#গৃহযুদ্ধ পর্ব ৫
__________
______________
কাঁধে সুপ্তির হাতের স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলাম। আমার হাতে তখন মণিকা ভাবীর ডায়েরিটা ধরা।
কি করব বুঝতে না পেরে পেছন ঘুরে সুপ্তির দিকে তাকালাম।
সুপ্তি আমার চোখে চোখ রেখে বললো, পলাশ ঘুমিয়ে গেছে।
তোমার মানিব্যাগে একটা চিরকুট পেলাম।
কে দিয়েছে এটা?
মনে মনে বললাম -শিট!!
পলাশকে আইসক্রিম ও চকলেট কিনে দেয়ার জন্য মণিকার হাতে পুরো মানিব্যাগটাই ধরিয়ে দিয়েছিলাম আমি। টাকা দেয়ার সময় হয়তও মণিকা ভাবীর দেয়া চিরকুটটা দেখে ফেলেছে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে সুপ্তি আবারো জিজ্ঞেস করলো,
বলো কে দিয়েছে এই চিরকুট!
উত্তরে জানালাম মণিকা ভাবী দিয়েছে।
মণিকা ভাবী! তোমাকে চিরকুট দিয়েছে,সেটাও আবার লিখেছে আমার রান্নার হাত ভালো না!
আমাকে নিয়ে তার মাথাব্যথা কেনো?
আর তুমি ই বা তাকে কিছু বলোনি কেনো!
তড়িঘড়ি করে কি বলবো, ভেবে পাচ্ছিলাম না হঠাৎ একটা কথা মাথায় আসলো।
বলে দিলাম, উনি আজ ই এটা আমাকে দিয়েছেন।তাও দুপুরবেলা। আমি তোমাকে দেখাব বলেই মানিব্যাগে রেখেছি। কিন্তু বাসায় ফিরে তুমি তো পলাশকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলে তাই সময় পাইনি।
যেখানে সুপ্তির চোখে নিভু নিভু আগুন ছিলো এতক্ষন, সেখানে দেখা দিলো একগুচ্ছ অনিশ্চয়তার ছাপ। যেটাকে বলে কনফিউজড।
ওর চোখ চলে গেলো আমার হাতের ডায়েরির দিকে,
জিজ্ঞেস করলো, কি এটা?
উত্তর দিলাম,এটাও মণিকা ভাবীর ই ডায়েরি। উনি আমাকে ডায়েরি এবং চিরকুট একসাথেই দিয়েছেন।
সুপ্তি আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে ডায়েরিটা নিয়ে গেলো।
দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের রুমে ঢুকে ধপাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। আমার বুকের ভেতরে ঢিপ ঢিপ করে কাঁপন ধরেছে। কি করবো বুঝতে পারছিনা। এমন সময়ে আসলো মণিকা ভাবির ফোন।
তার ফোন-কল দেখে সত্যি ই অনেক বিরক্ত লাগছিলো তখন।
তাও কি মনে করে যেন ফোনটি ধরলাম,
ফোন ধরার পর ওপাশ থেকে ভেসে আসলো একটা মোলায়েম কন্ঠস্বর,
– রোহান,
তুমি কি আমার ডায়েরিটা পড়েছো?
– না ভাবি,
– তুমি আমাকে ভাবী না বলে মণিকা বলেই ডেকো। তোমার মুখে আমার নামটা বেশ সুন্দর শোনাবে।
আমি নিরব রইলাম।
উনি আবার বললেন,
তুমি কি আমার ডায়েরী পড়োনি রোহান?
একটু সময় কি হয়নি তোমার?
– না,আসলে কাজে অনেক প্রেসার যাচ্ছিলো।
– কি কাজ করো তুমি? সব কাজ বাদ দিয়ে দাও।
– আমার সংসার চলবে কিভাবে!
– সংসার! এ যে এক মিথ্যে বাঁধন। সংসারে আবদ্ধ থেকে কি লাভ বলো! বরং নিজের ভালোলাগায় গা ভাসিয়ে দাও প্রিয়। শান্তি খুঁজে পাবে। তোমার টাকা পয়সায় সমস্যা হলে তুমি আমার কাছ থেকে নিও।
আমি ওনার এ কথাগুলো শুনেও নিরব রইলাম,
উনি পুনরায় বলতে লাগলেন,
ডায়েরিটা হাতে নাও,
প্রথম দিকের কথাগুলো একান্ত তোমাকে ভেবেই লেখা। ঠিক চার নম্বর পৃষ্ঠায় একটা কবিতা আছে। তুমি কি কবিতাটা আমাকে পড়ে শোনাবে?
– আমি আবৃত্তি করতে পারিনা, আর তার থেকেও বড় কথা হলো…
উনি আমাকে কথা শেষ না করতে দিয়েই বললেন,
তোমার গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বর আমার কাছে খুবই আকর্ষনীয় লাগে রোহান। আমাকে কবিতাটি পড়ে শোনাও।
কিছু একটা বলতে যাব এর মাঝেই মণিকা ভাবীর বিকট চিৎকার শুনতে পেলাম। ফোনের ওপাশ থেকে তো পেলাম ই আমার বাসা থেকেও ওনার চিৎকারের কন্ঠস্বর শোনা গেলো। ফোনের লাইনটাও কেটে গিয়েছে। কি হয়েছে জানার জন্য মণিকা ভাবীকে আবারো কল করলাম, ফোন সুইচড অফ। একটু পর শোনা গেলো দরজায় ধুপ ধাপ কিল ঘুষি পড়ার শব্দ। এত জোড়ে শব্দ হলো যে সুপ্তিও দৌড়ে দরজার সামনে চলে এলো।
দরজা খুলে দিতেই ভাবীর বাসার ছোট্ট মেয়েটার দেখা, আমাকে দেখে বললো, স্যার স্যার, মণিকা আপা কথা বলতে বলতে সিঁড়ি থেকে নিচে পড়ে গেছে। তার আর হুঁধ আইতেছে না। মাথা থেকে রক্ত পড়তাছে, আপনে একটু তাড়াতাড়ি আহেন।
ওর কথা শুনে আমি ও সুপ্তি দুজনেই দৌঁড়ে গেলাম। দেখতে পেলাম উনি বাসার সামনের সিঁড়ির নিচের অংশে পড়ে আছেন। পাশে পরে আছে একটা কফির কাপ।
ফ্লোর রক্ত এবং কফিতে মাখামাখি হয়ে আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছেনা ঠিক কোথা থেকে রক্ত বের হয়েছে, হয়ত মাথা ফেঁটেছে কোথাও দিয়ে। দ্রুত ইমার্জেন্সি এম্বুলেন্সের নম্বরে ফোন দিলাম আমি।
মিনিট দুয়েকের মাঝেই এম্বুলেন্স চলে আসলো।
মণিকা ভাবীকে দ্রুত ওঠানো হলো এম্বুলেন্সে। তার মাথা থেকে তখনও টপ টপ করে রক্ত ঝড়ছে। সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিউএ কান্না করছে।
ভয়ে একপাশে জড়োসড়ো হয়ে আছে। মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা দেখে সুপ্তি প্রচন্ড ভয় পায়।
মণিকা ভাবীকে এম্বুলেন্সে উঠানোর পরে সুপ্তিকে বললাম আমি ওনার সাথে যাবো? হাসপাতালে? সুপ্তি কান্না করতে করতেই বললো, না তুমি বাসায় থাকো। পলাশকে দেখো,আমি ওকে( মণিকা ভাবীর বাসার ছোট মেয়েটাকে)
নিয়ে যাচ্ছি।
ওর কথার সাথে আমি দ্বীমত পোষন করলাম না। ওরা দুজনে মণিকা ভাবীকে নিয়ে হাপতালের উদ্দেশ্যে চলে গেলো৷
অনেকটা বিষন্ন মনে বাসায় ফিরে আসলাম। ফেরার সময়ে পরে থাকা কফির মগ, তরল রক্ত এবং কফির দিকে বেশ অনেক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। জানিনা কেনো যেন আমারো খুব করে কান্না চলে আসছিলো,
বাসায় ফিরে দেখি পলাশ ওর বোনের ফোন নিয়ে গেমস খেলছে।
সুপ্তি ফোন না নিয়েই চলে গেছে তাহলে।
একটা টেনশন কাজ করছিলো মনে। তবে ও চাইলেই আমাকে যে কোন প্রয়োজনে ফোন দিতে পারবে যে কারো মোবাইল থেকে৷
পলাশকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে ঘুমাস নি এখনো?
ও উত্তর দিলো, না ভাইয়া৷
– একটু আগে তোর আপু এখানে একটা ডায়েরি নিয়ে ঢুকেছিলো?
– হ্যাঁ
– তারপর কি করেছে? পড়েছে?
– না, ঐ যে বালিশের নিচে রেখেছে। আপু অনেক কান্না করছিলো আর দেয়ালে সাথে হাত দিয়ে অনেক জোড়ে ঘুষি মেরেছিলো বারবার।আমি অনেক জোড়াজুড়ি করে তাকে থামিয়েছি।
ভাইয়া তোমার সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে আপুর?
আমি বললাম, “না। তুই ফোন রেখে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়িস। ”
বলে, বালিশের নিচে থেকে ডায়েরি টা নিয়ে চলে আসলাম।
ভাগ্যিস সুপ্তি ডায়েরিটা পড়া শুরু করেনি। কি লেখা আছে এতে আল্লাহ ই ভালো জানেন।
পলাশকে ঘুমাতে বলে ওখান থেকে চলে আসলাম আমি। হঠাৎ করেই মনে পড়লো মণিকা ভাবীকে এম্বুলেন্সে তুলে দেয়ার পরে ছোট মেয়েটিকে সাথে নিয়ে সুপ্তি দ্রুত ওদের সাথে চলে গেছে। মণিকা ভাবির বাসার তো দরজা তো একেবারেই খোলা।খালি বাসা খোলা অবস্থায় থাকলে চুরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
নিজের বাসার তালা চাবি নিয়ে মণিকা ভাবীর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। দরজা দেয়ার সময় হঠাৎ করেই আমার চোখ চলে গেলো বারান্দার দিকে, একটা রকিং চেয়ার একা একাই দুলছে। আমার মনটা ছিলো প্রচন্ড রকমের বিষন্ন। মনে মনে চিন্তা করলাম, বারান্দায় গিয়ে কিছুক্ষন বসি৷ হয়ত মনের অবস্থা ভালো হতেও পারে।
যেই ভাবা সেই কাজ।
আস্তে আস্তে পা ফেলে চলে আসলাম বারান্দাতে।
এখানে দাড়ালেই দক্ষিণা বাতাস মনটাকে জুড়িয়ে দিয়ে যায়। মণিকা ভাবীর লেখা ডায়েরীটা আমার হাতেই ছিলো। জানালার লাইটগুলো সব অফ, কিন্তু থালা আকৃতির বড় চাঁদ, পূর্ণিমার আলোর কিছু অংশ ঢেলে দিয়েছে এ জায়গাটাতে। বারান্দাতে লাগানো গাছের পাতার ফাঁকা দিয়ে চিরিচিরি জোছনার যে আলো এসে পড়ছে, তাতে ডায়েরির লেখাগুলো খুব স্পষ্টভাবেই পড়া যায়।
এমন একটা পরিবেশ ই ডায়েরিটা পড়ার জন্য বেশ উপযুক্ত। কিন্তু আমার মনে হয় এ ডায়েরির সাথে শত্রুতা আছে কোনো।
পড়া শুরু করবো, এমন সময়ে হঠাৎ একটা ফোন আসে আমার ফোনে।
ফোনটি এসেছে গ্রীন-লাইফ হাসপাতাল থেকে, ওখানেই ভর্তি করা হয়েছে মণিকা ভাবীকে।
মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত পাওয়ায় তিনি এখন কোমাতে আছেন। এছাড়াও তার পায়ের হাড়ে চিড় ধরেছে। তাকে এমারজেন্সি চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এখন বিল পেমেন্ট এর ব্যবস্থা করতে হবে।
আমি ফোনে সুপ্তিকে চাইলাম।
উনারা জানালো, মণিকা ভাবীকে হসপিটালে এডমিট করিয়ে সুপ্তি চলে গেছে।আমাকে ফোনে ধরিয়ে দেয়া হলো মণিকা ভাবীর বাসায় হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে থাকা মেয়েটিকে। ঐ মেয়েটিও একই কথা জানালো সুপ্তি চলে গেছে।
বারান্দা থেকে উঠে পড়লাম সুপ্তি বাসায় ফিরে আমাকে এখানে এসে দেখলে ব্যপারটা ঠিক হবেনা।
মণিকা ভাবীর বাসা তালা মেরে আমি নিজ বাসায় গেলাম। পলাশ ঘুমিয়ে পড়েছে।
কম্পিউটার টেবিলে সুপ্তির জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যেন আমিও ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম ভাংলো বেলা সাতটায়।
ঘুম ভাংগার পর পর ই মনে পড়লো সুপ্তির কথা। দৌড়ে পলাশের রুমে গেলাম।
পলাশ ঘুমাচ্ছে অঘোরে। পুরো বাসা তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। কোথাও নেই সুপ্তি।
সাথে সাথে হাসপাতালে ফোন দিলাম। তারা জানালো সুপ্তি হাসপাতালেও নেই।
ফোন দিলাম ওর অফিসের কলিগদের৷ তারা জানালো সুপ্তির অফিস নয়টার আগে খোলেই না।
প্রেসারে আমার মাথা থেকে দরদর করে ঘাম ঝড়তে শুরু করলো! কি করবো এখন আমি! দ্রুত একটা শার্ট গায়ে জড়িয়ে বের হয়ে পড়লাম। ওর হাতে ফোন ও নেই যে একটা ফোন দিয়ে দেখবো! একদিকে মণিকা ভাবীর মৃতপ্রায় অবস্থা, অপরদিকে সুপ্তি নিরুদ্দেশ।
দিশেহারা অবস্থায় রাস্তায় হেঁটে চলেছি। মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে আমিও কোন বড় ট্রাক বা বাসের নিচে পড়ে যাবো।
.
.
.
চলবে..
গৃহযুদ্ধ পর্ব-০৫
গৃহযুদ্ধ পর্ব-০৪
#গৃহযুদ্ধ পর্ব ৪
________
__________
বউয়ের সাথে ঘুরছি এই সময়ে মণিকা ভাবির মেসেজ এবং কল একটু বিরক্ত লাগলো।
মেসেজগুলো দ্রুত ডিলেট করে ফোন সুইচড অফ করে দিলাম।
বিফ চাপ চলে এসেছে ইতিমধ্যেই।
সুপ্তি কাটাচামচ নিয়ে নিজের প্লেট থেকে এক টুকরা মাংস তুলে আগেই আমার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। এ অভ্যেসটা ওর বরাবরের, কোথাও খেতে গেলে খাবার যে পাত্রেই থাকুক, আগে আমার মুখে উঠিয়ে দিবে তারপর নিজে খাবে৷ আমিও আমার প্লেট থেকে তুলে ওকে খাইয়ে দিলাম।
সুপ্তি খেতে খেতে বললো,
– এখানের চাপটা বেশ মজার।
আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে চুপচাপ খেতে থাকলাম, আমার মনে একটা ভয় কাজ করছিলো,
সুপ্তি সকালে যে খাবারগুলো রান্না করে রেখে গেছিলো, সেগুলো ওভাবেই পরে আছে টেবিলে।বাসায় ঢোকার সাথে সাথেই সুপ্তির নজরে আসবে। ও জিজ্ঞেস ও করবে আমাকে।
কি বলবো ওকে, সেটা মনে মনে ভাবছিলাম আমি,
মাত্র কয়েকদিনে ওকে অনেক অনেক মিথ্যা কথা বলতে হয়েছে আমার।
ইচ্ছে করছে সবকিছু বলে দিয়ে মাফ চেয়ে নেই৷
কিন্তু সুপ্তি খুব ঠান্ডা মেজাজের লোক বয়টা এখানেই। ও এমনিতে ঠান্ডা থাকে কিন্তু কোন এক কারণে রেগে গেলে ওকে আর এক দু মাসেও স্বাভাবিক করা যায়না। এ ভয়ে চুপচাপ রইলাম। সবকিছু এমন ভাবে ম্যানেজ করতে হবে, যেন আমাকে আর কোন ধরণের মিথ্যা কথা বলতে না হয়।
চামচ দিয়ে মাংসগুলো ঘাটাচ্ছিলাম এবং এগুলো ভাবছিলাম। সুপ্তি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, রোহান?
কোন বিষয় নিয়ে চিন্তায় আছো?
আমি বললাম না।
সুপ্তি আবারো জিজ্ঞেস করলো,
আমার বিষয়ে তোমার কাছে কোনো নালিশ এসেছে অফিস থেকে?
উত্তর দিলাম না।
কিন্তু খট করে মনে একটা প্রশ্ন চলে আসলো!
সুপ্তি এমন কি করেছে যার কারণে ওর নামে আমার কাছে নালিশ আসতে পারে?
নইলে শুধু শুধু তো ও এ’কথা বলার মানুষ না!
সুপ্তিকেও দেখলাম এক্লটু টেনশনের ভেতরে আছে।
সরাসরি ওকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। অফিস থেকেই খোঁজ নিতে হবে ওর ব্যপারে, কিছু তো একটা ঘটেছেই।
সুপ্তির অফিসের রিটেইলর আমার এক বন্ধুর খুব কাছের লোক। ভাবলাম, সেই বন্ধুর সাহায্য নিয়েই ওর ব্যপারে একটু খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করব। আমাকে চিন্তা করতে দেখে সুপ্তির ভেতর অস্থিরতা বেশ বেড়ে যায়৷ ওর অস্থিরতা দেখে আমি ভেতরের চিন্তারো আবার নতুন ডালপালা গজিয়েছে। সন্দেহের ডালপালা।
হঠাৎ করেই টেবিলের উপরে একটা গ্লাস কাত হয়ে পড়ে যায়,
সুপ্তির এবং আমার জামাকাপড় ভিজে যায় বেশ অনেকখানি,
সুপ্তি আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে বলে, মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মত কাজ করো, এ বয়সেও কেউ এভাবে পানি ফেলে জামাকাপড় নষ্ট করে!”
আমি আকাশ থেকে পড়লাম, আমি তো গ্লাসের দিকে হাত ও দেইনি, পানির গ্লাস ফালানোর তো প্রশ্নই আসেনা।
ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি তো পানির গ্লাস ফেলিনি।
ও বললো, দেখলে বাচ্চাদের মতই অস্বীকার করলে,
আরে বাবা কেউ তোমাকে বকছে না তো!
কেনো যেনো ওকে একটু ধমক দিয়ে বলে ফেললাম, নিজের দোষ অন্যের উপরে চাপানো বন্ধ করো।
ও আমার ধমক শুনে একটু চুপষে গেলো।
আশপাশের সবাই আমাদের দিকে ফিরে তাকালো।
ওয়েটার এসে টেবিলের পানি মুছে দিয়ে চলে গেলো।
ওয়েটার যাওয়ার পর সুপ্তি টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে আমাকে বললো,
-আমাকে এভাবে অপমান না করলেও পারতে। পানিটাতো তুমি ই ফেলেছো। শুধু শুধু আমাকে কেন সবার সামনে বকা দিলে?
– শোনো! তোমার বাজে অভ্যেস হয়েছে,অন্যের উপর দোষ চাপানো।
সকালে মণিকা ভাবিকে ধাক্কা মেরে চলে গেছো এজন্য উনি তোমাকে কল দিয়ে একটু বকাঝকা করেছে।
দোষ তো তোমার ও ছিলো৷ কিন্তু তুমি আমাকে বললে ভিন্ন কথা।
– আমি কাউকে ধাক্কা দেইনি রোহান। যদি কেউ তোমাকে এমন কিছু বলে থাকে সে মিথ্যা বলেছে।
– সবাই তোমার মত না সুপ্তি, এইমাত্র ও পানির গ্লাস ফেলে তুমি আমার দোষ দিলে। যেখানে আমাকেই তুমি দুষতে পারো সেখানে অন্য কেউ তো দূরের কথা।
আমার একটা বদ অভ্যেস আমি রেগে গেলে অনেক জোড় গলায় কথা বলিআশপাশের লোকজন খাওয়া বাদ দিয়ে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।এর ভেতর থেকে একটা মহিলা এগিয়ে আসলো আমাদের দিকে। এসে বললো,
আসলে আমি সরি, আমার বাচ্চাটা টেনিস বল দিয়ে খেলতে খেলতে ভুলে আপনাদের টেবিলের দিকে বলটা ছুড়ে মেরেছিলো। টেবিলের পায়ার সাথে বলটা ধাক্কা লাগাতেই আপনাদের একটা পানির গ্লাস কাত হয়ে গেছিলো।
ওনার কথা শোনার পরে দুজনেই ভুলটা বুঝতে পারলাম। আমি চিন্তায় এত মগ্ন হয়ে গেছিলাম যে বিষয়টি খেয়াল ও করিনি।
সুপ্তিও কোন কিছু একটা নিয়ে একটু উদ্বিগ্ন ছিলো, ওর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। মহিলাটি এসে ক্লিয়ার করে আমাদের ভুকটা ভাংগিয়ে দিলো। লোকজন তখন ও আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে নাটক দেখার অপেক্ষায়। হুট করে নাটকের মতই কিছু একটা করলাম। চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে,
টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে কানে হাত দিয়ে দুবার উঠবস করলাম। চিৎকার করে সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম,
সরিইইই বউউউউউউ
আমার ভুল হয়ে গেছেএএএএএ
আর কখনো এমন হবেনা আ আ…
সুপ্তি দ্রুত উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো, পাগল একটা, ভুল তো আমার ও হয়েছে। আমিও সরি।
ওকে আমি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।আশপাশের লোকজন আচমকাই হাত তালি দিয়ে উঠলো। ভালোবাসা এমন একটা জিনিস, যেটার প্রকাশ
মাঝে মাঝে চরম বিরক্তিকর পরিবেশকেও স্বর্গের মত উপভোগ্য করে তুলে।
মিনিট দুয়েক আগেই তাকিয়ে থাকা লোকজনের উপর অনেক বিরক্ত হচ্ছিলাম, অপমানিত বোধ করছিলাম ভেতরে ভেতরে, অথচ এখন তাদেরকেই খুব ভালো লাগছে।
ভালোবাসা প্রকাশে কখনো লজ্জা করতে নেই। বিশেষ করে বউকে ভালোবাসা দেখাতে।
একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখা উচিৎ, আপনি আপনার স্ত্রীকে যত বেশি ভালোবাসবেন, আপনার আশেপাশের লোকজন আপনার স্ত্রীকে তত বেশি ই সম্মান করবে।
যদি আপনি ই আপনার স্ত্রীকে অবহেলা করেন, আশেপাশের লোকজন ও আপনার স্ত্রীকে নিচু চোখে দেখবে।আসার সময়ে লাল টুকটুকে দুটো বেলুন কিনে দেই সুপ্তিকে। কোন এক অজানা কারণে সুপ্তির লাল টুকটুকে গ্যাস বেলুন অনেক পছন্দের। বেলুন হাতে পেলে ও রাস্তায় লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটে।
আমার কিউট বউটাকে তখন একটা গুলুমুলু ছোট্ট খরগোশ মনে হয়।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১০ টা বাজে। গেটের সামনে এসেই বেশ অবাক হতে হয় আমাদেরকে।
সুপ্তির ছোট ভাই পলাশ এসেছে।
আমাদের না পেয়ে এতক্ষন দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো ও।
আমার ফোন অফ ছিলো তাই কল দিয়েও পায়নি। সুপ্তির ফোন ছিলো ওর ব্যাগে। সাইলেন্ট অবস্থায়। হঠাৎ করে পলাশকে দেখেই সুপ্তি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। সুপ্তিকে বললাম পলাশের জন্য চকলেট ও মিষ্টি নিয়ে আসতে দোকান থেকে। সুপ্তি পলাশকে নিয়ে চলে গেলো পাশের একটা দোকানে। সেই সুযোগে আমি এক দৌড়ে বাসায় চলে যাই সুপ্তির রান্না করা খাবারগুলোকে ফেলে দেয়ার জন্য।
কিন্তু গিয়ে আমাকে অবাক হতে হয়। ডায়নিং টেবিল একদম চকচকে ফকফকে।
কে করলো এই কাজ!
রুম থেকে মণিকা ভাবীর দামী পারফিউম এর ঘ্রাণ বের হচ্ছে।
নিশ্চয়ই উনি সেকেন্ড চাবি দিয়ে আমার ফ্লাটে প্রবেশ করেছিলো।
মণিকা ভাবীর বডি স্প্রের ঘ্রাণ সরাতে আমি পুরো বাসায় এরোসল স্প্রে করলাম, একটু পরেই পলাশকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করলো সুপ্তি। আমি মানুষটা পাশে আছি না নাই সেটাই খেয়াল করলো না ও।দরজা খোলার পরে পলাশের সাথে কথা বলতে বলতে নিজের রুমে চলে গেলো। একটু মন খারাপ হলো আমার। যেখানেই যাই বাসায় ঢুকেই আগে একে অপরকে পাক্কা পাঁচমিনিট জড়িয়ে ধরে রাখি। আজ হঠাৎ করেই এর ব্যতিক্রম ঘটলো।
ফ্রেশ হয়ে আমি গিয়ে বসলাম আমার কম্পিউটারে হালকা পাতলা কিছু কাজ বাকি আছে তা করার জন্য।
সুপ্তি এমন সময়ে আমার জন্য চা করে দেয়৷
মাঝে মাঝেই এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে যায়।
কিন্তু আজ ও একবার ও আমার রুমে আসলো না। নিজের ভাইয়ের সাথে গল্প যেন ওর শেষ ই হচ্ছেনা।
মন খারাপ করে মণিকা ভাবির ডায়েরিটা খুললাম।
ডায়েরি খুলতেই কেয়া ফুলের অপূর্ব একটা ঘ্রাণ এসে লাগলো আমার নাকে।
প্রথম পাতায় সুন্দর করে একটা লাভ চিহ্ন আকা, লাভের ভেতরের অংশে লেখা, আমার প্রিয় অনুভূতির খেলাঘর।
ডায়েরিটা পড়ার জন্য পাতা উল্টাবো, হঠাৎ করেই কাঁধের উপরে অনুভব করলাম সুপ্তির হাতের স্পর্শ।
.
.
.
চলবে…
গৃহযুদ্ধ পর্ব-২+৩
#গৃহযুদ্ধ
পর্ব ২ + ৩
__________
কাল রাতে বাড়িওয়ালা ভাবি আমার স্ত্রীকে অপমান করার পরেও, সকালে আমি ওর রান্না করে রেখে যাওয়া খাবার না খেয়ে সেই ভাবির রেঁধে দেয়া খাবার গো-গ্রাসে খেয়েছি, এটা যদি ও জানতে পারে, তাহলে ঝামেলা হতে পারে। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে একটা আয়ডিয়া বের করলাম। টেবিলের উপরে রাখা সুপ্তির খাবারগুলো একটা প্যাকেটে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলে আসলাম। ভেতরে ভেতরে কেমন যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করছিলো। স্ত্রীরা কখনো তার হাজবেন্ড এর জন্য অবহেলা করে রান্না করেনা। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কাজে মনোযোগ দিলাম। মণিকা ভাবির খাবারের সাথে দেয়া চিরকুটটা যাতে ওর চোখে না পরে, তাই সেটাকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে দিলাম।
বক্স গুলো যদি দ্রুত ফেরৎ দিয়ে না আসি, তাহলেও তো সমস্যা। সব ক’টি বক্স ধুয়ে একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে মণিকা ভাবির বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজালাম।
ভাবি, বাসার দরজাটা খুলে একটা মিষ্টি হাসি দিলো। আমাকে জিজ্ঞেস করলো!
খেতে কেমন হয়েছে?
জবাবে জানালাম।
-খুবই ভালো ভাবি, ধন্যবাদ।
– ধন্যবাদ দিতে হবেনা। আসো ভেতরে এসে বসো। তোমাকে চা বানিয়ে দিচ্ছি।
– না থাক ভাবি। কিছু কাজ বাকি পড়ে আছে। আমি এখন আসি।
– আরে আমার বাসায় এসেছ, আর চা না খেয়ে চলে যাবে?
এসো বসো। মাত্র পাঁচ মিনিটের ভেতরে চা বানিয়ে আনি।
ভেতরে ঢুকে বসলাম আমি। এসির বাতাসে গা শীতল হয়ে এলো।প্রকৃতি যত নিষ্ঠুর আচরণ ই করুক না কেনো, বিত্তবানদের সমস্যা খুব কম ই হয়।
সোফায় বসলে এখান থেকে ভাবির বারান্দাটা দেখা যায়। বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছেন। বারান্দাটির চারপাশে দামি দামি অর্কিড এবং ফুল গাছের সমারোহ। একপাশে খাঁচায় রাখা আছে দুটি এলবিনো লাভবার্ডস, সুন্দর মিষ্টি সুরে ওরা গান করছে।
আমি যে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছি সেটা এতক্ষনে ভাবি খুব ভালোভাবেই খেয়াল করেছে। উনি কখন যে দু হাতে দু কাপ চা নিয়ে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তা আমি খেয়াল ই করিনি৷ যখন ছোট্ট করে গলায় খাকরি দিয়ে কাশি দিলেন, তখন আমি একটু চমকে উঠে ওনার দিকে তাকালাম। তিনি মুচকি হেসে আমার দিকে চায়ের একটি কাপ এগিয়ে দিলেন।
জিজ্ঞেস করলেন বারান্দার দিকে তাকিয়ে ছিলে যে?
বললাম, প্রকৃতি আমাকে বেশ টানে। আপনার রুচির প্রশংসা করতে হয়।
উনি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, আমার একাকিত্বের সঙ্গী এখন এই বারান্দার গাছ আর পাখি গুলোই।
যদি কিছু মনে না করো, তবে চলো, বারান্দায় গিয়েই চা টা শেষ করি। বলে উনি বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলেন। আমিও ওনার পিছনে পিছনে অনুসরণ করলাম।ড্রয়িং রুমের সোফা থেকে বারান্দার একটা অংশ দেখা গিয়েছিলো মাত্র। বারান্দায় আসার পরে বুঝতে পারলাম বারান্দাটা আসলে প্রকান্ড। বসার জন্য দুটো চেয়ার রয়েছে। রয়েছে একটা ফাউন্টেইন। লাভবার্ডস এর পাশাপাশি আছে ককাটেল ও। পুরো বারান্দা জুড়ে তাজা ফুলের মিষ্টি সুবাশ। সত্যিই মনটা ভরে গেলো। ওনার সাথে দু একটা কথা বলতে বলতে চা খাওয়া শেষ হয়ে গেলো।
কাপটা ওনার হাতে দিয়ে বললাম, আজ আসি ভাবি।
উনি মিষ্টি করে হেসে আমাকে বললেন,আবার এসো।
আমি দরজা খুলে বের হব, এমন সময় উনি আমাকে পেছন থেকে ডাক দিলেন, ওনার দিকে তাকালাম। আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
তোমার বউয়ের রান্নার হাত কিন্তু ভালোনা। বলেই একটা অট্টহাসি দিলেন। আমি কিছু না বলে বাসায় চলে আসলাম।
আমার ফোনটা বাসায় রেখে গিয়েছিলাম। দেসে দেখলাম সুপ্তি বেশ কয়েকবার কল দিয়েছিলো। তাড়াতাড়ি করে কলব্যাক করলাম।ফোন ধরে জিজ্ঞেস করলো কোথায় ছিলাম?
সুপ্তিকে আগে কখনো মিথ্যা বলিনি, তবে আমি যদি বলি যে মণিকা ভাবির বাসায় ছিলাম,তবে জিজ্ঞেস করবে কেনো গিয়েছিলে, খাবারের ব্যপারটা তখন ও জেনে যাবে। তাই ওর কাছে সত্যটা লুকিয়ে বললাম ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।
সুপ্তি বললো – আচ্ছা। আমি একটু টেনশনে পরে গেছিলাম। তুমি সকালে খেয়েছ?
– হ্যাঁ।
– সকালে তাড়াতাড়ি রান্না করে রেখে এসেছি। জানিনা কেমন হয়েছে, তুমি খেতে পেরেছো কিনা।
– খুব ভালো হয়েছে৷ আমি পেট ভরে খেয়েছি।
– যাক বাঁচা গেলো। তুমি দুপুরে একটু এসো আমার অফিসে। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
– আচ্ছা আসব।
বলে ফোনটা রেখে দিলাম। বেচারির কথাবার্তা শুনে মনে হলো, কাল রাতের বিষয় নিয়ে এখনো মন খারাপ।
ভাবলাম ওকে একটা সারপ্রাইজ দিব।
ঘন্টা দুয়েক অনলাইনে কাজ করলাম।
এরপর নিচে গিয়ে কিছু ঘাসফুল, কয়েকটা রজনীগন্ধার কান্ড, কিছু সাদা গোলাপ এবং কিছু মর্নিং গ্লোরি ফুল নিয়ে আসলাম।
বাসায় এনে নিজ হাতে র্যাপিং করে একটা তোড়া বানালাম।
এরপর একটা কাগজ নিয়ে ওর জন্য সুন্দর করে আমার অনুভূতির শিকড় নিংড়ে কবিতার মত কিছু একটা লেখার চেষ্টা করলাম-
” একটা কাচের গ্লাসে,
ব্যস্ততা ঢেলে নেশা করে তোমাকে কতক্ষন ভুলে থাকা যায়?
কর্ম ব্যস্ততা? সে আবার কি?
আমার নিজের মৃত্যুও তো তোমাকে ভুলাতে পারবেনা।
জানো?
আমার অনেক শক্তি আছে অনেক সাহস আছে।
আমি জানি,
আমি চাইলেই এভারেস্ট জয় করতে পারি, হেক্টরকে বধ করতে পারি।
না খেয়ে অনায়াসে দিন পার করতে পারি, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাড়ভাংগা খাটুনি খাটতে পারি,
বিজলীর সাথে পাঞ্জা ধরতে পারি,
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারি।
আমি সব পারি। সব।
কিন্তু,আমার দুর্বলতা তো একটাই
আমি যে চাইলেই তোমাকে ভুলে থাকতে পারি না!
তুমি যখন পাশে থাকো মনে হয় পুরো পৃথিবী আমার পাশে আছে।
আর, তুমি যখন থাকোনা, তোমার শূন্যতায় আমি লাশের মত একা হয়ে যাই।”
কবিতার কাগজটা ফুলের তোড়ার ভেতরে গুঁজে আমি সুপ্তির অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম,
নামার সময়ে আবার মণিকা ভাবীর সাথে দেখা।তিনি তার নিজ বাসার দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ফুল নিয়ে কোথায় যাচ্ছি, বললাম, সুপ্তির মন খারাপ, ওকে একটু সারপ্রাইজ দিব আরকি!
ভাবি ওহ আচ্ছা বলে বাসায় ঢুকে গেলেন। দরজা বন্ধ করার আগে বললেন,ওর রান্নার হাত কিন্তু একদম ই ভালোনা।
এবার বিষয়টা আমার মাথায় এসে লাগলো, উনি কি আমার সাথে মজা নিচ্ছেন! বারবার একই কথা বলার মানে কি!!
ওনার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে সুপ্তির অফিসে চলে আসলাম। ওকে লাঞ্চ টাইমে খাওয়ার জন্য কিছু সময় ছুটি দেয়। ঐ সময়টাতেই আমি এসেছি। ও আমার জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলো অফিস ভবনের পাশেই।
ফুলের তোড়াটা এক হাতে নিয়ে আমার পেছনে করে লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে এসেছি।
ওর কাছে আসতেই আমাকে বললো, তোমার হাতে কি লুকানো দেখি? আমি বললাম, চোখ বন্ধ করো, নইলে দেখতে দিবনা।
ও চোখ বন্ধ করলো। আমি হাটু গেড়ে বসে ওর হাতে ফুলের তোড়াটা ধরিয়ে দিয়ে বললাম, আমার মিষ্টি বউয়ের জন্য মিষ্টি একটা উপহার নিয়ে এসেছি।
চোখ খুলে ফুলের তোড়া দেখে রিতীমত চমকে উঠে সুপ্তি। এমন ভরদুপুরে এরকম কিছু হয়ত একদম ই আশা করেনি। ও। আমাকে দ্রুত বসা থেকে উঠিয়ে সব লোকজনের মাঝেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, আমার কাছে সবথেকে মিষ্টি উপহার তো তুমি, আল্লাহর পক্ষ থেকে।
ওর কথা শুনে আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। সকালে ওকে মণিকা ভাবীকে নিয়ে মিথ্যা বলাটা একদম ই ঠিক হয়নি। ভেতরে ভেতরে বেশ অপরাধবোধ কাজ করছিলো আমার।
দুজনে বাইরেই একসাথে দুপুরের খাবার খেলাম।
এরপর ওকে অফিসে পৌঁছে দিয়ে আমি চলে আসলাম আমার বাসায়। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে আবারো সেই মণিকা ভাবীর সাথে দেখা।
আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললেন, তোমার বৌ এর রান্নার হাত কিন্তু ভালো না। বলে দাঁত বের করে একটা হাসি দিলেন।
আমি মনে মনে
ওও খোদা আ আ আ আ আ আ আ বলে বিকট এক চিৎকার মারলাম। দৌড়ে বাসায় ঢুকে গেলাম। এ মহিলার মাথায় সমস্যা আছে নাকি! আমার তো মনে হয় এই একটা কথা উনি আমাকে যতবার দেখবে ততবার ই বলবে।
ওনার এই অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবো কিভাবে ভাবছিলাম। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
কলিং বেল এর শব্দে ঘুম ভাংল। পাঁচটা ত্রিশ বেজে গেছে। সুপ্তি বাসায় চলে এসেছে।
দরজা খোলা মাত্রই সুপ্তি আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এরপর ব্যাগ থেকে সেই কবিতার কাগজটা বের করে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে ব্যাঙ্গ করে পড়া শুরু করলো। আমি ভীষন লজ্জায় পড়ে গেলাম। লজ্জা এড়াতে দরজা আটকে দিয়ে ওকে কোলে তুলে আমাদের বেডরুমে নিয়ে আসলাম। ওর হাত থেকে কাগজটা সরিয়ে নিয়ে বললাম, অনেক কবিতা পড়া হয়েছে। এবার একটু
((” এসব কথা পাঠকদের শোনানো যাবেনা”))
ও গা ঝাপটা মেরে আমার থেকে নিজেকে ছুটিয়ে নিলো! বললো তুমি আসলে দিনে দিনে অসভ্য আর খাটাশ হয়ে গেছো৷ আমি বাইরে থেকে এসেছি, গা ঘামে ভেজা। গোসল করে ফ্রেশ তো হতে দিবে!!
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই টাওয়েল নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।
আমিও শিকারি বেড়ালের মত বসে বসে গোঁফে তা দিতে থাকলাম। শুধু একবার ফ্রেশ হয়ে বের হোক!!
.
.
.
সুপ্তি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে উঠে ওর যেহেতু অফিসে যেতে হয় তাই ও রাত জাগে না।
আমার ঘুমাতে একটু দেরী হয়। রাত জেগেই আমি অনলাইনে কাজ করি। তবে সেদিন শরীর একটু ক্লান্ত থাকায় বেশি রাত জাগলাম না। ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম। খানিক বাদেই গভীর ঘুমে ঢলে পড়লাম আমি।
রাতে ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখছি,
মণিকা ভাবি বারান্দার একটা চেয়ারের উপরে বসা।
আমি ছাদে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি।
মণিকা ভাবি তার মোবাইল থেকে আমাকে মেসেজ দিচ্ছে-
আজ বিকেলে আমার বারান্দায় আসলে না?
তার মেসেজের লেখাটা পুরো আকাশ জুড়ে বড় বড় অক্ষরে ভেসে উঠছে।
আমি আকাশে তাকিয়েই তার মেসেজটি পড়ে নিলাম। আমি রিপ্লাই করলাম,
সময় পাইনি তাই আসতে পারিনি।
আমার লেখাটাও ভেসে উঠলো পুরো আকাশ জুড়েই।
মণিকা ভাবী আবার লিখলেন,
কাল এসো। বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে গল্প করবো।
লেখাটা আকাশে ঝলমল ঝলমল করছে।
আমি রিপ্লাই দিলাম- আচ্ছা আসব।
আমার রিপ্লাই দেয়ার সাথে সাথেই দেখলাম সুপ্তি ছাদে চলে এসেছে। ও এসে দৌড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, তারপর আমার বুকের মাঝেই আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে গেলো।
আচমকা লাফ দিয়ে উঠলাম ঘুম থেকে।
কি ভয়ানক স্বপ্ন। আমি প্রচন্ড ঘামছিলাম।
বসে বসে ভাবতে লাগলাম! এমন স্বপ্ন আমি কেনো দেখেছি! কয়টা বাজে চেক করার জন্য মোবাইল ফোন হাতে নিলাম!
দেখলাম মণিকা ভাবির নম্বর থেকে একটা টেক্সট ম্যাসেজ এসেছে মিনিট পাঁচেক আগেই।
এত রাতে কেন সে আমাকে মেসেজ করলো!!
মনের ভেতর ধুকপুক করতে শুরু করলো! কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজটি ওপেন করলাম আমি।
চলবে…
লেখক- হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ
#গৃহযুদ্ধ পর্ব ৩
______________
মণিকা ভাবির মেসেজ ওপেন করতেই দেখতে পেলাম তিনি লিখেছেন,
” বারান্দায় চা নিয়ে বসে আছি,
হাসনা হেনার মিষ্টি গন্ধ এবং পূর্ণিমা ঢেলে দেয়া চাঁদ আমার ছোট্ট বারান্দাকে একটা অস্থায়ী নন্দনকাননে পরিণত করেছে। লেখালেখির অভ্যেস আমার বেশ আগে থেকেই ছিলো।
কিছু অগোছালো কবিতা পৃষ্ঠার বিছানায় নিরলস শুয়ে আছে। তোমার কন্ঠ বেশ গুরুগম্ভীর। আমাকে কবিতাগুলো আবৃত্তি করে শোনাবে? ”
মেসেজটা পরে মুখের কোণায় একটা হাসি ফুটলো আমার। মণিকা ভাবীকে যতটা কাঠখোট্টা মনে করেছিলাম ঠিক ততটা তিনি নন। ওনাকে রিপ্লাই করলাম,
সময় পেলে শোনাবো অবশ্যই।
কিছুক্ষন পরে জিজ্ঞেস করলো, তোমার স্ত্রী কি করে! জানালাম, ও ঘুমাচ্ছে।
পরে তার পক্ষ থেকে আর কোন রিপ্লাই আসেনি।
আমিও ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভাঙলো সুপ্তির ডাকে।
উঠে দেখলাম সুপ্তি চা নিয়ে হাজির। মুখে পানির ঝাপটা মেরে ফ্রেশ হয়ে এসে চায়ে চুমুক দিলাম। কালকে মণিকা ভাবীর হাতের চা খেয়ে সুপ্তির এ চা বেশ পানসে ই মনে হচ্ছে। দু-চুমুক খাওয়ার পর আর খেতে ইচ্ছে করলো না।
সুপ্তি আমাকে চা দিয়েই ঝটপট সকালে কিছু তৈরি করার জন্য কিচেনে চলে গেলো। সকালের নাস্তা হিসেবে পরোটা এবং ভাজি আমাদের দৈনিক রুটিন হয়ে গেছে।
সুপ্তি ওর নিজের জন্য কিছু খাবার একটা বক্সে প্যাক করে বাকিটা আমার জন্য প্লেটে সাজিয়ে রাখে।
অফিসের৷ উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে, ও আমাকে শক্ত করে একটা হাগ দেয়। আমিও ওর কপালে মিষ্টি করে একটা চুমু খাই।
আজকেও তার ব্যাতিক্রম হলো না। সুপ্তি বের হওয়ার সময় দরজা খোলা রেখে যখন ওকে হাগ দিয়েছি এবং কপালে চুমো খেয়েছি তখন মণিকা ভাবী কোথা থেকে আমাদের দেখে ফেলেছেন তা কে জানে!
সুপ্তি অফিসে যাওয়ার বিশ মিনিট পর আমাকে কল দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে।
আমি বারবার ওকে জিজ্ঞেস করছি,কি হয়েছে বলো! ও কান্না ই থামাচ্ছে না।
অনেক রিকুয়েষ্ট করার পরে সুপ্তি আমাকে জানালো, মণিকা ভাবি নাকি ওকে ফোন করেছিলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
তো এতে কান্নার কি আছে?
সুপ্তি উত্তর দিলো, মণিকা ভাবী নাকি ওকে নির্লজ্জ বলেছে।মুরুব্বীদের সামনে অসভ্যের মত কাজ করতে যেন আর না দেখে সেটা বলেছে।
বিষয়টা আমার কাছে অনেক খটকা লাগলো, যতদূর জানি মণিকা ভাবী এ ধরণের ভাষা ব্যবহার করার মত মানুষ না। আর এরকম করে বলবেই বা কেনো! কাল রাতেও তো সে কত সুন্দর করে কথা বললো।
তাও বিষয়টা ক্লিয়ার হওয়া দরকার।
দরজা আটকে রেখে মণিকা ভাবীর বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজালাম। দরজা খুললো অল্প বয়সী একটা মেয়ে। বললো, আপনে ভেতরে বহেন, খালামণি একটু পর আসতাছে।
কথা শুনে বোঝা গেলো বাসার টুকটাক কাজ করতেই হয়ত এ মেয়েটিকে রাখা হয়েছে। আমি ভেতরে ঢুকে সোফায় বসলাম।
একটু পর দেখা গেলো মণিকা ভাবিকে।
তিনি কলাপাতা রঙ এর একটা জামদানী শাড়ী পড়েছেন। গলায় চোকার, ঠোঁটে গাঢ় করে খয়েরী রঙ এর লিপস্টিক, সাথে আবার মেকাপ ও করেছেন।
উনাকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
কোথাও বের হচ্ছেন বোধ হয় ভাবি। আমি তাহলে একটু পরে আসি।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললেন!
আরে!
আমি কোথাও বের হবো কেনো! তোমার সাথে কথা বলতেই তো এলাম।
ওনার কথা শুনে আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।
ভাবী এমন গেটাপ নিয়েছে মনে হচ্ছে কোন পার্টিতে যাবে। আবার বলে,সে কোথাও বের হচ্ছে না আমার সাথে কথা বলবে। অদ্ভুত ব্যপার।
সে আমাকে বললো,
এখানে বসা কেনো! বারান্দায় চলো।কোন কথা থাকলে ওখানে বসেই বলি।
তার পেছনে পেছনে বারান্দায় গেলাম,
গিয়েই আমার চোখ ছানাবড়া।
আজ চেয়ার দুটোর সামনে একটা টেবিল পাতা হয়েছে। সেখানে রাখা আছে
কোরমা – পোলাও, গরুর রেজালা, মুরগীর রোস্ট, সালাদ, মিষ্টি, দধি, পায়েস,সরষে ইলিশ, এত এত আইটেম যে কোনটা রেখে কোনটার নাম বলবো সেটাই খুঁজে পাচ্ছিনা।
আমাকে বললো, তোমার জন্য ছোটখাটো একটা আয়োজন করলাম। তোমার বউ এর রান্নার হাত তো ভালোনা। কি সব হাবিজাবি খেয়ে দিন পার করছো!
বসো। আগে খাওয়াদাওয়া করো, তারপর কথা হবে।
বললাম, ভাবি আমার দেখেই পেট ভরে গেছে। এতকিছু কেন করতে গেলেন!
– আরে এতকিছু কোথায়! সামান্য কিছু করলাম একদম নিজ হাতে। খেতে বসো দেখবে নিমিষে শেষ হয়ে যাবে।
খাবারগুলো থেকে এত্ত সুন্দর স্মেল বের হচ্ছিলো! তাও সবকিছু উপেক্ষা করে বললাম ভাবি আরেকদিন খাবো।আজ একটা কাজে এসেছিলাম। উনি কপট রাগ দেখিয়ে বললো, আমি কত আশা নিয়ে বানিয়েছি, তুমি না খেলে সত্যি বললাম আমিও কিন্তু না খেয়েই থাকব। ওনার মন রাখতে খেতে বসলাম।
এতকিছুর মাঝে কোনটা রেখে কোনটা খাই!!এ বিড়ম্বনা থেকে বাঁচলাম
মণিকা ভাবি আমাকে প্লেট এগিয়ে খাবার তুলে দেয়ায়।
খাবারের স্বাদের কথা আর কি বলবো! যাস্ট অতুলনীয়। এত ভালো খাবার আমি কোন হোটেলেও খাইনি। এত্তগুলো খাবার কথায় কথায় কখন যে শেষ করে ফেললাম! স্বাদ ভালো হলে যা হয় আরকি।খাওয়া শেষে পেটটা ছোট খাট একটা গামলার মত মনে হচ্ছিলো।
মণিকা ভাবির চোখেও এক ধরণের সন্তুষ্টি দেখতে পেলাম।
খাওয়া শেষে ছোট মেয়েটা এসে টেবিল পরিষ্কার করে চলে গেলো।
একটু পর আসলো ড্রাগন টি।
ভারী খাবারের পরে ড্রাগণ টি খাওয়া নাকি শরীরের জন্য ভালো।
চায়ে চুমুক দিতে দিতেই উনি জিজ্ঞেস করলো! তারপর কি বলবে বলো!!
উনি এত আপ্যায়ন করলেন! এখন যদি জিজ্ঞেস করি আপনি আমার বউকে অসভ্য বলেছেন! সেটা একদম ই বেখাপ্পা দেখায়। তাই ওনাকে বললাম, আপনি আমার ওয়াইফ কে কল দিয়েছিলেন? উনি জানালেন, যে হ্যাঁ।
– আমাদের কোন কাজ কি আপনার কাছে অপছন্দ লেগেছে!
– না। তবে তোমার ওয়াইফ কেমন যেন, আমাকে দেখে সালাম তো দেয়নি বং সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে গায়ে ধাক্কা দিয়েছে। বিষয়টা আমার খারাপ লেগেছে। তাই ওকে ফোন করে জানিয়েছি।
আমি বললাম, ওহ আচ্ছা। তবে একটা প্রশ্ন!
আপনি জানতেন যে আমি আপনার বাসায় আসব?
– উনি বললেন না। এসেছ ভালোই হয়েছে। নইলে তোমাকে ডাকতে আমার বাসার মেয়েটাকে পাঠাতাম একটু পরে।
এরপর উনি আমার দিকে ওনার একটা ডায়েরি এগিয়ে দিলেন। বললেন ওটা যাতে আমি বাসায় নিয়ে যাই। এটাও বলে দিলেন, আমি যাতে এখন না খুলি ডায়েরিটা। আমি আচ্ছা বলে সেদিনের মত ওনার বারান্দা থেকে বিদায় নিলাম।
বাসায় এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
এত খাওয়াদাওয়া করেছি! একদম ঘুম চলে এসেছে। পেট নিয়ে নড়া কষ্টকর হয়ে গেছে আমার।
ডায়েরি টা বিছানার পাশে রেখে দিলাম এক ঘুম।
লম্বা একটা ঘুম হলো।
ঘুম যখন ভাংলো, তখন ঘড়িতে তিনটা বাজে। ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম দুটা থেকে আমাকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে সুপ্তি।
সাথে সাথে ব্যাক করলাম।
সুপ্তি জিজ্ঞেস করলো! কি করছিলে!
আমি ওকে বললাম ঘুমাচ্ছিলাম।
ও বললো, ওহ আচ্ছা।
জিজ্ঞেস করলাম
-লাঞ্চ করেছে?
– সরি সোনা, রাগ করোনা।
কলিগ জোড় করায় একটা সিংগারা খেয়ে ফেলেছি। তোমাকে ছাড়া খেতে ইচ্ছে করেনি। তুমি তো একেবারেই কিছু না খেয়ে আছ তাইনা?
– হু,
– আচ্ছা একটু ওয়েট করো অফিস ছুটি হওয়ার পর একসাথে খাব।
– আচ্ছা, রাখছি তবে।
বলে ফোন রেখে দিলাম। আমার ভেতরটা অনুশোচনায় জ্বলে যাচ্ছিলো।সুপ্তি মেয়েটা আমাকে না জানিয়ে মনে হয় এক কাপ চা-ও খায়না।সারাদিন ও বসে বসে অফিসে কাজ করে আর আমি এদিকে পেটপুরে খেয়ে আরাম আয়েশ করছি! এটা কেমন ভালোবাসা হলো!
মণিকা ভাবীর ডায়েরিটা বিছানার তোষকের নিচে রেখে দিলাম।
জামাকাপড় পরে রেডি হলাম। ঠিক করল আজ ওকে ছুটির পরে ভালো কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাব।
পাঁচটায় ওর অফিস ছুটি হলো।বাসায় না ফিরে সোজা চলে গেলাম রবীন্দ্র সরোবরে। সেখানে গিয়ে ওর পছন্দের ফুসকা খেলাম একসাথে।
এরপর দুজনে পাল্লা দিয়ে বেলুন ফাটালাম, বন্দুক দিয়ে। কে কতটা ফাটাতে পারে, আমার থেকে ও বেশি পারলো।জিতে যাওয়ার আনন্দে যে হাসি দেখলাম ওর মুখে মনে হল এ হাসি দেখেই আমি চিরকাল কাটিয়ে দিতে পারবো।
এরপর দুজনে একটা প্যাডেল বোট নিলাম। সন্ধ্যার অন্ধকার এবং লেকের পানির বুক চিড়ে আমাদের বোট একদম মাঝে চলে গেল। চারপাশটা অদ্ভুত নিরব। সুপ্তি আমার কাঁধে মাথা দিয়ে আছে। বোট টা ঢেউয়ের তালে তালে অল্প অল্প দুলছে। দুজনের কারো মুখে কোনো কথা নেই।
নীরবতারা আমাদের হয়ে গল্প করছে।হুট করেই এ নিস্তব্ধ নিরবতা ভেংগে দিলো মোবাইলের রিংটোন। আওয়াজ করে বেজে উঠলো। ফোন বের করে দেখলাম মণিকা ভাবির নাম্বার থেকে কল এসেছে। দ্রুত কেটে দিলাম। সেভ করা নেই দেখে সুপ্তি বুঝতে পারেনি।
কে কল দিয়েছে জিজ্ঞেস ও করেনি৷ সুপ্তি আমার কাঁধে মাথা রেখে পরিবেশটা উপভোগ করছিল। খানিক বাদে আবার ও মণিকা ভাবির কল। এবার কেটে দিয়ে ভাইব্রেশন করে রাখলাম৷ এরপরেও বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে সে। ভাইব্রেশন এর সেন্সটিভিটি কম থাকায় আমি টের পেয়েছি শুধু৷ কয়েকবার কল দেয়ার পর ধরছি না দেখে শুরু হলো এস এম এস। বেশ কয়েকবার এস এম এস এসেছে আমার ফোনে।
আরো কিছুক্ষন বোটে ভাসার ইচ্ছে ছিলো। ইচ্ছেটা মাটিচাপা দিয়ে দ্রুত প্যাডেল মেরে চলে আসলাম। বোট ছেড়ে উঠে একটা খোলা রেস্তোরায় বসে বিফ চাপের অর্ডার দিলাম।
সুপ্তি আর আমি মুখোমুখি চেয়ারর বসা। ফোনটা টেবিলের নিচে নিয়ে আমি ভাবির এস এম এস এমম ভাবে ওপেন করি যেন সুপ্তি না দেখে।
তার মেসেজগুলো ছিলো এমন,
” ফোন ধরছোনা কেনো! কোন সমস্যা হয়েছে?”
” তুমি কি আমার ডায়েরীটা পড়োনি রোহান?”
” আমার জন্য কি তোমার একটুও সময় নেই? ”
চলবে..
লেখকঃ Hasibul Islam Fahad
গৃহযুদ্ধ পর্ব-০১
#গৃহযুদ্ধ
লেখকঃ Hasibul Islam Fahad
পর্ব ১
আমার বউয়ের রান্নার হাত একদম-ই ভালো না। বিষয়টি নিয়ে আমার যতটা না মাথাব্যাথা তার থেকেও বেশি মাথাব্যথা আমার বাড়িওয়ালি ভাবীর।
প্রেম করে বিয়ে করার সুবাদে বউ যেভাবেই রান্না করুক, ভালোবাসা মাখামাখি করে খেয়ে নিতে আমার কোনো সমস্যা হয়না। আমি নিজে,একজন ছোটখাটো মাপের গ্রাফিক্স ডিজাইনার। সারাদিন বাসায় বসেই অনলাইনে কাজ করতে হয়৷আমার স্ত্রী সুপ্তি বি এস সি নবম সেমিস্টারে পড়াশোনা করছে। সাবজেক্ট কম্পিউটার সাইন্স।
অভিজ্ঞতা থাকায় হুট করেই হাজার বিশেক টাকার একটা জব পেয়ে যায় ও। যখন সংসারে দুজনের ইনকামের টাকা আসা শুরু করলো, আমরা পূর্বের ছোট্ট বাসাটা ছেড়ে সুবিধামত এড়িয়ায় নতুন একটা বাসা নিয়ে নিলাম।সমস্যাটা এই নতুন বাসার মালকিন ভাবীকে নিয়েই৷
বাসা ভাড়া নেয়ার আগে ফর্মালিটি মেইনটেইন করার জন্য আমাদের মাঝে যে সাধারণ কথাবার্তা হয়, তাতে আমরা জানতে পারি, বাড়িওয়ালা ভাবীর নাম
মণিকা রহমান।তিনি স্বামী হারা হয়েছেন বছর দুয়েক আগে৷ এখন একা-ই জীবনযাপন করছেন। আমিও গল্পে গল্পে বলে ফেলি, সুপ্তি নতুন চাকরী পেয়েছে, এজন্যই ওর অফিস থেকে কাছে হয় এমন জায়গায় দেখেশুনে ভালো একটা বাসা নিতে হলো।
বাড়িওয়ালী নতুন চাকরীর কথা শুনেই অনেক এক্সাইটেড হয়ে গেলেন। নিজ থেকেই অতি উৎসাহ নিয়ে বললেন! ওয়াও নতুন চাকরী! তাহলে তো সে উপলক্ষে তোমাদের বাসায় আমার দাওয়াত খেতে হবে একদিন!
যেদিন উঠবে সেদিন রাতেই আমি তোমাদের বাসায় খাবো৷
ওনার কথা শুনে হঠাৎ করেই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও হাসিমুখে বলে দিলাম। ঠিক আছে ভাবী। প্রথম যেদিন উঠবো, সেদিন আমাদের বাসায় ডিনার করবেন।
.
.
মাসের শুরুতেই নতুন বাসায় উঠে গেলাম। বাসায় ওঠার পর ই আমাদের দুজনের মাথায় একটা চিন্তা ভর করছিলো,
বাড়িওয়ালীকে দাওয়াত দিয়ে বা দাওয়াত ছাড়া যাই হোক, খাওয়াতে তো হবেই।দুপুরের মধ্যে আমাদের ছোট্ট সংসারের জিনিসপত্রগুলো সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজিয়ে নিলাম বাসাটায়। এরপর
সুপ্তি এবং আমি নামলাম বাজার সদায় করতে।
মুরগী নিলাম একটা, গরুর মাংস এক কেজী, সাথে পোলাওর চাল এবং পায়েস রান্নার জন্য যা যা দরকার কিনে নিলাম। মেয়ে মানুষদের সাথে নিয়ে বাজারে গেলে তারা ছেলেদের থেকে বেশি আগ্রহী হয়ে বাজার করে। কিন্তু সুপ্তির চোখে তাকিয়ে আমি অপরাধবোধের একটা ছায়া খুঁজে পাচ্ছিলাম।
রান্না না জানা বিষয়টাইএকটা মেয়ের কাছে অনেক বেশি কষ্টের।
সুপ্তি সবসময় নিজের ভেতর সে কষ্টটা লুকিয়ে রাখে।হাসিমুখে থাকে।
কিন্তু বাজার করতে আসলেই মনে হয় ওর রান্না নিয়ে কষ্ট লুকানোর শক্তিটা কমে যায়।বাজারে এত এত শাক সবজি মাছ মাংস দেখলে যে কোন মেয়েই চাইবে কিনে নিয়ে তার প্রিয় মানুষকে অনেক মজা করে রান্না করে খাওয়াতে৷
সুপ্তির রান্নার হাত যে খারাপ সেটা সুপ্তির হাতের বানানো খাবার খেতে খেতে আমি নিজেও ভুলে গেছিলাম।
ওর হাতের রান্না,
আমার পেট ও মন দুই-ই ভরিয়ে দিত।
যেহেতু আমি বাসায় একা থাকি, তাই সুপ্তি কোন রকম কাজের বুয়া বাসায় এলাউ করে না। ওর কোন বিষয় নিয়ে আমার মাঝে কোন প্রকার আফসোস বা অভিযোগ কিছু তো ছিলোই না বরং কিছু কিছু ছেলেমানুষী আমার খুবই ভালো লাগে।
বাজার শেষ করে বাসায় আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা।
সদয়পাতি নিয়ে কিচেনে ঢুকে, সুপ্তি ইউটিউব নিয়ে বসে গেলো। কোন আইটেম কিভাবে রান্না করলে খেতে মজা লাগবে, সেগুলো দেখছিলো আর একটু পর পর আমাকে বাইরে পাঠাচ্ছিলো। যে মহিলারা ইউটিউব চ্যানেলে রান্নার ভিডিও দেয় ওদের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো আমার। এত এত আইটেমের মশলা কেনো দেয়া লাগবে রান্নায়! এর ভেতরে এমন কিছু আইটেম আছে যার নামও জীবনে শুনিনি।
যাই হোক বহু কষ্টে যা যা পেরেছি সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছি।
এদিকে বউ আমার সবকিছু নিয়ে ঘটা করে রান্না করতে বসেছে। ওর রান্নার তোড়জোড় দেখে আমিও একটু এগিয়ে গেলাম সাহায্য করতে। কোমড়ে কাপড় গুজে, হাতে খুনতী নিয়ে ইউটিউব দেখে টুকটুক করে রান্নার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো ও। ওকে দেখে এখন পুরোদস্তুর একজন গৃহিনী মনে হচ্ছে। কপালে, নাকের নিচে, পেটে ঘেমে ঘুমে একাকার।
ইচ্ছে করছে রান্না টান্না সব বাদ দিতে বলে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে থাকি ঘন্টাখানেক।সুপ্তির ঘর্মাক্ত ঘাড়ে মুখ গুঁজে চুমু এঁকে দেয়ার ইচ্ছেটা খুব কষ্ট করে সংবরণ করলাম। কিচেনে ,থালাবাসন চুলা এবং তরিতরকারি র সাথে ঘন্টা তিনেক যুদ্ধ করার পরে রান্নার কাজ শেষ হলো।ঘড়িতে সময় তখন ন’টা বেজে পাঁচ মিনিট।
সুপ্তি আমাকে বললো, ডায়নিং রুমে সব খাবার সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করা শেষে বাড়িওয়ালা ভাবীকে ডেকে আনতে।
দুজনে মিলে খাবারের আইটেম গুলো ডায়নিং টেবিলে একে একে সব সাজালাম।
সুপ্তির মুখে মুচকি মুচকি একটা প্রশান্তির হাসি। তরকারির রঙ দেখে মনে হচ্ছে রান্না বেশ স্বুসাদু হয়েছে। দু’এক টুকরা মুখে দিয়ে দেখলাম, নাহ আগের তুলনায় বেশ অমায়িক করেই রান্না করেছে ও।খাবার চিবিয়ে গিলে কেমন হয়েছে বলার আগ পর্যন্ত আমার মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলো সুপ্তি। যখন বললাম আগের তুলনায় অনেক অনেক ভালো হয়েছে! কেন জানিনা ও হুট করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর নাকের উপরে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামের উপরে চুমু খেয়ে বললাম, আমি একটা পারফেক্ট বউ পেয়েছি। আমি অনেক লাকি একজন মানুষ। সুপ্তি বোধ হয় লজ্জা পেল। আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে ওর মাথা গুজে দিলো।
.
টুং-টাং কলিংবেলের শব্দ হওয়াতে দুজনেই একটু হতচকিত হয়ে উঠি।এ সময়ে মণিকা ভাবী ছাড়া আমাদের বাসায় আর অন্য কারো আসার কথা না।
সুপ্তি দৌড়ে রুমে চলে গেলো। জামাকাপড় ওড়না চুল, একটু ঠিকঠাক করে নিতে।
আমি দরজা খুলে দিলাম। দরজা খুলতেই কড়া একটা পারফিউমের ঘ্রাণ এসে লাগলো নাকে। বেশ সেজেগুজে একদম ফিটফাট হয়েই আমাদের বাসায় এসেছেন মণিকা ভাবি।
দরজা খুলতেই বললো,
ডাকার আগেই চলে এলাম। সন্ধ্যায় বাজার করে এনেছো দেখেই বুঝেছি, আমার মজা করে বলা কথাটা তোমরা সিরিয়াস ভাবে নিয়েছো। তা তোমার বৌ কোথায় এখনো রান্না করে নাকি!
হাসতে হাসতে বললাম,
– ভেতরে আসুন।
ওর রান্না শেষ।
ওনাকে সরাসরি ডায়িনিং টেবিলেই এনে বসালাম।
আমিও বসলাম একটা চেয়ারে। এরপর সুপ্তিকে ডাক দিলাম।
সুপ্তি এ কয়েকমিনিটে বেশ পরিপাটি হয়ে এসেছে। মনে হয় গালে হালকা করে একটু পাউডার ও ঠোঁটে লিপ্সটিক ও লাগিয়েছে। এত ফর্মালিটির কি আছে আমার মাথায় ঢোকেনা। আমি তো বাজার করে আসার সময় থেকে সেই একই জিন্স আর গেঞ্জি পরা।
যাই হোক ডায়নিং এ বসেই আমাদের ছোট খাট একটা আড্ডা হয়ে গেলো। এরপর শুরু হলো খাওয়াদাওয়া পর্ব।
প্লেটে সবাইকে ভাত দেয়ার পর
তরকারির বাটি থেকে ঢাকনা সরিয়ে সুপ্তি সবাইকে খাবার উঠিয়ে দেয়।
মণিকা ভাবি বলেন,
আমি অত ফর্মালিটি মেন্টেইন করিনা। নিজেই নিয়ে খাচ্ছি। প্রথমেই শুরু করলেন করলা ভাজি দিয়ে৷ দু লোকমা খেয়ে ভাজিগুলো একপাশে রেখে তিনি মুরগীর মাংসে হাত দিলেন।
মাংস দিয়ে একলোকমা মুখে দিতেই ভ্রু কুঁচকে বলে ফেললেন, এত বাজে রান্না আমি কোনদিন খাইনি। কোনকিছুই পরিমান মত নেই। ইচ্ছা করে আমাকে এনে অপমান করেছো নাকি তোমরাই ভালো জানো।
বলেই উঠে হন হন করে হেঁটে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলেন।
সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর গাল দুটো লাল হয়ে আছে। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। আমি উঠে গিয়ে দরজা দিয়ে আসলাম। সুপ্তির পেছনে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখতেই ও ঝাটকা মেরে আমার হাত সরিয়ে দিলো। দৌড়ে বেডরুমে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো। হাজারটা ডাকাডাকি করার পরেও আর দরজা খোলাতে পারলাম না।
এত যত্ন করে রান্না করা খাবার গুলো অযত্নে টেবিলের উপরে পরে রইলো। কেউ ই আর ছুয়েও দেখলো না। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসতেই কখন যে ঘুমের কোলে ঢলে পড়লাম! আল্লাহই ভালো জানেন। সকালে যখন ঘুন ভাংলো, দেখলাম টেবিলের উপরে নতুন খাবার, সাথে একটা চিরকুট।
চিরকুটে লেখা,- কাল বেশি ভালো রান্না করতে গিয়ে বেশি খারাপ হয়েছে।সব ফেলে দিয়ে সকালে যা পেরেছি রান্না করে রেখে গেছি। খেয়ে নিও। আর আমাকে মাফ করে দিও। আমার জন্য তোমার খারাপ খাবার খেতে হয়, আবার মানুষের সামনে অপমানিত ও হতে হয়।
চিরকুটের দিকে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। নিশ্চয়ই সকালে আমাকে না বলেই অফিসে চলে গেছে। আর এটা শিওর যে ও এখনো কোন কিছুই খায় নি।
দ্রুত পায়ে বাসায় তালা মেরে আমি ওর অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলাম।হোটেল থেকে ওর প্রিয় খাবার,নেহারী, পরোটা কিনে ওকে দিয়ে আসলাম। সাথে একটা চিরকুট ও দিয়েছিলাম। কি লিখেছি তা আপনাদের বলব না। অতিরিক্ত রোমান্টিক কথাবার্তা।
যাই হোক ওকে খাবার দিয়ে বাসায় ফেরার পথে,
দেখা হয়ে গেলো মণিকা ভাবীর সাথে। আমাকে দেখেই উনি বললেন, আমি আসলে কালকের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। তোমরা কেন আমাকে ইচ্ছা করে পচা রান্না খাওয়াবে! তাহলে তো এত এত বাজার করতে না।
আমি বুঝতে পারিনি৷
– আচ্ছা, ঠিকাছে৷ সমস্যা নেই।
বলে চলে আসব, এমন সময় উনি আবার ডাক দিলেন,
– এই শোনো!
– জ্বী বলুন!
– কেমন মেয়ে বিয়ে করলে তুমি! রান্নার হাত একদম ই ভালো না।
ওনার কোন কথার উত্তর না দিয়ে আমি সোজা বাসায় চলে আসলাম।
দরজা খুলতে যাবো,
এমন সময় দেখি দরজার সামনে কয়েকটা বাটি রাখা, সাথে একটা চিরকুট ও!
বাহ কো-ইন্সিডেন্স ঘরের ভেতরে বাইরে খাবার! তাও চিরকুট সহ! মনে আগ্রহ নিয়ে চিরকুট টা খুললাম।
লেখা আছে,
” তোমার বউয়ের রান্নার হাত ভালো না। ”
তাই তোমার ভাবী নিজে তোমাকে খাবার পাঠিয়েছে। খেয়ে নিও কেমন?
ইতি, তোমার ভাবি। ব্রাকেটে লেখা মণিকা।
দরজা খুলে ওনার খাবার বাটিগুলোকে তুলে ভেতরে আনলাম। অনেকটা রাগ নিয়েই সবক’টি বাটি খুললাম আমি। উনি যে আমার বৌ এর রান্নার এত সমালোচনা করলো নিজে কি রান্না করে তা দেখার জন্য।
বাটিতে পোলাও বিফ স্টেক এবং চিকেন কারী ছিলো।
প্লেটে তুলে মুখে দিতেই বেশ অবাক হতে হলো আমাকে!
কারো হাতের রান্না এত সুন্দর ও হতে পারে!
খাবারের স্বাদে চোখ বন্ধ হয়ে আসলো আমার৷ কখন যে চেটেপুটে পুরো খাবারটাই শেষ করে ফেলেছি, সেদিকে একদম ই খেয়াল নেই।
সুপ্তির বানিয়ে দেয়া খাবারগুলো অবহেলায় অনাদরে পরে রইলো টেবিলের উপরেই৷
চলবে…
coffee & vanilla Part-10
#coffee & vanilla
#part_10
#Arohi_Ayat
”
– রাইসা! রাইসা! উঠ কলেজ যাবি না!! ওই উঠ!
আমি এক লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম লাইসার ডাকে! লাইসা বলল
– তুই এখনো এইভাবে ঘুমাচ্ছিস? কলেজে কে যাবে??
আমি উঠে কিছু না বলে ওয়াশ্রুমে চলে গেলাম৷ লাইসা বসে বসে বাহির থেকেই চিল্লিয়ে বলছে
– মানে কি আমি বুঝলাম না! তুই এমন কেন? এখনিই আলসেমি করিস! আর কয়েকদিন পরে না তোর বিয়ে পরে কি শশুর বাড়ি গিয়েও এমন করবি? হুহ! তোকে একদিনেই বাড়ি থেকে বের করে দিবে!!
আমি ব্রাশ করতে করতে ওয়াশ্রুম থেকে বের হয়ে বললাম
– লাইক সিরিয়াসলি লাইসা!! তুই বিয়ে হওয়ার আগেই এইভাবে বলছিস? তাছাড়া আমি জানি আমার শশুর বাড়ির সবাই অনেক ভালো সবাই আমাকে ভালবাসে!
– আচ্ছা,, আগে কলেজে চল তোর জন্য আমারও লেট হয়ে যাচ্ছে!
আমরা দুইজন কলেজের জন্য বের হলাম৷ একটা রিকশা নিয়ে দুইজন কলেজ যাচ্ছিলাম৷ সামনে রাস্তা ভাঙা তাই রিকশা থেকে নেমে হেটে যেতে হলো৷ হঠাৎ দেখলাম আমার পাশ দিয়ে একটা ছেলে গেলো আর ছেলেটার পিছনে পিছনে একটা মেয়ে ছেলেটাকে বলছে
– আচ্ছা,, সরি! আর হবে না! দাড়াও!
লাইসা মাথা ঘুরিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি সামনের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসতে হাসতে যাচ্ছিলাম৷ লাইসা ভ্রু কুচকে বলল
– কিরে বাবা? আজব! আর তুই হাসছিস কেন?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
– না এমনেই!
আমরা দুইজন কলেজের গেটের সামনে যেতে দেখলাম আরহান ভাইয়া আর রিতু দাঁড়িয়ে আছে৷ রিতু হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে আর আরহান ভাইয়াও ওর পাশে দাড়িয়ে একটু মুচকি হাসছে আবার দুইজনে ফুসুরফুসুর করছে৷ আমি এইবারো একটু হেসে কলেজের ভিতরে চলে গেলাম৷ আর লাইসা আবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আরহান ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলল
– আমি আসলে বুঝলাম না! রাইসা কেমন জানি ওকে আমি কখনোই বুঝবো না! একসময় রেগে থাকে একসময় রুড থাকে আর এখন আবার যাই দেখে খালি হাসে আজব!
রিতু বলল
– তোর বুঝতে হবে না! আগে তোর লাইফে কেউ আসুক তারপর এমনেই বুঝে যাবি!
লাইসা আর কিছু না বলে কলেজের ভিতরে গেলো৷ আমি কলেজের মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলাম,, লাইসা আমার সামনে এসে বলল
– তুই আবার এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
– দেখ আজকে কেন যেন সারা কলেজে মেলা মেলা মনে হচ্ছে!
লাইসা ভ্রু কুচকে বলল
– এইরকম ত সবসময়ই মনে হয়!
– হ্যা কিন্তু আজকে কেন যেন ভিন্ন ভিন্ন লাগছে,,ওই দেখ লিজা আপু এত দিন আবির ভাইয়াকে ছাড়া বেচারি কত দুঃখী ছিল সারা দিন শুধু চুপচাপ বসে থাকতো,,আবার দেখ আরহান ভাইয়াও যখন রিতুর সাথে ব্রেকাপ হয়েছিল তখন কত কষ্টে ছিল!
– হ্যা তো? তুই এইসব কথা বাদ দিয়ে কি ক্লাসে যাবি? লেট হয়ে যাচ্ছে! আর তুই এইসব কথা কেন বলছিস? তুই ত এখন আর অসম্পূর্ণ না!!
আমি লাইসার দিকে তাকিয়ে ওর মাথায় চাপর মেরে বললাম
– ধুর!
তারপর আমরা ক্লাসে গেলাম৷ ক্লাস শেষে,,, লাইসা আর আমি ক্লাস থেকে বের হতে লাইসার কল এলো৷ লাইসা কল রিসিভ করে কথা বলে আমার দিকে তাকালো৷ আমি বললাম
– কি হয়েছে?
– ধুর আমার ভাল লাগে না! বাবা বাসায় যেতে বলেছে!
– কেন?
– আমি তোকে বললাম না আজকে আমাকে দেখতে আসবে!
আমি হেসে বললাম
– ভালো ত তো যা! আমার বিয়ে হয়ে গেলে ত তুই একা থেকে যাবি এর থেকে তুইও বিয়ে করে ফেল!
– ধুর! আচ্ছা আমি বাসায় যাই একটু দেরি হলেই আমার বড় বোন আর বাবা মিলে আমাকে ধরবে!!
এটা বলে লাইসা চলে গেলো৷ আমি কলেজের গেট থেকে বের হতে একটা মুচকি হাসি দিলাম৷ আমার সামনে দাড়ানো ব্যক্তিটা আমার কাছে এসে বলল
– চল!
আমি মুচকি হেসে ওর সাথে গেলাম৷ আমরা দুইজন গিয়ে একটা ক্যাফেতে বসলাম৷ উনি আমার পাশে বসে বলল
– তো বিয়েতে খুশি ত?
আমি কিছু বললাম না৷ উনি আবার বলল
– ভালবাসার মানুষকেই ত পেয়েছিস বিয়েতে ত খুশি হওয়ারই কথা!
– এটার থেকে আমার কাছে বড় হলো আমার বাবা আমাকে বলেছে এই জন্য আমি বেশি খুশি!
– আচ্ছা বল কি খাবি?
– কফি উইথ ভ্যানিলা!!
উনি মুচকি হেসে অর্ডার দিল৷ উনি আবার বলল
– আগে ত কফি পছন্দ করতি না আর এখন?!
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– এখন ত কফির সাথে ভ্যানিলাও আছে তাই খাই স্বাদটা অনেক ভালো লাগে!
উনি হেসে বলল
– লে তোর কফি এসে পরেছে!
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি উনি বলল
– আরে এই কফি না ওইযে,,!
আমি ক্যাফের দরজার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম৷ হাসিব ভাইয়া বলল
– তাহলে কি এখন আমি যাবো?
ফারহান এসে আমাদের সাথে বসে বলল
– তোমার ইচ্ছে হলে থাকতে পারো আমাদের কোন সমস্যা নেই!
– আরে না নিলা হয়ত আমার জন্য অপেক্ষা করছে! সো আমি যাই!
আমি বললাম
– ঠিক আছে পরে দেখা হবে!
ভাইয়া চলে গেলো৷ এটা হলো আমার খালাতো ভাই হাসিব! হাসিব ভাইয়া চলে যেতে ফারহানের দিকে তাকালাম৷ ফারহান আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি একটু রেগে বললাম
– তো আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলেছেন?
– কবে?
– যে আপনি এখানকার কিছু চিনেন না তাই না? আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনি কিছু চিনেন না আর ওইদিন যে আমি আপনাকে ঘুরিয়ে ছিলাম ওইসময় ও আপনি সব চিনতেন!
– তোমাকে কে বলল?
– কালকে রাতে রুমাইশা বলেছে!
– ওহ্ ত এই রুমাইশা কালকেও তোমাদের বাসায় গিয়ে আমার নামে বলে এসেছে!
– জিনা,, রুমাইশা আমার ফ্রেন্ড আমাদের বাসায় ত যাবে আর আমাকে বলবে না যে আপনি কেমন! আচ্ছা আগে বলেন আপনি মিথ্যা কথা কেন বলেছেন?
– হুহ! মিথ্যা কথা না বললে তোমার সাথে ঘুরতাম কিভাবে টাইম স্পেন করতাম কিভাবে!?
– ওওও ত এই জন্য?! আপনি আসলেও পাগলই!
ওয়েটার আমার অর্ডার নিয়ে এলো কফি এন্ড ভ্যানিলা৷ আমি এক চুমুক দিয়ে তারপর ফারহানকে বললাম
– আপনি এই কফির মত তেতো একেবারে!
ফারহান বলল
– আর তুমি এই ভ্যানিলা তাই না?! যার জন্য এখন আমি মিস্টি হয়েছি!?
– হুহ! আমাদের লাইফটাই কফি এন্ড ভ্যানিলার মত! আজগুবি!
– কেন আমাকে তোমার আজগুবি মনে হয়? আর এখন তোমার নিজের লাইফকেও আজগুবি মনে হয়?
– হ্যা,,সেই প্রথম থেকে শুরু হয়েছিলো আমাদের কাহিনী! সেই ৫দিন থেকে এর পরে কত কিছুই না হয়েছে! আর আজকে দেখেন আমরা দুইজন এখানে বসে আছি! মাঝে দিয়ে আমাকে কত মানুষই না বলেছে যে আমি বেহাইয়া ছেছড়া আর অনেক কিছু আসলে ওরা খারাপ কিছু বলে নি! আমি বেহাইয়া হয়ে ছিলাম মাঝখান দিয়ে আপনার জন্য,, সবাই জানে আমি কেমন কিন্তু মাঝখান দিয়ে আমাকে এমন দেখে সবাই বলেছে আমি ছেছড়া এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমি আপনার পিছনে এই জন্যই ঘুরেছিলাম কারণ আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম নাহলে এত সোজা না আমাকে কারো পিছনে ঘুরানো! আর হ্যা আমি যাকে ভালো বাসি তার জন্য আমার যতই বেহাইয়া হওয়া লাগুক যতই ছেছড়া হওয়া লাগুক মানুষ আমাকে যাই বলুক কিন্তু আমি তাকে পাওয়ার চেষ্টা ত করবো! আর তখন আপনিও আমাকে ভুল বুঝেছিলেন আর আমিও আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম এই ভুল বুঝা বুঝিই ত বড় সমস্যা!! আর ওইদিন যদি আপনি আমাকে এয়ারপোর্টে না আটকাতেন তাহলে হয়তো আমাকে আর দেখতে পারতেন না আর না আমি আপনাকে!!
– ওইদিন ত আমি আটকানোর পরেও তুমি চলে এসেছিলে! আমি কখনো এইভাবে কাউকে আটকাই নি ওইদিন অনেক সাহস করে তোমাকে বলেছিলাম কিন্তু এরপরেও যখন তুমি চলে গেলে এরপর রুমাইশাই সেই ব্যাক্তি যার জন্য আজকে আমারা এইখানে আর কয়েকদিন পর আমদের বিয়ে! রুমাইশা তোমার বাবার সাথে কথা বলে আমাদের বিয়ে ঠিক করে দেয় আর আমরা ত কিছু জানতামই না! রাইসা!!
– হুম!
ফারহান দাঁড়িয়ে গেলো৷ আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ ফারহান হঠাৎ চিল্লিয়ে সারা ক্যাফেতে বলল
– রাইসা!!! এইবার ৫দিন না ৭জন্মের জন্য আমার বউ হবে???
আমি এখনো ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ তারপর আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম আমি বললাম
– কি করছেন?
– তুমি শুধু এন্সার দাও!?
– না! এইবার আমি আপনার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করতে পারবো না!?
– কেন?
সারা ক্যাফের মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি বললাম
– ওইবার ৫দিন পরে ত আমাকে ছেরে চলেই গিয়েছিলেন এইবারও যদি চলে যান?!
– এইবার কোথাও যাবো না! আর গেলেও তোমাকে নিয়েই যাব নিজের সাথে!
আমি ভাবার ভান করে
– হু,,,,,,,,
ফারহান আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে বলল
– আসো তুমি আমার সাথে!
এটা বলে আমাকে ক্যাফের থেকে নিয়ে গিয়ে ওর সাথে গাড়িতে বসিয়ে দিল৷ আমি বললাম
– কি?
ফারহান আমার সামনে এসে আমার ঘারে জোরে কামর দিয়ে দিল৷ আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে বললাম
– আজব!
– দেখো লাল দাগ হয়ে গেছে এটা হলো চিহ্ন যে তুমি এখন থেকে আমার!!
সমাপ্ত,,,,,,,,,,
coffee & vanilla Part-09
#coffee & vanilla
#part_9
#Arohi_Ayat
”
ঠাসসস করে চর পড়লো ফারহানের গালে যেটা আমিই অকে মেরেছি৷ ফারহান গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি রেগে বললাম
– এই কথাটা কেন বললেন আপনি? আমি কি কোন রাস্তার মেয়ে নাকি যে একজনকে ছেরে আরেকজনকে ধরবো!! তাহলে এমনটা মনে হয় শুধু আপনিই পারবেন!! এতক্ষন আমি এই জন্যই আপানার পিছনে ঘুরছিলাম কারণ জানেন আমি কি ভাবছিলাম বলদের মত যে আপনি হয়তো সবার সামনে আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন না পরে একা আমার সাথে কথা বলবেন! আর আমি ত এটা মাথায়ও আনি নি যে আপনি আমাকে সত্যিই ইগনোর করছেন!!
একটু আগে,,,
অনেক্ষন ধরে দেখছিলাম ফারহান আমাকে দেখানোর জন্য ওই মিতিকার সাথে আমার সামনে দিয়ে ঘুর ঘুর করছিলো! তখন রেগে সবার সামনেই ফারহানের হাত ধরে একটা রুমে নিয়ে যাই৷ ফারহান বলল
– কি হয়েছে আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো??
– আপনি কি করছেন আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না! আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ড থাকতে আবার আরেকটা মেয়েকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানিয়েছেন?
ফারহান বলল
– আমি তোমার মত না! যে বয়ফ্রেন্ড থাকতে আরেকটা বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নিব!!
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
– মানে কি?? আমি আবার কি করলাম?
ফারহান আমাকে সোজা উত্তর না দিয়ে বলল
– তুমিও দেখলাম মিতিকার মত বেরিয়েছো শেষে! আমি জানতাম না তুমি এমন তাহলে কখনোই তোমাকে আমি নিজের গার্লফ্রেন্ড বানাতাম কি তোমার মত মেয়ের সাথে ত কথাই বলতাম না! হ্যা আমি তোমাকে বলেছিলাম আমার গার্লফ্রেন্ড হতে তুমি প্রথমে মানো নাই কিন্তু পরে মেনেছো আমি জানো বলদের মত কি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভালবেসে ফেলেছো কিন্তু আমি ভুল ছিলাম আর আমার দ্বারা আরেকটা ভুলও হয়েছে সেটা হলো এই ৫দিনে যে আমি নিজে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম!!!
ব্যাস এর পরেই চর পড়লো ফারহানের গালে!! আমি আবার বললাম
– এখন আপনি আগে বলেন কি করেছি আমি যে আপনি আমাকে এইসব কথা বলছেন? আর আপনি কেমন ওইদিন আমাকে এইসব সারপ্রাইজ দিয়ে তারপর আমাকে না বলেই চলে এলেন! এভাবে চলেই যখন যাওয়ার ছিল কেন করেছেন এত কিছু আর যখন আমি জিজ্ঞেস করছিলাম আপনি যাবেন না? তখন হাসলেন কেন? যানেন এত কিছু করার পরেও আমি আমার মাথায় একটা খারাপ কিছু আনি নি আপনার নামে,,যে গুলো এখন আপনি বললেন আমার নামে!!! আমি একটা আশায় ছিলাম যে আমি লন্ডন আসলে হয়তো আপনি আমাকে বলবেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন!
ফারহান রেগে বলল
– ও তাহলে এই আরহানের সাথে কি চলছে তোমার?? আমি যেতেই আরহানকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছো? আমি যাওয়ার পর একবারো কাউকে জিজ্ঞেস করেছো আমি এসেছি কেন? যাই হোক,,এই লন্ডনে তোমাকে প্রথম দেখে আমি চমকে গেছিলাম আর সবচেয়ে বেশি চমকেছি এটা দেখে যে তুমি আরহানের সাথে! আমি ত ভেবেছিলাম তোমরা হয়ত বিয়ে করে ফেলেছো!! এর পরেও তোমার মত মেয়েকে ইগনোর করবো না ত কি??
– লিসেন!! আরহান ভাইয়া শুধু মাত্র আমার ভাইয়া যাকে আমি আমার আপন ভাইয়ের থেকেও বেশি মানি!!! জানেন আমি কি দোয়া করি যদি আরহান ভাইয়া আমার আপন ভাই হতো তাহলে আমি কত লাকি হতাম! আর আমার সেই ভাইকে নিয়ে আপনার মাথায় এইসব বাজে চিন্তা ভাবনা এসেছে?!!আর তাই বলে আপনি মিতিকা কে আবার আপনার গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছেন?? আর ওইদিন এইভাবেই চলে এসেছেন কেন? এর থেকে যদি আমাকে না কোন আশা ভরসা দিয়ে চলে যেতেন তাহলে কি আপনার ভাল লাগতো না? আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি দেখেই ত বেহাইয়াদের মত লন্ডনে আসার পরে আপনার পিছে ঘুরছি নাহলে ত কবেই আপনাকে থাপ্পড় মেরে চলে যেতাম!! আমাকে চিনেন ত আমার মত মেয়ে আপনাকে ঘুরে ফিরে ২টাকারও দাম দেয় না!!
– লিসেন ওইদিন আমি তোমাকে আশা ভরসা দিয়েছি চলে যাওয়ার জন্য না! আমি তোমার সাথে যে চিটিংবাজি করে চলে এসেছি এমন কিছুও না!! তুমি চলে যাওয়ার পর আমার কল এসেছিল যে আমাদের কম্পানিতে অনেক বড় প্রব্লেম হয়েছে আর বাবা সেখানে একা ছিল বাবা বাংলাদেশে আসে নি! আমার বাবা হ্যার্ট আট্যাক করেছিল তাই কাউকে কিছু না বলেই সেখান থেকে ব্যাক করেছিলাম!! এর পর থেকে এই ২মাস ধরে কম্পানি সামলাবো নাকি বাবাকে সেটাই বুঝতে পারছিলাম না আর আমার ভাইও এই কাজেই ব্যাস্ত!!! আর তুমি কিছু না ভেবে না চিন্তে এইসব বলছো!! সত্যিই আমি তোমাকে যেমন ভেবেছিলাম তুমি তেমন না!
– you know what!! আপনার সাথে আমি আর কথা বলতে চাই না!!! আপনি আসলেই একটা ফালতু লোক আপনি যার তার কথা না বুঝে না শুনে উলটা পালটা ভেবে ব্যাস তাকে ইগনোর করা শুরু করে দেন!! এই জন্যই আপনি ফালতু অনেক বড় ফালতু আপনাকে না মিতিকার সাথেই মানায়! আপনি ওকেই ডিসার্ভ করেন!!
এটা বলে চলে আসতে নিলে ফারহান আমার হাত শক্ত করে টেনে ধরলো৷ আমি ছারানোর চেষ্টা করে বললাম
– আহ্ ছারেন!
ফারহান আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের কাছে এনে আমার ঠোটে জোরে কামর দিল৷ আমি এক ধাক্কায় ফারহানকে দূরে সরিয়ে বললাম
– আমি আর কখনোই আপনার এই চেহারা দেখতে চাই না!! কালকে চলে যাব আমি এখান থেকে!!
এটা বলে চোখের পানি মুছে রেগে সেখান থেকে চলে গেলাম৷ আরহান ভাইয়াকে লাইসাকে কিছু না বলেই পার্টি থেকে চলে গেলাম৷ এই অচেনা দেশে রাতের বেলা তাও আবার একা বেরিয়েছি এটার জন্য ভয় করছে কিন্তু আমি আর ওই পার্টিতে ফিরে যেতে পারবো না!! কাদতে কাদতে হাটতে হাটতে রাস্তার পাশেই একটা বসার যায়গায় বসে পড়লাম৷ ইচ্ছে করছে এখনি এখান থেকে চলে যাই! অনেক্ষন ধরে সেখানেই বসে আছি রাস্তার পাশ দিয়ে অনেক মানুষ যাচ্ছে আর আমার দিকে তাকাচ্ছে! একটু পরে কোথা থেকে যেন রিতু এসে আমার পাশে বসলো৷ আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
– তুই এখানে কেন?
রিতু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি আবার বললাম
– যা তুই এখান থেকে তোর আর আমার মজা নিতে হবে না আমি আর কখনোই আরহান ভাইয়ার আশে পাশেও যাব না!
এটা বলে কেদে দিলাম৷ রিতু আমার হাত ধরে বলল
– না রাইসা প্লিজ আমাকে ভুল বুঝিস না! আমি এখানে তোর মজা নিতে আসি নি আমি তোকে সরি বলতে এসেছি!
– ওহ্ আচ্ছা এখন সরি বলতে এসেছিস কেন?
– আ’ম সরি রাইসা আমি তোর সাথে আগে যাই করেছি,, আমি জানি এর জন্যই তুই আমাকে পছন্দ করিস না! সরি ইয়ার!
– ছার! আমি বুঝলাম না সবসময় এই একি সময় সবাই আমার সাথে এমন করে কেন? যেকোনো সময় আমি একটা দুঃখ পেলে সবাই একসাথে আমাকে আরও দুঃখি করে দেয়! ওইবার যখন আমার মা মরেছিল তখন সবাই আমাকে আরো স্বান্তনা না দিয়ে সবাই আমার সাথে মজা নিয়েছে এমনকি তুইও!! এর জন্যই আজকে তুই আমার চোখে এত নিচে পরে গিয়েছিস!
রিতু আমাকে জোরিয়ে ধরে বলল
– প্লিজ রাইসা আমাকে মাফ করে দে আমি মন থেকে তোর কাছে মাফ চাইছি! প্লিজ আমরা কি আগের মত ফ্রেন্ড হতে পারি না? আ’ম সরি!
আমি রিতুকে ধরে অনেক কান্না করলাম এই সময় একজনকে আমার প্রয়োজন ছিল৷ আর রিতু আগে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল আমাদের মাঝখানে কিছু মিসান্ডার্সটেন্ডিং এর কারণে আমাদের ফ্রেন্ড শিপটা ভেঙেছে!!
”
পরের দিন,,,
আজকেই আমরা সবাই চলে যাবো! এখানে একটা আশা নিয়ে এসেছিলাম যে ফারহানকে আমি বলে দিব যে আমি ওকে ভালবাসি! কিন্তু ওর প্রতি এখন মনে ঘৃনা নিয়ে ফিরছি!! আর আমি এখন আরহান ভাইয়ার ধারে কাছেও যাব না উনি কিছু করে নি কিন্তু তবুও উনার সাথে দেখলে যখন সবাই উলটা পালটা মনে করে তাহলে না যাওয়াই ভালো! আমি আমার ব্যাগ গুছাচ্ছিলাম আর আমার সাথে লাইসা হেল্প করছে! লাইসা বলল
– রাইসা! তুই ঠিক আছিস!!?
– হুম!
লাইসা বলল
– রাইসা! কালকে তুই পার্টি থেকে রুমাইশার সাথে দেখা না করে চলে এসেছিস! আর আজকে আমরা চলে যাচ্ছি! কালকে তুই চলে যাওয়ার পর রুমাইশা অনেক কান্না করেছিল তোর জন্য ! এর পরে ওর সাথে আর কবে দেখা হয় তুই কি একবার ওর সাথে দেখা করে যাবি না? ও ত তোর ছোট বেলার ফ্রেন্ড!
আমি তারাতাড়ি করে ব্যাগ গুছিয়ে লাইসাকে বললাম
– আমি ভুলে গিয়েছিলাম লাইসা! আমি রুমাইশার সাথে দেখা করতে চাই!
– কিন্তু এখন আমাদের হাতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় আছে এর পর সবার এয়ারপোর্টে চলে যাবে তুই এখন,,,,,
– হ্যা,,,এখন প্লিজ আমি তারাতাড়ি করে ওর সাথে দেখা করবো আর চলে আসবো! তুই আমার সাথে চল!
– আচ্ছা চল! আরহান ভাইয়াকে বলে যাই!
– না দরকার নেই! চল আমাদের শুধু মাত্র ১০ মিনিট লাগবে! তারাতাড়ি চল!
আমি আর লাইসা গেলাম রুমাইশাদের বাসায়! দরজার কলিং বেল বাজাতে রুমাইশা এসে দরজা খুলে দিল৷ আমি তারাতাড়ি ওকে জোরিয়ে ধরে কেদে দিলাম৷
– রুমাইশা! আমি চলে যাচ্ছি এর পর তোর সাথে আর কবে দেখা হয় আমি জানি না! কিন্তু আমাকে মাফ করে দিস!
– রাইসা প্লিজ তুই আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড!
আমি রুমাইশাকে ছেরে বললাম
– কে বলেছে তোকে এত দূরে বিয়ে করতে? আমাদের থেকে এত দূরে চলে গেলি তুই! থাক তাহলে!!আমাদের কথা মনে করারও কোন দরকার নেই!
– রাইসা প্লিজ! আয় আগে ভিতরে!
লাইসা বলল
– না আমাদের কাছে এত সময় নেই আমরা এখনি এয়ারপোর্টে রওনা দিব!
আমি রুমাইশাকে বললাম
– চলে যাই আমি!
– রাইসা প্লিজ তোর খেয়াল রাখিস!
আমার হাত ধরে বলল৷ এরপর আমরা দুইজন দুইজনকে জোরিয়ে ধরে কেদে দিলাম৷ লাইসা বলল
– রুমাইশা তারাতাড়ি চল আমাদের কাছে টাইম নেই!
রুমাইশাকে বায় বলে আমরা তারতাড়ি চলে আসতে নিলে হঠাৎ একটা গাড়ি এসে আমাদের সামনে দাড়ালো৷ গাড়িতে ফারহান বসে ছিল৷ আমি আর লাইসা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ ফারহান গাড়ির গ্লাস খুলে বলল
– আসো আমি তোমাদের এয়ারপোর্টে দিয়ে আসি!
আমি রেগে কিছু না বলেই লাইসার হাত ধরে সেখান থেকে চলে আসতে নিলে ফারহান আবার চিল্লিয়ে বলল
– লিসেন রাইসা! এখন আমার সাথে না গেলে লন্ডনই থেকে যেতে হবে কারণ ওরা চলে গেছে সবাই এয়ারপোর্টে! আর আমার না এত টাইম নেই তোমাদের পিছনে ব্যায় করার মত! সো যেতে চাইলে তারাতাড়ি আসো না হলে আমি চলে যাই আর তোমরা দেখো তোমরা কি ভাবে যাবে!! আর এইটা তোমাদের অচেনা দেশ রাইট?! এখানে ত আর তুমি একা একা যেখানে ইচ্ছে যেতে পারবে না!
লাইসা আমার হাত ধরে বলল
– প্লিজ রাইসা চল! না হলে দেরি হয়ে যাবে!!
চলবে,,,,,,,
coffee & vanilla Part-08
#coffee & vanilla
#part_8
#Arohi_Ayat
”
ব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ফারহান৷ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মুখে কোন এক্সপ্রেশন নেই৷ এখন সন্ধ্যা বেলা আকাশটা আরেকটু পরে কালো হয়ে যাবে৷ একটু পর ফাহানের একটা কল এলো৷ রুমাইশা কল করেছে,, ফারহান কল রিসিভ করে কথা বলে ফোন রেখে চোখে সান গ্লাস লাগিয়ে দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে তারপর গাড়ির সামনে গেলো৷
বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিল রুমাইশা৷ ফারহান ভিতরে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো৷ দেখলো রাইসা আর আরহান বসে আছে সাথে আরেকটা মেয়ে আছে৷
আমরা সবাই কলেজ থেকেই এখানে একটা ক্যাম্পে এসেছিলাম৷ কালকেই এসেছি সবাই৷ যখন শুনেছি আমরা লন্ডন যাচ্ছি তখন আমার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিলো না,,, লন্ডন যাচ্ছি এই জন্য না আমি সেখানে গিয়ে ফারহানকে দেখতে পারবো এটার জন্য! ১মাস ২২দিন হয়ে গেছে আজকে রুমাইশার বিয়ের৷ এত দূর লন্ডন যখন আসছি বেস্ট ফ্রেন্ড রুমাইসার সাথে দেখা করবো না এমন হয় নাকি? কালকে এসেছি আর আজকেই রুমাইশার বাসায় চলে এসেছি ওর সাথে দেখা করতে৷ আমি আমার সাথে আরহান ভাইয়াকে নিয়ে এসেছি আর সাথে আরেকটা মেয়ে হলো ওইযে আরহান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড রিতু মানে এক্স গার্লফ্রেন্ড যার সাথে রুমাইশার বিয়ের সময় ব্রেকাপ হয়েছিল৷ আজেক সকালে আরহান ভাইয়ার সাথে আমি ঘুরতে বেরিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের সাথে এই রিতুও বেরিয়ে গেছে৷ আমি এইভাবেই এই রিতুকে আগের থেকে দেখতে পারি না তাই আরহান ভাইয়ার হাত ধরে আরহান ভাইয়ার সাথে মজা করে ওকে জালানোর জন্য এমন করছিলাম ওর এই জলে পুরে যাওয়া ফেসটা দেখতে ভালোই লাগছিলো৷ আর এখন রুমাইশার বাসায় আসার সময় জানি না কেন হার্ট বিট অনেক বেরে গেছিলো এটা ভেবে যে আজকে আমি আবার ফারহানকে দেখতে পারবো৷ কিন্তু বাসায় এসে দেখলাম ফারহান নেই! আমি আরহান ভাইয়া আর রিতু সোফায় বসেছিলাম রুমাইশার সাথে কথা বলছিলাম তখন হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠতে রুমাইশা গিয়ে দরজা খুলে দিতে দেখলাম ফারহান এসেছে আমার হার্ট বিট আবার দ্রুত চলছে মনে হচ্ছে এখনি কেদে দিব৷ আমি ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছি দেখলাম ফারহান আমার দিকে একপলক তাকিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷
আমরা এখানে রাতে ডিনার করে তারপর আবার চলে যাবো৷ আমাদের সাথে লাইসাও এসেছে কিন্তু ওর নাকি একটু খারাপ লাগছে তাই লাইসা আমাদের সাথে এখানে আসে নি৷ আরহান ভাইয়া আর রিতু সোফায় বসে আছে আর রুমাইশা খাবার রেডি করছে৷ আমি সারা ঘর ঘুরে দেখার পর রুমাইশাকে বললাম
– বাবাহ! এভাবেই ত তোদের নিজেরি বাংলাদেশে এত বড় ভিলা আবার এখানে এসেও এই তাজমহল এ বসবাস করছিস ভালোই মাজেমে হ্যা!!
রুমাইশা আস্তে করে আমাকে বলল
– দেখ তুইও আবার আমার সাথে এখানেই থেকে যাস কি না!
আমি রুমাইশার দিকে তাকিয়ে বললাম
– যাহ! রুমাইশা প্লিজ এইসব কথা বলিস না!!
রুমাইশা বলল
– কেন তুই চাস না? আচ্ছা ইদানিং দেখছি তুই আরহান ভাইয়ার সাথেই সারা দিন ঘুরছিস! যে কোনো সময় তোকে কল দিলেই তুই বলিস আরহান ভাইয়ার সাথে আছিস! মানে কারণটা কি?
আমি আরহান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
– দেখ তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই না,, তুই আমি অনেক আগে থেকেই ভাইয়াকে ভাইয়াই মানি! কিন্তু একটা কথা বলবো ভাইয়া অনেক বেশি ভালো যে মেয়ে তাকে পাবে সেই মেয়ে অনেক লাকি হবে অনেক লাকি!!
এটা বলে আমি রুমাইশার দিকে তাকালাম দেখলাম রুমাইশা চুপ করে তাকিয়ে আছে৷ আমি ভ্রু কুচকে পিছনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম৷ দেখলাম ফারহান দাঁড়িয়ে আছে৷ ফারহান কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর আমার দিকে হাত বারিয়ে বলল
– হ্যালো! আমাকে মনে আছে ত আমি ফারহান! তোমার নাম যেন কি ওহ্ রাই,,রাইসা রাইট?!
আমি অবাক হয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আস্তে করে আমার হাত বারালাম৷ ফারহান আবার বলল
– ওহ তো হঠাৎ এইভাবে লন্ডন আসা হলো কি করে তোমার?
ফারহানের কথা গুলো শুনে অবাক হচ্ছি এমন ভাবে কথা বলছে যেন সে আমাকে চিনে আগে থেকে কিন্তু আমাদের মাঝে তেমন কিছু হয় নি! আর আজকে সে আমাকে আবার দেখেছে তাই ভদ্রতার খাতিরে কথা বলছে! আমি সেই অবাক চেহারা নিয়েই শান্ত ভাবে বললাম
– ক,,,কলেজের ক্যাম্পের জন্য এসেছি এখানে!!
– ওহ! ভালো!
এটা বলে চলে গেলো৷ আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর রুমাইশার দিকে তাকালাম৷ রুমাইশা কি বলবে সে জানে না তাই আমাকে বলল
– যা তুই গিয়ে বস!
আরহান ভাইয়া হয়তো দেখেছে তাই আমার হাত ধরে আমাকে তার সাথে বসিয়ে দিল৷ আমি চুপচাপ বসে আছি এইবার৷ আরহান ভাইয়া আমাকে বলল
– চুপ করে এখানে বসে থাক! আর এই ফারহানের সামনে যেতে হবে না!
আমি একবার মনে মনে ভাবছি ফারহান এমন করলো কেন আবার ভাবছি হয়তো ও সবার সামনে আমার সাথে কথা বলতে চায় না তাই হয়তো পরে কথা বলবে আমার সাথে৷ ডিনার করার সময় আমারা সবাই একসাথে টেবিলে বসলাম কিন্তু ফারহান বসলো না বলল পরে খাবে! যাই হোক আমরা খেতে বসলাম আর ফারহান সোফায় বসে আছে৷ আমি একটু পর পর ওর দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি আচ্ছা ওর মাথায় কি চলছে? ও কি আমাকে দেখে খুশি হয় নি? ওর সাথে কথা বলতে হবে!খাওয়া শেষে আরহান ভাইয়ার কল এলো৷ আরহান ভাইয়া কল রিসিভ করে এসে বলল
– রাইসা চল! অনেক লেট হয়ে যাচ্ছে!
রুমাইশা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– রাইসা! যত দিন এখানে আছিস তুই আমার সাথে এইখানে থাক!
আমি কিছু বলবো তার আগেই আরহান ভাইয়া আমার হাত ধরে বলল
– না,,না আমরা ক্যাম্পের জন্য এসেছি ও এখানে থাকলে হবে না! রাইসা আমার সাথেই যাবে! আর আমরা যত দিন আছি আমাদের ত দেখা হবেই! চল রাইসা!
পিছনে ফারহান ফোনের মধ্যে ঢুকে ছিল আমি পিছনে তাকাতে দেখলাম ফোন হাতে নিয়েই আরহান ভাইয়ার কথা শুনে ফারহান কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে রুড চেহারা নিয়ে! আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমি রুমাইশাকে বায় বলে আরহান ভাইয়ার সাথে চলে গেলাম৷ দরজার সামনে এসে রুমাইশার সাথে একটু কথা বলছিলাম তখন ফারহানের দিকে তাকালাম কিন্তু এইদিকে একবারও তাকাচ্ছে না দেখলাম কার সাথে ফোনে কথা বলছে! আমি এইবার আর ওর দিকে তাকালাম না এইবার মনে হচ্ছে ওর যদি সত্তিই আমার উপর মনযোগ না থাকে তাহলে ভালো কথা আমিও যাই এখান থেকে আমি কেন বার বার ওর দিকে তাকাবো! আরহান ভাইয়া বলল
– রাইসা চল!!
আমি খেয়াল করলাম রিতু আরহান ভাইয়ার হাত ধরতে যাবে তার আগেই আমি গিয়ে আরহান ভাইয়ার হাত ধরে রিতুর দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলাম হুহ!! তারপর আমরা সাখান থেকে চলে গেলাম৷ রুমাইশা দরজা বন্ধ করে দেখলো ফারহান ফোন কানে নিয়েই দারিয়ে তাকিয়ে আছে দাত কটমট করে৷ দরজা বন্ধ করতে ফারহান চলে গেলো সেখান থেকে রুমাইশা বলল
– ফারহান!!!
”
পরের দিন,,,,,
সকাল সকাল রুমাইশার ফোন এসেছে আরহান ভাইয়ার কাছে৷ ভাইয়া এসে আমাকে বলল
– রাইসা! রুমাইশা কল করেছিল বলেছে আজকে নাকি ওর হাসবেন্ড এর বার্থডে! তাই আজকে রাতে নাকি ওদের বাসায় পার্টি আছে!
আমি অবাক হয়ে বললাম
– ফয়সাল ভাইয়ার বার্থডে!
তারপর আমি একটু ভেবে সাথে সাথে বললাম
– আচ্ছা ভাইয়া তুমি কি আমাকে একটা হেল্প করবে! আজকে রাতে পার্টিতে গেলে একটু আমার সাথে couple হওয়ার এক্টিং করতে পারবে!
আরহান ভাইয়া কোমরে দুই হাত গুজে বলল
– কেন? ফারহানকে দেখানোর জন্য? তুই কি দেখিস নি আজকে ফারহান কেমন বিহেভ করেছে যেন তোকে চিনেই না! তুই এমন বার বার ওর পিছনে কেন লাগছিস যখন ও তোকে কোন দামই দিচ্ছে না!
– না ভাইয়া এমন কিছু না,,, হয়তো ফারহান সবার সামনে আমার সাথে কথা বলতে চায় নি সবাইকে এটা দেখাতে চেয়েছে যে ও আমাকে চিনে না!
– রাইসা তুই পাগল হয়ে গেছিস!! দেখ এমন বেয়াইয়া দের মত ওর পিছনে ঘুরে ওকে এইভাবে দেখিয়ে তুই কি করবি? অকে jealous করে তুই কি করবি?
আমি কিছু বলবো কোথা থেকে যেন এই রিতু এসে বলল
– লিসেন! আরহান আর আমার আবার মিল হয়ে গেছে! সো প্লিজ এখন আমার বয়ফ্রেন্ড থেকে দূরে থাকবে!
আমি রেগে রিতুকে কিছু বলবো তার আগে লাইসা এসে আমাকে সেখান থেকে নিয়ে গেলো৷ লাইসা আমাকে বলল
– প্লিজ রাগ করিস না! রিতু ত আরহান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড ও ত বলবেই! আচ্ছা তুই বল কালকে কি হয়েছে? ফারহান তোকে চিনে নাই মানে?
– আর কি বলতাম! আমার এখন ফারহানের উপরই জিদ লাগছে! কালকে এসে আমাকে কি বলে “হ্যালো,, আমাকে মনে আছে ত আমি ফারহান” মানে এমন ভাব করলো যেন ও আমাকে ভুলে গেছে! আর আমিও ওকে ভুলে গেছি! আবার ওমন ভাব ভিতরে যেটা আমি বাংলাদেশে দেখি নি ওইখানে আমার সামনে যেমন ভাবে ছিল আর এইখানে এমন ভাব! আমি জানিস কি ভেবেছিলাম এত দিন পর আমাকে দেখে হঠাৎ চমকে যাবে তারপর দৌড়ে এসে আমাকে জোরিয়ে ধরে বলবে আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি!!!
লাইসা আমার মুখের সামনে এসে বলল
– ও হ্যালো! এইসব শুধু মুভিতে আর নাটকে হয়! স্বপ্ন থেকে বের হয়ে রিয়েল লাইফে ব্যাক কর!!
”
রাতে,,,,,
লাইসা আমি আরহান ভাইয়া আর রিতু পার্টিতে এসেছি৷ এই রিতু আজকে যে আরহান ভাইয়ার হাত ধরেছে এমন ভাবে যেন কোন বীরশ্রেষ্ঠ যোদ্ধাও এসে ছারাতে পারবে না! এই রিতুর চেহারা দেখেই রাগ লাগছে! আর লাইসা বারবার আমাকে বলছে চিল ইয়ার!! ঠান্ডা হ! পার্টিতে এসেই দেখলাম রুমাইশা,, ওর সাথে কুশল বিনিময় করে পরে ফয়সাল ভাইয়াকে যেয়ে বার্থডে উইশ করলাম৷
– হ্যাপি বার্থডে জিজু!!
– থ্যাংক্স!
এটা বলে পকেট থেকে ফোন বের করে কল রিসিভ করে ওইদিকে চলল! আমি হা করে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷ তারপর রুমাইশার দিকে তাকিয়ে বললাম
– মানে কি? এটাই তোর হাসবেন্ড!
– ও এমনিই! প্লিজ মাইন্ড করিস না!
আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম আর আমি ফারহানকে বারবার এইদিক ওইদিক খুজছিলাম৷ হঠাৎ পাশে তাকাতে দেখলাম ফারহান! দেখে আমি নিজেই ক্রাশ খেয়েছি৷ আমি ফারহানের দিকে তাকিয়ে ভাবছি ও আল্লাহ আমি কত লাকি এত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে আমার বয়ফ্রেন্ড! শুধু আমি না সবার চোখই ফারহানের দিকে পার্টির সব মানুষ! কিন্তু হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে কোন একটা অসভ্য মেয়ে যেন এসে ফারহানে হাত জোরিয়ে ধরে ফারহানের পাশে দাড়ালো! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি৷ আমি তারাতাড়ি রুমাইশাকে জিজ্ঞেস করলাম
– এই মেয়ে কে?
– এটাই ত মিতিকা!!!
– মানে কিিিি? এই মেয়ে তাহলে এখানে কি করছে তাও আবার ফারহানের সাথে?
রুমাইশা আমতা আমতা করে বলল
– আব,,,আমার মনে হয় ওরা আবার রিলেশনে গেছে!!!
এটা শুনে আমি এখন কি বলবো বুঝতে পারছি না৷ আমি রুমাইশাকে বললাম
– কিন্তু তুই ত বলেছিলি এই মেয়ে ভালো না! তাহলে ফারহান আবার ওর সাথে রিলেশন এ গেছে কেন??
– দেখ রাইসা! সরি কিন্তু এতে আমি কি করতে পারি ফারহানের নিজের ইচ্ছা ও যার সাথে ইচ্ছা রিলেশনে যাবে এতে নিশ্চয়ই আমার কিছু করার নেই!!
চলবে,,,,,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 💜✨)
coffee & vanilla Part-07
#coffee & vanilla
#part_7
#Arohi_Ayat
”
আজকে ২০ দিন হয়ে গেছে রুমাইশার বিয়ের৷ সেইদিন বাসায় এসে বাবার সাথে কিছুক্ষন কথা বলার পর আর ধরে রাখতে পারছিলাম না,, বুক ফেটে কান্না আসছিলো আর গলা ধরে আসছিলো৷ ওয়াশ্রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কাদতে হয়েছে যেন বাবা না দেখে ফেলে৷ আমি কখনো কোন বিষয়ের জন্য কান্না করি নি শুধু মাত্র ব্যাথা পেলেই ভ্যা করে কেদে দিতাম এছাড়া সব বিষয়ে আমি যথেষ্ট স্ট্রং এত সহজে কেউ আমাকে কাদাতে পারে না৷ আমি জানি না এত কান্না আসছে কেন? ফারহান শুধু এখানে ৫দিনের জন্য ছিল,, আর এই ৫দিনই আমার ফারহানের গার্লফ্রেন্ড হয়ে থাকার কথা ছিল যেটা আমি নিজেই বলেছিলাম ফারহানকে যে আমি এই কয়েকদিনের জন্যই ওর গার্লফ্রেন্ড হবো এর পর ওকে ভুলে যাবো,, ও ওর লাইফে আর আমি আমার লাইফে!!! আর আজকে ফারহানের যাওয়ার কথাই ছিল তো চলে গেছে শেষ কাহিনী এতে এত দুঃখী হওয়ার কি আছে আমরা বুঝলাম না আমার কান্না আসছে কেন? ফারহানের সাথে আমার পরিচয় কি ৫ বছরের নাকি? শুধু মাত্র ৫দিনের আর এই ৫দিনের পরিচয়ের একটা মানুষের জন্য আমি কাদছি কেন? আমি বলেছিলাম ফারহান যখন চলে যাবে আমি ওকে ভুলে যাবো কিন্তু মনে হচ্ছে যেন এই ৫টা দিনের কথা আমি জীবনেও ভুলতে পারবো না!! আর ওইদিকে ও কি আমাকে ভুলে গেছে? যাবেই ত!! কিন্তু এখন আমার এই অবস্থার কারণ শুধু মাত্রই ফারহান! সব দোষ ওর,,,ও যখন চলেই যাবে কি দরকার ছিল আমাকে এত আশা ভরসা দিয়ে যাওয়ার? কি দরকার ছিল আমাকে ডেকে এত অবাক করিয়ে দেওয়ার? কি দরকার ছিল আমাকে আমার এত গুলো ছবি দেখানোর যা ও লুকিয়ে তুলেছে? কি দরকার ছিল এমন কথা বলার? আর আমি যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি চলে যাবেন নাকি তখন এমন ভাবে হাসার কি দরকার ছিল?? এই জন্যই ত আমি ভেবেছি ও হয়ত যাবে না!! ফারহান এইভাবেই চলে যেতো আমাকে কিছু না বলে তাহলে হয়তো এত কষ্ট লাগতো না কিন্তু যাওয়ার আগে আমাকে এত সারপ্রাইজ করার কি দরকার ছিল?? আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না!! হঠাৎ করে আমার হাত লেগে শ্যাম্পুর বোতলটা পরে যেতে বাবা বাহির থেকে দরজা বারি দিয়ে বলল
– কি হয়েছে রাইসা? পরে গেলি নাকি আবার?
আমি তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলিয়ে বললাম
– আব,,,,না বাবা! শ্যাম্পুর বোতল পরে গেছে!!
– আচ্ছা,, তুই ফ্রেশ হয়ে আয় তোর খাবার রেডি আছে!
আমি তারাতাড়ি মুখ ধুয়ে ভালো মত কান্না থামিয়ে মুখ মুছে দরজা খুলে বললাম
– বাবা,, আসার সময় আন্টির বাসা থেকে খেয়ে আসছি এখন খিদা নেই!
”
আজকে ২০ দিন হয়ে গেছে,,,এই ৫দিনেও এত বিরক্তি ফিল করি নি ফারহানের জন্য যেমনটা এখন ফারহান নেই বলে করি! এখন আমি নিজেও জানি না কেন যেন অনেক তারাতাড়ি বিরক্ত হয়ে যাই আগে ত রাগি ছিলাম এখন আরও বেশি রেগে যাই! আবার আমার সামনে এসে কেউ ফাইজলামি করলেও ভাল লাগে না শুধু একাই বসে থাকতে ইচ্ছা করে!! এখন আবার কলেজে যাই আর সেখানে লাইসার সাথে দেখা হলেই লাইসা একটু আমাকে ফারহানের কথা জিজ্ঞেস করলেই এত পরিমান রেগে যাই যে কি বলবো! তাই লাইসা এখন আর ফারহানের কথা বলেও না৷ লাইফটা আগের মত ত হয়েছে কিন্তু অনেক কিছুই মনে হয় যেন বদলে গেছে কিন্তু আসলে কিছুই বদলায় নাই আমি নিজেই একটু বদলে গেছি!!
কলেজের মাঠে বসে আছি লাইসা আর আরহান ভাইয়ার সাথে৷ আমি রুড চেহারা নিয়ে বসে আছি৷ লাইসা আর আরহান ভাইয়া কথা বলছিলো আমাকে এইভাবে দেখে আরহান ভাইয়া লাইসাকে জিজ্ঞেস করলো
– ওর কি হয়েছে?
– আরে ফারহান চলে গেছে তাই!
– ফারহান চলে গেছে তাতে ওর কি?
– আমার মনে হয় ও ফারহানকে ভালোবসে তাই,,,,,,!
লাইসার কথার মাঝখান দিয়ে আমি হঠাৎ রেগে গিয়ে বললাম
– লাইসা!! এত কথা কেন বলিস তুই না শুনে না বুঝে?! তোকে বলিছি না ফারহানের নাম নিবি না! আর ভাইয়াকে কি বলছিস এইসব? তুই জানিস আমি ওকে ভালবাসি? এত পাকনামি কেন করিস!?
লাইসা চুপ হয়ে গেলো৷ আমাকে এভাবে দেখে আরহান ভাইয়া বলল
– রাইসা!! কি সমস্যা তোর?? এমনই করবি এখন থেকে? এত কিসের বিরক্তি তোর এত কিসের রাগ?? আর যেটা সত্যি সেটা বলেছে ও আমাকে কি হয়েছে!? আগে ত এমন করতি না তুই এমন হুটহাট রেগে যেতি না তাহলে এখন কি হয়েছে? আরেকবার যদি আমার সামনে এভাবে দেখেছি তোকে!!?
