#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_07
,,
,,
,,
,,
ইতু এই মুহুর্তে কি করবে বুঝে পাচ্ছে না, নীড়ের সাথে কি কথা বলা দরকার। ইতুর ভাবনার মাঝে নীড় কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলতে লাগল, আই এম সরি ইতু তোকে হার্ট করার কোনো ইচ্ছে আমার ছিলো না, তুই বুঝবি না যখন তোকে অভাবে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখেছি আমার যেনো জান বেড়িয়ে গিয়ে ছিলো সরি আই এম রিয়েলি সরি।ইতু আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না, উল্টো দিকে ঘুরে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– নীড় ভাইয়া আই এম সরি, আমি ইচ্ছে করে তোমাকে কষ্ট দেই নিই।তুমি প্লিজ এমন কর না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোমাকে এভাবে দেখে।
– এই আবার কান্না শুরু করেছিস চুপ কর
– সরি
– থাম পাগলী, তোর কোনো দোষ নেই তুই সরি বলছিস কেন।এখন ঘুমা অনেক রাত হয়েছে। কাল ভার্সিটি যেতে হবে না।
– হুম আর তুমি
– আমি আবার কি?
– তুমি কাজে যাবে
– হুম তা তো যেতে হবে
– তুমি কাল ছুটি নেও
– সম্ভব না, অনেক কাজ আছে। এখন ঘুমা
বলেই ইতুকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। ইতুও আস্তে আস্তে হাত দিয়ে নীড়কে জরিয়ে ধরলো, নীড় বেশ অবাক হলো ইতু ওকে জরিয়ে ধরেছে নীড় যেন ভালো লাগার রাজ্যে ডুবে গেলো।নীড় হঠাৎ বলল,
– ইতু
– হুম
– আমি কি ঠিক দেখছি তুই কি সত্যি
ইতু হঠাৎ নীড়ের ঠোটে এক আঙ্গুল দিয়ে কথা আটকে দিলো,নীড় পুরো অবাক হয়ে গেলো।ইতু চোখ বন্ধ রেখেই বলল, ঘুমাও।নীড় মুচকি হেসে ঠোটে রাখা আঙ্গুলে চুমু খেতেই ইতু সাথে সাথে আঙ্গুল সরিয়ে নিলো।নীড় মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে নিলো।
______________________________
নীড় কেবিনে বসে আছে, নীড়ের মনটা আজ একটু হালকা কারণ ছাব্বিশ জন মেয়েকে উদ্ধার করতে পেরেছে তাদের আপন জনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে, কিন্তু তাদের মাঝে একটা মেয়েকে খুব নির্যাতন করা হয়েছে।মেঘ এসে নীড়ের সামনের চেয়ারে বসলো।নীড় মেঘকে বলল,
– ওই সিমা মেয়েটার কি অবস্থা
– হসপিটালে আছে ওর বাবা মাও আছে, এত দিন পর মেয়েকে পেয়ে যেমন খুশি হয়েছে, তেমনি মেয়ের এমন অবস্থা দেখে খুব ভেঙে পড়েছে।
– হুম, কিন্তু আমরা যাওয়ার আগেই পালিয়েছে অসভ্যটা ও এখনো আমাদের নাগালের বাহিরে।আরো অনেক মেয়ে আছে যাদের আটকিয়ে রাখা হয়েছে।
– হুম মামুন লোকটা ভিশন খারাপ, এমন কোনো ক্রাইম নেই যে করে নিই।ওকে দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে।
এর মাঝে টেলিফোন বেজে উঠলো। নীড় ফোন ধরে বলল, হ্যালো।অপরের কথা শুনে স্পিকারে দিলো।নীড় আবার বলল, হ্যালো।ওপাশ থেকে একটা লোক ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে বলল,
– কি অফিসার নীড়, আপনি কি ভেবেছেন আমাকে ধরা এতো সহজ হাহাহা
– সেট-আপ
– আরে আরে আস্তে, আপনি আজ অনেক ক্ষতি কইরা দিলেন, অন্যের বউ বোনের জন্য এতো মায়া এতো চিন্তা, যদি আপনার বউ বোন হয় তাহলে কেমন হয়
ইতু ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এসে আয়নার সামনে ভেজা চুল ঝাড় ছিলো আর গুনগুন করছিলো,হঠাৎ পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরতেই আতকে উঠলো। পরক্ষনেই আবার শান্ত হয় গেলো।মৃদু হেসে বলল,
– তুমি এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে
– হুম ভালো লাগছে না তাই তাড়াতাড়ি চলে আসলাম
– ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে নেও, আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসি
– হুম ওকে
ইতু রান্না ঘরে গিয়ে ভালো মতো চা বানিয়ে রুমে গিয়ে দেখে নীড় আগের শার্ট এতেই বিছানায় শুয়ে আছে। ইতু মুচকি হেসে নীড়ের কাছে গিয়ে বসলো।ইতু বলল,না ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়লে যে।নীড় চোখ না খুলেই ইতুর কোলে মাথা রেখে বলল,চুল গুলো নেড়ে দে না বউ।ইতু বউ কথা টা শুনে মুচকি হাসলো তারপর বলল, ফ্রেশ হয়ে নেও। নীড় বলল,না ইচ্ছে করছে না ঘুমাবো আর শোন মেঘ আসলে ডেকে দিস।ইতু নীড়ের চুল গুলো নেড়ে দিতে লাগল।
___________________________________
বৃষ্টি রান্না ঘরে জুস বানাচ্ছিলো,হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। বৃষ্টি গিয়ে দরজা খুললো।বৃষ্টি মেঘকে দেখে মিষ্টি হেসে বলল, কেমন আছেন? মেঘ আগের ন্যায় তাকিয়ে আছে ।বৃষ্টি আবার বলল, শুনতে পাচ্ছেন। মেঘের এতখনে ঘোর কাটলো নিজেকে সাভাবিক করে বলল,
– হুম কিছু বললে
– বললাম কেমন আছেন
– ওহ ভালো তুমি
– আমিও ভিতরে আসুন
– হুম
– জ্বি বলুন কি খাবেন চা নাকি কফি, নাকি ঠান্ডা কিছু
– তুমি যেটা খাওয়াবে
– মানে
– মা,মা,,মানে হলো কফি
– ওকে
– আর শোনা
– হুম বলুন
– নীড়কে ডেকে দেও
– ওকে
বৃষ্টি কফি বানিয়ে মেঘকে দিয়ে, উপরে গেলো নীড়কে ডাকতে গেলো।দরজায় নক করতেই ইতু এসে দরজা খুলে দিলো বৃষ্টিকে দেখে বলল, কিছু বলবা আপু।বৃষ্টি বলল,নীড় ভাইয়াকে বল মেঘ ভাইয়া এসেছে।ইতু বলল,ঠিক আছে।
বৃষ্টি চলে গেল। ইতু গিয়ে নীড়কে ডেকে তুললো,নীড় ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই। ইতু দৌড়ে সামনে গিয়ে বলল, নীড় ভাইয়া শোনো।নীড় বলল,
– বল
– আমি আমাদের বাড়িতে যাব কিছু দিনের জন্য বাবা মা তুতুল সবাইকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।
– এখন না তোকে একা যেতে দেবো না
– কেন তাহলে তুমিও আমার সাথে চলো
– এখন না
– কেন?? প্লিজ
– না ইতু এখন না জেদ করিস না
– না না যাব
– চুপ না করেছি না ( ধমকে বলল নীড় )
ইতু কেঁপে উঠলো ধমক শুনে, ফেস টা বাচ্চাদের মতো করে ফেলল এই বুঝি কেঁদে ফেলবে।নীড় নিজেকে শান্ত করে ইতুর হাত ধরে বলল,ইতু শোন।ইতু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো।
_______________________________________
অনেকটা রাত হয়ে এসেছে। আকাশে বাঁকা অর্ধ চাঁদ দেখা যাচ্ছে। সেই চাঁদের আলো গায়ে মেখে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে ইতু। শীতল পরিবেশ মাঝে মধ্যে ঝড়ো বাতাস এসে ছুঁইয়ে দিচ্ছে ইতুকে। কপালের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো নেড়ে উঠছে সে বাতাসের ঝাপটায়। ইতু এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ কোমড়ে কারো শিতল স্পর্শ অনুভব করলো,সাথে সাথে কেপে উঠলো।ইতু কিছু বলল না।নীড় হালকা কন্ঠে বলল,
– রাগ করেছিস
-……………………….
– সরি ইতু আমি কিছু দিন ধরে খুব চাপে আছি তাই হুটহাট রেগে যাই,তোকে বুঝাতে পারব না তোদেরকে নিয়ে কতটা চিন্তায় আছি।
– আমাদের নিয়ে কিসের চিন্তা
– বাদ দে, আমার কাজের পেশার টা কমুক আমি তোকে নিয়ে যাব
– সত্যি
– তিন সত্যি
– আচ্ছা ওই লাল শাড়ি টা কার
– তোর জন্য এনে ছিলাম কিন্তু কত কি হয়ে গেলো খেয়ালই ছিলো না
#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_06
,,
,,
,,
,,
নীড় ছেলে দুটোর কাছে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো,তারপর একটা হাসি দিয়ে বলল, কি খবর আপনাদের সাহসী গুপ্তচর আরে রনি স্যারদের খাতির যত্নের জন্য চা কফি আনো।নীড়কে খুব ভয়ঙ্কর লাগছে ছেলে গুলোর কাছে, ছেলে গুলো শুকনো ঢোক গিলে একে অন্যের দিকে তাকালো তারপর পূর্ণরায় নীড়ের দিকে তাকালো, এবার নীড়ের মুখ দেখে ওদের কলিজা শুকিয়ে আসলো নীড় রাগে কটমট করতে করতে দাতে দাত চেপে বলল,সহজ ভাবে বলবি নাকি অন্য ব্যবস্থা করব আমাকে যদি এই চেয়ার ছেড়ে উঠতে হয় তোদের জন্য খুব খারাপ হয়ে যাবে।
একটা ছেলে কাপতে কাপতে বলল,আমরা কক,কিছু জানি না স্যার। নীড় বিদুতের গতিতে চেয়ার থেকে উঠে, চেয়ারটা নিয়ে ওই ছেলেটাকে দিলো এক বাড়ি চেয়ারটা ভেঙে গেলো,ছেলেটা ভয়ঙ্কর আর্তনাদ করে নিচে পড়ে ছটফট করতে লাগল। ওই ছেলেটাকে দেখে পাশের ছেলেটা আধমরা অবস্থা প্রায়।নীড় চোয়াল শক্ত করে রক্তচক্ষু নিয়ে চেয়ারে বসা ছেলেটার দিকে তাকাতেই ছেলেটা কাপতে কাপতে বলল,ববব বলছি স্যার বলছি।নীড় মেঘের দিকে ইশারা করে বাহিরে চলে গেল। নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো, কিছু খন পর মেঘ এসে বলল, লোকেশন পেয়ে গেছি আমরা এখনি বের হবো। নীড় চিন্তিতো ভাবে বলল,যত দ্রুত সম্ভব বের করতে হবে আর মেয়ে গুলোকে উদ্ধার করতে হবে যতক্ষণ না পারছি শান্তি পাচ্ছি না। মেঘ বলল, টেনশন করিস না বেশি, দ্রুতই মেয়ে গুলোকে উদ্ধার করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
____________________________________________
নীড় বাড়ি ফিরছিলো, ঘড়ির কাটা রাত দশটা অতিক্রম করেছে।হঠাৎ কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে গাড়ির সিটে রাখা লাল শাড়িটার দিকে তাকালো। বাড়ি পৌঁছে গাড়ি পার্ক করে শাড়িটা নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো হল রুমে নীড়ের মা আর বৃষ্টি চুপ হয়ে বসে আছে, নীড় বলল,কি হয়েছে? নীড়ের মা কিছু বলল না। বৃষ্টি বলতে চেয়েও থেমে গেল কারো কোনো শব্দ না পেয়ে নীড় রুমের দিকে পা বাড়ালো, দৌড়ে রুমে চলে গেল, শাড়িটা বিছানায় রেখে হেসে বলতে লাগল,ইতু এই ইতু কোথায় তুই ইতু।
সারা রুম খুঁজে কোথাও পেলো না, নীড় অস্থির হয়ে উঠলো।দৌড়ে নিচে নেমে নীড় বলল, মা বৃষ্টি, ইতু কোথায়। নীড়ের মা গম্ভীর কণ্ঠে বলল, কি জানি ও কি আমাদের কিছু বলার প্রয়োজন মনে করে।নীড় ভ্রু কুচকে বলল,
– মানে?
– আমি জানি না, বাহির থেকে এসে ইতুকে দেখি নিই, মেয়েটার কি বুদ্ধি হবে না, কোথায় গেছে বলে গেলে কি হয়, আর কত রাত হয়েছে এখনো ফিরলো না।
– মানে কি? কি সব বলছো? বৃষ্টি
– আমি জানি না নীড় ভাইয়া, সন্ধ্যার দিকে দেখে ছিলাম, ও বলল। ওর ভালো লাগছে না তাই হাট ছিল।আমার মাথা ব্যথা করছিল তাই মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম, উঠে দেখি খালামণি চলে এসেছে কিন্তু ইতুকে আর দেখি নিই।
নীড়ের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, অজানা ভয় চেপে বসলো।আর দেরি না করে দৌড়ে গেটের সামনে গিয়ে দারওয়ানকে বলল,মিজান ইতু কি বাড়ি থেকে বের হয়ে ছিল।মিজান বলল,না তো আপু মণি বাহিরে যায় নাই কেন ভাইয়া।নীড় দ্রুত বাড়িতে ঢুকে সিসিটিভি গুলো চেক করতে লাগল,ফুটেজ দেখে দ্রুত স্টোর রুমে গেল, দরজা ধাক্কাতে লাগল কিন্তু খুললো না। উপর থেকে আওয়াজ পেয়ে নীড়ের মা বৃষ্টি আর কত গুলো কাজের লোক উপরে গেল।সেলিনা ছেলের এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলো তারপর বলল, নীড় কি করছিস বাবা তোর লেগে যাবে।নীড় ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল, ইতু ভিতরে মা। নীড় শরীরের বল প্রয়োগ করে জোরে কয়েকটা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো,ইতুকে এমন নিস্তেজ ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে নীড়ের দুনিয়া যেনো কেপে উঠলো।
_______________________________________
ইতু ধিরে ধিরে চোখ খুললো, নীড়ের মা পাশে বসা তার কাছে বৃষ্টি দাড়ানো।ঘড়িতে সময় রাত দুটা।বৃষ্টি বলল,তোমার কেমন লাগছে এখন। ইতু শোয়া থেকে আধশোয়া হয়ে বসলো,রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নীড়কে খুজতে লাগল,নীড় বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। নীড়ের মা বলল,
– তোকে কে বলে ছিলো স্টোর রুমে যেতে সবাইকে চিন্তায় ফেলতে তোর ভালো লাগে তাই না
– সরি কাকী
– হুম শরীর কেমন লাগছে এখন
– ভালো
– আমি খাবার পাঠাচ্ছি লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবি।
ইতু মাথা নিচু করে সম্মতি দিলো। নীড়ের মা রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো। বৃষ্টি ইতুর কাছে বসে বলল,
– সরি ইতু আমি তোমার সাথে থাকলে এমন কিছু হতো না
– না আপু তোমার কোনো দোষ নেই
– আরেকটা কথা নীড় ভাইয়া কিন্তু খুব রেগে আছে।
বলে বৃষ্টি উঠে চলে গেল। নীড় এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,রমে আসে নিই।ইতু অনেক খন ধরে অপেক্ষা করছে নীড়ের কিন্তু নীড়ের কোনো আসার নাম নেই।ইতু রেগে তাকালো নীড়ের দিকে তারপর ভাবতে লাগল, এই লোকটা এমন কেন? আমার তো খুব ইচ্ছে করছে উনাকে জরিয়ে ধরতে কিন্তু এতো আমার কাছেই আসছে না।
ইতু বিরক্ত হয়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে নীড়ের পিছনে দাড়ালো।কিছু খন চুপ থেকে ডেকে উঠলো, নীড় ভাইয়া । নীড় পিছনে ঘুরে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো গালে,ইতু গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো, সেকেন্ডে চোখ দিয়ে বৃষ্টিপাত শুরু মাথা নিচু করে ঠোট উল্টে ভ্যা ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিলো।
ইতুর কান্না দেখে নীড় আরো রেগে গেলো,ইতুর হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, খবরদার কান্না করবি না,আমাকে কষ্ট দিতে তোর খুব ভালো লাগে তাই না,মেরে ফেলতে চাস আমাকে। ইতু ভয়ে কান্না করতে করতে বলল, আআআ,আমি।
নীড় আবার ধমক দিয়ে বলল, চুপ।ইতু কেপে উঠলো। এর মাঝে ঘরের দরজা কেউ নক করলো। নীড় ইতুকে ছেড়ে দরজার কাছে গেলো,দেখলো বৃষ্টি খাবার নিয়ে এসেছে। নীড় খাবার নিয়ে রুমে আসলো , ইতু এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে মুখ চেপে কান্না করছে।নীড় বারান্দায় গিয়ে ইতুর হাত টেনে রুমে নিয়ে আসলো তারপর বসিয়ে খাবার হাতে নিয়ে বলল,মুখ খোল।ইতু বলল,
– না খাবো না
– আমাকে রাগাস না ইতু মুখ খুল
-………………………………
– কথা কানে যায় না, আরেক গালে দেবো আরেকটা মুখ খুল।
ইতু কিছু না বলে চুপ হয়ে রইলো। নীড় ইতুর মুখ চেপে জোর করে খাবার মুখে ঢুকিয়ে দিলো।ইতু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। নীড় গম্ভীর কণ্ঠে বলল, আমার দিকে না তাকিয়ে থেকে মুখের খাবার শেষ কর।খাওয়া শেষ করে মেডিসিন খেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো ইতু।উল্টো দিকে ঘুরে কান্না করতে লাগল। আর মনে মনে বলতে লাগলো,আর কথা বলব না তোমার সাথে তুমি আসলেই একটা হার্টলেস ভিশন ভিশন পচা তুমি।
হঠাৎ ঘাড়ে কারো উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে থমকে গেল ইতু। নীড় ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে জরিয়ে ধরে আছে। ইতু কিছু বলল না, এই হার্টলেস ছেলেটার সাথে আর কোনো কথা নয়।হঠাৎ ঘাড়ে পানির স্পর্শ পেয়ে ইতু অবাক হয়ে গেলো নীড় ভাইয়া কি কান্না করছে।
#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_05
,,
,,
,,
,,
খাওয়া শেষ করে নীড় বিছানায় গিয়ে বসলো,ফোন বের করে কার সাথে যেনো কথা বলে ইতুর দিকে তাকালো, ইতু বই নিয়ে বসেছে।নীড় কিছু খন নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইতুর দিকে অতঃপর বলল,আর কত খন পড়বি।ইতু নীড়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আরো কিছুক্ষন।নীড় কিছু না বলে কয়েকটা ফাইল নিয়ে বসলো। ইতু হঠাৎ নীড়কে বলে উঠলো,
– নীড় ভাইয়া
– হুম বল
– তুমি তো চাইলে বৃষ্টি আপুকে বিয়ে করতে পারতে, বৃষ্টি আপু যেমন মিষ্টি দেখতে তেমন ভালো মানুষ,তাহলে কাকীও আর রেগে থাকতো না, সব কিছু সাভাবিক থাকতো।
– হঠাৎ এই কথা কেন?
– বৃষ্টি আপু তোমাকে খুব ভালোবাসে আ…..
– তুই বাসিস না
-…………………..
– চুপচাপ পড়
ইতু আর কিছু না বলে বইয়ের দিকে নজর নিক্ষেপ করলো। বেশকিছু খন পর নীড় ফাইল থেকে মুখ তুলে ইতুর দিকে তাকিয়ে দেখলো ইতু স্টাডি টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। নীড় মুচকি হেসে ইতুর কাছে গিয়ে আস্তে করে ইতুকে পাজ কোলে নিয়ে বিছানার দিকে গেলো,ইতুর চোখ হালকা খুলে অস্পষ্ট কন্ঠে বলল, কি করছো।নীড় বলল,
– বেডে নিয়ে যাচ্ছি পড়তে বসলেই ঘুম পায় তাই না
– হুম পড়তে বসলে খুব ঘুম পায়
– পড়া চোর একটা
নীড় ইতুকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে শুয়ে পড়লো, ইতু বলল,ছাড়ো আমাকে।নীড় রেগে বলল, চুপচাপ ঘুমা আমাকেও ঘুমাতে দে।ইতু আরো কিছু বলতে চেয়েও পারলো না ঘুমের সমুদ্রে ডুবে গেলো।নীড় ইতুর মাথায় একটা চুমু দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল পরম প্রশান্তিতে।
নীড় মৃদু হেসে বলল, ফজরের সময় হয়েছে নামাজ পড়বা না উঠো।ইতু ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল, হুম। নীড় বুঝতে পারলো ইতু এখনো ঘুমের ঘোরে আছে।নীড় এবার ইতুর কানের কাছে এসে জোরে বলল,ইতু…….।ইতু লাফিয়ে উঠে পড়লো আতঙ্কিত হয়ে তাকিয়ে রইলো নীড়ের দিকে। নীড় হেসে কুটিকুটি। নীড় বলল, কত ডাকছি উঠ ছিলেই না তাই তো চেঁচাতে হলো এবার যা ফ্রেশ হয়ে ওজু করে নামাজ পড়ে নেয়। ইতু আর কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে গেল। ইতু কিছু খন পর বের হয়ে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাড়ালো।
এদিক দিয়ে নীড় সাদা পাঞ্জাবি পরে ওজু করে মাথায় টুপি দিয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে হাটা দিল।ফজরের নামাজ শেষ করে হেটে হেটে বাড়ি ফিরছিলো, বাড়ির গেটের সামনে আসতেই নীড় থমকে গেল এক দৃশ্য দেখে কি অসাধারণ স্নিগ্ধকর সেই দৃশ্য, ইতু বারান্দায় দাড়িয়ে ভোরের সতেজ হাওয়া গায়ে মাখছে,প্রকৃতির মাঝে আজ ইতু হারিয়ে যেতে চায়।নীড় মৃদু হেসে বাড়ির ভিতরে গেলো
_____________________________________
ইতু মৃদু হেসে উঠলো পাখিদের চঞ্চলতা দেখে, হঠাৎ চোখের সামনে এক কাপ চা কেউ এগিয়ে দিল,কাপ ধরা হাতটার মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখলো নীড়। ইতু কাপটা নিয়ে মুচকি হেসে সামনে তাকালো, নীড় ও সঙ্গ দিল।বেশ কিছুখন দুজন চুপ হয়ে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে রইলো হঠাৎ নীড় বলল,
– এতো গভীর ভাবে কি দেখছিস
– ওই দেখো গাছের ডালের দুটো চড়ুই পাখি কখন থেকে খুনসুটি করছে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে সব কিছু।
– হুম খুব সুন্দর, মাঝে মাঝে এমন নিখুত ভাবে তো আমাকেও দেখতে পারিস
– হুম তোমাকে সাদা পাঞ্জাবিতে খুব ভালো দেখাচ্ছে নীড় ভাইয়া
– এই তুই ভাইয়া ডাকা বন্ধ করবি কেউ শুনলে হাসবে
– আমার তো ছোট থেকে এই অভ্যাস এত সহজে যাবে না
– অভ্যাস চেঞ্জ কর নইলে তোর খবর আছে
– কোন বেলার খবর
– সব বেলার
– হুহ আমি রুমে গেলাম রেডি হই ভার্সিটি যাব
বলে ইতু রুমে চলে গেল। ইতু রুমে গিয়ে বোরখা পড়ে রেডি হলো।কিছু খন পর দুজন বেড়িয়ে পড়লো, ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামলো নীড়, ইতু নামতে যাবে তখনি নীড় বলল, ইতু দাড়া।ইতু নীড়ের দিকে ফিরে বলল, কি হয়েছে। নীড় বলল একটু কাছে আয় তো।ইতু একটু মাথা এগিয়ে নিয়ে বলল, বলো।নীড় ইতুর কপালে একটা ভালোবাসা দিয়ে বলল, সাবধানে থাকিস। ইতু তাড়াতাড়ি নেমে পড়লো তারপর বলল, তুমিও সাবধানে থেকো।বলেই উল্টো দিকে হাটা দিল। নীড় মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকলো যতক্ষণ না ইতু গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলো, ইতু ভিতরে যাওয়ার পর নীড় চোখে সানগ্লাস দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল।
___________________________________
নীড় নিজের ক্যাবিনে বসে আছে, মেঘ এসে বলল, নীড় দুটো ছেলে ধরা পড়েছে ওরা আমাদের সব ইনফরমেশন ওদের বসকে পাঠাতো।নীড় চিন্তাশীল ভাবে বলল,ওরা মুখ খুলেছে কে ওদের বস।মেঘ বলল, না প্রচুর মারা হয়েছে ওদের তাও কেউ মুখ খুলছে না।নীড় বসা থেকে উঠে বলল, চল আমিও দেখি কতক্ষণ চুপ থাকে।নীড়কে ভিতরে ঢুকতে দেখে একটা অফিসার ওই ছেলে গুলোকে ফিসফিসে বলল,আগেই বলে ছিলাম যা যা আছে এখন বলে দে নীড় স্যার আসলে খবর আছে তোদের, শুনলি না তো ভোগ এখন।ছেলে গুলো আতঙ্কিত ভাবে নীড়ের দিকে তাকালো।
________________________________________
ইতু নিজের রুমে বসে বসে ক্লান্ত তাই উঠে হাটতে লাগলো বাড়ির ভিতরে, বৃষ্টি নিচ থেকে উপরে উঠছিল ইতুকে দেখে বলল,
– কি করছো ইতু
– কিছু না আপু ভালো লাগছিল না তাই হাট ছিলাম গল্প করবা
– সরি ইতু আমার মাথাটা ব্যথা করছে একটু ঘুমাবো
– ওহ ঠিক আছে, যাও আচ্ছা কাকী কোথায়
– খালামণি বাহিরে গেছে
– ওহ ঠিক আছে
বৃষ্টি নিজের রুমে গিয়ে মেডিসিন খেয়ে দরজা আটকে ঘুমিয়ে পড়লো।ইতু পুরো বাড়ি হাটতে লাগলো, হঠাৎ কোণারের স্টোর রুমটা চোখে পড়লো ইতুর, দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো, অনেক ধুলো বালি রুমে, কয়েকটা কাশি উঠলো ইতুর, রুমের জানালাটা খুললো,রুমে বাহিরের আলো আসলো,আলোতে রুমের ভিতরের জিনিসপএ দেখা যাচ্ছে, নীড়ের ছোট বেলার কিছু খেলনা ইতু হাতে নিয়ে হেসে উঠলো
হঠাৎ জানালা দিয়ে প্রবল হাওয়া রুমে প্রবেশ করলো, বাতাসের ধাক্কায় রুমের দরজাটা ঠাস করে আটকে গেলো, ইতু লাফিয়ে উঠলো, কিন্তু বেশি একটা পাত্তা দিলো না, অনন্য আসবাপত্র দেখতে লাগল, একটা ছোট টাইগার টয় উপরে ছিল, ওটা ধরতে গিয়ে একটা ধুলো বালি দিয়ে ভরা কাপড়টা ইতুর মুখে পড়লো,ইতুর দম আটকে আসতে লাগলো অনেক কাশি হতে লাগল,অনেকটা অস্থির হয়ে উঠলো, ইতুর ডাস্ট এলার্জি আছে, ইতুর এখন রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়া দরকার নইলে আরো অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
ইতু দরজার কাছে এসে দরজা খুলতে গেলো কিন্তু দরজা খুললো না, বার বার টানতে লাগলো কিন্তু দরজা খুললো না দরজা লক হয়ে গেছে, বার বার ধাক্কাতে লাগল আর অনেক কষ্টে ডাকতে লাগল,কক,কেউ আছে, বব,বৃষ্টি, আপু কেউ আছে, কেউ আছে বের কর আমাকে আমার দম আটকে আসছে, কক,কেউ আছে ন,নীড় ভাইয়া।এক সময় ইতুর চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো আস্তে আস্তে চোখ বুজে গেলো,চোখ বন্ধ করে অনেক কষ্টে বলল নন,ন,নীড় ভাইয়া।
#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_04_Bonus
,,
,,
,,
,,
অর্ধ চাদটা ঠিক আকাশ পানে জলজল করছে, আর পুরো আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র তারা,হিম হাওয়ায় চারপাশ শীতল আবহাওয়া তৈরি হয়েছে,চারপাশে মিষ্টি ভালোবাসারা কানামাছি খেলছে।আর এই আকাশের নিচে দাড়িয়ে আছে এক জোড়া ভালোবাসা। ইতু কখন থেকে পরম শান্তিতে নীড়ের বুকের সাথে জড়িয়ে আছে। নীড় হঠাৎ বলল, আজ রাত কি এভাবেই পার করতে চাস তুই।ইতুর ঘোর কাটলো সাথে সাথে নীড়কে ছেড়ে দিল।নীড় মুচকি হেসে বলল, চলে যাব।কথা টা শুনে ইতু নিরব দৃষ্টিতে নীড়ের দিকে তাকালো। এই দৃষ্টি না জানি কত না বলা কথা বলে দিচ্ছে। নীড় হঠাৎ ইতুর হাত ধরে হাটা ধরলো,ইতুও সমান তালে তাল মিলালো।
সিড়ি দিয়ে দুজনকে নামতে দেখে হিনা মৃদু হাসলো।নীড় হিনার কাছে গিয়ে মুচকি হেসে বলল, থ্যাংক ইউ হিনা থ্যাংক ইউ সো মাচ। হিনা বলল, না ভাইয়া থ্যাংকস লাগবে না।নীড় একবার ইতুর দিকে তাকিয়ে বলল, আসি।বলেই নীড় বেড়িয়ে পড়লো। ইতু সেদিকেই তাকিয়ে আছে। হিনা এসে দুষ্টু হেসে বলল,
– আরে দোস্ত আর তো দুইটা দিন তারপর তো নীড় ভাইয়ার বাড়িতে এক সাথে থাকতে পারবি নীড় ভাইয়ার সাথে।
– চুপ কর শুধু ফালতু কথা
– কি ফালতু কথা
– হুম সোর আমার শাড়ি চেঞ্জ করতে হবে।
___________________________________________
শাহিন সাহেব গম্ভীর ভাব নিয়ে নিজের রুমে বসে আছে। ইতু গুটিগুটি পায়ে রুমে ঢুকে হালকা গলায় বলল,বাবা।শাহিন সাহেব মেয়ের দিকে তাকালো। ইতু বলল,
– আমি তো এখনি চলে যাব কথা বলবে না
– মা তুই শুধু রাজি হো এই বিয়ের থেকে তোকে মুক্তি করার দায়িত্ব আমার
– কি বলছো বাবা, বিয়ে যখন হয়ে গেছে তখন আর কিছু করার নেই
– কিন্তু….
– না বাবা তুমি শুধু শুধু চিন্তা কর না
– নীড়ের মা এত সহজে তোকে মেনে নেবে না
– হয় তো সময় লাগবে কিন্তু ঠিক হয়ে যাবে
– আল্লাহ ভরসা
– বাবা আমার যাওয়ার সময় হয়েছে
শাহিন সাহেব দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে, মেয়ের হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসলো।ইতুর মা মুখ চেপে কাদছে,তুতুল চাপা কান্নায় মুখ লাল করে ফেলেছে। শাহিন সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বলল, নীড় আমার একটা মাএ রাজকন্যা ওকে কখনো কষ্ট দিস না তাহলে কিন্তু আমি নিজে তোকে মেরে জেলে যাব।নীড় মুচকি হেসে বলল, কাকা চিন্তা করবেন না। অতঃপর ইতুকে গাড়িতে উঠালো গাড়ি ছুটতে লাগল নীড়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ইতু কেদে কেদে হেচকি উঠে গেছে নীড় ইতুকে কখন থেকে শান্ত হতে বলছে কিন্তু ইতু শুনছে না।
নীড় রেগে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলল, তুই থামবি মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। ইতু কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল, তুমি খুব বাজে এখনি আমাকে বকছো নীড় বলল, হুম বকছি বকা খাওয়ার কাজ করিস কেন কান্না করে চোখ মুখের কি হাল করেছিস। ইতু গাল ফুলিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে মিনমিনে বলল,হার্টলেস।
__________________________________
বাড়িতে প্রবেশ করা মাএই কাজের লোকেরা চলে আসলো,কিন্তু কাকীকে কোথাও দেখতে পেলাম না, সিঁড়ি দিয়ে একটা সুন্দরী মেয়ে নেমে আসছে মুখ খানা মলিন হয়ে আছে। চিনতে অসুবিধা হলো না এটা বৃষ্টি আপু।বৃষ্টি মুখে একটা নকল হাসি দিয়ে বলল,
– আপনারা এসে গেছেন ইতু কেমন আছো
– ভালো আপু তুমি
– আমিও চল তোমাকে রুমে নিয়ে যাই ফ্রেশ হয়ে নেও
– কাকী কোথায়
– খালা মণি রুমে উনার মাথা ব্যথা করছে তো তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও তারপর খালামণির সাথে দেখা কর।
ইতু আর কিছু না বলে চুপচাপ বৃষ্টির সাথে উপরে গেলো।ইতু রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে মুখ মুছ ছিলো হঠাৎ পেটে কারো উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে থমকে গেল ইতু, আয়নায় স্পষ্ট নীড়ের মুখটা দেখা যাচ্ছে, নীড় ইতুর চুলে মুখ গুজে চোখ বন্ধ করে ফেলল।ইতুও আবেগে চোখ বন্ধ করে ফেলল, তারপর কাপা কন্ঠে বলল, কি ক,করছো। নীড় চোখ বন্ধ রেখেই বলল,কই কিছুই তো করলাম না।
বৃষ্টি এসে ছিলো খেতে ডাকতে নক না করে ভিতরে ঢুকে নিজেই বেকায়দায় পড়ে গেল উল্টো ঘুরে বলল,সরি আমার নক করে আসা দরকার ছিল। বৃষ্টির কন্ঠ পেয়ে ইতু আর নীড় দূরে সরে গেলো।নীড় বলল,কেন এসে ছিলে।বৃষ্টি বলল,ওই খাবার খেতে যাওয়ার জন্য। নীড় বলল, ওকে তুমি যাও আমরা যাচ্ছি।
বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে চলে আসলো,বুকের ভিতরটা চিনচিন ব্যথা হচ্ছে, চোখের কোণে কষ্টরা জোড়ো হলো বৃষ্টির, যাকে ভালোবাসে তাকে অন্য কারো সাথে দেখা টা যে কি যন্ত্রণার এটা শুধু সেই জানে, এক তরফা ভালোবাসা গুলোর পরিণতি হয় তো এমনই হয়।
ইতু ছোট ছোট পা ফেলে নীড়ের মার রুমে ঢুকলো, নীড়ের মা বসে একটা বই পড়ছে ইতুকে দেখে চোখ তুলে তাকালো, ইতু হালকা কন্ঠে বলল, কেমন আছো কাকী।নীড়ের মা গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
– ভালো তুই কেমন আছিস
– ভালো খেতে চল
– ইচ্ছে করছে না মাথা ব্যথা করছে
– মাথায় মলম লাগিয়ে দেবো
– না থাক এতো যত্ন দেখাতে হবে না, পারলে আমাকে একটু একা ছেড়ে দে
ইতুর মুখটা ছোট হয়ে গেলো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে তা তো জানা ছিল,ইতু কিছু না বলে মাথা নিচু করে চুপচাপ বেড়িয়ে পড়লো। খাবার টেবিলে মন খারাপ করে বসতেই নীড় বলল, কি হয়েছে তোর, মা কোথায়, কিছু বলেছে তোকে।ইতু তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, না আমাকে কিছু বলে নিই কাকীর মাথা ব্যথা করছে তাই আসে নিই।বৃষ্টি বসা থেকে উঠে বলল,আমি দেখে আসি।নীড় বলল, না তুমি খাবার খাও। বলেই চম্পাকে খাবার প্লেটে নিয়ে মার রুমে যেতে বলল,নীড় ও ওর মার রুমের দিকে হাটা দিল।টেবিলে বসে থাকলো ইতু আর বৃষ্টি। বৃষ্টি বলে উঠলো, তুমি খাচ্ছো না কেন খেয়ে নেও। ইতু মৃদু হেসে সম্মতি দিলো।
_______________________________________
চম্পা খাবার নিয়ে সেলিনার সামনে রাখতেই সেলিনা গম্ভীর কন্ঠে বলল, এইসব কি আমি কি আনতে বলেছি নিয়ে যা।তখনি নীড় ঢুকে চম্পাকে যেতে বলল, চম্পা চুপচাপ বেড়িয়ে পড়লো, নীড় সেলিনার সামনে বসে খাবার হাতে নিয়ে বলল,মা মুখ খুলো।সেলিনা স্পষ্ট জানিয়ে দিল খাবে না।নীড় বলল,আমার উপর রেগে খাবে না কেন তোমার মেডিসিন ও আছে ভুলে গেছো নাও মুখ খুলো।সেলিনা রেগে বলল,
– ভালোবাসা দেখাতে হবে না এখন
– এটা কেমন কথা মা, আমি কি ভালোবাসি না তোমাকে
– হুম বাসিস না বাসলে আমার কথার অবাধ্য কখনো করতি না
– মা বুঝার চেষ্টা কর, যদি বৃষ্টির সাথে আমার বিয়ে হতো না আমি নিজে ভালো থাকতাম না ওকে ভালো রাখতে পারতাম।এভাবে জেনেশুনে কোনো সম্পর্কে না জোড়ানো ভালো।
– মা মরা মেয়ে ছোট থেকে এখানে থেকে বড় হয়েছে তোকে কত পছন্দ করতো ওর কেমন লাগছে তুই জানিস
– হুম হয় তো জানি না কিন্তু ধিরে ধিরে ঠিক হয়ে যাবে, তুমি চাইলে বৃষ্টির জন্য ভালো ছেলে আনবো, তুমি আমার বন্ধু মেঘকে তো চেনোই আমাদের এখানে এসে ছিল ও বৃষ্টিকে দেখে খুব পছন্দ করে ছিলো,মেঘ খুব ভালো ছেলে।
– হুম বৃষ্টি এখন রাজি হতে চাইবে না, আর তুই যা এখন খাবো না আমি
– ওকে ফাইন খেতে হবে না, আমিও খাবো না, না খেয়ে কাজে চলে যাবো
– তুই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছিস
– হুম এবার মুখ খুলো।
সেলিনা না চাইতেও খেয়ে নিলো।
____________________________________
ইতু আর বৃষ্টি বসে কথা বলছিলো, বৃষ্টির চোখ হঠাৎ ইতুর গলায় পড়তেই বলে উঠলো, ওয়াও ইতু তোমার লোকেট টা তো খুব সুন্দর কোথ থেকে কিনেছো।ইতু লোকেটে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলল, নীড় ভাইয়া দিয়েছে।বৃষ্টি মৃদু হেসে বলল, খুব সুন্দর। এর মাঝে নীড় রুমে এসে আলমারির থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল, কিছু খন পর বেড়িয়ে আসতেই ইতু বলল,কোথায় যাচ্ছো।নীড় মুচকি হেসে বলল, কাজে আসতে রাত হবে বৃষ্টি ওর খেয়াল রেখো।বৃষ্টি মৃদু হেসে বলল, ঠিক আছে চিন্তা করবেন না।
এর মাঝে নীড়ের ফোন বেজে উঠলো, নীড় কল রিসিভ করে বলল, হ্যালো ধরতে পেরেছিস ভেরি গুড আমি আসছি ধরে রাখ পালাতে যেনো না পারে।বলেই কল কেটে আলমারি থেকে গানটা বের করে নিলো। ইতু গান দেখে ভয় পেয়ে গেলো তারপর বলল, ওটা নিয়ে কোথায় যাচ্ছো।নীড় বলল,এটা ছাড়া কি যাওয়া যায় নাকি যখন তখন লাগে, বৃষ্টি আমি তো বলতে ভুলে গেছি মা তোমাকে ডেকে ছিল।
বৃষ্টি বলল,ওহ আচ্ছা আমি গেলাম।বৃষ্টি রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই নীড় হঠাৎ ইতুর কপালে নিজের অধর ছোয়ালো তারপর মিষ্টি হেসে ইতুর গাল টেনে বলল,আসি আর তুই পড়তে বস কাল থেকে ভার্সিটি যাবি আবার।বলে নীড় বেড়িয়ে পড়লো।ইতু কিছুখন অবাক হয়ে থেকে হঠাৎ লাজুক হাসলো।
_______________________________
সামনে একটা ছেলেকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে, তার সামনে নীড় পকেটে হাত দিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। আর তার পাশে মেঘ দাড়ানো।সব নিরবতার সমাপ্তি ঘটিয়ে, নীড় বলে উঠলো, বল এখন পযন্ত কত গুলো মেয়েকে বাহিরে পাচার করেছিস।চেয়ারের সাথে বাধা আহত ছেলেটা বাকা হেসে বলল, তা জেনে কি করবেন অফিসার ভালোই ভালোই আমাকে যেতে দেন।
নীড় বলল, তা তো সম্ভব না তোদের লজ্জা করে না যেই মেয়েদের গর্ভে জন্ম নিয়েছিস সেই মেয়েদের বাহিরে পাচার করে দিস।ছেলেটা বলল,ওতো সব দিয়ে আমার কি আমাকে ছেড়ে দেন নইলে আপনার সামনে ঘোর বিপদ অপেক্ষা করছে, বিয়ে করেছেন নতুন শুনেছি আপনার বউটা বলে হেব্বি সুন্দরী ওকে।আর কিছু বলার আগে রেগে এক লাথি মারলো নীড় ছেলেটা আর্তনাত করে চেয়ার নিয়ে পড়ে গেলো।নীড় আর কিছু করার আগে মেঘ নীড়কে ধরে ফেলল তারপর বলল, ওর কথায় কান দিস না ও কিছু করতে পারবে না। ছেলেটা আবার হেসে বলল, আমি জেলে থাকলে এটা ভাববেন না যে আমি কিছু করতে পারব না। নীড়ের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো, নীড় কিছু করার আগে মেঘ ধরে ফেলল।
মেঘ জোর করে নীড়কে বাহিরে নিয়ে আসলো আর ভিতরে ছেলেটা পাগলের মতো হেসেই চলেছে। নীড় মেঘকে বলল,আমাকে ছাড় ওকে তো।মেঘ বলল,রিল্যাক্স নীড় তোর আঘাত লেগেছে তুই বাড়ি যা।নীড় বলল,এসব কিছু না, আমি আসতে আসতে কিভাবে পালালো মাঝ রাস্তায় না দেখলে তো এই অমানুষটা হাতের বাহিরে চলে যেতো ওকে কড়া গার্ডে রাখিস আবার যেনো না পালায়, না জানি মেয়ে গুলোকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে ওদের পাচার করার আগে উদ্ধার করতে হবে আর ও একা নয় কেউ আছে এখনো যে হাতের নাগালে নেই, গা ঢাকা দিয়ে আছে ওকে খুঁজে বের করতে হবে নইলে যে আরো কত মেয়ের জীবন নষ্ট হবে।মেঘ বলল,হুম আমরা গোপনে খোজ চালিয়ে যাচ্ছি আশা করি দ্রুত ধরতে পারব।
___________________________
রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই ইতু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে হঠাৎ রুমের ভিতর থেকে আওয়াজ পেয়ে নিরবে এগিয়ে গেল, দেখলো নীড় এসেছে নীড়কে দেখে ইতুর ঠোটে হাসি ফুটলো,কিন্তু পরক্ষনেই ভয় চেপে ধরলো ইতুকে।নীড় শার্ট খুলছিল পিছন থেকে শরিরে আঘাত দেখা যাচ্ছে অনেক জায়গা ছিলে রক্ত শুকিয়ে আছে। ইতু ঘাবড়ে বলল, নীড় ভাইয়া কি হয়েছে তোমার। ইতুকে দেখে নীড় আবার শার্ট গায়ে জরিয়ে বলল,কই কি হয়েছে।
ইতু রেগে সামনে গিয়ে বলল, শার্ট খুলো।নীড় অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,কি তুই খালি রুমে আমার মান সম্মানের দিকে হাত বাড়াচ্ছিস।ইতু রেগে বলল, ফাজলামো বন্ধ কর আমি মোটেও মজার মুডে নেই।নীড় হঠাৎ ইতুর কোমড় টেনে নিজের কাছে এনে বলল,তাহলে কিসের মুডে আছিস।ইতু রেগে নীড়ের হাতের বাহুতে ধাপ্পড় দিয়ে বলল, অসভ্য।নীড় চোখ বন্ধ করে ফেলল, ইতু ঘাবড়ে বলল, সরি সরি আমার খেয়াল ছিল না এখন বসো এখানে।নীড়কে বসিয়ে ইতু মেডিসিন নিয়ে এসে ক্ষত স্থানে ঔষধ লাগিয়ে দিতে লাগলো খুব সাবধানে। আর নীড় আয়নাতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো ইতুকে।হঠাৎ ইতুর হাত টান দিয়ে কোলে এনে বসিয়ে দিল।ইতু হকচকিয়ে বলল, কক,কি করছো ছাড়ো। নীড় ইতুকে জরিয়ে ধরে বলল, তুই কাছে থাক আর কিছু লাগবে না।ইতু তাড়াতাড়ি উঠে বলল, ফ্রেশ হয়ে নেও আমি খাবার আনছি।বলেই বিদুতের গতিতে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো, নীড় ইতুর বিহেভিয়ার দেখে হুহা করে হেসে উঠলো।
নীড়ের কথা শুনে ইতু আকাশ থেকে পড়লো,ইতুর অবাক হওয়া দেখে নীড় কোনো রিয়াকশন দেখালো না, বিছানা থেকে উঠে আলমারির কাছে, আলমারি খুলে একটা কালো শাড়ি বের করে, ইতুর কাছে এসে বলল
– এই নেয় এই শাড়ি টা পড়ে নেয়
– কি????
– কানে কম শুনিস নাকি যা তাড়াতাড়ি শাড়ি টা পড়ে আয়
– না
নীড় ভ্রু কুচকে বলল, আমি তোর মতামত চেয়েছি একবারও যা।ইতু বিরক্ত হয়ে বলল, কি শুরু করলে এমনি কত অশান্তি চারপাশে তোমাকে এখানে কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে চলে যাও।নীড় একটা ব্যপক ভাব নিয়ে বলল, দেখলে দেখবে আমি আমার বউয়ের কাছে এসেছি তাতে কার কি বেশি কথা বললে এখনি নিয়ে যাব।
ইতু বুঝতে পারছে নীড়ের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই, তাই চুপ হয়ে রইলো।নীড় হঠাৎ বলল,কিরে কি বলছি যা শাড়ি পড়ে আয় নাকি আমি পড়িয়ে দেবো।নীড়ের কথা শুনে ইতু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,না আমি পারব।
বলেই শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে যেতে নেবে তখনি নীড় বলল, ওয়াসরুমে যেতে হবে কেন এখানেই চেঞ্জ কর।ইতু মেজাজ খারাপ করে তাকালো নীড়ের দিকে। নীড় দুষ্টু হেসে বলল,ওকে ওকে কুল যা।
ইতু মেজাজ দেখিয়ে চলে আসলো।নীড় জায়গায় বসে হুহা করে হেসে উঠলো। কিছু খন পর ইতু বেড়িয়ে আসলো, ইতুকে দেখে নীড় কিছু খন অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে হুহা করে হেসে উঠলো। ইতু গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো।নীড় বলল,
– খুব তো তখন ভাব দেখিয়ে বললি তুই পারবি তাহলে এখন শাড়ি পেচিয়ে আছিস কেন.
– এত হাসার কি আছে, শাড়ি তো শাড়ি এক ভাবে হলেই হলো আমি তো বাহিরে যাচ্ছি না।তোমার শেষ দেখা এবার চলে যাও।
– আজ রাত তো এখানেই থাকব
– কি???? এই না
– তোর কথা শুনতে চেয়েছি আমি, এখন আমার কাছে আয় শাড়ি ঠিক করে দেই।
– না না লাগবে না
– বেশি কথা বলবি না আয়
নীড় ইতুকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে লাগল,আর ইতু তো পাথরের ন্যায় হয়ে আছে। হঠাৎ হঠাৎ নীড়ের শিতল স্পর্শ ইতুকে জমিয়ে দিচ্ছে। নীড় শাড়ি পড়িয়ে ইতুকে বলল,এত কাপাকাপি করিস কেন একটু হলে তো ভূমিকম্প শুরু হয়ে যেতো,বলেই হুহা করে হেসে উঠলো।
ইতু বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে তাকালো।নীড় বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো তারপর হাতের ইশারায় ইতুকে ডাকলো।ইতু গাল ফুলিয়ে বিরক্তি নিয়ে গিয়ে সামনে দাড়ালো।নীড় আর কিছু না বলে ইতুর হাত ধরে টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে জরিয়ে ধরলো। ইতু তো হা হয়ে গেলো, নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,কি করছো ছাড়ো।
নীড় ইতুকে বিছানায় ফেলে ইতুকে বিছানার সাথে চেপে ধরলো নীড় অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে ইতুর দিকে, ইতু ঘাবড়িয়ে বলল,কক,কি করছো ন,নীড় ভাইয়া।নীড় বলল,চাইলে অনেক কিছু করতে পারি কিন্তু এখন কিছু করব না।ইতু হাফ ছেড়ে বাচলো।নীড় ইতুকে উঠিয়ে বসালো,তারপর জিন্সের পকেট থেকে একটা লোকেট বের করে ইতুকে পড়িয়ে দিয়ে ঘাড়ে আলতো করে একটা চুমু একে দিল। প্রথম কোনো ছেলের স্পর্শ পেয়ে ইতু পুরো জমে গেলো।
নীড় হঠাৎ ইতুর কোলে মাথা রেখে বলল,আমার চুল গুলো নেড়েচেড়ে দেয় তো ঘুমাবো।
ইতুর কোনো কথা না শুনে নীড় ইতুর হাত নিয়ে নিজের চুলে রাখলো।ইতু এবারও কিছু করলো না, নীড় ভ্রু কুচকে বলল, করবি না তাহলে চল বাসর করি।ইতু চমকে উঠে তাড়াতাড়ি চুল নাড়াচাড়া করতে লাগল, নীড় বাকা হেসে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
নীড়ের কোনো সারা শব্দ নেই, হয় তো ঘুমিয়ে গেছে। ইতুর দুচোখের পাতা কখন যে অবাধ্য হয়ে বুঁজে গেলো তা ইতু জানে না, সকালে সূর্য মামার সোনালি রোদ্দুর ইতুর চোখে পড়তেই ইতু পিটপিট করে চোখ খুললো।,একবার বন্ধ হয়ে গেলেও আবার খোলার চেষ্টা করলো,নিজেকে নীড়ের বাহুডোর পেয়ে চমকে উঠলো কিন্তু ইতুর ভালো লাগছে,কিন্তু এই ভালো লাগাকে দমিয়ে তাড়াতাড়ি উঠতে গেলেই নীড় আরো শক্ত করে ধরলো,ইতু বুঝতে পারলো নীড় জেগে আছে, ইতু রাগে কটমট করতে করতে বলল,
– কি করছো ছাড়ো
– চুপ চাপ থাক, এতো খন ঘুমিয়ে ছিলি তাই ভালো ছিলো
ইতু জোর করে উঠে বলল,তুমি কি শুরু করেছো আর কয়টা বাজে এখনো যাও নিই।নীড় বলল,হুম যাব তো। হঠাৎ দরজায় কেউ নক করলো, ইতু ঘাবড়ে বলল,হায় আল্লাহ কে এসেছে।
নীড় বলল, যা দরজা খুলে দে। ইতু বলল,আগে তুমি লুকাও।নীড় বলল,আমি কি চোর নাকি কেন লুকাবো। ইতু বিরক্ত হয়ে বলল, তোমার ভাব অন্য কোথাও দেখাও এখানে না। নীড় বিছানা থেকে উঠে হঠাৎ গিয়ে দরজা খুলে দিলো।ইতু হা হয়ে গেলো। দরজার অপাশে ইতুর ছোট ভাই তুতুল দাড়ানো।
তুতুল নীড়ের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো,নিজের চোখের চশমা টা ঠিক করে বলল,আপু আমার চোখে হয় তো একটু বেশিই সমস্যা শুরু হয়েছে আমি তোমাকে নীড় ভাইয়া দেখছিস আচ্ছা আমার জ্যামিতি বক্সটা এই ঘরে সরো তো নিতে এসেছি।
তুতুল ভিতরে ঢুকে ইতুকে দেখে বলল,এই দেখো আপু এখন তোমাকে ঠিক দেখছি দরজার কাছে নীড় ভাইয়া মনে হয়ে ছিল।বলেই দরজার দিকে তাকিয়ে হা হয়ে আবার ইতুর দিকে তাকালো। নীড় দরজার কাছ থেকে এসে টেবিলে রাখা জ্যামিতি বক্সটা তুতুলের হাতে দিয়ে বলল,এখন তুই যা।তুতুল হা হয়ে বলল,নীড় ভাইয়া তুমি।নীড় বলল,জ্বি ছোট বিদ্যাসাগর এখন যা আমাদের বিরক্ত করিস না।বলে তুতুলের হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আবার দরজা আটকে দিল।তুতুল বোকার মতো তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে।
ইতু নীড়কে বলল,তুমি কি করলে তুতুল যদি বলে দেয় তখন কি হবে। নীড় বলল, বললে বলবে আচ্ছা আমি গেলাম সাবধানে থাকিস আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস আর এসবের চক্করে পড়াশোনা খেয়ে বসিস না তোর লাইফ আগেও যেভাবে ছিল আজও তেমন আছে আমি কখনো তোর নিজস্ব জীবনে হস্তক্ষেপ করব না, আর কখনো বলব না ভালোবাসতে আমাকে,কারণ আমি জানি তোর মনে তুই শুধু আমাকে যত্ন করে রেখেছিস, তীব্র অভিমানে তা চাপা পড়ে আছে কিন্তু আমি জানি একদিন না একদিন তুই বলবি আমাকে, আর আমি অপেক্ষা করব সেই সময়ের জন্য প্রয়োজনে সারাটা জীবন, আসি।বলেই নীড় ইতুর গাল টেনে দিয়ে চলে গেল।
ইতু নীড়কে বলল,তুমি কি করলে তুতুল যদি বলে দেয় তখন কি হবে। নীড় বলল,
– বললে বলবে আচ্ছা আমি গেলাম সাবধানে থাকিস আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস আর এসবের চক্করে পড়াশোনা খেয়ে বসিস না তোর লাইফ আগেও যেভাবে ছিল আজও তেমন আছে আমি কখনো তোর নিজস্ব জীবনে হস্তক্ষেপ করব না, আর কখনো বলব না ভালোবাসতে আমাকে,কারণ আমি জানি তোর মনে তুই শুধু আমাকে যত্ন করে রেখেছিস, তীব্র অভিমানে তা চাপা পড়ে আছে কিন্তু আমি জানি একদিন না একদিন তুই বলবি আমাকে, আর আমি অপেক্ষা করব সেই সময়ের জন্য প্রয়োজনে সারাটা জীবন, আসি।বলেই নীড় ইতুর গাল টেনে দিয়ে চলে গেল।
ইতু নিশ্চুপ ভাবে তাকিয়ে আছে নীড়ের যাওয়ার দিকে। ইতিমধ্যে ইতুর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কণা, আমি তো চাই বলতে তবুও যে পারি না অন্য দশজন মানুষের মতো আমি আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি না, মনে মনে গত পাঁচ বছর ধরে ভালোবেসে গেছি হয়তো তুমি বুঝতে তবুও যে অবুঝের মতো থাকতে তখন খুব কষ্ট হতো।ওই দিন যখন কাকী তোমার আর তোমার খালাতো বোনের বিয়ে কথা বলেছিল, সেই দিন মনে হয়ে ছিল আমার বুকের ভিতর ধারালো ছুরি দিয়ে কেউ আঘাত করছে,চাপা কথা কাউকে বলতে না পেরে দমবন্ধ হয়ে আসছিল।সেই দিন থেকে ঠিক করে ছিলাম আমার মনে যত অনুভূতি আছে সব মাটি চাপা দিয়ে দেবো কিন্তু পারি নিই না কাউকে বলতে পেরেছি, ভিতরে ভিতরে পুড়েছি।বাবা বিয়ের কথা যখন বলেছে তখন মুখের উপর না করতে পারি নিই, কিন্তু মনের ভিতরে তখন একটাই শব্দ বেজেছে নীড় ভাইয়াকে ভালোবাসি খুব বেশি ভালোবাসি।কিন্তু কাল ওভাবে যে আমাদের বিয়ে হবে কল্পনা ও করতে পারি নিই কিন্তু নীড় ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে এর চেয়ে মধুর কোনো শব্দ মনে হয় আর আছে ।
__________________________________
আকাশ লালচে রঙ ধারণ করেছে, সূ্র্য ধিরে ধিরে ডুবে যাচ্ছে, আকাশে পাখিরা তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে, চারপাশে মৃদু বাতাস বইছে, ইতু নিরব ভঙ্গিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো,ফোনের স্কিনে হিনা নাম উঠে আছে, ইতু রিসিভ করে বলল,
– হ্যালো বল হিনা
– দোস্ত তোর মন মেজাজ কেমন
– এই তো এখন একটু ভালো
– তাহলে চল চা খেতে যাই ওই চাচার কাছে
– হুম ওকে কখন
– একটু পর
– এই টাইমে
– হুম আজ আমাদের বাড়ি থাকবি রাতে খুব মজা করব দুজন,বাবা মা নেই কাল আসবে একা ভয় করে আর ভালোও লাগে না।
– নারে যেতে দেবে না
– আরে আমি তোর বাড়ী যাব সবাইকে বলে নিয়ে আসবো না করবে না, আঙ্কেল আন্টি কত ভালোবাসে আমাকে তা তো তুই জানিস।
– ওকে আয় তাহলে রাখি
ইতু কথা শেষ করে পিছনে ঘুরে দেখলো তুতুল দাড়িয়ে আছে, ইতু ভ্রু কুচকে বলল,
– কিরে তুই এমন ভূতের মতো দাড়িয়ে আছিস কেন
– কার সাথে কথা বলছিলে নীড় ভাইয়ার সাথে
– চুপ কর এত বেশি বুঝিস কেন, আর তুই এখানে কি করিস তোর না সামনে পরিক্ষা এসএসসি পরিক্ষা এত সহজ না বুঝছিস।
– জানি আপু, মাএ একটা বই শেষ করে আসলাম।
– ভালো ভালো, আর শোন কাউকে বলিস নিই তো সকালের কথা
– হুম না বলি নিই, আর যদি না চাও বলি তাহলে আমাকে একটা বই কিনে দিতে হবে রাজি
– ওকে
– এই তো আমার লক্ষি আপু
– হয়েছে
– হিহিহি
______________________________
ইতু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে হিনার দিকে, ইতু বলে উঠলো, কিরে কি শুরু করেছিস এখন রাত ১১ টার বেশি বাজে একটু পর বারোটা বাজবে তুই এখন আমাকে সাজাচ্ছিস কেন।হিনা বলল,তুই চুপ কর তো কখন থেকে প্রশ্ন করে মাথা খেয়ে ফেলছিস।ইতু বলল,তুই বলবি তো।হিনা মুচকি হেসে বলল, তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে। ইতু বলল,কি কিসের সারপ্রাইজ?
হিনা ইতুর চুল ঠিক করে বলল,ঠিক আছে খুব ভালো দেখাচ্ছে এবার ছাদে চল।ইতু আতকে উঠে বলল, কি??????ছাদে কেন?? তাও এতো রাতে?
হিনা ইতুর হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগল,ইতু তো বকবক করেই চলেছে, হিনা ছাদের দরজার কাছে এসে বলল,যা ভিতরে।ইতু বলল,আমি একা যাবো। হিনা বলল,আরে যা ভয়ের মতো কিছু না। ইতু তবুও যেতে চাইলো না, হিনা বাধ্য হয়ে ইতুকে জোর করে ছাদে পাঠিয়ে দিল।
ইতু ছাদে এসে চারপাশ দেখে হা হয়ে গেলো, এ কি এ কোথায় আসলাম আমি, এত যেন কল্পনার জগতের মতো সাজানো।ইতু চারপাশ দেখে ইতুর মন মুগ্ধতার স্রোতে ভেসে গেলো,হঠাৎ সামনে তাকাতেই ইতুর বুকের ভিতর ধকধকানি বেড়ে গেলো,তার নজর কাড়া হাসি নিয়ে ধির পায়ে ইতুর কাছে আসলো।ইতু অবাক হয়ে বলল,নীড় ভাইয়া।নীড় মুচকি হেসে ইতুর কোমড় টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো, তারপর একবার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,হ্যাপি বার্থডে আমার পাগলী।ইতুর অজান্তেই তার ঠোটে হাসির রাজ্য দখল করে নিলো।
নীড় হঠাৎ বলল,ভালো লেগেছে। ইতু শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোধক উওর দিল, খুশির জন্য কথাই বলতে পারছে না,নীড় মৃদু হেসে বলল, আয় কেক কাটবো তোর ফেভারিট চকলেট কেক আর স্পেশাল ব্যাপার হলো কেকটা আমি বানিয়েছি চল টেস্ট করে বলবি কেমন হয়েছে।
ইতু অবাক হয়ে বলল, তুমি বানিয়েছো।নীড় বলল,হুম চল।কেক খাওয়া শেষ করে নীড় বলল,কেমন লেগেছে।ইতু বলল,খুব ভালো হয়েছে। নীড় ইতুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, Would you please dance with me? ইতু মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে দিল,নীড় ইতুকে নিজের কাছে নিয়ে স্লো-মোশনে ক্যাপল ড্যান্স শুরু করলো,ইতু যেন ভুলেই গেছে অতীত, ভুলে গেছে জমানো অভিমান অভিযোগ, এখন যে ইতু থমকে আছে নীড়ের মাঝে, নীড়ের মন আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষটার সাথে সময় কাটাতে পেরে, নীড় ইতুর চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাইতে লাগলো,,
Dua bhi lage na mujhe
Dawaa bhi lage na mujhe
Jabse dil ko mere tu laga hai….
Neend raaton ki meri
Chaahat baaton ki meri
Chain ko bhi mere tune yun thaga hai……..
Jab saansein bharu main
Band aankhein karoon main
Nazar tu yaar aaya………….
Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyaar aaya
Pehli pehli baar aaya
O yaara……….
Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyaar aaya
Pehli pehli baar aaya
কবুল বলে আমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবি, নাকি এখনি তোর সো কল উডবিকে লাশ বানিয়ে দেবো আমাকে তো এখনো তুই চিনিসই না, আমি খারাপ হলে যে কতটা খারাপ হতে পারি তোর কোনো আইডিয়া নেই।কথা গুলো অনেকটা রেগে ধমকিয়ে বলল নীড়।ইতুর তো শরীর শিতল হয়ে যাচ্ছে মানুষটা যে এত ভয়ঙ্কর কল্পনাও করতে পারে নিই।ইতু কাপা কাপা কন্ঠে বলল,
– নীড় ভাইয়া এএ,এমন কর না প্লিজ আর বিশালের তো কোনো দোষ নেই, উনাকে ছেছছ,,ছেড়ে দেও।
নীড় এর চোয়াল আরো শক্ত হয়ে গেলো,নীড় হকিস্টিক দিয়ে বিশালের মাথায় আরেকটা বাড়ি দিল, বিশাল আর্তনাদ করে উঠলো,বিশালের এই অবস্থা দেখে ইতুর কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। কাজী সাহেব তো রিতীমত কাপাকাপি শুরু করেছে,এই কোথায় আসলো সে।ইতু ভাঙ্গা গলায় বলল,
– নীড় ভাইয়া প্লিজ এমন কর না, উনাকে কেন আঘাত করছো উনার কোনো দোষ নেই,উনাকে ছেড়ে দেও। আর আমরা এভাবে বিয়ে করলে বাড়ীরর সবাইকে কি বলব।
– আই ডোন্ট কেয়ার, তোকে কি বললাম কবুল, তুই চাস তোর জন্য এই ছেলে প্রাণ হারাক।যদি তাই চাস তাহলে ঠিক আছে।
বলেই ছুরি টা বিশালের গলায় ধরলো,টান দেবে তখনি ইতু বলে উঠলো, করব বিয়ে একটা মানুষকে মেরো না। বলেই কান্না করতে লাগল।নীড় কাজী সাহেবকে বলল,কাজী সাহেব। বলতেই কাজী সাহেব চমকে উঠে তাড়াতাড়ি বিয়ে পড়াতে লাগল।কিছু খনের মাঝেই নীড় আর ইতু বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো।ইতু চুপ হয়ে আছে, কি হলো এটা সব কিছু পাল্টে গেলো।
নীড় ওর বন্ধু পিয়াসকে বলল,পিয়াস।পিয়াস বলল,বল কি হয়েছে। নীড় বলল,এই বিশাল অমানুষ টাকে হসপিটালে ভর্তি কর কিন্তু ওর হাতের চিকিৎসা যেনো না করে।বলেই ইতুর দিকে তাকালো তারপর হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো।ইতু বলল,
– তুমি আসলেই গুন্ডা একটা নীড় ভাইয়া ।তুমি একটা ছেলেকে এভাবে মারলে তার উপর একটা হাতও ভেঙ্গে দিলে।
– ওর ওই হাত তো আমি কেটেই দিতাম, দেই নিই ওর কপাল ভালো,তুই এত ন্যাকা কান্না কেন কাদছিস ওই অসভ্য টার জন্য, ভুলে গেছিস ও বাজে ভাবে তোর শরীরে হাত দিতে চেয়ে ছিল,আমি ওই দিন না থাকলে কি হতো কোনো আইডিয়া আছে তোর।আমার কাকাও না মানুষ যাচাই করে বিয়ে ঠিক করে দিয়েছিল ওই অসভ্যটার সাথে। তুই না পযন্ত করলি না, ও করবি কিভাবে তুই তো আবার পরিবারের বাধ্য মেয়ে।কিন্তু এতটা ভালো সাজিস না জেনে শুনে ওই অসভ্য লোকটাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলি।
ইতু কিছু বলল না, যা বলল সব তো সত্যি। ইতু হঠাৎ বলল,নীড় ভাইয়া। নীড় ইতুর দিকে তাকিয়ে বলল,
– বল
– এখন কি হবে, বাবা মা এবং কাকীও তো এই বিয়ে মানবে না।তুমি যে আমাকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে আসলে বাড়ীতে তো এত খনে কিয়ামত শুরু হয়ে গেছে।
– না মানলে না মানবে তাতে আমার কি তুই এখন আমার ওয়াইফ তোর ফ্যামিলি কিছু করতে পারবে না।
– এটা ঠিক না আমার বাবা মা অনেক কষ্ট পাবে,আমি তাদের কষ্ট দিতে চাই না।
– চুপ একটা কথাও বলবি না বেশি কথা বললে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেবো।
– ভ্যা ভ্যা ভ্যা ভ্যা তুমি খুব পচা, হার্টলেস একটা।
– আবার কান্না করে চুপ কর, চুপ কর বলছি
ইতু নীড়ের ধমক শুনে চুপ হয়ে গেলো,মুখে আঙ্গুল দিয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো নীড়ের দিকে।হাজার চেষ্টা করেও কান্না আটকে রাখতে পারলো না, আবার ভ্যা করতেই নীড় অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো,ইতুর দিকে ইতু আবার চুপ হয়ে গেল, কিন্তু হিচকি বন্ধ হচ্ছে না। নীড় ইতুকে বলল,শান্ত হো এত কান্না করছিস কেন। তারপর সামনে তাকিয়ে বলল,চাচা পানির বোতলটা দেও তো।ড্রাইভার চাচা পানির বোতল দিয়ে বলল, নেও।নীড় ইতুকে পানির বোতল দিল, ইতু কাপা কাপা হাতে বোতল নিয়ে সামান্য গলাটা ভিজালো।
ইতু বাহিরের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে, নীড় ইতুর হাত ধরে টেনে ইতুকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।ইতু উঠতে চাইলেই আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। ইতু দূরে সরে যেতে নিলেই নীড় বলল,
– এত নাড়াচাড়া করছিস কেন স্থির থাকতে পারিস না।
– ছাড়ো আমাকে ছাড়ো
– চুপচাপ থাক
__________________________________
গাড়ি থামতেই ইতুর বুকের ধকধকানি বেড়ে গেলো।গাড়ি থেকে নামতে ইচ্ছুক না থাকার পরও নামতে হলো।নীড় ইতুর হাত টেনে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো সবাই ওদের দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইতুর মা এসে ইতুকে জরিয়ে ধরে বলল,তুই ঠিক আছিস মা।শাহিন সাহেব হুংকার দিয়ে বললেন,,
– রিল্যাক্স কাকা চিন্তা করবেন না তেমন কিছু করি নিই,আগামী শুক্রবার রেডি থাকবেন ইতুকে নিয়ে যেতে আসবো।
– মানে কি???? আমার মেয়েকে আমি তোর হাতে তুলে দেবো না।
– আপনি বাধ্য তুলে দিতে কারণ ইতু আমার ওয়াইফ, শুভ খবরই তো দিলাম না কিছু খন আগেই আমরা বিয়ে করেছি।
সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো,ইতুর বাবা শাহিন সাহেব রেগে বলল, বিয়ে টা ছেলেখেলা নাকি বললেই হলো বিয়ে হয়ে গেছে। নীড় শান্ত কন্ঠে বলল, হ্যা বিয়ে হয়ে গেছে আপনাদের তো সুযোগ দিলাম মেয়ের বিয়ের আয়োজন করার জন্য আর না করলে আমার বউ আমি এখনি নিয়ে যাব।নীড় ইতুর কাছে যাবে তখনি ইতুর মা মালিহা বলল,না তোমরা আগামী শুক্রবারই নিয়ে যেও।নীড় সামান্য হেসে বলল,গুড তো আসি।বলেই নীড় বেড়িয়ে পড়লো।
_________________________________
বাড়ীতে সবার মুখে গম্ভীর ভাব, শাহিন সাহেব ভিশন চিন্তিতো কি করবে,মালিহা ইতুকে জোর করে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসে শাহিন সাহেবের সামনে বসলো।তারপর বলল,
– কি করবে এখন
– সেটাই ভাবছি, পুলিশের কাছে গিয়েও কোনো লাভ নেই,আর এই ব্যাপার জানাজানি হলে আমাদের ইতুকে আর কেউ বিয়ে করতে চাইবে না।
– তুমি কি করতে চাইছো,তুমি কি ওদের আলাদা করতে চাইছো।
– হ্যা ওই ফ্যামিলিতে আমার মেয়ে ভালো থাকবে না, নীড়ের মা নীড়ের বিয়ে ঠিক করে ছিল ওর খালাতো বোন বৃষ্টির সাথে, সেখানে আমাদের মেয়েকে মেনে নেবে না।আমার মেয়ের কষ্ট হবে সেখানে
– তুমি তো নীড়কে চেনো, ও ইতুর কোনো অসুবিধা হতে দেবে না
– কিন্তু মালিহা নীড় প্রচুর রাগী, আবার ওর যেই পেশা ওর জীবন অনেক ঝুকিতে থাকে প্রায় সময় যেখানে সেখানে যেতে হয় তখন আমার মেয়েটার কি করবে।
– এত চিন্তা করছো কেন কিছু হবে না।
_______________________________
নীড় বাড়ি ফিরে নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে পড়লো, চোখ বন্ধ করলো, চোখের সামনে ইতুর ভিতু মুখটা ভেসে উঠতেই নীড় এক গাল হেসে মনে মনে বলল, আমার পাগলিটা।হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলল, নীড় ভাইয়া। নীড় চোখ খুলে দেখে বৃষ্টি দাড়ানো বেশ লাজুক ভঙ্গিতে আবার বৃষ্টি বলল,আপনার জন্য ঠান্ডা শরবত নিয়ে আসবো।নীড় বলল,না বৃষ্টি লাগবে না তুমি যাও।
বৃষ্টির মুখটা মলিন হয়ে গেলো,আবারও বেশ মিনমিনে কন্ঠে বলল, আপনার ভালো লাগবে।
নীড় বলল, ওকে।বৃষ্টি খুশি হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,তখনি নীড়ের মা সেলিনা রুমে প্রবেশ করলো,নীড়ের সামনে গিয়ে রেগে বলল,
– নীড় তুই এটা কি করেছিস, আমি যা শুনেছি তা কি সত্যি
– হ্যা মা সত্যি, আমি ইতুকে বিয়ে করেছি, আগামী শুক্রবার ওকে এখানে নিয়ে আসবো।
– নিজেকে কি মনে করিস তুই কিভাবে করলি যেখানে বৃষ্টির সাথে তোর বিয়ে ঠিক ছিল, মেয়েটা কত আশা নিয়ে ছিল।
– এতে আমার দোষ নেই আগেই বলেছিলাম যে আমি বৃষ্টিকে বিয়ে করব না
– তুই এটা মোটেও ঠিক করিস নিই নীড়
হঠাৎ নীড়ের চোখ দরজায় পড়তেই দেখলো বৃষ্টি অনুভূতি শূন্য ভাবে দাড়িয়ে আছে, নীড় ধিরে ধিরে বৃষ্টির কাছে গেলো,তারপর বলল, আই এম সরি বৃষ্টি। বৃষ্টি কিছু বলল না শুধু মাথা নিচু করে ফেলল। নীড় আর কিছু না বলে বেড়িয়ে পড়লো বাড়ি থেকে।
___________________________________
এখন রাত ১১ টা বাজে, মালিহা ইতুকে খাইয়ে ঘুমাতে বলে চলে গেলো।ইতুর চোখে ঘুম নেই সে ভাবনায় বিভোর আজ কত কিছু হয়ে গেলো,আজ নীড় ভাইয়া কি করলো এটা, একটা সময় কতটা ভালোবাসতাম তাকে, তখন তো অবুঝের মতো ছিল,কিন্তু মাঝে মাঝে অদ্ভুত কান্ডের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করতো আবার মাঝে মাঝে এমন করতো যেন তার সাথে আমার কোনো কথা জীবনেও হয় নিই,কতবার নিশ্চুপ ভাবে আমার ছোট হ্রদয়টাকে ভেঙ্গেছে।
হঠাৎ মেসেজ আসলো,আওয়াজ পেয়ে ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে আসলো ইতু। মেসেজে নীড় বলল,বারান্দার দরজা খোল।ইতু আতকে উঠলো।বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো,অপাশে নীড় দাড়ানো।নীড় তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে বিছানায় গিয়ে বসলো।ইতু তো হা হয়ে আছে, তবুও নিজেকে সামলে বলল,
– নীড় ভাইয়া তুমি এখানে???
– হুম
– কিন্তু এত রাতে এখানে কেন???
– কেন আজ আমাদের বাসর রাত না, আজ রাত কি আলাদা থাকা যায়
#অন্তর্দহন_প্রণয়
#লিখনীতে_সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
১৮।
আপনি যখন প্রতিশোধের যাত্রা শুরু করবেন তখন দুটি কবর খনন করে শুরু করুন: একটি আপনার শত্রুর জন্য এবং একটি নিজের জন্য” ” – জোডি পিকল্ট এর এই উক্টুটি মাথায় গিথে গেছে ভালো করে জয়নবের। মন, মস্তিষ্ক দিয়ে নিজকে তৈরি করে নিয়েছে। মৃত্যুকে মাথায় করে আজ-ও বের হচ্ছে দ্বিতীয় খুনটি করতে। খুন! হে খুন। মস্তিষ্ক দিয়ে বুঝে শোনে খুন, ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে করা খুন। হাসলো জয়নব। এই খুনে তার কোনো অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। নেই কোনো শক্তির প্রয়োগ। শুধু প্রয়োজন….বুদ্ধির। জয়নব তাদের হোস্টেল রুমের ছোট আয়নার সামনে বসে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে যাচ্ছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে । কি থেকে কি হয়ে গেছে সে? সেতো আর ৫টা কিশোরীর মতোই ছিলো, কখনো রাগ, কখনো অভিমান, অভিযোগ, খিলখিল করে হাসি, ঠাট্টা সব করার কথা? কিন্তু সে কি করছে? ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করছে।
পরমুহূর্ত আবার ভাবলো জয়নব, সত্যিই মানুষ এরা? এরাতো পশু! আর এই যুথি? ওকে বড়পু তার কত বিশ্বাস করতো? তার সাথে কম্পিটিশন করতো বলে আপু কখনো অবজ্ঞা করতো না। সব সময় বলত,
“কমপিটিশন কমপিটিশনের জায়গা! আর বন্ধুত্ব? বন্ধুত্বের জায়গায়… ”
কিন্তু যুথি তা মানতো না। তাই তো রুফাইদা আজ ওদের হেফাজতে। ছোট শ্বাস ছেড়ে উঠে পরলো সে। এমন সময় পিছন থেকে যুথি বলে উঠলো,
“কি গো মেয়ে? রেডিতো? নাকি ভুলেই গেছো?”
জয়নব বাঁকা হাসলো। যার অর্থ,” আমি ভুলে যাবো? নাহ্ হতেই পারে না..”
দুজনেই রওনা করলো গন্তব্য। কলেজ গেট ক্রস করবে তখনি ঘটলো বিপত্তি। ডা. আদর! এই বাঁদর লোকটির এখনি এখানে টপকানোর কি দরকার ছিলো? ভেবে পাচ্ছে না জয়নব। সে বিনয়ের সাথে বলল,
“কিছু বলবেন স্যার?”
ডা. আদর গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“কথায় যাচ্ছ তোমরা?”
যুথিতো খুশিতে গদগদ। আজ কতদিন পর ডা. আদর সেধে এসে কথা বলছে! ভাবা যায়? সে বলল,
“আমরা, আমরা ওইতো সামনের শপিংমলে যাচ্ছি স্যার!”
ডা. আদর স্বভাবসুলভ ভ্রু কুঁচকে এক তার ঠান্ডা গম্ভীর দৃষ্টিতে দেখলো জয়নবকে। জয়নবের কি হলো? সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলো। সামনে দাঁড়ানো ব্ল্যাক প্যান্ট, স্কাই ব্লু শার্ট পড়া হ্যান্ডসাম ছেলেটি দিকে তাকানোর সাহস তার হলো না। রিজেক্ট করার পর থেকেই লোকটিকে দেখলে বুকটা কেমন খা খা করে। মনে হয় জয়নবের বুকের উপর আছড়ে পড়ে হাউ মাউ করে কেঁদে বলতে,
“ভালবাসি আমাকে আদর। খুব ভালোবাসি। ”
কিন্তু আফসোস সে পারে না। আর পারবেও না। তার জন্য এসব নয়! তার উপর তার বাবা জয়নবের শত্রু। অনেক বড়… শত্রু। জয়নব মাঝে মাঝে ভেবে যায়। এই ব্যক্তিটি যখন জানবে, ডা. সাহিরকে সে খুন করতে চায় তখন নিশ্চয় জয়নবকে ঘৃণা করবে ডা.আদর! এত..এত ভালোবাসা যে ফ্যাকাসে চোখ জোড়ায় জয়নব নিজের জন্য দেখে, তা নিশ্চয়ই ভয়ংকর, ধারোলো, উত্তপ্ত, লোহিত হবে বৈকি। জয়নব সপ্তপর্ণ একটি শ্বাস গিলে ফেললো। ডা. আদর তখন নিরবতা ভেঙ্গে বলল,
“চল, আমি তোমাদে ছেড়ে দেই। আমিও সেই দিকেই যাচ্ছি!”
চকিতে তাকালো জয়নব।একটা অচেনা ভয় কামড় দিলো বুকে। ডা. আদর যদি তাদের সাথে যায় তার কাজ সে কিভাবে করবে? তাহলে কি যুথি বেঁচে যাবে আজ? নাহ্, তা হতে দিবে না জয়নব। সে ঠোঁট ভাজ করে বলল,
“না, না স্যার। তার প্রয়োজন নেই, আমরা চলে যেতে পারবো।”
ডা. আদর শীতল দৃষ্টিতে আবার তাকালেন জয়নবের দিকে। মেয়েটি বরাবরই তার কথা বিন্দু পরিমাণ সম্মান করে না। কেন? আদর কি এতটাই ফেলনা নাকি? এটকা চাপা ক্রোধ ছেয়ে গেলো ডা. আদরের মুখখানায়। সে অবশ্যি চোখ এড়ায়নি জয়নবের। ভয় শুকনো ঢুক গিললো শুধু। তখন শোনা গেলো যুথির কথা। সে খুশি খুশি কন্ঠে বলল,
“আপনি আমাদের নিয়ে যাবেন এটা তো আমাদের সৌভাগ্য স্যার। যাবো আমরা যাবো!”
বলেই জয়নবের হাত ধরে টেনে ফিসফিস করে বলল,
“মানা করছো কেন মেয়ে? ডা. আদরের জন্য কত মেয়ে মরি মরি করে জানো? আর সে যখন আমাদের ছেঁড়ে দিবে বলেছে, তাহলে সমস্যা কথায়? চলো। বরং জলদি পৌঁছে যাবো আমরা। ”
জয়নব কিছু বলল না৷ যাস্ট মনে মনে প্ল্যানটা গুছিয়ে নিলো আরেক দফা। ডা. আদর তার গাড়ির দিকে হেঁটে চলে গেলেন। পিছন পিছন গেলো তারাও। কিন্তু এখানেও আবার বিপদ। সামনের সীটে বসবে কে? তবে বেশি ভাবতে হলো না জয়নবের। যুথি তাকে অবাক করে দিয়ে ঠেলে সামনে বসিয়ে দিলো। জয়নব আকাশ থেকে পড়েছে যেন, এমন ভাব করে বলল,
“আপু তুমি বসো না…! আমি নাহ্ পিছনে বসি?”
“কেনো? এই সিটে কি কাঁটা লেগে আছে?”
ডা. আদরের কন্ঠে চাপা ক্রোধ টের পেলো জয়নব। এমনটি নয় যে সে চায় না বসতে এখানে! কিন্তু একটা অস্বস্তি কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে লাগলো ভিতরটা। কেন এলো আদর তাদের সাথে? জয়নব যে দিকভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জয়নব গলার মাঝে শ্বাসটুকু আটকে বসে রইলো গাড়ির ভিতর। তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে বাহিরে। প্রচন্ড হাত-পা কাঁপছে তার। পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সবটুকু দেখলো ডা. আদর। ঠোঁট ভাজ করে বলল,
“এমন করছো কেন? আমিকি রাক্ষস? খেয়ে ফেলবো তোমায়?”
জয়নব চমকে তাকালো। ডা. আদরের এমন ঝাঁঝালো কণ্ঠে ভিতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে জয়নবের। কেন? কেন সে চেয়েও স্বাভাবিক থাকতে পাড়ছে না এই লোকটির সামনে?
—————
তারা পৌঁছে গেলো সামনের শপিংমলে। একটি বড় শপিংমল, যেখানে এসব আছে, সিনেপ্লেক্স, জিম, স্পা, জামা কাপড়ের দোকান। আবার উপরে উঠে গেছে আবাসিক কিছু পাঁচ তারকা হোটেল আর রেস্টুরেন্টে। আদর গাড়ি পার্ক করতেই, নেমে পড়লো গাড়ি থেকে চট করে জয়নব। আদর হতভম্ব। বলল,
“তোমার কি ট্রেন ছুটে যাচ্ছে নাকি?”
জয়নব থতমত খেয়ে গেলো। চাঁপা হেসে বলল,
“তেমন কিছু না ধন্যবাদ আমাদের পৌঁছে দেয়ার জন্য।আসি।”
বলেই যুথি আর জয়নব পা বাড়ালো। তখনি আদর বলল,
“জয়নব,আ.. আমার একজনকে গিফট করার আছে, কেন ইউ হেল্প মি?”
জয়নব কিছু বলবে, তার আগেই লাফাতে লাফাতে বলল যুথি,
“অবশ্যই স্যার কেন করবো না আমরা? বলেন কি নিতে চাইছেন? ঠিক করেছেন কি কিছু? বাই দ্যা ওয়ে কার জন্য নিবেন? ছেলে না মেয়ে?”
ডা. আদর গম্ভীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে চাইলো যুথির দিকে। যুথি চুপ করে গেলো। জয়নবের উদ্দেশ্যে আবার বলল,
“কেন ইউ?”
জয়নব মাথা নাড়লো। চলে এলো ভিতরে। ঘুর ঘুর করে সব দেখতে লাগলো। ডা. আদরের যেন কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। কি করবেন? ভেবে না পেয়ে জয়নবের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। জয়নব বলল,
“স্যার শাড়ি নিতে পারেন!”
ডা. আদরের গম্ভীর মুখে এবার একটু হাসির দেখা মিললো। তারা শাড়ির স্টোরে এসে দাঁড়ালো। জয়নবের তখনি চোখ আটকে গেলো সাদা একটি
শাড়িতে। সোনালী সুতের সুন্দর কাজ করা। জয়নব একনজর দেখে নিয়ে বলল,
“ওই শাড়িটা দিতে পারেন।”
ডা. আদর হাসলো। দোকানদারকে বলল,
“প্যাক ইট!”
জয়নব হতবুদ্ধি। ডা. আদর শাড়িটি দেখেছে কি না সন্দেহ। তাহলে? শুধু কি জয়নবের পছন্দ হয়েছে বলেই? জয়নব চোরা চোখে তাকালো একবার। লোকটি তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।জয়রব লজ্জা পেলো। লজ্জা লাল দুটি টমেটো হয়ে গেলো যেন। আচ্ছা? এ হাসি রহস্য কি?
—————–
শপিং শেষে তারা এসে বসলো একটি রেস্টুরেন্টে। আদর তখন-ও সাথে। জয়নবের কেন জানি ভালো লাগছে আজ অাদরের সাথে সময় টুকু কাটিয়ে। এর মাঝেই খাবার অর্ডার করা হলো। জয়নব যুথি বসে। তখনি যুথি বললো,
জয়নব থমকালো। আবার জান? কেন ডাকেন এই নামে এই লোকটি? কেন? এই আদর মাথা শীতল কন্ঠে জয়নব দিশেহারা যে হয়ে যায়! তা তি জানে আদর?জয়নব মাথা নত করে নিলো। আদর পরমযত্নে বলল,
“কেনো নিজে কষ্ট পাচ্ছো? আর আমায় কষ্ট দিচ্ছো? ”
জয়নব এক পলক তাকিয়ে বলল,
“আ.. মি। আ.. মি কাউকে কষ্ট দিচ্ছিনা।”
ডা. আদর হতাশ শ্বাস ছাড়লো। বললো,
“আমি সারাজীবনের জন্য দেশ ছাড়ছি। আজ রাতে আমার ফ্লাইট। ”
জয়নব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ অনুভব করলো তার নিশ্বাস ভাড়ি হচ্ছে, চোখ দুটি বড্ড জ্বালা করছে, বুকের গভীরে চিন চিন এক ব্যথা যেন কাবু করে নিচ্ছে তার ভিতর টা। ডা. আদর এবার শপিং ব্যাগটি এগিয়ে দিলো। মিষ্টি হেসে বলল,
“একটি আবদার আছে তোমার কাছে!”
জয়নব বহু কষ্টে একটি শব্দ উচ্চারণ করলো,
“কি?”
“যাওয়ার আগে এই শাড়িটিতে একবার দেখতে চাই তোমাকে!”
জয়নব চুপ। চুপ চারপাশ। আদরের কথাটা যেন ঝংকার তোলার মতো বাজতে লাগলো জয়নবের কানে। জয়নব তাকিয়ে রইলো শুধু। একটা.. একটা কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো জয়নবের। ঠিক সেই মুহূর্তে তার অনুভূতি গুলো দমিয়ে দিয়ে ভেসে এলো যুথির আত্মা চিৎকার। দুজনেই চমকে গেলো। এতখন একে অপরের দিক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো, তাউ হারিয়ে গেলো। দৌঁড়ে চললো ওয়াশরুমের দিকে। ওয়াশরুমের দরজা তখন বন্ধ। ভিতর থেকে ভেসে আসচ্ছে চিৎকার। যুথি বলছে,
“আ..মা..কে ছেড়ে দাও। যেতে দাও। নাহ্। হেল্প, সাম বডি হেল্প মি, প্লিজ। না ছুঁবে না আমাকে যেতে দাও, যেতে দাও..!”
বাহির থেকে কেউ কিছুই বুঝতে পাড়লো না যেন। কি হচ্ছে ভিতরে? যুথির কি হলো? কেন করছে এমন চিৎকার? রেস্টুরেন্টে তেমন মানুষ নেই। যারা ছিলো সবাই চলে এলো ওয়াশরুমের সামনে। আদর ক্ষণকাল সময় নষ্ট না করে, লাথি লাগালো ওয়াশরুম। দরজা খুলে গেলো। যুথি মাটিতে গুটিয়ে আছে। হাত দিয়ে আত্নরক্ষা করতে চাইছে, অথচ ভিতরে কেউ নেই। কার থেকে বাঁচতে চাইছে সে? সবার মুখের সামনে প্রশ্ন ঝুলে রইলো। ডা. আদর তার কাছে এগিয়ে গেলো। যুথিকে ধরতেই যুথি ধাক্কা দিয়ে পিছিয়ে গেলো,বার বার বলল,
” মেরে দেবে ও ও আ..মা..কে মেরে দিবে.. ওরা ওরা আমাকে মারতে চায়। ছুঁতে চায়। ”
ডা. আদর সহ সকলের মুখেই চিন্তার ছাপ। একটি সুস্থ সবল মেয়ে যে কিনা ভিতরে ঢুকেই এমন অস্বাভাবিক আচরণ করতে লাগলো? এটা কি মানা যায়? কেউ কিছুই বুঝলো না যেন। এক মাত্র দূরে দাঁড়িয়ে থাকা জয়নবের মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো। কাজ হয়েছে। এবার ধীরে ধীরে শেষ সময়টার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যুথি।
এদিকে যুথি কাউকে চিন্তে পাড়ছে না। ওর ভয় হচ্ছে বড্ড ভয়। দূরে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান ওর মাথা নেই। হাতের মুঠুতে মাথা, অন্য হাতে দুটো চোখ। ঠিক তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে পূঁজা, থেঁতলে দেয়া মুখ, এসিডে পোঁড়া, গলা শরীর গায়ে এক ফোঁটা কাপড় নেই যেন। তার হাতে ধোয়া ওঠা এসিডের বোতল। পাশেই রুফাইদা। তার হাতে একটি রাম দ্যা। বিকট এক হাসি হেসে এগিয়ে আসচ্ছে তার দিকে, চেঁচিয়ে বলছে,
” বিশ্বাসঘাতক। তুই ছাড় পাবি না। ”
আয়ানের কাঁটা মাথার ঠোঁট দুটি বলছে,
“আমি তোর বন্ধু ছিলাম, তুই আমাকেও ছাঁড়লি না?”
পূঁজা বলল,
“তোর থেকে সুন্দর বেশি বলে নিজ হাতে এসিড নিক্ষেপ করেছিলি না। এবার তোর চেহারার কি হবে?”
যুথি হাত দিয়ে না না করলো। বলল,
” আমাকে মে… রো না। না না।”
যুথি কাকুতি মিনতি করতে লাগলো। তার মাথার সৃষ্টি করা চিত্রভ্রমে নিস্তেজ করে দিতে চাইছে যেন। যুথি আর পাড়লো না। তার বাঁচতে হবে এই ভয়ানক ঘটনাটি দুঃস্বপ্ন লাগছে। সে পালাতে চায়। যুথি উঠে দাঁড়ালো। আদর বলল,
“আর ইউ ওকে যুথি?”
যুথি পাত্তা দিলো না। এক ছুটে বেড়িয়ে গেলো সবাইকে ঠেলে। পিছন পিছন দৌঁড় লাগালো জয়নব আর আদরও। কিন্তু ততক্ষণে খুব দেঁড়ি হয়ে গেছে। রুফাইদা দশতলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছে নিচে…..। এবার সব নিস্তব্ধ……।
“এমন যদি হতো! যারা আপুদের আর ভাইয়কে খুন করেছে সবাইকে তাদের অতৃপ্ত আত্মা মেরে দেয়!”
যুথি ভয় পেয়ে গেলো। থতমত খেয়ে বলল,
“এই.. এই মেয়ে কি সব বলছো? হে! আচ্ছা বাদ দাও মনে আছে তো, আজ আমরা কোথায় যাবো?”
জয়নব হেসে মাথা নাড়ায়। মনে মনে বলে,
“হে জানি তো, জমের বাড়ি!”
————–
আগের বারের মতো এবারো কোনো ক্লু পাওয়া গেলো না। সিসিটিভি ক্যামেরা দেখেও কিছু বুঝলো না। এদিকে জানতে পারলো সি আই ডি, কোনো এক ডিপ্রেশনের শিকার ছিলো সে। তা থেকেই হয়তো রেহাই পেতে যুথি এই পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু…! তবুও এই কিন্তু… একটি থেকে যায়। যা রূপক ধরতে পাচ্ছে না। এদিকে ডা. আদরের দেশ ছাড়ার প্ল্যান সাত দিন পিছিয়ে গেছিলো যুথির জন্য। কেসে তেমন দম নেই। প্রতিবারের মতো বন্ধ করে দিলো খাতা। এতে জয়নবের মুখে তাচ্ছিল্য ভরা হাসি ফুঁটে উঠে, যার অর্থ আইন নিশ্চয়ই এবারো পয়সা খেয়ে অন্ধ হয়েগেছে। নিশ্চয়ই যুথির কেইসটা আগালেই সব বের হয়ে যেতো বৈকি। কথায় বলে না? কান টানলে মাথা আসে। কিন্তু জয়নব জানে সে নিজের শাস্তি কিভাবে মাথা পেতে নিতে হয়। আর একটি খুন। ডা. সাহিরকে সে নিজ হাতে মারবে। তার রক্ত লাল করবে তার শরীর প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আহ্ কি শান্তি পাবে সে। সব শত্রু শেষ। কিন্তু আসলেই কি সব শত্রু শেষ হবে জয়নবের? নাকি ভাগ্য তার জন্য আরো কিছু লিখে রেখেছে?
