যার পৃথিবী ছিলো তুমিময়, যে খাওয়ার আগে জেনে নিতো তুমি খেয়েছো কিনা? জবাবে তুমি রিপ্লাই না দিয়ে নিয়ম করে তাকে অবহেলা করতে । সে মেয়েটাও একদিন তোমাকে মেসেজ দেওয়া বন্ধ করে দিবে । বোকা মেয়েটা বুঝে যাবে ভুল জায়গায় মেসেজ পাঠালে রিপ্লাই আসে না!
– যে মেয়েটার রাত জেগে কান্না করার উপলক্ষ্য তুমি, যাকে তুমি প্রতিরাতে ঘুমের বদলে কান্না করতে বাধ্য করেছো, সে মেয়েটাও একদিন রাতে স্বামীর কাধে মাথা রেখে ভুলে যাবে তোমার কথা । স্বামীর কাধে মাথা রেখে সে মুচকি হেসে নিজে নিজেই ভাববে ‘আমি কি বোকা ছিলাম!’
– যে মেয়েটাকে ভালোবাসার কথা বলে তাকে দিয়ে নিজের একাকিত্ব দূর করেছো, সেও একদিন তোমাকে কল দিয়ে বলবে ‘তুমি আমাকে খেলনা পুতুল ভেবে খেলেছো, এখন একজন আমাকে পুতুলের মতো যত্নো করে । সে আমাকে নিয়ে খেলেনা, জানো? পুতুল কে কিভাবে রাখতে হয় তুমি জানোনা ।’
– যে তোমাকে ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোমার কাছে এসেছিলো, তুমি তাকে ‘সস্তা মেয়ে’ ভেবে পাত্তা দাওনি, সেও একদিন কারো ভালোবাসায় আবদ্ধ হবে এবং তুমি সেটা দেখে ভিতরে ভিতরে জ্বলে যাবে । নিশ্চিত!
প্রকৃতি একটা নিয়ম করে রেখেছে! যে অবহেলা করবে, সে অবহেলা পাবেই! কেউ হয়তো খুব ভালোবাসে বলে বদদোয়া দিতে চায় না, প্রকৃতি ‘মানুষ’ না বলেই হয়তো এই দোয়া-বদদোয়া’র ধার ধারে না । সে একটা জিনিস ই বুঝে, ‘তুমি যা করবে, সেটা ফেরত পাবেই! আজ কাউকে কষ্ট দিলে, কাল অন্যজন তোমাকে কষ্ট দিবেই ।’ এই শাস্তি থেকে অতীতে কেউ পার পায়নি, আজ ও পাচ্ছে না, আগামীতেও পাবেনা!
তার এই আস্তে বলা কথা টাই আমার বুকে প্রচন্ড জোরে আঘাত করলো!
আমি নিজের কান কেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । নিজেই নিজেকে আবার জিজ্ঞেস করলাম “না মানে সিরিয়াসলি আমাদের আর কথা হবে না? একদম ই না?”
সে চুপ করে রইলো আর আমি চুপ মেরে গেলাম । যার সাথে কথা না বললে অস্থির লাগে, যার কাছে সারাদিনের কথা না বললে শান্তি লাগে না, তার সাথে কথা না বলে থাকতে হবে??
প্রথম বার ‘ভালোবাসি’ শুনে যেভাবে কেঁপে উঠেছিলাম, আজ আবার ‘কথা হবে না’ শুনে সেভাবেই কেঁপে উঠলাম । আমার মাথায় বারবার ঘুরছিলো “আমাদের আর কথা হবে না । কখনো না!”
সম্পর্ক কিছুতেই আটকাতে না পারলে মানুষ শেষে ‘বেহায়া’ হয়ে যায় । আমিও সেই পথে হাঁটলাম । খুব অনুরোধ এর সুরে বললাম “দেখো, সারাদিন কথা বলতে হবে না । তুমি যখন ভালো লাগে, তখন ই কথা বইলো । তবুও একটু কথা বইলো প্লিজ! তোমার সাথে কথা না বললে আমি বোধহয় দম আটকেই মরে যাবো!”
সে বোধহয় বিরক্ত হলো! আমার আকুতি কিংবা মৃত্যুর খবর কোনোটাই তাকে ছুঁয়ে গেলো না! মানুষ কি ভীষণ করে বদলায়!
সে নীরবতা ভেঙে বললো “ভালো থেকো!”
আমি কোথাও ভাঙনের শব্দ পেলাম । মন ভাঙার শব্দ । বিদায় বেলায় নিষ্ঠুরতার সাথে কারো ভালো চাওয়ার মত বাজে দৃশ্যের অভিনেতা হতে চাইনি, অথচ আমার কপালে সেটাই ছিলো!
তাকে আর কোনভাবেই আটকানো
গেলো না । মানুষ একবার যেটা ঠিক করে ফেলে, সেটা থেকে তাকে সরানো যায় না । জোর করলে হয়তো সে করুনা করে আমার সাথে কথা বলবে । কারো করুনার পাত্র হওয়ার মতো বাজে আর কিছুই নেই । তার চেয়ে মেনে নেওয়া ভালো “আমাদের আর কথা হবে না ।”
“বালক ফিসফিস করে আমায় কিছু একটা বলতে চাইলো, কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোচ্ছে না। ঠিক ঐ মুহূর্তে কনকনে শীতের রাতে বাইরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া নিয়ে একটা বিশদ লেকচার দেওয়া উচিৎ…কিন্তু তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার কেন জানি একটা মায়া লাগলো।
জ্বর বড্ড খারাপ জিনিস। তীব্র সুন্দর একজোড়া চোখও জ্বরের সাথে যুদ্ধ করে হার মেনে যায়…সেই চোখ জোড়াতে ভর করে রাজ্যের ক্লান্তি। বালক চোখ বন্ধ করলো। হু,হু করে তার জ্বর বাড়ছে। আমি একটা ভেজা রুমাল হাতে নিয়ে বালকের কপালে রাখলাম। বালক জানেনা, রুমালের রং নীল। জানলে সে খুব রেগে যেতো। নীল রং বালকের পছন্দ না!!!
সপ্তাহখানেক ধরে প্রতিদিন ঘন্টাখানেক পরপর আমি বালকের জ্বরের খুঁজ নিতাম। হয়তো সে বিরক্ত হতো, হয়তো হতো না…আমার এতকিছু ভাবার সময় ছিল না। আমার ভালো লাগলো। খুঁজ না নিতে পারলে কষ্ট লাগতো। আমি নিজের কষ্ট কমাতেই বোধ হয় ওর খুঁজ নিতাম!!!
অনুভূতির বেলায় মানুষ খুবই স্বার্থপর। নিজের ভালো লাগার দিকেই সে দৌঁড়াতে থাকে নিরন্তর…
আমি ডাক্তার নই..কিন্তু আমি জানি, এই পৃথিবীতে সবরকম অসুস্থ্যতার একটাই ঔষধ আছে। ঔষধের নাম “Care”….
গভীর রাতে জ্বরের সাথে যুদ্ধ করে প্যরাসিটামলের হেরে যাওয়ার দুঃখের গল্পটাই হুট করে ‘Care’ এসে হাজির হয়ে গল্পের Happy ending টেনে আনে….
কিছুদিনের মধ্যেই বালকের জ্বর ভালো হয়ে গেল। ব্যপারটাতে আমার খুশি হওয়া উচিৎ…কিন্তু কেন জানি আমি খুশি হতে পারছি না। তীব্র জ্বর আমাকে যে অদৃশ্য অধিকারটুকু দিয়েছিলো, আজ সে অধিকার হুট করে চলে গেলো…!!
এখন আমার জন্য “Care” এর দরজাটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমার কেন জানি শূন্য শূন্য লাগতে থাকে। কি অদ্ভুত আমি…কি ভয়ংকর স্বার্থপর আমি….
কষ্টের রং নীল….
বেদনার রং নীল…..
আমার রং ও বোধ হয়য় নীল..
নীল রং বালকের পছন্দ না,
একদম পছন্দ না…
চলে গেলাম তোমার সাজানো পৃথিবী ছেড়ে,
দূর থেকে বহু দূরে।
খুঁজো আমায় কোনো উদাস বিকেল বেলায়
কিংবা কোনো তারা ভরা জোছ্না রাতে।
আকাশের দূরের যে তারাটি
দীপ্তি চোখে জলকণার মত জ্বলজ্বল করে,
মনে করো সেইটিই আমি।
সেই তারাটির নাম অনুসারে আমার নাম রেখো।
এতেই আমার পরম শান্তি।
বর্ষাস্নাত কোনো সন্ধ্যা লগনে,
আসবো তোমার কাছে।
ধূয়ে মুছে দেবো
সকল গ্লানি দুঃখ।
কেননা আমি যে তোমায় বড্ড ভালবাসি।
আমার বুকের ব্যাথা আমারই থাক।
ভালোবাসনি তাতে কোনো দুঃখ নেই আমার।
শুধু দোয়া করো-
তুমি যাকে ভালোবাসো
পরজন্মে যেন সে হয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারি।
কিছুই নিয়ে যায়নি তোমার,
শুধু নিয়ে গেলাম তোমারি দেয়া অনুরাগের বিরহ বাঁশিটা।
কেননা বিরহ যে বড্ড ভালো লাগে আমার।
জানো প্রিয়,
আমি এটাই চাচ্ছিলাম-
এমনি ভাবে দুঃখ পেতে।
দুঃখ নাকি পরশ পাথরের ন্যায়?!
আত্নাকে পরিশুদ্ধ করে দেয়?
জানিনা কতটুকু শুদ্ধ হয়েছি।
তবে সেদিন বর্ষাস্নাত রাত্রি বেলায়
অনুরাগের বিশ্বাস থেকে
যে যৌবনের আদর তোমায় দিয়েছিলাম,
তা থেকে শুদ্ধ হতে পারিনি।
তবে ভয় করো না,
অভিশাপ দিবো না তোমায়।
যদি এমনি ভাবে কোনো উদাস বিকেল বেলায়-
তোমার যৌবনের উত্তাপ তোনায় ঘিরে ধরে,
ডেকো আমায়~
আসবো আমি তোমার সেই ক্ষুদা মিটাতে,
সাত সমুদ্র-তের নদী পার হয়ে।
কেননা আমি যে আমার বাবুর আব্বুকে বড্ড বেশী ভালোবাসি।
বাস টার্মিনালে মেজাজ খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে মায়া।বাস এলো প্রায় পনেরো মিনিট দেরিতে। শেষ মুহূর্তে পানি কিনতে গিয়ে কিছু’টা দেরি হয়ে গেল। মায়া বাসে উঠে সিট মিলিয়ে কাছে গিয়ে দেখে তার ঠিক পাশের সিটে বিশাল দেহী এক যুবক কানে হেডফোন গুঁজে পেপার পড়ছে। ছেলেটার চোখে চশমা।
ছেলেটাকে দেখেই মায়ার বুকে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হলো। মনে হলো সে মাথা ঘুরে পরে যাবে। ছেলেটা হঠাৎ পাশে তাকিয়ে মায়াকে দেখে জানালার আরেকটু পাশে চেপে যায়।
মায়ার চেহারায় কিছু একটা ছিল তাই ছেলেটি হেডফোন খুলে জানতে চাইলো__
” এটা আপনার সিট?
কোনো সমস্যা?”
– হ্যাঁ, এটাই আমার সিট। ‘কোনো সমস্যা নেই’ বলে মায়া চুপচাপ ব্যাগ দুটো তুলে রেখে সিটে বসল। সে মূর্তির মত সামনে তাকিয়ে আছে।
বাঁধন! ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। বাংলাদেশের কোটি কোটি লোকের মধ্যে এই বাঁধনের পাশেই তার সিট পড়তে হবে! মায়ার মনে পরে যাচ্ছে বাঁধনের সাথে হওয়া শেষ কথোপকথন টুকু। বাঁধনের সাথে সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার প্রায় তিনমাস পর আবার ব্লক খুলে নক করে সে। কেন করে সেটার কোনো ব্যাখ্যা নাই।
– ‘কেন বোকামি করছ মায়া? নতুন প্রেমিককে নিয়ে তো সুখেই আছ! কেন আবার আমাকে জ্বালাতে আসছো?’
– ‘ সুখে থাকলে কি তোমার সাথে কথা বলা যাবে না?’ ফ্রেন্ড হিসেবে আসছিলাম। স্যরি।
…. জানো, বাঁধন। আমি তোমার সব লিখা পড়ি, অন্য আইডি দিয়ে। খুব, খুব সুন্দর লিখ তুমি।
– ‘আমার লিখা পড়ারও দরকার নাই। আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপেরও দরকার নাই। এটা যেন কিডন্যাপিং করার পর টাকা নিয়ে মুক্তি দেবার পর বলা “কিপ ইন টাচ”।
– ‘ ঠিক আছে, বাঁধন আর কথা বলব না। কিন্তু আমি জানি, “তুমি আমাকে ভালোবেসেছিলা”।
– ‘ খবরদার। ভালোবাসা কথাটা আরেকবার বলবা না। কি ছাতার ভালোবাসা ছিল যে তুমি আমার সামনেই আসতে পারলা না? এমনকি আমি এখনও জানি না তুমি দেখতে কেমন! ইউ নো হোয়াট? আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক উয়িথ ইউ এনিমোর….
– ‘ বাঁধন, তুমি কি আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবা?’
– ‘ক্ষমা? তোমাকে? বুক কাটলে এখনো সেখানে দগদগে ঘা দেখা যাবে আমার। রিলেশন, প্রেম, ভালোবাসা এসব তোমার কাছে ফালতু ব্যাপার হতে পারে, আমার কাছে ছিল না।’
– ‘আমি তোমাকে একটা জিনিস দিতে চেয়েছিলাম। অনেকবার বলেছিলে, একটা গল্প লিখবে। গল্পের প্লট খুঁজে দিতে। তাই ভেবেছিলাম আমার একটা ডায়েরী তোমাকে দিব।’
– আমি তোমার ডায়েরী দুরের কথা, একটা পাতাও চাই না। তুমি অসুস্থ। আমায় আর এসএমএস দিও না।’
কি তীব্র ঘৃণা। মায়া শিউরে উঠে বাস্তবে ফিরে আসে। সে সাবধানে পাশে তাকায়। শান্ত মুখে ছেলেটা বসে আছে। এলোমেলো চুল, অনেকদিনের না কাটা খুঁচা খুঁচা দাঁড়ি। এই ছেলেটাই একসময় মাঝরাত্রে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলত, ভালোবাসি। মায়াও জবাব দিত, ভালোবাসি, খুব বেশী ভালোবাসি আমার ভীতুটাকে…..
মায়া হয়তো আসলেই অসুস্থ। কেন জানি কিছুতেই রাজি হলো না সেদিন বাঁধনের সাথে দেখা করতে। কেন জানি মনে হত দেখা হলে যদি আর না থাকে ভালোবাসার এই তীব্রতাটুকু!
একদিন তাই রেগেমেগে ছেলেটা তাকে বিদায় করে দিল!
আচ্ছা হঠাৎ যদি মায়া এখন বলে বসে, ” বাঁধন! আমি মায়া। এত শুকিয়ে গেছ কেন তুমি?” তখন কেমন হবে বেচারার চেহারা?
নিষিদ্ধ কোনো আকাংক্ষার মত ইচ্ছেটা মায়ার বুকের মধ্যে হৃদস্পন্দনের সাথে সাথে দুরমুশ পেটাতে থাকে….
কি পরবে আজ সেটাই ভাবছে হঠ্যাৎ ই চোখ গেলো বিছানার উপরে একটা প্যাকেট পড়ে আছে,কৌতুহোল নিয়ে আনুশা প্যাকেট টা হা তে নেয়
আনুশা: এই প্যাকেট টা এখানে কে রেখে গেছে,দেখি তো কি আছে এর মধ্যে, প্যাকেট খুলে আনুশা তো অভাক একটা শাড়ি, আর সাথে একটা চিঠি,আনুশা চিঠি টা পড়তে শুরু করলো
ওগো আমার মনের রানী,
তুমি নিশ্চই এতোক্ষনে শাড়িটা পেয়েচো, আর এখন মনে মনে হাসছো,এই ভেবে যে ডিজিটাল যুগে আমি তোমাকে চিঠি লিখেছি,কি করবো বলো ফোনে কি সব কথা বলা যায়,কিছু কথা চিঠিতেই মানায়,আমি চাই তুমি আজ শাড়ি চুড়ি পরে বনলতা সেনের মতো সাজবে,আমি জানি বনলতা সেন জীবনানন্দ দাস এর গল্পের নাইকা এর বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই,কিন্তু আমি চাই সেই অস্তিত্ব টা আজ সবাই দেখুক তুমি আমার বনলতা সেন, এটা সবাই জানুক,
?তানভীর?
আনুশা: চিঠিটা পড়ে যেন ঠোটের কোনায় হাসিটা লেগেই আছে, আচ্ছা শাড়িটা দেখি ওয়াও ব্ল্যাক আমার ফেভারিট কালার,আচ্ছা কেউ কালো শাড়ি পরে বনলতা সেন সাজে, দূর যাই ফ্রেশ হয়ে আসি,আনুশা ফ্রেশ হয়ে শাড়িটা পরতে আসলো,
এমা আমি তো শাড়ি পরতে জানি না এবার কি হবে কিন্তু পরতে তো হবে না পরলে তানভীর মন খারাপ করবে, শাড়ির কুছি গুলাই থাকছে না বার বার খুলে যাচ্ছে
এমন সময় তানভীর : আনুশা তুমি,এহহহহ আমি কিছু দেখিনি বলেই চোখে হাত দিয়ে পিছনে ফিরে গেলো
আনুশা: আরে দূর কি বলো তুমি শাড়ি তো পরতে পারছি না, কুছি গুলো একটু ধরে দাও তো,
তানভীর : ও তাই, আমি ভেবেছি কি
আনুশা: হুম তুমি তো ভাববেই সারাদিন মনের মধ্যে বোধবুদ্ধি নিয়ে থাকো তো তাই
তানভীর যত্ন করে শাড়ির কুছি ভাজ করে ধরলো,আনুশা শাড়িটা পরে নিলো
তানভীর : ওয়াও লুকিং সো বিউটি ফুল,
আনুশা: লজ্জা পেয়ে পিছনে ফিরে চুল বাধতে যায়
তানভীর : বাধা দেয়, চুল বেধো না বনলতা সেন চুল বাধে না
খোলা চুলে তানভীর একটু ফুল কানের কাছে গুঁজে দিলো,দুজনেই আয়নার দিকে তাকিয়ে দুইজনকে দেখছে,আজ তোমার থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না আনুশা
আনুশা: আর দেখতে হবে না এবার যাও তো বরযাত্রী আসার সময় হয়েছে
তানভীর ;হুম যাচ্ছি
আনুশা গিয়ে অন্নির পাশে বসলো অন্নি: বাবাহ আনু কি সেজেছিস রে তুই,আজকে তো কেউ আমাকে দেখবে না সবাই তোকে দেখার জন্য লাইন ধরবে
আনুশা: চুপ করতো বিয়ের কনেদের এতো কথা বলতে নেই
বর এসেছে বলে সবার হইচই পড়ে গেলো
কিছুক্ষনের মধ্যে বিয়ে পড়ানো শেষ খাবারের পর্ব ও শেষ
আনুশা: অন্নি তুই বসতো আমি একটু আসছি
অন্নি: কই যাচ্ছিস আমার খুব একা একা লাগছে
আনুশা: আসছি,আনুশা মিষ্টি নিয়ে তানভীর আর তানিমের কাছে গেলো
আনুশা: দুলাভাই একটা মিষ্টি খান
তানিম: মুছকি হেসে আর খেতে পারবো না শালিকা
আনুশা: তানভীর কে বল্লো বেয়াই আপনি একটা মিষ্টি খান
তানভীর : না বেয়ান খাবো না
আনুশা: এমন বললে আমি শুনবো নাকি,প্লিজ বেয়াই
তানিমের অন্য বন্ধুরা তানভীর খেয়ে নে বেয়ান এতো কষ্ট করে আনলো
তানভীর : ওকে দিন বেয়ান,আনুশা এই নিন,(খাও খাও চান্দু খেলে টের পাবে)
তানভীর : মুখে দিয়ে চিবানোর পরে উহা হাহহ হাহহহ মিষ্টি ঝাল কেনো
তা ও এতো ঝাল আমার মুখ পুড়ে যাচ্ছে
আনুশা: হিহিহিহি,বেয়াই বোঝ এই বার মিষ্টিতে একদম ধানি লংকা দিয়েছি,হহিহিহহি, আমি গেলাম,ঝালে তানভীরের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো,(আচ্ছা এই শোধ আমি তুলবোই)
এই ভাবেই হাসি আনন্দের মাঝে বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো,অন্নি শশুড় বাড়ির পথে পা বাড়ালো
কেটে গেলো আর কয়েক সপ্তাহ
তানভীর : আনুশা এই বার মাকে তোমাদের বাড়ি পাঠাই আমাদের বিয়ের কথা বলার জন্য
আনুশা: হুম আমি ও তাই ভাবছি, আর দেরি করে কি হবে বলো,
তানভীর : হুম কালই পাঠাবো
আনুশা: তানভীর এই ফাইল গুলো একটু দেখে দাওতো
তানভীর : হুম দিচ্ছি
এমন সময় দরজায় কেউ নক করলো
আনুশা: ইয়েস,তাকিয়ে দেখলো নিহাল,এসেছে, তুমিইই
নিহাল: হুম তোমার সাথে একটু কথা ছিলো
আনুশা: হুম বলুন
নিহাল: মিঃ তানভীর আপনি যদি একটু
ও এখানেই থাকবে নিহাল যা বলার ওর সামনে বলো
তানভীর : না থাক আমি বাইরে একটু ওয়েট করি
আনুশা: না তানভীর তুমি এখানেই থাকবে,নিহাল তোমার যদি কিছু বলার থাকে তো বলো নইলে আসতে পারো
নিহাল: না মানে বলছিলাম কি দেখো আমি এখন আগের মতো হাটতে পারি
আনুশা: হুম তো
নিহাল; আমি জানি আমি তোমার প্রতি খুব অন্যায় করেছিলাম, আর কোন কিছুর বিনিময় আমার ক্ষমা হয়না তবু ও বলছি চলো আনুশা আবার নতুন করে সব শুরু করি,আর কোন দিন তোমার হাত ছাড়বো না
আনুশা: স্টপ মিঃ নিহাল আপনি আমার সাথে নতুন করে কি শুরু করবেন,যা পুরোনো হয়ে গেছে তা নতুন করে শুরু করা যায় না,আর আমার হাত টা তো আমি ধরতেই দিয়েছিলাম,আপনি ধরে রাখতে পারেননি সেটা আপনার অক্ষমতা
নিহাল: তবু ও কি
আনুশা: ভালোবাসি না আপনাকে,আপনার মতো মানুষদের করুনা করা যায় ভালোবাসা যায় না, সো আপনি আসতে পারেন,দরজা টা ঐ দিকে
চরম অপমানিত হয়ে নিহাল চলে যায়
আনুশা কান্না করতে শুরু করে কেনো এমন হলো আমার সাথে
তানভীর : প্লিজ আনুশা কেদোনা আমি আছি তো
আনুশা: তানভীর তুমি বলেছিলে না তোমার আম্মু কে কাল পাঠাবে আমাদের বাড়িতে,কাল নয় তুমি আজই পাঠাও আর এক্ষুনি
তানভীর : কিন্তু আনুশা
আনুশা: তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে চাও কি না বলো
তানভীর : হুম চাই
আনুশা: তা হলে এক্ষুনি যাও তোমার মাকে নিয়ে আমাদে বাড়িতে এসো
তানভীর : ওকে
তানভীরের আম্মু তো আগেই আনুশাকে পছন্দ করতো তাই আজ ছেলের কথা শুনে আর দেরি করেনি চলে আসে আনুশাদের বাড়িতে এন্ড বিয়ের ডেইট ফাইনাল করে সাতদিন পর বিয়ে
আনুশার কাছে এই সাতদিন ও বেশি মনে হচ্ছে,কিন্তু কি করা সব আয়োজন করতে হবে তো(নিহাল কে বোঝাতে ওর মতো বেইমানের জন্য আমি অসুখী নই)
তানিম আর অন্নি আনুশার বিয়েতে কমর বেধে নেমে পড়ে কাজ করতে, আনুশা বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এই অনেক,
আনুশার আম্মু ও অনেক খুশি মেয়েটার জীবনটা হয় তো এবার সুখের হবে আনুশার বিয়ের কথা শুনে আত্মিয় স্বজন সবাই আনন্দে আটখানা,সবার অপেক্ষার পালা শেষ করে এলো সে কাংখিত দিন,আনুশার বিয়ের দিন
দুই বাড়িতে বিয়ের আনন্দ
পার্লারের মেয়েরা আনুশাকে একটা পরি সাজিয়ে দিয়েছে আনুশার বিয়ের লেহেঙ্গা টা নীল,তানভীরের পছন্দ ওর বউ বিয়ের দিন নীল পরবে মনে হচ্ছে আকাস থেকে নীল পরী মাটিতে নেমে এসেছে
এর মধ্যে বর যাত্রী এলো আনুশার দুই দুলা ভাই তানভীর কে ভিতরে আসতে দিচ্ছে না ফিতা কাটার জন্য, তানভীর অস্থির, আর ওর দুলা ভাইয়েরা দুষ্টামি করে ভিতরে আসতেই দিচ্ছে না, অনেক ঝোরা ঝোরির পরে তানিম তানভীর কে নিয়ে ভিতরে আসলো
যথা সময়ে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলো
এইবার কন্যা সম্পাদান করবে আনুশার আম্মু,তানভীরের হাতে তিনি মেয়েকে তুলে দিলেন,বাবা আমার কলিজা আমার বুকের ধন আনুশা,আমার ছোট মেয়ে খুব আদরের ওকে আজ তোমার হাতে তুলে দিলাম তুমি ওকে দেখে রেখো
আনুশা: মা এমন করে বলছে যেন আমাকে পর করে দিচ্ছে আনুশা মাকে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দিলো মা তুমি এমন করে বলো না মা,আমাকে কেনো পর করে দিচ্ছো আমি তোমার ছোট্ট আনু হয়ে থাকতে চাই এই ভাবেই প্রলাপ করে কাদছে আনুশা
অন্নি ওকে ঝোর করে গাড়িতে উঠায় তা ও আনুশা অন্নি কে ছাড়তে চায় না খুব ঝোরে জড়িয়ে ধরে কান্না করে
অন্নি অনেক বুঝিয়ে তানভীরের পাশে বসিয়ে দিলো আনুশা কে গাড়ি চলছে,আনুশার কান্নাও থেমে এসেছে কারন তানভীর যে আছে তার পাশে,
তানভীর : কাদছো কেন পাগলি আমি আছি তো তোমার পাশে, আনুশার হাত টা তানভীর শক্ত করে ধরে রাখে
ঘন্টা খানেকের মধ্যে ওরা পৌছে যায়,
তানভীরের আম্মু আনুশা কে বরন করে ঘরে তলে
কিছুক্ষন পর আনুশাকে বাসর ঘরে দেয়া হলো
আনুশা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে,সারা ঘর ফুল দিয়ে সাজানো নানা ফুলের গন্ধে ঘরটা একদম সুবাসিত
কিছুক্ষিন পর তানভীর রুমে প্রবেশ করলো,
তানভীর : মানে আর কি বলবো,একজন মানুষ তার ডায়েরী তে চুপি চুপি তার স্বপ্নের কথা লিখেছিলো ছোট্ট একটা সংসার থাকবে, সেখানে বরকে অনেক ভালোবাসবে আর বরের থেকে ভালোবাসা আদায় করে নিবে আর সেই ঘরে একটা ছোট্ট প্রিন্সেস থাকবে সে সারা ঘর
আনুশা আর বলতে দিলো না তানভীর কে,কিইই তুমি আমাকে লুকিয়ে আমার ডায়েরী পড়েছিলে
তানভীর হাসতে হাসতে পড়বো না ডায়েরীর প্রথম পাতায় যে আমার লিখা ছিলো
আনুশা: হুম ঐ কবিতাটা আমার খুব ভালো লাগে তাই তো যত্ন করে রেখে দিয়েছি
যাবে নাতো কখনো আমাকে ছেড়ে, জীবন নদীর মাঝ পথে হাত ছেড়ে দিবে না তো
তানভীর : প্রশ্নই আসেনা ছয় বছর ঘুরে ভালোবাসা পেয়েছি কি হাত ছেড়ে দেয়ার জন্য
হে আমার মনের রানী আমাদের প্রিন্সেস কি করে আসবে ভেবেছো কিছু
আনুশা: ইসসস তুমি ও না লজ্জায় তানভীরের বুকে মুখ লুকালো তানভীর ও আনুশা বুকে জড়িয়ে দরলো যেন হারিয়ে না যায়
শুরু হলো আনুশা তানভীরের পথ চলা, যে পথ আনুশা হারিয়ে ফেলে খুব কান্না করেছিলো, জীবনের হাসি আনন্দ ভুলে গিয়েছিলো আজ সে পথ নতুন রুপে খুঁজে পেয়েছে আনুশা,এ যেন হারানো পথ নতুন রুপে ধরা দিয়েছে
,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,
,,,,কিছু কথা,,,,
আমার যে সব প্রান প্রিয় বন্ধুরা তাদের মূল্যবান সময় ব্যায় করে আমার লিখা গল্পটা পড়েছে& আমাকে লিখার অনু পেরনা জুগিয়েছে তাদের জন্য রইলো আন্তরিক অভিনন্দন
আমার একজন ফ্রেন্ডস বলেছিলো গল্পের ইন্ডিং টা যেন নিহালের সাথে হয় তাকে বলছি বন্ধু, যাকে একবার ঘৃনা করা হয়,তাকে কোন দিন ভালোবাসা সম্ভব নয়,আনুশা নিহালকে ঘৃনা করে, সেখানে ভালোবাসা সম্ভব নয়
তানভীর : নিহাল আপনার ডক্টর যাচ্ছে আপনার সাথে, উনি সময় মতো আপনাকে নিয়ে প্লেনে উঠবে, আমার একটু কাজ আছে আমাকে যেতে হচ্ছে
নিহাল: ঠিক আছে তুমি যাও
তানভীর অফিসে এসেই আনুশার সাথে দেখা করে
তানভীর : ম্যাম আর্জেন্ট ফোন করে ডাকলেন কেনো,,কোন ইম্পরট্যান্ট কাজ পড়েছে কি?
আনুশা: হুম এটাও একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ, তুমি সুন্দর পুর গ্রামে যাও সেখানে হাসান মঞ্জিল নামে একটি দুই তালা বাড়ি আছে বাড়িটির বর্তমান মালিকের সাথে গিয়ে কথা বলো আর ওটা কিনার ব্যাবস্থা করো
তানভীর : ম্যাম কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করবো
আনুশা: তুমি বলবে আমি বাড়িটি কার জন্য নিচ্ছি,,এই তো,,,বাড়িটি আমি নিহাল হাসানের জন্য ই নিচ্ছি কারন বাড়িটি নিহালদের
তানভীর : কিন্তু ম্যাম নিহালের বাড়ি থাকতে ও আশ্রমে কেনো থাকছে
আনুশা: ওহ মিঃ তানভীর এতো প্রশ্ন করতেছেন কেনো কাজ টা পারলে বলুন,নইলে আমি নিজেই যাচ্ছি,
তানভীর : না ম্যাম আমি পারবো,, এই তো আমি এক্ষুনি বেরুচ্ছি
আনুশা: গুড
তানভীর চলে যাওয়ার একটু পরেই অন্নি অফিসে আসে
আনুশা: আরে অন্নি তুই কি ব্যাপার হঠ্যাৎ অফিসে
অন্নি: হুম এলাম তোর সাথে কিছু কথা ছিলো তাই,কথাটা আর ও আগেই বলতাম কিন্তু তুই এতো ব্যাস্ত ছিলি যে, তোকে আর বলতে পারিনি
আনুশা: হুম বল শুনছি
অন্নি: কি শুনবি আমার কাছে থেকে, তুই শুধু আমাকে বল তুই এই সব কি শুরু করছিস
আনুশা: আমি কি করলাম বল
অন্নি: কি করলি মানে তুই জানিস না তুই কি করছিস,এই নিহাল কোথায় থেকে উদয় হলো আর ওর জন্য তুই এতো কিছু করছিস কেনো
আনুশা: আমি এসব কেনো করছি তুই পরে বুঝবি,,প্লিজ তুই এই সব ব্যাপারে বাসায় কাউকে কিছু বলিস না
অন্নি: বাসায় বলবো না মানে বাসায় তো আমি সবার আগে জানাবো
আনুশা,: তুই এমন কিছু করবি না
অন্নি: আমি একশো বার করবো,,ওই নিহালের বাচ্ছা তোর জীবনটা তছনছ করে দিয়েছি,আর তুই তার জন্য এতো কিছু করছিস কেনো করছিস,ওকে এখনো ভালোবাসিস
আনুশা: ও আমার সাথে যা করেছে তার শাস্তি ও পাচ্চে অন্নি,আমি আর ওকে কি শাস্তি দিবো,আর ভালোবাসি,,অন্নি তুই জানিস যাকে করুনা করা যায় তাকে ভালোবাসা যায় না।
অন্নি: কিন্তু তোর এই সব কিছুর কারনে তানভীর কষ্ট পাচ্ছে, ও তোকে কতোটা ভালোবাসে তুই বুঝতেও পারবি না
আনুশা: আমি জানি অন্নি, আমি সব বুঝতে পারি আমি একজন মানুষ, আমার ও মন বলে কিছু আছে
অন্নি: এতোই যখন বুঝতে পারিস তখন তানভীর কে বলছিস না কেনো
আনুশা: তানভীর এখন আমাকে ভালোবাসে ব্যাপার টা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে,আমার মন খারাপ থাকলে জোঁকার সেজে হলে ও আমার মুখে হাসি আনতে রাজি, ও আমার জন্য সব করতে পারে।
এই সব আমি ফিল করি,কিন্তু যখন তানভীর আমার ফাস্ট জানবে তখন কি ও আমাকে ভালোবাসবে,
তখন যদি ও আমাকে নিহালের মতো দূরে সরিয়ে দেয়,সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না
অন্নি: তানভীর কে অতীতের কথা শুনানোর দরকার ও নেই
আনুশা: ওকে যদি আমি সত্যি টা না বলি তা হলে ওকে ঠকানো হবে,আর আমি কাউকে ঠকাতে চাই না
অন্নি; তুই থাম তো তোর এই সব কথা শুনতে আমার একদম ভালো লাগছে না আমি গেলাম,কাউকে ভালোবাসে, এটা প্রকাশ করতে পারবে না যত্তসব
#
আনুশার ফোন ভেজে উঠলো তানভীর ফোন করেছে
আনুশা: ইয়াহ তানভীর বলো
তানভীর : আনুশা এরা তো আমাদের কাছে বাড়িটি বিক্রি করতে রাজি হচ্ছে না
আনুশা: কি বলছো তুমি,,আচ্ছা তুমি ওখানেই থাকো আমি আসছি
আনুশা কয়েক ঘন্টার মধ্যে সুন্দরপুর গ্রামে পৌছে গেলো
তানভীর : ও তুমি এসেছো,দেখো এরা বাড়িটি কিছুতেই বিক্রি করবে না বলছে
আনুশা: আচ্ছা আমি দেখছি,,বাড়িটির বর্তমান মালিক রফিক উল্লাহ আমি উনার সাথে কথা বলে দেখছি
তানভীর : তাই বলো
আনুশা বাড়ির ভিতরে গেলো,বহু পুরনো স্মৃতি মনের কোনাই আকি ঝুকি মারছে
আনুশা: মিঃ রফিক আপনি বাড়িটি কেনো বিক্রি করতে চাইছেন্না,মার্কেট প্রাইজ এর থেকে আর ও তিন গুন বেশি দেয়া হচ্ছে আপনাকে,তবু ও কেনো বিক্রি করবেন্না
রফিক: বাড়িটি আমি বিক্রি করবো না আমার টাকার দরকার নেই, তবুও আপনি কেনো বাড়িটি ঝোর করে কিনতে চাইছেন
আনুশা: তো আপনি বাড়িটি বিক্রি করবেন্না তাই তো
রফিক: আর কতো বার বলতে হবে
আনুশা: ফাইন বিক্রি করার দরকার নেই আমি ও কিনবো না,,কোর্টে দেখা হবে তখন আর টাকা ও দিতে হবে না আর বাড়িটি ও আমার হয়ে যাবে
রফিক: আপনি আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছেন
আনুশা: ভুল বললেন বাড়িটি আপনার নয়, এটা নিহাল হাসানের বাড়ি, আর এটার লিগেল কোন দলিল আপনার কাছে নেই এটা আমি সিউর
রফিক: মা নে মানে,কি বলছেন এই সব
আনুশা: ঠিকই বলছি বাড়িটি তো নিহাল হাসান বিক্রি করেনি ঝোর করে পাওনা টাকা উসুল করার জন্য দখল নিয়েছেন,আবার বড় বড় কথা ছাড়ছেন,আপনাকে আমি এতো কিছু বলছিই কেনো যা বলবো সব আদালতে বলবো
রফিক: এমন করবেন না ম্যাম সাহেব,আমি বাড়িটি বিক্রি করবো
তানভীর : টাকা দিয়ে সাইন করিয়ে নিলো,
আনুশার কথা মতো বাড়িটি পাহারা দেয়ার জন্য আর পরিষ্কার করার জন্য দুইজন ক্যায়ারটেকার রেখে যায়।
আনুশা,: সো মিঃ তানভীর, অল ওকে
তানভীর : ইয়াহ,
*
তো যাওয়া যাক দুইজনে গাড়িতে উঠলো
তানভীর : চুপ করে বসে আছে মনে হাজার ও প্রশ্ন উকি ঝুকি দিচ্ছে,উত্তর পাবে না তাই প্রশ্ন গুলো আনুশাকে করছে না
আনুশা: তোমার মনে জমে থাকা প্রশ্ন গুলো করতে পারো তানভীর, আজ উত্তর পাবে
তানভীর আনুশার কথায় চমকে উঠলো আনুশা কি করে আমার মনের কথা বুঝতে পারলো
আনুশা: ভালোবাস আমায়?
তানভীর : চমকে উঠে,এ্যা
আনুশা: এ্যা নয় জানতে ছেয়েছি ভালোবাস আমায়?
তানভীর : তোমার কি মনে হয় এতো গুলো বছর ধরে কেউ কাউকে ভালো না বাসলে এই ভাবে তার পিছে পড়ে থাকে
আনুশা: ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে একটা জায়গাতে পার্ক করুন,তানভীরের দিকে তাকিয়ে বল্লো এখানে পাশেই একটা ছোট্ট লেকের পাড় আছে খুব নিরিবিলি,ওখানে কি একটু বসবে “তুমি আমার সাথে”
তানভীর : আনুশার কথা শুনে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না, আমার তো রিতি মতো পাগলু ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে
আনুশা: কি হলো যাবে না
তানভীর : হুম একশো বার যাবো চলো দুইজোনে গিয়ে লেকের পাড়ে বসলো আনুশা চুপ করে আছে আর তানভীর তো কি বলবে খুশিতে পাগল প্রায়
তানভীর : আনুশা জায়গাটা খুব সুন্দর এই রকম সুন্দর জায়গাতে তোমাকে নিয়ে অনন্ত কাল যদি পার করতে পারতাম,জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকতো না
আনুশা: আজ তোমাকে কিছু কথা বলবো,সে গুলা শুনলে তুমি হয় তো আর আমাকে ভালো না ও বাসতে পারো, অন্নি বলেছিলো কথা গুলো তোমাকে না জানাতে, কিন্তু আমি কাউকে ঠকাতে চাই না,,তাই কথা গুলো তোমার জানা দরকার
তানভীর : বলো,,কি এমন কথা যা শুনলে আমি আর তোমাকে ভালোবাসবো না
আনুশা: তা হলো শুনো,, নিহাল আমার কে হয়,,ও আমার হাজবেন্ড,
না এখন আর নেই ছিলো, বিয়ের দিন রাতেই ও আমাকে ডিভোর্স দেয়
তানভীর : হোয়াট কিন্তু কেনো
আনুশা তানভীর কে প্রথম থেকে সব কথা বল্লো
সব কথা শুনে তানভীর একদম চুপ হয়ে গেলো
আনুশা: সব তো শুনলে,এখন নিশ্চয়ই আমাকে ভালো বাসো না
একটা ডিভোর্সি মেয়েকে কেউ ভালো বাসে না,সমাজের চোখে সে একটা নিকৃস্ট মেয়ে,তা ও আবার বাসর রাতেই স্বামি তাকে ডিভোর্স দিয়েছে,,কেউ ভালোবাসে না এদের,
তুমি কেনো সবার বিপরীত হতে যাবে,,তানভীর তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও আর আমি কষ্ট পাবো না,,,কষ্টের মধ্যে জীবন যার তার আবার কষ্ট কিসের
তানভীর এতোক্ষন আনুশার কাছে থেকে একটু দূরেই বসা ছিলো এইবার আর দূরে থাকতে পারলো না একদম আনুশার গাঁ ঘেসে বসলো,
আনুশা একটু অভাক চোখে তানভীরের দিকে তাকায়
তানভীর : তো এই সেই কারন যার জন্য তুমি ছয়টা বছর আমার ভালোবাসায় সাড়া দাওনি,পাগলের মতো তোমার পিছনে ঘুরিয়েছ আমাকে,
আনুশা:,,,,,,,,,,
তানভীর : এই তোমাদের মেয়েদের সবছেয়ে বড় দোষ কি জানো,পৃথিবীর সব মানুষ কে একরকম মনে করা, খুব ভালোবাসতাম তোমায় আর তুমি আমায় কাঁদিয়েছ দিনের পর দিন,কতো রাত যে না ঘুমিয়ে কেটেছে তার কোন ইয়াত্তা নেই,,
অনেক কষ্ট দিয়েছো, তোমার মতো একটা ডিভোর্সি মেয়েকে আমি আর ভালোবাসতে পারবো না,
তোমার উচিৎ ছিলো কলেজের প্রথম দিনই আমাকে সত্যি টা বলে দেয়া,তা হলে আমি আর তোমার পিছনে এতোটা সময় নষ্ট করতাম না
আনুশা: তানভীরের কথা গুলো গায়ে কাটার মতো আঘাত করছে,তানভীর ও সবার মতো,হায় আল্লাহ মানুষ ছিনতে আমি এতো ভুল করি,আনুশা কান্নায় ভেঙে পড়ে
তানভীর : আনুশা কাদছে আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। এই পাগলি কি ভেবেছো তুমি কথা গুলো আমি মন থেকে বলেছি, আরে নারে পাগলি ওগুলা তো এমনি বলেছি,দেখছিলাম তোমার এক্সপ্রেশন কেমন হয়,,
সবাই এক নয় আমি অন্য সবার মতো নয় আমি তোমাকে এখন ভালোবাসি,এই বলে আনুশার মাথা তানভীরের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়
আনুশা তখন ও কাদছিল এই কান্না কষ্টের নয়,এই কান্না সুখের কারো নিস্বঃস্বার্থ ভালোবাসা পাওয়ার আনন্দ
তানভীর : আনুশার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বল্লো আর কখনো এই চোখে আমি পানি আসতে দিবো,এই বার তো একটু হাসি চাই
আনুশা: চোখে কান্না মুখে হাসি,অদ্ভুত এক সুন্দর লাগছিলো আনুশা কে
তানভীর : উলে উলে আমার কলিজাটা কে কতো কিউট লাগে
আনু্শা: আর তুমি ও তো কম সুন্দর নও স্যার
তানভীর : উলে উলে তাই,, তবে তোমার এই সত্যি টা আর ও আগে বলার উচিৎ ছিলো, কেনো মিছেমিছি এতো টা বছর একা কষ্ট পেয়েছো,আমরা দুজনে কষ্ট টা ভাগ করে নিতাম,,
আনুশা: তানভীরের কথা শুনে কি বলবো বুঝতে পারছি না,,এতো সুখ আমার কপালে ছিলো
তানভীর : তবে ম্যাডাম আপনি আমায় অনেক কষ্ট দিয়েছেন তার শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে
আনুশা: ঠিক আছে কি শাস্তি দিবে বলো আমাকে শাস্তি দিলে যদি তোমার কষ্ট টা একটু কমে তা হলে আমি কষ্ট পেতে রাজি
তানভীর : সত্যি, ঠিক আছে এখন আমাকে একটা ইয়ে দাও।
আনুশা: অভাক হয়ে তা হলে এটা আমার শাস্তি
তানভীর : এজ্ঞে হ্যা কেনোনা এর থেকে কঠিন উপায়ে কোন শাস্তি আছে বলে আমার মনে হয় না
আনুশা: ফাজিল একটা চলো বাসায় চলো সবাই চিন্তা করছে হয়তো
তানভীর : কেউ চিন্তা করছে না যে চিন্তা করতো সে এখন তোমার সাথেই আছে
আনুশা: তাই না,চলো বলছি
তানভীর : আমার ইয়েটা
আনুশা: দুষ্ট একটা,এখন কোন ইয়ে টিয়ে পাবে না বুঝলে, সব কিছুর একটা সময় আছে
তানভীর : তা হলে আমার সময় টা কখন হবে, এক মিনিট তুমি বাসর রাতের কথা ইংগিত করছো না তো
আনুশা: তানভীর তোমার মুখে কি কিছুই আটকায় না
তানভীর : না, আর কখনো আটকাবে ওনা,,আজই বাসায় গিয়ে আম্মু কে তোমাদের বাসায় পাঠাবো,বিয়ের কথা পাকা করতে
আনুশা: না আজ নয়,অন্নির। বিয়েটা হয়ে যাক
তানভীর : ওহ তাই তো তানিমের বিয়ে নিয়ে আমার অনেক প্ল্যান সেগুলা সফল করতে হবে না
আনুশা,হুম ঠিক বলেছো আমার ও,
এইভাবে আনুশা আর তানভীরের এক সাথে পথ চলা শুরু হয়
কেটে গেলো আর ও কয়েকটা দিন।, অন্নির বিয়ের সময় ঘনিয়ে এলো, খুশিতে সবাই মাতোয়ারা
আনুশা অন্নি কে ফোন করলো
আনুশা: অন্নি আজ তুই আর তানিম আমার সাথে দেখা করতে পারবি
অন্নি: কেনো বলতো
আনুশা: নাহ তেমন কিছু না তোদের বিয়ে নিয়ে আমার আর তানভীরের কিছু কথা বলার ছিলো
অন্নি: বাবাহ এখানে ও তানভীর এখন তো দেখছি আমার বন্ধুটা তানভীর কে চোখে হারায়,,আচ্ছা আসছি আমরা
তানভীর : আনুশা ওদের আসতে বলেছো তো
আনুশা: হুম বলেছি কিছুক্ষনের মধ্য এসে পড়বে
কিছুক্ষন পর অন্নি তানিম হাজির আনুশার অফিসে,
আজ কাল অফিসের তেমন কোন রুল নেই কাজের সময় কাজ,আর অন্য সময় আনুশার ক্যাবিনে বসে চার জনের আড্ডা হয়,অফিস স্টাফরা ও অনেক খুশি ম্যাডাম এর এই পরিবর্তনে
অন্নি: বল কেনো ডেকে ছিলি আমাদের
আনুশা: একটু ওয়েট কর তোরা ঠান্ডা কিছু খা,,তানভীর আসুক তার পর বলছি
অন্নি: এটা ও তানভীর কে ছাড়া বলা যাবে না
আনুশা: যেহেতু প্ল্যান টা দুজনে মিলে করেছি তা হলে আমি একা বলবো কেনো
অন্নি: ওহ তাই তো, তাই তো,কি বলো তো তানিম আমার মনে হয় তোমার আর আমার মধ্য একটু ভালোবাসা কম আছে
তানিম: কিই তুমি বলতে চাইছো আমি তোমায় ভালোবাসি না
অন্নি: তাই তো মনে হচ্ছে
আনুশা: এই তোরা থামবি, ঐ তো তানভীর এসে গেছে
তানভীর : সবাই এসে গেছে,তা হলে তো এবার কথা টা শুরু করা যায়
অন্নি: হুম কথা টা শুনার জন্যই তো এলাম, তো বলুন দুলাভাই
তানভীর : আনুশা তুমি শুরু করো
আনুশা: শুন আমি আর তানভীর চাই যে তোদের দুজনের হলুদ অনুষঠান একটা জায়গাতে হতে,,আলাদা, আলাদা ছেলের বাড়ি মেয়ের বাড়ি দরকার নেই,একটা বাড়িতেই সব হবে কি বলিস
তানিম: কার কাছে কথা টা কেমন লাগলো জানি না। তবে আমি বলবো একটা চমৎকাড় আইডিয়া তোমরা দিয়েছো,
অন্নি: আর আমি ও,কিন্তু তোদের এই রকম প্ল্যান করার কারন কি
তানভীর : কি আবার কিছুই না,এমনি আরকি
অন্নি: আমাকে উল্লুক ভানানো হচ্ছে
আনুশা: তো তুই কি বলতে চাইছিস
অন্নি: যাতে তোরা দুজন একসাথে থাকতে পারিস আনন্দ করতে পারিস এক সাথে, আর দুই বাড়িতে অনুষঠান হলে তো দুজন কে দুই বাড়িতে থাকতে হবে তা এই বুদ্ধি
তানভীর : এ্যা
অন্নি:এ্যা নয় হ্যা
আনুশা:তুই যখন সব বুঝেই গেছিস তা হলে তোর থেকে লুকিয়ে লাব নেই,হুম আমরা এই জন্য বলেছি
সবার এই ভাবে হাসি আড্ডার মাঝেই বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো কাল হলুদ, আনুশা আর তানভীরের কথা অনুযায়ী পুরো অনুষঠান আনুশাদের বাড়িতে হবে,আয়োজন ও প্রায় শেষ
হলুদের দিন নাচ আর গানের আয়োজন করা হয়েছে
অন্নির ইচ্ছে ওর হলুদ অনুষ্ঠানে আনুশা গান গাইবে কিন্তু আনুশা রাজি হচ্ছিলো না,সেই স্কুল লাইফে গান গাওয়ার বাজে অভ্যাস ছিলো,তার পর তো লাইফে যা হলো হাসি আনন্দ জীবন থেকে চলেই গেছিলো, অন্নি আর আনুশার মাঝে তানভীর এসে জয়েন করলো
তানভীর : তুমি কাকে কি বলছো অন্নি,এই শাঁকচুন্নি গাইবে গান,,আরে এ কি গান পারে নাকি,এর তো গলা হচ্ছে ফাটা বাঁশের মতো,,যে শুনবে তার কানের পর্দা ফেটে যাবে
আনুশা: কিইই আমি শাঁকচুন্নি আমার গলা ভালো নয়????
অন্নি: এই জন্য বলছি আনু দেখিয়ে দে এদের যে আমরা মেয়েরা ও কোন অংশে ওদের থেকে কম নয়
তানভীর : হারাবে মানে আমি তো গান গাইবো না আমি নাচ করবো
অন্নি: ওকে ফাইন একজন গান আরেক জন নাচ,হয়েই গেলো
★
হলুদের দিন সন্ধায় পার্লার থেকে মেয়েরা আসলো অন্নিকে সাজাতে,
অন্নি চায় আনুশা ও সাজবে কিন্তু আনুশা বলেই দিলো ও এতো ভারী মেকাপ করবে না,কি আর করা,, অন্নিকে সাজানো শুরু করলো পার্লারের মেয়েরা
আর কিছুক্ষন পরে অনুষঠান শুরু হবে তাই আনুশা রেডী হতে এলো,অনেক বাছ বিছার করে অবশেষ এ লাল একটি লেহেঙ্গা পরলো,যদি ও হলুদে সবাই শাড়ি পরেছে কিন্তু আনুশা একদমই শাড়ি পরতে যানে না
এদিকে অনুষ্ঠান শুরু হলো,তানভীর রেডী হয়ে তানিমের সাথে বসে আছে যেহেতু দুটো স্টেজই সামনা সামনি সো আনুশাকে দেখতে সুবিধে হবে
কিন্তু আনুশা এখনো ও আসছে না কেনো,অন্নি তো একা বসে আছে,, সবাই আসছে অন্নিকে হলুদ ছোঁয়াতে, অন্নির হলুদ ছোঁয়া হলে সবাই তানিম কে হলুদ ছোয়াতে যায়,ব্যাপার টা খুবই সুন্দর লাগছে তানভীরের কাছে, এই প্রথম সে এই রকম বিয়ে দেখছে, ছেলে মেয়ের এক সাথে হলুদ ছোঁয়া, তা ও আবার আনুশার দৌলতে দেখার সৌভাগ্য হলো,কিন্তু আমার মনের রানি আনুশাকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো
এদিকে গানের আর নাছের অনুষ্ঠান শুরু হতেও আর দেরি নেই হঠ্যাৎ ই তানভীরের অন্নির পাশে চোখ পড়ে
তানভীর : এ আমি কাকে দেখছি এই প্রথম আনুশাকে এই রকম ড্রেস এ দেখছে তানভীর, তাই চোখ টা ভালো করে মুছে নিলো সত্যি কি আনুশা,নাকি মনের ভুল
আনুশার ও তানভীরের দিকে চোখ পড়ে আজকে তানভীর কে ও খুব সুন্দর লাগছে
আনুশা: ও আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো,আনুশা ইশারায় তানভীর কে বল্লো কি হয়েছে
আনুশা : লজ্জা পেয়ে তানভীরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়
প্রথমে নাচ হবে তাই আগে তানভীরকে নাচতে হবে,
তানভীর : কতো করে বললাম জান নাচ টা পরে দাও,আগে গান হবে না,ম্যাডাম এর একটাই কথা আগে নাচ পরে গান এখন বুঝো আমার কি অবস্থা
নাচ শুরু হলো
তানভীর
” সোনা আজ শেষ করো দিন গোনা
বুঝে ও কেনো বুজছো না
আমি হেব্বী রোমান্টিক
আর অল্প ডিমান্ডিং”
তানভীর এই গানটার নাছ দেয়
আনুশা: ইসস নাচের কি শ্রী,তা ও আবার এই রকম একটা গানের নাছ
কিন্তু তানভীরের নাচ আনুশার পছন্দ না হলে ও উপস্থিত সবার খুব ভালো লাগে, তারা তানভীর কে আবার ডান্স করতে বলে,কিন্তু ম্যাডামএর অর্ডার একটা ডান্সের পরে একটা গান হবে, তাই সবাইকে বল্লো,শুনুন আপনারা এখন গান হবে তার পর আবার ডান্স হবে ততক্ষনে আপনারা গান টা ইনজয় করুন
আনুশা: ইহহহ এটা কোন ডান্স হলো,বাজে, বিস্রি, জগন্য,ইয়াক
তানভীর : এহহ দেখবো এখন নিযে কতো ভালো গান গায়,
আনুশা: একটু ভাব নিয়ে বল্লো,ওকে ফলোমি
আনুশা স্টেজে গিয়ে গান শুরু করলো,
” অতলে অতলে বুকেরি ভিতরে
রয়েছো আকা আমার এ অন্তরে
অতলে অতলে বুকেরি ভিতরে
রয়েছো আকা আমারই অন্তরে
দিবা নিশি মনের মাঝে তোমার নামে
বৃষ্টি ঝরে,ভালোবাসি, ভালোবেসে
যাবো সারা জনম ধরে
হুমমমম লাগেনা ভালো তুমি হিনা
আমার হৃদয়ে তুমি শিশির মালা
হুমমমম দুচোখে আছো স্বপ্নে থাকো,
রয়েছো আমার সবুজ আদরে
দিবানিশি মনের মাঝে তোমার নামে
বৃষ্টি ঝরে ভালোবাসি,ভালোবেসে
যাবো সারা জনম ধরে
হুম্ম বাছেনা প্রানটা দূরে গেলে
আমার চোখের একটু আড়ালে
জীবনে তুমি মরনে ও রবে
একই সাথে রবো কবরে
দিবানিশি মনের মাঝে তোমার নামে
বৃষ্টি ঝরে,ভালোবাসি, ভালোবেসে
যাবো সারা জনম ধরে””
গানটা সবার এতো পছন্দ হয়েছে যে কি বলবো সবার হাত তালি আর শিটি বাজানোই বুঝিয়ে দিচ্ছে
তানভীর তো পুরো অভাক,আজ যেন সে সম্পূর্ণ নতুন এক আনুশাকে দেখছে,,এই দিনটা কোন দিন ভুলার নয়,তানভীর এই সব ভাবছে
আনুশা তানভীরের পাশে এসে
কি কেমন দিলাম বলো
তানভীর : হুম সেটাই ভাবছি,আমি আজ তোমাকে সম্পূর্ণ নতুন রুপে দেখছি
আনুশা: তাইই,এই বার রেডি হও স্যার এবার যে আবার তোমার ফালা,,কিন্তু উপস্থিত সকলের ইচ্ছে তানভীর আর আনুশার একটা কাপেল ডান্স দেখবে
কিন্তু আনুশা তো নাচ পারে না তাই রাজি হচ্ছিলো না।
তানভীর : তুমি আসো আমি আছি তো, আমি সম্পূর্ণ তোমাকে হেল্প করবো
আনুশা: ব্যাপারটা তা নয়,আমি তো কোন দিন নাচিইনি,,
তানভীর : আমি আছি ত এসো
তার পর তানভীর আর আনুশা মিলে একটা হিন্দি গানের নাচ দিলো
“সান্সচমে তেরি সান্সউমে লেতু
বুঝে সান্সসায়ে মুঝে সান্সসায়ে
রুহুনেজুলি রেসকেকে খুসবো
তুঝ সান্সসায়ে মুজে সান্সসায়ে
তুঝ সান্সায়ে”
এই গান টার নাছ দেয়,,সবার হাত তালিই বলে দিচ্ছে কাপেল ডান্স টা সবাই অনেক ইনজয় করেছে, স্টেজ থেকে নামার পর অনেকই আনুশা আর তানভীরেরর সাথে পরিচিত হতে আসে
।এই ভাবে হইচই এর মধ্যে হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হয়,,সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে গেলো
★
পরদিন বিয়ে সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত,আনুশা তো এতো ব্যাস্ত যে তানভীর ওকে সকাল থেকে কয়েকবার খুজেও কিন্তু পায়নি
তানভীর : এই আনুশাকে যে কই পাই একটা গিফট এনেছি ওর জন্য, কিন্তু ওকে তো পাচ্ছি না, যাই ওর রুমে রেখে আসি
এদিকে অন্নিকে বউ সাজানো হয়ে গেছে,অন্নি আনুশাকে ঝোর করে রেডী হতে পাঠালো
আনুশা: ওহ বউ সাজটা দেখতেই দিলো না আরে বাবা বিয়ে তো ওর আমি একটু পরে রেডী হলে কি হতো কিন্তু না কে শুনে কার কথা
নিজে নিজে বকতে বকতে রুমে ডুকলো
রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভাবছে, ফেলে আসা দিন গুলির কথা,চাইলেই ঐ দিন গুলি সুন্দর হতে পারতো, আমার মনের মতো হতে পারতো, কিন্তু হয়নি,,,
নিহাল তুমি নিজ হাতে আমার স্বপ্ন গুলো কে গলা টিপে হর্ত্যা করেছো,, তুমি চাইলেই আমরা দুজন হাতে হাত রেখে সুখে সংসার করতে পারতাম,,,
তুমি যে এই আমি কে দেখছো না,আমি কিন্তু এমন হতে চাইনি, তুমি আমাকে এমন হতে বাধ্য করেছো,,
আনুশা এই সব ভাবছে আর ওর দুচোখ দিয়ে পানি অঝরে গড়িয়ে পড়ছে কোন বাধাই মানছে না আজ চোখের পানি গুলো
সুমি: এই আনু টার যে আজ কি হলো এসেই দরজা বন্ধ করে রুমের ভিতর কি করছে, কে জানে,, কিছু খায়ওনি,মা শুনলে তো আবার আরেক প্রব্লেম যাই ডেকে আসি,, এই আনু দরজা খোল কি হয়েছে তোর বল, দরজা বন্ধ করে আছিস কেনো,
আনুশা: এরা কি আমাকে আমার মতো করে কাঁদতে ও দিবে না
সুমি: আনু বোন আমার দরজা খোল
মামাতো বোন প্রিয়া: ছোট আপু দরজা খোল, কি করছো তুমি একা একা
আনুশা: উফফ এখন দরজা না খুললে পুরো বাড়ি মাথায় করে ফেলবে, আগে চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে আসি,নিহালের বিষয়ে এদের কাউকে কিছু বলা যাবে না,আনুশা চোখে পানি দিয়ে এসে দরজা খুলে দিলো
সুমি: কিরে আজ এসেই দরজা বন্ধ করে দিলি কি হয়েছে তোর
আনুশা: না কিছু না এমনি মাথা টা একটু ধরেছিলো,তাই এসে শুয়ে পড়লাম
প্রিয়া: ছোট আপু খাবার খেয়ে একটা ওষুধ খেয়ে সুয়ে পড়ো ভালো লাগবে
আনুশা: খেতে ইচ্ছে করছে না প্লিজ তোরা যা তো আমি ঘুমাবো,আনুশা ওদের ঝোর করেই বের করে দিলো তার পর দরজা আটকিয়ে আবার কান্নায় ভেঙে পড়লো, আজ যে চোখের পানি বাধ মানবে, না,
★
তানভীর : এই নিহাল টা কে,যে ভাবে আনুশা ওর সাথে কথা বলছিলো, মনে তো হলো খুব পরিচিত কেউ,কিন্তু কে হতে পারে, অন্নি কে জিজ্ঞেস করবো একবার,না থাক এখন না। দেখি কতো দূর যায় ব্যাপারটা,
তানভীরের আম্মু: কিরে তানভীর নতুন অফিস কেমন লাগছে কাজ করে বাবা
তানভীর : আম্মু ভালো ই,(আম্মুকে এখন ও বলিনি আমার নতুন অফিসের বস, যে আনুশা)
তানভীর : হুম পারবো যাও তুমি,,,আম্মুকে তো বলেছি নিজে খেয়ে নেবো কিন্তু আমার যে খেতে ইচ্ছে করছে না,
এই লোকটা কে যাকে আনুশা এতো গুরুত্ব দিলো,কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে, আম্মুকে ও বলতে পারছি না আনুশার কথা,,,
সেদিন আনুশা বিদেশ চলে যাওয়ার পর আমার স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগে ছিলো,
পাগলের মতো কেটেছে আমার দুটো বছর,,তার পর অনেক কস্টের পর নিজেকে সামলে নিয়েছি,আবার পড়া শুনা শুরু করেছি,পড়া শুনা শেষ জব খুজতে শুরু করলাম,
নিয়তির কি পরিহাস জবটা আনুশার আন্ডারে হলো,,সত্যি কোন কিছু আমাদের হাতে নেই সব উপর ওয়ালার ইচ্ছে
★
আনুশা কাদতে কাদতে কোখন যে চোখটা লেগে এসেছিলো, বুঝতে পারিনি,দরজায় কেউ টোকা দিচ্ছে বুঝতে পারলাম অনেক বেলা হয়ে গেছে তাই আপু ডাকতে আসছে
আনুশা: উঠে আয়নার সামনে দাড়ালাম,চোখ মুখ ফুলে কি অবস্থা হয়েছে,সবাই সন্দেহ করবে এখন কি করি,
সুমি: আনুশা দরজা খোল তোর সাথে দেখা করতে কেউ এসেছে
আনুশা: কে আসবে আমার সাথে দেখা করতে, আগে ফ্রেশ হয়ে নিই তার পর দেখছি(আপু আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুই যা)আনুশা সুমিকে বল্লো
ফ্রেশ হয়ে এসে ভাবছি চোখ মুখ যে আকারে ফুলেছে,, অধিক কান্না করলে যা হয় আর কি,, এখন বাসায় সবাইকে কি বলবো, দূর এতো ভাবতে পারছিনা, অফিসে যেতে হবে আবার
আনুশা: দরজা খুলে বের হলাম, নাস্তা করতে বসলাম,,
মা: কিরে আনু তুই কি কান্না করেছিস, তোর মুখের এই অবস্থা কেনো
সুমি: হুম তাই তো কাল থেকে তুই কেমন উদ্ভট আচরণ করছিস কি হইছে তোর
আনুশা: কি আর হবে কিছুই না,মা ঐ যে তুমি বলো না, ঘুমানোর সময় বালিশ ছাড়া ঘুমালে চোখ মুখ ফুলে যায়
সুমি: সেকি তোর রুমে বালিশ নেই
আনুশা: আছে কিন্তু কি বলতো,ঘুমের মধ্যে বালিশ টা সরে গেছে,
কোন ভাবে মা আর বোনকে বুঝিয়ে ড্রইং রুমে এসে দেখে তানভীর সেখানে বসে আছে
আনুশা: একি আপনি এখানে
তানভীর : আসলে আমি অফিসেই যাচ্ছিলাম পরে মনে হলো এই ফাইল টাতে আপনার সাইন লাগবে তাই
আনুশা: সেটা তো অফিসে গেলেও দিতে পারতেন, ঠিক আছে দিন সাইন করে দিচ্ছি,,
তানভীর : ম্যাম অফিসের সময় হয়ে গেছে চলুন অফিসে যাই
আনুশা: আপনি যান আমি যেতে পারবো
তানভীর : না ম্যাম চলুন না আমরা এক সাথে যাই, যখন দুজনে একই জায়গাতে যাবো তখন আলাদা আলাদা যাওয়ার কোন মানে হয়
আনুশা: আচ্ছা চলুন
তানভীর : যেতে যেতে ভাবছে আজ আনুশার মন ভালো নেই, তাই আমার সাথে কথা বাড়ায়নি, নইলে এই মেয়ে কিছুতেই আমার সাথে যেতে রাজি হতো না,চোখ গুলো ও ফুলে আছে মনে হয় খুব কান্না করেছে,
কিন্তু কেনো,এসব ভাবছে আর তানভীর অন্যমনে হাটছে
আনুশা: এই যে মিঃ গাড়ি এখানে, উঠুন গাড়িতে। এতো কি ভাবছেন
তানভীর : না কিছু না,গাড়িতে দুজনে উঠে বসলো,গাড়ি স্ট্রাট দিলো ড্রাইভার
তানভীর : আনুশা তোমার কি মন খারাপ
আনুশা: বাবাহ এতোক্ষন তো আমার বাসায় আপনি আপনি করে ডাকছিলেন,এখন আবার ভয়েজ চেঞ্জ
তানভীর : তোমার বাসায় আমি বলতে চাইনি,তোমার কথা ভেবে, আচ্ছা এগুলা বাদ দাও,বললে না তো তোমার মন খারাপ কেনো,
আনুশা:????
তানভীর : না মানে যদি ও তুমি সব সময় মুখটাকে শাকচুন্নির মতো করে রাখো , তবু ও অন্য দিনের ছেয়ে আজ মনে হচ্ছে মনটা বেশি খারাপ
আনুশা:??? কিইইই আমি শাঁকচুন্নি, আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে এমন কথা বলার,ভুলে যাবেন না আমি কে
তানভীর : না তুমি যেই হওনা কেনো, অফিসে কিন্তু আপনি আমার বস,
এখন তো এটা অফিস নয় তাই আপনাকে বস মানতে পারছি না
আনুশা: সব সময় জানতাম ছেলেরা কথা কম বলে,মেয়েরা সারাদিন বক বক করে কিন্তু এই ছেলে তো উল্টো আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে,,,,,
আপনি এতো কথা কই পান বলবেন, আর এতো কথা বলেন কেনো
তানভীর : আচ্ছা আনুশা তুমি কখনো ও কারো প্রেমে পড়েছো
আনুশা:??????
তানভীর : নাহ মানে প্রেমে পড়লে বুঝতে, ভালোবাসার মানুষের মন খারাপ থাকলে তার মন ভালো করার জন্য কতো কথা বলতে ইচ্ছে হয়
আনুশা: মনে মনে, ঠিক ধরেছি আমার মন ভালো করার জন্য উলটা পাল্টা বকছো,তোমার কথা শুনলে এমনিতেই মন ভালো হয়ে যায় তানভীর
তানভীর : আনুশা চুপ করে আছো কেনো,,আচ্ছা আনুশা তুমি তো আমাকে বললে না, এই নিহাল কে যার সাথে কালকে দেখা হয়েছিলো
আনুশা: তানভীর নিহাল এর কথা বলতেই বল্লো,ড্রাইভার গাড়ি থামান
তানভীর : গাড়ি থামিয়ে কি হবে আনুশা,ততক্ষনে ড্রাইভার গাড়িয়ে থামালো
আনুশা: আপনি নামুন মিঃ তানভীর
তানভীর : আমি নামবো মানে
আনুশা: আপনি অন্য কিছু করে অফিসে যান
তানভীর : মানে কি বলছো তুমি
আনুশা: আপনি নামবেন,নাকি আমি নেমে যাবো
তানভীর : ওকে ওকে নামছি
,তানভীর নেমে গেলো
আনুশা: ড্রাইবার গাড়ি গুরান,,ড্রাইভার কে ঠিকানা বলে দিলো আনুশা কোথায় যেতে হবে
তানভীর টেক্সি করে অফিসে আসলো
তানভীর ‘ আর নয় এবার অন্নিকে সব জানাতে হবে, অন্নিকে ফোন করে তানভীর সব বল্লো
অন্নি: তানভীর ভাই আমি দেখছি,আপনি কোন টেনশন করবেন না
আনুশা: চিরোটাকাল তুমি এমনই থেকে যাবে,আমি তোমাকে ডক্টর দেখাতে চাই,দেশের সব ছেয়ে বড় বড় ডক্টর দেখাতে চাই
নিহাল: তার কোন প্রয়োজন নেই আনুশা আমি আমার এই জীবন টাকেই মেনে নিয়েছি
আনুশা: এমন বললে হয় নাকি,চলো ডক্টরের কাছে যেতে যেতে কথা বলি অনেক কিছু জানার আছে তোমার কাছে আমার
নিহাল: মনে মনে,কি জানতে চাইবে বলো তোমাকে কোন কিছুই বলার নেই আমার
আনুশা: (তোমাকে অনেক প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি,দেবে কি সব প্রশ্নের উত্তর,না,না কোন উত্তর শুনতে চাই না আমি,তোমার কাছে থেকে, আমি আমার লাইফ নিয়ে সুখে আছি)ড্রাইভার উনাকে গাড়িতে তুলে দাও
নিহাল গাড়িতে বসে ভাবছে কেনো করছো আমার জন্য এতো কিছু
আনুশা: তুমি বললে না তো মা কোথায় আর তোমাদের বাড়িটির কি হয়েছে
নিহাল: সব শেষ হয়ে গেছে মায়ের অসুখের জন্য, মাকে বাঁচাতে পারিনি,,সব শেষ করে ও মাকে পেলাম না, ক্যানসার হয়েছিলো মায়ের,
অনেক টাকা ধার হয়ে যায়,,মায়ের মৃত্যুর পরে বাড়ি ছেড়ে চলে আসি,শুনেছি পাওয়ানাদার রা বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছিলো আর কিছু জানি না,,
আনুশা: মনো যোগ দিয়ে নিহালের কথা শুনছে, ভাবছে বিয়ের দিন রাতের কথা, এমন জেদ তার বিয়েরদিন রাতেই বের করে দিলো,আল্লাহ আছেন,তিনি সব দেখেন
নিহাল: কি ভাবছো
আনুশা: কিচ্ছু না হসপিটাল এসে গেছে ড্রাইভার উনাকে নামিয়ে উইল চেয়ারে বসিয়ে দিন,, ড্রাইভার তাই করলো,
আনুশা নিজে উইল চেয়ার ঠেলে নিহাল কে ডক্টরের চেম্বারে নিয়ে গেলো
এদিকে অন্নি আনুশাকে কল দিতে দিতে পাগল প্রায়, আনুশার ফোন সাইলেন্ট করা তাই আনুশা খেয়াল করেনি
তার মানে তানভীরের থেকে যা শুনেছি,আর আনুশার এভাবে তার প্রতি দয়া দেখানো সব কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে এই সেই নিহাল,
আনুশা কি করতে চায়, ওর সাথে কথা বলতেই হবে আমাকে, তানভীরের ভালোবাসা কি ও বুঝতে পারছে না,,অপেক্ষা করতে হবে আমাকে
★
ডক্টর বলেছে নিহালের পা আগের মতো করতে হলে ওকে ইন্ডিয়া নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে তা হলে সে আবার আগে মতো চলাফেরা করতে পারবে
আনুশা: নিহালকে নিয়ে ফিরে এলো আশ্রমে,,,
সেখান থেকে,সুমি আপুর শশুর বাড়ি যায়,
সুমির জামাইয়ের সাথে কথা বলে জানতে পারে, সে সুমির সাথে সংসার করতে চায়না,রিতি অনুযায়ী সে বিয়ে করবে& বিয়ের জন্য পাত্রী খোজা শুরু করেছে,
আনুশা: আপনি বিয়ে করবেন ভালো কথা, আমার বোনকে ডিবোর্স দিয়ে তার পর বিয়ে করবেন
সুমির জামাই সুমি কি ডিবোর্স দিতে রাজি নন
আনুশা: তা হলে আমার বোনকে নিয়ে সংসার করতে হবে, নতুবা আপনার বিরুধ্যে পুলিশকেস করতে বাধ্য হবো আমি,
অনেক কথা কাটা কাটির পর তারা সুমিকে নিতে রাজি হয়,
আনুশা: তো আংকেল আন্টি,আর আপনি গিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়িয়ে আসবেন,আর আপুকে নিয়ে আসবেন,
এতে আপু খুশি হবে
সব কাজ শেষ আনুশা বিকেল তিনটার দিকে অফিসে যায়,, গিয়ে চেয়ারে বসে মাথা এলিয়ে দেয়,খুব মাথা ব্যাথা করছে,তখনই মনে হলো নিহাল কে ইন্ডিয়া পাঠাতে হবে, যে করেই হোক ওকে আগের মতো সুস্থ করতে হবে, ,,
আনুশা: হুম আসুন,,ইমিডিয়েটলি নিহাল হাসান এর ইন্ডিয়া যাওয়ার জন্য সব ব্যাবস্থা করুন,বেশি দিন যেন না লাগে যতো টাকা লাগে দিন,১৫ দিনের মধ্যে ইন্ডিয়া যাওয়ার সব ব্যাবস্থা হওয়া চাই
তানভীর : ওকে ম্যাম, আনুশার ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে এলো তানভীর একটি প্রশ্নের উত্তর সে কিছুতেই পাচ্ছেনা,কে এই নিহাল যার জন্য আনুশা এতো কিছু করছে,আমি যতোটুকু জানি আনুশার লাইফে কোন প্রেম ছিলো না,,তা হলে কে,,অন্নিটা ও সব কথা বলছে না,,কিছুতো একটা প্রব্লেম আছে
আনুশাকে দেখে মনে হলো ও খুব টায়ার্ড ঠান্ডা কিছু খেলে মনে হয় ভালো লাগতো একটা ঠান্ডা জুস দিয়ে আসি, যেই ভাবা সেই কাজ
তানভীর : ম্যাম আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি খুব ক্লান্ত,,এই ঠান্ডা জুস টা খান ভালো লাগবে
আনুশা: রেখে যান আমি পরে খেয়ে নিবো
তানভীর : নাহ ম্যাম রেখে গেলে আপনি খাবেন না, আমি জানি,আপনি এখন আমার সামনে খাবেন
আনুশা:( মা ছাড়া এই প্রথম কেউ আমার এতো কেয়ার নিচ্ছে) আনুশা আর কথা বাড়ালো না চুপ চাপ বাধ্য মেয়ের মতো জুস টা খেলো
তানভীর : এই তো গুড গার্ল,,
আনুশা: তানভীরের মুখে কথা টা শুনতে ভালোইই লেগেছে আমার,কেউ তো কখনো ভালোবেসে এই সব বলেনি তাই হয়তো ভালো লেগেছে আমার
তানভীর : ঠিক আছে ম্যাম আমি এখন আসি
আনুশা: হুম যাও
তানভীর : হ্যা কি বললেন ম্যাম,শুনতে পাইনি
আনুশা: বললাম তো তুমি এখন যাও
তানভীর : আলহামদুলিল্লাহ শুনে মনটা শান্ত হলো
আনুশা: কিই আমি ওকে তুমি করে বলেছি সর্বনাশ। তানভীরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও হাসছে
এতো হাসির কিছু হয়নি আমি ভুল করে বলে পেলেছি
তানভীর : ইটস ওকে ভুল করে হলে ও বুড়োদের যে চিল টা আমার উপর লাগিয়েছেন সেটা তুলে পেলেছেন
এই বলে তানভীর হাসতে হাসতে চলে গেলো
আনুশা: ও হাসলো কেনো তা হলে কি আমি ওর উপর একটু একটু করে দূর্বল হয়ে পড়ছি,,আগে ওকে বিরক্ত লাগতো,এখন ওর সব কিছুই আমার ভালো লাগে কিন্তু কেনো,,আর ভাবতে পারছি না
এই বার বাসায় যাই
বাসায় যাওয়ার পর আনুশা সুমিকে আর মাকে খবর টা জানালো
সুমি: তুই সত্যি বলছিস ও আসবে আমাকে নিতে
আনুশা: হুম সত্যি
আনুশার আম্মু: তো ওরা রাজি হলো কি করে
আনুশা: রাজি হলো কি করে সেটা না হয় নাইবা শুনলে
এইভাবে কেটে গেলো পনেরো বিশদিন এর মধ্যে নিহালের ইন্ডিয়া যাওয়ার সব কিছু ফাইনাল হয়ে গেলো আগামিকাল ফ্লাইট
তানভীর : যাই ম্যাম কে খবর টা দিয়ে আসি
ম্যাম আসবো
আনুশা: এসো ( সেদিনের পর থেকে আনুশা তানভীরকে তুমি করেই বলে)
তানভীর : নিহাল হাসানের চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া যাওয়ার সব কিছু রেডী
আনুশা: ওকে, সময় মতো তাকে এয়ারপোর্ট এ পৌছে দিবেন
তানভীর : ম্যাম আপনি যাবেন না
আনুশা: নাহ আমার মিটিং আছে আমি যেতে পারবো না(আসল কথা হচ্ছে নিহালের সামনে আর আমি যেতে চাই না,ওকে শুধু দূর থেকে করুনা করা যায় ভালোবাসা যায় না)
তানভীর : কি ভাবছো আনুশা
আনুশা: এটা অফিস এখানে কোন এমপ্লয়ার, তার বস কে নাম ধরে বলে না।
তানভীর : সরি ম্যাম আসলে একটা কথা বলার ছিলো
আনুশা:( আমি জানি তানভীর তুমি কি বলবে আমাকে,এটাই যে নিহাল আমার কে হয় গত দু সপ্তাহ থেকে এই একি প্রশ্ন করে যাচ্ছো আমাকে)এখন কিছু বলতে হবে না আমাকে, সময় হলে সব জানতে পারবে
পরদিন আনুশা অফিসে বসে বসে ভাবছে,,এতো লেইট হচ্ছে কেনো অন্নির আসতে ওকি তা হলে আর আসবে না,এই সময়, হুট করে অন্নির আগমন
সাথে তানিম ও আছে,
আনুশা: ও অন্নি তুই এসেছিস,এই ফাইল গুলো একটু দেখতো। আমি একটু সাইডে কাজ দেখতে যাবো
অন্নি: দোস্ত আমি না কয়েকদিন অফিস করতে পারবো না
আনুশা: কেনো আপনার কি হইছে, অফিস করবেন না কেনো
অন্নি: আসলে বিয়ের আগে তানিমকে ভালো করে বুঝে নিতে চাই তাই ওর সাথে কিছুটা টাইম ওয়েস্ট করতে চাই
আনুশা: কয়দিন আসতে পারবেন্না
অন্নি: আমি চাই এক সাথে বিয়ে হানিমুন সেরে অফিস জয়েন করতে,
আনুশা: ভ্র কুঁচকে অন্নির দিকে তাকালো। মিস অন্নি এটা কোন প্লে গ্রাউন্ড নয় যে আপনার ইচ্ছে মতো, আপনি যাবেন আর আপনি ফিরে আসবেন এটা কাজের জায়গা,,এখানে এতো বাহানা চলবে না
অন্নি: দেখ আনুশা আমি তো নিজের ইচ্ছে যাচ্ছি না,তোর থেকে অনুমতি নিয়ে যাবো,,
আনুশা: তো আমি অনুমতি দিচ্ছি না,মন চাইলে রিজাইন দিয়ে চলে যেতে পারেন,, আমি আপনার জায়গাতে অন্য কাউকে এপয়েন্ট করবো
অন্নি: আনু তুই এটা আমাকে বলতে পারলি, তুই যখন দেশে ছিলি না তোর কম্পানির জন্য আমি কি না করেছি,রাত জেগে এতো এতো কাজ করেছি,,
তোর একার জন্য কম্পানিটা আজকের জায়গাতে আসেনি,,আমি ও অনেক করেছি আর সেই তুই কি না,আমাকে,আমি শুধু কয়েক মাসের জন্য কাজের থেকে ছুটি চাইলাম,
বিয়ের পর তানিম আবার ইতালিতে চলে যাবে তখন আমি একা হয়ে যাবো, তখন তো আবার জব টাতে জয়েন করবো, আমার তো এতোটুকু চাওয়া থাকতেই পারে
আনুশা: বুঝলাম তুই এই কম্পানির জন্য অনেক কষ্ট করেছিস,কিন্তু এটা ভুলে যাস না এইটা আমার কম্পানি,আজকের জায়গাতে এনে দাড় করাতে আমার প্রচুর শ্রম দিতে হয়েছে, তুই যে এতো গুলো মাস থাকবি না, তোর কাজ গুলো দেখবে কে বল,,আমি একা এতো সব দেখবো কি করে, তুই তো জানিস ঘর,এন্ড অফিস দুইটাই আমাকে সামলাতে হয়,ঐ দিকে মামাকে ডাক্তার দেখাতে হবে,সে দিকে দৌড়া দৌড়ি করতে হয় আমাকে,আর এদিকে এখন অফিস, কি করবো?
অন্নি: আমি সব বুঝতে পারছি,আচ্ছা ফাইন আমার কাজ গুলো না হয় ম্যানেজার তানভীর করে দিবে
আনুশা: হোয়াট, তানভীর। নো য়ে এর থেকে ভালো আমি একাই সব পারবো,
অন্নি: সে তুই পারবি এটা আমি জানি কিন্তু তবুও এতো কাজ এক সাথে করে তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি, এমন সময় তানিম এলো তানভীর কে নিয়ে
আনুশার ক্যাবিনে,দুটি মানুষই আনুশার কাছে খুব বিরক্তিকর,
আনুশা: এরা এখানে কি করছে,,কেনো এসেছে এরা
অন্নি: আমি ওদের ডেকেছি
আনুশা: তুই কেনো
অন্নি: আমি থাকলে তোর কি কি কাজ আমি করি সে গুলো তানভীর কে বুঝিয়ে দিতে আজ থেকে যতো দিন আমি আসবো না তত দিন, তানভীর আমার হয়ে কাজ গুলো করবে
আনুশা: তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড এর ফায়দা নিচ্ছিস তাই না
অন্নি: তোর ভুল ধারনা এই টা,আমি শুধু তোর যেন কষ্ট কম হয় সেই ব্যাবস্থা করছি
আনুশা: তোকে আমার কথা ভাবতে হবে না, আমি নিজেই নিজের কথা ভাবতে পারি
তানভীর : ম্যাম আপনার কি মনে হচ্ছে আমি অন্নি ম্যামের কাজ গুলা পারবো না আপনি একবার দায়িত্ব দিয়ে দেখুন সব কাজ একদম ঠিক ঠাক ভাবে পাবেন
অন্নি: এই দেখ ও পারবে
আনুশা: কিন্তু
অন্নি: আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না,আমার হয়ে ও তোর কাজ গুলো দেখবে এটা আমি বেছে দিলাম ওকে
এই বলে অন্নি তানিম কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো
তানভীর : ম্যাম এখন কি করতে হবে আমাকে
আনুশা: কিচ্ছু করতে হবে না আপনি যান
তানভীর : টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো অনেক গুলি ফাইল পড়ে আছে,,ম্যাম আমি এই ফাইল গুলি নিয়ে যাচ্ছি,ফাইল গুলি দেখে দিয়ে যাবো
আনুশা: কিছু বল্লো না,,শেষ অন্নি কি না আমার সাথে এমন করলো,এই জন্যই কাউকে বেশি সান্স দিতে নেই,,নইলে পরে গলায় কাটা হয়ে আটকে থাকে,,
তানভীর : ফাইল গুলি দেখছি আর আনুশার ক্যাবিনের দিকে চোখ রাখছি। কি করে দেখার জন্য,,অন্নি তো বলে দিয়েছে তানভীর ভাই আনুর শুধু সামনে নয় পিছনে ও কাঠালের আঠার মতো লেগে থাকবেন,???
কিন্তু সে তো বলেই খালাস ও তো আর জানে না ওর বান্ধুবী একটা শাঁকচুন্নি
যাক ফাইল গুলো দেখা শেষ, যাই ম্যাম কে দিয়ে আসি, তানভীর আনুশার ক্যাবিনের দিকে তাকাতেই দেখলো আনুশা কোথায় ও যাচ্ছে
তানভীর তাড়া তাড়ি ক্যাবিন থেকে বের হয়ে, ম্যামম কোথায় যাচ্ছেন
আনুশা: ওহ নো এখন আমি কোথায় যাবো সেটা ও আপনাকে বলে যেতে হবে,,
তানভীর : না ম্যাম তা কেনো আসলে কয়েক দিনের জন্য হলে তো আমি আপনার পিএ, তাই আর কি
আনুশা: উফফ এর সাথে কথা না বাড়ানোই ভালো, আমি সাইডে কাজ দেখতে যাচ্ছি
তানভীর : আমি যাবো
আনুশা: আপনাকে আমার সাথে যেতে হবে না,
তানভীর : আমি তো যাবোই
আনুশা: এই অন্নি টা আমার পিছনে কোন পাগল লাগিয়ে দিলো
ঠিক আছে আসুন।
তানভীর : চলুন ম্যাম,,
সাইডে কাজ দেখে ফিরতে ফিরতে অনেক বেলা হয়ে গেলো তানভীর কিছুতেই আনুশা কে এই পড়ন্ত বিকালে একা ছাড়বে না,তাই আনুশা আর তানভীর এক সাথেই আসছিলো
তানভীর : আনুশা একটা কথা বলি
আনুশা: একটা কেনো এতক্ষন তো বক বক করে আমার মাথা খেয়েছেন,তার পরে ও যদি আরেকটা কথা থেকে যায় তা হলে বলুন আমি শুনছি
তানভীর : না শুধু একটাই বলবো এর পর চুপ থাকবো কেমন,,
আনুশা:???
তানভীর : যাই হোক কথা টা হচ্ছে এই যে তুমি আমাকে আপনি আপনি করে বলো,,তোমার কি একবার ও মনে হয়না তুমি আমাকে তোমার দাদার বয়সের মুরুব্বী বানিয়ে পেলছো,
যেখানে আমরা এক সাথে পড়া শুনা করেছি,,সেখানে তো তুমি করে বলার কথা,আনুশা প্লিজ দয়া করো তুমি আমাকে আর যা কিছু বলো না কেনো মুরুব্বী বানিয়ে দিও না
আনুশা: তানভীর ছেলেটা সত্যি খুব মজার,ও সাথে থাকলে মন খারাপ করে থাকার কোন উপায় নেই,,নাহ ওকে বুঝতে দেয়া যাবে না,ও কে দূরে রেখেছি ও দূরেই থাক,,, এমন সময় গাড়িটা ঝোরে একটা ধাক্কা খেয়ে ব্রেক করে
আনুশা: ড্রাইভার কি হয়েছে এক্সিডেন্ট করে বসলে তো আবার
ড্রাইভার: না ম্যাম তেমন কিছু হয়নি আসলে একটা লোক উইল চেয়ারে বসে একা একা রাস্তা পার হচ্ছিলো আর আমি খেয়াল করিনি হঠ্যাৎ ই সামনে এসে যাই
তানভীর : তো বসে আছো কেনো গিয়ে দেখো লোকটা ঠিক আছে কি না
আনুশা: ড্রাইভার আপনি আপনার জায়গাতে বসুন এক্ষনি লোক জমা হবে তার পর কি হয় বলা যায় না,আমি দেখছি
তানভীর : চলো আমি ও যাবো তোমার সাথে,
তানভীর আর আনুশা গাড়ি থেকে বের হলো লোকটা গাড়ির ধাক্কা খেয়ে উইল চেয়ার থেকে পড়ে যায় আর পাব্লিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে, লোকটাকে উঠানোর কোন চেষ্টাই করছে না
তানভীর : আনুশা আমি লোকটা কে উঠাচ্ছি,,তানভীর লোকটাকে উঠে বসালো গাড়িতে তেমন একটা লাগেনি,একটু ব্যাথা পেয়েছে
আনুশা: লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে দু পা পিছিয়ে গেলো,,নিজের চোখ কে যে বিশ্বাস করতে পারছি না আমি,এ আমি কাকে দেখছি,,নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো, নাহ এ কি করে সম্ভব, এ হতেই পারে না
তানভীর আনুশার এই অবস্থা দেখে আনুশার কাছে এসে বল্লো
তোমার কি হয়েছে আনুশা তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো,
তানভীরের মুখে আনুশা নামটা শুনে উইল চেয়ারে বসা লোকটা আনুশার দিকে তাকালো, তাকিয়ে সে আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে উইল চেয়ার ঠেলে সেখান থেকে চলে আসার চেষ্টা করে,আনুশা ততক্ষনে নিজেকে সামলে নেয়,
তানভীর : তোমার কি হয়েছে আনুশা ডাক্তার ডাকবো,চলো তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই
আনুশা: আমি ঠিক আছি,,এই বলে তানভীর কে সরিয়ে দেয়,,
নিহাল যেওনা দাড়াও এই বলে আনুশা দৌড়ে গিয়ে নিহাল এর পথ আগলে দাঁড়ায়(উইল চেয়ারে বসা লোকটা আর কেউ নয় নিহাল,যার হাতে হাত রেখে সারা জীবন কাটানোর কথা ছিলো আনুশার কিন্তু সেদিন নিহাল সেই সুযোগ আনুশাকে দেয়নি)
নিহাল: (আজ এতো গুলো বছর পর আনুশাকে দেখবো ভাবতেই পারিনি,তাও আবার একদম নতুন রুপে পাশের লোকটা নিশ্চয়ই ওর বর,আমি তো কষ্ট ছাড়া কিছুই দিইনি হয় তো লোকটা তাকে সুখে রেখেছে,,)
আনুশা: নিহাল চুপ করে আছো কেনো তোমার এই অবস্থা কি করে হলো,বলো আমাকে
নিহাল:( আনুশা তোমাকে বলার মতো কোন ভাষা আমার নেই সেদিন নিজের ইগো আর নিজের জেদের কারনে তোমার উপর অবিছার করেছি,আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছো কি তুমি)
আনুশা: নিহাল চুপ করে থেকো না কথা বলো প্লিজ নিহাল, মা কোথায় তোমার এই অবস্থা হলো কি করে
নিহাল:( কি বলবো তোমাকে তুমি কি সুন্দর এখন ও আমার মাকে মা বলে ডাকছো আর আমি কি না)নাহ আমি আনুশার কোন প্রশ্নের উত্তর দিবো না,, আমাকে যেতে দাও আনুশা,, বাধা দিও না
আনুশা: সেদিন ও তুমি তোমার নিজের ইগোকে জিতিয়ে দিলে, আজও কি তোমার ইগোর কারনেই আমার সাথে কথা বলবে না।
নিহাল: অপমান করছো,ইগো দেখানোর মতো আমার আছে কি বলো, আজ দুই বছর এই উইল চেয়ার আমার চলার সংগি,,
আনুশা: আমি সেটাই জানতে চাইছি এমন হলো কি করে,
নিহাল:,,,,,,,,,,,,,,,,
আনুশা: ওকে ফাইন বলবে না তো,,আমি ও শুনবো,এইটা তো বলবে তুমি কোথায় থাকো, তোমাকে পৌছে দিয়ে আসি
নিহাল: না আমি কোথায় থাকি এটা আনুশা কে বলা যাবে না,,,,,,, নাহ আমি একাই যেতে পারবো
আনুশা: তুমি যদি ভেবে থাকো, তুমি চুপ করে থেকে পার পেয়ে যাবে আর আমি তোমাকে একা ছেড়ে দিবো তা হলে তুমি ভুল ভাবছো, আমি তোমাকে এখান থেকে একা যেতেই দিবো না
নিহাল: পা.শে. পাশেই একটা আশ্রম আছে সেখানেই থাকি
আনুশা: হোয়াট আশ্রম তুমি এখন আশ্রমে থাকো, কিন্তু কেনো তোমার বাড়ির কি হলো
নিহাল: আনুশা এতো প্রশ্ন করো না
আনুশা: এতক্ষনে নিহাল এর হাতের দিকে নজর পড়লো পড়ে গিয়ে কেটে গেছে আগে চলো পাশে ফার্মেসী থেকে কাটা জায়গাতে ওষুধ লাগিয়ে আনি
তানভীর এতোক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলো আর বুঝার চেষ্টা করছিলো,বাট কিছুই বুঝতে পারেনি
আনুশা তানভীরের দিকে তাকিয়ে বল্লো আপনি বাসায় যান আমার ফিরতে লেইট হবে
তানভীর : প্রব্লেম নেই আমি ও তোমার সাথে যাবো, রাত হলে কিচ্ছু হবে না
নিহাল:( আনুশাকে একবার জিজ্ঞাস করে দেখবো এই লোকটা তার কে, নাহ থাক কোন মুখে জিজ্ঞাস করবো,আমার তো সেই মুখ নেই)
তানভীর আর আনুশা নিহালকে ফার্মেসিতে নিয়ে গেলো কাটা জায়গাতে ওষুধ লাগিয়ে দুইজনে নিহাল কে আশ্রমে দিতে এলো,
আনুশা: মিঃ তানভীর আপনি উনাকে শুইয়ে দিয়ে আসুন আমার একটু কাজ আছে এখানে
তানভীর : ওকে
এই পাকে আনুশা আশ্রমের লোকেদের কাছে থেকে নিহাল এর ব্যাপারে জানতে চাইলো ও কি করে এখানে এলো,
কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না শুধু বল্লো দুই বছর আগে রোড এক্সিডেন্ট করে তখন ওকে ডাক্তার এর কাছে নেয়া হয়,
এক্সিডেন্ট হয়েছিলো খুব গুরুতর, আর সেই এক্সিডেন্ট এ ওর পায়ে অনেক আঘাত পাওয়া তে উন্নত চিকিৎসার অভাবে সে হাটতে পারছে না
,ওর বাড়ির ঠিকানা ও কাউকে বলেনি,
তখন হাসপাতাল এর কর্তি পক্ষ তাকে এই আশ্রমে রেখে যেতে বলে সেই থেকে ও এখানে আছে
এমন সময় তানভীর এলো,আনুশা চলো এই বার বাড়ি যাই উনাকে রেখে এসেছি
আনুশা: হুম চলুন, গাড়িতে বসে আর কেউ কোন কথা বলেনি,
বাসায় এসে আনুশা কারো সাথে কোন কথা না বলেই রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়
যাতে কেউ ওকে ডিস্টার্ব না করে,রুমে বসে ভাবছে পেলে আসা দিন গুলোর কথা,নিহাল এর কথা
তানভীর: আজ কতো গুলো বছর পর আনুশাকে দেখলাম ও ঠিক আগের মতোই আছে একটুও চেঞ্জ হয়নি,ও তো জানে না ওকে দেখার পর আমার বুকের ভিতরে চলাৎ করে ঢেউ বয়ে যাওয়া শুরু করলো,, বুকের রক্ত আবার নিজের গতীভেগে ফিরে এসেছে
আজ অনেক বছর পর,আশার আলো দেখেছে এই দুই চোখ তোমাকে ফিরে পাবার আশা, আর তোমাকে হারিয়ে যেতে দিবো না,
কিন্তু আজ যদি ও আমকে এই চাকরি থেকে বের করে দেয় তা হলে তো ওর কাছা কাছি থাকা খুব কঠিন হয়ে যাবে
অন্নি: মিঃ তানভীর
তানভীর : ও অন্নি ম্যাম আপনি,আসুন আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিতে বলেছে তাই না
অন্নি: না তা বলেনি,আমি আছি না
তানভীর : হাহ সত্যি তো আনুশা আমাকে ওর অফিসে রাখবে
অন্নি: হুম, আচ্ছা শুনুন আপনার সাথে আমার কথা আছে
তানভীর : জি বলুন
অন্নি: আরে অফিসে না, অফিস শেষ এ বাইরে কোথায় ও মিট করবো আমরা কেমন
তানভীর : ওকে
আনুশা: অন্নি এখন ও কি করছে একটু পরে যে মিটিং শুরু হবে সে দিকে খেয়াল নেই তার,ইন্টার কমে রত্নাকে ফোন করে বল্লো আনুশাকে পাঠিয়ে দিতে
কিছুক্ষন পর অন্নি এসে, ম্যাম চলুন মিটিং এর সময় হয়ে গেছে
আনুশা: আপনার তা হলে মনে আছে
অন্নি; মনে থাকবে না কেনো ক্লাইন্টরা এসে গেছে আসুন মিটিং শুরু করা যাক
আনুশা আর অন্নি মিটিং রুমে গেলো & ভালো ভাবে ডিলটা ফাইনাল করলো
অন্নি: যাক আনুশার অনেক ইচ্ছে ছিলো এই ডিলটা যেন ঠিক ভাবে হয় এখন,কোন ঝামেলা হয়নি এই অনেক
আনুশা: কোথায় ও খেতে হবে না আমরা দুজনে খাবারটা খেতে পারবো
অন্নি: যাহ এখন কি হবে ভেবেছিলাম,লাঞ্চ এর সময় তানভীর এর সাথে কথা বলে নিবো সেটা ও তো হলো না, এখন কি করবো
আনুশা: কি এতো ভাবছেন অন্নি, চলুন খেয়ে নিবেন
অন্নি: হুম,,
খাওয়া শেষ এ। অফিসের কিছু কাজ ছিলো অন্নি সব গুলো তাড়া তাড়ি শেষ করে নিলো,,
আনুশা: এতো তাড়া হুড়া করে কাজ করছিস কোথায় ও যাবি নাকি
অন্নি: হ্যারে সরি,ম্যাম আসলে আম্মু ফোন করেছিলো, কি জানি কাজ আছে, যেতে হবে তাই
আনুশা: ও আন্টি ফোন করেছিলো তো তাড়া তাড়ি যা কাজ করতে হবে না, নিশ্চয় খুব দরকারে ডেকেছে
অন্নি: যাক বাচা গেলো আমার মিথ্যা বলাটা বুঝতে পারেনি নইলে তো সব ভেস্তে যেতো, অন্নি অফিস থেকে বের হয়ে তানভীর কে মেসেজ করে দিলো আনুশা কে কি বলে অফিস থেকে বের হবে সব বলে দিলো
তানভীর মেসেজ পেয়ে আর দেরি করলো না,আনুশার ক্যাবিন এর বাইরে থেকে নক করলো
আনুশা: ওহ নো এ কে অফিসে রাখলে ও শুধু কাজের অযুহাতে আমার কাছে আসতে ছাইবে, বাট অফিসে না রেখে ও উপায় নেই,,,,ইয়েস
তানভীর : ম্যাম এখানে আসার পর, বাড়ি থেকে ফোন এসেছে হঠ্যাৎ করে নাকি আমার আম্মুর শরির টা খুব খারাফ হয়ে গেছে,এখন ম্যাম আমি ছাড়া তো আম্মুর কেউ নেই কে দেখবে বলুন
আনুশা: এতো ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাই তো বলতে পারেন, যে আপনার ছুটি লাগবে
তানভীর : ইয়ে মা,মানে ম্যাম
আনুশা: আর কিছু বলতে হবে না যান,আপনার আম্মুর কাছে যান,, আর হ্যা রোজ রোজ এই ভাবে কাজে ফাঁকি দেয়ার জন্য ছুটি চাইবেন্না
তানভীর : জি ম্যাম,
বেরিয়ে পড়লাম উফ বাচলাম,যে ভাবে উকিলের মতো জেরা করা শুরু করছে,এখন মিস অন্নির দেয়া ঠিকানায় পৌছাতে হবে
আনুশা: অফিসের কাজ গুলো শেষ করে আজ বাড়িতে যাবো বিদেশ থেকে আসার পর মা আর আপুকে একদম সময় দেয়া হয়নি
এর মাঝে একবার সুমি আপু জামাইয়ের সাথে দেখা করবো,,আপুর সাথে উনি সংসার করতে চায়কি চায় না,জানতে হবে
তানভীর ঠিকানা অনুযায়ী পৌছে গেলো,,স্থান একটা কফি শপ
অন্নি: উফ এই তানভীর ছেলেটা আসছে না কেনো,আনুশা ছুটি দিয়েছে তো ওকে
তানভীর : সরি সরি অনেক্ষন ওয়েট করতে হলো তাই না
অন্নি: ও আপনি এসে গেছেন, যাক তা হলে আনুশা কে ম্যানেজ করতে পারলেন
তানভীর : একটু কষ্ট হয়েছিলো, বুঝেনই তো ম্যাম বিজনেস এর ব্যাপারে কোন কম্প্রোমাইজ করতে চায় না
অন্নি: তা বুঝি না আবার,,আচ্ছা কি খাবেন বলুন অর্ডার করি আগে
তানভীর : আমার কফি হলেই চলবে
অন্নি: ওকে এক্সকিউজমি ভাইয়া দুইটা কফি দেন, এই টেবিলে
তানভীর : তা কেনো ডেকেছেন জানতে পারি
অন্নি: ইয়াহ অবশ্যই জানবেন দাড়ান কফি খেতে খেতে বলবো, আমার আবার খাওয়ার সময় গল্প করা খুব পছন্দ,, এই তো কফি এসে গেছে
তানভীর : এই বার তা হলে শুরু করা যাক
অন্নি: হুম,আপনি জানেন তো আমি আনুশার কি হই
তানভীর : কেনো আপনি আনুশার পিএ, এটা না জানার কি আছে
অন্নি: আপনার জানার মধ্যে একটু ভুল আছে আমি ওর পিএ প্লাস আমি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড,প্লাস বোন, কেনো না আনুশার আম্মু আমাকে মেয়ের মতোই স্নেহ করে
তানভীর :????? বলেন কি,তা হলে আপনারা একজন আরেক জন কে আপনি করে বলেন কেনো
তানভীর : আমাদের মহাররানীর মতে অফিস কাজের জায়গা,কোন ফ্রেন্ড আড্ডার জায়গা নয়,কাজের জায়গাতে সবাই সবাইকে আপনি করে সম্মান দেখিয়ে কথা বলতে হবে
তানভীর : জিও, লভলি, আপনার বান্ধুবী কে দিয়ে সব সম্ভব
অন্নি: তা ঠিক,বাট কথা হচ্ছে আমার মনে হয় আপনি অনেক ভালোবাসেন আনুশা কে তাই না
তানভীর : খুশি হয়ে আপনি জানেন কি করে নিশ্চয় আনুশা বলেছে তাই না,তা হলে আপনার সাথে আমামার গল্প ও করেছে,আমি জানি তো ও আমাকে মনে মনে ভালো বাসে কিন্তু মুখে বলতে চায়না
অন্নি: এতো এক্সাইটেড হওয়ার মতো কিছু বলেনি, ওকে,
আমি সেই স্কুল লাইফ থেকে আনুশার বন্ধু,,ওকে ভালো করে চিনি,বুঝি ওর মনের ভাষা,, আমাকে ও বলেছিলো আপনার কথা,কলেজে একটা ছেলে ডিস্ট্রাব করে,আমি ভাবলাম এই রকম অনেক ছেলেই আছে টাইমপাস করার জন্য মেয়েদের পিছনে ঘুরে,, তাই এতো গুরুত্ব দিই নি,,,আপনি ছিলেন না সে দিন এয়ারপোর্ট এ, আমার মনে ও ছিলো না আপনি সেই,,
তানভীর : হুম আমি গেছিলাম সেদিন আনুশার সাথে দেখা করতে, ভেবেছিলাম ওর সাথে আর কোন দিন দেখা হবে না,,কিন্তু আবার যে ওকে দেখতে পাবো আমি তা কল্পনা ও করিনি, ওকে দেখে আমার বুকের ভিতর চলাৎ করে উঠে, আপনি বুঝতে পারবেন্না,তখন আমার মনের ভিতরে কি চলছিলো আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,,
অন্নি: হুম বুঝতে পেরেছি আমি,আজ এই টা বুঝলাম যে আপনার মতো করে আনুশা কে কেউ ভালোবাসতে পারবে না,, তাই আমি চাই আপনি আনুশার মন জিতুন ওর মনে একটু একটু করে জায়গা করে নিন
তানভীর : কিন্তু কি করে আনুশা তো আমাজে সহ্যই করতে পারে না।
অন্নি: সুযোগ টা আমি আপনাকে করে দিবো
তানভীর : কি করে,,
অন্নি: বাবা মা অনেক দিন থেকেই আমার বিয়ের কথা বলছে, কিন্তু আনুশার কথা ভেবে আমি চুপ ছিলাম,এখন আমি সেই বাহানায় অফিসে যাবো না আর আমার পরে সব কাজ আপনি দেখবেন,এই দায়িত্ব আমি আপনাকে দিবো
তানভীর : কিন্তু ম্যাম আপনার জায়গায় যদি আপনার বান্ধুবী আরেক জনকে নিয়ে আসে
অন্নি: আনবে না কারন চাকরিটা আমি ছাড়বো না, আপনি শুধু আমার এপসেন্স এ আমার কাজ গুলো দেখার বাহানায় আনুশার কাছা কাছি যাবেন,এমন কিছু করবেন যাতে ও আপনার প্রতি ইমপ্রেস হয়ে যায়
তানভীর : আমার একটা প্রশ্ন ছিলো
অন্নি: হুম বলুন
তানভীর : আনুশার জীবনে কি এমন হয়েছে যে সে ছেলেদের সহ্য করতে পারে না, আর বিয়ের মতো একটা পবিত্র বন্ধন কে সাপোর্ট করে না
অন্নি: (নাহ আনুশা ফাস্ট সম্পর্কে আমি তানভীর কে কিছু বলবো না,তানভীর যদি সব জেনে আনুশা কে আর ভালো না বাসে,তা হলে মেয়েটার মনটা আবার ভেঙে যাবে)নাহ তেমন কিছুই নেই,এমনি ওর বিয়ে হয়ে গেলে ওর মা কি করবে, কে দেখবে তাকে তাই জন্য আর কি
তানভীর : ও আচ্ছা তাই,,ঠিক আছে অনেক কথা হলো এবার তা হলে উঠা যাক
অন্নি: হুম চলুন
আনুশা আজ অনেক দিন পর বাড়িতে সবার সাথে গল্প করছে
সুমি: আনু আজ না ছোট বেলার কথা খুব মনে পড়ছে এখন শুধু বড় আপু থাকলে ভালো হতো
আনুশা: তা ঠিক বলেছিস,বড় আপু তো এখন আসতে পারবে না, অনেক কাজ নাকি ওর,
সুমি: হুম, কি করা আমরা দুই বোন মিলে আড্ডা দিই,অন্নি থাকলে ও হতো অন্নি কোথায় রে
আনুশা: আন্টি ফোন করেছিলো তাই দেখা করতে গেছে
সুমি: ওহ
আনুশা: আপু তুই কি আর ভাইয়ার কাছে ফিরে যাবি না
সুমি; কি করে যাবো মানুষ টা কে আমি এতো বছরে ও একটা সন্তান দিতে পারিনি,,
আনুশা: আজ কাল এই রকম তো হয়েই থাকে,, তোরা বাচ্চা দত্তক নিবি তা হলেই তো হয়
সুমি: তা হলে তো ভালোই হতো কিন্তু আমার শাশুড়ি এতে রাজি নয়,আর তোর দুলা ভাই মায়ের কথার উপরে কথা বলে না
আনুশা: ঠিক আছে আমি দুলা ভাইয়ের সাথে কথা বলবো,, এমন সময় আনুশার ফোন বেজে উঠলো
আপু অন্নি ফোন করেছে কথা বলে আসি
অন্নি বল কি খবর আন্টি কেমন আছে
অন্নি: সব ঠিক আছে জানিস আব্বু আমার বিয়ে এক রকম ফাইনাল করে ফেলেছে
আনুশা: হোয়াট তোকে না জানিয়ে বিয়ে ফাইনাল করে কি করে
অন্নি: এখন ঠিক হয়নি, বাসার সবার ছেলেকে পছন্দ ইতালি থেকে এসেছে,ইতালি তে নাকি ছেলের বিজনেস আছে,,কালকে দেখতে আসবে ছেলে পক্ষ আমাকে,তুই আসবি তো
আনুশা: তুই তা হলে কাল অফিসে আসতে পারবি না
অন্নি: তুই ও তো অফিসে যাবি না,তুই অফিসে গেলে এখানে আসবে কে
আনুশা: আমি পরে যাবো
অন্নি: পাত্র পক্ষ চলে গেলে তুই আসার কি দরকার,,আর তুই পাত্র পছন্দ না করলে আমি বিয়ে করবো না
আনুশা: কি বলছিস তুই, বিয়ে করবি তুই ছেলের সাথে থাকবি তুই আর পছন্দ করবো আমি,ইম্পসিবল
অন্নি: আমি ওতো কথা বুঝি না তুই আসবি,,বায়
আনুশা: যাহ কিছু বলার সুযোগ ও দিলো না,,এখন না যেয়ে কোন উপায় নেই,ও সব সময় আমার পাশে থেকেছে,আর আমি ওর জীবনের ইম্পরট্যান্ট সময়ে থাকবো না তা ও তো হয় না একদিন অফিসে না গেলে কিছু হবে না,,,মহনাকে সব বুঝিয়ে দিবো, আর তানভীর তো আছেই,,ও দেখে নিবে সব আমি জানি
তানভীর: আজ কতো গুলো বছর পর আনুশাকে দেখলাম ও ঠিক আগের মতোই আছে একটুও চেঞ্জ হয়নি,ও তো জানে না ওকে দেখার পর আমার বুকের ভিতরে চলাৎ করে ঢেউ বয়ে যাওয়া শুরু করলো,, বুকের রক্ত আবার নিজের গতীভেগে ফিরে এসেছে
আজ অনেক বছর পর,আশার আলো দেখেছে এই দুই চোখ তোমাকে ফিরে পাবার আশা, আর তোমাকে হারিয়ে যেতে দিবো না,
কিন্তু আজ যদি ও আমকে এই চাকরি থেকে বের করে দেয় তা হলে তো ওর কাছা কাছি থাকা খুব কঠিন হয়ে যাবে
অন্নি: মিঃ তানভীর
তানভীর : ও অন্নি ম্যাম আপনি,আসুন আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিতে বলেছে তাই না
অন্নি: না তা বলেনি,আমি আছি না
তানভীর : হাহ সত্যি তো আনুশা আমাকে ওর অফিসে রাখবে
অন্নি: হুম, আচ্ছা শুনুন আপনার সাথে আমার কথা আছে
তানভীর : জি বলুন
অন্নি: আরে অফিসে না, অফিস শেষ এ বাইরে কোথায় ও মিট করবো আমরা কেমন
তানভীর : ওকে
আনুশা: অন্নি এখন ও কি করছে একটু পরে যে মিটিং শুরু হবে সে দিকে খেয়াল নেই তার,ইন্টার কমে রত্নাকে ফোন করে বল্লো আনুশাকে পাঠিয়ে দিতে
কিছুক্ষন পর অন্নি এসে, ম্যাম চলুন মিটিং এর সময় হয়ে গেছে
আনুশা: আপনার তা হলে মনে আছে
অন্নি; মনে থাকবে না কেনো ক্লাইন্টরা এসে গেছে আসুন মিটিং শুরু করা যাক
আনুশা আর অন্নি মিটিং রুমে গেলো & ভালো ভাবে ডিলটা ফাইনাল করলো
অন্নি: যাক আনুশার অনেক ইচ্ছে ছিলো এই ডিলটা যেন ঠিক ভাবে হয় এখন,কোন ঝামেলা হয়নি এই অনেক
আনুশা: কোথায় ও খেতে হবে না আমরা দুজনে খাবারটা খেতে পারবো
অন্নি: যাহ এখন কি হবে ভেবেছিলাম,লাঞ্চ এর সময় তানভীর এর সাথে কথা বলে নিবো সেটা ও তো হলো না, এখন কি করবো
আনুশা: কি এতো ভাবছেন অন্নি, চলুন খেয়ে নিবেন
অন্নি: হুম,,
খাওয়া শেষ এ। অফিসের কিছু কাজ ছিলো অন্নি সব গুলো তাড়া তাড়ি শেষ করে নিলো,,
আনুশা: এতো তাড়া হুড়া করে কাজ করছিস কোথায় ও যাবি নাকি
অন্নি: হ্যারে সরি,ম্যাম আসলে আম্মু ফোন করেছিলো, কি জানি কাজ আছে, যেতে হবে তাই
আনুশা: ও আন্টি ফোন করেছিলো তো তাড়া তাড়ি যা কাজ করতে হবে না, নিশ্চয় খুব দরকারে ডেকেছে
অন্নি: যাক বাচা গেলো আমার মিথ্যা বলাটা বুঝতে পারেনি নইলে তো সব ভেস্তে যেতো, অন্নি অফিস থেকে বের হয়ে তানভীর কে মেসেজ করে দিলো আনুশা কে কি বলে অফিস থেকে বের হবে সব বলে দিলো
তানভীর মেসেজ পেয়ে আর দেরি করলো না,আনুশার ক্যাবিন এর বাইরে থেকে নক করলো
আনুশা: ওহ নো এ কে অফিসে রাখলে ও শুধু কাজের অযুহাতে আমার কাছে আসতে ছাইবে, বাট অফিসে না রেখে ও উপায় নেই,,,,ইয়েস
তানভীর : ম্যাম এখানে আসার পর, বাড়ি থেকে ফোন এসেছে হঠ্যাৎ করে নাকি আমার আম্মুর শরির টা খুব খারাফ হয়ে গেছে,এখন ম্যাম আমি ছাড়া তো আম্মুর কেউ নেই কে দেখবে বলুন
আনুশা: এতো ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাই তো বলতে পারেন, যে আপনার ছুটি লাগবে
তানভীর : ইয়ে মা,মানে ম্যাম
আনুশা: আর কিছু বলতে হবে না যান,আপনার আম্মুর কাছে যান,, আর হ্যা রোজ রোজ এই ভাবে কাজে ফাঁকি দেয়ার জন্য ছুটি চাইবেন্না
তানভীর : জি ম্যাম,
বেরিয়ে পড়লাম উফ বাচলাম,যে ভাবে উকিলের মতো জেরা করা শুরু করছে,এখন মিস অন্নির দেয়া ঠিকানায় পৌছাতে হবে
আনুশা: অফিসের কাজ গুলো শেষ করে আজ বাড়িতে যাবো বিদেশ থেকে আসার পর মা আর আপুকে একদম সময় দেয়া হয়নি
এর মাঝে একবার সুমি আপু জামাইয়ের সাথে দেখা করবো,,আপুর সাথে উনি সংসার করতে চায়কি চায় না,জানতে হবে
তানভীর ঠিকানা অনুযায়ী পৌছে গেলো,,স্থান একটা কফি শপ
অন্নি: উফ এই তানভীর ছেলেটা আসছে না কেনো,আনুশা ছুটি দিয়েছে তো ওকে
তানভীর : সরি সরি অনেক্ষন ওয়েট করতে হলো তাই না
অন্নি: ও আপনি এসে গেছেন, যাক তা হলে আনুশা কে ম্যানেজ করতে পারলেন
তানভীর : একটু কষ্ট হয়েছিলো, বুঝেনই তো ম্যাম বিজনেস এর ব্যাপারে কোন কম্প্রোমাইজ করতে চায় না
অন্নি: তা বুঝি না আবার,,আচ্ছা কি খাবেন বলুন অর্ডার করি আগে
তানভীর : আমার কফি হলেই চলবে
অন্নি: ওকে এক্সকিউজমি ভাইয়া দুইটা কফি দেন, এই টেবিলে
তানভীর : তা কেনো ডেকেছেন জানতে পারি
অন্নি: ইয়াহ অবশ্যই জানবেন দাড়ান কফি খেতে খেতে বলবো, আমার আবার খাওয়ার সময় গল্প করা খুব পছন্দ,, এই তো কফি এসে গেছে
তানভীর : এই বার তা হলে শুরু করা যাক
অন্নি: হুম,আপনি জানেন তো আমি আনুশার কি হই
তানভীর : কেনো আপনি আনুশার পিএ, এটা না জানার কি আছে
অন্নি: আপনার জানার মধ্যে একটু ভুল আছে আমি ওর পিএ প্লাস আমি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড,প্লাস বোন, কেনো না আনুশার আম্মু আমাকে মেয়ের মতোই স্নেহ করে
তানভীর :????? বলেন কি,তা হলে আপনারা একজন আরেক জন কে আপনি করে বলেন কেনো
তানভীর : আমাদের মহাররানীর মতে অফিস কাজের জায়গা,কোন ফ্রেন্ড আড্ডার জায়গা নয়,কাজের জায়গাতে সবাই সবাইকে আপনি করে সম্মান দেখিয়ে কথা বলতে হবে
তানভীর : জিও, লভলি, আপনার বান্ধুবী কে দিয়ে সব সম্ভব
অন্নি: তা ঠিক,বাট কথা হচ্ছে আমার মনে হয় আপনি অনেক ভালোবাসেন আনুশা কে তাই না
তানভীর : খুশি হয়ে আপনি জানেন কি করে নিশ্চয় আনুশা বলেছে তাই না,তা হলে আপনার সাথে আমামার গল্প ও করেছে,আমি জানি তো ও আমাকে মনে মনে ভালো বাসে কিন্তু মুখে বলতে চায়না
অন্নি: এতো এক্সাইটেড হওয়ার মতো কিছু বলেনি, ওকে,
আমি সেই স্কুল লাইফ থেকে আনুশার বন্ধু,,ওকে ভালো করে চিনি,বুঝি ওর মনের ভাষা,, আমাকে ও বলেছিলো আপনার কথা,কলেজে একটা ছেলে ডিস্ট্রাব করে,আমি ভাবলাম এই রকম অনেক ছেলেই আছে টাইমপাস করার জন্য মেয়েদের পিছনে ঘুরে,, তাই এতো গুরুত্ব দিই নি,,,আপনি ছিলেন না সে দিন এয়ারপোর্ট এ, আমার মনে ও ছিলো না আপনি সেই,,
তানভীর : হুম আমি গেছিলাম সেদিন আনুশার সাথে দেখা করতে, ভেবেছিলাম ওর সাথে আর কোন দিন দেখা হবে না,,কিন্তু আবার যে ওকে দেখতে পাবো আমি তা কল্পনা ও করিনি, ওকে দেখে আমার বুকের ভিতর চলাৎ করে উঠে, আপনি বুঝতে পারবেন্না,তখন আমার মনের ভিতরে কি চলছিলো আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,,
অন্নি: হুম বুঝতে পেরেছি আমি,আজ এই টা বুঝলাম যে আপনার মতো করে আনুশা কে কেউ ভালোবাসতে পারবে না,, তাই আমি চাই আপনি আনুশার মন জিতুন ওর মনে একটু একটু করে জায়গা করে নিন
তানভীর : কিন্তু কি করে আনুশা তো আমাজে সহ্যই করতে পারে না।
অন্নি: সুযোগ টা আমি আপনাকে করে দিবো
তানভীর : কি করে,,
অন্নি: বাবা মা অনেক দিন থেকেই আমার বিয়ের কথা বলছে, কিন্তু আনুশার কথা ভেবে আমি চুপ ছিলাম,এখন আমি সেই বাহানায় অফিসে যাবো না আর আমার পরে সব কাজ আপনি দেখবেন,এই দায়িত্ব আমি আপনাকে দিবো
তানভীর : কিন্তু ম্যাম আপনার জায়গায় যদি আপনার বান্ধুবী আরেক জনকে নিয়ে আসে
অন্নি: আনবে না কারন চাকরিটা আমি ছাড়বো না, আপনি শুধু আমার এপসেন্স এ আমার কাজ গুলো দেখার বাহানায় আনুশার কাছা কাছি যাবেন,এমন কিছু করবেন যাতে ও আপনার প্রতি ইমপ্রেস হয়ে যায়
তানভীর : আমার একটা প্রশ্ন ছিলো
অন্নি: হুম বলুন
তানভীর : আনুশার জীবনে কি এমন হয়েছে যে সে ছেলেদের সহ্য করতে পারে না, আর বিয়ের মতো একটা পবিত্র বন্ধন কে সাপোর্ট করে না
অন্নি: (নাহ আনুশা ফাস্ট সম্পর্কে আমি তানভীর কে কিছু বলবো না,তানভীর যদি সব জেনে আনুশা কে আর ভালো না বাসে,তা হলে মেয়েটার মনটা আবার ভেঙে যাবে)নাহ তেমন কিছুই নেই,এমনি ওর বিয়ে হয়ে গেলে ওর মা কি করবে, কে দেখবে তাকে তাই জন্য আর কি
তানভীর : ও আচ্ছা তাই,,ঠিক আছে অনেক কথা হলো এবার তা হলে উঠা যাক
অন্নি: হুম চলুন
আনুশা আজ অনেক দিন পর বাড়িতে সবার সাথে গল্প করছে
সুমি: আনু আজ না ছোট বেলার কথা খুব মনে পড়ছে এখন শুধু বড় আপু থাকলে ভালো হতো
আনুশা: তা ঠিক বলেছিস,বড় আপু তো এখন আসতে পারবে না, অনেক কাজ নাকি ওর,
সুমি: হুম, কি করা আমরা দুই বোন মিলে আড্ডা দিই,অন্নি থাকলে ও হতো অন্নি কোথায় রে
আনুশা: আন্টি ফোন করেছিলো তাই দেখা করতে গেছে
সুমি: ওহ
আনুশা: আপু তুই কি আর ভাইয়ার কাছে ফিরে যাবি না
সুমি; কি করে যাবো মানুষ টা কে আমি এতো বছরে ও একটা সন্তান দিতে পারিনি,,
আনুশা: আজ কাল এই রকম তো হয়েই থাকে,, তোরা বাচ্চা দত্তক নিবি তা হলেই তো হয়
সুমি: তা হলে তো ভালোই হতো কিন্তু আমার শাশুড়ি এতে রাজি নয়,আর তোর দুলা ভাই মায়ের কথার উপরে কথা বলে না
আনুশা: ঠিক আছে আমি দুলা ভাইয়ের সাথে কথা বলবো,, এমন সময় আনুশার ফোন বেজে উঠলো
আপু অন্নি ফোন করেছে কথা বলে আসি
অন্নি বল কি খবর আন্টি কেমন আছে
অন্নি: সব ঠিক আছে জানিস আব্বু আমার বিয়ে এক রকম ফাইনাল করে ফেলেছে
আনুশা: হোয়াট তোকে না জানিয়ে বিয়ে ফাইনাল করে কি করে
অন্নি: এখন ঠিক হয়নি, বাসার সবার ছেলেকে পছন্দ ইতালি থেকে এসেছে,ইতালি তে নাকি ছেলের বিজনেস আছে,,কালকে দেখতে আসবে ছেলে পক্ষ আমাকে,তুই আসবি তো
আনুশা: তুই তা হলে কাল অফিসে আসতে পারবি না
অন্নি: তুই ও তো অফিসে যাবি না,তুই অফিসে গেলে এখানে আসবে কে
আনুশা: আমি পরে যাবো
অন্নি: পাত্র পক্ষ চলে গেলে তুই আসার কি দরকার,,আর তুই পাত্র পছন্দ না করলে আমি বিয়ে করবো না
আনুশা: কি বলছিস তুই, বিয়ে করবি তুই ছেলের সাথে থাকবি তুই আর পছন্দ করবো আমি,ইম্পসিবল
অন্নি: আমি ওতো কথা বুঝি না তুই আসবি,,বায়
আনুশা: যাহ কিছু বলার সুযোগ ও দিলো না,,এখন না যেয়ে কোন উপায় নেই,ও সব সময় আমার পাশে থেকেছে,আর আমি ওর জীবনের ইম্পরট্যান্ট সময়ে থাকবো না তা ও তো হয় না একদিন অফিসে না গেলে কিছু হবে না,,,মহনাকে সব বুঝিয়ে দিবো, আর তানভীর তো আছেই,,ও দেখে নিবে সব আমি জানি
রায়হানের বুকের একপাশে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো করে উঠলো খনিকের মধ্যে।শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ওর এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো
আনিকাআআআআআআ???
কিছুখনের জন্য পুরো পৃথিবীটা থেমে গিয়েছিলো রায়হানের কাছে।তার জন্য আনিকার আজ এই পরিস্থিতি।কেনো তখন সে আটকালোনা তাকে?
বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে।পা দুটো অবাস হয়ে গেছে।হেটে যাওয়ার
শক্তিও নেই তার কাছে।তবুও মনের শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে আনিকার কাছে হাটুগেরে বসে পরে।পাজোর কোলে নিয়ে অতিদ্রুত রুমে দিকে পা বারিয়ে চলে।
রুমে এনেই আগে ভেজা জামা-কাপড় পরিধান করিয়ে দিয়ে ডাঃ ওয়াজেদ কে কল করে আসতে বলে।
আশরাফ সাহেবকেও ডাক দিতে ভয় পাচ্ছে।যদি ত্যাজ্যপুত্র করে বসে।রুমে পায়চারি করতে থাকে সিগারেটের পর সিগারেট ধরিয়ে।আনিকার কিছু হলে তার বাবা যে ত্যাজ্যপুত্র করবে।না না এটা কখনোই হবে না।না আনিকা চলে যাবে। না তার বাবা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করবে।এসব কথা ভাবতে ভাবতে ডাঃ ওয়াজেদ সাহেব রুমে প্রবেশ করে।পারিবারিক ডাঃ বলে সব জায়গায় তার পরিচিত।তাই আর এগিয়ে আনতে হয় নি রায়হানের রুম পর্যন্ত।
-যাক ডাঃ আংকেল আপনি এসে গিয়েছেন। please আনিকাকে সুস্থ্য করে তুলুন।?
-আরে রায়হান চুপ করবি তো একটু।আগে দেখতে দে।
ওর এমন অবস্থা কি করে হলো বলতো একটু?
-ইয়ে মানে আংকেল..
-বুঝতে পেরেছি।থাক আর ইয়ে মানে বলতে হবে না।
বুঝি না,তোদের মধ্যে ঝগড়া হবে কি নিয়ে?ভালোবেসে বিয়ে করেছিস সংসার হবে সুখের। তবুও কেন যে ঝগড়া করিস এই বাপ-মা হারা মেয়েটার সাথে?
রায়হান কোনো কথা বলছে না?চুপচাপ কথা গুলো মিষ্টির সিরার মতো গিলে গিলে খাচ্ছে।
ডাঃ ওয়াজেদ আনিকাকে ভালোভাবে দেখে মেডিসিন
লেখে দিয়েছে যেনো নিয়মিত দেয়।আর ইনজেকশন দিয়েছে যেনো মস্তিষ্কে কোনো ক্ষতি না হয়।যে পরিমাণ ভিজেছে আর মানসিক চাপের মধ্যে গেছে সেই কারণে।
ডাঃ বিদায় নিলো যাওয়ার জন্য।তখনই রায়হান বলে উঠলো।
-আংকেল আব্বুকে এসব কিছু জানিয়েন না please.
ডাঃ ওয়াজেদও ওর মুখখানা দেখে বুঝতে পেরে শুধু মাথা নারিয়ে হ্যাঁ সূচক জানিয়ে প্রস্থান করলো।
রায়হান বেলকনিতে গিয়ে গিরিলে এক হাত দিয়ে দূর পানে চেয়ে রয় অনেকখন।তারপর কি ভেবে রুমে ফিরে এসে আনিকার মাথার পাশে বসে পরে।আলতো করে মাথা বুলাতে থাকে।কখন যে ঘুমের রাজ্যে পারি দিয়েছে ঐভাবেই বসে থেকে।
সকালবেলা,
আম্মু আম্মু উঠো না উঠোওও..
ঘুম ঘুম চোখে।তাকাতেও পারছে না তাকে কে ডাকছে।
মাথাটা যে তার অনেকটা ভারি হয়ে আছে।প্রচন্ড ব্যথাও আছে।তবুও আনিকা বুঝতে পেরেছে এটা তার এক মাত্র মানিক রতন আরিয়ান।
মাথায় হাত দিয়ে উঠতে উঠতে দেখে রায়হান তার মাথায় কোণায় বসে ঘুমাচ্ছে।গতকালকের কথা মনে করে দূরে সরে বসে তরিঘরি করে। টান দিয়ে বুকে জরিয়ে নেয় আরিয়ানকে।কাঁদতেও পারছে না এইটুকু ছেলের সামনে।নয় তো হাজারটা প্রশ্ন করে বসে বড়দের মতো করে?জড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে..
-আম্মু তুমি কোথায় ছিলে?জানো আমি ঘুমাতে পারি নি।যদি আমায় রেখে পালিয়ে যেতে ঐ দূর আকাশে নানু-নিনুর মতো করে। তখন আমায় কে ভালোবাসতো বুকে নিয়ে?
আরিয়ানের কথা শুনে আটকিয়ে রাখতে পারলো না
লুকানো কান্নাটাকে।গরিয়ে পরলো দুচোখ বেয়ে। খনিকের মধ্যে হু হু করে শব্দে বেগ হয়ে উঠলো রুমের চার দেওয়ালের মাঝে।
রায়হানের ঘুম ভেঙে গেলো কান্নার ধ্বনি শুনে।অযথা চেষ্টা করলো আনিকাকে মাথায় হাত রেখে বুঝাতে।
তার আগেই বললে উঠলো।
-এখানে আরিয়ান আছে। এমন কিছু বলার বাধ্য করো না, যাতে মুখতে হয় আমাকে।
রায়হান চুপ করে উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমে।ফ্রেস হয়ে একেবারে রেডি হয়ে বেরিয়েছে অফিসের উদ্দেশ্য।
রুম থেকে বেরুনোর সময় পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখলো আনিকাকে।তারপর চলে গেলো অফিসে।
আনিকা দেখেও না দেখার ভান করে। আরিয়ানকে বুকে নিয়ে বসে রয় একই স্থানে মাথা নিচু করে।
দরজায় নক..
-আসবো রে মা।
আনিকাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বলতে
থাকে মিসেস সালেহা বেগম।
-জানি না গতকাল কি হয়েছে তোদের মাঝে?তবুও একটা কথা বলবো মা তোকে রাখবি।যদি তুই আমাকে ভরসা দিস তাহলে নির্ভয়ে বলতে পারি তোকে।
-মা তোমার এমন কোনো কথা নাই যে রাখি নি আজ পর্যন্ত বলো তো একবার আমাকে।
-রাখছি..আজও আগে কথা দে আমাকে?
আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার মিসেস সালেহা বেগমের দিকে তাকালো। পরে কি মনে করে হাতের পর হাত দিয়ে বলে ফেললো?
-হুমম কথা দিলাম প্রতিবারের মতো তোমাকে।
।
।
।
বিকাল পার হয়ে রাত অবদ্ধি গনিয়ে এলো
এখনও রায়হানের বাসায় আসার নাম গন্ধ না হলো।
সারাদিন বেডে ফুল রেস্ট নিয়ে এখন আনিকা আগের থেকে অনেকটা ভালো আছে।
রায়হানকে অনেকটা মিস করছে।ওকে যে এখন অনেক ভালোবাসে।বিয়ের আগে জোরপূর্বক হলেও
আরিয়ান পেটে আসার কিছুদিন আগ থেকে ভালোবেসে ফেলেছে রায়হানকে।
একটা মানুষ প্রতি কিভাবে পারে ভালোবাসা তৈরি করতে সেটা রায়হানের থেকে কে বা ভালো বুঝে।
আজ থেকে ১০বছর আগে যখন প্রথম গ্রাম থেকে শহরে পা রাখে আনিকা।তখন তার জীবনে প্রেম ভালোবাসা বলতে কিছুই ছিলো না।
কিভাবে বুঝবে সে?জন্মের আগে বাবা মারা যায়। জন্মের পর মাটাও চলে যায়। পরে থাকে একমাত্র বড় বোন।তাদের দুবোনকে বড় করেছে চাচা চাচিরা।তারা ভালোই ছিলো।তাই তো দুবোনকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করে তুলেছে।বড় বোনকে বিয়ে দিয়েছে ভালো পরিবারেই।শহরে থাকে সে এখন।অনেক বার বলেছে ওর কাছে থাকতে কিন্তু পড়াশোনার জন্য যাওয়া হয়ে উঠেনি আনিকার?
আনিকা হঠাৎ একদিন ভাবে।আর পড়ে কি হবে?
তার থেকে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।তাই সে অনার্সে এডমিশন না নিয়েই পা বাড়ালো শহরের পানে চাকরির উদ্দেশ্য।
বড় বোন আনিয়ার বাসায় উঠলো।বেশ দিনগুলি কাটছিলো।চাকরির জন্য ট্রাইও করছে এখানে সেখানে।হয়েও গেলো একজায়গায় তার।আনিয়া অনেক খুশি বোনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে বলে।
আগামীকাল প্রথম অফিসে যেতে হবে। তাই বুঝাচ্ছে
-আনিকা তুই কিন্তু সেখানে গিয়ে বক বক করবি না।
কম কথা বলবি।আর পারলে তোর দুলাভাইয়ের প্রস্তাবটা ভেবে দেখতে পারিস।
চলবে….
(বিঃদ্রঃ please ভাই ও বোনেরা আপনাদের কাছে অনুগ্রহ করে বলছি,কেউ কপি করে,নিজের নাম দিয়ে পোস্ট করবেন না অন্য জায়গাতে।অনেক কষ্ট করে লেখা হয় কিন্তু পরে যদি দেখি নিজের ক্রেডিটটাই অন্যের নামে তখন মাথা এমনিতেই আগুন জ্বলে।
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ সবাইকে)
-দূরে থাকো আমার থেকে।(একথা বলেই চলে গেলো কাঁদতে কাঁদতে।)
_আনিকাআআআআ
আনিকা আর কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলো দৌড়িয়ে।তার লজ্জায় ঘৃণায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে।তাদের এতো বছরের বিয়ের বয়সে এমন কর্ম কখনো দেখে নি রায়হানের কাছ থেকে।
ওর মনো মুগ্ধ স্বতব্যবহারে কারণেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলো আনিকা।
তখন হয় তো ওর ঐরকম ব্যবহার ছিলো বানোয়াট।
না হলে কি আজ দেখতে হতো এমন কুকাজ।
ছাদের এক কোণায় বসে দুপা মেলে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বাধ ভাঙা ঝর্ণার মতো দুচোখ বেয়ে পানি ঝরে চলছে অবিরত ভাবে।হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার মনে।আসলেই কি সে এতোখন যাবত বাস্তবে মুখোমুখি হয়ে দেখেছে নাকি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার মতো হয়েছে?
যদি এই দৃশ্য দেখানোরই ছিলো আল্লাহর।তাহলে কেনো দুচোখ অন্ধ করে দিলোনা আগে তার?ভাবতে পারছে না আর সে।কি করবে,কোথায় যাবে,মরে গেলে দুধের শিশুটিকে কে দেখবে?
শুনেছে মা মরে গেলে বাপ হয় যেনো তাওই।আর সৎ মা করে বেড়ায় অঢাল অত্যাচার,শেষ পরিণতি হয় তার রাস্তায়।না না রায়হান এমন কাজ করতে পারে।তার কলিজার টুকরা আরিয়ানকে অনার্থ করতে পারে না।
এমন আরও অনেক কথা চিন্তা করতে করতে কখন যে আনিকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে ছাদের কোণাতে বসে।
অন্যদিকে রায়হান রেডি হয়ে চলে গেলো বাহিরে।
যখন বাহিরে যায় তখন সদর দরজা দিয়ে রায়হানের বাবা মা আর এক মাত্র ছেলে আরিয়ান প্রবেশ করছে।
আরিয়ান: আব্বু কোথায় যাচ্ছো?
রায়হান: এই তো বাবা একটু বাহিরে।
-ওকে আমার জন্য মজা নিয়ে এসো কিন্তু?
-আচ্ছা বাবা।
রায়হানের মা: কি রে আজ তোর অফিস ছিলো না?
রায়হান: ছিলো।
রায়হানের মা: তাহলে এতো তাড়াতাড়ি যে আজকে?
রায়হান : একটু কাজ ছিলো তাই এসেছিলাম।
বলেই হু হু করে হাটতে লাগলো সামনে।পিছন থেকে রায়হানের আব্বু জিঙ্গাসা করলো বউমা কোথায় রে?
কিন্তু কে শুনে কার কথা?ও ওর মতো দূরুত্ব হেটে স্থান ত্যাগ করলো ঐখান থেকে।না হলে যে তার অনেক প্রশ্নের সম্মুখী হতে হতো এতোখনে।
সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হতে চললো।আনিকার খোঁজ পাচ্ছে না বাসার কেউই?অন্যদিকে রায়হানও বাসায় ফিরছে না। এতবার কল করলো আশরাফ সাহেব রায়হানকে তবুও রিসিভ করছেই না।রেগে গিয়ে কয়েকটা কথা শুনে ফেললো মিসেস সালেহা বেগমকে।
-এই তোমার কারণে আজ এতো মাথায় উঠেছে।
ঘরে বউমার খবর নেই আর সে আছে আড্ডা বাজি নিয়ে রাতের বেলাও।আরে বিয়ে করেছিস,বাচ্চা হয়েছে, এখন আড্ডা দিবি বউ বাচ্চা নিয়ে।আমিও তো ইয়াং ছিলাম এক সময় কিন্তু দ্বায়িত্ব কাধে আসার পর থেকে প্রায়টাই বাদ দিয়ে দিয়েছি বদঅভ্যাস গুলো।
আজ আসুক ও বাড়ি,ওর খবর আছে বলে রাখছি রায়হানের মা তোমাকে। যদি বউমার কিছু হয়ে যায় না তাহলে……
এমন রাগান্বিত দেখে মিসেস সালেহা বেগম কিছু বলার সাহস পায় তা বলতে।তাই আরিয়ানকে কোলে নিয়ে চলে যায় নিজ রুমে চুপ করে।
আরিয়ানটাও আজ অনেক কেঁদেছে মা মা বলে।
সারা সন্ধ্যা পার করে দিছে কেঁদে কেঁদে।হয় তো কেঁদে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে তাই ঘুমিয়ে পরেছে।শিশুর মন তো,মাকে না দেখলে কু মন ডাকবেই।
বাহিরে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।হঠাৎ রায়হানের আগমন দরজা ভেদ করে ড্রয়িং রুমে।রাত প্রায় ১২টা
আশরাফ সাহেব সোফায় বসে বই পড়ছে।পায়ের শব্দ শুনে।
-কো..কো.. কোথায়?(বলে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ৪০+ মিস কল।)
-কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না যে?
-ইয়ে মা..মানে ফোনটা সাইলেন্স হয়ে গেয়েছিলো, খেয়াল করি নি।
-সেটা খেয়াল করবি কি?তোর তো এখন আর সংসার ভালো লাগে না, ঠিক না?
-না মানে হ্যাঁ..
-চুপহারামজাদা।তোর বউকে পাওয়া যাচ্ছে না আর তুই হ্যাঁ না মানে খুঁজছিস?অন্যদিকে দুধের শিশুটা মা মা বলে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে গেছে সেটা খোঁজ নিয়ে দেখেছিস?একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ,আমার রক্তে মাংসে করা যা কিছু করেছি সব
কিছু বউমা আর আরিয়ানের নামে দিয়ে যাবো।
যদি শুনি এমন-তেমন কখনো করেছিস।
বলে চলে যেতে লাগে।পিছু ফিরে বলে।
-বউমাকে ভোর হওয়ার আগে দেখতে চাই বাড়িতে।
না হলে সকাল হলে ত্যাজ্যপুত্র করবো মনে যেনো থাকে।
থ হয়ে দাড়িয়ে থাকে রায়হান ঐখানেই।কোথায় গেলো আনিকা ওকে ছেড়ে।এতো ঝড়বৃষ্টি বাহিরে।যদি কিছু হয়ে যায় আনিকার,কিছুই ভাবতে পারছে না আর।ও যে বাঁচবে না আনিকাকে ছাড়া এক মূহুর্তে।হঠাৎ করে মনে পরে গেলো। আনিকা তো রাগ করলে ছাদে চলে যায় মাঝে মাঝে।আজ যায় নি তো,গিয়ে দেখে আসবে কি যেয়ে।দেড়ি না করে এক দৌড় দেয় ছাদে।
রাত বেরেছে অনেক,আধারও আছে বোটে। তার সাথে ঝড়বৃষ্টিত তো আছেই।হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকিয়ে আলোর আভাস পরলো ছাদের এক কোণে।গুটিশুটি হয়ে পরে আছে আনিকা যে।
রায়হানের বুকের একপাশে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো করে উঠলো খনিকের মধ্যে।শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ওর এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো
আনিকাআআআআআআ
চলবে…..
(বিঃদ্রঃ বার বার বলছি আপনাদের,যদি ভালো না লাগে তাহলে ইগনোর করুন,তবুও কথা শুনাতে আসবেন না please.দরকার নেই আপনাদের লাইক কমেন্টের যাদের আনিকার জীবন কাহিনী পড়তে না ইচ্ছুক।ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন অনুগ্রহ করে।ধন্যবাদ অগ্রিম আপনাদের সবাইকে)
দরজা খুলেই এমন একটা দৃশ্য দেখবে ভাবতেও পারে নি। তারই বেড রুমে,তারই বিছানায় অন্য এক মেয়ের সঙ্গে উলঙ্গ হয়ে একে উপরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে অনতরঙ্গ ভাবে ফিজিক্যাল রিলেশন করছে।তাদের শরীরে কোনো জামা-কাপড় নেই,এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
তার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না,এটা কি সে
স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তব?খনিকের মধ্যে তার সর্ব শরীর বরফের ন্যায় হয়ে গেছে।কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।পুরো পৃথিবী গোল গোল দেখছে রুমের মধ্যে।চোখ বেয়ে পানি পরছে। বুকের ভিতরে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ভেঙে-চুরে,ডলে-মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।প্রায় ৫মিনিট অতিক্রম হওয়ার পর জোরে একটা চিৎকার করে উঠলো রায়হাননননননন।
চিৎকারের শব্দ শুনে একে-অপরকে ছেরে দিয়ে
ফ্লোর থেকে জামা-কাপড় তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো তারা।মেয়েটা ওড়না হাতে নিয়ে শরীরের গোপনাঙ্গ
ঢাকার চেষ্টা করেই চলছে তারপর খনিকের মধ্যে
রুম থেকে দৌড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো। আর অন্যদিকে রায়হান টাওয়ালটা প্যাচিয়ে নিলো তারপর একপা দু পা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
-আমার কথা শোনো একটু।
কাছে গিয়ে ধরার চেষ্টা।
-please আমাকে ঐ হাতে ছুবে না।শুধু কয়েক দিনের জন্য মা(শ্বাশুড়ী) ও বাবাকে(শ্বশুর) নিয়ে রুমানার
(ননদ) শ্বশুরবাড়ি গেয়েছিলাম ওকে দেখতে আর তার মধ্যে এমন একটা কান্ড করে ফেললে।ছিঃ আমার ঘৃণা করছে অনেক এসব দেখে। ভাগ্যিস ভালো মা-বাবা আরিয়ানকে নিয়ে পাশের বাড়ির স্বর্ণা আন্টি ও তার হাজবেন্ডের সাথে কথা বলতে গেছে। না হলে আজ তাদের কি অবস্থা হতো একবারও কি ভেবে দেখেছো রায়হান।একবারও কি আরিয়ানের কথা মনে পড়লো না।ওর নিশ্বপাপ মনে যদি একবার আঘাত হানে তোমার এমন কুকর্মের দৃশ্য দেখে। তাহলে বুঝো তার সামনে কিভাবে মুখ নিয়ে দাড়াবে।
-তুমি যা ভাবছো সেটা নয়….(কথা শেষ করার আগেই)
-দূরে থাকো আমার থেকে।একথা বলেই চলে গেলো কাঁদতে কাঁদতে
-আনিকাআআআআআ
চলবে…..
(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন কিন্তু ভুল বুঝবেন না?বাস্তব জীবন কাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা যেনো অন্যদের এমন অবস্থা না হয় )
ঘুম আর হলো না,নির্ঘুম রাত্রির মধ্যে আর ও একটি রাত যোগ হলো,
মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিন এর সুমধুর কন্ঠে আযানের সুর ভেসে আসছে, আর শুয়ে থাকতে পারবো না যাই বারান্দায় গিয়ে একটু বসি,
আনুশা কি ভাবে অন্ধকার থেকে আলোতে পরিনত হয় সারা দুনিয়া সেটাই দেখছে, এতো সুন্দর সকাল আবছা আলো আবছা অন্ধকার,, কি যে মনোরঞ্জন করা দৃশ্য। উফ কি বলবো অনেক দিন হয়েছে সূর্য উঠা দেখিনা আজ দেখবো,কতো গুলো দিন বিদেশের বুকে কাটাতে হয়েছে,
এতো সুন্দর দেশ ছেড়ে থেকেছি,,
আনুশার প্রকৃতি দৃশ্য উপভোগ করতে করতে কখন যে আটটা বেজে গেছে সেই দিকে কোন খেয়াল ছিলো না,আজ অন্নি আমায় ডাকতে আসেনি কেনো তা হলে কি রাতের ব্যাপারটা নিয়ে অন্নি রেগে আছে,,যাই ফ্রেস হয়ে গিয়ে দেখি কি অবস্থা, অন্নির
অন্নি: উহ কি সখ উনার প্রতিদিন আমি গিয়ে ডেকে দিবো,রাগ দেখানোর সময় তো এগুলা মনে থাকে না(মনে মনে বল্লো)না এমনি অনেক রাতে শুয়েছিস তো তাই আর সকাল সকাল ডাকতে যাইনি
আনুশা: ওহ তাই বল,তাড়া তাড়ি রেডি হও আজ অফিসে অনেক কাজ আছে,
অন্নি: আমি রেডি,
আনুশা: তা হলে খেয়ে নে আমি গিয়ে গাড়িতে বসছি
সুমি: তুই তো কিছুই খেলিনা আনু
আনুশা: আর খাবো না আপু,গেলাম, মায়ের দিকে খেয়াল রাখিস
অন্নি: খাওয়া শেষ করি তাড়া তাড়ি নইলে ম্যাম রেগে যাবে
আনুশা: অন্নি আসতে লেইট হচ্ছে,ততক্ষনে আমি ল্যাপটপ টা নিয়ে অফিসের কাজ গুলো সেরে ফেলি,এ কি মেইল এসেছে কখন,ও রাতে,,,যাই হোক আগে চেক করি কি এসেছে, মেইল চেক করে তো আনুশা মাথায় বাজ পড়লো
অন্নি: কিরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছিস কেনো, কি হইছে
আনুশা: কন্সট্রাকসান সাইডে যে কাজ চলছিলো সেখানে কিছু লোক জামেলা করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে
অন্নি: এখন কি হবে
আনুশা: তুই অফিসে যা আমি এদিক টা সামলে নিবো,
অন্নি: আমি ও তোর সাথে যাবো তুই একা পারবি না
আনুশা: অহ অন্নি কেন বুঝিস না আজ অফিসে ম্যানেজার সিলেক্ট করার ইন্টার্ভিউ,, তোকে এখানে দরকার, তুই এদিক সামলা, আমি সাইডে দেখছি
অন্নি: ঠিক আছে কোন প্রব্লেম হলে আমাকে জানাস কেমন
অন্নি আলাদা গাড়ি নিয়ে অফিসে চলে গেলো
সারা দিন আনুশা আর অন্নির খুব ব্যাস্ত সময় কেটেছে, অন্নি অফিস শেষ এ বাসায় এসে দেখে আনুশা এখন ও ফিরেনি, অন্নির খুব চিন্তা হতে লাগলো, বার বার ফোন করছে কিন্তু আনুশা ফোন ধরছেনা দেখে অন্নির টেনশন আর ও বেড়ে গেলো
আনুশা: যাক সব কাজ ভালোয় ভালোয় হয়ে গেছে একটু সময় লেগেছে বাট কোন ব্যাপার না,
মা মনে হয় টেনশন করছে আমার জন্য,অন্নিকে ফোন করে বলি আমি আসছি,একিইইই অন্নির এতো গুলো কল এক সাথে নিশ্চয় বাসায় সবাই আমার জন্য টেনশন করছে আর দেরি করা যাবে না এক্ষনি যেতে হবে,
ড্রাইভার যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি ড্রাইভ করুন,
আর ও ১ ঘন্টা লেগে গেলো আনুশার বাসায় পৌছাতে,
অন্নি: ঐ তো গাড়ির শব্দ শুনা যাচ্ছে আনুশা এসেছে
সুমি: আমি গিয়ে দরজা খুলে দিচ্ছি
আনুশা: বাসায় ডুকে দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে আমি কোন ভিন গ্রহের প্রানি,কি হলো তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো
আনুশার আম্মু: তুই ফোন ধরছিলি না কেনো কতো টা চিন্তা হচ্ছিলো তোর জন্য
আনুশা: উহ মা আমি এখন আর ছোট আছি বলো,,এতো চিন্তার কি আছে কাজে গেছি কাজ শেষ হলেই ফিরে আসবো
সুমি: হুম বুঝেছি আপনি এখন অনেক বড় হয়েছেন সবার মুরুব্বী, এখন আসেন খেতে বসেন
আনুশা: হুম সারা দিন কিচ্ছু খাইনি খুব খিদা পেয়েছে,আমি ফ্রেস হয়ে আসছি
অন্নি: খিদা লাগবে না তোর তো কাজ করার সময় নিজের দিকে কোন খেয়াল থাকে না,
আনুশা: অন্নির কথায় কান দিলাম না ফ্রেস হয়ে খেতে বসলাম অন্নি ও খাচ্ছে আমার সাথে,,অন্নি কাকে সিলেক্ট করলি ম্যানেজার পদে
অন্নি: করেছি একজন কে, ফাইল নিয়ে এসেছি,জানতাম তুই দেখতে চাইবি তাই,,ফাইল টা তোর রুমেই রাখা আছে দেখে নিস
আনুশা: ওকে,,,,
খাওয়া শেষ করে রুমে গেলাম,রুমে যেতেই টেবিলে রাখা ফাইল এর দিকে নজর পড়লো, ফাইলটা খুলে দেখতে লাগলাম,একটা জায়গাতে এসে চোখ টা আটকে গেলো,,
তানভীর মাহমুদ নাহিয়ান,,এই নাম টা খুব পরিচিত লাগছে,কে হতে পারে কে, দূর মনে পড়ছেনা কেনো ক্লিয়ার করে, কোথায় যেন শুনেছি,উফফ আর ভাবতে পারছি না মাথা টা খুব ধরেছে কি যে করি, যেই হোক না কেনো আমার কি আমি আর ভাববোনা, আজকে ওষুধ খেয়ে ঘুমাবো, যথারিতী ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো আনুশা
সকালবেলা অন্নি ভাবছে আনুশা এখন ও ঘুম থেকে উঠছে না কেনো মিটিং এর কথা কি আনুর মনে নেই নাকি যাই আমি ঘুম থেকে জাগিয়ে দিই
অন্নি: এই আনুশা আনুশা উঠ,দেখ ৮:৪০ বেজে গেছে, আজ।মিটিং আছে তো
অন্নি: কি করে সিলেক্ট হয় মানে একটা লোক তার সব যোগ্যতা থাকা সত্তেও সে সিলেক্ট হবে না
আনুশা: না হবে না,
অন্নি: প্লিজ মিঃ তানভীর আপনি এখন আসুন আমি ম্যাম এর সাথে কথা বলছি
তানভীর কিছু না বলে ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে গেলো
অন্নি: আনু তোর কি হয়েছে বলবি,,তুই কি উনাকে ছিনিস
আনুশা: কি বলবো অন্নিকে এখন,তানভীর যে আমাকে ভালোবাসে আর আমি চাই না এই ভালোবাসাতে জড়াতে,,এতো গুলো বছর দূরে ছিলাম হে আল্লাহ এ তোমার কেমন লিলা,বার বার একটা মানুষ এর সাথে আমার কেনো দেখা করিয়ে দিচ্ছো,কেনো আমার সাথে এমন হয়
অন্নি: আনু বোন আমার চুপ করে আছিস কেনো বল,দেখ তুই তোর মনের কথা না বললে আমরা বুঝবো কি করে, তানভীর, এক মিনিট আনু,এই কি সে তানভীর নয় তো যে ছেলেটা তোকে কলেজে এ অনেক লাইক করতো,তুই একদিন বলেছিলি,আমাকে আমি ভুলে গেছি,বলনা আনু
আনুশা: হুম অন্নি এই সেই তানভীর, কিন্তু ও আমার অফিসে ই কেনো জয়েন করলো
অন্নি: ছেলেটার সব দিক খুটিয়ে দেখলাম,অনেক ব্রিলিয়েন্ট, আমাদের কম্পানির জন্য এমন লোক ই দরকার তাই নিয়েছি
আনুশা: কিন্তু এখন কি হবে আমি ওকে আমার চোখের সামনে দেখতে পারবো না
অন্নি: আমি তোর পিএ তোর যাবতীয় সব কিছু তো আমি দেখবো,ও হলো ম্যানেজার , ও তার মতো কাজ করবে এতে তোর ক্ষতি কি,বল
আনুশা: মনে মনে অন্নি তো ঠিকই বলেছে,আর তা ছাড়া ওকে এখন বের করে দিলে ও ভাববে আমি এর প্রতি দূর্বল হয়ে যাবো,এই ভয়ে বের করে দিয়েছি, না আমি এমন টা করবো না
অন্নি: ঠিক আছে তুই যখন চুপ করে আছিস,তখন ওকে আমি চলে যেতে বলি
আনুশা: না,, ও কাজ করবে ওর মতো আমি আমার মতো,বের করে দিতে হবে না
মামি: আনুশাকে বুকে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দিলো,, সেদিন যে তিনি অনেক বড় ভুল করেছিলো আনুশা আর তার মাকে বের করে দিয়ে তার জন্য আজ তিনি অনুতপ্ত,,
আনুশা: কি বলবো মামি কে বুঝতে পারছি না, অনেক কস্টে মামিকে থামালাম
মামি: তোর মাকে নিয়ে আসিসনি কেনো,এখন ও নিশ্চুয় আমার উপর রেগে আছে
আনুশা: মা আপনাদের কথা সব সময় বলে,রেগে থাকলি কি আর বলতো,মামি মামার সাথে কথা বলবো
মামি: হুম আয় আমার সাথে,
আনুশা তো মামাকে দেখেই অভাক একদম বিছানার সাথে মিশে গেছে,
মামা : কাপা কাপা গলায়, আনু তুই এসেছিস
আনুশা: মামার কাছে গিয়ে বসলো,মামা তুমি কি করে বুঝলে আমি এসেছি,আমি তো কোন কথা বলিনি,
মামা: বুঝবো না ছোট বেলা থেকে তোকে এই বুকে আগলে রেখে বড় করেছি, তুই যখন তোর মার সাথে এই বাড়িতে আসিস তখন তোর বোনেরা বড় ছিলো সব বুঝতো,আর তুই খুব ছোট ছিলি,কোন কিছুই বুঝতিস না,,তার পর তোকে ছোট থেকে বড় করলাম,তবুও তোর কতো অভিমান মামার উপর তাই না এই জন্য ই তো এতো গুলো বছর চোখের দেখা ও দেখতে আসিস নি
আনুশা: মামার কথা গুলো শুনছি বলুক উনি,অনেক বছরের কষ্ট জমা হয়ে আছে বুকের ভিতর,কিন্তু মামাকে এই রকম বিছানায় পড়ে থাকতে দেখতে পারছি না আমি,কালই আমার সাথে ঢাকায় নিয়ে যাবো ডাক্তার দেখালে ভালো হয়ে ঊঠতে ও পারে
মামা: কিরে চুপ করে আছিস কেনো কিছু বল
আনুশা: কেনো এখানে এসেছি সব কথা মামাকে বললাম
মামা: শফিক আর ভালো হইলো না,,না বুঝে না শুনে ভাগ্নিদের জীবনটা আমি শেষ করে দিলাম
আনুশা: এমন করে বলবেননা মামা,,এই টা আমাদের ভাগ্য,
মামা: আমার তো কি অবস্থা দেখতেই পারছিস, আজ অনেক বছর বিছানার সাথে আমার সম্পর্ক এই বিছানা ছাড়া আর কোথায় ও যাওয়ার ক্ষমতা আমার নেই
আনুশা: মামি আপনি ও এখানে আছেন একটা কথা বলি কাল মামা আপনি প্রিয়া আমার সাথে ঢাকায় চলুন,সেখানে মামার চিকিৎসা হবে,ভালো ডক্টর দেখালে মামা ভালো হয়ে যাবে
মামি: তুই তোর মামাকে নিয়ে যা আমি যাবো না
আনুশা: তা বললে আমি শুনছি না আমি সবাইকে নিয়ে যেতে চাই
তার পর আনুশা অন্নি কে নিয়ে ঘুমাতে গেলো,প্রিয়া আর অন্নির বক বক শুনতে শুনতে আনুশার ঘুমটাও ভালো হয়নি
সকাল বেলা আনুশা অন্নি কে নিয়ে বড় আপুর বাসায় গেলে,,
বৈঠক বসলো সেখানে মুরুব্বী দের সিন্ধান্ত হলো শফিক বউ চালানোর যোগ্য নয়,বউ এর বোন যখন বউকে নিয়ে যেতে চায় তা হলে নিয়ে যাক,,,
শফিক সবার কথা শুনে নিজের ভুল বুঝতে পারলো,সবার কাছে ক্ষমা ছেয়ে নিলো সে আর কখন ও খারাফ পথে যাবে না,,তবুও তার ছেলে মেয়েরা যেন মা হারা না হয়,
আনুশার শফিক এর কথা পছন্দ হয়,,আনুশা মুরুব্বী দের বল্লো উনি যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তখন উনাকে আরেকটা সান্স দেয়া উচিৎ,,
গ্রামের সব মুরুব্বী আনুশার কথায় শুনে খুশি হলো
,সব ঠিক করে আনুশা মুরুব্বীদের সম্মুখে বোনের জামাইর হাতে ১০ লক্ষ টাকা তুলে দিলো যেন। business শুরু করতে পারে তার বোন কে যেন ভালো রাখতে পারে,শফিক এখন টাকা নিতে নারাজ তবুও আনুশা বুঝিয়ে বলে দিলো
সব ঠিক ঠাক ভাবে করে আনুশা মামা মামি প্রিয়াকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হলো
ঢাকায় পৌছানোর পর
আনুশার আম্মু ভাই, ভাবি, ভাইজী সবাইকে দেখে তার আনন্দ যেন ধরছেই না,,
অন্নি: আনুশা এই দিক টা তো হলো, অফিস থেকে ফোন এসেছে জরুরী ভাবে ম্যানেজার ছেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলো মহনা,এখন কি করবি
আনুশা: ঠিক আছে আমি অফিসে যাচ্ছি তুই থাক এখানে সবার সাথে
অন্নি: আমি থাকবো মানে আমি এখানে থেকে কি করবো
আনুশা: মামাকে কোন ডক্টর দেখালে ভালো হবে, কি করতে হবে তুই এগুলা দেখ
অন্নি: ওকে, তবে তাই হোক
আনুশা অফিসে চলে আসলো, অফিসটা এখন ও নিজের পছন্দে সাজায়নি,অন্নি যেমন সাজিয়েছে তেমন ই আছে,,যদি সাজটা আমার পছন্দ হয়নি,তবুও অন্নি কষ্ট পেতে পারে এই জন্য চেঞ্জ করতে ইচ্ছে করছে না
নিজের কেবিনে এসে বসলাম,,
মহনা: ম্যামম এর সামনে যেতে আমার ভয় লাগে,এই দিকে অন্নি ম্যাম ও আসেনি,কি আর করা যাই নক করি আগে,
আনুশা: কামিন,
মহনা: ম্যাম ইন্টার্ভিউ ডেইট টা কখন দিবো?
আনুশা: কালকে দিয়ে দিন,,কেননা পরশু একটা মিটিং আছে সো সময় হবে না আর
মহনা: ওকে ম্যাম
তার পর অফিসের কাজে মন দিলাম,সব কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে লেইট হয়ে গেলো, আজকে অন্নির ভাষণ শুনতে শুনতে আমার প্রান যাবে,যদি ওকে সাথে নিয়ে আসতাম তা হলে এতো কাজ একা আমাকে করতে হতো না, যাই হোক বাসায় যাই
অন্নি: নাহ আজ আমি আর আনু কে কিচ্ছু বলবো না,
আচ্ছা আনুকে জানতে হবে ও কি সত্যি আর কোন দিন বিয়ে করবে না,
কি জানি বাপু,ওর জন্য তো আমার বিয়ে টা ও হচ্ছে না,আমি আমার বিয়ের কথা বললে যে ভাবে রেগে যায় না জানি নিজের বিয়ের কথা শুনলে কি করবে
আনুশা: দরজায় কলিং বেল বাজালাম,সুমি আপু দরজা খুলেছে,,যাক ভালোই হলো
সুমি; আয় তোকে খেতে দিচ্ছি সবাই ঘুমিয়ে গেছে
আনুশা: আপু খিদা নেই খাবো নারে তুই শুয়ে পড়,
সুমি আপু চলে গেলো ঘুমাতে, আর আমি আসলাম আমার রুমে,
ঘুম আসবে না জানি,সেই পাঁচ বছর আগে থেকেই চোখের ইচ্ছে হলে ঘুমের। পরীকে বসতে দেয়,ইচ্ছে না হলে দেয় না,
আমার সব কিছু পালটে গেছে ডায়েরী লিখার অভ্যাস টা পাল্টাতে পারিনি,রোজই কোন না কোন বিষয় নিয়ে ডায়েরী লিখা হয়,,আজ ও ডায়েরী টা নিয়ে লিখতে বসলাম
অন্নি: যা ভেবেছি তাই হলো তুই ঘুমাবি না জেগে জেগে ডায়েরী লিখবি তাই না
আনুশা: মানে এই টা কি ধরনের প্রশ্ন, আমার ইচ্ছে আমি লিখি
অন্নি: সেটাই তো কার জন্য লিখিস,তুই তো ঠিক করে রেখেছিস জীবনে আর সংসার করবি না বিয়ে করবি না তা হলে এতো কিছু কার জন্য
আনুশা:?????অন্নিইইইই এতো রাতে তোর সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না
অন্নি: এই রে আবার রেগে গেলো পালাই,আমি এখান থেকে
আনুশা: (মনে মনে)অন্নি তুই আমার সব ছেয়ে কাছের বন্ধু আমার কষ্ট গুলো খুব কাছে থেকে দেখেছিস,তবু ও কেনো আমাকে এই সব কথা রাগিয়ে দিস,আমার অতিতকে মনে করিয়ে তুই কি সুখ পাস বলতো
অন্নি: বাবাহ নিজের রুমে চলে এসেছি এই ভালো নইলে আনু আমাকে খেয়ে নিতো আচ্ছা ওর সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলবে কে আন্টি তো আমাকে বলতে বলেই খালাস,উনার মেয়েকে যে এই ব্যাপারে কথা ছোঁয়ানোই যায় না,
কি করি এখন,এই দিকে বাবা আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখছে আমি বিয়ে করে পেল্লে আনুশার কি হবে,ওতো বড্ড একা,
দূর এতো কিছু ভেবে কাজ নাই আমি ঘুমাই
আনুশা: ঘুম যেন আসতেই চায় না,অন্নি এসে ডায়েরী লিখার মুড টা নষ্ট করে দিলো,বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি ঘুম যেন আসতেই চায়না,,উফফ ভালো লাগছে না আর
বিকেল এর দিকে অন্নি আর আনুশা রওনা হলো গ্রামের উদ্দেশ্য
আনুশা: ভাবছি কি করবো সেখানে গিয়ে ঐ লোকটাকে তো আমার দুলা ভাই বলতে ও ঘেন্না লাগে,সারা দিন জুয়া খেলে টাকা নষ্ট করবে,,তার যে ৩ টা বাচ্ছা আছে তাদের ভবিষ্যৎ আছে সে দিকে তার কোন খেয়াল নেই,,,পারে শুধু ক্বাপুরুষ এর মতো বউ এর গায়ে হাত তুলতে,
কি করবো আমি এখন আপুকে নিয়ে আসলে বাচ্ছারা মা হারা হয়ে যাবে আমি চাইনা তারা কস্টে থাকুক,আবার যদি বাচ্ছাদের সহ নিয়ে আসি,,সেটা ও ভালো দেখাবে না,কারন লোকে তাদের পিতার পরিচয় চাইবে,তোখন কি বলবে ওরা ওহ ভাবতে পারছি না কিছু,কে জানে হয় তো এখন ও জুয়ার আসরে বসে আছে
অন্নি: আনুশা কি এতো ভাবছিস বলতো, আরে ওখানে যাবি দুলা ভাইকে টাকাটা দিয়ে চলে আসবি,এতে এতো গভীর ভাবনার কি আছে
আনুশা: নারে অন্নি চুপ চাপ টাকা দিয়ে আসলে হবে না,এবার এর একটা বিহিত করতে হবে, চুপ থেকে থেকে টাকা দিয়ে আসতে আসতে লোকটার লোভ বেড়ে গেছে,,হ্যা আমাদের সমাজে যৌতুক প্রথা আইনত অপরাধ,,কিন্তু আমি ওর নামে থানা পুলিশ করতে চাইছি না,, এতে বাচ্ছাদের তার প্রতি একটা খারাপ ধারণা জন্ম নিবে,, আমি চাইনা আমার মতো করে সব সন্তান তার বাবাকে ঘৃনা করুক
অন্নি: তুই তা হলে কি করবি ভাবছিস
আনুশা: দেখি কি করতে পারি,এই বার ধমকি দিবো,যদি তাতে কাজ না হয় তা হলে পরে ভেবে দেখবো
অন্নি: আচ্ছা গ্রামে তো যাচ্ছিস তোর মামার সাথে দেখা করবি
আনুশা: ওদের কথা মনে ও রাখতে চাইনা
অন্নি: দেখ আনু আমি তোর কষ্ট টা বুঝতে পারছি, সেই সাথে তুই কিন্তু এইটা ভুলে যাচ্ছিস, তোদের যখন কোন আশ্রয় ছিলো না তখন তোর মামা তোদেত আশ্রয় দিয়েছে, শুধু তাই নয় উনি যদি তোকে প্রথম থেকে লিখা পড়া না করাতো, তা হলে আজ যেই জায়গাতে আছিস,এখানে কিছুতেই আসতে পারতিস না,,হ্যা তোর মামি তোদের প্রতি একটু অন্যায় করেছে, তবুও তোর মামার দিক দিয়ে চিন্তা করলে উনাদের সাথে তোর দেখা করা উচিত,
আনুশা: হুম অন্নি তুই ঠিক বলেছিস,আসলে আমি রাগের মাথায় এতো কিছু ভেবে দেখিনি, ঠিক আছে মামার সাথে দেখা করবো
প্রায় রাত ৮ বেজে গেছে
ড্রাইভার: ম্যাম আমরা আমরা এসে পড়েছি
আনুশা: বাইরে তাকিয়ে দেখলো আপুদের বাড়ির সামনে দোকান,এর সামনে গাড়ি দাড় করিয়েছে ড্রাইভার,, কিন্তু আর ও ভিতরের দিকে যেতে হবে তো
ড্রাইভার : ম্যাম রাস্তা ভালো না গাড়ি বিতরে যাবে না, এখানে ই নামতে হবে আপনাদের
অন্নি: আনুশা নেমে পড় আমরা এখান থেকে হেটেই যাবো
আনুশার গায়ে টিশার্ট আর গলায় স্কার্ফ, তাই আনুশা দোকানের সামনে নামতে চাইছিলো না,কিন্তু না নেমে ও কোন উপায় নেই তাই নামতে হলো,শহরের মর্ডান ড্রেস গ্রামের মানুষ আড় চোখে চাইবে, তাতে ও কিছু করার নেই
অন্নি গাড়ি থেকে নেমেই হাটতে শুরু করলো, আনুশা অন্নিকে থামিয়ে দিলো
অন্নি: কি হলো চল
অন্নি: কার আবার হবে দোকানে কতো লোক থাকে তাদের হবে হয় তো
আনুশা: না তুই আমার সাথে আয় তো
অন্নি:<মনে মনে)এতক্ষন নামতে চায়নি আর এখন দোকানে ডুকছে,ওকে নিয়ে আমি আর পারি না)ঠিক আছে চল
আনুশা দোকানে গিয়ে দোকানিকে জিজ্ঞাস করলো এখানে কি শফিক ভাই আছে,আনুশার দুলাভাইয়ের নাম শফিক
দোকানি: কেনো বলুন তো আর আপনারা কে
অন্নি: আমরা যে হই না কেনো সেটা পরে জানবেন, আপনি শফিক ভাইকে ডেকে দেন,দোকানের পিছনে বসে উনি কি করছে
দোকানদার শফিককে ডেকে দিলো
আনুশার আর বুঝতে বাকি রইলো না দোকানের পিছনে বসে ওরা কি করছিলো
শফিক: আরে আনুশা তুই কোন খবর দেয়া ছাড়াই এসে পড়লি
আনুশা: হুম খবর দিয়ে আসলে তো আপনার এই উন্নতি নিজের চোখে দেখতে পারতাম না, এতো দিন শুনেছি আজ দেখলাম
শফিক: রেগে গিয়ে তুই কি দেখেছিস বল
আনুশা: একদম চোখ রাঙিয়ে কথা বলবেন্না,এই টা আমার আপু নয় যে আপনার চোখ লাল দেখে ভয় পেয়ে চুপ করে যাবে, আর নয় অনেক হয়েছে,এই বার আমি এর একটা শেষ দেখতে চাই
শফিক: এই মেয়ে এই, বিদেশ থেকে কয় টাকার মালিক হয়েছ যে আমার এলাকায় এসে আমাকেই গরম দেখাচ্ছো
আনুশা: টাকা আপনার মতো লোকেরা তো টাকার ভাষাই বুঝে, অর্থলোভী একটা আপনি,
অন্নি: এই আনুশা কি করছিস এই টা পাব্লিক প্লেস, এখানে এতো বাড়াস না বাসায় চল, দুলা ভাই আপনি ও আসুন আপনার সাথে কথা আছে আমাদের
শফিক: এই দুই আঙুল এর মেয়ের সাথে আমি কি কথা বলবো
আনুশার তো শফিক এর কথা শুনে রাগে আগুন জ্বলছে মাথায়,
আনুশা: আপনি বড় বোনের জামাই তাই এখন ও আপনাকে সম্মান দেখিয়ে কিছু বলিনি নইলে এতক্ষনে অনেক কিছু ঘটে যেতো এখানে
দোকানে এতোক্ষনে অনেক লোকের ভীড় জমেছে তাদের মাঝখান থেকে একজন বলে উঠলো শফিক যা ওদের সাথে, ওরা তো তোর মেহমান, ওদের সাথে এই ভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি তোর। আর আনুশা তোর ছোট বোনের মতো,
সবার কথাতে শফিক বাড়িতে আসলো ওদেরকে নিয়ে
শিলা তো বোনকে দেখেই কান্না শুরু করে দিলো
আনুশা: আপু কাঁদিস না,, আমাদের দুঃখের দিন আল্লাহ শেষ করে দিয়েছে,আর কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে,
শিলা : কেদেই চলছে
আনুশা: আপু আমার দিকে তাকা আমি এসে গেছিতো কোন ভয় নেই আর
শফিক: বিদ্রূপ করে বল্লো এমন ভাবে কাদছে যেন উনি অনেক কস্টে ছিলো আমার কাছে,আরে তুই যত সুখে ছিলি তত সুখে তোর বাপ ও তোর মাকে রাখেনি,এই জন্য ই তোর বাপ তোর মাকে ছেড়ে চলে গেছে
আনুশা তো এই কথা শুনে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি,
আনুশা: আপুকে ছেড়ে দিলাম ঠাস করে গালের মধ্যে পাঁচটা আঙুল বসিয়ে দিলাম,
আনুশার এই কান্ডে শফিক তো অভাকই উপস্থিত আশে পাশের সবাই কানা কানি শুরু করছে,, গ্রামে তো আবার পাশা পাশি ঘর তাই এক ঘরে কি হয় অন্য। ঘরের লোকেরা জানার জন্য ছুটে চলে আসে,প্রতিবেশী একজন তো বলেই দিলো বড় বোনের জামাই হচ্ছে বড় ভাইয়ের সমান, তার গায়ে হাত তুলেছে কি বেয়াদপ মেয়েরে বাবা শিক্ষা দিক্ষা কি কিছু নেই নাকি
অন্নি: সবার কথা শুনে আনুশাকে ফিস ফিস করে বল্লো কি করছিস কি তুই আনু, সবাই কি ভাবছে বল তো।
আনুশা: সবার উদ্দেশ্য বলল,বাহ এখন আপনারা আমার শিক্ষা নিয়ে কথা বলছেন,কিন্তু আপনাদের ছেলে কতো শিক্ষিত তা তো আমার বুঝার বাকি নেই,
যে ছেলে জুয়া খেলতে পারে যৌতুক নিয়ে বিয়ে করতে পারে,আবার বার বার বউকে মার ধর করে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য, তখন আপনারা তাকে সঠিক শিক্ষাটা দিতে পারেননি, দিনের পর দিন আমার বোনকে যে টর্চার করেছে,তখন তো কেউ এসে বাধা দেননি,উলটো মজা নিয়েছেন সবাই,
মা বাবা মেয়ে বিয়ে দেয় মেয়েকে সুখে দেখার জন্য,আর যেখানে সুখের পরিবর্তে মেয়েকে লাঞ্ছিত হতে দেখে তখন, মায়েদের মনের অবস্থা কেমন হয় জানেন আপনারা,,
জানবেন কি করে আপনারা তো চোখ বন্ধ করে রাখেন তাই না এই যে কাকিমা আপনি যে বললেন আমাকে আমার মা শিক্ষা দেয়নি,
আজ আপনার মেয়ের সামনে আপনার আরেক মেয়ের জামাই যদি আপনাকে কথা শুনায় তা হলে আপনি চুপ করে থাকতে পারবেন কিন্তু, আপনার মেয়ে চুপ করে থাকতে পারবে না,,,
আনুশার কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো কারো মুখে কোন কথা নেই
আনুশা: যাই হোক অনেক বলে ফেলেছি, এই বার আসল কথা বলি আমি আমার বোনকে নিয়ে যেতে এসেছি, এখন বোনকে নিয়ে যাবো, আপনাদের ছেলের কাছে থেকে কোন টাকা পয়সা লাগবে না,
আমি আমার বোনকে নিয়ে যেতে চাই এই টুকুই,,আর হা শফিক ভাইয়ের তিন বাচ্ছার দায়িত্ব আমার বোন নিতে পারবে না,, কারন বাবা যেমন সন্তান তার মতোই হবে, আর আমার বোনের ও ভবিষ্যৎ আছে
এতোক্ষন শিলা কিছু বলেনি কিন্তুন আর চুপ করে থাকতে পারলো না
শিলা: তুই কি বলছিস আনু আমি আমার সন্তানদের রেখে এক মুহুর্ত থাকতে পারবো না
আনুশা: বোনের কথার কোন উত্তর না দিয়ে, একজন কে বল্লো মুরুব্বি আপনি এখানে সবার মুরুব্বী আপনি বলুন এতো যন্ত্রনার মাঝে একটা মেয়ে কি করে থাকবে
মুরুব্বী : দেখো মা আমরা সব জানি শফিক ভালো ছেলে নয়,কিন্তু আমাদেরই তো ছেলে আমরা চাইবো না তার সংসার টা ভেঙে যাক, তাই বলছি কাল সকালে আমরা গন্য মান্য কয়েকজন কে নিয়ে বসি দেখি সবাই কি বলে, তার পর না হয় তোমার বোনকে তুমি নিয়ে যেও,
আনুশা উনার কথা মেনে নিলো,
আনুশা: আপু আমি কিন্তু এখন এখানে থাকবো না
শিলা: থাকবি না মানে, এতো রাতে কই থাকবি
আনুশা: মামা তোকে বিয়ে দিয়েছে,সো কালকে মামাকে ও উপস্থিত থাকতে হবে,আর মামাদের সাথে তো এতো বছর যোগা যোগ ছিলো না দেখে আসি মামা কেমন আছে
এই ভাবে কেটে গেলো পাঁচটি বছর, পাঁচ বছর পর আজ আনুশা দেশে ফিরছে,
হুম এই পাঁচ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে সব দিক দিয়ে,,আনুশা বিদেশ এ চার বছরের business মেনেজমেন্ট এর কোর্স শেষ করে
নিজের প্রচেষ্টায়য় একটা কম্পানিতে জয়েন হয়ে,কম্পানির এমডির বিশ্বাস অর্জন করে,
তার সাহায্য নিজে একটা হোটেল দেয়, আজ সেটা খুব নামি দামি হোটেল এ পরিচিত, বিদেশী ক্লাইন্টরা এসে এই,হোটেল উঠে,
যাই হোক আনুশার এখন কোন কিছুর অভাব নেই এতোদিন এমডি ছিলো না, তাই অন্নি ভার পাপ্ত এমডি হয়ে সব কিছু সামলে নিয়েছে
আজ আনুশা দেশে ফিরছে, কতো আয়োজন করা বাকি,অফিসে সবাই ব্যাস্ত, নতুন এমডি আসবে তাকে ওয়েলকাল করতে,হবে,অন্নি তো সকাল থেকে নিশ্বাস ফেলতে ও সময় পায়নি
এই দিকে বাড়িতে আনুশার আম্মু খুব ব্যাস্ত,আজ তার ছোট মেয়ে আদরের ধন বাড়িতে ফিরবে,
সুমি আনুশার মেঝো বোন শশুড় বাড়ি থেকে চলে আসছে প্রব্লেম তার বাচ্চা হয় না,এই নিয়ে শাশুড়ি নানান কথা শুনাতো,তার বর মায়ের কথাতে উঠে আর বসে, বউ এর প্রব্লেম টা বুঝতেই চায় না,আর সহ্য করতে না ফেরে কিছুদিন আগেই মায়ের কাছে চলে আসে
আনুশা আম্মু: সুমি এই সুমি কই গেলি,কতো দিন পর আজ আমার আনু দেশে ফিরছে ওর সব কিছু ঠিক করে রেখেছিস তো
সুমি: হ্যা মা তুমি চিন্তা করো না সব একদম আমাদের ছোট রানির মনের মতো করে রেখেছি,
আনুশার আম্মু: আমি আজ নিজের হাতে আমার মেয়ের জন্য রান্না করবো বুয়ারে দিয়ে আজ কাজ হবে না
অন্নি: স্টাফ দের বার বার তাড়া দিচ্ছে সব কিছু যেন ঠিক ভাবে হয়,দুপুর ১২ টায় আনুশার ভিমান এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করবে, তার আগে সব রেডী করতে হবে
মহনা অফিস স্টাফ : ম্যাম আপনি তো নতুন এমডি কে এয়ারপোর্ট এ আনতে যাবেন,,স্টাফরা এখন ও জানে না তাদের নতুন এমডি স্যারর নাকি, ম্যাম, অন্নি এই কথা ইচ্ছে করে গোপন রেখেছে,যেন সবাই একটু অভাক হয়
অন্নি: হুম আমি বেরুচ্ছি অলরেডি টাইম হয়ে গেছে , এই দিকে যেন তোমাদের কোন ভুল না হয়, মনে রাখবে যিনি আসছে না উনি ডিসিপ্লিন ওর ডিসিপ্লিন, এর বাইরে কিছু উনি লাইক করে না
মহনা: ওকে ম্যাম,আপনি চিন্তা করবেন্না
দুপুর ১২ টায় আনুশার ফ্লাইট এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করে
অন্নি: ওয়াও কি দেখতে লাগছে আনুশাকে পুরো হিরোইন, অন্নি আনুশাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরলো
আনুশা: অন্নি কে থামিয়ে দিয়ে বললাম, এতো এক্সাইটেড হওয়ার কিছু হয়নি অন্নি,, এখন আমি অফিস এর কাজে যাবো সো আপনি সেখানে আমার পিএ, ফ্রেন্ড নন, বাসায় গিয়ে জড়িয়ে ধরবেন ওকে,
অন্নি: মনে মনে, যাক বাবা এখন অফিসে আমি আমার প্রিয়ো বান্ধুবীকে ম্যাম বলে ডাকবো এটা ও কি সম্ভব, আনুশার দারা সব সম্ভব যাই আবার রেগে যাবে
আনুশা অন্নি অফিসে পৌছে গেছে,
অফিস স্টাফ রা তো তাদের নতুন এমডি একজন মেয়ে,এটা দেখেই হা হয়ে গেলো তবু ও অন্নির বলা কথা গুলো মহনার মনে পড়তেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে আনুশা কে ওয়েলকাম জানালো
আনুশা নিজের কেবিনে গিয়ে বসলো অন্নি ও পিছু পিছু গেলো
আনুশা: অন্নি আপনি গত মাসের হিসেব আমাকে মেইল করেননি,সো এখন আমি গত মাসের হিসেব গুলো দেখতে চাই
অন্নি: আনু তুই,(বলে মুখে হাত দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিলো, এই রে কি বলতে কি বলে ফেলি)না মা,মানে আপনি এখন এসেছেন একটু রেস্ট নিন ম্যাম তার পর না হয়,
আনুশা: মিস অন্নি কাজের সময় ফাউল কথা বলা আমি পছন্দ করি না, সো যা বলেছি তা করুন,
অন্নি: ওকে ম্যাম, অন্নি ফাইল গুলো আনুশা কে দিয়ে বল্লো ম্যাম একটা কথা বলবো,
আনুশা: বলুন
অন্নি: বাসা থেকে আপনার মা,মানে আন্টি ফোন করে জানতে চাইলো আপনি কখন বাসায় যাবেন,উনি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে
আনুশা: আবার ফোন করলে বলে দিবেন যেন অপেক্ষা না করে কাজ শেষ করে ফিরতে দেরি হবে
অন্নি: ম্যাম যদি অনুমতি দেন তো কাজের বাইরে একটা কথা বলবো
আনুশা রাগি চোখে অন্নির দিকে তাকায়
অন্নি: ওকে ম্যাম আমি বলে দিবো আন্টি ফোন করলে, মনে মনে এই আনুশা টা এমন হয়ে গেলো, ওকে ঠিক করবে কে,কে জানে,
ফোন ভেজে উঠলো, আনুশার আম্মু কল দিয়েছে আচ্ছা উনার কি দোষ এতো বছর পর মেয়ে দেশে ফিরেছে তাকে না দেখে কি করে থাকবে,কিন্তু এই কথা টা উনার মেয়ের মাথায় ডুকাবে কে,
আনুশা: মনে মনে আমি জানি এখন মা অন্নি কে ফোন দিয়েছে আর অন্নি এখন এতো গুলো কথা বলবে আমার নামে মাকে, এই অন্নিটা আর চেঞ্জ হলো না,,নাহ আমার কাজের জন্য অন্নির বিয়েটা আর আটকে রাখা যাবে না এই বার একে বিয়ে দিতেই হবে
অন্নি: কেবিন থেকে বের হতেই সব অফিস স্টাফ রা ওকে ঘিরে ধরলো,ম্যাম আপনি কেনো বলেননি আমাদের নতুন এমডি ম্যাম, স্যারর নয়
আরে এখানে বলার কি আছে, আর শুনো আমি আবার,বলছি, অফিসের সব কিছু যেনো রুলস অনুযায়ী হয়,আমাদের ম্যাম কিন্তু এই সব ব্যাপারে ভিশন পাংচুয়াল,,বুঝেছো,বিশেষ করে কাজের ক্ষেত্রে কোন ভুল উনি একদম মেনে নেয় না, সো বি কেয়ারফুল
আনুশা: কেবিন থেকে সব দেখতে পাচ্ছি, হায়রে অন্নি,স্টাফ দের এগুলা কি বলছিস, কেবিন থেকে বের হলাম,সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম, এই টা অফিস, কোন ক্যান্টিন নয় যে সবাই আড্ডা দিবেন, সো যে যার কাজে যান
অন্নি: ম্যাম আন্টি আপনার সাথে কথা বলতে চায়
আনুশা: মা কে বলেন আমরা আসছি
অন্নি: খুশি হয়ে যাক এতোক্ষনে সদ্বুদ্ধি হলো উনার,
অন্নি আর আনুশা বাসায় যাওয়ার জন্য, গাড়িতে উঠলো,এই মানে ম্যাম এখন কি আপনাকে নাম ধরে ডাকতে পারি,এই টা এখন অফিস নয়,আর আমরা কাজে ও যাচ্ছি না,,তো যদি একটু বলতেন
আনুশা: তোকে সব কথা বলে দিতে হবে কেনো কাজের জায়গাতে আমি তোর বস,এখন বন্ধু আন্ডারস্ট্যান্ড,
অন্নি: ওকে,আচ্ছা দোস্ত তুই যে সারাদিন এমন করে মুখটার পেছার মতো করে রাখিস তোর হাসতে ইচ্ছে হয় না
আনুশা: বাজে বক বকানি বন্ধ কর, তোর আম্মু আব্বুকে আমাদের বাসায় আসতে বলেছিস
অন্নি: বলেছিলাম, উনারা আজ আসতে পারবে না অন্য কোন এক দিন আসবে বলেছে
আনুশা : অন্য কোন দিন মানে,
অন্নি: আমি কি জানি,কি কাজ আছে তাই আসতে পারবে না
আনুশা: তার মানে তুই উনাদের আগে থেকে বলিসনি,আজই বলেছিস
অন্নি: ভয়ে ভয়ে কি করবো বল,তুই ছিলি না অফিস এর সব কিছু আমাকে দেখতে হতো কাজের মাঝে ভুলে গেছি বলতে
আনুশা: ইটস ওকে এতো ভয় পাবার কিচ্ছু হয়নি
অন্নি,উফ বাছা গেলো
বাসায় পৌছে আনুশা মাকে সালাম করে জড়িয়ে ধরলো, মায়ের যে কতো অভিযোগ, এতো দিন কেনো আসেনি,আর ও কতো কি আনুশা সব বাধ্য মেয়ের মতো শুনছে,
আনুশা: মা বাড়ি টা কেমন খালি খালি লাগছে, তুমি বড় আপুকে আসতে বলোনি,ওর বাচ্ছারা মিলে আসলে তো বাড়িটা পুরো ঘম ঘম করতো
আনুশার আম্মু: পরে বলবো তোকে সব আসছিস আগে একটু ঠান্ডা হও তার পর বলছি
সুমি: হা আনু মা ঠিকই বলেছে,চল খাবি আজ তোর পছন্দের সব খাবার মা নিজের হাতে রান্না করেছে
অন্নি: ওয়াও আন্টি রান্না করেছে তা হলে আমি আগে যাই খাওয়া শুরু করি
আনুশা: মনে মনে কি এমন হলো বড় আপুর,নিশ্চয় দুলা ভাই কিছু একটা করেছে,নাহ আর না আমার বোনেরা অনেক সহ্য করেছে এই বার একটা বিহিত করা দরকার
আনুশার আম্মু: আনু, কি ভাবছিস চল খাবি,
খাওয়ার টেবিলে বসে আনুশা অন্নি কে বল্লো, অন্নি অফিসের যাবতীয় হিসেব দেখা শুনার জন্য একজন ম্যানেজার এপয়েন্ট করতে বলেছিলাম,,করিস নি তাই না
অন্নি: খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো আনুশার কথা শুনে,, আনু খেতে বসছি খেতে দে,অফিসের কাজ নিয়ে পরে কথা বলিস
আনুশাঃএর তো দেখছি ভিশন পাখা গজিয়েছে,নতুন পিএ এপয়েন্ট করতে হবে যে আমার কথা মতো চলবে
সুমি: অন্নি তো ঠিকই বলেছে আনু,খাওয়ার সময় খেতে হয় কাজের কথা পরে হবে,
খাওয়া শেষ আনুশা সবাইকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসলো
আনুশা: মা এই বার বলো বড় আপু কেনো আসেনি
আনুশার আম্মু: শিলার জামাই বলছে কিসের ব্যাবসা করবে, এই জন্য ওকে ৫ লক্ষ টাকা দিতে,কিন্তু শিলা আমাদের কাছে চাইতে নারাজ,তাই শিলাকে অনেক মার ধর করে, এই জন্য শিলা আসতে পারেনি
আনুশা: মা বিয়ের সময় তো ওকে দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দিয়েছিলো মামা,তাই না
আনুশার আম্মু: হুম তবু ও ওর দাবির শেষ ছিলো না আজ ও শেষ হয়নি
আনুশা: ঠিক আছে মা তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে, অন্নি বিকেল এ তুই অফিসের দিকটা দেখিস,আমি গ্রামে বড় আপুর কাছে যাবো,আর হা ম্যানেজার ছেয়ে একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে দিস ওকে
অন্নি: আনু অনেক দিন গ্রামে যাই না তুই যখন যাচ্ছিস আমি তোর সাথে যাবো,মহনাকে সব বুঝিয়ে বললে ও করতে পারবে
আনুশা: মহনা কে?
অন্নি: অফিস স্টাফ খুব ভালো মেয়ে,
আনুশা: তুই সিয়ুর ও সব পারবে
অন্নি : হুম পাক্কা,
আনুশা : ওকে তুই ওকে ফোন করে সব বুঝিয়ে বল, আমরা একটু পরেই বেরুবো
অন্নি: ওকে
রাতে আনুশা মনে হলো কেউ ওর পাশে বসে কাঁদছে ,
চোখ না মেলেই বুঝার চেষ্টা করছে,কে কাদছে,কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলো মা কাদছে
আসলে আমাকে ছেড়ে মা কখনো থাকেনি তো তাই,, আনুশা কি করবে বুঝতে পারছে না,এখন যদি আমি কান্না করি তা হলে মা আর ও বেশি কান্না করবে,আর কাঁদতে কাদতে শরির খারাফ করে পেলবে,, না আমি যে জেগে আছি এটা মাকে কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না,,তাই চুপ করে শুয়ে থাকলাম
অন্নি: উফফ আজ উঠতে দেরি হয়ে গেছে, আজকে মেয়েটা চলে যাবে ওর জন্য ভালো কিছু রান্না করা দরকার,
আনুশার আম্মু আর অন্নি মিলে গেলো কিচেন এ আজ সব আনুশার পছন্দের রান্না হবে।
আনুশা: ভালো লাগছে না কিছু সব কেমন উলট পালট লাগছে,,কি করে থাকবো আমি এতো দূরে গিয়ে,,।
সন্ধায় আপুদের সাথে ফোনে কথা বলে নিয়েছে আনুশা,অন্নি,মা সবাইকে নিয়ে এয়ারপোর্ট এ রওনা হলো, রাত ৮ ফ্লাইট, একটু আগে যাওয়া উছিত তাই ওরা সন্ধার ৬ টায় গেলে
আনুশা:বুকের বিতরে মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে, শুধু কান্না পাচ্ছে তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু কতোক্ষন পারবো নিজেকে কন্ট্রোল করতে
সবাই মিলে অপেক্ষা করছে ৭:২৫ ইমিগ্রেশনে এনাউন্সমেন্ট শুরু হয়ে গেছে,
অন্নি: আনু তুই একটু বস আমি আসছি
আনুশা: একটু পরেই আমি চলে যাচ্ছি তুই এখন কই যাবি,
অন্নি: তুই বস তো, আন্টি আপনি আমার সাথে একটু আসুন তো
আনুশা: তুই মাকে নিয়ে কোথায় যাচ্চিস
অন্নি: আরে বলছি তো একটু পরে এ আসছি,
আনুশা: যাক বাবা কিছু না বলেই মাকে নিয়ে চলে গেলো,পাশে ফিরতেই দেখলাম তানভীর
,লাফিয়ে উঠলাম ওকে দেখে, তানভীর এখানে কি করছে
তানভীর : আনুশা আমাকে দেখে মনে হয় ভুত দেখেছে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে গেলো,
আনুশা: আপনি, আপনি এখানে কি করছেন
তানভীর : কিছুই না দেখতে এলাম,হয়তো আর কোন দিন আমাদের দেখা হবে না তাই শেষবার দেখতে এলাম
আনুশা: আমি চাইনা কোন দিন আপনার সাথে আমার দেখা হোক
তানভীর : সেটা আমি জানি,আফসোস আমি যাকে ভালোবেসেছি তার মন পাথরের থেকে ও কঠিন, পাথরের ও ক্ষয় হয়,বাট তার মনে আমার জন্য একটুও ক্ষয় আসেনি
আনুশা: স্টপ,যথেষ্ট হয়েছে চুপ করুন আপনি, আনুশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো টাইম হয়ে গেছে তাই চলে যেতে চাইলে অন্নি এসে বাধা দেয়
অন্নি: কিরে আমাদের না বলেই চলে যাচ্ছিস
আনুশা: তুই কোথায় গিয়েছিলি মাকে নিয়ে
অন্নি: এই নে এটা আনতে গিয়েছিলাম,
আনুশা: কি আছে এতে
অন্নি: যাই থাকুক এখন খুলিস না,জায়গাতে পৌছে খুলে দেখিস কেমন এবার যা লেইট হয়ে যাচ্ছে,বাই দ্যা য়ে, এই ছেলেটা কেরে
আনুশা: তানভীর এর দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে,মাকে জড়িয়ে কান্না করা শুরু করলো
আনুশার আম্মু: কাঁদিস না মা, সবই আল্লাহর ইচ্ছে, উনি যা চায় তাই তো হয়,কাঁদিস না লক্ষি মা আমার
আনুশা: মা আমি থাকবো কি করে তোমাকে ছেড়ে
কথাটি শুনে আনুশার মা ও মেয়ের সাথে কাদতে শুরু করলো, কাদবে না কেনো,জীবন কঠিন সময় গুলো মা মেয়ে এক সাথে পার করেছে,আর এখন মেয়েকে একা একটা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে,
অন্নি: আনু পরে কাঁদিস দেরি হয়ে যাচ্ছে চল
আনুশা: মাকে ছেড়ে দিলাম জীবনের কঠিন বাস্তবতা কে মেনে নিয়ে অজানা দেশে পা বাড়ালাম
কিছুক্ষন পরেই ফ্লেন ছেড়ে দিলো,, ফ্লেন এর সিটে বসে একটা কথাই শুধু ভাবছি,যদি আমার জীবন টা অন্যরক হতো, তা হলে আজ মাকে ছেড়ে আসতে হতো না
অন্নি: আন্টি কাদবেন্না আপনি যদি এতো কান্না করেন তা হলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন,আর সেটা শুনে আনুশা আমার আস্ত ও রাখবে না
আনুশার আম্মু: মেয়েটা আমার পারবে তো সব কিছু সামলে নিতে
অন্নি: আন্টি আপনি আনুশাকে জানেন না,ও কেমন মেয়ে ও সব কিছু ঠিক সামলে নিবে
আনুশার আম্মু: হুম
অন্নি: এতো হুম হুম করবেন না তো আন্টি,চলুন আমরা বাসায় যাই,আম্মু ফোন করেছিলো বলেছে আপনাকে নিয়ে তাড়া তাড়ি ফিরতে
★
তানভীর : আনুশা তো চলে গেলে এই লক্ষকোটি মানুষের ভিড়ে আমাকে একা করে দিয়ে গেলো
কি করবো আমি এখন বসে পড়লাম মাটিতে, এখান থেকে উঠে যাওয়ার মতো শক্তি আমার নেই
তানিম: উফফ এই তানভীর কোথায় গেলো এখন ওকে কই পাই,,ওকি জানে না ওর আম্মু কতো টা টেনশন করছে ওকে না পেয়ে, আমি যত টুকু জানি,ওতো এয়ারপোর্ট এর দিকে আসার কথা, কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না কেনো,এই আনুশা মেয়েটা আমার বন্ধুটার মাথা পুরো খেয়ে নিয়েছে, ঐ তো পেয়েছি তানভীর কে
তানভীর : কেউ একজন আমার পাশে এসে বসলো, কে আনুশা নয়তো, পাশে তাকিয়ে আশার আলোটা নিভে গেলো, ও তুই
তুই এখানে কি করছিস
তানিম: আন্টির তোর জন্য চিন্তা করছে চল বাসায় চল
তানভীর : তুই যা আমি পরে আসছি,আম্মুকে বলিস আমি ভালো আছি
তানিম: পরে আসছিস মানে, তোকে এখনি আমার সাথে যেতে হবে চল তো
তানভীর তানিম কে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দিলো
তানিম: মনে মনে একটা ছেলে একটা মেয়েকে কতোটা ভালোবাসলে এই ভাবে কাঁদতে পারে, শুনেছি মেয়েদের মন খুব নরম,কিন্তু এই মেয়ের মন কি দিয়ে তৈরি কে জানে,, মুখে তানভীর কে কিছু বলে শান্তনা দেয়ার ভাষা আমার নেই, কাঁদুক কাদলে মন হালকা হবে
অন্নি: কিইই আমার ঘুম ভেঙে গেছে আর আনুশা এখন ও ঘুমাচ্ছে এই টা আমি কি করে মেনে নিই বলো আল্লাহ,, আমার তো একটাই বন্ধু,একটাই বান্ধুবী, এই বলে অন্নি আনুশাকে ডাকতে লাগলো এই আনু দেখ ১০ টা বেজে গেছে, এমা তুই এখন কি করবি,তোর তো এখন ও অনেক কাজ বাকি, এই আনু, আনু দেখ ১১ টা বাজে
আনুশা: অন্নির ডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেছে, কিন্তু ওর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলা কথা গুলো শুনতে ভালো লাগছিলো তাই ঘুমের ভান করে শুয়ে আছি,আমি জানি এখন ১০-১১ টা কোনটাই বাজেনি,আমাকে ঘুম থেকে উঠানোর এক ধান্দা,আমি ও কম যাইনা,ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বললাম,উফফ অনু ঘুমাতে দে তো, বিরক্ত করিস না
অন্নি: কি আমি বিরক্ত করি,তা হলে আজ তোকে ঘুমাতেই দিবো না, তুই উঠবি নাকি আমি পানি ডালবো গায়ে
আনুশা: এইরে এবার উঠতে হবে,আর ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকা যাবে না,
অন্নি: কিরে ঘুম থেকে উঠে মিট মিট করে হাসছিস কেনো
আনুশা: অনু তুই আর পাল্টালি না বল,সেই ছোট্ট অনুই রয়ে গেলি
অন্নি: দেখ আনু আমি তোর মতো গোমরা মুখো হয়ে থাকতো পারবো না আমার কাছে লাইফ মানে হচ্ছে ইনজয় করা,যা সময় পেরিয়ে গেলে করতে পারবো না
আনুশা: সময় পেরিয়ে যাবে মানে
অন্নি: এই যেমন বিয়ে হয়ে গেলে। স্বামি সংসার প্যারা, এই সব এর মধ্যে ইনজয় করতে পারবো না
আনুশা: অন্নির মুখে স্বামি সংসার এর কথা শুনে মেজাজ গেলো বিগড়ে,অন্নিইইইইইইই
অন্নি: আনু তুই রেগে গেলি কেনো প্লিজ প্লিজ তুই রাগিস না,আমি তোর সামনে বলতে চাইনি,বাট কি করে যেন মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো
আনুশা:……………..
অন্নি: এই যা অন্নিকে তো রাগিয়ে দিলাম এখন উপায়
আনুশা: মনে মনে (স্বামি এরা কে হয় অযোগ্য পুরুষ মানুষেরা,যোগ্য। দের তো খুজে পাওয়া যায় না,এরা মেয়েদের কে সারা জীবন পায়ের তলায় জুতো আর জুতোর তলায় পাপশ বানিয়ে রাখতে চায়,যেমন আমার দুই বোনের জামাই,আর আরেক জলন্ত প্রমান নিহাল,বোনেদের কথা না হয় বাদই দিলাম,কিন্তু আমার সাথে যা হয়েছে তা আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না)
অন্নি: ইসস এখন কি হবে আনু তো আগুন চোখ করে ভাবনার জগতে ডুকে গেছে, কি করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করবো,ইউরেকা
আনুশা: অন্নির চিৎকার এর বাস্তবে ফিরে এলাম, ভ্রু কুঁচকে অন্নির দিকে তাকালাম
অন্নি: মানে আনু আমি কি বলছি শুননা অনেক বেলা হলো,তোকে নিয়ে আমার একটা জায়গাতে যাওয়ার ছিলো,চলনা আমরা যাই
আনুশা: নো য়ে,আজ আমি কোথায় ও যাবো না আজ আমি সারা দিন মায়ের সাথে কাটাবো
অন্নি; প্লিজ প্লিজ না করিস না,আমি তোর হাত ধরছি,তোর পা ধরছি
আনুশা: এই এই কি করছিস পাগল হয়ে গেলি নাকি তুই,আচ্ছা আমি যাবো, এবার তো শান্ত হও
অন্নি: সত্তিইই
আনুশা: হুম,
অন্নি: উঠ তা হলে রেডী হয়ে নিইই
আনুশা: এখন ই রেডী হতে হবে
অন্নি,হুম চল তো
★
তানভীর : শুনেছি কাল রাত আট টায় আনুশার ফ্লাইট, ওকে দূর থেকে হলে ও শেষ বারের মতো চোখের দেখা দেখতে হবে, নইলে মনটা যে শান্ত হবে না,
আর আনুশা আমাকে কোন দিন হয়তো ভালো বাসবে না,হয় তো কালকের পর ওর সাথে আমার কোন দিন দেখা হবে না,
হয়তো তানভীর নামে একটা ছেলে ওকে পাগলের মতো ভালো বাস তো এই টা তার মনেই পড়বে না কোন দিন,
কিন্তু আমি, আমি তো কোন দিন আনুশা কে ভুলতে পারবো না, আমার সুইট এঞ্জেল, I love you sweet angel, I love you sob mach তোকে এই খারাপ ছেলেটা খুব ভালোবাসেরে, তুই বুঝলি না
★
অন্নি আনুশাকে নিয়ে মার্কেট এ এলো
আনুশা: এই খানে নিয়ে আসলি কেনো,
অন্নি: এই খানে মানুষ কেনো আসে তুই জানিস না,,আমি ও সেই জন্যই এসেছি
আনুশা: কিন্তু তুই তো বললি তুই একটা জায়গাতে যাবি,এখানে আসবি সেটা তো বলিস নি
অন্নি: বলিনি তো কি হয়েছে এখন তো জানলি, আর কথা বলিস না তো ড্রেস, দেখতে দে,,
আনুশা; কিচ্ছু বুঝতে পারছি না সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,
অন্নি: এটা দেখতো আনুশা এই ড্রেস টা তোকে খুব মানাবে
আনুশা: আমার কিছু লাগবে না অন্নি,তুই তোর জন্য নে
অন্নি: একদম চুপ থাক,কি লাগবে আর কি লাগবে না সেটা কি আমি জানি না
আনুশা: আর কিছু বললাম না,আর বলে যে কোন লাব হবে না,সেটা তো বুঝতেই পারছি
অন্নি: বেছে বেছে কয়েকটা ড্রেস নিলাম আনুশার জন্য,
অনেক বেলা হয়ে গেলো আনুশা কে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট এ খেতে ঢুকলাম
আনুশা: প্লিজ অন্নি আজকের দিন টা আমি মায়ের হাতের খাবার খেতে চাই,তুই আমাকে এখানে খেতে বলিস না
অন্নি: কিন্তু আমার যে খুব সখ আজকের দিনটা নিজের মতো করে তোর সাথে কাটাবো বলে
তুই,রাত আর সকালে এই দুইবেলা আন্টির হাতের খাবার খাস,কেমন
প্লিজ এখন আমাকে না করিস না
আনুশা: ওকে ফাইন তোকে নিয়ে আমি আর পারি না, খাবার দাবার গুরা গুরি সব শেষ করে সন্ধায় বাসায় ফিরলো ওরা
আনুশার আম্মু: এতোক্ষনে তোদের আসার সময় হলো
অন্নি: আন্টি আসলে কি বলেন তো অনেক দিন পর আনুশার সাথে দেখা,তা ও আবার একদিনের জন্য,কালতো ও চলেই যাবে তাই আজকের দিন টা স্মৃতি করে রাখলাম এই আর কি
,দুই বান্ধবি মিলে ফ্রেশ হয়ে,পেকিং এর কাজ টা সেরে পেল্লো, তার পর আনুশা অন্নির আনলিমেটেড বক বক শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লো