Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1060



প্রেমপ্রলয় পর্ব-১৩

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৩

-‘ জিমি তুই গেলি গোমড়া মুখো হয়ে। কি সব বলে গেলি আমরা তো টেনশনে শেষ আর আসলি মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে হাসি মুখে ব্যাপার কি বলতো তোর আমাদের টেনশন না দিলে তোর হয় না? না-কি রে একটু বলবি আমারে’

জিমি সোফায় আরাম করে বসে বলল

-‘ রিলাক্স আপু তেমন কিছুই না অফিস থেকে বসের ফোন আসছিল মনে করলাম জবটা মনে হয় শেষ কিন্তু না ওখানে গিয়ে দেখি উল্টো কেস’

-‘মানে কি বলছিস এগুলো? কিছু বুঝতেছি না’

-‘ ঠিকি বলছি আগে অফিস সপ্তাহে ৩দিন ছিলো আর এখন ৭ দিন-ই অফিস’

-‘ মানে তোর প্রমোশন হয়েছে?’

জিমি উপর নিচ মাথা নাড়ালো। সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সামি কিছু বুঝতে না পেরে বলল

-‘ এই আপনি কি সব খু*ন টুন বলে গেলেন? আর আপনি কিসের জব করেন?’

মিলিও সামির সাথে তাল মিলিয়ে বলল

-‘ হ্যাঁ তো তুই কারে খু-ন করার কথা বলছিলি?’

-‘ আরে ম্যানেজারকে শালা এক নম্বরের মীর জাফর আমাকে দু-চোখে সহ্য করতে পারে না কাজে কোনো ভুল না হলে খুঁচিয়ে ভুল বের করা স্বাভাব তার সবসময় দৌড়ের ওপরে রাখে আজ মনে করছিলাম স্যাররে যদি উল্টো পাল্টা বলে আমার নামে কান ভাঙ্গায় তাইলে আজই মাথা ফা’টিয়ে দিয়ে আসবো দেখলাম কিছুই বলল না মুখ গম্ভীর করে একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল নির্ঘাত ঝাড়ি খাইছে স্যারের কাছে’

লিমন হাতে থাকা ফোন দেখিয়ে আফসোস সুরে বলল

-‘ আপু এই দেখ আমি আরো ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিলাম কখন থানা থেকে ফোন আসবে আর তোকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবো কিন্তু না তা আর হলো না আহা কতদিনের শখ একটু থানা থেকে ঘুরে আসবো কিন্তু হলেও না’

লিমনের কথা শুনে মিলি ঠাস করে লিমনের মাথায় চ-ড় মে-রে বলল

-‘ সবকিছু নিয়ে ফাইজলামি তাই না? বিয়া*দপ।’

জাকি বাঁধা দিয়ে বলল

-‘ আহ তুমি আমার বাচ্চা শালাকে মারছো কেনো? তোমার তো দেখি সাহস কম না’

জিমি মজা নিয়ে বলল

-‘ মা’রের আর কি দেখলে ভাইয়া পিকচার তো আভি বাকি হে। যখন আপু তোমাকে ঝাঁটা নিয়ে তারা করবে আর তুমি দৌড়াবে আর আপু পিছনে ঝাঁটা নিয়ে দৌড়াবে আহা কত কিউট ই না হবে’

সামি বলে উঠলো

-‘হোয়াট এ সিন? আমি এখনই ইমাজিন করে ফেলছি’

জাকির কাশি উঠে গেলো। মিলি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। লিলি বেগম রেগে জিমির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ জিমি কি হচ্ছে এগুলা? বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না?’

জাকি বলল

-‘ থাক আম্মু বকবেন না ও মজা করছে’

লিলি বেগম অনুনয় করে বলল

-‘ জিমির কথায় কিছু মনে করো না বাবা কখন যে কি বলে মাথার ঠিক নাই পাগল ও’

-‘ আরে আম্মু এতো হায়পার হওয়ার কিছু নাই আমি কিছু মনে করি না লিমন জিমি ওরা তো আমার ছোট ভাই-বোন ওদের কথায় কেনো কিছু মনে করবো বলুন তো?’

জিমি মুখ ফুলিয়ে রুমে চলে গেলো। লিলি সামির সামনে ‘পাগল’ কথাটা বলায় জিমির বড্ড পেস্টিজে লাগছে। সামি ও তখন জিমির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছিলো জিমির গা জ্বলে যাচ্ছিল একে বারে।

জিমি ফ্রেশ হয়ে ধপাস করে বিছানায় উবুর হয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে চোখ খুলতেই সোজাসোজি টেবিলে থাকা বইগুলো চোখে পড়লো তারা যেনো জিমিকে কাছে ডাকছে। জিমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল

-‘ তোরা আমাকে ডাকছিস কেনো বলতো? নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে নাইলে তো তোরা এভাবে ডাকার পাত্র না সত্যি করে বলতো কি বলতে চাস?’

আবার ও কিছুক্ষণ চোখ ছোট ছোট করে বইগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো

-‘ এভাবে বার বার আমাকে ডেকে ডিস্টার্ব করলে তোদেরকে অন্য রুমে শিফট করে দিবো এই রুমে থাকতে চাইলে ডোন্ট ডিস্টার্ব মি গট ইট?’

জিমি নিজে নিজে বকবক করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।

____________________________________________

মিলিরা চলে গেছে আজ কয়েক দিন হলো মাত্র। সবাই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বেশি মন খারাপ হলে ফোন করে কথা বলে নেয়।

বিকাল বেলা চারিদিকে আধার নেমে আসছে জিমি দাঁড়িয়ে আছে অন্যমনুষ্ক হয়ে। হুট করে আচমকা জিমির হাত টান দিলো কেউ। কারোর বুকে এসে বাড়ি খেলো। তার হৃৎস্পন্দন বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে জিমি পারফিউমটাও কেমন চেনা চেনা অতিচেনা তখনই শাঁই করে একটা ট্রাক পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। লোকটা জিমিকে জড়িয়ে ধরে আছে দেখতেই জিমির কি হলো কে জানে ঝট করে সরে দাঁড়ালো। চোখ তুলে সামির মুখ দর্শন হলো। জিমির হঠাৎ হার্ট বিট বেড়ে গেলো অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস পড়তে লাগলো। মনে মনে অংক কষে বলল এই নিয়ে দুই বার ওনার এতো কাছে ছিলাম তা-ও আর কোনো ছেলের এতো কাছে যায়নি। ভাবনার মাঝে সামির বাজ খাই গলায় আওয়াজ জিমির কানে বাড়ি খেলো। জিমি চমকে সামির দিকে তাকালো

-‘ এভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কি ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছিলেন না-কি মডেলিং করতেছিলেন? আমি না আসলে আপনি উড়ে যেতেন সে খেয়াল আছে আপনার? মনটা কি আদেও আপনার কাছে আছে না-কি বফের কাছে রেখে আসছেন’

জিমি কিছু বলল না ওর মাথায় চলছে অন্য কিছু। শুধু সামিকে ছোট করে বলল

-‘ থ্যাংকিউ’

সামি অবাক হলো ভ্রু কুচকে গেলো ধিরে ধিরে বিড়বিড় করে বলল ‘আজব এতো কথা বলাম তার বদলে শুধু থ্যাংকিউ? এই মেয়ে রে একটা কথা বললে ১০০ টা কথা শুনিয়ে দেয় আর এখন এতো কথা বললাম এতোক্ষণ তো আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার কথা’ কিন্তু সামি মুখে বলল

-‘ জিমি আপনি ঠিক আছেন? আপনাকে কেমন অদ্ভুত লাগছে’

জিমি মাথা নাড়িয়ে বলল

-‘ হ্যাঁ ঠিক আছি’

-‘ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আপনি ঠিক নাই’

কথাটা শেষ হতে না হতেই জিমি রাস্তার মধ্যে পড়ে গেলো। সামি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে দেখলো জিমিকে ধরার সুযোগ টুকু পেলো না সোডিয়ামের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলো মাথা দিয়ে তরল পদার্থ বেরিয়ে রাস্তা ভিজে গেলো।

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-১২

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১২

আজ সকালে জিমি অনেক দেরিতে উঠেছে তাও ওর এখনো ঘুম পূরণ হয়নি। এখনো ঘুমতে মন চাইছে কিন্তু এদিকে জিমির মা বারবার জিমিকে বাজারে যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে। জিমি ফ্রেশ হয়ে ঘুম চোখে ডুলুডুলু পায়ে হেলতে দুলতে ড্রাইংরুমে আসতেই বাহুতে বারি খেলো ঘুমু চোখে মাথা উঠাতেই সামির মুখ দেখতে পেলো। সামিকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো কিচেনে বিরবির করে বলল ‘আজ দিন টা-ই খারাপ যাবে’

কিচেনের দরজায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল ‘আম্মু কও কি আনতে হইবো? শান্তিতে ঘুমাইতেও দাও না। কাল রাতে বললে সব এনে রাইখা দিতাম তাও এভাবে অত্যাচার না করতে হইতো না তোমার?’

লিলি চাপা স্বরে বলল ‘ভালোভাবে কথা বল জিমি বাড়িতে জামায় আছে, তার ভাই আছে এভাবে কথা বলতে শুনলে তারাই বা কি মনে করবে বলতো’

জিমি চোখ খুলে লিলির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল ‘কি লাগবে তারাতাড়ি বলো আমার ঘুম পাচ্ছে’

-‘এসে ঘুমাবি মানে কি মা-র-বো টেনে এক চ*ড় এসে কোনো কাজ না পেলে পড়তে বসবি পড়াশোনা তো সব লাটে উঠিয়েছিস’

জিমি চুপ থাকলো লিলি কি কি আনতে হবে তার একটা লিস্ট ধরিয়ে দিলো জিমির হাতে। জিমি ড্রাইংরুম ক্রস করে যাচ্ছিল তখন জাকি বলে উঠলো ‘কোথায় যাও গো শালিকা?’

জিমি জুতার ফিতা লাগাতে লাগাতে বলল

-‘প্রেমিকের সাথে দেখা করতে গো ভাইয়া’

-‘প্রেমিকের সাথে দেখা করতে গিয়ে প্রেমিকা বুঝি বাজারের প্যাকেট নিয়ে যায়’

-‘আমি হচ্ছে সব থেকে আলাদা প্রেমিকা বুজলে তাই প্যাকেট নিয়ে যায়’

-‘তাহলে চলো আমি যায় তোমার সাথে বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগছে না বেড়িয়ে আছি তোমার সাথে’

-‘আমার সাথে কেনো আপু আছে তো? আর আমার মেলা কাজ বুঝলে’

-‘বুঝলাম’

জিমি জুতার ফিতা লাগিয়ে উঠে দাঁড়াতেই জাকিকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। জাকি বলল

-‘চল এখন তোমার সাথে যায় পরে না হয় তোমার আপুর সাথে যাবো’

লিলি বেগম এগিয়ে এসে বলল ‘সে-কি বাবা তোমাকে ওর সাথে কষ্ট করে যেতে হবে না তোমাকে বরং লিমন ঘুড়িয়ে আনবে নাহলে জিমি বাইরে থেকে এসে তোমাদেরকে বেড়াতে নিয়ে যাবি’

-‘না আম্মু আমি জিমির সাথে বাজারে যেতে চায় জিমি পারবে না বাচ্চামেয়ে’

-‘জিমি পারবে বাবা ও-কে নিয়ে টেনশন করো না’

জিমির কিছু মনে হতেই হাতের বাজারের প্যাকেটটা জাকির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল ‘দাঁড়াও আসছি’

কথাটা বলে আর দাঁড়ালো না। নিজের রুমের দিকে হাটা দিলো। লিলি বেগম জিমির যাওয়ার পানে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জাকি মুচকি হেসে বলল ‘আমি যাচ্ছি আম্মু জিমির সাথে আমিও তো আপনার ছেলে না-কি এইটুকু করলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না মেবি’

লিলি হেসে চলে গেলো রান্না ঘরে। জিমির প্রতি লিলির প্রচন্ড রাগ লাগছে বিরবির করে জিমিকে বকতে বকতে বলল ‘বাড়ির বড় জামাইকে দিয়ে না-কি বাজার করাবে? মিলির বাবা থাকলে কখনো এটা হতে দিতো? এই মেয়ের বুদ্ধিসুদ্ধি সব গেলো না-কি?’