—————
আজ রাতের ফ্লাইট একেবরে ইউএস চলে যাচ্ছে আদর। মনটা ভিষণ খারাপ। একে একে হসপিটালের সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে এসেছে। জয়নবের বুকে কেমন খালি খালি একটা অনুভতি হচ্ছে। সে বসে আছে আদরের দেয়া শাড়িটি নিয়ে। লোকটির আবদার সে কি রাখতে পারবে? কিন্তু ভিতর থেকে কে যেন বার বার বলছে,
“আবদার তো রাখাই যায়। চলেই তো যাচ্ছে সে!”
অনেক ভেবে পড়ে নিলো শাড়ি। সাধারণ সাজে বেড়িয়ে এলো সে। ডা. আদর নিশ্চয়ই তার কেবিনেই আছে? একটু ভয়? একটু ভালবাসা, মিষ্টি অনুভূতি নিয়ে পা বাড়াল। ডা. আদরের কেবিনের সামনে থেমে গেলো। ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। সে কি যাবে ভিতরে? এতে লজ্জা কেন লাগচ্ছে? মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া তাকে দেখছে। জয়নব ভয় ভয় দরজা খুললো। ঠিক সেই মুহূর্তে ভিতর থেকে ভেসে এলো,
“হে রুফাইদাকে ঠিকানা লাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। অভিনব কখনো পাবে না তাকে!”
একটা ঠান্ডা গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো। এ কন্ঠ বড্ড চেনা জয়নবের। ডা. আদরে কন্ঠ। চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়তে লাগলো জয়নবের। ভালবাসার মানুষটির কাছে তার বোন? জয়নব এক ঝটকায় দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেলো। চোখ ভর্তি জল আর ভাঙা আয়নার মতো মন নিয়ে বলল,
” আমার বোনকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন স্যার?”
আদর স্থীর দৃষ্টিতে ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো জয়নবের দিকে। সাদা শাড়িটিতে কতই না সুন্দর লাগচ্ছে তার শ্যামলতাকে। জয়নব কাঁদছে ঝরঝর করে ঝরছে চোখে পানি। ডা. আদরকে কিছু বলতে না দেখে এগিয়ে এলো সে, টেবিলের বাড়ি দিয়ে চেঁচিয়ে বলল,
” আমি আপনার কাছে ভিক্ষা চাইছি আমার বোনকে ফিরিয়ে দিন।প্লিজ, আমি আপনার পায়ে পড়ি!”
ডা. আদর উঠে এলো। তার আচরণ আজ ভাড়ি উদ্ভট। এক পা ভাজ করে নিচে বসে জয়নবের দিকে তার গম্ভীর, ধারালো কন্ঠে বলল,
” বোন চাই?”
জয়নব মাথা নাড়লো। ডা. আদর জয়নবের চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলল,
“মেরি মি?”
জয়নব হতবিহ্বল, হতবুদ্ধি। হা করে চেয়ে রইলো শুধু। কিছুই বুঝতে পাড়লো না যেন। ডা. আদর তখন জয়নবের এলো মেলো চুল গুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
“বোন চাই তো? তাহলে বিয়ে করতে হবে আমাকে! নয়তো রুফাইদা কেন? তার ছায়ার কাছেও তুমি কখনো পৌছুতে পারবেনা। লেট মি গিভ ইউ সাম ইনফরমেশন, রুফাইদার হাতে বেশি সময় নেই। সময় গুনছে সে পৃথিবীর বুক থেকে মুক্তি পেতে।”
জয়নব অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইলো। কি করবে সে? রুফাইদাকে বাঁচাতে নিজের জান দিবে? নাকি রুফাইদাকে বাঁচাবে? কি করবে সে?সব কিছু ফাঁকা লাগচ্ছে। মায়ের বলা কথা গুলো মনে পড়ছে৷ বাবার শেষ ইচ্ছেটা কি পূরণ করতে পারবে সে? তখনি আদর আবার বলল,
“সময় বেশি নেই তোমার কাছে জয়নব মাত্র ৩০ মিনিটি। এরপর আমি বাংলাদেশ ছাড়বো। তোমার বোন কই? তা আর কখনো জানতে পারবে না কখনো না। ইওর টাইম স্টার্ট নাও… টিক টক টিক টক টিক টক…………”
লাস্যময়ী ভঙ্গিতে হাসলো। দেবাশীষ স্তম্বিত হলো। তার মনে হলো, কোনো দেবী তার সামনে একটি লাল ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে বসে আছে। জয়নব প্রথমে হাত বাড়ালো। দেবাশীষ সম্মোহিতর মতো ওর তালে তাল মিলাতে লাগলো। দেবাশীষ প্রতিরাতে এখানে আসে। তার জন্য একটি রুম বরাদ্দ থাকে সব সময়। সে রুমটির দিকে এগিয়ে গেলো জয়নবকে নিয়ে।রুমে ঢুকেই বসে পড়লো বিছানার উপর। বিশালতা ভরপুর এই কামরা। নিয়ন আলো জ্বলছে। রুমটির ঠিক মাঝ বরাবর গোল বিছানাটিতে বসে কামুকতা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে জয়নবকে।জয়নব এক অদ্ভুত হাসি হেসে ফেললো,
“আর ইউ আফ্রাইড অফ ডেড পিপল?”
দেবাশীষ চমকে গেলো। এমন এক পরিস্থিতিতে বেমান লাগলো কথাটুকু। কিন্তু তবুও মস্তিষ্ক কেমন অস্থির হয়ে গেলো । জয়নব আবার বলল,
“জানেন? এই পুরো বিল্ডিং গড়ে উঠেছে পুরোনো শ্মশানের উপর!”
দেবাশীষ এবার ঘামতে লাগলো। ছোট থেকেই ভয় পায় এইসবে। এমনকি, নিজের স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে দেখাতো দূর, মুখাগ্নি করেন-নি পর্যন্ত।এমনকি মেডিকেলে বরাবরই লাশ ঘটিত ব্যাপার থেকে দূরে থাকতে চায়। এই ভার থাকে সব সময় সাহিরের উপর। জয়নব এ কদিনে এদের উপর নজর রেখেছে। খুঁজে বের করেছে দূর্বলতা। আর তাইতো এই টোপ টাই ফেলেছে। তার জন্য সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখছে মৌ পোকার সংগ্রহীত করা ধুতরা ফুলের বিষ। ভয়ংকর সেই বিষ হল a very powerful haducinating drug যা মানুষের চিন্তায় কাজ করে। চেতনাকে পাল্টে দেয়। রিয়েলিটির ভুল ব্যাখ্যা করে।
জয়নব পড়েছিল একটি বই। বইটার নাম The crystad door, বইটার লেখক কিংস কলেজের একজন বিখ্যাত সাইকিয়াট্রিস্ট-James Hauler, তিনি এই বইটিতে বললেন-মানুষের মনের কিছু দরজা আছে যা সহজে খোলে না। মানুষ যদি কোনো কারণে ভয়ঙ্কর কোনো চাপের মুখোমুখি হয় তখনি দরজা খুলে যায়। তিনি এই দরজার নাম দিয়েছেন crystal door.
জেমস হাউলার বলছেন–এই স্ফটিক দরজার সন্ধান বেশির ভাগ মানুষ সমগ্র জীবনে কখনো পায় না। কারণ বেশির ভাগ মানুষকে তীব্র ভয়াবহ মানসিক চাপের মুখোমুখি হতে হয় না। জেমস হাউলার মনে করেন মানুষের কাছে দুধরনের বাস্তব আছে। একটি দৃশ্যমান জগতের বাস্তবতা, আরেকটি অদৃশ্য জগতের বাস্তবতা। স্বপ্ন হচ্ছে সে রকম একটি অদৃশ্য জগত এবং সেই জগতও দৃশ্যমান জগতের মতোই বাস্তব। স্ফটিক দরজা বা crystal door হল অদৃশ্য বাস্তবতার জগতে যাবার একমাত্র দরজা। এই সাইকিয়াট্রিষ্ট মনে করেন যে কৃত্রিম উপায়ে মানুষের মনে চাপ সৃষ্টি করে অদৃশ্য দরজা খোলা যেতে পারে। তিনি একটি কৃত্রিম উপায় বেরও করেছেন। তার উপর গবেষণা করছেন।
মনের উপর কৃত্রিম চাপ সৃষ্টির জন্যে তিনি উৎসাহী ভলেন্টিয়ারকে একটি সাত ফুট বাই সাত ফুট এয়ার টাইট ধাতব বাক্সে ঢুকিয়ে তালাবদ্ধ করে দেন। বাক্সের ভেতরটা ভয়ংকর অন্ধকার। বাইরের কোনো শব্দও সেখানে যাবার কোনো উপায় নেই। পরীক্ষাটা কী, কেমন ভাবে হবে তার কিছুই ভলেন্টিয়ারকে জানানো হয় না। সে কোনো রকম মানসিক প্ৰস্তৃতি ছাড়াই বাক্সের ভেতর ঢোকে। তারপর হঠাৎ লক্ষ করে বাক্সের ভেতর পানি জমতে শুরু করছে। আস্তে আস্তে পানি বাড়তে থাকে। ভলেন্টিয়ার বাক্সের ভেতর দাঁড়ায়। ডাকাডাকি করতে শুরু করে। বাক্সের ডালায় ধাক্কা দিতে থাকে। কোনো উত্তর পায় না। এদিকে পানি বাড়তে বাড়তে তার গলা পর্যন্ত চলে আসে। সে প্ৰাণে বাঁচার জন্যে পায়ের আঙুলে ভর করে উঠে দাঁড়ায়। পানি বাড়তেই থাকে। পানি নাক পর্যন্ত যাবার পর পরীক্ষাটা বন্ধ হয়। তীব্র ভয়ে ভলেন্টিয়ার দিশাহারা হয়ে যায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে শতকরা ত্রিশভাগ। ভলেন্টিয়ার পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে হঠাৎ নিজেকে বাক্সের বাইরে অ্যালো ঝলমল একটা জগতে দেখতে পায়। যে জগতের আলো পৃথিবীর আলোর মতো না। সেই আলোর বর্ণ সোনালি। সেই জগতের বৃক্ষরাজি বৃক্ষরাজির মতো না। সেই জগত অদ্ভূত অবাস্তব এক জগত। যেখানে অস্পষ্ট কিন্তু মধুর সঙ্গীত শোনা যায়। শতকরা দশভাগ। ভলেন্টিয়ার নিজেদের আবিষ্কার করেন। অন্ধকারে ধূম্রময় এক জগতে। সেই জগত আতঙ্ক এবং কোলাহলের জগত। বাকি ষাট ভাগ কিছুই দেখে না। তারা আতঙ্কময় এক অভিজ্ঞতা নিয়ে বাক্স থেকে বের হয়ে আসে।
জয়নব এবার ঠিক তেমনি টেকনিক প্রয়োগ করলো। দেবাশীষের মস্তিষ্কে ঘুর ঘুর করতে লাগলো প্রতিটি কথা। জয়নব এবার দেবাশীষের মাথা খুব সুক্ষ্ম ভাবে ঢুকিয়ে দিলো কিছু কথা,
“জানেন? এই বিলাশময়ী রুমিটতে একটি মেয়ে মারা গিয়েছে। রোজ রাতে নাকি মেয়েটি এই পরো বিল্ডিং-এ উল্টো হয়ে ঘুরে বেড়ায়?”
দেবাশীষের শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন হয়ে এলো। খুব কষ্টে যেন দম ফালছে। হুট করেই কান দুটি যেন গরম হয়ে গেছে। দেবাশীষ যেন স্পষ্ট দেখতে পেলো বড় পর্দার পিছনে একটি নগ্ন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি মাথা ঘন কালো কুচকুচে চুল। সারা অঙ্গ চুলে ঢাকা। মাথা নত করে আছে যেন। জয়নব দেবাশীষের চোখে মুখ ভয় দেখতে পেল। জয়নব বাঁকা হাসলো। বুঝতে বাকি নেই, ধুতরাফুল মধু কাজ করছে। দেবাশীষের চিত্রবিভ্রম
, দৃষ্টিবিভ্রম,দিকবিভ্রম হচ্ছে। জয়নব আরো একটু তেল মশলা ঢাললো। দেবাশীষের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“আরো কি হয় জানেন…. রাত যত গভীর হয়, শ্মশানে পরিণত হয় এই হোটেল। শিকার খুঁজে নেয় শ্মশানের অশুভ আত্মারা। ”
চোখ ভর্তি ভয় নিয়ে তাকালো দেবাশীষ। মুখের কথা গুলো বন্ধ হয়ে গেলো অটোমেটিক। বিছনা থেকে উঠে এক ছুটে রুম থেকে পালিয়ে যেতে চাইলো সে। কিন্তু কে যেন আটকে দিয়েছে পা জোড়া। মনে হচ্ছে! মনে হচ্ছে যেন পা দু’টো আটকে গেছে ইট পাথরের ফ্লোরটিতে। দেবাশীষ চিৎকার করতে চাইলো। জয়নবের দিকে তাকিয়ে ধাপাধাপি করতে লাগলো উঠার জন্য কিন্তু নাহ্… পারলো না। মনে হলো কোনো অদৃশ্য অশরীরী তার পা জোড়া বেঁধে দিয়েছে। দেবাশীষ তাকালো পর্দার আড়ালে থাকা মেয়েটির দিকে। হুট করে মেয়েটি চোখ মেলে তাকালো। দেবাশীষের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো। এই যে তার মেয়ে শোভা…। যাকে সেদিন পালানোর পরেও খুঁজে বের করেছে। এবং ধরে এনেছিলো। নির্মম ভাবে সপে দিয়ে ছিলো ড্রাগ দিয়া শিবপাঞ্জির কাছে। কিন্তু সেদিন তার মেয়ে বাঁচে নি। সাহির তাকে পুতে দিয়ে ছিলো কোনো এক শ্মশানে। শুকনো ঢুক গিললো দেবাশীষ। কাঁদো কাঁদো মুখে দাঁড়িয়ে রইলো শোভা। অসহায় কন্ঠে বলল,
“আমাকে কেন মারলে বাবা? আমি তো তোমার মেয়ে ছিলাম। তোমার শরীরের ছোট অংশ! জানো.. আমি সবাইকে বলে বেড়াতাম। ‘মাই ফাদার ইজ দ্যা বেস্ট ফাদার ইন ওয়ার্ল্ড। কিন্তু তুমি… তুমি আমাকে এভাবে মেরে দিলে? জানো বাবা? কত কষ্ট হয়ে ছিলো আমার। খুব কষ্ট। জানো এই অন্ধকার জগতেও খুব কষ্ট। কেউ নেই আমার সাথে। কার সাথে খেলবো? কথা বলবো? কিন্তু তুমি আছো তো। তাই তোমাকে নিতে এসেছি বাবা। এসো…!”
হাত বাড়িয়ে দিলো শোভা। দেবাশীষ আর্তনাদ করে উঠলো,
“নাহ্ নাহ্, আমি যাবো না, কোথাও যাবো না দূর হউ!”
মেয়েটি হাসতে লাগলো। হাসলে আরো যেন বিশ্রী রকমের ভয়ংকর লাগে। দাঁত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে যেন।দেবাশীষের গা গুলিয়ে এলো। সে অন্য দিকে ফিরলো। সাথে সাথে ভয়ংকর চিৎকার করলো। তার ডান পাশেই শতশত লাশ দাঁড়িয়ে আছে নগ্ন ভাবে। কারো বুকের ভিতরে হৃদপিণ্ড নেই, কারো চোখ নেই, নেই কারো কিডনি। দেবাশীষ পালাতে চাইলো। কিন্তু জয়নব তার আগেই রুম থেকে বেড়িয়ে দরজা আটকে দিলো। বাহিরে পার্টি হচ্ছে। লোউড সং বাজাচ্ছে। কেউ শুনতে পেলো না দেবাশীষের আর্তনাদ। জয়নব বেড়িয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে। কেউ জানলোও না, বুঝলোও না। একটি রুমের মাঝে নিজের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের চিত্রবিভ্রম ভস্ম করে দিলো দেবাশীষকে……
——————————
দেবাশীষ মারা গেছে আজ সাত দিন হলো। সবাই সেদিন দেখতে পেয়েছিলো সেই হোটেলের বদ্ধ ঘরটিতে ফাঁস লটকে ঝুলছিল দেবাশীষ। নিজের মস্তিষ্কের উত্তেজনা হয়তো সইতে পারেনি সে..! দেবাশীষের মৃত্যু সবচেয়ে ভাবায় সাহিরকে। কিছু তেই বুঝতে পারে না। এমন কেন করলো দেবাশীষ? সব তো ছিলো তার জীবনে। কিসের দুঃখ ছিলো তার? যা জানতো না সাহির? কিছুটা ভেঙ্গে পড়েছে কলেজ জীবনের এই বন্ধুটির জন্য।
——————————-
জয়নবের মন আজ বেশ ফুরফুরে। গুন গুন করতে করতে সে গোসল করছে। তখনি টোকা পড়ে বাহির থেকে। জয়নব একটু ফাক করে দেখে অগ্নিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যুথি। জয়নব মনে মনে হাসে। এর জন্যেও একটি টোপ রেডি করেছে অবশ্য। জয়নব মিষ্টি করে হেসে বলে,
“আপু কিছু বলবেন?”
অগ্নিমূর্তি যুথি গর্জে উঠে বলল,
“তুমি আমার হেড ফোন ছিঁড়ে ফেলেছো! ভর্তি কে করবে শুনি?”
জয়নব তার হাসিটুকু বরাদ্দ রেখে, বিনয়ী কস্ঠে বলল,
“সরি আপু ঘর পরিস্কার করতে গিয়ে বিছানা ঝুরতে থাকতে দেখি, আমি উঠিয়ে রাখতে নেই তখনি টান লেগে ছিঁড়ে যায়। আমি অনেক সরি তার জন্য। ইচ্ছেকৃত ভাবে করিনি।”
“সরি বললে আর হয়ে গেলো? জানো কত দাম এটির? লশ তো আমার হলো! ক্ষতি পূরণ টা দিবে টা কে শুনি?”
জয়নব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আমি বরং কিনে দেবো? আজ বিকেলে তো ছুটি আছে। আমরা বরং দোকান থেকে নতুন কিনে আনবো?”
যুথি খুশিই হলো। নতুন জিনিস আর টাকার প্রতি বড্ড লোভ তার। সে সম্মতি দিয়ে চলে গেলো। এবং জয়নব দরজা আটকে চোখ বুঝে ঝরনার দিকে মুখ করে হাসলো। ঝড়নার পানি স্নিগ্ধ মুখটাকে ধুয়ে আরো শীতল করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। জয়নব মুচকি হেসে বলল,
” পাখি তুমি হবে বন্দী খাঁচার ভিতরে খুব জলদি…! যেভাবে আমার বোনকে তুমি মরণযন্ত্রনা ভোগ করাচ্ছো? এখন তুমি করবে। খুব শখ না.. বিশ্বাস নিয়ে খেলার এবার কি হবে তোমার…….!”
#অন্তর্দহন_প্রণয়
#লিখনীতে_সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
১৫।
একটু একটু করে প্রতিদিন সিরিজ দিয়ে রক্ত বের করে নেয়া হয় রুফাইদার। ধীরে ধীরে রক্ত শূন্যতা দেখা দিচ্ছে। আগের মতো হাটা-চলার অবস্থা নেই। রুফাইদা আজ বহু কষ্টে মিনতি করলো,
“ডা. সাহির আমাকে হয় একে বাড়ে মেরে দিন। নয়তো ছেঁড়ে দিন। আমার কষ্ঠ হচ্ছে খুব। এই পীড়ন সহ্য করতে পারছি না আর!”
ডা. হাসির দৈত্যের মতো হাসলেন। কন্ঠে হিংস্রতা ঢেলে দিয়ে বললেন,
” আমিও তো মারতে চাই তোমাকে ডিয়ার। কিন্তু ধীরে ধীরে। ছটফট করতে করতে মরবে। শুকরিয়া করো, এখনো আমাদের পেটের খাবার বানাইনি। ”
রুফাইদা চোখ উপচে পড়লো জল। মনে পড়লো সেই রাতের কথাটি। যে রাতে তার বান্ধবী আর দুজন ওয়ার্ড বয় ধরে এনেছিলো সেই যুবকটির কাছে। সেদিন রুফাইদাকে রেপড করেনি সেই মানব। ছেড়ে দিয়েছিলো। বলেছিলো,
“আপনি আমার ভাবি। কোনো ক্ষতি করবো না আপনার ততক্ষণ যতক্ষণ আপনি আমাদের কথা শুনবেন। নয়তো ডা. অভিনবকে কখনো দেখতে পারবেন। ”
রুফাইদা সেদিন থেকেই মুখ বুঁজে সহ্য করছিলো সব। কিন্তু তার কিছুদিন সে যা দেখলো? তাতে থমকে গেলো সে। পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেলো মুহূর্তে। রুফাইদা শুকনো ঢুক গিললো। ডা. দেবাশীষ আর ডা. সাহির একটি মেয়েকে ধরে এনেছেন। মেয়েটি নগ্ন। দুহাতে ঢেকে রাখার বৃথা চেষ্টা করেছে মেয়েটি। লোক দুটি হাসচ্ছে। বয়স পঞ্চাশের কোঠার লোক গুলো মানসিকতা দেখে গা রি রি করছে। রুফাইদা এসব দেখতে পাড়লো না। ডুকে পড়লো ঘরটিতে। মেয়েটির গায়ে নিজের ওড়না দিয়ে ঢেকে দিলো। চিৎকার করে বলল,
“ছিঃ। নিজের মেয়ের বয়সি মেয়ের সাথে এসব করতে লজ্জা লাগছে না আপনাদের?? ডা. দেবাশীষ আপনি না বলতে, সকল মেয়েরা মায়ের জাত। আপনার সন্তান? ‘ এসব তার নমুনা? ”
দেবাশীষ ভড়কে গেলো৷ ডা. সাহিরের দিক তাকিয়ে কিড়মিড় করে বলল,
“এই মেয়ে এখনো বেঁচে কেন আছে? ওঁকে মারোনি কেন? পথে কাঁটা সরিয়ে দেয়া উচিত ছিলো তোমার। এক এক করে সব জেনে যাচ্ছে সে!”
ডা. সাহির হতাশ শ্বাস ছাড়লেন। বললেন,
“আমিও চেয়েছি মেরে দিতে। কিন্তু আমার ছেলের জন্য পাড়ছি না। ও যদি জানতে পারে রুফাইদার কিছু হয়েছে, আমাদের গড়ে উঠা সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিবে!”
“তাহলে উপায়?”
ডা. সাহির হাসলেন,
“আই হেভ এ প্ল্যান! ”
ডা. দেবাশীষের চোখ চক চক করে উঠলো। সাহির দুটো লোককে ডাকলো। দু টো রোক আসতেই বেঁদে ফেলতে বললো রুফাইদাকে। লোক দুটো তাই করলো। রুফাইদা চেচালো৷ বন্ধ ঘরে কেউ শুন্তে পেলো না। শুনলেও কেউ আর এগিয়ে আসবেনা। রুফাইদা অসহায় দৃষ্টি মেলে মেয়েটিকে দেখলো। মেয়েটি আর্তনাদ কারছে। কিন্তু কেউ এলো না তার কাছে। না রুফাইদা যেতে পাড়লো। হুহু করে উঠলো বুক রুফাইদার। বিনীত সুরে বলল,
“মেয়েটি ছেঁড়ে দিন!”
কিন্তু কে শোনে কার কথা? ডা. সাহির আর দেবাশীষ এগিয়ে গেলেন মেয়েটির দিকে। থাকা দিয়ে ফেলে দিলেন টেবিলের উপর৷ তারপর…. তারপর তাদের কার্য সমপন্ন করতে লাগলেন তারা। ঘরময় ঘুরতে লাগলো কিছু বিশ্রী শব্দ আর মেয়েটির আর্তনাদ। রুফাইদার আর সেখানে থাকতে ইচ্ছে হলো না। পালিয়ে যেতে চাইলো এক ছুটে। মনে মনে পার্থনা করলো, মাটি ভাগ হয়ে যাক, সেই মাটিতে সে মিটে যাক। দুনিয়া ধংস হয়ে যাক। তারপর থেকে রুফাইদা নিরব হয়ে গেলো। তারপরের এক ঘটনা দেখে পালাতে চেয়ে ছিলো রুফাইদা কিন্তু সেদিন???
রাত তখন ১২ টা হবে হয়তো। পানি খাবে বলে নিচে নেমে এসেছিলো রুফাইদা। তখনি তার চোখে পড়ে এক বড় খাঁচা। কাপড়ে ঢাকা। কৌতূহল হলো রুফাইদা এগিয়ে এসে একটু করে কাপড় তুলতেই শিবপাঞ্জি দেখতে পেলো ইয়া বড়। রুফাইদা ঘাবড়ে গেলো। এইটা এখানে কেন? কিছুতেই বুঝতে পাড়লো না সে। তখনি পায়ের শব্দে সে লুকিয়ে পড়ে। চারটিলোক মিলে খাঁচাটি নিচের টর্চার রুমে নিয়ে যেতে দেখে হতবাক হয় রুফাইদা। কি হতে চলেছে আবার? ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো রুফাইদার। লুকিয়ে সেও হাজির হলো। তখনি ভিতরে দেখতে পেলো, ডা. দেবাশীষ আর ডা. সাহির। তারা শিবপাঞ্জিকে কিসের ইনজেকশন পুশ করছেন। আর বলছেন,
“তোর মেয়ে রেডি তো?”
ডা. দেবাশীষ হাসলেন,
“এখনো কিছু বলিনি। শুধু ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে এসেছি। পাশের রুমেই আছে। ”
ডা. সাহির ও হাসলেন,
“তোর মেয়েটি কিন্তু খুব সুন্দরী। ভাবছি শিবপাঞ্জি না দেখে ক্রাশ খায়?”
দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো। রুফাইদার লোম দাঁড়িয়ে গেলো। বুঝতে বাকি নেই কি হতে চলছে। সে পাশে ঘরটিতে চলে গেলো পা টিপে টিপে। মকথা ঠান্ডা করে কাজ করতে হবে এবার। রুফাইদা পাশের রুমে মেয়েটিকে পেয়ে গেলো। ঠিক যেন জয়নবের বয়সি রুফাইদার বুকে কামড় দিয়ে উঠলো। সে মেয়েটিকে সব বলল। মেয়েটি কিছুতেই বিশ্বাস করলো না রুফাইদার কথা। কোনো বাবা তার মেয়ের সাথে এমন একটি কাজ করতে পারে? তা অসম্ভব! রুফাইদা না পেরে বলল,
“তুমি আসো আমার সাথে আমি দেখাচ্ছি? ”
মেয়েটি কিছু ভেবে সম্মতি দিলো। মেয়েটিকে নিয়ে যেইনা রুফাইদা বের হলো… তখনি…..
চলবে,
#অন্তর্দহন_প্রণয়
#লিখনীতে_সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
১৬।
মেয়েটি কিছু ভেবে সম্মতি দিলো। মেয়েটিকে নিয়ে যেইনা রুফাইদা বের হলো… তখনি…..দেখতে পেলো ডা. সাহির তার সামনে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। রুফাইদা ভয় পেলো না। এই লোকেদের ভয় পেতে নেই। রুফাইদা মেয়ের হাতটি শক্ত ধরে চেপে ধরলেন। ডা. সাহির এগিয়ে এসে রুফাইদার গলা শক্ত করে চাপ দিলেন। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু রুফাইদা হার মানবে না। পাশে থাকা টেবিলের উপর সাজানো ফুলদানিটা নিয়ে ধাম করে মারলো সাহিরের মাথায়। সাহির “আহ্” করে উঠলো। ঝড়ে পড়লো রক্ত। হাতের বাঁধন হলো হালকা। এই ফাকে ছুটে পালিয়ে গেলো সেখান থেকে রুফাইদা মেয়েটিকে নিয়ে। এর আগে রুফাইদা অনেক চেষ্টা করে পালাতে পারেনি। কিন্তু মেইন দরজা খোলা, আশেপাশে কেউ নেই। এ যেন মেঘ না চাইতেও বৃষ্টি। মেয়েটি খুব ভয় পেয়ে গেছে এর মাঝে। বার বার বলছে,
“আপু আমার ভয় লাগছে! খুব ভয়! আমাদের মেরে ফেলবে তারা তাই না। ”
রুফাইদা জানে এরা ধরতে পারলে আজ আর আস্ত রাখবে না। শুধু মেয়েকে বলল,
“বাঁচতে চাইলে দৌঁড়াও।”
ওরা নির্জন রাস্তায় নেমে এলো। গভীর রাত। কেউ নেই। রাস্তা ধারে দুটো নেড়ি কুকুর ঘোরাঘুরি করছে। রুফাইদা রাস্তা ঘাট চিনছে না। সে কোথায় আছে তার জানা নেই। কি করবে কোন দিক যাবে বুঝতে পারছে না। ঠিক তখনি ভেসে এলো কিছু গাড়ির আওয়াজ। নিশ্চয় ওরা চলে এসেছে? রুফাইদা শুকনো ঢুক গিললো। রাস্তার ধারে দুটো বাঁক। ডান পাশের বাঁক ধরে আবার দৌঁড়াতে লাগলো। এক পর্যায় সেখানে স্টেশন দেখে খুশিতে আত্মা হারা হয়ে গেলো। একটি ট্রেন মাত্রই ছেড়ে যাচ্ছে নিজ গন্তব্য। রুফাইদা মেয়েটিকে উঠিয়ে দিলো। নিজে যখন উঠবে ঠিক তখনি পায়ে গুলি এসে লাগলো। রুফাইদা আর্তনাদ করে ছিটকে পড়লো। ট্রেনের গতি বৃদ্ধি পেলো। দু হাতে সাহায্য হাতরে হাতরে ট্রেন ধরতে চাইলো। কিন্তু না ব্যর্থ সে। সে প্ল্যাটফর্মের দিকে ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে চাইলো। দৌঁড়ে আছে তার মরণ। এই মরণ জানে মারবে না, জীবিত রেখে ধীরে ধীরে মারবে। রুফাইদা লুটি পড়লো।
যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন সে বাঁধা অবস্থা বসে ছিলো। তার পাশেই দেবাশীষ, সাহির আর সেই যুবক। সাহিরের মাথায় ব্যান্ডেজ। রাগে তার গা কাঁপছে। এই মেয়েটির জন্য আজ অনেক বছরের এক্সপেরিমেন্ট ধসে পড়েছে। গলার কাঁটা হয়ে গেছে যেন। রুফাইদা ভয়ে ভয়ে তাকালো। যুবকটি এবার কথা বলল,
” নিজের জন্য আর আমাদের জন্য কেন বিষয় গুলো ক্রিটিক্যাল করে তুলছেন? আপনি জানেনা? আপনার এই পদক্ষেপের জন্য ভাইয়া, আপনার মা এন্ড এন্ড আপনার ছোট বোনের কি হবে?? বাবাকে তো হারিয়েছেন, এবার নিজের বড়টাকেও কি খোয়াতে চান নাকি??”
রুফাইদা শিউরে উঠলো। ভয়ে ভয়ে বলল,
“আমার বোন, আর মাকে কিছু করো না। প্লিজ কিছু করো না।”
যুবকটি ভ্রু কুঁচকে ফেললো। গম্ভীর আর শান্ত কন্ঠে বলল,
“আর তোমার বরটাকে কি করবো শুনি?”
রুফাইদা গলায় কঠোরতা ঢেলে বলল,
“চুলোয় যাক!”
শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠাস করে এক চর বসালো ডাক্তার সাহির রুফাইদার গাল।রুফাইদার চোখের সামনো ঘোলাটে হয়ে গেলো। গাল যেন ফেঁটে গেছে মনে হচ্ছে। জালা করছে খুব। মুখের ভিতরে নোনতা পানীয় জাতীয় লাগতেই বুঝতে পেলো রক্ত বেড়িয়ে গেছে। রুফাইদা হাসলো। ডা. সাহির অভিনবকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসে।ডা. অভিনব আপন ছেলে কিনা..! রুফাইদা হাসলো। কাতর কন্ঠে বলল,
“পাগল ছেলের জন্য এত দরদ? আর ভালো ছেলেটাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন তিলে তিলে?”
আরেকটা চর এসে পড়লো রুফাইদা অন্য গালে। গলা ফাঁটানো চিৎকার করে বলল, ডা. সাহির,
“চু…প!”
রুফাইদা এবার সত্যিই নিস্তেজ হয়ে পড়লো। পিছনের যুবকের উদ্দেশ্যে বলল,
“তোমার ভাইকে যাষ্ট আমি ঘৃণা করি। সে কাপুরুষ!”
যুবকটি বাঁকা হেসে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। কিছু মুহূর্তেই হাসির হলো একটি বাটি নিয়ে। রুফাইদা অবাক হয়ে চাইলো তার দিকে। ছেলেটি বাঁকা হেসে বলল,
” অনেক দিন পানিশমেন্ট দেয়া হয় না আপনাকে। তাই উড়ছেন তো? জানেন আমার হাতে কি?? মানুষের মাংস। ওইযে কদিন আগেই একটি মেয়ে খুন করা হলো? তার মাংস। জানেন? মানুষের মাংসের কত দাম? আপনার তো সৌভাগ্য, বিনে টাকায় খেতে যাচ্ছেন৷ রুফাইদা আত্মকে উঠলো৷ বিস্ফোরিত চোখে চাইলো বাটি আর যুবকটির দিকে। যুবকটি সাহিরকে ইশরা করতেই রুফাইদা মুখ খুললো। আর যুবটি একটুকরো মাংস ঢুকিয়ে দিলো রুফাইদার মুখে। রুফাইদা গা গুলিয়ে বমি করে ভাসিয়ে দিলো সব। চোখ উপচে পড়ছে জল। শরীরে শক্তি টুকু নেই লড়াই করার। যুবকটি বাঁকা হেসে বলল,
“কি আরো পালাতে চান? ”
রুফাইদা সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে না করলো। যুবকটি আবার বলল,
“আমার ভাই পাগল নই! সে আপনার বর মন থাকবে?”
রুফাইদা আবারো মাথা উপর নিচ করে হে জানালো। যুবটি এবার সুস্থির নিশ্বাস ফেললো। ডা. সাহিরের উদ্দেশ্যে বলল,
“রুফাইদা অভিনবের জান বলে ওকে মারি না আমরা। কিন্তু জয়নবকে কেন ছাড় দিচ্ছো? ও তো গলার কাঁটা হয়ে গেছে।”
যুবকটি মিষ্টি করে হাসলো। বলল,
“আমি ওকে ছাড় দিয়েছি, ছেড়ে দেইনি। আর ওকে মারবো কি না আমার ব্যাপার। নাক গলাতে আসবেন না নয়তো নাক ফুট করে দিবো। ”
বলে হাসতে লাগলো সে। পরমুহূর্তেই গম্ভীর আর শীতল কন্ঠে বলল,
“যার বউ অত্যন্ত তাকে ফিরে দিন। তাকে কাছে আসতে দিন। বউকে নিজেই ঠিক করে দিবে সে!”
যুবকটি বেড়িয়ে গেলো। সাহির সেখানেই দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করলো কতক্ষণ। অাফসোস করলো খুব। যুবকটি যদি তার সন্তান হতো? উনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। অভিনবের কথা ভেবেই বুকের মাঝে কষ্ট দলা পাকালো। ছেলেটি ৬ মাস সুস্থ, ৬ মাস পাগল থাকে। এই ৬ মাস সে ডা. সাহিরের হসপিটালের ইললিগ্যাল কাজে সাহায্য করে। তার বাবার আরেকটি ভয়ংকর রূপ আছে বেচারা জানেই না। অবশ্য ইললিগাল কাজ ছেড়ে দিতে চেয়ে ছিলো রুফাইদাকে পেয়ে এবং সে বছর পুরোটাই সুস্থ সবল ছিলো। ডা. সাহির অবাক হয়ে গেছিলেন। তাইতো রুফাইদার সাথে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছিলেন ছেলের। ছোট শ্বাস ফেলে ভিতরে চলে গেলো। মনে হচ্ছে এবার অভিনবকে বলতে হবে সব..!
——————
আজ অনেকদিন জয়নবের দেখা নেই হসপিটালে। সব কেমন শান্ত, স্তব্ধ। মেয়েটি কি ভয় পেয়েছে? তাই বুঝি চুপ। নাকি ঝড়ের পূর্বাভাস। ডা. সাহির জানে, এই মেয়ে নির্ঘাত কোনো ঘোল খাওযাবে? কিন্তু কি? তা বুঝতে পারলেন না।ছোট শ্বাস ফেললেন উনি। আজ তার একটি ইম্পর্টেন্স সার্জারি আছে ইললিগাল ভাবে করাতে হবে । লাভ হবে এক কোটি টাকার মতো। বড় ধনবান ব্যাক্তি হার্ট সার্জারি করাতে হবে। তার জন্য একটি হার্ট অত্যাবশ্যক। উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। তার সহযোগীরাও ছুটছে তার পিছনে। এক ট্রাক এক্সিডেন্ট হয়েছে। রোগীর গুরুতর অবস্থা বাঁচবে না বেশি সময়, চান্স খুব বেশি। রোগীর পরিবারেও কারো হদিস পাওয়া যায়নি । তারা রোগীকে ৩০৩ নং কক্ষে ঢুকালো। অপারেশনের সব তৈরি। ঠিক তখনি বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসতে লাগলো। বাহিরে তাদের নতুন দারওয়ান রমিজকে দাঁড় করানো ছিল। কোনো অসুবিধে হলেই খবর দেয়ার দায়িত্ব তার। অথচ রমিজের খবর নেই। বিরক্তি নিয়ে দেবাশীষকে বলল দেখে আসতে ডা. সাহির। দেবাশীষ বাহিরে আসতেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। ৩০৩ নং রুমের সামনে উপস্থিত সি আই ডির একটি দল। দেবাশীষ শুকনো ঢুক গিললো। পাশে দাঁড়ালো জয়নবের দিক চোখ পাকিয়ে তাকালো।মেয়েটি তীর্য হাসছে। চোখে মুখ হাসছে। আর কিছু দূরেই মার খেয়ে পড়ে আছে রমিজ।দেবাশীষ ভয়ে ভয়ে তাকালো,
“স্যার আপনারা? ”
সি আই ডি রূপক হেসে বললেন,
“শুনেছি ৩০৩ নং কক্ষ নাকি পরিত্যক্ত? এখানে আবার কিসের অপারেশন চলছে?”
শুকিয়ে গেলো তার মুখ। কথা আটকে গেলো গলা ভিতরটাতেই। রূপক তার সহকর্মীকে বললেন,
“একে সাইড করো। আমরা দেখে আসি নায় ঘুরে!”
দেবাশীষ আমতা আমতা করলো, কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু কেউ তার কথা শুনলো না। তারা ঢুকে গেলো ভিতরে। বের করে আনলো একে একে ডা. সাহির সহ আরে দুজন ডাক্তারকে। ডা. সাহির শান্ত। তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হলো পুলিশ স্টেশনে। যাওয়ার আগে অবশ্য কানে কানে বলে গেলেন জয়নবের,
“তোমার বোনের জন্য খুব একটা ভালো হবে না।”
গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো জয়নবের। একদিন কুয়াশা আর তার হবু বর মিস্টার রূপক যে সি আই ডি অফিসার তার সাহায্যে এদের মুখোশ উন্মোচন
হতে পেরেছে। কিন্তু বলে না টাকার জোর সব থেকে বেশি? ছাড়া হয়ে গেলো তারা। কিন্তু হসপিটাল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। যতদিন না তাদের গা থেকে দাগ মুছবে ততদিন এই হসপিটালে তাদের জায়গায় নেই। এর পর বেশ কিছুদিন কেঁটে যায়। জয়নব ঠিক করে নেয় এদের নিজ হাতে খুন করবে। তাউ তিলে তিলে মারবে। আর তাতে সাহায্যে করবে ‘মৌ পোকা”।এদিকে রুফাইদার কোনো খোঁজ চিরনি অভিজান করেও পাওয়া গেলো না। এর মাঝে ডা. অভিনবের দেখা মিলে। ৬ মাস যাবত উনি আর ডা. আদর টুর করে বেড়িয়েছেন। অথচ বাবার উপর এত ঝামেলা পড়লো? তাতে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই যেন। এটা কিভাবে সম্ভব? এই নিয়ে বড্ড কৌতুহল জাগলো জয়নবের।
————–
ডা. দেবাশীষ নাইট ক্লাবে প্রতিদিন নিত্যনতুন বান্ধবী নিয়ে উপস্থিত হন। আজো তাই হলো। রাতে আধারে এই ক্লাবটি যেন রঙ্গ মঞ্চ। বড় বড় ঘরের নামি দামি মানুষ এসে উপস্থিত হয় এই ক্লাবে। চারিদিকের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য আর নারীর সঙ্গ আর কি চাই এখানে? জয়নব আজ ভেশ পাল্টে হাজির হয়েছে পার্টিতে।দূরে বসে থাকতে দেখে দেবাশীষকে। লোকটি টলছে। আর পাশের ওয়েটারকে পেগ বানাতে বলছে। জয়নব সে সময়টি কাজে লাগালো। মৌ পোকার সংগ্রহ করা ধুতরা ফুলের মধু খাইয়ে ঢেলে দিলো গ্লাসে। গ্লাসটি এগিয়ে দিলো দেবাশীষের দিকে। দেবাশীষ নিভু নিভু চোখে চেয়ে জয়নবকে দেখে রেগে গেলো। সাসনে থাকা গ্লাস টুকু এক চুমুকে সবার করে দিলো। হিসহিসিয়ে বলল,
“তোকে একদিন বিছানায় নিয়ে গিয়ে উচিত শিক্ষা দিব।!”
জয়নব বাঁকা হাসলো। বলল,
“একদিন কেনো? আজ কেন নয়??”
লাস্যময়ী ভঙ্গিতে হাসলো। দেবাশীষ স্তম্বিত হলো। তার মনে হলো, কোনো দেবী তার সামনে একটি লাল ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে বসে আছে। জয়নব প্রথমে হাত বাড়ালো। দেবাশীষ সম্মোহিতর মতো ওর তালে তাল মিলাতে লাগলো। দেবাশীষ প্রতিরাতে এখানে আসে। তার জন্য একটি রুম বরাদ্দ থাকে সব সময়। সে রুমটির দিকে এগিয়ে গেলো সে। আর তারপর…..
#অন্তর্দহন_প্রণয়
#লিখনীতে_সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
১৪।
একটা তীব্র পারফিউমের ঘ্রাণ লাগছে নাকে। তির তির করে ঘ্রাণটি নাকের ভিতর প্রবেশ করছে। চেনা পরিচিত একটি ঘ্রাণ। হাত-পা বাধা অবস্থায় চেয়ার বসে আছে জয়নব। অজনা, অচেনা ভয় নাড়াচাড়া দিয়ে উঠছে শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে । চোখ দুটি-ও বাঁধা। জয়নবের মনে হচ্ছে, তার বুঝি দিন ফুরিয়ে এলো? পৃথিবীর বুকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করছে কি সে? শরীর কাঁপছে জয়নবের। মাথা, কঁপাল ভর্তি ঘাম। মুখ দিয়ে বলে যাচ্ছে,
“হেল্প…..হেল্প, কেউ আছেন? সামবডি হেল্প মি…. প্লিজ!”
কথা গুলো বাড়ি খেয়ে যেন ফিরে ফিরে এলো জয়নবের কাছেই। বন্ধ ঘরে কথা বললে যেমন আওয়াজ হয় ঠিক তেমন শোনাচ্ছে এই মুহূর্তে! আচ্ছা সে কোথায় আছে? লাষ্ট মুহূর্তে ওই কালো পোশাকধারী লোকটিকেই দেখেছিলো জয়নব। তীক্ষ্ণ কালো কুচকুচে চোখ তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। আজ লোকটি মুখ ঢাকা ছিলো না। ঠোঁটে ছিলে শ্লেষের হাসি। আবছা আবছা মনে আছে জয়নবের। লোকটি কে সে চিনে। খুব ভালো করে চেনা। মাথার মাঝের নার্ভ গুলোতে আরো পেশার দিলো জয়নব। ঠিক তখনি চোখে বাঁধন খট করে খুলে গেলো। জয়নব পিটপিট করে তাকালো। একটি ঘরের মাঝ বরাবর চেয়ারে বাঁধা জয়নব। ক্ষীণ,রাশ ভরী আলো জ্বলছে। খট করে আওয়াজ হলো। জয়নবের সামনে ভেসে উঠলো তিনটি অভিমূর্তি। ঘরটির ও প্রান্তে কাচের দেয়াল ভেদ করে ঠিক ওপাশে চেয়ারে বসে আছে। আয়ান আর ওই দুটি ওয়ার্ড বয় বসে আছে চেয়ার। জয়নবের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। সে ডাকলো,
“আয়ান ভাইয়া… আয়ান ভাই.. আ… য়া….ন ভা…ইয়য়য়া”
নাহ্ আয়ন নিশ্চুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জয়নবের দিকে। স্থীর চাহনি। চোখের পাতা নড়ছে না, চোখের মনি গুলো চুপ। জয়নবের শরীরে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গেলো মুহূর্তে। কি হয়েছে তাদের?
ঠিক তখনি শোনা গেলো পায়ের শব্দ। বন্ধ ঘরে শব্দ হচ্ছে, খট খট খট। থেমে গেল জয়নবের পিছনে। জয়নব উপলব্ধি করতে পারল। এক বিশালদেহী মানব। জয়নব পিছনে ঘুরতেই জয়নবের চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো। কন্ঠ নালিতে কথা গুলো টুপ করে বসে রইলো। কম্পিত কন্ঠে বলল,
“ডা… সা.. হি.. র!”
লোকটি মুহূর্তেই ঘর ফাটানো হাসি দিলো। বলল,
“আই হেইট ইউ ডিয়ার।”
বলেই চোখ টিপলো লোকটি। কালো পোশাকধারী লোকটি যে এই ব্যক্তি বুঝতে বাকি নেই জয়নবের। কিন্তু কি অদ্ভুত! কালো পোশাকে আগাগোড়া মোড়ানো লোকটি বয়স পঞ্চাশ এ মুহূর্তে ধরা যাচ্ছে না। জয়নব শুকনো ঢুক গিললো। নিজেকে শান্তু করতে চেষ্টা করলো। কন্ঠে যথাযথ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
“এ সব কিছুর পিছনে আপনি ছিলেন! আগেই বোঝা উচিত ছিলো।”
জয়নব চুপ করে দেখতে লাগলো লোকটিকে। ভদ্র মানুষের আড়ালে একটি হিংস্র পশু। জয়নব ঘৃণিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ডা. সাহির আবার বলল,
” তোমার বোন এত দূর কিন্তু আসতে পারেনি জানো। তার আগই.. মাঠের বাহিরে! তোমার বাবার প্লেন সব ভেস্তে গেল। কিন্তু তুমি? ইউ ক্লেভার গার্ল। আই লাইক ইট। ”
কথাটুকু শুনে জয়নব চমকালো। বলল,
“বাবার প্ল্যান মানে?”
সাহির ভ্রুকুচকে জয়নবের দিকে ঝুঁকল। হিসহিসিয়ে বলল,
“হে তোমার বাবারই প্ল্যান সব। ওই শালার জন্যই আজ ধরা আমাদের রহস্য প্রকাশ পেতে চলল। নয়তো আজ ৫০ বছর ধরে আমাদের কাজ সম্পর্কে কাক পক্ষীও টের পাই নি।”
জয়নব বিস্ময়ে বুঁদ। সাহির হেসে বলল,
“সুইটহার্ট! তুমি কিছু জানো? না জেনে লড়তে নেমে গেলে?”
সাহির এবার হেটে কাঁচের দেয়ালে দাঁড়িয়ে স্বগতোক্তির মতো বলল,
” তোমার বাবা একজন গোয়ান্দা বিভাগের সদস্য ছিলেন। তার প্ল্যানেই রুফাইদা এই হসপিটালে আগমন ঘটেছে। আর বেচারি… নরগ যন্ত্রনা ভোগ করছে!”
জয়নবের কিছুই বুঝতে পারলো না প্রথমে। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে লাগলো সে। তারপরই প্রশ্ন করে বসে,
“আপনি.. আপনি এসব আগে থেকেই জানতেন?”
“অফকোর্স লিটিল বেবি। আমি না জানলে জানবে কে? তোমার বাবা চুনোমাছ ভাবে ধরতে চেয়েছিল আমাদের। কিন্তু আমরা??? বোয়ালমাছ! তবে হে বেচারা রুফাইদা ভাল চেষ্টা করেছিলো। আমার ছেলের মাথাটাও খেয়ে দিয়েছে একবারে। বেচারা অভিনব বিয়ে করেও বুকে পেলো না কাছে…!”
জয়নবের রাগে, দুঃখ কান্না পেলো। হাত পা বাঁধা না থাকলে এবার হয়তো একে এখানেই শেষ করে দিতো। জয়নবের কন্ঠে ধরে এলো,
“আমার বোন কই!”
ঠোঁট কামড়ে কেঁদে উঠলো জয়নব। লোকটি ফিচেল হাসলো,
“আছো নরকে আছে!তবে বেশি দিন দুনিয়ায় মেহমান নয় সে।”
এ পর্যায় জয়নব চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“আমার বোনের কিছু হলে তোকে আমি মেরে কুত্তাকে খাওয়াবো!”
লোকটি হো হো করে হেসে উঠলো,
“তাই নাকি? তোমার মতো পুচকে আমার কি করবে শুনি?”
জয়নব হাত পা খোলার চেষ্টা করতে লাগলো। লোকটিকে বিশ্রী গালি দিয়ে বলল,
“নারীর বলে নরম ভাবিস না। একটা সুযোগ পেলে তোর মাথা কেঁটে আমি ফুটবল খেলবো!”
সাহির ভরকে গেলো। পিত্তি একটা মেয়ে তাকে শাসাচ্ছে! এটি খুব অপমান জনক সাহিরের কাছে। সে হাত তালি দিলো। একটি লোক আসতেই সাহির জয়নবের হাত খুলে দিতে ইশরা করলো। বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়েই জয়নব হামলে পড়লো সাহিরে উপর। সাহির ঠিক তখন স্ব জোড়ে চর বসালো জয়নবের গালে।এতে কিছুটা বাঁধা পড়লো। তাতেও খেন্ত হলো না জয়নব। সাহিরের মুখেও চড় বসিয়ে দিলো ওর গালে। সাহির স্তম্ভিত হলো। একটি পিচকে মেয়ের এত তেজ তার সহ্য হলো না। আরেক হাতে জয়নবের চুলের মুঠি ধরে হেলিয়ে নিলো পিছনের দিক। এতই জোড়ে টানলো চুল! জয়নব চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। সাহির দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” শোন মেয়ে আমার কাছে এখনো তুমি পিঁপড়ে। আমি কি করতে পাড়ি? তা এক পলক না হয় স্বচোখে দেখে নাও,?”
বলে কাচের দেয়ালে ঠেসে ধরলো জয়নবকে। জয়নব আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। সাহির তাকে এমন ভাবেই চেপে ধরেছে কাচের দেয়ালের সাথে যেন এখনি ভেঙ্গে কাচের ওপাশের রুমটিতে ঢুকে যাবে। জয়নব পিছন থেকে লোকটিকে ধাক্কা দিতে লাগলো। সাহির তখনি আরেক হাতে দুটি আঁটকে নিলো। তারপর মুশফিক বলে কাউকে ডাকলো। জয়নবের মাথায় তখন মুশফিক নামটি কেচ করলো। এটি যে তারই বোনের বন্ধু একজন? কাচের ওপাশের রুমটিতে প্রবেশ করলো মুশফিক, খাটো, মোটা একটি ছেলে। চোখে চশমা গায়ে ডাক্তারি এপ্রন।লোকটি হাতে তিনিটি সিরিজ। জয়নব প্রথমে কিছুই বুঝলো। সাহির তা ভালোমতোই বুঝেছে। তাই জয়নবকে বলল,
“ছোট বাবু আমার জানো? ওই সিরিজ গুলোতে কি আছে?”
জয়নবের নড়াচড়া থেমে গেলো। ভয় ভয় চোখে তাকালো সাহিরের দিক। সাহির বাঁকা হাসছে। জয়নবের উদ্দেশ্যে আবার বলল,
“ড্রাগ… এলএসডি!”
জয়নবের পিলে চমকে উঠলো। সাহিরকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইলো। আয়ান ভাই আয়ান ভাই বলে আর্তনাদ করতে লাগলো। কিন্তু লাভ হলো না। জয়নব এবার মুশফিককে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আয়ান ভাই না আপনার বন্ধু? তাকে কেন মারতে চাইছেন? ভাইয়া উনাকে ছেড়ে দিন, উনার কোনো দোষ নেই! আল্লাহর দোহাই লাগে! প্লিজ আয়ান ভািকে কিছু করবেন না? তার কি দোষ??”
সাহির ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“তার দোষ? সে বেইমানি করেছে আমার সাথে। তাকে তো মরতেই হতো!”
জয়নব থমকালো,
“মানে… আয়ান ভাই আপনাদের সাথে?”
সাহির মাথা নাড়লো। জয়নবের এবার পাগল পাগল লাগলো নিজেকে৷ ছল ছল চোখর তাকিয়ে রইরো ওই পাশের রুমটিতে। মুহূর্তের মাঝে আয়ান নিজের গলা কেঁটে ফেলেছে। পাশের দুটো লোকও তাই করলো। পুরো রুম রক্তে লাল হয়ে গেলো। জয়নব সেখানেই বসে পড়লো। পুরো দুনিয়া এখন তার গুরছে। সাহির তার সামনে বসলো। এক আগুল দিয়ে মুখ উঁচিয়ে ধরলো জয়নবের। হেসে বলল,
“আমার ক্ষমতা কতটুকু তা তোমার ধারণার বাহিরে মেয়ে। শুধু শুধু নিজের জান খোয়াতে চেয়েও না। পড়তে এসেছো পড়ে, ভালো ডাক্তার হয়ে বেড়িয়ে যাও। পাকনামি আর করো না! ”
জয়নব তাৎক্ষণিকভাবে বলে উঠলো,
“এর শেষ আমি দেখে ছাড়বো। আপানাকে জেলের ভাত না খাওয়াতে পাড়লে আমার না জয়নব নয়!”
সাহির হেসে দিলো,
“চ্যালেঞ্জ করছো?”
জয়নব চোখের পানি মুছে নিলো। বলল,
“তেমনিই ভেবে নিন!”
লোকটির চোখে মুখে অহংকার ফুটে উঠলো। জয়নবের কথা তাচ্ছিল্য করে বলল,
“ওকে দেখা যাবে, তোমার দৌড় কতটুকু। যদিও আমার কাছে নিছক এক মশা সমতুল্য তুমি? তবে এই খেলাটা আমি পুরোপুরি উপভোগ করতে চাই!”
জয়নব হাসলো। বলল,
” যখন জানতাম না এই খেলাটা অপরপ্রান্ত থেকে খেলছে কে? তখনি নেমে পড়েছিলাম খেলতে। আর এখন তো জানি, খেলোয়াড়টা কে? ”
জয়নব রুমটি থেকে বেড়িয়ে এলো। পিছনে এক পলক তাকিয়ে দেখলো, “৩০৩ নং রুম!”
—————-
রুফাইদা শুয়ে আছে। খাটের দু প্রান্তে বাঁধা দুটি হাত। ঠিক তখনি দুটি ডাক্তার ভিতর ঢুকলো। রুফাইদা ভয়ে কেঁপে উঠলো। আর্তনাদ করে উঠলো,