Monday, July 14, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1383



কোনো একদিন পর্ব-৭+৮

0

#কোনো_একদিন
#পর্ব_৭ ও ৮
#ভালেবাসার_সজ্ঞা_স্পেশাল_পর্ব
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

“ভালোবাসা!চার অক্ষরের ছোট্ট একটা শব্দ।কিন্তু এই একটি মাত্র শব্দের মাঝেই লুকিয়ে আছে হাজারো না বলা কথা,নাম না জানা অনুভূতি,কৈশোরকালের আবেগ,অদৃশ্য মায়ার বন্ধন আর রাতের অন্ধকারে গড়িয়ে পরা অশ্রু।ভালোবাসা শুধুমাত্র তখনই পূর্ণতা পায় যখন দু’জন ভালোবাসার মানুষ একত্রিত হয় এমনটা তো অনেকেই মনে করে আবার অনেকে বিশ্বাস করে।কিন্তু আমার ভালোবাসার সজ্ঞা অনুযায়ী দূর থেকেও ভালোবাসা যায়।হোক না সে অন্য কারো।তার কাছে যেতে না পারলেই কি আমার ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যাবে?নাহ,বরং তখন আমার ভালোবাসা সঠিকভাবে পূর্ণতা পাবে।কারণ ভালোবাসার মানুষটি ভালো থাকলেই কেবল সেই ভালোবাসা স্বার্থক হয়।আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু সে আমাকে ভালেবাসে না।তার মনে অন্য কারো বসবাস।এখন আমি চাইলেই তাকে জোর করে নিজের করে নিতে পারি।কিন্তু তাতে কি আদৌ আমরা কেউ ভালো থাকবো?সে তো আমাকে মামুষের সামনে মেনে নিলেও মন থেকে মেনে নিতে পারবে না আর না পারবে ভলোবাসতে।তখন আমি হয়ে যাবো তার কাছে অভিশপ্ত।শুধুমাত্র কাছে পেলেই ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।ভালোবাসার মানুষটির হাসি মুখ দেখার মধ্যে যে আনন্দ আছে সেটা তাকে জোর করে কাছে পাওয়ার পর বিষন্ন মুখ দেখে অনুভব করা যায় না।তাই আমার কাছে ভালোবাসার মানিষটির মুখের হাসিই সেরা।তার মুখের এক চিলতে হাসি আমাকে হাসতে অনুপ্রেরণা দেয়।এতেই তো আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পায়।এই পূর্ণতা একবার নয় বরং বারবার আমাকে নতুন করে প্রিয় মানুষটিকে ভালোবাসতে শেখায়।অপূর্ণতার মাঝেও জোনাকি পোকার আলোর মতো পূর্ণতা উকি দেয় আমার মনের মাঝে।”

এতোক্ষণ ধরে সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিল তুলির ‘ভালোবাসার সজ্ঞা”।একটা মানুষের চিন্তা ধারায় বলে দিতে পারে সেই মানুষটি আসলে কেমন।তুলির কথাগুলো শুনে আজ সবাই আবারো প্রমাণ পেল মেয়েটা আসলেই ওদের বন্ধু মহলের একজন হওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখে।

এদিকে তুলি ওর ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ বলতে বলতেই সিয়ামের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সিয়াম অবশ্য তুলির দিকে তাকাতেই ওদের মধ্য বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে তাতে সিয়াম বিব্রতবোধ করলেও তুলি শুধু এক ধ্যানে দেখেছে সিয়ামকে।কথা বলা শেষ করেই তুলি মাথা নিচু করে ফেলল।হয়তো নিজের চোখ থেকে গড়িয়ে পরা অশ্রুগুলো কাউকে দেখাতে চায়না তাই!

রাত এখন দশটা।সবাই সারাদিন ইচ্ছা মতো হৈ-হুল্লোড় করে রাতের খাবার খেয়ে আড্ডা দিতে বসেছে।মাসফি অনেক আগেই চলে এসেছে।আর তারপর মেহেক একটা নতুন খেলার আবিষ্কার করলো।সবার কাছে ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ জানতে চাইলো।চিরকুটে প্রথম নাম ছিল তুলির।তাই তুলি নিজের ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ সবার সামনে উপস্থাপন করলো।সবাই তুলির ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে আবার খেলায় ফিরে গেল।

মেহেক চিরকুটের বক্সটা সামনে নিয়ে আরেকটা চিরকুট তুললো।এবার চিরকুটে নাম এসেছে মিহির।মিহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করলো,

“একেক জনের কাছে ভালোবাসার সজ্ঞা একেক রকম।আমার কাছে ভালোবাসার সজ্ঞাটা খুব সাধারণ।তবে এটাকে সাধারণের মাঝে অসাধারণ ও বলা যায়।অনেক সময় আমরা নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়েও দূরে ঠেলে দেই।অবহেলা করি।কথায় আছে না,না চাইতেই পাওয়া জিনিসগুলোকে আমরা ঠিকভাবে গুরুত্ব দেই না।তেমনি ভালোবাসার ক্ষেত্রেও তাই।মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো যদি কেউ আমাদের সামনে চলে আসে তাকে আমরা পাত্তা দেই না।কিন্তু যখন সে আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে যায় ঠিক তখনই আমার আমাদের ভালেবাসার মানুষটির গুরুত্ব বুঝতে পারি।তার ভালোবাসার সুপ্ত অনুভূতিগুলো উপলব্ধি করতে পারি।কিন্তু তখন আমাদের আফসোস করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।কারণ আমাদের বুঝতে যে অনেকটা দেরি হয়ে যায়।তাই ভালোবাসার মানুষটিকে কখনো অবহেলা না করে আপন করে নেওয়ায় শ্রেয়।আমরা হয়তো ভাবি,সে তো আমাকে ভালোবাসে।তাই আমি শত অবহেলা করলেও ছেড়ে যাবে না।এমনটা ভাবা ভুল।নিজেকে এতো বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়েই তো আমরা ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলি।তাই আমার কাছে ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ প্রিয়জনকে অবহেলা না করে আগলে রাখতে শেখাই ভালোবাসার মূল চাবিকাঠি।”

মিহির কথা শুনে সানভি ওর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি উপহার দিল মিহিকে।এই হাসির মানেটা আর কেউ না বুঝলেও মিহি খুব ভালো করেই বুঝেছে।তাই সে নিজেও হেসে অন্যদিকে তাকালো।

“এইবার চিরকুট আমি তুলবো।”

এটা বলেই রাজ বক্স থেকে একটা চিরকুট তুলে নেয়।তারপর চিরকুটের ভাজ খুলতেই রাজ ওর নামটা দেখতে পায়।

“নে তোর নামই এসেছে।এবার বল তোর ‘ভালোবাসার সজ্ঞাটা’ কি রকম?”

তাহার কথায় রাজ হেসে চাঁদের আলোয় আলোকিত আকাশের দিকে তাকালো।বেশ অনেক্ক্ষণ কিছু একটা ভেবে তারপর বলল,

“ঐ যে দূরের আকাশটা চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে না?আমার কাছে ‘ভালোবাসার সজ্ঞাটা’ ঠিক সেই রকম।আমি যাকে ভালোবাসি অথবা বাসবো তাকে হতে হবে আকাশের ঐ চাঁদ।কারণ আমার মতো লক্ষ্যহীন ছেলের জীবনটাকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনার জন্য একটা চাঁদ খুব প্রয়োজন।হুমম চাঁদ ছড়াও আরো অনেকে আলো দিতে সক্ষম।কিন্তু কথায় আছে না,চাঁদের গায়েও কলঙ্ক থাকে।আমার সেই কলঙ্কিনীকেই চাই।তার একটা ব্যাখ্যা আছে অবশ্যই।সবার মতো আমারও কিছু অতীত আছে।আমি জানি অতীতের বিষাক্ত দিনগুলোর চেয়ে রাতগুলো বেশি ভয়ংকর হয়।রাতের আঁধারে চিৎকার করে কাঁদলেও কেউ দেখতে আসে না কি জন্য আমরা কাঁদছি।এই জন্য একটা সঙ্গীর প্রয়োজন আমাদের।যে যে এই বিষাক্ত অতীতের সাথে পরিচিত একমাত্র তারাই বাকিদের কষ্টগুলো অনুভব করতে পারবে,বুঝতে পারবে।আমার সলিড কাউকে লাগবে না।আমার এমন একজনকে লাগবে যে আমার আমি টাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিবে।আমার কাছে ‘ভালোবাসার সজ্ঞাটা’ এমনই।”

রাজের কথা শুনে তাহার অজান্তেই তাহার চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রুকণা গরিয়ে পরলো।ওও কেন কাঁদছে সেটা শুধু ওও নিজেই জানে।সবাই তাহাকে কাঁদতে দেখে বেশ অবাক হলো।তাহা কোনো কিছু না বলেই ছুটে রুমের ভেতরে চলে গেলো।বাকি সবাই ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রাজ সবার আড়ালে মুচকি হেসে ওখান থেকে উঠে গেলো।বাকিদের আর ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ জানা হলো না।হয়তো আজ না জানলেও সঠিক সময়ে ওদের ‘ভালোবাসার সজ্ঞাটা’ জানা যাবে।ধীরে ধীরে সবাই উঠে নিজেদের রুমে চলে গেলো।রাত বারোটা বাজতে চললো।এখন সবার একটু ঘুমানো প্রয়োজন।তাহার ব্যাপারটা সবাইকে ভাবালেও আপাতত রাতের বেলা আর কিছু না বলে পরে সবটা শোনা যাবে।তাই সবাই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল সাতটার সময় মেহেকের ঘুম ভাংলে একে একে সবাইকে উঠিয়ে ফ্রেশ হয়ে হালকা একটু নাস্তা করে সবাই লং ড্রাইভে বের হলো।তাহা এখনো বেশ চুপচাপ।মাসফি তাহাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই রাজ ওর হাত চেপে ধরে এখন কিছু বলতে না করলো।তাই মাসফি ও আর কিছু না বলে গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিল।সারাদিন ঘুরাঘুরি করার পর সন্ধ্যার দিকে সবাই যার যার বাসায় গিয়ে পৌঁছাল।দুইদিনের জার্নিটা বন্ধু মহলের সাথে বেশ ভালোই কেটেছে সবার।তাই সবাই ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে চলে গেল।

চলবে?

বিঃদ্রঃ সবার ‘ভালোবাসার সজ্ঞা’ কেমন লেগেছে আপনাদের?আর কার ‘ভালোবাসার সজ্ঞাটা’ সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে?

#কোনো_একদিন
#পর্ব_৮
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

“আগামী ১৫ই আগস্ট মেহেক আর মাসফির বিয়ে হবে!”

এই কথাটা বলেই মিস্টার আরহাম চৌধুরী মেহেকের বাবা মিস্টার তানজিম রাহমানকে নিয়ে উঠে গেলেন।আর বাকি সবাই বিয়ে নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো।আজকে মেহেকদের বাসায় মাসফির বাবা,মা,চাচ্চু,চাচিমা,ছোট বোন সবাই এসেছে।আবার সিয়াম,তুলি,মিহি,সানভি,তাহা,রাজ,মাাফি,মেহেকও উপস্থিত আছে।মূলত আজ বিয়ে নিয়েই সবাই আলোচনা করতে এসেছিল।মেহেকের আম্মু,ফুপ্পি আর মামিরা মিলে খাবার তৈরি করে নিয়ে আসলেন।সবাই মিলে বিকেলের নাস্তা খেতে খেতে আলোচনা করছে কখন কি কি করতে হবে।

মেহেক সকালে ঘুম থেকে উঠতেই মাসফির কল আসে।

“গুড মর্নিং”

“হুম মর্নিং”

“আজ আমরা সবাই তোমাদের বাসায় যাবো।”

“কেন?”

“আজকে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে।”

“আজকে?কিন্তু কেউ আমাকে বললো না কেন?”

“সারপ্রাইজ”

“হুম বুঝলাম।”

“এখন রাখছি।বিকালে দেখা হবে।”

“ওকে”

এরপর বিকালে সবাই এসে মেহেক আর মাসফির বিয়ের তারিখ ফিক্সড করে।মেহেক পুরোটা সময় চুপ করে ছিল।হঠাৎই মেহেক বলল,

“আচ্ছা আপু আর ইরজা তো এখন আসতে পারবে না।তাহলে কি আমার বিয়েতে ওরা থাকবে না?”

“এখন এই করোনার মধ্যে তো আমরা আর বড় করে অনুষ্ঠান করছি না।শুধু পরিবারের লোকজন।ওরা আসলে নাহয় বড় করে রিসিপশন করবো।তাহলে তো আর সমস্যা নেই।”

“আচ্ছা”

“বউমনি আমরা কিন্তু মেহেন্দির অনুষ্ঠান করবো।”

মিহুর কথায় সবাই তাল মিলালো।তাই মেহেক আর কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালো।তানভীর আর রাজ মেহেকের দুই পাশে বসে বলল,

“হলুদের অনুষ্ঠান আমরা মেহেক আর মাসফির হলুদ একসাথে করবো।এর জন্য আমাদের একটা রিসোর্ট বুক করতে হবে।”

“হ্যা আপুর আর জিজুর বিয়ের সব আয়োজন আমরা বান্দরবানে গিয়ে করবো।”

“হলুদের আগের দিন রাতে মেহেন্দির অনুষ্ঠানে আমরা কিছু গেম আর নাচ-গান তো মাস্ট করবোই।”

তুলির কথায় সবাই হেসে ফেললো।

“এগুলো তো থাকবেই।তবে বিয়ে আর বউভাত ও আমরা ওখানেই করবো।শপিং গুলো শুধু ঢাকা থেকেই করে নিয়ে যাবো।মোট সাতদিন আমরা বান্দরবানে থাকবো,ঘুরবো,মজা করবো।অনেক মজা হবে।”

মিহির কথায় সবাই হ্যা বলে আরো বিভিন্ন প্ল্যান করতে লাগলো।মেহেক শুধু চুপ করে কিছু একটা ভাবছে।মাসফি হঠাৎই উঠে কোথায় জানি চলে গেল।মেহেক ও ওর পেছন পেছন গিয়ে মাসফির পেছনে দাঁড়াতেই মাসফি রীতিমতো চমকে উঠলো।

“ওহ তুমি!”

“হ্যা আমি।কিন্তু তুমি চমকে উঠলে কেন?”

“ওও কিছু না।তো বলো কিছু বলবে?”

“না তেমন কিছু না।এখন তো সবাই ওখানে আড্ডা দিচ্ছে।তুমি উঠে আসলে তাই আর কি!”

“ওহ আসলে আমি একটা জরুরি কল করার জন্য আসছিলাম।আচ্ছা চলো যাই।”

মেহেক আর মাসফি ভেতরে আসতেই সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকলো।ওরা সবাই গিয়ে খেতে বসলো।খাওয়ার পর আজকেই রিসোর্ট বুক করে ফেললো মেহেক আর মাসফির বাবা।আগামীকাল সকালে সবাই শপিংয়ে যাবে।তারপর রাতের দিকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।সবকিছু ঠিক করে মাসফিরা চলে গেল।আর মেহেকের পরিবারের লোকজন বাকি সবকিছু গোছগাছ করতে শুরু করলো।প্রায় রাত বারোটা কি একটার দিকে ঘুমাতে গেলো সবাই।এত দ্রুত বিয়েটা শুধু মাসফির জেদের জন্যই দেওয়া।নয়তো আরো কিছুদিন সময় নিত সবাই।

________________________

অন্যদিকে রাত প্রায় একটার দিকে একটা গেডাউনের মধ্যে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটা ছেলেকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলেছে কোন এক আগন্তুক।পড়নে কালো হুডি পড়া থাকায় মুখটাও দেখা যাচ্ছে না।তবে শারীরিক গঠন দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো মেয়ে।ছেলেটার সারা শরীর রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে।নাক,মুখ থেকে রক্ত পরছে।তাতে কোনো ভাবান্তর নেই আগন্তুক মেয়েটার।সে একধ্যানে তাকিয়ে আছে ছেলেটার পাশে থাকা ব্রিফকেসের দিকে।

কিছুক্ষণ পর মাসফি গোডাউনে আসতেই দেখতে পেল ওর দলের লোকজন সবাই মাটিতে পড়ে আছে।সবার অবস্থায় খারাপ।মাসফি আর আহিল এসব দেখে চমকে উঠলো।আজ এখানে একটা জরুরি মিটিং করার কথা ছিল।মাসফির এত দিনের পরিশ্রম যে ফাইলের জন্য সেই ফাইলটা নিয়েই আজ এখানে তিনজনের আসার কথা।এটা ভাবতেই মাসফি আর আহিল দৌড়ে গোডাউনের ভেতরে এসে আরো অবাক হলো।কারণ ঐ তিনজন গার্ড নিচে পড়ে আছে অজ্ঞান অবস্থায়।আর চেয়ারের সাথে রক্তাক্ত অবস্থায় ওদের গ্যাং লিডার আর মাসফির প্রিয় একজন বন্ধু ‘আয়ান আহমেদ’ মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।এসব দেখে মাসফির মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেল।আহিল একটা ব্রিফকেস পেয়ে ওখানে গিয়ে দেখলো ব্রিফকেস ফাঁকা।আর সেখানে একটা চিঠিতে লেখা আছে,

“ডিয়ার মাসফি,বিয়ের জন্য তো অনেক খুশি তুমি তাইনা।কিন্তু সেই খুশিতে এক মুঠো ছাই ঢেলে দিলাম আমি।তোমার এত দিনের পরিশ্রমের ফল এখন আমার হাতে।এই ফাইলের জন্যই তো তুমি তোমার বিপক্ষ দলের গ্যাং লিডার ‘ফাইরুজ খান ফায়াজ’কে মেরেছিলে তাইনা।তুমি শুধু ফায়াজকে নয় বরং আরো দু’জনকে মেরেছো আর তার সাথে সাথে আমার মুখের হাসিটাও কেড়ে নিয়েছো।এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।এটা তো মাত্র ট্রেইলার।তোমার বাম হাত কেটেছি কেবল।এখনো অনেক কিছু বাকি আছে।তেমার কাউন্টডাউনের সময় আজ থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।নভেম্বর মাসের কোনো একটা দিনই হবে তোমার শেষ দিন।উহুম তোমাকে আমি মারবো না।তুমি তো তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে।আর আমি সেটা দেখবো।ভালো থেকো।আর হ্যা,এই ফাইলটা তুমি আর কখনোই পাবে না।”

ইতি,
ব্ল্যাক রোজ

চিঠিটা পড়েই মাসফি ছিড়ে ফেললো।আর চিৎকার করে উঠলো।

“ব্ল্যাক রোজ,তুমি যেই হওনা কেন।তোমার মৃত্যু আমার হাতেই লেখা আছে।তুমি নিজেও জানো না কার গুহায় এসে পড়েছো।আমি ঐ ফাইলটার জন্য সব করতে পারি।ফাইলটা আমার যেভাবেই হোক চাইইইইই।আর তার জন্য আমি ফায়াজের মতো তেমাকেও খুন করতে দু’বার ভাববো নাহ্।”

আহিল মাসফির রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে।মাসফি যে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কিং এটা শুধু ওও আর আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সদস্যরা ছাড়া আর কেউ জানে না।মাসফি যে ফাইলটার জন্য ফায়াজ সহ ওর পুরো গ্যাংকে শেষ করে দিয়েছে সেটার জন্য মাসফি আরো খুন করতেও দু’বার ভাববে না।কারণ ঐ ফাইলে মাসফির সবচেয়ে মূল্যবান কিছু আছে।মাসফি লেখাপড়ায় ভালো না এটা তো সবাই জানে।কিন্তু সবার জানার পেছনের বড় একটা সত্যি লুকিয়ে আছে।আর সেটা হলো মাসফি একজন সাইনটিস্ট।এই কথাটা মাসফি কাউকে জানায়নি।আন্ডার ওয়ার্ল্ডে মাসফি এই কারণেই এসেছে।ওর ক্যামিকেল নিয়ে রিসার্চ করার পর শ্রেষ্ঠ এক আবিষ্কার ছিল ‘পাওয়ার অব এসেন্স’।এই ক্যামিকেলের মাধ্যমে পৃথিবীর সব কঠিন রোগগুলো সারানো সম্ভব ছিল কিন্তু সেটার অপব্যবহারের মাধ্যমে হাজারো মানুষের প্রাণ যেতে পারে।ক্যামিকেল তৈরির বিস্তারিত বর্ণনা এবং এর সঠিক ব্যবহার ও অপব্যবহারের সম্পূর্ণ ডিটেইলস ঐ ফাইলটাতে আছে।আগে ফায়াজ ছিল আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কিং ‘রোবটিক হিরো’।ফায়াজ নিজেও একজন সাইনটিস্ট ছিল।এবং মাসফিকে হেল্প করেছিল সেই ক্যামিকেল বানাতে।তবে কোন এক কারণে ফায়াজ ফাইলটা নিয়ে পালিয়ে যায়।আর ঠিক সেই জন্যই মাসফিকে মাফিয়া জগতে প্রবেশ করতে হয়।ফায়াজ মারা যাওয়ার আগে এক গোপন স্থানে ফাইলটা রেখে যায়।সেটা খুঁজে বের করে মাসফওর একজন প্রিয় মাফিয়া বন্ধু আয়ান।এতসব কিছু যেই ফাইলটার জন্য সেটাই আজ হাত ছাড়া হয়ে গেল।

চলবে?

কোনো একদিন পর্ব-০৬

0

#কোনো_একদিন
#পর্ব_৬
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

“মেহেক,আমার মধ্যে এমন কিসের কমতি ছিল যার জন্য তুমি আমাকে রিজেক্ট করে মাসফিকে হ্যা বললে?আমিও তো ওর মতোই একই পরিবারের ছেলে।দেখতেও ওর চেয়ে কম না আমি।কোনোকিছুরই কমতি নেই আমার মধ্যে।তবুও কেন তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারলে না?কেন আমার পবিত্র ভালোবাসাকে অপমান করলে তুমি?বলো।জবাব দাও।প্লিজ মেহেক চুপ করে না থেকে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”

হঠাৎই তাহার কথায় কল্পনা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলাম আমি।এতক্ষণ ধরে আমি সিয়ামের কথা ভাবছিলাম।প্রতিনিয়ত ওকে কষ্ট দেওয়ার যন্ত্রণা আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না।ওর শুকনো মুখ,লাল লাল চোখ,নিজের যত্ন না নেওয়া আমি আর মানতে পারছি না।ভালো তো আমি সিয়ামকে ও বাসি।কিন্তু সেটা বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে।আমি এতোক্ষণ ধরে ভাবছিলাম হয়তো সিয়াম আমাকে একা পেলে এই কথাগুলোই বলবে।কিন্তু না,ওও আমার সমস্ত ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বললো,

“কংগ্রাচুলেশনস।”

আমি শুধু অবাক হয়ে ওকে দেখছি আর ভাবছি,

“একটা ছেলে কতটা ভালো হলে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হতে দেখেও এমন হাসি মুখে থাকতে পারে।আর সেই ছেলেটা তো অন্য কেউ না বরং ওরই আপন চাচাতো ভাই।”

সিয়াম আমাকে আর মাসফিকে উইস করেই বাগানের অন্য একটা দিকে চলে গেল।আমিও সবার মাঝে থেকে উঠে একটা কল করার বাহানা নিয়ে সিয়ামের কাছে চলে এলাম।ওও উদাসীন দৃষ্টিতে আকাশ পানে চেয়ে আছে।আমি পর কাছে গিয়ে দাড়ালাম।

“সিয়াম”

ওও একবার আমার দিকে তাকিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,

“হুম বলো।”

“আমাকে কি মাফ করা যায় না?”

“মাফ?তোমাকে আমি কেন মাফ করবো?তুমি তো কোনো ভুল করোনি।”

“হুম তুমি ঠিকই বলেছো।আমি কোনো ভুল করিনি।বরং অন্যায় করেছি।”

“না মেহেক।তুমি কিচ্ছু করোনি।আর যেটা করেছো সেটা হয়তো ঠিকই করেছো।”

“তুমি এতো স্বাভাবিক কিভাবে আছো?”

“অস্বাভাবিক-ই বা থাকবো কেন?”

“সিয়াম তুমি আমাকে ভালোবাসো।অথচ আজ আমি তোমারই ভাইয়ের বউ।তোমার কি একটু ও কষ্ট হচ্ছে না?খারাপ লাগছে না?”

হঠাৎই সিয়াম আমার কাছে এসে চোখের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলো,

“ভালোবাসা কাকে বলে জানো?ভালোবাসা তাকেই বলে যেটা নিঃস্বার্থ হয়।যেখানে কোনো লাভ-ক্ষতির হিসেব করা যায় না।ভালাবাসা সেটা নয় যেখানে কোনো না কোনো স্বার্থ জড়িয়ে থাকে।ভালোবাসার সজ্ঞাটা আমার কাছে এমন-ই যেখানে স্বার্থহীন ভাবে কাউকে ভালোবেসে তার ভালো থাকাটা নিশ্চিত করা যায়।আমি তোমাকে ভালোবাসি।তার মানে এটা নয় যে তোমাকে আমার কাছে পেতে হবে।দু’জন দু’জনকে ভালোবেসে একসাথে থাকতে পারলেই সেই ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে।আর ভালোবেসে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সেই ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে না এমনটা কিন্তু নয়।ভালোবাসা প্রিয় মানুষটিকে আগলে রাখতে শেখায়।প্রিয় মানুষের মুখের হাসি,তার আনন্দ,ভালো থাকা এসব নিশ্চিত করতে শেখায়।আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই যে তোমাকে আমার পেতে হবে এমনটা না।বিধির বিধানে যদি তুমি আমার ভাগ্যেই না থাকো তাহলে নিজেকে কষ্ট দিয়ে তিলে তিলে শেষ করেও কিচ্ছু হবে না।বরং যেটা হবে তা হলো,আমরা কেউ ভালো থাকবো না।আমার শেষ হয়ে যাওয়ার পেছনের গল্পটা কেউ জানলে তোমার দিকেই আঙ্গুল তুলবে।তুমিও প্রতিনিয়ত অপরাধবোধে শেষ হয়ে যাবে।এটা তো ভালোবাসা নয়।ভালোবাসা তো আমাদেরকে ভালো থাকতে শেখায়।হয়তো তুমি আমার সাথে ভালো থাকবে না সেই জন্যই মাসফিকে বেছে নিয়েছো।এতে তোমার কোনো দোষ নেই।কারণ জোর করে ভালোবাসা যায় না।সর্বোপরি,নিজের ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাকলেই আমার ভালোবাসা স্বার্থক হবে।আর তাই আমিও ভালো আছি।”

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে অবিশ্বাস্য চোখে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে আছি।

“তোমার ভালোবাসার ব্যাখ্যার কাছে আমার কথাগুলো নিতান্তই তুচ্ছ।সত্যি সিয়াম তোমাকে যে নিজের করে পাবে সে আসলেই অনেক বেশি ভাগ্যবতী।হয়তো সেই ভাগ্যবতী আমি নিজেই হতে পারতাম।কিন্তু আমার কাছেও যে ভালোবাসার একটা ব্যাখ্যা আছে।আর সেই ব্যাখ্যার কাছে হেরে গিয়েই আজ আমি মাসফির স্ত্রী।”

“তোমার ব্যাখ্যাটা শুনতে চাই আমি।বলবে কি আমায়?”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,

“অবশ্যই জানতে পারবে।তবে সেটা এখন না।সঠিক সময়ে সবটা জানতে পারবে।আজ নাহয় সেসব কথা তোলা থাক মনের সিন্দুকে।সঠিক সময়ে সেই সিন্দুকের চাবি দিয়ে সিন্দুক খুলে আমার ভালোবাসার ব্যাখ্যা সবাইকে জানাবো।”

আমার কথায় সিয়াম হাসলো।তারপর বলল,

“তোমার কথার প্রেমে আগেও পরেছি।আজ আবার নতুন করে নতুন ভাবে প্রেমে পরলাম।”

আমি কিছু না বলে শুধু হাসলাম।এই ছেলেটাকে ভালো রাখতে হবে।আর আমি জানি সেটা একমাত্র তুলিই পারবে।আমাকে এদের দু’জনকে যেভাবেই হোক এক করতেই হবে।একটু পর তুলি এসে আমাদের দু’জনকে একসাথে দেখে আলতো হেসে কাছে এসে বললো,

“কিরে তোরা এখানে কি করছিস?চল ঐদিকে চল।সেই সকালে এসেছি আমরা।এখন কিছু খেয়ে নিই।তারপর মেয়েরা মিলে রান্না করবো।আর ছেলেরা ডেকোরেশন করবে।আজ একটা পিকনিক হয়ে যাক।”

আমি উৎফুল্ল হয়ে বললাম,

“হ্যা চল চল।খুব মজা হবে আজকে।”

এটা বলেই আমি তুলি আর সিয়ামের হাত ধরে সামনপর দিকে এগোতে লাগলাম।সবার কাছে গিয়ে আমি হঠাৎই খেয়াল করলাম সিয়াম আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি ওর হাত ধরে আছি এটা বুঝতে পেরেই চট করে হাত ছেড়ে দিলাম।সিয়াম মুচকি হেসে অন্যদিকে গিয়ে বসে পড়লো।আমিও আর কিছু না বলে তুলির সাথে বসে পড়লাম।

“মেহেক,তোমার মুখের হাসি টাই আমার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যথেষ্ট।ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে না পেলেও প্রতিদিন একবার হলেও দেখতে তো পারবো।একদিক থেকে ভালোই হয়েছে তুমি মাসফির বউ হওয়াতে।কারণ তুমি আজ অন্যকারো হলে তো সবসময় আমার চোখের সামতে থাকতে না।তার থেকে তুমি আমার ভাইয়ের বউ হওয়াতে আমি অনেক খুশি হয়েছি।তুমি ভালো থাকলেই তো আমি ভালো থাকবো।তোমার বর হতে নাই বা পারলাম।বেস্ট ফ্রেন্ড তো হয়েছি।কোনো না কোনো দিক থেকে তো তোমার মনে জায়গা করতে পেরেছি।তোমার ভালোবাসা পেয়েছি।এতেই আমি সন্তুষ্ট।”

আমি সিয়ামের দিকে তাকানোর পর আমাদের দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।আমি তারাতাড়ি করে ওর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।কারণ ঐ ব্যাথাতুর চোখের দিকে তাকানোর সাহস নেই আমার।একটুপর আমি রাজ,তাহা আর মাসফিকে কোত্থাও দেখতে না পেয়ে মিহিকে জিজ্ঞেস করলাম,

“রাজ আর মাসফি কোথায়?”

“রাজ আর তাহা মার্কেটে গিয়েছে কেনাকাটা করার জন্য।ডেকোরেশন,রান্নার জিনিস এসব কিনতেই গিয়েছে।আর মাসফির কি যেন একটা জরুরি কাজ আছে বলে চলে গেলো।আর বললো এক ঘন্টার মধ্যেই চলে আসবে।”

আমি ‘ওহ’ বলে বাকি সবার সাথে গল্প করতে লাগলাম।আপতত এখানে আমি,তুলি,মিহি,সানভি আর সিয়াম আছে।বাকি তিনজন তো কাজে গিয়েছে।একটু পর আমি আর মিহি মিলে ইটের চুলা বানাতে লাগলাম।সানভি আর সিয়াম মিলে কাঠ,লতাপাতা,ইট এগুলো আনতে লাগলো।তুলি ডেকোরেশনের জায়গাটা পরিষ্কার করতে গেলো।আসলে আমরা প্রতিবার রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনে ফার্মহাউসের ভেতরে গিয়ে মজা,হৈ-হুল্লোড় করতাম।কিন্তু এইবার আমার কথাতেই এমন আয়োজন।বাগানের দিকেই সবকিছুর যোগাড় করা হচ্ছে।আমি সকাল সকাল এসেই সবাইকে সবটা বুঝিয়ে দিয়েছি।আর সবাই ও আমার কথা মতো হ্যা বললো।

প্রায় বিশ মিনিট পর রাজ আর তাহা সবকিছু নিয়ে এলো।তারপর আর কি?মেয়েরা সবাই রান্নার কাজে লেগে পরলাম।আর ছেলেরা ডেকোরেশন করতে লাগলো।আজ এখানেই আমরা সবাই থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।যেই ভাবা সেই কাজ,পরিবারের সবাইকে কথাটা জানিয়ে দিলাম যেন চিন্তা না করে।কারোর পরিবারই না করেনি।কারণ সবাই জানে,আমাদের বন্ধু মহলের সম্পর্কটা এমনই যেখানে চোখ বন্ধ করে একে-অপরকে বিশ্বাস করা যায়।যেখানে থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকবো।কেউ আমাদের দিকে তাকানোর সাহস পাবে না।আমাদের বন্ধু মহলের মেয়েদের জন্য ছেলেরা সবাই অনেক বেশি সচেতন।জানিনা কার মনে কাকে নিয়ে কি রকম ফিলিংস আছে।কিন্তু তুলি আর সিয়ামের ব্যাপারটা তুলির ব্যবহার দেখেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম।আর এখন সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাকে তুলির সাথে একান্তই কথা বলতে হবে খুব দ্রুত!

চলবে?

কোনো একদিন পর্ব-০৫

0

#কোনো_একদিন
#পর্ব_৫
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

“মেহেকের পিরিয়ড জনিত কিছু প্রবলেম হয়েছে।যার জন্য তলপেটে চাপ পরলে ওর সমস্যা হতে পারে।এই অবস্থায় কোনোভাবেই মেহেকের সাথে ফিজিক্যালি ইনভল্ভ হতে পারবে না তুমি মাসফি।যদি হও তাহলে মেহেকের অনেক বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।”

ডক্টর হৃদির কথায় আমি চুপ করে রইলাম।কারণ এখন আমি বলার মতো কিছু পাচ্ছি না।কিন্তু মাসফির চেহারায় আমি গাম্ভীর্যতা দেখতে পেলাম।পাশাপাশি ওর মনে যে আমাকে নিয়ে ভয় কাজ করছে তাও টের পেলাম।আমার ভাবনার মাঝেই মাসফি হৃদি আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

“আপু এক্ষেত্রে মেহেকের ভালো হতে কতদিন লাগতে পারে?আর ওর কোনো বড় ক্ষতি হবে না তো?”

“না।কোনো ক্ষতি হবে না যদি মেহেক আর তুমি আমার কথাগুলো মেনে চলো।আর রেগুলার মেডিসিন নিলে তিন-চার মাসের মধ্যেই মেহেক পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”

“তিন-চার মাস?এর আগে ভালো হওয়া কি কোনোভাবেই সম্ভব নয়?”

“না।কারণ এটা দীর্ঘদিনের একটা প্রসেস।তারাহুরো করতে গেলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।আর এটার জন্য অপারেশন করাও সম্ভব নয়।তাই আমি যা বলি শোনো,মেহেককে রেগুলার মেডিসিনগুলো খেতে হবে।আর পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া অবধি ফিজিক্যালি ইনভল্ভ হতে পারবে না তোমরা।”

“ওকে আপু।মেহেকের যেন কিছু না হয় তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার।”

মাসফির কথা শুনে আমি মুচকি হাসলাম।কিন্তু সেটা মাসফির আড়ালে।মাসফি যে এতো কেয়ারিং তা আজকে জানলাম।

এরপর আপুর সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মেডিসিন কেনার জন্য আমরা প্রথম ফ্লোরে চলে আসলাম।মেডিসিন কিনে নিয়ে মাসফি আমার হাতে দিয়ে বললো,

“নিয়মিত নিজের যত্ন নিবে।আর আমি তো আছিই।চিন্তা করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহর রহমতে।এখন চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।”

এটা বলেই মাসফি আমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল।আমিও ওর কথায় মাথা নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।মাসফি আমাকে নামিয়ে দিয়ে হালকা হেসে বাই বললো।আমিও কোনোকিছু না বলে শুধু একটু হাসার চেষ্টা করে বাসার ভেতরে চলে আসলাম।আমার হাতের মেডিসিন আর রিপোর্ট টা ব্যাগে ঢুকিয়ে আমি রুমে চলে আসলাম।অনেক ক্লান্ত লাগছে আজ।তাই আগে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।তারপর চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পরলাম বিছানায়।সারাদিন ক্লান্ত থাকায় শোয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম পরিরা আমার চোখে এসে ভর করলো।রাত প্রায় নয়টার দিকে মাথায় কারো হাত বোলানিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।পাশে তাকিয়ে দেখি আব্বু আমার মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আমি কিছু না বলে হেসে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম।

“তুমি কখন এসেছো আব্বু?”

“এইতো একটু আগেই মামনি।”

“তো আমাকে ডাকলে না কেন?”

“তুমি ঘুমাচ্ছিলে।তাই আর জাগায়নি।”

“ওওও আচ্ছা।”

“হুম।এখন উঠে পড়ো তো মামনি।ডিনার করতে চলো সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ডাইনিং এ।”

“আচ্ছা তুমি যাও।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

“ঠিক আছে তারাতাড়ি এসো।”

এটা বলেই আব্বু চলে গেল।আর আমি ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে একটু পানির ঝাপটা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলাম।তারপর সবাই মিলে একসাথে খেয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।রাত দশটার পর রুমে আসতেই দেখলাম ফোনের স্ক্রিনে আলো জ্বলছে।কাছে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি মাসফি কল করেছে।রিসিভ করে বললাম,

“হ্যা বলো।”

“কি করছো?”

“ডিনার করে আসলাম।তুমি?”

“আমি একটু কাজ করছি।”

“খেয়েছো?”

“না।একটু পর খাবো।”

“আচ্ছা তুমি তাহলে কাজ করো।আমি এখন রাখি।”

“আরে যে জন্য ফোন দিয়েছি সেটাই তো বলিনি এখনও।”

“হুমমম বলো কি বলবে?”

“কালকে আমাদের ফার্মহাউসে সবাই আসবে।লকডাউন এর জন্য অনেক দিন হলো সবাই মিলে আড্ডা দেই না।তাই কাল সারাদিন আমরা ফার্মহাউসে থাকবো।তুমি একাই আসবে?নাকি আমি গিয়ে নিয়ে আসবো?”

“না না আমি একাই যেতে পারবো।তোমার আসতে হবে না।”

“তাহলে কালকে দশটার মধ্যে ফার্মহাউসে চলে এসো।আসলে আমিই নিয়ে আসতাম তোমাকে।কিন্তু আমার সাথে সিয়াম আর সানভি ও যাবে।আর কিছু কাজও আছে তাই আর কি।”

“সমস্যা নেই।আমি একাই যেতে পারবো।”

“ঠিক আছে।মেডিসিন গুলো খেয়েছো রাতেরটা?”

“হ্যা খেয়েছি।আচ্ছা কাল কথা হবে এখন রাখি।”

“ওকে গুড নাইট।হ্যাভ আ সুইট ড্রিম উইথ মি।”

“আচ্ছা গুড নাইট।”

কল কেটে দিয়ে আমি ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম কিছু কাজ করার জন্য।কিছুক্ষণ পর আমি ল্যাপটপ অফ করে শুয়ে পরলাম।তারপর ফেসবুকিং করে রাত প্রায় একটার দিকে ঘুমালাম।

অন্যদিকে মাসফি খেয়ে এসে ল্যাপটপ অন করতেই একটা নোটিফিকেশন আসলো।কে যেন ইমেইল করেছে ওকে।ইমেইল টা ওপেন করতেই দেখতে পেলো,

“ডিয়ার মাসফি।আশা করি ভালো আছো।এখন তো ভালো থাকারই কথা।নতুন বিয়ে করেছো।বউটাও সুন্দরী।তার উপর তোমাকে অন্য মেয়েদের সাথে দেখেও কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ তোমাকে বিয়ে করে নিল।অনেক লক্ষ্যি একটা মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়েছো।মেহেকের জায়গায় আমি হলে তোমাকে আর ঐ মেয়েটাকে ওখানেই শেষ করে দিতাম।কারণ আমার কাছে বিশ্বাসঘাতক আর অন্যায়কারীদের কোনো মাফ নেই।হোক সে আমার শত্রু অথবা আমার ভালোবাসা।যাইহোক,এখন মূল কথায় আসি।যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা করে নাও আনুষ্ঠানিকভাবে।কারণ দেরি হয়ে গেলে হয়তো নিজের বউকে আপন করে পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলবে।তোমার পাপের প্রত্যেকটা হিসাব আমার কাছে আছে।তুমি যদি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কিং “সানফ্লাওয়ার” হও তাহলে আমি ও যে আন্ডার ওয়ার্ল্ড এর কুইন “ব্ল্যাক রোজ”।তোমার জন্য আমি অনেক কিছু হারিয়েছি।এবার তোমার ধ্বংস নিশ্চিত।আর তোমার বিনাশ করবো আমি।এখন থেকে ঠিক চার মাসের মধ্যে তোমাকে সর্বহারা করে দিবো আমি।আর এটা আমার নিজেকে করা প্রতিজ্ঞা।আমি নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও নিজেকে দেওয়া প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবো।তাই মিস্টার মাসফি চৌধুরী,আজ থেকেই নিজের সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার কাউন্টডাউন শুরু করে দাও।”

ইতি,
তোমার জানেমান
“ব্ল্যাক রোজ”

ইমেইল এ লেখা এই কথাগুলো পড়েই মাসফির রাগে কপালের শিরা গুলো ফুলে উঠলো।চোখ লাল করে হাতের কাছে থাকা সবকিছু ঠাস ঠাস করে নিচে ফেলে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙ্গে ফেললো।মাসফির রুম সাউন্ডপ্রুফ হওয়ায় কাচ ভাঙ্গার কোনো শব্দ বাইরে গেলো না।মাসফি ইমেইলটা চেক করে দেখলো ইমেইলদাতার নাম ও “ব্ল্যাক রোজ দেওয়া।”

“মিস ব্ল্যাক রোজ তুমি যেই হও না কেন,আমার দুনিয়ায় এসে খুব বড় ভুল করে ফেলেছো।তোমার ধারনাও নেই যে আমি ঠিক কি কি করতে পারি।তুমি আমার ধ্বংস দেখতে গিয়ে নিজেই না ধ্বংস হয়ে যাও।”

বলেই হাহা করে হেসে উঠলো মাসফি।হঠাৎই মেহেক আর ওর বিয়ের কথা মনে করে মাসফি আৎকে উঠলো।কারণ ওর দুর্বলতা এখন শুধুই মেহেক।মেহেককে যে ওও অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।ওর জন্য মেহেকের কিছু হয়ে গেলে মাসফি নিজেকে কখনোই মাফ করতে পারবে না।তাই এখন থেকে মেহেককে চোখে চোখে রাখতে হবে।এক মুহূর্তের জন্যও ওকে চোখের আড়াল করা যাবে না।আর তাছাড়া মাসফির আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত থাকা এবং সেখানকার কিং হওয়ার কথা ওর অ্যাসিসটেন্ট আহিল আর আন্ডার ওয়ার্ল্ডের লোকেরা ছাড়া কেউ জানে না।তাই এই কথা আর কাউকে জানানোও যাবে না।সবার আগে এই মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে।কে এই ব্ল্যাক রোজ?যার এত্তো সাহস যে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মাফিয়াদের সাথে লাগতে আসে।এইখানে তো সবাই ছেলে।তাহলে এই মেয়েটা আসলো কোথা থেকে?আর ওর সাথেই বা মেয়েটার কিসের শত্রুতা?

এসব ভাবতে ভাবতেই মাসফির সারারাত আর ঘুম হলো না।পুরো একটা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ভোরের দিকে দুচোখের পাতা এক করে ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো মাসফি।

চলবে?

কোনো একদিন পর্ব-০৪

0

#কোনো_একদিন
#পর্ব_৪
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

২০১৯ সালের শেষের দিকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সফার হয়ে আসি সিংগাপুর থেকে।তখন আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করে তৃতীয় বর্ষে পড়ার জন্য তৈরি হচ্ছি।আমার সিংগাপুর থেকে এখানে আসার পেছনের গল্পটা না হয় অন্য কোন একদিন বলবো।আমি স্বভাবতই বেশ চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে।ভার্সিটিতে আসার প্রথম দিন তেমন কারো সাথেই পরিচয় হয়নি।তবে ধীরে ধীরে আমার মিহি,সানভি,তুলি,সিয়াম,তাহা,রাজ,মাসফির সাথে বন্ধুত্ব হয়।ওদের বন্ধু মহলের একজন অন্যতম সদস্য হয়ে উঠি আমি।দিনগুলো বেশ ভালোই যাচ্ছিলো।আমার সবথেকে বেশি মিল ছিল মিহি আর সিয়ামের সাথে।আমার সিয়ামকে বেশ ভালো লাগতো।তবে সেটা বন্ধু হিসেবে।সিয়ামকে তুলি যে পছন্দ করে এটা আমি শুরু থেকেই জানতাম।কিন্তু সিয়াম ছিল একদম অন্য রকম।মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলতো না।আমি নিজেই প্রথম ওর দিকে বন্ধুত্বের হাত বারিয়ে দেই।আর মাসফি ছিল সিয়ামের পুরো বিপরীত।মেয়েদের সাথে পর ফ্লার্ট করা নিয়ে আমরা সবাই ওকে অনেক কথা শোনাতাম।কিন্তু আমাদের কথাগুলো মনে হয় ওর কর্ণগোচর হতো না।যাইহোক,সবকিছু বেশ ভালোই চলছিল।কিন্তু একটা দুর্ঘটনা ঘটে ২০২০ সালের নভেম্বরে।সেদিন আমরা সব বন্ধুরা মিলে মাাফিদের ফার্মহাউসে যাই পার্টি করার জন্য।আর দুর্ভাগ্যজনক হলেও মাসফি আর সিয়াম আমাকে একই দিনে প্রপোজ করে।ব্যাপারটাতে আমি পুরো থমকে গিয়েছিলাম।সিয়াম আমাকে আড়ালে গিয়ে প্রপোজ করেছিল বিধায় ওর কথা কেউ জানতো না।কিন্তু মাসফি আমাকে সবার সামনে প্রপোজ করে।আমাকে সেদিন সবাই মাসফিকে হ্যা বলতে বলে।আফটার অল মাসফি ভার্সিটি ক্রাশ বলে কথা।তবে সিয়াম ছিল ভার্সিটি টপার।মাসফি পড়ালেখার প্রতি বেশ উদাসীন।আমি সেদিন সিয়াম আর মাসফিকে কিছু না বলেই বাসায় চলে আসি।এরপর আমি দুজনের থেকেই ভাবার জন্য সময় চাই।আর তারপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি মাসফিকে হ্যা বলি।সবদিক থেকে সিয়াম এগিয়ে থাকলেও আমার মাসফিকে ভালো লেগে যায়।তারপর থেকেই সিয়ামের সাথে আমার বন্ধুত্বে ফাটল ধরতে থাকে।এতসব কিছুর পর গত জুলাইয়ে আমার মাসফির সাথে এনগেজমেন্ট হয়।আর তারপর সেদিন আমি মাসফিদের অফিসের লিফটে যা দেখি তা তো সবারই জানা।আমি চাইলেও আর মাসফির থেকে দূরে যেতে পারবো না।কারণ দিন শেষে আমি মাসফিকেই ভালোবাসি।

___________________________

ফোনের রিংটোনে আমি বাস্তবে ফিরে আসি।আপু কল দিয়েছে।

“আসসালামু আলাইকুম আপু।”

“ওয়ালাইকুম সালাম।”

“কেমন আছো?”

“হুম আলহামদুলিল্লাহ।তুই?”

“আলহামদুলিল্লাহ।”

“কি ব্যাপার মেহেক।এই হঠাৎ করে বিয়ে করার মানে কি?”

“আপু প্লিজ এখন আমাকে এসব বলার জন্য ফোর্স করো না।তুমি তো জানো,আমি কোনোকিছুই অযথাই করি না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“হুম আমার ইরজা মামনি টা কেমন আছে?”

“ওও তো ভালোই আছে।এখন ঘুমাচ্ছে।আর আমি অফিসের কিছু কাজ করছি।”

“আচ্ছা আপু তুমি আর ইরজা বাংলাদেশে কবে আসবে?”

“আসতে তো আমিও চাই মেহেক।কিন্তু…”

“আপু প্লিজ কেঁদো না।তেমার চোখের এক ফোঁটা পানি ও যে আমাকে কাঁদায়।”

“ধুর পাগলি মেয়ে।তুই কাঁদছিস কেন?যা হয়েছে তা তো আর ফিরে আসবে না।”

“তুমি তারাতাড়ি বাংলাদেশে চলে আসো প্লিজ।”

“আচ্ছা আমি দেখছি যত তারাতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে ফেরার জন্য কি করা যায়।”

“আপু আমি এখন ঘুমাবো।পরে কথা বলবো ওকে?”

“ওকে তুই ঘুমিয়ে পড়।আমিও কাজ শেষ করে একটু পরেই ঘুমাবো।”

“গুড নাইট।”

“গুড নাইট আমার সোনা বোনুটাহ্।”

আপুুর সাথে কথা বলা শেষ করে আমি ঘুমিয়ে পড়ি।সকালে ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙ্গে আমার।মাসফি ফোন দিয়েছে।আমার মুখে আবারো বিরক্তির আভা ফুটে উঠলো।

“হ্যালো”

“গুড মর্নিং জান।”

“সকাল বেলা তুমি আমাকে এজন্য ফোন দিয়েছো?”

“হুম।আচ্ছা শুনো এখন নয়টা বাজে।তুমি ফ্রেশ হয়ে তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।আর হ্যা,ব্রেকফাস্ট করে নাও।আমি দশটার মধ্যে আসছি।”

“হুম ওকে।”

“বাই বাই”

“আল্লাহ হাফেজ।”

এটুকু বলেই আমি ফোন রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।একটু পর একটা অফ ওয়াইট রংয়ের লং ড্রেস পড়ে বেরিয়ে আসলাম আমি।তারপর মাথায় হিজাব বেধে চোখে হালকা কাজল দিয়ে নিচে চলে গেলাম ব্রেকফাস্ট করার জন্য।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

“কোথায় যাবি তুই?”

“মাসফির সাথে একটু বের হবো আম্মু।”

“এতে সকালে কেন?”

“এমনিতেই একটু কাজ আছে।”

আমি এখন কাউকে ডক্টরের কথা বলবো না।এমনিতেই কালকের ঘটনা নিয়ে সবাই একটু রেগে আছে।তার উপর আবার এই কথা বলে চিন্তা বাড়াতে চাই না।তার থেকে ভালো,আমি আর মাসফি গিয়ে ব্যাপারটা সল্ভ করে আসি।খাওয়া শেষে আমি উঠে উপরে যেতেই মাসফির আগমন।আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“চলো।”

আমিও কোনো কথা বলে চুপচাপ ওর সাথে বের হয়ে আসলাম।গাড়িতে বসে আমি বা মাসফি কেউ কোনো কথা বলিনি।হসপিটালে আসার পর টেস্ট করার জন্য স্যাম্পেল দিয়ে মাসফি আমাকে নিয়ে একটা ক্যাফেতে গেলো।আমি কোনো কথায় বলিনি এখনো।মাসফি হঠাৎই আমার হাতের উপরে হাত রেখে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।

“দেখো মেহেক আমি জানি তুমি আমার উপরে রেগে আছো।আর সেটা স্বাভাবিক।কিন্তু আমার কথাটা একবার শুনো।গতকালকে…”

এটুকু বলার পর আর কিছু বলতে পারলো না ওও।কারণ ওর ফোনে কল এসেছে।

“এটা কার নাম্বার?চিনিনা তো।”

মাসফি কলটা রিসিভ করতেই ওপাশের কিছু তো আমি শুনতে পেলাম না।কিন্তু মাসফির চেহারার রং পাল্টে গেল।পুরো মুখে ছেয়ে গেলো রাগের আভা।আচমকাই ওর এমন রাগের কারণ আমি চিহ্নিত করতে পারলাম না।ওও কোনোকিছু না বলেই আমাকে ক্যাফেতে রেখে কোথায় জানি চলে গেল।আর আমি নিরব দর্শকের মতো ওর কান্ডগুলো দেখতে লাগলাম।প্রায় ৩০ মিনিট পর ওও ফিরে এলো।আর তারপর আমাকে নিয়ো আবার হসপিটালে চলে আসলো।হসপিটালে এসে টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে আমরা হৃদি আপুর কাছে চলে আসলাম।অনেক্ক্ষণ যাবত রিপোর্টগুলো পর্যবেক্ষণ করার পর হৃদি আপু যা বললো তাতে করে আমার আর মাসফির চোখগুলো যেন কোটর থেকে বেড়িয়ো আসবে এমন অবস্থা।

চলবে?।

কোনো একদিন পর্ব-২+৩

0

#কোনো_একদিন
#পর্ব_২_৩
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

“আরে কি করছো মাসফি?আমাকে নিচে নামাও,নামাও বলছি।”

“একদম চুপ করে থাকো।একটাও কথা বলবে না তুমি বুঝেছো।”

“কথা বলবো না মানে?তুমি আমাকে কোলে তুলে নিলে কেন?আমার কি পা নাই?আমি তো হেটেই যাচ্ছিলাম।”

“আমার বউকে আমি যখন ইচ্ছা তখন কোলে নিবো।তাতে তোমার কি হ্যা?”

“আমা….”

আমি কথা শেষ করার আগেই মাসফি আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।আমি রুমের ভেতরের ডেকোরেশন দেখে অবাক হয়ে মাসফির দিকে তাকালাম।মাসফি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

“হোয়াট?”

“এসব কি?এই রুম এমন ফুল আর ক্যান্ডেল লাইট দিয়ে সাজানো কেন?”

“কেন তুমি জানো না?আমরা বিয়ে যখন করেছি তখন তো বাসর ও করতে হবে।তাইনা?”

“এনাফ ইজ এনাফ মাসফি।সকাল থেকে তোমার অনেক বারাবাড়ি সহ্য করেছি।কিন্তু আর না,বুঝেছো?”

“কি এমন বারাবাড়ি করলাম বলো তো?এখনো তো কিছুই শুরু করলাম না।”

এই বলেই বাঁকা হেসে মাসফি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।আমি পিছালাম না।কারণ,পেছানোর মতো কোনো জায়গা নেই।তাই শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।মাসফি আমার কাছে এসে আচমকাই ঘাড়ে একটা বাইট দিলো।আমি ব্যাথায় চিৎকার করতে গেলেই ওও আমার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিল।আমি এক মুহূর্তের জন্য যেন ফ্রিজ হয়ে গেলাম।কিছুক্ষণ পর ওও আমাকে ছেড়ে দিলে আমার কি হলো জানিনা,মাথা ঘুরিয়ে নিচে পড়ে গেলাম।এরপর আমার আর কিছুই মনে নেই।

___________________________

ধীরে ধীরে চোখ খুলে আমি চারিদিকে তাকালাম।চোখ খুলেই আমি নিজেকে বিছানার উপরে আবিষ্কার করলাম।পাশেই মাসফি বেশ গম্ভীর হয়ে বসে আছে।আর আমার সামনাসামনি বসে আছে মিসেস.হৃদি রাহমান।হৃদি আপু আমাদের পারিবারিক ডক্টর।আমাদের পরিবারের মেয়েদের যেকোনো কিছু হলেই হৃদি আপু চলে আসেন।মাসফি ও খুব ভালো করেই হৃদি আপুকে চেনেন।কারণ আমি নিজেই বেশ কয়েকবার হৃদি আপুর চেম্বারে মাসফিকে নিয়ে গিয়েছিলাম।তাই হয়তো আজও মাসফি হৃদি আপুকেই ডেকেছেন।

“মাসফি,তোমরা যে এভাবে হুট করে বিয়ে করবে সেটা কিন্তু আমরা কেউ ভাবিনি।তোমাদের তো পারিবারিকভাবেই সব ঠিক করা ছিল।তাহলে হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন?”

“আসলে আপু আমার কি হয়েছিল জানিনা,কিন্তু মেহেক কে আমার আজকে বিয়ে করতে ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছি।তবে আমি ওকে আনুষ্ঠানিকভাবেই তুলে আনবো।”

“আচ্ছা সে যাইহোক,এখন আমি যেটা বলি সেটা শোনো।”

“জ্বি আপু বলুন।”

“মেহেকের জন্য আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিয়েছি।আপাতত সেগুলো নিয়ে এসে খাওয়াও।আর ওর কিছু টেস্ট করতে হবে।সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে।”

আমি মাসফির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওও বেশ চিন্তিত হৃদি আপুর কথা শুনে।

“কেন আপু?মেহেকের কি এমন হয়েছে?”

“দেখো,এখনই আমি শিওর হয়ে কিছু বলতে পারবো না।আগে টেস্ট করাও।তারপর রিপোর্ট দেখে আমি তোমাকে বলতে পারবো যে মেহেকের এক্সাক্ট কি হয়েছে।তবে হ্যা,আমি এটুকু বলতে পারি যে আপাতত তুমি আর মেহেক ফিজিক্যালি ইনভল্ভ হবে না।এতে করে মেহেকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।এখন আমি আসছি।আগামীকাল বিকাল পাঁচ টার সময় রিপোর্ট নিয়ে আমার চেম্বারে এসো।”

এটা বলেই হৃদি আপু চলে গেলেন।আর মাসফি মেডিসিনগুলো আনতে গেল।আমি নিজেও চিন্তাতে পরলাম।হ্যা,আমি এখনই মাসফির সাথে ফিজিক্যালি এটাচ্ড হতে চাই না।কিন্তু আমার কি এমন হয়েছে যে আমরা ফিজিক্যালি এটাচ্ড হলে আমার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে? আমার এসব ভাবনার মাঝেই মাসফি হাতে কিছু খাবার আর মেডিসিন নিয়ে আসলো।খাবার আর মেডিসিন গুলো টি-টেবিলের ওপর রেখে আমাকে তুলে বসিয়ে বললো,

“তোমার একা খেতে হবে না।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

“তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি একাই খেতে পারবো।”

“এতো বেশি কথা বলো কেন তুমি হ্যা?বললাম না আমি খাইয়ে দিবো।”

“কিন্তু…”

“আর একটাও কথা না।এখন হা করো।”

আমাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে ওও ধমক দিয়ে বললো,

“কি হলো,হা করো বলছি।”

আমিও চুপচাপ খেয়ে নিলাম খাবার গুলো।এরপর আমাকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে মাসফি কিচেনে প্লেট রাখতে গেলো।তখনই আমার ফোনে কল আসলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখি,আম্মু কল দিয়েছে।আমি রিসিভ করার আগেই মাসফি আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে আম্মুকে বললো,

“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।মেহেক আমার সাথেই আছে।এক ঘন্টার মধ্যেই ওকে নিয়ে আমি আপনাদের বাসায় আসছি।আর আমার ফ্যামিলির সবাইকেও ডাকুন।জরুরি কথা আছে আমার সবার সাথে।”

এটুকু বলেই মাসফি কল কেটে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“উঠে পড়ো।এখন আমরা বের হবো।”

“কোথায় যাবো এখন আমরা?”

“তোমাদের বাসায়।নাও চলো।”

আমি আস্তে করে উঠে মাসফির পেছন পেছন ফার্মহাউস থেকে বেরিয়ে গাড়ির সামনে এসে দাড়ালাম।মাসফি গাড়ির গেট খুলে দিলে গাড়িতে বসার পর ওও গাড়ি ঘুড়িরে আমাদের বাসার দিকে যেতে লাগলো।মাসফিদের ফার্মহাউস থেকে আমাদের বাসায় যেতে প্রায় এক ঘন্টা লাগে।আজকে আমার সাথে সাথে যা যা হলো সবটুকু আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।কোথায় থেকে কি হলো কিচ্ছু বুঝতেছিনা।মাসফির সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের কথা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ গাড়ির হর্নের আওয়াজে আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাসায় এসে পড়েছি আমরা।

আমরা দুজন বাসার ভেতরে গিয়ে দেখলাম আমাদের দুই পরিবারের সবাই হলরুমে বসে আছে।সবাই আমাদের দিকে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে আছে।মাসফির আম্মু মিসেস.রাইহানা চৌধুরী মাসফির দিকে তাকিয়ে বললেন,

“কি হয়েছে মাসফি?এতো তারাতাড়ি আমাদের সবাইকে ডাকার মানে কি?”

“সব বলবো মা।তার আগে বলো এখানে সবাই উপস্থিত আছে তো?”

“হ্যা,এখানে সবাই উপস্থিত আছে।এবার বল কি বলার জন্য আমাদের সবাইকে এখানে ডেকেছিস?”

এরপর মাসফি যা বললো তাতে সবাই বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো।কারণ……?

চলবে?

বিঃদ্রঃ১ আমি অবশ্যই নেক্সট দিবো।দয়া করে নাইস,নেক্সট না বলে একটু গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ।কারণ,প্রথম পর্বেই আমি কোনো গঠনমূলক কমেন্ট পাইনি।

বিঃদ্রঃ২ আমার গল্পের প্রথম পর্ব পড়েই সবাই মনে হয় পুরো গল্পটা বুঝে ফেলেছেন?আমি এখন কিছুই বলবো না।কারণ,আমার গল্পের শেষ পর্বেই আপনারা আপনাদের যোগ্য জবাব পেয়ে যাবেন।

ধন্যবাদ❤️

#কোনো_একদিন
#পর্ব_৩
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

“আমি আর মেহেক আজকে বিয়ে করেছি কাজি অফিসে গিয়ে!”

মাসফির কথায় সবাই বসা থেকে উঠে দাড়ালো।সবার রিয়েক্শন গুলো এমন যেন কোনো অদ্ভুত কথা শুনেছে।একেকজনের চোখ সুপারির মতো বড় হয়ে গিয়েছে।এটা দেখে আমি মনে মনে হাসলাম একটু।একটু পর সবাই অবাকের রেশ কাটিয়ে আমাকে আর মাসফিকে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।আমি কোনোকিছু না বলে চুপ করে আছি।মাসফি সবাইকে বসতে বলে আমাকে নিয়ে সোফায় বসলো।তারপর শান্ত সুরে বললো,

“দেখো আমি জানি তোমরা সবাই অবাক হয়েছো।আর এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু মেহেক তো আমার ফিয়ন্সে।আর তাই আজ আমি ওকে বিয়ে করেছি।বিয়ে করার কারণ টা কেউ জানতে চাইবে না প্লিজ।কারণ এটা আমি বা মেহেক কেউ বলতে পারবো না।”

এটুকু বলেই মাসফি আমার দিকে তাকালো।আমি শুধু দাঁতে দাঁত চেপে মাসফির প্রত্যেকটা কথা শুনছি।আসলে সবকিছুর জন্যই নির্দিষ্ট কিছু সময় এবং কারণ থাকতে হয়।আমি চাইলেই মাসফির আজ সকালের কথাটা সবাইকে জানাতে পারি।কিন্তু এটা সঠিক সময় নয়।তাই এখন আমার চুপ করে থাকায় শ্রেয়।একটু পর মাসফির ছোট বোন মিহু বলে উঠলো,

“কিন্তু ভাইয়া তোদের হঠাৎ এই বিয়ের কারণটা তো আমাদের জানা প্রয়োজন তাইনা।”

মিহুর সাথে তাল মিলিয়ে আমার গুণধর ভাই তানভীর ও বললো,

“হ্যা তো মিহু ঠিকই বলেছে।”

তখনই আমার বাবা গম্ভীর সুরে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

“বিয়ে যখন করেই ফেলেছো এখন আর কি করার।তবে আমি এখন ও বুঝে উঠতে পারিনি যেখানে আমরা সবাই রাজি তোমাদের বিয়েতে তখন এই সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছো?”

মাসফি সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে বললো,

“বললাম তো এই কথাটা কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করবে না প্লিজ আংকেল।”

এতোক্ষণ ধরে নিরব দর্শকদের ভূমিকা পালন করা মিস্টার আরহাম চৌধুরী অর্থাৎ মাসফির বাবা মুখ খুললেন।

“আচ্ছা মানলাম এটা আমাদের তোমরা বলবে না।কিন্তু এখন তোমরা কি চাও সেটা বলো।”

“বাবা আমি চাই আগামী এক মাসের মধ্যেই মেহেক কে আনুষ্ঠানিকভাবে আমার বউ হিসেবে গ্রহণ করতে।”

আমার আম্মু এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“বিয়ে তো ইতোমধ্যেই করে ফেলেছো তোমরা।এখন আনুষ্ঠানিকভাবে যত তারাতাড়ি সম্ভব বিয়ে দেওয়ায় আমাদের জন্য ভালো হবে।কিন্তু…?”

“কিন্তু কি মালিহা?”

মাসফির মায়ের কথায় আম্মু আবারো বললো,

“আমাদের বড় মেয়ে আর তার একমাত্র মেয়ে ইমিরা ইরজা এখনো সিংগাপুরে।”

“ওদেরকে আসতে বলো এখন।”

“হ্যা,কিন্তু এখন ওরা কিভাবে আসবে?লকডাউন তো।আর এখন বড় করে অনুষ্ঠানই বা কি করে করবো?”

আম্মুর কথায় এবার সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো।কারণ সত্যিই তো এখন ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া রিস্কি।সবাই ভাবছে কি করা যায়।তখনই মিস্টার মাসফি চৌধুরীর ঘটে নতুন বুদ্ধি উদয় হলো।

“আরে তোমরা এতো চিন্তা করছো কেন।আগামী পাঁচ তারিখের পর তো লকডাউন উঠে যাবে।আর সেটা যদি না-ও হয় তবুও এই বিয়েটা হবেই সেটা যেভাবেই হোক।”

“আচ্ছা তোর এতো তাড়া কেন বল তো?”

“বাবা তুমি এভাবে বলছো কেন?আমি আর মেহেক এখন আইনত স্বামী-স্ত্রী।আর আমি চাই ওকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।আমরা কথা বলে দেখছি কি করা যায়।আজকের মতো এসব কথা এখানেই শেষ হোক।পরবর্তী একদিন এসব নিয়ে আমরা কথা বলবো ঠিক আছে।”

“হ্যা সেটাই ভালো হবে এখন সবাই খেতে চলো।ডিনার টা করে নাও।”

“কিন্তু তানজিম আমাদের তো এখন যেতে হবে।”

মাসফির বাবার কথায় আব্বু বললেন,

“তোরা খেয়ে তারপর যাবি।”

“কিন্তু….”

“আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না আরহাম।এখন সবাই ডাইনিং এ চলো।”

এরপর সবাই ডাইনিং এ চলে গেলো।আর আমি রুমে চলে আসলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় মাসফিকে বসে থাকতে দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।আমি বিছানার উপর টাওয়েল টা ছুঁড়ে মেরে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

“কি সমস্যা?তুমি এখন এখানে কেন?যাও খেতে যাও।”

“হ্যা যাবো তার আগে শুনো আগামীকাল সকাল নয়টার মধ্যে রেডি হয়ে থাকবে।”

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

“কেন?”

“কেন আবার?টেস্ট করাতে নিয়ে যাবো তাই।”

আমি ছোট্ট করে ‘ওকে’ বলে রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং এ চলে আসলাম।কিছুক্ষণ পর মাসফি ও ফ্রেশ হয়ে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।সবাই টুকটাক কথা বলতে বলতে খাবার খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ বসে থেকে মাসফিরা চলে গেলো।আজ মাসফিদের বাসা থেকে মাসফির বাবা,মা,ছোট বোন আর ওর চাচাতো ভাই সিয়াম এসেছিল।সিয়াম আজ একটা কথাও বলেনি কারো সাথে।এতোটা সময় একদম চুপ করে ছিল কিন্তু চলে যাওয়ার আগে আমার দিকে কেমন একটা চাহুনি নিয়ে তাকিয়ে ছিল।তারপর কোনো কিছু না বলেই হনহন করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।আমিও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।কিছুক্ষণ পর আম্মু আমার কাছে এসে বসলো।

“কিছু বলবা আম্মু?”

“তোদের এই হঠাৎ বিয়ের কারণ কি?”

“এখন এই কথাটা জিজ্ঞেস করো না প্লিজ।” মাসফি তো বলেই দিয়েছে যে এটা আমরা এখন কাউকে বলতে পারবো না।”

“কি হয়েছে মেহেক?তুই তো কখনো আমার কাছে কিছু গোপন করিস না।তাহলে আজ কি হলো?”

আমি আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,

“আমি তোমার কাছে কোনো কিছুই গোপন করতে পারিনা আম্মু।এটা তো তুমি খুব ভালো করেই জানো।কিন্তু প্লিজ আজকের মতো মাফ করে দাও।কারণ আমি চাইলেও তোমাকে কিচ্ছু বলতে পারবো না।এখন তুমি যাও তো।অনেক ক্লান্ত লাগছে।ঘুমাবো আমি।”

আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো,

“আমি জানি আমার সন্তানেরা খারাপ কিছু করতে পারে না।আর আমার মেহেক তো কখনোই এমন করবে না।তবুও যা করবি ভেবেচিন্তে করবি ঠিক আছে এখন তুই ঘুমিয়ে পড়।আমি লাইট অফ করে দিয়ে যাচ্ছি।”

এটুকু বলেই আম্মু লাইফ অফ করে দরজা ভিরিয়ে চলে গেলো।আর আমি ঘুমাতে চেয়েও পারলাম।কারণ,আমার চোখের সামনে মাসফির সাথে প্রথম দেখা হওয়ার সেই ঘটনাগুলো ভাসছে।

সেদিন আমি….

চলবে?

কোনো একদিন পর্ব-০১

0

#কোনো_একদিন
#পর্ব_১
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

লিফটের ভেতরে নিজের ফিয়ন্সে কে একটা মেয়ের সাথে এতো ক্লোজভাবে দেখে আমার পুরো দুনিয়া যেন ঘুরতে লাগলো।নিজের চোখকে কি করে অবিশ্বাস করা যায়?আমি ঠিক কি করবো বা বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।নিজের অজান্তেই আমি চিৎকার করে উঠলাম।আমার চিৎকারে মাসফি আর ওর সাথে থাকা মেয়েটা একে-অপরকে ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো।আমি নিকাব পড়ে থাকায় মাসফি প্রথমে চিনতে না পারলেও আমার চোখ দেখে চিনে যায় যে এটা আমি।আমি আর কোনো কিছু না বলেই লিফটের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসি।আমি এখন কোথায় যাবো ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ পেছন থেকে মাসফি আমার হাত ধরে ফেলে।আমি নিজের হাত ওর থেকে ঝাড়া মেরে সরিয়ে নিয়ে বলি,

“খবরদার,ঐ নোংরা হাত দিয়ে আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না।”

মাসফি অবাক হয়ে বলে,

“তুমি এসব কি বলছো মেহেক?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

আমি কান্নারত অবস্থাতেই বললাম,

“কিচ্ছু বুঝতে পারছেন না তাইনা?নিজেকে ধোয়া তুলশী পাতা মনে করেন আপনি?”

“মেহেক প্লিজ চুপ করো।তুমি কি বলছো তা হয়তো নিজেও জানোনা।”

“হ্যা সত্যি আমি কিছুই জানিনা।আপনি কেন আমার জীবন নিয়ে খেললেন সত্যি আমি জানিনা।”

“আমি তোমার জীবন নিয়ে খেলেছি?এটা তুমি কিভাবে বলতে পারো?”

“হ্যা হ্যা আপনি আমার জীবন নিয়ে খেলেছেন।আমার জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছেন আপনি।”

“আরে বাবা তুমি কেন এমন করছো,সেটা তো বলো আমাকে।”

“সবকিছু বলবো তবে এখানে নয়,দুই পরিবারের সামনে।”

“পরিবার,এখানে পরিবার আসলো কোথা থেকে?”

“কেন?পারিবারিকভাবেই তো আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে।তাই এই এনগেজমেন্টটা ভাঙ্গার জন্যও তো দুই পরিবারকে লাগবে।তাইনা?”

“মেহেককককককক”

আর কিছু বলার আগেই আমার গাল লাল করে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসিয়ে দিলো মাসফি।আমি হতবাক চাহুনি নিয়ে মাসফির দিকে তাকালাম।মাসফির চোখগুলো লাল বর্ণ ধারণ করেছে।আমার দিকে তাকিয়ে মাসফি কোনোকিছু না বলেই টানতে টানতে গাড়িতে এনে বসিয়ে দিলো।চারপাশের মানুষজনের অবাক চাহুনি দেখে আমি অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।মাসফি কোনোদিকে না তাকিয়ে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগলো।ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপছে এতো স্পিডে গাড়ি চালালে ওও নিজেও মরবে আর আমাকেও মারবে।এদিকে থাপ্পর খাওয়ার পর ভয়ে আর কিছু বলতেও পারছি না আমি।প্রায় বিশ মিনিট পর গাড়ি এসে থামলো আমাদের বন্ধু মহলের আড্ডা দেওয়ার যায়গায়।ওখানে সবাই দাড়িয়ে আছে।মাসফি ইশারায় সবাইকে গাড়িতে এসে বসতে বললো।ওরাও চুপচাপ এসে বসে পড়লো।চারিদিকে পিন পতন নিরবতা।এ যেন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস।নিরবতা কাটিয়ে মিহি বলে উঠলো,

“মাসফি আমরা কোথায় যাচ্ছি?এতো জরুরি তলব কেন?”

মাসফি এখনো চুপচাপ ড্রাইভ করছে।সবাই একের পর এক প্রশ্ন করলেও মাসফি কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালিয়ে একটা জায়গায় এসে থামলো।তারপর আবারো আমাকে টেনে নামিয়ে সোজা একটা বিল্ডিংয়ের সামবে এসে দাড়ালো।আমি সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলাম।কারণ সাইনবোর্ডের উপরে বড় বড় অক্ষরে লেখা “কাজি অফিস”

আমার পাশাপাশি আাকি সবাই ও অবাক হয়ে মাসফির দিকে তকািয়ে আছে।সেদিকে ওর কোনো হেলদোল নেই।ওও সোজা কাজি সাহেবের সামনে গিয়ে বললো,

“আমরা দুজন আজ এখখই বিয়ে করতে চাই।”

আমি এতোটাই শকের মধ্যে আছি যে কথা বলারও ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।কি থেকে কি হয়ে গেলো এসব?আমার ভাবনার মাঝেই মাসফি একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললো,

“সিগনেচার করো।”

“একদম না।আমি সিগনেচার করবো না।”

“সিগনেচার করো বলছি।”

“না আমি মরে গেলেও সিগনেচার করবো না।”

মাসফি আমার দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

“হয় তুমি সিগনেচার করবে।আর নাহলে তোমার সব সার্টিফিকেট আমি নষ্ট করে ফেলবো তোমার স্বপ্ন একজন সিআইডি অফিসার হওয়াও আর হবে না।এখন চয়েস ইজ ইউর’স”

মাসফির কথা শুনে আমার পিলে চমকে উঠলো।এই ছেলেটা খারাপ আমি জানতাম।কিন্তু এতো খারাপ সেটা জানতাম না।আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সবকিছু করতে পারি।কিন্তু এমন কিছু নিয়ে যে মাসফি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করবে এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিলো।

“কি হলো সিগনেচার করবে না?”

বলেই বাকা হাসি দিয়ে অন্যদিকে তাকালো মাসফি।আমিও রাগে-দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে সিগনেচার করে দিলাম।

“এইতো গুড গার্ল মিস ওপস্ স্যরি মিসেস চৌধুরী।”

আমি শুধু ওর দিকে রাগী চোখে তাকালাম।এছাড়া আর কী-ই বা করার আছে আমার।ইচ্ছে করছে এই ভাল্লুকটাকে তুলে আছাড় মারতে।কিন্তু আমার মতো শুটকি মাছ কি আর ভাল্লুককে তুলে আছাড় মারতে পারবে।এই ভেবেই আমার কান্না আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।মাসফি আবারো আমাকে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসলো।তারপর বাকি সবাইকে বললো,

“তোদেরকে এখানে সাক্ষী হওয়ার জন্য ডেকেছিলাম।আমাদের বিয়ে তো হয়ে গেলো এখন তোরা যা।”

“যাবো মানে,তুই এসব কি করলি সব মাথার উপর দিয়ে গেলো আমাদের।”

সানভির কথায় বাকি সবাই তাল মিলিয়ে তুলি বললো,

“তোদের তো আর দুমাস পড়েই বিয়ে হয়ে যেতো। তাহলে এইভাবে বিয়ে করার কি দরকার ছিল?”

“আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই এভাবে বিয়ে করেছি।এখন তোরা যা তো।বাকি কথা পড়ে বলবো।”

আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে আবার ড্রাইভ করতে লাগলো।আমার হাত রীতিমতো ব্যাথা করছে।সকাল থেকে আমার হাত টানতে টানতে শাঁকচুন্নিদের মতো লম্বা করে ফেলেছে শালা ভাল্লুক।

“আমাকে মনে মনে বকা দেওয়া শেষ।”

মাসফির কথা শুনে আমি বিরক্ত হলাম প্রচুর।কারণ এই ছেলের অত্যাচারে আমি মনে মনে কোনো কথা বলেও শান্তি পাইনা।কিভাবে যেন আমার মনের কথাও বুঝে যায়।

“নামো।”

“নামবো কেন?”

“তো কি এখানেই বসে থাকতে চাও সারাদিন?”

মাসফির কথায় আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম এটা মাসফিদের একটা ফার্মহাউস।এখানে এর আগেও কয়েকবার বন্ধুরা সবাই মিলে আসা হয়েছে পার্টি করার জন্য।আমি গাড়ি থেকে নেমে ধীরে ধীরে ভেতরে যেতে লাগলাম।তখনই মাসফি আমাকে……

চলবে?

হার্টলেস পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0

#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_11 [ Last Part ]
,,
,,
,,
,,
হঠাৎ চোখ খুলে গেলো নীড়ের, শরীর ঘেমে একাকার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো মাঝ রাত ৩ টা বাজে পাশে তাকিয়ে দেখলো ইতু ছোট বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে। নীড় শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল, নিজেই নিজেকে বলতে লাগল, ওফ এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম, মামুন তো জেলে, কি ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখলাম।

নীড় ইতুর কাছে গিয়ে ইতুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।ইতুর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,তোকে ছাড়া আমার থাকা সম্ভব না ইতু জীবনের ভালো খারাপ সব সময়ে আমার তোকে চাই খুব খুব ভালোবাসি। বলে ইতুর কপালে ভালোবাসা দিয়ে দিলো।অনেক সময় ধরে শুয়ে থেকেও নীড়ের চোখে ঘুম আসলো না।তাই আস্তে করে উঠে বারান্দায় চলে গেল।

আকাশের দিকে আপন মনে তাকিয়ে রইলো, হঠাৎ পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরলো। নীড়ের বুঝতে বাকি রইলো না কে, নীড়ের ঠোট প্রসারিত হলো ইতুর হাতের উপর হাত রেখে বলল, কখন উঠলি।ইতু আগের ন্যায় থেকে বলল,

– মাএ হঠাৎ চোখ খুলে গেলো একটা খুব সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি

– তাই কি দেখেছিস

– বলব আগে তুমি বল এত রাতে এখানে কেন?

– খারাপ স্বপ্ন দেখেছি তাই আর ঘুম আসছে না।

– ওহ কি দেখেছো

– ওইসব না হয় বাদ দে, তুই কি দেখেছিস

– দেখেছি আমার টুইন বেবি হয়েছে

– কি???? হাহা খুব ভালো কথা।

ইতু মুচকি হেসে নীড়ের কাঁধে মাথা রাখলো।নীড় ও শান্তিতে পূর্ণরায় আকাশের দিকে তাকালো।
হঠাৎ ইতু বলল,

– শোনো

– হুম বল

– তুমি আমাকে তুমি করে বলবা নইলে আমাদের ছেলে মেয়েরা কি ভাববে

– ওকে তাহলে তোকেও ভাইয়া বলা বন্ধ করতে হবে নইলে আমার বাচ্চারা আমাকে মামু ডাকবে

– হিহিহিহি হিহিহি

– এমন করে হাসিস না বুকে চিনচিন ব্যথা করে

– হুম ঢং। আচ্ছা শোনাে

– হুম বলো

– আমি মা হতে চাই, কত সুন্দর হবে বল যদি আমাদের টুইন বেবি হয়

– কি? এখনি আগে আরো কিছু দিন যাক

– না এখনি

– ভেবে বলছিস তো

– ওই তুমি আবার তুই বলছো

– তুমি না হয় বাহিরে বলব, কিন্তু তোকে তুই ডাকতে বড্ড ভালো লাগে

– হুম বুঝলাম কিন্তু আমার বেবি চাই

– ওকে আমার কোনো প্রবলেম নেই।

বলেই ইতুকে পাজ কোলে উঠিয়ে নিলো।ইতু নীড়ের গলা জরিয়ে ধরে মাথা লুকালো নীড়ের বুকে।

______________________________________

বৃষ্টি আর মেঘ অনেক খন ধরে চুপচাপ বসে আছে, সাথে আছে ধোয়া উঠা কফি।এসির মাঝেও মেঘ প্রচুর ঘামছে।বৃষ্টির অপেক্ষার প্রহর শেষ করার জন্য আবার বলল,

– মেঘ ভাইয়া

– হুম

– কি বলবেন বলেন

– হুম বলছি

– কতক্ষণ ধরেই তো বলছেন, বলছি বলছি কিন্তু কিছুই তো বলছেন না।

– হুম আসলে বৃষ্টি আমি তোমাকে বলতে চাই যে যে

– হুম বলেন

– আসলে বৃষ্টি আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি, আসলে পছন্দ না ভা,ভ,,ভালোবাসি।

-…………………………………………….

– প্লিজ তুমি রাগ কর না, আমি তোমাকে জোর করছি না। আমি শুধু আমার অনুভূতি গুলো তোমাকে জানাচ্ছি, বাকি সব তোমার ইচ্ছে।

বৃষ্টি বসা থেকে উঠে বলল, আমি আসি।বলে উঠে গেল। মেঘ মুখটা বাচ্চাদের মতো ছোট করে মাথা নিচু করে ফেলল। বৃষ্টি একটু পিছনে ঘুরে দেখলো মেঘ বেখেয়ালি হয়ে কফির দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘের মুখ দেখে বৃষ্টি মৃদু হেসে চলে গেল।

____________________________________________

ফুল দিয়ে মোড়ানো বিছানায় বসে আছে বৃষ্টি। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে গুটিসুটি হয়ে বসলো।মেঘ এসে আস্তে করে বসলো তারপর বলল,

– বৃষ্টি

– হুম

– থ্যাংক ইউ সো মাচ

-??????????

– আমার জীবনে আসার জন্য, তুমি আমাকে একবার ভালোবেসে বিশ্বাস করতে পারো কখনো কষ্ট দেবো না প্রমিস।একটা সুযোগ দেবে আমাকে।

বৃষ্টি মুচকি হেসে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ বৃষ্টির চোখের সামনে পড়া চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দিলো।বৃষ্টি খানিকটা ভড়কে গেলো।মেঘ মুচকি হেসে বলল, আজ খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে। চাঁদ দেখার সঙ্গী হবে।বলে মেঘ বৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো,বৃষ্টি আস্তে করে মেঘের হাতে হাত রাখলো।দুজন এক সাথে বারান্দায় গিয়ে চন্দ্রবিলাস করতে লাগল।বৃষ্টি চাদ দেখতে দেখতে হঠাৎ মেঘের দিকে তাকালো, মেঘের দৃষ্টি বৃষ্টির দিকে।বৃষ্টি লাজুক ভঙ্গিতে বলল, ওভাবে কি দেখছেন।মেঘ হঠাৎ বৃষ্টির হাত ধরে ভালোবাসার আবেশে বলল,বৃষ্টি ভালোবাসবে আমাকে। বৃষ্টি কিছু বলল না মাথা নিচু করে লাজুক হেসে মেঘকে জরিয়ে ধরলো। মেঘ প্রথমে অবাক হলেও নিজেকে সাভাবিক করে মুখে হাসি নিয়ে আগলে ধরলো বৃষ্টিকে।

____________________________________________

এক রমণী বৃষ্টি বিলাসে মাতোয়ারা হয়ে আছে, চারপাশের সব ভুলে আনন্দে বৃষ্টির শুভ্র বিন্দুর মতো চকচক করছে। বৃষ্টির বিন্দুরা যখন আলতো করে ছুয়ে দেয় চোখে মুখে তখন তার মর্মদেশে ছেয়ে যায় এক রাশ প্রশান্তি, মোহনীয় এক হাসি বিরাজ করে তার অধরে।নীড় অনেক ক্ষণ ধরে দেখে চলেছে ইতুর পাগলামো।নীড় পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল,

– আমি ভাবছি তুই বেবি সামলাবি কিভাবে

– কেন

– তুই তো নিজেই একটা বেবি

– আগ্গে নয় মহাশয়, আমি আমার বেবি সামলাতে পারব, এই দেখো আমি আমার পেট ভিজতে দেই নিই।

ইতুর কথা শুনে নীড় নিজের হাসি অনেক কষ্টে আটকালো তারপর ইতুর গাল একটা ভালোবাসা দিয়ে বলল, খুব ভালোবাসি পাগলি তোকে আর আমাদের বেবি টাকে।ইতু মুচকি হেসে নীড়ের বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে বলল, আমিও ভিশন ভিশন ভালোবাসি।

★★★সমাপ্ত★★★

হার্টলেস পর্ব-১০

0

#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_10
,,
,,
,,
,,

সবার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ, চারপাশের পরিবেশ থমথমে। পুরো বাড়ি যেনো প্রাণহীন হয়ে পড়েছে।সেলিনা বিছানায় শুয়ে আছে ইতুর খবর পাওয়ার পর যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, নিজের উপর রাগ হচ্ছে ভিশন মেয়েটাকে সাথে নিয়ে গেলে হয় তো এমন হতো না। বৃষ্টি সেলিনার সামনে বসে বলল,

– খালা মণি কিছু খেয়ে নেও তোমার শরীর খারাপ করবে

– কি হয়ে গেলো এইসব মেয়েটা কোথায় আছে কোন হালে আছে আল্লাহ ভালো জানে।

– তুমি চিন্তা কর না নীড় ভাইয়া দ্রুত খুঁজে বের করবে ইতুকে

– আমার ছেলেটা একদম ভেঙে পড়েছে কাল থেকে কিছু খায় নিই,মেয়েটাকে আমাদের সাথে নিয়ে গেলে আর এমন কিছু হতো না।

– খালা মণি প্লিজ দুশ্চিন্তা কর না ইতু ঠিক আছে

________________________________________

ইতুর চোখ খোলার পর নিজেকে একটা রুমে আবিষ্কার করলো, চারপাশে আরো অনেক মেয়ে,ইতু এক ঢোক গিলে চারপাশ ভালো মতো তাকালো।নিজের হাত নাড়াতে গিয়ে দেখলো হাত পা বাধা,সব গুলোর মেয়ের এক অবস্থা। ইতু পাশের একটা মেয়েকে বলল,

– আপু এটা কোন জায়গা আর আপনাদের এই অবস্থা কেন?

– তোমাকে আজকে নিয়ে এসেছে

– মানে

– আমাদের অনেক দিন ধরে আটকে রেখেছে, আমাদের বাহিরে পাচার করে দেবে

– কি?????

– হুম এই জীবন থেকে কি কখনো বের হতে পারব না

ইতু বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো, এসব কি শুনছে কান যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না।ইতু মনে মনে বলতে লাগল, নীড় ভাইয়া তুমি কোথায়। ভেবেই ইতু কান্না করে দিলো।হঠাৎ রুমের দরজা খুলে কয়েকটা ছেলে ভিতরে ঢুকলো সবার হাতে ইনজেকশন, এক একটা মেয়ের কাছে এসে ইনজেকশন পুশ করছে মেয়ে গুলো চিৎকার করে কান্না করছে, আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে মেয়ে গুলো। ইতু শুকনো একটা ঢোক গিলে সামনে তাকালো।আস্তে আস্তে ছেলে গুলো যত ইতুর কাছে আসছে ইতুর যেনো ভয়ে জান বেড়িয়ে যাচ্ছে। একটা ছেলে ইতুর কাছে এগিয়ে এসে ইতুর হাতের বাহুতে ইনজেকশন পুশ করলো,যন্রণায় ইতু চোখ খিচে ফেলল।আস্তে আস্তে ইতুর শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। ইতুর চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।ইতু হালকা কন্ঠে বলে উঠলো, নীড় ভাইয়া কোথায় তুমি।

______________________________________________

পুরো রুম ছেলেটার আর্তনাদে কেপে উঠছে, কিন্তু এতে নীড়ের বিন্দু মাএ ও মায়া হচ্ছে না। ছেলে টা গোঙাতে লাগল,নীড় ছেলেটার মাথার চুল ধরে মুখ তুললো,নীড় অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তেজি কন্ঠে বলল,

– মেয়ে গুলোকে কোথায় আটকিয়ে রেখেছে উওর দে

বলেই নীড় হুঙ্কার দিয়ে আবার এলোপাথাড়ি আঘাত করতে লাগল।মেঘ এসে নীড়ের হাত আটকে বলল,নীড় ছেলেটা মারা যাবে শান্ত হো তুই।নীড় মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল, কিভাবে শান্ত হবো আমার ইতু কষ্টে আছে এই রাসকেল গুলোকে তো আমি শেষ করে ফেলল।বলেই নীড় ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,রনি ওর হাতের নখ উঠিয়ে ফেলো একটা একটা করে।
রনি নীড়ের কথা মতো একটা হাতের আঙ্গুলের নখ উঠিয়ে ফেলল,ছেলেটা আর্তনাদ করে উঠলো।

নীড় ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,,, এখনো চুপ থাকবি এত অনুগত তুই, হয় তো মামুন তোকে অনেক টাকা দিয়েছে কিন্তু তুই তো আর বাচবি না এত টাকা দিয়ে কি করবি যদি বলে দিস তাহলে বাচবি।ছেলেটাকে কিছু বলতে না শুনে নীড় রনিকে বলল,রনি তোমার কাজ কর।রনি ছেলেটার আরেকটা হাতের আঙ্গুল ধরতেই ছেলেটা অস্থির অবস্থায় বলল,

– বলছি স্যার ববব,বলছি

– শুরু কর

– ওখানে মোট চারশের বেশি মেয়ে বন্দি আজই বিকেলের দিকে তাদের পাচার করা হবে,জাহাজে করে সমুদ্র দিয়ে পার হবে।

– দ্রুত লোকেশন বল।

____________________________________________

আকাশের অবস্থা ভিশন খারাপ, হালকা ঝড়ো বাতাস বইছে। সমুদ্রের পানি এলোমেলো ভাবে স্রোত তুলছে এই পানির উপর ভাসছে এক জাহাজ।জাহাজের কয়েকটা রুমে অনেক মেয়ে বন্দি সবার চোখে পানি চকচক করছে কারো বুঝতে বাকি নেই তাদের জীবনের কালো অধ্যায়ের সূত্র পাত শুরু হয়ে গেছে।

ইতু হালকা চোখ খুললো অনেক মেয়েই এখনো অজ্ঞান, ইতু চারপাশে চোখ বুলালো,হঠাৎ দরজা খুলে একটা লোক প্রবেশ করলো। লোকটা সবার দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল, বাহ আসমানের পরী তো সব আমার কোবলে অনেক আয় হবে তোমাদের দিয়ে পরীরা।
ছেলেটা ইতুর দিকে তাকিয়ে ধির পায়ে ইতুর কাছে এসে এক হাটু ভেঙে বসলো তারপর এক পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল,

– মিসেস নীড়, একজন সম্মানিতো অফিসারের ওয়াইফ আপনি এটাই আপনার দোষ।আপনার হাসব্যান্ড প্রচন্ড ঝামেলা করেছে আমার সাথে অনেক লোস করিয়ে দিয়েছে, আমারও তো প্রতিশোধ নেওয়ার ছিলো।উনারও লস করিয়ে দিলাম আপনাকে নিয়ে এসে। আপনার হাসব্যান্ড নীড় আপনাকে প্রচুর ভালোবাসে তাই তো উনার দূর্বল জায়গায় আঘাত করলাম বেচারার হাল একদম বেহাল।কিন্তু আমি কল্পনা ও করতে পারি নিই আপনি এতটা মোহনীয় দেখতে বাহ অপরুপ। আপনাকে বিক্রি করলে অনেক আয় হবে। আপনার হাসব্যান্ড আর আপনাকে বাচাতে পারবে না বেচারা এত মেয়েকে বাচালো কিন্তু আফসোস নিজের ওয়াইফের রক্ষা করতে পারলো না।

বলেই লোকটা হাসতে হাসতে বেড়িয়ে পড়লো। ইতুর প্রচুর ঘৃণা হচ্ছে মানুষ এতটাও জঘন্য হয়।
ইতু চোখ বন্ধ করে নীড়কে ভাবতে লাগলো হয় তো আর কোনো দিনই দেখা হবে না, কোনো দিনই নীড়কে ভালোবাসতে পারবে না।হঠাৎ জাহাজ খুব জোরে ধাক্কা খেলো সব গুলো মেয়ে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো।বাহিরে হয় তো কিছু হচ্ছে। হঠাৎ দরজা খুলে কয়েক জন লোক গান হাতে ঢুকে পড়লো,তারপর নীড় ঢুকলো। ইতু মনে হয় জান ফিরে পেলো।নীড় সবার দিকে তাকিয়ে ডান দিকে তাকাতেই ইতুকে দেখলো।নীড় দ্রুত গিয়ে হাত পায়ের বাঁধন খুলে পাগলের মতো পুরো মুখে চুমু খেতে লাগলো নীড়ের জান যেনো ফিরে পেলো।আশেপাশে মানুষ আছে তা যেনো ভুলেই গেছে নীড়। ইতু নীড়কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।নীড় হেসে বলল, কাদছিস কেন পাগলি আমি চলে এসেছি তো আমি থাকতে তোর কিছু হতে দেবো না।

মেঘ ও মনে শান্তি পেলো মুচকি হেসে সবার উদ্দেশ্যে বলল, তোমরা সবাই এখন বিপদ মুক্ত আমরা তোমাদের উদ্ধার করতে এসেছি,তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরতে পারবে।সব গুলোর মেয়ের মুখে হাসি ফুটলো।

____________________________

নীড় গম্ভীর কণ্ঠে বলল, মামুন মেয়েটাকে ছেড়ে দে নয় তো তোর জন্য ভালো হবে না।মামুন পাগলের মতো হেসে বলল, আমি জানি আমার আর রক্ষে নেই কিন্তু অফিসার অনেক ক্ষতি করেছেন আমার আপনার ক্ষতি না করে শান্তি পাবো না।নীড় রেগে বলল, এখনো এইসব ভাবছিস কোন সাহসে মেয়েটাকে ছেড়ে দে সমুদ্রের মাঝে তোর পালাবার কোনো পথ নেই।
বা দিকে কয়েকটা মেয়ের সাথে ইতু দাড়িয়ে ছিলো।মামুন হঠাৎ পৈশাচিক হেসে বিদুতের মতো ইতুর কাছে গিয়ে ওর হাত টান দিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিলো।সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো নীড় যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না।নীড় পাগলের মতো কোনারে গিয়ে সমুদ্রের স্রোতের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, সেখানে ইতুকে দেখা যাচ্ছে না।সেখানে শুধু উথালপাথাল ঢেউ।মামুনকে এর মাঝে কয়েক জন ধরে ফেলেছে, নীড়ের হাবভাব বেশি ভালো দেখাচ্ছে না। নীড় পানিতে লাফ দেওয়ার আগে মেঘ নীড়কে ধরে ফেলল।নীড় মেঘের দিকে ভেজা চোখে তাকালো অস্থির হয়ে বলল,মেঘ আআ,আমার ইতু সমুদ্রে পড়ে গেছে ও সাতার জানে না অনেক ভয় পায় পানি, আমাকে ছাড় ওকে নিয়ে আসতে হবে তো।মেঘ চোখ বন্ধ করে ফেলল আর সহ্য হচ্ছে না নীড়ের মতো শক্ত একটা ছেলের এই অবস্থা।

আলো ডুবে গেছে আধারের মাঝে, পাখিরা যেন মুধুর সুরে গান গাওয়া ভুলে গেছে।নীড় নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সমুদ্রের দিকে। এই সমুদ্রে নিজের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলল নীড়।হঠাৎ নীড় ডান দিকে তাকাতে দেখলো শাহিন সাহেব দাড়িয়ে আছে। নীড় উঠে দাড়ালো ধির পায়ে শাহিন সাহেবের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাড়ালো।শাহিন সাহেব হঠাৎ নীড়কে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো, আর বলতে লাগল,, নীড় আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে আন আমার মেয়েটা একা থাকতে খুব ভয় পায়।বলে শাহিন সাহেব কান্নায় ভেঙে পড়লো।

_________________________________________

এলোমেলো ভাবে পা ফেলে রুমে ঢুকলো নীড়, নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে,এতো টা অসহায় নিজেকে কখনোই মনে হয় নিই নীড়ের। প্রকৃতি বড্ড নিষ্ঠুর।রুমের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতুর সৃতি। এই বুঝি কানের কাছে এসে বলল,নীড় ভাইয়া।নীড়ের চোখ বারান্দায় পড়তে দেখলো ইতু দাড়িয়ে আছে, নীড়ের ঠোটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো, ইতুর পিছনে গিয়ে হেঁসে বলল,ইতু তুই এসেছিস। বলে চোখের পানি মুছে ঠোটে হাসি নিয়ে বলল,আমি জানতাম তুই আসবি।নীড় ইতুর কাধে হাত রাখতেই ইতু হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।নীড় হাটু ভেঙে বসে পড়লো আর্তনাদ করে উঠলো, নীড়ের আর্তনাদে যেনো বাড়ির প্রতিটি জায়গা কেপে উঠলো।

#চলবে…………🖤

হার্টলেস পর্ব-০৯

0

#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_09
,,
,,
,,
,,
নীড়ের মাঝে থমকে গেল ইতু, নীড়ে অনুভূতি স্পষ্ট জানান দিচ্ছে ইতুকে যে নীড় কতটা ভালোবাসে। ইতুর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে নীড় আস্তে করে ছেড়ে দেয় ইতুকে।ইতুকে ছেড়ে দিয়ে নীড় ভিতরে চলে যায়। ইতু কিছু খন চুপ হয়ে রইলো হঠাৎ গাড়ি স্টার্ট এর আওয়াজ পেয়ে বারান্দা দিয়ে নিচে তাকালো।দেখলো নীড় গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে।ইতু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো এত রাতে কোথায় যাচ্ছে। রাজ্যের দুশ্চিন্তা হানা দিলো ইতুর মস্তিষ্কে।

___________________________________

সারা দিন নীড় বাড়ি ফিরে নিই,ওই যে রাতে বের হলো তারপর থেকে কথাও হয় নিই।ইতু সারা দিন চিন্তায় ছিলো।ঘড়িতে এখন সময় রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই ইতু সোফায় বসে আছে। তখনি দরজা দিয়ে নীড় ভিতরে ঢুকলো। নীড়কে দেখে ইতু মনে হয় প্রাণ ফিরে পেলো।এক সেকেন্ড ও না ভেবে নীড়কে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিল।

নীড় অবাক হয়ে গেলো, নিজেকে সাভাবিক করে দু হাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো ইতুকে, শান্তনা দিতে দিতে বলল,আরে কি হয়েছে কান্না করছিস কেন আরে বলবি তো। ইতু কাদু কাদু কন্ঠে বলল, কাল রাত থেকে কোথায় ছিলে একটা কল করলে কি হতো।নীড় বুঝতে পারলো ইতু খুব চিন্তায় ছিলো সারা দিন, নীড় বলল, আসলে অনেক ব্যস্ত ছিলাম তাই কল করতে পারি নিই।

ইতু নীড়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো, নীড়কে আসলেই খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ইতু নীড়কে বলল, ঠিক আছে তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও। বলেই ইতু বেড়িয়ে পড়লো নীড় ইতুর দিকে তাকিয়ে আনমনে হেসে উঠলো। ইতু নীড়ের জন্য কফি বানিয়ে রুমে গেল,তখনি নীড় ওয়াসরুম থেকে বের হলো।
নীড়কে স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে, ইতুর হ্রদয় জুড়িয়ে গেলো,এই মানুষটার জন্যই তো ইতু অস্থির হয়ে থাকে,এই মানুষটাকে দেখলেই তো ইতুর ঠোঁটে হাসি ফুটে।

ইতুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীড় ভ্রু কুচকে বলল, কিরে কি দেখছিস এতো।ইতু নীড়কে কফি এগিয়ে দিলো।নীড় কফি নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো,তারপর টাওয়াল ইতুকে দিয়ে বলল আমার চুল মুছে দে তো।ইতু বিছানায় বসে নীড়ের পিছনে গিয়ে যত্নসহকারে নীড়ের চুল মুছে দিতে লাগল। নীড় মুচকি হেসে কফি মুখে দিয়ে বলল,

– আজ পড়তে বসে ছিলি

– হুম

– ভালো

– তুমি খেয়েছো

– হুম বাহিরে গেয়েছি তুই

– হুম অল্প খেয়েছি

– অল্প কেন?

– তোমার দোষ , তোমার চিন্তায় সারা দিন আমার যা তা কেটেছে

– সরি অনেক চাপে ছিলাম

– একটা সত্য কথা বলবা

– হুম বল

– তুমি কি নিয়ে এতো চিন্তায় আছো, আমাকেও কোথাও যেতে দেও না।

– আসলে এই কেসটা নিয়ে চিন্তায় আছি এই আর কি কিন্তু আমার একটা কথা রাখবি

– বল না

– আমি না বলা পযন্ত বাড়ি থেকে বের হবি না

– কিন্তু কেন?

– প্লিজ প্রশ্ন করিস না পরে তোকে বলব

– ওকে

নীড় আবার কফিতে চুমুক দিলো।ইতু অনেকটা কাচুমাচু হয়ে বলল,নীড় ভাইয়া একটা কথা ছিলো। নীড় বলল,হুম বল। বলে আবার কফিতে চুমুক দিলো। ইতু ফট করে বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। নীড়ের কাশি উঠে গেলো।নিজেকে সাভাবিক করে ইতুর দিকে অবাক চোখে তাকালো। ইতু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল তারপর বলল, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

নীড় ইতুকে হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসলো তারপর বলল, কি বললি আবার বল।ইতু মাথা নিচু করে বলল,আমি তোমাকে ভভ,,ভালোবাসি। নীড় যেনো অজানা পৃথিবীতে হারিয়ে গেলো,নিজের ভালোবাসার মানুষটার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে যে কি সুখের যা ভাষায় বুঝানো দায়।নীড় অবাক হয়ে বলল,ইতু তুই সত্যি।আর কিছু বলার আগে ইতু নীড়কে জরিয়ে ধরে বলল, হুম খুব খুব ভালোবাসি তোমাকে কথাটা অনেক বার বলতে গিয়েও বলতে পারি নিই কিন্তু আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না।নীড়ও ভালোবাসার আবেশে ইতুকে জরিয়ে ধরে শান্তির শ্বাস ফেলল মুচকি হেসে ইতুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো।

_______________________________________

নীড়ের চোখে পানির ছোয়া পেতেই চোখ খুলে তাকালো, চোখের সামনে এক অতিসুন্দরী রমণীকে আবিষ্কার করলো,পড়নে লাল শাড়ি ভেজা চুল গুলো ঝাড়ছে। নীড় বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো ইতুকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল, আজ সকাল সকাল এত সাজগোজ যে সকাল বেলা পাগল করতে চাস আমাকে, আগে বল শাড়ি পড়লি কিভাবে? ইতু বলল,বৃষ্টি আপু পড়িয়ে দিয়েছে। নীড় বলল, ওহ।ইতু নীড়কে বলল,যাও ফ্রেশ হও।নীড় বলল,হুম যাচ্ছি।

ইতু মোবাইলে হিনার সাথে কথা বলছিলো।হঠাৎ ভিতর থেকে নীড় ডেকে উঠলো। ইতু কল কেটে ভিতরে গেলো তারপর বলল, কি হয়েছে। নীড় মুচকি হেসে ইতুর কাছে এসে, ইতুর চোখের সামনে বেবি হেয়ার গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বলল, আমি আসি সাবধানে থাকিস আর পড়তে বসবি কিন্তু ভালোবাসি।বলে নীড় ইতুর কপালে ভালোবাসা দিয়ে ইতুর গাল টেনে চলে গেল। ইতুর মন দখল করে নিলো এক রাজ্য ভালোবাসা, লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ফেলল, ইতুর সবটুকু জুড়ে রয়েছে শুধু নীড় আর নীড়।

__________________________________________________

নীড় মেঘের সাথে কথা বলছিলো তখনি সেলিনার ফোন কল আসলো।নীড় বেশ অবাক হলো কারণ এই সময় তো কল করে না, আর দেরি না করে কল রিসিভ করলো।তারপর বলল,,,

– হ্যালো মা বল

– নীড় তুই আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিস

– কেন

– আমি আর বৃষ্টি তোর মামার বাড়ি এসেছি, বেশী চিন্তা করিস না কাজের লোকেরা তো আছেই।

– ঠিক আছে, তোমরা সাবধানে থেকো

– আচ্ছা তুইও।

_________________________________________

মেঘ মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে নীড়ের কেবিনে আসলো,এসে চেয়ার টেনে বসে বলল,

– নীড় আমরা সাকসেসফুল

– মানে

– মানে হলো মামুন মেয়ে গুলোকে কোথায় আটকিয়ে রেখেছে আমরা জায়গাটা চিনেছি

– সত্যি দ্যাটস গ্রেট সবাই রেডি এখনি বের হবো

– হুম আমরা রেডি

– ভেরি গুড ল্যাটস গো

__________________________________________

নীড় বাড়ির গেটের সামনে এসে কখন থেকে হোন দিচ্ছে কিন্তু মিজান গেট খুলছে না।নীড় বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেটের কাছে ছোট দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো,মিজানের বসার জায়গায় গিয়ে নীড়ে অবাক হয়ে গেল।মিজানের হাত পা মুখ বাধা, মিজানের কপাল দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। নীড় দ্রুত গিয়ে বাধন খুলে দিলো তারপর অস্থির হয়ে বলল,

– মিজান এই মিজান তোর এই অবস্থা কে করলো

– নীড় ভাইয়া আপু মণি

বলেই মিজান কান্না শুরু করে দিলো,নীড়ের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো,দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো, চারপাশের অবস্থা একদম এলোমেলো, বা দিকে চোখ পড়তেই দেখলো কাজের খালা সেন্সলেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।

নীড় দৌড়ে রুমে গিয়ে চারপাশ খুজতে লাগল আর ডাকতে লাগলো,ইতু ইতু কোথায় তুই ইতু।রুমে কেউ নেই পুরো রুম এলোমেলো, ফ্লোরে চোখ পড়তেই দেখলো ইতুর হাতের কাচের চুড়ি ভেঙে ফ্লোরে পড়ে আছে। নীড় কাচের টুকরো গুলো হাতে নিলো, পরক্ষণেই দৌড়ে বেড়িয়ে পড়লো রুম থেকে, সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে নীড়ের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো।ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কিছু লোক ইতুকে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর ইতু বার বার ছেড়ে দিতে বলছে আর কান্না করছে।

নীড়ের যেনো সারা শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো,ওর ভালোবাসার মানুষটাকে এভাবে টেনে হেচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, নীড়ের যেনো পুরো দুনিয়া কেপে উঠলো, রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ফুটেজের দিকে নীড়ের চোখ বেড়ে পড়ছে ক্রোধ।

#চলবে…….🖤

হার্টলেস পর্ব-০৮

0

#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_08
,,
,,
,,
,,

ইতু রুমের ভিতরে গেলো হালকা সেজে নীড়কে ডেকে উঠলো।নীড় ইতুর কাছে গিয়ে দেখলো ইতু শাড়ি অর্ধেক পড়ে দাড়িয়ে আছে, নীড় মুচকি হেসে ইতুর কাছ থেকে শাড়ি নিয়ে পড়াতে লাগল আর বলল,শাড়ি পড়া কখনো শিখবি না।ইতু ভ্র কুচকে বলল,

– কি এটা কেমন কথা

– হুম সব সময় আমি পড়িয়ে দেবো

– তুমি পারো কিভাবে

– ইউটিউব আছে না

– মেয়েরা পড়ছিল আর তুমি দেখেছো৷ ( খানিকটা রেগে সরু চোখে তাকিয়ে বলল ইতু )

– আরে ন,না পুতুলকে পড়াচ্ছিলো ওটা দেখেছি

– সত্যি তো

– হুম

শাড়ি পড়ানো শেষ করে নীড় ইতুকে ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করে মুচকি হেসে বলল, অপরুপ।
নীড় ইতুর কাছে এসে বলল, তুই এতো সাংঘাতিক দেখতে কেন? ইতু ভ্রু কুচকে বলল, আমি মানে??? নীড় মুচকি হেসে ইতুর মাথায় একটা আস্তে থাপ্পড় দিয়ে বলল,গাধী। বলে নীড় আবার বারান্দায় গেলো।ইতুও পিছনে গিয়ে নীড়ের সাথে দাড়ালো।

বেশ কিছু খন দুজন চুপ থেকে ইতু হঠাৎ বলল, তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে খুব টেনশনে আছো।নীড় ইতুর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ ইতুর কোমড় টেনে কাছে নিয়ে আসলো তারপর বলল, তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করেছিলাম তুই কি এখনো রেগে আছিস।ইতু কিছু বলল না চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো, হঠাৎ হিম বাতাসের ঝাপটায়, ইতুর উড়নচণ্ডী চুল গুলো এসে মুখে পড়লো।নীড় হাত দিয়ে তা সরিয়ে দিলো, নীড় আস্তে আস্তে ইতুর অধরের দিকে অগ্রসর হতে লাগল।

হঠাৎ এমন হওয়া ইতু অনেক টা ঘাবড়ে নীড়ের কাছ থেকে সরে আসলো।নীড় নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাটির দিকে তাকিয়ে আহত কন্ঠে বলল, সরি। বলে নীড় চলে যেতে নিলেই ইতু নীড়ের হাত ধরে ফেলল,নীড় স্তব্ধ হয়ে ইতুর দিকে তাকালো। ইতু হঠাৎ পায়ের আঙ্গুল উঁচু করে নীড়ের অধরে অধর ছোয়ালো,নীড় চরম মাএায় অবাক হলো, বেশ কিছু খন পর ইতু সরে এসে নীড়ের বুকে মুখ লুকালো,তারপর বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। কথাটা শুনে নীড়ের চোখ মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো,এক রাজ্য প্রশান্তি বিরাজ করতে লাগলো নীড়ের মর্মদেশে।

হঠাৎ চোখ খুলে গেলো নীড়ের শোয়া থেকে উঠে বসলো, লেম্প টা জ্বালিয়ে দেখলো ইতু এক কর্ণারে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে, নীড় ঘড়ির দিকে তাকালো দেখলো ৪ টা বেজে ০৯ মিনিট। নীড় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ইতুর দিকে তাকালো আর ভাবতে লাগল, এটা স্বপ্ন ছিলো, যদি এটা সত্য হতো।

____________________________________

নীড় শার্ট পড়ছিল এখনি বের হবে,তখনি ইতু নীড়ের জন্য কফি নিয়ে আসলো। কফি নীড়ের সামনে রেখে বোরখা বের করলো,তা দেখে নীড় বলল,

– তুই কি ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছিস

– হুম

– না যাওয়া লাগবে না

– মানে???

– যে দিন ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস থাকবে শুধু সে দিন যাবি, আর এমনি হিনার কাছ থেকে নোট নিয়ে নিস।আমি ওকে বলে দেবো ও বাড়ি এসে তোকে দিয়ে যাবে।

– এসব কি বলছো, তুমি আমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছো

– বন্ধ করছি না, শুধু যে দিন ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস থাকবে শুধু সে দিন যাবি

– না

– ইতু আমি তোর সাথে কোনো তর্ক করতে চাই না। আমি যা বলেছি তা হবে।

– পেয়েছো টা কি তুমি, তুমি তো বলে ছিলে আমার জীবন আগে যেমন ছিলো এখনো তা আছে, তাহলে তুমি আমাকে এতো বাধা দিচ্ছো কেন?

– লিসেন ইতু,আমি বাধা দিচ্ছি না কিন্তু আমি যত দিন না বলছি তুই বাড়ির বাহিরে এক পা ও রাখবি না।

– না

নীড় রেগে ইতুর হাতের বাহু চেপে ধরে কড়া কন্ঠে বলল, আমি যখন না করেছি তোকে শুনতেই হবে। ইতু করুণ মুখে নীড়ের দিকে তাকালো, এই কি সেই নীড় ভাইয়া না উনি আমার সেই নীড় ভাইয়া হতেই পারে না। ইতুর চোখের কোণে পানি দেখে নীড় ইতুকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল।

__________________________________________

নীড় গম্ভীর ভাব নিয়ে নিজের কেবিনে বসে আছে। মেঘ এসে বলল, নীড়।নীড় মুখ তুলে তাকালো তারপর বলল, কি হয়েছে। মেঘ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,ওই মেয়েটা সিমা ও মারা গেছে। নীড় স্তব্ধ হয়ে রইলো। মেঘ আবার বলল, মেয়েটার বাবা এসেছে তোর সাথে দেখা করতে চায়।নীড় মাটির দিকে তাকিয়ে বলল, আসতে দে।

মেঘ লোকটাকে আসতে বলে, মেয়েটার বাবার মুখ দেখে নীড়ের বুকে চিনচিন ব্যথা করতে লাগল,সন্তানহারা বাবার কি করুণ অবস্থা। নীড় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল, জ্বি বলুন।
মেয়েটার বাবা নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে ভাঙা কন্ঠে বলল,

– আমার মেয়েটার কি দোষ ছিলো স্যার কেন আমার মেয়েটার সাথে এমন হলো।ও খুব ভালো মেয়ে ছিলো আর খুব ছোট ছিলো। আমার পরীর মতো মেয়েটার সাথে এমন কেন করলো।ওর অনেক স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হয়ে গরীবদেরকে ফ্রি তে চিকিৎসা করবে, অসহায় মানুষদের সাহায্য করবে।কিন্তু ওই অমানুষ গুলো আমার মেয়েটাকে..

বলতে গিয়ে মেয়েটার বাবা কান্নায় ভেঙে পড়লো, আবার নিজেকে সামলে বলল,আমি এর বিচার চাই ওই অমানুষ গুলোর শাস্তি চাই, নইলে আমার মতো আরো অনেক বাবার বুক খালি হয়ে যাবে।আমি ওই অপরাধী গুলোর শাস্তি চাই।

বলেই লোকটা আবার কান্নায় ভেঙে পড়লো। নীড়ের চোখ লাল হয়ে গেলো, লোকটার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।লোকটার হাতের উপর হাত রেখে ভরসা দিয়ে বলল,আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যতক্ষণ না ওদের শাস্তি দিতে পারছি আমরাও থামবো না আপনারা অবশ্যই ন্যায় বিচার পাবেন।

__________________________________________________

গোধূলির লগ্ন, বাতাসের তীব্রতা আজ একটু বেশি। কিন্তু তাতে ইতুর কোনো ভাবান্তর নেই সে ছাদে দাড়িয়ে আছে, আর তীব্র বাতাস এসে ছুয়ে দিচ্ছে ইতুকে।হঠাৎ পিছন থেকে বৃষ্টি বলল,ইতু কি করছো চল রুমে চল।ইতু কিছু বলল না বৃষ্টির সাথে রুমে চলে গেল।

বৃষ্টি নিচে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে আসলো, ইতুকে এক কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,

– ইতু

– হুম

– তোমার কি মন খারাপ

– না আপু

– নীড় ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে

– হঠাৎ এই কথা কেন?

– না আসলে এটা তোমাদের নিজস্ব ব্যাপার তবু তোমাদের বিহেভিয়ার এতে তাই প্রকাশ পাচ্ছে।
– আসলে

– বলতে না পারলে বল না, আমি জোর করব না কিন্তু নীড় ভাইয়া কিন্তু তোমাকে খুব ভালোবাসে।

-……………………………………..

– আর এইসব ছোট খাটো ঝগড়া সবারই হয়, কিন্তু এসব ঝেড়ে ফেলাই ভালো। হয় তো নীড় ভাইয়ার কোনো কাজে তোমার খারাপ লেগেছে। কিন্তু এসব ভুলে গিয়ে সামনে আগানো উচিৎ

– হুম

_________________________________________

নীড় বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলো,ইতু কিছু দিন ধরে কেমন চুপচাপ হয়ে আছে, হুম না ছাড়া কোনো কথাই বলে না নীড়ের সাথে। নীড়ের একটু ভালো লাগে না সব কিছু এলোমেলো লাগে নীড় ইতুকে এমন মেনে নিতে পারছে না।নীড় ধির পায়ে ইতুর পাশে গিয়ে দাড়ালো। বেশ কিছুখন চুপ থাকার পর নীড় বলল,

– রাতে খেয়েছিস

– হুম

– আজ পড়তে বসে ছিলি, হিনা এসে ছিলো

– হুম

-…………………………..

-………………………………

নীড় পিছনে ফিরে চলে যেতে নিয়েও আবার ইতুর কাছে এসে ইতুর কোমড় জরিয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে , অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আহত কন্ঠে বলল, খানিক ভুল করেছি বলে দূরে চলে যেতে হবে, তাহলে যে এত ভালোবাসি তার জন্য আরো কাছে আসা যায় না।

#চলবে……..🖤