Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1046



কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরি পর্ব-০২

0

গল্পঃ কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরি
পর্বঃ০২
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

মা ওই খারাপ লোকটার কাছ থেকে নিজেকে ছোটানোর বিভিন্নরকম চেষ্টা করছে। কোনোমতেই লোকটার গায়ের সঙ্গে পেরে উঠছেন না।আমি থরথর করে কাপঁছি।আমার ছোট ভাইটাও জেগে গেছে, ও ভীষণ ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। এরমাঝেই মা তার কোমর থেকে ছুড়িটা বহুকষ্টে বের করলেন তারপর মা ছুরিটা ওনার কানি আঙুলে
পোচ লাগয়ে দেন,এরপরও নিজেকে ওনার কাছ
থেকে ছোটাতে না পেরে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে
কানি আঙুলে ভালোমতো পোচ দেয়ার ফলে
আঙুলটা কেটে দুভাগ হয়ে যায় আর গলগল করে
রক্ত পড়তে থাকে, রুমটা পুরো রক্তে ভরে যায়।
রক্ত দেখে আমরা দুই ভাইবোনও বেশ ভয় পেয়ে যাই।
মুখোশধারী লোকটা এবার মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে
দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে চলে যান।আল্লাহর দয়ায়
আর মায়ের বুদ্ধির জোরে সেদিন মা নিজের সম্মান
রক্ষা করতে পেরেছিলেন।এরপর সারারাত মা ঘুমান
নি, আমার এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে আমাদের বুকে
ধরে সারারাত কেঁদেছিলেন।
সকালে আমার বড়চাচা বেশ রাগী চেহারা নিয়ে ঘরে ঢোকে। আমি তখন খুব ভালো করে
বড়চাচার হাতের দিকে খেয়াল করে দেখি চাচার হাতে
একটা ব্যান্জেজ, বিশেষ করে কানি আঙুলের দিকটা ভালো করে ব্যান্ডেজ করা।বড়চাচা মাকে এবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধামকি-ধুমকি দিলেন।রাতের ব্যাপার নিয়ে যাতে কোনো বিচার-শালিশ না ডাকে। আর যদি কোনো ঝামেলা করার চেষ্টা করে তাহলে আমাদের কপালে অনেক দুঃখ আছে–বলে চাচা চলে গেলেন। আমার শিশু মনে হঠাৎ করে
প্রশ্ন এলো তাহলে কি কালরাতে আমাদের ঘরে
মুখোশ পড়ে আমার বড়চাচা-ই এসেছিলেন? কিন্তু কেন
এসেছিলেন?
বড়চাচা চলে যাওয়ার পর মাকে গিয়ে একথা জিজ্ঞেস করায় মা মুখে আচঁল চেপে কাঁদতে লাগলেন। তখন
এতোটাও অবুঝ ছিলাম না, কিছুটা হলেও মায়ের মুখে আঁচল দিয়ে কান্নার মানেটা বুঝেছিলাম।
রাতের এমন ভয়ানক কাহিনি, সকালে চাচার হুমকি
সবমিলিয়ে মা বেশ ভয় পেয়ে যান।যদি আবার খারাপ কিছু ঘটে এই আশংকায়! মা বড়মামাকে ফোন দিয়ে
সবটা খুলে বলেন। মামা মায়ের কথা শুনে একমুহূর্ত দেরী না করে আমাদের বাসায় চলে আসেন। আমাদের বড় রকমের বিপদ হওয়ার ভয়ে মামা মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাদের সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন তাদের বাড়িতে। শুরু হলো আমাদের জীবনের অন্যরকম যাত্রা।
মামাবাড়িতে উঠার পর আমাদের সেখানে থাকার কথা শুনে মামির মুখ চুপসে গেল। অবশ্য মামিকে আমি দোষ দেই না কারন কেউ তার সংসারে আপদ চায় না।
তিন তিনটা মানুষের ভরনপোষণের দায়িত্ব নেওয়া
চাট্টিখানি কথা নয়।যদিও মামি প্রথম প্রথম আমাদের
সাথে খারাপ ব্যবহার করতো না,কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের প্রতি তার আচরনে বিরক্তি ফুটে উঠতো।
কথায় কথায় মাকে ছোট করতো,খোটা দিতো।

মা তখন মামিকে বলেছিলো-” ভাবী, মেয়েরা খুব অসহায় না হলে কখনো বাপের বাড়ি পড়ে থাকে না।আজ আমি অসহায় বলে আপনার দারস্থ হয়েছি।
একদিন আমারও দিন ঘুচবে, সারাজীবন আপনার সংসারে থাকতে চাই না। ছেলেমেয়ে দুটো আরেকটু বড় হোক তারপর আমিই চলে যাব।”
মায়ের কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজে।
তারপর থেকে মা ঘরের প্রায় সবকাজ করার চেষ্টা করতো।মামিও চাইতো কাজের লোক বিদায় করে
মাকে দিয়ে ঘরের সব কাজ করানোর।কিন্তু একদিন
মামা মা আর মামিকে ডাকেন।

মামা মামিকে কড়াগলায় বলেন, “আমাদের কি টাকা পয়সার কমতি আছে যে তুমি আমার আদরের বোনটাকে দিয়ে কাজ করাও? তোমার আরো কাজের লোক লাগলে আমাকে বলবা আমি রেখে দিব। তুমি কেন ওকে দিয়ে কাজ করাও?ও কি এবাড়ির কাজের লোকের কাজ করার জন্য এনেছি?শোনো ঝুমা আম্মু
তুমি রেশমার সাথে যা ব্যবহার করো সব আমি জানি,শুনি।কিন্তু কিছু বলি না তোমাকে।তবে আজকে
তোমাকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি ভবিষ্যতে কোনো খারাপ ব্যবহার করবে না আর ঘরের কোন কাজও করাবে না।

মামি কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে রইলেন।মামা মাকে বললেন,

–“রেশমা তোকে এবাড়িতে কাজ করতে আনি নি।
তুই এবাড়ির আশ্রিতা বা কাজের লোক কোনটাই না যে যার ইচ্ছা তোকে দিয়ে কাজ করাবে আর তুইও মুখ বুজে কাজ করবি সেটা হবে না।তুই এবাড়িতে থাকবি নিজের বাড়ির অধিকার নিয়ে।তোর যখন যা প্রয়োজন আমাকে বলবি, লজ্জা করবি না।তুই তো জানিসই আমি আর রোমান তোকে কতোটা ভালোবাসি।রোমান তো আপা আপা বলতেই পাগল। আর তুই নিজেকে ভাবছিস অসহায়?কে বলেছে তুই অসহায়?এই বড়ভাই যতদিন বেঁচে আছে ততদিন তোর গায়ে কোনো ফুলের টোকাও লাগতে দিব না।

সেদিন মামা মাকে মর্যাদা দেওয়ায় মামি সবসময় আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করত।মূলত বড়মামার ভয়ে তিনি আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো না।
.
★★★ ★★★ ★★★ ★★★ ★★★
.

দিন যাচ্ছে বড় হচ্ছি। এখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্রী।
যতদিন যায়, মানুষের জীবনে খরচ অনেক বাড়ে।রোমান মামা আগে বিদেশে থাকতেন।প্রতি মাসে মাকে আমার পড়াশোনার খরচের কথা বলে বেশি টাকা পাঠাতেন যাতে আমাদের সংসারের খরচটাও হয়ে যায়।এখন মামা বিদেশ থেকে চলে এসেছেন। বিয়ে করেছেন ছেলে হয়েছে।আগের মতো টাকা নেই তার কাছে তবুও তিনি আমাদের সংসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।আর বড়মামার অবদান আমাদের জীবনে না বললেই নয়!
তিনি এখন পর্যন্ত আমাদের জন্য যা করেছেন তা ইতিহাসে বিরল।তবুও আর্থিক সংকট জীবন থেকে যাচ্ছে না। সবকিছু তো আর মামাদের থেকে নেওয়া
যায় না।তাদেরও ফ্যামিলি আছে,ভবিষ্যত আছে।
আমি পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় স্কুলে বিনামূল্যে পড়াশোনা করি।বাড়িতে বড়মামার মেয়ে ঝুমা আপু আমাকে বাকি পড়া বুঝিয়ে দেয়। বড়মেয়ে হওয়ায় সংসারের অনেক কিছুই আমাকে বুঝে নিতে হয়।টেইলারিং এর কাজ করে টাকা উপার্জন করছি।এদিকে মা আবার অসুস্থ। আমাকে বিয়ে দেওয়ার
জন্য পাগল হয়ে গেছে। মায়ের ধারনা মা বেশিদিন বাঁচবে না।
মায়ের কিছু হলে আমার কি হবে সেই দুশ্চিন্তায় মা আরো ভেঙে পড়ছে।কিন্তু মামা এখন আমাকে বিয়ে দিতে রাজি নন।তিনি আমাকে অনার্স কমপ্লিট করাতে চান।
মাঝে মাঝে ভাবি আমার জীবনটা এতো সাদাকালো কেন?অন্য মেয়েদের জীবনের মতো আমরা
জীবনটাও তো হতে পারতো রঙিন।
তবে আমি কখনোই নিজেকে নিয়ে ভেঙে পড়ি না।আমার বিশ্বাস আমি পড়াশোনা শিখে অনেক বড় মানুষ হবো।অনেক ধন-সম্পদের মালিক হবো।সমাজসেবিকা হবো,দরিদ্রদের পাশে দাড়াব।
.
★★★ ★★★ ★★★ ★★★ ★★★
.
ঝুমাআপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাত্ররা অনেক ধনী।
মামি তো এমন পাত্র পেয়ে খুশিতে গদগদ।অবশ্য শুধু মামি না বাড়ির সকলেই খুশি।তবে মামি এমন পাত্র পেয়ে সবার তুলনায় একটু বেশিই খুশি। ঝুমা আপুও দেখতে শুনতে কম নয়।বলা যায় রুপে-গুনে অনন্য।
অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। আমি আপুর থেকে প্রায় পাঁচ বছরের ছোট।আমিও এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। টেইলারিংয়ের পাশাপাশি স্টুডেন্টদের বাড়িতে গিয়ে টিউশনি পড়িয়ে বেশ ভালো টাকা ইনকাম করি।
তবে আমার মায়ের বাড়ি গিয়ে সন্ধ্যার পর টিউশনি পড়ানোর ব্যাপারটা পছন্দ নয়। তবে সন্ধ্যার পর পড়ানো ছাড়া কোন উপায়ও নেই।সারাদিন কলেজ,টেইলারিংয়ের কাজ,ঘরের কাজ সামলিয়ে আমি বেশ হাপিয়ে উঠি।তাই সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত টিউশনি করে বাড়ি ফিরি।বাড়ি ফিরার আগ পর্যন্ত মা ভীষণ টেনশন করে যদি আমার কোনো বিপদ-আপদ হয়। রাত করে বাড়ি ফিরা ছাড়া কোনো উপায় নেই কারন যে বাড়িতে কর্তা থাকে না, সেখানে নারীদেরই সকল বাধা পেরুতে হয়।
সেই নারীদের কোন ভয় থাকতে লাগে না।
.
.
মায়ের ভয়টাই একদিন আমার জীবনে সত্যি হয়ে দাঁড়ালো।আমি টিউশনি শেষে বাড়ি ফিরছি, দেখি সামনের কেরাম খেলার ঘরটায় তিন-চারজন ছেলে কি রকম লোভতুর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! ওদের দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারছি কেন এভাবে তাকিয়ে আছে?ভীষণ ক্লান্ত লাগছে আমার তবুও আমি তাড়াতাড়ি হাঁটার চেষ্টা করছি আর মনে মনে দোয়া-দরূদ পড়ছি।সামনে এক দম্পতিকে দেখতে পেলাম, তাদের দেখে মন এক টুকরো সাহস হলো কিন্তু একটুখানি যাওয়ার পর তারা অন্য রাস্তা ধরলো আর আমিও ভয়ে দৌড় দিলাম।তবে শেষ রক্ষা আর হলো না। মানুষরূপী জানোয়ারগুলোও আমাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলল।

#চলবে

কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরী পর্ব-০১

0

গল্পঃ কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরী
পর্বঃ সূচনা পর্ব
নিঝুম জামান

কলেজ ফেরার পথে দেখি একটা সিএনজিওয়ালা
মামা তার সিএনজি থেকে একটা ডায়েরি
রাস্তার দিকে ছুড়ে ফেললেন।ডায়েরিটা এসে
আমার পায়ের কাছে পড়ল।আমি ডায়েরিটা
হাতে নেয়ার পর সেই মামা পান খাওয়া দাঁতে
হাসি দিয়ে বললেন,

— কে জানি গাড়িতে ফেলায় গেছে খাতাটার
ভিতরে একটাও খালি পাতা নাই
তাই ফেলায় দিলাম,তুমার নিয়াও লাব হইবো
না।

ডায়েরিটা হাতে নেয়ার পর কভার পেজটা দেখে
বুঝতে পারলাম যে এটা কারো পার্সোনাল ডায়েরি।
আমি সিএনজিওয়ালা মামা দিকে মুচকি হাসি দিয়ে
ডায়েরিটা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাড়ি ফেরার পর থেকেই ডায়েরিটা পড়ার জন্য মনটা উতলা
হয়ে আছে,যদিও কারো পার্সোনাল কিছুতে হাত দেওয়া উচিত নয় তবুও। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ করে হয়ে ডায়েরিটা নিয়ে বসলাম। মোটামুটি পুরনো, বিবর্ন ডায়েরিটা।
প্রথম পেজটা খুলে পড়া শুরু করলাম, সেখানে
লিখা-

“প্রিয় ডায়েরি”,

সবকথা সবাইকে বলা যায় না। গোপন কথাগুলো
মানুষ জানতে পারলে সে কথাগুলো দিয়ে যে
বড্ড কষ্ট দেয়। আবার কারো
সাথে শেয়ার করতে না পারলেও বুক ভার হয়ে
থাকে।তুমি না হয় আমার সুখ-দুঃখের সাথি
হয়ে থেকো।আজকে থেকে আমার সব
অতীতগুলোর সাক্ষী না হয় তুমিই থাকলে।
আমি জানি একমাত্র তুমিই
আছো যে কিনা আমার সব কথা জেনেও
আমার সাথে বেইমানি করবে না।

– (২৩/০৫/০৭ইং)

তারমানে এই ডায়েরিটা আজ থেকে প্রায় পনেরো
বছর আগের।তারিখের নিচে আবার খুব যত্নে
হালকা ফুল-লতা পাতার একটা নকশা
ডিজাইন করা।বুঝতে পারলাম এটা কোনো
মেয়ের খুব পছন্দের
ডায়েরি ছিল।আমিও একজন মেয়ে,আমিও
মাঝে মাঝে ডায়েরিতে কিছু লিখার
পর শেষে কোনো ফুলের ছবি আকিঁ।যাইহোক,
পরের পেজটা খুলে পড়া শুরু করলাম,

” আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আমার
বাবা মারা যায়। আমার ছোট ভাইটার বয়স
চার বছর।তখন থেকে মা আমাদের দুই
ভাইবোনকে বহু সংগ্রাম করে মানুষ করেন।
নানাবাড়ি থেকে বহুবার মাকে নিয়ে যেতে চাইলেও
মা নিজের আত্মসম্মানের জন্য যান নি।
তিনি কখনোই ভাই-ভাবীর সংসারের বোঝা হতে
চান নি।আবার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার
দুইচাচা আমাদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা
করছিলেন। এইকারনেও মা এবাড়ি ছেড়ে যান নি।কারণ,
মা মনে করতেন একবার বাড়ির দখল ছেড়ে
দিলে আর কখনোই এবাড়িতে ঠাঁই নিতে
পারবেন না।আমার অনেক সুন্দরী ছিলেন।
গ্রামের লোভতুর মানুষের দৃষ্টি পড়ে আমার মায়ের ওপর।প্রায় রাতেই আমাদের দরজায় কে যেন
জোরে জোরে ধাক্কাতো।ঘুমানোর সময়
দেখতাম মা দা-বটি পাশে নিয়ে ঘুমাতেন
আর সবসময় একটা ধারালো ছুরি নিজের কাছে কোমরে গুজে রাখতেন।তখন দা-বটি নিয়ে
ঘুমানোর কারনটা না বুঝলেও এখন ঠিকই বুঝি।
এতো কষ্ট – সমস্যা উপেক্ষা করেও তিনি
এবাড়িতে থেকেছেন শুধু আমাদের সুখের
কথা ভেবে।আমাদের বাইরে বাথরুম হওয়ায়
যখন বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হত তখন মা
আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তারপর বেশ সর্তকতা অবলম্বন
করে বাইরে যেতেন।
একদিন গভীর রাতে মা বাথরুমে গেছেন বাইরে
থেকে শেকল আটকে। আর আমি
ঘুম ঘুম চোখে বসে আছি আর হাই তুলছি।হঠাৎ
দেখি শেকল খুলে হুড়মুড় করে একজন পুরুষ
লোক আমাদের ঘরে, মুখে কালো রংয়ের
মুখোস পড়া।আমি ওনাকে দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে
উঠলাম। লোকটা এসে আমার মুখটা চাপা দিয়ে
ধরল।তারপর আমার মুখ, হাত – পা বেঁধে ফেলল।
আমাকে বেঁধে কালো মুখোস পড়া লোকটা
দরজার আড়ালে গিয়ে দাড়ালো।এদিকে আমার মা
আমার চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘরে আসলোমা ঘরে
ঢোকার সাথে সাথে ওই লোকটা দরজা লাগিয়ে দিলো।
আমার মা ভয় পেয়ে গেল।ওই লোকটা মায়ের
গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। মা ওনার কাছ থেকে
নিজেকে ছোটানোর বিভিন্নরকম চেষ্টা করছে।
কোনোমতেই লোকটার গায়ের সঙ্গে পেরে উঠছেন
না।আমি থরথর করে কাপঁছি।আমার ছোট ভাইটাও
জেগে গেছে, ও ভীষণ ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে
ধরে আছে। এরমাঝেই মা তার কোমর থেকে
ছুড়িটা বহুকষ্টে বের করলেন তারপর মা….

#চলবে

তোমার ছায়া পর্ব-২৩(শেষ পর্ব)

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ২৩ এবং শেষ)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আয়রিন আর ফারদিন দুজনে মিলে শাড়ি ও জামা দেখতে লাগলো। ফারদিন দেখে দেখে শাড়ি গুলো একটা একটা আয়রিনের গায়ে মেলে ধরে কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখছে এগুলো কেমন মানায়। আয়রিন চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। আর মাঝে মাঝে আড় চোখে ফারদিনের দিকে চেয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
ফারহা হাটতে হাটতে একটা দোকানে ফারদিন ও আয়রিনকে এভাবে দেখে কিছুক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো এক পাশে। এক পাশে দাড়িয়ে লুকিয়ে দুজনকে দেখছে সে। কতো হাসি খুশি তারা। দুজনকেই দেখে মনে হচ্ছে খুব গভির সম্পর্কে জড়িয়ে আছে তারাও।
কিছুক্ষনের মাঝে আবরার এসে পেছন থেকে কাধে হাত ছুইয়ে বললো,
– এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন?
ফারহা একটু মুচকি হেসে বললো,
– ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে।
ফারহার চোখের ইশারায় আবরারও ওদের দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন। এর পর ভ্রু-কুচকে ফারহার দিকে তাকালে ফারহা শান্ত ভাবে বললো,
– আপনাকে অনেক কিছু বলার আছে আমার।
আবরার ওভাবেই তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বললো,
– কি?
– এখানে না। পরে আলাদা কোনো এক জায়গায় বলবো।
আবরার একটু হাসলো। তারপর মুকে হাসি ধরে রেখে বললো,
– মহা রাণী’র ইচ্ছাকেই মেনে নিলাম। এবার দাড়িয়ে না থেকে দয়া করে সামনে পা বাড়ান।
,
,
ফাইনালি অনেক কিছু সহ্য করে ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো তাদের। সন্ধার পর থেকে গায়ে হলুদের কাজ শুরু হলো। সব শেষে রাতে গুমাতে গেলে আবরারের ফোন থেকে একটা টেক্সট আসে,
‘আমি তোমাদের ছাদে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।’
অবাক ভঙ্গিতে এক হাত গালে গালে চলে যায় তার। ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে মেসেজটা আবার ভালো করে পরে নিলো সে। ঘুমানোর আগে দুঃস্বপ্ন দেখছে না তো সে? না ঠিকই তো দেখছে। তার মানে আবরার সত্যি ছাদে আছে? যদি থাকেই তাহলে এতো রাতে কিভাবে ছাদে এলো? আর কেনোই বা এলো।
আর কিছু না ভেবে ছাদে চলে গেলো সে। দেখে ছাদের এক কোনে হেলায় দিয়ে দাড়িয়ে আছে আবরার। আর চাঁদের আলোয় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
ফারহা তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,
– কিভাবে এসেছেন এতো রাতে? আর কেনই বা এসেছেন?
আবরার একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
– তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই।
– পাগল নাকি?
– বলতে পারো,,
– কালকে তো একেবারেই চলে যাবো। তখন কোলে নিয়ে বসে থাকবেন। একন যান।
– আজ কয়দিন হলো ওই বারি থেকে এসেছো? এই সময়টায় চোখে হারাচ্ছিলাম শুধু। মনে হচ্ছিলো আমার ছায়াটা আমাকে ছেরে দুড়ে চলে গেছে।
– হুম চলে এসেছিলো আমার কাছে। এই যে আমার সাথে মিশে আছে যে এইটা। হিহিহি,,,
– তাহলে রেখে দাও নিজের কাছে। যেন আমি পুরোটাই হয়ে থাকি #তোমার_ছায়া। তাহলে আর হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না। সারাটা দিন তুমি যেখানে যাবে ছায়াটাও পাশে থাকবে তোমার।
আবরারের এমন পাগলামি কথা বার্তায় ফারহা হেসে দিয়ে বলে,
– এখন যান, এতো রাতে আপনাকে এখানে দেখলে সবাই হাসাহাসি করবে।
– আচ্ছা, বলো তো আমি তোমাকে কখনো জড়িয়ে ধরেছিলাম কি না?
ফারহা কিছুক্ষন ভেবে বলে,
– ওম,,, না কখনো ধরেন নি। তবে হাত ধরেছেন অনেক বার।
আবরার একটু হেসে বলে,
– জড়িয়েও ধরেছিলাম একবার। দেখো তো মনে করতে পারো কি না?
ফারহা কিছুক্ষন ভেবে বললো,
– মনে পরছে না।
– জঙ্গলে, ছিন’তাই কারিদের থেকে লুকাতে গিয়ে তখন।
ফারহা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে দিয়ে বললো,
– হুম মনে পরছে। আর এতো ভঙিতা না করে সরাসরিই বলতে পারতেন, যে আপনি আমার জড়িয়ে ধরতে চাইছেন।
আবরার এবার ফাটা বাশের চিপায় পরার মতো অবস্থা হয়ে আর কিছু বলার মতো খুজে পাচ্ছিলো না। তাই হুট করে ফারহাকে টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে চুপচাপ হয়ে রইলো।
,
,
বিয়ের বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। অনেক দিন পর আবার বাবার বাসায় আসে ফারহা। সেই সাথে মা কে ফারদিন আর আয়রিনের বিষয়টা জানালে, মা রেগে আগুন। বিসয় টা যেন তিনি কোনো ভাবেই মানতে পারছেনা। নিজের এক মাত্র ছেলেকে এমন মেয়ে বিয়ে করাবে, যার আগেও একটা বিয়ে হয়েছিলো?
রেগে বলে,
– তোদের দুই ভাই বোন কে ওই বাড়ি থেকে কি জাদু করেছে কে জানে? দুজনই ওদের দুই ভাই বোনকে নিয়ে পাগল হয়েছিস।
ফারহা মায়ের এক হাত ধরে বললো,
– ভাইয়াকে কখনো বিয়ের জন্য রাজি করাতে পেরেছো? পারোনি। আর ভাইয়া বলেই দিয়েছে আয়রিনকে বৌ করে না আনলে আর জীবনে বিয়েই করবে না। আর তোমরা কি চাও না, তোমাদের ছেলে সুখে থাকুক?
মা উঠে হাটতে হাটতে বলে,
– তোদের যা ইচ্ছা তাই কর তোরা।
ফারহা একটু হেসে রুমে চলে গেলো। পরে ফারদিন এসে চুপি চুপি জিজ্ঞেস করলে ফারহা বলে,
– একটু রাগ করেছে, তবে মনে হয় না অমত করবে।
,
,
– তুমি এতোটা দুশ্চরিত্রা, তা আগে জানলে কখনো আয়রিনের সাথে আমি এমনটা করতাম না।
কাচের গ্লাস ফ্লোরে ছুড়ে মা’রে মাহিন। আর পাশে চুপচাপ নিজের নিষ্পাপ বাচ্চাকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে মাহি। আর অঝরে কাঁদছে।

