Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1444



ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-২৩+২৪

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ২৩
#Arshi_Ayat

ইয়াদ হসপিটালে এসে ইফাজের চেম্বারে উঁকি দিয়ে দেখলো ইফাজ রুগীর সাথে কথা বলছে।ইয়াদকে দেখে ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল।ইয়াদ বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলো।পাঁচ মিনিট পর রুগী বেরিয়ে যেতেই ইয়াদ ঢুকলো।ইফাজের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে বলল,’কি বলবে বলো।’

ইফাজ ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে!ভেতরে সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে।তবুও বলতে শুরু করলো,’ইয়াদ তোকে একটা সিরিয়াস কথা বলবো।’

ইয়াদ কৌতুহলী হয়ে বলল,’হ্যাঁ বলো।’

ইফাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন নার্স এসে দ্রুত বলল,’স্যার,ইট’স এন ইমার্জেন্সি।পেশেন্টের অবস্থা ক্রিটিকাল।’

ইফাজ নার্সের কথা শুনে তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।তারপর ইয়াদকে বলল,’তুই বাসায় যা।পরে কথা হবে।’

এটা বলেই ইফাজ চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো।
—————-
সন্ধ্যায় কোচিং থেকে বেরিয়ে মধু আর আরিয়া কোচিং এর সামনেই দাড়ালো ইয়াদের জন্য।মধুর একা দাড়াতে ভালো লাগে না।তাই আরিয়াও ওর সাথে দাড়ালো।হঠাৎ আরিয়া মধুর হাত চেপে ধরে বলল,’মধু তাড়াতাড়ি সামনে তাকিয়ে রিকশায় বসা ছেলেটাকে দেখ।’

মধু তাকিয়ে দেখলো ইফাজ রিকশায় বসা।আরিয়া আবারও বলল,’এই ছেলেটাকে যে আমি কতো খুঁজেছি দোস্ত।বলে বোঝাতে পারবো না।মাঝেমধ্যেই রাস্তায় দেখি কিন্তু গিয়ে কথা বলতে পারি না।’

মধু ভ্রু কুঁচকে বলল,’এটা তো ইফাজ ভাইয়া।ইয়াদের বড় ভাই উনি।’

মধুর কথায় আরিয়া চমকে বলল,’সত্যি!বিশ্বাস হচ্ছে না।ইয়াদ ভাইয়ার ভাই উনি!দোস্ত প্লিজ একটা ব্যবস্থা কর না!’

মধু আরিয়ার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,’আমার এই ব্যাটাকে ভয় লাগে।আর ওনার সঙ্গে আমার তেমন কথাও হয় নি।আমি পারবো না।তুই ইয়াদকে বল।’

‘ধূর,ইয়াদ ভাইয়াকে এগুলো বললে ভাইয়া কি ভাববে?তার চেয়ে ভালো তুই একটু দেখ না কি করা যায়!বেশি না ওনার নাম্বারটা একটু ম্যানেজ করে দে না!”

আরিয়ার কথার জবাব দেওয়ার আগেই ইয়াদ চলে এলো।ইয়াদকে দেখে আর মধু কিছু বলল না।আর আরিয়া ইয়াদকে হাই/হ্যালো বলে চলে যাওয়ার সময় বলল,’দোস্ত ওইটা কিন্তু চাইইই আমার।প্লিজ!”

এটা বলে আরিয়া চলে গেলো।ইয়াদের মাথায় কিছু ঢুকলো না তাই ও মধুকে বলল,’আরিয়া কি বলল?’

মধু এবার আমতা আমতা করতে করতে বলল,’আরে ওই যে আমার নোট চাইছে।’

‘ওহ!চলো।’ইফাজ সন্দেহ করলো না।শুধুশুধু সন্দেহ করাটা ওর ধাতে নেই।

‘চলেন।’
———–
সন্ধ্যায় ইফাজ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে মা’কে জিগ্যেস করলো,’মা ইয়াদ কই?’

‘ও তো একটু আগে মধুর সাথে দেখা করতে বেরিয়েছিলো।এখনো ফেরেনি।’

‘ও আচ্ছা।ও আসলে একটু বইলো তো রুমে আসতে।’

তারপর ইফাজ রুমে চলে গেলো।নিজের ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ’টা বের করতে গিয়ে আজকে নিহার দেওয়া বিয়ের কার্ডাটায় চোখ পড়লো।অনিচ্ছা স্বত্বেও কার্ডটা খুললো।বরের নাম “রাজীব আহমেদ”।দশদিন পর বিয়ের তারিখ।সহ পরিবারে আমন্ত্রিত।’ইফাজ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।যাক নিহার বিয়ে হয়ে গেলো অন্তত ওর জ্বালানির হাত থেকে বাঁচা যাবে।ইফাজ কার্ড রাখতেই ইয়াদ চলে এলো।ইয়াদকে দেখে ইফাজ বলল,’কি রে কই ছিলি এতক্ষণ?’

‘আর বইলো না মধুকে হোস্টেল পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেলাম।পথেই চটপটির দোকান দেখে দাড়িয়ে পড়লো।চটপটি খেতেই হবে ওর।তো আমি আর কি করবো।দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র হবু বউ আমার চটপটি কিনে হোস্টেলে দিয়ে এলাম।’এটা বলেই ইয়াদ হাসলো

ইফাজের বুকে যন্ত্রণা হলো।নিজেকে সামলে হালকা হেসে বলল,’খুব ভালোবাসিস তাই না?’

‘হ্যাঁ অনেক ভালোবাসি।ও এমন একটা মেয়ে যে ওকে দেখলেই মায়া চলে আসবে।চোখে সরলতা ঠোঁটে চপলতা।হাসলে নরম গালে টোল পড়ে।দেখলে মন চায় দেখতেই থাকি।’
এতটুকু বলে ইয়াদ থামলো।তারপর আবার বলল,’জানো মেয়েটার পরিবারে কেউ ওর আপন না।বাবা ছোটবেলায় মারা গেছে।মায়ের অবহেলায় এই পর্যন্ত বড় হয়েছে।এর আগেও ওর মায়ের বিয়ে হয়েছিলো।কিন্তু পরে ডিভোর্স হওয়ায় ও আবার ওর মায়ের সাথেই থাকতো।একটু বড় হবার পর থেকেই বিয়ের জন্য প্রেশার দিতো।কয়েকবার ও বিয়ে ভেঙেছে।এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এখন ও হোস্টেলে থাকে।যখন ও ওর কষ্টগুলো আমার সাথে শেয়ার করেছিলো তখন আমি ভাবলাম ওকে সাহায্য করা দরকার।কিন্তু ও এমনিতে আমার হেল্প নিতো না।তাই ওর সাথে রিলেশনে যাই।ও আমাকে আগে থেকেই পছন্দ করতো।ওর এক্সপ্রেশনে বুঝতে পারতাম।আমি রিলেশনে সিরিয়াস ছিলাম না।কিন্তু ভাইয়া সত্যি বলতে ওর এই কয়েকমাস ওর সাথে থাকতে থাকতে আমি যে কখন ওকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না।সারাদিনে একবার না দেখলে অস্থির অস্থির লাগে।কিছুদিন আগে ওর টেস্ট পরীক্ষা ছিলো ওকে দেখা করতে না বলে নিজেই চুপিচুপি প্রতিদিন ওকে দেখে আসতাম।ওর মধ্যে রাগ জিনিসটা নেই কিন্তু অনেক অভিমানী।’এতটুকু বলেই ইয়াদ হাসলো।

ইফাজ এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সব শুনলো।ওরা কতো সুখী!শুধু নিজের জন্য এভাবে কি ওদের আলাদা করা ঠিক হবে !ইফাজের একবার মনে হচ্ছে স্বার্থপর হতে আরেকবার মনে হচ্ছে এটা ঠিক হবে না।ওদের মাঝখানে আসা উচিত নয়।ইফাজ কনফিউশানে পড়ে গেছে।ঠিক করতে পারছে না কি করবে।সময় প্রয়োজন!ভাবতে হবে!

এবার ইয়াদ আবার বলল,’তুমি কিছু বলবে বলেছিলো!”

‘হ্যাঁ আরে শোন না তোর ফাইনাল এক্সাম কবে?আর স্কলারশিপের আবেদন করেছিস?’

‘ফাইনালের আরো চারমাস বাকি।আর স্কলারশিপের আবেদন কিছুদিন আগেই করেছি।’

‘ও,আচ্ছা।’
ইফাজ আর কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না।তাই বলল,’এখন যা কিছু রিচার্স করতে হবে।’

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল,’তুমি না কি বলবে বলছিলে?সিরিয়াস কিছু!”

‘বললামই তো!এই যে তোর স্কলারশিপের ব্যাপারে।’

ইয়াদ বেকুব হয়ে মনেমনে বলল,’এটা সিরিয়াস বিষয়!অবশ্য ভাইয়া যেই আঁতেল টাইপ স্টুডেন্ট তার কাছে এটা সিরিয়াস বিষয় হওয়াটা অস্বাভাবিক না।’

ইয়াদ শিশ দিতে দিতে নিজের রুমে চলে গেলো।
—————
হোস্টেলে ফোন এলাও না তবুও ইয়াদের জন্য মধুর ফোন রাখতে হয়।প্রথম ফোন আইরিন রহমান নিয়ে যাওয়ার পর ইয়াদ আরেকটা ফোন দিয়েছিলো শুধুমাত্র ওর সাথে কথা বলার জন্য।যখন ইয়াদ ফোন দেয় তখন মধু ওয়াশরুমে গিয়ে কল ছেড়ে কথা বলে।এছাড়া আর উপায়ও নেই।রুমমেট’রা ওকে সন্দেহ করলেও কখনো হাতেনাতে ধরতে পারে নি।ফোন লুকানোর ক্ষেত্রে বেশ সতর্কই থাকে মধু!প্রথমবার ধরা খেয়ে প্রচুর শিক্ষা হয়ে গেছে।

রাত ৯.০০ টা বাজে।মধু ওর বিছানার ওপর বসে ম্যাথ করছিলো।হঠাৎ কোমরে ফোনের ভাইব্রেশনে বুঝলো ইয়াদ ফোন দিয়েছে।মধু ম্যাথ বইটা অফ করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো ইয়াদ না আরিয়া ফোন দিয়েছে।মধু রিসিভ করলো হয়তো কোনো জরুরি দরকার থাকতে পারে তাই।

‘হ্যালো আরিয়া বল।’

‘ওই নাম্বারটা জোগাড় করতে পারছিস?’

মধুর মেজাজ গরম হয়ে গেলো মুহুর্তেই।এই বাল বলার জন্য আরিয়া ফোন দিছে!মধু রেগে বলল,’কালকে কলেজে আইসা যদি তোরে জুতা দিয়া না পিটাইছি তাইলে আমার নামও মধু না।’

‘হ্যাঁ এখন তো এমন করবিই।তোর তো লাইন ক্লিয়ার।শুধু আমার বেলায়ই ঠনঠনা ঠনঠন।’কৃত্রিম অভিমানী সুরে আরিয়া বলল।

‘ন্যাকামি কম কর হারামি।’

‘প্লিজ বইন নাম্বারটা জোগাড় কইরা দে না প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ….’

প্লিজের বন্যা হয়ে যাওয়ার আগেই মধু ফোন কেটে দিলো।তারপর ইরিনকে ফোন দিলো ইয়াদের কাছে জীবনেও নাম্বার চাইতে পারবে না কিন্তু ইরিনকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে নাম্বার নেওয়া যাবে।আর আজকে নাম্বার না নিলে আরিয়া কালকে ওর কান খেয়ে ফেলবে।দুই তিন কল হতেই ইরিন ফোন রিসিভ করলো

‘হ্যালো ইরিন,আমি মধু।’

‘হ্যা বলো।’

‘কেমন আছো?’

‘এইতো ভালো তুমি?’

‘আলহামদুলিল্লাহ।শোনো না একটা দরকারে ফোন দিলাম।’

‘কি দরকার বলো?’

‘ইফাজ ভাইয়ার নাম্বারটা একটু দিবে?আমার ফ্রেন্ডের খালা শ্বাশুড়ি অসুস্থ এইজন্য ও ভালো ডাক্তার খুঁজছিলো।তো আমি ভাইয়ার কথা বললাম।ও ভাইয়ার নাম্বারটা চাইছিলো।’

‘ও আচ্ছা।ঠিকাছে লিখো।’

নাম্বার নেওয়ার পর আরো দু’চারটা সৌজন্য মূলক কথা বলে মধু ফোন রেখে দিয়ে আরিয়াকে কয়েকশ গালি দিয়ে ফোন কোমরে গুঁজে ওয়াশরুম থেকে বের হতে না হতেই আবার ফোন ভাইব্রেশন হলো।মধু আবার দৌড়ে ওয়াশরুমে গেলো।এবার ইয়াদ ফোন দিয়েছে।

ওর সাথে কথা বলে বের হয়ে বিছানায় এসে বসতেই ওর পাশের বেডের শিমলা বলল,’তোমার কি পেট খারাপ?বারবার ওয়াশরুমে যাচ্ছো যে?’

মধু কি বলবে!অতি দুঃখে কাঁদতেও পারছে না হাসতেও পারছে না।

চলবে…

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ২৪
#Arshi_Ayat

দুপুরের লাঞ্চের সময় একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এলো ইফাজের ফোনে।ইফাজ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ ভেসে এলো।মধুর রিনরিনে গলায় বলল,’এটা কি ডাক্তার ইফাজের নাম্বার?’

‘জ্বি,কে বলছেন?’

‘আমি খুব অসুস্থ ডাক্তার সাহেব।’

‘আপনি চেম্বারে আসুন।ফোনে তো বোঝা যাবে না আসলে আপনার সমস্যা কোথায়।’

এবার ওপাশ থেকে একটু কাতর গলায় বলল,’আমি জানি আমার সমস্যা কোথায়।কিন্তু ঔষধ তো শুধু আপনার কাছেই আছে।জানেন আমি যেদিকে তাকাই শুধু আপনাকেই দেখতে পাই।’

ইফাজ এবার বুঝতে পারলো কেউ ওর সাথে তামাশা করছে।তাই ইফাজও ঠাট্টার স্বরে বলল,’ওহ!এবার বুঝতে পেরেছি আপনার সমস্যা।আপনাকে তো জ্বিনে ধরেছে।অতি দ্রুত ওঝার কাছে গিয়ে পানি পড়া খান জ্বীন চলে যাবে।’

এটা বলে ইফাজ ফোনটা খট করে কেটে দিলো।তারপর বিরক্তিতে লাঞ্চ করা শুরু করলো।এমনিতেই মনে শান্তি নাই তার ওপর এগুলো যে কোথা থেকে আসে!উফফ!

ইফাজ ফোন কাটতেই আরিয়া হাসতে হাসতে রাস্তায় বসে পড়লো।মূলত ওই ইফাজকে ফোন করেছিলো মধুর কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে।কলেজ ছুটির পর আরিয়া নিজের ফোন থেকে ইফাজকে ফোন দিয়েছিলো।সাথে মধুও ছিলো।প্রথমে আরিয়া নার্ভাস থাকলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়েছিলো।
———–
সন্ধ্যার সময় ইফাজ বাসায় যাওয়ার জন্য চেয়ার ছাড়তেই দেখলো নিহা চেম্বারে ঢুকলো।আজকে নিহাকে অন্যরকম লাগছে।হাফ সিল্কের নীল পাড়ের সাদা শাড়ী,হাতে নীল সাদা চুড়ি,মাঝখানে সীঁথি করে খোপা বাধা।খোপায় টাটকা বেলি ফুলের মালা গোঁজা।চোখে কাজল টানা।

নিহা এগিয়ে এসে চুড়ির ঝংকার তুলে বলল,’কেমন আছো ইফাজ?’

ইফাজ মোহ কাটিয়ে বলল,’ভালো,তুমি?’

‘এই তো,ভালোই আছি।বাসায় যাচ্ছো?’

‘হ্যাঁ,ডিউটি শেষ।’

‘ওহ!রাজীবের সাথে একটু বেরিয়েছিলাম।চলো পরিচয় করিয়ে দেই।’

চেম্বারের বাইরেই রাজীব দাঁড়িয়ে ছিলো।ইফাজ আর নিহা বেরিয়ে আসতেই রাজীব ইফাজের দিকে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো।তিনজনে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ইফাজ নিজের বাসার দিকে চলে এলো আর ওরা অন্যদিকে চলে গেলো।বাসায় যেতে যেতে ইফাজের রাস্তার একপাশে চোখ গেলো।ইয়াদ আর মধু রাস্তা পার হচ্ছে।ইয়াদ মধুর হাত ধরে খুব সাবধানে পার করলো।ইফাজ মনে মনে বলল “ভালোবাসা সবার জন্য না।”
————–
দুইদিন পরের কথা..
আজকে শুক্রবার।ইয়াদ আর মধু বিকেলে রাস্তায় হাটছিলো।দুজনে কথা বলতে বলতেই মধু গুনগুনিয়ে গান শুরু করলো।ইয়াদ বলল,’একটু আমাকেও শোনাও।’

মধু ইয়াদের দিকে তাকিয়ে ভেঙেচিয়ে বলল,’না,শোনাবো না।’

‘কেনো?’

‘আমি ফ্রীতে গান শোনাই না।’

‘আচ্ছা যাও যা চাও তাই দিবো।’

‘পাক্কা?’মধু লাফিয়ে উঠে বলল।

‘পাক্কা’।ইয়াদ হাসলো।

মধু ইয়াদের হাত ধরে গাইতে শুরু করলো।

“ও আমার বন্ধু গো
চির সাথী পথ চলার
তোমারই জন্য গড়েছি আমি
মঞ্জিল ভালোবাসার

এক সাথে রয়েছি দুজন
এক ডোরে বাঁধা দুটি প্রাণ
ছিঁড়বেনা কভু এই বাঁধন
আসলে আসুক তুফান

তুমি আমারই বলবো শতবার
হাত দু’টি ধরেছি তোমার
মানবো না কোনো বাধা আর
শুনবো না কারো কথা যে আর

মন্দ বলুক সমাজ
তুমি আমারই, হায়, বলবো শতবার
ও আমার বন্ধু গো
চির সাথী পথ চলার,
তোমারই জন্য গড়েছি আমি
মঞ্জিল ভালোবাসার।”

মধুর গান শেষ হতেই ইয়াদ তালি দিলো।তারপর বলল,’বাহ!এইবার বলো কি চাও?’

‘যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই,যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই।’

মধুর উত্তর শুনে ইয়াদ হেসে বলল,’অলরেডি তোমারই আমি।কিন্তু এখন কি চাও?আমি বলেছিলাম তুমি যা চাও তাই দিবো।’

‘আচ্ছা আপাতত একটা আইসক্রিম হলে মন্দ হয় না।’

ইয়াদ দুটো চকবার নিলো।আইসক্রিম খেতে খেতেই ইয়াদ বলল,’দে কে আগে খেতে পারে।যে জিতবে সে তার পাশের জনেরটা খেয়ে নিবে।’

‘ওকে।’
দুজনেই তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করলেও কিন্তু ইয়াদ জিতলো।তাই শাস্তি স্বরুপ ইয়াদ মধুর আইসক্রিম কাড়তে লাগলো।দুজনেই কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে কারোই খাওয়া হলো না।আইসক্রিম পড়ে গেলো।মধু হাসতে হাসতে বলল,’ভালো হইছে পড়ে গেছে।না আপনি খেতে পারলেন না আমি পারলাম।’

‘তোমার জন্যই পড়ছে।’

‘জ্বী,না আপনার জন্য পড়ছে।’

এই তো শুরু হলো দুইজনের যুদ্ধ সারা রাস্তা দুইজনে দুজনার দোষ দিতে দিতে যেতে লাগলো।
————–
গত দুইদিন ধরে একটা আননোন মেয়ের নাম্বার ইফাজকে প্রচুর জ্বালাচ্ছে।মেয়েটাকে ইফাজ দেখা করতে বলেছিলো কিন্তু সে অনেক ঘুরানোর পর আজ দেখা করতে রাজি হয়েছে।ইফাজও রাজি হয়েছে।যেহেতু আজ শুক্রবার সেহেতু ডিউটি নেই গিয়ে ফাজিল মেয়েটার ফাজলামো বের করা যাবে।ইফাজ রেডি হয়ে বের হলো।মেয়েটা বলছিলো আরাগ নগর মলের সামনে দাড়াবে।ইফাজ ওকে দেখে নি তাই গিয়ে শুধু ওখানে দাড়াবে।মেয়ে নিজেই ওকে খুঁজে নিবে।ইফাজ মলের সামনে গিয়ে দাড়াতেই একটা মেয়ে দৌড়ে এসে ওর সামনে দাড়ালো।তারপর উৎফুল্ল গলায় বলল,’কেমন আছেন?’

‘ভালো,কিন্তু আপনি কে?’

‘আমি আপনার রোগী,আপনি আমার ডাক্তার।’আরিয়া রসিকতা করে বলল।

আরিয়ার এহেন কথায় ইফাজ বুঝলো এটাই সেই বজ্জাত মেয়ে।ইফাজ গলা ঝেড়ে বলল,’তো,আমাকে বিরক্ত করার পেছনে কারণ কি?’

‘আপনাকে পছন্দ করি সেইজন্য বিরক্ত করি।আর বিরক্ত না করলে তো আপনি পটবেন ও না।’

ইফাজ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল,’শুনুন আমি একজনকে ভালোবাসি।তাই আমি চাইবো আপনি আমাকে বিরক্ত করবেন না।’

আরিয়ার মুখ কালো করে বলল,’আপনি মিথ্যা বলছেন আমি জানি।’

‘বেশি জানা ভালো না।’

‘আচ্ছা আপনার গার্লফ্রেন্ডের ছবি দেখান তাহলেই আমি বিশ্বাস করবো।’

ইফাজ ভাবলো কথা বাড়ানোর চেয়ে একটা ছবি দেখিয়েই দেই।ফোনের গ্যালারিতে শুধু মধুর ছবি।কিন্তু ইফাজ কি মনে করে যেনো মধুর ছবি দেখালো না।নিহার সাথে কয়েকটা পিক আছে ওগুলোই আরিয়াকে দেখালো।আরিয়া পিকগুলো দেখে অনেক আপসেট হয়ে গেছে।এটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যায়।আরিয়া ইফাজের ফোনটা ওকে ফিরিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে চলে গেলো।ইফাজও উল্টোদিকে হাঁটা ধরলো।
—————-
একসপ্তাহ পরের কথা…
আজ ইফাজ অনেক চেষ্টা করেছিলো ইয়াদকে সব বলতে কিন্তু ভেতর থেকে কিছু একটা ওর গলা চেপে ধরেছিলো তাই আর বলতে পারলো না।কিন্তু এখন কষ্ট হচ্ছে খুব।তাই নিহাকে ফোন দিলো।নিহা ফোন রিসিভ করতেই ইফাজ বলল,’একটু নদীরপাড় আসতে পারবে?’

‘এখন?এখনতো সন্ধ্যা।আর আমার……’

ইফাজ আর কিছু বললও না শুনলো না খট করে ফোনটা কেটে দিলো।নিহা কয়েকবার ফোন দিলেও ধরলো না।ফোনে যখন কথা বলছিলো তখন মনে হয়েছিলো ইফাজ কাদছিলো।কি হয়েছে ওর!যতক্ষণ না জানা যাবে ততক্ষণ নিহার শান্তি লাগবে না।অগত্যা কাজিনদের সাহায্যে বিয়ের আসর ছেড়ে পালাতে হলো।

নিহা যখন নদীর পাড়ে পৌছালো ইফাজ তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো।নিহা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল,’কি হয়েছে তোমার?’

ইফাজ নিহার দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো।আজ যে নিহার বিয়ে ছিলো বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো।ও কি বিয়ের আসর ছেড়ে চলে আসলো নাকি?অবশ্য ও যা মেয়ে এমন করলেও অস্বাভাবিক হওয়ার কিছু নেই।ইফাজ শিউর হওয়ার জন্য জিগ্যেস করলো,’নিহা তুমি কি বিয়ের আসর ছেড়ে এসেছো?’

‘হ্যাঁ,কবুল না বলেই এসেছি।’

‘কি বলছ তুমি?মাথা খারাপ তোমার?বিয়ের আসর ছেড়ে কেনো আসতে গেলে?’

‘তুমি ডাকলে আমি সবকিছু ছেড়ে আসতে পারবো।’

‘হেয়ালি করার সময় না এখন চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।’

এই বলে ইফাজ নিহার হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলেই নিহা দাঁড়িয়ে পড়লো।ইফাজ ওর দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকলো।নিহা আকুতি ভরা কন্ঠে বলল,’রেখে দাও না আমাকে।’

ইফাজ থমকে গেলো।কি সরল আকুতি ভরা কন্ঠ।এতো ভালোবাসা বোধহয় এইজীবনে কেউ দিতে পারবে না।নিজের ভালোবাসা পূর্ণতা না পেলেও কারো ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে পারলে ক্ষতি কি?একমুহূর্ত কিছু একটা ভেবে ইফাজ বলল,’সত্যি?একবার রেখে দিলে আর যেতে পারবে না।’

‘কবুল বলে শিকল পড়িয়ে দাও যেনো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে পারি।’

ইফাজ আর কথা বাড়ালো না।জেলা সদরে চলে গেলো।ওখানেই কাজি অফিস।নিহা কাজি অফিস আসার সময়টুকু ইফাজের দিকে তাকিয়ে ছিলো।সময়টা যনো ঘোরের মধ্যে দিয়ে কাটছে।আসলেই কি এই মানুষটার সাথে ওর বিয়ে হচ্ছে?নাকি এটা স্বপ্ন!নিহা ইতিমধ্যে দশবার নিজের হাতে চিমটি কেটে পরীক্ষা করেছে এটা সত্যি কি না!

যখন সাইন করে কবুল বলল তখন নিহা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলেই ইফাজ ধরে ফেললো।তারপর বলল,’তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?’

‘নাহ!মনে হচ্ছে স্বপ্ন!এতো খুশীতে আমার হার্ট অ্যাটাক চলে আসছে।’

ইফাজ নিহার কথায় হাসলো।কাজি অফিস থেকে বেরিয়ে নিহাকে বলল,’এখন কি করবে?’

‘চলো কোথাও গিয়ে বসি।’

ইফাজ আর নিহা আবার নদীরপাড়ে এলো।নিরবতা ভেঙে নিহা’ই বলল,’তুমি যাকে ভালোবাসো সে কোথায়?’

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-২১+২২

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ২১
#Arshi_Ayat

দেখতে দেখতে সম্পর্কের দুইমাস অতিবাহিত হলো।ইয়াদ আগের থেকেও বেশি যত্নশীল হয়ে গেলো মধুর প্রতি।আর মধু তার থেকেও এক ধাপ ওপরে।ইতিমধ্যে ইয়াদ ওর বাবা মা কে মধুর কথা জানিয়েছে।ওর বাবা মা আপত্তি করে নি।খুব সুন্দরভাবেই মেনে নিয়েছিলো।তবে টেস্ট পরীক্ষার প্যারায় এই সপ্তাহে একবারো ইয়াদ দেখা করে নি।পরীক্ষার আগের দিন কড়া করে বলে দিয়েছিলো পরীক্ষায় যেনো ৯০% নাম্বার আসে।আর পরীক্ষা চলাকালীন কোনো রকম দেখা করা চলবে না।মধু অবশ্য বলেছিলো একদিন পরপর দেখা করার কথা কিন্তু তার আবদার ইয়াদের শাসনের কাছে ধোপে টিকলো না।

মধু ১.১০ এ কলেজ থেকে বের হলো।পরীক্ষা শেষ ১.০০ টায়।দশমিনিট বান্ধবীদের পরীক্ষার খবর টবর নিয়েই বেরিয়ে পড়লো কলেজ থেকে।এখন হোস্টেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে আবার পড়তে বসতে হবে।কালকেই শেষ পরীক্ষা।আর কালকে বিকেলেই ইয়াদের সাথে দেখা হবে।মধুর যেনো তর সইছে না!তবে কিচ্ছু করার নেই যেহেতু এতোদিন ধৈর্য ধরেছেই আরেকটা দিনও নাহয় ধরবে।
————-
সময়টা ৪.০০টা বেজে ৫৩ মিনিট।অতি মনোযোগে জৈবযৌগের বিক্রিয়া লিখছিলো মধু।হঠাৎ তার মনযোগ পন্ড করে পাশের বেডের শিমলা বলল,’আপু,তোমার পার্সেল এসেছে।দারোয়ান দিয়ে গেলো।’
এটা বলেই শিমলা একটা শপিং ব্যাগ মধুর হাতে ধরিয়ে দিলো।মধু একটু অবাক হলো।ভাবলো ওকে পার্সেল দেওয়ার মতো কে আছে?ইয়াদ দিয়েছে?না ইয়াদ তো যা দেওয়ার সামনাসামনি দেয়।নাকি পরীক্ষার জন্য সামনে না এসে পার্সেলে পাঠিয়েছে!কিন্তু কেনো পাঠাবে?মধু দ্বিধাদ্বন্দে ব্যাগটা খুললো।

এতে একটা মেরুন রঙের শাড়ি,এক জোড়া নুপুর,একজোড়া ঝুমকো,একটা মেহেদী,একডজন রেশমী চুড়ি,একটা গাজরা আর একটা চিঠি আছে।মধু চিঠিটা হাতে নিলো।চিঠিটা খুলতেই দেখলো মার্জিত হাতের লেখায় কিছু লেখা আছে।মধু চিঠিটা পড়তে শুরু করলো।

“”””মধু”””””
‘এগুলো তোমার জন্য।আমি নিজেই দিতাম তবে এখন তোমার পরীক্ষা চলে তাই আর আসলাম না।’

মধু এবার বুঝলো এগুলো ইয়াদ দিয়েছে তাই আনমনেই একটু হাসলো।তারপর ব্যাগটা রেখে আবার পড়ায় মন দিলো।
——————
পরীক্ষা শেষ পাঁচ মিনিট আগে।মধু,আরিয়াসহ সব বান্ধবীরা মিলে প্রশ্ন মিলাচ্ছে।প্রশ্ন মিলানো শেষে আরিয়া আর মধু কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়লো।হাটতে হাটতে আরিয়া বলল,’আজকে ভাইয়া আসবে?’

‘হুম দুইটার সময় আসবে।’

‘তো তাড়াতাড়ি হোস্টেলে যা।রেডি হতেও তো সময় লাগে নাকি!”

‘হুম,যাচ্ছি।আল্লাহ হাফেজ।’
এই বলে মধু হোস্টেলে দিকে চলে গেলো আর আরিয়া নিজের বাসার দিকে।হোস্টেলে ফিরে মধু শাওয়ার নিলো তারপর ফ্যানের নিচে বসে চুল শুকালো।চুল আধো শুঁকানোর পর।চুলে হাতখোপা করে শাড়ি পড়া শুরু করলো।ভাগ্য ভালো মেরুন রঙের একটা ব্লাউজ ছিলো ওর কাছে নাহলে ধার করতে হতো।শাড়ি পড়ে হালকা সাজলো।তারপর চুলে আঁচড়ে খোপা করে তাতে গাজরা বসালো।মোটামুটি রেডিই বলা যায়।আয়নায় নিজেকে একবার দেখে মধু নিচে নামলো।এখনো ইয়াদ আসে নি!গেটের কাছে মধু ইয়াদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

মধুকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় নি।ইয়াদ পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে আসলো।এসেই মধুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পর্যবেক্ষণ করে বলল,’যদি বউ সাজো গো আরো সুন্দর লাগবে গো।’

মধুও ইয়াদের সাথে তাল মিলিয়ে বলল,’বলো,বলো আরো বলো লাগছে মন্দ নয়।জীবনের এই স্বপ্ন ওগো সত্যি যেনো হয়।’

দুজনই দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হেসে ফেললো।তারপর একটু এগিয়ে ইয়াদ একটা রিকশা নিলো।রিকশায় উঠে মধু বলল,’আপনিতো বলেছিলেন আজকে আপনাদের বাসায় নিয়ে যাবেন।তাহলে এখন কোথায় যাচ্ছি?’

‘হ্যাঁ বাসায় তো যাবো।কিন্তু তার আগে আমরা একটু একা থাকবো।একটা সপ্তাহ তোমাকে দেখি নি,জানো আমার চোখে খরা পড়ে গিয়েছিলো।’

মধু খুব খুশী হয়ে হাসি মুখে বলল,’তাই বুঝি?’

‘হ্যাঁ তাই।তোমার কষ্ট হয় নি?’

মধু একটু জ্বালানোর জন্য বলল,’নাহ!একদম না।’

ইয়াদ মধুর শয়তানি বুঝতে পেরে বলল,’ও আচ্ছা তাহলে বাসায়ই চলো।’

এটা বলেই রিকশাওয়ালাকে বলল,’মামা রিকশা ঘুরান তো।’

মধু চট করে বলে উঠলো,’না মামা রিকশা ঘুরাবেন না।সোজা চলে যান।’

এবার ইয়াদ বলল,’ওমা,রিকশা ঘুরাতে বারণ করলে কেনো?বাসায় যাবে না?’

‘হ্যাঁ যাবো তো।তার আগে আপনার ইচ্ছা পূরণ করবো।’

‘আমার কোনো ইচ্ছাই নেই।’অনেকটা অভিমানী সুরে ইয়াদ বলল।

‘কিন্তু আমার আছে।’
এভাবেই দুজনে খুনসুটি করতে করতে সন্ধ্যা পর্যন্ত এদিক সেদিক টইটই করে ঘুরলো।তারপর ইয়াদের বাসার সামনে এসে মধু অবাক হয়ে বলল,’ওয়াও!আপনাদের বাসাটা অনেক সুন্দর।’

‘হ্যাঁ,গতমাসেই কাজ কম্প্লিট হলো।এইজন্যই মা বলল তোমাকে নিয়ে আসতে।’

মধু ইয়াদের ডানহাত শক্ত করে ধরে বলল,’আমার না খুব লজ্জা লাগছে।’

ইয়াদ হেসে বলল,’স্বাভাবিক,প্রথম প্রথম শ্বশুরবাড়ি আসতে একটু লজ্জা লাগেই।’

‘আচ্ছা চলুন।’

ইয়াদ দরজা নক করলো।দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো।ভেতরে অন্ধকার।লাইট জালানো হয় নি।ইয়াদ হাতড়ে হাতড়ে লাইট সুইচ দিলো কিন্তু লাইট জ্বলে নি।তারমানে কারেন্ট নেই।কিন্তু কেউ তো লাইট ধরাবে নাকি!বাড়িতে কি কেউ নেই।ইয়াদ গলা ছেড়ে ডাক দিলো,’আব্বু,আম্মু’।

কোনো আওয়াজ আসলো না।তারপর ইরিনকে ডাক দিলো এরপরও কোনো আওয়াজ আসলো না।আর এদিকে মধুর রিতীমত ঘাম ছুটছে।মনে হচ্ছে হলিউড মুভির কোনো ভুতুড়ে বাংলোতে ওরা এসেছে।এখনি ভুতুড়ে আত্মাগুলো এসে ওদের ঘাড় মটকে দেবে।মধু ভয়ের চোটে ইয়াদের হাত খামচি দিয়ে ধরলো।ইয়াদও ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না।পকেট থেকে ফোনটা বের করে যেই ইরিনকে ফোন দিতে যাবে তখনি ঘরের লাইটগুলো জ্বলে উঠলো।আর সাথে সাথেই ইয়াদসহ সবাই চিল্লিয়ে বলে উঠলো,’হ্যাপি বার্থ ডে মধু।’

মধু চমকে গেলো।ইয়াদের বাবা,মা,ইরিন আর ইয়াদ গোল হয়ে মধুর চারপাশে দাড়ালো। ইয়াদের মা মধুকে জড়িয়ে ধরে বলল,’সুখী হও মা।’

মধু ইয়াদের মা বাবাকে সালাম করলো।ওরা ওকে নিয়ে সোফায় বসালো।ইরিন কেক নিয়ে এলো।তারপর কেক কাটা হলো।প্রথমে ইয়াদের বাবা,মা আর ইরিনকে খাইয়ে তারপর ইয়াদকে খাওয়ালো কেক।

মধু ভুলেই গেছিলো আজকে যে ওর জন্মদিন।ও ভেবেছিলো হয়তো অন্য কোনো কারণে ইয়াদ ওকে বাসায় নিয়ে এসেছে।তবে এখানে এসে মধু যতোটা না সারাপ্রাইজড হয়েছে তার থেকে বেশি খুশী হয়েছে।ছোটবেলা থেকে কখনো মধু জন্মদিন পালন করে নি।পালন তো দূরের কথা বান্ধবীরা ছাড়া কেউ উইশও করে নি।কিন্তু আজকে তো ওরাও করে নি।হয়তো মনে নেই!

কেক খাওয়া শেষে ইয়াদের বাবা বলল,’জানো সব প্ল্যান ইয়াদের ছিলো।এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রতিদিন বলতো তোমার জন্মদিন সারপ্রাইজ দিতে হবে।আমাদের অতিষ্ট করে ফেলেছিলো।’

ওনার কথা শেষ হতে না হতেই ইয়াদের মা বলল,’আজকে যেতে পারবে না।’

মধু বিচলিত হয়ে বলল,’না আন্টি হোস্টেলে ফিরতে হবে।তা নাহলে সমস্যা হতে পারে।’

‘কিচ্ছু হবে না।তুমি আজকে থাকবে মানে থাকবেই।’

ইয়াদের মায়ের জোরের কাছে মধু হেরে গেলো।তাই ফয়সালা হলো আজকে মধু এখানেই থাকবে।
—————–
ইরিন মধুকে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে নিজের ড্রেস দিলো।মধু শাড়ি চেঞ্জ করে ড্রেসটা পরে আবারও বসার ঘরে আসলো।ওখানে ইয়াদ,ইরিন,আর বাবা মা সহ সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো।আড্ডার মাঝে হঠাৎ বেল বাজায় ইরিন গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো ইফাজ এসেছে।ইফাজ ঘরে এসে মধুকে দেখতে পেয়ে চমকালো।বিষয়ট বুঝে উঠতে পারলো না ইফাজ।

ইফাজকে দেখে ওর মা বলল,’দেখ বাবু তোর ভাই তোর থেকেও ফাস্ট।
তুই এখনো কাউকে পছন্দই করতে পারলি না আর ও পছন্দ করে নিয়েও এসেছে।’
ইয়াদের মায়ের কথায় মধুসহ সবাই হাসলেও ইফাজ হাসলো না। একবার মধুর দিকে তাকাতেই ইফাজের মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।তাই আর সেখানে না দাঁড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।

রাতের খাবার খাওয়ার আগে ইফাজ একবারও রুম থেকে বের হয় নি।আর কেউ বিরক্তও করে নি।হয়তো কাজ আছে এইজন্য!খাবার টেবিলে এসে মধুর মুখোমুখি বসলো তবে ওর দিকে একবারের বেশি তাকালো না।তাকালেই দেখা যায় মধু আর ইয়াদ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।খাওয়ার একপর্যায়ে ভুল করে মধু ইফাজের পায়ের ওপর পা দিতেই ইফাজ সরিয়ে ফেলে।মধু বুঝতে পেরে জিভে কামড়ে দিয়ে ফেললো।তারপর খাওয়া শেষে ইফাজ চলে যাওয়ার আগেই বলল,’সরি ভাইয়া।’

ইফাজ মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।

চলবে…

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ২২
#Arshi_Ayat

মধু চুপিচুপি ইরিনের রুম থেকে বের হলো।প্রায় সবাই ঘুমে আছে এখন।ইরিনও ঘুমিয়ে গেছে আর ইয়াদের বাবা মায়ের রুমের দরজা বন্ধ।তবে ভেতরে আলো জ্বলছে।ঘন্টা দেড়েক আগেও সবাই মিলে আড্ডা দিয়েছিলো।তারপর রাত বাড়ছে বলে সবাই শুতে চলে গেলো।আজকে রাতে ইরিনের সাথেই মধু ঘুমাবে।তাই মধু যখন ইরিনের রুমে আসতে নিলো তখনই ইয়াদ লোক চক্ষুর আড়ালে মধুর হাতে একটা চিরকুট গুঁজে দিলো।পরে ইরিনের ওয়াশরুমে গিয়ে চিরকুট’টা খুলে দেখলো ওতে লেখা আছে

“”সাড়ে বারোটার সময় সবাই ঘুমিয়ে যাবে।তখন তুমি ছাদে চলে এসো।আমি অপেক্ষায় থাকবো।””

মধু চিরকুট’টা মুচড়ে ফেলে দিলো।তারপর রুমে এসে ইরিনের সাথে কিছু সময় বকবক করে শুয়ে পড়লো।কিছুক্ষণের মধ্যে ইরিন ঘুমিয়ে পড়লেও মধু ঘুমালো না।সাড়ে বারোটা বাজতেই সাবধানী পা ফেলে ইরিনের রুম থেকে বেরিয়ে দো’তলার সিড়ির দিকে রওনা দিলো।দো’তলার একটা রুমে ইয়াদ আরেকটায় ইফাজ থাকে।ওদের রুম ক্রস ছাদের সিড়ি ধরে ওপরে উঠতেই দেখলো ছাদের দরজা আধখোলা।বাতাসা দরজাটা মৃদু দুলছে।মধু আস্তে আস্তে উঠে এলো।

আজ আকাশ পরিস্কার।চরাচর ভাসানো জ্যোৎস্না নিয়ে আজকের রাতের আকাশে উদ্ভাসিত হল পূর্ণিমার চাঁদ।চারদিকে আলোর বন্যা বয়ে যাচ্ছে।মধু ধীর পায়ে বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে আসলো।তারপর রেলিঙের দিকে মুখ করে থাকা তার ভালোবাসার মানুষটিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

কিন্তু বিপরীত পাশে ঘোরা মানুষটা যখন মধুর হাত তার গলা থেকে ছাড়িয়ে ওর দিকে ঘুরে তাকালো তখন মধু চাদের উজ্জ্বল আলোতে দেখলো এ তো ইয়াদ না।চমকে উঠলো মধু।একটু পিছিয়ে গিয়ে অপরাধী ভঙ্গিতে বলল,’সরি ভাইয়া,আমি বুঝতে পারি নি।ভেবেছিলাম ইয়া…’

মধুর কথা শেষ হওয়ার আগেই ইফাজ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’বুঝতে পেরেছি।ইট’স ওকে।’

মধু সৌজন্যমূলক একটা হাসি দিলো।ও ভেবেছিলো কি না কি ভেবে নেয় ইয়াদের ভাই।যাক উনি বুঝতে পেরেছে এটাই বেশি।মধু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।আর নিজের বলদামির জন্য নিজেকে কয়েকদফা গালি দিলো মনে মনে।এরমধ্যেই ইয়াদও চলে এলো।ভাইকে দেখে সহাস্যে বলে উঠলো,’আরে,ভাইয়া তুমি এখনো ঘুমাও নাই?’

ইফাজ হেসে বলল,’না ঘুমিয়ে কি তোর ক্ষতি করে ফেললাম নাকি?’

ইয়াদ এগিয়ে এসে বলল,’আরে না।তুমি চাইলে শুনতে পারো আমাদের প্রেমালাপ।’

ইয়াদের কথা শুনে ইফাজ বলল,’আমি তোর মতো বেহায়া না।’
এটা বলে একবার মধুর দিকে তাকিয়ে যেতে যেতে বলল,’বেশিক্ষণ থাকিস না।’

‘আচ্ছা।’ইয়াদ বলল।ইফাজ নেমে যাওয়ার সময় দরজাটা হালকা ভেজিয়ে দিয়ে চলে গেলো।ইফাজ যাওয়ার পর ইয়াদ বলল,’সরি,দেরি হয়ে গেলো।আর বইলো না।যেই আসতে নিছিলাম সেই দুই নাম্বারটা ধরছিলো এইজন্যই দেরি হইছে।’

মধু ইয়াদের কথায় হেসে দিলো।তারপর বলল,’আপনার এমনই হবে।দেখা যাবে আমাদের বিয়ের সময় যখন কবুল বলার সময় আসবে তখন আপনি বলবেন “আমার ওয়াশরুমে যেতে হবে।ঐখান থেকে এসে কবুল বলবো।’

এটা বলেই মধু আবার হাসলো আর ইয়াদ চোখ বাঁকা করে মধুর দিকে তাকিয়ে বলল,’এমন হলে যতোকিছুই হোক কবুল বলেই ওয়াশরুমে যাবো।’

ইয়াদের কথা শুনে মধুর হাসির বেগ আরো বেড়ে গেলো।হাসতে হাসতেই দেখলো ইয়াদ অভিমান করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।মধু অনেক কষ্টে নিজের হাতে চিমটি কেটে নিজের হাসি কন্ট্রোল করলো।তারপর ইয়াদের মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে ইনোসেন্ট চেহারায় ‘সরি’ বলেই আবার হেসে ফেললো।এবার ইয়াদও হাসলো।হাসি থামতেই ইয়াদ জিগ্যেস করলো,’ভাইয়া কিছু বলেছে তোমাকে?’

মধু ভাবছে ইয়াদকে কি বলে দিবে যে ও ভুল করে ইফাজকে জড়িয়ে ধরেছিলো।নাকি বলবে না!না বললে মধুর নিজেরই শান্তি লাগবে না।তার চেয়ে বলে দেওয়াই ভালো।তাই মধু বলল,’জানেন,আমি ছাদে এসে দেখি ইফাজ ভাইয়া রেলিং এর দিকে ঘুরে দাড়িয়ে ছিলো তো আমি ভেবেছিলাম আপনি দাড়িয়ে আছেন।তাই আমি আপনাকে চমকে দেওয়ার জন্য ইফাজ ভাইয়াকে আপনি ভেবে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরি।যখন ভাইয়া আমার দিকে ফিরলো তখন আমি নিজেই চমকে যাই।ভাইয়া কি না কি ভেবেছেন।আমার কেমন জানি লাগছে।’

ইয়াদ ঝেড়ে ফেলল দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,’বাদ দাও তো।এমন ভুল তো কতোই হয়।রিল্যাক্স,ভাইয়া কনজার্ভেটিভ মাইন্ডের না।ও কিছুই মনে করে নি।আর ও আমার ভাই মানে তোমারও ভাই সো ইট’স নর্মাল।’

ইয়াদের কথায় মধু একটু হালকা হলো।তা নাহলে বুকের মধ্যে একটা খচখচানি থেকেই যেতো।
——————-
রুমের সবকিছু ওলট-পালট হয়ে আছে।যেনো মনে হচ্ছে রুমের ওপর দিয়ে বেশ তীব্র মাত্রার কোনো ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ইফাজ নিজের বিধ্বস্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলো।বলা বাহুল্য রুমের এই অবস্থা সে নিজেই করেছে একটু আগে ছাদের থেকে এসেই।সন্ধ্যা থেকে বহুকষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছিলো কিন্তু এখন আর পারছে না।বুকের পাজরে পাজরে ফাটল ধরেছে।ছোটোবেলা থেকেই ইফাজ ইন্ট্রোভার্ট।ইয়াদের মতো সবকিছু এক্সপ্রেস করার ক্ষমতাটা ইফাজের নেই।এইজন্য কম মাসুল দিতে হয় নি ইফাজকে তবুও কখনো ইফাজ নিজেকে নিয়ে অভিযোগ করে নি।নিজেকে অসহ্য লাগে নি।কিন্তু আজ লাগছে।চরমভাবে অসহ্য লাগছে!
হাতের সামনের ফুলদানিটা দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় সজোরে মারলো।সাথে সাথে আয়নার শত টুকরা হয়ে নিচে ঝরে পড়লো।একটা কাচ ইফাজের পায়ের এসে ঢুকলো।ইফাজ এলোমেলো হওয়া খাটের ওপর বসে পা থেকে কাচটা তুলে নিলো।

তারপর সাবধানী পায়ে বারান্দায় গিয়ে ইজি চেয়ারে বসে দু’হাতে মাথা চেপে ধরে রইলো কিছুক্ষণ।তারপর আস্তে আস্তে নিজেকে কন্ট্রোল করে রুমে এসে সবকিছু ঠিকঠাক করলো।পায়ে ব্যান্ডেজ করে খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো।ইফাজের মনে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে উঠলো।নাহ!এতো সহজেতো হার মানা যায় না।এতো সহজে তার প্রয়সীকে সে কারো সাথে দেখতে পারবে না।ইফাজ ভাবলো কালকে ইয়াদকে ও সব বলবে।আর ইফাজ শিওর ইয়াদ সবকিছু জানলে মধুকে ছেড়ে দিবে।আর মধু ইয়াদকে ভুল বুঝবে।এই সুযোগটা ইফাজ ভালো ভাবেই কাজে লাগাতে পারবে।
————-
ইয়াদ মধুর কাঁধে মাথা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।মধুও নিজের মাথাটা ইয়াদের মাথায় ঠেকিয়ে ইয়াদের দৃষ্টি অনুসরণ করছে।হাঠাৎ নিরবতা ভেঙে মধু বলল,’আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?’

‘করো।’

‘যদি কখনো আপনার পরিবার আর আমার মধ্যে কাউকে বাচাতে হয় আপনি কাকে বাঁচাবেন?’

ইয়াদ মধুর দিকে তাকিয়ে বলল,’অবশ্যই পরিবারকে।পরিবারকে বাঁচিয়ে,তোমাকে নিয়ে মরে যাবো।’

মধু হেসে ইয়াদের গলা জড়িয়ে ধরলো।জীবনে এমন কাউকেই চেয়েছিলো মধু।এই চারটা মাস ইয়াদ যতোটা সম্ভব মধুকে খুশী রেখেছে।মধুর মাঝেমধ্যেই ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে যায়।সেই সময়টা বাবাও এমন করে হাসাতো,আদর করতো খেলতো।মাঝখানের সময়টা মধুর জন্য বিভীষিকাপূর্ণই বলা যায়।তবে এখন মনে হচ্ছে নাহ!জীবনে আরো অনেকবছর একসাথে দুজনকে বাঁচতে হবে।
——————–
এখন সকাল ৮ টা ৩০ বাজে।সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছে।আজকে ইরিন আর ইয়াদের মা মধুর দুইপাশে বসেছে আর ইয়াদ ইরিনের পাশে বসেছে।ইফাজ কালকে রাতের মতো আজও মধুর সামনাসামনি বসেছে।তবে ইচ্ছাকৃত নয় এসে এখানেই জায়গা পেয়েছে তাই বসে পড়েছে।

এদিকে নাস্তা করার মাঝখানেই ইয়াদ ইরিনকে খোঁচাচ্ছে ওর জায়গাটা ইয়াদকে দেওয়ার জন্য।ইরিনও কম ইতড় না।ডাট মেরে বসেছে তো বসেছেই মানে কোনোভাবেই সে এই চেয়ার ছেড়ে উঠবে না ভুমিকম্প হয়ে যাক তবুও না।ইয়াদ কিছুক্ষণ খোঁচাখুঁচির পর কোনো ফয়দা না করতে পেরে মনে মনে ইরিনের মুন্ডুপাত করে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
—————
নয়টা বাজতেই ইরিন,মধু,ইয়াদ আর ইফাজ বেরিয়ে পড়লো।ইফাজের হসপিটালে যেতে হবে আর ইয়াদ ইরিন আর মধুকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য বেরিয়েছে।যাওয়ার সময় ইফাজ ইয়াদকে ডেকে বলল,’তুই ওদেরকে দিয়ে একটু হসপিটালে আসিস।’

ইয়াদ মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে ওদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।আর ইফাজও ওর চেম্বারের দিকে রওনা হলো।

রিকশায় বসে ইফাজ ভাবছে কি বলবে ইয়াদকে।কি কি বললে ইয়াদ সবটা মানবে।আচমকাই নিহা রাস্তার এপাশ থেকে ইফাজকে হাত নাড়লো।ইফাজের মেজাজ খারাপ হলেও রিকশাটা নিহার সামনেই থামালো।নিহা অনুরোধে সুরে বলল,’ইফাজ,একটু লিফট দেবে?দেখো না!একটা রিকশাও পাচ্ছি না।’

ইফাজ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো আসলেই আসলেই কোনো খালি রিকশা নেই।অগত্যা ইফাজ চেপে বসে নিহাকে জায়গা করে দিলো।নিহা উঠে বসে ইফাজকে বিনীত কন্ঠে ধন্যবাদ দিলো।ইতিমধ্যে রিকশাও চলতে শুরু করছে।নিহার অফিসের সামনে আসতেই ও রিকশা থেকে নেমে নিজের ব্যাগ থেকে একটা বিয়ের কার্ড বের করে ইফাজের হাতে দিয়ে বলল,’আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।আগামী শুক্রবার বিয়ে।আসবে কিন্তু।অপেক্ষায় থাকবো।’

এটা বলেই অফিসের দিকে পা বাড়ালো।ইফাজ কার্ডাটা অবহেলায় নিজের ব্যাগে রেখে দিলো।এই কার্ডটা দেখার একটুও প্রয়োজন মনে করছে না ইফাজ ওর মাথায় তো অন্যকিছু ঘুরছে।
————
ইরিন আর মধুকে কলেজে দিয়ে ইয়াদ ভাইয়ের হসপিটালের দিকে রওনা দিলো।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-১৯+২০

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৯
#Arshi_Ayat

অবিবাহিত মেয়ে প্রেগন্যান্ট!বিষয়টা সবার কাছেই দৃষ্টিকটু।তারওপর মেয়েটা নিজের মুখে বলছে আবার প্রমাণও দেখাচ্ছে।ইমন প্রেগন্যান্সির কিট’টা দেখে আর কিছু বলল না।বসার ঘরে চলে এলো।ওর পিছনে মধুও এলো।ইমন এসেই বাবা মাকে বলল,’চলো এখান থেকে।’

ওর মা ভ্রু কুঁচকে বলল,’কেনো কি হইছে?’

‘মেয়ে বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট!নিজের মুখে বলছে।এই মেয়ে বিয়ে করা যাবে না।’

ইমনের কথা শুনে ঘরের মধ্যে নিঃশব্দে একটা বজ্রপাত হলো।আইরিন রহমান মধুর দিকে এমন ভাবে তাকালো যাতে এটা স্পষ্ট ওর কপালে দুর্ভোগ আছে।আর এদিকে ছেলে পক্ষ আইরিন রহমানকে অপমান করে বেরিয়ে গেলো।ওরা বের হতেই আইরিন রহমান মধুর গলা চেপে ধরে বলল,’পেট বাধাইলি কার সাথে?’

মধু অনেক কষ্টে আইরিন রহমানের হাত নিজের গলা থেকে ছাড়ালো।কাশতে কাশতে চোখ থেকে পানি বের হয়ে গেলো।ঘরের ওয়াল ঘেঁষে বসে পড়লো মধু।আইরিন রহমান আবার মধুর ওপর হাত তুলতে নিলেই মধু নিজের হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে বলল,’খবরদার আমার গায়ে হাত তুলবে না।তুমি আমার মা না।’

আইরিন রহমান চিৎকার করে বলল,’হ্যাঁ,আমি তোকে পেটে ধরলেও আমি তোকে মন থেকে মানতে পারি নি কখনো।কতোবার তোকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোর বাপের জন্য পারি নি।তোর বাপের জন্য আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।’

মধু চোখের পানি মুছে কৌতূহলী গলায় বলল,’কি করেছে আমার বাবা?’

আইরিন রহমান রাগে ফোঁস করে উঠে বলল,’আমি অন্য একজনকে ভালোবাসতাম কিন্তু পরিবার থেকে মেনে নেয় নি।বিয়ের পর তোর বাপকে বলছিলাম আমাকে মুক্তি দিতে।কিন্তু না তোর বাপ আমাকে জোর করেছে তার সাথে সংসার করার জন্য।বিয়ের চারমাস পর জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট!অনেক চেষ্টা করি এবরশোন করানোর কিন্তু তোর বাবা করতে দেয় নি।তোকে আমি কখনো মন থেকে চাই নি।কখনো না!’

মধু উঠে দাড়ালো।টেবিল থেকে আইরিন রহমানের ফোনটা নিয়ে আরিয়াকে ফোন করলো।আরিয়া রিসিভ করতেই বলল,’আমি তোদের বাসায় আসছি।আজকে তোদের এখানে থাকবো।’

আরিয়া বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে।তাই প্রশ্ন না করে বলল,’চলে আয়।আমি এগিয়ে আসছি তুইও আয়।’

মধু ফোনটা রেখে নিজের ঘরে গিয়ে বইগুলো গুছিয়ে বেধে নিলো।তারপর নিজের কিছু জামা কাপড় গুছিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’বাবা তোমাকে৷ মুক্তি দেয় নি,কিন্তু আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে গেলাম।আর কখনো মা ডাকবো না।’

মধু বইয়ের ব্যাগ আর জামা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আরিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে হাটা ধরলো।মাঝরাস্তায় আসতেই আরিয়ার দেখা পেলো।আরিয়া ওকে এই অবস্থায় দেখে বলল,’কি হইছে তোর?এভাবে কেনো?’

‘থাকবো না আর ওই বাসায়।হোস্টেলে উঠবো।দুই/তিন দিনের মধ্যে কি সীট পাওয়া যাবে? ‘

‘জানি না,কিন্তু চেষ্টা করলে পাওয়া,যেতে পারে।কিন্তু কাহিনি কি সেটা তো বলবি?’ আরিয়া মধুর হাত থেকে বইয়ের ব্যাগটা নিয়ে বলল।

‘পরে বলবো।এখন ভালো লাগছে না রে।’মধু থমথমে গলায় বলল।

আরিয়া বুঝতে পারলো মধুর মন ভালো নেই তাই আর কিছু বলল না।বাসায় এসে নিজের ঘরে চলে গেলো।আজকে আরিয়াদের বাসায় কেউ নেই।আরিয়ার চাচাতো বোন শিউলীর বাবুকে দেখতে গেছে সবাই ওকে ও নিতে চেয়েছিলো কিন্তু আরিয়া যায় নি।

মধু আরিয়ার খাটে বসলো।আরিয়া ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বলল,’তুই একটু বস আমি আসছি।’

মধু কিছু বলল না নিশ্চুপে বসে রইলো।একটু পর আরিয়া একটা ঢাকনা দেওয়া একটা প্লেট এনে বলল,’আগে ফ্রেশ হয়ে নে।তারপর খেয়ে নে।মনে হয় না সারাদিনে কিছু খেয়েছিস।’

মধু আরিয়ার কথার কোনো জবাব না দিয়ে বলল,’তোর ফোনটা একটু দিবি?’

আরিয়া নিজের ফোনটা এগিয়ে দিলো।মধু ইয়াদকে ফোন দিলো।ইয়াদ রিসিভ করতেই মধু বলল,’হ্যালো,আমি মধু।’

‘হ্যা বলো।’

‘এখন কি অবস্থা?কোথায় আপনারা?’

‘আব্বু প্রচুর ভেঙে পড়েছে।ভাইয়া আব্বুর সাথে আছে আর ইরিন আম্মুর সাথে।আমরা কুষ্টিয়া আছি।আসতে পাঁচ/ছয়দিন লাগতে পারে।’

‘আচ্ছা আঙ্কেল,আন্টির খেয়াল রাখবেন।ভালো থাকবেন।’

‘তুমিও নিজের খেয়াল রাইখো।আল্লাহ হাফেজ।’

মধু ফোন রেখে দিলো।এই অবস্থায় আর টেনশনে ফেলা ঠিক হবে না ইয়াদকে তাই আর মধু কিছু বলল না।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে শুয়ে পড়লো।আরিয়া ওর রুমের লাইট বন্ধ করে অন্যরুমে চলে গেলো।এখন মধুর রেস্টের প্রয়োজন।লাইট জ্বললে মধু ঘুমাতে পারে না।
————
আনুমানিক রাত ৩.০০ টা হবে।আরিয়া মধুর পাশেই ঘুমিয়েছিলো।হঠাৎ করে ঘুমটা ছুটে যাওয়ায় ও পাশে তাকিয়ে দেখলো মধু নেই।বারান্দায় দরজা খোলা।আরিয়া গায়ে ওড়না জড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো মধু বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে পাথুরে ভঙ্গিতে।মনে হচ্ছে যেনো ওর ভেতরে প্রাণ নেই।কাঁদছে কি না অন্ধকারে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।আরিয়া গিয়ে মধুর কাঁধে হাত রাখলো।ওর কোনো ভাবান্তর নেই।যেভাবে দাড়িয়ে ছিলো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।আরিয়া মধুকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,’এই মধু,এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?’

এবার মধু একটু নড়েচড়ে পাশে রাখা একটা চেয়ারে বসলো।আরিয়াও ওর পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।আচমকা মধু আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।মধুর আচমকা জড়িয়ে ধরায় আরিয়া অবাক হলো তবে নিজেকে সামলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর মধু ওকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে ভেজা গলায় বলল,’তুই গিয়ে শুয়ে পড়।আমার ঘুম আসছে না।’

‘ঘুম আমারও আসছে না।তুই আগে এটা বল কি হয়েছিলো আসলে যে তুই এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে এলি।’

‘ওই বাড়িতে আমার কেউ নেই।ওখানে থেকে কি হবে?’মধু ভেজা কন্ঠে বলল।

‘কি হইছে একটু স্পষ্ট করে বল না।’আরিয়া উত্তেজিত কন্ঠে বলল।

মধু বৃষ্টিতে ভেজার পর থেকে যা যা হয়েছে সব বলেছে।সব শোনার পর আরিয়া বলল,’যা করছিস ঠিক করছিস আমি হলে আরো আগেই বেরিয়ে আসতাম।কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না তুই প্রেগ্ন্যাসির কীট’টা পেলি কোথায়?’

‘ময়লার বাল্টি থেকে নিয়েছিলাম।আইরিন রহমান তার মায়ের বাসায় যাওয়ার পর আমাকেই ময়লা ফেলতে হতো।তো একদিন ময়লা ওয়ালা আমাদের ঘরের সামনে ময়লার বাল্টি রেখে ওপরে গিয়েছিলো ময়লা আনতে।আমি যখন ময়লা দিতে গেলাম তখন দেখি ময়লার বাল্টিতে এই কীট’টা পড়ে আছে।আমার কৌতুহল জাগলো।আমি ওটা নিয়ে নিলাম।ঘরে গিয়ে এটা ভালো করে দেখলাম।এতে দুইটা দাগ স্পষ্ট!তারমানে এটা যার সে এখন প্রেগন্যান্ট।তো আমার কৌতুহল শেষ কিন্তু আমি ওটা ফেলতে ভুলে গেছিলাম।কাল যখন আইরিন রহমান আমাকে বলল রেডি হতে তখন এটা আমি আমার ড্রেসিং টেবিলের এক কোণায় পেয়েছিলাম।ওটা পাওয়ার পরই মাথায় এই বুদ্ধিটা এসেছিলো।’

আরিয়া সব শুনে হেসে ফেললো।সময়টা হাসির না হলেও এই ঘটনা শোনার পর হাসতে বাধ্য হয়েছিলো আরিয়া।মধুও একটু হাসলো।তারপর আরিয়া বলল,’যাক যা করেছিস ভালোই করেছিস কিন্তু এটা মনে রাখিস ইয়াদ ভাইয়া এটা শোনার আগেই তাকে সবটা বলে দিস তা নাহলে তোকে ভুল বুঝতে পারে।’

‘হুম,চেয়েছিলাম তখনই বলতে কিন্তু ওনার দাদা মারা গেছেন তাই বলতে পারি নি।’

‘ও,,আচ্ছা।সুযোগ পেলে বলে দিস।আর শোন তুই ঘুমিয়ে ছিলি বলে বলতে পারি নি তোর জন্য একটা সীট পেয়েছি।সমস্যা হলো ইন্টার ফাস্ট ইয়ারদের সাথে থাকতে হবে তোকে।সেকেন্ড ইয়ারের হলে সীট নেই।’

‘সমস্যা নেই।কালই উঠবো।’মধু বলল।

‘আচ্ছা তাহলে চল শুয়ে পড়ি।সকালে উঠতেও হবে।’

‘হুম।’
আরিয়া আর মধু গিয়ে শুয়ে পড়লো।মনে অশান্তি নিয়ে ঘুমানো যায় না।তবুও মধু শুয়ে রইলো।
——————-
চারদিন পরের কথা….
মধু হলে শিফট হয়ে গেছে চারদিন আগেই।হলে ফোন এলাও না তাই ইয়াদের সাথে চারদিন ধরে কথা হয় না।আবার কলেজেও আরিয়া ফোন আনে না।
আজকে বিকেলে মধু শুয়েছিলো।হঠাৎ আরিয়া আসলো।ওকে দেখে মনে হলো ও খুব তাড়াহুড়ায় এসেছে।মধু ওকে দেখে উঠে বসলো।তারপর বলল,’কি রে কি হইছে?’

‘এখনি রাস্তায় যা।ইয়াদ ভাইয়া আসছে।’

ইয়াদের কথা শুনে মধু লাফিয়ে উঠে ওড়না মাথায় দিয়ে এক দৌড় দিলো।একদৌড়ে রাস্তায় চলে এলো।রাস্তার বিপরীত পাশে ইয়াদ দাড়িয়ে আছে দুইহাত পকেটে ঢুকিয়ে।মধু রাস্তা পার হয়ে সোজা এসে ইয়াদকে জড়িয়ে ধরলো।একটু পর ছেড়ে দিয়ে বলল,’কেমন আছেন?’

‘ভালো,কিন্তু তুমি এখানে কেনো?অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম ওই ফোনে।ফোন বন্ধ!তারপর তোমার বান্ধবীকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম তুমি এখানে!কি হয়েছে?’

মধু বলল,’একটু পর আজান দিবে।এখনি হলের গেট বন্ধ করে দিবে।আমাকে ভেতরে যেতে হবে এখনি।আমি আপনাকে কাল সকালে সব বলবো।আপনি কাল সকালে এখানে আসবেন।’

এটা বলে মধু চলে যেতে লাগলো।হঠাৎ কিছু একটা মনে হওয়ায় আবার ফিরে এসে ইয়াদের হাত ধরে বলল,’আমাকে কখনো অবিশ্বাস করবেন না।আপনি অবিশ্বাস করলে আমি শেষ হয়ে যাবো।’

ইয়াদ ভরসা দিয়ে বলল,’আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।আমি জানি তুমি কোনো ভুল করো নি।’

মধু আরো একবার ইয়াদকে জড়িয়ে ধরে হলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।আর ইয়াদ মধুর যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।মধু হলের ভেতর চলে যাওয়ার পর সেও চলে গেলো।

চলবে….

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ২০
#Arshi_Ayat

‘নিহা প্লিজ আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করো।আমি একজনকে ভালোবাসি তোমাকে কতো বার বলবো?বুঝতে চাও না কেনো তুমি?’ইফাজ রেগে কথাগুলো বলল।

‘কিন্তু আমার কি হবে ইফাজ!আমি তোমাকে ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি।তোমার জন্য জীবনে কারো সাথে জড়াই নি।কিন্তু কখনো আমি আমার ভালোবাসাকে সম্মান করো নি।’নিহা আক্ষেপের সুরে বলল।

‘আমি তোমাকে ভালো বন্ধু ছাড়া অন্যকিছু ভাবিনি কখনো।এতে আমার কি দোষ চাইলেই কারো জন্য ভালোবাসা আসে না, আবার না চাইতেও কারো জন্য মন অস্থির হয়।আমি চাইবো আমাদের বন্ধুত্ব যেনো আমার নষ্ট করতে নাহয় তোমার জন্য।’ইফাজ অন্যদিকে তাকিয়ে কাটকাট গলায় জবাব দিলো।

ইফাজের কঠিন কথার বানে নিহার চোখদ্বয় হতে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।তবুও নিজেকে সামলে নিহা ম্লান হেসে বলল,’ভালো থেকো।আমি আর কখনো ভালোবাসি বলবো না কিন্তু আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখতেই হবে।’

ইফাজ নিহার দিকে জিজ্ঞাসামূলক চাহনি নিয়ে তাকালো।নিহা নিজের ব্যাগ থেকে একটা টিফিন বক্স বের করে বলল,’তোমার জন্য বানিয়েছি।নিলে খুশী হবো।’

নিহার করুণ গলার স্বর আর কাতর চাহনি ইফাজকে বক্সটা নিতে বাধ্য করলো।ইফাজ বক্সটা নিয়ে টেবিলের একপাশে রাখলো।নিহা মৃদু হেসে বলল,’তুমি আমাকে না ই ভালোবাসলে,কিন্তু আমাকে ভালোবাসতে বাঁধা দিও না।তোমাকে না ভালোবাসলে আমি দম আটকে মারা যাবো।এটা নিশ্চয়ই তুমি চাইবে না তাই প্লিজ আমাকে বাঁধা দিও না।’

এটা বলে নিহা চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।ইফাজ আর নিহা ক্লাসমেট।ইন্টার পর্যন্ত একসাথে পড়লেও তারপর আলাদা হয়ে যায়।তবে আলাদা হলেও নিহা এক মুহুর্তের জন্যেও ইফাজকে ভোলে নি।দেশে বসে ইফাজের অপেক্ষা করেছে।এই দীর্ঘ পচিশ বছরের জীবনে শুধু ইফাজকেই ভালোবেসেছে।তবে এই ভালোবাসাটা একতরফা।নিহা নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছে একতরফা ভালোবাসা অভিশাপ!ভালবাসার মানুষের চোখে অন্য একজনের জন্য ভালোবাসা দেখা যে কতোটা কষ্টের এটা তারাই বোঝে যারা কাউকে একতরফা ভাবে ভালোবেসেছে।

তবে ইফাজের নিহার জন্য আফসোস হয় কিন্তু তবুও কিছু করার নেই।ইফাজ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রোগী কল করা শুরু করলো।
————–
এখন সকাল নয়টা বাজে।ইয়াদ মধুর হোস্টেলের সামনে দাড়িয়ে আছে।হোস্টেলের গেট দিয়ে একটু পরপরই কয়েকটা মেয়ে যাচ্ছে আর ইয়াদের দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেনো ছেলে দেখে নি।ইয়াদ বেশ অস্বস্তি লাগছে।মধু নেমে আসলে এখন থেকে চলে যাওয়া যেতো কিন্তু ও তো নামছে না।ভেতরে খবর দেওয়ার মতো কিছুই নেই।ইয়াদ বিরক্তি নিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতেই খেয়াল করলো মধু আসছে।ইয়াদও একটু এগিয়ে গেলো।মধু আসতেই বলল,’এতো দেরি লাগলো যে।’

মধু ভ্রু কুঁচকে বলল,’কোথায় এতো দেরি হলো।আপনি আসছেন নয়টায় আর আমি আসছি নয়টা পাঁচ এ।’

‘হুম।তোমাদের হোস্টেলে মেয়েগুলা কেমন যেনো?’

মধু ভ্রু নাচিয়ে বলল,’কেমন?’

‘আরে আমি দাড়িয়ে ছিলাম তোমার জন্য।তো ওরা একেকজন বের হয় আর আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেনো খেয়ে ফেলবে।’

মধু ইয়াদের কথায় বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,’দেখবেই তো।এতো সেজেগুজে আসলে তো দেখবেই।’

ইয়াদ মুখ বাঁকা করে বলল,’এইজন্যই গার্লস হোস্টেলের সামনে দাড়ানো উচিত না।এই মেয়ে গুলার জন্যই ছেলেরা কালো হয়ে যাচ্ছে।ওদের শকুনের নজর ছেলেদের ওপর পড়তেই ছেলেরা জ্বলে কালো হয়ে যায়।’

মধু চোখ বাঁকা করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,’ইনসাল্ট হচ্ছে কিন্তু!’

‘আচ্ছা ওকে আমি চুপ।চলো হাটি।’

‘হ্যাঁ চলুন।’

যাওয়ার আগে ইয়াদ দুই প্যাকেট ঝালমুড়ি নিয়ে এলো।তারপর হাঁটতে হাঁটতে বলল,’কি হয়েছিলো বলো।’

মধু সবটা বলল।সব শোনার পর ইয়াদ মধুর হাত ধরে বলল,’ওই সময়টা আমি ছিলাম না বলে তোমার মা বেঁচে গেছে।তা নাহলে ওই মহিলার এমন হাল করতাম!রাগ লাগছে প্রচন্ড।আর তুমিও বোকা নাকি!এতোদিন এগুলো সয়েছো কিভাবে!ও মাই গড!কতোটা স্টুপিড মহিলা।’

মধু ইয়াদকে শান্ত করে বলল,’আপনি কি সত্যি আমাকে বিশ্বাস করেছেন?মনে কোনো খচখচানি থাকলে বলুন আমি আমি টেস্ট করাবো।আমি চাইনা ভালোবাসার মধ্যে সন্দেহ থাকুক।’

ইয়াদ একহাত মধুর ঘাড়ের ওপর রেখে বলল,’একদম না,সন্দেহের কোনো প্রশ্নই আসে না।আমি শোনা কথায় চলি না।কারো কথায় কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করে সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়ার মতো পাব্লিক আমি না।কালকে নিশিও আমাকে হেনতেন বলেছিলো।আমারও মেজাজ গরম হয়েছিলো প্রথমত তুমি কেনো বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছো সেটা সঠিক জানতে পারি নি দ্বীতিয়ত কালকে তোমাকে দেখেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠেছিলো।তাই আমি তোমাদের হোস্টেল থেকে গিয়ে ছাদে দাড়িয়েছিলাম তখনই নিশি এসে আজেবাজে কথা শুরু করেছিলো।তারপর আর কি আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো আর আমি ঠাটিয়ে একচড় দিয়ে চলে এসেছি।’

ইয়াদের কথা শুনে মধু ঠোঁট টিপে হাসলো।তারপর বলল,’কিন্তু একটা বিষয় বুজলাম না আপনি এত তাড়াতাড়ি আমার প্রেগন্যান্ট এর বিষয়টা যে মিথ্যা এটা বিশ্বাস করে নিলেন কি করে?’

মধুর কথা শুনে ইয়াদ দুষ্টু হেসে বলল,’ধূর বললেই হলো না কি!আমি’তো এখনো কিছু করলাম ই না।বাচ্চা কোথা থেকে আমদানি হবে।’

মধু ইয়াদের কথার ইঙ্গিত ধরতে পেরে চোখ ছোটোছোটো করে বলল,’আপনি একটা অসভ্য!’

ইয়াদ মধুর কথায় হাসলো।মধুও হাসছে।তারপর আরো অনেক্ক্ষণ দুজনেই কথাবার্তা বলার পর যখন কলেজের কাছাকাছি পৌছালো তখন হঠাৎ করেই মধু বলল,’আচ্ছা সেদিন আপনি ছাদ থেকে কখন নেমেছেন?নিশি কি আপনাকে দেখেছিলো?’

ইয়াদ বলল,’তুমি যাওয়ার পাঁচ মিনিট পরই নিশি চলে যায়।আর ও নামার দুই মিনিট পর আমি নামি।ঠান্ডায় পুরো কাশাকাশি সুরু হয়ে গেছিলো আমার।’

মধুর অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’সরি।আমি আপনাকে একা রেখেই চলে গিয়েছিলাম।’

ইয়াদ মৃদু হেসে বলল,’ইট’স ওকে।তার একটু পরই জানতে পারি দাদু নাকি ভীষণ অসুস্থ।তো আমরা সবাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ি।ফোনে চার্জ ছিলো না আমার তাই তোমাকে বলতে পারি নি।তখন কথা বলার মতো পরিস্থিতিও ছিলো না।এরপর কালকে সকাল থেকে তোমাকে অনেকবার কল দিয়েছিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ ছিলো।’

এতটুকু বলার পর ইয়াদ থামলো তারপর আবার বলল,’যাক বাদ দাও।এখন বল নাস্তা করছো?’

ইয়াদের কথা শুনে মধুর ওইদিনের কথা মনে পড়ে গেলো।তাই মধু তাড়াতাড়িই বলল’করেছি,করেছি।’এমনিতেও মধু নাস্তা করেই বেরিয়েছিলো।মধুর উত্তর শুনে ইয়াদ জোরেজোরে হেসে দিলো।তারপর হাসি থামিয়ে বলল,’সত্যি তো?’

‘হুম,সত্যি।’

‘আচ্ছা তাহলে কলেজে যাও।আর হোস্টেলে ঢোকার আগে একটু বাইরে দাড়িয়ো।আমি আসবো।’

মধু মাথা নেড়ে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে কলেজের ভেতর চলে গেলো।
————
পাঁচদিন থেকে আইরিন রহমানের শরীর খারাপ।কেমন যেনো বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না হাত পা অবশ হয়ে আছে।এইটা তার নতুন কোনো রোগ নয় মাঝেমধ্যেই এমনটা হয়।তখন মধু সবকাজ করে হাতে পায়ে,মাথায় তেল মালিশ করে দেয়।কিন্তু এখন এগুলো করার মতো কেউ নেই।মিলি নিজের ঘরে নিজের মতো আছে।ডাকলে আসে না ডাকলে কথা নেই।
আজ কেমন যেনো একটু সুক্ষ্ম অনুভুতি কাজ করলো তার মধুর জন্য।

আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে বসলো আইরিন রহমান। দু-এক কদম হাঁটতেই মাথাঘুরে পড়ে যেতে নিলেই ওয়ারড্রব ধরে ফেলেন।তারপর আবার বিছানায় ফিরে এসে শুয়ে পড়লেন।শরীর চলছে না!
———
ইফাজ মাত্রই বেরিয়েছে চেম্বার থেকে।এখন বিকেল পাঁচটা।কয়েকদিন ধরেই তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে দেখা হয় না।কি জানি কোথায় গেছে!
ইফাজ রিকশায় উঠলো বাসায় যাওয়ার জন্য।আচমকাই খেয়াল করলো ওর প্রেয়সী রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।ইফাজ রিকশা থামিয়ে ওর দিকে যেতে নিলো কিন্তু তার আগেই ও আরেকটা রিকশায় উঠে পড়লো।ইফাজ হাত ঝাড়া দিয়ে বলল,’ওহ!শীট’
তারপর আবার নিজের রিকশায় উঠে পড়লো।বাসায় যেতে যেতে ভাবলো আগামী মাসে বাড়িটা কম্প্লিট হলে পুরো ফ্যামিলি ওখানে শিফট হবে তারপরই তার প্রেয়সীকে নিজের করে নিবে।এগুলো ভাবতে ভাবতেই ইফাজ হাসলো।

বাড়ির সামনে এসে রিকশা থেকে নেমে ভেতরে যেতে লাগলো।সিড়িতে উটতেই ইয়াদের ওর মুখোমুখি পড়লো।ইয়াদকে দেখে ইফাজ বলল,’কই যাস?’

‘এইতো একটু ঘুরতে।’ইয়াদ আমতা আমতা করতে করতে বলল।

‘ঘুরতে নাকি গার্লফ্রেন্ডরে ঘুরাইতে।’

ইয়াদ একটু লাজুক হাসলো।ইফাজ ওর পিঠে চাপড় দিয়ে বলল,’যতোই ঘুরাও কোনো লাভ হবে না যতোদিন না আমি বিয়ে করছি ততোদিন তোর রাস্তা বন্ধ।’

ইয়াদও টিটকারি দিয়ে বলল,’আমি পালিয়ে বিয়ে করবো তাও তোমার আগে।’

ইফাজও ভাব নিয়ে বলল,’দেখা যাবে।’

‘দেইখো।

তারপর দুজনই দুদিকে চলে গেলো।
—————
ইয়াদ মধুর হোস্টেলের সামনে আসতেই দেখলো নিশিও দাড়িয়ে আছে এখানে।ইয়াদ দেখেও না দেখার ভান করে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলো।ইয়াদকে দেখে নিশি কথা বলতে যাবে এরমধ্যেই মধু এসে ইয়াদের হাত ধরে ফেললো।এটা দেখে আর নিশি সামনে এগুলো না।মধুর কাহিনি দেখে ইয়াদ হেসে ফেলল।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-১৭+১৮

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৭
#Arshi_Ayat

নিশির যা রাগ উঠেছিলো মন চেয়েছিলো তখনই গিয়ে মধুর মা কে সব বলে দিবে কিন্তু মনে মনে ভাবলো কয়েকটা প্রমাণ জোগাড় করতে পারলে খেলা জমে যাবে এইজন্য নিশি তখন কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো।
————–
নিশি যাওয়ার পাঁচমনিট পরই মধু বাসায় চলে আসলো।এখন সাড়ে ছয়টা বাজে।সাতটায় প্রাইভেট পড়াতে যেতে হবে।তারপর কলেজে তাই একবারেই রেডি হয়ে নাস্তা করতে এলো।কিন্তু নাস্তার টেবিলে এসে দেখে নাস্তা নেই।মধু ওর মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো মা শুয়ে আছে।ঘুমিয়ে আছে নাকি বোঝা যাচ্ছে না।মধু না ডেকেই বেরিয়ে পড়লো।

প্রাইভেট পড়িয়ে মাত্রই বের হলো পেট চো চো করছে ক্ষুধায়।আজকে টাকাও নিয়ে বের হয় নি মধু।ক্লাস শুরু হতে আধঘন্টা আছে আর এইসময়ে বাসায় গিয়ে খেয়ে আবার আসতে লেট হবে।তাই মধু আর বাসায় গেলো না।কলেজের দিকে রওনা দিলো।কলেজের কাছাকাছি আসতেই দেখলো ইয়াদ আসছে।মধুকে দেখে দূর থেকেই হাসলো।তারপর সামনে এসে বলল,’কলেজে যাচ্ছো?’

‘হুম।’

‘নাস্তা খেয়েছো?’

‘না।আসলে সময় পাই নি।’

‘চলো।’
ইয়াদ মধুর হাত ধরে হাটা শুরু করলো।মধু অবাক হয়ে বলল,’কোথায় যাচ্ছি আমরা?’

‘খেতে।’ইয়াদ সংক্ষেপে বলল

‘আপনি এখনো খান নি?’মধু ভ্রু কুঁচকে বলল।

‘ম্যাম আমি খেয়েছি।আপনি খান নি।আর না খেলে পড়াশোনা মাথায় ঢোকে না।পেট ফুল করে পরে পড়তে বসতে হয়।তাই আগে খাওয়া দাওয়া পরে পড়াশোনা।’

‘কিন্তু খেয়ে আসতে আসতে তো লেট হয়ে যাবে।আর কলেজের গেটও বন্ধ করে দিবে।’

‘লেট হলে হবে।দরকার হয় আজকে কলেজ করবা না।কিন্তু খালি পেটে থাকা যাবে না।’

মধু মনেমনে বলল,’কেনো যে বলতে গেলাম!এখন খাইয়ে ফুটবল না বানিয়ে ছাড়বে না।’

ইয়াদ মধুকে নিয়ে কাছের একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো।তারপর দুইপ্লেট বিরিয়ানি অর্ডার করলো।মধু আৎকে উঠে বলল,’দুইপ্লেট কে খাবে?’

‘তুমি খাবা।’ইয়াদ স্বাভাবিক ভাবেই বলল।

মধু কাঁদোকাঁদো মুখে বলল,’এতো খাবারতো রাক্ষসও শেষ করতে পারবে না আমিতো দূরের কথা।প্লিজ এতো খাবার আমি খেতে পারবো না।’

‘চুপচাপ বসো।’ইয়াদ চোখ রাঙিয়ে বলল।
ইয়াদের কথায় মধু আর কোনো শব্দও করলো না।একটু পরই দুইপ্লেট বিরিয়ানি চলে আসলো।ইয়াদ মধুর দিকে তাকিয়ে বলল,’নাও শুরু করো।’

মধু অনুরোধের কন্ঠে বলল,’আমি অল্প খাবো কিন্তু!’

‘আচ্ছা শুরু করো।’

মধু খাওয়া শুরু করলো এবং বহুকষ্টে একপ্লেট শেষ করলো।তারপর ইয়াদের দিকে ছলছল চোখে তাকালো।ইয়াদ ওর অবস্থা দেখে মুখ টিপে একটু হাসলো তারপর বলল,’আচ্ছা ঠিকাছে এই প্লেট আমি খাচ্ছি।’

ইয়াদ ঝটপট শেষ করে ফেললো।তারপর বিল মিটিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে হাতঘড়িতে দেখলো সাড়ে দশটা বাজে।আজকে আর কলেজে যাওয়া হবে না।মধু বলল,’এখন কি করবো?বাসায় গেলেতো আম্মু হাজারটা প্রশ্ন করবে।’

‘বাসায় যাওয়া লাগবে না।চলো আমার ভার্সিটিতে চলো।ওদের সাথে দেখা করিয়ে আনি।’

তারপর মধু আর ইয়াদ ভার্সিটিতে এলো।ইয়াদ নিজের ফ্রেন্ডের মাঝে নিয়ে গিয়ে ওকে পরিচয় করিয়ে দিলো।ওর বন্ধুরা মধুকে ভাবি ভাবি করে ওর খান গরম করে ফেলছে।মধু বারবার ইশারা দিচ্ছে এখান থেকে যাওয়ার জন্য কিন্তু ইয়াদ বুঝতে পারছে না।কিন্তু রাসেল বুঝতে পারলো মধুর ইশারা তাই ইয়াদকে খোঁচা মেরে বলল,’বন্ধু তোমাকে কেউ একজন ইশারায় বলছে ”কাছে এসো, কাছে এসো,কাছে এসো না আআআআআআ’

রাসেলের কথায় বন্ধুদের মধ্যে সবাই হেসে দিলো আর মধু লজ্জা পেলো।তারপর ইয়াদ আর মধু ওদের থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে কিছুদূর হাঁটতেই টিপটিপ বৃষ্টি পড়া শুরু করলো।আশেপাশে ছাউনি পাওয়া যাচ্ছে না।দূর থেকে একটা বাস দেখে ইয়াদ হাত দিয়ে ইশারা দিলো।বাস এসে ওদের সামনে স্লো হয়ে গেলো কিন্তু থামলো না।ইয়াদ লাফিয়ে উঠলো তারপর মধুকেও উঠালো।বাসে উঠেই মধুর মাথা চক্কর দিতে লাগলো।এর আগে কখনো বাসে দাড়িয়ে যায় নি মধু।বাসের ঝাঁকুনির জন্য খালি পড়ে যেতে নেয়।ইয়াদ ব্যাপারটা লক্ষ করে চারপাশে দেখলো একটা সীটও নেই।তাই ইয়াদ মধুকে একবারে বাসের পিছনের সাইডে নিয়ে এলো তারপর নিজে একটা স্যান্ড ধরে একহাতে মধুকে জড়িয়ে ধরলো।মধু মাথাটা নিজের বুকের ওপর রেখে ফিসফিসিয়ে বলল,’আমার গলা জড়িয়ে ধরো তাহলে আর ঝাঁকুনি লাগবে না।ইয়াদের কথা মতো মধু ওর গলা জড়িয়ে ধরলো।তারপর না চাইতেও দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।মধুর চোখের দিকে চাইতেই ইয়াদের কবি নিমাই ভাট্টাচার্যের একটা কথা মনে হলো

“””””প্রহর শেষে আলোর রাঙা সেদিন চৈত্র মাস,
তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়,
বাটে ঘাটে হাজার লোকের পরিহাস,
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।””””(নিমাই ভট্টাচার্য)

ইয়াদ মধুর চোখ থেকে নিজের চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।বাস এসে থামলো লঞ্চঘাট।ইয়াদ আর মধু নামলো বাস থেকে।এখন রোদ উঠেছে তবে মাঝেমধ্যে বৃষ্টির আনাগোনাও আছে।মধু চারপাশে একবার তাকিয়ে বলল,’এখানে আসলাম কেনো?’

‘তোমাকে পাচার করে দিবো তাই।’ইয়াদ দুষ্টু হেসে বলল।

মধু মুখ বাকিয়ে বলল,’এহ!আপনাকে ছাড়া আমি যাবো না।’

ইয়াদ হাসলো তারপর বলল,’চা খাবে?’

‘হ্যাঁ খাবো কিন্তু দোকানে যাবো না।অনেক ছেলেরা বসে আছে।’

‘আচ্ছা তাহলে তুমি এখানে পাঁচ মিনিট দাড়াও আমি নিয়ে আসছি।’

মধু ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।ইয়াদ গিয়ে দু কাপ চা নিয়ে এলো।চা শেষ করে ওরা নদীর ঘাটে গিয়ে দাড়ালো।নদীর ঠান্ডা পানি ছুয়ে একটা বাতাস দুজনেরই চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে।নিরবতা ভেঙে মধুই বলল,’জানেন আমি কখনো লঞ্চে উঠি নি।ইচ্ছা আছে উঠবো।’

‘চলো এখনি উঠি।’

‘এখনি?’

‘হ্যাঁ,কারণ আজকে সুযোগ আছে, সময় আছে, টাকা আছে,ইচ্ছা আছে তাই আজই উঠবো বলা যায় না কখন কি হয় তাই যখনি কোনো ইচ্ছা হয় তখনি সেটা পূরণের চেষ্টা করবে কারণ হয়তো এমন কোনোদিন আসবে সেদিন তোমার টাকা,সময় থাকলেও ইচ্ছে থাকবে না আবার ইচ্ছে থাকলেও সময় অথবা টাকা থাকবে না।তাই সুযোগ যখন আসে তখনই লুফে নিতে হয়।’

মধু ইয়াদের কথায় মুগ্ধ হলো আবারও।নতুন করে আরো একবার এই ইয়াদের প্রেমে পড়তে হলো মধুকে।

এখন একটা লঞ্চ ছাড়াবে।এই লঞ্চেই উঠবে ওরা।কিন্তু মধুর ভয় লাগছে।যদি পড়ে যায়।তবুও মনে সাহস রেখে একটু একটু করে এগিয়ে লঞ্চে উঠেই গেলো।ওর পিছনে ইয়াদও এলো।এটা লোকাল লঞ্চ।নদীর ওইপাড়ে যাবে।একটু পারই লঞ্চ ছেড়ে দিলো।মধু ভয় ইয়াদের হাত খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছে লঞ্চের বারান্দায়।এটা তখন মাঝনদীতে অবস্থান করছে।ইয়াদ চারপাশে একবার তাকিয়ে বলল,’ফিল করো এখন তুমি নদীর ওপর ভাসছো।ফিলিং কেমন?’

‘খুব ভাল্লাগছে।’মধু উৎফুল্ল হয়ে বলল।

‘আচ্ছা চলো একটা টাইটানিক পোস দেই।’

‘এটা দিতে হলে ছাদে যেতে হবে।’মধু বলল।

‘এরা ছাদে যেতে দিবে না।এখান থেকেই দিতে হবে।’

তারপর দুজনে গরীবের জ্যাক আর রোজ সোজে একটা পোস দিলো।দুজনেই হাসলো খুব।লঞ্চ ওইপাড়ে পৌঁছানোর পর দুজনই নামলো।নদীর এপাড়টা একটু গ্রাম টাইপের।মধু আর ইয়াদ আশেপাশে ঘুরলো।তারপর ফিরতি লঞ্চে এপাশে চলে আসলো।এখন দুপুর একটা।দুইটা থেকে মধুর কোচিং শুরু।কলেজ না করলেও কোচিং করতে হবে তাই।ইয়াদ আর মধু লঞ্চ ঘাট থেকে একটা বাস উঠলো।এইবাসটায় যাত্রী তেমন নেই।দুপুরের সময়তো তেমন যাত্রী নেই।দশমিনিট অপেক্ষা করে আরো দুই তিন জন যাত্রী নিয়ে বাস ছেড়ে দিলো।বাসে দুজের মাঝে তেমন কথা হয় নি শুধু চোখাচোখি হয়েছে।ইয়াদের ভার্সিটির সামনে আসতেই দুজনে নেমে গেলো।বাস থেকে নেমে মধু বলল,’আমি ব্যাচে গেলাম।আল্লাহ হাফেজ।’

‘এই দাড়াও।এখনো একঘন্টা বাকি।দুপুরে খেয়ে তারপর যাবা।’

‘যেগুলো খাওয়াইছেন ওগুলোইতো এখনো হজম হয় নাই।’

‘হয়ে যাবে।’

তারপর জবরদস্তি মধুকে খেতে হলো দুপুরে।যেখানে মধু জীবনেও দুপুরে খায় নি।খাওয়া শেষ করে বের হতেই মধু আচমকা ইয়াদের হাত ধরে ফেললো।ইয়াদ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,’কি হইছে মধু?’

‘সামনে তাকান’ মধু সামনের দিকে তাকিয়ে বলল।

দৃষ্টি অনুসরণ করে ইয়াদও তাকালো সামনে।নিশি রাস্তার ওইপাড়ে একটা ছেলের হাত ধরে হাঁটছে।ইয়াদ ওইদিকে তাকিয়েই ঘৃণায় অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,’ব্যাচে চলে যাও।আর এসব মেয়েদের থেকে কমপক্ষে একশো হাত দূরে থাকবা।’

তারপর ইয়াদ চলে গেলো বাসার দিকে আর মধু নিশির পিছুপিছু।কারণ ব্যাচ শুরু হতে আরো আধঘন্টা বাকি।মধু নিশিকে ফলো করতে করতে কিছুদূর আসতেই হঠাৎ দেখলো কেউ একজন ছুটে এসে নিশির হাত ধরে ফেললো।মধু আরেকটু এগিয়ে ভালো করে তাকিয়েই বুঝতে পারলো এটা সেদিনের সেই পাগলটা যেটা মধুকে দেখতে এসেছিলো।মধুর হাসি আসছে প্রচুর তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে কাহিনি দেখতে লাগলো।

যে ছেলেটা নিশির হাত ধরে হাটছিলো ওই ছেলেটা নিশিকে একটা থাপ্পড় মেরে চলে গেলো।ছেলেটা ভেবেছে এই পাগল ছেলেটা ওর আরেকটা বয়ফ্রেন্ড।এদিকে নিশি বেক্কল হয়ে গেছে।এটা কি হলো!নিশি বারবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ছেলেটা ছাড়ছে না।এরমধ্যেই ছেলের মা এসে ওদের ছাড়িয়ে ছেলেটাকে নিয়ে গেলো।যেতে যেতেও ছেলেটা নিশির দিকে তাকিয়ে ছিলো।দূর থেকে মধু দেখে বলল,’আহা কি মহব্বত!”
এটা বলেই হাসতে হাসতে নিজের ব্যাচের দিকে হাটা ধরলো।আজকে একটা শান্তি শান্তি লাগছে মনের মধ্যে।

চলবে…

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৮
#Arshi_Ayat

ব্যাচে আজকে আরিয়া যায় নি।মধু ব্যাচে গিয়ে বুঝতে পারলো।আজকে একা যেতে হবে।হঠাৎই মনে হলো ইয়াদকে বললেই তো হয়।ও এসে নিয়ে যাবে।মধু ক্লাসের মাঝেই লুকিয়ে ইয়াদকে টেক্সট করে দিলো।

ব্যাচ শেষ করে মাত্রই মধু বের হয়েছে।এখনো ইয়াদ আসে নি।অন্ধকার আস্তে আস্তে আলোকে মুছে দিয়ে নিজের অস্তিত্ব কায়েম করছে।মধু ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে ইয়াদ ফোন দিতে নিবে এই সময়ই ইয়াদ চলে এলো।এসেই স্বভাবমতো একটু হাসলো।তারপর বলল,’আজকে তোমার বান্ধবী আসে নি?’

‘না সেইজন্যই তো আপনাকে আসতে বললাম।আমার ভয় লাগে রাস্তাটা দিয়ে যেতে।আবার কয়েকদিন যাবত মনে হয় কেউ যেনো ফলো করে আমাদের।’

ইয়াদ চিন্তিত কন্ঠে বলল,’কে তোমাদের ফলো করবে?সন্দেহ হয় কাউকে?’

‘না সন্দেহ করার মতো কাউকেই তো দেখি না।’

‘তাহলে শুধু শুধু কেউতো ফলো করবে না।’

‘আমিও তো সেটাই বলছি।বুঝতে পারছি না বিষয়টা।’মধু অস্থির হয়ে বলল।

‘আচ্ছা চিন্তা করো না।কালকে তুমি আর আরিয়া আগে যাবে আমি তোমাদের থেকে অনেকটা পিছনে থাকবো।দেখবো কে সন্দেহজনক ভাবে তোমাদের ফলো করছে।’

‘আচ্ছা।’
এবার মধু অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে এসে বলল,’দুপুরে বাসায় যাওয়ার পর কি করলেন?’

‘বাসায় যাই নি তো।রাসেল,মাসুদ আর কয়েকজন বড় ভাইয়ের সাথে ক্রিকেট খেলছি।’

‘বাহ!আপনিতো ফুটবল ক্রিকেট সবই খেলেন।’

‘হ্যাঁ,ছোট থাকতে মাঝেমধ্যেই ভাইয়া আমি বাবা খেলতাম।কখনো আমি ব্যাটিং করতাম তো কখনো ভাই নাহয় বাবা।মোটামুটি সব খেলার হাতেখড়ি বাবার হাতেই হয়।
ইফাজ ভাইয়া খুব শান্তশিষ্ট ছিলো কিন্তু আমি দুষ্ট ছিলাম খেলার সময় প্রচুর চালাকি করতাম।ভাইয়া বুঝতে পারলেও কিছু বলতো না।এখন ভাইয়া ব্যাস্ত আর বাবা ইচ্ছা থাকলেও তার ডাক্তার পুত্রের নিষেধ আছে কারণ হাটুতে ব্যাথা।তাই ওদের সাথে খেলতে না পারলেও এখন ফ্রেন্ডদের সাথে খেলি।’

‘ও,আমার সাথে খেলবেন লুকোচুরি।’

ইয়াদ চোখ মেরে দুষ্ট হেসে বলল,’হ্যাঁ খেলা যায়।’

‘আচ্ছা।সময় হোক।’

‘যেমন আপনার ইচ্ছা।’ইয়াদ মুচকি হেসে বলল।

এভাবেই কথা বলতে বলতে বাড়ির কাছাকাছি চলে এলো।এখান থেকে মধু আগে আগে হাটছে আর ইয়াদ পিছনে।তারপর যে যার ঘরে চলে গেলো।
———————-
আজকে শুক্রবার।কলেজ,ব্যাচ কিছুই নেই তার ওপর সকাল থেকে বৃষ্টি।জানালাগুলো আটকে মধু বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টি হাতে দিয়ে ছুয়ে অনুভব করছে।হঠাৎ মনে হলো ভিজলে কেমন হয়!তাই ইয়াদকে মেসেজ করলো,’এই যে মহাশয়,চলুন না বৃষ্টিতে ভিজি।ছাদে আসুন।’

সাথেই সাথেই উত্তর আসলো,’অসুখ বাধানোর জন্য?’

‘কিচ্ছু হবে না প্লিজ আসুন না।’

‘আচ্ছা আসো।’
মধু খুশী হয়ে ফোনটা ব্যাগে রেখে বেরিয়ে পড়লো।ছাদের মাঝখানে এসে মুখটা আকাশের দিকে তুলে ধরে বৃষ্টি অনুভব করতে লাগলো।এরইমধ্যে ইয়াদও চলে এলো।ইয়াদ ছাদে এসেই ছাদের দরজা বন্ধ করে দিলো।খোলা রাখাটা ঠিক হবে না।কে কখন দেখে ফেলে কে জানে!

ছাদের দরজা আটকে মধুর সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,’অসুখ হলে দেইখো কি করি?’

‘কি করবেন?’মধু ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করল।

‘আগে হোক তারপরই বুঝবা।’

মধু মুখ ভেঙচিয়ে বলল,’আপনার হলে?’

‘আমার হলেও তুমি দায়ী।তোমার জন্যই আমি ভিজছি।’

‘আমি আপনার কে?আমি বললেই আপনি ভিজবেন কেনো?’মধু দুষ্টুমি করে বলল।

‘আচ্ছা তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।’এই বলে ইয়াদ হাঁটা ধরলেই মধু হাত ধরে ফেললো।তারপর বলল,’সরি,সরি আর বলবো না।’

ইয়াদ মুচকি হাসলো।মধু নিজের চুলের খোঁপা ছেড়ে দিয়ে বলল,’আমাকে কোলে নিতে পারবেন।বর’রা যেভাবে বউদের নেয়।’

ইয়াদ একবার মধুর দিকে তাকিয়ে বলল,’না পারার কি আছে তবে এখন না সময় হলো নিবো।’

মধু কিছু বলবে এই সময়েই ছাদের দরজায় খটখট আওয়াজ হয়।দরজায় কারো শব্দে দুজনেই ঘাবড়ে গেলো।এখন কি করবে কোথায় লুকাবে।পাশেই একটা সিমেন্টের টাংকি আছে।ইয়াদ সেটার পিছনে লুকিয়ে পড়লো।মধু গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো নিশি।ও মধুকে পাশকাটিয়ে ছাঁদে চলে গেলো।মধুও কিছু না বলে একপাশে এসে দাড়ালো।নিশির মতিগতি কিছু বোঝা যাচ্ছে না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে ও।পনেরো মিনিট হয়ে গেছে এখনও নিশি যাচ্ছে না তাই মধুও যেতে পারছে না আর ইয়াদ বেচারা টাংকির পিছনে বসে বসে পা ব্যাথা হয়ে গেছে।মধু ভেবেছে নিশি যাওয়ার পরই যাবে বলাতো যায় না কখন কি কান্ড করে ফেলে।কিন্তু মধুর সেই ইচ্ছায় একবালতি জল ঢেলে মিলি এসে বলল,’আপু,তোমাকে আম্মু ডাকে।’

যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয় কথিত এই প্রবাদটা মধুর সাথেও মিলে গেলো না চাইতেও ইয়াদকে একা রেখে যেতে হচ্ছে।মধু বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ছাদ থেকে নেমে যেতে লাগলো।
—————
জামা পাল্টে বিছানায় বসে মধু চিন্তা করছে ইয়াদ কি এখনো ছাদে আছে?নিশি কি চলে গেছে?ও কি ইয়াদকে দেখে ফেললো?এমন অনেক প্রশ্ন মধুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।ইয়াদকে মেসেজ করেছে বাসায় এসে ওকে জানাতে কিন্তু সেটারও রিপ্লাই আসছে না।ওফ!চিন্তায় মনে হচ্ছে মাথা ফেটে যাবে।আর এখন বেরও হওয়া যাবে না।

চিন্তায় চিন্তায় বিকেল হয়ে গেলো।একবার ইয়াদকে দেখে আসতে পারলে ভালো হতো কিন্তু যাবে কিভাবে!ভাবতে ভাবতেই টেবিলের ওপর একটা খাতা দেখলো ইরিনের যেটা গত পরশুদিন এনেছিলো।এটা দেওয়ার নাম করে তো যাওয়া যেতেই পারে।মধু খাতাটা নিয়ে তিন তলায় পা বাড়ালো।কিন্তু একি!দরজায় তো তালা ঝুলানো।ওরা কি কোথায় গেলো নাকি!ইয়াদ তো মধুকে কিছু বলে নি নাকি রাগ করেছে ওকে ওভাবে একা রেখে আসায়!মধু পাঁচ মিনিট তিনতলার ফ্ল্যাটের সামনে ঘুরাঘুরি করে আবার নিজের ঘরে চলে এলো।তারপর ফোনটা বের করে ইয়াদকে ফোন দিলো কিন্তু ফোন বন্ধ!টেনশন হচ্ছে মধুর!কোথাও যাবে একবারও বলবে না!মধুর কষ্ট লাগলো!চোখ দিয়ে পানি বের হতে নিলেও সে সামলে নিয়ে ফোনটা ব্যাগে রেখে দিলো।কিন্তু ভেতরে অস্থিরতা ঠিকই কাজ করছে।হঠাৎ মনে পড়লো আইরিন রহমানের ফোন দিয়ে ইরিনকে কল দিলেই তো হয়।

মধু ইরিনের নাম্বারে কল দিলো কিন্তু ফোন কেউ রিসিভ করছে না।ওদের আর নাম্বারও নেই মধুর কাছে।খুব ভয় লাগছে মধুর।এমন কি হলো যে সবাই একসাথে গায়েব হয়ে গেলো।
—————-
মধু পড়ছিলো।ঠিক পড়ছিলো বললে ভুল হবে বইটা সামনে রেখে বসে ছিলো।চিন্তা মাথায় রেখে কি পড়া হয়!
বিরক্তিতে বইটা বন্ধ করে মধু উঠে দাড়ালো।কিছুক্ষণ পায়চারি করে আবার কল দিলো ইয়াদকে না এবারও ফোন বন্ধ।চিন্তা বেড়েই চলছে মধুর।

এখন রাত ১১.০০ টা বাজে।মধু আবার কল দিলো।এবার ফোনে কল ঢুকছে।মধুর বুক ঢিপঢিপ করছে।কল কেটে যাবার আগেই ইয়াদ কল ধরলো।মধু প্রায় সাথে সাথেই উত্তেজিত কন্ঠে বলল,’আপনি কোথায়?কি হয়েছে আপনার?কল ধরছেন না কেনো?’

ইয়াদ কিছু বলল না।মধু উদ্বিগ্ন কন্ঠে আবার বলল,’কি হলো বলুন না।’

‘আমার দাদু মারা গেছেন একটু আগে।তোমার সাথে পরে কথা বলবো।’ইয়াদ এতটুকুই বলল ধরা গলায়।ফোনের এপাশ থেকেও মধু বুঝতে পারলো ইয়াদের প্রচুর কষ্ট হচ্ছে।কেনো যেনো মধুরও খারাপ লাগা ভর করলো।এতক্ষণ দুশ্চিন্তা আর এখন খারাপ লাগা!
—————-
এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন চোখ লেগে এসেছিলো মধু টেরও পায় নি।সকালে তাড়াতাড়িই উঠেই ইয়াদকে কল করলো।ইয়াদ কল ধরে নি।না ধরাটাই স্বাভাবিক।

মধু ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই চোখ কপালে চলে গেলো।ওর ফোন মিলির হাতে।মধু ভুলেই গিয়েছিলো ফোনটা লুকাতে।মধু ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই মধু খপ করে ওর হাত ধরে বলে,’মিলি কাউকে বলিস না প্লিজ।’

‘না আমাকে ছাড়ো।আমি আম্মুর কাছে যাবো।’

মধু অসহায় কন্ঠে বলল,’প্লিজ বলিস না।তোর যা লাগবে বল আমি দিবো।’

মিলি তবুও শুনলো না।এমনিতেই মন মেজাজ খারাপ তার ওপর আবার মিলির এই আচরণ মধুর ভাল্লাগলো না।মিলিকে সপাটে একটা থাপ্পড় দিয়ে ফোনটা নিয়ে নিলো কিন্তু মধু বুঝতে পারে নি রাগের মাথায় করা কাজটা ওর বিপদ ডেকে আনতে পারে।ঠিক তাই হলো মিলি গিয়ে আইরিন রহমানকে সব বলে দিলো।আইরিন রহমান এসে মধুকে উড়াধুড়া মাইর শুরু করলো।ওর থেকে ফোনটাও নিয়ে নিলো।প্রচুর মার খাওয়ায় মধু জ্ঞান হারালো।যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দুপুর।সারা শরীরে কালশীটে দাগ।আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো।মাথা ঘুরছে।শরীরে ব্যাথা।কোনো মতে বিছানায় বসে ব্যাথার ঔষুধ খেয়ে শুয়ে থাকলো।

বিকলে ঘুম থেকে উঠতেই বুঝতে পারলে ব্যাথা নেই।তবে দাগগুলো স্পষ্ট।মধু গোসল করে নিলো।ভাত খাওয়ার রুচি নেই।

সন্ধ্যার সময় ওর মা এসে ফুল হাতার একাটা ব্লাউজ আর শাড়ি দিয়ে বলল,’চুপচাপ রেডি হ।’

কিচ্ছু বলল না মধু।চুপচাপই রেডি হলো।পাত্রপক্ষের কথাবার্তা শেষ হওয়ার পর পাত্র বলল মধুর সাথে কথা বলবে।মধুও গেলো।ছেলের নাম ইমন।ছেলে মধুকে বলল,’আপনার কি বিয়েতে আপত্তি আছে?’

‘হ্যাঁ আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।’

‘বিয়ের আগে এমন থাকেই।যাইহোক আমি আপনাকেই বিয়ে করবো।’এটা বলে ছেলেটা চলে যেতে নিলেই মধু বলে উঠলো,’আমি প্রেগন্যান্ট জানার পরও বিয়ে করবেন আমাকে?’

ছেলেটা মুহুর্তেই ঘুরে তাকালো।তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’আপনি প্রেগন্যান্ট তার প্রমাণ কি?’

‘ও আচ্ছা প্রমাণ লাগবে তো দাড়ান দেখাচ্ছি।’

এই বলেই মধু প্রেগ্ন্যাসি কিট’টা ইমনকে দেখালো।ইমন কীট’টা দেখেই মুখ গম্ভীর করে ফেললো।কীটে স্পষ্ট প্রমাণ করছে মধু প্রেগন্যান্ট!

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-১৫+১৬

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৫
#Arshi_Ayat

সাইকার চোখ রাঙানি দেখে সবার আগে হিমেল নামলো।তারপর শিহাব আর আরাফ নামলো।ওরা নামতেই সাইকা সন্দেহের দৃষ্টিতে বলল,’ওতো রাতে ছাদে বসে কি করছিলো তোমরা?’

‘কিছু না জান তারা গুনছিলাম।’হিমেল বলদের মতো দাঁত বের করে বলল।

‘তুমি তো কিছু বইলো’ই না।তোমারে শায়েস্তা ঘরে গিয়ে করতাছি আমি।যেই নিজের মতো দেখতে দুই বান্দর পাইছে সেই শয়তানি শুরু হইছে।এখন যদি আম্মায় আসতো তাইলে কি হইতো!আক্কলে,আন্দাজ কিচ্ছু নাই।’

হিমেলকে বাঁচানোর জন্য শিহাব বলল,’দুলাভাই চলেন ঘুমাইতে যাই।অনেক রাত হয়ে গেছে।’

‘হুম চল সবাই চল।’আরাফও শিহাবের কথায় তাল দিলো।

তারপর আরাফ আর শিহাব চলে যেতে লাগলো।ওদের পিছনে পিছনে হিমেলও যেতে নিলে সাইকা বলল,’এই তুমি পশ্চিমেট ঘরটায় যাও।আমি আসছি।’

সাইকার কথা শুনে হিমেল অসহায় মুখ করে একবার সাইকার দিকে আরেকবার আরাফ আর শিহাবের দিকে তাকালো।ওরা হিমেলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেষ্ট অফ লাক বলে চলে গেলো।ওরা যেতেই সাইকা মধুকে বলল,’তুই ঘুমাতে যা।’
তারপর মধু ঘরে চলে গেলো আর সাইকা পশ্চিম দিকের গেস্টরুমে চলে গেলো।

মধুর রাগ হচ্ছে নিজের প্রতি যে কোনো ভূত-টুত কিছু না শুধুশুধু ভয় পাচ্ছিলো।নিজেকে নিজে বিড়বিড় করে গালি দিতেদিতে বলল,’এই বালের ভূত ধরার জন্য রাত দুইটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম।ছিহঃ’
নিজের ওপর নিজের রাগ মিটাতে মিটাতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে গেলো মধু।
————–
‘এই মধু ওঠ তাড়াতাড়ি।দিনের নয়টা বাজে।’
সাইকার কথা শুনে মধু আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো।তারপর জড়ানো কন্ঠে বলল,’আরেকটু ঘুমাতে পারলে ভালো হতো।’

‘আচ্ছা নাস্তা করে আবার একটু শুয়ে থাকিস কিন্তু আগে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নে।’

মধু আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে কলপাড়ে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে ঘরে আসতেই দেখলো সাইকা নাস্তা নিয়ে বসে আছে।মধুকে দেখে বলল,’নে খেতে বস।আমি একটু দেখে আসি ওর কিছু লাগবে কি না।’
এটা বলেই সাইকা বেরিয়ে গেলো।সাইকা বেরিয়ে যাবার পর মধু ভেজে মুখটা মুছে খেতে বসলো।একটু খাওয়ার পরই আইরিন রহমান এলেন।ওনাকে দেখেই মধুর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।উনি চুপচাপ মধুর পাশে বসে বললেন,’তাড়াতাড়ি খেয়ে ব্যাগের ভেতর রাখা জাম রঙের শাড়িটা পড়ে রেডি হয়ে নিবি।’

আইরিন রহমানের কথা শুনে মধু একপলক ওনার দিকে তাকালো আর যা বোঝার বুঝে গেলো।আবার পাত্র দেখাদেখি খেলা।মধু গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার খেতে লাগলো।আর আইরিন রহমান উঠে চলে গেলেন।মধু খাওয়া শেষ করে ব্যাগ থেকে শাড়িটা বের করে পরে নিলো।

হঠাৎ সাইকা ঘরে আসতেই দেখলো মধু তৈরি হচ্ছে।সাইকা ভ্রু কুঁচকে বলল,’কি রে কোথাও যাবি নাকি?’

‘না আপু,আম্মু বলছে রেডি হয়ে থাকতে।’

‘সেটাই তো কেনো রেডি হবি?’

মধু কথাটা ভেতরে চেপে বলল,’জানি না তো।’

‘আচ্ছা দাড়া আমি দেখছি।’
সাইকা বেরিয়ে গেলো মধুর মায়ের সাথে দেখা করতে।

মধু রেডি হয়ে বসে আছে।একটু পরেই সাইকা এসে মধুর পাশে বসে উত্তেজনা নিয়ে বলল,’জানিস তোর মা কি প্ল্যান করছে?’

মধু সবজানে তবুও না জানার ভান ধরে বলল,’কি?’

‘তোরে একটু পর দেখতে আসবো।পছন্দ হইলে আজকেই নাকি বিয়া।’

সাইকার কথা শুনে এবার মধুর টনক নড়লো।আজকেই বিয়ে হয়ে গেলে সব শেষ।মধু কাঁদোকাঁদো মুখ নিয়ে বলল,’কি করবো আমি এখন আপু?’

‘আচ্ছা চিন্তা করিস না।বিয়ে হবে না।চুপচাপ বসে থাক।’
বলেই সাইকা উঠে চলে গেলো।এতো সহজে কি শান্ত হওয়া যায়!মধুর ভেতরে তোলপাড় চলছে!একটু পরই আইরিন রহমান এসে বললেন,’চল।আর ওদের সামনে কোনোরকম নাটক করবি না।’

মধু মায়ের পিছনে পিছনে চলে গেলো।বাইরের ঘরে একটা দুইটা পুরুষ আর একটা মহিলা বসে আছে।একটু কমবয়সী ছেলেটাই মনে হয় পাত্র।মধু আড়চোখে একবার সবাইকে দেখে নিলো।তারপর মায়ের নির্দেশমতো তাদের সামনে বসলো।এরমধ্যেই ওইখানে সাইকাও উপস্থিত হলো।সাইকা উপরে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে সুযোগ খুঁজছে কিছু না একটা করে ভাগাতে হবে।পাত্রপক্ষ মধুকে একের পর এক প্রশ্ন করছে আর ও উত্তর দিচ্ছে।ভেতর থেকে সাইকাকে ছোট মামি ডাক দিলো শরবত নেওয়ার জন্য।সাইকা ভেতরে গিয়ে শরবতের ট্রে টা নিয়ে হিমেলকে কল দিলো।

‘হ্যাঁ,কই তুমি?আনছো?’

‘হ্যাঁ,আরাফের ঘরে এনে রাখছি।’

‘আচ্ছা।’
সাইকা ফোন রেখে আরাফের ঘরে গিয়ে দেখলো শিহাব,আরাফ,হিমেল তিনজনই বসে আছে।সাইকাকে দেখে হিমেল বলল,’এগুলো দিয়ে কি করবে?’

‘বাইরের ঘরের দরজার সামনে পাঁচ মিনিট পর উকি দিও তাইলেই বুঝতে পারবা।’

সাইকা টেবিলের ওপর থেকে কিছু একটা শরবতে মিশিয়ে নিয়ে গেলো।তারপর শরবতের ট্রে ওদের সামনে রাখলো।আইরিন রহমান ওদের আন্তরিক ভাবে বলল,’আপনারা শরবত নিন না!”

সবাই শরবত নেওয়ার পর।সাইকা ঠোঁট টিপে একটু হাসলো।মধু সাইকার হাসি দেখে ইশারায় বলল,’হাসো কেনো?’

সাইকা একটু দুষ্টু হাসি দিলো।এবার মধু বুঝলো নিশ্চিত কোনো না কোনো ঘাপলা করেছে ও।তো নাস্তা খাওয়া শেষে।পাত্রের বাবা মধুর মাকে বলল,’বেয়াইন সাহেব মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।বিয়েটা আজকেই হোক।শুভ কাজে দেরি করা উচিত না।’

পাত্রের বাবার কথা শুনে মধুর বুকের ভেতর চিপ দিয়ে উঠলো।চোখ ছলছলিয়ে উঠলো।হঠাৎ পাত্রের মা বলল,’আপনাদের ওয়াশরুমটা কই?’

সাইকা বলল,’আন্টি আপনি আমার সাথে আসুন।’
মহিলাকে সাইকা নিয়ে গেলো।ফিরে আসতেই পাত্রের বাবা বলল,’আর কোনো ওয়াশরুম আছে আপনাদের?’

সাইকা ছোট মামির এটাচ ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো পাত্রের বাবাকে।এবার আসতেই পাত্র বলল,’পেট মোচড়াচ্ছে,ওয়াশরুমে যেতে হবে।’

সাইকা চিন্তিত মুখে বলল,’আর কোনো ওয়াশরুম খালি নেই।আপনার একটু বসতে হবে।’
ছেলে দাঁতমুখ খিঁচে বসে আছে।কিন্তু ওর বাপ মা এখনো ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না।বেচারা না পেরে উঠে দাড়ালো।আর তখনোই সর্বনাশটা ঘটলো।বেচারার আর কন্ট্রোল হলো না!!প্যান্টের মধ্যেই কাজ সেরে ফেলেছে।এই অবস্থা দেখে আইরিন রহমান তাড়াতাড়ি ওই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।মধুও দ্রুত বের হয়ে গেলো।দুর্গন্ধে অবস্থা খারাপ!ছেলের চেহারা দিকে তাকানো যাচ্ছে না মনে হচ্ছে এখনি কান্না করে দিবে।হয়তো ভেতরে ভতরে বলছে ‘ছাইড়া দে মা,কাইন্দা বাঁচি।’

ছেলের বাবা মা দশ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে আসলো।এদিকে ছেলের যা শর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে।তারপর কোনোমতে আইরিন রহমানের থেকে বিদায় নিয়ে যে সি এন জি দিয়ে এসেছে ওটা দিয়েই চলে গেছে।

এদিকে মধু আর সাইকা ওদের ঘরে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।আর ওইদিকে হিমেল,শিহাব আর আরাফেরও একই অবস্থা।হাসতে হাসতেই সাইকা বলল,’দেখিস ওরা নিজেই মানা করে দিবে।’

‘তা তো দিবেই।তুমি যা করছো।’

তারপর আবার দুইবোন হাসতে লাগলো।
—————–
মধুর বড়খালা অনেক করে বলল এতো তাড়াতাড়ি যেতে না।কিন্তু মধুর মা আজই চলে যাবে।আজ সকালেই যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু পাত্রপক্ষ আসবে সেইজন্য যায় নি।একটু আগে ছেলের বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে বলেছে ওনারা মানা করে দিয়েছে।তাই আর থেকে কি লাভ।আজকে রাতের নয়টার বাসেই ফিরবে ওরা।মধুর মন খারাপ হচ্ছে খুব।সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।সাইকার ও মন খারাপ তবে মধুকে স্বান্তনার স্বরে বলল,’আরে পাগলি আমাদের আবার দেখা হবে।’

যাওয়ার আগে আরাফ মধুর হাতে একট প্যাকেট দিয়ে বলল,’এই নে।একসেট বেশি করেই কিনেছিলাম।’
মধু ছলছল চোখে আরাফের দিকে তাকালো।আরাফ হাসি মুখে বলল,’ভালো থাকিস।আবার তো আসবিই।মন খারাপ করিস না।’

তারপর বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা রওনা দিলো।বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত আরাফ ওদের এগিয়ে দিলো।

বাসে তিনটা সীট নেওয়া হয়েছে।দুইটা পাশাপাশি আর একটা দুই সীট পর।পাশাপাশি দুইটা সীটে আইরিন রহমান আর মিলি বসলো।আর দুইসীট পরের সীটে মধু বসলো।পাশের সীটে কে মধু জানে না।বাস ছাড়তে আরো পনেরো মিনিট বাকি আছে।মধু বাইরে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ পাশের সীটে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ফিরে তাকাতেই দেখলো একটা ছেলে বসেছে।মধু তেমন গ্রাহ্য না দিয়ে আবার বাইরে তাকালো।হঠাৎ ইয়াদের গলা শুনে মধু চমকে তাকিয়ে দেখলো তাদের সীটের পাশের সারির পাশাপাশি সীটে ইয়াদ বসে আছে।ওদের চোখাচোখি হতেই দু’জনেই অবাক হয়ে গেলো।এবার মধু লজ্জা পেয়ে আবার বাইরে তাকালো।কিন্তু এখন কি আর বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় বারবার চোখগুলো যেনো ইয়াদের দিকেই যায়।মধু নিজেকে কিছুতেই শাসন করতে পারছে না।কিন্তু একটা জিনিসে মধু অবাক হয়েছে যখনই ও ইয়াদের দিকে তাকায় তখনই দেখে ইয়াদও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
এভাবেই লুকোচুরি চলছে।বাস ছেড়ে দিয়েছে অনেক্ক্ষণ হলো।মধু চোখ বন্ধ করে আছে।চোখ খুলে পাশে তাকাতেই চোখ গুলো বড়োবড়ো হয়ে গেছে।ওর পাশের সীটেই ইয়াদ বসে আছে।আর ওই ছেলেটা ইয়াদের সীটে বসে ঘুমাচ্ছে।ইয়াদ মুচকি হাসি দিয়ে বলল,’কেমন আছো?’

‘ভালো আপনি?’

‘সবসময়ই ভালো থাকি।তো আজই ব্যাক করছো?’

‘হুম।তোমার আম্মু,বোন ওরা কই?’

‘দুই সীট সামনে।পাশাপাশি আর সীট পাওয়া যায় নাই তাই আলাদা এই সীট টা নিতে হলো।’

‘ও’
এমনই টুকটাক দুজনের মাঝে কথা হলো।তারপর ইয়াদ কনে ইয়ারফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে সীটে হেলান দিয়ে রইলো।মধুও চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রাখলো।হঠাৎ ইয়াদ বলল,’তোমার ফোন নাম্বারটা দাও তো!’

মধু মন খারাপ করে বলল,’আমার তো ফোন নেই।’

‘ওহ!আইডি আছে?’

‘না খুলিনি।’

‘আচ্ছা কালকে সকাল নয়টায় পুকুর পাড়ের সামনে দেখা করতে পারবে?’

‘কেনো?’মধুর জবাবে কৌতুহল।

‘দরকার আছে বলেই বলেছি।’

‘আচ্ছা আসবো।’
এরমধ্যেই আইরিন রহমানকে নিজের সীট ছেড়ে আসতে দেখে মধু মুহুর্তেই বাইরের দিকে তাকালো।আর ইয়াদ সীটে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে রইলো।আইরিন রহমান এসে মধুকে বলল,’তুই মিলির সাথে গিয়ে বস।’

মধু কিছু না বলে মিলির কাছে গিয়ে বসলো।আর মধুর মা ইয়াদের পাশে বসে পড়লো।এরপর আর কোনো কথা হয় নি ওদের মাঝে।যখন ওরা বাসায় পৌঁছালো তখন রাত একটা।
নিজেদের ফ্ল্যাটে যাওয়ার সময় মধুর মায়ের জন্য শেষ কথাবার্তা টুক হয় নি।

তবে মধুর কেনো যেনো অজানা একটা ভালো লাগে শরীরে ভর করেছে।দেখা যাক কাল সকাল দশটায় কেনো ডাকা হয়েছে মধুকে।

বাসায় পৌঁছে ধড়াম করে শুয়ে পড়লো মধু।ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু করছে।
————–
সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত মধু পুকুর পাড়ের সামনে অপেক্ষা করেও ইয়াদের নামগন্ধও পেলো না।বিরক্ত হয়ে যখনই হাটা শুরু করবে তখনই ইয়াদ ডাক দিলো।

‘মধু’

মধু পেছনে তাকাতেই দেখলো ইয়াদ আসছে।মধু দাড়ালো সেখানে।দেখা যাক কি বলে সে।ইয়াদ ওর সামনে এসে বলল,’সরি ফর লেট।’

এটা বলেই একটা গোলাপ ফুল বের করে মধুর হাতে দিয়ে বলল,’নাও আমাকে প্রপোজ করো।’

মধু ইয়াদের কথা শুনে বেক্কল হয়ে গেলো।মানে কি!হঠাৎ প্রপোজ করতে যাবে কেনো!মধু বলল,’মানে!বুঝলাম না।’

‘বাংলা ভাষাতেই বললাম।তুমি এখন এই গোলাপ দিয়ে আমাকে প্রপোজ করবা।আর আমি একসেপ্ট করবো।’

‘কেনো?’মধু ভ্রু কুঁচকে বলল।

‘কারণ তুমি আমাকে পছন্দ করো।’

‘আমি আপনাকে বলছি?’

‘সব কথা বলতে হয় না।’

‘আচ্ছা তাহলে প্রপোজও করার দরকার কি যেহেতু বুঝতেই পারছেন।’

‘দরকার আছে।আমারে জীবনেও কোনো মেয়ে প্রপোজ করে নাই।আমার অনেকদিনের ইচ্ছা কোনো মেয়ে আমাকে প্রপোজ করবে।এই ইচ্ছাটা তুমিই পূরণ করে দাও প্রিয়তমা।’ইয়াদ অনুরোধের সুরে বলল।

ইয়াদের মুখে প্রিয়তমা শুনে মধুর মনে হলো ভালোবাসা কি তাহলে আমাকে ধরা দিলো!দ্বিধাহীন ভাবে মধু ইয়াদকে ‘ভালোবাসি’ বলেই দিলো।এতো সহজে যে ভালোবাসা তাকে ধরা দিবে মধু ভাবতেও পারে নি।
ভালোবাসার প্রকাশ শেষে ইয়াদ মধুকে একটা ফোন দিয়ে বলল,’এটা রাখো।সিম,আইডি সব কিছু আছে।বাসায় গিয়ে আইডির পাসওয়ার্ড পাল্টে দিও।’

মধু কৌতুহলী হয়ে বলল,’ফোন দিয়ে কি করবো?’

‘গাধা,ফোন না থাকলে পিরিত করবা কি দিয়া?’

চলবে…..

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৬
#Arshi_Ayat

‘যদি আম্মু দেখে ফেলে?’মধু ভীতু গলায় বলল।

‘যথাসম্ভব লুকায় রাখবা।আর নিশির সামনে এমন ভাব করবা যেনো তুমি আমাকে একদম দেখতে পারো না।ও জানতে পারলে একদম আগুন লাগিয়ে দিবে।’ইয়াদ সতর্ক গলায় বলল।

মধু ইয়াদের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো।এটা সাবধানে রাখতে হবে।ইয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,’কলেজে যাবে এখন?’

‘হ্যাঁ।আপনি?’

‘আমি আড্ডা মারতে যাবো।’

‘আপনার পড়াশোনা নাই।ভার্সিটিতে যান না কেনো?সারাদিন বাদাইম্মার মতো ঘুরলে পড়বেন কখন?’মধু ভ্রু কুঁচকে বলল।

‘ভার্সিটির পোলাপান পড়ে না।শুধু পরীক্ষা আসলে কোমড়ে গামছা বেধে নাকে মুখে পড়ে পরীক্ষা দিতে যায়।’ইয়াদ মৃদু হেঁসে বলল।

‘ইশ!আমি কবে ভার্সিটিতে উঠবো।’মধু আফসোসের সুরে বলল।

‘আগে ইন্টার পরীক্ষা দাও।তারপর ভর্তি পরীক্ষা এরপর চান্স পেলেই ভার্সিটিতে উঠতে পারবা।’

‘আমার পড়ালেখার যা অবস্থা মনে হয় ফেল করবো।’মধু চিন্তিত গলায় বলল।

‘তো পড়াশোনা ঠিকমতো করো না কেনো?কোচিং কোথায় করো?’

মধু উদাসভাবে উত্তর দিলো,’ছেড়ে দিয়েছি।’

‘কেনো?’ইয়াদ ভ্রু কুচকে বলল।

‘আম্মু খোঁটা দেয় সেইজন্য।’

‘আচ্ছা তুমি কোন স্যারদের কাছে পড়তে নাম বলো।’

‘শুভ স্যার আর মুকুল স্যার।’

‘ওনাদের নাম্বার দাও তো।’

মধু নাম্বারগুলো ইয়াদকে দিলো।ইয়াদ নাম্বার পেয়ে হালকা হেসে বলল,’আরে ওরা তো আমার ফ্রেন্ড।চলো আমি ওদের বলে দিচ্ছি।আর কোনোরকম পড়াশোনায় ফাঁকি দিবা না।সামনে টেস্ট!খারাপ করলে খবর আছে একবারে!”

মধু ভালো মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।মনেমনে ভিষণ খুশী লাগছে।ইয়াদ আর মধু প্রথমে শুভ স্যারের কাছে গেলো তারপর মুকুল স্যারের কাছে গেলো।দুইটা কোচিং আবার সেটা করে মধুকে কলেজে দিয়ে ইয়াদ রাসেল দের বাড়িতে চলে গেলো।

মধু কলেজে এসেই আরিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।আরিয়া অবাক হয়ে বলল,’কি রে আজকে এতো খুশী কেনো?’

মধু আরিয়াকে সব বলার পর আরিয়া বলল,’কংগ্রাচুলেশন।কিন্তু দেখিস ধরা পরিস না।আর ওই নিশি নাকি হিসি ওইটার থেকে বেঁচে থাকবি।’

‘হুম এই কথাগুলো উনিও বলছে।’

‘আচ্ছা তাহলে কি টিউশনিগুলা করবি না?’

‘করমু তো।সকালে করায় কলেজে আসমু তারপর কলেজ ছুটির পর স্যারদের কাছে পইড়া বাসায় যামু।’

‘হুম এটাই ভালো হবে।তোর হাত খরচটা চলবে।’

‘হুম।’
তারপর আরিয়া আর মধু স্যার না আসা পর্যন্ত টুকটাক কথা বলল।
—————
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।মধু আর আরিয়া একসাথে আসছিলো।কিন্তু হঠাৎ মনে হলো কেউ ওদের পিছনে আসছে।কিছুদিন আগেও এমন হয়েছিলো।কে সে যে এমন ফলো করে।আরিয়া ফিসফিসিয়ে বলল,’মধু এতোদিন তো তুই ছিলি না আমি একা একা আসছি।প্রতিদিন মনে হতো কেউ পেছনে পেছনে আসে।’

‘কি বলিস!আমার ভয় করতেছে।দৌড় দিবো নাকি?’মধুও ফিসফিসিয়ে জবাব দিলো।

‘আরে না।একটা প্ল্যান বানাতে হবে।কে পিছনে আসে ব্যাপারটা জানতেই হবে।’

‘কি করবি সেটা বল?’

‘জানি না।আজকে ভেবে কালকে জানাবো।’

‘আচ্ছা।
এরপর মধু আর আরিয়া দ্রুত পায়ে হেটে বাসায় চলে গেলো।

মধু বাসায় এসেই দরজা বন্ধ করে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে অন করলো।তারপর ইয়াদকে একটা কল দিয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে আবার ব্যাগে রেখে ফ্রেশ হতে গেলো।ফ্রেশ হয়ে,খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে এসে দরজা আবার দরজা বন্ধ করে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ইয়াদ তিনবার কল দিয়েছে।মধু ব্যাক করতে যাবে তার আগেই ইয়াদ আবার দিলো।মধু রিসিভ করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।রুমে বসে কথা বললে বাইরে থেকে কেউ শুনতে পেলে খবর আছে।রিসিভ করতেই ইয়াদ বলল,’বাসায় পৌছেছো?’

‘হ্যাঁ কিছুক্ষণ হলো।’

‘আচ্ছা শোনো কোনো একটা বাহানা দিয়ে তোমার শ্বশুড়বাড়িতে আসো।’

‘এখন!না না মা জিগ্যেস করলে কি বলবো?’

‘বলবা ইরিনের কাছে তোমার খাতা আছে তাই যেতে হবে।’

‘তারপর খাতা কই থেকে আনবো?আম্মু হাতে খাতা না দেখলে সন্দেহ করবো।’

‘আরে সমস্যা নাই।ইরিন রে বলবা ওর রসায়ন খাতাটা তোমাকে দিতে।তাইলে ই ল্যাটা চুকে যায়।’

‘এখন না আনালেই পারতেন!কালকেই তো দেখা হতো।আপনার জন্য এতগুলো মিথ্যা বলতে হবে।’

‘বলবা।আমি তোমার দশটা না পাঁচটা একটা মাত্র বয়ফ্রেন্ড।আমার জন্য বলবা না তো কার জন্য বলবা?তাড়াতাড়ি আসো।’

‘আচ্ছা আসতেছি।’
মধু ফোনটা রেখে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মাথায় ওড়না টেনে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে ইয়াদের দেওয়া বাহানা আইরিন রহমানকে বলে বেরিয়ে পড়লো শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে।

ওদের ঘরের সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজাতেই ইয়াদ দরজা খুললো যেনো মধুরই অপেক্ষা করছিলো।মধুকে দেখে একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে ইরিনকে ডেকে বলল,’ইরিন তোর বান্ধবী আসছে।’

ইয়াদের কাহিনি দেখে মধু মুখ টিপে হাসলো।এরমধ্যেই ইরিন চলে এলো।ইরিন এসেই মধুকে ঘরে নিয়ে এলো।নিজের ঘরে এসে মধুকে বসতে দিয়ে বলল,’তো কেমন খেলে বিয়েশাদি?’

‘ভালোই।’

মধুর কথাশুনে ইরিন দুঃখ পাওয়ার ভান করে বলল,’হ্যাঁ তোমারই দিন।বিয়ে খেতে পারছো।কিন্তু আমার চৌদ্দগোষ্ঠীতে কেউ বিয়ে করছে না।এই যে আমার দুইটা দামড়া দামড়া ভাই একটাও বিয়ে করছে না।’

ইরিনের কথা শেষ হতেই পেছন থেকে ইয়াদ বলল,’তোকে তাড়িয়ে পরে আমরা বিয়ে করবো।’

ইরিন ইয়াদের পিঠে দুম করে দুইটা কিল দিয়ে বলল,’আমি জীবনেও যাবো না।মরে ভূত হয়ে তোমার বউকে ভয় দেখাবো।’

ইরিনের কথা শুনে ইয়াদ আর মধু দুজনেই হেসে দিলো।ওদের হাসি ঠাট্টার মাঝেই ইয়াদের মা খিচুড়ি এনে বলল,’এই নাও খেয়ে বলো তো কেমন হইছে।’

‘আন্টি আমি তো খেয়েছি একটু আগে।’

‘হ্যাঁ তো কি হইছে আবার খাবা।’ইয়াদ বলল।

ইয়াদের কথায় ইরিন আর ওর মা দুজনেই সমর্থন করলো।হঠাৎই কলিং বেল বাজায় মধুর মা গেলো দরজা খুলতে।আর এদিকে মধু যতোবারই ইয়াদের দিকে তাকাচ্ছে ততোবারই ইয়াদ ওকে চোখ মারছে।
একটু পরই ইয়াদের মা এসে ইয়াদকে বলল,’পাঁচতলার ভাবি মিষ্টি পাঠাইছে।ওনার মেয়ে আসছে।তুই আয় তো!”

ইয়াদের মায়ের কথাশুনে ইয়াদ আর মধু দুজনেই দুজনের দিকে চমকে তাকালো।পাঁচতলায় তো নিশিরা থাকে।তারমানে নিশিরা মিষ্টি পাঠিয়েছে।ইয়াদ মধুর দিকে এক পলক তাকিয়ে বসার ঘরে আসতেই দেখে নিশি পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে।ইয়াদ আর ওর মা মুখোমুখি সোফায় বসলো।ইয়াদের মা সৌজন্যমূলক হেসে বলল,’কি উপলক্ষে মিষ্টি দিলে?’

‘আন্টি আমার খালাতো বোনের মেয়ো হইছে সেইজন্য।’

‘ও আচ্ছা।তুমি একটু বসো।’
এটা বলে ইয়াদের মা উঠে চলে যেতেই ইয়াদ বলল,’লজ্জা নাই তোমার এতো বলার পরও আমার বাসায় আসছো কেনো?’

‘আমি তোমার কাছে আসি নাই।আমি আন্টির কাছে আসছি।’নিশি কাটাকাটা জবাব দিলো।

ইয়াদ রাগে উঠে চলে গেলো নিজের ঘরে।আর নিশি একটা বাঁকা হাসি দিলো।বস্তুত এই মিষ্টি নিশি নিজেই কিনে এনেছে।শুধু ইয়াদ দের বাসায় আসার জন্য।ইয়াদ চলে যাওয়ার পর ইয়াদের মা এসে নিশিকে খিচুড়ি দিলো।নিশি অল্প একটু খেয়ে তাড়া দেখিয়ে চলে গেলো।ইয়াদ মধু এই যাত্রায় বেঁচে গেলো মধুর জুতা নিশি খেয়াল করে নি।নিশি যাওয়া পাঁচ মিনিট পর মধুও চলে গেলো।যাওয়ার আগে সবার অগচোরে ইয়াদের হাতে একটা চিরকুট গুঁজে দিয়ে চলে গেলো।ইয়াদ যখন ওইরুমে গিয়েছিলো আর ইরিন ফোনে কথা বলছিলো তখনই মধু লুকিয়ে এই চিরকুট টা লিখেছিলো।

মধু যাওয়ার পর ইয়াদ নিজের ঘরে এসে চিরকুট টা খুললো।তাতে লেখা আছে

“”খবরদার আপনি মিষ্টি খাবেন না।
আমার মনে হয় নিশি আপনারে তাবিজ করার জন্য মিষ্টি দিছে।
ভুলেও কিন্তু ওগুলো খাবেন না।ওইসব তাবিজে কিন্তু কুত্তার ঘু আর ছাগলের ঘু থাকে।””

মধুর চিরকুট পড়ে ইয়াদ হাসতে হাসতে বসেই পড়লো।
————-
ইয়াদ সকালে ঘুম থেকে উঠে মধুকে মেসেজ করলো বের হওয়ার জন্য।মধু নামাজ পড়ে মেসেজটা দেখেই হিজাব বেধে বেরিয়ে পড়লো।পুকুর পাড়ের সামনে আসতেই দেখলো ইয়াদ জগিং স্যুট পরে কানে হেডফোন লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মধু সামনে এসে বলল,’কালকে আপনি মিষ্টি কি খেয়েছিলেন?’

‘নাহ! খাইনি।’

‘ভালোই করেছেন।বলাতো যায় না কি কি মিশিয়েছে।’

ইয়াদ কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই মধু বলল,’আপনি এতো ছ্যাচড়া কেনো?খালি আমার পিছনে ঘোরেন।আপনারে যাতে আমার পিছনে ঘুরতে না দেখি।’

মধুর এমন উদ্ভটমার্কা কথায় ইয়াদ টাস্কি খেলো।হঠাৎ করে কি হলো যে এগুলো বলছে।ইয়াদ ডানপাশে চোখ দিতেই দেখলো নিশি ওদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে।এবার ইয়াদ বুঝে গেলো।মনেমনে নিশির গোষ্ঠী উদ্ধার করে মধুকে বলল,’হ্যাঁ তো কি করবে?একশোবার ঘুরবো।’

এটা জোরেজোরে নিশিকে শুনিয়ে বলল।মধুও রাগের ভান করে বলল,’ফালতু ছেলে।’
এটা বলেই অন্যদিকে হাঁটা শুরু করলো।আর ইয়াদ সামনের দিকে দৌড়ানো শুরু করলো।নিশি রাগে মাটিতে একটা লাথি মেরে মনেমনে বলল,’মনে করছো কিছু বুঝি না আমি তাই না!তোমাদের প্রেম বের করতেছি দাড়াও।’

মনে মনে এগুলো বলে নিশি বাড়ির দিকে চলে গেলো।

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-১৩+১৪

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৩
#Arshi_Ayat

মধু এরপর আর ওখানে দাড়ালো না।সাইকার রুমে এসে বালিশের ওপর শুয়ে কান্না করতে লাগলো।হঠাৎ কেউ একজন ওর মাথায় হাত রাখতেই কান্না থামিয়ে উঠে বসতেই দেখলো শিহাব ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আচমকা শিহাবকে দেখে মধু চোখের পানি মুছে ফেললো।শিহাব ভ্রু কুঁচকে বলল”মধু কাদছিস কেনো?”

