Sunday, July 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1417



গৃহযুদ্ধ পর্ব-১৫

0

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ১৫
#লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ
________________________________
” আমি ভাবতেও পারছিনা আমার বউ এর এমন কিছু ছবি এ ফোনে খুঁজে। যাই হোক আমি ওকে এ বিষয়ে কিছু বলবো না। শুধু ওকে না কাউকেই কিছু বলবোনা। ”
বেচারি যদি মেসেজটা পড়ে থাকে তবে কনফিউশান এ পড়ে যাবে, আমি নাকি সুপ্তি কার কাছে ও ধরা পরে গেছে!
মানুষের মনের ভেতরে এরকম প্রেসার সৃষ্টি করে রাখার চেয়ে বড় মাপের শাস্তি আর হয়না। তবে এর থেকেও ভয়ানক শাস্তি,অপেক্ষা করছে রেশমির জন্য,এবং অবশ্যই সেটা শারিরীক।

.—*———–
সিঁড়ি থেকে উপরে ওঠার সময়ে একটা মাঝবয়েসী ছেলের সাথে ধাক্কা খেলাম। ভুলটা আসলে আমার ই। মোবাইল টিপতে টিপতে উপরে উঠছিলাম, দেখিনি। সরি বলার সময়ে খেয়াল করলাম এ ছেলেটাকে পূর্বে কখনো এই বিল্ডিং এ দেখিনি। বেশ লম্বাচওড়া, ছ’ফুট হবে।চেহারার রঙ ফর্সা, ক্লিন শেভড, চুলগুলো সিল্কি, একটু লম্বা করে রাখা। বাম হাত দিয়ে লম্বা চুল পেছনে ঠেলে বেশ সুন্দর ভাবে বলো,
It’s ok bro…
” আপনাকে আগে তো কখনো দেখিনি এখানে!
ছেলেটি মুচকি হেসে বললো,
“আমি রবিন। আজ-ই এ বিল্ডিং এ উঠেছি। ফোর্থ ফ্লোরে। ”
ওহ, আচ্ছা, বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম।
মণিকা ভাবীকে সুন্দরভাবে একটা সরি বলা উচিৎ। আমার বাসায় আসা গেস্ট এর বদমায়েশির কারণে বেচারি মন ও শরীর দুটোতেই ব্যথা পেয়েছে।
কিন্তু আবার যখন মনে পড়লো,জানালার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকার কথা, লজ্জায় আর তার সামনে পড়ার সাহস করলাম না৷
সোজা বাসায় চলে গেলাম।
রেশমি অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। সুপ্তির সাথে তেমন বেশি কথা বলে না। আমাকেও একটু এড়িয়ে চলে। সুপ্তি প্রথম প্রথম বিষয়টি খেয়াল না করলেও পরে ঠিক ই ধরতে পারে। এসব ঝামেলায় আমার অনলাইনে সময় দেয়া হচ্ছে না। সুপ্তির ও অফিস নেই।
হাতের টাকা পয়সাও শেষের দিকে।রেশমি বিষয়টা বুঝতে পেরে সুপ্তির টেবিলের উপরে পঞ্চাশটি এক হাজার টাকার নোটের একটা বান্ডেল রেখে দেয়।
সুপ্তি কিংবা আমি দুজনের কেউ ই সে বান্ডেল ছুঁয়েও দেখিনি। রেশমির বোধ হয় বিষয়টা আরো বেশি খারাপ লাগে। সে পুরোপুরিভাবে নিজেকে একা করে নেয় এবং আমাদের থেকে দূরে থাকতে শুরু করে।ইদানীং রেশমির মোবাইল ও পরে থাকে সোফা কিংবা বিছানার উপরে। রেশমি বিষন্ন মনে ছাদে কিংবা বারান্দায় পায়চারী করে।
রেশমির বিষয়টাকে স্বাভাবিক করার জন্য সুপ্তি সিদ্ধান্ত নেয়, রেশমির সাথে খোলাখুলি ভাবে সাময়িক সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
.

হঠাৎ কলিংবেল বেজে ওঠে। খুলে দেখি ফুলী এসেছে। ওর কাছে শুনলাম আমাকে জরুরী তলব করেছে মণিকা ভাবি। হয়ত বাসা ছেড়ে দিতে বলবে।মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।
ফুলীর সাথেই গিয়ে মনীকা ভাবীর বাসায় ঢুকলাম।
দেখলাম তিনি নেই। গেস্টরুমের সোফার উপরে বসে মণিকা ভাবীর অপেক্ষা করলাম কিছুক্ষন।
নিশ্চয়ই তিনি আমার জন্য চা বানাতে ব্যস্ত! তার হাতের চা মানেই অভাবনীয় স্বাদে কিছুক্ষন ডুবে থাকা।
চোখ বুজে চায়ের কল্পনায় ডুবে গেলাম।
মণিকা ভাবী কখন পাশে এসে দাঁড়ালেন, খেয়াল করিনি।
খুক খুক করে কাশি দেয়াতে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি,ভাবী দাঁড়িয়ে আছেন।
তার হাতে চায়ের কাপ?
কোথায়?
তার হাতে চায়ের কাপের বদলে কিছু কাগজপত্র।
মনে মনে খুব দুঃখ পেলাম। মণিকা ভাবী তো এমন না!
তিনি আমার হাতে কাগজগুলো ধরিয়ে দিয়ে বললেন, বাসার দু মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকি
আছে। একটু গিয়ে পরিশোধ করে আসবে?
কি আর করবো! না তো বলতে পারিনা। বললাম, আচ্ছা।
উনি বললেন, ঠিক আছে। বলে আমার হাতে বিলের টাকা দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।
হুট করে মণিকা ভাবীর আচরনগত এত পরিবর্তন!
মন একটু খারাপ করে তার বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।
.
.
.
বাসায় এসে বাইরে বের হওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি, সুপ্তি তখন আমাকে ডাক দিলো।
রুমে নিয়ে গিয়ে বসালো।
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
” রেশমির সাথে আমি কথা বললাম,”
ওর সম্পর্কে ভয়াবহ কিছু তথ্য জানতে পারলাম। এখন আমি স্বাভাবিক হতে পারছি না। ”
-কি জেনেছো, বলো আমাকে!
-রেশমি আমাকে অনেক মিথ্যা বলেছে রোহান। ও রফিক সাহেবকে ঠকিয়েছে। স্মরন নামের একটা ছেলের সাথে রেশমির পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো৷
– আচ্ছা আর কি বললো?
– ও রফিক সাহেবের লাইফ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছিলো। এজন্য রফিক সাহেবের একটা ভুল পেতেই, রফিক সাহেবকে হুট করে সবকিছু থেকে বের করে দিলো। পরে প্লান করছিলো স্মরন এর সাথে বিয়ে করে নেয়ার এবং একত্রে থাকার।
– ওহ। আচ্ছা।
– কিন্তু গত দু’দিন যাবৎ স্মরন নিঁখোজ৷ রফিক সাহেব তার দলবল নিয়ে স্মরনকে কিডন্যাপ করেছে৷ রেশমিকে একটা ভিডিও পাঠিয়েছে। স্মরন আটকানো অবস্থায় আছে৷ ওর দেহ রক্তাক্ত৷ রফিক সাহেব ভিডিও বার্তায় বলছেন, তার সব সম্পত্তি ফেরত দিতে,নইলে স্মরনকে মেরে ফেলবে।
রেশমি এ ভিডিওটা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে রফিক সাহেব এবং স্মরন সবাই নিঁখোজ।
সুপ্তির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম, এটা ওদের ঝামেলা। তুমি এত সিরিয়াস হচ্ছো কেনো সোনা!
সুপ্তি বললো- রেশমিকে আমি অনেক ভালো ভাবতাম। আমি ধর্ষিতা, হয়ত আমার শরীরে অনেকের স্পর্শ আছে। কিন্তু রেশমির মত নোংরা মনের অধিকারী আমি নই রোহান। আমি ওর থেকে অনেক ভালো আছি৷ যাদের মন নোংরা থাকে,মনে অন্য মানুষদের নিয়ে চিন্তাভাবনা থাকে তারা পতিত্মতাদের থেকেও খারাপ। পতিতারা জীবন জীবিকার জন্য খারাপ কাজ করে। কিন্তু ওরা? ওদের সব থেকেও নিরবে নিভৃতে ঠকিয়ে যাচ্ছে কাছের মানুষটাকে। আমার নিজেকে অনেক অপরাধী লাগত কিছুক্ষন আগেও। রেশমির কাছ থেকে এগুলো শোনার পরে নিজেকে ওর থেকে একটু হলেও ভালো মনে হচ্ছে।”
সুপ্তির কথাগুলো শুনে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। শ্রদ্ধাবোধ অনেক বেড়ে গেলো।
খারাপ কাজ কখনো ভালো ফলাফল বয়ে আনেনা। রেশমির জীবনে সব আছে। কাড়ি কাড়ি টাকা,অর্থসম্পদ, বাড়ি গাড়ি সব। কিন্তু দেখো, ওর মনে শান্তি নেই৷ একটুও শান্তি নেই৷ এসব মানুষরাই জীবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সুইসাইড নামক অভিশাপের মাধ্যমে। পুলিশ যদি রফিক সাহেবকে ধরতে পারে, রেশমির এসব ব্যাপার পুরো দেশবাসীর সামনে আসবে। ও কি করে নিজেকে সামলাবে তাই ভাবছি।
.
.
.
মণিকা ভাবীর হাতে চা খুব মিস করছি। ওনার বাসায় গেলেই চা দিয়ে আপ্যায়ন হবে তা জানি৷ তাই কোন একটা উপায় খুঁজতে লাগলাম, কি উসিলায় মণিকা ভাবীর বাসায় উঁকি মারা যায়।
বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরে খুচরা কিছু টাকা বেঁচে গেছিলো।
ভাবলাম ওটা নিয়েই মনিকা ভাবীর কাছে যাই।
ভাবীর দরজার কলিং বেল প্রেস করলাম বেশ কয়েকবার।
ভাবী দরজা খুলে সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কি প্রয়োজন?
বললাম, ভাবী টাকা গুলো বেঁচে গেছে রাখুন।
উনি বললেন, সমস্যা নেই তুমি চা খেয়ে নিও। বলে একটা হাসি দিলেন, যার অর্থ এবার তুমি আসো। অবাক হলাম। মনে মনে ভাবলাম, তিনি হুট করে আমার সাথে এমন আচরণ করছেন, হয়ত রেশমির ব্যপারে রাগ করে আছেন৷ ওনাকে সরি বলে নেই ভালোভাবে।
মণিকা ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললাম,
ভাবী সমস্যা না থাকলে একটু ভেতরে আসতে পারি?
ভাবি মনে হয় আনকম্ফোরট্যাবল সিচুয়েশনে পড়ে গেলেন।
সে একটু হেসে বললেন,
আচ্ছা আসো ভেতরে এসে বসো।
ভেতরে ঢুকেই মোটামুটি বড় আকারে একটা ঝাটকা খেলাম।
দেখলাম বারান্দার টেবিলে বসে আছে রবিন। তার সামনে সাজানো সারি সারি খাবার। রবিনের হাতে মণিকা ভাবীর সেই ডায়েরিটা।
আমাকে ওদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মণিকা ভাবী জিজ্ঞেস করলো,
কি যেন বলবে বলছিলে?
বললাম, রেশমির বিষয়ে সরি বলতে এসেছিলাম।
মণিকা ভাবী বললো, আরে আমি পুরো বিষয়টাতেই মজা পেয়েছি। ছোট বেলায় বান্ধবীরা মিলে একে অন্যকে এভাবে কত জব্দ করতাম! পুরোনো দিনে ফিরে গেছিলাম। আমি এগুলোয় কিছু মনে করিনি। তুমি এবার আসো।
– আচ্ছা বলে উঠে গেলাম।
মনটা বিষন্নতায় ভরে গেলো!
আহা! মণিকা ভাবীর সাধের রান্না ঐ স্মার্ট রবিন এসে আমার থেকে কেড়ে নিয়ে গেলো।
রবিনকে জব্দ করার একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে। মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হবে রবিনকে সরানোর জন্য রেশমিকে ইউজ করতে হবে।
.
.
চলবে….

গৃহযুদ্ধ পর্ব-১৪

0

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ১৪
________________
সোফার উপরে রেশমির ঘুমন্ত দেহ নিথর হয়ে পরে আছে।
সুপ্তিও ডুবে গেছে গভীর ঘুমে।
বাসার লাইট নিভিয়ে আমি ড্রয়িং রুমে এপাশ-ওপাশ হাঁটাহাঁটি করে চলেছি। মাথায় অগোছালো কিছু চিন্তাভাবনা ঘূর্ণিঝড় তুলেছে। আবছা অন্ধকারের পরিবেশটা ধূমায়িত করে তুলে,তারপর জটিল সব চিন্তাভাবনায় ডুব দিতে হবে। ম্যাচের কাঠিতে ঘষা দিতেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠলো। সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলাম।
“রেশমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে যে ছেলেটার সাথে কথা বলে, সে যদি সম্পর্কে রেশমির কিছু হয়েও থাকে, কিংবা রেশমি যদি পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে রফিক সাহেবের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে, তাতে আমার কি!!
এটা রেশমির একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার।আমি নাক গলানোর প্রয়োজনবোধ করিনা।
তবে আমার সমস্যাটা অন্য জায়গায়! এসবের মাঝে সুপ্তি কেনো!
রেশমি আমাকে যখন সুপ্তি এবং রফিকের ইন্সিডেন্ট এর কথা বলেছিলো, তখন কথায় কথায় বলে ফেলেছিলো,
” রফিক, সুপ্তির রুমে ঢোকার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি কি হয়েছিলো সব কিছুই আমার কাছে সংগ্রহিত আছে। আমি সব ভিডিও করে রেখেছি।”
রেশমির এ কথাদুটো আমার মস্তিষ্ককে ভাবিয়ে তুলে আছাড় মারে।
কিছুক্ষন পরে জটিল কোন কিছু ঘটতে যাচ্ছে এমনটা যখন মানুষ শতভাগ শিওর থাকে, তখন ই কেবল ভিডিও ক্যামেরা অন করে তা রেকর্ড করার চিন্তাভাবনা করে।যদি রেশমির পূর্ব পরিকল্পনা না থাকত, তবে নিশ্চয় ই রফিক সাহেবের ঘটনাটা পুরোপুরিভাবে সে রেকর্ড করতে পারতো না। রেকর্ড করা তো দূরে থাক,সবকিছু যদি রেশমির বর্ননা মতো স্বাভাবিক থাকতো,।তবে রফিক সাহেব সুপ্তির ঘরের দিকে পা বাড়াতে দেখলেই রেশমি জিজ্ঞেস করতো, ওদিকে কেনো যাচ্ছো! কোন প্রয়োজন কিনা!”
যাই হোক!
যেহেতু পুরো বিষয়টার সাথে সুপ্তি জড়িয়ে গেছে, তাই রেশমির পারসোনাল জীবনে একটু তো ঘাটাঘাটি করতেই হয়।
সিগারেট শেষ হয়ে এসেছে৷ তবে পুরো শেষ হয়নি। সিগারেটের থেকে রহস্য আমাকে বেশি টানে।
বাকি যেটুকু ছিলো তা অ্যাশট্রেতে ফেলে উঠে গেলাম।
আমার সামনেই রেশমি। রাতের নিস্তব্ধতায় ওর নিঃশ্বাসের শব্দটাও কানে এসে লাগছে।
মাথার কাছ থেকে রেশমির ফোনটা নিলাম। ওর ফিংগারপ্রিন্ট ইউজ করে ফোনের লক খুললাম। একজন মানুষের ব্যক্তিগত মোবাইল হাতে পাওয়া মানে তার সবকিছুই পেয়ে যাওয়া, কন্টাক্ট লিস্ট সহ সবকিছু ধীরে ধীরে চেক করতে থাকি, আস্তে আস্তে বের হতে থাকে ভয়ানক সব তথ্য।
সবচেয়ে বেশি শকড হই যখন আমি রেশমির গ্যালারিতে ঢুকি। একটু নিচের দিকে স্ক্রল করতেই দেখতে পাই সুপ্তির ছবি।
রেশমির ফোনের গ্যালারিতে সুপ্তির ছবি থাকবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না৷ কিন্তু ছবি গুলো কোনো স্বাভাবিক ছিলোনা। জামাকাপড় বিহীন পুরো নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে সুপ্তি, ঘুমন্ত অবস্থায় আছে ও।
পাশে একই অবস্থায় শুয়ে আছে রেশমিও,কিন্ত ও ঘুমন্ত না। ছবি তোলার ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, রেশমি এক হাত দিয়ে সুপ্তির সাথে এমন ছবি তুলেছে।
কিন্তু এটার উদ্দেশ্য কি হতে পারে!
রেশমি কি সমকামী!
ছবিগুলো আমার ডিভাইসে শেয়ার করে নিয়ে ডিলেট দিয়ে দিলাম।
ফোন ঘাটাঘাটি করে বের হয়ে এলো আরো চমকপ্রদ তথ্য।এখন ইচ্ছে করছে রেশমিকে একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে চেয়ার সমেত উলটো করে ফ্যানে ঝুলিতে রাখতে। কিন্তু এটা করা আমার জন্য খুব বোকামির কাজ হবে।
রেশমিকে ওর কাজ সামনে এগিয়ে নিতে দিলেই বরং আমার লাভ। একটা পুঁটিমাছ যদি হুট করে বিশাল সমুদ্রে এসে পরে তবে কেমন লাগবে!
আমার কাছে ঠিক তেমনটাই লাগছে।
রেশমির ফোন থেকে বেশ কিছু ডকুমেন্টস ও আমি আমার নিজের ডিভাইসে ফরোয়ার্ড করে নিলাম।।
সাথে ছিলো রফিক সাহেবে যে সুপ্তির রুমে প্রবেশ করেছিলো সে ভিডিওটাও।
বারান্দায় বসে ভিডিওটা কমপক্ষে বিশ বারের উপরে দেখলাম এবং একটা দারুণ বিষয় আবিষ্কার করলাম ঐ সময়ে রেশমির বাসায় শুধুমাত্র রফিক সাহেব সুপ্তি রেশিমি এবং কাজের মেয়ে বাদেও তৃতীয় আরেকজন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলো। মাত্র কয়েকসেকেন্ডের জন্য যার আবছা একটা ছায়ার প্রতিফলন দেখা গেছে।
আমি যদি ভুল না করি ফুলদানি দিয়ে জোড়ালো আঘাতটাও তৃতীয় কোন ব্যক্তি করেছে রেশমি না। ক্যামেরার এংগেলে সেটা বোঝা না গেলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে আমি ধারণা করে নিলাম।
রফিক সাহেবের সাথে আমার কথা বলাটা খুবই জরুরি।
শরীরের সব জামাকাপড় খুলে নিলাম।
অন্ধকারের চাঁদর ছাড়া আমার গায়ে আর কিছু নেই।
রকিং চেয়ারে বসে হাত পা ছড়িয়ে একটু রিলাক্স হওয়ার চেষ্টা করলাম। মাথায় চিন্তার প্রেসার বেশি থাকলে উদোম গায়ে চিন্তাভাবনা করে সঠিক সিদ্ধান্তে আসাটা সহজ হয়ে পরে।
নিজেকে অনেকটা হালকা ও ফুরফুরে লাগে।
ঠান্ডা মাথায় ভেবে চলেছি, চারপাশের অবস্থা খুব জটিল হয়ে গেছে। সুপ্তিকে নিয়ে অচিন কোন জায়গায় পাড়ি জমবো কিনা!
যেখানে আমাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করার কেউ থাকবেনা! নতুন একটা জীবন শুরু হবে আমাদের!
নাকি যে ঝামেলা গুলো জট পাকিয়ে আছে তার প্যাঁচ আস্তে আস্তে খোলার চেষ্টা করবো!
দুটো রাস্তায় আবার ফলাফলটাও ভিন্ন।
সুপ্তিকে নিয়ে দূরে চলে গেলে আমাদের চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়বে।
খাওয়াদাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবেনা।
ভালোবাসাপূর্ণ হলেও জীবন হয়ে উঠবে কঠিন।
পরবর্তী রাস্তায়,
জটে জটে রিএওয়ার্ড, একটা জট খুলে ফেলা মানে বড় অংকের টাকাপয়সা নিজের পকেটে আসা। তবে রিস্ক ও কম নয়। নিজেকে হারিয়ে ফেলার রিস্ক আছে,চিরতরে।
.
.
.
ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে এলো কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারলাম না। কি অনিশ্চিত আমাদের জীবন। বাথরুমে প্রবেশ করে ঝর্ণা ছেড়ে দিলাম।
নিজেকে ছোট বাচ্চাদের মত লাগছে। ছোট বাচ্চারাই শরীরে কিছু না জড়িয়ে ঘরের এদিক সেদিক দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। আমিও সেটাই করছি।
বেশ অনেক্ষন ধরে গোসল করলাম। ঝর্ণায় ভিজলাম। টাওয়েল আনতে মনে নেই। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেডরুমে গিয়ে টাওয়েল নিলাম। মেঝের অনেক জায়গা শরীরের পানিতে ভিজে গেলো।
বেডরুম থেকে টাওয়েল নিয়ে এসে আবার বাথরুমে ঢোকার ঠিক আগ মুহুর্তে চোখ গেলো বাসার দরজার পাশের জানালার উপরে। চোখ পড়তেই দেখলাম কেউ একজন দ্রুত সরে গেলো। আমি ভুল না করলে ওটা মণিকা ভাবি ছিলো। লাফ মেরে বাথরুমে ঢুকলাম।গায়ে টাওয়েল জড়িয়ে নিলাম। দরজার ফাঁকা দিয়ে হাত বের করে বাথরুমের লাইট অফ করে দিলাম। পরক্ষনেই হুঁশ হলো! যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে এখন এগুলো করে কি লাভ! লজ্জায় বাথরুমের ফ্লোরে বসেছিলাম অনেক্ষন।
.
.
.
সন্ধ্যার দিকে ঘুম ভাংগে সুপ্তি এবং রেশমির।
ওদের জন্য খাবার রেডি করা ছিলো। আমি গরম করে টেবিলে খাবার খেতে ডাকি। দুজনের কেউ ই তেমন কিছু টের পায়নি। ভেবেছে স্বাভাবিকভাবে একটু বেশি ঘুম হয়েছে সবার। ওদের সাথে আমিও এমন ভাব করেছি,
যেন আমার ঘুম ও একটু আগেই ভেংগেছে।
খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ হওয়ার পরে রেশমী সোজা বাথরুমে চলে গেলো। বাথরুম থেকে
শ্যাম্পুর বোতল এবং এক মগ পানি নিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে গেলো আমার ফ্লাট থেকে। ওর পিছু নিলাম আমি এবং সুপ্তি। দেখলা। মণিকা ভাবির দরজার সামনে রেশমি শ্যাম্পু এবং পানির মিশ্রন তৈরি করে খুব সুন্দরভাবে লেপন করছে। ওর কার্যক্রম দেখে আমার রাগ লাগলো। মণিকা ভাবী একবার আছাড় খেয়ে পরে বেশ কয়েকদিন অসুস্থ ছিলো, এখন রেশমি যেটা করছে সেটা একদম ই ঠিক করছে না। আমি অনেক সিরিয়াস মুডে রেশমিকে নিষেধ করলাম, বললাম যে কাজটা করেছো, ঠিক করোনি৷ বিষয়টাকে তুমি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছ রেশমি।
রেশমি আমার দিকে তাকিয়ে অবজ্ঞার হাসি হেসে বললো! বালাবালি! কিসেল বালাবালি! আমাল জীভ যে পুলিয়ে দিলো,এখন আমি থিকমতো কথাও বলতে পালিনা! বালাবালি তো মণিকা ই কলেছে। এল শেষ আমি দেখে ছালবো।
রেশমির কথা শুনে সিরিয়াস মুহুর্তে অনেক হাসি আসলো। পেটে হাসি চাপিয়ে রেশমিকে বললাম,
মণিকা ভাবীর বাসায় ফুলীও থাকে। ওর কোন বিপদ হয়ে যেতে পারে। তুমি যাই করো ভেবেচিন্তে করবে৷
আমাদের কথাবার্তার শব্দ শুনে দরজা খুলে বের হলো মণিকা ভাবি। এক পা সামনে দিতেই শ্যাম্পু পানির দ্রবনে পা পিছলে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললো। পাশে আমি দাঁড়ানো ছিলাম। আছড়ে পরে যাওয়ার আগেই ধরে ফেললাম তাকে।
মণিকা ভাবি তার দু হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো! এটা একটু বাড়াবাড়ি। উনি এমনটা না করলেও পারতেন। টুপ করে ওনাকে ছেড়ে দিলাম আবার। উনি হয়ত এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। ফ্লোরের উপর আছড়ে পড়লেন।বড় ধরণের কোন ক্ষতি না হলেও পুরো ব্যাপারটায় উনি ভীষন অপমানিত হলেন।
রেশমি তো হেসেই খুন!
তোতলাতে তোতলাতে বললো!
ডিয়াল ভাবী মণিকা,
যতই বুদ্ধী খাতাও পাঁকা,
আমি আংগুল কললে বাকা,
আপনাল হয়ে যাবে থব ফাঁকা!
সুপ্তি গিয়ে মণিকা ভাবীকে ফ্লোর থেকে তুলে নিলো এবং রেশমির পক্ষ হয়ে ক্ষমা চাইলো।
মণিকা ভাবী কিছুই বললেন না। চুপচাপ উঠে খোড়াতে খোড়াতে ভেতরে চলে গেলেন। দরজা আটকে দিলেন।
মনে মনে ভাবলাম! এই বুঝি বাড়ি ছাড়ার নোটিশ আসবে!
তিনজন বাসায় ফিরে এলাম।
আমার মাথা কিছুতেই স্বাভাবিক রাখতে পারছিলাম না।
রেশমিকে সহ্য হচ্ছেনা।
চাপ দাঁড়িওয়ালা ছেলেটার সাথে রেশমির একটা সম্পর্ক রয়েছে, রফিক সাহেবকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর,ঐ ছেলের সাথে চ্যাট, মেসেজ এবং ছবি আদান প্রদানের কোন কিছুই সে ডিলেট করেনি৷ কিন্তু তার আগের সবকিছুই রেশমির ফোন থেকে ডিলেট করা। এর একটাই মানে হতে পারে। রফিক সাহেব হয়ত রেশমির ফোন নিয়মিত চেক করতেন। এজন্যই রেশমি সবকিছু ডিলেট করে রেখেছিলো। আমার সিক্সথ সেন্স যা বলছে,
তা হলো,
সুপ্তির দেহের প্রতি রফিক সাহেবের যাতে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, এজন্য রেশমি তার নিজের ফোনে সুপ্তির এসব ছবি তুলে রেখেছিলো। রফিক সাহেব যখন রেশমির ফোন চেক করতেন, তখন সুপ্তির এরকম ছবি দেখে তার মাথায় বাজে চিন্তা ভর করেছিলো!
তবে এটা আমার ধারণা মাত্র।
আপাতত নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে।
আন্ডারগ্রাউন্ড বস দের কাছে, এখন আমি টপ টার্গেটের একজন। তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসেনা। ওরা যে ব্যক্তিকে খুন করার জন্য টার্গেট করেছে সেটা আমার ছদ্মবেশ।
সাধারণ জীবনে আমি নিতান্তই ভদ্র একজন মানুষ।কয়েকঘন্টার ভেতরে
রেশমির ব্যবহার হুট করে পরিবর্তন হয়ে গেলো।
রেশমি অপরাধ বোধ নিয়ে আমার দিকে এবং সুপ্তির দিকে তাকাচ্ছে।
আমাদের দুজনকেই এড়িয়ে চলছে।
ছবিগুলো ডিলেট করে দিয়েছি ওর ফোন থেকে সেটা ও টের পেয়েছে হয়ত এতক্ষনে।
ওর ফোনে একটা বার্তা ড্রাফট বক্সে সেভ করে রেখেছিলাম,
” আমি ভাবতেও পারছিনা এমন কিছু ছবি এ ফোনে খুঁজে। যাই হোক আমি ওকে এ বিষয়ে কিছু বলবো না। শুধু ওকে না কাউকেই কিছু বলবোনা। ”
বেচারি যদি মেসেজটা পড়ে থাকে তবে কনফিউশান এ পড়ে যাবে, আমি নাকি সুপ্তি কার কাছে ও ধরা পরে গেছে!
মানুষের মনের ভেতরে এরকম প্রেসার সৃষ্টি করে রাখার চেয়ে বড় মাপের শাস্তি আর হয়না। তবে এর থেকেও ভয়ানক শাস্তি,অপেক্ষা করছে রেশমির জন্য,এবং অবশ্যই সেটা শারিরীক।

.
.
চলবে..
লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ

গৃহযুদ্ধ পর্ব-১৩

0

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ১৩
__________
________________

জানো রোহান ওরা আমাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছে।
অনেক বেশি!!
আমি অনেক ব্যাথা পেয়েছি পুরো শরীরে। আমাকে অনেক মেরেছে।
কথাগুলো শুনে আমার চোখ থেকে অজান্তেই পানির ফোঁটা টপটপ করে ঝড়ে পড়তে লাগলো। ওকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরার শক্তিও চলে গেছে। মনে হচ্ছে পাথর হয়ে গেছি।
সুপ্তির গায়ের সেই পুরোনো আদরমাখা গন্ধ নাকে এসে লাগলো। জড়িয়ে ধরলাম ওকে, খুব শক্ত করে।
প্রাণভরে ওর ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে নিঃশ্বাস নিলাম। বহু পরিচিতো আলিঙ্গন।
কতদিনের চেনা অনুভূতি। বুকের হাড় ভেংগে মনে হয় হৃদয় বের হয়ে আসবে, এমন ভাবে ধুক ধুক করছিলো। কিছুক্ষন আগ মুহুর্ত পর্যন্ত নিজের আমিকে বড্ড অচেনা লাগছে আমার। এত মায়াভরা, ভালোবাসা ভরা বুকটা শুধুমাত্র আমার জন্য,আর আমি সেটাকে অবহেলায় দূরে রেখেছি। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো।
ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
আমার শার্টের বুকের অংশটুকু ভিজে গেছে সুপ্তির চোখের পানিতে। অন্ধকারেও যেনো দেখতে পেলাম সুপ্তির দুচোখ বন্ধ।
মুক্তোর মত পানি গড়িয়ে পড়ছে ওর চক্ষুযুগল থেকে। সুপ্তির মাথার পেছনে থাকা চুলগুলোর ভেতরে আমার বা হাতের আংগুল গুঁজে দিলাম। এরপর আস্তে আস্তে ওর কোমল ঠোঁটে আমার ঠোঁট নামিয়ে দিলাম! কিছু কিছু গভীর চুম্বনের মাঝে শুধু কামুকতা থাকে না।
– সবকিছু ঠিক আছে,একদম কিচ্ছুই হয়নি, দুজন মানুষ একাকিত্বে এক-সত্তায় মিশে ছিলো আছে থাকবে, এ অনুভূতিরও প্রতিফলন ঘটায়।
সুপ্তির ঠোঁটে পরম মমতায় চুম্বন খাওয়ার সময় চোখ বন্ধ করে রাখলেও, কল্পনায়, মস্তিষ্কের ক্যানভাসে ওর মুখচ্ছবিটা ঠিক ই ভাসছিলো, আমার কাছে সে মুখটা,এ পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী মুখ। সবথেকে নিষ্পাপ মুখ। সবথেকে বিশ্বস্ত মুখ।
“কে বলেছে পৃথিবীতে জান্নাত নেই?
এইযে পবিত্র ভালোবাসা, বিচ্ছেদের কষ্টের পর মিলনের আনন্দের মুহুর্ত কয়েক সেকেন্ডের জন্য কি পৃথিবীটাকে জান্নাত করে তোলে না!
এখন মনে হচ্ছে গত কিছু দিন,খুবই অভাবে ছিলাম, ভালোবাসার অভাবে। অমন একাকিত্বের ভয়ানক দিনগুলোতে আর ফিরে যেতে চাইনা।
স্ত্রীর ভালোবাসা হলো ছেলেদের জন্য শক্তি।একইভাবে
স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, ছেলেদের দুর্বলতার।
মানুষ পরিবর্তনশীল।
সে সবথেকে বেশি পরিবর্তন হয় প্রেমে পড়ার পরে,ভালোবাসায় আবদ্ধ হওয়ার পরে। ভালোবাসা বিষয়টা, একজন মানুষকে ভীতু করে তোলে।
যে ছেলেটা রগচটা, পাড়ায় পাড়ায় মারামারি করে বেড়ায়, সেও একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হলে হুট করেই বদলে যায়৷
যদি তার জন্য তার ভালোবাসার মানুষের প্রতি কোনো আঘাত আসে?
যদি কটু কথা শুনতে হয়? যদি অপমানিত হতে হয়?
এ ভয়ে তারা ভীতু হয়ে ওঠে। ভদ্র হয়ে ওঠে।
যে ছেলেটা অতি দ্রুত বেপরোয়া গতিতে বাইক চালায়, সেও প্রকৃত ভালোবাসা খুঁজে পেলে, তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে খুব সাবধানে চলাফেরা করে। কোন বিপদ তাদের মাঝে হুট করে যেন এসে না পরে।
মাঝে মাঝে কিছু ছেলেকে দেখা যায়, পেছনে সো কল্ড প্রেমিকা নিয়ে খুব দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে, রিকশার পাশে নিজের প্রেমিকাকে দাঁড় করিয়ে রেখে রিকশাওয়ালার সাথে বাজে ব্যবহার করছে, এদের ভালোবাসার গভীরতা ঠিক কতটুকু তা খুব করে জানতে ইচ্ছে করে।
এদের মাথায় এটুকু চিন্তা কি থাকেনা? বাইকটা কোনো কারণে কাত হয়ে গেলে পেছনে থাকা মানুষটার কি হবে?
কিংবা রিকশাওয়ালাটা চলে যাওয়ার সময়,মনে মনে হলেও ওকে কিংবা ওর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে একটা বাজে মন্তব্য করে যেতে পারে,
নিজের ভালোবাসার মানুষের প্রতি সম্মান থাকলে, ছেলেরা আসলেই ভীতু হয়ে যায়৷
কিন্তু এই ভালোবাসার মানুষটির যখন কোন কারণে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন এসব নিরব, ভীতু ছেলেগুলোই হয়ে ওঠে সবথেকে ভয়ানক, সবথেকে হিংস্র।
সুপ্তির ভালোবাসা আমাকে বদলে দিয়েছিলো খুব,আমি আমার পাস্ট, আমার অতীত ছেড়ে সুপ্তির ভালোবাসাতে ডুব দিয়েছিলাম। নিজেকে পরিবর্তন করেছি। আমার নিজের পূর্বের পরিচয়টাই ভুলেই গেছি একেবারে।
কিন্তু সুপ্তির অনুপস্থিতিতে,ভালোবাসার অভাবে আমি আবার ফিরে গেছিলাম আমার অন্ধকার অতীত-রাজ্যে৷
যে হাতে সুপ্তির জন্য ভালোবাসার গোলাপ থাকতো, সে হাত ভরে উঠেছিলো তাজা রক্তে। যে নাক সুপ্তির দেহে ভালোবাসার গন্ধ খুঁজে পেত, সে নাকেই শুঁকতে হয়েছে তাজা রক্তের গন্ধ।
কি ভয়ানক সময়ের ভেতর থেকে কেটেছে আমার দিনগুলো।
ভুলে যেতে চাই সব।
সুপ্তিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেই৷
শুধু বলি,মাঝের কিছু দিনের কথা আমি ভুলে যেতে চাই।
না তুমি মনে করবে, না আমি।
সুপ্তি মাথা কাত করে সম্মতি জানায়। ওকে বলি,
আমার দিকে তাকাও, সুপ্তি আবছা অন্ধকারে আমার দিকে তাকায়,
– একটা হাসি দাওতো।
বলার একটু পরেই
ফিক করে হেসে ফেলে ও।
মনে হলো মনে জমে থাকা দুঃখ কষ্ট সব চলে গেছে বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে। ভালোবাসার বৃষ্টিতে। বেশ অনেক ক্ষন পরে আমরা একসাথে আমাদের রুম থেকে বের হলাম। আমাদের মাঝের সব দুরত্ব দূর হয়ে গেছে। অবশ্য একটা কথা আপনাদের বলে নেই। যদিও এটা গোপন করা আমার উচিৎ ছিলো,
তাও আমার পেট পাতলা স্বভাব, কিছু গোপন করতে পারিনা।
যাই হোক, সুপ্তি আমাকে মণিকা ভাবীকে নাম ধরে ডাকার জন্য এবং তাকে সুন্দর বলার জন্য ৫০+৫০ ১০০ বার কান ধরে উঠবস করিয়েছে।
অন্ধকারে দ্রুত কান ধরে ওঠা বসা করে নিয়েছি। কেউ দেখেওনি,কেউ জানেওনা৷ হিহি।
বেডরুম থেকে বাইরে এসে দেখি রেশমি ড্রয়িং রুমে নেই। ও বারান্দায় দাঁড়ানো। আমি সুপ্তিকে বললাম, সুপ্তি তুমি এখানে থাকো। আমি নিচে গিয়ে ঠান্ডা কিছু নিয়ে আসি।বলে ওর কপালে চুমু খেয়ে শার্ট নিয়ে দ্রুত নিচে চলে আসলাম।
আমার সন্দেহ সত্য হলো। নিচে এসে দেখি চাপ দাঁড়িওয়ালা ফর্সা, লম্বা একটা ছেলে বাসার সামনে দাঁড়ানো। মণিকা যে বারান্দায় দাঁড়ানো তার ঠিক নিচেই৷ ছেলেটা উপরের দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলছে। দেখে চুপচাপ ওখান থেকে চলে আসলাম।
ছেলেটা সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া আমার জন্য জরুরী হয়ে পড়েছে।
রাতে মণিকা ভাবীর দাওয়াত গ্রহণ করে গেলাম তার বাসায় খেতে।
রেশমি ও সুপ্তি প্রথমবারের মত মণিকা ভাবীর বাসায় গেলো। বারান্দায় ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজন করা হয়েছে। বেশ সুন্দর করে সেজেছেন মণিকা ভাবি৷
আমি মণিকা ভাবীর দিকে তাকালেই আমাকে আড়চোখে রাঙানী দিচ্ছে সুপ্তি।
ডিনারে দেখলাম সবার জন্য খাবারের প্লেটের সামনে ছোট ছোট ডিশে আলাদা আলাদা ভাবে সবকিছু রাখা আছে। চেয়ার টেনে সাদর আমন্ত্রনে তিমি রেশমিকে বসালেন।
এরপর সুপ্তিকে। এরপর আমাকে বসিয়ে আমার পাশে বসলেন তিনি। কারো কিছু লাগবে কিনা তার তদারকি করছে ফুলী। ফুলীকেও আমাদের সাথে খেতে বসতে বলায়, ফুলী জানালো সে আগেই পেটপুরে খেয়ে নিয়েছে। মিষ্টি ভাষায় ছোট একটা ভাষন দিলেন মণিকা ভাবি,
তার বক্তব্যে খুবই রুচিশীলতা ফুটে উঠলো।
ফর্মালিটি শেষ করে সবাই খেতে বসলাম, অনেক দিন পর মোমের আলোতে সুপ্তিকে দেখছি! অপূর্ব, মনে হচ্ছে মহাকাব্যিক কোন দেবী। ওর দিক থেকে চোখ ফিরছেনা। আমি যে একনজরে ওর দিকে তাকিয়ে আছি বিষয়টি মণিকা ভাবি হয়ত খেয়াল করেছে। হঠাৎ তার দিকে চোখ পড়ায় দেখলাম তিনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
রেশমি হাসি দিয়ে বললো,
না না মণিকা ভাবী আপনাকেও আমরা দেখছি৷ আপনার রূপে আমরা মুগ্ধ, রোহান একটু তাকাও ভাবীর দিকে। কত সুন্দর করে সেজেছেন। আমি ছেলে হলে তো ক্রাশ খেতাম।
মণিকা ভাবির গায়ে কথাগুলো লাগলো বোধ হয়,
তিনি রেশমির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,
ক্রাশ খেতে হবে না, আপাতত খাবার খাও,কেমন?
সবাই হাত ধৌত করে প্লেটে খাবার নিলাম। সবার আগে সুপ্তি খাবার মেখে আমার মুখে তুলে দিলো। আমিও ওর মুখে এক লোকমা তুলে দিলাম৷
মণিকা ভাবি মুখ ছোট করে বললো, রোহান, কিছু লাগলে আমাকে বলো, ঠিক আছে?
আমি বললাম আচ্ছা।
সুপ্তি খাবার মুখে দিয়ে বললো, ভাবি, অপূর্ব, এত ভালো রান্না আমি জীবনে খাইনি। সত্যি অসাধারণ।
খাবারের স্বাদ আমার কাছেও ফাটাফাটি লাগলো।
ফাটাফাটি, মারাত্মক, অতুলনীয় সবকিছুর উপমা এক করেও হয়ত ভাষা দিয়ে খাবারের স্বাদের অনুভূতি প্রকাশ করা যাবেনা।
আইটেম ও ছিলো অনেক।
হাসের মাংসের ভূনা, ডিমের কোরমা, চিকেন রোস্ট, চিংড়ির মালাইকারী- দো পেয়াজা, গরুর মাংসের কালোভূনা,ইলিশ মাছের পাতুরি, রুইয়ের কোফতা কারী, ইলিশের ডিম, পোলাও, সাদা ভাত, পায়েস কি নেই আইটেমে!
এত কিছু খাবার দেখেই তো পেট ভরে যাওয়ার কথা,
আমি ও সুপ্তি একপাশ থেকে খাচ্ছি, এবং সুপ্তি ভাবীর প্রশংসা করেই যাচ্ছি। রেশমি দেখলাম অনেকটা চুপচাপ, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম সামথিং ওয়াজ রং।
হঠাৎ করেই ও চিৎকার দিয়ে ওঠে!
ও মা গো! আমার জীভ পুড়ে গেলো!
ঝাল! ঝাল! টেবিলের ওপর থেকে পায়েস নিয়ে কতখানি পায়েস খেলো, তাতেও ঝাল কমলো না! বরং ওর ছটফটানি আরো বেড়ে গেলো। ও দৌড়ে মণিকা ভাবীর রুম থেকে বের হয়ে গেলো। এমনটাতো হওয়ার কথা না। আমাদের খাবার তো ঠিক ই আছে৷ হঠাৎ এমন একটা ইন্সিডেন্স ঘটলো! এত স্বাদের খাবারগুলো রেখে যেতে মন চাচ্ছে না। এর মধ্যে সুপ্তি দৌড়ে চলে গেলো রেশমির পেছনে পেছনে। আমি বসে রইলাম। সুপ্তি ভাবি দেখি চোখমুখ টান টান করে অন্য দিকে চেয়ে বসে আছে। আমার দিকেও তাকাচ্ছে না। স্পষ্ট বুঝতে পারলাম রেশমির বিষয়টায় সে খুব মজা পেয়েছে। খুব কষ্টে হাসি চেপে রেখেছে। আমার দিকে না তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে মণিকা ভাবী বললো,
রোহান তুমি বসো। আমি একটু আসছি। বলে সেও উঠে চলে গেলো।
আমি আর কি করব! বসে বসে খেতে লাগলাম।
একটু পর দেখি ফুলী আসলো হাসতে হাসতে। এসে বললো, কি হয়েছে মণিকা আফার?
আমি বললাম, জানিনাতো।
ফুলী হাসতে হাসতে বললো, মণিকা আফা বাথরুমের দরজা আটকে জোড়ে জোড়ে পাগলের মত হাসতেছে। আমি মুখে খাবার চিবুচ্ছিলাম। ফুলীর কথা শুনে হাসতে গিয়ে মুখ থেকে সব খাবার বের হয়ে পড়লো! মণিকা ভাবীর বিষয়টা কল্পনা করেই প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে আমার।
.
.
.
রেশমির জিহবা ফুলে উঠেছে। ও কথাও বলতে পারছেনা। জিহবা কালো হয়ে গেছে পুড়ে। মণিকা ভাবীর চেহারা নিয়ে কথা বলার শাস্তিটা রেশমিকে এভাবে দেয়াটা ঠিক হয়নি।
ও যন্ত্রনায় ছটফট করছে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি এনে দিলাম রেশমিকে।
সুপ্তির জন্য চা বানিয়ে আনলাম।
রেশমি ঠান্ডা পানি এবং সুপ্তি চা খেয়েই গভীর ঘুমে অজ্ঞান হয়ে গেলো।
দুজনের পানীয় এর সাথেই আমি মিশিয়ে দিয়েছি হাই পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ এটিভেন-১।
আমার ঠোঁটের কোণায় বাঁকা এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
ঠিক ডেভিলরা যেভাবে হাসে।
.
.
.
চলবে…
লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহা

গৃহযুদ্ধ পর্ব-১২

0

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ১২
_______________
__________________

ব্যাগে কিছু জামাকাপড় গুছিয়ে সুপ্তির সাথে সন্ধ্যায় আমার বাসায় উপস্থিত হয় রেশমিও।
বেশ অনেকদিন পর সুপ্তি বাসায় ফিরলো। কিন্তু ও এসে ওর রুমে দরজা আটকে বসে ছিলো। রেশমি ওকে কি বুঝিয়ে এনেছে জানি না। তবে বাসায় ঢোকার পর সুপ্তির চোখের পানি যেন বাঁধ মানে না৷ কলিংবেল বাজার পরে আমি দরজা খুলতেই সুপ্তি এক দৌড়ে আমাদের বেডরুমে চলে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়৷
গিয়ে বেশ কিছুক্ষন দরজা ধাক্কা ধাক্কি করি আমরা দুজনেই। কিন্তু সুপ্তির হেঁচকি দিয়ে কান্না করার আওয়াজ ছাড়া আর তেমন কোন সাড়া-শব্দ পেলাম না।
মেয়েটা ভেতরে ভেতরে ভীষন অপরাধবোধ নিয়ে বেঁচে আছে। এভাবে বেঁচে থাকা যায়না।
অদ্ভুত এক পৃথিবী! দোষ না করেও কেন যেন দোষী! ঠিক গাছে ফুটে থাকা সবথেকে সুন্দর ফুলের মত।
সুন্দর হওয়ার অপরাধে মানুষ সেটা ছিড়ে নেয়৷ প্রকৃতি মাঝে মাঝে কিছু কিছু মানুষের সাথে ঘোর অন্যায় করে ফেলে।
সোফায় বসে দু হাত মাথার পেছনে দিয়ে কথাগুলো ভাবছিলো রোহান। এর ভেতরে কলিংবেল বেজে ওঠে হঠাৎ।
দরজা খুলতেই,ভেতরে মণিকা ভাবির আগমন৷
– রোহান! তোমার বাসায় গেস্ট এসেছে?
– হুম আপনাকে বলেছিলাম না! সুপ্তি ওর বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গেছে। আজ সুপ্তি এবং ওর সেই বান্ধবী এসেছে।
– ভেতরে আসতে পারি!
– অবশ্যই।
ভেতরে ঢুকে মণিকা ভাবী। শাড়ির আচল ডান হাতে ধরে আভিজাত্যের ভাব নিয়ে হেঁটে সোফায় এসে বসে সে।
রেশমির দিকে তাকিয়ে বলে,
– হাই, আমি মণিকা৷ এ বাড়ির মালিক।
– আসসালামু আলাইকুম, ভাবী,
আমি রেশমি।সুপ্তির বান্ধবী।

পরিচিত হওয়ার পরে, রেশমির সাথে টুকটাক কথাবার্তা চালিয়ে যায় মণিকা ভাবী।আমি দুজনকে বসতে বলে চা বানাতে ভেতরে গেলাম।
মণিকা ভাবী যেখানেই থাকুক, ঘুরে ফিরে তার কথার ভেতরে রান্নার বিষয়টা চলে আসে।
মণিক ভাবী হুট করেই রান্না বান্নার বিষয়ে আলাপ শুরু করলো। বিশাল এক বক্তব্য দিলো।রেশমি হয়ত বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু কিছু মুখ ফুটে কিছু বলছেনা৷
আমি চা নিয়ে এলাম। বেশি করে কনডেন্সড মিল্ক আর হালকা চিনি দিয়ে।
চায়ে চুমুক দিয়েই মণিকা ভাবী গড়গড় করে বলে দিলো চায়ে ক’চামচ চিনি এবং ক’চামচ দুধ দিয়েছি।বিষয়টায় আমিও খুব অবাক হলাম।
রেশমির দিকে তাকিয়ে মণিকা ভাবী হাসতে হাসতে বললো, সুপ্তি তো রান্না বান্নায় একদম অকর্মার ঢেঁকি।
ওর রান্নার হাত একদম ই ভালো না।
রেশমি কথাটা শুনেই চা খাওয়া বাদ দি মণিকা ভাবীর দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। এরপর অবজ্ঞার গলায় বললো,
সুপ্তির রান্নার হাত ভালো না, আর আপনার তো চেহারা-ই ভালো না।
সরাসরি এমন একটা কথা শুনে মণিকা ভাবী বেশ অপমান বোধ করলেন। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার কপাল ঘেমে গেছে, নাকের উপরেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। চায়ের কাপটা হাত থেকে টি টেবিলে রেখে তিনি উঠে হন হন করে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। ঠিক প্রথমদিন সুপ্তিকে রান্না নিয়ে অপমান করে যেমন ভাবে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, ঠিক তেমন ভাবে।
তবে পার্থক্যটা এটুকুতেই যে!
সেদিন অপমান করে বের হয়ে গেছিলেন আজ অপমানিত হয়ে বের হয়ে গেছেন।
.
.
.
কিছু বাজার সদয় করার জন্য বাসা থেকে বের হলাম।
বাসা থেকে নামতেই প্রথমে চোখ গেলো একটু দূরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানা দুটো ছেলের উপর।
প্রথম দৃষ্টিতে মনে হলো এরা মিরাতের লোক। হয়ত রেশমি যে আমাদের বাসায় সেটা জেনে গেছে৷
কিন্তু কিছুক্ষন পরখ করার পরে দেখলাম ভিন্ন কিছু৷ দুজনের ভেতরের একজন একটু চাপ দাঁড়িওয়ালা, ফতুয়া এবং জিন্স পড়া৷ ওর দৃষ্টি আমার বাসার বারান্দায়। বারান্দার ওপাশে কে আছে ঠিক বুঝছি না, সুপ্তি বা রেশমি হবে কেউ একজন। তবে রেশমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ সুপ্তিকে তো ওর নিজের রুমে ঢুকেই কান্না করতে দেখে এলাম।
ছেলেটা বারান্দার দিকে তাকিয়ে মোবাইলে কথা বলে যাচ্ছে। চেহারাটা ভালোভাবে মনে আয়ত্ত করে চলে গেলাম বাজারের দিকে।
.
.
.
মিরাতের সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে কাব্য৷ একটা ছোট কাজ দেয়া হয়েছিলো তাকে সেটা করতে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার।
মিরাত একটা ছবি বের করে কাব্যর হাতে দিলো।
বললো
– স্যার এই মিশনে আমাদের বেশ ক’য়েকজন লোক খুন হয়েছে।
আমরা এসবের পেছনে এই ছেলেটাকে সন্দেহ করছি৷ আমাদের সন্দেহ যদি পাকাপোক্ত হয়, তবে সবার আগে এটাকে মারবো। কাব্য উত্তরে বলে পাকাপোক্ত হওয়ার কি আছে! যদি এমন কিছু হয়, তবে ওর মাথাটা স্নাইপার দিয়ে কদবেলের মত উড়িয়ে দাও৷ আমি আমার কাজ তাড়াতাড়ি হওয়া চাই৷
টাকা তো তোমাকে এডভান্স দেয়া-ই হয়েছে।
মিরাত মাথা চুলকাতে চুলকাতে কাব্যর অফিস থেকে উঠে যায়৷
.
.
.
বাজার নিয়ে বাসায় ফেরার সময় পথ আগলে দাঁড়ায় মণিকা ভাবী৷
রোহানকে বলে,
আরে বাজার করে এসে একদম ঘেমে গেছো যে!
আমার বাসায় বসে একটু এসিতে ঠান্ডা হয়ে নাও, পানি খেয়ে নাও, তারপর বাসায় যেও৷
– না ভাবি, আমার তাড়া আছে একটু।
– আহা, তোমার সাথে আমার জরুরী কথাও আছে। আসো আসো ভেতরে আসো।
রোহান ব্যাগগুলো মণিকা ভাবীর বাসার সামনে রেখে তার সাথে বাসার ভেতরে ঢুকে।
রোহানকে এক গ্লাস লাচ্চি খেতে দিয়ে মণিকা ভাবি বলেন,
রোহান তুমি বরং আমাকে তুমি করেই বলো আর মণিকা ভাবী নয়। শুধু মণিকা ডাকবে৷ আজ সুপ্তিকে সাথে নিয়ে আমার বাসায় রাতে তিনজন ই খেতে আসবে।
রোহান, জ্বী আচ্ছা বলে রাজী হয়ে গেলো।
মণিকা ভাবীকে আজ একটু অন্যরকম লাগছে৷
তার চেহারায় থাকা দাগগুলো বোঝা যাচ্ছেনা। ত্বক আরো উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।
রোহান একটা কথা বুঝে উঠতে পারছেনা। রেশমি কোন হিসেবে বললো মণিকা ভাবীর চেহারা খারাপ! বরং রেশমি এবং সুপ্তির চেয়ে মণিকা ভাবী বেশি ই সুশ্রী! তাহলে রেশমী বললো কেন যে সে দেখতে ভালোনা!
কথাটা রেশমীকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
বাজার হাতে নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
রেশমী এবং সুপ্তি সোফায় বসা। আমাকে দেখেই সুপ্তি চোখ ফ্লোরে নামিয়ে ফেললো। লজ্জা পেলো নাকি কষ্ট পেলো বুঝলাম না। মনে হলো শুধু আমি হয়ত খুব অপরিচিত কেউ, এবং সে আমার বিয়ে করা একদম নতুন বউ৷
নতুন বউ যেমন বর দেখলে লজ্জা পায় কাচুমাচু করে সুপ্তিও এখন সে কাজটাই করছে।
শুধু পার্থক্য হলো নতুন বউ যা করে লজ্জা থেকে করে, সুপ্তি করছে নিজের ভেতর অপরাধ বোধ থেকে।
বাসায় ঢুকে বললাম রাতে মণিকা তার বাসায় আমাদের খেতে দাওয়াত দিয়েছে।
মণিকা ভাবীকে নাম ধরে মণিকা বলায় সুপ্তি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। আবার পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে ফেললো।
সুপ্তির সামনেই রেশমিকে জিজ্ঞেস করলাম,
মণিকা ভাবী তো দেখতে ভালো ই, তাহলে তাকে বললে যে, সে দেখতে ভালো না! ব্যপারটা কি বলো তো রেশমি!
– ব্যপার কিছুনা। সুন্দর মানুষকে অসুন্দর বললে তাদের গায়ে বেশি লাগে।
– সুপ্তি রেশমির দিকে তাকিয়ে বলে, একজন আমাকে বলেছিলো আমি তার কাছে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী। এখন আর আমাকে সুন্দর লাগেনা। মণিকা ভাবীকে তার সুন্দর লাগে। আমার কপালটাই পোড়া।
আমি কিছু বললাম না। শুধু হাসলাম।
সুপ্তি
তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,
একটু পর রুমে এসো।
বলে বাজারগুলো কিচেনে রেখে আমি চলে গেলাম আমাদের রুমে।
সুপ্তি হয়ত আসতে চাচ্ছিলো না।
রেশমি মনে হলো সুপ্তিকে কিছু একটা বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলো আমার কাছে।
ও রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো, আমার কাছে না এসে দরজার সামনে দুপা একসাথে মিশিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
– এদিকে এসো।
– বলো কি বলবে।
– দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
– এমনি।
– রেশমি আমাকে বলেছে সব। ওগুলো নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। এখন কাছে এসে বসো। জরুরী আলাপ আছে।
বেশ কয়েকবার ডাকার পরেও আমার কাছে আসেনা সুপ্তি।
– এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
বলে হালকা ধমক দেই ওকে।
দরজার পাশে থাকা লাইটের সুইচ টিপে লাইট বন্ধ করে দেয়।
এরপর দৌড়ে এসে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে। চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলে,
জানো রোহান ওরা আমাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছে।
অনেক বেশি। আমি অনেক ব্যাথা পেয়েছি পুরো শরীরে। আমাকে অনেক মেরেছে।
কথাগুলো শুনে আমার চোখ থেকে অজান্তেই পানির ফোঁটা টপটপ করে ঝড়ে পড়তে লাগলো। ওকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরার শক্তিও চলে গেছে। মনে হচ্ছে পাথর হয়ে গেছি।
.
.
.
চলবে…..

লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ

গৃহযুদ্ধ পর্ব-১১

0

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ১১
____________
_______________

কি বলিস! তুই আমার বৌ এর সাথে! না না, আর যাই হোক এটা আমি সহ্য করতে পারবোনা।
সামনের দাঁতগুলো বের করে কাব্য বলে, আচ্ছা তোর বউ বাদ,
তাহলে প্লানটা অন্যরকম করি,
রেশমিকে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করি স্পটেই,
আর সুপ্তিকে তুলে নিয়ে আসি।
– ওকে ডিল ডান।
বলে হ্যান্ড শেক করে দুজনেই। কাব্যর কাছ থেকে আপাতত চলার জন্য কিছু টাকা ধার নিয়ে রফিক সাহেব সেদিনের মত চলে যায়।
কাব্য বেশ সতর্কতার এবং বুদ্ধির সাথে একটা নীল নকশা তৈরি করে।
আন্ডরওয়ার্ল্ড এর পেশাদার খুনী মিরাত এবং তার দলবলের সাথে বেশ কয়েকবার বৈঠক ও সম্পন্ন করে কাব্য৷ অতিবাহিত হয়ে যায় বেশ কয়েকটি দিন।
.
.
.
ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে মণিকা ভাবী।
রোহানের সাথে তার খাতিরটা বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে মণিকা ভাবী এই প্রথম আবার রান্নাঘরে গেলো৷ আজকে আগে থেকেই রোহানকে বলে রেখেছে, তার জন্য স্পেশাল কিছু আইটেম রান্না করবে। রোহান ও একদম প্রস্তুত খাওয়ার জন্য। গলার সাথে রুমাল পেচিয়ে লম্বা একটা জুব্বা পড়ে সেই সকাল থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপেক্ষা করছে, কখন তার ডাক পড়বে! মণিকা ভাবিও বেশ মনোযোগ দিয়ে রান্না করছেন।
তার কিচেনে নতুন সাউন্ড বক্স লাগানো হয়েছে। তিনি সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে হালকা নাচতে নাচতে রান্না করেন। প্রফেশনাল শেফ দের মত কড়াইয়ে রাখা মাংস ছুড়ে দেন উপরে। তারপর নিজে হালকা একটু ডান্স মুভ করে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মাংসগুলো কড়াই দিয়ে ক্যাচ ধরেন। রান্না যে উপভোগ করার জিনিস সেটা মণিকা ভাবীর ডান্স মুভ যে দেখবে একমাত্র সে ই বুঝতে পারবে।
অনেক কষ্ট করে রান্না শেষ করার পরে মণিকা ভাবি রোহানকে তলব করে।খুশিতে ছুটতে ছুটতে চলে আসে রোহান।
ডায়নিং রুমে ঢুকে দেখে সারি সারি খাবার সাজানো আছে তার জন্য।
দেখে মনে হচ্ছে একজায়গায় বসে সব খাবার শেষ করা যাবে না।
পুরো ডায়নিং টেবিলের চারপাশের চেয়ারে ঘুরে ঘুরে বসে তাকে খাবার শেষ করতে হবে।
মনিকা ভাবি নিজেও কিছু খায়নি। সে রোহানের মুখোমুখি চেয়ারে বসে। দুজনেই খেতে শুরু করে। মণিকা ভাবীর এক প্লেট খাবার শেষ হতে না হতেই রোহান বেশ কয়েক প্লেট খাবার সাবার করে ফেলে। মণিকা ভাবি একটু অবাক হয়। রোহান তার দিকে তাকিয়ে বলে, খাবার এত্ত মজা হয়েছে যে ইচ্ছে করছে আজ সারাদিন বসে খাই। মণিকা ভাবী রোহানের কথার উত্তরে বলে,
খাবার তো সব তোমার জন্যই। খেতে থাকো।
রোহান কথা না বাড়িয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
দেখতে দেখতে টেবিলের সব খাবার শেষ হয়ে আসে।
মাথা তুলে মণিকা ভাবীর দিকে তাকিয়ে রোহান বলে, ভাবী আর কি কিছু নেই খাওয়ার জন্য?
মণিকা ভাবী একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে যায়। সে ভেবেছিলো খাবার অনেক বেঁচে যাবে। কিন্তু হলো বিপরীত। রোহান তো আরো চাচ্ছে। সে রোহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
আমার শরীর খারাপ তো! তাই কম করে রান্না করেছিলাম। কিছু মনে করো না।
তবে তোমার প্রিয় চা আছে। তুমি একটু বস। আমি চা বানিয়ে আনি।
বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে চায়ের ছুতো দিয়ে দ্রুত রোহানের সামনে থেকে উঠে যান মণিকা।
কিচেনে গিয়ে নিজের উপর রাগ ঝাড়তে থাকেন কিনি! কি বেইজ্জতিটাই না হলেন!মেহমানের সামনে দেয়া খাবার শেষ হয়ে গেলো আরো খেতে চাইলো কিন্তু সে দিতে পারলো না!
মন ভরা আফসোস নিয়ে মণিকা ভাবী খুব সুন্দর করে মালাই চা বানালো। গরুর দুধের ক্ষীর দিয়ে বানানো চায়ের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়লো আশে পাশেও।
নিজের মনকে শান্তনা দিলেন মণিকা ভাবী নিজেই। অন্তত জমপেশ একটা চা বানিয়ে খাওয়ানো যাবে রোহানকে।
মাঝারি সাইজের একটা কাপে চা ঢেলে সুন্দরভাবে ডেকরেশন করে মণিকা ভাবী নিয়ে আসে রোহানের জন্য।
কিন্তু এসে দেখে ডায়নিং টেবিলের চেয়ারটা শূন্য পড়ে আছে। কোথাও কেউ নেই৷ মণিকা ভাবী গালে হাত দিয়ে বসে দুঃখে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেললেন।

তখন মণিকা ভাবী চা আনার জন্য কিচেনে যেতেই রোহান দ্রুত উঠে চলে আসে নিজের বাসায়।
এতক্ষন ধরে মণিকা ভাবীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অধিকাংশ খাবার জুব্বার নিচে চালান করে দিয়েছে সে। কাজটা মোটেই সহজ ছিলোনা। তবে আগে থেকেই প্রিপারেশন নিয়ে রেখেছিলো রোহান। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী খাবারগুলো শরীরের সাথে আটকে রাখা ছোট ছোট ব্যাগে প্যাক করে নিতে বেশি একটা সমস্যা হয়নি তার।
বাসার ফ্রিজে খাবারগুলোকে সংরক্ষন করে রোহান একটা জামা গায়ে চাপিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
.
.
.
.
রেশমি পাশে থেকে সুপ্তিকে অনুপ্রেরণা দিতে দিতে আস্তে আস্তে ওর মানসিক অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক করে তোলে।তবে অবসর সময়ে সুপ্তি প্রচুর ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করে। ও ঠিক করে নিজের জন্য একটা চাকরি খুঁজে নিবে। অন্য একটা পরিচয়ে নিজেকে গড়ে তুলবে। রেশমি সুপ্তিকে বুঝায়, সুপ্তির কোন জব করার দরকার নেই, কারণ রেশমির বর্তমানে যে পরিমান অর্থ-সম্পদ আছে, তা দিয়ে এরকম বিশজন সুপ্তির খরচ বছরের পর বছর চালাতে কোন সমস্যা ই হবে না।
কিন্তু সুপ্তি তার সিদ্ধান্তে অনড়। সে নিজে খুব ছোট করে হলেও কিছু একটা করতে চায়। এমনিতেও ব্যস্ত থাকাটা তার জন্য জরুরী। ব্যস্ততা, সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মানুষকে অনুভূতির জাল থেকে মুক্ত রাখে।
রেশমি তার নিজের বিজনেসের একটা অংশে সুপ্তিকে বসাতে চাইলে সুপ্তি রেশমির সে প্রস্তাবও নাকচ কর দেয়।সুপ্তির মতে অতি আপনজনদের সাথে টাকা কিংবা কাজের সম্পর্ক রাখা উচিৎ নয়। কোন না কোন সময় অবিশ্বাসের ছায়া নেমে আসে, ঝামেলা হয়।
সুপ্তি দূরবর্তী কোন এলাকায়, কোন একটা অফিসে জব করবে বলে জানায় রেশমিকে। রেশমিও নিরুপায় হয়ে সুপ্তিকে আর আটকায় না,বরং সুপ্তিকে নিজের গাড়িতে চাপিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির ওউনারদের কাছে নিয়ে যায়৷ ওর জবের ব্যপারে কথা বলে, সিভি জমা দিয়ে আসে।খুব দ্রুত কোন একটা জব ম্যানেজ হয়ে যাবে, আশাবাদী হয়ে ওঠে দুজনেই।
বাড়ি ফেরার পথে রেশমি লক্ষ করে গত দু’দিনের মত আজও একটা কালো রঙ এর গাড়ি তাদের গাড়ির পেছনে পেছনে আসছে। একই ঘটনা দুবার ঘটলে মানা যায় সেটা কো- ইন্সিডেন্স।কিন্তু তিনবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মানে কোনো একটা ঝামেলা আছে। রেশমি কালো গাড়িটার দিকে নজর রেখে, রাস্তার পাশে নিজের গাড়িটি পার্ক করে। রেশমির ধারণা ই ঠিক। কালো গাড়িটা ওদেরকে ফলো করছে, এজন্য রেশমির গাড়ির একটু পেছনে এসে কালো গাড়িটিও থেমে যায়৷ যখন আবার রেশমি তার গাড়িটি চালানো শুরু করে, কালো গাড়িটিও রেশমিদের পেছন পেছন চলতে শুরু করে।
বেশ চিন্তায় পরে যায় সুপ্তি এবং রেশমি দুজনেই।
রেশমির ধারণা, রফিককে বাসা থেকে বের করে দেয়ায় হয়ত ও-ই ষড়যন্ত্র করে কোনো লোক পাঠিয়েছে।
সিদ্ধান্ত নেয় ৯১১ এ কল দিয়ে ইমার্জেন্সি হেল্প নেয়ার।
ইমার্জেন্সি হেল্পলাইনে কল দেয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই সাইরেন বাজাতে বাজাতে পুলিশের গাড়ি চলে আসে। পুলিশের গাড়ির সাইরেনের প্যাঁ পু আওয়াজ শুনতেই ইউটার্ণ নিয়ে উল্টোদিকে চলে যায় ব্লাক কালারের গাড়িটি। যখন পুলিশ এসে সুপ্তিদের গাড়ির সামনে পৌঁছায়, সুপ্তি এবং রেশমি পুরো ঘটনা পুলিশদের খুলে বলে। তারা একটা ডায়েরিতে সবকিছু লিপিবদ্ধ করে সেদিনের মত চলে যায়।
নিরাপদে ঘরে ফেরে সুপ্তি এবং রেশমি।
আশ্চর্যজনক ভাবে সেদিন রাতেই সবগুলো টেলিভিশনের সংবাদে একটা দুর্ঘটনার নিউজ প্রচারিত হয়। হাইওয়েতে কালো রঙ এর একটা মাইক্রোবাস এক্সিডেন্ট করেছে।
মাইক্রোবাসে থাকা দু’জন ব্যক্তির একজন ও বেঁচে নেই। পুলিশ এটাকে এক্সিডেন্ট না বলে পরিকল্পিত হত্যা বলে প্রচার করছেন। কারণ মাইক্রোতে থাকা দুজন ব্যক্তিরই মাথা আলাদা অবস্থায় পেছনের সিট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে৷
এমন ভয়ানক অবস্থা দেখে রেশমি এবং সুপ্তি দুজনেই বেশ ভয় পেয়ে যায়৷ তারা দুজনে আঁচ করতে পারে, কোন একটা ঘোর বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই।
.
.
.
ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ নিয়ে মাঝরাতের দিকে বাসায় ফেরে রোহান।
মণিকা ভাবী তার দরজার সামনেই দাঁড়ানো ছিলো।
রোহানকে দেখে অভিমানের সুরে বললো, রোহান তুমি আমাকে না বলে কোথায় চলে গেছিলে বলোতো!
রোহান মণিকা ভাবীর দিকে তাকিয়ে বলে, ভাবী একটু কাজ ছিলো বাইরে। রোহানের পেছনে ৫/৬ জন ছোট ছোট ছেলেদের দেখে জিজ্ঞেস করে, তোমার পেছনে এরা কারা?
রোহান উত্তর দেয়,
এই এলাকার ই ছোট ছোট পিচ্চি পাচ্চা। সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় টো টো করে, কেউ কেউ ভিক্ষা করে।
আসলে বাসাটা অগোছালো হয়ে আছে তো,তাই ভাবলাম ওদের দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে রাখবো । বিনিময়ে দু-চার পয়সা দিয়ে বিদায় দিব।
– তুমি আমাকে বলতে পারলে না রোহান! তোমার বাসা আমি গিয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে আসতাম!
– না থাক ভাবী আপনি অসুস্থ। রেস্ট নিন।আপনি সুস্থ না থাকলে প্রতিদিন মজার মজার রান্না কে খাওয়াবে! কালও কিন্তু আপনার বাসায় খাব ভাবী।
মণিকা ভাবী হেসে উত্তর দেয়, আচ্ছা।
– আমি তাহলে আসি ভাবি।
বলে রোহান নিজের ফ্লাটের দিকে পা বাড়ায়
রোহানের সাথে ওর বাসায় প্রবেশ করে ছোট ছেলেগুলো ও।
সেদিন রাতে সবাই মিলে একত্রে ভুড়িভোজ করে। রোহান সবার মাঝে একটা টেন্ডেন্সি দেখতে পায়, সবাই খুব কম করে খাচ্ছে। প্যাকিং করে বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্রতি আগ্রহ সবার। অবাক হয় রোহান! এটুকু বয়সেই নিজের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি কত দায়িত্ববোধ এদের।
.
.
.
.

একটা নিরিবিলি পার্কে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে রেশমি এবং রোহান।
রোহানের বক্তব্য,
সুপ্তিকে সে নিজের কাছে রাখতে চায়।
রেশমি সাফ জানিয়ে দিয়েছে সুপ্তিকে কিছুতেই রোহানের কাছে যেতে দিবেনা।
সেদিনের কথাগুলো মনে পড়লে এখনো রোহানকে মারতে ইচ্ছে করে রেশমির।
রোহান বললো,
ঐদিন যে কথাগুলো বলেছিলাম সেজন্য আমার একটুও আফসোস নেই। বা হবেওনা। কারণ সুপ্তির নিজের সিকিউরিটি নিয়ে ভাবা উচিৎ ছিলো।
জেনেশুনে কেউ যদি বাঘের খাচায় প্রবেশ করে সেটার দায়ভার কে নিবে?
আমাদের সমাজটা এখন জানোয়ারে পরিপূর্ণ। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই পুরুষরা নারীলোভি। নারীদের ভোগ্য পণ্য মনে করে। এটা সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত থাকবে।
নিজের সতর্কতা নিজের কাছে। ধর্ষণ হওয়ার পেছনে নৈতিক অবক্ষয় যেমন দায়ী, নিজেদের অসতর্কতাও একইভাবে দায়ী।
– তোমার মধ্যের গোড়ামি এখনো যায়নি। তুমি ওকে তোমার কাছে নেয়ার পর এসব বিষয়ে খোটা দিলে ও কতটা কষ্ট পাবে জানো?
– খোঁটা দিলে যদি ওর গা থেকে ধর্ষণের দাগ মুছে যেত৷ তাহলে দিতাম।
কিন্তু যা হওয়ার তা হয়ে গেছে,চাইলেও পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমি তাই ওকে পাস্ট নিয়ে কোনো কথা শুনাবো না।
– আচ্ছা, যেহেতু তোমার স্ত্রী ও। আমি বাঁধা দিয়ে রাখার কেউ না। নিয়ে যেও ওকে বুঝিয়ে। এমন একটা ভাব করবে যেন তুমি ওকে অনেক খুঁজে তারপর পেয়েছো।ওকে ছাড়া এতদিন কষ্টে ছিলে।
– আচ্ছা৷ সুপ্তিকে নাহয় আমার কাছে নিয়ে রাখলাম।
কিন্তু তুমি? তোমার ও তো ঘোর বিপদ। তোমাকে সবটাই খুলে বললাম, যেসকল লোক তোমাদের পেছনে লাগানো হয়েছে ওরা খুবই বিপদজনক।
– আমাকে একটা কথা বলো তো! তুমি এসব জানো কিভাবে?
– সুপ্তি তোমার কাছে আছে এটা জানার পর থেকে আমি গোপনে সব সময় সুপ্তির উপর নজর রেখেছি। ওর আপডেট জেনেছি।
– তুমি কেমন মানুষ আমি সত্যি ই বুঝছিনা। তোমাকে আমার একটু আগেও জুতাপেটা করতে মন চাচ্ছিলো। এখন চাচ্ছেনা।
– রোহান কথাটা শুনে একটু অপমান বোধ করে।
সুপ্তিকে বলে,
যাই হোক, তোমাকে একটা ভালো বুদ্ধি দেই। তুমি কয়েকদিন আমাদের বাসায় থাকো। সুপ্তির এমন অবস্থায় তোমাকে ওর পাশে খুব প্রয়োজন। তারপর পাসপোর্ট, ভিসা রেডি করে দ্রুত দেশত্যাগ করো।
তোমার জন্য এটাই সবথেকে ভালো হবে।
রেশমি মুচকি হেসে, আচ্ছা বলে রাজি হয়ে যায়।
আরো কিছুক্ষন কথাবার্তা শেষে রেশমি বিদায় নেয়।
রোহান পার্কের ঘাসের উপরে শুয়ে পরে। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে,
চকলেটের মত পৃথিবীর সব মানুষ মুখোশের মোড়কে মোড়ানো।
সুপ্তিকে ব্যবহার করে রেশমি কত বড় একটা দান মেরে দিলো!
বেচারা রফিক সাহেব, বুঝতেও পারেনি কিছু। অসৎ লোকেরা সহজেই ফাঁদে পরে। রফিক সাহেবও পড়েছেন নিজ দোষেই।
কে বেশি দোষী!
যে ফাঁদ পেতেছে সে! নাকি যে নিজ দোষে ফাঁদে পড়েছে সে!
বিষয়টা নিয়ে জটিল চিন্তাভাবনায় মগ্ন হতে হবে। একটা সিগারেট ধরিয়ে চারপাশের পরিবেশ ধূমায়িত করে তোলে রোহান। আধ্যাত্মিক লেভেলে চিন্তাভাবনা করার জন্য এমন পরিবেশ বেশ জরুরী।
.
.
.
চলবে…
লেখকঃ
হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।
পর্ব ১০-

গৃহযুদ্ধ পর্ব-১০

0

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ১০
________________
জানোয়ার ছেলেগুলোকে কেউ খুন করে ফেলে রেখেছে,
শুনেই সুপ্তির কান্না থেমে গেলো। প্রশান্তির একটা আভাস সুপ্তির কালি পড়ে যাওয়া চোখে খেলা করে বেড়াচ্ছে। রেশমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়৷ ওয়েটার কফি দিয়ে যাওয়ার পরে, রেশমি ও সুপ্তি কফি হাতে নিয়ে ক্যাফের বাইরে বের হয়ে আসে।দুজনেই এরপর প্রচুর ঘোরাঘুরি করে, কেনাকাটা করে,ছবি তোলে।
দু বান্ধবী-ই যেনো একলাফে চলে যায় তাদের কলেজের ফেলে আসা দিনগুলোতে। দুজনের জীবনে ঘটে যাওয়া বড় বড় দুটো দুর্ঘটনার কথা মন থেকে কিছুক্ষনের জন্য একদম ই দূরীভূত হয়ে যায়।

দিনশেষে কয়েক বস্তা জামাকাপড়, কসমেটিকস, জুতা এবং সাজসজ্জার প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে বেশ ক্ষুধার্ত অবস্থায় তারা প্রবেশ করে একটি পাঁচ তারকা রেস্তোরাঁয়।
ম্যানু হাতে নিয়ে রেশমি বিভিন্ন রিচ ফুড এবং ড্রিংকস অর্ডার করে।
ওয়েটার খাবার দিয়ে যাওয়ার পরপর ই রেশমি গো-গ্রাসে একপাশ থেকে খাওয়া শুরু করে দেয়। কিন্তু সুপ্তি কোন খাবার হাত দিয়ে স্পর্শ পর্যন্ত করে না। বরং উদাস মনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।
বিষয়টা কিছুক্ষন পরে খেয়াল করে রেশমি।
জিজ্ঞেস করে,
– কিরে খাবার না খেয়ে বাইরে তাকিয়ে আছিস কেনো?
– খেতে ইচ্ছে করছে না।
– কেনো কি সমস্যা?
– রিলশনে যাওয়ার পর থেকেই আমি রোহানকে ছাড়া কখনো কোন রেস্তোরাঁয় খাইনি। ও নিজেও আমাকে ছাড়া কখনো একা একা ভালোমন্দ কিছু খায়না। রোহানের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে আমার। না জানি ছেলেটা কত দুশ্চিন্তায় আছে! না খেয়ে মনে হয় একদম শুকিয়েই গেছে। আর যা-ই বলিস আমি ওকে রেখে এখানে বসে ভুড়ি-ভোজ করব সেটা কি করে হয়!
রেশমি খাওয়া থামিয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করলো। বললো, একটা চিরকুটে ওর জন্য কিছু একটা লিখে দিস। আমি চিরকুট আর খাবার ওর বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করবো৷ এবার প্লিজ খেয়ে নে।
রেশমি সেদিম রোহানের বলা জঘন্য কথা গুলো সুপ্তির কাছে গোপন করে। সুপ্তির এমন মানসিক অবস্থায় রেশমি চাচ্ছে না আবার কোনো ভাবে ও নতুন করে মনে আঘাত পাক।
রেশমি মনে মনে রোহানকে প্রচুর গালি দিতে থাকে। যে মেয়েটা রোহানকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে, সে কিভাবে পারলো সুপ্তিকে নিয়ে এতটা জঘন্য কথা বলতে!!
ধর্ষণ তো সুপ্তির দেহকে করা হয়েছে। ওর মন টা তো আর ধর্ষিত হয়নি!
যে ছেলেরা যে মেয়েরা নিজ ইচ্ছায় তার পার্টনার কে ঠকায়, খারাপ তো তারা।
চার দেয়ালের মাঝে বন্দী থাকা কোনো মেয়ে যদি তার স্বামীকে ভালো না বেসে সব সময় অন্য ছেলেদের নিয়ে চিন্তা করে, তাহলে তাদের উপর অরুচি আসতে পারে।কিন্তু কোন ধর্ষিত মেয়ের নিষ্পাপ, গভীর ভালোবাসার প্রতি অরুচি কোন যুক্তিতে আসে?
এক মুহুর্তের জন্য রেশমির ইচ্ছে করছিলো,
রোহান এবং রফিক দুটাকেই একটা বস্তার ভেতরে ঢুকিয়ে বস্তার মুখ বেধে উপর থেকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটাতে কিংবা শিল পাটায় ব্যবহৃত পুঁতা দিয়ে ওদের থেতলে ভর্তা করে দিতে।
বিমর্ষ মনে হালকা কিছু খাবার খায় সুপ্তি। রেশমিরও খাবারের প্রতি অরুচি চলে আসে। বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো ফেলে না রেখে পার্সেল করে নিয়ে দুজনে বের হয়ে যায় রেস্তোরা থেকে।
ব্যক্তিগত গাড়িতে ‘চলা- ফেরা করার সময়ে যখন সিগন্যালে অপেক্ষা করতে হয়, তখন প্রায়শই অতি অল্প বয়সী কিছু বাচ্চারা ফুল কিংবা নকশি রুমাল সহ বিভিন্ন ছোট খাটো পন্য নিয়ে গাড়ির জানালায় নক করে।
ওগুলো বিক্রি করেই চলে ওদের কণ্টকাকীর্ণ জীবন। রেশমির গাড়ির কাছেও সেদিন একটা ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ে ফুল বিক্রি করতে আসে, একটা ফুল নিয়ে বিনিময়ে মেয়েটার হাতে খাবারের পার্সেল আর কিছু টাকা তুলে দেয় রেশমি।
দুপাশে চুল বেনী করা মেয়েটি খুশিতে নাচতে নাচতে ওদের গাড়ি থেকে সামনের দিকে চলে যায়।
যাওয়ার পথে সে সবাইকে তার ঝুড়ি থেকে একটা করে ফুল দিতে থাকে আর চিৎকার করে বলতে থাকে, ট্যাকা লাগবোনা। এমনি ই দিছি।
রেশমির বা হাত চেপে ধরে সুপ্তি।
ওর কানের কাছে গিয়ে বলে,
জানিস রেশমি আমার অনেক শখ ছিলো আমার খুব ফুটফুটে একটা মেয়ে বাবু হবে। আমি আর আমার রাজকুমারী একই রকম ড্রেস পড়ে সব জায়গায় ঘুরে বেড়াবো।
কথাটি বলেই খিলখিল করে হাসতে থাকে সুপ্তি।
পরক্ষনেই ওর চেহারায় নেমে আসে কালো মেঘের অন্ধকার।
নিজে নিজেই বলে,
কিন্তু আমার মত পোড়া-কপালির ভাগ্যে, সংসার ই নেই! আবার বাচ্চা!
রেশমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
হঠাৎ আকাশ ভেংগে বৃষ্টি শুরু হয়।
গাড়ির জানালার কাঁচ বেয়ে বৃষ্টির ভাড়ী ফোঁটা গড়িয়ে পড়তে থাকে। জানালার কাঁচের ওপাশে দু’হাত রেখে গড়িয়ে পড়া পানির ফোঁটার দিকে একমনে চেয়ে থাকে সুপ্তি।গাড়ির চাকাগুলো কাঁদাপানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে সামনের দিকে।
আহা! এটাইতো জীবন। কোথাও কোথাও মন থমকে দাঁড়ালেও দেহটাকে জীবনযুদ্ধে নামিয়ে দিয়ে এগিয়ে নিতে হয় ক্রমশই দূর থেকে বহুদূরে।

.
.
.
বাথরুমে ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে বেশ অনেক্ষন ধরে ভিজে চলেছে রোহান।
আজ ফুলীর সামনে কাটা দাগটা উন্মুক্ত হয়েই পড়লো! একটু সাবধানে চলতে হবে তাকে।জলীয়বাষ্পে আবছা হয়ে যাওয়া আয়নাটা হাত দিয়ে ডলে পরিষ্কার করে সে।
শুধু হাতে নয়৷ বুকে, পেটেও অসংখ্যা আচড় এবং কাটাছেঁড়ার দাগ।এটা নিয়ে অবশ্য বেশি একটা চিন্তা নেই তার।
যে ছয়জন মারা গেছে তারা আগে থেকেই ক্রিমিনাল হিসেবে প্রশাসনের ধুলোপড়া খাতায় কালো তালিকাভুক্ত হয়ে ছিলো। ওদের এমন মৃত্যু নিয়ে কারো কিছু আসবে যাবে না।
পুলিশি ইনভেস্টিগেশন ও তেমন বেশি হবে না। এসব ভেবে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের চেহারা দেখে রোহান ডেভিলের মত হা হা হা করে হাসতে থাকে।
কোন এক অজানা নেশা তাকে পেয়ে বসেছে। হিংস্রতার নেশা।
.
.
.
.

মণিকা ভাবীর স্বাস্থ্য দ্রুত উন্নতির দিকে চলে এসেছে।
তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে।
বাসায় ফেরার পর পর ই সে যখন রোহানকে দেখলো একটা মিষ্টি হাসি দিলো।
রোহান বলল, “আরে বাহ আপনার হাসি দেখে তো মনেই হচ্ছে না! আপনি মারাত্মক একটা এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এতদিন।”
মণিকা ভাবী কাঁপা গলায় উত্তর দেয়, আমার যত দুঃখ ব্যাথা তোমার মুখদর্শনে দূরীভূত হয়ে গেলো।
রোহান মণিকা ভাবীর কথা শুনে হাসে।
যতটা না মুখে হাসে, তার থেকেও বেশি হাসে মনে।
” আপনার রান্নাটা অনেক মিস করেছি ভাবি। ভাবছি আপনি কবে পুরোপুরি সুস্থ হবেন! আর পেট পুরে আপনার রান্না খাবো!”
কথাটা বলার পরেই রোহান স্পষ্ট মণিকা ভাবীর চোখে উচ্ছাস উথলে পড়তে দেখলো!
মণিকা ভাবী বললো! আচ্ছা ঠিকাছে, খাওয়াবো তোমাকে। আগে দেহটা একটু শক্তপোক্ত হোক!
রোহান মণিকা ভাবীর কথা শুনে মনে মনে বলে,
” ঘুঘু দেখেছ এতদিন, এবার ঘুঘুর ফাঁদটাও দেখবে।”
.
.
.
বেশ বিগড়ে আছে রফিক সাহেবের মাথা। এতদিন এতটা বছর ধরে তিলে তিলে জমানো টাকাপয়সা সবকিছু হারিয়ে আজ পথের ফকির সে। কি ভুল করেই যে সে কাজটা করেছিলো! সম্পত্তির সবকিছুই উইল করে দিয়েছে তার স্ত্রীর নামে। অথচ রেশমি ছিলো মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সাধারণ মেয়ে। তবে স্ত্রী হিসেবে খুবই বিশ্বস্ত একজন। রফিক সাহেব বিয়ের আগে ও পড়ে যতদিন ধরে মিশেছেন রেশমির সাথে৷ ফান করেও রেশমিকে কখনো মিথ্যা কথা বলতে দেখেন নি। অগাধ বিশ্বাস ছিলো ওর উপরে কিন্তু শেষের দিকে এসে এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি হবে সে নিজেও বুঝেনি।
দুঃখের কথা সবটাই রফিক সাহেব তার বন্ধু কাব্যর সাথে শেয়ার করেন।
কাব্যর সাথে পরিচয় বিজনেসের লেনদেনের মাধ্যমে। এই লোকের চিকন বুদ্ধি বেশি। ব্যবসা বানিজ্য ও তাই ফুলে ফেঁপে উঠেছে অতি অল্প সময়েই।
রফিক সাহেবের মনে একটা আস্থা ছিলো,
ওর কাছে গেলে কোনো না কোনো উপায় ঠিক ই পাওয়া যাবে।
কিন্তু সব ঘটনা কাব্য সাহেবের সাথে শেয়ার করার পরে, সে শুনালো উল্টা কথা।
– রফিক, কিছু মনে করোনা বন্ধু! তোমার মত একজন রেপিস্ট এর থেকে ভালো কিছু ডিজার্ভ করেনা।
– আমাকে রেপিস্ট বললে কেনো! ঐ পর্যন্ত তো যেতে পারিনি। তার আগেই..
– তোমার মন কাউকে রেপ করতে চাইছে মানেই তুমি রেপিস্ট। তুমি আমার অফিসে কি করছো!!
তোমার তো জেলে থাকার কথা। নেহাৎ তোমার স্ত্রী তোমাকে ভালোবাসে তাই ধরে পুলিশে দিয়ে দেয়নি।
– দেখো ভাই, কন্ট্রোল ছিলোনা।
বিয়ের সময় রেশমির ফিগার ছিলো অন্যরকম, মেদহীন পেট, কামুক নাভী! সিমসাম গড়নের। বিয়ের কয়েকবছর পরেই গেলো হুট করে মোটা হয়ে। ইউ নো হট? মোটা মেয়েদের সাথে ফিজিকাল রিলেশন করে কোন রকম ইনজয় ই করা যায়না।
– তাই বলে বৌ এর বান্ধবীর দিকে নজর যাবে? ছিহ, রফিক! তোমার তো লজ্জায় মরে যাওয়া উচিৎ। তুমি সুইসাইড করো গিয়ে। আমি বরং ভাবির সাথে গিয়ে নতুন কোন বিজনেসের ব্যাপারে ডিল করি। তাতেই আমার লাভ।
– লাভ? লাভ খুজছো তুমি? আমাকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করো। আমার বিজনেসের কোয়ার্টার ভাগ তোমাকে দিয়ে দিবো পাক্কা!!
– নড়েচড়ে বসে কাব্য। গলা চাপিয়ে বলে,
মরে টরে গেলে কোন সমস্যা আছে?
– কে?
– যার নামে তোমার সব সম্পত্তি, সে।
– কি বলো?
– হুম। ওকে সরিয়ে দিলেই তো সবকিছু আবার তোমার হয়ে যাবে। এই একটা উপায় ই আছে।
– দেখো ওকে আমি অনেক ভালোবাসি। তবে এখন আমার কাছে আমার সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ।
তোমার যেটা ভালো মনে হয়, করো।
– বেশ। তবে রেশমিকে সরিয়ে দেই। আর সাথে ঐ ঝামেলা সুপ্তিকেও বা রাখবে কেনো! ওটাকেও খতম করে দেয়া ভালো হবে।
– কি বলো! দুটা মার্ডার! যদি ধরা পড়ে যাই!
– ধুর বোকা মার্ডার আমরা করবো নাকি! আমরা টাকা দিবো, ভাড়াটে খুনীদের। ওরা কাজ সম্পন্ন করবে। কিভাবে কি করবে ওদের ব্যপার। আমরা তো শুধু পরদিন নিউজপেপারে শোক সংবাদ পাঠ করবো!!
এতক্ষনে চোখেমুখে হাসি ফোটে রফিক সাহেবের।
কাব্য চোখের ভ্রু কুঁচকিয়ে রফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে,
শোনো রফিক,
তুমি তো তোমার স্ত্রী কে মেরেই ফেলতে চাইছো। তোমার যদি আপত্তি না থাকে তবে দুটোকেই তুলে আনি আগে।
ভোগ উপভোগের হিসেব চুকিয়ে তারপর না হয় খালাস করলাম!!
– চলবে….
লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ

গৃহযুদ্ধ পর্ব-০৯

0

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ৯
___________________
সুপ্তি চিৎকার করার ও সুযোগ পায়না এক হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে রফিক। কানের কাছে মুখ লাগিয়ে বলে,
দেখো,
তুমি তো ছয় সাতজনের কাছে ভোগ হয়েছ-ই।
এখন আমাকে একটু শান্তি দাও, আমি তোমার মনের অপূর্ণ ইচ্ছে গুলো পূরণ করে দিব সুপ্তি।
জানোইতো আমার টাকা পয়সার অভাব নেই।
তোমার জীবনের সব সমস্যা আমি দূর করে দিব।
সুপ্তি নিজের হাত দিয়ে রফিক সাহেবকে পেছনের দিকে ধাক্কা মারে।সুপ্তির ধাক্কায় দু-তিন হাত পেছনে সরে যায় রফিক।
চাপা গলায় সুপ্তি বলে,
দ্যাখ রফিক, তোর সাথে রেশমির প্রেমের বিয়ে।এখন আমি যদি রেশমিকে ডেকে সব খুলে বলি, তোর কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছিস? কিন্তু আমি ওকে কোন প্রকারের কষ্ট দিতে চাইনা৷ ওর বিশ্বাস ও ভাংতে চাইনা৷ তাই তোকে সুযোগ দিলাম , নিজের চরিত্রটা শুধরে নে। তোর মত কুলাঙ্গারদেরকে পেটানোর অভ্যেস আমার ছোট থেকেই আছে।
রফিক সাহেব ও চাপা গলায় উত্তর দেয়,
– একটা বেশ্যা আর তোর ভেতরে এখন তফাৎ কি রে? আমার বাসায় থাকিস, খাস। তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেব কাল।
রেশমিকে ডেকে কি বলবি তুই?.
রেশমি তোর মত ধর্ষিতার কথা বিশ্বাস করবে? নাকি ও যাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে তার কথা বিশ্বাস করবে?
তার থেকে চুপচাপ রাজী হয়ে যা। আমি প্রতি রাতে এসে তোকেও সুখ দিব, নিজেও তৃপ্ত হবো৷
– তোকে শেষ সুযোগ দিচ্ছি রফিক। আমি কিন্তু এখন ই রেশমিকে ডাক দিব?
– দিবি? তো দে? ওকে দুধের সাথে হাই পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি আমি। রফিক এত কাঁচা কাজ করে না।
সুপ্তির বুকের ভেতরে ধুকপুক করতে শুরু করে।
রফিক দাঁত বের করা কুটিল হাসি দিয়ে সামনের দিকে আগাতে থাকে ধীরপায়ে।
হঠাৎ করেই বিকট একটা শব্দ হয় সুপ্তির রুমের ভেতরে। ঝন ঝন করে কাঁচের কিছু একটা ভেংগে পড়েছে।এরপরেই শোনা যায় রফিক সাহেবের আর্তনাদ।
ফ্লোরে লুটিয়ে পরে সে। কয়েক সেকেন্ড পরে অন্ধকার কাটিয়ে রুমের বাতি জ্বলে ওঠে৷ একটা ভাংগা ফুলদানির সামনের অংশ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রেশমি।
ঐ ফুলদানি দিয়েই রফিকের মাথার পেছনের অংশে আঘাত করেছিল সে।রেশমি নিজে নিজেই বির বির করে বলে,
আমাকে দুধের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পড়িয়ে রাখার প্লান করেছিলি! ইডিয়ট!
এরপর দ্রুত পা ফেলে ছুটে আসে সুপ্তির দিকে। মাথার পেছনের চুলগুলো মুঠি করে ধরে বলে, তুই ধর্ষিত হয়েছিস এতে যে তোর দোষ একেবারেই নেই সেটাও না। তোর মত মেয়ের কি শিক্ষা হবেনা জীবনেও? সুপ্তি ব্যাথায় ক’কিয়ে ওঠে।
সুপ্তিকে ধাক্কা মেরে বিছানার উপরে ফেলে দেয় রেশমি।
” কি দরকার ছিলো তোর সেদিন রাতে বাইরে বের হওয়ার? মেয়ে মানুষ বাইরে নিরাপদ না তা কি জানতি না তুই? আবার আজকে,
আজকে তুই কেনো দরজা লাগিয়ে ঘুমাস নি?
বল, কেন দরজা লাগাস নি?
চিৎকার করে বলে রেশমি।
উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে রফিকের অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পরা দেহটিকে টানতে টানতে সুপ্তির রুমের বাইরে নিয়ে যায়৷
সিলিং এর ঘুরন্ত ফ্যানের মাঝ বরাবর চিন্তাশূন্য ভাবে অনেক সময় ধরে তাকিয়ে থাকে সুপ্তি। আস্তে আস্তে ঘুমের কোলে ঢলে পরে সে।
সকাল হয় রেশমির ডাকে।
একটা ট্রে-তে হালকা পোড়া করে ভাজা পরোটা এবং কাপভর্তি দুধ-চা নিয়ে এসে সুপ্তির বেডের পাশে থাকা টেবিলে রেখেছে সে।
সুপ্তির ঘুম ভাঙতেই রেশমি গিয়ে ওর পাশে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, সরি রে, কালকে রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে তোকে আঘাত করে ফেলেছি। কিছু মনে করিস না।
দেখ আমি মানসিক ভাবে অত্যন্ত শক্ত দেখে
কালকের বিষয়টা বুকের মাঝে পাথরচাপা দিয়ে স্বাভাবিক আচরণ করছি।
সুপ্তি রেশমির দিকে তাকিয়ে বলে,
” একটা কথা বল তো রেশমি, কোন এক পরিস্থিতির জন্য যদি আমাকে আর রফিক ভাইকে এক রাত এক রুমে কাটাতে হত, পরদিন সকালে কি তুই তাকে সন্দেহ করতি?আমাদের মাঝে খারাপ কিছু হতে পারে এটা নিয়ে?
রেশমি, মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে,না বলে।
” ওকে আমি আমার নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করতাম। ভাবতাম আমি ছাড়া ওর চিন্তাভাবনা জুড়ে আর কেউই থাকেনা৷ ”
তোর যেমন তোর হাজবেন্ড এর উপর বিশ্বাস আছে, আমারো তেমনি রফিক ভাইয়ের উপর বিশ্বাস ছিল। সম্মান ছিল।
এজন্য দরজা দেয়ার কথা চিন্তাও করিনি। আর যখন আমি সুইসাইড এটেম্পট করেছিলাম, তুই ই আমাকে নিষেধ করেছিলি দরজা না দিতে।
– দেখ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি দেখেই তোকে সরি বলছি। আর মন থেকেই সরি বলছি৷ কালকের ব্যপারটা ভুলে যা তো!
– ভুলে গেছি রেশমি। তুই আমাকে কিছু টাকা দিয়ে হেল্প করিস। আমি আজ ই চলে যাব।
– আমার উপর রাগ করে?
– না। তোর জামাইকে দেখলেই আমার ঘৃণা আসবে। তার সামনে পড়ব কি করে?
– সে সুযোগ নেই। তুই আমার কাছেই থাকবি।
– মানে?
– কাল রাতে রফিকের হুঁশ ফেরার পরেই ওকে ওর ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি৷
– তাড়িয়ে দিয়েছি মানে!
– এই ফ্লাটটা আমাদের তা তো জানিস।
– হুম।
– এটা রফিকের টাকাতেই কেনা। ওর ব্যাংক ব্যালেন্স, গাড়ি বাড়ি বিজনেস যা কিছু আছে সবকিছুই বিয়ের পর ও আমার নামে করে দিয়েছে৷এখন ও পুরো রাস্তার ফকিরের মত ঘুরে বেড়াবে।
– এটা ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হলো না? ওর সারাজীবনের অর্জন!
– আমার বিশ্বাসের মর্যাদা ও দিতে পারেনি। আমি কেন ওর বিশ্বাস রাখতে যাবো?
ওর সারাজীবনের অর্জন এই টাকা পয়সা। আর আমার জীবনটাই তো ও ছিলো।
এলাকার বখাটে ছেলেদের টাকা-পয়সা দিয়ে ওর পিছে লাগিয়ে দিয়েছি।
এই এলাকায় ঢুকলেই যেন ইট পাথর মেরে নাক মুখ এবড়োখেবড়ো করে দেয়।
শালা বজ্জাত কালকে তোকে যা বলেছে তা আমার কানে ভাসলেই মনে হয় ওর নিম্নাংগ শিল পাটায় বেটে ভর্তা করে কুকুরকে খাইয়ে দেই।
সুপ্তি কিছুক্ষন নিরব থেকে বলে,
আচ্ছা তোকে তো দুধের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলো তাহলে টের পেলি কিভাবে?
– দেখ সুপ্তি, ওকে আমি অনেক ভালোবাসতাম। ও আমাকে গ্লাসভর্তি দুধ খেতে দেয়ার পরে আমি ভেবেছিলাম ও ভালোবেসে আমাকে খেতে দিয়েছে, যদি না খাই তাহলে মন খারাপ করবে। তাই লুকিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
সুপ্তি বলে
যাক এসব দুঃখের কথা বাদ দে। ভালো কিছু বল।
– তুই চায়ের ভেতর পরোটা চুবিয়ে খেতে পছন্দ করতি তাই তোর জন্য বানিয়ে এসেছি৷ খাওয়াদাওয়া শেষ কর। আজ সারাদিন আমরা বাইরে ঘুরবো। শপিং করবো। বড় নামি-দামি রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া করব।
সুপ্তি হাসে। রেশমি উদ্দেশ্য করে বলে,
যত বড় রেস্তোরাঁয় ই যাইনা কেনো! তোর এই পরোটা আর চা ই আমার কাছে বেস্ট।
রেশমি প্রশংসা শুনে হাসি দেয়। সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে বলে, কিছু ফালতু মানুষের জন্য আমাদের জীবনটা থামিয়ে রাখবো কেনো!
লেটস চিল.. তাড়াতাড়ি খেয়ে গোসল করে রেডি হ৷
.
.
.
.
.
মুরগীর রানের অংশে কামড় দিতে দিতে রোহান বললো,
রোস্ট টা তো দারুণ হয়েছে রে ফুলি। তুইও ভালো রান্না করিস।
ফুলি হাসতে হাসতে বললো, আরেকটু পোলাও দেই!
– না থাক। আজ পেট একদম কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আমি বারান্দায় বসি। তুই বরং চা বানিয়ে নিয়ে আয়।
বারান্দায় গিয়ে গাছগুলোর দিকে একবার নজর বুলায় রোহান।
নতুন নতুন অনেক ফুল এসেছে।
বারান্দার কোণায় সেট করে রাখা ককাটেল পাখিদুটো ডিম দিয়েছে। ওদের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে দেখতে আরো ১৭ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
সুপ্তি কেমন আছে!
মনে পড়তেই মাথা দুদিকে ঝাকি দেয় রোহান। সুপ্তির কথা এখন একদম ই মনে করা যাবে না।
ফুলি চা নিয়ে আসে। ডান হাত দিয়ে চা নেয়ার সময় রোহানের হাতের দিকে ফুলির চোখ চলে যায়।
সাথে সাথে ও বলে ওঠে!
ও মা! ভাইজান আপনার হাতে অতখানি কাটলো কিভাবে!
রোহান পাল্টা প্রশ্ন করে ,
-পাখিতে ডিম পেড়েছে দেখেছিস?
– হ ভাইজান। দেখছি।
– ওদের ডিম ধরে দেখতে গেছিলাম।
তখন কামড় দিয়েছে।
বিশাল চিন্তায় পড়ে যায় ফুলি। কথা না বাড়িয়ে সেও রোহানের সাথে চা-পান করে।
রোহান মণিকা ভাবীর লেখা একটা কবিতা আবৃত্তি করে। ফুলি কবিতার অর্থ না বুঝেই হাত-তালি দেয়।
কিছুক্ষণ পরে নিজের বাসায় চলে যায় রোহান।
ফুলি ককাটেলের খাচার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে ডিম বের করে আনে। পাখিদুটো ফুলিকে কামড়ায় না। ফুলি ভাবে রোহান ভাইকে তাহলে কেন কামড়ালো? ওরা কি রোহান ভাইকে অনেক বেশি অপছন্দ করে? আর এটুকু পাখিতে কামড়ালে কি অতবড় করে কেটে যায়?? গালে হাত রেখে মনে জেগে ওঠা
প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করতে করতে অলস সময় কাটিয়ে দেয় ফুলি।
.
.
.
শপিং করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসে সুপ্তি এবং রেশমি। ক্যাফের একটা পত্রিকার প্রথম পাতায় চোখ পড়তেই হাত দিয়ে চোখমুখ ঢেকে ফেলে সুপ্তি। ছয়জন ছেলের চেহারা অনেক বড় বড় করে ছাপা হয়েছে৷ রেশমির দিকে তাকিয়ে সুপ্তি কান্না শুরু করে। রেশমি জিজ্ঞেস করে, কিরে কি হয়েছে আবার? কোনো কথা না বলেই আংগুল তুলে পত্রিকার দিকে ইশারা করে দেখায় সুপ্তি।
পত্রিকাটা হাতে নেয় রেশমি। সুপ্তি বলে, ওদিন রাতে এই ছেলেগুলোই ছিলো রেশমি!ওদের চেহারা দেখেই আমার ভয়ানক স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গেছে।
রেশমি আগ্রহ ভরে চোখ দেয় হেডলাইনের দিকে,
লাল কালির হেডলাইনে লেখা-
নর্দমা থেকে উদ্ধার হয়েছে অজ্ঞাত ছয় যুবকের মৃতদেহ।

চলবে….
লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ

গৃহযুদ্ধ পর্ব-০৮

0

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ৮
______________
স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগে আমার।
মানতেই কষ্ট হচ্ছে,
সুপ্তির নামের পেছনে এখন ধর্ষিতা ট্যাগ লাগানো! সবকিছু শোনার পরে মনে হচ্ছিলো রাগে আমার কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
সেদিন যখন মণিকা ভাবী এক্সিডেন্ট করলো, আমি যেতে চেয়েছিলাম ভাবির সাথে৷ কিন্তু সেখানে বেশি বুঝে আমাকে যেতে না দিয়ে ও বের হয়ে গেছে৷ ওর তো কোন দরকার ছিলো না অত রাতে বের হওয়ার। সেফটির একটা বিষয় আছে। নিজে যদি সাবধান হয়ে না চলে, বিপদে পরে তাহলে কার ই বা কি করার আছে।
কথা গুলো ভাবার সাথে সাথে রেশমিকেও বলে ফেললাম।
রেশমি উত্তরে জানালো, কেউ কি ইচ্ছা করে ধর্ষিত হয় রোহান? উলটা কথা কেন বলছো! ঠিক ই করেছে সুপ্তি তোমার কাছে যায়নি। গেলে এসব কথা শুনতে হতো, ওর যেখানে এখন সাপোর্ট দরকার, সেখানে উলটো আরো আঘাত পেত৷ ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া আঘাত সহজে মেনে নেয়া যায়না।
– সুপ্তি জানে যে আমি ওকে প্রচন্ড ভালোবাসি। নিজেকে হেফাযতে রাখার দায়িত্বটাও তাই ওর নিজেরই ছিলো।আমাকে কিছু বুঝাতে এসো না।
ছয় সাতজন ছেলের কাছে ভোগ হওয়া শরীরের প্রতি আমার আর রুচি আসবেনা।
বলেই চেয়ার ধাক্কা মেরে ফেলে উঠে আসলাম।
এবার আর কোন হাঁটাহাঁটি নেই। একটা পাঠাও রাইড ভাড়া করে চলে আসলাম বাসায়।
এসে জামাকাপড় খুলে সব ফ্লোরে ফেলে ফ্যান ছেড়ে বিছানায় শুয়ে রইলাম।
চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো পুরানো কিছু স্মৃতি।
সুপ্তির সাথে আমার এক বছরের প্রেমের সম্পর্ক। তারপর বিয়ে।
রিলেশনের শুরু থেকেই ও আমার প্রতি শতভাগ ডেডিকেটেড ছিলো।
কেউ যদি আমাকে এসে বলতো, যে সুপ্তির সাথে ফোনে কথা হয়েছে, হোক ছেলে কিংবা মেয়ে, আমি বিশ্বাস করতাম না। কারণ সুপ্তি যে কারো সাথেই কথা বলুক না কেন, আমাকে নিজ থেকেই জানাতো।
ও আমাকে রেখে তো কখনো এক গ্লাস পানিও খেত না।
খুব মনে পড়ছে আগের দিনের কথাগুলো। অফিস থেকে এসে যখন ও রান্না করতো, আমি বারবার ও ক্লান্ত চেহারার, ঘর্মাক্ত দেহের প্রেমে পড়তাম। আদরে আদরে আমাদের ছোট্ট কিচেনটাকে স্বর্গতুল্য করে তুলতাম। সকালে আমার ঘুম ভাঙতো সুপ্তির চুমো খেয়ে।খুব অল্পতে তৃপ্ত ছিলো মেয়েটা। পথের পাশে পরে থাকা ফুল তুলেও যদি ওর হাতে দিতাম, প্রচন্ড খুশি হত ও। মনে হত পুরো পৃথিবীটা হাতে পেয়েছে।
রান্না ভালো না পারা সত্তেও অফডে তে টুকটাক পিঠা বা ভিন্ন কিছু বানিয়ে আমাকে খাওয়াতে চেষ্টা করতো। আমাদের ভালোবাসার কমতিটাই বা ছিলো কোথায়!!তবে সবকিছু হঠাৎ করেই কেন এমন ছন্নছাড়া হয়ে গেল?
না চাইতেও অসীম ভালোবাসার মাঝে সৃষ্টি হলো অসীম দূরত্ব।
সুপ্তির কথা মনে পড়লে আগে হাজারো মন খারাপের মাঝে আমার মন ভালো হয়ে যেত।
আর এখন ওর কথা মনে পড়লে রাগে আমার হাত পা কেঁপে উঠছে।
কিন্তু নিজেকেও সর্বহারা মনে হচ্ছে,
কি নেই এখন আমার!
বাসায় খাবার আছে, পকেটে টাকা আছে, রুমে সুন্দর করে সাজানো ফার্নিচার আছে।
কিন্তু মনে সুখ নেই। ভালোবাসার মানুষটা নেই। ভালোবাসার মত কেউ নেই।
ফোনটা হাতে নিয়ে হাসপাতালে কল করলাম, মণিকা ভাবি কেমন আছে আপডেট নিলাম।
তার শারিরীক অবস্থা এখন উন্নতির দিকে।
মণিকা ভাবী তার জীবনে অনেকটাই একা।
ঠিক সুপ্তির মত।
সুপ্তি বড় হয়েছে ওর মামার বাসায়। ওর ছোট ভাই পলাশের বয়স যখন পাঁচ, তখন একটা সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ওর মা বাবা, এরপর ওদের দুজনের জীবন হয়ে যায় জলে ভাসা পদ্মপাতার মত। সুপ্তিকে যে আমি বিয়ে করেছি এটা ওর মামার বাসার লোকেরা জানে, বিয়ের আগেই জানানো হয়েছিলো।
” বিয়ে করবি? আচ্ছা করে নে। ছেলে ভালো তো? ”
এ কথাগুলো বাদে আর কিছুই বলা হয়নি বা করা হয়নি সুপ্তির জন্য।
ওকে বিয়ে করেছিলাম খুব সাধারণ ভাবে, একটা কাজী অফিসে গিয়ে। বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত ওর মামার বাড়ি থেকে একটা ফোনকলও আসেনি।পলাশ একটা আবাসিক স্কুলে লেখাপড়া করছে।
ছুটি পেলে মাঝে মাঝে বাসায় আসে।
পলাশ আর আমাকে ঘিরেই সুপ্তির পুরো পৃথিবীটা।
কিন্তু কিছু কিছু মানুষের কপালে আল্লাহ হয়ত সুখ লিখে রাখেন না। সুপ্তির বেলায় ও তাই। ভালোবাসায় টইটুম্বুর আমাদের চার মাসের সংসারে দুঃখ কি সুপ্তি তা কখনো অনুভব ই করেনি। আমি করতে দেইনি। কিন্তু সেদিন মণিকা ভাবি যখন খাবার ফেলে উঠে চলে গেছিলো,
ও প্রচুর কষ্ট পেয়েছিলো। শুরুটা হয়ত তখন থেকেই৷
নিজের মনের বিরুদ্ধে কি কিছু করা যায়?
এইযে এখন আমি মন থেকে সুপ্তিকে মেনে নিতে পারছিনা! কি করব এখন! কি ই বা করার আছে আমার।
ছয় সাতজন ছেলে মিলে একটা মেয়ের দেহের উপর হামলে পড়লে, আর কি ই বা বাকি থাকে!!
শোয়া থেকে উঠে বসলাম গায়ে জামা চাপিয়ে চলে গেলাম মণিকা ভাবির বাসায়।
নক করতেই দরজা খুলে দিলো ফুলি।
জিজ্ঞেস করলাম, রান্না করেছিস, খেয়েছিস?
ফুলি বলল, জ্বী ভাইয়া করছি।
বললাম, রাত থেকে আমার জন্য ও করিস। আজ থেকে তোদের এখানে খাবো।
মাস শেষে বিল দিয়ে দিব।
ফুলি আমার কথা শুনে এক হাত দিয়ে মুখ চেপে হাসলো।
জিজ্ঞেস করলাম, কিরে হাসিস কেনো?
ফুলি বললো- আফায় আপনের কাছ থেকে খাওনের টাকা নিবে না ভাইয়া৷ আপনে এখানে খাওয়াদাওয়া করবেন এইটা আফায় শুনলে অনেক খুশি হইবে।
– রান্নাবান্না কি সবসময় তুই ই করিস?
– না রান্না বাদে বাকি কাজ-কাম আমি করি। কিন্তু রান্না করে মণিকা আফায়। উনি আমারে হাত দিতে দেয়না।
– আচ্ছা। আমি বারান্দায় বসছি। তুই চা নিয়ে আয়৷
ফুলি চা আনতে চলে গেল। আমি বারান্দায় গেলাম।
গাছের পাতাগুলো লালচে হয়ে গেছে। মেয়েটা বোধহয় ঠিকভাবে গাছে পানি দেয়না। পাশেই গাছে পানি দেয়ার জন্য একটা পাইপ লাগানো ছিলো।
ওটা হাতে নিয়ে সব গাছগুলোতে পানি দিতে লাগলাম৷
বাগান করা আমার সব সময়ের শখ ছিলো।
সুপ্তির ও অনেক ইচ্ছে ছিলো আমাদের বারান্দা হবে সবুজ গাছে পরিপূর্ণ। ইচ্ছে থাকলেও টাকা ছিলো না। টাকা পয়সার সমস্যা দূর করতেই সুপ্তি চাকরিতে যোগ দেয়। দিন রাত অফিসে পরে থেকে পরিশ্রম শুরু করে। যখন ই অভাব দূর হয়ে গেলো। শখ গুলো পূরণ করার সময় এলো তখন ই ও আর নেই।
ওর হাড়ভাংগা খাটুনিও বৃথা! সবার কপালে সবকিছু থাকেনা। অথচ আমি তেমন পরিশ্রম না করেও সবুজে ঘেরা বারান্দার সৌন্দর্য, শান্তি উপভোগ করতে পারছি।
এজন্য অবশ্য মণিকা ভাবিকে একটা ধন্যবাদ দেয়া দরকার।
চা চলে আসলো কিছুক্ষনের মধ্যেই, রকিং চেয়ারর শুয়ে সেন্টার টেবিলের উপরে পা উঠিয়ে দিয়ে আয়েশ করে একটা চুমুক দিলাম,
মনে হলো,আহ, জীবন হয় সুন্দর।
এখন অবশ্য মণিকা ভাবি থাকলে তাকে বলতাম আবৃত্তি করে দুটো কবিতা শোনান।
.
.
রেশমির বিছানার উপরে একটা কোলবালিশ কোলে দিয়ে বসে আছে সুপ্তি।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে চলেছে বেশ অনেক্ষন ধরেই।
রেশমি এসে সুপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, বলে সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন দেখিস। রোহান যে রেশমির সাথে দেখা করেছিলো খুব সাবধানে সে কথা সুপ্তির কাছে গোপন করে রাখে রেশমি।
সুপ্তি রেশমিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,
জানিস, আমার মত রোহানেরও কেউ নেই। ওর কষ্টটা বরং আমার চেয়ে বেশি। বাসায় সৎ মায়ের কাছ থেকে কখনো কোন ভালোবাসা পায়নি ও। আমি চেয়েছিলাম ওর ভালোবাসাহীন জীবনটা ভালোবাসা দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিতে। কিন্তু আমার কোন ইচ্ছা সৃষ্টিকর্তা বোধ হয় পূরণ করবেন না।
কোন মুখে আমি ওর সামনে দাঁড়াবো! এখন জানিওনা ও খেয়ে আছে নাকি না খেয়ে থেকে আমার জন্য কান্না করছে, কথাটা বলেই হু হু করে আরো জোড়ে কান্না করে দেয় সুপ্তি।
রেশমি সুপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
রোহান একদিন নিজেই তোকে খুঁজে বের করে নিয়ে যাবে দেখিস। সুপ্তি শব্দ করে কান্না করা থামিয়ে দেয়। তবুও নিরব কিছু অশ্রু চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসে সুপ্তির।

.
.
মাঝ রাতে হঠাৎ করেই একটা দুঃস্বপ্নে সুপ্তির ঘুম ভেংগে যায়।
রেশমির বাসাটা তিন রুমের। একটা ওদের নিজেদের রুম, আরেকটা স্টোর রুম। সুপ্তি যেটায় থাকে সেটা গেস্ট রুম। গেস্ট রুমে একটা সুন্দর বারান্দা আছে। সুপ্তি বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় চলে যায়।
খুব সুন্দর ফুরফুরে বাতাস এসে চুলগুলোকে দোলা দিয়ে যায় সুপ্তির। কিছু মুহুর্তের জন্য সুপ্তি ভুলে যেতে চায়, যে ওর সাথে খারাপ কিছু হয়েছে। ও একটা বাচ্চার মতই নিষ্পাপ। সবকিছু আগের মত আছে।এই বারান্দার মৃদু বাতাস,হালকা চাঁদের আলো এবং রাতের নিরবতায়, ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে ওর দ্বিতীয় অস্তিত্ব, রোহান।
রোহানকে প্রচন্ডভাবে মিস করতে থাকে সুপ্তি।
রোহানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো হয়না কতদিন! আর কোনদিন হবে কিনা তাও জানেনা সে।সুপ্তির চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে।
হঠাৎ কোমড়ের কাছে আলতো একটা স্পর্শ অনুভব করে সুপ্তি। ওর পুরো শরীর কেঁপে উঠে। পুরুষালি হাতের ছোয়া!!
রোহান এসে ওকে সারপ্রাইজ দিলো নাকি! কথাটা ভেবে পেছনে ফিরতেই সুপ্তির চোখ বড় বড় হয়ে যায়৷ মুখে বিশ্রী একটা হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রেশমির হাজবেন্ড রফিক সাহেব।
” পরিবেশটা খুব সুন্দর তাইনা? ”
বলেই সুপ্তির নরম কোমড়ে শক্ত হাতের চাপ বাড়িয়ে দেয় সে।

চলবে….
লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ

গৃহযুদ্ধ পর্ব-০৭

0

#গৃহ_যুদ্ধ পর্ব ৭
_________
____________

মণিকা ভাবির আলমারি থেকে টাকা নিয়ে চলে গেলাম গ্রীন-লাইফ হাসপাতালে।
ডিউ টাকা পরিশোধ করলাম। মনে মনে একটা কথা ভাবলাম, মানুষের টাকা পয়সা যতই থাকুক, পাশে যদি সাহায্য করার মত লোক না থাকে, একাকিত্ব যদি একটা মানুষকে ঘিরে রাখে তবে সে জীবনের কাছে পুরোদমে অসহায় হয়ে পরে। বেশি কিছু হয়ত ওনার জন্য করতে পারছিনা, অথচ আমরা না থাকলে উনি মারাও যেতে পারতেন। ওনার বেডের পাশে রাখা একটা চেয়ারে গিয়ে বসলাম। উনি আমার উপস্থিতি হয়ত টের পেয়েছেন। ভাংগা ভাংগা গলায় জিজ্ঞেস করলেন, আমার বারান্দার গাছগুলো কি ঠিক আছে?
জবাব দিলাম। জ্বী। এরপর উনি নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। পাশ থেকে উঠে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম কবে নাগাদ বাসায় ফিরতে পারবে? ডাক্তার জানালো হাসপাতালে তাকে থাকতে হবে আরো প্রায় দশ দিন। ওখানের ইনচার্জ কে বলে আসলাম ওনার সেবা শুশ্রুশায় যেন কোন প্রকার সমস্যা না হয়৷ দরকার হলে একজন নার্স রেখে দিন ওনাকে ২৪ ঘন্টা দেখাশোনা করার জন্য৷ টাকা-পয়সা নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না। পরিশোধ হয়ে যাবে।
ওনারা মণিকা ভাবিকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি জানালো।
হাসপাতাল থেকে বের হলাম। চারপাশের মানুষগুলোকে অসহ্য লাগছে। আমার একটু একাকিত্ব দরকার। আর এ জনবহুল শহরের মাঝেও একাকিত্ব এনে দেয়ার জন্য একটা সিগারেট যথোপযোগী ভূমিকা পালন করে।
এবার সব চিন্তাগুলোকে একপাশে বাদ দিয়ে একটু সিরিয়াস হয়ে সুপ্তিকে নিয়ে চিন্তা করা যাক,
সুপ্তি কেনো বাসায় ফিরলো না?
আমার উপর রাগ করে? নাকি অন্য কোন কারণে? আমার উপর রাগ করে ও বাসা ছাড়েনি। তাহলে রাগ দেখিয়ে আগেই চলে যেত। মণিকা ভাবিকে হাসপাতালে দিয়ে উধাও হয়ে যেত না। সুপ্তি আবার বাসায় ফিরে এসেছিলো তাহলে ও ঠিক আছে। তবে আবার চলে গেলো কেনো!
যে লোকটা আমার বাসায় এসেছিলো ডেন্টিস্ট পরিচয়ে, তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। আমার হিসেব অনুযায়ী ঐ লোকটা এখন বাসায় নেই। বাসায় আছে তার ওয়াইফ।
হাঁটতে হাঁটতেই ঠিকানা অনুযায়ী চলে গেলাম লোকটার বাড়ি।
কলিংবেল চাপ দেয়ার বেশ কিছুক্ষন পরে এসে দরজা খুললেন এক ভদ্র মহিলা। ওনাকে বললাম, আমি ইব্রাহীম সাহেব( ওনার স্বামী) এর কলিগ। উনি কি বাড়িতে আছেন?
ভদ্র মহিলা জানালেন বাড়িতে নেই তিনি।
বললাম যে তার জন্য অপেক্ষা করি?
উনি জানালেন, তিনি চাকরী করেন। ডিউটি টাইম সকাল ৯ টা থেকে বিকেল পাঁচটা৷
– বুঝলাম, স্ত্রী হিসেবে আপনি অতটাও আদর্শ নন। আপনার হাজবেন্ড এর চাকরী চলে গেছে দু’দিন হলো।সেটা আপনি বুঝতে পারেন নি। আদর্শ স্ত্রীরা স্বামীর সবকিছু সহজেই ধরে ফেলতে পারে।
– কি বলছেন আপনি!! ওর চাকরী চলে গেছে?
ওনার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম।
উনি আমার আচরণে একটু বিব্রত হলেন। মুখ থেকে আস্তে আস্তে ধোয়া ছেড়ে ওনাকে বললাম, আপনার মাঝে কি কোন অপূর্ণতা আছে?
উনি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন৷
ওনাকে আবারো বললাম,
আমার স্ত্রী গত একদিন নিঁখোজ ছিলো৷ ওকে অনেক খুঁজেছি, রাস্তায় রাস্তায় খুঁজেছি, থানায় মামলাও করেছি, পুলিশরাও আমার স্ত্রীকে খুঁজছে। গতকাল
আপনার হাজবেন্ডও আমার বাসায় গিয়েছিলো। সেও কোন একটা কারণে আমার স্ত্রীকেই খুঁজছে।
– কেনো?
-কেনোর উত্তরটা পরে দিচ্ছি, আগে আমার কথা শেষ হোক।
আপনার হাজবেন্ড আমার বাসায় গিয়েছিলো ডেন্টিস্ট সেজে। অবশ্য তার কথাবার্তা শুনেই আমার সন্দেহ হয়েছিলো এক্কটু৷
পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম উনি আসলে সুপ্তির কোন ডেন্টিস্ট না। বরং সুপ্তির একজন কলিগ।
শুধু এটাই না। আরো অনেক তথ্যই জেনেছি, সুপ্তিকে উনি অফিসে প্রায়শ ই উত্তক্ত করতো। মাঝে মাঝে চিঠি দিত। এ বিষয়টি আমার স্ত্রী একদম ই পছন্দ করতো না।
গত পরশু একই কাজ আবারো রিপিট করায়, অফিসের সবার সামনেই আপনার হাজবেন্ড কে চড় মেরে বসে সুপ্তি। এ নিয়ে ভালোই জল ঘোলা হয়। বিষয়টি পরে কতৃপক্ষের নজরে গেলে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে আপনার হাজবেন্ডকে চাকুরী থেকে বহিস্কৃত করে দেন তারা।
ভদ্র মহিলা আমার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করলেন না। তার চোখে মুখে উৎকন্ঠা। এক্সপ্রেশন দেখেই বোঝা যাচ্ছে, হাজবেন্ড এর প্রতি তার ভালোবাসা অনেক।
উনি আমার সামনেই ওনার হাজবেন্ড কে কল দিলেন।
ফোন রিসিভ হলো।
– হ্যালো! তুমি কোথায়?
– বোকার মত প্রশ্ন করো না। আমি এ সময়ে কোথায় ই বা থাকি?
– সত্যি করে বলো তো তুমি কোথায়!
– কাজ করার সময় বিরক্ত করো না। আমি অফিসে বসা। কাজ করছি,বাই।”
বলে ফোনটা কেটে দিলো ইব্রাহীম।
মহিলা আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
জানেন?
আমার স্ত্রীকে আমি দু’দিন ধরে খুঁজে পাচ্ছিনা। ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেলে কতটা কষ্ট লাগে বলতে পারেন?
উনি আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
পকেট থেকে ফোন বের করে কল দিলাম ইব্রাহীম সাহেবকে।
ফোন রিসিভ হলো।
ফোন লাউড স্পিকারে রেখে
সালাম দিলাম।
উনি সালাম এর উত্তর দিলেন।
বললাম,
– ডেন্টিস্ট, মি. ইব্রাহীম সাহেব, আমি সুপ্তির হাজবেন্ড, রোহান মাহমুদ।
ওপাশ থেকে তখন পিন পতন নিরবতা।

– আপনি নিশ্চয়ই এখন দুপুরের কড়া রোদে কোন রাস্তায় নিরুদ্দেশ ঘোরাঘুরি করছেন। এদিকে ভাবী ইলিশ মাছ দিয়ে লাউ শাকের ঝোল রান্না করেছেন।
যে গরম পড়েছে, রোদে না পুড়ে বরং বাসায় চলে আসুন। একসাথে দুটো ডাল-ভাত খাই।
– আপনি আমার বাসায় গিয়েছেন?
– জ্বী। আপনি আমার বাসায় ঢু মেরে গেছেন, আমি আপনার বাসায় না আসলে সেটা কেমন দেখাতো!
অবশ্য আমাকে এজন্য একটু কষ্ট করতে হয়েছে, আমাকে আপনার সম্পর্কে অনেক খোঁজ খবর নিতে হয়েছে।
এরপরই আপনার বাসায় চলে আসলাম। ভাবির সাথে কিছুক্ষন গল্প-সল্প করলাম।
আমি আছি এখানেই আপনি চলে আসুন দ্রুত।
ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেলো।
মিনিট দশেক অপেক্ষা করতেই চলে আসলেন ইব্রাহীম সাহেব।
কিন্ত এই দশ মিনিট আমি শান্তিতে থাকতে পারিনি৷ ওনার বাসায় যে লাউশাক আর ইলিশ মাছের ঝোল রান্না হচ্ছে এটা আমি কিভাবে বুঝলাম সেটা জানার জন্য অনেক প্রশ্ন করছিলেন। আমি উত্তরে শুধু রহস্যময় একটা হাসি দিয়েছি৷
.
.
.
বিমর্ষ হয়ে আমার সামনে বসে আছেন ইব্রাহীম সাহেব।
ওনার ওয়াইফ ফুঁপিয়ে কান্না করছেন। আমি ধীরে সুস্থে সিগারেট শেষ করলাম।
” ইব্রাহীম সাহেব?”
ডাকতেই উনি ফ্লোরের দিকে তাকানো অবস্থা থেকে আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন।
” আপনি আমার বাসায় মিথ্যে পরিচয় নিয়ে কেনো গিয়েছিলেন? সত্যিটাই বলুন।”
– আমি সুপ্তির কাছে গেছিলাম। সরি বলার জন্য। চাকরি হারানোর পরে যখন আমি বসের হাতে পায়ে ধরে মাফ চাইলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, সুপ্তির কাছে সরি বলতে, যদি সুপ্তি বসকে আমার ব্যপারে সুপারিশ করে তবেই কেবল আমি পুনরায় চাকরিতে জয়েন করতে পারব। এরপর আমি সুপ্তির সাথে অনেক বার যোগাযোগ এর চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। এরপর বাধ্য হয়েই আপনাদের বাসায় যাই। যদি আমি সেদিন বলতাম আমি ওর কলিগ, আপনি জিজ্ঞেস করতেন কেন এসেছি ওর কাছে? আপনাকে সত্য কথাটা কিভাবে বলতাম!
তাই বানিয়ে কিছু একটা বলে দিয়েছি৷
আমাকে মাফ করবেন এজন্য৷
– সুপ্তিকে আপনি উত্যক্ত করতেন কেনো?
ওনার বউয়ের সামনে প্রশ্নটা করায় উনি বাজে একটা সিচুয়েশনে পড়লেন।
কোন উত্তর দিলেন না।
আবারো বললাম, আপনি ভরা অফিসে একজন মেয়েকে উত্তক্ত করেছেন, আড়ালে সুযোগ পেলে তো রেপ করতেন!
কথাটা বলার সাথে সাথেই ওনার স্ত্রী পাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন।
বললেন, শাট আপ মিস্টার রোহান, আপনি আমার হাজবেন্ড কে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন না।
– আমি যা ইচ্ছা তাই কোথায় বললাম! উনি যা করেছেন সেটাই বললাম।

– উনি কি করেছেন? আপনার স্ত্রীকে উত্তক্ত করেছেন? সেটা আমার জন্য। আমি দায়ী৷
আমি অন্য একটা বিবাহিত ছেলের সাথে কিছুদিন ঘোরাঘুরি করেছিলাম। ও সেটা দেখে রাগ হয়ে, আমার উপর জিদ দেখিয়ে আপনার স্ত্রীকে হয়ত কিছু একটা বলেছে। আমাকে দেখাতে চেয়েছে সে-ও চাইলে প্রেম ট্রেম করে ফেলতে পারে যে কোন সময়ে।
আমি সেজন্য সরি। আপনার পায়ে ধরে মাফ চাইবো এখন?
ইব্রাহীম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম,
শিখুন, ভালোবাসা কি জিনিস তা আপনার স্ত্রীর কাছ থেকে শিখুন। নিজের চরিত্রে দাগ লাগিয়ে হলেও সে আপনার সম্মান রক্ষা করতে চেয়েছে। তার সামনে আপনাকে কটু কথা বলেছি, আপনার থেকেও এতে সে বেশি কষ্ট পেয়েছে। নিজে মিথ্যা একটা গল্প বানিয়ে,নিজেকে আমার কাছে ছোট করে হলেও আপনাকে মহৎ প্রমাণ করতে চাইছে।
আর আপনি কি করছেন! বাসায় এমন একটা স্বর্গ রেখে বাইরের মানুষের দিকে নজর দিচ্ছেন। নিজে ভেবে দেখুন কতবড় ভুল আপনি করেছেন।
ভদ্র-মহিলার বলা মিথ্যা আমি ধরতে পেরেছি এজন্য হয়ত আমাদের মাঝ থেকে উঠে উনি লজ্জায়,বাসার ভেতরে চলে গেছেন।
স্ত্রী চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইব্রাহীম সাহেব এসে আমার হাত ধরে বসে পড়লেন। বললেন, এমন ভুল উনি আর কোনদিন করবেন না। কারো সাথেই করবেন না। আমি যাতে সুপ্তিকে বলি ওনাকে চাকরিতে পূনর্বহালের জন্য সুপারিশ করতে। নইলে না খেয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
ওনার চোখেমুখে তাকিয়ে বোঝা গেলো এবার আর কোন মিথ্যা ছলনার আশ্রয় নিচ্ছে না। ভেবেছিলাম সুপ্তির গায়েব হওয়ার পেছনে ইব্রাহীম সাহেবের হাত আছে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল হল। সুপ্তি গায়েব হলে ইব্রাহীম সাহেবেরই লস।
ওনাকে বললাম, দোয়া করবেন সুপ্তির জন্য।
উনি কি বুঝলো, কি বুঝলোনা তা জানিনা কিন্তু মাথা নাড়িয়ে বললো,
হ্যাঁ, হ্যাঁ অনেক দোয়া করবো। অনেক দোয়া করবো।
ওনার বাসা ছেড়ে চলে আসলাম।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হিসেব মিলালাম।
সুপ্তি অফিসে ওর কলিগ ইব্রাহীম সাহেবকে থাপ্পড় মেরেছে, এ নিয়ে গন্ডোগোল হয়েছে। তাহলে সেদিন রাতে ও এ বিষয়টি নিয়েই কোন নালিশ এসেছিলো কিনা, আমাকে জিজ্ঞেস করেছে।
সুপ্তির প্রতি আমার অন্য একটা সন্দেহ জন্ম হয়েছিলো৷ একটা অবিশ্বাস জন্ম হয়েছিলো এখন নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে।
ভালোবাসার মাঝে অবিশ্বাসের জায়গাটা আমি ই তৈরি করেছি। আমিও সুপ্তিকে নিজের মতই ভেবেছি হয়ত। আমার কেবলই মনে হতে লাগলো মণিকা ভাবীর সাথে আমার হুট করেই এত বেশি ক্লজ হওয়াটা উচিৎ হয়নি।
অনুশোচনায় রাস্তার মাঝেই নিজের গালে নিজে একটা চড় মারলাম।
কিছুক্ষন পরে মোবাইলে রিং হলো,
রিসিভ করার পরে ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো,
” ভাইজান, সি.এন. জি ওয়ালাকে খুঁজে পেয়েছি”
সুপ্তি পুনরায় বাসায় আসার পরে আবার যখন চলে গেলো, তখন
বাসার সামনে থাকা সিসি টিভি ক্যামেরায় ওর সি এন জির পেছনে থাকা নম্বরপ্লেটের ছবি স্পষ্ট ভাবেই রেকর্ড হয়ে ছিলো। ফুটেজ থেকে ইনফরমেশন কালেক্ট করে আমি লোক লাগিয়ে দেই সি.এন.জি ওয়ালাকে খুঁজে বের করার জন্য।
ও কোথায় নেমেছে কি করেছে সেটা জানাটা আর আমার জন্য বেশি কঠিন হয়ে উঠবে না।
.
.
.
.
.
একটা রেস্তোরার মুখোমুখি সিটে বসে আছি আমি এবং রেশমি রফিক।
মেয়েটার নাম যখন ছিলো শুধু রেশমি তখন ওকে একবার দেখেছিলাম। সুপ্তির স্কুল জীবনের বান্ধবী।
রফিক নামের এক লোকের সাথে বিয়ে হওয়ার পর এখন তার নাম হয়ে গেছে রেশমি রফিক। বিয়ের পর জামাইয়ের পদবী কেনো মেয়েরা চুরি করে নেয়,
তা কিন্তু জটিল চিন্তার বিষয়৷ যাক এটা নিয়ে পরে বিস্তর চিন্তাভাবনা করা যাবে আগে আমার জানতে হবে রেশমি রফিকের বাসায় আমার স্ত্রী কেনো লুকিয়ে আছে!
রেশমি কিভাবে আমাকে মূল কারণটা বলবে, সেটা ভেবে পাচ্ছিলো না।
এদিকে আমিও বারবার প্রশ্ন করে যাচ্ছিলাম।আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ও পালটা প্রশ্ন করলো, আমি কিভাবে জানতে পারলাম যে সুপ্তি এখানে আছে?
ছোট করে উত্তর দিলাম, সি এন জি ওয়ালাকে ধরেছি,সে আপনাদের বিল্ডিং দেখিয়ে দিয়েছে। বাকি সাহায্যটুকু করেছে আপনার বাসার দাঁড়োয়ান।
এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
রেশমি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
সুপ্তি পৃথিবী থেকে ওর সুপ্তি পরিচয়টাই মুছে দিতে চাইছে।
ও কাউকে নিজের মুখ দেখাতে চাচ্ছে না। দুবার সুইসাইড এটেম্পট ও করেছিলো। কিন্তু আমার জন্য পারেনি।
– কিন্তু এসব কেন?
কারণ ওর পৃথিবী ছিলেন আপনি।ওর মতে এখন আপনার সামনে যাওয়ার বা দাঁড়ানোর মত মুখ ওর নেই। এজন্য ওর কাছে এ পুরো পৃথিবী ই মূল্যহীন।
– আমি আপনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝছিনা।
– সুপ্তি সেদিন রাতে মণিকা ভাবীকে হাসপাতালে এডমিট করিয়েছিলো।
– হুম। তো?
– ফেরার পথে কিছু বখাটে ছেলেরা ওকে তুলে নিয়ে ঘন্টাখানেক ধরে ধর্ষণ করে৷
রেশমির কাছ থেকে শোনা কথাটা, আমার জন্য কোন সাধারণ কথা ছিলো না। মনে হলো ওর গলার কন্ঠস্বর একটা বুলেট হয়ে আমার এক কানের ছিদ্র দিয়ে ঢুকে মস্তিষ্ক ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে অপর পাশের কান থেকে বের হয়ে গেলো।
রেশমি বলতে থাকলো,
এটা জানার পরে আপনি ওকে আর মেনে নিবেন না,ওর সাথে খারাপ ব্যাবহার করবেন এসব ভেবেই ও আর আপনার কাছে ফেরত যায়নি। আহত অবস্থায় কোনরকম আমার বাসা পর্যন্ত এসেছে।ওকে আমি একজন মেয়ে নার্স এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু ও একটু মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। দু’বার ছাদ থেকে লাফ দিতে চেয়েছিলো…..
রেশমি ওর মত করে অনেক কথা বলে যাচ্ছে। আমি চেয়ারে বসে আছি। কথাগুলো শুনছি।কিন্ত হাত পা নাড়ানোর শক্তি পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে আমি প্যারালাইজড হয়ে গেছি। আস্তে আস্তে আমার চিন্তা করার শক্তিও হারিয়ে যাচ্ছে।…..
চলবে…
লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ

গৃহযুদ্ধ পর্ব-০৬

0

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ৬
_________
____________

উদ্ভ্রান্তের মত রাস্তার উপর দিয়ে ছুটে চলেছি।কি করবে বুঝতে পারছিনা। সুপ্তি হুট করেই কোথায় উধাও হতে পারে। একমাত্র উপায় থানায় জিডি করা। সিসিটিভি ক্যামেরা অনুসন্ধান করলেই বোঝা যাব্ব সুপ্তি কোথায়! কিন্তু সেটাও তো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হাঁটতে থাকলাম উদ্দেশ্যহীন। মণিকা ভাবীকে যেখানে ভর্তি করা হয়েছে, সেখানে,সুপ্তির অফিসের সামনে বাসার সামনের রোডে, সব জায়গায় খুব ভালোভাবে খোঁজ নিলাম। কোথাও কেউ সুপ্তিকে দেখেনি
.
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলো। শাহবাগ থানায় সুপ্তির নিঁখোজ হওয়ার ব্যপারে একটা রিপোর্ট লেখালাম।
মনটা খুব বিষন্ন হয়ে আছে৷ জীবনে কখনো সিগারেট মুখে নেইনি। তাও আজ একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে হেঁটে চলেছি। মাথা বেশ হালকা লাগছে।
সন্ধ্যার একটু আগে এসে পৌঁছালাম গ্রীন-লাইফ হাসপাতালে, দূর থেকে মণিকা ভাবীকে দেখলাম, মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। অনড় হয়ে শুয়ে আছে সে।
তাদের বাসায় কাজ করা মেয়েটি সারাদিন না খেয়ে ইমার্জেন্সি রুমের দরজার সামনেই বসে আছে।
ওকে কিছু খাবার কিনে দিলাম। ডাক্তাররা জানালেন মণিকা ভাবীর চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মোটামুটি ভালো অংকের টাকা লাগবে। আমি ডাক্তারদের সব খুলে বললাম, যে আমি ভাড়াটিয়া৷ উনি এক্সিডেন্ট করেছেন ওনাকে এখানে নিয়ে এসেছি। এটুকুর বেশি কি ই বা করতে পারি৷
প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তাররা একটু অর্থলোভী হয়ে থাকে। তারা বললো, দু-দিনের বিল ডিউ পরে গেলে আমরা রোগীকে আর সার্ভিস দিতে পারবো না৷
সবকিছু শুনে মনে হচ্ছে মাথায় আমার আকাশ ভেংগে পড়লো। ওনার বাসার মেয়েটাকে সাথে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
পলাশও বেশ মনমরা হয়ে আছে। ওর বোনের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা, বিষয়টা ওকেও কষ্টদায়ক পরিস্থিতিতে ফেলেছে।আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ও কান্না করছে।
হাত পা চারদিকে ছড়িয়ে ফ্লোরের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছি। মাথায় খাঁ খাঁ শূন্যতা।
সন্ধ্যার একটু পর হবে হয়ত সময়টা।
টুং-টাং করে বাসার কলিং বেল বাজলো। হুট করে মনে হলো দেহের শব রক্তগুলোতে একটা তুফান বয়ে গেছে।
দৌড়ে দরজার কাছে গেলাম। আমার সাথে দৌড়ে আসলো পলাশ ও। দ্রুত দরজা খুলতেই নিরাশ হতে হলো আমাদের।
আমার সামনে স্যূটেট ব্যুটেট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেশ স্মার্ট একজন ভদ্রলোক। দেখে মনে হচ্ছে হয়ত মণিকা ভাবীর কোন আত্মীয় হবে।
আশা করেছিলাম সুপ্তিকে দেখতে পাব।কিন্তু সে আশায় তো গুড়ে-বালি।
জিজ্ঞেস করলাম কাকে চাচ্ছেন?
লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
জ্বী সুপ্তির খোঁজে আসছিলাম। ও বাসায় আছে? আসলে ওকে ফোনে পাচ্ছিলাম না তো তাই খোঁজ নিতে চলে আসলাম।
ভ্রু কুঁচলে গেলো আমার।
জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার পরিচয়?”
– আমি সুপ্তির ডেন্টিস্ট। ওর দাঁতের সমস্যার জন্য আমার এপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলো৷
– ওহ, আচ্ছা। ও বাসায় নেই৷
– আচ্ছা। ও কখন আসবে?
– জানিনা। আসলে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে বলব।
লোকটার হাসি মুখ খানা চুপসে গেল। এক হাতে করে পেছনে লুকিয়ে রাখা একটা গিফট বক্স টা সামনে এনে সেটাকে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো। ওনার ভঙ্গী দেখে মনে হচ্ছিলো অনেক আশা করে গিফট বক্স টি নিয়ে এসেছেন উনি। সেটা সুপ্তিকে না দিতে পারায়৷ বক্সটির কোন ভ্যালু ই রইলো না তার কাছে।
উনি আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
.
.
.
পলাশকে বাইরে থেকে খাবার এনে দিলাম। ও খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
রাত তখন দশটা। বাসা থেকে বের হয়ে মণিকা ভাবীদের বাসার কলিংবেল বাজালাম দরজা খুলে দিলো ছোট্ট মেয়েটি।
অনুমতি না নিয়েই ভেতরে ঢুকে গেলাম। সোজা চলে গেলাম একেবারে বারান্দায়।
যতদূর জানি, এ মেয়েটি ফুল বেশ পছন্দ করে। এজন্য ওকে মণিকা ভাবী আদর করে ফুলি ডাকে।
আমিও একই নামে ওকে ডাকলাম,
এই ফুলী,
এদিকে আসো।
ফুলী মন খারাপি চেহারা নিয়ে আসলো আমার কাছে।
ওকে বললাম, কড়া করে দু কাপ চা বানিয়ে আনতে।দুধ চা।
ফুলি চলে গেলো।
প্রথমে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে নিলাম। পায়ের উপর পা ফেলে
রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে সিগারেটে বড় একটা টান দেই।
ধোয়াগুলো বাতাসে ছেড়ে দিতে দিতে ভাবি, সিগারেট খাওয়ার ও একটা আর্ট আছে। এমন আয়েশ করে সিগারেট খেতে খেতে অনেক কিছু চিন্তা করে ফেলা যায়।
চিন্তা করা খুব কঠিন একটা কাজ।
সবথেকে বেশি চিন্তা করে ভিক্ষুকরা। তারা নির্দিষ্ট একটা জায়গায়, পুরানো প্লেট নিয়ে আয়েশ করে বসে একটা নির্দিষ্ট চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। তারা জ্ঞানীগুণী মানুষের চেয়েও বেশি চিন্তা করে। দেশের জটিল সব বিষয় নিয়ে চিন্তা করে, এই যেমন হঠাৎ করে ওভারব্রিজ ভেংগে পড়লে কতজন মানুষ আহত হবে, কতজন মারা যাবে, কারো পকেট থেকে মানিব্যাগ বা মোবাইল ছিটকে পরে যাবে কিনা। যদি এমন কিছু হয় তাহলে আজ নিশ্চয়ই বাড়তি ইনকাম হবে।
এরকম মহাজাগতিক চিন্তা করতে করতে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করে দেয়,তাদের বোরিং লাগেনা। ভিক্ষুকদের পরে সবথেকে যারা বেশি চিন্তা করে তারা হচ্ছে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে থাকা মানুষ।
আমি এখন তাদের দলে।
সুপ্তির বিষয়টি আমার কাছে ক্লিয়ার না।
ওর দাঁতে কোন সমস্যা নেই। তাহলে ডেন্টিস্ট এর কাছে কেনো গেলো!
সুপ্তি ক্যান্টিনে সিংগাড়া খেতে যাওয়ার আগেও আমাকে বলে যায়।
সেখানে একজন ডেন্টিস্ট এর কাছে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিয়ে আসলো,
আমাকে জানালো ও না কিছু!
আবার আমাকে কিছু না জানাক,
ঐ ডাক্তার কেনো সুপ্তিকে খুঁজতে বাসা পর্যন্ত চলে আসবে? তাও হাতে একটা গিফট বক্স নিয়ে?
মনে হাজারটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।
ফুলী চা বানিয়ে এনেছে।
ওর বানানো চায়ে চুমুক দিলাম।
মণিকা ভাবীর মত পারফেক্ট বলা না গেলেও চলে আরকি।
ফুলীকেও বললাম আমার সামনের রকিং চেয়ারে বসে চা খেতে। কিন্তু ও কখনো রকিং চেয়ারে বসেনি। তাই আমার সামনে ফ্লোরে বসে চা খেতে লাগলো।
ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
তোর মণিকা আপার কি কোনো আত্মীয় স্বজন নেই?
ফুলী জবাব দিলো,
– আমি এইখানে আছি তিন বছছোর,
এর মধ্যে কাউরে আইতে দেখিনাই ভাইজান।
– ওনার চিকিৎসার জন্য তো টাকা পয়সা লাগবে৷কিভাবে কি করব বুঝছি না।
– ভাইজান, আফাজানে আলমারির চাবি কই রাখে আমি জানি। আপনে আলমারি খুলে টাকা বের কইরা নিয়া ডাক্তারগো বিল দিয়া দেন।
– কি বলো! তুমি চাবির খোঁজ জানো?
– হ,ভাইজান জানি।
মনে মনে একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেল তবে। মণিকা ভাবীর চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে তাহলে আরা ভাবতে হবেনা।
সুপ্তির বিষয়টা আমার কাছে ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে উঠছে।
অফিস থেকে কোন বিষয়ে নালিশ আসার কথা বলেছিলো আমাকে সুপ্তি।
সবকিছু যোগ দিয়ে ফলাফল বের করতে মহাপুরুষ টাইপ চিন্তাভাবনা করা দরকার।
এজন্য আগে আমাকে রিল্যাক্স হতে হবে।
ফুলিকে মাথা টিপে দিতে বললাম।
ফুলি হালকা সরিষা তেল হাতে মেখে মাথা টিপে দেয়া শুরু করলো।
রিল্যাক্স হতে হতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম ঠিক নেই। হঠাৎ দমকা বাতাস এসে গায়ে ধাক্কা দিতেই ঘুম ভেংগে গেল।চারদিকে তাকিয়ে বুঝলাম সকাল হতে আর একটু সময় বাকি। ফুলি সোফার উপরে ঘুমিয়ে আছে। মোবাইলে বেশ অনেকগুলো কল এসেছে আমার। সবগুলো সুপ্তির নম্বর থেকে। তার মানে পলাশ ফোন দিয়েছে।
দ্রুত দরজা খুলে চলে গেলাম আমার নিজের বাসায়। কলিং বেল টিপতেই দরজা খুললো পলাশ।
জিজ্ঞেস করলো, আমি কোথায় ছিলাম?
ওর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগেই ও নিজেই বললো,
আপনাকে কতবার কল করেছি!
একটু আগে আপু এসেছিলো।
তার ঠোঁট, গাল,কপালে অনেক দাগ দেখেছি, মনে হচ্ছে কেউ খামচি দিয়েছে এমন। প্রচন্ড কান্না করছিলো আপু। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একটা ব্যাগে কিছু জামাকাপড় নিয়ে আপু আবার চলে গেছে।
বুকের মাঝে কামড় দিয়ে উঠলো।
আমার ভালোবাসার কলিজাটা বাসায় এসেছে, আবার চলেও গেছে। আমাকে কিচ্ছু জানালো না। কি হয়েছে ওর এটাই আমি ভেবে পাচ্ছি না।
ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজে কিছুক্ষন জোড়ে জোড়ে আঘাত করি।
গ্রীন-লাইফ হাসপাতাল থেকে কল এসেছে।
মণিকা ভাবীর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু ঘোরের মাঝে সে নাকি রোহান রোহান বলে কাতরাচ্ছে।
ডাক্তাররা ফোন করে দ্রুত আমাকে সেখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য বললো।
.
.
.
চলবে…
লেখকঃ
হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