Friday, June 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1447



সত্যি ভালোবাসো পর্ব-০২

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_02
#Writer_Fatema_Khan

নিজেকে আয়নায় দেখে কেউ চিৎকার দেয়।সবাই কি ভাববে আমি এই সকাল বেলাতেও তোমার সাথে রোমাঞ্চ করছি।আসলেই ইডিয়ট মেয়ে তুমি।আর এটা কি পরেছো?পুরো জিলেপির প্যাকেট হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?ওমম ওমম ওমম……
কি হলো কথা বলছো না কেন?
আরে বজ্জাত আগে আমার মুখ থেকে হাত সরা তারপর তো কিছু বলবো(তাহিয়া মনে মনে)

অহ আচ্ছা আমি তো তোমার মুখ ধরে রেখেছিলাম।আচ্ছা এবার বলো জিলেপির প্যাকেট হয়ে আছো কেন?(আরিশ)

আসলে আমি শাড়ি পরতে পারি না তাই ইউ টিউব দেখে দেখে পরছিলাম।আয়নার দিকে তাকাই নি তাই এমন হয়ে গেছে(তাহিয়া)

যেটা পারো না সেটা করতে যাও কেন,নাকি আমাকে ইম্প্রেস করার জন্য শাড়ি পরছো?দেখো এইসবে কোনো কাজ হবে না বুঝলা।এখন তারাতাড়ি শাড়ি পরে নাও(আরিশ)

আইছে অসভ্য লোক তারে নাকি আমি এই তাহিয়া রহমান ইম্প্রেস করার জন্য শাড়ি পরছে।আমার পিছে হাজার ছেলে ঘুরে।আর আমি নাকি এই অসভ্যকে ইম্প্রেস করতে যাবো।(আমি মনে মনে)
আমি তো পরতে পারছি না(তাহিয়া)

হে ওয়েট তুমি এটা ভাবছো নাতো যে আমি তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবো।তাহলে তুমি পুরোপুরি ভুল।(আরিশ)

আমি কি বলছি আপনাকে পরিয়ে দিতে(তাহিয়া)

আচ্ছা তুমি ওয়েট করো আমি কাওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি(আরিশ)

দশ মিনিট পর আমার শাশুড়ী আসলেন আমার রুমে।এসে আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিলেন।তারপর আমাকে নিয়ে নিচে চলে গেলেন।

আমরা বের হতেই আরিশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে।

সবাই নাস্তা করার জন্য নিচে নেমে আসে।আরিশও নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে।

নীলিমা খান(আরিশের মা)ও তাহিয়া নাস্তা নিয়ে টেবিলে রাখে।আর আরিশের মা বলে আজ ম্যাংগো জুস টা কিন্তু আমাদের তাহিয়া বানিয়েছে।সবাই জুস খেয়ে খুব প্রশংসা করলো তাহিয়ার।আরিশ জুস মুখে দেয়ার সাথে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।সে কোনোমতে জুস শেষ করে উপরে চলে আসে।তারপর আরিশ চোখ মুখ শক্ত করে নিজেকে স্বাভাবিক করে অফিস যাবার জন্য নিচে নেমে আসে।

আরিশ তুই বিয়ের পরেরদিন কই যাচ্ছিস?(নীলিমা)

মা একটু অফিসে যাবো।(আরিশ)

আজ থেকে যা না বাবা কাল থেকে গেলে হয়না(নীলিমা)

আমি চলে আসবো একঘন্টা পরে বেশি দেরি করবো না(আরিশ)

আচ্ছা যা কিন্তু তারাতাড়ি চলে আসিস মেয়েটাকে একটু সময় দে।(নীলিমা)

যাবার আগে একবার তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বের হয়ে যায় আরিশ।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি আমি।কালকের কথা ভেবে কান্না পাচ্ছে।নিজের বিয়ে নিয়ে প্রতিটি মেয়ের মনেই অনেক স্বপ্ন থাকে।আমার স্বপ্নগুলো আমি নিজের হাতেই ভেংগে দিলাম।এমন একটা মানুষের সাথে আমার থাকতে হবে যাকে না আমি ভালোবাসি না সে আমাকে ভালোবাসে।চোখ দিয়ে বর্ষণ ঝড়ছে,এই বর্ষণ যেন আজকে আর থামবে না।

অনেক্ক্ষণ যাবত বেলকনিতে বসে কান্না করতে করতে মনে হলো কেউ আমার কাধে হাত রেখেছে।পিছনে তাকিয়ে দেখি আরিশের মা দাড়িয়ে আছে।আমি তাকে দেখে তারাতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম।

নীলিমাঃআমি জানি তুমি কেনো কাদছো।আমার ছেলেটা খুব ভালো বুঝলে মা।নিজের ছেলে বলে বলছি না।সত্যিই খুব ভালো মনের মানুষ।তোমাকে আগলে রাখবে,রক্ষা করবে সব বিপদ থেকে।তুমি একটু ভরসা করো আমার ছেলেটার উপরে।তোমাকে নিরাস করবে না।

আমিঃ…….

নীলিমাঃপ্রতিটি মেয়েরই নিজের বিয়ে স্বামী সংসার নিয়ে স্বপ্ন থাকে।হয়তো তোমার বিয়ে নিয়ে যত স্বপ্ন ছিলো তা পুরন হয়নি কিন্তু এইটুকু বলতে পারি স্বামী সংসার নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছো তা পুরন হবে।

আমি হাউমাউ করে কেদে উঠলাম।আর মাকে(নীলিমা খান) জড়িয়ে ধরে কান্না করলাম।

নীলিমাঃএই বোকা মেয়ে আর কান্না করে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।একটু ধৈর্য ধরো।আরিশের উপর আস্থা রাখো ও সব আগের মত করে দিবে।

আমিঃ কিন্তু আরিশ ভাইয়া তো আমাকে পছন্দ করেন না তাহলে,আনমনেই কথাগুলো বললাম।তাহলে কিভাবে সব ঠিক হবে।

নীলিমা খান হালকা হাসলো।তারপর তাহিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো দুপুর পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই খাবে কখন।

আমিঃআমার খিদে নেই মা।খিদে লাগলে খেয়ে নিব।

নীলিমাঃআরিশটা যে কই গেলো এখনো আসলো না।ছেলেটাও না খেয়ে আছে তুমিও কিছুই খাচ্ছো না এমন করলে কিভাবে হবে বলো।
বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।

আসলেই কোথায় গেলো,সেই সকালে বের হয়ে গেলো।বলে তো গেছে অফিস যাবে একঘন্টার জন্য কিন্তু এখনো এলো না।নিজে নিজে কথাগুলো বলছিলাম আমি।

আমাকে মিস করা হচ্ছে বুঝি।এতো মিস করবে জানলে আরো আগে আসতাম।(আরিশ)

গলার আওয়াজ অনুসরণ করে পিছনে তাকিয়ে দেখি আরিশ আমার দিকে এক রহস্যময় হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছেন।

আমি একটা শুকনো ঢোক দিলাম।সব শুনে ফেলেনি তো।(আমি মনে মনে)

আরিশঃকি ভাবছো আমি কিছু শুনেছি কিনা।বড় কথা এটা নয় আমি তোমার কথা শুনেছি কিনা।কথা হলো তুমি না খেয়ে আছো কেনো।

আমিঃঅবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনি জানেন কিভাবে আমি খাইনি।আপনি তো বাসায় ছিলেন না অবশ্যই মা বলেছে হয়তো।

আরিশঃতোমার এই ছোট মাথায় এতো চাপ নিতে হবে না।উঠো খাবে চলো।আমারও খিদে পেয়েছে।
তারপর আরিশ ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দুইজনে খেয়ে নেয়।

রাতে আরিশ সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর দরজার দিকে বারবার দেখছে কখন আসবে তাহিয়া।

আর এইদিকে তাহিয়া আরিশের কাজিন মিলি শিলা আর নিরবের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।তারা আড্ডা দিচ্ছে সাথে পাকোড়া খাচ্ছে।”দেরি করে দুপুরের খাবার খাওয়ার ফলে রাতের খাবার খায় নি তাই এখন পাকোড়া আর কফি খাচ্ছে।”

হঠাৎ মিলি বিষম খায়,তাই তাহিয়া তারাতাড়ি পানি আনতে গেলো মিলির জন্য।আনার সময় কিছুটা পানি নিচে পরে যায় তাহিয়া সেদিকে খেয়াল না করে মিলির জন্য পানি নিয়ে আসে।মিলি পানি খাওয়ার পর ঠিক হলে তাহিয়া গ্লাস রাখতে গেলে ফ্লোরের পানিতে স্লিপ কেটে নিচে পরে যায়।

কারো চিৎকার শুনে আরিশ তারাতাড়ি নিচে আসে,সিড়ির সামনে এসে সে দেখে তাহিয়া সোফায় বসে আছে তার পাশে মিলি আর শিলা,আর তাহিয়ার সামনে হাটুতে ভর করে নিরব তাহিয়ার পায়ে কি যেনো করছে।তাহিয়ার চোখ দিয়ে পানি পরছে।
“নিরবের হাত তাহিয়ার পায়ে দেখে আরিশের চোখ রাগে লাল বর্ণ ধারণ করলো।”

আরিশঃকি হয়েছে এখানে?

নিরবঃআসলে ভাই তাহিয়া পরে গেছিলো তাই পায়ে ব্যাথা পাইছে।

আরিশঃঅহ,আর নিরব ও তোর ভাবি হয় তাই নেক্সট টাইম তাহিয়া না ভাবি ডাকবি।ঠিক আছে।

নিরবঃআচ্ছা ভাই।

এর আবার কি হলো আমাকে কে কি নামে ডাকুক ওনার কি(আমি মনে মনে)
আমার ভাবনার মাঝেই আমি হাওয়ায় ভাসতে লাগলাম।তাকিয়ে দেখি সে আমাকে কোলে তুলে উপরে নিয়ে যাচ্ছেন।

আমিঃএই কি করছেন নামান আপনি আমাকে,আমি একাই যেতে পারি।

আরিশ সাথে সাথে তার হাত হালকা করলো আমি ভয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম।

আরিশঃকি হলো যাও।এখন আমাকে এভাবে ধরেছো কেনো?

আমিঃ……

“রুমে নিয়ে সে আমাকে খাটে বসিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।” ফ্রেশ হয়ে আমাকে বললো—
“ছেলেরা তোমায় ছুয়ে দিলে তোমার খুব ভালো লাগে তাই না।”
আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বলে মিস্টার অসভ্য মাথা ঠিক আছে তো।
আরিশঃ”আমার মাথা ঠিক আছে তোমারটা আজ ঠিক করবো।”
আমি আবারও অবাক,মনের কথা কি মিস্টার অসভ্য শুনতে পায়।
“তা আমার জুসে সকালে কি মিশিয়েছো?”
আমার দিকে না তাকিয়ে কথাগুলো বললো।

এখন তো তুই শেষ তাহিয়া।পায়ের জন্য পালাতেও পারবি না।–আমার ভাবনার মাঝেই সে আমার পাশে এসে বসলো।আমি তার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ডোক দিলাম আর বললাম,
কখন?কি মিশাবো সবাই তো ভালো বললো।
সে আমার আরেকটু কাছে এসে বললো কি মিশিয়েছো?

আমিঃলবন(চোখ বন্ধ করে)

আরিশঃ হুম।তা কেনো করেছো?

আমিঃআমি রাতে ফ্লোরে ঘুমাইছি এটা তার শাস্তি স্বরূপ।

আরিশঃতাহলে ম্যাডামের কি আমার সাথে ঘুমানোর ইচ্ছে ছিলো।বাসর করার ইচ্ছে ছিলো বললেই হতো।

আমিঃএই না না কি বলছেন এসব,আমি বাসর করবো তাও আপনার মত একটা অসভ্য লোকের সাথে।

আরিশঃআচ্ছা সে কথা বাদ দাও।যানো তো আমার মুখে এখনো লবনের স্বাদ লেগে আছে।তাই এখন মুখটাকে মিষ্টি করতে হবে।

এই বলে সে আমার দিকে এগিয়ে এলো……

চলবে…..

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-০১

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#writer_Fatema_Khan
Part-01

পর পর দুইটা থাপ্পড় খাবার পর আমি থমকে আছি তূর্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে।তূর্য ভাইয়ার চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।আমার হাত আমার গালে।বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।মা আচল মুখে দিয়ে কান্না করছেন।সবাই আমার উপর রেগে আছে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি।কিন্তু আমারই বা কি করার ছিলো।তখনই বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো তাহিয়াকে তারাতাড়ি তৈরি করে নিচে নিয়ে আসো।আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো বাবার কথা শুনে।

কিছুক্ষণ আগে,
আজ আমার বড় আপু তনিমার বিয়ে ছিলো।কিন্তু তনিমা আপু ভালোবাসে রাসেল ভাইয়াকে।আপু বাসায় বলতে পারে নাই ভয়ে।আজ সকালে আপুর কাছে যাচ্ছিলাম আমি তখন শুনতে পাই আপু রাসেল ভাইয়ার সাথে কথা বলছে আর কান্না করছে।আমি আপুর সব কথা শুনে বুঝতে পারি যে আপু রাসেল ভাইয়াকে ভালোবাসে।

আপু,আসবো?আপু চমকে পিছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে খুব আঁতকে উঠল।আর বললো তুই এখানে,
আমিঃহ্যা আমি।তুমি কি রাসেল ভাইয়াকে ভালোবাসো আপু?
তনিমাঃহ্যা,কিন্তু এখন কি করবো আমি বল।না আমি বাবা আর তূর্য ভাইয়ার বিরুদ্ধে যেতে পারবো।না রাসেলকে ভুলতে পারবো।
আমিঃতাহলে পালিয়ে যাও।আমি সাহায্য করব তোমাকে।
তনিমাঃ সত্যি বলছিস তুই,কিন্তু পরে কি হবে যখন সবাই জানবে বউ পালিয়ে গেছে।মা বাবার অসম্মান হবে।
আমিঃতা নিয়ে তুমি ভেবো না।এদিকে আমি সব ঠিক সামলে নিবো।আর এমনিতেও আমার ওই আরিশ না ফারিশকে একদমই পছন্দ না।তুমি বরং রাসেল ভাইয়ার সাথে পালিয়ে যাও।

যেই ভাবনা সেই কাজ।বিকাল হতেই মেহমানদের আসা শুরু হয়ে গেছে আর বাড়ির সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মেহমানদের নিয়ে।আমিও এই সুযোগে আপুকে বাসা থেকে পালাতে সাহায্য করি।রাসেল ভাইয়াকে আগে থেকেই সব বলা আছে সে বাড়ির একটু দূরে গাছের আড়ালে বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

বর্তমান,
আমাকে বউ সাজিয়ে ওই আরিশ না ফারিশের সাথে নিয়ে বসালো।কাজি আমাদের বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছেন না চাইতেও আমার তিনবার কবুল বলতে হলো।তারপর সেও তিনবার কবুল বললো।দুইজনেই সাইন করলাম।বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো।বিদায়ের সময় মা বাবা তূর্য ভাইয়ার চোখে পানি কিন্তু আমি তাদের সাথে কথা না বলেই গাড়িতে উঠে বসলাম।আরিশ ভাইয়া।সবাইকে বলে তারপর গাড়িতে বসলো।

গাড়ি এসে থামলো আরিশ ভাইয়ার বাড়ির সামনে।এই বাড়িতে আমি আগেও এসেছি তবে তূর্য ভাইয়ার সাথে।যখনই আসতাম আরিশ ভাইয়া দূর দূর করে তার রুম বের করে দিতো।তার রুমে নাকি কাওকে এলাও করে না।যতসব ঢং।

(আমি তাহিয়া।বাবা মায়ের ও বাড়ির ছোট মেয়ে।এবার মাধ্যমিক পাস করলাম।বড় ভাইয়া তূর্য।সে বাবার সাথে বিজনেস দেখে।বড় বোন তনিমা আপু,সে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে।আর যার সাথে আমার বিয়ে হলো সে আরিশ খান তূর্য ভাইয়ার বন্ধু আর তার সাথেই তনিমা আপুর বিয়ের কথা ছিলো।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ও অনেক বড় বিজনেসম্যান)।

বর্তমানে আমি আরিশ ভাইয়ার সাথে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি।আমাকে বরণ করে নিলেন আরিশ ভাইয়ার মা(নীলিমা খান)।তারপর ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো।রাত ১১টা বাজে আরিশ ভাইয়ার কিছু কাজিন আমাকে তার রুমে দিয়ে আসলো।আমি খাটের মাঝখানে বসে আছি।রুমটাতে চোখ বুলিয়ে দেখলাম অনেক গুছানো।দেয়ালে তার কয়েকটা ছবি টাংগানো।বাইরে থেকে শব্দ আসছে টাকা দেয়ার জন্য তাহলে কি আরিশ ভাইয়া চলে এসেছে?

আচ্ছা মেয়েটাকে জোর করে বিয়ে না দিলেও তো পারতে।মেয়েটা একটাবার তাকালো পর্যন্ত না।খুব অভিমান হয়েছে আমাদের উপর (আফসানা রহমান -তাহিয়ার মা)।
তুমি চিন্তা করো না মা আরিশ ওকে আগলে রাখবে।কোনো কষ্ট পেতে দেবে না।খুব যত্নে রাখবে(তূর্য)।
তূর্য ঠিক বলছে আরিশের উপর আমার আস্থা আছে ও আমার মেয়েকে মাথায় করে রাখবে।আর যা করা হয়েছে তাহিয়ার ভালোর জন্যই করা হয়েছে(আরমান রহমান)।
হুম তাই যেন হয়।মেয়েটা সুখে থাকলেই হলো(আফসানা রহমান)।

প্রায় ১০মিনিট পর ভিতরে আসলো আরিশ ভাইয়া।আমার দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের টি -শার্ট আর ট্রাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আমিও মুখ বাকিয়ে দিলাম কতবর অসভ্য এতো সুন্দরী বউ এখানে বসে আছে শালা খাটাশ ভালো করে তাকলোই না।কিছুক্ষণ পর আরিশ ভাইয়া বের হয়ে আসলো।আয়নার সামনে চুল ঠিক করছে,আর বলে উঠলো চোখ দিয়ে পরে গিলে খেতে পারবি এখন চেঞ্জ করে নে।এমনিতেও তোর কাছেও যাওয়া যাচ্ছে না।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কি বলতে চাইছে এই অসভ্যটা।সে বললো তারাতাড়ি চেঞ্জ কর তোর গায়ে যা গন্ধ আমি তো রুমে কিভাবে দাঁড়িয়ে আছি আমিই জানি🤮।আমি তো শকড কি বললো এটা আমার গায়ে গন্ধ।আমিও তেতে বলে উঠলাম এই যে মিস্টার অসভ্য আপনি কি বললেন আমার গায়ে গন্ধ আপনার গায়ে গন্ধ বাজে লোক একটা।এই বলে গটগট করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।

একটা মেরুন রঙের থ্রি পিস পরে বের হলাম।তারপর তনিমা আপুর কাছে কল দিলাম।আপু আর রাসেল ভাইয়া বিয়ে করে নিয়েছে। তারা রাসেল ভাইয়ার বাড়িতে। প্রথমে সবাই রেগে গেলেও পরে নাকি সবাই মেনে নিয়েছে।আমার আর আরিশ ভাইয়ার বিয়ের কথা বলার পর আপু চুপ করে রইলো।তারপর বললো আমার সুখের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো।না না আপু কি বলছো তুমি তো মানা করেছিলে আমিই তো জোর করে তোমাকে পাঠালাম।তারপর টুকটাক কথা বলে রেখে দিলাম।

তারপর বিছানার একপাশে শুয়ে পরলাম।আরিশ ভাইয়া রুমে নেই তাই ভাবলাম তারাতাড়ি ঘুমাই যাই।অনেক ক্লান্ত ছিলাম তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম।আমি ঘুমিয়ে যাবার পর আরিশ ভাইয়া রুমে আসলো আর দেখলো আমি বিছানায় ঘুমিয়ে গেছি।সে আমার হাত ধরে একটানে শোয়া থেকে উঠালো।তারপর বললো ভালোই তো আমার রুমে থাকবি আবার আমার খাটেও ঘুমাবি।
তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো(আমি)।
যেখানে ইচ্ছে যা আমার সামনে থেকে যা(আরিশ)।
আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি যেন হলো ওনার কথা শুনে বুকে হালকা ব্যাথা অনুভব করলাম।সে আবার বলে উঠলো, যাচ্ছিস না কেন আমি ঘুমাবো।নাকি আমার সাথে বাসর করার ইচ্ছা আছে।আমি হা করে তাকিয়ে থেকে উঠে দাড়ালাম সে পাশ ফিরে শুয়ে পরলো।আমি বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি।খুব কষ্ট হচ্ছে চোখ দিয়ে না চাইতেও একফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।রাতে রুমে এসে খাটের কাছে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছি।নিচেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলাম।হটাৎ আরিশ ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে খাটের অন্যদিকে শুয়িয়ে দিলো।

সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি আরিশ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছি।আমি অবাক হয়ে ভাবছি অসভ্য লোকটা তো আমাকে উপরে আনবে না তাহলে কি আমিই উপরে উঠে আসছি?এখন আমাকে যদি দেখে আমি উপরে ঘুমাইছি অনেক বকবে সাথে বলবে আমি তার সাথে বাসর করার জন্য উপরে ঘুমাইছি।কি লজ্জা পাবো তখন।কিন্তু আমি তো নিচে ঘুমাইছি উপরে উঠলাম কখন কিছুই তো মনে পরছে না।তখন চোখ গেলো আরিশ ভাইয়ার দিকে।কি নিস্পাপ লাগছে একদম বাচ্চাদের মত ঘুমায়।মাথার চুলগুলো কপালে আসছে বারবার আমি চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিলাম।কে বলবে এই লোকটা আস্ত একটা বজ্জাত।আমাকে নিচে ঘুমাতে দেয়া এর শাস্তি তুমি পাবা মিস্টার অসভ্য।এই বলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।প্রায় একঘন্টা শাওয়ার নেয়ার পর বের হয়ে এলাম।

আরিশ ভাইয়া ঘুম থেকে উঠে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো হেই ইউ স্টুপিড গার্ল কি করছো তার কথা শুনে আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি সে চোখ রসগোল্লার মত বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি তার থেকে চোখ সরিয়ে আবার সামনের আয়নার দিকে তাকিয়ে এক চিৎকার দিলাম সাথে সাথে সে উঠে আমার মুখ চেপে ধরলো……

চলবে,

সুখ পাখি পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ১৩ শেষ 💖

ওপরেশন থেয়েটার বাইরে ঘাটা দুয়েক ধরে বসে আছে মাহির। সাথে আছে নিশু মিলি। নিশু মিলিও কান্না করছে। মাহিরের বাবা -, মাকে ফোন দিয়ে নিশু বলে যে আদারা কার এক্সিডেন্টে করেছে। অপর দিকে নিশু ইমারেনর ফোনে মেসেজ করে দিয়েছে,,, মেয়ের এমন অবস্থার কথা শুনে কোনো বাবা-মাই রাগ করে থাকতে পারে না। তাই তারাও ছুট লাগিয়েছে। মাহিরের চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু সেটা গরিয়ে পরছে না। মাহির আর পারবে না এভাবে বসে থাকতে । সোজা চলে যায় মসজিদে। নিশু মিলি ডাকলেও কোনো শারা পায়নি। মাহির আজকে তার কাছে তার আদারাকে চাইবে যে কখনো তাকে ফিরিয়ে দিবে না । মাহিরের বাবা মা এক প্রকার দৌড়ে হসপিটালে ঢুকছে। আদারার মা-বাবাও চলে এসেছে এতক্ষণে। আদারা চাচি তো নিজের সাজুগুজ ঠিক করতে ব্যস্ত। উদ্দেশ্য মিলির জন্য ইমারানের হাত চাইবে। এই সময়েও কেউ এমন কিছু ভাবতে পারে তা ভাবলেই অবাক লাগে। মাহিরের মা নিশুর কাছে গিয়ে বলে

—- আদারা আদারা কোথায়, ডক্টর কি বলেছে,, ? আদারার মাও নিশুর কাছে উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। নিশু বলে

— এখনো ডক্টর বেরহয়নি। তখনই মাহিরের বাবা বলে

— মাহির কোথায়? নিশু বললো

— ভাইয়া অনেক ভেঙে পরেছিল হঠাৎ করেই উঠে কোথায় যেন চলে যায়। আদারা চাচি পান চিবুতে চিবুতে বলে

— এত সুন্দর একখানা সমন্ধ আইছিল,,, যদি কু-কর্ম না কইরা ঐ খানে বিয়া হইতো ভালা হইতো। গ্রামের মাইয়া এইহানে মানায় নাকি? আর যেই চুনকালি মাখাইছে আমাদের মুহে,,৷ এমন মাইয়া না থাহাই ভালো,, আর কিছু বলার আগেই একটা চড় বসিয়ে দেয় আদারা চাচা তার চাচির গালে। আর বলে

— তোর মতো খারাপ মহিলা আমি দুইটা দেখি নাই!! তুই পারিসই অন্যের খুত আর কুটনামি করতে। নিজেকে কি মনে করছ,,, মেয়েটা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আর তুই তোর এই অকর্মা কথা কইতেছিস।

সবাই রেগে একাকার এখানে আদারার জীবন মরনের ব্যাপার সে আছে তার কথা নিয়ে । তখন মাহিরও চলে আসে। মাহির বলে

— আদারা এখান মিসেস মাহির আহনাফ আবিদ খান। ওর নামে উল্টো পাল্টা কথা বলার আগে ভেবে নিবেন। আর আদারার কোনো দোষ ছিল না আর আমাদের আগেও বিয়ে হয়নি,, ঐগুলা সব নাটক ছিল কারণ। আর কিছু বলতে যাবে তখন মায়া পিছন থেকে বলে

— কারণ মাহির আদারাকে ভালেবাসতো,,, আর ওর কাছে অন্য কোনো উপায় ছিলনা বিয়েটা আটকানোর। আদারার মা গো কান্না জুড়ে দিয়েছে সে তার মেয়েকে বিশ্বাস না করে কত কিছু বলেছে। আর অপর দিকে মাহির তো অবাক। মায়া কেনো সত্যিটা লুকালো। আদারার বাবা বলে

— তুমি কে মা আর তুমিবা এইসব কিভাবে জানো? মাহির এখন ভাবছে মায়া কি বলবে। আর সত্যি টা চাপা থাকে না কোনোদিন না কোনোদিন সেটা বেড়িয়ে আসবে। মায়া বলে

— আমি আকাশের উডবি মানে আমাদের বিয়ের কথা চলছে আর মাহিরকে আমে সেই থেকেই চিনি। মাহিরের বাবা মায়ার বুদ্ধি দেখে খুশিই হলো কারণ এখন যদি সত্যি টা মাহির বলে দিত তাহলে অবস্থা আরো বিগরে ঢ়েতো হয়তো এখন এই সুন্দর সম্পর্কটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতো। আদারার বাবাও কথা বাড়ায় না এখানে যে তার মেয়ে নিষ্পাপ এটা জেনেই সে খুশি। কিছু সত্যি মাটি চাপা দিয়ে রাখতে হয়। একটু পরই ডক্টর বেড়িয়ে আসে তা দেখে মাহির এগিয়ে যায়। ডক্টর একটা বিজয় হাসি দিয়ে বলে

— পেসেন্ট ভালো আছে৷। কিন্তু তাকে কোনো কিছুর চাপ দেওয়া যাবেনা। সেন্স আসলে তাকে বেডে দেওয়া হবে।
সবার মুখে খুশির ঝলক। মাহির তো অনেক খুশি,,,, তার থেকে আল্লাহ তার আদরাকে কেড়ে নেয়নি। কিন্তু এই মেয়েকে এখন মানাতে হবে। তারপরের দিন সকালে আদারার সেন্স আসে। আদারার চাচা চাচি আর ইমরান গ্রামে ফিরেগেছে কারণ সেখানে সমস্যা হচ্ছে। আদারার মা বাবা,, মেয়েকে না দেখে যাবে না। তাই রয়েগেছে।

বেডে দেওয়ার পর আদারার সাথে দেখা করতে যায় মাহির। আদারা চোখ বুঝে শুয়ে আছে। সে ভেবেছিল হয়তো আর আপন মানুষগুলোর দেখা সে পাবে না। হঠাৎ কেউ তার হাত ধরাতে সে ধীরে ধীরে তার চোখ মেলে তাকায়। দেখে মাহির। মাহির আদারার হাত ধরে বলে

—- মানি ভুল করেছি তাই বলে এত বড় শাস্তি? আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? আর আমি বসে বসে দেখবো? কখনোই না জানে মেরে দিব। আদারা মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে অনেক কষ্টে বলে

— তাহলে বাঁচালেন কেন? মরে যেতে দিতেন আপনার আর কষ্ট করতে হতো না। মাহির আদারা হাতটা ছেড়ে আদারার মুখটা নিজের দিকে ফেরায়। আদারা ভালো করে দেখে হলুদ শার্টে রক্তের ছাপ গালে খুচা খুচা দাড়ি। চুলগুলো এলোমেলো চোখ লাল হয়ে আছে হয়তো ঘুমায়নি রাতে। আদারা কিছু বলে না।

দেখতে দেখতে ৫ মাস কেটে যায় ঐদিন রাগ অভিমান ভুলে সবাইকে আপন করে নিয়েছিল শুধু মাহিরকে ছাড়া। মায়ার সাথে আদারার এখন বেস ভালো বন্ধুত্ত আজ তাদের বৌভাত,,, বেশ বড় আয়োজন। আদারা পরিবারের সবাই এসেছে। আদারা এখন সুস্থ আজকে সে একটা সম্পূর্ন পাথর দিয়ে ডিজাইন করা গাউন পরেছে। ড্রেসটা পারপাল কালারের। সাথে উড়না চুলগুলে কার্ল করা,, ঠোঁটে ডার্ক পারপাল কালারের লিপস্টিক,, কানে ডায়মন্ডের দুল। অসাধারণ লাগছে আদারাকে। মাহিরও কমনা আদারার সাথে মেচিং করে সেও পরেছে সাদা,শার্ট পারপাল কালারের কোট সম্পূর্ণ ফরমাল ড্রেসআপ। জাস্ট ওসাম। মাহির আদারার কাছে গিয়ে বলে

— আজ তোমাকে প্রপোজ করবো তারপর আবার বিয়ে করব। আদারা বলে

— মামাবাড়ির আবদার আর কিছু দিন পর আপনার আর আমার ডিভোর্স সো এইসব ফালতু চিন্তা বাদ দিন। আমি আমার আগের লাইফে বেক করব আর আপনি। আর কিছু বলতে যাবে দেখে মাহির নেই। আদারাও বেশ মজা লাগছে মাহিরকে জ্বালাতে সেও বুঝুক ইগনোর করলে কেমন লাগে। তখনই লাই ওফ
হয়ে যায়। আর যখন লাইট ওন হয় দেখে সব যারা আদারাদের বয়সী দাড়িয়ে আছে। ইভেন মায়া আকাশও। হঠাৎ মিউজিক বাজতে শুরু করে আর তার মাঝ থেকে মাহির বেরিয়ে আসে সেই এটিটিউড আর ভাব নিয়ে আর গান গাইতে থাকে আর সাথে তাল মিলিয়ে ডান্স করতে থাকে আর গান গাইতে থাকে

— আরে Love you… love you.. love you..love you… love… you…. ( আদারার দিকে তাকিয়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে)

— মান চায় আজ পাখি উড়া উড়ি তুমি আমি একসাথে। তুমি আমার পাশে থাকলে ( আদারার দিকে ইশারা করে) দুনিয়ার কেয়ার আর কে করে? (

(আদারাতো অবাক, আর বাকি সবাইরা তো হাসছে আর অনেকে বুঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে এখানে)

— তুমিতো জানো তুমিতো বুঝো,, এই মনটা কি যে চায়। ( বুকের বাপাশে হাত দিয়ে) আমার ফোকাস শুধু তুমি আর আসে পাশে কিছু নাই। ( আকাশ এসে মাহিরের সামনে এসে হাত নারায় কিন্তু মাহির তাকিয়ে আছে আদারার দিকে, আকাশের ধাক্কা দেয় মাহিরকে আর মাহির হুশ আসলে সে আবার গানে ফিরে আসে আর আদারার দিকে আগাতে লাগে)

— জান কাছে আসো, I need you….
জান কাছে আসো,,, I wanna kiss you ( আর সাথে সাথে আদারার গালে একটা কিস করে দেয় আদারা তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে,,, মিহির কি করছে এইসব,,, আর সবাই তো মিটমিট করে হাসছে)

—- জান কাছে আসো,, I wanna love you….আরে love you,,,, love you,,,,। (আদারাকে নিজের সাথে নিয়ে ডান্স করতে করতে) জান কাছে আসো I need you…জান কাছে আসো I love you…..। (বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)গান শেষে আদারা মাহিরকে লজ্জায় জড়িয়ে ধরে তার বুকে মুখ লুকায় তখনই একজন বলে

—- এই সব ঢং দেখলে বাচিনা বিয়ের আগেই নষ্টফস্টি। মাহিরের মাথায় আগুন ধরে যায় সে বলে

—- What you mean by that’s? ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী,,, আমারা বিয়ে করেছি আর পরিবারের সবাই জানে। আর আমার বউকে নিয়ে যা ইচ্ছে করব আপনাদের সমস্যা থাকলে হু কেয়ার? আজ আমি সবার সামনে বলছি আদারা আমার বিয়ে করা স্ত্রী। কিন্তু আমরা আমাদের বিয়েটা কোনো এক কারণে মিডিয়াতে প্রকাশ করেনি। আর সবাই জেনে রাখুন উনি হলেন মিসেস….মাহির আহানফ আবিদ খান।।। আদারার চোখে আজ খুশির পানি আজ মাহির সবার সামনে তাকে স্বকৃীতি দিয়েছে তাদের সম্পর্কের ফাটল দূর করেছে। রাতে পার্টি শেষে যে যার মতো ঘুমিয়ে পরে কিন্তু মাহির এখনো রুমে আসছেনা তাই দেখে আদারা নিচে নামতে যায়। হাঠাৎ করেই মাহির এসে আদারাকে কোলে তুলে নিল আর কিছু না বলেই ছাদের দিকে হাটা দিলো। ছাদে এসে আদারা অবাক অনেক সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। অনেক বেলুন। মাহির আদারাকে কোলে থেকে নামিয়ে দিয়ে কাউকে ফোন করে কিছু বলে আর হঠাৎ করেই ফানুস উড়তে লাগে।

আর তখনই মাহির হাঠু গেরে বসে পরে আদারার সামনে আর বলে

—- হয়তো বলতে পারবো না নিজের সব কথা, তাও বলি ভালোবাসি, জানি রেগে আছো আমি এই রাগ বহন করতে রাজি,, ভালোবাসি খুব করে। তুমি যখন হসপিটালের বেডে ছিলে,, ভেবে ছিলাম আমার #সুখ_পাখি হয়তো আমায় একা ছেড়ে উড়াল দিবে। আমি বলি মায়ার প্রতি ছিল আমার মায়া কিন্তু,,, আর কিছু বলতে যাবে আর আদারা মাহিরের চুল গুলো টেনে বলে

—- মহিষের বাচ্চা,, মায়া তোর ভাবি লাগে ছোট তো কি হইছে মায়া বলবিনা মায়া ভাবি বলবি এত সুন্দর মূহুর্তটাকে দিলিতো খারাপ করে,, আরেকবার যদি তোর মুখে অন্য মেয়ের নাম শুনছি, তোকে এই ছাঁদ থেকে ফেলে দিব।। মাহির হুহু করে হেসে দিয়ে ঐভাবেই আদারাকে জড়িয়ে ধরে বলে

— ভালোবাসি #সুখ_পাখি। আদারা বলে

— আমার এখনো আপনাকে ইগনোর করা বাকি আছে,, রিভেন্ঞ্জ নেয়া বাকি অনেক ইগনোর করছেন। মাহির বলে

— তাই না তোমাকে দেখাচ্ছি মজা,, আমিও দেখবো কি করে তুমি আমাকে ইগনোর কর,,,আদারা মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয় দৌড়। মাহিরও আদারার পিছন পিছন দৌড় দেয় আর বলে

—- একবার হাতে পাই, তারপর তোমাকে বুঝাচ্ছি।

সমাপ্ত

সুখ পাখি পর্ব-১২

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ১২

মাহির এবার ইচ্ছে করেই আদারার হাতে কামড় দেয়। আদারা ব্যাথা পেলেও কোনো রিকেয়শন দেয় না । আবারও মাহির আবার একই কাজ করে আদারা এবার হালকা চিৎকার দেয়। মাহির বলে

— তুমি খাচ্ছ না কেন? আদারা বলে

— আপনি খান। কিন্তু দয়া করে আমার হাত না ভাত খান। মাহির বলে

— হ্যা আমি জানি আমি খান। এবার তুমিও খাও। আদারা বলে

— আমি খেয়ে নিয়েছি তুমি মানে আপনি খান। মাহির বলে

— আরে বেইবি আমি জানিতো আমি খান আর তুমি মিসেস খান। আদারা বলে

— হুমমমম,, মাত্র সারে পাঁচ মাসের জন্য। কথাটা শুনার সাথে সাথে মাহির বলে

— আমি খাবো না। আদারা বলে

— আরেকটু আছে। মাহির বলে

— বললামতো খাবো না আমি । আদারা বলে

— ঠিক আছে কিন্তু রুমের এই অবস্থা কেন? দেখেতো মনে হচ্ছে মানুষ না মহিষ থাকে এই রুমে। মাহির বলে

— তুমি গুছিয়ে দাও। আদারা বলে

— আপনার কি হয়েছে বলেনতো,,, একমিনিট। মাহির কিছু বলে না তাই আদারা কিচেনে চলে যায়। কিচেনে গিয়ে পেলেট টা রেখে হাত ধুয়ে যেই না নিশুর রুমে যাবে তখনই মাহির এসে আদারার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে দরজা লক করে দেয়। আদারা বলে

— আরে আরে,,, কি হয়েছে? মাহির বলে

— হয়নি তবে হবে তোমার আর আমার দুইটা কিউট বেইবি। আদারা ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে । আদারা মাহিরের কাছে গিয়ে বলে

— একটু নিচু হবেন। মাহিরও আদারার কথায় নিচু হয়। আদারা মাহিরের কাপালে পরা চুল গুলো সরিয়ে দেখে বলে

— কই ব্যাথার তো কোনো চিহ্ন দেখছি না। মাহির আদারাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে ফু দিয়ে আদারার সামনের কাটা চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে বলে

— তুমি কি করছ একটু বলবে? আদারাতো জমে ফ্রিজ হয়ে গেছে। তার মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। মাহির সেটা দেখে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে

— সত্যি আজ খুব গরম। আর তুমি,,, আর কিছু বলার আগেই আদারা মাহিরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যেতে চাইলে মাহির গিয়ে আদারাকে বলে

— আসো আমি হেল্প করি,,, বলেই দরজা খুলে দেয়। আদারাকে আর পায়কে বাচ্চাদের মতো দৌড় দেয় আর বেলেন্স সামলাতে না পেরে ঠুসসস করে পরে যায় হামাগুড়ি দিয়ে আদারা রুমে চলে যায়। আর আয়তুল-কূসরী যেই যেই দোয়া পারে সব পরতে লাগে। আর অন্য দিকে মাহির হাসতে হাসতে শেষ । মাহির হাই তুলতে তুলতে বললো

— ভালোই হয়েছে,,, বিয়ের পর বউকে গার্লফ্রেন্ড বানাবো তারপর চুটিয়ে প্রেম করব, কিন্তু অনেক কিছু করতে হবে,, । যাই সকালে উঠতে হবে।

মাহির গিয়ে ঘুমিয়ে পরে ঐদিকে আদারা ভয়ে শেষ তার মনে হচ্ছে মাহিরকে ভূতে বশ করেছে কারণ তার মতে মাহির কখনো সেন্সে এমন করবে না। একসময় আদারাও ঘুমিয়ে পরে ।

সকালে সবাই একসাথে নাস্তা করতে বসে এখন অপেক্ষা মাহিরের। মাহির এসে তার জায়গায় না বসে আদারার পাশে বসে পরে। নিশু আর মিলিতো অবাক। যত যাই হোক মাহির সবসময় তার বাবার পাশের চেয়ারে বসে,,, আর যখন তার বাবা না থাকে তখন সে তার বাবার জায়গায় আর আকাশ মাহিরের জায়গায় এটা এই বাড়ির এক ধরনের নিয়ম বললেই চলে। মাহির বলে

— তাড়াতাড়ি খা,,,,, তোদের আবার ভার্সিটি পৌঁছে দিতে হবে। নিশু বলে

— তুই ভার্সিটি দিতে যাবি!!! অফিস যাবি না? মাহির বলে

— আজকে কোনো মিটিং নেই। আর যা কাজ আছে ঐটা পিএ দেখে নিবে। মিলি বলে

— আদারা আপু খাচ্ছো না কেন? আদারা খাবে কি করে মাহির তার হাত ধরে রেখেছে। মাহির বলে

— ওর শরীরটা খারাপ লাগছে হয়তো চোখ মুখ লাল হয়ে আছে আর খাচ্ছেও না। আদারা কিছু বলতে যাবে তখনই মাহির বলে

— এই নিশু তুই আর মিলি চলে যা আমি ডাইভার চাচ্চুকে বলছি তোদের দিয়ে আসতে। তোদের কোন সমস্যা হবে? নিশু ঠোঁট চেপে হাসি দিয়ে বলে

— নাহ আমাদের আবার কি সমস্যা । এই মিলি তাড়াতাড়ি চল। বলেই জুসটা মুখে দিয়ে চলে যায়। আদারার তো আর ভয় লাগছে ভূত না তার ঘার মটকে দেয়। নিশু আর মিলি যাওয়ার পর মাহির আদারা হাত ছেড়ে দেয় আর বলে

— তাড়াতাড়ি খেয়ে তৈরি হয়ে নাও তোমাকে নিয়ে বাইরে যাবো। আদারা চেয়ার ছেড়ে উঠে চিৎকার দিয়ে বলে

— এই জ্বিন ভূত তুই কে? কোন গাছ থেকে আমাদানি হয়েছিস?আমার মহিষ আহহহ মানে মিহির ধূর মাহিরকে ছেড়েদে,, এই ব্যাটা তোর চেয়ে বেশি ভয়ংকর খারাপ, খবিশ, তোরা নানার চৌদ্দ গুষ্টির নানার নানা। যদি জানতে তুই তাকে দিয়ে এইসব করিয়েছিস তোকে মানে তোর আত্মাকে কাচা চিবিয়ে খাবে। মাহির ধমক দিয়ে বলে

— হুয়াট ননসেন্স কি বাজে বকছ। ২০ মিনিট সময় রেডি হয়ে নিচে নামবে নয়তো সত্যি ভূত হয়ে ঘাড় মাটকাবো। আদারা বলে

— না না না, এইতো আমি এখনি যাচ্ছি, এই গেলুম এই আসলুম। আম্মুইইই,,,,। বলেই রুমের দিকে ছুট লাগায়। আর এই দিকে মাহির বলে

— ওর মতো,,, একটা এতো সাহসী আর বুদ্ধিমতি মেয়ে নাকি ভূতে বিশ্বাসী!!! ভাবা যায়?? ২৫ মিনিট হতে চললো কিন্তু আদারার কোন খুজ নেই মাহির আদারার রুমের দিকে যেতেই দেখে আদারা একটা হলুদ রঙের শাড়ি সাথে চুলগুলো খুলে রাখা আর ঠোঁটে হালকা রেড কালারের লিপস্টিক। ফোনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিচে নামছে ।
মাহির একটা হাত আপনাআপনি বুকের বা পাশে চলে যায় আর বলে

— মারডালা ইয়ার। আদারা মাহিরের সামনে এসে চুপচাপ দাড়ায়। মাহির আদারা দিকে একমনে চেয়ে আছে। কাততালিয় ভাবে মাহিরও সাদা জিন্স আর হলদে রঙের শার্ট পরেছে। চুলগুলো স্পাইক করা। হাতে ব্রেসলেট। জাস্ট ওয়াও। দুজনকেই সুন্দর লাগছে। মাহির আদারাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে। একটু পরপরই মাহির আদারাকে দেখছে। আর আদারারও তাকিয়ে আছে। আদারা মনকে হঠাৎ করে একটা ভয় আকরে ধরে বসেছে। হয়তো কিছু হতে চলেছে ভয়ংকর আতংক করা নারছে আদারার মনে। ভরের দিকে স্বপ্নেও খারাপ দেখেছে। আজকে কেন যেন তার সেই রাগটা কাজ করছেনা আদারা। সামনে যেতেই মাহির দেখে একটা গাছের নিচে একজন বৃদ্ধ মহিলা বেলী ফুলের গাজরা বিক্রি করছে । আর মাহির সেটা দেখে বলে

— তুমি বসো আমি আসছি। বলেই গাড়ি থেকে নেমে পরে। আর রাস্তা ক্রশ করে অন্য দিকে যায় ফুল আনতে। আদারাও কার থেকে নামে মাহিরের কাছে যেতে চাইলে একটা ট্রাক তৈড়িৎ গতিতে ছুটে এসে একটা ধাক্কা দিয়ে আদারাকে অন্য পাশে ফেলে দিয়ে চলে যায়। মাহির আদারা বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আসছে।

রক্তের লাল রঙে ভরে আছে পিচঢালা ঝকঝকে রাস্তাটা আর সেই রক্তের মালিকের নিথর দেহ পরে আছে রাস্তার মাঝখানে, চোখ তার পিটপিট করছে হয়তো এটাই তার জবীনের শেষ কিছু মুহূর্ত। হয়তো তাকে বিদায় নিতে হবে এই সুন্দর নামক নিষ্ঠুরতম পৃথিবীর কাছ থেকে। আর রয়ে যাবে তার হাজারো স্মৃতি আর কিছু না বলা অভিযোগ আর আভিমান। হঠাৎ করেই মানুষ জড় হতে লাগলো আদারার আশেপাশে কিন্তু তার সাথে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। রক্তে লাল আভাতে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। তখনই ভীর ঠেলে কেউ ছুটে আসে আদারার দিকে। কিন্তু এতটা সময়ে অনেক লেট হয়েগেছে তার আসতে। আদারা ধীরে ধীরে নিজের চোখ বুঝে ফেলে। তা দেখে মাহির দৌড়ে আসে আদারার কাছে আর বলতে লাগে

—- আদারা এই,,,এই আদারা চোখ খুল দেখো তোমার,, তোমার মাহির এসেছে,, আদারা। আদারার মনে হচ্ছে কেউ তাকে খুব করে ডাকছে। কিন্তু তার চেয়ে তাকে হাতছানি দিয়ে বেশি ডেকে চলছে এক ঘোর আধার, সেখানটায় তলিয়ে গেলে হয়তো তার আর ফিরে আসা হবে না। মাহিরের তো পাগল পাগল অবস্থা নিজের চোখের সামনে নিজের স্ত্রীর এমন অবস্থা দেখলে কয়জন মানুষ পারে ঠিক থাকতে।। আজ তার মনে হচ্ছে যদি আদারের কিছু হয়ে যায় তাহলে তার বেঁচে থাকার মূল কারণ সে হারিয়ে ফেলবে। নিজেকে সামলে নিয়ে কোলে তুলে নিলো সে আদারাকে। ততক্ষণে এম্বুলেন্সও চলে আসছে।কারণ এত লোকের মাঝে কে জেন এম্বুলেন্সকে কল দিয়ে দিয়েছে।।

চলবে,,,

সুখ পাখি পর্ব-১১

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ১১,

মাহির বলে

— অনেক গরম লাগছে। বলেই চলে যায় কোনটা নিয়ে। মানে কি আদারা মাহিরের এমন হঠাৎ পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না। নিশ্চিত এর পিছনে কোনো কারণ আছে। মাহির নিজের রুমে এসে একাই হেসে ফেলে। ভাবে ডোসটা হয়তো একটু বেশিই হয়েগেছে… মাহির ভাবছে হ্আজ দুপুরের কথা। হঠাৎ করেই মায়া তার সাথে দেখা করতে আসে। মাহির দেখা করতে না চাইলেও একপ্রকার জোর করেই কথা বলে। মায়া বলে

— জানি আমরা ক্ষমার অযোগ্য, হয়তো কোনো দিন তুমি আমাদের ক্ষমা করবেও না। সেটাই স্বভাবিক। জানোতো মাহির যখন আমরা ভাবি আমরা তাকে ছাড়া বাঁচবো না তখন সৃষ্টি কর্তা আমাদের থেকে সেই জিনিসটা কেড়ে নেয় আর এট বুঝিয়ে দেয় যে কেই কারো জন্য বাঁচে না বা মরেনা। সব কিছু আগে থেকেই লিখা। তোমার আর আমার কাহিনী টা ঠিক তেমন। কিন্তু আমার আর আকাশের ভুলের মাশুল আদারা কেন দিবে বলতে পারো? আদারার তো কোন ভুল নেই!! আদারাতো তোমার সামনে নিজেকে উপস্থিত করেছে একটা খুলা বইয়ের মতো। সে চায় তুমি তাকে পড় তার ভিতরে গল্পটাকে আঁকড়ে ধর। মাহির সময় থাকতে কদর করতে শিখ নয়তো এমন দিন না আসে তুমি আদারাকে খুব করে চাইবে কিন্তু পাবে না। আজ আসি অনেক কথা বললাম,,, ক্ষমা চপয়ার সাহস আমার নেই। দেখা হবে আবার এখনতো রোজই দেখা হবে সপ্তাখানিক বাদেই আমকে আকাশ বাসায় নিয়ে যাবে। বলেই মায়া চলে যায়।

মাহিরও ভাবে মায়া তাকে ধোঁকা দিয়েছে এতে তার খারাপ লাগেনি বরং সে যে আদারাকে কষ্ট দিয়েছে তাতে তার খারাপ লাগছে। হয়তো তার মনেও আদারাকে নিয়ে কিছু আছে হ্যা সত্যি আছে নয়তো আদারার করা ইগনোরে তার এত খারাপ লাগতো না। মাহির আদারা প্রেমে পরে গেছে। কিন্তু মাহির ভাবে এই মেয়ে যেই জোরে থাপ্পড় মারে মাথা ঝিম ঝিম করে। সেইদিনের থাপ্পড়টার কথা মনে পরতেই গালে হাত চলে যায় মাহিরের। মাহিরের খুদাও লাগছে তাই আইসক্রিম টা শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় রাত তখন ১ টা বাজে। নিশু আর মিলি ঘুমিয়ে পরেছে। আদারার খুব পানি তেষ্টা লাগায় সে নিচে নামে পানি খেতে কারণ রুমে পানি নেই। ঠিক তখনই দেখে মাহিরও আসছে । কিন্তু সে মাহিরকে দেখেও না দেখার ভাঙ করে পানি খেয়ে চলে যেতে নিলে মাহির বলে

— #সুখ_পাখি খুদা লাগছে কি খাবো? বাচ্চাদের মতো করে। আদারার এই ডাক অপেক্ষা করার ক্ষমতা নেই, কিন্তু রাগী ভাবটা বজায় রেখেই বলে

— ফ্রিজে খাবার রাখা আছে। মাহির বলে

— না, অন্য কিছু খাবো। আদারা বলে

— অন্য কিছু কি খাবেন? মাহির বলে

— আসো আমরা কিছু রান্না করি। আদারা বলে

— যা খুশি করেন বলে চলে যেতে চাইলে মাহির আদারার হাত ধরে কিচেনে নিয়ে যায় , আদারা আরেক দফা অবাক হচ্ছে টাকি এইসব। কিচেনে টেবিলে অনেকটা জায়গা খালি ছিল সেখানে মাহির আদারাকে কোলে তুলে বসিয়ে দেয়। আর বলে

— আমার সাথে এখানে বসে থাকবে,,, আমি সুপ বানাবো। আদারা হেসে দেয় এইবার। কারণ সুপ বানানো অনেক ইজি গরমপানি সাথে সবজি আর প্যাকেট সুপ। আদারাকে হাসতে দেখে মাহির সবজি কাটতে কাটতে বলে

— হাসবে না বলে দিলাম। আদারা আঙ্গুল নিজের ঠোঁটে রেখে আবারা হেসে দেয়। অসাবধনতার কারণে মাহিরের আঙুল কেটে যায় কিন্তু তেমন না হালকা। আদারা মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্রেন বলছে উঠে চলে যেতে মন বলছে থেকে যেতে সময়টা সত্যি অদ্ভুত। মাহির সুপ তো বানিয়েছে কিন্তু সেটা খাওয়ার অযোগ্য। আদারা এবার আর না পেরে হুহু করে হেসে দেয় আর মাহির এক মনে তাকিয়ে আছে আদারার দিকে। আদারা টেবিল থেকে নেমে ফ্রিজে রাখা খাবার গরম করে দেয় মাহিরকে। মাহির বলে

— আমি খেতে পারবো না হাত কেটে গেছে আর আগের ক্ষতটাও এখনো আছে। আদারা বলে

— চামচ দিয়েই তো খাবেন। মাহির বলে

— হাত দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে, আজ যদি হাতটা ভালো হতো। আদারা বলে

— সমস্যা কি, মাহির ভাবে আদারা তাকে খায়িয়ে দেওয়ার কথা বলবে কিন্তু না সে বলে

— হাত ঠিক হলে খাবেন। কাল ভার্সিটি আছে। বলেই আদারা চলে যেতে চাইলে মাহির গিয়ে বলে

— কেমন মেয়েগো তুমি হাসবেন্ড অফিস থেকে এসেছে আর একটু আদর আপ্যায়ন করবে কি তুমি তা না!!! আদারা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে

— হাসবেন্ড!!! হাসালেন। মাহির বলে

— সরি আদারা,,, আমাকে কি ক্ষমা করে নতুন অধ্যায় শুরু করা যায় না? আদারা

—- যখন আমি আপনাকে চেয়েছিলাম তখন কেথায় ছিলেন? আপনি তো আমাকেই ভালোই বাসেন না আর সারে ৫ মাস পর আমাদের ডিভোর্স তাই এসব না বলাই ভালো আপনি আপনার রাস্তা যাবেন আর আমি আমার রাস্তায়। মাঝে রয়ে যাবে কিছু না বলা ভয়ংকর অন্ধকার। মাহির বলে

— এর মানে কি ধরে নিব?তুমি আর আমাকে চাও না? আদারা উপরে যেতে যেতে বলে

— চাইলেই তো সব কিছু পাওয়া যায় না। একটা কথা আছে যদি সব ইচ্ছে পূর্ন হয়ে যায় জীবনে তাহলে তামান্না করবে কিসের জন্য, কিছু অপূর্ণ ইচ্ছেই বাঁচতে আমাদের সাহায্য করে আমি ঠিক তেমন। আর হঠাৎ এমন পরিবর্তন ঠিক মানতে পারছি না!! মাহির বলে

— মায়া এসেছিল অফিসে তারপর মাহির আদারাকে সব কিছু বলে। আদারা বলে

— অন্যর কথায় না যেদিন নিজে বুঝতে পারবেন সেদিন এসেন। মাহির বলে

— কারো কথায় আমি কিছু বলেনি বা করেনি। মায়া এখন আমার ছোট ভাইয়ের বউ। আদারা মিচে নেমে এসে বলে

— হুমম আমি জানি।আর কিছু? মাহির কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে যায়। আদারার খারাপ লাগে কারণ একটু আগেই মাহির বললো তার খুদা লেগেছে এখন আবার না খেয়েই চলে গেলো। আদারা প্লেট খাবার নিয়ে মাহিরের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে রুমটায় প্রবেশ করে না অনেক দিন। যাবে কি যাবে না ভাবছে। রুমটা সম্পূর্ণ অন্ধকার করে রাখা আদারা রুমের লাইট ওন করে দেখে টাই এক জায়গায় মুজা এক জাগায় আর শার্ট এক জাগায়। আদারা বরাবরই গোছানো একটা মেয়ে তার এমন নোংরা ভালো লাগেনা। সে খাবারটা টি টেবিলে রাখে আর তখনই বেলকনিতে থেকে মাহির আসে। হাতে সিগারেট। আদারার সিগারেটর গন্ধ টায় অনেক খারাপ লাগছে। মাহির আদারা কাছে এসে তার মুখে ধোঁয়া দিয়ে বলে

— এখানে কি চাই? আদারা বলে

— আপনার খাবার। মাহির

— খেতে পারি এক শর্তে সেদিনের মতো খায়িয়ে দিতে হবে!! আদারা বলে

— পারবো না। মাহির

— আমিও খাবো না। আদারা শেষে না পেরে হাত ধুয়ে এসে খাবার তুলে দেয় মাহিরের মুখে। মাহির বলে

— ওহু এভাবে না। হাত দিয়ে খাবো। আদারা খাবর ধরে মাহিরের মুখের কাছে মাহিরও খেতে লাগে। মাহির এবার ইচ্ছে করেই আদারার হাতে কামড় দেয়। আদারা ব্যাথা পেলেও কোনো রিকেয়শন দেয় না । আবারও মাহির একই কাজ করে আদারা এবার হালকা চিৎকার দেয়। মাহির বলে

— তুমি খাচ্ছ না কেন? আদারা বলে

— আপনি খান। কিন্তু দয়া করে আমার হাত না ভাত খান। মাহির বলে

— হ্যা আমি জানি আমি খান। এবার তুমিও খাও। আদারা

চলবে

সুখ পাখি পর্ব-১০

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ১০

আদারার সাফ সাফ কথা সে এই বাসায় থাকবে না। মাহিরের মা, নিশু, বাবা, চাচা, চাচি সবাই একসাথে বলে বুঝিয়ে রাজি করায় আদারাকে। মাহির তো অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদারার দিকে কিন্তু এই দৃষ্টিতে আদারার রাগ গলে যাওয়ার মতো না। আদারা বলে

— কেন থাকবো আমি? কি পরিচয় থাকবো বলতে পারো তোমরা? আজ না হয় কাল কাল না হয় পরশু চলে যেতেই হবে আমাকে। মাহিরের মা বলে

— তুই তোর ফুপির কাছে থাকবি, তোকে বলবো না মাহিরের বউ হয়ে থাকতে, তুই নিশু আর মিলির সাথে থাকবি। কাল থেকে তুইও ভার্সিটি যাবি মিলি আর নিশুর সাথে। মাহিরের বাবা এতে তোমার কোন আপত্তি আছে? মাহিরের বাবা বলে

— না আমার কোনো আপত্তি নেই। আর আজিজ ( মাহিরের চাচার নাম) আমি চাই না এই দুই ছেলের কুকর্মের জন্য আমাদের খারাপ হোক। আকাশকে তার বউকে নিয়ে আসতে বল। আর হ্যা সে যাই করুক তোর ছেলে তাই বলে তেয্য পুত্র করার মানে হয় না, এটা ইসলামে হারাম। বলেই মাহিরের বাবা বেড়িয়ে যায় অফিসের জন্য । মাহিরের বাবা বরাবরই এমন সব কিছু
ঠান্ডা মাথায় করার চেষ্টা করে। মাহিরের চাচাও বেড়িয়ে যায় । আকাশ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিল। মাহিরের বাবা হাতে ইশারায় মাহির আর আকাশকে আসতে বলে , আকাশও যেতে লাগে। মাহির বলে

— আমি কিছুদিন অফিসে যেতে পারবো না। মাহির বাবা একমিনিট দাড়িয়ে শুধু এত টুকু বলে

— ok Take your time… বলেই বেড়িয়ে যায়। আদারা ভাবছে সে এখন যাবে কোথায় গ্রামে ফিরে গেলো হাজারো কথা শুনতে হবে তার জন্য তার পরিবারের। সে এই জিনিসটা ২য় বার চায় না। মাহিরের মা বলে,

—আয় মা, আয় কিছু খেয়ে নে। আদারা বলে

— ভালো লাগছেনা ফুপি আমার কাজ আছে। জামা কাপড় সব পড়ে আছে ঐ রুমে সেগুলো গুছাতে হবে। অনেক কাজ। মাহিরের মা বলে

— সার্ভেন্টরা করে দিব।আদারা বলে

— না আমারটা আমিই করব।

নিশু হঠাৎ করে বলে

— ভাইয়া তোর হাতে কি হয়েছে? মাহির নিজের বেন্ডেজ করা হাতটার দিকে তাকিয়ে বলে

— কিছু না, আর উপরে চলে যায়। আদারাও কিছু না খেয়ে গেস্ট রুমে চলে আসে। দরজাটা লাগিয়ে বালিশে মুখ গুজে কান্না করছে। এটা তার সাথে কি হচ্ছে। আদারা ভাবতেও পারেনি তার জীবন থেকে সুখ নামক জিনিসটা এভাবে উরাল দিবে। দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে এলো। মাহির সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে আদারার জন্য যখন আদারা রুমে আসবে তার জামা কাপড় গুছাতে তখন সে তার সাথে কথা বলবে। কিন্তু এটা ছিল তার ভুল ধারণা। সেদিনে আদারাকে মাহিরের রুমের আশেপাশে অব্দি দেখা যায়নি। মাহিরের আর একসময় ভালো লাগে না তাই সে তার রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। মাহিরের মা ছেলেকে ভরদুপুরে কোথাও যেতে দেখেও চুপই থাকলেন। অন্য কোনোদিন হলে হয়তো মাহিরকে বাঁধা দিত। সবাই দুপুরে একসাথে বসে খেতে লাগলো আদারকেও জোর করে নিয়ে আসে মিলি আর নিশু মিলে । আদারা হালকা পাতলা কিছু মুখে দিয়ে উঠে দাড়ায়। আর মাহিরের আম্মু বলে

— আদারা খাবার শেষ কর। আর নিশু মিলি তোরা তিনজন একসাথে থাকবি। নিশু মাথা দোলায় নিশু আর আদারা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে ছাত্রী আর মিলি তাদের এক বছরের জুনিয়র। আদারাও মাথা দোলায়। তারপর তিনজন মিলে যায় মাহিরের রুমে। ফার্স্ট এড বক্সটায় থাকা ঔষধ গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফ্লোরে এখনো পর্যন্ত। আদারা সেগুলোর দিকে একপল তাকিয়ে কিছু না ভেবেই নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নিতে থাকে তখনই রুমে প্রবেশ করে মাহির। মাহির আদারাকে দেখে মনে মনে খুশি হয়ে যায়। মাহির নিশু আর মিলিকে বলে

— নিশি, মিলি বাইরে যা তোরা । নিশু আর মিলি আদারার লাগেজটা নিয়ে বাইরে চলে যায় আদারাও বেড়িয়ে যেতে চাইলে মাহির গিয়ে দরজা আটকে দাঁড়ায়। আদারা সেটা দেখে ভ্রু-কুচকে ফেলে। আদারা মাহিরের হাতের নিচ দিয়ে বেড়িয়ে যায়। মাহির বলে

— এই মেয়ের এত জিদ কেন? একটু কথা শুনলে কি হয়!!

! কথাটা আদারা কান এড়ায়নি এত বড় অন্যায় করার পরও আদারার রাগটাই ছোখে পরলো তার আবেগ অনুভূতি গুলো তুচ্ছ তার কাছে। আদারা সামনে এগুতেই দেখে একটা ফুলদানি সেটা নিয়ে সে ছুড়ে মারলো মাহিরের রুমের দরজাটার ঠিক একটু আগে। মাহির রুমে ছিল হঠাৎ কিছু ভাঙার আওয়াজে সে ভয় পেয়ে যায় রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে তার দরজার কাছে ভাঙা ফুলদানিটা পরে আছে। মাহির কি মনে করে হেসে দেয়।

বিকেলের দিকে নিশু, আদারা আর মিলি বের হয় সপিং করতে। আদারা নিশু আর মিলি মিলে অনেক সপিং করে আর শেষে আদারা নিজের জন্য একটা ফোন আর বই কিনে। এখন থেকে সে আর মাহিরকে নিয়ে ভাবতে চায় না। নিজেকে নিয়ে ভাববে সে। মাহির নামক কোনো মানুষ তার জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে ছিল সেটা সে মুছে ফেলবে। বাসায় এসে আদারা একদম ফ্রী হয়ে যায় আগের মতো সবার সাথে। শুধু এড়িয়ে যায় মাহির আর আকাশকে। মাহিরের চোখের দিকে তাকায় না অব্দি আদারা। মাহিরের মাও মাহিরের সাথে তেমন দরকার ছাড়া কথাই বলে না। দেখতে দেখতে কেটে যায় ১ সপ্তাহ এই এক সপ্তাহে আদারা যথা সম্ভব এড়িয়ে চলছে মাহিরকে। মাহিরের ও প্রচুর খারাপ লেগেছে কাজ টায় । কিন্তু কারণটা তার অজানা। আজ মিলি আর নিশু আদারা বাসায় একা। কারণ বাসার সবাই মাহিরের চাচির সাথে তাদের চাচির বাবাকে দেখতে গিয়েছে বাসায় শুধু মাহির আদারা, নিশু আর মিলি। মাহিরের অফিসে তার ফিরতে লেট হবে। তাই নিশু আর মিলি প্লান করে যে তারা সবাই একসাথে পার্টি করবে ডিজে পার্টি। সবাই টি-শার্ট আর একটা থ্রি কোয়াটার পেন্ট পরে আছে। নিশু আর মিলি এগুলো পরে অবস্থ তারা প্রায় সময় এগুলো পরে থাকে। কিন্তু আদারার একটু আনইজি লাগছে। কিন্তু আদারাকে বেশ কিউটও লাগছে পরনে তার গোলাপি আর সাদা কালের টি-শার্ট, সাদা কালের পেন্টে জাস্ট চুল গুলো উঁচু করে জুটি করা ওয়াও। দেখতে দেখতে রাত এগারোটা বেজে যায়। তখনও তারা ডান্স করছে

All I see, in hersszz touch
What’s the fun? (ah, ah)
Do you know what I mean it is? (ah, ah)
Mmm, sup, sup, sup, sup
Ooo, can I get ya’?
Ooo, can I touch you?
Ooo, can I get ya’?
Ooo, can I touch you? আদারাও তাল মিলিয়ে ডান্স করছে। একটা সময় তাদের বেশ গরম লাগে। তখন নিশু বলে

— আদারা নিচে গিয়ে আইসক্রিমের বক্সটা নিয়ে আয়। আদারা বলে

— আমি যাবো না নিচে। মিলি বলে

— কেন কেউ কি তোমায় খেয়ে ফেলবে নাকি? আদারা বলে

— ধূর নিচে সার্ভেন্টরা আছে না। নিশু বলে

— চুপ শাঁকচুন্নি। তুই ভালো করেই জানিস সন্ধ্যার পর বাসায় আমরা ছাড়া কেউ থাকে না। আদারা বলে

— যাচ্ছি, তোদের আমি আইসক্রিম দিব না। বলেই নিচের দিকে পা বাড়ায়। আদারা এখন ফ্রী মাহিরকে দেখলে খারাপ লাগে কিন্তু তার বলা করা ব্যবহার গুলোর কথা মনে পরলেই আদারার আর ভালো লাগে না। আদারা ফ্রিজ থেকে একটা কোন বের করে খুলে খেতে থাকে আর আইসক্রিমের বক্সটা না নিয়ে বাটিতে করে নিয়ে যেতে থাকে। কারণ নিশু আর মিলি একবারে এক বক্স সবার দিয়ে দিবে পরে তাদের কষ্ট হবে ঠান্ডা জ্বর লাগবে। আদারা কিচেন থেকে মাত্রই বের হয় কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একহাতে তার ট্রে আরেক হাতে তার আইসক্রিম। ঠিক তখনই বাসায় প্রবেশ করে মাহির। অনেক ক্লান্ত সে। হঠাৎ করে দরজা খুলাতে আদারা ভয় পেয়ে যায় । মাহির তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে । আর মাহিরের এমন করে তাকিয়ে থাকে দেখে আদারা কেমন যেন লাগছে। মাহির কি হলো কে জানে। সে গিয়ে আদারার হাত থেকে কোনটা নিয়ে খেতে খেতে বলে

— হেল্প করে দিলাম #সুখ_পাখি এবার যাও। আদারা অবাক হয়ে যায়। এই প্রথম মাহিরের মুখে এত সুন্দর একটা ডাকনাম পেল সে। মাহির বলে

— অনেক গরম লাগছে। বলেই চলে যায় কোনটা নিয়ে। মানে কি আদারা মাহিরের এমন হঠাৎ পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না। নিশ্চিত এর পিছনে কোনো কারণ আছে। মাহির নিজের রুমে এসে একাই হেসে ফেলে। ভাবে ডোসটা হয়তো একটু বেশিই হয়েগেছে…

চলবে?

সুখ পাখি পর্ব-৮+৯

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০৮+০৯

বাতাস বইছে সুসু করে বৃষ্টি হওয়ার ফলে বাতাসটা ঠান্ডা লাগছে। মাঝে মাঝে দুইএকটা গাড়ি যাচ্ছে। মাহির আদারাকে এভাবে আকরে ধরেছে যে এটাই তার শত আবদারের ভান্ডার । আদারাও মাহিরকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে আছে। আদারা মাহিরের চুলের ভাজে একটা চুমু খেয়ে বলে

— চুপ করেন, এত কাঁদতে হয় না। মায়া আপনার ভাগ্য ছিলনা। সুসুসু চুপ। পিঠে হাত বুলাচ্ছে আর মাহিরকে এইসব বলছে আদারা। মাহির অনেক কষ্ট নিয়ে বলে

— সরি,,,,,, আমার জন্য,, মাহিরকে থামিয়ে বলে

— আমি আর এইসব ভাবতে চাইনা। যা হয়েছে তা হয়েছে। সব নতুন করে শুরু করা যাক। মাহির কিছু বলেনা সে আজ নিশ্চিুপ হয়ে গেছে। রাত ১২টার দিকে মাহির আর আদারা বাসায় ফিরে। আকাশ অনেক আগেই বাসায় ফিরে এসেছে। মাহির চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে। বিলকনির দোলনাটায় বসে পরে। আদারা রুমে এসে দেখে মাহির বেলকনিতে বসে আছে। সে নিচে গিয়ে খাবার নিয়ে আসে মাহিরের জন্য । আদারা গিয়ে বসে মাহিরের পাশে। মাহওর একবার আদারার দিকে তাকিয়ে আবার ভাবনা জগৎে ব্যাস্ত হয়ে যায়। আদারা ভাত মাখিয়ে মাহিরের সামনে ধরে। মাহির বলে

—- খাবো না ইচ্ছে নেই আমার। আদারা রেগে বলে

—- দেখেন একদম ন্যাকামি করবেন না। আপনার বউ মারা যায়নি, বেঁচে আছি আমি। আর ছ্যাকা খেয়ে বাকা না হয়ে আমাকে নিয়ে ভাবুন, যত্তসব। বলেই মাহিরের মু মুখে ভাত পুরে দেয়। মাহির ভাবতেই পারেনি এত কিছুর পরও আদারা তাকে এতটা আপন করে নিবে। বেলকনির সোনালী লাইটের আলোতে দুজন আলোকিত হচ্ছে। যানান দিচ্ছে শুরু হতে চলেছে এক নতুন অধ্যায়। মাহির শুধু আদারাকে দেখে চলছে এমন জীবন সঙ্গী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। একসময় মাহির বিষম খায় কারণ তার মনযোগ ছিল আদারের দিকে। আদারা দৌড়ে গিয়ে রুম থেকে পানি নিয়ে আসে। আর মাহিরে হাতে দেয় মাহিরও খেয়ে গ্লাসটা মূহুর্তের মাঝেই শেষ করে দেয়। তারপর দুজন একসাথে খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষ আদারা কিচেন গিয়ে পেলেট টা রেখে আসে। আর মাহির কে বলে

—- চলেন ছাঁদে যাই। মাহিরের কেনো জানি আজ আদারার সব কথা শুনতে ইচ্ছে করছে।সেও কিছু বললোনা। আদারা মাহিরের সাথে ছাঁদে গিয়ে বলে

—- আমি রেলিঙে বসবো। হেল্প করেন। মাহিরও হেল্প করে। আদারা মাহিরের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বসে আছে রেলিঙে। মাহিরও খুব করে আগলে রেখেছে। একসময় আদারা মাহিরের কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে নেয়। মাহির বলে

— পরে যাবেতো। আদারা বলে

— যাক কথা বেড়হয়েছে। আমি তো ভেবে ছিলাম বোবা স্বামীকে নিয়ে আমার সংসার করতে হবে। আর পরবোনা আপনি আছেন তো। মাহির বলে

— এত কিছুর পরও এত বিশ্বাস? যদি ফেলে দেই? আদারা মাহিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে

— হুমম অনেক। আমিও যদি আপনার জায়গায় থাকতাম তাহলে হয়তো আমিরও এমনটাই করতাম, আর আপনারতো ভুলছিল না কোথাও। আপনাকে ভুলবুঝানো হয়েছে। বলেই মাহিরের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। মাহির বলে

—- আমার,,,, আদারা বলে

—- জানি জানি বলবেন সময় লাগবে!!! থাক আর বলতে হবে না। আস্তে করে বলে মাহিষ একটা। সেটা মাহিরের কান এড়ায়নি। মাহির বলে

— কি আমি মহিষ? আদারা বলে

— যাক আলহামদুলিল্লাহ্ নিজের মুখে শিকার করলেন আপনি মহিষ। মাহির বলে

—- কোথায় বললাম? আদারা বলে

— এই মাত্র। মাহির বলে

— বাজে বকলে এখান থেকে ফেলে দিব। আদারা কিছু বলেনা। আজ অনেকদিন পর মাহিরের সাথে তার এতো সুন্দর করে কথা হয়েছে। সে মুচকি হাসি দেয় অন্য দিকে তাকায়। পিছন থেকে তাদের এই কাহিনী দেখছে সেই বিশাল চাঁদটা। একটু পর মাহির বলে

—- চল রুমে যাই। আদারা বলে

— No, never, kabi Nahi, চন্দ্র বিলাস করব আজকে। মাহির বলে

— চন্দ্র নামটা সুন্দর না? আদারা এক্সাইটেড হয়ে বলে

— ওকে আমাদের মেয়ে হলে নাম রাখব চন্দ্র। মাহির আদারার কথায় শুধুই হাসে। আদারা বলে

—- আপনার মতো খবিশ আমি দুইটা দেখিনাই। বলেই রেলিঙ থেকে নেমে দেওয়াল ঘেঁষে বসে পরে। মাহিরও তার পাশে গিয়ে বসে বলে

—- তাই তাহলে এই খবিশটাকে ছেড়ে দাও। আদারা মনটা মুহূর্তেই খারাপ হয়ে যায়। আদারা মাথা নিচু করে বলে

—- থাকতে কদর করুন এমন সময় না আসে যখন আপনার আমাকে খুব প্রয়োজন ঠিক আমার মতো করে। কিন্তু আমি মুখ ফিরিয়ে নেই আপনার থেকে। যানেন তো প্রকৃতির একটা নিয়ম আছে তুমি যা দিবে তার দিগুণ আপনার কাছে ফিরে আসবে। মাহির বলে

—- অভিশাপ দিচ্ছ? আদারা একটা হাসি দিয়ে বলে

—- নাহ, এটা অভিশাপ না এটাই সত্যি। রাত হয়েছে চলুন নিচে যাওয়া যাক। মাহির বলে

— কেন কি হয়েছে আরেকটু থাকি!!!ভালোই তো লাগছে। আদারা বলে

— তাহলে আপনি থাকুন আমি যাই। মাহিরকে কিছু বলতে না দিয়েই আদারা নিচে চলে আসে কিন্তু এবার সে আর মাহিরের রুমে যায় না সরাসরি গেস্ট রুমে চলে যায়, যেখানে সে আগে বেড়াতে আসলে থাকতো। খুব কান্না আসছে কেন মাহির তাকে বুঝেনা কেন সবসময় তার কথার অন্য দিকটা খুজে। একসময় কান্না করতে করতে আদারা ঘুমিয়ে যায়। মাহির রুমে এসে দেখে আদারা নেই। ভাবে হয়তো নিচে গিয়েছে। সে সোফায় বসে বসে আদারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগে কিন্তু আদারা আসে না। একসময় মাহিরও ঘুমিয়ে যায়। সকাল ৬টার দিকে আদারা রুমে চলে আসে দেখে মাহির সোফায় শুয়ে আছে। হয়তো ঠান্ডা লাগছে তাঁর। তাই আদারা এসিটা কমিয়ে মাহিরের গায়ে চাদর দিয়ে দেয়। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। মাহিরের ঘুম ভাঙলো ৯টার দিকে তখনই আদারা আসে মাহির আদারাকে দেখে বলে

— গুড মর্নিং। আদারাও বলে

— গুড মর্নিং। মাহির বলে

— কালকে রাতে কখন এসেছ রুমে? আদারা কিছু বলে না হাতে রাখা কফির মগটা মাহিরের সামনে রাখে আর বলে

— আপনি ব্রাশ দিয়ে ব্রাশ করবেন না। মাহির বলে

— কেন তাহলে কি দিয়ে করব? আর কেন।।আদারা দরজার কাছে গিয়ে বলে

— কারণ ঐটা দিয়ে আমি দেওয়াল পরিষ্কার করেছি কালকে। বলেই দেয় দৌড়। আর মাহিরের অবস্থা দেখার মতো ওয়াক ওয়াক করতে করতে বাথরুমে চলে যায়। নিশু তখন মাহিরের রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল মাহিরকে বমি করতে দেখে নিশু মাহিরের কাছে গিয়ে বলে

— আলহামদুলিল্লাহ্ আমি ফুপি হতে চলেছি। মাহির ভূত দেখার মতো অবাক হয়ে যায়। মাহির বলে

— কি বাজে বকছিস? পাগল হয়ে গিয়েছিস।। নিশু বলে

—- খারাপ কি বলেছি? তুই সকাল সকাল বমি করলি এর মানে কি ধরে নিব। মাহির বলে

—- কানের নিচে দিব একটা যা, তোর ভাবি কে উপরে পাঠা। নিশু বলে

—- তোর মতো জল্লাদ ভাই দুইটা দেখি নাই। এই একটু এইদিকে আয়তো। মাহির নিশুর কাছে যায়। নিশু মাহিরের পেটে হাত বুলিয়ে বলে

—- গুড মর্নিং ফুপি, জানিস তোর বাবাটা না খুব পঁচা শুধু বকে, তোর মা ঠিকই বলে মহিষ একটা। মাহির নিশুর কান ধরে বলে

—তোকে না বললাম আদারাকে ডেকে দিতে আর তুই তোর মতো বাজে কথা বলেই চলেছিস। নিশু নিজের কান ছড়িয়ে বলে

—- আমার কানটা সমানে লালে লাল করে দিলি হারামি মহিষ একাটা। বলেই নিশু দৌড়। নিশু নিচে গিয়ে আদারাকে বলে

—- ভাবি গো তোমাকে তোমার মহিষ হাসবেন্ড তোমাকে ডাকে। মাহিরের মা বলে

—- চুপ ফাজিল মেয়ে, আদারা যাতো মা দেখে আয় মাহির কি বলে। আদারা নিজের হাত মুছতে মুছতে বললো

চলবে

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💗
#পর্বঃ০৯
লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা

— ওকে মা আমি আসছি। আকাশ তখনই নিচে নামছিল। আকাশকে দেখে আদারা একটা হাসি দিয়ে রুমে চলে আসে। আদারা রুমে গিয়ে দেখে মাহির হাতের বেন্ডেজটা ভিজিয়ে বসে আছে, সেটা দেখে আদারা রাগী গলায় বলে

— আপনার কি সেন্স কমনসেন্স বলতে কিছু নেই?? হাতটা ভিজিয়ে বসে আছে। আদারা গিয়ে ফার্স্ট এড বক্সটা খুজতে লাগে। আদারা মাহিরকে জিজ্ঞেস করে

— ফার্স্ট এড বক্সটা কোথায়? মাহির ইশারা করে বলে ড্রসিং টেবিলের নিচের ড্রয়রে। আদারাও সেটা নিয়ে এসে মাহিরের সামনে রেখে চলে যেতে যেতে বলে

— বেন্ডেজটা করে নিচে খেতে আসুন। অফিস যাবেন না লেট হচ্ছে। মাহির বলে

— থাক থাক আর এতো বেশি ভাবতে হবে না যদি আমাকে নিয়ে সত্যি ভাবতে তাহলে বেন্ডেজটা নিজেই করে দিতে। ডান হাতে লেগেছে বাম হাত দিয়ে আমি কি ভাবে করি। আর আমি অফিস যাবো না কিছু দিন। আদারা মাহিরের কাছে আসতে আসতে বলে

— রাগ দেখিয়ে গ্লাস ভাঙতে কি বলেছিল আমি?, আর অফিস যাবেন না মানে!!! আর মাহিরের হাতের বেন্ডেজটা খুলতে লাগে মাহির বলে

— হুমমম,,,একটু বিরতি দরকার এইসব আর ভালো লাগছে না। যাই হোক খুব জলদি সবাইকে বলে তোমাকে মুক্ত করে দিব ৬মাসের মধ্যে । আর নিজে অন্য একটা ভালো ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিব। আদারা মূহুর্তেই রেগে গিয়ে বলে

— আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। কালকেও আপনাকে বললাম কিন্তু আপনি আপনিতো আপনি। বলেই নতুন করে বেন্ডেজটা করতে লাগে। মাহির বলে

—- দেখ আদারা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসা লাগে আর আমি অন্য। আদারা বলে

— অন্য কাকে? কাকে মায়া আপুকে সে আপনার ছোট ভাইয়ের বউ। আর আপনি আমাকে মুক্তি না নিজের মুক্তির কথা বলছেন। মাহির বলে

— আদারা প্লিজ আমি এইসব কথা নিয়ে ভাবতে চাই না। আদারা বলে

— আচ্ছা ঠিজ আছে , আর জোর করবো না, আপনার কোনো ব্যাপারে নাক গলাবো না।
৬মাস ৬মাস পরত আমি চলে যবো তাই না!! মাহির চুপ হয়ে যায়। অপর দিকে আদারা মনে শুরু হয়েছে নতুন করে ঝড়। আদারা খুব কষ্ট করে বলে

—- আচ্ছা মাহির আপনি একটুও অবাক হননি মায়াকে সুস্থ দেখে মনে ও যাই করেছে,,, তখনই মাহির বলে

—- প্রথম দেখে মুখে একটা তৃপ্তির হাসি চলে এসেছিল কিন্তু যখন, আকাশকে আর মায়াকে জড়িয়ে ধরারটা মাথায় আসে, মাথা ঠিক ছিলনা আমার। আদারা

—- সত্যি খুব ভালোবাসেন মায়াকে? মাহির বলে

—- এটা ভালোবাসা কিনা জানিনা,,, কিন্তু কালকে আমার মায়ার জন্য না আকাশ আর তোমরা জন্য খারাপ লেগে। আচ্ছা সত্যিটা জানার পরও তুমি আমাকে এতো আগলে রেখাছো কারণ..? আদারা বলে

—- কারণটা আপনার অজানা নয়। ভালেবাসি, কালকে যখন আমাকে জড়িয়ে আপনি কেঁদে ছিলেন তখনই আমার রাগ অভিমান আর অভিযোগ সব কিছু শেষ হয়ে যায় । তখন আমাকে আপনার জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেখি সত্যি বলতে দোষটা আপনার ছিলও না আবার ছিল। কারণ আপনি পয়েন্ট ওফ ভিউ টা একবার চেক করতেন তাহলে হয়তো এমনটা হতো না। আচ্ছা আমার কোন দিক দিয়ে কমতি আছে একটু বলবেন?। বেন্ডেজ করে উঠে দাড়ায় আদারা । মাহির বলে

— তোমার কোন দিক দিয়ে কমতি নেই। আদারা রেগে হাতের ফার্স্ট এড বক্সটা ছুড়ে মারলো আর নিজেকে আটকে রাখতে পারবেনা সে। মাহিরের গেঞ্জি টা টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে

— সমস্যা কি তোর? কি এমন চেয়েছি তোর কাছে? সেই প্রথম দিন থেকে তোর সব অত্যাচার সহ্য করে এসেছি হ্যা মানি প্রতিবাদ করেছি কারণ আমি ঠিক ছিলাম। আর এতো মায়া মায়া করিস দুইদিন পর মায়ার বাচ্চা কাচ্চা তোকে চাচ্চু চাচ্চু বলে ডাকবে। আমার থেকে আমার পরিবারটা কেড়ে নিয়েছিস। আবার বলছিস তুই আমার জন্য ভালে ছেলে খুঁজে দিবো। এই হারামজাদা তোকে বলেছিলাম আমাকে বিয়ে কর? আমাকে যখন ফিরিয়ে দিয়েছিল আমি চলে যাইনি কেন আবার আসলি বমার জীবনটাকে নষ্ট করতে। আমিতো চেয়েছিলাম তোর জীবনটাকে জান্নাত করতে তুই কেন আমার জীবন টাকে জাহান্নাম করে দিলি। তোর কি মনে হয় সত্যিটা জানার পরও আমাকে সমাজ সেই আগের সম্মান দিবে? ঐটা গ্রাম আর এটা শহর আসমান আর জমিনের তফাত। নানান জনের মুখে আমাকে নিয়ে নানান কথা হবে। তোর কি তুই তো ছেলে। জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি তোকে নিজের আপন মনে করে। এবার আর একই ভুল আমি আর করব না। তুই তোর মতো আমি আমার মতো আর আমাকে নিয়ে তোর দরদ দেখাতে হবে না। কিন্তু সে দিন বেচ্শি বাকি নেই যেদিন তুই নিজে আসবি আমার কাছে, কিন্তু সেদিন আমি থাকবনা। বলেই চলে যায় আদার দরজটা খুলে দৌড়ে নিচে নেমে যায়। মাহিরও পিছন পিছন যায়। কিন্তু কাউকে কিছু না বলেই আদারা বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় । মাহিরের মা তা দেখে আদারাকে ডাকে কিন্তু শুনেনা একটু পর মাহিরও দৌড়ে আসতে দেখে আদারার পিছন পিছন। সবাইতো অবাক কি হচ্ছে সব মাথার দুইহাত উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিছু সময় আগ অব্দি তো ঠিক ছিল। মাহির বের হয়ে দেখে আদারা গেট খুলতে বলছে দারওয়ান চাচাকে কিন্তু মাহির পিছন থেকে চিৎকার করে না বলে দেয়। দারওয়ান চাচাও গেট খুলে না। মাহির এসে আদারার হাত ধরে বলে

—- বাসায় চল খাবা, সবাই অপেক্ষা করছে। আদারা চিৎকার দিয়ে বলে

—- আমার জন্য তোকে ভাবতে হবে না,,, আমাকে আমার মতো থাকতে দে। বাসার সবাই একসাথে তখন গার্ডেনে এসে পরে। মাহিরের মা আদারাকে এভাবে কথা বলতে দেখে বুঝতে পারলো অনেক বড় কিছু হয়েছে। নিশু বলে

—- কি হয়েছে আদারা, এমন করছিস কেন? আদারা রেগে গিয়ে বলে

—- কি হয়নি তাই বল। তোর এই ভাই মিস. মাহির আহনাফ আবিদ খান আর এই আকাশ আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল। সেতো আমাকে বিয়ে করেছিল প্রতিশোধ নিতে তার ভালোবাসা আর তোর ছোট ভাই আকাশের বউ এর জন্য । আকাশের বউ কথাটা শুনা মাত্র সবাই আরেক দফা অবাক হয়। মাহির বলে

— আদারা বাসায় চল। আদারা বলে

—কেন? কেন যাবো আমি? তোর দাসি হয়ে। তারপর আকাশ মায়া আর মাহিরের কালকের সব ঘটনা বলে । জানিস নিশু কালকে যখন সে নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো আর আমাকে সরি বলেছিল সব ভুলে আপন করে নিয়ে ছিলাম। কিন্তু না সে বলছে আমাকে অন্য একটা ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিবে ৬ মাস পর আমাদের ডিভোর্স আর সবাইকে সময় মতো সত্যিটা বলবে!!! আমাকে সস্তা পেয়ে গিয়েছিল তাই যেমন খুশি তেমনি নাচিয়েছ। কিন্তু আমি আর পারবো না। আমাকে মাফ করো তোমারা। কাদঁতে কাদঁতে নিচে বসে পরে আদারা। তখনই মাহিরের বাবা এসে মাহিরের গালে একটা কষিয়ে চড় লাগায় বলে

—- তোকে এই শিক্ষা দিয়েছে তোর মা বল? মাহিরের মা আদারাকে গিয়ে ধরে আদারাকে। আকাশের বাবা তো রেগে বম হয়ে আকাশের দিকে তেড়ে যায়। কিন্তু আকাশের মা অনেক কষ্টে আটকায়। নিশু বলে বাসায় চল সবাই। কিন্তু আদারা যেতে নারাজ। অনেক জুড় করে আদারাকে বাসায় নিয়ে আসে সবাই। অপরাধীর মতো আকাশ আর মাহির দাড়িয়ে আছে। মাহিরের মা মাহির কে বলে

—- তোকে নিজের সন্তান বলতেও লজ্জা করছে। আদারা বলে

—- সবাই মাহির মাহির কেন করছ সব নাটের গুড় তো এই আকাশ। তোকে তো আমি নিশু এসে আদারাকে থামায়। আকাশের বাবা সরাসরি বলে দেয়

—- আকাশকে আমি তেয্য পুত্র করলাম, ওর আর এই বাসায় জায়গা নেই। ও ওর বউকে নিয়ে যেখানে খুশি থাক। বলেই উপরে চলে যায়। আকাশের মা বলে

— তোর মতো ছেলে আমারও চাই না একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে তোর একটুও খারাপ লাগলো না? যেখানে তোদের বাসায়ও তোদের আদরের বোন আছে। মাহির বলে

— এর জন্যই আমি এখন বলতে চায়নি। কিন্তু আদারা। আদারা বলে

—- আদারা আদারা কি? এই তুইতো একটা Selfish giant, নিজেরটা ভালো বুজিস তুই আমাকে কি ডিভোর্স দিবি আমি নিজে তোকে ডিভোর্স দিব। মাহিরের মা আদারাকে বলে

—- আদারা মা শান্তহ। আদারা বলে

—- আমি থাকবো না এখানে।

চলবে

সুখ পাখি পর্ব-০৭

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০৭

প্লিজ মায়া। আমি সরি। মায়াও আকাশকে জড়িয়ে ধরে। আকাশ বলে

—- I love you… love you so much। মায়াও আকাশকে জড়িয়ে কেঁদে বলে

— Love you too….

আর তখনই কেবিনে প্রবেশ করে কেউ,,, তাড়াতড়ির কারণে আকাশ ভালো করে দরজটা লক করতে ভুলে যায়। ,,, মায়া চোখ মেলে যাকে দেখে তাতে সে ভয় পেয়ে যায়। মাহির দাড়িয়ে পিছনে আদারা। মায়া আকাশকে নিজের থেকে আলাদা করে দাঁড়ায়। আকাশ মায়াকে এমন কাচুমাচু হতে দেখে তার দৃষ্টি লক্ষ করে তাকায়। দেখে মাহির আর আদারা। আকাশ দেখে মাহিরের চোখ লাল টোটকে হয়ে আছে। মাহির এসে আকাশের কর্লার ধরে বলে

— তোর সাহস কি করে হলো? তুই মায়াকে জড়িয়ে ধরেছিস। আর সাথে সাথে একটা নাক বরাবর ঘুসি মেরে দেয়। আকাশের নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। আদারা এক কোনে দাড়িয়ে আছে। মায়া দৌড়ে এসে আকাশে ধরে । মাহির আবার আকাশকে মারতে আসলে। মায়া মাহিরকে থামিয়ে দিয়ে বলে

— ইস্টপ, কি করছটা কি মাহির… মাহির চিৎকার করে বলে

— ওর সাহস কি করে হলো তোমাকে ধরার। ওকে তো আমি। আর তখনই আদার এসে মাহিরকে থামায়। আর বলে

— কি হচ্ছেটা কি এখানে? এটা হসপিটাল বাসা না। আর মাহির চুপ করে বসুন আর ওদের কথাটা শুনুন। মাহির কিছু বলতে গেলে আদারা মাহিরকে ধমক দিয়ে বলে

— চুপ একদম চুপ একটা কথা বললে খবর আছে। মায়ার মা কেবিনে আসে ভয়ে ভয়ে। মাহির রাগে ফুসফুস করছে। আদারা তা দেখে এক গ্লাস পানি এনে দেয় মাহিরকে মাহির সেটা হাতে চাপ দেয় যার ফলে কাঁচের গ্লাসটা ভেঙে যায় আর টুকরো গুলো হাত ঢুকে যায়। আদারা সেটা দেখে অন্য দিকে তাকিয়ে কিছুটা সময় চোখ বন্ধ করে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় মাহিরের গালে। কেবিনের সবাই অবাক। আদারা মাহিরের শার্টের কর্লার ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে আর বলে

— নিজেকে কি মনে করেন আপনি? হিরো ( বিদ্রঃ আগ্গে আন্নেরই সাইকো হিরো) হাতের কি অবস্থা করেছেন। আর অন্য দিকে মায়া ব্যস্ত আকাশকে নিয়ে। আদারা বাইরে গিয়ে ডক্টর ডেকে নিয়ে আসে। তারপর ডক্টরের কথায় একটা নার্স এসে মাহিরের হাতের ড্রেসিং করতে থাকে। আকাশের তেমন কিছু হয়নি।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া পরে যখন মাহির উপরে যায় তখনই আদারা রুমে আসে। মাহির দেখে তার বালিশে ভিজা তোয়ালেটা রাখা। সে সেটা তুলে দেখে তোয়ালেটা একদম ভিজে চুপচুপে আর বালিশটাও ভিজে একাকার। বিছানার উপর আরেকটা ভিজা তোয়ালে রাখা। মাহির আদারাকে উদ্দেশ্য করে বলে

— এই সবের মানে কি? আদারা বিছানার অন্য পাশে বসতে বসতে বলে

— কি আবার তোয়ালে!!! মাহির বলে

— সেটাই তো, কিন্তু এটা এখানে কি করে? আদারা বলে

— আপনিতো রেখে গিয়েছিলেন। মাহির বলে

— হ্যা কিন্তু সেটা এতোটা ভিজা ছিলো না আর বালিশের ধারের কাছেও ছিল না। আদারা মেকি হাসি দিয়ে বলে

— তোয়ালে হাটতে পারে আর সেও আপনার মতো গোসল করে এসে ঘুমি দিয়েছে। মাহির বলে

—- হোয়াট দ্যা,,,, ফাউল কথা। আদারা এক ভ্রু উচু করে হাসি দিয়ে বলে

— এটা কথা না শিক্ষা নেক্সট টাইম যেন এমনটা না হয়। মাহির বলে

— তুমি একটা? আদারা বলে

— কি আমি? মাহির বলে

— কিছু না। আদারা বলে

— আচ্ছা। আদারা বলে

— আপনার বেলকনিতে ফুলের গাছগুলো খুব সুন্দর। মাহির সোফায় বসে বলে

— ফুল ভালোলাগে? আদারা বলে

— হুমমম। মাহির বলে

— মায়ারও খুব পছন্দের ছিল।। আদারার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সেটা দেখে মাহির বলে

— মায়াকে দেখতে যাবে? আদারা কিছু সময় পর বলে ঠিক আছে। আর দুজনই হসপিটালে আসে মায়াকে দেখতে, কিন্তু কেবিনে বাইরে মায়ার মা ভয়ে দাড়িয়ে ছিল মাহিরকে দেখে। সে মাহিরকে আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মাহির সেটাকে পাত্তা না দিয়ে কেবিনে ঢুকে আর দেখে আকাশ মায়া একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। নার্স ড্রেসিং করে চলে যাওয়ার পর আকাশ বলে

— মাহির ভাইয়া আমার কথাটা,,,,, মাহি চিৎকার করে বলে

— কি কি বলবি তুই?? আদারা কেবিনের দরজাটা লক করে বলে

— চুপ,, একদম চুপ। আপনার মহিষের মতো না চেচামেচি করলে ভালোলাগে না তাই না, আকাশ ভাইয়া আপনি বলেন। আজ সত্যিটা সামনে আসুক। আকাশ বলতে লাগে

—- মায়ার সাথে আমার পরিচয় কলেজ লাইফ থেকে আর সেখান থেকেই আমাদের সম্পর্ক, তারপর একদিন আমরা বিয়ে করে ফেলি কাউকে না জানিয়ে। আমি চেয়েছিলাম পরিস্থিতি সামলে তারপর পরিবারের সবাইকে আমাদের ব্যাপারে বলবো। কিন্তু তার আগেই আমরা বন্ধুরা মিলে একদিন একটা পার্টিতে কার্ডস খেলি সেখানে আমি হেরে যাই বাজিতে ছিল ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু তখন আমি ছিলাম বেকার আর টাকার লোভটা আমাকেও আকরে ধরেছিল কিন্তু আমি যখন হেরে যাই তখন আমি টাকা দিতে পারি না, আমি ওদের বললেও শুনেনা। আমিতো ভেবেছিলাম ওরা আমার বন্ধু তাই কোন সমস্যা হবে না, আর আমি মিথ্যাে বলেছিলাম যে আমার কাছে টাকা আছে । তারপর ওরা দাবি করে টাকা দিতে না পারলে আমাকে মায়াকে তার কাছে তুলে দিতে হবে। আর তখনই তোমার সাথে মায়ার এক ফ্রেন্ডের পার্টিতে দেখা। মায়া তোমাকে আগে থেকেই চিনতো তাই সে তোমার সাথে বন্ধুসুলভ আচারণই করে। আর তুমি তার অপর আকৃষ্ট হয়ে পর। আর মায়া আমাকে বলে আমিও তখন একটা প্লান করে ফেলি ওরা আমাকে কিছু সময় দিয়েছিল টাকা দেয়ার জন্য। আর তখনই আমার মাথায় সে বুদ্ধি আসে আদারা না থাকলেও আমি এই প্লানটাই করতাম।

সব শুনে আদারা বুঝতে পারলো এখানে মায়া আর আকাশের দোষ নেই আবার আছেও যদি আকাশ টাকার লোভে না পড়তো তাহলে এমনটা হতো না। আর যদি মাহিরকে সত্যিটা বলে দিত তাহলে হয়তো দুই ভাইয়ের সম্পর্কের মাঝে এমন ফাটল ধরত না। মাহির সব শুনে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। আদারাও দৌড়ে যায় পিছন পিছন। মাহির গিয়ে গাড়িতে বসে পরে। আর আদারাও বসে পরে তার পাশে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে বিকেলের শেষ প্রহর চলছে ঘন্টা খানিক পরই সূর্য মামা অস্ত যাবে। মাহির গাড়ি চালাতে লাগে আর ভাবছে তার জন্য আদারার মতো একটা মেয়ে কষ্ট পেয়েছে, তার এটা ভেবে খারাপ লাগছে আকাশ তার ভাই তাকে ঠকিয়েছে। মাহির গাড়িটা নিয়ে হাতিরঝিলের দিকে যায়। গাড়িটা এক সাইডে থামিয়ে মাহির গাড়ি থেকে নেমে উঠে বসে পরে গাড়ির উপরে। আদারাও গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। সে মাহিরের সামনে গিয়ে দাড়ায়। সে মাহিরের পিঠে হাত রাখতেই মাহির আদারাকে জড়িয়ে কেঁদে দেয় ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই কিন্তু মাহির আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে নেই। আদারাও পরম যত্নে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় মাহিরকে নিজের সাথে। মুহূর্তেই সব রাগ বরফের মতো গলে যায়। মাহির আদারাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। সূর্যটা ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে হয়তো লজ্জা পেয়েছে সে, মাহির আদারকে এভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য, তাই সে লুকিয়ে পরে। বাতাস বইছে সুসু করে বৃষ্টি হওয়ার ফলে বাতাসটা ঠান্ডা লাগছে। মাঝে মাঝে দুইএকটা গাড়ি যাচ্ছে। মাহির আদারাকে এভাবে আকরে ধরেছে যে এটাই তার শত আবদারের ভান্ডার । আদারাও মাহিরকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে আছে। আদারা মাহিরের চুলের ভাজে একটা চুমু খেয়ে বলে

— চুপ করেন, এত কাঁদতে হয় না। মায়া আপনার ভাগ্য ছিলনা। সুসুসু চুপ। পিঠে হাত বুলাচ্ছে আর মাহিরকে এইসব বলছে আদারা। মাহির অনেক কষ্ট নিয়ে বলে

— সরি,,,,,, আমার জন্য,, মাহিরকে থামিয়ে বলে

— আমি আর এইসব ভাবতে চাইনা। যা হয়েছে তা হয়েছে। সব নতুন করে শুরু করা যাক।

চলবে

সুখ পাখি পর্ব-০৬

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০৬

সূর্য মামা ব্যস্ত কালো মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলতে। আদারা মাহিরকে একটু দেখে হাটতে লাগে আবার। মাহির কোন রকম উঠে আবার দৌড় দেয় আদারার সাথে। আদারা সামনে তাকাতেই দেখে গোবর আর সেটা দেখে তার মাথায় বুদ্ধি আসে সে সরে দাড়ায় আর মাহির তার কাছাকাছি আসতেই নিজের একটা পা বাড়িয়ে দিলো আদারা। আর ধপাস করে……মাহির পরে যায় গোবরে আর তা দেখে আদারা হাসি দিয়ে বলে

—- ওয়াও,, হাউ কিউট। এখন একদম মহিষ মহিষ লাগছে । তখনই মাহির উঠে দাড়ায় তার কোট গোবরে মেখে আছে। সেটা দেখে মাহির বলে

—- ছিঃ কি বাজে গন্ধ। আদারা একটা মেকি হাসি দিয়ে মাঠ বরাবর দেয় একটা দৌড় মাহিরও তার কোট টা খুলে ছুড়ে মারে আর আদারার পিছনে পিছনে সেও দেয় এক দৌড়। হঠাৎই খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয় । বৃষ্টি শুরু হওয়ার ফলে আদারা মাহিরের দিকে ফিরে আসে। মাহির কাক ভিজা হয়ে আছে। সাদা শার্টটা লেপ্টে আছে তার গায়ে। সামনের চুল থেকে টুপ টুপ করে জল ঝরছে। আদারার কাছে তাকে বর্তমানে কিং ওফ মায়ার বাদশাহ মনে হচ্ছে। অপর দিকে মাহির এক মনে তাকিয়ে আছে আদারার দিকে। মেয়েটাকে সে কখনো এমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেনি কিন্তু আজ কেন জানি ইচ্ছে হচ্ছে তাকে দেখেতে। ঘন কালো চুল, মিষ্টি একটা মুখ, ঘন পাপড়ি ওয়ালা ডাগর ডাগর চোখ। আর সেই চোখে তার জন্য কখনো থাকে অভিযোগ, কখনো অভিমান আবার কখনো ভালোবাসা। মাহিরকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদারার একটু আনইজি লাগে তাই সে মাহিরের কাছে গিয়ে বলে

— চলুন বাসায় ফিরে যাওয়া যাক। মাহির তখনও তাকিয়ে আছে আদারার দিকে আদারা মাহিরের সামনে তুড়ি বাজায় যার ফলে মাহিরের হুশ আসে। মাহিরকে আদারা বলে

— চলুন বাসায় যাওয়া যাক। মাহির বলে

— হুমমম। তারপর আর তাদের মধ্যে কোন প্রকার কথা হয় না। বাসায় এসে মাহির আর আদারা রুমে চলে যায়। ড্রয়িং রুমে কেউ ছিলনা তাই তারা তাড়াতাড়ি নিজেদের রুমে চলে আসে। রুমে এসে আদারা নিজের জামা নিয়ে ঢুকে ওয়াশরুমে আরো একবার শাওয়ার নিতে হবে তাকে। মাহিরও গেস্ট রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে আসে । আর এবারও আগের মতো ভেজা তোয়ালেটা বিছানায় ফেলে নিচে চলে যায় । আদারা শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে সকালের মতো এখনো মাহির ভিজা তোয়ালেটা বিছানায় ফেলে চলে গিয়েছে। আদারা বলে

— দাড়াও দেখাচ্ছি মজা। বলেই তোয়ালেটা তুলে নিল।

মাহিরকে না দেখে আদারাও নিচে যায় দেখে নিশুও চলে এসেছে আর দুই ভাই বোন ঝগড়া করছে। তাও আবার রিমোট নিয়ে। মাহির ডিসকাভারি দেখবে আর নিশু দেখবে সিরিয়াল। আদারা গিয়ে ওদের অপজিট সোফায় বসে পরে ম্যাগাজিন নিয়ে। তা দেখে নিশু বলে

— এই আদু ভাইয়াকে কিছু বল না। আদু নামটা শুনে মাহির হাহাহা করে হেসে দিয়ে বলে

—- এই যে আদু ভাই অপপস সরি আদু আপা। নিশু বলে

— নিজের বউকে কেউ আপু বলে। আদারা ম্যাগাজিনের পৃষ্টা উল্টাতে উল্টাতে বলে

— মহিষদের কি সেই সেন্স আছে বল। আর সে তার বন্ধু দের মিস করছে তাই সে ডিসকাভারি দেখবে। মাহির ভাবতেই পারেনি আদারা তাকে এভাবে অপমান করবে। মাহির বলে

— দেখব না আমি তুই দেখ। মাহির উপরে উঠতেই আদারা আর নিশু ফিক করে হেসে দেয়। মাহির উপর থেকে দেখে বলে।

— এই দিন দিন না আমারও দিন আসবে। কিন্তু কবে??

অপর দিকে মাহিরের বাবা আর চাচাকে মাহিরের আম্মু জানিয়ে দিয়েছিল মাহির আর আদারা ঘুরতে বেড়িয়েছে। যদিও কলটা মাহিররে বাবাই করেছিলেন।

অপর দিকে কেবিনে বসে বর হচ্ছে মায়া। প্রায় মাস তিনেক হলো সে এই অভিনয় করছে। আর আজকে তার বাইরে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। আর আজ যেহেতু মাহির তাকে দেখতে আসেনি সকালে এর মানে আজ আর সে আসবে না। মায়া তাই তার মাকে বলে বাইরে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়ে নেয়। সেও রাজি হয়ে যায় মেয়েটা তার প্রায় তিন মাস যাবৎ এই চার দেওয়ালে বন্ধি। বিকেলে বৃষ্টি ঝড়ে যায়। মায়াও সেজেগুজে বেড়িয়ে পরে। আহহ আজ কত দিন পর সে বেড়িয়েছে। সামনে যেতেই মায়ার চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। তার ভালোবাসার মানুষটা আসছে। মায়া দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে। কিন্তু মায়াকে এভাবে দেখে রেগে বম হয়ে যায় সেই ব্যক্তি তাই সে তার হাত ধরে টেনে কেবিনে নিয়ে আসে। মায়ার মা এই ভয়টাই পাচ্ছিল আর সেটাই হলো। মায়াকে সে ব্যক্তিটা কেবিনে নিয়ে দরজটা লক করে দেয়। আর মায়া কে চেপে ধরে বলে

—- তোমার কি সেন্স বলতে কিছু নেই? আজ যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে? বল আমাকে? যদি মাহির ভাইয়া তোমাকে দেখে ফেলতো? ধারণা আছে তোমার কি হতো? মায়া নিজেকে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে বলে

—- Just stop It আকাশ!!! আর কত? আর কত এভাবে থাকবো আমি? আর তোমার জন্য এইসব হয়েছে যদি না তুমি এই নাটকটা করতে। সামান্য কিছু টাকার জন্য তুমি নিজের বউকে তোমার বর ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে দিলে!!!! আকাশ বলে

—- আমি সব ঠিক করতে চাচ্ছি, আর মাহির আদারাকে বিয়ে করে নিয়েছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই আমি সত্যিটা বলে দিব ভাইয়াকে। মায়া বলে

— কি বলবে? কেন করেছিলে এমন!!! আর তোমার কি মনে হয় মাহির আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে? তখন যদি তুমি বাঝিতে না হারতে তাহলে এমনটা হতো না আকাশ!!! সেদিন পার্টিতে বারবার বলেছিলাম তুমি কার্ডস খেলোনা। দিব্যিতো ভালোছিলাম আমরা। আর তুমিই তো বলেছিলে খুব জলদি তুমি নিজের পরিবারের সামনে আমাকে নিয়ে যাবে!!! কোন মুখে নিয়ে যাবে তুমি?? আর মাহির আমাকে ভালোবাসে, আর আমার জন্য আদারের মতো একটা মিষ্টি ভালো মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে । আকাশ বলে

—- মাহির তোমাকে ভালোবাসে এটা তোমার ভুল ধারণা মাহির আদারকে ভালোবাসে কিন্তু সেটা তার অজানা। ঐদিন আদারের যাওয়ার পর ৭দিন তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি মাহির। আর ঐ সাত দিন সে ছিল একা, কিন্তু যখন আমি তোমার ফ্রেন্ড হয়ে ফেল আইডি দিয়ে তোমার মিথ্যা এক্সিডেন্ট এর কথা জানাই তখন সে আসে তোমাকে দেখতে। আর আদারা ছিল শুধু একমাত্র ওয়ে। কিন্তু আমি কি জানতাম নাকি যে মাহির এইসব করবে। মায়া আকাশকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলে

— তোমরা ছেলেরা আমাদের মেয়েদের পেয়ছটা কি? খেলার পুতুল মনে হয় আমাদের? মাহির আর তুমি আজকে আমাকে আর আদারাকে যেই কষ্ট টা দিচ্ছ৷ কাল সেটার জন্য হয়তো আমার তোমাদের কাছে নাও থাকতে পারি। তুমি তো শুধু নিজের দিকটা বুঝ আমার দিকটা কখনো দেখেছ? তুমি একটা সেলফিস। আকাশ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না, মায়াকে একটা চড় বসিয়ে দেয়। মায়া এবার না পেরে কেঁদেই দেয়। আকাশ মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে

—- সরি, আমি জানি মাহির ভাইয়া আমাদের সম্পর্কটা মানতে নারাজ হবে। কিন্তু কি করব বল তখন আমার কাছে টাকা ছিল না। আর অফিসে জয়েন করেছি এক মাস। আর ঐদিন আমি ড্রাংক ছিলাম। প্লিজ মায়া। আমি সরি। মায়াও আকাশকে জড়িয়ে ধরে। আকাশ বলে

—- I love you… love you so much। মায়াও আকাশকে জড়িয়ে কেঁদে বলে

— Love you too….আর তখনই কেবিনে প্রবেশ করে কেউ,,, মায়া চোখ মেলে যাকে দেখে তাতে সে

চলবে

সুখ পাখি পর্ব-০৫

0

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০৫

মাহির বিছানয় বসে মাথার চুলগুলো আকরে ধরে বসে আছে, আর ভাবছে নিজের কি কোথাও ভুল হচ্ছে। তখনই সে তার ভাবনা জগৎের সুতো ছিড়ে বেড়িয়ে আসে আদারার চিৎকারে। মাহির দৌড়ে নিচে যায়। দেখে আদারা মাহিরের মাকে ডাকছে।

—- ফুপি, ফুপি। তখনই আদারা ডাকে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে আদারার শাশুড়ী আর তার চাচি শাশুড়ী। বাসায় তেমন কেউ নেই সবাই যে যার মতো কাজে। মাহিরকে দেখে। মাহিরের আম্মু বলে

— কিরে বাবা কি হয়েছে আজকে যে অফিসে গিয়েও ফিরে আসলি? আর আদারা তোকে না বলেছি ফুপি ডাকতে না। আদারা বলে

— আজ আমি তোমাদের কিছু কথা বলবো!!! মাহিরের আর বুঝতে বাকি রইলো না আদারা কিসের কথা বলছে। মাহির তাড়াতাড়ি করে আদারের হাত চেপে ধরে আর বলে

— আমি একটু বকা দিয়েছি। সে বাইরে যাওয়ার বায়না ধরেছে, আর আমি তাকে না ঘুরতে না নিয়ে অফিসে চলে গিয়েছি তাই এত রাগ। আম্মু আমি আদারাকে নিয়ে বের হচ্ছি। আদারা কিছু বলতে যাবে তখনই মাহিরের মা বলে

—- এই ব্যাপার, আমি ভাবলাম কিনা কি!!! যাই হোক যা ঘুরে আয়। আদারা বলে

—- না ফুপি। আর কিছু বলতে যাবে তখনই মাহির আদারকে কুলে তুলে নিল মূহুর্তেই আদারা চুপ৷। মাহিরের এমন কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছে মাহিরের মা আর চাঁচি। মাহিরের চাচি বলে

— ভাবি চল। মাহির আদারাকে কুলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। আর তখনই আদারা বলে

— আপানি একটা বাজে লোক, আপনার মতো খারাপ লোক আমি দুটো চোখে দেখেনি, আপনি কি মনে করেছেন আমি কিছু বলবো না, আজ নাহয় কাল আমি সবাইকে সত্যি বলে চলে যাবো। মাহিষ একটা। মাহির মহিষ নামটা শুনে খেপে যায় আর বলে

— আমাকে কোন দিক দিয়ে তোমার মহিষের মতো লাগে? আদারা কিছু বলে না চুপচাপ নিজের মতো অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। মাহির গাড়িতে বসে গাড়ি ইস্টার্ট দেয়। গাড়ি চলছে আপন গতিতে আর আদারা বাইরে তাকিয়ে কান্না করছে আর চোখের জল মুছে। মাহির সেটা দেখে নিজের রুমালটা আদারার দিকে এগিয়ে দেয়। আদারা রেগে গিয়ে সেটাকে বাইরে ছুড়ে দিয়ে বলে

— এখন এত দরদ কেন? কিছুক্ষণ আগ অব্দি তো আপনার চোখের বিষ ছিলাম না আমি? আর আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন নিশ্চয়ই আমাকে কোথাও নিয়ে মেরে ফেলবেন? হ্যা সেটাই হবে তাছাড়া তো আর আপনি পারবেনই বা কি। মাহির গাড়ি ব্রেক কষে আদারার চোয়াল শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে

— আমি জানিনা তুমি সত্যি কিনা , তুমি যদি সত্যি হও তাহলে তোমাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে সবাইকে সত্যিটা বলে দিব। আর যদি তোমার কথা মিথ্যা হয় তাহলে যেন্ত মাটিতে পুতে ফেলব। আদারা মাহিরের হাত জোরে কামড় দেয়। আর মাহির বলে

—- আহহহহহহ আদর লাগছে। মাহিরের মুখে আজ প্রথম সে আদর নামটা শুনে নিস্তব্দ হয়ে যায়। নামটা তার বেশ ভালোই লাগছে। আদারা কিছু না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহির তা দেখে নিজের মতো গাড়ি চালাতে ব্যস্ত

,,, সাময়ের ব্যবধানে অভিমানে নিচে পরে হারিয়ে যাচ্ছে আদারের মনে গড়ে তোলা মাহিরের জন্য এক একটা অনুভূতি। আদারের মনে হচ্ছে সে ভুল কাউকে ভালোবেসেছে। এমন উপর নিচ ভাবতে ভাবতে মাহির চলে আসে আদারাকে নিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত জায়গায়। আদারা তাকিয়ে দেখে সামনের দিকে সবুজ রঙের একটা বড় মাঠ। আর মাঠে দুই একটা গরু ঘাস খাচ্ছে । মাহির গাড়ি থেকে বের হলেও আদারা এখনো সেখানেই বসে আছে । মাহির বলে

— বাইরে আসো ভালোলাগবে। আদারার তো ইচ্ছে করছে মাহিরকে জেন্ত গিলে খেতে আদারা গাড়ি থেকে নেমে বলে

— সমস্যা কি আপনার? কি চাই? আমার সাথেই বা এত ভালো ব্যবহার কেন? নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে!! মাহির ভ্রু-কুচকে বলে

— তোমরা মেয়েরা না একদম অতিরিক্ত বুঝ। আদারা মাহিরকে থামিয়ে দিয়ে বলে

— অতিরিক্ত বুঝলেও আপনাদের ছেলেদের মতো অত বেশি বুঝিনা। আপনারা শুনেন ৪ লাই বুঝেন ১৪ লাইন আর লেকচার মারেন ১১৪ লাইন। যত্তসব আমি বাসায় যাবো। মাহির বলে

— দেখ ভালো ব্যবহার করছি এত সুন্দর করে কথা বলচছি তাও তুমি এমন ব্যবহার করবে?? তোমার জন্য সেই আগের মাহিরই ঠিক। আদারা বলে

— ঐটা মাহওর না ঐটা পাগল মহিষ। যখন তখন আক্রমণ করে বসে। আর আপনি যাবেন না তো ওকে আমি এখন চলে যাবো যেদিক দুই চোখ যায়। বলেই নিজের মতো হাটতে লাগলো মাহির পিছন থেকে ডাকলেও আদারা শুনে না। তাই বাধ্য হয়ে সেও আদারের পিছন পিছন হাটতে লাগলো। আর অন্য দিকে মাহিরকে যা মনে আসছে বলছে আদারা

—- শয়তান, খারাপ, বদের হাড্ডি, কালা না সাদা মহিষ একটা। তোকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিব আর তোর যার সাথেই বিয়ে হওয়ার কথা হবে তাকে বলে দিব যে তুই একটা মহিষ। তখনই মাহির পিছন থেকে বলে

— অহহহ আচ্ছা। তাহলে তো আর আমার বিয়েই হবে না!! তাহলে আর তোমাকে ডিভোর্স দেয়া যাবেনা। আদারা মাহিরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে এইদিকে ঐদিক কিছু খুঁজে তখন দেখে একটা গাছের ডাল। সেটা সে তুলে নিল। মাহির বলে

— এই তুমি এটা দিয়ে কি করবে? আদারা কিছু না ভেবেই মাহিরের গায়ে একটা বাড়ি লাগিয়ে দেয়। মাহির বলে

— আহহহ, আম্মু। এই আদারা কি করছ টাকি?আদারা আরেকটা বাড়ি লাগিয়ে দেয়। মাহির পিছাতে লাগে আর আদারা আগাতে। মাহির বলে

— দেখ ভালো হচ্ছে না। আদারা বলে

— বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতন নামক কোনো আইন নাই, এখন তোকে আমি মেরে শুটকি দিব তারপর তোর ঐ মায়া শাঁকচুন্নি কছে পার্সেল করে দিয়ে আসবো। মাহির একটু রেগে বলে

— মায়ার নামে একটা উল্টো পাল্টা কথা বলবেনা। আদারা এবার রেগে দৌড়ে আসে মাহিরের দিকে। মাহিরও কি মনে করে দৌড় দেয়। আদারা লাঠিটা দিয়ে মাহিরকে মারছে আর বলছে

—- তোর লজ্জা করেনা? নিজের বউয়ের সামনে অন্য একটা মেয়ের নাম নিতে? পরকিয়া করতে। তোকে আজ আমি সত্যি মেরে ফেলব। মহিষের বাচ্চা দাঁড়া বলছি তোকে আজ আমি এই মাঠে চরাবো, তোকে ঘাস খাওয়াবো তারপর যদি তোর এই নষ্ট মাথাটা আবার ঠিক হয়। কোথায় যাচ্ছিস দাঁড়া । মাহির তো দৌড়াচ্ছে ভাবা যায় যেই মাহিরকে একটু আগ অব্দি আদারা ভয় পেত আর সে এখন তাকেই মারছে। মাহির বলে

—- আল্লাহ তুমি আমাকে এই জল্লাদ মাইয়ার হাত থেকে বাঁচাও।

আদারার মনে হচ্ছে আগের মাহির ফিরে এসেছে। কিন্তু তার রাগটা এখন মাথায় চড়ে বসেছে। হঠাৎই মাহির থেমে পিচ ঢালা রাস্তার মাঝে বসে পরে। আদারা তার সামনে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে এক হাত কমড়ে দিয়ে। মাহির তা দেখে নিজের বুকে হাত দিয়ে হাতটা একটু নাড়ায়। যার মানে আমি আর পারবো না। আদারা লাঠিটা ফেলে দেয়। আজও আকাশ মেঘলা কালো মেঘেরা ছুটাছুটি করছে আকাশ। সূর্য মামা ব্যস্ত কালো মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলতে। আদারা মাহিরকে একটু দেখে হাটতে লাগে আবার। মাহির কোন রকম উঠে আবার দৌড় দেয় আদারার সাথে। আদারা সামনে তাকাতেই দেখে গোবর আর সেটা দেখে তার মাথায় বুদ্ধি আসে সে সরে দাড়ায় আর মাহির তার কাছাকাছি আসতেই নিজের একটা পা বাড়িয়ে দিলো আদারা। আর ধপাস করে……মাহির পরে যায় গোবরে আর তা দেখে আদারা হাসি দিয়ে বলে

—- ওয়াও,, হাউ কিউট। এখন একদম মহিষ মহিষ লাগছে । তখনই

চলবে