Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1044



তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১৬

0

তোমাকে বলার ছিল……
ষষ্ঠদশ পর্ব
– তোমার কি মাথা ধরেছে সুজন ?
-না
– তাহলে গলা এরকম শোনাচ্ছে কেন ? নিশ্চয়ই মাথা ধরেছে
– একটু
– ওঠো চলো ওষুধ খাবে
-এখন উঠতে ইচ্ছা করছে না I ওষুধ খেতে ও ইচ্ছা করছে না
-আচ্ছা উঠতে হবে না এস আমি মাথা টিপে দেই
তৃণা সুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল I অনেকক্ষণ কপালের দুই পাশ চেপে ধরে টিপে দিল i রাত তখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে Iদুজনের কেউই ঘুমায়নি I অনেকক্ষণ বাইরে বসে থাকার পর বাতাসে যখন হিম ভাব নেমে এলো তৃণার শীত করছিল i তৃনা বললো
– চলো ভেতরে যাই ঠান্ডা লাগছে
– আমার তো অনেকক্ষণ থেকেই যেতে ইচ্ছা করছে
– তাহলে এতক্ষণ বলনি কেন ?
– তুমি আবার কি মনে করো
– কি মনে করব ? অদ্ভুত তো I চলো

সারারাত ধরে বকবক করেছে সুজন i এই ছেলে যে এত কথা বলতে পারে তৃণার কোনো ধারনাই ছিল না I কত রকমের গল্প I প্রথম বই পড়ার গল্প , প্রথম সাইকেল চালানোর , প্রথম পাহাড় দেখার , প্রথম কবিতা পড়ার গল্প I একটা সময় পর তৃণার মনে হয়েছিল ছেলেটা আসলে খুব একা Iওর সেইরকম কোন বন্ধু নেই I বাবা মা ও নেই এখানে যে নিজের কথা বলবে কাউকে I কিছুক্ষণ পর তৃণা লক্ষ করল সুজনের গলা ভেঙে আসছে I হয়তো এতক্ষণ বকবক করার কারণে অথবা মাথা ধরেছে I অনেকক্ষণ ধরে তৃণা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল I চুল টেনে দিল, কপালের দুই পাশ চেপে ধরে টিপে দিল I আরামে তখন ওর চোখ বুজে আসছিল Iএকসময় সুজন বলল
– হয়েছে আর করতে হবে না
– কেন , ভালো লাগছে না ?
– লাগছে আর কষ্ট করতে হবে না
– আমি এটা তোমার জন্য করছি না আমার নিজের জন্য করছি
– মানে ?
– আমি চাই না আমার সঙ্গে তোমার প্রথম স্মৃতিটা মাথাব্যথাময় হোক I পরবর্তীতে আমি তোমার মাথা ব্যাথার কারণ হতে চাই নাI বলতে বলতে তৃণা হেসে ফেললো I
-এ আবার কেমন কথা আর এখন যদি আমি ঘুমিয়ে পড়ি তাহলে তো কোনো স্মৃতিই থাকবে না
– ঘুমিয়ে পড়বে কেন ?
-এত আরাম লাগছে ঘুম এসে যাচ্ছে তো
তৃণা সস্নেহে বললো তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো
– আমি ঘুমাতে চাই না I ঘুমিয়ে এই মুহুর্তটা আমি নষ্ট করতে চাইনা
– তুমি তো এমন ভাব করছো যেন সকাল হলেই আমি চলে যাব আর আমাকে পাবে না
সুজন তৃণার মাথাটা নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে বলল
– আর কখনো এরকম কথা বলবে না I আমি কখনো তোমাকে কোথাও যেতে দিতে চাই না
– আচ্ছা যাও বললাম না I ছাড়ো এখন
– না ছাড়বো না I তুমি এভাবেই শুয়ে থাকবে আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি
তৃণা কিছু বলল না I সুজন আস্তে আস্তে ওর চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল I তারপর একসময় বলল
– আমি তিন্নিকে এরকম করে দিতাম I ওর খুব প্রিয় ছিল
– তিন্নি কে ?
– আমার ফুপি I আমাকে খুব ভালোবাসতো আমরা সারাক্ষণ একসঙ্গে খেলতাম
– কোথায় উনি এখন ?
– মারা গেছে
তৃণা একটু চমকালো I তারপর জিজ্ঞেস করলো কিভাবে ?
– ক্যান্সার হয়েছিল I শেষের দিকে আমাকে ওর কাছে যেতে দিত না I এইযে বাড়িটা দেখছো এটা তিন্নির ও আমাকে দিয়ে গেছে I উত্তরায় আমাদের আরেকটা বাড়ি আছে I বাবা মা দেশে থাকতে আমরা ওখানেই থাকতাম I উনারা চলে যাওয়ার পর আমি এখানে শিফট করি I আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতি আছে এই বাড়িতে I তৃণা, তোমাকে আমার মাঝে মাঝে তিন্নির মতো লাগে I তিন্নি ও কি করে যেন বুঝে ফেলতো আমার কখন কি লাগবে I কখন আমার মাথাব্যথা ,কখন জ্বর এসেছে কখন খিদে পেয়েছে I তৃণা একটু হাসলো I ও বুঝলা সুজনের মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে I প্রসঙ্গ ঘোরাতে বলল
– কয়টা বাজে ?
– জানিনা
– তোমার ঘরে কোন ঘড়ি নেই কেন ?
– কেনা হয়নি I বুঝতে পারছিলাম না তোমার কেমন ঘড়ি পছন্দ Iপেন্ডুলাম দেয়া না রোমান হরফ কনফিউজড ছিলাম I
– সময় দেখা যায় এমন ঘড়ি হলেই আমার চলবে I আমারও অত বাচবিচার নেই I জিনিসপত্র ও কি কেনোনি আমার কারনে ?
– হ্যাঁ I কালকে একসঙ্গে সব কিনব ঠিক আছে ? গাছ ও কিনে নিয়ে আসব
– আচ্ছা I তোমার মাথা ব্যথা কমেছে ?
– কমেছে একটু I
– কাছে এসে শোও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি
এবার সুজন আর আপত্তি করল না I খুব কাছে এসে তৃণার গা ঘেঁষে শুয়ে পড়ল I তৃণ আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো I একসময় লক্ষ্য করলো ওর দুচোখে ঘুম নেমে এসেছে I

সুজন ঘুমিয়ে পড়লে তৃণা উঠে ওর ট্রলিব্যাগটা খুলল I সুলতানা আন্টি কি সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়েছে I একপাশে কয়েকটা শাড়ি Iকতগুলো ড্রেস সঙ্গে ম্যাচিং এক্সেসরিজ I অন্যপাশে একটা সুন্দর হ্যান্ড ব্যাগI তার পাশে ক্রিম ,লোশন, শ্যাম্পু , ব্রাশ Iহালকা মেকআপ এর সরঞ্জাম I কয়েক জোড়া স্যান্ডেল I তৃণার চোখে পানি এসে গেল I ওর নিজের মা থাকলেও হয়তো এত সুন্দর করে গুছিয়ে দিত না I

তৃণা গোসল করে একটা গোলাপী রঙের শাড়ী পরল I ততক্ষনে ভোর হয়ে গেছে I তৃণা ভিজা চুল আঁচড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো I

সুজনের বাসার পাশেই একটা পার্ক I আশেপাশে বেশ অনেকটা খোলা জায়গা I ঠিক সূর্যোদয় দেখতে না পারলেও ভোরের ফুটে ওঠা দেখতে পারল তৃণা I অনেকক্ষণ রেলিঙে ভর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল I চা খেতে ইচ্ছা করছে I সুজন নিশ্চয় ঘুমাচ্ছে এখনো I যা বকবক করেছে সারারাত I তৃণা ফোনটা হাতে নিল সময় দেখবে বলে I কাল রাতে ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেছিলো I ফোন হাতে নিয়ে আশ্চর্য হয়ে গেল ও I সুজন ম্যাসেজ পাঠিয়েছে I তারমানে ও জেগে আছে ? আজকের কবিতাটা এত তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে ? আগে ভেতরে যাবে না আগে কবিতাটা পড়বে ঠিক করে উঠতে পারছিল না তৃণা I অবশেষে কবিতার কাছে হার মানলো I কবিতাটা পড়ে অদ্ভুত ভালোলাগায় ভরে গেল মনটা I সুজন লিখেছে

এই একরত্তি জীবনে বলো না কীভাবে সম্ভব ভালোবাসা
তার জন্য চাই আরো দীর্ঘ অনন্ত জীবন,
ভালোবাসা কীভাবে সম্ভব, অতিশয় ছোটো এ জীবন
একবার প্রিয় সম্বোধন করার আগেই
শেষ হয় এই স্বল্প আয়ু-
হয়তো একটি পরিপূর্ণ চুম্বনেরও সময় মেলে না
ভালোবাসি কথাটি বলতেই হয়তোবা কেটে যাবে সমস্ত জীবন,
তোমার সম্মুখে বসে প্রথম একটি শব্দ উচ্চারণ করতেই
শেষ হয়ে যাবে কতো কৈশোর-যৌবন,
ঘনাবে বার্ধক্য, কেশরাজি উড়াবে মাথায়
সেই ধূসর পতাকা;
এইটুকু ছোট্ট জীবন, এখানে সম্ভব নয় ভালোবাসা
তার জন্য চাই আরো অনেক জীবন, অনন্ত সময়
তোমাকে ভালোবাসার জন্য জানি তাও খুবই স্বল্প ও সংক্ষিপ্ত মনে হবে।
তৃণা ঘরে ঢুকে সুজন কে দেখতে পেল না I শাওয়ারের শব্দ শুনে বুঝল ও ওয়াশরুমে I তৃণা বিছানা গুছিয়ে রাখল I অগোছালো কাপড় ভাঁজ করে তুলে রাখলো I বালিশের নিচে থেকে সুজনের ফোনটা বের করে দেখল অনেকবার রিং হয়েছে I ফোনটা তখনও সাইলেন্ট মোডে ভাইব্রেশন হচ্ছে I তৃণা ওয়াশরুম নক করে বলল
– সুজন তোমার ফোন বাজছে অনেকক্ষণ ধরে
– মনে হয় মা ,একটু ধরবে প্লিজ
তৃণা অস্বস্তি নিয়ে ফোনটা ধরল I ও কিছু বলার আগেই অন্য প্রান্ত থেকে উদ্বিগ্ন নারী কন্ঠ শোনা গেল
– সুজন তুই কি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলেছিস ? আমার কথা শোন I আমাদের কাছে ফোন এসেছিল I আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি I ওই মেয়ের বাবা ইউএসএ থাকে I ওখানকার কমিউনিটি থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম I ওখানে ওনার বউ বাচ্চা আছে I দেশে ওনার কোন মেয়ে নেই I আমার তো মনে হয় এই মেয়ের কোন বাবার পরিচয় নেই I এরকম একটা বংশ পরিচয় হীন মেয়েকে তুই বিয়ে করিস না I আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস ?
তৃণার মাথাটা ঘুরে উঠলো I এই জীবনে বাবা-মার কারণে ওকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে I কিন্তু আজ পর্যন্ত এরকম কুৎসিত কথা ও কখনো শোনেনি I তৃণা আস্তে করে ফোনটা নামিয়ে রাখল I তারপর ধীরে ধীরে হেঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল I
ঘরটার দিকে এক পলক তাকিয়ে সুজনের মনটাই ভালো হয়ে গেল I কি সুন্দর করে সব গুছিয়ে রেখেছে তৃণা I সমস্ত ঘর জুড়ে ওর স্পর্শ লেগে আছে I বের হয়ে ওকে কোথাও দেখতে পেল না I হয়তো চা বানাচ্ছে I রান্নাঘরে ও ওকে পাওয়া গেল না I সুজন পুরোটা ছাদ ঘুরে ওকে খুঁজে এল I কোথাও দেখা গেলোনা I অদ্ভুত তো কোথায় চলে গেল I সুজন ফিরে এসে দেখল দোলনার উপর ওর ফোনটা রাখা I আশ্চর্য ফোন ফেলে কোথায় চলে গেল সকাল সকাল I সুজন ফোনটা হাতে নিতেই দেখল তার নিচে একটা সাদা কাগজ I কাগজটা তুলে পড়তে নিতেই ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল I তৃণা লিখেছে

সুজন
আমি চলে যাচ্ছি I তোমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যেতে পারলাম না I এত সাহস নেই আমার I একবার তোমার কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলে হয়তো আর তোমাকে ছেড়ে যেতে পারতাম না I যাবার আগে তোমাকে কয়েকটা কথা বলে যেতে চাই I আমার মতন অনেকেই তোমার জীবনে আসবে যাবে কিন্তু তোমার বাবা-মা, তারা তোমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ I তাদেরকে কখনো কষ্ট দিওনা I আমি আমার একটা জীবন বাবা মা ছাড়া কাটিয়েছি আমি জানি তাদের কি গুরুত্ব I

আরেকটা কথা আমার জন্য অপেক্ষা করে থেকো না I আমার জন্য নিজের ক্যারিয়ার কিংবা পড়াশোনার কোনো ক্ষতি করো না I কেউ যেন কোনদিন বলতে না পারে যে আমার কারনে তোমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল I আমি তোমাকে তোমার স্বপ্নের সেই শিখরে দেখতে চাই যেটা তুমি এতদিন মনের মধ্যে লালন করে এসেছে I কখনো ভেবো না আমি তোমার উপর রাগ করে কিংবা তোমাকে ভুল বুঝে চলে যাচ্ছি I আমার এই চলে যাওয়াটাই তোমার জন্য ভালো I

তোমাকে অনেক কথা বলার ছিল I কিছুই বলা হলো না I তোমাকে বলার ছিল কতটা ভালবাসি তোমায় I তোমাকে কতটা ভালবাসি সেটা বলার জন্য হয়তো এই একটা জীবন ও যথেষ্ট ছিল না আর এই এক টুকরো কাগজে কি বা বলতে পারতাম I তাই আর চেষ্টা করলাম না I যদি এই জীবনে আবার কোনদিন দেখা হয় তাহলে হয়তো বলবো I তবে একটা কথা বলে যাই আমাকে খুঁজে সময় নষ্ট করো না I তুমি আমাকে খুঁজে পাবে না I

ভালো থেকোI নিজের যত্ন নিও I

তৃণা

চলবে. ………..
তোমাকে বলার ছিল……
ষষ্ঠদশ পর্ব
লেখনীতে
অনিমা হাসান

এই পর্বে যে কবিতাটা দেয়া হয়েছে তার নাম ‘এই জীবন’ ‘লিখেছেন মহাদেব সাহা

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১৫

0

তোমাকে বলার ছিল ………
পঞ্চদশ পর্ব

তৃণার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে I ও বুঝতে পারছেনা এখন কি করবে I তৃণা আশেপাশে তাকিয়ে ওর মোবাইলটা খুজলো I তখনই মনে পড়লো এখানে আসার আগেই মোবাইলটা টেবিলের উপর রেখে এসেছে I এখন উঠে নিয়ে আসা সম্ভব নয় I তাছাড়া মোবাইল থাকলেও এই অবস্থাতে কাউকে ফোন করতে পারত না I ফোনটাই বা কাকে করবে I হিয়ার নাম্বারে কানেকশন পাওয়া যাচ্ছে না I সুলতানা আন্টিকে ফোন করা যায় I উনি নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন I কিন্তু বড় চাচা, দাদি এরা থাকতে উনি কি বা করবেন I যা করার নিজেকেই করতে হবে I তৃণার মনে হল এখন তো শুধু আংটি পড়াবে বিয়ে তো আর পড়াচ্ছে না I বিয়ের সময় ও ঠিকই বেকে বসবে I এটা ভেবে যাও একটু নিশ্চিন্ত হয়েছিল বড় চাচীর কথা শুনে ওর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো I চাচী বললেন
– আমি বলি কি ভালো কাজটা জুম্মার আগে করে ফেলি I বিয়েটা পড়িয়ে তারপর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে নামাজে যাই I আপনারা কি বলেন ? মামুন এবং তার মা খুশি খুশি মুখ করে বলল
– আমাদের কোনো আপত্তি নেই
– আলহামদুলিল্লাহ
-কিন্তু কাজীর ব্যবস্থা….
– ও নিয়ে আপনারা ভাববেন না I কাজী রেডি আছে I নিচে গাড়িতে বসে আছে I আমি এখনই ফোন করে দিচ্ছি I তৃণার বড় চাচা বললেন
তৃণার এবার সত্যি সত্যি ভয় করতে লাগলো I তৃণা মনে মনে বলল
আল্লাহ আমাকে এই বিপদ থেকে বাঁচাও
জীবনে মনে হয় এই প্রথমবার তৃণার প্রার্থনা এত তাড়াতাড়ি কবুল হয়ে গেলো I হঠাৎই নিচে হইচইয়ের শব্দ শোনা যেতে লাগলো I অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনতলার দরজাটা খোলাই ছিল I নিচ থেকে শব্দ ভেসে আসতে লাগলো
পুলিশ আইছে পুলিশ I জায়গা দে I
তৃণা তাকিয়ে দেখল ইউনিফর্ম পরা একজন পুলিশ অফিসার গম্ভীর ভঙ্গিতে ভেতরে ঢুকেছে I কোনরকম ভনিতা না করেই ভদ্রলোক এসে বললেন
– মামুনুর রশীদ কে এইখানে ?
মামুন ভয়ে ভয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো জি আমি
– আপনার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে
-কেন আমি কি করেছি ?
– আপনার নামে কমপ্লেন আসছে I আপনি একজন বিবাহিত মহিলাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন
– কি !!? কে বিবাহিত ?
ভদ্রলোক তৃণার দিকে তাকিয়ে বললেন
– আপনার নাম আফসানা আক্তার তৃণা ?
– জি
– আপনার স্বামীর নাম হাবিবুল বাশার ?
তৃণার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা I এখন আবার এই হাবিবুল বাশার কোথা থেকে এলো I এই নাম জীবনে শুনেছে বলেও মনে পড়ছে না I তবে এর কারণে যদি এই বিয়ে ভন্ডুল করা যায় তবে এটাও খারাপ না I তৃণা চুপ করে রইলো I
মামুন এবার তেতে উঠে বলল
– এভাবে কিছু হয় নাকি ? কোনরকম প্রমাণ ছাড়া আপনি কি বলতেছেন না বলতেছেন
– আপনি চুপ থাকেন I বেশি ফালাফালি কইরেন না I প্রমাণ ছাড়া আমি আসি নাই I আমার কাছে কাবিন নামা আছে I
এবার ভদ্রলোক একটা কাগজ বের করে তৃণার কাছে ধরে বলল
– এটা কি আপনার সিগনেচার ?
তৃণা মাথা নাড়ল I
এইযে দেখছেন
– এই একটা কাগজে কি যায় আসে ?
– খালি কাগজ না আমার কাছে সাক্ষী ও আছে I কই আপনারা ভেতরে আসেন
হিয়া আর রাতিনকে ভেতরে ঢুকতে দেখা গেল I তৃণার ইচ্ছা হল খুশিতে নাচতে I হিয়া ভিতরে ঢুকে চোখের ইশারায় তাকে আশ্বস্ত করলো যে সব ঠিক আছে I
বড় চাচী হাহাকার করে উঠলেন
– হিয়া তুই আমাদের এই সর্বনাশ করলি
হিয়া ওর জীবনের শ্রেষ্ঠ পারফরম্যান্সটা দিল I কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল
– চাচি আপনি তো আমার বান্ধবীর বিয়েতে আমাকে ডাকলেন না I ডাকলেই তো এই ঝামেলা আর হতো না
ইন্সপেক্টর সাহেব বললেন
– আপনারা এখন বলেন আপনারা কি জানেন
রাতিন কথা শুরু করলো
-তৃণার ফ্যামিলি থেকে এরকম কিছু করতে পারে ধারণা করে হাবিব ভাই তৃণা কে বিয়ের কথা বলেন I গত রবিবার বিয়েটা হয় I আমরা দুইজন সাক্ষী ছিলাম I আজকে সকালে মামুন সাহেব কে ফোন করে জানানো হয়েছিল I কিন্তু তবুও উনি বিশ্বাস করেননি I বিয়ে করতে চলে এসেছেন I
বড় চাচা তেরে এসে বললেন
– তৃণা তুই এটা কি করলি ?
ইন্সপেক্টর তাকে থামিয়ে দিয়ে তৃণার দিকে তাকিয়ে বললেন
– এনারাও কি এই অবৈধ বিয়েতে আছেন ?
তৃণা কোনমতে বলল
– না ওনারা কিছু জানতেন না I আমি কিছু জানায়নি
– এইবার আপনি সবকিছু ঠিকঠাক বলেন I আপনার স্বামীর নাম হাবিবুল বাশার ?
তৃণার একবার মনে হল কোথাকার কোন হাবিবুল বাশার এখন একে স্বামী বানাতে হচ্ছে I তবে হিয়া যখন ঠিক করেছে তখন নিশ্চয়ই ও কাউকে না কাউকে ব্যবস্থা করে রেখেছে I
– কথা বলেন I
ভদ্রলোক হুংকার করে উঠলেন I সমস্ত ঘরে পিনপতন নীরবতা I তৃনা বললো
– জি
ঘরের মধ্যে মনে হল একটা বোমা ফাটলো I জাহানারা বেগম দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে পড়লেন I বড় চাচা কপাল চাপড়াতে শুরু করলেন I ইন্সপেক্টর এগিয়ে গেলেন মামুন কে এরেস্ট করার জন্য I মামুনের তেজ তখনো কমেনি I ও বলল
– কিসের হাবিবুল বাশার I বিয়ে হয়ে থাকলে জামাই কই I এরা এইসব বিয়ে ভাঙ্গার জন্য করতেছে I
– আপনি চুপ থাকেন I এই সাত্তার মিয়া কখনো কাঁচা কাজ করে না I হাবিব সাহেব ভেতরে আসেন
পর্দা সরিয়ে সুজন ভেতরে ঢুকলো I ওকে দেখে তৃণা হতভম্ব হয়ে গেল I এতক্ষণ পর খেয়াল হল সুজনের ভালো নাম হাবিবুল বাশার I

ভদ্রলোক তৃণার দিকে তাকিয়ে বললেন
– ইনি আপনার স্বামী ?
– জি
– নেন তাইলে তো সব মিটে গেল I মামুন সাহেব চলেন আমাদের সাথে I
মামুন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল
– বিয়ে তো হয়নি আমাকে কেন যেতে হবে ?
– হয় নাই তো কি আমরা না আসলে তো হইতো I চলেন চলেন
– মানে বলছিলাম কি কোনভাবে কি কিছু…
ভদ্রলোক কাছে এসে গলা নামিয়ে বললেন
– ঠিক আছে কিছু দিয়া টিয়া রফা করেন
– কত দেবো ?
– এই আপাতত দুই দিলেই চলবে
– 2000 ?
– ভোদাই নাকি মিয়া আপনে ? 2000 তো আজকাল ট্রাফিক পুলিশেরে পান খাইতে ও দেয় না I 2 লাখ I
মামুন কাবিনের জন্য 50 হাজার টাকা নিয়ে এসেছিল I ওর পকেটে ছিল I মামুন পকেট চেপে ধরে আর্তনাদ করে উঠল
– না… Iকিছু কম করেন স্যার

সুজন এতক্ষণ কোন কথা বলেনি I এবার বলল
– এসবের কোন দরকার নেই ইন্সপেক্টর সাহেব I আমি আমার বউ নিয়ে চলে যাচ্ছি I উনাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো কমপ্লেন নেই I
মামুন খুশি খুশি গলায় বলল
– এইতো , এই ভাইসাহেব একদম ঠিক কথা বলছেন I তাছাড়া টাকা দিয়া যদি মাইয়া পাওয়া যাইত তাহলে না হয় একটা কথা ছিল I
সুজনের প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেল I ও রাগী গলায় বলল
– আমি আপনাকে হেল্প করার চেষ্টা করছি আর আপনি আমার ওয়াইফের ব্যাপারে এসব কি ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করছেন ?
– না না মানে বলতে চাচ্ছিলাম যে
– কিছু বলতে হবেনা আপনাকে I তারপর তৃণার দিকে ফিরে বলল
– তৃণা তুমি রেডি হয়ে এস I এখান থেকে কিছু নেয়ার দরকার নেই I হিয়া তুমি ওর সঙ্গে যাও I

হিয়া তৃণাকে নিয়ে ওর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল I তৃণা হিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল
– তোরা এটা কি করে করলি ?
– তোর মেসেজ পেয়ে আমি সুজন কে ফোন করি তারপর আমরা তিনজন মিলে মামুনকে ফোন দেই I বেটা দুনিয়ার বদ I তাড়াতাড়ি কর I তৃণা চেঞ্জ করে সুজনের দেয়া নীল শাড়িটা পরল I আলমারি থেকে ওর সার্টিফিকেট আর ক্যাশ টাকা যা ছিল ব্যাগে ভরে নিয়ে বেরিয়ে এলো I জাহানারা বেগম তখনও হতবিহবল হয়ে বসে আছেন I তৃনাকে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালেন I তৃণা দাদিকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল
– দাদি আমি বিয়ে করিনি I কিন্তু আমার আর কোনো উপায় ছিল না I ওই লোকটাকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা I
জাহানারা বেগম ও নাতনির কানে ফিসফিস করে বললেন
– এমন সুন্দর ছেলে বিয়ে করলেও আমি রাগ করতাম না I
তৃণা সহ বাকিরা নিচে নেমে এলো I সুজন গাড়ি নিয়ে এসেছে I গাড়িতে উঠার আগে তৃণা ইন্সপেক্টর এর দিকে ফিরে বলল
– আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার
বাকিরা হো হো করে হেসে উঠলো I সুজন মানিব্যাগ বের করে ইন্সপেক্টর কে 2000 টাকা দিল I ভদ্রলোক বিগলিত হাসি হেসে বলল
– স্যার আমার ব্যাপারে একটু বলে দিয়েন
তৃণা হতভম্ব হয়ে গেল I রাতিন হাসতে হাসতে বলল I
– তৃণা ও মঞ্চের জুনিয়র আর্টিস্ট I অনেকদিন থেকে একটা টিভি সিরিয়ালের জন্য ঘুরছিল I সুজনদের বাসার ভাড়াটিয়া ফিলম ডিরেক্টর I অনেকদিন থেকেই আমি সুজন কে বলছিলাম ওর কথা I আজ কেমন খাপে খাপে মিলে গেল I

গাড়ি চলতে শুরু করেছে I সুজন নিজেই ড্রাইভ করছে I তৃণা পাশের সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে I অনেকক্ষণ পর ও চোখ খুলে বলল
– আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
পেছনে হিয়া আর রাতিন বসে গল্প করছিল I তৃণার কথা শুনে ও বলল
-কাজী অফিস I গত রবিবার যে বিয়েটা হয়নি সেটা এখন হবে

তৃণা কিছুতেই সুজনের বাবা-মাকে না জানিয়ে বিয়েতে রাজী হচ্ছিল না I হিয়া ওকে আশ্বস্ত করে বলল
-আমার সামনেই সুজন ওর বাবার সঙ্গে কথা বলেছে I উনাদের কোন সমস্যা নেই I
-তবু আমি চাই উনারা ভিডিও কলে হলেও সঙ্গে থাকুক
সুজন এতক্ষণ চুপ করেছিল এবার বলল
– তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করছো না ? বাবা মা আমার কাজিনের ওখানে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায় I ফ্লাইটে ওঠার আগে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে I বাবা আমাকে কি বলেছে জানো ? বলেছে আমার ছেলে হয়ে তুই এটা কি করে করতে পারিস I এখনই ওকে তুলে নিয়ে এসে বিয়ে কর I তুমি তো জানো না আমার মা-বাবার বিয়ে ও এভাবে হয়েছে I মায়ের অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল I তবুও তুমি না চাইলে আমি অপেক্ষা করতে পারি I
– না আমার কোন সমস্যা নেই I

রাত তখন ও গভীর হয় নি I একটু আগেই হিয়া আর রাতিন বিদায় নিয়ে চলে গেছে I তৃণা যেহেতু বাসা থেকে কিছু নিয়ে আসেনি হিয়া ওকে একটা ট্রলি ব্যাগ রেডি করে দিয়ে গেল যেখানে ওর প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে I যাবার আগে হিয়া ওকে জড়িয়ে ধরে বলল
– আমি অনেক খুশি হয়েছি দোস্ত I তোর বিয়ে দেখে তো আমারও বিয়ে করে ফেলতে ইচ্ছে করছে I রাতিন বলল
– একটু আগে বললেই তো আমরা ও বিয়ে করে ফেলতে পারতাম
ওরা তিনজনই হেসে ফেললো I সুজন খাবার অর্ডার করেছিল I চাইনিজ খেতে খেতে অনেকক্ষণ ধরে মামুনের নুডুলসের আর পুলিশের ভয়ে কান্না কাটির গল্প হল I

আজ আকাশে চাঁদ নেই I তবে আকাশ খুব পরিষ্কার I একটু লক্ষ করলেই সপ্তর্ষিমণ্ডল চোখে পড়ে I সুজন বাইরের আলো টা বন্ধ করে দিয়েছে I পুরো ছাদ জুড়ে নরম মায়াবী আলো I ওরা দুজন বসে আছে দোলনার দুই প্রান্তে I তৃণার খুব অদ্ভুত লাগছে I হঠাৎ করে একদিনের মধ্যেই সব কেমন বদলে গেল Iএকটা অদ্ভুত ভালো লাগায় মনটা ভরে আছে I শুধু যদি সুজন আরেকটু কাছে এসে বসত তাহলে আরো ভালো লাগতো I সুজন কাছে এসে বসলো না I দূর থেকেই বললো
– একটা কবিতা শোনাবে তৃণা
– না I আজকে আমি শোনাবো না I তুমি শোনাবে I আজকে কবিতা পাঠানোর দরকার নেই I এমনি পড়ে শোনাও I
– কিন্তু আমি তো অলরেডি পাঠিয়ে দিয়েছি
– কখন ?
তৃণা ওর ফোনটা চেক করতে গেলে সুজন ওর হাতটা ধরে ফেলল তারপর বলল
– না এখন দেখ না
– কেন ?
– দেখলে তুমি রাগ করবে
– রাগ করবো কেন ? আচ্ছা ঠিক আছে দেখলাম না I যেটা পাঠিয়েছ সেটাই শোনাও
– তুমি শিওর রাগ করবে নাতো?
– না
– তাহলে একটু কাছে এসে বস I এই কবিতা জোরে জোরে বলা যাবে না
তৃণা একটু অবাক হল I তবে ও কাছে এসে বসলো I সুজন একেবারে ওর গা ঘেষে বসল তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল

কাছে আসো, সম্মুখে দাঁড়াও
খুব- কাছে, যতোখানি কাছে আসা যায়,
আমি আপাদমস্তক দেখি তোমার শরীর
যেভাবে মানুষ দেখে, প্রথম মানুষ।
দেখি এই কাণ্ড আর ডালপালাখানি, ভিতর-বাহির
কতোটা পেয়েছে মাটি, কতোটা বা এই জলবায়ু
পায়নি শিকড়খানি, পেয়েছে কি তোমার প্রকৃতি?
কাছে আসো আরো কাছে, সহজেই যেন চোখে পড়ে
তোমার সূক্ষ্ম তিল, আঙুলের সামান্য শিশির
যেন দেখি তোমার সজল চোখ, তোমার মদির সলজ্জতা
দূরদৃষ্টি নেই মোটে, কেবল কেবল সন্নিকটে।
তুমি খুব কাছে আসো, খুব কাছে, ঠিকই খুব কাছে
যতোখানি কাছে এলে আর কোনো আড়াল থাকে না;

চলবে………
তোমাকে বলার ছিল ………
পঞ্চদশ পর্ব
লেখনীতে
অনিমা হাসান
এই পর্বে যে কবিতাটা দেয়া হয়েছে তার নাম ‘ কাছে আসো, সম্মুখে দাঁড়াও’ লিখেছেন মহাদেব সাহা

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১৪

0

তোমাকে বলার ছিল ………
চতুর্দশ পর্ব
কাল রাত থেকে মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে আছে তৃণার I নিজের উপর ভীষন রাগ হচ্ছে I কাল এভাবে সুজনের বাসায় যাওয়াটা উচিত হয়নি I ওর কাছ থেকে উপহার নেয়াটাও ঠিক হয়নি I যেটা হবেনা, সেটাকে শুধু শুধু বাড়তে দেয়া ঠিক নয় I ওর সঙ্গে কথা বলতে হবে I এমনটা যে হবে এটা তৃণা আগে থেকেই জানত ,তবু কেন যে এত কষ্ট হচ্ছে I কাল হঠাৎ করে নিজের স্বপ্নটাকে চোখের সামনে দেখে হয়তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি I কিন্তু আর নয় I যে সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ নেই, সেটাকে আর না এগিয়ে নেওয়াই ভালো I

তৃণা ঠিক করেছে হলে উঠে যাবে I আজই ফর্ম ফিলাপ করে ফেলতে হবে I এখন বাসায় কাউকে জানাবে না I দাদি বলছিল এবার ঈদ করে যাবে I সেরকম হলে ঈদের পরে উঠে যাবে I
বিকেল তিনটায় টিউশনিতে যেতে হবে I এগারোটার দিকে তৃণা রেডি হয়ে ব্যাগ হাতে নিতে গেলে হঠাৎ খেয়াল করলো, ব্যাগের মধ্যে শাড়ীটা এখনো রয়ে গেছে I কি মনে করে তৃণা প্যাকেটটা খুলল I আকাশী নীল রঙের একটা শাড়ি; সাদা আর ধূসর পার I দেখে মনে হচ্ছে শরতের এক টুকরো আকাশ I তৃণার একবার মনে হল ফিরিয়ে দেবে, পরমুহুর্তেই মনে হোলো থাক একটাইতো স্মৃতি; থাকলো না হয় ওর কাছে I তৃণা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাড়িটা আলমারিতে তুলে রাখলো I তারপর দাদির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল I

জাহানারা বেগম ঠিক করেছেন ছেলের সঙ্গে কথা বলবেন I মেয়েটা যখন ,এখন বিয়ে করতে চাইছে না তখন জোর করার দরকার নেই I এক বছর পরে না হয় দেখা যাবে I ততদিনে ওর ফাইনাল পরীক্ষাটা শেষ হয়ে যাবে I জাহানারা বেগম ছেলের ঘরে গিয়ে দরজায় টোকা দিলেন I সামাদ সাহেব আর রেহানা ভেতরেই ছিলেন , মাকে দেখে তাড়াতাড়ি ভেতরে নিয়ে এলেন I উনি কিছু বলার আগেই সামাদ সাহেব বললেন
– দেখেন আম্মা , রেহানা কি করেছে I তৃণার জন্য কি সুন্দর একটা শাড়ি কিনেছে I আপনি তো শুধু মনে করেন আমরা তৃণাকে ভালোবাসি না I দেখেন বিয়ের কথাটা তো রেহানাই এনেছে I এত ভালো ছেলে I ওরা যদি তৃনাকে পছন্দ না করে টুম্পাকে করতো, তাহলে ও আমি দিয়ে দিতাম I কিন্তু তৃনাকে পছন্দ করেছে তাতেও আমি খুশি I তৃণাও তো আমার মেয়ে I আপনি ওকে একটু বুঝিয়ে বলেন I এত ভালো ছেলে সব সময় পাওয়া যায় না I ওদের তৃণার পড়াশোনা নিয়ে কোন আপত্তি নেই I এমন কি চাকরি নিয়েও না I

জাহানারা বেগমকে বেশ আশ্বস্ত মনে হল I এতদিন শুধু শুধু ছেলেকে ভুল বুঝে এসেছেন I সামাদ সাহেব মায়ের মুখ ভঙ্গি দেখে কিছুটা আচ করতে পারলেন I একবার স্ত্রীর দিকে তাকালেন I দুজনের চোখে চোখে কথা হয়ে গেল I এবার মা-এর কাছাকাছি এসে বসে বললেন
– দেখেন আম্মা তৃণার বয়স অল্প, এখন বুঝতেছেনা I আমি বলি কি আগামী শুক্রবার দিন ছেলে আর ওর মা আসতে চায় I এখনই বেশি কিছু বলার দরকার নাই; তারা আসুক I কথাবার্তা ঠিকঠাক হোক তারপর দেখা যাবে I ছেলে, ছেলের মা আসবে; পছন্দ হলে আংটি পরিয়ে যাবে I

-ঠিক আছে তুমি যেটা ভালো মনে করো I বাপ মা থাকতেও নাই I আল্লাহ যেন মেয়েটার ভালো করেন এই দোয়াই করি I

জাহানারা বেগম ঘর থেকে বেরোনোর পরে স্বামী স্ত্রী মিলে সবটা গুছিয়ে ফেললেন I এই শুক্রবারে কাজ সেরে ফেলতে হবে I ওদেরকে বলতে হবে বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে আসতে I আজকে এক সোমবার, আগামী সোমবার থেকে রোজা শুরু হয়ে যাবে; যা করার এই শুক্রবারেই করে ফেলতে হবে I মা বা তৃণাকে এখনই কিছু জানানো যাবে না I একদিন আগে জানালেই চলবে I

হলের কাজকর্ম শেষ হতে বেশি সময় লাগল না I যদিও ওর ফাইনাল ইয়ার; সিঙ্গেল রুম পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না I তৃণা তবু আপত্তি করেনি; জানিয়েছে এক রকম হলেই হবে I মাত্র একটা বাজে I দু’ঘণ্টা কি করবে বুঝতে পারছে না তৃণা I হিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে একটু আগে I ও শপিং করতে গেছে বসুন্ধরা মলে I আসতে বলেছিল তৃণাকে I রাজি হয়নি ও I কি দরকার শুধু শুধু দুজনের মাঝে গিয়ে ঝামেলা বাড়ানোর I ওরা দুজন আনন্দে আছে, থাকুক I তৃণা হল থেকে বেরিয়ে ভুত দেখার মত চমকে গেল I সুজন দাঁড়িয়ে আছি গেটের কাছেই I তৃণাকে দেখে কাছে এগিয়ে এসে বলল
– তোমাকে ফোন দিচ্ছি সকাল থেকে ধরছো না কেন ?
তৃণা ইচ্ছা করেই ফোন ধরেনি সকাল থেকে I তবুও বলল
– খেয়াল করিনি I
– তুমি কি এখন বাসায় যাচ্ছ ?
– না টিউশনি তে যেতে হবে I
– সেটা তো তিনটায় I চলো তাহলে বসি I
– হু I
ওরা হাঁটতে হাঁটতে টিএসসির দিকে চলে গেল I তৃণা খুব গম্ভীর হয়ে আছে I কোন কথা বলছে না I ভেতরে ঢুকে বসার পর সুজন জানতে চাইল
-কি হয়েছে তৃণা ? কোন সমস্যা ?
– আমার মনে হয় আমাদের একটু কথা বলা উচিত I
সুজন হেসে ফেললো I বলল
– আমরা তো কথাই বলছি I
– আমার মনে হয় আমাদের ব্যাপারটা এখানেই শেষ হওয়া উচিত I
– সব তো ঠিকই ছিল I হঠাৎ কি হল ?
– না কোন কিছুই ঠিক ছিল না I
– কিরকম ?
– তোমার ওখানে যাওয়াটা আমার উচিত হয়নি I যে সম্পর্কের কোন ফিউচার নেই সেটা বাড়তে না দেওয়াই ভালো I
-সম্পর্কের কি ধরনের ফিউচার চাও তুমি ?
– আমি কি চাই তাতে কিছু যায় আসে না I আর সেটা ইম্পর্টেন্টও নয় I
– তাহলে আমি যেটা চাই সেটা ইম্পর্টেন্ট ?
– তুমি কি চাও ? তৃণা জানতে চাইল
– আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই I
এই ধরনের সরাসরি জবাবে তৃণা একটু হকচকিয়ে গেল I তবে দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
– তোমার ফ্যামিলি এটা কখনো মেনে নেবে না I
-না নেওয়ার কোনো কারণ দেখি না I
– আমার সম্পর্কে সব জানলে উনারা কখনই রাজি হবেন না I
– কি জানলে ? তোমার বাবা মা নেই I তুমি চাচা-চাচীর কাছে বড় হয়েছে I এটাই তো ?
– আমার বাবা-মা নেই কথাটা ঠিক না I তারা দুজনেই বেঁচে আছেন I কিন্তু তারা আমাকে চান না I
– এতে তো কোন কিছু বদলে যাচ্ছে না I
– তোমার জন্য হয়তো না কিন্তু তোমার ফ্যামিলি……
– আমার ফ্যামিলি তোমার কথা জানে I তাদের কোন সমস্যা নেই I
এক মুহুর্তে তৃণা বলার মত কিছু খুঁজে পেল না I পরমুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
– শুধু তো এটা না I
– আর কি ?
– তুমি একটা মেয়ের কাছ থেকে রিফিউজড হয়ে হাতের কাছে যাকে পেয়েছ তাকেই ভালবাসতে চাইছ I এটাও ঠিক না I কদিন পর তোমার আর আমাকে ভাল লাগবে না I
– তুমি মোটেও হাতের কাছে পাওয়া যেকোনো মেয়ে নও I আমার কাছে তুমি অনেক স্পেশাল I
তৃণা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল
– যে তার বাবা-মায়ের কাছে স্পেশাল হতে পারেনি, সে তোমার কাছে কি স্পেশাল হবে I
– তোমার বাবা মায়ের ব্যাপারটা আমি জানিনা I তবে আমি আমার নিজের ব্যাপারটা জানি I -শুরু থেকে আমার, তোমার সঙ্গে একটা কানেকশন ছিল I হিয়ার সঙ্গে ছিলনা I আমি জানি তুমি আমাকে কবিতাগুলো পাঠাতে I মেসেঞ্জারেও আমার তোমার সঙ্গেই কথা হতো I শুরু থেকেই আমি তোমাকেই ভালোবেসেছি তৃণা; অন্য কাউকে না I
-তোমাকে এসব কে বলেছে ?
– কে বলেছে সেটা ইম্পর্টেন্ট নয় I এটাই সত্যি এবং এটা আমি জানি I আমি ইচ্ছা করে তোমাকে এতদিন বলিনি I আমি চেয়েছিলাম তুমি নিজে থেকে আমার কাছে আসো; কোনো অপরাধবোধ থেকে নয় I
তৃণা দুই হাত দিয়ে ওর মাথার দুই পাশে চেপে ধরল I তারপর থেমে থেমে বলল
– সুজন , এটা সম্ভব না I এটা এখানেই শেষ হবে প্লিজ I পরবর্তীতে কষ্ট পাওয়ার চাইতে এখন মিউচুয়ালি সবটা শেষ করা ভালো I তুমি আর আমাকে ফোন করবে না I কোনরকম কবিতাও পাঠাবে না I
তৃণা ঝড়ের বেগে উঠে দাঁড়ালো তারপর হাঁটতে গিয়ে খেয়াল করল সুজন ওর হাত ধরে আছে I সুজন খুব শান্ত গলায় বলল
– বস I
তৃণা বসলো না I ওর ভয় করছে I সুজন কে না, নিজেকেই ভয় করছে I মনে হচ্ছে হঠাৎ করেই ও এমন কিছু একটা করে ফেলবে, যে সুজনের সামনে ধরা পড়ে যাবে I

সুজন উঠে দাঁড়ালো I তারপর কাছে এগিয়ে এসে বলল
– আমি তোমাকে ফোনও করব আর কবিতাও পাঠাবো I তোমার ইচ্ছা না হলে তুমি রিপ্লাই দিও না I কেমন ?

তৃণা সত্যিসত্যি সুজনের ফোন ধরল না I তবে রাত গভীর হলেই ও ছাদে চলে যায়; অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন কবিতাটা আসবে I এক মিনিট এদিক-ওদিক হলেই ওর অস্থির লাগে I মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসছে I ফোন না ধরলে সুজন মেসেজ পাঠায় I সেই মেসেজগুলোর ভাষা অত্যন্ত অদ্ভুত I তৃণার রাগ হওয়া উচিৎ কিন্তু ও রাগ করতে পারে না; বরং কান্না পায় I আজ রাত 10 টা থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে I তৃণা ধরেনি সাড়ে দশটার পর মেসেজ এল

আমার মাথায় জলভরা একটি আকাশ
তার নাম তুমি,
খর গ্রীষ্মে আমার উঠোনে অঝোর বর্ষণ
তুমি তার নাম;
ভীষণ তৃষ্ণার্ত এই পথিকের ক্লান্ত চোখে সুশীতল মেঘ
একমাত্র তুমি-
দুপুরের খরতাপ শেষে আমার জীবনে এই শান্ত সন্ধ্যা
তুমি, তুমি, তুমি;
মরুময় এই ভূপ্রকৃতি জুড়ে ঘন প্রেইরীর সবুজ উদ্যান
তুমি তার নাম,
আমার ধূসর দুই চোখে চিরসবুজের গাঢ় হাতছানি
তার নাম তুমি;
আমার স্মৃতির অববাহিকায় একটি স্বপ্নের প্রিয় নদী
তুমি নিরবধি।

আজ বুধবার I সামনে শনিবার থেকে ক্লাস শুরু হবে I তৃণা ছাদে পায়চারি করছে I একটু আগে বড় চাচা ভয়ঙ্কর একটা কথা বলেছেন I এই শুক্রবারে মামুন আর ওর মা আসবে I ওদের তৃণাকে পছন্দ হয়েছে I ফাইনাল কথা বলতে আসবে ওরা I সব ঠিকঠাক হলে আংটি পরিয়ে যাবে I তৃণার মাথা কাজ করছে না I দাদিকে অনেক করে বুঝানোর পরও কোনো লাভ হলো না I কান্নাকাটি শুরু করে দিল শেষমেষ I ঝড়ের মত একটা দিন কেটে গেল I দাদি সারাক্ষণ আঠার মতো লেগে রইলেন I সুজনের মেসেজটা পর্যন্ত পড়তে পারল না I হিয়াকে দুইবার ফোন করেছে I নট রিচেবল দেখাচ্ছে I মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ দিয়ে জানিয়ে রেখেছে তৃণা I হিয়ার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারলে ভালো হতো I

ব্যাপারটাকে যতটা হালকাভাবে নিয়েছিল, ব্যাপারটা যে সেরকম না, সকালে উঠে সেটা বুঝতে পারল তৃণা I খুব ভোরে উঠে বড় চাচা বাজারে চলে গেছেন I বাজার থেকে ফেরার পর সবাইকে ডাকা হল দেখার জন্য I বিশাল সাইজের রুই মাছ, গরুর গোশত, দেশি মুরগি, ইত্যাদি ইত্যাদি আরও নানান কিছু আনা হয়েছে I কোনটার দাম কত তা মোটামুটি ঘোষণা দিয়ে বলা হচ্ছে I জাহানারা বেগম অত্যন্ত খুশি I রেহানা রান্নার তদারকিতে ব্যস্ত I টুম্পা ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়াচ্ছ I ফুল ভলিউম এ হিন্দি গান চলছে I তৃণার সবকিছু অসহ্য লাগছে I কোথাও ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে I

বাজার দেখে রেহানার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে I একেতো এতো খরচা, তার ওপর আবার রান্নার ঝামেলা I তৃণাকে এখনো বিয়ের ব্যাপারটা জানানো হয়নি I জাহানারা বেগমকে একটা আভাস দেয়া হয়েছে I তিনি সম্মত বলেই মনে হলো I হুট করে তৃণাকে রেডি করতে হবে I ওর কোন বান্ধবী উপস্থিত থাকলে ভাল হত I কিন্তু ওর সেই ফিচেল বান্ধবীটাকে ডাকার কোনো আগ্রহ নেই রেহানার I মা মেয়ে দুটোই বদ I

সকাল থেকে তৃণাকে রেডি করার জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে পরলো I যেহেতু আজ শুক্রবার, শুভ কাজ শেষ করে সবাই জুম্মার নামাজে যাবে I তাই সকাল সকাল ছেলেপক্ষ চলে এলো I নাস্তার আয়োজন করা হয়েছে I পরোটা,গরুর মাংস , বুটের ডাল , খাসির পায়া এলাহি অবস্থা I তৃণা শুনেছিল শুধু মা ছেলে আসবে; কিন্তু বাইরে আরো লোকজনের গলা পাওয়া যাচ্ছে I তৃণাকে একটা মেরুন রঙের কাতান শাড়ি দিয়েছে বড় চাচি I সেটা পড়েই যখন সামনে এলো, মামুনের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল I তৃনাকে মামুনের মায়ের পাশে বসানো হলো I ভদ্রমহিলা ওর একটা হাত টেনে নিয়ে বললেন
– মেয়ে তো আমাদের কবে থেকেই পছন্দ I এখন আংটি পরিয়ে দেই I জুম্মার নামাজের পর বিয়েটা পড়িয়ে ফেলা যাবে I
তৃণার মনে হলো ও ভুল শুনছে I তৃণা বড় চাচার দিকে তাকালো I উনি বিগলিত হাসি হেসে বললেন
– মেয়ে তো এখন আপনাদেরই I যখন ইচ্ছা বিয়ে করাবেন, যখন ইচ্ছা নিয়ে যাবেন I

তৃণা হতভম্ব হয়ে গেল I ও দাদির দিকে তাকালো I জাহানারা বেগমের মুখ হাসি হাসি I তার মানে তিনিও আগে থেকে জানতেন I তৃণার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে I এখন ও কি করবে ?

চলবে………
তোমাকে বলার ছিল ………
চতুর্দশ পর্ব
লেখনীতে
অনিমা হাসান
এই পর্বে যে কবিতাটা দেয়া হয়েছে তার নাম তুমি লিখেছেন মহাদেব সাহা

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১৩

0

তোমাকে বলার ছিল ………
ত্রয়োদশ পর্ব

– বাহ ! আমি জানতাম না তুমি এত মজার রান্না করো I
খেতে খেতে কথাগুলো বলল সুজন I রান্না-বান্না শেষে ছাদের মধ্যে চাদর বিছিয়ে বসা হয়েছে I আয়োজন খুবই সামান্য I খিচুড়ি, ডিম-ভাজা; তার সঙ্গে লেবু আর শশা I কিন্তু দুজনেই ভীষণ ক্ষুধার্ত থাকায় খেতে অসাধারণ লাগছে I তৃণা হেসে ফেললো I বলল
– তুমি কাল রাতে কি খেয়েছ ?
-কিছু খাইনি I
– দুপুরে ?
– মনে নেই I
– এজন্যই এত মজা লাগছে I
– না সেজন্য না I আসলেই ভালো হয়েছে I
– কিন্তু তুমি না খেয়ে ছিলে কেন ?
– আসলে খুবই এক্সাইটেড ছিলাম I তোমাকে নিয়ে আসব বলে I সব গোছগাছ করছিলাম I তাই খাওয়ার কথা মনে ছিল না I
– এখানে গোছগাছ করার কি আছে ? কিছুই তো নেই I
– আমি ইচ্ছা করেই কিছু কিনিনি I তুমি পছন্দ করে কিনবে তাই I
তৃণা খাওয়া থামিয়ে তাকিয়ে রইল I সুজন বলেই যাচ্ছে I
– গাছ ও লাগাই নি I আমি জানিনা তোমার কি গাছ পছন্দ I তুমি তোমার ইচ্ছা মতন এনে নিও I
তৃণার রাগ হওয়া উচিত I কিন্তু কেন যেন রাগ হচ্ছে না I খুব ভাবতে ইচ্ছা করছে আসলেই কদিন পর ও এখানে আসবে I এই জায়গাটাকে ওর মনের মতো করে সাজাবে I অনেক গাছ লাগাবে I তারপর রাত হলে দুজনে দোলনাতে বসে আকাশের তারা দেখবে I তৃণা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে গেল I এঁটো প্লেটগুলো ধুয়ে রাখল I অবশিষ্ট খিচুড়ি, ডিম ভাজি বক্সে তুলে রেখে বলল
– তুমি রাতের বেলা খেয়ে নিও I
– আচ্ছা I চা বানাই ?
– চা করতে পারো ?
– হ্যা পারি I
সুজন তৃণার জন্য চা করল I নিজের জন্য কফি I তারপর দুজনে এসে দোলনাতে বসলো I দুপুর হলেও রোদ নেই I আকাশে মেঘ জমে আছে I চারপাশটা ভীষণ নিরব I অনেকক্ষণ দুজনে চুপ করে বসে রইল I সুজনের অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করছে I খুব ইচ্ছা করছে তৃনাকে আর যেতে না দিতে I ওর জন্য খুব শখ করে একটা উপহার কিনেছে I কি জানি ও নিবে কিনা I
তৃণা চা শেষ করতে পারলো না I তার আগেই বাড়ি থেকে ফোন এলো I ল্যান্ড ফোন থেকে ফোন এসেছে বোঝার উপায় নেই কে করেছে I তৃণা ভুরু কুঁচকে ফোনটা ধরল
– হ্যালো I
– তুমি কোথায় তৃণা ? বড় চাচীর গলা পাওয়া গেল I
– আমার বন্ধুর বাসায় I কেন ?
– লাইব্রেরীর কথা বলে বন্ধুর বাসায় চলে গেলে ?
তৃণার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেল I প্রতিদিন সকালে ও বেরোয় I রাত করে বাড়ি ফেরে I কেউ কখনো কিছু জানতে চায়নি I আজ হঠাৎ করে এত খোঁজখবর বিরক্ত লাগছে I
– তিনটার সময় টিউশনিতে যেতে হবে I এতক্ষণ তো লাইব্রেরীতে থাকতে পারবো না I তাই বন্ধুর বাসায় এসেছি I সব সময় এরকমই হয়ে এসেছে I আজ হঠাৎ করে কি হয়ে গেল ?
রেহানা একটু থমকালেন I বললেন
– দেশ থেকে তোমার দাদি এসেছেন I তোমার খোঁজ করছিলেন I তাই ফোন করলাম I
তৃণা ভীষণ অবাক হয়ে গেল I একটু চিন্তাও হলো I
– দাদির শরীর ঠিক আছে ? এভাবে হঠাৎ কিছু না জানিয়ে এলেন যে ?
– না সব ঠিক আছে I তুমি এসো টিউশন শেষ করে I কোন সমস্যা নেই I
তৃণা উঠে গেল I বলল
– আমাকে যেতে হবে I
-এখনি চলে যাবে ? আরেকটু থাকো I
– বাড়ি থেকে দাদি এসেছেন I আমার খোঁজ করছেন I
– ও আচ্ছা I চলো আমি নামিয়ে দিয়ে আসি I
– না, ঠিক আছে আমি চলে যাব I তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না I
– সমস্যা নেই গাড়ি নিয়ে যাব I আজকে ড্রাইভার নেই; আমি তোমাকে ড্রপ করেই চলে আসব I
– আচ্ছা I
– তৃণা একটা কথা ছিল I
– বল I
– তোমার জন্য একটা উপহার কিনেছিলাম I
– হঠাৎ! কি উপলক্ষে ?
– তুমি আজকে প্রথম এখানে এলে তাই I একটু দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি I
সুজন একটা বই আর একটা প্যাকেটে তৃণার হাতে দিলো I খুব অবাক হয়ে প্যাকেটগুলো হাতে নিল তৃণা I একটা কবিতার বই মহাদেব সাহার I তৃণা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
– আর এর মধ্যে কি ?
– একটা শাড়ি I তোমাকে শাড়ি পরলে খুব সুন্দর দেখায় I আমি কখনো তোমাকে নীল রঙের শাড়িতে দেখিনি I তাই কিনলাম I তুমি পরলে আমার খুব ভালো লাগবে I
সুজন ভেবেছিল তৃণা হয়তো উপহার গুলো নেবেনা; কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে তৃণা শাড়িটা ব্যাগের মধ্যে রেখে দিল I বইটা হাতেই ধরে রাখল I তারপর বলল
– চলো যাই, দেরী হয়ে যাচ্ছে I
****************
-কই যাও তৃণা ?
– ছাদে যাচ্ছি দাদি I
– এত রাতে ছাদে কি করতে যাও ?
– এমনি I আমি রোজই যাই I
– তুমি কি আমার উপর রাগ করছো ?
– না রাগ করিনি I
– বস I শুনো তোমার ভালোর জন্যই বলি I বিয়াটা কইরা ফালাও I আমি আজ আছি কাল নাই I তোমারে নিয়া সবসময় চিন্তায় থাকি I মন টিকে না I তোমার বিয়েটা হইলে নিশ্চিন্ত হইতে পারি I
– আমি এখন বিয়ে করতে চাই না দাদি I পড়াশোনা শেষ করতে চাই আগে I
-পড়াশোনা তো বিয়ের পরেও শেষ করা যায় I
-বললাম তো এখন বিয়ে করতে চাচ্ছি না I তোমরা সবাই হঠাৎ এরকম উঠে পড়ে লাগলে কেন ?
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে I তুমি যেমন চাইবা তেমনই হবে I
তৃণার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল I ও বই আর ফোন নিয়ে ছাদে চলে গেল I আসার পর থেকে এই জবাবদিহিতা শুরু হয়েছে I অসহ্য লাগছে এইসব I বাসায় কথা বলতে হবে I আর একটা বছর আছে I এবছরটা হলে থাকতে চায় ও I এত ঝামেলর মধ্যে পড়াশোনা সম্ভব না I
আজ আকাশে মেঘ জমে আছে I তারাদের দেখা মিলছে না I তৃণা ছাদের এক কোনায় বসে সুজনের দেয়া বইটা খুলল I শাড়িটা এখন পর্যন্ত দেখারও সুযোগ পায়নি I বইয়ের প্রথম পাতায় একটা কবিতা লিখে দিয়েছে ও I
তুমি চলে যাবে বলতেই বুকের মধ্যে
পাড় ভাঙার শব্দ শুনি-
উঠে দাঁড়াতেই দুপুরের খুব গরম হাওয়া বয়,
শার্সির কাঁচ ভাঙতে শুরু করে;
দরোজা থেকে যখন এক পা বাড়াও
আমি দুই চোখে কিছুই দেখি না-
এর নাম তোমার বিদায়, আচ্ছা আসি, শুভরাত্রি,
খোদা হাফেজ।
তোমাকে আরেকটু বসতে বললেই তুমি যখন
মাথা নেড়ে না, না বলো
সঙ্গে সঙ্গে সব মাধবীলতার ঝোপ ভেঙে পড়ে;
তুমি চলে যাওয়ার জন্যে যখন সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকো
তৎক্ষণাৎ পৃথিবীর আরো কিছু বনাঞ্চল উজাড়
হয়ে যায়,
তুমি উঠোন পেরুলে আমি কেবল শূন্যতা শূন্যতা
ছাড়া আর কিছুই দেখি না II
তৃণার ভেতরটা হটাৎ খুব এলোমেলো লাগল I বুকের মধ্যে প্রচন্ড একটা কষ্ট টের পেল I হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠল তৃণা I ফোন বাজছে; ধরতে ইচ্ছা করছে না I ফোনটা বেজে বেজে থেমে গেল I যাক ভালই হয়েছে I টুং করে একটা মেসেজ এলো I দেখতে ইচ্ছা করছে না I আবারো বাজছে ফোনটা I বাধ্য হয়ে তৃণা ফোনটা ধরল I
– হ্যালো I
– কি হয়েছে তৃণা ? তুমি কাদছো কেন ?
– কিছু হয়নি I
-তুমি কি ছাদে ?
– হ্যাঁ I
– বাসায় কিছু হয়েছে ?
-না I
– আমাকে বলবেনা ?
– না I
অনেকক্ষণ দুজনেই চুপ করে রইলো I পরস্পরের নীরবতাটাই যেন অনুভব করল I অনেকক্ষণ পর সুজন বলল
– তৃণা..
– হু.
– তোমাকে খুব মিস করছি I
তৃণার খুব বলতে ইচ্ছা করল আমিও; কিন্তু বলতে পারল না I
***************

এই নিয়ে দুইবার ফোন করেছে হিয়া তৃণাকে I প্রতিবারেই কল ওয়েটিং এ দেখাচ্ছে I হিয়া মনে মনে একটু হাসলো I সুজনের সঙ্গে কথা বলছে নিশ্চয়ইI কিযে দারুন হবে এরকম হলে I রাতিনের সঙ্গে ওর বিয়ের ডেট ফিক্স হয়েছে ঈদের পরে I রোজা শুরু হতে আর কয়েকদিন বাকি I ওরা দুজনে মিলেই কেনাকাটা করছে I বিয়ের, সেইসঙ্গে আবার ঈদের ও I তৃণার পাত্রী দেখানোর ব্যাপারটা হিয়া মায়ের সঙ্গে শেয়ার করেছে I সুলতানা বেশ চিন্তায় পড়ে গেছেন I
হিয়া যতটা মারকুটে স্বভাবের, তার মা সুলতানা ঠিক ততটাই অমায়িক I চোখের পলকে বন্ধুত্ব করে ফেলতে পারেন; তা হোক সে তরকারিওয়ালা কিংবা কোন শিল্পপতির স্ত্রী I হিয়ার কাছ থেকে তৃণার ছেলে দেখানোর কথাটা সুলতানা শুনেছেন I এই মেয়েটাকে তিনি অসম্ভব স্নেহ করেন I তার যদি নিজের কোন ছেলে থাকতো, তাহলে ওকেই বিয়ে করিয়ে আনতেন I মেয়েটা যেমন সাহসী, দৃঢ়চেতা, তেমনি তার আত্মসম্মানবোধ I নিজের মেয়ের চাইতে কোন অংশে কম স্নেহ করেন না তিনি তৃণাকে I ছেলে তৃণার বড় চাচির আত্মীয় শুনে চিন্তায় পড়ে গেছেন সুলতানা I তৃণার বড় চাচী রেহানাকে দুই চোখে দেখতে পারেননা সুলতানা I মহিলা এক নাম্বারের একচোখা I অসম্ভব স্বার্থপর I তার আত্মীয়র সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করেছে; নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন একটা ঘাপলা আছে I সুলতানা তাই ছেলের নাম পরিচয় বের করে সব খোঁজখবর করে ফেলেছেন I এটা করতে অবশ্য তাকে তেমন বেগ পেতে হয়নি I তার বান্ধবীর খালাতো বোন রেহানার পরিচিত I তার মাধ্যমেই ছেলের ঠিকুজি বের করে নিয়েছেন I তারপর পাড়ায় ,মসজিদে, অফিসে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে যে খবর পেয়েছেন, তাতে তার মাথা ঠিক নেই I এই ছেলের সঙ্গে কোনোভাবেই তৃণার বিয়ে দেওয়া যাবে না I কোনোভাবেই না I
চলবে………
তোমাকে বলার ছিল ………
ত্রয়োদশ পর্ব
লেখনীতে
অনিমা হাসান

এই পর্বে যে কবিতাটা দেয়া হয়েছে তার নাম ‘তুমি চলে যাবে বলতেই ‘লিখেছেন মহাদেব সাহা

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১২

0

তোমাকে বলার ছিল……
দ্বাদশ পর্ব

পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো,
মনে থাকবে ?

বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব,
সন্ধে হলে বসবো দু’জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায়
তারার চোখের জল গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক’রে
দুচোখ ভ’রে থাকবো চেয়ে
মনে থাকবে?
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেবো
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন
মনে থাকবে ?
আমি হবো উড়নচন্ডি এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেবো।
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে ?
এই নিয়ে কবিতাটা মোট এগারো বার পড়ল তৃণা I প্রতিবার শেষ করেই মনে হয় আবার পড়ি I এই কবিতাটা কাল রাতে পাঠিয়েছে সুজন I গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন রাতে একটা করে কবিতা পাঠায় I প্রথমদিকে তৃণা রাগ করত I কয়েকবার ফোন করে নিষেধ ও করেছে I কিন্তু আজকাল সুজন এমন লাগামছাড়া কথাবার্তা বলে ভয়ে এখন আর ফোন করে না তৃণা I এই যেমন সেদিন তৃণা ফোন করে বলল
– তুমি আর কতদিন আমাকে এভাবে কবিতা পাঠাবে ?
– সারা জীবন I বুড়ো হয়ে গেল ও পাঠাবো I কোনদিন যদি পাঠাতে ভুলে যাই তাহলে বুঝতে হবে….
– কি বুঝতে হবে ?
– যে সম্পর্কের ধুলো জমে গেছে
– তখন কি করবে ?
– নেক্সট হানিমুন প্ল্যান করব
– কি করবে !!?
– তোমাকে নিয়ে পাহাড়ে জঙ্গলে চলে যাব I আমার বাবা-মা ও তাই করে জানো তো I যখন দেখে বেশি ঝগড়া হচ্ছে তখন দুজন মিলে কোথাও বেড়াতে চলে যায় I সপ্তাহ দুয়েক ঘুরে রিলেশনশিপ রিচার্জ করে আসে I দারুন আইডিয়া না ? আমরাও তাই করব I
তৃণার কান গরম হয়ে গেল I ও কোনমতে বলল
– তোমাকে ফোন করাই আমার ভুল হয়েছে
– ঠিক বলেছ I এরপরে আর ফোন করো না আমাকে বলো আমি দেখা করতে চলে আসব I
তৃণা ভয়ে ফোন রেখে দেয় I এই ছেলের মাথা খারাপ হয়ে গেছে I কিন্তু আজকের এই কবিতাটা পড়ে কেন যেন রাগ হচ্ছে না অসম্ভব ভালো লাগছে I
কাল রাতে ভাল ঘুম হয়নি I বারবার ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল I কি সবএলোমেলো স্বপ্ন দেখছিল I খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেছে I তৃণা হাত মুখ ধুয়ে এক কাপ চা নিয়ে ছাদে চলে এসেছে I তখনো ভোরের আলো ফুটে নি ভালোমতো I তৃণা অনেকক্ষণ ছাদে হাটলো I রেলিঙে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকলো অনেকক্ষণ I আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠা শহরটাকে দেখলো I প্রতিটি শহরেই ভোরবেলাকার একটা নিজস্ব চরিত্র আছে I খুব ইচ্ছা করে এইরকম ভোর গুলোতে নতুন নতুন শহরে হাঁটতে I তৃণা ঠিক করেছে বিসিএস দেবে I বদলির চাকরি করলে বেশ হবে I বিভিন্ন শহর ঘুরে দেখা যাবে I কিন্তু মাঝখান থেকে এরা এই বিয়ের ঝামেলা টা যে কেন পাকাচ্ছে বুঝতে পারছেনা তৃণা I সব গন্ডগোল বেধে যাবে I দাদি কে একটু বুঝিয়ে বলতে হবে এভাবে রাগ করে থেকে লাভ হবে না I হিয়াটার ও বিয়ে ঠিক হয়ে গেল I এ শহরে আর কিবা রইল ওর I বদলির চাকরি নিয়ে অন্য শহরে চলে যাবে বরং I সেই সব দিক থেকে ভালো I যতদিন বিসিএস না দিচ্ছে কোন একটা স্কুলে চাকরি নিয়ে ঢাকার বাইরে চলে যাবে I চট্টগ্রামের দিকে হলে ভালো I দাদির কাছাকাছি থাকা যাবে I আর একটা বছর কোনমতে ওদেরকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাখতে হবে I
তৃণা কবিতাটা আরেকবার পড়ল I কবিতার নিচে একটা দু লাইনের ম্যাসেজ দিয়েছে সুজন I লিখেছে
আমি পরের জন্মে বিশ্বাস করি না তৃণা I তোমাকে আমার এই জন্মেই চাই I
কেন যে এরকম পাগলামি শুরু করেছে ছেলেটা বুঝতে পারছে না তৃণা I মাঝে মাঝে মনে হয় কি হতো যদি ওর জীবনটা আর দশটা মেয়ের মত স্বাভাবিক হত I যদি ওর ও বাবা মা থাকতো কোনদিন তৃণা ও ওর ভালবাসার মানুষটিকে ওর বাবা-মার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতো I সবকিছু কত সুন্দর হতো Iতৃণা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চায়ের কাপটা মেঝে থেকে তুলে নিল নিচে নামবে বলে I তখনই সুজনের ফোনটা এলো I তৃণা বলল
-তুমি এত সকালে
– একটু নিচে আসবে তৃণা
– নিচে কোথায় ?
– তোমাদের বাসার নিচে
-কেন?
– তোমাকে কোথাও নিয়ে যাবো I কিছু দেখাতে চাই
– তুমি কোথায় সুজন ?
– তোদের বাসার নিচেই
তৃণা আকাশ থেকে পড়ল I এই ছেলের সমস্যা কি ? বাসা অবধি চলে এসেছে I সুজন তাড়া দিয়ে বলল
– তুমি নামবে, না আমি উপরে ছাদে চলে আসব ?
– না দাঁড়াও আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি
– পাঁচ মিনিট কেন লাগবে ? সিঁড়ি দিয়ে নামতে বড় জোর চল্লিশ সেকেন্ড লাগা উচিত
– আমাকে চেঞ্জ করে বের হতে হবে
– চেঞ্জ করার দরকার নেই I গোলাপি তে তোমাকে খারাপ লাগছে না
তৃণা ভয় পাওয়া চোখে এদিক ওদিক তাকালো Iসুজন ওকে কি করে দেখল ও বুঝতে পারছে না I তৃণা গম্ভীর গলায় বলল
– বললাম তো পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি
– আচ্ছা এসো
তৃণা ঘরে ঢুকে চেঞ্জ করে একটা বাসন্তী রঙের সুতির জামা পরলো I সকাল সকাল গোসল করাতে চুল এখনো ভেজা I ভেজা চুলটা আঁচড়ে নিল I বাঁধলো না আর I ব্যাগটা কাঁধে তুলে বেরিয়ে যাবার সময় রেহানার সঙ্গে দেখা I রেহানা অবাক গলায় বলল
– এত সকালে কোথায় যাও ?
– একটু লাইব্রেরীতে যাচ্ছি
– পরীক্ষা তো শেষ
– একটা বই ছিল ফেরত দিতে হবে
– আচ্ছা যাও
রেহানা আজকাল চোখে চোখে রাখে তৃনাকে I কি জানি কখন আবার কি করে ফেলে I
তৃনা নিচে নেমে দেখলো সুজন একটা ছোট ছেলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্প করছে I দুজনের মুখই হাসি হাসি I ছেলেটার পরনে হাফ প্যান্ট গায়ে কোন জামা নেই I হাতে একটা বড় আইসক্রিম I তৃণা বুঝলে আইসক্রিমটা সুজনই কিনে দিয়েছে I সুজন এক পলকে তৃনাকে দেখে চোখ নামিয়ে নিল I কাছাকাছি আসার পর দুজন হাঁটতে লাগলো পাশাপাশি I কেউ কোন কথা বলল না I হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তা পর্যন্ত যাবার পর রিক্সা নিল I তৃনার অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করছে এই যেমন সুজন কেন এসেছে, কখন এসেছে ওকে কেমন করে দেখলো আবার এখন কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে না I এই ব্যাটা নিজের থেকেও কিছু বলছে না I কোন কথাই বলছে না একবার শুধু জিজ্ঞেস করল তোমার বসতে কষ্ট হচ্ছে তৃনা I রিক্সার হুড তুলে দেবো I তৃণা জবাব দেয়নি I রিক্সা নীলক্ষেত পার হয়ে ইউনিভার্সিটি চত্বরে ঢুকছে I
-আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
– আমার বাসায় I তোমাকে বলেছিলাম না বাসা রেনোভেট করেছি I সেটাই দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি
সুজনদের বাসায় আগে গেছে তৃণা I মনে আছে ফার্স্ট ইয়ারের রেজাল্ট এর পর সবাই খুব করে ধরল সুজনকে খাওয়ানোর জন্য Iক্লাসে প্রায় পঞ্চাশ জনের মত স্টুডেন্ট Iএতজন মিলে কোন রেস্টুরেন্টে গেলে আরাম করে খাওয়া যাবে না I তাই ঠিক হল সুজনের বাড়িতেই অনুষ্ঠান করা হবে I যেহেতু এটা ওর নিজের বাসা এবং ও একাই থাকে পুরো একটা ফ্লোর নিয়ে I বিশাল আয়োজন করেছিল সুজন I বিয়ে বাড়ির ভোজ এর মত I সুজনের বইয়ের কালেকশন দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল তৃণা I ওর একটা বই কিনতে হলে দশবার ভাবতে হয় কত হিসেব মেলাতে হয় টাকার I ভীষণ ঈর্ষা হয়েছিল সেদিন তৃনার I
রিক্সা থেকে নেমে সুজন কোন রিক্সা ভাড়া দিল না I তৃণা বেশ অবাক হয়ে নিজে ভাড়া দিতে গেলে সুজন বলল
– নিতে হবে না I আমি মাসের শুরুতে দিয়ে দেই I
তৃণা আশ্চর্য হয়ে গেল
মাসের শুরুতে দিয়ে দাও মানে ?
আমার মাঝে মাঝে রিক্সা করে ঘুরতে ইচ্ছা করে I তাই এরকম বন্দোবস্ত করেছি আর কি I
সুজন দের বাড়িটা তিন তলা I ও তিন তলাতেই থাকে I দরজায় তালা দেয়া I সুজন তালা না খুলে উপরের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল I তৃনা একটু থমকে গেল I ওকে থামতে দেখে সুজন পেছন ফিরে বলল
– কি হলো এস
তৃনা পেছনে পেছনে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল I ছাদের দরজার পাশে একটা সু রেক রাখা Iসুজন জুতো খুলে রেখে দরজার তালা খুললো I তৃণা ও স্যান্ডেল খুলে রেখে পেছনে পেছনে এগিয়ে গেল I ভেতরের দিকে তাকিয়ে তৃণার পা দুটো জমে গেল I মনে হচ্ছে এটা বাস্তব নয় কোনো রূপকথা I বিশাল লম্বা একটা ছাদ I মেঝেটা পাথরের I এক পাশে একটা বড় দোলনা রাখা I তৃনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সুজন ওর একটা হাত ধরে বলল ভেতরে এসো I তৃণা ভেতরে ঢুকলো I চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো I এক পাশে একটা ঘর তার সামনে বারান্দা সবুজ ঢেউ খেলানো টিনের সেড দেয়া I বারান্দায় দুটো চেয়ার রাখা I মাঝখানে একটা টি টেবিল I টেবিলের উপর কয়েকটা বই I কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন পুরোটা I তৃণা আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল I বিশাল একটা ঘর I ঘরের মধ্যে একটা খাট ছাড়া আর কোন আসবাব নেই I এক পাশের দেয়াল জুড়ে বইয়ের আলমারি I পুরোটা বিভিন্ন রকমের বই দিয়ে ভরা I সুজন বলল
চা খাবে ?
তৃণা কোন জবাব দিল না I ওর এখনো ঘোর কাটেনি I সুজন বললো আচ্ছা ঠিক আছে চা খেতে হবে না চলো বসি I ওরা দুজনে দোলনার মধ্যে বসলো দুই পাশে I কাল শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি পড়েছে I ছাদটা একটু ভেজা ভেজা রোদের তেমন তেজ নেই I বাতাসে ঠান্ডা ভাব I তৃণার একটু একটু শীত করছে I ওর ভেজা চুল শুকিয়ে গেছে বাতাসে I বাঁধতে ইচ্ছা করছে না I তৃণা নিচের দিকে তাঁকিয়েই টের পেল সুজন ওর দিকে দিকে তাকিয়ে আছে অপলক I সেই দৃষ্টিতে আছে একরাশ মুগ্ধতা Iতৃণা চুপ করে বসে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে I কোন কথা বলছে না I কেন জানি হঠাৎ করে ওর মনটা খুব খারাপ লাগছে I সুজন বলল
চলো তোমাকে রান্নাঘরটা দেখিয়ে আনি
রান্নাঘরে ঢুকে তৃণা আরেকদফা অবাক হল I একপাশে একটা ইন্ডাকশন চুলা I তারা একদিকে মাইক্রোওয়েভ I অন্যদিকে কফি মেকার আর তার পাশে একটা ওয়াটার হিটার আর একটা তাকে চায়ের সরঞ্জাম I কৌটো গুলোর মধ্যে সুন্দর করে নাম লেখা I তৃণা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছিল I হঠাৎই টের পেল সুজনের একেবারে ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে I এত কাছে যে ওর কাঁধে নিঃশ্বাস টের পাওয়া যাচ্ছে I তৃণা হঠাৎ করেই ঘুরে দাঁড়ালো I সুজন একটু চমকে দু পা পিছিয়ে গেল I তারপরও লজ্জা পেয়ে বলল
সরি তোমাকে আনকম্ফোর্টেবল করতে চাইনি I আসলে এই টি স্টেশনটা আমি শুধু তোমার জন্য বানিয়েছি I আমি বিশেষ একটা চা খাইনা I
তারপর আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেল রান্নাঘর থেকে Iতৃনার খুব হাসি পেল I ছেলেটা একদম বাচ্চাদের মতন I বের হয়ে পুরো ছাদটা ঘুরে দেখল তৃনা I অনেক ফুলের টব রাখা মাটি দিয়ে ভরা কিন্তু কোন গাছ লাগানো হয়নি I তৃণা একটু অবাক হলো I
– তুমি কি এখন এখানেই থাকো ?
– হ্যাঁ Iতোমার পছন্দ হয়েছে?
– খুব সুন্দর হয়েছে I দেখানো তো শেষ এবার আমি যাই
– এখন কেন যাবে I আমিতো ভাবলাম আমরা একসঙ্গে লাঞ্চ করব I আমি তোমার জন্য রান্না করতে চাইছিলাম I
তৃনা হাসতে হাসতে বলল
– তুমি রান্না ও করতে পারো ?
– না পারি না I ভেবেছিলাম তুমি দেখিয়ে দেবে
– বাহ I তুমি আমাকে ইনভাইট করে আমাকে দিয়েই রান্না করবে ? তোমার অবস্থা তো দেখি মামুন ভাইয়ের চেয়েও খারাপ I
সুজন হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল I তারপর বলল
– মামুন ভাইটা কে ?
– কেউ না
– সেই নুডুলসওয়ালা নাকি ?
তৃণা হতভম্ব হয়ে গেল I বলল
– তুমি কি করে জানলে ?
– ইচ্ছা করলেই জানা যায় I খিদে পেয়েছে I চলো কিছু বানাই I
তৃনার কেন যেন ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে না I হঠাৎই মনে হলো একটা দিন না হয় হোক সবকিছু নিয়ম ভেঙ্গে I তৃণা রান্নাঘরে ঢুকে পরল
দেখি কি আছে তোমার রান্না ঘরে I ফ্রিজের ভেতর থেকে ডিম পাউরুটি ধনেপাতা পেঁয়াজ মরিচ সবই পাওয়া গেল I উপরের তাকে মশলাপাতি চালডাল নুন সবি আছে I তৃনা বললো
– বাহ ভালই তো সংসার পেতেছে I তা কি রান্না করবো বলো খিচুড়ি না বোম্বাই টোস্ট ?
– তোমার যেটা ইচ্ছা I আমি দুটোই খাই
চুলায় খিচুড়ি বসানো হয়েছে I তৃণা ডিম ভাজির আয়োজন করছে I সুজন বলল
তৃণা একটা কবিতা শোনাও না
অবশ্যই শোনাবো I এই মুহুর্তের জন্যে একেবারে পারফেক্ট একটা কবিতা মাথায় এসেছে I শোনো
ভালবাসার সময় তো নেই
ব্যস্ত ভীষন কাজে,
হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে।

কাজের মাঝে দিন কেটে যায়
কাজের কোলাহল
তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল।

নদী আমার বয় না পাশে
স্রোতের দেখা নেই,
আটকে রাখে গেরস্থালির লেই।

তোমার দিকে ফিরবো কখন
বন্দী আমার চোখ
পাহারা দেয় খল সামাজিক নখ।

কবিতা শেষ করার আগেই তৃণা হি হি করে হেসে ফেললো I সুজন করুন মুখ করে তাকিয়ে আছে I হঠাৎ করেই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা মুছড়ে উঠলো তৃণার I মনে হলো এই মুহূর্তটা কি সত্যিই না স্বপ্ন I এরকম একটা স্বপ্ন দেখা কি ওর জন্য অনেক বড় অপরাধ ?
চলবে….
লেখনীতে
অনিমা হাসান
(আজকের পর্বে দুটো কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে I প্রথমটা ,”মনে থাকবে? লিখেছেন আরণ্যক বসু আর দ্বিতীয় টা ভালবাসার সময় তো নেই লিখেছেন রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ )

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১১

0

তোমাকে বলার ছিল……
একাদশ পর্ব
তৃণা ভেবেছিল সুজন ওকে কখনো ভালোবাসার কথা বললে ও খুব খারাপ ব্যবহার করবে I কিন্তু কেন যেন পারল না I হয়তো মনটা খারাপ ছিল তাই I বরং ভীষণ কান্না পেয়ে গেল I আবেগে ভেসে যাওয়ার মতন মেয়ে তৃণা নয় I ছোটবেলা থেকেই ও নিজেকে খুব শক্ত প্রাচীর দিয়ে ঘিরে বড় করেছে, যেন কোনো আঘাত ওকে ভেঙে ফেলতে না পারে; কোন আবেগ নাড়িয়ে দিতে না পারে I মোবাইলের সাউন্ডটা বন্ধ করে অনেকক্ষণ কাঁদলো তৃণা I সুজন চুপ করেই ছিল অনেকক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে বলল
– তুমি কিছু বলবে না তৃণা ?
ততক্ষনে তৃণা নিজেকে সামলে নিয়েছে I যদিও ওর গলা এখনো ভেঙে আছে I তৃনা বললো
– তুমি আর আমাকে কখনো ফোন করো না সুজন l
– কেন?
– আমার মনে হয় সেটাই সব দিক থেকে ভালো হবে l
-আমি তোমাকে ভালবাসি তৃণা I এটা কি আমার অপরাধ?
– যদি এটা ভালোবাসা হতো, তাহলে হয়তো অপরাধ হতো না I কিন্তু তুমি যেটাকে ভালোবাসা ভাবছো, এটা আসলে ভালোবাসা নয় l
– তাহলে এটা কি?
– আমি একটা ক্রাইসিস মোমেন্ট-এ তোমার সঙ্গে ছিলাম; তাই হয়তো সাময়িক ভাবে একটা ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হয়েছে I এটাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করোনা I কিছুদিন পর দেখবে আমার কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অস্থির লাগবে I
– আমাকে তোমার এরকম মনে হয়?
– তুমি কিরকম সেটা ফ্যাক্টর নয় I এটাই রিয়ালিটি l
– তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করছো না?
– আমি ভালোবাসা ব্যাপারটাতেই বিশ্বাস করিনা I তোমাদের দুজনকে দেখার পর তো আরো করি না I কদিন আগে তুমি হিয়াকে ভালবাসতে; আজ আমাকে ভালোবাসো, কদিন পর হয়তো অন্য কাউকে ভালো লাগবে l
সুজন হঠাৎ চুপ করে গেল I ও যত ভালোই পড়াক না কেন তৃণার সঙ্গে কথায় পেরে ওঠা ওর কাজ নয় I তৃণা কথাগুলো এত জোর দিয়ে বলছে, যেন মনে হচ্ছে কথাগুলোও সুজনকে নয়, নিজেকেই বলছে I সুজনের হঠাৎ ভীষণ অভিমান হল I দুম করে ফোনটা রেখে দিল ও I দুই হাতে মাথা চেপে ধরে কোলের উপর ফোনটা রেখে বসে থাকল অনেকক্ষণ I ফোন বাজছে I নিশ্চয়ই তৃণাই কল করেছে আবার I সুজন ফোনটা ধরে বলল
– আমাকে আরো অপমান করা কি বাকি রয়ে গেছে তৃণা?
– হ্যালো সুজন l
– কে?
– আমি হিয়া l
*********
সামাদ সাহেব আর তার স্ত্রী রেহানা দুজনে মিলে সব গুছিয়ে নিয়েছেন I পরীক্ষার পরেই বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে I বেশি দেরি করা যাবে না I তৃণা একবার পাশ করে চাকরি নিয়ে ফেললে, তখন ওকে সামলে রাখা মুশকিল হবে I যা করার এখনই করতে হবে I রেহানা ফোন করে শাশুড়িকে জানিয়ে দিয়েছেন; যেন এই ছুটির মধ্যে ওকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়ে ফেলেন I হিসেব মতো তৃণা ফিরে এলে বলতে হবে ছেলের মা দেখা করতে চায় I পছন্দ হলে আংটি পরিয়ে যাবে এতটুকুই I শাশুড়িকে আনিয়ে রাখতে হবে I আংটি পরানোর পর হঠাৎই সামাদ সাহেব বলবেন আংটি যখন পড়ানো হয়ে গেছে, তখন না হয় আজকেই বিয়েটা পরিয়ে ফেলি I ঝামেলা রেখে কি লাভ I তৃণার পড়াশোনা শেষ হলে তখন না হয় ছোট করে একটা অনুষ্ঠান করে ফেলা যাবে I আগে থেকেই কাজী ঠিক করে রাখতে হবে I একটা নতুন শাড়ির ব্যবস্থাও রাখতে হবে I একবার বিয়েটা পড়ানো হয়ে গেলে আর কোন চিন্তা নেই I এখন সবকিছু ভালই ভালই হলেই হয় I
********
সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেকক্ষণ I ঘরের ভেতর আবছা অন্ধকার I অন্ধকার ঘরেই বসে আছে সুজন I উঠে আলো জ্বালাতে ইচ্ছে করছে না I কাল দুপুরের ঘটনা টা এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না I হঠাৎ করে একসাথে এতগুলো ঘটনা ঘটে যাওয়ায় কেমন যেন নিতে পারছে না ও I তৃণার কথাগুলো এত তীব্রভাবে আঘাত করেছিল ওকে যে মনে হচ্ছিল ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে I ফোনের রিংটোন যখন বাজলো ধরেই নিয়েছিল তৃণা ফোন করেছে I মনের ভিতর একটা ক্ষীণ আশা ছিল I হয়তো তৃণার কষ্ট হয়েছে অপরাধবোধ জন্মেছে এভাবে কথা বলে I কিন্তু ফোন ধরে একটা ধাক্কা খেয়েছে সুজন I ফোনটা তৃণা করেনি করেছিল হিয়া I অসম্ভব বিরক্তি নিয়ে সুজন বলেছিল
– হিয়া ? তুমি হঠাৎ, কি মনে করে ?
– এত পার্ট নেওয়ার দরকার নেই I তোমার সঙ্গে আবার ভাব করার জন্য ফোন করিনি I একটা ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য ফোন করেছি I
– কি ইনফর্মেশন ?
– বলছি I তার আগে বল তৃণা তোমাকে কি অপমান করেছে ?
-সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার I
– আরে ঢ্যামনা গিরি ছাড়ো তো I আমি এখানে তোমার স্বার্থের কথা ভাবছি তুমি আমার সঙ্গে ভাব দেখাচ্ছো ?
সুজন হতভম্ব হয়ে গেল I কোনমতে বলল
– এটা কি ধরনের ল্যাংগুয়েজ ইউজ করছ তুমি ?
– এটাই আমার ইউজুয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ I এতদিন তোমার সঙ্গে অনেক ভালো সেজে ছিলাম I এখন কি তুমি বলবে তোমার আর তৃণার মধ্যে কি হয়েছে , নাকি তৃণার বিয়ের পর বলবে I
– কি বললে ?
– ঠিকই শুনেছো I তৃণার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে I
-কবে ? আমার সঙ্গে তো রেগুলার কথা হয় I কই আমাকে তো একবারও বললে না
– তোমাকে কেন বলবে ? তুমি কি ওর বয়ফ্রেন্ড ? শোনো যে ছেলের সঙ্গে তৃণার বিয়ে ঠিক হয়েছে ঐরকম থার্ডক্লাস মারকা ছেলের সঙ্গে আমি কিছুতেই ওর বিয়ে হতে দেবো না I ভেবেছিলাম তোমাকে দিয়ে হয়তো কোনো লাভ হবে I কিন্তু তুমি আগে যেরকম হোপলেস ছিলে এখন তার থেকেও বেশি হোপলেস I ফোন রাখলাম I
– শোনো হিয়া I হ্যালো
– বল শুনছি
– তৃণা কি কাউকে ভালোবাসে ?
-হ্যাঁ
এক মুহুর্তে সুজনের পৃথিবীটা দুলে উঠলো I এজন্যই তাহলে তৃণা ওকে মানা করে দিয়েছে I কোনমতে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
– কাকে ? ওই পিয়াস কে ?
– আরে নারে গাবলু
– তাহলে ?
– তৃণা যাকে ভালোবাসে তার কথা সে মরে গেলেও স্বীকার করবে না
সুজনের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে I ও কোনমতে বলল
– কাকে ভালবাসে তৃণা ?
-তুমি এত ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছ কেন ? তুমি কি ওকে ভালবাসো ?
– হ্যাঁ
– বলেছ ওকে সে কথা ?
– বলেছি
– তারপর ? ও কি বলেছে ?
– বলেছে ও ভালবাসায় বিশ্বাস করে না I
– আমি জানতাম এটাই বলবে I তারপর তুমি কি করলে ? অভিমান করে বসে থাকলে ?
– তো কি করবো আমি ?
– ওকে ওর মতো করেই হ্যান্ডেল করতে হবে I আমি বলছি তোমাকে কি করতে হবে I শোনো মনোযোগ দিয়ে I
*********
তৃণা ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে I অসম্ভব ক্লান্ত লাগছে; খিদেও পেয়েছে I পথে কিছু খেতে পারেনি l অন্যান্য সময় দাদি খাবার দিয়ে দেয় আজ রাগ করে খাবারও নেয়নি I আসার আগ পর্যন্ত দাদির ঘ্যানর ঘ্যানর চলছিল I হঠাৎ করে কি হলো বুঝতে পারছে না তৃণা I
ঘরে ঢুকে ব্যাগ রেখে হাত মুখ ধুয়ে এসে দেখলো বড় চাচী দাঁড়িয়ে আছেন ঘরে I তৃণাকে দেখে মধুর কন্ঠে বললেন
-ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও; এত লম্বা জার্নি করে এসেছ I টেবিলে খাবার দেয়াই আছে I
তৃণা বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে কি হয়ে গেল I এরকম ব্যবহার-এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে I কি হতে পারে সেটা I তার আত্মীয়র সঙ্গে তৃনাকে বিয়ে করিয়ে উনার কি লাভ I এতসব ভাবতে ইচ্ছা করছে না I মাথা ধরে আছে I হিয়াকে ফোন করতে হবে I কালই ওদের বাসায় রাতিনের আসার কথা ফ্যামিলি নিয়ে I হিয়া বলেছে সকাল সকাল চলে যেতে I তৃণা ফোনটা হাতে নিয়ে হিয়াকে কল করতে যাবে, তার আগেই দেখল একটা মেসেজ এসেছে I মেসেজ ওপেন করে তৃণা হতভম্ব হয়ে গেল I ও ভেবেছিল সুজনের সঙ্গে ওই রকম আচরণ করার পর হয়তো আর কখনো ফোন করবে না; কোনো যোগাযোগ রাখবে না I কিন্তু তা না করে সুজন যেটা লিখে পাঠিয়েছ সেটা পড়ে ও হতবাক হয়ে গেল I তৃণা বুঝতে পারছে না এসব কি হচ্ছে I সুজন লিখেছে
তুমি ভালো না বাসলেই
বুঝতে পারি ভালোবাসা আছে।
তুমি ভালো না বাসলেই
ভালোবাসা জীবনের নাম,
ভালোবাসা ভালোবাসা বলে
দাঁড়ালে দু’হাত পেতে
ফিরিয়ে দিলেই
বুঝতে পারি ভালোবাসা আছে।
না না বলে ফেরালেই
বুঝতে পারি ফিরে যাওয়া যায়
না কখনো।
না না বলে ফিরিয়ে দিলেই
ঘাতক পাখির ডাক শুনতে পাই চরাচরময়।
তৃণার মাথা ঝিমঝিম করছে I ও কোনমতে ফোনটা করে বলল
– তুমি এসব কি শুরু করেছে সুজন ?
– শুরুটা তো আমি করিনি I আমিতো শুধু কন্টিনিউ করছি I
চলবে. ………..
তোমাকে বলার ছিল……
একাদশ পর্ব
লেখনীতে
অনিমা হাসান
আজ যে কবিতাটা দেয়া হয়েছে তার নাম ‘যে পায় সে পায় ‘ লিখেছেন আহসান হাবীব

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১০

0

তোমাকে বলার ছিল……..
দশম পর্ব

– আলু পেঁয়াজের দাম নিয়ে কথা হল ?
মিথিলা অবাক হয়ে কন্ঠে বলল I
-আরে শুধু আলু-পেঁয়াজ না; অন্থন, রিক্সাভাড়া, ড্রাইভার-এর-বেতন, এসব বাদ দিচ্ছিস কেন ? বলতে বলতে হিয়া হি হি করে হেসে ফেললো I
তিন বান্ধবী মিলে অনেকদিন পর বসেছে রোকেয়া হলের বাইরের খোলা চত্বরে I মিথিলা রুম থেকে বাটি-চামচ নিয়ে এসেছে I চা ও এনেছে I একপ্রস্থ চা খাওয়া হয়ে গেছে I এখন নুডুলস খাওয়া হচ্ছে আর নুডুলস নিয়ে গল্প হচ্ছে I তৃণা হাসতে হাসতে বলল
– তোকে খুব মিস করছিলাম রে হিয়া I তুই থাকলে খেলাটা জমে যেত I
– সে আর বলতে I শালাকে কেমন শিক্ষা দিতাম I বাপের জন্মে আর মেয়ে দেখতে রেস্টুরেন্টে যেত না I যাক, তুই আবার এই চার নাম্বার কোয়ালিটি লোককে বিয়ে করার কথা ভাবছিস না তো ?
হিয়ার ফোন বাজছে I বারবার এক পলক দেখে ফোনটা উল্টো করে ঘাসের উপর রেখে দিচ্ছে I তৃণার চোখ এড়ালো না ব্যাপারটা I রাত বেশ হয়েছে I প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে I মিথিলা বলল
– আমার সকালে ক্লাস আছে আমি নিচে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়ছি I তোরা দুজন খাটে শুয়ে পড়িস I
– এই না I আমরা অনেকক্ষণ এখানে গল্প করব I তুই খাটে শুয়ে পড় I দরজাটা শুধু খোলা রাখিস I
– আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম I চা রেখে গেলাম I
মিথিলা চলে গেলে তৃণা বলল,
-কিরে ফোন ধরছিস না কেন ?
-ইচ্ছা করছে না I
-কে?
-রাতিন I
-বিষয় কি? আবার কি ঘট পাকিয়েছিস?
হিয়া ঠোঁট উল্টে বলল
-কিছু না I মানা করে দিয়েছি আজকে I
-আবার? এখন কি করবি?
-কিছুই করব না I এবার একটু পড়াশোনা করতে হবে; তা না হলে ফেল করব I ফেল করলে মা লাথি মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেবে I
তৃণা হেসে ফেললো; তারপর নরম গলায় বলল
-তোর বিষয়টা কি বলতো আমাকে I সবকিছু খুলে বল I কিছু লুকাবি না I আমি তো সব কথাই বলি I তুই ও সবটা বল আমাকে I
-তুই সব কথা বলিস আমাকে ?
-বলি না ?
-বলিস? আজকে যে টিএসসিতে সুজন এসেছিল সেটা আমাকে বলেছিস?
তৃণা হকচকিয়ে গেল I সহসা কি বলবে বুঝে পেলোনা I একটু থেমে বলল
-আমি এটা তোর কাছ থেকে লুকাতে চাই নি I আমি তোকে বলতাম I তাছাড়া আমি ইচ্ছা করে ওকে ডাকিনি I একটা বিপদে পড়ে ডাকতে হয়েছে I
হিয়া ভুরু কুঁচকে বললো
– কি বিপদ ?
– পিয়াস খুব বিরক্ত করছিল I এত বেশি গায়ে পড়া আচরণ করেছিল যে অসহ্য লাগছিল I আমি জানতাম উল্টোদিকেই সুজন আছে লাইব্রেরীতে I তাই ওকে ডেকেছিলাম I
-রিলাক্স ! এত কৈফত দিচ্ছিস কেন? তুই কোনখানে আমার বয়ফ্রেন্ডকে ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিস I
-এভাবে কথা বলছিস কেন ? তোর সাথে অনেকদিন কথা হয়না তাই বলা হচ্ছিলনা I সুজন খুব ভেঙে পড়েছিল I তাই আমি পড়ানোর কথা বলে ওকে প্রতিদিন ফোন করতাম রাতের বেলা; যে সময় কবিতা পাঠানো হতো I তবে এখন মনে হয় সামলে উঠেছে I তাই এসব আর কন্টিনিউ করার দরকার নেই I
হিয়া অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তৃণার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল I ওর চোখের ভাষা পড়তে কখনোই ভুল হয় না হিয়ার I হিয়া খুব আস্তে আস্তে বলল
-সুজন কি তোর প্রেমে পড়েছে?
-কি যা তা কথা বলিস I প্রেমে পড়বে কেন ? আমি একটা সমস্যার সময় ওর পাশে ছিলাম তাই একটা সাময়িক ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হয়েছে I এর বেশি কিছু না I
-বেশি কিছু হলে অসুবিধা কোথায় ?
-অসুবিধা আছে I আর কক্ষনো এসব কথা বলবি না I
-আচ্ছা বলবো না I এত রেগে যাচ্ছিস কেনো?
-রেগে যাচ্ছি না I এবার তোর কথা বল I
-বলছি I শোনো মনোযোগ দিয়ে I সুজনের সঙ্গে যখন প্রেম করতাম, তখন নিজেকে আমি বলে মনে হতো না I মনে হতো আমি অন্য কেউ I সারাক্ষণ নিজের অস্তিত্বটাকে চেপে রেখে ওর সঙ্গে মিশতে হত I আমি যা নই, তা ও কে দেখাতে হত I আবার আমি যা সেটা ওকে দেখানো যেত না I
-কিরকম ?
-এই যেমন ধর আমি একশন মুভি পছন্দ করি I সেটা নিয়ে ওর সঙ্গে গল্প করতে গেলে ও অন্যমনস্ক হয়ে যায়; আবার ও কবিতা নিয়ে কথা শুরু করলে আমার বিরক্ত লাগে I একদিন ওর সামনে একটা স্লাঙ্ বলে ফেলেছিলাম বলে, এমন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল যেন আমি কি অপরাধ করে ফেলেছি I যেন আমি একজন অচেনা মানুষ I শেষের দিকে দম বন্ধ হয়ে আসত I ইচ্ছা করত আমি যেমন, আমাকে কেউ সেই রকম ভাবে ভালোবাসুক, সে-রকমভাবেই পছন্দ করুক I রাতিন এর সঙ্গে কোইন্সিডেন্টলি একদিন ফোনে কথা হয় I গল্প করে খুব ভালো লাগছিল I আমাদের কমন ইন্টারেস্ট অনেক I শুরু থেকেই সবকিছু খুব ক্লিয়ার ছিল I ঠিক করেছিলাম কেউ কোনো কমিটমেন্ট-এ যাব না; যতদিন ভালো লাগবে একসঙ্গে থাকব I একটু ভালো সময় কাটাবো I এই আর কি I
-তো এখন কী হলো ?
-হিসেব মতো আমি ওকে বললাম, আই এম ডান উইথ ইউ I এরপর সে কান্নাকাটি শুরু করে দিল I সে নাকি আমাকে ভালবাসে I এতোটুকু হলেও ছিলো…
-আরো আছে ?
-হ্যাঁ তো I বলেছে আমাকে বিয়ে করতে চায় I কি হাস্যকর ব্যাপার ভাব একবার I
-হাস্যকর এর কি হলো?
-আমি ওকে বলেছি আমার বেশিদিন একজনকে ভালো লাগে না I ও কি বলেছে জানিস? বলেছে ‘আমি আর কোনদিন তোমাকে অন্য কাউকে ভাল লাগতে দেব ই না’ I আমি বললাম ঠিক আছে সেটা না হয় বুঝলাম; কিন্তু তোমার যদি অন্য কাউকে ভালো লেগে যায়, আমাকে ভালো না লাগে তখন?
-তারপর কি বলল?
-তারপরই তো ঘ্যান ঘ্যানানি শুরু হলো I টু মাচ সিরিয়াস হয়ে গেছে I ইউএসএ থেকে ওর বাবা-মা এসেছে I বলছে নাকি আমাদের বাসায় পাঠাবে প্রস্তাব দিয়ে I বিয়ে করে একবারে নিয়ে যাবে ওখানে I
তৃনা বললো, এটা তো ভালো কথা তুই এরকম করছিস কেন? তোর কি ওকে ভাল লাগেনা?
-ভালো লাগে I কিন্তু….
-কিন্তু কি ?
-জানিনা I
-আচ্ছা আমাকে একটা কথা বল I এইযে ও তোর জন্য কষ্ট পাচ্ছে; এতে তোর খারাপ লাগছে না?
-হ্যাঁ লাগছে I
-তুই ওকে বিয়ে করতে চাস না?
-এতদুর ভাবতে পারছিনা I
-একদিন ওকে ডাক; আমরা তিনজন কথা বলি I
হিয়া লাফিয়ে ওঠে তৃণার হাত ধরল I তারপর বলল
-সত্যি তুই কথা বলবি?
-বলবো না কেন?
-আহ কি যে শান্তি লাগছে আমার; তোকে বলে বোঝাতে পারবো না I তুই পাশে থাকলে আর কোন সমস্যা হবে না I
তৃণা একটু গম্ভীর হয়ে গেল I তারপর বলল আমি কিন্তু সুলতানা আন্টির সঙ্গেও কথা বলব I
-সে তুই যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে কথা বলিস I তুই আমার সাথে আছিস, আমার আর কোন টেনশন নেই I
পরীক্ষা প্রায় চলে এসেছে I সেদিনের পরেও সুজনের সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়েছে তৃণার I তবে তৃণা ইচ্ছা করে একটু কাটকাট আচরণ করেছে I পড়াশোনার বাইরে খুব একটা কথা বলেনি I ঝড়ের মত পরীক্ষাটা হয়ে গেল I পরীক্ষা শেষ করে তৃণা দাদা বাড়ি যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে I এর মধ্যে অবশ্য একদিন রাতিনের সঙ্গেও বসা হয়েছে I ছেলেটাকে বাইরে থেকে দেখতে যেমন মনে হয়; কথাবার্তায় সেরকম নয় I বেশ ভদ্র I ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও ভালো I কথা বলে মনে হলো হিয়ার ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস I ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনাতে এডমিশন হয়ে গেছে রাতিনের I ওর বাবা-মা চাইছে ওকে বিয়ে দিয়ে তারপর পাঠাতে I হিয়ার ব্যাপারে সবই বলেছে ও বাসায় I ওদের ইচ্ছে আর এক বছর পর হিয়ার অনার্স কমপ্লিট হলে তখন ওকে নিয়ে যাবে I বিয়েটা এখন হয়ে গেলে কাগজপত্র তৈরি করা সহজ হবে I সুলতানা আন্টির সঙ্গেও একদিন কথা বলল তৃণা I হিয়ার বাবা মা দুজনেই খুব খুশি I পরীক্ষার পর তারা আসছে হিয়াদের বাসায় I কথাবার্তা ফাইনাল করতে I হিয়া বলে দিয়েছে তার আগেই যেন তৃণা দাদা বাড়ি থেকে ফিরে আসে I পরীক্ষা শেষ করে তাই আর বেশী দেরী করলো না তৃণা I পরদিনই দাদা বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল I দুপুর দেড়টার সময় ট্রেন ধরবে সন্ধ্যা নাগাদ পৌছে যাবে I চট্টগ্রাম শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয় ওর দাদা বাড়ি I নেমে একটা বাস ধরতে হয় I তারপর রিক্সা নিলেই পৌঁছে যায় I
পরদিন সকালবেলা তৃণা গোছগাছ করা নিয়ে ব্যস্ত I সেই সময়ই সুজনের ফোন এল I
-কেমন আছো তৃণা ? তুমি যে আমাকে আর ফোন দিলে না?
-আসলে একটু ঝামেলার মধ্যে ছিলাম I আজকে চট্টগ্রামে যাচ্ছি দাদা বাড়ি I তুমি কেমন আছো?
-ভালো
-কী করছো এখন পরীক্ষার পর ?
-বাসা রেনোভেশন করছি I
-ওয়াও I
-শেষ হয়ে গেলে তোমাকে নিয়ে এসে দেখাবো একদিন I
তৃণা একটু ম্লান হাসলো I তারপর বলল আচ্ছা I
-কবে ফিরছো তুমি?
-ঠিক করিনি এখনও I দেখি কতদিন থাকা যায় I
-ঠিক আছে সাবধানে যেও I ফোন করবো আমি I
-ঠিক আছে ভালো থেকো I
তৃণা ভেবেছিল দাদা বাড়িতে আসলে ওর মন ভালো হয়ে যাবে I কিন্তু এবার উল্টো হলো I মন ভালো হবার বদলে আরো খারাপ হয়ে গেল I দাদি সারাক্ষণ বিয়ের কথা বলতে লাগলো I ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একই কথা I ছেলেটা ভালো; তৃণার ব্যাপারে সব জেনেশুনেও বিয়ে করতে রাজি হয়েছে I ছেলে একটু হিসেবে-স্বভাবের এটা ঠিক আছে; তবে এ ধরনের ছেলেদের সাথে সংসার করে শান্তি I কখনো অভাবে থাকতে হয় না I ওর বাবা দুহাতে খরচ করত; তাই তো ব্যবসা করে ডুবলো I তারপর সংসারে অশান্তি শুরু হল Iপালিয়ে বাঁচল বউ বাচ্চা ফেলে Iএইসব নানান কথা শুনতে হল সারাক্ষণ I
তৃণা টিকিট বুক করে ফেলেছে I কাল দুপুরেই রওনা দিয়ে দেবে I এখানে আর ভালো লাগছে না I বিকেল থেকে হঠাৎ করেই আকাশ অন্ধকার করে বৃষ্টি নামল I কেমন মন খারাপ করা আবহাওয়া I ছোট বেলায় এখানে থাকতে তৃণা খুব বৃষ্টিতে ভিজতো I আজ বৃষ্টি টা যেন ঠিক ভেজার মতন নয় I কেমন ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে I তবুও আর হয়তো অনেকদিন আসা হবে না, এই ভেবে তৃণা নেমে গেল পিছনের উঠোনে বৃষ্টিতে ভিজবে বলে I খুব একটা ভেজা হলো না I শীত করতে লাগলো ভীষণ I তাড়াতাড়ি করে দোতালায় চলে গেল চেঞ্জ করতে I ভেজা কাপড় ছেড়ে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে ঘরে ঢুকতেই টের পেল ফোন বাজছে I
সুজনের বাসার রেনোভেশন এর কাজ শেষ I মজিদ চাচার সঙ্গে মিলে এবার ও নিজ হাতে সব করেছে I মজিদ চাচা বেশ অবাক হয়েছে I সাধারণত এসব কাজে সুজন কখনো মাথা ঘামায় না I সব সময় দূরে দূরে থাকে বইপত্র নিয়ে I এবার ও নিজেই বলে দিয়েছে কিভাবে কি করতে হবে I নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব করিয়েছে I সব শেষ হয়ে যাবার পর হঠাৎ করেই খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সুজনের I দুপুরে খাবার পরে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল I অবেলায় ঘুমানোতে উঠার পর মাথা ধরে আছে I সুজন কফি নিয়ে বারান্দার দরজা খুলেই টের পেল বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে I বাধ্য হয়ে ঘরে এসেই বসতে হলো I কেমন মন খারাপ করা বিকেল I কিছু ভালো লাগছেনা I ইচ্ছে করছে কেউ একজন খোঁজ নিক I কেউ বলুক বারান্দার দরজাটা বন্ধ করে দাও, ঠান্ডা লাগছে না; কিংবা এখন ছাদে যেও না শরীর খারাপ করবে I সুজন ফোনটা তুলে নিয়ে তৃণাকে ফোন দিল I
-কেমন আছো তৃণা?
-ভালো তোমার গলা এরকম শোনাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ?
সুজন একটু হাসল I জবাব দিল না I তারপর বলল
-তুমি কবে ফিরবে?
-কাল I
-আমার সঙ্গে একবার দেখা করবে I তোমাকে কয়েকটা কথা বলার ছিল I
-বল I
-এখনই শুনতে চাও?
-বল সমস্যা নেই I
-অনেক দিন ধরে তোমাকে একটা কবিতা শোনাতে চাই I শুনবে আজকে?
তৃণার মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে ছিল; তাই ও আর না করলো না I বলল শোনাও I
-শোনো তাহলে

তুমি শুদ্ধ করো আমার জীবন, আমি প্রতিটি ভোরের মতো
আবার নতুন হয়ে উঠি,
হই সূর্যোদয়
আমার জীবন তুমি পরিশুদ্ধ করো, আমি প্রস্ফুটিত হই
আমি বহুদিন ঝরা ব্যথিত বকুল অন্ধকারে, আমি বহুদিন
বিষন্ন বিধুর ;
একবার আমার মাথায় হাত রাখো, সুপ্রসন্ন হও
এই দগ্ধ বুকে করো শ্রাবণের অঝোর বর্ষণ
আমি শ্যামল সবুজ বৃক্ষ হয়ে উঠি ।
আমার জীবন তুমি শুদ্ধ করো, আমি হই নতুন সবুজ
কোনো দ্বীপ,
আমি হই বর্ষাকাল, আমি হই বরষার নব জলধারা
আমি বহুদিন ব্যথিত বিষাদ, আমি বহুদিন একা
ঝাউবন ।
তুমি শুদ্ধ করো আমার জীবন, আমি হয়ে উঠি সদ্যফোটা ফুল
আমি হয়ে উঠি সকালের ঘুমভাঙ্গা চোখ ।
চলবে……
তোমাকে বলার ছিল……..
দশম পর্ব
লেখনীতে
অনিমা হাসান
আজকে যে কবিতাটা দেয়া হয়েছে তার নাম ‘শুদ্ধ করো আমার জীবন ‘ লিখেছেন মহাদেব সাহা

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-০৯

0

তোমাকে বলার ছিল…….
নবম পর্ব
-এহ ! এত ছোট প্লেটে দেয় I বলে তিনজন খাওয়া যাবে কিন্তু যা কোয়ান্টিটি তাতে দুজনের ও হবে না I
নুডুলস আসার পর বেশ বিরক্ত কন্ঠে কথাগুলো বলল মামুন I তৃণা কোন জবাব দিল না I ওর মাথাব্যথা আরো বেড়েছে I উঠে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু সেটা এখন সম্ভব না I মামুন প্রথমে নিজের প্লেটে নুডুলস নিল I অর্ধেকের বেশি বাটি খালি করে দিল I তারপর তৃণার দিকে তাকিয়ে বললো তুমিও নাও I তৃণা একটুখানি তুলে নিল I ওর খাওয়ার ইচ্ছা মরে গেছে I কত তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হওয়া যায় সেই চিন্তা মাথায় ঘুরছে I একটুখানি নুডুলস নিয়ে নাড়াচাড়া করছে খেতে ইচ্ছা করছে না I তৃণা তাকিয়ে দেখল মামুন গোগ্রাসে গিলেই যাচ্ছে I বেশ অনেকক্ষণ পর যখন প্লেট প্রায় খালি তখন তার খেয়াল হল I তৃণার দিকে তাকিয়ে বলল
– আরে তুমি তো কিছুই খাচ্ছ না I আরেকটু নাও I
– না আমি ঠিক আছি
– আচ্ছা তাহলে আমি বাকিটা নিচ্ছি I নষ্ট করে কি লাভ I
মামুন প্লেটের পুরোটাই ঢেলে নিতে গেল I তারপর কি একটা ভেবে খানিকটা ছেড়ে দিল প্লেটেই I দ্রুতই প্লেটের খাবার শেষ করে আয়েশ করে কোকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল
– তুই বাকিটা নিয়ে নাও
– না আমার খাওয়া শেষ
– তাহলে পার্সেল করে দিতে বলি ? বাসায় নিয়ে যাও I
তৃণা তাকিয়ে দেখল বড়জোর দুই টেবিল চামচ এর মতন নুডুলস পড়ে আছে I ও বলল
– বাসায় আরও লোক আছে I এইটুকু খাবার আমি নিয়ে যাব না I আমি বরং একটা পুরো অর্ডার দিচ্ছি I
মামুন ওয়েটারকে ডেকে প্লেটে পড়ে থাকা খাবারটা পার্সেল করে দিতে বললো I আর তৃণা আরেকটা নুডুলস অর্ডার দিল I অনেকক্ষণ থেকে তৃণার ফোন বাজছে I তৃণা ব্যাগের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখল হিয়া ফোন দিচ্ছে I এখন ধরা যাবেনা I তৃণা ছোট্ট একটা টেক্সট করে দিল
– একটু বিজি আছি I পরে ফোন দিচ্ছি
মেসেজ পাঠানোর পর খেয়াল করলো আরো একটা মেসেজ এসেছে সুজনের I ও লিখেছে
বিকেলে কি ফ্রি আছো I তোমাকে স্টেরিও কেমিস্ট্রির কয়েকটা স্ট্রাকচার বুঝিয়ে দিতাম I ফোনে দেখানো সম্ভব নয় I সামনা সামনি হলে ভালো হতো I ফোন দিও
তৃণা বুঝতে পারছে না I সুজন হঠাৎ ওকে পড়ানোর সময় এমন খেপে উঠল কেন I
– কোন সমস্যা তৃণা ?
– না আসলে আমার ফ্রেন্ড এর সঙ্গে লাইব্রেরীতে যাওয়ার কথা I ওই মেসেজ দিচ্ছে
– ও আচ্ছা তাহলে ওয়েটারকে তাড়াতাড়ি করতে বলি
মামুন ওয়েটারকে বিল নিয়ে আসতে বলল I ওয়েটার বিল আর পার্সেল দুটো এনে টেবিলে রাখল I বিল দেখে মামুনের ভূরু কুঁচকে গেল I ও বিরক্ত গলায় বলল
– আমার হিসাব অনুযায়ী তো 730 টাকা হওয়ার কথা I চৌদ্দশ 50 টাকা আসলো কোত্থেকে ? ওয়েটার বলল
– স্যার দুইটা নুডুলস আর দুইটা কোক
মামুন একগাল হেসে বলল
– ও, একটা নুডুলস ম্যাডামের I আমাকে শুধু একটা নুডুলস আর দুইটা কোকের বিল দিন
ওয়েটার এবং তৃণা দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেল I একটা মানুষ এতটা চক্ষুলজ্জাহীন কি করে হয় তৃণা ভেবে পেল না I ও ব্যাগ থেকে পনেরশো টাকা বের করে ওয়েটারকে দিল I তারপর হেসে বলল বাকিটা আপনার টিপস I এরপর পার্সেল হাতে নিয়ে ব্যাগ কাঁধে তুলে বেরিয়ে গেল I বাইরে এসে মনে হলো নিঃশ্বাস নিতে পারছে I মামুন হতদন্ত হয়ে পেছনে ছুটে এসেছে I
– তুমি বিল দিলে কেন ? আমিতো দিচ্ছিলাম
– সমস্যা নেই এবার না হয় আমি দিলাম
মামুন খুশি খুশি গলায় বলল
– ঠিক আছে I পরের বার কিন্তু আমাকে দিতে দেবে কেমন ?
তৃণা বললো
– আমি আজকে যাই I আমার একটু তাড়া আছে I
– চলো তোমাকে নামিয়ে দেই I আমি তোমাদের বাসার দিকে যাচ্ছি
– আমি বাসায় যাবো না উল্টো দিকে যাব লাইব্রেরীতে I শুধু শুধু আপনার রিক্সা ভাড়া বেশি খরচ হবে I
-তুমি তো কিছু বললেনা
– কি বিষয় ?
– এই আমাদের ব্যাপারে আর কি
তৃণা ক্লান্ত গলায় বলল
– মামুন ভাই I সামনে আমার পরীক্ষা I আপাতত এই বিষয়টা থাক
– হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে I পরীক্ষা শেষ হোক তারপর না হয় ঠান্ডা মাথায় বসা যাবে I
– আচ্ছা আমি যাই তাহলে
তৃষা জবাবের অপেক্ষা না করে একটা রিক্সায় উঠে গেল I টিএসসির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মনে পড়লো আজকে তো ওদের ফাইনাল রিহার্সেল I পাঁচটার সময় I মনেই ছিল না I ফাইনাল গেটআপে আসতে বলা হয়েছে ঠিক যেমনটা প্রোগ্রামের দিন হবে I ওফ ! মনেই ছিল না এসব ঝামেলায় I তৃণা ঘড়ি দেখল I এখনো 2 ঘণ্টা আছে I যাক কিছুটা সময় পাওয়া গেল I
তৃণা রোকেয়া হলের সামনে এসে মিথিলাকে ফোন দিল I মিথিলা ওর কলেজ জীবনের বান্ধবী I সোসিওলজিত পড়ে I তৃণার কখনো হলে থাকতে হলে ওর রুমেই থাকে I মাঝে মাঝে দুপুরে এসে বিশ্রাম নেয় I গ্রুপের কোনো প্রোগ্রাম থাকলে এখান থেকেই রেডি হয়ে যায় I এখানে ওর এক সেট জামা আর কিছু শাড়ি রাখা আছে I কলেজ জীবনে মিথিলাকে নানান ভাবে সাহায্য করেছে তৃণা I মেয়েটা মনে রেখেছে I তৃণা এলে কখনো বিরক্ত হয়না I ভালোই আদর যত্ন করে I ফোন দিয়ে জানা গেল মিথিলার রুমেই আছে I
তৃণা ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে গেল I লম্বা সময় ধরে গোসল করলো I মাথাব্যথা অনেকটাই কমেছে I ভেজা চুল আচরে মুখে ক্রিম মেখে তৃণা শাড়ি গুলি নেড়েচেড়ে দেখছিল I সবুজ রঙের শাড়ি পড়তে হবে আজ I শুভঙ্কর নন্দিনীর একটা কথোপকথন করবে ওরা I এবার পিয়াস ভাই ওর সঙ্গে থাকবে শুভঙ্কর চরিত্রে I তৃণার একটু বিরক্ত লাগছে I আগামী সপ্তাহে প্রোগ্রামের পরে একটু ব্রেক নেবে ঠিক করল I পরীক্ষা চলে এসেছে I পরীক্ষা শেষ করে দেশে গিয়ে কিছুদিন দাদির সঙ্গে থাকবে I দাদির শরীরটা ভালো যাচ্ছে না I সেদিন ফোনে কথা বলে মনে হলো মনটা অনেক দুর্বল হয়ে গেছে I এই পৃথিবীতে একমাত্র একজনই আছে যে ওকে সত্যিকারের ভালবেসে I
চারটা বেজে গেছে I তৃণা আস্তে আস্তে পোশাক পাল্টে শাড়ি পড়ে নিল I গাঢ় করে কাজল দিলে চোখে I এই সবুজ শাড়িটা ওকে হিয়া উপহার দিয়েছিল I হঠাৎ করেই হিয়ার জন্য খুব মন কেমন করতে লাগলো I এতবার ফোন দিচ্ছিল I কোন সমস্যায় পড়েনি তো ? তৃণা রেডি হয়ে হিয়াকে ফোন দিল I ফোন ধরে হিয়া বললো
– তুই কি আমার উপর এখনো রেগে আছিস ?
– নারে I একটু কাজে বিজি ছিলাম
-কী নিয়ে এত বিজি ?
– আজকে ফাইনাল রিহার্সেল I
-হলে থাকবি রাতে ?
– হ্যাঁ
– আমিও চলে আসি তাহলে I সারারাত আড্ডা দেয়া যাবে I মিথিলার রুমেই আছিস তো ?
– হ্যাঁ
– ঠিক আছে আসলে দেখা হবে তাহলে I আটটার পরে আসবো I
– আচ্ছা আয়
হিয়ার সঙ্গে কথা বলে মনটা খুব হালকা লাগছে I আবারও ফোন বাজছে I হিয়া হয়তো কিছু বলতে ভুলে গেছে I সব সময় এমন করে ও I ফোন ধরে তৃনা একটু অবাক হল I হিয়া নয় সুজন ফোন করেছে I
– তুমি আমার ম্যাসেজ পেয়েছো ?
– হ্যাঁ পেয়েছি I আজকে বোধ হয় আর বসা হবে না I আমার রিহার্সাল আছে I
– টিএসসিতে ?
– হ্যাঁ
– আমি কি তোমার রিহার্সাল দেখতে আসতে পারি ? আমি উল্টোদিকেই লাইব্রেরীতে আছি
– রিহার্সাল খুব বোরিং ব্যাপার I ফাইনাল প্রোগ্রাম এর দিন এস I আমার ঘন্টাখানেকের কাজ I শেষ হয়ে গেল তখন তোমাকে ফোন দেই I সময় থাকলে আমাকে একটু পড়াটা দেখিয়ে দিও I
– আচ্ছা I ফোন দিও আমাকে শেষ করে
– ওকে
বাংলা ডিপার্টমেন্টের চারুদি গ্রুপের বেশ সিনিয়র মেম্বার I তৃণাকে খুব স্নেহ করেন I ওকে ঢুকতে দেখে এগিয়ে এসে বললেন
– তোকে আজকে যা লাগছে না I পিয়াস এর তো পুরো মাথা নষ্ট হয়ে যাবে I
– আহ ! চারুদি কি শুরু করলে
– দেখ তোর শুভঙ্কর কেমন সেজেগুজে এসেছে
তৃণার খুব অস্বস্তি হচ্ছে I রিহার্সালের সময়ে অস্বস্থি আরো বাড়লো I পিয়াস বারবার গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছে I রিহার্সাল শেষ করে কানের কাছে এসে বলল
– তুমি আমাকে সেদিন মিথ্যা কথা বললে কেন ?
– কি মিথ্যে ?
– তুমি যাকে তোমার বিশেষ বন্ধু বলে পরিচয় করিয়ে দিলে সে তো তোমার বান্ধবীর লাভার
তৃণার অসম্ভব মেজাজ খারাপ হয়ে গেল I এ ধরনের ব্যক্তিগত আলোচনা ওর একেবারেই পছন্দ না I তারপরে আবার এমন একজনের কাছ থেকে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব পর্যন্ত নেই I তৃনা ফোন বের করে সুজনকে টেক্সট করল
আমার কাজ শেষ হয়ে গেছে I তুমি কি একটু ভেতরে আসতে পারবে ?
সাথে সাথে জবাব এলো আসছি
সুজন ভিতরে ঢুকে যে কাজটা করলো সেটার জন্য তৃনা একেবারেই প্রস্তুত ছিল না I গ্রুপের সবাই তখন রিহার্সাল শেষ করে চা সিঙ্গারা আনিয়েছে I সুজন ভেতরে এসে সোজা তৃণার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরলো I তারপর বলল
– চলো যাই অনেক দেরি হয়ে গেছে
গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্যই তৃণার জুনিয়ার I ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে I ফাইনাল ইয়ারের চারুদি ও অবশ্য আছে I সবাই বেশ অবাক হয়ে গেল I সুজন সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে তৃণার দিকে ফিরে বলল
– তোমার গ্রুপ মেম্বারদের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেবে না
তৃণা ভেবে পাচ্ছেনা সুজন হঠাৎ এরকম আচরণ কেন করছে I বরাবরই ও মুখচোরা আর লাজুক স্বভাবের I তৃনা একটু অস্বস্তি নিয়ে সবার সঙ্গে সুজনের পরিচয় করিয়ে দিল I তাকিয়ে দেখল পিয়াস ভাইয়ের মুখ শুকিয়ে এতোটুকু হয়ে আছে I জুনিয়ার একজন জিজ্ঞেস করল
– ভাইয়া আপনিও কি আবৃত্তি করেন ?
– না আমি কবিতা পড়ি আর শুনি I আবৃত্তি করি শুধু নিজের জন্যই
চারু দি বলল তোমার ভয়েস টোন কিন্তু খুব ভালো I তা আজকে আমাদের তৃণার জন্য কিছু শোনাও দেখি I
তৃনা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই সুজন বলল
হ্যাঁ নিশ্চয়ই
তারপর বেশ আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে আবৃত্তি করল
‘সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই।
তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি।
এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার –
আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে …’
তৃনা হতভম্ব হয়ে গেল I এসব কি হচ্ছে ?
চলবে……….

লেখনীতে
অনিমা হাসান
এই পর্বে যে কবিতাটা ব্যবহার করা হয়েছে তার নাম ‘স্নান’ লিখেছেন জয় গোস্বামী

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-০৮

0

তোমাকে বলার ছিল ………..
অষ্টম পর্ব

– তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব তৃণা, সত্যি করে বলবে ?
– হ্যাঁ বল I
– এইযে হিয়া আমাকে এত কবিতা পাঠাতো; এগুলো কি সব আসলে ওই পাঠাতো ?

তৃণা চমকে উঠলো I তৎক্ষণাৎ কোন জবাব খুঁজে পেল না I কিন্তু দ্রুতই সামলে উঠলো I তারপর বলল
– কেন তোমার কি মনে হয় এসব আমি পাঠাতাম ?
এরকম সরাসরি উত্তরে সুজন একটু হকচকিয়ে গেল I বলল
– আমি তো সেটা বলিনি I
– আমি আবৃত্তির গ্রুপের সঙ্গে আছি এজন্য আমার বাসায় প্রচুর কবিতার বই আছে I হিয়া আমার কাছ থেকে নিয়ে কবিতা পড়তো I আর তোমাকে কবিতাগুলো ওই পাঠাতো I
– ও আচ্ছা I
– আমাকে নিচে যেতে হবে, অনেক রাত হয়েছে I
-আচ্ছা ঠিক আছে যাও I আবার পরে কথা হবে I

পরীক্ষার আর মাত্র দুই মাস বাকি I ক্লাসের অনেক প্রেসার I তৃণা কয়েকদিন আর সুজন কে ফোন দিল না I পড়াশোনার চাপ অনেক I তৃণা ভেবেছিল শুক্রবার সকাল থেকে লাইব্রেরীতে চলে যাবে I কিন্তু জানা গেল শুক্রবারে বাসায় কয়েকজনকে দাওয়াত করা হয়েছে I বড় চাচীর ফুফাতো বোন আর তার ননদ I তৃণাকে বাসায় থাকতে বলা হয়েছে I

তৃণার অসম্ভব বিরক্ত লাগছে I বিকেলে টিউশনিতে যেতে হয় বলে এমনিতেই ও পড়ার সময় পায়না I ভেবেছিলো শুক্রবার দিন কয়েকটা চ্যাপ্টার শেষ করে ফেলবে I কিন্তু এসব হাঙ্গামা বেঁধে গেল I দুপুরে খাওয়ার পর তৃণা নোটপত্র নিয়ে ছাদে যাচ্ছিলো একটু পড়বে বলে I যাবার আগেই চাচী বললেন
– তৃণা সবার জন্য একটু চা করে দিয়ে যাও তো I
তৃণা ভাবলো ভালোই হয়েছে I নিজের জন্য শুধু চা করা যাচ্ছিল না; এখন সবাইকে দিতে হবে বলে নিজেও কিছুটা নিতে পারবে I তৃণা সবাইকে চা দিয়ে, নিজের কাপ নিয়ে ছাদে চলে গেল I যাবার আগে একজন আত্মীয়া বললেন
– বাহ তুমি তো খুব ভালো চা বানাও I তুমি চা নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? বস আমাদের সঙ্গে I
– আন্টি আমার সামনে পরীক্ষা I একটু পড়বো বলে ছাদে যাচ্ছি I আপনারা গল্প করুন I
– ও আচ্ছা যাও তাহলে I

তৃণা ছাদে এসে মাদুর পেতে বসলো বই-খাতা ছড়িয়ে I ফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বেজে যাচ্ছে I সাইলেন্ট করে রেখেছে তৃণা I হিয়া সকাল থেকে ফোন দিচ্ছে সমানে I তৃণা ঠিক করেছে হিয়ার ফোন ধরবে না I ফোনটা বেজেই যাচ্ছে I তৃণা পড়তে পড়তেই ফোন ধরে বেশ ঝাজের সঙ্গে বলল
– কি হয়েছে ?
– সেটাইতো আমি জানতে চাচ্ছি কি হয়েছে ? আমার ছাত্রী হঠাৎ করে আমাকে ভুলে গেল কেন ?
– ও সুজন I না ভুলে যায়নি I সামনে পরীক্ষা তাই তোমাকে আর বিরক্ত করছি না I আমাকে পড়াতে গেলে তোমার পড়ার ক্ষতি হবে I
– আমি প্রথমে নিজে পড়ে তার পরেই তোমাকে পড়াই I কোন ক্ষতি হয় না I বরং আবার রিভিশন হয়ে যায় I আজ কি পড়াবে বল ?

– আমার কাছে এখন শুধু ইনকম্পটিবিলিটি চ্যাপ্টার টাই আছে I এটা পড়লে পড়াও I
– তুমি কোথায় ?
– ছাদে I
– সারাক্ষণ ছাদে কি করো ?
– ছাদ আমার ভীষণ প্রিয় I আমি ঠিক করেছি আমার যখন চাকরি হবে, তখন আমি একটা চিলেকোঠার ঘর ভাড়া নেবো ছাদ সহ I সারাক্ষণ ছাদেই থাকবো I অনেক গাছ লাগাব, আর দোলনাতে বসে বৃষ্টিতে ভিজবো I
– বাহ ! শুনেইতো ভাল লাগছে I
তৃণা সাধারণত এধরনের ব্যক্তিগত কথা কারও সঙ্গে শেয়ার করেনা I আজকে এটা বলে নিজেই অবাক হয়ে গেল I তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
– যাক বাদ দাও I এস পড়া শুরু করি I
– তুমি সব সময় নিজের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাও কেন ?
– কোথায় ?
– তোমার প্রসঙ্গ আসলেই বল বাদ দাও I
– আমার প্রসঙ্গে বলার মতো কিছু নেই I
-তবুও আমি জানতে চাই I
– তুমি মনে হয় আমার ব্যাপারে একটু বেশিই আগ্রহ দেখাচ্ছো I
– আমার তো মনে হয় শুরু থেকে আমার তোমার ব্যাপারেই আগ্রহ দেখানো উচিত ছিল I
– কি বললে ?
– কিছুনা এসো পড়া শুরু করি I
তৃণার বেশিক্ষণ পড়া হলো না I নিচে থেকে ডাক এলো, মেহমানরা চলে যাচ্ছে তাদের বিদায় জানাতে যেন নিচে আসা হয় I তৃণা হতাশ গলায় বলল
– এখন মনে হয় আর পড়া হবেনা I দেখি চেষ্টা করব রাতে ফোন দিতে I
– আচ্ছা I ফোন দিয়ে অবশ্যই I
– দেখি
ফোন রেখে সুজন বারান্দায় গিয়ে বসল I শরতের দুপুর I আকাশে মেঘের ভেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে I নিস্তব্ধ দুপুর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে খুবI সুজন হাত বাড়িয়ে সাইড টেবিল থেকে কবিতার বই টেনে নিল I পড়তে ইচ্ছা করছে না I বই না খুলেই একমনে আবৃত্তি করল

তোমার সাথে প্রতিটি কথাই কবিতা, প্রতিটি
মুহুর্তেই উৎসব-
তুমি যখন চলে যাও সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর
সব আলো নিভে যায়,
বইমেলা জনশূন্য হয়ে পড়ে,
কবিতা লেখা ভুলে যাই।
যতোক্ষণ তুমি থাকো আমার নিকটে থাকে
সপ্তর্ষিমণ্ডল
মাথার ওপরে থাকে তারাভরা রাতের আকাশ,
তুমি যতোক্ষণ থাকো আমার এই হাতে
দেখি ইন্দ্রজাল
আঙুলে বেড়ায় নেচে চঞ্চল হরিণ;
তুমি এলে খুব কাছে আসে সুদূর নীলিমা
তোমার সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহূর্ত সঙ্গীতের
অপূর্ব মূর্ছনা
যেন কারো অবিরল গাঢ় অশ্রুপাত;
তোমার সাথে প্রতিটি বাক্য একেকটি কবিতা
প্রতিটি শব্দ শুভ্র শিশির।

*****************

সামাদ সাহেব মহা বিপদে পড়েছেন I তার মায়ের শরীর খারাপ I উনার ধারণা তিনি আর বাঁচবেন না I তাই মারা যাবার আগে বিষয় সম্পত্তির একটা ফয়সালা করে দিয়ে যেতে চান I উকিলের সঙ্গে কথা বলে ফেলেছেন I সামাদ সাহেব শুনে হতভম্ব হয়ে গেছেন I গোপনে উকিলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গ্রামের বিষয় সম্পত্তির কিছুটা তৃণার নামে লিখে দেওয়া হয়েছে I অতটুকু হলেও কথা ছিল I শোনা গেছে এই বাড়ির দোতালা তৃণার নামে লিখে দেয়া হবে I তৃণা চাইলে সেখানে থাকতে পারে I কিংবা ভাড়া দিয়ে টাকা নিতে পারে I তবে পৈত্রিক বাড়ি বিক্রি করতে পারবেনা I কখনো বিক্রি করতে হলে সামাদ সাহেবের কাছে বিক্রি করতে হবে I

উনি বুঝতে পারছেন না কিভাবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাবেন I এই বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন I যদিও সেদিন তৃণার সামনে রেহানার সাথে চেঁচামেচি করাতে সে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে ছিল I অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ওকে ঠান্ডা করা গেছে I তবে আজ রেহানা যে বুদ্ধিটা দিয়েছে সেটা এক কথায় চমৎকার I রেহানার ফুপাতো বোনের ননদের একটা ছেলে আছে I ব্যাংকে চাকরি করে I খুব হিসেবে ছেলে I এর সঙ্গে যদি তৃণার বিয়ে দিয়ে দেয়া যায় I দাওয়াত এর দিন তৃণাকে দেখে ওদের বেশ পছন্দ হয়েছে I এমনটা হলে সম্পত্তি টা নিজেদের হাতে থাকে I সময়মতো নামে মাত্র দামে ওদের থেকে কিনে নেয়া যাবে I ভাড়া এখন যেমন হচ্ছে তেমনি উঠবে I কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তৃণা হয়তো বিয়েতে রাজি হবে না I সেটারও উপায় রেহানা বের করে ফেলেছে I মাকে দিয়ে কথা বলাতে হবে I উনার কথা তৃণা কিছুতেই ফেলতে পারবে না I পরিকল্পনা মতো সামাদ সাহেব আর রেহানা মায়ের কাছে কথাটা পারলেন বেশ কায়দা করে I

তীর নিশানা মতোই লাগলো I কারণ তার কয়েকদিন পরেই তৃণা দাদীর কাছে থেকে ফোন পেল I দাদির বক্তব্য শুনে তৃণা হতভম্ব হয়ে গেল I অনেক চেষ্টা করেও কোনোভাবেই এড়াতে পারল না I কান্নাকাটি করে উনি একবার ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য তৃণা কে রাজি করিয়ে ফেললেন I পরীক্ষার কথা বলেও কোন লাভ হল না I বলা হল, যা হবে পরীক্ষার পরেই হবে I কিন্তু এখন একবার দেখা করে নিতে I

সামাদ সাহেব এবং রেহানা দুজনেই ভীষণ খুশি I ঝটপট তারা রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাও করে ফেললেন দেখা সাক্ষাতের জন্য I নির্ধারিত সময়ে সেখানে পৌঁছে তৃণা একটু অবাক হল I মোটামুটি মানের একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট I ভেতরে ঢুকেই তৃণা এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো I কোনার টেবিল থেকে একটা ছেলে উঠে এসে হাসি হাসি মুখে বলল
– আমি মামুন I তুমি নিশ্চয়ই তৃণা ?

– জি I সরি একটু দেরী হয়ে গেলো; জ্যাম ছিল I
– সমস্যা নাই বস I
তৃণা বসলো I আশেপাশে তাকিয়ে দেখল I এই রেষ্টুরেন্টে আগে কখনো আসেনি ও I মামুন বলল
– কি খাবে বলো ?
– একটা কিছু হলেই হবে I আপনার পছন্দমত অর্ডার দিন I
মামুন মেনু বুকের উপর ঝুঁকে পড়ল I তৃণা বেশ অবাক হয়ে দেখতে লাগলো I দেখে মনে হচ্ছে মেনু বুকটা আরবি ভাষায় লেখা I মামুন ডান দিক থেকে বাম দিকে দেখে যাচ্ছে I কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলো মামুন আগে দাম দেখে নিচ্ছে I তৃণা মনে মনে একটু হাসলো I পাত্রী দেখতে গিয়েও যে কোন ছেলে এরকম করতে পারে, এখানে না আসলে তৃণা বুঝতে পারত না I অনেকক্ষণ ধরে দেখার পর মামুন বলল I
– তুমি কি অন্থন খাও ?
– হ্যাঁ কেন ?
– দেখো অন্থন অর্ডার করে লাভ নেই I আটটা দেবে I চারটা চারটা করে তো আমরা খেতে পারব না I শুধু শুধু নষ্ট হবে I চিকেন ফ্রাই এর ক্ষেত্রেও তাই I সুপ্ তো আমার একেবারেই পছন্দ না I কোনদিনও শেষ করতে পারিনা I টাকাটাই নষ্ট হয় I তারচেয়ে বরং নুডুলস অর্ডার করি I কি বল ?
– করেন I
– নুডুলস এর সঙ্গে আর কিছু খাবে ?
– না I
– কোক খাবে না পানি বলবো ?
ওয়েটার অর্ডার নিতে চলে এসেছে I দুজনের জন্য শুধু একটা নুডুলস দেখে অবাক হল I কোক অর্ডার দেয়া হলো না পানির জগ দিতে বলা হলো I দেখা গেল এরা পানি আলাদা দেয় না পানির বোতল কিনে নিতে হয় I তাতে পয়সা খরচ হবে দেখে মামুন বেশ বিরক্ত হলো I বলল তাহলে কোক ই দিন I
তৃণা হাফ ছেড়ে বাঁচলো I যাক অর্ডার পর্ব শেষ হয়েছে তাহলে I মামুন এবার হাসি হাসি মুখ করে বলল
– এবার বলো তোমার খবর কি ?
– এই চলছে আরকি I
-চললেই ভালো I দিনকাল যা পড়েছে I সবকিছুর দাম বেশি বুঝলে I আলুর কেজি 2 টাকা বেড়ে গেছে I বল মানুষ থাকবে কি করে ?
আলুর কেজি কত তৃণা জানেনা I দু টাকা বেড়ে কত হয়েছে সেটাও জানেনা I তাই ও আর কোনো মন্তব্য করল না I
– সামনে রোজা আসছে এখন দেখবে সব কিছুর দাম আগুনের মতন হয়ে যাবে I আর শুধু কি আলু; রিকশাভাড়া যে পরিমাণ বাড়ছে তাতে রিকশায় চড়া ছেড়ে দিতে হবে I
– গাড়ি কিনে ফেলুন I
– গাড়ি কিনে ও তো শান্তি নেই বল I পেট্রোলের খরচ, গ্যাসের খরচ, ড্রাইভার এর বেতন- এসব আছে না I যাক এসব কথা বাদ দাও I তুমি পাশ করে কি করতে চাও সেটা বল I
ভদ্রলোকের ভাবভঙ্গি দেখে তৃণার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে তাই ও ইচ্ছা করেই বললো
– কিছুই করতে চাই না I বিয়ে করে ঘর সংসার করতে চাই; আর হাজবেন্ডের টাকা উড়াতে চাই I
মামুন হো হো করে হেসে ফেললো I
-তুমি মজা করছ তাইনা ? তোমার চাচী আমাকে বলেছে I তুমি তো ছোটবেলা থেকেই টিউশনি করো I যত দ্রুত সম্ভব চাকরি নিতে চাও I তা কোন লাইনে চাকরি করার ইচ্ছা তোমার ? তোমাদের সাবজেক্ট তো চাকরির অপশন অনেক I বেতনও ভালো I
তৃণার মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেছে I এক কাপ চা খেতে পারলে ভালো লাগতো I কিন্তু এখন সে কথা বললে আবার দুধ চিনি চা পাতার দাম নিয়ে একগাদা কথা শুনতে হবে I এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে I হিয়াকে পাঠানো দরকার ছিল I সুমনাকে যখন দেখতে আসার কথা তখন প্রক্সি দিতে হিয়াকে পাঠানো হয়েছিল I ঘটনাটা ছিল এরকম সুমনা আর রিপন ভাই সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকেই প্রেম করছে I হঠাৎ করেই সুমনার বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করে ফেলল I দেখাদেখির জন্য একটা রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা করা হলো I সুমনা কান্নাকাটি করে হিয়াকে রাজি করালো I ভদ্রলোককে দেখে অবশ্য হিয়ার বেশ ভালো লেগেছিল I ভদ্র ও মার্জিত Iদেখতে শুনতেও খারাপ না I কথাবার্তাতেও ভালো I কিন্তু যেহেতু সম্পর্কটা ভাঙতে হবে, তাই হিয়া হুট করে জিজ্ঞেস করল
– আপনি কি ভার্জিন ?
ভদ্রলোক একটু চমকালেন I কিন্তু সেরকম কিছু প্রকাশ না করে একটু হেসে বললেন
– এ প্রশ্নটা কিন্তু আমিও তোমাকে করতে পারি I
– অবশ্যই পারেন I কিন্তু যেহেতু আমি প্রশ্নটা আগে করেছি তাই উত্তরটা আপনি প্রথম দিবেন I
– হ্যাঁ I আমি তোমাকে এই প্রশ্ন করব না I
– ছেলেদের ভার্জিনিটি টেস্ট করার একটা কিট পাওয়া যায় I ইউকে থেকে আমি আমার বান্ধবীকে দিয়ে আনিয়েছি I আপনি চাইলে আমি এখনি টেস্ট করে দেখতে পারি I
ভদ্রলোক বিষম খেলেন I শার্টের মধ্যে পানি টানি ফেলে একাকার অবস্থা করলেন I তারপর আমি ওয়াশ রুমে যাচ্ছি বলে উঠে গেলেন I ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে দেখলেন পাত্রী গায়েব I
যদিও পরবর্তীতে এই ছেলের সঙ্গেই সুমনার বিয়ে হয়েছিল I বিয়ের দিন স্টেজে উঠে ছবি তোলার সময় হিয়া বরের পাশে গিয়ে কানে কানে বলেছিল
– ভাইয়া ভার্জিনিটি টেস্ট এর কিটটা আমি সুমনাকে দিয়ে দিয়েছি I বেস্ট অফ লাক I
ভদ্রলোক চমকে তাকালেন; কিন্তু তার আগেই হিয়া উধাও হয়ে গেল I আজ ওকে এখানে পাঠানো দরকার ছিল I শালার আলু পেঁয়াজের দাম ছুটিয়ে দিত I

চলবে……..
লেখনীতে
অনিমা হাসান

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-০৭

0

তোমাকে বলার ছিল ………..
সপ্তম পর্ব

চা-পাতা, চিনি -খরচ করে করে উজাড় করে দিয়েছে I মনে হয় যেন বাপের পয়সায় কেনা I

ঘরের ভেতর থেকেই কথাটা কানে গেল তৃণার I বড় চাচী রান্নাঘরে থালা-বাসন আছড়ে শব্দ করছে; আর একা একাই বকে যাচ্ছে I অবশ্য বিড়বিড় করে বলছে না I ইচ্ছে করেই এমন ভাবে বলছে, যেন কথাগুলোর তৃণার কানে যায় I হঠাৎ করে প্রচন্ড কান্না পেয়ে গেল তৃণার I বাড়িতে ও খায়না বললেই চলে I সকালে না খেয়ে বেরিয়ে যায় I দুপুরে হলে গিয়ে খাবার কিনে খায় I রাতে মাঝে মাঝে খেয়ে ফেরে I কখনো চায়ের সাথে টুকটাক খেয়ে নেয় I খাবার বলতে বাড়িতে শুধু চা টাই খায় I এটা নিয়েও এত কথা শুনতে হচ্ছে ! কান্নাটা প্রায় গলার কাছে চলে এসেছিল; তখনই তৃণার মনে হল সুলতানা আন্টি বলেছিলেন যে নিজের অধিকারের জন্য নিজেকেই লড়তে হয় I বলেছিলেন তুই যত মাথা নিচু করে থাকবি, সবাই তোকে ততই দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করবে I নিজের অধিকার আদায় করে নিতে শেখ I নিজের ভালো দেখার মধ্যে দোষের কিছু নেই I

তৃণা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো Iবড় চাচা টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে I টুম্পা টিভি দেখতে দেখতে আইসক্রিম খাচ্ছে I তখনো রান্নাঘর থেকে একইরকম ভাবে আওয়াজ ভেসে আসছে I তৃণা বড় চাচার সামনে দাঁড়িয়ে থমথমে গলায় বলল
– তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে চাচা I
সামাদ সাহেব তাকালেন না I একমনে খেয়ে যেতে লাগলেন I তৃণা বললো
-অনেকদিন থেকেই তোমাদের বলতে চাচ্ছি I আমি কাল হলে উঠে যাব I এখানে আমার পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে I
সামাদ সাহেব আতকে উঠলেন I সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে তৃণা হলে উঠে যাওয়ার কথা বলছে I কিন্তু তার মা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যদি তৃণা হলে থাকে, তাহলে তার খরচা বাবদ দোতালার ভাড়াটা ওকে বুঝিয়ে দিতে I দোতালার ভাড়া 12000 টাকা I এখন তৃণাকে এক পয়সা দিতে হয়না I উল্টো তৃণা মাসে মাসে এক হাজার করে টাকা দেয় I সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে I সামাদ সাহেব হুংকার দিয়ে উঠলেন
– মেয়েটা একটু চা খায় এটা নিয়ে এত কথা বলার কি আছে I সারাদিন খালি ভ্যাজর ভ্যাজর I ভালো লাগেনা আর বাড়িতে থাকতে I
তারপর তৃণার দিকে তাকিয়ে বললেন
– যা তো মা দুইকাপ চা বানা I এক কাপ তোর আর এক কাপ আমার I তারপর গলা উঁচিয়ে বললেন,
রান্না ঘর থেকে একটু বের হলে ভালো হয় I
তৃণা বড় চাচা কে চা দিয়ে নিজের চা নিয়ে ছাদে চলে গেল I

তৃণাদের ছাদটা তেমন বড় নয় I খুব একটা যত্নও করে না কেউ I শুধু কাজের মেয়েটা এক বেলা এসে ঝাড়ু দিয়ে যায় I তৃণা কিছু গাছ লাগিয়েছিল Iঅযত্নে অযত্নে সেগুলো ও মরে গেছে I তৃণার খুব শখ ওর নিজের একটা ছাদ হবে I সেখানে অনেক গাছ লাগাবে ও I পানির ট্যাংকটার পিছনে খানিকটা ফাঁকা জায়গা I দুই দিক থেকে ঘেরা; তাই বাইরে থেকে দেখা যায় না I এই জায়গাটা তৃণার খুব প্রিয় I ও মাঝে মাঝে এখানে বসে বই পড়ে I

আজ আকাশ খুব পরিষ্কার I তৃণা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল, অজস্র তারা-ভরা রাতের আকাশ Iতৃণার খুব ইচ্ছা করে ছাদের মধ্যে শুয়ে থাকতে I চায়ের কাপ পাশে রেখে হেলান দিয়ে বসলো তৃণাI রাত বোধ হয় ভালোই হয়েছে I পাশ থেকে মোবাইলটা নিল সময় দেখার জন্য I একটা মেসেজ এসেছে I খেয়াল করা হয়নি I তৃণা দেখল সুজন মেসেজ পাঠিয়েছে I
– সরি তোমার ফোন ধরতে পারিনি I তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ I ফোন করা যাবে ?

তৃণা নিজেই ফোন করলো

– তোমার শরীর এখন কেমন সুজন ?
-ভালো
– তাহলে আজকে ক্লাসে আসলে না যে ?

– সকালে একটু খারাপ ছিল I সারাদিন ঘুমিয়েছি I এখন খুব ঝরঝরে লাগছে I তোমাকে কি ফোন করে বিরক্ত করলাম I
– একেবারেই না I
– তোমার কি মন খারাপ তৃণা ?
তৃণা একটু চমকালো;
– না তো
– তোমার গলা শুনে মনে হচ্ছে I একটু ভিডিওটা অন করবে ?
তৃণা হেসে ফেললো I বলল
– আমি এখন ছাদে I ভিডিও অন করলে তুমি কিছু দেখতে পাবে না I
– এত রাতে তুমি ছাদে কি করো ?
– আকাশ দেখি I আজকে আকাশ খুব পরিষ্কার I অনেক তারা দেখা যাচ্ছে I
-তাই ? তোমার কথা শুনে তো আমারও দেখতে ইচ্ছে করছে I কতদিন ছাদে যাওয়া হয় না I দাঁড়াও আমিও যাচ্ছি I
– না তুমি যেওনা I একটু ঠান্ডা আছে I তোমার আবার শরীর খারাপ করবে I
-আচ্ছা I
– তোমাকে একটা জরুরী কথা বলার জন্য ফোন করেছিলাম I
-কি ?
– কালকে স্টেরিও কেমিস্ট্রির একটা পরীক্ষা আছে I ম্যাডাম নোটিশ বোর্ডে দিয়েছে
– হঠাৎ ? ম্যাডাম তো ছুটিতে ছিল !
– হ্যাঁ কাল থেকে ক্লাস শুরু হবে I তোমাকে কেউ বলেছে নিশ্চয়ই ?
– না কেউ বলেনি I কেউ ফোনও করেনি;
– ও
– তৃণা একটা কথা তোমাকে অনেকদিন ধরে বলব ভাবছি I বলা হচ্ছে না…
– কি বলো..
– থ্যাঙ্ক ইউ I তুমি আমার জন্য যা করেছ, সেটা অনেক কাছের বন্ধু না হলে কেউ করেনা I
– আমি আবার কি করলাম ?
সুজন একটু হাসলো তারপর বলল;
– আমাকে দেখতে যতটা বোকা মনে হয়, আমি আসলে ততটা বোকা নই I এই যে তুমি রাতের বেলা আমাকে ফোন করো পড়ার কথা বল, এটা তুমি কেন করছ আমি জানি I যেন আমার পড়াশোনার ক্ষতি না হয় I তুমি জানো এই সময়টাতে হিয়া আমাকে কবিতা পাঠাতো I কি জানো তৃণা, ছোটবেলা থেকে আমার কোনো বন্ধু নেই I সবাই সব সময় প্রয়োজনে আমার কাছে এসেছে I কিন্তু আমি যখন তাদের মাঝে গেছি, ওদের আড্ডা থেমে গেছে I কেউ আমার সামনে সহজ হতে পারেনি I আমি সবার কাছে দূরেরই থেকে গেছি I
কিছুক্ষণ দুজনই চুপ করে রইলো I একসময় তৃণা নীরবতা ভেঙে বলল
– তুমি কি আমার কাছে হিয়ার ব্যাপারে কিছু জানতে চাও ?
– নাহ I আমার এখন ওর মুখটা ও ঠিক মত মনে পড়ে না I
– এসব কী বলছো?
– সত্যিই বলছি I ওর সঙ্গে আমার কখনো সেই রকম কোন কানেকশন তৈরি হয়নি I তবে হ্যাঁ , যখন রাত হয় আমার ভীষণ কষ্ট হয় I প্রতি রাতেই ও আমাকে তিনটা করে কবিতা পাঠাতো I ওই সময়টা আসলে আমার খুব অস্থির লাগে I কোন কিছুতেই মন বসাতে পারি না I
– ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তেI
– হু I
-কবিতা তোমার খুব প্রিয় তাই না…
– হ্যাঁ
তৃণার হঠাৎ মনটাই খারাপ হয়ে গেল I এভাবে ছেলেটার ইমোশন নিয়ে খেলা উচিত হয়নি I তৃণা জানত সুজনের কবিতা খুব প্রিয় I লাইব্রেরীতে দেখেছে ও I সুজন যখন পড়তে বসে, তখন ওর ব্যাগ থেকে সব বই বের করে টেবিলের উপর রাখে I তৃণা লক্ষ্য করেছে, ওখানে অনেক কবিতার বই থাকে I

সুজন খুব বিষন্ন গলায় বলল
– আচ্ছা তৃণা , তুমি তো আবৃত্তি কর I আজকে আমাকে একটা কবিতা শোনাবে ?
-তৃণা সচরাচর কাউকে কবিতা পড়ে শোনায় না I কিন্তু আজকে ওর মনটা খুব অন্যরকম হয়ে আছে I ও বলল, আচ্ছা I

হয়তো এই পাহাড় সমান উঁচু হতে চায় কেউ
আমি মাটিতে মেশা ঘাস হতে ভালোবাসি,
যার মাড়িয়ে যাওয়ার সে মাড়িয়ে যাক ঘাস
তবু ঘাসের বুকেই জমে শিশিরবিন্দু ;
হয়তো কেউ পার হতে চায় দীর্ঘ দূরের পথ
আমি বাড়ির উঠোনে লুটিয়ে থাকি,
উঠানের কোণে হয়ে থাকি চারাগাছ
সেইখানে ঐ দূর আকাশকে ডাকি ;
হয়তো কেউ পাখিদের মতো চায় দুইখানি ডানা
আমি ভালোবাসি শিশুদের টলমলে হাঁটা, উড়তে চাইনা,
চাই এইখানে নিরিবিলি শুয়ে থাকি
যার হওয়ার সে হোক জোয়ার,
আমি হতে চাই ভাটা ;
হয়তো কেউ হতে চায় ঐ পাহাড়ের মতো
আমি হাত-পা গুটিয়ে মাটিতেই শুয়ে থাকি,
লেগে থাক এই শরীরে শুধুও কাদামাটির ঘ্রাণ
যে কাছে আছে তাকেই আমি আরো কাছাকাছি ডাকি II
অনেকক্ষণ পর্যন্ত সুজন চুপ করে রইলো I তৃণা একটু হেসে বলল,

– কি হল, আমার অডিয়েন্স এরকম নীরব হয়ে গেল কেন ?

– আচ্ছা তৃণা একটা কথা জিজ্ঞেস করব, সত্যি করে বলবে ?
– হ্যাঁ বল
– এইযে হিয়া আমাকে এত কবিতা পাঠাতো এগুলো কি সব আসলে ওই পাঠাতো ?
তৃণা চমকে উঠলো I কোন জবাব খুঁজে পেল না I

চলবে ………
লেখনীতে
অনিমা হাসান