বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1170



গল্পটা ভালবাসার পর্ব:- ১

0

গল্পটা ভালবাসার পর্ব:- ১

‘লেখক:- তৌহিদুল ইসলাম
,
যদি বউ সাজো গো আরো সুন্দর লাগবে গো।
–ঠাসসসস ঠাসসসস
–বেয়াদব ছেলে,,,
রাস্তায় মেয়ে দেখলেই টিজ করতে ইচ্ছে হয় না।(অপরিচিতা)
কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে ফুল ভলিউম দিয়ে গান টা শুনছিলাম আর রাস্তার পাশ দিয়ে মাথা নিচু করে হাটছিলাম আর আস্তে আস্তে গান টা গাচ্ছিলাম। বুঝলাম না মেয়েটা থাপ্পড় মারলো কেনো। আর আমি আবার কখন মেয়েটা কে টিজ করলাম।
–ও হ্যালো আমি আবার আপনাকে কখন টিজ করলাম।(আমি)
–কখন টিজ করলেন মানে।
এই মাত্রই তো আমাকে দেখে গান করলেন।(মেয়েটি)
–ও হ্যালো নিজেকে আয়নায় দেখেছেন কখনো???? যেই না মোর চেহেরা নাম রাখছে পেয়ারা!!???
আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নাই ত
তাই আপনার মতো পেত্নী কে দেখে গান করব।
আমার মাথা এখনো ঠিক আছে বুঝছেন।
আমি তো গান শুনছিলাম। (আমি)
–এই আপনি আমাকে কি বলেন আমি পেত্নী।
ঘুশি মেরে নাক ফাটিয়ে দিব ভুত একটা।
আর মিথ্যা কথা ভালোই বলতে পারেন।
আমাকে দেখে গান গাচ্ছেন আর এখন বলছেন গান শুনছিলেন মিথ্যুক একটা। (মেয়েটি)
–বিশ্বাস না হলে নিজেই শুনুন।
ইয়ার ফোন টা মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিলাম।(আমি)
মেয়েটি ইয়ার ফোন কানে লাগিয়ে চুপ হয়ে গেলো। কোন কথা না বলে চলে যেতে লাগল।পিছন থেকে আমি বললাম–
— এই যে শুনুন থাপ্পড় টা তোলা থাকলো সুজোগ পেলে সুদে আসলে দিয়ে দিবো।(আমি)
মেয়েটি আমার দিকে ভেঙচি কেটে চলে গেলো।
এখন মেয়েটা বর্ণনা দেই।
মেয়েটি মোটেও পেত্নীর মত না!!
খুবই সুন্দর একটা মেয়ে।
দেখেই ক্রাশ খাবার মতো।
হিজাব পরে ছিলো তাই চুলের বর্ণনা দিতে পারছি না।তবে ভাই চোখ দেখে যে কেউ ক্রাশ খাবে শিয়র। আমিও বাদ পরিনি।
ঝগরার মধ্যে ছিলাম তো তাই বলতে পারি নি।তাছাড়া এলাকায় নতুন এসেছি।
বাবার বদলীর কারনে এখনে আসা।
এখন আমার সর্ম্পকে বলি,
আমি আপনাদের ফেসবুক ফ্রেন্ড হৃদয়।
আমি একজন MBBS.
আরে ভাই পড়ার দিক দিয়ে না।
মা বাবার বেকার সন্তান।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে এখন চাকরির জন্য ঘুরছি।বেশ কয়েকটা ইন্টার্ভিউ দিয়েছি এখনো কোনো খবর পাইনি।
তাই সারা দিন গান শুনি আর ঘুরে বেড়াই।
আমার বাবা একজন সরকারি কর্মকতা।
আর মা গৃহিণী।
আর একজন আছে বদের হাড্ডি আমার কলিজার টুকরা একমাত্র বোন।
পরিবারে আমি মা কে ভয় পায় বেশি আর বাবা তো আমার বন্ধুর মত।
সব কথা শেয়ার করি।
এই নিয়েই আমাদের সুখের সংসার।
অনেক পরিচয় দিলাম এবার গল্পে আসি।
যেখানে যাচ্ছিলাম সেখানে না গিয়ে বাসায় ফিরে যাই।আজ দিন টায় খারাপ যাচ্ছে।
বোনের সাথে ঝগরা করে বাসা থেকে বের হয়ছি আর এখন রাস্তায় ঝগরা করলাম।
কার মুখ দেখে যে উঠছি আজ।
না আজ ত আমি নিজের মুখ দেখেই ঘুম থেকে উঠছি ???
তাহলে এমন যাচ্ছে কেন।
আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় আসলাম।
কলিং বেল বাজালাম–
–কে???(মা)
–মা আমি দরজা খুলো।(আমি)
–তোর বাড়িতে জায়গা নাই।
তুই বাহিরেই থাক।(বোন)
–ঐ পুচকি তোরে কিন্তু আমি মাইরা ফেলামু।তারাতারি দরজা খোল।(আমি)
–হা হা হা হা মাইরা ফেলা দেখি কত পারিস।
আছিস তো বাড়ির বাহিরে।(বোন)
–মা দরজা খুলতে বলো ওকে না হলে কিন্তু ভালো হবে না।(আমি)
–খুলতে পারি এক শর্তে?? (বোন)
–কি শর্ত শুনি। (আমি)
–আমাকে ৫০ টাকা দিতে হবে।
তাহলে খুলবো না দিলে খুলবো না।(বোন)
–আচ্ছা দিবো খোল এখন।(আমি)
–উঁহু হবে না।দরজার নিচ দিয়ে টাকা আগে দে তারপর খুলবো। (বোন)
কি আর করার ভাই জানেন ত ফাদে পরলে চামচিকাতেও লাথি মারে।
একে টাকে ভিতরে ঢুকে দিলাম।
ও টাকা নিয়ে দরজা খুলে দিয়ে দৌড়ে ওর রুমে চলে গেলো। আমি আমার রুমে চলে আসলাম।রুমে বসে ফেসবুকে গল্প পরছি।
গল্প পরতে আমার খুব ভালো লাগে আর মাঝে মাঝে ২-১ গল্প লিখি আর কি।
ত গল্প পড়ছিলাম তখনি তাজমিনা এসে বলল,
(তাজমিনা আমার বোনের নাম)
–ভাইয়া আম্মু তোকে ডাকছে।(তাজমিনা)
–আচ্ছা যা আসছি আমি।(আমি)
–না এখনি ডাকছে তারাতারি আয়।(তাজমিনা)
রুম থেকে বাহিরে গেলাম ড্রইং রুমের দিকে।বাড়িতে মনে হয় কে যেনো আসছে।
মাথা নিচু করেই গেলাম।
গিয়ে মাকে বললাম,
–মা আমাকে ডাকছো??(আমি)
–হুম এই তোর আন্টি পাশের বাড়িতে থাকে।(মা)
–আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
কেমন আছেন??(আমি)
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।
ভালো আছি বাবা তুমি কেমন আছো? (আন্টি)
–জি আন্টি ভালো আছি।
তখনো মাথা নিচু করে ছিলাম (আমি)
–দেখ দেখে কিছু শেখ।
বড় দের কি ভাবে সন্মান করতে হয় দেখে শেখ।(আন্টি)
দেখি কাকে শিখতে বলছে আন্টি।
মাথা টা তুলেই আমি পুরা ৪২০ ভোল্ট ঝাটকা খাইলাম।
আরে এ তো ঐ পেত্নী টা।
আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো। আমি আবার কি করলাম।
মনে হচ্ছে গিলে খাবে।
–আ_আ_আপনি আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো???
আমার ভয় করছে।(আমি)
–এই নুসরাত হচ্ছে টা কি।
কি করছিস ছেলে টা কে??(আন্টি)
(বাহহ নাম টা ত ভালোই নুসরাত।
চেহারার সাথে মিল আছে বটে।)
–আমি আবার কি করলাম আম্মু।(নুসরাত)
–কি করলি মানে।
এই ভাবে ওর দিকে তাকাচ্ছিস কেন???(আন্টি)
–কই কি ভাবে তাকাচ্ছি।
দুর ভাল লাগে না।
আমি গেলাম।(নুসরাত)
বলে রাগ করে চলে গেলো নুসরাত।
তারপর আন্টির সাথে কিছুক্ষন কথা বলে আমি রুমে চলে আসলাম।
বসে বসে গেমস খেলছিলাম তখনি তাজমিনা আসলো —
–এই ভাইয়া ফোন দে।(তাজমিনা)
–কেনো???(আমি)
–গেমস খেলবো দে।(তাজমিনা)
–দিবো না যা ভাগ।(আমি)
–দে বলছি না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।(তাজমিনা)
–কি খারাপ হবে শুনি।(আমি)
–দারা দেখাচ্ছি।
বলে হাত থেকে ফোন টা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
–তাজমিনা ফোন দে।
না হলে কিন্তু ভালো হবে না।(আমি)
–………
–তাজমিনা ফোনটা দে বলছি।(আমি)
–দিব না যা ভাগ এখন আমি গেমস খেলবো। আর এখন যদি ডিস্টার্ব দিস তাহলে আরও দেরি করব।(তাজমিনা)
–লক্ষি বোন আমার দে ফোনটা।(আমি)
–বলছি না দিবো না তো দিবো না।(তাজমিনা)
–তুই এত্ত প্যারা দিস কেন বলতো।(আমি)
–কি!!
আমি প্যারা দেই যা তুই আজ ফোনই পাবি না।(তাজমিনা)
–এই না না প্লিজ লক্ষি বোন এমন করিস না।
প্লিজ ফোনটা দে।(আমি)
–না দিব না।
দুর এর জন্য শান্তি তে একটু ফোনটাও চালাতে পারব না।ফোন না থাকলে কি ভালো লাগে।
দুর ছাই বাড়িতেই থাকব না।
বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে আসলাম।
মাথা নিচু করে হাটছিলাম এমন সময় কে যেনো পিছন থেকে ডাকলো —
–এই যে মিস্টার এই দিকে শুনো।(নুসরাত)
–জি আমাকে বলছেন??
.
.
চলবে__

বাজিরপ্রেম২ ,২য় পর্ব/শেষ পর্ব

0

বাজিরপ্রেম২ ,২য় পর্ব/শেষ পর্ব

লেখক:- তৌহিদুল ইসলাম

। কষে এক চড় মেড়ে বসলাম ।
“আমি কখনও ভাবিও নি তুমি এমন টা করবে ! এতো সুন্দর চেহারা তোমার । মনটা এতো কুৎসিত কেন ?? আমার নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে যে তোমাকে আমি ভালবেসেছি ।“
কথা গুলো ওকে কিভাবে বলেছিলাম কে জানে । তারপর চলে আসি ওখান থেকে ।
পরের এক সপ্তাহ বলতে গেলে একেবারে বিচ্ছন্নই ছিলাম সবার কাছ থেকে । কারো সাথে কোন যোগাযোগ করি নি । একাই নিজের মন বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম । তারপর যখন ক্লাসে গেলাম সবাই যেন আমাকে একটু অন্য চোখে দেখতে লাগল ।
মুক্তা মত মেয়েকে যে আমি চড় মেড়ে বসব এই কথা হয়তো কেউ ভাবে নি । সবার কথা বলছি কেন আমি নিজেই তো ভাবি নি । নিজের ক্লাস রুমটাকে কেমন জানি অচেনা লাগছিল । কদিন আগেও জীবন টা কত সহজ ছিল । আর এখন জীবন টা কত জটিল হয়ে গেলো । মুক্তা আসলো তারও কিছুক্ষন পরে ।আগের মত হাসি খুশি না । আজ আর চেহারায় সেই আত্মবিশ্বাসের হাসি দেখতে পেলাম না । তারপর এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল ।
সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু আগের সহজ সরল জীবনের সুর কেটে গিয়েছিল । আস্তে আস্তে এটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠল ।
তারপর একদিন । সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল । কেউই বলতে গেলে আসে নি । একটা ফরম জমা দিতে হবে বলে আমি এসেছিলাম । না হলে আমিও আসতাম না । হেডফোনে গান শুনছিলাম আর বৃষ্টি দেখছিলাম ।
এমন সময় দেখি মুক্তা আমার দিকে আসছে । প্রথম ওকে ইগনোর করা চেষ্টা করি । কিন্তু লাভ হয় না । ও আমার সামনে এসেই বসে । ইশারায় হেড ফোন খুলতে বলে । একসময় ছিল ওর সাথে কথা বলার জন্য মন টা সবসময় অপেক্ষা করে থাকতো । কিন্তু আজ প্রেক্ষাপট ভিন্ন ।
আমি উঠে চলে যেতে চাইলাম । ও আমার পথ আটকালো । বললাম “সমস্যা কি ?”
“ তোমার সমস্যা কি ? আমাকে কিছু বলার সুযোগ তো দিবে নাকি ! অন্তত ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ তো দিবে ?”
“ ক্ষমা চেয়ে কি করবা তুমি ? কোন দরকার আছে ?”
“ আছে ।‘
“ কোন দরকার নাই । কোন লাভ নাই । কারন আমি কোন দিন তোমাকে ক্ষমা করবো না । কোন দিনও না ।তোমার মত মেয়ের সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণ্ণা হচ্ছে । পথ ছাড়ো । যেতে দাও ।“
মুক্তা কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেল ।এতো কঠিন কথা শুনে ওর অভ্যাস নেই । দেখলাম ওর চোখে দেখলাম পানি জমতে শুরু করেছে ।
জল ভরা চোখ নিয়ে ও বলতে লাগল “একথা সত্যি যে তোমার সাথে আমি মিশতে শুরু করেছিলাম বাজী ধরেই । কিন্তু বিশ্বাস কর তোমার সাথে মিশার সময় আমার মন আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করেছিল । আমি সত্যি সত্যি আমাদের রিলেশন টা স্থায়ী করতে চেয়ে ছিলাম । আমি তোমার উপর সত্যি সত্যি ফল করতে শুরু করেছিলাম ।ইনফ্যাক্ট আই হ্যাভ অলরেডি ফলেন ইন লাভ উইথ ইউ । আর এই কয়দিনে আমি আরো বেশি বেশি তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি ।তৌহিদ প্লিজ আমার কথা টা বিশ্বাস কর ।“
খুব ইচ্ছা করছিল মুক্তার কথা গুলা বিশ্বাস করি ! কিন্তু বেলতলায় একবার যাওয়াই ভালো ।
“কথা শেষ হয়েছে তোমার?”
ও কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো আহত চোখে ।
“তুমি বিশ্বাস করছ না আমার কথা ?”
“করার কোন কারন নেই । আর শোন তোমার কেবল মনে হচ্ছে যে তুমি আমার প্রেমে পড়েছ । আসলে তা কিন্তু না । সারা জীবনে তুমি কখনও কারো কাছ থেকে রিজেক্টেড হও নি তো তাই তোমার এমন মনে হচ্ছে । আমি করেছি । তোমার আগে পিছে সব সময় তুমি ছেলেদের ঘোরাফেরা করতে দেখেছ ! আমি করছি না তাই আমার প্রতি তোমার আকর্ষন জন্মেছে । আর এটাকে আর যাই বলুক ভালবাসা বলে না!”
“তৌহিদ ……. “
মুক্তা আরো কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু আমি ওকে সুযোগ দিলাম না ।

গাড়ি থেমে গেছে । মনেহয় চলে এসেছি । হাসপাতালে…..।হাসপাতাল আমার কোন কালেই পছন্দ না । কিন্তু এই হাসপাতাল টাকে ঠিক হাসপাতালের মত মনে হচ্ছে না । মনে হচ্ছে কোন নির্জন বাগান বাড়িতে চলে এসছি । পুরো হাসপাতাল জুরে এক আলো আধারির খেলা ।
মুক্তাকে রাখা হয়েছে চার তালার কোন একটা কেবিনে । লিফটে থেকে বের হয়ে যেন অন্য জগতে চলে এলাম । চারিদিকে আলোর বন্যা । পুরো করিডরে অসংখ্য মানুষ । তার মধ্যে আমাদের ক্লাসের অনেকে আছে ।
আমাদের কে আসতে দেখে দেখলাম এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক আমাদের দিকে এগিয়ে এল ।
“তুমি তৌহিদ?”
আমি কোন কথা বললাম না । কেবল একটু মাথা নাড়লাম ।
“এসো আমার সাথে ।“
আমি খ্যাল করলাম করিডরের প্রত্যেকটা চোখ আমার দিকে নিবদ্ধ । কেমন জানি অসস্তি লাগছিল আমার । ভদ্রলোক আমাকে মুক্তার কেবিনে নিয়ে গেল ।
মুক্তা তখন চোখ বন্ধ করে আছে । একজন ডাক্তার যেন কি একটা কাগজ দেখছিলেন ।
আমাদের ঢুকতে দেখে বললেন “আর কিছুক্ষনের মধ্যে সেন্স আসতে পারে ।“
ভদ্রলোক বললেন ডক্তর, “এ হল তৌহিদ।“
“ ওকে ফাইন । ও কেবিনেই থাকুক । সেন্স ফিরে যদি ওকে দেখে তাহলে পেসেন্ট মেন্টালি সাপোর্ট পাবে । আর এখনে কাররো থাকার দরকার নেই । ওকে ? আর কোন সমস্যা হলে তো আমরা আছি ।“
এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলেন ।
ভদ্রলোকও চলে গেলেন । তবে চলে যাওয়ার আগে আমাকে বললেন “আমার মেয়েটা খুব জেদি । যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে তো তাই এমন হয়েছে । জোর দিয়ে কিছু বলার অধিকার তো আমার নেই কেবল তোমাকে অনুরোধ করতে পারি ।“
বলতে বলতে ভদ্রলোক কেঁদে ফেললেন । আমি খুব অসস্তির মধ্যে পড়লাম ।
“মুক্তা সারা জীবন যা চেয়েছে আমি তাই ওকে এনে দিয়েছি । কিন্তু এবার ও এমন কিছু চেয়েছে যা আমার সামনে থাকা সত্তেও আমি ওকে এনে দিতে পারছি না ।“
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । ভদ্রলোক আর কিছু বলতে পারলেন না । আস্তে আস্তে চলে গেলেন । আমি মুক্তার পাশে এসে বসলাম । মুক্তার মুখ টা কি নিশ্পাপ লাগছে । সাদা ধবধবে বিছানায় শুয়ে আছে । আমি কিছুক্ষন ওর দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারলাম না । এই পরীর মত মেয়েটা আজ আমার জন্য এই বিছানায় শুয়ে আছে ।
যতই মুক্তার উপর রাগ থাকুক ওকে ভাল তো আমি ঠিক বেসেছিলাম । জীবনের প্রথম ভালবাসার অনুভূতি তো ওর হাত ধরেই পেয়েছি । ওকে এই অবস্থায় দেখে মনের মধ্যে শান্তি কি আর লাগে ? কেন জানি নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয় । আজ আমার কারনেই ও এখানে ।
সত্যিই সকাল বেলা ওর সাথে একটু বেশি খারাপ ব্যবহার করা হয়ে গেছে । এতো টা কঠিন আচরন না করলেও চলতো । অন্তত ভালবাসার এই দিনে তো এমন করা ঠিক হয় নি ।

সেদিনের পর মুক্তা প্রায়ই আমার সাথে কথা বলতে চাইতো । ক্ষমা চাইতো । এমন কি আমার সব বন্ধুদের কেও ও কনভেন্স করে ফেলেছিল । তারা সবাই আমার কাছে ওর সুপারিশ নিয়ে আসতো । কিন্তু আমি এসব পাত্তা দিতাম না । ওকে এড়িয়ে চলতাম ।
তবে আজ সকালে ক্লাসে আসার সময় মিজান আমাকে বলল যে আজ মুক্তা কোন সিন ক্রিয়েট করতে পারে । সত্যি তাই করল ও । কারনও ছিল ।
আজ ভেলেনটাইন । ভালবাসার দিন । ক্লাস শেষে বের হতে গেলাম মুক্তা পথ আটকালো ।
“তৌহিদ তুমি কি এখনও আমাকে ক্ষমা করবা না ! অন্তত আজ ভালবাসার দিনে ?”
মুক্তার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল যেন ও সত্যি কথা বলছে । আমার ইগো আর সেল্ফ রিস্পেক্ট, যাতে ও চরম ভাবে আঘাত করেছে, কিছুতেই ওর কথা বিশ্বাস করতে দিলো না । বরং ওর কথা শুনে মেজাজ টা আরো খারাপ হয়ে উঠল ।
“ শোন ভালবাসা কি জিনিস সেটা তোমার মত মেয়ে কোন দিন বুঝবে না । বুঝতে পারবেও না । আর আমি সারা জীবন যদি একা একা মরেও যেতে হয় তবুও তোমার মত মেয়ের কাছে যাবো না ।“
“ বিশ্বাস করো……”
“বিশ্বাস ? তোমাকে ? নো ওয়ে । পথ ছাড়ো । আমার কাজ আছে ।“
মুর্তির মত কিচ্ছুক্ষন মুক্তা দাড়িয়ে থাকলো । তারপর আমাকে বলল “তুমি তো বিশ্বাস করলে না । আমি তোমাকে সত্যি ভালবাসি । আর তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে আমি পারবো না । এটা আমি তোমাকে বুঝিয়ে দেবো ।“
আমি হেসে ফেললাম ।
“মরে যাবে তুমি ? আমার জন্য ? হা হা হা !”
আমি হাসতে থাকি । পুরো ক্লাস তখন আমাদের দিকে তাকিয়ে । তখন আমার মজাই লাগছিল ।
মুক্তা আর কিছু বলল না । দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল । কাঁদতে কাঁদতেই ও চলে গেলো । মিজান পাশেই ছিল । আমার কাছে এসে বলল “এভাবে না বললেও পারতিস !”
সত্যি কি তাই ? নিজের কাছে প্রশ্ন করলাম এভাবে না বললেও কি পারতাম ? তখন এই প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না । এখন ? এই কেবিনে বসে ? এখনও কি ঐ প্রশ্নটার উত্তর আমি জানি ? যখন মিজানের কাছ থেকে প্রথম খবর টা শুনি কেঁপে উঠেছিলাম । কিন্তু পরক্ষনেই আমার ঈগো মাঝখানে চলে এসছিল । আর ঈগোর কাছে আমার সব কিছু পরাজিত হয়েছিল কিন্তু এখন এই পরিস্থিতি তে আমি কি করব ? যেখানে একদিকে রয়েছে মুক্তার ভালবাসা আর ওর বাবা কান্না সাথে ওর জন্য আমার মনের বন্ধ করে রাখা স্বপ্ন । আর অন্য দিকে আমার ঈগো । কোন দিকে যাবো আমি ? হঠাত্ দেখলাম মুক্তার চোখের পাতা যেন একটু কেঁপে উঠল ।
কি যেন মনে হল, ইচ্ছা হল ওর হাতটা ধরি ।
ওর হাতটা ধরলাম । মনে হল যেন ওর হাতটা খানিকটা কেঁপে উঠল । ওর হাতটা আর ছাড়লাম না ।
মনে মনে বললাম প্রথম বার ভূল করেছিলাম তোমাকে ভালবেসে । দ্বিতীয় বার ভূল করেছিলাম তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে । আর তৃতীয় ভূলটা করতাম যদি আজ তোমার হাত টা না ধরতাম ! কিন্তু আমি সে ভূল করিনি । এই দেখো তোমার হাতটা আমি ধরেছি ।
জানি না আমার হাত ধরার জন্যও কিনা অথবা ওর এমনিতেই এখন সেন্স ফেরার সময় হয়েছিল । ও চোখ মেলল । ও হয়তো আশা করেছিল আমি আসবো না । ওর চেহারা কেমন জানি একটা শান্তির ছায়া দেখতে পেলাম ।
ও কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে চাইল । আমি ইশারায় কথা বলতে মানা করলাম । কথা না বললেও ও ওর দুর্বল হাত দিয়ে আমার হাত চেপে ধরতে চাইলো । আমি বুজতে পারছি ও বল পাচ্ছে না তবুও হাতটা চেপে ধরা চেষ্টা করেই যাচ্ছে ।
আমি এবার আমার দুহাত দিয়ে ওর হাত খানি ধরলাম । ওকে আশ্বাস দিলাম যে এই হাত ছুটে যাবে না । আমি ওর হাত ধরে ওর পাশে বসে আছি । আর ও পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । যেন পলক ফেললেই আমি হারিয়ে যাবো ।
ওর দিকে তাকিয়ে থাকতেই দেখলাম ওর চোখ দিয়ে অশ্রুর ধারা নিচে নেমে চলেছে । নিরব অশ্রু দিয়ে যেন বলতে চাইছে আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি । এই প্রান দিয়েই ভালবাসি । হঠাত্ লক্ষ্য করলাম যে আমার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে । সাথে সাথে ওর প্রতি আমার যত রাগ ছিল ওই চোখের পানি দিয়ে সব ধুয়ে মুছে চলে গেল । মুক্তার ভালবাসার কাছে আমার ঈগো পরাজিত হল । সবাই দোয়া করবেন যেন এমন একজন কে পাই। সবার লাইফ টা এমনই হোক।

বিঃদ্রঃ গল্পটি কাল্পনিক ছিলো। কল্পনা ও ভাবনা থেকে গল্পটি লেখা,। কেমন হয়ছে সবাই জানাবেন আর ভালো থাকবেন সবসময়। আল্লাহ হাফেজ ❤
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,(তৌহিদ),,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

গল্পঃ বাজির প্রেম ২ পর্ব : ১

0

গল্পঃ বাজির প্রেম ২ পর্ব : ১

লেখকঃ তৌহিদুল ইসলাম

মোবাইল টা সাইলেন্ট করা ছিল । রাতে শোবার আগে যখন ফোনটা হাতে নিলাম দেখি ৮৩ টা মিস কল ।
একটা নম্বর থেকে না অনেক গুলো নম্বর থেকে । পরিচিত অপরিচিত ।
কি এমন দরকার হল আমাকে কে জানে ? আগে কাকে ফোন করবো তাই ভাবছি এমন সময় মিজান এসে ঢুকল ঘরে ।
“ফোন ধরিস না ক্যান ?”
“ আরে সাইলেন্ট ছিল । বুঝতে পারি নি । কি হয়েছে । এতো বার ফোন দিছিস ক্যান ?”
“ মুক্তা সুইসাইড করেছে ।“
“ মানে ?” বুকের মধ্যে কেউ যেন কেউ আস্তো একটা চুরি ঢুকিয়ে দিল ।
“ মানে করার ট্রাই করেছে । হাসপাতালে আছে । তোকে বার বার দেখতে চাইছে ।“
“মানে এখনও মরে নি ।“
“ তৌহিদ এমন ভাবে বলিস না প্লিজ ।“
“ কেন বলব না ? আর তুই আমার কাছে কেন এসেছিস ? ও আমার কে ? ও বাঁচল কি মরল তাতে আমার কি যায় আছে ?”
“ তৌহিদ প্লিজ এতো জেদ ধরিস না । তুই কি ওকে ভালবাসতিস না ?”
“ হ্যা । বাসতাম । আর বাসতাম বলেই আজ ওকে ঘৃনা করি । তুই তো জানিস ও আমার সাথে কি করেছে ।“
মিজান কিছু বলল না । মোবাইল বের করে কি যেন করল । তারপর আমার দিকে মোবাইলটা দিয়ে বলল “এটা দেখ ।“
“ কি এটা ?”
“ মুক্তা শেষ ফেসবুক স্টাটাস ।“
আমি নিলাম । ওটাতে লেখা “আই এম সরি তৌহিদ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও ।“
আমি মোবাইলটা ওকে ফিরিয়ে দিলাম । আমার কোন ভাবান্তর হতে না দেখে মিজান বলল “তুই কি বেচারীকে এখনও ক্ষমা করবি না ।“
“ কোন দিনও না । আর তুইতো আমাকে ওর আসল চেহারার কথা বলেছিলি ।“
“ বলেছিলাম । কিন্তু ও বদলেছে ।“
“ ও বদলেছে কিন্তু আমি বদলাই নি ।“
“ ও যদি আজ মরে যায় ?”
“ মরবে না । ওমন মেয়েরা এতো সহজে মরে না । আর আগেই বলেছি ও বাঁচল বা মরলো আমার তাতে কিছু যায় আসে না । তুই এখন যা । তোর সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না ।“
অনিচ্ছা সত্তেও মিজান চলে গেল ।
আমি লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম । কিন্তু শুয়ে পড়লেই কি আর ঘুম আসে ? আমার মনের ভিতর তোলপাড় চলছে । মুক্তাকে নিয় তোলপাড় । যতই মুখে আমি জেদ দেখাই মনের ভিতর ওকে নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব চলছেই । কি করব আমি ? ও আমার সাথে যাই করুক না কেন ভাল তো বাসি ওকে ।
এতোখন মুক্তা বলছি যে তার পুরা নাম । মাহামুদা আক্তার মুক্তা । আমাদের ক্লাসের সব থেকে স্মার্ট মেয়ে । সব থেকে সুন্দর মেয়ে । আর সব থেকে অহংকারী মেয়ে । ওরিয়েনটেশনের প্রথম দিন মুক্তা নিজের উপস্থিতি আর গুরুত্ব খুব ভাল করে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে ছিল । উপরের ক্লাসের ভাইয়ারা তো ছিলোই আমাদের ক্লাসের মোটামুটি সবাই মুক্তার উপর ফিদা ছিল । এবং সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজেও ছিলাম । ও যখন ক্লাসে আসতো যেন এক ঝড়ো বাতাস মনের মধ্য বয়ে যাচ্ছে । যথন ওর সাথে দেখা হত মনের ঘরে যেন হাজারো বেহালা বেজে চলত । কিন্তু ওকে পাবার স্বপ্ন ওর সাথে বন্ধুত্ব করা এমন কি ওর সাথে কথা বলার কথাও ভাবতাম না কোন দিন ।
কিভাবে ভাবতাম ? ও হল একটা পারফেক্ট মেয়ে । সবার মনের রানী আর আমি ক্ষুদ্র প্রজা । আমি ত ক্ষ্যাত মার্কা একটা ছেলে । ওর ধারে কাছে যাবার প্রশ্নই আসে না । আমি যেতামও না । এভাবেই চলে যাচ্ছিল জীবন ।
কিন্তু একদিনের কথা । আমি ক্লাস শেষে হলের দিকে যাচ্ছি ।
এমন সময় পেছন থেকে ডাক “তৌহিদ একটু দাড়াবে ?”
কণ্ঠ শুনে মনে হল দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো ।
মুক্তার মুখে নিজের নাম যে শুনবো এটা আমি কোন দিন আশাই করি নি । আমি দাড়ালাম ।
“ হাই ।“
এতো টাই নার্ভাস হয়ে পড়লাম যে হ্যালো টাও বলতে পারলাম না । কোন রকম একটু হাসার চেষ্টা করলাম । মুক্তা খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে বলল “ তোমার সাথে কিছু কথা বলতে পারি ?”
“ বল ।“
“ একচুয়ালী কথা না, অভিযোগ । তোমার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ আছে ।“
“ অভিযোগ ?” আমি অবাক হই ।
“তুমি আমাকে এড়িয়ে চল কেন ?”
কিছুই বলতে পারলাম না । বোকার মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া । তাছাড়া আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে মুক্তা আমার সাথে কথা বলেছে ।
সেইদিন রাতে ঘুম তো আর আসেই না । কত কিছুই না মনের জানালায় উকি মারে । মন ছুয়ে যায় কত অজানা রঙে । তারপর আসতে আসতে মুক্তার সাথে যোগাযোগ বেড়ে যায় । মোবাইলে কথা হতে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ।
পড়ব পড়ব না করেও আমি ওর প্রেমে পড়ে যাই । জীবন যেন এক নতুন পথে চলতে থাকে । যে পথে কেবল মুক্তা ছাড়া আর কিছুই নেই ।
আমি ভাসতে থাকি নতুন স্বপ্নে । কিন্তু স্বপ্ন ভাঙ্গতে সময় লাগে না । আমার ও লাগলো না ।
যে দিন আমি ঠিক করেছি যে ওকে বলব সেদিন সব যেন কেমন অন্যরকম হয়ে যায় । সকালবেলা ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই নাস্তা খাচ্ছি এমন সময় মিজান কে আসতে দেখলাম । ওর মুখ থমথমে ।
আমি বললাম “ কি হয়েছে ?”
“ তোর সাথে কথা আছে ।“
“ বল ।“
‘ এখানে না । আয় আমার সাথে ।“
বলে এক প্রকার জোর করেই আমাকে নিয়ে গেল ওর রুমে । নাস্তাও ঠিক মত শেষ করতে দিল না । আমরা মুখো মুখি বসলাম ।
“ তোকে একটা কথা জিঞ্জেস করবো সরাসরি উত্তর দিবি ।“
আমি বললাম “আচ্ছা দিবো । কি হল এমন ?”
“ তুই কি আজকে মুক্তা কে প্রোপোস করার কথা ভাবছিস ?”
আমি খানিকটা চমকালাম । ইতস্তর করে বললাম “তুই কিভাবে জানিস ?”
“ শুধু আমি না পুরা ভার্সিটির সবাই জানে এটা । তুই কি বুঝতে পারছিস না মুক্তা তোকে নিয়ে খেলা করছে । তোর কি মনে হয় ও তোর সাথে মিশছে কেন ? তোর কোন আইডিয়া আছে ?”
আমি কোন কথা বলতে পারি না । সত্যি তো আমার তো কিছুই নেই যে ও আমার সাথে মিশবে ।
মিজান বলল “মুক্তা ওর বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরেছে যে তোকে ওর প্রেমে ফেলবে । তারপর সবার সামনে তোকে হেয় করবে । আজ সবাই রেডি হয়ে আছে মজা দেখার জন্য ।“
আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । মানুষ এমনটা কেমন করে করে ? কারো ইমোশন নিয়ে কিভাবে খেলে ? এসব ভাবতে ভাবতে

মুক্তা ভাই এসেছিল ।
ভেবেছিলাম মুক্তাকে দেখতে যাবো না । কিছুতেই যাবো না । কিন্তু না গিয়ে পারলামও না ।এমন ভাবে অনুরোধ করতে লাগলো । আমি না করতে পারলাম না কিছুতেই । আর না যাওয়াটা অমানবিক হত ।
ওর অবস্থা নাকি খুব ক্রিটিক্যাল । দুএক বার নাকি চেতনা এসেছিল । বার বার নাকি আমার নাম নিয়েছে !
গাড়ি চলছে হাসপাতালের দিকে আর আমি ভাবছি মুক্তার কথা ।

সেদিন মিজানের কাছ থেকে সব শোনার পর আমার সব কিছু যেন ওলটপালট হয়ে গেছিল । আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন আমি আর এই পৃথিবীতে নাই । একজন মানুষ আর একজনের সাথে এমনটা কেমন করে করতে পারে ? আমার মনটা কি একটা বাজির সমান ? এতোই ক্ষুদ্র আমি ?
তবুও ভার্সিটিতে গেলাম । মুক্তা যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল ।
ওর সামনে যখন দাড়ালাম তখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে এত সুন্দর একজন মানুষ আমার সাথে এমন একটা ঘৃন্য খেলা খেলতে পারে ।
মুক্তা আমাকে বলল “এতো দেরী হল কেন ? আমি কতক্ষন ধরে তোমার জন্য ওয়েট করছি ।”
তারপর হেসে বলল “তুমি যেন কি আমাকে বলবে আজ ?”
আমি কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলাম না । তারপর বললাম “কত টাকা বাজি ধরেছো ?”
“ সরি”
মুক্তাকে একটু চমকাতে দেখলাম । ও মনে হয় আমার কাছ থেকে এটা আশা করে নি ।
“সরি আমি বুঝতে পারলাম না তুমি কি বললে ?”
আমি বললাম “তুমি তোমার বান্ধবীদের সাথে কত টাকা বাজি ধরেছো ?”
“ বাজি ?”
“ হ্যা । বাজি । আমাকে প্রেমে ফেলানোর বাজি । আমাকে নিয়ে খেলা করার বাজি ।“
কিছুক্ষন মুক্তা কোন কথা বলতে পারলো না ।
“শোন তৌহিদ তুমি যেমন টা ভাবছো তেমন না । আই ক্যান এক্সপ্লেইন ।“
“ আমি কোন ব্যাখ্যা শুনতে চাইছি না । আমি শুধু জানতে চাই তুমি বেট ধরেছিলে কি না?”
মুক্তা কিছুক্ষন কোন কথা বলল না । তারপর মাথা ঝাকালো ।
কি জানি হয়ে গেল আমার ! মাথা যেন আগুন ধরে গেল। কষে একটা চড় মেড়ে,,,,,,

চলবে

বাজির প্রেম পাঠঃ ২/শেষ

6

বাজির প্রেম পাঠঃ ২/শেষ

লেখকঃ তৌহিদুল ইসলাম
ও কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে। তো আজকে ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি নিলীমা ওর বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। তাই আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম
আমিঃ নিলীমা একটু এদিকে আসবা
নিলীমাঃ হুম বল( আমার সামনে এসে)
আমিঃ তোমার কি হয়েছে। আমাকে এমন অবহেলা করছ কেন
নিলীমাঃ তোমাকে আমি আবার কখন অবহেলা করলাম।
আমিঃ অবহেলা যদি না ই করে থাক তাহলে আমার সাথে ঠিকমত কথা বলছ না কেন ফোন দিলে ফোন ধর না কেন।
নিলীমাঃ দেখ আমি এই বিষয় নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না। আমার একটু কাজ আছে।পরে কথা হবে। বায়
একথা বলে নিলীমা আমার উত্তরের আশা না করে ওর বান্ধবীদের কাছে চলে গেল।
আমার খুব খারাপ লাগলো। কিছুদিন আগেও ও আমাকে কত গুরুত্ব দিত আর এখন অবহেলা করছে।
তাই আমি মন খারাপ করে বন্ধুদের আড্ডায় গেলাম। কারন ওদের কাছে গেলে এমনিতেই মন ভাল হয়ে যাবে।
এভাবে বেশ কয়েক দিন চলে গেল। নিলীমা আমার সাথে দেখা হলেও কথা বলে না। আর আমার নাম্বার ব্লাক লিষ্টে রেখেছে তাই আমি ওকে ফোনও দিতে পারি না।
আমি এগুলা সহ্য করতে পারছিলাম না। তো আজ ভার্সিটি গিয়ে দেখি নিলীমা ওর বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে তাই আমি সোজা ওর কাছে চলে গেলাম। ওদের কাছে গিয়ে আমি বললাম
আমিঃ নিলীমা তুমি আমার সাথে এমন করছ কেন
নিলীমাঃ কেমন করছি।
আমিঃ দেখ নিলীমা আমি আর নিতে পারছি না।
নিলীমাঃ জয় আসলে আমি স্যরি।
আমিঃ স্যরি কেন
নিলীমাঃ আসলে আমি তোমাকে কখন ভালবাসিনি। আমরা বাজি ধরেছিলাম যে তোমার সাথে আমি প্রেম করব। আর যদি তোমার সাথে আমি প্রেম করতে পারি তাহলে আমি পাচ হাজার টাকা পাব। আর যদি না পারি তাহলে আমাকে পাচ হাজার টাকা দিতে হবে।
আমিঃ তারমানে তুমি আমার সাথে গেম খেলেছ।
নিলীমাঃ হুম। আর এই দেখ আমি পাচহাজার টাকা জিতেছি(ব্যাগ থেকে টাকা বের করে)
আমিঃ কিন্তু নিলীমা আমিতো তোমাকে সত্যিই ভালবেসেছি।
নিলীমাঃ তুমি বেসেছ আমি তো আর বাসিনি।
আমিঃ নিলীমা আমি তোমাকে ছারা থাকতে পারব না(ওর হাত ধরে)
নিলীমা এক ঝটকায় আমার হাত ছারিয়ে নিয়ে বলল
নিলীমাঃ ঐ কোন সাহসে তুই আমার হাত ধরিস। আর তোর কানে যায় না আমি তোকে ভালবাসিনি।
নিলীমার এক বান্ধবী বলল
বান্ধবীঃ চলতো এখান থেকে।
তারপর ওরা সবাই চলে গেল আর আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সেখানেই বসে পরলাম।
পরদিন আমি ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢোকার সময় দেখলাম নিলীমাও একা আসছে তাই আমি নিলীমার কাছে গিয়ে বললাম
আমিঃ নিলীমা তুমি কি আমাকে একটুও ভালবাস না।
নিলীমাঃ দেখ যা বলার আমি কাল বলে দিয়েছি।
আমিঃ কিন্তু নিলীমা আমিতো তোমাকে অনেক ভালবাসি। তোমাকে ছারা আমি থাকতে পারব না।
নিলীমাঃ দেখ জয় আমি তোমাকে ভাল বাসি না।
আমিঃ প্লিজ তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।প্লিজ প্লিজ।
নিলীমাঃ ঐ তোকে সোজা ভাবে বলছি কানে যায় না। আর তুই ভাবলি কি করে যে আমি তোর মত ছেলেকে ভালবাসব। আর এরপর যদি তুই আমাকে এই ভালবাসার কথা বলিস তাহলে আমি আব্বুর কাছে বলে তোর টিসির ব্যবস্হা করব।
ওর কথা শুনে আমি পুরাই অবাক হয়ে গেলাম। ও একথা বলবে আমি কখনও ভাবতেও পারি নি।
তারপর আমি নিলীমাকে বললাম
আমিঃ আসলে নিলীমা আমরা মধ্যবিত্তরা যাকে ভালবাসি না তাকে মন থেকেই ভালবাসি। আর তোমাকেও আমি মন থেকেই ভালবাসতাম।এমনকি তুমি আমাকে প্রপোজ করার আগে থেকেই। আর আমি কখনও ভাবতেও পারি নি যে তুমি আমার সাথে এমন করবে। আর আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম যে তোমাদের বড়লোকদের কাছে এটা একটা কমন ব্যাপার। আচ্ছা ভাল থেক তোমাকে আর ডিষ্ট্রাব করব না। নিজের যত্ন নিও। গুড বায়।
একথা বলে আমি ভার্সিটিতে না ঢুকে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় আসার পর আমার নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। যাকে এত ভাল বেসেছিলাম সেই আমার সাথে অভিনয় করল।
কিন্তু চাইলেই কি নিজেকে শেষ করা যায়। আমাকে তো ভালবাসার আর মানুষ আছে যারা নিজের চেয়ে আমাকে বেশি ভালবাসে। আমিই তাদের সব। তারা হলো আমার বাবা মা। তাই আমি নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করলাম।
নিলীমা সেদিন এই জন্যই বলেছিল আগে বিয়ে হয়ে নিক।
আমার মন খারাপের কারনে দুইদিন ভার্সিটিতে যাই নি। আম্মু ঠিকি বুঝে ফেলেছে আমার মন খারাপ। আম্মু আমাকে কালকে বলেছিল
আম্মুঃ কিরে বাবা তোর মন খারাপ
আমিঃ না তো আম্মু।
আম্মুঃ আমার সাথে মিথ্যা বলিস কেন বাবা
আমিঃ আসলে আম্মু
আম্মুঃ টেনশন নিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
একথা বলে আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেল।
আজ দুইদিন পর আমি ভার্সিটিতে আসলাম। এসে দেখি সবাই সবার মত ব্যস্ত। তাই আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেলাম।
এভাবেই দুইদিন চলে গেল। তো পরদিন আমি ভার্সিটির আমগাছের নিচে একা বসে আছি এমন সময় একটা মেয়ে এসে আমার পাশে বসল।
মেয়েঃ হাই জয়
আমিঃ হেল
মেয়েঃ কেন আছ
আমিঃ ভাল কিন্তু আপনি কে
মেয়েঃ আমি তিশা। তোমার ফেন
আমিঃ মানে
তিশাঃ তুমি ফেসবুকে গল্প লিখ তাই না
আমিঃ হুম তো
তিশাঃ আমি তোমার গল্পের ভক্ত। মানে তোমার প্রত্যেকটি গল্প আমি পরেছি
আমিঃ ওহ।
তিশাঃ আচ্ছা আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি
আমিঃ ইয়ে মানে
তিশাঃ কি মানে মানে করছ। আজ থেকে আমরা বন্ধু।
আমিঃ আচ্ছা।
আমি ওর সাথে কথা বলছি তখনি দেখলাম নিলীমা আমাদের সামনে দিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে চোখ পড়ায় আমি ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।
পরদিন আমি ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকব তখন দেখি তিশা আমার জন্য দাড়িয়ে আছে। আমি ওকে দেখা মাএই বললাম
আমিঃ হাই দোস্ত কেমন আছিস
তিশাঃ ভাল তুই
আমিঃ এইত ভাল। চল ক্যাম্পাসে যাওয়া যাক।
তিশাঃ হুম চল।
তারপর আমরা ক্যাম্পাসে আসলাম। একটুপর তিশা বলল
তিশাঃ দোস্ত চল না ফুচকা খেয়ে আসি
আমিঃ নারে দোস্ত আমি ফুচকা খাই না
তিশাঃ তোর খাওয়া লাগবে না। আমি খাব চল
তারপর আর কি করার ওর সাথে যেতেই হলো।
তিশা ফুচকা খাচ্ছে আর আমি পাশে দাড়িয়ে আছি তখনি নিলীমাও ফুচকার দোকানে আসল আর ফুচকার অর্ডার করল।
আমি দাড়িয়ে আছি এমন সময় তিশা বলল
তিশাঃ দোস্থ হা কর
আমিঃ কেন
তিশাঃ হা করতে বলেছি হা কর।
ওর জোরাজুরিতে হা করলাম আর ও আমাকে ফুচকা খাইয়ে দিল।
আমি ফুচকা খেয়ে নিলীমার দিকে তাকানো মাএই দেখলাম ও আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। তাই আমি ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।
এভাবে তিশা আর কয়েকবার আমাকে খাইয়ে দিল আর নিলীমা আমার দিকে চেয়েই ছিল।
বিল দেয়ার সময় যখন আমি বিল দিতে যাব তখন তিশা বলল
তিশাঃ ঐ তুই বিল দিচ্ছিস কেন
আমিঃ আরে তুই মেয়ে হয়ে কি বিল দিবি নাকি
তিশাঃ হুম দিব। আর ফুচকা খেতে আমি তোকে নিয়ে আসছি তুই আমাকে আনিস নি।
আমিঃ তবুও
তিশাঃ চুপ কোন কথা বলবি না।
একথা বলে তিশা নিজেই বিল দিয়ে দিল।
এখন তিশা আমার ভাল একটা বন্ধু হয়ে গেছে। আমার খুব কেয়ার করে আমার সমস্যা হলে তা সমাধানের চেষ্টা করে।
বেশ কিছুদিন ধরে নিলীমা আমাকে ফলো করছে।কিন্তু কেন ফলো করছে তা আমি জানি না।
আজ আমি ও তিশা পুকুর ঘাটে বসে আছি একটুপর দেখলাম নিলীমাও ওর এক বান্ধবিকে নিয়ে আমাদের একটু দূরে বসল।
তারপর তিশা আমাকে বলল
তিশাঃ আচ্ছা তুই কি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস
আমিঃ কি
তিশাঃ ঐ যে দেখ মেয়েটা ও তোকে ফলো করে
আমিঃ তুই কিভাবে বুঝলি
তিশাঃ আরে তুই যেখানেই যাস দেখি ও সেখানেই।
আমিঃ এটা ওতো হতে পারে যে ও আগে থেকেই সেখানে থাকে
তিশাঃ তুই আসলেই একটা গাধা।
আমিঃ ঠিক বলেছিস রে গাধা না হলে কি আর ওর কাছে ধোকা খেতাম।
তিশাঃ মানে।
তারপর আমি তিশাকে সব খুলে বললাম।
আমার কথা শুনে তিশার মনটা খারাপ হয়ে গেল তারপর বলল
তিশাঃ মেয়েটা আসলেই একটা বুল করেছে রে।
আমিঃ হুম।
তিশাঃ তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস তাই না
আমিঃ তখন পেয়েছিলাম। এখন সব ভুলে গেছি।
তিশাঃ জয় আমার মনে হয় মেয়েটা তোকে এখন ভালবাসে
আমিঃ কচু বাসে। চল তো এখান থেকে।
তারপর আমরা দুজন চলে আসলাম।
এখন নিলীমা আমার দিকে কেমন যেন করুন চোখে তাকিয়ে থাকে।
পরদিন আমগাছের নিচে তিশার জন্য অপেক্ষা করছি তখনি দেখালাম নিলীমা আমার দিকে আসছে।
তাই আমি উঠে চলে যাব তখনি নিলীমা আমাকে ডাক দিল
নিলীমাঃ জয় দাড়াও
আমিঃ হুম বল
নিলীমাঃ জয় আমি তোমাকে ভালবাসি।
আমিঃ হুম
নিলীমাঃ তুমি কিছু বলবে না
আমিঃ এবার কত বাজি লাগছেন
নিলীমাঃ মানে আর তুমি আমাকে আপনি করে বলছ।
আমিঃ আপনারা বড়লোক মানুষ তুমি বললে যদি রাগ করেন। আর এবার কি দশহাজার বাজি লাগছেন।
নিলীমাঃ দেখ জয় আমি আগেরবারের জন্য স্যরি। কিন্তু এবার আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি।
আমিঃ একটা কথা আছে না ন্যারা একবার বেলতলায় যায় বার বার যায় না। তাই আমি ও একই ভুল দুইবার করতে চাই না।
নিলীমাঃ বিশ্বাস কর জয় আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি।
আমিঃ হুম আমি বুঝেছি। বায়।
একথা বলে আমি চলে গেলাম।
পেয়েছে কি মেয়েটা। আমি মধ্যবিও বলে কি আমার কোন ইমশন নেই। আমাকে নিয়ে বার বার খেলতে চায়। না এবার আমি ওর খেলার পাএ হব না।
একথা যখনি ভাবছি তখনি কোথা থেকে যেন তিশা এসে বলল
তিশাঃ কি রে কি ভাবছিস
আমিঃ কিছু না রে
তিশাঃ তাহলে মন খারাপ কেন
আমিঃ এমনি।
তিশাঃ আচ্ছা চল কোথাও বসি
আমিঃ আচ্ছা।
তারপর তিশার সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে এলাম।
এখন প্রতিদিনি নিলীমা আমার সাথে কথা বলতে চায় বাট আমি বলি না।
আজকে নিলীমা আমার কাছে এসে বলল
নিলীমাঃ জয় আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি। তোমাকে ছারা আমি বাচব না
আমিঃ দেখেন এত ড্রামা করার কিছু নেই কত টাকা বাজি ধরেছেন বলেন আমি আপনাকে জিতিয়ে দিব।
নিলীমাঃ তুমি কেন আমাকে বিশ্বাস করছ না।
আমিঃ ম্যাডাম মধ্যবিওরা কাউকে একবারি বিশ্বাস করে বারবার না।
নিলীমাঃ তার মানে তুমি আমাকে ভালবাসবে না।
আমিঃ প্রশ্নেই আসে না।
নিলীমাঃ তুমি যদি আমাকে ভাল না বাস তাহলে আমি তোমার নামে আব্বুর কাছে কমপ্লেন করব। তোমাকে টিসি দিতে বলব
আমিঃ তুমি কি ভেবেছ আমি টিসির কথা শুনে ভয় পাব। হা হা হা। পারলে দিও আমাকে টিসি। আর না পারলে আমিই নিয়ে নিব। তোমার এই টর্চার আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
আমার কথা শুনে নিলীমা মাথা নিচু করে রাখল।
তারপর আমি সেখান থেকে চলে এলাম। আমাদের সব কথা তিশা শুনেছিল তাই তিশা আমাকে বলল
তিশাঃ মনে হয় মেয়েটা তোকে সত্যিই ভালবাসে
আমিঃ তো আমি কি করব
তিশাঃ তুই মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিস না।
আমিঃ দেখ একসময় আমিও ওর পিছু পিছু ঘুরেছি কিন্তু ও আমাকে একটুও পাত্তা দেয় নি।
তিশাঃ তো তুই কি এখন তার প্রতিশোধ নিচ্ছিস।
আমিঃ হয়তো।
তারপর আমি বাসায় চলে এলাম। এভাবে বেশ কিছুদিন চলে গেল। এখন নিলীমাকে দেখলে মনে হয় ও ঠিকমত ঘুমায় না খায় না। ওর চোখের নিচে কালি পরেছে। মেয়েটাকে একটু দুর্বল লাগে।
আজকে ক্যাম্পাসে বসে আছি এমন সময় নিলীমার কিছু বান্ধবী এসে বলল
একজনঃ তুমি নিজেকে কি ভাব
আরেকজনঃ তোমার জন্য মেয়েটা অসুস্হ্য হয়ে যাচ্ছে।
আমিঃ ষ্টপ ষ্টপ। আমার জন্য নাকি টাকার জন্য
প্রথমজনঃ মানে
আমিঃ মানে বোঝেন না। এবার কত টাকা বাজি ধরেছেন আমার সাথে প্রেম করার জন্য
দ্বিতীয় জনঃ দেখ তুমি ভুল বুঝছ। নিলীমা তোমাকে সত্যিই ভালবাসে।
আমিঃ বুঝেছি। আর এর জন্য আপনাকে দালালি করতে হবে না।
একজনঃ মানে কি বলতে চাইছ তুমি
আমিঃ কিছু না।
একথা বলে আমি সেখান থেকে চলে এলাম।
এখন আমারও নিলীমার জন্য খারাপ লাগে। মেয়েটা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।আগের নিলীমার সাথে এই নিলীমার কোন মিল নেই।
আজকে পুকুরঘাটে একা বসে আছি তখনি নিলীমা আমার কাছে এসে আমাকে ডাক দিল
নিলীমাঃ জয়।
আমিঃ আমি ওকে দেখে উঠে চলে যাব তখনি নিলীমা আমার হাত ধরে ফেল্ল
আমিঃ হাত ছার নিলীমা
নিলীমাঃ কেন হাত ছারব। আমার মাঝে কি নেই যে তুমি এখন আমাকে ভালবাসতে পারবে না (কান্না করে)
আমিঃ বিশ্বাস নেই।
নিলীমাঃ মানছি আমি তখন তোমার সাথে অন্যায় করেছি কিন্তু এখনতো আমি তোমাকে ভালবাসি আর আমার ভুল আমি শিকার করছি।
আমিঃ দেখ নিলীমা আমি আগে তোমাকে খুব ভালবাসতাম কিন্তু এখন আমি তোমাকে ভাল বাসি না।
নিলীমাঃ জান তোমার সাথে যেদিন সব শেষ করেছিলাম তার কিছুদিন পর্যন্ত আমি খুব ভাল ছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পর আমি তোমাকে মিস করতে শুরু করি। তোমার সাথে পার্কে বসে বাদাম খাওয়া। বিকেলে নদীর পারে হাটা। সকালে শিশির ভেজা ঘাসে তোমার হাত ধরে হাটা সবকিছুই আমি মিস করতে শুরু করি। এগুলা যতই ভুলতে চেষ্টা করি ততই বেশি মনে পরে। তারপর আস্তে আস্তে তোমাকে ভালবাসতে শুরু করি।
আমিঃ তো
নিলীমাঃ তোমাকে ছারা আমি থাকতে পারব না জয়।
আমিঃ দেখ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না
নিলীমাঃ আচ্ছা কি করলে তুমি আমাকে বিস্বাস করবে
আমিঃ কিছু না।
নিলীমাঃ আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি তাহলে তো বিশ্বাস করবে
আমিঃ কি বল এইসব।
নিলীমাঃ আমি এত কিছু বুঝি না। আজকেই তোমাকে বিয়ে করব(আমাকে জড়িয়ে ধরে)
আমিঃ কিন্তু
নিলীমাঃ কোন কিন্তু নয় চল
একথা বলে নিলীমা আমাকে জোর করে নিয়ে গেল উদ্দেশ্য কাজী অফিস।
নিলীমা ওর ফ্রেন্ডদের ওখানে আসতে বলল।
তারপর আমরা দুজন বিয়ে করে নিলাম।
এই মুহুর্তে আমরা রিক্সায় বসে আছি। রিক্সা তার আপন গতিতে চলছে।
একটুপর নিলীমা বলল
নিলীমাঃ তুমি আমাকে বিয়ে করেছ বলে আবার আমাকে টাচ করতে এসো না
আমিঃ কেন। আমার বউকে আমি টাচ করব না তো কে করবে
নিলীমাঃ উহম এখন আসছে দরদ দেখাতে।
আমিঃ আমার বউকে আমি দরদ দেখাতেই পারি।
নিলীমাঃ তোমাকে আমি বিয়ে করেছি এটাও কিন্তু একটা বাজি ছিল।
আমিঃ কিহহহ। তারমানে তুমি আমাকে ধোকা দিলে
নিলীমাঃ জী না স্যার। এই বাজির মধ্যে একটা সত্য আছে।
আমিঃ কি
নিলীমাঃ সেই সত্যটা হলো আমি তোমাকে ভালবাসি। হি হি হি।
আমিঃ সত্যিতো
নিলীমাঃ হুম।
একথা বলে নিলীমা আমার হাত টা জড়িয়ে আমার কাধে মাথা রাখল। আর আমিও ওর হাতের ওপর আমার হাত রাখলাম।
ভাল আছি আমরা। আপনারাও ভাল থাকবেন।
সমাপ্ত।

বাজির প্রেম পাঠঃ ১

2

বাজির প্রেম পাঠঃ ১

লেখকঃ তৌহিদুল ইসলাম
নিরবঃ এই জয় শোন তোকে নিলীমা ডাকছে
আমিঃ কেন
নিরবঃ আমি কিভাবে জানব। তুই গিয়ে দেখ।
আমিঃ আচ্ছা ও এখন কোথায় আছে
নিরবঃ ঐ বড় আমগাছটার নিচে বসে আছে।
আমিঃ আচ্ছা তুই থাক আমি দেখে আসছি কি জন্য ডাকছে।
তারপর আমি নিরবকে রেখে আমগাছের দিকে হাটা দিলাম।
আমি জয় বাবা মায়ের আদরের সন্তান। আর যে আমাকে ডাকছে সে নিলীমা আমাদের ভার্সিটির প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়ে। আমি ওকে মনে মনে খুব ভালবাসি কিন্তু এটা ও জানে না। আর তাছারা ওর সাথে আমি বেশি একটা কথা বলি না আবার ও আমার সাথেও বেশি একটা কথা বলে না।
তো যাই হোক আমি আমগাছটার কাছে গিয়ে দেখি নিলীমা আর ওর কিছু বান্ধবি বসে আছে। তাই আমি নিলীমাকে ডাক দিয়ে বললাম
আমিঃ নিলীমা।
নিলীমাঃ হুম।
আমিঃ তুমি কি আমাকে ডেকেছিলে।
নিলীমাঃ হুম।
আমিঃ কেন
নিলীমাঃ একটু ঐ দিকে চল বলছি।
তারপর নিলীমার সাথে আমি একটু সাইডে গেলাম।
আমিঃ হুম এবার বল।
নিলীমাঃ দেখ জয় আমি কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে পারি না। তাই সোজাসুজি বলছি
আমিঃ হুম বল কি বলবে
নিলীমাঃ আমি তোমাকে ভালবাসি জয়।
আমিঃ কিহহহ(অবাক হয়ে)
নিলীমাঃ অবাক হওয়ার কিছু নেই আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি।
নিলীমার কথা শুনে আমার নাচতে ইচ্ছা করছে কারন আমি তো ওকে মনে মনে ভালবাসি। আর আজ ও আমাকে প্রপোজ করছে। পরক্ষনেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল কারন আমি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান আর ও বড়লোক বাবার আদরের মেয়ে। ওর সাথে আমার যায় না। তাই আমি নিলীমাকে বললাম
আমিঃ স্যরি নিলীমা। এটা সম্ভব না।
নিলীমাঃ কেন
আমিঃ জানি না। বায়।
একথা বলে আমি হাটা ধরলাম।
পেছন থেকে নিলীমা ডাকছে। কিন্তু আমি তাতে কান দিচ্ছি না। কারন বড়লোকদের সাথে মধ্যবিত্তদের ভালবাসা হয় না।আর যদিও হয় সেটা অসমাপ্তই থেকে যায়। আর আমি যদি নিলীমার সাথে রিলেশন করি আর সেটা যদি অসমাপ্ত থেকে যায় তাহলে আমি সেটা সহ্য করতে পারব না। তাই আমি বাসায় চলে এলাম।
পরদিন ভার্সিটি গিয়ে আমি নিরব শান্ত রাকিব আড্ডা দিচ্ছি তখনি কোথা থেকে যেন নিলীমা আমাদের সামনে আসল আর বলল
নিলীমাঃ জয় তোমার সাথে আমার কথা আছে।
আমিঃ হুম বল
নিলীমাঃ একটু ঐ দিকে চল
আমিঃ হুম চল।
নিলীমাঃ দেখ জয় আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি।
আমিঃ দেখ নিলীমা পাগলামি করো না। এটা হয় না
নিলীমাঃ কেন।
আমিঃ কারন আমি মধ্যবিত্ত।
নিলীমাঃ তো
আমিঃ তুমি বড়লোক বাবার মেয়ে তোমার বাবা এই সম্পর্ক মেনে নিবে না
নিলীমাঃ তো তুমি আমি মেনে নিলেই তো হয়
আমিঃ দেখ পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু করা ঠিক না।
নিলীমাঃ ঠিক নাকি ভুল আমি কিছু জানি না আমি শুধু জানি আমি তোমাকে ভালবাসি।
আমিঃ দেখ নিলীমা এক কথা বার বার কেন বলছ।
নিলীমাঃ তুমি কি আমাকে ভাল বাসবা। যদি না বাস তাহলে আমি সুইসাইড করব।
আমিঃ কি বল এইসব।
নিলীমাঃ হুম ঠিকি বলছি। এখন বল আমাকে ভালবাস।
আমিঃ আমাকে একটু ভাবার সময় দাও।
নিলীমাঃ হুম দিলাম কিন্তু আমার উত্তর হ্যা হওয়া চাই।
আমিঃ আচ্ছা দেখা যাক।
একথা বলে আমি বন্ধুদের আড্ডায় চলে গেলাম।
রাতে আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি।
আমি নিলীমার সামনে গেলে আমারও বলতে ইচ্ছে হয় নিলীমা আমিও তোমাকে ভালবাসি কিন্তু বলতে পারি না। কারন আমি মধ্যবিও। আবার ওকে ভুলতে যেতে চাইলেও পারি না কারন ওকে মন থেকে ভালবাসি তো তাই।
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম কাল নিলিমাকে বলে দিব আমিও নিলীমাকে ভালবাসি।
পরদিন কলেজে গিয়ে নিলীমাকে খুজছি তখনি দেখলাম নিলীমা আমার দিকে আসছে। আমার মনে হয় ও আমাকে অনেক ভালবাসে তাইতো আমার পেছনে এভাবে পরে আছে।
তো নিলীমা এসে সোজা আমার হাত ধরে পুকুর ঘাটে নিয়ে গেল।
নিলীমাঃ আমার উওর দাও
আমিঃ কিসের
নিলীমাঃ কাল না বললে ভেবে উওর দিবে।
আমিঃ ওহ।
নিলীমাঃ বল বল।
আমিঃ আসলে নিলীমা আমিও তোমাকে ভালবাসি(এক নিশ্বাসে বলে ফেল্লাম)
নিলীমাঃ সত্যিই (খুশি হয়ে)
আমিঃ হুম।
নিলীমাঃ তাহলে চল আমরা কোথাও ঘুরে আসি।
আমিঃ কিহ। ক্লাস করবে না।
নিলীমাঃ আরে একদিন ক্লাস না করলে কিছু হবে না। চল তো
একথা বলে নিলীমা একপ্রকার জোর করেই আমাকে টেনে নিয়ে গেল।
আমরা দুজন পাশাপাশি রিক্সায় বসে আছি। আমার কেমন যেন অসস্থি লাগছে। তা দেখে নিলীমা বলল
নিলীমাঃ এই তুমি এভাবে চুপটি করে বসে আছ কেন
আমিঃ আসলে এর আগে কোন মেয়ের সাথে রিক্সায় উঠি নি তো তাই একটু অসস্হি লাহছে।
নিলীমাঃ হি হি হি। তাই নাকি। আচ্ছা আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর আমরা একটা পার্কে ঢুকলাম। চারদিকে কাপলের অভাব নেই।
আমরা দুজন পাশাপাশি বসে আছি তখন নিলীমা বলল
নিলীমাঃ এই চল না ফুসকা খাই
আমিঃ কি বল ফুসকা
নিলীমাঃ হুম
আমিঃ না আমি ফুসকা খাই না। তারচেয়ে বরং আমরা বাদাম খাই।
নিলীমাঃ ধুর এই সময় কেউ বাদাম খায় নাকি।
আমিঃ আরে চল তো। ফুচকা খেলে পেট খারাপ হতে পারে কিন্তু বাদাম খেলে হবে না। আর বাদামে কিন্তু অনেক শক্তি।
নিলীমাঃ ধুর বাদাম খাব না।
আমিঃ আরে খেয়েই দেখ না। এ সময় বাদাম ভাল লাগবে।
একথা বলে আমি উঠে কিছু বাদাম কিনে নিয়ে আসলাম।
তারপর আমি বাদাম খাচ্ছি কিন্তু নিলীমা খাচ্ছে না। তাই আমি বললাম
আমিঃ নাও খেয়ে দেখ ভাল না লাগলে খাওয়ার দরকার নেই।
তারপর নিলীমা বাদাম খেল। একটুপর নিলীমা বলল
নিলীমাঃ আসলেই তো। এসময় বাদাম তো ভালই লাগছে।
তারপর আমরা কিছুক্ষন পার্কে থেকে যে যার বাসায় চলে এলাম।
এখন নিলীমার সাথে ভালই যাচ্ছে আমার দিনকাল।
আজকে খুব ভোরে উঠে নিলীমাকে ফোন দিলাম।
নিলীমা প্রথম দুবার ধরল না। তিনবারের সময় নিলীমা ফোন ধরে বলল
নিলীমাঃ হেল।
আমিঃ কি করছ
নিলীমাঃ এই শিতের সকালে মানুষ কি করে গাধা।
আমিঃ ওহ তার মানে ঘুমাচ্ছিলে
নিলীমাঃ হুম। তা কি জন্য ফোন দিয়েছ এত সকালে
আমিঃ একটু বাইরে আস না।
নিলীমাঃ কিহহহ বাইরে। কেন
আমিঃ আমি বাইরে দারিয়ে আছি।
নিলীমাঃ এত সকালে আর এই ঠান্ডার মধ্যে তুমি বাইরে তাও আবার আমাদের বাসার সামনে
আমিঃ হুম। এখন কথা না বলে বাইরে আস।
একথা বলে আমি ফোন রেখে দিলাম। একটুপর নিলীমা বাইরে আসল।
নিলীমাঃ তুমি কি পাগল। এত সকালে কেউ বের হয়।
আমিঃ হুম পাগল। তোমার জন্য পাগল। আর আমি বের হই।
নিলীমাঃ হয়েছে এবার বল কেন এসেছ।
আমিঃ এই কুয়াশা ভেজা ঘাসের মধ্যে তুমি আমি খালিপায়ে একে অপরের হাত ধরে হাটব বলে
নিলীমাঃ কি। এই ঠান্ডায় শিশির ভেজা ঘাসে খালিপায়ে হাটব অসম্ভব।
আমিঃ আরে কিসের অসম্ভব। এটার মধ্যে একটা রোমান্টিকতা কাজ করে। আর বিয়ের পর আমরা দুজন শিতের শকালে শিশির ভেজা ঘাসে হাটব বুঝেছ।
নিলীমাঃ আগে বিয়ে হক তারপর।
আমিঃ মানে
নিলীমাঃ না কিছু না।
আমিঃ তাহলে জুতা খোল আমরা হাটি।
তারপর আর কি আমরা দুজন একে অপরের হাত ধরে শিশির ভেজা ঘাসে কিছুক্ষন হাটলাম। আমার খুব ভাল লেগেছে কিন্তু নিলীমার কেমন লেগেছে তা আমি জানি না। কিন্তু ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ওর ও ভাল লেগেছে।
এখন আমরা মাঝে মাঝে ঘুরতে যাই। বিকেলে নদীর পারে ও ঘুরতে যাই। নিলীমাকে আমি সবসময় হাসিখুসি রাখতে চেষ্টা করি। যেদিন ওর মন খারাপ থাকে সেদিন ওর মন ভাল করার চেষ্টা করি। বিভিন্ন মাধ্যমে ওকে হাসাই। এভাবেই চলছে দিন।
দেখতে দেখতে আমাদের রিলেশনের একমাস হয়ে গেল।
আমি নিজেকে খুব সুখি মনে করতাম। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে নিলীমা কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে। আমার সাথে ঠিকমত কথা বলে না ফোন দিলে ফোন ধরে না
চলবে

ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ২/শেষ

1
ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ২/শেষ

ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ২/শেষ

লেখকঃJoy Khan
নিলীমাঃ হুম আমি ঠিকি বলছি। আমি আজ থেকে এই বাসায়ই থাকব।
আমিঃ দেখ নিলীমা এখন তুমি সব কিছু বোঝ আর তোমার এধরনের পাগলামি করার কোন মানে হয় না
নিলীমাঃ কি বললেন আপনি আমি পাগলামি করছি। ঠিক আছে আমি পাগল। আর আমি আপনাকে পাগলের মত ভালবাসি।
ওর কথা শুনে আম্মু বলল
আম্মুঃ ঠিক আছে মা তুই কোন চিন্তা করিস না জয়ের সাথেই তোর বিয়ে দিব।
আমিঃ আম্মু কি বলছ এইসব
আম্মুঃ ঠিকইতো বলছি। তুই ওকেই বিয়ে করবি।
আমিঃ কিন্তু ও তো আমার ছাত্রী।
নিলীমাঃ ছাত্রী হয়েছি তো কি হয়েছে। ছাত্রীদের কি স্যার রা বিয়ে করতে পারে না
আমিঃ না পারে না
নিলীমাঃ আপনি বললেই হলো। আমাদের জুবায়ের স্যার তার ছাত্রীকে বিয়ে করেছে।
আমিঃ তো
নিলীমাঃ আপনিও আমাকে বিয়ে করবেন।
আমিঃ দেখ নিলীমা
আব্বুঃ ঐ তুই এত কথা বলছিস কেন আমরা নিলীমাকেই ঘরের বউ বানাবো। ওকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে।
আমিঃ কি বল এইসব।
আব্বুঃ যা বলছি ঠিকি বলছি সামনের সপ্তাহে তোদের বিয়ে।
আমিঃ আব্বু তুমি
আব্বুঃ আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না আর নিলীমা মা তুমি এখন বাসায় যাও আমি তোমার বাবা মার সাথে কথা বলে তোমাদের বিয়ের সব কিছু ফাইনাল করি।
নিলীমাঃ ঠিক আছে বাবা।
একথা বলে নিলীমা হাসিমুখে চলে গেল আর আমি আমার রুমে চলে আসলাম।
কিছুই ভাল লাগছে না শেষ পর্যন্ত ছাত্রীকে বিয়ে করতে হবে।ধুর ভাল লাগে না।
সন্ধ্যায় আম্মু আমার রুমে এসে বলল
আম্মুঃ কিরে কি ভাবছিস
আমিঃ কিছু না আম্মু
আম্মুঃ আমি জানি তুই নিলীমাকে নিয়েই ভাবছিস। জানিস মেয়েটা তোকে অনেক ভালবাসে। তাই তোর সাথে এরকম পাগলামী করে। তুই মেয়েটাকে কষ্ট দিস না।
আমি আম্মু কথা শুনে চুপ করে থাকলাম।
একটুপর আম্মু চলে গেল।
এভাবে এক সপ্তাহ চলে গেল। আজ আমাদের বিয়ে। অবশেষে বিয়ে করে নিলীমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে এলাম।
এখন আমি বাশোর ঘরের দরজার সামনে দারিয়ে আছি ভিতরে ঢুকব কি ঢুকব না তা চিন্তা করছি। তারপর কি মনে করে যেন ঢুকে গেলাম।
আমার অস্তিত্ব টের পেয়ে নিলীমা খাট থেকে নেমে এসে আমাকে সালাম করল তারপর আবার খাটে গিয়ে বসল।
আমি নিলীমাকে বললাম।
আমিঃ দেখ নিলীমা তোমাকে আমি স্ত্রীর অধিকার দিতে পারব না
নিলীমাঃ স্যার আপনি এই কথা না বলে বলেন তুমি জোর করে আমার দেহ পাবে কিন্তু মন পাবে না
আমিঃ কি বল এইসব।
নিলীমাঃ হি হি হি।
আমিঃ হাসছ কেন।
নিলীমাঃ আপনি আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিবেন না কেন। আপনার কি কোন গার্লফ্রেন্ড আছে
আমিঃ না।
নিলীমাঃ ভাল আর থাকলেও কাজ হতো না।
আমিঃ মানে
নিলীমাঃ মানে টানে কিছু না। আমি এখন আপনার বউ আপনি শুধু আমাকে ভালবাসবেন।
আমিঃ দেখ নিলীমা তুমি কিন্তু বারাবারি করছ
নিলীমাঃ স্যার আপনি আমার সাথে এখও আগের মত করে কথা বলেন কেন ভুলে যাবেন না আমি এখন আপনার বউও
আমিঃ বউ তো কি হয়েছে
নিলীমাঃ হয়নি তবে এখন হবে
একথা বলে নিলীমা খাট থেকে নেমে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
আমিঃ নিলীমা ছার আমাকে
নিলীমাঃ উহু ছারব না। আর আমি আমার স্বামীকে ধরেছি।
আমিঃ নিলীমা আমা
নিলীমা আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর নরম ঠোট দুটো দিয়ে আমার ঠোটদুটো চেপে ধরল।
ওর ঠোটের ছোয়া পেয়ে আমার কেমন যেন ভাললাগা কাজ করছিল।
এভাবে কিছুক্ষন থাকার পর নিলীমা আমাকে ছেরে দিল।
আমিঃ তুমি এটা কি করলে নিলীমা
নিলীমাঃ টিটুয়েন্টি খেলা যখন শুরু হয় তখন খেলয়াড়রা যে প্রাক্টিস করে না সেটা করলাম।
আমিঃ কি বলছ এইসব।
নিলীমাঃ হুম ঠিকি বলছি।
আমিঃ দেখ নিলীমা
নিলীমাঃ আচ্ছা স্যার আপনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন আমি সুন্দর কি না
আমি ওর দিকে তাকিয়ে যেন মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
ওকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। ওর চোখে কাজল দেয়া ঠোটে হল্কা লিপিষ্টিক লেপ্টানো চুলগুলো ছারা। ওকে একদম পরীদের মত লাগছে কিন্তু আমি অবাক হলাম ও মুখে কোন মেকাপ করে নি।
আমি যখন ওকে দেখায় ব্যাস্ত হয়ে পরেছিলাম তখন ওর ডাকে আমার ঘোর কাটল
নিলীমাঃ স্যার কোথায় হারিয়ে গেলেন।
আমিঃ ক কই হারিয়ে গেলাম।
নিলীমাঃ তাহলে হা করে কি দেখছিলেন।
আমিঃ তুমি মুখে মেকাপ কর নি কেন
নিলীমাঃ কারন আপনি মেকাপ পছন্দ করেন না।
আমিঃ তুমি কিভাবে জানলে
নিলীমাঃ আপনার আম্মু বলেছে।
আমিঃ তাই নাকি। আর জান মেয়েদের মেকাপ না করলেই সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে। মানুষের আল্লাহর প্রদও চেহারাই কত সুন্দর তাই না।
নিলীমাঃ হুম স্যার।
আমিঃ আমার না ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো।
নিলীমাঃ আমার ও ঘুম পাচ্ছে আমিও ঘুমাবো।
আমিঃ তুমি কোথায় ঘুমাবে।
নিলীমাঃ আপনার বুকে
আমিঃ কিহহ।
নিলীমাঃ অবাক হওয়ার কিছুই নেই আমি আপনার বুকেই ঘুমাব।
আমিঃ বুকে ঘুমাবে মানে
নিলীমাঃ বুকে ঘুমাব মানে বুকে ঘুমাবো এখন আপনি শুয়ে পরুন।(রেগে)
তারপর নিলীমা জোর করে আমাকে শুইয়ে দিল। আর ও আমার বুকে শুয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আর বলল
নিলীমাঃ স্যার আপনি কি আমাকে ভালবাসবেন না।
আমিঃ
নিলীমাঃ কি হল স্যার বলেন না।
আমিঃ এখন ঘুমাও তো।
নিলীমাঃ আমার ঘুম আসছে না আমাকে ঘুম পারিয়ে দেন।
আমিঃ আমি পারব না
নিলীমাঃ স্যার আপনি এমন কেন। আমার মত এত সুন্দর একটা মেয়ে আপনার এত কাছে আছে তাকে আপনি একটু ছুতে ও চাচ্ছেন না।
আমিঃ ছুতে তো মন চাচ্ছে কিন্তু কেন যেন পারছি না(এইরে কি বলতে কি বলে ফেল্লাম)
নিলীমাঃ সত্যি
আমিঃ না
নিলীমাঃ আমি জানি আপনি আমাকে ভালবাসতে শুরু করেছেন(আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
আমিঃ জি না।
আপনি বললেই হলো আমি বুঝেছি।
আমিঃ কি বুঝেছ
নিলীমাঃ কিছুনা। এবার আমাকে একটু আদর করে দেন না
আমিঃ পারব না।
নিলীমাঃ প্লিজ স্যার।
তারপর আমি নিলীমার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলাম।
আমিঃ এবার হয়েছে
নিলীমাঃ উহু
তারপর আমি নিলীমার গালে কপালে ও ঠোটে চুমু খেলাম।
তারপর নিলীমাকে বললাম
আমিঃ এই তোমার ঠোটের লিপিষ্টিক এরকম লেপ্টে আছে কেন
নিলীমাঃ আপনিইতো এরকম করেছেন (লজ্জা পেয়ে)
আমিঃ বাহ আমার লজ্জাবতি দেখি লজ্জাও পায়
নিলীমাঃ যাহ দুষ্টু।
আমিঃ তা মেডাম এখন কি টিটুয়েন্টি খেলা আরাম্ভ করব নাকি
নিলীমাঃ একটু আগে তো কথাই বলছিলেন না এখন এত কথা কিভাবে বলছেন হুম
আমিঃ তুমিইতো বলতে বাদ্ধ করছ।
নিলীমাঃ হি হি হি।
তারপর আমরা দুজন এক অজানা ভালবাসার সাগরে হারিয়ে গেলাম।
সকালে নিলীমার ডাকে আমার ঘুম ভাঙল।
নিলীমাঃ স্যার উঠেন।
আমিঃ এত সকালে
নিলীমাঃ এত সকাল কই অনেক বেলা হয়েছে উঠুন
আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি এই মাএ নিলীমা গোসল করে এসেছে ওকে আর সুন্দর লাগছে। তাই আমি ওকে আমার বুকে জড়িয়ে নিলাম
নিলীমাঃ স্যার কি করছেন ছারেন
আমিঃ এই আমি এখন তোমার স্যার নাকি আমি তো তোমার স্বামী
নিলীমাঃ উহু আপনি আমার স্যার ও আবার স্বামী ও।
আমিঃ এই তুমি আমাকে আপনি করে বলছ কেন
নিলীমাঃ আমি আপনাকে আপনি করেই বলব
আমিঃ কেন
নিলীমাঃ আপনি বলায় অন্য রকম একটা সন্মান থাকে।
আমিঃ তাই পাগলী (কপালে একটা চুমু খেয়ে)
নিলীমাঃ হুম।
এভাবে কিছুক্ষন থাকার পর আমি পাগলীটাকে ছেরে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
এভাবে দিন কাটতে লাগল।
একদিন আমি নিলীমাকে বললাম
আমিঃ এই তুমি আর কেলেজে যাও না কেন আর পড়তে ওতো বস না
নিলীমাঃ আমি আর কলেজে যাব না।
আমিঃ কেন
নিলীমাঃ আমি কলেজে গেলে বাসার কাজ করবে কে আর আপনি কার সাথে সময় কাটাবেন
আমিঃ এই তুমি কি সব কাজ কর নাকি আম্মুইতো সব করে আর তিন চার ঘন্টায় আমার কিছু হবে না।
নিলীমাঃ তবুও।
আমিঃ না কাল তেকে কলেজে যাবে।
নিলীমাঃ আচ্ছা যাব যদি আপনি আমাকে প্রতিদিন দিয়ে আসেন এবং নিয়ে আসেন।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
নিলীমাঃ আর একটা কথা আমাকে কিন্তু প্রতিদিন কোলে বসিয়ে পড়াতে হবে হুম।
আমিঃ আচ্ছা পরাব।
পরদিন নিলীমা আমার কোলে বসে আমার বুকে মাথা বই হাতে নিয়ে বসে আছে
আমিঃ কি হল পড় নিলীমাঃ না পরব না
আমিঃ কেন
নিলীমাঃ যদি আদর করে দেন তাহলে পরব।
আমিঃ দুষ্ট মেয়ে পরার সময় ও আদর লাগবে
নিলীমাঃ হুম লাগবে।
তারপর আর কি আদর দিতেই হলো।
আজকে ওকে কলেজে নামিয়ে দেয়ার জন্য বের হবো তখন নিলীমা বলল
নিলীমাঃ একটা পাপ্পি দেন
আমিঃ কেন
নিলীমাঃ বাহ রে আমি তিন চার ঘন্টা কলেজে থাকব তখন আপনার কথা মনে পরবে না তাই
তারপর আমি ওকে কাছে টেনে এনে ওর কপালে একটা চুমু খেলাম।
নিলীমাঃ কপালে দিলে তো হবে না
আমিঃ কেন
নিলীমাঃ এখানে দিতে হবে(ঠোট দেখিয়ে)
আমি ওকে আর কাছে টেনে এনে ওর ঠোটে একটা চুমু খেলাম।
আসলে ও যদি আমার জিবনে না আসত তাহলে আমি বুঝতেই পারতাম না যে জীবন এত সুন্দর হয়।
এখন প্রতিদিন ওকে কলেজে যাওয়ার সময় আর পড়তে বসার সময় আদর দিতে হয়।

সমাপ্ত

বিদ্রঃ গল্পটা সম্পূর্ন কাল্পনিক।

ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১

3

ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১

লেখকঃJoy Khan
এই মুহুর্তে আমি দারিয়ে আছি নিলীমাদের বাসার দরজার সামনে। তারপর কলিংবেল চাপলাম। একটুপর নিলীমা দরজা খুলে দিল।
নিলীমাঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার
আমিঃ অলাইকুমুস সালাম।
নিলীমাঃ কেমন আছেন স্যার
আমিঃ এইতো ভাল তুমি কেমন আছ
নিলীমাঃ এতক্ষন ভাল ছিলাম না তবে এখন ভাল আছি
আমিঃ মানে
নিলীমাঃ না স্যার কিছু না ভিতরে আসেন
আমিঃ হুম চল।
তারপর ভিতরে ঢোকলাম।
আমি জয় বাবা মায়ের আদরের সন্তান। আর এতক্ষন যার সাথে কথা বলছিলাম ও নিলীমা। আমার ছাএী।এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। নিলীমাও বাবা মায়ের একমাএ সন্তান।
আমি টেবিলে গিয়ে বসলাম একটুপর নিলীমা চা আর বিস্কুট নিয়ে আসল।
আমি চা খেতে খেতে নিলীমাকে বললাম
আমিঃ নিলীমা বই নিয়ে বস।
নিলীমাঃ হুম বসছি স্যার।
আমি চা শেষ করে কাপটা যখন টেবিলে রাখব তখন নিলীমা আমাকে বলল
নিলীমাঃ স্যার ভালবাসা কাকে বলে
আমি তো ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। বেশ কিছুদিন ধরে ও আমাকে এমন ধরনের প্রশ্ন করছে।
সেদিন বলল
নিলীমাঃ ছেলে ও মেয়েকে একে অপরকে ভালবাসে কেন।
আর আজ বলল ভালবাসা কাকে বলে।
সেদিন আমি ওর কথায় কোন উওর দেই নি তাই আজও দিলাম না।
একটুপর নিলীমা আবার বলল
নিলীমাঃ কি হল স্যার বলেন না কেন
আমিঃ আমি কি তোমাকে এসব শিখাতে এসেছি আর বইয়ে কি কোথাও এধরনের প্রশ্ন আছে
নিলীমাঃ না স্যার
আমিঃ তাহলে বললে কেন।
নিলীমাঃ বাহ রে আমি কিছু না জানলে আপনাকে জিঞ্জেস করব না
আমিঃ হুম আবশ্যই করবে তবে এসব বিষয়ে না
নিলীমাঃ কেন স্যার। আর বলেন না ভালবাসা কি
আমিঃ আমি জানি না তুমি পড়
নিলীমাঃ প্লিজ বলেন না স্যার
আমিঃ আচ্ছা বলব তবে এর পরে আর কোন কথা বলতে পারবে না
নিলীমাঃ আচ্ছা স্যার।
আমিঃ ভালবাসা হলো এমন একটা জিনিস যা দ্বারা কাউকে অনুভব করা যায়। ভালবাসা হলো দুটো মানুষের একটি প্রানকে বোঝায় তবে বাবা মা ভাই বোনের ভালবাসা ভিন্ন।
নিলীমাঃ ও বুঝেছি স্যার।
আমিঃ হুম এবার পড়তে বস।
নিলীমাঃ স্যার যদি আমি আপনাকে ভালবাসি তাহলে কি আমিও আপনাকে অনুভব করতে পারব।
আমিঃ কি বলছ এইসব।
নিলীমাঃ কই কি বললাম। আর আমিতো ঠিকি বলেছি।
আমিঃ দেখ নিলীমা তুমি কিন্তু ইদানিং একটু বেশি বেশি করছ।
নিলীমাঃ কই স্যার বেশি বেশি করলাম।
আমিঃ তোমাকে আমি চার বছর ধরে পড়াচ্ছি তুমিতো কখনি আমাকে এইধরনের প্রশ্ন কর নি
নিলীমাঃ স্যার তখন আমার এমন লাগেনি এখন যেমন লাগছে
আমিঃ মানে
নিলীমাঃ স্যার আপনি কি কিছু বোঝেন না
আমিঃ কি বুঝব। আর তোমার আম্মুকে বলে দিও আমি কাল থেকে আর তোমাকে পড়াব না
নিলীমাঃ কিহহহ।কেন স্যার।
আমিঃ এমনি।
একথা বলে আমি ওদের বাসার থেকে বের হয়ে গেলাম।
আমি বুঝে গেছি নিলীমা আমাকে কি বোঝাতে চায়। আসলে স্যার আর ছাএীর মাঝেকি কখনও প্রেম সম্ভব। ও আমাকে বোঝাতে চাইছে ও আমাকে ভালবাসে কিন্তু আমার দ্বারা এটা সম্ভব না।
আজ দুইদিন হলো নিলীমাকে পড়াতে যাই না।ওর আম্মু অবশ্য কয়েকবার ফোন করেছিল কিন্তু আমি বলে দিয়েছি আমি ওকে আর পরাব না।
সকালে ঘুমিয়ে আছি এমন সময় কলিংবেল এর আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল।
তাই আমি আম্মুকে বললাম
আমিঃ আম্মু দরজা খুলে দেখ তো কে এসেছে।
আম্মুঃ হুম দেখছি।
তারপর আমি যখন আবার ঘুম দিব তখন শোনা গেল
আম্মু কেমন আছে
আমিতো অবাক আমার আম্মুকে আবার কে আম্মু বলবে।
তারপর মনে হল এটা নিলীমার কন্ঠ।
আম্মুঃ কে মা তুমি তোমাকে তো আমি চিনতে পারলাম না
নিলীমাঃ আমি আপনার হবু বউমা।
আম্মুঃ কি বল এইসব
নিলীমাঃ হুম আম্মু আমি ঠিকি বলছি। আমি আপনার ছেলেকে কত ভালবাসি কিন্তু সে আমাকে একটুও ভালবাসে না।
আম্মুঃ মানে
তারপর নিলীমা আম্মুকে সব বলতে লাগল আর আম্মু ওর কথা শুনে হাসছে।
নিলীমাঃ আম্মু স্যারে এখন কই
আম্মুঃ ঐ রুমে ঘুমাচ্ছে
নিলীমাঃ আমাকে কষ্ট দিয়ে ঘুমাচ্ছে না।
তারপর নিলীমা আমার রুমে আসল
নিলীমাঃ স্যার এখনও ঘুমাচ্ছেন
আমিঃ না তো। আর তুমি এখানে কেন
নিলীমাঃ আমার শ্বশুর বাড়ি আমি আসব না তো কে আসবে হুম
আমিঃ দেখ নিলীমা তুমি এখনও ছোট। আর তুমি এখন যা বলছো এবং করছ সবি আবেগের বসে করছ
নিলীমাঃ কি বললেন আপনি আমি ছোট না। আজ যদি আপনার সাথে আমার বিয়ে হয় তাহলে একবছর পর আমি বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে পারব আর আপনি আমাকে ছোট বলছেন।
আমিঃ দেখ নিলীমা
নিলীমাঃ স্যার আমি আপনাকে সত্যি অনেক ভালবাসি। আর আমি আপনার বউ হতে চাই।
আমিঃ এটা কখনও সম্ভব না নিলীমা।
একথা বলা মাএই নিলীমা আমাকে জড়িয়ে ধরল।
আমিঃ এই কি করছ
নিলীমাঃ স্যার আমি কি দেখতে খারাপ
আমিঃ না মোটেও না
নিলীমাঃ তাহলে আমাকে ভালবাসবেন না কেন
আমিঃ দেখ নিলীমা তুমি আবেগের বসে এসব করছ আবেগ কেটে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিলীমাঃ আমি অত কিছু বুঝি না বিকেলে আব্বু আম্মু আসবে তাদের আপনি বলবেন যে আপনি আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছেন
আমিঃ কি আব্বু আম্মু আসবে মানে
নিলীমাঃ আমি আব্বু আম্মুকে বলেছি যে আমি আপনাকে ভালবাসি আর আপনাকেই বিয়ে করব। আর যদি আপনার সাথে আমার বিয়ে না দেয় তাহলে আমি সুইসাইড করব। তারপর আব্বু আম্মুও রাজী হয়ে যায়।
আমিঃ কি বল এইসব।
নিলীমাঃ হুম ঠিকি বলছি। এখন আমি যাই বিকেলে আসব।
একথা বলে নিলীমা আমার গালে একটা চুমু খেয়ে চলে গেল আর আমি বলদের মত দাড়িয়ে রইলাম।
বিকেল হতে না হতেই নিলীমার আব্বু আম্মু হাজির।
আম্মুকে নিলীমা বলে গেছে তাই আম্মু আব্বুকে বাসায় আসতে বলেছে আর হাল্কা পাতলা নাস্তার ব্যবস্থা করেছে।
আমি তাদের দেখা মাএই সালাম দিয়ে ভাল মন্দ জিঞ্জেস করলাম তারাও সালামের উওর নিয়ে আমাকে ভালমন্দ জিঞ্জেস করল।
তারপর আম্মু আব্বু তাদের সাথে কথা বলতে লাগল।
একটুপর নিলীমার আব্বু আমাকে বলল
নিলীমার আব্বুঃ তা বাবা নিলীমাকে তোমার কেমন লাগে
আমিঃ ভাল লাগে তবে ঐ হিসেবে নয়। আর ও এখন এসব আবেগের বসে করছে কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিলীমার আম্মুঃ তার মানে তুমি নিলীমাকে বিয়ে করবে না।
আমিঃ দেখেন আন্টি ও এখনও ছোট। ওর এখনও বিয়ের বয়স হয় নি
আমার কথা শুনে নিলীমা রেগে গিয়ে বলল
নিলীমাঃ কি বললেন আপনি আমার এখন বিয়ের বয়স হয় নি।আপনি জানেন আমার এক বান্ধবির দুই বছরের একটা বাচ্চা আছে। আর অনেক বান্ধবিরও বিয়ে হয়ে গেছে। আপনি যদি আমাকে বিয়ে করতে না চান তাহলে আমি এই বাসার থেকে যাব না আমি এখানেই থাকব।
আমিঃ কি বলছ তুমি
চলবে…

চুক্তির বউ ১০ম (শেষ পর্ব)

0

চুক্তির বউ ১০ম (শেষ পর্ব)

লেখা:তামান্না
তোমাকে ভালোবেসেছি দূরে থাকার জন্য নয় মেঘ।এটা ঠিক যে তোমাকে একরকম জুড় করে বিয়ে করেছি।আমি তখন অসহায় ছিলাম তোমাকে বাঁচানোর কোনো উপায় ছিলো না আমার কাছে।তবু ও তোমার মত নেওয়া টা আমার উচিত ছিলো।আর এখন যখন মতামতের কথা উঠলো তো ঠিক আছে তুমি যেতে চাইলে যেতে পারো আমি তোমাকে আটকাবো না।তোমার ইচ্ছার দাম আমি দিবো।তুমি চাইলে ডিভোর্স পেপারে সাইন ও করে দিবো সব করবো কিন্তু প্লিজ তোমাকে ভুলে যেতে বলোনা।এই কাজটা আমি করতে পারবো না মেঘ কোনোদিন ও না।
শ্রাবণ কথাগুলো বলে ছাদ থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।যেই শ্রাবণ চলে যাবে অমনি মেঘ শ্রাবণের এক হাত ধরে ওকে আটকায়।
শ্রাবণ মেঘের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।শ্রাবণ অবাক মেঘ তো কাঁদছে।
শ্রাবণঃকি ব্যাপার এখন কাঁদছো কেনো?বললাম তো তোমার ইচ্ছের দাম আমি দেবো।আমি ডিভোর্স পেপার টাতে সাইন করে ওটা নিয়ে আসছি তুমি সাইন……
মেঘঃআর একবার ডিভোর্স এর কথা উঠলে মাথা ফাটিয়ে দিবো।
শ্রাবণঃএখন তো তোমার ইচ্ছে…
শ্রাবণ কে থামিয়ে মেঘ নিজেই বলা শুরু করে।
মেঘঃআমি কি একবার ও বলেছিলাম আমার ডিভোর্স চাই।আমি কি একবার ও বলেছিলাম আমি আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই।আমি কি একবার ও বলেছিলাম আপনাকে ঘৃণা করি।
সবসময় নিজের যা ভালো মনে হলো তাই করলেন।আবার এখন ও বলছেন ডিভোর্স দিবেন।ডিভোর্স কি ওতো সহজ নাকি যে আপনি চাইবেন আর আমি দিয়ে দিবো।
শ্রাবণঃমানে…..
মেঘঃখুব সোজা আমি ওই পেপারটা পুড়িয়ে ফেলেছি।
শ্রাবণঃকি! কখন করলে এটা?
মেঘঃকেনো?খুশি হননি।
শ্রাবণঃওটা পুড়িয়ে দিলে কেনো?
মেঘঃপুড়ালাম কেনো আবার আমার ইচ্ছা হয়েছে।
শ্রাবণঃতোমার ইচ্ছে হলেই তুমি ওটা পুড়াবে কেনো আমাকে জানাবে না।
মেঘঃবেশ করেছি।
শ্রাবণঃআমি আবার আনবো
মেঘঃআমি আবার পুড়িয়ে ফেলবো।
শ্রাবণঃতাও আমি আরো আনবো।
মেঘঃআমি তবুও ওটা পুড়াবো।
শ্রাবণঃকেনো পুড়াবে?
মেঘঃভালোবাসি তাই।(কান্নামাখা কন্ঠে)
শ্রাবণঃমেঘ……
মেঘ নিজে থেকেই শ্রাবণ কে জড়িয়ে ধরে।
শ্রাবণ ও নিজের দুহাত দিয়ে মেঘকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
মেঘ বলা শুরু করে….
জানেন শাণ যখন আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলো খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।জানতাম না শাণ এতোটা খারাপ মনের মানুষ।যেদিন পিয়ালি বললো শাণ প্রতারক বিশ্বাস হয়নি।কিন্তু যেদিন জানলাম শাণের বাবা আপনাকে মেরে ফেলার জন্য বার বার চেষ্টা করেও পারছে না মারতে তখন অজান্তেই মনের ভিতরে ঝড় বইতে শুরু করে।
মাকে হারিয়েছি এখন যদি আপনাকে ও হারাই আমি কিভাবে বাঁচবো বলতে পারেন।
মাকে জিজ্ঞেস করে অনেক কষ্ট করে ম্যানেজার আংকেলের ঠিকানা জুগাড় করি তারপর জানি যে ম্যানেজার আংকেলের ছেলে শাণ আর বাবার সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিশোধ নিতে আপনাকে মেরে ফেলতে চায়।তখন ইচ্ছে করছিলো নিজের হাতে শাণ কে মেরে ফেলি।
যে শাণ আপনাকে মেরে ফেলতে চায় আপনি কি না সেই শাণের সাথেই হাত মিলিয়ে আমাকে #চুক্তির_বউ করে আনলেন।জানেন শাণকে ভুলতে শুরু করেছিলাম কিন্তু আপনার দেওয়া চুক্তিটা দেখে আবারো মনের ভিতর কষ্টের পাহাড় গড়ে উঠে।
অফিসে একটা মেয়ে জব করে।চুপিচুপি তাকে দেখে ভালোবেসে ফেলেন আবার মিথ্যা চুক্তি দিয়ে বিয়েও করেন একবার ও বলতে পারলেন না তাকে ভালোবাসেন।বলতে পারলেন না মেঘ আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কেনো বলেননি সত্যি টা আমাকে?
আমি কি পারতাম সত্যিটা জেনেও আপনার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে।পারতাম এই বন্ধন ভেঙে দিতে।
শ্রাবণঃমেঘ সরি।আর জীবনেও এমন কথা মুখে আনবো না।কোনোদিন ও তোমাকে দূরে যেতে দিবো না।
মেঘঃএই চুক্তিটা যদি সত্যি হতো যদি এমন হতো আপনার থেকে আলাদা হতে হতো তাহলে হয়তো আমি মরে….
শ্রাবণ মেঘের ঠোটে আঙুল দিয়ে আটকায়…
শ্রাবণঃহুসসসসস।চুক্তিটা সত্যি হোক কি মিথ্যে এই চুক্তির মাধ্যমেই আমি তোমাকে আমার বউ করে পেয়েছি মেঘ।প্রতি মুহুর্তে মনে হতো এই এক বছরে কি তুমি আমাকে ভালোবাসবে নাকি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।যদি আমাকে নিয়ে তোমার মনে ভালোবাসার জন্ম না তো হতো তাহলে জানিনা আমি কি করতাম হয়তো নিজেকে শেষ করতেও দুবার ভাবতাম না।
মেঘ দুহাত দিয়ে শ্রাবণের গলা জড়িয়ে ধরে।পা থেকে জুতো খুলে শ্রাবণের পায়ের উপর পা তুলে একদম কাছে চলে যায়।মেঘের নিঃশ্বাসের প্রতিটা ছোঁয়া শ্রাবণের মুখে গিয়ে লাগছে।শ্রাবণ যেন একটা ঘুরের মাঝে চলে যাচ্ছে।মেঘের কোমর দুহাত দিয়ে জড়িয়ে হ্যাচকা টানে মেঘকে আরো কাছে নিয়ে আসে।
সবসময় ভালোবাসি কথাটা বলার প্রয়োজন হয়না।ভালোবাসার মানুষ এর প্রতিটা ছোঁয়া বারবার ভালোবাসি বলে যায়।
মেঘ দুচোখ ভরে আজ শ্রাবণ কে দেখছে।গভীর দৃষ্টি দিয়ে শ্রাবণের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ শ্রাবণের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে।খুঁজে পেয়েছে তার আসল ঠিকানা।এই ঠিকানা ছেড়ে চলে যাওয়ার শক্তি মেঘের নেই।মেঘ চায় না আজ এই মায়া কাটাতে।চায় আজ হারিয়ে যেতে শ্রাবণের মাঝে।
শ্রাবণ একটু একটু করে মেঘকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিচ্ছে।মেঘ বুঝতে পারে শ্রাবণ তার ঠোঁটের একদম কাছে চলে এসেছে।মেঘের ঠোট দুটো কাঁপতে শুরু করে।শ্রাবণ মেঘের ঠোঁটে চুমু দিতেই মেঘ চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।
একহাত দিয়ে শ্রাবণের চুলে হাত রাখে অন্যহাত দিয়ে পিটে খামছে ধরে।শ্রাবণ মেঘের ঠোঁটে আজ নিজেকে ডুবিয়ে নিচ্ছে।মিনিট দুয়েক পর শ্রাবণ মেঘকে ছেড়ে দেয়।মেঘ নিচের দিকে চোখ নামিয়ে জুড়ে জুড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।শ্রাবণ মেঘের দুগালে হাত রেখে মুখ উঁচু করে কপালে চুমু দিয়ে মেঘকে কোলে তুলে নেয়।
মেঘঃআরে আরে করছেন টা কি?
শ্রাবণঃকেনো দেখতে পাচ্ছো না।আমার বউকে আমি কোলে তুলে নিলাম।
মেঘঃছি লজ্জা করে না আপনার।দুহাত দিয়ে শ্রাবণের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকায়।
শ্রাবণ মেঘকে কোলে করেই ছাদ থেকে নিচে নেমে আসে।মেঘ লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছেনা।এরপর সব ইতিহাস।আর কিচ্ছু বলা যাবে না।
…………………
…………………
সকালে মেঘের ঘুম ভাঙতেই দেখে শ্রাবণ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আর মেঘ শ্রাবণের কলার চেপে ধরে আছে।শ্রাবণের তাকিয়ে থাকা দেখে মেঘ শ্রাবণ কে ছেড়ে বিছানা থেকে নামতে যাবে তখনই শ্রাবণ মেঘের হাত ধরে আটকে নেয়।
মেঘ নিজের হাত মুড়ানো শুরু করে কিন্তু ছাড়াতে পারছে না।
শ্রাবণঃগুড মর্নিং বলে তো যাও।
মেঘঃপ্লিজ হাত ছাড়ুন।সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছে।নাস্তা রেডি করতে হবে।
শ্রাবণঃনা ছাড়বো না।
শ্রাবণ নিজেই উঠে দাঁড়ায় পিছন থেকে মেঘকে জড়িয়ে ধরে মেঘের চুলে মুখ গুঁজে দেয়।
মেঘ বাধ্য হয়ে শ্রাবণের দিকে ঘুরে শ্রাবণের কপালে চুমু দেয়।শ্রাবণ আপনা থেকেই মেঘকে ছেড়ে দেয়।মেঘ এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ঢুকে।
শ্রাবণঃসময় আমারো আসবে তখন দেখবো কোথায় পালাও।
এরপর সবাই একসাথে নাস্তা করে।
শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে পিয়ালি আর মেঘ দুজনেই হেসে যাচ্ছে।
শ্রাবণঃওই ভাবে হাসছো কেনো তোমরা?
মেঘঃকিছু না এমনি।
মেঘ উঠে শ্রাবণের কাছে যায়।তারপর শাড়ির আচল দিয়ে কপাল লেগে থাকা লিপস্টিক এর রঙ মুছে দেয়।শ্রাবণের মা কিছু না বলে খাওয়া শুরু করেন।এদিকে পিয়ালি হেসেই যাচ্ছে।
মেঘঃপিয়ালি এখন কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে।নিজের বেলায় দেখবো কি করিস তুই?
পিয়ালিঃদুর বাবা দেখবি কিভাবে?তোকে তো আমার বিয়েতে ইনভাইট করবোইনা।শুধু দুজন কে করবো আর সে দুজন হলো স্যার আর আন্টি।তাই না গো আন্টি।
পিয়ালির কথা শুনে শ্রাবণ শ্রাবণের মা সবাই হাসা শুরু করে।মেঘ একটু রেগেই কথা বলে।
মেঘঃআমাকে দাওয়াত দিবি না।
পিয়ালিঃনা দেবো না।তুই তো আমার একমাত্র শত্রু।আর শত্রুকে কেউ বিপদ বাড়াতে ডাকে নাকি।
মেঘঃআমি তোর শত্রু তাই না।
পিয়ালিঃহ্যা শত্রুই তো।
মেঘঃবের হয়ে যা এক্ষুণি।
একটু রাগী মুডে।
পিয়ালিঃওই এটা তোর বাসা না।এটা আমার বেষ্টুর বাসা।
মেঘঃকে তোর বেষ্টু?
পিয়ালিঃকেনো তুই জানিস না।আমার বেষ্টুর নাম কাশফিয়া হাসান মেঘ।হরফে মিসেস শ্রাবণ মাহমুদ।
মেঘঃতবে রে আজ তোকে আমি
মেঘ পিয়ালির পিছনে ছুটছে।দুজনে সারাঘর ছুটাছুটি শুরু করলো।একসময় পিয়ালি গিয়ে শ্রাবণের পিছনে লুকায়।
মেঘঃবেঁচে গেলি ডাইনী।
পিয়ালিঃস্যার থুক্কু দুলাভাই বলি।দেখেন না আপনার বউ টা কি শয়তান নিজের বান্ধবী রে কেউ ওইভাবে দৌড়ানি দেয়।
শ্রাবণঃমেঘ এইবার থামো।বেচারি হাপাচ্ছে আর ছুটাছুটি করতে পারবে না।
মেঘঃআপনি ও ওর দলে।ঠিক আছে আমিও দেখবো।
শ্রাবণঃকি দেখবে?
মেঘঃআপনাকে দেখে নেবো।
শ্রাবণঃএক বছর ধরেই তো দেখছো আর কি দেখবে।
মেঘঃদুর ছাই ভাল্লাগেনা।
মেঘ রাগ করে সোফায় গিয়ে বসে।কারো সাথে কথা বলছে না।পিয়ালি মেঘের রাগ ভাঙাতে ওর পাশে গিয়ে বসে।মেঘ নিজের দুপা সোফায় তুলে দুহাত দিয়ে ধরে পা নাচিয়ে যাচ্ছে।
পিয়ালিঃমেঘ বলছি কি আমার বিয়েতে তুই বরং এক সপ্তাহ আগেই যাস তোকে ছাড়া তো আমি কনের সাজে সাজতে পারবো না।
মেঘঃতুই কে রে আমি তোর বিয়ে তে কেনো যাবো?
পিয়ালিঃপ্লিজ মেঘ রাগ করিস কেনো?আমি তো ফান করেছি।
মেঘঃহ্যা করবিই তো।মা ও ছেড়ে চলে গেলো স্বার্থপরের মতো এখন তুই ও যা।আমার কাউকে লাগবে না।সবাই চলে যাও সবাই।
পিয়ালিঃমেঘ আই এম সরি।আমি এইভাবে বলিনি কেনো ভুল বুঝছিস?
শ্রাবণের মাঃমেয়ে বলে কি আমি আবার কখন মরলাম।
মেঘ অবাক চোখে শ্রাবণের মায়ের দিকে তাকায়।শ্রাবণের মা মেঘের কাছে গিয়ে বসেন।
শ্রাবণের মাঃবল আমি কবে মরলাম।
মেঘঃ…….
শ্রাবণের মাঃআমি কি তোর মা নই।আমাকে তুই পর করে দিবি।তোর জন্য আমি আবার নতুন করে হাটতে পেরেছি।আর তুই কি না বললি তোর মা তোকে ছেড়ে চলে গেছে তাহলে আমি তোর কে মেঘ?
মেঘঃমাঅাঅা (কান্না জড়ানো কণ্ঠে)
শ্রাবণের মাঃতাহলে কিভাবে বললি আমি স্বার্থপর?
মেঘ নিজের এক হাত কানে দিয়ে বলে..
মেঘঃমা সরি।
শ্রাবণের মাঃহয়েছে আর সরি বলা লাগবে না।আমার তো তোকে নিয়ে কতো চিন্তা হচ্ছিলো।আমার ছেলের বোকামির জন্য ও না আবার তোকে হারিয়ে বসে।এমন এমন কাজ করে যার জন্য বার বার কষ্ট পায়।
মেঘ মাথা তুলে শ্রাবণের দিকে তাকায়।শ্রাবণ ওর দিকে তাকাতেই মেঘ মুখ ভেঙচি দিয়ে মায়ের বুকে মাথা রাখে।
মেঘঃমা আমাদের মাঝে আপনার ওই পাজী ছেলেটাকে টানবেন না তো।কতো সাহস ওর আমাকে এগ্রিমেন্টে সই করিয়ে বিয়ে করে।আবার নিজেই কষ্ট পায়।কি বুদ্ধি ওনার।
শ্রাবণঃমা আর মেয়ে মিলে এখন আমাকে পঁচানি দিবে।পিয়ালি দেখো তোমার বান্ধবী কতো বড় স্বার্থপর।আমার মাকে নিজের মা বানিয়ে আমাকেই দূরে সরিয়ে দেওয়ার প্লেন করছে।
পিয়ালিঃহ্যা তাইতো।মেঘ তুই এতো শয়তান।
মেঘঃএই ডাইনী তুই আসবিনা মা মেয়ের মাঝে ওনি আমার মা।আর কারো না বুঝলি।
শ্রাবণের মাঃঝগড়া থামাও।আমি দুজনেরি মা।হয়েছে শান্তি।
শ্রাবণঃহ্যা মামনি এইবার ঠিক আছে।
শ্রাবণের মা মেঘকে আর শ্রাবণকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেন।অন্যদিকে পিয়ালি ওদের খুশি দেখে কান্না আটকাতে পারে না।পিছন ঘুরে চোখের জল টা মুছে মেঘের দিকে তাকায়।মেঘ চোখ দিয়ে ইশারা করে কি হয়েছে?
পিয়ালি মাথা নাড়িয়ে না বলে।তারপর আঙুল তুলে একদম পারফেক্ট বলে ইশারা করে।
আর মনে মনে বলে….
আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া অবশেষে তুই একটা ঠিকানা পেলি।তোর মুখের হাসিটা যেন এইভাবেই থাকে মেঘ।সারাজীবন তুই খুশি থাকিস মেঘ।বিধাতার কাছে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।
অন্যদিকে শ্রাবণ মাকে ছেড়ে মেঘকে চোখটিপা মারে।তারপর পিয়ালির কাছে যায়।
শ্রাবণঃভেবো না পিয়ালি।ওর এখানে কোনো অযত্ন হবে না।ওর জীবন টাকে সুখ দিয়ে ভরিয়ে দিবো আমি।মুছে দেবো ওর মনকে শাণের অস্তিত্ব।
পিয়ালিঃআমার সেই বিশ্বাস আছে স্যার সেইজন্য তো মেঘের ব্যাপারে সব তথ্য আমি আপনাকে দিয়ে সাহস করতে পেরেছি।আমার এটা মনে হয়েছিলো ওর মা পরে যদি কেউ ওকে বুঝে তবে সেটা আপনি।
শ্রাবণঃথেংক্স এ লট।আজ তোমার হেল্পেই ও আমার হয়েছে।
পিয়ালিঃথেংক্স না বলে আমার জন্য এমন কাউকে খুঁজে দিন না।তাহলেই তো হয়ে যায়।
মেঘঃভাবিস না তোর জন্য আমি এমন একজনকে সিলেক্ট করবো যে সারাজীবন তোকে জ্বালাবে।
পিয়ালিঃসত্যি তুই আমার শত্রু।
পিয়ালির কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠে।
অবশেষে মেঘ #চুক্তির_বউ থেকে শ্রাবণের সত্যিকারের বউ হয়ে উঠলো।ওদের সংসারে সারাজীবন এরকম খুনসুটি লেগে থাকুক।হাসি খুশি আর আনন্দের ভরে উঠুক ওদের এই মিষ্টি সংসার।
ভালোবাসার জুর থাকলে সম্পর্ক যেমনি হোক একদিন তা #পূর্ণতা পাবেই।অনেক কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে মেঘ সত্যি ভালোবাসার সন্ধান পেলো আর শ্রাবণ ফিরে পেলো তার ভালোবাসার মায়াবতীকে।
ভালো থাকুক ভালোবাসা,ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষ গুলো।
সমাপ্ত——-।

চুক্তির বউ ৯ম পর্ব

0

চুক্তির বউ ৯ম পর্ব

লেখা:তামান্না
হ্যা সে আর কেউ না পিয়ালি নিজে।
মেঘ মাথা তুলে পিয়ালির দিকে তাকায়।তারপর আবার পড়া শুরু করে………
পিয়ালির বলেছিলো মেয়েটা নাকি পিয়ালির খুব ভালো বন্ধু।আর পিয়ালি ওর সম্পর্কে সব জানে।যাই হোক আমি যে মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছি সেটা পিয়ালিকে না বললেও মেয়েটা কি করে যেন বুঝে নিলো।আর এটা ও জানালো যে আমি যাকে ভালোবাসি সে অন্যকাউকে ভালোবাসে।
ওর কাজ কর্ম প্রতিটা জিনিস খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখা।কাজের প্রতি যত্নশীল আর দায়িত্ববোধ দেখে ওর প্রতি ভালোবাসাটা আর টান যেন বাড়তেই থাকে।দিনদিন ওর প্রতি আলাদা একটা টান জন্মাতে থাকে।ওকে না দেখে থাকাটা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না।
এরপর একদিন জানতে পারলাম ও যে ছেলেটাকে ভালোবাসতো সে অন্য একজন কে বিয়ে করে দেশ ছেড়ে চলে গেছে।তাও ওকে না জানিয়ে।খবরটা শুনে খুব খারাপ লেগেছিলো।ওর কষ্টটা আমি ফিল করতাম কাউকে কতোটা ভালোবাসলে তার দেওয়া কষ্ট গুলো সহ্য করা যায় না সেটা আমি বুঝি আর বুঝি বলেই ওকে খুশি দেখতে চেয়েছিলাম।কিন্তু খটকা একটা জায়গায় ও যে আমাকে ভালোবাসে না।
দেখতে দেখতে কয়েকমাস কেটে যায়।
আজ ওকে খুব কান্না করতে দেখেছি কিন্তু কেনো কাঁদলো ও এইভাবে।এখনো ও কি ভালোবাসার মানুষ টার জন্য রাত জেগে কাঁদে মেয়েটা।
ওর কান্নার কারণ জানতে পিয়ালি কে ডেকে পাঠাই।তারপর পিয়ালির থেকে জানতে পারি ওর কান্নার কারণ টা কি?ওর মায়ের হার্টের ফুটো অপারেশন এ অনেক টাকার দরকার।মেয়েটা একা সব সামলাতে পারবে না বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে।সত্যি তো কি করার থাকতে পারে ওর।এমনিতেই ভালোবাসার মানুষ টাকে হারিয়ে কষ্ট থাকা সত্ত্বেও হাসিমুখে অফিসের সব কাজ সামলে নিতো।আর আমি ওকে ইচ্ছে করেই কাজ বাড়িয়ে দিতাম।ওকে কাজের মাঝে ডুবিয়ে রাখতাম যেন ও সব কষ্ট ভুলে স্বাভাবিক হতে পারে।
আমি জানতাম টাকাটা আমি ওকে কাজ ছাড়া দিলে দান হিসেবে দেখবে।ভাববে আমি ওকে করুণা করছি।কিন্তু সত্যি তো এটাই আমি ওর মুখে একটু খানি হাসির ছোঁয়া দেখতে চাই।
যখন ওকে টাকা দিবো ভাবলাম ও টাকাটা এমনি এমনি নিতো না।কি করবো এসব ভাবছিলাম।এরপর যখন ওকে বিয়ের কথা বলতে যাবো তখন রাস্তায় ওর প্রিয় মানুষ টার সাথে দেখা হয়ে যায়।বেচারা অন্যদেশে গিয়ে নাকি অনুভব করতে পেরেছে সে তার ভালোবাসার মানুষ টাকে কতোটা ভালোবেসে।তাই ওই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দেশে ফিরে এসেছে।আমিও খুব বোকা সহজেই বিশ্বাস করে নিলাম।কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র আমি নই।তাই আমি ওকে বলে দিলাম যে আমি ওকে বিয়ে করবো আর তা আজকেই।তখনই ও মেয়েটাকে মারার হুমকি দেখায়।আরো অন্যান্য ভাবে ব্লেকমেইল করতে থাকে।একটা সময় বাধ্য হয়ে আমরা দুজনেই একটা সিদ্ধান্ত নেই।আর সিদ্ধান্ত এটাই যে আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করে যদি একবছরের মধ্যে আমার প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে পারি তাহলেই সে আমার নয়তো তাকে তার অতীতের মানুষ এর কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
এরপর বাধ্য হয়ে আমি তাকে #চুক্তির_বউ করে আমার বাসায় আনি।আমি চাইনি ওকে কষ্ট দিতে কি করতাম আমি।আমি যে অসহায় ছিলাম।ওই মুহুর্তে ওর মাকে বাঁচানো ছিলো আমার একমাত্র লক্ষ্য।
এরপর ওকে বউ করে ঘরে আনলাম ঠিকই কিন্তু ওর মন থেকে ওর ভালোবাসার মানুষ কে মুছে দিতে পারলাম না।একটা মিথ্যে মায়াজালে বন্ধি ছিলো সেটাও ওকে বুঝাতে পারলাম না।
আজ ওর জীবন থেকে ওর সবচাইতে কাছের মানুষ টাকে হারালো।ওর মা ওকে এইভাবে ছেড়ে চলে যাবে এটা আমি বা ও কেউ ভাবিনি।
ওর কষ্ট টা সহ্য করতে পারছিলাম না।ইচ্ছে করছিলো কেঁদে কেঁদে আল্লাহ কে বলি আর মেঘকে কষ্ট দিও না আল্লাহ।আমি আর পারছিনা ওকে এইভাবে দেখতে।সেদিন ওকে অনেক কষ্ট করে বুঝাই।মা কে হারিয়ে কেমন যেন হয়ে গেছিলো মেয়েটা।
এরপর অনেক কষ্টে ওকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনলাম।
আজ আমি অফিসের কাজে তিনমাস এর জন্য ওকে ছেড়ে আমেরিকা যাবো।জানিনা এই তিনিটা মাস আমার কিভাবে কাটবে শুধু জানি আমি আমার মায়াবতী কে খুব মিস করবো।
এরপর আর কিছু লেখা নেই।
…………….
……………..
………..
মেঘ কয়েকটা পেইজ উল্টে দেখে আরো কিছু লেখা…..
আজ দেশে ফিরলাম।তিনমাসের কাজ দুমাসেই শেষ করলাম।একটা ডিল ফাইনাল করতেই যাওয়া।বাসায় এসে মেঘকে সারপ্রাইজ দিবো ভেবেছিলাম কিন্তু মেঘ যে আমার জন্য একটা বিরাট সারপ্রাইজ রাখবে আমার জানা ছিলোনা।আজ তিনবছর পর মামনিকে হাটকে দেখেছি।আর সেটা শুধু মেঘের জন্য।
দেশে ফিরে বার বার মেঘকে বলতে চেয়েছি “আমি তোমাকে ভালোবাসি”কিন্তু কোথাও যেন একটা বাধা আমাকে আটকে দিতো।এই একটা চুক্তির জন্য মেঘকে সত্যি টা বলতেও পারছিনা।কি যে কষ্ট লাগে না বলা কথাগুলো চেপে রাখতে সেটা শুধু আমি জানি।
আজ আমার জন্মদিনে মেঘ আমার জন্য যে আয়োজন করলো প্রথমে একটু কষ্ট লাগলেও ওর কথা শুনে খুব সুখী মনে হচ্ছিলো নিজেকে।মনে হয়েছিলো পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ আমি।কিন্তু ওর কথার দ্বারা এটা বুঝতে পারলাম ওর এই বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার খুব ইচ্ছা।হয়তো পারেনি আমাকে ভালোবাসতে কিন্তু ওকি জানে ও যদি এই বন্ধন ছেড়ে চলে যায় পরেরদিন আমি মারা যাবো।ওকে ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমি কি করবো এখন……
মেঘ পেইজ উল্টাচ্ছে কিন্তু তাতে আর কিছু লেখা নেই।মেঘ ডায়রীটা জড়িয়ে কাঁদছে।
পিয়ালিঃএইবার বল মেঘ তুই কি চাস।তুই চাইলেই স্যারকে ছেড়ে চলে যেতে পারিস।আমার আর কিছু বলার নেই।
মেঘঃকেনো এতো ভালোবাসলেন ওনি আমাকে।আমি যে শুধু শাণের জন্য ওনাকে মেনে নিতে পারতাম না।বার বার মনে হতো আমি শাণকে ঠকাচ্ছি কিন্তু শাণ আমাকে এইভাবে ঠকাবে আমি ভাবতেই পারিনি।আমি তো এটাও জানতাম না শাণ অন্যকাউকে বিয়ে করে আমার থেকে দূরে সরে গেছে।অথচ আমি কিনা শাণ কে এতোদিন ভালো ভেবে এসেছি।
পিয়ালিঃএইবার তো জানলি।
মেঘঃওনি কোথায় এখন?
পিয়ালিঃজানিনা রুমে দেখলাম না।
মেঘ তাড়াতাড়ি নিচে নেমে ডায়রিটা রুমে রেখে তারপর মায়ের কাছে যায়।
মেঘঃমা ওনাকে দেখেছেন।
শ্রাবণের মাঃগাড়ি নিয়ে কোথায় গেলো কিন্তু এখনো ফিরছে না কেনো?
মেঘঃআপনাকে বলে যান নি।আমাকেও কিছু বলেননি তাহলে কোথায় ওনি?
মেঘ শ্রাবণের ফোনে বার বার ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ।এতোরাতে লোকটা গেলো কোথায়?
আমি এখন কিভাবে খুঁজবো ওনাকে?
কোথায় পাবো?
মেঘ টেনশনে পড়ে যায় কি করবে এইটা ভেবে।
পিয়ালি মেঘকে বুঝাচ্ছে চিন্তা না করতে।
কিন্তু চিন্তা কি বলে হয়?
মেঘঃপিয়ালি আমার খুব ভয় হচ্ছে ওনি বাসায় আসছেন না কেনো?
পিয়ালিঃমেঘ চিন্তা করিস না একটু পর চলে আসবে।হয়তো কাজ পড়ে গেছে তাই বেড়িয়েছে।ভাবিস না তুই।
মেঘঃএতো রাতে কিসের কাজ থাকতে পারে।রাত ১১:০০ টা পিয়ালি।একবার ও কি মাথায় যায় না বাসায় সবাইকে চিন্তা রাখে।এমন কেনো ওনি?
মেঘ কপালে হাত দিয়ে টেবিলের সাথে কনুই লাগিয়ে বসে আছে।একটুপর কলিংবেল এর আওয়াজ।মেঘ তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দিলো।শ্রাবণ কে দেখে একটু রাগী লুক নিয়ে কোমরে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকায়।শ্রাবণ ভয় পেয়ে যায় মেঘকে এভাবে দেখে।ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে….
শ্রাবণঃকি ব্যাপার ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
মেঘ ভ্রু কুচকে তাকায়….
শ্রাবণঃসরে দাড়াও ভেতরে যাবো।
মেঘঃএতোক্ষণ কোথায় ছিলেন?
শ্রাবণঃতোমাকে সব বলতে বাধ্য নই।
মেঘঃকিহহহহহহ
শ্রাবণ মেঘের হাতে আলতো করে ধরে দরজার সামন থেকে সরিয়ে ভেতরে ডুকে…..
তারপর পিয়ালির কাছে গিয়ে কি যেন বলে।পিয়ালি তাড়াতাড়ি মেঘের কাছে গিয়ে খাবার আনতে বলে।
পিয়ালিঃমেঘ খিদে পাইছে খাবার রেডি করবি আয়।
মেঘঃউফফ পিয়ালি জানতে দে না আগে ওনি কোথায় ছিলেন।
পিয়ালিঃদুর সেটা পরেও জানবি আগে আয় আমার খুধা লাগছে প্লিজ দুস্ত।
মেঘঃএই মেয়ের শুধু খাওয়ার জ্বালা।
মেঘ রাগে গজগজ করতে করতে রান্না ঘরে গেলো।তারপর সবাইকে খাবার দিয়ে নিজেও খাবার খেতে বসে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে মেঘ রুমে গিয়ে অবাক।টেবিলের উপর একটা পেপার রাখা।
মেঘ সারা রুম খুঁজে শ্রাবণ কে পেলো না।
মেঘ পেপারটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।
এটা কি?
ওনি এটা কেনো করলেন?
খুব শখ না আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার।
আজ দেখবো আমাকে কিভাবে ডিভোর্স দেয়।
এইবুঝি ওনার ভালোবাসা।
একবছরে শেষ হয়ে গেলো সব অনুভূতি।
এইজন্য তখন বাইরে গেছিলো।শয়তান বানর হনুমান কোথায় গেলো এখন।
এই ডিভোর্স পেপারের বারোটা আমি বাজাচ্ছি।
মেঘ একটা ষ্টীলের ডাস্টবিন আনে।তারপর রান্নাঘর থেকে দিয়াশলাই আনে।কাটি দিয়ে আগুন জ্বালায়।তারপর ডিভোর্স পেপারে আগুন জ্বালিয়ে ডাস্টবিনে রাখে।পেপার টা পুড়ে ছাই হয়ে গেলে একহাত দিয়ে অন্যহাতে সুন্দর করে তালি বাজায়।
এইবার দেখি শ্রাবণ মাহমুদ আমাকে ডিভোর্স দেন কিভাবে?
কিন্তু বজ্জাত টা গেলো কই।ড্রয়িংরুমেও দেখলাম না।পিয়ালির সাথে আড্ডা দিতে গেলো নাকি আবার।দেখিতো……
মেঘ পিয়ালির রুমে দরজা লক দেখে ভাবে পিয়ালি ঘুমিয়ে পড়েছে।
মায়ের রুমে ও গিয়ে দেখে মা ঘুমাচ্ছে।
বাকি রইলো একটা জায়গা ছাদ।
এতোরাতে ওনি আবার ছাদে গেলেন কেনো?
দূর এতো ভেবে কাজ নেই দেখে আসি।
মেঘ ছাদের দিকে পা বাড়ায়……
পুরো ছাদ জুরে মোমবাতি জ্বালানো।
এমা ওনাকে আবার ভুতে ধরলো নাকি।
কেউ এইভাবে ছাদে মোমবাতি জ্বালায় নাকি।
কিন্তু ওনি গেলেন কোথায়?
মেঘ ঘুরে ঘুরে ছাদের চারিদিক দেখছে।
চারিদিক মোমবাতির আলোয় ভরে উঠেছে।
হঠাৎ মেঘের অনুভব হলো কেউ ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে যেন ফাঁক না থাকে।মেঘ আবার ফাঁক পেলেই পালাবে।
মেঘঃএসবের মানে কি?
শ্রাবণঃবুঝলে কিভাবে আমিই এসেছি?
মেঘঃমন বলছিলো।
শ্রাবণঃআর কি বলে শুনি?
মেঘঃআমার মাথা।এইভাবে সারা ছাদ জুরে মোমবাতি কেনো?
শ্রাবণঃকেনো মানে।আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী।
মেঘঃঘোড়ার ডিম।কিসের বিবাহবার্ষিকী?দিন শেষ হয়ে রাত পেরিয়ে যাচ্ছে আর ওনার মাথায় এখন আসছে আজ নাকি বিবাহবার্ষিকী।
শ্রাবণঃইহহহ বললেই হলো এখনো ৫ মিনিট বাকি আছে।
মেঘঃতাতে কি হয়েছে?
শ্রাবণঃHappy Anniversary My Dear Wife.
মেঘঃদুর ছাড়েন তো।
মেঘ জুড়ে ধাক্কা দিয়ে শ্রাবণ কে সরিয়ে দিলো।
শ্রাবণঃএটা কি হলো?আজ আমাদের Anniversary আর তুমি কি না এইভাবে রিয়েক্ট করছো।
মেঘঃAnniversary হ্যা Anniversary.একট
া নকল বিয়ের একবছর পূর্ণ হলো যে বিয়ের কিনা কোনো মানেই নেই।নেই কোনো স্বপ্ন নেই কোন আশা।আর সেই বিয়ের একবছর পুর্তি উপলক্ষে এইসব তাইতো।কি মানে আছে এসবের?
শ্রাবণঃমেঘ………….
মেঘঃহুম ঠিকই তো বলছি।আপনি সব সময় যা ভাববেন যা চাইবেন তাই হবে একবারো অন্যের চাওয়ার মুল্য দিবেন না।একবার ও বুঝবেন না আমি কি চাই।আমার মন কি চায়।একবারো জানতে চেয়েছেন আমার মনে কি আছে।
শ্রাবণঃ………….
মেঘঃডিভোর্স দিবেন তাইতো।ঠিক আছে আপনার ইচ্ছাতেই সব হবে।এই বিয়েটাও যখন আপনার ইচ্ছায় হলো ডিভোর্স টাও আপনার ইচ্ছায় হবে।
শ্রাবণ মেঘের সামনে গিয়ে দুকাধে হাত রাখে।
শ্রাবণঃমেঘ আমার কথা শোণ।
মেঘঃআর কি শোনবো।সব কথাই তো শুনি আমি আপনার।আজও শুনবো ভাবছেন কিভাবে আপনি?ডিভোর্স পেপার রেডি করে আনলেন একবার আমাকে জানানোর ও প্রয়োজন মনে করেননি?আমি কি এতোটাই খারাপ।আমার কথা বলার মত প্রকাশ করার কি কোনো ইচ্ছে নেই কোনো দাম নেই?
কথা বলতে বলতে মেঘ কান্না করে দিয়েছে।
শ্রাবণ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।মেঘ যে ভীষণ রেগে আছে এটা ঠিকই বুঝতে পারছে।অন্যদিকে অভিমান ও জমেছে অনেক।সত্যি তো শ্রাবণ কিভাবে ভুলটা করলো।মেঘকে জানিয়ে ডিভোর্স পেপার টা আনা উচিত ছিলো।
হুট করেই মেঘের কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
শ্রাবণঃআই এম সরি মেঘ।খুব বড় ভুল করে ফেলেছি আমি।আর এমন হবে না লক্ষিটি প্লিজ কেঁদোনা।
শ্রাবণের কথাগুলো মেঘের কান্না আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো।শ্রাবণের শার্টের পিছনে দুহাত দিয়ে খামছে ধরে।অনেক টা সময় পর মেঘের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আটে।
মেঘঃএই বিয়ের তো কোনো মানে নেই।তাই বলছি কি আমাদের ডিভোর্স টা হয়ে যাক।আপনি তো ডিভোর্স পেপার রেডি করে আনলেন তাই আর দেরী করা ঠিক হবে না।বারোটা অলরেডি বেজে গেছে আর একবছর চুক্তির সময় ও শেষ।
মেঘের কথায় শ্রাবণের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।মেঘ কে বুক থেকে সরিয়ে নেয়।মেঘের হাতে হাত রেখে বলে…….
শ্রাবণঃতুমি এসব কি বলছো?
মেঘঃহ্যা ঠিকই তো বললাম।আমি কাল সকালেই চলে যাবো।শুধু আজকের রাতটা এখানে
শ্রাবণঃমেঘ স্টপ দিস ননসেন্স।
শ্রাবণের ধমকে মেঘ অনেকটা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে।একহাত দিয়ে শাড়ির আচল আঙুলের সাথে পেছাচ্ছে।অন্য হাত দিয়ে জুড়ে শাড়ি ধরে রেখেছে।
চলবে………..

চুক্তির বউ ৮ম পর্ব

0

চুক্তির বউ ৮ম পর্ব

লেখা:তামান্না
শ্রাবণ অবাক হয়ে মাথা উঁচু করে সামনে তাকায়।পুলিশ এখানে আসলো কিভাবে আমি তো কাউকে কাউকে কল করিনি কিন্তু এরা জানলো কিভাবে?
এরমাঝেই আরেকজন এসে ভেতরে ডুকে শাণকে উদ্দেশ্য করে বলে…….
রিদিঃএইবার শ্বশুড়বাড়ি চলো মি.শাণ।অনেক ক্ষতি করেছো তুমি এদের আর বাকি জীবন জেলে বসে কাটিয়ে দিবে চলো।
শ্রাবণঃরিদি তুমি।(অনেকটা অবাক হয়ে)
রিদিঃহ্যা স্যার আমি।এখানকার থানার একজন কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার।
মেঘঃরিদি তাকিয়ে কি দেখছো আগে বাধন টা খুলতে বলো এদের।আর কতক্ষণ এভাবে থাকবো।
রিদিঃহ্যা মেঘ।
রিদি ওর সাথে আসা পুলিশকনস্টেবল কে মেঘ আর শ্রাবণের বাধন খুলে দিতে বললো।
শাণঃএটা কিন্তু ঠিক হলো না।আমি তোমাদের দেখে নেবো।
রিদিঃআরে দূর তুমি কি দেখবে সেটা আমার জানা আছে।আসো আগে আমার সাথে একবার জেলের মাঝে পঁচে দেখো কি স্বাদ লাগে।
রিদি একজন কনস্টেবল কে ডেকে শাণ কে এরেস্ট করতে বললো।তারপর শাণের সব চেলাদের ও সাথে নিয়ে গেলো।
মেঘঃথেংক ইউ রিদি আজ তুমি না থাকলে এইখান থেকে বেঁচে ফিরতাম না।
শ্রাবণঃরিদি আমার মাথায় কিচ্ছু ডুকছে না।তোমরা একে অপরকে চিনো কিভাবে?
রিদিঃওয়েট স্যার।আগে শাণের ব্যবস্থা করে নেই।বিকেলে আমি আপনাদের বাসায় যাবো।
শ্রাবণঃথেংক ইউ রিদি।
রিদিঃইট’স মাই প্লেজার।আর হ্যা আমাদের সাথে তোমরা ও এসো বাসায় পৌঁছে দেবো।
রিদি ওদের সবাইকে ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালো।অন্যদিকে মেঘ তখন থেকে এক হাত দিয়ে অন্য হাত খামচে যাচ্ছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না।
শ্রাবণঃদাঁড়িয়ে আছো কেনো?বাসায় যাবে না।
মেঘঃ………..
শ্রাবণঃমেঘ কিছু বলছি তোমায় কি ভাবছো এতো?
মেঘঃক ক কই কিছু না।
শ্রাবণঃতুমি ভয় পাচ্ছো কেনো?নাও উই আর অলমোস্ট সেইফ।
মেঘঃহুম…..
শ্রাবণঃহুম কি এসো বাসায় যাবো মামনি চিন্তা করছে?মামনিকে তো কল ও করিনি এদিকে ফোনটাও সাথে নেই।
রিদিঃকি ব্যাপার তোমরা এখনো দাঁড়িয়ে কেনো?এসো বাসায় যেতে হবে দেরী হয়ে যাচ্ছে না।
শ্রাবণঃআমরা আসছি তুমি যাও।
রিদি যাওয়ার পর শ্রাবণ মেঘের হাতে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো।তারপর নিজেও উঠে বসলো।ওদের জন্য আলাদা একটা গাড়ি আনা হয়েছে।গাড়িতে উঠে মেঘ কোনো কথাই বলছে না।কি যেন ভেবেই যাচ্ছে।হ্যা মেঘ এটাই ভাবছে আর একটু পর শ্রাবণ আর মেঘ আলাদা হয়ে যাবে।ভাবতেই মেঘের ভেতরে একটা ঝড় বয়ে যায়।
অন্যদিকে শ্রাবণের ভিতরেও একই ভাবনা।শ্রাবণ এর ভিতর যে ঝড়টা যাচ্ছে সেই একই ঝড় মেঘের মনেও বইছে।দুজনেই একটা ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করছে।ভাবতে ভাবতেই ওরা বাসার সামনে চলে আসে।রিদি ওদেরকে নামিয়ে দিয়ে বাকিদের নিয়ে থানার দিকে এগিয়ে গেলো।
বাসায় আসতেই শ্রাবণের মা মেঘকে ধরে কান্না শুরু করেন।
শ্রাবণের মাঃকোথায় ছিলি সারাদিন জানিস কতো টেনশন হচ্ছিলো আমার।এইভাবে কিছু না বলে কেউ বাসা থেকে বের হয়।আর যদি কখনো এমন ভুল হয় তাহলে কিন্তু মায়ের হাত মাইর খাবি।
মেঘঃমা মা শুনুন আপনার হাতের মাইর খাওয়ার জন্য এরকম ভুল আমি বার বার করতে রাজি।
শ্রাবণঃকি তুমি আবারো ও ওই গোন্ডাদের কাছে যেতে চাও?দেখলে তো কি হলো?
মেঘঃকিছুই হতো না আপনি কেনো ওদের ফাঁদে পা দিলে গেলেন?
শ্রাবণঃমেঘ আমি না গেলে ওরা তোমাকে মেরে ফেলতো।
মেঘঃপাগল নাকি।শাণ মারবে আমাকে তার আগেই তো আমি ওর সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি।
শ্রাবণঃমানে কিভাবে?
মেঘঃআজ শাণ আমাকে ধরে নিয়ে গেলো কিভাবে?গোন্ডা পাঠিয়ে আমাকে নিয়ে এটাই ভাবছেন তো তাই না।আরে শাণের এতো সাহস নেই আমার কিছু করবে।একটা সময় তো ও আমাকেই ভালোবাসতো।
শ্রাবণঃতাহলে তুমি ওখানে গেলে কিভাবে?
মেঘঃসবটাই প্লেন ছিলো।নিজে থেকে ওর কাছে ধরা দিলাম যাতে ওকে পুলিশের হাতে তুলে দিবে পারি।
শ্রাবণঃপ্লেন মানে।
রিদিঃহ্যা স্যার প্লেন।
শ্রাবণঃআমি কিছু বুঝতে পারছি না।
মেঘঃদাড়ান বুঝিয়ে বলি।রিদি তুমি বলো…
রিদিঃহুম….
স্যার আমি আপনার অফিসের এম্পলোয়ি হয়ে কাজ করেছি শুধু মাত্র শাণের খুঁজ পাবার জন্য।আমাকে আগেই আপনার মা বলেছিলেন আপনার বিপদ।আর সেটা শাণের জন্য।শাণ যেভাবে হোক আপনার ক্ষতি করবে।এর আগেও শাণ আর শাণের বাবা আপনাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন।আপনার অফিসের ম্যানেজার যে লোকটাকে দিয়ে গাড়ির ব্রেকফেইল করিয়ে ছিলো সে নিজেই আপনার মায়ের কাছে সব বলেছিলো।এতোদিন শাণ পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো।
শ্রাবণঃকিন্তু শাণ কেনো?
রিদিঃআপনার বাবার কোম্পানি টা নিজেদের কাছে দখল নেওয়ার জন্য।আপনার বাবার সব সম্পত্তি দখল করার জন্য।আপনার বাবা ম্যানেজারকে চোরের দায়ে কোম্পানি থেকে বরখাস্ত করেছিলেন আর যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শাণ আর শাণের বাবা মিলে আপনাকে মারার প্লেন করে।সেদিন মারতে পারেনি কারণ সেদিন আপনার বাবা জেনে গেছিলেন গাড়ির ব্রেকফেইল করানো হয়েছে তাই তিনি আপনাকে বাঁচাতে নিজেই ড্রাইভ কন্ট্রোল করতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করেন।
শ্রাবণঃআর শাণ এতোদিন শুধু মেঘের নাম ব্যবহার করে আমার থেকে টাকা নিতো।
রিদিঃহ্যা স্যার।শাণ এটা ভেবেছিলো মেঘের ক্ষতি করার কথা বললে আপনি মেঘকে বাঁচাতে নিজের জীবন টাও দিয়ে দিবেন তাই ওর নিজের স্বার্থরক্ষার জন্য এতোদিন মেঘকে ব্যবহার করেছে।ভাগ্য ভালো মেঘ শাণের আসল রূপ জেনে গেছিলো নয়তো আজ সত্যি মেঘের কোনো বিপদ হতো?
শ্রাবণঃতুমি ওখানে গেলে কিভাবে?
রিদিঃআজকে শাণ মেঘকে রাস্তা থেকে কিডন্যাপ করবে এটা মেঘ আর আমার প্লেন।শাণ কে ধরার আর কোনো উপায় ছিলো না।
শ্রাবণঃযদি মেঘের কোনো ক্ষতি হতো?
রিদিঃআমি থাকতে মেঘের কিছু হতে দিতাম না।মেঘকে কিডন্যাপ করার কিছুক্ষণ আগে মেঘ আমাকে কল করে।তারপর নিজের ফোন আমার নাম্বার কলিং এ রেখে শাণের পাঠানো গোন্ডাদের মধ্যে একজনের পকেটে রেখে দেয়।ওদের লোকেশন মুহুর্তেই পেয়ে যাই।তাই ওখানে যেতে কোনো অসুবিধা হয় নি।আজ মেঘ নিজে যদি শাণ কে ধরতে হেল্প না করতো তাহলে শাণ দু একদিনের মধ্যেই আপনার উপর এটাক করতো।
শ্রাবণঃথেংক ইউ রিদি।আজ তুমি না থাকলে আমরা কেউই বেঁচে ফিরতাম না।
রিদিঃথেংক্স তো মেঘের প্রাপ্য।সময় মতো আমাকে কল দেওয়ায় আমি ওখানে যেতে পারলাম।
শ্রাবণঃতাহলে আমার সাথে যে ডিল ফাইনাল করতে আমেরিকা গেলে।
রিদিঃশাণ আমেরিকা ছিলো।ওকে ফলো করার জন্য ইচ্ছে করে একটা ডিল করা।আর আপনাকে প্রটেক্ট করা।
শ্রাবণঃআমার বুঝা হয়ে গেছে এবার একটু আড্ডা দেই।টেনশন করতে করতে প্রাণের বারোটা বেজে গেছিলো।
মেঘঃআপনাকে টেনশন নিতে কে বলেছিলো?
শ্রাবণঃতুমি বুঝবে কিভাবে?তুমি তো আর….
শ্রাবণের মাঃহয়েছে আর টেনশন করতে হবে না।আসল অপরাধীর সাজা তো হয়েই যাবে এইবার এখন আর টেনশন করা লাগবে না।মেঘ তুই একটু চা করে আনবি।আজ সারাদিন তোর ধরে তোর হাতের চা খুব মিস করছি।
মেঘঃআচ্ছা মা আমি চা নিয়ে আসছি।
মেঘ রান্না ঘরে গিয়ে চা নিয়ে আসে সবার জন্য।
সবাই চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছে।শ্রাবণ বার বার আড়চোখে মেঘকে দেখছে।কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু সবার সামনে চাইলেও কথা বলতে পারছে না।
মেঘ সেটা বুঝেই কেটে পড়ে রান্নাঘরে।ইচ্ছে করেই অনেকগুলো রান্নার আয়োজন শুরু করে।
কিছুসময় পর রিদি চলে গেলো।
সবাই রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে মেঘ আর পিয়ালি ছাদে বসে গল্প করছে।
পিয়ালিঃএখন কি করবি কিছু ভাবলি?
মেঘঃহুম।
পিয়ালিঃকি সিদ্ধান্ত নিলি?
মেঘঃচলে যাবো।
পিয়ালিঃমেঘ……..
মেঘঃহ্যা রে চলে যাবো।এগ্রিমেন্টের এক বছর পেড়িয়ে গেছে।কাল সকালেই এই বাড়ি ছাড়তে হবে।আর বিপদ বাড়িয়ে কি লাভ?
পিয়ালিঃমেঘ তুই একবার ও স্যারের কথা ভাববিনা?
মেঘঃওনার কথা ভেবেই বলছি।এগ্রিমেন্টে এটাই লেখা ছিলো এক বছর পর যে যার যার রাস্তা বেঁছে নিবো।আমার খেয়ালই ছিলো না।আজ এক বছর পের হতে যাচ্ছে।
পিয়ালিঃমেঘ তুই কি জানিস না স্যার তোকে……
মেঘঃআমাকে কি?
পিয়ালিঃমেঘ তুই আবার ভুল করিস না একবার স্যারের সাথে কথা বল।
মেঘঃআমার কিছু বলার নেই পিয়ালি।
পিয়ালিঃতোর নেই কিন্তু ওনার থাকতে পারে মেঘ।
মেঘঃওনি যা বলার এক বছর আগেই বলে দিয়েছেন নতুন করে আর কি বলবেন?
পিয়ালিঃতুই একটু বস আমি আসছি।
পিয়ালি উঠে নিচে নামলো…..
শাণ আমাকে টকালো।আমি তো কোনোদিন শাণের সাথে প্রতারণা করিনি তাহলে কেনো আজ শাণের সাথেই চুক্তি করলেন ওনি।তাও আমার জীবন নিয়ে।আমি কি খেলার পুতুল যে যার ইচ্ছে মতো আমাকে ব্যবহার করবে আবার সময় পুড়িয়ে গেলে ডাস্টবিনে ফেলে দিবে।
মেঘ বিড়বিড় করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
একটু পর পিয়ালি মেঘের কাধে হাত রেখে পাশে বসে।
মেঘঃএসেছিস।চোখের জল মুছতে মুছতে…
পিয়ালিঃহুম।এইটা ধর….ডায়রিটা মেঘের হাতে দিয়ে।
মেঘঃকি এটা?
পিয়ালিঃদেখতেই পাচ্ছিস ডায়রি।
মেঘঃহ্যা তো এটা দিয়ে কি করবো?
পিয়ালিঃপড়বি।এটা স্যারের ডায়রি।
মেঘঃএটা আমি পড়তে যাবো কেনো?
পিয়ালিঃতোর অনেক কিছু এখনো অজানা মেঘ।এটা না পড়লে জানতে পারবি না।
মেঘঃকিন্তু…..
পিয়ালিঃতুই পড় মেঘ।
মেঘঃহুম…
মেঘ শ্রাবণের ডায়রিটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করে।প্রথমেই ডায়রির মাঝে লেখা-শ্রাবণের মেঘ।
মেঘ খানিকটা অবাক হয়ে পিয়ালির দিকে তাকায়।পিয়ালি ইশারায় পরের পেইজটা উল্টাতে বলে।মেঘ মাথা নেড়ে সায় দেয়।
তারপর পেইজ টা উলটে দেখে কিছু লেখা আছে।
আজ আমি প্রথম অফিস জয়েন করছি।বাপির খুব ইচ্ছে ছিলো নিজের ছেলেকে কোম্পানির সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে কিছুদিন বিশ্রাম নিবেন।কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিলো না বলে বাপি আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।অবশ্য বাপি চলে যাওয়ার পিছনে আমি দায়ী।আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বাপি নিজেকে শেষ করে দিলো।
যাই হোক বাপির ইচ্ছে বলি আর নিজের দায়িত্ব কর্তব্য যাই বলি আজ থেকে বাপির রেখে যাওয়া আমানত গুলোর দায়িত্ব আমি নিলাম।আর এই ডায়রিতে প্রতিদিনের কিছু ঘটে যাওয়া কথা উল্লেখ করলাম যেহেতু নিজের লাইফ নিয়ে কারো সাথে কিছু শেয়ার করিনি তাই এই ডায়রিটাই আমার কষ্টগুলো জমা রাখার একটা আশ্রয়।
কোম্পানি জয়েন করার পর জানতে পারলাম আগের ম্যানেজার আংকেল কে চাকরী থেকে বাতিল করা হয়েছে কিন্তু কেনো তা আমাকে কেউ জানায়নি বা আমারো জানার ইচ্ছে হয়নি।
আজ প্রথম অফিসে জয়েন করে বুঝতে পারলাম বাপি কতোটা প্রেশারের মাঝে থাকতো।সারাদিন এতো এতো কাজ করেও বাপি হাসিমুখে বাসায় ফিরতো।আর আমাদের সাথে আড্ডা দিতো।আমার দুঃখ একটাই বাপিকে বুঝে উঠতে আমি খুব দেরী করে ফেলেছি।আগে যদি বুঝে নিতে পারতাম তাহলে হয়তো বাপিকে এতো তাড়াতাড়ি হারাতাম না।
একটু একটু করে কোম্পানির সব দায়িত্ব বুঝে নিলাম।নতুন একজন ম্যানেজার নিয়োগ করলাম।দেখতে দেখতে কোম্পানিটা বেশ উন্নতি হতে লাগলো।
এরপর একটা করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেপারে দিলাম নতুন কর্মচারী লাগবে এইটা উল্লেখ করে।
কয়েকজন এর ভাইবা নিয়ে সিলেক্ট করলাম।
আজ আবার নতুন কর্মচারী জয়েনিং করার দিন।নতুন একজন জয়েন করলো তাও আবার একটা মেয়ে।দেখতে একদম পরীর মতো।টানা টানা চোখ।মায়াবী মুখ।বাকা ঠোটের হাসি।লাজুক লাজুক মুখের চাহনি।একদম পরীর মতো দেখতে।যে একবার দেখবে সেই প্রেমে পড়ে যাবে।প্রথম দেখায় মেয়েটাকে আপন ভেবে নিয়েছিলাম।কিন্তু জানতাম না যেই মেয়েকে আমি মনের গহীনে অজানা একটা সুখের ঠিকানা গড়ে তুলেছি সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।বাপিকে হারিয়ে একরকম পাগল হয়ে গেছিলাম কিন্তু ওকে দেখে আবারো পাগলামি থামানোর একটা মাধ্যম খুঁজে পেলাম কিন্তু যেদিন জানলাম পরীটা অন্যকাউকে ভালোবাসে সেদিন আবারো খুব কষ্ট অনুভব করলাম।বুকের ভেতরে কেমন যেন ব্যথা অনুভব করতাম।মামনি আমার কষ্ট মেনে নিতে পারছিলো না।বার বার জানতে চাইতো বলে একদিন মামনিকে সব বলে দিলাম।মামনি আমাকে অনেক বুঝতো যে আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে একদিন সে আমার হবেই।আর আমার নিজের ভালোবাসায় উপর বিশ্বাস ছিলো।সেই বিশ্বাসটাই হয়তো আমাকে বাঁচতে শিখালো।ও কখন অফিসে আসতো কখন কি করতো সব নজর রাখতাম।একরম পাগল ছিলাম আমি ওর জন্য।ওহ হ্যা পাগল আমি এখনো ওর জন্য।মনের গহীনে আজো আমি ওকেই অনুভব করি।
কিন্তু সমস্যা তো বাধে অন্য জায়গায়…….
এমনটা হবে কোনোদিন ভাবিও নি।কি থেকে কি হয়ে গেলো।মুহুর্তেই সব শেষ হয়ে গেলো।আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।আমার কি করনীয় সেটাও মাথায় ডুকছে না।
অবশেষে একজনকে পেলাম আমাকে হেল্প করার জন্য।যে আমাকে প্রতিটা পদে হেল্প করেছে তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।কিন্তু তাও আমি থাকে ধন্যবাদ জানালাম।তার মাধ্যমেই আসল ঘটনা জানতে পারলাম।
চলবে………..

চুক্তির বউ ৭ম পর্ব

0

চুক্তির বউ ৭ম পর্ব

লেখা:তামান্না
শ্রাবণ দরজা খুলে রুমে ডুকেই চারিদিকে তাকিয়ে মেঘকে চিৎকার করে ডাকতে থাকে।মেঘ তাড়াতাড়ি শ্রাবণের গলার আওয়াজ পেয়ে রুমে আসে।শ্রাবণ মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলা শুরু করে……
শ্রাবণঃএসব কি মেঘ?
রুমের ভেতরটা দেখিয়ে।মেঘ পুরো রুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে।চারিদিকে মোমবাতির নিবু নিবু আলো রুমটার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।শুধু মোমবাতি না সামনে ছোট টেবিলে একটা ছোট কেক।আর তাতে লেখা “Happy Birthday Dear Shrabon Mahmud”
এগুলো দেখে শ্রাবণের মাথায় রক্ত চেপে যায়।
মেঘ ভয়ে ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
মেঘঃআসলে একটুপর তো আপনার জন্মদিন তাই।
শ্রাবণঃকে বলেছে এসব করতে আমি বলেছি তোমাকে।আমি বলেছি আমার জন্মদিন আমাকে উইশ করো।আমি বলেছি আমার জন্ম দিনে পার্টি করো।আমি বলেছি আমার জন্মদিনে আমাকে সারপ্রাইজ দাও।(ধমক দিয়ে)
মেঘ কিছু না বলে চুপ করে আছে।ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
শ্রাবণ মেঘকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।এমন ভাবে হাতদুটো চেপে ধরেছে মেঘ ব্যথায় চিৎকার দেয়।মেঘ কষ্ট পাচ্ছে দেখে হাত ছেড়ে দেয়।আবার বলা শুরু করে।
শ্রাবণঃকেনো এসব করেছো একবার আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতে?
মেঘঃসরি আমি বুঝতে পারিনি আপনি ওইভাবে রিয়েক্ট করবেন।একটু শান্ত্ব হয়ে আমার কথা শুনুন।
শ্রাবণঃকি শুনবো আমি?আমার কিছু শুনার ইচ্ছে নেই।আমাকে একা থাকতে দাও।
মেঘঃদুর একা থাকবেন বলেকি আমি এতো কিছু করলাম।তখন কি বললেন আপনি আর এখন কি করছেন?
শ্রাবণঃতখন ভাবনায় ছিলো না তুমি আমার জন্মদিন নিয়ে এইভাবে কিছু করবে।
মেঘঃহুম তাই নাকি।আচ্ছা বাদ দিন আসুন কেক কাটবেন।
মেঘ শ্রাবণের হাত ধরে টানতে টানতে কেকের সামনে নিয়ে দাড় করায়।
শ্রাবণঃকেনো এমন করছো মেঘ এই দিনটা আমি ভুলে যেতে চাই কেনো বুঝো না।
মেঘ আলতো করে শ্রাবণের গালে একহাত রাখে অন্যহাতে শ্রাবণ এর আরেকহাত ধরে আছে।
মেঘঃআপনি তো কোনো অন্যায় করেননি তাহলে আপনি কেনো কষ্ট পাবেন।আর আমি যখন জেনেই গেছি বাবার মৃত্যুর পিছনে কেউ জড়িত তখন তাকে খুঁজে বের করা আমার দায়িত্ব আর আজ থেকে আপনার মুখে হাসি ফুটানোর দায়িত্ব ও আমার।
শ্রাবণঃএক মাসের জন্য।
মেঘঃহোক না এক মাস তাতে কি?এই একমাস কেই আমি কাজে লাগাবো।
শ্রাবণঃকি করবে এই এক মাসে?যা আমি তিন বছরেও করতে পারিনি।
মেঘঃউফফফ সেটা আমি দেখবো আসেন তো আগে কেক কাটবেন।আমি মাকে কথা দিয়েছি আমার কথা আমাকে রাখতে দিন প্লিজ।
মেঘের কথায় শ্রাবণ আর কিছু না বলে ছুরি হাতে নিয়ে কেক কাটে।আর মেঘ হাততালি দিয়ে শ্রাবণ কে উইশ করতে থাকে।
অন্যদিকে শ্রাবণের মা দরজার পাশ থেকে সব দেখে মুখে একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে যান।
তারপর মেঘ আর শ্রাবণ অনেক গল্প করে।
সেদিনের পর থেকে শ্রাবণ অনেকটা বদলে গেছে।আগের মত হাসি আনন্দ নিয়ে মেতে থাকে।কিন্তু একটাই চিন্তা আর মাত্র কয়েকটা দিন পর মেঘ চলে যাবে।শ্রাবণ কি ব্যর্থ মেঘকে তার ভালোবাসা বুঝাতে।হয়তো ব্যর্থ হয়তো না।
তাহলে কি পারলো না শ্রাবণ মেঘকে আটকাতে।
অন্যদিকে মেঘ একটা একটা করে ক্লু খুঁজে বের করছে।কে মারার প্লেন করতে পারে শ্রাবণ কে।কে ওর এতো বড় ক্ষতি করতে চায়।
ধীরে ধীরে মেঘ সব রহস্য জানতে পারে।
মেঘ যখন জানলো এর পিছনে কার হাত তখন তো বিশ্বাসই হচ্ছিলো না যে মেঘ এর সামনে এমন কিছু আসবে যা মেঘকে আবারো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে।
আজ মেঘ আর শ্রাবণের বিয়ের একবছর পূর্ণ হবে।একদিকে শ্রাবণ ভাবছে মেঘকে কিভাবে ডিভোর্সের কথা বলবে।অন্যদিকে মেঘ চাইছে আজ এমন কিছু হোক যেন শ্রাবণ মেঘকে কোনোভাবেই না ছাড়ে।
সকাল বেলা মেঘ কাউকে কিছু না বলেই বাসা থেকে বের হয়ে যায়।সারাদিন পার হয়ে যাচ্ছে মেঘের বাসায় ফেরার নাম নেই।শ্রাবণ মেঘের নাম্বারে কল করে ব্যর্থ হয়।কারণ মেঘের নাম্বার বরাবরই বন্ধ দেখাচ্ছে।
শ্রাবণ পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে।শেষমেশ মেঘ কি চলে যাবে শ্রাবণ কে ছেড়ে এইভেবে।
শ্রাবণ আর ওর মা ভাবতে ভাবতে পুলিশে রিপোর্ট করবেন ভাবেন এর মাঝেই শ্রাবণের নাম্বারে একটা কল আসে।
……. মেঘকে বাঁচাতে চাইলে তাড়াতাড়ি এই ঠিকানায় চলে আসো।
শ্রাবণঃহ্যালো কে বলছেন?
কল কেটে গেলো।শ্রাবণ একটু আগে আসা নাম্বারে ডায়াল করে কিন্তু ততক্ষণে নাম্বারটা বন্ধ হয়ে গেছে।
শ্রাবণের মাঃকি হয়েছে শ্রাবণ তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
শ্রাবণঃমামনি হাতে সময় নেই আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে নয়তো মেঘকে ওরা মেরে ফেলবে।
শ্রাবণ তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে ঠিকানা অনুযায়ী যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।আর পিয়ালিকে কল করে বাসায় গিয়ে মাকে সামলাতে বলে।
শ্রাবণ বিশাল একটা মাঠের কাছে গাড়ি থামায়।তারপর চারিদিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে এটা সেই ঠিকানা কিনা।
হ্যা এটা তো সেই জায়গা কিন্তু মেঘ কোথায়?
শ্রাবণ চারিদিকে খুঁজাখুঁজি করতেই একজন ওর পিছন থেকে এসে চোখ বেধে জুড় করে একটা গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।একজন ওর মাথায় রিভলভার ধরে রাখছে আরেকজন শক্ত করে চেপে ধরেছে।আর বার বার শ্রাবণ কে নড়াচড়া করতে নিষেধ করছে।
কিছুসময় পর একটা নির্জন জায়গায় গাড়ি থামায়।তারপর শ্রাবণ এর মাথায় রিভলভার টেকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বলে।যদি ও শ্রাবণ এর চোখ বাধা তারপরেও ওকে জুড় করে নিয়ে যাচ্ছে।
একটা সময় একটা ঘরে নিয়ে শ্রাবণ এর হাতপা বেধে ফেলে।তারপর চোখের বাধন খুলে।শ্রাবণ চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মেঘকেও একইভাবে বেধে রাখা হয়েছে।শ্রাবণ মেঘকে দেখে ওদেরকে বার বার বলে মেঘকে ছেড়ে দিতে।শ্রাবণ হাত পা এর বাধর খুলার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়।
শ্রাবণঃমেঘকে এখানে কেনো বেধে রেখেছেন।কারা আপনারা কেনো এমন করছেন।কি চাই আপনাদের?
……………..
শ্রাবণঃমেঘ তুমি চিন্তা করো না ওরা তোমার ক্ষতি করতে পারবে না।
মেঘঃওরা আমার ক্ষতি করবে না।ওরা আপনার ক্ষতি করতে চায়।কেনো ওদের ফাঁদে পা দিলেন আপনি?
শ্রাবণঃআমার ক্ষতি কে করবে?
মেঘঃতিনবছর আগে যে মানুষ টা আপনাকে মেরে ফেলার জন্য গাড়ি ব্রেইকফেইল করিয়ে রাখেন তারই রক্ত।
শ্রাবণঃমানে কি বলছো তুমি কে সে যে আমাকে মেরে ফেলতে চায়?
একটা আওয়াজ আসে অমনি শ্রাবণ চুপ হয়ে যায়।ভালো করে বুঝার জন্য দুজনেই চুপ করে থাকে।এরপর আওয়াজটা আরো স্পষ্ট হয়।
মি. শ্রাবণ মাহমুদ…….
কে তোমাকে মারতে চায় জানেন না?
ওহ জানবে কিভাবে তুমি তো কখনো তাকে দেখোনি? বা দেখলেও বুঝে উঠতে পারোনি।
তুমি কি বোকা শ্রাবণ যে তোমাকে মারার জন্য এতো এতো কষ্ট করলো আজ তার কাজটাই তুমি সহজ করে দিলে।
একটু একটু করে একজন মানুষ শ্রাবণের সামনে এসে দাঁড়ায়।মুখে কালো মুখোশ পড়া।
শ্রাবণঃকে আপনি?
আমি কে সেটা দেখার এতোই কৌতূহল।
শ্রাবণঃআমি আপনার কি এমন ক্ষতি করলাম যার জন্য আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন আবার মেঘকে এইভাবে শাস্তি দিচ্ছেন।
আচ্ছা জানার খুব ইচ্ছা না আমি কেনো এমন করলাম।
মেঘঃআমি সেটা ভালো করেই জানি আর তুই যা ভাবছিস কোনো দিনও সফল হবে না।না পারবি ওনার কোনো ক্ষতি করতে না পারবি আমার কোনো ক্ষতি করতে।শুধু শুধু এতো কষ্ট করে কেনোই নিজের পাপের বুঝা বাড়াচ্ছিস।
মেঘ মেঘ থামো এইভাবে বলো না কলিজায় গিয়ে লাগে।অনেক কষ্ট হয়।
মেঘঃছি তোর আবার কষ্ট বুঝিস তুই কষ্ট কি কষ্ট কাকে বলে।
আরে বাবা এতো ছটছো কেনো?দাড়াও আগে তোমার স্বামীর সাথে কাজ সেরে নেই।তুমি তো আবার ওর #চুক্তির_বউ।
শ্রাবণঃকে আপনি বলুন?
ওয়েট এ সেকেন্ড…….
লোকটা নিজের মুখ থেকে মুখোশ টা খুলে নিচে ফেলে দিলো।তারপর মাথাটা নিচু থেকে ধীরে ধীরে উপরে তুলতে লাগলো।
দেখো তো শ্রাবণ আমাকে চিনতে পারো কি না।
শ্রাবণঃশাণ তুমি।
শাণঃহুম আমি।শাণ……… তোমার এক এবং একমাত্র শত্রু।
শ্রাবণঃকি বলছো শাণ।আমরা তো খুব ভালো বন্ধু।
মেঘঃবন্ধু!একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে… ও বন্ধুত্বের মানে জানে।ওর কাছে তো ইম্পরট্যান্ট টাকা পয়সা ব্যাংক ব্যালেন্স।আর আপনার সম্পত্তি।
শ্রাবণঃমানে এটা তুমি কি বলছো মেঘ?
শাণঃহ্যা শ্রাবণ তোমার বউ।দূর বাবা ও তো এগ্রিমেন্টের বউ।যাই হোক ও ঠিক বলছে।আমি তোমার সম্পত্তি চাই।
শ্রাবণঃশাণ তোমাকে আমি এর আগেও অনেক টাকা দিয়েছি সেটা কি ভুলে গেছো।
শাণঃনা না শ্রাবণ।তোমার এতো বড় উপকারের কথা আমি ভুলবো কিভাবে?তুমি টাকা না দিলে আমি এতোদিনে মেঘকে ওপারে পাঠিয়ে দিতাম।
শ্রাবণঃতাহলে কেনো আমাকে আর মেঘকে এভাবে বেধে রেখেছো।এটা তো হওয়ার কথা ছিলো না।
শাণঃরাইট এটা হওয়ার কথা ছিলো না।কেনো এলো এটাই জানতে চাও তাই না।
শ্রাবণঃহ্যা কি করণে এমন অমানুষের মতো কাজ করলে তুমি।
শাণঃতাহলে শোণ আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কাহিনি।তোমার বাবা আশরাফ মাহমুদের কোম্পানিতে ম্যানেজারের দায়িত্বে কাজ করতেন আমার বাবা ইমতেহাজ আহমেদ।
শ্রাবণঃতুমি ম্যানেজার আংকেল এর ছেলে।
মেঘঃশাণের বাবা আপনাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন সেদিন।কিন্তু আল্লাহ আপনাকে বাঁচিয়ে আপনার বদলে বাবাকে কেঁড়ে নিলেন।সেদিন ওদের প্লেন টা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় আর যার জন্য শাণ প্লেন করে আপনাকে ওই চুক্তির কথা বলে।
শ্রাবণঃতুমি কিভাবে জানলে এসব?
মেঘঃশাণ নিজেই এসব বলেছে কিন্তু শাণ এটা জানেনা যে ও কতো বড় ভুল করলো।
শাণঃশাণ কোনো কাজের প্রমান রাখে না।সেদিন যেমন কোনো প্রমান আমার বাবা রাখেনি আজ আমি রাখবো না।তবে বাবা একটা ভুল করে ফেলেছে।বাবার সব প্লেনের কথা তোমার মা বাবা দুজনেই জেনে যান।এই একটা জায়গায় বাবা ভুল করলেও আর সব ঠিক।আজ বাবা ফেলে রাখা কাজটা আমি কমপ্লিট করবো।
মেঘঃতুমি শত চেষ্টা করেও কিছু করতে পারবে না।মা আমাকে সব জানিয়েছেন আর আমি তো তোমাদের চুক্তির কথা জেনেই গেলাম।তাহলে এখন নতুন করে কি প্লেন করবে তুমি।
শাণঃজেনে গেছো ভালোই হয়েছে এবার তোমার মতামত টা জানিয়ে দাও।তাহলেই সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে।তাই না শ্রাবণ…….
শ্রাবণ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।শাণ এইভাবে তার সাথে প্রতারণা করবে শ্রাবণের কল্পনায় ও ছিলো না।কিন্তু এখন তো সব মেঘের হাতে।আজ মেঘের একটা সিদ্ধান্ত সব বদলে দিতে পারে।
অন্যদিকে পিয়ালি বাসায় শ্রাবণের মাকে শান্ত্বনা দিচ্ছে।শ্রাবণের মা কান্নায় ভেঙে পড়েন।তাহলে কি এইবার শ্রাবণ ও হারিয়ে যাবে।
শাণঃকাম-অন মেঘ স্পিক আপ।
মেঘঃশাণ প্লিজ ওনাকে ছেড়ে দাও।
শাণঃআরে আরে এতো দরদ জাগছে কেনো?এই বিয়েটাই তো মিথ্যে।
শ্রাবণ মেঘের দিকে অবাক চোখ তাকিয়ে আছে।সত্যি কি এই সম্পর্কটা মিথ্যে বলে প্রমাণ হয়ে যাবে।আমার ভালোবাসার কি কোনো মুল্য ছিলোনা।মেঘ চুপ করে আছে কেনো?কেনো কিছু বলছে না।
শাণঃমেঘ তোমার মতামত টা আমি ভালো করেই জানে।এই চুক্তির কথা অনুযায়ী এই বছরে তোমার মনে শ্রাবণের প্রতি কোনো অনুভূতি জাগেনি।তুমি এখনো শাণ আই মিন আমাকেই ভালোবাসো।আর এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী আজ একবছর শেষ তাই আজ তোমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে আর তুমি আমাকে বিয়ে করবে।
মেঘঃনিজেকে খুব চালাক মনে করো তাই না শাণ।তোমার সব ভাবনাই সত্যি হয়ে যাবে।তুমি যা বলবে তাই হবে।
শাণঃএগ্রিমেন্টে তো এটাই ছিলো
একটা চুক্তির মাধ্যমে শ্রাবণ মাহমুদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো কাশফিয়া হাসান মেঘ।এই বছরে যদি মেঘের মনে শ্রাবণ কে নিয়ে কোনো অনুভতি না জন্মায় তাহলে মেঘ সারা জীবনের জন্য শ্রাবণের থেকে আলাদা হয়ে যাবে।আর এই চুক্তির কথা মতো শ্রাবণের সাথে মেঘের ডিভোর্সের পর শাণের সাথে মেঘ আবারো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।
নিচে একটা সিগনেচার করা তোমার নিজের তাই না মেঘ।এবার তাড়াতাড়ি বলো তোমার মনে শ্রাবণ কে নিয়ে কোনো অনুভতি ভালোবাসা মায়া মমতা কিচ্ছু নেই আছে শুধু ঘৃণা।
মেঘ একবার শ্রাবণের দিকে তাকায়।শ্রাবণ চোখ দুটো বন্ধ করে নিচের দিকে দিয়ে রেখেছে।
শাণঃমেঘ আর চুপ করে থেকে দেরী করো না।প্লিজ এইবার তুমি বলে দাও যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো বলো তাহলেই কিন্তু আমি শ্রাবণ কে মুক্তি দিবো।
মেঘঃ…………
শাণঃমেঘ দেরী করো না এখনো অনেক কাজ বাকী প্লিজ মেঘ তাড়াতাড়ি বলো।
মেঘঃআমি……..
শ্রাবণের চোখ এখনো বন্ধ…..
শাণঃতুমি বলো মেঘ প্লিজ বলো।
মেঘঃআমি…..
এরমাঝেই ধুম করে একটা শব্দ হয়।শাণ কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশ এসে শাণের মাথায় রিভলভার ধরে।শ্রাবণ সামনে তাকিয়ে অবাক এ কাকে দেখছে শ্রাবণ।এটা কিভাবে সম্ভব।
ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মি.শাণ আহমেদ।
মেঘ পুলিশের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো।
চলবে………..

চুক্তির বউ ৬ষ্ট পর্ব

0

চুক্তির বউ ৬ষ্ট পর্ব

লেখা:তামান্না
দু’মাস পর……………..
আজ শ্রাবণ আমেরিকা থেকে দেশে ফিরছে।
মনের ভেতর অজানা প্রশ্ন মেঘ শ্রাবণ কে দেখে কিভাবে রিয়েক্ট করবে।শ্রাবণ আমেরিকা তিনমাসের জন্য গেলেও মেঘকে এতো মিস করছিলো তিনমাসের কাজ পনেরোদিন আগেই শেষ করে।আজ মেঘকে চমকে দেবে শ্রাবণ।এখনো শ্রাবণ জানায়নি যে সে আজ দেশে ফিরছে।এদিকে শ্রাবণ ভাবছে মেঘকে সারপ্রাইজ দিবে।অন্যদিকে শ্রাবণ নিজেও জানে না তারজন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।শ্রাবণ এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বাসায় আসার জন্য গাড়ি রিজার্ভ করে।চাইলেই বাড়ির গাড়িটা ড্রাইভারকে দিয়ে আনিয়ে নিতে পারতো কিন্তু এতে সারপ্রাইজ টা দেওয়া হবে না।
বাসার কাছে এসে শ্রাবণ কলিংবেল চাপে।
মেঘ রান্না করছিলো।
মেঘঃদুর এই দুপুর বেলা আবার কে এলো?কাজের বারোটা বাজাবে বলে।
মেঘ বিড়বিড় করে দরজা খুলেই অবাক।
শ্রাবণ আসবে তাও এইভাবে ভাবনার বাইরে ছিলো।অনেকসময় পেরিয়ে গেলো।মেঘ শ্রাবণের দিকে তাকিয়েই আছে।শ্রাবণের ডাকে ঘোর কাটে মেঘের।
শ্রাবণঃকি ব্যাপার ভেতরে যেতে দেবে নাকি এখানেই দাড় করিয়ে রাখবে।এমনিতেই জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে গেছি।
মেঘের চোখে আঙুল দিয়ে তুড়ি বাজায় শ্রাবণ।
মেঘঃআপনি আজ।
শ্রাবণঃকেনো?খুশি হওনি।তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো তাই চলে আসলাম।(একটু আস্তে করেই বলে)
মেঘঃকি বললেন?
শ্রাবণঃবললাম যে ডিলটা কাল রাতেই ফাইনাল হয়ে গেছে তাই চলে আসলাম।ওখানে যার জন্য যাওয়া সেই কাজ যখন শেষ বসে থেকে কি করবো বলো?
মেঘ অবাক হয়ে শ্রাবণের ব্যবহার দেখছে।এর আগে শ্রাবণ মেঘের সাথে যতবার কথা বলেছে সবসময় রাগী রাগী ভাব থাকতো আজ কি এমন হলো যে এতো ভালো বিহেভ করছে।
শ্রাবণঃকি হলো ভাবনাতেই থাকবে নাকি দরজা থেকে সরে দাঁড়াবে।
মেঘঃওহ হ্যা আসুন।
শ্রাবণ ভেতরে ডুকতে ডুকতে মেঘকে বলে….
শ্রাবণঃমামনি কোথায়?
মেঘঃওনার রুমে।
শ্রাবণঃএক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে আসো।আমি গিয়ে মামনির সাথে দেখা করে আসি।
মেঘঃআচ্ছা।
শ্রাবণ তার মায়ের রুমে গিয়ে দরজায় ঠোকা দেয়………
শ্রাবণঃমামনি দরজা খুলো আমি শ্রাবণ।
একটুপর দরজা খুলার আওয়াজ…….
শ্রাবণ ভেতরে আসতে যাবে অমনি চোখ যায় তার মায়ের দিকে।চোখ থেকে অবিরাম জল গড়িয়ে পড়ছে।শ্রাবণের বিশ্বাস হচ্ছে না যে এটা তার মা।এক ছুটে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
শ্রাবণের মাঃপাগল ছেলে কাঁদছিস কেনো?
শ্রাবণঃমামনি এটা কিভাবে সম্ভব হলো?
শ্রাবণ তার মায়ের পায়ের দিকে ইশারা করে।শ্রাবণের কান্নার কারণ হচ্ছে আজ প্রায় তিনবছর পর সে তার মাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে।মাকে এই অবস্থায় শ্রাবণ যে কতোটা খুশি তা বলে বুঝানো যাবে না।
শ্রাবণঃমামনি তুমি ভালো হয়ে গেছো।ইয়ায়ায়ায়াহু আমার মামনি আবার হাটাচলা করে।
শ্রাবণ মাকে ধরে চারিদিক ঘুরে চিৎকার করে বলছে।
শ্রাবণের মাঃশ্রাবণ পড়ে যাবো থাম এবার।
শ্রাবণঃওহ হ্যা।তোমার পা ঠিক হলো কবে?
শ্রাবণের মাঃএটার জন্য সব ক্রেডিট মেঘের।
শ্রাবণঃমেঘ কিভাবে তোমার পা?
শ্রাবণের মাঃসেটা পরে বলছি আগে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আয়।তারপর সব জানবি।
শ্রাবণঃওকে আমি আসছি।
শ্রাবণ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হবে এর মাঝেই মেঘ এসে সামনে দাঁড়ায়।শরবতের গ্লাসটা রেখে চলে যাবে শ্রাবণ তখন মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে…….
শ্রাবণঃথেংক ইউ মেঘ।
মেঘ ঘুরে তাকায়।চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করে কিসের জন্য?
শ্রাবণঃমামনিকে সুস্থ করে তুলার জন্য।
মেঘঃওহ মাকে সুস্থ করেছি বলে থেংক্স দিয়ে ছোট করতে চাইছেন।
শ্রাবণঃআসলে ঠিক সেটা নয় মেঘ।
মেঘঃআমার বুঝা হয়ে গেছে।মেয়ে মাকে সুস্থ করার জন্য মায়ের সেবা করেছে আর আপনি সেটাকে অন্যভাবে নিলেন।
শ্রাবণঃমেঘ আমি এটা কখন বললাম।আমি শুধু এটা বলতে চেয়েছি এতোদিন আমি পারিনি মামনিকে হাজার চেষ্টা করেও সুস্থ করতে আর তুমি তিনমাসের মধ্যেই মামনিকে সুস্থ করে তুললে।
মেঘঃআর বুঝাতে হবে না।শরবত টা খেয়ে নিচে আসুন খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
শ্রাবণঃট্রাস্ট মি মেঘ আমি ওভাবে বলিনি।
মেঘ জবাব না দিয়ে নিচে চলে যায়।
খাবার টেবিলে বসে শ্রাবণের মা নিজেই বলা শুরু করেন।
শ্রাবণের মাঃতুই চলে যাওয়ার পর বউমা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে।দিনের পর দিন আমার সেবা করেছে।প্রতিদিন দুবার করে পায়ে মালিশ করতো।ঠিকমতো ওষুধ খাওয়াতো।মাঝে মাঝে ঘুম পাড়িয়ে দিতো।প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় আর সন্ধ্যের আগে রোজ দুবার করে পার্কে নিয়ে যেতো।হাতে হাত রেখে হাটতে শিখাতো।একটা সময় পায়ের টান গুলো হাল্কা কমতে শুরু করে।ডক্টর এর ট্রিটমেন্ট ও সাথে ছিলো।এইভাবে ধীরে ধীরে পায়ের ফুলা কমতে থাকে।একদিন তো উইলচেয়ার থেকে পড়ে গেছিলাম।মেঘ যখন আমাকে ধরে তুলবে তার আগেই আমি নিজে নিজে উঠার চেষ্টা করি।আর এরপর থেকে একটু একটু করে হাটতাম।আর এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।সব এই মেয়েটার জন্য।
মেঘকে উদ্দেশ্য করে।মেঘ এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলো।শ্রাবণ মেঘের দিকে একবার তাকায় আবার মায়ের দিকে তাকায়।এরপর আবার মেঘ নিচের দিকে তাকায়।
শ্রাবণের মাঃমেঘ না থাকলে আজ তো আমি হাটতেই পারতাম না।
মেঘঃমা কি সব ফালতু কথা বলছেন।আপনার হাটার পেছনে আপনার মনের জুরটাই ছিলো সবচেয়ে বড় শক্তি।আমি তো শুধু আপনার লাঠি হিসেবে কাজ করেছি।আপনার মনে আবারো স্বাভাবিক হওয়ার ইচ্ছা শক্তি ছিলো তাই আপনি শতবার পড়ে যাওয়ার পরেও হার মানেননি।আর তার ফল আজ আপনি নিজের পায়ে হাটাচলা করতে পারছেন।
শ্রাবণের মাঃতোর সাথে কথায় পারবো না।আয় বস আজ আমি তোকে খাইয়ে দিবো।
মেঘঃমা আপনি খেয়ে নিন আমি পড়ে খাবো।
শ্রাবণের মাঃআমার কথা অমান্য করে।আয় এখানে।
মেঘঃসরি মা।
মেঘ মায়ের পাশের চেয়ারে বসে।ফুলি এসে কি লাগবে না লাগবে সেটা দেখে গেলো।
শ্রাবণের মা অল্প ভাত মেখে মেঘের মুখের সামনে তুলে ধরেন।মেঘ এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না।আজ অনেকদিন পর মায়ের হাতে খাবে।খুশিতে মেঘের চোখে সুখের অশ্রু ধরা দিলো।
শ্রাবণের মাঃকি রে মা কাঁদছিস কেনো?
মায়ের কথায় শ্রাবণ চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে মেঘ সত্যি কাঁদছে।বুঝে উঠতে পারছে না মেঘ হঠাৎ কেনো কাঁদছে?
মেঘ কেঁদেই যাচ্ছে………
শ্রাবণের মাঃপাগল মেয়ে এইভাবে কেউ কাঁদে।
মেঘঃমা…….অনেকদিন পর মায়ের হাতে খাচ্ছে।যেন মনে হচ্ছে মেঘের মা আজ খুব আদর করে মেঘকে খাইয়ে দিচ্ছেন।
শ্রাবণের মাঃভাতের পাতে চোখের জল ফেলতে নেই মা।
মেঘের চোখের জল মুছে দিলেন।
মেঘ মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
শ্রাবণের মাঃনে হা কর।আর কান্না না।
মেঘঃহুম।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে শ্রাবণ আর ওর মা গল্প বসে গল্প করছেন।
শ্রাবণের মাঃওখানে সব ঠিকঠাক ছিলো তো শ্রাবণ।
শ্রাবণঃহ্যা মামনি সব ঠিক ছিলো।তাইতো কাজ গুছাতে বেশি সময় লাগেনি।আমি তো ভেবেছিলাম তিনমাসেরও বেশি সময় লাগবে।
শ্রাবণের মাঃশ্রাবণ কালকের তারিখটা তোর মনে আছে তো।
শ্রাবণঃকালকের তারিখ।
শ্রাবণ একটু ভাবনায় পড়ে যায় কালকে কি সেটা নিয়ে।একটু পর যখন মনে পড়ে কাল কি?তখন শ্রাবণ ওর মায়ের দিকে একপলক তাকায় মুহুর্তেই ভয়ানক দিনটার কথা মনে পড়ে যায়।দেরী না করে তাড়াতাড়ি মায়ের পাশ থেকে সরে ছাদে চলে যায়।আর এক মুহুর্ত মায়ের কাছে থাকলে নিজেকে সামলানো অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে যাবে।আর শ্রাবণের মা ও পারবেন না নিজেকে সামলাতে।
শ্রাবণ উঠে যেতেই মেঘ ওর শ্বাশুড়ির কাছে গিয়ে বসে।তারপর জিজ্ঞেস করে……..
মেঘঃমা কালকে কি আছে ওনি এভাবে চলে গেলেন কেনো?
শ্রাবণের মাঃমুখে আচল চেপে কান্না করছেন।
মেঘঃমা কি হয়েছে কাঁদছেন কেনো?
শ্রাবণের মাঃজানতে চাস কালকের দিনে কি হয়েছিলো?
মেঘঃকি হয়েছে?
শ্রাবণের মাঃকাল শ্রাবণের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী।
মেঘঃকতবছর হয়েছে?
শ্রাবণের মাঃকাল তিনবছর পূর্ণ হবে।
মেঘঃওহ মা বাবা মারা গেছেন কিভাবে ওনার কি কোনো রোগ ছিলো?
শ্রাবণের মাঃনা রে মা।একটা এক্সিডেন্ট সব শেষ করে দিলো।ওই এক্সিডেন্ট এর পর থেকে আমি হাটাচলা করতে পারতাম না।আর শ্রাবণ ওইদিনের পর থেকে নিজেকে প্রতিটা মুহুর্তে অপরাধী ভাবছে।
মেঘঃএক্সিডেন্টে ওনি নিজেকে কেনো অপরাধী ভাববেন এটা হয়তো আল্লাহর ইচ্ছা।কেনো ওনিই নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন।
শ্রাবণের মাঃশোণ কেনো শ্রাবণ নিজেকে দোষ দিচ্ছে।
মেঘঃহ্যা মা বলুন।না জানলে পারবোনা ওনার মন থেকে গিল্ট ফিলিংটা দূর করতে।
শ্রাবণের মাঃজানিস শ্রাবণ এমন রাগী ছিলো না।ও খুব হাসিখুশি আর ভালো মনের একটা ছেলে।সবসময় দুষ্টামি করা আর সবার সাথে মাস্তি করা ছিলো ওর নেশা।একদিন কারো সাথে দুষ্টামি না করলে ওর নাকি ভালো লাগতো না।ওর বাবা তখন আমাদের কোম্পানিটা দেখাশুনা করতেন।শ্রাবণ কে অনেকবার রিকুয়েস্ট করেছেন যে বাবার সাথে কোম্পানির দেখাশুনা কর।কিন্তু ওর একটাই কথা তুমি থাকতে জীবনেও ওই কোম্পানিতে আমি পা রাখবো না।আমার বুঝি লাইফটাকে সেলিব্রেশন করতে মন চায় না।তোমার মতো অতকাজ আমাকে দিয়ে হবে না।আরো অনেক কথা…..
সেদিন ছিলো শ্রাবণের জন্মদিন।শ্রাবণের বাবা অনেকটা জোর করে ওকে আমাদের অফিসটা দেখতে পাঠাবেন ভাবেন।কিন্তু শ্রাবণের একটাই কথা যাবে না।এরপর বাবার জুরাজুরিতে শেষমেশ রাজী হয়।তিনজনে মিলে সেদিন প্লেন হলো ঘুরাঘুরি করার পর একসাথে অফিসে যাওয়া।যেহেতু শ্রাবণের জন্মদিন তাই ওর কথা অনুযায়ী আগে ঘুরাঘুরি পরে যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবে।সেদিনই আমার ছেলের মুখে শেষ হাসি দেখেছিলাম এরপর থেকে শ্রাবণ হাসিটা কেমন ঘুটিয়ে নিলো।
মেঘঃতারপর কি হয়েছিলো।
শ্রাবণের মাঃপ্রথমত গাড়ি শ্রাবণ ড্রাইভ করে।কিন্তু ওনার ফোনে একটা কল আসার পর ওনি ড্রাইভ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন।শ্রাবণ বলে সে নিজে ড্রাইভ করবে।কিন্তু ওর বাবা মানতে রাজী না।বাধ্য হয়ে শ্রাবণ পিছনে এসে বসে।এরপর অফিস যাওয়ার পথে মাঝখানে গাড়ির ব্রেকফেইল হয়ে যায়।শ্রাবণ বুঝে উঠতে পারে না যে সে কি করবে?একদিকে বাবাকে বাঁচানোর জন্য গাড়ি কন্ট্রোল করা অন্যদিকে আমাকে বাঁচানোর জন্য কোনো একটা উপায় বের করা।
শ্রাবণ যখন বুঝতে পারে গাড়ি ব্রেকফেইল করেছে তখন গাড়ির দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেয়।তারপর বাবা ছেলে মিলে বাবাকে সরিয়ে ড্রাইভ সামলাতে যাবে এরমাঝেই সামনে থেকে একটা ট্রাক এসে গাড়ির সামনে পড়ে।শ্রাবণের বাবা শ্রাবণ কে সরিয়ে নিজেই গাড়ির ভেতরে থেকে যান।মুহুর্তেই সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।শ্রাবণের হাতে পায়ে ছুট লাগলেও আমার পা দিয়ে চলাচলের শক্তি হারাই।ওনাকে হাসপাতালে এডমিট করার সাথে সাথেই মারা যান।জানিস মা শ্রাবণ এইজন্য সবসময় নিজেকে দোষ দেয়।কিন্তু শ্রাবণ তো অপরাধী না।আসল অপরাধী কে সেটা হয়তো শ্রাবণ এখনো জানেনা।
মেঘঃআসল অপরাধী মানে কি মা।
শ্রাবণের মাঃআমাদের গাড়িটা এক্সিডেন্ট হয়নি মা।ওটার এক্সিডেন্ট করানো হয়েছে।আর যে করেছে শ্রাবণ তাকে ফেলে কখনো ক্ষমা না ও করতে পারে।ভেতরে ভেতরে ছেলেটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
মেঘঃমা কাল তাহলে ওনার জন্মদিন ও।
শ্রাবণের মাঃহ্যা মা।এরপর থেকে শ্রাবণ কে হাসতে দেখিনি।প্রতিটা জন্মদিন এখন ওর জন্য বিষাদময়।
মেঘঃমা কালকের দিন থেকে আপনার ছেলে হাসবে।ওনাকে যে আগের মতো হতেই হবে।
শ্রাবণের মাঃতুই পারবি তো মা।
মেঘঃপারতে আমাকে হবেই।মা আমি একটু বের হচ্ছি।আমার কিছু কাজ আছে।চিন্তা করবেন না।আমি সন্ধ্যে হওয়ার আগেই চলে আসবো।
শ্রাবণের মাঃঠিক আছে মা।তবে যেখানে যাবি একটু সাবধানে কেমন।
মেঘঃহুম।
মেঘ নিজের পার্টস আর কিছু টাকা সাথে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যের কিছু সময় আগেই মেঘ বাসায় ফিরে আসে।রুমে গিয়ে দেখে শ্রাবণ রুমে নেই।ফুলিকে জিজ্ঞেস করে….
মেঘঃফুলি তোর ভাইজান কে দেখেছিস।
ফুলিঃভাইজান তো সেই দুপুরের পর থেকে ছাদে এখনো নিচে আসেনি।
মেঘঃওহ ঠিক আছে।
মেঘ দ্রুত ছাদের দিকে পা বাড়ায়।ছাদে গিয়ে দেখে শ্রাবণ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।অনেকক্ষণ মেঘ শ্রাবণের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।শ্রাবণ এর খেয়ালই নেই ওর পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।মেঘ নিজে থেকেই কথা বলে।
মেঘঃকি ব্যাপার রুমে যাবেন না আর কতক্ষণ এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন।(ঘাড়ে হাত রেখে)
শ্রাবণ পাশ ফিরে তাকিয়ে মেঘকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে।পাগলের মতো কাঁদছে আর বলছে……
শ্রাবণঃবিশ্বাস করো মেঘ আমি বাপিকে মারিনি।কিভাবে যেন এক্সিডেন্ট টা হয়ে গেলো।আমার জন্য আমার মামনি তিনবছর নিজের পায়ে হাটতে পারেনি।আমার জন্য মামনিকে গায়ে সাদা শাড়ি জড়াতে হলো।আমি অনেক চেষ্টা করেছি বাপিকে বাঁচানোর কিন্তু পারিনি।
মেঘঃপ্লিজ আপনি একটু শান্ত্ব হন।
শ্রাবণঃজানো বাপি মারা যাওয়ার কিছুদিন পর জানতে পারি কেউ একজন আমাকে মেরে ফেলার জন্য গাড়ির নাকি ব্রেকফেইল করিয়ে রাখে।আর বাপি সেটা জেনে যায়।আমাকে বাঁচাতে গিয়েই সেদিন বাপি নিজেকে শেষ করে দিলো।বাপির মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী মেঘ আমি দায়ী।
মেঘঃআপনি কেনো নিজেকে দোষী ভাবছেন?দেখুন কেউ যদি আপনার ক্ষতি করতে আপনাকে মেরে ফেলতে চায় আর সেটা আপনার বাবা জেনে গিয়েও কিভাবে হাত ঘুটিয়ে বসে থাকবেন।আপনার বাবার এই সবকিছু তো আপনার জন্য সেই আপনাকেই যদি ওনি সুখ দিতে না পারেন তাহলে ওনি নিজেকে খুব অপরাধী মনে করবেন।আর শুনুন আজ থেকে নিজেকে একদম দোষ দিবেন না।কারণ আপনি নিজে ভালো করেই জানেন আপনি দোষী নন।শুধু শুধু কেনো নিজেকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন।আর আপনি এটা জানার চেষ্টা করেন কে আপনাকে সেদিন মারতে চেয়েছিলো।
শ্রাবণঃকিভাবে জানবো আমি?
মেঘঃআমার মন বলছে মা কিছু একটা আড়াল করছেন ওনি পারেন আপনাকে আসল অপরাধীর কথা বলতে যদি ওনি জেনে থাকেন তো।
শ্রাবণঃহতে পারে এইজন্য মামনি বার বার অফিসের ব্যাপার নিয়ে এতো চিন্তা করে।আমি কতো বুঝাই আমি সব দেখাশুনা করবো তাও কি জেনো খুঁজে।
মেঘঃহুম।তাহলে কাল থেকে আমরা জানার চেষ্টা করবো কে এর পিছনে আছে।
শ্রাবণঃতুমি আমার সাথে থাকবে।
মেঘঃহ্যা কেনো থাকবো না।এখনো আমাদের চুক্তির একবছর শেষ হয়নি যে মাঝপথে আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো।যতদিন চুক্তি মেয়াদ আছে ততদিন আমি আপনার পাশে থাকবো।
শ্রাবণঃওহ চুক্তি শেষ হলেই চলে যাবে।
মেঘঃহুম যেতে যে আমাকে হবেই।এই চুক্তিটা যে একবছরের জন্য ছিলো।
শ্রাবণ মেঘকে ছেড়ে নিচে চলে গেলো।মেঘ।মনে মনে ভাবছে…..
এই চুক্তি কেনো দেয়া একবছর কেনো যদি আমার মৃত্যুর পর আরো কোনো জন্ম থাকে সেই জন্মেও আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না।জানিনা এই চুক্তিতে কি আছে কেনো এই চুক্তি কি কারণ তার শুধু সময়ের অপেক্ষা।আমি অতীতের ভুলটা আর করতে চাইনা যে।আমি আর হারাতে পারবো না কিছু।আমার সেই শক্তি নেই।তবে ভালোই হয়েছে অতীতে যদি ভুল না করতাম তাহলে চোখ খুলতো না।জানতেও পারতাম না আর বুঝতেও পারতাম আসল ভালোবাসা কি?
চলবে……..

চুক্তির বউ ৫ম পর্ব

0

চুক্তির বউ ৫ম পর্ব

লেখা:তামান্না
শ্রাবণ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পারায় মেঘের উপরে গিয়ে পড়ে।এদিকে মেঘ ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে।মেঘের দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে শ্রাবণ।আজ যেন মেঘকে নতুন রূপে দেখছে।শ্রাবণ মেঘের অনেকটা কাছে চলে যায়।মেঘের নিঃশ্বাসের প্রতিটা শব্দ শ্রাবণের বুকে এসে লাগছে।এক অদ্ভুত ভালোলাগা শ্রাবণ কে ছুঁয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ করেই শ্রাবণের চুক্তির কথা মনে পড়ে।উঠতে গেলে আবার বিছানায় পড়ে যায়।
শ্রাবণ ভাবে মেঘ ঘুমিয়ে পড়লো তাহলে টান লাগলো কোথায়?তখনই ওর চোখ পড়ে নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে।শ্রাবণের হাতের ঘড়ি মেঘের শাড়ির আঁচলের সাথে আটকে আছে।এরজন্যই শ্রাবণ যখন উঠতে যাচ্ছিলো শাড়ির টান লেগে পড়ে যায়।ঘড়ি থেকে আচলটা সরিয়ে মেঘের থেকে দূরে সরে যায়।মনে মনে বলে….
তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি মেঘ কি করবো বলো আমি যে নিরুপায়।যদি এই চুক্তিটা আমাদের মাঝে না আসতো তাহলে এইভাবে তোমাকে কষ্ট পেতে দিতাম না।জানিনা কোনোদিন সত্যি টা তোমাকে বলতে পারবো কি না।শুধু এইটুকু বলতে পারি এই চুক্তির মাধ্যমেই তোমাকে এক বছরের জন্য হলেও নিজের বউ হিসেবে পেয়েছি এটাই অনেক।এই চুক্তিটা না থাকলে আজ তুমি আমার কাছে থাকতে না।এক বছর মেঘ মাত্র এক বছর।কিন্তু এখন এই বছর আমার কাছে অনেক কিছু।
কথাগুলো বলার সময় শ্রাবণের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করে।চোখের জল আড়াল করতে রুম থেকে বেড়িয়ে রুমের পাশে বেলকুনিতে চলে যায়।
এভাবেই কয়েকটা দিন কেটে যায়।শ্রাবণ মেঘকে অনেক টা সময় দেওয়ার চেষ্টা করে যদিও অফিসের কাজ সামলে খুব একটা সময় পায় না তবুও চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখে না।
সকাল বেলা শ্রাবণ নাস্তা করে অফিসে চলে যায়।মেঘ আর ওর শ্বাশুড়ি সোফায় বসে গল্প করছিলেন।এমন সময় মেঘের ফোনে একটা কল আসে।মেঘ ওর শ্বাশুড়ি মাকে বলে যে বাইরে একটা কাজ আছে যেতে হবে।মেঘের শ্বাশুড়ি খুব ভালো একজন মানুষ ওনি বাধা দেন নি মেঘকে।মেঘ ফুলিকে মায়ের খেয়াল রাখতে বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়।
একটুপর একটা টেক্সিতে করে একটা রেস্টুরেন্টে যায়।মেঘ যখন রেস্টুরেন্ট পৌঁছায় তখন দেখে পিয়ালি ওর জন্য অপেক্ষা করছে।তারপর কফি অর্ডার করে মেঘ চেয়ারে বসে।
মেঘঃহ্যা পিয়ালি বল কি জন্য ডেকেছিস?
পিয়ালিঃমেঘ তুই কেমন আছিস?
মেঘঃভালো।(একটা চাপা হাসি দিয়ে)
পিয়ালিঃস্যারের সাথে বিয়ের পর তো তোর সাথে আমার আর যোগাযোগ হয়নি।আন্টি মারা গেলেন তাকেও গিয়ে দেখতে পারলাম না।সরি রে।
মেঘঃদুর তুই সরি কেনো বলছিস?সব আমার কপাল রে।
পিয়ালিঃসত্যি কি তুই ভালো আছিস?
মেঘঃভালো না থাকার কি আছে?এতো বড়লোক একজন মানুষ এর সাথে আমার বিয়ে হলো ভালো না থেকে উপায় আছে।
পিয়ালিঃতোর কথাবার্তা এমন লাগছে কেনো মনে হচ্ছে কিছু একটা আড়াল করছিস?
মেঘঃছাড় তো এসব কথা বল কেনো ডেকেছিস?
পিয়ালিঃতুই কি কিছু জানিস না?
মেঘঃকোন ব্যাপারে?
পিয়ালিঃস্যার মানে তোর স্বামী।
মেঘঃকেনো কি হয়েছে?
পিয়ালিঃঅফিসে তোর পদে একজন কে জব দেওয়া হয়েছে।
মেঘঃজানি সে একজন মেয়ে।
পিয়ালিঃজানিস তাহলে চুপ করে আছিস কেনো?
মেঘঃমানে…….
পিয়ালিঃস্যার তিনমাসের জন্য রিদিকে নিয়ে আমেরিকা যাচ্ছেন।
মেঘঃতো।
পিয়ালিঃমেঘ কি হয়েছে তোর।ওনি তোর স্বামী আর তুই ওনাকে আটকাবি না।কি দরকার এসব ডিল করার আর তিনমাসের জন্য অন্য দেশে যাওয়ার।আর ওই মেয়েটাকেই কেনো নিয়ে যাবেন।অফিসে তো অন্য স্টাফেরা আছে।
মেঘঃঅফিসের কাজে যাবে এতে তুই এতো ভাবছিস কেনো?
পিয়ালিঃমেঘ তুই তো এতো বোকা না।ওই মেয়েটা সারাক্ষণ স্যারের মাথায় চড়ে থাকে।স্যার যেখানে যাবেন ওই রিদি মেয়েটাও সেখানে যাবে।
মেঘঃপিয়ালি এতে এতো ভাবার কি আছে।অফিসের কাজেই তো যাচ্ছে।
পিয়ালিঃমেঘ বাচ্চাদের মতো বিহেভ করিস না।কেনো বুঝেও না বুঝার ভান করছিস?তোর স্বামী তোকে না বলে অফিসের কাজে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে আমেরিকা যাবে আর তুই একা একা থাকবি।
মেঘঃপিয়ালি প্লিজ এসব কথা নাইবা বললি ভালো লাগছে না আমার এইগুলো শুনতে অন্য কিছু বল।
পিয়ালিঃওহহ সরি।একটা কথা মেঘ তুই কি শাণের জন্য স্যারকে দূরে সরিয়ে রাখছিস?
মেঘঃপিয়ালি শাণ কে এর মাঝে টেনে আনছিস কেনো?
পিয়ালিঃমেঘ তুই যদি ভেবে থাকিস শাণের জন্য স্যারকে অবহেলা করবি তাহলে জেনে রাখ তুই কিন্তু তোর জীবনের সব চাইতে বড় ভুলটা করতে যাচ্ছিস।
মেঘঃভুল….একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয় মেঘ।ভুল তো সেদিন করেছি যেদিন শ্রাবণ মাহমুদের বউ হয়ে ওই বাড়িতে পা রেখেছি।
পিয়ালিঃমেঘ……..একটা ধমক দিয়ে।
মেঘঃতুই স্যারের জন্য আমাকে ধমকালি।
পিয়ালিঃসরি রে।মেঘ তুই ভালো করেই জানিস শাণ একটা প্রতারক।আর তুই শাণের জন্য স্যারকে দূরে কেনোই বা রাখবি বল।
মেঘঃশাণ প্রতারক না পিয়ালি।
পিয়ালিঃমিথ্যে ভালোবাসার মায়াজালে আটকা পড়েছিস তুই তাই বুঝতে পারছিস না কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল।তবে হ্যা যখন বুঝতে পারবি তখন যেন খুব বেশি দেরী না হয় মেঘ।
মেঘঃশাণকে নিয়ে আর একটা কথাও আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই না।আর হ্যা ওনি আমার স্বামী।আমি ওনাকে নিয়ে কি ভাববো না ভাববো সেটা আমি জানি।আর আমি এটাও জানি আমাকে ঠিক কি করতে হবে।মাত্র তো তিনমাস তারপরেই সব শেষ।
পিয়ালিঃমানে কি উল্টা পাল্টা বলছিস?
মেঘঃজাস্ট ওয়েট এন্ড সি।
এইবলে মেঘ উঠে দাঁড়ায়।পা বাড়ায় চলে যাওয়ার জন্য।পিয়ালি পিছন থেকে শুধু একটা কথাই বলে।
পিয়ালিঃঅতীতে যে ভুলটা করেছিলি সেই ভুল আর করিস না মেঘ।সব হারাবি তুই।
মেঘ পিয়ালির কথাটা শুনে অবাক হয়ে পিছনে তাকায়।তারপর বলে….
মেঘঃহারানোর মতো নেই কিছু যা ছিলো অনেক আগেই হারিয়েছি নতুন করে কিছু হারাবে না আমার।আর অতীতে ভুল আমি করিনি।
এইবলে মেঘ সামনের দিকে হাটা শুরু করে।তারপর বাসায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
বাসায় এসে বার বার পিয়ালির কথাগুলো মনে পড়তে থাকে।ভুলে যেতে চাইলেও কানে বাজে একটা কথা অতীতের ভুলটা করিস না মেঘ।
মেঘ রুমে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
আমি তো কোন ভুল করিনি তাহলে কেনো আমাকে এতো কষ্ট পেতে হচ্ছে।কেনো আমার সাথেই এমন হচ্ছে।সব ভুলেই তো ভালো ছিলাম আমি কেনো স্যার চুক্তিটা মাঝখানে নিয়ে এলো।কেনো এই চুক্তি দিয়েই আবার আমার মনে শাণের দেওয়া আঘাত গুলো ফিরিয়ে দিলো।কেনো কেনো কেনো?
মেঘের কান্না যেন থামছেই না।
রাতে শ্রাবণ বাসায় ফিরে ব্যাগ প্যাকিং করা শুরু করে।মেঘ খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে আসে।এসে দেখে শ্রাবণ ব্যাগ গুছাচ্ছে।
মেঘঃআমি হেল্প করবো।
শ্রাবণঃনা আমি নিজেই করে নিবো।
মেঘঃআচ্ছা।মা অপেক্ষা করছে খাবার টেবিলে।
শ্রাবণঃতুমি যাও আমি আসছি।
মেঘ যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই শ্রাবণ আবার মেঘকে ডাকে…….
শ্রাবণঃমেঘ শোণ।
মেঘ থেমে যায়……
মেঘঃজ্বি বলেন।
শ্রাবণঃকোথায় যাচ্ছি ব্যাগ কেনো গুছাচ্ছি জিজ্ঞেস করলে না?
মেঘ অনেকটা অবাক হয় শ্রাবণের এমন কথায় তারপর বলে……..
মেঘঃকারো পারসোনাল ব্যাপারে জানার তেমন ইচ্ছা বা আগ্রহ কিছুই আমার নেই।
শ্রাবণঃকিন্তু তুমি তো আমার…….
মেঘঃহুম আমি….(একটু থেমে)আমি আপনার #চুক্তুর_বউ ।তাই আমার মনে হয় না কোনো কিছু জানার অধিকার আমি রাখি।একবছর তো চলেই যাচ্ছে হাতে মাত্র তিনমাস পনেরো দিন তারপর আপনার এই এগ্রিমেন্ট থেকে আমি মুক্ত।
মেঘ চলে গেলো……..
শ্রাবণ এর মাথায় ছিলোই না মাত্র তিনমাস পনেরো দিন সময়।তার মাঝে তিনমাস শ্রাবণ আমেরিকাতে থাকবে ইচ্ছে করছে ডিলটা এক্ষুণি ক্যান্সেল করে দেই কিন্তু সেই চান্স ই নেই।আগেই সব ফাইনাল হয়ে গেছে।
এসব ভাবছিলো এমন সময় রিদির কল……
শ্রাবণঃহ্যা রিদি বলো।(কাঁপা কাঁপা গলায়)
রিদিঃস্যার আপনি ঠিক আছেন তো।
শ্রাবণঃহ্যা আমি ঠিক আছি।কি জন্য কল দিলে সেটা বলো?
রিদিঃস্যার আমরা কাল সকালেই এয়ারপোর্ট এ যাচ্ছি।আপনি আমাকে কষ্ট করে পিক করতে পারবেন।
শ্রাবণঃতুমি নিজেই এয়ারপোর্ট চলে এসো আমি অপেক্ষা করবো।
রিদিঃএকই জায়গায় যখন যাচ্ছি তখন একসাথে গেলেই বা কি দোষ?
শ্রাবণঃওকে ফাইন একসাথে যাবো।
শ্রাবণ রাগে রাগে গজগজ করতে লাগলো।কি জন্য যে ওকে জব দিতে গেলো এখন সেটা হারে হারে টের পাচ্ছে এই মেয়ে সারাক্ষণ মাথার কাছে ছারপোকার মত ঘুরে বেড়ায়।খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই নাকি।হাত থেকে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে।তারপর নিচে যায় খাবার খেতে।
শ্রাবণঃমামনি কালকে সকালের ফ্লাইটে আমেরিকা যেতে হচ্ছে।তিনমাসের জন্য একটা ডিল ফাইনাল করতে যাচ্ছি।তুমি একটু সাবধানে থেকো।
শ্রাবণের মাঃতিনমাস অনেকটা লম্বা সময় হয়ে গেলো না।
শ্রাবণঃকিছু করার নেই মামনি সাইন করে ফেলেছি যেতেই হবে।
শ্রাবণের মাঃএক কাজ কর বউ মাকে সাথে নিয়ে যা।বিয়ের পর তো ওকে নিয়ে কোথাও যাওয়া হয় নি।সারাদিন বাসায় একা একা থাকে।
মেঘঃনা মা আমি এখানেই ভালো আছি।আমার জন্য কারো কাজে ডিস্টার্ব হোক এটা আমি চাই না।আর আমি চলে গেলে আপনার দেখা শুনা করবে।
শ্রাবণের মাঃসেকি রে মা।তাই বলে তুই যাবি না।
মেঘঃনা মা আমি যাবো না।
শ্রাবণঃকারো যাওয়া লাগবে না আমার সাথে।রিদি আছে আমি সব সামলে নেবো।
খুব জুড়ে কথাটা বলে শ্রাবণ খাবার না খেয়েই উঠে গেলো।শ্রাবণের মা পিছন থেকে ডাকলেও শুনে না।
মেঘ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে।আজ শ্রাবণ চলে যাবে।শ্রাবণ এর জন্য নাস্তা বানাতে গেলো।
সকাল আটটার দিকে শ্রাবণ মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বের হবে।তখন পিছন ঘুরে একবার তাকায়।মেঘ বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে।শ্রাবণ মেঘকে ডাক দিবে ভেবে আবারো থেমে যায়।
কিছু না বলেই বেড়িয়ে যায়।শ্রাবণ ভাবছে হয়তো মেঘের মনে নিজের জন্য বিন্দুমাত্র অনুভুতির জন্ম হয়নি।তাই মেঘ ওর থেকে দূরে দূরে থাকছে।
অন্যদিকে মেঘ ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।শ্রাবণ যখন গাড়িতে উঠছিলো তখন আবার উপরে তাকায়।শ্রাবণ কে নিচে দেখে মেঘের ঘুর কাটে।একই ওনি তো চলে যাচ্ছেন।আমাকে একবারও ডাকলেন না কেনো?একটুপর শ্রাবণ গাড়িতে উঠে তারপর এয়ারপোর্ট এর দিকে এগিয়ে যায়।
মেঘের মন ঘরে ঠিকছে না।বার বার মাথায় পিয়ালির কথাগুলোই বাজছে।পিয়ালির কথার মাঝে কেমন যেন রহস্যের চাপ ছিলো মেঘ সেটা বুঝতে পেরেছে ঠিকই কিন্তু কি লুকাচ্ছে পিয়ালি সেটাই মেঘ জানে না।
শ্রাবণ আমেরিকাতে পৌঁছার পর মাকে কল করে জানিয়ে দিলো।মেঘ মনে মনে একটু কষ্ট পেলেও পরক্ষণে মনে পড়ে মেঘ শ্রাবণের #চুক্তির_বউ।
কেনোই বা আমার কাছে কল করবে আমি তো ওনার কিছুই না।এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘের মন খারাপ হয়ে যায়।কখনো শ্রাবণ কে নিয়ে ভাবতে গেলেই মনে পড়ে আর মাত্র কয়েকমাস তারপরেই সব শেষ।কি দরকার এসব?কেনোই বা মায়ার বাধা পড়বে।কিছুদিন পর তো আলাদা হয়েই যাবে।তাহলে আর এতো ভাববে কেনো?
এদিকে শ্রাবণ চলে যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর মেঘ আর ওর শ্বাশুড়ি মিলে বেশ ভালোই আড্ডা দিচ্ছেন।কলিংবেল
এর আওয়াজ কানে আসতেই মেঘ দরজার দিকে আগায়।ভাবতে থাকে এসময় কে আসতে পারে।কারো আসার কথা ণা।তাহলে কে এলো এই সন্ধ্যেবেলা।
মেঘ দরজা খুলে দরজার সামনে তাকিয়ে পিয়ালিকে দেখে একটা হাসি দিলো।তারপর ওকে ভেতরে নিয়ে বসালো।
মেঘঃআজ হঠাৎ কি মনে করে?
পিয়ালিঃকেনো আমি আসতে পারি না?
মেঘঃএই খালি প্যাচ টেনে কথা বলিস কেনো?
পিয়ালিঃদেখেন না আন্টি আপনার বউমা কতো শয়তান।বিয়ের পর নিজের বেষ্ট ফ্রেন্ড কে তো ভুলেই গেছে একবার খুঁজ নিয়েও দেখে না বেঁচে আছি নাকি মারা গেছি।
শ্রাবণের মাঃহ্যা তাইতো।বউমা তুমি ওর খুঁজ নেওনি এটা কি সত্যি?
মেঘঃমা ওর কথা বিশ্বাস করবেন না তো গতসপ্তাহে আমরা দেখা করলাম।শাঁকচুন্ন
ি টা সেটা চেপে যাচ্ছে।
পিয়ালিঃবেশি বেশি বকবক করিস না যা আমার জন্য চা নিয়ে আয়।চা খেতে খেতে এই সন্ধ্যেবেলা একটা আড্ডা হয়ে যাবে।
শ্রাবণের মাঃহ্যা বউমা যাও তুমি চা নিয়ে আসো আমি ওর সাথে গল্প করি।
মেঘ চলে যাওয়ার পর পিয়ালি আর মেঘের শ্বাশড়ি মিলে গল্প করছেন।
পিয়ালিঃআপনার শরীর এখন কেমন আছে আন্টি?
শ্রাবণের মাঃএইতো আছি রে মা ভালো।তোর কি খবর?
পিয়ালিঃভালো আছি।আন্টি স্যার কেমন আছেন?
শ্রাবণের মাঃকাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত কল করার সময় পায়না।মাঝে মাঝে কল করে খুঁজ নেয়।
পিয়ালিঃআন্টি মেঘ কি এখনো কিছু জানতে পারেনি?
শ্রাবণের মাঃমেঘ এখনো ওর সাথে স্বাভাবিক হতে পারেনি পিয়ালি।ওরা দুজন যে আলাদা থাকে সেটা আমি জানি।আমি মেঘকে বলেছি শ্রাবণের থেকে সব জেনে নিতে কিন্তু মেয়েটা কেনো যেন এক পা আগালে দুপা পিছিয়ে পড়ে।
পিয়ালিঃআপনি নিজেই তো বলে দিতে পারেন।
শ্রাবণের মাঃআমি চাই মেঘ নিজে থেকে বুঝে নিক।শ্রাবণ ওর স্বামী শ্রাবণের ব্যাপারে কথা বলার অধিকার ওর আছে কিন্তু কেনোও মেয়েটা স্বাভাবিক হচ্ছে না সেটাই মাথায় যাচ্ছে না।
পিয়ালিঃসেদিন আমি অনেক বুঝিয়েছি কাজ হয় নি।ও চাইলেই স্যারকে আমেরিকা যাওয়া থেকে আটকাতে পারতো।
এরইমাঝে মেঘ চা নিয়ে হাজির…………
মেঘঃআমাকে রেখে কি কথা হচ্ছে শুনি?
পিয়ালিঃআর কথা হলো কই।চাইলাম আন্টির সাথে একটু সুখ দুঃখের কথা ভাগাভাগি করবো তা না দিলি এসে জল ঢেলে।
মেঘঃগরম চা ঢেলে দিবো বলে দিলাম।তুই মায়ের সাথে গল্প করবি তাতে আমি আবার জল ঢাললাম কই।আমি তোকে বারণ করছি নাকি যে মায়ের সাথে আড্ডা দিস না।এক নাম্বারে শয়তান মেয়ে।
শ্রাবণের মাঃথামবি তোরা।কই একটু বান্ধবী কে নিয়ে গল্প করবি তা না ঝগড়া করে যাচ্ছে।
মেঘ একটু হেসে পিয়ালির কাছে বসে।তিনজনে মিলে আড্ডা দিয়ে অনেকটা সময় কাটায়।তারপর রাতের খাবার খেয়ে পিয়ালি চলে যায়।মেঘ অনেক জুড় করে কিন্তু পিয়ালি কাজের অজুহাত দেখিয়ে পালিয়ে গেলো।
চলবে………..

চুক্তির বউ ৪র্থ পর্ব

0

চুক্তির বউ ৪র্থ পর্ব

লেখা:তামান্না
হাসপাতালের সামনে এসে শ্রাবণ ব্রেক করতেই মেঘ ধাক্কা খায় সাথে সাথেই মেঘের ঘোর কাটে…
শ্রাবণঃনামো।
মেঘঃআপনি ভেতরে যাবেন না।
শ্রাবণঃনা আমার অফিসে কাজ আছে। তুমি অপেক্ষা করো আমি বিকেলে এসে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাবো।
মেঘঃআপনি না বললেন মিটিং কেন্সেল করেছেন।
শ্রাবণঃহ্যা করেছি।
মেঘঃতাহলে কি কাজ অফিসে?
শ্রাবণঃনতুন যে আসবে তাকে সমস্ত কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে।
মেঘঃসেটা তো ম্যানেজার কে বলে দিলেই হয় আপনার যাওয়ার কি দরকার?
শ্রাবণঃজয়েন যে করবে সে একজন মেয়ে আর আমার খুব কাজের কেউ।
শ্রাবণের এমন কথায় মেঘ প্রথমে একটু কষ্ট পেলেও পরে আবার সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে…..
মেঘঃস্পেশাল কেউ হয়।
শ্রাবণঃহ্যা স্পেশাল।
মেঘ আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে যায়। একবার ও পিছন ফিরে তাকায়নি।এক রকম দৌড় দিয়ে হাসপাতালের ভেতর ডুকে যায়। শ্রাবণ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অফিসের দিকে গেলো।
মেঘ সারাদিন তার মায়ের সেবা করেছে মায়ের সাথে অনেক আড্ডা দিলো।
মেঘের মাঃমেঘ একটা কথা বলি।
মেঘঃহ্যা মা বলো কি বলবে?
মেঘের মাঃতুই শ্রাবণের সাথে ভালো আছিস তো।
মেঘঃমা এটা কেমন প্রশ্ন? ভালো না থাকলে কি আজ শ্রাবণ নিজে আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়ে যেত।
মেঘের মাঃআমি জানতাম শ্রাবণ তোকে বুঝবে।
মেঘঃহুম……..
শ্রাবণ অফিসের নতুন কর্মচারী কে কাজ বুঝিয়ে দিলো তারপর হাসপাতালে গেলো।
শ্রাবণঃএটা কি হলো মা?(ভেতরে ডুকতে ডুকতে)
মেঘের মাঃকেনো বাবা কি হয়েছে?
শ্রাবণঃমেয়েকে কাছে পেয়ে ছেলেকে ভুলে গেলেন এটা কিন্তু ঠিক হলো না।
মেঘের মাঃকে বলেছে ভুলে গেছি?
শ্রাবণঃতা নয়তো কি?মেয়েকে নিজের বুকে জড়িয়ে রাখলেন আর আমি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছি।
মেঘের মাঃশোণ ছেলের কথা।এদিকে এসো তো।
শ্রাবণ একটা চেয়ার টেনে ওনার পাশে বসলো।মেঘ বার বার শ্রাবণের দিকে তাকাচ্ছে।মায়ের কাছে এলে ছেলেটা কেমন অন্যরকম হয়ে যায় আর বাসায় সবসময় গোমড়া মুখ নিয়ে থাকে।
কি আছে ওনার মনে?কেনো এমন অভিনয় করছেন?নিজেতো কষ্ট পাচ্ছেন সাথে আমাকেও একটা চুক্তির মাঝে আটকে রাখছেন।ওনি আসলেই চান টা কি?
শ্রাবণঃহ্যা মা বলুন।
মেঘের মাঃআমার না এইখানে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর পারছি না থাকতে।
মেঘঃকি বলছো মা?তুমি ঠিক আছো তো ডাঃ কে ডাকবো?
মেঘের মাঃনা রে মা আমি ভালো আছি।আমার না বাড়ি যেতে খুব ইচ্ছে করছে।আমাকে নিয়ে যা এখান থেকে।
মেঘ একবার শ্রাবণের দিকে তাকায় তারপর আবার মায়ের দিকে তাকায়।শ্রাবণ হয়তো বুঝতে পারছে মেঘের চোখের ভাষা। তাই শ্রাবণ নিজেই মুখ খুলে।
শ্রাবণঃমা আমি ডাঃ কে বলে দেখছি রিলিজ করে দেয় কি না?
মেঘঃকিন্তু মা কে নিয়ে যাবো কোথায়?
শ্রাবণঃকেনো?আমাদের বাড়ি আছে কি জন্য?
মেঘঃওখানে নেওয়া টা ঠিক হবে না।
শ্রাবণঃআমি তোমার কোনো কথাই শুনছি না।মা আজ আমাদের এইখানেই যাবে।আর এখন থেকে ওখানেই থাকবেন এটা আমার ডিসিশন। তুমি কোনো কথা বলবে না এটাই ফাইনাল।
আমি দেখি ডাঃ কি বলেন।
তারপর শ্রাবণ ডাঃ এর সাথে কথা বলতে গেলো…..
শ্রাবণঃডক্টর আসবো।(দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)
ডাক্তারঃহ্যা শ্রাবণ এসো।কিছু বলবে।
শ্রাবণঃআসলে আমি চাইছিলাম মাকে আজকেই বাসায় নিয়ে যেতে এখানে থাকতে হয়তো ওনার অসুবিধা হচ্ছে।
ডক্টরঃসেটা ঠিক তবে শ্রাবণ ওনার ঠিক মতো যত্ন নিতে হবে যদি ও ওনার হাতে সময় খুব কম তাও যতদিন আছেন ততদিন তোমাদের একটু কষ্ট করতে হবে।
শ্রাবণঃএটা কোনো ব্যাপার না ডাঃ আমি আর মেঘ সব সামলে নিবো।ওনার সেবার কোনো ত্রুটি আমি রাখবো না।
ডক্টরঃসেটা আমি জানি শ্রাবণ তোমাকে তো আমি আজ থেকে জানিনা।তোমার মায়ের দিকটাই দেখো না আজ দুবছর ধরে ওনার এই অবস্থা অথচ তুমি ওনাকে সব রকম ভাবে সাহায্য করছো।
শ্রাবণঃমামনির এই অবস্থার জন্যতো আমিই দায়ী ডক্টর যদি একটু সেবা করে আমার পাপের বুঝা টা হাল্কা করতে পারি সেটাই বা কম কিসের।
ডক্টরঃদেখো আমি এভাবে বলিনি।তুমি আমার কথায় কষ্ট পেলে আমি দুঃখিত শ্রাবণ।আসলে এ পর্যন্ত তোমার মায়ের সবরকম ট্রিটমেন্ট এই হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয় আর সেটা আমি ই হ্যান্ডেল করে আসছি। আমি তো সবই জানি তাই বললাম। I am sorry Shrabon.
শ্রাবণঃIt’s okay Doctor…..আমি কি মাকে নিয়ে যাবো।
ডক্টরঃতোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে।দাড়াও আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি তুমি আজকেই ওনাকে নিয়ে যাবে।
শ্রাবণঃThank You Doctor.Thank You So Much…..
ডক্টরঃএটা আমার দায়িত্ব শ্রাবণ।আমি জানি ওনার কোনো অযত্ন হবে না।
শ্রাবণঃআসি তাহলে।
ডক্টরঃতুমি যাও আমি ওনার রিলিজের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
শ্রাবণঃOkay….
তারপর শ্রাবণ কেবিনে ডোকে মেঘের মায়ের সাথে গল্প করতে লাগলো।ডক্টর ডিসচার্জ পেপারে সই করতে বলে মেঘের মাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেয়।
এরপর ওরা বাসায় চলে আসে।এখানে আসার পর মেঘকে সবদিকটাই সামলাতে হচ্ছে।একদিকে মায়ের সেবা অন্যদিকে শ্বাশুড়ি মায়ের যত্ন সব মিলিয়ে মেঘ একটু চাপে থাকলেও কাউকে কোনোপ্রকার কষ্টে ফেলতে চায় না নিজের হাতেই সব কাজ সামলে নেয় মেঘ।
শ্রাবণ ও অনেক হেল্প করে মেঘের কাজে।যতটা সময় বাসায় থাকে সেই সময় টুকু মেঘকে কাজে সাহায্য করে।
এভাবেই দিন কেটে যায় দেখতে দেখতে মেঘ আর শ্রাবণের বিয়ের প্রায় ৪ মাস কেটে যায়। মেঘ অনেকবার চেষ্টা করেছে শ্রাবণের ব্যাপারে সব জানতে কিন্তু বরাবরি মেঘকে হার মানতে হচ্ছে।একটা সময় ছিলো মেঘ শুধুমাত্র একজন স্টাফ ছিলো শ্রাবণের। আর আজ শ্রাবণের বউ।যদি ও এটা চুক্তির মাঝে সীমিত ছিলো তাও এই কয়েকমাসে শ্রাবণের প্রতি মেঘের একটা টান জন্মাতে শুরু করে।মেঘ নিজেও জানে না সে শ্রাবণের মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে।অথচ এই সম্পর্ক টা আর পাঁচটা সম্পর্কের মতো স্বাভাবিক না।মেঘ বার বার শ্রাবণের সমস্ত অতীত জানতে চায় শত চেষ্টার পরেও মেঘের জানা হয়ে উঠে না।
এই চার মাস ভালো কাটলেও বিপত্তি ঘটে পাঁচ মাসের মাথায়।মেঘের জীবন থেকে হারিয়ে যায় তার সবচাইতে কাছের মানুষ।বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।হ্যা সে আর কেউ না মেঘের মা।আজ সকালের ঘটনা……..
শ্রাবণ অফিসে যাওয়ার পর মেঘ,মেঘের মা,মেঘের শ্বাশুড়ি সবাই মিলে একটা গল্প করছিলেন।হঠাৎ করেই মেঘের মা বুকের ব্যথায় চটপট করতে থাকেন।মেঘ দ্রুত ডাঃ কে কল করে একটা এম্বুলেন্স এ করে ওর মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শ্রাবণের মাকে বাসায় রেখে গেলো। মেঘ শ্রাবণ কে কল করে হাসপাতালে আসতে বলে। যখন শ্রাবণ হাসপাতালে যায় মেঘের মা শ্রাবণের হাত ধরে শুধু একটাই কথা বললেন……
মেঘের মাঃশ্রাবণ আমার মেয়েটার খেয়াল রেখো।সব হারিয়েছে ও আজ আমি চলে যাচ্ছি। হয়তো আল্লাহ আমাকে এই পৃথিবীর সুখ থেকে বঞ্চিত করতে চান তাই তো আজ আমাকে ওপারে যাওয়ার জন্য ডাকছেন।আমি চলে যাওয়ার পর ওর আপন বলতে তুমি আর তোমার মা থাকবে।তুমি আমার মেয়েটাকে একটু ভালো রেখো বাবা।
শ্রাবণঃমা প্লিজ শান্ত হন।কিচ্ছু হবে না আপনার এক্ষুণি ঠিক হয়ে যাবেন।আমি ডক্টর কে ডাকছি।
শ্রাবণ ডাঃ কে ডাকলে গেলে মেঘ খুব জুরে একটা চিৎকার দেয়…..
মেঘঃমা……….ও মা কথা বলো না মা।প্লিজ কথা বলো।এভাবে আমাকে একা করে দিও না মা।আমি কিভাবে থাকবো তোমাকে ছাড়া ও মা কথা বলো না প্লিজ চুপ করে থেকো না।ও মা থাকাও না আমার দিকে।
মেঘের কান্না দেখে শ্রাবণ থমকে যায়। ডাঃ কে ডাক দিলে ওনি এসে পালস চেক করে ওনাকে মৃত ঘোষনা করেন।
এরপর থেকে এখন পর্যন্ত মেঘ একটাও কথা বলেনি।কেমন যেন হয়ে গেছে মেয়েটা। কারো সাথে কথা বলে না।শ্রাবণ জানাজা শেষ করে ওনাকে কবরস্থান এ দাফন করে এলো।
হাসপাতাল থেকে আসার পর মেঘ এখনো নিজের রুম থেকে বের হয় নি।শ্রাবণ ওর মায়ের সাথে কথা বলে মেঘের কাছে যায়।
মেঘ কেমন যেন ধুম মেরে বসে আছে।কোনো দিকে তাকাচ্ছেও না।শ্রাবণ এসে ওর কাছে বসলো।ওর হাতে হাত রেখে আলতো স্বরে ডাক দিলো।
শ্রাবণঃমেঘ কিছু খেয়ে নিবে এসো।
শ্রাবণের ছোঁয়া পেয়ে মেঘ যেন হোশ ফিরে পায়।ঝাপটে ধরে শ্রাবণ কে।সারাদিন ধরে কান্না করেছে তাও যেন কান্না থামার নাম নিচ্ছে না।শ্রাবণ কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে মেঘ।
শ্রাবণঃমেঘ প্লিজ শান্ত হও।দেখো এটা তো হওয়ারই ছিলো।কেউ তো সারাজীবন বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসেনি।আজ অথবা কাল আমাদের কেও যেতে হবে।পৃথিবী তে আমরা কেউই স্থায়ী না।আমাদের জন্য পরকাল বলেও একটা জীবন আছে।ইহকালীন জীবন ছেড়ে আমাদের সবাইকেই একদিন পরপারে আশ্রয় নিতে হবে।প্লিজ মেঘ একবার বুঝার চেষ্টা করো।তুমি তো জানোই তোমার মায়ের কতো বড় রোগ ছিলো।হার্টের ফুটো অপারেশন করেও রোগীকে বাঁচানো যায় না অথচ তুমি মাকে পাঁচ মাস নিজের কাছে পেয়েছো।এরকম রোগী তো অপারেশন থিয়েটারেই মারা যায়। আল্লাহ কতো মহান যে ওনি তোমার তোমার মাকে কিছুদিন বেঁচে থাকার সুখ দিয়েছেন।
মেঘঃ…………….অবিরাম পানি জড়ছে চোখ থেকে।
শ্রাবণঃপ্লিজ মেঘ একটু শান্ত হও।
মেঘঃডক্টর মিথ্যে বললো কেনো?ওনি তো ছয়মাস সময় দিয়েছিলেন তাহলে কেনো আজ মা আমাকে একা করে চলে গেলো কেনো এমন হলো।(গলাটা ধরে আসছে কথা বলার মতো শক্তি নেই তাও কান্নাভরা কন্ঠে বলতে থাকে)
শ্রাবণঃতুমি তো জানো মেঘ মায়ের কান্ডিশন কেমন ছিলো তাও বোকার মতো কথা কেনো বলছো।আর ডাক্তার কি মানুষ এর জীবন মরনের খবর জানে নাকি ওনারা শুধু নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে সামান্য কিছু বুঝার চেষ্টা করেন আর সেই অভিজ্ঞতা থেকে ওনি ছয়মাস সময় বলেছিলেন।
শ্রাবণ মেঘকে কোনোরকম বুঝিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে বসায়।মেঘ এক মনে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে খেতে ইচ্ছে করছে না।গলা দিয়ে খাবার নামছেই না।কিন্তু না খেলে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
মেঘ খাচ্ছে না দেখে শ্রাবণ নিজেই মেঘের মুখে খাবার তুলে দিলো।শ্রাবণ খাবারটা মুখের সামনে তুলে দিতেই মেঘ আপনা থেকেই হা করে খেয়ে নেয়।হয়তো শ্রাবণ বকা দিবে ভেবে খেয়ে নিলো।
মেঘকে খাইয়ে দিয়ে শ্রাবণ ওকে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে ঘুমোতে বললো।
মেঘঃকেনো এমন হলো?
মেঘ আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।শ্রাবণ ওর পাশে বসে ওর মাথাটা বালিশে রেখে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
শ্রাবণঃপ্লিজ মেঘ আর কান্না করে নিজেকে কষ্ট দিও না।এতে তুমি নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবে।
মেঘঃ………..
শ্রাবণঃবললাম না ঘুমিয়ে পড়তে।তুমি কেনো বুঝোনা মেঘ তোমার কিছু হলে আমি…….
মেঘঃচোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
শ্রাবণঃওইভাবে তাকাবে না ঘুমাও বলছি।(নিচু স্বরে ধমক দিলো)
মেঘ সাথ সাথেই চোখ বন্ধ করে ফেললো।একটু পর মেঘ ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো।শ্রাবণ উঠে মায়ের রুমে যাবে অমনি টান খেয়ে বিছানায় পড়ে যায়।
চলবে……..

চুক্তির বউ ৩য় পর্ব

0

চুক্তির বউ ৩য় পর্ব

লেখা:তামান্না
শ্রাবণ রুমে ডুকে মেঘকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে কিছু না বলেই বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।ভাবতে থাকে আজকের দিনটার কথা।মেঘকে কতোটা কষ্ট দিলো একটা চুক্তির কাগজ দিয়ে,মেঘ জানেও না তার সাথে কি হলো।শ্রাবণ নিজেকে বার বার বকছে ওকে সত্যিটা বলতেই পারতো কিন্তু এতে যদি মেঘ দূরে সরে যায় সেই ভয়েই তো একটা চুক্তি।কিন্তু শ্রাবণ কি পারবে এই চুক্তির মাধ্যমে মেঘের মনে জায়গা করে নিতে নাকি মেয়েটা ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিবে।শ্রাবণ নিজের ডায়রীটা হাতে নিয়ে লেখা শুরু করে।
শ্রাবণের একটাই অভ্যাস এ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব কিছুই এই ডায়রীতে লিখে রাখা।যত কষ্ট যত সুখ সব কিছুই এর মাঝে লেখা।লিখতে লিখতে শ্রাবণ চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়ে।
মাঝরাতে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়।রুমের লাইট অন দেখে মেঘ অবাক হয়। এতো রাতে লোকটা লাইট জ্বালিয়ে রাখলো কেনো?চারিদিক তাকিয়ে দেখে শ্রাবণ চেয়ারেই ঘুমিয়ে আছে।মেঘ উঠে শ্রাবণের পাশে যায়।হাতের নিচে একটা ডায়রী দেখে মেঘ সেটা ধরবে কি ধরবে না এই সব ভাবতে ভাবতে ডায়রীটা হাতে নিয়েও আবার টেবিলেই রেখে দিলো।কারো পারসোনাল জিনিসে অনুমতি ছাড়া হাত দেওয়া টা চরম অন্যায়।মেঘ সেই অন্যায় কিছুতেই করবে না।মেঘ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় শেষ এর দিকে।তাই ওয়াশরুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পালটে অন্য একটা শাড়ি পরে নেয়।অজু করে তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করে নিলো
তারপর কোরঅান তেলাওয়াত করে।ফজরের আজান দিলে নামাজ আদায় করে নেয়।একটু পর চারিদিক টা আলোয় চিকচিক করবে।দেরী না করে মেঘ রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো।তখন ওর শ্বাশুড়ি মায়ের গলার আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল।ওনার ফুঁপানির কন্ঠ শুনে মেঘের বুঝতে বাকী রইলো না যে ওনি কান্না করছেন।কিন্তু এতো সকাল কেনো কাঁদছেন সেটা জানার বড্ড কৌতূহল হয় মেঘের।দরজার কান পেতে এমন কিছু কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
কিছু সময় পর নিজেকে সামলে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে আগায়।সকালের সব নাস্তা মেঘ নিজের হাতে করে।তারপর শ্রাবণের মায়ের রুমে ঠোকা দেয়,
মেঘঃমা দরজা টা কি খুলবেন?
শ্রাবণের মাঃকে বউমা?
মেঘঃহ্যা মা আমি মেঘ।
শ্রাবণের মাঃওখানেই থাকো আসছি মা।
ওনি উইল চেয়ার ঠেলে দরজা খুলে মেঘকে দেখে অবাক।এক্কেবারে ঘরের গিন্নি।হাতে চায়ের কাপ।চুলে খোপা শাড়ির আচল কোমরে গোজা।
মেঘঃমা আপনার চা,(চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে)
শ্রাবণের মাঃএকই মা এতো সকালে তুমি রান্না ঘরে ফুলি কোথায়?
মেঘঃফুলি অন্য কাজ করছে তাই আমি রান্নাটা করে নিলাম।
শ্রাবণের মাঃইশ প্রথম দিন ই রান্না ঘরে কেনো গেলে মা ফুলিই করে দিতো।
মেঘঃমা এতোদিন ফুলি সব করেছে আজ থেকে আমি করবো আপনি কিন্তু আপত্তি করতে পারবেন না।আর আপত্তি করলেও আমি শুনছিনা।আমি কিন্তু খুব বেয়াদব টাইপের মেয়ে কথা না শুনার অভ্যাস আমার আছে।
শ্রাবণের মাঃতোমার সাথে কথায় পারবো না।এসো ভিতরে এসো।
মেঘঃচা টা নিন।আর কি খাবেন বলুন আমি রান্না করে নিয়ে আসছি।
শ্রাবণের মাঃকিছু লাগবে না মা।এতোদিনে আমার ঘরে লক্ষি এসেছে আমার বাদর ছেলেটা এবার একটু ভালো থাকবে।
মেঘঃকেনো মা,ওনি কি ভালো থাকতেন না?
শ্রাবণের মাঃনা মা ঠিক তা না।তুমি ওর স্ত্রী।ওর সব কথা জানার অধিকার তোমার আছে তবে সেটা আজ না অন্যদিন তোমাকে বলবো।
মেঘঃমা আপনি কি কিছু লুকাচ্ছেন আমার থেকে?
শ্রাবণের মাঃতোমার থেকে কিছু লুকানোর অধিকার আমার নেই মা।এখানে বসো……(বিছানায় বসিয়ে)
মেঘঃতাহলে এইভাবে বলছেন কেনো?বলুন না মা কি হয়েছে আমি কি জানতে পারি না?
শ্রাবণের মাঃজানবে তবে সেটা শ্রাবণের থেকে আমি কিছু বললে শ্রাবণ কষ্ট পাবে।আমি চাই তুমি সেটা ওর থেকে জানো।আর ওর ভেতরের একটা গিল্টি ফিলিং আছে যে টা তোমাকেই দূর করতে হবে।ও বার বার নিজেকে দোষী ভাবছে কিন্তু আমি তো মা আমি জানি আমার ছেলেটার কোনো অন্যায় নেই।
মেঘঃআমি কিভাবে জানবো মা?
শ্রাবণের মাঃবোকা মেয়ে তুমি ওর বিবাহিতা স্ত্রী। এমন কিছু ব্যাপার নেই যে টা শ্রাবণ তোমার থেকে লুকাবে তবে কিছু একটা নিয়ে ও খুব কষ্ট পাচ্ছে সেটা আমি আজো জানতে পারছি না কিন্তু বুঝতে পারি আমার ছেলের কষ্ট।ও রোজ রাতে একটা ডায়রীতে কি যেন লিখে রাখে যে তা আমি রোজ ফলো করতাম কিন্তু কাল জানিনা ওর মনের মধ্যে কি ঝড় গেছে শুধু এইটুকু জানি আমার ছেলেটা ভালো নেই।মেঘ আজ থেকে তো তুই আমার বউ না আমার মেয়ে।পারবি না আমার ছেলেটাকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে।পারবি না আমার ছেলের মনের সব গিল্টি ফিলিং গুলো দূর করতে, পারবি না ওকে তোর ভালোবাসা দিয়ে একটা সুন্দর জীবন গড়ে দিতে।(মেঘের হাতে হাত রেখে)
কি করবো মা আমি।আমি যে একটা চুক্তির ভেতর আটকে আছি যে টা এক বছর পর শেষ হয়ে যাবে তারপর তো দুজন দুপ্রান্তে ছিটকে পড়বো।এই বছরে কিভাবে পারবো আমি ওনার কষ্ট টা দূর করতে জানিনা কি আছে ওনার মনে তবে যাই থাকুক সেটা আমাকে জানতেই হবে।(মনে মনে)
শ্রাবণের মাঃকি রে মা রাখবি না আমার এই অনুরোধ?
মেঘঃছি ছি মা আপনি এভাবে বলবেন না।আমি চেষ্টা করবো ওনার কষ্ট গুলো দূর করার।
শ্রাবণের মাঃ যা গিয়ে দেখ ওর কি লাগে।আমি একটু রান্নাঘর এ দেখি ফুলি কি করছে?
মেঘঃমা আপনি বিশ্রাম নিন।তাছাড়া এখন তো আমি আছি আমি থাকতে আপনি কষ্ট করে রান্না ঘরে যাবেন সেটা কিভাবে হয় বলেন তো।
শ্রাবণের মাঃঠিক আছে রান্নাঘরে যাচ্ছি না আমাকে একটু সোফার কাছে নিয়ে চল।একটু বসি।
মেঘঃঠিক আছে আসুন।
মেঘ উইল চেয়ার টা ঠেলে ওনাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।তারপর রুমে গিয়ে দেখে শ্রাবণ চেয়ারে নেই।ওয়াশরুম থেকে টেপ এর আওয়াজ আসছে তারমানে ওনি ওয়াশরুমে।
মেঘ রুমটা টিকটাক করে নিচে চলে আসে।
তারপর সব নাস্তা রেডি করে সবাইকে খাবার দিলো।সকালের নাস্তা শেষ করে শ্রাবণ রেডি হয় অফিস যাবে বলে।
মেঘঃএকই আপনি রেডি অনেক দেরী হয়ে গেলো তাইনা।ইশ কখন অফিস যাবো।(রুমে ডুকতে ডুকতে)
শ্রাবণঃকোথায় যাবে?(ভ্রু কুঁচকে)
মেঘঃকেনো অফিস যাবো আজ না একটা মিটিং আছে অফিসে।
শ্রাবণঃতো কি হয়েছে?
মেঘঃকি হয়েছে মানে অফিস যাবো।রেডি হবো এখন।
শ্রাবণঃতুমি কোথাও যাচ্ছ না?
মেঘঃমানে কি?
শ্রাবণঃমানে খুব সহজ তুমি অফিস যাচ্ছ না আমি একাই যাচ্ছি।
মেঘঃকিন্তু কেনো?
শ্রাবণঃতোমার পোস্টে আজ থেকে অন্য একজন জয়েন করবে।
মেঘঃমানে আমার জব।
শ্রাবণঃনেই।(টাই বাধবে বাধতে)
মেঘঃWhat?(মেঘ ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে)
শ্রাবণঃকি হলো টা কি তোমার?
মেঘঃএখন আমি কি করবো?মায়ের ট্রিটমেন্ট এর এতো টাকা কোথায় পাবো।কিভাবে মায়ের ওষুধের টাকা জোগাড় করবো কিভাবে মাকে বাসায় নিয়ে যাবো তাছাড়া এখনো বাড়িওয়ালার অনেক দেনা বাকি।এখন কি করবো আমি কিভাবে সবটা ম্যানেজ করবোম(মেঘ ভাবতে ভাবতে কান্নায় ভেঙে পরে)
শ্রাবণঃমেঘ কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?
মেঘঃআমার চাকরী টা কেনো কেঁড়ে নিলেন জানতে পারি।
শ্রাবণঃতোমার আর চাকরীর কি দরকার ঘরের বউ হয়ে চাকরী করবে এটা কেমন যেন দেখায় তাছাড়া একই অফিসে স্বামী-স্ত্রী চাকরী করবে এটাতো বেমানান। আর আমি যেখানে তোমার স্বামী সেই অফিসে তুমি জব করতে Comfortable Feel করবে না তাই পোস্ট এ অন্য কাউকে জয়েন দিলাম।
মেঘঃওহহ ভালো ঘরের বউ হয়ে মায়ের দায়িত্ব নেয়া থেকে বঞ্চিত হলাম।
শ্রাবণঃমানে কি বলছো?
মেঘঃকিছু না।আপনি যান আপনার দেরী হয়ে যাচ্ছে।আজ তো জরুরী মিটিং আছে।
শ্রাবণঃমিটিং কেন্সেল করে দিয়েছি।
মেঘঃকেনো?
শ্রাবণঃঅন্য একটা কাজ আছে।
মেঘঃওহ তাহলে যান দেরী হয়ে যাবে।
শ্রাবণঃতুমি রেডি হও।একসাথে বের হবো।
মেঘঃকেনো?আমি কোথাও যাবো না।
শ্রাবণঃএতো প্রশ্ন করার অধিকার আমি তোমাকে দেইনি।তুমি আমার স্ত্রী তাই এখন থেকে আমি যা বলবো তাই করতে হবে।যাও গিয়ে রেডি হও।(ধমক দিয়ে)
মেঘঃআমি তো ভুলেই গেছিলাম আমি আপনার #চুক্তির_বউ আপনি যা বলবেন আমাকে তো তাই করতে হবে।সেই অধিকার থেকেই একটা কথা জানতে চাইবো বলবেন।
শ্রাবণঃকি জানতে চাও বলো?(হাটু গেড়ে বসে অনুর হাতে হাত রাখে)
মেঘঃআপনি তো একজনকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেনো?তাও একটা এগ্রিমেন্ট পেপারে সই করিয়ে।আমি কি খুব বড় ক্ষতি করেছি আপনার যার জন্য এতো বড় সাজা টা আপনি আমায় দিলেন।আজ অব্দি কোন কথাটা শুনিনি আপনার অফিসের সব কাজ ঠিক মতো করে নিজের মাকে নিয়ে যে দুনিয়া টা ছিলো এখন তো সেটাও শেষ হয়ে গেলো।কেনো করলেন এমন টা আমার সাথে।
শ্রাবণঃআমি তোমার সব কথার জবাব দিতে বাধ্য নই।শুধু একটা কথা জেনে রাখো শ্রাবণ মাহমুদ আজ অব্দি যা যা চেয়েছে তার মা বাবা তাকে সেটাই এনে দিয়েছে আর আজ তার মায়ের চাওয়ার গুরুত্ব সে দেবেনা এটা তো হতে পারে না।আমার মামনিকে আমি খুশি দেখতে চাই আমার মামনি আমার সব চাওয়া পূরণ করেছে তাই আমি তার একটু হলেও মামনিকে ফিরিয়ে দিতে চাই।আর হ্যা আজ থেকে আমি তোমাকে যতটুকু জানার অধিকার দিবো ঠিক ততটুকুই জানবে।এর থেকে বেশি কিছু প্রশ্ন করবে না আমার পছন্দ না এখন চুপচাপ গিয়ে রেডি হও।মাকে দেখতে যাবো।তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমাকে আবার অফিস যেতে হবে।
মেঘঃআপনি কেনো এমন করছেন।যে টা জানতে চাইলাম উত্তত দিন না প্লিজ।কেনো আমার জীবনটা নিয়ে খেলছেন আপনি।কি অধিকারে।
শ্রাবণঃআমি তোমার জীবন নিয়ে খেলছি এটা তুমি ভাবলে কিভাবে মেঘ।তোমার মুখে একবার
ও আটকালো না এইরকম কথা বলতে তুমি এতোটা পাষাণ কিভাবে হও বলোতো?(শ্রাবণে চোখে জল টলমল করছে)
মেঘঃঅন্যায় আপনি করলেন আর অপরাধী আমি বাহ মি.শ্রাবণ মাহমুদ বাহ কি সুন্দর কথা বললেন আপনি।যাই হোক আমি একা যেতে পারবো আপনার আর দরকার হবে না আপনি অফিসে যান।
শ্রাবণঃবেশি বকবক না করে তাড়াতাড়ি রেডি হও।আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
শ্রাবণ আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।মেঘ রেডি হয়ে নিচে নামে তারপর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে।মেঘ বার বার শ্রাবণের দিকে তাকায়।শ্রাবণ একটা কথাও বলে না।চুপচাপ ড্রাইভ করে যাচ্ছে।শ্রাবণের চোখে এখন জল এর চিহ্ন বুঝা যাচ্ছে। অনু ভাবতে থাকে…..
কি এমন কষ্ট ওনার যার জন্য ওনি এখনো এতো কষ্ট পান।আমার সাথেই বা এমন এগ্রিমেন্ট কেনো করলেন।কিভাবে বুঝবো আমি?কিভাবে জানবো সব সত্যি?কি এমন গোপন তথ্য লুকিয়ে আছে এর পিছনে যার জন্য আমাকেই ওনার #চুক্তির_বউ হতে হলো।এতো কিসের কষ্ট ওনার।সব জানতে হবে আমাকে সব জানতে হবে।যেভাবেই হোক মায়ের কথা আমাকে রাখতেই হবে।আমি মাকে কথা দিয়েছি ওনার সব কষ্ট দূর করে ওনার মুখের হাসি টা আবার ফিরিয়ে আনবো।আমাকে যে পারতেই হবে মা।পারতেই হবে।শত হলেও আমি ওনার এগ্রিমেন্ট করা বউ। আর একবছর তো অনেক সময় আমি এই একটা বছরকেই কাজে লাগাবো।
চলবে………….

চুক্তির বউ  ২য় পর্ব

0

চুক্তির বউ ২য় পর্ব

লেখা:তামান্না

বিয়ের সব কাজ শেষ করে কাজী চলে গেলো।মেঘ শ্রাবণ কে বলে…

মেঘঃস্যার এবার তো আমি মায়ের কাছে যেতে পারি।

শ্রাবণঃহ্যা এসো।

মেঘঃএই পোশাকে।

শ্রাবণঃহ্যা…এটাই পরে যাবে।তোমার মায়ের কাছ থেকে আশির্বাদ নিতে হবে না।ওনার তো দেখা দরকার ওনার মেয়েকে বউ সাজে কেমন লাগছে তাও আবার #চুক্তির_বউ।(মেঘের একদম কানের কাছে গিয়ে মুখ নিয়ে বলে)

শ্রাবণের মাঃকি রে কি বলছিস ওকে?

শ্রাবণঃমামনি ও ওর মায়ের দেখা করতে চায়।কথা ঘুরিয়ে।

শ্রাবণের মাঃঠিক আছে তুই ওকে নিয়ে,আর হ্যা তাড়াতাড়ি আসিস।আমাকে একটা করিস আমি চিন্তায় থাকবো।

শ্রাবণঃমামনি তুমি চিন্তা করো না আমরা ফিরে আসবো।ফুলি এই ফুলি কোথায় তুই?

ফুলিঃজ্বি ভাইজান বলেন।

শ্রাবণঃমামনির খেয়াল রাখিস আমি একটু বাইরে যাবো।

ফুলিঃজি ভাইজান রাখবো।আপনে কোনো টেনশন করবেন না।

শ্রাবণঃগুড…মেঘ চলো আমাদের বেরোতে হবে।

মেঘঃআসছি মা।

শ্রাবণের মাঃতাড়াতাড়ি এসো।

মেঘঃজি মা আসবো।

ওরা হাসপাতালে গেলো,মেঘ ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে চাইলো ওর মায়ের এখন কি অবস্থা।

মেঘঃDoctor আমার মা কোথায়?

ডাক্তারঃওনার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো।যদি ও ওনার অপারেশন সাকসেসফুল তবুও ওনাকে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা……

মেঘঃমানে কি Doctor?

ডাক্তারঃদেখো শ্রাবণ জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে এখন ওনি চাইলে মানুষ কে বাঁচাতে পারেন আবার মারতেও পারেন।আপনার মা আর বেশিদিন বাঁচবেন না।

মেঘঃআপনি পাগল হয়ে গেছেন Doctor।এটা কখনোই হতে পারে না আমার মা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।আমি মায়ের কাছে যাবো।

মেঘ এক ছুটে মায়ের কেবিনে ডোকে মায়ের পাশে বসে কান্না করতে থাকে।

এদিকে শ্রাবণ ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।

শ্রাবণঃDoctor ওনাকে কবে রিলিজ করছেন?

ডাক্তারঃদুদিন পর ওনাকে রিলিজ করে দিবো।আর একটা কথা।

শ্রাবণঃহ্যা Doctor বলুন।

ডাক্তারঃপ্লিজ ওনার একটু খেয়াল রাখবেন ওনার হাতে মাত্র ছয়মাস সময় আছে।এই ছয়মাস ওনাকে একটু দেখে রাখবেন।

শ্রাবণঃOkay Doctor I will try my best.

ডাক্তারঃThank You Shrabon.

শ্রাবণঃআমি আসছি।

শ্রাবণ কেবিনে এসে দেখে মেঘ পাগলের মতো কান্না করছে অনিক কিভাবে ওকে সামলাবে কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ওর ঘাড়ে হাত রেখে ওকে শান্ত্বনা দেয়।

শ্রাবণঃমেঘ প্লিজ তুমি এভাবে ভেঙে পড়োনা।
তুমি যদি দুর্বল হয়ে পড়ো তাহলে তোমার মাকে কে সামলে রাখবে।ওনি তো এখন ও জানেন না ওনার হাতে সময় মাত্র কটা মাস।

মেঘ পিছন থেকে ঘুরে শ্রাবণ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে…

মেঘঃমায়ের কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচবো না স্যার।মা ছাড়া যে আমার আর কেউ নেই।আমি যে খুব একা হয়ে যাবো।

শ্রাবণ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

শ্রাবণঃকেনো আমরা আছি তো।আমি আর মামনি কেনো এভাবে ভেঙে পড়ছো।মেঘ তুমি নিজেকে সামলাতে শিখো।

শ্রাবণের কথায় মেঘ ওকে ছেড়ে দিয়ে সরে যায়।

মেঘঃI am sorry…

মেঘের মাঃমেঘ…….অস্পষ্ট ভাবে ডাক দিলেন।

মেঘঃমা তুমি ঠিক আছো তো।

মেঘের মা উঠতে গেলে শ্রাবণ ওনাকে ধরে পিটের পিছনে বালিশ দিয়ে ওনাকে বসিয়ে দেয়।

মেঘের মাঃবাহহ তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে এই সাজে।(বিয়ের পোশাক দেখে)

মেঘঃমা আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে না জানিয়ে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।

মেঘের মাঃশ্রাবণ আমাকে সব বলেছে।

মেঘঃতুমি জানো।(অবাক হয়ে)

মেঘের মাঃহ্যা…অপারেশন এ যাওয়ার আগে ওর সাথে আমার কথা হয়েছিলো আমি ওকে অনুমতি দেই তোকে বিয়ে করার।

মেঘের মনে ভয় ডুকে যায় কি বলে স্যার মাকে বিয়ের জন্য রাজী করে ফেললো তাও আবার একটা এগ্রিমেন্ট এ সই করা বিয়ে।মা কি এটা জানে।মা এটা জানলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।

মেঘ শ্রাবণের দিকে এক নজর তাকিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে।

মেঘের মাঃতুই খুব সুখী হবি মা।আমি তোর জন্য আল্লাহর কাছে রোজ কান্নাকাটি করে তোর জন্য এমন একজন কে চেয়েছি।শ্রাবণ খুব ভালো ছেলে মা ও তোকে খুব ভালো রাখবে।

মেঘঃমা…এখন এসব কথা ছাড়ো তো.আগে বলো তোমার এখন কেমন লাগছে?

মায়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।কথা ঘুরাতেই এমন কিছু বলা।

মেঘের মাঃআমি একদম ঠিক আছি।

শ্রাবণঃমা এখন একটু রেস্ট নিন নয়তো আবার শরীর খারাপ করবে।

মেঘের মাঃঠিক আছে।

শ্রাবণঃমেঘ চলো আমরা বাসায় যাই মামনি অপেক্ষা করছে।

মেঘঃস্যার আমি এখানেই থাকি মাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।

মেঘের মাঃকিন্তু মা আজ তো তোদের বিয়ের প্রথম…

মেঘঃমা প্লিজ…যাই বলো আমি এখন কোথাও যাচ্ছি না এটাই ফাইনাল।

মেঘ বাচ্চাদের মতো মাকে জড়িয়ে ধরে রাখে।

মেঘের মাঃপাগল মেয়ে।

মেঘঃতোমার ই তো।

শ্রাবণঃমা আমি মামনিকে কল করে বলছি মেঘ আসতে চাইছে না।

মেঘের মাঃনা বাবা মেঘ যাবে।আজ মাত্র ওর বিয়ে হলো।আজ তো ওর বরের বাড়িতে থাকার কথা তাছাড়া আমি এখন ভালো আছি।তোমরা সকালে এসো রাতে তো দুজন থাকতে পারবে না।এটা Hospital।এখানে কি এতলোক জন Allow করবে।

মেঘঃকিন্তু মা আমি তোমাকে ছাড়া।

মেঘের মাঃরাতটাই তো।সকালে আসিস অনেক সময় আড্ডা দিবো মা মেয়ে মিলে।এবার যা তোর সংসার সাজানোর প্লেন কর।

মেঘঃমা….(মেঘ কান্নায় ভেঙে পরে।মায়ের কথা শুনে মেঘের কান্নার বেগ যেন বাড়তেই থাকে)

মেঘের মাঃকাঁদে না মা।আজ যে সুখের দিন।আজকের দিনে কাঁদতে নেই।(মেঘের চোখের পানি মুছে ওর কপালে চুমু দিলেন)

মেঘঃমা আমি যাব না।

মেঘের মাঃমায়ের কথা শুনতে হয়।আর তোর শ্বাশুড়ি মা তো অপেক্ষা করছে তোদের জন্য।

মেঘঃতাতে কি হয়েছে?

মেঘের মাঃশ্রাবণ ওকে নিয়ে যাও তো বাবা।

মেঘঃমা তুমি এমন করছো কেনো?

মেঘের মাঃপাগলি মেয়ে।নিজের বরের বাড়ি যাবি না এখানে থাকবি সেটা হয় নাকি।

শ্রাবণঃও খুব জেদি মা আমার একটা কথাও শুনে না বকা দিন তো একটু।

মেঘ রাগে কটমট করে শ্রাবণের দিকে তাকায়।

শ্রাবণঃএইভাবে তাকিয়ো না মা বকা দিবে।

মেঘের মাঃঅনু কি শুরু করলি তুই যাবি ওর সাথে।

মেঘঃযাচ্ছি তো।নিজের মেয়ের থেকে মেয়ের জামাইকে প্রায়োরিটি দিচ্ছো।তুমি খুব পঁচা।

মেঘ রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

মেঘের মাঃতোমার কাছে একটা অনুরোধ বাবা।

শ্রাবণঃছি মা অনুরোধ কেনো বলছেন বলুন না আপনি কি বলবেন?

মেঘের মাঃআমি জানি আমার হাতে সময় নেই।আমি যখন থাকবো না ওকে দেখে রেখো বাবা।আমি চলে গেলে ও একা হয়ে যাবে।এটা একটা সন্তানের কাছে তার মায়ের অনুরোধ।(শ্রাবণের হাত ধরে)

শ্রাবণঃমা আমি আপনাকে আগেই সব বলেছি।আপনি একদম ভাববেন না।মেঘের দায়িত্ব যখন আমি নিয়েছি তখন ওকে ভালো রাখার দায়িত্ব ও আমার আজ হোক কাল হোক ও আমার হবেই।হ্যা এটা ঠিক যে মেঘ আগে একজনকে ভালোবাসতো।হয়তো সে থাকলে আজ মেঘ আমার হতো না।মা আমি আপনাকে ওয়াদা করছি আজ থেকে মেঘকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।একফোঁটা কষ্ট ও ওকে স্পর্শ করবে না মা।শুধু আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন।আমি যেন আমার সর্বস্ব দিয়ে মেঘকে ভালো রাখতে পারি।

মেঘের মাঃআমি দোয়া করি একদিন তোমার ভালোবাসার জয় হবেই।আমার মেয়েটা যে কবে বুঝবে কে জানে?

শ্রাবণঃচিন্তা করবেন না।বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন ও চাইলেও এই পবিত্র বন্ধর থেকে মুক্ত হতে পারবে না।আমি ওকে মুক্তি দেবো না।সারাজীবন আমার কাছেই থাকবে আমাদের মাঝে।মামনি তো ওকে চোখে হারায়।

মেঘের মাঃতোমার মতো একজনের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিতে পেরেছি এর থেকে বড় সুখ আমার কাছে আর কি হতে পারে।

শ্রাবণঃআসি মা মেঘ গাড়িতে একা।

মেঘের মাঃঠিক আছে বাবা এসো।

শ্রাবণ গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।মেঘ চুপচাপ বসে আসে কেউ কোনো কথা বলছে না।ভাগ্যিস মেঘ তখন কেবিনে ছিলো না নইলে সব শুনে ফেলতো মেয়েটা।এমনিতেই অনেক কষ্ট পাচ্ছে।আর কষ্ট দেওয়া যাবে না।এসব ভাবতে ভাবতে বাসার কাছে চলে আসে।গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যায়।

মেঘ ফ্রেশ হতে যায়। শ্রাবণ ওকে আলমারি থেকে কিছু শাড়ি বের করে দেয়।আর একটা শাড়ি পরে নিতে বলে।মেঘ ফ্রেশ হয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে রান্নাঘরে যায়।

তারপর রাতের খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে মেঘ।

চলবে………….

চুক্তির_বউ  ১ম_পর্ব

0

চুক্তির_বউ
১ম_পর্ব
টক টক টক টক টক,,,,,,,,
মেঘঃMay I come I’m sir .
শ্রাবণঃYes,Please come.
মেঘঃSir কেনো ডেকেছেন আমাকে?
শ্রাবণঃহ্যা বলছি বসো এখানে।
মেঘঃOh Sure.(বসতে বসতে)
শ্রাবণঃশুনলাম তোমার টাকার দরকার।কথাটা কি সত্যি?
মেঘঃআসলে স্যার…
শ্রাবণঃসত্যি কি না সেটা বলো।
মেঘঃহ্যা স্যার টাকা দরকার।
শ্রাবণঃকত টাকা দরকার?
মেঘঃপ্রায় দশ লাখের মতো।
শ্রাবণঃটাকা টা আমি তোমাকে দেবো।
মেঘঃআপনি কেনো আমাকে এতোগুলো টাকা দিবেন?তাছাড়া এতো টাকা আমি আপনার থেকে নিতে পারবো না।
শ্রাবণঃটাকা তো খুব ইম্পরট্যান্ট তোমার কাছে।
মেঘঃহ্যা ইম্পরট্যান্ট।কিন্তু আমি আপনার থেকে টাকা টা নিতে পারবো না।
শ্রাবণঃটাকা তো আমি তোমাকে এমনি এমনি দিবো না,
মেঘঃতাহলে কেনো দিবেন টাকা?
শ্রাবণঃআমার একটা কাজ তোমাকে করে দিতে হবে,
মেঘঃকি এমন কাজ যে যার বিনিময়ে আপনি আমাকে এতোগুলো টাকা দিবেন?
শ্রাবণঃসেটা কিছুক্ষণ পর বলবো।এখন বলো টাকা টা নিবে কি না।
মেঘঃস্যার টাকা আমার দরকার কিন্তু আমি সেটা এমনি এমনি নিতে পারবো না।কি কাজ আর সেটা কতোটা ইম্পরট্যান্ট আমাকে জানতে হবে না হয় টাকা আমি নিতে পারবো না।
শ্রাবণঃতাহলে তোমার মা কে বাঁচাবে কিভাবে যদি টাকা জোগাড় না হয়।
মেঘঃআপনি কিভাবে জানেন আমার মায়ের ব্যাপারে?(অনেকটা অবাক হয়ে)
শ্রাবণঃসেটা তোমার দেখার বিষয় না।এখন দেখো তুমি কি করবে?
মেঘঃকি কাজ করতে হবে বলুন?
শ্রাবণঃএকটা Agreement পেপারে সই করতে হবে।
মেঘঃকিসের এগ্রিমেন্ট?
শ্রাবণঃবিয়ের।
মেঘঃমানে…..(অনেকটা ধাক্কা খায় মেঘ)
শ্রাবণঃমানে হলো একটা বিয়ের এগ্রিমেন্ট পেপারে সই করবে তাহলে আমি তোমাকে টাকা টা দিবো।এগ্রিমেন্ট হবে এক বছরের একবছর পর তুমি তোমার পথ দেখবে আমি আমার পথ।ক্লিয়ার…….
মেঘঃসরি স্যার।(মেঘ উঠে গেলো)
শ্রাবণঃভেবে দেখো সময় মাত্র চব্বিশ ঘন্টা।
মেঘ কিছু না বলে নিজের ডেস্ক এ বসে ভাবতে থাকে।ডাঃ বলেছে যেভাবে হোক টাকা টা জোগাড় করতে নয়তো তাদের আর কিছু করার থাকবে না।মা কে তো বাঁচাতেই হবে যেভাবেই হোক প্রয়োজনে নিজেকে মেরে ফেলে হলেও মায়ের ট্রিটমেন্ট আমি করাবো কিন্তু স্যার মায়ের খুঁজ পেলেন কিভাবে? আর এগ্রিমেন্ট পেপার ই বা কেনো?বিয়ে যদি করতে না চান তাহলে বিয়ের নাটক কেনো?জানতে হবে আসল রহস্য টা কি?
পিয়ালিঃকি রে মেঘ কি ভাবছিস?
মেঘঃঅন্যমনস্ক….
পিয়ালিঃমেঘ কি ভাবছিস বলবি তো?
মেঘঃহুম হ্যা পিয়ালি তুই কি বলবি বল?
পিয়ালিঃবলবি তো তুই।
মেঘঃমানে কি বলবো আমি?
পিয়ালিঃতোকে স্যারের সাথে কথা বলতে দেখলাম কিছু হয়েছে।
মেঘঃনা……
পিয়ালিঃতাহলে কি এতো ভাবছিস?
মেঘঃতুই তো জানিস মা ছাড়া আর কেউ নেই আমার আজ যদি সেই মাকেই না বাঁচাতে পারি তাহলে নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে যাবো।যে মা নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছে নিজের সুখ না দেখে আমার সুখের কথা ভেবেছে আজ সে মায়ের মৃত্যু কিভাবে নিজের চোখে দেখি বলতে পারিস।
পিয়ালিঃমন খারাপ করিস না কিছু একটা উপায় নিশ্চয় পাওয়া যাবে।
মেঘঃহুম……
মেঘ সারারাত ঘুমোতে পারেনি।কিভাবে ঘুমাবে মা যে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে তাহলে মেয়ে কিভাবে ভালো থাকে।
রাতটা কোনোভাবে পার করে মেঘ।সকালে অফিসে গিয়ে শ্রাবণের সাথে দেখা করতে গেলো।
মেঘঃস্যার আসবো।
শ্রাবণঃআরে মেঘ তুমি কি ব্যাপার?আজ নিজেই এলে।Any Problem?
মেঘঃসমস্যা তো একটাই।
শ্রাবণঃতারমানে আমার প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি তুমি তাইতো।
মেঘঃআর কোনো অপশন কি নেই?
শ্রাবণঃনা এইটাই একমাত্র অপশন।লাইফ তোমার।মা ও তোমার সিদ্ধান্ত ও তোমার দেখো কি করবে।
মেঘঃআমি রাজি।
শ্রাবণঃগুড….আমি জানতাম তুমি এই প্রস্তাব ফেলতে পারবে না।
মেঘঃস্যার টাকা টা আজই দরকার।
শ্রাবণঃহ্যা…টাকা আজই দিবো আর বিয়েটা ও আজই হবে।
মেঘঃকিন্তু স্যার…..
শ্রাবণঃকোনো কিন্তু না এসো আমার সাথে।
কোনো প্রশ্ন না। যেখানে যাবো সাথে তুমি ও যাচ্ছ আর হ্যা ভয় পেয়ো না তোমার মায়ের ট্রিটমেন্ট এর টাকা আমি দিচ্ছি এটাই ফাইনাল।
মেঘঃThank You Sir…
শ্রাবণঃএসব না বললেও চলবে।এসো তো আগে।
শ্রাবণ মেঘকে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসালো তারপর নিজেই ড্রাইভ করতে শুরু করে।
মেঘঃআমরা কোথায় যাচ্ছি?
শ্রাবণঃগেলে বুঝতে পারবে এতো প্রশ্ন করো কেনো তুমি?
মেঘঃনা স্যার এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম।
তারপর মেঘকে নিয়ে একটা বাড়ির ভেতরে ডোকে,মেঘ চারিদিকে তাকিয়ে আছে এটা বাড়ি না রাজপ্রাসাদ।এতো সুন্দর বাড়ি কারো হয় নাকি।
শ্রাবণের সাথে মেঘ ভেতরে গেলো,ভয়ে মেঘের গলার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে কিন্তু একটা কথাও মুখ ফুটে বলতে পারছে না।
শ্রাবণঃমামনি,মামনি দেখো কাকে নিয়ে এসেছি?
একটু পর হুইল চেয়ারে বসে একজন মহিলা এগিয়ে এলেন শ্রাবণের কাছে।হ্যা ওনি শ্রাবণের মা।একটা এক্সিডেন্ট এর পর থেকে ওনি পেরালাইজড হয়ে যান সেই থেকে হাটাচলা করতে পারেন না।
শ্রাবণের মাঃএই তো শ্রাবণ আমি।এতো চিৎকার করে ডাকছিস কেনো?
শ্রাবণঃকাকে নিয়ে এসেছি দেখো?
শ্রাবণের মাঃবাহহ খুব সুন্দর তো।একি সেই মেয়ে যাকে তুই?
শ্রাবণঃমামনি, মামনি শোণ আজ কে ওর আমার বিয়ে তুমি সব আয়োজন করো আমি একটু আসছি ওকে নিয়ে শপিং এ যাবো।
শ্রাবণের মাঃএতো দিনে একটা কাজের মতো কাজ করতে যাচ্ছিস।ঠিক আছে আমি তোর উকিল আংকেল কে আসতে বলি সব কাগজ পত্র রেডি করে রাখি তোরা শপিং করে আয়।
শ্রাবণঃওকে।
শ্রাবণের মাঃএদিকে একটু আসবে মা।
মহিলার মুখে মা ডাক শুনে মেঘের ভেতর কেমন যেন মুচড় দিয়ে উঠলো।মেঘ ওনার পায়ের কাছে গিয়ে বসে হাতে হাত রাখে।
শ্রাবণের মাঃআজ থেকে আমার এই বাদর ছেলেটার সব দায়িত্ব কিন্তু তোমার।ওকে দেখে রাখবে কেমন।আমার ছেলের পছন্দ যে এতো সুন্দর আমার জানা ছিলোনা।এই বলে ওনি অনুর কপালে একটা চুমু দিলেন।
মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে।কি বললেন ওনি এটা।মেঘের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকালো।শ্রাবণ সোজা সাপ্টা জবাব দিলো।
শ্রাবণঃএভাবে না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি এসো শপিং করতে হবে।
মেঘ রিতিমতো ভয়ে পেয়ে গেলো শ্রাবণের এরকম কথায়।কি আজব লোক রে বাবা,নিজের
স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আমাকে বিয়ে করতে চাইছে।নাকি ওনার এই বিয়ের পিছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।কে জানে কি চান ওনি।ওনার মতিগতি বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দেননি মনে হয়।যাই হোক এতো ভেবে কাজ নেই।এখন মা কে বাঁচানোর এই একটাই উপায় যেভাবে হোক মা কে আমার চাই ই চাই।
দুজনে টুকটাক শপিং করে বাসায় আসে।শ্রাবণ মেঘকে একটা শাড়ি পরে রেডি হতে বলে।একটুপর কাজী আসবে তার পর থেকেই মেঘের আগামী এক বছর চুক্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকবে।একটা সম্পর্ক কি চুক্তি দিয়ে শুরু হয় মেঘ ভাবছে এগুলো শ্রাবণের কথা হুশ ফিরে।
শ্রাবণঃএই যে হ্যালো তাড়াতাড়ি রেডি হও এক্ষুণি কাজী এসে যাবে।
মেঘঃস্যার আমার মা।
শ্রাবণঃতোমার মায়ের অপারেশন আজকে রাতেই হবে।তুমি সেখানে যাবে কিন্তু আমাদের বিয়েটা আগে হোক তারপর।
মেঘঃঅপারেশন এর টাকা।
শ্রাবণঃওটা অলরেডি জমা দেওয়া হয়ে গেছে আর ডাক্তারের সাথে আমার কথাও হয়েছে।
মেঘঃওহহহ……
শ্রাবণঃতুমি রেডি হয়ে এসো আমি নিচে অপেক্ষা করছি।
মেঘঃহুম….মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো….
শ্রাবণঃওহ হ্যা একটা কাজ বাকি।
শ্রাবণ আলমারি থেকে একটা কাগজ বের করে মেঘের হাতে দিলো।
মেঘঃএটা কি স্যার?
শ্রাবণঃএটাই এগ্রিমেন্ট পেপার।
মেঘ হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলো।শ্রাবণ ওকে থামিয়ে দেয়।
শ্রাবণঃএখন এটা পড়ে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি সাইন করো।
মেঘঃএক্ষুণি সাইন করতে হবে।
শ্রাবণঃহ্যা এক্ষুণি।তাড়াতাড়ি করো।
মেঘ ভয়ে ভয়ে কলম তা হাতে তুলে নিলো।
হ্যা আল্লাহ বাঁচার কি কোনো উপায় নেই শেষ পর্যন্ত একটা এগ্রিমেন্ট কাগজে সই করে বেঁচে থাকার লড়াই করতে হবে।কিন্তু যদি শান এটা জানে তাহলে ওকে কি জবাব দেবো।অবশ্য ওর আর এখন আমার লাইফ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই যদি থাকতো তাহলে এভাবে….
ভাবতে ভাবতে মেঘের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
শ্রাবণঃএতো ভেবে লাভ নেই যা হবে ভালোই হবে তোমার মাকে তো ফিরে পাবে।
মাকে বাঁচাতে আজ নিজের জীবনকে একটা চুক্তির ভেতরে নিয়ে নিলাম।একটা সাক্ষর এর মাধ্যমে আমি আমার সব হারাতে যাচ্ছি তবে যাই হোক এর জন্য তো আমি মাকে ফিরে পাবো এটাই আমার কাছে অনেক।
হুট করেই মেঘ কাগজে সই করে কাগজ টা শ্রাবণের হাতে দিলো।শ্রাবণ সেটার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো তারপর ওটা আলমারি তে রেখে মেঘ কে নিচে আসতে বলে নিজে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মেঘ খুব জুড়ে কান্না করতে লাগলো।আজ সব শেষ হয়ে গেলো সব।
চলবে…….

মন ফড়িং ❤ ১৬. 

3
মন ফড়িং ❤
১৬.
– সবাই ফ্রেশ হয়ে খেতে আসার আগে আমাকে একটু ডেকে দিতে পারবেন?
রশীদ সাহেব বললেন
– অবশ্যই।
রিতা তার রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলেন।বেশ কয়েক মাস পর তার পুরাতন রোগ টা ধরা পড়েছে। মাথার ভেতর কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। হাত পা কাঁপে। কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকলে হাত পা  কাঁপা টা কমে কিন্তু মাথার সমস্যা টা যেতে একদিনের বেশি সময় নেয়।
নিজের উপরই বিরক্ত হলেন রিতা। অসুস্থ হওয়াএ আর সময় পেলো না।
চুপচাপ শুয়ে রইলেন। ঘুমানো যাবেনা, তাহলে মেহমানদের খাবার,পানি গুছিয়ে দেয়ার কেউই নেই। লিলিকে দিয়ে ওই আশা করা ভুল, চরম ভুল। ওদিকে অদ্রি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাতে ইয়া বড় একটা ফোসকা বানিয়ে এখন পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে।
ঘুম ভাঙলেও সমস্যা। ওই রুমে কেনো থাকতে দেয়া হলো?অদ্রির এই  প্রশ্নের উত্তরে সে কী বলবে? নতুন মেহমানকে তো আর রাগ শোনানো যায়না। সব দায় তার কাঁধে নিতে হবে।
নিদ্র রুমে ঢুকতেই অবাক হলো। সবকিছু ঠিক যেমন সে রেখে গিয়েছিলো তেমনই আছে। দেয়ালের নকশা, রঙ সে যেমন করেছিলো ঠিক তেমনই আছে। বিছানার চাদরের রঙটা খুব সুন্দর। হালকা বেগুনি রঙের মধ্যে কস্তুরি ফুলের নকশা। নিশ্চয়ই অদ্রির পছন্দ। মেয়েটা সবসময় হালকা রঙ পছন্দ করে।
অদ্রি কী করছে? আছে, তার রুমে চুপচাপ বসে বা জানালা থেকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
গোসল সেরে চুল মুছতে মুছতে নিদ্র অদ্রির রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা আপসানো, একটু ধাক্কা দেয়াতে পুরোটা খুলে গেলো।
নিদ্র নিঃশব্দে রুমের ভেতর ঢুকে দরজা আটকে দিলো।
হাতের তোয়ালে টা পাশে রাখা চেয়ারে রেখে দিলো। অদ্রি ঘুমুচ্ছে, কে বলবে ঘুমুচ্ছে? ঘুমালে গায়ের জামা কাপড় ঠিক থাকেনা বা এলোমেলো থাকে। কিন্তু এই মেয়ের হয়েছে উল্টো।
বুকের উপর ওড়নাটাও একদম ভালোভাবে আছে। ভেজা চুলগুলো ছড়িয়ে আছে বালিশের উপরে। ডান হাতে কালসিটে দাগ আর ফোসকা দেখে নিদ্র অনুমান করলো, হয়তোবা গরম তেলে পুড়ে গেছে। নিশ্বাস পড়ছে ছন্দে ছন্দে। অদ্রি একটু নড়ে উঠলো আর তখনই নিদ্রের ঘোর কাটলো।
নিদ্র মুচকি হেসে অদ্রির কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে দ্রুত তোয়ালে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
বাসায় নতুন একজন মানুষ আছে, সে কোনোভাবে দেখে ফেললে বিপদ।
বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। প্রথম চুমুর অনুভূতি তাকে গ্রাস করছে ধীরে ধীরে। কী মনে করে যেন কাজটা সে করে ফেললো।
তার কি ভাবা উচিৎ ছিলো অন্ততপক্ষে একবার?
অদ্রি কি বুঝতে পেরেছে? না, বুঝতে পারলে ও ওইভাবে চুপচাপ শুয়ে থাকতে পারতো না। নিশ্বাসের উঠানামা তে বোঝা যেত সে জেগে আছে।
নিশ্বাসের উঠানামা ধীরে ধীরে যদি হয় তখন বোঝা যায় সে ঘুমুচ্ছে।
কীসব ভাবছে সে? নিজেকে বিজয়ী মনে হচ্ছে। অনেক বড়সড় যুদ্ধ জয় করে ফিরে এসেছে। সামান্য একটা চুমু কিন্তু অনুভূতিটা অসামান্য।
তবে অনুভূতিটা শুধু সেই পেয়েছে, অদ্রি তো ঘুমুচ্ছিলো।
নাজমুল সাহেব তার মাকে ডেকে বললেন
– মা, দেখো তো খাবার আছে কিনা?
– দেখছি।
আসমা জামান বসার ঘরে রশীদ সাহেবকে খবরের কাগজ পড়তে দেখলেন। বসার ঘর মানে ড্রয়িংরুমের সাথেই ডাইনিং রুম।
রশীদ সাহেবকে বললেন
– রশীদ নাজমুল খেতে চাচ্ছে।
– আচ্ছা আপনারা টেবিলে বসুন। আমি রিতা আপাকে ডেকে আনি।
রিতা নাজমুল সাহেবের প্লেটে ডাল বেড়ে দিচ্ছিলেন তখন নিদ্র নিচে নেমে আসলো।
ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে রশীদ সাহেবকে বললেন
– চাচা, লিলি টা কই?
– আছে ওর রুমে।
নিদ্র তার সামনে রাখা প্লেটে ভাত বেড়ে নিয়ে বললো
– চাচা, ভাজি টাজি আছে নাকি?
রিতা বললেন
– হ্যাঁ আছে।
আসমা জামান রিতাকে জিজ্ঞেস করলেন
– আজকে কি শুটকি রান্না হয়েছে নাকি?
– হ্যাঁ।
– গন্ধটা কতদিন পর পেলাম। আমি আজকে শুধু শুটকি দিয়েই খাবো।
সন্ধ্যার দিকে অদ্রির ঘুম ভাঙলো। আজকে সে খুব সুন্দর স্বপ্ন দেখেছে। ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই সে কপালে হাত দিয়ে হেসে ফেললো। স্বপ্নটা কিছুটা এমন ছিলো – নিদ্র চুল মুছতে মুছতে তার রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। তার কিছুক্ষণ পর তার কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে গেলো। অসম্ভব সুন্দর স্বপ্ন, দিবাস্বপ্ন যা পূরণ হবার নয়।
 ডান হাতটার উপর ভর করে শোয়া থেকে উঠতে গিয়ে অদ্রির ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। পুরো হাত ব্যথা।
বাম হাতের উপর ভর করেই তাকে উঠতে হলো।
মুখ ধুয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে আসলো। রিতাকে সোফার উপর বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো
– খেয়েছেন আপনি?
– না, তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।
– আপনি খেয়ে নিতেন। শুধু শুধু কষ্ট করতে হলো আপনাকে।
– তুমি নিজ হাতে রান্না করেছো। তাই ভাবলাম একসাথে খাই।
টেবিলে খাবার দেখে অদ্রি জিজ্ঞেস করলো
– লিলি একা এতো খাবার খেলো কীভাবে? নাকি রশীদ চাচা এসেছিলেন?
– রশীদ সাহেব তিনজন মেহমান নিয়ে এসেছেন। তারাই এখানে এসে দুপুরের খাবার খেয়েছেন।
– তারা চলে গেছে নাকি?
– না, মনে হয় থাকবেন।
– রাতের যোগ্য খাবার আছে নাকি রান্না করতে হবে?
– রান্না করতে হবে।
– লিলিকে সাথে নিও হেল্পার হিসেবে।
– রাজি হবে?
– কেনো হবেনা? চামচ হলে সুবিধা হতো খেতে। পুরো ডান হাত নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে।
– নিষেধ করেছিলাম।
খাওয়া শেষ হলে অদ্রি দোতলায় উঠে চলে যাচ্ছিলো। রিতা বললেন
– একটা কথা বলার ছিলো।
অদ্রি থেমে গিয়ে বললো
– বলুন।
– তিনজনের একজন মেহমান ওই রুমটাতে উঠেছে। সে অন্য রুমে নাকি যাবেনা।
– কোন রুম খালা মনি?
– দক্ষিণের কোণার দিকের রুমটা।
– আচ্ছা আমি দেখছি।
অদ্রির মেজাজ বিগড়ে গেলো। ওই রুম অন্য কারো জন্যে না। দক্ষিণের দিকে আরো একটা রুম আছে। পারলে ওখানে উঠুক, কিন্তু ওই রুমে না।
দরজায় কয়েকটা জোরে টোকা দিয়ে অদ্রি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।
দরজা খুলে নিদ্র মুচকি হেসে বললো
– ম্যাডাম, এতো অস্থিরতা কীসের? একটু ঘুমাবো আর আপনি দরজা প্রায় ভেঙে ফেলার প্ল্যান পূরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
অদ্রি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো নিদ্রের দিকে। তার দু চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছেনা।
সত্যিই কি নিদ্র?
স্বপ্ন দেখছে না তো সে???
চলবে……!
© Maria Kabir

sanam teri kasam part 11

0

@@ sanam teri kasam @@
.
পর্ব : (১১/শেষ)
.
লেখক : Abdullah al ador mamun (কাল্পনিক লেখক)
.
–চুপ ফাজিল। (আম্মু)
.
আমাকে পাঠাচ্ছে ভালো কথা এই উটের বাচ্ছা নূরী কে
সাথে পাঠাচ্ছে কেনো।এমনিতে নূরীর জন্য শান্তি নাই
যখন তখন ধমক দেয়, মারার জন্য তাড়া করে। ওখানে তো
আমাকে একলা পাবে তখন কি করবে অাল্লাহ জানে।
নূরী কে আমার একটুও বিস্বাস হয় না যখন তখন যা খুশি
করতে পারে।
.
কি আর করা। ইচ্ছে না থাকার পরও নূরী কে নিয়ে ঢাকায়
আসতে হলো।
সবকিছু আগে থেকে ঠিক করে রাখায় কোন প্রবলেম
হলো না।
জ্যামে পড়ে নতুন বাসায় এসে পৌছাতে পৌছাতে রাত ২
টা বাজলো।
বাসায় ডুকে মাথা খারাপ হয়ে গেলো ইচ্ছে করছে নূরী
কে ঘুশি মেরে মেরে ভর্তা বানিয়ে দিই।
এত ঘন্টা ধরে জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে গেছি, বাসায়
ডুকে একটা ঘুম দিবো তা আর হলো কোথায়।সব দোষ নূরীর
আব্বু বলছিলো সবকিছু ঠিক করে রাখবে কিন্তু নূরীর জন্য
কোন কিছুই হলো না ও যদি বারন না করতো তাহলে
ঘুমাতে পারতাম।
ক্ষিদেও লাগছে খুব, পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।
একটা বিছানার চাদর নিচে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।জানি
ক্ষিদের কারনে ঘুম হবে না।এদিকে আসার পর থেকে
দেখছি নূরী অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকায়। এতদিন
হয়ে গেলো তবুও এখনো আমি নূরীর চোঁখের বাসা বুঝলাম
না।
.
–কি রে কি ভাবছিস।(নূরী)
.
–ইচ্ছে করছে তোরে পিটাই।(আমি)
.
–কেনো আমি কি করছি।(নূরী)
.
–কেনো তুই জানিস না কি করছিস।তোর জন্য আমাকে
নিচে শুতে হচ্ছে আজ।আমাকে ডিস্টার্ব করবি না আমি
ঘুমাবো।(আমি)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমা আমি খেয়ে নিই।(নূরী)
.
–তুই খাবার ফেলি কোথায়। (আমি)
.
–কেনো আসার সময় তো শাশুড়ি মা দিয়েছিলো তোর
মনে নাই।(নূরী)
.
–তোরে দিছে তুই খা আমি খাবো না।(আমি)
.
–তুই না খেলে আমার কি আমি খেয়ে নিই।(নূরী)
.
জানি পাগলিটা খাবে না আমি না খেলে।দেখি না কি
হয়। ক্ষিদের কারনে ঘুম হচ্ছে না তবুও চুপ করে শুয়ে আছি।
.
–আদর খাবি না তুই।(নূরী)
.
–না খাবো না।তুই খা।(আমি)
.
–তুই জানিস না, তুই না খেলে আমি খেতে পারি না।খু্ব
ক্ষিদে পেয়েছে আর পারছি না সহ্য করতে।(নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে আর কাঁদতে হবে না,আমিও খাবো।
(আমি)
.
–আমাকে খাইয়ে দিবি না।(নূরী)
.
–ঠিক আছে খাইয়ে দিবো চল,আর ছলনা করতে হবে না।
(আমি)
.
–আমি ছলনা করছি।(নূরী)
.
–আরে বাবা ভুল হয়ে গেছে এবার খেয়ে নেয় তো
পাগলি।খুব ঘুম পাচ্ছে। (আমি)
.
খাওয়া শেষ করতে করতে ৩:৩০ বাজলো।রাতও শেষ হয়ে
আসলো আর এখন যদি না ঘুমাই তাহলে কখন ঘুমাবো।
শুয়েছি মাএ সাথে সাথে নূরী এসে আমার বুকে মাথা
রেখে শুয়ে পড়লো। মনে হয় এতক্ষন নূরী এ সুযোগটার
অপেক্ষায় ছিলো।
.
৯ টার দিক ঘুম ভাঙ্গলো।তখনও নূরী ঘুমাচ্ছে। ঘুমানো
অবস্থায় যে মেয়েদের এত সুন্দর লাগে নূরী কে না
দেখলে বুঝতে পারতাম না।ইকবাল ভাইয়ের কাছে
শুনেছিলাম ঘুমানো অবস্থায় নাকি একটি মেয়ের
সৌন্দর্য ফুটে উঠে।আজ ইকবাল ভাইয়ের কথাটি সত্যি
মনে হচ্ছে।বেহায়া চোঁখ দুটো যেনো সরতে চাইছে না
নূরীর উপর থেকে।
নূরী তো আমার।নূরী কে তো আমি ভালোবাসি, হয়তো
কখনো মুখ ফুটে বলিনি এই যা।মুখে বলিনি বলে কি নূরী
কে ভালোবাসি না নাকি আমি তো পারবো না বাঁচতে
নূরী কে ছাড়া।
.
না এবার যেতে হবে প্রায় ১০ টা বাজতে চললো বাইরে
থেকে কিছু নিয়ে আসি পেটে মনে হয় ধর্মঘট করছে।
.
দুজনে নাস্তা করে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করলাম।দুপুরের
মধ্যে কাজ শেষ করে বাইরে গিয়ে খাবার নিয়ে
আসলাম। গোসল শেষ করে এসে দেখি নূরী খাবার নিয়ে
বসে আছে।খাওয়া শেষ করে দুজনে একসাথে বাইরে বের
হলাম।কিছু জিনিসপত্র কেনাকাটা করার আছে।নূরী
আবার বাইরের খাবার খেতে পারে না।
.
কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে কাজে মনোযোগ দিলাম।
অফিস শেষ করে বাসায় আসি আবার সকালে অফিসে
যাই।পাগলিটা সারাদিন অপেক্ষা করে থাকে কখন
আসবো আমি।
এতদিন হয়ে গেলো পাগলিটা কে নিয়ে কোথাও ঘুরতে
বের হইনি।পাগলিটা কে অালাদা করে কখনো সময় দিই
নাই।জানি পাগলিটার কোন অভিযোগ নেই আমার উপর
তবুও আমার কেমন যেনো অস্বস্তি হচ্ছিলো।
.
আব্বু আম্মু, বন্ধুরা সবাই আসলো। আমাদের ঘুছিয়ে নেয়া
সংসার টা দেখতে।আব্বু আম্মু আসার পর থেকে দেখছি
নূরীর সময় হয় না আমার সাথে কথা বলার। সবসময় এটা ওটা
নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নূরী যে প্রেগন্যান্ট সেটা বুঝতে চায়
না। ওকে কতবার যে বুঝানোর চেষ্টা করছি কিন্তু সে
কিছুতেই বুঝতে চায়।ও বুঝতে চায় না ওর তলপেটে একটু
একটু করে বেড়ে উঠছে আমাদের সন্তান।
.
–নূরী তুই এমন কেনো।বলতো।তুই যদি এত দৌড়াদৌড়ি
করিস তাহলে আমাদের বাবুটার কি হবে।(আমি)
.
–তুই কি করে জানিস বাবু হবে। বাবুনিও হতে পারে।(নূরী)
.
–আচ্ছা যা ভুল হয়েছে, আমাদের সন্তান।(আমি)
.
–আমাদের নবাগত সন্তানের নাম কি রাখা যায় বলবো।
(নূরী)
.
–মেয়ে হলে বৃষ্টি রাখবো বলে দিলাম।(আমি)
.
–বৃষ্টি কি তোর gf ছিলো।ছেলে হলে মেঘ রাখবো বলে
দিলাম তুই তখন কোন প্রকার বাধা দিতে পারবি না।(নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে, এখন থেকে তুই যদি বেশি
দৌড়াদৌড়ি করিস তাহলে আজ থেকে তোর সাথে কোন
কথা নেই।(আমি)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে আর দৌড়াদৌড়ি করবো না,আমি আজ
থেকে বিছানা থেকে নামবো না। (নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে নামতে হবে না তোরে আমি আছি না
তোর সেবা করতে।(আমি)
.
–তুই গিয়ে তোর অফিসের সেবা কর,আমার জন্য আমার
শাশুড়ি আছে না।(নূরী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে,এখন ঘুমা।(আমি)
.
১০ এপ্রিল আজকে ওর ডেলিভারির তারিখ।পাগলিটার
তলপেটে বেড়ে উঠা নবজাতক আজকে পৃথিবীর মুখ
দেখবে।পৃথিবীতে আসবে আমার আর নূরীর সন্তান। এই
দিনটার জন্য ১০ মাস ১০ দিন দরে অপেক্ষা করছি।
পাগলিটা আমাদের সন্তানের নাম ঠিক করে রাখছে,
মেঘ।যদি মেয়ে হয় তাহলে বৃষ্টি।
.
অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়ার আগে শুধু একটি কথাই
বলছিলো পাগলিটা, “আমি যদি ফিরে না আসি তোর
বুকে তাহলে তুই আমাদের সন্তান কে দেখে রাখিস আর
প্রতিদিন আমার কবরে একটি করে গোলাপ রাখবি”।
.
সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা
করছে আর আল্লাহ কে ডাকছে।আল্লাহ যেনো আমার
নূরী কে আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়।আমার আর কিছুই চাই
না আমি আমার নূরী কে চাই।আল্লাহ তুমি আমার নূরী কে
ফিরিয়ে দাও।
.
প্রায় ৩ ঘন্টা পর ডাক্তার বের হয়ে আসলো।
সবাই ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছি, ডাক্তার
বললো,” আমরা অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু মা মেয়ে
কাউকে বাঁচাতে পারিনি”।
.
আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো কি করবো
আমি বুঝতেছি না।আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটি
পৃথিবীতে আর নেই এটা যেনো আমি বিস্বাস করতে
পারছি না। দু-চোঁখ দিয়ে অবিরাম জলের ধারা বয়ে
যাচ্ছে।আমি যেনো সব শক্তি হারিয়ে ফেলছি।
.
মা মেয়ে দুজনের করবে প্রতিদিন একটা করে গোলাপ
রাখি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে।
ওরা তো চলে গিয়ে মুক্ত হয়ে গেছে। ভালো থেকে নূরী
ভালো তুমি আমাকে একা করে দিয়ে।
.
.
.
★★★সমাপ্ত ★★★

sanam teri kasam

0

@@ sanam teri kasam @@

.
পর্ব : (১০)
.
লেখক : Abdullah al ador mamun (কাল্পনিক লেখক)
.
দূর ভাল্লাগে না।ঘুমের ঘোরে কি থেকে কি হয়ে গেলো।
ইচ্ছে করছে নিজের কপাল নিজেই ফাটিয়ে দিই।
অনেক্ষন এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে বাড়ি ফিরলাম থুক্কু
শ্বশুর বাড়ি ফিরলাম।বাড়িতে ডুকে আব্বুর অগ্নি মূর্তি
দেখতে পেলাম।বাপরে আমি বাড়ি থেকে বের হলে
যেনো সব বিপদ ঘটে।আজকে আবার কি হলো।
.
–কিরে তোর কোথায় ছিলি এতক্ষন।।(নীরব)
.
–কেনো একটু বাইরে গিয়েছিলাম এখানে বসে বসে কি
করবো।(আমি)
.
–এখন গিয়ে রেডি হয়ে নেয়। (নীরব)
.
–যাচ্ছি যা,তবে একটা কথা বলে যা আব্বু এত রেগে
আছে কেনো।(আমি)
.
–তোরে যদি হাতের কাছে পেতো তখন বুঝিয়ে দিতো
কেনো এত রেগে আছে।(নীরব)
.
–আরে কি হয়েছে সেটা তো বলবি।(আমি)
.
–তোর মোবাইলে একটা মেয়ে কল করছিলো।তোর বউ
সেটা আঙ্কেলের কানে তুলছে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে।
(নীরব)
.
–ওহহহ এই ব্যাপার। ভাই আমারে তোরা একটা রাক্ষসীর
হাতে তুলে দিয়েছিস।এই মাইয়া আমারে একদিন না
একদিন উপরে পাঠিয়ে দিবে।(আমি)
.
–বাজে বকিস না।ওর মতো মেয়ে হয় না।ও। তোরে খুব
ভালোবাসে।ও তোর জন্য মরতেও পারে।(নীরব)
.
–হিহিহিহিহিহি মরতে তো আমিও পারি তবে
ভালোবাসার জন্য না।(আমি)
.
–দাঁত কেলানো বন্ধ করে রেডি হয়ে নেয় না হলে
অাঙ্কেল তোরে উপরে পাঠিয়ে দিবে।(নীরব)
.
ভ্যাগিস বেঁচে গেছি।সময়মত চলে এসেছি না হলে
আজকে কপালে দুঃখ ছিলো।কোন মেয়ে আবার আমাকে
ফোন দিবে।আমি তো কোন দিন কারো সাথে কৌতূহল
বসত কথা বলি নাই আর আজকে আমার নাম্বারে কল
দিলো।
কে জানে এর মাঝে কত শতাংশ মিথ্যা আছে।এক্ষুনি
গিয়ে দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা।
.
–কি মশাই কেমন দিলাম।(নূরী)
.
—————–
.
— মোবাইল খুজছিস তাই তো।সেটা পাবি না।(নূরী)
.
–মোবাইল টা দেয় আমি দেখবো কে সে সৌভাগ্যভান
ব্যক্তি যে আমাকে ফোন দিলো।(আমি)
.
–তোর কি মনে হয় আমি তোরে মোবাইল দিবো। একটা
শর্তে মোবাইলটা দিতে পারি।(নূরী)
.
–কি শর্ত।কালকে এত শর্ত দেওয়ার পরেও আরো শর্ত
বাকি আছে তোর।(আমি)
.
–মোবাইল যদি চাস তাহলে ১০ বার কান ধরে উঠবস কর।
আর হ্যাঁ সকালে একটা ভুল করছিস সেটার অপরাধে ১০
মিনিট এক পায়ে দাড়িয়ে থাকবি কান ধরে।(নূরী)
.
–এই আমার মোবাইলের দরকার নাই।তোর শর্তেরর কোন
দরকার নাই।মোবাইল নিবো না শর্তও মানবো না।(আমি)
.
এখন আমি শিউর। শুধু শিউর না ১০০০% শিউর যে কেউ ফোন
দেয় নাই সব নূরীর কারসাজী। মাইয়াটারে ইচ্ছে করে
মাথার উপর থেকে ছেড়ে দিই।
.
রাতে খাবার পর বাড়ি ফিরতে চাইছিলাম ভালো
লাগছিলো না।আমি যেখানে যাই না কেনো ১ দিন ১
রাতের বেশি থাকতে পারি না।বাড়ীতে আসার চেষ্টা
করেও ব্যর্থ হলাম।মন খারাপ করে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
নূরীর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছে না এই মাইয়ার জন্য
বাড়ীতে যেতে পারি নাই।
বিছানায়র এক পাশে শুয়ে পড়লাম।ক্লান্ত থাকায়
বিছানায় পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুম।
হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।চোঁখ খুলে দেখি লাইট
জ্বলছে কিন্তু আমি তো লাইট অফ করে শুয়েছি।নূরী
দিয়েছে মনে হয় কিন্তু ও এত রাতে আলো জ্বালিয়ে কি
করবে।মাথাটা একটু ঘুরিয়ে দেখি নূরী তাকিয়ে আছে।
এবার বুঝতে কোন সমস্যা হলো না যে এটা নূরীর কাজ।
ইচ্ছে করছে চুলের মুঠি ধরে কিছুক্ষণ পিটাই।
ইচ্ছে থাকার পরও কিছু করলাম না ১০ টা না ৫ টা না
একটা মাএ বউ আমার।
.
–কিরে কথা বলবি না আমার সাথে।(নূরী)
.
–তোর সাথে কথা বলার কোন প্রশ্নই আসে না।তোর জন্য
আজকে বাড়ীতে যেতে পারি নাই সে দুঃখ ভুলতে
বসেছিলাম ঘুমিয়ে তুই ঘুমটাও নষ্ট করে দিলি। (আমি)
.
–আমার কি দোষ বল।আজ সারাদিন তুই আমার সাথে কথা
বলিস নাই,এখন আবার একদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ছিস যে
জন্য তোর বুকে মাথা রাখতে পারছিনা আমি। (নূরী)
.
–বুকে মাথা রাখতে পারছিস না তাই বলে আমার ঘুম
ভেঙ্গে দিবি।আহ্ কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম
মেয়েটি যেনো কিউটের বস্তা। (আমি)
.
–ওহহহ আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে তোর ময় চায় না।
বিয়ের পরেও অন্য মেয়ে কে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিস।
আজকে এর একটা সমাধান করে তবেই ছাড়বো আমি।(নূরী)
.
–চুপচাপ ঘুমা বলছি নইলে তোর খবর আছে বলে দিলাম।
(আমি)
.
নূরী আর কোন কথা বলেনি,চুপচাপ আমার বুকে মাথা
রেখে শুয়ে পড়লো।একটি বারও কোন প্রকার শব্দ করলো
না।যাক ভালোই হলো শান্তিতে তো ঘুমাতে পারবো।
.
নূরী আবার কি হলো।মেয়েটি সত্যি রহস্যময়। এই হাসি এই
কান্না।এতক্ষন শুয়েছিল চোঁখ বন্ধ করে আর আমি চোঁখ
বন্ধ করার সাথে সাথে কান্না শুরু করছে।
.
–নূরী কান্না বন্ধ কর বলছি।(আমি)
.
–……………
.
–কেনো কাঁদছিস বলতো।(আমি)
.
–………….
.
–এবার কিন্তু তোরে নিচে ফেলে দিবো।কান্না যদি না
থামাস।(আমি)
.
–……….
.
–নূরী আমার কিন্তু ঠান্ডা লেগে যেতে পারে তুইতো টি-
শার্ট পুরোটা ভিজিয়ে ফেলছিস।(আমি)
.
মুখ তুলে একটু চাইলো আমার দিকে তারপর আবার কান্না
জুড়ে দিলো।বিরক্ত হয়ে গেছি নূরীর এমন অাচারনে।দূর
ভাল্লাগে না এইসব নেকামি।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে নাক টানাটানি শুরু
হয়ে গেছে থুক্কু সর্দি শুরু হয়ে গেছে।সর্দি আমার একদম
পছন্দ না।সর্দি না হয়ে যদি জ্বর হতো সেটাই ভালো
হতো।
.
দেখতে দেখতে আমার আর নূরীর বিয়ের ৬ মাস পূর্ণ হলো।
রাগ, অভিমান, ঝগড়া করে চলে আমাদের দুজনের পথচলা।
বিয়ের ৬ মাস পর আব্বু আমাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়ার
সিকদান্ত নিয়েছে। আব্বু চায় আমি ঢাকাতে থেকে
আব্বুর আমাদের বিজনেস সামলাই ইমন আর আব্বু মিলে
এখানে (চিটাগাং) সামলাবে।
.
–সবকিছু রেডি করা আছে তোরা গিয়ে ওখানে উঠবি।
(আব্বু)
.
–আব্বু আমি বলি কি ইমন ওখানে চলে যাক। ও তো
অনেকদিন ধরে ঢাকাতে কাজ করছে ও ভালো ভাবে
সামলাতে পারবে। আমি না হয় এখানে সামলাবো।(আমি)
.
–না তা হবে না আমি যা বলছি তাই হবে।তোরা ঢাকাতে
যাবি।(আব্বু)
.
–আমরা মানে আমি তো একাই যাবো। (আমি)
.
–তোর বউ কোথায় যাবে নূরী কে সাথে নিয়ে যাবি।
বিয়ের পর তো কোন দিন মেয়েটি কে নিয়ে ঘুরতে বের
হয়েছিস বলে মনে হয় না।(আম্মু)
.
–তুমি আবার কখন আসলা এখানে , নূরীর গুনগান গাইতে।
(আমি)
.
–চুপ ফাজিল। (আম্মু)
.
.
চলবে