনির দরজাটা লাগিয়ে দেয় সাথে লাইটাও ওফ করে দেয়। মাহিরের পিএ মাহবুব কল দিয়েছে কোন একটা সমস্যা হয়েছে। মাহিরও কথা বলছিল তখনই বেলকনির লাইটটা ওফ হয়ে যায়। মাহিরের অন্ধকার জিনিসটাই বেশি ভালো লাগছে। তাই সেও কিছু বললো না। আর ঐদিকে আদারা টান টান হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে আর ভাবতে থাকে সে কি ভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে। অন্যদিকে বেলকনির দরজাটা খুলতে গিয়ে মাহির দেখে সেটা ভিতর থেকে লক করা। সে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর কি যেন বলছে। কিন্তু বাইরের আওয়াজ ভিতরে আসছে না। আদারাও রুমের লাইটা ওফ করে আরামসে শুয়ে পরে। অপর দিকে মাহির রেগে বম হয়ে আছে। আর মশাও মাহিরকে নিজের খাদ্য হিসেবে অনেক মজা করে খাচ্ছে মানে মাহিরের রক্ত চুষছে। মাহির শত চেষ্টার পরও সে বেলকনির দরজাটা খুলতে পারেনা। তাই মনে মনে ঠিক করে আজকে বেলকনিতেই কাটাতে হবে কালকে সে আদারাকে দেখে নিবে। কিন্তু ঘুমতো হবে না মাহিরের যেই মশা। মাহির নিজের ফোন নিয়ে বসে। কিন্তু সারাদিন খাটাখাটির পর সে অনেক ক্লান্ত তাই মশার কামড় খাওয়াটাকে উপেক্ষা করে একসময় ঘুমিয়ে পরে। রাত ৩ টা বাজে৷। আদারা এখন ঘুমায়ানি। সে একটা বালিশ আর ব্ল্যাঙ্কেট নিয়ে যায়। বেলকনির লাইটটা ওন করে দরজাটা খুলে দেখে মাহির ঘুমিয়ে গেছে কি নিষ্পাপ লাগছে তাকে। আদারা আস্তে করে মাহিরের মাথার নিচে খুব সাবধানে বালিশটা দিয়ে ব্ল্যান্ঙ্কেট টা গায়ে জড়িয়ে দেয়। আদারা খেয়াল করে মাহিরের গলায় দাগ বসে গেছে। আদারার মায়া লাগে কিন্তু তখন কার কথা মনে পরতেই সে রেগে যায়। আর কিছু না ভেবেই রুমে এসে শুয়ে পরে। আর ভাবছে নিজের পরিবারের কথা। বাবা কেমন আছে। মা ঠিক মত ঔষধ খায়তো। সে কিভাবে নিজেকে সবার কাছে নির্দোষ প্রমাণ করবে আর আগের মতো সব ঠিক হয়ে যাবে। এই সব ভাবতে ভাবতে আদারা ঘুমিয়ে পরে।

সকালের সূর্য স্নানের মধ্য দিয়ে ঘুম ভাঙলো মাহিরের নিজের গায়ে ব্ল্যান্ঙ্কেট আর মাথার নিচে বালিশ আর বেলকনির দরজাটাও খুলা পরে আছে। মাহির রুমে গিয়ে দেখে আদারা বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। অনেক কিউট লাগছে আদারাকে কিন্তু মাহিরের আদারের এই সুখ সহ্য হলোনা, আর রাতের কথা মনে পরতেই সে আরো খেপে যায়। বাথরুমে গিয়ে একবালতি পানি নিয়ে এসে ঢেলে দেয় আদারের উপর। আদারা ভয় পেয়ে লাফিয়ে ওঠে বসে নিজের সমস্ত শরীর ভিজে একাকার, বিছানাও অনেক ভিজে গিয়েছে। আদারা মাহিরের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মাহির একটা হাসি দিয়ে বলে

—- কালকে বলেছিলাম না এটা তোর বাপের বাড়ি না, যে পরে পরে ১০টা অব্দি ঘুমাবি। আদারা কিছু না বলে উঠে আলমারি থেকে নিজের একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে অনেক জুড়ে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। মাহির বলে

—- দরজা ভাঙার আগে তোকে ভেঙে ফেলবো, আমার সামনে যদি আরেক বার এমন রাগ দেখিয়েছিস।

আদারা বাথরুম গিয়ে মাহিরের ব্রাশটা হাতে নিয়ে বাকা হাসি দিয়ে বলে। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা। আর ব্রাশটা নিয়ে বাথরুমের দেওয়াল পরিষ্কার করতে লাগে। আর গান গাইতে লাগলো

—- আহা আকাশে বাতাসে, আহা আজ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। মাহির ভাবছে কিভাবে সে আদারাকে টাইট দিবে। তাই সে নিচে গিয়ে সার্ভেন্টদের বলে

— আজ নাশতা সবার জন্য আদারা বানাবে, তাই যেন কেউ নাশতা না বানায়।

অপর দিকে, হসপিটালে মায়ার কেবিনে কেউ হুট করে ঢুকে যায়। মায়ার মা তখন মায়াকে আপেল কেটে দিচ্ছিল আর মায়া সেটা খাচ্ছিল আর ফোন চালাচ্ছিল হঠাৎ করে কারো কেবিন প্রবেশ করাতে মায়া ভয় পেয়ে যায়। ভেবে ছিল হয়তো তাদের প্লানটা ভেছতে গেলো কিন্তু মায়া যাকে দেখে সে খুশিতে দৌড়ে গিয়ে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে

—- Miss you jaan…

চলবে

সুখ পাখি পর্ব-০২

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০২

যখন চোখ মেলি আমতো অবাক। আমি রুমে আসলাম কখন? আমি তো বেলকনিতে ছিলাম। শরীরটাও কেমন মেজমেজ করছে। গরমের কারণে মনে হচ্ছে ভিতরটা সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে । আমি আমার বাম পাশে তাকিয়ে দেখি মাহির ভাইয়া এখন তো আমার হাসবেন্ড আর যাই হোক ভাইয়া বলা যাবে না মানে মাহির আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পরনে তার ডার্ক ব্লাক কালারের শার্ট আর পেন্টে তার পাশেই তার কোট। মানে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছেন। আমাকে উঠতে দেখেই সে ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বলে

—-ভাবিস না তোকে দয়া করে বিছানায় নিয়ে আসছি। আম্মু ডাকতে আসছিল তাই। তোর মতো মেয়ের আমার মতো মাহিররে দোয়ার যোগ্যও না। আর হ্যা এটা তোর বাবার বাসা না যে পরে পরে সকাল ১১ অব্দি ঘুমাবি। যা নিচে গিয়ে নাশতা বানা।

মাহিরদের বাসায় অনেক সার্ভেন্ট আর রান্না বান্না সব তারাই করে। কিন্তু তার বলা কথা গুলো আমার অনেক খারাপ লাগেছে। নিয়ে আসলো কেন আমাকে? আমি আমাকে এখানে আনতে বলেছিলাম?? রেগে আমি বিছানা থেকে নেমে, মাহিরের সামনে দাড়িয়ে বলি

—- আমি বলেছিলাম আমাকে এখানে আনতে? আর সাথে সাথে মাহির আমার চুলের মুঠি ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

—- আহহহ আমার লাগছে ছাড়ুন আমাকে, মাহির আর জুড়ে আমাড চুলের মুঠি ধরে বলে

— আমার সামনে এমন চোখ গরম দেখাবিনা। যা এখন আমার চোখের সামনে থেকে দূরহ।

বলেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয় নিজেই চলে যায়। কি করব আমি কিসের জন্য এমন করছে মাহির। মাহির আমাকে ভুল বুঝেছে। আমি জানি সে তো এমন না। আমিতো এই মাহিরকে চিনি না৷ আগের মাহির রাগী থাকলেও সবাইকে যথেষ্ট সম্মান করত। কিন্তু আজ এই মাহিরের তো। তখনই নিশু আসে রুমে । আমি নিশুকে দেখে চোখ মুছে তাড়াতাড়ি উঠে দাড়াই। নিশুর সাথে আমার বন্ডিং টা অনেক ভালো। সেম এজ সেম ক্লাস। নিশু আমাকে দেখে বলে

—- কি হয়েছে কাঁদছিস কেন ফ্লোরে বসে বসে? আমি বলি

— কই না তো কিছু না। নিশু বলে

—- ভাইয়া বকেছে? ভাইয়ার সাথে চুপচাপ প্রেম করে বিয়েটাও করে ফেললি আমাকে বললি না পর্যন্ত? তা নাহলে বুজলাম ভালোবেসে করেছিস। কিন্তু তুই আরেকটা বিয়েতে রাজী কি করে হলি? তাই ভাইয়া রাগটা তোর ওপর ঝারছে। রাগ হওয়াটা কি স্বভাবিক না তুই বল? আমি কি বলবো বুঝতে পারলামনা তাই চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে নিশু বলে

— আচ্ছা বাদদে। নিচে চল খাবি। ভাইয়াতো না খেয়েই বেড়িয়ে পরলো কত করে বললাম শুনলো না, আম্মু আর বাবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে । আমি বললাম

— তুই যা আমি আসছি। আর শুন আম্মু ফোন,,,,, নিশু আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে

— চিন্তা করিসনা সব ঠিক হয়ে যাবে। আম্মু ফোন দিচ্ছে দেখে আসলাম, এখন জলদি নিচে আয়। তার পর ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম দেখি ফুপি বসে আছে। আমাকে দেখে ফুপি বলে

— আয় মা আয় বস।

আমিও চুপচাপ বসে পরলাম আমি বরাবরই এমন। যতযাই হোক খাবারের সাথে রাগ দেখাই না। এক গ্লাস ফ্রেশ জুস আর একটা টোস্ট খেয়ে উঠে পরলাম। ফুপা অফিসে চলে গেলো সবাইকে বিদায় দিয়ে। ঐদিকে নিশুও ভার্সিটির জন্য বেড়িয়ে গেলো। বাসায় আমি আর ফুপি আর কিছু সার্ভেন্ট। আমি ফুপির কাছে গিয়ে বলি

—- ফুপি আসলে,,,,, ফুপি বলে

— দেখ আমি এখন তোর ফুপি না তোর বরের মা মানে তোরও মা। আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। ফুপিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। ফুপি মাহিরকে কত বিশ্বাস করে যদি আমার মা বাবাও একটু বিশ্বাস করত। ফুপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে

—- ধূর পাগলী কান্না করছিস কেন? আমি

— আম্মু,,, বাবা। আমাকে থামিয়ে ফুপি বলে

— ভাইজানকে আমি চিনি তার রাগ এত জলদি ভাঙবে না। সম্মানে আঘাত লেগেছে তার । ফোন করে ছিলাম আমি,,, কেউ ধরেনি। সব সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তুই আর মাহির কাজটা ঠিক করিসনি। আমি তো প্রথমে বেশ রাগ করেছিলাম, কিন্তু পরে ভাবলাম বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে তাহলে নিজের ঘরের বউকে নিজের কাছে নিয়ে আসাই ভালো। এই তোর শরীর গরম কেন দেখি। ফুপি আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে।

আর আমি ভাবছি মাহিরের কথা কত বড় খেলওয়ার সে। কি দানটাই না চাললো। আমি কিছু ফুপিকে কিছু বলতে চেও বললামনা এখন চুপ থাকা টাই ভালো হবে হয়তো।

অপর দিকে মাহির অফিসে না গিয়ে হসপিটালে গিয়েছে মায়াকে দেখতে। মায়ার সাথে মাহিরের পরিচয় হয় মাহিরের এক ফ্রেন্ডের জন্মদিনে আর সেখান থেকে মাহির মায়ার উপর অনেক দূর্বল হয়ে যায়। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্ব থেকে সেটা গড়িয়ে একটা সম্পর্কে পরিনত হয়ে যায়। কিন্তু কোন একটা কারণে মায়া আজ হসপিটালে। আর এই কারণটা মাহির মনে করে আদারাকে। আদারা মায়ার থেকে সব দিক দিয়ে সুন্দর। যেমন উচ্চ লম্বা, তেমনি চলাফেলা, খুবই ভদ্র একটু দুষ্টও বটে। কিন্তু রাগটা তার অনেক, সহজে রাগে না কিন্তু রাগলে তার খবর আছে যার ওপর রেগেছে। আদারা বরাবরই মাহিরকে পছন্দ করে। মাহিরা যখন তাদের গ্রামের বাড়ি যেত আদারা তাকে নিয়ে রোজ বিকেলে ঘুড়তে বেরহত। সময়ের সাথে মাহির আর আদারার মাঝে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। মাহির আদারাকে বোনের চোখে দেখলেও। আদারের মনে তখন নতুন করে ভালোলাগার ফুল ফুটতে লাগে। আদারাও ঢাকা আসত প্রতি গ্রীষ্মের ছুটিতে৷ এসে তার ফুপা, ফুপি, নিশু আর মাহির কে দেখে যেত। আদারা মনের দিক দিয়ে অনেক ভালো। আদারার ফুপা ফুপিও আদারকে বেশ পছন্দ আর আদরও করে। মাহিরকে হসপিটালে ঢুকতে দেখে মায়ার মা দৌড়ে আসে। বলে

—- বাবা মায়ার অবস্থা খুবই খারাপ এখনই নাকি টাকা লাগবে ঔষধ কিনার জন্য। আমি এখন কি করব বাবা? কান্না করতে করতে। মাহির বলে

—- আরে আন্টি চিন্তা করবেন না আমি আছি তো। কত টাকা লাগবে বলেন। আচ্ছা আমি নিজেই কিনে দিচ্ছি ঔষধ। ফার্মেসিতে চলেন। মায়ার মা বলে

— না বাবা তুমি মায়ার কাছে যাও আমি ঔষধ নিয়ে আসছি।

মাহির নিজের ওয়ালেট থেকে ১০০০ টাকার ছয়টা নোট বের করে দিয়ে মায়ার কেবিনের দিকে পা বাড়ালো। মায়াকে দেখার জন্য মনটা উৎসুক করছিল মাহিরের। মাহির মায়ার কেবিনে গিয়ে দেখে মায়া চোখ বুঝে নিথর হয়ে শুয়ে আছে। মাহির মায়ার কাছে গিয়ে বসে মায়ার হাত ধরে বলে

—- তোমার এই অবস্থা আর আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ওকে অনেক শাস্তি পেতে হবে। তুমি জলদি সুস্থ হয়ে যাও মায়া। আর তখনই মাহিরের ফোনে একটা কল আসে দেখে তার বাবা। মাহির মায়ার কেবিন থেকে বেড়িয়ে ফোন রিসিভ করে

—- হ্যা বাবা বল। মাহিরের বাবা

—- কোথায় তুমি? বাসা থেকেও জলদি বেরিয়ে ছিলে। তুমি এতটা কেয়ারলেস কিভাবে হতে পারো মাহির? আজকে আমাদের একটা জরুরি মিটিং আছে জাপানি ক্লাইন্টদের সাথে তুমি ভুলেগেছ? আর প্রেজেন্টটেশনও তো তুমি করবে বলেছিলে তাই না?

—- Extremely sorry বাবা, আসলে। বলে ছিলাম না আমার এক ফ্রেন্ডের এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই,,,, মাহিরের বাবা

—- তাই বলে প্রতিদিন? যাই হোক It’s ok,,, তাড়াতাড়ি আসে। মাহির আর পিছু ফিরে না তাকিয়ে বেড়িয়ে পরে অফিসের উদ্দেশ্য।

মাহির বেড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কেউ একজন দেয়ালের পাশ থেকে বেড়িয়ে আসে। ঠোঁটের কোণে তার বাঁকা হাসি। মাহির কে চলে যেতে দেখে দেরি না করে তাড়াতাড়ি সে মায়ার কেবিনে ঢুকে যায়।

রাতে সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আর আমি খাবারের টেবিলে বসে বসে অপেক্ষা করছি মাহিরের। যত যাইহোক সে আমার স্বামী। সকালে ফুপি জোর করে মেডিসিন খায়িয়ে দেয় যার ফলে জ্বরটা আর আমাকে কাবু করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু ঠান্ডা লাগছে বেশ। বসন্তের শেষ প্রহর চলছে সামনের সপ্তাহ থেকে ঠান্ডা শুরু। আর এই কারণটার জন্য ফুপিকে মিথ্যা বলতে পেরেছি । ফুপি জ্বর আসার কারণ জানতে চাইলে বলি মৌসুমের পরিবর্তনের ফলে এই অবস্থা। বাসায় থেকে একটা কল পর্যন্ত করেনি কেউ,,, ভাবতেই কান্না আসছে। এই সব ভাবছি তখনই কেউ কলিং বেল চাপে। মাহির হয়তো চলে এসেছে, ভেবে ডোরটা ওপেন করি,, আর দেখি

চলবে…

সুখ পাখি পর্ব-০১

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖
লেখিকাঃ-আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০১

বিয়ের ভারী লেহেঙ্গা আর ভেজা শরীরে বেলকনিতে ছিটে আসা বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয়ে ফ্লেরে বসে কান্না করছি। ভাগ্যের কি পরিহাস কিছু না করেই আজ সবার কাছে আমি অপরাধী। আর ঐদিকে আমার ডেভিল হাসবেন্ড পরে পরে ঘুমাচ্ছে বিছানায়। এই তো কিছু সময় আগের কথা।
বিয়ের ঠিক কবুল বলার আগ মুহূর্তে আমার সামনে এসে দাড়ায় মাহির ভাইয়া। আর সাথে সাথে আমার গালে কষে একটা চড় বসায়। আমি তো আহম্মকের মতো তাকিয়ে দেখে চল ছিলাম আসলে হচ্ছেটাকি এইসব? মানে কি!! কি করলাম আমি আবার? এইসব ভাবছি তখনই। মাহির ভাইয়া জোরে আমার গাল টিপে ধরে বলে

—- কি মনে ভেবেছিল তুই? আমি অন্য সবার মত মুখবুজে সব মেনে নিব? আমি মাহির অন্য সব ফালতু সস্তা কৃত্রিম প্রেমিকদের মতো না। আপনাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছি। আদারার আর আমার বিয়ে হয়েগেছে। কিন্তু ভয়ের জন্য কাউকে বলতে পারেনি,,,, আর এখন ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী।

আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে কি বলছে টা কি? মাহির ভাইয়াকে আমি পছন্দ করি জানি আমি তাকে প্রপোজও করেছিলাম কিন্তু সে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আজ, আমার বিয়ে হঠাৎ এমন কেন করছে সে? আর আমাদের বিয়েই বা কবে হলো? এই সব ভাবছিলাম তখনই মা এসে আমার গালে আরেকটা চড় বসিয়ে দেয়। বাবাতো মাথা নিচু করে আছে। আমার বাবা হলেন আমাদের গ্রামের চিয়ারম্যান সম্মান জিনসটা তার খুব প্রিয়। পরিবার বলতে মা,বাবা, আমি, চাচা, চাচি আর ইমারান ভাইয়া । আমি কিছু বলতে চাইলে আমার মা বলে

—- এর জন্য তুই এত ঢাকা যেতে চাইতি? আমি যদি জানতাম তুই এমন হবি, তাহলে তোকে জন্মের পর লবণ মুখে দিয়ে মেরে ফেলতাম…। কিভাবে পারলি নিজের বাবা মাকে ধোকে দিয়ে বিয়ে করতে? একটু গায়ে বাজলো না তোর? একবার ভাবলি না তোর বাবার সম্মানের কথা?

আম্মুর কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছিল মরে যাই। মাহির ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। আমি বলি

—- আম্মু বিশ্বাস কর,,, আমাদের বিয়ে হয়নি। মিথ্যা বলছেন উনি আর,,,,, আর তুমিই বল আমারা কখন বিয়ে করব? মাহির ভাইয়া থাকে ঢাকায় আর আমি গ্রামে, আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা কর আম্মু। তখনই মাহির ভাইয়া বলে

— মামী তুমি ওর কথা বিশ্বাস করবে না। কিছুদিন আগে গ্রীষ্মের ছুটিতে যখন আমাদের বাসায় বেড়াতে যায় তখনই আমাদের বিয়ে হয়। আর এই দেখ বিয়ের রেজেসট্রেট পেপার। আমি মুহূর্তেই চমকে গিয়েছিলাম আমি সেটা হাতে নিয়ে দেখি সত্যি এটা একটা কাবিন নামা আর সেখানে আমার আর মাহির ভাইয়া সাইন। এটা কিভাবে সম্ভব । পরক্ষণেই মনে পরে এটা তেমন কিছুই না আজকালকার জামানায় । আমি বলি

—- এটা মিথ্যে৷। বাবা আম্মু বিশ্বাস কর। ভাইয়া তুই অন্তত আমাকে বিশ্বাস কর। তখন আমার চাচি বলে

—- আমি আগেই বলছিলাম মাইয়া মানুষকে এত লাইদিতে নাই শুনলেন নাতো ভাইজান দেখছেন এখন। আমার চাচা বলে

—- আহহহহ্ তুমি চুপ করত। বরের বাবা আমার বাবার সামনে গিয়ে বলে

—- এভাবে আমাদের অপমান না করলেও পারতেন। চল সবাই বলেই সে আমার বর মানে আমার যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তাদের সবাইকে নিয়ে চলে যায়। এতক্ষণে কানাকানি শুরু হয়েগেছে। পাশের বাসার আন্টিরা একজন আরেকজনকে ফুসফুস করে কি যেন বলছে। বাবা কিছু বলছেনা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিল । তখনই মাহির ভাইয়া বলে

—- এর আগের বার আমাদের বিয়েটা হয়েছিল গোপনে, কিন্তু এবার আমি সেটা সবার সামনে করতে চাই। মামা মামী তোমাদের সমস্যা আছে?? বাবা চুপ মা বলে

—- কি বলবো কিছু বলার মুখ রেখেছে এই মেয়ে?

আমি বার বার বলার পরও কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। বরাবরই আমার কথা না শুনে সবাই আমাকে দোষারোপ করেছে। আমার কিছু করার ছিলনা। আমি বলে ছিলাম

—- আমি এই বিয়ে করবনা। তখন আমার চাচি বলে

—- বিয়ে করবিনা মানে, করেইত ফেলেছিস। এখন আবার এত ন্যাকামি না করে কবুল বলে বিদায় হও। আমার বাবা উপরে চলে যান সাথে আমার মাও । জোড় করেই আমার বিয়েটা দেয় আমার চাচা আর আমার চাচাতো ভাই ইমরান। আমি না চাও সত্ত্বেও বিয়েটা আমার করতে হয়। ইমারান আমার লাগেজটা নিয়ে মাহিরের গাড়িতে রেখে আসে।

তারপর মাহির ভাইয়া আমাদের বাড়িতে এক মুহূর্ত দেরি না করে আমকে টেনে গাড়িতে তুলে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়।কেমন বিয়ে হোল আমার? কেউ একটু আসলোনা আমাকে বিদায় দিতে। আমার নিজের মা বাবাও আমাকে বিশ্বাস করল না । কান্নায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে নিজেকে আর আটকে রাখতে না পেরে কেঁদেই দিলাম আমি। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরি জানি না আমি কিন্তু হঠাৎ করে ব্রেক করাতে আর সিটবেল্ট না বাধার কারণে মাথায় বেশ ব্যাথা পাই আর ঘুমও ভেঙে যায়। দেখি আমার ভাইয়াদের বাসায় পৌছে গিয়েছি। কিন্তু এখন ভয় আকরে ধরেছে যদি ফুপি আমাকে মেনে না নেয় আগের মতো আদরনা করে। যদি আমাকে বাসা থেকে বেড় করে দেয় । মাহির ভাইয়া আমাকে ফেলে গাড়ির দরজা খুবে জোরে লাগিয়ে হাটতে লাগে। আমি তখন ঠাই বসে ছিলাম সেখানে। মাহির ভাইয়া কিছু সময় পর আবার আমার কাছে ফিরে আসে আর দাঁত চেপে চেপে বলে

—- আপনি কি হেটে আসতে পারবেন নাকি হেলিকপ্টার পাঠাবো? আমি বললাম

— কেন করলেন আমার সাথে এমন? মাহির ভাইয়া বলে

— আমার থেকে আমার ভালোবাসা কেরে নিয়ে তুই সুখে সংসার করবি? তোর জন্য আজ মায়া আমার কাছে নেই। আমি চমকে যাই মায়া আপুর কথা শুনে আমি শুধু এতটুকু বুঝতে পারছি যে সে আমাকে ভুল বুঝেছে। সে আমাকে টেনে গাড়ি থেকে বের করে দারওয়ান চাচাকে বলে গাড়ি থেকে আমার লাগেজটা বের করে গাড়িটা রেখে আসতে। আমি তাকে কিছু বলতে চাইলে বলে

—- যদি আম্মুর সামনে ন্যাকামি করছিস খবর আছে। আমি যখন সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম সামনে তাকিয়ে দেখি ফুপি আমার শাশুড়ী মা আমার ফুপাজান মানে আমার শুশুড় বাবা আর নিশু দাঁড়িয়ে। ফুপির হাতে বরন ডালা। আমি তো অবাক আমাকে দেখে ফুপি বলে

—- আমি জানতাম আমার ছেলে আমার ঘরের লক্ষ্মীকে ঠিকিই নিয়ে আসবে। মাহির আমাকে সব বলেছে। আমাদের বললেই পারতি তোরা। আমি তো তোকে বরাবরই নিজের ঘরের ছেলের বউ করে আনতে চেয়েছিলাম । আমি কিছু বলতে যাবো তখন মাহির ভাইয়া বলে

—- আহহহহ্ আম্মু বাদ দাও তো। কত দূর থেকে এসেছি একটু বুঝার চেষ্টা কর। মাহির ভাইয়ার বাবা বলে

—- হ্যা মাহির ঠিকই বলেছে, ওদের আগে রেস্ট নিতে দাও। আদারার উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মুখটা একবারে শুকিয়ে আছে মেয়েটার।

মাহির ভাইয়া
বরাবরই ফুপির ফুপার সবার আদরের কিন্তু তিনি যে এই আদরের এমন কিছু করবে তা আমার জানাছিল না। কিন্তু একটা জিনিস সেটা হলো মাহির ভাইয়ার চাচা চাচিকে দেখছিনা। আর আমার বিয়েতে আমাদের সব আত্মীয় গেলেও ফুপিরা যায়নি হঠাৎ করে মাহির ভাইয়ার আগমন ঘটে। কিছুসময় পর আমাকে নিশু মাহির ভাইয়ার রুমে নিয়ে আসে। অন্য সব পাঁচটা ঘরের মতো না এটা। নিশু আমার লাগেজটা থেকে জামাকাপড় বের করে আলমারিতে ঘুছিয়ে রেখে একটু পর চলে যায় । রুমটা ফুল দিয়ে হালকা পাতলা সাজানো কিন্তু আমার এই সব বিরক্ত লাগছে। তখনই ঘরে প্রবেশ করে মহির ভাইয়া। আমি আর নিজের রাগটা দমিয়ে রাখতে পারলাম না। ছুটে গিয়ে চেপে ধরেছিলাম তার শার্টের কলার

—- কেন করলেন এমনটা আমার সাথে কেন? কি এমন ক্ষতি করিছি আমি আপনার? যার বদলে আপনি আমাকে আমার পরিবারের কাছে একটা খারপ মেয়ে বানাতে ২ বার ভাবলেন না? একটু লজ্জা করলোনা আপনার? মাহির ভাইয়া এক ঝটকায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে

—- তোর লজ্জা করলোনা আমার আর মায়ার এত সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট করতে। তুই আমার থেকে আমার ভালোবাসার মানুষটা কেড়ে নিয়েছিস তার বদলে আমি তোর আপন মানুষগুলোকে তোর থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। আর যদি মাকে পাকনামি করে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে চাস আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। আমি বললাম

—- আপনার ভুল হয়েছে। বিশ্বাস করুন আমি মায়া আপুকে কিছু বলেনি। আমি তো। আর কিছু বলতে যাবো তখনই সে আমার দুই গাল জোড়ে চেপে ধরে বলে

—- আর বানিয়ে মিথ্যা কথা বলতে হবে না। নয়তো তোর এই মুখ আমি ভেঙে গুরগুর করে দিব। বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে বেলকনিতে নিয়ে আসে। আর আমাকে বেলকনিতে রেখে দরজা লাগিয়ে চলে যায়। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল আমি ভাইয়াকে বলেছিলাম

— মাহির ভাইয়া। প্লিজ দরজাটা খুল বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু না সে আমাকে একা ফেলে চলে যায় আর লাইটাও বন্ধ করে দেয় বলকনির ভয়ে আর ঠান্ডায় থরথর করে কেঁপে যাচ্ছি। হঠাৎই খুব জোরে বিদ্যুৎ চমকায় আর ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি কিন্তু আমার সেই চিৎকার শুনোর মতো কেউ নেই। ডিভেলটা পরে পরে আরামসে ঘুমাচ্ছে,,, এত জলদি কেউ কিভাবে ঘুমাতে পারে? আর বাইরের আওয়াজ রুমেও প্রবেশ করেনা,,, দেখতে দেখতে বৃষ্টি কমে যায় কিন্তু ঠান্ডা বাতাস বইছে আর এই বাতাসের তীব্র ঠান্ডার কারণে শরীরে সব লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। মাথা ব্যাথাও খুব করছে। ধীরে ধীরে চোখ বুঝে আসছে,,,,

চলবে

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

2

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ২০ ও অন্তীম পর্ব
লেখিকাঃমাহযাবীন

“আপনার ঠোঁটের স্পর্শে এক অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি আছে,আফিম”
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নাফিয়ার দিকে তাকায় আফিম।ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে আলতো করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা আফিমের ঠোঁট স্পর্শ করে নাফিয়া বলে ওঠে,
-এর স্পর্শ পুরো পৃথিবীটা ভুলিয়ে দেয়।সব কষ্ট ভুলিয়ে সুখের সমুদ্রে নিয়ে যায়।এই স্পর্শ আমার মাঝে সাহস জাগায়।আমার সব নিরাশা, সংকোচ,ভয় সব কিছু নিঃশেষ করে দেয়।আপনিহীনা কি করতাম আমি,আফিম?(চোখ জ্বলজ্বল করছে নাফিয়ার)
এতো টা সময় চুপচাপ নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে তার উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো আফিম।নাফিয়ার চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে উঠতেই নাফিয়ার কোমর দু’হাতে আঁকড়ে ধরে নাফিয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় সে।আফিমের এতোটা কাছে যেতেই নিজের চোখজোড়া বুজে নেয় নাফিয়া।আফিম তার দুচোখের পাতায় আলতো করে দু’টো চুমু বসিয়ে দেয়।তারপর আর দেরি না করে নাফিয়ার ওষ্ঠদ্বয় নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।

একটু আগে____

রাত ঠিক বারোটা।হসপিটালের বেডে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে নাফিয়া।আফিম আলতো করে তার কপালে চুমু দিয়ে ডেকে ওঠে তাকে।আফিমের এক ডাকেই ঘুম ভেঙে যায় তার।আলতো করে চোখজোড়া মেলে তাকাতেই আফিমকে নিজের অনেক টা কাছে আবিষ্কার করে সে।আফিম ঠোঁটে এক চিলতে হাসি বজায়ে রেখে নাফিয়াকে উঠে বসতে সাহায্য করে।আধশোয়া হয়ে বসে,নিজের চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিতেই অবাক হয়ে যায় নাফিয়া।পুরো কক্ষটি হরেক কালারের মোমবাতি ও প্রদীপ দিয়ে সাজানো।সেই সাথে তাদের দুজনের অনেক গুলো ছবি পুরো কক্ষ জুড়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।হটাৎ এসবের কারন বোধগম্য হচ্ছে না তার।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আফিমের দিকে তাকাতেই আফিম মুচকি হেসে বলে ওঠে,
-আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার আজ ১ বছর সম্পূর্ণ হলো,মিসেস.আফিম ইবনান।সেই সাথে এই রাতটিই হসপিটালে তোমার শেষ রাত।আগামী কাল আমরা বাসায় ফিরবো।
আফিমের কথায় ঠোঁটে বড় একটি হাসি ফুটিয়ে তোলে নাফিয়া।আলতো স্বরে বলে ওঠে,
-অনেক সুন্দর হয়েছে সাজানোটা আফিম।আমি সত্যিই অনেক খুশি হয়েছি।আমাকে একটু উঠতে সাহায্য করুন তো!আমি,আমাদের ছবি গুলো দেখতে চাই।
আফিম কিছু না বলে নাফিয়াকে সাহায্য করে।নাফিয়া পুরো ঘর ঘুরে ঘুরে সব গুলো ছবি দেখছে।প্রতিটি ছবিতে কত শত স্মৃতি মিশে আছে।সব মনে পরছে তার।সেই সাথে ঠোঁটে ফুটে উঠছে হাসি।
সব গুলো ছবি দেখা শেষে নাফিয়া বলে ওঠে,
-হসপিটালে এগুলো কিভাবে করলেন?
-নিজ হাতে সব করেছি।তুমি তো নাক ডেকে ঘুমুচ্ছিলে।
-ডাক্তার ঘুমের ঔষধ দিয়েছিলো হয়তো!(মন খারাপ করে বলে ওঠে)
দু’হাতে নাফিয়ার গাল স্পর্শ করে আফিম বলে ওঠে,
-ঘুমিয়ে ছিলে বলেই তো আমার জন্যে সুবিধা হয়েছিলো।নাহয় সারপ্রাইজ দিতাম কি করে?
উত্তরে একটু হাসে নাফিয়া।
-উইল ইউ ড্যান্স,মিসেস.আফিম ইবনান?
উত্তরে একটু হেসে আফিমের কাঁধে এক হাত রাখে এবং অপর হাত দিয়ে আফিমের হাতের আঙুলে আঙুল গুঁজে দেয় নাফিয়া।আফিম বাঁকা হেসে রিমোট এর সাহায্যে লো ভলিউমে সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।গানের তালে তালে আলতো দুলতে শুরু করে তারা।উভয়ই ধীরে ধীরে ড্যান্সের স্টেপ গুলো করছে কারণ নাফিয়ার অপারেশন শেষ হয়েছে কেবল ৩ সপ্তাহ সম্পূর্ণ হলো।

!!
ফজরের নামাজ কায়েম করেই নাফিয়ার বাবা-মা অর্থাৎ অভ্র সাহেব এবং নয়না বেগম বেরিয়ে পরেন হসপিটালের উদ্দেশ্যে।প্রতিদিন এভাবে সকালে যান এবং বিকেলে বাড়ি ফিরে আসেন তারা।আফিম থাকতে মেয়ের সেবা যত্ন করার সুযোগ তো তারা পান না কিন্তু চোখের দেখা দেখে নেওয়াটাই শান্তি।
মেয়ের অপারেশনের দিন ঘন্টার পর ঘন্টা কেঁদে ও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করে শরীর খারাপ করে ফেলেছিলেন নয়না বেগম।বাবা, অভ্র সাহেব চাপা স্বভাবের মানুষ।নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন না সহজে।তাই সংসার জীবনে নিজের স্বামীর চোখে শুধু মাত্র তিন বারই জল দেখতে পেয়েছেন নয়না বেগম।প্রথম,যখন নাফিয়াকে প্রথম কোলে নিয়েছিলেন অভ্র সাহেব।দ্বিতীয়,যখন অভ্র সাহেবের মা মারা যান।এবং তৃতীয়,নিজ কন্যার এমন অপারেশনে।
অতঃপর,অপারেশন সাকসেসফুল হওয়ার পর দু’জনে যেনো প্রাণ ফিরে পায়।
নাফিয়ার রোগ ও চিকিৎসা জানবার পর বেশ দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছিলো দু’জনকে।প্রথমত নাফিয়ার সুস্থতা আর দ্বিতীয়ত,নাফিয়ার সংসার টিকবে তো?
কিন্তু অপারেশনের সময় থেকে এই তিন সপ্তাহ, প্রতিদিন তারা হাসপাতালে নাফিয়াকে দেখতে যেয়ে প্রতিদিন নাফিয়ার প্রতি আফিমের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়ে ও এক বুক প্রশান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরেন।চেয়েছিলেন হসপিটালে নয়না বেগম থেকেই নাফিয়ার দেখাশোনা করবেন কিন্তু তাদের মেয়ে জামাই নিজের বৌয়ের পাশ ছাড়লে তো?তার বৌয়ের খেয়াল সে নিজেই রাখবে।অবশেষে তার জিদের কাছে হার মেনে নেন নয়না বেগম।
এখন আর নাফিয়ার সংসার নিয়ে দুশ্চিন্তা হয় না অভ্র সাহেব এবং নয়না বেগমের।বরং এ নিয়ে দুশ্চিন্তা হয় যে,তারা কিভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে?

!!
প্রায় ১ মাস পর পুত্র ও পুত্রবধূ বাড়ি ফিরছে।ভীষণ খুশি সানিয়া বেগম।গৃহপরিচারিকাদের দিয়ে পুরো ঘর টা চকচকিয়ে রেখেছেন।সেই সাথে খাওয়া-দাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।তার এমন ব্যস্ততার মাঝেই বাড়ির কলিং বেলটি বেজে ওঠে।ঠোঁটের হাসি প্রশস্ত করে তিনি এগিয়ে যান দুয়ারের দিকে।এই ভেবে যে হয়তো আফিম ও নাফিয়া ফিরেছে।কিন্তু দরজা খুলতেই দেখা পান পরিচিত কিছু প্রতিবেশীদের।ঠোঁটে তাও হাসি বজায়ে রেখে তাদের সোফায় বসতে বলে নাস্তার বিষয়টির জন্য রান্না ঘরের দিকে যান সানিয়া বেগম।দাদী সোফায় মেনমানদের সাথে বসেন।একে-অপরের খবর নেওয়ার পর্ব শেষ হতেই প্রতিবেশীদের মাঝে একজন মহিলা বলে ওঠেন,
-শুনলাম,নাফিয়ার অপারেশন হয়েছে?
-হ্যা হয়েছে।অপারেশন সাকসেসফুল আলহামদুলিল্লাহ। (দাদী)
অপর একজন প্রতিবেশী মহিলা মুখ কালো করে বলে ওঠেন,
-অপারেশনে পুরো একপাশ কেটে ফেলা হইছে, শুনলাম!
এমন কথায় দাদীরও মন খারাপ হয়ে যায়।তিনি নিরাশ কন্ঠে বলে ওঠেন,
-হ্যা।
-আমাদের আফিম এতো সুন্দর একটা ছেলে।কতো মেয়ের মনে রাজ করে তার হিসেব আছে?অভিনয় জানলে চিত্র জগতেও রাজ করতে পারতো!আমাদের এমন সোনার টুকরো ছেলে এমন একটা মেয়েকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিবে?
নিজের মনের মতো কথা শুনে দাদীর কন্ঠ জোড়ালো হয়ে যায়।তিনি সায় দিয়ে বলে ওঠেন,
-এ বিষয়ে আফিমের সাথে কথা বলতে চাইছিলাম।কিন্তু ছেলেটি কিছু বুঝার চেষ্টা করলে তো!
-কি যে বলেন খালাম্মা!বুঝবে না কেন?
-এক বারে না বুঝলে বার বার বুঝাইবেন।
-ও বাচ্চা ছেলে।ভালো-মন্দের জ্ঞান ওর এখনো হয়নি।যখন হবে তখন আবার মেলা দেরি হয়ে যেতে পারে।তাই বড় হওয়ায় আপনাদের উচিৎ ওরে বুঝানো।
-কি বুঝাবে?(সানিয়া বেগম)
-দেখো বৌমা,এতোদিন তো তোমরা সবাই আমাকে একা পেয়ে আমার কথা গায় লাগাওনি কিন্তু এরাও আমার মতোই ভাবছে।(দাদী)
ঠোঁটে হাসি টেনে সোফায় বসে পরেন সানিয়া বেগম।শান্ত স্বরে বলে ওঠেন,
-মেয়েদের আপনারা কি ভাবেন?সোপিছ নাকি ভোগের বস্তু?মেয়েদের বাহ্যিক রুপ নিয়ে সমাজের প্রতিটি মানুষের এতো কেনো চুলকানি? মেয়ে কালো হলে বা শ্যামলা বলে,খাটো হলে বা বেশি লম্বা হলে, মোটা হলে বা বেশি চিকন হলে,নাক বোঁচা হলে বা খাঁড়া হলে হব কিছুতেই তো আপনাদের সমস্যা!সব কিছুতেই আপনাদের হাজারো মন্তব্য!কই ছেলেদের রুপ তো কেউ এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন না তবে মেয়েদের রুপ নিয়ে কেনো সবার এতো মাথা ব্যথা?আজ একটু বলেই দিন,মেয়েরা কি আপনাদের কাছে?সোপিছ নাকি ভোগের বস্তু?
এ কথার উত্তরে কেউ কিচ্ছুটি বলে না।সবাই চুপ করে আছে।সানিয়া বেগম আবারও বলে ওঠেন,
-মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখুন।আমার পুত্রবধূ আমাদের ভালোবাসার পাত্রী।সে আমাদের ভালোবাসায় আগলে রাখবে।আমার পরিবারের খেয়াল রাখবে।যার জন্য সে পুরোপুরি যোগ্য। একটি রোগ তাকে অযোগ্য করেনি।তাই আফিমের দ্বিতীয় বিয়ে করবার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি না।
-আপা,আপনি শুধু শুধুই আমাদের ভুল বুঝলেন।
-আমরা তো আফিমের ভালোর জন্যেই বলছিলাম।কিন্তু আপনারা যদি না চান তবে সেটি আপনাদের ব্যাপার।
উত্তরে রুক্ষ কিছু না বলে ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,
-ভুল বুঝে থাকলে দুঃখিত।তবে হ্যা!যে রোগটির জন্য আপনারা একটি মেয়েকে ত্রুটিপূর্ণ বা অযোগ্য মনে করেন সে রোগটি নিয়ে নিজে একটু সচেতন হয়ে নিয়েন।কারণ রোগটি যেকোনো বয়সের মেয়েদের হতে পারে।অবশ্য ৩০ এর পর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।সব মেয়ের উচিৎ প্রতিদিন নিজে নিজে পরিক্ষা করে দেখা যে,তার বুকে কোনো চাকার মতো কিছু বিঁধে কিনা বা কোনো ব্যথাসহ সেই জায়গায় কোনো পরিবর্তন দেখা যায় কিনা। আর হ্যা,কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অনতিবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
উপস্থিত মহিলাগুলো ঠোঁটে একটু হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
-জ্বি,ধন্যবাদ।আমরা তবে আজ উঠি।
-সে কি! এসেছেন কিছু খেয়ে যান।(সানিয়া বেগম)
-না না,আপা।আবার পরে আসবো।
বলেই সবাই বিদায় নেয়।

!!
পেছন হতে নাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আফিম।আকাশ পানে দৃষ্টি দুজনার।নিরবতায় অনেকটা সময় কাটাবার পর নাফিয়া মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-শুনছেন?
-হু।
-জানেন নেশা কি?
হটাৎ নাফিয়ার এমন প্রশ্নে অবাক হয় আফিম।এমন প্রশ্নের কারণ বোধগম্য হয় না তার।সন্দিহান কন্ঠে বলে ওঠে,
-উহু।
-নেশা হচ্ছে আসক্ত।আপনি যত এটি সেবন করবেন ঠিক ততই আপনার আসক্তি বাড়তে থাকবে।সেই সাথে এটি আপনার সকল কষ্ট ভুলিয়ে দিবে এবং আপনাকে একটা ভিন্ন সুখের জগতে বাস করাবে।কোনো কিছুর নেশা হলে সেটি আপনার নিত্য দিনের প্রয়োজন হয়ে উঠবে।জানেন,নেশা সত্যিই খুব ভয়ংকর।আসক্তি যদি তৃতীয় স্টেজে চলে যায় তাহলে মানুষ এটি ছাড়া বাঁচতেই পারে না।এটি সেবন করার ফলে তাদের মৃত্যু হবে জেনেও মানুষ এই নেশা ছাড়তে পারে না।কারণ এই নেশা মারাত্মক।নেশা ছাড়ার থেকে মানুষের কাছে মৃত্যু টা সহজ মনে হয়।
এসব কথা বলে আফিমের দিকে ঘুরে দাঁড়ায় নাফিয়া।আফিমের চোখে চোখ রেখে সে বলে ওঠে,
-আমিও এক নেশায় আসক্ত।আফিম নামক নেশাতেই আসক্ত আমি।কারণ #আফিম_বড্ড_নেশালো।এ নেশা এতোটাই ভয়ংকর যে আমার কাছে মরন সহজ কিন্তু আফিম বিনে একটি শ্বাস নেওয়াও দুষ্কর।
কথাটি বলেই ঠোঁটে হাসি নিয়ে আফিমের বুকে মুখ লুকায় নাফিয়া।আফিমও প্রশান্তিময় একটি হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে নাফিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
অনেকটা সময় এভাবে পার হবার পর আফিম বলে ওঠে,
-চলো ঘুমাবে।এখনো পুরোপুরি সুস্থ হওনি।এতো রাত পর্যন্ত জাগা যাবে না।
-আফিম,আপনি দিন দিন নিরামিষ হয়ে যাচ্ছেন।(বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে নাফিয়া)
-কিহ!
-হ্যা।
-আচ্ছা।তাহলে কি “আফিন”কে আনার প্রক্রিয়া শুরু করবো?
-আফিন?
-নাফিয়া ও আফিমের অংশ।
ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে আবারও আফিমের বুকে মুখ গুঁজে দেয় নাফিয়া।

সমাপ্ত।

[এই গল্পের মাধ্যমে আমি সবাই কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ম্যাসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

প্রথমে,আফিমের মা-বাবার কাহিনি দিয়ে আপনাদের বোঝাতে চেয়েছি,সম্পর্কে এক তরফা সমঝোতা কখনোই সুখকর হয় না।তাই উভয়কেই একে-অপরকে বুঝার চেষ্টা করা উচিৎ।আর যদি অনেক চেষ্টার পরও ব্যর্থ হন তবে নিজেদের রাস্তা আলাদা করে নিন।এতে দু’জনই সুখে থাকবেন।

দ্বিতীয়,একটা মেয়ের যখন শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দেয় তখন সে মানসিক ভাবে প্রচন্ড ভেঙে পড়ে।হোক তা ব্রেস্ট ক্যান্সার বা বন্ধ্যা হওয়া বা এসিডের শিকার হওয়া বা অন্য যেকোনো সমস্যা! নাফিয়ার মাধ্যমে তা তুলে ধরেছি।এই উদ্দেশ্যে যে আপনার আশেপাশের কেউ এমন সমস্যায় পড়লে আপনারা যেনো তার অবস্থা উপলব্ধি করতে পারেন এবং তার প্রতি সহযোগী আচারণ করেন।

তৃতীয়, ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগটি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

চতুর্থ, আফিমের চরিত্রের মাধ্যমে একজন স্বামীর তার স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো কি তা ফুটিয়ে তুলেছি।

পঞ্চম, মা এবং শাশুড়ী হিসেবে সানিয়া বেগমকে একটি আদর্শ চরিত্র প্রদান করেছি।বিচ্ছেদের পর তিনি যে বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা দিয়ে ছেলেকে মানসিক ভাবে কষ্ট পাওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন তা শিক্ষনীয়।সেই সাথে নাফিয়াকে সাপোর্ট করা টাও।

ধন্যবাদ সবাইকে গল্পটি পড়ার জন্য।সবাই কষ্ট করে রিভিউ দিয়েন প্লিজ। যাদের গল্পটি ভালো লাগেনি তাদের কষ্ট করে কমেন্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই🙂]

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-১৯

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৯
লেখিকাঃমাহযাবীন

ডাক্তারের বলা টেস্টগুলো করিয়ে হাসপাতাল হতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে আফিম ও নাফিয়া।নাফিয়ার মন ভালো রবে না এটিই স্বাভাবিক।গাড়ি চালানোর মাঝেই নাফিয়াকে আড়চোখে দেখে নিচ্ছে আফিম।মেয়েটি অন্য মনস্ক হয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।বিষয়টি ভালো লাগছে না আফিমের।
প্রকৃতি প্রেমি মানুষদের মন খারাপ, বিষন্নতা, কষ্টগুলো প্রকৃতির স্পর্শে এলে নিমিষেই বিলীন হয়ে যায়।এরা প্রকৃতির মাঝে প্রশান্তি খুঁজে পায়।প্রকৃতি যেনো এদের কষ্টগুলো শুষে নিজের মাঝে নিয়ে নেয় এবং তাদের অস্থির হৃদয়কে প্রশান্ত করে দেয়।
নাফিয়া প্রকৃতি প্রেমিদের মাঝে একজন।আফিম বিষয়টি জানে।তাই এই মুহূর্তে নাফিয়াকে প্রকৃতির সংস্পর্শে আনাটি সঠিক বলে মনে করছে সে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি এলাকা হাতিরঝিল।যা জনসাধারণের চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে।এখানে একটি ঝিল রয়েছে এবং ঝিলের চারপাশ ঘিরে গাছপালাসহ রয়েছে বসার ব্যবস্থা।জায়গাটি ভীষণ রকমের সুন্দর।
নাফিয়া নিজের ধ্যানে এতোটাই মগ্ন ছিলো যে সে খেয়ালই করেনি আফিম বাড়ির পথে না গিয়ে হাতিরঝিলে এসে পৌঁছেছে।গাড়ির ব্রেক কষতেই ধ্যান ভাঙে তার।জায়গাটি অপরিচিত লাগায় ব্রু জোড়া কুঁচকে আফিমকে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কোথায় এসেছি?
উত্তরে কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে পরে আফিম।আফিমকে নামতে দেখে নাফিয়াও গাড়ি হতে নেমে পরে।চারপাশটায় চোখ বুলোতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে নাফিয়ার।সে আফিমের কাছে এসে বলে ওঠে,
-এটা হাতিরঝিল?
-হু।
-আমার ভীষণ পছন্দের জায়গা।কিন্তু কখনো সেভাবে আসা হয়নি।শুধু এক বারই এসেছিলাম।তাও অনেক আগে।
উত্তরে ঠোঁটে একটু হাসি টেনে নেয় আফিম।নাফিয়াও নিজের ঠোঁটে হাসি টেনে নিয়ে বলে ওঠে,
-ধন্যবাদ এত্তগুলা!
ঠোঁট হাসি বজায়ে রেখে আফিম বলে ওঠে,
-চলো ঝিলের কাছে যাওয়া যাক।

!!
দু’জনে হাতে হাত গুঁজে পাশাপাশি হাঁটছে।মৃদু বাতাস এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে উভয়কে।নাফিয়া ঝিলের দিকে তাকিয়েই হেঁটে চলছে।ঝিলের বহমান পানি, কোলাহলমুক্ত পরিবেশ,মৃদু বাতাসে গাছের পাতাগুলো নড়ার শব্দ সেই সাথে প্রিয় মানুষটির সঙ্গ।সবটাই খুব উপভোগ করছে সে।আফিমও এসব উপভোগ করছে।নাফিয়ার মুখ নেকাবে ঢাকা থাকলেও আফিম বেশ বুঝতে পারছে,নাফিয়ার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে আছে।এই হাসিটির জন্যেই তো সে অসাধ্যকেও সাধন করবার সর্বোচ্চ চেষ্টাটি করতে প্রস্তুত।
হাঁটার মাঝেই আফিমের চোখ পরে একটি আইসক্রিমের ভ্যান গাড়ির দিকে।একটি লোক ভ্যানটি নিয়ে পথ চলছে।নাফিয়াকে দাঁড় করিয়ে সে ভ্যানটির দিকে এগিয়ে যায় আফিম।একটি কোণ আইসক্রিম হাতে নিয়ে ফিরে আসে সে।আইসক্রিম দেখে নাফিয়ার ঠোঁটের হাসিটি প্রশস্ত হয়ে ওঠে।
আফিম নাফিয়ার হাতে আইসক্রিম টি দিয়ে বলে ওঠে,
-ঐ দিকটি গিয়ে বসি!ওখানে কোনো লোকজনের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
-জ্বি।
অতঃপর দুজনে গিয়ে বসে পরে।সামনেই ঝিলের পানি দেখা যাচ্ছে।পেছনে এবং আশপাশে গাছগাছালি।নাফিয়া নেকাব খুলে খাওয়া আরম্ভ করে।আর আফিম নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে তাকে।মেয়েটি বাচ্চাদের মতো খাচ্ছে।মুখে তো আইসক্রিম লেগেছেই।সেই সাথে নাকেও লাগিয়ে বসে আছে সে।এটি দেখে মৃদু হাসে আফিম।আফিমের ঠোঁটে হাসি দেখে নাফিয়া জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-হাসছেন কেনো?
-দেখবা?
-হু।
নিজের পকেট হতে ফোন বের করে নাফিয়ার চেহারার অবস্থাটি ক্যামেরা বন্দী করে নেয় সে।ছবিটি নাফিয়াকে দেখাতেই সে নিজের মুখটি মুছে নেওয়ার উদ্দেশ্য হাত উঠায় কিন্তু আফিম তার হাতটি ধরে থামিয়ে দেয়।
-তুমি তো মজা করে আইসক্রিম খেলে।আমি খাবো না?
-আইসক্রিম তো একটিই কিনেছিলেন।
-তো?
-কিভাবে খাবেন?আমার টা তো আমি খেয়ে নিয়েছি।দুঃখিত।(মন খারাপ করে বলে নাফিয়া)
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-No problem.[সমস্যা নেই]
আফিমের চাহনি সুবিধের ঠেকছে না নাফিয়ার।আফিমের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আশপাশ টায় চোখ বুলিয়ে নেয় সে।এই জায়গার ধারে কাছে মানুষ নেই বললেই চলে।যারা আছে তারা দূরেই তাও বেশি মানুষ না।ঢোক গিয়ে আফিমের দিকে তাকিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-কি চাইছেন?
কথায় সময় অপচয় না করে নাফিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে আরম্ভ করে আফিম।একদম কাছে যেতেই চোখ জোড়া বুজে নেয় নাফিয়া।আফিম আলতো করে নাফিয়ার নাকে লাগানো আইসক্রিম খেয়ে নেয়।সেই সাথে থুঁতনি ও ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা আইসক্রিম গুলোও বাদ দেয় না সে।

!!
সূর্য ডুবে যাচ্ছে।আকাশ হলদে বর্ণ ধারণ করেছে।কিছুক্ষণের মাঝেই সূর্য মামা পুরোপুরি বিদায় জানাবে এবং আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পরবে।
আফিমের কাঁধে মাথা রেখে সূর্যের ডুবে যাওয়ার সময়টা উপভোগ করছে নাফিয়া।আফিম একহাতে নাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।উভয়ই অনেকটা সময় নিরাবতা পালন করছে।অবশেষে নিরাবতা কাটিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-I want to prepare you for one thing.[আমি তোমাকে একটি বিষয়ের জন্যে প্রস্তুত করতে চাইছি।]
-কোন বিষয়?
ঠোঁট আলতো হাসি ফুটিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-তুমি শিক্ষকতা করেছো।তাই নৈতিক জ্ঞান তোমার আছে।বলো তো,মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে কেউকে বিচার করা বা তা নিয়ে মন্তব্য করা টা কতোটুকু সঠিক?
-বিন্দু পরিমাণ সঠিক নয়।
-Correct. যদি কেউ কারো বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে বাজে মন্তব্য করে তখন কি করা উচিৎ?
-সাধ্যে থাকলে উচিৎ জবাব দেওয়া উচিৎ।আর তা সম্ভব না হলে উপেক্ষা করা উচিৎ।
-Again correct.[আবারও সঠিক] আজ টেস্ট করিয়েছি,কাল বা পরশু ডাক্তার চিকিৎসা জানাবে।সার্জারি হলে প্রতিবেশীদের কানে যাবে।সেই সাথে তারা তাদের নোংরা মানসিকতার পরিচয়ও দিতেই পারে।কিন্তু এসব কিছুর কোনো প্রভাব তোমার উপর পরতে দিবা না।
এতো টুকু বলে নাফিয়ার মাথা তার কাঁধ হতে উঠিয়ে দু’হাতে নাফিয়ার গাল স্পর্শ করে আফিম বলে ওঠে,
-চিকিৎসা যাই হোক,তুমি এখন যেমন সুন্দর,পরেও ঠিক এমনই সুন্দর থাকবে।এ রোগ কোনো ত্রুটি নয়।আর রোগ তোমায় বিন্দু পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারবে না।আমি চাই,তুমি নিজেকে ভালোবাসো।ঠিক যেমন তুমি আমাকে ভালোবাসো।আমার এক হাত বা পা যদি কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তবে কি তুমি আমাকে অযোগ্য ভাববে?
-কখনোই না।(জ্বলজ্বল করা চোখে আফিমের দিকে তাকিয়ে কথাটি বলে নাফিয়া)
-ঠিক তেমনই নিজেকে মূল্য দিতে শেখো।সাহসিকতার সাথে এই রোগ মোকাবেলা করো এবং সমাজের কিছু মানুষের নোংরা মানসিকতার বিপক্ষে দাঁড়াও।আমি সবসময় তোমার সাথে তোমার ঢাল হয়ে থাকবো ইন শাহ আল্লাহ।
চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরতেই আফিমের বুকে মুখ গুঁজে নেয় নাফিয়া।এই স্থানটি তার জন্যে সব থেকে নিরাপদ ও পরম শান্তির।

চলবে

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-১৭+১৮

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৭
লেখিকাঃমাহযাবীন

“আপনি দয়া করে কক্ষ ত্যাগ করুন,আফিম।আমি একা থাকতে চাইছি।”
নিজের কান্না যথা সাধ্য আটকাবার চেষ্টা করে শান্ত কন্ঠে কথাটি বলে নাফিয়া।অবাধ্য অশ্রু কণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে তার।আফিম অসহায় দৃষ্টিতে কিছুটা সময় নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে নাফিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে আরম্ভ করে।
নাফিয়ার একদম কাছে এসে নিজের ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আলতো করে নাফিয়ার গাল বেয়ে পরা চোখের অশ্রু স্পর্শ করে আফিম।চোখের পানি মুছে দিয়ে নাফিয়াকে এক টানে নিজের বুকে নিয়ে এসে বলে ওঠে,
-তুমি একা নও তাই একা ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না।
কথাটি বলে একটু থামে আফিম।নাফিয়াকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে নিজের চোখজোড়া বুজে বলে ওঠে,
-তোমাকে শক্ত হতে হবে,মিসেস.আফিম ইবনান।এ রোগের আতংকে ভেঙে পরা চলবে না।বরং সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে হবে।আমি আছি তো প্রতিটি কদমে তোমার ঢাল হয়ে।
আফিমের বুকের সাথে লেপ্টে নিজের ভেতরের অনুভূতিগুলোকে অশ্রু রূপে বিসর্জন দিয়ে নিজের ভেতরের কষ্টটাকে কিছুটা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নাফিয়া।অনেকটা সময় এভাবেই চলার পর ধীরে ধীরে আফিমের বুক হতে মাথা উঠায় সে।মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-এ রোগ আমার সৌন্দর্য কেরে নিবে,আফিম।
-পারবে না।
-এমনটি আপনি আমার মন রাখতে বলছেন কিন্তু সত্যি টা এটাই।
নাফিয়ার কথায় তাকে নিজের বাহুবন্ধনী হতে মুক্ত করে তার গাল আলতো করে দু’হাতের মাঝে নিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-তোমার সৌন্দর্য তোমার ভাসা ভাসা মায়াবী এই চোখ জোড়ায়,খাঁড়া এই নাকটিতে এবং এই মুগ্ধ করা ঠোঁটে যা প্রথম দেখাতেই আমাকে ঘায়েল করেছিলো।সেই সাথে তোমার সব থেকে বড় সৌন্দর্য তোমার মানসিকতা,চিন্তাধারা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা প্রতিনিয়ত আমায় মুগ্ধ করে।এসবের মাঝে,শরীরের সৌন্দর্য তো আকর্ষণ মাত্র যা সময়ের সাথে সাথে শেষ হয়েই যায়।
কান্নার বেগ বৃদ্ধি করে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আপনি শুধু মাত্র আমার কষ্ট লাঘব করবার জন্যেই এগুলো বলছেন,আফিম।কিন্তু একটি মেয়ের শারীরিক সৌন্দর্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমি জানি।
-যে ব্যক্তিত্বের মুগ্ধতায় আটকে যায় তার কাছে রুপ মূল্যহীন।আমি তোমাতে মুগ্ধ মিসেস.আফিম ইবনান,তোমার রুপে নই।তাই তোমার শারীরিক সৌন্দর্য আমার কাছে গুরুত্বহীন।
-আপনি আমার সাথে সুখি থাকবেন না,আফিম।
-তোমার উপস্থিতিই আমার সুখ।রাতে আমার বুকে তোমার অস্তিত্ব অনুভব করা টা আমার সুখ।অফিসের কাজ বেশি হলে রাত জেগে যখন কাজ করতে হয় তখন তুমিও রাত জেগে কাজে আমার সাহায্য করো।সে সময় তোমার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে।কাজের ফাঁকে ফাঁকে তোমার সেই রুপ দেখাটা আমার সুখ।বিষন্ন হয়ে কোথাও বসলেই যখন এক কাপ কফি হাতে আমায় কোম্পানি দিতে হুট করেই চলে আসো সেই সময়টুকু আমার সুখ।কাজের চাপে মাথা ব্যথা করলে যখন কিছু বলে উঠার আগেই কপালে তোমার হাতের স্পর্শ পাই ঠিক ঐটাই আমার সুখ।মাঝ রাতে স্লো মিউজিকে যখন ড্যান্স করার ইচ্ছে হয় তখন তোমার সঙ্গটাই আমার সুখ।এমন আরো অসংখ্য সুখ শুধু তুমিই আমায় দিতে সক্ষম, মিসেস. আফিম ইবনান।
কান্নার বেগ কমার জায়গায় আরো বেড়ে গেলো নাফিয়ার।অসংখ্য অনুভূতিরা তার মনে এসে জায়গা করে নিচ্ছে।আফিমের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দে নিজেকে ভীষণ সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে তার।এতো টা ভালোবাসা সে তার স্বামী হতে পাবে তা ভাবনাতিত ছিলো তার।কিন্তু সে এটিও কোনোভাবে ভুলে যেতে পারছে না যে,তার এ শারীরিক ত্রুটি কোনো সামান্য বিষয় নয়।সারাজীবন নারীত্বে এ ত্রুটি নিয়েই কাটবে তার।এ ক্রুটি নিয়ে সে কোনো ক্রমেই আফিমের যোগ্য নয়।তবে আফিম কেনো থাকবে তার সাথে?আফিমের মতো এতো সুন্দর ছেলে চাইলেই কোনো আগুন সুন্দরী মেয়েকে বৌ বানিয়ে আনতে পারে তাহলে আফিম কেনো সারাটি নিজের জীবন তার সাথে কাটিয়ে সমঝোতা করে যাবে?এখন হয়তো আফিম আবেগের বসে এসব বলছে কিন্তু ক’দিন পর হয়তো এই আবেগ টা আর থাকবে না।তখন হয়তো সে নিজের জন্য সুন্দর কোনো মেয়েকেই বাছাই করে নিবে।ঠিক তখন কোথায় যাবে নাফিয়া?কিভাবে মেনে নিবে সে সবটা?তখনের পাওয়া কষ্টটার থেকে এখনই আফিমকে ছেড়ে দেওয়াটিই উত্তম নয় কি?
অল্প সময়ের মাঝেই অনেকটা ভেবে নাফিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে আফিমের চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে,
-এসব আবেগে বলছেন আপনি।আমার উপর দয়া হচ্ছে আপনার সেজন্য বলছেন।আমার অপারেশনের পর আমি কুৎসিত হয়ে যাবো।তার আগেই আপনি আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করুন।
কথাটি শোনা মাত্রই যেনো আফিমের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে চোখ জোড়া বুজে নিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সে।মুহূর্তেই ফর্সা চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে তার।আফিমের এমন রাগ ১০ মাসে এই প্রথম দেখলো নাফিয়া।ভীষণ ভয় লাগছে তার আফিমের এমন রূপে।কথাটি বলা যে কতোটা ভুল হয়েছে তা এখন বুঝতে পারছে নাফিয়া।কিন্তু তার কাছে তো কথাটি সঠিকই মনে হচ্ছে।
নাফিয়ার মানসিক অবস্থার কথাটি ভেবে কিছুটা সময় নিয়ে আফিম নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।কিছুটা সময় চোখ বুজে থাকবার পর নিজের রাগ টা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলো সে।অতঃপর চোখ মেলে নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে সে বলে ওঠে,
-একবার বলেছো,বলেছো! কিন্তু দ্বিতীয়বার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা মাথায় আনলেও মেরে এখানেই পুঁতে রেখে দিবো।আফিম ইবনানের রাগ সমন্ধে তুমি এখনো অবগত নও।
কথা বলার সময় আফিমের কন্ঠস্বর ও লাল হওয়া চোখজোড়া দেখে ভয়ে মাথা নুইয়ে নেয় নাফিয়া।আঁখির জল যেনো আজ তার ফুরচ্ছেই না।আফিম কিছুটা সময় ক্রন্দনরত নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।নাফিয়ার চোখের অশ্রুগুলো আফিমের হৃদয়কে পোড়াচ্ছে ভীষণ।না পারছে সইতে আর না পারছে কষ্টটা দূর করতে।নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে তার।
অসহায় দৃষ্টিতে কিছুটা সময় নাফিয়াকে দেখে নিয়ে আলতো পায়ে নাফিয়ার কাছে গিয়ে অনতিবিলম্বে নাফিয়াকে নিজের বুকে টেনে নেয় আফিম।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওঠে,
-তুমি বড্ড বেশি ভেবে এ বিষয়টিকে বড় বানিয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছো।তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী,মিসেস. আফিম ইবনান।অর্থাৎ আমার অর্ধেক অংশ।এখন আমার ডান হাতের একটি আঙুলে যদি কোনো ত্রুটি হয় তাহলে কি আমি আমার পুরো ডান পাশটিই কেটে নিজের থেকে আলাদা করে ফেলবো?আর যদি এমনটি করি তাহলে আমি বেঁচে থাকতে পারবো?পারবো না।ঠিক তেমনই মিসেস. আফিম ইবনান কে ছাড়া আফিম ইবনান বাঁচতে পারবে না। তুমি আমার কাছে এখন যেমন সুন্দর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঠিক এমন সুন্দরই থাকবে।
আবেগাপ্লুত হয়ে আফিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নাফিয়া।একদিকে আফিমের মুখ হতে উচ্চারিত শব্দ গুলো তাকে সুখানুভূতি দিচ্ছে,ভরসা দিচ্ছে,আশ্বাস দিচ্ছে,নিশ্চয়তা দিচ্ছে ঠিক তেমনই তার রোগটিকেও সে ভুলতে পারছে না।কিন্তু এই মূহুর্তে সে এই রোগটি সম্পূর্ণরূপে ভুলে যেতে চাইছে।কারণ আফিমের হৃৎস্পন্দনে সে নিজের জন্য এতোটা ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছে যে পুরো দুনিয়াটা তার মিছে মনে হচ্ছে,এসব রোগ অতি তুচ্ছ মনে হচ্ছে।

!!
আফিমের দাদীর কক্ষে পাতানো সোফায় নাফিয়ার প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বসে আছেন সানিয়া বেগম।সম্পূর্ণ প্রেসক্রিপশনে চোখ বুলিয়ে নেবার পর তার আর বুঝতে বাকি রয় না রোগটির বিষয়ে।তিনি এখন এও বুঝতে পারছেন যে তখন নাফিয়ার ওমন দৌড়ে নিজের কক্ষের উদ্দেশ্যে গমন করার কারণ কি ছিলো!সানিয়া বেগম একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে তার শাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন,
-আম্মা একটি বিষয় আপনাকে জানাতে চাইছি।
-নাফিয়ার বিষয়ে?
-জ্বি।
-বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছে বৌমা।বলো তো কি হলো মেয়ে টার?ওমন কাঁদছিলো কেনো?আর ওভাবে দৌড়ে কক্ষেও বা গেলো কেনো?
ভীষণ মন খারাপ নিয়ে মৃদু স্বরে সানিয়া বেগম বলে ওঠে,
-নাফিয়ার ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে বলে ধারণা করছে ডাক্তার।
-কি বলো!এ রোগের চিকিৎসা কি?
-এ রোগ শরীরে কতো টা ছড়িয়ে পরেছে সেটির উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়।নাফিয়ার হয়তো অপারেশন করতে হবে।হয় টিউমারটি কেটে ফেললেই রেহাই মিলবে নাহয় যে পাশে টিউমার হয়েছে সে পাশটি পুরোটাই কেটে ফেলতে হবে।
-কি!!যদি এমনটিই হয় তবে কি এমন একটি ত্রুটিপূর্ণ মেয়ের সাথেই সারাটি জীবন কাটাবে আমাদের,আফিম?
-কি বলতে চাইছেন,আম্মা?

চলবে

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৮
লেখিকাঃমাহযাবীন

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নাফিয়া।নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে।তাকে দেখতে কোনো আগুন সুন্দরীর মতো না লাগলেও সে যথেষ্ট সুন্দরী।কোমর অব্দি লম্বা চুল তার।চুল বেশি ঘন না আবার একদম যে পাতলা তাও না।তার এই ভাসা ভাসা চোখে গাঢ় কাজল লাগিয়ে,কোমর অব্দি লম্বা সোজা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখতে নাকি মারাত্মক লাগে।যে কেউ নাকি এ রূপের প্রেমে পরতে বাধ্য।অবশ্য এ কথার প্রমাণও পেয়েছে সে।প্রথম যখন এভাবে আফিমের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলো তখন আফিমের নেশালো চাহনিই বলে দিয়েছিলো নাফিয়া এ রুপে কতোটা মোহনীয়!
আচ্ছা,অপারেশনের পরও কি তার এ রুপ,এ সৌন্দর্য,এ মোহনীয়তা থাকবে?অপারেশনের পর যখন তার শারীরিক পরিবর্তন আসবে তখনও কি তার দিকে এতোটা নেশালো চাহনিতে তাকাবে আফিম?
প্রতিটি মেয়েই আদুরে হয়।তার প্রিয় মানুষ টির সামনে সে নিজেকে যথাসাধ্য সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে চায়।প্রিয় মানুষটির কাছ হতে নিজের সৌন্দর্যের বর্ণনা শুনতে পছন্দ করে,নিজের প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে।প্রিয় মানুষটির চোখে নিজের প্রতি মুগ্ধতা দেখতে পছন্দ করে।পছন্দ করে দুষ্টু মিষ্টি প্রেমময় আদর নিতে।নাফিয়াও এর বিপরীত নয়।সেও আফিমের চোখে নিজের জন্য একরাশ মুগ্ধতা দেখতে চায়।আফিমের সামনে নিজেকে যথাসাধ্য সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে চায়। কিন্তু তা কি আর সম্ভব হবে!
সৌন্দর্যই যেনো মেয়েদের মনোবল বৃদ্ধি করে।একটি মেয়ে নিজেকে যখন সুন্দর ভাবে তখন তার মাঝে এক আলাদা মনোবল তৈরি হয়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন নিজেকে সুন্দর হিসেবে দেখে তখন তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।আবার এই সৌন্দর্যের অনুপস্থিতি একটি মেয়ের আত্মবিশ্বাস শূন্যে আনতে সক্ষম।তাদের মনোবল ভেঙে গুড়িয়ে দিতে সক্ষম।
নাফিয়াও যেনো ধীরে ধীরে নিজের মনোবল হারিয়ে ফেলছে।নিজের মাঝেই নিজে ভেঙে পরছে সে, নিজের আত্মবিশ্বাস ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে।নিজেকে কেমন যেনো নিজের কাছেই ভালো লাগছে না তার।

!!
-তোমাকে কিছু কথা বলবার জন্যে এখানে ডেকেছি।

দাদীর গম্ভীর কন্ঠস্বরে এমন কথা শুনে কিছু টা চিন্তিত হয় আফিম।নাফিয়াকে নিজের বাহুডোর আঁটকে রাখা কালীন সময়ে একজন গৃহপরিচারিকা তাদের কক্ষের দরজায় কড়া নেড়ে আফিমকে খবর দেয় দাদী ডাকছে।তাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নাফিয়াকে একা রেখে সে দাদীর সাথে কথা বলবার জন্যে দাদীর কক্ষে আসে।
ব্রু কুঁচকে দাদীকে উদ্দেশ্য করে আফিম বলে ওঠে,
-কি কথা?
-নাফিয়ার রোগ সমন্ধে ডাক্তার যা বলেছে তা তোমার মায়ের কাছ হতে শুনেছি।ডাক্তার সাহেবা এ রোগ নিয়ে নিজের মন্তব্য ব্যক্ত করবার পূর্বে কি কিছু পরিক্ষা করেছেন?
-কোনো টেস্ট করা হয়নি।তবে ওকে আলাদা নিয়ে হয়তো ওর বুকে যে চাকার মতো অনুভব হয় সেটি পরিক্ষা করে দেখেছেন।সেই সাথে নাফিয়ার মেডিকেল রিপোর্টস চেক করেছিলো এবং প্রয়োজনীয় সকল তথ্য নিয়েছেন।
-এ রোগের চিকিৎসা বলেনি।তাই তো?
-টেস্ট করবার পর জানাবে।
একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দাদী বলে ওঠেন,
-যদি অপারেশনের মাধ্যমে পুরো পাশটি কাটতে হয় তবে?
-ওর সুস্থতাই আমার এক মাত্র কামনা,দাদী।
-দেখো আফিম নিজের স্ত্রীর মন্দ সময়ে তার পাশে থাকা অবশ্যই একজন স্বামীর কর্তব্য।আর তুমি যেমন নাফিয়ার সাথে আছো ঠিক তেমনই আমরাও নাফিয়ার সাথে আছি।ওর ভালোটাই আমাদের সবার কাম্য।
মলিন চেহারায় একটু হাসি ফুটিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-জানতাম।ধন্যবাদ দাদী।তবে কি আমি যেতে পারি?
দাদীও নিজের ঠোঁটে একটু হাসি এনে বলে ওঠে,
-আরেকটু বসো।
নাফিয়ার চিন্তায় দাদীর কাছে দুদণ্ড বসাও বেশ কঠিন হয়ে পরছে আফিমের কাছে।তাও সে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে আর স্থান ত্যাগ করলো না।
দাদী আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-নাফিয়ার চিকিৎসায় কোনো ধরনের কমতি থাকুক তা আমি মোটেও চাচ্ছি না।ও সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে থাকুক এমনটিই চাইছি আমি।কিন্তু একটি বিষয় যা এখন বলাটা সমুচিত কি নয় তা বুঝে উঠতে পারছি না।তুমি তো জানোই আমি নিজের মাঝে কথা দাবিয়ে রাখতে পারি না।তাই এখনই বলছি,আমি চাই না আমার পোতা এমন ত্রুটিযুক্ত মেয়ে নিয়ে পুরো জীবন পাড় করুক।
ব্রু জোড়া কুঁচকে আফিম বলে ওঠে,
-কি বলতে চাইছো?
-দ্বিতীয় বিয়ের…….
দাদীর আর কিছু বলে উঠার আগেই উঠে দাঁড়ায় আফিম।রাগে নিজের দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় সে।কিছু কঠিন শব্দ জিহ্বা অব্দি আসার পরও তা উচ্চারণ না করে নিজেকে সংযত করে সে বলে ওঠে,
-নাফিয়ার জায়গায় যদি আমি হতাম তাহলে এই পরামর্শ তুমি নাফিয়াকেও দিতে?
-স্বামী আর স্ত্রী এক নয় আফিম।মেয়েদের মেনে নিয়ে এবং মানিয়ে নিয়ে সংসার করতে হয়।
-তাহলে নাফিয়ার জায়গায় আফরিন(আফিমের সৎ বোন)হলে ওর স্বামীকে তুমি এই পরামর্শ দিতে?
উত্তরে চুপ হয়ে যান দাদী।নিজের ছেলের মেয়ে সতীনের সংসার করবে এমনটি কখনোই সহ্য করতে পারবেন না তিনি।
দাদীর নিরাবতা দেখে আফিম বলে ওঠে,
-নারীরাই নারীদের শত্রু।আফরিনের বেলায় যা তোমার সহ্যের বাইরে নাফিয়ার বেলায় তুমি তাই ই চাইছো।এ কেমন নীতি তোমার?আরেকটি কথা,যাকে তুমি ত্রুটিপূর্ণ বলেছো,সে আমার অর্ধাঙ্গিনী।আর এ রোগ মোটেও তার ত্রুটি নয়।সে সুন্দর তার মনের সৌন্দর্যের জন্য।শরীরের সৌন্দর্য নিয়ে তো দেহব্যবসায়ীরা পরে থাকে।
বলে আর দাঁড়ায় না আফিম।দ্রুত পদে কক্ষ ত্যাগ করে।

!!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই নিচের ঠোঁট কামড়ে চোখ জোড়া বুজে একটু শব্দ করেই কাঁদছে নাফিয়া।ঠিক এই মুহূর্তেই কক্ষে প্রবেশ করে আফিম।একে তো দাদীর কথায় রাগে ফুঁসছে সে।এর মাঝে নাফিয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে আরও রাগ বেড়ে যায় তার।দ্রুত পদে নাফিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে নাফিয়ার বাম হাতটি ধরে এক হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে সে।এক হাতে কোমর আঁকড়ে ধরে ও অপর হাতে নাফিয়ার চুল মুঠোবন্দি করে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দেয় আফিম।আফিমের এমন কাজে চমকে যায় নাফিয়া।চোখ বড় বড় করে আফিমের দিকে তাকায় সে।কিন্তু আফিম চোখ বুজে নিজের কাজে ব্যস্ত।সময়ের সাথে সাথে নিজের চোখজোড়াও বুজে নেয় নাফিয়া।ধীরে ধীরে আফিম নামক নেশালো ঘোরে প্রবেশ করতে আরম্ভ করে সে।নিজের দু’হাত ধীরে ধীরে আফিমের মাথা অব্দি নিয়ে আফিমের চুলগুলো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে সে।
নাফিয়া পুরোপুরি শান্ত হতেই তাকে ছাড়ে আফিম।একে-অপরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে তারা।আফিম আলতো করে নিজের দু’হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে নাফিয়ার চোখের পানি মুছে দেয়।অতঃপর কিছুটা সময় উভয়ই চোখ বুজে কাটাবার পর আফিম চোখ মেলে তাকিয়ে নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-আর যদি তোকে কাঁদতে দেখি,জানে মেরে ফেলবো।
-চোখের পানি সহ্য করতে পারেন না তাহলে মারবেন কি করে?(ঠোঁটে হাসি টেনে বলে ওঠে নাফিয়া)
-ওয়ান্না সি হাও?[দেখতে চাও,কিভাবে?]
-হুম।
নাফিয়ার সম্মতি পেয়ে আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তোলে।সেই সাথে আর দেরি না করে নাফিয়ার গলার নিচের অংশটায় কামড় বসিয়ে দেয় সে।ব্যথায় শব্দ করে চেচিয়ে উঠে নাফিয়া।কিন্তু আফিমের ছাড়ার নাম নেই।আফিমকে নিজের থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে নাফিয়া।অবশেষে কিছুটা সময়ের মধ্যেই আফিম নাফিয়াকে ছেড়ে কিছু টা দূরে সরে দাঁড়ায়।ঠোঁটে তার এখনো বাঁকা হাসি ঝুলছে।আফিমের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আয়নায় নিজের ক্ষত টার দিকে দৃষ্টিপাত করে নাফিয়া।জায়গা টা লাল হয়ে দাঁতের দাগ বসে কিছুটা রক্ত বেড়িয়ে এসেছে।সেই সাথে জায়গাটা ভীষণ জ্বলছে।
রাগী দৃষ্টিতে আফিমের দিকে তাকিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আপনি আমায় এভাবে কামড়ালেন!নিজেকে কি ভ্যামপ্যায়ার মনে হয় আপনার?
-ইয়েস।এভাবেই কামড়ে কামড়ে মারবো তোমায়।(বলে চোখ মারে আফিম)
-আচ্ছা তাই?আজ এর শোধ আমি নিবোই।
বলেই আফিমের দিকে এগিয়ে যায় নাফিয়া।এদিকে নাফিয়াকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই দৌড়ে সরে যায় আফিম।আফিমের পেছন পেছন নাফিয়াও দৌড়াচ্ছে।পুরো রুমটা টায় গোল গোল কয়বার দৌড়াবার পরও নাফিয়া আফিমকে ধরতে সক্ষম হয় না।
দৌঁড়ানোর মাঝেই আফিমের কানে আসে,”আহহ” শব্দটি।পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে নাফিয়া বিছানায় বসে আছে।চেহারায় ব্যথা পাবার চাপ প্রকাশ পাচ্ছে।আফিম দেরি না করে নাফিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসে।নাফিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে ওঠে,
-আর ইউ ওকে,মিসেস.আফিম ইবনান?
উত্তরে কিছু না বলে আফিমকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে আফিমের উপরে উঠে একটি শয়তানি হাসি দিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-এখন আপনাকে কে বাঁচাবে?
কথাটি বলে আর সময় অপচয় করে না নাফিয়া।আফিমের গলার নিচের অংশে দাঁত বসিয়ে দেয় সে।ফর্সা শরীরে কামড়ের জায়গাটা একদম লাল হয়ে গিয়েছে।দাঁতের দাগ বসে কিছুটা রক্তও বেড়িয়ে এসেছে সেথা হতে।নাফিয়া জায়গা টায় চোখ বুলিয়ে ব্রু কুঁচকে বলে ওঠে,
-এমন কামড়ে ব্যথা তো অনেক পাওয়ার কথা!সেখানে আপনি তো “আহ” শব্দ তাও করেন নাই।
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-এসব ইঁদুরের কামড়ে আফিম ইবনানের কিছুই হয় না।
-কি!আমি ইঁদুর?
-কামড় তো তাই ই বলছে।ছোট ছোট দাঁত!(বলেই ঠোঁট চেপে হাসে আফিম)
রাগে নাফিয়া আবারও আফিমের বুকে কামড় বসাতে যায় কিন্তু তার আগেই আফিম তাকে বিছানায় ফেলে তার উপর ভর দিয়ে শুয়ে পরে।আচমকা আফিমের এমন কাজে হতবাক হয়ে যায় নাফিয়া।আফিম নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-এখন আপনাকে কে বাঁচাবে মিসেস.আফিম ইবনান?
নাফিয়া এর উত্তরে কিছু বলতে পারে না।এক দৃষ্টিতে আফিমের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে সে।আফিমের চোখে ভীষণ মাদকতা দৃশ্যমান।আফিম তার নেশালো চাহনিতে কিছুটা সময় নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে ধীরে ধীরে নাফিয়ার অনেকটা কাছে চলে আসে।চোখে জোড়া বুজে নিয়ে নাফিয়ার গলায় মুখ ডুবায় সে।নাফিয়াও চোখ জোড়া বুজে নিয়ে দু’হাতে আফিমের চুল আঁকড়ে ধরে।

চলবে

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-১৫+১৬

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৫
লেখিকাঃমাহযাবীন

“কোনো এক রাতের আকাশের নিচে ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোতে আপনার আঙুলের ভাঁজে আঙুল গুঁজে উদ্দেশ্যহীন অনেকটা পথ চলতে চাই,আফিম।”
নাফিয়ার কথায় ঠোঁটে এক চিলতে হাসি টেনে আফিম বলে ওঠে,
-তবে আজ রাতটিই সে রাত হোক?
ঠোঁট হাসি টেনে সম্মতি দেয় নাফিয়া।

রাত ঠিক ১২ টা বেজে ১৫ মিনিটের মতো।রাস্তা সম্পূর্ণ জনমানব শূন্য তা বলা যাচ্ছে না।কারণ পথ চলার মাঝেই ১/২ জনের দেখা পাওয়া যাচ্ছে।সেই সাথে খালি ২/৩ টে রিকশেরও দেখা মিললো।কিন্তু তাও পরিবেশ টা নিস্তব্ধ।ঠান্ডা বাতাস খুব বেশি না হলেও স্বস্তি দিচ্ছে।আকাশটা চাঁদ বিহীন কেমন যেনো শূন্য শূন্য কিন্তু তারার মেলায় বেশ লাগছে।
নাফিয়া ও আফিম উভয়ই হাত ধরে ধীরে ধীরে হাঁটছে।অনেকটা সময় নিরাবতা চলার পর নাফিয়া নিরাবতা ভেঙে বলে ওঠে,
-আজ থেকে ঠিক ১০ মাস আগে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো।
একটু বিস্ময় নিয়ে ঠোঁটে আলতো হাসি টেনে আফিম বলে ওঠে,
-মনে রেখেছো দেখছি!
-রাখতেই হতো।যে কান্ড ঘটিয়ে ছিলেন!
-আর তুমি কি করেছিলে?
এক ব্রু উঁচু করে বলে ওঠে আফিম।
ঠোঁটে একটি চোরা হাসি টেনে নাফিয়া বলে ওঠে,
-কি করেছিলাম?
উত্তরে কিছু না বলে রাগী চোখে নাফিয়ার দিকে তাকায় আফিম।এমন রাগী চাহনিতে নাফিয়ার চোরা হাসি বিলীন হয়ে গেলো।সে নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে বলে ওঠে,
-আপনিই বাধ্য করেছিলেন।ওমন বাজে কথার উত্তরে যেকোনো মেয়ে ওমনটাই করতো।
-মাঝ রাতে ঝড়ের মধ্যে নিস্তব্ধ রাস্তায় একা একটি বোরকা পরিহিত কোনো ভালো পরিবারের মেয়ে থাকে?
-জানি মাঝরাতে বোরকা পরে পতিতারা রাস্তায় ঘোরে।আসলে সেদিন টিউশনি করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরার পথে মনে পরলো বাসায় কিছু বাজার দরকার তাই বাসার পথ ছেড়ে বাজারের পথ ধরলাম।বাজার বাসা থেকে দূরেই ছিলো।৯ টায় বাজার শেষে যখন ফিরবো তখন ঘটলো আরেক বিপত্তি।জুতো ছিড়ে গিয়েছিলো।বাজার থেকে বেরিয়ে একটু সামনে গেলেই জামা-কাপর সহ জুতোর দোকান আছে।তাই জুতো কিনবার জন্যে সেখানে যাই।আমার আবার সহজে কিছু পছন্দ হয় না।তাই পুরো শোরুম খুঁজে খুঁজে অবশেষে মোটামুটি পছন্দের একটা জুতো কিনলাম।এগুলো করতেই ১০ টা বেজে গেলো।তারপর বাড়ি ফিরার উদ্দেশ্যে শোরুম দিয়ে বেরোতেই খেয়াল করলাম ঝড়ের পূর্বাভাস।চটজলদি রিকশার খোঁজে লেগে পরেছিলাম।কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির সময় সদাসর্বদাই রিকশার খোঁজ মেলে না আর মিললেও তখন ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা হয়ে যায়।সেদিন ও এমন হচ্ছিল।১/২ টো যা পেলাম তার ভাড়া শুনে আর উঠলাম না।রিকশার খোঁজে সামনের দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েও রিকশা পেলাম না।অবশেষে হাঁটা ছাড়া উপায়ও ছিলো না।এমন সময় নিজেই নিজেকে কঠিন কিছু গালি দিয়েছিলাম,কেনো সেই ১/২টো রিকশার মাঝে কোনোটায় উঠে যাইনি!
নাফিয়ার কথার উত্তরে আফিম বলে ওঠে,
-তোমার ওমন কিপ্টামির জন্যেই তোমার সাথে আমার ওভাবে দেখা হয়।তাই দোষ সব তোমার।ঐ কাজের পানিশমেন্ট এখন অব্দি পাওনি তুমি।অনেক ছাড় দিয়ে দিয়েছি।এখন পানিশমেন্ট দেওয়ার পালা।
ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আজ আমাদের বিয়ের ৬ মাস পূর্ণ হলো,আফিম।আর এই দিনে আপনি আমায় শাস্তি দিতে চাইছেন?
-চাইছি।এখন এই মুহূর্তে আমার যে গালে চর দিয়েছিলে সে গালে গুনে গুনে ১০০ টি চুমু দিবে।
বিস্মিত চোখে আফিমের দিকে তাকিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-এমন রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে?
-ইয়াহ!
-অসম্ভব।
-ভেবে বলছো?
-একদম।
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-ঠিক আছে।আমি আগামী কালই আমার পিএ এরিন কে নিয়ে ৭ দিনের জন্যে বিজনেস ট্যুরে যাবো।

বাঙালি নারী আর যাই পারুক,নিজের পুরুষের আশেপাশেও অন্য কোনো নারীকে সহ্য করতে পারে না।নাফিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি ভিন্ন নয়।আফিমের কথায় মুহূর্তেই রেগে গেলো সে।রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,
-খবরদার!এ কাজ করলে আপনার রক্ষা নেই।
-করবো যদি এ পানিশমেন্টটি স্বীকার না করো তবে।(বেপরোয়া সুরে কথাটি বলে ওঠে আফিম)
কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে নাফিয়া একটু একটু করে আফিমের অনেকটা কাছে চলে আসে।আলতো করে আফিমের গালে ঠোঁট ছোঁয়াতেই আফিম নিজের চোখ জোড়া বুজে নেয়।নাফিয়ার হৃৎস্পন্দন বেশ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।সেই সাথে লজ্জাও লাগছে তার কিন্তু যত যাই হোক নিজের বরকে তো অন্য নারীর সাথে দেখা সম্ভব নয়।
গুনে গুনে আফিমের পুরো গাল জুড়ে তেরোটি চুমু দিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আর কতো,আফিম?
-৮৭ টি।
-আর পারবো না।
-ঠিক আছে।এরিনের….
কথাটি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই রাগে নাফিয়া উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে।মজাটি যে অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছে তা বুঝতে পেরে আফিম নাফিয়ার পেছন পেছন গিয়ে হাত ধরে এক টানে নাফিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।অতঃপর বলে ওঠে,
-কোথায় যাচ্ছো?
-যেখানে ইচ্ছে সেখানে।আপনি যান না এরিনের কাছে!
-সত্যি যাবো?
-হ্যা।
-ঠিক আছে।
বলেই নাফিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আফিম।রাস্তা ফাঁকা হওয়ার পুরো ফায়দা লুটছে সে।নাফিয়া রাগে নিজেকে আফিমের বাহু বন্ধন হতে ছাড়াতে চেষ্টা করে তবে ব্যর্থ হয়।আফিম বলে ওঠে,
-কি গন্ধ!বাঁচা যাচ্ছে না।
আফিমের কথায় নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা থামিয়ে বলে ওঠে,
-কোনো গন্ধই তো নেই!
-কোনো কিছু পোড়ার ভীষণ গন্ধ পাচ্ছি।
নাফিয়ার আর বুঝতে বাকি রয় না আফিম কি বুঝাচ্ছাতে চাইছে।নাফিয়া আবারও নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরে।নাফিয়ার কাজে আফিমের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।সে ঠোঁটে হাসি নিয়েই জড়িয়ে ধরে রাখে নাফিয়াকে।
কিছুটা সময় পাড় হতেই নাফিয়ার রাগ অনেকটা শান্ত হয়ে যায়।সে চুপটি করে আবদ্ধ হয়ে আছে আফিমের বাহুডোরে।
নাফিয়ার রাগ কমেছে বুঝতে পেরে আফিম বলে ওঠে,
-চলো সামনে এগোনো যাক।
উত্তরে কিছু বলে না নাফিয়া।আফিমের বাহুডোর হতে ছাড়া পেতেই সে হাঁটতে আরম্ভ করে।সাথে আফিমও।কিছুটা পথ চলতেই একটি মুদি দোকান খোলা পায় আফিম।এতো রাতে সচরাচর কোনো দোকানই খোলা থাকে না।কিন্তু মাঝে মাঝে এক-দুটি এমন খোলা পাওয়া যায়।
আফিম কিছু একটা ভেবে সে দোকানে প্রবেশ করে।নাফিয়া আফিমকে সেই দোকানে যেতে দেখে দোকানের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে।১/২ মিনিটের মাঝেই হাতে একটি কোণ আইসক্রিম নিয়ে ফিরে আসে আফিম।
আইসক্রিম দেখেই নাফিয়ার রাগ উধাও।আফিম আইসক্রিমটি তার দিকে এগিয়ে দিতেই সে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে আইসক্রিমটি নিয়ে নেয় সে।

!!
রান্নার জন্যে ২ জন সেফ(chef) আছে।সেই সাথে ঘরের অন্যান্য কাজের জন্যেও গৃহপরিচারিকা আছে ২ জন।তাই জন্যে ঘরের বউ হওয়ার পরও নাফিয়ার তেমন কোনো কাজ থাকে না।সে আগের মতোই দাদীর সাথে থাকে।দাদীর এবং সানিয়া বেগমের খেয়াল রাখা ও তাদের সাথে গল্পে সারাটি দিন কাটে তার।
সখ করেই মাঝে মাঝে নিজে রান্না করে নাফিয়া।আজও তার ইচ্ছে হলো সবার জন্যে বিশেষ কিছু রান্না করার।আফিম ঝাল খুব পছন্দ করে সেই সাথে সবসময় রিচ ফুড বেশি খাওয়া পরায় আজ নাফিয়া ভিন্ন কিছু বলতে ঝাল করে আলু ভর্তা করার পরিকল্পনা করে।সেই সাথে ডিম ভাজা ও ডাল না হলে তো চলবেই না।সানিয়া বেগম এবং দাদী আবার রাতে রুটি খান।তাই জন্য নাফিয়া রুটি,পাঁচ মিশালি সবজি ও গাজরের হালুয়া তৈরি করার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী রান্না শুরু করে সে।অনেকটা রান্না প্রায় শেষ এমন সময় হটাৎই সে তার শরীরের একটি অঙ্গে ব্যথা অনুভব করে।ধীরে ধীরে ব্যথাটি বাড়ছে।এমন ব্যথা সে আগেও ক’বার অনুভব করেছে কিন্তু তেমন একটা গায় লাগায়নি।কিন্তু আজকাল ব্যথাটা বেশি হচ্ছে সেই সাথে অঙ্গে কিছু পরিবর্তনও লক্ষ্য করছে সে।

চলবে

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৬
লেখিকাঃমাহযাবীন

কফি হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে নাফিয়া।চোখে রাতের অন্ধকার আকাশের দিকে থাকলেও মন ছেয়ে আছে তার দুশ্চিন্তা।নিজ শরীরের অঙ্গের ব্যথাটিকে জড়তার জন্যে এতো টা দিন অবহেলা করলেও ব্যাপারটি এখন বেশ ভাবাচ্ছে তাকে।
কক্ষের বিছানাতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আফিম।কক্ষ হতে বারান্দাটি ভালোভাবেই দেখা যায়।কাজের মাঝেই হটাৎ আফিমের চোখ পরে নাফিয়ার দিকে।বাতাসে মেয়েটির কোমর অব্দি লম্বা চুলগুলো উরছে।পেছন থেকে নাফিয়াকে দেখতে বেশ মোহনীয় লাগছে।আফিম নিজের কোল হতে ল্যাপটপটি সরিয়ে বিছানায় রেখে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বারান্দার উদ্দেশ্যে।
হটাৎ কোমরে অতি পরিচিত হাত দ্বয়ের স্পর্শ পেয়ে এক অদ্ভুত শিহরণে চোখজোড়া বুজে নেয় নাফিয়া।আফিম নাফিয়ার ঘাড়ে আলতো একটি চুমু বসিয়ে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-কিছু নিয়ে চিন্তিত?
অবাক হয় নাফিয়া।লোকটা কিভাবে যে ওকে এতোটা বোঝে তা বুঝে উঠতে পারে না সে।চোখ বুজে রেখে আফিমের বুকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
-আফিম,আমার হয়তো ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
কথাটি কানে আসতেই ব্রু জোড়া কুঁচকে নেয় আফিম।নাফিয়াকে নিজের দিকে ফিরিয়ে পা হতে মাথা অব্দি চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
-কি হয়েছে তোমার?
আফিমের প্রশ্নের কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না নাফিয়া।কথাটি বলতে ভীষণ রকমের অস্বস্তিবোধ করছে সে।ঠিক তেমনই লজ্জা লজ্জাও লাগছে তার।কথাটি কিভাবে বলবে বুঝতে না পেরে সে বলে ওঠে,
-জানি না।ডাক্তার দেখালে জানতে পারবো।
-রোগের নাম জানতে চাইনি।লক্ষণ কি প্রকাশ পেয়েছে তা বলো।
নাফিয়া বেশ বুঝতে পারছে কথাটি আফিমকে না বলা অব্দি তার রেহাই মিলবে না।

!!
ঢাকা মেডিকেল কলেজের গাইনী বিভাগের একজন মহিলা ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে আফিম এবং নাফিয়া।উভয়ের হৃদয় ধুকপুক করছে।ভীত এবং চিন্তিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারা ডাক্তারের দিকে।কিছুটা সময় নিয়ে ডাক্তার সাহেবা বলে ওঠেন,
“আপনি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত মিসেস.ইবনান।”
কথাটি শোনা মাত্রই যেনো নাফিয়ার হৃৎস্পন্দন থেমে থেমে যাচ্ছে।সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না এ কথার কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে সে।কথাটি যেনো কোনো ভাবেই হজম করতে পারছে না নাফিয়া।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম নিয়ে নাফিয়া একটু হাসার চেষ্টা করে ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-এমন সামান্য লক্ষণ থেকে আমার ক্যান্সার কি করে হতে পারে?আপনি তো এখন অব্দি কোনো পরিক্ষা করে দেখেননি।হতেও তো পারে আপনি ভুল ভাবছেন।
নাফিয়ার মনোভাব বুঝতে পেরে ডাক্তার সাহেবা কিছু টা সময় নিয়ে বলে ওঠে,
-আপনার অনুভূতি টা আমি বুঝতে পারছি মিসেস. ইবনান।লক্ষণগুলোকে আপনি সামান্য বলছেন কারণ আপনার এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই।আসলে আমাদের বাঙালি সমাজে মেয়েরা এ অঙ্গ নিয়ে কথা বলতে ইতস্ততবোধ করে।সেখানে সচেতনতা সৃষ্টি হবে কোত্থেকে আর মেয়েরা এ ব্যাপারে জানবেও বা কোত্থেকে?
-তাও ডাক্তার আপনি আরেকটু পরিক্ষা করে দেখেন?অন্য কোনো রোগ ও তো হতে পারে।(করুন কন্ঠে বলে ওঠে নাফিয়া)
-আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত।
ডাক্তারের কথার উত্তরে আর বলার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না নাফিয়া।সে সত্যিই এমন রোগে আক্রান্ত?নিস্তেজ হয়ে নিজের দৃষ্টি মাটিতে আবদ্ধ করে নেয় সে।নিজেকে কেমন যেনো অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে তার।
আফিম ডাক্তারের কথাটি শোনা মাত্রই যেনো থমকে গেলো।নাফিয়া এমন বড় একটি রোগে আক্রান্ত তা ভেবেই নিজের পুরো দুনিয়াটা অন্ধকার লাগছে তার কাছে।কিচ্ছু ভাবতে পারছে না সে।কেমন যেনো ভয় কাজ করছে তার মাঝে।নাফিয়ার কিচ্ছুটি হতে দিতে চায় না আফিম।কারণ নাফিয়াকে হারানোর সামর্থ্য তো তার নেই।”এ রোগ নিরাময়যোগ্য তো?” এ প্রশ্নটি মাথায় আসতেই আফিম ভীত ও চিন্তিত কন্ঠে ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-এ রোগের চিকিৎসা আছে তো?
ডাক্তার সাহেবা ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
-আছে।দেখুন মিঃইবনান,ব্রেস্ট ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ আছে।যেমন-বুকে বা বগলে চাকার মতো কিছু অনুভব করা,বুকের চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া বা চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া(কমলা লেবুর খোসার মতো) ইত্যাদি।এসব উপসর্গ আপনার ওয়াইফের মাঝে পরিলক্ষিত হয়েছে।আবার এ রোগ হওয়ার কারণ সমূহের মধ্যে আছে-দেরি করে বিয়ে করা, শারীরিক পরিশ্রম কম করা,খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি কম থাকা,অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া এবং পরিবারে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ইতিহাস থাকা।এসবও মিসেস. ইবনানে মাঝে পরিলক্ষিত হয়।এসব তথ্য অনুযায়ী বলছি যে সে এই রোগে আক্রান্ত।কিন্তু চিকিৎসা দেওয়ার আগে কিছু টেস্ট করা আবশ্যক।যেমন-ম্যামোগ্রাফি, আলট্রাসনোগ্রাফি,এম আর আই,বায়োপসি।
-এ রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য তো?
-জ্বি।শুরুর দিকে এলে ১০০ ভাগ নিরাময় যোগ্য।কিন্তু অনেক বেশি দেরি হয়ে গেলে এ রোগের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত হয়।মিসেস.ইবনান যে শুরুর দিকে এসেছেন এমনটি নয়।তিনি ও যথেষ্ট দেরি করে ফেলেছেন।এখন টেস্ট করে সার্জনের সাথে পরামর্শ করে চিকিৎসা আপনাদের জানানো হবে।হয় টিউমারের অংশ টুকু কাটলেই এই রোগ হতে নিরাময় লাভ করবেন নাহয় পুরো একপাশটিই কেটে ফেলতে হবে।
আফিম এতো টুকুতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে যে,তার নাফিয়াকে হারাতে হবে না।কিন্তু এ রোগটির প্রভাবে নাফিয়া মানসিক ভাবে কতোটা ভেঙে পরবে তা ঠিকই বুঝতে পারছে সে।বিষয়টি তার মানতেই কষ্ট হচ্ছে সেখানে নাফিয়ার মনের হাল ঠিক কেমন তা কল্পনা করার সাহস করলো না আফিম।নাফিয়াকে সে সামলাতে পারবে তো!
নিজের অনুভূতিগুলোকে পাত্তা না দিয়ে সে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করে নাফিয়াকে সামলানোর জন্য।
ডাক্তার সাহেবা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নিরাবতা দেখে বলে ওঠেন,
-বিষয়টিকে আপনারা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার চেষ্টা করুন।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ এ রোগে মারা যান।বেশিরভাগ নারীরা এ রোগে মারা যান তাদের অসচেতনতা এবং জড়তার জন্যে।বাংলাদেশি নারীরা নিজেদের এ অঙ্গের নাম মুখে নিতেও যেখানে লজ্জাবোধ করে সেখানে এ অঙ্গের কোনো সমস্যা নিয়ে অন্য কারো সাথে আলাপ-আলোচনা করা তো চিন্তাতেই আনা যায় না।ফলে এ রোগ সৃষ্টির একদম শেষের দিকে যখন তারা সহ্য করতে অক্ষম ঠিক তখনই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।কিন্তু তখন কিছু করার থাকে না এবং পরিনতি হয় মৃত্যু।মিসেস.ইবনান তো তাও সময় থাকতেই এসেছেন।তাই শুকরিয়া করুন।
-ধন্যবাদ।
বলে আর দেরি করা না আফিম।নাফিয়ার দিকে ফিরে তাকাতেই হৃদয় মোচড় দিয়ে ওঠে তার।মেয়েটির চেহারা পানে তাকানো যাচ্ছে না।দেখতেই কেমন অনুভূতি শূন্য লাগছে।আফিম নিজেকে সামলে নাফিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে ওঠে,
-চলো,উঠি।
নাফিয়া,আফিমের দিকে না তাকিয়েই ধীরে ধীরে উঠে হাঁটা আরম্ভ করে।নাফিয়ার এমন অবস্থা আফিমকেও ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে কিন্তু তার তো শক্ত থাকতেই হবে,তার প্রিয়ার জন্যে।আফিম দেরি না করে নাফিয়ার পেছন পেছন যেয়ে নাফিয়ার হাতটি শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।এতেও নাফিয়ার উপর কোনো প্রভাব পরে না।মেয়েটির মাঝে যেনো কোনো অনুভূতিই কাজ করছে না।

!!
সকাল সকাল আফিম ও নাফিয়াকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরোতে দেখে নিজেদের খুশি ধরে রাখতে পারছে না সানিয়া বেগম এবং দাদী।নতুন মেহমানের সুখবর শোনার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুণছে তারা।দু’জনে মিলে তো এখন থেকেই ভাবা শুরু করে দেয়েছে মেয়ে হলে কি নামে ডাকবে এবং ছেলে হলে কি নামে ডাকবে।সেই সাথে আরো অনেক জল্পনা কল্পনাও করে ফেলেছেন দুই বৌ-শাশুড়ি মিলে।তাদের আর তর সইছে না।কখন আফিম ও নাফিয়া এসে তাদের সুখবর দেবে আর কখন তারা পুরো মহল্লায় মিষ্টি বিতরণ করবেন।

অবশেষে অপেক্ষার প্রহরের ইতি টেনে আফিম ও নাফিয়া উভয়ই বাড়ি ফিরে আসে।আফিমের আগেই নাফিয়া গৃহে প্রবেশ করলো।ড্রয়িং রুমেই বসে ছিলেন সানিয়া বেগম তার ছেলে ও ছেলের বৌয়ের অপেক্ষায়।নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে তিনি দ্রুত পদে নাফিয়ার কাছে এসে বেশ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠেন,
-সুখবর তো?
শাশুড়ির উচ্ছ্বসিত কন্ঠ শুনে তার মুখ পানে তাকায় নাফিয়া।তার আনন্দিত চেহারা যেনো নাফিয়ার কষ্ট কয়েকশত গুণ বৃদ্ধি করে দিলো।এতোক্ষণ নিজেকে অনুভূতি শূন্য করে রাখলেও এখন আর নিজের অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলো না নাফিয়া।অনুভূতির প্রকাশ তার চোখেও ফুটে উঠলো।চোখ দু’টো ঝাপসা হতেই সে কিছু না বলে নিজের কক্ষের উদ্দেশ্যে দৌড়ে এগিয়ে গেলো।এতোক্ষণে আফিমও সেখানে উপস্থিত হয়।নাফিয়াকে দৌড়ে কক্ষের দিকে অগ্রসর হতে দেখে সেও নাফিয়ার পেছন পেছন দ্রুত পদে অগ্রসর হয়।

চলবে।

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-১৪

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৪
লেখিকাঃমাহযাবীন

বিয়ের আগে মেয়েদের মনে নানান অনুভূতিরা বাসা বাঁধে।তাদের মনে ভয়,সংশয় এবং অস্থিরতার অনুভূতি যেমন জায়গা করে নেয় ঠিক তেমনই আরেকটি হচ্ছে লজ্জানুভূতি।
জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ে পা রাখবার জন্যে যেমন অধীরতা কাজ করে ঠিক তেমনই এক নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারবে কিনা এ নিয়ে থাকে ভয় এবং সংশয়।
অতি প্রিয় ও কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় কি আদৌও?যত বারই নাফিয়া ভাবছে সে মিস.শেখ হতে মিসেস.আফিম ইবনানে পরিণত হবে ততবারই এক তীব্র সুখ অনুভব করছে সে।সেই সাথে আছে উত্তেজনা,প্রশান্তি,মুগ্ধতা ও লজ্জা।এতো এতো সুন্দর অনুভূতির মাঝে ভয়,সংশয় ও অস্থিরতাও রয়েছে।
সেন্টমার্টিনের বুকে নির্মিত ব্লু মেরিন রিসোর্টের একটি কক্ষের জানালার ধারে দাঁড়িয়ে অনুভূতির সাগরে সাঁতরাতে ব্যস্ত নাফিয়া।রাত পোহাতেই শুরু হবে তার বিয়ের প্রস্তুতি।সন্ধ্যের মধ্যেই সে শেখ পরিবারের মেয়ে হতে ইবনান পরিবারের পুত্রবধূতে পরিণত হবে।একটি জিনিস ভেবে ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে নাফিয়ার।আর তা হলো,এতোদিন তাদের প্রেমের সাক্ষী ছিলো আকাশ,বাতাস,চাঁদ ও তারা।আর এখন এদের সাথে সমুদ্রও যোগ হয়েছে।তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পাবার গল্পটা সমুদ্রের বুকেও লিখে যাবে তারা।
হটাৎই নাফিয়ার ফোনটি বেজে ওঠে।ফোনটি হাতে নিতেই দেখতে পায় “অভিরতি” [Addiction] লিখে সেভ করা নাম্বার হতে কল আসছে।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে নাফিয়া কলটি রিসিভ করে কানে ধরে।কিন্তু ফোনের ওপাশ হতে কোনো শব্দ আসে না।কিছুটা সময় এভাবেই নিরব থাকবার পর ফোনের ওপাশ হতে মৃদু কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
-This is not fair,Miss. Sheikh![এটি ঠিক নয়,মিস.শেখ]
-কোনটি?
-১০ দিনে একটি বারও দেখা করোনি।
-বিয়ের আগ অব্দি দেখা করা নিষেধ।
-Do you think that i care about this?[তোমার মনে হয় আমি এর পরোয়া করি?]
-কালই তো বিয়ে।
উত্তরে কিছু বলে না আফিম।আবারও উভয়ের মাঝে নিরাবতা বিরাজ করছে।এরা একে-অপরের কন্ঠস্বরের থেকে নিঃশ্বাসের শব্দই যেনো বেশি উপভোগ করে।ঠিক যেমন ঠোঁটে উচ্চারিত হওয়া শব্দগুলোর থেকে চোখে ভেসে ওঠা অনুভূতিগুলোই উপলব্ধি করায় মত্ত হতে পছন্দ করে এরা।
নিরাবতা ভেঙে আফিম বলে ওঠে,
-রুম হতে বেরোতে পারবে?
-উহু।
-ইচ্ছে করেই করছো।
উত্তরে মুচকি হাসে নাফিয়া।আফিম মিথ্যে বলেনি।সে সত্যিই ইচ্ছে করেই এ দশ দিন আফিমের সাথে দেখা করেনি।আসলে দূরত্ব কাছে আসার আনন্দকে কয়েকশত গুণ বৃদ্ধি করে দেয়।আফিমকে এতোটা দিন ধরে না দেখে থাকতে নাফিয়ার কম খারাপ লাগছে না কিন্তু কাল যখন একেবারে আফিম তার হয়ে যাবে এবং ১০ দিনের তৃষ্ণার্ত চোখ আফিমের দর্শন করবে তখনের অনুভূতিটি হবে এক অন্য রকম প্রশান্তির।
অনেকটা সময় উভয়ই নিরাবতা পালন করবার পর নাফিয়া বলে ওঠে,
-কাল পূর্ণিমা রাত!
-হু।
-জানতেন?
-হু।
-ইচ্ছে করেই বিয়ে এ দিনে ঠিক করেছেন,নয় কি?
-কাল জানতে পারবে।শুভ রাত্রি!
বলেই ফোনটি কেটে দেয় আফিম।

!!
সেন্টমার্টিনের নামকরা একটি রিসোর্ট ব্লু মেরিন।যা ফেরিঘাটের কাছেই অবস্থিত।রিসোর্টটি যেমন বড় ঠিক তেমনই সুন্দর।এ রিসোর্টের ৩য় তলায় বুফেট রেস্টুরেন্টের মতো খাবার ব্যবস্থা আছে।সেই সাথে আছে থাকার জন্যে কক্ষের ব্যবস্থাও।পুরো তৃতীয় তলা বুক করে নিয়েছেন অভ্র সাহেব।মেয়ের বিয়ে বলে কথা!
ঘাড়ে ঋণের বোঝা থাকতেও তিনি তার দুই কন্যার বিয়ের জন্য জমিয়ে রাখা ৮ লাখ টাকার একটি টাকাও কখনো খরচ করেননি।৪ লাখ টাকা করে ৮ লাখ টাকা দুই কন্যার বিয়েতে ব্যয় করবেন বলে জমিয়ে রেখেছিলেন।নাফিয়ার জন্যে যখন আফিমের প্রস্তাব আসে তখন সম্মতি দেওয়ার সময় চিন্তায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছিলো তার।এতো বড় পরিবারের সাথে সম্বন্ধ করতে চলেছেন, বিয়ের খরচ উঠাতে পারবেন তো!বিষয়টি প্রথম দিকে যতটা কঠিন লাগছিলো তার কাছে পরে আরো কঠিন মনে হয়েছিলো যখন আফিম সেন্টমার্টিনে বিয়ে করবার আবদার করে।কিন্তু এখন যেনো চিন্তের ছিতে ফুটাও নেই অভ্র সাহেবের।বিয়েতে মেহমান বলতে শুধু আফিমের খালার পরিবার এবং চাচার পরিবার।মামা আর ফুপু নেই আফিমের।আর নাফিয়ার তরফ থেকে শুধুই তার মামার পরিবার।কারণ খালা,চাচা,ফুফু কোনোটিই নেই তার।
রিসোর্টে প্রতিটি মেহমানের কক্ষ ভাড়া এবং খাওয়ার খরচ ব্যতীত তেমন কোনো খরচ করতে হচ্ছে না অভ্র সাহেবের।আফিমের পরিবার কোনো শর্তও দেয়নি তাকে।এমন কি নাফিয়ার বিয়ের কাপড় নাফিয়াকে সাথে নিয়ে সানিয়া বেগমই কিনে দিয়েছিলেন।আফিমকে যে নাফিয়ার পরিবার কিছু দেয়নি এমনটি নয়।আফিমকে নিয়ে অভ্র সাহেব গিয়েছিলেন কেনাকাটা করতে।মোট ৪০ হাজার ওখানে খরচ করে এসেছিলেন তিনি

বিয়ের জন্য দুটি রুম সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।একটি ছেলেদের জন্য এবং অপরটি মেয়েদের জন্য।আর একটি রুম বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে।যাকে বলে বাসর ঘর।
সন্ধ্যে ঠিক সাড়ে ৭ টা।নাফিয়াকে সাজিয়ে বসানো হয়েছে মেয়েদের জন্যে সাজিয়ে রাখা কক্ষটিতে।অন্যদিকে আফিমও বিয়ের শেরওয়ানিতে বর সেজে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।বধু বেশে তার প্রিয়াকে দেখতে কতোটা মনোমুগ্ধকর লাগতে পারে তা কল্পনায় আনতে বারংবার ব্যর্থ হচ্ছে সে।অপেক্ষা যেনো পুরোচ্ছেই না।

রাত ৮ টায় কাজী সাহেব উপস্থিত হন বিয়ে পড়াতে।প্রথমে আফিমকে কবুল বলতে বলা হলে সে তড়িৎ গতিতে বলে ওঠে,”কবুল”।যেনো কয়েক সেকেন্ড বিলম্বে উত্তর দিলে তার বউ ভেগে যাবে।উপস্থিত বড় বুজুর্গ ব্যক্তিসহ আফিমের কাজিনসরা শব্দ করে হেসে ওঠে।সেই সাথে অনেকে তো বলেই বসে,”তাড়া দেখছিস!এখন দিয়েই বৌ পাগলা”।এদের হাসি বা কথায় বিন্দু পরিমাণ ভ্রুক্ষেপ করে না আফিম।সে তো দ্রুত বিয়ে টা সেরে তার মিস.শেখকে দেখতে চায়।
এদিকে নাফিয়াকে কবুল বলতে বলা হলে মেয়েটি অনুভূতির সাগরে সাঁতরাতে সাঁতরাতে বেশ সময় নিয়েই বলে “কবুল”।
অবশেষে চারিদিকে “আলহামদুলিল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ” শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।সবার মাঝে সে কি আনন্দ,উল্লাস!

!!
বাসর ঘরে লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো বিছানাটিতে চুপটি করে বসে আছে নাফিয়া আফিমের অপেক্ষায়।পুরো ১০ দিন পার হয়ে ১১ দিনের দিন লোকটিকে দেখবে সে।হৃদয় জোরে জোরে স্পন্দিত হয়ে জানান দিচ্ছে সে কতোটা ব্যকুল তার প্রিয়র দর্শন পেতে।অপেক্ষার প্রহর বেশি লম্বা হলো না।৫/৬ জন মেয়ে কাজিনস সহ কক্ষে প্রবেশ করলো আফিম।নাফিয়ার দিকে চোখ যেতেই থমকে দাঁড়ালো সে।সিঁদুর লাল রঙের বেনারসি শাড়িতে একটি রূপসী নিজেকে জড়িয়ে বসে আছে।যার চোখে গাঢ় কালো কাজল,ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক,খোঁপায় গুজা ফুল।আফিমের হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলছে।পুরো পৃথিবীটা যেনো তার জন্যে থেমে গিয়েছে আর সে চোখ ভরে দেখে নিচ্ছে তার সদ্য বিয়ে করা এই মায়াবীনিকে।
কক্ষে উপস্থিত কাজিনসরা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে আফিম ও নাফিয়া উভয়ের একে-অপরের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে।হটাৎ একজন গিয়ে আফিমকে ধাক্কা দিয়ে বলে ওঠে,
“সারা রাত পরে আছে।তখন নাহয় ইচ্ছে মত দেখে নিস।তোর বউকে কেউ তুলে নিয়ে যাবে না।এখন যেয়ে তার পাশে বস এবং আমাদের ছবি তুলতে দে।” ধ্যান ভাঙতেই আফিম কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে,
-বিয়ে করছি কি তোদের সাথে ছবি তোলার জন্য?যা বের হো আমার রুম থেকে।আমার বৌয়ের সাথে শান্তিতে থাকতে দে।
কাজিনদের মাঝে আবারও হাসির রোল পরে যায়।সবাই নানা কথা বলে মজা করতে আরম্ভ করে।আর এদিকে বেচারি নাফিয়া লজ্জায় লাল,নীল হচ্ছে।

চলবে।

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃস্পেশাল [সমুদ্র বিলাস]
লেখিকাঃমাহযাবীন

সমুদ্র বিলাসের শ্রেষ্ঠ সময়টি হয়তো রাত।আর যদি রাতটি হয় জোৎস্নাময় তবে এর মুগ্ধতা অবর্ণনীয়।রাতের নিস্তব্ধতা,ঠান্ডা বাতাসের আলতো করে ছুঁয়ে যাওয়া,সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দে মন দুলে উঠা, আকাশের বুকে মস্ত বড় চাঁদের উপস্থিতি যা তার জোৎস্না দিয়ে পৃথিবীর অর্ধেকাংশের কুটকুটে অন্ধকার দূরীভূত করে এবং পৃথিবীতে প্রেরণ করে তাপহীন মনোমুগ্ধকর আলো।সেই সাথে জোৎস্নার আলো যখন সমুদ্রের পানিতে প্রতিফলিত হয় তখন পানিগুলো দেখতে যেনো রাশি রাশি মুক্তোর দানা।

আফিম ও নাফিয়া উভয়ই সমুদ্রের কিনারা ধরে ধীরে ধীরে পথ চলছে।একটু পর পর সমুদ্রের পানি ঢেউ হয়ে এসে আলতো করে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তাদের পা দু’টো।একে-অপরের আঙুলে আঙুল ঢুকিয়ে নিরবে হাঁটছে তারা।এমন মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি ও পরিবেশে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে হাঁটার অনুভূতি প্রকাশের কোনো শব্দ আছে কি?
উহু!এ অনুভূতিটি শুধুই অনুভব করা যায়,ব্যাখা করা যায় না।কিছু বিশেষ অনুভূতি এমনই হয়,নামহীন ও বর্ণনাতিত। ধুকপুক করা হৃদয় ও লজ্জানুভূতি নিয়ে হাঁটার মাঝেই একটু পর পর তাকাচ্ছে নাফিয়া,আফিমের দিকে।আফিমের ঠোঁটে হাসি নেই তবে তার শান্ত চেহারা তার মনের প্রশান্তি ব্যক্ত করছে।আফিম হাঁটার মাঝেই হটাৎ থেমে যায়।নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-চলো পানিতে খানিকটা ভিজে আসি!
আফিমের কথায় অবাক হয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-এই রাতে পানিতে?
-তো?(ব্রু কুঁচকে বলে ওঠে আফিম)
-মোটেই না।আমার ভয় লাগে।
-তবে তো ভিজতেই হবে।(ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে বলে ওঠে আফিম)
নাফিয়া এর তীব্র অসম্মতি জানিয়ে কিছু বলে ওঠার আগেই আফিম তার হাত ধরে হাটু অব্দি পানিতে নিয়ে আসে।কাজটি এতোটাই দ্রুত করে আফিম যে নাফিয়া কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাতে সময় পায় না।হাটু সমান পানিতে এসে আফিম থামতেই নাফিয়া আফিমকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে।আফিমও জড়িয়ে ধরে নাফিয়াকে নিজের মাঝে।ঠোঁটে হাসি নিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-আমার বুকে লেপ্টে থাকার সুযোগ আরো পাবে কিন্তু এসময়ের এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য টা মিস করলে আর নাও পেতে পারো।
আফিমের কথার কোনো উত্তর দেয় না নাফিয়া।সে ভয়ে আফিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই আছে।আসলে নাফিয়ার পানির আতংক আছে(ওয়াটার ফোবিয়া)।তাই জন্যেই এতোটা ভয় পাচ্ছে সে।আফিম ধীরে ধীরে নাফিয়াকে নিজের বক্ষ হতে উঠিয়ে শান্ত কন্ঠে নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে,
-আমি আছি তো!তোমার কিচ্ছু হবে না।শুধু ঐ দিক টায় তাকাও।
ভালোবাসা এক অদ্ভুত রকমের অনুভূতি।এই অনুভূতিতে যেমন আছে বিশ্বাস,ঠিক তেমনই আছে ভরসা ও নির্ভরতা।আফিমের কথায় এক বুক ভরসা নিয়ে নিজের ভয়কে দূরে ঠেলে আফিমের বিপরীত দিকে ফেরে নাফিয়া।আহা,কি সুন্দর সেই দৃশ্য!আকাশে মস্ত বড় চাঁদ আর চাঁদের আলো পানিতে পরায় পানি জ্বলজ্বল করছে।সেই সাথে হাটু অব্দি পানিতে নামায় সমুদ্রের ঢেউয়ের পানির স্পর্শ মিলছে।ঠান্ডা বাতাস তো আছেই।মুহূর্তেই ভয় ভুলে একরাশ মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়ে গেলো নাফিয়ার মন।হটাৎই পেটে কারো দু’হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো সে।আফিম পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেছে।নাফিয়ার কাঁধে মুখ রেখে চোখ জোড়া বুজে নেয় আফিম।নাফিয়াও এর বিপরীত নয়।সেও নিজের চোখজোড়া বুজে নিয়েছে।উভয়ই সমুদ্রের এই সৌন্দর্যে অনুভূতির সাগরে ডুব দিচ্ছে।

এভাবেই অনেকটা সময় পার হবার পর আফিম নাফিয়কে বলে ওঠে,
-চলো ওদিক টায় যাওয়া যাক।
আফিমের কথায় সম্মতি দেয় নাফিয়া।উভয়ই পানি হতে উঠে আরো কিছুটা পথ চলে।হাঁটার মাঝেই নাফিয়া বলে ওঠে,
-আমরা ফিরবো কখন?
নাফিয়ার প্রশ্নে তার দিকে তাকায় আফিম।অতঃপর বলে ওঠে,
-রাত টা এখানেই থাকছি।
আফিমের কথায় অবাক হয় নাফিয়া।এমন একটি বিশেষ রাত আফিম সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে কাটিয়ে দিতে চাচ্ছে!মুহূর্তেই মন খারাপ হয়ে যায় তার।কিন্তু তা প্রকাশ করে না সে।আফিম নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে তার মন খারাপ হওয়া টা উপলব্ধি করে।ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে সে বলে ওঠে,
-ঐ দিক টায় তাকাও।
আফিমের ইশারা অনুযায়ী সেই দিক টিতে তাকাতেই সে দেখতে পায় একটি ক্যাম্পিং তাঁবু।তাঁবুটির চারপাশটা এলইডি নেট লাইটস দিয়ে সাজানো।খুশিতে নাফিয়ার ঠোঁটে এক লম্বা হাসি ফুটে ওঠে।সে আফিমকে উদ্দেশ্য করে বেশ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে ওঠে,
-আমি তাঁবুটির কাছে যাই?
ঠোঁটে হাসি নিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-তোমার জন্যেই করা হয়েছে।
-উহু!আমাদের জন্য।
বলে আর দেরি করে না নাফিয়া।এক প্রকার দৌড়ে তাঁবুর দিকে এগিয়ে যায় সে।নাফিয়ার উচ্ছ্বাস দেখে বেশ ভালো লাগছে আফিমের।সে ঠোঁটে হাসি নিয়ে নাফিয়ার পেছন পেছন এগিয়ে যায়।

তাঁবুটির ভেতরে দু’জনের জন্যে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।একটি ছোটো ম্যাট্রেস বিছানো আছে এবং তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কয়েকটি গোলাপের পাপড়ি।খুবই সুন্দর লাগছে নাফিয়ার কাছে তাঁবুটি।সে আফিমের কাছে এসে ঠোঁটে আনন্দের হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
-এতোটা অনন্য না হলেও পারতেন,আফিম।বাসর রাতে জোৎস্না বিলাস তো অনেকেই করে কিন্তু সমুদ্র বিলাস ক’জনে করে?এতো অসাধারণ চিন্তা কোত্থেকে আসে আপনার মাথায়!
ঠোঁটে হাসি টেনে আফিম দু’হাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে।নাফিয়া চমকে আফিমের দিকে তাকায়।উভয়ই একে-অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।আফিম ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
-পছন্দ হয়েছে?
-অনেক বেশি।এই বিশেষ রাতটিকে সত্যিই আপনি ভীষণ বিশেষ করে দিয়েছেন যা আমি কখনোই আশা করেছিলাম না।
-তবে তো তোমারও কিছু করা উচিৎ আমায় বিশেষ অনুভব করানোর জন্য।(ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে বলে ওঠে আফিম)
এ কথায় নাফিয়ার মুখখানি লজ্জায় লাল হয়ে যায়।কিন্তু আফিম যেহেতু তার জন্যে এতোটা করেছে তবে তারও তো কিছু করা উচিৎ।নিজের মাঝে লজ্জাগুলোকে নিয়েই ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁট আফিমের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় সে।আলতো এক স্পর্শ কপালে এঁকে দিয়ে আফিমের দুচোখে এবং গালেও ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় নাফিয়া।আফিম চোখ বুজে ভালোবাসা নিচ্ছে তার প্রিয়ার।গালে ঠোঁট ছোঁয়ানোর পর নাফিয়া,আফিমের ঠোঁটের দিকেও অগ্রসর হয় কিন্তু একরাশ লজ্জা এসে বাঁধা দেয় তাকে।সে আর না এগিয়ে আফিমের বুকে নিজেকে লেপ্টে নেয়।নিজের বুকে নাফিয়ার অস্তিত্ব অনুভব করে চোখ বুজে রেখেই ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তোলে আফিম।দু’হাতে শক্ত করে নাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
-হাও আর ইউ ফিলিং,মিসেস.আফিম ইবনান?
আফিমের নেশালো কন্ঠস্বরে নাফিয়া ধীরে ধীরে এক তীব্র ঘোরে জড়িয়ে পরছে।হৃদয়ের স্পন্দন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে তার।সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
-জানি না তবে এক অন্য রকম ভালোলাগার অনুভূতি।
আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
-পূর্বের দু’টি ধন্যবাদ তোলা ছিলো,মনে আছে?
-হু।
-কিভাবে ধন্যবাদ বলতে হয় শিখিয়ে দিয়েছিলাম!নাও গিভ মি থ্যাংকস ইন দ্যাট ওয়ে।[এখন আমাকে ওভাবে ধন্যবাদ দেও]
ধন্যবাদ বলার সেই পদ্ধতিটি মনে পরতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় নাফিয়া।চোখজোড়া বুজে থাকা অবস্থাতেই ঠোঁটে লজ্জা মাখা হাসি ফুটে ওঠে তার।ধীরে ধীরে আফিমের বক্ষ হতে মুখ উঠিয়ে তার চোখ পানে তাকায় সে।চেহারায় লজ্জা ও চোখে তার মাদকতা।জোৎস্নার আলোতে নাফিয়ার এমন মোহনীয় রূপ আফিমকে একটি ঘোরের মাঝে নিয়ে যাচ্ছে।সে ঘোর লাগা কন্ঠে নাফিয়াকে বলে ওঠে,
-ডু ইট ফাস্ট,মিসেস.আফিম ইবনান।
আজ আফিমের কোনো আবদারই ফিরিয়ে দিতে চায় না নাফিয়া।নিজের লজ্জাকে যথাসম্ভব সংযত করবার চেষ্টা চালিয়ে এই অসাধ্য কাজটি করবার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করছে সে।চোখ জোড়া বুজে তার ঘোড়ার গতিতে স্পন্দিত হওয়া হৃদয় নিয়ে কচ্ছপের গতিতে আফিমের ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে নিজের ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নিতে থাকে নাফিয়া।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাদের ওষ্ঠদ্বয় একে-অপরকে স্পর্শ করে।আফিমের ওষ্ঠদ্বয়ের স্পর্শ পেতেই নাফিয়ার শরীরে যেনো বৈদ্যুতিক শক লাগে।সে ছিটকে সরে আসে আফিমের থেকে।
আফিম অবাক হয়ে তাকায় নাফিয়ার দিকে।নাফিয়ার এমনটি করার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে।
আফিমের থেকে সরে এসে নিজের লজ্জারাঙ্গা মুখখানি মাটির দিকে নুইয়ে রাখে নাফিয়া।তার হৃৎস্পন্দন কতোটা বেড়ে গিয়েছে তা তার নিঃশ্বাসের গতিই বয়ান করছে।
আফিম নাফিয়ার এতোটা লজ্জা পাওয়া দেখে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে নাফিয়ার দিকে।আফিমকে নিজের দিকে এগোতে দেখে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরে নাফিয়া।ভীষণ লজ্জা লাগছে তার।বিশেষ করে,আফিমের ঘায়েল করা চাহনি তার হৃদয়ে গিয়ে লাগছে।হটাৎ ই সে নিজের কোমরে আফিমের হাত জোড়ার স্পর্শ অনুভব করে।সাথে সাথে কেঁপে ওঠে সে।সেই সাথে কাঁধে আফিমের গরম নিঃশ্বাসও অনুভব করতে পারছে।আফিম পেছন থেকেই নাফিয়ার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে এক হেঁচকা টানে নাফিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।অনতিবিলম্বে নাফিয়ার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে নেয় আফিম।এভাবেই ধীরে ধীরে একে-অপরের সাথে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়ে দুজনে।

প্রকাণ্ড খোলা আকাশের নিচে ও বিশাল সমুদ্রের কিনারায় জোৎস্নার আলোতে এক নব দম্পতি তাদের ভালোবাসার পূর্ণতার গল্প লিখছে।এ গল্পের পাঠক ঐ খোলা আকাশ,প্রবাহমান বাতাস,বহমান সমুদ্রের পানি এবং আকাশের বুকে বিরাজ করা সেই মস্ত বড় চাঁদটি।

চলবে

আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-১২+১৩

0

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১২
লেখিকাঃমাহযাবীন

রাত ঠিক ১০ টা বাজে।আফিমের কথা রাখতেই নিজের পরিবারকে বুঝিয়ে আজই আফিমদের বাড়িতে চলে আসে নাফিয়া।ঠিক সন্ধ্যে ৭ টায় এ বাড়িতে এসে পৌঁছায় সে।দাদী ও সানিয়া বেগম উভয়ের সাথে দেখা হলেও আফিমের দেখা পায় না সে।তার দুচোখ জোড়া আফিমকেই খুঁজে বেরাচ্ছিলো কিন্তু চোখের তৃষ্ণা মিটলো কই?
দাদী ঘুমিয়ে যাওয়ায় নিজ কক্ষে এসে গোসল টা সেরে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ায় নাফিয়া।মন টা তার ভালো নেই।আফিমকে একটি বারের জন্য হলেও আজ দেখতে চায় সে।আকাশ পানে তাকিয়ে মুখ গোমড়া করে সে বলে ওঠে,
-কাল তো খুব বলেছিলো,”I wanna see you tomorrow at home” আর এখন নিজেরই খবর নেই।
ঠিক এই সময়ই নাফিয়ার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়।ওমনি ধুক করে ওঠে নাফিয়ার হৃদয়।হয়তো আফিম এসেছে এই ভেবে ধুকপুক করা হৃদয় নিয়ে ধীরে ধীরে দরজার কাছে এগিয়ে যায় সে।এক বুক আশা নিয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পায় দরজার ওপাশে একজন গৃহ পরিচারিকা দাঁড়িয়ে আছে।মুহূর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো নাফিয়ার।ব্রু কুঁচকে মেয়েটির দিকে তাকাতেই মেয়েটি বলে,
-আফিম স্যার আপনাকে ছাঁদে যেতে বলেছেন,ম্যাম।
বিগড়ে যাওয়া মেজাজ আবারও ভালো হয়ে যায় নাফিয়ার।সে কোনোমতে ওরনা পেঁচিয়ে ছাঁদের দিকে এক প্রকার দৌড়ে অগ্রসর হয়।ঠোঁটে তার আলতো হাসি।

!!
ছাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে আফিম।পরনে সাদা একটি শার্ট এবং ব্লু জিন্স প্যান্ট।বাতাসে তার শার্টসহ চুলগুলো নড়ছে আর সে নিস্তব্ধ হয়ে এক দৃষ্টিতে আকাশপানে তাকিয়ে আছে।
আকাশে আজও চাঁদ নেই তবে আজ তারা আছে।কালো আকাশ টায় ঝলমলে তারাগুলো দেখতে বেশ লাগছে আফিমের।
ছাঁদে এসে আফিমের পেছন দিকটা চোখে পরে নাফিয়ার।আফিমের উপস্থিতিই তার মাঝে ভালো লাগা তৈরিতে সক্ষম।সাদা শার্টে আফিমকে পেছন থেকেই দেখতে খুব ভালো লাগছে তার।না জানি সামনে দিয়ে দেখতে কতোটা সুন্দর লাগছে ছেলেটিকে!
নাফিয়া ধীর পায়ে আফিমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিকে তাকায় আফিম।নাফিয়াকে দেখে দৃষ্টি স্থির রাখে সে নাফিয়ার দিকে।আবারও এই গাঢ় খয়েরী রঙের চোখে ঘায়েল হলো নাফিয়া।দু’জনই একে-অপরের চোখের গভীরতা মাপতে ব্যস্ত হয়ে পরে।আফিম ধীর পায়ে নাফিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে।এবার আর নাফিয়া পিছিয়ে যায় না বরং আফিমের চোখে চোখ রেখে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে।আফিম,নাফিয়ার কাছে এসে দু’হাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে নাফিয়াকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-You won’t get leave anymore.[তুমি আর ছুটি পাবে না]
আফিমের বলা কথাটি শুনা মাত্রই নাফিয়ার মনে একরাশ ভালোলাগা এসে জায়গা করে নেয়।তবে কি আফিম চায়,সে সর্বদাই আফিমের বাড়িতে থাকুক?ঠিক এই মুহূর্তেই নাফিয়ার মনে পরে তার মা-বাবা তার জন্য ছেলে পছন্দ করেছে।ভালোলাগা গুলো মুহূর্তেই মধ্যেই বিলীন হয়ে গেলো।নাফিয়া আফিমের চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে,
-আগামী মাসে হয়তো আমায় এই চাকরিটি ছাড়তে হবে।
কথাটি শোনা মাত্রই আফিমের চেহারায় স্বাভাবিকভাবটা পরিবর্তন হয়ে রাগান্বিতভাব প্রকাশ পেতে আরম্ভ করে।আফিম নাফিয়ার কোমর আরেকটু শক্ত করে ধরে বলে ওঠে,
-এন্ড ইউ থিংক আই উইল এলাউ ইউ টু ডু দিস?[আর তোমার মনে হয় আমি তোমাকে এমনটা করতে দিবো?]
উত্তরে নাফিয়া মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-বাবা-মা আমার বিয়ের জন্যে ছেলে পছন্দ করেছে।
সাথে সাথেই আফিম নাফিয়ার কোমর হতে নিজের হাত সরিয়ে নেয়।এক-দু পা পিছিয়ে গিয়ে এক দৃষ্টিতে নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে দাঁড়ায় আফিম।আফিম যে ভীষণ রেগে গিয়েছে তা বুঝতে বাকি রইলো না নাফিয়ার।আফিম আর কিছু না বলেই স্থান ত্যাগ করার জন্য অগ্রসর হতেই নাফিয়া আফিমের হাত ধরে ফেলে।ভীষণ খারাপ লাগায় নাফিয়ার চোখজোড়া কিছুটা ঝাপসা হয়ে আসছে।সে আফিমের হাত ধরেই বলে ওঠে,
-বিয়েতে আমার মত নেই।
নাফিয়ার দিকে ফিরে তাকায় আফিম।নাফিয়া আবারও বলে ওঠে,
-না এ বিয়ে করতে চাইছি আর না এ চাকরি ছাড়তে চাইছি।
নাফিয়ার কথায় আফিমের চেহারায় যে রাগান্বিতভাব টা প্রকাশ পেয়েছিলো তা দূরীভূত হয়ে গেলো।সে নাফিয়ার দিকে ফিরে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কেনো চাইছো না?
উত্তরে চুপ থাকে নাফিয়া।তার চোখ দুটো যেনো আফিমকে না বলা অনেক কথাই বলে দিচ্ছে। আফিম কিছুটা সময় নাফিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে কাছে এসে একহাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে এবং অন্য হাতে নাফিয়ার গাল স্পর্শ করে বলে ওঠে,
-উইল ইউ বি মাই অ্যাডিকশন[addiction] মিস.শেখ?
এই মুহূর্তে আফিম তাকে এ কথাটি বলে বসবে তা ভাবনাতিত ছিলো নাফিয়ার।যতটা না সে অবাক হয়েছে তার চেয়েও বেশি,অতিরিক্ত খুশিতে তার হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলছে।এতো এতো সুখানুভূতি নাফিয়ার হৃদয়ের পুরোটা জায়গা দখলে নেওয়ার পরেও চোখের অশ্রু কণা হয়েও বেড়িয়ে এলো কিছু।ডান চোখের পাশ দিয়ে একটি অশ্রু কণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো নাফিয়ার।সে ভাঙা কন্ঠে আফিমকে বলে ওঠলো,
-উহু!
নাফিয়ার কথাটি যেনো আফিমের কানেই এলো না।সে তো ব্যস্ত নাফিয়ার চোখের গভীরতায় ডুব দিতে।নাফিয়ার ঠোঁট “উহু” বললেও তার চোখজোড়া তীব্রভাবে অসম্মতি জানাচ্ছে।কিছুটা সময় নিয়ে সে বলে ওঠে,
-আমি আপনার আসক্তি নই বরং আপনাতে আসক্ত হতে চাই,আফিম।এতোটাই আসক্ত হতে চাই যতটা হলে একটি দিনও আপনিহীনা থাকতে পারবো না,এতোটাই আসক্ত হতে চাই যে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অন্য কোনো নেশা আমায় কাবু করতে পারবে না,এতোটাই আসক্ত হতে চাই যে প্রতিটি দিন এর আসক্তি বৃদ্ধি পাবে কিন্তু কিঞ্চিৎ পরিমাণও কমবে না।এতোটাই আসক্ত হতে চাই যে নাফিয়ার মাঝে নাফিয়া কম আফিমকেই বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে।বৈধভাবে আপনার হতে চাই,আফিম।আপনার মিস.শেখ থেকে মিসেস.আফিম ইবনান হতে চাই।
এতোটা সময় খুব মনোযোগ দিয়ে নাফিয়ার চোখে চোখ রেখেই নাফিয়ার বলা প্রতিটি শব্দ নিজের মাঝে অনুভব করছিলো আফিম।নাফিয়ার বলা প্রতিটি শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে নাফিয়ার চোখও যেনো অনেক কথাই বলে দিলো আফিমকে।অনুভূতির যে গভীরতায় এই মুহূর্তে দু’জন আছে সেখানে পুরো পৃথিবীটাই অনুপস্থিত।এরা দু’জনই যেনো দুজনের পৃথিবী।বাকি কিছু এই মুহূর্তে তাদের মাথায় নেই।এ এক অন্য রকম ঘোরের মাঝেই বিরাজ করছে তারা।
আফিম নাফিয়ার দিকে নিজের ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নিয়ে কপালে এক গভীর চুমু এঁকে দেয়।অতঃপর নাফিয়ার চোখজোড়ায় নিজের ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দু’গালেও ঠোঁট ছোঁয়ায়।প্রতিটি স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে নাফিয়া।সে এই মুহূর্তে এ পৃথিবীতে নেই বরং আফিম নামক এক নেশাময় ঘোরে বিলীন হয়ে আছে।আফিম নিজের ওষ্ঠদ্বয় নাফিয়ার ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে এগিয়ে নিতে গিয়েও থেমে যায়।নাফিয়ার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
-ইউ উইল বি মিসেস.আফিম ইবনান ভেরি সুন।
নাফিয়ার দিকে তাকিয়েই কথাটি বলে আফিম।নাফিয়া তো সেই কখন থেকে চোখ বুজে আছে।আফিমের কথা কানে আসতেই চোখ বুজে থাকা অবস্থাতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে তার।নাফিয়ার ঠোঁটের হাসিটি দেখে আর দেরি করে না আফিম,নাফিয়াকে ছেড়ে সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।কারণ সে জানে এখানে আর একটু সময় থাকলে এমন কিছু হয়ে যেতে পারে যা হওয়া উচিৎ নয়।

!!
সকাল হতেই অতিরিক্ত রকমের মন ভালো নাফিয়ার।ঠোঁটের হাসি যেনো এক মুহূর্তের জন্যেও উপস্থিতি হারায়নি।প্রতিটি কাজ বেশ উৎসাহের সাথে করছে সে।মন ভালো হওয়ায় পক পক ও কম করছে না সে।নাফিয়ার এই পরিবর্তিত আচারণ প্রত্যেকের নজরে পরছে।সার্ভেন্টস রা তো সবাই এক প্রকার কানাঘুঁষা করা শুরু করে দিয়েছে।সানিয়া বেগম এবং দাদীও বিষয়টি বেশ কিছুক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছেন।অতঃপর সানিয়া বেগম জিজ্ঞেস করেই বসলেন,
-কি ব্যাপার নাফিয়া,তোমায় খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে।
-এ শুধু খুশি নয় বৌমা,এই খুশিতে একটু লজ্জা লজ্জা ভাবও আছে।বিয়ে ঠিক হলো নাকি?(দাদী)
ডাইনিং টেবিলেই বসে ছিলো সবাই সকালের নাস্তা করবার জন্যে।দাদীর প্রশ্নটি করার সময়ই সেখানে উপস্থিত হয় আফিম।নাফিয়ার কিছু বলার আগেই আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে ওঠে,
-ভুল বলোনি দাদী।হতেই পারে গত রাতে ছাঁদে বসে মিস.শেখ এর বিয়ে ঠিক হয়েছে।[নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে সবার অগোচরে চোখ মারে আফিম]
আফিম চোখ মারতেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় নাফিয়া।আফিম আসতেই নাফিয়ার চেহারা লজ্জায় লাল হওয়াটা লক্ষ্য করেন সানিয়া বেগম।সেই সাথে আফিমের এমন উদ্ভট কথা!বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে তার কাছে।
দাদী আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন,
-কি সব বলছো!রাতে তাও আবার ছাঁদে বসে কারো বিয়ে ঠিক হয়?
-মিস.শেখ আপনি বলুন,হয় না?
এ কোন বিপাকে ফেললো আফিম তাকে?এ প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে সে!নাফিয়াকে চুপ করে থাকতে দেখে দাদী বলে ওঠেন,
-তুমি খাও তো,সকাল সকাল এই ছেলের মাথার তার ছিড়ে গিয়েছে।

চলবে

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৩
লেখিকাঃমাহযাবীন

“আমি মিস.শেখকে বিয়ে করতে চাই,মম।”
নিজ কক্ষে এক কাপ গ্রীন টি হাতে নিয়ে সোফায় বসে ছিলেন সানিয়া বেগম।আফিম হটাৎই অনুমতি নিয়ে তার কক্ষে এসে নম্র কন্ঠে কথাটি বলতেই ছেলের দিকে চোখ উঠিয়ে তাকান সে।কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠেন,
-সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছো?
-তোমার মতামত ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়াটা শিখিয়েছো আমায়?
কথাটি শোনা মাত্র সানিয়া বেগমের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি জায়গা করে নেয়।ছেলেকে সুশিক্ষা দিতেই তো তিনি নিজের জীবনের মূল্যবান সময়গুলো ছেলেকে ঘিরেই শেষ করে দিয়েছেন।সেই সাথে ত্যাগ স্বীকারও তো কম করেননি তিনি।আজ তার ছেলে তাকে প্রাপ্য সম্মান,মূল্য এবং ভালোবাসা দেয় এটিই কি তার প্রাপ্তি নয়!
কিছুটা সময় নিশ্চুপ থেকে সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,
-আফিম,আমি তোমায় ভীষণ যত্নে বড় করেছি বাবা।তোমায় একজন যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে গড়তে আমি নিজের তরফ থেকে কোনো কমতি রাখিনি।আলহামদুলিল্লাহ!হয়তো আমি সফলও।অতীতে যেহেতু তোমায় সঠিক পথ প্রদর্শনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বর্তমানে এর বিপরীত করবো না।
মায়ের কথা শুনে ঠোঁটে আলতো হাসি টেনে আফিম সোফায় তার মায়ের পাশে যেয়ে বসে।মায়ের একটি হাত তার দু’হাতের মাঝে নিয়ে তাতে ঠোঁট স্পর্শ করে বলে ওঠে,
-I know mom[আমি জানি মা]
ঠোঁটে হাসি টেনে সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,
-আমি চাইছি বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তুমি নাফিয়াকে ভালো করে জেনে-বুঝে নেও।তোমার বাবা এবং আমার সম্পর্কের বিষয়ে তুমি অজানা নও,আফিম।যে ভুল আমি এবং তোমার পিতা দু’জনে করেছিলাম সে একই ভুল তুমিও করো তা চাইছি না।ঠিক এজন্যেই তোমার ৩৩ বছর বয়স হবার পরও কখনো বিয়ের জন্যে চাপ দেইনি,নিজের থেকে কোনো মেয়েও তোমার জন্যে পছন্দ করিনি।আমি চেয়েছি তোমার জীবন সঙ্গী তুমি নিজে খুঁজে নেও।
-নিয়েছি মম।মিস.শেখ আমার জীবন সঙ্গী হওয়ার জন্য পুরোপুরি যোগ্য।
-ভেবে বলছো?
-হ্যা।
ছেলের কথায় ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে সানিয়া বেগম ছেলের কান টেনে বলে ওঠেন,
-কবে দিয়ে চলছে এসব হ্যা?তলে তলে টেম্পো চালাচ্ছিলে দু’জন?
মায়ের কথায় হেসে দেয় আফিম।

!!
“গার্ডেনে এসো ফাস্ট”
আফিমের নাম্বার হতে ম্যাসেজটি পেতেই ব্রু কুঁচকে ফেলে নাফিয়া।দিনে-দুপুরে চাইছে টা কি ছেলেটা!
দাদীর পায়ে ব্যথা অনুভব হওয়ায় নাফিয়া দাদীর পা ম্যাসেজ করছিলো।এখন কিভাবে যাবে সে আফিমের কাছে!
নাফিয়া পা ম্যাসেজ করতে করতেই দাদীর দিকে তাকায়।দেখতে পায় দাদী ঘুমিয়ে পরেছেন।এখন আর তাকে আঁটকায় কে!খুশিতে তার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।আর দেরি না করে ধীরে ধীরে দাদীর কাছ থেকে উঠে গার্ডেনের দিকে অগ্রসর হয় নাফিয়া।

অনেকটা জায়গা নিয়েই বাড়ির চারপাশ ঘিরে বড় করে গার্ডেন করা হয়েছে।নাফিয়া গেটের বাইরে এসে বুঝে উঠতে পারছে না যে সে আসলে গার্ডেনের কোন দিক টায় গেলে আফিমকে পাবে।ঠিক এমন সময় নাফিয়ার কানে একটি শব্দ আসে।কেউ শিস বাজালে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমনই শব্দ টা।শব্দের উৎসের দিকে তাকাতেই নাফিয়া দেখা পায় আফিমের।ছেলেটি তার দিকে তাকিয়েই পকেটে দু’হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নাফিয়া ধীরে ধীরে তার দিকে এগোতে শুরু করে।সেই সাথে একটু একটু করে লজ্জারা এসে জায়গা করে নিচ্ছে নাফিয়ার মনে, হৃদয়ও আনন্দানুভব করছে।আফিমের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই আফিম নাফিয়ার আরো কাছে এসে দাঁড়ায়।এক হাতে নাফিয়ার গাল স্পর্শ করে নাফিয়ার নাকের সাথে নিজের নাক আলতো করে ঘষে মৃদু স্বরে আফিম বলে ওঠে,
-কি করছিলে?
নাফিয়া চোখ বুজা অবস্থায় মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-পা ম্যাসেজ।
নাফিয়ার কথাটি শুনে চোখ মেলে তাকায় আফিম।শান্ত কন্ঠেই বলে ওঠে,
-এসবের জন্যে সার্ভেন্ট আছে।
ঠোঁটে হাসি টেনে নাফিয়া বলে ওঠে,
-দাদীর প্রতিটি কাজ করার দায়িত্ব আমার নয় কি?
-না।তোমার দায়িত্ব শুধু দাদীর সাথে থাকা এবং তার তিন বেলার ওষুধের প্রতি খেয়াল রাখা।
নাফিয়া কিছু না বলে ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে আফিমের এক গালে হাত রেখে বলে ওঠে,
-দাদীর কাজগুলো করতে আমার ভালো লাগে।আর পা ম্যাসেজ দাদী আমায় করতে বলেননি আমি নিজে থেকেই করেছি।
কথাটি শুনে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-দাদী শাশুড়ীর মন জয় করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বুঝি?
এমন কথায় লজ্জা পায় নাফিয়া।আফিমের গাল থেকে নিজের হাতটি সরিয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি অর্পন করে সে।
নাফিয়ার লজ্জামাখা চেহারাখানির দিকে কিছুটা সময় নিরবে তাকিয়ে থাকবার পর এক ঘোরলাগা কন্ঠে আফিম বলে ওঠে,
-উইল ইউ বি ইন মাই আর্মস,মিস.শেখ?[আপনি কি আমার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হবেন,মিস.শেখ?]
আফিমের করা প্রশ্নে নাফিয়ার লজ্জা আরো কয়েক শত গুণ বেড়ে গেলো।সেই সাথে তার অবাধ্য হৃদয়ের স্পন্দনও বাড়তে আরম্ভ করেছে।নাফিয়া একটু একটু করে কচ্ছপের গতিতে আফিমের একদম কাছে গিয়ে আফিমের বুকে আলতো করে মাথা রাখে।
নাফিয়ার মনে হচ্ছে সে যেনো কোনো এক অসাধ্যকে সাধন করে ফেলেছে।আফিমের হৃদয়ের স্পন্দন প্রথমবারের মতো অনুভব করায় এক অদ্ভুত রকমের প্রশান্তি নাফিয়ার হৃদয়জুড়ে জায়গা করে নিয়েছে এবং আফিমের প্রতিটি হৃৎস্পন্দন,নাফিয়ার হৃৎস্পন্দনকে কয়েকশো গুণ বাড়িয়ে চলছে।দ্রুতগতিতে স্পন্দিত হওয়া হৃদয় নিয়ে আবেশে নিজের চোখজোড়া বুজে নেয় সে।
নিজের বুকে নাফিয়ার অস্তিত্ব পেয়ে ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটিয়ে তোলে আফিম।তার প্রিয়াকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয় সে।

!!
চিন্তার ভাজ নয়না বেগম ও তার স্বামী উভয়ের কপালেই বিদ্যমান।উভয়ই নিজ কক্ষে বসে গভীর ভাবে কিছু একটি নিয়ে ভাবছেন।নিরাবতা ভেঙে নয়না বেগম বলে ওঠেন,
-শুনছেন?
-হুম।
-ব্যাপারটি মোটেও সুবিধের মনে হচ্ছে না আমার।
স্ত্রীর দিকে চোখ উঠিয়ে তাকান অভ্র সাহেব।নয়না বেগম স্বামীর কিছু বলার অপেক্ষা না করে আবারও বলে ওঠেন,
-একে তো অর্থবিত্তের দিক থেকে তারা আমাদের তুলনায় বেশ এগিয়ে।সেই সাথে ছেলের চেহারা তো মা শাহ আল্লাহ!সেখানে আমাদের নাফিয়া শ্যামবর্ণা।তবে কেনো তারা তাদের সোনার টুকরা একমাত্র ছেলের জন্যে নাফিয়ার হাত চাইছে?
-পারিবারিক বিয়েতে আমরা রুপ এবং অর্থবিত্তকে প্রাধান্য দিলেও ভালোবাসা কিন্তু এসবের মোহতাজ নয়।যতটুকু আঁচ করতে পারছি,আফিম হয়তো নাফিয়াকে পছন্দ করেছে।আর নিজের একমাত্র ছেলের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েই সানিয়া বেগম এবং তার শাশুড়ি আজ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন।
-সানিয়া বেগম ও তার স্বামীর সম্পর্ক টাও তো ঠিক নেই।এইসব বড় ঘরের মানুষের সম্পর্ক টেকেই নাহ।আমি আমার মেয়ের বিয়ে এমন ঘরে দিতে চাইছি না।
উত্তরে মুচকি হাসেন অভ্র সাহেব।তিনি তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন,
-সম্পর্কে আবদ্ধ দুটি মানুষই যখন সম্পর্কের যত্ন নেয় তখন সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে না।উভয়ের মাঝে ভালোবাসা থাকলে সম্পর্কে যত্ন থাকে।সময়ের অভাবে একজন যত্ন একটু কম নিলে আরেকজন হয় অভিমান করে সতর্কবার্তা দেয় নাহয় অপর মানুষটির ব্যস্ততা উপলব্ধি করে মানিয়ে নেয় এবং নিজের তরফ থেকে যত্ন নেওয়া টা বাড়িয়ে দেয়।সম্পর্কের যত্ন নেওয়ার জন্য উভয়ের মাঝে ভালোবাসাটা থাকা আবশ্যক।তাই নাফিয়া এবং আফিম উভয় যদি উভয়কে ভালোবাসে তবে এ সম্পর্কে আমরা দ্বিমত করবো না।তবে আফিম মানুষ হিসেবে কেমন সে সমন্ধে খোঁজ নিতে হবে।তুমি নাফিয়ার সাথে কথা বলে জেনে নেও ওর কি মতামত এ বিয়ে নিয়ে।

!!
বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে নাফিয়া।নিজের ভাগ্যের উপর নিজেরই হিংসে হচ্ছে তার।এতো এতো নিয়ামত আল্লাহ এই ক্ষুদ্র সময়ের মাঝে তাকে দিয়েছেন যে সে নিজের ভাগ্যকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।সেই সাথে নিজের এতো আনন্দ রাখবার জায়গা ও তো খুঁজে পাচ্ছে না সে।
বেশি না কয়েক ঘন্টা আগেরই কথা।নাফিয়া গার্ডেন হতে আফিমের সাথে দেখা করে আবারও দাদীর কক্ষে ফিরে আসে।এসে দেখে দাদীর ঘুম ভেঙে গিয়েছে এবং সানিয়া বেগমের সাথে কোনো একটি বিষয়ে কথা বলছেন।বিরক্ত করা টা ঠিক হবে না ভেবে দাদীর কক্ষে আর প্রবেশ না করে নিজের কক্ষে চলে যায় সে।এরই ঠিক ১ ঘন্টার মাঝে সানিয়া বেগম নাফিয়াকে এসে বলেন নাফিয়া যেনো প্রস্তুতি নেয় নিজ বাড়িতে যাবার জন্যে।সেই সাথে এও বলেন যে,সে এবং দাদীও যাবেন।নাফিয়া প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না।আফিমকে কল এবং ম্যাসেজ উভয়ই করেছিলো সে কিন্তু আফিমের তরফ থেকে কোনো সাড়া পেয়েছিলো না।ভয় মনে চেপে রেখে দাদী এবং সানিয়া বেগম উভয়কে নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসে।সানিয়া বেগম এবং দাদীর সাথে ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলেন অভ্র সাহেব এবং নয়না বেগম।কথার মাঝ দিকে ড্রাইভার দু-হাত ভরে মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার নিয়ে উপস্থিত হয়।এসব দেখে এবং লুকিয়ে কিছু কথা শোনার পর নাফিয়ার আর বুঝতে বাকি রয় না কিছু।খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় সে।সেই সাথে একটু চিন্তেও হচ্ছে,তার বাবা-মা বিয়ে টা মেনে নিবে তো?

হটাৎই নাফিয়ার কক্ষের দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হয়।নাফিয়া দেরি না করে দ্রুত পদে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।নয়না বেগম কিছু না বলে কক্ষে প্রবেশ করে বিছানায় গিয়ে বসেন।নাফিয়াও মায়ের পেছন পেছন গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়ায়।নয়না বেগম গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে ওঠে,
-আফিমের জন্য তোমার হাত চাইতে এসেছিলেন সানিয়া বেগম।এ বিষয়ে কিছু জানতে?
-নাহ।
-বিয়েতে তোমার মত কি?
লজ্জায় কি বলবে বুঝতে পারছে না নাফিয়া।নিজের মেয়ের লজ্জায় লাল হওয়া মুখটা দেখেই যা বুঝার বুঝে নেন নয়না বেগম।

চলবে