জিমি রুমে গিয়ে বাইকের চাবিটা হাতে ঘুরাতে এসে জাকির হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বলল ‘থ্যাংকস এতোক্ষণ ব্যাগটা ক্যারি করার জন্য আসি’

জাকি ভ্রু কুচকে বলল ‘মানে কি আমি যাবো তোমার সাথে’

জিমি থেমে পিছনে ফিরে বলল ‘তুমি কেনো যাবে ভাইয়া?’

জাকি রাগি দৃষ্টিতে তাকালো জিমির দিকে জিমি হেসে বলল ‘তুমি এবাড়ির বড় জামাই মিলি আপুর বর আব্বু থাকলে কখনোই যেতে দিতো না তোমাকে আমিই বা তোমাকে কিভাবে নিয়ে যায় বলো না? আর তাই তোমাকে নিয়ে যেতে পারলাম না তুমি যাবে বলেছ এটাই অনেক এটাই বা কইজন বলে বলতো? আর তুমি জামাই মানুষ তাও আবার এবাড়ির বড় জামাই বলে কথা একটু ভাবটাব নিয়ে থাকবে তা না উনি বাজারে যাবেন হাহ্ আইসে বাড়িতে তো বাজার করো না এদিকে শশুর বাড়িতে এসে বাজার করবে ব্যাপারটা কেমন গন্ডোগোল না আন্টি জানলে কি হবে ভাবতে পারছো? তার আদরের বড়ছেলেকে দিয়ে বাজার ও-মাই-খাট! বাসায় গিয়ে বাজার করবে বুঝলে’

জাকি হেসে বলল ‘বা বাহ্ তুমি তো দেখছি পাকাবুড়ি!’

জিমি পুষ্পা মুভির ডায়লগ বলল ‘জিমি কাভি ঝুঁকে গা নেহি’

জিমির বলার স্টাইল দেখে না চাইতেও হেসে ফেললো সবাই। সামি এতোক্ষণ নিবর দর্শন ছিলো জিমির কান্ড দেখে হাসে চাপতে না পেরে হেসে দিলো। লিলি রান্নাঘর থেকে এসব দেখে হেসে নিজের নিজেই বলল ‘যাক মেয়েটার মাথা যায়নি তাহলে’

_____________________________

দুপুরের ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই খাবার খাচ্ছে। আর টুকটাক কথা বলছে। জিমি সকালে না খাওয়ায় প্রচন্ড খুদা লাগছিলো তাই তাড়াতাড়ি খাচ্ছিল সামি জিমির পাশে বসে জিমির খাওয়া দেখে জিমির কানের কাছে গিয়ে চাপা স্বরে বলল

-‘এমন রা*ক্ষ*সী*দে*র মতো করে খাচ্ছেন কোনো?’

সামির কথা জিমির কানের পৌঁছাতেই মাথায় দপ করে আ’গু’ন জ্বলে উঠলো। রাগি চোখে সামির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘আমার খাবারের লোভ না দিয়ে নিজের খাবারের দিকে নজর দেন। ছুঁ*চা কোথাকার!’

জিমিকে কথাটা বলে সামি মনের সুখে খাচ্ছিল জিমির মুখে ‘ছুঁ*চা’ শুনে ওর ফুরফুরে মেজাজটায় অগ্নিকুন্ডলে পরিনত হলো। দুজন দুজনের রক্তিম দৃষ্টি মিললো। এখনি যেনো ভস্য করে দিবে। তখনি জিমির ফোনের রিংটোনটা তীব্র কালবৈশাখির ন্যায় বেজে উঠলো। জিমি সামির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে ধ’ম’কা-ধ’ক’মি’র উল্কা ন্যায় ছুটে আসলো। জিমির বিরক্ত, রাগি দৃষ্টি আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেলো। জিমি বোঝানোর চেষ্টা করে বলল

-‘স্যার আপনি আমাকে ভুল বুঝে….’

-‘…………’

জিমি ফোন কেটে ভাত রেখে উঠে দাঁড়ালো। মিলি প্রশ্ন করলো

-‘কি হয়েছে? কে ফোন করেছিলো?’

লিলি বলল

-‘ভাত রেখে উঠলি কেনো? যেখানে যাবি আগে খেয়ে যাবি’

জিমি বেসিং থেকে হাত ধুয়ে পাশে থাকা তোয়ালেতে হাত মুছতে মুছতে বলল

-‘শোনো আম্মু যদি শোনো তোমার মেয়ে খু*নে’র দায়ে জেলে দেওয়া হয়েছে তাহলে ঘাবড়ানো কিছু না-ই শুধু মনে রাখবে যা করেছি ঠিক করেছি তোমার মেয়ে কখনো অন্যায় কাজ করে না’

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-১১

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১১

চারিদিকে আত্মীয় স্বজনে ভরপুর মিলি তার পরিবারের জন্য অপেক্ষা করছে কখন দেখা হবে ভেবে প্রহর গুনছে। ধীরে ধীরে কাৎক্ষীত সময় এসে গেলো। জিমিকে দেখে মিলি সহ সামি, জাকি, জুলি, শহিদ খান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কেননা জুলি দেওয়া পিংক শাড়িটা জিমি পড়েছে। হলদেটে মুখে কোনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া নেই এ যেনো এক মায়াবীকন্যা যার মুখের অন্যন্ত মায়া ডুবে থাকা যায় শত সহস্র বছর। মিলির সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিমি গেজ দাঁতের হাসি দিয়ে বলল

-‘মিসেস. মিলি বলেন তো আমাকে কেমন লাগছে?’

মিলি খুশিতে জিমিকে জড়িয়ে ধরে দু-হাতে মুখ ধরে বলল

-‘খুব সুন্দর লাগছে আমার বোনটাকে তোকে যে কখনো এমন ভাবে দেখবো কখনো ভাবি নাই’

-‘এটাই তো ম্যাজিক তোরা যেটা ভাববি তার উল্টোটাই আমি করবো বুঝলি এটাই ম্যাজিক্যাল ওফ সাইন্স’

মিলি ওর মা, ভাই, দাদি, মামা, মামি, চাচা, চাচি সকলের সাথে কুশল বিনিময় করলো। সামির মা জুলি বেগমকে হা করে জিমির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিমি মুখ টিপে হেসে বলল

-‘কি গো আন্টি বললে না তো আমাকে কেমন লাগছে? এস্পেশালি তোমার থুক্কু আপনার কথায় শাড়ি পড়লাম আর আপনি রেটিং দিলেন না?’

জুলি বেগম অবাকের রেশ কাটিয়ে হেসে বলল

-‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে মামনি। আর তুমিটাই তো ঠিক ছিলো আবার আপনি কেনো? হ্যাঁ শুনি?’

জিমি দাঁত কেলিয়ে বলল

-‘ওটা তো টকিং মিস্টেক আন্টি যাই হোক তুমি হয়েছে’

জুলি জিমির মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

-‘হ্যাঁ পুরা রাজকন্যাদের মতো লাগছে এতো মায়া তোর মুখে’

-‘ওফ্ফ আন্টি কি যে বলো না কোথায় রাজকন্যা আর কোথায় আমি। পামটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না’

-‘জানি তো সত্যি কথা বললে সবাই পাম লাগবে একটু আগেই না শুনলি কেমন লাগছে আর যে-ই না আমি প্রসংশা করলাম ওমনি পাম হয়ে গেলো?’

-‘আরে আন্টি চোটছো কেনো বুঝোনা আমার ও লজ্জা লাগে’

জিমির কথা শুনে হাসির রোল পড়ে গেলো।

ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল অবস্থা। একজায়গায় চুপ করে দাড়িয়ে আছে বন্ধুগুলা সাথে আনছিলো তারা এখন কব্জি ডুবিয়ে মনপ্রাণ উজাড় করে দিয়ে খাচ্ছে। জিমি অস্থিতে হাঁশপাস করছে। একেতে শাড়ি পড়া অভাস না তার ওপরে আবার গরম হুট করে সামি জিমির সামনে এসে শরবতের গ্লাস ধরলো মুখে বলল

-‘খান ভালো লাগবে’

জিমি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো সামি ইশারায় জিজ্ঞেসা করলো ‘কি’?

-‘আপনাকে না আমার সুবিধার লাগে না’

সামি ভ্রু কুচকে বলল

-‘কেনো? সুবিধার না লাগার কি আছে?’

-‘এই যে শরবত দিচ্ছেন এতে কিছু মিশান নি তো?’

সামি যেনো আকাশ থেকে টপ করে পড়লো এমন মুখ ভঙ্গি করে বলল

-‘মানে? আমাকে আপনার এমন মনে হয়?’

-‘মনে না হওয়ার কি আছে। আপনি যে ভাবে সবসময় আমার সাথে ঝ*গ*ড়া করতে আছেন আমার মনে হয় আপনি আমাকে দু-চোখ সহ্য করতে পারেন আমাকে জাতশ*ত্রু ভাবেন তাই ডাউট ডাউট লাগতেছে’

-‘আমি কি শুধু আপনার সাথে ঝ*গ*ড়াই করি?’

-‘হ্যাঁ নিজেই একটু ভেবে দেখুন তো’

-‘হ্যাঁ আর আপনি তো ধোঁয়া তুলশী পাতা’

-‘সেটা কখন বললাম আমার সাথে যে যেমন বিহেভিয়ার করে আমি তাকে রিটার্ন ফেরত দি আমার তো আবার দয়ার শরীর ঋণ বাকি রাখি না’

-‘হাহ্ আইছে দয়ার শরীর বললেই পারেন আমি শরবত আনছি বলে আপনি খাবেন না এতো প্যাচান কেন?’

-‘কখন বললাম খাবো না দিন খাই। যদি কিছু মিশানো থাকে তাহলে পরবর্তীতে আপনাকে সেটা ডাবল ভাবে রিটার্ন ফেরত দিবো মাইট ইট’

সামির হাত থেকে শরবত নিয়ে খেতে শুরু করলো। সামি রাগি চোখে তাকিয়ে বলল

-‘আপনি আমাকে থ্রে*ট দিলেন নাকি?’

জিমি খেতে খেতে বলল

-‘সেরকম কিছুই’

সামি সবসময় এই মেয়ে ওপরে প্রচন্ড রকমের অবাক হয়। যা বললার একে বারে ডিরেক্টর বলে দেয় কোনো লুকোচুরি থাকে না। এখন-ও ঠিক এমনটাই হলো। সামি চোখ মুখ শীতল হয়ে এলো শান্ত কন্ঠে বলল

-‘আপনাকে কিন্তু আজ সুন্দর লাগছে’

-‘থ্যাংকিউ বাট আপনার কাছ থেকে এডভাইস চাই নি’

সামি ভ্রু কুচকে বলল

-‘সবসময় ঘাড় ত্যাড়ামো করেন কেন? একটু ভালোভাবে কথা বলা যায় না?’

জিমি শরবতের গ্লাসটা সামির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল

-‘আজ্ঞে জী না আপনার সাথে আমার ভালো করে কথা বলার সম্পর্ক না যে আপনার সাথে ভালো করে কথা বলবো আর আমার ইচ্ছেও নাই আপনার মতো ষাঁড়ের সাথে ভালো ভাবে কথা বলার যে না বুঝেই চিল্লাই’

কথাটা বলে জিমি আর দাঁড়ালো না বোনের কাছে চলে গেলো। সামি তখন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিড়বিড়িয়ে বলল

-‘আমাকে ষাঁড়ের সাথে তুলনা করে আবার অপমান করে চলে গেলো?’

সামি রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো জিমির দিকে জিমি সেটা পাত্তা দিলো। সামি রাগে গজগজ করতে করতে অন্য দিকে চলে গেলো। জিমি মিলিকে বলল

-‘তুই আর ভাইয়া আমাদের সাথে যাবি তো?’

-‘হ্যাঁ তার আগে এটা বল তুই কাল কোথায় হওয়া হয়ে গেছিলি?’

-‘আরে একটা কাজ পড়ে গেছিলো তাই আর থাকতে পারি নাই চলে গেছিলাম বাসায় এসে শুনি তুই চলে গেছিস’

মিলি চোখ ছোট ছোট করে বলল

-‘আমাকে বোকা ভাবিস? কিছু বুঝি না মনে করিস?’

-‘সেটা কখন ভাবলাম আর বললাম? তুই তো নিজেই বললি’

-‘তুই তোর হাবভাবে বুঝিয়ে দিস তুই একাই ট্যালেন্টেড গার্ল আর বাকি সবাই গাধা’

তখনি সামি এখান থেকে যাচ্ছিল কথাটা শুনে বলল

-‘আসলেই ভাবি তোমার বোন নিজেকে কি না কি মনে করে আর বাকি সবাইকে গাধা মনে করে আসলে ব্যাপারটা যে উল্টো সেটা সে জানে না ভালো করে জানিয়ে দিও তো’

সামি কথাটা বলে হেলতে দুলতে চলে গেলো জিমি তখনও সামির যাওয়ার পানে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিলি অবাক হয়ে বসে আছে সে বেশ বুঝতে পারছে বোন আর দেবরের মাঝে কমপিটিশন চলছে। দুজনের একজনও তো ভালো না কেউ কারোর থেকে কম যায় না। মিলি জিমিকে জিজ্ঞেসা করে বলল

-‘কি হয়েছে রে?’

জিমি রেগে বলল

-‘কি আবার হবে তোমার ষাঁড়ের মতো দেবর সবসময় আমার সাথে যেচে ঝগড়া লাগাতে আসে’

মিলি চুপ আর কিছু বলল না এখন কিছু জিজ্ঞেসা করতে গেলে আরও হিতেবিপরিত হবে। এখন আর কিছু জিজ্ঞেসা না করাই ভালো পরে না হয় ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেসা করে নিবে।

চলবে।

প্রেমপ্রলয় পর্ব-১০

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১০

রাত গভীরতা বাড়ছে ততই যেনো সবাই ক্লান্তিতে নিঃতেজ হয়ে পড়ছে। জমজমাট পরিবেশ স্টেজে নাচছে বর-কণে সাথে মিলি আর জাকির কাজিন সার্কেল। জিমি তার চাচার সাথে যায় নি। জিমি দূর থেকে বোনের হাস্যউজ্জ্বল মুখটা দেখছে। কাল বোন চলে যাবে ভাবলেই বুকের ভিতর ভিষন কষ্ট। দুষ্টু মিষ্টি মুহূর্তগুলা চোখের সামনে ভেসে উঠছে মনে মনে বলল ‘তোকে ছাড়া কেমন করে থাকবো রে আপু খুব যে কষ্ট হচ্ছে’

কাঁধে কারোর স্পর্শ পেতেই চমকালো জিমি। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু গুলো অতি সাবধানে লুকিয়ে মুছে হাসি মুখে পিছনে ঘুরে নিজের মা’কে দেখতে পেয়ে বলল

-‘আম্মু তুমি। খাইছো তুমি, দাদি, লিমন?’

-‘তুই খাইছিস?’

জিমি চুপ করে থেকে বলে উঠলো

-‘হ্যাঁ খেয়েছি খুব খুদা লাগছিলো তাই খেয়ে নিয়েছি’

-‘তাই না-কি এখন মিথ্যা বলাও শিখে গেছিস দেখছি’

জিমির মুখ ছোট করে বলল

-‘সরি আম্মু আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না’

-‘এমন করলে হবে? না খেয়ে খেয়ে কি অবস্থা করছিস নিজের দেখেছিস একবার আয়নায়?’

জিমি লিলিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল

-‘উফফ ওতো আয়নায় দেখতে পারতেছি না আম্মু তোমার মেয়ে কত হাসিখুশি দেখো ও বিয়ের পর খুব সুখি হবে। ওকে আর এই গরিবের ঘরে কষ্ট করে থাকতে হবে না একটু শান্তি পাবে এতোদিন তো গাধারখাটুনি খাটলো আমাদের জন্য এবার নাহয় পৃথিবীর সমস্ত সুখী ব্যক্তিটি আমার বোন হোক’

-‘হ্যাঁ ওদের পরিবারের সবাই অনেক ভালো আমার মেয়েটা সুখি হলেই আমি খুশি তারপর তোকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলে আমি নিশ্চিনত’

জিমি চুপ রইলো যতই মাকে বলুক বিয়ে করবে না। মায়েরা চিন্তা থামাবে না মা’রা চাই তার মেয়ের বিয়ে করে সুখি হোক ভালো স্বামী পাক নিজের হাতে জামাই দের ভালো ভালো রান্না করে খাওয়াবে। মেয়েদের ছেলেমেয়েদের কোলে নিবে কত ইচ্ছে তাদের।

জিমি নিজের মনেই ভাবে মায়ের ইচ্ছে সে কখনোই পূরণ করতে পারবে না ওর বিয়ে হয়ে গেলে ওর পরিবারকে কে দেখবে। শশুর বাড়ির থেকে যে চাকরি করে পরিবারকে দিবে তারা যদি না মানে আর মানবেই বা কেনো এই যুগে কেই-বা চাই বাড়ির বউ বাপের বাড়ির জন্য চাকরি করে টাকা পাঠাবে।

অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত ২টা বেজে গেলো। বরপক্ষরা সবাই চলে গেছে। সামি তারপর আর জিমির সাথে কথা বলে নি। বলতে গেলে জিমিই সুযোগ দেয় নি। ঘুমাতে ঘুমাতে তিনটা বেজে গেলো।

জিমির সারারাত ঘুম হলো না। আজান দেওয়ার সাথে সাথে উঠে গেলো নামাজ পড়ে বাইরে চলে আসলো এখনো সবাই ঘুমাচ্ছে। জিমির মা-ও তার কিছুক্ষণ পরে উঠলো। উঠে দেখলো জিমি চা বানিয়ে খাচ্ছে। জিমির চোখ মুখ দেখেই তিনি চট করে ধরে ফেললেন এই মেয়ে সারারাত দু’চোখের পাতা এক করে নি। জিমি লিলিকে দেখে বলল

-‘আম্মু চা দিবো এখনো গরম আছে পাতিলে’

-‘না থাক তোর দিতে হবে না আমি নিচ্ছি সারারাত না ঘুমিয়ে যে তুই অসুস্থ হয়ে যাবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে’

জিমি কিছু বলল না চা-টা শেষ করে বাইরের দিকে গেলো। আজ মিলির বিয়ে কাজ অনেক। শুয়ে বসে কাটালে চলবে কি করে?
ধীরে ধীরে সকলে ঘুম থেকে উঠে গেলো মিলি কে ডাকতে নিলে জিমি বারণ করে বলল

-‘আপুকে ডেকো না এখন ওঘুমাক রাতে দেরিতে ঘুমিয়েছে তার ওপর আজ আবার ওর ওপরে অনেক ধকল যাবে পার্লারের মেয়েরা আশার আগে আমি ওকে ডেকে দিবো এখন আর আপুকে ডেকো না কেউ’

জিমি কথা মেনে নিলো সবাই। কাজগুছাতে গুছাতে হাত ঘড়িতে সময় দেখলো জিমি ১০:২৩ বাজে ১১ টার দিকে পার্লারের মেয়েরা আসবে জিমি দৌড়ে রুমে এসে মিলিকে ডাকতে লাগলো

-‘এই আপু, আপু ওঠ আর কত ঘুমাবি? আজ না তোর বিয়ে’

মিলি নড়েচড়ে আরাম আয়েস করে শুয়ে ঘুমু কন্ঠে বলল

-‘যা তো ঘুমাতে দে ডিস্টার্ব করিস না’

জিমি মিলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দুষ্টুমি করে বলল

-‘বরপক্ষের সকলে চলে এসেছে কণে ঘুমাচ্ছে দেখে তারা চলে যাবার জন্য গাড়িতে উঠছে’

জিমির কথাটা কানে যেতেই মিলি ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বলল

-‘কই? কই?’

জিমি হেসে উঠে বলল

-‘বেশ হয়েছে’

মিলি রেগে জিমির কান মুলে দিলো।

-‘আহ! আপু! দেখ ১০:৩০ বেজে গেছে ১১ টাই পার্লারের লোক আসবে যা গোসল করে নে’

-‘ওমা সে-কি আমাকে এতো দেরি করে ডাকলি কেনো?’

-‘ইশশ আইছে। এখন ডাকছিলাম তাই উঠছিলি না আর আগে ডাকলে খুব উঠতিস?’

মিলি কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।

বরপক্ষ চলে এসেছে অনেকক্ষণ হলো। জাকি আর মিলিকে এক জায়গায় বসালো হয়েছে। কাজী বারবার মিলিকে ‘কবুল’ বলতে বলছে। মিলির এই তিন অক্ষরের আজ খুব কঠিন লাগছে। চোখ ছলছল করে উঠেছে। ঝাপসা চোখে এলোমেলো দৃষ্টি দিয়ে মা আর বোনকে খুঁজে কিন্তু কই তারা?
মিলির মনে ভয় জমছে খুব কষ্ট হচ্ছে হাত-পা কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে।

হঠাৎ কোথা থেকে জিমি এসে মিলির পাশে দাঁড়িয়ে বলল

-‘কি রে আপু তারাতাড়ি বলে দে’

মিলি চোখ তুলে জিমির দিকে তাকালো জিমির লাল চোখ দেখে বুঝতে পারলো জিমি কেঁদেছে। জিমি হাঁটু গেড়ে বসে চোখ দিয়ে ইশারাই বলতে বলল

মিলি কান্না পাচ্ছে। কঠিন শব্দটি বলে মিলি জিমিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। জিমি কাঁদছে না চোখ ক্রমশ লাল হয়ে উঠছে। জিমি মিলিকে বুঝিয়ে কান্না থামালো। সামি জিমির দিকে তাকিয়ে ছিলো সামি আজ একটি বারের জন্য কথা বলি নি জিমির সাথে।

বিদায়ের সময় মিলি কাঁদছ কান্না যেনো আজ বাঁধা মানছে না। মিলির বিদায়ের সময় জিমি উধাও জিমিকে কেউ খুঁজে পেলো না। জিমির মা কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারা। লিমন বাচ্চাদের মতো মিলিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললছে ‘আপুকে কোথাও যেতে দিবো না আপু এখানেই থাকবে’
মিলির দাদিও কাঁদছে একটুতেই শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তাই ওনাকে ধরে সবাই বাসার ভিতরে নিয়ে গেছে।
মিলির মামারা সবসামলে নিয়ে মিলিকে গাড়িতে তুলে দিলো।

_____________________________

জিমি নদীর পাড়ে বসে আছে। আশে-পাশে জনমানবের চিহ্ন টুকু দেখা মিলছে না। জিমির চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা বেয়ে চলছে। জিমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আব্বু বলে জোরে চিৎকার দিয়ে হাওমাও করে কেঁদে উঠলো। ফাঁকা জায়গায় কথাটা বারবার প্রতিধ্বনি হতে লাগলো।

-‘আব্বু আপুকে ছাড়া কিভাবে থাকবো৷ আব্বু ও আব্বু আমাকে আপুর মতো শাসন, আদর, বকবে কে? কাকে রাগাবো? কিভাবে থাকবো গো?

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-০৯

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৯

সূর্য মামা ধীরে ধীরে অর্স্ত যাচ্ছে। দুই বাড়িতে বিয়ের দুম পড়ছে। আজ মিলিদের বাসায় গায়ে হলুদ আর সাংগীত একসাথে হবে। জাকিরাও ওবাসা থেকে আসবে। জিমি সকালে থেকে কাজ করে যাচ্ছে বিয়ে বাড়িতে কাজের শেষ নাই। আত্মীয় স্বজনরা চলে এসেছে। জিমিদের আত্মীয় স্বজন বলতে জিমির দুই মামা, আর জিমির একমাত্র ছোট চাচা তারা আলাদা থাকে ঠিকি কিন্তু চাচার সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকলের চাচির সাথে গলায় গলায় ভাব। কারণটা হচ্ছে জিমির চাচা খুব চালাকচতুর মানুষ আর জিমি চাচি সহজসরল মানুষ ওদের ২টা জমজ ছেলে আছে নাম রাকিব-সাকিব তারা লিমনের সমসয়সী একসাথেই পড়ে। যখন জিমির বাবা মারা যায় তখন তারা একবাসাতেই চট্টগ্রামে থাকতো। জিমির বাবা বেঁচে থাকতে জিমির চাচা ওদের খুব ভালোবাসতো যেই না জিমির বাবা মারা গেলো সেই থেকে জিমির চাচার ব্যবহার ক্রমশ খারাপ হতে লাগলো। বাদ্ধ্য হয়ে চট্টগ্রাম থেকে জিমিরা চলে আসলো ঢাকা শহরের ভাড়া বাড়িতে তখন অবশ্য চাচি অনেক মানা করে ছিলো আসতে কান্না কাটিও করে ছিলো তখন। কিন্তু এতো অপমানের পর আর ওরা ওখানে থাকতে পারে নি ওদের সাথে জিমির দাদি ও চলে আসে। ঢাকা শহরে যখন আসছে সব কিছু নতুন লাগতো। সব কিছু আগুন দাম হাতে চলার মতো টাকাও নাই। তখন জিমির দুই মামা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এখনো অব্দি জিমির মামারা সাহায্য করে যাচ্ছে।

জিমিদের ভাড়া বাড়ির ছাদটা অনেক বড়। মহলের বিয়ে গুলা এই ছাদেই হয়। পুরো এগারো তারা বাড়িটা মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো। গেটটা ফুল দিয়ে সাজানো। জিমি ঘেমে একাকার এতো কাজ করার ফলে প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে তার মা’কে এই ভরা বাড়িতে খুঁজে পাচ্ছে না মেজাজটাও বিগড়ে আছে ওর ছোট চাচাকে দেখে চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হয়। এদিকে বরের বাসা থেকেও লোকজন চলে আসছে। জিমি ছাদে এসে মা’কে খুঁজতে লাগলো খোঁজাখুজির মাঝে জিমির সামনে হুট করে সামি এসে বলল

-‘কি বিয়ানসাব কি অবস্থা?’

-‘মেজাজ কিন্তু বিগড়ে আছে ঝ/গ/ড়া করার মুড নাই সামনে থেকে সরেন’

-‘আজব তো ঝ/গ/ড়া করার মতো কি বললাম শুধু শুনলাম কি অবস্থা’

-‘আপনার সাথে কথা বলা মানেই ঝ/গ/ড়া’

সামি জিমির মাথা থেকে পা অব্দি দেখে বলল

-‘আপনি জানেন আপনি মেয়ে?’

জিমির মেজাজ এমনিই খারাপ ছিলো এখন সামির কথা শুনে মেজাজ মঙ্গলগ্রহে চলে গেলো দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘হ্যাঁ আমি জানি মেয়ে আপনাকে ওতো বলতে হবে না’

কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে আসতে নিলেই সামি বলে উঠলো

-‘তাহলে কেনো এমন ড্রেস পড়েন?’

জিমি সামির চোখের দিকে তাকালো চোখে কিছু একটা আছে অদ্ভুত কিছু কিন্তু কি? জিমি গম্ভীর হয়ে বলল

-‘এটা আমার পারসোনাল ম্যাটার’

কথাটা বলে আর দাঁড়ালো না জিমি বড়বড় কদম ফেলে চলে গেলো। সামি তাকিয়ে রইলো জিমির যাওয়ার পানে। রানা এতোক্ষণ জিমি আর সামির ব্যপারটা দেখছিলো সাথে অবাক ও হয়েছে এ মেয়ে এখানে কি করছে? জিমি চলে যেতে রানা সামির পাশে দাঁড়িয়ে বলল

-‘এই মেয়েটা এখানে কেনো? তুই চিনিস ও কে?’

-‘হ্যাঁ ভাইয়ার শালী, মিলি আপুর বোন, আর আমার বিয়ানসাব’

-‘ওএমজি সত্যি?’

-‘হ্যাঁ’

-‘তাহলে কি তুই সেদিন ওকে জানতি জেনেশুনে ঝামেলা বাঁধালি?’

-‘না আগে জানতাম না ক’দিন আগে জানছি’

কিছুক্ষণ নিরবতা চললো নিরবতা ভেংগে রানা বলল

-‘তুই কি মেয়েটার প্রেমে পড়লি না-কি’

সামি থমকালো। চমকালো। বিষ্ময় নিয়ে তাকালো রানার দিকে। বুকের ধুকপুক বেড়ে গেলো। সামি নিজেই অবাক হলো নিজের অস্থিরতা দেখে গলা ঝেড়ে বলল

-‘পাগল তুই? এমন মেয়েকে আমি ভালোবাসবো? ওকে দেখে কোন দিক দিয়ে মেয়ে লাগলে শার্ট প্যান্ট ছাড়া কিছুই পড়তে দেখি না। চুলগুলো দেখছিস একদম ছেলেদের মতো করে কাটা। মেয়ে মানুষ চুল লম্বা হবে, শাড়ি পড়বে সালোয়ার পড়বে সেটাই তো আসলো মেয়ে মানুষ। কেমনে যে আজব আজব প্রশ্ন করিস তুই’

জিমি তখনই ওখান থেকে ক্রস করছিলো সামি রানা কেউই খেয়াল করি নাই। সামি যে কথাগুলো জিমিকে মিন করে বলছে জিমি সেটা বুঝতে পারলো কেননা জিমি ছাড়া এখানে কেউ ছেলেদের মতো চলাফেরা করে না। সামির কথাগুলা জিমির মনে কোথাও কিছু হলো কি? জিমি চলে গেলো।

জিমি রুমে গিয়ে দরজা আটকে আয়নার সামনে গিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে মাথায় থাকা ফলস্ হেয়ার খুলে নিজের কোমর সমান চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে আবার তাকালো আয়নার দিকে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল

-‘একটা মানুষের দুইরকম রূপ যাকে বহুরূপী বলে ওয়াও। ইশ আমারও সাজতে ইশে করে। চুল ছেড়ে শুভ্র রংয়ের শাড়ি পড়ে জনমানবহীন রাস্তায় হাঁটবো তখন দমকা হাওয়া এসে আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিবে। তখন আমি বিরক্তি নিয়ে চুলগুলা কানের পিছে গুচ্ছে দিয়ে বলবো’তোরা মুক্ত হয়ে বড্ড অবাদ্ধ্য হয়ে গেছিস’ চুল গুলা আবার অবাদ্ধ্য ন্যয় এলোমেলো হয়ে যাবে আমি হেঁসে উঠবো পাগলাটে হাসি সে হাসিতে কোনো কষ্ট থাকবে না থাকবে না কোনো বাঁধা’

জিমি হেসে নিজের মাথায় নিজেই টুয়ো মেরে আবার বলল

-‘ওফফ্ জিমি তোর আবার কি হলো হ্যাঁ এসব কি পাগলামি শুরু করলি হ্যাঁ তুই কি এখনো ছোট? আবেগে ভেসে বেড়াচ্ছিস কেন বলতো? চল এসব বাদ দিয়ে রেডি হয়ে যা’

জিমি হেসে আবার আগে ছন্দবেশি রূপে ফিরে আসলো। আসলো রূপটা গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না জানতে দেয় না জিমি।

ড্রাইংরুমে জিমির চাচাকে দেখে পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলে। জিমির চাচা বলে উঠলো

-‘জিমি তোর সাথে আমার কথা আছে’

জিমির পা থেমে গেলো। কঠিন কয়েকটি কথা শোনাতে ইচ্ছে করলো।

-‘আমার সাথে আপনার আবার কি কথা থাকবে পাবে জমির ব্যপারে ওটা নিয়ে চিন্তা করার কারণ নাই ওটা আপনিই নিয়েন আমার বা আমার পরিবারে কারোর ওসবের দিকে কোনো ইন্টারেস্ট নাই’

-‘জিমি শোন তুই ভুল বুঝছিস আমাকে’

-‘ভুল বুঝার কি আছে যেটা সত্যি সেটাই বলছি এছাড়া আপনার সাথে আমার কি-ই বা ইনপটেন কথা থাকতে পারে বলুন তো?’

-‘জিমি তোর সাথে আমার খুব ইনপটেন কথা আছে কিন্তু এখানে বলা যাবে না যখন তখন যে কেউ এসে শুনে ফেলতে পারে আমার সাথে চল আমি তোকে সব বলছি’

চলবে।

প্রেমপ্রলয় পর্ব-০৮

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৮

-‘মিস জিমি সেলিব্রিটি হয়ে আপনার এটিটিউড, ইগো বেড়ে গেছে দেখছি মানুষকে মানুষ বলে মনে করেন না না-কি?’

কাল শপিং শেষ করতে না পারায় আজ আবারও শপিংয়ে এসেছে সবাই। জিমি থাইগ্লাস দেওয়া বড় জানালা দিয়ে মানুষের ডেলি ব্যস্ত জীবন গল্প দেখছিলো। হুট করে চিরচেনা ঝ’গ’রু’টে পুরুষালীর কন্ঠ শুনে একটু চমকালো কিন্তু সেটা সামনের ব্যক্তিটাকে বুঝতে না দিয়ে সামির সোজাসোজি দাড়িয়ে বলল

-‘কেনো আপনার জ্ব*লে?’

সামি ভরকে গিয়ে ভ্রু কুচকে বলল

-‘মানে? আমার জ্ব*ল*বে কেনো?’

-‘এই যে আমি সেলিব্রিটি হয়ে গেছি বলে আপনার হিং*সা হচ্ছে’

সামি অবাক হয়ে বলল

-‘মানে কি? আমার কেনো হি/ং/সা হবে?’

-‘বলা তো যায় না হতেই পারে। আজ কালর মানুষের বিশ্বাস নাই’

সামি বিরক্তিতে ‘চ’ উচ্চারণ করে বলল

-‘আপনি আসলেই একটা ডিজগাস্টিং মেয়ে সবসময় আউল ফাউল কথা বলে মেজাজটা চটিয়ে দেন’

-‘হ্যাঁ আর আপনি তো খুব ভালোমানুষ যেচে আমার সাথে সবসময় পায়ে পা লাগিয়ে ঝা/মে/লা বাঁধাতে আসেন’

-‘আমি মোটেও ঝা/মে/লা বাঁধাতে আসি না আপনাকে কোনো কথা বললেই আপনি সেটা ঝ/গ/ড়ার মুডে নিয়ে চলে যায়’

-‘এই শুনেন একদম শাক দিয়ে মাছ ডাকার চেষ্টা করবেন না আপনি সবসময় গা জ্বা/লা/নো কথা বলবে আর আমি কিছু বলবো না-কি?’

-‘আমি কি এমন খারাপ কথা বললাম বলুন তো?’

জিমি সামির মতো মুখো ভংগী করে বলতে শুরু করলো

-‘মিস জিমি সেলিব্রিটি হয়ে আপনার এটিটিউড, ইগো বেড়ে গেছে দেখছি মানুষকে মানুষ বলে মনে করেন না না-কি? হুহ্ নিজের ভাবওয়ালা, ফেরিওয়ালা আবার আমাকে বলতে আসে’

-‘এই আপনি আমাকে কপি করলেন?’

-‘হ্যাঁ করলাম তো কি করবেন? যা করেছি বেশ করেছি! কি ক্ষ*তিটা করেছি বলুন তো আপনার? শুধু শুধু সবসময়টা আমার সাথে কেনো ঝ/গ/ড়া লাগাতে আসেন?’

-‘শুধু শুধু? মোটেও না। কোনো কারণ ছাড়া আপনার সাথে আমার কথা বলতে বয়েই গেছে। আপনি আমার পায়ের ওপর চা’প দিলেন কেনো তখন?’

জিমি এবার নিজের অবাক হওয়াটা আর দমাতে না পেড়ে বলল

-‘আপনার পায়ে কখন কি করলাম? আজব তো?’

-‘হ্যাঁ হ্যাঁ জানি তো এখন এমন একটা ভাব করবেন জেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারেন না’

জিমির প্রচন্ড বেগে হাসি পাচ্ছে সামির কথা শুনে কিন্তু মুখ গম্ভীর করে বলল

-‘অসাবধানতায় সামান্য পায়ে পাড়া লাগছে বলে আমি ঝগড়া করতে আসছেন?

জিমির কথায় সামির টনক নড়ে বিরবির করে নিজেই নিজেকে বলল ‘অসাবধানতায় সামান্য লেগে যেতেই পারে এতে এতো বাড়াবাড়ি করার কি আছে সত্যি তো!’

সামি কথাটা আস্তে বললেও জিমি শুনতে পেয়ে বলল

-‘বাড়াবাড়ি বলে বাড়াবাড়ি যাকে বলে ম’হা’ভ’য়ং’ক’র বাড়াবাড়ি? একে বারে যাচ্ছে তাই অবস্থা।’

সামি নিজের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য গলা ঝেড়ে বলল

-‘কেনো আপনার চোখ নাই আপনি কানা না-কি? অসাবধানতা হয় কেমন করে?’

-‘আজব পাবলিক তো মশাই! ওয়ান, টু’র বাচ্চাদের মতো ঝ/গ/ড়া করছেন।’

সামি চুপ নিজেই বুঝতে পারছে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। কিন্তু কি করতে আসছিলো ও? চট করে মনে পড়লো মেয়ে’টার মুখে মায়া খুঁজতে হবে। সামি তাকালো জিমির দিকে কি এমন মায়া আছে?

সামি কথা বলছে না দেখে জিমি মজা নেওয়ার জন্য বলল

-‘আচ্ছা আপনি কি শুধুই এই ছোট কারণে আমার সাথে ঝ/গ/ড়া করতে আসছে না-কি আমি সেলিব্রিটি হয়ে গেছি বলে কথা বলার সুযোগ খুঁজছে?’

কথাটা বলে জিমি হেঁসে উঠলো। সাথে সাথে গেজ দাঁত ওয়ালা রমনীর হাসি দেখে সামনে থাকা ছেলেটির হার্ট বিট বেড়ে গেলো অজানতেই অদ্ভুত অনুভূতির সাথে পরিচয় ঘটলো। সামি ডান হাত দিয়ে বুকের বা পাশে হাত দিলো। জিমি তখনো হেঁসে যাচ্ছে এতোক্ষণের চেপে রাখা হাসিগুলা সব এখন বেরিয়ে আসছে। জিমির সামির দিকে খেয়াল হতেই হাসি বন্ধ করে কৌতুহলে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল

-‘আপনার কি বুকে ব্যথা করছে?’

সামির মুখোভঙ্গি এমন এখনই মঙ্গল গ্রহ থেকে টুপ করে পড়লো সাথে সাথে হাত নামিয়ে গম্ভীর মুখোভঙ্গি করে ‘না’ বলে গটগট করে চলে গেলো। জিমি তখনো সামির যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। সেও আর কিছু না ভেবে সামির পিছনে পিছনে সবাই যেখানে সেখানে গেলো দেখলো মোটামুটি সবার শপিং কমপ্লিট জিমি আসতেই জিমিকে দেখে জুলি বেগম বলেন

-‘মামনি তুমি তো কিছু নিলে না বলো কি নিবে?’

-‘না আন্টি আমি কিছু নিবো না’

জুলি বেগম জিমির কথা শুনলেন না বেছে বেছে সুন্দর দেখে দুইটা শাড়ি দিলেন একটা কালো আর একটা পিংক কালারে। জিমি বলল

-‘আন্টি আমি শাড়ি-টাড়ি পড়ি না’

-‘পড়ো না তো কি হয়েছে পড়বে। বোনের বিয়ে দিন শাড়ি পড়বে শাড়িতে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগবে দেখো কি পড়বে তো?’

জিমি কিছু বলল না ভদ্রতার খাতিরে হাসি দিয়ে চুপ রইলো। সামি জিমির দিকে আড় চোখে তাকালো।

বাসায় এসে সোফায় চুপচাপ নিরবে বসে আছে জিমি মাথা ঝিম ধরে আছে। মাথার মধ্যে শাড়ি পড়ার বিষয় ঘুরছে। জুলি বেগম এমন ভাবে কথাটা বললেন যে জিমি না-ও করতে পারলো না আবার হ্যাঁ-ও বলতে পারলো না। মুখের ওপর না বললে ওনাকে অপমান করা হবে আবার হ্যাঁ বলতেও কোথায় জানি একটা বাঁধছিলো। এমনিতেই কখনো শাড়ি পড়ি নাই এখন থেকেই কেমন আনইজি লাগছে জিমির নিজেকে।

জিমিকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মিলি চা বানিয়ে এনে বলল

-‘কি-গো বাইকার কুইন আরজে তুই দেখি দুই দিক দিয়ে সেলিব্রিটি তা আপনার কি হয়েছে শুনি এভাবে ভম্বল টাকের মতো বসে আছিস কেনো?’

জিমি চা তে চুমুক দিয়ে বলল

-‘কি আবার হবে? কিছু হয় নি!’

-‘শাড়ি পড়া নিয়ে ভাবছিস? এতো ভাবতে হবে না আর শাড়িও পড়তে হবে না তুই যেটাতে কমফোর্টেবল ফিল করবি সেটাই পড়বি আমি শাশুড়ি আম্মুকে বুঝিয়ে বলবো উনি নিশ্চয়ই বুঝবেন এতোটাও অবুঝ নয় ওনি’

-‘আমি কি একবারও শাড়ি পরবো না একথা বলছি?’

-‘তার মানে তুই শাড়ি পড়বি?’

-‘সেটাই বা কখন বললাম?’

-‘তুই বড্ড শ*য়*তা*ন বুঝলি?’

-‘বুঝালাম কিন্তু এটা বুঝলাম না কোন বিয়ের কোণে এ-তো বকবক করে’

-‘আমি ডিজিটাল কোণে সেজন্য এতো কথা বলছি তোর কি সমস্যা’

-‘না আমার কোনো সমস্যা না কিন্তু তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমার শান্তি আহ্ পুরো রুম আমার দখলে’

লিমন এসে বলল

-‘ঠিক আমার ও কত ভালো হবে আর কথায় কথায় কেউ ঝপাং ঝপাং করে মা’র’বে না আহারে আহারে আকাশে বাতাসে কত মজা রেএএএএএএএ’

জিমি দাদি হাতে থাকা লাঠি দিয়ে জিমি আর লিমনকে দুইটা বাড়ি দিলো। ওরা তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে উঠে দৌড় লাগালো। ততক্ষণে মিলি ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিসে।

চলবে।

প্রেমপ্রলয় পর্ব-০৭

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৭

কোলাহলপূর্ণ চারিদিক কৃত্রিম আলোর ছড়াছড়ি। আজ প্রতিযোগিতার লাস্ট দিন জিমি আগের দুই প্রতিযোগিতায় মধ্যে সিলেক্ট হয়েছে। আজ লাস্ট দিন সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। কে থাকবে? কাকে চলে যেতে হবে বুক ভরা আশা নিয়ে। জিমি নিজেকে স্ট্রং করে নিয়েছে নিজে এলোমেলো কথায় বুঝিয়েছে ‘প্রতিযোগিতায় হার জিত আছেই। কেউ জিতবে কেউ বা হারবে। কিন্তু সবার মনে একটা না একটা আশা নিয়ে এসেছে কেউ বা এখানেই থেমে যাবে কারো বা এখান থেকেই শুরু হবে যা হবে দেখা যাবে’ জিমি যতই নিজেকে বোঝাক মনের মধ্যে একটা ক্ষুদ থেকেই যাই। সবার পার্ফমেন্স দেখে জিমি মনে মনে ভয় পাচ্ছে। একাক জনের পার্ফমেন্স দূরদান্ত প্রতিযোগিতায় তাতে ক্রমশ টাফ হয়ে যাচ্ছে। একে একে স্ট্যান্ড শেষ এবার জিমি পালা। জিমি বড়বড় শ্বাস নিয়ে অন্ধকার আচ্ছন্ন চাঁদহীন আকাশের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলল ‘তোমার মেয়েকে জিততেই হবে হারলে যে সব শেষ আব্বু তুমি দেখো আমি ঠিক পারবো ইন-শা-আল্লাহ’

জিমির নাম এনাউন্স করতেই জিমি মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মাঠের চারিদিকে বসে থাকা সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। ফেন্ডদের দিকে তাকাতেই তারা আশ্বাস দিলো। জিমিও মাথা নাড়িয়ে বাইকের ডান হাতের হ্যান্ডেল ধরে বা হাত দিয়ে চাবি ওয়ান করে দিলো। ডান হাত দিয়ে বাইকের পিছনের একচাকা দিয়ে নিজের চারিদিকে ঘুড়ালো গাড়ি। অতঃপর বাইকে বসে কিছুক্ষণ গিয়ার দিয়ে স্টার্ট দিয়ে কিছুদূর চালিয়ে নিজেই বাইকের হ্যান্ডের ওপর উঠে দাঁড়ালো। সবাই উত্তেজনায় চিৎকার দিয়ে উঠলো কেউ বা শিঁশ বাজিয়ে উঠলো। জিমি বাইকের পিছনে এসে হ্যান্ডেল ধরে পিছনের একচাকায় দাঁড় করিয়ে দিলো। এছাড়ার আরো কয়েকটা আনকমন স্ট্যান্ড করলো।

রেজাল্টের পালা উত্তেজনায় হাসফাস করছে। রেজাল্ট কি? জিমি নিজেও ঘামছে বারবার। কি হবে? কি হবে? করে মনে মনে অস্থির হয়ে উঠছে। জিমি হাতে থাকা টিস্যুটা নিয়ে কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া ঘাম গুলা বারবার মুছে। হাতে-পায়ে অদৃশ্য কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিযোগিরা সকলেই মনে মনে চাই তারা সিলেক্ট হোক! কিন্তু সবাই তো আর সিলেক্ট হবে না ৬ জন থেকে ৩ জনকে সিলেক্ট করা হবে।

স্ট্রেজে উঠে একটা মেয়ে এন্ডকারিন করতে লাগলো।

-‘হ্যালো এভরিওয়ান! কেমনবোধ করছেন সবাই? হুমমম সবাইকে দেখছি বেশ এক্সাইটেড দেখাছে। কি হবে? কে টিকবে? আর কেই বা মন খারাপ করে চলে যেতে হবে? আমি ও প্রচুর এক্সাইটেড। প্রতিযোগিতার লাস্ট দিন যে এতো টাফ তো হবেই। সব প্রতিযোগিতারাই এক একজন উইনয়ার একটা কথায় মাথায় রাখবেন প্রতিযোগিতায় হার জিত থাকবেই তাই বলে কি থেমে গেলে চলবে? উহুম এখান থেকে আবার উঠে দাড়াতে হবে অনেকটা পথ পারি দিতে হবে। আপনার মন খারাপ করার কিছু-ই নাই আপনার মধ্যে কিছু তো একটা আছে যার জোরে আপনি এতোদূর আসতে পারেছেন সবাই তো আর এতো দূর আসতে পারে না। প্রাউন্ডফিল হওয়া উচিত আপনার। তো যাই হোক অনেক কথা বলে ফেললাম জানিনা আপনাদের মধ্যে কার কতটা আমার কথা কাজে লাগবে। তো চলুন আমাদের জাঝেজরা কি সিদ্ধান্ত নিলেন দেখে আসি। জাঝেজ সিনিয়র মি.শফিক স্যার প্রতিযোগিদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন….’

মি.শফিক-‘তুমি তো সবই বলে দিলে এটা সত্যি প্রতিযোগিতা অনেক টাফ ছিলো। আমরা জাঝ করার সময় ভেবে পারছিলাম না কাকে রেখে কাকে কি করবো তো যারা পারবেন না তাদের মন খারাপ করার কারন নাই এগিয়ে যান তবু আপনাদের মধ্যে আমরা বেষ্টটাকে বেছে নেওয়ার চেষ্টা করছি তো দেখা যাক কি হয়’

-‘অপেক্ষার অবশান ঘটিয়ে সেই কাক্ষিত মুহূর্ত সো এস্ট্রেজে ডেকে নিচ্ছি আমাদের জাঝেজদের তাদের কাছ থেকে জেনে নিবো আমাদের বিজয়-ই দের নাম…’

জিমির বুকে দ্রিমদ্রিম করে আওয়াজ হচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে এ-ই বুঝি সব শেষ?

জাঝেজরা একে একে নাম বলতে লাগলেন। জিমি চোখ বুজে দু-হাতে মুখ ডেকে বসে আছে নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। জাঝেজরা থার্ড, সেকেন্ড, ফার্স্ট নাম এনাউন্স করছে। একে একে থার্ড, সেকেন্ড প্রতিযোগিদের নাম বলায় জিমি ফুপিয়ে উঠলো। মনে মনে ধরেই নিলো সে এই প্রতিযোগিতার সিলেক্ট হতে পারলো না।

-‘আমাদের ফাস্ট রানারাফ মিস.জিমি আফরিন’

জিমি থমকালো। মনের মধ্যে মিশ্র অনুভূতিরা রংধনুর রঙিন আকাশে অবাধ্য পাখির ন্যয় ডানা মেলে উড়াউড়ি করতে লাগলো। চোখ দিয়ে দূর্লভ অবাধ্য জল গড়িয়ে পড়লো। মুখে দু-হাত চেপে কেঁদে ফেললো সবার সামনে।

সবাই উত্তেজনায় জিমির নাম ধরে চিৎকার দিতে লাগলো। জিমির ৫ জন ফেন্ড লাফিয়ে বাউন্ডারি ক্রাস করে। চিৎকার দিয়ে মাঠ দিয়ে দৌড়ে আসলে। গার্ডরা বাঁধা দিতে এলেও তারা মানলো না। জিমির কাছে চলে গেলো। জিমিকে ঘিরে চিৎকার দিয়ে উঠে বলল

-‘থ্রি চিয়ার্স ফর জিমি হিপ হিপ হুররেএএএএ…’

জিমিকে স্ট্রেজে ডেকে পুরুস্কৃত করা হলো। এক লক্ষ টাকার চেক। এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো আর দামি বাইক হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর (মটোজিপি এডিশন) পুরুস্কৃত করা হলো। জিমি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলল

-‘আমাকে তো সবাই চিনেনই আমি জানি না এটা পাওয়ার যোগ্যতা আমার কতটুকু? আদেও আছে কি না জানি না। আমি বলতে গেলে এখানে কখনো আসবো কখনো কল্পনা তো দূর ভাবিও নাই। আমার ৫ ফেন্ড আসলে তারা ফেন্ড না তারা যে আমার কতটা হৃদয় জুড়ে আছে হয়তো তারা জানে না বলে বোঝাতে পারবো না তাদের জন্য আমি আজ এখানে। এমনকি আমার ফ্যামিলির কেউ-ই জানে না আমি এখানে হয়ত এতোক্ষণে জেনেও গেছে আমাকে টিভির পর্দায় দেখছে। তো যায় হোক আমার এই টাকা দরকার ছিলো আমার বোনের বিয়ে আর ক’দিন পরেই আমার ইচ্ছে ছিলো অনেক ধুমধামে আপুর বিয়ে দিবো এমনকি আমার বাবাও তাই চাইতেন তার বড়মেয়েকে খুব ধুমধামে বিয়ে দিবে এটা আমি তার ডাইরি পড়ে জেনেছি কেউ জানে না অবশ্য তিনি হয়ত নাই কিন্তু তার স্বপ্নগুলা তো আছে আমি তার স্বপ্ন গুলো পূরণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এই টাকা দিয়ে আমি আমার আপুর বিয়ে দিবো এন্ড থ্যাংকিউ সো মার্চ ওয়াল আমার জন্য দোয়া করবেন’

টিভি সামনে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিলি তার চোখটাও অশ্রুতে টইটম্বুর। সামিও অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে টিভির স্কিনে।

চলবে।

প্রেমপ্রলয় পর্ব-০৬

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৬

ঘুমন্ত নগরী রাত কয়টা বাজে ঠিক নাই। জাকি কেবল মিলির সাথে চ্যাট শেষ করে বসেছে। ওমনি দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুলে জুলি বেগম জাকিকে ডাকলে

-‘জাকি বাবা ঘুমিয়ে গিয়েছিস না-কি?’

জাকি দরজা খুলে বলল

-‘না আম্মু কিছু বলবে?’

জুলি বেগম ঘরে ডুকে বিছানায় বসে গম্ভীর হয়ে বলল

-‘হ্যাঁ বলার তো অনেক কিছুই আছে। তুই আগে থেকে সব জানতিস তাই না?’

জাকি ভরকে গিয়ে বলল

-‘কোন ব্যপারে আম্মু?’

তখনি সামি দরজা দিয়ে উঁকি মেরে বলল

-‘আমাকে ছাড়ায় তোমরা গল্প করছো?’

জাকি ঘার ঘুড়িয়ে বলল

-‘কেবলি আম্মু এসে বসলো। সাথে সাথে তুইও হাজির’

সামি দাঁত কেলিয়ে রুমে ডুকতে ডুকতে বলল

-‘যাক তাহলে তো ভালোই তা কি নিয়ে কথা হচ্ছিল শুনি’

-‘ও হ্যাঁ আম্মু বলো কোন ব্যাপারে আমি জানতাম?’

-‘এই যে মিলির বোন আছে আর এ ব্যপারটা আমাদের থেকে লুকিয়েছে’

-‘হ্যাঁ জানতাম তোমার কাছে ফোন দেওয়ার আগে আমাকে সব বলছে আর জানতাম এতে তুমি বিশেষ রিয়াক্ট করবে না’

-‘জিমি মেয়েটা অনেক মিষ্টি মুখে মায়া আছে মেয়েটার।’

সামি ছোফা থেকে লাফিয়ে উঠে বলল

-‘জিমি ভাবির বোন!’

-‘হ্যাঁ কেনো? তুই চিনিস না-কি জিমিকে?’

সামি থতমত খেয়ে বলল

-‘না তেমন কিছুই না ভাবির বোন আছে আগে জানতাম না তো।’

-‘হ্যাঁ আমরাও জানতাম না আজ মিলি নিজে বলছে। দেখে মনে হলো বোনকে বড্ড ভালোবাসে তাছাড়া জিমি মেয়েটাও মিষ্টি মুখে মায়ায় ভরপুর ইশ এইটুকু বয়সে না-কি পুরোসংসারের খরচ একা চালায় সাথে নিজেও পড়াশোনা করে’

সামি ভ্রু কুচকে বলল

-‘আম্মু এতো প্রসংশা করছো কেনো বলো তো?’

-‘যে প্রসংশা করার যোগ্য তার নামে প্রসংশা করবো না কেনো? কিন্তু মেয়েটার একটা জিনিস খারাপ কি তার ছেলেদের মতো চলাফেরা মেয়েটার চুলগুলা যদি একটু বড় হতো তাহলে সামির জন্য মেয়েটাকে বউ করে নিয়ে আসতাম’

জুলির কথা শুনে সামির কাশি উঠে গেলো। জাকি হাসতে হাসতে বলল

-‘আম্মু আমার মনে হচ্ছে সামির জন্য আমাদের মেয়ে দেখতে হবে না তেনার বোধ হয় পছন্দ করা আছে’

জুলি বেগম কথাটা সিরিয়াসলি নিয়ে বলল

-‘মেয়েটা কে সামি? আমাদেরকে বললে কি আমরা মানা করতাম কখনো? আমাদেরকে এতোটা খারাপ ভাবিস তুই’

সামি বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল

-‘না আম্মু তোমার ছেলে মিথ্যা কথা বলছে ওর কথা একদম বিশ্বাস করো না আর আমি যদি কিছু করি তাহলে তোমাকে সবার আগে বলবো’

জুলি বেগম কথাটা বিশ্বাস করলেন কি না বোঝা গেলো না তিনি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল

-‘আর কোনো কথা না ঘুমিয়ে পড় সবাই অনেক রাত হয়েছে কাল আবার শপিংয়ে যেতে হবে’

কথাটা বলে চলে গেলো জুলি। সামি জাকির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

-‘আমি প্রেম করি এসব আউল ফাউল কথা কে বলেছে তোকে? তুই জানিস না আমি প্রেম করি না তা?’

-‘জানতাম তো কিন্তু আজ-কাল ভাইয়ের চেঞ্জ দেখে মনে হয়’

-‘আমার মধ্যে কি এমন চেঞ্জ দেখলি যে তোর মনে হলো আমি প্রেম করছি’

-‘এই যে রাস্তা ঘাটে মেয়েদের সাথে ঝ’গ’ড়া করিস তাও আবার একটা মেয়ের সাথেই’

-‘ওফ্ফ ভাইয়া তোর এই সব ভালো লাগে না ঘোড়ার ডিম ঝ’গ’ড়া করছি মানে প্রেমে পড়েছে লেইম এক্সিউস দাও কেনো বুঝি না তুই আসলে আমাকে আম্মুর সামনে ফাঁ’সা’তে চাইছিলি আমি বুঝি না মনে করিস? বাই দ্যা ওয়ে তোকে এসব নিউজ লিক করে কে’

জাকি ভাব নিয়ে বলল

-‘আমার সব দিকে চোখ থাকে বুঝলি আমাকে ফাঁকি দেওয়া ওতো সহজ না’

সামি জাকির বাহুতে ঘু/ষি মেরে বলল

-‘থাক তুই তোর চোখ নিয়ে’

_________________________

আজ দিনটা মেঘলা সূর্য আর মেঘ লুকোচুরি খেলায় ব্যস্ত। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া বইছে। আজ সকাল থেকে জিমি লাপাত্তা আজ সকাল থেকে কেউ দেখে নি জিমিকে। জিমি এমনই করে কেউ আর এটা নিয়ে ভাবলো না কিন্তু মিলিকে এটা নিয়ে ভিষণ ভাবাচ্ছে। কাল রাতে যে জিমি ঠিক মতো ঘুমাই নি সেটা মিলি জিমির পাশে শুয়ে সারারাত টের পেয়েছে। মিলি কয়েক বার ‘কি হয়েছে’ জিজ্ঞাসা করলে-ও জিমির উত্তর ছিলো ‘কিছু না তুই ঘুমা’। আজ ফোন দিলেও জিমি ফোন ধরে নি এসএমএস দিয়ে বললেছে ‘আমি একটা কাজে ব্যস্ত আছি কাজটা শেষ হতে রাত হবে আমাকে নিয়ে টেনশন করিস না লিমনকে নিয়ে জাকি ভাইয়ার সাথে শপিংয়ে যাস নিজের সহ বাসার সবার খেয়াল রাখিস’

তারপর মিলি ফোন দিলেও জিমি ধরে নি এমনকি সুইসটপও করে নি। এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো জিমির দেখা নেই জাকি এসে মিলি আর লিমন কে নিয়ে গেলো বিয়ের শপিং করতে। শপিংয়ে এসে দেখলো জাকির মা ভাই সহ আরও অনেকে আছে যাদের কে মিলি চিনে না কেমন নার্ভাস লাগছে মিলির জুলি সকালে সাথে মিলির পরিচয় করিয়ে দিলো। জুলি বেগম মিলিকে প্রশ্ন করলো

-‘মিলি জিমি কোথায়? ওকে আনো নি কেনো?’

মিলি বিব্রতবোধ করে বলল

-‘আসলে আন্টি জিমি সকাল থেকে উধাও কোথায় গেছে বলে যায় নি শুধু বলল আসতে দেরি হবে’

-‘ওমা সেকি ফোন দিয়েছিলে?’

-‘হ্যাঁ ধরে নি ম্যাসেজ দিয়ে বলল শুধু আসতে দেরি হবে। ও এমনই করে পাগলাটে’

মিলির কথা শুনে সামি মনে মনে বলল ‘পাগল মানে মহাপাগল একেবারে তার ছেঁড়া পাগল। ইশ কত মনে করলাম আজ জিমির মুখে মায়া খুজবো আম্মুর এতো প্রসংশার মানে খুঁজবো কিছুই হলো না’

একে একে সকলে শপিং করতে শুরু করলো।

________________________

জিমি নিজেই নিজেকে বারবার প্রশ্ন করছে -‘জিমি তুই যতটা নিজেকে স্ট্রং দেখাস ততটা কি তুই স্ট্রং? না-কি সেটা লোক দেখানো মাত্র?’

আজ জিমির প্রতিযোগিতার প্রথমদিন আশার পর থেকে নিজের মধ্যে একরাশ ভয়, নার্ভাসনেস কাজ করছে। নিজেকে সাহস দিতে গিয়ে ভেঙ্গে পড়ছে বারবার। নিজে সাহসে কুলাতে পারছে না। প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে দুপুর তিনটা থেকে। ছেলেমেয়ে উভয়ই এ প্রতিযোগিতায় আছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা এসেছে। প্রথম রাউন্ডের ফার্স্ট স্ট্রেপ (রেস) হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে ১৮ জনকে বেছে নিয়েছে। জিমিও তার মধ্যে আছে। এখন সন্ধ্যা ৬টা বাজে প্রথম রাউন্ডের সেকেন্ড স্ট্রেপ (স্ট্যান্ড) কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হবে। এর মধ্যে থেকে ১২ জনকে বাছাই করে নিবে। জিমি বন্ধুরা জিমিকে টেনশন করতে বারণ করছে বার বার মাথা ঠান্ডা করে কাজ করে বলছে।

মিলি শপিং করতে করতে শপিংমলের টিভির স্কিনে চোখ যেতেই যেনো মাথার নিউরনগুলো নড়ে উঠলো। এলোমেলো কথা বুলি আওড়াতে লাগলো। সে কি সত্যি দেখছে নাকি স্বপ্ন?

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-০৫

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৫

খান বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসা শুরু করেছে। বাসার বড় ছেলের বিয়ে যেনো তেনো ভাবে দিলে হয় তার বিয়ে তো হবে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সেভাবেই এগোচ্ছে সব কিছু। সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে সামি আর জাকি পাশাপাশি বসে খাচ্ছে। খাওয়ার ফাঁকে সামি জাকির কানের কানে কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো

-‘ ভাইয়া ভাবির সাথে প্রেম কেমন চলে?’

জাকি খাবার খাওয়া থামিয়ে বিষম উঠে যায়। জুলি বেগম দৌড়ে এসে ছেলেকে পানি দিয়ে বলল

-‘কি হলো? দেখেশুনে আস্তে আস্তে খাবি তো না-কি এতো তাড়াহুড়ার কি আছে?’

সামি খেতে খেতে ফোঁড়ন কেটে বলল

-‘ আরে বুঝো না? ভাবির সাথে প্রেমআলাপ করবে সেজন্য’

সামির কথা শুনে কেউ কেউ মুখ টিপে হাসলো কেউ বা জোরেই হাসলো। জাকি সামির দিকে চোখ রাঙালো তা দেখে সামি বলল

-‘দেখছো দেখছো আম্মু। সত্যি কথা বললেই তোমার ছেলে চোখ রাঙানি দেয়’

জাকি দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘হ্যাঁ তুমি তো সত্যবাদী যুধিষ্ঠি আর তুমি যে আজ-কাল রাস্তাঘাটে কি করছো সে-সব তোমার আম্মু জানে? নাকি বলবো তোমার আম্মুকে’

সামি গম্ভীর হয়ে যায়। জাকিও আর কিছু বলল না। জুলি বেগম বলেন

-‘আজ মিলিদের বাসায় যাচ্ছি আমি কাল মিলি আমাকে ফোন দিয়ে যেতে বলল হঠাৎ কি জানি বলবে’

°
°
সূর্যের তির্যক রশ্মি ভ্যাপশা গরমে কাহিল অবস্থা সবার ঘেমে নেয়ে একাকার। এই গরমের মধ্যে জিমি আর লিলি গেছে বাজারে। জিমি একা যেতে চাইছিলো কিন্তু লিলি তাতে নারাজ কি আনতে কি আনবে তাই জেদ ধরে সেও গেছে সাথে অবশ্য জিমি ফেন্ডরা ছিলো মিলি বিয়েতে তারাও কোমড় বেঁধে নেমে পড়েছে। লিমন স্কুলে গেছে আর একমাস পরেই তার এসএসসি পরীক্ষা কড়া নজরে রাখছে সবাই ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই।মিলির বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। আর ক’দিন পরেই বিয়ে কাল থেকে আত্মীয় স্বজনরা আসা শুরু করবে। বাসার মেনডোর খোলা থাকায় জিমি আর লিলি ডুকে পড়ে।

-‘আপু, এই আপু, কই তুই দেখ সবঠিকঠা….’

বসার রুমে এসে আর কথা বলতে পাড়লো না কথা যেনো আটকে গেছে। গলাটা শুকিয়ে গেছে। কপাল বেয়ে দরদর করে ঘামের চিকন স্রোত বেয়ে আসছে। সাথে লিলি বেগমেরও অবস্থা খারাপ ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে বসার রুমে বসে থাকা জুলি বেগম ওরফে মিলির হবুশাশুড়ি। মিলি ওনার পাশেই বসে ছিলো। মিলি উঠে এসে জিমির পাশে দাঁড়িয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বলল

-‘এই যে আমার ছোট বোন জিমি আফরিন!’

জিমি বিষফোড়ান চোখে মিলির দিকে তাকালো। মিলি চোখ দিয়ে আশ্বাস জানালো। জিমি শুঁকনো ঢোক গিলে জুলি বেগমের দিকে তাকালো তাকে দেখে তার অভিব্যক্তি বোঝা যাচ্ছে না। তিনি যেমন ছিলেন তেমনি আছে। লিলি পরিস্থিতি সামালাতে এগিয়ে এসে মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বলল

-‘আরে বেয়ান আপনি কখন আসলেন? আমি তো কিছুই জানি না’

জুলি তখন চুপ। জুলি বেগম তখনোও চুপ! লিলি বেগম মনে মনে ভয় পেলেন মিলির দিকে কঠিন চোখে তাকালেন। মিলি নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো ওর কিছু যায় আছে না যা হবে সেটাই মেনে নিবে। নিরবতা চলল মিনিট দশেক কিছুক্ষণ পর জুলি বেগম বলেন

-‘মিলি তোমার বোন তো দেখছি একদম কিউট বাচ্চা মাশাআল্লাহ’

জিমি সহ লিলি, মিলি চমকালো। মিলির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। জিমি, লিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তা দেখে জুলি বলল

-‘কি বেয়ান ভয় পাইছিলেন না-কি? আর ছোট একটা মেয়ে আছে আমাদের বলেন নি কেনো হ্যাঁ? কতদিনই বা লুকিয়ে রাখতেন? একদিন না একদিন তো জানতে পারতামই না-কি?’

-‘আসলে বিয়ান….’

-‘বিয়ান আপনার অবস্থাটা বুঝছি এতো টেনশন নিয়েন না আপনার বড়মেয়ে, ছোটমেয়ে মাশা-আল্লাহ। আর এই যে জিমি আম্মু তোমার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনলাম এতটুকু বয়সে কত স্ট্রাগল করছো মাশা-আল্লাহ তোমার আপু আমাকে সবই বলেছে’

মিলি বলল

-‘আসলে আন্টি আমি চাইনি বিয়ের পর কোনো ঝামেলা হোক বা দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হোক। আর আমি চাই না অন্য কারোর কাছ থেকে এগুলো শুনে কোনো অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি হোক।’

-‘মিলিআম্মু তো দেখি ভালো গুছিয়ে কথাও বলতে পারো বিয়ে ওর শাশুড়ী বউমার ঝ/গ/ড়া ভালোই জমবে’

কথাটা বলে জুলি বেগম, লিলি বেগম, মিলি হেসে উঠলো। জিমি এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেনো ও কোনো স্বপ্ন দেখছে। মিলি জিমির বাহুতে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল

-‘এটা স্বপ্ন না সত্যি’

জিমি মায়াবী জলহীন চোখে তাকালো মিলির দিকে মিলি হাসলো। লিলি বেগম মেয়ের শাশুড়ির খাবার-দাওয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। জুলি বেগম অবশ্য বাঁধা দিয়ে বেশ কয়েকবার বললেন ‘আহ বেয়ান এতো ব্যস্ত হবেন না’

কিন্তু লিলি বেগম তো কোনো কথা শোনার পাত্রী নয়। সারাদুপুর জুলি বেগমের ক্ষেদমত চললো। বিকালের দিকে তিনি বাড়ি রওনা দিলেন। লিলি বেগম অবশ্য ভয়ে ভয়ে ছিলেন এনা বাসায় গিয়ে ফোন দিয়ে বলেন ‘আপনাদের মেয়েকে আমার ছেলের বউ হিসেবে মানবো না বিয়ে ক্যান্সাল’

কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। রাতে জিমি মিলি শুয়ে ছিলো। মিলি শুয়ে জাকির সাথে চ্যাট করছিলো। তখন জিমি বলল

-‘আপু তুই ক্যান হুটহাট এমন করিস বলতো কবে জানি হার্ট অ্যা/টা/ক করে মা/রা যায়’

মিলির এদিকে কোনো খেয়াল নাই সে ফোনে মগ্ন আর মিটমিট করে হাসছে জিমি সেটা খেয়াল করে আস্তে আস্তে মিলি মাথার পাশে গিয়ে দেখে মিলি জাকির সাথে চ্যাট করছে। জাকি তিনটা চু/ম্মু ওয়ালা স্টিকার দিয়েছে। জিমি বড়বড় চোখ করে ফোনে স্কিনে তাকিয়ে আছে। মিলির ধ্যান আসতেই মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো। জিমিও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আস্তে বলতে গিয়ে জোরে বলে উঠলো ‘নাউজুবিল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ’

মিলি রেগে বলল ‘জিইইমির বাচ্চা!’

জিমি চোখ বন্ধ করে একটা ‘আপু বিশ্বাস কর আমি পড়ি নি’

জিমি চোখ খুলে মিলির দিকে তাকাতেই ফিক করে হেঁসে ফেললো সাথে মিলিও।

-‘বিয়ের আগে অরেঞ্জম্যারেজে এতো প্রেম বাবাহ্ আগে কোথাও দেখিও নি শুনিও নি বলে কি না ‘আমাকে আদর দাও”

কথাটা বলে জিমি আবারও হেসে ফেললো। মিলি রাগার ভান করে বলল

-‘জিমি ভালো হচ্ছে না কিন্তু শ/য়/তা/ন মেয়ে সবসময় আমার পিছনে লাগা’

জিমি ভ্যাংগিয়ে টেনে টেনে বলল

-‘আমাকে আদর দাও’

-‘জিমিকা বাচ্চু’

#চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-০৪

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৪

সময়টা গোধূলিলগ্নে সূর্যের লাল আলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে কোনো নাম না জানা কিংবা নাম জানা কোনো দেশে। জিমি সেই কখন থেকে জ্যামে আটকে আছে সূর্য ডুবে গিয়ে সারাশহর অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে সারাশহরের রংবেরঙের কৃত্রিম আলোই ভরপুর হয়ে গেলো। জিমির মেজাজ ক্লান্তি, বিরক্তিতে টইটম্বুর। তার মধ্যে মরার ওপর খাড়া হয়ে জ্যামের মধ্যে দেখা হয়ে গেলো সামির সাথে। জিমির ঠিক পাশেই সামি গাড়িতে বসে জিমির দিকে তাকিয়ে আছে কি যেনো ভাবছে এতে জিমি আরও মহাবিরক্ত। পিছানোরও জায়গায় নায় সামনে যাওয়ার ও জায়গা নাই একেবারে গ্যারা কলে পড়ে ফেঁসে গেছে যেনো। সাথে আজ হার্ড বাইক স্ট্যাড করায় হাতে পায়ে ব্যথা পেয়ে বেশ ছিলেও গেছে। সামি বলে উঠলো

-‘এই মেয়ে, এই!’

জিমি কাঠ হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো যেনো কিছু শোনেই নি। কিন্তু সামি থামবার পাত্র নয় ‘এই মেয়ে’ বলে ডেকেই চলেছে। জিমির কানের পোকাগুলা যেনো নড়ে উঠলো আশেপাশের লোকজন ও বারবার তাকাছে। জিমি মহাবিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে বলল

-‘গরুর মতো চিৎকার করছেন কেনো? আর আমার না একটা নাম আছে সেটা জ ি কারে জি ম ি কারে মি জিমি, জিইইইমি বুঝছেন ভালো করে মাথায় ডুকিয়ে নিন’

-‘গাধার মতো কথা কথা বলবেন না বুঝতে পারছেন আর শুনুন আপনাকে না আমি অযথা ডাকি নাই’

-‘শুনুন আমি না আপনার মতো সবসময় ঝগড়া করা মুডে থাকি না তাই মোটেও আমি আপনার সাথে এখন ঝগড়া করতে চাইছি’

-‘আপনার দোষ আমার ওপরে চাপাছেন কেনো নিজে তো ঝগড়া করার জন্য রেডি থাকেন বাই দ্য ওয়ে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেসা করার জন্য আপনাকে ডাকছে ৩৬ লাইন বেশি না বুঝলে হয় না আপনা’

-‘দেখেন আপনি সবসময় বেশি বেশি করেন কবে জানি আমি আপনার মাথা ফা/টি/য়ে দি’

-‘হ্যাঁ সেই তো আপনি আমার মাথা ফা/টা/তে আসবেন আর আমিও মাথা এগিয়ে বলবো নেন নেন আমার মাথা ফা/টি/য়ে দিন বাহ্ কি দারুণ ব্যপার না?’

জিমি আর উত্তর দিলো মাথা ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছে যেনো। সামি আবার বলল

-‘শুনুন আপনি ঔ বাড়ির কে হন? আই মিন মিলি ভাবির কে হন?’

জিমির বুকে কেমন করে উঠলো। আর তখনি ভাগ্যক্রমে জ্যাম ছুটে গেলো। জিমিও আর না দাঁড়িয়ে উত্তর না দিয়ে চলে গেলো। সামি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে বলল ‘শুনতে পাই নি? না-কি উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না? না-কি পালিয়ে গেলো?’

সারাদিনের ক্লান্তি বাসায় ফিরতেই জিমি বিছানায় লুটিয়ে পড়লো। মিলি বকতে বকতে জিমিকে ফ্রেশ করতে পাঠালো। জিমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মিলি খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে। জিমি ঠাস করে শুয়ে পড়ে বলল

-‘খেতে ইচ্ছে করছে না আপু নিয়ে যা এসব’

-‘খেতে ইচ্ছে করছে না বললে তো শুনবো না খেতেই হবে’

-‘আপু যা না আমার খাওয়ার মুড নাই’

-‘কানে চ*ড় দিয়ে সোজা করে ফেলবো বি/য়া/দ/প ওঠ’

মিলি জিমিকে ঠেলে উঠে বসালো।

-‘সবসময় ভালোলাগে না আপু’

-‘আর ক’দিন পরে যখন চলে যাবো তখন আর এমন করবো না’

জিমি চুপ রইলো। মনটা তার ও খারাপ হয় যখন ভাবে তার প্রাণপ্রিয় আপুটা শশুর বাড়িতে চলে যাবে এমন করে আর তাকে কেউ শাসন করবে না মন চাইলে আর ঝগড়া, দেখা করতে পারবে না। জিমি আর কিছু না বলে খেতে লাগলো মিলির হাতে তা দেখে মিলি নিভৃতে হাসলো। খাওয়া শেষে জিমি শুয়ে পড়লো ক্লান্তিতে বড্ড ঘুম পাচ্ছিল তার কিন্তু ঘুম পরিরা এখন কোন অজানায় জেনো হারিয়ে গেলো জিমির বুকটা হটাৎ ভার ভার লাগছে বড্ড কান্না পাচ্ছে সচারাচর তার কান্না পাই না কিন্তু হঠাৎ এখন কেনো কান্না পাচ্ছে তার? মনে হচ্ছে কি যেনো হারিয়ে ফেলার ভয় দূরে চলে যাওয়ার ভয়। জিমি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শক্ত করার প্রয়াশ চালানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলো। জিমির চোখের কার্ণিশ বেয়ে অবাধ্য নোনাধরা বেয়ে পড়লো। মাথায় হাতের ছোঁয়া পেতে চোখ খুলে মিলিকে দেখে জড়িয়ে ধরে নিরবে কেঁদে ফেললো।

-‘এই পাগলি কাঁদছিস কেনো? আমি কি চলে গেছি না-কি?’

-‘যাসনি কিন্তু যাবি তো! আচ্ছা ওখানে গিয়ে আমাদেরকে ভুলে যাবি না তো আপু?’

-‘তোর কি এমনটাই মনে হয়?’

-‘উহুম কিন্তু মানুষ তো পরিবর্তনশীল!’

মিলি জিমি দু’জনই চুপ কারোর কোনো কথা নেই।কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে নিরবতা ভেংঙে জিমি বলল

-‘মিলিপু একটা কথা বলবো?’

মিলি আনমনেই বলল

-‘হুম’

-‘মারবি বা বকবি না তো?’

-‘এতো হেয়ালি না করে বলে ফ্যাল’

-‘আপু আসলে তোকে যারা আগে দেখতে আসছিল না তারা না অনেকেই ভালো ছিলো না আবার অনেকে আমার পছন্দ হয় নি তাই ভেঙে দিয়েছিলাম ‘

-‘জানি!’

জিমি অবাক হয়ে তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে উঠে বলল

-‘জানিস মানে? তাহলে আমাকে আগে বকিস নি কেনো?’

-‘আমি জানি মিস.জিমি আফরিন যেটা করে তার পিছনে নিশ্চয়ই ভালো কিছু লুকিয়ে আছে আর এও জানি সে আমার সবসময় ভালো চায়’

-‘আপু! এতো ভালো কেনো তুই? এতো ভালো কে হতে বলেছিল বলতো? তোর জাগায় অন্য কেউ থাকলে আমাকে এতক্ষণে মা/র্ডা/র করে দিতো’

জিমি কথাটা বলতে বলতে মিলির কোলে শুয়ে পড়লো মিলিও জিমির মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে হাসলো। জিমি আবার বলল

-‘আপু! জাকি ভাইয়ার ফুল ডিটেইলস আমি দেখছি ওনি অনেক ভালো সাথে ওনার পরিবারও তুই খুব সুখী হবি আপু দেখিস ওনার সাথে কথা বলছিস?’

মিলি লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে ‘হুম’ বলল।

-‘আপু দেখিস সব ঠিক মতো হবে। তোর বিয়েটা অনেক বড় ধুমধাম করে দিবো’

মিলি মলিন হেসে বলল

-‘টাকা পাবি কই?’

-‘সেটা নিয়ে তোদের ওতো ভাবতে হবে না ও ঠিক একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে’

-‘ধার করবি? কিভাবে শোধ করবি?’

-‘ওফ আপু এতো কেনো বকিস বলতো? বলাম না সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে আর শোন তুই আর টিউশানি করাতে যাবি না’

-‘মানে কি যাতা বলছিস বলতো? আমি টিউশনি না করালে তুই একা হিমশিম খেয়ে যাবি’

-‘বিয়ের পরে শশুড় বাড়ি গিয়েও কি তুই টিউশনি করিয়ে আমাদেরকে টিউশনির টাকা পাঠাবি?’

-‘দরকার পড়লে তাই কি করবো’

-‘শোন বেশি ফালতু বকবক করিস না যা বলছি সেটাই করবি তোর বিয়ে অনেক ধুমধাম করে দিবো দেখিস আমার খুব ইচ্ছে আপু। হয়ত উপস্থিত থাকতে পারবো না কিন্তু সব ঠিক ভাবেই হবে’

-‘উপস্থিত থাকবি না তো কই যাবি?’

জিমি চোখ বন্ধ করে বলল

-‘মাথা টিপে দে ভালো করে খুব ব্যথা করছে’

মিলি জিমির মাথা টিপে দিতে দিতে গভীর চিন্তায় পড়ে গেলো। কিভাবে কি হবে?

চলবে