Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1045



তোমাকে বলার ছিল পর্ব-০৬

0

তোমাকে বলার ছিল ………
ষষ্ঠ পর্ব
লেখনীতে
#অনিমা_হাসান

সকাল থেকে তৃণার মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে I সুজন, হিয়া কেউই আজ ক্লাসে আসেনি I প্রতিবারের মত আজও তৃণার মনে হয়েছিল হয়তো দুজন একসঙ্গে আছে I হয়তো আবার সব ঠিক হয়ে গেছে I কিন্তু হিয়াকে টেক্সট করে জানতে পারল ও কাশফুল দেখতে দিয়াবাড়ি গেছে রাতিনের সঙ্গে I তৃণার মাথায় আগুন ধরে গেল I ক্লাসের মধ্যেই ও হিয়া কে টেক্সট করল I
তোর অনেক ফাজলামি আমি আমি সহ্য করেছি I সুজনের সঙ্গে তুই যেটা করেছিস সেটার জন্য তো তোকে আমি দেখে নেব, কিন্তু রাতিনকে নিয়ে যদি কোন বাড়াবাড়ি করিস, তাহলে আমি সুলতানা আন্টিকে জানাতে বাধ্য হব I
জবাবে হিয়া লিখে পাঠালো
তুই কি চাস আমি আত্মহত্যা করি I মা জানালে আমাকে খুন করে ফেলবে I
তোর আত্মহত্যা আমার দেখা হয়ে গেছে I দুইটার সময় ল্যাব শুরু হবে I তোকে যদি ল্যাব এ না দেখি তাহলে আমি সোজা তোদের বাসায় চলে যাব I
দুইটা বেজে গেছে I হিয়ার এখনও আসার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না I তৃণা ঠিক করে ফেলেছে আজ ও একটা এসপার ওসপার করেই ছাড়বে I অ্যাটেনডেন্স এর ঠিক আগ মুহূর্তে হিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে ল্যাবে ঢুকলে I হাঁপাতে হাঁপাতে তৃণার কাছে এসে কানে কানে বলল
– এইবার খুশি মেডাম ?
তৃণা জবাব দিল না I রাগত চোখে তাকালো একবার I তারপর বলল
– ল্যাব শেষ করে তুই বসবি আমার সঙ্গে I তোর সঙ্গে জরুরী কথা আছে I
ল্যাব শেষ হতে হতে চারটা বেজে গেল I তৃণা হিয়াকে নিয়ে টিএসসিতে চলে গেল I
রিক্সা থেকে নেমে হিয়া বলল
– ভীষণ খিদে পেয়েছে , চল কিছু খাই I
-এখন না I বোস আগে I কথা আছে I
– তুই এইরকম হেডমিস্ট্রেস এর মতো আচরণ করছিস কেন ? ভয় লাগছে দেখে I
-কালকে তোর ফোন বন্ধ ছিল কেন ?
– কখন ? কই নাতো ?
– তোর কি আমাকে বোকা মনে হয় ?
– তোর সমস্যা কি ? তুই হঠাৎ করে এরকম ডিটেকটিভ এর মতন আচরন করছিস কেন ?
– সমস্যা আমার ? পরীক্ষার আর তিন মাস আছে এই সময় তুই সুজনের সঙ্গে এরকম করলি কেন ? আর সেটা যদি বাদ ও দেই রাতিনের সঙ্গে তোর কেসটা কি ?
– কোন কেস নেই I এমনি টাইম পাস করছি I
– টাইম পাস করার জন্য তুই আর কাউকে পাসনি ?
– না I বাকি ছেলেরা খুব সিরিয়াস হয়ে যায় I ও আমার টাইপেরই I তবে এটা বেশিদিন করতে হবে না I
তৃণা এবার খুব মন খারাপ করা গলায় বলল
– তুই আমাকে হারিয়ে দিলি হিয়া I তুই প্রমাণ করে দিলি যে পৃথিবীতে আসলে ভালবাসা বলে কিছু নেই I আমি ভেবেছিলাম তুই হয়তো একটু অন্যরকম I কিন্তু না , তুই ও সেই আমার বাবা মায়ের মতই I
– ওরে বাবা I এত বড় ডায়লগ দেওয়ার মত কি করলাম ?
-তুই কি জানিস সুজনের জ্বর ?
-জ্বর তো আমি কি করবো ? আমি কি ডাক্তার ? জ্বর হয়েছে ডাক্তার দেখাক I
– তোর কিছু যায় আসে না ?
– না I তুই কি করে জানলি ওর জ্বর ?
-আমার সঙ্গে কথা হয়েছে কাল I তুই ওর সঙ্গে এরকম আচরণ কি করে করতে পারিস ? একসময় না ওর জন্য মরতে গেছিলি ?
– হ্যাঁ সেটাই সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে গেছে I ভাবি নি তুই এত সিরিয়াস হয়ে যাবি I
– মানে ? সব মিথ্যা ছিল ? সুজন কে বাদ দে, তুই আমার সঙ্গে এরকম কেন করলি ?
হিয়া এবার বেশ গম্ভীর হয়ে গেল I তৃণার চোখে চোখ রেখে বলল
– শোন আমি মানুষটা যতই খারাপ হই না কেন আমি কখনো কাউকে ঠকাই না I
– তাই নাকি ? তৃণা ব্যঙ্গ করে বলল
– হ্যা তাই I সুজনকে ও আমি ঠকাতে চাইনি তাই সম্পর্কটা ভেঙে দিয়েছি I সত্যি কথা বলতে সুজন কখনো আমাকে ভালবাসেনি I আমি ওর সামনে বসে থাকলে ও কখনো আমাকে দেখতই না I আমার মধ্যে সবসময় অন্য কিছু খুঁজতো I গল্প করতে গেলে অন্যমনস্ক হয়ে যেত I একবার আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে ও আমাকে ভালবাসে কিনা I ও কি জবাব দিয়েছিল জানিস ?
– কি ?
– বলেছিল, আমি তোমার সৌন্দর্য দেখে তোমাকে ভালোবাসি না I তোমার ভেতরে যে মনটা আছে সেটাকে ভালোবাসি I কিন্তু কাহিনী হইল এই মনটা তো আমারই না I ও যে জিনিসটার প্রেমে পড়েছে সেটা আমি কখনো ছিলামই না I ও কখনো আমার প্রেমে পরেইনি I ও যদি কখনো কারো প্রেমে পড়ে থাকে তবে সেটা তোর I
প্রচন্ড রেগে উঠে দাঁড়িয়ে তৃনা বললো
– ফাজলামি করার জায়গা পাস না তুই ? তোর একজনের প্রতি মন উঠে গেছে; এখন অন্যজনের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করবি, এজন্য তুই আমাকে এরমধ্যে টেনে আনছিস? লজ্জা করে না তোর ?
হিয়া হেসে ফেললো I বলল
– আমি জানতাম তুই এ ভাবেই রিয়াক্ট করবি I এ জন্যই এতদিন তোকে বলছিলাম না I
-তুই আর কোনদিন ও আমার সঙ্গে কথা বলবি না I কোনদিনও না I
তৃণা ঝড়ের বেগে উঠে একটা রিকশা নিয়ে চলে গেল I হিয়া কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল I ব্যাগের মধ্যে ফোন বাজছে I ধরতে ইচ্ছা করছে না I প্রবল অনিচ্ছা নিয়ে হিয়া ফোন বের করে দেখলো রাতিন ফোন করেছে I হিয়া আপন মনেই বিড়বিড় করে বলল
– ধুর ! এই শালা জ্বালিয়ে মারলো I
তৃণা বাড়ি ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল I আজও বাড়িতে কেউ নেই I ভালোই হয়েছে I তৃণা ঘরে ঢুকে এক পলকে ঘরটায় চোখ বুলিয়ে নিল I যাবার আগে ঘরটা গুছিয়ে রেখে গিয়েছিল ও I কেউ একজন এসেছিল I ওর জিনিসপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করেছে I বিরক্ত লাগছে I কিন্তু কিছু করার নেই I অন্যের বাড়িতে থাকলে এসব সহ্য করতেই হবে I কবে যে একটা চাকরি হবে আর একটু নিজের মতো করে থাকা যাবে I আজ মেজাজটাই খারাপ I স্টুডেন্ট এর সঙ্গে ও রাগারাগি করে এসেছে I সব ওই হিয়াটার জন্য I
তৃণা ঘর গোছালো, তারপর সময় নিয়ে গোসল করলো I সবশেষে চা নিয়ে ঘরে এসে বসল I সুজনের জ্বর কমেছে কিনা কে জানে I আজ আর পড়বে না বলে ঠিক করলো তৃণা I ফোন করে একবার খোঁজ নেওয়া দরকার I রিং বাজছে কেউ ধরছেনা I হয়তো ঘুমিয়ে আছে I তৃণা ঘড়ি দেখল I মাত্র সাড়ে আটটা বাজে I মাথা ব্যথাটা কিছুতেই কমছে না I তৃণা ওর বইয়ের তাক থেকে একটা কবিতার বই নামালো I পৃষ্ঠা উল্টাতেই একটা কবিতা দেখে আগের কথা মনে পড়ে গেল I
গত বছরের কথা I ডিসেম্বরের শুরু I হালকা শীত পড়েছে I হিয়া আর সুজন মিলে ঠিক করলো একটু দূরে কোথাও বেড়াতে যাবে I যথারীতি তৃণা কে ও সাথে যেতে হবে I সেদিন তৃণার রিহার্সেল ছিল I দুপুর বেলা দুইটার সময় I তৃণা এড়িয়ে যেতে চাইছিল I শেষ পর্যন্ত পারলো না I ঠিক হলো তিনটার সময় ওকে টিএসসি থেকে তুলে নেবে ওরা I হিয়া বলল
-আমরা বরং দুইটার সময় টিএসসিতে যাই; আমরা দুজন বাইরে গল্প করলাম I তোর তো এক ঘন্টার কাজ I শেষ হলে একসাথে চলে যাব I
সেইরকমই সব ঠিক ছিল I প্ল্যান অনুযায়ী দুপুরবেলায় হিয়াদের বাসায় চলে গিয়েছিল তৃণা I ওখানে গিয়ে জানতে পারল সে দিন সকালেই হিয়ার বাবা এসেছে কাতার থেকে I
হিয়ার বাবা কাতারে থাকে I ওখানে উনার একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে I ভালোই চলে I দেশি খাবারের ব্যবস্থা থাকায় প্রচুর বাঙালি ইন্ডিয়ান পাকিস্তানি খদ্দের আসে তার কাছে I হালাল মাংস, দেশি সবজি , মাছ , টুকটাক দেশী স্নাক্স; সবই পাওয়া যায় ওখানে I হিয়া আর ওর মাকে ও নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন উনি I কিন্তু এখানকার আধুনিক জীবনযাপন ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি ওরা I হিয়ার কলেজ ইউনিভার্সিটির কথা বলে এখানে থেকে গেল ওরা I ওর বাবা তিন চার মাস পর পর আসে I ওদের বাড়িতে সবসময়ই একটা বিদেশী গন্ধ লেগে থাকে I যখনই তৃণা আসে, হিয়ার মা বসে অনেক গল্প করে I জোর করে খাওয়ায় I মাঝে মাঝে অনেক দামী উপহার ও দেয় I ভদ্রমহিলা খুবই সরল I কোন অহংকার নেই I মা-মেয়ে দুজনেই দুইহাতে খরচ করে I তৃণার প্রথমদিকে খুব অস্বস্তি হত I কিন্তু একটা সময় পর ও বুঝতে পারল, আসলে ওরা দুজনই ওকে খুব ভালোবাসে I
তৃণা কে দেখে হিয়া বলল

– আমি আজকে কোন ভাবেই বেরোতে পারবোনা
– ঠিক আছে I আমি তাহলে আজকে যাই I তুই সুজন কে ফোন করে মানা করে দে I

টিএসসি পৌঁছে তৃণা অবাক হয়ে গেল I রিহার্সাল রুমে কেউ নেই I শুধু পিয়াস ভাই একা একা বসে আছেন I তৃণাকে দেখে উনি বেশ খুশি হয়ে গেলেন I তৃণা অবাক হয়ে বলল
– বাকিরা সব কোথায় ?
-কেউ আসেনি, দেখনা রিহার্সালের ব্যাপারে কেউ সিরিয়াস না I
-আগে জানলে তো আমিও আসতাম না I
-যাক এসেই যখন পড়েছ, তখন আমরা দুজনে রিহার্সাল করি I

তৃণার ব্যাপারটা ভালো লাগলোনা I ও বলল
– ফোন করে দেখেছেন I দাড়ান আমি ফোন দেই I

পিয়াস হন্তদন্ত হয়ে বলল
– না না I আমি ফোন দিয়েছিলাম সবাই ব্যস্ত I রিহার্সাল করতে ভালো না লাগলে চলো কোথাও বসি I
তৃণার হঠাৎ মনে হলো পিয়াস ভাই মনে হয় আর কাউকে বলেইনি I ইচ্ছা করেই শুধু ওকে আসতে বলেছে I তৃণা বলল
– সবাই না এসে ভালই হয়েছে I আমার আসলে একজায়গায় যাবার কথা I আমি আজ আসি I
তৃণা তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেল I পিয়াস দৌড়ে গিয়ে ওর পথ রোধ করে দাঁড়ালো I
– এত তাড়া কিসের একটু পরে যাও I
– আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে পিয়াস ভাই I
পিয়াসের বোধহয় তৃণার কথা বিশ্বাস হলো না I তাই ও পিছুপিছু এল I তৃণা একটু বিপাকে পড়ে গেল I কিছুতেই এই লোকের পিছু ছাড়ানো যাচ্ছে না I বাইরে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তৃণা দেখল, দূরে সুজন অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে I তৃণা একরকম দৌড়ে ওর কাছে গেল I পিয়াস ও গেল ওর পেছন পেছন I তুমি এসে গেছ, এই বলে তৃণা এগিয়ে গিয়ে সুজনের হাত ধরল I সুজন একটু অবাক হল, কিন্তু কিছু বললো না I তৃনা বললো
– পিয়াস ভাই, ও সুজন আমার বন্ধু; আর সুজন উনি পিয়াস ভাই; আমাদের গ্রুপের সিনিয়র I
সুজন এগিয়ে গিয়ে হাত মিলালো I তারপর বললো
-চলো যাই I
তৃণা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো I বাইরে এসে সুজনের হাতটা ছেড়ে দিয়ে ও বলল
– সরি সুজন I
– ইটস ওকে I উনি কি তোমাকে বিরক্ত করছিলেন
– না সেরকম কিছু না I কদিন ধরেই লক্ষ্য করছি, একটু বেশি গায়ে পড়া ভাব দেখাচ্ছে I তুমি কিছু মনে করো না I
– না কিছু মনে করিনি I বন্ধুদের জন্য এটুকু তো করাই যায় I কিন্তু তুমি একা কেন ? হিয়া কোথায় ?
-ও তোমাকে ফোন করে নি ?
সুজন খুব মন খারাপ করা গলায় বলল
-নাতো I
-দাঁড়াও আমি ফোন করে দেখছি I

দুবার ফোন করার পর হিয়া ফোনটা ধরল
– তুই সুজনকে ফোন করিস নি ?
– একদম ভুলে গেছি I আসলে বাবা সুটকেস খুলেছে; কি সব এনেছে দেখাচ্ছে I এই ঝামেলায় আর মনে ছিল না I
– তোর ওকে জানানো উচিত ছিল I বেচারা মন খারাপ করে এখানে বসে আছে I
– তুই তো আছিস ওখানেই বলে দে না I আর শোন , কি সব মেসেজ পাঠাচ্ছে; আমার এখন দেখতে ইচ্ছা করছে না I তুই একটা কিছু রিপ্লাই দিয়ে দে I
তৃণা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হিয়ার মেসেঞ্জার ওপেন করল I সুজন লিখে পাঠিয়েছে

সকল দুয়ার খোলা আছে
নিমন্ত্রণ-লিপি গাছে গাছে
গাঢ় চুম্বনের মত আকাশ নদীর খুব কাছে
রোদে ঝলোমলো।
কখন আসছ তুমি বলো?
বেলা যায়, দেরী হয়ে যায়
বাসি ফুল বাগানে শুকায়
অন্যান্য সমস্ত লোক আড়ম্বরপূর্ণ হেঁটে যায়
দূরের উৎসবে।
তোমার কি আরো দেরী হবে?

কবিতাটা পড়ে তৃণার মনটাই ভালো হয়ে গেল I কি সুন্দর করে লিখেছে I এর একটা জবাব পাঠিয়ে দিয়ে ফিরে এসে বলল
– ও একটা ঝামেলায় আটকে গেছে I আজকে আর আসতে পারবে না I
– ও I চা খাবে ?
– খাওয়া যায় I
চায়ের কথা বলে ওরা দুজন কালভার্টের উপর বসল I সুজনের মোবাইলে একটা মেসেজ এসেছে I তৃণা তাকিয়ে আছে I মেসেজ পড়তে পড়তে সুজনের মুখটা কেমন আনন্দে ঝলমল করে উঠল I তৃণা আশ্চর্য হয়ে গেল I

সুজন মন্ত্রমুগ্ধের মতো ওর মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে I হিয়া লিখেছে
একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থুল অনটন আজন্ম ভেতরে আমার।

তুমি ডাক দিলে
নষ্ট কষ্ট সব নিমিষেই ঝেড়ে মুছে
শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো
পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব
পথে এতোটুকু দেরিও করবো না।
তুমি ডাক দিলে
সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরুদ্দ্যান হবো,
তুমি রাজি হলে তুমি
যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো।

একবার আমন্ত্রণ পেলে
সব কিছু ফেলে
তোমার উদ্দেশে দেবো উজাড় উড়াল,
অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে
লোকালয়ে থাকবো না আর
আমরণ পাখি হয়ে যাবো, -খাবো মৌনতা তোমার I

চলবে………

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-০৫

0

তোমাকে বলার ছিল…
পঞ্চম পর্ব
-বল আজ কোন চ্যাপ্টার পড়তে চাও ?
– তোমার গলা এরকম শোনাচ্ছে কেন ? তোমার কি শরীর খারাপ ?
– না আমি ঠিক আছি I সুজন ক্লান্ত কন্ঠে বলল
– ভিডিও টা একটু অন করো তো
– কেন ?
– করই না
সুজন ভিডিও অন করেছে I যথাসম্ভব চেষ্টা করছে নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর I তবু ওর চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে শরীর বেশ খারাপ I তৃণা একটু চমকালো I তবে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করল না I স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল
– বাসায় থার্মোমিটার আছে ?
-আছে হয়তো I কেন ?
– নিয়ে আসো তো
সুজন বাধ্য ছেলের মত উঠে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো I টেবিলের উপর রেখে থার্মোমিটার বের করল I ডিজিটাল থার্মোমিটার, আগেকার দিনের মতন নয় যে; মুখে দিয়ে বসে থাকতে হবে I চট করে টেম্পারেচার মেপে সুজন নিজেই অবাক হয়ে গেল I
– কত ?
– 103
– আচ্ছা I জ্বরের ওষুধ আছে ?
সুজন বক্স এ উঁকি দিয়ে বলল আছে I
– হুম I তুমি খেয়েছো কিছু ?
– কখন ?
– সেটা তো আমি জানতে চাচ্ছি কখন খেয়েছো ?
– মনে নেই
তৃণার খুব বিরক্ত লাগলো I কি অদ্ভুত ছেলে রে বাবা I কখন খেয়েছে সেটাই মনে করতে পারছে না I তৃণা বিরক্তি চেপে বললো
– ঠিক আছে মনে করতে হবে না I তুমি অনলাইনে কিছু অর্ডার দিয়ে দাও I
সুজন ফোন হাতে নিয়ে বসে রইল I তৃণা তাড়া দিয়ে বলল
– কি হল তাড়াতাড়ি করো
– কি অর্ডার করবো বুঝতে পারছিনা
– আমি বলে দিচ্ছি I একটা চিকেন স্যান্ডউইচ I গ্রিল চিকেন মেনশন করে দাও I আর সঙ্গে অরেঞ্জ জুসI
সুজন অনেকটা সময় নিয়ে অর্ডার করলো I তারপর বলল
– তুমি কি করে জানলে এগুলো খেতে ভালো লাগবে ?
– জ্বরের সময় কোন কিছুই খেতে ভালো লাগেনা I আমার যখন জ্বর হয়, আমি অনেক রকম খাবারের কথা ভাবি I কিছুই ভালো লাগেনা I তখন মনে হয় এই দুটো খেলে খুব ভালো লাগবে I
সুজন হাসলো I বলল , চলো পড়া শুরু করি I খাবার না আসা পর্যন্ত তোমার পড়া ধরি I
সুজন দেশ কায়দা করে কিছু প্রশ্ন করল আগের দিনের পড়া থেকে I তৃণা সাবলীলভাবেই উত্তর দিল I
সুজনের মুখ আনন্দে ঝলমল করে উঠল I খুশি হয়ে বলল
-বাহ I বেশ ভালো পড়িয়েছি বল
তৃণা মনে মনে হাসলো I এই চ্যাপ্টারটা ওর আগে থেকেই পড়া ছিল I পড়ানোর কথা ও বলেছিল শুধুমাত্র সুজনকে ব্যস্ত রাখার জন্য I পরীক্ষার 3 মাস আগে হিয়া এমন একটা কান্ড করলো I ছেলেটার রেজাল্ট না খারাপ হয়ে যায় I একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল তৃণার মধ্যে I
– তাই তো মনে হচ্ছে I মনে হয় তোমার দরজায় কেউ এসেছে I দেখো খাবার চলে এসেছে কিনা
সুজন উঠে খাবার আনতে গেল I তৃণার ও কিছু খাওয়া হয়নি দুপুর থেকে I খিদে পেয়েছে খুব I রান্নাঘরে গিয়ে দেখতে হবে কিছু আছে কিনা I প্রতিদিন বাইরে খাওয়া পোষায় না I আজ ও বাড়িতে কেউ নেই I সবাই গেছে বৌভাতের অনুষ্ঠানে I সুজন খাবার নিয়ে ফিরে এলো I একহাতে খাবারের বক্স অন্য হাতে জুসের বোতল I সুজন খাবার টেবিলে রেখে বললো
-আরেকটু পড়া ধরি
– না তুমি আগে খেয়ে নাও I তারপর ওষুধ খাও I
– একা একা খেতে ইচ্ছা করছে না I ছোটবেলায় আমার যখন জ্বর হতো মা আমার পাশে বসে খাইয়ে দিতেন I
– তুমি মাকে খুব মিস করছো তাই না ? ফোন করে নাও একটা I কিংবা ভিডিও কলে কথা বলতে পারো; আমি রেখে দেই ?
– না না I মা-বাবা ইউরোপে গেছে I বেড়াতে I আমার জ্বরের কথা বলিনি; শুধু শুধু টেনশন করবে
– ও আচ্ছা I তাহলে আর কি করা I দাঁড়াও কেউ বোধহয় এসেছে , আমি একটু দেখে আসি I
গেট খুলে তৃণা হতভম্ব হয়ে গেল I ওর জন্য একটা পার্সেল এসেছে I তৃনা বললো
– আমি তো কিছু অর্ডার করিনি I
লোকটা বলল আপনার ঠিকানাই দেয়া আছে I আর পেমেন্ট করা হয়ে গেছে I
তৃণার মনে পড়ল সুজন প্রায়ই হিয়ার জন্য কবিতার বই সহ নানা উপহার পাঠাতো I ওর বাড়িতে সমস্যা হবে বলে তৃণার ঠিকানায় পাঠাতো I তৃণা খাবার নিয়ে ফিরে গিয়ে বলল
– তুমি খাবার পাঠালে কেন ?
– একা একা খেতে ইচ্ছা করছিল না I চলো খাওয়া শুরু করি
খাওয়া শেষ করে , ঔষধ খেয়ে সুজন বলল
– আজকে আর পড়াতে ইচ্ছা করছে না
– ঠিক আছে পড়াতে হবে না তুমি বরং রেস্ট নাও
– তুমি কি ফোন রেখে দিচ্ছ ?
– হ্যাঁ তুমি ঘুমাও
-আমার ঘুম আসছে না I একটু কথা বলবে তৃণা ? আজকে বাসায় ও কেউ নেই I
-আচ্ছা ঠিক আছে I তুমি আরাম করে বস I আর বারান্দার দরজা টা বন্ধ করে দাও I ঠান্ডা লাগছে না ?
সুজন খেয়াল করলো সত্যিই তো বারান্দার দরজা খোলা তাই এত ঠান্ডা লাগছিল I কি অদ্ভুত খেয়াল করা হয়নি I তৃণা বললো
– চা খাবে ?
– না চা খেলে আর ঘুমাতে পারবো না
– আমি যদি একটু চা নিয়ে আসি তোমার কি সমস্যা হবে ?
– সমস্যা হবে কেন ? এটা স্বাধীন দেশ তুমি চা খেতেই পারো I একথা বলে ও নিজেই হেসে ফেললো
তৃণা হাসতে হাসতে বলল দাঁড়াও আমি একটু চা নিয়ে আসি
দূরে কোথাও বৃষ্টি হয়েছে বাতাসে ঠান্ডা ভাবI তৃণা আয়েশ করে চা এ চুমুক দিয়ে বলল
– তুমি গ্রাজুয়েশনের পর কি করতে চাও সুজন ?
– পিএইচডি করার ইচ্ছা I এখানে বোধ হয় থিসিস করা হবে না I মাস্টার্স করতে US চলে যেতে পারি I তুমি কি করতে চাও ?
-আমি ? আমার কথা বাদ দাও I
– কেন ? বাদ দেবো কেন ?
– আমি সামান্য মানুষ I পাস করে একটা চাকরির ধান্দা করব I যাতে একটু নিজের মতো করে থাকতে পারি I
-তুমি থিসিস করবে না ?
– মনে হয় না I
– কেন ? তুমি এত ব্রাইট স্টুডেন্ট I তোমার তো রিসার্চে যাওয়া উচিত I
– এসব বিলাসিতা আমাকে মানায় না I তাছাড়া আমার অতো অ্যাম্বিশন ও নেই I আমি সাধারণ জীবনেই খুশি I
– কি যেন একটা কবিতা পড়েছিলাম এরকম I মনে করতে পারছিনা I
তৃণা একটু হাসলো I তারপর বলল
– ঘুমিয়ে পড়ো I অনেক রাত হয়েছে I
– আচ্ছা I কালকে আবার কথা হবে I
ফোন রেখে তৃণা চা নিয়ে বারান্দায় চলে গেল I হিয়া কে একটা ফোন করা দরকার I একটু আগে ট্রাই করেছিল; সুইচড অফ দেখাচ্ছে I
এই বারান্দাটা একসময় ওর শোবার ঘর ছিল I এখনো মনে আছে বেশ অনেকদিন ও এখানে ছিল I দাদি বোধহয় কারো কাছ থেকে শুনেছিলেন I আচমকা একদিন দাদি চলে আসায় চাচা চাচি খুব অপ্রস্তুত হয়েছিলেন I চাচা-চাচির ঘর, টুম্পার ঘর ছাড়া ও এ বাড়িতে আরেকটা শোবার ঘর আছে I সেটাকে গেস্ট রুম বানিয়ে রাখা হয়েছে I চাচির গ্রামের বাড়ি থেকে প্রায়ই আত্মীয়-স্বজনরা আসে , তখন ওখানেই থাকতে দেয়া হয় I দাদি আসার পর ও ঐ ঘরটায় খুলে দেয়া হয়েছিল I কিন্তু দাদি ওখানে থাকলেন না I ব্যাগ নিয়ে বারান্দায় চলে এলেন তৃণার কাছে I বললেন
-আমি এখানেই ঘুমাবো
– আম্মা এখানে আপনার কষ্ট হবে
– আমার ছোট বাচ্চাটার যদি এখানে কষ্ট না হয় I তাইলে আমার কষ্ট হবে কেন ? তুমি রেহানা আর টুম্পা কে নিয়ে এখানে আসো I আমার জরুরী কথা আছে I চাচা চাচি ভয়ে ভয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন I
– টুম্পা কই ? ওরে ও ডাক দাও I
চাচি টুম্পাকে ডাকতে গেলেন I তৃণা উঠে চলে যেতে চাইলো I দাদি হাত ধরে ওকে টেনে বসলেন
– শোনো সামাদ , একটা কথা তোমারে পরিষ্কার কইরা বইলা রাখি , এই বাড়িটা কিন্তু তোমার আব্বা বানাইছেন I এখনো এ বাড়ির দলিল আমার কাছে I উনি একতলা-দোতলা বানাইছিলেন দুই ছেলের জন্য I জহির যা করছে তারপরে ওরে আমার দেওয়ার রুচি নাই I কিন্তু তুমি যদি মনে করে থাকো যে এইটার দখল তুমি পুরা নিবা তাইলে ভুল করবা I
– আম্মা বাচ্চাদের সামনে এইসব কথা বলা কি ঠিক ?
দাদি গর্জে উঠলেন
– ঠিক হইব না কেন ? ওরাও জানুক I কোনকিছু তো লুকানোর নাই I তিন তালা তুমি বানাইছো তুমি সেই খানে থাকো I একতলা দোতলা তুমি আমাকে বুঝিয়ে দাও I তোমার উপর ভরসা করে আমি বাচ্চাটারে এইখানে পাঠাইছি I আর তুমি ওকে বারান্দায় ফালায়া রাখছো ? আমি মরলে তো লাথি মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিবা I
– ছি আম্মা এসব কি বলেন
– ঠিকই তো বলি I কোন আক্কেলে তুমি মাইয়াটারে বারান্দায় রাখছো ? নিজের মেয়েরে তো রাখো নাই I
-আমি আজকেই তৃণার ঘরের ব্যবস্থা করে দিব I আপনি মাথা ঠাণ্ডা করেন I
এই ঘটনার পর তৃণা ঘর পেয়েছিল ঠিকই I কিন্তু চাচা চাচির আচরণ আরো খারাপ হয়ে গেছিল I উনাদের ধারণা তৃণাই দাদিকে উস্কে দিয়েছিল I তৃণা তখন ক্লাস এইটে I বৃত্তি পরীক্ষার সময় ওকে কোচিং করতে দেয়া হলো না I ক্লাস নাইনে সাইন্স নিয়ে পড়তে যাওয়ার সময় ও নানান ঝামেলা হল I ক্লাস এইটে বৃত্তি পাওয়ার পর পাড়ার দুটো ছেলে মেয়েকে পড়াতো তৃণা I তাই দিয়ে ওর খরচ চলে যেত I এসএসসির সময় বাড়ি থেকে সাইন্স নিতে নিষেধ করেছিল কিন্তু স্কুলের টিচারদের চাপে পড়ে আর কিছু করতে পারলেন না I স্কুলের টিচাররা অনেক সাহায্য করেছে তৃণা কে I কোনরকম প্রাইভেট না পড়েই অনেক ভাল রেজাল্ট করেছে ও I কিন্তু ঝামেলা বাধলো কলেজে ভর্তির সময় I বাড়ি থেকে কিছুতেই ওকে সাইন্স নিয়ে পড়তে দেবেনা I যদিও ও সরকারি কলেজেই পড়তে চাচ্ছিলো I কলেজের খরচ ও নিজেই দেবে বলেছে I তবু বাড়ি থেকে রাজি হচ্ছিল না I আসলে চাচি চাইছিলেন না তৃণার ভালো কিছু হোক I টুম্পাকে নিয়ে সারাক্ষণই একটা হীনমন্যতায় ভুগছিলেন উনি I অগত্যা বাধ্য হয়ে আর্টস নিয়ে পড়বে ঠিক করল তৃণা I যখন কলেজে ভর্তির জন্য লাইনে দাঁড়ালো I অসম্ভব কান্না পাচ্ছিল ওর I হঠাৎ করেই তৃণা টের পেল কেউ একজন ওর হাত ধরে লাইন থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসছে I তৃণা অবাক হয়ে গেল I বলল
– আন্টি আপনি ?
– তুই এখানে কি করছিস ? এটাতো আর্টসের লাইন I
তৃণা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো I ওর গলা ধরে আসছে I কোনমতে বলল
– আমি জানি I
সুলতানা খেকিয়ে উঠে বললেন
– জানি মানে কি ? তুই কি আর্টস এ ভর্তি হবি নাকি ? এত ভালো রেজাল্ট তোর I চল আমার সঙ্গে I
তৃণা মিন মিন করে বলল
– আন্টি আমার বাসা থেকে….
– বুঝেছি আমি I চল আমার সঙ্গে I
সুলতানা একরকম জোর করেই তৃণাকে সায়েন্সে ভর্তি করলেন I ওর কোন নিষেধ শুনলেন না I বললেন
– বেতন ফেতন তো সব তুই দিবি তাহলে আবার ওদের অত পোড়ানি কিসের ?
– আন্টি সাইন্সে পড়লে টিচার রাখতে হবে আমি এতটা পারবোনা I
– চুপ কর তুই I হিয়ার জন্য তো আমি টিচার রাখবই I সে তুই ওর কাছ থেকে দেখে নিস I

একটা কথা সেদিন তৃণা বুঝেছিল যে ভদ্র মহিলা তাকে সত্যিকারের স্নেহ করেন I মনটা কৃতজ্ঞতায় ভরে গিয়েছিল I সেদিন সুলতানা তৃণাকে অনেক বোঝালেন I তৃণা বুঝেছিল এই পৃথিবীতে নিজের অধিকারের জন্য নিজেকেই লড়তে হয় I সেদিনের পর নিজেকে বদলে ফেলেছিল তৃণা I এমনিতে ও বাকপটু , আত্মবিশ্বাসী কিন্তু বাড়িতে সব সময়ই মাথা নিচু করে থাকতো I সেদিনের পর তৃণা প্রতিবাদ করতে শিখেছিল I আর যার জন্য এসব সম্ভব হয়েছিল আজ তার মেয়েকে তৃণা কিছুতেই উচ্ছন্নে যেতে দেবে না I কিছুতেই না I

হিয়াটা বুঝলো না I এত ভালো একটা ছেলে I ওর জন্য এত কষ্ট পাচ্ছে I কি করে পারল ও এমন করতে I তৃণার মনে আছে, হিয়ার জন্মদিনে অনেকগুলি কবিতার বই , একটা শাড়ি আর অনেক চকলেট পাঠিয়েছিল সুজন I হিয়া খুব বিরক্ত হয়েছিল I শাড়ীটা দেখে বলেছিলো

– এহ ! এরকম বুড়ো মানুষের শাড়ি কেউ দেয়
-এমন করছিস কেন শাড়িটা তো সুন্দর
– তোর পছন্দ হবে তুই রেখে দে
– কি যা তা বলছিস I আমি কেন রাখব
– শোন নেক্সট দিন এটা পড়ে ওর সঙ্গে দেখা করতে যাবি
– আর কাজ নেই আমার এ বুড়ো মানুষের শাড়ি পড়বো
তৃণা খুব আগ্রহ নিয়ে কবিতার বইগুলো দেখছিল I একটা বইয়ের প্রথম পাতায় সুজন উইশ করেছে ওকে I কি সুন্দর করে একটা কবিতা লিখেছে

যেদিন তুমি আপনি ছিলে একা
আপনাকে তো হয় নি তোমার দেখা।
সেদিন কোথাও কারো লাগি ছিল না পথ-চাওয়া;
এপার হতে ওপার বেয়ে
বয় নি ধেয়ে
কাঁদন-ভরা বাঁধন-ছেঁড়া হাওয়া।

আমি এলেম, ভাঙল তোমার ঘুম,
শূন্যে শূন্যে ফুটল আলোর আনন্দ-কুসুম।
আমায় তুমি ফুলে ফুলে
ফুটিয়ে তুলে
দুলিয়ে দিলে নানা রূপের দোলে।
আমায় তুমি তারায় তারায় ছড়িয়ে দিয়ে কুড়িয়ে নিলে কোলে।
আমায় তুমি মরণমাঝে লুকিয়ে ফেলে
ফিরে ফিরে নূতন করে পেলে।

আমি এলেম, কাঁপল তোমার বুক,
আমি এলেম, এল তোমার দুখ,
আমি এলেম, এল তোমার আগুনভরা আনন্দ,
জীবন-মরণ তুফান-তোলা ব্যাকুল বসন্ত।
আমি এলেম, তাই তো তুমি এলে,
আমার মুখে চেয়ে
আমার পরশ পেয়ে
আপন পরশ পেলে।

তৃণা বলেছিল
– তোর ওকে একটা রিটার্ন গিফট দেওয়া উচিত
– যা না দিয়েছে এর আবার রিটার্ন গিফট I তুই একটা কিছু কিনে দিস I কোন কবিতার ফবিতার বই I
অগত্যা তৃণা নিজেই একটা কবিতার বই কিনে হিয়াকে দিয়ে বলেছিল
– কিছু একটা লিখে দে অন্তত
– ও তুই লিখে দিয়ে দে I আমি অতসব পারবোনা
**********
সুজন ভেবেছিল আজ খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে I কিন্তু ফোনটা রাখার পর যেন দু চোখের ঘুম উড়ে গেছে I জ্বরটা বোধ হয় ছেড়ে গেছে সেইসঙ্গে ঘুমটাও পালিয়ে গেছে I সুজন অন্যমনস্ক ভাবে ওর বইয়ের তাক থেকে কবিতার বইগুলো নামাতে লাগলো I হঠাৎই একটা বইয়ে চোখ আটকে গেল I এই বইটা হিয়া ওকে দিয়েছিল I হিয়ার জন্ম দিনের পর I প্রথম পাতায় একটা কবিতা লেখা I কবিতাটা পড়ে বিমোহিত হয়ে গিয়েছিল সেদিন সুজন I হিয়া লিখেছিল
আজ তোমাকে আমার মাঝে পেয়ে
মনে হচ্ছে হৃদয় মাঝে উঠলো জোয়ার ধেয়ে

তুমি এলে লাগলো আমার ঘোর
তুমি এলে ঘুচলো আমার অপেক্ষার প্রহর

তুমি এলে উঠল সূর্য ভরে
তুমি এলে আধার গেল সরে
তুমি এলে কাটলো অন্ধকার
তোমার মাঝে আমায় পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার I

কবিতাটা পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই হিয়াকে ফোন করেছিল সুজন I ও ধরেনি I বাধ্য হয়েই টেক্সট করেছিল
– এই কবিতাটা কার লেখা হিয়া ?
– আমার
– তুমি কবিতা লেখ !
– আগে লিখতাম না এখন লিখি I শুধু তোমার জন্য I

চলবে……..

লেখনীতে
অনিমা হাসান

এই পর্বে দুটো কবিতা দেয়া হয়েছে I প্রথমটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বলাকা থেকে নেয়া আর শেষেরটা আমার নিজের লেখাI খুবই বিচ্ছিরি কাঁচা হাতের লেখা I প্রাসঙ্গিক আর কোন কবিতা না পাওয়ায় এটাই দিতে হলো I আশা করছি পাঠকেরা বিরক্ত হবেন না I

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-০৪

0

তোমাকে বলার ছিল…
চতুর্থ পর্ব
বাড়ি ফিরে তৃণা দেখল সবাই বিয়ে বাড়িতে গেছে I আশ্চর্য কেউ ওকে একবার জানানোর ও প্রয়োজন বোধ করেনি I যাক, এ আর নতুন কি I তৃণা হাত মুখ ধুয়ে চেঞ্জ করে নিজের ঘরের দিকে তাকালো I ও সবসময় ঘরটাকে খুব সুন্দর আর পরিপাটি করে রাখে I যদিও এটাকে নিজের ঘর বলতে ওর খুব ঘেন্না হয় I
মনে আছে যখন প্রথম দাদা বাড়ি থেকে এখানে এসেছিল ওর জায়গা হয়েছিল বারান্দায় I পুরানো দিনের বাড়ি বলে বারান্দাটা বেশ বড় I সেখানেই একটা ছোট খাট আর পড়ার টেবিল পেতে ওকে থাকতে দেয়া হয়েছিল I একটা টেবিল ফ্যান ও ছিল I রাতের বেলা কার্নিশ দিয়ে বিড়াল হেঁটে গেলে তৃণার খুব ভয় করত I দাদা বাড়িতে সবসময় দাদির সঙ্গে থাকতো ও I কখনো এভাবে একা বারান্দার মধ্যে থাকেনি I
তৃণাকে আনতে গিয়েছিলেন ওর বড় চাচা I বড় চাচা ভীষণ ভালবাসলেন তৃণাকে I প্রতিবছর ঈদের সময় চাচা চাচি আর টুম্পা আসতো I টুম্পা তৃণার চাচাতো বোন I তৃণার দুই বছরের ছোট I বড় চাচা কত উপহার নিয়ে আসতেন I তৃণার জন্য ওর প্রিয় চকলেট নিয়ে আসতেন I টুম্পা কত খেলত তৃণার সঙ্গে I এখানে আসার পর সব হঠাৎ করে এমন বদলে যাবে তৃণা কল্পনাও করেনি I পরদিন দাদি ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন সব ঠিক আছে কিনা I তৃণা কিছু বলতে পারেনি, ঘাড়ের উপর বড় চাচী দাঁড়িয়ে ছিলেন Iঅবশ্য না থাকলেও কিছু বলতো না I
ওকে একটা সাধারন সরকারি স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল I তখন টুম্পা নামিদামি প্রাইভেট স্কুলে পড়ে I তবুও তৃণা কিছু বলেনি I সব মেনে নিয়েছিল I দাদির কাছে কোনো অভিযোগ করেনি I স্কুলের প্রথম দিনের কথা তৃণা কোনদিনও ভুলবে না I তৃণা পেছনের সারির একটা বেঞ্চের কোনায় সবে বসেছে কোত্থেকে একটা মেয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল
– এখানে বসেছিস কেন ? এটা আমার সিট জানিস না ?
তৃণা উঠতে যাবে , তার আগেই মেয়েটা ওর একটা বেনি ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে ওকে নামিয়ে দিতে নিল I ব্যথার চাইতেও বেশি অবাক হয়েছিল তৃণা I ওর সঙ্গে আগে কেউ কখনো এরকম আচরণ করেনি I কান্নাটা প্রায় গলার কাছে চলে এসেছিল তার আগেই হঠাৎ করে মেয়েটা হুড়মুড় করে ওর গায়ের উপর এসে পড়ল I বোঝা গেল পেছন থেকে কেউ ধাক্কা মেরেছে অথবা পিঠে কিল বসিয়ে দিয়েছে I ঘটনার আকস্মিকতায় তৃণা হকচকিয়ে গেল I আর তখনই দেখল একটা মিষ্টি চেহারার মেয়ে ওদের দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে I মেয়েটা মিষ্টি করে হেসে বলল
– তোকে না নিষেধ করেছিলাম মারামারি করতে
অন্য মেয়েটা উঠে দাড়িয়ে তেতে উঠে বলল তাই বলে তুই আমাকে মারবি ?
মিষ্টি চেহারার মেয়েটা খুব অবলীলায় অন্য মেয়েটার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল I তারপর আবারো মিষ্টি করে হেসে বলল
– হ্যাঁ মারলাম I তুই মারলে নিজেও মার খাবি
অন্য মেয়েটা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল তুই আমার গায়ে হাত তুললি ?
এবারে ও আরো সুন্দর করে হাসলো তারপর বলল
– ঠিক আছে এর পরেরবার আর হাত তুলবো না I বারান্দায় নিয়ে গিয়ে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেবো
মেয়েটা ফোঁপাতে ফোঁপাতে চলে গেল I মিষ্টি চেহারার মেয়েটা তৃণার কাছে এগিয়ে এসে বলল
– আমি হিয়া I ক্লাস ক্যাপ্টেন কোন সমস্যা হলে আমাকে বোলো কেমন ?
– থ্যাংকস I আমি তৃণা I আজকেই প্রথম ক্লাস
– সমস্যা নেই, এসো আমার সঙ্গে বসবে I ওই ফাজিল মেয়ের জায়গায় তোমাকে বসতে হবে না I
এই ভাবেই ওদের বন্ধুত্বের শুরু I এরপর এতগুলো বছর ধরে সুখে দুঃখে ওরা কখনো পরস্পরের হাত ছাড়ে নি I কিন্তু এবার তৃণার মনে হচ্ছে হিয়া কাজটা ভালো করেনি I হিয়ার সঙ্গে কথা বলাটা খুব জরুরী I কিন্তু তার চেয়েও জরুরী হচ্ছে এক কাপ চা খাওয়া I তৃণা রান্নাঘরে গেল চা করতে I রান্নাঘরে গিয়ে মনে হল ভাগ্যিস খেয়ে এসেছিল তা না হলে খালি পেটে শুতে হত I ওর জন্য কোন খাবার রাখা হয়নি I তৃণা চা নিয়ে ঘরে চলে এলো I আরাম করে চায়ে চুমুক দিয়ে হিয়াকে ফোন করে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল I কল ওয়েটিং এ দেখাচ্ছে I নিশ্চয়ই ওই বদমাইশ রাতিনটার সাথে আবার গল্প করছে I
তৃণা ঘড়ি দেখল I সাড়ে নয়টা বেজে গেছে I দশটার সময় সুজন কে ফোন করতে হবে I তৃণা উঠে গিয়ে চুল আচঁড়া নিল I অনেকখানি লম্বা চুল ওর I এই রিবন্ডিং এর যুগে ওর ঢেউ খেলানো লম্বা চুলগুলো বেশ ব্যতিক্রমী দেখায় I চুল বেঁধে মুখে ক্রিম মেখে তৃণা আবারো হিয়া কে কল করল I যথারীতি কল ওয়েটিং এ I হঠাৎ তৃণার মনে হল হিয়া বলছিল ওর মেসেঞ্জার আইডি চেঞ্জ করে ফেলেছে তারমানে তো ও সুজনের কোন ম্যাসেজই পাচ্ছে না I পুরনো আইডির পাসওয়ার্ডটা তৃণার কাছে আছে I একটা সময় বিরক্ত হয়ে হিয়া বলেছিল
– এতসব কপি পেস্ট আর ভালো লাগছেনা I তুই না হয় আমার আইডিটা তোর ওখানে ওপেন কর , তাহলে আমরা দুইজনই দেখতে পাবো I
পরের দিকে তৃণা নিজেই লিখতো I আর সেই সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে নিতো দুজনে I হিয়া খুব হাসাহাসি করত I বলতো
-দেখ আবার না তোর সঙ্গে প্রেম হয়ে যায় !
-কদিন পর ওকে বলে দিস I বেশি দেরি করিস না
– আরে একবার লাইনে তো আসুক
সুজনের প্রথম কবিতা পেয়ে হিয়া লিখেছিল
– কি সব হাবরা-যাবরা লিখেছে, কিছুই তো বুঝতে পারছি না
তৃণার ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়েছিল I এমন সুন্দর একটা কবিতা লিখেছে আর হিয়া এই সব বলছে I তৃণা বলেছিল
– এভাবে বলছিস কেন ?
– তো কি করব ? খুশিতে নাচবো ?
– চাইলে নাচতে পারিস I এটা কিন্তু গ্রিন সিগন্যাল এর শুরু
– তাই নাকি ? হিয়া লাফিয়ে উঠেছিল I তাহলে কালকে ওর সঙ্গে দেখা করি ?
– একেবারেই না I আমি যেভাবে বলছি সেটা কর I আগামী দুইদিন তুই ক্লাসে যাবি না I মেসেঞ্জার ও অফ করে রাখবি
– এর মানে কি ? তুই না বললি গ্রিন সিগন্যাল ?
– হ্যাঁ, কিন্তু সেটা পার্মানেন্ট করতে হবে তো
হিয়া সত্যি সত্যি পরবর্তী দুই দিন ক্লাসে গেল না I সুজন ওকে অনেকবার কল দিয়েছিল I কিন্তু হিয়া অফলাইনে ছিল I তিনদিন পর সুজনের যখন পাগলপ্রায় অবস্থা তখন হিয়া অনলাইনে এসে মেসেজ পাঠালো
– কি হয়েছে এত বার কল দিচ্ছ কেন ?
জবাবে সুজন লিখেছিল
‘এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না
একবার তোমাকে দেখতে পাবো
এই নিশ্চয়তাটুকু পেলে-
বিদ্যাসাগরের মতো আমিও সাঁতরে পার
হবো ভরা দামোদর
কয়েক হাজার বার পাড়ি দেবো ইংলিশ চ্যানেল;
তোমাকে একটিবার দেখতে পাবো এটুকু ভরসা পেলে
অনায়াসে ডিঙাবো এই কারার প্রাচীর,
একবার দেখা পাবো শুধু এই আশ্বাস পেলে
এক পৃথিবীর এটুকু দূরত্ব
আমি অবলীলাক্রমে পাড়ি দেবো।
তোমাকে দেখেছি কবে, সেই কবে, কোন বৃহস্পতিবার
আর এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না।……….’
এর পরেও বেশ অনেকটা সময় লেগেছিল ওদের দুজনের কাছাকাছি আসতে I তৃণা ভেবেছিল হিয়ার অমন সুন্দর মুখশ্রী , এ মুখের মায়া সহজে কেউ এড়াতে পারবে না I কিছুদিন পর আর এসব কবিতার প্রয়োজন পড়বে না I কিন্তু সেটা আদতে হয়নি I সুজন বোধহয় আসলেই আর দশটা ছেলের মত নয় I তৃণা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘড়িটা আবার দেখলো I দশটা বেজে গেছে I একটু অস্বস্তি নিয়ে তৃনা ফোনটা হাতে নিল I কী আশ্চর্য সুজন কল করল কখন ? মনে পড়ল স্টেজে ওঠার আগে ফোনটা সাইলেন্ট করা হয়েছিল, আর ঠিক করা হয়নি I তাই বোধহয় শুনতে পাইনি I এবার তৃণা নিজেই কল করল I সুজন বলল
– তোমাকে ফোন করলাম ধরলে না যে
– সরি, ফোনটা সাইলেন্ট ছিল খেয়াল করিনি
– কি পড়তে চাও আজকে ?
– থার্মোডাইনামিক্স নিয়ে বসি ?
– পড়া যায় I তবে আমার কাছে নোটটা নেই I হাবিব নিয়ে গেছে I তোমার কাছে বই আছে ?
– লাইব্রেরী থেকে তুলেছিলাম I দাঁড়াও নিয়ে আসছি
-আচ্ছা আমরা আজকে ফার্স্ট এন্ড সেকেন্ড ‘ল পড়বো
– ঠিক আছে
সুজন বোঝাতে আরম্ভ করলো I পড়াতে পড়াতে কেমন একরকম নেশা ধরে গেল ওর I তৃণা মাঝে মাঝে টুকটাক প্রশ্ন করলেও মোটামুটি সুজনকে বলতে দিল বেশি I সুজন অসম্ভব ভালো পড়ায় I সব ভালো ছাত্রের মধ্যে এই গুনটা থাকেনা I ওর মধ্যে আছে I ও নিঃসন্দেহে একজন ভালো টিচার হতে পারবে I তৃণা একসময় হাই তুলে বলল
– আজ এ পর্যন্তই থাক I সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে I
সুজন চমকে উঠলো I কি অদ্ভুত I থার্মোডাইনামিক্স এর সূত্রে ও এমন ভাবে আটকে ছিল যে সময়ের খেয়ালই ছিল না I অন্যদিন হলে এই সময়টা ওর কাটতেই চায় না I শুধু ঘড়ির দিকে তাকায় আর কবিতার জন্য অপেক্ষা করে I
– আচ্ছা ঠিক আছে আজকে এই পর্যন্তই থাক I কালকে শেষ করে দেব I যতটুকু পড়েছি তুমি পুরোটা মুখস্ত করে রেখো I
– আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে কাল কথা হবে I
ঘুমাতে যাওয়ার আগে তৃণা ভাবলো একবার হিয়ার আইডিটা চেক করে দেখা যেতেই পারে I কেন জানি একটা ক্ষীণ আশা মনের মধ্যে দেখা দিচ্ছে , যদি সব ঠিক হয়ে যায় I আইডি ওপেন করে তৃণা হতভম্ব হয়ে গেল I এইমাত্র সুজন একটা কবিতা পাঠিয়েছে
তোমার কাছে আর যাব না
নদীর কাছে যাবো
সকাল বেলার ভাঙ্গন দেখে
তোমার ছায়াই পাব
তোমার কাছে আর যাব না
যাবো মেঘের কাছে
তোমার চেয়ে দৃশ্য বদল
তারই জানা আছে
তোমার কাছে আর যাব না
যাব সমুদ্দুরে
তোমার চেয়ে চতুর ঢেউয়ে
ভাসবো অনেক দূরে
তোমার কাছে আর যাব না
থাকবো নিজের কাছে
তোমায় ছেড়ে ভালো থাকার
অনেক কিছুই আছে
কবিতাটা পড়ে তৃণার মনটাই খারাপ হয়ে গেল I তৃণা খুব করে চেয়েছিল যেন ওদের ভালোবাসাটা সফল হয় I অন্তত একবারের জন্য হলেও ওর ভালবাসার প্রতি বিশ্বাস টা ফিরে আসত I মনে হতো এই পৃথিবীতে সবাই ওর বাবা মায়ের মত নয় I এখনও এই পৃথিবীতে ভালোবাসা বেঁচে আছে I কিন্তু হিয়া সবটাই মিথ্যা প্রমাণ করে দিল I
কবিতাটা পাঠানোর পর সুজন অনেকক্ষণ বারান্দায় বসে রইল I আজও বোধহয় ঘুম আসবে না I আজ তৃণা কে পড়াতে যেয়ে একটা ব্যাপার বুঝতে পেরেছে সুজন I পড়ানো টা শুধু ওর ভালো লাগা নয়; একটা প্যাশন ও বটে I আবেগের বশে ও আর এটাকে নষ্ট করবে না I
কিন্তু যেই কথাটা সুজন কিংবা তৃণা কেউ জানলো না; তা হল পুরনো আইডি খুলে কবিতাটা দেখে হিয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘুমাতে চলে গেল I
চলবে……..
লেখনীতে
অনিমা হাসান
এই পর্বে দুইটা কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে এক কোটি বছর তোমাকে দেখিনা মহাদেব সাহার লেখা আর তোমার কাছে আর যাব না লুৎফর হাসানের লেখা I

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-০৩

0

তোমাকে বলার ছিল…
তৃতীয় পর্ব

– সুজন তোর কাছে থার্মোডাইনামিক্স এর নোট টা হবে ?
সুজন ওর পাশে রাখা চশমাটা চোখে দিল I চশমার কাঁচ ঘোলাটে হয়ে আছে মুছতে ইচ্ছা করছে না I এমনিতেই আজ চশমাটা বারবার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে I সুজন ঘোলাটে চশমা দিয়েই ব্যাগ হাতড়ে নোটটা বের করল I তারপর বলল
– কালকে ফেরত দিলেও হবে
– অনেক থ্যাংক ইউ রে I তুই আমার ফটোকপি টাকাটা বাঁচিয়ে দিলি I আজ রাতেই লিখে ফেলবো
– আচ্ছা সমস্যা নেই
আজ লাইব্রেরীতে কিছুতেই মন বসছে না I তিন দিন হয়ে গেল হিয়া ফোন ধরছেনা , মেসেজ করছে না এমনকি মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছে না I শুধু অদ্ভুত একটা মেসেজ পাঠিয়ে ,তারপর দুইদিন ফোন বন্ধ করে রেখেছে I সুজন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা বের করে একটা কল করলো I

-তুমি কি বিজি তৃণা ?
– না সেরকম কিছু না I কেন ?
– একটু দেখা করতে পারবে ?
– এখন ? তুমি কি এখন আবার ক্যাম্পাসে আসবে ?
– আমি ক্যাম্পাসেই আছি I তুমি কোথায় ? তোমার হলের কাছে আসবো ?
– আমি হলে থাকি না I
-ও, তাহলে বরং থাক
– সমস্যা নেই আমি ও কাছাকাছি আছি I তুমি কোথায় আছো বলো আমি আসছি
– আমি লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে গেছি I তুমি কোথায় ?
– টিএসসিতে
– আচ্ছা আমি আসছি
তৃণা একটু জড়োসড়ো হলো I সুজনে ওর সঙ্গে দেখা করতে চায় কাল রাতে মেসেজ জানিয়েছে I কিন্তু এখন একটু অস্বস্থি হচ্ছে I তৃণা গ্রুপের সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো I এপ্রিলের শেষ I একটু গরম পড়েছে I তবে এদিকটাতে ভালোই বাতাস I বেশ সুন্দর আবহাওয়া I তৃণ আস্তে আস্তে সামনের দিকে হাটতে লাগল I রোকিয়া হল এর কাছাকাছি এসে দেখল সুজন রাস্তা পার হয়ে এদিকে আসছে I তৃণা ওকে দেখে হাত নাড়লো I সুজন বোধহয় প্রথমে তৃণা কে চিনতে পারেনি I না পারারই কথা I তৃণা আজকে শাড়ি পরে এসেছে I হালকা বেগুনির মধ্যে সবুজ পাড় I অন্ধকারে যদিও খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না I তবে দিনের আলোয় দেখলে যে কাউকেই জারুল ফুলের কথা মনে করিয়ে দিত I তৃণা একেবারেই সাজেনি I তবে ওকে খুব স্নিগ্ধ লাগছে I সুজন একটু অবাক হয়ে বলল
– তোমার কি কোন প্রোগ্রাম ছিল ?
– হ্যাঁ I আমাদের গ্রুপের একটা প্রোগ্রাম ছিল
– কিসের গ্রুপ ?
– আবৃত্তির
– তুমি আবৃত্তি করো ? সুজন বিস্মিত হয়ে জানতে চাইল
– এই টুকটাক I সেরকম কিছু না I
তৃণা এড়িয়ে গেল I গ্রুপে ওর ভালোই পরিচিতি I ফার্স্ট ইয়ার থেকেই ও গ্রুপের সঙ্গে আছে I আজ একটা কথোপকথনের মেইন লিড ছিল ওর I ছোটবেলা থেকেই ওর গান শিখার শখ ছিল I কিন্তু টিচার ইন্সট্রুমেন্ট এর খরচ নানা ঝামেলায় পারেনি I তাই ফার্স্ট ইয়ার থেকে গ্রুপের সঙ্গে জয়েন করেছে I বেশ লাগে I স্কুলে থাকতেও তৃণা টুকটাক আবৃত্তি, উপস্থাপনা করেছে I এখন ডিপার্টমেন্টের যে কোন অনুষ্ঠানে ওই উপস্থাপনা করে I ওর আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠস্বর সুন্দর বাচনভঙ্গি নির্ভুল উচ্চারণ সকলেরই ভালো লাগে I

– তোমার সঙ্গে একটু কথা ছিল তৃণা
– হ্যাঁ বল
– একটু কি বসতে পারি ?
– এখানে বসবে ? তৃণা একটু অবাক হলো I সন্ধ্যা হয়ে গেছে I হলের সামনে এসময় প্রচুর কপোত-কপোতী বসে গল্প করছে I সুজন এখানে বসতে চাইবে ও আশা করেনি I
– কোন সমস্যা ? সুজন জানতে চাইল
– না আমার কোন সমস্যা নেই I চলো বসি
কালভার্টের উপর দুজন বসল পাশাপাশি I তৃণা বলল
– চা খাবে ?
– না I আমি যদি একটা সিগারেট ধরাই তোমার কি খুব সমস্যা হবে ?
তৃণা হেসে ফেললো
-সমস্যা হবে কেন ? এটা স্বাধীন দেশ I তুমি অবশ্যই সিগারেট ধরাতে পারো I

সুজন সিগারেট ধরালো I তৃণা লক্ষ্য করলো ওর হাত কাঁপছে I সিগারেট ধরিয়ে ওভাবেই বসে রইলো I তৃণার খুব অস্বস্তি হচ্ছে I কি বলবে বুঝতে পারছে না I অনেকক্ষণ পর তৃণা বললো
-তুমি ঠিক আছো সুজন ?
সুজন কিছু বলল না অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন I তৃণা একটু অবাক হল I চশমা ছাড়া ছেলেটাকে একেবারে অচেনা লাগছে I
-তুমি খেয়েছো কিছু ?
-হ্যাঁ ? না কিছু খাইনি
– আমিও খাইনি কিছু খাবে ?
– ও আমার সঙ্গে এমন কেন করল তৃণা ?
-তুমি ওর কথা মাথা থেকে বের করে ফেলো I ভেবে নাও এমন কিছু হয়নি
সুজন একটু হাসল I
-এতো সহজে বলে ফেললে ? জানো তৃণা আমার আজকাল নিজেকে খুব অপদার্থ মনে হয় I মনে হয় আমি হয়তো …….
– আচ্ছা সুজন তোমার থার্ড পেপার এর কি অবস্থা ? আমার মনে হয় আমি ওটাতে ফেল করব
সুজন কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইল তারপর হেসে বলল
– তুমি খুব অদ্ভুত তৃণা I এই কথাটা এখন ইচ্ছা করেই বললে তাই না ?
– সে তুমি যা ভাবার ভেবে নাও কিন্তু আমার আসলেই একটু হেল্প দরকার I তা না হলে ফেল করব I একটু সাহায্য করবে আমাকে I
– অবশ্যই করবো
– দিনের বেলা তো ক্লাস থাকে আর বিকেলে আমাকে টিউশনি করতে হয় I তোমার যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে দশটার দিকে ফোনে আমাকে একটু বুঝিয়ে দিতে পারো I পারবে ?
– হু
– ঠিক আছে তাহলে আমি কল দেব I আজ তাহলে যাই
– তোমাকে পৌছে দেবো রাত হয়ে গেছে তো
তৃণা ঘড়ি দেখল I সাড়ে আটটা বাজে I
– রাত কোথায় ? মাত্র সাড়ে আটটা বাজে I আমি এখন কোথাও বসে খাব I তারপর বাড়ি যাবো I তুমি কি কিছু খেয়েছো দুপুরে
– না
-খাবে কিছু ?
– খাওয়া যায়
– কি খাবে বলো ?
– একটা কিছু হলেই হল
– এভাবে বললে তো হবেনা I
– কেন ?
– এই ধরো তুমি চিংড়ি মাছ খাও না আমি যদি এখন তোমাকে একটা সি-ফুড রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাই তুমি খেতে পারবে ?
সুজন বিস্মিত হয়ে বলল
– তুমি কি করে জানলে যে আমি চিংড়ি মাছ খাইনা
– আমি জানিনা Iএটা একটা এক্সাম্পল ছিল I যাক জেনে ভালো হলো
ওরা দুজন রিকশা নিয়ে ধানমন্ডির একটা রেস্টুরেন্টে বসে দুটো সেট মেনু খেলো I খেতে বসে বোঝা গেল দুজনই প্রচন্ড ক্ষুধার্ত ছিল I খাওয়া শেষে তৃনা বললো
– তুমি এখান থেকে ফিরবে কি করে ? তোমার বাসাতো গুলশান তাই না ? তোমাকে এদিকে নিয়ে আসাটা উচিত হয়নি
– সমস্যা নেই গাড়ি এসে নিয়ে যাবে
– তুমি তো ফোন করনি I আসতে তো প্রায় ঘন্টাখানেক লাগবে
– না গাড়ি ক্যাম্পাসে রাখা আছে
তৃণা আশ্চর্য হয়ে বলল
– তাহলে তুমি গাড়ি রেখে আমার সঙ্গে রিক্সা করে আসলে কেন ?
– এমনি I রিক্সায় খুব একটা উঠা হয় নাতো তাই
সুজনের কন্ঠস্বর কেমন বিষন্ন শোনালো I সুজন প্রায়ই হিয়াকে বলতো রিক্সা করে কোথাও ঘুরতে কিন্ত হিয়া রাজি হতো না সবসময় গাড়ি নিতে চাইত I সঙ্গে তৃণা কে ও যেতে হতো I তৃণা যেতে চাইতো না I তবু দুজনেই জোর করত I হঠাৎ করেই সবকিছু এরকম হয়ে যাবে তৃণা কোনোদিন ভাবতেও পারেনি I দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও বলল
– আমি এবার যাই I দশটার পর তোমাকে ফোন দিব
– আচ্ছা সাবধানে যেও
তৃণা চলে যাবার পর সুজন আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে লেকের ধারে গিয়ে বসল I জায়গাটা আবছা অন্ধকার I অন্যমনস্ক হয়ে বসে রইল সুজন I
গত দু’দিন হিয়া ওর মেসেজের রিপ্লাই করেনি I যদি আজ ও না করে তাহলে আর কোনো দিন ও কে বিরক্ত করবে না I কিন্তু কেন ও এরকম করলো এটা খুব জানতে ইচ্ছা করছে I

অনেকদিন পর্যন্ত হিয়া ওকে প্রতিরাতেই তিনটা করে কবিতা পাঠাতো I সুজন জবাব দিত না I একটা লেখার কথা আজ খুব মনে পড়ছে I হিয়া লিখেছিল

করুণা করে হলেও চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি
দিও খামে
কিছুই লেখার নেই তবু লিখো একটি পাখির শিস
একটি ফুলের ছোট নাম,
টুকিটাকি হয়তো হারিয়ে গেছে কিছু, হয়তো পাওনি খুঁজে
সেইসব চুপচাপ কোন দুপুরবেলার গল্প
খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড় একা লাগে, তাই লিখো
করুণা করে হলেও চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলেও বোলো, ভালবাসি !
এই কবিতাটার মধ্যে একটা অদ্ভুত বিষন্নতায় আছে I এই বিষন্নতা ছুঁয়েছিল সুজনক I মেসেজ পেয়ে সেদিন হিয়াকে ফোন করেছিল সুজন হিয়া ধরেনি I বাধ্য হয়ে টেক্সট করেছিল সুজন
– তুমি আমাকে এইসব কবিতা কেন পাঠাও হিয়া ?
হিয়া লিখেছিল
– এগুলো কবিতা নয় আমার মনের কথা I কিন্তু এই যে আমি তোমাকে এত কিছু লিখি, কই তুমি তো কখনো তার জবাব দাওনা I
– কি জবাব দেবো ?
– আজ যদি জবাব না দাও তাহলে আর কোনদিন তোমাকে কিছু লিখব না
মেসেজ পেয়ে আঁতকে উঠেছিল সুজন I ততদিনে ওর নেশা ধরে গেছে I এই কবিতা আসা বন্ধ হয়ে গেলে মনে হয় ওই দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে I সুজন লিখেছিল
খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে
এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা
এক পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা
কিংবা ধরো রেল লাইনের পাশাপাশি শুয়ে
অবিরাম বয়ে চলা ।
যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে
মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন
দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির।
তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া, থেকে স্পর্শ
রোদ্দুরের বু্‌ক, থেকে উত্তাপ
শীতলতা, থেকে উষ্ণতা
প্রেমে্‌র, খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা
তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছা কাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।
মেসেজটা পেয়ে হিয়া দ্রুত তৃণা কে সেটা ফরওয়ার্ড করে দিল আর তার সঙ্গে লিখল
– কীসব হাবরা জাবরা লিখেছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না I
চলবে……..

লেখনীতে
অনিমা হাসান

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-০২

0

তোমাকে বলার ছিল…
দ্বিতীয় পর্ব

-ঠিক আছে আমি উঠলাম
– এই না
হিয়া দুই হাতে শক্ত করে তৃণার হাত চেপে ধরলো I একদম যাবি না এখন I বসে থাক চুপচাপ আমি খাবার নিয়ে আসছি I
– আমি এখন খাব না
– একশোবার খাবি I তুই সকালেও কিছু খাস নি
– তুই যদি সুজনের সঙ্গে ওই রকম করিস তাহলে তোর সঙ্গে আমি আর কথাই বলব না খাওয়া তো দূরের কথা
– কোথাকার কোন সুজন তার জন্য তুই আমাদের এত দিনের বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিবি ?
– আচ্ছা ! সে এখন কোথাকার কোন সুজন হয়ে গেল ? ওর জন্যই না তুই একদিন মরতে বসেছিলি ডেটল ফেটল খেয়ে কি অবস্থা I
হিয়া হাসতে হাসতে বলল
– আরে ধুর I আমি ডেটল খেয়েছিলাম নাকি I এক ঢোক খেয়ে দুবার বমি করেছিলাম তারপর সবটা কমোডে ফেলে দিয়েছি I আরেকটু আশেপাশে ছড়িয়ে তোদের ভয় দেখিয়েছিলাম I
– কি ? সত্যি ?
– তো তুই কি ভেবেছিস ? আমি ওই বোরিং সুজনের জন্য মরতে যাব ?
– আচ্ছা সে এখন আবার বোরিং ও ? এত রাগ এর মধ্যেও তৃণা হেসে ফেলে
-দাঁড়া খাবারটা আগে নিয়ে আসি তারপর বলছি
হিয়া ক্যান্টিন থেকে দুটো ভুনা খিচুড়ি প্যাকেট নিয়ে এলো I একটা তৃণার হাতে দিয়ে আরেকটা নিজে নিয়ে বসলো পা ছড়িয়ে আরাম করে I তারপর বলল
– আরাম করে খা I এরপর চা আনছি
-এটা কি ঘুষ ?
– কি বাজে কথা বলিস I শোন এতদিন পর এই কথাটা থেকে বলতে পেরে খুব ফ্রি লাগছে I এতদিন মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে মরে যাব I
– কেন ?
– এসব কবিতার ভ্যানতারা আমাকে দিয়ে আর হবে না
– তোর এটা আগে ভাবা উচিত ছিল
– সেসময় একটা জেদ চেপে গিয়েছিলো
– তার মানে তুই ওকে ভালবাসিস না
– কি যন্ত্রণা I ভালো লেগেছিলো একটু কিন্তু ও ঠিক প্রেম করা টাইপের না
– তাহলে কি টাইপের ?
– কী টাইপের আল্লাই জানে I হাত ধরতে গেলে চমকে ওঠে I সেদিন চুমু খেতে গেলাম এমন ভাব করলো যেন আমি ওকে রেপ করছি I
এত ঝামেলার মধ্যেও তৃণা না হেসে পারল না I হাসতে হাসতে বলল
– তা এই চেষ্টাটা তুই কখন করলি ?
– কদিন আগে
– কোন জায়গায় ?
– এখানেই, ক্যাম্পাসে
– তোর কি মাথা খারাপ ? এই জায়গায় কেউ এমন কাজ করে ?
– করবে না কেন ? আর তাছাড়া আমরা তো প্রেম করছি তাই না ? একটু-আধটু তো চলতেই পারে
– তুই একটা ইম্পসিবল I এটাই কি তোর সমস্যা ?
– আরে না I এটা কোন সমস্যাই না I ও আমি ঠিকই সাইজ করে নিতাম I সমস্যা বেধেছে অন্য জায়গায়
– কোথায় ?
– বলছি আগে একটু খেতে দে আরাম করে
তৃণা ঘড়ি দেখল I বাসের সময় প্রায় হয়ে এসেছে I এখনই না উঠলে ঝামেলায় পড়ে যাবে I তৃণা বললো
– আমাকে যেতে হবে রে I রাতে ফোনে কথা বলছি I আর শোন এর আগে সুজানের সঙ্গে কোন কথা বলবি না I এসব ব্রেকআপের চিন্তা মাথা থেকে বের করে ফেল I

হিয়া কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তৃণা ওকে থামিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল I হিয়া আপন মনেই বিড় বিড় করে বললো
কিন্তু এখনতো অনেক দেরী হয়ে গেছে I আমি তো অলরেডি ওকে বলে ফেলেছি I

টিউশনি সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তৃণার সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল I ভেবেছিল আজ বেতনের টাকাটা পাবে I কিন্তু আন্টি বাড়ি ছিল না I মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল I টাকাটা ভীষণ দরকার ছিল I নানা ঝামেলায় হিয়ার কথা মনে ছিল না তৃণার I সাড়ে নয়টা বাজায় খেয়াল হলো I তৃণা ফোন চেক করে দেখলো হিয়া কল করেনি I অগত্যা তৃণাই কল দিল I কল ওয়েটিং এ দেখাচ্ছে কেন ? তৃণা হাত মুখ ধুয়ে আধা ঘন্টা পরে আবার কল দিল I এখনো ওয়েটিং এ I কি অদ্ভুত I সুজনের সঙ্গে আবার ভাব হয়ে গেল নাকি I তৃণা মনে মনে একটু খুশি হলো I আরো অনেকক্ষণ পর তৃণা যখন শুতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন হিয়ার কল এলো
– হ্যালো তৃণা
– কি ? সুজনের সঙ্গে আবার ভাব হয়ে গেছে তাইনা ? আমি জানতাম
– কচু জানতি তুই
তৃণা একটু গম্ভীর হলো I
– তাহলে এতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলছিলি?
– হিয়া ভয়ে ভয়ে বলল রাতিনের সঙ্গে
তৃণা থমথমে গলায় বলল
– কোন রাতিন ?
-কয়টা রাতিন কে চিনিস তুই ?
-আমিতো একটাকেই চিনি I অ্যাপ্লাইড ফিজিকস এর I বদমাইশের হাড্ডি একটা
– যা এভাবে বলিস না I খুবই চার্মিং ছেলে
-তুই কি এখন আবার ওর সঙ্গে প্রেম করার ধান্দা করছিস ?
– আরে না I আর করলেই বা সমস্যা কি ? I am a free bird now
-মানে ? তুই কি সুজন কে মানা করে দিয়েছিস
– হ্যাঁ
– কবে ?
– দুই দিন হয়ে গেল
-ও তোকে মেসেজ পাঠাচ্ছে না ?
– কি জানি I পাঠাচ্ছে হয়তো I আমি আইডি চেঞ্জ করে ফেলেছি I ওর ফোন নাম্বার ব্লক করে দিয়েছি
তৃণার আগুন ধরে গেল I মনে হল হিয়া ওর সামনে থাকলে ওকে টেনে দুটো চড় বসিয়ে দিত I রেগেমেগে ফোন রেখে দিল তৃণা I

তৃণা ঘড়ি দেখল I প্রায় এগারোটা বাজে I ইস সুজন নিশ্চয়ই মেসেজের জন্য অপেক্ষা করছে I একটা পাতলা শাল জড়িয়ে ছাদে চলে গেল তৃণা I তৃণাদেরএই বাড়িটা অনেক পুরনো I তৃণার দাদা কিনেছিলেন অনেক বছর আগে I তখন এই অঞ্চলটা তেমন ডেভলপড হয়নি I ওর দাদা বাড়ি চট্টগ্রামে I ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ওখানেই ছিল I দাদির কাছে I ক্লাস ফাইভে যখন ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় দাদি ওকে ঢাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বড় চাচার কাছে , যাতে এখানে থেকে ভালো স্কুলে পড়তে পারে I যদিও খুব একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করা হয়নি I সরকারি স্কুলে ই পড়েছো I তবু আগাগোড়াই ওর রেজাল্ট ভালো I

তৃণার বাবা-মা নেই I আসলে থেকেও নেই I এখন তো ওর বাবা মায়ের মুখ ও মনে পড়ে না I বাবা কখনো ওর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি I এতগুলো বছর হয়ে গেল I তবে বাবার প্রতি ওর কেন জানি কোন রাগ নেই I তবে মায়ের প্রতি খুব অভিমান হয় I এখানে আসার তিন বছর পর ক্লাস এইটে বৃত্তি পরীক্ষার আগে ওকে কিছুতেই কোচিং করতে দেওয়া হচ্ছিল না I তৃণা তখন গোপনে ওর মাকে একটা চিঠি লিখেছিল I একবার দেখা করতে চেয়েছিল I মা দেখা করেনি I কিন্তু চিঠির জবাব দিয়েছিল খুব দ্রুতই I তা ও পোস্টে না I স্কুলের দারোয়ান এর কাছে দিয়ে গিয়েছিল ওর জন্য I চিঠির কয়েকটা লাইন আজও ভুলতে পারেনা তৃণা I মা লিখেছিলেন

তুমি নিশ্চয়ই চাও না তোমার জন্য আমার সংসারটা ভেঙে যাক I আমার স্বামী জানেন না যে আমার একটা মেয়ে আছে I যদি এখন জানতে পারেন তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়া আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবেন I আমার যাবার মত আর কোন জায়গা নেই I আমার কাছ থেকে কোনো আশা রেখো না I ওনারা যেভাবে বলে এভাবেই চল I এটাই তোমার জীবন I যার বাপ তাকে পেটে রেখে পালিয়ে যায় অন্য মহিলার সঙ্গে তার এত বড় বড় স্বপ্ন দেখা মানায় না I

তখন তৃণার বয়স কত হবে তেরো বড়জোর I চিঠিটা পেয়ে অনেক কেঁদেছিল তৃণা I ওই বয়সেও একটা কথা খুব ভালো করে বুঝে ছিল তৃণা I এই পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই I শুনেছে ওর বাবা-মা ভালবেসে বিয়ে করেছিল I এই যদি হয় ভালোবাসার নমুনা তবে তৃণা কোনদিনও কাউকে ভালোবাসবে না, কোনদিনও না I

নাদিয়া ম্যাডাম ওদের বাংলা পড়াতেন I তৃণা কে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদেছিলেন উনি I তৃণার এই পর্যন্ত উঠে আসতে উনার অবদান অনেক I আরেকজনের অবদান ও আছে I তাই আজও তার যেকোনো আবদার তৃণা ফেলতে পারেনা I

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদ থেকে নেমে গেল তৃণা I আগামীকাল একটা আবৃত্তি প্রোগ্রাম আছে I সকালে ক্লাস আছে দুপুরে ল্যাব I তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া দরকার I সিঁড়ির কাছাকাছি এসে দেখলো ফোনে একটা মেসেজ এসেছে I আশ্চর্য খেয়াল করেনি কেন ? অন্যমনস্ক ছিল হয়তো I মেসেজটা পড়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল তৃণার I

চলবে……..

লেখনীতে
অনিমা হাসান

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-০১

0

তোমাকে বলার ছিল…
প্রথম পর্ব
1.
-আমি তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা
-বুঝতে না পারার মত তো আমি কিছু বলিনি তৃণা I ব্রেকআপ মানে ব্রেকআপ
– এক মিনিট I তুই বলতে চাইছিস তুই আর সুজনের সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাস না ?
– না চাইনা
– কিন্তু কেন ? সব তো ঠিকই ছিলো
– এখন আর ঠিক নেই
– কেন কি করেছ ও ?
– কিছুই করেনি
– মানে ? কিছুই করেনি তাহলে সম্পর্ক ভাঙতে যাচ্ছিস কেন ?
– ওফ I এত কথা বলতে পারবোনা I তুই ওকে বলে দে আজ থেকে আমার সঙ্গে আর কোন সম্পর্ক নেই

তৃণার এবার সত্যি সত্যি মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে যায় I গত এক বছর ধরে নানান ধরনের নাটক করে হিয়া সুজনের সঙ্গে এ সম্পর্কটা করেছে আর এখন ছয় মাসের মাথায় বলছে সম্পর্ক শেষ I তাও যদি তৃনাকে এসবের মধ্যে না জড়াতো তবু একটা কথা ছিল I পুরো ব্যাপারটা মধ্যেই তৃণা জড়িয়ে আছে I ওই সুজন কে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে হিয়া ওকে কতটা ভালবাসে I এখন আবার ওকে বলতে হবে
যে সম্পর্ক শেষ ?

তৃণা বেশ বিরক্ত গলায় বলল

– তোর যা বলার নিজে গিয়ে বল I আমাকে এর মধ্যে টানিস না
হিয়া এবার নরম হলো I কাছে এগিয়ে এসে তৃণার হাত দুটো ধরে বলল
-এমন করিস না দোস্ত I

কথা হচ্ছিল টিএসসির করিডোরে বসে I তৃণা ঘড়ি দেখল I ওঠা দরকার I না হলে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে I হিয়া বলল
– তোর নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে I চল কিছু খাই I

বেলা তখন প্রায় দেড়টা বাজেI তৃণা কে বাস ধরতে হবে I টিউশনিতে যেতে হবে I তিনটা থেকে পড়ানোর কথা I এখনো তৃণার খাওয়া হয়নি I পড়ানো শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে যায় I ততক্ষণে বাড়িতে সবার খাওয়া শেষ হয়ে যায় I মাঝে মাঝে বাড়ি ফিরে তৃণ দেখে পাতিলের কোনে তলানি একটু ভাত পড়ে আছে I কোন কোন দিন সেটাও থাকেনা I সবাই ভাবে তৃণা হয়তো খেয়ে ফিরবে I

স্টুডেন্টের বাসায় মাঝে মাঝে চা দেয়I কখনো কখনো চায়ের সাথে হালকা নাস্তা ও থাকে I কোন কোন দিন দিতে বড্ড দেরি করে ফেলে I মাঝে মাঝে আন্টি বাড়ি না থাকলে দেয় ও না I তৃণার ভীষণ খিদে পায় সে সময়ে তাই আজকাল যাবার আগেই কিছু খেয়ে নেয় I আজ এখন পর্যন্ত কিছু খাওয়া হয়নি I হিয়া ওকে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছে I তৃণার সত্যিই খিদে পেয়েছে কিন্তু এখানে এভাবে খেতে ইচ্ছা করছে না I তৃনা বললো
– না আমি এখন উঠবো
– এমন করিস না ভাই Iতুই জানিস না কি হয়েছে
– কি হয়েছে বল আমাকে I সুজন কিছু বলেছে তোকে ?
– আরে না I ও কি বলবে ?
– তাহলে সমস্যা কি ?
– আমার আর ওকে ভালো লাগছেনা
তৃণার এবার প্রচন্ড রাগ হল I কয়েকদিন আগেও হিয়া সুজনের জন্য মরে যাচ্ছিল I কান্না টান্না করে কি হুলুস্থুল অবস্থা I আর এখন ভালো লাগছেনা ?

সুজন ওদের ক্লাসের সবচেয়ে ভদ্র শান্ত এবং চুপচাপ ছেলে I ছাত্র ও সেইরকম ভালো I অনেকেই ওকে চলমান ডিকশনারি বলে I কারো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে ওর কাছেই যায় I কোন রেফারেন্স বুক না দেখেই ও ঝটপট উত্তর দিয়ে দেয় I বুঝিয়ে ও দেয় সুন্দর করে I কখন ও বিরক্ত হয়না I দেখে মনে হয় ব্যাপারটাতে ও বেশ আনন্দ পায় I তৃণা বেশ কয়েকবার গেছে ওর কাছে পরিসংখ্যানের নানা ফর্মুলা বুঝতে I ফার্স্ট ইয়ারে পরিসংখ্যান ক্লাস এর জন্য অনেকেই দুই মাসের কোচিং করেছিল I তৃণা করতে পারেনি I 6000 টাকা দিতে হতো I তাই ও নিজেই চেষ্টা করেছিল কিন্তু শেষের দিকে এসে হাল ছেড়ে দিয়েছে I পাস ই করতে পারত না যদি না সুজন সাহায্য করত I সুজন অবশ্য আলাদাভাবে ওর জন্য তেমন কিছু করিনি I অনেকেই গেছিল ওর কাছে I সবাইকেই খুশিমনে সাহায্য করেছে ও I হিয়া ও ছিল ওদের মধ্যে I এই পড়ানোর সময়ই বোধহয় হিয়ার ওকে ভালো লেগে যায় I তারপর যখন রেজাল্টের পর দেখা গেল সুজন প্রথম হয়েছে তখন হিয়া হঠাৎ করেই ওর প্রেমে পড়ে যায় I কাউকে কিছু না জানিয়ে হুট করেই সুজনকে বলে বসে I সুজন ওকে কি বলেছিল কেউ জানে না কিন্তু এরপর হুলুস্থুল বাধে I হিয়া খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে তুলকালাম করে বাড়িতে I হিয়ার মায়ের ফোন পেয়ে তৃণা এসে দেখে ওর এখন তখন অবস্থা I

-কি হয়েছে ? তৃণা জানতে চাইল
– ও আমাকে মানা করে দিয়েছে I হিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল
– কে ?
– কে আবার সুজন
– তুই ওকে কখন বললি ?
– কাল
-তুই ওকে বলতে গেলি কেন ?
– আমি ওকে ভালোবাসি
তৃণা দীর্ঘশ্বাস ফেলল I হিয়ারএই প্রথমবার নয় I ক’দিন পরপরই ওর কাউকে ভালো লাগে I কখন ও ফোনে কখনো বা ফেসবুকে I কিছুদিন বেশ চলে I তারপর ও খেই হারিয়ে ফেলে I কিন্তু হিয়া সুজনের মত ছেলেকে ভালোবাসবে এটা তৃণা আশা করেনি I তৃণা বলল
– তুই কি সিরিয়াস ? আরেকবার ভেবে দেখ I সুজন কিন্তু তোর টাইপের না
– তুই ও দেখি এই কথাই বললি ?
– মানে?
– সুজন ও এটাই বলেছে
– কি ? যে তুই ওর টাইপের না ?
– না
– তাহলে ?
– বলেছে ও নাকি আমার টাইপের না I কদিন পর আমার আর ওকে ভালো লাগবে না
– ঠিকই তো বলেছে I তুই আবার ভেবে দেখ I
– অনেক ভেবেছি I ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না I

তৃণা আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে I প্রতিবার একই ডায়লগ I তৃণা পাত্তা দেয় না I বাড়ি ফিরে যায় I
সে রাতেই হিয়া আত্মহত্যার চেষ্টা করে I এক বোতল ডেটল খেয়ে ফেলে I খুব ভোর বেলা তৃণার কাছে ফোন আসে I হিয়ার মা কাঁদতে কাঁদতে করে বলে
– তুই আমার মেয়েটাকে বাঁচা I ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই I
তৃণা যখন হাসপাতালে পৌঁছালো ততক্ষণ এ হিয়ার স্টমাক ওয়াশ করে বেডে দিয়ে দিয়েছে I হিয়ার মা তৃণা কে দেখে জড়িয়ে ধরলেন তারপর কাঁদতে কাঁদতে বললেন
– তুই কিছু কর তৃণা , না হলে মেয়েটা আমার মরে যাবে
তৃণা হিয়াকে দেখে চমকে উঠলো I একদিনে কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার I তৃণা কাছে গিয়ে হিয়ার হাত ধরল I হিয়া ক্ষীণ স্বরে বলল
– ও কি আমার কথা জেনেছে ?
– না I
তৃণা হিয়ার হাতটা নিজের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে বলল
– আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি সব ঠিক করে দেবো

2.

রাত প্রায় সাড়ে দশটা I সুজন ওর ঘরের লাগোয়া বারান্দায় অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে I ওর হাতে জ্বলন্ত সিগারেট I সুজন সচরাচর সিগারেট খায় না I আজ অসম্ভব অস্থির লাগছে I হাতের সিগারেট পুড়তে পুড়তে যখন আঙ্গুলে ছ্যাকা লাগলো তখন খেয়াল হল সুজনের I ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল এগারোটা বাজতেছে আর পাঁচ মিনিট বাকি I কালকে হিয়া মেসেজ করে নি I আজও কি করবেনা ?

প্রতিদিন রাত এগারোটায় হিয়া ওকে একটা মেসেজ পাঠায় I খুবই অদ্ভুত মেসেজ I কোন সম্বোধন নেই I ভূমিকা উপসংহার কিছু নেই I কবিতার কয়েকটা লাইন থাকে শুধু I সেই প্রথম দিন থেকে এটাই হয়ে আসছে I এগারোটায় একটা এর ঠিক আধঘন্টা পর আরেকটা I এরপর বারোটায় আরেকটা আসে I শেষ মেসেজটা দেখে তবেই সুজন শুতে যায় I

কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি ও I বারবার মেসেজ চেক করছিল I হিয়া অফলাইনে ছিল I কোন সমস্যা হয়েছে কি ? ফোনটা ও বন্ধ I কিছুই বোঝা যাচ্ছে না I এত রাত না হয়ে গেলে তৃণা কে একটা ফোন করা যেত I ওর কাছ থেকে জানা যেত কি হয়েছে হিয়ার I

সুজন আবার ঘড়ি দেখল I 11:05 I সিগারেট ফেলে দিয়ে বারান্দায় রাখা দোলনায় বসল সুজন I বলতে গেলে এ বাড়িতে ও একাই থাকে I গেস্টরুমে মজিদ চাচা থাকেন I মজিদ ওদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় I এখানেই থাকে , বাড়ির দেখাশোনা করে I একটা কাজের লোক আছে প্রতিদিনে এসে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে রান্না করে দিয়ে যায় I সুজনের বাবা-মা থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ায় I ওর বড় বোন বৈবাহিক সূত্রে আমেরিকার নাগরিক I সুজনের চেয়ে প্রায় 9 বছরের বড় I বিয়ের পরপরই বাবা-মায়ের জন্য এপ্লাই করে I বেশ ক’বছর লেগে যায় নাগরিকত্ব পেতে I বছর চারেক আগে সব গুছিয়ে ওনারা পাকাপাকিভাবে আমেরিকায় চলে যান I সুজন কে ও নিয়ে যেতে পেয়েছিলেন কিন্তু ও রাজি হয়নি I তখন সামনে এইচ এস সি পরীক্ষা I তাই মজিদকে এখানে রেখে উনাদের যেতে হয় I মজিদ অবশ্য অনেক বছর ধরেই ওদের আরেকটা প্রপাটির কেয়ারটেকার হিসেবে আছে I অনেক পুরনো এবং বিশ্বস্ত লোক I এখনো সমস্ত প্রপার্টি দেখাশোনা করে আর রাতে এসে এখানে থাকে I কথা ছিল এইচএসসির পর সুজন ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাবে I ওখানে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করবে I কিন্তু সুজনের স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার I তাই ওর পছন্দের সাবজেক্টে চান্স পাওয়ার পর ও আর যেতে রাজি হল না I

সুজন বরাবরই ভাল ছাত্র I পড়াশোনাটা ওর কাছে নেশার মত I পাঠ্য বই ছাড়াও প্রচুর গল্প-উপন্যাস পড়ে ও I তবে ওর সবচেয়ে প্রিয় কবিতা I প্রতিরাতে কবিতা না পড়লে ওর ভালই লাগেনা I ওদের ড্রইংরুমে বিশাল লাইব্রেরী I প্রচুর বইয়ের কালেকশন সুজনের I প্রতিবছর বইমেলা থেকে ও অনেক বই কেনে I ওর নিজের ঘরেও দুটো বইয়ের আলমারি ভর্তি বই I
সুজন আবারও ঘড়ি দেখল I 11:35 I নাহ , আজও বোধ হয় আর মেসেজ করবে না হিয়া I তবুও ফোন হাতে অন্যমনস্ক ভাবে বসে রইল ও I হিয়া ওকে খুব ছেলে মানুষের মত প্রপোজ করেছিল I একেবারেই পাত্তা দেয়নি সুজন I ওকে যে অনেক মেয়ে প্রেম নিবেদন করেছে তেমন কিছু নয় I তবে স্কুল কলেজে থাকতে ও প্রচুর চিঠি পেত মেয়েদের কাছ থেকে I এসব নিয়ে কখনোই মাথা ঘামায়নি সুজন I ওর কল্পনার জগতে কবিতার মতো নির্মল কেউ একজন ছিল I তাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছিল এতদিন I হিয়া খুবই হালকা ধরনের , প্রাণোচ্ছল ছটফটে মেয়ে I একেবারেই সিরিয়াসলি নেয় নি তখন I এর তিন দিন পর ঠিক রাত এগারোটার সময় প্রথম মেসেজটা আসে I মেসেজ দেখে চমকে গিয়েছিল সুজন I শুধু কয়েক লাইন কবিতা আর কিছু নেই I

তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?
পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।
ইচ্ছে হলে দেখতে দিও, দেখো
হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো
অপূণতায় নষ্টে-কষ্টে গেলো
এতোটা কাল, আজকে যদি মাতাল জোয়ার এলো
এসো দু’জন প্লাবিত হই প্রেমে
নিরাভরণ সখ্য হবে যুগল-স্নানে নেমে।
থাকবো ব্যাকুল শর্তবিহীন নত
পরস্পরের বুকের কাছে মুগ্ধ অভিভূত।

সুজন তখন লোরকার একটা বই নিয়ে সবে বসেছে I প্রতিদিন রাতেই ঘুমাতে যাবার আগে কবিতা পড়ে ক I এরকম একটা কবিতা ও আশা করেনি হিয়ার কাছ থেকে I অবাক হলেও খুব একটা পাত্তা দেয়নি সুজন I বই বন্ধ করে ঘুমাতে চলে গেছিল I 11:30 এ আরেকটা এল I

তোমাকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি
তোমাকে ছাড়াতে গিয়ে আরো বেশি গভীরে জড়াই,
যতোই তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই দূরে
ততোই তোমার হাতে বন্দি হয়ে পড়ি
তোমাকে এড়াতে গেলে এভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাই
এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি;

সুজন একটু হাসলো I ভাবল হয়তো কোন খান থেকে কপি পেস্ট করে দিয়ে দিয়েছে I কিন্তু যখন তৃতীয় কবিতাটার এল সুজন ভুত দেখার মত চমকে গেল I কারণ তৃতীয় কবিতাটা ছিল লোরকার

Every song
is the remains
of love.

Every light
the remains
of time.
A knot
of time.

And every sigh
the remains
of a cry.

তবে কি হিয়া ওকে দেখতে পাচ্ছে ?

লেখনীতে
অনিমা হাসান

কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরি পর্ব-০৬(শেষ পর্ব)

1

গল্পঃ কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরি
পর্বঃ ০৬ (শেষ পর্ব)
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

বেশ কয়েকদিন ছুটি থাকায় ঝুমা আপুদের সাথে আমি সিলেটে ঘুরতে আসলাম। ঘুরতে এসে এতো বড় যে সারপ্রাইজ পাবো কখনো ভাবতে পারি নি।
আমি কখনোই কল্পনা করিনি সিলেটে এসে যে তামিমের দেখা পাবো। তামিমকে দেখা মাত্রই আমি উল্টো ঘুরে চলে আসতে নিলে ও আমাকে পেছন থেকে ডাকলো।আমি ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম না।কিন্তু ঝুমা আপু বলল, ছেলেটা হয়ত খুব গুরুত্বপূর্ন কিছু বলতে চায়।যা গিয়ে শুনে আয়।
আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি গেলাম।হাজার হোক তামিম তো আমার এককালের ভালোবাসা ছিল। এতোদিনে ও নিশ্চয় বিয়ে করে সংসার করছে।
আমি তামিমকে জিজ্ঞেস করলাম,

–কি হয়েছে? ডেকেছেন কেনো?যা বলার তাড়াতাড়ি বলবেন দয়া করে।

–এতো তাড়া কিসের নীলা? এতোদিন পর দেখা হলো আমাদের। তুমি জানো গত দেড়টা আমি তোমাকে কীভাবে খুঁজেছি? তোমার আগের ফোন নাম্বার বন্ধ, ফেসবুক আইডিতেও অ্যাক্টিভ না।

–ফেসবুক চালানো তো আমি সেদিনই ছেড়ে দিয়েছি যেদিন আমার ভালোবাসার মানুষটি আমাকে ধোঁকা দিয়েছিল। আমি ফেসবুকে একমাত্র একজনের ম্যাসেজের অপেক্ষায় থাকতাম, সেই যখন নাই আর ফেসবুক চালিয়ে কি করবো।
এনিওয়ে আমার কাজ আছে আমি এখন আসছি।

–মিথ্যা কাজের ভান করো না,এখানে তুমি ঘুরতে এসেছো।আর সেদিন আমি তোমার কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম কারন তুমি আমার প্রতি এতোটাই দূর্বল হয়ে পড়ছিলে যে তুমি পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট পর্যন্ত করেছিলে আর এদিকে আমারও মাস্টার্স শেষে গবেষণার জন্য বিদেশে চলে যেতে হয়েছিল।তাই আমি ভেবেছি তুমি আমার অপেক্ষায়,আমার জন্য সময় নষ্ট না করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নাও। বুঝতে পারছি সেদিন তোমার সাথে করা ব্যবহারটা খুব খারাপ ছিল কিন্তু তোমার ভালোর জন্যই করেছি।যাইহোক, এখন যেই গুরুত্বপূর্ণ কথাটা আমি বলব সেটা হচ্ছে আমার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। অলরেডি ৩২ হয়ে গেছে আর বাড়িতেও বিয়ের জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে, আমি আর ওয়েট করতে পারব না।এবার তোমাকে নিজের করে নিব।

আমি তামিমকে কিছুটা অভিমানী কন্ঠে বললাম,
–আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।

–কেনো কেনো,বিয়ে করতে পারবা না কেনো?
আমার কি তোমার স্বামী হওয়ার যোগ্যতা কোনদিক থেকে কম?হলে বলো তোমার জন্য সব যোগ্যতা অর্জন করতে রাজি। আমি বর্তমানে সিলেটেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রফেসর হিসেবে
আছি পাশাপাশি বাবার বিজনেস সামলাচ্ছি। আর কিছুর প্রয়োজন?

আমি এবারে কেঁদেই দিলাম।চোখ মুছে ওকে বললাম,
— আমার যে আপনার ওয়াইফ হওয়ারই কোন যোগ্যতা নেই কারন আমি যে ধর্ষিতা….

–আমি তোমার অতীতের কোনো কথা জানি না,জানতেও চাই না।আমি এখন তোমাকে বিয়ে করতে চাই এটাই ফাইনাল কথা।

–মানুষ আবেগের বশে অনেক ভুল করে, আপনিও ঠিক তেমনি ভুল করছেন।আবেগ চলে গেলে আপনিও নিজের ভুল বুঝতে পারবেন।

— নীলা আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক। এটা কোন আবেগের বয়স না।আমি যা করছি ভেবে চিন্তে করছি।আমি তোমাকে কথা দিয়ে ছিলাম সারাজীবন তোমার ভালো বন্ধু হয়ে পাশে থাকতে চাই। হাজবেন্ড -ওয়াইফের চাইতে ভালো বন্ধু আর দুনিয়াতে নেই। আমি তোমার কোন কথা এখন শুনতে চাই না।আমি ঝুমা ভাবির সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট ফাইনাল করছি।

–ঝুমা ভাবি মানে কি?

— তোমার দুলাভাই আসিফ ভাই আমার ফুপাতো ভাই আর তার স্ত্রী আমার ভাবি।ঝুমা ভাবীর থেকেই তোমার খবর পেয়েছি। এবার তোমার মামার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।তোমার কোনো বারণ শুনব না, তুমি গিয়ে বিয়ের প্রিপারেশন নাও।

সেদিন চারবছরের মান-অভিমানের গল্প শেষ হয়েছিল। একসপ্তাহের মধ্যেই আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে।আমিও আমার প্রথম ভালোবাসাকে ফিরে পেয়েছি। সবসময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম যে আমাকে সত্যিকারীর ভালেবাসবে সেই আমার চিরসাথী হয়।
আল্লাহর অনেক অনেক শুকরিয়া। আমার জীবনেও দুঃখের পর সুখ এসেছে। তবে মা-ভাইয়ের কথা ভীষণ মনে পড়ছে। আমার সুখের দিনে আজ তারা কেউ নেই। প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেছে তারা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
.
.
.
ইদানীং ডায়েরি লেখার টাইম পাই না। সারাদিন ব্যস্ত থাকি রাতে যতটুকু সময় পাই পরিবারকে সময় দেই। আমার স্বপ্ন ধীরে ধীরে পূর্নতা পাচ্ছে। আমার নিজস্ব একটা ফাউন্ডেশন আছে, “আশালতা”
নাম। আশালতার মূল কাজ অসহায়, ধর্ষিতা নারীদের পড়াশোনা শিখিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া। এছাড়া দরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা। আজ আমি চিৎকার করে বলতে পারবো যেই সমাজ আমাকে খারাপ মেয়ের স্বীকৃতি দিয়ে সমাজের বোঝা বানাতে চেয়েছিল।আজ আমি সেই সমাজের মানুষের কাছে একজন কাছের মানুষ হয়ে উঠেছি নিজের কঠোর পরিশ্রম ও যোগ্যতা দিয়ে।এখন কেউ আমাকে ধর্ষিতা বলে খোটা দেয় না। সকলে আমাকে ভরসা করে যা আমার জীবনের সবচেয়ে পাওয়া। মামা আমাকে ঠিকই বলেছিলেন,আল্লাহ আমাকে দিয়ে কিছু করাবেন বলেই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।আমি হয়তো মানুষের জন্য বড় কিছু করতে না পারলেও মানুষের প্রয়োজনে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পেরেছি।।তবে আমার স্বপ্ন পূরনের পুরো আর্থিক – মানসিক সার্পোট পেয়েছি আমার হাজবেন্ডের থেকে। অনেক কপাল গুনে এমন হাজবেন্ড পেয়েছি। মুরব্বিদের কাছে একটা কথা প্রায়ই শুনতাম-
” সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে,
গুনবান পতী যদি থাকে তার সনে।”
.
.
.

আলহামদুলিল্লাহ, শুকরিয়া মহান আল্লাহর দরবারে।
গতসপ্তাহে আমি মা হয়েছি।আমার জমজ একছেলে এক মেয়ে হয়েছে। এখন বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে, এই সুযোগে আমি অনেকদিন পর ডায়েরি লিখতে বসেছি। এখন সারাদিনই ব্যস্ত থাকি। ভালোবাসার ডায়েরিটির বয়সও প্রায় আট বছর হয়ে গেছে। ডায়েরীটাও প্রায় শেষ। আমার জীবনের সাদা-কালো,রঙিন জীবনের মুহূর্তগুলির সাক্ষী আমার ডায়েরিটা। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আমার জীবনের কাহিনি নিয়েই লিখে ফেলি জীবনের গল্প।

_____★★★_____★★★______★★★______

(ডায়েরিরএখানেই কাহিনি শেষ।এখন ডায়েরি পাঠিকার কাহিনি শুরু)

ডায়েরিটা পড়া শেষে আমার নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ডায়েরিটা এতো সুন্দর উপস্থাপন করে লিখা হয়েছে মনে হচ্ছে কোনো রাইটারের লিখা কোনো বই।একটা মেয়ে জীবনের কতোটা সংগ্রাম করে জীবনে এতোটা সফল হয়েছে। নীলা নামের মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছা করছে।অবশ্য এতোদিনে তিনি হয়ত মধ্যবয়স্ক হয়ে গেছেন।কারন সর্বশেষ ডায়েরি লিখেছিলেন ২০১৫ সালে। তাকে দেখার জন্য নীলা আহমেদ লিখে ফেসবুকে সার্চ দিলাম।কিন্তু অনেক ঘাটাঘাটি করেও খুঁজে পেলাম না।তারপর বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপেও ডায়েরিটার ছবি পোস্ট দিলাম। কিন্তু নীলা আহমেদকে খুঁজে পেলাম না।অবশেষে তাকে খুঁজে পাওয়ার আশা বাদ দিয়ে ডায়েরিটা যত্ন করে আমার কাছে রেখে দিলাম। আমার বিশ্বাস একদিন ডায়েরির মালিককে খুঁজে পেয়ে তার প্রিয় ডায়েরিটিকে তার কাছে ফেরত দিব।

……

ফেসবুকে লিখালিখি বেশ জনপ্রিয় আমি। একটা গল্প শেষ না হতেই পাঠক-পাঠিকারা কমেন্টে-ইনবক্সে নতুন গল্প লিখার অনুরোধ করে।
এবারও তাই হলো।কিন্তু নতুন কোনো গল্পের থিম নির্ধারণ করতে পারছি না।হঠাৎ মনে পড়লো ছয়মাস আগে #কুড়িয়ে_পাওয়া_ডায়েরি তে পড়া কাহিনিটা নিয়ে নতুন গল্প লিখি।সব গল্প তো কাল্পনিকই লিখি।এবার না হয় বাস্তব জীবনের আলোকে গল্প লিখলাম।সবকিছু ভেবে-চিন্তে গল্পের সূচনা পর্ব লিখলাম। গল্পের নাম দিলাম-“কুড়িয়ে_পাওয়া_ডায়েরি”
প্রথম পর্বতেই প্রায় দশ হাজার+ রিয়েক্ট আর এক হাজার + কমেন্ট আসলো।ব্যপারটা বেশ ভালো লাগলো আমার। তিন/চার পর্ব দেওয়ার পর গল্পের কমেন্ট বক্সের কমেন্ট পড়ছিলাম।সেখানে অসাধারণ /নেক্সট /নাইস এরকম কমেন্টের ভীড়ে গিয়ে একটা কমেন্ট দেখে আমার চোখ আটকালো।

“এতো কমেন্টের ভীড়ে হয়ত আমার কমেন্ট পড়বেন না। তবে অনুরোধ রইল আমার প্রিয় ডায়েরিটা ফিরিয়ে দেওয়ার।”

কমেন্টটা পড়ে আইডির নামটা খেয়াল করে দেখলাম নীলা আহমেদ। আমি দ্রুত তার প্রফাইলে ঢুকলাম। এতোদিন যাকে ফেসবুকে খুজে বেড়াচ্ছিলাম আজ সেই আমাকে কমেন্ট করেছে।প্রফাইল পিকচার মিসেস নীলার ফ্যামিলির।তিনি দেখতে এতোটা সুন্দর! অবশ্য শুধু তিনিই না তার হাজবেন্ড, ছেলে-মেয়েরা সবাই সুন্দর। আমি ভেবেছিলাম তিনি এতোদিনে বয়স্ক হয়ে গেছেন।কিন্তু ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে ৩৫/৩৬ বয়সী হবেন।আমি তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম। কিছুক্ষন পর তিনি আমাকে ম্যাসেজ দিলেন- “তোমার সাথে ফোনে কথা বলতে পারি।”

আমিও জ্বি লিখে পাঠালাম। ফোনে আমাদের অনেকক্ষন কথা হলো।কোথায় ডায়েরি পেলাম? তিনি ডায়েরিটার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছেন!তার বাস্তব জীবনী দিয়ে গল্প লেখায় তিনি ভীষণ খুশি হয়েছেন এই ধরনের টুকটাক আরো অনেক কথা বললাম।তিনি আমাকে সামনের শুক্রবারে ডায়েরিটা ফেরত দেওয়ার জন্য রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বললেন।
আমিও দেখা করতে গেলাম সাথে তার প্রিয় ডায়েরিটা নিয়ে। তিনি সপরিবারে এসেছেন। ছবির চাইতে বাস্তবে দেখতে আরো সুন্দরী। একটা নেভি-ব্লু রঙের বোরকার পড়ে এসেছেন। দেখে মনে হচ্ছে বোরকাটা একমাত্র তার জন্যই বানানো। বোরকা পরিহিত হলেও তিনি যথেষ্ট আধুনিক। তার পুরো পরিবারই মাশাআল্লাহ যেমন সুন্দর ব্যবহারও তেমনি সুন্দর।বাচ্চা দুটো পাঁচ বছরের হয়েছে। ডায়েরিটা ফেরত দিতে গিয়ে আমার কেন জানি মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। তবে অনেক ভালোলাগাও কাজ করল ডায়েরি ফেরত পেয়ে তার মুখের হাসি দেখে।
আসার সময় তিনি ছোটবোন হিসেবে তিনি আমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর উপদেশ দিলেন।তার উপদেশ-ভালোবাসা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।

(সমাপ্ত)

কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরি পর্ব-০৫

0

গল্পঃ কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরি
পর্বঃ০৫
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

ছেলেটা উজ্জ্বল শ্যামবর্নের, হাসি দিলে একগালে টোল পড়ে যা দেখে আমি প্রথম দিনেই পুরো ফিদা হয়ে গেছি।
আজকেও বইয়ের ফাঁকে একটু তার দিকে তাকালাম। সেও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল।চোখে চোখ পড়ায় আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। লজ্জায় আমি তাড়াতাড়ি সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম। তারপর হোস্টেলের রুমে এসে ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম ছেলেটা আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আমি অবাক হলাম ছেলেটা আমার নাম জানলো কিভাবে? তবে আমি খুশি মনে হয়ে একসেপ্ট করে ফেললাম।ছেলেটার নাম তামিম হাসান। পদার্থবিজ্ঞানের চতুর্থ বর্ষে পড়ে।দেখে যথেষ্ট নম্র-ভদ্র মনে হয়। কিছুক্ষন পর তামিম নামের ছেলেটা আমাকে ম্যাসেজ দিল,
— কেমন আছো?

আমি রিপ্লাই দেওয়ার আগেই সে আবার ম্যাসেজ দিল, ” প্রতিদিন তুমি আমাকে বইয়ের ফাঁকে লুকিয়ে দেখো কেনো?”

তার ম্যাসেজটা পড়ে আমি ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম। আমি তাকে লিখলাম, “কই না তো”

–” আর মিথ্যা বলতে হবে না,আমি খেয়াল করে দেখেছি। আজকেও তো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে..

তার ম্যাসেজের ধরন দেখে মনে হচ্ছে তার সাথে আমার কতদিনের পরিচয়? আমি তাকে “সরি,আর আপনার দিকে তাকাবো না” লিখে সেন্ড করলাম।

–আর এই সামান্য ব্যাপারে সরি বলতে হবে না,আমি জাস্ট মজা করলাম।কালকে থেকে আর লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে হবে না।আমাকে সরাসরি দেখো।

ম্যাসেজটা দেখে আমি একটা হাসির ইমোজি পাঠালাম।এভাবেই আমাদের পরিচয় হলো। প্রথম দিকে টুকটাক কথাবার্তা হতো, ধীরে ধীরে আমাদের
সম্পর্কটা বন্ধুত্বের চাইতেও বেশি হয়ে উঠল। দুজন দুজনের চোখের ভাষা বুঝলেও কখনোই কারো ভালোবাসি কথাটি বলা হয়ে ওঠে নি। আমার পরিবারের কথা,আমার স্বপ্নের কথা জানতো তাই আমার স্বপ্ন পূরনের জন্য
আমাকে পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক হেল্প করতো। তবে তামিমের সাথে আমার সম্পর্ক শুরু হওয়ার পর থেকে আমি পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী হতে পারতাম না।সারাক্ষণ আমার কল্পনায় তামিম থাকতো। কিন্তু তামিম আমায় সবসময় বলতো,
কল্পনায় কখনো জীবন চলে না আমাকে জীবনে সফল হতেে হলে অনেক পরিশ্রমী হতে হবে। নিজের যোগ্যতায় সমাজে মাথা উচু করে বাঁচতে হবে। ওর
আমি কথাগুলো শুনতাম ঠিকই মানার চেষ্টা করতাম না। চোখে তখন হাজারো রঙিন স্বপ্ন দেখতাম।
.
.
.
দিন যতোই যাচ্ছে আমাদের বন্ধুত্ব ততই গভীর হচ্ছে। আমার একদিন মনে হলো আমার কালো অতীত সম্পর্কে তামিমকে কিছু বলা উচিত। কারন কাউকে কখনো ঠকাতে চাই না।আমি ওর সাথে দেখা করে আমার জীবনের কালো অধ্যায় সব খুলে বললাম। তামিম মাথা নিচু করে সবকিছু শুনলো তারপর হাত দুটো ধরে বলল,

–আমি জানি নীলা একটা মেয়ের ধর্ষিতা হওয়ার পেছনে তার কোনো দোষ থাকেনা তোমারও নেই।কিন্তু আমরা,আমাদের সমাজের মানুষগুলো অসহায় মেয়েটাকেই সব দোষ দিয়ে থাকি।
যাইহোক, আমি তোমার অতীত নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না।আমি এখন যেমন তোমার পাশে আছি ভবিষ্যতেও তেমন তোমার পাশে থাকতে চাই।”

তামিমের কথাগুলো শুনে আমার খুব ভালো লেগেছিল। মনে হচ্ছিল আমি ভুল মানুষকে ভালোবাসি নি।
তবে আমার মনের কথা ধারণাটা ভুল প্রমানিত হয়েছিল তার দুইদিন পরে। সেদিন আমার ফাস্ট ইয়ারের ফাইনাল রেজাল্ট দিয়েছিল। রেজাল্ট দেখে আমি নিজেই প্রচন্ড শকড হয়েছিলাম।আমার দুই সাবজেক্টে ফেল আসে। আমার যেহেতু দুনিয়ায় আপনজন বলতে কেউ ছিল না,তাই তামিমের কাছেই আমি আপনজন ভেবে সব শেয়ার করতাম।
তামিমকে ফোনে আমার রেজাল্টের কথা বলতেই ও ক্ষেপে যায়।আর ফোনেই আমাকে বলতে থাকে,

–আমি জানতাম নীলা এমন কিছুই হবে…
আমি বেশ কিছুদিন ধরে তোমাকে খেয়াল করছি যে তুমি আমার প্রতি দিনকে দিন দূর্বল হয়ে পড়ছো।পড়াশোনা ঠিকমতো করো না। শোনো নীলা…
আমি কিন্তু তোমার প্রতি দূর্বল নই।আমি তোমাকে ভার্সিটির জুনিয়র বোন হিসেবে, বন্ধু হিসেবে এতোদিন ভেবেছি এছাড়া অন্য কিছু নয়।

আমি ওর কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছালাম। হয়ত ও আমাকে কখনো মুখে বলে নি আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমার প্রতি ওর কেয়ারিং দেখে বুঝতে পারতাম যে ও আমাকে ভালোবাসে।আমি তামিমকে সরাসরি বললাম,

–তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?

— এখানে আমার ভালোবাসা না বাসার কথা বলছি না।আমি বলেছি তুমি আমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছো, যা তোমার লেখাপড়ার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে। ভালোমতো পড়াশোনা করো।

তামিম আরো কিছু বলতে চাইছিল তার আগেই আমি রাগে ফোনটা কেটে দিলাম। অবশ্য আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারছি যে আমি যে ধর্ষিতা মেয়ে,সেই কারনেই ও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
দোষটা আমারই,আমিই আমার অতীত ভুলে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।আমি যে কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।ভেবেই আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। আমার ভালোবাসা হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল।

নিজেকে সব ধরনের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করলাম।
অনার্সের পড়ার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম।
এর মাঝে অবশ্য খবর পেয়েছি তামিম স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশে চলে গিয়েছে।ওর সাথে এখন আর কোন যোগাযোগ নেই। যাওয়ার আগে আমাকে ফোন দিয়ে সরাসরি দেখা করতে চেয়েছিল, আমিই যাই নি। মাঝে মাঝে ফেসবুকে ওর বিভিন্ন পোস্ট দেখি।একবার ব্লক করতে চেয়েও করতে পারি নি।ওর কারনেই মূলত এখন আর ফেসবুকে অ্যাক্টিভ থাকি না। বলা যায় ফেসবুকই চালাই না।

……

আজকে আমি ভালো ভীষণ খুশি। আমাদের অনার্স থার্ড ইয়ারের রেজাল্ট দিয়েছে। আমার সিজিপিএ 3.90 আউট অফ 4
কি যে খুশি লাগছে! মাকে ভীষণ মনে পড়ছিল।
মা জানলে অনেক খুশি হতেন।
.
.
.
.
জীবনে দুঃখের পর সুখ আসে।আমার জীবনেও দুঃখের সময় পার করে আজ সুখের সন্ধান পাচ্ছি। প্রায় চার বছর পর আজকে ডায়েরি লিখতে বসেছি।আজ আমার জীবনের অনেক আনন্দের একটা দিন। আমি আজকে আমার কর্মক্ষেত্রে প্রথম জয়েন করেছি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। আমার এতোদিনের কষ্ট সার্থক হয়েছে। খুব মিস করছি মা আর ছোট ভাইকে।রাজু বেঁচে থাকলে এখন নিশ্চয় অনার্সে পড়তো। ভাইটা আমার কাছে অনেক কিছু আবদার করতো,বলতো- ” আপু তুমি যখন চাকরী করবা, তখন আমার ইচ্ছে মতো অনেক কিছু কিনব।”
আফসোস! চাকরী করছি মাস শেষে ভালো একটা টাকাও পাবো কিন্তু কিনে দেওয়ার মতো কোন মানুষ নেই। জীবনে বড় কিছু অর্জন করে প্রিয়জনদের তার আনন্দ ভাগ করতে না পারলে ভীষণ কষ্ট হয়।
ভাবছি আমার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে কিছু দরিদ্র শিশুকে জামা-কাপড় কিনে দিব।
.
.
অনেকদিন পর আজকে মামাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। পৃথিবীতে আপনজন বলতে এরাই আছে। ঝুমা আপুর বিয়ে হয়েছে অনেক বড় ঘরে। তার একটা ছেলে হয়েছে।
মামারা তাদের বাড়িতে যাওয়ায় ভীষণ খুশি হয়েছেন। মামা বাড়িতে থাকার ইচ্ছে ছিলো না।দুই মামা জোর করে দুইদিন তাদের বাড়িতে রাখলো।
খুব মজা হলো এই দুইদিন।ঝুমা আপু, দুলাভাই,ছোট মামি,মামাতো ভাই মাহবুব সবাই মিলে সারারাত আড্ডা দিলাম।
.
.
বেশ কয়েকদিন ছুটি থাকায় ঝুমা আপুদের সাথে আমি সিলেটে ঘুরতে আসলাম। ঘুরতে এসে এতো বড় যে সারপ্রাইজ পাবো কখনো ভাবতে পারি নি।
আমি কখনোই কল্পনা করিনি সিলেটে এসে যে তামিমের দেখা পাবো…

#চলবে

কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরি পর্ব-০৪

0

গল্পঃ কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরি
পর্বঃ০৪
নিঝুম (ছদ্মনাম)

আমি কোচিং সেন্টারের ক্লাসে এসেছি
আমার ফোনে অনেকগুলো কল আসছে,ফোন ভাইব্রেট মোডে থাকায় বেশ বুঝতে পারছি কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস থাকায় কলটা রিসিভ করলাম না।
কিন্তু এতো বার কল করছে যে শেষমেষ বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরলাম। ফোনটা ধরে যা শুনলাম তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।আমার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে।
ফোনটা রিসিভ করার পর ওই প্রান্ত থেকে একটি পুরুষ কন্ঠে শুনতে পেলাম,

— আপনার মা ট্রাক চাপায় গুরুতর আহত হয়েছে। অনেক ব্লিডিং হয়েছে যার কারনে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। স্হানীয় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে আপনি দয়া করে তাড়াতাড়ি আসুন।

আমি একমুহূর্ত দেরী না করে হাসপাতালে ছুটে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম ছোট মামা, ঝুমা আপু কাঁদছে আর ছোট মামি তাদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে। তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম আমার ছোট্ট প্রিয় ভাইটা আর দুনিয়ায় নেই। কথাটা শুনে আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার বুকটা চিরে ভেতর থেকে কলিজাটা টেনে ছিড়ে ফেলছে।আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাদঁতে পারছি না। কীভাবে কি হয়ে গেলো এতটুকু সময়ের মধ্যে?আমি বিশ্বাসই করতে পারছি যে আমার কলিজার ভাইটা আর নেই। আমি ঝুমা আপুর দুই বাহু ধরে জিজ্ঞেস করলাম,

–তুমি মিথ্যা বলছো তাই না ঝুমা আপু?আমার ভাইটা বেঁচে আছে। ওর শিক্ষা সফর শেষে ঠিকই বাড়ি ফিরবে। এতোকিছু কিভাবে হলো, কখন হলো?সকালেই তো রাজুকে টাকা দিলাম ঘুরতে গিয়ে কিছু কেনার জন্য…..

ঝুমা আপু আমার কোনো কথার উত্তর দিল না।আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।ছোট মামি কান্না আটকে আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,

–“তুমি শান্ত হও নীলা।আগে আমার কথা শোনো…
শিক্ষা সফরে যাওয়ার সময় রাজুদের বাস খাদে গিয়ে পড়ে সেখানেই স্পট ডেড।তারপর সেই খবর পেয়ে তোমার পাগলের মতো ছুটে যাচ্ছিলেন রাস্তার গাড়ি খেয়াল না করেই। আর একটা ট্রাক এসে আপাকে চাপা দেয়।তোমার বড় মামা আর মামাতো ভাই মাহবুব রাজুর লাশ আনতে গেছে। ”

আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বললাম,

–“মামি,,রাজুর মৃত্যুর জন্য, মায়ের এই অবস্থার জন্য দায়ী একমাত্র আমি। মা ওকে ঘুরতে যেতে নিষেধ করেছিল। ওর মন খারাপ হবে বলে আমি টাকা দিয়ে ঘুরতে যেতে দিয়ে ওকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছি। আজ যদি না যেত তাহলে ও এখন বেঁচে থাকতো আর মায়েরও কিছু হতো না।”

–“এখন যা হওয়ার হয়েছে মা…
এখানে কারো হাত নেই,সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তোমার এখন শক্ত হতে হবে। ভেঙে পড়লে চলবে না।”
.
.
.
মায়ের অবস্থার উন্নতি নেই।বড় মামা আর মাহবুব রাজু’র লাশ নিয়ে এলো।রাজুর বিকৃত লাশ দেখে আমি আতকে উঠলাম। সবকিছু সম্পন্ন করে দাফন করা হলো।কিন্তু আমি যেন ঘরের ভেতর ওর আওয়াজই শুনতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে ও হাঁটছে,আবার আমার সাথে ঝগড়ার কারন খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমি ওর জামাকাপড় নিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না ওকে যে জীবনে আর কখনো দেখব না।

…..

দিন যতো যাচ্ছে ততই বুঝতে পারছি জীবনটা যে কতো কঠিন! আমাদের মতো ফ্যামিলির মেয়েদের জীবনে হয়ত সুখ নামক কথাটি লিখা নেই।রাজুুর মৃত্যুর ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে মায়ের মৃত্যু হলো। টানা পনেরো দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে করতে মা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেদিন তাদের সাথে আমারও মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। পরিবার হারিয়ে আমার মনের যে কি অবস্থা হয়েছিল বলে বোঝানো সম্ভব নয়। হারানোর বেদনা সেই বোঝে যার হারায়। প্রতিটা দিন আমার কাঁদতে কাঁদতে পার হতো। বাড়িটা ছেড়ে দিলাম।মামা তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল আমিই যাই নি।
স্টুডেন্টের বাবা-মা মানে আলভি ভাইয়া আর ভাবীর সহযোগিতায় আমি মেয়েদের হোস্টেলে গিয়ে উঠলাম। পরিবার হারিয়ে আমি হয়ে গেলাম একা..
সম্পূর্ণ একা…..

পরিবারের শোক কাটিয়ে পড়াশোনা করতে পারি নি। মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় আমি চান্স পেলাম না। আরো ভেঙে পড়লাম। এবার নিজেকে
শক্ত করলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম।একমাস কঠিন পরিশ্রম করলাম।
অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেলাম। আনন্দে মনটা ভরে গেল রেজাল্টটা দেখে।
কিন্তু আমার আনন্দ, আমার খুশি ভাগ করার মত কেউই নেই। মা থাকলে ভীষন খুশি হতেন।আমার রেজাল্টে মামা-মামি,আলভি ভাইয়া, ভাবী সবাই খুশি হলেন।
ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর থেকেই ভালো করে পড়াশোনা শুরু করে দিলাম।আমাকে যে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতেই হবে। যাতে কেউ আমাকে আর ধর্ষিতা মেয়ে বলতে না পারে।আমার দুচোখে হাজারো স্বপ্ন। আমার ইচ্ছে আমার নিজের একটা সংস্থা থাকবে যেখানে এতিম, অসহায় মেয়েগুলোকে লেখাপড়া শিখিয়ে নিজের পায়ে দাড়া করানো।
.
.
.
ভার্সিটির লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতে গিয়ে একটা ছেলেকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। ছেলেটা আমার সিনিয়র তবে কোন ইয়ারে পড়ে তা জানি না।ছেলেটার নামটাও জানি না। লাইব্রেরীতে প্রতিদিন এসে পড়াশোনা করে।আমি প্রায়ই তার দিকে তাকিয়ে থাকি। ছেলেটা উজ্জ্বল শ্যামবর্নের, হাসি দিলে একগালে টোল পড়ে যা দেখে আমি প্রথম দিনেই পুরো ফিদা হয়ে গেছি।
আজকেও বইয়ের ফাঁকে একটু তার দিকে তাকালাম। সেও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল।চোখে চোখ পড়ায় আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। লজ্জায় আমি তাড়াতাড়ি সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম। তারপর হোস্টেলের রুমে এসে ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম……

#চলবে…

কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরি পর্ব-০৩

0

গল্পঃ কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরি
পর্বঃ০৩
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

সেদিন নিজেকে ওই মানুষরূপী হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারি নি। ওরা দৌড়ে আমাকে ধরে ফেলে।একসাথে চারটা ছেলের শক্তির সাথে আমি পেরে উঠি নি।সারারাত আমাকে খুবলে খেয়েছিল ওরা। তারপর যখন ভোর হয় তখন আমাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়।তারপর আর আমার মনে নেই। প্রচন্ড ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আমি। বাড়ির লোকেদের কাছে শুনেছি রাস্তার পাশ থেকে
আমার ধর্ষিত দেহটা খুঁজে পেয়েছে।এরপর শুরু হয় আমার জীবনের অন্যরকমের গল্প। আমার নামের সাথে যোগ হয় ধর্ষিতার ট্যাগ। আমার শরীরে ওই পশুগুলো এতো পাশবিক নির্যাতন চালায় আমি প্রায় একমাসের মতো অসুস্থ ছিলাম। বড় মামা- ছোট মামা অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করে সুস্থ করে আনে। ধর্ষকের নামে মামলা করেও তেমন লাভ হয় না। আমাদের সমাজে ধর্ষকদের শাস্তি হয় না,কিন্তু
সমাজের মানুষদের কথার আঘাতে ধর্ষিতারা প্রতিদিন বারবার মৃত্যুর সমতুল্য যন্ত্রণা সহ্য করে।
আমার জীবনটা হয়ে গেছে সকলের জীবনের চেয়ে একবারে আলাদা। কোন মেয়ে আমার সাথে এখন আর মিশে না।সকলের ধারনা আমিই খারাপ মেয়ে।
এমনকি আমার জন্য ঝুমাআপুর বিয়েটাও ভেঙে যায়।পাত্রপক্ষ সরাসরি জানিয়ে দেয়, ধর্ষিতা পরিবারের সাথে তারা কোন আত্মীয়তা করতে চায় না।ঝুমা আপুর বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় মামি এবারে মুখ খোলেন।অবশ্য তার দোষ আমি দেই না কারন এতো ভালো সমন্ধটা হাতছাড়া হলে যে কেউ রাগ করবে।কিন্তু আমার যে কিছুই করার ছিল না।কেউ তো আর নিজের ইচ্ছায় ধর্ষিত হয় না।মামি আমাকে আর মাকে নিয়ে মুখ দিয়ে যা নয় তাই বলেছিল। এতো কুরুচিপূর্ণ কথা মানুষ বলতে পারে আমার জানা ছিল না। সেদিন মা মামির কথা শুনে আমাকে ভীষণ মেরেছিল।আমাকে মা মারতে মারতে বলেছিল, তুই কেন তোর পোড়ামুখ নিয়ে ফিরে এলি? মরে যেতে পারলি না।তুই মরলে তো আমিও বাঁচতাম।তোর ভাইকে গলা টিপে মেরে আমি নিজেও না হয় গলায় দড়ি দিতাম।কেন মরলি না? আর কতদিন অন্যের বোঝা হয়ে থাকব?
আশেপাশের সকলের কথা, মামির কথা,মায়ের কথা
সকলের কথা শুনে বুঝতে পারলাম আমি মরে গেলেই ভালো হতো। সকলের কথা শুনে আমার নিজেরও জীবনের প্রতি ঘৃণা চলে এলো। অভিমান হলো এই পৃথিবীর ওপর, এই সমাজের মানুষগুলোর ওপর,যারা ধর্ষিত অসহায় মেয়েগুলোকেই সকল দোষ আরোপ করে। অভিশপ্ত জীবনটাকে আর রাখতে চাই না।মরে গিয়ে সবাইকে শান্তি দিতে চাই। ছোট মামাদের ঘর থেকে চুরি করে ইঁদুরের বিষ নিলাম।ঘরে গিয়ে ছোট্ট একটা চিঠি লিখলাম।
ভয়ে ভয়ে হাতে থাকা বিষ মুখের সামনে নিলাম।চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছে, আত্মহত্যা করা মহাপাপ।যেখানে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনটাও অনিশ্চিত। ****

…..

এতোটুকু পড়ার পর পরের পৃষ্ঠা ভয়ে আর পড়লাম না। সুইসাইড করার চেষ্টার ঘটনাটুকু পড়ে আমার গায়ের লোম দাড়িয়ে গেছে। আমি ডায়েরিটা রেখে দিলাম। কেন জানি আমার প্রচন্ড ভয় করছে আমার! কেনো মেয়েটা সুইসাইড করার মতো এতবড় দুঃসাহস করলো?
চোখটা বন্ধ করে আমি যেন মেয়েটার পুরো জীবন কাহিনিটা আবার স্মরণ করলাম।আমার মনে হচ্ছে মেয়েটার জীবনের কাহিনিগুলো আমার সামনেই সব ঘটেছে আর আমি জীবন্ত সব দেখতে পাচ্ছি। এর মাঝেই মায়ের ডাক শুনতে পেলাম। মা আমাকে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছে।খাওয়ার টেবিলে বসে খেতে পারছি না, বারবার ডায়েরির মেয়েটার কথা মনে পড়ছে। না আমি মেয়েটাকে চিনি, আর না আমি মেয়েটার নাম জানি।খাওয়ার টেবিলে আমাকে এমন চুপচাপ দেখে মা জিজ্ঞেস করলেন,

–কিরে রিনি? কি হয়েছে তোর,শরীর অসুস্থ লাগছে?

–হ্যাঁ..মা

বলে আমি খাওয়া রেখেই আমি নিজের রুমে চলে এলাম। ডায়েরিটার
শেষ পর্যন্ত না পড়া অবধি আমার শান্তি নেই।তবে এবার ডায়েরিটা হাতে একটু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। ডায়েরিটা বেশ মোটা।শেষের পৃষ্ঠার কোণায় একটু বড় করে লিখা
“নীলা আহমেদ + তামিম হাসান ” নিচে একটা লাভ একে লাভের ভিতরে N+T লিখা। আমি বুঝতে পারলাম যে ডায়েরির মালিকের নাম নীলা আহমেদ।
তামিম হাসান হয়ত তার বয়ফ্রেন্ড কিংবা স্বামী। যাইহোক, ডায়েরিটা খুলে আবার পড়া শুরু করলাম।

**** বিষ মুখে দিতে যাব এমন সময় মামা এসে আমাকে কষে একটা থাপ্পড় মারলেন। মামা এতো জোরে থাপ্পড় দিলেন যে আমার হাত থেকে বিষটুকু পড়ে গেল আর আমিও ফুপিয়ে কেঁদে ফেললাম। আমার খেয়াল হলো আত্মহত্যা করার আগে দরজাটা আটকাতেই ভুলে গেছি। মামার সাথে ঝুমা আপুও এসেছে। মামা আমাকে এবারে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,

— নীলা, রাগের বশে তোমাকে থাপ্পড় মেরে ফেলেছি কিন্তু তোমার ভালো চাই বলেই। থাপ্পড় খেয়ে তোমার রাগ হতে পারে এটাই স্বাভাবিক। ঝুমার কাছে জানতে পারলাম আজকে তোমাদেরকে ঝুমার মা বেশ খারাপ কথা বলেছে।রেশমাও তোকে অনেক কিছু বলেছে।শোনো নীলা মা রেশমা তোমার মামির সাথে অভিমান করে তোমাকে কথাগুলো শুনিয়েছে তাই বলে তুমি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিবে। আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত তাহলে তোমার মায়ের অবস্থা কি হবে?তুমি ভাবতে পারছো। তুমি তোমার মায়ের ভরসা,আশার আলো। সেই কালোরাতের ঘটনা ভুলে তোমাকে পড়ালেখা শিখে অনেক বড় মানুষ হতে হবে,তারপর ওদের মত সব নরপশুদের শাস্তি দিতে হবে। আর কখনো আত্মহত্যা করার চেষ্টা করবে না। ঝুমা যদি না দেখতো তুমি রোমানের ঘর থেকে ইদুরের বিষ চুরি করছো তাহলে এখন কি হতো ভাবতে পারছো?তুমি মন দিয়ে একটা কথা ভেবে দেখো,
আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে ওই নরপশুদের শাস্তি দেওয়ার জন্য। না হলে ওই পশুগুলো তোমাকে চাইলে মেরে ফেলতে পারতো।আমার বিশ্বাস আল্লাহ তোমাকে দিয়ে বড় কিছু করাবেন বলে তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এখন রেস্ট নাও, আমরা কিছুক্ষন পর আসছি।”

বলে ঝুমা আপু আর মামা চলে গেলেন।
মামার কথাটা শুনে আমার মনে হলো আসলেই তো,প্রায়ই পত্রিকায় পড়ি ধর্ষণের পর কিশোরী / তরুনীকে মেরে হয়।আল্লাহ নিশ্চয় আমাকে দিয়ে ভালো কিছু করাবেন তাই বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি এখন থেকে বাঁচবো নিজের জন্য নয়,বাঁচবো আমার মত প্রতিটি অসহায় মেয়েদের হয়ে লড়াই করার জন্য।

★★★ ★★★ ★★★ ★★★

আমরা এখন মামার বাড়ির কিছুদূরেই বাসা ভাড়া করে থাকি। মামা অবশ্য আমাদের বাসা ভাড়া নিতে নিষেধ করেছিল কিন্তু মা থাকতে রাজি নয়।আমি কিংবা মা কখনোই চাই নি আমাদের জন্য তাদের ফ্যামিলিতে ঝামেলা হোক। ঝুমা আপুর বিয়ে ভাঙার পর থেকে মামি সামান্য কারনেই মামার সাথে ঝগড়া করতো যার কারন হিসেবে থাকতাম আমি,মা আর না হয় আমার ছোট ভাই রাজু।
বাসা ভাড়া নেওয়ার পর থেকে আমি আবারও টিউশনি পড়ানো শুরু করি।আগে যাদের পড়াতাম,তাদের মধ্যে একজন স্টুডেন্ট আমার কাছে পড়ে।আমার জীবনে আমি সেই স্টুডেন্টের ফ্যামিলির কাছেও ঋনী কারন সেইদিনের ঘটনার পর থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিলেও তারা আমাকে অনেক সাহায্য-সহযোগিতা করেছে।আবার আমাকেও দ্বিগুণ সম্মানি দেয়। সবকিছুতে ওই ভাইয়া-ভাবী আমার পাশে থাকেন। হয়ে ওঠেন রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও আপনজন।

জীবন চলছে আপন গতিতে….
এখন আমার জীবনের মূল লক্ষ্য সমাজে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যাতে রাস্তায় বেরোলে কেউ বলতে না পারে ধর্ষিতা নীলা আহমেদ যাচ্ছে।
সামনে এইচএসসি পরীক্ষা তারপর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। আমি কোচিং সেন্টারের ক্লাসে এসেছি
আমার ফোনে অনেকগুলো কল আসছে,ফোন ভাইব্রেট মোডে থাকায় বেশ বুঝতে পারছি কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস থাকায় কলটা রিসিভ করলাম না।
কিন্তু এতো বার কল করছে যে শেষমেষ বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরলাম। ফোনটা ধরে যা শুনলাম তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।আমার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে…..

#চলবে