সুখ পাখি পর্ব-০২

0
1860

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০২

যখন চোখ মেলি আমতো অবাক। আমি রুমে আসলাম কখন? আমি তো বেলকনিতে ছিলাম। শরীরটাও কেমন মেজমেজ করছে। গরমের কারণে মনে হচ্ছে ভিতরটা সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে । আমি আমার বাম পাশে তাকিয়ে দেখি মাহির ভাইয়া এখন তো আমার হাসবেন্ড আর যাই হোক ভাইয়া বলা যাবে না মানে মাহির আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পরনে তার ডার্ক ব্লাক কালারের শার্ট আর পেন্টে তার পাশেই তার কোট। মানে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছেন। আমাকে উঠতে দেখেই সে ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বলে

—-ভাবিস না তোকে দয়া করে বিছানায় নিয়ে আসছি। আম্মু ডাকতে আসছিল তাই। তোর মতো মেয়ের আমার মতো মাহিররে দোয়ার যোগ্যও না। আর হ্যা এটা তোর বাবার বাসা না যে পরে পরে সকাল ১১ অব্দি ঘুমাবি। যা নিচে গিয়ে নাশতা বানা।

মাহিরদের বাসায় অনেক সার্ভেন্ট আর রান্না বান্না সব তারাই করে। কিন্তু তার বলা কথা গুলো আমার অনেক খারাপ লাগেছে। নিয়ে আসলো কেন আমাকে? আমি আমাকে এখানে আনতে বলেছিলাম?? রেগে আমি বিছানা থেকে নেমে, মাহিরের সামনে দাড়িয়ে বলি

—- আমি বলেছিলাম আমাকে এখানে আনতে? আর সাথে সাথে মাহির আমার চুলের মুঠি ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

—- আহহহ আমার লাগছে ছাড়ুন আমাকে, মাহির আর জুড়ে আমাড চুলের মুঠি ধরে বলে

— আমার সামনে এমন চোখ গরম দেখাবিনা। যা এখন আমার চোখের সামনে থেকে দূরহ।

বলেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয় নিজেই চলে যায়। কি করব আমি কিসের জন্য এমন করছে মাহির। মাহির আমাকে ভুল বুঝেছে। আমি জানি সে তো এমন না। আমিতো এই মাহিরকে চিনি না৷ আগের মাহির রাগী থাকলেও সবাইকে যথেষ্ট সম্মান করত। কিন্তু আজ এই মাহিরের তো। তখনই নিশু আসে রুমে । আমি নিশুকে দেখে চোখ মুছে তাড়াতাড়ি উঠে দাড়াই। নিশুর সাথে আমার বন্ডিং টা অনেক ভালো। সেম এজ সেম ক্লাস। নিশু আমাকে দেখে বলে

—- কি হয়েছে কাঁদছিস কেন ফ্লোরে বসে বসে? আমি বলি

— কই না তো কিছু না। নিশু বলে

—- ভাইয়া বকেছে? ভাইয়ার সাথে চুপচাপ প্রেম করে বিয়েটাও করে ফেললি আমাকে বললি না পর্যন্ত? তা নাহলে বুজলাম ভালোবেসে করেছিস। কিন্তু তুই আরেকটা বিয়েতে রাজী কি করে হলি? তাই ভাইয়া রাগটা তোর ওপর ঝারছে। রাগ হওয়াটা কি স্বভাবিক না তুই বল? আমি কি বলবো বুঝতে পারলামনা তাই চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে নিশু বলে

— আচ্ছা বাদদে। নিচে চল খাবি। ভাইয়াতো না খেয়েই বেড়িয়ে পরলো কত করে বললাম শুনলো না, আম্মু আর বাবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে । আমি বললাম

— তুই যা আমি আসছি। আর শুন আম্মু ফোন,,,,, নিশু আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে

— চিন্তা করিসনা সব ঠিক হয়ে যাবে। আম্মু ফোন দিচ্ছে দেখে আসলাম, এখন জলদি নিচে আয়। তার পর ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম দেখি ফুপি বসে আছে। আমাকে দেখে ফুপি বলে

— আয় মা আয় বস।

আমিও চুপচাপ বসে পরলাম আমি বরাবরই এমন। যতযাই হোক খাবারের সাথে রাগ দেখাই না। এক গ্লাস ফ্রেশ জুস আর একটা টোস্ট খেয়ে উঠে পরলাম। ফুপা অফিসে চলে গেলো সবাইকে বিদায় দিয়ে। ঐদিকে নিশুও ভার্সিটির জন্য বেড়িয়ে গেলো। বাসায় আমি আর ফুপি আর কিছু সার্ভেন্ট। আমি ফুপির কাছে গিয়ে বলি

—- ফুপি আসলে,,,,, ফুপি বলে

— দেখ আমি এখন তোর ফুপি না তোর বরের মা মানে তোরও মা। আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। ফুপিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। ফুপি মাহিরকে কত বিশ্বাস করে যদি আমার মা বাবাও একটু বিশ্বাস করত। ফুপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে

—- ধূর পাগলী কান্না করছিস কেন? আমি

— আম্মু,,, বাবা। আমাকে থামিয়ে ফুপি বলে

— ভাইজানকে আমি চিনি তার রাগ এত জলদি ভাঙবে না। সম্মানে আঘাত লেগেছে তার । ফোন করে ছিলাম আমি,,, কেউ ধরেনি। সব সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তুই আর মাহির কাজটা ঠিক করিসনি। আমি তো প্রথমে বেশ রাগ করেছিলাম, কিন্তু পরে ভাবলাম বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে তাহলে নিজের ঘরের বউকে নিজের কাছে নিয়ে আসাই ভালো। এই তোর শরীর গরম কেন দেখি। ফুপি আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে।

আর আমি ভাবছি মাহিরের কথা কত বড় খেলওয়ার সে। কি দানটাই না চাললো। আমি কিছু ফুপিকে কিছু বলতে চেও বললামনা এখন চুপ থাকা টাই ভালো হবে হয়তো।

অপর দিকে মাহির অফিসে না গিয়ে হসপিটালে গিয়েছে মায়াকে দেখতে। মায়ার সাথে মাহিরের পরিচয় হয় মাহিরের এক ফ্রেন্ডের জন্মদিনে আর সেখান থেকে মাহির মায়ার উপর অনেক দূর্বল হয়ে যায়। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্ব থেকে সেটা গড়িয়ে একটা সম্পর্কে পরিনত হয়ে যায়। কিন্তু কোন একটা কারণে মায়া আজ হসপিটালে। আর এই কারণটা মাহির মনে করে আদারাকে। আদারা মায়ার থেকে সব দিক দিয়ে সুন্দর। যেমন উচ্চ লম্বা, তেমনি চলাফেলা, খুবই ভদ্র একটু দুষ্টও বটে। কিন্তু রাগটা তার অনেক, সহজে রাগে না কিন্তু রাগলে তার খবর আছে যার ওপর রেগেছে। আদারা বরাবরই মাহিরকে পছন্দ করে। মাহিরা যখন তাদের গ্রামের বাড়ি যেত আদারা তাকে নিয়ে রোজ বিকেলে ঘুড়তে বেরহত। সময়ের সাথে মাহির আর আদারার মাঝে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। মাহির আদারাকে বোনের চোখে দেখলেও। আদারের মনে তখন নতুন করে ভালোলাগার ফুল ফুটতে লাগে। আদারাও ঢাকা আসত প্রতি গ্রীষ্মের ছুটিতে৷ এসে তার ফুপা, ফুপি, নিশু আর মাহির কে দেখে যেত। আদারা মনের দিক দিয়ে অনেক ভালো। আদারার ফুপা ফুপিও আদারকে বেশ পছন্দ আর আদরও করে। মাহিরকে হসপিটালে ঢুকতে দেখে মায়ার মা দৌড়ে আসে। বলে

—- বাবা মায়ার অবস্থা খুবই খারাপ এখনই নাকি টাকা লাগবে ঔষধ কিনার জন্য। আমি এখন কি করব বাবা? কান্না করতে করতে। মাহির বলে

—- আরে আন্টি চিন্তা করবেন না আমি আছি তো। কত টাকা লাগবে বলেন। আচ্ছা আমি নিজেই কিনে দিচ্ছি ঔষধ। ফার্মেসিতে চলেন। মায়ার মা বলে

— না বাবা তুমি মায়ার কাছে যাও আমি ঔষধ নিয়ে আসছি।

মাহির নিজের ওয়ালেট থেকে ১০০০ টাকার ছয়টা নোট বের করে দিয়ে মায়ার কেবিনের দিকে পা বাড়ালো। মায়াকে দেখার জন্য মনটা উৎসুক করছিল মাহিরের। মাহির মায়ার কেবিনে গিয়ে দেখে মায়া চোখ বুঝে নিথর হয়ে শুয়ে আছে। মাহির মায়ার কাছে গিয়ে বসে মায়ার হাত ধরে বলে

—- তোমার এই অবস্থা আর আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ওকে অনেক শাস্তি পেতে হবে। তুমি জলদি সুস্থ হয়ে যাও মায়া। আর তখনই মাহিরের ফোনে একটা কল আসে দেখে তার বাবা। মাহির মায়ার কেবিন থেকে বেড়িয়ে ফোন রিসিভ করে

—- হ্যা বাবা বল। মাহিরের বাবা

—- কোথায় তুমি? বাসা থেকেও জলদি বেরিয়ে ছিলে। তুমি এতটা কেয়ারলেস কিভাবে হতে পারো মাহির? আজকে আমাদের একটা জরুরি মিটিং আছে জাপানি ক্লাইন্টদের সাথে তুমি ভুলেগেছ? আর প্রেজেন্টটেশনও তো তুমি করবে বলেছিলে তাই না?

—- Extremely sorry বাবা, আসলে। বলে ছিলাম না আমার এক ফ্রেন্ডের এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই,,,, মাহিরের বাবা

—- তাই বলে প্রতিদিন? যাই হোক It’s ok,,, তাড়াতাড়ি আসে। মাহির আর পিছু ফিরে না তাকিয়ে বেড়িয়ে পরে অফিসের উদ্দেশ্য।

মাহির বেড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কেউ একজন দেয়ালের পাশ থেকে বেড়িয়ে আসে। ঠোঁটের কোণে তার বাঁকা হাসি। মাহির কে চলে যেতে দেখে দেরি না করে তাড়াতাড়ি সে মায়ার কেবিনে ঢুকে যায়।

রাতে সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আর আমি খাবারের টেবিলে বসে বসে অপেক্ষা করছি মাহিরের। যত যাইহোক সে আমার স্বামী। সকালে ফুপি জোর করে মেডিসিন খায়িয়ে দেয় যার ফলে জ্বরটা আর আমাকে কাবু করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু ঠান্ডা লাগছে বেশ। বসন্তের শেষ প্রহর চলছে সামনের সপ্তাহ থেকে ঠান্ডা শুরু। আর এই কারণটার জন্য ফুপিকে মিথ্যা বলতে পেরেছি । ফুপি জ্বর আসার কারণ জানতে চাইলে বলি মৌসুমের পরিবর্তনের ফলে এই অবস্থা। বাসায় থেকে একটা কল পর্যন্ত করেনি কেউ,,, ভাবতেই কান্না আসছে। এই সব ভাবছি তখনই কেউ কলিং বেল চাপে। মাহির হয়তো চলে এসেছে, ভেবে ডোরটা ওপেন করি,, আর দেখি

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে