সুখ পাখি পর্ব-০৬

0
1454

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০৬

সূর্য মামা ব্যস্ত কালো মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলতে। আদারা মাহিরকে একটু দেখে হাটতে লাগে আবার। মাহির কোন রকম উঠে আবার দৌড় দেয় আদারার সাথে। আদারা সামনে তাকাতেই দেখে গোবর আর সেটা দেখে তার মাথায় বুদ্ধি আসে সে সরে দাড়ায় আর মাহির তার কাছাকাছি আসতেই নিজের একটা পা বাড়িয়ে দিলো আদারা। আর ধপাস করে……মাহির পরে যায় গোবরে আর তা দেখে আদারা হাসি দিয়ে বলে

—- ওয়াও,, হাউ কিউট। এখন একদম মহিষ মহিষ লাগছে । তখনই মাহির উঠে দাড়ায় তার কোট গোবরে মেখে আছে। সেটা দেখে মাহির বলে

—- ছিঃ কি বাজে গন্ধ। আদারা একটা মেকি হাসি দিয়ে মাঠ বরাবর দেয় একটা দৌড় মাহিরও তার কোট টা খুলে ছুড়ে মারে আর আদারার পিছনে পিছনে সেও দেয় এক দৌড়। হঠাৎই খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয় । বৃষ্টি শুরু হওয়ার ফলে আদারা মাহিরের দিকে ফিরে আসে। মাহির কাক ভিজা হয়ে আছে। সাদা শার্টটা লেপ্টে আছে তার গায়ে। সামনের চুল থেকে টুপ টুপ করে জল ঝরছে। আদারার কাছে তাকে বর্তমানে কিং ওফ মায়ার বাদশাহ মনে হচ্ছে। অপর দিকে মাহির এক মনে তাকিয়ে আছে আদারার দিকে। মেয়েটাকে সে কখনো এমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেনি কিন্তু আজ কেন জানি ইচ্ছে হচ্ছে তাকে দেখেতে। ঘন কালো চুল, মিষ্টি একটা মুখ, ঘন পাপড়ি ওয়ালা ডাগর ডাগর চোখ। আর সেই চোখে তার জন্য কখনো থাকে অভিযোগ, কখনো অভিমান আবার কখনো ভালোবাসা। মাহিরকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদারার একটু আনইজি লাগে তাই সে মাহিরের কাছে গিয়ে বলে

— চলুন বাসায় ফিরে যাওয়া যাক। মাহির তখনও তাকিয়ে আছে আদারার দিকে আদারা মাহিরের সামনে তুড়ি বাজায় যার ফলে মাহিরের হুশ আসে। মাহিরকে আদারা বলে

— চলুন বাসায় যাওয়া যাক। মাহির বলে

— হুমমম। তারপর আর তাদের মধ্যে কোন প্রকার কথা হয় না। বাসায় এসে মাহির আর আদারা রুমে চলে যায়। ড্রয়িং রুমে কেউ ছিলনা তাই তারা তাড়াতাড়ি নিজেদের রুমে চলে আসে। রুমে এসে আদারা নিজের জামা নিয়ে ঢুকে ওয়াশরুমে আরো একবার শাওয়ার নিতে হবে তাকে। মাহিরও গেস্ট রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে আসে । আর এবারও আগের মতো ভেজা তোয়ালেটা বিছানায় ফেলে নিচে চলে যায় । আদারা শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে সকালের মতো এখনো মাহির ভিজা তোয়ালেটা বিছানায় ফেলে চলে গিয়েছে। আদারা বলে

— দাড়াও দেখাচ্ছি মজা। বলেই তোয়ালেটা তুলে নিল।

মাহিরকে না দেখে আদারাও নিচে যায় দেখে নিশুও চলে এসেছে আর দুই ভাই বোন ঝগড়া করছে। তাও আবার রিমোট নিয়ে। মাহির ডিসকাভারি দেখবে আর নিশু দেখবে সিরিয়াল। আদারা গিয়ে ওদের অপজিট সোফায় বসে পরে ম্যাগাজিন নিয়ে। তা দেখে নিশু বলে

— এই আদু ভাইয়াকে কিছু বল না। আদু নামটা শুনে মাহির হাহাহা করে হেসে দিয়ে বলে

—- এই যে আদু ভাই অপপস সরি আদু আপা। নিশু বলে

— নিজের বউকে কেউ আপু বলে। আদারা ম্যাগাজিনের পৃষ্টা উল্টাতে উল্টাতে বলে

— মহিষদের কি সেই সেন্স আছে বল। আর সে তার বন্ধু দের মিস করছে তাই সে ডিসকাভারি দেখবে। মাহির ভাবতেই পারেনি আদারা তাকে এভাবে অপমান করবে। মাহির বলে

— দেখব না আমি তুই দেখ। মাহির উপরে উঠতেই আদারা আর নিশু ফিক করে হেসে দেয়। মাহির উপর থেকে দেখে বলে।

— এই দিন দিন না আমারও দিন আসবে। কিন্তু কবে??

অপর দিকে মাহিরের বাবা আর চাচাকে মাহিরের আম্মু জানিয়ে দিয়েছিল মাহির আর আদারা ঘুরতে বেড়িয়েছে। যদিও কলটা মাহিররে বাবাই করেছিলেন।

অপর দিকে কেবিনে বসে বর হচ্ছে মায়া। প্রায় মাস তিনেক হলো সে এই অভিনয় করছে। আর আজকে তার বাইরে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। আর আজ যেহেতু মাহির তাকে দেখতে আসেনি সকালে এর মানে আজ আর সে আসবে না। মায়া তাই তার মাকে বলে বাইরে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়ে নেয়। সেও রাজি হয়ে যায় মেয়েটা তার প্রায় তিন মাস যাবৎ এই চার দেওয়ালে বন্ধি। বিকেলে বৃষ্টি ঝড়ে যায়। মায়াও সেজেগুজে বেড়িয়ে পরে। আহহ আজ কত দিন পর সে বেড়িয়েছে। সামনে যেতেই মায়ার চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। তার ভালোবাসার মানুষটা আসছে। মায়া দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে। কিন্তু মায়াকে এভাবে দেখে রেগে বম হয়ে যায় সেই ব্যক্তি তাই সে তার হাত ধরে টেনে কেবিনে নিয়ে আসে। মায়ার মা এই ভয়টাই পাচ্ছিল আর সেটাই হলো। মায়াকে সে ব্যক্তিটা কেবিনে নিয়ে দরজটা লক করে দেয়। আর মায়া কে চেপে ধরে বলে

—- তোমার কি সেন্স বলতে কিছু নেই? আজ যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে? বল আমাকে? যদি মাহির ভাইয়া তোমাকে দেখে ফেলতো? ধারণা আছে তোমার কি হতো? মায়া নিজেকে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে বলে

—- Just stop It আকাশ!!! আর কত? আর কত এভাবে থাকবো আমি? আর তোমার জন্য এইসব হয়েছে যদি না তুমি এই নাটকটা করতে। সামান্য কিছু টাকার জন্য তুমি নিজের বউকে তোমার বর ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে দিলে!!!! আকাশ বলে

—- আমি সব ঠিক করতে চাচ্ছি, আর মাহির আদারাকে বিয়ে করে নিয়েছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই আমি সত্যিটা বলে দিব ভাইয়াকে। মায়া বলে

— কি বলবে? কেন করেছিলে এমন!!! আর তোমার কি মনে হয় মাহির আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে? তখন যদি তুমি বাঝিতে না হারতে তাহলে এমনটা হতো না আকাশ!!! সেদিন পার্টিতে বারবার বলেছিলাম তুমি কার্ডস খেলোনা। দিব্যিতো ভালোছিলাম আমরা। আর তুমিই তো বলেছিলে খুব জলদি তুমি নিজের পরিবারের সামনে আমাকে নিয়ে যাবে!!! কোন মুখে নিয়ে যাবে তুমি?? আর মাহির আমাকে ভালোবাসে, আর আমার জন্য আদারের মতো একটা মিষ্টি ভালো মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে । আকাশ বলে

—- মাহির তোমাকে ভালোবাসে এটা তোমার ভুল ধারণা মাহির আদারকে ভালোবাসে কিন্তু সেটা তার অজানা। ঐদিন আদারের যাওয়ার পর ৭দিন তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি মাহির। আর ঐ সাত দিন সে ছিল একা, কিন্তু যখন আমি তোমার ফ্রেন্ড হয়ে ফেল আইডি দিয়ে তোমার মিথ্যা এক্সিডেন্ট এর কথা জানাই তখন সে আসে তোমাকে দেখতে। আর আদারা ছিল শুধু একমাত্র ওয়ে। কিন্তু আমি কি জানতাম নাকি যে মাহির এইসব করবে। মায়া আকাশকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলে

— তোমরা ছেলেরা আমাদের মেয়েদের পেয়ছটা কি? খেলার পুতুল মনে হয় আমাদের? মাহির আর তুমি আজকে আমাকে আর আদারাকে যেই কষ্ট টা দিচ্ছ৷ কাল সেটার জন্য হয়তো আমার তোমাদের কাছে নাও থাকতে পারি। তুমি তো শুধু নিজের দিকটা বুঝ আমার দিকটা কখনো দেখেছ? তুমি একটা সেলফিস। আকাশ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না, মায়াকে একটা চড় বসিয়ে দেয়। মায়া এবার না পেরে কেঁদেই দেয়। আকাশ মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে

—- সরি, আমি জানি মাহির ভাইয়া আমাদের সম্পর্কটা মানতে নারাজ হবে। কিন্তু কি করব বল তখন আমার কাছে টাকা ছিল না। আর অফিসে জয়েন করেছি এক মাস। আর ঐদিন আমি ড্রাংক ছিলাম। প্লিজ মায়া। আমি সরি। মায়াও আকাশকে জড়িয়ে ধরে। আকাশ বলে

—- I love you… love you so much। মায়াও আকাশকে জড়িয়ে কেঁদে বলে

— Love you too….আর তখনই কেবিনে প্রবেশ করে কেউ,,, মায়া চোখ মেলে যাকে দেখে তাতে সে

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে