Friday, June 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1446



সত্যি ভালোবাসো পর্ব-১৪+১৫

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_14
#writer_Fatema_Khan

রাত ১ঃ০০বাজে।রেজোয়ানের পুরো বাড়ি পুলিশ ঘেরাও দিয়ে রেখেছে।তারপর নিচ থেকে একজন পুলিশ মাইক দিয়ে তাকে নিচে নেমে আসতে বললো। তাকে কিছুক্ষন সময় দেয়া হলো,কিন্তু সে নিচে না নেমে উল্টো পুলিশের উপর গুলি করা শুরু করলো।পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লো।এক পর্যায়ে পুলিশ বাড়ির ভিতরে ডুকে যায়।দুইদিকের পাল্টা আঘাত কমছেই না।তবে এতো পুলিশের সাথে একলা রেজোয়ান কতক্ষণই বা টিকে থাকতো।তাই সে চিন্তা করে তার স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাবে।তারা পিছন দরজা দিয়ে যাবার জন্য পা বাড়ালে একটা গুলি এসে রেজোয়ানের স্ত্রীর গায়ে এসে লাগে।আর সাথে সাথে তিনি মাটিতে ঢলে পরেন।রেজোয়ান তাকে তার পায়ের উপর রেখে কান্না করতে থাকে।সে তার স্ত্রী ও সাথে অনাগত বাচ্চা দুইটাই হারাতে বসেছে।তার স্ত্রী তার কোলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তারপর রেজোয়ান তাকে রেখে পালিয়ে যায়।

রেজোয়ান পালিয়ে সোজা আমার বাড়িতে আসে।কলিংবেল বাজতেই আমার ঘুম ভেঙে যায়।আর আমার মনে ভয় জাগে এতো রাতে কে আসবে।তূর্যের মা যেন ঘুম থেকে না উঠে তাই আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে নিচে চলে আসলাম।দরজা খুলে দেখি রেজোয়ান দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভয় পেয়ে যাই,তারপর সে বাড়িতে ঢুকে সোফায় বসে।তার হাতে রক্ত দেখা যাচ্ছে এবং একটি পিস্তলও আছে।আমি কিছু বললাম না অন্য সোফায় গিয়ে বসলাম।

রেজোয়ানঃকেনো করলি আমার সাথে এমনটা?তোর কোনো ক্ষতি করেছি আমি,একটু ভালো করে জীবন কাটাতে চেয়েছি।

আরমানঃভালো করে জীবন কাটা কিন্তু সৎ পথে কাজ করে।এমন বেয়াইনি কাজ করে নয়।তাও নারী পাচারের মতো জঘন্য একটা কাজ।পুলিশের কাছে ধরা দে,নিজের সব দোষ শিকার কর তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। নিজের কথা না ভাব অন্তত ভাবি আর নিজের সন্তানের কথা ভাব একটু।

রেজোয়ানঃস্ত্রী সন্তান আমার সব শেষ হয়ে গেছে।শুধু তোর জন্য আমার পরিবার আজ ধ্বংস হয়ে গেলো।

আরমানঃমানে কি বলতে চাস তুই?তোর ভালোর জন্যই বলছি নিজে থেকে ধরা দে।

রেজোয়ানঃআরমান,একটা কথা জানিস।আমার হাতে এই রক্ত কিসের?

আরমানঃকিসের?

রেজোয়ানঃআমার স্ত্রী আর সন্তানের।

আরমানঃকি বাজে বকছিস(সোফা থেকে দাঁড়িয়ে বললাম)

রেজোয়ানঃবাজে বকছি না পুলিশের গুলিতে ওরা দুইজন মারা গেছে।কিন্তু আমি এখানে কেনো এসেছি জানিস

আরমানঃনিশ্চই আমাকে মারার জন্য।

রেজোয়ানঃনা ভাই, আমি তোকে নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি মনে করতাম।কিন্তু তুই একনিমিষে আমার সব কেড়ে নিলি।

আরমানঃআমাকে না মারলে তুই করতে চাস কি?

রেজোয়ানঃসেটা সময় হলে বুঝতে পারবি।

আরমানঃমানে?

রেজোয়ানঃমানে তোর থেকে তো প্রিয় জিনিস কেড়ে নিবো আমি।আচ্ছা এখন চলি আমি।কোনো একদিন দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

(বলেই সে উঠে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো)

সেদিন রাতে আর আমি দু’চোখের পাতা এক করতে পারি নাই।সকালে নিউজ চ্যানেল খুলে দেখি নিউজ হেডলাইন হলো রেজোয়ানকে নিয়ে।নিউজ হেডলাইন হলো পুলিশের ক্রসফায়ারে মারা গেছেন রেজোয়ান।

এরপর থেকে আজ অবদি রেজোয়ানের নাম পর্যন্ত শোনা যায় নি কোথাও।

বর্তমান,,,

এতো বছর যাকে মৃত ভেবে এসেছি সে জীবিত।আর তোমাদের যখন বলেছে আমার থেকে তার পরিচয় লুকাতে তার মানে অনেক বড় প্ল্যান আছে তার।

(আমরা সবাই বাবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।বাবার চোখে পানি।ভাবতেই অবাক লাগে যাদের মাঝে ভাইয়ের মতো বন্ধুত্ব ছিলো আজ তারা সবচেয়ে বড় শত্রু।)

_________________________________

(সারাদিন ভালোই ছিলো শুধু রেজোয়ান আংকেলের কথাটা শুনে মন খারাপ ছিলো। একটা ভুল কাজের জন্য সব হারাতে হলো তাকে।কিন্তু সে নিজের ভুল বুঝতে না পেরে উল্টো বাবাকে ভুল বুঝলো।এখন সব ঠিক হলেই হলো।নিজেই কথাগুলো ভাবছিলাম তনিমা আপুর ডাকে চমকে উঠলাম।)

তনিমাঃকিরে তুই এখানে কি করছিস, তারাতাড়ি ছাদে চল।

তাহিয়াঃছাদে যাবো কেনো?

তনিমাঃসবাই আমরা আড্ডা দিবো সারারাত।কাল সবাই চলে যাবো তাই।এখন চল।

তাহিয়াঃওকে চলো।

(তারপর দুইজনে ছাদে চলে গেলাম)

ছাদে মাদুর বিছিয়ে সবাই বসে আছে।আমি গিয়ে আরিশের পাশে বসে পরি।আরিশ আমাকে দেখে তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।

আরিশঃকেমন মায়াবী লাগছে আজ তোমাকে আমি বলে বুঝাতে পারবো না।

তাহিয়াঃসেই তো।তুমি আমাকে বলে বুঝাতে পারবে না কিছু করেও বুঝাতে পারবে না।কি করে বুঝাতে পারবে বলো তো।(আমার কথা শুনে জোরে হেসে দেয় আরিশ,আর সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে আর বুঝার চেষ্টা করছে কি এমন বললাম আমি যাতে আরিশ এভাবে হাসছিলো)

আরিশঃএকদিন করলাম তো।বাকিটা বড় হলে বুঝাবো এখনো অনেক ছোট তুমি আমার কিউট বউ।(আমার কানের কাছে এসে বললো)

রাসেলঃআরে তাহসিন কোথায়,ওকে দেখছি না যে?

তূর্যঃ হুম ইদানীং যে কি হলো ছেলেটার কেমন চেঞ্জ হয়ে গেছে।

তাহিয়াঃ ভাইয়া আসলে তাহসিন ভাইয়া না একটা মেয়ে……..(আরিশ আমার হাত চেপে ধরলে আমি চুপ করে যাই আর আরিশের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাই)

আরিশ;এমনি এমনি তোমাকে পিচ্চি বলি আমি।(একটু রেগেই কথাটা বলে আমার হাত ছেড়ে দিলো)

তনিমাঃআমি দেখছি,হয়তো ওর রুমেই আছে আমি নিয়ে আসছি।

_______________________________

তনিমাঃতুই এখানে কি করছিস তোকে না বলে গেলাম উপরে যেতে।তাহলে এখানে কি?আর সবাই তোকে নিয়ে কথা বলছে যে তোর হঠাৎ এমন কি হলো যার জন্য তুই পুরো চেঞ্জ হয়ে গেলি।

(তাহসিন মাথা উপরে তুললে তনিমা দেখে সে কাদছে।তনিমার খুব কষ্ট হচ্ছে যতই হোক তার বেষ্টফ্রেন্ড। আর সে এতো কষ্ট পাচ্ছে।সবকিছুর জন্য তার দোষ যে সবচেয়ে বেশি তা সে ভালো করেই বুঝে।তখন মুখ ফুটে বাবাকে রাসেলের কথা বলতে পারলে হয়তো তাহসিনের এমন অবস্থা হতো না)

তাহসিনঃকি ভাবছিস?

তনিমাঃকই কিছু না।

তাহসিনঃঠিক আছে তুই একটু বস আমি চোখে মুখে পানি দিয়ে আসছি।

_________________________________

(তাহসিন আর তনিমা ছাদে এসে দাড়ালে সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে বলে এতোক্ষণে সময় হলো আসার।আমি তাদের দিকে তাকাতেই দেখি তাহসিন ভাইয়া আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম।অনেক অভিমান হয়েছে কালকের ঘটনার জন্য আর এখন অবদি আমাকে সরি বলে নাই।)

(তনিমা গিয়ে রাসেলের পাশে বসলো।তাহসিন তাকিয়ে দেখলো তাহিয়ার কাছে জায়গা খালি আছে আর সবাই গোল করে বসাতে তাহসিনকে সেখানেই বসতে হলো।)

তারা গল্প করতে থাকলো প্রায় রাত ৩টা পর্যন্ত।তনিমা রাসেলের কাধে ঘুমিয়ে আছে,তাহিয়ারও ঘুম ঘুম পাচ্ছে।তূর্য দূরে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেনো কথা বলছে।রাসেল তনিমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে গেলো।

আরিশঃতাহিয়া যাও রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

তাহিয়াঃওকে। (বলেই নিচে চলে এলাম)

ছাদে আরিশ আর তাহসিন ছাদে আমরা যা নিয়েছি সব গুছিয়ে রাখলো।

তাহসিনঃআপনি খুব ভাগ্যবান ভাইয়া যে আপনি আপনার ভালোবাসাকে পেয়েছেন।

আরিশঃতাই নাকি।

তাহসিনঃ সত্যি অনেক ভাগ্যবান আপনি।আর তার চেয়েও বড় কথা তাহিয়া খুব ভালোবাসে আপনাকে।

আরিশঃ তাহিয়া এখনো ছোট ওর এখন যাকে ভালো লাগবে তাকেই তার ভালোবাসা মনে হবে।ওকে আরো বুঝতে হবে সবকিছু।মানুষের মনের কথা চোখ দেখে বুঝতে হবে।আর ওকে বলে দিলেও সে বুঝে না।

তাহসিনঃমানে? তাহিয়া যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। মাঝে মাঝে বোকা বোকা কথা বলে এই আর কি।

আরিশঃলেখাপড়ায় ভালো হলে হয় না।বুদ্ধিও থাকতে হয়।আর সে যদি সব বুঝতো তাহলে সবার আগে তোমার চোখের ভাষা বুঝতে পারতো।

তাহসিনঃআমার আবার কি হবে যে আমার চোখের ভাষা বুঝতে হবে ওকে।(হকচকিয়ে বলে উঠলো তাহসিন)

আরিশঃএকটা কথা বলি

তাহসিনঃ জ্বি বলুন।

আরিশঃ #সত্যি_ভালোবাসো তাহিয়াকে?

তাহসিনঃ(নিশ্চুপ।তার চোখের পানি ছলছল করছে,যেনো চোখের পাতা ঝাপটালেই পানি গড়িয়ে পরবে)

তূর্যঃকি হলো সবাই কই গেলো?আর তোরাই বা কি বলছিলি?

(তূর্যের কথায় তাহসিন আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলো।)

আরিশঃনা তেমন কিছু না। তাহলে চল ঘুমিয়ে পড়ি।

তারপর যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।সবাই ঘুমিয়ে গেলেও দুইজনের চোখে ঘুম নেই।আরিশ আর তাহসিন তাদের চোখে ঘুম নেই,তাদের চোখে বিষাদময় অনুভূতি।আরিশের কিউট বউকে হারানোর আর তাহসিনের তার প্রেয়সী হারানোর বিষাদময় অনুভূতি।

চলবে,,,,

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন। আর অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে জানাবেন কেমন হয়েছে পর্বটা]

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_15
#writer_Fatema_Khan

সকালে ঘুম থেকে উঠে তাহিয়া নিচে গিয়ে দেখে সবাই নিচেই আছে।সকালের নাস্তা করেই চলে যাবে।কিছুক্ষণ পর ডাইনিংয়ে নাস্তা দিলে সবাই খেতে বসে।

রায়হানঃআরে আবির ভাই তাহসিনকে দেখছি না যে,সে কোথায়?

(এতোক্ষণে খেয়াল করলাম তাহসিন ভাইয়া নেই।)

আবিরঃআসলে তাহসিনের কি কাজ ছিলো তাই সকালেই চলে গেছে।একটু আগে আমাকে কল করে বললো।

নীলিমাঃতাই বলে না খেয়ে চলে গেলো ছেলেটা।

আবিরঃ কোনো ব্যাপার না ও অফিসে কিছু খেয়ে নিবে।

(তারপর সবাই খেয়ে কিছুক্ষন কথা বলে আমাদের বিদায় দিয়ে চলে যায়।)

_________________________________

রাত ৮ঃ০০

আবিরঃদাড়াও। কোথায় ছিলে সারাদিন? আর ওই বাসায় কাওকে না বলে আসা কোন ধরনের কাজ।(রেগে কথাগুলো বললো)

তাহসিনঃওই বাসায় কাওকে না বলে আসার জন্য সরি বাবা।আর সারাদিন আমি বন্ধুদের সাথে ছিলাম।

আবিরঃআর এখন রাত ৮ঃ০০ টা বাজে তোমার আসার সময় হলো?

তাহসিনঃবাবা আমার খুব খিদে পেয়েছে,আমি ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিই।তারপর তোমার সাথে আমার কিছু ইম্পর্টেন্ট কথা আছে।

আবিরঃকি কথা?

তাহসিনঃআমি এসে বলছি।

(তারপর তাহসিন সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে চলে যায়)

________________________________

তাহসিনঃতনিমা কাল প্লিজ তাহিয়াকে একটু কলেজ নিয়ে আসবি।ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

তনিমাঃকি কথা?জরুরি কিছু নাকি?

তাহসিনঃঅনেক দরকারি কথা,কাল আসলেই জানতে পারবি।

তনিমাঃওকে আমি কাল তাহিয়াকে কলেজ নিয়ে আসব।

তাহসিনঃঅনেক অনেক থ্যাংকস দোস্ত।

___________________________________

(রাত ১১ঃ০০ টা আবির আহমেদ গম্ভীর হয়ে বসে আছেন।তাহসিনের এই ছন্নছাড়া জীবন আর মেনে নেয়া যায় না।তাকে কিছু একটা করতে হবে।)

তাহসিনঃবাবা ভিতরে আসবো?

আবিরঃভিতরে আসো।

(ভিতরে এসে তাহসিন তার বাবার সামনে এসে বসে।)

তাহসিনঃবাবা আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমার মনে হয় তুমি শুনে খুশি হবে।

আবিরঃ কি সিদ্ধান্ত নিয়েছো তুমি যাতে আমি খুশি হবো?

তাহসিনঃবাবা আমি এই সপ্তাহে দেশের বাইরে চলে যেতে চাই।কানাডা চলে যাবো আমি।ওইখানেই স্টাডি কম্পলিট করতে চাই।সব রেডি করে ফেলেছি আমি।তুমি অনুমতি দিলে আমি কাল টিকিট কেটে নিবো।

আবিরঃতোমার কথা শুনে সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছি।আর আমিও চাই তুমি নিজের জীবনে এগিয়ে যাও।

তাহসিনঃথ্যাংকস বাবা।তাহলে আমি কাল টিকিট কেটে ফেলি।যাতে এই সপ্তাহে যেতে পারি।

আবিরঃঠিক আছে।তবে নিজের খেয়াল রাখবা।কোনো অযত্ন করবে না।

তাহসিনঃকরবো না বাবা।

আবিরঃ তুমি ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো।তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই এটা মনে রেখো।

(তাহসিন তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো)

_________________________________

(তাহিয়া তাহসিনের সামনে দাড়িয়ে আছে।কিন্তু কোনো কথা বলছে না।মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে তাহসিনের দিকে।)

তাহসিনঃকিরে কথা বলবি না আমার সাথে?

তাহিয়াঃনা তুমি পচা।

তাহসিনঃ হুম খুব পচা।আমাকে একদম দেখতে ইচ্ছে করে না তোর তাই না।

তাহিয়াঃহ্যা তাই।ওইদিন রাতে তুমি আমাকে হাতে ব্যাথা দিয়েছো।আমি কত ভয় পেয়েছিলাম যখন তুমি আমার এতো কাছে ছিলে।

তাহসিনঃসরি।মাফ করে দে সব কিছুর জন্য।মাফ করে দিবি তো

তাহিয়াঃকি হয়েছে তোমার,এমন করে বলছো কেনো?

তাহসিনঃআমি চলে যাচ্ছি।

তাহিয়াঃকোথায় যাবে তুমি?

তাহসিনঃকানাডা চলে যাবো,ওইখানেই স্টাডি শেষ করে ওইখানেই থেকে যাবো।

তাহিয়াঃভাইয়া তুমি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে?

তাহসিনঃআমি একটু ভালো থাকতে চাই।আর এখানে আমি ভালো নেই।তোকে আরেকটা কথা বলার ছিলো

তাহিয়াঃকি বলো

তাহসিনঃআমি তোকে খুব ভালোবাসি রে প্রেয়সী।আমার ছোট্ট প্রেয়সী।

(বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ আমাকে জড়িয়ে রেখে সে আমাকে ছেড়ে দিলো।আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই সে কলেজের গেইট পেরিয়ে গেলো।)

তাহিয়াঃকি বলে গেলে তুমি এটা?তুমি কি আমাকে #সত্যি_ভালোবাসো?

(কথাটা বলতেই আমার চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।আর আমি গেইটের দিকে তাকিয়ে আছি।ভাবতেই এতো কষ্ট হচ্ছে আর কোনোদিন দেখা হবে না এই লোকটার সাথে।বিদায়…….)

চলবে,,,,

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-১২+১৩

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_12
#writer_Fatema_Khan

নিচে নেমে আমি দেখলাম মা,বাবা,তনিমা আপু,রাসেল ভাইয়া,তূর্য ভাইয়া,তাহসিন ভাইয়া আর তাহসিন ভাইয়ার বাবা আবির আহমেদও ড্রয়িং রুমে বসে। বাবা(রায়হান),মা(নীলিমা)আর আরিশের সাথে কথা বলছে।আমি তো ভাবতেই পারছি না সবাই একসাথে এখানে কিন্তু কেউ আমাকে বললো না কেনো?আমি নিচে নেমে এলাম আর বললাম–

তাহিয়াঃএকি তোমরা সবাই এখানে তাও হঠাৎ,আর কখন এলে আমাকে ডাকো নি কেনো?

আরমানঃএতোগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উত্তর দিবো বল,(বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)

আরিশঃতোমাকে সবাই দেখতে এসেছে।আর তোমার শরীর ভালো না বলে কেউ তোমাকে ডাকে নি।

তাহিয়াঃআরে আংকেল(আবির) তুমি কেমন আছো?

আবিরঃএইতো ভালো আছি।তুমি এখন কেমন আছো?

তাহিয়াঃসবাইকে দেখে কি আমার আর খারাপ থাকার কথা।তা আংকেল তোমাকে তো দেখাই যায় না,অনেকদিন পরে দেখে খুব ভালো লাগছে।

আবিরঃকি করবো বলো মা তাহসিনের তো এখনো লেখাপড়া কমপ্লিট হয়নি তাই এমনিতেই ওকে ১বছর ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে আমি ভুল করেছি। আমার ছেলের জীবন থেকে তার সবচেয়ে দামি জিনিস সে হারিয়ে ফেলেছে।

তাহিয়াঃমানে কি হারিয়ে ফেলেছে তাহসিন ভাইয়া।(তাহসিন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

আবিরঃসেসব কথা ভাদ দেও।এখন এখানে আসো আমার পাশে বস।

(তাহিয়া গিয়ে তাহসিনের বাবার কাছে এসে বসলো।তারপর সবাই অনেক গল্প করছে খাওয়া দাওয়া চলছে)

আরিশঃআমার কিছু বলার ছিলো সবাইকে।

(সবাই আরিশের দিকে তাকিয়ে আছে সে কি বলতে চায় জানার জন্য)

রায়হানঃকি বলতে চাও বলো?

আরিশঃআমি চাই কাল আমরা সবাই মিলে একটা পিকনিকের আয়োজন করি।কেমন হবে?

(সবাই একসাথে বলে উঠলো রাজি)

(তারপর সারাদিন সবাই একসাথে ভালো একটা সময় কাটালাম।রাতের খাবার পর সবাইকে যার যার রুম দেখিয়ে দিলাম।আজ সবাই এখানেই থাকবে।যাবতীয় জিনিস পত্র তূর্য আর তাহসিন ভাইয়া দিয়ে নিয়ে এসেছে)

______________________________

(আমার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে তাহসিন ভাইয়া কি এমন হারিয়ে ফেললো এই ১বছরে আমাকে জানতে হবে।আবার ভাইয়া কেমন চেঞ্জ হয়ে গেছে।আগে কত মজা করতো দুষ্টুমি করতো আর এখন কেমন চুপচাপ থাকে।একটু যাব গিয়ে জিজ্ঞেস করলে যদি বলে।যেই ভাবনা সেই কাজ।)

তাহিয়াঃআসবো?(দরজার বাইরে থেকে বললাম)

তূর্যঃআয় ভিতরে আয়।তা এই সময় না ঘুমিয়ে তুই এখানে কি করছিস?

তাহিয়াঃএখন ঘুমিয়ে যাবো ভাইয়া।

তূর্যঃযা ঘুমিয়ে যা এমনিতেই শরীর ভালো না তোর।

তাহিয়াঃভাইয়া তাহসিন ভাইয়া কই?

তূর্যঃও তো একটু ছাদে গেছে কেনো?

তাহিয়াঃআচ্ছা আমি ঘুমাতে যাই ভাইয়া।

______________________________

আমি ছাদে যাই তাহসিন ভাইয়ার কাছে।গিয়ে আমার চোখ কপালে,এ কি দেখছি আমি😯।ভাইয়া সিগারেট খাচ্ছে।যে কিনা এগুলো সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে।

তাহিয়াঃতাহসিন ভাইয়া

তাহসিনঃএকি তুই এখানে কেনো?(তারাতাড়ি সিগারেট ফেলে দিয়ে আর কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে)

তাহিয়াঃআসলে ভাইয়া আমার কিছু কথা ছিলো(ভয়ে ভয়ে বললাম,ভাইয়াকে কেমন যেন দেখাচ্ছে চোখ লাল হয়ে আছে)

তাহসিনঃকি বলবি তারাতাড়ি বল

তাহিয়াঃ ভাইয়া তুমি রাগ করো না প্লিজ

তাহসিনঃবল রাগ করব না।

তাহিয়াঃভাইয়া তুমি কি হারিয়ে ফেলেছো

তাহসিনঃকিছুনা যা এবার

তাহিয়াঃবলনা ভাইয়া প্লিজ বলো।তুমি কেমন চেঞ্জ হয়ে গেছো ভাইয়া।আমাকে বলো(আমি ভাইয়ার হাত ধরে)

(ভাইয়া আমার হাতের দিকের তাকিয়ে যেনো আরও রেগে গেলো,ভাইয়া হাত ছাড়িয়ে আমাকে ছাদের দেয়ালে সাথে চেপে ধরে,আমার হাত তার হাতের মুঠোয়।আমি নড়তে পারছে না।ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার মুখে পরছে।কিভাবে যেনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।)

তাহসিনঃবলেছি না তোকে আমার কাছে আসবি না।দূরে থাকবি।তাহলে কেনো বারবার আমার কাছে আসিস।(আমার কপালে ভাইয়ার কপাল ঠেকিয়ে)

তাহিয়াঃআমি তো শুধু জানতে এসেছি তোমার কি হয়েছে?

(ভাইয়া যেন কিভাবে তাকিয়ে আছে ভাইয়ার চোখে যেন অন্যরকম অনুভূতি দেখতে পাচ্ছি,এমনটা আগে কখনই দেখি নাই,ভাইয়া আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে,সে আমার ঠোঁটের কাছে এগিয়ে আসতে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই।)

তাহিয়াঃভাইয়া ছাড়ো আমার লাগছে।

(ভাইয়া সাথে সাথে নিজের মধ্যে ফিরে এলো,আর নিচের দিকে তাকালো,তাকিয়ে আরকদফা অবাক হলো।আমার কোমরের কাছের শাড়ি সরে গেছে তাই কোমরটা উন্মুক্ত অবস্থায় ছিলো তা দেখে ভাইয়া আমাকে তারাতাড়ি ছেড়ে পিছন ফিরে যায়।)

তাহসিনঃতাহিয়া এখান থেকে যা।আমাকে একা থাকতে দে।

তাহিয়াঃভাইয়া কিন্তু…..

তাহসিনঃযা এখান থেকে(অনেক জোরে চিল্লিয়ে বললেন)

আমি আর এক মুহূর্তও সেখানে থাকলাম না দৌড়ে নিচে চলে এলাম।

চলবে,,,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_13
#writer_Fatema_Khan

(ছাদ থেকে সোজা রুমে আসলাম।এসে বিছানায় বসে হাপাতে লাগলাম।অনেক ভয় করছিলো আজ তাহসিন ভাইয়াকে।আমি এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে ফেললাম।)

আরিশঃকি হয়েছে তোমার এমন করছো কেনো?

তাহিয়াঃও তাহসিন ভাইয়া না আজ কেমন করছিলো।ওনার চোখ লাল হয়ে গেছিলো। আর উনি আমাকে….

আরিশঃতুমি ছাদে গিয়েছিলে নাকি?

তাহিয়াঃ হুম।ভাইয়া এমন কেনো হয়ে গেলো,আর ভাইয়া নাকি কি হারিয়ে ফেলেছে?কি হারাতে পারে সেটাই আমার ব্রেইনে আসছে না।

আরিশঃসেটা আমিও জানি না।তবে তোমাকে একটা ছোট গল্প বলি।

তাহিয়াঃবলো।

আরিশঃআমার কাছে আসো।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলি।

(আমি আর আরিশ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি।আরিশ একহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন)

আরিশঃজানো একটা মেয়ে ছিলো না পিচ্চি মেয়ে,১৬বছরের পিচ্চি।আর একটা ২০বছরের যুবক। যুবক ছেলেটা পিচ্চি মেয়েটাকে খুব ভালবাসে।মেয়েটা এতোটাই অবুঝ সে কিছুই বুঝে না।একদিন যুবকটি এক কাজে দূরে যেতে হয় সেই সময় অই পিচ্চি মেয়েটার একটা ২৭বছরের বুড়োর সাথে বিয়ে হয়ে যায়।এখন যখন যুবকটি জানতে পারে পিচ্চি মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে তার এখন কেমন লাগবে বলো তো।

তাহিয়াঃঅনেক কষ্ট হবে,সে তো তার সবকিছুই হারিয়ে ফেলল।

আরিশঃএইতো তুমি বুঝতে পারলা সব হারিয়ে ফেলেছে যুবকটি।কিন্তু যানো এটি যার গল্প সে এখনো বুঝে নাই যুবকটির কি হয়েছে?

তাহিয়াঃআচ্ছা আরিশ আমার মনে হয় কি তাহসিন ভাইয়া কাওকে ভালবাসে আর তার বিয়ে হয়ে গেছে🤔।

আরিশঃহতে পারে(পাগলী একটা সে পিচ্চি মেয়েটা যে তুমি নিজেই), চলো এখন ঘুমিয়ে যাই।সকালে উঠতে হবে কাল পিকনিক আছে তো।

তাহিয়াঃআরে হ্যা আমি তো ভুলেই গেছি।চলো ঘুমিয়ে পরি।

(আমি আর আরিশ একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলাম)

_____________________________

(একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে তাহসিন।তার মাথা আজ কাজ করছে না মাথা চেপে ধরে আছে।)

তাহসিনঃকি করলাম আজ তাহিয়াকে নিজের এতো কাছে কিভাবে আনলাম,সে কি ভাববে আমাকে নিয়ে?কাল আমি তাহিয়ার সামনে কিভাবে যাব?আমি এতোটা নিচে কিভাবে নামলাম। কিভাবে তাহিয়ার চোখের দিকে তাকাবো,আর ওকে সরি বলা দরকার।

(এগুলো ভাবতে ভাবতে নিচে এসে রুমে গিয়ে দেখে তূর্য এখনও জেগে আছে,কি যেনো করছে ওর মোবাইলে।তারপর তাহসিন অন্য সাইড দিয়ে শুয়ে পরলো।)

______________________________

(সকাল সকাল আরিশের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে পরি।সে মোবাইলে কারো সাথে জোরে জোরে কথা বলছে।)

আরিশঃআপনার সাথে আমি আমার কোম্পানির কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না।আর আপনি এমন একটা খারাপ কাজের সাথে জড়িত আছেন জানলে কখনোই আপনার সাথে পার্টনারশীপ করতাম না।আর আজ থেকে আপনার সাথে আমাদের কোম্পানির পার্টনারশীপের ইতি হলো।

তাহিয়াঃকার সাথে তুমি এভাবে কথা বলছিলে?

আরিশঃওই রেজোয়ানের সাথে।

তাহিয়াঃকি হলো ওনার সাথে আবার তোমার, উনি তো ভালো একজন মানুষ।

আরিশঃ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো,কে ভালো কে খারাপ তা আমাকে দেখতে দাও।

তাহিয়াঃ ওকে।

(আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম)

_______________________________

(নিচে সবাই হাতে হাতে কাজ করছে।আমরা মেয়েরা আজ কাজ করবো না।ছেলেরা রান্না করবে আজ।আরিশ,রাসেল ভাইয়া,তূর্য ভাইয়া আর তাহসিন ভাইয়া রান্নার কাজে।বাবা(আরমান,রায়হান)ও আংকেল(আবির) সবজি,পেয়াজ সব কেটে দিচ্ছেন।আর এইদিকে আমরা পাকোড়া,আর চা খাচ্ছি,আড্ডা দিচ্ছি।হঠাৎ আমার নজর যায় আরিশের দিকে, তার কপালে পরে থাকা অবাধ্য চুলগুলো খুব বিরক্ত করছে তাকে।তা দেখে আমার খুব ইচ্ছে করছিলো চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেই।তার পাশেই তাহসিন ভাইয়া ছিলো তার দিকে চোখ যেতেই দেখি সে আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আমি তাকানোর সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলে।আবার তাকালে আমি রাগ দেখিয়ে অন্যদিকে ফিরে যাই।)

(প্রায় ৩ঘন্টা পর তাদের রান্না শেষ হলো।তারপর সবাই শাওয়ার নিয়ে একসাথে খেতে বসবে।)

________________________________

খাবার টেবিলে সবাই খাচ্ছে সেই সময় আরিশ বলে উঠলো–

আরিশঃআমার সবাইকে কিছু বলার আছে।

রায়হানঃকি ব্যাপার কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে নাকি?

আরিশঃজ্বি বাবা,অনেক দরকারি কথা।

রায়হানঃকি বলো?

(সবাই আরিশের দিকে অধির আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে সে কি বলবে তা শোনার জন্য।)

আরিশঃবাবা আমি রেজোয়ানের সাথে সকল ডিল ক্যান্সেল করে দিছি,ইভেন আমাদের মাঝে যে পার্টনারশীপ ছিলো সেটাও শেষ করে দিছি।

রায়হানঃকিন্তু কেনো?এতো বড় একটা ডিসিশন নেয়ার আগে ভেবে দেখেছো তুমি?

আরিশঃবাবা উনি নারী পাচারকারী চক্রের একজন সদস্য।

মানে(সবাই অবাক হয়ে বললো)

আরমানঃতাহলে আমার ধারনাই ঠিক।

রায়হানঃমানে কি বলতে চাইছো তুমি,আর আরমান ভাই আপনি কি ধারণা করছিলেন কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

আরিশঃআমিও জিনিসটা প্রথম খেয়াল করি নাই।কিন্তু যেদিন উনি বাবার(আরমান) নাম আরমান রহমান জানলেন সেদিন উনি আমাদের বলে দিয়েছেন যে বাবাকে(আরমান) যেনো আমরা তার নাম বা তার সম্পর্কে কিছু না বলি।সেদিনই আমার প্রথম সন্দেহ হয়।তারপর আমি আমার লোক রেজোয়ানের পিছনে লাগাই।

নীলিমাঃকিন্তু সেটা তো ওনারা দুইজন বন্ধু,আর আরমান ভাই রেজোয়ান ভাইয়ের সাথে রাগ করে আছে তাই

আরিশঃসব মিথ্যা মা।ওনার সাথে বাবার(আরমান) কি শত্রুতা আছে আমি জানি না তবে যেদিন তাহিয়াদের বাসায় রেজোয়ানের নাম শুনে বাবা(আরমান) ভয় পেয়ে গেছিলো সেদিন আমি কনফার্ম হই কোনো ঘাপলা তো আছেই।

(সবাই তো পুরা শক,কি বলছে এসব আরিশ শুধু বাবা ছাড়া।কারণ বাবাও কিছু না কিছু জানে)

তাহসিনঃএই জন্যই আংকেল এতো ঘাবড়ে গিয়েছিলেন।আমি তো আংকেলকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,কিন্তু তার আগেই তূর্য এসে আমাকে নিয়ে গেলো।

রায়হানঃকি এমন হয়েছে আরমান ভাই যার কারণে আপনি এতো ভয় পেয়ে আছেন?

(বাবা একগ্লাস পানি খেয়ে নিয়ে বলতে শুরু করেন)

অতীত(১৮বছর আগে),,

আমি আর রেজোয়ান খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।আমি যেনো রেজোয়ানকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না ঠিক তেমনি রেজোয়ানও আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।

তূর্যের তখন ৬বছর,তূর্যের মা তখন প্রেগন্যান্ট, তনিমা ছিলো তার গর্ভে।

রেজোয়ানের সাথে কয়েকদিন হলো দেখা হয়না।এদিকে ভাবিও(রেজোয়ানের স্ত্রী) প্রেগন্যান্ট, তাই হয়তো তেমন একটা সময় দিতে পারে না।তাই ভাবলাম আমি যে আবার বাবা হতে চলছি তা রেজোয়ানকে তার বাসায় গিয়ে বলে আসি।তাহলে ও অনেক খুশি হবে।যেই ভাবনা সেই কাজ।বের হই রেজোয়ানের বাসার উদ্দেশ্যে।

রেজোয়ানের বাসার দরজা খোলাই ছিলো তাই আমি বাসায় ঢুকে যাই।আর রেজোয়ানের স্টাডি রুমে চলে যাই।এই সময় তাকে ওইখানে ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাবে না।

রুমের দরজার সামনে আসার সাথে সাথে আমি শুনতে পাই সে নারী পাচারকারী চক্রের সাথে কথা বলছে আর ডিল ফাইনাল করছে।রেজোয়ান আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে আমি দাঁড়িয়ে আছি।সে ঘাবড়ে গিয়ে বলে
রেজোয়ানঃকিরে আরমান তুই কখন এলি?আয় বস।

আরমানঃতুই কার সাথে কথা বলছিলি?

রেজোয়ানঃওই এমনি আর কি

আরমান ঃতুই নারী পাচারকারী চক্রের সাথে কথা বলছিলি আর ডিল ফাইনাল করার কথা বলছিলি।

(রেজোয়ান বুঝতে পারে আমি সব শুনে নিয়েছি)

রেজোয়ানঃতুই যখন জেনেই গেছিস তোর থেকে আর লুকাবো না।তুই চাইলে আমি তোকেও এই কাজে আনতে পারি।অনেক টাকা আয় করতে পারবি।

আরমানঃথাম তুই ছিঃ। তুই এই ধরনের কাজ করে আবার আমাকেও এই কাজে নেয়ার জন্য বলছিস।তুই নিজে থেকে পুলিশের কাছে যাবি, নাকি আমার গিয়ে বলতে হবে।

রেজোয়ানঃদুইটার একটাও না। না আমি বলবো না তুই বলবি বুঝলি।

(পরে আমি সেখান থেকে রাগে চলে আসি।৩দিন রেজোয়ানের সাথে কোনো কথা নাই।সে কি করে খারাপ পথে যেতে পারে।)

(৪দিন পির আমি তাকে কল করে জিজ্ঞেস করলাম সে পুলিশের কাছে সব বলে দিছে কিনা।)

আরমানঃদেখ ভাই কেনো এমন করছিস বল।তাই বলছি নিজ থেকে ধরা দে।ভালো পথে আয়।

রেজোয়ানঃআমার যা ইচ্ছে আমি করবো তাতে তোর কি,এই বলে রাগে কল কেটে দিলো।

(তারপর আমি পুলিশের কাছে সব বলে দেই।পুলিশরা রাতে রেজোয়ানের বাসায় যাবে আর তাকে এরেস্ট করে নিয়ে যাবে।)

চলবে,,,,,,

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-১০+১১

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_10
#writer_Fatema_Khan

তপ্ত দুপুরে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছি আমি।হয়তো শরীর দূর্বল তাই এখনো ঘুম থেকে উঠা হয়নি।আমার মাথায় কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তবুও চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না।তার অধরজোড়া আমার কপালে ছোয়ালো।সাথে সাথে আমি চোখ খুলে তার দিকে তাকাই।সে অতি নরম কন্ঠে বললো উঠো ফ্রেশ হয়ে খাবে আসো।আমার খিদে পেয়েছে।আমি কোনো উত্তর দিচ্ছি না তার দিকে তাকিয়ে আছি।ভালোবাসলে যে মানুষ বেহায়া হয়ে যায় তা শুধু বইয়ের পাতায় পড়েছি আজ আমার সাথেও তা হচ্ছে।সে ভ্রু নাচিয়ে বললো-

আরিশঃকি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?

তাহিয়াঃতোমাকে।

আরিশঃআমি তো তোমারই এভাবে দেখার কি আছে?

তাহিয়াঃজানিনা,কিন্তু তোমাকে শুধু দেখতে ইচ্ছে করে।মনে হয় এটাই হয়তো আমি তোমায় শেষ দেখছি।আমার মনে হয় হারিয়ে ফেলবো তোমায়।

আরিশঃপাগলী একটা যাও এখন তারাতাড়ি করো ঘুরতে যাবে না।আর মাথার কি অবস্থা?

তাহিয়াঃআমি এখনি যাচ্ছি।আর মাথার অবস্থা এখন তো অনেকটাই বেটার।

আরিশঃআচ্ছা যাও এখন আমি ওয়েট করছি।

“আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।আরিশ ওয়েট করছে আমার জন্য।প্রায় ৩০মিনিট পর আমি বেরিয়ে আসলাম।তারপর দুইজনে খেয়ে নিলাম।”
_____________________________

“আরিশের দেয়া লাল রঙের শাড়ি পরবো আমি।ব্লাউজ আর পেটিকোট আর উপরে টাওয়েল পরে শাড়ি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি।”

তাহিয়াঃআচ্ছা তুমি জানো আমি শাড়ি পরতে পারি না তবে শাড়ি পরতে বললে কেন?এখন কে আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে?

আরিশঃকেনো আমি পরিয়ে দিবো। আর সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিবো দেখে নিও।আচ্ছা এখন টাওয়েলটা সরাও।

তাহিয়াঃতুমি কি পাগল হয়ে গেলে আজ,আমি তোমার সামনে শুধু ব্লাউজ পরে থাকবো।ছিঃ ইম্পসিবল।

“আরিশ নিজেই তাহিয়ার গায়ের থেকে টাওয়েল সরিয়ে নিলো।তাহিয়া তো লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছে না।আর আরিশ যেনো ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে।আমার হাত থেকে শাড়ি নিয়ে পরানো শুরু করলো।শাড়ি পরানোর সময় তার হাত আমার শরীরে লাগছিলো আর তার ছোয়াতে আমি বারবার কেপে উঠছিলাম।কুচি করার সময় আরিশ নিজের হাতে আমার কুচি গুজে দেয় আমি শরীরে যেনো ছোটখাটো একটা ঘূর্নিঝড় বয়ে গেলো।”

“চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে নিলাম ব্যাস আমার সাজ কমপ্লিট।”

তাহিয়াঃকেমন লাগছে আমাকে আরিশ?

আরিশঃলাল বাদর লাগছে একদম।এখন চলো।

তাহিয়াঃআমি লাল বাদর,তুমি একাই যাও আমি যাবো না।আমি গেলে সবাই তোমাকে দেখে হাসবে।(ঠোঁট ফুলিয়ে কাদো কাদো ভাব নিয়ে বললাম)

আরিশঃচোখ ফেরানো যাচ্ছে না তোমার থেকে।আমার পবিত্র অন্যায়গুলো করতে ইচ্ছে করছে।

“আমি লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেলাম”

তাহিয়াঃহয়েছে হয়েছে এবার চল।

আরিশঃ হুম চলো।

“তারপর আমরা হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলাম।সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে হাত ধরে হাটতে লাগলাম।অন্যরকম অনুভুতি কাজ করছে। মনে হচ্ছে সময়টা থেমে গেলে মন্দ হতো না।দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।সূর্যাস্ত দেখে আমরা বাইরে থেকে খেয়ে একেবারে হোটেলে আসলাম।”

__________________________❤️

আমি ওয়াশরুমে যাবো চেঞ্জ করতে কিন্তু তার আগেই আরিশ আমার হাত ধরে নিলো।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলি–

তাহিয়াঃকি হয়েছে?আমি চেঞ্জ করবো তো।

“আরিশ আমার হাত ধরে টান দিতেই আমি তার বুকে গিয়ে পরি, আরিশ আমার কপালে ঠোঁট ছোয়ালে আমি লজ্জায় তার বুকে মাথা লুকাই।আরিশ আমার মাথাটা উঠিয়ে আমার কপালের সাথে তার কপাল ঠেকিয়ে বলে আজ তোমাকে চাই,খুব আপন করে পেতে চাই,জানিনা কি হলো আজ আমার কিন্তু আজ তোমাকে না পেলে যে মরে যাবো সত্যি।”

তাহিয়াঃকি ধরনের কথা আমাকে ছেড়ে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না তোমার।

“আরিশ আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে। আমি কাপছি,আমার কম্পমান ঠোঁট জোড়া তাকে আরও টানছে।আমি সরে আসতে চাইলে সে আমার কোমর জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলো।তার ঠান্ডা হাত আমার উন্মুক্ত কোমরে লাগাতে আরেকদফা কেপে উঠলাম আমি।সে আমার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো।অনেকক্ষণ পর সে আমার ঠোঁট ছেড়ে দিলো।আমি হাপাতে লাগলাম।তারপর সে গলায় মুখ ডুবালো।ধীরে ধীরে তার ভালোবাসা বাড়তে থাকলো।সে আমাকে কোলে তুলে খাটে নিয়ে গেলো।আমার উপর তার শরীরের ভার ছেড়ে দিলো।রাত যত বাড়লো ভালোবাসাময় অত্যাচার বাড়তে থাকল।”

চলবে,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_11
#writer_Fatema_Khan

আরিশের বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে তাহিয়া।আরিশ তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।পরে তার কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দেয়।তারপর আরিশও ঘুমিয়ে পরে।

সকালে তাহিয়ার ঘুম ভেঙে যায়,সে তার উপর ভারি কিছু অনুভব করতেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।তাকিয়ে দেখে আরিশ বাচ্চাদের মত মুখটা হালকা খোলা রেখে ঘুমাচ্ছে।তাহিয়া আরিশের মুখটা বন্ধ করে পাশে থাকা আরিশের শার্ট পরে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

১ঘন্টা লম্বা শাওয়ার নেয়ার পর তাহিয়া বের হয়ে দেখলো আরিশ এখনো ঘুমিয়ে আছে।তাহিয়া তাকে উঠতে বলে-

তাহিয়াঃআরিশ উঠো, তোমার তো কাজ আছে উঠো।যাবে না?

আরিশ আরমোরা ভেঙে আমার দিকে তাকিয়ে বললো –

আরিশঃআজ যে তোমায় ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।

তাহিয়াঃআগে কাজ বাকিসব পরে।এবার উঠো।

আরিশঃকই তুমি আমাকে বলবে না যাওয়ার জন্য, আর তুমি কিনা আমাকে ঠেলে পাঠিয়ে দিচ্ছো।

তাহিয়াঃবুঝতে পারছি এবার তুমি উঠো আর শাওয়ার নিয়ে আসো।

(তাহিয়া জোর করে আরিশকে উঠিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো)

______________________________

সকাল ৮ঃ০০।

তূর্যঃবাবা তাহিয়া কেমন আছে এখন?ওর সাথে তো কথাও হয় না ভালো করে।

আরমানঃতোমার কাছে সময় আছে নাকি তোমার বোনদের খবর নেয়ার।আমার বিজনেস ছাড়া কি এমন কাজ করো যার জন্য আমাদের কারো সাথে তোমার ভালো করে দেখাও হয় না।

আফসানাঃআহা ছেলেটা খেতে বসেছে তুমি আবার শুরু করে দিলে।

আরমানঃওর একটা পরিবার আছে তাদের জন্যও তার সময় বের করার দরকার।

তূর্যঃআমি চেষ্টা করি নিজেকে ফ্রি রাখার, তা বললে না তাহিয়া এখন কেমন আছে?

আরমানঃভালো আছে।আর ও এখন কক্সবাজারে আছে আরিশের সাথে ঘুরতে গেছে কিছুদিন।

তূর্যঃভালোই হলো কয়েকদিন ঘুরে আসলে ভালো লাগবে।

আরমানঃ হুম।আচ্ছা আমি উঠছি।

তূর্যঃঠিক আছে।

আফসানাঃতুই খা বাবা তোর বাবার কথা শোনে না।উনি তো এমনই।(তূর্যের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

__________________________________

রায়হানঃআরিশ কল করেছে?ওদের কি খবর এখন?

নীলিমাঃকরেছিলো,সকালে কল করেছে তাহিয়া ওরা ভালো আছে।

রায়হানঃতোমাকে একটা কথা বলা হয়নি,আমাদের ৭০০ব্যাগ গার্মেন্টস প্রোডাক্ট দুবাই ডেলিভারি হয়েছে তা ওইখানে কাস্টমারদের কাছে খুব পছন্দ হয়েছে।

নীলিমাঃএটা তো খুব ভালো কথা।আরিশ যানে?

রায়হানঃআরিশই আমাকে এই খবরটা দিয়েছিলো।কিন্তু সেদিনই তাহিয়া ছাদ থেকে পরে যাবার ফলে আমার মাথা থেকে বের হয়ে গেছে।

নীলিমাঃতাহিয়া আমাদের আরিশের জন্য খুব লাকি বলো।ও আসার পর থেকেই সব ভালো হচ্ছে।কিন্তু ওকে মারতে কে চায় বলোতো।

রায়হানঃসেটা কিভাবে বলব বলো,কিন্তু খারাপ লাগে এই পিচ্চি মেয়েটারও বুঝি শত্রু আছে।এত সুন্দর একটা মেয়েকে মারতে কারো হাত কাপে না।

নীলিমাঃকি বলবো বল।আচ্ছা তুমি কফি খাবে?

রায়হানঃ হুম মন্দ হয়না।

_________________________________

“আরিশ শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে নিজের চুল হাত দিয়ে ঠিক করছেন।আমি তার দিকে তাকিয়ে আরেকদফা ক্রাশ খেলাম।ওনার শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি,চুল থেকে ফোটা ফোটা পানি পরছে।মেয়েরা সদ্য গোসল কিরে আসলে তাদের নাকি রূপবতী লাগে।ছেলেদেরও যে এতটা আকর্ষনীয় লাগতে পারে তা আমার এই মিস্টার অসভ্য নামক বরটাকে না দেখলে যানতেই পারতাম না।

আরিশঃতোমার বর আমি এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার কি আছে,সামনে নিয়ে বসে ভালো করে দেখো।

“আরিশের কথা শুনে লজ্জায় চোখ নিজে থেকেই নিচে নেমে গেলো।ছিঃ কি বেহায়ার মত করছি আমি।নিজের বরের দিকে কেউ এভাবে তাকায়”

আরিশঃকি এত ভাবছো,চল নাস্তা খেয়ে নিবে।

তাহিয়াঃ ঠিক আছে চলো খেয়ে নিই তুমি যাবা কখন যাবে?

আরিশঃএইতো নাস্তা করে বের হয়ে যাবো।

(তারপর দুইজনে নাস্তা করার পর আরিশ তৈরি হয়ে চলে যায়,আর তাহিয়া ফেসবুকে স্ক্রল করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে)

_________________________________

১০ঃ৩০ কলেজে,

এই তাহসিন দাড়া।(তাহসিন কিছুটা দূরে ছিলো বলে একটু জোরে ডেকে উঠলো তনিমা)

তাহসিনঃআরে তনিমা,আমি ভাবছিলাম তুই আজ আসবি না।

তনিমাঃআমি তো আসতে চাইনি, কিন্তু আমার হিটলার জামাই জোর করে পাঠিয়ে দিলো।

“তাহসিন এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে তাহিয়াকে খুজে চলছে।”

তনিমাঃকাকে খুজছিস?তাহিয়াকে তাই না।

তাহসিনঃওরে খুজতে যাবো কেনো? ইদানীং তুই একটু বেশি কথা বলিস।আর তাহিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে,আমি অনেক খুশি কারণ তাহিয়া সুখে আছে।(বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো,চোখের কোণায় পানি জল এসে গেলো তাহসিনের)

তনিমাঃ সত্যি তোর মত কয়জন ভালোবাসতে পারে যে কিনা ভালোবাসার মানুষটিকে খুশি দেখে নিজের কষ্টগুলো ভুলে থাকতে পারে।

তাহসিনঃসেসব বাদ দে,আগে বল তাহিয়া এখন কেমন আছে,ওর শরীর এখন ঠিক আছে তো?

তনিমাঃআগে থেকে বেটার আছে।আর ও আজ দুইদিন হলো কক্সবাজারে আছে।

তাহসিনঃহানিমুনে বুঝি।

তনিমাঃআরে না আরিশের কাজ আছে তাই তাহিয়াকে সাথে নিয়ে গেছে।

তাহসিনঃওহ ভালোই হলো,একটু ঘুরে আসলে ওর মনটাও ফ্রেশ লাগবে।আচ্ছা চল ক্লাসে।

তনিমাঃসেই চল ক্লাসের দেরি হয়ে যাবে।

_________________________________

৫দিন পর,

আজ আমরা ঢাকা চলে আসবো,এই সাতদিন আমরা খুব এনজয় করছি।আজ একটু খারাপ লাগলেও আনন্দও লাগছে।কতদিন পর আবার সবার সাথে দেখা হবে।

আমরা বাসায় এসে পৌছাই রাত ৯ঃ০০ টার দিকে।তারপর আমরা দুইজনে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পরি।খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই তারাতাড়ি ঘুম চলে এলো

_______________________________

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আরিশ আমার পাশে নেই।ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে দেখি আরিশ সেখানেও নেই।তাহলে মনে হয় নিচে গেছে।আমি ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছি।ঠিক সেই সময় নিচে থেকে অনেক শব্দ আমার কানে আসতে লাগলো।কৌতুহল থেকে নিচে নেমে আসি।নেমে আমি যা দেখলাম আমি তা কল্পনাও করি নাই।

চলবে,,,,,,

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-০৯

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_09
#writer_Fatema_Khan

প্রেয়সী তুমি কি জানো আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো তোমায় নিয়ে সকালবেলা সূর্য উদয় দেখব। রক্তিম সূর্যটা যখন উঠবে তখন তুমি আর আমি পাশাপাশি থাকবো। আমি এক হাতে তোমায় জড়িয়ে ধরবো আর তুমি আমার বুকের মধ্যে থাকবে।আর সাক্ষী হয়ে থাকবে এই রক্তিম সূর্য।প্রেয়সী তুমি কি জানো আমার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল সেটা আর কখনো বাস্তবে পরিণত হবে না। (কথাটি বলতেই তাহসিনের চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো)

তাহিয়াঃভাইয়া তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?
(কারো এমন কথায় চমকে উঠল তাহসিন। পিছনে তাকাল দেখল তাহিয়া দাঁড়িয়ে আছে)

তাহসিনঃএকি তুই এত ভোরবেলা ছাদে।

তাহিয়াঃতুমি কিন্তু আমার কথার উত্তর দাও নি তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?

তাহসিনঃকি যা তা বলছিস আমি আবার কাকে ভালবাসতে যাবো

তাহিয়াঃ আমি নিজ কানে শুনেছি একদম মিথ্যা বলবেনা আমাকে আর তুমি কান্না করছিলে

তাহসিনঃ ফালতু বকিস না ঘুমাতে যা।

তাহিয়াঃআগে তুমি আমার কথার উত্তর দাও তারপর আমি চলে যাব। আর প্রেয়সী কে?

তাহাসিনঃতাহিয়া তুই কিন্তু এবার একটু বাড়াবাড়ি করছিস বললাম না তুই নিচে যা।আর তুই আমার পিছনে কখন এসে দাঁড়িয়েছিস?

তাহিয়াঃযখন তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমার প্রেয়সীর সাথে কথা বলছিলে।

তাহসিনঃতুই যখন যাবি না তাহলে আমিই চলে যাই।তুই থাক এখানে।

তাহিয়াঃএমন করো কেনো ভাইয়া আমার সাথে।এবার ফেরার পর থেকেই দেখছি আমার থেকে তুমি কেমন পালাই পালাই করো।(আমি তাহসিন ভাইয়ার হাত ধরে)

তাহসিনঃকিছু না।(বলেই নিচে চলে আসলো তাহসিন। সে ভাবলো একটু পর হয়তো আরিশ আসতে পারে তাই আগেই চলে আশা ভালো)

______________________________

আরিশঃতাহিয়া তো অনেকক্ষণ হলো ছাদে গেলো এখনো আসলো না কেনো।হাতের কাজটা শেষ করেই তাহিয়ার কাছে যাবো।

(সে সময় আরিশের মোবাইল বেজে উঠে)

আরিশঃএতো সকালে কে কল দিলো? রেজোয়ান আংকেল।রিসিভ করি তারপর দেখি কি বলে।হ্যালো জ্বি আংকেল বলুন।

রেজোয়ানঃআরিশ ৭০০ ব্যাগ ডেলিভারি হয়েছে তা খুবই ভালো।আমি চাই তুমি সেইম আরও প্রোডাক্ট তৈরি করো।যাতে এগুলো আমি অন্য দেশে পাঠাতে পারি।

আরিশঃ সত্যি অনেক ভালো হয়েছে প্রোডাক্টটি।আমি আমার নিজের বেস্টটা দিবো। বাকি প্রোডাক্ট তো আপনি দেশে আসলে দেন পাঠানো হবে।

রেজোয়ানঃ হুম।আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি আমি।

আরিশঃআচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাকবেন।

যাই দেখি গিয়ে তাহিয়া কি করছে?

________________________________

হটাৎ এক চিৎকার শুনে পুরো বাড়ির সবাই ছাদে যায়।দেখে আরিশ তারাতাড়ি নিচে যাচ্ছে।সবাই জিজ্ঞেস করলে আরিশ বলে তাহিয়া ছাদ থেকে পরে গেছে।

তাহিয়া রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।আরিশ তাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

বাকি সবাই অন্য গাড়ি দিয়ে হসপিটাল পৌছে।তারপর তাহিয়াকে এডমিট করা হয়।

(আফসানা রহমান ও তনিমা কান্না করে যাচ্ছে)
প্রায় ৩০ মিনিট পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলে সবাই ডাক্তারের কাছে যায়।

আরিশঃআমার তাহিয়া কেমন আছে এখন ভালো আছে।ওর কিচ্ছু যেনো না ডাক্তার, না হলে আপনাকে আমি ছাড়বো না ডাক্তার।

(ততক্ষণে নীলিমা খান ও রায়হান খান হসপিটালে চলে আসেন)

ডাক্তারঃরিল্যাক্স মিঃ খান।আপনার ওয়াইফ ঠিক আছেন।মাথা ফেটে গেছে ওইটা আমরা ড্রেসিং করে দিয়েছি।আর তেমন একটা মারাত্মক কিছু হয়নি।

আরিশঃআমি আমার ওয়াইফের সাথে দেখা করতে পারি?

ডাক্তারঃঘুমের ঔষধ দিয়েছে উনি ঘুমাচ্ছেন।কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠলে আপনারা দেখা করতে পারেন।

আরিশঃঅনেক ধন্যবাদ।

১ঘন্টা পর তাহিয়ার ঘুম ভাঙলে এক এক করে সবাই তার সাথে দেখা করতে যায়।ওর সাথে একটু আধটু সবাই কথা বলছে।তাহসিন তাকে বাইরে থেকে দেখে নিলো ভিতরে গেলো না।আর কিছু চোখের জল বিসর্জন দিলো।

_______________________________

বিকালে তাহিয়াকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।আফসানা রহমানের কান্না দেখে সবাই তাহিয়াদের বাড়িতেই নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

তাহিয়াঃআরিশ হসপিটাল থেকে দেখছি আমার কাছে সবাই আসছে কিন্তু তাহসিন ভাইয়া তো একবারও আসে নি।

আরিশঃজানিনা ও তো ওর রুমে আছে।

তনিমাঃতুই বস আমি ওকে নিয়ে আসতেছি।

(তনিমা তাহসিনকে নিতে তাহসিনের রুমে যায়।)

তনিমাঃএকি তুই এখানে বসে কাদছিস কেনো?কি হয়েছে তোর?সব ঠিক আছে তাহিয়ার তেমন একটা লাগে নি।শুধু মাথায় ব্যাথা পেয়েছে।

তাহসিনঃআমি যদি তখন না আসতাম তাহলে এই ঘটনাটা ঘটতোই না।

তনিমাঃআচ্ছা চল।তাহিয়া তোকে ডাকছে।

তাহসিনঃঠিক আছে চল।

(তাহসিন ও তনিমা তাহিয়ার রুমে আসলে তাহসিন দূরে দাঁড়িয়ে থাকে)

তাহিয়াঃআরে তাহসিন ভাইয়া এদিকে এসো কি হয়েছে তোমার?

তাহসিনঃআমি তখন চলে না আসলে এতো কিছু হতো না।তোর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী।

তাহিয়াঃতোমার কোনো দোষ নেই।এতো চাপ নিও না তো।

তাহসিনঃআচ্ছা তাহিয়া একটা কথা বল তুই ছাদ থেকে পরলি কিভাবে?

তাহিয়াঃআমি দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিলাম হটাৎ কে যেন আমাকে ধাক্কা দিলো আর আমি পরে গেলাম।

তাহসিনঃকে ফেলেছে দেখতে পেয়েছিস

তাহিয়াঃ হুম দেখেছি ভাইয়া।ওইদিন তোমাকে বললাম না একটা মাস্ক পরা লোক আমাকে মারতে চেয়েছিলো সে ওইদিন পার্কেও ছিলো।আর আজ আমাকে সে ধাক্কা দিয়ে একপলক আমার দিকে তাকিয়ে সরে গেলো ওইখান থেকে।

তাহসিনঃআরিশ ভাইয়া আমাদের এই কথাগুলো নিজেদের মধ্যে রাখলে হবে না,পুলিশকে জানানো দরকার।

আরিশঃআমি আজই পুলিশকে জানাচ্ছি কথাগুলো।

_______________________________

২দিন পর,,,,

তাহিয়া এখন সুস্থ।তাই এই বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।তাহিয়া খাটে বসে আছে। আর আরিশ কার সাথে যেনো কথা বলছে।

আরিশঃআমার পক্ষে এখন যাওয়া পসিবল না।(বলে কল কেটে দিলো)

তাহিয়াঃকোথায় যাবে না তুমি।আর কেনো যাবে না আমার জন্য।

আরিশঃআমাকে ৭দিনের জন্য কক্সবাজারে যেতে হবে তাও আজ রাতের ফ্লাইটে।

তাহিয়াঃতুমি যাবে বাস এটাই ফাইনাল।

কোথায় যাবে আজ(নীলিমা ও রায়হান রুমে ডুকতে ডুকতে)

তাহিয়াঃমা বাবা দেখো না আরিশ আমার জন্য নাকি যাবে না।ওর কক্সবাজারে কাজ আছে আজকেই যেতে হবে ৭দিনের জন্য।

রায়হানঃতুই যাবি না কেনো? তারাতাড়ি ব্যাগ প্যাক কর আমি টিকিট কাটার ব্যবস্থা করছি।আর হ্যা তাহিয়া মা তোমার ব্যাগটাও প্যাক করে নিও,তুমিও যাচ্ছ।

তাহিয়াঃআমি কিন্তু উনি তো কাজে যাচ্ছে।

নীলিমাঃকাজ সারাদিন থাকে না।কাজের টাইমে কাজ করে সারাদিন তোমাকে নিয়ে ঘুরা ফিরা করবে।আর বিয়ের পর তোমরা কোথাও যাওনি।ঘুরে আসো ভালো লাগবে।

________________________________

সকাল ৭টা,,,আমরা হোটেলে এসে পৌছালাম।আরিশ ফ্রেশ হতে গেছে আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছি।হটাৎ দুটি হাত আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো প্রথমে চমকালেও পরে বুঝতে পারি এটি আরিশের হাত।

আরিশঃযাও ফ্রেশ হয়ে আসো।তারপর কিছু খেয়ে নাও।

তাহিয়াঃ ওকে।(আমি আমার একটা থ্রি পিস বের করে ওয়াশরুমে চলে যাই)

ফ্রেশ হয়ে দেখি আরিশ খাবার অর্ডার করে রাখছে সে খাবার টেবিলে গুছিয়ে রাখছে আরিশ।

আরিশঃআরে আসো তারাতাড়ি খেয়ে নাও।খাওয়া হলে তুমি রেস্ট নিও আমি বের হবো।বিকালের দিকে আমরা ঘুরতে বের হবো।

(তারপর আমরা খেয়ে নিলাম।আরিশ তৈরি হয়ে বেড়িয়ে গেল।আমিও বিছানায় শুয়ে পরলাম।কিছুক্ষণ পরেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলাম।

চলবে,,,,,,,,

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-০৮

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_08
#writer_Fatema_Khan

তখন থেকে রুমে পায়চারি করছে আরমান রহমান।তার ভাবনায় একটাই কথা ঘুরছে রেজোয়ান হোসেন।এই রেজোয়ান ১৮বছর আগের সেই রেজোয়ান নয়তো।কিন্তু সেই রেজোয়ান তো মারা গিয়েছে।আমারই কোথাও ভুল হচ্ছে।আর আরিশদের সাথে সেই রেজোয়ানের বিজনেস।না না আমি একটু বেশি ভাবছি।

তাহসিনঃআংকেল আসবো

(আরমান তাহসিনের কথা শুনে চমকে উঠলো)

আরমানঃআরে তাহসিন বাবা যে আয় ভিতরে আয়।আমার পাশে বস।

তাহসিনঃএকটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।

আরমানঃকি জিজ্ঞেস করবি বল।

তাহসিনঃরেজোয়ান হোসেন কে আংকেল?

আরমানঃক-কে রেজোয়ান,তা কি করে জানবো।তাহিয়া তো বললো ওদের বিজনেস পার্টনার।

তাহসিনঃমিথ্যা বলো না আমাকে আমি তোমার চোখে ভয় দেখেছি।আমাকে বলো না প্লিজ।

আরমানঃতাহসিন ঘুমাতে যা।আমার ঘুম পাচ্ছে।

তাহসিনঃতুমি সবাইকে বুঝাতে পারলেও আমাকে পারবে না।আমি তোমাকে ভয় পেতে দেখেছি রেজোয়ানের নাম শোনার সাথে সাথে।

আরমানঃকি জানতে চাস তুই?

তাহসিনঃকি এমন হয়েছে যার জন্য রেজোয়ানের নাম শোনার সাথে সাথে তুমি ভয় পেয়ে গেলা?

দরজা খুলে তূর্য ভিতরে আসতে আসতে বললো–

তূর্যঃকিরে তাহসিন তুই এখানে কি করছিস,চল নিচে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।তোর জন্য অপেক্ষা করছে সবাই।

তাহসিনঃতূর্য ভাইয়া আমি আসছি তুমি যাও।

তূর্যঃনা বাবা না তাহিয়া তো বললো তোর নাকি মন খারাপ তোকে যেনো সাথে নিয়ে নিচে নামি।

আরমানঃতাহসিন যা বাবা তুই আমরা এই বিষয়ে পরে কথা বলবো।

তূর্যঃসিরিয়াস কিছু নাকি?

আরমানঃনা তেমন কিছু না।তোমরা যাও আমি ঘুমাবো।আর তূর্য তোমার মাকে পাঠিয়ে দিও।

তূর্যঃ ঠিক আছে।আমরা তাহলে যাই।চল তাহসিন।

তাহসিনঃ হুম চলো।

_________________________________

তনিমাঃতাহসিনকে আনতে গিয়ে কি তূর্যও কি গায়েব হয়ে গেলো।

তূর্যঃগায়েব হবো কেনো,বল এখন তোদের দুই বোনের বকবক শুরু কর।

ভাইয়া।তাহিয়া ও তনিমা একসাথে বলে উঠলো।তারপর তারা অনেকক্ষণ যাবত গল্প করতে থাকলো।

তনিমাঃএই তাহিয়া যা না সবার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।

তাহিয়াঃ ঠিক আছে।(তাহিয়া উঠে রান্নাঘরে চলে গেলো।তাহিয়ার পিছনে আরিশও উঠে গেলো।তা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে।)

আরিশঃকফি বানানো শেষ।দাও আমি নিয়ে যাই।

তাহিয়াঃ হুম চলো।
(তারা কিছু স্ন্যাকস আর কফি নিয়ে গেলো।তাদের দেখে এখনো সবাই হাসছে।তাহিয়া তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে)

আরিশঃআমি বুঝি না বিয়ে করা বউ আমার যা ইচ্ছে তাই করব সে যে যাই বলুক না কেনো।তুমি লজ্জা পেয়ো না বউ।

(তাহিয়া যেনো লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।আর এইদিকে সবার কথা শুনে তাহসিন তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তাহিয়াকে খুশি দেখে সেও হেসে দিলো।যাক তার না হলো কিন্তু তাহিয়া খুশি তো আছে।)

অনেক রাত পর্যন্ত সবাই গল্প শেষ করে ঘুমাতে গেলো।

______________________________

আড্ডা শেষ করে তাহসিন ছাদে চলে আসে।সে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবে তাহিয়া এখন অন্যকারো আর সেখানে তাহিয়া অনেক সুখে আছে তাই আমার ওকে ভুলে যাওয়া দরকার।ও সুখে থাকুক স্বামী সংসার নিয়ে ভালো থাকুক এটাই চাই।
“কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ কাধের উপর পেতেই তাহসিন পিছনে ফিরে তাকায়।”

তাহসিনঃআরে তনিমা তুই এখনো ঘুমাস নি।

তনিমাঃনা।আর তুই এই ছাদে কি করস ঘুমাবি না।

তাহসিনঃঘুম আসছিলো না তাই এখানে একটু হাওয়া খেতে এলাম।তুই যা রাসেল ভাইয়া অপেক্ষা করছে তোর জন্য।

তনিমাঃবলে এসেছি আমি তোর কাছে।আর এটাও বলছি আমাকে দরকার হলে ছাদে চলে আসে। এবার বল তুই এখানে কার শোক করার জন্য আসছোস।

তাহসিনঃকার শোক করব?আমি তো এমনিতেই এখানে আসছি।এখন মনে হচ্ছে এসে খুব বড় ভুল করে ফেললাম।

তনিমাঃএই কেনো কেনো?

তাহসিনঃকারন এতো রাতে একটা পেত্নি আমার কানের কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করছে।

তনিমাঃকি আমি পেত্নি

তাহসিনঃতাতে কোনো সন্দেহ নাই যে তুই পেত্নী।এখন তো আমার ভয় করছে তোকে কখন যে আমার ঘার মাটকে দেস কে যানে।

তনিমাঃআচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি।তুই চলে আসিস।

তাহসিনঃতনিমা।

তনিমাঃ হুম বল কিছু বলবি

তাহসিনঃতাহিয়া মাত্র মাধ্যমিক পাশ করছে ওর বয়স তো ১৬-১৭ হবে।তাহলে এতো তারাতাড়ি বিয়ে টা ঠিক হলো।

তনিমাঃআমার জন্যই হয়েছে সবটা।বাবা নিজের সম্মান বাচাতে তাহিয়ার বিয়ে দিয়ে দিলো।

তাহসিনঃঅহ।আচ্ছা যা না হয় তোর জামাই এখন এখানে চলে আসবে।

তনিমাঃআচ্ছা ঠিক আছে যাই আমি।
(এই বলে তনিমা চলে যেতে লাগল)

তাহসিন আগের ন্যায় চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশে যেনো তার প্রেয়সীর মুখখানা সে দেখতে পায়।চাঁদের থেকেও তুমি সুন্দর প্রেয়সী।
_______________________________

আরিশ ল্যাপটপে কাজ করছে আর তাহিয়া খাটে বসে তাকে দেখছে।আর ভাবছে কেমন নিরামিষ হলে সামনে এমন সুন্দরী বউ থাকতে কেউ কাজে মন দিতে পারে।একটু আদর করতে ইচ্ছে করে না আমাকে😏।আর আমি কি মুখ ফুটে বলতে পারি আমাকে আদর করো।

তাহিয়াঃএই যে কি করছো ঘুমাবে না।

আরিশঃআমি পরে ঘুমাবো কাজ আছে,তুমি ঘুমিয়ে পরো।আর তুমি যা করার কথা ভাবছো তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও।

তাহিয়াঃআমি আবার কি করার কথা ভাবছি।আমি তো ঘুমানোর কথা বলছি।
(আমি বুঝি না আরিশ মনের কথা কেমনে বুঝে ফেলে)

আরিশঃতোমার ফেসের এক্সপ্রেসন দেখলে আমি কেনো সবাই বলে দিতে পারবে তুমি কি ভাবছো।

তাহিয়াঃঅহ।আচ্ছা সব বুঝলাম।আমি মাথা থেকে ওইগুলো ঝেড়ে ফেলে দিবো কেনো।আমাদের বিয়ে হইসে।

আরিশঃতুমি অনেক ছোট।মাত্র মাধ্যমিক পাশ করছো।আরেকটু বড় হও তারপর অনেক আদর করব।এখন ঘুমিয়ে পড়ো।

তাহিয়াঃএখন আর ঘুম আসবে না।ফজরের আযান দিবে পর নামাজ পড়ে আমি একটু ছাদে যাবো।

আরিশঃ আচ্ছে ঠিক আছে। আমি একটু কাজ করি কিউট বউ আমার।

তাহিয়াঃওকে।
_______________________________

ফজরের নামাজ পড়ে তাহিয়া ছাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।ছাদে এসে দেখে দরজা খোলা।
তাহিয়া ভাবলো ভিতরে কি কেউ আছে।ভিতরে ডুকে দেখে ছাদের এক কোনায় তাহসিন দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে।

চলবে……

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-০৭

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_07
#writer_Fatema_Khan

আরিশকে সামনে দেখে তাহিয়া খুশি হলেও তা মুখে প্রকাশ করছে না।

তাহিয়াঃতুমি,এখানে কেনো এসেছো?আর এভাবে হাত ধরে রুমে নিয়ে আসা এটা কি ধরনের কাজ ছিলো,কেউ দেখলে কি ভাববে।ছাড়ো আমাকে।

আরিশঃআমি যা ইচ্ছে করবো বিয়ে করা বউ আমার।কে কি বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।বুঝলে আমার কিউট বউটা।

তাহিয়াঃছাড়ো তোমার আবার মিটিং আছে না।আমার জন্য নিজের মুল্যবান সময় নষ্ট না করাই ভালো।তাছাড়া আমি কিউট বউ হলাম কবে আমিতো ষ্টুপিড বউ ছিলাম।

আরিশ জোরে হেসে বলে-

আরিশঃনা আজ থেকে তুমি আমার কিউট বউ।আর আমার কিউট বউয়ের অভিমান হয়েছে বুঝি।

তাহিয়াঃঅভিমান কেনো হতে যাবে।এখন ছাড়ো আমাকে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।

আরিশঃসকালের মিটিং টা খুব ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো রেজোয়ান আংকেলের সাথে।রেজোয়ান আংকেল কাল দুবাই ফিরে যাচ্ছে তাই মিটিং করার জন্য তোমাকে নিয়ে আসতে পারি নি কলেজে।সরি(কানে হাত দিয়ে)

তাহিয়াঃআচ্ছা ঠিক আছে এবারের মত ক্ষমা করে দিলাম সেইম ভুল আবার করলে আর ক্ষমা হবে না।মিটিং এতো ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো তাহলে তুমি এখানে কি করো।

আরিশঃতারাতাড়ি শেষ হলো তাই ভাবলাম আমার কিউট বউটার সাথে একটু ঘুরে আসবো।

তাহিয়াঃতাই।অনেক মজা করবো আজ দুইজন মিলে অনেক ঘুরবো।

আরিশঃজ্বি।এখন চলো তারাতাড়ি দাঁড়িয়ে আছো কেনো।
_________________________________

আরিশ আর আমি অনেক ঘুরাঘুরি করি।সবসময় আমি আরিশ আমার হাত ধরে রেখেছে। একবারের জন্য হাত ছাড়েনি।খুব ভালো লাগা কাজ করছে আরিশের হাতে হাত রেখে ঘুরতে।

সময় ১ঃ৩০মিনিট।আরিশ আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো। আমরা খাবার খেয়ে নিলে আরিশ আমাকে আবার কলেজে দিয়ে আসবে।আরিশের আবার অফিসে যেতে হবে। কিন্তু এবার আমার অভিযোগ নেই।অনেক ভালো লাগছে আরিশের সাথে সময় কাটিয়ে।এটাই মনে হয় ভালোবাসা।হ্যাঁ ছোট ছোট অভিমান, অভিযোগ, রাগ করা,আবার সব ঠিক করে নেয়া।যতই অভিযোগ থাকুক তার বাচ্চাদের মত কান ধরে সরি বললে সব রাগ এক নিমিষেই শেষ। আরিশের ডাকে আমি আমার ভাবনার জগৎ থেকে বের হই।

আরিশঃতাহিয়া কি হলো,কোথায় হারিয়ে গেলে কখন থেকে ডাকছি।কলেজ এসে গেছে যাও।আমি অফিস যাবো। তুমি তনিমা আর তাহসিনের সাথে চলে এসো।

তাহিয়াঃঠিক আছে।সাবধানে যেও।(নামার আগে ফট করে আরিশের গালে একটা চুমু দিয়ে কলেজের ভিতরে দিলাম দৌড়।এইমুহুর্তে তার সামনে দাড়নো মানেই লজ্জা পাওয়া)

আরিশঃতার হুটহাট কাজে আমি জাস্ট শকড।পাগলী একটা।(পরে আরিশ চলে যায়)
_______________________________

রেজোয়ানঃসব ঠিকভাবে চলছে তো আরিশ।

আরিশঃজ্বি।সবকিছু আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী চলছে।আপনি একদম টেনশন নিবেন না।

রেজোয়ানঃআমি কাল দুবাই চলে যাবো।এবার তো মাত্র ৭০০ ডেলিভারি হয়েছে।নেক্সট টাইম যখন আসবো তখন ৩০০০-৫০০০ টা ডেলিভারি করতে হবে,মাথায় রেখো আমার কথাগুলো।

রায়হানঃআরে রেজোয়ান তুমি এইদিকের টেনশন করো না।এইদিকে আমি আর আরিশ সামলে নিবো।

আরিশঃআর আংকেল আপনি নিশ্চিন্তে দুবাই যান।আপনি আবার দেশে আসার আগেই ৩০০০এর উপরে রেডি থাকবে।

রেজোয়ানঃআমার তোমার উপর অগাধ বিশ্বাস আছে তাই তো সব তোমার উপর রেখে যাচ্ছি।

আরিশঃআপনি আমার আর বাবার উপর বিশ্বাস করে দুবাই যান।আপনাকে নিরাশ করবো না।

রায়হানঃআচ্ছা তাহলে আমি আর রাজোয়ান এয়ারপোর্টে যাই।তুমি তোমার কাজে লেগে পরো আরিশ।

আরিশঃজ্বি বাবা।
______________________________

তাহিয়া দাঁড়িয়ে তনিমা আর তাহসিনের জন্য অপেক্ষা করছে তারা আসলে একসাথে বাড়ি যাবে।দেরি করে আসাতে তাহিয়া আর ক্লাস করতে পারে নাই।এমন সময় তনিমা আর তাহসিনকে দেখা গেলো তারা একসাথে আসছে।

তাহিয়াঃতাহসিন ভাইয়ার কি হলো কেমন মনমরা হয়ে থাকে।আগে কত মজা করতো এখন কত চুপচাপ।আগে সবসময় তো আমাকে রাগানোর জন্য উঠে পরে লাগতো।আর এখন আমকে কেমন এড়িয়ে চলে আমার সাথে কথা বলে না আমার দিকে তাকায়ও না।বুঝলাম না ব্যাপারটা কি?

তনিমাঃকিরে ভাবনাকুমাড়ি কি এত ভাবছিলি।আর তুই বাইরে দাড়িয়ে আছিস কেনো?

তাহিয়াঃও আসলে আরিশ এসেছিলো আমরা একটু ঘুরতে গেছিলাম তো এসে দেখি যেই ক্লাস বাকি আছে ওইটা স্টার্ট হয়ে গেছে তাই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি।

তনিমাঃওহ আচ্ছা তাই বল।আমিও তো বলি ক্লাস এখনো শেষ হয়নি তোদের তুই বাইরে কি কেনো।

তাহসিনঃতাহলে তুই আরিশের সাথেই বাসায় চলে যেতি।এখানে অপেক্ষা করার কোনো মানে হয় নাকি।আরেকটু টাইম দিতি দুইজন একে অপরকে।আর আরিশ সকালে কত ব্যাস্ত ছিলো তাহলে এখন কি হলো।

তাহিয়াঃভাইয়া ওর অফিস আছে।তাই চলে গেছে।বলছে তোমাদের সাথে যেতে।আর সকালের মিটিং টা তারাতাড়ি শেষ হয়ে গেছে।

তনিমাঃতোরা চুপ কর তো।এখন রাসেল আসবে তারপর আমরা একটা পার্কে যাবো।কিছুক্ষণ থেকে তারপর চলে আসবো।

“আমি আর তাহসিন ভাইয়া কিছু বললাম না।তাহসিন ভাইয়া আমাকে এভাবে বললো কেনো।আমার উপর কি রেগে আছে।হুম তাই হবে হয়তো।না হয় সবার সাথে কত হাসিমুখে কথা বলে আর আমার বেলায় কথাই বলে না।মনে হয় আমার কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করছে সে।কিন্তু তার চোখ যেন কিছু বলতে চায় আমাকে।”
“আমার ভাবনার মাঝেই রাসেল ভাইয়া চলে আসলেন।আমরা গাড়িতে উঠে পরি।সামনে রাসেল ভাইয়া আর তনিমা আপু পাশাপাশি আর পিছনে আমি আর তাহসিন ভাইয়া।অনেকটা দূরত্ব রেখে বসেছেন আমার থেকে।”

“আমরা একটা পার্কে বসে আছি।আমি আর তাহসিন ভাইয়া একটা বেন্স এ বসে আছি।আর রাসেল ভাইয়া ও তনিমা আপু নিজেদের মত ঘুরছে।”

তাহিয়াঃভাইয়া।

তাহসিনঃ হুম।বল।

তাহিয়াঃতুমি কি আমার উপর রাগ করে আছ?

তাহসিনঃএমন কেনো মনে হচ্ছে তোর যে আমি তোর উপর রাগ করে আছি।আমি নিজের উপর রেগে আছি।নিজের একটু ভুলের জন্য সব হারিয়ে ফেললাম।

তাহিয়াঃতুমি যে কাজে একবছর ঢাকায় ছিলে না সেটা কি হয়নি।

তাহসিনঃসেটা করতে গিয়ে তো নিজের সবথেকে মুল্যবান জিনিসটা হাতছাড়া হয়ে গেলো।
(ভাইয়ার চোখে পানি)

তাহিয়াঃভাইয়া তুমি কান্না করো না।আমরা আছি তো তোমার সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।আর এভাবে বাচ্চাদের মত কে কান্না করে বলতো।

“ভাইয়া আর কিছু বললো না।”

“আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ফলো করছে বুঝতে পারছি না মনের ভুল নাকি সত্যি।আমি চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে থাকি হঠাৎ চোখ যায় দূরে একটা বেন্সে একা বসে থাকে লোকটা।ভালো করে তাকাতে দেখি লোকটা উঠে দ্রুত চলে গেলো।আরে এটা তো সেই মাস্ক পরা লোকটা। আমি তাকে দেখে তাকে ডাকতে থাকি আর তার পিছনে যেতে থাকি।”
“ভাইয়াও আমার পিছনে গেলো আমার ডাক শুনে।অনকেটুক গিয়ে দেখি লোকটা আজকেও পালিয়েছে।”

তাহসিনঃকি হয়েছে কাকে ডাকছিস?আর এভাবে কার পিছনে আসলি।পরিচিত কেউ।

তাহিয়াঃচলো বলছি।
“তারপর ভাইয়াকে সবকিছু খুলে বললাম ওই দিনের কথা আবার আজকেও সেইম।আবার মাস্কও পরা।”

তাহসিনঃএটা তো খুব ভাবার বিষয়।তোরা থানায় জানিয়েছিস।

তাহিয়াঃনা।আরিশকে আজ বলব।

“এভাবে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো।সূর্য ডুবছে আমি তাকিয়ে আছি, সূর্য ডুবা দেখতে ব্যাস্ত আমি।আর একজোড়া চোখ আমাকে দেখে চলছে।কিছুক্ষণ পর রাসেল ভাইয়া আর তনিমা আপু আসলো।
আমরা বাসায় চলে এলাম।এখনো আরিশ আসেনি।তাহসিনকে মা রেখে দিছে বলছে আমরা পরশু চলে যাব তাকেও পরশু যেতে।সে মানা করলেও সবার জোরাজোরিতে বেচারার হার মানতে হলো।”

“রাত ৮টার দিকে আরিশ বাসায় আসে।আরিশ ফ্রেশ হয়ে আসলে আমরা সবাই একসাথে খেতে বসি।”

খাবার টেবিলে,
তাহিয়াঃআংকেল চলে গেছে আরিশ?

আরিশঃহ্যা ওনার ফ্লাইট বিকাল ৫টায় ছিলো।

আরমানঃকোন আংকেল তাহিয়া?

তাহিয়াঃরেজোয়ান আংকেল বাবা।আরিশের মুখ থেকে শুনেছি অনেক ভালো মানুষ।

আরমানঃরেজোয়ান হোসেন। (আনমনে নামটি বললেন বাবা)

তাহিয়াঃ হুম বাবা রেজোয়ান হোসেন ই নাম আংকেলের।উনি তো আমাদের বউ-ভাতের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।

আরমানঃঅহ।আচ্ছা খেয়ে ঘুমাতে যাও।

তাহসিনঃ(আরমান আংকেলকে রেজোয়ান হোসেনের নাম শুনে এমন চিন্তিত দেখচ্ছে কেনো)

চলবে……

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-০৬

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_06
#writer_Fatema_Khan

“বউ-ভাত শেষ হবার পর আমি,আরিশ,তনিমা আপু আর রাসেল ভাইয়া আমাদের বাসায় চলে আসছি।আমরা এখানে দুইদিন থাকব।তখন তাহসিন ভাইয়াকে দেখেই কেমন যেনো খারাপ লাগা কাজ করছিলো।”

ফ্ল্যাশব্যাক,

তাহিয়াঃতাহসিন ভাইয়া।

তাহসিনঃ হুম আমি,কেনো আশা করিস নি আমাকে।নাকি আমি এখানে এসেছি বলে তুই খুশি হসনি।

তাহিয়াঃ তা কেনো হবে ভাইয়া,অনেক দিন পর দেখলাম তোমায় তাই একটু অবাক হলাম।তা কেমন আছো?

তাহসিনঃ যেমন রেখেছিস।

তাহিয়াঃকি বললে বুঝলাম না।

তাহসিনঃনা কিছু না,বলছিলাম ভালো আছি।
বউ সেজে তোকে খুব সুন্দর লাগছে।

তাহিয়াঃ হুম।ভাইয়া তুমি কিছু খেয়েছ?নাকি না খেয়ে আছো এখনো?

তাহসিনঃআমার চিন্তা তোর করতে হবে না।তুই বরং নিজের বরের খেয়াল রাখ।

তাহিয়াঃভাইয়া তুমি আগে কিছু খেয়ে…..

তূর্যঃআরে তাহসিন যে,কখন এলি তুই?

তাহসিনঃএই তো ভাইয়া ত্রিশ মিনিটের মত হবে।তা কেমন আছো তুমি?

তূর্যঃভালো থাকি কিভাবে আমার কলিজার বোনগুলোর যে বিয়ে হয়ে গেলো।

তাহসিনঃসে একটু খারাপ তো লাগবেই।সব ঠিক হয়ে যাবে।

“তাহসিন ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলো।ভাইয়ার চোখ দেখে মনে হলো আমাকে কিছু বলতে চায়।চোখ দুটো কেমন ছলছল করছিলো।তা দেখে আমারও খারাপ লাগছিলো।এমন কি হলো যে তাহসিন ভাইয়ার কষ্ট হচ্ছে।ভাইয়া কোনরকম তূর্য ভাইয়ার সাথে কথা শেষ করে চলে গেলো।চলে গেলো বললে ভুল হবে পালিয়ে যাচ্ছিলো।”

(এতোক্ষণ যার সাথে তূর্য কথা বলছিলো সে তনিমার বন্ধু তাহসিন আহমেদ।তনিমার সাথেই অনার্স 2য় বর্ষে
পড়ে।মা মারা গেছেন অনেক আগেই।এখন বাবা আবির আহমেদের সাথে থাকে ও লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার বিজনেসও দেখে)

বর্তমান,

দরজা খোলার আওয়াজে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।দেখি আরিশ ভাইয়া এসেছে।

_______________________________

“রাসেল রুমে ডুকে দেখে তনিমা ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে চুল ঠিক করছে।তার পরনে লাল রঙের শাড়ি।রাসেল তনিমার দিকে এগিয়ে গিয়ে তনিমার চুলে মুখ গুজে দিলো আর চুলের ঘ্রান নিতে লাগলো। ”

রাসেলঃআমাকে কি বিনা আঘাতে তুমি মেরে ফেলতে চাও।এভাবে লাল শাড়ি পরে খোলা চুলে আমার সামনে আসলে আমি নিজেকে সামলাবো কিভাবে বলতো।

তনিমাঃছাড়ো আমাকে ঘুমাবো আমি।
(বলেই চলে আসতে নিলে রাসেল তনিমার হাত ধরে ফেলে বলে।রাসেল যেন এক ঘোরের মধ্যে আছে)

রাসেলঃআমি আমার কথা রেখেছি এবার তোমার পালা।সবাই আমাদের মেনে নিয়েছে এবার তো আমায় কাছে আসতে দিবে।

তনিমাঃ হুম।
(তনিমার শরীর কাপছে ভয়ে আর গাল গুলো লাল হয়ে আছে লজ্জায়)

রাসেলঃআমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।তুমিও কি আমাকে #সত্যি_ভালোবাসো।

তনিমাঃ সত্যি অনেক ভালবাসি।

“রাসেল তনিমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।প্রায় অনেকক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে তনিমার গলায় মুখ ডুবালো।তনিমাকে কোলে তুলে নিলো রাসেল,তারপর খাটে শুইয়ে দিলো” (বাকিটুকু নিজ দায়িত্বে বুঝে নিবেন🙈)

_______________________________

“আরিশ ভাইয়া রুমে আসলে আমি দাঁড়িয়ে উঠলাম।হঠাৎ দরজা খোলায় ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে উঠলাম।অন্য দিকে মন থাকলে যা হয় আর কি।”

আরিশঃকি হলো ভয় পেলে নাকি?এভাবে দাঁড়িয়ে গেলা যে।

তাহিয়াঃঅই একটু অন্যদিকে মন ছিলো তাই হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে ভয় পেয়ে গেছি।

আরিশঃতা কি ভাবছিলো আমার ষ্টুপিড বউটা?

তাহিয়াঃতেমন কিছু না।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি অনেক ক্লান্ত লাগছে।

আরিশঃওকে যাও কিন্তু…

তাহিয়াঃকিন্তু কি?

আরিশঃএই শাড়িটা পরে আসো।

তাহিয়াঃআমার জন্য। অনেক ধন্যবাদ।

“গোল্ডেন পারের নীল রঙের শাড়ি দিয়েছে আরিশ তাহিয়াকে।তাহিয়া শাড়ি পরে বের হয়ে আসলো।”

তাহিয়াঃকেমন লাগছে আমাকে আরিশ ভাইয়া?

আরিশঃঅপরুপ।

তাহিয়াঃতাই😊।

আরিশঃআচ্ছা শোনো,তুমি আমাকে ভাইয়া বলে ডাকো কেন,আমি কি তোমার ভাইয়া হই?

তাহিয়াঃআগে থেকেই তো ভাইয়া ডাকি।তাহলে এখন নতুন করে কি হলো?

আরিশঃএখন আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।তাই আজ থেকে তুমি আমাকে শুধু আরিশ বলে ডাকবা আর তুমি করে বলবা।মনে থাকবে

তাহিয়াঃ হুম মনে থাকবে।

আরিশঃএকটা কথা জানো

তাহিয়াঃকি কথা?

আরিশঃআমি তোমাকে সত্যি খুব ভালোবাসি।বলতে পারি নাই তুমি যদি আমাকে মেনে না নেও তাই।পরে তনিমার সাথে বাবা বিয়ে ঠিক করেছে বলে আর বলা হলো না।

তাহিয়াঃঅহ,তাহলে বিয়ের পর আমার সাথে এমন করলে কেনো?আমি রাতে কত কান্না করেছি যানো।

আরিশঃজানি তো।তাই তো তুমি ঘুমিয়ে যাবার পর তোমাকে আমার কাছে এনে জড়িয়ে ধরে ঘুমাইছি।

তাহিয়াঃতার মানে তুমি আমায় খাটে নিয়ে আসছো আর আমি ভাবছি আমি হয়তো ঘুমের মধ্যে তোমার কাছে এসে গেছি।

“আরিশ তাহিয়ার হাত ধরে কাছে এনে জড়িয়ে ধরে। তাহিয়া হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনায় অবাক।পরে তাহিয়াও আরিশকে জড়িয়ে ধরে।”

তাহিয়াঃআমি আজ খুব খুশি তোমাকে পেয়ে।তুমি আমাকে #সত্যি_ভালোবাসো আমি কখনো কল্পনাতেও আনি নাই।

“আরিশ তাহিয়ার কপালে একটি ভালোবাসার পরশ একে দেয়।”

আরিশঃহুম সত্যি অনেক ভালবাসি তোমায়।অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পরো কাল আবার তোমাকে কলেজে নিয়ে যেতে হবে।

(তারপর তারা দুজনেই ঘুমিয়ে গেলো)

______________________________
(অন্ধকার রুমে খাটের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে তাহসিন।পুরো রুমের অবস্থা করুন।ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা ভেংগে নিচে গ্লাসের টুকরো পরে আছে,রুমের সবকিছু ভেঙে ফেলেছে তাহসিন)

তাহসিনঃকেনো এমন হলো আমার সাথে,কেনো সেদিন বলে যেতে পারিনি মনের কথা,কেনো আজ তাকে হারিয়ে ফেললাম।একবছরের জন্য তোমায় ছেড়ে গিয়েছি বাবার বিজনেস এর ব্যাপারে আর এর মাঝেই তোমাকে হারিয়ে ফেলবো ভাবতেই কত কষ্ট হচ্ছে তুমি কি দেখতে পাচ্ছো তাহিয়া?আমার যে বুকে খুব ব্যাথা হচ্ছে তা কি তুমি বুঝতে পারো নি আজ?

(কান্না করতে করতে একসময় তাহসিন ঘুমিয়ে পরলো)

___________________________

(সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাহিয়া ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিলো।আজ কলেজের প্রথম দিন,তাই অনেক এক্সাইটেড সে।)

তাহিয়াঃমা আমি কলেজ যাচ্ছি। আরিশ আমাকে দিয়ে আসবে

আফসানাঃভালো কিন্তু কিছু খেয়ে যা।

তাহিয়াঃদেরি হয়ে যাবে তো আরিশের আবার অফিসে কি মিটিং আছে।

(তাহসিন দরজা দিয়ে ডুকতে ডুকতে বলে কার মিটিং)

আফসানাঃআরে তাহসিন বাবা তুই এত সকালে?এসেছিস যখন বস নাস্তা করে নে।

তাহসিনঃআরে আজ অনেকদিন পর কলেজ যাবো।এতোদিন তো ছিলাম না মাঝখানে একবার এসে পরীক্ষা দিয়ে চলে গেছিলাম।আর তনিমা আর তাহিয়া বাসায় আসছে তাই ওদের আর ওদের বরের সাথেও দেখা করতে এলাম।

তনিমাঃতাহিয়াও আমাদের কলেজে এডমিশন নিছে।

তাহসিনঃঅহ।তা রাসেল ভাইয়া কোথায়?

তনিমাঃসে তো সকালেই চলে গেছে অফিসে কাজের চাপ আছে এইকয়েকদিন তো অফিস যেতে পারেনি।

আরিশঃতাহলে তো ভালোই হলো আমি বরং অফিস চলে যাই।তাহসিন তুমি তাহিয়া আর তনিমাকে তোমার সাথে কলেজ নিয়ে যেও।

তনিমাঃসেই ভালো হবে।

(তারপর আরিশ বের হয়ে গেলো)
_____________________________

(তাহসিন আর তনিমা সামনের সিটে বসে আর তাহিয়া পিছিনের সিটে বসে।তাহসিন তাহিয়াকে বারবার আয়নার মধ্যে দেখতে থাকে।তনিমা তাহসিন কথা বলতে বলতে কলেজে আসে।তাহিয়া পুরো রাস্তা চুপ করে ছিলো।তার ইচ্ছে ছিলো আরিশের সাথে কলেজ আসার।)

তাহিয়াঃআপু তাহলে তোমারা নিজেদের ক্লাসে যাও,আমিও যাই।

তনিমাঃঠিক আছে যা।কিছু দরকার হলে আমাকে আর তাহসিনকে বলবি।

তাহিয়াঃঠিক আছে আপু।

(তাহিয়ার যাবার দিকে তাহসিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যতক্ষণ না তাহিয়া ক্লাসে ডুকে।)

তনিমাঃহইছে দেখা, বিয়ের আগে তো বলতে পারলি না তাই এখন দেখে লাভ নাই।

(তাহসিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

তাহসিনঃ হুম চল।

_______________________________

“তাহিয়ার আজ কিছুই ভালো লাগছে না। বারবার আরিশের কথা মনে পড়ছে।”

তাহিয়াঃদূর ভালো লাগে না যদি আরিশ থাকতো আমরা ঘুরতে যেতাম কত মজা হতো।যাই ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে আসলে ভালো লাগবে।

তাহিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আবার ক্লাসে আসার সময় কে যেনো ওর হাত ধরে টান দিয়ে একটি রুমে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।তাহিয়া লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে-

তাহিয়াঃতুমি

চলবে…….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ভুল হলে অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন।আর সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি]

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-০৫

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_05
#writer_Fatema_Khan

আরিশ আর তাহিয়া বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৯টা বেজে যায়।আরিশ পাশে তাকিয়ে দেখে তাহিয়া বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আরিশ তাহিয়াকে কোলে করে বাসার ভিতরে নিয়ে যায়।

নীলিমাঃকিরে আরিশ তাহিয়ার কি হয়েছে,ও ঠিক আছে তো?তোদের আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?

আরিশঃনা।আমরা ঠিক আছি।তোমাকে কল করে বললাম না একটা গাড়ি ওকে আরেকটুর জন্য ধাক্কা দিতে পারে নি।

নীলিমাঃঅহ।তাহলে ওকে কোলে করে আনলি যে আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।

আরিশঃতেমন কিছু না ভয় পাইছে,তাই হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।

নীলিমাঃতাই হবে হয়তো।

আরিশঃওর কিচ্ছু হতে দিব না আমি।ওর কিছু হলে আমার কি হবে মা।এতদিনের স্বপ্ন সব ভেংগে যাবে।

নীলিমাঃতোর বাবা এসেছে আজ।আরমান ভাই সাহেব নাকি কল দিছে তোর বাবাকে আর তোদের বউ-ভাতের কথা বলছিলো।

আরিশঃহ্যা মা।তিনদিন পরেই হবে।

নীলিমাঃতিনদিন পর নাকি সে আসবে।

আরিশঃতুমি জানলে কিভাবে।আমি তো তোমাকে বলি নাই।

নীলিমাঃতোর বাবা বললো।কোনো সমস্যা হবে নাতো আবার।

আরিশঃনা উল্টো আরো ভালো হবে বউ-ভাতের সময় আসলে।আলাদা করে আসলে সমস্যা হতো।

নীলিমাঃকেউ চিনে ফেললে?

আরিশঃরিলেক্স মা সব ঠিক হবে।যাও ঘুমিয়ে পড়ো।আমি তাহিয়াকে নিয়ে রুমে যাই।

“তারপর তাহিয়াকে সোফা থেকে আবার কোলে করে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপর আরিশ ফ্রেশ হতে চলে গেলো”

_________________________________

“প্রায় ৩০মিনিট পর আরিশ গোসল করে বের হলো।এসে দেখে তাহিয়া বসে আছে গালে হাত দিয়ে।”

আরিশঃকি হয়েছে আমার ষ্টুপিড বউটার

“আরিশের হঠাৎ কথা বলার কারনে তাহিয়া ভয় পেয়ে গেলো।তারপর নিজেকে সামলে বললো “—

তাহিয়াঃআমার কাছে আসুন।পাশে বসুন না(করুন সুরে বললো)

আরিশ তাহিয়ার কাছে এসে হাটু গেরে তাহিয়ার সামনে বসলো।

তাহিয়াঃআপনি একটা কথা জানেন ওইটা এক্সিডেন্ট ছিলো না।আমাকে কেউ মারতে চায়।কিন্তু কেন,আমি তো কাউকে কিছু করিনি।

আরিশঃকে বললো তোমাকে এগুলো।আর এসব বাজে চিন্তা করো আর বেশি কথা বলো তাই না।(একটু রাগ নিয়ে)

তাহিয়াঃআমি সত্যি বলছি।আমি তাকে দেখেছি।

আরিশঃকিহ,কিভাবে দেখলে যে গাড়িতে ছিলো সে তো ড্রাইভ করছিলো।

তাহিয়াঃনা সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে ছিলো।তাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছিলো।ভালো করে খেয়াল করতে যাবো তার আগেই গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।

আরিশঃতুমি ভয় পেয়েছ তাই উল্টো পালটা কথা বলছো।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।

তাহিয়াঃওকে।

” তাহিয়া উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো”

__________________________________

“আরিশ হাতে খাবার নিয়ে রুমে ডুকে দেখে তাহিয়া ফ্রেশ হয়ে মাত্র বের হলো”

আরিশঃতারাতাড়ি আসো খিদে লাগছে তো।আমি আবার খিদে সহ্য করতে পারি না বুঝলে।

তাহিয়াঃ হুম বুঝতে পারছি।আসুন খেয়ে নেই।

“তারপর দুইজন খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো”

__________________________________

“দেখতে দেখতে তিনদিন কেটে গেলো।আজ তাহিয়া ও তনিমার বউ-ভাত।সকাল থেকে সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।একসাথে দুটো বউ-ভাত তাই বড় করে এরেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে।”

“তাহিয়া ও তনিমা গেছে পার্লারে।সাথে শীলা,মিলি,নিরব গেছে।শীলা আর মিলিও সাজতেছে।গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে নিরব।”

“টানা তিন চার ঘন্টা পর তারা চারজন গাড়ির কাছে আসে।”

নিরবঃএতো টাইম লাগে সাজতে।আমার পা ব্যাথা হচ্ছে জানো তোমরা।

শীলাঃআচ্ছা এখন তারাতাড়ি চল না হয় যাদের জন্য এতকিছুর আয়োজন তারা বাইরে থাকবে।

“সবাই গাড়িতে উঠে বসলো।আমি মেরুন আর গোল্ডেন এর মধ্যে লেহেঙ্গা পরছি,তনিমা আপু খয়েরী রঙের লেহেঙ্গা পরছে।শীলা ও মিলি কালো আর গোল্ডেন এর মধ্যে লেহেঙ্গা পরছে কিন্তু দুটো ভিন্ন ডিজাইন।আর সবাই ভারি মেকাপ সাথে মেচিং গয়না।”

_________________________________

পাশাপাশি দুটো স্টেজ।একটিতে আমি আর আরিশ পাশেরটাতে তনিমা আপু আর রাসেল ভাইয়া।

আমাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।অনেক আত্নীয়-স্বজন এসেছে।একে একে সবাই আমাদের সাথে টুকটাক কথা বলে যাচ্ছে।

এমন সময় আমাকে আর তনিমা আপুকে ডাক দিলো নীলিমা খান।আমরা ওইদিকে গেলাম,গিয়ে দেখি আরিশ আর রায়হান খান কার সাথে যেন কথা বলছে।দেখে মনে হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা।

নীলিমা খান আরিশকে ডাক দিলেন-

নীলিমাঃআরিশ,তনিমা আর তাহিয়ার সাথে রেজোয়ান ভাইয়ের আলাপ করিয়ে দাও।

আরিশঃওহ হ্যা।তাহিয়া তনিমা ইনি হলেন রেজোয়ান হোসেন।আমাদের বিজনেস পার্টনার।
আর রেজোয়ান আংকেল ও হলো তাহিয়া আমার ওয়াইফ,আর ও তনিমা,তাহিয়ার বড় বোন।

রেজোয়ানঃরায়হান তোমার ছেলের বউ ও শালী কিন্তু মারাত্মক সুন্দরী।

রায়হানঃহ্যা তা ঠিক বলেছো।

নীলিমাঃআচ্ছা তাহিয়া তনিমা তোমরা গিয়ে বসো।আমরা একটু বিজনেস এর ব্যাপারে কথা বলে আসছি।

তনিমাঃআচ্ছা আন্টি।

“তারপর আমরা সেখান থেকে চলে এলাম”

তাহিয়াঃআপু আমার না ওনাদের কথাগুলো কেমন যেনো লাগছিলো।

তনিমাঃতুই একটু বেশি ভাবিস।এই ছোট মাথায় এতো চাপ নিস না।বেশি চাপ নিলে কিন্তু ফেটে যাবে।

তাহিয়াঃআপু এবার বেশি হচ্ছে,সবাই আমাকে নিয়ে মজা করো আমি ছোট বলে।কেউ গুরুত্বই দেও না আমার কথার।

“আমি আর আপু কথা বলছি এর মাঝেই আপুর মোবাইলে কল আসে।”

তনিমাঃহ্যালো।
………

তনিমাঃআচ্ছা ঠিক আছে তুই এই এড্রেসে চলে আয়।বাই।
………

তাহিয়াঃকে কল দিয়েছে আপু,কাকে আসতে বললা?

তনিমাঃওই তাহা…..

“আপু বলার আগেই আমাদের আবার ডাক দিলো আম্মু।”

তনিমাঃচল তারাতাড়ি আম্মু ডাকছে।

তাহিয়াঃআচ্ছা চলো আবার কেনো ডাকছে।
_________________________________

তনিমাঃআম্মু তাহিয়া কোথায় ওরে দেখছিনা অনেকক্ষণ হলো?

আফসানাঃদেখ তো ওয়াশরুমে গেছে কিনা

তনিমাঃঠিক আছে আমি দেখছি।

“এই বলে আপু আমাকে খুজতে ওয়াশরুমের দিকে যায়,আর আমাকে দেখতে পায়।”

তনিমাঃআরে তাহিয়া তুই কোথায় ছিলি,কখন থেকে খুজতেছি তোকে

তাহিয়াঃকেনো কিছু দরকারি কথা নাকি,তারাতাড়ি বলো।

তনিমাঃতোর সাথে আমার এক বন্ধুর দেখা করিয়ে দিবো।চল

তাহিয়াঃতোমার কোন বন্ধু?

তনিমাঃতুই ইদানিং বেশি প্রশ্ন করিস।গেলেই তো দেখতে পাবি।এখন তুই চল আমার সাথে ও অপেক্ষা করছে।

তাহিয়াঃতাহলে কি তখন সে বন্ধু কল করছিলো

তনিমাঃ হুম
__________________________________

তনিমাঃএই যে দেখ ধরে নিয়ে আসছি তাহিয়াকে।

লোকটা পিছনে ফিরে ছিলো।আপুর ডাকে আমাদের দিকে তাকালো।

তাহিয়াঃতাহসিন ভাইয়া

চলবে…….

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-০৪

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_04
#writer_Fatema_khan
সকাল ১০ঃ৩০টা বাজে,
আরিশঃতাহিয়া,তারাতাড়ি আসো তোমাকে দিয়ে আমাকে অফিস যেতে হবে।

তাহিয়াঃএই মিস্টার অসভ্য নামক লোকটা আমাকে শান্তিমত তৈরি হতেও দিবে না।বাহ!আমাকে তো আজ একদম নীল পরী লাগছে এই নীল সালোয়ার কামিজে।

আরিশঃআর কতক্ষণ লাগবে,বিয়েতে যাচ্ছো না তুমি।তোমার বাবার বাড়িতে যাচ্ছো সো একটু কম সাজলেও তোমাকে সবাই চিনবে।

তাহিয়াঃআমি রেডি।আর এতো চিল্লাচ্ছেন কেনো।আমি কালা না আমি শুনতে পাই।
(আরিশ কেমন আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,তারপর রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম)

তাহিয়াঃমা(নীলিমা খান) আমি আর আরিশ ভাইয়া একটু আমাদের বাড়িতে যাচ্ছি সন্ধ্যায় চলে আসবো।

নীলিমাঃআচ্ছা যা।সাবধানে যাস আর তারাতাড়ি ফিরে আসিস।

তাহিয়াঃচলুন এবার যাওয়া যাক।আর কত দেখবেন আমাকে আপনার বউ আমি সারাদিন দেখতে পারবেন।

আরিশঃহোয়াট আমি তাও তোমাকে দেখছিলাম,হাসালে।আমার তো বিরক্ত লাগছে তোমাকে পুরাই হারপিক লাগছে এই নীল সালোয়ার কামিজ পরে।

তাহিয়াঃকি আমাকে হারপিক লাগছে।আর আপনাকে পুরো আলকাতরা লাগছে।উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব কালো পরে বসে আছে সে বেলায় আমি কিছু বলেছি।

আরিশঃএখন আমার সাথে জগড়া করবে নাকি তোমাদের বাড়িতেও যাবে।

তাহিয়াঃ😏চলুন।

___________________________________

প্রায় ৩-৪মিনিট ধরে কলিংবেলটা বাজতেছে।কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।আবার বাজানোর আগেই দরজা এসে খুললো আফসানা রহমান।

আফসানাঃতনিমা তুই এসেছিস মা।

তনিমাঃহ্যা আম্মু ।আমি এসে গেছি।তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি মা।

আফসানাঃতোরা আগে ভিতরে আয় পরে কথ……
(আফসানা রহমানকে বলতে না দিয়ে আরমান রহমান বললেন)

আরমানঃকি চাই তোমার।আমার মান সম্মান তো সব শেষ করে গেছো।আর কি চাই।

তনিমাঃদৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে বাবার পা ধরে আমাকে মাফ করে দাওনা তোমরা।অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আমিও জানি।

__________________________________

তাহিয়াঃএকটু তারাতাড়ি গাড়ি চালালে কি আপনার মস্ত বড় ভুল হয়ে যাবে।

আরিশঃআচ্ছা ব্যাপার কি বিয়ের দিন তো কারো সাথে কথাও বললে না আর আজ যাবার জন্য এত উতলা হচ্ছো যে।

তাহিয়াঃআপনি বড্ড বেশি কথা বলেন।তারাতাড়ি গাড়ি চালান তাহলেই দেখতে পারবেন।

আরিশঃওকে তুমি বেশি কথা বলো না।ড্রাইভ করতে দাও আমাকে।

তাহিয়াঃকি আমি কখন বেশি কথা বলি। “সারাদিন তো নিজে বকবক করে আসছে আমারে বলতে আমি বেশি কথা বলি(মনে মনে)”
__________________________________

১০মিনিট পর আমি আর আরিশ বাসায় আসলাম।দরজা খোলাই ছিলো।আমার আর বুঝতে বাকি নেই আপু আর রাসেল ভাই বাসার ভিতরে আছে।

তাহিয়াঃআপু……দৌড়ে গিয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরি।কেমন আছো আপু?আমি কত মিস করেছি তোমাকে।

তনিমাঃএইতো আছি কোনরকম।তোদের ছাড়া কি আমি ভালো থাকি।আরিশ কেমন আছো?

আরিশঃআলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।রাসেল কি খবর তোমার বলো?কখন আসলে এখানে?

রাসেলঃ হুম ভালো।এইতো বেশিক্ষণ হয়নি আসলাম।

“আমি বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার আর আপুর দিকে রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে আছে।তা দেখে আমিও বাবাকে মুখভেংচি দিয়ে দেই😏😏।”

আফসানাঃতোরা দুইজন আমার সাথে উপরে চল।

তারপর আমি,আপু আর আম্মু উপরে চলে গেলাম।

আরমানঃরাসেল আর আরিশ তোমাদের বিয়েটা তো যেমন তেমন হলো।কিন্তু আমি চাই বৌ-ভাত টা যেনো অনেক বড় করে হয়।

আরিশঃআপনি যেমন ভালো মনে করেন।

রাসেলঃজ্বি বাবা আপনি যা বলবেন তাই হবে আপনি শুধু আমাদের মন থেকে মেনে নিন।তনিমা খুব কষ্ট পাচ্ছে।

আরমানঃরাসেল আমি তোমার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই।আর বৌ-ভাত ৩দিন পরে হবে।আর বিয়েটা যেহেতু হয়েই গেছে তাই না মেনে আর উপায় নেই।

আরিশঃ৩দিন পরে(খানিকটা অবাক হয়ে)

আরমানঃকেনো তোমার কোনো সমস্যা থাকলে বলো।

আরিশঃকপালের ঘামটুকু মুছে বললো আমার কোনো সমস্যা নেই।

আরমানঃআচ্ছা তাহলে ৩দিন পর।আর রাসেল আমি কথা বলবো তোমার মা-বাবার সাথে।

রাসেলঃআচ্ছা ঠিক আছে।

আরমানঃতোমরা রেস্ট নাও।আমি একটু বের হলাম।
“বলেই বের হয়ে গেলেন।”

__________________________________

হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ডুকলেন রায়হান খান(আরিশের বাবা)

নীলিমাঃতুমি আজ বাসায় চলে এলে।তোমার তো কাল আসার কথা ছিলো।ছেলেটার বিয়েটা হবার আগেই চলে গেলে।

রায়হানঃআরিশ কোথায়?ওকে একটু ডেকে দাও তো।

নীলিমাঃ আরিশ তো তাহিয়ার সাথে ওদের বাসায় গেছে।কেনো বলতো,কি হয়েছে?

রায়হানঃতাহিয়ার বাবা কল করেছিলেন,উনি বললো তনিমা-রাসেল,তাহিয়া-আরিশের বৌ-ভাত হবে ৩দিন পরে।কত কাজ পরে আছে।তাই তো চলে এলাম।

নীলিমাঃঅহ।আরিশ আসলে ওর সাথে কথা বলে নিও।এখন ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নাও।

_________________________________

বিকাল ৫টা,

আরিশঃতাহিয়া তারাতাড়ি চলো আমাদের বাসায় যেতে হবে,মা কল করেছিলো বাবা আসছে।

তাহিয়াঃআমি আজকে এখানে থেকে যাই না।কাল চলে আসবো

আরিশঃনা কাল তোমাকে কলেজে এডমিশন নিতে হবে।নাকি স্কুল শেষ আর বিয়ে হয়ে গেলো বলে কলেজে পড়তে চাও না।

তাহিয়াঃআমি কি বলছি যে আমি পড়বো না।
“আর বাসায় থেকেই কি লাভ যা নিরামিষ জামাই একে দিয়ে কিচ্ছু হবে না(আস্তে আস্তে বললো তাহিয়া)”

আরিশঃতুমি কি আমাকে কিছু বললে?

তাহিয়াঃকই নাতো।চলুন এবার যাওয়া যাক।

তারপর মা-বাবাকে বিদায় দিয়ে আমি আর আরিশ চলে গেলাম ওইদিকে রাসেল ভাইয়া ও তনিমা আপু চলে গেছে।তূর্য ভাইয়া বাসায় ছিলো না।তাই তার সাথে দেখা হলো না।

_______________________________

তাহিয়াঃএকটু আস্তে গাড়ি চালান মনে হচ্ছে প্লেন করে উড়ে যাচ্ছি।

আরিশঃচুপ করে বসে থাকতে পারো না।

তাহিয়াঃ মিস্টার অসভ্য গাড়ি থামান।আমি ফুচকা খাবো।(জোরে চিল্লাতে চিল্লাতে)

আরিশঃ তুমি সত্যি ষ্টুপিড এই সময় কেউ ফুচকা খায় তাও বাইরের।

তাহিয়াঃআমি খাই।এবার নামুন।

আরিশ আর তাহিয়া ফুচকার দোকানের সামনে গিয়ে এক প্লেট ফুচকা অর্ডার করে তাহিয়া খাওয়া শুরু করলো।

আরিশঃতুমি ফুচকা খাও আমি একটা কল করে আসি।এখানেই থেকো।আমি যাচ্ছি আর আসছি।

তাহিয়াঃঠিক আছে আপনি যান।এমনিতেও আপনার এখানে কোনো কাজ নেই।
________________________________

আরিশঃসব ঠিক আছে তো।হ্যাঁ আমি মেসেজ পাইছি।
“কথা বলতে বলতে আরিশ অনেক দূরে চলে যায়।”

তাহিয়াঃফুচকা তো শেষ তো আরিশ কই।

ঠিক এই সময় রাস্তার অন্য সাইড থেকে একটা গাড়ি খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে তাহিয়ার দিকে।তাহিয়া তো বোকার মত দাড়িয়ে আছে।গাড়িটা যখনই তাহিয়ার কাছে চলে আসে তাহিয়া চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠে।

সেই মূহুর্তে তাহিয়াকে কে যেনো হাত টেনে অন্য সাইডে নিয়ে যায়।তাহিয়া তাকিয়ে দেখে ফুচকাওয়ালা তাকে টেনে নিয়ে আসে,তার যেন জান ফিরে আসে।তাহিয়া তাকিয়ে দেখে গাড়ির মধ্যে কালো মাস্ক পরা একটা লোক তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তাহিয়ার তাকে দেখে ভাবছে তাকে হয়তো তাহিয়া চিনে কিন্তু তার আগেই গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় লোকটা।

কিছুক্ষণ পর আরিশ দৌড়ে আসে তাহিয়ার কাছে আর বলে তোমার কোথাও লাগেনি তো।

তাহিয়া অবাক হয়ে বললো,
তাহিয়াঃ আপনি তো বাম দিকে গেছিলেন কথা বলতে বলতে।তাহলে ডান দিক থেকে কিভাবে আসলেন।

আরিশঃইয়ে মানে ওই আর কি গাড়ির পিছনে গেলাম ধরার জন্য।কিন্তু চলে গেলো।

তাহিয়াঃকই আপনাকে তো দেখলাম না গাড়ির পিছনে যেতে।

আরিশঃতুমি খেয়াল করো নি হয়তো।আচ্ছা মামা কত দাম হলো ফুচকার আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার ওয়াইফকে বাচানোর জন্য।

তাহিয়াঃআপনি কিছু তো লুকাচ্ছেন,কিন্তু সেটা কি?আর আপনি মিথ্যা বললেন কেন। কিছুই বুঝতে পারছি না(মনে মনে কথাটা ভাবলো)

চলবে…….

[ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।আর কেমন হয়েছে কমেন্টে বলতে ভুলবেন না।]

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-০৩

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_03
#Writer_Fatema_Khan

তনিমা খাটের এককোনায় বসে কান্না করছে,তখনই রাসেল রুমে ডুকলো আর দেখলো তনিমা কান্না করছে—

রাসেলঃকি হলো তনিমা তুমি কান্না করছো কেনো?

তনিমাঃমা-বাবা কি আমাদের মেনে নিবেন।মা-বাবার মনে কষ্ট দিলাম এটা ভেবেই কষ্ট লাগছে।আবার আমার জন্য তাহিয়ার জীবনটাও নষ্ট হয়ে গেলো।(কান্নার বেগ বাড়িয়ে)

রাসেলঃতুমি কান্না করো না জান সব ঠিক হয়ে যাবে।কাল যাবো আমি আর তুমি তোমাদের বাসায়।ঠিক আছে।

তনিমাঃ সত্যি কাল আমরা বাসায় যাবো।সবাই আমাদের মেনে নিবে?

রাসেলঃঠিক তাই জানটা আমার।(তনিমাকে জড়িয়ে ধরে)

দুইজন কিছুক্ষণ চুপচাপ রইল।

রাসেলঃজান

তনিমাঃ হুম

রাসেলঃআমাকে একটু আদর করতে দিবে?

তনিমা সাথে সাথে রাসেল কে ছেড়ে দাড়িয়ে বললো–

তনিমাঃযতদিন সবাই আমাদের মন থেকে মেনে না নেয় ততদিন কোনকিছু হবে না।বুঝতে পেরোছে মিস্টার জামাই।

রাসেল মুখটা কালো করে বললো-

রাসেলঃবিয়ে তো হয়ে গেছে এখন কেনো কষ্ট দিচ্ছো বলো।আমার তো তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করে তাই না।

তনিমাঃহ্যা হ্যা সব বুঝতে পারলাম কিন্তু সবকিছু মা-বাবা মেনে নিলে।এখন ঘুমাও তো মিস্টার জামাই।

রাসেলঃআচ্ছা ঠিক আছে(মুখটা কালো করে)কিন্তু জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে তো আর সমস্যা নাই।

তনিমাঃওওওম….আচ্ছা ঠিক আছে।বাট নো দুষ্টুমি ওকে।

রাসেলঃওকে মেরি জান।

তারপর দুইজন জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।

__________________________________

আরিশ আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।লজ্জায় নিজের শাড়ি খামচে ধরি।অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করার পরও কিছু হচ্ছে না আর পাশে কেমন শব্দ হচ্ছে তা শুনে চোখ খুলে যা দেখি তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না(তাহিয়া মনে মনে)

তাহিয়াঃএকি আপনি কিটকেট খাচ্ছেন যে,তাহলে আমি এটা খাওয়ার শব্দ পাচ্ছিলাম।

আরিশঃকেনো আমি তো বললাম মুখে এখনো লবনের স্বাদ লেগে আছে আমার তাই মিষ্টি খাচ্ছি।

তাহিয়াঃওহ।

আরিশঃ হুম।

উনি কিটকেট খাচ্ছেন আর আমি শুধু কিছু না কতকিছু ভাবছিলাম। I hate my mind.(তাহিয়া নিজেই কথাগুলো ভাবতে লাগলো)

হটাৎ তাহিয়া নিজের পায়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব করতেই পায়ের দিকে তাকালো–

তাহিয়াঃকি করছেন আপনি?আমার পা ছাড়ুন।

আরিশঃএকদম নরবে না পায়ে ব্যাথা পেয়েছো ঔষুধ লাগাতে হবে।তাই চুপ করে বসো আর আমাকে আমার কাজ করতে দেও।আর নিরব যখন দেখছিলো তখন তো মানা করো নি।

তাহিয়াঃআর ইউ জেলাস?

আরিশঃচুপ করে বসবে তুমি(রাগী লুক নিয়ে)।

এই বলে আরিশ ঔষুধ লাগানো শুরু করলো।তাহিয়ার যেন অন্যরকম লাগছে তার অনুভূতিগুলোকে।আরিশের ছোয়াতে তাহিয়া কেপে কেপে উঠছে।আর আরিশ আড়চোখে দেখছে তাহিয়ার অবস্থা ভালোই উপভোগ করছে আর ঠোঁট কামড়ে হাসছে।

আরিশঃহয়ে গেছে স্টুপিট গার্ল।

তাহিয়াঃকি বললেন আপনি আমি ষ্টুপিড আর আপনি যে মিস্টার অসভ্য,বজ্জাত লোক,আস্ত খাটাশ।

আরিশঃকি বললে তুমি?

তাহিয়াঃকিচ্ছু না।
(বলেই বালিশ নিয়ে সোফায় যাওয়ার জন্য উঠে।তখনই আরিশ তাহিয়ার হাত ধরে ফেললো)

আরিশঃকোথায় যাও?

তাহিয়াঃকেনো ঘুমাতে।

আরিশঃখাটে শুতে পারো।তবে আমাকে বিরক্ত করবে না।চুপচাপ ওই পাশে শুয়ে পরবে।

তাহিয়াঃ😲আপনার শরীর ঠিক আছে তো?

আরিশঃমানে কি,আমার আবার কি হবে?বেশি বকবক না করে ঘুমিয়ে যাও।

তাহিয়াঃওকে।
তাহিয়া তাদের মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে দেয়।আরিশ তা দেখে ভ্রু কুচকায় কিন্তু কিছু বলে না।

________________________________

তূর্য তার মায়ের রুমের দিকে যায় আর শুনতে পায় তার মা,বাবা কি নিয়ে যেন কথা বলছে আর আফসানা রহমান কান্না করছে আরমান রহমান তাকে সান্তনা দিচ্ছে।

তূর্যঃ বাবা,মা আসবো?

আরমানঃআরে বাবা ভিতরে আয় অনুমতি নেয়ার কি আছে।তা তুই এই সময় ঘুমাস নি।

আফসানাঃতূর্য তোর মুখটা কেমন শুকনো লাগছে কি হয়েছে?

তূর্যঃআমার বোনদের কথা খুব মনে পড়ছে।দুইটা বোন একসাথে দূরে চলে গেলো।আর তাহিয়া তো এখনো অনেক ছোট মাত্র তো মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করলো।বিয়ের বয়সও তো হয়নি।

আরমানঃ হুম আমরাও সেটা নিয়ে ভাবছি।কি করে সামলাবে সবকিছু।

আফসানাঃনতুন যায়গায় সবার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে তো আমার ছোট মেয়েটা।
(বলেই আবার কান্নার বেগ বাড়িয়ে কান্না করতে লাগলো)

তূর্যঃআমরা নিজেদের মান-সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের ছোট্ট পরীটার উপর অন্যায় করি নাই তো।

আর তাহিয়া আরিশকে আগে থেকেই তেমন একটা পছন্দ করে না,আমি কি খুব বড় ভুল করে ফেললাম।সব জেনেও বোনটাকে এভাবে বিয়ে দেয়া ঠিক হলো না।(তূর্য মনে মনে ভাবলো)

আরমানঃআচ্ছা তূর্য তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পর অনেক রাত হয়ে গেছে।

তূর্যঃঠিক আছে বাবা।তোমারাও ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি তাহলে।

________________________________

রাত ২টা আরিশ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।তখনই তার মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো।সে বিরক্তি নিয়ে মোবাইলের দিকে তাকালো।না চাইতেও মেসেজ চেক করলো।
মেসেজ দেখার সাথে সাথে আরিশের মুখের রং বদলে গেলো।সে মোবাইলটা পুনরায় টেবিলে রেখে বেলকনির দরজায় দাড়ালো।কিছুসময় পর সে তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময়ী হাসি দিলো।তারপর সে তাহিয়ার অপর পাশে শুয়ে পরলো।

সকালে,
আরিশের ঘুম ভেঙে যায়।সে দেখে তাহিয়া বাচ্চাদের মত তার বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।আরিশ মাথা হালকা উঠিয়ে দেখে কোলবালিশ নিচে পরে আছে।তারপর সে তাহিয়াকে ছেড়ে উঠে বসে।সে দেখে তাহিয়ার শাড়ির আচল এলোমেলো যার দরুন তাহিয়ার কোমরটা উম্মুক্ত,ডান পায়ের হাটুর উপরে শাড়ি উঠে আছে।না চাইতেও আরিশের চোখ তাহিয়ার দিকে চলে যাচ্ছে যা তাকে খুব টানছে।আরিশ তারাতাড়ি করে তাহিয়ার শাড়ি ঠিক করে দেয়। তাহিয়ার মুখের উপর কিছু অবাধ্য চুল তাহিয়ার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে সেটা দেখে আরিশ চুলগুলো তাহিয়ার কানে পিছে গুজে দিলো।

আরিশ আয়নার দিকে তাকিয়ে,না আমি তাহিয়ার প্রতি দূর্বল হলে চলবে না।আমাকে আরও শক্ত হবে।এই বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

আরিশ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে তাহিয়া গোমড়া মুখ করে বসে আছে।তা দেখে আরিশ বললো–

আরিশঃস্টুপিট গার্ল কি হয়েছে।গোমড়া মুখ করে বসে আছো কেন?

তাহিয়াঃআমি আজ মা-বাবার কাছে যাবো।তাদের কথা খুব মনে পড়ছে।

আরিশঃওকে নিয়ে যাবো।

যাক ভালো মিস্টার অসভ্য রাজি হয়েছে না হলে তনিমা আপুর সাথে দেখা হত না।(তাহিয়া মনে মনে)

আরিশঃকি ভাবছো ইডিয়ট

তাহিয়াঃকই কিছুনা তো।আর ইডিয়ট,ষ্টুপিড কেমনে হই আমি?

আরিশঃতাহলে আমি মিস্টার অসভ্য,বজ্জাত,খাটাশ কেমনে হই?তুমি যানো অসভ্য,বজ্জাত,খাটাস কাকে বলে?আমি তোমায় শিখিয়ে দিবো ঠিকাছে।

আমার দিকে এগুতে এগুতে কথাগুলো বললো সাথে তার ঠোঁটের কোণে সে মারাত্মক বাকা হাসি যা যে কাওকে ঘায়েল করতে সক্ষম।

তাহিয়াঃআরে মা আপনি এতো সকালে কিছু লাগবে।
আরিশ পিছনে তাকালে আমি এক দৌড় ওয়াশরুমে,আমাকে আর পায় কে।আরিশ বুঝতে পেরে খুব জোরে হেসে উঠলো

আমি ৩দিন পর দেশে আসছি…….

চলবে…….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।সবার কাছে গঠনমুলক মন্তব্য আশা করছি]