‘এমনিতেই সাইকা আপুকে মনে পড়ছে তাই।’

শিহাব কিছু একটা ভেবে বলল ‘লুডু খেলবি?’

‘হ্যাঁ খেলবো।কিন্তু মাত্র দুইজন?’

‘না আরাফ ভাইয়া আসছে।তুই বস আমি লুডু বোর্ড নিয়ে আসি।’
এটা বলে শিহাব বোর্ড আনতে গেলো।মধু খাট থেকে নেমে ছাড়া চুলগুলোকে হাত খোপা করে কলপাড়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে আসতেই দেখলো আরাফ আর শিহান খাটের ওপর লুডুর বোর্ড নিয়ে আরাম করে বসে আছে।মধু হাত,মুখ মুছে ওদের সাথে বসে পড়লো।তিনজনই নিজেদের গুটি পছন্দ করে নিলো।প্রথমে মধু চাল দিলো কিন্তু ছক্কা ওঠে নি।তারপর আরাফ দিলো,আরাফেরও কপাল খারাপ।সবার শেষে শিহাব চাল দিতেই ওর ছক্কা উঠলো।শিহাব এক গুটি উঠিয়ে আবার চাললো।কিন্তু এবার এক(কানা)উঠলো।গুটিটা একঘর এগিয়ে দিলো।তারপর মধু চালতেই এবার মধুর ছক্কা উঠলো মধুও নিজের একটা গুটি উঠিয়ে আবার চাল দিলো।এবারও ছক্কা।মধু নিজের দ্বিতীয় গুটিও উঠালো।এরপর আবার দিতেই পাঁচ উঠলো।প্রথম গুটি পাঁচঘর এগিয়ে দিলো।তারপর চাল আরাফের।আরাফ মনেমনে চাইছিলো একটা ছক্কা যেনো ওঠে।কিন্তু কে জানে ওর ওপর কি কুফা লেগেছে!এবার ছক্কা ওঠে নি।এরপর শিহাব চালদিলো।শিহাবের পর মধু।ওদের দুজনের আর ছক্কা না উঠলেই গুটি এগুচ্ছিলো কিন্তু বেচারা আরাফের একটা গুটিও এখন পর্যন্ত ওঠে নি।আরাফের ইচ্ছা করছে খেলা ছেড়ে উঠে যেতে।কয়েকবার চেয়েছিলো ও কিন্তু মধু আর শিহাব ওকে জোর করে বসিয়ে রেখেছে।ইতিমধ্যে মধুর এক গুটি পেকে গেছে। শিহাবের এক ঘর গেলেই একটা গুটি পেকে যাবে।অথচ আরাফের এখনো একটা ছক্কাও উঠছে না।তবুও বিরক্তি মুখে বসে আছে সে।হঠাৎ চাল দিতেই আরাফের ছক্কা উঠলো।আরাফ খুশীতে একটা গুটি উঠিয়ে আবার চাল দিলো।আবারও ছক্কা উঠলো।আরেকটা গুটি উঠিয়ে আবার চাল দিতেই চার উঠলো।এতক্ষণে আরাফের মুখে হাসি ফুটলো।খেলা আস্তে আস্তে জমছে।শিহাবের একটা গুটি আরেকটু পরই পাকতো কিন্তু মধু নিজের গুটি দিয়ে ওরটা কেটে দিলো।এভাবে কাটাকাটি চলছে।মধু আর শিহাবের একটা গুটি পাকলেও এরপর আর কোনো গুটিই পাকছে না।শুধু কাটাকাটি হচ্ছে। অনেক্ষণ খেলার পর মধুর আর আরাফের মুড চলে গেলো।আর খেলতে ইচ্ছে করছে না তাই শিহাব লুডুর বোর্ড রেখে এলো।এরমধ্যেই আরাফের মা এসে বলল’তোরা সবাই খেয়ে নে।খাবার দিয়েছি।’

আরাফের মায়ের কথায় সবাই মাঝখানের রুমে গেলো।এইরুমেই সবাই একসাথে খায়।একটু আগে মামারা,খালুরা আর অন্যান্য আত্নীয়রা খেয়েছে।এখন বাকি যারা আছে তারা খাবে।খাওয়া শেষ করে মধু সাইকার রুমে এসে দেয়ালঘড়িতে দেখলো সাড়ে দশটা বাজে।যে যার যার মতো শুয়ে পড়ছে।সাইকার রুমে আজ মধুর একা শুতে হবে।এমনিতেই মধু ভয় পায় আজ আরো ভয় লাগছে।মধু গিয়ে আইরিন রহমানকে বলল”আম্মু আজকে আমার সাথে ঘুমাও না!আমার ভয় করে।”

আইরিন রহমান বিরক্ত কন্ঠে বললেন”ঢং না করে গিয়ে শুয়ে পড়।বিয়ের বয়স হয়ে গেছে এখনি নাকি ভয় পায়!”

মধু আর কিছু না বলে রুমে চলে এলো।মন খারাপ করে মশারী টানিয়ে দরজা বন্ধ করে লাইট জ্বালিয়েই শুয়ে পড়লো।ঘুম আসছে না।মনটা ভার হয়ে আছে।মনে হচ্ছে কিছু একটা বুকের মধ্যে চেপে বসে আছে।নামাতে পারলে ভালো লাগতো।বাইরে মেঘ ডাকছে।হঠাৎ করে কারেন্টও চলে গেলো।মধু শোয়া থেকে জড়সড় হয়ে উঠে বসলো।হালকা বৃষ্টিও শুরু হয়েছে।বাতাস হচ্ছে প্রচুর।এভাবেই এক দেড়ঘন্টা মধু বসেছিলো।এক দেড়ঘন্টা পর বাতাস বৃষ্টি কমে যাওয়ায় মধু গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো।তখনও কারেন্ট আসে নি।চোখ মুখ খিঁচে শুয়ে থাকার ফলে মধুর ঘুম চলো আসে।তখন ঘড়িতে আনুমানিক রাত ১২ টা।
———————
ফজরের আজান কানে আসার সাথে সাথে মধুর ঘুম ভেঙে গেলো।আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে উঠে বসলো মধু।দরজা খুলে কলপাড়ে গিয়ে ওজু করে ঘরে এসে নামাজ পড়ে খাটে বসে রইলো।ইচ্ছাছিলো একটু হাটবে কিন্তু এখন বের হওয়া ঠিক হবে না।কেউই এখবো জাগে নি।দশ পনেরো মিনিট পর বাইরে বড় খালা আর ছোটো মামিকে দেখা গেলো।মধু খাট থেকে নেমে বাইরে যেতেই বড় খালা বলল’কি রে কখন উঠলি ঘুম থেকে?’

‘একটু আগে।খালা আম্মু উঠছে?’

‘হুম তোর মা নামাজ পড়ে।’

‘ও,,,খালা আমি একটু হেঁটে আসি।আম্মু জিগ্যেস করলে বইলো একটু হাঁটতে গেছি।’

‘আচ্ছা যা।তাড়াতাড়ি আসিস।’

মধু ঘাড় নাড়িয়ে হাঁটতে লাগলো।কাল রাত বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাঘাট কাঁদাকাদা হয়ে আছে।আরো মধু জুতা নেয় নি খালি পায়ে হাঁটছে।খালি পায়ে হাটতে মধুর ভালো লাগে।সবসময়তো জুতা পায়ে দিয়েই হাটা হয়।তাই মধু যখনই গ্রামে আসে তখনই খালি পায়ে হাটে।মধুর বহুদিনের ইচ্ছা নৌকায় চড়া।কিন্তু আজও সেটা পূরণ হয় নি।কে জানে কবে হবে!প্রায় অনেক্ক্ষণ হাটাহাটি করে মধু বাড়ি ফিরলো।কলপাড়ে গিয়ে হাত পা ধূয়ে ঘরে এসে দেয়াল ঘড়িতে দেখলো সাতটা বাজে।মধু ঘর থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে গেলো।সেখানে ওর মা আর মামিরা নাস্তা বানাচ্ছে।ওকে দেখে ওর মেঝো খালামনি ডেকে বলল”মধু এই নাস্তার প্লেট টা তোর বড় মামাকে দিয়ে আয়।”

মধু প্লেট টা নিয়ে বড় মামার রুমে আসতেই দেখলো বড়মামা হেলান দিয়ে বসে আছে।মধু টেবিলে নাস্তার বাটিটা দিয়ে বলল”মামা নাস্তা দিয়েছি।”

“আচ্ছা।তুই খেয়েছিস?”

“না পরে খাবো।”
এটা বলে মধু চলে গেলো।এরপর সবার নাস্তা পৌঁছে দিতে দিতে মধু ক্লান্ত হয়ে গেছে।সবার শেষে নিজের নাস্তা নিয়ে ঘরে এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করলো।এখন প্লেট রাখতে যাবে এইসময় ছোট মামি এসে বলল’মধু,শোনো আজকে আমরা সবাই শাড়ি পড়ে যাবো সাইকার শ্বশুর বাড়ি।তুমি শাড়ি এনেছো?’

মধু উদাস মুখে বলল’না মামি শাড়ি তো আনি নি।’

‘আচ্ছা সমস্যা নেই।প্লেট রেখে আমার রুমে আসো।’
মধু প্লেটগুলো রেখে ছোটো মামির রুমে গেলো।ছোট মামি পাঁচ ছয়টা শাড়ি বের করে বলল’দেখো যেটা পছন্দ হয় সেটা পরো।’

মধু দেখেশুনে কালো রঙের লাল কাছা ওয়ালা একটা শাড়ি নিলো।ছোটো মামি শাড়িটা ওর গায়ের ওপর মেলে ধরে বলল’বাহ!অনেক সুন্দর লাগছে।এটাই পরবে তুমি।এগারোটার মধ্যে গোসল করে নিও।’

‘আচ্ছা আমি তুমি কোনটা পরবে?’

ছোট মামি হালকা গোলাপি রঙের ওপরে সোনালি রঙের সুতায় জর্জেট কাজ করা একটা শাড়ি বের করে বলল’এটা পরবো।এই শাড়িটা তোমার মামা আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে দিয়েছে’ এটা বলেই ছোটমামি একটু লাজুক হাসলো।মধু একটু হেসে বলল’আচ্ছা আমি আমি এখন গেলাম।’

‘আচ্ছা যাও।’
মধু সেখান থেকে বের হতেই আরাফের মুখোমুখি পড়লো।আরাফ ভ্রু কুঁচকে বলল’এভাবে টইটই করে ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেনো?’

‘কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছি!আমি তো ছোট মামির কাছে গিয়েছিলাম শাড়ি পছন্দ করতে?’

‘কেনো শাড়ি পছন্দ করে কি করবি?’

‘ছোটমামি বলছিলো আজকে সবাই নাকি শাড়ি পড়ে সাইকা আপুর শ্বশুড় বাড়ি যাবে।আমার তো শাড়ি নেই তাই আমি ওনার থেকে একটা পছন্দ করতে বলেছিলো।’

‘ও আচ্ছা।শোন তোর সাথে কথা আছে।’

‘কি কথা?’

‘এখানে না বাইরে আয়।’

‘আচ্ছা চলো।’
আরাফ মধুকে নিয়ে পুকুর পাড়ে চলে গেলো।পাড়ে এসে মধু বলল’হুম বলো কি বলবে?’

‘আচ্ছা মেয়েদের চুড়ির মুট,টিপের পাতা,কানের দুল,নাকফুল,মেহেদী এগুলো কতো করে রে?আসলে দাম জানি না তো সেইজন্য জিগ্যেস করলাম।দোকানদার তো ঠকিয়ে দিবে।’

মধু এক ভ্রু উঠিয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল’কেনো বলো তো?তুমি এগুলো কিনে কি করবে?’

‘আরে আমার এক বান্ধবীর জন্মদিন আজকে তাই ওকে গিফট করবো।উল্টাপাল্টা কিছু ভাবসি না।’

মধু মুখ ভেঙচিয়ে বলল’বান্ধবী নাকি প্রেমিকা?’

‘সত্যি বান্ধবী।’

‘আচ্ছা আমি সবগুলোর দাম লিখে তোমাকে দিচ্ছি।’

‘আচ্ছা আমি ঘরেই আছি।তুই দিয়ে যাস।’

‘আচ্ছা।’
মধু ঘরে গিয়ে আরাফের বলা সবগুলো জিনিসের দাম লিখে আরাফকে দিয়ে আসলো।আসার সময় বলল’এগুলোর প্রত্যেকটা থেকে এক সেট আমার জন্যও চাই তা নাহলে বড় খালামনির কাছে ফাস করে দেবো।’

‘আমার কাছে তো এতোটাকা নাই রে বোন।থাকলে সত্যি নিয়ে আসতাম।’

‘বান্ধবীর জন্য থাকে কিন্তু বোনের জন্য থাকে না।বাহ!”মধু অভিমানী গলায় বলল।

আরাফ একটু হেসে বলল’আচ্ছা তোর জন্যও আনবো।খুশী?’

মধু ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসলো।জবাব দিয়ে দিলো সে খুশী।তারপর আরাফের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গিয়ে দেখে আইরিন রহমান বসে আছে।মধুকে দেখে বলল’কোথায় গিয়েছিলি?’

‘এইতো ছোট মামির রুমে গিয়েছিলাম।’

আইরিন রহমান কৈফিয়ত নেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন’কেনো?’

‘মামি বলছিলো আজকে সবাই নাকি শাড়ি পড়ে যাবে।তাই আমাকেও পড়তে।আমার শাড়ি নেই শুনে মামি ওনার থেকে একটা শাড়ি পছন্দ করতে বলেছিলেন তাই ওনার রুমে গিয়েছিলাম।’

‘শাড়ি পড়া লাগবে না।অন্য যে ড্রেস আছে সেটা পরবি।’

‘মা সবাই পরবে।আমিও পরি?’

মধুর কথা শুনে আইরিন রহমান সপাটে একটা চড় মেরে বলল’আমার কথার ওপর কথা বলিস কিভাবে?দিনদিন কি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস!’
এটা বলেই আইরিন রহমান চলে গেলেন ঘর থেকে।তিনি মূলত এজন্যই এসেছেন ঘরে যেনো মধু শাড়ি না পড়ে।একটু আগে রান্নাঘরে শুনছিলো সবাই নাকি শাড়ি পড়বে।তাই তিনি মধুকে নিষেধ করতে এইঘরে এসেছিলেন।আইরিন রহমান চলে যাওয়ার পর মধু বাম হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললো।তারপর জামা কাপড় নিয়ে পুকুর ঘাটে গেলো।আজকে কেউ নেই একা গোসল করতে হবে।বড়রা পরে করবে।মধু গলা পানি পর্যন্ত নামলো তারপর ইচ্ছামতো ডুব দিতে থাকলো।একটা পর্যায়ে ডুব দিতে দিতে চোখেমুখে আধার দেখছিলো তাই তাড়াতাড়ি ঘাটে চলে আসলো।গোসল শেষে জামা পড়ে ঘরে গিয়ে আয়নার সামনে দাড়াতেই দেখলো অনেকক্ষণ ডুবানোর ফলে চোখ দুটো ভয়ানক লাল হয়ে আছে।মধু মাথায় তোয়ালে পেচিয়ে বিছানায় বসে রইলো।একটু পর ছোট মামি এসে বলল’মধু শাড়ি পরবে না?চলো তোমাকে পরিয়ে দেই।’

মধু বাধা দিয়ে বলল’মামি আমি যাবো না।শরীর খারাপ লাগছে।তোমরা যাও।’

মধুর কথা শুনে ওর ছোটো মামি ভালো ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন’কি হয়েছে মধু?চোখ লাল কেনো তোমার?জ্বর আসছে নাকি?’

‘মনে হয় মামি।শরীর ব্যাথা ব্যাথা করছে।মাথাব্যথা করছে।’

‘আচ্ছা তুমি শুয়ে থাকো।কিছু খাবা?’

‘না মামি কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।’

‘আচ্ছা তাহলে শুয়ে থাকো।কিছু লাগলে বইলো।’

মধু মাথা নেড়ে সায় দিলো।ছোটোমামি চলে যেতেই মধু চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।একটু পর আইরিন রহমান এসে বললেন’অসুখ বাধালি কিভাবে?’

মধু কিছু না বলে মুখ নিচের দিকে নামিয়ে রাখলো।মধু জবাব না পেয়ে আইরিন রহমান বললেন’ওষুধ খেয়ে নিস।আমাদের আসতে দেরি হবে।আর ঘর থেকে একদম বের হবি না।’

মধু মাথা নেড়ে সায় দিলো।আইরিন রহমান বেরিয়ে যেতে নিলেই ওর বড় খালা এসে বলল’মধু তুই আসলেই যেতে পারবি না?একটু কষ্ট হলেও আয় সাইকা তোকে দেখলে খুশি হবে।’

মধু কিছু বলার আগেই আইরিন রহমান বললেন’আরে আপা যেতে না চাইলে থাক।জোরাজোরির দরকার নেই।চলো লেট হচ্ছে আমাদের।’

মধুর বড় খালা মধুর দিকে এগিয়ে এসে বলল’তোরা সবাই যা।আমি থাকি।ওকে অসুস্থ রেখে যাওয়া যাবে না।’

এবার মধু বাধা দিয়ে বলল’না খালামনি তুমি যাও,আমার তেমন কিছু হয় নাই।তুমি না গেলে তো সাইকা আপু রাগ করবে।প্লিজ তুমি যাও।’

‘কিন্তু তুই তো অসুস্থ।’মধুর খালা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল।

‘আরে সমস্যা নাই।তোমরা তো চলেই আসবা।আমি ততক্ষণ শুয়ে থাকবো।তুমি আর দেরি কইরো না বেরিয়ে পড়ো।’

মধুর জোরাজোরিতে তিনি আর না করতে পারলেন না।সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লো।যাওয়ার আগে আরাফকে আসতে দেখে মধু ঘুমের ভান ধরে থাকলো।আরাফ এসে মধুকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে চলে গেলো।সবাই চলে যেতেই মধু উঠে বসলো।এখন দুপুর বারোটা বাজে।ওরা আসতে আসতে সন্ধ্যা হবে।এতক্ষণ কি বসে থাকা যায় নাকি!মধু খাট থেকে উঠে দাড়িয়ে মাথা থেকে তোয়ালেটা সরিয়ে চুলগুলো ঝেড়ে নিলো।তারপর মাথায় ওড়না দিয়ে গেটে তালা মেরে চাবিটা ওড়নায় বেঁধে বেরিয়ে পড়লো।আজ অনেকদূর হাটা যাবে।মধু ধান ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেটে ব্রীজের ওপর উঠলো।এটার নিচে খাল।এই খাল কতোদূর পর্যন্ত গেছে মধুর জানা নেই।মধু ব্রীজের ওপরে বসলো।হালকা একটা স্নিগ্ধ বাতাস বইছে সাথে রোদের তাপও আছে।দুপুর হওয়ায় তেমন মানুষ নেই।মধু কিছুক্ষণ সেখানে বসে আবার উঠে দাড়িয়ে হাটা শুরু করলো।হাঁটতে হাঁটতে সামনে দেখলো ইয়াদ একটা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে।ওর সাথে একটা ছেলেও আছে।বাড়ির সামনে একটা রিকশাও আছে।ওরা এখন রিকশায় উঠবে।মধু দৌড় দিলো যে করেই হোক ইয়াদকে আটকাতে হবে।এই ভরদুপুরে ইয়াদকে যেনো ভীষণভাবে চায় মধু।

চলবে…..

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৪
#Arshi_Ayat

মধু দৌড়াতে দৌড়াতে দূর থেকেই দেখলো ইয়াদ রিকশায় উঠছে না ওই ছেলেটা একাই চলে যাচ্ছে।ছেলেটা চলে যাওয়ার পর ইয়াদ সামনের দিকে হাটছে।মধু পেছন থেকে ডাক দিলো’এই যে শুনছেন?’

একটা পরিচিত কন্ঠ পেয়ে ইয়াদ ঘুরে দাড়ালো।তারপর মধুকে দেখে মৃদু হাসলো।মধুও ইয়াদের সামনে দাড়িয়ে কিছুটা হেসে বলল’কোথায় যাচ্ছেন?’

‘কোথাও না এদিকেই হাটবো আর কি।তুমি?’

‘আমিও।আচ্ছা আপনি ঢাকা ফিরবেন কবে?’

‘কালকে রাতের বাসে ব্যাক করবো।তুমি?’

‘জানি না।মা যখন বলে।’

‘ও আচ্ছা দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই চলো হাটি।’

‘চলুন।’

মধু আর ইয়াদ বড়রাস্তা থেকে নেমে খালপাড় দিয়ে হাটা শুরু করলো।একটু হাটতেই মধু একটা নৌকা দেখে বলল’নৌকা বাইতে পারেন?’

‘হ্যাঁ পারি।কেনো তুমি চড়বে?’

মধু মাথা নাড়িয়ে বলল’হুম অনেকদিন থেকে ইচ্ছে।কিন্তু আমিতো বাইতে পারি না।আবার কেউ নিয়েও যায় না।’

‘আচ্ছা তাহলে নৌকায় চড়ার ইচ্ছাটা নাহয় আমই পূরণ করি।’এটা বলে ইয়াদ চওড়া হাসি দিলো।তারপর ঝুকে নিজের প্যান্ট খাপিয়ে বলল ‘ওঠো নৌকায়।’

মধু উঠতে পারলো না কারণ নৌকায় পা দিতেই নৌকা পিছিয়ে যায়।মধুর অবস্থা দেখে ইয়াদ আগে উঠলো তারপর নিজের হাত বাড়িয়ে বলল’এবার আসো।’

মধু কাপাকাপা হাতে ইয়াদের হাত ধরলো।ইয়াদ একটানে নৌকায় উঠিয়ে নিলো মধুকে।ইয়াদ নৌকা থেকে পানিতে নেমে নৌকা ঠেলে কিছুদূর এগিয়ে নিজেও উঠে পড়লো।তারপর নৌকা বাইতে শুরু করলো।মধু ভয়েভয়ে বলল’যদি পড়ে যাই তাহলে বাঁচাবে কে?আমিতো সাতার জানি না।’

‘পড়বে না।আর পড়লেও সমস্যা নেই আমি সাতার জানি।তুমি জড়তা ভেঙে বসো তা নাহলে মজা পাবে না।’

কিছুদূর যাওয়ার পর মধু কিছুটা সহজ হলো।হাতের কাছে একটা শাপলা ফুল দেখে ওটা তুলে নিলো মধু।এখন অনেক ভাল্লাগছে মধুর কয়েকটা শাপলা তুলে নৌকায় রেখে দু’হাতে খালের পানিতে হাত ভেজাচ্ছে।ইয়াদ নৌকা বাইছে আর মধুর খুশী দেখছে।এই খুশীগুলো ক্যামেরা বন্দী করলে কেমন হয়!ইয়াদ বাম হাতে নিজের ফোনটা বের করলো তারপর লুকিয়ে চুরিয়ে মধুর কয়েকটা ছবিতুলে ফোনের একটা ফোল্ডারে লক করলো।তারপর মধুকে ডেকে বলল’এদিকে এসে কয়েকটা সেলফি তোলো।এদিকের ভিউ অনেক সুন্দর।’

মধু আস্তে আস্তে ইয়াদের কাছাকাছি এসে কয়েকটা সেলফি নিলো।তারপর বৈঠা হাতে ইয়াদের কয়েকটা ছবি তুললো।ইয়াদও নৌকায় রাখা শাপলা গুলো মধুর হাতে দিয়ে কয়েকটা ছবি তুললো।মোটামুটি অনেকদূর চলে এসেছে দু’জনে।তাই নৌকা ঘুরিয়ে ফেললো ইয়াদ।রোদের তাপে ইয়াদ প্রচুর ঘামছে।শার্টও ভিজে জুবুথুবু হয়ে গেছে।অস্বস্তি লাগছে।মধু বুঝতে পেরে বলল’শার্ট টা খুলে ফেললেই পারেন।’

‘কিভাবে? আমার হাতে তো বৈঠা।”

মধু উত্তরে আর কিছু না বলে এগিয়ে এসে ইয়াদের শার্টটা খুলে নিলো।ইয়াদ মৃদু হাসলো।মধু হেসেছে তবে অন্যদিকে তাকিয়ে।যখন ওরা কিনারায় পৌঁছেছে তখন আনুমানিক দুপুর ২.০০ টা।কিনারায় পৌঁছে দু’জনেই চুপচাপ হাটছে।ইয়াদের শার্ট মধুর হাতে।নিরবতা ভেঙে ইয়াদ’ই প্রথমে বলল’বাসায় যাবে না?’

‘না আজকে অনেকদূর পর্যন্ত ঘুরবো।বাসায় কেউ নেই।’

‘সবাই কোথায় গেছে?’ইয়াদ কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলো।

‘আমার আপুর বউ ভাতে।’

‘তুমি যাও নি কেনো?’

‘এমনিতেই ইচ্ছে নেই তাই।এবার আপনি বাসায় চলে যান।’মধু ইয়াদের শার্ট’টা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল।

‘তুমি একা একাই হাটবে?’নিজের শার্ট’টা হাতে নিয়ে বলল।

‘হুম।’মধু একটু উদাসী হয়ে বলল।

‘আচ্ছা যদি আমিও তোমার সাথে হাটি?’

‘আপনারতো ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন।আর খাওয়া দাওয়া ও তো করেন নি।না.. না আপনি বাসায় চলে যান।’

‘সমস্যা নেই বাসায় গিয়ে একবারে ফ্রেশ হবো আর আমি সকালে নাস্তাই খেয়েছি বারোটায়।তাই আপাতত আমার ক্ষিদে নেই।’

মধু মৃদু হেসে বলল’আচ্ছা তাহলে চলুন।’

ইয়াদ আর মধু হাঁটতে লাগলো।আজ যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকেই যাবে দু’জন।হাটতে হাটতেই ইয়াদ প্রশ্ন করে বসলো’আচ্ছা একটা কথা বলি?’

মধু ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল’বলুন।’

‘মাঝেমধ্যেই তোমাকে খুব বিষন্ন দেখা যায় কেনো?তুমি চাইলে আমাকে বলতে পারো।আমি যদিও তোমাকে সাহায্য করতে না পারিও তবুও তোমার দুঃখ কিছুটা হলেও কমবে।’

মধু ইয়াদের কথা শুনে একটু হাসলো।আজ কেনো জানি সব দুঃখ কষ্ট মুখ ফুটে বলে দিতে চায় মধু।খুব করে বিশ্বাস করতে চাইছে পাশে থাকা মানুষটাকে।মধু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল’নিজের আপন মাকে কখন মুহুর্তেই অপরিচিত হতে দেখেছেন?কখনো মনে হয়েছে পরিবারে আপনি বোঝা?কখনো মনে হয়েছে পরিবার ছেড়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে।হতাশায় কখনো মুষড়ে পড়েছেন?কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছেন কখনো?’

মধু এতটুকু বলে থামলো।ইয়াদ বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে মধুর দিকে চেয়ে রইলো।মেয়েটার কতো কষ্ট থাকতে পারে এই জীবনের অল্পসময়ে।মধু নিজেকে সমলে আবার বলতে শুরু করলো’আমার বাবা মারা যায় চার বছর বয়সে।মা কে নানুরা জোর করে অন্য জায়গায় বিয়ে দেয়।চারবছর বয়স থেকে আমি নানুদের বাসায় থাকতাম।ছোট ছিলাম শুধু মা মা করতাম।আর কান্না করতাম।আমার কান্না থামানোর জন্য বড় মামি অথবা নানু থাপ্পড় মারতো ভয় দেখাতো।আমি গুমরে গুমরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়তাম।এভাবেই দুইবছর চলে যায়।যখন আমার বয়স ছয় তখন একদিন মা বাড়িতে আসে।এই দুইবছরে একবারও আসে নি সে।এমনও দিন গিয়েছে আমি জিদ করে বসেছিলাম মা না আসলে আমি খাবো না।উপোস করে বসে থাকতাম।কিন্তু মা আসতো না।নানু মেরে মেরে খাওয়াতো।যেদিন মা আসলো সেদিন শুনলাম মায়ের নাকি ডিভোর্স হয়েছে।ডিভোর্স মানে কি আমি জানতাম না।কিন্তু এটা বুঝেছিলাম আমি আবার মায়ের কাছে থাকতে পারবো।কি খুশি হয়েছিলাম সেদিন কেবল আমিই জানি।তখন থেকে আবার মায়ের সাথে থাকা শুরু হয়।সাথে মিলিও ছিলো।মিলিকে খুব হিংসে করতাম আমি।সবসময় মিলির দোষ হলেও মা আমাকে মারতো।এভাবেই চোখের সামনে নিজের মায়ের পরিবর্তন দেখেছি।কথায় কথায় চড়,থাপ্পড়,মার খেয়েছি ইচ্ছেমতো।যখন ক্লাস এইটে ছিলাম একদিন আমার মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব আসে।মা তখনই চেয়েছিলো বিয়ে দিয়ে দিতে কিন্তু বড় খালা মানা করায় আর দেন নি।এভাবে এই চারবছরে কতো সম্বন্ধ এসেছে তার হিসেব নেই।কয়েকটা আমি ভেঙেছি কয়েকটা বড় খালা মানা করেছেন।কিন্তু এবার মনে হয় না বিয়ে আটকাবে।হয়েই যাবে এবার বিয়েটা।ইচ্ছে ছিলো নিজের পায়ে দাড়ানোর।কিন্তু জানি না কি হবে।কাল বোধহয় দেখতে আসবে আমায়।’

মধু হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে ইয়াদের দিকে তাকালো।ইয়াদের চোখও ছলছল করছে।মধু ফিক করে হেসে বলল’দেখুন, আমি আপনাকে ইমোশনাল বানিয়ে ফেললাম।’

ইয়াদ নিজেকে সামলে বলল’এমন কিচ্ছু হবে না ধৈর্য ধরো।নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার কষ্ট লাঘব করবে।’

‘হ্যাঁ আমিও সেই আশাতেই আছি।বাড়ি যাবেন না?’

‘তুমি যাবে না?’

‘আমি আপনাকে প্রশ্ন করলাম।আপনি উত্তর না দিয়ে উল্টা আমাকে প্রশ্ন করছেন।বলুন না!কখন যাবেন বাসায়?’

‘তুমি যখন যাবে।’

‘আমি এখনই যাবো বিকেল হয়ে এসেছে।বাড়ির সবাই এখনি চলে আসবে।’

‘তাহলে চলো দিয়ে আসি।’

‘আমি যেতে পারবো।আপনি চলে যান।’মধু বাধা দিয়ে বলল।

‘কিন্তু আমার তো একা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।সুন্দরীদের একা একা ফিরতে নেই।’

মধু ইয়াদকে কোনোমতেই মানাতে পারলো না।ইয়াদ যাবে মানে যাবে।মধু মনেমনে হেসে বলল’এমন ঘাড়ত্যাড়া ছেলেটা!’

তারপর এই ঘাড়ত্যাড়া ছেলের সাথে মধুর বাড়ি ফিরতে হলো।ইয়াদ মধুকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে চলে গেলো।ঘরে ঢুকে মধু কিছুক্ষণ জিরিয়ে কলপাড়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে চলে এলো।তারা এখনো আসে নি।মধু বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে রইলো।একটুপর ই ওর চলে এলো।সাইকা এসেই মধুর পাশে বসে বলল’কি রে কি হয়েছে তোর?অসুস্থ হলি কিভাবে?’

মধু হেসে বলল’তেমন কিছু না তুমি ফ্রেশ হও।দুলাভাই কই?’

‘তোর দুলাভাই তো আরাফ আর শিহাবের সাথে কোথায় যেনো গেছে।’

‘ওহ”তো তুমি বসে আছো কেনো যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও।’

সাইকা চলে যাওয়ার পর বড় খালা এসে বলল’মধু কি অবস্থা এখন তোর?এতক্ষণ কি করেছিস?’

মধু চটপট বানানো মিথ্যাটা বলল’ওইতো ঘুমিয়েছি।’

‘যাক,তাও ভালো আমিতো চিন্তায় ছিলাম।কিছু খাবি এখন?’

‘না..’আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই সাইকা বলল’তুই খাবি না তোর ঘাড় খাবে।আম্মু যাও তো খাবার দাবার নিয়ে আসো।’
—————
রাত আট’টা মধু সাইকার সাথে বসে গল্প করছে কিন্তু মধুর মনোযোগ এখানে নেই।সে তো ভাবছে ইয়াদের কথা।হঠাৎ সাইকা ওকে ধাক্কা দিয়ে বলল’কি ভাবিস?’

‘কিছু না।তুমি বলো।’

‘কি বলবো তুই তো কিছুই শুনছিস না।’

‘আচ্ছা শুনবো বলো।’

‘না আমি বলবো না।’এটা বলে সাইকা উঠে যেতে নিলে মধু ওর হাত ধরে বলল’আপু শোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।’

সাইকা ঘুরে এসে বসে বলল’কি বল।’

‘আচ্ছা আপু এই বাসায় কি কোনো ভূত আছে?’

সাইকা ভ্রু কুঁচকে বলল’নাহ!কেনো?’

‘না আমি একদিন ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠেছিলাম তখন কারো ভয়ানক হাসির আওয়াজ শুনেছিলাম।’

‘ধূর,কি বলিস না তো।আমিতো কখনো শুনি নি।’

‘আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে আজকে রাতে আমার সাথে এসো তুমি।’

‘আচ্ছা ঠিকাছে।তুই যখন উঠবি তখন আমাকেও ডেকে দিস।’

‘আচ্ছা।’
—————
রাত বারোটা বাজে।মাত্রই সাইকা আর মধু শুয়েছে।আজকে প্ল্যান হলো ভূত ধরার।এই উত্তেজনায় মধুর আর সাইকা কারোই ঘুম আসলো না।যখন রাত দুটো বাজলো তখন মধু ফিসফিসিয়ে বলল’আপু চলো উঠি।’

‘চল।আজকে এই ভূত ধরেই ছাড়বো।এই ভূত ধরার জন্য আজকে আমি জামাইরে ছাইড়া তোর কাছে শুইছি।’

তারপর মধু আর সাইকা লাইট নিয়ে বের হলো।আর ঠিক এমন সময় তিনটা গলা পাওয়া গেলো।ভয়ানক গলায় হাসছে।মধু ভয়ে সাইকাকে জাপটে ধরে বলল’আপু দেখছো।আমি বললাম না ভূত আছে।আজকে একটা না তিনটা।’

সাইকা ভ্রু কুঁচকে বলল’আরে ধূর এগুলো তো আরাফ ভাই শিহাইব্বা আর আমার জামাই হিমেইল্লার গলা।এগুলো হাসে কই থেইকা।’

সাইকা টর্চ লাইট টা ঘরে ছাদের ওপর মারতেই দেখলো ওর তিনজন ভূত দেখার মতো চমকে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।আর নিচ থেকে মধু তাজ্জব বনে গেলো এটা দেখে।আর সাইকা কটমট করে চোখ রাঙিয়ে ওদেরকে নিচে নামতে বলল।

চলবে……

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-১১+১২

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১১
#Arshi_Ayat

খিলা থেকে একটা সি এন জি নেওয়া হলো খালাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য।সামনে শিহাব ভাই বসেছে আর মধুরা পিছনে বসেছে।গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে সি এন জি চলছে।কোথাও দুপাশে পুকুর তো কোথাও ধান ক্ষেত।মাত্র আধঘন্টা লাগলো বান্দুয়াইন পৌঁছাতে।এখানেই খালাদের বাড়ি।মধুরা সি এন জি থেকে নেমে একটু হাটলো।বাড়ির উঠানে আসতেই মধুর বড় খালা আইরিন রহমানকে জড়িয়ে ধরলো।আর সাইকা এসে মধু আর মিলিকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো।তারপর ওদের ভেতরে নেওয়া হলো।আরো অনেক আত্মীয় স্বজন আসছে।আজকে সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ।মামিরা আর খালারা কাজ করছে।মামারা বাজারে গেছে।শিহাব মধুদের বাসায় দিয়ে চলে গেছে ফুল আনতে।আরাফ গেছে বাবুর্চির সাথে কথা বলতে।আরাফ,সাইকা আর শিহাব তিন ভাইবোন।মেঝো খালার কোনো ছেলে মেয়ে নাই।আর সবচেয়ে ছোট আইরিন রহমান মানে মধুর আম্মু।উনিই তিনবোনের মধ্যে ছোট।সবমিলিয়ে মধুর খালাতো ভাই দুইটা আর বোন একটা।
—————–
একটু জিরিয়ে নিতেই মধুর আম্মু এসে বলল”ব্যাগ থেকে জামা কাপড় বের করে গোসল করতে যা।সাথে মিলিকেও নিস।”

“কোথায় করবো গোসল?”

“পুকুরে গিয়ে কর।সাইকাও গেছে।ওর সাথে যা।”

“আচ্ছা।”মধু জামা কাপড়সহ মিলিকে নিয়ে পুকুরপাড়ে গেলো।গিয়ে দেখে সাইকা কোমর পানিতে নেমে গোসল করছে।মেয়েরা এখনা গোসল করে ছেলেরা মসজিদের সামনে একটা পুকুর আছে সেটায় করে।এই পুকুরঘাট’টা মোটা কাপড় দিয়ে বাঁধাই করা তাই রাস্তা থেকে কেউ দেখতে পায় না।সাইকা মধুকে হাত দিয়ে ইশারা করলো পানিতে নামার জন্য।মধু মিলিকে ঘাটের কিনারায় নিয়ে গিয়ে জিগ্যেস করলো” তুই কি আমার সাথে নামবি?”

“না আমার ভয় করে।” মিলি ভীত গলায় বলল।

“আচ্ছা তাহলে মগ দিয়ে গোসক করে নে।সাবান, শ্যাম্পু সবই আছে।”

মিলি ওপরে থেকেই গোসল করে ভেজা জামা কাপড় নিয়ে ঘরে চলে গেলো সেখানে পাল্টাবে।ওর এখানে পাল্টাতে লজ্জা লাগে।অবশ্য লজ্জা লাগারই কথা সবসময় চার দেয়ালের মধ্যে পাল্টানোর অভ্যাস হওয়ায় এখন এখানে আন ইজি লাগবেই।তবে গ্রামের মানুষ এখনো এভাবেই পাল্টায়।মিলি চলে যাওয়ার পর মধু সাইকাকে বলল”আপু ছেলে কি করে?”

সাইকা সাবান মাখতে মাখতে বলল”ইন্জিনিয়ার সাহেব।”বলেই সাইকা হাসলো।

“তুমি কি দেখছো ছেলেকে?”

“আরে গত তিনবছর ধরে তো দেখেই আসতেছি।”

“মানে?” মধু অবাক হয়ে গেলো।

“আমাদের রিলেশনের বিয়ে।কাউকে বলিস না যেনো?জানিসই তো আমাদের ফ্যামিলিতে প্রেমের বিয়ে মেনে নেয় না।”

মধু উত্তেজিত হয়ে বলল”আচ্ছা কাউকে বলবো না।কিন্তু কিভাবে কি হলো এটা বলো।”

“আরে শোন তোর দুলাভাই ঘটকরে দিয়া বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাইছে।আব্বায় বলছে আমারে দেখতে আসতে।তো তোর দুলাভাই তার পরিবার নিয়া আমারে দেখতে আসছে।তারপর আমরা এমন ভাবে ছিলাম যেনো কেউ না বুঝতে পারে আমাদের মাঝে কিছু আছে।আর সবচেয়ে মজা লাগছে যখন ওর মা ওরে জিগ্যেস করছিলো ‘হিমেল তোর কি মেয়ে পছন্দ হইছে?’ তখন ও নিচের দিকে তাকাইয়া বলছে ‘মা তোমার পছন্দ হলেই হলো।” তারপর শ্বাশুড়ি মা আমারে আংটি দিয়া গেছে।তখন ওর কথা শুইনা আমার প্রচুর হাসি পাইছে।কিন্তু সবাই সব সবকিছু বুঝে যাবার ভয়ে হাসি নাই।

সবশুনে মধু হাসতে হাসতে বলল”আপু তোমরা সেই লেভেলের বাটপারি করছো।”

“কিচ্ছু করার নাই রে।আপোষে হইলা আমরা এমন করতাম না।বাড়িতে যদি বলতাম তাহলে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিতো।”

“হুম,ভালোই করছো।কিছু মিথ্যা যদি সবকিছু ঠিক রাখতে পারে তাহলে ওটাই ভালো।এভাবে তোমরাও খুশী পরিবারও রাজি।আচ্ছা আপু এই তিনবছরে কি একবারও ধরা পড়ো নাই?”

“না বান্ধবীরা বাচায় দিসে।”

“বাহ!আচ্ছা যদি ভাইয়ার ফ্যামিলি যদি তোমারে না পছন্দ করতো তাহলে কি করতে?”

“এগুলো বলিস না বোন।এই চিন্তায় আমার দুইরাত ঘুম হয় নাই।”

মধু সাইকার কথায় হেসে দিলো।সাইকা ওর হাসি দেখে বলল”হাসিস না।আমি টেনশনে প্রায় মরেই যেতে নিছিলাম।”

“যাক মরো নাই তো।উল্টো বিয়ে করতেছো।”

“হুম তোর কি খবর?কাউকে পছন্দ করিস নাকি।”

সাইকার কথা শুনে মধুর চোখের সামনে ইয়াদের চেহারা ভেসে উঠলো।কিন্তু তবুও মধু হেসে বলল”আরে না আপু কি যে বলো!এখনো কাউকে পছন্দ হয় নাই।”

“আরে থাকলে বল আমি কাউকে বলবো না।”

“আরে না আপু কেউ নেই।থাকলে বলতাম তোমাকে।”

তারপর আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা আর৷ হাসাহাসি করে দুজনেই গোসল সেরে উঠে এলো।

তারপর ছেলেদের আগে খাবার দাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে মেয়েরা বসলো।এই বিষয়টা মধুর একবারেই অপছন্দ!কেনো মেয়েদেরই ছেলেদের পরে খেতে হবে?ভালো না লাগলেও কিছু করার নেই।কিছু বলতে গেলেই হামলে পড়বে সবাই।আর বলবে মেয়ে বেয়াদব হয়ে গেছে।তাই আর মধু কিছু বললো না।চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো।
——————-
এখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে।উঠানে পাটি বিছিয়ে সব মুরুব্বিরা বসে একে একে সাইকার গায়ে হলুদ দিচ্ছে।আর গায়ে হলুদের পরই পাশের ঘরের এক ভাবী সাইকাকে মেহেদী পরাচ্ছে।মধুর প্রচুর বোরিং লাগছে।এটাকে গায়ে হলুদ বলে!ওফফ!কোনো মজা নাই প্রতিবন্ধীর মতো বসে থাকা ছাড়া।মধু ওইখান থেকে উঠে বাড়ির পেছনে চলে গেলো যেখানে রান্নাবান্না হচ্ছে।অন্তত ওখানের থেকে এখানে থাকা ভালো।রান্নার লোভনীয় ঘ্রাণ পাওয়া যাবে।মধু একপাশে মোড়া পেতে বসে রান্না দেখতে লাগলো।কিন্তু পাঁচ মিনিট পর আর বসে থাকতে পারলো না মশার জ্বালায়।তাই হাটাহাটি শুরু করলো।কতক্ষণ আর এভাবে থাকা যায়।পড়াশোনা নাই,টিভি নাই।অসহ্য!তারচেয়ে না আসাই ভালো ছিলো।হঠাৎ মধুর মা পেছন থেকে ওকে ডেকে বলল”মধু,ইরিন ফোন দিয়েছে।নে কথা বল।”

আইরিন রহমান মধুকে ফোনটা দিয়ে চলে গেলো।মধু কানে দিয়ে ‘হ্যালো’ বলতেই ইরিন বলল”মধু তুমি নাকি কুমিল্লা গেছো?”

“হ্যাঁ খালাতো বোনের বিয়েতো তাই।”

“ও আচ্ছা।ইয়াদ ভাইয়াও কালকে রাতে কুমিল্লা গেছে ট্যুরে ওর বন্ধুদের সাথে।”

ইরিনের কথাশুনে মধুর লাফাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল”ও তাই নাকি?কুমিল্লার কোথায় আসছে?”

“জানি না তো ভাইয়া কিছু বলে নাই শুধু বলছে কুমিল্লা ট্যুরে যাবে।”

“ও আচ্ছা।”

“কি করো তুমি?” ইরিন বলল

“এইতো বোরিং হয়ে বসে আছি।”

“কেনো আজ না গায়ে হলুদ।”

“হুম,কিন্তু কোনো মজাই হচ্ছে না।শহরের আর গ্রামের গায়ে হলুদ আলাদা।”

“ওহ!আচ্ছা।ছবি তুললে আমাকে দিও।”

“আচ্ছা দিবো।তুমি কি করো?”

“আমি তোমার সাথে কথা বলছি।” বলেই ইরিন হাসলো।সাথে মধুও হাসলো।

মধুর মুখটা এতক্ষণ একশো ওয়াটের বাতির মতো জ্বললেও এখন ঠুস করে নিভে গেছে।এতো বড় কুমিল্লার কই আছে কে জানে!ওর সাথে কি আদৌও দেখা হবে!মধুর তবুও এতটুকু ভেবে ভালো লাগছে যে ইয়াদ এখানেই আছে।আল্লাহ চাইলে হয়তো দেখা হতেও পারে।তারপর মধু আর ইরিন আরো অনেক্ক্ষণ কথা বলল।
—————
রাত দশটা বাজতেই গায়ে হলুদ শেষ।সবাই খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে গেছে।মধু,মিলি আর সাইকা একসাথে শুয়েছে।মধ্যরাতে মধুর ঘুম ভেঙে যায় এখনি ওয়াশরুমে যেতে হবে কিন্তু ওয়াশরুম বাড়ির বাইরে।ঘট থেকে বেরিয়ে একটু হাটলেই ওয়াশরুম।এমনিতেই মধু ভীতু।তার ওপর আবার বাইরে ওয়াশরুম।আর এখন না গেলেই নয়।মধু সাইকাকে ধাক্কা দিয়ে উঠানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সাইকা উঠলো না।এতোরাতে আর কাউকে ডাকাও যাবে না।তাই অগত্যা একটা টর্চ লাইট আর বুকে সাহস নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।গাড় অন্ধকার মধুর গা ভয়ে ছমছম করছে।আবার ওয়াশরুমের পাশেই তেতুল গাছ।মধু শুনেছে তেতুল গাছে নাকি ভূত থাকে।মধু ঢোক গিলতে গিলতে হাঁটছে। হঠাৎ পিছন থেকে কারো ভয়ানক হাসির শব্দ আসতেই মধু ফ্রিজ হয়ে গেলো।অতিকষ্টে ঘাড় ঘুরাতেই দেখলো…..

চলবে…

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১২
#Arshi_Ayat

হঠাৎ পেছন থেকে কারো ভয়ানক হাসির শব্দ আসতেই মধু ফ্রিজ হয়ে গেলো।অতিকষ্টে ঘাড় ঘুরাতেই দেখলো কেউ নেই।আর হাসির শব্দটাও নেই।এবার মধু আরো ভয় পাচ্ছে।হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়েছে।মধু ঠিক করেছে যতোকিছুই হোক ও পিছনে তাকাবে না সরাসরি ওয়াশরুমে যাবে।তো যেই ভাবা সেই কাজ।মধু আর পিছনে না তাকিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।কোনোমতে কাজ সেরে বেরিয়ে কলপাড়ে হাত ধুয়েই ঘরের দিকে হাটা শুরু করলো।হঠাৎ ঘরের সামনে আসতেই সেই ভয়ানক হাসির শব্দটা আবার শোনা গেলো।মধু তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে দরজা আটকে সাইকার পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রইলো।মধুর প্রচন্ড ভয় করছে।অনেক্ক্ষণ দাঁত মুখ খিঁচে চোখ বন্ধ রাখার পর আবার ঘুম চলে এলো মধুর।
————-
বাচ্চাদের চিল্লাচিল্লিতে মধুর ঘুম ভাঙলো।পিটপিট করে চোখ মেলতেই দেখলো পাশে সাইকা,মিলি কেউই নেই ওদের বদলে আসিফ,সৈকত ওরা বসে একটা আরেকটার চুল টানছে।আসিফ আর সৈকত ছোট মামার ছেলে।সৈকত বড় আর আসিফ ওর দুই বছরের ছোটো।মধু উঠে বসে দেয়াল ঘড়িতে তাকাতেই দেখলো আট’টা বাজে।আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে কলপাড়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ব্রাশ করে রান্নাঘরে আসতেই দেখলো মামিরা,খালারা আর ওর মা সহ কথা বলছে আর রুটি বানাচ্ছে।মধু আশেপাশে সাইকা কে না দেখে সারা বাড়ি খুঁজলো।অবশেষে না পেয়ে ধানক্ষেতের আইল ধরে হাটতে লাগলো।চারপাশটা সবুজে ছেয়ে আছে।মধু ডান দিকে তাকিয়ে মাঠ দেখতে দেখতে হাটছিলো।হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে কাঁদার মধ্যে পড়ে গেলো।ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো যে মধু কাদায় পড়ে যাওয়ার পাঁচ সেকেন্ড পর বুঝতে পারলো আসলে কি হয়েছে।প্রচন্ড রাগ উঠলো মধুর কে এই আকাম করেছে সেটা দেখার জন্য তাকাতেই মধু বিষ্ময়ের চূড়ায় পৌঁছে গেলো।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ওর।ওর সামনে স্বয়ং ইয়াদ দাড়িয়ে আছে।আর নিজের হাতটা মধুর দিকে বাড়িয়ে ধরে রেখেছে।মধু ইয়াদের হাতে নিজের হাতটা দিতেই ইয়াদ মধুকে টেনে তুললো।তারপর বলল”সরি আপু আমি দেখি নি।”এটা বলেই চলে যেতে নিলেই মধু ইয়াদের পথ আটকে দাড়ালো তারপর বলল”এই,এই আপনি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেনো?”

“এক্সকিউজ মি আপনি কি আমাকে চেনেন?”

“আরে কি বলেন এতো তাড়াতাড়ি সবকিছু ভুলে গেলেন নাকি?আমি মধু।”

“সিরিয়াসলি,তুমি মধু?”সন্দেহের দৃষ্টিতে জিগ্যেস করলো ইয়াদ।

“হ্যাঁ।” মধু অভিমানের সুরে বলল

এবার ইয়াদ বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে হাসতো লাগলো।হাসি থামতেই বলল”ওহ!সরি তোমার পুরো মুখে কাঁদা লেগে থাকায় চিনতে পারি নি।”

মধু মুখ বাকিয়ে বলল”আপনিই তো ফেলেছেন আমাকে।”

“আচ্ছা বাবা সরি।তারপর বলো তুমি কুমিল্লায় কি করো?”

মধু আর ইয়াদ আইল ধরে হাঁটতে লাগলো।মধু ইয়াদের প্রশ্নের উত্তরে বলল”আমার খালাতো বোনের বিয়েতে এসেছি।”

“আচ্ছা এইকথা।তুমি আমাকে দাওয়াতই দিলে না।”

“আপনার সাথে তো কথাই হয় নি।তবে এখন দিলাম আজকে আপনার দাওয়াত।আজকে আপুর বিয়ে।”

“ধন্যবাদ দাওয়াতের জন্য কিন্তু আসতে পারবো না।বন্ধুদের সাথে ঘুরবো।”

“ওহ!এখন কোথায় যাচ্ছেন?”

“সামনে খাল’টা দেখছো না!ওটার ওপাড়ের মাঠে এখন আমরা বন্ধুরা মিলে ফুটবল খেলবো।চাইলে দেখতে পারো।”

“আমি দেখবো।” মধু উৎফুল্ল হয়ে বলল।

“চলো তাহলে।আর শোনো খালের পানিতে মুখটা ধুয়ে নিও।”

“আচ্ছা।”
তারপর মধু খালের এপাশেই থকলো আর ইয়াদ ওপাশে চলে গেলো।এপাশ থেকে ওপাশ ভালো ভাবেই দেখা যায়।ফুটবলের কোড করা হলো।তারপর সবাই রেডি হতে লাগলো।ইয়াদ শার্ট খুলে ফেললো।নিচে স্যান্ডো গেঞ্জি ছিল।আর প্যান্টকে হালকা গুটিয়ে নিলো।সবাই চলে আসার পরই খেলা শুরু হয়ে গেলো।অনেকেই দেখছে খেলা।হাড্ডা হাড্ডি লড়াই চলছে মাঠে।কোনো পক্ষেই গোল হচ্ছে না।অনেকসময় পর ইয়াদের টিমে একটা গোল হলো।তারপর আবার খেলা শুরু হলো।সবাই দৌড়াচ্ছে বলের পেছনে।কে কার থেকে বল নিবে আর গোল দিবে এই চিন্তায় আছে।আস্তে আস্তে সূর্যের তাপও বাড়ছে।আনুমানিক পৌনে দশটাতো বাজেই।সব ছেলেদের শরীর থেকে দরদর করে ঘাম পড়ছে।রোদে ঘামের ফোটাগুলো চিলিক দিচ্ছে।তারপর পরের গোলটা ইয়াদ’রা একটুর জন্য দিতে পারে নি।তবে নিজেরা গোল খাওয়া থেকে বেঁচেছে।তারপর আবার পুরোদমে খেলা চলছে।খেলা দেখতে দেখতে কখন যে এগারোটা বেজে গেছে খবর নেই।মধুর হুশ আসতেই খেলা রেখেই বাড়ির দিকে দৌড় দিলো।এতো দেরি হয়ে গেছে!এখন মা জানলেই ইচ্ছামতো মারবে।মধু তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসতেই ওর বড় খালার মুখোমুখি পড়লো।তিনি ভ্রু কুঁচকে বলল”দৌড়াচ্ছিস কেনো?কোথায় গিয়েছিলি?”

“ঐতো একটু এদিকেই গিয়েছিলাম।”

“ও,,,আচ্ছা যা গিয়ে গোসল করে রেডি হয়ে নে।দুপুরেই তো বরযাত্রী চলে আসবে।”

“ওও,,,খালামনি সাইকা আপু কোথায়?”

“গোসলে করতে গেছে মিলিকে নিয়ে।”

“আপু পার্লারে যাবে না?”

“এই বাড়ির মেয়েরা পার্লারে যায় না।ওর বান্ধবীরা সাজিয়ে দিবে।”

“ও,আচ্ছা।আমি তাহলে গোসল করতে যাই।”
মধু দৌড়ে ঘরে গিয়ে ব্যাগ থেকে জামা কাপড় বের করে পুকুর পাড়ে চলে গেলো।
—————-
বরযাত্রী চলে এসেছে তবুও সাইকাকে সাজানো হয় নি।বিয়ের পর যখন বরযাত্রী খেতে বসবে তখন সাজানো হবে।সাইকাকে ঘিরে অনেক মুরুব্বি আর ওর বান্ধবীরা বসে আছে।বাইরে থেকে কাজির কন্ঠ শোনা গেলো।তিনি ভেতরে এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।তারপর সাইকাকে বললেন কবুল বলতে।সাইকা একটু চুপ করে রইলো।সবাই বলার পর আস্তে আস্তে কবুল বলল।এরপর সবাই আলহামদুলিল্লাহ পড়লো।কাজি বেরিয়ে যেতেই ওর বান্ধবীরা মিলে ওকে সাজানো শুরু করলো।আর মধু
ওই ঘর থেকে বের হতেই দেখলো বড় খালার ঘরে ছোট বাচ্চাদের খেতে দেওয়া হয়েছে।এতক্ষণ ধরে মধু এটাই চাইছিলো।তাই ওখানে গিয়ে বাচ্চাদের পাশে বসে পড়লো।ওকে বসতে দেখে মেঝো খালা বলল”কি রে মধু তুই এখানে বসেছিস কেনো?”

“খিদেয় পেট ব্যাথা করছে খালা।আমাকে খাবার দাও।”

“সোনা আরেকটু অপেক্ষা কর।সাইকাকে বিদায় দিয়ে তারপর আমরা খাবো।এখন খেলে মানুষ খারাপ বলবে।”
অগত্যা মধুর উঠে যেতে হলো।খাওয়া নিয়ে এতো তামাশা সত্যিই অসহ্য!এখন খেলে খারাপ কেনো বলবে সেটাই মধুর মাথায় ঢুকছে না।মধু মনেমনে ভাবলো”এভাবে ক্যাবলার মতো ওয়েট করতে পারবো না।কিছু একটা করতে হবে।হঠাৎ মাথায় একটা আইডিয়া আসলো।’মধু চট করে মেঝো খালার রুমে গিয়ে ওনার শোকেস থেকে একটা কাঁচের প্লেট নামিয়ে মেঝো খালার কাছে এলো।তারপর ওনার সামনে প্লেট টা ধরে বলল”খালামনি,এই প্লেটে একটু ভালো করে সাজিয়ে দাও।”

ওর খালামনি ধমকে বলল”তোকে বললাম না পরে খেতে।তর সইছে না একবারে।”

“আরে খালামনি আমার জন্য না তো।সাইকা আপুর বান্ধবীর আম্মুর জন্য।বড় খালা মনি আমাকে বলল তোমাকে গিয়ে বলতে।” মধু ব্যাস্ত গলায় বলল।

“ও,,আচ্ছা সেটা আগে বলবি তো।প্লেট টা দে এবার।”

মধু প্লেট টা এগিয়ে দিতেই উনি ভালোমতো পোলাও,মাংস,ডিম,সালাদ,আরো হাবিজাবি দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো।মধু প্লেট টা নিয়ে চুপচাপ রান্নাঘরে চলে গেলো।রান্নাঘরে আপাতত কেউ নেই।মধু রান্নাঘরে ঢুকেই দরজাটা আটকে খাওয়া শুরু করলো।অর্ধেক খাওয়া শেষ হতেই কেউ একজন দরজা খুলতেই মধু ফ্রিজ হয়ে গেলো।দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো আরাফ দাঁড়িয়ে আছে।আরাফ ওকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল”কি রে মধু তুই এখানে লুকিয়ে লুকিয়ে খাচ্ছিস কেনো?”

মধু ধরা পড়া গলায় বলল”আসলে আমার অনেক ক্ষিধে পেয়েছে কিন্তু খালামনি বলছে পরে সাইকা আপুকে বিদায় দিয়ে খেতে।তাই এখানে বসে খাচ্ছি।”

মধুর কথা শুনে আরাফ হাসতে হাসতে বলল”যা আমার রুমে গিয়ে খা।এখানে খেলে এমনিতেও ধরা পড়বি।”

“কিন্তু এখন বের হবো কিভাবে?” মধু অসহায়ের সুরে বলল।

“তোর প্লেট টা আমার হাতে দে।আমি প্লেট টা আমার ঘরে রেখে আসছি।তুই হাত ধুয়ে ওখানে চলে যাস।”

“আচ্ছা ভাইয়া।”
আরাফ মধুর প্লেট নিয়ে চলে গেলো।মধু রান্নাঘরে কলসির থেকে পানি নিয়ে হাতটা ধুয়ে আরফের ঘরে চলে গেলো।আরাফ নিজের পড়ার টেবিলে ওর প্লেট টা ঢেকে রেখেছে।মধু গিয়ে আবার খেতে বসলো।খাওয়া শেষ করে প্লেট টা ধুয়ে আবার মেঝোখালা মনির শোকেসে রেখে দিয়ে বের হতেই কান্নাকাটি শুনতে পেলো।মানে সাইকাকে বিদায় দিচ্ছে।মধু গিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো।সাইকা সবাইকে ধরে ধরে কাঁদছে।কান্নাকাটি একটু কমলে শিহাব আর আরাফ সাইকাকে গাড়িতে তুলে দিলো।সাইকার সাথে মিলি গেলো।এটা নাকি নিয়ম কনের সাথে কেউ একজন যায়।প্রথমে সবাই চেয়েছিলো মধু যাক কিন্তু মধুর মা মানা করে দেওয়ায় মিলি গেলো সাইকার সাথে।
—————
সাইকাকে বিদায় দেওয়ার পর মধুর মা আর মধুর মেঝো খালা সাইকার মাকে শান্তনা দিতে লাগলো।একমাত্র মেয়েকে বিদায় দিয়ে তিনি ভেঙে পড়েছেন।মধু কিছুক্ষণ সেখানে দাড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ধান খেতে চলে এলো।এখন বিকেল।সূর্যটা পশ্চিম দিকে ঢলে পড়েছে।হালকা একটা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে ধান ক্ষেতের ওপর দিয়ে।মধু হাঁটতে হাঁটতে খালের পাড়ে চলে এলো।সকালেও এসেছিলো ইয়াদের খেলা দেখার জন্য কিন্তু পরে আর যাওয়ার সময় কথা হলো না।আচ্ছা ইয়াদকে খেলা শেষ হওয়ার পর মধুকে খুঁজেছিলো নাকি ওর মনেই ছিলো।মধু আস্তে আস্তে কিনারা বেয়ে নেমে খালের প্রবাহিত পানির ধারায় হাত ভিজালো।কি শীতল পানি!আশেপাশে তেমন কেউ নেই।মধু উঠে দাড়ালো।তারপর আবার ধান ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটতে লাগলো।এইমুহুর্তে মধুর একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে।মধু গুনগুনিয়ে গাওয়া শুরু করলো
“তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।”
—————-
বাসায় তেমন মেহমান নেই।আর মধুর সমবয়সী তো কেউই নেই।সব খালা,মামী,মার বয়সী।তার বড়খালার রুমে বসে কথা বলছে।আরাফ,শিহাব বাইরে গেছে।মধুর বোরিং লাগছে।ও বড়খালার রুমে ঢুকতে গিয়েই থমকে দাড়ালো।ভেতর থেকে ওর মায়ের গলার আওয়াজ আসছে।তিনি বলছেন”সাইকার তো বিয়ে হয়ে গেছে।এরপর মধুর বিয়ে দিবো।দুই তিনমাসের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে দিবো।”

তারপর কেউ একজন বলল”হুম,আপা আপনার মেয়েতো বড় হইছেই।আমি একটা ছেলেরে চিনি খুব ভালো।আপনি বললে আমি আসতে বলমু।”

“আচ্ছা আগে সাইকার বউ ভাত হোক।ওর বউ ভাতের পরেরদিন আসতে বইলো।”

আইরিন রহমানের কথা শেষ হতেই ওর বড় খালা বলল”তুই এতো তাড়াহুড়ো লাগিয়েছিস কেনো রে?সাইকা অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর ওর বিয়ে দিয়েছি আমরা।আর তোর মেয়েতো এখনো ইন্টার পরীক্ষাই দেয় নি।”

“সাইকাতো ভালো।কিন্তু আমার মেয়ের তো ভরসা নাই কোন সময় কার সাথে ভেগে যায় ঠিক নাই।বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে পারলেই বাঁচি।” আইরিন রহমান বললেন।

মধু এরপর আর ওখানে দাড়ালো না।সাইকার রুমে এসে বালিশের ওপর শুয়ে কান্না করতে লাগলো।হঠাৎ কেউ একজন ওর মাথাশ হাত রাখতেই কান্না থামিয়ে উঠে বসতেই দেখলো…….

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-৯+১০

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৯
#Arshi_Ayat

মধু রেডি হচ্ছে কলেজে যাওয়ার জন্য কিন্তু ওর মাথায় ঘুরছে অন্যকিছু।কালকে মায়ের দরজায় আড়ি পেতে শোনা কথাগুলো মধুকে বেশ প্যারা দিচ্ছে।কি করা উচিত সেটাও মাথায় আসছে না।আর যাইহোক বিয়ে আটকাতে হবে যেকোনো মূল্যে।এগুলো ভাবতে ভাবতে মধু রেডি হয়ে বের হতে নিলেই পিছন থেকে আইরিন রহমান বলল”মধু,আজকে কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরবি।”

মধু ঘাড় কাত করে সম্মতি দিয়ে বেরিয়ে পড়লো।কিন্তু মনটা কোনো ক্রমেই সায় দিচ্ছে না তাড়াতাড়ি ফিরতে।মধু কলেজে পৌঁছে দেখলো আজ আরিয়া আসে নি।আরিয়া আসলেও ওর সাথে বিষয়টা শেয়ার করা যেতো।মধু চুপচাপ সারা ক্লাস বসে ছিলো।মাথায় কোনো পড়া ঢুকছেই না।ঢুকবেই বা কিভাবে এতো টেনশনে কিছুই ভাবা যায় না।

কলেজ শেষ হলো দুপুর ২.০০ টায়।মধু কলেজ থেকে বেরিয়ে কিছুটা হাটতেই দেখলো ইয়াদ ফোনে কথা বলতে বলতে উল্টোদিক থেকে হাটছে।এতো চিন্তার মাঝেও মধুর মনটা খুশি হয়ে গেলো।বর্ষার গুমোট আকাশ চিরে এক ফালি রোদ উঁকি দিলো।মধু ইয়াদের সামনে গিয়ে দাড়ালো।ইয়াদ মধুকে দেখে একটু হেসে ফোনের অপর পাশের ব্যাক্তিকে বলল”আচ্ছা দোস্ত এখন রাখি।পরে কথা হবে।”

এটা বলে ফোন রেখে দিয়ে মধুর দিকে তাকিয়ে বলল”তারপর,কি খবর?বাসায় যাচ্ছো?”

“হ্যাঁ একটু আগে কলেজ ছুটি হয়েছে।এখন বাসায়ই যাচ্ছি।আপনি?”

“ঘুরতে বের হয়েছি।ভাল্লাগছিলো না বাসায়।ইফাজ ভাইতো সকালে বেরিয়েছে আর ইরিন প্রাইভেটে।আমিই অকর্মা।”

ইয়াদ কথা শুনে মধু মৃদু শব্দে হেসে উঠলো।মধুর এখন একটা অদ্ভুত ইচ্ছে হচ্ছে।মন চাইছে অনেক্ক্ষণ ইয়াদের সাথে হাটতে।কিন্তু আদৌও কি এটা হবে!মধুকে চুপচাপ কিছু চিন্তা করতে দেখে ইয়াদ বলল”কি ভাবছো?”

“যা ভাবছিলাম তা আপনাকে বললে আপনি হয়তো রাগ করবেন।”

ইয়াদ চেহারা হাসি ফুটিয়ে বলল”করবো না।তুমি বলো।”

“সত্যি?” মধু সন্দিহান গলায় বলল।

“হুম।” ইয়াদ কৌতুহলী হয়ে জবাব দিলো।

“ইয়ে মানে আর কি আমি চাইছিলাম আপনার সাথে একটু হাঁটতে।বেশি না দশ/পনেরো মিনিট হলেই চলবে।”

মধুর কথা শুনে ইয়াদ মুখটা গম্ভীর করে ফেললো।ইয়াদের গম্ভীর মুখ দেখে মধু ভয় পেয়ে গেলো।মনে মনে নিজেকেই গালি দিতে লাগলো।কিন্তু ইয়াদ নিজের এই গম্ভীর ভাব আর ধরে রাখতে পারলো না জোরেজোরে হেসে দিলো।হাসির বেগ কমে যাওয়ার পর ইয়াদ বলল”সিরিয়াসলি এটা বলতে এতো সংকোচ ছিলো তোমার!আমি তো ভেবেছি কি না কি ইচ্ছে করছে তোমার!আচ্ছা চলো তোমার ইচ্ছা পূরণ করবো।”

মধু খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।মধুর খুশি থেকে ইয়াদ অবাক হলো।সে কি খুশির কোনো কথা বলেছে!মধু হঠাৎ ইয়াদের অবাক হয়ে যাওয়া মুখটা দেখতে পেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল”চলুন যাওয়া যাক।”

“হ্যাঁ চলো।”

হাটঁতে হাঁটতেই মধু বলল”জানেন কাল যখন ইরিনের থেকে আমার খাতাটা নিয়ে আসছিলাম তখন নিশি আপুর সাথে দেখা হয়েছিলো সিড়িতে।”

“কিছু বলেছিলো?”

“হ্যাঁ জিগ্যেস করেছিলো আমি কেনো আপনাদের বাসায় গিয়েছিলাম।”

“তুমি কি বললে?”

“এটা বলতে পারবো না।” মধু নিচের ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকালো।

“বলো না প্লিজ।আমি কিচ্ছু বলবো না প্রমিস।”

“বাহ!এতো কৌতুহল!”

“হ্যাঁ,বলো না।” ইয়াদ অনুরোধের সুরে বলল।

“বলেছিলাম ‘তোমার এক্সকে চুম্মা দিতে”

এটা বলেই মধু হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো।আর ইয়াদ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ মধুর দিকে তারপর হো হো করে হাসতে লাগলো।হাসির বেগ কমতেই বলল”যা জবাব দিয়েছো আমার অনেক ভাল্লাগছে।তারপর আর কিছু বলে নাই?”

“শাসিয়েছে আমাকে।আমিও শাসায় দিছি।”

“ভালো করছো।একদম ওকে প্রশ্রয় দিবা না।নিজেকে যে কি মনে করে আল্লাহ মালুম!”

“আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতে পারি?”

“এতক্ষণ যা বললে তাতেই কিছু মনে করি না অতএব এটাতেও করবো না।নিঃসন্দেহে বলে ফেলো।আর তুমি কি বলবে তা কিছুটা আন্দাজ করেছি আমি।তবুও বলো।”

“আপনার আর নিশি আপুর ব্রেকাপ কেনো হলো?”

ইয়াদ হালকা একটু হেসে বলল”আমার মনে হয়েছিলো তুমি এই প্রশ্নটাই করবে।তাই হলো!আচ্ছা শোনো তবে।আমি ওর দুইবছরের সিনিয়র।আমাদের রিলেশনশিপ শুরু হয় যখন ও ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো আর আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।ভালোই চলছিলো।প্রতিদিন সকালে ওকে কলেজে দিয়ে আমি ভার্সিটিতে যেতাম।দুজনে একসাথে ফিরতাম।যেখানে আমার লাস্টের ক্লাস আমি করতাম না ওর সাথে ফিরবো বলে।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া বন্ধ করেছি ওর জন্য।মেয়ে বন্ধুদের ওর ভালো লাগতো না।তাই আমিও যতোটা পারি এড়িয়ে চলতাম।কখনো ফোনের পাসওয়ার্ড,ফেসবুক পাসওয়ার্ড,কোনোকিছুর পাসওয়ার্ড চাই নাই।ওর ফোন আমার সামনে খোলা পড়ে থাকলেও আমি দেকতাম না।আমি বিশ্বাস করতাম ওকে!একদিন আমাকে সন্দেহ করে বলেছিলো আমার ফোন ও দুইদিনের জন্য নিবে।আমি বিনাবাক্যে দিয়েছি।একদিন মামাতো ভাইয়ের বিয়েতে চিটাগং গিয়েছিলাম।ওকে বলেছিলাম আসতে দুই তিনদিন লাগবে।ও মন খারাপ করেছিলো।তো মামাতো ভাইয়ের গায়ে হলুদের রাতে আমার ফোনে রাসেলের ফোন আসে।রাসেল আমার বন্ধু।একসাথে চলাফেরা করি।রাসেল বলল ফোনে নাকি কিসের ভিডিও পাঠিয়েছে।আমি বললাম পরে দেখবো।রাসেল বলল এখনই দেখতে।তো ওর কথা মতো ভিডিও লিংক ওপেন করতেই আমার চোখেমুখে অন্ধকার নেমে এলো।ও আমার এক ব্যাচ সিনিয়র ভাইয়ের সাথে একবিছানায়।আমি কোনোমতে বিশ্বাস করতে পারলাম না।হলুদের রাতেই আব্বু আম্মুকে মিথ্যে বলে চলে এলাম এখানে।আসতে আমার সকাল হলো।সারারাত না ঘুমিয়ে আমার চোখ লাল হয়ে গেছিলো।মুখের অবস্থা ভয়াবহ!আমি ওকে কল দিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বললাম।ও আসলে ওকে ভিডিওটা দেখাতেই ও মুখটা নিচে নামিয়ে রাখলো।আমি চেচিয়ে বলতে লাগলাম এটা সত্যি কি না!ও বলল এটা সত্যি!এতোটা ভেঙে পড়েছিলাম আমি!ওর আমার সাথে রিলেশনের আগেও আরো অনেকের সাথেই ছিলো রিলেশন।আমি সবকিছু মাফ করেছিলাম কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।নিজের ভালোবাসা কে মিথ্যা মনে হতে লাগলো।ও সেদিন ব্রেকাপ করে চলে গিয়েছিলো।আমাদের দেড় বছরের রিলেশন ছিলো।আমি বোঝাতে পারবো না কি যে অবস্থা হয়েছিলো আমার!ইরিন সব জানতো!সেইসময়টা ইরিন বড়বোনের মতো পাশেছিলো।আস্তে আস্তে সবকিছু থেকে বেরিয়ে আসলাম।পুরোনো যাদের সাথে সম্পর্ক খারাপ করেছিলাম সবার সাথে যোগাযোগ করেছি।বন্ধুদের নিয়ে হেব্বি ট্যুর দিয়েছি।এখন এটাকে আর কষ্ট মনে হয় না।মনেহয় আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে নিজ হাতে।কোটি কোটি শুকরিয়া।আমি ওকে সারাজীবন মনে রাখবো তফাৎ এতটুকুই ওকে মনে পড়তেই আমার মন ঘৃণায় বিষিয়ে উঠবে।

মধু ব্যাথিত গলায় বলল”অনেক খারাপ লাগলো।এতো ভালোবাসা পেয়েও কেউ হারায়!তবে আমি একটা অন্যায় করে ফেলেছি!”

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল”কি?”

মধু ঢোক গিলে বলল”আসলে যেদিন আপনি বাসায় এসেছিলেন সেদিন থেকেই নিশি আপু আপনাকে খাবার পাঠাতো।আর ওটা এসে আমার রুমের জানালয় আটকাতো।আমি ওগুলো খেয়ে আপনারা নামে চিরকুট পাঠিয়ে আরো চাইতাম।আর আপুও পাঠাতো।পরে যখন আপনারা সিড়িতে কথা বলছিলেন আমি শুনেছিলাম।আমার খুব অপরাধ বোধ হচ্ছিলো।সরি!”

ইয়াদ হাসলো আর বলল”আমি জানি।”

মধু ভ্রু কুঁচকে বলল”কিভাবে?”

“নিশি যখন চিরকুটগুলো আমাকে দেখিয়েছিলো।আমি দেখেই বুঝেছিলাম ওগুলো আমার না।আর আমি তোমাকে সন্দেহ করি।তারপর তোমার খাতায় তোমার লেখা আর চিরকুটের লেখা মেলাতেই শিউর হয়েছিলাম।”

মধু অপরাধীর মতো মুখ করে বলল”সরি।”

“ইট’স ওকে।ফুচকা খাবে?সামনে ফুচকার দোকান আছে।”

“চলুন।” মধু বলল।

ইয়াদ আর মধু বিভিন্ন কথা বলতে বলতে ফুচকা খেয়ে আরো কিছুক্ষণ হাটলো তারপর বাসার দিকে ফিরলো।বলাবাহুল্য দশ/পনেরো মিনিটের জায়গায় দুজনে দেড়ঘন্ট বকবক করেছে।বাসার সামনে এসে ইয়াদ বলল”এভাবে মাঝেমধ্যে ঘুরলে মন্দ হয় না।কি বলো!”

“আমিও তাই বলি।”

“আচ্ছা বাসায় যাও।আমি এখন যাবো না।আমার একটু কাজ আছে।”

“আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।”

এটা বলে মধু বাসার ভেতরে চলে গেলো।আর ইয়াদ সামনের দিকে হাটতে লাগলো।ঘরের দরজার সামনে এসে মধুর মাথায় হাত পড়লো।একি!মা তো তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছিলো আর আমি দেড়ঘন্টা পরে আসছি।আজকে আমারে জবাই দিবে।মধুর মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই ও নিচে নেমে সামনের ফার্মেরি থেকে একটা ব্যান্ডেজের কাপড় কিনে হাতে বেধে নিলো।তারপর বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই ওর মা খুললো।আইরিন রহমান রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মধুর ব্যান্ডেজের দিকে চোখ পড়ে আইরিন রহমানে।বকা না দিয়ে তিনি শিথিল গলায় বললেন”কিভাবে হলো?”

“পড়ে গিয়ে ছিলে গেছে।”

“বেশি ব্যাথা করছে?”

“হুম” মধু ইনোসেন্ট চেহারা বানিয়ে বলল।

“ঘরে গিয়ে ব্যাথার ঔষুধ খেয়ে নে।”

মধু ঘরের দরজা বন্ধ করে খুশীতে গড়াগড়ি খেলো।আজ অনেকদিন পর ভাল্লাগছে মধুর!

চলবে….

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat

মধু চুল আঁচড়াচ্ছে আর চিন্তা করছে কিভাবে কৌশলে ছেলেটা তাড়ানো যায় আর মা কিছু বলতেও না পারে।এমন কাজ করতে হবে যাতে সাপ ও না মরে লাঠিও না ভাঙে।মধু চুল আঁচড়িয়ে চোখে আইলেনার দিয়ে তৈরি হলো।মধুর মা এসে বলল”তুই রেডি?ওরা অপেক্ষা করছে।”

“হ্যাঁ আমি রেডি।” মধু আইরিন রহমানের দিকে চেয়ে বলল।আইরিন রহমান মধুকে আগা গোড়া এক পলক দেখে বলল”কাটা জায়গাটা আঁচলের নিচে রাখবি।”

মধু মুখটা স্বাভাবিক রাখলেও ওর হাসি আসছে।নিজেকে কন্ট্রোল করে হাতটা শাড়ির নিচে রাখলো।মধুর মা ওকে ছেলেপক্ষের সামনে নিয়ে গেলেন।সামনে তিনজন বসা।দুপাশে বাবা মা আর মাঝখানে লজ্জাবতী গাছের মতো চুপসে আছে ছেলে।ছেলে কে দেখেও মধুর হাসি পেলো।কেমন মদন মার্কা।দেখলেই বোঝা যায় এই ছেলে শারিরীক দিক দিয়ে বড়ো হলেও মানসিক দিক দিয়ে এখনো নাবালক।এই নাবালক ছেলে কে কিভাবে বিয়ে করবো!একে প্রতিবেলায় খাইয়ে দিতে হবে।ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে।একটু বকা দিলেই মায়ের কাছে দৌড়ে গিয়ে বিচার দিবা।এগুলো ভেবেই মধুর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।মনেমনে বলল”না..না এই ছেলেকে বিয়ে করার চেয়ে কলাগাছে ঝুলে পড়া ভালো।”তবে এতোকিছুর মাঝেও একটা বিষয় ভেবে ভালো লাগলো মধুর যে বলদটাকে ভাগাতে বেশি পরিশ্রম লাগবে না।মধুর এসব ভাবনায় ছেদ পড়লো ছেলের মায়ের কথায়।

“তুমি কোন ক্লাসে পড়ো মামনি?”

“ইন্টার পরীক্ষা দিবো আন্টি।” মধু কৃত্রিম একটা হাসি মুখে ঝুলিয়ে বলল।

“মাশাল্লাহ!তোমার কোনো পছন্দ আছে?আগে কি কেউ ছিলো?”

“না আন্টি।” মধু ছোটো করে জবাব দিলো।

“রান্না পারো?”

“হালকা পারি।”

“আচ্ছা।বিয়ের পর পড়তে চাও?”

মধু মনেমনে বলল’বিয়ে হয় কি না আগে সেটা দেখেন।’কিন্তু মহিলার জবাবে বলল”জ্বি আন্টি।”

“আচ্ছা,তোমার কিছু বলার আছে?”

“হ্যাঁ,আমি একটু উনার সাথে কথা বলতে চাই।” মধু মৃদু আওয়াজে বলল।

“অবশ্যই।” মহিলাটা এটা বলে ছেলেকে নির্দেশ দিলেন মধুর সাথে যেতে।মধু ওকে নিয়ে বারান্দায় এলো।তারপর পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক পলক দেখে বলল”বিয়ে কাকে বলে আপনি জানেন?”

ছেলেটা ফ্যালফ্যাল করে মধুর দিকে তাকিয়ে আছে।ওর তাকানো দেখে মধু মনেমনে বলল”কাকে কি বলছি আমি!” কিন্তু একে কি করে বিদায় করবো!হঠাৎ বারান্দা দিয়ে মধুর নজর গেলো নিচে দাড়িয়ে থাকা নিশির ওপর।মধু হালকা জোরে ডাক দিলো নিশিকে।

“নিশি আপু!”

নিশি নিজের নাম শুনতে পেয়ে ওপরে তাকিয়ে দেখলো মধু ওকে হাত নাড়ছে।নিশি মনেমনে রেগে থাকলেও মুখে কৃত্রিম হাসি নিয়ে নিজেও হাত নাড়ালো।নিশি হাত নাড়তেই মধু ছেলেটাকে বলল”দেখো মেয়েটা তোমাকে হাত নাড়ছে,তোমাকে দেখে হাসছে।”

মধুর কথা শুনে ছেলেটা নিশির দিকে তাকালো।তারপর মধুর দিকে তাকিয়ে বলল”ও আমাকে দেখে হাসছে কেনো?আমাকে কি খারাপ লাগছে দেখতে?”

“আরে না বোকা।ও তোমাকে পছন্দ করে।”

মধুর কথা শুনে ছেলেটা কি বুঝলো কে জানে কিন্তু নিশির দিকে তাকিয়ে নিজেও ওকে হাত নেড়ে হাসলো।কিন্তু বিষয়টা নিশির দৃষ্টিগোচর হলো না।এবার মধু নরম কন্ঠে বলল”তোমার ওকে ভালো লেগেছে?”

ছেলেটা লাজুক হেসে মাথা নাড়ালো।

“তুমি ওর সাথে কথা বলতে চাও?”

ছেলেটা আবার মাথা নাড়িয়ে বলল”হুম।”

“কিন্তু ও তো তোমার সাথে কথা বলবে না।”

ছেলেটা মন খারাপ করে বলল”কেনো?আমি কি পঁচা ছেলে?আমি তো সবকথা শুনি।”

“না তুমি ভালো ছেলে।কিন্তু তুমি যদি ওকে বিয়ে করো তাহলেই ও তোমার সাথে কথা বলবে।”

ছেলেটা উৎফুল্ল গলায় বলল”আমি ওকে বিয়ে করবো।”

“এইতো ভালো ছেলের মতো কথা।এখন মাকে গিয়ে বলবে ‘মা আমি নিশিকে বিয়ে করবো’।

” কিন্তু মা না করে দিলে কি করবো?”

“কান্না করবা।কান্না করলে মা রাজি হবে।”

ছেলেটা নিজের হাত দিয়ে মধুর গাল স্পর্শ করে বলল”তুমি কতো ভালো!”

“তুমিও।আচ্ছা চলো আমরা যাই।”

মধু ছেলেটাকে নিয়ে রুমে আসতেই ছেলেটা ওর মায়ের পাশে গিয়ে বলল”মা আমি নিশিকে বিয়ে করবো।”

ওর কথায় সবাই তাজ্জব বনে গেলে।আর মধু মনেমনে বলল”এবার আমি শুধু সার্কাস দেখবো।”

ছেলেটার মা ওকে ধমক দিয়ে বলল”মাহির কি বলছো তুমি এগুলো?”

ছেলেটা এবার বাচ্চাদের মতো মায়ের সামনে বসে কান্না করে দিয়ে বলল”মা আমি নিশিকে বিয়ে করবো।”ছেলের কথা শুনে মহিলা পড়েছে বিপাকে।ছেলের মা আইরিন রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল”আপনাকে পরে জানাবো আমরা।আজ আসি।”

আইরিন রহমান রেগে বলল”আপনার ছেলে যে প্রতিবন্ধী সেটা আগে বলেন নি কেনো?এখনি বের হোন।”

মহিলা আর ওনার স্বামী ছেলেটাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে নিয়ে গেলো।ওর চলে যাওয়ার পর মধু আইরিন রহমানকে খোঁচা মেরে বলল”আম্মু ছেলেটা কিন্তু ভালো তাই না?”

“তোর মাথা।এগুলো যে কোথা থেকে আসে কে জানে!”

এটা বলে আইরিন রহমান নিজের ঘরে চলে গেলেন।আর মধু একটা বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে বলল”তুমি পাতায় পাতায় চললে আমিও শিরায় শিরায় চলি মিসেস আইরিন রহমান।”

মধু আয়নার সামনে দাড়িয়ে একবার নিজেকে দেখলো।তারপর আস্তে আস্তে নিজের সাজসজ্জা মুছতে লাগলো।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসলো।আজকে মনটা ভালো।তবে ভালো লাগার মূল কারণটা মধু ধরতে পারছে না।দুপুরে ইয়াদের সাথে সময় কাটানো নাকি ছেলেপক্ষকে তাড়ানো!কোনটা মধুর মন ভালোর কারণ?যাইহোক মধু পড়ায় মন দিলো।

সাড়ে দশটা বাজে মধু পড়াশেষ করে টেবিল থেকে উঠলো।এখন খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে হবে।মধু ডাইনিং রুমে এসে খেতে বসলো।মধুর মা বলল”কালকে আমরা কুমিল্লা যাবো।”

মধু ভ্রু কুঁচকে বলল”কেনো?”

“তোর খালাতো বোন সাইকার বিয়ে।”

“ও আচ্ছা।”

“এখন গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিস।”

মধু মনেমনে খুশী হলো।কিন্তু মুখে কিছু না বলে খাওয়া শেষ করে উঠতে না উঠতেই আইরিন রহমানের রহমানের ফোনে কল আসলো।আরিয়া ফোন দিয়েছে।মধু রিসিভ করে বলল”হ্যাঁ বল।”

“তোর জন্য খুশীর খবর আছে।”

মধু কৌতুহলী হয়ে বলল”কি খুশীর খবর?”

“তোর জন্য দুটো টিউশনি খুঁজে পেয়েছি।ক্লাস ফাইভের দুটো বাচ্চা।জমজ ভাই।দুটোকে একসাথে পড়াবি।মাসে পাঁচ হাজার দিবে।কনফার্ম করবো?”

“ভালোই হলো করে দে।কবে থেকে পড়াতে হবে?”

“সামনের মাস থেকে।”

“আচ্ছা শোন আমি তিনদিন কলেজে আসবো না।”

“কেনো?”

“খালাতো বোনের বিয়ে।কুমিল্লা যেতে হবে।”

“ও,,,আচ্ছা।সাবধানে থাকিস।”

“আচ্ছা।রাখি আল্লাহ হাফেজ।” মধু ফোনটা রেখে দিলো।এতক্ষণ মনটা ভালো ছিলো আর এখন আরো ভালো হয়ে গেলো।আল্লাহ যখন দেয় মনেহয় সবখুশী একসাথেই দেয়।মধু নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগ গুছানো শুরু করলো।ব্যাগ গুছিয়ে শুয়ে পড়লো।কালকে সকালেই রওনা দিতে হবে।
————–
বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে মধু।অনেকদিন পর এতো ভালো লাগছে।শীতল বাতাস মধুর চোখেমুখে আঁছড়ে পড়ছে।দ্রুত গতিতে বাস ছুটে চলছে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে।কুমিল্লা যাওয়ার পথে অনেক গাছপালা আর ধান ক্ষেত।দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।মধু মনেমনে বলল’ইশ!ইয়াদকে নিয়ে যদি এই ধান ক্ষেতগুলোর আইল ধরে হাঁটা যেতো!আমি সামনে হাটবো আর ও পিছনে।’ মধু এগুলো ভাবছে আর লজ্জায় লাল হচ্ছে।কিন্তু এগুলো কি সম্ভব!হয়তো না!তবে কল্পনা করতে দোষ কোথায়!বাস্তবে না হলেও কল্পনায়ই আমরা এভাবে হাটবো!মধু মৃদু হাসলো।

বাসটা এখন মেঘনা ব্রিজের ওপর দিয়ে যাচ্ছে।বাস থেকে নদীটাকে এতো সুন্দর লাগছে বোঝানো সম্ভব না।নদীতে মালবাহী জাহাজ,নৌকা,আর স্টিমার চলছে।মেঘনা এতো বিশাল যে এর শেষটা চোখে পড়ে না।যতোদূর চোখ যায় শুধু মেঘনার বিশালতা চোখে পড়ে।মধুর তখনকার মতো এখনও ইচ্ছে করছে ছোট একটা ডিঙি নৌকায় ইয়াদ আর ও ভাসবে মেঘনার বুকে!মধু মেঘনার দিকে তাকিয়ে দৃশ্যটা কল্পনা করতে করতে চোখ বন্ধ করলো।

মেঘনা ব্রীজ পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন ওদের বাস কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট আছে।একটু পরই পৌঁছে যাবে খালাদের বাড়ি।মধু হাতঘড়িতে দেখলো এখন সকাল ৯.০০ টা বাজে।মাত্র তিনঘণ্টা লেগেছে কুমিল্লা আসতে।

মধুর খালার বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম থানায়।ওটা খিলা ইউনিয়নে পড়ে।মধুরা খিলা বাজারে এসে পড়েছে।এখান থেকে ওর খালাতো ভাই শিহাবের সাথে ওদের বাড়ি যাবে।ইতিমধ্যে শিহাবও এসে পড়েছে।এখন যাওয়ার পালা।

চলবে….

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-৭+৮

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৭
#Arshi_Ayat

মধুর ভয় লাগছে।জিগ্যেস করবে বাগানে কেউ আছে কি না!নাকি জানালা বন্ধ করে দিবে।যদি চোর ডাকাত হয়!এমনিতেও বাসায় কেউ নেই।শুধু শুধু খাল কেটে কুমির আনার দরকার নেই।তাই মধু জানালা বন্ধ করে দিলো।

কালকে রাতের মতো আজকেও কাটবে ভয়ে ভয়ে এমনিতেই ঝড়বৃষ্টি তার ওপর মধুর আলগা ভয়তো আছেই।খাওয়া দাওয়া করে মধু দোয়া দুরুদ পড়ে শুয়ে পড়লো।
—————–
আজও খুব সকালেই ঘুম ভাঙলো মধুর কাল রাতেও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলো।নামাজ পড়ে নাস্তা বানাতে গেলো।আজকে আর বের হতে ইচ্ছে করছে না।নাস্তা বানাতে বানাতে সাতটা বেজে গেছে।মধু নাস্তা খেতে খেতে টিভি দেখতে লাগলো।হঠাৎ কলিং বেল বাজায় মধু নাস্তার প্লেট টেবিলের ওপর রেখে লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখলো ওর মা আর বোন এসেছে।ওদের দেখে মধু দ্রুত টিভি বন্ধ করে নাস্তার প্লেট নিজের রুমে রেখে এসে দরজা খুল দিলো।আইরিন রহমান ঘরে ঢুকে বললেন”এতো সময় লাগলো কেনো দরজা খুলতে?”

“খাচ্ছিলাম আমি।”

“নাস্তা বানিয়েছিস?”

“হ্যাঁ।” মধু দায়সারা জবাব দিলো।

“কলেজে যাবি?”

“হুম।যেতে হবে।আমি রেডি হয়ে আসছি।” এটা বলে মধু নিজের ঘরে গিয়ে নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নিলো।তারপর ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় রান্নাঘরে একবার উঁকি দিয়ে জিগ্যেস করলো”নানি কেমন আছে?”

“এখন ভালোই আছে।”

“আচ্ছা।”
বলেই মধু কলেজে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হয়ে হাঁটতে লাগলো।একটু হাঁটতেই দেখলো ইয়াদ একটা মেয়ের সাথে হাসতে হাসতে কথা বলছে।মেয়েটাও হাসছে।কেনো জানি ব্যাপারটা একদম ভালো লাগছে না মধুর।কেনো ভালো লাগছে না মধু নিজেও জানে না।তাই মধু আর ওইদিকে তাকালো না কিন্তু তবুও চোখ হারামি বারবার ওইদিকে চলে যায়।ওদের ক্রস করার পর ঘাড়টাও বেইমানি করছে।না চাইতেও ঘাড় ঘুরিয়ে মধু ওদের দেখছে।ওরা চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত মধু কতোবার যে ঘাড় বাঁকা করে ওদের দিকে তাকিয়েছে সেটা ও নিজেও জানে না।কলেজে পৌঁছানোর পরই আরিয়ার পাশে গিয়ে বসলো মধু আরিয়া মধুর উদাস মুখের দিকে তাকিয়ে বলল”কি রে কি হইছে?চেহারা এমন করে রাখছিস কেনো?”

“আরে একটা ছেলের ওপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছি।”

“তো সমস্যা কই!গিয়া লাইন মার।ছেলে কই থাকে?”

“আমাদের বাসার তিনতলায়!”

আরিয়া লাফিয়ে উঠে বলল”বাহ!তাইলে আর লাগে কি!সকালে বিকেল ক্রাশের সাথে দেখা হবে।তাই লাইন মারা শুরু কর।”

“এতো সহজ না বইন।পুরোটা শুনে তারপর কথা বল।ওর এক্স পাঁচ তলায় থাকে।”

মধুর কথা শোনার পর যতোটা উচ্ছ্বাস আরিয়ার মুখে ছিলো সব ফুস হয়ে গেছে।তবুও আরিয়া বলল”এক্স হইছে তো কি হইছে।ওর সাথে তো এখন সম্পর্ক নাই।”

“না থাকলেও ওর এক্স সহ্য করতে পারে না আমি ওর সাথে কথা বললে।”

“মানে কি?কি বলে?” আরিয়া ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো।

মধু এই দুই তিনদিনে নিশি যা যা বলেছে,করেছে সব আরিয়া কে বলল।আরিয়া সব শুনে বলল”আচ্ছা বুঝলাম।আচ্ছা তোর ক্রাশ মানে ইয়াদের দিকে থেকে কোনো সাড়া আছে?”

“আমি বুঝতে পারছি না।স্বাভাবিক আচরণই করে।আর সবার সাথে যেভাবে কথা বলে আমার সাথেও সেভাবেই বলে।”

“এখনই কিছু বলা যাবে না।আরো কয়েকদিন দেখ।তারপর তুই নিজেই বুঝবি।”

মধু আরিয়ার কথার উত্তরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্যার চলে এলো।তাই মধু আর কথা বলতে পারলো না।ক্লাস শেষে কোচিংএ গেলো।আজকে দুটো ব্যাচই পড়তে হবে।তিনচার দিন ধরে প্রচুর খামখেয়ালী করেছে আর করলে হবে না।
দুটো ব্যাচ ছুটি হয়েছে সন্ধ্যার সময়।আরিয়া আর মধু একসাথেই ওই রাস্তাটা দিয়ে হাটতে লাগলো।আচমকাই মনে হলো কেউ একজন ওদের পেছনে পেছনে আসছে!এটা শুধু মধুর না আরিয়ারও মনে হলো।কে আসবে!আরিয়া আর মধু দুজনই কয়েকবার পেছনে তাকালো কিন্তু না সন্দেহজনক কাউকে দেখতে পেলো না।আবার হাঁটতে শুরু করলো ওরা এবারও সেম কাহিনী।মধু ভয়ে আরিয়ার হাত চেপে ধরে বলল”দোস্ত আমার মনে হয় ভূত আমাদের পিছনে পড়েছে।তাড়াতাড়ি হাট।”

“আরে ভূত-টুত কিছু না।হয়তো কেউ ফাইজলামি করতেছে।শালারে পাইলে চটকাইতাম।”

আরিয়া বিরক্তিমুখে হাটছে আর মধু ভয়ে ভয়ে।ওই রাস্তাটা পার হয়ে একটু হাটলেই মধুর বাড়ি।আরিয়া মধুর বাড়ির সামনে এসে ওকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো।মধু ঘরের সামনে আসতেই দেখতে পেলো নতুন কয়েকজোড়া জুতা।মধু ভেবে পেলো না।ঘরে আবার কোন মেহমান আসলো।কৌতূহলী হয়ে দরজায় নক করলো সে।আইরিন রহমান দরজা খুলে হাসিমুখে মধুকে ঘরে নিয়ে এলো।আইরিন রহমানের আচরণ ঠিকঠাক লাগছে না মধুর কাছে।হঠাৎ এতো আদিক্ষ্যেতা কেনো!আইরিন রহমান যখন মধুকে বসার ঘরে নিয়ে গেলো।তখন মধু বুঝতে পারলো কাহিনী কি!ওকে দেখতে এসেছে।একটা আন্টি টাইপের মহিলা আর একটা ছেলে।মনেহয় মহিলারই ছেলে।বয়স আন্দাজে ৩২ হবে হয়তো।মধুর অনুসন্ধানের মাঝে আইরিন রহমান বাম হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন”এইতো আমার মেয়ে।ও রেডি হয়ে আসুক।আপনারা একটু বসুন।”

এটা বলে আইরিন রহমান মধুকে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল”তাড়াতাড়ি বিছানার ওপর রাখা শাড়িটা পড়ে একটু সেজেগুজে নে।আর মুখ পেঁচা মতো না করে মুখে একটু হাসি রাখবি।”

এটা বলেই উনি চলে যেতে নিলেই মধু বলল”আমাকে একবার জিগ্যেস করতেও পারতে!”

“তোকে জিগ্যেস করার কি আছে।বড়ো হয়েছিস বিয়ে হবে না নাকি!কতোদিন আর আমার ঘাড়ে বসে থাকবি?”

“বললাম তো আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরো।আমি চলে যাবো।তোমার ঘাড়ে বসে খাবো না।তবুও এই বিয়েশাদিতে আমাকে জড়িয়ো না।”

“না,,কোনো কথা হবে।চটপট রেডি হয়ে আয়।আর ওদের সামনে উল্টাপাল্টা কিছু করলে একদম মেরে ফেলবো।”

বলে আইরিন রহমান চলে গেলেন।মধু বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে শাড়ি পড়লো।তারপর চুল ছেড়ে ওদের সামনে আসলো।আইরিন রহমান ওকে সবার সামনে বসিয়ে দিলেন।মধু মাথাটা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে।ছেলের মা হঠাৎ বলে উঠলো”এইদিকে তাকাও।”

মধু মুখতুলে তাকালো।মহিলাটা পাশের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল”পছন্দ হয়েছে বাবু?”

ছেলে বলল”তোমার পছন্দ হলেই হলো।”

ছেলের মা বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে বলল”মেয়ে মাশাল্লাহ!আমাদের পছন্দ হয়েছে।তো মামনি তুমি রাঁধতে পারো?”

“না আন্টি।”

মধু জবাব শুনে মধুর মা ওকে চোখ গরম করে ইশারায় বলল হ্যাঁ বলতে।কিন্তু মধু বলল না।মহিলাটা আবার বলল”শিখে নিবে।আর শোনো বিয়ের পর কিন্তু পড়ালেখা চলবে না।”

“কেনো?” মধু অবাক হয়ে বলল।

“কারণ আমার ছেলেই তো বিসিএস ক্যাডার।তোমাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারবে।তাই এতো পড়াশোনার দরকার নেই।”

মধুর মেজাজ তেতে উঠলো।মস্তিষ্কে সুপ্ত প্রতিবাদী ভাব জাগ্রত হলো।মুখের লাগাম খুলে গেলো।মধু উত্তপ্ত কন্ঠে বলল”আপনি মেয়ে তবুও এগুলো কিভাবে বলতে পারলেন?আমি কেনো আরেকজনের গলায় ঝুলে পড়বো?কেনো আরেকজনের দাসত্ব করবো যেখানে আমিও মানুষ সেও মানুষ।নাকি আপনারা এখনো জাহিলিয়ার যুগে পড়ে আছেন।মেয়েদের মানুষ বলে মনে করেন না।মেয়েদের কি আত্মসম্মান বোধ নেই!আপনারা তো আমাদের বোঝা মনে করেন।কখন কার ঘাড় থেকে কে নামাবে।এই তো আমার মা তার ঘাড় থেকে নামানোর জন্য আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে আর আপনি আপনার বিসিএস ক্যাডার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য লেগেছেন।ছিঃ”

এতুটুকু বলতেই আইরিন রহমান আর সহ্য করতে পারলেন না।মধুর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে রুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলেন।তারপর পাত্রপক্ষের সামনে এসে পাত্রের মাকে বললেন”ক্ষমা করবেন আপা।”

পাত্রের মা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল”এমন বেয়াদব মেয়ে এখনো বাচিয়ে রেখেছেন কেনো?এই মেয়েকে জীবনেও বিয়ে দিতে পারবেন না।”

এটা বলে মহিলা আর তার ছেলে চলে গেলো।রাগে আইরিন রহমানের মাথা ফেটে যাচ্ছে।কতো কষ্ট করে এমন একটা সমন্ধ জোগাড় করেছিলো!সব শেষ।

আইরিন রহমান মধুর ঘরে ঢুকে ইচ্ছামতো মারলেন ওকে।গায়ে দাগ বসে গেছে।অনেক মারার পর ক্লান্ত হয়ে সে চলে গেলো।আর মধু রুম অন্ধকার করে হাঁটুতে মুখ গুজে কাঁদতে লাগলো।আজ খুব করে বাবাকে মনে পড়ছে মধুর।যখন মধুর বয়স চার বছর ছিলো তখন ওরা ফুলপুর থাকতো।প্রতিদিন সন্ধ্যায় অফিস শেষে বাবা আসলে মধু ওর বাবার গলা জড়িয়ে শুয়ে থাকতো।তখন দিনগুলে কতো সুন্দর ছিলো।হঠাৎ এক্সিডেন্টে বাবা মারা যাওয়ার পর সব উল্টে গেলো।মা কেমন যেনো হয়ে গেলো।মামাদের কর্তিত্ব চলে এলো সংসারে।মাকে আবার বিয়ে দেওয়া হলো।মা ওখানে সংসার করতো।আর মধু মামার বাড়ি থাকতো।ওই বয়সেও কতো কিছুর স্বীকার হয়েছে মধুর ভাবতেই কান্না পায়।তারপর ছয়বছর বয়সে মা ফিরে আসে ওখানে নাকি ডিবোর্স হয়ে গেছে।ওখান থেকে একটা দেড় বছর বয়সই মেয়েও নিয়ে আসে।তারপর থেকে আবার মায়ের সাথেই থাকা।কিন্তু তখন থেকেই মনে হচ্ছিলো একই চেহারা হলেই মানুষটি ওর মা না।মধু এইসব স্মৃতি ভাবতেই ঢুকরে কেঁদে ওঠে।মনের ক্ষত আর শরীরের ব্যাথা মিলিয়ে চোখদ্বয় ক্রমেই বুঁজে আসতে শুরু করলো।মধু মনেমনে বলল”এইটা যেনো আমার শেষ ঘুম হয়।”

চলবে….

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৮
#Arshi_Ayat

সকালের কোমল হওয়া আধখোলা জানালার গ্রিল ভেদ করে মধুর ঘুমন্ত শরীরে আছড়ে পড়ছে।ওর চুলগুলো অবাধ্য হাওয়ার তালেতালে উড়ছে।মধুর এখনো ঘুম ভাঙে নি।এদিকে একজোড়া চোখ তাকে কাঁচের জানালার গ্রিলের বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করছে।এতো সুন্দর মানবী সে আগে কখনো দেখেনি তাই নিজের ফোনে এই ঘুমন্ত মায়াময়ী মানবীর একটা ছবি তুলে নিলো।কিন্তু হাতের কালশিটে দাগ তার চেহারায় উদ্বীগ্নতা ফুটিয়ে তুললো।সে আর বেশিক্ষণ থাকতে পারলো না।রুমে কাউকে আসতে দেখে সে সরে পড়লো।
———————
মিলি এসে মধুর মাথায় হাত দিয়ে দেখলো অনেক জ্বর শরীরে।মিলি আলতো ধাক্কা দিয়ে ডাকলো”আপু,এই আপু ওঠ।”

কয়েকবার ডাকার পর মধু আস্তে আস্তে চোখ খুললো।সারা শরীর প্রচন্ড ব্যাথা করছে,মাথা ঘুরছে।মধু একহাত দিয়ে মাথা ধরে উঠে দাড়ালো।কালকের সন্ধ্যায় পরিহিত শাড়ি এখনো মধুর পরনে।আস্তে আস্তে খাটে বসে মধু নিজের মাথাটা চেপে ধরলো।তারপর মিলিকে বলল”নাস্তা হলে আমাকে একটু হালকা নাস্তা দে।”

মিলি গিয়ে নাস্তা এনে মধুর সামনে রাখলো।মধু একটু নাস্তা খেয়ে নিজের কাছে থাকা জ্বরের ঔষধ খেয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো।উঠে দাড়ানোর মতো শক্তি পাচ্ছে না মধু।আজ কলেজেও যাওয়া হবে না।
————–
দ্বিতীয় বার মধুর ঘুম ভেঙেছে সকাল এগারোটায়।এখন একটু ঠিকঠাক লাগছে।জ্বর টাও ছেড়েছে।কিন্তু সারা শীররের ব্যাথা কমেনি।মধু ওয়াশরুমে গিয়ে গোসলটা সেরে এসে মিলিকে দিয়ে মায়ের ফোনটা আনলো।তারপর আরিয়াকে ফোন দিলো।আরিয়া ফোন ধরতেই মধু বলল”আজকে বিকেলে বাসায় আসিস কথা আছে।”

“আচ্ছা,কলেজে আসিস নি কেনো?”

“বিকেলে আসলেই জানতে পারবি।”

“আচ্ছা আসবো।”

মধু ফোনটা আবার মিলিকে দিয়ে রেখে আসলো।তারপর আবার শুয়ে পড়লো।

কলেজ শেষে একটা ব্যাচ পড়েই আরিয়া মধুর বাসায় চলে আসলো।মধু তখনো শুয়ে ছিলো।আরিয়াকে দেখে উঠে বসলো।তারপর বলল”ব্যাচ করে আসলি?”

“হ্যাঁ,এবার বল কি বলবি?আর কলেজে যাস নি কেনো?”

“আমি আর কোচিং করবো না রে।তুই স্যারদের কে বলে দিস।”

“কিন্তু কেনো?”

“মন চায় না।”

“মন চায় না নাকি আন্টি কিছু বলছে?”

“জানিসই তো তাইলে আর জিগ্যেস করিস কেন?”

“কিন্তু…. ” এতটুকু বলেই আরিয়া থেমে গেলো মধুর হাত পায়ের কালশীটে দাগ দেখে উত্তেজিত কন্ঠে বলল”তোর হাতে পায়ে এমন দাগ কেনো?”

মধু মলিন একটা হাসি দিয়ে সন্ধ্যার ঘটনাটা আরিয়াকে বলল।আরিয়া সবটা শুনে কান্না করে বলল “এইজন্যই তুই ব্যাচ পড়বি না।”

“হুম।পারলে আমার জন্য কয়েকটা টিউশনি খুঁজে দিস।”

“আচ্ছা।আমি দেখবো।”

“আর শোন ব্যাচের পড়াগুলো তুই আমাকে একটু কলেজে এসে বুঝিয়ে দিস।”

আরিয়া মধুকে জড়িয়ে ধরে বলল”চুপচাপ সব সহ্য করে যা।আল্লাহ সব দেখছেন।তোর কষ্ট শেষ হবেই।”

মধু ম্লান হেসে মনে মনে বলল”আমিও সেই আশাতেই আছি।”
আরিয়া চলে যাওয়ার পর মধু ওজু করে নামাজ পড়ে তিনতলায় নামলো ওর পদার্থবিজ্ঞান নোট খাতার জন্য।দরজায় নক দিতেই ইরিন দরজা খুললো।মধুকে দেখে একগাল হেঁসে বললো”ভেতরে আসো।”

মধু ভেতরে গিয়ে দেখে বসার ঘরে ইরিনের আম্মু,আব্বু,ইয়াদ আরেকটা ছেলে বসে আছে।এই ছেলেটাকে মধু এর আগে দেখে নি।ইরিন মধুকে নিয়ে নিজের রুমে আসলো।তারপর মধুকে বসতে বলে বলল”চা চলবে নাকি কফি?”

“চা চলবে।”

ইরিন একটু হেসে বলল”দ্যাটস গ্রেট আমি আর ইয়াদ ভাইয়া চা খোর।ইফাজ ভাই আবার কফি খোর।তুমি একটু ওয়েট করো আমি আসছি।”

ইরিন চলে যেতে নিলেই মধু বলল”ইরিন শোনো,সোফায় বসা নতুন ছেলেটা কে?”

ইরিন দাঁত বের করে হেঁসে দরজার কাছে থেকে ফিরে এসে মধুর হাত ধরে দাড় করিয়ে বলল”চলো।”

মধু ভ্রু কুঁচকে বলল”কোথায়?”

“আহা!চলো না!” এটা বলে ইরিন হাত ধরে টেনে ড্রইং রুমে নিয়ে আসলো মধুকে তারপর ইরিন সবার মনযোগ আকর্ষণের জন্য বলল”এই যে আমার শ্রদ্ধেও পিতা,মাতা ও ভাইদ্বয় আমার কথাগুলো যদি একটু কৃপা করে শুনতেন তাহলে আমি কৃতার্থ হবো।”

ইরিনের এই লম্বা বক্তব্য শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো।সবার এটেনশন পাওয়ার পর ইরিন মধুর হাত ধরে বলল”এই যে কিউট মিষ্টির দোকানের মতো মেয়েটা আমার বান্ধবী।তো আমার বান্ধবী জানতে চেয়েছে ইয়াদ ভাইয়ের সাথে বসা নতুন ছেলেটা কে?কি তার পরিচয়?কেনো সে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে?”

ইরিনের কথা শুনে সবাই হো হো করে একদফা হেঁসে উঠলো।আর মধুও লজ্জায় লাল,নীল হচ্ছে।তারপর ইরিন হাতের ইশারায় বলল”এই নতুন ছেলে উঠে দাড়াও।তোমার পরিচয় দাও।”

ইরিন এই কথা শুনেও সবাই হেসে দিলো।ইয়াদের পাশের ছেলেটা উঠে দাড়িয়ে হাসিমুখে বলল”আমি আরহাম খান ইফাজ।সদ্য ডাক্তারী পাশ করে আজকেই দেশে ফিরলাম।আমি ইয়াদ, ইরিনের বড়ো ভাই।আর ইয়াফ খান ও সাইদা খানের বড় পুত্র।এছাড়া আর কোনো পরিচয় নেই আমার।”

ইফাজের কথা শেষ হতেই ইরিন বলল”মধু এবার এই নতুন ছেলেটার পরিচয় নিয়ে কোনো সন্দেহ আছে?”

মধু লজ্জায় লাল হয়ে কিছু না বলেই ইরিনের রুমের দিকে দৌড় দিলো।মধুর কান্ডে সবাই আরেকদফা হাসলো।ইরিনও হাসতে হাসতে কিচেনে গিয়ে দু’কাপ চা নিয়ে ঘরে আসলো।মধু ইরিনকে দেখে মুখ ফুলিয়ে বলল”এভাবে লজ্জা না দিলে কি হতো না?”

“কোথায় লজ্জা দিলাম।আমিতো আমার বড়ো ভাইয়ের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দিলাম।”

“এভাবে সবার সামনে!”

“ও তাহলে চিপায় গিয়ে পরিচিত হতে চাও?”

মধু ইরিনের হাতে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল”অসভ্য তুমি।”

ইরিন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল”এই কমপ্লিমেন্ট টা ভাল্লাগছে।”

চা শেষ করে ইরিন একটা চকলেটের বক্স মধুর হাতে দিয়ে বলল”এটা ওই নতুন ছেলেটা এনেছে।নাও”

“আমিতো চকলেট খাই না।”

“তাহলে তোমার বোনকে দিও।তবুও নিতে হবে।”

ইরিনের জোরাজোরিতে মধুর নিতেই হলো।

তারপর মধু আর ইরিন পাঁচ দশমিনিট কথাবার্তা বলে মধু ওর নোট খাতাটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।আর যাওয়ার আগে ইয়াদের দিকে একপলক তাকালো।মহাশয় বত্রিশ দাঁত বের করে কেলাচ্ছে।
—————-
মধু ওদের ঘর থেকে বেরিয়ে সিড়িতে আসতেই নিশির দেখা পেলো।নিশি গম্ভীর কণ্ঠে বলল”ইয়াদ দের বাসায় গেছো কেনো?”

“তোমার এক্সকে চুম্মা দিতে।”

“মানে!” নিশি ভ্রু কুঁচকে বলল।

“দেখছো হাতে খাতা।তারপরেও জিগ্যেস করছো কেনো?”

“তোমাকে না বলছি ওকে আর ওর বোনকে এড়িয়ে চলতে।”

“তুমি বললেই আমি শুনবো কেনো!”

“তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছো আমি কি করতে পারি।”

“যা করার করো তুমি।তবে তুমিও মনে রেখো।তোমার মায়ের কানে বিষ ঢালার মতো বিষও আমার কাছে আছে।অতএব যা করবে ভেবে চিন্তে করবে।”

“তুমি আমার মা’কে কি বলবে?”

“কিচ্ছু না শুধু তিনতলার ইয়াদ নামক একটা ছেলে তোমার এক্স এটাই বলবো।”

মধু এতটুকু বলে একটা বাঁকা হেসে ওপরে চলে গেলো।
আর নিশি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
—————-
বাসায় গিয়ে মধু দরজা বন্ধ করে পড়তে বসলো।পড়ায় মন বসছে না,সবকিছুতে বিতৃষ্ণা চলে এসেছে।জীবন ভালো লাগে না।মধু মাথায় হাত দিয়ে বসে হেড ডাউন করে রাখলো।জ্বর বোধহয় আবার আসছে।ক্ষুধাও লাগছে।সকালে নাস্তা খাবার পর আর খাওয়া হয় নি।মধু দরজা খুলে রান্না ঘরে গিয়ে খাবার খেয়ে আসার সময় আইরিন রহমানের ঘরে সামনে একটু কান খাড়া করতেই শুনতে পেলো।আইরিন রহমান কাকে যেনো বলছে”আপনারা কাল এসে দেখে যান।তাহলেই হবে।”

এতটুকু শুনেই মধু বুঝতে পারলো কোন বিষয়ে কথা হচ্ছে।মধু নিঃশব্দে সেখান থেকে নিজের ঘরে চলে গেলো।

চলবে……

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-৫+৬

0

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat

হাতে টান পড়ায় মধু ঘুরে দাড়ালো।ইয়াদ মধুর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল”সরি,আসলে আমি ভেবেছিলাম…… যাইহোক বাদ দাও।তোমার ভবিষ্যৎ লক্ষ কি?মানে কি হতে চাও?”

“অনেক অনেক অনেক টাকা উপার্জন করতে চাই।”

“কেনো?এতো টাকার প্রয়োজন কেনো?”

“কি বলেন!টাকা থাকলে সবকিছু আপনার।টাকা থাকলে মানুষের ব্যাবহার বদলায় মোটকথা মানুষটাই বদলায়।প্রিয়মানুষ গুলোকে হারানোর ভয় থাকে না।সবার প্রিয় হওয়া যায়।কেউ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে না।”

মধুর কথা শুনে ইয়াদ মধুর চোখের দিকে তাকালো।ওর চোখজোড়ায় কষ্ট স্পষ্ট।কিন্তু এতো ছোটো বয়সে এতো কষ্ট কিসের!ইয়াদের কৌতুহল হলো।কিন্তু এখন কিছু জিগ্যেস করলে মেয়েটা কিছুই বলবে না।আগে ফ্রী হই তারপর হয়তো বলতে পারে।তাই ইয়াদ বলল”তোমার নামটা জানা হলো না।”

“তয়ত্রি রহমান মধু।” মধু সামনের দিকে তাকিয়ে বলল।

“ওহ!নামটা ইউনিক!”

মধু দুই ঠোঁট মিলিয়ে হেসে বলল”ধন্যবাদ।আপনার নামতো ইয়াদ!তাই না?”

“আবরাহাম খান ইয়াদ।”
ইয়াদ কথা শেষ করতেই ইরিনা চলে এলো।ইরিনা এসে মধুর পাশে দাড়িয়ে বলল”হেই মধু,আমার ভাইয়ের সাথে কি কথা বলছো?”

“তোর জানতে হবে না।তুই নিচে যা।” ইয়াদ বিরক্ত কন্ঠে বলল।

“হ্যাঁ যাবো তো।মধুও যাবে আমার সাথে।চলো তো মধু।”

“কেনো ও যাবে কেন?তোর মতো পেত্নীর সাথে ও যাবে না।”

ইয়াদের কথা শুনে ইরিন বলল”আচ্ছা,ওকে মধুই বলুক ও কি এখানে থাকবে নাকি আমার সাথে যাবে।”

মধু দাঁত বের করে হেসে বলল”ইরিনা আমার বান্ধবী তাই আমি ওর সাথেই যাবো।”

“কিন্তু আমি তো তোমার বান্ধবীর ভাই।” ইয়াদ অসহায় মুখ করে বলল।

ইরিন বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলল”তুমি চুপ করো।ও আমার সাথেই যাবে।”এটা বলে মুখ বাঁকা করে মধুর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।ইয়াদ ওদের সাথে ঘরে গেলো।ইরিন মধুকে নিজের ঘরে বসিয়ে খাবার নিয়ে এলো।খাবার দেখে মধু বলল”এগুলো আনলে কেনো?আমিতো খেয়ে এসেছি।”

“খেলে আবার খাবে।কোনো কথা চলবে না।”

মধু আর কি করবে।ইরিনের জোরাজোরিতে খেতে বাধ্য আর পেটে খুদাও ছিলো।খাওয়া শেষ করে ইরিন আর মধু বকবক করছিলো।ইয়াদ পাশের রুমে বসে ওদের হাসির শব্দ শুনছিলো।একটু আগে উঁকি দিয়ে দেখেও এসেছিলো।মেয়েটাকে কিছুক্ষণ আগে কি গম্ভীর দেখাচ্ছিলো কিন্তু এখন হাসছে।মেয়েটাকে হাসিতেই মানায়।হাসলে খুব নিখুঁত ভাবে দুটো গালে টোল পড়ে।ইয়াদের মন চায় গাল দুটো টেনে দিতে।

আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মধু বিদায় নিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে এলো।এতটুকু সময়ে মোটামুটি দুজনই দুজনের সাথে সহজ হয়েছে।ইরিন একটু বেশিই কথা বলে।তাই পুরোটা সময় মুখ এক সেকেন্ডও বন্ধ ছিলো না।যাইহোক মন খারাপটা কিছুটা হলেও কমেছে।কিন্তু ঘরে গিয়ে আবার মুখ ভার করে আইরিন রহমানের সামনে দিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো।

রাত আট’টা।মধু সেই যে দরজা বন্ধ করেছে এখনো খোলে নি।দরজা বন্ধ করে পড়ছে।হঠাৎ দরজায় কেউ নক করলো।মধু দরজা খুলতেই দেখলো নিশি দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখ করে।নিশিকে দেখে মধু মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বলল”আরে নিশি আপু!আসো ভেতরে এসে বসো।”

নিশি এসে মধুর খাটে বসলো।মধু বলল”তুমি বসো আমি তোমার জন্য চা আনছি।”

নিশি মধুর হাত ধরে আটকে দিয়ে বলল”চা লাগবে না।তুমি আমার পাশে একটু বসো।তোমার সাথে কথা আছে।আর দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে আসো।”

মধু মনে কৌতুহল রেখে দরজা চাপিয়ে নিশির পাশে গিয়ে বসলো।নিশি মধুর দিকে তাকিয়ে বলল”তিনতলায় নতুন আসছে যে একটা ছেলে ইয়াদ নাম ওকে চেনো?”

“হ্যাঁ।কথা হয়েছে হালকা।”

“ওহ!শোনো ওর আর ওর বোনের সাথে কথা বলবে না।ওদের দেখলে এড়িয়ে চলবে।”

“কেনো আপু?”

“কৈফিয়ত দিবো না আমি তোমাকে।যেটা বললাম সেটা করবা।আর যদি না করো তোমার আম্মুকে তো চিনো তাই না?আন্টিকে একবার বললে সে তোমার কি করবে জানো তো!নাকি মনে করিয়ে দিবো।”

মধু নিচের দিকে তাকিয়ে মুখ কালো করে রইলো।কারণ মধু জানে ওর মা জানলে বাড়ি থেকেই বের করে দিবে।গত রোজায় একটা ঘটনা এখনো মনে পড়ে মধুর।সারাদিন রোজা রেখে মাথাটা ঘুরাচ্ছিলো।ওর ক্লাসমেট রাদিত আর রিহা ওকে দিয়ে গিয়েছিলো।মধু ওদের বাসায় এনে বসায়।তখন ওদের সামনে আইরিন রহমান কিছু না বললেও ইফতারির পর মধুকে অনেক মেরেছিলো শরীরে দাগ বসে গেছিলো।ওই মারের চোটে মধুর তিনদিন ভয়ানক জ্বর আসে।তিনদিন রোজাও রাখতে পারে নি।তারপর মধুর মা কড়া করে বলে দিয়েছিলো যেনো কোনো ছেলে বন্ধু না থাকে।আর যদি কখনো কোনো সম্পর্কে জড়ায় তাহলে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।মধু ওই ঘটনার পর থেকে ছেলেদের সাথে কম কথা বলে।আর বাসায় আনা তো দূরের কথা।আর এখন যদি নিশি ওর মায়ের কাছে ইয়াদকে নিয়ে কিছু বলে তাহলে মনে হয় এখানে আর থাকাই হবে না।

মধু কিছু বলছে না দেখে নিশি বলল
“কি ভাবছো!শোনো কিছু ভেবে লাভ নাই।পস্তাবে।”

এটা বলে নিশি উঠে দাড়ালো।দরজার কাছে গিয়ে বলল”মনে থাকে যেনো আমার কথা।নাহলে…..
এটা বলে নিশি আর না দাড়িয়ে চলে গেলো।মধুর আবার মন খারাপ হলো।চারদিকে শুধু দুঃখ আর দুঃখ।মধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার পড়তে বসলো।রাত দশটার দিকে মিলি খাবার দিয়ে গেলো ঘরে।মধু চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়লো।
——————
শরতের নীল আকাশে টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।চারপাশে হালকা বাতাশ।রোদের তাপও আছে।তবুও বাতাসটা শরীরে শিহরণ জাগায়।মধু বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।আজ কলেজে যাবে না।একটু আগে মিলি আর আইরিন রহমান মুন্সিগঞ্জ চলে গেছেন।নানী নাকি অসুস্থ।আই মধুকে বাসায় রেখে গেছে।মধুও তাই চেয়েছিলো।নানীর সাথে সম্পর্ক খারাপ না হলেও ওই বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করে না মধুর।তার অবশ্য একটা কারণও আছে।ওই বাড়িতে গেলে কয়েকটা মহিলা সব সময় মধুর বিয়ের কথা বলে নানারকম কথা বলে মায়ের মাথা ভরিয়ে ফেলে।মধুর প্রচন্ড বিরক্ত লাগে।এদের কি খেয়েদেয়ে কাহ নেই!কারো বিয়ে নাহলে কি এরা মরে যাবে?নাকি নিজের জামাই দিয়ে দিবে।যত্তসব!সেইজন্যই মধু নানীর বাড়ি যায় না।

বারান্দা থেকে ভেতরে এসে বসলো মধু।দুই তিনদিন কলেজে যাওয়া লাগবে না।ভেবেই শান্তি লাগছে।দুপুরের জন্য আইরিন রহমান রান্না করে গেছেন।আর রাতে নিজের রান্না করতে হবে।খুব বেশি ভালো রাঁধতে না পারলেও খাওয়া যায় এতটুকু মধু রাঁধতে পারে তাই তেমন কোনো চিন্তা নাই।মধু সোফায় বসে পায়ের ওপর পা তুলে টিভি ছাড়তেই সামনে একটা মুভি পড়লে ‘গোলমাল’।মধু বসে গেলো মুভিটা দেখতে।মুভি শেষ হলো বারোটায়।মুভিটা দেখে অনেক হেসেছে মধু।এখন টিভি বন্ধ করে জামা কাপড় নিতে গেলো।গোসল করতে হবে।কিন্তু এই জামাটর ওড়না পাওয়া যাচ্ছে না।হঠাৎ মনে পড়লো দুদিন আগে এই জামা টাই ধুয়ে ছাঁদে দিয়েছিলো।কিন্তু ওড়না মেলার জায়গা ছিলো না তাই মধু একটা শার্টের ওপর মেলেছিলো।কিন্তু জামা কাপড়গুলো তো সেদিন ও আনে নি।ওর মা এনেছিলো।ওড়নাটা কি এনেছিলো!মধু চিন্তায় পড়ে গেলো।তন্ন তন্ন করে পুরে ওয়ারড্রব খুঁজলো কিন্তু না ওড়না তো দূর থাকে ওড়নার সুতাও খুঁজে পেলো না।তারমানে ওড়নাটা আনা হয় নি।এখন ওড়না ছাড়া কিভাবে পরবে এটা!আর ওড়নাটা নিয়েছে কে!কেউ যদি চুরিও করতো তাহলে জামা কাপড় বাদ দিয়ে ওড়না নিলো কেনো?হয়তো কারো কাপড়ের সাথে চলে গেছে।কি আর করার।ওই জামাটার সাথে অন্য একটা ওড়না নিলো মধু।
.
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে জব্বর ঘুম দিলো মধু।বিকেলে উঠে চা-বিস্কুট খেয়ে বাইরে বের হলো ঘরে থাকতে ভালো লাগছে না।সামনে একটা পুকুর আছে।মধু ওই পুকুরের সামনে গিয়ে দাড়ালো।

“মধু….” হঠাৎ পিছনে থেকে কেউ ডাকতেই মধু পিছনে তাকালো।ইয়াদ আসছে।মধুর মুখে মৃদু একটা হাসির ঝলক দেখা গেলো।কিন্তু ইয়াদের পিছনে নিশিকে দেখে হাসিটা মিলিয়ে গেলো।মধু ওইখান থেকে অন্যদিকে হাঁটা শুরু করলো।মধুর এমন কান্ডে ইয়াদ বিস্মিত!আর নিশির মুখে বাঁকা হাসি!

ইয়াদ মধুর পিছনে পিছনে হাঁটতে হাঁটতে ওকে বারবার ডাকছে।আর মধু পিছনে না তাকিয়ে জোরেজোরে হাটছে।ইয়াদ কিছুক্ষণের মধ্যে মধুর পাশাপাশি চলে এলো।যখনই মধুর হাত ধরতে যাবে তখনই নিশি এসে মধুর হাত ধরে বলল”আরে মধু হাঁটতে বের হলে নাকি!”

ইয়াদ আর মধু দুজনেই চমকে গেলো।মধু নিজেকে সামলে বলল”জ্বি আপু।”

“ওহ!চলো আমরা একসাথে হাটি।”

“চলো।”

মধু আর নিশি একসাথে অন্যদিকে হাঁটতে লাগলো।

চলবে…..

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৬
#Arshi_Ayat

ইয়াদের কাছ থেকে যখন অনেকটা দূরে চলে আসলো নিশি আর মধু তখন নিশি মধুর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল”শোনো ও যদি তোমার সাথে কথা বলতে চায় তাহলে ওর সাথে মিসবিহেভ করবা।এমন ভাব করবা ওকে তোমার সহ্য হয় না।”

মধু নিশির কথায় সায় দিয়ে মাথা নাড়ালো।নিশি আবার বলল”এবার ঘরে যাও।”

মধু সোজা বাড়ির দিকে রওনা দিলো।আর মনে মনে বলল’এমন ছ্যাচড়ামি করার মানে হয়!এমন ভাব করছে মনে হয় ওর বয়ফ্রেন্ডকে আমি চুরি করে নিয়ে যাবো।শুধু আম্মুর জন্য ওকে আমি কিছুই করতে পারবো না।তা নাহলে আমার ওপর হুকুম ফলানো বের করতাম।মধু রাগে গজগহ করতে করতে হাঁটতে লাগলো।
—————
মধুকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিশি ইয়াদের কাছে যেতে লাগলো।ইয়াদ নিশিকে নিজের দিকে আসতে দেখে অন্যদিকে হাটা শুরু করলো।নিশি দ্রুত হেটে ইয়াদের পাশাপাশি এসে বলল”দাড়াও,কথা আছে।”

“আমার তোমার কথা শোনার সময় নেই।”

“শুনতে হবে তোমাকে।” এটা বলে নিশি ইয়াদের হাত ধরে ফেললো।ইয়াদ নিশির হাত ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দিলো।তারপর রেগে দাঁত কটমট করে বলল”আমার হাত ধরার সাহস কোথাও পাও তুমি?তোমাকে না বললাম আমাকে বিরক্ত করতে না।”

“আচ্ছা আমাকে আরেকবার মাফ করা যায় না?”

“না,তোমাকে এবার মাফ করলে নিজেকেই নিজে মাফ করতে পারবো না।এর আগেও দু’বার মাফ করেছি তোমাকে।আর না।”

নিশি দুইমিনিট চুপ করে রইলো।তারপর বলল”মধুকে পছন্দ করো?”

“আমি তোমার মতো না যাকে দেখবো তাকেই লাগবে।এতো সহজে কাউকে ভালোবাসাও যায় না আবার ভোলাও যায় না।”

এটা বলে ইয়াদ চলে গেলো।নিশি ইয়াদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
——————
দিনের বেলা বাসায় একা থকা যায় কিন্তু রাত হলে সব আজব আজব জিনিস মনে পড়ে।মনে হয় বাসায় আরো কেউ আছে।তেমনই অবস্থা মধুরও।সারাদিন খুব সুন্দর করে কাটালেও সন্ধ্যা থেকে ভয় করছে।তাই দরজা জানালা সব বন্ধ করে বসে আছে মধু।হঠাৎ দরজায় নক করলো কেউ একজন মধু লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখলো ইরিন দাঁড়িয়ে আছে।মধু দরজা খুলতেই ইরিন বলল”কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ তুমি?”

“ভালো আছি।তুমি মনে হয় বাসায় একা তাই না?”

“হুম,আম্মু নানু বাসায় গেছেন।”

“ওহ!”
ইরিন হাতে থাকা ওড়নাটা মধুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল”এটা তোমার না?”

মধু ওড়নাটার দিকে এক পলক চেয়ে বলল”হ্যাঁ এটা আমার।”

ইরিন মধুর হাতে ওড়নাটা দিয়ে বলল”এই ওড়নাটা নিয়ে বাসায় যুদ্ধ হইছে জানো!ইয়াদ ভাইয়া গোসল করতে যাওয়ার সময় শার্ট বের করতেই ওড়নার সুতা শার্টের বোতামে আটকে ছিলো।ভাইয়া তো রাগ ওড়না দেখে তারপর আমাকে ডেকে জিগ্যেস করলো এটা আমার কি না!আমি দেখেই বললাম এটা আমার না।এটা আম্মুরও না।এবার আমি আর আম্মু ভাইয়ার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালাম।পরে ভাইয়া অসহায় মুখ করে আম্মুকে বলল”’আম্মু বিশ্বাস করো আমার সাথে কারো সম্পর্ক নেই।এটা কিভাবে আমি জানি না।”‘

ইরিন হাসতে হাসতে আবার বলল”তখন ভাইয়ার চেহারাটা দেখারা মতো ছিলো!!

ইরিনের কথায় মধুও হাসলো।তারপর আরো দু একটা কথা বলে ইরিন চলে গেলো।মধুও দরজা বন্ধ করে দিলো।
—————–
রাত বারোটা।মধুর এক চিলতে ঘুমও আসছে না।প্রতিদিন দশটা বাজলেই ঘুমে চোখ ঢুলতো কিন্তু আজকে ঘুমের বালাইও নেই।সেটার কারণও আছে।মধু নিজের ঘরের লাইট বন্ধ করে নি।লাইট বন্ধ করলেই মনে হয় কেউ ওর পাশে শুয়ে আছে।এই ওভার থিংকিং এর জন্য একটুও ঘুম আসছে না মধুর।

দীর্ঘসময় এপাশ ওপাশ করতে করতে একসময় মধুর ঘুম চলে এলো।
——————-
সূর্য এখনো ওঠে নি কিন্তু অন্ধকার সরে গিয়ে আকাশ পরিস্কার হয়েছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য উঠবে।আজ মধুর অনেক তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙেছে।দেরিতে ঘুমিয়েও তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙেছে দেখে মধু নামাজ পড়ে হিজাব পরে বেরিয়ে পড়লো।সকালে হাঁটতে অনেক ভালো লাগে মধুর কিন্তু ইদানীং ঘুম থেকে উঠতে পারে না বলে যেতেও পারে না তবে আগে প্রতিদিন নিয়ম করে যেতো।

মধু হাঁটতে হাটতে পুকুর পাড়ে চলে এলো।জায়গা সুন্দর!পুকুরটা চারদিকে বাঁধাই করা।আশেপাশে গাছাপালা পরিবেশটা মোহনীয় করে তুলেছে।পুকুরপাড়ের রাস্তাটা ঢালাই করা।প্রতিদিন সকালে বিকেলে অনেকেই এখানে হাটেন।মধু বাঁধাই করা ঘাটে গিয়ে বসলো।তারপর সেলোয়ারটা হালকা উঠিয়ে পা ডুবালো।শীতল পনির শিহরণ যেনো মধুর সারা শরীরের ছড়িয়ে পড়ছে।একটুপর কেউ একজন পিছন থেকে ডাকলো মনে হলো।মধু বসা থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলে ইয়াদ দাড়িয়ে আছে জগিং স্যুট পরে।ইয়াদকে দেখে মধু কিছু না বলে আবার সামনের দিকে ঘুরলো।ইয়াদ মধুর একটু কাছে এসে বলল”উঠে আসো।কথা আছে।”

মধু উঠলো না।ইয়াদের বিরক্ত লাগছে।ইয়াদ আবার বলল”ওঠো বলছি!না আসলে কিন্তু ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিবো।”
ইয়াদের কথায় এবার মধুর টনক নড়ে।পা দুটো উঠিয়ে ঘাট থেকে উপরে চলে আসে।তারপর বলে”কি বলবেন বলুন।”

“সমস্যা কি তোমার।এমন করছো কেনো?কালকে ডাকলাম উত্তর দিলে না।এড়িয়ে চলে গেলে।এখনও তাই করলে!এনি থিং রং?

” আপনার সাথে কথা বললে আমার ঘরে অশান্তি লাগবে।”মধু সরাসরি বলে দিলো।এতো নাটক ভালো লাগে না।

“মানে!কি অশান্তি?”

“আপনার এক্স নিশি আপু আমাকে বলেছে আপনার সাথে কথা বলতে না।বললে আমার আম্মুকে বলে দিবে।আর আম্মুকে বললে আমি মার খাবো।তার চেয়ে কথা না বলাই ভালো।”

“ওও….আচ্ছা এইজন্যই কাল নিশি ওমন করলো।আচ্ছা তোমাকে একটা বুদ্ধি দেই তাহলে ও কিছু করতে পারবে না।”

“কি বুদ্ধি?”

“তুমি এরপর আমার সাথে কথা বলবে ওর সামনেই পরে ও কিছু বললে বলবে আমিও তোমার নামে অনেক কিছু জানি।তোমার আম্মুকে বললে সেটা কেমন লাগবে।”

“ওর নামে তো আমি কিছুই জানি না।” মধু ভ্রু কুঁচকে বলল।

“জানা লাগবে না।শুধু এতটুকু বললেই হবে।”

“আচ্ছা ভাইয়া।” এটা বলার পর মধু খেয়াল হলো ‘ভাইয়া’ মনের ভূলে ডেকে ফেলেছে।ক্রাশকে কেউ ভাইয়া ডাকে না কি!আর এদিকে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল”তুমি ভাইয়া বললে কেনো?”

“তো কি বলবো?”

“কিছু বলা লাগবে না তবু ভাইয়া বলবে না।”

“কেনো?”

“সুন্দরী মেয়েরা ভাইয়া বললে কষ্ট লাগে।”
ইয়াদের কথা শুনে মধু মিটমিটিয়ে হাসলো।ইয়াদ নিজেও মুচকি হেসে বলল”বাসায় যাবে নাকি আমার সাথে দৌড়াবে?”

“নাহ!আপনিই দৌড়ান।আমি এমনিতেই চিকনা দৌড়ালেতো বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।”

ইয়াদ হেসে বলল”আচ্ছা যাও।”

মধু বাসার দিকে রওনা দিলো।আর ইয়াদ দৌড় শুরু করলো।
——————
সারাদিন পড়াশোনা ঘরের কাজ আর রান্নাবান্না করেই সময় শেষ মধুর বাইরে যাওয়ার সময়ই পায় নি।দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।বিকেলে উঠতেই দেখলো আকাশ কালে হয়ে আছে বাইরে প্রচুর বাতাস!মধু তাড়াতাড়ি দরজা জানালা বন্ধ করে ছাঁদে গেলো।কয়েকটা কাপড় শুকোতে দিয়েছিলো।আল্লাহই জানে আছে কি না!নাকি সব উড়িয়ে নিয়ে গেছে।ছাঁদে গিয়ে দেখলো না আছে কিন্তু বাতাসে কাপড়গুলো পতাকার মতো উড়ছে।মধু কাপড়গুলো নিয়ে চলে আসতে নিলেই হঠাৎ বালুর মতো কিছু একটা চোখের মধ্যে পড়তেই মধু চোখ বন্ধ করে ফেললো।চোখে অনেক জ্বালা করছে।চোখ খুলতেই পারছে না।এদিকে ইয়াদ ছাঁদে উঠতেই দেখলো বাতাসের মধ্যে মধু দাড়িয়ে আছে চোখে হাত দিয়ে।ইয়াদ ওর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল”এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”

“চোখে কিছু একটা পড়েছে।চোখ জ্বালা করছে,কচকচ করছে।”

ইয়াদ মধুর হাতটা সরিয়ে চোখটা আলতো করে খুলে দেখতে লাগলো কিছু পড়েছে কি না!কিন্তু নাহ!কিছুই দেখতে পারছে না।ইয়াদ মধুর চোখে কয়েকবার ফু দিয়ে বলল”এখনও কি খারাপ লাগছে?”

মেহের বলল”না এখন ঠিক আছি তবে হালকা কচকচ করছে।”

“বাসায় গিয়ে মুখে পানি দিয়ে দিও।”

“আচ্ছা।”
মধু আর ইয়াদ দুজনেই নিচে নেমে এলো।মধু নিজের ঘরে চলে গেলো আর ইয়াদ নিচে নেমে গেলো।
—————–
বাইরে ভয়ংকর ঝড় হচ্ছে।বাসায় কারেন্ট নেই।পুরো অন্ধকারের মধ্যে জড়সড় হয়ে বসে আছে মধু।হঠাৎ দরজায় কেউ ধাক্কা দিলো।একবার ধাক্কা দিয়েই থেমে গেলো।মধু ভয়ে আরো সিটিয়ে গেলো।কারণ ও শুনেছে একবার দরজায় নক করে নাকি ভূতেরা।তারপর আবার তিন/চার বার নক করতেই মধু গুটিগুটি পায়ে দরজা খুললো।খুলতেই দেখলো ইরিন দাড়িয়ে আছে।ওর হাতে মোম।হাতের মোমটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল”একি অন্ধকারে বসে আছো কেনো?নাও এটা ধরো।আর আমাকে তোমার পদার্থবিজ্ঞান নোট খাতাটা দাও।কালকে আমার ক্লাস টেস্ট।”

মধু মোমবাতি দিয়ে খুঁজে ওর নোট খাতাটা বের করে ইরিনকে দিলো।খাতাটা নিয়ে ইরিন চলে যেতে নিলেই মধু বলল”বাতিটা নিবে না?”

“না ওটা তোমার কাছেই থাক।অন্ধকারে থাকা ভালো না।”

এটা বলে ইরিন চলে গেলো।মধু মোম নিয়ে ঘরে এলো।যাক অন্ধকারে তো আর থাকা লাগবে না।মোমটা টেবিলের ওপর রেখে মধু খাটে বসলো।

ঝড়বৃষ্টি কিছুক্ষণ পর থেমে যাওয়ায় কারেন্টও চলে এলো।মধু বৃষ্টি হচ্ছে কি না এটা দেখার জন্য জনালা খুলে হাত বাড়িয়ে দেখলো।নাহ!বৃষ্টি হচ্ছে না।তবে ঠান্ডা বাতাস বইছে।হঠাৎ মধুর বাগানে চোখ গেলো।এই বাড়িটা পেছনে একটা বাগান আছে।যেখানে কেউ ঢুকতে পারে না তবে মধুর জানালা দিয়ে বাগানটা পরিস্কার দেখা যায়।মধু সরু চোখে দেখলো কেউ একজন বাগানের বেঞ্চিতে বসে আছে।কে সে!

চলবে……