Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1059



প্রেমপ্রলয় পর্ব-২৩(শেষ পর্ব)

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-২৩ [শেষ পর্ব]

সামি আর জিমি বেঞ্চের মুখোমুখি বসে আছে। হাতে ধোঁয়া ওঠা মালাই চা। সামি জিমির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। জিমি পিচের রাস্তার সাদা রংয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। আসলে জিমি ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কি করা উচিত। আজ বাসা থেকে বের হবার সময় লিলি জিমিকে শুধু বলেছে ‘আর যায় করিস আমার মেয়ের সংসারটা ভাংগিস না আর আমার মুখটা পুরাস না’
জিমি জানে সে যতক্ষণ না বিয়েতে হ্যাঁ বলবে ততক্ষণ লিলি বিয়ের কথা আগাবে না।

নিরবতা ভেঙে সামি বলল

-‘ কি হয়েছে তোমার? এমন অদ্ভুত বিহেব করছ কেনো?’

জিমি ভনিতা না করে চট করে বলল

-‘ আপনি না-কি আমাকে বিয়ে করতে চান?’

সামি সোজাসাপটা উত্তর দিলো

-‘ হ্যাঁ।’

-‘ কেনো? আমাকেই কেনো বিয়ে করতে হবে বাংলাদেশ কি মেয়ের অভাব পড়েছে না-কি?’

-‘ উহুম। কিন্তু আমার তুমিটার খুব অভাব!’

জিমি সামির কথায় লজ্জা পেয়ে সামির অপর দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সামি হেসে বলল

-‘ বাহ! আপনি তো দেখছি লজ্জাও পান’

জিমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল

-‘ মটেও না। আমি যদি আপনাকে বিয়ে না করি তখন কি করবেন? ‘

-‘ অপেক্ষা করবো!’

-‘ অপেক্ষা কিন্তু কঠিন জিনিস সময়ের ব্যাপার যদি ধৈর্য্য হারা হয়ে যান’

-‘ তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নিবো’

জিমি এবার ভারি অবাক হলো। সামির কথার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিল না। গলা ঝেড়ে বলল

-‘ একদম জে’লে পুরে দিবো’

সামি হাসলো। জিমি সে হাসির দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল

-‘ যদি আমাকে বিয়ে করতে চান তাহলে কিছু নিয়ম মানতে হবে’

সামি বিষময় নিয়ে বলল

-‘ মানে তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি?’

-‘ হ্যাঁ কিন্তু আমি বিয়ের পরে চাকরি ছাড়তে পারবো না আর মাঝে মধ্যে আমার রাতেও বাসার বাইরে থাকতে এগুলো যদি আপনি মানতে পারেন এটাতে যদি আপনি রাজি থাকে তো বলেন আমি বিয়েতে রাজি আছি’

জিমি কথাটা বলে উঠে দাঁড়ালো সামি খুশিতে জিমিকে জড়িয়ে ধরে বলল

-‘ রাজি রাজি সব শর্তে রাজি থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ সো মার্চ আমি যে কতটা খুশি হয়েছি তোমাকে যে কিভাবে বলবো?’

জিমি সামিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সরে দাড়িয়ে বলল

-‘ নিজের লিমিট ক্রস করবেন না লিমিটের মধ্যে থাকুন’

-‘ আসলে সরি খুশিতে বুঝতে পারি নাই’

-‘ ইট’স ওকে আসছি’

পিছিয়ে ফিরে জিমি মুখ টিপে হাসলো। সামিও মাথা চুলকে বিল মিটিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।
___________________

-‘ আম্মু আমি বিয়েতে রাজি’

লিলি বেগম অবাক করে জিমির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ তুই ভেবে বলছিস তো?’

জিমি খেতে খেতে বলল

-‘ হ্যাঁ’

-‘ তুই সত্যি বলছিস? তাহলে আমি ওদের হ্যাঁ বলে দিয়ে আসি ওরা যে কি খুশি হবে’

লিলি আর একমুহূর্ত দাঁড়ালো না রুমে গিয়ে ফোন লাগালো জুলি বেগমর কাছে। জিমি তাকিয়ে দেখলো শুধু তার বিয়েতে তার মা এতো খুশি? তার হ্যাঁ বলাতে তার জীবনটা বদলে যাবে? সে কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিলো?

_________

জিমি আর সামির বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। জিমি মনে মনে ভয় পাচ্ছে সামি বিয়ের পর আদেও চাকরি করতে দিবে তো না-কি পাল্টি খাবে। খুব দ্রুত জিমি আর সামির বিয়ের দিন চলে আসলো। সব রিচুয়াল মেনেই ওদের বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়েটা খুব সাদা মাটা ছিল। বিয়েতে বেশি কাউকে বলা হয় নি কাছে আত্মীয় ছাড়া। জিমি বিদায়ের সময় নিজেকে খুব শক্ত রাখার চেষ্টা করেও নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে বাচ্চাদের মতো মা’কে কেঁদে দিয়েছিলো। কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চাদের মতো করে বলেছিল মা’কে ছাড়া কোথাও যাবে না সে। পলাশ জিমিকে বুঝিয়ে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিল।

_______________

জিমি বাসর ঘরে বসে ফুপিয়ে কেঁদে চলছে। মা আর দাদিকে ছাড়া জিমি কখনো কোথাও থাকে নি। মিলি, লিমন মামা বাড়িতে বেড়াতে গেলোও জিমি কখনো মা’কে ছাড়া থাকে নি। জিমি মা’র বকাগুলোও আজ প্রচন্ড মিস করছে। সেগুলো তখন বিরক্ত লাগলেও এখন যেনো সেগুলো মধুর লাগছে। সামির যে জিমির সাথে গালে হাত দিয়ে বসে জিমির দিকে তাকিয়ে আছে জিমির সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে-তো নিজের মতো করে কেঁদে যাচ্ছে। সামি জিমির দিকে ওভাবে তাকিয়ে থেকে বলল

-‘ আমি এতো দিন জানতাম আমি একটা ম্যাচুয়েড মেয়েকে বিয়ে করতে চলেছি কিন্তু এখন জানলাম একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করে এনেছি। যে কি না এখন বাচ্চাদের মতো করে কান্না করছে’

জিমি ফুপাতে ফুপাতে বলল

-‘ আপনার কি আপনি চুপ করে বসে থাকুন আপনারই তো সব দোষ কে বলেছিলো আমাকে বিয়ে করতে? না আপনি আমাকে বিয়ে করতেন না আমি আম্মুকে ছেড়ে এতো দূর থাকতাম। সব আপনার জন্য হলো’

সামি বোকার মতো কিছুক্ষণ জিমির দিকে তাকিয়ে থেকে শান্ত কন্ঠে বলল

-‘ যাও ফ্রেশ হয়ে আসো’

জিমি মাথা হেলিয়ে সমতি জানিয়ে জামা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। সামি জিমির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বেলকনিতে চলে গেলো। আজ রাতের আকাশে চাঁদ তারার মেলা বসেছে সবাই মিটমিট করে জ্বলছে। সামি তাকিয়ে রইলো সেদিক পানে। পায়ের শব্দ পেতে পিছনে ফিরে জিমিকে দেখলো জিমিকে আজ অন্য অন্য রুপে দেখছে সামি। কখনো শাড়ি তো এখন আবার থ্রি পিচ সামি জিমিকে কখনো থ্রি পিচ কিংবা শাড়িতে দেখেনি সবসময় ঢিলাঢালা শার্ট কিংবা টি-শার্টে দেখেছে। জিমির নতুন নতুন রূপ দেখে সামি যেনো নতুন করে জিমির প্রেমে পড়ছে। জিমি একটা লাল রংয়ের থ্রি পিচ পড়ে আছে চুলগুলা ছাড়া। নিজের কাছেই তার কেমন কেমন জানি লাগছে। জিমি অস্তি নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। সামি চোখ ফিরিয়ে নিলো বহু কষ্টে শুকনো ঢোক গিলে বলল

-‘ দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও ঘুমিয়ে পড় সারাদিন অনেক ধকল গেছে তোমার’

জিমি চোখ তুলে সামির দিকে তাকালো সামির পিছনটা দেখা যাচ্ছে বলল

-‘ আর আপনি ঘুমাবেন না?’

-‘ হ্যাঁ তুমি ঘুমিয়ে পড় আমার দেরি হবে’

জিমি কিছু বলতে গিয়েও কিছু বলল না পিছনে ফিরে রুমের দিকে পা বারাতেই সামি বলে উঠলো

-‘ জিমি’

জিমি চলন্ত পা থামিয়ে পিছনে ফিরে বলল

-‘ হুমম’

-‘ তুমি কি কষ্ট পেয়েছ?’

জিমি বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে বলল

-‘ মানে? কিসের জন্য?’

-‘ ঔ যে নিচে তখন খালামনির কথায়’

জিমি মনে পড়লো ভ্রু কুচকানো মিলিয়ে গেলো।

ফ্ল্যাসব্যাক–
বিয়ে করে আনার পর যখন জিমিকে বাসায় এনে সোফায় বসানো হয় তখন জিমি মিলিকে আস্তে করে বলল

-‘ আপু আমি ওয়াসরুমে যাবো চোখমুখ জ্বালা করছে নিয়ে চল’

আস্তে বললেও পাশে বসে থাকা খালাশাশুড়ি শুনতে পেয়ে খ্যাক করে উঠে বলল

-‘ এই নতুন বউ তুমি বড় বউকে তুই তোকারি করছো কেনো? মানলাম ও তোমার বড় বোন কিন্তু এখন তো জা ও হয় সম্মান দিয়ে কথা বলবে’

জিমি মাথা নিচু করে নিলো। সবাই তাকিয়ে আছে জিমির দিকে মিলি বলে উঠলো

-‘ সে যাহোক খালামনি সে আমার আগেও বোন ছিলো এখনো বোন আছে তার সাথে জা এড হয়েছে কিন্তু ও আমার বোন আগে যেমন ছিল এখনো তেমনি থাকবে আর এটা আমাদের দুজনের ব্যাপার আপনারা এর মধ্যে কথা না বললে খুশি হবো’

-‘ হ্যাঁ দেখবো তোমাদের ভাব কতদিন থাকে।’

বর্তমান–

জিমিকে কিছু বলতে না দেখে সামি বলল

-‘ দেখো ওনার কথায় কিছু মনে করো না উনি একটু ওমন-ই’

জিমি সামির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ আমি জানি সমাজে এবং পরিবারে এমন কিছু মানুষ থাকে তারা শুধু অন্যর ত্রুটি ধরে প্রশংসা করে না উনিও তাদের মধ্যে-ই পড়েন আমি এগুলোতে কিছু মনে করলেও আপুর কথায় সেকথা আর গায়ে লাগে নি বরং আপুর প্রতি ভালোবাসা আর সম্মানটা বেড়ে গেছে’

সামি বলতে চাইলো ‘আর আমার প্রতি কি তোমার কোনো ফিলিং কাজ করে না? এতোদিনেও কি আমি কি তোমার মনে জায়গা করে নিতে পারলাম না?’ কিন্তু সেগুলো আর মুখ দিয়ে বের করা হলো না। শুধু মুখে বলল

-‘ থ্যাংস বোঝার জন্য’

জিমি মাথা ঝাকিয়ে ধীর পায়ে রুমে গিয়ে বেডের এক পাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো। জিমির মনের মধ্যে অজানা অচেনা অনুভূতি গুলো উঁকি দিচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে ক্রমাগত। জিমি এপাশ ওপাশ করলো অনেকক্ষণ বারান্দার দরজার দিকে তাকালো বার বার সামির অপেক্ষায় রাত ২টা বেজে গেলো তবুও সামি এলো না। জিমি নিজের মধ্য অস্থিরতা খুব করে অনুভব করলো। জিমিকে ক্লান্তিও জেনো আজ জিমিকে কাবু করতে পারছে না। জিমি শোয়া থেকে উঠে ধীর পায়ে বারান্দায় গেলো। গিয়ে দেখলো সামি আগের মতো এখনো গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে। জিমিও সামির পাশে গিয়ে দাড়ালো। সামি টের পাই নি জিমি এসেছে তা। চারিদিকে নিস্তব্ধ চাঁদের আলোর ছড়াছড়ি মৃদু হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। তার সাথে বেলিফুলের ঘ্রাণ। নিস্তব্ধতা ভেঙে জিমির মৃদু সুরেলা কণ্ঠে সামির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ কি ভাবছেন?’

সামি অদ্ভুত ভাবে চমকে জিমির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো

-‘ তুমি এখানে কি করছো?’

-‘ ঘুম আসছিলো না’

-‘ ওহ’।

আবারও মিনিট পাঁচেক নিস্তব্ধতা বিরাজ করলো। হুট করে কোনো কথা ছাড়া সামি সরাসরি প্রশ্ন করলো

-‘ এখনো কি তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারো নি?’

জিমি মুখ স্বাভাবিক রেখে বলল

-‘ যদি বলি না’

সামি হতাশ নিশ্বাস ছাড়লো। জিমি আবারও বলল

-‘ এতোদিন আমার পিছে পিছে ঘুরে এখনো আমার মন বুঝতে পারেন নি?’

-‘ তোমার মনে হয় আমি তোমার মন বুঝি না? অবশ্যই বুঝি আর এটাও বুঝি যে তুমি আমাকে ভালোবাসো শুধু প্রকাশ করতে চাও না’

-‘ বুঝেন তাহলে প্রশ্নটা করলেন কেনো?’

-‘ মন চাইলো। যানতাম আজও উত্তর পাবো না তাও করলাম’

-‘ আপনার কি মনে হয় আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ কিছু করাতে পারে? তাহলে ভাবলেন কেমন করে বিয়েটা আমাকে দিয়ে জোর করে করানো হয়েছে? আপনার এইটুকু বোঝা উচিত ছিল আমার মতে বিয়েটা হচ্ছে কেউ জোর করে করাই নি তাহলে কেনো আপনি আপুর কাছে শুনতে গেলেন?’

সামি জিমির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল

-‘ তাহলে শিকার করছো তুমি আমাকে ভালোবাসো?’

জিমি সামির চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে উত্তর দিলো

-‘ হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে। প্রতিদিন আমাকে বিরক্ত করে আমার সাথে যেচে ঝগড়া বাঁধিয়ে আমাকে বাধ্য করেছেন। আপনার চোখের চাহনি আমাকে ক্রমশ দূর্বল করে দিয়েছে। প্রতিদিন আপনার এতো ব্যস্ততা থাকার সত্ত্বেও আপনি আমাকে ৫ মিনিটের জন্য হলেও সময় দিয়েছে। আমার ভালো, খারাপ, পছন্দ, অপছন্দের খবর নিয়েছেন আপুর কাছ থেকে।এতো কিছু পরেও আমার মনে হয় একটা পাথরও গলে যাবে আর আমি তো সেখানে মানুষ মাত্র’

সামির মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।

-‘ তাহলে পারলাম আমার প্রেমপ্রলয়ে তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে’

জিমি সামির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আকাশে দৃষ্টি স্থির করে হেসে বলল

-‘ ভাসিয়ে নিয়ে জাননি ডুবিয়ে দিয়েছেন’

সামি হুট করে জিমির পায়ের কাছে বসে। পা কলে নিলো জিমি চমকে বলল

-‘ কি করছেন কি? পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?’

সামি একটা সুন্দর পায়েল পড়িয়ে দিতে দিতে বলল

-‘ আমি আগেই ভেবে রেখেছিলাম যেদিন তুমি আমার প্রতি তোমার অনুভূতি প্রকাশ করবে তোমাকে এটা দিবো’

কথাটা বলে জিমি পায়ে ঠোঁট ছোয়ালো। জিমি কেঁপে উঠলো। সামির বাহু খামছে ধরলো।

সমাপ্ত

প্রেমপ্রলয় পর্ব-২২

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-২২

জিমির আজ-কাল বাসায় আসলেই মনে হয়। জিমির অগোচরে কিছু হচ্ছে। আবার সেটা তাকে নিয়েই। অথচ সে জানে না। আজ-কাল লিলি, আর জিমির দাদি জিমির দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে দৃষ্টি গভির, মায়া ভরা, কিছু একটার আকুতি বা আবদার! জিমি ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। জিমি জানে এখনি লিলি আসবে কিছুক্ষণ উশখুশ করবে কিন্তু কিছু না বলে চলে যাবে। জিমি কথাটা ভাবতে না ভাবতেই মাথায় হাতের ছোঁয়া পেলো বুঝতে অসুবিধা হলো না যে লিলি এসেছে। জিমি চোখ বন্ধ করে থেকে বলল

-‘ আম্মু তুমি কি আমাকে এমন কিছু বলতে চাও যা আমাকে বলতে পারছো না?’

লিলি বেগম বোধ হয় চমকালেন। জিমি চোখ খুলে লিলির দিকে তাকালো লিলির এলোমেলো দৃষ্টি কিছুক্ষণ নিরব থেকে লিলি বলল

-‘ আসলে ছেলেমেয়েরা বড় হলে মা-বাবার একটা টেনশন থাকে….’

-‘ মানে? কোন টেনশনের কথা বলছ? বিয়ে? ‘

লিলি যেনো এবার সাহস পেলেন তিনি গড়গড় করে সব বলতে লাগলেন।

-‘ হ্যাঁ ছেলেটা ভালো বাবার ব্যবসা সামলায় তারা নিজে থেকেই বলেছে তারা তোকে বউ বানাতে চাই আমারও ছেলেটাকে খুব পছন্দ হয়েছে দেখতে সুন্দর তোর সাথে মানাবে তুই বলিস তো বিয়ের কথা আগাই?’

জিমি সবটা মন দিয়ে শুনলো। এবার লিলির চোখ চোখ রেখে বলল

-‘ আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমার শান্তি? ‘

-‘ শান্তি? হ্যাঁ মরেও শান্তি। আমি তোকে বিয়ে দিয়ে মরতে পারি তাহলে শান্তি পাবো মনকে বুঝ দিতে পারবো যে তোকে সামলানোর জন্য কেউ আছে। আর তোকে যদি বিয়ে না দিয়ে মরে গেলে মনকে বুঝ দিতে পারবো না’

-‘ যার সাথে বিয়ে হবে সে যে ভালো তার কতটুকু গ্যারান্টি দিতে পারবে তুমি?’

-‘ আমার বিশ্বাস সে তোকে সুখি রাখবে’

-‘ আচ্ছা তা আমার বিয়ে হয়ে গেলে তারা কি আমাকে চাকরি করতে দিবে?’

-‘ বিয়ের পরে চাকরি করে কি করবি?’

-‘ তোমরা খাবে কি?’

লিলি কি বলবেন খুঁজে পেলেন না আমতাআমতা করে বলল

-‘ সে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে ঠিক’

জিমি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল

-‘ আম্মু এসব বাদ দাও তো আমি বিয়ে নিয়ে ভাবি না বিয়ে না করেও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে’

-‘ মানে? তুই বিয়ে করবি না?’

-‘ নাহ্’

-‘ কিন্তু আমি তাদের কথা দিয়েছি আমি তাদের থেকে কথা ফিরাতে পারবো না’

জিমি তড়িৎ গতিতে উঠে বসে বলল

-‘ মানে? আমার কাছে না শুনে তুমি তাদের হ্যাঁ বলে দিলে? আমার কাছে শোনার প্রয়োজন বোধটুকুও করলে না?’

-‘ তোর কাছে শুনলেই বলবি বিয়ে করবো না তোর কাছে শুনে কি করবো? আমি এটাই যানি তুই এই বিয়েটা করবি ব্যাস আমি আর কিছু শুনতে চাই না’

জিমি কিছুক্ষণ স্ট্যাচু হয়ে বসে রইলো মাথার মধ্যে ফাঁকা ফাঁকা লাগলো। জিমি হঠাৎ বলে উঠলো

-‘ আম্মু ছেলেটা কে? নম্বর দাও কথা বলবো’

লিলি বেগম চমকালেন। ভ’য়া’র্ত কন্ঠে বলল

-‘ কেনো তুই নম্বর নিয়ে কি করবি? বিয়ে ভাংবি?’

-‘ নম্বর দিতে বলছি নম্বর দাও তুমি যেমন আমার কাছে শুনার প্রয়োজন বোধটুকুও করো নি আমি ও তেমন তেমাকে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করছি না’

-‘ জিমি আমি চাই না তোর জন্য আমার মিলির ঘর ভাংউক’

জিমি কিছুটা অবাক হলেও বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা সামি। জিমি একবার লিলির মুখের দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়লো ঘুম পাচ্ছে তার ঘুম থেকে উঠে না হয় ভাবা যাবে কি করবে। লিলি ও চলে গেলো নিজের রুমে।

____________

জিমি রাত ১টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। আস্তে আস্তে উঠে বসলো পেটে ক্ষুদা অনুভব হলো। জিমির মনে পড়লো সন্ধ্যায় বাসায় এসে বিস্কিট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছিল। জিমি উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে কাছে আসতেই দেখলো প্লেটে খাবার ঢেকে রাখা। জিমি খেয়ে নিলো। রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে একবার ভাবলো সামিকে ফোন দিবে কি না রাত ও অনেক হয়েছে এতো রাতে কি একটা মানুষকে ডিস্টার্ব করা উচিত? জিমি সাত পাঁচ অনেক কিছু ভাবলো। জিমি মাথায় একটা কথা আসলো সামি জিমির ঘুমের মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করে তখন জিমির মেজাজ কই থাকে জিমি নিজেও জানে না জিমি শয়*তানি হাসি দিয়ে বলল

-‘ এবার দেখ খুব শখ না আমাকে বিয়ে করার? তোর বিয়ে করার শখ আমি মিটিয়ে দিবো’

জিমি সামির ফোনে কল লাগালো। জিমি সামিকে ফোন দিতে কেমন জানি আনইজি লাগছে। ওদের ফোন আলাপ কখনো দীর্ঘ হয় নি বলতে গেলে তেমন হয় ই নি সামির কন্ঠ শুনলেই জিমি ফোন কেটে ফোন অফ করে রেখে দিতো। জিমি সামির কাছে কল দিয়ে কানে ধরতেই বুকের ধুকপুকানি টের পেলো।

সামি ঘুমাইনি জিমির সাথে দেখা করে বাসায় এসে সারাদিন ঘুমিয়েছে আজ আর অফিস যায় নি। তাই অফিসের পেন্ডিং কাজ গুলো করছিলো। যেহেতু সারাদিন ঘুমিয়েছে তাই এখন আর ঘুম আসছে না। হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় অবাক হলো এতো রাতে কে ফোন দিচ্ছে? ফোন হাতে নিয়ে আরও অবাক হলো জিমির নাম দেখে। সামির বিষময় যেনো কাটছে না। সামি মনে মনে বলল ‘জিমি তো ফোন দেওয়ার মেয়ে নয়।তাহলে ফোন দিলো কেনো? কোন বিপদ হয় নি তো?’ কথাটা ভেবেই চটপট ফোন রিসিভ করে বলল

-‘ জিমি আর ইউ ওকে? তোমার কিছু হয় নি তো? কি হলো কথা বলছো না কেনো? জিমি কিছু বলো! জিমি। হ্যালো জিমি!’

সামির কথা শুনে জিমি বেকুব বনে গেলো

-‘ সাট আপ আমার আবার কি হবে?’

সামি শান্ত হলো। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল

-‘ না মানে তুমি তো আমা….!’

-‘কিহ?’

-‘ কিছু না। তুমি কি কিছু বলবে ফোন দিলে যে?’

-‘ কেনো আমি ফোন দিতে পারি না? ডিস্টার্ব করলাম নাকি?’

-‘ আরে না আমি তো এমনি জেগে ছিলাম। বলো কি বলবা’

-‘ কাল আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?’

-‘ তোমার কি হয়েছে? তোমার কি জ্বর আসছে? জ্বরের ঘোরে কি এসব বলছো?’

-‘ হঠাৎ এমন মনে হলো কেনো?’

-‘ তুমি নিজ থেকে আমার কাছে ফোন দিয়েছ আবার দেখা করতে বলছ তাই আর কি মনে হলো তুমি নিজের মধ্যে নাই’

-‘ আপনি বেশি কথা বলেন কিন্তু আমি জাস্ট শুনছি আপনি দেখা করতে পারবেন কি না?’

সামি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল

-‘ কোথায় আসতে হবে?’

-‘ আজ যেখানে দেখা হয়েছিলো সেখানে বিকাল ৫টাই’

-‘ আচ্ছা চলে আসবো’

-‘ ওকে রাখছি’

-‘ আরও কিছুক্ষণ কথা বলো প্লিজ।’

সামির আদুরে কন্ঠের প্রতিত্তোরে হ্যাঁ না কিছু বলতে পারলো না জিমি কিছুক্ষন নিরব থেকে কানে ফোন রেখে খট করে ফোন কেটে দিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিলো। জিমি ফোন কেটে দেওয়ায় সামি হাসলো।

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-২১

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-২১

জিমির ঘুম ভাঙ্গলো লিলির ডাকে। পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো লিলি হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিমি আস্তে আস্তে উঠে বসলো। লিলি বলল

-‘ যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি’

জিমি টলমল পায়ে ওয়াসরুমে গিয়ে মুখে পানির ঝাঁপটা দিতেই মনে পড়লো লিলি তো তার সাথে রাগ করেছিলো তাহলে এখন স্বাভাবিক তারমানে রাগ পড়ে গেছে। জিমি চটপট ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে লিলির সামনে বসে বলল

-‘ আম্মু তুমি আর আমার ওপরে রাগ করে নাই তো?’

লিলি ভাত মেখে এক লোকমা জিমির মুখে দিয়ে বলল

-‘ তোর সাথে রাগ করে থাকা যায়? না তুই থাকতে দিস?’

-‘ আপুও কি রাগ করে আছে?’

-‘ তুই গিয়ে শোন ওদের নাস্তা দিয়েছি নাস্তা করছে একটু পরে চলে যাবে’

-‘ সন্ধ্যা হয়ে গেছে তো আজ রাতটা থাকতে বলো’

-‘ বল থাকবে না তুই গিয়ে বলে দেখ কি বলে’

জিমি ছুটলো বোনের কাছে। লিলি বলল

-‘ আরে কই যাচ্ছিস খেয়ে নে আগে ওফ্ফ এই মেয়েটাও না’

লিলিও প্লেট হাতে নিয়ে গেলো জিমির পিছনে পিছনে। মিলি সামি আর জাকিকে পরোটা দিচ্ছিল জিমি টেবিলে চেয়ারে বসে বলল

-‘ ভাইয়া আজ না গেলে হয় না?’

জাকি কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই মিলি বলে উঠলো

-‘ নাহ্’

জিমি উঠে মিলির পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল

-‘ সরি আপু রাগ করে আছিস না আমার ওপরে?’

-‘ না সর আমার রাগ টাগ নাই। আর কার ওপরেই বা রাগ করবো কেউ আছে আমার’

পাশ থেকে জাকি বলে উঠলো

-‘ আমি আছি বউ তোমার জামাই এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে’

লিলি তখনই এসে উপস্থিত হলো জাকির কথাটা শুনেও না শোনার ভান করে কিচেনের দিকে চলে গেলো। জিমি, সামি আর লিমন মুখ টিপে হাসলো। মিলি জাকির দিকে চোখ মোটা মোটা করে তাকালো জাকি মাথা চুলকে খাওয়ায় মন দিলো।

-‘ আপু আজ প্লিজ থাক না দেখ সন্ধ্যাও হয়ে আসছে’

-‘ না মা বাসায় একা বাবা আজ কাজের জন্য রংপুর গিয়েছে থাকা যাবে না’

-‘ আন্টিকে আনিস নি কেনো?’

-‘ মা আসে নাই’

-‘ আপু তুই কি এখনো আমার ওপরে রাগ করে আছিস?’

-‘ না’

-‘ এমন করে বলছিস কেনো একটু ভালো করে বল’

মিলি জিমির দিকে তাকিয়ে জিমির কানটা জোরে মুলে দিয়ে বলল

-‘ এর চেয়ে ভালো করে বলতে পারি না আমি’

-‘ আহ কত ব্যাথা পাইছি’

-‘ ভালো হইছে’

____________________________________________

সময় বহমান দেখতে দেখতে একমাস হতে চলল।আগের মত যে-যার মত নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। সামির সাথে জিমির দেখা হলে এক দাফা ঝগড়া হবেই হবে। লিমনের পরিক্ষা শেষ হয়েছে কাল মিলি কালই লিমনকে সাথে করে নিয়ে গেছে নিজের সাথে করে।

আজ আকাশটা মেঘলা সূর্যের দেখা মেলেনি সকাল থেকে। চারিদিকে শীতল বাতাস বইছে। শীতের আগমন ঘটছে সেটাই জানান দিচ্ছে প্রকৃতি। জিমি রাস্তার চায়ের দোকানে সামনের বেঞ্চে বসে। চা খাচ্ছে এই নিয়ে যে কত কাপ শেষ করলো জিমির নিজেরই ঠিক নাই। হঠাৎ সামি এসে বলে উঠলো

-‘ এতো চা খাচ্ছেন কেনো?’

জিমি চা খেতে খেতে বলল

-‘ ইট’স মাই ফেভারিট’

-‘ ওহ রিয়েলি তো আমাকেও এক কাপ খাওয়ান’

জিমি এবার সামির দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল

-‘ আপনি কোথা থেকে টপকে পড়েন বলেন তো? আবার এখন যেচে এসে চায়ের অফার নিচ্ছেন। আপনি একটা মানুষ ভাই’

-‘ এই একদম ভাই বলবা না’

-‘ তো কি জামাই বলবো?’

-‘ বলতেই পারো আই ডোন্ট মাইন্ড’

-‘ সাট আপ। আপনি আপনি করে কথা বলেন আবার তুমি তে চলে গেছেন কেনো? মে/রে আলুভাজি বানিয়ে দিবো’

-‘ না বাবাহ থাক আমার আবার ওতো সিআইডির হাতে মা*র খাওয়ার ইচ্ছে নাই’

-‘ আপনি আমার সাথে মজা করছেন?’

-‘ ছিঃ ছিঃ কি বলেন এগুলা আমার কি ওতো সাহস আছে না-কি? ‘

-‘ আপনি……’

জিমির কথা শেষ হওয়ার আগে পলাশ এসে উপস্থিত হয়ে ভ্রু কুচকে বলল

-‘ কি হচ্ছে এখানে? কে এটা?’

জিমিও পলাশের মতো ভ্রু কুচকে বলল

-‘ কি হবে?’

-‘ আমার লগে ফাইজলামি করিস?’

জিমি কাত হয়ে পলাশের পিছনে শায়লাকে দেখে বলল

-‘ এতোক্ষণ কি করছিলি ভাই?’

পলাশ মুখে হাত দিয়ে হালকা কেশে বলল

-‘ এহম যায় করি তোর কি?’

-‘ আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে তুমি প্রেম করতে গেছো? তোমাকে তো পরে দেখে নিচ্ছি সাইট প্লিজ ‘

কথাটা বলে পলাশকে ধা*ক্কা দিয়ে সরিয়ে জিমি শায়লার কাছে গেলো। পলাশ মাথা চুলকে বলল

-‘ দূর তা-রি-কা-র’

তারপর সামির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ আপনি কে?’

-‘ আমি সামি। মিলি ভাবির দেবর’

-‘ ওহ! আমি পলাশ মিলির মামাতো ভাই। আসলে তোমাকে চিনি না মিলির বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারি নাই তো তাই’

-‘ ওহ নাইস টু মিট ইউ’

-‘ সেম টু’

পলাশ এবার শায়লা আর জিমির দিকে তাকালো সাথে সাথে জিমি পলাশের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো।

-‘ ভাইয়া বিয়ে আগে এসব কি?’

পলাশ ভরকে গেলো। আমতা-আমতা করে বলল

-‘ মানে তুই কি বলতে চাইছিস?’

-‘ তোকে আমি জে/লে পুরে দিবো’

-‘ মা মানে?’

-‘ কিছু না। যা ভাবিকে পৌঁছে দিয়ে আয় আমি অফিসে যাচ্ছি। ‘

পলাশ আর কিছু না বলে শায়লাকে বাইকে পিছনে উঠিয়ে জিমিকে বলল

-‘ তুই সাবধানে যাস আমি ওকে পৌঁছে দিয়ে আসতেছি’

-‘ হ্যাঁ তুই আই আমি তোর ব্যবস্থা করতেছি তার আগে ঝটপট আমাকে একহাজার টাকা দে’

-‘ আমাকে কি তোর টাকার গাছ মনে হয় তোর?’

-‘ অবশ্যই হ্যাঁ তোর প্রমোশন হয়েছে তুই এখন বড়লোক্স’

-‘ তোর প্রমোশন হয় নি?’

-‘ হয়েছে তো কি হয়েছে? তোর জন্য এতক্ষণ এখানে বসে থাকলাম কতগুলো চা খেলাম তার জন্য তুই দায়ী তাই এখন টাকা দে’

-‘ ওফ্ফ তোরে নিয়ে বড় জ্বালায় পড়লাম আমি’

সামি বলল

-‘ আমি দিয়ে দিচ্ছি সমস্যা নাই ‘

জিমি সামিকে ধ’ম’ক দিয়ে বলল

-‘ এই আপনি একদম চুপ থাকেন আপনাকে কে কথা বলতে বলেছে?’

পলাশ উল্টো জিমিকে ধ’ম’ক বলল

-‘ জিমি। তুই সামির সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো? চ*ড়ি*য়ে তোমার গাল লা’ল করে দিবো ‘

কথাটা বলে জিমির হাতে একহাজার টাকা দিয়ে বলল

-‘ আর যেনো কখনো এমন না দেখি’

জিমি একটা মুখ ভেংচি কেটলো। পলাশ চলে যেতেই। জিমি বলল

-‘ আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? যান নিজের কাজে যান। আপনার জন্য বকা খেতে হলো’

-‘ মজা পাইছি’

-‘ হ্যাঁ তা তো আমি বকা খেলে তো আপনি মজা পাবেনই আমি আপনার শ*ত্রু তো’

-‘ না আপনি আমার বউ’

-‘ বেশি বেশি কথা না বলে এখান থেকে ফটেন’

জিমি চায়ের দোকানের গিয়ে বলল

-‘ মামা এই নেন চা-টা অনেক মজা ছিলো’

-‘ আমার কাছে তো এতো টাকা ভাংটি নাই গো মা’

-‘ আরে আপনি রেখে দেন আপনাকে এতোক্ষণ অনেক জ্বালিয়েছি’

-‘ না না এতো টাকা তো বিল না মা’

-‘ মনে করেন আপনার মেয়ে দিচ্ছে’

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-২০

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-২০

জিমি বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে আছে। কিছু ভালো লাগছে না তার মনটা বিষন্নতায় টইটম্বুর হয়ে আছে। সবাই তাকে অভিমান করে দূরে ঠেলে দিলো? একবার তার কথাটা শোনার প্রয়োজন বোধটুকু করলো না? এতোটাই কি খারাপ সে। শরীরও আর কুলাছে না। বড্ড ঘুম পাচ্ছে তার কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। তার কি এভাবে এতগুলো কষ্ট নিয়ে শান্তি করে ঘুমাতে পারবে তার উহুম সে কখনো পারবে না। জিমি উঠে বসলো কয়েক মিনিটে ছক কষে নিলো কি করা উচিত তার। এখনি তার বাসা থেকে চলে যাওয়া উচিত কেউ তাকে একটুও ভালোবাসে না সবাই অভিমান করে দূরে ঠেলে দিলো? বকলেও না হয় মানা যেত কেউ বকেছে না। জিমি রেডি হয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য ড্রাইংরুম ক্রস করতে যাবে তখনি লিলি বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো

-‘ কোথায় যাচ্ছো?’

জিমির অভিমান যেনো আরো গড় হলো হঠাৎ কেনো জানি না কান্না পেলো? কিন্তু সে কাঁদবে না। অভিমান করে বলল

-‘ যেখানেই যায় বলে ইচ্ছুক নই!’

লিলি ভ্রু কুচকে বলল

-‘ হ্যাঁ এখন তো আমাদের কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করো না তুমি বড় হয়ে গেছো তো তুমি আমাদের কে কেনো কিছু বলবে? যায় হোক খাবার টা খেয়ে রেস্ট নিয়ে যেখানে খুশি যাও তোমাকে বাঁধা দিবো না’

-‘ আমি ম-র-লে কার কি যায় আসে উল্টো তোমরা আমার মতো খারাপ মেয়ে ম-র-লে বাঁচো’

লিলি এসে জিমির ঠাস করে চ-ড় মা’র’লো। জিমি চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। মা/র/ছে এবার একটু শান্তি পাইছে। জিমির দাদি এসে বলল

-‘ বউ তুমি ছেমড়িডারে মা’র’লা ক্যান?’

-‘ মা আপনারা আর জিমিকে লাই দিয়েন না। জিমি অনেক বার বারছে মুখে মুখে কথা বলছে আগের বার বাইক রেসে নাম দিলো আমাদের না জানিয়ে কিছু যদি হয়ে যেতো আমি তখনও কিছু বলি নাই আবার এখন ও না-কি সিআইডি এটাও লুকালো আমরা কি ওর কেউ না? কখনো আপন ভাবতে পারেনি ও আমাদেরকে এতোটাই পর আমরা’

জিমি এবার আর কান্না আটকাতে পারলো না ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলল

-‘ আম্মু তোমরা আমাকে ভুল বুঝছো আমার কথাটা এবার শুনো তারপর না হয় জাজ করো’

-‘ তোর কথা কি শুনবো হ্যাঁ? নিশ্চয়ই মিথ্যা বলবি? বলতো আমাদের থেকে আর কি কি লুকাইছিস? কি হলো কথা বলছিস না কেনো?’

-‘ আর কিছু লুকানোর নাই আম্মু’

-‘ তুই যে স্টুডিওতে আরজে ওটা কি মিথ্যা? কখনো তো আমি ওসব শুনি নাই’

-‘ না ওটা মিথ্যা না কিন্তু সত্যি ও না!’

-‘ মানে?’

-‘ আসলে ওটা সবুজের স্টুডিও আমি মাঝেমধ্যে ওখানে….’

জিমি কথাটা শেষ করতে পারলো না লিলি মাথায় হাত দিয়ে বসে বলল

-‘ আর কত মিথ্যা বলবি আমাদেরকে?

জিমি মাথা নিচু করে নিলো হ্যাঁ সে অনেক মিথ্যা বলেছে। কিন্তু মিথ্যা না বলেও যে উপায় ছিলো না। জিমির মা যে সিআইডি তে কখনো সাপোর্ট করতো না। নিজের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে জন্য সে এটা লুকিয়ে রেখে ছিলো। জিমি ভা-ং-ঙ্গা গলায় বলল

-‘ তুমি বললে আমি এখনি চাকরিটা ছেড়ে দিবো আম্মু তবুও রেগে থেকেও না প্লিজ আর কখনো মিথ্যা বলবো না তোমাকে’

লিলি তেতে উঠে বলল

-‘ মিথ্যা বলার আর কি বাকি রেখেছিস? আর এই চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে কি করবি? আবার নতুন কিছু করে আমাদের মিথ্যা বলবি?’

-‘ আম্মু আমাকে ভুল বুঝছো বাবার খু*নি কে খুঁজে বের করার জন্য এতো কিছু যদি তোমাকে আগে এগুলা বলতাম তাহলে তুমি আমাকে কখনো সাপোর্ট করতে না’

জিমির দাদি বলে উঠলো

-‘ বউ ছেমরিডার লগে এমন করতাছো ক্যান? ছেমরিডা কত কষ্ট করে আমাগো জন্য আর তুমি ছেমরিডারে এমনে কানডাইতেছ? আমার ছোট পোলাডা যে একখান অ-মা-নু-ষ হইবো এইডা আগে কেডা জানতো? আগে জানলে জন্মের সময় গলা টি*পে মে*রে ফ্যালাইতাম তবুও আমার এই দিন দেখনলাগতো না’

কথা বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেললো। লিলি বেগম কিছু বলতে পারলেনা এটা সত্যি জিমি তাদের জন্য অনেক বেশিই কষ্ট করে। কলিং বেল বেজে উঠলো। এখন এই সময় কে আসবে? লিমন গিয়ে দরজা খুলে দিলো। মিলি, জাকি আর সামি এসেছে। জিমি তার চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক থাকার প্রয়াস চালালো। মিলি জিমির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়তে যাবে তখনি লিলি বাঁধা দিয়ে বলল

-‘ এই ব্যাপারে আর কোনো কথা হবে না। জিমি খেয়ে নে কাল থেকে তো নাওয়া খাওয়া তো নাই যা খেয়ে নে মিলি আমার সাথে রুমে আয়’

মিলি, লিলির সাথে রুমে গেলো। জিমি এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদলো অনেকক্ষণ। অস্পষ্ট স্বরে বাবার কাছে পাহার সমান অভিযোগ পেশ করলো। জিমি আগে বুঝতে পারি নাই সবাই এতোটা রিয়াক্ট করবে। এতোটা তাকে কষ্ট পেতে হবে। তার জীবনের কষ্টের অবসান কি ঘটবে না? কবে আসবে সেই দিন? আদেও আসবে কি? জিমির মাথাটা ভার ভার লাগলে প্রচন্ড মাথা ব্যাথাটা বেরেছে। এখন ইচ্ছে না থাকার সত্ত্বেও তাকে ঘুমাতে হবে। জিমি উঠে মাথা ব্যাথা আর একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।

______________

-‘ জিমিকে কিছু বলার দরকার নাই। যা হবার তো হয়ে গেছে এটা নিয়ে এতো ঘ্যাঁটার দরকার নাই’

-‘ তাই বলে তোমার মেয়ে পার পেয়ে যাবে সবসময়? কিছু বলবা না তুমি তাকে?’

-‘ আমি কি বলবো জিমিকে? ঔটুকু মেয়ে আমাদের জন্য এতো কিছু করছে যাতে আমরা একটু ভালো থাকতে পারি যেনো একটু শান্তিতে থাকতে পারি। আর আমরা ওর ওপরেই জু/লু/ম করবো? এখনকার ওর মতো মেয়েরা চোখে রঙিন চশমা পড়ে ঘোরে বাবা-মার কাছে কত-শত আবদার করে আর জিমি আমাদের জন্য নিজের সবটা উজার করে দিয়েছে!’

মিলি চুপ করে রইলো। লিলির বলা প্রতিটা কথায় সত্যি তাদের জন্য কতই না কষ্ট করে যাচ্ছে মেয়েটা। মিলি কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে এসে ড্রাইংরুম এসে জিমিকে না দেখতে পেয়ে বলল

-‘ জিমি কোথায়?’

জাকি বলল

-‘ রুমে গিয়ে দরজা দিলো তো’

মিলি এক্সট্রা চাবি নিয়ে এসে জিমির রুমের দরজার লক খুলে জিমির রুমে ডুকলো দেখলো। জিমি এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে চোখের কার্ণিশে পানি জমে আছে। মিলি জিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। কপালে চু-মু খেলো।

-‘ তোকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলি বোন। সরি ফর এভরিথিং।’

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-১৯

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৯

জিমি চেয়ারে বসে আছে পাশের চেয়ারে বসে আছে পলাশ জিমির মামাতো ভাই মুখোমুখি বসে আছে হেডঅফিস্যার জিমির চোখ মুখে উপচে পড়া তৃপ্তির হাসি। আজ তার খুশির শেষ নেই এতো দিনের প্লান আজ সাকসেসফুল পাখি নিজে এসেই ধরা দিয়েছে। বিশেষ কোনো কষ্ট করা লাগলো না। জিমি হাসি মুখে বলে উঠলো

-‘ স্যার আপনি তো বলেছিলেন এই কেসটা স্লভ হয়ে গেলে প্রমোশন দিবেন কই কখন কবে দিবেন?’

পলাশ জিমির কথা শুনে সেও সাথে সাথে বলে উঠলো

-‘ স্যার ওর প্রোমোশন দিলে আমি কি দোষ করলাম’

পলাশের অ’গো*চ’রে জিমি মুখ ভেংচি দিলো। হেডঅফিস্যার মুশফিকুর রহমান ওদের বাচ্চামো দেখে হেসে উঠলেন। তিনি অন্য অফিস্যারদের মতো গম্ভীর নয় বেশ রসিক মানুষ। কিন্তু কাজের ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক। কাজে ভুল করলে তার আর র’ক্ষে নেই।

-‘ তোমরা কি কেস সামলাতে গিয়েও মা-র-পি-ট করো না-কি?’

-‘ এসব কি বলেন স্যার। আমরা তো গুড গার্ল এন্ড বয় আমরা কি ওসব পচা কাজ করতে পারি?’

জিমির কথা শুনে পলাশ জিমিকে ভ্যাংঙ্গালো। জিমি রাগি চোখে তাকালো পলাশের দিকে পলাশ সেটাকে পাত্তা দিলো না। একেবারে দুজন দুজনের শ-ত্রু-র মতো বিহেভিয়ার করে। মুশফিকুর রহমান এদের দেখে হাসি কন্ট্রোল করতে পারে না। তিনি হাসতে হাসতে বলল

-‘ সো ফানি, সো ফানি তোমরা টম এন্ড জেরির মতো সবসময় লেগেই থাকো। তো চলো কাজের কথায় আসা যাক। পলাশ তুমি আগে বলো তোমার প্রমোশন কেনো দরকার?’

-‘ এটা কেমন প্রশ্ন স্যার? প্রমোশন সবাই চাই আমিও চায়’

-‘ কোনো ইনপন্টেন রিজন নাই?’

-‘ না স্যার’

-‘ স্যার আমি জানি একটা ইনপটেন কারণ আছে বলবো?’

-‘ বলো’

পলাশ চোখ বড়বড় করে ইশারায় জিমিকে কারণটা বলতে বারণ করলো। কিন্তু জিমি তো জিমি পলাশকে পাত্তায় দিলো না। জিমি বলতে লাগলো

-‘ স্যার পলাশের গার্লফ্রেন্ড শায়লার বিয়ে দেওয়ার জন্য তার বাবা-মা ভালো ছেলে খুঁজছে এদিকে পলাশের ও অবস্থা খারাপ প্রমোশন না হলে বিয়ের পর বউকে খাওয়াবে কি? কোন মুখ নিয়ে-ই বা নিজের বাসায় বলবে শায়লাকে বিয়ে করতে চাই?’

-‘ হোয়াট? পলাশ তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে। আমাদের কে জানালেও না দ্যাস গ্রেট’

পলাশ বড্ড লজ্জা পেলো। পলাশ বলল

-‘ না মানে আসলে স্যার… ‘

-‘ ওকে ওকে এতো হেজিটেড হয়েও না। জিমি নাউ ইউর টার্ন…’

জিমি মলিন হেসে বলল

-‘ স্যার তেমন কোনো রিজন নাই আ’ম জাস্ট কিডিং আমি যে আমার বাবার খু-নি দের শাস্তি দিতে পেরেছি এটাই আমার কাছে অনেক’

-‘ ইউ নো জিমি তুমি যখন একবছর আগে আসছিলে সিআইডি তে জয়েন হতে। তখন তোমার ফেসের সাথে তোমার বাবার ফেস মিল পাই আমি তোমার সব ডিটেইলস চেক করি সবে তুমি তখন উনিশে পা দিয়েছো। ভেবেছিলাম এতো পিচ্চি মেয়ে এখানে টিকতে পারবে না কিন্তু না সেই তুমি আমাকে অবাক করে দিয়ে তুমি সবগুলোতে একে একে পার হয়ে গেলে তুমি সিলেক্ট ও হয়ে গেলে। আমার অবাকের শেষ ছিলো না। বেছে বেছে তোমাকেই আমি তোমার বাবার খু*নি দের খুঁজে বেড় করার কেসটাই তোমাকে দি আমি জানতাম অন্য কারোর কাছে কেসটা দিলে তারা তোমার মতো করে এতো সফটলি করতো না এন্ড এটাও আমি জানতাম তোমার তারগের্ট এটাই ছিলো বাবার খু*নি দের খুঁজে বের করা। কিন্তু আজ আমার নিজেকে খুব হালকা ফিল হচ্ছে আজ আমি ও খুশি জামান আমার কলেজ লাইফের ফেন্ড সাথে বেস্ট ফেন্ড হয়ে উঠেছিলাম আমরা হঠাৎ ক্যারিয়ারে ফোকাস করার জন্য আমাদের দূরত্ব বেড়ে গেলো’

জিমি হেসে বলল

-‘ জী স্যার। কিন্তু কি জানেন স্যার আমার পাশে বসে থাকা বাঁদর ভাইটার জন্য আমি এতদূর আসতে পারছি। এছাড়াও আমার ফেন্ডরা আমাকে অনেক সাপোর্ট করে। এদেরকে ছাড়া আমি সত্যি অসম্পূর্ণ এদিকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না।’

পলাশ জিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হেসে বলল

-‘ বাবাহ বড় হয়ে গেছিস তো আই থিংক তোকে বিয়ে দেওয়া উচিত কি বলেন স্যার আমাদেরও বিয়ে খাওয়া হোক’

-‘ গুড আইডিয়া তো আমি বিয়ের দাওয়াত পাচ্ছি কবে?’

-‘ স্যার আমাদের আগে পলাশ স্যারের বিয়ে খাওয়া উচিত না হলে তাহার গফ পগার পা হয়ে যাবে’

জিমি কথা শুনে মুশফিকুর রহমান আর পলাশ হেসে উঠলো।

____________________________________________

জিমি আজ প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে কাল রাত থেকে ঘুমাতে পারি নাই। তার দরুন মাথা, চোখ, ঘাড় ব্যাথা করছে। জিমি সব ঠিকঠাক করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো। মাথায় হাজারো চিন্তারা বাসা বেঁধেছে বাসার সবাই কিভাবে নিবে এটা কিভাবে রিয়াক্ট করবে? এতোক্ষণে তো সবার জেনে যাবার কথা। মিলি আপু কি তার ওপরে অভিমান করে বসে আছে তাকে না জানিয়ে এতো কিছু করাতে নিশ্চয়। দাদির-ই বা কি অবস্থা এক ছেলের খু*নের জন্য আরেক ছেলে জে/লে? চাচিদেরই বা কি অবস্থা এখন তারা কি কান্নাকাটি করছে? খুব বেশি-ই কি ভেঙ্গে পড়েছে তারা এখন তো ফোনে চার্জও নাই তার কিভাবে একটা খবর নিবে তাদের। চাচার দু-ছেলে কি কাঁদছে না-কি বাবাকে ঘৃণ্য করে দূরে ঠেলে দিবে ভাবছে।

জিমি আর ভাবতে পারছে না। কিছু দূর আসতেই ~’চা চলবে?’~ এটা কি ক্যাফে না-কি চা’র দোকান বুজলো না জিমি। জিমির মনে প্রশ্ন আসলো এটা কি নতুন করেছে আগে তো এটা কখনো দেখে নি। জিমি সেখানে নামলো এক কাপ চা খাওয়ার উদ্দেশ্য। চা টা তার বড্ড প্রিয় চা না খেলে তার একটা দিন ও চলে না। আজ না হয় এখানেই চা টেস্ট করা যাক। বাসায় গিয়ে তো আবার নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে নিজেকে তো ফিট রাখা প্রয়োজন তার জন্য চা ই বেস্ট। জিমি চা খেলো কিন্তু টেস্ট বুঝতে পারলো না তার মুখ থেকে কি স্বাদ চলে গেছে না-কি ম*রে গেছে? জিমি সে-সব নিয়ে আর মাথা ঘামালো না বিল মিটিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো আবার।

জিমি বাড়ির মেনডোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হাত কাঁপছে তার ভয় করছে কেন জানি না হঠাৎ। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে কলিং বেল বাজালো কয়েক সেকেন্ডের মাথায় দরজা খুলে দিলো লিলি তার মুখ গম্ভীর তার মন মস্তিষ্কে কি চলছে জিমি বুঝতে পারলো না। দরজা সামনে দাঁড়িয়ে জিমি বলতে লাগলো

-‘ আম্মু আমি…. ‘

লিলি জিমিকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল

-‘ ফ্রেস হয়ে খেতে আসো’

কথাটা বলে লিলি জায়গা থেকে প্রস্থান করলো। জিমি অবাক হলো। লিলি তাকে কোনো প্রশ্ন করলো না কেনো? পরিবেশ ঠান্ডা মানে ঝড়ের লক্ষণ! জিমি চুপচাপ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসে খেতে বসলো। লিলি, লিমন, দাদি কারোর টিকিটাও দেখতে পেলো না। জিমির পেটে খুদা থাকার সত্ত্বেও খাওয়া ইচ্ছেটাও ম-রে গেলো। মন ম’রা হয়ে টেবিল থেকে উঠে গেলো জিমি।

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-১৮

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৮

লিলি বেগম চিন্তায় শেষ কাল থেকে জিমি বাসায় ফিরে নি জিমির ফোনটাও বন্ধ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এদিকে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলো। ছুটির দিন হওয়ায় লিমন ঘুমাছে জিমির দাদি বসে তাসবি পড়ছে লিলি এখনো কাউকে কিছু বলে নি জানে শাশুড়ির বয়স হয়েছে জিমির ব্যাপারটা বলে তার চিন্তা বাড়িয়ে পেশার হাই করে আরে বিপদ। লিলি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে কাজ করে যাচ্ছে আর পথ চেয়ে তাকিয়ে আছেন কখন ফিরবে তার মেয়ে। ভালো-মন্দ সব চিন্তারা হানা দিয়েছে লিলির মাথায়। কি করবে লিলি? মিলিকে কি একটা বার ফোন দিয়ে জানানো উচিত? বাসায় তো লিমন ছাড়া কোনো ছেলেও নাই। লিমন বাচ্চা লিমন-ই বা কি করবে? লিলি বেগম লিমনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বললেন

-‘ লিমন যা তো জিমির বন্ধুরা বাসায় আছে কি না। আর তারা জিমির কোনো খবর জানে কি না। এই মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই’

-‘ কেনো আম্মু কি হয়েছে? আপু কোথায়?’

-‘ সেটা তো জানি না কাল রাতেও বাসায় আসে নি মেয়েটা কোথায় আছে কি করছে কিছুই জানি না ফোনটাও অফ’

-‘ সেকি আম্মু তুমি আগে বলবা না দাঁড়াও আমি সবুজ ভাইয়া বাসায় আছে কি না দেখে আসি’

-‘ আর শোন আসার সময় জিমির সব বন্ধু গুলোর ফোন নম্বর নিয়ে আসবি’

-‘ আচ্ছা আম্মু তুমি টেনশন করো না আমি দেখছি’

লিলি জিমির খবর না পাওয়া পর্যন্ত নিজেকে শান্ত করতে পারবে না। লিলি পায়চারি করছে এ রুম থেকে ঔরুম পর্যন্ত। লিলি শাশুড়ি ড্রাইংরুমে এসে সোফায় আরাম করে বসে বলল

-‘ বউমা আমারে চা বানায় দাও তো সগাল থেইকা শরীরডা ম্যাজম্যাজ করতাছে।’

-‘ দিচ্ছি মা’

-‘ তোমার ছেমরিডা কই দেখতেছি না যে আজইকা। আইজ কি তাড়াতাড়ি আপিস চইলা গেছে না-কি আমার লগে দেখাও করলো না?’

-‘ মা আসলে খুব ভোরে উঠে চলে গেলো কি না-কি জরুরি কাজ আছে’

-‘ ও আইচ্ছা তুমি আমারে কড়া কইরা চা বানাই দাও’

-‘ আচ্ছা মা’

এর মধ্যে লিমন চলে আসলো। মেনডোর খোলা ছিলো বলে আসতে বাঁধা হয়নি কিছু। লিমন যেই কিছু বলতে যাবে লিলি বেগম ইশারায় লিমনকে চুপ করিয়ে দেয় লিমন ও বুঝে রুমে চলে যায়। লিলি তার শাশুড়ীকে চা দিয়ে লিমনের রুমে গিয়ে বলল

-‘ কি রে বাপ আমার জিমি কই? ওরাও কি সাথে গেছে?’

-‘ না আম্মু আপুর ফেন্ডরা তো সবাই বাসায় ওরাও কিছু জানে না লাস্ট ওদের দেখা হয়েছিলো কাল দুপুরে তারপর আর ওরা আপুর খোঁজ যানে না। আপু না-কি বলছিলো আমার কাজ আছে তোরা বাসায় যা তারপর ওরা আপুর কাছে ফোন দিয়েছিলো বাট আপু প্রথম প্রথম নেটওয়ার্ক বিজি থাকলেও এখন বন্ধ’

লিলি বেগম মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে বলল

-‘ হাই আল্লাহ আমার মেয়েটা কোথায় গেলো? কোনো বিপদ হয় নি তো? আমার মেয়েটাকে সুস্থ রেখো আল্লাহ জিমিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ আর কিছু চাই না আল্লাহ’

____________________________________________

ছুটির দিন হওয়ায় সবাই সকালে বাসায় বসে চা আড্ডা জমিয়েছে। মিলি তার শশুরকে চা দিচ্ছিল মিলির শশুর বলল

-‘ মামনি তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো এ বাড়িতে? আমিও বাসায় থাকি না তোমাদের সময় দিতে পারি না’

-‘ না বাবা নো সমস্যা হচ্ছে না’

-‘ কলেজে ভর্তি হবে কবে?’

মিলি থমকায় সে-তো পড়াশোনার আশা ছেড়েই দিয়েছিলো প্রায়। আবার যে শুরু করতে পারবে বা শশুর বাড়ির লোক মেনে নিবে আশাও করে নি কখনো। মিলির শশুর মিলির ব্যাপারটা ধরতে পেরে বললেন

-‘ এতো অবাক হওয়ার তো কিছু নাই। তুমি যদি চাকরি করতে চাও তবুও তোমাকে কেউ বাঁধা দিবে না আপাতত মাস্টার্স ভর্তি হয়ে নাও স্টাডি শেষ করো তারপর তুমি কি করবে সেটা নিতান্তই তোমার ব্যাপার’

মিলি যেনো কথা বলার শব্দ হারিয়ে ফেললো। তারমধ্যে জাকি মৃদুস্বরে টিভির স্কিনে তাকিয়ে বলে উঠলো

-‘ আমি যা দেখছি তোমরাও কি ঠিক তাই দেখছো?’

সামিও খাওয়া বাদ দিয়ে রেখে টিভির স্কিনে তাকালো। সবাই বিষফোড়া চোখে তাকিয়ে আছে। যেনো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।
____________________________________________

লিলি বেগম যখন মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন। তখনি ফোন ঝংকার তুলে বেজে উঠলো। মনে কোনে কোথাও এক চিলতে আশা খুঁজে পেলেন জিমি ফোন করেছে ভেবে ফোন হাতে নিতেই দেখলেন মিলি ফোন দিয়েছে। লিলির এখন মিলির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তবুও ইচ্ছে না থাকার সত্ত্বেও ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে মিলি প্রশ্ন ছুড়লো

-‘ আম্মু তুমি আগে থেকে সবটা জানতে তাই না? শুধু আমাকে ধোয়াসার মধ্যে রাখছো?’

লিলি বুঝতে পারলো না মিলি কিসের কথা বলছে বেশ বিরক্তও হলেন তিনি এই টেনশনের সময় হেয়ালি পনা তার মটেও পছন্দ নয়। লিলি বেগম রেগে বলল

-‘ কি সব বলছিস? কি লুকাবো তোর থেকে? এখন মজা আমার ভালো লাগছে না বরং বিরক্তি লাগছে’

মিলি অবাক হলো তাহলে কি মা’কে ও কিছু বলে নি জিমি। সবটাই নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে? মিলি নিজের মনেই প্রশ্ন করলো ‘এই মেয়ে আর কি কি লুকিয়ে রেখেছে?’

মিলি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল

-‘ টিভিটা খুলে নিউজ দেখো আম্মু। তোমার মেয়ে যে আর কি কি লুকিয়ে রেখেছে ঔ-ই ভালো জানে’

কথাটা বলে মিলি আর দেরি না করে ঠাস করে ফোন কেটে দিলো। লিলি বেগমও বেশ অবাক হলেন কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না। টিভিতে কি দেখবেন এখন। লিলি আর কিছু ভাবতে পারছে না কৌতুহল মিটাতে দৌড়ে গিয়ে টিভি চালু করে দিলেন। টিভির ব্রেকিং নিউজে হেডলাইনে বড়বড় করে লেখা ””’ এডভোকেট জামান সাহেবের খু/নে’র রহস্য উন্মোচন করেছেন তার ছোট মেয়ে সিআইডি জিমি আফরিন”’

লিলি সহ লিমন জিমির দাদি তাকিয়ে আছেন।

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-১৭

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৭

জিমি আগের থেকে এখন অনেক সুস্থ হয়ে গেছে। এখন অফিসেও ঠিক মতো যায়। মাঝে মধ্যে সামির সাথে রাস্তায় কিংবা বাসায় দেখা হয় তখন তাদের মধ্যে ভালো মন্দ কথার থেকে ঝগড়াঝাটি বেশি-ই হয়। সামি জিমিকে রাগিয়ে মজা পেয়ে হাসে জিমি সেই হাসি দেখে গা জ্বলে যায়।

জিমির আজ মন-মেজাজ তুংঙ্গে উঠে আছে। কিছুতেই কিছু ভালো লাগছে না মনের মধ্যে খুঁত খুঁত করছে সকাল থেকে একটা নম্বর থেকে বার বার ম্যাসেজ আসছে। কিছু ছবিও পাঠিয়েছে ভা’য়া’ন’ক। মন সাই দিচ্ছে না কোনো কিছু তেই কি করবে ভেবেও পাচ্ছে না। ম্যাসেজ দেওয়া ঠিকানাটায় কি যাবে না-কি যাবে না দ্বিধায় ভুগছে। এর মধ্যে চাচির কাছে ফোন দিয়ে শুনেছে চাচা বাসায় আছে কি না জিমির চাচি বলেছে কাল থেকে চাচা বাসায় নেই কি যেনো কাজে যশোর গিয়েছে। জিমি আর কিছু বলে নি ফোন রেখে দিয়েছিলো তখন থেকে মনের খচখচানিটা আরো বেড়ে মনকে আর বেঁধে রাখা যাচ্ছে না। না তাকে যেতেই হবে সেখানে। চায়ের দোকানে দাম মিটিয়ে বাইকে উঠতেই সামি এসে বাইকের চাবি নিয়ে বলল

-‘ কই যাও?’

জিমির মেজাজ এমনিই খারাপ ছিলো সামিকে দেখে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না

-‘ আমি কোথায় যায় কি না যায় সেটা আপনি যেনে কি করবেন? কে হন আপনি আমার? ভাই? মামা? চাচা? না আপনি বোনের দেবর সো নিজের লিমিটের মধ্যে থাকুন’

সামি শব্দহীন হাসলো সুন্দর হাসি। কিন্তু জিমির সেই হাসি দেখে গা জ্বলে গেলো চোখ ফিরিয়ে নিলো সামি বলল

-‘ সময় বলে দিবে তুমি আমার কে? এখন প্রেমিক বা হবু বর হিসেবে ধরতে পারো কজ আই লাভ ইউ’

-‘ আপনাকে কতবার বারণ করছি এসব আমার ভালো লাগে না। আর আপনি আমাকে কত টুকু চিনেন? কত টুকুই বা জানেন? যে ভালোবাসার দাবি করেন? দেখেন আপনি আরো অনেক মেয়ে পাবেন আপনি আমার থেকে আরো ভালো মেয়ে ডিজাব করেন আমার মধ্যে কি এমন পেলেন আপনি আমাকে ভালোবাসতে হবে?’

-‘ ডিফিকাল্ট কিছু যা তোমার কাছে আসবে বারবার বধ্য করে ভালোবাসাতে মন চাই’

-‘ ওফ্ফ ভালোবাসা! ভালোবাসা! আর ভালোবাসা! আমি জাস্ট নিতে পারছি না। এই গাড়ির চাবি দেন তো আমার কাছ আছে’

-‘ না আগে বলো কোথায় যাবে? চলো আমি ও যায় তোমার সাথে’

-‘ মানে কি? আপনি আমার সাথে কোথায় যাবেন? চাবি দেন’

কথাটা বলে সামি জিমির হাত থেকে টা-ন দিয়ে গাড়ির চাবিটা নিয়ে নিলো। সামিকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। সামি দাঁড়িয়ে রইলো জিমির যাওয়ার পানে তাকিয়ে অজান্তেই একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো। নিজ মনেই বলল

-‘ একদিন ঠিকই আমাকে ভালোবাসতে হবে তোমার সেই দিনের অপেক্ষায় আছি থাকবো যতদিন না তুমি বলছ আমাকে ভালোবাসো। আমার কাছেই ফিরতে হবে দিন শেষে দেখে নিও’

____________________________________________

একটা পুরনো অন্ধকার আচ্ছন্ন বাড়ি। কোনো শব্দ নেই ভূ’তু’ড়ে বাড়িতে জিমির হাঁটার সময় পায়ের পাতার মড়মড়ে শব্দ। জিমি বারবার পিছিয়ে ফিরে চাইছে। জিমির মনে হচ্ছে কেউ আছে। জিমি এখানে আসার আগে লিলিকে ফোন দিয়ে বলে ছিলো বাসায় ফিরতে রাত হবে। একটা রুমে এসে ডুকতেই পিছন থেকে দরজাটা ধরাম করে বন্ধ হয়ে গেলো। জিমি দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।

-‘ এই কে দরজা আটকালেন? দরজা খুলুন বলছি।’

কট করে দরজা খুলে গেলো। জিমি দুকম পিছিয়ে গেলো। দরজা খুলে গিয়ে আলোর ঝলকানি এসে জিমির চোখে পড়লো। জিমি চোখ বন্ধ করে নিলো হাত দিয়ে পিছন থেকে কেউ এসে জিমির মুখ চেপে ধরলো। জিমি ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। দুইটা মেয়ে এসে জিমিকে চেয়ারে বসিয়ে হাত বেঁধে দিলো। জিমি চোখ খুলে দেখলো সামনে চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে একটা বয়স্ক ব্যক্তি বসে আছে। জিমি ভ্রু কুচকে বলল

-‘ আমাকে এখানে বেঁধে রেখেছেন কেনো?’

-‘ কুল কুল মিস. জিমি কাম ডাউন এতো হাইপার হওয়ার কিছু নাই তোমাকে জাস্ট একটা সাইন করতে হবে দেন তোমাকে আমি ছেড়ে দিবো’

-‘ সাইন? কিসের সাইন?’

-‘ সেটা তোমার না জানায় শ্রেয়। আর তুমি পিচ্চি মেয়ে এতো জেনে কি করবে?’

-‘ কে আপনি? চাচু কোথায়? কি করেছেন চাচুকে? কি হলো কথা বলছেন না কেনো?’

-‘ তোমার চাচু আমার সাথে বি’শ্বা’স-ঘা’ত’ক’তা করেছে। আমাকে ঠ’কি*য়ে’ছে তার মূল্যত তাকে চুকাতেই হবে’

-‘ মানে কি করেছে চাচু? ‘

-‘ সহ্য করতে পারবে তো?’

-‘ মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি?’

-‘ যদি বলি তোমার বাবার খু*নি তোমার চাচা’

জিমি শান্ত কন্ঠে বলল

-‘ আপনি ও তো ছিলেন সাথে’

সামনে বসা লোকটা ঘাবড়ালো! চমকালো! ঘামতে শুরু করে তুতলিয়ে বলল

-‘ মা মানে তু তুমি সব জানো?’

-‘ না জানার কি আছে। আপনিই যে আমার চাচাকে উশকে নিজের দলে টেনে আমার বাবাকে খু*ন করেছেন।’

সামনে বসা লোকটা অবাক না হয়ে পারছে না। বাবার খু-নি কে যেনেও মেয়েটা শান্ত কন্ঠে সেগুলা আবার বলছে। আশ্চর্য বিষয়! লোকটা যতদূর যানে মেয়েটা এভাবে শান্ত ভাবে মেনে নেওয়া মেয়ে নয়। গভীর চিন্তার ভাজ পড়লো কপালে। জিমি হেসে উঠে বলল

-‘ আরে আঙ্কেল ভ-য় পাচ্ছেন নাকি? ভ-য় পেলে আপনাকে যে কি কিউট লাগে কি বলবো’

লোকটা আরো চমকালো। জিমি লোকটার এমন ফেস দেখে বলল

-‘ আচ্ছা আঙ্কেল একটা আমার বাবা কে মে*রে আপনার প্র’তি*শো’ধ নেয়া শেষ না-কি এখনো বাকি আছে? আমাকে মে-রে শোধ তুলবেন কি আবার?’

-‘ ক কি বলছ এসব তোমাকে কেনো মা-র-বো তুমি একটা সাইন করে নিজের কাজে চলে যাও তোমাকে আর বাঁধা দিবো না’

-‘ আমাকে ভ-য় পাচ্ছেন?’

-‘ তো তোমাকে ভ-য় পাওয়ার কি আছে?’

-‘ সেটাই তো আমিও বুঝতে পারছি না আমাকে ভ*য় পাওয়ার কি আছে?’

লোকটা উঠে দাড়িয়ে জিমির দিকে গা-ন তাক করলো। জিমিও শান্ত ভাবে বসে রইলো।

-‘ অনেক বেশি কিছু জেনে গেছিস মেয়ে। তোকে বাঁ’চি’য়ে কি লাভ?’

তখনি পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো

-‘ ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মিস্টার. সালাম’

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-১৬

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৬

জিমি অবাক হয়ে তাকালো সামির দিকে। সে-তো ভুলেই গেছিলো এই ছেলে সুধরাবার নয়। সব কথার উল্টো পাল্টা মানে বের করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে ওস্তাদ। জিমি নিজেও বুঝতে পারলো সামিকে এই প্রশ্নটা করা মটেও ঠিক হয়নি সে-তো শুধু কৌতুহল মিটাতে প্রশ্নটা করছিলো এখন উল্টো ফ্যাসাদে পড়ে গেলো। যদি-ও সন্ধেয় ছিল উত্তর পাবে কি। উত্তর তো পেলোই না উল্টো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এখন। জিমি শান্ত মেজাজে বলল

-‘ আমি জাস্ট আস্ক করছি নাথিং এলস্’

-‘ বাট আই নৌউ সামথিং সামথিং’

-‘ ওফ্ফ মহাবিরক্তি কর মানুষ আপনি। আপনার সাথে ফালতু বকে আমার এখন মাথা ব্যাথা করছে’

জিমির মাথা ব্যাথার কথা শুনে সামি ব্যস্ত হয়ে বলল

-‘ এখনি তো ঠিক ছিলে। মেডিসিন নিবে, মাথা টিপে দিবো? দাঁড়াও আন্টিকে চা কিংবা কফি আনতে বলছে’

-‘ কিছু লাগবে না আপাততঃ আপনি আমার সামনে থেকে গেলেই হবে’

সামি নিরবে কিছুক্ষণ জিমির মুখোপানে তাকিয়ে রইলো। যাবার আগে শুধু বলে গেলো।

-‘ নিজের খেয়াল রেখো কিছু লাগলে আন্টিকে ডাক দিও আমাকেও ডাকতে পারো মাইন্ড করবো না’

সামি যেতেই জিমি মাথা ব্যন্ডেজ খুলে সাওয়ার নিতে গেলো। এখন এটাই একমাত্র মাথা ঠান্ডা করার মেডিসিন। সাওয়ার নিয়ে রুমে এসে চিল্লিয়ে জিমি লিলিকে বলল ‘আম্মু আমি ঘুমাবো আমাকে ডাকবে না প্লিজ’ কথাটা বলে জিমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে জানালাও বন্ধ করে দিলো ফ্যানটা ফুল স্প্রিডে দিয়ে শুয়ে পড়লো। শুয়ে যেনো একটু আরাম পাচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গলো দুপুর ৩টার দিকে। রুম থেকে লিলি আর জুলি গল্প করছে। লিমন সামির ফোনে গেম খেলছে দাদি রুমে রেস্ট নিচ্ছে। মিলি জাকিও রুমে। জিমিকে দেখে লিলি বলল

-‘ জিমি তোর না-কি মাথা ব্যাথা করছিলো সামি বলল এখন কমেছে?’

জিমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বলল

-‘ হ্যাঁ খেতে দাও খুদা লাগছে’

-‘ ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার দিচ্ছি’

-‘ তোমরা খেয়েছো?’

-‘ হ্যাঁ’

জিমি আর কথা না বলে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসতেই লিলি জিমিকে হাতে তুলে খাইয়ে দেয়। জিমি জুলি আর লিলির সাথে এটা ওটা নিয়ে গল্প করতে লাগলো। সামি তাকিয়ে ছিলো জিমির দিকে জিমি একবারও সামির দিকে তাকাই নি। সামির মনে মনে অভিমান জমতে লাগলো আদেও কি এ অভিমানে তার প্রিয়মত’র কোনো যায় আসে না-কি সে বুঝতে পারলো?

সামি আর ওদিন জিমিদের বাসায় থাকে নি বিকালেই বাসায় রওনা দিয়েছে। এর মধ্যে আর জিমির সাথে কথা হয় নি জিমিই সে সুযোগটা আর দেয় নি।

____________________________________________

গভীর রাত চারিদিকে আধার গ্রাস করে আছে। সামি নিজের রুমের বারান্দায় ডিভানে বসে আছে। আকাশটায় আজ চাঁদের দেখা মেলি নি তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে। সামির কাঁধে কারোর হাতে স্পর্শ পেতেই চমকালো। পাশ ফিরে জুলিকে দেখতে পেয়ে বলল

-‘ আম্মু তুমি এখন? এতো রাতে? ঘুমাও নি কেনো এখনো?’

-‘ একই প্রশ্ন তো আমারও’

-‘ এমনি আম্মু আমার ঘুম আসছে না’

জুলি বেগম সামির পাশে বসলেন সামি তার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে বলল

-‘ মাথায় বিলি কেটে দাও’

জুলি বেগম বিলি কেটে দিতে দিতে বলল

-‘ তুই কি কাউকে ভালোবাসিস আব্বু?’

সামি একদম চমকালো না। সে জানে তার মা কেমন কেমন করে যেনো সব জেনে যায়। এখন জিমির নামও বলে দিবে তাতেও সামি একটুও অবাক হবে না। সামি বলল

-‘ তুমি তো সব জানোই তাহলে কেনো শুনছো?’

-‘ তাহলে তোর আর জিমির বিয়ের কথাটা পাকা করে ফেলি?’

-‘ ও আমাকে ভালোবাসে না আম্মু আমার ভালোবাসা ওর কাছে ফান মনে হয়। আমি যে ওকে ভালোবাসতে পারি এটা না-কি ওর ধারণার ও বাইরে’

-‘ জিমিকে কেউ কখনো ভালোবাসি বলে দাবি করে নি সেজন্য হয়তো’

-‘ তুমি জানলে কিভাবে আমি জিমিকে ভালোবাসি?’

জুলি বেগম হেসে বললেন

-‘ জাকি মিলির বিয়ের দিন তোদের ঝগড়া করতে দেখে আমিও মনে মনে চেয়েছিলাম তোদের মধ্যে কিছু হোক। আজ ক্লিয়ার হয়ে গেছিল যখন আমি জিমির রুমে গেছিলাম তোদের কথা শুনে যতটুকু বুঝলাম তুই জিমিকে ভালোবাসিস জিমি বাসে না তাই তো?’

-‘ হ্যাঁ’

-‘ এতো মন খারাপ করতে হয় না বাবা জিমিকে সময় দে দেখবি তোকেও একদিন ও ভালোবাসবে এখন না বাসুক তোর আর ওর বিয়ের পর তো বাসবে!’
____________________________________________

লিলি জিমির মাথায় বিলি কেটে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছিল। হঠাৎ জিমি লিলিকে প্রশ্ন করলো

-‘ আম্মু প্রেম আর ভালোবাসা কি এক?’

লিলি জিমির প্রশ্নে প্রথমে অবাক হয়। ভ্রু কুচকে যায়। পালটা প্রশ্ন না করে উত্তর দেয়

-‘ না। প্রেম আর ভালোবাসা দুইটা হলো আদালা। প্রথম দেখায় ভালোলাগা হলো প্রেম যা সহজেই ভুলে যাওয়া যায়। আর ধীরে ধীরে ভালোলাগা হলো ভালোবাসা যা সহজে ভুলতে পারা যায় না। দুইটাই আলাদা আদালা অনুভূতি।’

-‘ তুমি আব্বুকে খুব ভালোবাসো তাই না?’

-‘ হ্যাঁ সে আমার স্বামী পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আমরা আমাদের ভালোবাসা তো থাকবে আমাদের ভালোবাসাটা হচ্ছে আল্লাহ ঠিক করে দিয়েছে তা না হলে কি আমরা এক হতে পারতাম আমি কই থাকতাম আর তোর আব্বু কই থাকতো’

-‘ বিয়ের আগে আব্বুর সাথে তোমার দেখা হয় নি?’

-‘ হ্যাঁ হয়েছিল তো আমি তো লজ্জায় কথা বলতে পারতেছিলাম না আর তোর আব্বু আমার লজ্জা দেখে সে কি হাসি লোকটার মন অনেক ভালো ছিলো বড্ড রসিকতা করে আমাকে রাগিয়ে দিতো।’

লিলি কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা কাঁপলো চোখে অশ্রু গুলো ভীর জমালো। টুপ করে জিমির কপালে কয়েক ফোটা পানি পড়লো জিমি বুঝলো লিলি কাঁদছে। জিমি লিলির কোমর জড়িয়ে ধরে বলল

-‘ ও আম্মু কাঁদছ কেন তুমি? জানো না আব্বু সবসময় আমাদের সাথে থাকে আমাদেরকে দেখে তুমি কাঁদলে তো আব্বু কষ্ট পাবে কেঁদো না প্লিজ আমার লক্ষি আম্মু’

-‘ হ্যাঁ রে মা আমি আর কাঁদব না তুই ঘুমিয়ে পড়। রাত জাগিস না আর কড়া ডোজের ঔষধ খাচ্ছিস ঘুমা তাড়াতাড়ি’

জিমি চোখ বন্ধ করতেই সামির মুখ ভেসে উঠলো। সাথে সাথে চোখ খুলে বিড়বিড় করে বলল ‘আজব! আমি কি উনাকে মিস করছি? ওনাকে দেখলাম কেন? আমাকে না জালানে তো আবার ওনার শান্তি লাগে না বিয়া*দপ ছে’ম’ড়া একটা কবে জানি মাথা ফা’টি’য়ে দি সবসময় আমাকে ডিস্টার্ব করা’

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-১৫

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৫

আজকের সকালটা একেবারে ঝকঝকে তকতকে নীল আকাশে শুভ্র রংয়ের মেঘকুজ্ঞগুলো এদিক থেকে ওদিকে ভেসে বেড়াছে। রোদের তীব্র ঝাঁজে আর ভ্যাপশা গরমে জানান দিচ্ছে গ্রীষ্মের আগমন ঘটছে। কাক গুলো তৃষ্ণায় কা কা করে সারা আকাশময় চক্রর দিচ্ছে। মাঝে মাঝে দমকা হওয়া দিচ্ছে। জিমি এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ তিনদিন আগেই জিমিকে বাসায় আনা হয়েছে। বাসায় আসা থেকে বসে বসে মাতৃআজ্ঞা পালন করছে লিলির একথাই কথা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাও চলবে না সারাদিন বাসায় রেস নিতে হবে সে তোমার যতই জরুলি কাজ হোক। সেই সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে জানালার পাশে বসেছে সেই থেকেই আকাশপানে একমনে তাকিয়ে প্রকৃতিরলীলা খেলা দেখায় মক্ত হয়ে আছে। আগে কখনো এভাবে আকাশ দেখেছে বলে মনে পড়ছে না জিমির কিন্তু আজ আকাশ দেখতে খুব ভালো লাগছে এযেনো আকাশের নতুন রূপ। এই রূপটা কি শুধু-ই তার কাছে নতুন না-কি সবার কাছে? জিমি কিছুক্ষণ ভাবলো না তার কখনো আকাশ দেখার সময় ছিলো না। চোখের সামনে তুড়ি বাজতেই জিমির ভাবনার সুতো কাঠলো সাথে চমকালোও বেশ পাশ ফিরে মিলি, লিলি, জুলি, সামি, জাকিকে দেখে আরো চমকালো। সামি বলে উঠলো

-‘ ম্যাডাম আপনার ধ্যান ভাংলো নাকি আরো কিছুক্ষণ চলবে কাইন্ডলি জানাবেন প্লিজ তাহলে আমরা বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করি’

জুলি বেগম বলেন

-‘ সামি মজা করছিস কেনো? মেয়েটা অসুস্থ। কেমন আছো জিমি মামনি?’

-‘ আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। তোমরা কেমন আছে?’

-‘ আলহামদুলিল্লাহ। মাথা ব্যাথা কমছে?’

-‘ হ্যাঁ আন্টি তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো। আজ কিন্তু থাকতে হবে’

-‘ সে পরে দেখা যাবে খন’

-‘ দেখা যাবে মানে? আজ নো ছাড়াছাড়ি আজ তোমাকে থাকতেই হবে’

-‘ তা কি করে হয় তোর আঙ্কেল তো অফিসে বাসায় গিয়ে খুঁজেবে’

-‘ আঙ্কেলকেউ আসতে বলো’

-‘ দেখো পাগলি মেয়ের কান্ড’

আরো কিছুক্ষণ কথা বলে লিলি বেগম ওদের নাস্তা করাতে নিয়ে গেলেন। সামি গেলো না দেওয়ালে হেলান দিয়ে জিমি দিকে তাকিয়ে আছে। সামির এমন কাজে জিমি বেশ অস্থিতে পড়লো। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস চালিয়ে কপাট রেগে বলল

-‘ অ’স’ভ্য, নি-ল-র্জ্জ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?’

-‘ উহুম দেখছি!’

সামির কথায় জিমি অবাক হওবার সাথে সাথে রেগে বলল

-‘ এই আপনি আমার রুমে কি করছেন? যান রুম থেকে বের হন’

সামি সোজা হয়ে দাঁড়ালো জিমি ভাবলো সামি চলে যাবে কিন্তু না জিমির ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে দিয়ে চলে যাবার বদলে হুট করে সামি জিমির কাছে চলে আসলো। জিমি বড়বড় চোখ করে সামির দিকে তাকিয়ে দেওয়ালে লেপ্টে রইলো সামি চোখে ঘোর নিয়ে জিমির দেওয়ারের হাত দিয়ে আটকে রাখছে যেনো যেতে না পারে। জিমির হঠাৎ ভয় পেতে শুরু করলো গলা শুকিয়ে গেলো। লজ্জায় অস্থিরতায় এলোমেলো দৃষ্টি ফ্লোরের দিকে। সামি দুষ্টু হেসে জিমির মুখে ফুঁ দিলো জিমি চোখ বন্ধ করে মুখ একপাশে করে হাত খামছে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো কথাও যেনো মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। কথাপাখিরাও লজ্জায় স্থান ত্যাগ করছে মনে হয়। সামি একহাত দিয়ে জিমির সামনের বেবি হেয়ার গুলো কানের পিটে গুঁজে দিয়ে বলল

-‘ লজ্জামিশ্রিত তুমির সাথে আজ নতুন পরিচয় ঘটলো। তোমাকে লজ্জা লাগলে অন্য রকম লাগে যেনো এক লজ্জাবতী গাছ। চোখ বন্ধ পাপড়িগুলো মৃদু নড়ছে মুখের দুপাশটা হালকা গোলাপি, রক্তিম শুষ্ক ঠোঁট গুলো যখন কামড়ে ধরলে তখন বড্ড হিংসে হলো তোমার ঔ ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হলো আমার দিবো কি ছুঁয়ে?’

সামির কথাগুলো শ্রবণ হতেই জিমির লজ্জায় আরোষ্ট হয়ে গেলো। আর সময় বিলম্ব না করে জিমি সামিকে দু’হাতে দিয়ে ধাক্কা দিলো। সামির থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে প্রাণভরে শ্বাস টেনে নিয়ে রেগে বলল

-‘ শয়*তান ছেলে আমার রুম থেকে বের হ’

-‘ ভয় পাচ্ছো না-কি?’

-‘ তোকে ভয় পাওয়ার কি আছে?’

-‘ প্রেমে পড়ার ভয়’

জিমির ভ্রু কুচকে এলো অস্ফুটস্বরে বলল ‘প্রেমে পড়া বারণ কারণে-অকারণে!’

-‘ প্রেমে পড়া বারণ কেনো? একবার প্রেমে পড়েই দেখো না ঠকবে না হান্ড্রেডট পারসেন্ট গ্যারান্টি’

-‘ দূর যান তো এখান থেকে আপনাকে দেখলেই আমার রাখলে’

-‘ কেনো একটু প্রেম প্রেম পাই না? ব্যাপার না আস্তে ধীরে পেয়ে যাবে’

-‘ অসহ্য মানুষ তো আপনি। দেখে আপনাকে আমি জাস্ট নিতে পারছি না তাও আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করছেন কেনো?’

-‘ আপনাকে ডিস্টার্ব করতে আমার ভালো লাগে একটা অন্য রকম শান্তি পাই’

জিমি এবার রেগে বম হয়ে দু’হাত এগিয়ে সামির গলায় হাত বাড়াতে নিলেই নিজেকে সংযত করে নিলো। সামি সেটা দেখে খুশি তে গদগদ হয়ে বলল

-‘ ওয়াও ওয়াও তুমি আমারকে নিজের ইচ্ছেতে টার্চ করতে গেছিলে?’

-‘ না আপনাকে খু-ন করতে গেছিলাম এনি ডাউট?’

-‘ সে তুুমি যাই করতে আসো নিজের ইচ্ছেতে তো আমার টার্চ করতে আসছিলে’

-‘ টার্চ করতে গেছিলাম করি নাই তো’

-‘ কেনো করলে না? নিজেকে ধন্য মনে করতাম।’

জিমি এবার কি ক্লান্তি হয়ে অসহায় মুখ করে বলল

-‘ আমাকে এতো জ্বালাছেন কেনো বলুন তো?’

-‘ ভালোবাসি তাই’

-‘ ভালোবাসা আমি বিশ্বাসি নই তাই অযথা এগুলো নিয়ে আমার সাথে ফান করবেন না’

-‘ আমার ভালোবাসাটা তোমার কাছে ফান মনে হচ্ছে? আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি ‘

-‘ এগুলো আমার কাছে থেকে কখনোই পাবেন না অন্য কাউকে খুঁজে নেন প্লিজ আর আমি বুঝতে পারছি না আমার মধ্যে কি এমন আছে যার জন্য আমাকে ভালোবেসে ফেললেন?’

-‘ এই উত্তরটা আমি আগেও তোমাকে বলছি প্রেমে পড়ার কোনো কারণ লাগে মানুষ হুট করে প্রেমে পড়ে অতঃপর মায়ায় পড়ে ভালোবেসে ফেলে’

-‘ এসব নিয়ে পিএইচডি করছেন না-কি? আগে কয় জনের সাথে ফ্লাট করছেন?’

জিমির কথায় সামি গা দুলিয়ে হোহো করে হেসে দিয়ে বলল

-‘ আর ইউ জেলাস?’

চলবে

প্রেমপ্রলয় পর্ব-১৪

0

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৪

জিমি পিটপিট করে চোখ খুলে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে শুভ্র রংয়ের বিছানা, জানালার পর্দা দেখে নিজ মনেই আওড়ালো ‘আমি কি মা’রা গেছি?’

পাশ ফিরতেই মাথায় ব্যাথা পেয়ে ‘আহ্’ বলে মৃদু চিৎকার করলো। পাশ থেকে চেনা পুরুষালী কন্ঠ ভেসে এলো।

-‘ অদ্ভুত তো আপনি মাথায় ব্যাথা যেনেও মাথা ওদিকে নিচ্ছেন’

জিমি চমকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো সামির দিকে সামি স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে আছে জিমির মুখপানে। জিমি তাকিয়ে থাকতে দেখে সামি গলা ঝেড়ে বলল

-‘ আই নোউ আ’ম লুকিং সো হ্যান্সাম তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন?’

জিমি অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে মাথায় হাত দিলো। মাথায় হাত দিয়ে অনুভব করলো শুভ্র রংয়ের ব্যান্ডেজ করা। সাথে সাথে অনুভব করলো নিজের চুল গুলা বেডে ছড়িয়ে রাখা শুকনো ঢোক গিলে সামির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ এসব কি হ্যাঁ আমি এখানে কেনো? আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আনছেন?’

সামি হেঁসে উঠে বলল

-‘ আরে আপনি ঘাবড়ে গেলেন নাকি? আপনার চুলগুলো দেখে ফেলছি বলে’

জিমি চোখমুখ কুঁচকে বলল ‘আজব’

-‘ আজব টাজব রাখেন এখনি ডক্টর আসবে নার্স ডক্টরকে ইনফর্ম করতে গিয়েছে’

তখনি কেবিনের দরজা ঠেলে ডক্টর আর নার্স ডুকলো। চেকাপ করতে করতে ডক্টর জিমিকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে লাগলো। যাওয়ার আগে বলল

-‘ নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন মিস জিমি। দূর্বলতার জন্য আপনি মাথা ফা’টি’য়ে ফেললেন আরো বড় কিছু হতে পারতো।’

ডক্টর, নার্স চলে যেতেই। সামি জিমির বেডের দু-পাশে হাত রেখে মুখের কাছে গিয়ে বলল ‘হঠাৎ অনুভব করলাম আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি খুব গভীর ভাবে।’

জিমি চোখ বড়বড় করে সামির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সামির নিশ্বাস জিমির চোখ মুখে আছড়ে পড়ে। সামি ঠোট উল্টে বলল

-‘ জিমি নামক প্রেম রোগে ধরছে। কি করা যায় বলুন তো?’

জিমি তখন অবাক! বিষ্ময়! হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। সামি সোজা হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল

-‘ বাসায় ইনফর্ম করে দিয়েছি আপনার জন্য খাবার আনছে ভাবি’

জিমি তখনো ঘোরের মধ্যে আছে। কি হলো বা হইছে সব যে মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো। এটা স্বপ্ন? বাস্তব? না-কি কল্পনা? কিছু বুঝতে পারছে না জিমি। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে ঘোর কাটিয়ে উঠে বলল

-‘ কি বললেন আপনি?’

সামি ভ্রু কুচকে মেডিসিন আর প্রেসক্রিপশন দেখতে দেখতে বলল

-‘ কই কি বললাম?’

-‘ কিছু বলেন নি?’

-‘ উহুম আপনি কি শুনেছেন?’

-‘ শুনলাম কিসব প্রেম ট্রেম’

-‘ ঠিক শুনেছেন?’

জিমি আঁ-ত-কে উঠে বলল

-‘ মানে?’

সামি স্বাভাবিক ভাবে জিমির চোখে চোখ রেখে বলল

-‘ যেটা শুনেছেন সেটাই। আমার আবার মনে ওতো প্যাচ ট্যাচ নাই তাই এস্টেট কার্ট সব বলতে পছন্দ করি’

জিমি কিছুক্ষণ নিরবতা থেকে বলল

-‘ হঠাৎ প্রেমে পড়ার কারণ কি?’

-‘ প্রেমে পড়ার বিশেষ রিজন থাকে বা আছে বলে আমার জানা নাই। কিন্তু আপনাকে আমার হঠাৎ ভালো লাগলো হুট করে প্রেমে পড়ে গেলাম। আপনার মুখে মায়া খুঁজতে গিয়ে আপনার মায়ায় আটকে গেলাম। আপনার সাথে আমার ঝ’গ’ড়া না করলে আজকাল আমার দিন ভালো যাচ্ছে না সব শূন্য লাগছে। প্রথম প্রথম বিষয়টাকে পাত্তা না দিলেও এখন বেশ উপলব্ধি করতে পারছি আপনাকে ছাড়া আমার একবিন্দু চলবে না! এবার আপনি বলতে-ই পারেন আমার অসুখ হয়েছে বা পা’গল হয়ে গেছি আমার ডক্টর দেখানো উচিত কিন্তু তার একমাত্র ঔষধ আপনি!’

জিমি সামির কথার প্রতিত্তোরে বলল

-‘ আপনার লজ্জা করলো না আমার সাথে মজা নিতে ফাইজলামি পাইছেন না-কি? আমি কিছু বুঝি না’

সামি হাসলো চমৎকার সেই হাসি। জিমি সেই হাসি আজ প্রথম দেখছে। প্রেমে পড়ার মতো সেই হাসি কিন্তু জিমি প্রেমে পড়লো না চোখ ফিরিয়ে নিলো। মনে মনে বলল ‘আগে কখনো তো এমন ভাবে হাসতে দেখি নি সব ভা’ন্ডা’মি আমাকে তার ম্যাজিকাল মায়ায় ফেলতে যতই যায় করুক আমি তার মায়ায় কখনোই পড়বো না কখনো না’

-‘ সে আপনি যা-ই ভাবেন না কেনো? আপনি আমার-ই হবেন। আপনার সাথে আমার আবার ঝগড়া লাগবে একটা সময় আপনি আমার ঠিকি প্রেমে পড়বেন ভালোবাসা বাড়বে’

জিমি বিরক্তি নিয়ে বলল

-‘ কি সব যাতা বলছেন আপনি?’

সামি বুকের পাশে হাত দিয়ে বলল

-‘হাই আপনার লুক গুলা যা বারবার আমার হার্ট বিট বাড়িয়ে দেয়’

জিমি বিরক্তির শেষ নাই মহা বিরক্তি নিয়ে বলল

-‘ এই আপনি আমার চোখের সামনে থেকে যান তো আপনাকে জাস্ট টলারেট করতে পারতেছি না আমি’

সামি এবার বাচ্চাদের মতো ইনোসেন্ট ফেস করে বলল

-‘ তুমি এমন করে বলো কেনো কষ্ট লাগে তো’

সামির কথায় জিমি আরেক দাফা অবাক হলো ‘তুমি’ সমদ্ধন করাই।

জিমিকে এমন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে মিলি আসলো। মিলি জিমির পাশে বসে বলল

-‘ কেমন আছিস এখন?’

-‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আম্মু কোথায়?’

-‘ আম্মু বাসায় সারারাত তোর পাশে বসে ছিলো কান্নাকাটি করছিলো। সকালে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি তা-ও যেতে চাই ছিলো না একটু পরেই আবার চলে আসবে’

-‘ ওহ’

-‘ হ্যাঁ। নিজের দিকে তো খেয়াল রাখিস না। একটা না একটা কিছু বাঁধানো লাগবেই তোর। নিজের দিকে খেয়াল রাখার জন্য তোর বিয়ে দেওয়া উচিত তখন বাঁদরামো পানা ছুটিয়ে যাবে’

সামি পাশ থেকে বলে উঠলো

-‘ গুড আইডিয়া ভাবি তাইলে তো আবার একটা বিয়ের দাওয়াত খেতে পারবো’

জিমি মিলি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মিলি বলল

-‘ ভাইটু তুমি খাদক হয়ে গেলে আজ টের পাইলাম’

-‘ ভাবি দুবোন আমার মজা নিতাছো কেনো?’

-‘ এমা ছিঃ ছিঃ কি যে বলো না? তোমার মজা নিবো আমরা আমাদের ঘাড়ে কটা মাথা আছে বলো’

-‘ নেও নেও যত ইচ্ছে মজা নাও আমার ও দিন আসবে মনে রেখো এক মাঘে শীত যায় না’

মিলি জিমিকে খাইয়ে দিলো জিমি বলল

-‘ বাসায় যাবো কবে?’

-‘ কেনো বাসায় কি কাজ তোর?’

-‘ আরে হসপিটালে থাকতে কার ভালো লাগে বলতো আমার নিজেই রুগী রুগী ফিল হচ্ছে।’

-‘ তার মানে তুই বলতে চাইছিস তুই রুগী আই মিন পেসেন্ট নস?’

-‘ অভিয়েসলি না’

-‘ তাইলে তুই কি?’

-‘ আমি একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ পারলে তোমার দেবরকে হসপিটালে ভর্তি করো পাগলের প্রলাপ করতে থাকে কানের কাছে’

-‘ এই আপনি আমাকে পাগল বললেন? ওকে আমি মাইন্ড করলাম না আপনি সুস্থ হয়ে নেন তারপর না হয় কোমড় বেঁধে ঝগড়া করবো’

-‘ আমি কেনো আপনার সাথে অযথা ঝগড়া করবো?’

-‘ আপনি তো আমার সাথে অযথায় ঝগড়া করেন’

-‘ মটেও না নিজে ঝগরুটে আবার আমাকে বলতে আসে’

-‘ স্টপ! স্টপ! তোরা না বললি ঝগড়া করবি না আবার দেখ এখন ঝগড়া করতেছিস? ব্যাপারটা কি তোদের তোদের ঝগড়া দেখে তো আমি পাগল হয়ে যাবো দেখছি’

-‘ কে ঝগড়া লাগাছে দেখতে পারতেছিস না?’

-‘ সেটাই ভাবি কে ঝগড়া লাগাছে দেখতে পারছো না?’

-‘ ওফ আবার শুরু করলি তোরা এবার দয়া করে থাম তোরা সামি যাও বাসায় যাও গিয়ে রেস্ট নাও অনেক ধকল গিয়েছে তোমার ওপর দিয়ে।

চলবে