Friday, June 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1445



ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-৩+৪

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat

ইয়াদের কথা শুনে মধু মনে মনে বলল’এহ!কি এটিটিউড।এটিটিউডে পা মাটিতে পড়ে না।’মনে মনে এটা বললেও মুখে কিছু বলতে পারলো না।চুপচাপ চলে যেতে নিয়েই মনে পড়লো পায়েসের বাটির কথা।পায়েসের বাটিও কি দিবে না?মধু পিছনে ফিরে ইয়াদকে ডাক দিলো

“শুনুন।”

ইয়াদ দাড়াতেই মধু সামনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর বলল”আচ্ছা আমাদের বাটগুলোও কি দিবেন না?ওগুলো দিয়ে দিন প্লিজ।ওগুলো কিন্তু আমার না ওগুলো আম্মুর।আমার আম্মু অনেক রাগী।”

ইয়াদ কিছু না বলে দরজা খুলে ভেতরে চলে গেলো।মধু বেকুব হয়ে ওখানেই দাড়িয়ে রইলো।যেনো ও কোনো মানুষই না।কেমন পাত্তা না দিয়েই চলে গেলো।মধু বুঝতে পারছে না চলে যাবে নাকি থাকবে!মধু পা বাড়িয়েছে সিড়ির দিকে যাওয়ার জন্য।তখনই ইয়াদ আসলো।হাতে দুটো বাটি।মধুর হাতে দিয়ে বলল”এই বাটিগুলো আপনি আমাকে দেন নি।এগুলো আপনার আম্মু আমার আম্মুকে দিয়েছে।তাই এগুলো আমি রাখতে পারবো না।আর এই জ্যাকেট টা আমি নেওয়ার উদ্দেশ্যে আপনাকে দেই নি।আপনাকে সাহায্য করার জন্য দিয়েছি।বুঝেছেন?”

“জ্বি,” এটা বলে মধু ওপরের দিকে চলে গেলো আর মনে মনে বলতে লাগলো”কি অদ্ভুত ছেলে।”

তারপর বাসায় এসে নিজের রুমে এসে দেখলো জানালায় আবার ঝুড়িটা আটকে রয়েছে।মধু গিয়ে দেখলো আবারো পিঠা দিয়েছে নিশি।মধু ঝুড়িটা নিয়ে পিঠাগুলো খেয়ে চিরকুট টা খুললো।

“ইয়াদ”
সোনা,জানু। আরো দিবো?

এতটুকুই লিখা ছিলো।মধু আরেকটা কাগজে লিখলো

“নিশি”
না জানু আজকে আর না।আই লাভ ইউ বেবি।

এটা লিখে ঝুড়িতে রেখে রশিতে ঝুলিয়ে খাটে বসে হাসতে হাসতে বলল”নিশি আপু জানেও না সে কার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে।যাক কারো বয়ফ্রেন্ড হয়ে এতো ভালো খাবার পাবো ভাবতেও পারি নাই।”

মধু দশটা পর্যন্ত পড়লো।এরপর আর পড়তে ইচ্ছে করছে না।তাই টিভির রুমে গেলো।গিয়ে দেখে ওর মা সোফায় বসে মুভি দেখছে।মধুও মায়ের পাশে বসে পড়লো।আইরিন রহমান টিভির থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন”কি করিস এখানে?পড়া শেষ?”

“না মা কিন্তু এখন পড়তে ইচ্ছে করছে না।”

“না করলে গিয়ে শুয়ে পড়।সকালে তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে বসবি।”

“আচ্ছা একটু বসি।আধঘন্টা পরে যাই।”

“তোরে আমি চিনি না!তুই টিভির সামনে বসলে দুনিয়াদারী ভূলে যাবি।তাড়াতাড়ি যা মার না খেতে চাইলে।”

কি আর করার অগত্যা চলে যেতে হলে মধুর।ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।যেহেতু আর পড়তে ইচ্ছে করছে না সেহেতু শুয়ে পড়াই উত্তম।
——————
শুক্রবারে অন্যান্য দিনের চেয়ে আরো বেশি ব্যাস্ত থাকে মধু।যেমন আজকে!প্রতি শুক্রবারের মতো এই শুক্রবারেও নিজের জামাকাপড়গুলো নিজের ধূয়ে শুকোতে দিতে হয়।তাই তো মধু জামা কাপড়গুলো ধূয়ে ছাঁদে নিয়ে চললো।কিন্তু ছাদের এক কোণাও খালি নেই।সবগুলো দড়িতে জামা কাপড় ঝুলানো।মধু জামাগুলেকে কিছুটা কুঁচকে কুঁচকে মেলে দিলো।মোটামুটি অনেক কষ্টে জামাগুলো শুকাতে দিলো।কিন্তু একটা ওড়না কোথাও দিয়ে পারছে না তাই এটা একটা শার্টের ওপর মেলে দিলো।মধু জানে না শার্ট টা কার।যদি জানতো শার্ট টা ইয়াদের তাহলে জীবনেও দিতো না।

জামাকাপড় শুকাতে দিয়ে মধু নিচে নেমে এলো।চারতলা দিয়ে নামার সময়ই বুঝতে পারলো নিশিদের ঘরে আজকে বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে।মধু মনে মনে বলল”আজকে তাহলে আমারও বিরিয়ানি খাওয়া হচ্ছে।”এটা বলে একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।বাসায় আসতেই দেখলো একটা মেয়ে সোফায় বসে ওর মায়ের সাথে বকবক করছে।মেয়েটা কে?মধু মেয়েটাকে চেনে না।মধু ঘরে ঢুকতেই ওর মা বলল”মধু,এখানে বস।”

মধু মায়ের পাশে বসে পড়লো।মধুর মা মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলল”ও আমার বড় মেয়ে মধু।তোমার সাথেই পড়ে।ও এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।”

মেয়েটা মৃদু হেসে মধুর দিকে তাকিয়ে বলল”হাই,আমি ইরিন।তিনতলায় নতুন আসছি।”

“ওহ!”

“তুমি কোন কলেজে পড়ো?”

“আরাগনগর ডিগ্রি কলেজ।তুমি?”

“তোমাদের পাশেই আরাগনগর মহিলা কলেজ।”

“ওহ!তুমি কি তিনতলায় থাকো।” মধু প্রশ্নটা করেছে এইজন্য যাতে শিউর হতে পারে মেয়েটা ওই ছেলেটার বোন।

“হ্যাঁ আমরা তিনতলায় নতুন আসছি।আসার পর শুনলাম আমার বয়সই আরেকজন আছে তাই দেখা করতে এলাম।”

এরপর মধু আরকিছু বলল না।মধুর মা বলল”তুমি বসো।তোমার জন্য চা নিয়ে আসি।”

“আরে না আন্টি।আমি নাস্তা করে এসেছি।”

“আরে বসো।নাস্তা করেছো তো কি হয়েছে।আবার করবে।”

আইরিন রহমান কিচেনে চলে গেলো।আইরিন রহমান যেতেই মধু বলল”তোমরা কয় ভাইবোন?”

“তিনভাই বোন।দুইটা বড় ভাই আছে আর আমি ওদের একমাত্র বোন।”

“ও…”
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর আইরিন রহমান আসলেন চা নাস্তা নিয়ে অগত্যা ইরিনের খেতেই হলো।তারপর তিনজনে আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ইরিন চলে গেলো।
——————–
দুপুরের খাবার মধু খায় নি জানালা দিয়ে বিরিয়ানি পাবার আশায়।কিন্তু নাহ!তিনটে বেজে গেছে বিরিয়ানি নাম গন্ধও নেই।এদিকে মধুর পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।একবার ভাবছে খেয়ে নেবে আবার ভাবছে খাওয়ার পর যদি বিরিয়ানি আসে!এই চিন্তায় মধু কি করবে বুঝতে পারছে না।কিছুক্ষণ ভেবে খেতে চলে গেলো।আর যাইহোক না খেয়ে থাকা অসম্ভব।মধু খাওয়া শেষ করে এসেই দেখে বিরিয়ানির বাটি জানালায় ঝুলছে।এই অবস্থায় মধুর প্রচুর কান্না পাচ্ছে।এতো লোভনীয় বিরিয়ানি অথচ পেটে এক ফোটা জায়গাও নেই।এখন কি করবে!ফ্রিজে রাখলে মা জিগ্যেস করবে এগুলো কোথা থেকে এসেছে!তখন আরো জ্বালা।না গিলতে পারছে না ফেলতে পারছে।মধু অতি দুঃখে বিরিয়ানির বাটি টা নিলো।তারপর ওটা খাটের নিচে রেখে দিলো।আর চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুললো।চিরকুটে লিখা ছিলো।

“ইয়াদ”
তুমি এতো পাষাণ কেনো?আমার ফোন ধরো না।মেসেজের রিপ্লাই দাও না।কেনো এমন করছো?উত্তর দাও।”

তোমার ‘নিশি’

মধু মনেমনে বলল”ভালো কিছু একটা লিখতে হবে।উল্টাপাল্টা কিছু লিখলে আর কিছু পাঠাবে না।তাই মধু লিখলো

“নিশি”
বাবু শোনো।আমি অনেক ব্যাস্ত।সামনপ পরীক্ষা বোঝোইতো!তুমি এমন রাগ করলে হবে?আচ্ছা পরীক্ষা শেষ হলে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।”

তোমার”ইয়াদ”

এটা বলে ঝুড়িতে চিরকুট টা রেখে রশিতে ঝুলিয়ে দিলো।কিন্তু মধু এটা ভেবে পাচ্ছে না এই বিরিয়ানিগুলে কি করবে।হঠাৎ কে যেনো ওর রুমের দরজায় নক করলেন।মধু দ্রুত বিরিয়ানির প্লেট টা খাটের নিচে রেখে দরজা খুললো।দরজা খুলতেই দেখে আরিয়া দাড়িয়ে আছে।আরিয়াকে দেখে মধু বলল”কি রে।কি হইছে তোর।দু’দিন ধরে কলেজে আসিস না কেন?”

“ভেতরে চল।সব বলতেছি।”

মধু আরিয়াকে ভেতরে নিয়ে এলো।আরিয়া ওর খাটের ওপর বসে বলল”জানিস,আব্বু অনেক অসুস্থ হয়ে গেছিলো।ওনাকে নিয়াই দৌড়াদৌড়ি করতে করতে কলেজে আসতে পারি নাই।”

“তো ফোন দিলি না কেন?”

“আরে মনে ছিলো না।”

“ও আচ্ছা।এখন কি তুই টায়ার্ড?বিরিয়ানি খাবি?”

“হুম খাবো।তুই রান্না করছিস?”

“ধূর,আমি রান্না করতে পারলে তো!”

“তাহলে আন্টি রান্না করছে?”

মধু জবাব দেওয়ার আগে দরজাটা সাবধানে আটকে দিলো।তারপর বলল”আরে না।এটা জাদু।”

“তোর মাথা!সত্যি করে বলতো তো কাহিনি কি?”

এবার মধু নিশির কথা সব বললো কিন্তু সেদিন রাস্তায় কি হয়েছিলো সেট বললো না।সব শুনে আরিয়া হাসতে হাসতে শেষ।পেটে হাত রেখেই বলল”দোস্ত এমন কোনো বাড়ি পেলে বলিস তো! আমারও কারো বয়ফ্রেন্ড সেজে খেতে ইচ্ছে করছে।”

“আপাতত এই বিরিয়ানি খা।” মধু হাসতে হাসতে বলল।
——————-
আরিয়া সন্ধ্যার সময় চলে গেছে।ওর ভাই এসে নিয়ে গেছে।আরিয়া যাওয়ার পর মধু মায়ের৷ বকুনিতে পড়তে বসলো।কিন্তু মধুর কপাল মনে হয় ভালো ছিলো বেশিক্ষণ পড়তে হয় নি কারেন্ট চলে গেছে।জেনারেটরের চার্জ নেই।আইরিন রহমান বললেন”যা তো নিচে গিয়ে দুটো মোম বাতি কিনে নিয়ে আয়।”

মধু ঘর থেকে তিনতলায় আসতেই টর্চ বন্ধ হয়ে গেলো।চার্জ নেই।এখন সামনে সব অন্ধকার!মধু হাতড়ে হাতড়ে নামতে লাগলো কিন্তু হঠাৎ কেউ একজন আল্লাহ গো!মরে গেলাম বলে চিল্লিয়ে উঠলো!

চলবে……

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat

চিল্লানোর আওয়াজে মধু থমকে দাড়ালো।অন্ধকারে তো কিছু দেখাও যাচ্ছে না।হঠাৎ কারেন্ট চলে আসায় মধু সিড়িতে তাকিয়ে দেখলো নিশির হাতে পাড়া দিয়ে দাড়িয়ে আছে মধু।তৎক্ষনাৎ মধু পা টা সরিয়ে নিলো।তারপর নিশির পাশে বসে বলল”সরি আপু।আসলে অন্ধকার ছিলো তাই খেয়াল করি নাই।তুমি এখানে বসে আছো কেনো?”

“ইয়া…..কিছু না এমনিই।কারেন্ট চলে গিয়েছিলো তো তাই আর কি।”

“ও আচ্ছা চলো তাহলে বাসায় যাও।আমিও যাই।”

“আচ্ছা তুমি যাও।আমি এখনই চলে আসবো।”

মধু আবার ফেরত গেলো ওর ফ্ল্যাটের দিকে হঠাৎ মনে হলো তিনতলায় কেউ কান্না করছে।মধু দেখার জন্য সিড়িতে এসে তিনতলায় ঝুঁকতেই দেখলো নিশি ওর ক্রাশবয়ের কলার চেপে ধরে বলছে”ইয়াদ,কেনো এমন করছো বলতো?একটা ভুলের জন্য এতোবড়ো শাস্তি কেনো দিচ্ছো?আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?”

ইয়াদ নিশির হাতটা নিজের কলার থেকে ধাক্কামেরে সরিয়ে দিয়ে বলল”তুমি যেটা করেছিলে সেটা ভূল না অপরাধ।আর কেউ ক্ষমা করলেও আমি পারবো না।আমি এতো উদার না।আর প্লিজ দয়া করে আমাকে ডিস্টার্ব করবে না।অসহ্য লাগে আমার।”

নিশি কাঁদতে কাঁদতে বলল”তাহলে এইবাড়িতে কেনো এসেছো?”

“আমি জানতামও না তুমি এখানে থাকো।জানলে আসতামই না।”

নিশি চোখের পানি মুছে বলল”তাহলে সন্ধ্যার সময় যে খাবার পাঠাতাম ওগুলো নিতে কেনো?চিরকুটে কেনো লিখতে আই লাভ ইউ?কেনো?”

ইয়াদ মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো নিশির কথা শুনে।কি যাতা বলছে!ইয়াদ তো কখনো কোনো খাবার পায় নি জানালা দিয়ে।ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল”ও হ্যালো,কি বলছো এগুলো।আমি কখনো কোনো কিছু পাই নাই।আর তুমি যা করছো তারপর থেকে তোমার মুখও তো দেখতে মন চায় না চিরকুট লেখাতো দূরের কথা।”

“মিথ্যা বলবা না ইয়াদ।চিরকুটগুলো এখনো আছে আমার কাছে।”

এতক্ষণ ধরে মধু সবকিছু দেখে স্থির থাকলেও নিশির এ কথা শোনার পর আর স্থির থাকতে পারলো না।তোলপাড় চলছে ভেতরে।নিশি যদি চিরকুটগুলো দেখিয়ে দেয় আর ইয়াদ যদি জানতে পারে তাহলে কি ভাববে!নির্ঘাত পেটুক ভাববে।মধু এগুলো ভাবতে ভাবতেই দেখলো নিশা চিরকুটগুলো ইয়াদের হাতে দিয়ে বলল”এগুলো তুমি লেখো নি?”

ইয়াদ চিরকুটগুলো হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল”নাটক করো আমার সাথে?এগুলো তো আমার লেখাই না।কার না কার চিরকুট এনে আমার নামে চালাচ্ছো।লজ্জা হওয়া উচিত”

“লজ্জা তো তোমার হওয়া উচিত।খেয়ে আবার চাইতে।ছ্যাঁচড়া কোথাকার।”

এটা বলে নিশি ওপরের দিকে আসতে নিলে মধু একদৌড়ে নিজেদের ঘরে ঢুকে গেলো।ঘরে আসার পর আইরিন রহমান বললেন”কি রে মধু।এতক্ষণ কই ছিলি?কারেন্ট তো তুই যাওয়ার পাঁচ সেকেন্ড পরেই চলে আসছে।”

“আরে আম্মু নিচে ইরিনের সাথে দেখা হয়ে গেছিলো।তো ওর সাথে কথা বলতেই দেরি হয়ে গেছে।”

“ও,,আচ্ছা।কিছু না পারলে ওকে বলিস।মেয়েটা অনেক মেধাবী।তোর মতো ফেল্টু না।”

মধু মনে মনে বলল’আপনা টাইম আয়ে গা।”এটা মুখটা বাঁকা করে নিজের ঘরে চলে গেলো।নিজের ঘরে গিয়ে বসে নিচের কাহিনী মেলাতে লাগলো’তারমানে ইয়াদ এই ছেলের নাম আর এই ছেলের সাথে নিশি আপুর রিলেশন ছিলো।কোনো কারণে এটা ভেঙে গেছে আর নিশি আপু চাইছে এটা ঠিক করতে কিন্তু ছেলেটা চাইছে না।ইশ!ব্রেকাপটা আরো কয়েকদিন পর করলে ভালো হতো!এখন তো আর জানালা দিয়ে কোনো খাবারও দিবে না।এটা ভেবেই মধু মন খারাপ করে ফেললো।তবুও একটু শান্তি পাওয়া গেলো ওরা বুঝতে পারে নি এটা যে মধুর কাজ।ইয়াদ ভাবছে নিশি মিথ্যা নাটক করছে।আর নিশি ভাবছে ইয়াদ মিথ্যা বলছে।খেয়ে আবার ছ্যাচড়ামি করছে।
.
.
আর মধু আপসেট মুডে পড়তে বসলো।
——————
আইরিন রহমান এসে মধুর মুখে পানির ছিটা দিয়ে বললেন”তাড়াতাড়ি ওঠ মধু।সাতটা বেজে গেছে।এতো ঘুমালে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কি করবি?সংসার করে খেতে পারবি না।”

মধু চোখ মুখ কচলে উঠে বসলো।তারপর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল”আমার প্রয়োজন নেই সংসার করার এমনিতেই অনেক ভালে আছি।আর তোমাকে না আমি বারবার বলেছি সংসার নামক এসব ফালতু জিনিসের নাম আমার সামনে বলবে না।”

“তাহলে তোকে কি সারাজীবনই বসিয়ে খাওয়াবো নাকি?”

“সারাজীবন লাগবে না।আরো কয়েকটা মাস কষ্ট করো।অনার্সে ভর্তি হয়েই জবে ঢুকবো।”

“হুম।অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে উঠেই তুমি চাকরী পেয়ে যাবে।চাকরী মনে হয় হাতের মোয়া।”

“চাকরী না পেলে মাটি কাটবো,ইট ভাঙবো,চৌরাস্তার মোড়ে ভিক্ষা করবো তবুও তুমি চুপ করো।তোমার থেকে আর খাবো না।এবার যাও।”

আইরিন রহমান মুখ বাকিয়ে চলে গেলেন।আর মধু বিরক্তমুখে ওয়াশরুমে চলে গেলো।সকাল সকাল মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো।মধু ফ্রেশ হয়ে কলেজের ইউনিফর্ম পরে নাস্তা না খেয়েই বেরিয়ে পড়লো।পেছন থেকে আইরিন রহমান ডাকলেও শুনলাম না।রাগটা যেনো মাথায় চেপে বসেছে।রাস্তা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হাটছিলো মধু।আসলে নিচের দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলো বললে ভূল হবে কাঁদছিলো।হঠাৎ কেউ একজন ওর সামনে এসে দাড়ালো।মধু চোখ মুছে মুখ তুলে তাকালো।তার সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে আছি।ইয়াদ মুধর কান্নারত ইষৎ লাল হওয়া আধবেজা মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো কারণ এই মুখটা আরো একবার দেখেছে ইয়াদ।যেদিন মেয়েটা বিপদে পড়েছিলো সেদিনও এভাবে কাঁদতে কাঁদতে এসে সাহায্য চেয়েছিলো।কিন্তু আজ কেনো কাঁদছে।ইয়াদ মধুকে কিছু জিগ্যেস করার আগে আশেপাশে তাকালো কেউ কি ওকে বিরক্ত করছে কি না!নাহ!তেমন কেউ তো নেই।তাহলে কাদছে কেনো?ইয়াদ বলল”কাঁদছো কেনো?”

“এমনিতেই মন চাইছে।”

ইয়াদ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।কি বলে মেয়েটা।কান্না কি কেউ এমনিতে করতে পারে নাকি!কান্না করার জন্য একটা কারণ প্রয়োজন।ইয়াদ বলল”এমনিতেই কান্না করে না।তুমি যদি না বলো আমি সাহায্য করবো কি করে?কেউ কি রাস্তায় কিছু বলছে?”

“না,,,একটা ব্যাক্তিগত বিষয়ে মন খারাপ।”

“ওও,,” তারপর ইয়াদ আর কিছু বলতে পারলো না মধু পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।মধুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ইয়াদ মনে মনে বলল’এইটুকু মেয়ের আবার ব্যাক্তিগত ব্যাপার!নিশ্চিত বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে।তাই শেয়ার করতে চাইছে না।”ইয়াদ মনে মনে এগুলো ভেবে হাঁটতে লাগলো
——————-
কলেজে পৌঁছে মধু আরিয়ার পাশে এসে বসলো।আরিয়া হোমওয়ার্ক করছিলো।মধুকে দেখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল”কি রে মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?কান্না করছিস নাকি?”

“না তেমন কিছু না।”

“লুকিয়ে লাভ নাই।আমি সবই জানি।আজকেও কি আন্টির সাথে রাগ করছিস?”

মধু রাগে কাঁদতে কাঁদতে বলল”আমার মা এমন কেনো রে?খাওয়ায় খোঁটাও দেয়।আমি খোঁটা সহ্য করতে পারি না।আমি হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছি বাবা না থাকলে কি হয়।”

আরিয়া মধুর চোখ থেকে পানি মুছে দিয়ে বলল”কান্না করিস না।শান্ত হ,দেখ আন্টি রাগের মাথায় বলেছে।উনি তোকে কষ্ট দেবার জন্য বলে নি।আর তুই একটা জিনিস চিন্তা কর।তার জায়গায় তুই থাকলে কি করতি?সেও তো মানুষ!তারও কষ্ট আছে।তবুও সে কিন্তু তোদের দু’বোন কে মানুষ করছে।তাই প্লিজ আন্টিকে দোষ দেওয়া বন্ধ করে ধৈর্য ধর আল্লাহ তো আছেনই।”

মধু চোখ মুছে বলল”হুম।তুই বস আমি আসছি মুখ ধুয়ে।”

“আয়।”

মধু মুখ ধুয়ে এসে আরিয়ার পাশে বসলো।আর তখনই স্যার এসে ক্লাসে ঢুকলো।আর ক্লাস শুরু হলো।
—————
কলেজ ছুটি হয়েছে দুপুর দুপুর ১.০০ টায়।আর এখন চারটা বাজে।এতক্ষণ একটা কোচিং করে আর ভালো লাগছে না।দুজনই ঠিক করলো বাসায় চলে যাবে।তারপর দুজনই বাসায় চলে আসলো পরের কোচিংটা না করেই।বাসায় এসে মধু জামা কাপড় ছেড়ে শাওয়ার নিয়ে ছাঁদে চলে গেলো।আইরিন রহমান ওকে ছাদে যেতে দেখে আটকালেন না।এমনকি কোনো কথাই বললেন না।মধু ছাঁদে এসে দাড়িয়ে ছিলো রেলিঙের দিকে মুখ করে।পেছন থেকে কেউ একজন বলল”আজকে এতো তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে ফিরলে যে!তা মন কি এখনো খারাপ?”

“কোচিং না করে এসেছি।হ্যাঁ এখনো খারাপ।”

“বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিটআপ করে ঝামেলা মিটিয়ে নিলেই তো পারো।”

মধু ভ্রু কুঁচকে বলল”জ্বি,কি বললেন?বয়ফ্রেন্ড আসবে কোথা থেকে আমার!”

“তাহলে মন খারাপ কেনো?”

মধু এবার প্রচন্ড রেগে গেলো।মন খারাপের কি আর কোনো কারণ হতে পারে না?না কি এটাই একমাত্র কারণ।মধু দাঁতে দাঁত চেপে বলল”কারো সম্পর্কে না জেনে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করা বন্ধ করুন।মন খারাপ হলেই যে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে হবে এমন ভাবেন কেনো?আমাদের কি নিজস্ব জীবন নেই!নাকি বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডই সব।সে ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না।”

এটা বলে মধু চলে যেতে নিলেই ইয়াদ মধুর হাত ধরে ফেলে।আর এটা নিশি ছাদের দরজার আড়াল থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করে।

চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-১+২

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০১
#Arshi_Ayat

মধুর পিরিয়ড হয়েছে কলেজ থেকে আসার পথে।কিন্তু পথে কোনো ফার্মেসী না পাওয়ায় নিজের হিজাবটা খুলে কোমরে বেধে নিলো।তবুও রক্তের দাগটা দেখা যাচ্ছে।পেছন থেকে একটা ছেলে বলল”দেখ,পিছনে সীল মারা।লাল সীল!”
এটা বলেই হাসা শুরু করলো।ওর সাথে আরো দুইটা ছেলেও হাসা শুরু করলো।মধু এগুলো শুনে জোরে জোরে হাটা শুরু করলো।এবার ওই ছেলেটা উঠে এসে মধুর পেছনে হাটতে লাগলো।মধু ভয় পেয়ে হাটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।ছেলেটাও মধুর পাশাপাশি এসে পড়লো।তারপর বিচ্ছিরি হেসে বলল”ইউ আর লুকিং সো হট!”

মধু কিছু না বলে মাথা নিচের দিকে নামিয়ে হাটতে লাগলো।সন্ধ্যা হয়ে আসছে।আশেপাশে অন্ধকার ঘনীভূত হচ্ছে।মধু যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরে রাস্তাটা একটু জঙ্গলের মতো।সন্ধ্যার সময়টা ভূতূড়ে ভূতুড়ে লাগে।প্রতিদিন ওর বান্ধবী আরিয়া থাকায় ভয় লাগে না কিন্তু আজ আরিয়া আসে নি আর আজই পিরিয়ড হতে হলো।পরিয়ডের ডেটও আজ ছিলো না আরও তিনদিন পর ছিলো কিন্তু আজই কেনো হলো!তার ওপর আবার এই ছেলেটা কতো জঘন্য জঘন্য কথা বলছে।কথাগুলো শুনলেই গা ঘিনঘিন করে।এই রাস্তা থেকে একটা দৌড়ে বাসায় চলে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এই অবস্থায় মুখ বুঁজে থাকতে হবে।যতো তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে পারলেই হয়।অনেক্ক্ষণ ধরে ছেলেটা বিশ্রী বিশ্রী কথা বলছিলো মধু কিছু না বলে চুপচাপ হাটছিলো এবার হঠাৎ করে ছেলেটা মধুর হাত চেপে ধরলো।মধু আতংকিত চোখে ছেলেটার দিকে চেয়ে বলল”হাত ছাড়ুন প্লিজ।”

“হাত তো ছাড়ার জন্য ধরি নি।আজকে বাসায় যাওয়া লাগবে না।আমার সাথে চল।”

“হাত ছাড়ুন ভাইয়া প্লিজ!বাসায় যেতে হবে আমাকে।” মধু কাদো কাদো গলায় বলল।

“বাসায় কালকে যাবি।আজকে আমার সাথে চল।”

মধু কাঁদতে কাঁদতে হাত মুচড়ানো শুরু করলো।কিন্তু ছেলেটা নির্দয়ের মতো ওকে টেনে হেচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো।মধুর মাথায় কোনো বুদ্ধি আসছে না।হঠাৎ মধুর যেনো কি হলো সজোরে ছেলেটা হাতে কামড় বসিয়ে দিলো।ছেলেটা তৎক্ষনাৎ মধুর হাত ছেড়ে দিলো।মধু হাত ছাড়া পেয়েই দৌড় লাগালো।ছেলেটাও পেছনে দৌড়াচ্ছে।মধু সামনে তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছে না অন্ধকার নেমে যাওয়ায়।হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই কেউ একজন ধরে ফেললো।মধু অবছা আবছা আলোয় বুঝতে পারলো কোনো মানুষ হয়তো!মধুকে দাড় করিয়ে সামনের জন পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশলাইট বের করলো।ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় মধুর ভীত আর কান্নারত চেহারা দেখে বিচলিত হয়ে ইয়াদ বলল”রিল্যাক্স,কি হয়েছে।এভাবে দৌড়াচ্ছিলেন কেনো?”

মধু কাঁদতে কাঁদতে বলল”প..পিছছনে এ..একককটা ছছছেলে….”এতটুকু বলতে না বলতেই ছেলেটা মধুর কাছাকাছি এসে দাড়ালো।ফ্ল্যাশলাইটেট আলোয় ইয়াদ ছেলেটার দিকে তাকালো।তারপর মধুর দিকে তাকিয়ে বলল”আপনি একটু প্লিজ ফোন টা ধরুন। যাতে আমি ওকে দেখতে পাই।বাকিটা আমি দেখছি।”

মধু কাপাকাপা হাতে ফোনটা ধরলে।ইয়াদ ছেলেটার সামনে গিয়ে ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলল”কি ভাই,ওনাকে বিরক্ত করছেন কেনো?”

“তোর সমস্যা কি?”

“অনেক সমস্যা।আমি এগুলো সহ্য করতে পারি না।আমার হাত নিশপিশ করে।” এটা বলে কষে দুটো ঘুষি দিয়ে কলারটা চেপে ধরে মধুর সামনে নিয়ে এসে বলল”সরি বল।”

ছেলেটা মধুর দিকে তাকিয়ে ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সরি বলল।তারপর ইয়াদ আরো দুটো থাপ্পড় দিয়ে ছেলেটা ছেড়ে দিলো।ছাড়া পেয়ে ছেলেটা দৌড়ে পালালো।ছেলেটা চলে যাওয়ার পর ইয়াদ নিজের জ্যাকেট টা খুলে মধুর কোমরে বেঁধে দিলো।মধু একটা টু শব্দও করে নি।শুধু ফ্ল্যাশলাইটের উজ্জ্বল আলোতে একটা সরল মুখশ্রীর একটা ছেলেকে দেখতে লাগলো।ছেলেটার মুখে একটা আশ্চর্য হাসি আছে।যেটা সবাইকে মুগ্ধ করতে যথেষ্ট।সাথে চাপ দাড়ি আর মোচ ফুল প্যাকেজ।সব মিলিয়ে এতো সুন্দর লাগছিলো মধুর!যে এক মুহুর্তের জন্য ও সবকিছু ভুলে গেছিলো।ইয়াদের ডাকে মধুর হুশ এলো।ইয়াদ বলল”আপনার বাসা কোথায়?”

“আরাগনগরের ২ নম্বর গলি।মহসিন ভিলা।”

“ওহ!তাই।কতো তলায়?”

“চারতলায়।”

“ওহ,আচ্ছা।আমি তিনতলায়।আজই আসলাম ওই বাসায়।চলুন আপনাকে দিয়ে আসি।”

ইয়াদ পিছনে আর মধু সামনে হাটতে লাগলো।বাসার সামনে আসতেই ইয়াদ বলল”এবার আপনি চলে যান।”

ইয়াদ এটা বলে চলে যেতে নিলেই মধু পেছন থেকে ডেকে বলল”ধন্যবাদ।”

“এসব ধন্যবাদের কিছু নেই।আমরা প্রতিবেশী।তাই প্রতিবেশীই প্রতিবেশীর সাহায্য করবে স্বাভাবিক।আপনার বয়সই আমার বোনও আছে তাই এটা আমার কর্তব্য।এখন বাসায় যান।”

মধু সৌজন্যমূলক হেসে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।নিজেদের ফ্ল্যাটের সামনে এসে মধু জ্যাকেট টা কোমর থেকে খুলে ব্যাগে ভরে নিলো।কারণ এটা বাসার কেউ দেখলে অনেক কৈফিয়ত দিতে হবে।এমনিতেই কৈফিয়ত দেওয়াটা মধু পছন্দ করে না।জ্যাকেট টা ব্যাগে ঢুকিয়ে মধু দরজায় নক করলো।দুই মিনিট পর মধুর ছোটো বোন মিলি দরজা খুললো।মধু ভেতরে ঢুকতেই মিলি বলল”আপু তোর পেছনে তো অবস্থা খারাপ।রাস্তা দিয়ে এসেছিস কিভাবে?”

“হেঁটে আসছি।এখন চুপ কর।আম্মু কই?”

“নিচের তলায় গেছে।নতুন ভাড়াটিয়া আসছে ওদের সাথে দেখা করতে।”

“ও,,আচ্ছা।দরজা আটকে দে।আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি।আম্মু আসলে খুলে দিস।”

“আচ্ছা।”

মধু ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে ব্যাগ থেকে জ্যাকেট টা বের করে ওয়াশরুমে গিয়ে রাখলো।আর নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
.
.
জামা কাপড়গুলো ধুয়ে মধু গোসল করে নিলো।ওরা ওগুলো বারান্দায় শুকাতে দিলো।মধুর মা এসে ওর দরজায় নক করা শুরু করলো।মধু চুল ঝারতে ঝারতে দরজা খুললো।আইরিন রহমান বললেন”কি রে কলেজ থেকে এসে এভাবে ঘরে বসে আছিস কেনো?খাওয়া লাগবে না?”

“হ্যাঁ আসছি।মাত্রই গোসল করলাম।”

“তাড়াতাড়ি আয়।”

মধু চুল গুলো তোয়ালে পেচিয়ে বেধে খেতে চলে গেলো।খাওয়া শেষ করে ঘরে এসে এসাইনমেন্ট করতে বসলো।হঠাৎ মনে হলো জনালায় কিছু একটা শব্দ করছে।মধু টেবিল থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দেখলো একটা বাস্কেটে পায়েস আর একটা চিরকুট।মধু ভ্রু কুঁচকে ভাবতে লাগলো।আচ্ছা আমাকে এগুলে পাঠাবে কে?ওপরের তলায় তো কোনো ছেলে থাকে না।নিশি আপুরা থাকে।আপুর তো ভাইও নাই তাহলে এগুলো পাঠাবে কে?মধু বাস্কেট টা হাতে নিয়ে ঘরে নিয়ে আসলো।তারপর বস্কেট থেকে পায়েসের বাটিটা তুলে নিয়ে চিরকুট টা খুললো।
চিরকুটে লিখা ছিলো

“ইয়াদ”
আমি খুশী হয়েছি তুমি এই বাসায় শিফট হয়ে আসছো।এবার আমরা চুটিয়ে প্রেম করবো।তোমার জন্য পায়েস রান্না করছি।খেয়ে জানাবা কেমন হইছে।”

তোমার “নিশি”

পুরো চিটকুট টা পড়ে মধু বুঝতে পারলো কাহিনি কোথায়।নিচতলায় নিশি আপুর বফরা আসছে।এইজন্য নিশি আপু এট পাঠাইছে কিন্তু এটা এসে মধুর জানালায় ফেঁসে গেছে।মধু পায়েসের বাটিটা তুলে খাওয়া শুরু করলো।ওহ!কি টেস্টি।খাওয়া শেষ করে বাটিটা বাস্কেটে রেখে একটা কাগজে লিখলো

“নিশি”

আই লাভ ইউ,অনেক মজা হইছে।এতো ভালো রান্না করো তুমি!আরেকটু পাঠাও প্লিজ!”

তোমার”ইয়াদ”

এটা লিখে পায়েশের বাটি আর চিরকুট টা বাস্কেটে ভরে আবার রশিতে ঝুলিয়ে দিয়ে এলো।হাসতে হাসতে মধুর পেট ব্যাথা করছে।কিন্তু ইয়াদ টা কে?মধু মনে মনে বলল”যে হওয়ার হোক।খালি আমার ক্রাশবয় না হলেই হয়।”

কিন্তু মধু তখনও জানে না তার ক্রাশ বয় এর নামই ইয়াদ।

একটু পর আবার বাস্কেট এসে মধুর জানালায় ফাঁসলো।মধু দাত কেলিয়ে আবার জনালার পাশে গেলো।যখনই বাস্কেট টা হাতে নিতে যাবে তখন এটা নিচে নামা শুরু করলো মধু তড়িঘড়ি করে নিতে যেয়েও পারলো না এটা নিচে চলে গেলো।মধু রশিটা ধরে টান ছে কিন্তু আসছে না।নিচ থেকে কেউ যেনো ওটা ধরে রেখেছে।

চলবে….

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০২
#Arshi_Ayat

অনেক টানাটানি করেও মধু পায়েসের বাটিটা ওপরে তুলতে পারলো না।তারপর দড়িটা ছেড়ে আফসোসের স্বরে বলল”ইশ,আরেকটু তাড়াতাড়ি ধরলে পায়েসটা খেতে পারতাম।কি ইয়াম্মি ছিলো!থাক বেশি লোভ করা ভালো না।”মধু নিজেকে এসব স্বান্তনা দিয়ে পড়তে বসলো।

আধঘন্টা পড়ার পর মিলি এসে বলল”আপু,আম্মু তোকে ডাকছে।”

“কেনো?”

“আমি জানি না।তোকে যেতে বলছে।”

মধু টেবিল থেকে উঠে মায়ের কাছে গেলো।আইরিন রহমান খাটে বসে আছেন।মধু গিয়ে ওনার সামনে দাড়ালো।আইরিন রহমান বললেন”তোর নাকি আজকে অর্ধবার্ষিকীর রেজাল্ট দিয়েছে।মার্কশীট কই?”

মধুর পিলে চমকে উঠলো।একটা বড় ঢোক গিলে ঠোঁট কামড়াতে লাগলো।আইরিন বেগম ধমক দিয়ে বললেন”যা তাড়াতাড়ি নিয়ে আয়।”

মধু মায়ের রুম থেকে নিজের রুমে যেতে যেতে ভাবতে লাগলো এখন কি করবে?যদি মা একবার মার্কশীট দেখে তাহলে ‘মধু তু তো গেয়া’
মধু ভেবে কুল পাচ্ছে না কি করবে।ম্যাথ,পদার্থ,রসায়ন,জীববিজ্ঞান সবগুলোতে ফেল করেছে কিন্তু বাংলা তে টেনেটুনে পাশ উঠেছে।মধু নিজের রুম থেকে মার্কশীট টা এনে কাঁপা কাঁপা হাতে মায়ের হাতে দিলো।আইরিম রহমান মার্কশীট দেখে পাঁচ মিনিট চুপ ছিলেন।তারপর বললেন”পিঠে বস্তা বেধে আয়।আজকে তোকে মেরে আমি বেত ভাঙবো।”

মধু ভয়ে কেঁদেই ফেলল।মধুর কান্না দেখে আইরিন রহমান আর বেত নিলেন না কিন্তু কড়া গলায় বললেন”এইগুলো কি করেছিস?দুইটা কোচিংএ পড়িস তবুও রেজাল্টের এই অবস্থা কেনো?সবগুলো সাবজেক্ট ফেল করেছিস।”

এবার মিলি আইরিন রহমানের কথায় বাম হাত ঢুকিয়ে বলল”আম্মু সব সাবজেক্টে না বাংলায় তো পাশ করেছে।”

মিলির কথায় আইরিন রহমান ঘর কাপিয়ে ধমক দিয়ে বলল”এগুলো পাশে ছিরি?ওমন পাশ না পড়েও করা যায়।বাংলা খাতায় ক,খ লিখলেই পাশ মার্ক তোলা যায়।”
আইরিন রহমান ইচ্ছামতো বকছে আর মধু মাথা নিচু করে চুপচাপ শুনছে।একঘন্টার বয়ানের পর আইরিন রহমান বললেন”এখন ঘরে যা।আর মনে রাখিস ইন্টারে যদি খারাপ করিস তাহলে সোজা ধরে রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।”
মধু মার্কশীট টা নিয়ে রুমে চলে এলো।তারপর আবার পড়তে বসলো।এবার যে করেই হোক ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।তা নাহলে মান ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে।
————————
সূর্যের আলো বরাবর হয়ে মধুর চোখেমুখে লাগছে।মধু চোখমুখ কুঁচকে ফেললো তারপর আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে উঠে বসলো।তারপর উঠে গিয়ে ব্রাশ মুখে দিয়ে কিচেনে গেলো।আইরিন রহমান মধুকে দেখে বলল”পরীক্ষায় ফেল করেও লজ্জা হয় না সাতটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকিস।”তারপর বিশটাকার নোট হাতে দিয়ে বলল”ডিম শেষ হয়ে গেছে।দুটো ডিম নিয়ে আয়।তাড়াতাড়ি যা মিলি স্কুলে যাবে।”

মধু ঘরে এসে ওড়না টা মাথায় দিয়ে ব্রাশটা মুখে ঢুকিয়ে বেরিয়ে পড়লো।বাসার নিচে একটা মুদি দোকান আছে।কিছু লাগলেই ওইখান থেকে নেওয়া যায়।মধু দোকানের সামনে এসে বলল”আনোয়ার চাচা দুইটা ডিম দেন।”

দোকানদার মধুকে দুইটা ডিম দিলো আর মধু টাকা দিয়ে সামনে ঘুরতেই কালকে সন্ধ্যায় যে ছেলেটা ওকে বাঁচিয়েছিলো তাকে দেখতে পেলো।জগিং স্যুট পরা,কানে হেডফোন,কপাল দিয়ে দরদরিয়ে ঘান পরছে।ওহ!দেখতে কি কিউট লাগছে।মধু ভেবেছিলো গিয়ে কথা বলবে কিন্তু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে বলল’ছিঃএভাবে গেলে ছেলেটা তো তোর দিকে তাকাবেই না মধু।একদম ফকিন্নি লাগছে তোকে।থাক কথা বলার দরকার নেই কেটে পড়।”
ইয়াদ দূরে থাকা অবস্থায়ই মধু সুন্দর করে কেটে পড়লো।অথচ দূর থেকে ইয়াদ হাত নাড়িয়ে দাড়াতে বলল কিন্তু মধু সেটা দেখতে পেলো না এমম আচরণে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল”মেয়েটা আমাকে ইগনোর করলো কেনো?”নাকি অন্যকোনো কারণ!ইয়াদ অতো না ভেবে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।নাস্তা করে ভার্সিটিতে যেতে হবে।
———————
মধু নাস্তা করে বেরিয়ে যেতে নিলেই ওর মা বলল”মধু,এই নে ক্ষীর আর পায়েসটা তিনতলায় নতুন ভাড়াটিয়াদের দিয়ে আয়।”

“কেনো?”

“নতুন কেউ আসলে দিতে হয়।তাছাড়া আমরা প্রতিবেশী।তাই ভালোমন্দ রান্না করলে দেওয়া উচিত।”

মধু মায়ের হাত থেকে বাটিটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।তিনতলায় এসে কলিং বেল চাপলো।একটু পর কেউ একজন দরজা খুললো।মধু সামনে তাকাতেই দেখলো তার ক্রাশ বয় দাড়িয়ে আছে।মধু উত্তেজনার চোটে কিছু বলতেও পারছে না।তবুও কষ্ট করে বলল”মা পাঠিয়েছে।”

ইয়াদ মধুর হাত থেকে বাটিটা নিতে গিয়ে ওর হাত মধুর হাতে টাচ লাগলে ইয়াদ দ্রুত সরিয়ে বাটিটা নিয়ে ঘরে দিয়ে আসলো।আর এদিকে মধু লজ্জায় লাল,নীল,বেগুনী,হলুদ হতে লাগলো।আর ইয়াদ আসার আগেই চলে গেলো।কারণ আরো কতক্ষণ দাড়ালে বোধহয় মধু একবারে মাটিতে মিশেই যাবে।
ইয়াদ বাটিটা ফিরিয়ে দিতে আসলো কিন্তু দরজায় কেউ নেই।ওমা!গেলো কোথায়!ইয়াদ বাটিটা আবার ঘরে রেখে এসে নিজের ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
——————-
আজও আরিয়া নেই।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।মধু কোচিং থেকে বেরিয়ে ভাবতে লাগলো কি করা যায়!আজও যদি কালকের মতো কিছু হয়!মধু হাটতে হাটতে ওই রাস্তাটায় পৌঁছে গেলো।কিন্তু আজ কোনো ছেলে নেই আশেপাশে।মধু আল্লাহর নাম নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।আর মনেমনে বলল আরিয়া যতোদিন না আসে ততদিনে সে কোচিং এ যাবে না।
মোটামুটি জোরে হাটার ফলে তাড়াতাড়ি চলে আসলো মধু আর আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যাও হয় নি!
বাসায় এসে প্রতিদিনের মতো ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো।কিন্তু পড়ায় মন বসছে না কালকের মতো আজও যদি কিছু খাবার পাওয়া যায়!ইশ!সেইজন্য মধু জানালার কাছে এসে বসলো।এমনিতে বাসায় মা পায়েস,ক্ষীর রান্না করেছে কিন্তু এভাবে খাওয়ার মজাটাই আলাদা।অপেক্ষা করতে করতে সেই কাঙ্ক্ষিত সময়টা চলে এসেছে।মধু খেয়াল করলো একটা ঝুড়ি আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামছে।মধু খপ করে ধরে ফেললো।তারপর ঝুড়িটা ঘরে নিয়ে এলো।আজকে পিঠা!তাও পুলি পিঠা!মধু জিহ্বা দিয়া ঠোঁট চেটে বলল”এখন থেকে এই খাবার আমার।”মধু চিরকুট টা নিয়ে খুললো চিরকুটে লিখা ছিলো

“ইয়াদ”
আমি তোমার সাথে রাগ করেছি।তুমি আমার একটা ফোনও ধরো নাই।কিন্তু তবুও অনেক কষ্ট করে তোমার জন্য বানাইছি।বইলো কেমন হইছে।”

তোমার”নিশি”

মধু চিরকুট টা পড়ে আরেকটা কাগজে লিখলো

“নিশি”

আ’ম সরি সোনা।আসলে অনেক বিজি ছিলাম তো তাই।রাগ করে না পাখি।আর পিঠাগুলো অনেক মজা হইছে।আরো কয়েকটা দিও।”

তোমার”ইয়াদ”

চিরকুটটা ভাজ করে পিঠাগুলো খেয়ে প্লেট আর চিরকুট ঝুড়িতে রেখে আবার দড়িতে ঝুলিয়ে দিয়ে আসলো।
হঠাৎ মনে পড়লো বারান্দায় ছেলেটার জ্যাকেট টা শুকাতে দিয়েছিলো।সেটা আছে কি না!নাকি মা দেখে ফেলেছে।মধু দৌড় চলে গেলো বারান্দায়।গিয়ে দেখে জ্যাকেট টা ওখানেই আছে।মধু জ্যাকেট টা হাতে নিয়ে ঘরে চলে আসলো।আর জ্যাকেট টা একটা শপিং ব্যাগে ভরে রাখলো।তারপর মায়ের কাছে গিয়ে বলল”আম্মু,পায়েসের আর ক্ষীরের বাটিটা নিয়ে আসি?”

“কাল সকালে গিয়ে নিয়ে আসিস।এখন ওপরে গিয়ে নিশির মা’কে বল আমি ডাকছি।”

“আচ্ছা।”
এটা বলে মধু শপিং ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।নিশিদের বাসায় গিয়ে নিশির আম্মুকে ডেকে তারপর এই জ্যাকেট টা তিনতলায় গিয়ে ছেলেটাকে দিয়ে আসবে।মধু নিশিদের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দরজা নক করলো।দরজা খুললো নিশি।নিশিকে দেখে মধু বলল”আপু,আন্টিকে একটু ডাকবে?আম্মু আন্টিকে ডাকছে।”

“আচ্ছা তুমি ঘরে আসো।”নিশির কথায় মধু ঘরে গেলো।নিশির মা নিচে গেলো আর মধুকে নিশি নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।টেবিলের ওপর তার লেখা দুটি চিরকুট পড়ে আছে।মধু ইনোসেন্ট ফেস করে বলল” আপু,এগুলে কি?”

নিশি চিরকুট টা গুলো লুকিয়ে বলল”আরে এগুলো আমার বান্ধবীর!”

“ও” মখে কিছু না বললেও মধু মনেমনে হাসলো।তারপর নিশির সাথে হালকা কথা বলে তিনতলায় চলে গেলো।যখনই দরজা নক করতে যাবে তখনই মনে হলো কেউ একজন আছে মধু ঘুরতেই দেখলো ওর ক্রাশবয় দাঁড়িয়ে আছে।মধু আমতা আমতা করতে করতে বলল”আপনার কাছেই এসেছিলাম।”

“কেনো?”

মধু শপিং ব্যাগটা ইয়াদের দিকে বাড়িয়ে ধরলো।ইয়াদ নিজের জ্যাকেট টা দেখে আবার মধুর হাতে দিয়ে বলল

“আমি যে জিনিস একবার দিয়ে দেই সেটা আর ফেরত নেই না।আর যদি কারো থেকে কিছু নেই সেটাও ফেরত দেই না।”

চলবে……

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_30 (Last part)
#writer_Fatema_Khan

সকাল থেকেই একদন্ড বসার সময় পাইনি।তাহসিন ভাইয়ার সব কাজ আমি,মা আর আম্মু সামলাচ্ছি।তেমন একটা মহিলা না থাকায় আমাদেরই করতে হচ্ছে।এছাড়া গেস্টরাও করছে টুকটাক।সকালেই আমরা চলে এসেছি তনিমা আপু সোফায় বসে সব দেখছে।তার নড়াচড়া একদম মানা রাসেল ভাইয়ার আদেশ।তাই সেও নড়ছে না সোফায় বসেই দেখছে।একটু পর বরযাত্রী বের হয়ে যাবে।উপরে আরিশ আর তূর্য ভাইয়া তাহসিন ভাইয়াকে তৈরি করছে।আজ এসব দেখে নিজের বিয়ের কথা মনে পরে যাচ্ছে বারবার।কি একটা অবস্থায় বিয়ে হয়েছিল আমার।ভালোবাসতাম না এই মিস্টার অসভ্য নামক লোকটাকে।কিন্তু আজ এই মিস্টার অসভ্য নামক লোকটাকে ছাড়া আমার চলেই না।১৬ বছরের একটা কিশোরী থেকে এখন ১৮বছরের যুবতী আমি।ভালোবাসা কি সেটা বুঝি এখন।তখন অল্পতেই বড্ড মন খারাপ হতো অভিমান হতো।এখন জীবনে এতো কিছু দেখে বুঝে গেছি প্রতিটা মুহূর্ত খুব ইম্পর্ট্যান্ট এগুলো হারিয়ে যেতে দেয়া নিছক বোকামি ছাড়া কিছুই না।

__________________________________

জারাকে তার কাজিনরা একটা রুমে বসালো।সাদা পাতলা কাপড়ের একপাশে জারা আরেকপাশে তাহসিন ভাইয়া।লাল রঙের বেনারসি শাড়ি সাথে সোনার গয়না ভারি মেকাপ অপুর্ব লাগছে জারাকে।তাহসিন ভাইয়াকে অনেক সুন্দর লাগছে।

কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন প্রথমে জারাকে কবুল বলতে বলা হলো,জারা তিনবার কবুল বলার পর তাহসিন ভাইয়াকে বলতে বললে সে একপলক আমার দিকে তাকিয়ে তিনবার কবুল বলে ফেললো।তারপর সাইন করে বিয়ে সম্পন্ন হলো।তারপর দুইজনকে স্টেজে নিয়ে পাশাপাশি বসানো হলো।অনেকক্ষণ ফটো তোলা হলো বর-বউয়ের।আমরাও সবাই তাদের সাথে ছবি তুললাম।তারপর আসলো বিদায়ের পালা।জারা তার মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করতে থাকলো।আর আমি আমার বিদায়ের সময় অভিমান করে চলে আসছিলাম।জারা আর তাহসিন ভাইয়ার গাড়ি ছেড়ে দিলো,উদ্দেশ্য এক নতুন ভালোবাসার গল্পের সূচনা।

আরিশঃকি হলো আমাদের বিয়ের কথা মনে পরছে বুঝি

তাহিয়াঃ হুম।অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই তোমাকে পেয়েছিলাম আমি।

_________________________________

তাহসিনঃআচ্ছা বাবা আর কান্না করো না তো।তোমার চোখের পানিতে সব মেকাপ চলে যাচ্ছে আর তোমার যে পেত্নী মার্কা চেহারা আছে ওইটা সামনে এসে যাচ্ছে।

জারাঃকিহ আমার চেহারা পেত্নীর মত(কান্না থামিয়ে রেগে বললো)

তাহসিনঃসে তুমি মানো আর না মানো তুমি তো দেখতে পেত্নীর মত।এখন বাবা যখন তোমার সাথে আমার বিয়ে দিয়েই তাহলে এই পেত্নী মার্কা চেহারাটা আমিই দেখি আর কাউকে দেখাইও না

জারাঃকি আমি পেত্নী,আমার চেহারা পেত্নীর মত(বলেই তাহসিনের বুকে মারতে শুরু করলো)

তাহসিনঃ হুম পেত্নীই তো।আমার পেত্নী,তাহলে এই পেত্নী রূপটা অন্য কেউ দেখবে কেনো এটা তো শুধু আমার অধিকার(জারাকে জড়িয়ে ধরে)

জারাঃ হুম এই পেত্নীটাকে সারাজীবন আগলে রাখতে হবে বলে দিলাম।একটুও কষ্ট দিলে ঘাড় মটকে দিবে(জারাও তাহসিনকে জড়িয়ে ধরলো আর তাহসিন জোরে হেসে উঠলো)

জারাঃকি একটা অবস্থা আস্তে হাসুন ড্রাইভার চাচা কি ভাববে

তাহসিনঃএটাই ভাববে যে আমি বিয়ে করে পাগল হয়ে গেছি

জারাঃএটা ভাবার কি আছে আগে থেকেই পাগল ছিলেন

তাহসিনঃতাই নাকি

জারাঃ হুম

তাহসিনঃআচ্ছা তাহলে আজ পাগলের পাগলামি দেখবে,দেখতে প্রস্তুত তো মিসেস তাহসিন আহমেদ(ঠোঁটে বাকা হাসির রেখা টেনে আর জারা তার কথার মানে বুঝতে পেরে লজ্জায় চুপসে গেলো)

__________________________________

আরিশঃতূর্য এইদিকে শোন না ভাই

তূর্যঃকি বল

আরিশঃআসলে হয়ে কি মা বাবা চলে গেছে অনেক আগেই।আর এখন আমি তাহিয়াকে নিয়ে বের হবো তুই যদি রোজাকে একটু বাসায় পৌছে দিয়ে আসতি ভালো হতো

তূর্যঃঠিক আছে,ওকে বল তারাতাড়ি আসতে।আমি গাড়ির কাছে অপেক্ষা করছি।আর মা বাবা,তনিমা আর রাসেল চলে গেছে একটু আগে তুই তাহিয়াকে তারাতাড়ি দিয়ে আসিস

আরিশঃজ্বি দিয়ে আসবো আর কিছু বড় ভাই।

তূর্যঃ না আমি আসছি(তারপর সে চলে গেলো)

আরিশঃআমার বউয়ের সাথে সারারাত থাকবো না দিয়ে আসবো সেটা তোকে বলতে হবে শালা,তারাতাড়ি দিয়ে আসিস

তাহিয়াঃতুমি তো আমাকে বলো কোথায় যাবো

আরিশঃআরে বোকা বউ আমার তোমার ভাইয়ে সেটিং করাতে পাঠালাম বুঝলে

তাহিয়াঃ তার মানে রোজার সাথে ভাইয়ার

আরিশঃ হুম সোনা।এখন চলো

_________________________________

(নির্জন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে।পাশাপাশি দুইটি মানুষ থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।হঠাৎ একটা ব্রিজের ওপর এনে গাড়িতে ব্রেক করলো তূর্য)

রোজাঃকি হলো গাড়ি থামালে কেনো?

(তূর্য কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে রোজাকে নামালো)

রোজাঃএ কি ধরনের অসভ্যতা।আর এভাবে রাস্তায় গাড়ি থামিয়েছো কেনো,আমি বাসায় যাবো চলো

তূর্যঃরোজা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে

রোজাঃআমাদের মধ্যে এখন কোনো কথা থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়না,কারণ সবটা তুমি নিজেই শেষ করে দিয়েছো

তূর্যঃএই মেয়ে আমার চোখের দিকে তাকাও আর বলো আমায় এখন আর ভালোবাসো না

রোজাঃবাসি না

তূর্যঃআমার দিকে তাকিয়ে বলো(দুইগালে হাত দিয়ে আর সাথে সাথেই রোজার চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে)

রোজাঃকেনো করলে এমন আমার সাথে,একটুও কষ্ট লাগে নি যে মেয়েটা তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসে তাকে এভাবে কষ্ট দিতে

তূর্যঃসরি জান,আর কখনো এমন হবে না।তোমার কি মনে হয় আমি খুব সুখে ছিলাম ওই সময়টাতে।বাসায় যেতাম না সারাদিন বাইরে বাইরেই থাকতাম।(রোজাকে জড়িয়ে ধরে)

রোজাঃআর কখনো দূরে যাবে না তো

তূর্যঃযতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন না।অনেক ভালোবাসি তোমায়

রোজাঃ #সত্যি_ভালোবাসো আমায় এতোখানি

তূর্যঃ হুম সত্যি ভালোবাসি।

রোজাঃআমিও খুব ভালোবাসি

(তারপর তূর্য রোজার কপালে ঠোঁট ছোয়ালো)

________________________________

(রাসেলের বুকে মাথা গুজে শুয়ে আছে তনিমা।)

তনিমাঃআচ্ছা আমাদের সাথে এমন কেনো হলো।আমরা কত কিছু ভেবেছিলাম বেবিকে নিয়ে।ও কি ওর মাম্মা আর পাপার কথা একবারের জন্যও ভাবে নি।কিভাবে স্বার্থপরের মত আমাদের ছেড়ে চলে গেলো(কাদতে কাদতে)

রাসেলঃএমন করে বলো না,আমাদের বেবি উপর থেকে সব শুনতে পাচ্ছে।তুমি যদি এভাবে বলো ওর তো কত কষ্ট হবে বলো।

তনিমাঃ সত্যি সে আমাদের দেখতে পাচ্ছে।তাহলে তার মাম্মা যে কষ্ট পাচ্ছে তা দেখতে পাচ্ছে না

রাসেলঃহয়েছে আর কান্না করে না আবার আরেকটা বেবি নিবো আমরা কিন্তু এখন না তুমি একটু সুস্থ হও তারপর।আর কান্না করলে কিন্তু খুব রাগ করবো(চোখের পানি মুছে দিয়ে)

তনিমাঃতুমি আমার উপর রেগে নেই

রাসেলঃকেনো

তনিমাঃআমার জন্যই তো এমন হলো।তোমার কত শখ ছিলো একটা রাজকন্যার সব আমার বাচ্চামোর জন্য শেষ হয়ে গেলো

রাসেলঃএখানে তোমার কি দোষ বলো,তুমিও তো কত এক্সাইটেড ছিলা নিজের রাজপুত্র নিয়ে।আসলে যা আমাদের কপালে থাকে না তা নিয়ে আফসোস করতে নেই।আর তুমি এভাবে ভেঙে পরলে আমার কত কষ্ট হয় তুমি বুঝতে পারো না

তনিমাঃতুমি আমাকে এতোটা #সত্যি_ভালোবাসো

রাসেলঃ হুম অনেক যা তোমার ভাবনার বাইরে।বাঁচতে পারবো না তোমায় এভাবে দেখে

তনিমাঃআমিও যে খুব ভালোবাসি তোমাকে(তারপর দুইজন জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো)

__________________________________

(বাসর ঘরে ফুল দিয়ে সাজানো খাটের মাঝ বরাবর বসে আছে জারা।মনে ভয় ও লজ্জা দুটোই যেনো তাকে ঘিরে ধরেছে।তখনই তাহসিন দরজা খুলে ভিতরে আসলো।জারাকে দেখে এক ভুবন ভুলানো মিষ্টি হাসি দিলো।যা জারার মনে ভালোবাসার ঢেউ খেলাতে সক্ষম।)

তাহসিনঃতুমি এখনো চেঞ্জ করো নি।

জারাঃ হুম করছি

তাহসিনঃ ওকে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি বরং অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি।

জারাঃঠিক আছে

(প্রায় ৩০মিনিট পর জারা ওয়াশরুম থেকে গোসল সেরে বের হলো।তাহসিন বিছানায় বসে মোবাইল দেখছিলো।জারাকে দেখে উঠে দাঁড়ায়)

তাহসিনঃএকি গোসল করলে যে

জারাঃআসলে খুব টায়ার্ড লাগছিলো তাই

তাহসিনঃঅহহ চলো

জারাঃকোথায়

তাহসিনঃচলো তো(জারার হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে গেলো।তারপর জারাকে দোলনায় বসালো,তাহসিনও জারার পাশে বসলো)

তাহসিনঃআজ আমাদের দুইজনের জন্য খুব স্পেশাল রাত।তাই আমি আর তুমি সারারাত এইখানে বসে চাঁদ দেখবো আর মনের যত কথা আছে সব বলবো।

জারাঃআপনি আমার পাশে থাকলে আমি সারাজীবন এভাবে কাটাতে রাজি আছি

তাহসিনঃকেনো,আমি তো তোমাকে কখনো খুশি করি নি আমার কথায়।সবসময় কিভাবে আমার থেকে দূরে ঠেলে দিবো সে চিন্তায় ছিলাম

জারাঃআমি যে ভালোবাসি আপনাকে।আর দূরে ঠেলে দেয়ার চিন্তায় ছিলেন দূরে ঠেলে দিতে পেরেছেন কি?দূরে ঠেলে দিলেও আমি যেতাম না ঠিক পিছনে চলে আসতাম

তাহসিনঃতুমি আমাকে #সত্যি_ভালোবাসো এতোটা আমি ভাবতেই পারিনি

জারাঃ হুম এতোটাই ভালোবাসি কেনো আপনি বাসেন না

তাহসিনঃতোমাকে ভালো না বেসে থাকা যায়

(তারপর দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরলো আর তাদের ভালোবাসার স্বীকারোক্তির স্বাক্ষী রইল চাঁদ)

________________________________

আরিশ আর তাহিয়া হাত ধরে রাস্তায় হাটছে।কিছুদূর একটা নদী আছে।তারা সেখান গিয়ে নদীর পাড়ে বসে।

আরিশঃআজ চাঁদটা কেমন জোৎস্না ছড়াচ্ছে তাই না

তাহিয়াঃ হুম।

আরিশঃএকটা কথা বলবো?

তাহিয়াঃজিজ্ঞেস করার কি আছে তুমি বলো

আরিশঃআমাকে কখনো অবিশ্বাস করো না,অবিশ্বাস করে দূরে ঠেলে দিও না।তাহলে আমি মরে যাবো

তাহিয়াঃকখনোই না।যে ভুল একবার করেছি তা আর দ্বিতীয় বার করার ভুল করবো না।

আরিশঃতাই

তাহিয়াঃ হুম।আগে তোমার সব কথা শুনবো তুমি কি বলতে চাও

আরিশঃঅনেক ভালোবাসি তোমায় তুমি ভুল বুঝলে আমার কত কষ্ট হয় তুমি জানো

তাহিয়াঃআমায় ক্ষমা করে দাও আর কখনো তোমাকে ভুল বুঝবো না

আরিশঃ #সত্যি_ভালোবাসো তো আমায়

তাহিয়াঃ সত্যি অনেক ভালোবাসি,নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি

আরিশঃআমিও

এমনি ভালো থাকুক সবাই তাদের ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে।সবাই এই চার জুটির জন্য দোয়া করবেন।

(সমাপ্ত)

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-২৮+২৯

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_28
#writer_Fatema_Khan

গাড়িতে হঠাৎ রেজোয়ান হোসেন তূর্য ভাইয়াকে বলে উঠলো-

রেজোয়ানঃআচ্ছা তূর্য এই ছেলেটা কে?একে তো আগে দেখি নি,নতুন ড্রাইভার রেখছো নাকি?

আমি তাকালাম না কিন্তু তূর্য ভাইয়া বিষম খেলো রেজোয়ানের কথা শুনে।তারপর বললো-

তূর্যঃ হুম নতুন রেখেছি।আগে যেটা ছিলো তাকে তো আরিশ চিনে তাই রিস্ক নেই নি।

রেজোয়ানঃএটা একটা ভালো কাজ করেছো।ওই আরিশের কোনো ভরসা নেই।আচ্ছা এই ড্রাইভার তুমি কি এয়ারপোর্টের রাস্তা চেনো না এইদিকে কেনো নিচ্ছো?

তূর্যঃআসলে আমিই বলেছি অন্য রাস্তা দিয়ে নিতে যাতে আরিশ টের না পায়।

রেজোয়ানঃঅহ আচ্ছা।তাহলে ঠিক আছে

তারপর আর কোনো কথা হলো না।আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে কান্না করেই যাচ্ছি।প্রায় ৩০মিনিট পর গাড়ি ব্রেক করলো।আমার বুক কেপে উঠলো ভয়ে এই বুঝি সব শেষ হয়ে যাবে।একে একে সবাই বাইরে নেমে গেলো আমি ভয়ে নামছি না।আর কেউ নামাতেও আসছে না।বাইরে রেজোয়ান হোসেনের আওয়াজ আসছে কি যেনো বলছে।আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে বাইরের দিকে আবার তাকালাম,তাকিয়ে দেখি এটা তো এয়ারপোর্ট না।তাহলে কোথায় আমরা?তারাতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।

_________________________________

আফসানা রহমান সেন্সলেস হয়ে আছেন কাল রাত হতেই।মাঝে একবার সেন্স আসলেও আবার সেন্স হারান তিনি।নীলিমা খান আর তনিমা তার কাছেই বসে আছে।নিচে ড্রয়িং রুমে আরমান,রায়হান,আবির বসে আছে তাদের মুখে চিন্তার রেশ পরে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো।

রায়হানঃআরমান তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

আবিরঃ হুম কোনো চিন্তা করো না,ওরা তিনজন তো আছেই ওরা সামলে নিবে সবটা।

আরমানঃকি করে শান্ত হবো,আমার ছেলেটার মনটা ছোট থেকে বিষিয়ে রেখেছে ওই রেজোয়ান।তাকে নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধু মনে করতাম তাই ভালো পথে আনতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সে কি করলো আমার স্ত্রীকে মেরে ফেললো আর আমরা সারাজীবন এই ভুল ধারণা নিয়ে আছি যে সে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছে।তূর্য তো সব মানিয়ে নিয়েছিলো আর ওই রেজোয়ান আমার ছেলেটার মাথায় প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে রেখেছিলো।

আবিরঃএখন সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি বরং আবার ডাক্তারকে একটা কল দাও ভাবির জ্ঞান ফিরানো দরকার।

রায়হানঃহ্যা সেটাই এখন যা হবার হয়ে গেছে,ভাবির চিন্তা করো তুমি।

_________________________________

বাইরে বের হয়ে দেখি আমরা একটা পুরোনো বিল্ডিং এর সামনে।আর তূর্য ভাইয়া ও রেজোয়ান হোসেন ভিতরে যাচ্ছে।ওরা কোথায় যাচ্ছে আর আমরা তো এয়ারপোর্টে যাবার কথা ছিলো তাহলে এখানে কেনো।আমার ভাবনার মাঝেই কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকলো-

তাহসিনঃকিরে বাইরে দাড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরেও যাবি।চল

তাহিয়াঃভাইয়া তুমি এখানে কেনো,তুমি তারাতাড়ি চলে যাও না হয় তোমাকে মেরে দিবে ওরা

তাহসিনঃযাওয়ার জন্য বুঝি গাড়ি চালিয়ে এতো দূর নিয়ে এলাম তোদের

তাহিয়াঃতাহলে তুমি গাড়ি চালাচ্ছিলে তাই তখন রেজোয়ান হোসেন বলছিলো তুমি নতুন ড্রাইভার কিনা।কিন্তু সে তোমাকে চিনলো না কেনো

তাহসিনঃকারণ সে এর আগে আমাকে দেখে নি বুঝলি বোকা মেয়ে চল এখন

তাহিয়াঃ ওকে চলো

(তারপর দুইজনে ভিতরে যাই।দোতলা একটা বিল্ডিং আমরা সিড়ি দিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলাম।ওইখানে গিয়ে দেখি তূর্য ভাইয়া রেজোয়ান হোসেন আর আরিশ দাঁড়িয়ে আছে।আমি আরিশকে দেখে ছুটে আরিশের কাছে যাই,সে আমার দিকে একপলক তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো।আমার চোখ দিয়ে আবার পানি গড়িয়ে পরলো।)

আরিশঃআপনি কি ভেবেছেন মিস্টার রেজোয়ান আমি সবকিছু জানা সত্ত্বেও আমার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে দিবো।কখনোই না

রেজোয়ানঃকিভাবে করলে এসব।আমি সবসময় তোমার পিছনে লোক লাগিয়ে রেখেছি।তোমার প্রতিটি পদক্ষেপের খবর আমি পেতাম।

আরিশঃ হুম সেটা ঠিক আমি নিজে বের হয়ে কিছুই করতে পারি নি কিন্তু সবকিছু তাহসিন করেছে।বাকিটা আজ তূর্য ও তাহসিন করলো

রেজোয়ানঃতূর্য তূমি আমাকে ধোকা দিলে কেনো?

তাহসিনঃআমি বলি।যেদিন তূর্য ফিরে এলো ওর হাতে আঘাত ছিলো,কিন্তু তূর্য আর তাহিয়ার কথায় বুঝতে পারছিলাম ওরা মিথ্যা বলছে।সেখান থেকে আসার পথে আরিশ আমাকে কল দেয় আর দেখা করতে বলে।আমরা দেখা করলে আরিশ আমাকে সব খুলে বলে।তখন থেকেই আমি আড়ালে থেকে সব করি।আর আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ ছিলো তূর্যের চোখ থেকে পর্দা সরিয়ে সত্যিটা ওর সামনে তুলে ধরা।সে সুযোগ টা কাল রাতে আমি পাই যখন তূর্য ভাইয়া তাহিয়াকে আপনার কাছে রেখে যাচ্ছিলো তখন তূর্য ভাইয়ার কথা শুনে বুঝছিলাম যে সে তাহিয়াকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আপনার প্ররোচনায় এমনটা করছে।তাই যখন ভাইয়া চলে যাচ্ছিলো তখন ভাইয়ার সামনে আমি যাই আর ভাইয়াকে আটকে দিয়ে বলি আমার কিছু কথা আছে ভাইয়ার সাথে।তূর্য ভাইয়া আমাকে দেখে খুব চমকে যায় সেখানে আমাকে দেখবে আশা করে নি।তারপর ভাইয়াকে বুঝিয়ে আবার আপনি আর তাহিয়া যেই রুমে ছিলেন সেই রুমের কাছে গিয়ে আড়াল থেকে সব শুনি।আর সবকিছুই আমি রেকর্ড করে রাখি।

তূর্যঃআমার মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়লো কার কথায় নিজের আদরের বোনকে পাচার করে দিচ্ছিলাম আমি যে কিনা আমার মাকে খুন করেছে(কান্না করতে করতে,ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসলো)আমাকে ক্ষমা করে বোন ছোট থেকে এই লোকটার কথায় সবার থেকে দূরে দূরে থেকেছি কিন্তু কারো প্রতি ভালোবাসা কমে নি।তারপরও মায়ের মৃত্যু মানতে পারি নি তাই যারা আমাকে এতো ভালোবাসে তাদেরকে আজ সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম।

তাহিয়াঃভাইয়া আমি জানি তুমি আমাদের অনেক ভালোবাসো।আর আমি কিচ্ছু মনে করি নি।তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই তো বড় কথা,এখন এই লোকটাকে শাস্তি দিতে পারলেই হবে।(বলেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম)

তূর্যঃআর ওইদিন আরিশের কোনো দোষ ছিলো না

তাহিয়াঃজানি আমি ভাইয়া(আরিশের দিকে তাকিয়ে দেখি সে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে মানে আমার উপর অভিমান করে আছে)

রেজোয়ানঃ তোমরা চিন্তা করো না আমার লোকেরা এখন এসে তোমাদের সবকটাকে মেরে দিবে।আর আমাকে নিয়ে যাবে

তাহসিনঃএকটু মিসটেক

রেজোয়ানঃমানে

আরিশঃমানে হলো যারা তোমাদের পিছনের গাড়িতে ছিলো তারা কেউ তোমার লোক না রেজোয়ান হোসেন ওরা সবাই পুলিশ।

রেজোয়ানঃতাহলে আমার লোক কোথায়

তাহসিনঃকোথায় আবার সবগুলোকে কাল রাতেই পুলিশ নিয়ে গেছে

রেজোয়ানঃএতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা আমার সাথে তূর্য তুই কি করে করতে পারলি।আর আমিও কিভাবে তোকে বিশ্বাস করে নিলাম তুই তো সেই আরমানের ছেলে যে কিনা আমার সাথে এক সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো

তূর্যঃভুল বাবা শুধু আপনাকে ভালো পথে আনতে চেয়েছিলো কিন্তু আপনি তাকে শত্রু বানিয়ে নিয়েছেন।

আরিশঃতাহসিন পুলিশকে কল করো উপরে আসতে আর এই জঘন্য লোকটাকে নিয়ে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে।যাতে আর কোন মা বোনদের এই লোকটা পাচার করতে না পারে।

তাহসিন ভাইয়া পুলিশকে কল দিলো উপরে আসার জন্য।আমি এখনো তূর্য ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আছি।ঠিক তখনই একটা বিকট শব্দে আমরা ঘুরে তাকাই।যা দেখি আমরা উপস্থিত সবাই থমকে যাই।আরিশ নিচে পরে আছেন।তার সাদা শার্ট ভিজে লাল হয়ে আছে।আমি এক চিৎকারে আরিশের কাছে গেলাম।

রেজোয়ানঃতুই কি ভেবেছিস আমার সব প্ল্যান ভেস্তে দিবি আর আমি যাবার আগে এমনি ছেড়ে দিবো তোকে।কখনো না।তোকে মারতে পেরেছি এটাই শান্তি আমার।

আমি আরিশের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে আছি।কোনো অনুভুতি কাজ করছে না আমার কি করবো।আমার একটু ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি দিবে আমায়।তুমি বলেছিলে #সত্যি_ভালোবাসো আমাকে তাহলে কেনো আজ সব মিথ্যা করে দিচ্ছো।আরিশের উপর ঢলে পরলাম আর কিছু মনে নেই কি হলো তারপর।জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি। মা(নীলিমা) আর আম্মু আমার পাশে বসে আছে।তনিমা আপু সামনে সোফায় বসে আছে।আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম-

তাহিয়াঃমা আরিশ কোথায়?

নীলিমাঃওর অবস্থা তেমন একটা ভালো না।অপারেশন চলছে ওর।

আমি মার কথা শুনে বেড থেকে উঠে চলে গেলাম বাইরে।কারো বাধা মানছি না আমি।গিয়ে দাড়ালাম অপারেশন থিয়েটারের সামনে।বাইরে বাবা,আব্বু,আবির আংকেল,তাহসিন,রাসেল ভাইয়া,জারা ও জারার মা-বাবা দাঁড়িয়ে আছে।একজন নার্স বাইরে এলে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি আরিশের কি অবস্থা।।

নার্সঃদেখুন পেশেন্ট এর অবস্থা খুব খারাপ আপনারা দোয়া করুন।মনে হয়না বাঁচবে

আমি নিচে বসে পড়লাম তার কথা শুনে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_29
#writer_Fatema_Khan

আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।চোখ মেলে বাইরে তাকিয়ে দেখি বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার।উঠে নামাজ পড়ে নিলাম।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি।স্বচ্ছ আকাশ ধীরে ধীরে রস্তিম বর্ণ ধারণ করছে।পুরোপুরি সূর্যদয় হয়ে গেছে।এ যেন এক নতুন দিনের আগমনের সাথে সাথে যেনো সবার জীবনেও নতুন কিছুর আগমন ঘটে।দূরের এক কৃষ্ণচূড়া গাছে একটি কোকিল ডাকছে।এই কোকিলকে দেখে খুব হিংসে হচ্ছে আজ।জানিনা কেনো এমনটা হচ্ছে কিন্তু খুব হিংসে হচ্ছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের ভিতরে চলে আসি।রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা তনিমা আপুর রুমে চলে যাই।আমি আমাদের বাড়িতে আছি।ওই বাড়ি থেকে এসেছি তিনদিন হলো।আপু সোফায় বসে আছে।আপুর পাশে গিয়ে বসি।হঠাৎ আপুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই,আপুও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের পানি বিসর্জন দেয়।

তাহিয়াঃআপু এমন কেনো হলো,সবকিছু এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।কেনো ও চলে গেলো আমাদের ছেড়ে।এমন না হয়ে সবকিছু অন্যরকম হতে পারতো।

তনিমাঃআমাদের হাতে কিছু থাকে না।যা থাকে সবকিছু আল্লাহর হাতে।আমরা চাইলেও ফিরিয়ে আনতে পারবো না,যে চলে যাবার সে চলে গেছে।

তাহিয়াঃরাসেল ভাইয়া কোথায়?

তনিমাঃঅফিসে গেছে এই কয়দিন অনেক দৌড়াদৌড়ির উপর ছিলো তাই যেতে পারে নি।আজ কিছু ফরেইনার ক্লাইন্ট আসবে তাই যেতে হলো।

তাহিয়াঃঅহহ।আমি তাহলে যাই তুমি তাহলে রেস্ট নাও।

তনিমাঃঠিক আছে যা।আর আজ তাহসিন আর জারার গায়ে হলুদ মনে আছে তো

তাহিয়াঃ হুম মনে আছে,তুমি যাবে না

তনিমাঃনা আমি যাবো না এই অবস্থায়।আর গেলে রাসেল খুব বকবে।তোরা যা আর তাহসিনকে আমার শুভকামনা জানাতে ভুলিস না।আর ওর সাথে মোবাইলে কথা তো হবেই

তাহিয়াঃআচ্ছা তাহলে আমি যাই

__________________________________

বিকালে আমরা সবাই তাহসিনের বাড়িতে গেলাম।একসাথে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে।আমাদের উপর এতো কিছু হয়ে যাবার ফলে ওরা ডেট আরও পরে নেয়ার কথা বলেছিলো কিন্তু আমরাই মানা করে দিয়েছি।কলাপাতা রঙের শাড়ি পরেছে সব মেয়েরা তাই আমিও পরেছি।আর ছেলেরা সেইম কালারের পাঞ্জাবি।তাহসিনকে কোনো রাজপুত্রের চেয়ে কম লাগছে না।কাচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরেছে।খুব মানিয়েছে।জারাকেও পুরো রাজকন্যা লাগছে খুব সুন্দর লাগছে ওকে।তাহসিনের সাথে ম্যাচিং লেহেঙ্গা পরেছে।আমার ভাবনার মাঝেই তূর্য ভাইয়া বলে উঠলো-

তূর্যঃআরিশের বাড়ি থেকে কেউ এখনো আসে নি কেনো একটা কল দিয়ে দেখ তো

তাহিয়াঃআচ্ছা ভাইয়া আমি কল করছি।(বলেই এক কোণায় এসে মোবাইল বের করলাম কল দেয়ার জন্য।ঠিক তখনই কেউ আমার হাত টেনে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে আসলো।আর ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।সে আমার গলায় মুখ ডুবালো। একমুহূর্তে খুব ভয় পেয়ে গেলেও পরমুহূর্তেই পরিচিত সুগন্ধে বুঝতে বাকি রইল না সামনে থাকা ব্যাক্তিটি কে।আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ সে।)

তাহিয়াঃকোথায় ছিলে এতোক্ষন আমি অপেক্ষা করছিলাম তো

আরিশঃরাগ হয়েছে বুঝি আমার বউয়ের

তাহিয়াঃতা নয়তো কি(অভিমানী কন্ঠে)

আরিশঃএই দেখো কানে ধরছি আর কখনো দেরি হবে না।

তাহিয়াঃতুমি জানো না তোমার থেকে একমুহূর্ত দূরে থাকতে পার না আমি তাহলে কেনো দেরি করে আসলে

আরিশঃআর কখনো হবে না বউ(আমাকে জড়িয়ে ধরে)

অতীত,,,,,,

অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছি আমি।এখনো লাল বাতি জ্বলছে।মনে হচ্ছে এক ছুটে আরিশের কাছে চলে যাই।চোখের পানি এখন আর ঝরছে না তারাও হয়তোবা শুকিয়ে গেছে।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলে আমরা সবাই তাকে ঘিরে ধরি।

রায়হানঃডাক্তার আমার ছেলে কেমন আছে?

ডাক্তারঃগুলি টা বুকে লাগাতে অনেক কমপ্লিকেটেড হয়ে গেছিলো প্লাস অনেক রক্ত ক্ষরণ হওয়ার ফলে আমরা রুগির বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।এখন উনি আশংকা মুক্ত।

তাহিয়াঃআমি দেখা করতে পারি আরিশের সাথে

ডাক্তারঃজ্ঞান না ফিরা অবদি কেউ দেখা করতে পারবে না।জ্ঞান ফিরলে আপনারা সবাই দেখা করতে পারবেন।

ছয় ঘন্টা পর আরিশের জ্ঞান ফিরে আসে।একে একে সবাই আরিশের সাথে দেখা করেছে।কিন্তু আমি যাচ্ছি না।কেমন অপরাধবোধ কাজ করছে।কি করে তাকে ভুল বুঝলাম।আবার না দেখেও থাকতে পারছি না।তাই অনেক ভেবে ভিতরে গেলাম।আরিশ চোখ বন্ধ করে আছে।আমি ভিতরে আসছি টের পাইনি হয়তো।না হয় এতোক্ষনে চোখ খুলে তাকাতো একবার হলেও।

আরিশঃএই সময় হলো তোমার আমার কাছে আসার।এই ভালোবাসো আমাকে

তাহিয়াঃআসলে আ আমি

আরিশঃআ আমি কি,তোতলানো বন্ধ করে সোজা কথা বলতে পারো না

তাহিয়াঃআমাকে দেখে কেমন রিএক্ট করবে তাই আসতে ভয় করছিলো

আরিশঃকেনো রিএক্ট করবো

তাহিয়াঃআমি তোমার সাথে এমন করেছিলাম,ভুল বুঝেছি,তোমার কোন কথা না শুনেই সবকিছু বিচার করেছি তাই

আরিশঃএমন করাটাই কি স্বাভাবিক ছিলো না।তূর্য তোমার ভাই তাকে যদি কেউ আঘাত করে তুমি তার বিরুদ্ধে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না।

(আমি আরিশকে জড়িয়ে ধরি আরিশও আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।আমি সত্যিই ভাগ্যবতী যে আরিশের মত স্বামী পেয়েছি)

আরিশঃআচ্ছা রেজোয়ান হোসেনের কি হলো?

তাহিয়াঃওনাকে জেলে নিয়ে গেছে।আর ওনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরিশঃঅহ ভালোই হলো

(দুইদিন আরিশকে হসপিটাল থাকতে হলো।তারপর আমরা আরিশকে বাসায় নিয়ে এলাম।সবার সেবা-যত্নে এখন সে অনেকটাই সুস্থ।সবকিছু ঠিক হওয়ার ফলে তাহসিন ভাইয়া আর জারার বিয়ের দিন ফেলা হয় এক সপ্তাহ পরে)

_________________________________

দুইদিন পর,,

রাসেলঃতনিমা তারাতাড়ি ওয়াশরুম থেকে বের হউ।তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আমি অফিস যাবো।

তনিমাঃআসছি তো

রাসেলঃআর পাঁচদিন পরে তো বিয়ে তাই আজ শপিংয়ে যেতে হবে।আজ তো মেয়েদের শপিং সারাদিনে শেষ হবে কিনা আল্লাহ ভালো জানে।

তনিমাঃহয়ে গেছে আমার

(হঠাৎ তনিমা চিৎকার দিয়ে উঠলো। রাসেল ভাইয়া তারাতাড়ি দরজায় কড়া নাড়তে থাকে কিন্তু আপুর কান্নার বেগ বাড়তে থাকায় রাসেল ভাইয়া দরজা ভেঙে ফেলে।আর ভিতরে আপুকে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়।আপুকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হলে জানা যায় আপুর মিসকেরেজ হয়েছে।আপু খুব ভেঙে পরে তাই আপুকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসা হয়।সাথে আমি আর রাসেল ভাইয়াও চলে আসি।এখন আপু অনেকটা সুস্থ কিন্তু কষ্ট তো আর শেষ হয়ে যায় না।)

বর্তমান,,,,

তাহসিনঃআজ আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে

জারাঃথ্যাংকস।আপনাকেও খুব ভালো লাগছে

তাহসিনঃধন্যবাদ(তখন আরিশ আর তাহিয়া তাহসিন আর জারাকে হলুদ পরাতে আসলো)

তাহিয়াঃতাহসিন ভাইয়া আজ থেকে কিন্তু তুমি জারার আচলে বেধে গেলে।এখন থেকে জারার কথাই শেষ কথা তোমার কথার কোনো মুল্য নেই বুঝলে।(সবাই হাসলো)

তাহসিনঃসবসময় ভালো থাকিস।তোকে এভাবেই হাসি খুশি দেখতে ভালো লাগে।

জারাঃভাইয়া আপু দোয়া করবে আমাদের জন্য

আরিশঃঅবশ্যই,আমাদের দোয়া সবসময় তোমাদের সাথেই থাকবে

(আমি আর আরিশ হলুদ দিয়ে উঠে আসলাম।তাহসিন ভাইয়া স্টেজ থেকে উঠে গেলো তার পিছনে জারাও উঠে কোথায় যেনো গেলো)

তাহসিনঃভালো থাকো প্রেয়সী ,আমার বাস্তবে তুমি আমার নও কিন্তু আমার দিক থেকে একান্ত ব্যক্তিগত অস্তিত্বে তোমার বসবাস থাকবে চিরকাল।কারণ তোমার স্থান আমি অন্য কাউকে দিতে পারবো না প্রেয়সী।কিন্তু কথা দিলাম জারাকে খুশি রাখবো আর নিজেও সুখি হবো জারার সাথে।তাকে যে আমি একটু হলেও ভালোবাসি।তবে তোমার স্থানটা তোমারই থাকবে।বাকিটা জুড়ে জারা থাকুক।(আকাশের দিকে তাকিয়ে এগুলো বলে চোখের কোণের পানিটুকু মুছে ফেললো,তবে তা জারার দৃষ্টিগোচর হলো না কারণ তাহসিনের পিছনেই জারা ছিলো।)

জারাঃখুব ভালোবাসেন তাই না(কাধে হাত দিয়ে)

তাহসিনঃ হুম অনেক।প্রথম ভালোবাসা নাকি ভুলা যায় না।হয়তো কথাটি সত্যি।কিন্তু আবারও ভালোবাসা যায়।মন থেকে চাইলে বাসা যায়।

জারাঃমানে

তাহসিনঃআপনাকে আমি ভালোবাসি।তাহিয়াকে ভুলা আমার পক্ষে পসিবল না।কিন্তু আপনার সাথে আমি সারাজীবন থাকতে চাই।বৃদ্ধ হতে চাই আপনার সাথে।হবেন কি আমার সাথে

জারাঃ আমিও যে খুব ভালোবাসি আপনাকে।হবো আপনার সাথে আমি সারাজীবন থাকবো।এত্তোগুলো বাচ্চার মা হবো আবার বুড়োও হবো।😊

(তারপর দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরলো)

_________________________________

তূর্য আর আরিশ বসে কথা বলছে।

তূর্যঃতুই একলা এসেছিস,আংকেল আন্টি আসে নি কেনো

আরিশঃকাল বিয়েতে আসবে আর আমি একলা আসি নাই

তূর্যঃতাহলে কে এসেছে তোর সাথে

আরিশঃদাড়া ডাকছি তাকে(মুখে বাকা হাসি দিয়ে)

তূর্যঃকাকে ডাকছিস

আরিশঃসামনে আসলেই দেখতে পাবি।(পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাকে যেনো কল করল আর ওরা যেখানে আছে সেখানে আসতে বললো)

কিছুক্ষণ পর একটা মেয়েলি কন্ঠ বলে উঠলো -ভাইয়া ডাকছিলে আমায়।তূর্যের যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না সে ঠিক শুনছে তো।

আরিশঃ হুম রোজা এইদিকে আয় দেখ কে এসেছে।

তূর্যঃরোজা তুমি(অনেকটা অবাক হয়ে)

রোজাঃ……..

(কিছুক্ষণ পর তাহিয়া সেখানে আসলে সবাই বিভিন্ন কথা বলে।কিন্তু তূর্য আর রোজা একে অপরের সাথে কোনো কথা বলছে না দেখে আরিশ তাহিয়ার হাত ধরে উঠে অন্য সাইডে চলে গেলো।)

তূর্যঃকেমন আছো তুমি

রোজাঃযেমন রেখে চলে এসেছিলে তেমন(রোজা আর তূর্যের আগে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো।যা তূর্য নিজের ভেঙে দেয়।কারণ সে তার অনিশ্চিত জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে চায় নি।তাহিয়াকে কিছু করলে তার জীবন অনিশ্চিত ছিলো।কিন্তু এখন সব ঠিক আছে।)

তূর্যঃএখনো রেগে আছো আমার উপর।সবকিছু কি আগের মত ঠিক করক যায় না

রোজাঃআমার দেরি হচ্ছে, আমাকে যেতে হবে।

তূর্যঃকাল বিয়েতে আসবে তো

রোজাঃবলতে পারছি না(আমাকে যে আসতেই হবে।তোমাকে দেখার তৃষ্ণা কি আমি মিটাতে পারবো না আসলে)

তূর্যঃঅহহ

রোজাঃআচ্ছা আসছি।(আর একমুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে গেলো এখান থেকে)

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-২৬+২৭

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_26 (কিডন্যাপ)
#writer_Fatema_Khan

সবগুলো ক্লাস শেষ করে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে তাহিয়া।অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটা রিক্সাও পেলো না।হঠাৎ তার চোখ গেলো দূরে গাছের দিকে।

তাহিয়াঃওটা আরিশ না,সে এখানে কি করছে?হয়তো আমার সাথে কথা বলতে আসছে।কিন্তু আমি কোনমতেই তাকে ক্ষমা করবো না।আমার ভাইকে গুলি করা।আচ্ছা তাহলে কি আরিশ ভাইয়াকে এতোদিন আটকে রেখেছিলো।কারো সাথে ফোনে কথা বলছে কিন্তু একবারও এদিকে তাকাচ্ছে না।তাহলে কি অন্য কাজে আসছে।যা ইচ্ছা করুক আমার কি।

(তখনই একটা গাড়ি আসলো আর আরিশ গাড়িতে করে চলে গেলো।আরিশ চোখের আড়াল হয়েছে বেশ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।একটা রিক্সাও নেই।এমন সময় আমার পিছন দিক থেকে কে যেনো আমার মুখে কিছু একটা চেপে ধরলো।তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।)

_________________________________

রেজোয়ানঃহ্যালো,কাজ হয়েছে

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃহয়ে গেছে।আপনি অপেক্ষা করুন আমি আসছি তাকে নিয়ে।

রেজোয়ানঃআমার এতোবছরের প্রতিশোধ পূর্ণ হতে যাচ্ছে।

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃআমারও।আজ সবকিছুর বদলা নিবো আমি।

রেজোয়ানঃতারাতাড়ি এসো সবকিছু খুব জলদি করতে হবে।

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃরাখছি আমি তাহিয়া কে নিয়ে আসছি।

_________________________________

আফসানাঃহ্যালো তূর্য (কান্না করতে করতে)

তূর্যঃহ্যা মা বলো

আফসানাঃতাহিয়া এখনো বাসায় ফিরে নি বাবা

তূর্যঃকি বলছো মা ও তো বললো একলা চলে যেতে পারবে।আচ্ছা তুমি কান্না করো না আমি দেখছি।কোথায় গেলো

________________________________

নীলিমাঃআরিশ তুই কোথায়

আরিশঃকেনো কি হয়েছে বলো

নীলিমাঃতাহিয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না।

আরিশঃঅহ আচ্ছা

নীলিমাঃতুই এমন স্বাভাবিক কি করে।তোর একটু চিন্তা হচ্ছে না।

আরিশঃমানে হ্যা কোথায় গেছে কে জানে।

নীলিমাঃতো ওকে খুঁজে বের কর

আরিশঃ হুম দেখছি(কল কেটে দিলো)

________________________________

আরিশঃসব ঠিক মত হচ্ছে তুমি কোথায়

…………

আরিশঃআমিও আসছি।

………..

__________________________________

অন্ধকার একটা রুমে রাখা হয়েছে আমাকে।জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে এই অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করি।বুঝতে পারছি যে আমার হাত পা একটা চেয়ারের সাথে বাধা।মুখও কাপড় দিয়ে বাধা।কোথায় আছি বুঝতে পারছি না।অনেক ভয় করছে কি হতে চলছে আমার সাথে।গলা শুকিয়ে আসছে এই মূহুর্তে একটু পানি পান করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তারও উপায় নেই।হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে ওইদিকে তাকালে চোখে আলো পরার সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।বুঝতে পারছি একটা পুরুষ অবয়ব আমার দিকে এগিয়ে আসছে,লোকটিকে আমার বড্ড চেনা লাগছিলো কোথাও দেখেছি মনে হয়।লোকটা রুমের লাইট জ্বালালে আমি তাকে দেখে পুরো অবাক

রেজোয়ানঃকি হলো তাহিয়া খুব অবাক হচ্ছো
বুঝি।আমিই তোমাকে এখানে এনেছি।দাড়াও তোমার মুখের বাধনটা খুলে দেই(আমার মুখের বাধন খুলতে খুলতে)

তাহিয়াঃআপনি আমাকে এখানে কেনো এনেছেন আর এভাবে বেধে রেখেছেন কেনো

রেজোয়ানঃকেনো তোমার বাবা মানে ওই বিশ্বাসঘাতক আরমান কিছু বলে নি তোমাদের আমাকে নিয়ে

তাহিয়াঃ হুম কিন্তু আমাকে কেনো তুলে এনেছেন

রেজোয়ানঃ কেনো বলতো,অহ হ্যা তুমি তো জানোই আমি কিসের কাজ করি

তাহিয়াঃআপনি আরিশদের বিজনেস পার্টনার
ছিলেন

রেজোয়ানঃওইটা তো আছেই যেটার জন্য তোমার বাবা আমার জীবন শেষ করে দিলো সেটার কথা বলছি

তাহিয়াঃনারী পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত আপনি

রেজোয়ানঃকিন্তু এখন আর জড়িত নই নারীপাচার চক্রের লিডার আমি।আর কাল তোমাকে দুবাই নিয়ে পাচার করে দিবো

তাহিয়াঃমানে কি এসবের আমাকে ছাড়ুন,আমি বাসায় যাবো

রেজোয়ানঃতা বললে তো হচ্ছে না ২০বছরের প্রতিশোধের আগুন নিভানোর সময় হয়েছে আর তা আমার হাতের মুঠোয় তুমি বলছো যেতে দিতে।

তাহিয়াঃআপনি জানেন না আপনার কি হাল করবে আরিশ,তাহসিন ভাইয়া আর তূর্য ভাইয়া।যখন জানতে পারবে আপনি নিজেও ধারণা করতে পারবেন না কি হবে আপনার।

রেজোয়ানঃকেউ জানলে তো।

তাহিয়াঃএতোক্ষণে সবাই আমাকে পাগলের মত খুজতেছে।পেয়েও যাবে দেখে নিবেন।

রেজোয়ানঃতাই নাকি।

তাহিয়াঃ হুম আমাকে আজ রাতের মধেই নিয়ে যাবে।

রেজোয়ানঃআচ্ছা দেখা যাবে।

__________________________________

আরিশ সিড়ি দিয়ে নিজের রুমে যাবার পথে নীলিমা তার পথ আটকে ধরে বলে-

নীলিমাঃকি হয়েছে আরিশ তুই এমন হয়ে গেছিস কেনো

আরিশঃকেমন মা আমি তো ঠিক আছি।

নীলিমাঃমেয়েটাকে সারাদিন পাওয়া যাচ্ছে না আর তুই কিনা বাসায় চলে এলি আর তোকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি

আরিশঃআমি খুজতেছি মা।

নীলিমাঃতাহলে মেয়েটা কই

আরিশঃ আমার খুব টায়ার্ড লাগছে আমি রুমে যাচ্ছি খাবার পাঠিয়ে দিও আমি খেয়ে ঘুমাবো(বলেই চলে গেলো উপরে)

নীলিমাঃসবাই মেয়েটার জন্য পাগল প্রায় আর এ কিনা ঘুমাতে গেলো।

________________________________

রেজোয়ানঃতুমি কোথায়?

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃআমি একটু বাসায় আসছি কেনো কোনো ঝামেলা করে নি তো?

রেজোয়ানঃআরে না ভাবলাম তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই তাই আর কি

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃআমি রাতে আসবো,এখন আমার এখানে থাকতে হবে।

রেজোয়ানঃঠিক আছে রাখছি তাহলে।আর তারাতাড়ি এসো কিন্তু।

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃ হুম

________________________________

রাত ২ঃ০০ টা,,,

তাহিয়া চেয়ারে বাধা অবস্থায় ঘুমিয়ে রয়েছে।হঠাৎ রেজোয়ানের কন্ঠে তাহিয়ার ঘুম ভেঙে যায়।

রেজোয়ানঃআরে মামনি ঘুমিয়ে ছিলে নাকি।

তাহিয়াঃকি চাই

রেজোয়ানঃআমার আবার কি চাই,সব পেয়ে গেছি বাকিটা কাল দুবাই গেলেই পেয়ে যাবো।তোমাকে কিছু দেখানোর আছে।যে তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে তাকে দেখতে চাও না।

তাহিয়াঃকে সে?

রেজোয়ানঃতাকে দেখতে প্রস্তুত তো।অনেক বড় সারপ্রাইজ কিন্তু এটা তোমার জন্য।

তাহিয়াঃআর কি সারপ্রাইজ বাকি আছে(তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে)

রেজোয়ানঃআচ্ছা দেখো তাহলে,কই রুমের ভিতরে এসো।

(একটা ছায়া ধিরে ধিরে আমার কাছে আসতে থাকলো।সারাদিন কিছু না খাওয়ার ফলে দূূর্বল লাগছে তাই আবছা দেখতে পাচ্ছি।সামনে আসতেই আমি অবাক।এটা তো মাস্কপরা ব্যাক্তি।লোকটাকে কেমন চেনা চেনা লাগছে।কে হতে পারে)

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃআমাকে চেনার চেষ্টা করা হচ্ছে বুঝি।

তার কন্ঠস্বরকে চিনতে আমার একমুহূর্তও সময় লাগে নি।সাথে সাথে বলে উঠলাম-

তাহিয়াঃতুমি

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_27 #রহস্য_উন্মোচন
#writer_Fatema_Khan

সামনে থাকা মানুষটির কন্ঠ শুনে যেনো আমি পাথর হয়ে গেছি।আমি ঠিক শুনতে পেয়েছি নাকি কোনো ভুল হচ্ছে আমার।না না ভুল হবে কেনো সে তো সামনে দাড়িয়ে আছে শুধু মুখোশ খোলার অপেক্ষা।কিভাবে ভালোবাসায় মানুষগুলো মুখোশ পরে থাকে।যাদের আমরা এতো ভালোবাসি তারাই পিছন দিক থেকে ছুরি মারে।

“কি হলো এখনো চেনা যায়নি বুঝি আমাকে”

তাহিয়াঃতূর্য ভাইয়া তুমি

তূর্যঃফাইনালি চিনতে পারলি আমাকে।

তাহিয়াঃকেনো এমন করছো ভাইয়া

তূর্যঃতোরা আমার সবকিছু শেষ করে দিয়ে এখন বলছিস এমন করছি কেনো?

রেজোয়ানঃআহা এতো হাইপার হচ্ছো কেনো এই বেচারি তো কিছু জানেই না।আগে সবটা বলো তারপর তো বুঝবে

তাহিয়াঃকি সত্যি যা আমি জানি না।আমার মনে হয় ভাইয়া এই লোকটা তোমায় ভুল বুঝিয়েছে

তূর্যঃএই লোকটা আছে বলেই আজ আমি আমার প্রতিশোধ নিতে পারবো।

তাহিয়াঃকিসের প্রতিশোধ ভাইয়া

তূর্যঃতাহলে শোন তোর বাবা আর মা কি করেছে আমার মার সাথে

তাহিয়াঃমানে কি ভাইয়া আমরা এক মা বাবার সন্তান তাহলে কোন ধরনের কথা বলছো তুমি আমার মাথায় কিছুই আসছে না।

তূর্যঃআমার তখন সাত বছর তনিমার ছয় কি সাত মাস হবে তখন।আমরা একদিন ঘুরতে গেছিলাম তখন একটা গাড়ি এসে মাকে চাপা দিয়ে যায়।মার স্পট ডেড হয়।আমি তখন ভালো করে কিছুই বুঝি না।আস্তে আস্তে দিন যেতে থাকে আমাদের।বাবা একদিন ওই মহিলা মানে তোর মাকে বিয়ে করে আনে।আমাকে খুব আদর করতো আমিও তাকে মায়ের মতোই দেখতাম।তারপর একবছরের মধ্যে তুই আমাদের মাঝে আসলি।সব ভালোই যাচ্ছিলো।

তাহিয়াঃমানে তুমি আমার আপন ভাইয়া না।

তূর্যঃআপন না হলেও তনিমা থেকে তোকে বেশি আদর করতাম আমি।কিন্তু একদিন আমার সামনে সব সত্যি চলে আসে।

তাহিয়াঃকি সত্যি?

তূর্যঃআমি তখন অনেকটা বুঝি।সিক্স সেভেনে পড়ি হয়তো।একদিন স্কুল থেকে ফিরার পথে রেজোয়ান হোসেনের সাথে আমার দেখা হয়।তিনি আমাকে যা বললেন তা শোনার পর নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারি নি আমি।কিন্তু সব চিন্তা করে দেখলাম রেজোয়ান হোসেন সত্যি কথা বলছে।

তাহিয়াঃকি এমন কথা যে এই জঘন্য লোকটা বলেছে আর তুমি বিশ্বাস করে নিয়েছো

তূর্যঃআমার মাকে আরমান রহমান আর তার কলেজ লাইফের প্রেমিকা আফসানা রহমান প্ল্যান করে মেরে ফেলেছে।আর রেজোয়ান হোসেনের কথা সত্যি ছিলো কারণ এর আগেও মা বেঁচে থাকতে আমি শুনেছি তারা একসাথে পড়তো আর আমাদের বাসায়ও কয়েকবার এসেছে।আমার মাকে মেরে ফেলেছে তারা কি করে তাদের ছেড়ে দেই।তখন রেজোয়ান হোসেন আমাকে বুদ্ধি দেয় যে সবকিছু যেভাবে চলছে সেভাবেই যেনো চলে।আর তুই বড় হলে তোকে ওনার হাতে তুলে দিতে তাহলে ওনার প্রতিশোধও পূর্ণ হবে আর আমারও।কিন্তু আমি তোকে নারীপাচার চক্রের হাতে দিতে চাইনি খুব ভালোবাসি তোকে তাই মেরে ফেলার চেষ্টা করেছি কিন্তু প্রতিবার ব্যার্থ হই।আজ আমার কাজ শেষ কাল তুই চলে যাবি সবাই সারাজীবন কষ্ট পাবে তোর কথা ভেবে।(চোখের পানি মুছতে মুছতে)

তাহিয়াঃআর তুমি

তূর্যঃআমি,আমি তো খুব খুশি থাকবো

তাহিয়াঃবারবার গলা ধরে আসছে কেনো,কষ্ট হচ্ছে তাইনা।নিজের বোনকে এভাবে দেখে।শুধু জেদের বশে পরে এমন করছো তুমি।

তূর্যঃকোন কষ্ট হচ্ছে না আজ আমার আনন্দের দিন

তাহিয়াঃতাহলে আনন্দ কই?এই লোকটা তোমাকে ভুল বুঝিয়েছে আমাদের উপর এর রাগের কারণে তোমাকে হাতিয়ার বানিয়েছে।

রেজোয়ানঃতূর্য তুমি যাও।কাল আমাকে যেতে হবে।তাই এখন তুমি বাসায় ফিরে যাও কাল সকালে আসতে হবে।

তূর্যঃঠিক আছে।ওকে কিছু খাবিয়ে দিবেন সকাল থেকে কিছুই খায়নি।(যাবার আগে একবার তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো)

_________________________________

রেজোয়ানঃএই নাও খেয়ে নাও।(হাতের বাধন খুলতে খুলতে)

তাহিয়াঃভালোই প্ল্যান করেছেন এক ঢিলেই সব পাখি একসাথে তাইনা

রেজোয়ানঃতোমাকে আমি বোকা ভাবতাম,কিন্তু তুমি তূর্য থেকে অনেক বুদ্ধিমতি।কি করে ধরে ফেললে সব আমার প্ল্যান।একটা কথা জানো

তাহিয়াঃকিহ

রেজোয়ানঃআরমানের প্রথম স্ত্রী মানে তূর্যের মাকে আমিই মেরেছি।আস্তে আস্তে সবাই কে মারার প্ল্যান তৈরি করলাম।কিন্তু না পরে ভাবলাম মেরে ফেললে আর প্রতিশোধ পূর্ণ হবে কমনে।তাই ভাবলাম বাচিয়ে রেখে প্রতিদিন মারবো।তূর্য তো বোনের শোকেই মরে যাবে,মেয়ের পরিনতি আর ছেলের জীবনের কথা ভেবে আরমানও শেষ হয়ে যাবে।(বলেই উচ্চস্বরে ঘর কাপিয়ে হেসে উঠলো)

(পালাতে হবে না হলে সবার ভুল বুঝাবুঝি র‍য়ে যাবে)

রেজোয়ানঃখেয়ে নাও তারাতাড়ি।আর একটা কথা জানো ওই আরিশ বড্ড চালাক।ঠিক সবকিছু ধরে ফেলেছে।তূর্যকেও আটকে রেখেছিলো দুইদিন।তূর্য পালানোর চেষ্টা করলে ওদের মাঝে মারামারি হয় একপর্যায়ে ভুলে গুলি গিয়ে পরে তূর্যের উপর।আর আমার কাজ আরও সহজ করে দাও তুমি ওইখানে গিয়ে।আরিশকে ভুল বুঝে তূর্যের সাথে চলে এসে।এখন তূর্যকে ফাসিয়ে আমি চলে যাবো দুবাই।তোমার মা বাবা তো এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে।মেয়ে পাচার হয়ে যাবে,একমাত্র ছেলে জেলে থাকবে।আমার প্রতিশোধ পূর্ণ হবে।মাঝখানে তূর্য জানতেই পারবে না আসলে সবকিছুর পিছনে আমিই ছিলাম।

তাহিয়াঃছিঃআপনি এতো নিকৃষ্ট একজন মানুষ।

রেজোয়ানঃএতো হাইপার হয়ে যেও না।খেয়ে ঘুমিয়ে পরো সকালে তূর্য আসলেই বের হতে হবে।

(আমার খাওয়া শেষ হলে আমার হাত আবার বেধে রেজোয়ান রুম থেকে চলে যায়)

_________________________________

সকালে রুমের দরজা খোলার খটখট শব্দে ঘুম থেকে উঠে পরি।সামনে ভাইয়াকে দেখি।বুঝতে পারি যাবার সময় হয়ে গেছে।ভাইয়া কি একটুও বুঝতে পারবে না যে সে ভুল করছে।ভাইয়া আমার হাত পায়ের বাধন খুলছে আর আমার দাগ পরে যাওয়া স্থানে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

তাহিয়াঃভাইয়া খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা।তবু্ও কেনো বুঝতে পারিস না যেটা করছো তুমি সেটা ভুল।

(ভাইয়া কোনো কথ বললো না।তাই আমিও চুপ হয়ে গেলাম।)

রেজোয়ানঃহয়েছে তূর্য,হলে তারাতাড়ি চলো

তূর্যঃ হুম হয়ে গেছে চলুন।

আমরা তিনজন একটা গাড়ির সামনে দাড়াই।আরও একটি গাড়ি আছে।সাথে তিন চারজন ভাড়াটে গুন্ডা হয়তো।আমাকে একটা গাড়িতে উঠানো হলো।সামনে তূর্য ভাইয়া আর ড্রাইভার,পিছনে আমি আর রেজোয়ান হোসেন।গাড়ি যাচ্ছে এয়ারপোর্টের দিকে।আমার চোখের পানি যেনো আজ সব বাধ ভেঙে পরছে।অঝোর ধারায় বইছে।তখনই রেজোয়ান হোসেন বলে উঠলো—

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-২৪+২৫

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_24 (দুরত্ব)
#writer_Fatema_Khan

আকাশ ভেঙে পড়লো আমার মাথায় যাকে নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসি সে আজ আমার ভাইকে মারতে চায়।কিন্তু কেনো?

আরিশঃতাহিয়া তুমি ভুল বুঝছো।তুমি যা দেখছো তা সম্পূর্ণ ভুল।আমি ইচ্ছে করে এমনটা করি নাই।

তাহিয়াঃতাহলে কিভাবে হলো,তোমার হাতে পিস্তল ভাইয়ার হাতে রক্ত।বলো কিভাবে?

তূর্যঃতাহিয়া আরিশ আমাকে এতোদিন আটকে রেখেছিলো যানিনা কেনো,কিন্তু আজ যখন আমি পালানোর চেষ্টা করি তখনই আরিশ এসে আমাকে গুলি করে।

আরিশঃ তূর্য একদম মিথ্যা বলবি না(কলার ধরে)

তাহিয়াঃআমার ভাইকে ছাড়ো(আরিশ আর তূর্যকে ছাড়াতে ছাড়াতে)

তাহিয়া তূর্যকে ছাড়িয়ে আরিশকে এক থাপ্পড় মেরে বলে-

তাহিয়াঃআমার ভাইয়ের গায়ে আর একটা আঘাত করেছো তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।ভুলে যাবো আমি তুমি আমার কে হও,আমি তোমাকে ভালোবাসি।

আরিশঃতুমি পাগল হয়ে গেছো,কি সব বলছো তুমি!

তাহিয়াঃআমি একদম ঠিক বলছি মিস্টার আরিশ খান।দূরে থাকবেন আমার থেকে এবং আমার ফেমিলি থেকে।

আরিশঃতাহিয়া তুমি আমার কথা শুনো।

তাহিয়াঃআমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না।যা নিজের চোখে দেখেছি তাই যথেষ্ট।(চোখের পানি মুছে)

তূর্যঃ তারাতাড়ি চল বোন না হলে এই আরিশ তোকে মারতেও এক মূহুর্ত ভাববে না।

আরিশঃতাহিয়া প্লিজ বউ তুমি আমার কথাটা শুনো তারপর না হয় চলে যেও।

তাহিয়াঃআপনার ওই নোংরা মুখে আমাকে বউ বলবেন না।আমার থেকে দূরে থাকুন।

(তাহিয়া আরিশের কোনো কথা না শুনে তূর্যকে নিয়ে চলে গেলো)

_____________________________________

দুইদিন ধরে তার কোনো খবর নেই।আমি যে তাকে কল করে যাচ্ছি মোবাইলটাও বন্ধ করে রেখেছে।আমি যে পরশু বাংলাদেশ যাবো তার সেদিকে কোনো খেয়াল আছে।(রেজোয়ান রুমে পায়চারি করে নিজেই বলছে এসব।তখনই তার মোবাইলে কল আসে)

রেজোয়ানঃহ্যালো(গম্ভীর হয়ে)

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃহ্যালো।আসলে……

রেজোয়ানঃআসলে নকলে শুনতে আসি নাই আমি।এই দুইদিন কই ছিলা তুমি?আর তোমার মোবাইল বন্ধ ছিলো কেনো?

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃঅনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেছে।

রেজোয়ানঃকিহ ঝামেলা?

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃসে অনেক কিছু জেনে গেছে,আর আমি এইজন্যই এই দুইদিন আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নাই।

রেজোয়ানঃতাহলে এখন

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃআমাদের খুব সাবধান থাকতে হবে এই দুই-তিন দিন।

রেজোয়ানঃ হুম বুঝলাম

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃপরশু আপনি আসলে আমরা কাজ শেষ করে পরেরদিন প্রথম ফ্লাইটে আপনি দুবাই চলে যাবেন।বাংলাদেশে থাকা খুব রিস্ক হয়ে যাবে।

রেজোয়ানঃঠিক আছে এখন রাখছি।তুমি সাবধানে থেকো।

__________________________________

কেনো করলে তুমি এমনটা আমার সাথে? আমি তো ভালোবেসেছি মন থেকে।নিজের মন প্রাণে শুধু তোমার নাম এতো ভালোবাসার পরও তুমি আমার ভাইয়ের সাথে এমনটা কিভাবে করলে।সবকিছু এতোই তুচ্ছ তোমার কাছে।

আফসানাঃতাহিয়া দরজা খোল মা কি হয়েছে মাকে তো বল(দরজায় নক করে)

তাহিয়াঃকিছু হয়নি মা।

আফসানাঃতুই দরজা খোল আগে

(তাহিয়া দরজা খুলে দিলো)

আফসানাঃএবার বল কি হলো আরিশের সাথে জগড়া হয়েছে।আর তূর্যকে কোথায় পেলি।

তাহিয়াঃকিছু হয়নি মা।ভাইয়া এসেছে তো তাই ভাবলাম কয়দিন থেকে যাই।

আফসানাঃভালো করছিস।কিন্তু ছেলেটার হাতে ব্যান্ডেজ কেনো?তূর্য ঘুমিয়ে গেছে না হলে ওকেই জিজ্ঞেস করতাম

তাহিয়াঃজানিনা মা,ভাইয়ার তো এমনই ছিলো। হয়তো ব্যাথা পেয়েছে।

আফসানাঃঅহ কই ছিলো এই কয়দিন কিছুই বললো না।আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পড়।

তাহিয়াঃআচ্ছা মা।

(তারপর আফসানা চলে গেলেন)

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_25 #কিস
#writer_Fatema_Khan

পরের দিন সকালে তাহসিন ও আবির আহমেদ,নীলিমা ও রায়হান খান,তনিমা ও রাসেল তূর্যের ফিরে আসার কথা শুনে তাকে দেখতে আসে।সবাই আসলেও আরিশ আসে নি।সবাই তূর্যকে নিয়ে খুব চিন্তিত।

রায়হানঃকি করে হলো এসব তূর্য? তোমার হাতের এই অবস্থা কিভাবে?

তূর্যঃআসলে আমার একটা এক্সিডেন্ট হয় তাই আর কি

রায়হানঃঅহ আচ্ছা সাবধানে থাকবে তো নাকি

তূর্যঃজ্বি আংকেল

তাহসিনঃকিন্তু ভাইয়া তুমি তো প্রায় ১৫দিনের মত গায়েব ছিলে কিন্তু তোমার হাতের ঘা দেখে মনে হচ্ছে নতুন ঘা

তূর্যঃআসলে হয়েছে কি কাল আরি……

তাহিয়াঃআহা!কত কথা বলো তোমরা?শুধু কি কথাই বলবে নাকি কিছু খাবেও(তূর্যকে কথা বলতে না দিয়ে)

আফসানাঃহ্যা হ্যা আগে খেয়ে নেও সবাই পরে না হয় সব জানা যাবে।

(তাহিয়া আর তূর্যের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে ওরা কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কি লুকাতে চায় তারা।)

তনিমাঃচল না তাহসিন খাবি তো

(তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া করে বিকালের দিকে চলে যাওয়ার জন্য উঠে পরে)

নীলিমাঃতুই যাবি না মা আমাদের সাথে?

তাহিয়াঃহয়েছে কি ভাইয়া আসছে তাই ভাবছি কিছুদিন থেকে যাই।আর আরিশ জানে আমি থাকবো কিছুদিন

নীলিমাঃঅহহ আচ্ছা সাবধানে থাকিস,তাহলে আসি আমরা (সকলে বিদায় নিয়ে চলে গেলো)

________________________________

“তাহিয়া আর তূর্য কিছু তো মিথ্যা বলছিলো।কিন্তু কেনো?এগুলো ভাবছিলো তখনই তাহসিনের মোবাইলে কল আসে।সে মোবাইল নাম্বার দেখে রিসিভ করে।”

…………..

তাহসিনঃঠিক আছে আমি আসছি।(বলে কল কেটে দিলো)

তাহসিন গাড়ি নিয়ে যাবার সময় জারাকে দেখতে পায়।সে জারাকে দেখে গাড়ি থামায়।দেখে জারার সাথে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।ছেলেটা বারবার জারার হাত ধরছে আর জারা রেগে কিছু একটা বলছে।তাহসিন তা দেখে রেগে গেলো গাড়ি থেকে নেমে ওদের কাছে যায়।

তাহসিনঃকি হয়েছে জারা কোনো সমস্যা

জারাঃআপনি এখানে

তাহসিনঃআপনাকে দেখলাম এখানে তাই আসলাম।উনি কে

জারাঃআসলে ও আমার ফ্রেন্ড বিহান আমরা একসাথে পড়তাম

তাহসিনঃও আচ্ছা

বিহানঃও কে জারা।আর একে এতো কথার জবাব দিতে হবে কেনো তোকে

জারাঃউনি তাহসিন।

বিহানঃতো চল(বলেই জারার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইলো)

জারাঃএ কেমন অসভ্যতা ছাড় আমাকে

তাহসিনঃউনি বলছে না যাবে না তাহলে কেনো হাত ধরে টানাটানি করছেন আপনি

বিহানঃকে আপনি যে আমার আর ওর মাঝে কথা বলছেন

তাহসিনঃআমি ওনার হবু স্বামী। ওনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হইছে

বিহানঃমানে কি

জারাঃকখন থেকে এটাই বলছি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর তুই ভাবছিলি আমি মিথ্যা বলছি।

বিহানঃতোকে তো আমি ভালোবাসি তুই তো আগে থেকেই জানতি তাহলে।

জারাঃকিন্তু আমি বাসি না প্লিজ ঝামেলা করিস না।(বলেই তাহসিনের হাত ধরে সেখান থেকে চলে গেলো)

(তাহসিন জারাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে বললো সন্ধ্যার পর আমি আসবো তৈরি হয়ে থাকবেন।তারপর জারাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো)

জারাঃযাহ বাবা কি লোক রে আমি যাবো কিনা একবারও জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না।

________________________________

তাহসিনঃআমি এসে গেছি কোথায় তুমি

……………

তাহসিনঃকি হয়েছে বলো,এতো আর্জেন্ট ডাকলে যে।

…………

তাহসিনঃআচ্ছা ঠিক আছে আমি সব বুঝতে পেরেছি।তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি তোমার সাথেই আছি।আর আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না সে এমন কিছু করতে পারে।

(তারপর তাহসিন ও ব্যাক্তিটি আর‍ও কিছু কথা বলে চলে গেলো)

___________________________________

তাহসিন আর জারা একটা পার্কে পাশাপাশি হাটছে কিন্তু কেউই কথা বলছে না।তাই তাহসিন বলে উঠলো-

তাহসিনঃবিহানকে তুমি পছন্দ করো

জারাঃও শুধু আমার ফ্রেন্ড এর বেশি কিছু না।

তাহসিনঃঅহ বুঝতে পারছি

জারাঃআমি শুধু একজনকে পছন্দ করি আর সেটা আপনি

তাহসিনঃজানি।কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালোবাসি না

জারাঃবাসেন না বেসে ফেলবেন আর কি।

তাহসিনঃহয়তো

জারাঃতবে আমার না নিজের বাচ্চাদের ফিউচার নিয়ে অনেক চিন্তা হয়

তাহসিনঃকেনো ফিউচার বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তার কি আছে

জারাঃ যে নিরামিষ জামাই কপালে পরছে দেখা যাবে আমার এত্তগুলা কিউউউট বাচ্চাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

তাহসিনঃআমাকে আপনার নিরামিষ মনে হয়।

জারাঃনয়তো কি

“তাহসিন জারার কোমর ধরে হেচকা টান দিলে জারা টাল সামলাতে না পেরে তাহসিনের বুকের উপর পরলো।সাথে একরাশ লজ্জা এসে ভর করলো তার চোখে।”

তাহসিনঃআমার চোখের দিকে তাকান।

“জারা ধীরে ধীরে তাহসিনের চোখের দিকে তাকালে তাহসিন জারার দুগালে হাত রেখে তার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায়।জারা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো।তাহসিন জারার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।জারা তো পুরো শকড কি হচ্ছে কি এটা।অনেকক্ষণ পর তাহসিন জারাকে ছেড়ে দিলো।জারা তো তার দিকে তাকাচ্ছেই না লজ্জায়।তাহসিন জারার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ উপরে উঠিয়ে বললো-

তাহসিনঃআমি নিরামিষ,হুম।
কাল আমার কাজ আছে দেখা হবে না।

জারাঃকোথায় যাবেন?

তাহসিনঃঅনেক বড় কাজ আছে কাল।নিজের খেয়াল রাখবেন ঠিক আছে।

জারাঃআমি বাসায় যাবো

তাহসিনঃআরেকটু থাকি না রোমাঞ্চ করতে ভালোই লাগছে।কি বলেন

জারাঃদেরি হচ্ছে তো(এই লোকটা ইচ্ছে করে আমাকে লজ্জা দিচ্ছে)

(তাহসিন জারাকে বাসায় পৌছে নিজের বাসায় চলে গেলো)

_______________________________

সকালেই তাহিয়া বেড়িয়ে গেছে কলেজের উদ্দেশ্যে।তূর্য তাকে নিয়ে গেছে কলেজে।

তূর্যঃকলেজ শেষ হলে আমি নিতে আসবো।

তাহিয়াঃনা ভাইয়া আমি চলে যাবো তোমার আসতে হবে না।

তূর্যঃঠিক আছে।আর তুই চিন্তা করিস না আমি সব ঠিক করে দিবো।একদম মন খারাপ করবি না।

তাহিয়াঃ হুম

তূর্যঃআরিশ কল দিছে

তাহিয়াঃনা ভাইয়া

তূর্যঃঅহহ আচ্ছা তুই তাহলে ক্লাস করতে যা।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-২২+২৩ (বোনাস পর্ব)

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_22 (তোমাতে_আসক্ত)
#writer_Fatema_Khan

সারাদিনের কাজ শেষ করে গোসল সেরে খেয়ে নিলাম।আরিশ এখনো বাসায় ফিরেনি।এই ছোট্ট বউটিকে তার বুঝি অপেক্ষা করাতেই ভালো লাগে।আমার আর আরিশের একটা ছবি হাতে নিয়ে দেখছিলাম।এটা আমার আর আরিশের বউভাতের ছবি।দেখো এখানেও আমার দিকে তাকাচ্ছে না আর আমি বেহায়ার মত তার দিকেই তাকিয়ে আছি।না তাকিয়ে উপায় আছে আমার বরটাকে যে সেদিন খুব সুন্দর লাগছিলো।শ্যামবর্ণের গায়ের রঙটা যেনো তার জন্যই।তার সবকিছুই আমাকে তার প্রতি আরো আকর্ষিত করে তুলে।সে যেনো আমার কাছে এক নেশার মত।আমি যেনো ‘তোমাতে আসক্ত’ হয়ে পড়ছি।আমার ভাবনার মাঝেই আরিশ রুমে প্রবেশ করে।তার পুরো শরীর ঘেমে আছে।চুলগুলো ঘামে কপালে লেপ্টে আছে।

তাহিয়াঃআরে তুমি কোত্থেকে এলে,আর এতো ঘেমে আছো কেনো,তুমি তো গাড়ি নিয়ে গেছিলে?

আরিশঃআরে আরে থামো বলছি,শ্বাস তো নেও।কত কথা বলো তুমি?এই নাও এটা।

তাহিয়াঃএটা কি?(তার হাতে যে একটা প্যাকেট আছে খেয়ালই করি নি)

আরিশঃদেখো কি আছে(বলেই টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো)

আমি প্যাকেট হাতে নিয়ে বিছানায় বসে আছি।কিছুক্ষণ পর আরিশ বের হয়ে বলে-

আরিশঃ এখনো বের করেও দেখোনি কি আছে।আচ্ছা এক কাজ করো ফ্রেশ হয়ে আসে আগে।

তাহিয়াঃকেনো আমি তো ঠিক আছি

আরিশঃআমি বলেছি তাই যাবে।এখন যাও।

(আমিও চলে গেলাম ওয়াশরুমে।বের হয়ে দেখি আরিশ রুমে নেই।কিন্তু প্যাকেটের উপর একটা চিরকুট আছে।তাতে লেখা আছে তারাতাড়ি করো আমি নিচে গাড়িতে ওয়েট করছি।আমি প্যাকেটটা খুলে দেখি একটা কালো রঙের শাড়ি সাথে ম্যাচিং অর্নামেন্টস।এই মিস্টার অসভ্য নামক লোকটার কালো রং এতো পছন্দ কেনো যেখানে আমার নীল খুব পছন্দ।সবকিছু পরে নিলাম সাথে লিপস্টিক ও চোখে কাজল।ভালোই লাগছে আরিশের ভালো লাগবে তো?তখনই মোবাইলে মেসেজ আসলো।সিন করে দেখি আরিশের মেসেজ।আর কতক্ষণ লাগবে বউ।আরিশের এই বউ ডাকটি যেনো মন ছুয়ে যায়।)

“নিচে এসে দেখি আরিশ গাড়ির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার পরনে কালো কালারের শার্ট কালো জিন্স হাতে ঘড়ি,আর হাতে আছে রোদচশমা।আমি তো পুরাই ফিদা আরিশের উপর।আর কতভাবে নিজের প্রেমে পরাবে আমাকে।”

আরিশঃএতোক্ষণ লাগে তৈরি হতে,তারাতাড়ি চলো।

(দুইজন গাড়িতে উঠলাম,আরিশ বরাবরের মতই আমার সিটবেল্ট বেধে দিলো।আমি বারবার আরিশকে জিজ্ঞেস করলাম আমরা কই যাচ্ছি কিন্তু আরিশ বললো না গেলেই নাকি দেখতে পাবো।আমিও মন খারাপ করে বসে আছি।)

__________________________________❤️

জারাকে তাহসিন অনেকক্ষণ যাবত কল দিচ্ছে কিন্তু জারা রিসিভ করছে না।

তাহসিনঃএই মেয়ে নিজেকে ভাবে কি এতোগুলা কল দিলাম রিসিভ করছে না কেনো?

এইদিকে জারা তার কাজিনদের সাথে আড্ডা দিয়ে সবে মাত্র রুমে আসে।রুমে এসেই দেখে তার মোবাইল বেজে চলছে।সে কল রিসিভ করতেই তাহসিন কড়া গলায় বলে উঠলো-

তাহসিনঃএতোক্ষণ লাগে কল রিসিভ করতে,কতগুলো কল দিছি সেই খেয়াল আছে।

জারাঃওহ হ্যালো কে আপনি আবার কল দিয়ে এমনভাবে কথা বলছেন কেনো?(ইচ্ছে করে তাহসিনকে রাগানোর জন্য)

তাহসিনঃআমি তাহসিন।ওইদিন তো জোর করে মোবাইল নাম্বার নিলেন আর আজ বলছেন কে আমি।

জারাঃআচ্ছা আচ্ছা আসলে আমি ইম্পর্ট্যান্ট কারো ছাড়া নাম্বার সেইভ করি না।

তাহসিনঃভালো।

জারাঃতা কল করেছেন কেনো?

তাহসিনঃআপনার সাথে দেখা করতে চাই।আসতে পারবেন?

জারাঃঠিক আছে।

তাহসিনঃআপনি তৈরি থাকুন আমি গাড়ি নিয়ে গেইটের বাইরে থাকব।

জারাঃআচ্ছা।

কল কেটে দিয়ে জারা খাটের উপর উঠে উরাধুরা নাচ শুরু করলো।

_________________________________❤️

রেস্টুরেন্টে সামনা সামনি বসে আছে জারা আর তাহসিন।জারা তো নিজের মত কথা বলেই যাচ্ছে আর তাহসিন তাকে দেখতে ব্যাস্ত।তাহসিন যে তাকে কিছু বলার জন্য ডেকেছে সেটা নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেই সে কথা বলেই যাচ্ছে।

তাহসিনঃ(এই মেয়ে আমাকে কিছু বলতে দিবে নাকি নিজেই বকবক করতে থাকবে)আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য ডেকেছি তো।

জারাঃতো বলুন না আমি কি আপনার মুখে স্কসটেপ লাগিয়ে দিয়েছি নাকি।

তাহসিনঃনাহ তা কেনো হবে।আপনি বিয়েতে রাজি হলেন কেনো?

জারাঃসবাই প্রশ্ন করছিলো আমার আপনাকে পছন্দ হয়েছে কিনা,বিয়ে করতে চাই কিনা।তাই আমার মনে যা ছিলো তাই বলে দিলাম।

তাহসিনঃআমি তো মানা করেছিলাম তাই না

জারাঃআমি আপনার মত নই যে নিজের মনের কথা বলতে পারেন না।আমার মনে ছিলো আমি আপনাকে বিয়ে করবো তাহলে মানা করার কথা কোথায় আসে।

তাহসিনঃআমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।

জারাঃকেনো,আমার জানামতে আপনার জীবনে অন্য কেউ নেই।যাকে পছন্দ করতেন তার বিয়ে হয়ে গেছে।

তাহসিনঃআপনি এতো কিছু কি করে জানেন?

জারাঃএসব বাদদিন এখন ফাইনাল কথা হলো আমরা বিয়ে করছি বুঝলেন।

তাহসিনঃআচ্ছা চলেন আপনাকে বুঝিয়ে লাভ নেই।

জারাঃযাবো মানে আজ ঘুরবো আমি আর আপনি।

তাহসিনঃমানে কি,রাত হয়ে গেছে।৭ঃ০০ টা বাজতে চললো।

জারাঃআপনি সাথে আছেন তো।তবে গাড়ি করে না হেটে হেটেই সময় পার করতে চাই আমি আপনার সাথে।(আপনি আমার থেকে যতই দূরে যেতে চাইবেন আমি ততই কাছে যাবো আপনার।আমি যে দিন দিন ‘তোমাতে আসক্ত’ হয়ে পড়ছি।একটা মানুষ কি করে একজনকে এতো ভালোবাসতে পারে।তাকে যে আমি খুব করে ভালোবাসতে চাই।আমার ভালোবাসায় আমি আপনার হৃদয়ে আমার জন্য ভালোবাসা গড়ে তুলবো।)

তাহসিনঃআচ্ছা চলুন।(জারা আপনি তো আমার মনের মত।ঠিক আমি যেমন চেয়েছিলাম তাহিয়াকে। কিন্তু আমি যে তাহিয়াকে খুব বেশি ভালোবাসি আমার সাথে থাকলে আপনি কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবেন না)

__________________________________❤️

হঠাৎ ব্রেক কষে আরিশ একটা জায়গায় এনে গাড়ি থামালো।

তাহিয়াঃএকি আরিশ গাড়ি থামালে যে আমরা কি এই মাঝ রাস্তায় নেমে যাবো।

আরিশঃনা বউ আরেকটু বাকি আছে।

তাহিয়াঃতাহলে এখানে থামালে কেনো?

আরিশঃতুমি বেশি কথা বলো(বলেই আমার চোখ একটা কালো কাপড় দিয়ে বেধে দিলো)

তাহিয়াঃএকি চোখ বাধলে কেনো?

আরিশঃবললাম না সারপ্রাইজ আছে।

আরোও কিছুক্ষন গাড়ি চলার পর আরিশ গাড়ি থামালো।তারপর আরিশ গাড়ি থেকে নেমে আমাকে ধরে নামালো।কিছুক্ষণ ধরে নিয়ে গেলো।তারপর আমাকে কোলে উঠিয়ে নিলো।অনেকটুক রাস্তা হাটার পর আরিশ আমাকে নামিয়ে দিলো।আর বললো-

আরিশঃ এবার চোখের কাপড় সরাও।

আমি চোখের কাপড় সরাতেই দেখি……

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_23 #সারপ্রাইজ
#writer_Fatema_Khan

চোখের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে নিতেই দেখি চারপাশ অন্ধকার হয়ে আছে।আরিশকে ডাকছি কিন্তু আরিশের কোনো সারাশব্দ নেই।হঠাৎ আমার চারদিকে আলো জ্বলে উঠলো।হুট করে চারপাশ আলোকিত হওয়ায় চোখ বুজে ফেললাম আমি।আস্তে আস্তে চোখ খুলে তো আমার চোখ ছানাবড়া, যেনো চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে পরবে।এতো সুন্দর করে সাজানো।চারদিকে গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে,লাভ শেপের বেলুন দিয়ে সাজানো আর আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটাও গোলাপের পাপরি দিয়ে সাজানো আমি মাঝ বরাবর।সামনে তাকিয়ে দেখি আরিশ এক হাটুর উপর ভর করে বসে আছে হাতে তার একটা লাল গোলাপ।আমি তো পুরাই অবাক,বিয়ের এতোদিন পর আরিশ আমার জন্য এগুলো করছে।যা সবসময় আমি চাইতাম।

আরিশঃতোমাকে সেদিন থেকে ভালোবাসি যেদিন থেকে ভালোবাসা কি বুঝতে শিখেছি।কিন্তু বলতে পারি নি বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট তুমি।কিন্তু ফাইনালি তুমি আমার হলে।সেটা যেভাবেই হোক না কেনো।নিজের ফিলিংস প্রকাশ করতে পারি না আমি।তুমি আমার জীবনের সেই গোলাপ যার সুবাসে আমি প্রতিদিন তোমার প্রেমে পরি।তোমাকে হারানোর ভয়ও ছিলো মনে।কিন্তু তুমি আমার পাশে ছিলে সবসময়।স্ত্রীর সুখ তোমায় দেইনি আমি নিজেকে সবসময় তোমার থেকে দূরে রেখেছি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি শুধু আজকের দিনের জন্য।খুব ভালোবাসি তোমায় তুমিও কি আমায় #সত্যি_ভালোবাসো? যদি ভালোবাসো তাহলে এই ফুলটি গ্রহণ করো।

তাহিয়াঃতোমাকে অনেক ভালোবাসি আমি।(গোলাপটি আরিশের হাত থেকে নিয়ে)

আরিশ তার পকেট থেকে ছোট একটি বক্স বের করলো,বক্সটি থেকে একটি ডায়মন্ডের আংটি নিয়ে আমার সামনে ধরলো আর বললো-

আরিশঃতোমাকে আজ আমি আমার করে নিতে চাই।হবে কি আমার?

তাহিয়াঃআমি তো তোমারই।(নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে)

“আরিশ আমাকে আংটি পড়িয়ে দিলো।তারপর উঠে দাড়ালো।”

আরিশঃএকি তুমি কান্না করছো কেনো?(আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে)

তাহিয়াঃআমি তো খুশিতে কান্না করছি।এতো ভালোবাসো কিভাবে আমাকেও একটু শিখিয়ে দিও।

আরিশ হাসতে হাসতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আর বললো চলো ওইদিকে যাই।তারপর আমার হাত ধরে একটা নৌকার সামবে দাড় করালো।নৌকাটি খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো।আমি তো একটার পর একটা ঝাটকা খাচ্ছি।সে আমার হাত ধরে নৌকায় উঠালো।আমি আর আরিশ নৌকার একপাশে বসেছি অন্যদিকে মাঝি।আরিশ আমায় পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আর গান গাইছেন।

_________________________________

তাহসিন আর জারা পাশাপাশি হাত ধরে হাটছে।তাহসিন বারবার হাত ছেড়ে দিচ্ছিলো,কিন্তু জারা বারবার হাত ধরছিলো তাই এখন আর মানা করছে না।অনেকদূর যাওয়ার পর একটা আইসক্রিমের গাড়ি দেখে জারা তাহসিনের হাত আরও চেপে ধরে বলতে লাগলো আমি আইসক্রিম খাবো।তাহসিন তাতে বিরক্ত হলো না বরং হাসলো।

তাহসিনঃচলেন।(মেয়েটা পুরো বাচ্চাদের মত করে।)

(তাহসিন জারাকে আইসক্রিম নিতে বললো।জারা ৩টি আইসক্রিম নিলো।আর খাওয়া শুরু করলো।খাওয়ার সময় তার পুরো মুখে লাগিয়ে ফেলছে।তাহসিন নিজের অজান্তেই জারার ঠোঁটে থাকা আইসক্রিম হাত দিয়ে মুছে দিলো।তারপর একটা টিস্যু দিয়ে পুরো মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে দিলো।জারা লজ্জায় দূরে সরে এলো।তাহসিন বুঝতে পেরে ভাবলো সে করছিলো কি,তার ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে জারার দিকে এগিয়ে গেলো।)

তাহসিনঃবাসায় যাবেন না,চলুন আপনাকে দিয়ে আসি।

জারাঃ হুম চলুন।

তারপর আবার হাটা শুরু করলো দুইজনে তবে এবার জারা হাত ধরে নি কেমন লজ্জা লাগছিলো তার।হটাৎ বৃষ্টি শুরু হলো।তাহসিন জারার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকলো।একটা ছাউনির নিচে দুইজন দাঁড়ায়।তাহসিন নিজের চুল ঝাড়তে ঝাড়তে দেখে জারা তার পাশে নেই।জারা দুই হাত মেলে বৃষ্টি উপভোগ করছে।তাহসিন জারার দিকে তাকিয়ে আছে।তার দিকে তাকিয়ে তাহসিন হেসে দিলো আর বললো পুরাই বাচ্চা একটা মেয়ে।জারার জামা ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে যার দরুন জারার শরীরের প্রতিটি ভাজ দৃশ্যমান।জারার ওরনাও অনেকটা সরে গেছে বুকের উপর থেকে সেইদিকে জারার কোনো খেয়াল নেই সে তো বৃষ্টিবিলাশ করতে ব্যাস্ত।তাহসিন জারার মেয়েলি দেহের গরনের প্রতিটি ভাজের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।তাহসিন কিছুক্ষণ পরেই নিজের চোখ নিচে নামিয়ে নেয়।সে জারার দিকে এগিয়ে যায় আর জারার কাছে গিয়ে জারার হাত ধরে বলে বাসায় যেতে হবে দেরি হচ্ছে তো।জারা তার দিকে তাকিয়ে তাহসিনকে জড়িয়ে ধরলো।তাহসিন তাল সামলাতে না পেরে জারাকে নিয়েই হালকা পিছিয়ে যায়,সে জারার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো

তাহসিনঃ কি হয়েছে?

জারাঃকিছুনা

তাহসিনঃতাহলে চলুন যাওয়া যাক

জারাঃথাকি না কিছু সময় এভাবে ভালোই তো লাগছে আমার।আপনার ভালো লাগছে না?

তাহসিনঃজ্বর আসবে তো

জারাঃআপনি আছেন তো আসলে আসবে আমার জ্বর। আপনার উষ্ণতায় আমার জ্বর সারিয়ে দিবেন।

তাহসিনঃ……….(জারাকে জড়িয়ে ধরে)

___________________________________

আরিশ আর তাহিয়া নৌকা থেকে নামার কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শুরু হলো।আরিশ তাহিয়াকে নিয়ে পাশে থাকা ছোট ঘরটার কাছে দৌড়ে গেলো।ঘরটাতে ঢুকে তাহিয়া আরও অবাক।ঘরটা পুরো গোলাপ রজনীগন্ধা দিয়ে সাজানো।তাহিয়া লজ্জায় এককোনায় চুপ করে বসে আছে।

আরিশঃকি গো বউ এতো লজ্জা পেও না।একটু পর সব লজ্জা যে বিসর্যন দিতে হবে।এর আগেও একবার তোমার কাছে এসেছি তবে তখন হয়তো অনুমতি নেই নি।কিন্তু আজ যে আমার তোমায় ভালোবাসতে তোমার অনুমতি চাই।দিবে কি আমাকে সেই অধিকার।খুব করে ভালোবাসতে চাই তোমাকে।

তাহিয়া আরিশের বুকে মাথা ঠেকিয়ে বলে-

তাহিয়াঃভালোবাসতে চাই তোমাকে।তোমার ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে চাই।আমাকে নিজের করে নাও।এই জীবনে আমি শুধু তোমার হতে চাই।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#বোনাস_পার্ট
#writer_Fatema_Khan

আরিশ তাহিয়ার কপালে নিজের ঠোঁটের ছোয়া দিয়ে কোলে তুলে নেয়।তাহিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে গেলো।তাহিয়া তার চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললো।তখনই আরিশের মোবাইলে কল আসলো।আরিশ বিরক্ত হয়ে বললো সব আমার শত্রু।তাহিয়া হেসে দিলো আর বললো রিসিভ করতে।আরিশ পকেট থেকে মোবাইল বের করে নাম্বার দেখে তার চেহারার রঙ পালটে গেলো।

তাহিয়াঃকি হলো,কে কল করেছে?

আরিশঃতুমি বসো,আমি কথা বলে আসছি

তাহিয়াঃবাইরে তো বৃষ্টি

আরিশঃআমি আসছি(আরিশ বাইরে বের হয়ে যায়।)

তাহিয়াঃকার এমন কল এলো যে চলে গেলো? সত্যি আমাদের ভালোবাসায় সব শত্রু(বলেই হেসে দিলো)

আরিশ ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো-

আরিশঃচলো আমাদের এখন বাসায় যেতে হবে।

তাহিয়াঃকেনো?

আরিশঃতোমাকে বাসায় দিয়ে আমার একটু কাজে বের হতে হবে।

তাহিয়াঃকি কাজ?

আরিশঃএতো কথা জেনে কি করবা চলো তো।

__________________________________

তাহসিনঃআপনার বাড়ি এসে গেছে।(গাড়িতে ব্রেক কষে)

জারাঃ হুম।ভিতরে আসুন

তাহসিনঃনা আজ না,দেরি হয়ে গেছে এমনিতেই।

জারাঃআচ্ছা।

(জারা ও তাহসিন গাড়ি থেকে নেমে।জারা ভিতরে ঢুকতে যাবে তাহসিন তাকে ডাক দেয়।)

তাহসিনঃতারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিবেন না হয় জ্বর আসতে পারে রাতে।

জারাঃঠিক আছে,আর আপনিও তারাতাড়ি যান না হলে আপনারও জ্বর আসবে।

(তাহসিন জারাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো)

________________________________

(আরিশ কোথায় যাবে আর কে কল করলো,আমাকেই বা কিছু বলতে চায় না কেনো কিছুই মাথায় আসছে না।আর কল আসার পর থেকেই কেমন অস্থির হয়ে গেছে সেখানে যাবার জন্য।)

আরিশঃকি ভাবছো?গাড়ি থেকে নামো আমরা এসে গেছি।

তাহিয়াঃতুমি ভিতরে আসবে না?

আরিশঃনা আমার কাজ আছে। (বলেই তাহিয়াকে নামিয়ে চলে গেলো)

তাহিয়াঃমা,বাবা কেউ যানে না আমাকে আরিশ বাসায় দিয়ে গেছে,তাহলে আমি আরিশের পিছনে যাবো আজ আমাকে যে জানতেই হবে আরিশ কি এমন লুকানোর চেষ্টা করছে আমার থেকে।

(একটা সি.এন.জি. তে উঠে যায় তাহিয়া,তারপর আরিশের গাড়ির পিছনে।অনেক দূরেই আরিশের গাড়ি তবু্ও রাস্তা ফাকা হওয়ায় আরিশের গাড়ি তাহিয়া ঠিক চিনতে পারছে।তাহিয়া যেদিকে বলছে সি.এন.জি. চালকও সেদিকেই নিচ্ছে।)

__________________________________

তাহসিন ফ্রেশ হয়ে মাত্র রুমে আসলো।আয়নার সামনে চুল ঠিক করছে আর জারার করা বাচ্চামোর কথা ভাবছিলো আর আনমনে হাসছিলো-

তাহসিনঃপাগলী একটা।কিন্তু মনটা অনেক ভালো।আমি চেষ্টা করবো ওর মুখে সবসময় হাসি ফুটিয়ে রাখার।

(এদিকে জারাও তাহসিনের কথা ভেবে লজ্জায় লাল হয়ে আছে।)

জারাঃছিঃ কি করে পারলাম তাকে জড়িয়ে ধরতে,আর কিসব বলছিলাম।কি ভাববে আমাকে নিয়ে কে জানে।আবার দেখা হলে তো আমাকে নিয়ে অনেক মজা করবে।না না আমি আর তাহসিনের সামনেই যাবো না।

__________________________________

তাহিয়া একটা বড় বিল্ডিং এর সামনে আরিশের গাড়ি দাড় করানো দেখলো।সে টাকা দিয়ে সি.এন.জি. বিদায় করলো।

তাহিয়াঃআরিশের এখানে কি এমন কাজ,আর বিল্ডিং এর কাজও অসম্পূর্ণ।

তখনি গুলির আওয়াজ কানে আসে।তাহিয়া গুলির আওয়াজ শুনে একমুহূর্তও ব্যয় না করে উপরে ছুটে গেলো।

তাহিয়াঃআমার আরিশ ঠিক আছে তো, কে গুলি চালালো,আর আরিশের এখানে কেনো আসা লাগলো।

তাহিয়া গিয়ে দেখে দুইজন লোক সেখানে আছে।একজন নিচে বসে আছে একহাত দিয়ে অন্য হাত চেপে ধরে, আরেকজন একটা পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।তাহিয়া আরেকটু এগিয়ে গিয়ে যা দেখলো সে পুরাই অবাক।সে বলে উঠলো-

তাহিয়াঃতূর্য ভাইয়া তুমি এখানে!(বলেই বসে পড়লো।তার চোখের সামনে যা দেখছে তা যেনো সে বিশ্বাস করতে পারছে না)

তূর্য একহাত দিয়ে যেখানে রক্ত পড়ছে সেখানে চেপে ধরে আছে আর আরিশ তার সামনে পিস্তল নিয়ে দাড়িয়ে আছে

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,

(সবার জন্য বোনাস পার্ট দিলাম এখন সবাই গঠনমূলক মন্তব্য না করলে কিন্তু রাগ করবো।ধামাকা টা কেমন হলো সবাই কমেন্ট করে জানাবেন।)

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-২০+২১

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_20
#writer_Fatema_Khan

তাহসিন জারাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো।জারা সুযোগ বুঝে যেই পালাতে যাবে তাহসিন জারার হাত ধরে ফেললো।জারা পিছনে তাকালে তাহসিন তাকে পাজাকোলে নিয়ে নেয়।জারা তো অবাকের শেষ সীমায়।এই ছেলে করতে কি চাইছে।তাহসিন জারাকে ছাদের একদম কোনায় এনে বলে-

তাহসিনঃছাদ থেকে পরে মরতে চান নাকি আমাকে বিয়ে না করে বাঁচতে চান।

জারা ভয়ে তাহসিনের গলা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো-

জারাঃনামিয়ে দিন প্লিজ আমি এখনো বাচ্চা মেয়ে।কত স্বাদ ছিলো বিয়ে করবো,৫-৬টা বাচ্চার মা হবো।সেগুলো নষ্ট হতে দিবেন না।আমি সবাইকে বলে দিবো আমার আপনাকে পছন্দ হয়নি।

তাহসিনঃএইতো লাইনে আসছেন।এবার নিচে গিয়ে এটাই বলবেন যে আপনি রাজি না।আর এতোক্ষণ আমি যা যা বলেছি তার একটা কথাও যেনো কারো কানে না যায়।মনে থাকবে তো

জারাঃ হুম মনে থাকবে।আপনি যা বলবেন তাই করবো এবার তো সরে আসুন।

তাহসিন জারাকে ছাদের মাঝখানে এসে নামিয়ে দেয়।আর বলে তাহলে নিচে যাওয়া যাক।সবাই অপেক্ষা করছে।জারাও সম্মতি জানালে দুইজনে নিচে চলে আসে।

_________________________________

আমি ৫দিন পর দেশে ফিরবো।তুমি সব রেডি করে রাখবা কারন আমি পরের দিনই দুবাই ব্যাক করবো।দেশে থাকা রিস্ক হয়ে যাবে।(রেজোয়ান ফোনে কথাগুলো বলছিলো)

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃআপনি চিন্তা করবেন না।আমি সব ঠিকঠাক করে রাখবো।এই কয়দিন তাদের একটু আনন্দ করতে দেই কি বলেন।

রেজোয়ানঃতা মন্দ বলো নি।এরপর তো যতদিন বেঁচে থাকবে শুধু কান্নাই লিখা আছে ওর ভাগ্যে আর আরমান বুঝতে পারবে আপনজন হারালে কেমন কষ্ট লাগে।

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃঠিক আছে রাখছি আমি।তাহলে আপনার সাথে আমার ৫দিন পরে দেখা হচ্ছে।

রেজোয়ানঃ হুম রাখছি।(বলে কল কেটে দিলো)

_________________________________

তাহসিন আর জারাকে পাশাপাশি বসানো হলো।তাহসিনকে সবাই জিজ্ঞেস করলো জারাকে তার কেমন লেগেছে,সে বিয়েতে রাজি তো।সে বলল-

তাহসিনঃজ্বি জারাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।আর ওকে আমি বিয়ে করতে চাই।

জারাকেও সেইম প্রশ্ন করলে জারা আমতা আমতা করতে থাকে।একপলক তাহসিনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে তার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলছে বলতে।

জারাঃআমারও ওনাকে খুব ভালো লেগেছে,আমার কোনো আপত্তি নেই ওনাকে বিয়ে করতে।(আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া তাইনা,কেমন জব্দ করলাম মিস্টার তাহসিন)

তাহসিনের মাথায় তো আগুন জ্বলে উঠলো।সে রেগে জারার দিকে তাকালে জারা তাকে সবার আড়ালে চোখ টিপ মারে এটা দেখে তাহসিন আরও রেগে যায়।কিন্তু কিছুই বলতে পারে না।

তারপর তাহসিন আগে জারার অনামিকা আংগুলে আংটি পড়ায়।পরে জারা তাহসিনকে পড়ায়।তারপর জারাকে রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।সবাই মিলে বিভিন্ন কথা বলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়।তখন আবির আহমেদ বলে উঠে জারাকে একটু ডেকে দিতে।তারপর জারা আসলে জারার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল-

আবিরঃআমার ছেলেটাকে সারাজীবন আগলে রাখবে তো।আমি জানি তুমি পারবে আমার ছেলেটাকে ঠিক করতে।ছেলেটা আমার কথাই শুনে না,তুমি বাধ্য করবে তোমার কথা শুনতে, তোমায় ভালোবাসতে।আর ওর সম্পর্কে তোমাকে আগেই সবকিছু বলে নিয়েছি আমি।

তাহসিনঃকি হলো বাবা কি এমন বলছো তারাতাড়ি চলো দেরি হচ্ছে।(জারা আর আবিরের কাছে এগুতে লাগলো)

আবিরঃ হুম চলো।আচ্ছা মা আজ তাহলে আসি।(জারার থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে গেলো)

হালকা কেশে তাহসিনকে জারা বললো-

জারাঃআপনি যাবেন না।নাকি হবু বউ কে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।

তাহসিনঃতোমাকে তো আমি দেখে নিবো,আজ তুমি আমার সাথে একদম ঠিক করো নি বুঝলা।

জারাঃবুঝলাম,আর আমাকে দেখে নেয়ার কথা হলে সারাজীবন পরে আছে দেখার জন্য এখন যান সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।

তাহসিন তাকিয়ে দেখে সত্যিই সবাই তাকিয়ে আছে আর মুখ চেপে হাসছে।তা দেখে তাহসিন মাথা চুলকে সামনে এগিয়ে যায়।তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে তারা বেরিয়ে যায়।

_________________________________

আমি বাসায় এসে ফ্রেশ হতে চলে যাই।৩০মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে আসি।এসে দেখি আরিশ ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে।হয়তো অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হইছে।এইদিকে আমি যে রেগে আছি তার দিকে কোনো খেয়াল আছে উনি তো ভালোই আছে।কোথায় আমার রাগ ভাঙাবে তা না করে উনি কাজ করছে।আমিও কথা বলবো না।আমার কাছে এসে কানে ধরে সরি বললেও আমি কথা বলবো না।তারপর বিছানার একপাশে শুয়ে পরি।ঘুম আসছে না।অনেকক্ষণ পর আরিশ এসে আমার অপরপাশে শুয়ে পরলো।কিন্তু কোনো কথা বললো না।আমার আরও রাগ উঠে গেলো।আমি আরিশের দিকে ফিরে তার কলার ধরে বলে উঠলাম তোমার বউ যে রেগে আছে তা তুমি দেখো নি বুঝি।কই রাগ ভাঙাবে তা না করে ঘুমানো হচ্ছে।

আরিশঃআহ ছাড়ো তো সকালে অফিস আছে ঘুমাতে হবে।তোমার সাথে এই ফালতু কথা নিয়ে আমি ঝামেলা করতে চাই না।

তাহিয়াঃআমার রাগ ফালতু।আমার কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে।ও এখন তো ওই মিতা না টিতা ওকে ভালো লাগে তোমার।

(ওহ ম্যাডাম তাহলে এইজন্যই রেগে ছিলো।তাহলে ম্যাডাম জেলাস।)

আরিশঃকোন মিতা?

তাহিয়াঃযার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলে।আমি জানি ইচ্ছে করে পরে যাবার নাটক করছিলো যাতে তোমার গায়ে এসে পড়তে পারে।

আরিশঃ ওও… মনে পরেছে ওই সুন্দরী মেয়েটা।খুব সুন্দর দেখতে কি বলো

তাহিয়াঃও এখন আমাকে ভালো লাগে না।এখন ওই শাকচুন্নি কে ভালো লাগে।ও সুন্দর হয়ে গেলো তাই তো।

আরিশঃনা তোমাকে এখন আর ভালো লাগে না।আমার কাছে সবার আগে আমার কাজ।আর এখন মিতা।এবার সরো ঘুমাতে দাও।

আমি তাকে ছেড়ে অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পরলাম।খুব কান্না আসছে।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগলো।আমি আর তার দিকে ফিরলাম না।অনেক কষ্ট হচ্ছে তার কথাগুলো শুনে।

আরিশঃআমাকে ইগনোর করা তাই না।একটু কষ্ট পাও লক্ষীটি।পরশু তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।সেটা না দেয়া অবদি একটু কষ্ট যে পেতে হবে।সারপ্রাইজ পাবার পর তোমার আর রাগ থাকবে না আমি জানি।

তাহিয়া কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।আরিশ উঠে তাহিয়ার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।

চলবে,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_21 #কেয়ার
#writer_Fatema_Khan

কাচের জানালা ভেদ করে সূর্যের তির্যক রশ্নি আমার চোখে এসে পরাতে ঘুম ভেঙে গেলো।সকাল সকাল আরিশ তৈরি হয়ে গেছে।আমি ঘুম থেকে উঠেই দেখি সে টাই পরছে।আমাকে দেখে বলে উঠলো-

আরিশঃআমি বের হচ্ছি,আসতে লেইট হবে।

তাহিয়াঃতোমাকে আমি একটা কথা বলেছিলাম তোমার মনে আছে

আরিশঃকোন বিষয়ে?(আমার দিকে তাকিয়ে)

তাহিয়াঃতূর্য ভাইয়ার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।ভাইয়ার কোনো খবর পেলে?

আরিশঃদেখছি আমি,সেটা নিয়ে তোমার চিন্তা না করলেও চলবে।

তাহিয়াঃআমার ভাই আর আমি চিন্তা করবো না এটা কখনো হয় নাকি

আরিশঃআমি এই বিষয়ে পরে কথা বলবো এখন দেরি হচ্ছে।

(বলেই বেড়িয়ে গেলো।এমন কেনো করছে ও আমার সাথে।যখন থেকে তূর্য ভাইয়া নিখোঁজ তখন থেকেই কেমন ভাইয়ার কথা এড়িয়ে যায়।যেনো এটা খুব সাধারণ বিষয়।আর কাল ওই মিতাকে দেখার পর হতে তো আমার সাথেও শুরু।বুঝিনা কি হয় এই লোকের।)

_________________________________

সারাদিন মায়ের(নীলিমা)
সাথে বাসার অনেক কাজ করলাম।যেনো নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে পারি।কাজের মধ্যে থাকলে এই মিস্টার অসভ্য নামক লোকটার কথা মনে পরবে না।কাজ শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলাম।নামাজ পড়ে একটু বিছানায় গা লাগাতেই মায়ের ডাক পরলো খেতে যেতে।ভিষণ খিদে পেয়েছে কিন্তু শরীর বড্ড ক্লান্ত লাগছে তাই উঠে যেতে ইচ্ছে করছে না।তাই আর উঠে গেলাম না শুয়ে রইলাম।

কিছুক্ষণ পর মা রুমে আসলো আর দেখলো আমি শুয়ে আছি।আমাকে শুয়ে থাকতে দেখে মা বলে উঠলো-

নীলিমাঃকিরে তাহিয়া তোর কি শরীর খারাপ লাগছে।খেতে না গিয়ে শুয়ে আছিস যে?

তাহিয়াঃনা মা আমি ঠিক আছি।কেনো যানিনা খুব ক্লান্ত লাগছে আজ,তাই একটু শুয়ে আছি।একটু পর ভালো লাগলে আমি নিজেই খেয়ে আসবো।

নীলিমাঃতুই ঠিক বলছিস তো,নাকি আমাকে মিথ্যা বলছিস?

তাহিয়াঃআমি ঠিক আছি।তুমি আর বাবা(রায়হান) গিয়ে খেয়ে নাও।আমি পরে খেয়ে নিবো।

নীলিমাঃআচ্ছা আমি যাচ্ছি,তোর কিছু লাগলে আমাকে ডেকে নিস।

তাহিয়াঃআচ্ছা আমার কিছু লাগলে তোমাকে ডেকে নিবো।

(তারপর নীলিমা রুম থেকে বের হয়ে গেলো)

__________________________________

(হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে আমি চমকে ঘুম থেকে উঠে গেলাম।আমার সামনে আরিশ দাঁড়িয়ে আছে।ও কিছুটা রেগে আছে মনে হচ্ছে কিন্তু কেনো রেগে আছে?জিজ্ঞেস করবো না থাক নিজেই বলবে)

আরিশঃকি শুরু করেছো কি তুমি?

তাহিয়াঃআমি আবার কি করলাম?(অনেকটা অবাক হয়ে)

আরিশঃদুপুরে খাও নি কেনো?কি হয়েছে তোমার?

তাহিয়াঃআমি ঠিক আছি আমার কিছুই হয়নি।

আরিশঃতাহলে দুপুরে খেলে না কেনো?

তাহিয়াঃআমার ভালো লাগছিলো না তাই।

(তারপর কিছু না বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।)

তাহিয়াঃযাহ বাবা এর আবার কি হলো,আর এখন ফুলতে ফুলতে কোথায় গেলো?

(কিছুক্ষণ পর আরিশ আবার রুমে ঢুকলো কিন্তু হাতে একটা প্লেট।আরিশ প্লেটটা আমার সামনে রেখে বেসিনে গেলো হাত ধুতে।হাত ধুয়ে সে প্লেট হাতে নিয়ে আমার সামনে বসলো)

আরিশঃহা করো।

তাহিয়াঃকিহ?

আরিশঃআমি কি ইংরেজিতে কথা বলেছি আমি তো বাংলাতেই বললাম হা করো।(আরিশ ভাতের লোকমা আমার দিকে ধরে)

(আমিও বাধ্য মেয়ের মত খেতে লাগলাম।আরিশ আমাকে খাবিয়ে দিচ্ছে সত্যি এখন খুব ভালো লাগছে ওর কেয়ারগুলো সবসময় খুব এনজয় করি আমি।আচ্ছা আরিশ খেয়েছে নাকি কে যানে)

তাহিয়াঃতুমি খেয়েছো?(আরিশের হাত ধরে)

আরিশঃপরে খেয়ে নিবো।এখন তুমি খাও।

(আমি উঠে হাত ধুয়ে এসে প্লেটটা নিয়ে নিলাম আর আরিশের দিকে ভাতের লোকমা ধরলাম)

আরিশঃএটা তোমার তুমি খাও

তাহিয়াঃনা দুইজন একসাথে খাবো।হা করো তারাতাড়ি।

(তারপর দুইজনে মিলে খাবার খেয়ে নিলাম।আরিশ সবকিছু গুছিয়ে নিলো।আমি এখনো বিছানার একপাশে বসে আছি।আরিশ ফ্রেশ হতে গেলো।১০মিনিট পর বের হয়ে আসলো।)

আরিশঃআমার অফিসে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে,রাতে আসতে দেরি হবে।

তাহিয়াঃএখন আবার অফিসে যেতে হবে?(মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো)

আরিশঃ হুম রাতে খেয়ে নিও।না খেয়ে ঘুমিয়ে যেও না।তাহলে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাবার খাবাবো বুঝলে।

তাহিয়াঃআচ্ছা খেয়ে নিবো।তবে তারাতাড়ি আসার চেষ্টা করো।

আরিশঃঠিক আছে।(বলেই আমার কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।তারপর তারাতাড়ি চলে গেলো।)

আজ তার প্রতি কেনো জানি কোনো রাগ বা অভিমান নেই।সে আমাকে খুব ভালোবাসে আমি জানি।কিন্তু মাঝে মাঝে এমন করে কেনো,আমি বুঝতেই পারি না ওর মনে কি চলে।মনে হয় অনেক কিছু লুকিয়ে যায় আমার থেকে।কিন্তু কি?)

_________________________________

(রাতের খাবার খেয়েছি অনেক আগেই।এখন বিছানায় একবার এপাশ তো আরেকবার ওপাশ করেই যাচ্ছি।দুপুরে ঘুমানোর ফলে এখন ঘুম আসছে না।আবার আরিশও আসে নাই এখনো।রাত ১২টার উপরে বাজে কি এমন কাজ করে যে এখনো আসছে না।এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলাম।)

“রাত ২ঃ০০ টা বাজে আরিশ বাসায় ফিরেছে।তার কাছে এক্সট্রা চাবি আছে বিধায় কারো ঘুম ভাঙতে হয়নি।রুমে এসে তাহিয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে সে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সে তাহিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।”

আরিশঃআমার বউটা বুঝি আমার উপর খুব রাগ করে আছে,অনেক অভিমান করে আছে।এতো বড় বড় অভিযোগের ঝুলি আছে বুঝি।কাল সব দূর করে দিবো।এই দুইবছরের অপেক্ষার অবসান কাল ঘটবে।বউ তুমি তৈরি তো কালকের জন্য।তৈরি আছো তো আমার ভালোবাসায় নিজেকে পুড়াতে(তারপর তাহিয়ার ঠোঁটে একটা চুমু একে দিয়ে আরিশ নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো)

__________________________________

আজ সকালে আমি রোজকার মতোই ঘুম থেকে উঠি।কিন্তু নিজেকে কারো বুকের মাঝে আবিষ্কার করি।মাথা হালকা উঠিয়ে দেখি আরিশের বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছি আমি।আরিশের অবাধ্য কিছু চুল বারবার তার কপালে এসে পরছে।আমি চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিলাম।কেমন বাচ্চাদের মত ঘুমায় আরিশ।এতো মাধুর্য কেনো এই লোকটার মধ্যে।যত দেখি ততই নতুন করে প্রেমে পরে যাই।আচ্ছা আজ কি আরিশ অফিসে যাবে না,ডাকবো একবার।নাহ ডাকবো না আজ সে শুধুই আমার।আবার তার বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে শুয়ে আছি আর তার শরীরের সুগন্ধি উপলব্ধি করতে থাকি।এই সুগন্ধ যে আমায় মাতাল করে দেয়।আরিশ কবে বুঝবে তুমি আমি বড় হয়ে গেছি এবার তো আমায় ভালোবেসে কাছে টানতে দোষ নেই বলো।আমি যে খুব ভালোবাসি তোমায়।তোমায় ছাড়া যে আমার নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে সেটা কি তুমি বুঝো না।আমি যা ভাবি তুমি চট করে বুঝে ফেলো,তাহলে তোমার চোখের ভাষা কেনো আমি বুঝতে পারি না।আমিও তোমাকে তোমার থেকে বেশি ভালোবাসতে চাই।যেনো প্রতিটি শ্বাস কি বলতে চায় সেটা সবার আগে আমি বুঝতে পারি।সেই সুযোগ কি দিবে আমায়?

__________________________________

সকালের নাস্তা করে আরিশ বেড়িয়ে যাচ্ছে তা দেখে আমি বললাম কোথায় যাচ্ছে,আরিশ একটু পর আসছি বলে চলে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,,

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-১৮+১৯

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_18
#writer_Fatema_Khan

প্রতিটি সূর্যদয় প্রত্যেক মানুষের জন্য নতুন কিছু নিয়ে আসে।কেউ নতুন করে বাঁচার জন্য মাঝ সমুদ্রেও ভেলা পেয়ে বসে।সবাই বাঁচতে চায়,নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে।কেউবা তাদের প্রথম ভালোবাসা পায় না।সব ভালোবাসা যে পূর্ণতা পাবে তেমনটা না ও হতে পারে।কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ থাকাই শ্রেয়।তবে একজনকে ভালোবাসলে তা পূর্ণতা না পেলে যে অন্য কাউকে ভালোবাসা যাবে না এমনটা কোথাও লিখা নেই।চেষ্টা করলেই ভালোবাসা যায়।প্রথম ভালোবাসাকে ভুলতে না পারো কিন্তু নতুন কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে ক্ষতি নেই তাই না।একবার চেষ্টা করেই দেখো না সব হবে তোমার দ্বারা।

(তাহসিনের হাত ধরে কথাগুলো বলল তাহিয়া)

_______________________________

ফ্ল্যাশব্যাক,,,

তাহসিনঃবাবা তুমি আমাকে মিথ্যা বলে দেশে আনলে কেনো?

আবিরঃদেখো তোমাকে দেশে আনা দরকার ছিলো।

তাহসিনঃকি এমন দরকার ছিলো,তুমি জানো আমি কেনো দেশে আসতে চাই নি।আমি তাহিয়ার থেকে দূরে থাকার জন্য কানাডা চলে গেলাম যাতে ওর আর আরিশের জীবনে আমার জন্য কোনো সমস্যা যেনো না হয়।সব জেনেও তুমি আমাকে মিথ্যা বলে কেনো আনলে বলো

আবিরঃআমি একদম হেয়ালি পছন্দ করি না,তাই তোমাকে সোজাসাপটা উত্তর দিবো।আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।

তাহসিনঃমানে কি এসবের?আমি বিয়ে করতে পারবো না।

আবিরঃআমি তোমার থেকে জিজ্ঞেস করি নাই তোমাকে আমার সিদ্ধান্ত জানালাম।

তাহসিনঃবাবা আমি কালই চলে যাবো কানাডা।

আবিরঃতোমার পাসপোর্ট আমার কাছে যা তুমি পাবে না।

তাহসিনঃএবার কিন্তু বেশি করে ফেলছো তুমি।

আবিরঃবাবার একমাত্র মেয়ে।কাল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে।ওইখানেই লেখাপড়া করে।তুমি চাইলে বিয়ের পর তাকে নিয়ে কানাডাতে সেটেল্ড হতে পারো।আর আমরা আজ বিকেলে ওদের বাড়িতে যাবো।এনগেজমেন্ট করে ফেলবো তোমাদের।

(হাতের কাছে থাকা গ্লাসটি ফ্লোরে ছুড়ে মেরে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে চলে যায় তাহসিন)

আবিরঃহ্যালো তাহিয়া মা একটু বাসায় আসবি।(তাহিয়াকে সব খুলে বলল)

তাহিয়াঃআমি আসছি আংকেল।

আবিরঃধন্যবাদ মা,তাহসিন তোর কথা শুনবে আমি জানি।

তাহিয়াঃআমি আর আরিশ আসছি।
_________________________________

ফ্ল্যাশব্যাক শেষ,,,

তাহিয়াঃকি বলো ভাইয়া নিজের জীবনকে আরেকটা সুযোগ দিবে না।

তাহসিনঃআমার দ্বারা যে এই বিয়ে টিয়ে হবে না,তুই যা এখান থেকে।

আরিশঃ চেষ্টা করে দেখো তাহসিন।কারো জন্য জীবন থমকে থাকে না।

তাহিয়াঃভাইয়া প্লিজ একটাবার ভেবে দেখো।আংকেলের কথা। সে তোমায় এভাবে দেখে কত কষ্ট পাচ্ছে।নিজের কথা ভাবো এভাবে কষ্ট পেয়ে নিজে কি খুব সুখে আছো।আমরা তোমাকে সুখি দেখতে চাই।তুমি সুখে থাকলেই সবাই সুখে থাকবে।

আরিশঃবিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাও।সব ঠিক হয়ে যাবে।তোমার কি এমন কাউকে চাই না যে শুধু তোমাকে ভালোবাসবে।প্রথম ভালোবাসা ভুলা যায় না আমি মানছি,কিন্তু নতুন একজনকে ভালোবাসার চেষ্টা করতে তো আর দোষ নেই।একবার চেষ্টা করেই দেখো।

(তাহসিন নির্বাক কি বলবে সে।আরিশ আর তাহিয়া যা বলছে সব সত্যি।কিন্তু সে যে তাহিয়াকে খুব ভালোবাসে)

তাহিয়াঃকি হলো ভাইয়া কিছু তো বলো?

তাহসিনঃঠিক আছে আমি রাজি বিয়ে করতে।

তাহিয়াঃ সত্যি তুমি নিজের জীবনকে আরেকটা সুযোগ দিবে।

তাহসিনঃ হুম দেখি কি হয়।

(আরিশ তাহসিনকে জড়িয়ে ধরলো)

তাহিয়াঃ আচ্ছা এখন চলো আমরা বের হই,বিকালে তো আবার জারা ভাবিদের বাসায় যেতে হবে।

তাহসিনঃজারা ভাবি কে?

আরিশঃনিজের হবু বউয়ের নাম এখনো জানা হয়নি বুঝি?আজ তো তোমার আর জারার এনগেজমেন্ট তার কথাই বলছিলো তাহিয়া।

তাহসিনঃঅহহ

তাহিয়াঃ তো আমরা এখন যাই বিকালে দেখা হবে।

(তাহসিনকে বিদায় দিয়ে তাহিয়া ও আরিশ বের হয়ে যায়)

তাহসিনঃজারা নামটা যেনো কোথায় শুনেছি আমি।ওহ হ্যা কাল যে মেয়েটার সাথে ধাক্কা লেগেছিল সেই মেয়েটার নামও জারা ছিলো।কি ঝগড়ুটে মেয়েরে বাবা।(ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে)

___________________________________

রাসেলঃএকদম বায়না করবে না।নিয়ে যাচ্ছি আমার সাথে সাথেই থাকবে।আমার চোখের আড়াল হলেই সোজা নিয়ে আসবো।

তনিমাঃএমন করছো কেনো?সবাই যাবে তাহসিনের এনগেজমেন্টে আমি যদি না যাই আমার মনটা তো ওইখানে পরে থাকবে আর আমার কত খারাপ লাগবে বলো।আর মনে হয় বাচ্চাটা একলা তোমারই আমার না।তোমার থেকে আমার বেশি টেনশন বুঝলা।

রাসেলঃ হুম বুঝলাম।আমার রাজকন্যা ভালো থাকলেই হলো।

তনিমাঃরাজকন্যা কেনো হতে যাবে।আমার তো রাজপুত্র হবে।

রাসেলঃআচ্ছা দেখা যাবে।এখন চলো লেট হয়ে গেছে।

________________________________

(জারাদের বাড়িতে সবাই বসার ঘরে বসে আছে।জারাকে নিয়ে তাহসিনের সামনে বসানো হলো।সবাই বিভিন্ন কথা বলছিলো।তাহসিন জারার দিকে তাকাচ্ছিলো না।আর জারা লজ্জায় মাথা তুলছে না।তা দেখে আরিশ আর রাসেল মিলে সবাইকে বলল তাহসিন আর জারাকে আলাদা কথা বলতে দিতে।কারণ ওদের তো আগে দেখা বা কথা হয়নি।তাই নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করুক।সবাই রাজি হলো।তাহসিন আরিশ আর রাসেলের দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।তারা দুইজন তাহসিনের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলালো।)

ছাদের এককোণে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাহসিন।কারো পায়ের শব্দে বুঝতে পারে জারা এসে গেছে।তাহসিন পিছনে ফিরে দেখে কালকের রাস্তায় যার সাথে ধাক্কা লেগেছিল সেই মেয়েটাই।

তাহসিনঃআপনি?😳

জারাঃআপনি😳

চলবে,,,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_19
#writer_Fatema_Khan

আরিশ আর রাসেল তাহসিনকে ছাদে দিয়ে নিচে আসছে।জারাকে ওর কাজিনরা উপরে দিয়ে আসছে।আসার সময় জারার এক কাজিন পরে যেতে নিলে আরিশ তাকে ধরে ফেলে।মেয়েটি আরিশের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে।আরিশ মেয়েটিকে ছেড়ে বলে-

আরিশঃআপনি ঠিক আছেন তো

মিতাঃজ্বি এখন ঠিক আছি।

আরিশঃঅহ।

মিতাঃআমি মিতা,আপনি?

আরিশঃআমি আরিশ(কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল)আচ্ছা আসি ভালো থাকবেন

মিতাঃসেকি চলে যাচ্ছেন কেনো একটু কথা বলি ভালোই তো লাগছে।

আরিশঃআসলে আমার ওয়াইফ অপেক্ষা করছে আমার জন্য তাই যেতে হবে।

মিতাঃআপনার বিয়ে হয়ে গেছে?(কাদো কাদো ফেস নিয়ে বললো)

আরিশঃজ্বি।

বলেই চলে গেলো।মিতা ভাবেনি যে আরিশ বিবাহিত হবে।মন খারাপ করে সেও চলে এলো সবার কাছে।এইদিকে তাহিয়া দূর থেকেই সব দেখছিলো আর রাগে ফুলে উঠছিলো।আরিশ এসে তাহিয়ার পাশে বসলে তাহিয়া মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলে।আরিশ ব্যাপারটি খেয়াল করলেও বুঝতে পারলো না তাহিয়া কি জন্য রাগ করেছে।আরিশ তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে তাহিয়ার গালদুটো রাগে লাল হয়ে আছে।আরিশ বুঝতে পারে তাহিয়া তার উপর রেগে আছে কিন্তু কি নিয়ে রাগ করবে সেটা তার বোধগম্য হলো না।একটু আগেও তো ভালো ছিলো।সবাই বিয়ের বিভিন্ন কথা বলছিলো আর এইদিকে আরিশ তাহিয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু সে ব্যর্থ।তারপর আর সে কিছু বললো না আরিশ সবার সাথে কথা বলতে থাকলো।

__________________________________

জারাঃএই যে আপনি আমার পিছু নেন নি তো?আপনি তো ভারি অসভ্য লোক।

তাহসিনঃআমি আর আপনার মত পাগলের পিছু নিবো।

জারাঃআমাদের বাড়িতে দাঁড়িয়ে বলছে আমার পিছু নেই নি।আমি জানি আমি অনেক সুন্দরী তাই বলে আমাদের বাড়িতে এসে পরবেন নাকি।নিজেকেও তো আয়নায় একটু দেখে আসবেন

তাহসিন চুপ করে জারার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা সত্যি অনেক সুন্দরী।বা গালে টোল পড়ে,ঠোঁটের নিচে একটা তিল আছে, চোখের ঘন পাপরি গুলো কথা বলার সময় বারবার ঝাপটানো,গোলাপি ঠোঁট,পরনে সবুজ রঙের শাড়িতে অপুর্ব লাগছে।যেন এক অপ্সরা তার সামনে দাড়িয়ে আছে।

জারাঃএই যে আপনি শুনছেন

তাহসিনঃকি?

জারাঃ তাড়াতাড়ি যান।এখন আমার হবু বর চলে আসবে।আপনাকে আমার সাথে দেখলে খারাপ ভাববে।

তাহসিন ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি দিয়ে জারার অনেক কাছে এসে দাঁড়ায়।যার দ্বারা জারা অনেকটা অস্বস্তিবোধ করে।

জারাঃকি হলো আপনি এভাবে এগুচ্ছেন কেনো?

তাহসিনঃআপনি সত্যি খুব সুন্দরী,তাই ভাবছি আপনার হবু বর আসার আগে একটু কাছে আসলে দোষ কি

জারাঃকি সব বলছেন(পিছিয়ে যেয়ে)

পিছনে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে জারার পিঠ ঠেকে যায়।জারা চলে আসতে চাইলে তাহসিন দেয়ালে হাত দিয়ে আটকিয়ে দেয়।জারা ভয় পেয়ে যায়।

তাহসিনঃকি যেনো বলছিলেন আপনি,আমি কি?

জারাঃ ক-কই কি ব-বলছিলাম।কি-কিছু বলছিলাম না তো

তাহসিনঃআপনার কথা আটকে আসছে কেনো?এতোক্ষণ তো খুব কথা শোনাচ্ছিলেন আমাকে।আমি অসভ্য,নিজেকে আয়নায় দেখতে তাই না।

জারাঃ না না ওইগুলো তো এমনি বলছিলাম।

তাহসিনঃআচ্ছা বুঝলাম আপনার হবু বর কই সে এখনো আসলো না যে

জারাঃআপনি একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলুন

তাহসিন দূরে সরে দাড়ালো।আর বলল-

তাহসিনঃ আমার সাথেই আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে,কিন্তু আপনি নিচে গিয়ে বলবেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না।আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি।

জারা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তাহসিনের দিকে,কি বলে এই ছেলে পাগল হয়ে গেলো নাকি।

জারাঃদেখুন আমারও আপনাকে বিয়ে করার কোনো শখ নেই বুঝলেন আপনি।আর এমন গায়ে পরা ছেলেকে তো আমি কখনোই বিয়ে করবো না।

তাহসিনঃগুড গার্ল।

জারাঃকিন্তু আমি মানা করতে পারবো না।আপনি বলে দিয়েন আপনি রাজি না থাকলে।

তাহসিনঃআমি বলতে পারলে আপনাকে বলতে বলতাম না।কথাটা আপনাকেই বলতে হবে।

জারাঃআমি বলতে পারবো না।আর যদি বলতে না পারেন তাহলে আমাকে বিয়ে করার জন্য তৈরী হোন মিস্টার।

তাহসিনের রাগ উঠে গেলো জারার কথা শুনে।সে জারার কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো আর বললো খুব শখ না আমাকে বিয়ে করার।জারা আচমকা এমন হওয়ায় ঘাবড়ে গেলো,আর নিজেকে ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।জারার পুরো শরীর কাপছে।তাহসিন এতো কাছে আসাতে তার নিঃশ্বাস জারার মুখের উপর পরছে।জারা চোখ বন্ধ করে ফেলে।এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে তার।কেমন শীহরন বয়ে যাচ্ছে তার শরীরে।তাহসিনের সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই।

জারাঃকি করছেন ছাড়ুন আমাকে? কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে।প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।

তাহসিনঃএখন কেনো দূরে যেতে চাইছেন,দুইদিন পর তো বিয়ে হবেই তাই কাছে আসতে তো দোষ নেই তাই না।

জারাঃবিয়ের পর কাছে আসবেন মিস্টার এখন না।

এইটুকুই যথেষ্ট তাহসিনের রাগ দ্বিগুণ করার জন্য।সাথে সাথে সে এমন একটি কাজ করে বসলো যা জারার কল্পনার বাইরে ছিলো।

চলবে,,,,

সত্যি ভালোবাসো পর্ব-১৬+১৭

0

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_16
#writer_Fatema_Khan

“অন্ধকার রুমে বসে আছে তাহসিন।তার একহাতে পাসপোর্ট ও টিকিট আর অন্য হাতে তাহিয়ার ছবি।”

তাহসিনঃজানিনা কোনদিন ভুলতে পারবো কিনা তোমাকে,আর আমিও চাই না তোমাকে ভুলতে।তুমি বাস্তবে আমার হবে না আমি জানি কিন্তু একান্ত আমার ব্যাক্তিগত স্বত্তায় তুমি শুধু আমার।আর কখনো দেশে ফিরবো না,দেখা হবে না আমার এই ছোট প্রেয়সীর সাথে।কিন্তু প্রেয়সী একটা কথা জানো তোমাকে ভুলে থাকার ক্ষমতা আমার নেই।অনেক কষ্ট হচ্ছে আজ ছেড়ে চলে যাবো তোমাকে।আরিশ বুঝতে পেরে গেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি,তাই আমার এখানে থাকা সম্ভব না।আমি চাই না আমার জন্য তোমার জীবনে কোনো সমস্যা হোক।

আবিরঃভিতরে আসবো(দরজায় নক করে)

তাহসিনঃআরে বাবা এসো,তোমাকে নক করে আসতে হবে কেনো?(রুমের লাইট জ্বালাতে জ্বালাতে)

আবিরঃছেলে মেয়ে বড় হলে তাদের রুমে নক করে আসতে হয়।আর আমার ছেলেটা যে হঠাৎ এমন করে বড় হয়ে যাবে আমি ভাবতেই পারি নাই।অন্যের সুখের জন্য নিজে সবার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।

তাহসিনঃ কিছু করার নেই বাবা।আমার তো যেতেই হতো।

আবিরঃ,তোমার ফ্লাইট কয়টায়?

তাহসিনঃএইতো আধা ঘণ্টার মধ্যে বের হয়ে যাবো,১১ঃ০০টা বাজে আমার ফ্লাইট।

আবিরঃ ওকে তুমি তৈরি হয়ে নিচে এসো।আর খেয়ে নিয়েছো তো?

তাহসিনঃ হুম বাবা।

_________________________________

“প্লেনে বসে আছে তাহসিন।চোখ দুটি বন্ধ করে নিজের প্রেয়সীকে ভাবছে সে।১০মিনিট পর প্লেন টেক অফ করবে এনাউন্সমেন্ট হচ্ছে।”

তাহসিনঃবিদায় প্রেয়সী💔।(তাহসিন চলে গেলো তাহিয়া থেকে অনেক দূরে,হয়তো আর দেখা হবে না)

___________________________________

“তাহিয়া খাটে বসে তাহসিনের বলা কথাগুলো ভাবছে,আরিশ তার দিকে তাকিয়ে আছে আর চিন্তা করছে তাহিয়া কি এমন ভাবছে?”

আরিশঃকি ভাবছো তুমি তখন থেকে?

তাহিয়াঃতাহসিন ভাইয়া চলে গেছে আজ।

আরিশঃকোথায়?(অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো)

তাহিয়াঃকানাডা।ওইখানে নাকি স্টাডি কমপ্লিট করবে।

আরিশঃ হঠাৎ চলে গেলো,তুমি ওকে কিছু বলেছো?মানে কারো সাথে কিছু হয়েছে?

তাহিয়াঃ না তবে আমি একটা খবর জানতে পেরেছি সেটা হলো ভাইয়া যাকে ভালোবাসে সে আমি।

আরিশঃঅহ,আচ্ছা তুমি ঘুমিয়ে পরো।এতো চাপ নিও না এই ছোট মাথায়।বুঝলা বউ।(এতো বোকা কেনো তুমি মেয়ে।কবে যে তোমার বুদ্ধি হবে।তাহসিন তোমাকে ভালোবাসে সেটাও আমাকে বলে দিলে কত অবুঝ তুমি)

তাহিয়াঃ হুম।কিন্তু তুমি কখন ঘুমাবে?

আরিশঃআমার একটু কাজ আছে।কাজ শেষ করে শুয়ে পরবো।

তাহিয়াঃ ঠিক আছে।(তারপর তাহিয়া ঘুমিয়ে পরলো)

(আরিশ নিজের কাজ শেষ করে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তাহসিনের কথা ভাবছে।তুমি তাহিয়াকে এতো ভালোবাসো যে ওর সুখের চিন্তা করে নিজের সুখের কথা ভুলেই গেলে।#সত্যি_ভালোবাসো তুমি তাহিয়াকে।অনেক ভালোবাসো।)

_________________________________

তূর্যঃ কিহ আমাকে কাল দেশের বাইরে যেতে হবে তাও ২ বছরের জন্য।কিন্তু কেনো বাবা এখানে থেকে আমি কাজ করছি?

আরমানঃদেশে আমি দেখে নিবো।কিন্তু আমার অবর্তমানে তোমাকেই সব দেখতে হবে,তাই আমি চাই তুমি দেশের বাইরে আমাদের যে বিজনেস আছে সেটা এই ২বছর দেখো।

তূর্যঃকিন্তু বাবা…

আরমানঃকোনো কিন্তু নয়।তুমি কাল যাচ্ছো লন্ডন,তোমার টিকিট কাটা হয়ে গেছে।তাই সব গুছিয়ে নাও।

তূর্যঃঠিক আছে বাবা।(রাগে হাতের মুষ্ঠী বন্ধ করে)

_______________________________

“সকালে সবাই তাহিয়াদের বাড়িতে উপস্থিত।তূর্য চলে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই।সবার থেকে বিদায় নিয়ে তনিমা আর তাহিয়াকে জড়িয়ে ধরে তূর্য।তনিমা ও তাহিয়া দুইজনের চোখে পানি। ২বছরের জন্য ভাইয়াকে দেখতে পারবে না তারা।”

তূর্যঃ একদম কান্না করবি না।শ্বশুর বাড়িতে ভালো মত থাকবি।আর দুইজনে ভালো করে লেখাপড়া কিরবি।আমি এসে যেন দেখি খুব ভালো রেজাল্ট আসছে।ওকে

ওকে ভাইয়া(তনিমা আর তাহিয়া একসাথে বলে উঠে)

(তূর্য বেরিয়ে যায়।২ বছর পর ফিরবে ভাবতেই তূর্যের মা(আফসানা) কান্না করে দেয়।ছেলেটাকে বড্ড ভালোবাসে সে।)

__________________________________

২বছর পর,,,,,

আজ তাহিয়ার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষদিন।খুব ভালো হয়েছে তার পরীক্ষা।বাইরে গাড়ি নিয়ে আরিশ দাঁড়িয়ে আছে তাহিয়া আসলে তারা বাসায় যাবে।কিছুক্ষণ পর তাহিয়া বের হয়ে আসে।আর বলে—

তাহিয়াঃচলোনা আজ একটু ঘুরতে যাই।আজ তো আমার পরীক্ষা শেষ।

আরিশঃআজ না।কাল ঘুরতে নিয়ে যাবো।আজ অফিসে কাজ আছে,তোমাকে বাসায় দিয়ে আমার আবার অফিসে যেতে হবে।

তাহিয়াঃঠিক আছে।কিন্তু কাল নিয়ে যেতে হবে বলে দিলাম(রাগে গাল ফুলিয়ে)

আরিশঃপ্রমিস কাল নিয়ে যাবো।

(তারপর দুইজন গাড়িতে উঠে চলে যায়।)

_________________________________

আরমানঃতূর্যের মা তূর্য কল করেছে?

আফসানাঃ না।তূর্য গত ৫দিন ধরে না কল করছে না আমাদের কল ধরছে।আমার ছেলেটা ঠিক আছে নাকি কে জানে।

আরমানঃ ঠিক আছে চিন্তা করো না

আফসানাঃ অহ এখন চিন্তা করবো না।জোর করে আমার ছেলেটাকে বিদেশ পাঠিয়েছ।ছেলেটা যেতে চায় নি।এখন কেমন আছে কে জানে।

(বলেই কান্না করতে লাগলো)

__________________________________

কানাডা,,,,,

তাহসিনঃ কেমন আছিস?

তনিমাঃএইতো ভালো।তোর কি খবর?

তাহসিনঃআমি আছি কোনরকম।আচ্ছা তাহিয়ার পরীক্ষা কেমন হলো,আজ তো ওর শেষ পরীক্ষা ছিলো?

তনিমাঃএকটু আগে কথা হলো।খুব ভালো হয়েছে পরীক্ষা।

তাহসিনঃভালো। আচ্ছা তাহলে রেখে দেই,পরে কথা হবে।

তনিমাঃ ওকে নিজের খেয়াল রাখিস।(তারপর কল কেটে দিলো তাহসিন)

(তুমি কি আমায় ভুলে গেছো প্রেয়সী?কিন্তু দেখো আমি ঠিক আগের জায়গায় রয়ে গেছি, ২বছর আগে যেখানে ছিলাম এখনো সেখানেই আছি—-তাহিয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে তাহসিন)

চলবে,,,,,,

#সত্যি_ভালোবাসো
#part_17
#writer_Fatema_Khan

“বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।সকালের নামায পরে দাঁড়িয়ে আছি সূর্য উঠা দেখবো বলে।সাদা মেঘের ভেলায় যেনো একটুকরো রক্তিম লাভা উকি দিতে দেখা যাচ্ছে।কি সুন্দর দৃশ্য,আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি।মনটা একদম ভালো নেই এই কয়দিন।তূর্য ভাইয়ার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না গত ১০দিন ধরে।কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না কেউ। আরিশের ডাকে নিজের মধ্যে ফিরে আসি আমি।”

আরিশঃএতো সকালে বেলকনিতে কি করছো তুমি?(পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার চুলে মুখ গুজে)

তাহিয়াঃআসলে ভাইয়া কই গেলো সেটা নিয়েই ভাবছিলাম।

আরিশঃঅহহ আচ্ছা আমি বের হচ্ছি আসতে আসতে রাত হবে তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পরো।

তাহিয়াঃ আজও এতো সকালে যাবে আর দেরি করে আসবে?(গাল ফুলিয়ে)

আরিশঃ হুম।তবে আমার ছোট্ট বউটার জন্য সারপ্রাইজ আছে ৩দিন পর।তুমি পুরো অবাক হয়ে যাবে।

তাহিয়াঃলাগবে না আমার সারপ্রাইজ,তুমি কাছে থাকলেই আমার সব পাওয়া হয়ে যায়।

আরিশঃআমাকে #সত্যি_ভালোবাসো

তাহিয়াঃনিজের চেয়েও বেশি।তুমি বুঝি আমাকে #সত্যি_ভালোবাসো না?

তাহিয়াঃতোমাকে ছাড়া আমি নিঃস্ব।আমার কোনো অস্তিত্ব নেই।

আরিশঃতাই

তাহিয়াঃহুম।কিছু খাবে না

আরিশঃখেতে তো অনেক কিছুই ইচ্ছে করছে।(আমার কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে)

তাহিয়াঃছাড়ো না প্লিজ।আর কিছু খেয়ে নাও।

আরিশঃবাইরে খেয়ে নিবো।(বলেই আমার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বের হয়ে চলে গেলো)

তাহিয়াঃকেনো যানিনা মনে হয় তুমি আমাকে যতটুকু ভালোবাসো আমি তোমাকে তার সমপরিমাণ ভালোবাসি কিনা।কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া অচল থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া।মরে যাবো আমি তোমাকে ছাড়া।কখনো দূরে যাবে না তো আমাকে ছেড়ে ।কেনো জানিনা ইদানীং খুব ভয় হয় আমার।তোমার ভালোবাসা আমি হারাতে চাই না।আমাকে সবসময় নিজের বুকে আগলে রেখো ভালোবাসা।

(বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তাহিয়া)

_________________________________❤️❤️

আবিরঃতাহসিন তোমাকে কালকের মধ্যে দেশে আসতে হবে।

তাহসিনঃকিন্তু আমি তো দেশে ফিরবো না এটা তুমি জানো,তাহলে কেনো বলছো আমাকে দেশে যেতে

আবিরঃআমার শরীর টা ভালো নেই।তোমাকে একটু দেখতে ইচ্ছে করছে।তুমি ১সপ্তাহ থেকে চলে যেও।

তাহসিনঃএতো তাড়াতাড়ি টিকিট পাবো কিনা বলতে পারছি না।

আবিরঃসে ব্যবস্থা আমি করে দিবো।তুমি চলে আসো বাস।

তাহসিনঃঠিক আছে আমি কাল তাহলে দেশে আসছি।(বাবার অসুস্থতার কথা শুনে আর মানা করতে পারলো না সে)

আবিরঃআচ্ছা রাখছি।(বলে কল কেটে দিলো)

_________________________________

আবিরঃছেলেটাকে এভাবে মিথ্যা বলা কি ঠিক হলো।

আরমানঃএকদম ঠিক হয়েছে।না হলে তোমার ছেলে দেশে আসতো বলে তোমার মন হয়।

আবিরঃ কিন্তু ওকে না জানিয়ে ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলা।আমার উপর অনেক রেগে যাবে।

আরমানঃএকবার বিয়ে হতে দাও সব ঠিক হবে দেখে নিও।তারপর বউ নিয়ে না হয় কানাডা চলে যাবে অসুবিধে কোথায়

আবিরঃতাই যেনো হয়।

আরমানঃআর তূর্যের যে কি হলো কোনো খবর পাচ্ছি না।ওর মা তো কেদে কেটে শেষ।

আবিরঃহ্যা ছেলেটা হঠাৎ কোথায় গেলো।সেটা ভাবার বিষয়।ওইখানে তূর্যের সব বন্ধুদের সাথে কথা বলা হয়েছে ওরা কিছু জানে?

আরমানঃযাদের আমি চিনি সবার থেকে খবর নেয়া হয়ে গেছে তারা কেউ জানে না।

আবিরঃ অহ।এখন ও ভালো থাকলেই হয়।

আরমানঃছেলেটার কোনো বিপদ হলে নিজেকে মাফ করতে পারবো না আমি।

আবিরঃতূর্যকে জোর করে না পাঠালেও পারতে।কিন্তু দুইবছর তো হয়ে গেলো কিছুদিন পর ওর আসার কথা আর এই সময় ছেলেটা এভাবে উধাও হয়ে যাওয়া।

আরমানঃসেটাই অনেক চিন্তা হচ্ছে,কিন্তু কাওকে আমার যে চিন্তা হচ্ছে বুঝতে দিতেও পারছি না।তাহলে তূর্যের মা আরও ভেঙে পরবে।তনিমার শরীরটাও ভালো নেই এইদিকে তূর্য কি যে করি মাথা কাজ করছে না।আচ্ছা আজ তাহলে উঠি।পরে তোমার সাথে কথা হবে।

আবিরঃঠিক আছে।আর ভাবির খেয়াল রেখো।

_________________________________

(রাতে রুমে বসে গিটারে টুংটাং আওয়াজ বের করছে তাহসিন।)

কাল আবার আমায় দেশে যেতে হবে।আমি চাই না আমি তোমার সামনে যাই।আমি যতদিন দেশে থাকবো তোমার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখবো।বলেই গিটারে সুর তুললো–

শোননা রূপসী তুমি যে শ্রেয়সী,

কি ভীষণ উদাসি প্রেয়সী।

না না না …

জীবনের গলিতে এ গানের কলিতে,

চাইছি বলিতে ভালবাসি।

চোখের জলেরই আড়ালে,

খেলা শুধুই দেখেছিলে,

যন্ত্রণারই আগুন নীলে,

পুড়েছি যে-বোঝনি তা।

অভিমানে চুপটি করে,

এসেছি তাই দূরে সরে,

বোঝাতে চেয়েও পারিনি

তাই বোঝাতে- লুকোনো কথা।

_________________________________💔💔

রেজোয়ানঃআর কতদিন অপেক্ষা করাবে?তোমার কথায় ২বছর অপেক্ষা করলাম,এবার তো নিজের কথা রাখবে।

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃসময় শেষ হয়ে গেছে,এবার আমি আমার কথা রাখবো।শীঘ্রই আপনার সাথে আমার দেখা হচ্ছে।

রেজোয়ানঃএবার তাহলে আমার প্রতিশোধ পূর্ণ হবে।(উচ্চস্বরে হেসে বলল)

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃজ্বি অবশ্যই,এতোদিন যখন অপেক্ষা করেছেন আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপর আপনার আর আমার দুইজনের প্রতিশোধ পূর্ণ হবে।

রেজোয়ানঃআমার না হয় একটা কারণ আছে প্রতিশোধ নেয়ার,কিন্তু তুমি কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছো তুমি তো তাদের…….

রেজোয়ানকে থামিয়ে—

মাস্কপরা ব্যাক্তিঃসব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন সময় হোক।আর আপনি আজ বা কালের ভেতরে দুবাই থেকে দেশে আসুন।(বলেই কল কেটে দিলো)

________________________________

(তাহসিন দেশে ফিরে এলো।এসেই সে নিজের বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিচ্ছে।কিন্তু তার মন ব্যাকুলতায় ভরে আছে একটি বার যদি সে তার প্রেয়সীর মায়াবী মুখটা দেখতে পারতো।যেই ভাবা সেই কাজ সে বেড়িয়ে পরল,উদ্দেশ্য আরিশদের বাড়ি।)

(তাহসিন গাড়ি করে না গিয়ে বাসে করে যাবে,তাই সে রাস্তায় নেমে পরলো।একটা রিকশা নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলো।রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে যেই না পিছনে ফিরবে কারো সাথে ধাক্কা লেগে যায়।)

তাহসিনঃসরি,আসলে আমি দেখতে পাইনি আপনাকে।

জারাঃঅহ হ্যালো মিস্টার কিসের সরি।সুন্দরী মেয়ে দেখলেই বুঝি গায়ে পরতে ইচ্ছে করে।

তাহসিনঃআমি সরি বলছি তো।

জারাঃআমি জারা বুঝলেন আপনার মত ছেলেদের খুব ভালো করে চিনি।মেয়ে দেখেই লাইন মারা শুরু।

জারাঃআমি জানি সুন্দর দেখতে আমি।তাই বলে এমন করবেন নাকি।আর শুনুন আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সো আপনার কোনো চান্স নেই বুঝলেন।

তাহসিনঃপাগল হয়ে গেলেন নাকি।আমার কি মাথা নষ্ট নাকি যে আপনার মত জগরুটে মেয়ের সাথে লাইন মারতে যাবো।আমার জন্য মেয়েদের লাইন পরে থাকে আপনার মত মেয়েদের আমি পাত্তা দেই না।

(বলেই আবার রিকশাতে উঠে পরল)

তাহসিনঃচাচা যেখান থেকে আসছি ওইখানে নিয়ে চলেন।মুডটাই নষ্ট করে দিলো।

চলবে,,,,