হার্টলেস পর্ব-০৮

0
1370

#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_08
,,
,,
,,
,,

ইতু রুমের ভিতরে গেলো হালকা সেজে নীড়কে ডেকে উঠলো।নীড় ইতুর কাছে গিয়ে দেখলো ইতু শাড়ি অর্ধেক পড়ে দাড়িয়ে আছে, নীড় মুচকি হেসে ইতুর কাছ থেকে শাড়ি নিয়ে পড়াতে লাগল আর বলল,শাড়ি পড়া কখনো শিখবি না।ইতু ভ্র কুচকে বলল,

– কি এটা কেমন কথা

– হুম সব সময় আমি পড়িয়ে দেবো

– তুমি পারো কিভাবে

– ইউটিউব আছে না

– মেয়েরা পড়ছিল আর তুমি দেখেছো৷ ( খানিকটা রেগে সরু চোখে তাকিয়ে বলল ইতু )

– আরে ন,না পুতুলকে পড়াচ্ছিলো ওটা দেখেছি

– সত্যি তো

– হুম

শাড়ি পড়ানো শেষ করে নীড় ইতুকে ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করে মুচকি হেসে বলল, অপরুপ।
নীড় ইতুর কাছে এসে বলল, তুই এতো সাংঘাতিক দেখতে কেন? ইতু ভ্রু কুচকে বলল, আমি মানে??? নীড় মুচকি হেসে ইতুর মাথায় একটা আস্তে থাপ্পড় দিয়ে বলল,গাধী। বলে নীড় আবার বারান্দায় গেলো।ইতুও পিছনে গিয়ে নীড়ের সাথে দাড়ালো।

বেশ কিছু খন দুজন চুপ থেকে ইতু হঠাৎ বলল, তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে খুব টেনশনে আছো।নীড় ইতুর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ ইতুর কোমড় টেনে কাছে নিয়ে আসলো তারপর বলল, তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করেছিলাম তুই কি এখনো রেগে আছিস।ইতু কিছু বলল না চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো, হঠাৎ হিম বাতাসের ঝাপটায়, ইতুর উড়নচণ্ডী চুল গুলো এসে মুখে পড়লো।নীড় হাত দিয়ে তা সরিয়ে দিলো, নীড় আস্তে আস্তে ইতুর অধরের দিকে অগ্রসর হতে লাগল।

হঠাৎ এমন হওয়া ইতু অনেক টা ঘাবড়ে নীড়ের কাছ থেকে সরে আসলো।নীড় নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাটির দিকে তাকিয়ে আহত কন্ঠে বলল, সরি। বলে নীড় চলে যেতে নিলেই ইতু নীড়ের হাত ধরে ফেলল,নীড় স্তব্ধ হয়ে ইতুর দিকে তাকালো। ইতু হঠাৎ পায়ের আঙ্গুল উঁচু করে নীড়ের অধরে অধর ছোয়ালো,নীড় চরম মাএায় অবাক হলো, বেশ কিছু খন পর ইতু সরে এসে নীড়ের বুকে মুখ লুকালো,তারপর বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। কথাটা শুনে নীড়ের চোখ মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো,এক রাজ্য প্রশান্তি বিরাজ করতে লাগলো নীড়ের মর্মদেশে।

হঠাৎ চোখ খুলে গেলো নীড়ের শোয়া থেকে উঠে বসলো, লেম্প টা জ্বালিয়ে দেখলো ইতু এক কর্ণারে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে, নীড় ঘড়ির দিকে তাকালো দেখলো ৪ টা বেজে ০৯ মিনিট। নীড় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ইতুর দিকে তাকালো আর ভাবতে লাগল, এটা স্বপ্ন ছিলো, যদি এটা সত্য হতো।

____________________________________

নীড় শার্ট পড়ছিল এখনি বের হবে,তখনি ইতু নীড়ের জন্য কফি নিয়ে আসলো। কফি নীড়ের সামনে রেখে বোরখা বের করলো,তা দেখে নীড় বলল,

– তুই কি ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছিস

– হুম

– না যাওয়া লাগবে না

– মানে???

– যে দিন ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস থাকবে শুধু সে দিন যাবি, আর এমনি হিনার কাছ থেকে নোট নিয়ে নিস।আমি ওকে বলে দেবো ও বাড়ি এসে তোকে দিয়ে যাবে।

– এসব কি বলছো, তুমি আমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছো

– বন্ধ করছি না, শুধু যে দিন ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস থাকবে শুধু সে দিন যাবি

– না

– ইতু আমি তোর সাথে কোনো তর্ক করতে চাই না। আমি যা বলেছি তা হবে।

– পেয়েছো টা কি তুমি, তুমি তো বলে ছিলে আমার জীবন আগে যেমন ছিলো এখনো তা আছে, তাহলে তুমি আমাকে এতো বাধা দিচ্ছো কেন?

– লিসেন ইতু,আমি বাধা দিচ্ছি না কিন্তু আমি যত দিন না বলছি তুই বাড়ির বাহিরে এক পা ও রাখবি না।

– না

নীড় রেগে ইতুর হাতের বাহু চেপে ধরে কড়া কন্ঠে বলল, আমি যখন না করেছি তোকে শুনতেই হবে। ইতু করুণ মুখে নীড়ের দিকে তাকালো, এই কি সেই নীড় ভাইয়া না উনি আমার সেই নীড় ভাইয়া হতেই পারে না। ইতুর চোখের কোণে পানি দেখে নীড় ইতুকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল।

__________________________________________

নীড় গম্ভীর ভাব নিয়ে নিজের কেবিনে বসে আছে। মেঘ এসে বলল, নীড়।নীড় মুখ তুলে তাকালো তারপর বলল, কি হয়েছে। মেঘ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,ওই মেয়েটা সিমা ও মারা গেছে। নীড় স্তব্ধ হয়ে রইলো। মেঘ আবার বলল, মেয়েটার বাবা এসেছে তোর সাথে দেখা করতে চায়।নীড় মাটির দিকে তাকিয়ে বলল, আসতে দে।

মেঘ লোকটাকে আসতে বলে, মেয়েটার বাবার মুখ দেখে নীড়ের বুকে চিনচিন ব্যথা করতে লাগল,সন্তানহারা বাবার কি করুণ অবস্থা। নীড় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল, জ্বি বলুন।
মেয়েটার বাবা নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে ভাঙা কন্ঠে বলল,

– আমার মেয়েটার কি দোষ ছিলো স্যার কেন আমার মেয়েটার সাথে এমন হলো।ও খুব ভালো মেয়ে ছিলো আর খুব ছোট ছিলো। আমার পরীর মতো মেয়েটার সাথে এমন কেন করলো।ওর অনেক স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হয়ে গরীবদেরকে ফ্রি তে চিকিৎসা করবে, অসহায় মানুষদের সাহায্য করবে।কিন্তু ওই অমানুষ গুলো আমার মেয়েটাকে..

বলতে গিয়ে মেয়েটার বাবা কান্নায় ভেঙে পড়লো, আবার নিজেকে সামলে বলল,আমি এর বিচার চাই ওই অমানুষ গুলোর শাস্তি চাই, নইলে আমার মতো আরো অনেক বাবার বুক খালি হয়ে যাবে।আমি ওই অপরাধী গুলোর শাস্তি চাই।

বলেই লোকটা আবার কান্নায় ভেঙে পড়লো। নীড়ের চোখ লাল হয়ে গেলো, লোকটার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।লোকটার হাতের উপর হাত রেখে ভরসা দিয়ে বলল,আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যতক্ষণ না ওদের শাস্তি দিতে পারছি আমরাও থামবো না আপনারা অবশ্যই ন্যায় বিচার পাবেন।

__________________________________________________

গোধূলির লগ্ন, বাতাসের তীব্রতা আজ একটু বেশি। কিন্তু তাতে ইতুর কোনো ভাবান্তর নেই সে ছাদে দাড়িয়ে আছে, আর তীব্র বাতাস এসে ছুয়ে দিচ্ছে ইতুকে।হঠাৎ পিছন থেকে বৃষ্টি বলল,ইতু কি করছো চল রুমে চল।ইতু কিছু বলল না বৃষ্টির সাথে রুমে চলে গেল।

বৃষ্টি নিচে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে আসলো, ইতুকে এক কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,

– ইতু

– হুম

– তোমার কি মন খারাপ

– না আপু

– নীড় ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে

– হঠাৎ এই কথা কেন?

– না আসলে এটা তোমাদের নিজস্ব ব্যাপার তবু তোমাদের বিহেভিয়ার এতে তাই প্রকাশ পাচ্ছে।
– আসলে

– বলতে না পারলে বল না, আমি জোর করব না কিন্তু নীড় ভাইয়া কিন্তু তোমাকে খুব ভালোবাসে।

-……………………………………..

– আর এইসব ছোট খাটো ঝগড়া সবারই হয়, কিন্তু এসব ঝেড়ে ফেলাই ভালো। হয় তো নীড় ভাইয়ার কোনো কাজে তোমার খারাপ লেগেছে। কিন্তু এসব ভুলে গিয়ে সামনে আগানো উচিৎ

– হুম

_________________________________________

নীড় বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলো,ইতু কিছু দিন ধরে কেমন চুপচাপ হয়ে আছে, হুম না ছাড়া কোনো কথাই বলে না নীড়ের সাথে। নীড়ের একটু ভালো লাগে না সব কিছু এলোমেলো লাগে নীড় ইতুকে এমন মেনে নিতে পারছে না।নীড় ধির পায়ে ইতুর পাশে গিয়ে দাড়ালো। বেশ কিছুখন চুপ থাকার পর নীড় বলল,

– রাতে খেয়েছিস

– হুম

– আজ পড়তে বসে ছিলি, হিনা এসে ছিলো

– হুম

-…………………………..

-………………………………

নীড় পিছনে ফিরে চলে যেতে নিয়েও আবার ইতুর কাছে এসে ইতুর কোমড় জরিয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে , অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আহত কন্ঠে বলল, খানিক ভুল করেছি বলে দূরে চলে যেতে হবে, তাহলে যে এত ভালোবাসি তার জন্য আরো কাছে আসা যায় না।

#চলবে……..🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে