In Depths of Love Part-06

0
1816

#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০৬ ||
___________________________________________

রাত প্রায় ২টা! পশ্চিম আকাশে রুপালি রঙের থালার মত চাঁদ উঠেছে। মাঝে মধ্যে উত্তর দিক থেকে দমকা হাওয়া বইছে। সে-ই হাওয়াতে রিমির খোলা চুলগুলো লুটোপুটি খাচ্ছে। বাতাসে তার ফুল গাছগুলোর থেকে মিষ্টি সুভাস ভেসে বেড়াচ্ছে। রিমি চোখ বন্ধ করে বেলকনিতে বসে রাতের সে-সব সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

–‘কি অপরূপ সৃষ্টি সৃষ্টিকর্তার! এসব মনোমুগ্ধকর সৃষ্টি দেখলে মন-প্রাণ ভরে যায়। মানুষও তার সৃষ্টি! কিন্তু মানুষ তার মনের ভিতরে অনেক কিছু লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে। বাহিরে প্রকাশ করতে চায় না। কত অদ্ভুত তাই না? সত্যিই বড় অদ্ভুত! তার চেয়ে অদ্ভুত হলো রোমান। সবাই জানে উনি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। কিন্তু সে আমাকে কখন, কোথায় প্রথম দেখছে। তা আজও আমি জানি না। কখনো উনি স্বেচ্ছায় মুখ ফুটে বলেনও নি। আবার মিতু, যে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসত। সে আজ আমার থেকে অনেক বড় সত্য লুকিয়েছে। কিন্তু কেন? কেন আমি সমাধান করার বদলে বারবার গোলক ধাঁধার ভিতরে ফেঁসে যাচ্ছি।’
_______________________🍁🍁

সকালে গাঁয়ে ভেজা কিছু অনুভব করতেই লাফ দিয়ে উঠে বসে রিমি। জামায় হাত দিয়ে খেয়াল করে তার পুরো জামাটা পানিতে ভিজে রয়েছে। তিথীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
–‘এই তিথুর বাচ্চা, আমার গাঁয়ে পানি এলো কোথা থেকে?’

–‘কোথা থেকে আবার আসবে? জগ থেকে এসেছে।’ বলে খিলখিল করে হাসতে শুরু করল।

তিথীর হাসি দেখে রিমির রাগ যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল। কড়া গলায় সে তিথীকে বলল,
–‘হাসা বন্ধ করবি তুই? এখন বল পানি কেন ঢেলে দিয়েছিস আমার উপর?’

–‘ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ ক’টা বাজে! এত বেলা অব্দি কেও ঘুমায়? শ্বশুড় বাড়িতেও নিশ্চয় এভাবেই এত বেলা অব্দি ঘুমাস। তোরে কেও বকে না?’

–‘আজ্ঞে না, ম্যাডাম! কাল রাতে দেরি করে ঘুমানোর ফলে সকালে আমার ঘুম ভাঙে নি। তাছাড়া তুই জানিস, আমি কখনো লেট করে ঘুম থেকে উঠি না। বরং, সবার আগে উঠি।’ (ভেংচি কেটে বলল)

–‘হইছে, মহারানী! আপনার আর নিজেরে নিয়ে গুনগান গাওয়া লাগব না। আপনি এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।’

–‘আচ্ছা!’
.
.
.
ড্রাইনিং টেবিলে বসে সবাই খাবার খাচ্ছে। এর মধ্যে হঠাৎ রিমির বাবা (আমির) আহানাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
–‘রিমি, তিথী ওরা যখন এখানে আছে। তাহলে অধরা (তিথীর মা) ওদেরও আসতে বলো। রিধিকেও আসতে বলো, মেয়েটার সাথেও তো অনেক দিন দেখা হয় না। সবাই নাহয় এখন একসাথে কিছু দিন টাইম স্পেন্ড করি। কেমন হয় বলো?’

–‘খুব ভালো প্রস্তাব! আমি এখনি ওদের কল করে আসতে বলছি।’

মিসেস আহানা উঠে যেতে নিলে রিমির ফোনের টোনটা বেজে উঠে। রিমি স্ক্রিনের উপর নাম না দেখেই তাড়াহুড়ো করে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কারো নরম গলা ভেসে আসল।

–‘হ্যালো, রিমি! কেমন আছো?’

–‘ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’

–‘এইতো আছি! একটা কথা বলার ছিল। জানি তোমার খুব খারাপ লাগবে। বাট আমার কিছু করার নেই।’

–‘কি কথা? আগে সে-টা তো বলবেন।’

–‘আসলে, আমার এখন অফিসে কাজ কম। তো তাই আম্মু বলছে আমাদের এখন দু’জনের কিছু টাইম একা স্পেন্ড করা উচিত। তোমাকে কোথাও নিয়ে যেতে বলছে। কয়দিন পর আবার তো আমার কাজের চাপ বাড়বে। সেজন্য আম্মু বলছে এখনি কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য।’

–‘কিন্তু, আমি তো গতকাল কেই আসলাম। আজ-ই আবার চলে যাব? এটা কেমন কথা হলো?’

–‘আরে বাবা! আমার এখন কাজ কম বলে আম্মু বলেছে। আর তাছাড়া আমরা ঘুরে আসার পর নাহয় আবার যেও।’

–‘বাট…!’

–‘আচ্ছা তুমি যদি রাজি না হও, তাহলে আম্মুকে আমি মানা করে দিচ্ছি।’

–‘এই না, না! আমি যাব। আম্মুকে মানা করা লাগবে না।’

–’এটাই তো সুযোগ, আপনার মুখ থেকে কথা বের করানোর। এরপর মনে হয়না এত ভালো সুযোগ পাব!(মনে মনে)

–‘ওকে, ডান! আমি তাহলে বিকেলে পিকাপ করতে আসব নি। এখন রাখছি।’

–‘আচ্ছা!’

–‘কিরে রিমি? কি হয়েছে রে? জিজু কল করেছে না-কি?’

–‘হ্যাঁ, আসলে আম্মু চাচ্ছে আমরা দু’জন একটু বাহিরে ঘুরে আসি। রোমানের এখন কাজের চাপ কম তাই!’

–‘সবে মাত্র তো আসলি রে! এখনি?’

–‘তিথু, আমি ঘুরে এসে আবার আসব।’

–‘কি আর করার? পরিস্থিতিকে এখন তো মেনে নিতেই হবে।’
____________________🍁🍁

বিকেলে বাহিরে গাড়ির হর্ন বাজতেই রিমি বেলকনি থেকে রোমানের গাড়ি দেখে নিচে নেমে আসে। দরজা খুলে দিলে রোমান গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে আসে। কিছুক্ষন গল্প-গুজব, খাওয়া-দাওয়া হওয়ার পর রোমান যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। রিমিকে উপরে লাগেজ আনতে পাঠায়। রিমি উপরে গিয়ে দেখে তিথী কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। রিমির কোনো সন্দেহ নেই, তিথী কেন নিচে যায় নি? রিমি যাওয়ার সময় বারবার তিথীকে জোড় করেছে নিচে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তিথী বাহানা দিয়ে কথাটা এড়িয়ে গেছে। এখন তো রিমির রহস্যটা জানা আরো জরুরি হয়ে গেছে।

–‘তিথু! নিচে এলি না কেন?’

তিথী গান শোনাতে বিভোর। যার করুন, রিমির কথাটা তার কান অব্দি পৌঁছায় নি। এবার রিমি ক্ষিপ্ত হয়ে তিথীর হেডফোন খুলে দিয়ে বলল,

–‘তিথী, আমি তোকে কিছু বলছি!’

–‘হুম, তো বলনা! কে মানা করেছে?’

–‘নিচে আসলি না যে!’

–‘ভালো লাগছিল না তাই।’

–‘রোমানকে তো তুই দেখিস নি। তোর তো আবার মানুষ দেখার কৌতুহল অনেক! তাহলে আজ না যাওয়ার কারন?’

তিথী কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিমি তার হাত উঁচু করে তিথীকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
–‘ওহ, প্লিজ! এটা বলিস না, যে তোর ভালো লাগেনি বলে যাস নি। কারন আমি তোকে খুব ভালো করেই চিনি।’

–‘এতই যখন চিনিস, তাহলে বলনা কেন আমি গেলাম না নিচে? আছে উত্তর? আছে? আছে তোর কাছে?’

–‘যদি বলি আছে!’

রিমির কথা শুনে তিথী একটা শুকনো ঢোক গিলল। ওর হাত-মুখ ভয়ে ঘেমে যাচ্ছে! রিমি সিউর, তিথী কিছু একটা তো করেছে। যার জন্য এতটা ভয় পেয়ে আছে।

–‘কি হলো? তুই এত ঘামছিস কেন?’

–‘কই? আমি ঘামছি না তো। এখন তুই বল, আমি কেন যাই নি?’

রিমি একটা ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে স্ট্রেইট কাট বলে দিল,
–‘তুই কোনো কিছু নিয়ে ভয়ে যাস নি। অ্যাম আই রাইট?’

–‘কিসের ভয়? আর আমি কেন ভয় পেতে যাব?’

–‘এটা তুই খুব ভালো করেই জানিস।’

তিথী আর কিছু বলতে পারল না। তার আগেই রুমে রোমানের আগমন!

চলবে….☘️☘️

~বি.দ্র: রিচেক দেওয়া হয়নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে