আনুশার আম্মু: কয়েক ঘন্টা বলছিস,তুই গত কাল দুপুরে ঘুমিয়েছিস আর এখন সকাল
আনুশা: কিইই এখন সকাল জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম হুম সকালই তো ভালো হলো একটু হালকা লাগছে,দুপুরে যত চিন্তা ছিলো মাথায় এখন তা নেই
আনুশার আম্মু: তোর স্যার ফোন করেছিলো বলেছে আজ তোকে দেখা করতে অন্নি ফোন করেছিলো কেউই তোকে পাইনি ফোনে
আনুশা: আচ্ছা অন্নির সাথে পরে কথা বলবো স্যারর এর সাথে আগে দেখা করে আসি, ফ্রেশ হয়ে স্যার এর সাথে দেখা করতে গেলাম। স্যারর এর বাসায়, স্যার আমাকে নিয়ে পার্সপোর্ট অফিসে যায়,সেখানে ফর্মালিটি গুলো শেষ করে বাসায় আসলাম,
চিন্তায় আছি মাকে নিয়ে, মাকে কার কাছে রেখে যাবো, আপুদের কাছে রাখা যাবে না ওরা নিজেই কোন ভাবে শশুড় বাড়ি পড়ে আছে, তার মধ্যে মাকে সেখানে রাখা একদম সেভ নয়, কি করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছি না
এই ভাবে গেলো কয়েক দিন, আনুশার চিন্তার কোন কুল কিনারা নেই,মাকে নিয়ে,।এর মধ্যে কাগজ পত্র সব ঠিক হয়ে গেছে দুই একদিনের মধ্য ডেট পড়বে যাওয়ার কথা, আনুশা শিন্ধান্ত নিলো সে যাবে না দেশের বাইরে পড়তে, মাকে একা রেখে যাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়,,
আনুশার আম্মু:কিরে এতো কি ভাবছিস
আনুশা: ভাবছি যাবো না
আনুশার আম্মু: কোথায় যাবি না
আনুশা: বিদেশে পড়তে যাবো না,তোমাকে কার কাছে রেখে যাবো বলো মা,আমি ছাড়া তোমার আর কে আছে
আনুশার আম্মু: তুই কি বলছিস, পাগল হয়ে গেলি নাকি,সবাই তোকে কি ভাববে, যারা তোর জন্য এতো কিছু করছে তারা
আনুশা: কে কি ভাবলো না ভাবলো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না, আমি তোমাকে একা রেখে যাবো এটা ই ফাইনাল
আনুশার আম্মু: এই মেয়ে কে নিয়ে কি করি আমি
আনুশা: স্যার কে ফোন করে জানিয়ে দিই সব ক্যানসেল করে দিতে,
স্যারঃতো আনুশার কথা শুনে অভাক এই মেয়ে বলেকি মন্ত্রী সাহেব এর কাছে আমার মুখ থাকবে না, কতো কি বলে মন্ত্রী সাহেব কে কনভেন্স করিয়েছি এখন কি হবে
আনুশা: যাক স্যারর কে জানিয়ে দিলাম, এইবার আমি আমার মতো একটা জব খুজে বের করবো,আবার আগের মতো রুটিং অনুযায়ী কাজ শুরু করবো
বিকেল হয়ে গেলো আনুশার আবার পড়ন্ত বিকেল সূর্যের রক্তিম আভা ধারন করাটা ভিশন প্রিয়,আনুশা সূর্যের দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে আছে
আনুশার আম্মু: আনু তোর স্যার আর অন্নি এসেছে তোর সাথে দেখা করতে
আনুশা: স্যার, অন্নি কি বলছো, অন্নি এখানে আসবে কি করে ও তো গ্রামে
আনুশার আম্মু:তুই এসে দেখে যা,তা হলেই বুঝবি
আনুশা: আচ্ছা আমি আসছি, বস্তিতে থাকি তো তাই বস্তির পাশে একটা খোলা মাঠের মতো জায়গা আছে সেখানে সূর্য দেখছিলাম,মায়ের কথা শুনে রুমে গেলাম, অন্নিকে দেখে তো আমি অভাক অনেক দিন পর দেখা,কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না স্যারর অন্নি কে পেলো কই
অন্নি: কি অভাক হচ্ছিস তাই না, তোকে চমকে দিবো বলেই হঠ্যাৎ করে আসা, আর আংকেল এর সাথে তো আমার আগের ই জানা শুনা,তোকে বলেছিলাম না বাবার বন্ধু
আনুশা: মনে আছে,বাট
স্যার: কিন্তু কিছুই না আনুশা, তুই যখন বললি তুই দেশের বাইরে পড়তে যাবি না,তখন আমি ব্যাপার টা মেলাতে পারছিলাম না এতো ভালো একটা অফার কেউ রিজেক্ট করে,
তার পর আমি অন্নি কে সব বলি,
অন্নি :আংকেল প্রব্লেম হচ্ছে ওর আম্মু,আনুশা ওর আম্মু কে কই রেখে যাবে কার কাছে রেখে যাবে সেই জন্য নিষেধ করছে
আমি তখন ও সিয়ুর ছিলাম না,আমাকে কনফিউজড হতে দেখে
অন্নি,বলল ট্রাস্ট মি আংকেল,এই টা ই হবে কারন আমার ছেয়ে ভালো ওকে কেউ বুঝে না
তার পর তোদের বাসায় আসলাম অনেক্ষন হলো তোর মায়ের সাথে কথা বলে সিউর হলাম
আনুশা: অন্নি ঠিক বলেছে স্যারর এই জন্য ই আমি যাচ্ছি না, আপনি সব ক্যানসেল করে দিন
অন্নি: না আংকেল কিচ্ছু করতে হবে না,আন্টি আমাদের বাসায় থাকবে কোন প্রব্লেম হবে না
আনুশা: মা তোদের বাসায় থাকবে? কিন্তু তোর আম্মু আব্বু তারা কি ভাববে
অন্নি: তারা কিছুই ভাববে না,আমি তাদের সব বুঝিয়ে বলবো
আনুশা: কি বলবো বুঝতে পারছি না,অন্নি টা সব সময় আমার প্রয়োজনে যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর এই ঋন আমি কি করে দেবো
অন্নি: কি ভাবছিস, এতো কিছু ভাবতে হবে না,পরশু তোর ফ্লাইট তুই ফেকিং করা শুরু কর
আনুশা: অভাক হয়ে পরশু
স্যারর: হুম পরশু আমি তোকে ফোন করে খবর টা দিতে চাইছিলাম,কিন্তু তার আগেই তুই জানিয়ে দিলি যাবি না,তাই তোকে বলা হয়নি
আনুশার আম্মু: তুই আর কিছু ভাবিস না মা,তুই যা,আমি অন্নির বাসায় থাকবো আর অন্নি কে তুই ভালো করেই চিনিস আমার কোন অসুবিধে হতে দিবে না
আনুশা: ওকে তোমরা সবাই যখন বলছো,তখন আমি যাবো,কিন্তু অন্নি তোকে কিন্তু আমার মায়ের খেয়াল রাখতে হবে
অন্নি: আচ্ছা বাবা রাখবো এই বার হলো তো
স্যার:আমি তা হলে আজ আসি,
স্যারর চলে গেলো
আনুশা: অন্নি তুই থাকবি আমার সাথে
অন্নি: থাকবো মানে পরশু তোকে এয়ারপোর্টে দিয়ে এসে আমি আর আন্টি বাসায় যাবো
আনুশা: কিন্তু তোরা ঢাকায় আসলি কবে
অন্নি: গত কাল,তুই তো আমার কোন খবর রাখিস না, আমি আংকেল এর কাছে থেকে তোর সব খবর পেয়েছি
আনুশা: ও তাইই ম্যাডাম, আপনি গোয়েন্দাগিরি করছেন কবে থেকে
অন্নি: গোয়েন্দাগিরি না করলে জানতে পারতাম আপনি ওতো ভালো একটা অফার হাত ছাড়া করে দিচ্ছেন
আনুশা: তো দিবো না, আমি মায়ের জন্য সব করতে পারি
অন্নি: হুম বুঝলাম,
আনুশা: চা খাবি করে দিবো
অন্নি: খাবো,চল দুজনে গিয়ে চা বানাই,তার পর খেতে খেতে আয়েশ করে গল্প করবো
আনুশা : চল
★
তানভীর : স্যার এর কাছে শুনলাম আনুশার যাওয়ার ডেট পড়ে গেছে আবার কতো বছরের জন্য ওকে দেখবো না কে জানে, যাই হোক এয়ারপোর্ট এ একবার গিয়ে দেখে আসবো
তানভীরের আব্বু: কিরে তানভীর কি ভাবছিস বাবা
তানভীর : না আব্বু কিছু না
তানভীরের আব্বু: মন খারাফ করে বসে আছিস যে
তানভীর : এমনি আব্বু,চুপ থাকতে ভালো লাগে তো তাই
তানভীরের আব্বু: তা বললে কি হয় বেটা চল, আজকে বাপ বেটা হাটতে বের হবো নিশ্চুপ সন্ধার মুগদ্ধতা নিবো
তানভীর : আব্বু আমার একদম যেতে ইচ্ছে করছে না
তানভীরের আব্বু: আমি তোর কোন কথা, শুনছি না চল তো
তানভীর : মনে মনে ওহ কি আর এখন যেতে হবে,,, ঠিক আছে চলো
১১:২২ মিনিটে অনুষঠান শুরু হলো, আনুশা & তার মা,তানভীর সহ সবাই প্রথম সারিতে বসলো, প্রথম সারিতে আনুশার শুভাকাঙ্ক্ষী দের বসতে দিলো,প্রিন্সিপাল স্যার এর ইচ্ছে অনুযায়ী,
তানভীর যখন আনুশার সাফল্য খুশি তা হলে তানভীর ও আনুশার শুভাকাঙ্ক্ষী তাই প্রথম সারিতে বসলো সবাই
অনুষঠান শুরু হলো একে একে সবাই তাদের বক্তব্য রাখলেন স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্য করে,সবাই যেন আনুশার মতো এগিয়ে যেতে পারে, এই অনুপেরনা দিয়েছেন,
এইবার পুরস্কার দেয়ার পালা,আনুশাকে স্টেজ এ ডেকে নিলো
জেলা মন্ত্রী সাহেব আনুশার গলায় গোল্ড মেডেল পরিয়ে দিলো সে সাথে তিনি ঘোষণা করলেন আনুশাকে তিনি চীনে পাঠাচ্ছেন উচ্ছ ডিগ্রী অর্জনের জন্য
কথাটা শুনে দর্শকদের মাঝে হই চই পড়ে গেছে কেউ খুশি হলো কেউবা হিংসা করে বল্লো, দেখলি মেয়েটা কদিন হলো আমাদের কলেজ এসেছে এর মধ্যে সবাইকে পিছনে পেলে টেক্কা দিয়ে দিলো,
আনুশার সাথেই পড়তো লিমা, সে বল্লো চুপ চাপ থেকে যে মেয়েটা জল এতো দূর গড়িয়ে নিবে ভাবতেও পারিনি আমি,ক্লাসে তো কোন মেয়ে বা ছেলে। কারো সাথেই কথা বলতো না সব সময় নিজের মুড নিয়ে থাকতো,
আর এখন দেখ সবার চোখের মনি হয়ে গেলো উফফ গা জলে যাচ্ছে আমার এতো আদিক্ষেতা দেখানোর কি আছে এতে বঝি না,
স্টেজ এ আনুশা অভাক হয়ে চেয়ে আছে কি শুনছি, আমি কি ঠিক শুনলাম নাকি আমার মনের ভুল এ, ও ছিলো আমার ভাগ্যে লিখা,খুশিতে কেদেই দিলো আনুশা
প্রিন্সিপাল স্যারর:সবার উদ্দেশ্য আনুশাকে কিছু বলতে বল্লো
আনুশা: মাইক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কি বলবো বুঝতে পারছি না কেমন স্টাচু হয়ে গেলাম তবু ও সবাইকে সালাম দিয়ে শুরু করলাম
জীবনে কিছু পেতে হলে সেটাকে লক্ষ্য হিসেবে নিতে হবে,এর মাঝে অনেক বাধা আসবে সব কিছু উপেক্ষা করে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়াটা ই প্রকৃৃত কাজ,
বিপদে ঘাবড়ে গেলে চলবে না বরং শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে, যে মানুষ টা বিপদে পড়তে দেখে ঠাট্রা বিদ্রুপ করেছে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে আমি ভেঙে পড়ার মতো মানুষ নই তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে মনের শক্তিটা ই আসল,
এই রকম আর ও কিছুক্ষন বলার পর ষ্টেজ থেকে নেমে আসলাম,মা তো আমায় খুশিতেই জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো
আমার ক্লাস ফ্রেন্ড রা কখন ই আমার সাথে কথা বলতে আসেনি,আজ ওরা সবাই এগিয়ে আসছে আমার সাথে কথা বলার জন্য
ছেলেদের মধ্যে অনেকই আমার কাছে ফোন নাম্বার চাইছে, বুঝলাম এরা আমার সুদিনের বন্ধু হতে চায়,এদের প্রয়োজন পুরিয়ে গেলে আবার এরা চলে যাবে, সবাকে উপেক্ষা করে যখন বাইরে এলাম তখন কারো Congress anusha, কথাটা শুনে পিছনে তাকালাম তানভীর,
তানভীর : Congress আনুশা দেশের বাইরে পড়তে যাচ্ছো অনেক উন্নতি করবে তুমি জীবনে আমি জানি, উন্নতি করবে নাই বা কেনো,
আর তোমাকে তানভীর নামের এই বিরক্তিকর ছেলেটা বিরক্ত করবে না,,নিজের মনের মতো করে চলতে পারবে
আনুশা: নির্বাক হয়ে আমি ওর বলা কথা গুলো শুনছি, আমি আজ ও বুঝতে পারছি না আমার সাথে কেনো এই সব হচ্ছে
তানভীর : তুমি বিদেশ এ গেলে জানি আমার কথা তোমার মনে পড়বে না, তবু ও যদি কোন বৃষ্টি মূখর সন্ধ্যায় আমার কথা মনে পড়ে,কিংবা
কোন অমাবস্যার অন্ধকার রাতে আমার কথা একটু ভাবো তা হলে বুঝে নিও মেঘে ডাকা আকাশে,আর অমাবস্যার অন্ধারে আমি তারা হয়ে তোমাকে আলো দেয়ার অপেক্ষায় আছি,শুধু মেঘ কেটে গেলে,আর অন্ধকার কেটে আলো হওয়ার অপেক্ষায় আছি,,
আমি জানি না কেনো তোমার মন এতো পাথর,কেনো তুমি আমাকে মানতে পারছো না তুমি কি বুঝো না আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি
আনুশা:( আর শুনতে পারছিলাম না তানভীরের বলা কথা গুলো,)ওকে থামিয়ে দিলাম,ব্যাস অনেক বলেছেন আপনি,এই বার আমি বলি,
আমি তো আপনাকে বলিনি ভালোবাসি,আপনি নিজের থেকে এতো দূর এগিয়েছেন,, এটা আমার নয়, আপনার প্রব্লেম, জীবনের কোন মুহুর্তে ও আপনার কথা আমার মনে পড়বে না, আমি সামনে হাটার সময়,পিছনে তাকাই না
তানভীর : আনুশার কথা শুনে আমি কাদতে ও ভুলে গেছি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি
আনুশা: কথা গুলো বলা শেষ করে চলে আসলাম ওর সামনে থেকে কারন ওর চোখ যে অন্য। কথা বলছে, আমি কাউকে আমার এ জীবনের সাথে জড়াতে চাই না, আমি আমার মতো করে থাকতে চাই
মাকে নিয়ে চলে আসলাম বাসায়। মন টা ভালো লাগছে না কেমন যেন লাগছে, দুপুরের খেয়ে,সাথে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লাম,জানি মরবো না আর আমি মরে যাওয়ার জন্য খাইনি শুধু একটু ঘুমাতে চাই,আচ্ছা আমার আজকের এই পাওনা টা কি পেপার এ চাপানো হবে,আমি চাই এই খবর টা নিহাল জানুক,আর ও বুঝুক। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না,আর ভাবতে পারছি না চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে,বুঝতে পারছি ওষুধ কাজ করা শুরু করছে,
★
তানভীরের আম্মু: কিরে তানভীর তোর কি মন খারাপ
তানভীর : না আম্মু আমি ঠিক আছি,আব্বু আসেনি এখন ও
তানভীরের আম্মু: না এসে পড়বে কিছুক্ষনের মধ্যে
তানভীর : ওও আচ্ছা
তানভীরের আম্মু: আনুশা তো দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে ওকে আটকাবি না তুই
তানভীর : না আম্মু ওকে আটকিয়ে রাখার কোন অধিকার আমার নেই, ও নিজেরর মতো করে থাকুক আর আমি ওর কথা ভাবতে চাই না আমি আমার মতো ঠিক আছি আম্মু
তানভীর :খেতে ইচ্ছে করছে না আম্মু,আমি ঘুমাবো,ঘুম থেকে উঠে না হয় খাবো
আম্মু: ঠিক আছে, আমি তা হলে যাই আমার আবার একটু কাজ আছে
তানভীর : আম্মুকে চলে যাওয়ার জন্য ঘুমের কথা বলেছি,আমার তো ঘুম আর কখনোই আসবে না, আমার ঘুম যে আনুশার চোখে,থাক আমার ঘুমাতে হবে না ও ঘুমাক,ও ভালো থাকুক আমি না হয় ভালো থাকবো ওর ভালো থাকায়
পরদিন সকালে আনুশা খুব তাড়া হুড়া করছে কলেজ এ যাওয়ার জন্য,,কই মা হলো তোমার এতো কিসের কাজ করো বলো তো
আনুশার আম্মু: এই তো হলো, আর একটু অপেক্ষা কর
আনুশা: তুমি জানো এর মাঝে প্রিন্সিপাল স্যার। কতো বার কল দিয়েছে
আনুশার আম্মু: হুম চল এবার
★
এদিকে তানভীরের ঘুম থেকে উঠতে আজ দেরি হয়ে গেছে রাতে আম্মুর সাথে কথা বলতে বলতে ওর মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে আজকে যে আনুশাকে বাসা থেকে নিয়ে আসার দায়িত্ব স্যার। তাকে দিয়েছিলো
তানভীর : আম্মুউউউউউউ
তানভীরের আম্মু: কিরে সকাল সকাল এই রকম ছিৎকার করছিস কেনো
তানভীর : করবো না, তুমি জানো কাল স্যার আমাকে আনুশাকে বাসা থেকে নিয়ে আসতে বলেছে, এখন কতো লেইট হয়েছে তুমি জানো
তানভীরের আম্মু: তুই ঘুমাচ্ছিস দেখে ডাকিনি,আর আনুশা কে নিয়ে আসতে হবে কেনো,ও কি কলেজ চিনে না নাকি,
তানভীর : ওহ আম্মু তোমার সাথে কথা বলে টাইম নস্ট করতে চাই না, আমি গেলাম
তানভীরের আম্মু: কিরে ফ্রেশ তো হবি,নাস্তা খাবি, তার পর তো যাবি
তানভীর : ও তো কিছু করার সময় নেই
তানভীরের আম্মু: আজ কলেজ এ আমি ও যাবো তোর সাথে
তানভীর : তুমি যাবে মানে?
তানভীর আম্মু: কেনো আজ তো কোন ক্লাস হবে না অনুষঠানে কি আমার যেতে মানা( আমার ছেলে সারা দিন আনুশা আনুশা করে মরছে এই আনুশাকে না দেখে তো আমি শান্তি পাবো না)
তানভীর : ঠিক আছে আম্মু তুমি আসো,আমাকে আগে যেতে হবে কাজ আছে বললাম না
এই বলে তানভীর বেরিয়ে পড়লো
তানভীর : আনুশার অবস্থা বুঝতে পেরে,, বল্লো আসলে স্যার আমাকে পাঠিয়েছে তোমাকে নিয়ে যেতে
আনুশা: মনে মনে স্যার কি আর লোক পায়নি,ওকেই পাঠাতে হলো,আর কাউকে পাঠানোর কি দরকার ছিলো আমরা নিজেরাই চলে যেতে পারতাম
তানভীর : আনুশা কে চুপ করে থাকতে দেখে বল্লো কি হলো গাড়িতে উঠো
আনুশার আম্মু: কিরে এতো কি ভাবছিস, ছেলেটা কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে
আনুশা: কিছু না বলে চুপ চাপ গাড়িতে গিয়ে বসলো
প্রায় ঘন্টা খানেক পর ওরা পৌছে গেলো
প্রিন্সিপাল স্যার: ছেলে টাকে আনুশাকে নিয়ে আসার দায়িত্ব দিয়েছিলাম ছেলেটা এখন ও নিয়ে আসলো না কেনো,এ দিকে সবাই ওর সাথে কথা বলার জন্য পাগল করে দিচ্ছে আমাকে
আনুশা: তার মাকে নিয়ে প্রথমে অফিস রুমে গেলো প্রিন্সিপাল স্যার এর সাথে দেখা করতে
প্রিন্সিপাল স্যারর: কিরে তোর আসতে এতো দেরি হলো কেনো আজকের দিনে তো তোর সবার আগে আসার কথা
আনুশা: সরি স্যারর
প্রিন্সিপাল স্যার:ঠিক আছে ঠিক আছে,আর দুঃখ প্রকাশ করতে হবে না,সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে আপনি ওদের সাথে দেখা করে আমাকে উদ্ধার করুন
আনুশা: হেসে উঠে ঠিক আছে স্যারর এখনি যাচ্ছি
স্যারর:দাড়া আমি ও যাবো সবাইকে বলতে হবে না তা ছাড়া অনেক গন্য মান্য লোক আছে সেখানে,জানিস আমি তোর কথা জেলা মন্ত্রী সাহেব এর কাছে বলেছি, উনি তো তোর সাথে কথা বলার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছে
আনুশা: ঠিক আছে স্যারর চলুন,সবার সাথে দেখা করে কথা বলে আনুশার খুব ভালো লাগলো,কিন্তু স্যারর আমার কাছে থেকে দূরে গিয়ে জেলা মন্ত্রীর সাথে কি বলছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না দূর যা ইচ্ছে তাই বলুক আমার কি,আমি গিয়ে দেখে আসি মা কি করছে
প্রিন্সিপাল স্যারর: আনুশার সব কথা মন্ত্রী সাহেব কে খুলে বল্লো
মন্ত্রী সাহেব: শুনে কিছুক্ষন দুঃখ প্রকাশ করলেন,তার পর একটু ভেবে বল্লো আমি আপনার স্টুডেন্ট, মানে আমার জেলার এতো ভালো একটা স্টুডেন্ট এর জন্য কিছু করতে চাই
প্রিন্সিপাল স্যারর: খুশি খুশি মনে মন্ত্রি সাহেব দিকে তাকালো
মন্ত্রী:আমি আনুশা কে দেশের বাইরে পড়তে পাঠাবো সম্পূর্ণ ফ্রি তে ওর কোন খরচ দিতে হবে না সব দায়িত্ব আমার
প্রিন্সিপাল স্যার:খুশি হয়ে বলল তা হলে আমি গিয়ে আনুশা কে খবর টা দিয়ে আসি,
মন্ত্রী সাহেব: না,না,আপনি এখন ওকে কিছু বলবেন্না অনুষঠান শুরু হওয়ার পর অফার টা আমি ওকে দিবো
★
তানভীর : ওহ নো আনুশা এতো ব্যাস্ত যে ওর সাথে একটু কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি না কি যে করি,ঠিক আছে ওর সাথে পরে কথা বলবো আগে
দেখে আসি তো আম্মু কি করছে, নিষেধ করলাম আম্মু তুমি এসো না,কে শুনে কার কথা উনি আসবেই
তানভীরের আম্মু: এতক্ষন বসে বসে আনুশার মায়ের সাথে কথা বলছিলো,
আপনার মেয়ে তো খুব ভালো পড়াশুনায় তাই না,নিশ্চয় আপনি ওকে এই অনুপেরনা দিয়েছেন
আনুশার আম্মু:আসলে ঠিক তা নয়,আমি কখন ও ওকে পড়া শুনা করতে হবে বা করিস না এই সব কিছু বলিনি,ও সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছে তে চলা ফেরা করেছে আমি কখনই ওকে কিছুতে বাধা দিতাম না,আর পরিস্থিতি এমন ভাবে তৈরী হলো যে চাইলে ও পিছু হাটতে পারেনি,ওকে এগিয়ে যেতেই হয়েছে
তানভীরের আম্মু: কি এমন হয়েছে জানতে পারি আমি
আনুশার আম্মু: ওসব কথা থাক সেগুলা এখন না বলি
এমন সময় তানভীর এলো, আরে আম্মু তুমি এখানে আমি তোমায় কখন থেকে খুজছি,যাই হোক অনেক হয়েছে এবার তুমি বাসায় যাও আর এখানে থাকতে হবে না
তানভীরের আম্মু: সে কিরে যাকে নিয়ে এতো আয়োজন আমি তো এখন ও তাকেই দেখিনি, আর আমি তোর এই আন্টির সাথে কথা বলছি তুই যা তো
তানভীর : তুমি কি ভুলে গেছো আজকে আব্বুর দেশে আসার কথা, আর তাকে আনতে এয়ারপোর্ট তুমি যাচ্ছো
তানভীরের আম্মু: আমি তোর আব্বু কে ফোনে বলে দিয়েছি উনি নিজেই চলে আসবে
তুই বরং আনুশা কে একটু ডেকে দে আমি ওর সাথে একটু কথা বলবো
তানভীর আনুশার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো উনি কিছু বলবেন এই আশায়
আনুশার আম্মু: যাও বাবা আনুশা কে ডেকে দাও তোমার মা ওর সাথে দেখা করতে চায়
তানভীর : মায়ের কথা মতো আনুশাকে খুজতে বের হলাম কই পাই ওকে,উনি তো এখন একজন সেলিব্রেটি হয়ে গেছে উনাকে পাওয়া কি এতো সহজ
অবশেষ এ আনুশা কে খুজে পেলাম,স্যার এর সাথে কথা বলতেছে,এই মেয়েটার পিছনে সারা দিন স্যার লেগে থাকে কেনো সেটাই বুঝি না,আমি ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম
স্যার : তানভীর তুমি কি কিছু বলবে,
তানভীর : স্যার আনুশাকে ওর মা ডাকছে(মিথ্যা করে বললাম,আমার মায়ের কথা শুনলে হয়তো আনুশা না যেতে পারে)
আনুশা: ও মা আমায় ডাকছে, নিশ্চয় মায়ের শরির খারাফ লাগছে আমি গিয়ে দেখে আসি মাকে,
স্যার: হুম যা, তানভীর তুমি আমার সাথে এসো কিছু কাজ আছে
আনুশা: মা আমায় ডেকেছো কেনো তোমার শরির ঠিক আছে তো
আনুশার আম্মু: আমি ঠিক আছি,তোর এই আন্টি টা তোকে দেখতে চাইলো তাই ডাকলাম
তানভীরের আম্মু: ( আনুশা কে দেখে মনে মনে বলছে স্বাদে কি আমার ছেলে আনুশার জন্য পাগল হয়েছে,এই রকম একটা মিষ্টি মেয়ের প্রেম এ যে কেউ পড়ে যাবে)
আনুশা: আন্টি মানে, মা তুমি কি উনাকে ছিনো
আনুশার আম্মু: উনি হচ্ছে যে ছেলেটা আজ বাসা থেকে আমাদের নিয়ে এসেছে তানভীর, ওর আম্মুন
আনুশা:(ওও তা হলে আজ পুরো গুষ্টি সহ কলেজ এ এসেছে মতলব টা কি এদের)মুখে সালাম। করলো,মনের কথা গুলো মনেই রেখে
তানভীরের আম্মু: বাহ কি লক্ষি মেয়ে তুমি বস মা বস, আমার পাশে এসে বস,তোমাকে ভালো করে দেখি,
আনুশা: মনে মনে উফফ আদিক্ষেতা দেখে আর বাচি না
তানভীর এর আম্মু: জানো মা আমার না সব সময় একটা মেয়ের সখ ছিলো, আজ তোমাকে দেখে আমার সে ইচ্ছে টা পুরোন হবে মনে হচ্ছে
আনুশা: কিছু বললাম না শুধু মুচকি একটা হাসি দিলাম, আন্টি আমি তা হলে আসি এখন আপনি মায়ের সাথে কথা বলুন
উফফফ বাছলাম, মা ছেলে দুজনেই একরকম,একটু বেশি কথা বলে,।
তানভীর : যাক আনুশাকে এখন একটু একা পেলাম একটু কথা বলে আসি,এই আনুশা
আনুশা: মায়ের থেকে উদ্ধার হলাম, এখন ছেলে শুরু করছে,না দাঁড়িয়ে কোন উপায় নেই
তানভীর : আনুশা তোমাকে না আজকে,,,,,,,,,,,,,,
আনুশা: আমাকে আজকে কি?
তানভীর : না মানে তোমাকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে
আনুশা:?????????
তানভীর : এই প্লিজ প্লিজ তুমি রেগে যেওনা কি করবো বলো সত্যি কথা
মুখ পসকে বেরিয়ে গেছে আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না এই কান ধরেছি
আনুশা: তানভীরের অবস্থা দেখে না হেসে পারলাম না,একটা হাসি দিয়ে
ওখান থেকে চলে আসলাম
তানভীর : তুমি নিজে ও জানো না হাসলে তোমাকে কতো সুন্দর লাগে,এই প্রথম তোমাকে হাসতে দেখলাম আর আমি যে তোমার প্রেম এ আবার পড়ে গেলাম।
আনুশা: ওখান থেকে চলে আসাতে ভালো হয়েছে,আমি কারো উপর দূর্বল হতে চাই না, ছেলেরা ভালোবাসার ফাদে পেলে,পরে ভালোবাসার সম্মান। রাখতে জানে না এরা ভালোবাসার যোগ্য নয়
অন্নি: তা তো রাখবি,তবুও,, মানে তোর জীবনে কিছু হওয়ার ইচ্ছে নেই,এই ধর ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ইটস ইটস,আর কি
আনুশা: উফফ অন্নি এই সব ফালতু কথা বলা বন্ধ করবি
অন্নি: ফালতু হতে যাবে কেনো রে, কথা গুলো মোটেও ফালতু নয়
আনুশা: তুই মনে হয় জানিস না অন্নি, স্বপ্ন দেখা আমি কবেই ছেড়ে দিয়েছি,স্বপ্ন শুধু মানুষকে নিস্বঃ শব্দ ভাবে আঘাত করতে জানে, কখনো পূরন হয় না
অন্নি: সত্যি আনু তুই অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছিস,আমার তো এখন ডাউট হচ্ছে তুই আনুশা তো, নাকি অন্য কেউ,তুই তো আমাকে বলতি অনু স্বপ্ন তো মধ্যভিত্ত ফ্যামেলির মানুষেরা দেখে যা তাদেরকে বাচতে শিখায়
আনুশা: পুরনো সব কিছু মনে করতে চাই না আসলে তখন বুঝতাম না, জীবন কি?,স্বপ্ন কি?এখন বুঝি জীবন মানে যুদ্ধ করা,আর স্বপ্ন দেখা হচ্ছে জীবনের সব ছেয়ে বড় ভুল
অন্নি:(আজকের দিনে তো আমি আনুশার মনটা আর ও খারাফ করে দিলাম,ইসস অতিত নিয়ে কথা বলা একদম উচিত হয়নি আমার) ওকে আনু এগুলা বাদ দে তো তোকে একটা খবর দেয়ার ছিলো
আনুশা: এখন আর কোন কিছুতেই খুশি হইনা,জীবনকে জীবনের মতো করে চলতে দিই।
অন্নি: তোকে তো আমি এই প্রথম দেখছি না সেই ছোট বেলা থেকেই আমরা এক সাথে পড়ছি,শুধু তাই নয় আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড সেই ক্লাস ওয়ান থেকে,তোর মনে আছে, স্যার রা আমাদের কতো বকা দিতো, আমরা কেনো এক সাথে বসি,আর কথা বলি সারা ক্লাস,এ
আনুশা: সে গুলো ভুলার মতো নয়,আবার যে মনে রাখতে হবে তেমন ও কোন কথা নেই,আচ্ছা অনেক কথা বললি আজ এইবার রাখিরে আমার এখন ভালো লাগছে না,
অন্নি: ইসস মেয়েটার মন খারাফ করে দিলাম এখন তো আর কল ও রিসিভ করবে না নিশ্চয় খুব কাঁদবে এখন
আনুশা:(মনে মনে) অন্নি কেনো তুই আমার পিছনের স্মৃতি মনে করিয়ে দিলি,
আমি তো এই সব কিছু ভুলে থাকতে চাই,কেনো মনে করিয়ে দিলি,খুব সিম্পল একটা স্বপ্ন ছিলো সংসার করবো,নিজের বরকে খুব ভালোবাসবো,আর বিনিময়ে তার থেকে অনেক ভালোবাসা আদায় করে নিবো,আমাদের ছোট্ট একটা সুখের সংসার থাকবে,আর একটা লিটল প্রিন্সেস, যে সারা ঘরময় আলোকিত করে গুরে বেড়াবে,এই এতো সব নাম কামানো তো আমার স্বপ্ন ছিলো না, নিহাল, নিহাল কেনো তুমি আমার সাথে এমন করলে, একটা সুযোগ দিয়েই দেখতে তোমাকে কতোটা নিস্বঃ সার্থ ভাবে ভালোবাসতাম,ভালোবাসায় তোমাকে কানায় কানায় ভরিয়ে দিতাম,
না না না তোমরা পুরুষজাতি কখন ও কারো ভালোবাসার যোগ্য ই না , তোমরা কারো জীবন সুন্দর করে ঘড়তে পারো না,বরং জীবনের সব গুলো রঙিন রঙ গুলো কে সরিয়ে, সাদা কালো করে দিতে পারো, জীবন সাগরের,মাঝখানে পেলে চলে যেতে পারো একবার ও পিছনে তাকিয়ে দেখনা , যাকে সাগরে পেলে এসেছ সে মরে গেছে নাকি, ডুবে ডুবে ভেসে আছে,,আনুশা ভিড় ভিড় করে এগুলা বলছে আর কাঁদছে,হঠাৎ কারো স্পর্সে আনুশা কান্না থামিয়ে দিলো,বুঝতে পারলো মা ছাড়া কেউ নয়,মায়ের সামনে ভেঙে পড়লে চলবে না,আনুশা আস্তে করে চোখের পানি মুছে নিলো
আনুশার আম্মু:কিরে মা কাঁদছিস কেনো খুব মন খারাফ তাই না, আসলে এমন টা তো হওয়ার ই কথা, তোর বাবা যে আমার সাথে তোদের সাথে বেঈমানি করেছে,মানুষ টা কি করে পারলো তার মেয়েদের পেলে চলে যেতে,তুই জানিস তুই তখন ছোট ছিলি,বাবা ছাড়া কিছু বুঝতিই না তুই,সারাদিন বাবার কাছে যাবো বলে পাগল করে দিতি,আর তোর বাবার একটু সময় ছিলো না তোর জন্য,শিলা সুমি তখন বুঝতে শিখেছে,ওরা তোর বাবার এই আচরণ কে খুব। ভয় করতো একদিন তোর বাবা ঘুমাচ্ছিলো,তুই যেয়ে ঘুম থেকে জাগালি আর বললি তুই আইসক্রিম খাবি,উনি সেদিন তোকে ও মেরেছে আর আমাকে ও,যখন আমাকে মারছিলো, তোর বাবা,। তখন শিলা সুমি এক কোনায় বসে কান্না করে,আর তুই তোর বাবার কাছে কান্না করতে করতে বলছিস বাবা তুমি মাকে মেরো না,আমি কোন দিন তোমার কাছে কিচ্ছু চাইবো,না
আনুশা:আচ্ছা মা বাবারা তো অনেক ভালো হয় আমার বাবা এমন ছিলো কেনো
আনুশার আম্মু: তোর বাবা এমন ছিলো না যখনই পর মহিলার নেশা মনে ডুকে যায় তখন থেলে পালটে যায় তোর বাবা
আনুশা: থামো মা আর বলতে হবে না শুনতে চাই না এই সব কথা,,ভুলে থাকতে চাই সব কিছু,ভুলে থাকতে চাই অতিত কে, মা মেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, (কাঁদুক কাদতে দিন ওদের কাঁদলে কষ্ট টা কিছু হলে হালকা মনে হয়)
★
তানভীর : যাক বাবা স্যার। যে ভাবে যে ভাবে বলেছে,সব ঠিক ঠাক মতো করতে পেরেছি এই অনেক,আনুশার এমন একটা দিনে কোন কিছুর ঘাপলা থাক এই টা আমি চাই না,এখন বাসায় ফেরা যাক
তানভীরের আম্মু: অনেক রাত হলো ছেলেটা এখন ও ফিরছে না কেনো,একটু চিন্তা মুক্ত হলাম তানভীরের আব্বু সব কিছু মেনে নিয়েছে বরং এই সময় ছেলের পাশে বন্ধুর মতো থাকতে বলেছে বার বার করে বলেছে কোন মেণ্টাল প্রেশার যেন না দিই,উনি যখন মেনে নিয়েছে তখন আমি আর কি বলবো, আর ঐ মেয়েটার ভুত ওর মাথা থেকে নামাবো কি করে, দরজায় টোকা পড়েছে মনে হয় তানভীর এসেছে যাই দরজা টা খুলে দিই
তানভীর :তুমি ঘুমাওনি আম্মু,
তানভীরের আম্মু: তুই দুপুর থেকে না খেয়ে আছিস আমি ঘুমাই কি করে বল
তানভীর :ওহ আম্মু তুমি আমাকে নিয়ে এতো ভেবো না ত আমি এমনিতেই ঠিক আছি
তানভীরের আম্মু: কতো টা ঠিক আছিস সে তো দেখতেই পাচ্ছি,চল খাবি,, আজ নিজের হাতে তোকে খাইয়ে দিবো
তানভীর : আম্মু আমি তোমাদের স্বপ্ন টা পূরন করতে পারিনি,প্লিজ তোমরা আমার উপর রেগে থেকো না
তানভীরের আম্মু:দূর পাগল ছেলে,, এই বার পারিসনি তো কি হইছে,পরের বার পারবি,আমরা সব সময় তোর পাশে আছি
তানভীর : আম্মু তুমি আব্বুকে কথা টা বুঝিয়ে বলো,উনি যেন রাগ না করে
তানভীরের আম্মু,,উনাকে আমি বলেছি উনি সব স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিয়েছে তুই এখন এগুলা নিয়ে ভাবিস না,,খাওয়া শেষ তানভীর ঘুমাতে গেলো,তানভীরের আম্মু তানভীরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে
রশীদ আলমের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে আফতাব হোসেনের দারুণ হয়রানি হয়েছে! এই লোক তো তার চেয়েও কিপটে মনে হচ্ছে। এতো ভিতরে কেউ বাড়ি করে! সে অবশ্য নিজেও তো বেশ ভিতরে বাসা ভাড়া করে থাকেন। কিন্তু রশীদ আলম সাহেব তাকেও হার মানিয়েছেন বটে! তবে মধ্যবিত্তরা ইচ্ছাকৃত ভাবে কিপটে হয়না। হাজারটা কারণ থাকে। কলিং বেলে চাপ দিয়ে বুঝতে পারলেন, কলিং বেল নষ্ট বা নেই। সুইচ আছে, এতে বোঝা যায় পূর্বে কলিং বেল ছিলো। রশীদ আলম সাহেব সত্যিই আর্থিক সংকটে থাকেন।
দরজায় টোকা দিলেন। তিন চার বার দেয়ার পরে দাঁড়িয়ে রইলেন। ভিতরে মানুষ থাকে কোনো হেলিকপ্টার না, যে উড়ে উড়ে আসবে। নিজেকেই বোঝাতে লাগলেন। কেনো যেন সবকিছুতেই অস্থিরতা কাজ করছে তার৷ কারণ টা খুঁজে পাচ্ছেন না।
১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরে আবার টোকা দিলেন।
বাড়ির লোকজন কি ঘুমায় নাকি? আজব ব্যাপার তো! একজন মানুষ আসবে সেটা তো খেয়াল রাখতে পারে।
– আজকে সব বিষয়ে আমার অস্থিরতা লাগছে। তাই কিছু মনে করতে বাধ্য হচ্ছি। ভেতরে আসা যাবে কি?
রশীদ আলম সাহেব দরজা ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললেন
– অবশ্যই। আপনার জন্যই তো অপেক্ষা করছি!
– তাই নাকি? অপেক্ষা করছিলেন তাই দরজা খুলতে এতো দেরি। আর অপেক্ষা না করলে কী হতো কে জানে!
– আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
– মেনে নিলাম।ফারিয়াকে ডেকে আনুন আর তার মাকেও।
রশীদ আলম ভেতরের ঘরে চলে গেলেন। গেলেন তো গেলেনই আর খোঁজ নেই।
আফতাব হোসেন নিজেকেই গালি দিলেন। তার আসা যে ঠিক হয়নি বুঝতে পারছেন।
না এসেও উপায় ছিলো না। এইটুকুন একটা মেয়েকে এভাবে ফেলা যায়না।
প্রায় ১০ মিনিট পরে রশীদ আলম চা, বিস্কুট, চানাচুর নিয়ে এলেন। পিছনে গুটি গুটি পায়ে ফারিয়া এসে বাবার গা ঘেঁষে দাঁড়ালো।
আফতাব হোসেন বললেন
– এসবের প্রয়োজন ছিলো না। বেশি করে ফেলছেন।
– আপাতত নাস্তা করেন। রাতে খেয়ে যাবেন। ফারিয়ার আবদার!
ফারিয়া নিচু স্বরে বলল
– আপনি না খেয়ে যাবেন না।
বাসার ভেতর থেকে বৃদ্ধা নারী চেঁচিয়ে বললেন
– ঔ মাইয়ার কথায় মন গলতে দিয়েন না ডাক্তার সাহেব। ওর ঘাড়ে জ্বীন আছে জ্বীন। গঞ্জু ফকীর রে দেখাইছিলাম হে কইছে ঘাড়ে জ্বীনের মন্ত্রী বসেছেন। এই মেয়েকে ছাড়বেনা। আপনি ডাক্তার মানুষ আপনি জ্বীন-ভূত ছাড়াবেন ক্যামনে বলেন?
রশীদ আলম লজ্জায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছেন না। তার মা যে এসব বাজে কথা বলে বসবেন বুঝতে পারেননি।
রশীদ আলম আমতা আমতা করে বললেন
– ওসব কথায় কান দিবেন না। মা তো বয়স হয়েছে তাই আরকি…..
বৃদ্ধা চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন। আফতাব হোসেন একটি কথাও বুঝতে পারছেন না। এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথা বললে, সেই কথার আগাগোড়া বোঝা মুশকিল। আফতাব হোসেন ব্যাপারটাকে অগ্রাহ্য করে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।
– আপনার নাকে চিল্লাতে দিন। একাই থেমে যাবে। আর আমাকে নিয়ে ভাববেন না। আমি আপনাদের পারিবারিক বিষয় টাকে অগ্রাহ্য করতে পারবো।
রশীদ আলম নীরবে কোনো প্রতিউত্তর না দিয়েই বসার ঘর ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন।
ফারিয়া, আফতাব হোসেনের সামনে চেয়ার নিয়ে বসলো।
– চা খাবে মামনী?
ফারিয়া মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালো।
– আজকে মনে হচ্ছে বেশ সুস্থ আছো?
– জি, আজকে গন্ধটা নাকে কম আসছে। ব্যথাও কিছুটা কমেছে।
আফতাব হোসেনের মনে হলো মেয়েটি পুরোপুরি সুস্থ না। ভান করছে সুস্থ হওয়ার। যেমনটা মধ্যবিত্তরা সুখী হওয়ার ভান করে। মেয়েটার চোখ তীব্র কষ্ট ধরে আছে। গলার স্বরটাও সুস্থ দের মতো না। মেয়েটি এখন তাকে মিথ্যা বলেছে।
– স্বপ্নটা আবার বলোতো।
– অন্যদিন বলি? আজকে আমার কিছুটা সুস্থ লাগছে।
– তুমি মোটেও সুস্থ না। তোমার চোখ আর গলার স্বর প্রমাণ করে তুমি অসুস্থ। গন্ধটা কম লাগছে বিধায় নিজেকে সুস্থ মনে হচ্ছে।
– সুস্থ তো হতে পারছিনা।
– স্বপ্নটা আজ বলবা না বুঝলাম তবে আগামীকাল বলতেই হবে। আমি তোমার বাবাকে ফোন করবো তখন বলতে হবে।
– আচ্ছা।
– কিছু প্রশ্ন করবো সঠিক উত্তর দিবে। মিথ্যা হলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবোনা।
– আমি যদি মিথ্যা বলি আপনি ধরতে পারবেন?
– মামনী, একটু আগেও তো ধরলাম!
ফারিয়া খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো।
ভেতরের ঘরে বসে রশীদ আলমের মা ফারিয়ার এরকম হাসি শুনে বেশ বিরক্ত হলেন। কিছু বলতে চাচ্ছিলেন কিন্তু বললেন না। কারণ ডাক্তার তাকে একেবারেই পাত্তা দেননি।
– তোমার স্কুলে যেতে ইচ্ছা করেনা?
– করে।
– খেলতে?
– করে। আমাদের বাড়ির উত্তর পাশে একটা মাঠ আছে। এই এলাকার সবাই ওখানেই খেলে।
– তোমার বন্ধু বান্ধবী নেই? তোমাকে দেখতে আসেনা?
– স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেবার পরে ওরা আসতো। কিন্তু দাদী তাদের কে আসতে নিষেধ করেছেন। আমার ঘাড়ে নাকি জ্বীন আছে। সেই জ্বীন ওদের ক্ষতি করবে।
লিমা দেশি মুরগীর ঝোলের লবণ স্বাদমতো হয়েছে কিনা দেখছিলেন। স্বামীকে লজ্জিত অবস্থায় রান্নাঘরে আসতে দেখে খুব একটা অবাক হলেন না। লিমা জানতেন তার শ্বাশুড়ি আম্মা আজকে বড় কিছু ঘটনা ঘটাবেন। বড় কিছুর তুলনায় এই ঘটনাটি খুব ছোট্ট। স্বামীকে বললেন
– শুকুর করুন যে অল্পের উপর দিয়েই গেছে। এর চেয়ে বাজে কিছু ঘটতে পারতো।
– রান্না হয়েছে?
– প্রায়ই শেষ। কেনো?
– ডাক্তার সাহেব তোমার সাথে কথা বলবেন।
– আমার সাথে আবার কীসের কথা!
– তোমার মেয়ের সম্পর্কেই জানতে চাইবে।
লিমা গুছিয়ে নিচ্ছে কী কী বলবে। আর কীভাবে কথা বলবে। একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলবে সে। ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে।
ডাক্তার সাহেবের সামনে লিমা একা বসে আছেন। ডাক্তার সাহেব তাকে ২০ মিনিট যাবত বসিয়ে রেখেছেন কিন্তু একটা প্রশ্ন পর্যন্ত করেননি। সে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতেও পারছেন না।
আফতাব হোসেন লিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন
– আমি দুঃখিত আপনাকে এভাবে বসিয়ে রাখার জন্য।
লিমা বললেন
– সমস্যা নেই।
– কী যে বলেন গৃহিণী দের আবার সমস্যা নেই। ৫ মিনিটও আপনাদের বসে থাকার উপায় নাই। সেখানে ২০ মিনিট, যাইহোক।আসল কথায় আসি।
– ফারিয়া তো আপনার সৎ মেয়ে, তাই না?
প্রশ্নটা করে আফতাব হোসেন লিমার দিকে তাকালেন। কষ্টের ছায়া পুরো চোখ মুখ জুড়ে খেলা করছে। মনে হচ্ছে একটু পরেই কেঁদে ফেলবে। ঠিক তাই হলো, চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু হলো।
আফতাব হোসেন বললেন
– প্রথম যেদিন স্বপ্ন দেখেছিলো সেদিনের ঘটনা মানে স্বপ্ন দেখার আগে বা পরে কী কী করেছিলো ফারিয়া একটু বলবেন? আপনি তো ওর মা আপনি ভালো জানবেন।
চোখের পানি না মুছেই লিমা বলতে শুরু করলেন
– স্বাভাবিক কাজই তো করেছে। স্কুলে গিয়েছিল। তারপর এসে খেয়ে ঘুমালো। ঘুম থেকে উঠে গোসল করে পড়তে বসলো। বিকালে খেলতে গেলো। প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যায় ফিরে আসলো। সন্ধ্যায় নাস্তা করে আবার পড়তে বসলো। তারপর রাতে খেয়ে ঘুম। কিন্তু ভোরের দিকে ওর বিকট চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙে। প্রায় দৌঁড়ে আমি ওর ঘরে গেলাম। ফারিয়া ওর বিছানার উপর বসে ভয়ে কাঁপ ছিলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ও চিৎকার দিয়ে বললো
– মা ব্যথা লাগে। মা পুরো শরীরে আমার ব্যথা।
আমার মেয়েটার কথা কেউ বিশ্বাস করলো না। সবাই ওকে মিথ্যাবাদী বলতে শুরু করলো। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন অবস্থা খুব খারাপ হতে লাগলো তখন ওর বাবা বিশ্বাস করতে শুরু করলেন।
লিমা চুপ করে গেলেন।
আফতাব হোসেন কিছুক্ষণ ভেবে বললেন
– স্কুলে খারাপ কিছু হয়েছিল?
– না। ও আমাকে সবকিছু শেয়ার করতো। ভালো লাগা, খারাপ লাগা সব। স্কুলে কিছু হলে অবশ্যই আমাকে বলতো।
– বাসায় কিছু বা খেলতে গিয়ে?
– নাহ।
– আপনি ওকে জিজ্ঞেস করবেন অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে কিনা ওর সাথে। আমার জানা টা খুব দরকার। আচ্ছা ওর দাদীর কাছে গল্পটল্প শুনতো বা আপনার কাছে না কারো কাছে?
– ও ছোটো বেলা থেকেই দাদীর কাছ থেকে দূরে থাকতো। আসলেই আমিই দূরে রাখতাম। ওর দাদী ওকে ঠিক পছন্দ করেন না। আমি গল্প বলতাম।
– কীরকম গল্প? ভূতের?
– নাহ, রাজা রাণীর গল্প বা টোনাটুনির গল্প এসব। আমার বাবা নিষেধ করে দিয়েছিলেন বাচ্চাদের যেন ভূতের গল্প না শোনাই।
– কোনোদিন ওর মাঝে অস্বাভাবিক কিছু দেখেছেন বা অস্বাভাবিক কিছু করেছে?
– না।
– আমার ধারণা আপনি ওর সবচেয়ে কাছের, খুব কাছের। আপনাকে আমি ২ দিন সময় দিলাম, খুঁজে বের করুন পূর্ব স্মৃতি থেকে।
আমি আজ উঠি।
– না না খেয়ে যাবেন। যাই রান্না করেছি তাই খেয়ে যাবেন।
প্রিন্সিপাল : তা বললে কি আর হয়রে মামুনি,তুই তো এখন আমাদের সবার গৌরব, আচ্ছা অনেক কথা হলো আজ তা হলে আসি,
আনুশার আম্মু: আপনারা এতো দূরর কষ্ট করে এলেন, আপনাদের কে ভালো করে,,
প্রিন্সিপাল : না না আপনি এতো ব্যাস্ত হবেন্না,আমরা এমনিতে ই অনেক খুশি,(আনুশার মায়ের কথা টা প্রিন্সিপাল স্যারর বুঝতে পেরে থামিয়ে দিলেন)আচ্ছা কাল আপনি ও আপনার মেয়ের সাথে যাবেন আপনি ও কিন্তু ইনভাইটেড
আনুশা আম্মু: কিচ্ছু বললেন না,(মনে মনে আল্লাহর কাছে শত কুটি শুকরিয়ে আদায় করলাম)
আনুশা: স্যার রা চলে গেছে,এখন আপুদের এই খবর টা জানাই কি করে,মোবাইলে যে ব্যালেন্স শূন্য, (মন খারাফ করে বসে আছে আনুশা,আজকের এই দিনে ও টাকা নেই হাতে, এই ভেবে মন টা খুব খারাফ)
#
তানভীর : এতো কিছু ভিতরে আনুশার সাথে একটু ও কথা বলতে পারলাম না,,ঠিক আছে কোন ব্যাপার না,আজকের, আর কালকের এক সাথে দুই দিনের কথা ওর সাথে বলবো কাল,, এখন বাসায় যাই
তানভীরের আম্মু: ছেলেটার যে কি হলো ফোনটা ও রিসিভ করছে না, কি এলো রেজাল্ট এ কিছুই জানালো না কি যে করি
তানভীর : খুশি খুশি মনে বাসায় ডুকলাম
তানভীরের আম্মু: কিরে এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো তোকে, বলনা রেজাল্ট কেমন হলো নিশ্চয় অনেক ভালো তাই না
তানভীর : ওহ আম্মু আমার কথা বাধ দাও তো তুমি জানো আজ কি হয়েছে।
তানভীরের আম্মু: তুই না বললে জানবো কি করে
তানভীর : আনুশা সবার প্রথম হয়েছে শুধু তাই নয় পুরো জেলা দিয়ে প্রথম স্থান আনুশা পেয়েছে
তানভীরে আম্মু:সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু তোর রেজাল্ট কি, সেটা তো বলবি,(তানভীর যেনো ওর মায়ের। কথা শুনতেই পাচ্ছে না)
তানভীরের আম্মু:ছেলেটার যে কি হলো, কি জানতে চাইছি, আর ছেলেটা কি করছে, ওর মাথা ঠিক আছে তো
হ্যারে তানভীর আমি তোর কথা জানতে চাই আনুশার কথা নয়,বল আম্মুকে কি রেজাল্ট আসলো তোর
তানভীর : কিছু বলতে যাবে অমনি বাসার দরজাতে টোকা পড়লো, আম্মু যাই দেখে আসি কে আসছে
তানভীর দরজা খুলে দেখলো তানিম আসছে
তানভীর : কিরে তুই কি মনে করে এলি,
তানিম: এলাম আর কি, না এলে তো আর তোর পাগলামি দেখতে পারতাম না,রেজাল্ট পূরো এফ। তাতে ও তোর মধ্যে কোন এফেক্ট পড়েনি তুই আনুশার জন্য পাগল হয়ে আছিস
তানভীরের আম্মু:কিইইই তানিম তুমি কি বললে
তানিম: কেনো আন্টি তানভীর আপনাকে কিছু বলেনি, ওর তো রেজাল্ট ই আসেনি
তানভীরের আম্মু: স্তব্ধ হয়ে গেলাম ছেলের রেজাল্ট এর কথা শুনে,কিছু বলার ভাষা নেই
তানভীর : ওসব কথা ছাড় তুই কেনো এসেছিস সেটা বল
তানিম: প্রিন্সিপাল স্যারর তোকে ফোনে পাচ্ছে না তা আমাকে বল্লো তোকে বলতে কালকের অনুষঠানের কিছু আয়োজনে তোকে থাকতে বলেছে, তোকে আমি একটা মেসেজ সেন্ট করছি,সেখানে কি কি আনতে হবে সব লিখা আছে,অই গুলা স্যারর কে এনে দিবি
তানিম: আমি তা হলে যাই
তানভীর : মোবাইল টা চার্জে দিয়ে অন করে এক নজর দেখে নিলো লিস্টে কি কি আনতে হবে,তার পর মোবাইল রেখে বের হয়ে গেলো
তানভীরের আম্মু: কি বলবো আমি তানভীরের আব্বুকে কতো স্বপ্ন ওর ছেলেকে নিয়ে এখন,এখন কি হবে
★
আনুশা: রাত আটটা বাজলো এখন ও আমি কাউকে খবর টা জানাতে পারিনি,
আনুশার আম্মু: আল্লাহর খুশি সব মা, আজকের এমন একটা খুশির দিনে আমরা কাউকে খবর টা দিতে পারছি না,সবই আল্লাহর ইচ্ছে,আয় এশার নামায পড়ে নে
আনুশা: তুমি যাও মা আমি আসছি
রুমের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, রাতের শহরটা খুব ভালো লাগছে বিশেষ করে এই মন খারাফ এর রাতে, আজ তো খুব খুশি হওয়ার কথা আমার,তবু ও কেনো যেনো খুশি হতে পারছি না,মনে হচ্ছে কিছু একটা নেই, (আনুশার ভাবনায় পাটল পড়লো, কেন না মোবাইল টা বেজে উঠলো)
আনুশা: স্কিন এ তাকিয়ে দেখলাম অন্নি,কলটা রিসিভ করলাম
অন্নি:ঐ বান্দুরনি আজকের এমন একটা খুশির খবর আমাকে সবার আগে জানালি না কেনো,আমি একটু আগে খবর টা টিভি তে দেখলাম,তাই আমি এখন তোর উপর রেগে আছি
আনুশা:রাগ করিস না, ইচ্ছে থাকা সত্তেও তোকে জানাতে পারিনি,শুধু তুই কেনো,শিলা আপু, সুমি আপু, কাউকে বলতে পারিনি
অন্নি: যা আন্দাজ করেছি তা ই তো হলো তোর মোবাইলে ব্যালেন্স নাই,ওয়েট এ মিনিট,
আনুশা: যাহ লাইন কেটে দিলো কিছুক্ষন পর আনুশার মোবাইলে মেসেজ টোন বেজে উঠলো,আনুশা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে নিশ্চয় পাগলি টা মোবাইলে টাকা রিসার্চ করছে
এই বার কলটা আমি করি, সে কি কল টা কেটে দিলো,
অন্নি: আনুশা আমাকে কল করেছে কল কেটে দিয়ে নিজে কল করলাম,ঐতোকে কি আমাকে কল করার জন্য রিসার্চ করে দিয়েছি,তুই এই গুলা দিয়ে সুমি এন্ড শিলা আপুর সাথে কথা বলবি
আনুশা: কিন্তু ওদের সাথে কথা বলতে তো এতো টাকা লাগবে না
অন্নি: তো না লাগলে ওগুলা মোবাইলে থাক পরে দরকার হতে পারে, আচ্ছা বাদ দে এগুলা,বল আজ তোর কেমন লাগছে
আনুশা: কেমন লাগবে আবার,অন্যদিন যেমন লাগছে আজ ও তেমন লাগছে
অন্নি: বুদ্ধ অন্য দিন আর আজ এক হলো, তোর এই সাকসেস এ আমি কিন্তু খুব খুশি, কতটা খুশি তোকে বলে বুঝাতে পারবো না
নেক্সট প্ল্যান কি বল
আনুশা: কি আবার হবে কিছুই না,একটা জব খুজবো পেলে ভালো, না পেলে আর কি করার বল
অন্নি: কি যে বলিসনা তুই অনায়াসে যে কোন ভার্সিটিতে সান্স পাবি
আনুশা: এগুলা নিয়ে আমি ভাবি না রে, আমার ভাবনা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত যেন মাকে ভালো রাখতে পারি
মায়ের সে কি আনন্দ, অনেক দিন পর মাকে এতো খুশি হতে দেখলাম
আম্মু: কিরে শিলা এতো শুকিয়ে গেলি কেনো
শিলা: কই মা আমি তো ঠিকই আছি
আনুশা: আপু বুঝিস না,তুই যদি হাতি ও হয়ে যাস তার পরে মা বলবে না তুই এখন ও চিকন, আরেকটু মোটা হতে হবে,আনুশার কথা শুনে সবাই এক সংগে হেসে উঠলো
★
তানভীর : যাক বাবা এতো দিনে আনুশা কোথায় থাকে সেটা জানতে পারলাম
তানিম: এবার খুশি তো চল এবার বাসায় যাই
তানভীর : আর একটু থাকি না এখানে
তানিম: থেকে কি করবি,দেখ এখন সন্ধ্যা হতে চল্লো আনুশা এখন আর বের হবে না সো এখানে থেকে ও তোর কোন কাজ হবে না তার ছেয়ে ভালো বাসায় যাই
তানভীর : কি আর করা চল তা হলে, বাসার দিকে ফিরে গেলাম
শিলা:বাবা আনুশা তুই কবে থেকে কাজ করিস কি সুন্দর করে আমাকে ভাত বেড়ে খাওয়াচ্ছিস,আগে তো এক গ্লাস পানি ডেলে ও খাইতিস না
আনুশা: আপু আগে যেমন ছিলাম এখন ও কি তেমন থাকতে হবে, সব কিছুই পরিবর্তন শিল,আমি ও এর ব্যাতীর্কম নই
শিলা: তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো আনুশা আমি তো যাস্ট এমনি বললাম
আনুশা: কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু কর,
#
তানভীর : বাসায় এসে পৌছলাম
আম্মু: কিরে কই গেলি, এতো তাড়া তাড়ি চলে আসলি,বলে তো গেলি ফিরতে রাত হবে
তানভীর : আম্মু এতো কথা বলছো কেনো আমি বাসায় আসাতে কি তোমার প্রব্লেম হইছে,তা হলে বলো আমি আবার চলে যাই
আম্মু: যাক বাবা তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো,
তানভীর : তুমি রাগ করার মতো, কথা বললে আমি রাগবো না তো হাসবো,দেখো আম্মু এখন একটু চুপ থাকো, কোন প্রশ্ন করো না
এই বলে চলে এলাম রুমে দরজা লাগিয়ে দিলাম
তানভীরের আম্মু: ছেলেটার যে কি হয়েছে আজকাল কথায় কথায় রাগ দেখায়,সারা দিন কি এতো ভাবে,জিজ্ঞাস করলে ও বলে না ওর বাবাকে ব্যাপার টা জানাতেই হবে,আজকেই ফোন করলে বলবো
*
খাওয়া শেষ করার পর আনুশা বল্লো আপু তুই একটু রেস্ট নে আমি এগুলা পরিষ্কার করে আসছি কেমন
শিলা: বোন টা কে যতো দেখছি ততই যেন অভাক হচ্ছি,এ কি সেই বোন যে কি না কাজ করতে চাইতো না হাত ময়লা হয়ে যাবে সেই ভয়ে
আনুশার আম্মু: কিরে শিলা কি ভাবছিস
শিলা: মা আনুশা?
আনুশার আম্মু: আমার মেয়েটা আর আগের মতো নেই রে শিলা,অনেক পালটে গেছে কতোটা পাল্টেছে তা কেউ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবে না, মেয়েটা আমার বিতরে বিতরে গুমরে গুমরে মরছে,আর আমি মা হয়ে তা দেখছি
শিলা: মা কেদো না তো সব ঠিক হয়ে যাবে
আনুশা: হঠ্যাৎ এসে দেখি মার চোখে পানি,একি মা তুমি কাদছো কেনো
শিলা: মা আসলে ভাবছে উনার দুই মেয়ে উনার কাছে সুমি টা আসলে ভালো হতো ( কথা গুরানোর জন্য বললাম)
আনুশা: মা তুমি কেদো না তো যখন আমার একটা চাকরি হবে তখন বড় একটা বাসা নিবো, তখন তিন মেয়ে কে এক সাথে দেখবে,
আনুশার আম্মু: সুমি কে একটু ফোন কর তো,
আনুশা: আচ্ছা করছি,এই নাও রিং হচ্ছে রিসিভ হলে কথা বলবে
শিলা: চল আনু আমরা একটু কথা বলি দুই বোনের অনেক দিন পর দেখা হলো,
আনুশা: হুম তা যা বলেছো আপু তোমাকে পেয়ে আমি অনেক খুশি হয়েছি,আর ও খুশি হতাম যদি সুমি আপু ও একসাথে থাকতো।
এই ভাবে গেলো আর ও কিছু দিন
আজ আনুশাদের রেজাল্ট বের হবে আনুশা তো সকাল থেকে টেনশন এ শেষ গতো কাল শিলা আপু ও চলে গেছে, কতো করে বললাম থেকে যেতে থাকলো না দুলা ভাইয়ের খাওয়া দাওয়ার নাকি প্রব্লেম হচ্ছে,এখন যে কি করি রেজাল্ট জানি কেমন হয় উফফ আর ভাবতে পারছি না কান্না পাচ্ছে যদি রেজাল্ট ভালো না হয় তা হলে আমি কি করবো
আনুশার আম্মু: চিন্তা করিস না মা আমি জানি তোর রেজাল্ট ভালো হবে
আনুশা: মা তুমি বলছো ভালো হবে,আল্লাহ তুমি আমার মায়ের কথা টা কবুল করো এই ভাবে হতাসার মধ্যে আনুশার সময় যাচ্ছে,
#
তানভীর :: রেজাল্ট নিয়ে আমার কোন চিন্তা নাই,হয় তো রেজাল্ট আসবে না,নয় তো টেনে টুনে পাশ করা রেজল্ট আসবে,আমি জানি এক্সাম ভালো হয়নি,
তানভীর এর আম্মু: তানভীর জানিস তোর বাবা কাল দেশে আসছে
তানভীর : জানতাম না তো আম্মু তা আব্বু হঠ্যাৎ করে দেশে ফিরছে কেনো
আম্মু: হঠ্যাৎ করে আসতে যাবে কেনো অনেক দিন থেকেই আসার কথা চলছে,তোকে নাকি তোর আব্বু কয়েক দিন কল দিয়েছে,তুই নাকি তোর আব্বুর কল রিসিভ করিস নি,
তানভীর : হুম আম্মু আসলে কথা বলতে ভালো লাগেনি তাই
আম্মু: তুই জানিস তোর পরিক্ষার রেজাল্ট নিয়ে তোর আব্বুর কতো সপ্ন,ওনি আজই আসতে ছেয়ে ছিলো টিকেট পায়নি তাই কাল আসছে
তানভীর : মন খারাফ হয়ে গেলো কেননা আমি আব্বুর সপ্ন পুরন করতে পারবো না,
আম্মু: ভাবিস না বাবা রেজাল্ট ভালোই হবে আল্লার রহমতে
দুপুর ২ টার দিকে রেজাল্ট বের হলো
আনুশা: মা এবার তা হলে একবার কলেজ থেকে ঘুরে আসি,এতোক্ষনে রেজাল্ট বের হয়ে গেছে মনে হয়
আনুশার আম্মু: তা হলে যা,
এইদিকে তানভীর সকাল থেকেই কলেজ এ ওয়েট করতেছে রেজাল্ট এর জন্য,(কি ভাবছেন তানভীর নিজের রেজাল্ট এর জন্য অপেক্ষা করছে,না ও আনুশার রেজাল্ট দেখবে বলে অপেক্ষা করে বসে আছে)
তানভীর : যখন এ শুনলাম,নোটিশ বোর্ড এ রেজাল্ট শিট দিয়ে দিয়েছে তখনই ভোঁ দৌড় লাগালাম,
রেজাল্ট শিট দেখে তো আমি বলার ভাষা হারিয়ে পেলেছি,স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
তানভীর : তানিমের কথায় আমার ঘোর কাটলো, ওওও আমার টা আসেনি তা হলে, কোন ব্যাপার না তুই আনুশার রেজাল্ট টা দেখ তো
তানিম: আনুশার রেজাল্ট দেখে আমার কি হবে
তানভীর : ভ্রূ কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে, তুই বুঝবি না সর তো প্রিন্সিপাল স্যার এর কাছে যাবো এই বলে হাটা ধরলাম অফিস রুমের দিকে
তানভীর : মে আই কামিন
প্রিন্সিপাল স্যারর:ইয়েস
তানভীর : স্যারর আনুশার রেজাল্ট দেখেছেন
স্যার: হুম দেখেছি আমরা কয়েকজন স্যারর মিলে এখন আনুশা দের বাড়িতে যাবো
তানভীর : (খুশি হয়ে) ও তাই নাকি
স্যার: কিন্তু আনুশার রেজাল্ট দেখে তুমি এতো খুশি কেনো তোমার তো রেজাল্ট ই আসেনি
তানভীর : কি যে বলেন স্যার সবাইকে আর ভালো রেজাল্ট করতে পারে,এর মধ্যে ইংলিশ স্যার মানে আমাদের রবিন স্যারর আসলো,
রবিন স্যারর প্রিন্সিপাল স্যারর কে বলছে স্যার গাড়ি রেডী চলুন আনুশাদের বাড়িতে যাওয়া যাক
প্রিন্সিপাল : হুম চলুন,
প্রিন্সিপাল স্যারর কি ভেবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন তুমি যাবে আমাদের সাথে
তানভীর : স্যারর এর কথা শুনে তো আমার খুশি তে লাফাতে ইচ্ছে করছে, হুম স্যার। যাবো
এর মধ্যে:মেহেদী স্যারর আমাদের বাংলা শিক্ষক উনি এসে প্রিন্সিপাল স্যারর কে বললেন স্যারর একটা কান্ড ঘটে গেছে
প্রিন্সিপাল : আবার কি ঘটলো
মেহেদী স্যার:জার্নালিস্টি রা কি করে যেনো খবর পেয়ে গেছে ওরা আনুশার ইন্টার্ভিউ নিতে যায়
প্রিন্সিপাল : ও তাই চলো ওদের কে নিয়ে আনুশার বাড়িতে যাবো
তানভীর : আমার তো খুশির সিমা নেই আমাকে এতো খুশি হতে দেখে
তানিম বল্লো s,s,c te তোর রেজাল্ট অনেক ভালো ছিলো তখন তো তুই এতো খুশি হসনি
তানভীর : তানিম তুই বুঝবি না প্রিয়ো মানুষটার ভালো কাজে, কতো টা আনন্দ পাওয়া যায় এটা তুই বুঝবি না
তানিম: রাগ দেখিয়ে আমার বুঝার দরকার নেই আমি গেলাম তুই তো আনুশার বাড়িতে যাবি
তানভীর : হুম যাচ্ছি কেনো তুই যাবি না
তানিম: তোর ইচ্ছে হইছে তুই যা আমাকে এর মধ্যে টানছিস কেনো
তানভীর : ওকে আমি যাচ্ছি,সবাই এক সাথে মাইক্রোবাস করেছে আনুশাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য,আমি এ তাদের সাথে উঠে বসলাম
to bee continue
[09:04, 3/15/2019] sultana eity: হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া
writer : সুলতানা ইতি
part:9
গাড়ি চলছে নিজের গতিতে,আর তানভীর এর হার্টবিট যেনো তার থেকে দশগুন বেশি গতি নিয়ে চলছে
আনুশার আম্মু: কিরে তোর হলো, যাবি কখন
আনুশা: এই তো মা আর একটু,আসলে মা টেনশন লাগছে খুব,যদি খারাফ কিছু শুনি তা হলে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না মা
আনুশার আম্মু: দেখো মেয়ের কান্ড এমন অলক্ষনে কথা কেউ বলে,তুই আল্লাহর নাম করে যা তো
আনুশা: ঠিক আছে মা দোয়া করো এই বলে আনুশা বের হলো
গলির মোড়ে এসেই আনুশা থেমে গেলো ওর কলেজ এর স্যার প্রিন্সিপাল স্যার সবাই আসছে তানভীর কে দেখে তো ওর আর ও ভয় লাগতে শুরু করলো, কি জানি ছেলেটা কোন মতলবে এসেছে তা ও আবার স্যার দের নিয়ে
তানভীর : আনুশা এ ভাবে ছেয়ে আছে কেনো ও কি কিছু বুঝতে পারেনি নাকি,উফফ ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে খুশির খবর টা দিতে, কিন্তু তা সম্ভব না এখানে শিক্ষকরা আছেন উনারাই বলবে
আনুশা: কি জানি কি হয় আজ আমার সাথে তবু ও স্যারর দের কে সালাম করি আগে ( আসসালামু আলাইকুম) স্যার। আপনারা
প্রিন্সিপাল স্যার: কেনো আমাদের আশা করিসনি বুঝি,
আনুশা: ইয়ে মানে, না মানে
স্যারর:তুই এতো নার্বাস হচ্ছিস কেনো
প্রিন্সিপাল স্যার: তা আমাদের কে তোর বাসায় নিবি না
আনুশা:হ্যা স্যার আসুন,( স্যার দের কে বসতে দিবো কোথায় একটাই রুম,যেখানে থাকি ও খানেই, খাই ও,পড়ি ও ইসস কি লজ্জা)
ভাবতে ভাবতেই চলে আসলাম বাসার ভিতরে,
আনুশার আম্মু: কিরে আনু তুই না কলেজ এ গেলি ফিরে আসলি কেন
আনুশা: মা আমার কলেজ থেকে প্রিন্সিপাল স্যারর সহ আসছে
আনুশার আম্মু: কলেজ থেকে কেনো,অভাক হয়ে উনি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন
আনুশার মায়ের কথা উত্তর না দিয়ে স্যারর দের বসতে বল্লো,আর আমতা আমতা করে বল্লো আসলে স্যার আমি আর মা থাকি তো তাই বাড়তি রুম নিই নাই,
স্যার: আনুশা কে থামিয়ে না না, মা তোর এতো ব্যাস্ত হতে হবে না আমরা কয়েকটা কথা বলেই চলে যাবো,তোর আম্মুকে ডাক
আনুশা: জি স্যারর ডাকছি( মনে মনে আল্লাহ জানে মা কে কি বলবে স্যারর, উফফ কি যে টেনশন হচ্ছে)মা তোমাকে স্যারর ডাকছেন
আনুশার আম্মু: স্যার দের সালাম দিয়ে পর্দার আড়ালে দাড়ালেন
স্যার: আসলে আমরা আপনাকে একটা কথা বলতে এসেছি
আনুশার আম্মু: জি স্যার বলুন আমার মেয়ে কি কোন ভুল করেছে
স্যারর:না না ভুল করবে কেনো বরং ও যা করেছে তার জন্য আমরা গর্ভিত,আমাদের কলেজের সবাই অহংকার করে
আনুশার আম্মু: আমাকে কি বুঝিয়ে বলবেন কি হয়েছে
স্যারর: হুম কেনো নয় আপনার মেয়ে এই কয় দিন আগে আমাদের কলেজ ভর্তি হয়েছে,আর এই কয়দিনে সে আমাদের কলেজ এর সবাইকে পিছনে পেলে কলেজ স্টপার হয়েছে ( স্যারর অনেক খুশি মনে কথা টা বললেন)
আনুশা: এতক্ষন মায়ের সাথে দাঁড়ানো ছিলো কথা টা শুনে সে ভিতরে গেলো, চোখে চল চল পানি স্যার আপনি সত্যি বলছেন তো, কেনো জানি না আমার কান কে বিশ্বাস করাতে পারছি না
প্রিন্সিপাল স্যারর:হ্যারে মা দেখ আমরা সবাই এসেছি,তোকে খুশি খবর টা দিতে
আনুশার আম্মু: খুশিতে কেদেই দিয়েছেন,আল্লাহ তারকথা শুনেছেন,এর থেকে বেশি আর কি চাই
আনুশা: স্যার আমি কি নিজের চোখে দেখতে পারি,রেজাল্ট টা,
প্রিন্সিপাল স্যারর:কেনো নয় একশোবার দেখবি, আগে দাড়া আমাদের সাথে আর ও কিছু গেস্ট এসেছে তাদের সাথে কথা বলে নে
আনুশা: অভাক হয়ে গেস্ট?
স্যারর:কই আপনারা এবার ভিতরে আসুন, স্যার বলার সাথে সাথে কয়েকজন লোক ভিতরে ডুকে গেলো তাদেত হাতে ক্যামেরা সহ আর ও অনেক কিছু আছে
আনুশা: এরা কারা
স্যার:আনুশা এরা জার্নালিস্ট তোর ইন্টার্ভিউ নিতে এসেছে
আনুশা: আমি তো অভাক হলাম,এতো খুশি আল্লাহ আমার কপালে লিখে রেখেছেন আনুশার ঘোর কাটলো জার্নালিস্ট দেত কথায়
জার্নালিস্ট: ম্যাম আপনার এতো টা সাকসেস এর পিছনে কারন টা জানতে পারি, যে খানে এখন কার ছেলে মেয়েরা পড়া শুনা বাদ দিয়ে খারাফ নেশায় আসক্ত হচ্ছে সেখানে আপনি সব কিছু কে এড়িয়ে চলে এতো ভালো রেজাল্ট করেছেন এর পিছনে কারন টা জানতে পারি
আনুশা: খুভ স্বাভাবিক হয়ে উত্তর দিলো
আমি আমার লাইফে অন্য। কিছুর দিকে খেয়াল করিনি,আমার লখ্য । একটাই ছিলো, লাইফে সাকসেস হওয়া,
জার্নালিস্ট: ম্যাম আপনি এখন কি করবেন বলে আশা করেন,বা আপনি আপনার লাইফে কি হতে চান, কি হওয়ার স্বপ্ন,মানে আমাদের কে যদি একটু বলতেন?
আনুশা:আমি এখন কোন কিছু নিয়ে ভাবছিনা,আর আমি কোন কিছু নিয়েই আশা রাখি না,যে আমি লাইফে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবো এমন কোন স্বপ্ন আমার নেই,আমার স্বপ্ন আমার মাকে ভালো রাখা জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত তার পাশে যেন আমি থাকতে পারি,
জার্নালিস্ট: তার মানে আপনি এখন পড়া লিখা বা অন্য কিছু নিয়ে ভাবছেননা?
আনুশা: আমি পড়া লিখা করবো না এই টা আপনাদের কে বলিনি,তবে কতটুকু পর্যন্ত করবো সেটা আমার ভাগ্যের উপরে নির্ভরশিল,
জার্নালিস্ট: ওকে ম্যাম আমরা, আপনার মাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই
আনুশা আম্মু: অদের সামনে গিয়ে দাড়ালেন
জার্নালিস্ট: আপনার মেয়ের এতো ভালো একটা রেজাল্ট করেছে এই নিয়ে আপনার কোন কিছু বলার আছে
আনুশার আম্মু: আমার আর কি বলার থাকবে আমার মেয়েকে নিয়ে গর্ব করি,সে যেন তার লাইফে ভালো একটা পর্যায়ে পৌছাতে পারে আমি সেই দোয়া করি
প্রিন্সিপাল স্যার:আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আপনারা আর অহেতুক প্রশ্ন করে উনাদের বির্বত করবেন্না,আপনারা তো আনুশার কথা শুনেছেন আর কি
জার্নালিস্ট:আসলে স্যার মেয়ের এতো বড় একটা সাফল্যে মায়ের,মনের অবস্তা টা কেমন সেটা ই জানার ছিলো
প্রিন্সিপাল স্যার: আপনারা প্রশ্ন করা বন্ধ করলে আমরা উনাদের কিছু বলার সুযোগ পেতাম
জার্নালিস্ট : ওকে স্যার তা হলে আমরা আসছি,(জার্নালিস্ট রা চলে গেলো)
প্রিন্সিপাল : আনুশা মা তোকে কিছু বলার ছিলো,একটু শুনবি
আনুশা: জি স্যার বলুন
প্রিন্সিপাল : আমরা সবাই মিলে কাল তোকে একটা সম্ভর্ধনা দেয়ার অনুষঠানের আয়োজন করেছি,আসলে আমরা বললে ভুল হবে শহরের অনেক নামি দামি মানুষেরা এখন তোর সাথে দেখা করতে চাইবে, সেখানে সবাই উপস্থিত থাকবে
আনুশা: স্যারর এই সব না করলেও পারতেন,এমনিতে ও আপনাদের দোয়া আর ভালোবাসা আমার সাথে ছিলো বলেই আজ আমি এখানে দাড়াতে পেরেছি
মায়ের সে কি আনন্দ, অনেক দিন পর মাকে এতো খুশি হতে দেখলাম
আম্মু: কিরে শিলা এতো শুকিয়ে গেলি কেনো
শিলা: কই মা আমি তো ঠিকই আছি
আনুশা: আপু বুঝিস না,তুই যদি হাতি ও হয়ে যাস তার পরে মা বলবে না তুই এখন ও চিকন, আরেকটু মোটা হতে হবে,আনুশার কথা শুনে সবাই এক সংগে হেসে উঠলো
★
তানভীর : যাক বাবা এতো দিনে আনুশা কোথায় থাকে সেটা জানতে পারলাম
তানিম: এবার খুশি তো চল এবার বাসায় যাই
তানভীর : আর একটু থাকি না এখানে
তানিম: থেকে কি করবি,দেখ এখন সন্ধ্যা হতে চল্লো আনুশা এখন আর বের হবে না সো এখানে থেকে ও তোর কোন কাজ হবে না তার ছেয়ে ভালো বাসায় যাই
তানভীর : কি আর করা চল তা হলে, বাসার দিকে ফিরে গেলাম
শিলা:বাবা আনুশা তুই কবে থেকে কাজ করিস কি সুন্দর করে আমাকে ভাত বেড়ে খাওয়াচ্ছিস,আগে তো এক গ্লাস পানি ডেলে ও খাইতিস না
আনুশা: আপু আগে যেমন ছিলাম এখন ও কি তেমন থাকতে হবে, সব কিছুই পরিবর্তন শিল,আমি ও এর ব্যাতীর্কম নই
শিলা: তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো আনুশা আমি তো যাস্ট এমনি বললাম
আনুশা: কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু কর,
#
তানভীর : বাসায় এসে পৌছলাম
আম্মু: কিরে কই গেলি, এতো তাড়া তাড়ি চলে আসলি,বলে তো গেলি ফিরতে রাত হবে
তানভীর : আম্মু এতো কথা বলছো কেনো আমি বাসায় আসাতে কি তোমার প্রব্লেম হইছে,তা হলে বলো আমি আবার চলে যাই
আম্মু: যাক বাবা তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো,
তানভীর : তুমি রাগ করার মতো, কথা বললে আমি রাগবো না তো হাসবো,দেখো আম্মু এখন একটু চুপ থাকো, কোন প্রশ্ন করো না
এই বলে চলে এলাম রুমে দরজা লাগিয়ে দিলাম
তানভীরের আম্মু: ছেলেটার যে কি হয়েছে আজকাল কথায় কথায় রাগ দেখায়,সারা দিন কি এতো ভাবে,জিজ্ঞাস করলে ও বলে না ওর বাবাকে ব্যাপার টা জানাতেই হবে,আজকেই ফোন করলে বলবো
*
খাওয়া শেষ করার পর আনুশা বল্লো আপু তুই একটু রেস্ট নে আমি এগুলা পরিষ্কার করে আসছি কেমন
শিলা: বোন টা কে যতো দেখছি ততই যেন অভাক হচ্ছি,এ কি সেই বোন যে কি না কাজ করতে চাইতো না হাত ময়লা হয়ে যাবে সেই ভয়ে
আনুশার আম্মু: কিরে শিলা কি ভাবছিস
শিলা: মা আনুশা?
আনুশার আম্মু: আমার মেয়েটা আর আগের মতো নেই রে শিলা,অনেক পালটে গেছে কতোটা পাল্টেছে তা কেউ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবে না, মেয়েটা আমার বিতরে বিতরে গুমরে গুমরে মরছে,আর আমি মা হয়ে তা দেখছি
শিলা: মা কেদো না তো সব ঠিক হয়ে যাবে
আনুশা: হঠ্যাৎ এসে দেখি মার চোখে পানি,একি মা তুমি কাদছো কেনো
শিলা: মা আসলে ভাবছে উনার দুই মেয়ে উনার কাছে সুমি টা আসলে ভালো হতো ( কথা গুরানোর জন্য বললাম)
আনুশা: মা তুমি কেদো না তো যখন আমার একটা চাকরি হবে তখন বড় একটা বাসা নিবো, তখন তিন মেয়ে কে এক সাথে দেখবে,
আনুশার আম্মু: সুমি কে একটু ফোন কর তো,
আনুশা: আচ্ছা করছি,এই নাও রিং হচ্ছে রিসিভ হলে কথা বলবে
শিলা: চল আনু আমরা একটু কথা বলি দুই বোনের অনেক দিন পর দেখা হলো,
আনুশা: হুম তা যা বলেছো আপু তোমাকে পেয়ে আমি অনেক খুশি হয়েছি,আর ও খুশি হতাম যদি সুমি আপু ও একসাথে থাকতো।
এই ভাবে গেলো আর ও কিছু দিন
আজ আনুশাদের রেজাল্ট বের হবে আনুশা তো সকাল থেকে টেনশন এ শেষ গতো কাল শিলা আপু ও চলে গেছে, কতো করে বললাম থেকে যেতে থাকলো না দুলা ভাইয়ের খাওয়া দাওয়ার নাকি প্রব্লেম হচ্ছে,এখন যে কি করি রেজাল্ট জানি কেমন হয় উফফ আর ভাবতে পারছি না কান্না পাচ্ছে যদি রেজাল্ট ভালো না হয় তা হলে আমি কি করবো
আনুশার আম্মু: চিন্তা করিস না মা আমি জানি তোর রেজাল্ট ভালো হবে
আনুশা: মা তুমি বলছো ভালো হবে,আল্লাহ তুমি আমার মায়ের কথা টা কবুল করো এই ভাবে হতাসার মধ্যে আনুশার সময় যাচ্ছে,
#
তানভীর :: রেজাল্ট নিয়ে আমার কোন চিন্তা নাই,হয় তো রেজাল্ট আসবে না,নয় তো টেনে টুনে পাশ করা রেজল্ট আসবে,আমি জানি এক্সাম ভালো হয়নি,
তানভীর এর আম্মু: তানভীর জানিস তোর বাবা কাল দেশে আসছে
তানভীর : জানতাম না তো আম্মু তা আব্বু হঠ্যাৎ করে দেশে ফিরছে কেনো
আম্মু: হঠ্যাৎ করে আসতে যাবে কেনো অনেক দিন থেকেই আসার কথা চলছে,তোকে নাকি তোর আব্বু কয়েক দিন কল দিয়েছে,তুই নাকি তোর আব্বুর কল রিসিভ করিস নি,
তানভীর : হুম আম্মু আসলে কথা বলতে ভালো লাগেনি তাই
আম্মু: তুই জানিস তোর পরিক্ষার রেজাল্ট নিয়ে তোর আব্বুর কতো সপ্ন,ওনি আজই আসতে ছেয়ে ছিলো টিকেট পায়নি তাই কাল আসছে
তানভীর : মন খারাফ হয়ে গেলো কেননা আমি আব্বুর সপ্ন পুরন করতে পারবো না,
আম্মু: ভাবিস না বাবা রেজাল্ট ভালোই হবে আল্লার রহমতে
দুপুর ২ টার দিকে রেজাল্ট বের হলো
আনুশা: মা এবার তা হলে একবার কলেজ থেকে ঘুরে আসি,এতোক্ষনে রেজাল্ট বের হয়ে গেছে মনে হয়
আনুশার আম্মু: তা হলে যা,
এইদিকে তানভীর সকাল থেকেই কলেজ এ ওয়েট করতেছে রেজাল্ট এর জন্য,(কি ভাবছেন তানভীর নিজের রেজাল্ট এর জন্য অপেক্ষা করছে,না ও আনুশার রেজাল্ট দেখবে বলে অপেক্ষা করে বসে আছে)
তানভীর : যখন এ শুনলাম,নোটিশ বোর্ড এ রেজাল্ট শিট দিয়ে দিয়েছে তখনই ভোঁ দৌড় লাগালাম,
রেজাল্ট শিট দেখে তো আমি বলার ভাষা হারিয়ে পেলেছি,স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
তানভীর : তানিমের কথায় আমার ঘোর কাটলো, ওওও আমার টা আসেনি তা হলে, কোন ব্যাপার না তুই আনুশার রেজাল্ট টা দেখ তো
তানিম: আনুশার রেজাল্ট দেখে আমার কি হবে
তানভীর : ভ্রূ কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে, তুই বুঝবি না সর তো প্রিন্সিপাল স্যার এর কাছে যাবো এই বলে হাটা ধরলাম অফিস রুমের দিকে
তানভীর : মে আই কামিন
প্রিন্সিপাল স্যারর:ইয়েস
তানভীর : স্যারর আনুশার রেজাল্ট দেখেছেন
স্যার: হুম দেখেছি আমরা কয়েকজন স্যারর মিলে এখন আনুশা দের বাড়িতে যাবো
তানভীর : (খুশি হয়ে) ও তাই নাকি
স্যার: কিন্তু আনুশার রেজাল্ট দেখে তুমি এতো খুশি কেনো তোমার তো রেজাল্ট ই আসেনি
তানভীর : কি যে বলেন স্যার সবাইকে আর ভালো রেজাল্ট করতে পারে,এর মধ্যে ইংলিশ স্যার মানে আমাদের রবিন স্যারর আসলো,
রবিন স্যারর প্রিন্সিপাল স্যারর কে বলছে স্যার গাড়ি রেডী চলুন আনুশাদের বাড়িতে যাওয়া যাক
প্রিন্সিপাল : হুম চলুন,
প্রিন্সিপাল স্যারর কি ভেবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন তুমি যাবে আমাদের সাথে
তানভীর : স্যারর এর কথা শুনে তো আমার খুশি তে লাফাতে ইচ্ছে করছে, হুম স্যার। যাবো
এর মধ্যে:মেহেদী স্যারর আমাদের বাংলা শিক্ষক উনি এসে প্রিন্সিপাল স্যারর কে বললেন স্যারর একটা কান্ড ঘটে গেছে
প্রিন্সিপাল : আবার কি ঘটলো
মেহেদী স্যার:জার্নালিস্টি রা কি করে যেনো খবর পেয়ে গেছে ওরা আনুশার ইন্টার্ভিউ নিতে যায়
প্রিন্সিপাল : ও তাই চলো ওদের কে নিয়ে আনুশার বাড়িতে যাবো
তানভীর : আমার তো খুশির সিমা নেই আমাকে এতো খুশি হতে দেখে
তানিম বল্লো s,s,c te তোর রেজাল্ট অনেক ভালো ছিলো তখন তো তুই এতো খুশি হসনি
তানভীর : তানিম তুই বুঝবি না প্রিয়ো মানুষটার ভালো কাজে, কতো টা আনন্দ পাওয়া যায় এটা তুই বুঝবি না
তানিম: রাগ দেখিয়ে আমার বুঝার দরকার নেই আমি গেলাম তুই তো আনুশার বাড়িতে যাবি
তানভীর : হুম যাচ্ছি কেনো তুই যাবি না
তানিম: তোর ইচ্ছে হইছে তুই যা আমাকে এর মধ্যে টানছিস কেনো
তানভীর : ওকে আমি যাচ্ছি,সবাই এক সাথে মাইক্রোবাস করেছে আনুশাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য,আমি এ তাদের সাথে উঠে বসলাম
আগামি কাল আনুশার এক্সাম তাই পড়া শুনা করছে,, টিউশনির স্টুডেন্টদের ও বলে দিয়েছি কয়েক দিন পড়াতে পারবে না, আনুশা চায় না তার পড়ার কোন।ক্ষতি হোক
আনুশার আম্মু: হ্যারে আনু শিলা চায় তোর পরিক্ষার পরে এসে কয়েক দিন থাকতে তুই কি বলিস
আনুশা: মা এটা তুমি কি বলছো বড় আপুর আসতে ইচ্ছে হয়েছে সে আসবে এতে এক্সাম এর সাথে সম্পর্ক কি,আপু কে তুমি কাল ই আসতে বলে দাও
আনুশার আম্মু: না মানে এখানে তো থাকার তেমন জায়গা নেই, একটা রুম আমরা মা মেয়ে থাকি,আর ওর ছেলে মেয়ে আসলে ওরা দুষ্টামি করবে তোর পড়া শুনার ডিস্টার্ব হবে ভেবে আমি নিষেধ করেছি
আনুশা: তা ঠিক বলেছো আমি ও তো কিছু ভেবে দেখিনি,টেনশন করো না মা এক্সাম টা ভালো ভাবে হয়ে গেলে যদি ভালো রেজাল্ট করতে পারি তো একটা জব পেলে এই বাসা টা ছেড়ে দিবো
আনুশার আম্মু: আল্লাহহ যেন তোর মনের আশা পূর্ন করে
আনুশা রাত একটা পর্যন্ত পড়লো এক্সাম এর চিন্তায় ওর ঘুম আসতেই চাইছে না
★
তানভীর : কাল এক্সাম আর আজ ও ঠিক করে পড়তে পারছি না কি যে করি,আচ্ছা আনুশা কি আমার কথা এমন করে ভাবে, কি জানি হয়তো ভাবে না,
আচ্ছা আনুশা কি পড়তে পড়তে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে,হবে হয় তো,
মেয়েটা যে গ্রন্থ কীট, পড়তে পড়তে হয় তো পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছে, আচ্ছা আনুশা ঘুমালে কি ওর মুখে চুল এলো মেলো হয়ে এসে পড়ে,ইসস যদি ওর ঘুমন্ত মুখ টা একবার ছুঁয়ে দিতে পারতাম
তানভীর এর আম্মু: অনেক রাত হয়েছে দেখে আসি ছেলেটা ঘুমিয়েছে কি না,
সে কি ছেলেটা তো আমার পড়া শুনা বাদ দিয়ে ভাবনায় ডুবে আছে তানভীর এই তানভীর, কিরে পড়ছিস না কেনো
তানভীর ; আম্মু পড়ছি তো
আম্মু: আর পড়তে হবে না অনেক রাত হয়েছে এই বার ঘুমা,
তানভীর : ঠিক আছে আম্মু, তুমি আমাকে একটু তাড়া তাড়ি ডেকে দিও, এখন লাইট অফ করে দাও
আম্মু:হুম দিচ্ছি
তানভীর : আম্মু চলে গেছে, অন্ধকারে ও যেন আনুশা কে দেখতে পাচ্ছি অনেক দিন হলো ঠিক করে ঘুমাই না,ঘুম যে আনুশার ঐ মায়াবী চাহনিতে আটকে গেছে,
★
সকাল বেলা,আনুশা তাড়া তাড়ি ফ্রেশ হয়ে এক্সাম দিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে
আনুশার আম্মু: আনু সব কিছু মনে করে নিয়েছিস তো ভুলে কিছু পেলে রাখিসনি তো
আনুশা: না মা তুমি দেখো সব নিয়েছি আর তোমার মেয়ে এতো টা ও মন ভুলো নয় যে প্রয়োজনীয় জিনিশ পেলে যাবে
#
এদিকে তানভীর ভাবছে কিছুই তো পড়েনি কি লিখবো,আল্লাহ কপালে যা রাখছে তা ই হবে ভেবে লাব নাই,
তানভীর আম্মু:তানভীর এই নে তোর সব রেডি করে দিয়েছি এই বার আল্লাহর নাম করে বের হও
তানভীর মায়ের দোয়া নিয়ে বেরিয়ে গেলো,
এ ভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম এর পর আজ ওদের এক্সাম শেষ হলো,
আনুশা :মা বড্ড ক্লান্ত লাগছে,আজ আর কোথায় যাবো ণা, সারা দিন ঘুমাবো
আনুশার আম্মু: তুই ভুলে গেছিস আজকে যে শিলা আসবে আর তোকে কিন্তু স্টেশন এ আনতে যেতে হবে,আমার বড় মেয়েটা একদম বোকা, ও আসতে পারবে না এতো দূর
আনুশা: হুম তা যা বলেছো আপু এমন দেখেই দুলা ভাই ওর সাথে চালাকি করে পার পেয়ে যায়
আনুশার আম্মু: হুম তা ঠিক,আচ্ছা এখন আর কথা বলিস না ঘুমা,আমি বিকেল ও জাগিয়ে দিবো তোকে,
আনুশা কিছু না বলেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে
★
তানভীর : এক্সাম তেমন একটা ভালো হয়নি কোন ভাবে টেনে টুনে পাশ করবো,কিন্তু আমি এতো দিন থাকবো কি করে আনুশা কে না দেখে, আল্লাহ প্লিজ তুমি আনুশা কে খুঁজে দাও, এক্সাম এর জন্য ওর সাথে কথা বলতে পারিনি,সেদিন সবার আগে স্যার কে অনেক রিকুয়েস্ট করে সময়ের আগে কাগজ জমা দিয়ে হল থেকে বের হই, শুধু আনুশার সাথে একটু কথা বলবো এই ভেবে,
তানভীর : ঐ তো আনুশা হল থেকে বের হয়েছে এই আনুশা দাড়া ও প্লিজ যেও না
আনুশা: তানভীর আবার ডাকছে উফফ কি করলে যে এই ছেলেটা আমার পিছু ছাড়বে আমি নিজে ও জানি না,দাঁড়িয়ে পড়লাম
তানভীর : কেমন আছো আনুশা
আনুশা: আপনি আমি কেমন আছি এটা জানার জন্য আমাকে ডেকেছেন,
তানভীর : কেনো আমি জানতে পারি না
আনুশা: (এই ছেলের সাথে কথা না বাড়ানো ই ভালো) হুম ভাল আছি আর কিছু
তানভীর : আমি কেমন আছি জানতে চাইবে না
আনুশা: জানার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না,, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে ভালোইই আছেন (অন্য দিকে ফিরে কথা টা বললাম,)
তানভীর : তুমি আমার চোখের দিকে একবার তাকাও আনুশা,দেখবে সে চোখে তোমার ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা কতো টা
আনুশা: অনেক কস্টে নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে বললাম,আপনার কথা শেষ হয়েছে এবার তা হলে আমি আসতে পারি, এই বলে তানভীর কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো
তানভীর : সেদিন যাওয়ার পথে চেয়ে রইলাম এই আশায় যদি আনুশা একবার পিছনে ফিরে তাকায়,কিন্তু ওর মনে যে অনেক ঘৃনা একটি বার ও তাকালো না
একা একা ভালো লাগছে না, যাই ফ্রেন্ডস দের সাথে একটু আড্ডা দিই,
তানিম কে একটা ফোন করি, তানিম হলো তানভীর এর বেষ্ট ফ্রেন্ড,
তানভীরের আম্মু: কিরে কোথায় ও যাচ্ছিস নাকি
তানভীর : হুম আম্মু তানিমের সাথে দেখা করতে, আমার ফিরতে রাত হবে তুমি খেয়ে শুয়ে পড়বে কেমন
আম্মু: বেশি রাত করিস না,
তানভীর : বললাম তো ফিরতে রাত হবে, এই বলে তানভীর বেরিয়ে পড়লো
আনুশা : বড় আপুর জন্য স্টেশন এ দাঁড়িয়ে আছি এখন বাস আসেনি
তানভীর : তানিমের সাথে কথা বলতে বলতে স্টেশন এ চলে আসলাম,(আসার কোন কারন ছিলো না,এমনি হাটতে হাটতে মনের অজান্তে চলে এলাম)
আরে এ আনুশা না, খুশিতে তানভীরের চোখ চক চক করে উঠলো ভাবতেই পারিনি ওকে এই ভাবে দেখবো
তানিম; আচ্ছা তানভীর তুই আনুশার মাঝে কি এমন খুজে পেলি বলতো শুধু দেখতে একটু সুন্দর আর কি,দেমাগে ভর পুর কারো সাথে কথা বলে না,
তানভীর : তুই এমন করে বলছিস কেনো ও এমনি তে কথা বলা পছন্দ করে না
তানিম: বুঝলাম ও ছেলেদের সাথে কথা বলা পছন্দ করে না,কিন্তু মেয়েরা কি দোষ করলো,কোন দিন আনুশাকে দেখেছিস কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে
তানভীর : তানিম তুই থামবি,( তানিমের মুখে আনুশা সম্পর্কে এগুলা শুনতে আমার মোটেই ভালো লাগছে না তাই ওকে থামিয়ে দিলাম) অনেক্ষন। আনুশাকে দূর থেকে দেখছি, ভাবলাম আজ আনুশা কে follow করে ওর বাড়ি পর্যন্ত যাবো, তাই ওর সামনে গেলাম না, সামনে গেলে হয় তো সে আমার চোখ পাকি দিতে পারে
আনুশা: উফফ আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবো, পা ব্যাথা হয়ে গেলো তো
প্রায় ৩০ মিনিট পর শিলা বাস থেকে নামলো আনুশা তার ছোট্ট ভাগ্নি টাকে কলে নিয়ে আদর করতে থাকে,
আনুশা: আপু এবার কিন্তু অনেক দিন থাকবে তুমি এই বলে দিলাম
শিলা: আচ্ছা থাকবো এখন টেক্সি ডাক,আনুশা টেক্সি ডেকে উঠে পড়লো
তানভীর : আগেই C.N.G ঠিক করে রেখেছিল আনুশার টেক্সি তে উঠার সাথে সাথে অদের পিছু পিছু যেতে লাগলো,তানিমের মুখ দেখে মনে হচ্ছে আনুশাকে follow করাতে ও একদম খুশি নয়, তাতে তানভীর এর কিছু যায় আসে না ওর ভাবনা আনুশার বাসা অব্দি পৌছানো
আনুশা: আপু দুলা ভাই আসেনি কেনো
শিলা: ওর কাজ আছে তাই,আর বলে আসলে থাকবে কোথায় তাই আসেনি
আনুশা: কিচ্ছু বললাম না আপুকে,শুধু নিজের মনকে বললাম ধৈয্য ধরার শক্তি দিতে আপুকে নিয়ে বাসায় পৌছালাম
কলারের থেকে হাত দুটো ছাড়িয়ে নিয়ে পুলক পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ভিডিও প্লে করে দিলো।ভিডিও তে সেই মেয়েটি স্বীকারোক্তি দিচ্ছে।মেয়েটি কাঁদছে আর কথাগুলো বলছে।আর তার পাশেই ওই সর্দারনী।মাথায় ঘোমটা টেনে মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে সেও স্বীকারোক্তি দিচ্ছে।
বোঝাই যাচ্ছে বেঢপ মার দেওয়া হয়েছে তাদের।শ্রুতি বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না।কাকে বিশ্বাস করবে সে? মন তো চাইছে পুলককে বিশ্বাস করতে।কিন্তু পুলক যদি নিরাপরাধ হয়ে থাকে তাহলে এই তিন বছরের মধ্যে কেনো ওকে জানালোনা? ও কিছু ভাবতে পারছেনা।
-‘ বোকা পেয়েছিস? তুই যে ওদের মারধোর করে স্বীকারোক্তি নিয়েছিস তা তো বোঝাই যাচ্ছে।’
-‘ ওয়েল।তাহলে প্রত্যক্ষদর্শী নিয়ে আসি।’ ঠান্ডা গলায় বললো পুলক।
পুলকের ফোন পেয়ে রিয়া আর ধ্রুব এসে হাজির হলো ওদের মাঝে।তারপর ধ্রুব বলতে শুরু করলো,-‘ এতকিছু তো পুলক একা করতে পারে নি।ওকে সাহায্য করেছি আমরা।ও তো মরেই যাচ্ছিলো শ্রুতি ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর।কতভাবে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে! তারপর ওর থেকে সবটা শুনে আমি আর রিয়া উদ্যোগ নিলাম সত্যিটা কী আর এর পেছনে আসল ঘটনাটা কী তা জানার জন্য।কিন্তু পুলক এতটায় ডিপ্রেশনে ভুগছিলো ওকে আগে সুস্থ করার প্রয়োজন বোধ করলাম।মাস ছয়েকের মধ্যে ওকে নিয়ে স্কটল্যান্ড চলে এলাম।আমার আর আমার বাবার সাথে ওকে শেয়ারে নিয়ে নিলাম আমাদের ব্যবসায়ে।শুধু ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য।তার ভেতর রিয়াকে শ্রুতির ব্যাপারে সব খোঁজ নিতে বললাম।পুলক অস্থির হয়ে থাকতো ওর খবর জানার জন্য।আস্তে আস্তে ডিসিশন নিলো ও আর কোনোদিনও শ্রুতির সামনে আসবেনা।ওকে বলবে না ও নির্দোষ।কিন্তু আমি বললাম,-‘ তোর জানা উচিত ওই মেয়েটা কেনো মিথ্যে বলেছিলো।শ্রুতির কাছে নিরাপরাধ সাজার জন্য নয়।সত্যটা জানা তোর প্রয়োজন।’ তার মধ্যেই রিয়া খবর জানালো ঈশাণ শ্রুতিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।ব্যাপারটা আমার কাছে খটকা লাগলেও পুলক নিশ্চিত হয়ে গেলো যে ওই ঘটনার সাথে ঈশাণ জড়িত কোনোভাবে।দেশে ফিরে এলাম ওকে নিয়ে।বহুকষ্টে ওই মেয়েটাকে খুঁজে বের করলাম। মেয়েটির সন্ধান পাওয়ার জন্য সর্দারনীকে কম ধোলাই খেতে হয়নি।আর যখন মেয়েটাকে খুঁজে পেলাম তখন তো সবটা রেকর্ড করেই রেখেছি।এরপরই পুলক আমি আর রিয়া প্ল্যান করলাম ইভেন্টের।নতুন করে আগমন ঘটালাম পুলকের। পুলক আমার ছোটবেলার বন্ধু।ওকে আমি চিনি ওর অতীতটা আমি জানি।তাই আমি বিশ্বাস রেখেছিলাম যে পুলক কখনো শ্রুতিকে ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্তোম সর্বশ্রেষ্ঠা সুন্দরী মেয়ের দিকেও তাকাবেনা।আমি ওর বন্ধু হয়ে ওর প্রতি এমন বিশ্বাস রেখেছিলাম।আর শ্রুতি তুই ওর ভালোবাসার মানুষটা হয়ে ওর প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারলিনা?মেরেই তো ফেলেছিলি ওকে।’
-‘ এই তোরা চুপ কর।সবগুলো গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসেছিস? নাটক করতে শিখে গেছিস না?’ চিৎকার করে বলছিলো ইশাণ।
হঠাৎ করেই ঈশাণের গালে শ্রুতির পাঁচ আঙুল বসে গেলো। ঈশাণ থম মেড়ে দাঁড়িয়ে রইলো ওর দিকে চেয়ে।
-‘ সবাই তোর শত্রু তাই না?সবাই তোর বিরুদ্ধে নাটক সাজিয়েছে তাই না? কেনো এমনটা করলি তুই? কীভাবে পারলি আমাদের সাজানো সংসার টা ভেঙ্গে দিতে? কী ক্ষতি করেছিলাম আমরা তোর? বল?’
আরো কয়েকটা থাপ্পর পড়ল ঈশাণের গালে।হঠাৎ করে ঈশাণ শ্রুতিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।তারপর হুংকার দিয়ে উঠল।
-‘ ক্ষতি তুই করিসনি।ক্ষতি করেছে ও।’ পুলকের দিকে তাকিয়ে বললো।
আবার বলতে শুরু করলো,-‘ পুলক আমাদের বন্ধুমহলে আসার আগেই আমি তোকে পছন্দ করতাম। ভালোবাসি কথাটা বলতে গিয়েও কখনো বলতে পারি নি। হঠাৎ করেই পুলক কোথা থেকে উড়ে এসে তোর মনে জায়গা করে নিলো।আমি বলতে গিয়েও কিছু বলতে পারলাম না। দেখলাম তুই অনেক হ্যাপি তোদের রিলেশনশিপে।আস্তে আস্তে তোদের থেকে দূরে সরে গেলাম।সহ্য হতোনা তোদের একসঙ্গে দেখলে।ভেতরটা পুড়ে জ্বলে যেতো।তোদের বিবাহবার্ষিকী তে তোকে ওইভাবে নতুন বউয়ের সাজে দেখে আমার সেই পুরোনো ঘা টা আবার তাজা হয়ে গেলো।তাও বহুকষ্টে নিজেকে সামলিয়েছি এই ভেবে তুই এখন অন্য কারো।তারপরও নিজেকে বেঁধে রাখতে পারি নি।তোকে আরো একবার দেখার লোভটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো। চলে এলাম অন্য একদিন তোর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু সেদিন পুলকের ব্যবহার আর আমাকে দেখিয়ে তোর সঙ্গে পুলকের ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে খাওয়া আমাকে একরকম পাগল করে দিচ্ছিলো।ভেতরে ভেতরে পুলককে খুন করে ফেলার একটা ঝোঁক কাজ করছিলো।কিন্তু সেই ঝোঁকটাও সামলে উঠলাম।নিজেকে একদম নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে শুরু করলাম।ভুলে যেতে চাইলাম পুলকের সেদিনকার ব্যবহার। তারপর যেদিন তোর বাসায় এসে তোর কাছ থেকে পুলকের অবহেলার কথাগুলো জানলাম মনে মনে খুব খুশি হচ্ছিলাম। ভাবতে থাকলাম এভাবে যদি তোদের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায় তারপরই আমি তোকে আমার প্রতি কনভিন্স করার চেষ্টা করবো।আর রবিন যখন পুলকের ব্যাপারে ওই ঘটনাগুলো বললো প্রথমে আমার বিশ্বাস না হলেও আমি এতটায় খুশি হয়েছিলাম যে তখন আমি সব ভেবে নিলাম খুব বেশি সময় লাগবেনা তোদের সম্পর্কটা নষ্ট হতে।’
-‘ এরপরই তুই প্ল্যানগুলো করে ফেললি তাইনা?’ পুলক বললো।
-‘ তিনটা বছর নষ্ট করলি আমাদের জীবনের।কতোটুকু উপকার পেলি এগুলো করে?
কথাটা বলেই পুলক এসে ঈশাণের চোয়ালে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো।মার খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে ঈশাণ টেবিলের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল।রেগে উঠে দাঁড়িয়ে স্যুটের ভেতর পকেট থেকে পুলিশের লাইসেন্সকৃত পিস্তল পুলকের দিকে তাক করে ধরে বললো, -‘ এতকিছু করে যখন উপকার পাইনি তাহলে তোকে খুনই করি।’
শ্রুতি,রিয়া আর ধ্রুব তিনজনই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলো ভয়ে।পুলকের রাগ তখন আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো।পিস্তলকে তোয়াক্কা না করে ওর চোয়ালে আরো একটা ঘুষি মাড়ল।
-‘ আর কতো নিচে নামবি?আমাকে খুন করলে তুই নিজে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারবি?পুরো জীবনটায় তোর শেষ হয়ে যাবে।’
ঈশাণ টেবিলের ওপর হুমড়ি দিয়ে পরে রইলো।প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে ওর।এভাবে কারো ক্ষতি করে নিজে কোনোদিন সুখী হওয়া যায় না।আর ভালোবাসা এ তো ঈশ্বর কতৃক দান। এই জিনিস ঈশ্বর যাকে দিবেন শুধু সেই তার অধিকার পাবে। জোর করে তা বা মিথ্যা দিয়ে তা কোনোদিনও অর্জন করা সম্ভব না। কাঁদতে কাঁদতে সে উঠে দাঁড়ালো।কোনো দিকে না তাকিয়ে টলতে টলতে বেরিয়ে গেলো শ্রুতির বাড়ি থেকে।
_______________________
-‘ কিছু বলছোনা যে? ক্ষমা করবেনা আমাকে?’
-‘ তুমি কী অপরাধ করেছো যে তোমাকে ক্ষমা করবো?’
-‘ এতটা অনুরাগ চেঁপে রেখোনা আমার প্রতি।মারতে ইচ্ছা করলে মারো, হাত পা বেঁধে যেমন খুশি তেমন শাস্তি দাও। তবুও মুখ ফিরিয়ে থেকো না।’
-‘ কী চাইছো তুমি?’
-‘ তুমি বুঝতে পারছোনা?’
-‘ বোঝার ক্ষমতা আজ কাল খুব কম।’
-‘ নিয়ে যাবেনা আমাকে তোমার সঙ্গে?’
-‘ গিয়ে কী করবে?’
শ্রুতি এতসময় পুলকের পাশে বসে ওর বাহু জড়িয়ে ধরে কথা বলছিলো।হুট করে ওর পাশ থেকে উঠে এসে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসল।
-‘ আমাকে একা ফেলে চলে যাবে?আমার ভুলের শাস্তি আমাকে এভাবে দেবে?’
কান্নার বেগ বেড়ে গেছে শ্রুতির।পুলক ওর দিকে না তাকিয়ে বললো, -‘ ভুলের শাস্তি তুমি আর পেলে কই?পেলাম তো আমি।আর ভবীষ্যতে যাতে না পেতে হয় তাই…..’
-‘ তাই কী?’
পুলক নিশ্চুপ।
-‘ বলো তাই কী?
পুলক এবার ওর দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে তেজী গলায় বললো,-‘ এরপর যদি কেউ আবার এমন কোনো নাটক তৈরি করে আমার বিরুদ্ধে তখনও যে তোমার বিশ্বাস নড়বড়ে থাকবে না আমার প্রতি তার কী গ্যারান্টি? আমি পারবোনা এত বার বার ধাক্কা খেতে।আমার এত্ত এনার্জি নাই ধাক্কা সামলানোর।’
-‘ রাত ন’টা বাজে।আমাকে যেতে হবে।কাল সন্ধ্যে ফ্লাইট। অনেক গোছগাছ বাকি আছে।’ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে বললো।
-‘ না প্লিজ!’
-‘ না প্লিজ কী? আমাকে যেতে হবে না? তোমার রং তামাশা দেখবো বসে?’
-‘ আরে বললাম তো আমাকে যা শাস্তি দেওয়ার দাও।যা খুশি বলো, যা খুশি করো।তাও আমাকে ছেড়ে যেওনা।’
-‘ আমার আইডিয়া নেই কী করে শাস্তি দেওয়া যায়।’
-‘ আমি তো কিছু আইডিয়া দিলাম।’
-‘ শেষ একটা আইডিয়া দাওনি।’
মুখটা কাচুমাচু করে বসে আছে শ্রুতি।কী করে এমন একটা শাস্তির কথা বলবে সেটাই ভাবছে।তবুও ও তো বলেছে ও অনেস্টলি বলবে।মুখটা নিচু করে বললো, -‘ তোমাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য সত্যি সত্যি কারো সাথে…..’
-‘ কারো সাথে কী? থেমে গেলে কেনো?’
পুলক বেশ এনজয় করছে শ্রুতির অবস্থাখানা।কথাটা ওর মুখ থেকে বের করে তবেই এখান থেকে যাবে ও।বললো, -‘ বলবে নাকি আমি উঠবো?’
-‘ না।সত্যি কারো সাথে প্রেম করে তোমার সামনে এসে দেখাতাম।’
-‘ তোমার আইডিয়া গুলো আমার পছন্দ হয়েছে।তার জন্য তোমাকে আমার সঙ্গে নিবো।তবে আমি শুধু প্রেম করবোনা। বিয়েও করবো তোমাকে চরম শিক্ষা দেওয়ার জন্য।’
তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো, -‘ চলো এখন।’
-‘ বিয়ে করতে মানে? আমি কী বিয়ে করতাম?কখনোই না।’
-‘ আজকে কী করছিলে?’
-‘ এটা আমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।’
-‘ আর এটা আমার সঠিক সিদ্ধান্ত।’
-‘ আমার সামনে তুমি অন্য একটা মেয়ের সাথে…..’
-‘ শোবো, ঘুমাবো।’
-‘ যাবোনা।যাও তুমি।’ উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো।
-‘ যেতে তোমাকে হবেই।আইডিয়া দিয়েছো শাস্তির।আর শাস্তি খাবে না? চলো……’
টানতে টানতে শ্রুতিকে নিয়ে চলে গেলো পুলক।হয়তো কিছু সময় বাদেই অনুরাগের পালা শেষ করে ভালোবাসার শাস্তির পালা শুরু হবে তাদের মাঝে।
দু চোখ বেয়ে পানির সঙ্গে আগুন ঝরছে শ্রুতির চোখে।ঈশাণের দিকে ভয়াবহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও।ঈশাণ আবার ও প্রশ্ন করলো,-‘ কী হয়েছে? এভাবে দেখছিস কেনো? দেখি কাগজ টা দে তো আমার কাছে।’
শ্রুতির হাত থেকে কাগজটা নিয়ে ঈশাণ পড়তে আরম্ভ করলো।প্রথম অংশ পড়ে তেমন কিছুই মনে হলো না ওর কাছে।শেষের দিকে এসে যা পড়ল তা পড়ার পর ওর হাত কাঁপতে শুরু করলো।যে মেয়েটিকে পুলক ওর বোন ভেবে নিয়েসেছিল সে সত্যিই পুলকের বোন ছিল না ঠিকই। কিন্তু পুলকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছিল মেয়েটি তা সম্পূর্ণ সাজানো কথা ছিল।আর এই কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছিল ওই পতিতালয়ের সর্দারনী।কেনো এই কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছিল সেটাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ওখানে।সবকিছু পড়ার পর ঈশাণ জোর গলায় বললো,-‘ শ্রুতি তুই ওর এসব কথা বিশ্বাস করছিস?ও তোকে যে এসব মিথ্যা বলছেনা তার প্রমাণ কী? ওর কাছে শোন যে কথাগুলো এখানে লিখা আর তা যে সত্যিই ওই মেয়েটির আর তার সর্দারনীর জবানবন্দী তার সত্যতা কী?’
শ্রুতি এবার সত্যিই দ্বিধায় পড়ল।সত্যিই তো! পুলক যে সবটাই সত্যি বলছে তার প্রমাণ কী?ও যদি সত্যিই বলে থাকে তাহলে এই তিনটা বছর ও কেনো শ্রুতির সামনে এলো না?এই কথাগুলো এই তিন বছরের মধ্যে কেনো ওকে বললো না?
শ্রুতি প্রশ্নচোখে পুলকের দিকে তাকাতে পুলক একটু একপেশে হাসল।তারপর বললো,
-‘ মেয়েটাকে আমি ঢাকা নিয়ে আসার পূর্বেই ঈশাণ নিজে ভালোভাবে যাচাই করে দেখেছে।আমি যে মেয়েটির সঙ্গে ঘোরাফেরা করেছি তার পরিচয় আসলে কী?এবং অবশেষে জানতেও পারলো আমি তাকে নিজের বোন ভেবে ওই পতিতাবৃত্তি থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে নিজের বোনের পরিচয় দিতে যাচ্ছি।ঠিক তখনই ঈশাণ ওখানকার সর্দারনীর সাথে আলাপ করলো।পরিষ্কার হওয়ার জন্য জানতে চাইলো মেয়েটি সত্যিই আমার বোন কিনা।তখন সে তো আরো একটি সত্যি ঈশাণকে জানিয়ে দিলো যে সত্যটা আমি তখন জানতাম না।
আমার মামা আমার বোন কে যেখানে রেখে এসেছিল সেখান থেকে তারা কোথায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যে ওকে বিক্রি করে দিয়েছে তাও তাদের মনে নেই।শুধুমাত্র নিজের চিকিৎসার টাকার জন্য মামা এমন একটা নাটক করেছিলো।
অন্য একটা মেয়েকে আমার বোন বানিয়ে দিলো।আর ওই সর্দারনীকে শিখিয়েও দিলো আমি খোঁজ নিতে এলে যেনো সে এটাই বলে ওই মেয়েটিই আমার বোন। সে তাই ই করলো।এতগুলো মিথ্যা কথা সে এই আশাতেই বলেছিলো সে জানতো আমি টাকার মায়া না করে আমার বোনকে এখান থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাবো।আর এই ব্যাপারটা সে এমনি এমনি ঈশাণকে বলে দেয়নি।ঈশাণ তাকে আমার চেয়েও টাকার পরিমাণ বেশি দিয়ে কথাগুলো জেনেছে।আর তারপর ও আরো কিছু টাকা দিয়ে একটা কাহিনী সাজিয়ে ফেললো আমি ওই মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে আসার আগেই। মেয়েটাকে শিখিয়ে দেওয়া হলো আমার বাসায় তাকে আনার পর সে যেনো বলে আমি তাকে বোনের পরিচয়ে নয় নিজের ভোগের বস্তু করে নিয়েসেছি।মেয়েটি তাই ই করলো।এবং শর্তমোতাবেক মেয়েটিকে ও আরো কিছু টাকা দিয়ে ঢাকার শহর থেকে ভাগিয়ে দিলো।’
-‘ এই একদম চুপ।একদম বাজে কথা বলবি না।এতদিন পর এসে একটা মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে এনে কী সুন্দর সাজিয়ে সাজিয়ে বলছিস।আর ভাবছিস খুব সহজেই তা শ্রুতি বিশ্বাস করে নিবে।আর কতো ক্ষতি করতে চাইছিস মেয়েটার? আর কত অমানুষ হবি?’ ঈশাণ পুলকের কলার চেপে ধরে হুংকার দিয়ে বললো।
-‘ কোথায় ঘাপটি মেরে ছিলি বল তো এই তিনটা বছর?’ (নিশাদ)
-‘ আমি কী আসামি নাকি যে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকবো?’
গ্লাসে ড্রিংক ঢেলে নিতে নিতে কথা বলছে পুলক।ওর দিকে কয়েক জোড়া চোখ বিস্ময় আর প্রশ্ন ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। রিয়ার পাশে এসে বসলো পুলক।সবার দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শ্রুতির দৃষ্টিকে লক্ষ্য করে বললো, ‘ কী সমস্যা?এভাবে তাকিয়ে দেখছো কেনো আমাকে? এ্যাম আই লুকিং আগলি?’
শেষ প্রশ্নটা রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো পুলক।রিয়া ভ্রু জোড়া উঁচু করে একটা হাসি দিয়ে বললো, ‘ নো।মোর দ্যান ড্যাস্যিং।’
শ্রুতি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।ঈশাণকে বললো, ‘ আমায় বাসায় ফিরতে হবে।আমি উঠছি।’
-‘ চল আমি তোকে নামিয়ে দিয়ে আসি।’
-‘ আরে আরে আজকে কে কখন ফিরবো তার ঠিক নেই। অনেক দিন বাদে সবাই একসাথে।কোনো উঠাউঠি নেই।আজ অনেক মজা হবে।’
ধ্রুবর কথার সঙ্গে পুলক একটা রহস্যভরা হাসি মেশালো। হাসিটা ঈশাণের চোখ এড়ালো না।এর মধ্যে অনেকেই পুলে নেমে পড়েছে।কেউ এখানে ডেট শুরু করে দিয়েছে, কেউ বা মিউজিকের তালে হেলছে-দুলছে।মোটামোটি যে যার মতো এনজয় করতে ব্যস্ত।শুধু একটা জায়গায় বসে আছে, পুলক,রিয়া, শ্রুতি,ঈশাণ,ধ্রুব,মেঘলা,তানিয়া,নিশাদ আর রবিন।রিয়া আর নিশাদ উঠে হাঁটতে হাঁটতে খানিকটা দূরে চলে গেলো।পুলক ড্রিংকের গ্লাস টা নিচে নামিয়ে রাখলো। হঠাৎ করেই চোখ পড়লো ঈশাণের হাতের দিকে।শ্রুতির হাঁটুর কিছুটা উপরে ওর হাতটা।শ্রুতি ও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ওর হাতটা গ্রহণ করে বসে আছে।একটা গম্ভীর নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো পুলকের মাঝ থেকে।কিন্তু ওদের দুজনকেই খুব অপ্রস্তুত লাগছে।
-‘ তো?’
পুলকের আওয়াজ পেয়ে চমকে তাকালো শ্রুতি।চোখে মুখে উচ্ছন্ন ভরা হাসি মেখে আছে পুলকের।মনে হচ্ছে খুব চিন্তামুক্ত আর হাস্যজ্জল মানুষ একটা।তিন বছর আগে তার জীবনে যে কোনো একটা অপ্রিয় ঘটনা ঘটে গেছে সেটা তাকে দেখে মনেই হচ্ছেনা।চোখের পলক পড়ছে না শ্রুতির।এদিকে পুলকও চেয়ে আছে তার প্রাণখোলা হাসি মুখে মেখে নিয়ে।ঈশাণ শুধু তাকিয়ে দেখছে ওদের দৃষ্টি বিনিময়।এক মিনিট, দু মিনিট পার হয়ে যাচ্ছে শ্রুতি হাজারো প্রশ্নভরা চোখে তাকিয়ে দেখছে ওকে।ঈশাণ হঠাৎ করে একটু কেশে উঠল।ভাবনাগ্রস্ত শ্রুতি হুঁশে এলো তখন।পুলক খানিকটা হেসে ফেলল।
-‘ হাসছিস যে?’
-‘ হুম? আমাকে বলছিস?’
পুলকের এমন উদাসীন ভাবটা নেওয়া ঈশাণের অসহ্যবোধ লাগলো খুব।চোখ মুখ শক্ত করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো ওর থেকে।পুলক বললো, ‘ বিয়েতে কী ইনভাইটেশন পাচ্ছি?’
-‘ লজ্জা করছে না তোর?কোন মুখে এই প্রশ্নগুলো করছিস?’
-‘ অ…! লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু বলেছি বোধহয়? এই ধ্রুব আমার প্রশ্নটা কী লজ্জা পাওয়ার মতো ছিল?’
-‘ আমি কী বলবো ভাই!’
-‘ তোরা বিয়ে করছিস এটা একটা ভালো কথা।আমি সেখানে দাওয়াত পাচ্ছি কিনা সেটা জানতে চাওয়া কী আমার অপরাধ?’
-‘ এতদিন কই ছিলি?’
-‘ স্কটল্যান্ড।’
-‘ মেয়েটাকে নিয়ে ওখানে পাড়ি জমিয়েছিস?’
রবিনের প্রশ্নে পুলকের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে আসার মতো অবস্থা।কিন্তু না, ও এখন এই মুহূর্তে কোনো সিনক্রিয়েট করবে না।রবিনের প্রশ্ন শুনে শ্রুতি চেয়ে আছে পুলকের দিকে।অবশ্যই পুলক কী উত্তর দেয় তা শোনার আশায়।ওর বুকের ভেতরটা যে তোলপার হয়ে যাচ্ছে।পারছেনা এভাবে চুপচাপ ওর সামনে বসে থাকতে। ইচ্ছে করছে ওর কলারটা চেঁপে ধরে ওর দু’গালে বিরতিহীন চড় বসাতে।জানতে ইচ্ছা করছে এমনটা কেনো করলো ওর সাথে।শ্রুতির চোখে চোখ পরতেই পুলক দেখতে পেলো শ্রুতির চোখের আগুন।শুধু একটু হাসলো।তারপর উঠে চলে গেলো পুল সাইডে অন্যসব ফ্রেন্ডদের মাঝে।প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলো পুলক।কিন্তু শ্রুতি যে খুব আগ্রহ নিয়ে বসে ছিল উত্তরটা শোনার আশায়।মনে মনে ভেবেই নিলো আজ ও সবকিছু পুলকের থেকে জেনে তারপর এখান থেকে যাবে।
-‘ শ্রুতি! চল আমরা ফিরি।’
-‘ না।’
অনেকটা গম্ভীর হয়ে বললো শ্রুতি।
-‘ একটু আগেই না বললি বাসায় ফিরবি?’
-‘ এখন যেতে ইচ্ছে করছে না।’
উঠে চলে এলো ঈশাণের পাশ থেকে।দূরে দাঁড়িয়ে শুধু পুলককে লক্ষ্য করছে শ্রুতি।কী সুন্দর না দেখাচ্ছে আজ পুলককে। শ্যামলা বর্ণ ছিলো গায়ের রং টা।তিন বছর পর দেখে মনে হচ্ছে গায়ের রং টা আরো পরিষ্কার হয়েছে।চশমার ফ্রেমটাও চেইঞ্জ করেছে,চুলগুলো স্টাইলিশ ব্রাশ করা।দু একটা চুল লম্বা হয়ে পরে আছে কপালে ওপর।রেড টি শার্টের ওপর ব্ল্যাক স্যুট। হাতা কনুই অবদি গুছিয়ে রাখা।এত পরিবর্তন! কে বলবে দেখে এই মানুষটার জীবনে কিছু ঘটে গেছে যা একটা মানুষের জীবন শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।এত ভালো থাকতে দেখে পুলকের প্রতি শ্রুতির ঘৃণাবোধ টা আরো বেড়ে গেলো।ও দেখতে চেয়েছিল পুলক যেদিন ওর সামনে আসবে সেদিন ওর চেহারা হবে অপরাধবোধ আর অনুশুচোনার আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়া একটা মানুষের চেহারা।আজ ওর সামনে এসেছে ঠিকই তবে যা ভেবে রেখেছিল একদম তার বিপরীত কিছু হয়ে ওর সামনে এসেছে।পুলক কানে ফোন নিয়ে পুল সাইড থেকে একটু দূরে সরে এলো একটু ফাঁকা জায়গাতে।শ্রুতি সেখানে দ্রুত হেঁটে গেলো।ও অপেক্ষাতে ছিল কখন ফাঁকা স্পেসে পাবে পুলককে।
-‘ হ্যাঁ প্রজেক্টটা আমিই কমপ্লিট করবো সমস্যা নেই।এ মাসের সাতাশ তারিখেই আমি ব্যাক করছি।টেনশান নিতে হবে না আপনাকে।’
কথার মধ্যেই দেখল শ্রুতি ওর দিকে এগিয়ে আসছে।অনেকটা কাছে চলে এসেছে ওর।ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে বিদায় জানিয়ে ফোনটা পকেটে ভরে নিলো।ওর দিকে তাকিয়ে সুন্দর একটা প্রাণখোলা মুচকি হাসি দিলো।
-‘ হ্যালো।’
শ্রুতি নিশ্চুপ হয়ে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।চোখ দুটো উপচে পানি নেমে আসবে আসবে ভাব।পুলক বললো,
-‘ কী দেখছো এভাবে?’
-‘ একজন প্রতারক কে।’
-‘ কে প্রতারক এখানে?’
-‘ নামটা কী শুনতে ইচ্ছা করছে আমার মুখ থেকে?’
-‘ হ্যাঁ।’
-‘ কতোটা পাথর হৃদয়ের মানুষ হলে কেউ এত বড় অপরাধ করার পর ও….’
-‘ চুপ।’
ঠোঁটের ওপর অনামিকা আঙুল রেখে চোখে মুখে কঠোরতা এনে বললো পুলক।
-‘ এখনো যে আমার সামনে তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছো সেটাই তোমার কপাল।ধৈর্য ধরে বসে আছি শুধু।’
-‘ কী বোঝাতে চাইছো তুমি?’
-‘ কিছুনা।এখন বলো তো এঙ্গেজমেন্টের দিন ইনভাইটেশান পাচ্ছি কিনা?’
-‘ খুব শখ আসার?’
-‘ খুব।’
-‘ ঠিক আছে।চলে এসো।’
-‘ কী চায় তোমার আমার থেকে?’
-‘ অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে আমি।’
-‘ ওমা অবাক হওয়ার কী হলো?কিছু চায়না তোমার?ডিভোর্স? এটাও চায়না?’
আর পারলোনা আটকে রাখতে।অশ্রুর বাঁধ ভেঙ্গে পড়লো দু চোখ থেকে।আরো বেশি কান্না পাচ্ছে পুলকের এক্সপ্রেশন গুলো দেখে।শ্রুতি কান্না করলে পুলক সেই কান্না ভেজা চোখে আর মুখে হাজারো চুমুর প্লাবন বইয়ে দিতো।আজ সেই পুলক ওর কান্না দেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেমন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে। এ কেমন পুলক?এই পুলককেই কী শ্রুতি সবটা উজার করে ভালোবেসেছিলো?এত বড় স্বার্থবাদী একটা প্রতারককে বিশ্বাস করে নিজের বাড়ি ছেড়েছিল?পুলক আজ শ্রুতির চোখের পানি নিয়ে যে খেলাটা খেলল তা শ্রুতি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলবেনা। ওর কাছে এগিয়ে এসে গাল থেকে এক ফোটা পানি অনামিকা আঙুলের ডগার ওপর তুলে নিলো পুলক।তারপর বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে সেটা ঝেড়ে ফেলল।টিস্যু পেপাড় দিয়ে সেই আঙুল দুটোও মুছে নিলো।সবশেষে শ্রুতির পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।মরে যেতে ইচ্ছে করছে শ্রুতির।এর থেকে তো সারাজীবনে দেখা না হলেও ভালো হতো।তক্ষণি শ্রুতি ছুটে চলে আসে হোটেলের বাহিরে।আর সে দেখতে চাই না এই বিশ্বাসঘাতক,প্রতারক মানুষটাকে।
_____________________
তিন বছর আগের সবকিছুকে দুঃস্বপ্ন ভেবে সামনের জীবনে এগিয়ে যাবে শ্রুতি।এমন কিছু ভেবেই সে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে।ভাববে না সে আর ওই প্রতারকের কথা।
-‘ কিরে আজকের দিনে অনন্ত এভাবে মুখটা কালো করে রাখিস না।এমনিতেই তোদের নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই।তারউপর মুখটা এভাবে কালো করে রাখলে আরো বেশি বলার সুযোগ পাবে সবাই।’
মেঘলার কথাগুলো কানে আসতেই শ্রুতি ভাবলো, -‘ সত্যিই তো! কেনো আমি মনমরা হয়ে থাকবো? আমার তো আজ থেকে জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।আমি আজ থাকবো সবার থেকে খুশি হয়ে।’
কথাগুলো ভেবে নিজেকে একদম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো শ্রুতি।আজকে ঈশাণের সঙ্গে শ্রুতির এঙ্গেজমেন্ট।শ্রুতির বাড়িতেই পার্টিটা এ্যারেঞ্জ করা হয়েছে।শ্রুতি আর ঈশাণের আশপাশ দিয়ে ওদের সকল বন্ধু-বান্ধব গিজগিজ করছে। কেউ ই আসতে বাকি নেই।শুধু একজন বাদে।সে তো নিজে যেচে এসে দাওয়াতটা নিয়েছিল।আসবে কী সে? সবার সাথে হেসে হেসে গল্প করছে ঠিকই।কিন্তু মনের মধ্যে সেই মানুষটার ভাবনাও ভাবছে শ্রুতি।সবশেষে এঙ্গেজমেন্টটা হয়েই গেলো। প্রত্যেকেই খুব খুশি।কিন্তু খুশি হতে পারছে না শ্রুতি।এত ঘেন্নার পরও ইচ্ছা ছিল ওই মানুষটা আসবে এখানে, একটাবার দেখবে তাকে।কিন্তু কই?সে তো এলোনা।আর আসবেই বা কোন মুখ নিয়ে।আত্মসম্মানবোধ না থাকলে ঠিকই আসতো। নিচে গার্ডেন সাইডে বসে শ্রুতি আর ঈশাণ সব ফ্রেন্ডদের সঙ্গো আড্ডাই ব্যস্ত ছিলো।এরই মাঝে পুলক এসে উপস্থিত হলো।
-‘ আড্ডা তো বেশ জমেছে।আমি কী জয়েন করতে পারি?’
সবাই ফিরে তাকালো ওর দিকে।বাহ্ বেশ তো লাগছে আজ দেখতে পুলককে।পুলকের পরনে আজ শ্রুতির দেওয়া শেষ উপহারের হোয়াইট স্যুট এন্ড প্যান্ট।তার সঙ্গে স্যুটের নিচে হালকা পিংক কালার একটা শার্ট।পকেটে দু’হাত পুরে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে সে।নজরটা রয়েছে শ্রুতির দিকে।শ্রুতিও আজ হোয়াইট আর পিংক কালার মিক্সড একটা ল্যাহেঙ্গা পরেছে।যার জন্যই সবাই একবার শ্রুতিকে দেখছে আবার পুলককে দেখছে।পুলকের আগমন সবাইকে অবাক করে দিয়েছে শুধু ধ্রুব ছাড়া।সে এসে ওকে বললো,
-‘ আমি তো ভাবলাম তুই বোধহয় রুমে বসে কাঁদছিস আর টিসু পেপাড়ে চোখ মুছছিস।’
-‘ কী যে ভাবিস না আমাকে তোরা!’
-‘ তুই এখানে?’
ঈশাণ রাগে গম গমে ভাব নিয়ে প্রশ্নটা করলো পুলককে।ভদ্রতা বজায় রেখে পুলক উত্তর দিলো,-‘ তোর হবু বউয়ের কাছ থেকে সেদিন ইনভাইটেশান পেলাম।অবশ্য আমিই যেচে পড়ে নিয়েছিলাম।খুশি হোস নি বুঝি?’
শ্রুতির নজর মাটির দিকে।সে না পারছে পুলকের দিকে তাকাকে আর না পারছে ওর সঙ্গে কথা বলতে।চোখ ফেটে ভেতরে সব কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে।এতটা কষ্ট তো ওর হওয়া উচিত না।পুলক তো বেশ আছে।তাহলে ও কেনো এত কষ্ট পাবে?
-‘ আমি এসেছি তার কারণটা তুই না বুঝলেও তোর বউ বুঝে গেছে।’
পুলকের কথায় শ্রুতি এতক্ষণে টের পেলো।পুলক এসেছে ওকে ডিভোর্স পেপাড় টা দিতে।কাগজে কলমে সারাজীবনের জন্য আজই ওদের বিচ্ছেদ ঘটবে।পারবে কী শ্রুতি ওই কাগজে একটা সই করে সারাজীবনের জন্য ওকে ত্যাগ করতে?হুহ্ মনের বিচ্ছেদটা তো কবেই ঘটে গেছে।তাহলে কাগজে কলমে বিচ্ছেদটা মেনে নিতে আর সমস্যা কোথায়?নিজেকে সামলে একদম স্বাভাবিক করে উঠে এলো পুলকের সামনে।
-‘ কই? কাগজটা দাও।’
পুলক কাগজটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।শ্রুতির চোখের দিকে তাকিয়ে কাগজ ওর দিকে এগিয়ে ধরলো।
_________________
বাগানের ভেতরটায় যেখানে নিরিবিলি বসার জন্য একটা ছোট টেবিল আর দুটো চেয়ার সেখানে গেল ওরা দুজন।সাথো এলো ঈশাণও।কাগজটা হাতে নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে শ্রুতি যখন সই করতে গেলো তখন পুলক বললো,-‘ অন্ততপক্ষে একবার চোখটা বুলিয়ে নাও।পড়ে দেখো কাগজে কী লেখা আছে।এত তাড়া কিসের?বিয়েটা তো আর আটকে দিচ্ছি না।’
ঈশাণ এগিয়ে এসে বললো,-‘ শ্রুতি কাগজটা দে তো দেখি।’
-‘ ডিভোর্সটা আমার আর তোর শ্রুতির হচ্ছে।তোর ভূমিকা এখানে না থাকলেও চলবে।স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাক।’
ঈশাণ ক্রুদ্ধ চোখে চেয়ে আছে পুলকের দিকে।পুলকের চাহনি ও ঠিক একই রকম।শ্রুতি কাগজটা হাতে নিয়ে যখন পড়তে শুরু করলো তখন পুলক আবার বললো,-‘ চেয়ারটাতে বসো তারপর পড়ো।’
শ্রুতি একটু সময় ওর দিকে চেয়ে থেকে চেয়ারে বসল।তারপর পড়তে আরম্ভ করলো।শুরুর দিকে আইনীভাবে কাগজে যা লেখা থাকে সেগুলোই লেখা।তারপর নিচে নামতে নামতে যে লিখাগুলো ছিল তা পড়তে পড়তে শ্রুতির গলা শুকিয়ে আসছিলো।মনে হচ্ছিল ওর পায়ের নিচের জমিন কেঁপে উঠছে বার বার।এর জন্যই বোধহয় পুলক ওকে বসে পড়তে বলেছে।
-‘ বিয়েটা কেনো করছিস না বল তো?ঈশাণ কিন্তু সত্যি খুবই পছন্দ করে তোকে।আর সেটা ভার্সিটি টাইম থেকেই।ও এখনো তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।আর তুই অপেক্ষা করে আছিস ওই বেঈমানের জন্য?’
শ্রুতি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।এই তিনটা বছর শ্রুতি কীভাবে কাটালো তা নিজেরও অজানা।এর মাঝে অনেকবার মনে হয়েছে যে পুলকের সাথে একটাবার কথা বলা উচিত।কিন্তু রাগ অনুরাগ তাকে আটকে ধরে রেখেছিলো।আর যখন সেই রাগ অনুরাগকে ভুলে গিয়ে পুলকের খোঁজ নিতে গেলো তখন আর পুলককের অস্তিত্ব পাওয়া গেলো না।সবাই বলছে পুলক হয়তো সেই বাবলী মেয়েটার সঙ্গে দূরে কোথাও সংসার পেতেছে কিংবা অন্য কাউকে নিয়ে।কিন্তু শ্রুতির মনে হচ্ছে পুলক ভালো নেই।
-‘ শ্রুতি?কথা বলছিস না কেনো?
মেঘলার ডাকে শান্ত চোখে ওর দিকে ফিরে তাকালো।
-‘ তোর কী মনে হয় পুলক সত্যিই কাউকে….?’
-‘ শ্রুতি!’
-‘ প্লিজ বল না?’
-‘ আমি জানিনা কিছুই।ওর ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে নামা প্লিজ।ও যদি কোনো অপরাধ করে না থাকে তাহলে তোর সাথে কেনো আর যোগাযোগ করলোনা বল।ও তোকে একসময় এমনিতেই ছেড়ে চলে যেতো।কিন্তু তার আগেই তো…..’
মেঘলার কথার মাঝে ওর ফোন বেজে উঠলো।ফোনে কথা বলা শেষে শ্রুতিকে বললো, ‘ঈশাণ আসছে এখানে।তোর ফোন রিসিভ হচ্ছেনা বলে আমাকে ফোন করেছে।’
-‘ ও এখানে এসে কী করবে?’
-‘ কী করবে আবার?কফি খাবে আমাদের সঙ্গে।শোন আজ সবকিছু তোদের মাঝে ক্লিয়ার করে নে।ঈশাণ সত্যি তোকে ভালোবাসে রে।ও তোকে অনেক ভালো রাখবে।’
সেদিনের কথার পর শ্রুতি আর ঈশাণ কে ফিরিয়ে দিতে পারে নি।ঈশাণের ওর মুখ থেকে হ্যাঁ শব্দটি না শোনা পর্যন্ত জায়গা থেকে এক চুল পরিমাণ ও নড়েনি।শ্রুতির হাতটা ধরে বসেই ছিল শুধুমাত্র ওর মুখ থেকে হ্যাঁ শব্দটি শোনার জন্য।অবশেষে শ্রুতি আর ফিরিয়ে দিতে পারে নি ওকে।সেদিন রাতেই ঈশাণ ওর বাবা-মা কে নিয়ে শ্রুতির বাড়িতে যায় শ্রুতিকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিতে।ঈশাণের মতো ছেলের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার মতো ইচ্ছা কোনো বাবা-মায়ের ই নেই।শ্রুতির বাবা-মা ও পারে নি।সবশেষে রিসেন্ট মান্থেই ওদের এঙ্গেজমেন্টের ডেট ফিক্সড করেছে তারা।
.
.
.
-‘ আচ্ছা তোরা এ্যারেঞ্জমেন্ট কর। ওকে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমার।ওকে রাখছি।’
-‘ ঈশাণ আমি কোথাও যাবোনা। প্লিজ আমাকে জোড় করিস না।’
-‘ কেনো যেতে চাইছিস না তুই?আচ্ছা তুই কী আমাকে মেনে নিতে পারছিস না এখনো?’
-‘ তেমন কোনো বিষয় না।আমার ভালো লাগছে না।’
-‘ ভালো লাগাতে হবে শ্রুতি।২-৩ বছর আগেও আমরা সব ফ্রেন্ডরা এমন কতো ইভেন্ট তৈরি করেছি।কতো এনজয় করেছি সেইসব ইভেন্টগুলো।তাহলে আজ কেনো করবি না?এভাবে লাইফটাকে থামিয়ে রাখার কোনো মানেই হয়না।’
শ্রুতি ঈশাণ কে কী করে বোঝাবে যে এমন ধরনের ইভেন্টে জয়েন করা মানেই পুলকের স্মৃতিগুলো ওকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে।সেইসব ইভেন্টগুলোর মূল ইভেন্ট প্ল্যানার ছিল যে পুলক।সেই সময়গুলোতে দুজন কতো মিষ্টি মধুর সময় কাটিয়েছে ওরা।আর আজ এখন সেই ইভেন্টে সবাই থাকবে শুধু থাকবে না পুলক।
-‘ তুই নিশ্চই পুলকের কথা মনে করে ইভেন্টে যেতে চাইছিস না?’
-‘ (নিশ্চুপ)’
-‘ যদি এটাই তোর না যাওয়ার মূল কারণ হয় তাহলে আমি তোকে বাধ্য করবো ইভেন্টে জয়েন করতে।কারণ আমি চাই না তুই ওই প্রতারকের স্মৃতি মাথায় রেখে সব আনন্দ খুশি থেকে নিজেকে দূরে রাখবি।এখন তুই কী চাস বল?আমি তোকে বাধ্য করবো আমার সঙ্গে যেতে নাকি তুই নিজেই যাবি?’
অগত্যা শ্রুতি পুলকের সঙ্গে একটি হোটেলে গেলো ওদের ফ্রেন্ডদের গেট টুগেদার পার্টিতে।সেখানে তানিয়া,মেঘলা,নিশাদ,রবিন ছাড়াও ভার্সিটির আরো কিছু ফ্রেন্ড এসেছে।পার্টিটা হচ্ছে হোটেলের মধ্যে সুইমিং প্লেসের সাইডে।চারপাশ অসম্ভব আলো আর মিউজিকের জোরালো শব্দে শ্রুতির মাথা ধরে আসছে।সবাই ইতোমধ্যে শ্রুতি আর ঈশাণের বাগদানের কথা জেনে গেছে।খুব ইয়ারকি মজা করছে সবাই ওদের সঙ্গে।এর মধ্যে ওদের একটি ফ্রেন্ড ধ্রুব এসে ঈশাণকে বললো, ‘ সেই তো ওকে ভাগিয়েই নিলি।তো পুলকের সঙ্গে বিয়েটা হওয়ার আগেই ভাগিয়ে নিতি।বিয়ের পরে কেনো দোস্ত?’
-‘ ভাগিয়ে নিয়েছি এটা কেমন কথা ধ্রুব?কথা সংযত হয়ে বল।’
-‘ অদ্ভুত!রেগে যাচ্ছিস কেনো?কথাটা কী শুধু আমি একা বলছি? এখানে যারা উপস্থিত সবাই একই কথা বলছে।’
-‘ সবাই বলছে মানে?সবাই কী বলছে?’
-‘ আচ্ছা থাক বাদ দে।যা বলেছি তো বলেছি।ওসব কথা থাক। এসেছি এনজয় করতে।ভাগাভাগি প্রসঙ্গ থাক।চল ওদের কাছে যাই।’
-‘ দাঁড়া শ্রুতিকে ডাকি।’
-‘ আরে ও তো আছে মেঘলাদের সঙ্গে।তুই আয় আমার সাথে।’
হাতে সফ্ট ড্রিংকসের গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে ঈশাণ সবার সঙ্গে কথা বলছে।কথার এক পর্যায়ে ঈশাণ জানতে চাইলো আজকের ইভেন্টের মূল প্ল্যানার কে?শুভ নামের একটি ফ্রেন্ড বললো, ‘ কেনো তুই জানিস না?’
-‘ না তো।কে?’
-‘ কী যে বলিস।এতকাল ধরে ইভেন্টগুলো কে তৈরি করে? সেই ই করেছে।’
ঈশাণ কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেলো শুভ’র কথা শুনে।চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।বললো, ‘কার কথা বলছিস।ভালো করে বল।’
-‘ থাক আর জানতে হবে না।একটু পর নিজের চোখেই দেখে নিস।’
-‘ এই শ্রুতি তোদের কী আকদটা হয়ে গেছে?’
-‘ আরে না।এ মাসের ছাব্বিশ তারিখে এঙ্গেজমেন্ট।তারপরই বিয়ের ডেট ফিক্সড হবে।’
-‘ আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?কিছু মনে করবি না তো?’
-‘ রিয়া তুই কী জিজ্ঞেস করতে পারিস তা আমি জানি। না, আমার আর ওর ডিভোর্সটা এখনো হয়নি।ও কোথায় আছে আমি নিজেও জানিনা।’
-‘ তাহলে ডিভোর্স ছাড়া……’
রিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইভেন্ট প্ল্যানার এসে উপস্থিত। সবাই তার সঙ্গে জাপ্পি নিতে ব্যস্ত।
-‘ এবারের ইভেন্ট প্ল্যানার কে?’
-‘ গিয়ে দেখে আয় কে।’
রিয়ার মুখের দিকে চেয়ে দেখলো শ্রুতি।রিয়া ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।রিয়ার থেকে চোখ ফেরাতেই ঈশাণের দিকে চোখ পড়লো শ্রুতির।কেমন বিষণ্নতার ছাপ চেহারায় দেখতে পাচ্ছে ও।
-‘ চল দেখা করে আসি ওর সাথে।অনেকদিন বাদে দেখা হচ্ছে।’
রিয়ার সাথে এগিয়ে গেলো সকলের মাঝে সেই ইভেন্ট প্ল্যানারের সাথে দেখা করতে।বুকের ভেতরটা কেমন যেনো ছটফট করছে।মানুষটা কে হতে পারে এটা ভেবেই বড্ড অস্থির লাগছে শ্রুতির।শ্রুতির পাশে এসে দাঁড়ালো ঈশাণ।সে নিজেও এক্সাইটেড মানুষটা কে হতে পারে তাকে দেখার জন্য।
-‘আমি কী তোমার বাসায় যাচ্ছি?’
-‘হ্যাঁ।’
-‘সত্যি?’
-‘মিথ্যা হবে কেনো?’
-‘আমি কী আজ থেকে তোমার সঙ্গেই থাকবো?’
-‘অবশ্যই।আমার সঙ্গে থাকবেনা তো কার সঙ্গে থাকবে তুমি?’
-‘ওখানে আর আমাকে ফিরে যেতে হবেনা? ওরা যদি আমাকে কখনো নিতে আসে আবার?’
-‘আর আসবেনা ওরা বাবু।তুমি এত চিন্তা করছো কেনো?এখন তো আমি আছি তোমার সঙ্গে তাইনা?’
গাড়িতে বসে পুলক বাবলীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাড়িতে পৌঁছে গেলো।বাবলী ছোট বাচ্চাদের মতো পুলকের বাহু জড়িয়ে ধরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।শ্রুতি কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে ওদের দুজনকে একসাথে দেখে না চাইতেও চমকে গেলো।
পুলকের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।আর বাবলী মেয়েটা খুব ভীত চোখে তাকিয়ে দেখছে শ্রুতিকে।
শ্রুতি দরজার মুখের সামনে থেকে সরে দাঁড়াতে ওরা ভেতরে ঢুকলো।ড্রয়িংরুমে তানিয়া,মেঘলা, ঈশাণ,রবিন,নিশাদ সবাই বসে আছে।সবারই মুখের ভাবটা গম্ভীর।পুলকের সঙ্গে ছবিতে দেখা ওই মেয়েটিকে দেখে সবাই বেশ চমকে উঠলো। কেউ কিছু বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছেনা।শুধু তাকিয়ে দেখছে দুজনকে।
শ্রুতি শান্ত ভঙ্গীতেই বললো পুলককে।পুলক বললো, ‘ও আমার ছোট বোন শ্রুতি।আমার একমাত্র ছোট বোন।যাকে আমি সেই এগারো বয়স হারিয়েছিলাম।’
পুলকের উত্তরে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেলো।শ্রুতিও একদম চুপ হয়ে গেলো।ওরা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু।ঈশাণ হঠাৎ এর মধ্যে খিক করে হেসে উঠল।বললো, ‘কারো কোনো কমেন্ট আছে?’
সবাই নিশ্চুপ।এ্যাটেনশন এখন সবার ঈশাণের দিকে।পুলকও চেয়ে আছে ওর দিকে।কী বলতে চাই তা শোনার আশায়।ঈশাণ উঠে এসে পুলকের সামনে দাঁড়াল পকেটে হাত গুজে।বললো, ‘এত লো ক্লাসেস বুদ্ধি পাস কই?’
-‘তোর সমস্যা কোথায় বল তো ঈশাণ?’
-‘এটা তো আমি জিজ্ঞেস করবো আমি?কেনার সময় কী বোন বলে কিনেছিস?’
-‘ঈশাণ….!’
চিৎকার করে উঠলো পুলক।ঈশাণ আবারো বললো, ‘কিনেই তো এনেছিস।মিথ্যে বলেছি কী?রবিন স্বাক্ষী আছে এখানে।আর সব থেকে বড় স্বাক্ষী ওখানকার সর্দারনী।ফোন দিই?কী বলিস?তুই দিবি নাকি আমি দিবো?’
ঈশাণ পুলককে সর্দারনীর নাম্বারটা দেখিয়ে কল করলো তাকে।কলটা স্পীকার করে সবাইকে শুনালো পুলক কীভাবে কত দামে বাবলীকে ওখান থেকে কিনে নিয়েসেছে।আর সব থেকে বড় যে কথাটা সেটা হলো সর্দারনী জানিয়েছে বাবলীকে পুলক বিয়ে করবে বলে সে ওকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে কিনে এনেছে।কোন বোন পরিচয়ে আনেনি এখানে।শ্রুতি ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলো।মেঘলা,তানিয়া ওকে দ্রুত গিয়ে ধরে বসল।পুলক ঈশাণের কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে সর্দারনীকে বললো, ‘এই কী বলছেন আপনি?এসব কী বলছেন?বাবলীকে আমি বিয়ে করবো বলে…..।ছিঃ ও আমার বোন।আমি কত কষ্টে ওর সন্ধান পেয়েছি আপনি জানেন।হ্যালো হ্যালো…..?’
ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে গিয়েছে।পুলক ঘুরে তাকিয়ে দেখলো শ্রুতি মেঘলার বুকে মাথা রেখে ফ্লোরে পাথরের মতো বসে আছে।তাকে খুবই অস্বাভাবিক লাগছে।ওর কাছে গিয়ে পুলক বললো, ‘তুমি আমাকে বিশ্বাস করছোনা,হ্যাঁ? এই শ্রুতি?তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা আমার কথা? বাবলী আমার বোন।ছোট থাকতে আমার মামা একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে ওকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলো আমার কাছ থেকে।ও তখন খুব ছোট ছিলো।আমি ওকে কোথাও খুঁজে পাইনি।সপ্তাহ খানেক আগে আমার সেই মামা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকার জন্য।আমাকে জানায় সে ক্যান্সারে আক্রান্ত।এডিক্টেড ছিলো খুব সে।আমি তাকে টাকা দিতে রাজি না হলে সে আমাকে বাবলীর কথা জানায় বাবলীকে সে কোথায় চুরি করে রেখে এসেছিলো।আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বাবলী এখন টাঙ্গাইল।আর আমি সেদিনই তোমাকে অফিসের কাজের কথা জানিয়ে টাঙ্গাইল যাই ওকে ফিরিয়ে আনতে।আমি……’
-‘থাম ভাই।অনেক তো বললি।এবার তোর বাবলীকে কিছু বলতে দে।’
পুলক থম মেড়ে দাঁড়িয়ে আছে।শ্রুতিকে কিছু বলবে তখনই ঈশাণ ধমকে বাবলীকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এই মেয়ে তোর সাথে পুলকের পরিচয় কী করে?তোর সাথে ওর সম্পর্ক কিসের?’
এরকম আরো নানারকম প্রশ্ন করলো ঈশাণ বাবলীকে।বাবলীর উত্তর যা ছিল তা শোনার পর পুলক আর এক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। শ্রুতি ওর মুখটা অবদি তাকিয়ে দেখেনি।শ্রুতি বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে মেঘলা আর তানিয়ার সাথে।বাবলী কী করে বলতে পারলো পুলক তার দেহ ভোগের জন্য বাড়িতে নিয়েসেছে পতিতালয় থেকে?নিজের বোন হলে এমন কথা সে কখনো বলতে পারতোনা।এসব ভেবে পুলকের মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে একদম।এর মধ্যে কখন যে শ্রুতি মেঘলা আর তানিয়ার সাথে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে পুলক তা লক্ষ্যও করেনি।একে একে বাসাটা পুরো খালি হয়ে গেছে।পুলক মেঝেতে বসে আছে।
-‘জীবন টা আবারও আমার সঙ্গে লুকোচুরি খেললো।’
এটায় ছিলো পুলকের শেষ কথা।এরপর প্রায় তিন বছর কেটে যায়।পুলকের কোনো সন্ধান মিলেনি।শ্রুতি যখন নিজের বাড়িতে ফিরে যায় তার কিছুদিনের মাথায় ওর ফ্যামিলি শ্রুতিকে বাধ্য করে পুলককে ডিভোর্স লেটার পাঠাতে। পুলকের ঠিকানাতে ডিভোর্স লেটার পৌঁছালেও পুলককে আর পাওয়া যায় না।তার আগে পুলক বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলো শ্রুতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে।কিন্তু পারেনি আর তার এক সপ্তাহ পর থেকেই পুলক হারিয়ে গেছে কোথাও।কেউ ই তার কোনো সন্ধান দিতে পারেনি।
-‘ তোর সাহস কতখানি তুই আমাকে থ্রেট করছিস?অবশ্য এমন একটা বাজে কাজ করার মতো সাহস যে দেখাতে পারে তার তো…..।তুই বেরো আমার বাসা থেকে।যাহ্ বেরো……বেরো।’
একরকম ঘাড় ধাক্কা দিয়েই বের করে দিলো ঈষাণকে পুলক।শ্রুতি বেলকোনির এক কোণে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখের পানিতে গাল চিকচিক করছে তার।আবছা আলোতেই পুলক দেখতে পাচ্ছে শ্রুতি আর শ্রুতির ভেজা গাল।তখন ঈষাণের সাথে অমন ক্লোজড হয়ে বসে থাকতে দেখে ক্ষণিকের জন্য মাথা খুব গরম হয়ে গিয়েছিল।নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারেনি তখন।ওইভাবে শ্রুতিকে আঘাত করা পুলকের একদমই উচিত হয়নি।সম্পর্কের এতগুলো বছরে এভাবে হুট করেই শ্রুতিকে অবিশ্বাস করাটা পুলকের কাছে খুব অন্যায় বলে মনে হচ্ছে।তবুও মনকে মানাতে পারছেনা সে।
-‘ কেনো এমনটা করলে?’
পুলকের প্রশ্নে শ্রুতি চোখের পানি মুছে চোখ মুখ শক্ত করে ওর দিকে এগিয়ে এলো।
-‘ আমাকে করছো এই প্রশ্ন?প্রশ্নটা তো আমার করার কথা ছিলো তাইনা?’
পুলক খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে।শ্রুতি যদি অন্যায় কিছু করে থাকে তাহলে ওর চোখে মুখে কঠোরতা নয় আতংক থাকার কথা।কিন্তু না তাকে খুবই আপসেট লাগছে।ওপর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ভেঙ্গে চুড়ে পরেছে সে।ব্যাপারটা আগে জানা প্রয়োজন পুলকের।
-‘ কী করেছি আমি বলো তো?কী হয়েছে তোমার?’
-‘ আমার মুখ থেকেই শুনতে চাইছো?’
-‘ প্লিজ আমি এভাবে তোমাকে দেখতে পারছিনা।’
-‘ তাই?’
-‘ তখন তুমি কী বললে আমাকে?আমি তোমার সতীন আনছি।নারী পিপাসু আমি।এগুলো কী ভাষা ছিলো শ্রুতি?এমনো কথা তোমার থেকে আমাকে কখনো কোনোদিন শুনতে হবে……।’
-‘ কী করেছি আমি বলো?’
শ্রুতি কিছুক্ষণ পুলকের মুখের দিকে চেয়ে থেকে রুমে চলে গেলো।পুলকও ওর পিছু পিছু রুমে এলো।বিছানার ওপর থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে ফটো গুলো পুলকের সামনে মেলে ধরলো শ্রুতি।ফটোগুলো দেখে চোখদুটো বন্ধ করে হতাশার ভঙ্গীতে মুখ ঘুরিয়ে নিলো পুলক। অনেক সময় ধরে শ্রুতি পুলকের মুখের দিকে চেয়ে আছে কিছু শোনার আশায়।ও শুনতে চায় পুলক বলুক, ‘ তুমি যা ভেবেছো সব ভুল সব মিথ্যা।’ কিন্তু পুলক এমন কিছুই বললোনা। কিছুক্ষণ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলো।গলা থেকে টাই টা খুলে নিচে ফেলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো সে।শ্রুতির ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাঁদতে।হেঁটে হেঁটে বেলকোনিতে চলে গেলো সে।
————————————————–
মাথাটা প্রচন্ড ভার হয়ে আছে শ্রুতির।কেমন যেনো চোখ মেলে তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে।মাথাটা চেঁপে ধরে উঠে বসে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো সে।সকাল ১০ বেজে ৩৫ মিনিট।
-‘ অনেক দিন পর এতো বেলা অবদি ঘুম হলো।’
পুলকের কথা শুনে ফিরে তাকালো শ্রুতি ওর দিকে।হাতে দু কাপ কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। খুব খোশ মেজাজে আছে বলে মনে হচ্ছে শ্রুতির কাছে।ব্ল্যাক টি শার্ট আর হাফ কোয়ার্টার প্যান্ট সাথে ভেজা চুল গুলো কপালের ওপর এলোমেলো হয়ে পরে আছে।খুবই স্বচ্ছ লাগছে তাকে দেখতে।
ওর এতো অতী স্বাভাবিক ভাব দেখে শ্রুতির নিজেকে আরো বেশি এলোমেলো লাগছে।
একটু আবেগমাখা কন্ঠে পুলক আবারো বললো, ‘ পারবেনা তো আমাকে ছেড়ে থাকতে।তাহলে খামোখা এই দূরে থাকার ব্যার্থ চেষ্টা কেনো?’
-‘ কী চাইছো বলো তো তুমি?কী চাইছো?সবকিছু স্বাভাবিক রেখে আমার সামনে তাকে নিয়ে সংসার করতে?কীভাবে পারছো তুমি এমন জিনিস ভাবতে?’
বড্ড তেজী গলায় কথাগুলো বললো শ্রুতি।পুলক শুধু শূণ্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওর দিকে।শ্রুতি ওর এমন ব্যবহার কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। পুলকের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারলোনা। চোখের পলক নামিয়ে মাথা নিচু করে আবার কেঁদে ফেললো।ও পারবেনা এভাবে থাকতে। মরেই যাবে ও পুলককে ছাড়া।পুলক শ্রুতির মাথাটা নিজের কাঁধের ওপর টেনে নিলো।শ্রুতি মাথা উঠিয়ে নিতে চাইলে পুলক জোর করেই ধরে রাখলো ওকে।
-‘ ছাড়ো।’
-‘ না।’
-‘ উফ্ আমার অসহ্য লাগছে খুব।ছাড়ো।’
-‘ আমি সারাদিন তোমাকে এভাবে ধরে রাখলেও তোমার যে অসহ্য লাগবেনা তা আমি জানি। তোমাকে জানতে হবে, শুনতে হবে আমার সব কথা। কে বা কারা এমন একটা ব্যাপারকে ভুলভাবে তুলে ধরেছে তোমার সামনে তা আমি শুনবোনা। কারণ সেই তথ্য আমি নিজেই অনুসন্ধান করবো।কিন্তু তুমি যে ব্যাপারটাকে ঘিরে একটা বিশ্রি ঘটনা তৈরি করে নিয়েছো নিজের মনে সেটা আমায় ক্লিয়ার করতে হবে তোমার কাছে। তবে শুধু মুখে বলে নয়।স্ব-চোক্ষে দেখিয়ে ক্লিয়ার করবো সবকিছু।একটু ওয়েট করো।’
__
ঈশাণ শ্রুতির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে দেখল পুলকের সঙ্গে একটি মেয়ের বেশ কিছু ছবি।একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে পুলক ওই মেয়েটাকে আইসক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে, মেয়েটাও ওকে আইসক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে আবার ওর নাকেও জড়িয়ে দিচ্ছে।দুজন মিলে শপিং করে বের হচ্ছে,রিক্সায় ঘুরছে।ছবিগুলো দেখে ঈশাণ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল।তারপর শ্রুতিকে বলল,
-‘ রবিনকে ফোন কর।’
শ্রুতির শরীর থরথর করে কাঁপছে তখন। মাথাটাও কেমন ঘুরছে মনে হচ্ছে ওর কাছে।আজকে শ্রুতির পুলকের বলা ওই কথাটা মনে পরছে,
-‘ জীবনের সব থেকে বড় খুশিটা ফিরে পেয়েছি।’
তাহলে কী এটাই ছিল ওর জীবনের সব থেকে বড় খুশি?হ্যাঁ ছবিতে পুলককে খুব খুশি দেখাচ্ছে।এই খুশির জন্যই হয়তো ও এতদিন অপেক্ষা করেছে।এমনটাই মনে হচ্ছে ছবিগুলো দেখে।শ্রুতি আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা।মাথা ঘুরে নিচে পরে গেল।ঈশাণ দ্রুত ধরে ওকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে এল।চোখ মুখে পানি ছিটানোর পর ওর জ্ঞান ফিরলে ঈশাণের বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল শ্রুতি।ঈশাণ তখন ধমকে বলল,
-‘ ছবিটার মেয়েটা কে তুই কী জানিস? না জেনেই এরকম পাগলের মত কান্নাকাটি করছিস কেন?ওর তো কোনো রিলেটিভ…..’
শ্রুতি ঈশাণের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘ ওর কোনো রিলেটিভ নেই ঈশাণ ওর কোনো রিলেটিভ নেই।’
-‘ তুই কান্না থামা।আগে রবিনকে ফোন কর।ও মেসেজ করেছে তুই ওই মেয়েটাকে চিনিস কিনা?’
কোনরকমে নিজেকে সামলে শ্রুতি রবিনকে ফোন করল।
-‘ হ্যালো শ্রুতি?’
-‘ তুই এই ছবিগুলো কোথায় পেয়েছিস?’
-‘ এই ছবিগুলো আমি নিজে তুলেছি। গতকাল আমি টাঙ্গাইল এসেছি মামার বাড়িতে।তারপর বিকালে আমি মামার সাথে শহরে ঢুকতেই পুলককে একটা দোকানের সামনে দেখলাম।ওকে দেখে ছুটে ওর কাছে যাব তখন দেখি ওর পাশে ওই মেয়েটা।তারপর ওরা ওখান থেকে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকল।আমিও গেলাম সেখানে।ওরা পাশাপাশি বসে যেভাবে গল্প করছিল আর খাচ্ছিল এভাবে আমি বাইরে কখনো তোর সাথে বসেও করতে দেখিনি।ব্যাপারটা তখনই আমার কাছে বেশ খটকা লাগল।তাই আমি ছবিগুলো তুলে ফেলি।ভেবেছিলাম ওই সময়ই তোকে ফোন দিব।পরে ভাবলাম আগে আমি নিজে ক্লিয়ার হই।পুরোটা বিকাল ও ওই মেয়েটাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছে।আর সন্ধ্যার সময় ওই মেয়েটাকে নিয়ে এমন একটা জায়গায় ঢুকল যে তখন আমি মাথা ঠান্ডা করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না।’
রবিন একটু চুপ থেকে নিচুস্বরে বলল, ‘ নিষিদ্ধ পল্লিতে।’
শ্রুতি তখন একদমই চুপ।রবিন আবার বলতে শুরু করল,
-‘ আমি পিছু পিছু মামাকে নিয়ে ওখানে ঢুকলাম।তারপর দেখলাম মেয়েটাকে নিয়ে ওই পল্লির সর্দারনীর বিল্ডিং এ ঢুকতে।মিনিমাম দু ঘন্টা পর পুলক বেশ মন ভার করে বেরিয়ে এল ওখান থেকে।আমি ভাবলাম তখনই ওর সাথে গিয়ে কথা বলব।কিন্তু মামা বারণ করল।ওর পিছে পিছে তখন ওই সর্দারনী বেরিয়ে এসেছে।ওকে বলল,
‘ কাল রাতেই তুমি ওকে এসে নিয়ে যেতে পারবে।কিন্তু আজকে নয়।কথা দিচ্ছি ওর কাছে আজকে রাতে আর কেউ আসবে না।তুমি নিশ্চিন্তে ফিরতে পারো।’
-‘ আমার হাত পা নিশপিশ করছিল তখন। কোনোরকমে নিজেকে সামলে চলে এসেছি আমি।তারপর মনে হল ব্যাপারটা তোকে জানানো উচিত।’
-‘ অনেক বড় উপকার করেছিস।তুই কোথায় এখন?’
-‘ আমি এখনো মামার বাড়িতে।কাল ঢাকা ফিরব।’
-‘ কাল রাতে আমাদের বাসায় আসিস।’
-‘ পুলক বাড়িতে ফিরেনি?’
-‘ না।কাল আসবে।’
-‘ আচ্ছা তুই নিজেকে সামলা।ওর থেকে আগে পরিষ্কার ভাবে জানতে চাইবি মেয়েটা কে ছিল?’
-‘ হুম।রাখছি।’
ফোনটা হাত থেকে নিচে পরে গেল। শ্রুতির চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পরছে।এখন ওর কী করা উচিত,কীভাবে নিজেকে সামলানো উচিত ও কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা।ওর কী এগুলো বিশ্বাস করা উচিত নাকি উচিত না ওর মাথায় কিছুই কাজ করছেনা।ঈশাণ বার বার জিজ্ঞেস করছে,”কী বলল রবিন?” সেই প্রশ্নেরও উত্তরও দিচ্ছেনা শ্রুতি।বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে ডাইনিং এ চলে গেল।তারপর টেবিল থেকে ছুড়িটা নিয়ে হাতে আঘাত করতে গেলে ঈশাণ ছুটে এসে জোড় করে ওর হাত থেকে ছুড়িটা নিয়ে নিচে ফেলে দিল।টানতে টানতে ওকে বেডরুমে নিয়ে বসাল।
শ্রুতি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘ আমার পুলক একটা বেশ্যার প্রেমে পরেছে ঈশাণ।’
শ্রুতিকে সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছে ঈশাণের।এভাবে ওকে একা ফেলে গেলে নির্ঘাত কোনো একটা অঘটন ঘটিয়ে বসবে।বাধ্য হয়ে ঈশাণকে থেকে যেতে হচ্ছে শ্রুতির কাছে।শ্রুতিকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে ঈশাণ।আর শ্রুতি ঈশাণের কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে যাচ্ছে।কাঁদার এক পর্যায়ে শ্রুতি ঈশাণের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে।ঈশাণ তখন ঘড়িতে দেখল রাত ১১:৩০ টা বাজে।এখন শ্রুতিকে শুইয়ে দিয়ে চলে যাওয়া যায়।কিন্তু তারপরেই মনে হল ঘুম ভেঙে যদি আবার কিছু করার চেষ্টা করে।তাই ঈশাণ সিদ্ধান্ত নিলো আজকের রাতটা এখানেই থেকে যাবে।ব্যাপারটা খারাপ দেখালেও কিছু করার নেই এখন।রাত দুটোর সময় পুলক বেশ হাসিখুশিভাবে বাসায় ফিরে এল।অনেক কিছু কিনে এনেছে পুলক শ্রুতির জন্য।আজকে অবশ্য আসার কথা ছিলনা পুলকের।এটাই বলেছিল শ্রুতিকে। কিন্তু ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য না বলেই চলে এল।রুমে ঢুকে দেখল ডাইনিং রুমের লাইট জ্বলছে।নিজেদের রুমের ও লাইট জ্বলছে।শ্রুতি কী এখনো জেগে আছে?রুমে ঢুকেই পুলক একটা ধাক্কা খেল।স্বপ্নেও কখনো কল্পনা করেনি শ্রুতিকে ও এইভাবে ঈশাণের সঙ্গে দেখবে।হাতের প্যাকেটগুলো ফ্লোরে ছুড়ে মাড়ল।তার শব্দ শুনেই ওদের ঘুম ভেঙ্গে গেল।পুলকের চোখে তখন আগুন জ্বলছে।শ্রুতিও একটু ঘৃণাভরা আর বিস্ময় চোখে তাকিয়ে দেখছে পুলককে।তারপরই খেয়াল হলো ও ঈশাণের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। দ্রুত সোজা হয়ে বসল শ্রুতি।ঈশাণের দৃষ্টি তখন স্বাভাবিক।এই মুহূর্তে কার কী বলা উচিত কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা কেউ। পুলক হঠাৎ ঈশাণের দিকে তেড়ে আসে ওর কলার চেঁপে ধরে দাঁড় করিয়ে বলল,
-‘ জানুয়ারের বাচ্চা তোর রুচিতে একটুও বাঁধলোনা রে?আমার ঘরে বসেই তুই আমার বউয়ের সঙ্গে রাত কাটাচ্ছিস? এভাবেই দাম দিলি বন্ধুত্বের?’
-‘ পুলক কলাড় ছেড়ে কথা বল।কিছু না জেনে না শুনে আগেই কোনো ব্লেম দিবিনা।’
পুলক ওর কলাড় চেঁপে ধরে ঠেলতে ঠেলতে দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে বলল,
-‘ কী জানাবি তুই?রাত দুটোর সময় তোরা কাঁধে মাথা রাখা রাখি করে ঘুমিয়ে আমাকে কী জানাতে চাস?’
শ্রুতি চোখদুটো চোখে মুখে রাগ নিয়ে পুলকের পিছে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বলল,
-‘ নিজের নোংরা মনের সাথে সবার মনের তুলনা করবেনা তুমি।ঈশাণকে ছাড়ো।ছাড়ো ওকে।’
শ্রুতির দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওর গালে কষে একটা চড় মাড়ল পুলক।শ্রুতির ঠোঁট কেটে একটু রক্ত গড়িয়ে পরল।
-‘ লজ্জা লাগছেনা গলা উঁচু করে কথা বলতে?নোংরামি করে এখনো এত জোড় আসছে কোথার থেকে?নাকি ধরা পরে গেছো বলে আর কোনো লুকোচুরি রাখছোনা?এখন নিশ্চই বলবে তুমি আমাকে তালাক দিয়ে ওর সঙ্গে ঘর বাঁধতে চাও?এমন সিদ্ধান্ত নিলে আমাকে খুন করে তবেই মুক্তি পাবে আমার থেকে।কী ভেবেছো?আমাকে বলবে আর আমি তোমাদের সেই সুযোগ দিয়ে দিব?’
-‘ ছিঃ লজ্জা তো তোমার করা উচিত। আমাকে ঠঁকিয়ে যাচ্ছো দিনের পর দিন। এই ঘরে আমার সতীন এনে সংসার করার চিন্তা করছো?এতটা নারী পিপাসু তুমি?একজনকে রেখে তোমার মন জুড়াবেনা।আর আমাকে বলছো আমি নোংরামি করছি।আজকে ও না থাকলে আমার মৃতদেহ দেখতে পেতে এই ঘরে। ঈশাণ তুই যা। আমি চাইনা তুই আর অপমানিত হ।কাল ওদের সবাইকে নিয়ে চলে আসিস।যা হবে সকলের সামনে হবে।সবাই জানবে এই মানুষটা একটা মুখোশধারী শয়তান।সবাই ওকে ফেরেশতা ভাবতো না?সবাই জানবে ও কীভাবে আমার সঙ্গে ধোঁকাবাজি খেলা খেলছে।’
ঈশাণ পুলকের সামনে এসে ওকে থ্রেট করে বলল,
-‘ ওর যদি কোনো ক্ষতি হয় একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া তোকে কেউ আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেনা।’
শ্রুতি বেশ চমকে উঠে তাকাল পুলকের দিকে।আর ঈষাণ অনেকটা ঘাঁবড়ে গেল পুলকের এই ব্যাপারটাতে।গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে পুলক ঈষাণের দিকে। শ্রুতির বাহু চেঁপে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তারপর আচমকা ঈষাণের পেটে ঘুষি দিয়ে বলল,
-‘ এই শালা তুই আমার বউয়ের হাত ধরে কী করছিলি রে? ‘
শ্রুতি বুঝতে পারল যে পুলক ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেয়নি।তখন শ্রুতি ওর কনুই দিয়ে পুলকের পেটে গুতা দিয়ে বলল,
-‘ তুমি যে কী ভয়ানক কাজ করো আজকাল!এভাবে কেউ টেনে ধরে?ফাজিল ছেলে।ফ্রেশও তো হওনি।যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি তোমাদের ডিনার রেডি করছি।’
-‘ আরে না।আগে দু কাপ কফি পাঠাও। আজ আমি আর ঈষাণ একটু আড্ডা দিই।’
-‘ মাত্রই তো খেলাম আমরা কফি।আবার?’
-‘ তোমরা দুজন খেয়েছো।আমি তো আর খাইনি।তোমাকে আর খেতে হবেনা।তুমি বরং আমাদের দুজনের জন্য পাঠাও।’
-‘ আচ্ছা ঠিকআছে।বসো নিয়ে আসছি।’
ঈষাণ মুখটা শুকনো করে বলল,
-‘ নারে… আমাকে এগারোটার আগে ফিরতে হবে।আজ আর গল্প নয়।অন্য কোনোদিন আসব।’
-‘ অন্য কোনোদিন?তার মানে বর্তমান একটু ফ্রি সময় পাচ্ছিস তাই তো?আরে কাল তো তোদের সাথে কথাই হয়নি ঠিকমত।একটু বস তারপর না হয় ডিনার করে চলে যাস।’
-‘ এই ঈষাণ বস না?আমার কফিটা কিন্তু মন্দ না সেটা নিশ্চই খেয়ে বুঝেছিস। তাই আর এক মগ যে খাওয়া অসাধ্যকর এমনটা কিন্তু নয়।’
ঈষাণ শুকনো মুখের একটা মুচকি হাসি দিল মাত্র।সেটা দেখে পুলক বলল,
-‘ থাক জোড় করে বেচারাকে কফি গেলানোর কোনো মানে হয়না।ও যে এত ব্যস্ততার মাঝে এটুকু সময় বের করে আমার বাসায় আসতে পেরেছে এতেই আমার ভালো লেগেছে।চল ডিনার করে যাবি।’
-‘ হুম চল।’
ডিনার শেষ করেই ঈষাণ আর এক সেকেন্ডও বসেনি।বিষয়টা দেখে শ্রুতি বেশ অবাক হলো।
**************
-‘ আজ এত জলদি জলদি শুয়ে পড়লে যে?’
-‘ খুব ক্লান্ত গো।তাড়াতাড়ি এসো তো।ঘুম আসছেনা তোমাকে ছাড়া।’
পুলকের কথা শুনে মুচকি হেসে দিল শ্রুতি।চুলটা বিনুনি করে পুলকের পাশে এসে শুয়ে পরল।পুলক বলল,
-‘ তুমি বসে আগে আমার চুলগুলো নেড়েচেড়ে দাও।আমি তোমার কোলের ওপর মাথা রেখে শুবো।’
শ্রুতি সেটাই করল।পুলক ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে ওর কোলের ওপর মাথা রেখে বুকে ভর দিয়ে শুয়ে আছে।আর শ্রুতি ওর চুলগুলো নেড়েচেড়ে দিচ্ছে।
-‘ ঘুমিয়ে পরলে? ‘
-‘ উহু।চোখ বন্ধ করে আছি।তবে না ঘুমানো পর্যন্ত তুমি শুবেনা। ‘
-‘ এই তখন খেয়াল করেছিলে ঈষাণকে? ডিনার করে আর একটা মুহূর্তও বসলোনা।কিরকম তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল। ‘
শ্রুতির কথা শুনে পুলক চোখ খুলল। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
-‘ পুলিশ মানুষ।কোন আসামির কথা মনে পরেছে তাই তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেছে। ‘
-‘ হুম।হয়তোবা। ‘
পুলক খুব ভালো করেই জানে ঈষাণ কেন ওভাবে চলে গেল।ঈষাণের সামনে যখন পুলক শ্রুতিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে তখন ঈষাণের মুখটা একদম শুকিয়ে যায়।পুলকের ব্যবহারটা শ্রুতির কাছে ওইসময় স্বাভাবিক মনে হলেও ঈষাণ ঠিকই বুঝতে পেরেছে পুলকের চোখের চাহনি দেখে।তাই ওর আর ইচ্ছা করেনি পুলকের সামনে থাকতে। তারপর খেতে বসে যখন পুলক শ্রুতিকে টেনে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে বলছিল,
-‘ আজ আর আমি হাত দিয়ে খেতে পারবোনা।তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে এভাবে আমার কোলে বসেই।’
এই দৃশ্যগুলো দেখে ঈষাণের ভাত হজম করতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল।তাই খাওয়া শেষ করে আর এক সেকেন্ডও বসেনি।এর সবটাই পুলক ইচ্ছে করে করেছে।আর ঈষাণ নিজেও তা বুঝতে পেরেছে।পুলক হঠাৎ শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ এই তুমি আজ হোয়াইটটা পরেছো কেন? ‘
-‘ তো কী হয়েছে?একটা পরলেই হলো। ‘
-‘ না একটা পরলেই হলোনা।তুমি আজকে ব্ল্যাকটা পরবে।যাও এটা খুলে ব্ল্যাকটা পরে এসো।’
-‘ কী অদ্ভুত!নাইটি তো নাইটিই।সেটা ব্ল্যাক আর হোয়াইট কী? ‘
-‘ উফ তুমি কী যাবে নাকি আমি গিয়ে নিয়ে আসব? ‘
-‘ আমি নিজেই যাচ্ছি।আচ্ছা নাছোড়বান্দা তুমি। ‘
নাইটি চেইঞ্জ করে পুলকের সামনে এসে দাঁড়াতেই পুলক হ্যাঁচকা টানে ওর বুকের মধ্যে নিয়ে নিলো শ্রুতিকে।তারপর চেঁপে ধরে শ্রুতির ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসল।
-‘ তুমি যে কত বড় লুচু…. ‘
-‘ লুচুর মত কী করলাম তোমার সাথে? ‘
-‘ আমি বুঝিনি কিজন্য তুমি এটা পরতে বলেছো? ‘
-‘ বলো কিজন্য পরতে বলেছি? ‘
-‘ এটা যে খুব শর্ট।হাঁটুর উপরে উঠে থাকে একদম। ‘
শ্রুতিকে বুকের ওপর নিয়ে শুয়ে পরে বলল,
-‘ এখন আর হাঁটুর ওপরেও থাকবেনা।ওয়েট…..’
এমনকরেই সুখে দিনগুলো পার করছিল ওরা।ছোট্ট সংসারে দুটি মানুষের মধ্যে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলনা। ওদের দুজনের ভালোবাসা নিজেদের কাছে সবসময় কম মনে হতো।পুলক ভাবত শ্রুতির তুলোনায় পুলক হয়তো ওকে কম ভালোবাসে।আর শ্রুতি ভাবত পুলক ওকে বেশি ভালোবাসে নিজের ভালোবাসার তুলনায়।পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিল বলে শ্রুতির বড় বোন ইতি ওকে অভিশাপ দিয়েই বলেছিল, ‘যে ভালোবাসার জন্য নিজের পরিবার ত্যাগ করলি সেই ভালোবাসায় একদিন তোর কাছে বিষ মনে হবে।সেই বিষ সহ্য করতে না পেরে ফিরে আসতে হবে আব্বা আম্মার পায়ের কাছে।’
এই কথাগুলো যখন পুলক শুনেছিল তখন শ্রুতিকে সে বলেছিল, ‘আমার ভালোবাসা যদি কোনোদিন সত্যি বিষে পরিণত হয় তাহলে আর কিছু ভাববেনা শেষ করে দেবে আমাকে।’ কথাগুলো তখন শ্রুতির কাছে আবেগী মনে হলেও পুলক যে কথাগুলো অনেক কষ্ট পেয়ে মন থেকেই বলেছে তার প্রমাণ শ্রুতি তার কিছুদিন পরই পেয়ে গিয়েছিল।পুলক যত ব্যাংক ব্যালেন্স তৈরি করেছে তার চাকরি জীবনে তার সবটায় শ্রুতির নামে ট্রান্সফার করে দিয়েছে।আর ভবিষ্যতেও যা হবে তার সবটাই শ্রুতি পাবে।যদিও তা শ্রুতির বাবার বাড়ির সম্পত্তির তুলনায় কম। তবুও শ্রুতি অনেক অবাক হয়েছিল।রেগে গিয়ে পুলককে বলেছিল,
-‘ ব্যাংক ব্যালেন্স প্রপাটি এইসব হাবিজাবি দিয়ে তুমি ভালোবাসার প্রমাণ দিচ্ছো? এগুলোর জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করেছি? ‘
পুলক সেদিন শ্রুতিকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলেছিল,
-‘ সবটাই যদি আবেগ দিয়ে বিচার করা যেত তাহলে তোমার আমার সম্পর্কটাও তোমার বাবা-মা আবেগ দিয়ে বিচার করে আমাদের মেনে নিতো।তারা আমাকে কেন মেনে নেয়নি সেটা তো তুমি জানোই।শুধুমাত্র আমার সামর্থ্যের জন্য। তাই ভালোবাসাতে যেমন আবেগটাও খুব জরুরি তেমন ভালোবাসাকে আর নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য এই টাকা পয়সাটাও জরুরি।তুমি যতই সবার সামনে নিজেকে সুখি প্রমাণ করো তবুও তারা জানতে চাইবেই আমি তোমাকে কী দিয়েছি?তোমার দেনমোহর কত দিয়েছি? বিবাহবার্ষিকীতে আমি তোমাকে কী উপহার দিয়েছি তাছাড়াও আমি ইনকাম করে তোমাকে কতটুকু কী খরচ দিই আরো নানানরকম কথা জিজ্ঞেস করবে তোমাকে।তখন যদি তুমি বলো শুধু ভালোবাসা দিলেই হবে তখন সেটা তোমার কাছে মিষ্টি শোনালেও ওদের কাছে তেঁতো লাগবে।আড়ালে তোমাকে নিয়ে তোমার স্বামীকে নিয়ে ওর কানাকানি করবে অপমানজনক কথা বলবে।তখন তুমি ভেতরে ভেতরে কতটা কষ্ট পাবে তোমার আইডিয়া নেই।আর এমন কিছু জায়গা থেকেই শত ভালোবসার মাঝে দুজনের মধ্যে ছোট খাটো বিষয় নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয়।’
-‘ তার মানে তুমি বলতে চাইছো আমি এগুলো নিয়ে তোমার সাথে ঝামেলা করব?’
-‘ নারে বাবা আমি কী সেটা বলেছি? এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে আপনাআপনিই নিজেদের মধ্যে ঝুট ঝামেলা তৈরি হয়ে যায়।এসব পরিস্থিতির মাঝে না পরলে তুমি বুঝতে পারবেনা আমি তোমাকে কেন এগুলো বলছি।আর আমাদের বিয়েটা তো বাকিসবার মত স্বাভাবিকভাবে হয়নি।তাই এমন বিয়েতে মেয়েদের বাবার বাড়িতে বন্ধুবান্ধবদের কাছে নানানরকম কথা শুনতে হয়। তুমি কিছুটা শুনেওছো।আর যাতে এমন কিছু না শুনতে হয় তার জন্য এই ব্যবস্থা। তুমি যেমন চাইবেনা তোমার স্বামীকে কেউ ছোট করে কথা বলুক তেমন আমিও চাইনা আমার বউটাকে কেউ অপমান করুক।’
এতকিছুর পর এই মানুষটার ভালোবাসা যে কখনো বিষ হতে পারেনা শ্রুতি তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।এর মাঝে হঠাৎ শ্রুতি খুব অসুস্থ হয়ে পরে।প্রচুর পরিমাণে ব্লিডিং শুরু হয় ওর।সেটা দেখে শ্রুতি চিৎকার করে কান্না শুরু করে।পুলক ওকে দ্রুত হসপিটালাইজড করে জানতে পারে শ্রুতি কনসিভ করেছিল কিন্তু বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে।পরে জানতে পারল শ্রুতির জড়ায়ুতে সমস্যা হয়েছে।মাসখানেকের মত ওদের ফিজিকালি এটাচ্ড হওয়া যাবেনা। বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যাওয়াতে শ্রুতি খুব উদাস হয়ে পরে।ওর খালি বারবার মনে হচ্ছে ওর বাবা-মায়ের দেওয়া অভিশাপ গায়ে লেগেছে হয়তো।মেন্টালি সিক হয়ে পরছে দিন দিন শ্রুতি।এদিকে পুলকটাও আজকাল খুব কম সময় দিচ্ছে শ্রুতিকে। যতটুকু সময় ওর পাশে থাকে ততটুকু সময় খুব কেয়ার করে ওকে।কিন্তু আজকাল আগের মত আর পুলক বাইরে থাকলে তেমন কথা বলেনা ফোনে। আবার বাড়িতেও ফিরে রাত বারোটা একটার সময়।মাঝে মাঝে রাতে খাওয়া দাওয়া না করেই এসে ঘুমিয়ে পরে। আবার খুব সকালে উঠে বেরিয়ে যায়। পুলকের এমন পরিবর্তনটা শ্রুতি ঠিক মেনে নিতে পারছিলোনা।দেখতে দেখতে প্রায় এভাবেই দুটো মাস কেটে যায়। শ্রুতির চেহারাও দিন দিন ভেঙে পরছিল। পুলকটাও আজকাল শ্রুতিকে সেই আগের মত হূরপরীও বলে ডাকেনা।ও সুস্থ হওয়ার পর পুলক নিজে থেকে কখনোই শ্রুতির সঙ্গে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করেনা।যার জন্য শ্রুতিও কখনো ওর কাছে যেচে পরে যায়না।কিন্তু মনের মধ্যে তোলপার হয়ে যায় ওর।একদিন সকালে খেতে বসে পুলক শ্রুতিকে বলে,
-‘ তুমি বাসায় একা থাকতে পারবে তো? ‘
-‘ একা থাকতে হবে কেন?তুমি কী কোথাও যাবে? ‘
-‘ হুম।অফিসের কাজে দুদিনের জন্য একটু ঢাকার বাইরে যেতে হবে।’
-‘ ও কোথায় যাবে?’
-‘ টাঙ্গাইল।তোমার যদি অসুবিধা হয় তো মেঘলাকে এসে থাকতে বলি তোমার সঙ্গে দুদিনের জন্য।’
-‘ খারাপ লাগলে আমি নিজেই বলব।তুমি কী আজই যাবে?’
-‘ হ্যাঁ।অফিস করেই চলে যাব।বাসায় আর আসব না।’
-‘ আচ্ছা সাবধানে যেও।পৌঁছে ফোন দিও একটু।’
শেষের কথাটা শুনে পুলক শ্রুতির দিকে তাকাল।ওর হাতের ওপর হাতটা রেখে একটা মুচকি হাসি দিল।আজকাল খুব কম সময় দিচ্ছে শ্রুতিকে সে সেটা পুলকের আজ খেয়াল হলো।আজ সারাটা রাত শ্রুতি বেলকোনিতে বসে কেঁদে পার করেছে।তার কাছে যেন আর কিছুই ভালো লাগছেনা।দম বন্ধ লাগছে এই ঘরের পরিবেশটাকে।আগে তো এমন কখনো লাগেনি।পুলকটা এভাবে পাল্টে যাবে সেটাও কখনো ভাবেনি শ্রুতি। পরেরদিন রাত নয়টার সময় ঈষাণ এসে হাজির হলো।বিস্ময় চোখে তাকিয়ে শ্রুতিকে দেখে ঈষাণ প্রশ্ন করল,
-‘ এটা কে? ‘
-‘ কেমন আছিস? ‘
-‘ আমি যে খুব ভালো আছি তা আমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তোর শরীরের কী অবস্থা এটা?ওয়েট লস করছিস নিশ্চই? তাই বলে এরকম শুকনা কাঠির মত শরীর বানানোর কোনো মানেই হয়না শ্রুতি।চেহানার কী অবস্থা দেখেছিস?পুলক কিছু বলেনা তোকে? ‘
-‘ এই তুই এত কথা একসাথে বলিস কীভাবে রে?আয় বস আগে। ‘
-‘ সিরিয়াসলি তোকে দেখে আমার একটুও ভালো লাগছেনা।কী হয়েছে বল তো? চোখ মুখ একদম শুকিয়ে গেছে।মনে হয় কতকাল খাসনা ঘুমাসনা। ‘
-‘ আরে এমনিতেই।বয়স হচ্ছে তো।
চিরকালই কী একইরকম থাকব? ‘
-‘ একটা থাপ্পর খাবা।তুমি আমাকে বয়স দেখাচ্ছো।আমাকে বল কী হয়েছে?শরীর ঠিক আছে তোর? ‘
-‘ হুম একদম ঠিক আছি।তো এতদিন পর মনে পরলো আমাদের কথা? ‘
-‘ আমাদের কথা না শুধুমাত্র তোর কথা। পুলককে তো আজকাল ফোন করলেও পাওয়া যায়না।তোর কথা আর জিজ্ঞেস করবো কীভাবে?তাই তোকে দেখতে চলে এলাম।আজ নিশ্চই ওর এমন সময় বাইরে থাকার কথা নয়।আজ তো ফ্রাই ডে। ‘
-‘ অফিসের কাজে টাঙ্গাইল গেছে।আজ ফেরার কথা ছিল।কাল ফিরবে।একা মানুষ তাই আর তেমন কিছু রান্না করিনি।বল কী খাবি? ‘
-‘ এই থাম তো আসলেই শুধু খাওয়া খাওয়া।আমি তোর দিকে তাকাতে পারছিনা। ‘
-‘ তোকে তাকাতে হবেনা।তুই বস আমি আসছি। ‘
শ্রুতি উঠে রান্নাঘরে চলে গেল।তখনই শ্রুতির ফোনটা বেজে উঠল।পুলক ফোন করেছে।ঈষাণ ডাকতে গিয়েও শ্রুতিকে ডাকলনা।তার বদলে ফোনটা সাইলেন্ট উল্টে রাখল।এর মধ্যে মিনিমাম চারবার ফোন করেছে পুলক।শ্রুতি এসে ঈষাণের হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-‘ তো বল বিয়ে কবে করছিস? ‘
-‘ চল্লিশ পার হোক তারপর ভেবে দেখব। ‘
-‘ এসব পাগলামী বাদ দিয়ে জলদি একটা বিয়ে টিয়ে কর। ‘
ঈষাণ শ্রুতির কথার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বসল ওকে।
-‘ তুই ভালো নেই তাইনা? ‘
-‘ কী শুরু করেছিস বল তো আসার পর থেকে। ‘
-‘ তুই কিছু হাইড রাখতে চাইছিস।আচ্ছা বলতে না চাইলে থাক।জোড় করবনা। আমি তাহলে উঠি।পুলকের সাথে তো আর দেখা হলোনা। ‘
-‘ উঠবি মানে?ডিনার করে তারপর যাবি। ‘
-‘ ফরমালিটিস পালন না করলেও চলবে। আসি, নিজের খেয়াল রাখিস। ‘
ঈশাণ যাওয়ার জন্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে শ্রুতি বলল,
-‘ তোর সাথে আমি ফরমালিটি করব কেন?আমার সাথে কী তোর ফরমালিটির সম্পর্ক?বসে যা না। ‘
ঈশাণের নিজেরও যেতে ইচ্ছা করছিল না।খুব মায়া লাগছে শ্রুতির মুখটা দেখে ওর।শ্রুতির পাশে গিয়ে বসল ঈশাণ।
এক চিলতে হাসি দিয়ে শ্রুতি ডিনার রেডি করতে চলে গেল।দুজনে একসঙ্গে বসে খাবার শেষ করে আবার গল্প জুড়ে বসল।গল্পে গল্পে শ্রুতি ওর সংসার জীবনে নানারকম গল্পও করল।আজকাল পুলকের পরিবর্তনের বিষয়টাও শ্রুতি ঈশাণকে জানাল।
-‘ পুলককে যতদূর জানি সেই হিসাবে ওর এমন পরিবর্তনের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা।ওর কাছের বন্ধু বলতে তো জানি আমরা পাঁচজনই।আর অফিস কলিগদের সাথে তো এত ভালো সম্পর্ক কারো সাথে আছে বলে মনে হয়না।কারণ ও সবসময় কম মিশুক ছিল মানুষের সাথে।আর সবসময় নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সবসময় সচেষ্ট।তাহলে আড্ডাবাজি নিয়ে মেতে থাকার কোনো কোনো কারণ দেখছিনা আমি।তুই ওর সঙ্গে এই বিষয়ে ক্লিয়ার করে কথা বল। ‘
-‘ ইচ্ছে করেনা রে। ‘
-‘ শ্রুতি তোর সমস্যা কী বল তো।তুই একটু বেশিই চাপা।এত চাপা স্বভাব নিয়ে পুরুষ মানুষের মন জুগিয়ে চলা খুবই কষ্টকর।তোকে তো শক্ত থাকা উচিত। তোদের সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই এখনো কানাঘুষা করে।সেখানে পুলকের এমন পরিবর্তন দেখা দিলে তোর বাবা-মাও বলা বাদ রাখবেনা।তারা আরো সুযোগ পাবে এটা নিয়ে। ‘
ওদের কথার মাঝেই শ্রুতির মেসেঞ্জারে মেসেজ আসার শব্দ পেল শ্রুতি।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল পুলক বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল।অনেকটা খুশি হয়ে কল করতে গেল কিন্তু হোমস্ক্রিণে রবিনের কনভার্সেশন দেখে আগে সেখানে ঢুকল। কিছুক্ষণ পরই শ্রুতির চোখ থেকে টুপ টুপ করে পানি পরতে থাকল।স্তব্ধ হয়ে বসে আছে শ্রুতি।
শ্রুতিঃ আমি তখন বললাম আমি আমার ভ্যালেন্টাইন গিফ্ট পেয়ে গেছি আমার কলিজাটা। ও আমায় তখন বলল, ‘ যা এটা কী কোনো গিফ্ট হতে পারে?এটা তো আমার জীবনের একটা মহামূল্যবান উপহার। আচ্ছা তোমার তো আগরা যাওয়ার খুব শখ।এ বছর বসন্তঋতুতে আমরা দীর্ঘসময়ের জন্য ভ্রমণে বের হবো।ধরো দার্জিলিং আর আগরা দুটো জায়গাতেই আমরা ঘুরে আসব।আর বেঁচে থাকলে পরের বছর তোমার পৃথিবীর ভূস্বর্গতে নিয়ে যাব কাশ্মীরে। ‘
তানিয়াঃ ওয়াও সো এক্সেলেন্ট গিফ্ট দোস্ত।
শ্রুতিঃ মোটেও না তানিয়া।কারণ আগে আমাকে ওর এবিলিটির দিকে নজর দিতে হবে।ও চাকরিতে জয়েন করেছে মাত্র দু বছর হলো।আমি এখনি ওকে ফিন্যান্সিয়াল ভাবে এত চাঁপ দিতে চাইনা।আমি তো ওর ওই খুশিটাকে গিফ্ট হিসেবে চেয়েছি।
মেঘলাঃ ওর ওই খুশিটা কী আমাদের বল।
শ্রুতিঃ জানিনা এখনো।বললো পরে জানাবে।
বেলা দুপুরের সময় শ্রুতি লাঞ্চ শেষ করে পুলক কে কয়েকবার ফোন করল।কিন্তু ওপাশ থেকে ফোনটা আর রিসিভ হলোনা।মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল শ্রুতির।পুলক শত ব্যস্ততার মাঝেও শ্রুতির সঙ্গে ফোনে কথা বলতে না পারলেও টেক্সট করে কথা বলে।তবু শ্রুতির ফোন কখনো ইগনোর করেনা। কিন্ত এখন তো অফিসে লাঞ্চের সময়। এখন তো ওর কোনোভাবেই বিজি থাকার কথা নয়।এতকিছু ভাবনার মাঝে শ্রুতি নিজের মনকে এটা বলে বুঝ দিলো হয়তো ফোনের কাছে নেই কিংবা সত্যি খুব বিজি বলেই ফোনটা রিসিভ করছেনা।ব্যস্ততা শেষ হলেই পুলক ওকে ফোন দিবে।এটা ভেবে বিছানায় শুয়ে অপেক্ষা করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেল শ্রুতি।ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যার সময়। নিজের ঘুম দেখে শ্রুতি নিজেই অবাক। ও কখনোই এতসময় অবদি ঘুমায়না তাও আবার দিনের বেলাতে।বিছানা ছাড়তেই পুলকের ফোনের কথা মনে পড়ল।দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল পুলকের কোন ফোন কলস আসেনি।একটু অবাক হলো শ্রুতি।সেই সাথে চিন্তাও হতে লাগল। কোনো সমস্যাই পরলো কিনা কে জানে। সঙ্গে সঙ্গে আবার ফোন করলো পুলককে। এবার ফোনটা কেটে দিয়ে পুলক টেক্সট করলো,
‘ Byasto achi my heart. ‘ মেসেজটা পেয়ে অনেকটা স্বস্তি পেল শ্রুতি।রাতের রান্না চাঁপিয়েছে চুলায় এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল।গ্যাস অফ করে দরজা খুলতেই ঈষাণকে দেখল শ্রুতি।
-‘ আরে বাবা আজ কাল সূর্য কোনদিকে উঠছে এস.পি সাহেব। ‘
-‘ এই তুই আমাকে আমার নাম ধরে ডাকবি।এইসব প্রফেশোনাল নাম ধরে ডাকবিনা একদম। ‘
-‘ ভয় করে তো। ‘
-‘ ভয় তোর পিঠের ওপর দিবো।আগে ঢুকতে দে। ‘
-‘ ও স্যরি স্যরি।ভেতরে আসুন মি.ঈষাণ রাজ। ‘
ঈষাণ ভেতরে এসেই ঠাস করে সোফায় বসে পরল।তারপর বলল, ‘ ফ্যানটা একটু ছেড়ে দে কষ্ট করে। ‘
শ্রুতি ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ঈষাণের মুখোমুখি বসল।
-‘ এত পরিমাণ ব্যস্ত যিনি যে টয়লেটে আরাম করেও পাঁচটা মিনিট বসতে পারেনা।আর সেই ব্যক্তিই আজ আমার সামনে বসে ফ্যানের বাতাস খাচ্ছে। আমি কী সত্যি দেখছি? ‘
ঈষাণ ধুম করে শ্রুতির পাশে বসে ওর হাতে জোড়ে একটা চিমটি কাটল।
বলেই ঠোঁট টিপে হাসছে ঈষাণ।আর শ্রুতির মুখটা তখন দেখার মত ছিল।বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে ঈষাণের দিকে।তারপর ঈষাণ হো হো করে হেসে ফেলল।সেটা দেখে শ্রুতি ওর গায়ে চাপড় দিয়ে বলল, ‘ তোকে না আমি সাত দিনের রিমান্ডে নিব।শয়তনা একটা।এখনো এত মজা করতে পারিস তুই কীভাবে কে জানে? ‘
-‘ আমি তো এমনই ছিলাম তাইনা? ‘
-‘ বুঝেছি তোর এখন কী প্রয়োজন। ‘
ঈষাণ হাসি থামিয়ে মুখটা মলিন করে জিজ্ঞেস করল, ‘ সত্যি বুঝেছিস? ‘
-‘ হুম।দাঁড়া কালই আন্টিকে ফোন করব। ‘
-‘ আরে এর মধ্যে আবার আন্টি কেন? ‘
-‘ বিয়ে টিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তো কথা বলতে হবে।না হলে তো তুই খুব তাড়াতাড়িই পাগল হয়ে যাবি। ‘
-‘ ঠিকই বলেছিস। তোকে আজকাল দেখলে সত্যি পাগল পাগল লাগে।ভালোই ছিলাম এতদিন তোকে না দেখে। ‘
শ্রুতি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ মানে? ‘
ঈষাণ নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল, ‘ মানে তোর মত একটু কিউট বউ দরকার আমার।পুলক শালা তো ঝোপ বুঝে কোপটা মাড়ল।আমাদের বন্ধুমহলে একরকম সবার ক্রাশ ছিলি যে তুই। ‘
-‘ আচ্ছা তুই বস আমি তোর জন্য কফি করে নিয়ে আসি।টিভিটা চালিয়ে দিচ্ছি টিভি দ্যাখ বসে।রান্না বন্ধ করে এসেছি তো।আমি ততক্ষণে রান্নাটা করে আসি।রাতের খাবার খেয়ে যেতে হবে কিন্তু তোকে। ‘
-‘ হুম।পুলক কখন ফিরবে? ‘
-‘ এক দেড় ঘন্টার মধ্যে চলে আসবে। ‘
-‘ অনেক দেরী তো। ‘
-‘ তো কী হয়েছে?ডিনার না করে তোকে যেতে দিচ্ছিনা।’
-‘ তাহলে চল তোর রান্নাতে হেল্প করি। ‘
-‘ আরে না।তুই বসে টিভি দ্যাখ আমি চট করে রান্নাটা সেড়ে আসছি। ‘
-‘ কথা বলিসনা তো।চল। ‘
”
”
”
-‘ ইলিশ মাছের দোপেয়াজা রাইট? ‘
-‘ হুম।ওর ভীষণ পছন্দের খাবার। ‘
-‘ আমারও খুব পছন্দ এটা। ‘
-‘ পোলাও আর তার সঙ্গে ইলিশের দোপেয়াজা পেলে ঈদের চাঁদ দেখার মত খুশিতে লাফিয়ে উঠে। ‘
রান্না শেষে ডাইনিং এ বসে শ্রুতি আর ঈষাণ গল্প করছে।এর মধ্যে পাঁচবার ফোন করেছে পুলক শ্রুতির ফোনে।কিন্তু শ্রুতি ফোনটা বেডরুমে রেখে চলে এসেছে।
-‘ এই শ্রুতি তোদের বেডরুমটা কিন্তু আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ‘
-‘ আমার আসার আগেই ও আমার থেকে শুনে শুনে নিজেই বেডরুমটা সাজিয়েছে। আর সবথেকে বেশি সুন্দর আমাদের বেলকোনিটা।ওটাও ও নিজেই সাজিয়েছে। ‘
-‘ আমাকেও তো সাজিয়ে রাখতে হবে আমার বউয়ের জন্য।চল তো তোদের বেলকোনিটা দেখে আসি।”
“আয়। ‘
ঈষাণ ওদের বেডরুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। বেডরুমে দেখার মত সব থেকে আকষর্ণীয় জিনিস হলো পুলক আর শ্রুতির ছবিগুলো।সেগুলোই দেখছিল ঈষাণ। তারপর বেলকোনিতে গিয়ে দাঁড়াল ওরা।
বেলকোনির গ্রিলে সাদা পর্দাটা টেনে দিল শ্রুতি।তারপর রুমে গিয়ে রুমের লাইট অফ করে নীল ড্রিম লাইটটা জ্বালিয়ে দিল।অন্য একটা সুইচ অন করতেই সারা বেলকোনি বিভিন্ন রঙের মৃদু আলোতে ভরে গেল।ঈষাণ ওপরে তাকিয়ে দেখল বেলকোনির ছাদ জুড়ে বিভিন্ন রঙের ছোট ছোট কালারফুল প্রজাপতি জ্বলছে।অন্ধকার ঘরে এই প্রজাপতিগুলো খুব সুন্দরভাবে জ্বলে ওঠে। এখন সত্যিই বেলকোনিটাকে স্বপ্নেররাজ্য বলে মনে হচ্ছে ঈষাণের কাছে।সেখানে দাঁড়িয়ে দুজন গল্প করছে। গল্প করতে করতে কখন যে ঘড়ির কাটাতে রাত দশটা বেজে গেল শ্রুতির তা খেয়ালই নেই।পুলক বাসায় ফিরে কলিংবেল চাঁপার আগেই দেখল দরজা ভেজিয়ে রাখা।দরজা লক করে ড্রয়িংরুমে ঢুকে দেখল সোফার ওপর একটা ফোন। যেটা শ্রুতির নয়।সোজা বেডরুমে ঢুকে গেল।বেডরুমের লাইট অফ শুধু ড্রিম লাইট জ্বলছে।আর বেলকোনি থেকে শ্রুতি আর একজন পুরুষের কথা আর হাসির শব্দ আসছে।ব্যাগটা বিছানার ওপে রেখে বেলকোনিতে চলে গেল পুলক। শ্রুতির হাতের তালুতে ঈষাণ আঙুল দিয়ে কী যেন লিখছে আর কথা বলছে। আর শ্রুতি সেটা দেখে হাসছে।পুলক বেলকোনিতে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা ওদের কারোরই খেয়াল হলোনা।ঈষাণ শ্রুতির হাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছে তার মধ্যেই পুলক এক ঝটকায় শ্রুতিকে টেনে নিয়েলো নিজের কাছে।
সিঁড়ি ভেঙে ওঠার সময় শ্রুতি বার বার কথা বলার চেষ্টা করছে পুলকের সঙ্গে। মুখটা বেঁধে রাখার জন্য মুখের শব্দটা কেমন যেন গোঙানির শব্দের মত শোনাচ্ছে।
পুলক ধমক দিয়ে বলল,
-‘ এই চুপ এত কথা কিসের? একদম নিচে ফেলে দিব কিন্তু।এমনিতেই জানটা বেরিয়ে আসার উপক্রম।দিন দিন খেয়ে আটার বস্তা হচ্ছে।বাপরে বাপ মিনিমাম পঞ্চান্ন কেজি তো হবেই।শরীরের অনেক মেদ জমে গেছে না?এর জন্য স্বামীকে স্বামী বলে গ্রাহ্য করতে ইচ্ছে করেনা।আজকেই মেদ একদম কমিয়ে দিব। ‘
পুলকের কথাগুলো শুনে শ্রুতি একদম চুপ করে গেল।বুকটা ফেঁটে কান্না আসছে ওর। পুলক এত বাজে ব্যবহার ওর সঙ্গে করতে পারছে?ও না হয় একটু রাগ দেখিয়ে তুই তুকারি একটু গালাগাল দিয়েছে।তাই বলে পুলক ওর সঙ্গে এত নোংরা ব্যবহার করবে।এমন ব্যবহার সহ্য করার থেকেই ওর মরে যাওয়াই ভালো।ছাদে উঠে চিলেকোঁঠার ঘরে চলে এল পুলক।তারপর শ্রুতি কে কাঁধ থেকে নামিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল।দুজনেই প্রচন্ড ঘেমে গেছে। চিলেকোঁঠার জানালাটা খুলে দিল আগে। চাঁদের আলোর জন্য ঘরের অর্ধেকটাই আলোকিত লাগছে। তারপর ফ্যানটা ছেড়ে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ছাদের মাঝে গিয়ে দাঁড়াল।চাঁদনিরাত তাই বিছানাতে বসেই শ্রুতি পুলককে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে।বাহিরে কিছুটা ঝিরিঝিরি বাতাসও বইছে।কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে পুলক ঘরে ঢুকল।শ্রুতি বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে পুলকের দিকে।দরজাটা বন্ধ করে পুলক শ্রুতির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল, ‘ তো তুমি রেডি? ‘
শ্রুতি মুখের ভঙ্গিতে বোঝাচ্ছে, ‘ কিসের জন্য রেডি হবো? ‘
শ্রুতি মুখের বাঁধন খোলার সাথে সাথে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকল।সেটা দেখে পুলক বলল, ‘ সিড়ি ভেঙে কাঁধে করে নিয়েলাম আমি। আর হাঁপাচ্ছো তুমি?সে যাই হোক তুমি রেডি তো? ‘
ঝাঁঝালো কন্ঠে জিজ্ঞেস করল শ্রুতি, ‘কিসের জন্য?মরার জন্য? ‘
-‘ না। ‘
-‘ এই তুমি কী করতে চাইছো বলো তো?”