আমি চুপ করে বসে আছি৷ ভাইয়া আবার বলল
– চল! তোর মন ঠান্ডা করতে হবে,, তোকে এই ফারহান টারহান ভুলাতে হবে! চল তুই আমার সাথে!
এটা বলে আমার হাত টেনে উঠিয়ে নিজের সাথে নিয়ে গেলো সাথে লাইসাও গেলো৷ আমি ভাইয়ার উপরে কিছু বলতে পারবো না তাই চুপ করে গেলাম৷
আজকে সারাটা দিন আমারা ৩জন টোটো করে ঘুরে বেলাম৷ সারাটা দিন ঘুরেছি আজকে যেখানে যেতে ইচ্ছে করেছে সেখানেই গিয়েছি৷ ভাইয়া আর লাইসা পুরো চেষ্টা করেছে আমাকে হ্যাপি করার আর আমিও সেটা বুঝতে পেরেছি৷ আরহান ভাইয়া অনেক বেশি ভালো এইটা ত আমি আগেই জানতাম কিন্তু আজকে সারা দিন ভাইয়ার সাথে ঘুরার পর মনে তার জন্য আরো রেস্পেক্ট বেরে গেলো৷ সন্ধ্যার সময় আমরা রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম তখন হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো কিন্তু আমরা দৌর দিলাম না আমরা ভিজে ভিজেই যাচ্ছিলাম অনেক বেশি ভাল লাগছিলো এই মোমেন্টা! বৃষ্টিতে ভিজে বাসার নিচে আসার পর ভাইয়া বলল
– কেমন লেগেছে তাহলে আজকের দিনটা?
আমি খুশি হয়ে বললাম
– অনেক বেশি ভালো!
– দেখ তোর লাইফ তুই ইচ্ছে করলেই ওইসব বাদ দিয়ে নিজের খুশি দেখতে পারিস! আজকে তোর অনেক ভাল লাগছে না নিজেকে এইভাবে খুশি দেখে?! তাহলে কেন নিজের মনের ভালো লাগা বাদ দিয়ে শুধু শুধু খারাপের কথা ভেবে মন মরা হয়ে বসে থাকবো?! of course সব সময় এই দিকটা দেখবো যে আমি খুশি হবো কিভাবে? কিভাবে মনকে ভালো ফিল করাবো! কত মানুষ যে যায় আসে না আমাদের এতটুকু লাইফে এর জন্য কি ওইসব মনে রেখে দুঃখী হতে হবে নাকি? যদি এমনই হতো তাহলে দুনিয়ার প্রত্যেক্টা মানুষই এমন আগের কথা মনে রেখে মন মরা হয়ে থাকতো,,কারণ দুনিয়ায় সব মানুষেরই একটা না একটা দুঃখ থাকেই!!! আর শেষ একটা কথা বলবো আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে!!!
আমি বড় একটা নিশ্বাস ছেরে মুচকি হাসলাম আর তার মানে হলো আমি বুঝতে পেরেছি ভাইয়ার কথা!! তারপর আমি ওদের দুইজনকে বায় বলে উপরে চলে গেলাম৷ সিরি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি পরলো৷
”
১মাস পরে লন্ডনে,,,,,
আহমেদ ইন্ডাস্ট্রির নিচে অনেক ভির জমে আছে৷ অনেক সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে আছি৷ হঠাৎ এই ভিরের মাঝখান থেকে বের হলো ফারহান! চার পাশে secretary! আর ফারহান চোখে একটা কালো সানগ্লাস পড়া আর কালো কোর্ট পড়া আজকে পুরাই বিজনেস ম্যান মনে হচ্ছে! ফারহান বের হয়েই সোজা গাড়িতে ঢুকে গেলো৷ কারো কোন প্রশ্নের উত্তরই দিল না৷ অনেক মিডিয়ারা দাঁড়িয়ে আছে এখনো৷ ফারহান ড্রাইভার কে বলল তারাতাড়ি এখানে থেকে যেতে৷ ফারহান গাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ ফারহান পাশে তাকাতে ফারহান প্রথমে ওর সান গ্লাসটা খুলে তারপর গাড়ির গ্লাসটা খুলল৷ গাড়ির গ্লাস খুলতে ফারহান একেবারে পরিষ্কার দেখছে যে রাইসা ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে৷ ফারহান ওর ড্রাইভারকে বলল
– স্টপ দি কার!!
গাড়ি থামাতে ফারহান দূর থেকে দেখছে রাইসা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে৷ ফারহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে৷ একটু পরে ফারহান দেখলো আরহান এসে রাইসার পাশে দাড়ালো৷ রাইসা আরহানের হাত জোরিয়ে ধরে আরহানের দিকে তাকিয়ে হাসলো৷ ফারহান এখনো শকড এ আছে যে রাইসা এখানে কি করছে? ফারহান আবার ওর চশমা পরে ড্রাইভারকে বলল
– জাস্ট গো!!
চলবে,,,,,,
coffee & vanilla part-06
#coffee & vanilla
#part_6
#Arohi_Ayat
”
বসে আছি একাই আর রুমাইশার হলুদের ফাংশন চলছে৷ এইসময় আমার সাথে কথা বলার কেউ নেই৷ আমি লাইসাকে কল করলাম৷
–হ্যালো কই তুই? এখনো পার্লারেই বসে আছিস তাই নাই? এইদিকে ফাংশন শেষ হয়ে যাচ্ছে!
– না আমি রাস্তায় আসছি!
কল কেটে দেখলাম ফারহানও ওদের সাথে বসেই মজা করছে যেটা দেখে কেন যেন অনেক ভাল লাগছে! আমি একেবারে পিছনে এক কোনায় বসে আছি,,কারণ রুমাইশার যে বিগ ফ্যামিলি ওরা হলুদ দিতে দিতেই সারা রাত কেটে যাবে! আমি লাইসার অপেক্ষায় আছি ও আসলে নাহয় আমরা দুইজন একসাথে হলুদ দিবো! ফারহানকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিন ধরে মনে হয় এমন মজা করে না তাই আজকে এত খুশি! আমি বসে বসে দেখছিলাম তখন পিছন থেকে লাইসা এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল
– কিরে!
আমি পিছনে তাকিয়ে চমকে গেলাম৷ আমি অবাক হয়ে বললাম
– বাব্বাহ! লাইসা কি সেজেছিস তোকেই বউ লাগছে! এভাবে না তুই বলেছিলি সাজতে পছন্দ করিস না!
– হ্যা আজকে কেন যেন অনেক সাজতে ইচ্ছে করলো!
– ও আচ্ছা আরহান ভাইয়া আসে নি?
– না,,, ভাইয়া নাকি কালকে আসবে!
– ও আচ্ছা!
দেখলাম ফারহান আমাদের দিকেই আসছে৷ লাইসা তারাতাড়ি একটু নরেচরে দাড়ালো৷ আমি আড় চোখে লাইসার দিকে তাকালাম৷ ফারহান এসেই বলল
– হেই! কি যেন তোমার নাম লাইসা! কেমন আছো?
– ভালো! আপনাকে ত পুরাই সেই লাগছে!
ফারহান বাকা হেসে বলল
– you looking pretty too!!
আমি বড় বড় চোখ করে ফারহানের দিকে তাকালাম৷ আজব আমাকে ভালো মন্দ কিছুই বলল না আর লাইসাকে you looking pretty!?! যাক ভালো আমার কারো কমপ্লিমেন্ট এর প্রয়োজনও নেই আমার কাছে আমি অনেক সুন্দর৷ ফারহানের দিকে তাকিয়ে ভাবছি,, আর নিজেকেও একেবারে এত হ্যান্ডসাম লাগছে না যেমন ও নিজে নিজে মনে করছে হুহ!! আমি লাইসার হাত ধরে বললাম
– চল আমরা হলুদ দিয়ে আসি!
আমরা দুইজন গিয়ে ছবি তুলে রুমাইশার সাথে মজা করে কিছু কথা বলে কত গুলি হলুদ মেখে দিয়ে চলে এলাম৷ লাইসা আর আমি গিয়ে একটু বাহিরে গেলাম,,বাগানের দিকে৷ সেখানে গিয়ে আমরা কথা বলছিলাম দেখলাম ফারহান ফোনে কথা বলতে বলতে এখানেই আসছে৷ লাইসা ওর ফোন বের করে নিজেকে দেখে ঠিক করে নিল৷ আমি দোলনায় বসে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছি,,আর লাইসা ফারহানকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে গেছে মনে হয় ওর সাথেই কথা বলতে আসছে হুহ! কিন্তু আমি জানি ফারহান এসে আমার সাথেই কথা বলবে৷ আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছি৷ ফারহান কথা বলা শেষ করে ফোন রেখে আমাদের সামনেই এলো৷ ফারহান আমাকে কিছু বলতে নিলে লাইসা হাত বারিয়ে বলল
– হ্যালো!
ফারহান কিছু না বলে মুচকি হেসে ওর সাথে হ্যান্ড শেক করলো৷ আমি শুধু হাবাদের মত লাইসার দিকে তাকিয়ে আছি বসে বসে৷ লাইসা ফারহানকে বলল
– আপনিও এখানে বসেন আমারা কথা বলি!
আমি আরাম করে দোলনায় বসে আছি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে এমন সময় এমন ইম্পর্টেন্ট মুহুর্তে রুমাইশা আমাকে ডাক দিয়ে সব নষ্ট করে দিল৷ একটা মেয়ে এসে বলল
– আপু তোমাকে ডাকে রুমাইশা আপু!
আমি উঠে গেলাম ভিতরে রুমাইশার কাছে৷ রুমাইশার ওর রুমে ছিল৷ আমি যেতে বলল
– আমার এই ঘুমটা টা একটু ঠিক করে দে প্লিজ!
– এইটার জন্য ডেকেছিস! অন্য কাউকেও ত বলতে পারতি!!
আমি রুমাইশার ঘুমটা ঠিক করে দিয়ে তারাতাড়ি আবার নিচে যেতে চাইলে রুমাইশা আবার ডেকে বলল
– দাড়া এত তাড়া কেন?
– কি হয়েছে আবার?
– কিছু না,, কিন্তু এখন আমার কিছু করার নেই আমার সাথে একটু কথা বল বসে!
আমি প্রথমে ভ্রু কুচকে বললাম কেন? পরে আবার বললাম
– আচ্ছা,,, আমি একটু আসছি!
আমি গেলাম বাগানে,, গিয়ে দেখি দোলনায় লাইসা আর ফারহান বসে বসে কথা বলছে৷ আমি গিয়ে ফারহানকে বললাম
– এই উঠেন এইটা আমার জায়গা ছিল! আমি এখানে বসেছিলাম!
ফারহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
– so what?
– আচ্ছা,, আমি আমার ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিলাম আপনি এখানে কি করছেন?
– আমিও ত ফ্রেন্ড এর সাথেই কথা বলছি!
– ওও মাত্র এই কয়েক মুহুর্তে লাইসা আপনার ফ্রেন্ড হয়ে গেছে??
ফারহান লাইসার দিকে তাকিয়ে বলল
– হুম আমরা ত এখন থেকে ফ্রেন্ড এম আই রাইট লাইসা?!
লাইসা বলল
– হুম!
আমি চুপচাপ কিছুক্ষন কিছু না বলে এদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর ওরা দুইজন দোলনায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,ফারহান ত একেবারে পায়ের উপর পা উঠিয়ে দোলনার উপর দুই হাত রেখে ভাব নিয়ে বসে আছে৷ ফারহানের দিকে তাকিয়ে ভাবছি কত বড় সাহস এই ছেলেটার আমি দাঁড়িয়ে আছি আর ও নিজের গার্লফ্রেন্ড এর ফ্রেন্ড এর সাথে বসে আছে এটাকেই কি ও গার্লফ্রেন্ড বলে দাবি করে? আবার নাকি লাইসা ওর ফ্রেন্ডও হয়ে গেছে! যাক ভালো কথা ফ্রেন্ড হয়েছে কিন্তু মাত্র কয়েক মুহুর্তের ফ্রেন্ড কি এখন বেশি হয়ে গেছে গার্লফ্রেন্ড থেকে? আমি লাইসার হাত ধরে বললাম
– লাইসা উঠ,, চল আমরা অন্য জায়গায় গিয়ে কথা বলি! চল!
আমি লাইসার হাত ধরে টানছি আর ফারহান চুপচাপ বসে আছে আর লাইসা! কি একটা ফ্রেন্ডও পেয়েছি আল্লাহ,,,,! লাইসা উঠছেই না যেন ও সারাজীবন এইভাবেই ফারহানের সাথে দোলনায় বসে থাকবে! আমি বললাম
–কিরে লাইসা উঠ! রুমাইশা একা চল আমরা গিয়ে ওর সাথে কথা বলি!
– তুই যা না প্লিজ!
আমি রেগে মেগে লাইসার হাত ছেরে দিয়ে বললাম
– থাক তুই আমিই তাহলে চলে যাই!
এটা বলে সেখান থেকে চলে গেলাম কিন্তু কেউ আমাকে আটকালো না,,, না ফারহান যে নাকি আমার বয়ফ্রেন্ড আর না লাইসা যে নাকি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড!! আমি রুমাইশার কাছেই গেলাম আবার৷ আমি নিজেই মনে মনে ভাবছি বেচারি রুমাইশাকে একা ফেলে আমি চলে এসেছি শুধু মাত্র ফারহানের জন্য আর লাইসার জন্য এই জন্যই এখন এইভাবে অপমানিত হয়ে ফিরেছি এখন আমি রুমাইশার সাথেই থাকবো বেচারি বিয়ে হয়ে কালকে চলে যাবে কত দূর আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড ওকে আর কবে দেখবো সেটারও কোন ঠিক নাই উফফ,,,,অনেক মিস করবো ওকে! আমার ওর সাথেই টাইম স্পেন করা উচিৎ গিয়ে!
ব্যাস সারা হলুদ আমি রুমাইশার সাথেই ছিলাম ওর সাথে কথা বলছিলাম ওকে বলছিলাম যে ওকে আমি কতটা মিস করবো ব্যাস এটা বলতেই রুমাইশা হুহু করে কেদে দিল আমি ওকে থামানোর চেষ্টা করে বললাম
– আরে আরে তুই আজকে কাদছিস কেন? কালকে ত আবার কাদতে হবে প্লিজ স্টপ ক্রাই!
একটু পরে লাইসা এলো রুমে৷ আমি লাইসার দিকে তাকাতে লাইসা আমাকে ডেকে বলল
– শুন রাইসা! প্লিজ ইয়ার রাগ করিস না আমাকে মাফ করে দিস আ’ম সরি!!
আমি বললাম
– কি হয়েছে তোর আবার?
– আমি কতক্ষন ধরে জানিস ফারহানকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বানানোর চেষ্টা করছি এখন ফারহান নিজেই আমাকে বলল যে তুই আর ফারহান নাকি রিলেশন এ আছিস?! তুই আমাকে আগে বলিস নি কেন? দেখ আমি কখনোই চাইবো না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর বয়ফ্রেন্ডকে নিতে,, আসলে আমি ত জানতামি না!! প্লিজ সরি,, একটু আগে আমি যা করলাম!!
আমি লাইসাকে একটা চাপর মেরে বললাম
– চুপ কর এত কথা বলিস কেন? বস এখানে আমারা কথা বলি!!
লাইসা চলে যাওয়ার সময় আমি আর রুমাইশা এসে দরজার সামনে এসে দাড়ালাম৷ লাইসা আমাকে জোরিয়ে ধরে বলল
– আচ্ছা আমি যাই কালকে দেখা হবে!
রুমাইশা বলল
– আজকে থেকে যা এখানে আমাদের সাথে! কালকে ত আমার বিয়েই!
লাইসা বলল
– হ্যা আমি চেয়েছিলাম কিন্তু বাসায় যেতে হবে বাবা বলেছে এসে পরতে! থাক না আমি ত আবার কালকে আসবো!
রুমাইশাকে কে যেন ডাক দিতে রুমাইশা ওকে বায় বলে চলে গেলো৷ তারপর আমিও বায় বলতে লাইসা চলে যাবে এমন সময় ফারহান এসে লাইসাকে ডেকে বলল
– বায় লাইসা! কালকে দেখা হবে!
লাইসাও বলল
– হুম! বায়!
– এত রাতে তুমি একা যাবে?
– না সমস্যা নেই! আমি যেতে পারবো!
– ও আচ্ছা ভালো ভাবে যেও!
আমি লাইসাকে বললাম
– আচ্ছা,,, আচ্ছা যা এখন! এতক্ষন তোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না!
লাইসা চলে যেতে আমি একবার ফারহানের দিকে তাকিয়ে তারপর চলে যেতে নিলে ফারহান বলল
– কি হয়েছে রিসু?
– আমার নাম রাইসা রিসু না!
এটা বলে সেখান থেকে চলে গেলাম৷ আমার রুমের সামনে আসতে ফারহানও আমার পিছনে পিছনে এসে আমাকে বলল
– দাড়াও দাড়াও এত jealous হওয়া ভালো না!
আমি ঘুরে পিছনে তাকিয়ে বললাম
– দেখেন এখন আপনি আমার থেকে তেমন কিছু আশা করবেন না যে আমি বলব কই না কে jealous? হ্যা আমি jealous! আর আপনি যখন এটা জানেন যে আমি jealous তাহলে এমন করছিলেন কেন? আমি আপনাকে বলেছিনা আমি তেমন মেয়ে না যে চুপচাপ সহ্য করবো!
ফারহান দুই হাত ভাজ করে বলল
– ও আচ্ছা,,, আমি ত সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম যে তুমি কি করতে পারো! কিন্তু দেখলাম ত তুমি কিভাবে সেখান থেকে চলে গেলে চুপচাপ!
– লিসেন লাইসা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,, তাছাড়া লাইসা তেমন মেয়ে না অন্যের বয়ফ্রেন্ড এর উপর নজর দিবে আর ও জানতো না যে আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড! তাই আমি কিছুই বলি নি চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেছি! কিন্তু হুম আমার বয়ফ্রেন্ড হতে হলে অনেক রুলস মানতে হবে সেটা হলো অন্য মেয়ের সাথে এত ভাব করা যাবে না আর যদি করে তাহলে আমিও অন্য ছেলের সাথে কথা বলবো আমার বয়ফ্রেন্ড আমার কথা না শুনলে আমিও তার সাথে তেমনই করবো আমিও তার কথা শুনবো না! কিন্তু এমন হবে না যে সে আমার কথা শুনবে না আর আমি যে তার সব কথা শুনবো!!!হুহ! যান এখন এখান থেকে!
এটা বলে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম৷ ফারহান দরজার বাহির থেকেই বলল
– এই রুলস গুলো ত আগে বলা উচিৎ ছিল!!
এটা বলে বাকা হেসে সেখান থেকে চলে গেলো৷
পরের দিন,,,,
আজকে রুমাইশার বিয়ে৷ আমি আজকে পার্লারের মানুষের হাতেই সেজেছি রুমাইশার সাথে কিন্তু আমি হালকা যে সাজটা আছে সেটাই দিয়েছি আর রুমাইশা ত পুরাই বউ লুক! আমি একটা কালো শাড়ি পরেছি আর চুল গুলো স্ট্রিট করা৷ আমার কাছে নিজেকে ত এই কালো লুকে অস্থির লাগছে এখন আজকে দেখবো অন্য কেউ কি বলে! আজকে দেখলাম ফারহান একটা ডার্ক ব্লু যেটাকে নেভি ব্লু বলে সেই কালারের একটা পাঞ্জাবি পরেছে৷ ভেবেছিলাম ফারহান আজকে আমার উপর ফিদা হয়ে যাবে কিন্তু আমার মনে হয় উলটা আসার হয়েছে আমার উপর!! ফারহান বিয়েতেই কিছুটা ব্যাস্ত ছিল ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা৷ আমার সাথে কথা বলার এখনো সময় পায় নি আর আমিও রুমাইশার সাথে রুমাইশাকে নিয়ে কিছু ব্যাস্ত ছিলাম ছোট বেলার ফ্রেন্ড বলে কথা!
একটা কথা যা এর মাঝে আমার মনেই নেই যে আজকে সম্পুর্ণ ৫দিন হতে চলেছে আর আজকে যে ফারহান চলে যাবে! রুমাইশার বিয়ে হয়ে গেলো৷ এখন রুমাইশার বিদায় এর সময়,, আজকেই নাকি ওরা একেবারে লন্ডন চলে যাবে! আমি রুমাইশাকে জরিয়ে ধরে অনেক কাদলাম আর ও অনেক কাদলো৷ রুমাইশা যখন গাড়িতে উঠছিলো তখন হঠাৎ আমার বুক কেপে উঠলো ফারহানের কথা ভেবে আমি ভিরের মধ্যে ফারহানকে খুজছিলাম৷ ফারহান কোথায় গেলো? সকাল থেকে একবারও আমার ফারহানের সাথে কথা হয় নি! ফারহান এভাবেই চলে যাবে?? কোথায় ও?? আমি ত ভুলেই গিয়েছিলাম যে ফারহানও আজকে চলে যাবে!! রুমাইশার ছোট বোন এসে আমাকে বলল
– আপু তোমাকে ডাকে ওই রুমে!
আমি রুমে যেতে দেখলাম অনেক অন্ধকার রুমের মধ্যে অনেক গুলো মোম জ্বলছে৷ আমি বললাম
– ফারহান!!
হঠাৎ ফারহান এসে আমার সামনে দাঁড়ালো৷ আমি ওকে দেখে খুশি হয়ে গেলাম৷ আমি বললাম
– আপনি যান নি? ওরা ত চলে গেছে! আপনি যাবেন না?!
ফারহান কিছু বলল না৷ রুমে লাইট জলে উঠলো৷ রুমে কিছু দরি টানানো ছিল আর সেগুলো তে ঝুলানো অনেক গুলো ছবি ছিল শুধু আমার৷ আমি ঘুরে ঘুরে সেগুলো দেখতে দেখতে বললাম
– এই গুলো কি?
ফারহান বলল
– আমি তোমাকে বলেছিলাম আমার ৫দিনের গার্লফ্রেন্ড হতে! এই ৫দিনে অনেক কিছুই হয়েছে! সেগুলোকে ক্যাপচার করার জন্য সেই মোমেন্ট গুলোকে মনে রাখার জন্য এই ছবি গুলো তুলেছিলাম আমি!
ফারহান ঘুরে ঘুরে আমাকে প্রত্যেকটা ছবি দেখাতে দেখাতে বলল
– এইযে এইটা প্রথম দিন যেদিন তোমার সাথে পরিচয় হয়েছিল,, এইটা তোমার পার্কের ছবি যখন তুমি হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছিলে,,আর এইটা যখন আমাকে আর লাইসাকে একসাথে হাটতে দেখে তোমার মুখের যেই ১২টা বেজেছিল,,আর এইটা যখন তুমি আমার সাথে রাগ করেছিলে মেহেদির দিন,,, আর এইটা যখন তুমি আমাকে নিজে বলেছিলে ট্যারিসে দাঁড়িয়ে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড হতে চাও,,, আর এইটা যখন হলুদের দিন তুমি আমার কাছে মাফ চাইতে এসেছিলে তখন তোমার ফেসটা খুবই ইনোসেন্ট লাগছিলো,,,আর এইটা তুমি যখন jealous হয়েছিলে বাগানে লাইসা আর আমাকে দেখে,,আর এইটা আজকে সকালে যখন তুমি ঘুমিয়েছিলে আমি গিয়েছিলাম তোমার রুমে তখন,,,, আর এইটা দেখো আজকে যখন তুমি রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়েছো তখন তুলেছিলাম! আজকে তোমাকে একেবারে কালো হুর পরি লাগছে!!!
আমি কি বলবো আসলে আমি জানি না! তাই চুপ করে আছি এইসময় কি বলা উচিৎ আমার জানা নেই! ফারহান আমার দুই গালে হাত দিয়ে বলল
– এই মাত্র ৫দিনে কত কিছু হয়েছে! এই ৫দিনে তুমি আমাকে অনেক কিছু ফিল করিয়েছো অনেক নতুন নতুন ফিলিংস এর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়েছো যেগুলো আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে,, তোমার jealous হওয়া তোমার রাগ করা তোমার অভিমান করা তোমার সাথে ঘুরা এইসব কিছুই আমার কাছে নতুন ছিল!!
আমি এখন কি বলবো আমার মনে হচ্ছে আমার যা বলা উচিৎ ফারহান তা বলছে,, আমি নিজেই প্রথম এইসব ফিল করেছি,, নিজেই প্রথম কারো সাথে এমন ভাবে রাগ করেছি কারো জন্য এমন ভাবে jealous হয়েছি কারো জন্য এমন ভালো লাগা ফিল করেছি!! আমি ফারহানকে বললাম
– আপনি যাবেন না?
ফারহান কিছু না বলে শুধু হাসলো যার উত্তর আমি বুঝতে পারলাম যে ফারহান যাবে না! আমি অনেক খুশি হলাম অনেক বেশি অনেক ভাল লাগছে!!
”
আরহান ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম৷ ভাইয়া আজকে বিয়েতে এসেছে৷ আর এখন ভাইয়া চলে যাবে আর আমিও ত চলে যাবো বাসায়৷ আমি আরহান ভাইয়ার সাথে কথা বলে পরে আমি আমার ব্যাগ গুছাতে গেলাম রুমে৷ ব্যাগ গুছিয়ে আমি আন্টির কাছে গিয়ে সবাইকে বায় বললাম৷ আমি ফারহানকে খুজছিলাম ওকে বায় বলবো সারা বাড়ি ফারহানকে খুজে না পেয়ে রুমাইশার ছোট বোনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম
– ফারহান কই??
যেটা আমি কখনোই আশা করি নি ওর মুখ থেকে সেই জবাবটাই বের হলো একেবারে একটা অবাক করে দেওয়ার মত জবাব!!
– আপু ভাইয়া ত কবেই লন্ডন ব্যাক করেছে! ওইযে তোমাকে যখন ডেকেছিল এর কিছুক্ষন পরেই চলে গেছে!!
এটা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো৷ ফারহান চলে গেছে? কিন্তু আমি যখন ওকে জিজ্ঞেস করলাম ও হাসলো কেন এর মানে কি এটা ছিল না যে ও থাকবে? নাকি আমিই ভুল বুঝেছি? ফারহান সত্যিই চলে গেলো? আচ্ছা চলেই যখন গেছে তাহলে তখন এত কিছু কেন করলো? তখন কিছু মুহুর্তেই ফারহান আমাকে অনেক গুলো খুশি আর অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে দিয়ে গেছে? সেগুলো করার কি দরকার ছিল যদি চলে যাওয়ারই ছিল! এইভাবেই চলে যেতো!! কেন এমন করলো ফারহান?
চলবে,,,,,,
coffee & vanilla Part-05
#coffee & vanilla
#part_5
#Arohi_Ayat
”
রুমের দরজা খুলতেই দেখলাম টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আলমারি থেকে কাপড় বের করছে ফারহান৷ আর শরিরে কোন কাপড় নেই শুধু একটা টাওয়েল৷ আমি হঠাৎ দরজা খুলতে ফারহানও আমার দিকে তাকালো আর আমি ফারহানের দিকে৷ বড় বড় চোখ করে কিছু না বুঝে কতক্ষন সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম৷ তারপর কিছু না বলে তারাতাড়ি করে দরজা বন্ধ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাবছি আমি নিজেও কেমন একটা মানুষের রুমে যে নক করে ঢুকতে হয় সেটা কি ভুলে গিয়েছিলাম? ফারহান এসে দরজা খুলে বলল
– কি হয়েছে?
আমি ঘুরতে দেখলাম ফারহান এখনো সেইভাবেই আছে৷ আমি বললাম
– আগে যান জামা কাপর পরেন তারপর কথা বলছি! আর সরি নক না করে ঢুকে গিয়েছিলাম!!
ফারহান বলল
– ডোন্ট ওয়ারি! আমিই ত তোমাকে বলেছিলাম তুমি যেকোনো সময় আমার রুমে আসতে পারো! তুমি গার্লফ্রেন্ড রাইট!!
– আপনি প্লিজ আগে যান কাপড় পরে আসেন আমার কথা আছে আপনার সাথে!
ফারহান রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল৷ আর আমি দাঁড়িয়ে ভাবছি আমি না বুঝে কত খারাপ ভেবেছি ফারহানকে আমার এমন করা উচিৎ হয় নি৷ আচ্ছা,, রুমাইশা যা বলেছে তা কি সত্যি আমার ত ভয় করছে! কিন্তু আমি উনার সাথে যে ব্যাবহার করে সেটার জন্য আমাকে সরি বলতেই হবে!
কালকে রাতে,, আমি রুমে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে ভাবছি৷ ফারহান কি তাহলে সত্যি এমন? আমি ত ভাবতেও পারি নি! আর তাছাড়া আজকের দিন চলে গেলে আর আছে ২দিন তারপর ত ও চলেই যাবে আমার ওর কথা নিয়ে ভাবার এত কি প্রয়োজন? আর আমার সাথে ওর সম্পর্ক ছিল শুধু এই ৫দিনেরই আমার কোন অধিকার নেই ওর এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলার ওর লাইফ ওর ইচ্ছে যা মন চায় করুক কিন্তু হ্যা ও আমার সাথে এমন গুটিবাজি করতে পারবে না! এখন থেকে ওর থেকে দশ হাত দূরে থাকবো আর এখনি ওকে ভুলে যাব!
সকালে,,,,
ব্রেকফাস্ট এর জন্য নিচে যেতে দেখলাম ফারহান বসে আছে৷ আমি সিরি দিয়ে নামার সময় ফারহানের চোখ পড়লো আমার দিকে৷ খেয়াল করলাম আমার দিকেই তাকিয়ে আছে কিন্তু আমি ওর দিকে তাকাবোই না,, আজকে না যত দিন এখানে আছে আমি ওকে পুরোই ইগনোর করবো!! আমি নিচে নেমে টেবিলে বসলাম৷ হাতে একটা ব্রেড নিয়ে আস্তে আস্তে খেতে খেতে একেবারে আস্তে করে এক পলক ফারহানের দিকে তাকাতে দেখলাম এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে রুমাইশার দিকে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম৷ ব্রেকফাস্ট শেষে বাগানে গিয়ে দাড়ালাম৷ দেখলাম ফারহান এইদিকেই আসছে আমি ঘুরে দাড়ালাম৷ ফারহান আমার সামনে এসেই বলল
– গুডমর্নিং গার্লফ্রেন্ড!
আমি কিছু বললাম না এমনকি ঘুরলামও না৷ ফারহান আমার সামনে এসে দাড়াতে আমি আবার ঘুরে দাড়ালাম ফারহান বলল
– হেই! তুমি এমন বার বার ঘুরে দাড়াচ্ছো কেন?
আমি কিছু বললাম না৷ ফারহান আমার হাত ধরে বলল
– এইযে লিসেন,, আমি আছি এখানে কি হয়েছে তোমার?
আমি সাথে সাথে হাত ছারিয়ে সেখান থেকে চলে গেলাম৷ ফারহান ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি ভিতরে গেলাম৷ সোফায় বসলাম রুমাইশার সাথে৷ দেখলাম ফারহান আবার আসছে এখানে৷ এসে ফারহানও সোফায় বসলো৷ আমি রুমাইশা তারপর বাকি সবার সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত আর ফারহান বার বার আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কি যেন বলতে চাচ্ছে কিন্তু আমি ভুলেও ওর দিকে তাকাচ্ছি না! একটু পরে আমি উঠে রুমের দিকে গেলাম৷ ফারহানও আবার উঠে আমার পিছনে আসছিলো৷ আমি আমার রুমের সামনে আসতেই পিছন থেকে ফারহান আমার হাত ধরে বলল
– হেই তুমি কি আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করছো?
অনেকটা শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো ফারহান৷ আমি এইবার ঘুরে বললাম
– সরি কে আপনি? ওহ আপনি রুমাইশার ভাই তাই না? আমি আপনাকে ইগনোর কেন করবো? আমি এখানে বিয়ে খেতে এসেছি আমার ফ্রেন্ড এর আমি ত এখানে কাউকে ইগনোর করতে আর কাউর গার্লফ্রেন্ড হতে আসি নি! সরি!
এটা বলে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম৷
বিকেলে,,,আমি রুমাইশার রুমে গেলাম৷ পার্লার থেকে লোক এসেছে রুমাইশাকে সাজাতে আজকে রুমাইশার গায়ে হলুদ৷ আমি যেতে রুমাইশা বলল
– তুই বস তোকেও সাজিয়ে দিবে!
– না আমি এত গর্জিয়েস লুক করবো না আমি নিজেই সাজতে পারি আমি নিজে সেজে নিব তুই সাজ!
– আচ্ছা!
রুমাইশার হেয়ার স্টাইল নিয়ে ব্যাস্ত,,আমি ওর পাশেই বসে আছি চুপচাপ আমাকে এইভাবে দেখে রুমাইশা বলল
– কি হয়েছে?
আমি একটু মন মরা হয়ে বললাম
– না আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই!
– কি?
– আব,,,,ফারহানের আগে কয়টা গার্লফ্রেন্ড ছিল,, মানে ওর গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কে আই মিন ওর সম্পর্কে একটু বলবি?
– ও আচ্ছা এই কথা! দেখ তুই আমার ছোট কালের ফ্রেন্ড তুই আমাকে এইসব কথা জিজ্ঞেস করতে হিছকিচ খাচ্ছিস কেন? ফারহান আমার ভাই আমি সব জানি ওর সম্পর্কে আর আমি কেন বলবো না তোকে? আচ্ছা ডায়রেক্ট বল কি বিষয় নিয়ে তুই এত টেন্সনে?
এইবার আমি অনেকটাই ফ্রি ফিল করলাম৷ এইভাবে এমন কোন কথা নেই যেটা আমি রুমাইশার সাথে শেয়ার করি না আর আমার দুইজন অনেক ফ্রি আমি আমার প্রত্তেকটা ছোট ছোট কথাই রুমাইশাকে বলি৷ কিন্তু এই প্রথম আজকেই আমি এমন ফিল করেছি ওর সাথে কথা বলতে কারণ আমি ওকে ওর ভাইয়ের কথাই জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছি আর আমি ওর ভাইয়ের কথাই খারাপ ভাবছি পরে রুমাইশা জানতে পারলে কিভাববে তাই আমি এখানে এসেছি রুমাইশাকে সব বলতে আর ওর থেকে সত্যি জানতে! আমি বললাম
– রুমাইশা! ফারহানের মিতিকা নামের কোন,,,,,,,
আমি এত টুকি বলতে রুমাইশা বলল
– ওহ্ মিতি,,মিতিকা! এই মিতিকাই ত সব কিছুর মূল! এই মিতিকা জানিস কত খারাপ! মিতিকা প্রথমে নিজেই এসেছিলো ফারহানের কাছে ওকে বলেছিল ও ফারহানকে অনেক ভালবাসে এর পর অনেক দিন ফারহানের পিছনে ঘুরার পর ফারহান রাজি হয় ওর সাথে রিলেশন এ যেতে! ওদের রিলেশন মাত্র ৩দিন গেছে কারণ মেয়েটা ছিলই গুটিবাজ! এর পর থেকে বারবার ফারহানকে কল করে একি কথা বলে ও অকে অনেক ভালবাসে! এর পর একদিন ফারহান রাজি হয় ওকে মাফ করে দিতে কিন্তু সেই দিনও ও আরেকটা ছেলের সাথে ধরা খায়! বল এইসব মেয়েদের কি করা উচিৎ! আর তাছাড়া ফারহানের আরও কিছু গার্লফ্রেন্ড ছিল কিন্তু আমার মনে হয় না সেগুলো গার্লফ্রেন্ড,, সেগুলো শুধু নামেই গার্লফ্রেন্ড! এইভাবে না দেখা হতো না কথা হতো ফারহান ওদের ফ্রেন্ড হিসেবেই মানতো!
আমি বললাম
– তোকে কি ফারহান সব বলে?
– হুম! একমাত্র আমিই যার সাথে ফারহান সব কিছু শেয়ার করে! আচ্ছা এখন বল তুই এত আপসেট কেন? দেখ এই সময় গার্লফ্রেন্ড সব ছেলেদেরই থাকে একটা দুইটা,, আর ফারহানের শুধু পাস্ট এ ছিল এইসব এখন কেউ নেই! শুধু তুই আছিস!
– কিন্তু আমি কিছু না যেনে সকাল থেকে ওকে ইগনোর করছি এমনকি একটু আগে আমি ওকে কিসব বলেছি! এখন আমার সরি বলতে হবে ওকে!
রুমাইশা সোজা হয়ে বসে বলল
– কি তুই ইগনোর করেছিস তাও আবার ফারহানকে? লাইক সিরিয়াসলি? আর ও কি এখনো তোকে কিছু বলে নি?
আমি গলা ঝেরে বললাম
– মানে কি? কি বলবে?
– ওও আই থিংক তোকে কিছু বলে নি! কিন্তু তুই ওকে চিনিস না! ওর কাছে সব চেয়ে বেশি খারাপ লাগে কেউ ওকে ইগনোর করলে এরপর ও পুরাই ফায়ার হয়ে যায়! ও তেমন মানুষ না যে কেউ ওকে ইগনোর করবে আর ও চুপচাপ মেনে বসে থাকবে!
– তার মানে কি আমি সরি বললে আমাকে মাফ করবে না?
রুমাইশা ঠোট উল্টিয়ে বুঝালো সে জানে না কিন্তু মুখে কিছু বলল না৷ আমি বড় একটা হাফ ছেরে বললাম
– আচ্ছা আমিও রেডি হই এখন!
আমি রেডি হয়েই ফারহানের রুমে গেলাম৷ আমি আজকেও সুন্দর করে সেজেছি আর একটা কাচা হলুদ রঙের লেহাংগা পিরেছি৷
বর্তমানে,,,
আমি ফারহানের রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ ফারহান রুমের দরজা খুলে আমাকে রুমের ভিতিরে টান দিল৷ আমার কেন যেন আজকে অনেক ভয় করছে আবার বুকের ধুকপুক বেরেছে৷ ফারহান ঘার একটু বাকা করে শান্ত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি ফারহানের দিকে খেয়াল করতে দেখলাম ফারহান একটা পাঞ্জাবি পরেছে হলুদ কালার এর৷ ফারহান বলল
– কি হয়েছে?
আমি কাপা কাপা গলায় বললাম
– স,,,সরি! সকালে আপনার সাথে এমন ব্যাবহারের জন্য! আমি আসলে,,,,!
দেখলাম ফারহান সেই ভাবেই ঘার বাকা করে কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে মনে হয় এখনি আমাকে খেয়ে ফেলবে৷ আমি এইভাবেই কাপাকাপা গলায় কথা বলছি তাও আবার এই চাহনি দেখে মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না! ফারহান বলল
– হুম তারপর,,,? তুমি আসলে,,,?
– আ,,আমি আসলে আপনাকে ইগনোর করছি,,,,,,!
আর কিছু বলতে পারলাম না ফারহান আমার ঘারে মুখ গুজতে মুখটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো আমি নিজেই জমে গেছি! ফারহানের প্রত্যেকটা নিশ্বাস আমার ঘারে পরছে৷ আমার কেন যেন এখন হাত পাও কাপছে না কিছু বলতে পারছি আর না ওকে সরাতে পারছি! ফারহান ওর মাথা উঠিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলতে যাবে তার আগে হঠাৎ রুমে কে যেন ঢুকে বলল
– ফারহান ভাইয়া ডাকে!
এটা বলে চলে গেলো৷ রুমের দরজাটা লক করা ছিল না৷ হঠাৎ কেউ আসায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম৷ ফারহান বলল
– চলো নিচে যাই!
এটা বলে ফারহান আগে রুম থেকে বের হয়ে গেলো৷ আমি মনে মনে ভাবছি কিরে বাবা একটু বলবে না আমাকে কেমন লাগছে? কোন কম্পলিমেন্ট না দিয়েই চলে গেলো৷
চলবে,,,,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 💖✨)