চুক্তির বউ ৬ষ্ট পর্ব
লেখা:তামান্না
দু’মাস পর……………..
আজ শ্রাবণ আমেরিকা থেকে দেশে ফিরছে।
মনের ভেতর অজানা প্রশ্ন মেঘ শ্রাবণ কে দেখে কিভাবে রিয়েক্ট করবে।শ্রাবণ আমেরিকা তিনমাসের জন্য গেলেও মেঘকে এতো মিস করছিলো তিনমাসের কাজ পনেরোদিন আগেই শেষ করে।আজ মেঘকে চমকে দেবে শ্রাবণ।এখনো শ্রাবণ জানায়নি যে সে আজ দেশে ফিরছে।এদিকে শ্রাবণ ভাবছে মেঘকে সারপ্রাইজ দিবে।অন্যদিকে শ্রাবণ নিজেও জানে না তারজন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।শ্রাবণ এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বাসায় আসার জন্য গাড়ি রিজার্ভ করে।চাইলেই বাড়ির গাড়িটা ড্রাইভারকে দিয়ে আনিয়ে নিতে পারতো কিন্তু এতে সারপ্রাইজ টা দেওয়া হবে না।
বাসার কাছে এসে শ্রাবণ কলিংবেল চাপে।
মেঘ রান্না করছিলো।
মেঘঃদুর এই দুপুর বেলা আবার কে এলো?কাজের বারোটা বাজাবে বলে।
মেঘ বিড়বিড় করে দরজা খুলেই অবাক।
শ্রাবণ আসবে তাও এইভাবে ভাবনার বাইরে ছিলো।অনেকসময় পেরিয়ে গেলো।মেঘ শ্রাবণের দিকে তাকিয়েই আছে।শ্রাবণের ডাকে ঘোর কাটে মেঘের।
শ্রাবণঃকি ব্যাপার ভেতরে যেতে দেবে নাকি এখানেই দাড় করিয়ে রাখবে।এমনিতেই জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে গেছি।
মেঘের চোখে আঙুল দিয়ে তুড়ি বাজায় শ্রাবণ।
মেঘঃআপনি আজ।
শ্রাবণঃকেনো?খুশি হওনি।তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো তাই চলে আসলাম।(একটু আস্তে করেই বলে)
মেঘঃকি বললেন?
শ্রাবণঃবললাম যে ডিলটা কাল রাতেই ফাইনাল হয়ে গেছে তাই চলে আসলাম।ওখানে যার জন্য যাওয়া সেই কাজ যখন শেষ বসে থেকে কি করবো বলো?
মেঘ অবাক হয়ে শ্রাবণের ব্যবহার দেখছে।এর আগে শ্রাবণ মেঘের সাথে যতবার কথা বলেছে সবসময় রাগী রাগী ভাব থাকতো আজ কি এমন হলো যে এতো ভালো বিহেভ করছে।
শ্রাবণঃকি হলো ভাবনাতেই থাকবে নাকি দরজা থেকে সরে দাঁড়াবে।
মেঘঃওহ হ্যা আসুন।
শ্রাবণ ভেতরে ডুকতে ডুকতে মেঘকে বলে….
শ্রাবণঃমামনি কোথায়?
মেঘঃওনার রুমে।
শ্রাবণঃএক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে আসো।আমি গিয়ে মামনির সাথে দেখা করে আসি।
মেঘঃআচ্ছা।
শ্রাবণ তার মায়ের রুমে গিয়ে দরজায় ঠোকা দেয়………
শ্রাবণঃমামনি দরজা খুলো আমি শ্রাবণ।
একটুপর দরজা খুলার আওয়াজ…….
শ্রাবণ ভেতরে আসতে যাবে অমনি চোখ যায় তার মায়ের দিকে।চোখ থেকে অবিরাম জল গড়িয়ে পড়ছে।শ্রাবণের বিশ্বাস হচ্ছে না যে এটা তার মা।এক ছুটে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
শ্রাবণের মাঃপাগল ছেলে কাঁদছিস কেনো?
শ্রাবণঃমামনি এটা কিভাবে সম্ভব হলো?
শ্রাবণ তার মায়ের পায়ের দিকে ইশারা করে।শ্রাবণের কান্নার কারণ হচ্ছে আজ প্রায় তিনবছর পর সে তার মাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে।মাকে এই অবস্থায় শ্রাবণ যে কতোটা খুশি তা বলে বুঝানো যাবে না।
শ্রাবণঃমামনি তুমি ভালো হয়ে গেছো।ইয়ায়ায়ায়াহু আমার মামনি আবার হাটাচলা করে।
শ্রাবণ মাকে ধরে চারিদিক ঘুরে চিৎকার করে বলছে।
শ্রাবণের মাঃশ্রাবণ পড়ে যাবো থাম এবার।
শ্রাবণঃওহ হ্যা।তোমার পা ঠিক হলো কবে?
শ্রাবণের মাঃএটার জন্য সব ক্রেডিট মেঘের।
শ্রাবণঃমেঘ কিভাবে তোমার পা?
শ্রাবণের মাঃসেটা পরে বলছি আগে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আয়।তারপর সব জানবি।
শ্রাবণঃওকে আমি আসছি।
শ্রাবণ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হবে এর মাঝেই মেঘ এসে সামনে দাঁড়ায়।শরবতের গ্লাসটা রেখে চলে যাবে শ্রাবণ তখন মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে…….
শ্রাবণঃথেংক ইউ মেঘ।
মেঘ ঘুরে তাকায়।চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করে কিসের জন্য?
শ্রাবণঃমামনিকে সুস্থ করে তুলার জন্য।
মেঘঃওহ মাকে সুস্থ করেছি বলে থেংক্স দিয়ে ছোট করতে চাইছেন।
শ্রাবণঃআসলে ঠিক সেটা নয় মেঘ।
মেঘঃআমার বুঝা হয়ে গেছে।মেয়ে মাকে সুস্থ করার জন্য মায়ের সেবা করেছে আর আপনি সেটাকে অন্যভাবে নিলেন।
শ্রাবণঃমেঘ আমি এটা কখন বললাম।আমি শুধু এটা বলতে চেয়েছি এতোদিন আমি পারিনি মামনিকে হাজার চেষ্টা করেও সুস্থ করতে আর তুমি তিনমাসের মধ্যেই মামনিকে সুস্থ করে তুললে।
মেঘঃআর বুঝাতে হবে না।শরবত টা খেয়ে নিচে আসুন খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
শ্রাবণঃট্রাস্ট মি মেঘ আমি ওভাবে বলিনি।
মেঘ জবাব না দিয়ে নিচে চলে যায়।
খাবার টেবিলে বসে শ্রাবণের মা নিজেই বলা শুরু করেন।
শ্রাবণের মাঃতুই চলে যাওয়ার পর বউমা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে।দিনের পর দিন আমার সেবা করেছে।প্রতিদিন দুবার করে পায়ে মালিশ করতো।ঠিকমতো ওষুধ খাওয়াতো।মাঝে মাঝে ঘুম পাড়িয়ে দিতো।প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় আর সন্ধ্যের আগে রোজ দুবার করে পার্কে নিয়ে যেতো।হাতে হাত রেখে হাটতে শিখাতো।একটা সময় পায়ের টান গুলো হাল্কা কমতে শুরু করে।ডক্টর এর ট্রিটমেন্ট ও সাথে ছিলো।এইভাবে ধীরে ধীরে পায়ের ফুলা কমতে থাকে।একদিন তো উইলচেয়ার থেকে পড়ে গেছিলাম।মেঘ যখন আমাকে ধরে তুলবে তার আগেই আমি নিজে নিজে উঠার চেষ্টা করি।আর এরপর থেকে একটু একটু করে হাটতাম।আর এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।সব এই মেয়েটার জন্য।
মেঘকে উদ্দেশ্য করে।মেঘ এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলো।শ্রাবণ মেঘের দিকে একবার তাকায় আবার মায়ের দিকে তাকায়।এরপর আবার মেঘ নিচের দিকে তাকায়।
শ্রাবণের মাঃমেঘ না থাকলে আজ তো আমি হাটতেই পারতাম না।
মেঘঃমা কি সব ফালতু কথা বলছেন।আপনার হাটার পেছনে আপনার মনের জুরটাই ছিলো সবচেয়ে বড় শক্তি।আমি তো শুধু আপনার লাঠি হিসেবে কাজ করেছি।আপনার মনে আবারো স্বাভাবিক হওয়ার ইচ্ছা শক্তি ছিলো তাই আপনি শতবার পড়ে যাওয়ার পরেও হার মানেননি।আর তার ফল আজ আপনি নিজের পায়ে হাটাচলা করতে পারছেন।
শ্রাবণের মাঃতোর সাথে কথায় পারবো না।আয় বস আজ আমি তোকে খাইয়ে দিবো।
মেঘঃমা আপনি খেয়ে নিন আমি পড়ে খাবো।
শ্রাবণের মাঃআমার কথা অমান্য করে।আয় এখানে।
মেঘঃসরি মা।
মেঘ মায়ের পাশের চেয়ারে বসে।ফুলি এসে কি লাগবে না লাগবে সেটা দেখে গেলো।
শ্রাবণের মা অল্প ভাত মেখে মেঘের মুখের সামনে তুলে ধরেন।মেঘ এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না।আজ অনেকদিন পর মায়ের হাতে খাবে।খুশিতে মেঘের চোখে সুখের অশ্রু ধরা দিলো।
শ্রাবণের মাঃকি রে মা কাঁদছিস কেনো?
মায়ের কথায় শ্রাবণ চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে মেঘ সত্যি কাঁদছে।বুঝে উঠতে পারছে না মেঘ হঠাৎ কেনো কাঁদছে?
মেঘ কেঁদেই যাচ্ছে………
শ্রাবণের মাঃপাগল মেয়ে এইভাবে কেউ কাঁদে।
মেঘঃমা…….অনেকদিন পর মায়ের হাতে খাচ্ছে।যেন মনে হচ্ছে মেঘের মা আজ খুব আদর করে মেঘকে খাইয়ে দিচ্ছেন।
শ্রাবণের মাঃভাতের পাতে চোখের জল ফেলতে নেই মা।
মেঘের চোখের জল মুছে দিলেন।
মেঘ মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
শ্রাবণের মাঃনে হা কর।আর কান্না না।
মেঘঃহুম।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে শ্রাবণ আর ওর মা গল্প বসে গল্প করছেন।
শ্রাবণের মাঃওখানে সব ঠিকঠাক ছিলো তো শ্রাবণ।
শ্রাবণঃহ্যা মামনি সব ঠিক ছিলো।তাইতো কাজ গুছাতে বেশি সময় লাগেনি।আমি তো ভেবেছিলাম তিনমাসেরও বেশি সময় লাগবে।
শ্রাবণের মাঃশ্রাবণ কালকের তারিখটা তোর মনে আছে তো।
শ্রাবণঃকালকের তারিখ।
শ্রাবণ একটু ভাবনায় পড়ে যায় কালকে কি সেটা নিয়ে।একটু পর যখন মনে পড়ে কাল কি?তখন শ্রাবণ ওর মায়ের দিকে একপলক তাকায় মুহুর্তেই ভয়ানক দিনটার কথা মনে পড়ে যায়।দেরী না করে তাড়াতাড়ি মায়ের পাশ থেকে সরে ছাদে চলে যায়।আর এক মুহুর্ত মায়ের কাছে থাকলে নিজেকে সামলানো অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে যাবে।আর শ্রাবণের মা ও পারবেন না নিজেকে সামলাতে।
শ্রাবণ উঠে যেতেই মেঘ ওর শ্বাশুড়ির কাছে গিয়ে বসে।তারপর জিজ্ঞেস করে……..
মেঘঃমা কালকে কি আছে ওনি এভাবে চলে গেলেন কেনো?
শ্রাবণের মাঃমুখে আচল চেপে কান্না করছেন।
মেঘঃমা কি হয়েছে কাঁদছেন কেনো?
শ্রাবণের মাঃজানতে চাস কালকের দিনে কি হয়েছিলো?
মেঘঃকি হয়েছে?
শ্রাবণের মাঃকাল শ্রাবণের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী।
মেঘঃকতবছর হয়েছে?
শ্রাবণের মাঃকাল তিনবছর পূর্ণ হবে।
মেঘঃওহ মা বাবা মারা গেছেন কিভাবে ওনার কি কোনো রোগ ছিলো?
শ্রাবণের মাঃনা রে মা।একটা এক্সিডেন্ট সব শেষ করে দিলো।ওই এক্সিডেন্ট এর পর থেকে আমি হাটাচলা করতে পারতাম না।আর শ্রাবণ ওইদিনের পর থেকে নিজেকে প্রতিটা মুহুর্তে অপরাধী ভাবছে।
মেঘঃএক্সিডেন্টে ওনি নিজেকে কেনো অপরাধী ভাববেন এটা হয়তো আল্লাহর ইচ্ছা।কেনো ওনিই নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন।
শ্রাবণের মাঃশোণ কেনো শ্রাবণ নিজেকে দোষ দিচ্ছে।
মেঘঃহ্যা মা বলুন।না জানলে পারবোনা ওনার মন থেকে গিল্ট ফিলিংটা দূর করতে।
শ্রাবণের মাঃজানিস শ্রাবণ এমন রাগী ছিলো না।ও খুব হাসিখুশি আর ভালো মনের একটা ছেলে।সবসময় দুষ্টামি করা আর সবার সাথে মাস্তি করা ছিলো ওর নেশা।একদিন কারো সাথে দুষ্টামি না করলে ওর নাকি ভালো লাগতো না।ওর বাবা তখন আমাদের কোম্পানিটা দেখাশুনা করতেন।শ্রাবণ কে অনেকবার রিকুয়েস্ট করেছেন যে বাবার সাথে কোম্পানির দেখাশুনা কর।কিন্তু ওর একটাই কথা তুমি থাকতে জীবনেও ওই কোম্পানিতে আমি পা রাখবো না।আমার বুঝি লাইফটাকে সেলিব্রেশন করতে মন চায় না।তোমার মতো অতকাজ আমাকে দিয়ে হবে না।আরো অনেক কথা…..
সেদিন ছিলো শ্রাবণের জন্মদিন।শ্রাবণের বাবা অনেকটা জোর করে ওকে আমাদের অফিসটা দেখতে পাঠাবেন ভাবেন।কিন্তু শ্রাবণের একটাই কথা যাবে না।এরপর বাবার জুরাজুরিতে শেষমেশ রাজী হয়।তিনজনে মিলে সেদিন প্লেন হলো ঘুরাঘুরি করার পর একসাথে অফিসে যাওয়া।যেহেতু শ্রাবণের জন্মদিন তাই ওর কথা অনুযায়ী আগে ঘুরাঘুরি পরে যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবে।সেদিনই আমার ছেলের মুখে শেষ হাসি দেখেছিলাম এরপর থেকে শ্রাবণ হাসিটা কেমন ঘুটিয়ে নিলো।
মেঘঃতারপর কি হয়েছিলো।
শ্রাবণের মাঃপ্রথমত গাড়ি শ্রাবণ ড্রাইভ করে।কিন্তু ওনার ফোনে একটা কল আসার পর ওনি ড্রাইভ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন।শ্রাবণ বলে সে নিজে ড্রাইভ করবে।কিন্তু ওর বাবা মানতে রাজী না।বাধ্য হয়ে শ্রাবণ পিছনে এসে বসে।এরপর অফিস যাওয়ার পথে মাঝখানে গাড়ির ব্রেকফেইল হয়ে যায়।শ্রাবণ বুঝে উঠতে পারে না যে সে কি করবে?একদিকে বাবাকে বাঁচানোর জন্য গাড়ি কন্ট্রোল করা অন্যদিকে আমাকে বাঁচানোর জন্য কোনো একটা উপায় বের করা।
শ্রাবণ যখন বুঝতে পারে গাড়ি ব্রেকফেইল করেছে তখন গাড়ির দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেয়।তারপর বাবা ছেলে মিলে বাবাকে সরিয়ে ড্রাইভ সামলাতে যাবে এরমাঝেই সামনে থেকে একটা ট্রাক এসে গাড়ির সামনে পড়ে।শ্রাবণের বাবা শ্রাবণ কে সরিয়ে নিজেই গাড়ির ভেতরে থেকে যান।মুহুর্তেই সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।শ্রাবণের হাতে পায়ে ছুট লাগলেও আমার পা দিয়ে চলাচলের শক্তি হারাই।ওনাকে হাসপাতালে এডমিট করার সাথে সাথেই মারা যান।জানিস মা শ্রাবণ এইজন্য সবসময় নিজেকে দোষ দেয়।কিন্তু শ্রাবণ তো অপরাধী না।আসল অপরাধী কে সেটা হয়তো শ্রাবণ এখনো জানেনা।
মেঘঃআসল অপরাধী মানে কি মা।
শ্রাবণের মাঃআমাদের গাড়িটা এক্সিডেন্ট হয়নি মা।ওটার এক্সিডেন্ট করানো হয়েছে।আর যে করেছে শ্রাবণ তাকে ফেলে কখনো ক্ষমা না ও করতে পারে।ভেতরে ভেতরে ছেলেটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
মেঘঃমা কাল তাহলে ওনার জন্মদিন ও।
শ্রাবণের মাঃহ্যা মা।এরপর থেকে শ্রাবণ কে হাসতে দেখিনি।প্রতিটা জন্মদিন এখন ওর জন্য বিষাদময়।
মেঘঃমা কালকের দিন থেকে আপনার ছেলে হাসবে।ওনাকে যে আগের মতো হতেই হবে।
শ্রাবণের মাঃতুই পারবি তো মা।
মেঘঃপারতে আমাকে হবেই।মা আমি একটু বের হচ্ছি।আমার কিছু কাজ আছে।চিন্তা করবেন না।আমি সন্ধ্যে হওয়ার আগেই চলে আসবো।
শ্রাবণের মাঃঠিক আছে মা।তবে যেখানে যাবি একটু সাবধানে কেমন।
মেঘঃহুম।
মেঘ নিজের পার্টস আর কিছু টাকা সাথে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যের কিছু সময় আগেই মেঘ বাসায় ফিরে আসে।রুমে গিয়ে দেখে শ্রাবণ রুমে নেই।ফুলিকে জিজ্ঞেস করে….
মেঘঃফুলি তোর ভাইজান কে দেখেছিস।
ফুলিঃভাইজান তো সেই দুপুরের পর থেকে ছাদে এখনো নিচে আসেনি।
মেঘঃওহ ঠিক আছে।
মেঘ দ্রুত ছাদের দিকে পা বাড়ায়।ছাদে গিয়ে দেখে শ্রাবণ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।অনেকক্ষণ মেঘ শ্রাবণের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।শ্রাবণ এর খেয়ালই নেই ওর পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।মেঘ নিজে থেকেই কথা বলে।
মেঘঃকি ব্যাপার রুমে যাবেন না আর কতক্ষণ এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন।(ঘাড়ে হাত রেখে)
শ্রাবণ পাশ ফিরে তাকিয়ে মেঘকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে।পাগলের মতো কাঁদছে আর বলছে……
শ্রাবণঃবিশ্বাস করো মেঘ আমি বাপিকে মারিনি।কিভাবে যেন এক্সিডেন্ট টা হয়ে গেলো।আমার জন্য আমার মামনি তিনবছর নিজের পায়ে হাটতে পারেনি।আমার জন্য মামনিকে গায়ে সাদা শাড়ি জড়াতে হলো।আমি অনেক চেষ্টা করেছি বাপিকে বাঁচানোর কিন্তু পারিনি।
মেঘঃপ্লিজ আপনি একটু শান্ত্ব হন।
শ্রাবণঃজানো বাপি মারা যাওয়ার কিছুদিন পর জানতে পারি কেউ একজন আমাকে মেরে ফেলার জন্য গাড়ির নাকি ব্রেকফেইল করিয়ে রাখে।আর বাপি সেটা জেনে যায়।আমাকে বাঁচাতে গিয়েই সেদিন বাপি নিজেকে শেষ করে দিলো।বাপির মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী মেঘ আমি দায়ী।
মেঘঃআপনি কেনো নিজেকে দোষী ভাবছেন?দেখুন কেউ যদি আপনার ক্ষতি করতে আপনাকে মেরে ফেলতে চায় আর সেটা আপনার বাবা জেনে গিয়েও কিভাবে হাত ঘুটিয়ে বসে থাকবেন।আপনার বাবার এই সবকিছু তো আপনার জন্য সেই আপনাকেই যদি ওনি সুখ দিতে না পারেন তাহলে ওনি নিজেকে খুব অপরাধী মনে করবেন।আর শুনুন আজ থেকে নিজেকে একদম দোষ দিবেন না।কারণ আপনি নিজে ভালো করেই জানেন আপনি দোষী নন।শুধু শুধু কেনো নিজেকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন।আর আপনি এটা জানার চেষ্টা করেন কে আপনাকে সেদিন মারতে চেয়েছিলো।
শ্রাবণঃকিভাবে জানবো আমি?
মেঘঃআমার মন বলছে মা কিছু একটা আড়াল করছেন ওনি পারেন আপনাকে আসল অপরাধীর কথা বলতে যদি ওনি জেনে থাকেন তো।
শ্রাবণঃহতে পারে এইজন্য মামনি বার বার অফিসের ব্যাপার নিয়ে এতো চিন্তা করে।আমি কতো বুঝাই আমি সব দেখাশুনা করবো তাও কি জেনো খুঁজে।
মেঘঃহুম।তাহলে কাল থেকে আমরা জানার চেষ্টা করবো কে এর পিছনে আছে।
শ্রাবণঃতুমি আমার সাথে থাকবে।
মেঘঃহ্যা কেনো থাকবো না।এখনো আমাদের চুক্তির একবছর শেষ হয়নি যে মাঝপথে আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো।যতদিন চুক্তি মেয়াদ আছে ততদিন আমি আপনার পাশে থাকবো।
শ্রাবণঃওহ চুক্তি শেষ হলেই চলে যাবে।
মেঘঃহুম যেতে যে আমাকে হবেই।এই চুক্তিটা যে একবছরের জন্য ছিলো।
শ্রাবণ মেঘকে ছেড়ে নিচে চলে গেলো।মেঘ।মনে মনে ভাবছে…..
এই চুক্তি কেনো দেয়া একবছর কেনো যদি আমার মৃত্যুর পর আরো কোনো জন্ম থাকে সেই জন্মেও আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না।জানিনা এই চুক্তিতে কি আছে কেনো এই চুক্তি কি কারণ তার শুধু সময়ের অপেক্ষা।আমি অতীতের ভুলটা আর করতে চাইনা যে।আমি আর হারাতে পারবো না কিছু।আমার সেই শক্তি নেই।তবে ভালোই হয়েছে অতীতে যদি ভুল না করতাম তাহলে চোখ খুলতো না।জানতেও পারতাম না আর বুঝতেও পারতাম আসল ভালোবাসা কি?
চলবে……..