-‘ রেপ করব। ‘
-‘ কীহ্? ‘
-‘ হুম।হাত পা বেঁধে জোড় করে ধর্ষণ করে দেখোনি টিভিতে?আমিও তাই করব। তারপর উঁচু করে ছাদ থেকে ফেলে দিব। ‘
কথাগুলো শেষ করে পুলক পাঞ্জাবীটা খুলে ফেলল।সেটা দেখে শ্রুতি চিল্লিয়ে বলল, ‘ দেখো তুমি কিন্তু বেশি বেশি করছো। আমার হাত পা খুলে দাও বলছি। ‘
কে শোনে কার কথা।পাঞ্জাবীটা খুলেই শ্রুতিকে একরকম ধাক্কা দিয়েই বিছানায় শুইয়ে দিল।শ্রুতির হাত দুটো সামনের দিক করেই বেঁধে রেখেছিল পুলক।বাঁধা হাতের ফাঁকা দিয়ে শ্রুতির উপর উঠে এল।তখন শ্রুতির বাঁধা হাতদুটো পুলকের ঘাড়ের ওপর পড়ল।মনে হচ্ছে পুলকের ঘাড় দুহাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে।পুলক জিজ্ঞেস করল, ‘ গরম লাগছে খুব? ‘
ইনোসেন্ট মুখ করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁবোধক উত্তর দিল শ্রুতি।
-‘ বলবে তো সেটা। ‘
পুলক শ্রুতির হাতের ফাঁক বেরিয়ে এসে শাড়ির আঁচলটা টেনে খুলে ফেলল ওর গা থেকে।তারপর ওকে বলল, -‘ দু’মিনিট সময় দিচ্ছি শাড়িটা খোলার জন্য।কোথায় কী ব্রুজ না সেফটিপিন লাগিয়েছো।সেগুলো তাড়াতাড়ি খুলো। আমি খুললে কিন্তু টেনে টুনে ছিড়ে ফেলব। ‘
শ্রুতি রাগ দেখিয়ে আর উঠলোনা।
ওভাবেই শুয়ে থাকল।পুলক ওকে টেনে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে শাড়ি খুলতে শুরু করল।শ্রুতি একদম তাজ্জব বনে গেল পুলকের কান্ড দেখে।এত ভদ্র ছেলেটা এই এক রাতের ভিতর এত অসভ্য হয়ে গেল কী করে?
-‘ তুমি কী পাগল হয়ে গেলে?ছিড়ে যাবে তো শাড়ি। ‘
-‘ ছিড়ুক। ‘
-‘ রেপিস্টদের মত করছো কেন? ‘
-‘ আমি এই মুহূর্তে একজন প্রফেশোনাল রেপিস্ট।শুনেছো তুমি?’
শাড়িটা খুলে নিচে ফেলে দিল।তারপর শ্রুতির কোমড় টেনে ধরে একদম কাছে নিয়ে এল।শ্রুতি কিছু বলতে গেলে পুলক ও ঠোঁটের ওপর আঙুল রেখে বলল,
-‘ অনেকক্ষণ ধৈর্য রেখেছি।আর পারছিনা রাখতে। ‘
-‘ কিসের ধৈর্য্য? ‘
কথার জবাব না দিয়ে শ্রুতির লাল ঠোঁটজোড়া একদম টেনে নিল ওর ঠোঁটজোড়ার মাঝে।কতসময় ধরে যে শ্রুতির ঠোঁটজোড়া চেঁপে রেখেছিল তা ঠিক খেয়াল নেই পুলকের।ঠোঁটজোড়াকে নিজের ঠোঁটের মাঝ থেকে মুক্তি দেওয়ার পর শ্রুতিকে বলল, ‘ এটার জন্য।সেই এক ঘন্টা আগে থেকে নিজেকে কন্ট্রোল রেখেছি। ‘
শ্রুতি দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, ‘ তাই? ‘
-‘ হুম। ‘
-‘ হয়ে গেছে? ‘
-‘ না এখনো বাকি। ‘
-‘ তাহলে শুরু করো। ‘
-‘ আল্লাহ্! এই মেয়ে কী যেচে পড়ে… ‘
-‘ খাল্লাস হতে এসেছি। ‘
পুলকের গলা জড়িয়ে ধরে বলল শ্রুতি। পুলক ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি রেখে বলল, ‘ আজ তো তুই সত্যিই শ্যাষ। ‘
”
”
”
তানিয়াঃ হা হা হা…কী দুর্দান্ত একটা ঘটনা।উহ্ আমি হাসতে হাসতেই একদম শ্যাষ।
মেঘলাঃ ইশ আমাদের এই ইনোসেন্ট পুলকটা এত্ত রোমান্টিক সেটাই তো বিশ্বাস হচ্ছেনা।তোদের বিয়ের পর ভেবেছিলাম যে গাঁধাটাকে রোমান্স শেখাতে গিয়ে তুই বুড়িই হয়ে যাবি।
তানিয়াঃ আর এটাও মজা করে বলেছিলাম যে শেষমেশ দেখা গেল পুলকটাই না প্রেগনেন্ট হয়ে যায়।
মেঘলাঃ তো ভ্যালেন্টাইন আর বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কী গিফ্ট পেলি?
শ্রুতিঃ বিবাহবার্ষিকীর গিফ্টটা সিক্রেট আপাতত।ওটা কিছুদিন পর জানাবো তোদের।আর ভ্যালেন্টাইনের গিফ্টটার কথা আমি সারাজীবনেও ভুলব না।
তানিয়াঃ এই কী গিফ্ট রে? বল না।
মেঘলাঃ হুম,তুমি তো শুধু পারো কম্পেয়ার করতে।তোমার রবিনের থেকে বড় বা দামী কোনো গিফ্ট দিলো কিনা।
তানিয়াঃ মেঘলা তুই কিন্তু….
শ্রুতিঃ জানিনা এই গিফ্টটা বড় বা দামী কোনো গিফ্টের সঙ্গে কম্পেয়ার করা যাবে কিনা।ইভেন আমি কম্পেয়ার করতেও চাইনা।ছোটবেলা থেকে যে ছেলেটা বাবা-মা আপনমানুষ গুলো ছাড়া একা একাই বড় হয়েছে জীবন যুদ্ধে একাই সংগ্রাম করে এতদূর এসেছে।সেই মানুষটার জীবনে আমি একটু সুখের আভাস দিতে চেয়েছি সবসময়।বিয়ের পর ভেবেছিলাম আমার বাবা-মা’র আদর,স্নেহ আর ভালোবাসা পেয়ে নিজের বাবা-মায়ের ভালোবাসার ঘাটতি পূরণ হবে।কিন্তু বিধাতা সেই কপাল বোধহয় ওর রাখেনি। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে ওর একটুও আক্ষেপ নেই যে ও ওর শ্বশ্বুড়বাড়ি আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।আমি কখনো মন খারাপ করে থাকলে ও কেমন যেন ভয় পেয়ে যেত।ভাবত আমি যদি আমার বাবা-মা কে ছেড়ে না থাকতে পারলে ওকে ছেড়ে যদি চলে যাই?তার জন্য কখনো ইমোশোনাল হয়েও আমাকে বলেনি, ‘ শ্রুতি প্লিজ আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যেয়োনা। ‘ তার পরিবর্তে সবসময় আমার সামনে শক্ত মনের মানুষ হয়ে চলাফেরা করত।আর আমার মাথায় হাত রেখে বলত, ‘ এই বাচ্চাটা খুব মন খারাপ করছে বাবা-মায়ের জন্য?তাহলে যাও বাবা-মায়ের কাছ থেকে ঘুরে এসো।যেদিন ইচ্ছা হয় সেদিন আমার কাছে এসো।আমি এগুলো নিয়ে কখনোই অভিযোগ করবোনা।’
তানিয়াঃ তুই যে তোর বাবা-মায়ের কাছে কখনো ফিরে গেলে তারা যে তোকে কোনোদিনও ওর কাছে ফিরে আসতে দিতোনা সেটা কী ও বুঝতোনা?
শ্রুতিঃ বুঝতো।আর বুঝেও এই কথাগুলো বলতো শুধু আমার ভালো থাকার জন্য। নিজের ভালো থাকার জন্য ও কখনো অন্য কারোর ভালো থাকা বা সুখকে কেড়ে নিতে পারেনা।কথাগুলো হাসিমুখে বললেও ওর চোখে যে কী পরিমাণ ভয় থাকত আমাকে হারিয়ে ফেলার সেটা কেবল আমিই দেখেছি।জানিস আমাদের মাঝে এত ভালোবাসা থাকার পরেও আমি ওকে মাঝে মাঝেই রাতে বেলকোনিতে বসে কাঁদতে দেখেছি।আর তারপর আমার কাছে এসে ঘুমের মধ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলত,
‘ এই হৃদপিন্ডটা কে আমার বুক থেকে ছিনিয়ে নিওনা মাবূদ।আমি আর সইতে পারবোনা।
একজনকে আমার থেকে চিরতরের জন্য কেড়ে নিয়েছো।আমি চুপচাপ সয়ে গেছি।কিন্তু ও আমার থেকে দূরে চলে গেলে আমি অন্ধকারে তলিয়ে যাব। ‘
এই কথাগুলো শোনার পর আমার বুকের বা পাশটাতে কী পরিমাণ ধাক্কা লাগে তা তোদের বোঝাতে পারবোনা।
তানিয়াঃ তার মানে তুই ওর জীবনে আসার আগে ও আরো একজনকে ভালোবাসতো?
শ্রুতিঃ হ্যাঁ।
মেঘলাঃ কিন্তু এমন কারো কথা তো আমরা কখনো শুনিনি।আর ভার্সিটিতে ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করতো।কিন্তু সম্পর্কের ব্যাপারটাতে এগিয়েছিল শুধুমাত্র তোর সঙ্গেই।আর তার একটামাত্র কারণ ছিল শুধু তোর গান।
তানিয়াঃ তুই এরপর জানতে চাসনি যে সে কে ছিল?
শ্রুতিঃ না।কেন জানতে চাইব?ও আমাকে যখন নিজে থেকে কিছু বলতে চাইছেনা তখন আমি কেন ওকে অযথা ফোর্স করব।ও তো কখনোই কোনোকিছুতে আমাকে ফোর্স করেনা।আর সব থেকে বড় কথা যদি এমন কেউ থেকেও থাকে ওর জীবনে সেটা ওর অতীত।আর আমি ওর বর্তমান।এমন তো না ও আমাকে ঠঁকিয়ে যাচ্ছে।আর যে ছিল সে ওর জীবন থেকে চিরতরের জন্য চলে গেছে।
মেঘলাঃ হুম বুঝলাম।জানিস তো শ্রুতি, মাঝে মাঝে তোদের দুজনের এত বোঝাপড়া এত বিশ্বাস,ভরসা আর ভালোবাসা দেখলে বড্ড হিংসে হয় আমার।তোরা দুজন দুজনের কাছে কতোটা পরিষ্কার।খুব সুখে থাকরে তোরা।
তানিয়াঃ কিন্তু তোর গিফ্টটা কী ছিল? সেটা তো বললিনা।
শ্রুতিঃ অনেকদিন পর ওর পুরোনো খুশিটা।
তানিয়াঃ মানে?
শ্রুতিঃ কাল রাতে ও আমাকে বলল, ‘ অনেকদিন পর আমার জীবনের একটা পুরোরো খুশি ফিরে পেতে চলেছি। ‘
” বলনা কি এমন হয়?
যদি আর একটু চায় হৃদয়।
বলনা কি এমন হয়?
যদি হই আমি স্বপ্নময়।
নাহয় পেলাম সে স্বপ্নকে তোর দু-চোখের নীল তারায়।
নাহয় পেলাম সে সুখ ছোঁয়া হিম বাতাসের আশকারায়। বলনা কি করি হায়?
যদি স্বপ্নরাই তোকে চায়।
বলনা কি করা যায়?
যদি আনমনেই মন হারায়। ”
ঘুমটা জেঁকে বসার আগেই মোহকর কন্ঠসুর শুনে শ্রুতি ঘুম ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বসল।গানের কন্ঠটা আসছে বেলকোনি থেকে।গানটা খুব মনযোগ দিয়ে শুনতে শুনতে শ্রুতি খাটের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে নিল।ও জানে এই মোহকর সুর শুধুমাত্র একজনেরই। এই সুরকে ভালোবেসেই তো পুলককে কাছে টেনে নিয়েছিল সে।
” ঘুম জাগা চিলেকোঠায়,
মন ভেজা অমানিশায়,
মান করে,কখনও ভান করে তোকে আপন করে হারাতে চায়।
স্বপ্নরা উড়ে পালায়,
আনকোরা খেয়ালে হায়,
দূর থেকে,হৃদয় পুর থেকে অচেনা সুর থেকে কি করে পাই?
মন চাইছে ভীষণ,হারাতে………
তোর মন নজরে আড়াতে,
নাহয় থাক পড়ে খেয়ালে,
অভিমান গুলো গোপনে।
নাহয় পুরনো আশারা আজ ছোট্ট এই জীবনে।
বলনা কি হবে তাই?
যদি আর একটু কাছে পাই।
বলনা কি হবে তাই?
যদি দূর থেকেই হাত বাড়াই। ”
শ্রুতি সুর ছেড়ে দিতে তাল হারানোর আগেই পুলক আবার গেয়ে উঠল,
” নাহয় কাটালি এক জীবন,
কিছু ছন্নছাড়া ঢঙে,
নাহয় রাঙ্গালি স্বপ্ন তোর,
ওই রংধনুর সাত রঙে।
বলনা কি আসে যায়?
যদি আর একটু পাশে পাই।
বলনা কি ক্ষতি হয়?
যদি একটু বুঝিস আমায়। ”
দুজনের মোহকর কন্ঠ একত্র হয়ে মনের মাঝে যত মেঘের ঘনঘটা সৃষ্টি হয়েছিল শ্রুতি’র, সবটা নিমিষের মধ্যে ভ্যানিশ হয়ে গেল। এই মানুষটার গানের কন্ঠস্বর আর সুরগুলো এত পাগল করা কেন?যত বড় অন্যায় করুকনা সে।এমনভাবে যদি শ্রুতি’র সামনে কিছুসময় পার করে দেয় গান গেয়ে তাহলে শ্রুতি পুরো পৃথিবীকে ভুলে গিয়ে পুলকের বুকে ঝাঁপিয়ে পরবে। আর পুলকটাও সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে।এই কন্ঠে সারাজীবন গান শুনেও পার করে দিতে পারবে সারাটা সময়। এর জন্যই তো এই ছন্নছাড়া মানুষটিকে নিজের জীবনের সঙ্গে বেঁধে নিয়েছে শ্রুতি সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে।আর কী থাকা যায় মুখ ঘুরিয়ে?বেলকোনির গ্রিলের সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখদুটো বন্ধ করে গানটা গাইছিল পুলক।শ্রুতি যে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে সেটা পুলক বুঝেও চোখদুটো খুলছেনা।শ্রুতি নিজেই কথা বলল।
-‘ তখন রুম থেকে বেরিয়ে গেলে কেন? ‘
(পুলক নিশ্চুপ)
পুলক কোনো কথা বলছেনা দেখে শ্রুতি’র খুব অভিমান হলো।এভাবে পালাক্রমে দুজন রেগে থাকলে ভালোবাসাটা কখন হবে?এটা ভেবেই অথৈ আবার রেগে গেল। আর কিছু না বলে পুলকের গলা চেঁপে ধরতে গেলে পুলক চোখ খুলে শ্রুতি’র হাতদুটো ধরে নিজের কাঁধের দুপাশে রাখল।তারপর ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে একদম কাছে টেনে নিয়েলো ওকে।দাঁত কিটকিট করে শ্রুতি বলল, ‘ ভাবটা তো কম শিখোনি।এতসময় কথা বলছিলেনা কেন? ‘
-‘ ভাব নিচ্ছিলাম।সবসময় তো তুমিও একশোতে একশো ভাব নিয়ে চলো।তাই আজ আমিও একটু দেখালাম “ভাব”। ‘
-‘ বদমাইশ পোলা।ভাব নেওয়ার রাইট অনলি আমার।তুই কেন নিবি?তাও আবার আমার কাছে নিবি?পাঁজি,বজ্জাত, শয়তান,খারাপ ছাড় আমাকে।আমার এখানে আসাই ভুল হয়ে গেছে।আমার কাছে ভাব নিতে আসে।কত বড় সাহস? ‘
পুলক আরো শক্ত করে চেঁপে ধরে বলল, ‘ এই ছুকড়ি তুই সবসময় আমাকে তুই তুকারি করে গালাগাল দিস কেন রে,হুম? আমি তোর বয়সে কত বড় জানিস? ‘
-‘ মাত্র আড়াই বছর। ‘
-‘ আড়াই বছর কম মনে হল তোর কাছে না?আ…ড়াই বছর আগে আমি দুনিয়াতে এসেছি।তখন তুই কই ছিলি তার কোনো খবরই নেই।আড়াই বছরের ছোট হয়ে তুই আমাকে গালাগাল দিস আবার তুই তুকারি করিস।আজ তোকে আমি শিক্ষা দিয়েই ছাড়ব। ‘
-‘ ওই ব্যাটা কী করবি তুই আমাকে?তার আগে আমি তোকে দুটো ঘুষি মেরে তোর নাক ভোঁতা করে দিব। ‘
বলা শেষ হতেই পুলকের নাকে শ্রুতি ঘুষি লাগাতে গেল।পুলক তখন ওর হাতটা ধরে বলল, ‘ স্বামীর নাক ফাটাতে আসছিস তুই?আজ তো তুই পুরো খাল্লাস। ‘
শ্রুতি কে কাঁধে তুলে রুমে নিয়ে চলে এল পুলক।তারপর ঠাস করে বিছানায় ফেলে দিল।
শ্রুতিঃ উহ্ঃ অসভ্য বেয়াদব ছেলে।তুই আমাকে এভাবে ফেলে দিলি কেন?
পুলকঃ আবার?আবার গালাগালি দিয়ে কথা বলছিস?তোকে তো আমি….
কথা শেষ না করে আলমারি থেকে তিনটা ওড়না বের করে নিয়ে শ্রুতি’র হাত পা বাঁধতে শুরু করে দিল।শ্রুতি চিৎকার করে বলল, ‘ এই তুমি কী করছো এগুলো? ‘
কথার জবাব দিল না পুলক।ওকে চেঁপে ধরে হাত পা বেঁধে চলেছে।শ্রুতি ভয় পেয়ে গেল।পুলক প্রচন্ড রেগে গেছে হয়তো।এতটা বেশি করা উচিত হয়নি ওর।নিজের দোষে এখন ওকে উত্তম মধ্যম না খেতে হয়।শ্রুতি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আবার জিজ্ঞেস করল, ‘ এই শোনোনা তুমি আমার হাত পা বাঁধছো কেন?হাত পা বেঁধে মারবে নাকি তুমি? কথা বলোনা কেন?সো স্যরি আমার কলিজাটা।আর কখনো এমন ছোটলোকদের মত ব্যবহার করবোনা। ‘
-‘ কলিজাটা?কলিজাতে বার বার লাথি মারার সময় মনে ছিলনা? ‘
-‘ আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে তো।হাত পা বাঁধছো কেন?আমি কিন্তু চিৎকার করে ওদের ডাকব। ‘
-‘ মাইক এনে দিই?না হলে তো কানে যাবেনা ওদের।এমন সময় চিৎকার করলে ওরা কেন তোর আব্বাজানও দরজার কাছে আসবেনা। ‘
-‘ আচ্ছা তুমি আমাকে মারতে চাইলে মারো।তাই বলে হাত পা বেঁধে কেন? ‘
(পুলক নিশ্চুপ)
-‘ আরে আমার ভাই হাত পা বাঁধছিস কেন রে? ‘
-‘ ছাদ থেকে ফেলে দিব হাত পা বেঁধে। বুঝেছিস?যে বউ স্বামীকে তুই তুকারি করে গালাগাল দেয় সেই বউকে আজ চরম শিক্ষা দিব।তারপর সকাল হলে সবাই যখন তোকে রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পড়ে থাকতে দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করবে এমনটা কী করে হল?তখন বলব আমার বউ আস্ত একটা গালিবাজ ছিল। তার জন্য ওকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে শাস্তি দিয়েছি। ‘
কথাটা বলেই শ্রুতি’র মুখটা বেঁধে দিয়ে ওকে আবার কাঁধে তুলে নিয়ে ছাদের দিকে রওনা হল।শ্রুতি ভয়ে ঘেমে একদম চুপসে গেছে।পুলক রেগে গেলে যে কতটা সাংঘাতিক হয় তা তো একবার দেখেছিল যখন ওদের মাঝে প্রেম ছিল।রেগে গেলে ছেলেটা একদম হিতাহিত জ্ঞানবোধ হারিয়ে ফেলে।