মাহিনের রাগের কারণ টা হলো তার ছেলে। মাহি প্রেগনেট শুনে তাকে বিয়ে করে আয়রিনকে ডিবোর্স দিয়েছিলো সে। তবুও যেন একটু সন্দেহ মিশে ছিলো। আর বাচ্চা হওয়ার পর সেটাই ঠিক হলো।
বাচ্চার সাথে মাহিনের DNA টেস্ট কনো ভাবেই মেচ করছে না। যার অর্থ বাচ্চা টা মাহিনের না। অন্য কারো। যা মাহিনের বাচ্চা বলে মাহিনকে বিয়ে করেছিলো মাহি। মাহিনের বাবা মা তো সেদিনই তার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো, যে দিন মাহিকে বিয়ে করে এনে আয়রিনকে বের করে দিয়েছিলো মাহিন।
মাহিনের ভাবতেই আজ সব কিছু ভেঙে চুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে যে, অন্য কারো বাচ্চা সে এখন নিজের সন্তান পরিচয় দিয়ে বড় করতে হবে।

আর খবর টা আয়রিনের কানে আসার পর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে তার। এতো দিনের জ্বলতে থাকা আগুন টা যেন একটু একটু করে নিভতে শুরু করলো। আসলে যে যেমন, তার জন্য মিলেও তেমন।
,
,
আবরার কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলে দেখে সামনে একটা নীল রংয়ের চকচকে বাইক রাখা। আবরার কিছুক্ষন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো। বাসায় তো তেমন কাউকেই দেখলো না।
পেছন থেকে ফারহা এসে একটা চাবি এগিয়ে দিয়ে বলে,
– অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখন থেকে আর গাড়ির জন্য দাড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। নিজের বাইকেই যাবেন।
আবরার কিছুক্ষন চেয়ে থাকলে ফারহা আবার বলে,
– মায়ের কাছে শুনেছিলাম, গারি কেনার জন্য টাকা জমাচ্ছেন। যখন হবে তখন গাড়ি কিনবেন। এখন থেকে কিন্তু বাইকে করে আমাকেও কলেজে নিয়ে যেতে হবে।
,
,
আজ সারা দিন ক্লান্তিতে কেটেছে ফারহার। সন্ধার পর আবরার আসার পর তার জন্য ঠান্টা পানি আনতে গিয়ে মাথা ঘুরিয়ে পরে যায় সে।
আবরার দৌড়ে গিয়ে ফারহাকে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দেয়। আর মুখে পানি ছিটিয়ে নিলো।
আর দুই দিন পরই ফারদিন আর আয়রিনের বিয়ে। এর মাঝে ফারহার আবার কি হয়ে গেলো তা বুঝে উঠতে পারছে না সে।
আবরার একটা গাড়ি কল দিয়ে হসপিটালে নিয়ে যায় ফারহাকে। ওই দিনটা খুব টেনশনে কেটেছে তার।
হসপিটাল থেকে ফিরে আসার পর থেকেই আবরারকে খুব বিষণ্ন দেখালো। কাউকে এই ব্যাপারে কিচ্ছু বলেনি।

আজ শুক্রবার, ফারহা স্বাভাবিক ভাবে আবরারের কাছে গিয়ে বললো,
– হসপিটালে যাওয়ার পর কি হয়েছে তা কিন্তু এখনো বলেন নি।
আবরার শান্ত ভাবে বললো,
– কিছু হয় নি, এমনি তোমার শরির দুর্বল ছিলো তাই এমনটা হয়েছে।
ফারহা এবার সিরিয়াস লুক দিয়ে তার পাশে বসে বললো,
– দেখুন আমি আপনাকে দেখেই বুঝতে পারছি, কোনো কিছু লুকাচ্ছেন আমার কাছে।
– কি লুকাবো?
– বলুন না, কি হয়েছে? আমার বড় কোনো অসুখ ধরা পরেছে?
আবরার মুহুর্তেই ফারহার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে থামিয়ে দিলো তাকে। আর শান্ত ভাবে বললো,
– শুনবে কি হয়েছে?
– হুম, বলুন না। আমার খুব টেনশন লাগছে।
– বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে।
ফারহা না বুঝে বললো,
– কে আসবে?
আবরার একটু হেসে বলে,
– হতে পারে কোনো রাজপুত্র, নয়তো রাজকন্যা।
ফারহা এবার কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে পাশ থেকে একটা বালিশ নিয়ে আবরারকে মা’রতে শুরু করলো। মা’রতে মা’রতে বললো,
– এমন একটা খুশির বিষয়ে আপনি এমন গম্ভির হয়ে ছিলেন? মন খারাপ হয়ে ছিলেন? আর জানেন আমি কতো টেনশনে ছিলাম? কেন করেছেন এমন, বলুন বলুন।
আবরার বালিশের বারি খেতে খেতে বলে,
– তোমাকে রাগাতে ভালো লাগে তাই। আর সত্যিই বাবা হওয়ার অনুভুতি আমাকে সব ভুলিয়ে দিয়েছিলো।
,
,
দুই বছর পর। ছেলে হয়েছিলো আবরারের। বসতে শিখেছে মাত্র। দাদির সাথে বসে ছিলো সে। আবরার আর ফারহা বের হবে ঈদের শপিং করতে। ঈদ ঘনিয়ে এসেছে। সন্ধার পর বের হলো দুজনই।

শপিং মলে কাঁন্নার শব্দ কানে আসতেই লোকজন জড়ো হয়ে যায় সেখানে। ফারহা পাগলের মতো আবরারের দিকে চেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,
– আমার বাবু কোথায়? আমার ফাহাদ। মুহুর্তের মাঝে কোথায় চলে গেছে? কে নিয়ে গেছে তাকে? আমার বাবুকে এনে দিন।
বলেই আবার কাঁদতে থাকে ফারহা। পুরো শপিং মলে হই হুল্লার লেগে গেলো। পুরোটা খুজেও ছোট ফাহাদকে পাওয়া গেলো না। সি’সি’টিভি ফুটেজ দেখলে দেখে একটা লোক কোলে করে নিজের বাচ্চার মতো নিয়ে বের হয়ে গেছে। কিন্তু মুখটা কোনো ভাবেই দেখা গেলো না। সারা শরিরে শুধু চোখ দুটি দেখা যাচ্ছিলো। সেই রাতের মাঝেই যেন কোথায় হাড়িয়ে গেলো তাদের ছোট্ট ফাহাদ৷
,
,
বিশ বছর পর।
– তুমি আবার ভাইয়ার ছবি নিয়ে কাঁদছো মা?
ফারিহা পেছন থেকে গিয়ে কথাটা বলতেই চোখের পানি মুছে নিলো ফারহা। মেয়ের দিকে চেয়ে করুণ চোখে বলে উঠে,
– আমার ফাহাদ কবে ফিরবে রে মা? নাকি কখনো ফিরবে না?
ফারিহা মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ভাইয়া ফিরে এলে তুমি তাকে চিনতে পারবে?
ফারহা চোখের পানি মুছে বললো,
– আমার ছেলেকে চিনতে আমার একটুও ভুল হবে না। ওর শরিরে এমন একটা চিহ্ন আছে যেটা দেখে আমি আরো বিশ বছর পর হলেও চিনতে পারবো।
ফারিহা আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো,
– কি সেটা?
ফারহা আবারও ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,
– ওর পিঠে কোনাকোনি ভাবো বড় একটা কা’টা দাগ আছে। যেই কাটার জন্য আমার ছোট্ট ফাহাদ ১ মাস হসপিটালে ছিলো। অনেক কষ্টে ফিরে পেয়েছিলাম। এর পর আবার হারিয়ে ফেললাম।
ফারিহা মাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য বললো,
– দেখবে আমি এক সময় ঠিকই ভাইয়াকে খুজে নিয়ে আসবো।

তবুও যেন মনটা বুজলো না ফারহার। রাতেও ছেলের ছবির দিকে চেয়ে কাঁদছিলো। কারণ আজ তার ছেলের জন্মদিন। এর মাঝে আবরার এসে ফারহাকে কাঁদতে দেখে, ফারহার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,
– আবারও সেই পুরোনো স্মৃতি নিয়ে কাঁন্না করছো?
ফারহা আবরারের দিকে চেয়ে বলে,
– ছেলেটা তো আমারই। কেন ফিরে আসেনা এখনো? আমাকে আল্লাহ্ সব কিছু দিয়েও কেন আমার ছেলেটার থেকে দুরে রাখলো?
আবরার তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
– সৃষ্টি কর্তা যা করে প্রত্যেকটার পেছনেই উত্তম কোনো পরিকল্পনা থাকে। হয়তো আবার আমাদের বুকে আমাদের ছেলেকে ফিরিয়ে দিবে সে। আর না দিলেও এর পেছনে ভালো কিছুই থাকবে।
বলেই ফারহাকে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলো সে। এই ২৩ বছরে যেন ভালোবাসা একটুও কমেনি।

এভাবেই বুকে জড়িয়ে কোনো এক জোৎস্নার আলোয় চাঁদকে শাক্ষি রেখে চিৎকার বলতে চায় সে,
~ তোমার জন্য আমি #তোমার_ছায়া হয়ে যাবো। এভাবেই পাশে রবো বাকি জীবন। কারণ কঠিন পরিস্থিতিতেও কখনো ছারা মানুষকে ছেরে যায় না। আমি সেই ভাবে #তোমার_ছায়া হয়েই তোমার পাশে থেকে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করলাম এই রাতকে শাক্ষি রেখে। কখনো হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।

কিন্তু আজও সেই কথাটা বলা হলো না। আমি যে #তোমার_ছায়া হয়ে থাকতে চাই।

To be continue…..

তোমার ছায়া পর্ব-২২

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ২২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

সাদাফ ও ফারহার রিলেশন থাকা কালিন এক সাথে তোলা ছবি গুলোর দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আবরার। পাশেই মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে রেখে ড্রাইভ করছে সাদাফ।
সাদাফ একটু হেসে বললো,
– ফারহার প্রিয় জায়গা কোনটা জানো?
আবরার কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
– কোনো খোলামেলা নির্জন জায়গা অথবা কোনো কুল কুল পানির শব্দ কানে আসে এমন নদীর পাড়।
সাদাফ ড্রাইভ করতে করতে বলে,
– এক্সেক্টলি,,, তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই চলো।
বলেই কিছুক্ষন পর একটা নদীর পাড়ে নিয়ে গেলো আবরার কে।

ইদানিং মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় নদীর পানিও বেড়েছে অনেক। নদীর বুকে ভেষে সবুজ কচুরিপানা গুলো এক পাশ থেকে ভেষে ভেষে অন্য দিকে হাড়িয়ে যাচ্ছে।
সাদাফ একটা ছোট পাথর নদীর দিকে ছুড়ে মেরে বলে,
– আমরা প্রথম দেখা টা এখানেই করেছিলাম।
আবরার একটু বিরক্ত নিয়ে বললো,
– তো আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো? আর তোমার মতলব টা কি ডিরেক্টলি বলো।
– আচ্ছা তাহলে সোজাসুজি ভাবেই বলি। তুমি তো এখন বিশ্বাস করলে যে ফারহার সাথে আমার রিলেশন ছিলো?
আবরার ভ্রু-কুচকে বললো,
– ছিলো? তার মানে এখন নেই? তাহলে ব্রেকআপ হয়েছে কেন তোমাদের?
সাদাফ আবারও হেসে বললো,
– বাহ্, স্বামী হয়ে স্ত্রীর প্রাক্তনের কাছে প্রেম কাহিনি শুনতে চাইছো? সহ্য করতে পারবে তো?
আবরার চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো। তারপর বললো,
– তুমি চাও টা কি?
– ফারহাকে ছেরে দাও ভাই, আর আমার জীনিস আমাকে দিয়ে দাও। প্রয়োজনে তুমি যা চাইবে তাই পাবে।
আবরার একটু রাগ কন্ট্রোল করে বললো,
– ফারহাকে কি তোমার এতোটাই সস্থা মনে হয় যে, আমি কিছু চেয়ে বিনিময়ে ফারহাকে তোমার কাছে দিয়ে দিবো? দেখো সাদাফ আমি এতোটাও মহৎ নই যে নিজের ভালোবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দিবো। হ্যা বিষয় টা যদি এমন হতো যে, তোমাদের রিলেশন আছে। আর ফারহাও তোমাকে ভালোবাসে, তাহলে আমি বিষয়টা ভেবে দেখতাম।
সাদাফ এবার একটু সিরিয়াস লুক নিয়ে বলে,
– দেখো ফারহার সাথে যে আমার অনেক কিছুই ছিলো, তার সব প্রমানই এই ফোনে আছে। এসব কিছু অন্যরা জানলে তোমার মান সম্যান থাকবে?
আবরার একটু কপাল কুচকে বললো,
– কোথায় প্রমান?
সাদাফ কপালে হাত রেখে বললো,
– এতোক্ষন ধরে তো নিজের চোখেই দেখলে।
আবরার এবার হাতে থাকা সাদাফের ফোনটা ছুড়ে নদীর জলে ফেলে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললো,
– এবার দাও প্রমান।
সাদাফ কিছুক্ষন হা করে নদীর দিকে তাকিয়ে থেকে পরে আবরারের দিকে চোখ ফিরিয়ে বললো,
– কি করলে এটা তুমি? ওই ফোনে আমার কতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস ছিলো। আর এটা আইফোন থার্টিন। তোমার তিন মাসের ইনকাম দিয়েও এমন ফোন নিতে হিমশিম খাবে।
আবরার এবার সাদাফের চোখে চোখ রেখে বললো,
– যাই থাকুক, আমার কাছে ফারহার চেয়ে দামি আর কিছু নেই।
বলেই আবরার হাটা ধরে একটা গাড়ি ডেকে উঠে পরলো বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ওদিকে সাদাফ একনো হা হয়ে তাকিয়ে আছে, এটা কি হলো?

বাড়ি যেতে যেতে টিসু দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে লাগলো আবরার। ঘাম মুছে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বাইরের দিতে তাকিয়ে আছে।
সেইদিনের কথাটি মনে পরলো আবার।

~ আয়রিনের বিয়েতে সাদাফকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে অস্থির হয়ে ছিলো ফারহা। তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলো সাদাফ কে এখানে দেখে। তার সারা চোখে মুখে হতাশা ও অস্থিরতার ছাপ ফুটে ছিলো পুরোপুরি। সেদিন যখন আবরারকে সাদাফের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলো তখনও কেমন অন্য মনস্ক দেখাচ্ছিলো ফারহাকে।
সাদাফকে কিভাবে চেনে সে? আর তাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? একটু প্রশ্ন জাগলো আবরারের মনে। আবরার তখনও জানতো যে ফারহা আবরারকে পছন্দ করে। তবুও অন্য ছেলের কথা বলতে ফারহাকে এতোটা বিষণ্ন দেখাচ্ছিলো কেন?
সেদিন এসব ফারহাকে আর জিজ্ঞেস না করে খোজ নিতে লাগলো বিষটা আসলে কি? তখনই ফারহা আর সাদাফের সম্পর্কটা জেনেছিলো সে। বাট ফারহাকে কিছু বুঝতে দেয়নি আর। কারণ দোষটা সাদাফেরই ছিলো। তাই আজ সাদাফের ফোনটা হাতে পেয়ে ও পুরোনো প্রেমিকের সাথে ছবি গুলো দেখে তা নদীতে ফেলে দিয়েছে। কারণ ওসব ছিলো ফারহার অতিত। আর ফারহার সাথে অন্য কারো স্মৃতি জড়িয়ে থাকুক এটা সে কোনো ভাবেই চায় না। তাই সব প্রমান, সব স্মৃতি নদীর সাথে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো।

তবুও অস্থির লাগছে আবরারের। আজ বাসায় গিয়ে ফারহাকে বিষয়টা জিজ্ঞেস করতে হবে। দেখবে সে তার কাছে কিছু লুকায় কি না? কারণ ফারহার সব বিষয়ে জানার অধিকার আছে।
,
,
রাতে খাবার টেবিলে বাবা মা ও ফারদিন একসাথে খাবার খেতে ব্যাস্ত। মা ফারদিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কালকে গিয়ে ফারহাকে নিয়ে আসবি এই বাড়িতে।
খাওয়ার সময় মায়ের মুখে আচমকাই এমন কথা শুনে যেন বিষম উঠে গেলো তার। মা আজ নিজেই ফারহার কথা বলছে, এটাও কি সম্ভব? নাকি পুরোটাই স্বপ্ন দেখছে। তবুও সব চিন্তা ভাবনা এক পাশে রেখে একটু পানি খেয়ে মায়ের দিকে চেয়ে বললো,
– সত্যিই বলছো মা?
মা স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো,
– হ্যা, কালকে গিয়ে নিয়ে আসবি। আমাদের মেয়ে কেন পালিয়ে বিয়ে করে শশুর বাড়িতে চোরের মতো থাকবে? অন্য আট দশ টা মেয়ের মতো তারও ধুম ধাম করে সব হবে। সেদিন নিয়ে যাওয়া চোরের মতো নয়। বৌ বেশে ওই বাড়িতে যাবে সে।
ফারদিন এবার এক পলক বাবার দিকে তাকালো। দেখে বাবাও কিছু না বলে চুপচাপ খাচ্ছে। মানে নিরবতা সম্মতির লক্ষন ধরে নিলো সে।
মা আবার বললো,
– যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। আমরা এমন আচরণ করলে বা সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখলেও আর কিছু ঠিক হবে না। আর আমাদের ইগো থেকে দামি হলো ফারহার সুখে থাকাটা।
,
,
সেই সন্ধার আগে বাসায় ফিরার পর থেকে ফারহার সাথে তেমন একটা কথা বলেনি আবরার। ফারহা বিষয়টা খেয়াল করে কয়েকবার আবরারের কাছে গিয়েছিলো। কিন্তু প্রতিবারই মুখটা গম্ভির দেখালো তার।

রাতের বেলায় খাওয়া শেষে ছাদে হাটাহাটি করছিলো আবরার। তখনই ফারহা পেছন থেকে গিয়ে বলে,
– আপনার সমস্যা টা কি বলুন তো? আমাকে ইগনোর করছেন কেন?
আবরার পেছন ফিরে দেখে ফারহা কোমরে দুই হাত দিয়ে দাড়িয়ে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফারহার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবরার শান্ত ভাবে বললো,
– কেন এমনটা মনে হলো?
– দেখুন আমি বাচ্চা না যে এসব বুঝবো না। আর আমি কোনো ভুল করলে বা কোনো অন্যায় করে ফেললে তা সরাসরি বলে দিবেন। দুজন কথা বলে সমাধান করে ফেলবো। এভাবে গাল ফুলিয়ে থাকা কথা না বলা ইগনোর করা, এসব আমার ভালো লাগে না।
আবরার অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,
– কিছুনা, এমনি মনটা ভালো না তাই।
ফারহা আবার বললো,
– কিছুতো নিশ্চই হয়েছে, বলুন না কি হয়েছে?

আবরর এবার সোজা হয়ে দাড়িয়ে তার দিকে চেয়ে বললো,
– তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো?
ফারহা কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে মাথা নিচু করে বললো,
– আপনার কাছে মিথ্যে বলবো না। হুম ছিলো আগে।
– তো আমাকে আগে বলোনি কেন এটা?
ফারহা মন খারাপ করে বললো,
– ভয়ে বলিনি, যদি আপনি এসব শুনে আমাকে ছেরে চলে যান তাই।
– তো এখন কেন বললে?
– আপনি জিজ্ঞেস করেছেন তাই।
– যদি এখন ছেরে চলে যাই?
ফারহা এবার আর কোনো উত্তর না দিয়ে হুট করে আবরার কে জড়িয়ে ধরে নিশ্চুপ হয়ে রইলো। হুট করে তার এমন অনুভূতি তৈরি হওয়ার কারণটা সে নিজেও জানেনা। শুধু এটাই বুঝতে পারছে, আবরার কেন ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে? কেন বলবে সে? কোথায় যাবে? আমি যেতে দিবো না। কিছুতেই দিবো না।
,
,
সবাইকে সব কিছু বুঝিয়ে ফারহাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ফারদিন। ভয়ে ধুক ধুক করছে ফাহার বুক। গিয়ে বাবা মায়ের সামনে কিভাবে দাড়াবে? কি করবে তারা? ইচ্ছে করছে ঘুমিয়ে যেতে। কারণ ঘুমিয়ে গেলে এই সময়টা খুব তারাতারি পার হয়ে যাবে। আর ঘুম ভাঙলে কি হয়েছে তা কিছুই মনে থাকবে না। দেখবে শুধু সব ঠিকঠাক।
এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় পৌছালো তারা। দরজার বাইরে দাড়িয়ে হাত পা কাঁপছে তার। মা দরজা খুললে ফারহা কিছুক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে কেঁদে মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পরে বলে,
– আমায় ক্ষমা করে দাও মা। খুব বেশিই অন্যায় করে ফেলেছি তোমাদের সাথে। আমি খুব খারাপ মা। খুব বেশিই খারাপ।
এর মাঝে বাবা এলো। দুজনকে ধরেই কাঁন্না করতে লাগলো সে। এটাও যেন এক ধরনের সুখের কাঁন্না।
,
,
পারিবারিক ভাবে সব কিছু করছে নতুন করে। দুই ফ্যামিলিই এখন খুব হ্যাপি। কয়েকদিন সময় নিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর ধীরে সুস্থেই সব হচ্ছে।

সেই অনেক্ষন যাবৎ রেডি হচ্ছে ফারহা। এদিকে ফারদিন ড্রয়িং রুমে বসে বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
– কি রে কোথায় তুই? কতোক্ষন লাগবে আর? আবরার ফোন দিচ্ছে বার বার। ওরা হয়তো পৌছে গেছে আর তোর এখনো রেডিই হওয়াটাই শেষ হয়নি। এতো ঘসা মান্জা করার কি আছে? বিয়ে করতে তো যাচ্ছিস না আর।
ফারহা রুম থেকে বেড়িয়ে বললো,
– হয়ে গেছে ভাইয়া, চলো এবার।

কিছুক্ষনের মাঝেই শপিংমলে পৌছে গেলো তারা। ওখানে আগেই এসে বসে আছে আবরার আর আয়রিন। আর এখান থেকে গেলো ফারহা আর ফারদিন।
আবরার আয়রিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
– তুই আর ফারদিন যা ভেতরে গিয়ে সব কিছু দেখ। আমরা আসছি।
আয়রিন আর ফারদিন ভেতরে চলে গেলে ফারহা আবরারের দিকে চেয়ে বলে,
– ওদেরকে এভাবে পাঠিয়ে দিলেন কেন? আমাদের তো তেমন কোনো দরকারও নেই।
আবরার একটু হেসে বললো,
– আমার ইচ্ছা। আর বের করলে কতো দরকারই তো বের করা যায়।
তখনি সাদাফ তাদে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় থেমে বলে,
– দু’জন দেখি একসাথে শপিং মলে? বাহ্ ভালো তো। তো মিস ফারহা, কেমন যাচ্ছে দিন কাল? সব টিক ঠাক?
ফারহা বিরক্ত হয়ে বললো,
– মিস না, মিসেস আবরার। আর আপনাকে না বলেছি আমার দুই চোখের সামনেও আসবেন না। তবুও কেন ফলো করেন বার বার।
– তোমার মতো থার্ট ক্লাস মেয়েকে ফলো করার সময় নেই সাদাফের।
এর মাঝে আবরার ফারহাকে বললো,
– তুমি আয়রিন আর ফারদিনের কাছে যাও তো, আমি আসছি।
ফারহা সাদাফের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে চলে গেলো সেখান থেকে।

আবরার সাদাফের দিকে চেয়ে বললো,
– আবার কেন এসেছো? কি চাইছো তুমি?
সাদাফ পূর্বের মতো হেসে বললো,
– কিছুই চাই না। আর এখানে এসেছি একটা দরকারে, তোমাদের ফলো করতে আসিনি। আর তোমাকে নতুন করে কিছু বলেই বা কি লাভ৷ বৌ এর পূর্বের সব নিজ চোখে দেখেও তোমার কিছুই আসলো গেলো না। আমি হলে এমন মেয়েকে লা’থি দিয়ে বের করে দিতাম।
আবরার এবার চার দিকে চেয়ে নিজের রাগ টা চেয়ে রেখে সাদাফকে বললো,
– দেখো সাদাফ, দুনিয়ার সব মেয়ে ভালো, শুধু একটা মেয়ে খারাপ, আর সে হলো ফারহা। বিষয়টা যদি এমনও হয়, তবুও আমি তাকেই ভালোবাসি। ভালোবাসা দিক দেখে পাল্টে যায় না। যাকে ভালোবাসবো তার সব কিছুকেই ভালোবাসবো। তার অতিত, বর্তমান, তার অস্তিত্ব, তার স্বপ্ন, তার ইচ্ছা সব নিজের সাথে মানিয়ে নিবো। এক কথায় সে যেমনই হোক তা একান্তই আমার ব্যাপার। উত্তর পেয়েছো? এবার নিজের রাস্তা মাপো।

To be continue….

তোমার ছায়া পর্ব-২১

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ২১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

হাত পা হাওয়ার মধ্যে অনুভব করে কিছুক্ষনের জন্য নিজের তাল হারিয়ে চোখ বন্ধ করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো আয়রিন। আসার সময় তো কাউকেই দেখেনি। তাছারা এতো রাতে সবাই ঘুমের দেশে। এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না।
ফারদিন তাকে সামনে দাড় করানোর কিছুক্ষন পর ভয়ে ধিরে ধিরে চোখ খোলে সে। কারণ সুই সাইড করতে গিয়ে ধরা খেয়ে বেচে গেলে বিপদ টা আরো বড় হয়ে আসে। কারণ মা’রা গেলে তো গেলোই। আর বেচে থাকলে আরো বেশি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। আবার কখনো সাক্ষাত উত্তম মাধ্যম যেন ফ্রিতে উড়ে গায়ের উপর এসে বসে।
আয়রিন ছল ছল চোখে তাকিয়ে সামনে ফারদিনকে দেখে কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– কেন বাচাতে এলেন? চলে গেলে তো দুঃখ কষ্ট সব শেষ হয়ে যেত। সারা জীবন ধুকে ধুকে ম’রার চেয়ে একবারে ম’রে যাওয়া ভালো নয় কি?
ফারদিন তার দিকে দৃষ্টি স্থির করে বললো,
– মা’রা যাওয়াই কি সব কিছু সমাধান হয়ে যাবে? এই একটু কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তুমি যেই রাস্তায় ঝাপ দিচ্ছো, ওখানে তো আরো হাজার মাত্রার কষ্ট। অল্প থেকে বাচার জন্য জেনে শুনে কঠিনে ঝাপ দেওয়া কি বোকামি নয়?
আয়রিন এবার কেঁদে দিয়ে বলে,
– কেন বেচে থাকবো আমি? কোন চোখে বেচে থাকবো? আজ এমনটা হয়েছে। কাল রাস্তায় বের বের হলে সবাই বলবে, এই মেয়েটার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এতো ভালোবেসে ফেলেছিলাম তাকে, কই তার থেকে তো বিন্দু মাত্রও ভালোবাসা পাইনি? কেন বেচে তাকবো আমি।
ফারদিন এবার আয়রিনের দুই বাহু দরে ঝাকি দিয়ে বলে,
– এভাবে নিজের কাছে হেরে গেলে তুমি কিভাবে অন্যের কাছে জিতবে? আর একজন ভালোবাসেনা দেখে বিষয়টা এমন নয় যে, কেউ তোমাকে ভালোবাসে না। নিজেকে শক্ত করো, নতুন করে নিজেকে গুছিয়ে নাও। দেখবে তোমার আশে পাশে এমন অনেক মানুষের ভালোবাসা পাবে। তুমি নিজের কাছে জিততে পারলে কারো কাছে হেরে যাবে না তুমি। তুমি আজ চলে গেলে, কষ্ট দেওয়া মানুষ গুলো কাল তোমাকে ভুলে যাবে। তারা দিব্যি সুখে থাকবে। আর তুমি? তুমি কেন নিজের জীবনটা নষ্ট করবে?
আয়রিন এবার চোখের পানি মুছে বলে,
– তাহলে আপনিই বলুন আমার কি করা উচিৎ?
– তোমাকে আগে নিজের সাথে জিততে হবে। নিজের বেপরোয়া মনের সাথে যুদ্ধ করে হলেও তোমাকে উইন হতে হবে। তাদেরকে দেখিয়ে দিবে তুমিও অনেক সুখে আছো। তাদের দেখিয়ে দিবে যে তুমি কোনো সস্থা বস্তু নয়। তোমারও মুল্য আছে। আর সে ঠকিয়েছে দেখে, তোমার ভালোবাসা গুলো হারিয়ে যায় নি। হয়তো এমন কেও আসবে তোমার লাইফে যে তোমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসবে।
– কিন্তু আমার লাইফে এমন মানুষ কখনো ছিলো না। আর এখনও নেই, কারণ এতো কিছুর পর কেওই আমাকে ভালোবাসবে না। হলেও প্রয়োজন হতে পারবো, কারো প্রিয়জন না।
ফারদিন হাত দিয়ে আয়রিনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
– তোমার এখন এসব ভাবার সময় না। এসব পরেও ভাবতে পারবে। তোমার এখন নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়।

আয়রিন এবার চুপ করে রইলো। ফারদিন তাকে নিয়ে ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে বললো,
– এবার নিচের দিকে তাকাও তো আয়রিন।
আয়রিন নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কই কিছু তো দেখছি না।
ফারদিন হেসে বললো,
– আমি তো নিজ চোখে তোমার বোকামি গুলো দেখতে পাচ্ছি।
আয়রিন তার দিকে চেয়ে বলে,
– কিভাবে?
ফারদিন এবার হেসে দিয়ে বলে,
– এক তলার উপর থেকে লাফ দিলে কি কেও ম’রে? বরং এখন লাফ দিলে হাত পা ভে’ঙে তোমাকে অনেক দিন হসপিটালে পরে থাকতে হতো। হয়তো এমনও হতে পারে যে, আর কখনো ঠিক ভাবে হাটতে পারতে না, তখন কি করতে?
আয়রিন এবার শান্ত ভাবে বললো,
– বাসায় কাউকে কিছু বলবেন না প্লিজ।
– বলবো না একটা শর্তে, তুমি একন আমার সামনে দাড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আর কখনো উল্টা পাল্টা চিন্তা মাথায় আনবে না।
– আচ্ছা আনবো না।
,
,
– সেই পরশু রাতে যে বের হলি তখন থেকে কোথায় ছিলি তুই?
– আবরারদের বাড়িতে ছিলাম মা। এর পর আজ সকালে ওখান থেকেই অফিসে চলে গিয়েছিলাম। আর এখন ডিরেক্ট এখানে।
মা খাবার দিতে গিয়ে থেমে গিয়ে বললো,
– তোকে বললাম না ওদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবি না। তোর বাবা জানলে কি করবে বুঝছিস?
ফারদিন সোজা হয়ে মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– আর কতো মা? সে কি তোমার মেয়ে না? আর আমার বোনের সাথে আমি যোগাযোগ রাখবোনা কেন? তোমাদের চোখে সে অপরাধি, আমার চোখে তো না। তোমরা বাবা মা হয়ে কিভাবে সন্তানদেরকে বুঝতে পারো না মা? কেমন বাবা মা, যে সন্তানের ভুল ক্ষমা করতে পারো না। কষ্ট তো ঠিকই পাচ্ছো। এক সময় মেনেও নিবে। তাহলে কেন এখন নিজেরাও কষ্ট পাচ্ছো আর অন্যকেও কষ্ট দিচ্ছো। আর আবরার ছেলেটা কেমন তা তোমরা ভালোই জানো। ছোট বেলা থেকেই আমার মতো সেও তোমাদের নিজের সন্তানের মতো ছিলো। তাহলে এখন কেন এতো সুন্দর সম্পর্কে মরিচিকা ধরাচ্ছো? হাসি মুখে সন্তানের ভুল গুলো ক্ষমা করে মেনে নিয়ে দেখো না। সবাই কতো সুখি হয়।
ফারদিনের কথায় মা একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে কিছুক্ষন চুপ কারে রইলো। যার দ্বারা কিছুই বুঝা গেলো না। মা এবার শান্ত ভাবে বললো,
– শুনলাম আয়রিনের নাকি ডিবোর্সের কথা বার্তা চলছে?
ফারদিন এবার অবাক হয়ে মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– তুমি কিভাবে জানো? তার মানে ভেতর ভেতর ওই বাড়ির সব খবরই রাখো। আর বাহিরে কঠোরতা প্রকাশ করছো।
– খবর রাখার কি আছে? আর এসব কথা কি চাপা থাকে? এই কান থেকে ওই কান হতেই সর্বত্রে ছড়িয়ে যায়। ডিবোর্স কেন হচ্ছে?
– ওর হাসবেন্টের কারণে। বিয়ে করেই দেশের বাইরে চলে গেলো, আর ফিরে এসেই পূর্বের প্রেমিকাকে বিয়ে করে বাসায় ঢুকলো। ভেবে দেখো তো, আয়রিনের জায়গায় ফারহাকে। তাহলে কেমন হতো? সেই হিসেবে কি ফারহা সুখে নেই?
মা একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,
– আমি তোর সাথে ভিন্ন টপিক নিয়ে কথা বলছি। আর সব টপিকেই তুই বার বার ফারহাকে টেনে আনিস।
ফারদিন খেতে খেতে বলে,
– মরিয়ম খালা কোথায় আজ। আসার পর থেকে দেখিনি যে?
– সে গত কাল ওর বাড়িতে চলে গেছে। তার বড় মেয়েকে নাকি স্বামী আবার মার’ধর করেছে। তাই বাড়িতে চলে গেলো। সেখান থেকে মেয়ের শশুর বাড়ি যাবে।
ফারদিন মায়ের দিকে চেয়ে আবার বলে,
– দেখলে মা, সব মেয়ে কিন্তু বিয়ে করে সুখি হতে পারে না। আর পায় না ভালো মনের একজন জীবন সঙ্গি। তো সেই হিসেবে কি ফারহা সুখি হবে না মা?
মা এবার বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ফারদিনের দিকে তাকায়। এই ছেলের সাথে যতোক্ষন কথা বলবে, ততোক্ষনই ফারহা ফারহা বলে মাথা খারাপ করে ফেলবে। তাই বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে বলে,
– কিছু প্রয়োজন হলে ডাক দিস। নয়তো কিচেন থেকে নিয়ে আসিস।
,
,
কয়েকদিন সব ঠিক ঠাকই চলছিলো। সব শেষে বিকেলে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলো। তখন সামনে একটি গাড়ি এসে দাড়ায়। গ্লাস নামালে দেখে তার বাবার বন্ধুর ছেলে সাদাফ। আবরারকে বললো,
– গাড়িতে উঠো, আমি ওদিক দিয়েই যাচ্ছি। সাথে একটু গল্পও করা হবে। অনেক দিন তো কথা হয় না। উঠে পরো।
পরিচিত দেখে আবরারও আর না করলো না। সাদাফের সাথে কথাও বলা হলো এই ফাকে। মন্দ কি?

সাদাফ ড্রাইবিং করছে আর পাশে আবরারের সাথে কথা বলছে। কথার ফাকে সাদাফ বললো,
– শুনলাম ফারহাকে নাকি বিয়ে করে নিয়েছো?
আবরার একটু অবাক হয়ে বললো,
– ফারহাকে তুমি কিভাবে চিনো? মানে নাম সহ এতো কনফিডেন্স নিয়ে চেনার তো কথা না।
আবরারের কথায় হা হা করে হেসে উঠলো সাদাফ।
তারপর হাসতে হাসতে বললো,
– আমার গার্লফ্রেন্ডকে আমি চিনবো না?
মুহুর্তেই যেন সারা শরির জুড়ে একটা গরম ঢেউ বয়ে গেলো আবরারের। সাদাফের দিকে চেয়ে বললো,
– মানে?
সাদাফ একটু হেসে বললো,
– বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? বিশ্বাস না হওয়ারই কথা। কারণ তোমার মতো সহজ সরল একটা ছেলে কখনোই ফারহার মতো একটা সিক্রেট প্লেয়ারের খেল গুলো ধরতে পারবে না।
আবরার একটু রেগে বললো,
– দেখো সাদাফ বাজে বকো না। আমি ফারহাকে খুব ভালো ভাবেই চিনি। খুব ভালো একটা মেয়ে সে।
সাদাফ আবারও হেসে উঠলো। কিছুক্ষন হেসে তারপর বললো,
– আচ্ছা, ফারহা কখনো তোমাকে বলেছে, যে ওর বয়ফ্রেন্ড আছে?
– না, এমনটা সে আমাকে কখনোই বলেনি। আর তুমি আমার সাথে মজা করছো না তো সাদাফ। দেখো সাদাফ যদি মজা করে থাকো তাহলে আগেই বলে রাখি, ফারহাকে নিয়ে এমন কোনো মজা আমি সহ্য করবো না।
সাদাফ নিজের ফোন টা বের করে বলে,
– জানতাম, তোমার কাছে মজাই মনে হবে। প্রমান সহ দেখলে তো আর অবিশ্বাস করতে পারবে না তাই না? একজনের সাথে চলে ফিরে সুজুগ বুঝে আরেকজনের ঘাড়ে চেপে বসে খুব সুন্দর খেল দেখিয়েছে সে। এখন নিজ চোখে দেখো তোমার প্রো-প্লেয়ারের খেল গুলো। কেমন করে ঠান্ডা মাথায় খেলতে পারে সে।

To be continue…..

তোমার ছায়া পর্ব-২০

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ২০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

মাহিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে কোনো সংকোচ ছারাই বাসায় প্রবেশ করলো। আয়রিন এখনো দরজার পাশে স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে। কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছে না সে।
মুহুর্তেই তার মা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে। আর হা করে তাকিয়ে আছে মাহিন ও পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে। অবাক দৃষ্টিতে এক হাতে মেয়েটার দিকে ইশাকা করে বললো,
– মেয়েটা কে?
মাহিন কোনো সংকোচ ছারাই বললো,
– আমার স্ত্রী। তোমাদের বৌ মা।
মা একটু রেগে বললো,
– এসব কোন ধরনের ফাজলামু মাহিন? বৌ মানে? নিজের বিয়ে করা বৌ এর সামনে দাড়িয়ে আরেকটা মেয়েকে বৌ হিসেবে পরিচয় দিতে তোর একটুও লজ্জা লাগছে না?
মাহিন সোজাসুজি ভাবে বললো,
– বিয়ে করা স্ত্রী’কে স্ত্রী বলে পরিচয় দেওয়াতে তো আমি লজ্জার কিছু দেখছি না।
মা ঠাস করে একটা চ’র বসিয়ে দিয়ে বললো,
– কেন করলি এমন টা? ঘরে বৌ রেখে অন্য একটা মেয়েকে কিভাবে বিয়ে করে আনলি তুই?
মাহিন পুনরায় মাথা উঠিয়ে বললো,
– আমার লাইফ তোমাদের কথায় অনেক চলেছে। বাট, আর না। মাই লাইফ, মাই রুল্স।

বলেই নতুন বৌকে নিয়ে রুমের দিকে চলে গেলো মাহিন। আয়রিন এবার একটা শ্বাস নিয়ে স্ট্রং হয়ে দাড়ালো। মনে কিছু সাহস সঞ্চয় করে দৌড়ে রুমের সামনে গিয়ে দুজনের পথ আটকে দারালো। আর মাহিনের দিকে চেয়ে বললো,
– আপনি চাইলেই যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না।
মাহিন রাগ ও বিরক্তিতে বললো,
– মাথা এমনিতেই অনেক গরম হয়ে আছে। তাই অজথা সামনে এসে নিজের বিপদ টেনে আনবে না একধম। আর তোমাকে আমি আগেই বলেছি, এই বাড়িতে বৌ হয়ে থাকতে পারবে। বাট কখনো বৌ এর অধিকার চাইতে আসবে না।
– আপনি বললেই হলো নাকি? তাহলে বিয়ে করেছেন কেন আমাকে? দেখেন মাহিন, আমি কোনো ভাবেই আপনাকে অন্য একটা মেয়ে নিয়ে রুমে ঢুকতে দিবো না।
আর কিছু না বলে ঠাস করে একটা চ’র বসিয়ে দেয় আয়রিনের গালে। এর পর বৌ নিয়ে সোজা রুমে প্রবেশ করে মাহিন।
আয়রিন গালে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– এসব কি হচ্ছে মা? ওকে কিছু বলুন না। কেন ঘরের মাঝে সতিন নিয়ে আসলো সে? প্লিজ মা, ওকে কিছু বলুন না।

মাথায় হাত দিয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে মাহিনের মা। আর এক পাশে বসে কাঁন্না করছে আয়রিন। মাহিন রুম থেকে বের হলে আয়রিন ছুটে গিয়ে মাহিনের সামনে দাড়িয়ে বললো,
– বলুন না, আপনি কি সত্যি সত্যিই বিয়ে করেছেন? নাকি কোনো প্র্যাঙ্ক করছেন? দেখুন আমি কোনো ভাবেই অন্য কোনো মেয়েকে আপনার সাথে সহ্য করতে পারবো না।
মাহিনের সোজা উত্তর,
– আমি কেন প্র্যাঙ্ক করতে যাবো?ওর সাথে আমার চার বছরের রিলেশন, আর এখন তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছি।
– তাহলে আমি কে? কেন বিয়ে করেছেন আমায়? বলুন কেন বিয়ে করেছিলেন আমারয়?
– বাবা মায়ের চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর তখন জানতাম না যে মাহি প্র্যাগনেট ছিলো। বিয়ের দিন রাতে জানতে পারি আমি, যে মাহি প্র্যাগনেট। তার পর থেকে যেন সব এলোমেলো লাগছিলো। পারিনি তোমাকে কিছু বলতে, আর পারিনি মাহিকে প্রত্যাক্ষান করতে। তো আমি কি করবো বলো? ওর জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিতে চাইনি আমি। তাই স্ত্রীর অধিকার দিয়ে দিলাম।
– আর আমার জীবনটা কি জীবন না? আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলেন? দেখেন মাহিন, আমাকে যতটা ভালো দেখছেন আমি মোটেও এতোটা ভালো মেয়ে না। মে’রে ফেলবো ওই মেয়েকে, তবুও আমার স্বামীর ভাগ কাউকে দিবো না আমি।
মাহিন এবার লাগাতার কয়েকটা চ’র দিয়ে আয়রিনের চুল চেপে ধরে বলে,
– খুব পাখনা গজিয়েছে না? ছোট লো’কের বাচ্চা। কবুতরের খোপের মতো বাসা থেকে এমন রাজপ্রসাদে পা দিয়েই সাহসটা আকাশ ছুয়েছে? বেশি তিড়িংবিরিং করবি তো একধম পাখনা দুটি কে’টে মাটিতে ফেলে রেখে দিবো। ছোট লো’কের বাচ্চা।
বলেই আয়রিনের চুল ছেরে হাটা ধরে মাহিন। আয়রিন রাগে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– একটাকেও ছা’রবো না আমি। আপনাদের স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছা’রবো আমি। সেই বিয়ের পর থেকে অনেক অপমান সহ্য করেছি। কাউকে কিছু বুঝতে দিই নি। আর না, আমার বাবা ভাইকে এক্ষুনি জানাচ্ছি সব কিছু। একটাও শান্তিতে থাকতে পারবি না। সব কিছু এলোমেলো করে দিবো আমি।

শান্ত আয়রিন কে যেন আজ খুবই হিংস্র দেখাচ্ছে। আসলে অনেক মানুষই এমন। নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে অন্য কাউকে কখনোই সহ্য করতে পারে না।
,
,
– আর কতো দিন এভাবে থাকবে বাবা? জানো ফোন দিলে ফারহা ইদানিং খুব কাঁন্নাকাটি করে। আর তারও তো কোনো দোষ ছিলো না। ফারহা কখনোই তোমাদের কথার বাইরে কিছু করতো না। একটা এক্সিডেন্টের মতো ঘটে গেছে বিষয় টা। হয়তো আল্লাহ্ তাদেরকে এক করেই পাঠিয়েছে। আমরা তো চাইলে কপালের লিখন পরিবর্তন করতে পারি না তাই না? দেখবে ওরা খুবই সুখে থাকবে। মেনে নাও না বাবা। ফারহা প্রতিদিন কাঁন্না করে, শুধু একবার তোমাদের সাথে কথা বলার জন্য। তামাদের পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার জন্য।

ফারদিনের কথায় বাবা বসা থেকে উঠে বললো,
– ওর কথা আমি শুনতেও ইচ্ছুক না। নেক্সট টাইম কখনো ওর জন্য কিছু বলতে আসবি না। সবাই যার যার মতো ভালো থাক।
বলেই চলে গেলো বাবা। ফারদিন মায়ের দিকে করুন চোখে চেকে বললো,
– মা,,,,
মা ও চলে গেলো উঠে। নিরুপায় ফারদিন নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষন। আর তখনই আবরারের ফোন পেয়ে রিসিভ করে কথা বলে সে।
মাকে ডেকে দরজা বন্ধ করতে বলে বেড়িয়ে পরে সে। মা কয়েক বার ডাক দিলেও কিছু বললো না ফারদিন। রাত বাজে তখন ১১ টা।
,
,
অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় মাহিনদের বাসায় যায় নি কেউ। আয়রিনকে বললো, কোনো রকম আজকের রাতটা পার করতে। কাল সকালেই আসছে তারা।

পর দিন সকালে রওয়া দেয় আবরার, তার বাবা ও ফারদিন। মেয়ের এমন খবর শুনে বসে বসে কাঁন্না করছে মা। ফারহা শাশুড়ি মায়ের পাশে বসে তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।

ওই বাড়িতে যেতে যেতে সকাল পার হয়ে যায়। মাহিনও আজ বাড়িতেই ছিলো। ওখানে যাওয়ার পর অনেক সিনক্রিয়েট হয়ে যায় তাদের মাঝে।
মাহিন রুম গিয়ে অনেক গুলো টাকা এনে আবরারের গায়ে ছুড়ে মে’রে বলে,
– এই নিন, আপনাদের মেয়ের কাবিনের টাকা।

আবরারের দিকে এভাবে টাকা ছুড়ে মারা মাত্রই ফারদিন মাহিনের বুক বরাবর লা’থি মেরে বললো,
– শু** বাচ্চা, টাকার গরম দেখাচ্ছিস? তোর কি ধারণা টাকা দিয়েই সব হয়ে যায়। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে টাকা দিয়ে সব কিছু উড়িয়ে ফেলতে চাইছিস? বেশি বড়লোকি দেখাতে আসবি, একেবারে ফে’রে ফেলবো। শু** বাচ্চা।
লা’থি খেয়ে অনেকটা দুড়ে ছিটকে করে মাহিন। পাশ থেকে ওখানের দুইটা লোক এসে ফারদিনকে ধরে আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আজ যেন ফারদিনের দু’চোখ জুড়ে আগুন ঝড়ছে। কারণ পাশেই আয়রিনোর কান্না ভেজা মুখ দেখলে সব কিছু এলোমেলো লাগতে শুরু হলো তার।
আবরার নিজেও আজ ফারদিনকে আটকে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। এমনই আচরণ করছে ফারদিন।
এসবের মাঝে, ওখাবে কয়েকজন মানুষ এসব থামিয়ে বললো,
– দয়া করে এমন বিশৃঙ্খলা না করে ঠান্ডা মাথায় কথা বলি সবাই। এতে একটা সমাধান খুজে পাবেন। এমন বিশৃঙ্খলা করলে শুধু ঝামেলাই বাড়বে।
,
,
আয়রিনকে নিয়ে চলে এলো সবাই। কারণ জোর করে কিছু করলেও ওই বাড়িতে আয়রিন কখনোই সুখি হতে পারবে না।
বাসায় আসার পর থেকে ফারহাকে ধরে অনেক্ষন কাঁদলো আয়রিন।
– আমার সাথেই কেন এমনটা হতে হলো, বলতে পারবি ফারহা?
আয়রিনকে জড়িয়ে ধরে ফারহা বললো,
– কষ্ট পাবি না একধম। আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে। আর লাইফে পার্ফেক্ট কাউকে পেলেও অনেক সময় সুখ কপালে থাকে না। এমন কাউকে বেছে নিতে হয় যে সারা জীবন তোর ছায়ার মতো তোর পাশে থাকবে।
– আমার লাইফে কেন এমন একটা মানুষ এলো না। কেন আমার সাথেই এমনটা হতে হলো?
– হয়তো তোর লাইফেও এমন কেউ আসবে যে তোকে সারা জীবন আগলে রাখবে। তোর ছায়া হয়ে তোর সাথে থাকবে সারা জীবন।
আয়রিন আর কিছু না বলে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে।
,
,
আজ আর বাসায় গেলো না ফারদিন। কারণ এখানে সবই অস্বাভাবিক। কেউই স্বাভাবিক নেই। তাই রাতেও এই বাড়িতেই থাকছে আজ।

রাত তখন গভির। ঘুম আসছে না ফারদিনের। চোখ বন্ধ করে অনেক্ষন শুয়ে থাকার পরও ঘুম আসছে না। কেন যেন এক অজানা কারণে বুকের ভেতর টা টিপ টিপ করছে।
ঘড়ির কাটা তখন রাত ২ টা পেরিয়েছে। রুমের সামনে দিয়ে ছায়া র মতো কিছু চোখে পরতেই উঠে বসে যায় সে। দরজা খোলা থাকায় দেখতে পায় এখনই রুমের সামনে দিয়ে কে যেন হেটে গেলো।
ফারদিনও চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। দেখে ছাদের সিঁড়ি বেচে উপরে উঠে গেলো সে। ফারদিনও দেড়ি না করে ছাদের দিকে হাটা ধরে।

ছাদে আসতেই চাঁদের আলোয় দেখতে পায় আয়রিন ছাদের এক পাশে খুব কিনারায় উঠে দাড়িয়ে আছে। অশ্রু শিক্ত চোখ মুছে কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো সে। চোখ বন্ধ করে নিজের সব ভার নিচের দিকে ছেড়ে দিতেই খেয়াল করে সে হাওয়ায় ভাসছে। কেউ একজন এক হাতে তার কোমড় জড়িয়ে বিড়াল ছানার মতো ছো মেরে কোলে তুলে নিয়েছে। অবাকের চরম সীমানায় আয়রিন। খুব অবাক সে। এই অসময়ে আবার কে এলো?

To be continue……

তোমার ছায়া পর্ব-১৯

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১৯)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আবরার আর ফারহার চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ফারদিন। ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় চোখের কোনে জমে থাকা জল চিক চিক করে উঠছে। টলমলে আশ্রু কনা গড়িয়ে পরার আগেই তা টিসু দিয়ে মুছে নিলো সে। ঠোঁটের কোনে একটা হাসির রেখা টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বাড়িতে ঢুকে গেট লাগিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরলো। হয়তো সব কিছুই আগের মতো ঠিকঠাক হয়ে যাবে একটা সময়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে হার মেনে ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেললে, তা আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবেনা। হয়তো কিছু দিন কষ্টে থাকবে সবাই। কেউ ভালো থাকবে না। তবুও সারা জীবন কষ্ট পাওয়ার চেয়ে এই কিছু সময়টা সব সহ্য করে নেওয়াই ভালো। কারণ মায়া শব্দ টা বড্ড জটিল একটা শব্দ। আবার এসব বিসর্জন গুলো আর সব টুকু ভালোবাসা সঠিক মানুষের প্রতি বিনিয়োগ না করলে তার উল্টোটাই হয়। কারণ ভালোবাসা মানুষকে ধোকা দেন না। মানুষ মানুষকে ধোকা দেয়। আর জীবনে সঠিক মানুষকে বেছে না নিয়ে পরে ঠঁকে গেলে অনেকেই বলে ভালোবাসা বলতে কিছু হয় না, সবই বিশ্বাস ঘাতকতা। এই ক্ষেত্রে দোষ টা ভালোবাসায় না। দোষ টা হলো সঠিক মানুষ নির্বাচন করার মাঝে নিজের ব্যার্থতায়।
,
,
গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে ফারহাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো আবরার। বাড়ির সামনে দাড়িয়ে কয়েকবার কলিং বেল বাজালে কিছুক্ষনের মাঝে মা এসে দরজা খুলে দেয়। আবরার মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ফারহাকে নিয়ে এসেছি মা, একেবারের জন্য।

ফারহা নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে। আজ শুধু এক কাপরে আবরারের হাত ধরে চলে এসেছে এই বাড়িতে। আজ থেকে সারা জীবনের জন্য এই ফ্যামিলিটাই তার নিজের ফ্যামিলি।
আবরার ইশারা করে বললো, মাকে সালাম করতে।
আবরারের ইশারায় ফারহা চুপচাপ তাই করলো। পাশে এসে দাড়ালো বাবা। বাবাকেও সালাম করে উঠে দাড়ায়।
মা ফারহাকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে,
– আমার ছেলে কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি আর নিবেও না। ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নেয় সব সময়। তাই তার এই সিদ্ধান্ততেও আমরা দ্বিমত পোষন করছি না। আমাদের একটাই ছেলে, সে সুখি হলে আমরাও সুখি। এক আকাশ সমান সুখ নিয়ে এই বাড়িতে প্রবেশ করো আজ। দুঃখ সব পেছনে ফেলে আসা অতিত হয়ে যাবে। আশা করি আজ থেকে এই বাড়ির সবাইকে আপন করে নিবে। সবাইকে তোমার নিজের মানুষ বানিয়ে নিবে। তোমাদের দুজনের জন্যই রইলো অফুরন্ত দোয়া ও ভালোবাসা।

আবরার কিছুক্ষন এক পলকে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইশ, পৃথিবীর সব বাবা মা যদি তার মতো হতো। তাহলে হয়তো সবার ভালোবাসাই পূর্ণতা পেতো। আজ কাল বেশির ভাগ বাবা মা ই মেয়ের সুখ খোজে ছেলের অর্থ ও উপার্জনের মাঝে। অফুরন্ত অর্থ সম্পদ দিয়ে সংসার সুখি করা যায় না। যদি সেখানে ভালোবাসার অভাব থাকে।

আজ সারা দিন প্রচুর গরম পরেছে। ছোট বেলায় মুরুব্বিদের কাছে শুনতাম, গ্রীষ্মের শেষ সময়ে হুট হাট বেশি গরম পড়া মানেই এর পর অঝড়ে বৃষ্টি নামা।

গরমে সেই সাথে ভয় ও অস্থিরতায় ঘামে সারা শরিরে অস্বস্থিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে ফারহার মাঝে। মা আয়রিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ফারহাকে তোর রুমে নিয়ে যা। আর ভালো দেখে ফারহাকে পার্ফেক্ট হবে এমন জামা বের করে দে। ফ্রেশ হয়ে পরে নিবে সে। আর কালকে গিয়ে আবরার ওর প্রয়োজনিয় সব কিছু নিয়ে আসবে।
আয়রিন একটু হেসে বললো,
– আচ্ছা সমস্যা নেই, আমার সব জামাই তাকে ফার্ফেক্ট হবে।
আবরার পাশ থেকে বললো,
– তোকে জামা’র কথা বলছে, জামাই’র কথা বলেনি।
আয়রিন এবার হাস্যজ্জল মুখে আবরারের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায়। মানে বিরক্তিও প্রকাশ করছে, হাসিও থামিয়ে রাখছে এমন।
,
,
আরো কয়েকদিন কে’টে গেলো। ইদানিং আয়রিনের দিন খুব ভালো কাটছে। প্রথমত ফারহা এখন তার সাথেই থাকে আর দ্বিতীয়ত আর দুই এক দিনের মাঝেই মাহিন দেশে ফিরছে। তাই আয়রিনের খুশির মাত্রা ও আকাশ সমান। অনেক তো দুড়ে ছিলো মাহিন। কাছে থাকলে তো অবশ্যই মায়া বাড়বে। আর মায়া থেকেই তো ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।
,
,
– নিজের রুমে তো কখনোই কারো প্রবেশ পছন্দ করতে না ভাইয়া। তাহলে কি ফারহাও সব সময় তোমার রুমের বাইরে থাকবে?
বলেই খিক খিক করে হেসে দিলো আয়রিন।
পাশ থেকে মা বললো,
– কেন, ফারহা তোর সাথে থাকছে বলে কি তোর অসুবিধা হচ্ছে?
আয়রিন এবার সিরিয়াস লুক নিয়ে বললে,
– আমি মোটেও এমনটা মিন করিনি। আমি যাস্ট ভাইয়ার সাথে মজা করছিলাম। আর আমি চলে গেলে তো ফারহা আমার রুমে একাই থাকবে। আমার সমস্যা হবে কেন? আর ফারহা সব সময় আমার সাথে থাকলে তো আমি আরো বেশি খুশি।
পাশ থেকে আবরার বললো,
– আয়রিন চলে গেলে তো ফারহা ওই রুমে একা ঘুমাতে ভয় পাবে, তাই না ফারহা?
এবার ফারহা মুখ খুলে বললো,
– আমি বাচ্চা না যে ভয় পাবো। আগেও আমি একা থাকতাম। তাই প্রব্লেম হবে না।
আবরার কিছুটা ভেবে আবারও বললো,
– আরে ফারহা লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। তুমি যে লজ্জায় কাউকে ভয়ের কথা বলছে না এটা তো আমরা বুঝতে পারছি। ভু’তের ভয় তো তুমি নিশ্চই পাও তাই না?
ফারহা আবারও বললো,
– ভু’ত টুত বলতে কিছু নেই। আমি ওসব বিশ্বাস ও করিনা ভয়ও পাই না।
আয়রিন আবারও বললো,
– ঠিকই তো ফারহা বড় মেয়ে। ছোট বাচ্চা না। আর মা শুনো, অনুষ্ঠান করে সবাইকে জানিয়ে সব কিছু কমপ্লিট করে তারপর ওদেরকে এক সাথে থাকতে দিবে। এর আগে না।
আবরার আর কিছুই বলতে পারছে না। রাগ এবং লজ্জায় মায়ের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে হাসতে হাসতে আয়রিনকে বলে,
– দয়া করে তুমি একটু কম পন্ডিতি করো বোন, নাহলে পরে কিন্তু পিঠের উপর ধুম ধাম ভু’তের থা’বা পরতে পারে।

রাতে ঘুমাতে গেলে আয়রিন বলে,
– কিছু আইডিয়া দে না প্লিজ।
ফারহা পাশ থেকে বললো,
– কি আইডিয়া বল।
– মাহিনের কাছে কিভাবে যাবো?
– তোর জামাই, তুই কি করবি না করবি এটা তোর ইচ্ছা।
– ভাবছি, কালো রং এর শাড়ি পরে ওর সামনে দাড়াবো। ও সব কিছু কালো ব্যাবহার করে, নিশ্চই ওর ব্ল্যাক কালার পছন্দ হবে।
– এমন ভাব করছিস, মনে হয় প্রথম ওর সাথে দেখা করতে যাবি?
– অনেকটা ওরোকমই।
– ওরোকম মানে?
– কাউকে বলিস না হ্যা,, বিয়ের পর যে দশ বারো দিন ওই বাড়িতে ছিলাম, ওই কয়দিন মাহিন আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি ভালো ভাবে। রাতেও অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমাতো। এখনো ভালোবাসা তৈরি হয়নি দেখে আমার কাছেও আসেনি। ভাবতে পারিস কতো ভালো মানুষ সে? মোট কথা হলো, আমাদের এখনো ঠিক ভাবে কথাও হয় নি। তাই এতো নার্ভাস লাগছে।
ফারহা কিছুটা ভাবুক হয়ে বললো,
– মানে, আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। একটু খুলে বলবি কাহিনি টা কি?
– পরে একদিন বলবো, এখন শুধু তাকে ইম্প্রেস করার কথা ভাবছি। হিহিহি,,,
বলেই শুয়ে পরলো আয়রিন। ফারহা কিছুক্ষণ চিন্তিত ভাব নিয়ে বসে থেকে আয়রিনের দিকে তাকালো। কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার।
আয়রিন চোখ বন্ধ করে বলে,
– তুই শুয়ে পরলে লাইট অফ করে দিস।
আয়রিন যে খুব আনন্দে আছে তা আয়রিনের আচরণ দেখেই বুঝতে পারছে ফারহা। তবে আয়রিনের কথা বার্তা গুলো বলছে ভিন্ন কাহিনি। বেশিক্ষন না ভেবে সেও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে নিলো।
,
,
মাহিন আসবে আজ এই বাসা থেকে সবাই গেলো ওই বাসায়। সাথে ফারহাও। মাহিনের বাবা ও আবরার এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসলো।
বাসায় প্রবেশ করার পর সবার সাথে কথা বলে ভেতরে প্রবেশ করলো। আয়রিন সেই সকাল থেকে সাজুগুজু করেও সব যেন পানির জোয়াড়ে ভেসে গেলো। কারণ এতো কিছু করেও মাহিনকে ইম্প্রেস করতে পারলো না।
মাহিন তেমন একটা পাত্তা দিলো না তাকে। এর মাঝেই একটু সন্দেহ ঢুকে গেলো ফারহার মাঝে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে, আয়রিন কিছু লুকিয়ে রেখেছে। কারণ আসার পর থেকে আয়রিনকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না মাহিন।
আয়রিনকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও বিষয়টা ফানি ভেবে হেসে উড়িয়ে দিলো সে। তার ধারণা আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
পর দিন আয়রিন কে ওখানে রেখে বাসায় চলে আসে সবাই। সবার মনটা বিষণ্ন। কারণ আয়রিন কে একেবারে দিয়ে এসেছে ওই বাড়িতে। এর পর এই বাড়িতে আসলেও আসবে মেহমান হিসেবে। যাই হোক মেয়েটা সুখে থাকলেই সব কষ্ট মুছে যাবে।

পার হয়ে গেলো আরো কয়েকদিন। ইদানিং মাহিনের চলাফেরা কেমন সন্দেহ জনক মনে হচ্ছে আয়রিনের কাছে। দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা করার জন্য উৎ পেতে আছে। কিন্তু বিষয়টা কি তা বুঝতে পারছে না সে।
সন্ধায় কলিং ব্যাল বাজতেই গিয়ে দরজা খোলে আয়রিন। বািরের দৃশ্য দেখে মুহুর্তেই বুকটা কেঁপে উঠলো তার। সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকার জন্য পায়ের নিচে যেন মাটি খুজে পাচ্ছে না। নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে, মাহিন দ্বিতীয় বিয়ে করে বৌ নিয়ে বাসায় এসেছে। আর আরেকটা অবাক করার বিষয় হলো, যেই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে তার শরিরের গঠন দেখে মনে হচ্ছে কম করে হলেও ৬-৭ মাসের প্র্যাগনেট মেয়েটা। আর মাহিন মেয়েটাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে আয়রিনকে সামনে থেকে সরিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো। আয়রিন যেন এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের চোখ কে। সব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে আজ।

To be continue…..

তোমার ছায়া পর্ব-১৮

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

মায়ের এমন হিংস্র রুপ টা এর আগে কখনো দেখেনি ফারহা। ছোট বেলায়ও তো অনেক মে’রেছিলো। হয়তো গাছ থেকে চিকন ঢাল ভে’ঙে কয়েকটা লাগিয়ে দিতো, আবার কখনো পড়ার টেবিল থেকে স্কেল নিয়ে কয়েকটা দিতো।
ওগুলোকে মা’র বলা গেলেও আজকেরটা কে কোনো মতেই মা’র বললে ভুল হবে। বাইরে থেকে ফারদিন বার বার দরজায় আঘাত করে বললো,
– মা তুমি কি পাগল হয়ে গেলে আজ।
কিন্তু কোনো কথাই কানে না নিয়ে নিজের সব শক্তি নিয়ে পি’টিয়ে মনে হচ্ছে সব রাগ এই মা’রের মাধমেই ঝাড়লেন।
একটাই মেয়ে, আশে পাশের কিছু মেয়েদের খবর শুনতে শুনতে সব সময় ফারহাকে নিয়ে যাই ভয়টা পেতো সেটাই আজ সত্যি হয়ে গেলো। মেয়েকে এতো শাসন করলেও শেষে এসে সব মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলো সে।

নিজের সব টুকু রাগ এতোক্ষন ঝেড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো তার মা। ফারদিন দ্রুত রুমে ঢুকে দেখে ক্লান্ত শরিরে চোখ বন্ধ হবে হবে ভাব নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে আছে ফারহা। একটু আগের আঘাত গুলো হাত পা যতটুকু দেখা যাচ্ছে সবটা লাল হয়ে আছে। কিছু যায়গায় ফেটে র’ক্তও বেড়িয়ে গেছে অনেকটা। মায়ের এমন রুপ টা যেন কল্পনায়ও আনতে পারছেনা সে।

ফারদিন দ্রুত ফারহাকে কোলে তুলে নিয়ে সবাইকে উচু গলায় ঝাড়ি দিতে দিতে ঘর থেকে বেড়িয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে ছুটে চলে।
,
,
সন্ধার আগে বাসায় ফিরে রুমে নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিলো আবরার। মাথা জুড়ে নানান চিন্তা৷ এতো দিন যেই ভয়টা বার বার পেছন থেকে তাড়া করছিলো আজ সেটাই সত্যিই হয়ে গেলো। কেন হতে হলো এমন? সবাইকে সব কিছু বুঝিয়ে বললে কি মেনে নিবে সব?
প্লিজ না চাইলেও সব কিছু একবার মেনে নাও না তোমরা। আমি যে আশে পাশের প্রিয় মানুষ গুলোর ভয়ে কখনো তাকে ভালোবাসি শব্দটা বলারও সাহস পাই নি। কেন এমনটা হয়?
প্রিয় জিনিস গুলো চাইলাম, আর পেয়ে গেলাম। নিয়মটা এমন হলেই বোধ হয় পৃথিবী টা সুন্দর হতো। তাহলে আর প্রিয় জিনিস হারানোর ভয় থাকতো না। প্রিয় মানুষটার কথা ভেবে বুকের ভেতরটায় ধুক ধুক শব্দ তৈরি হতো না। আমি যে ছায়া হয়ে হলেও তার পাশে থাকতে চাই। না চাইতেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি তার সাথে। যেমন করে কারো সাথে তার ছায়া মিশে থাকে।

নিজের মাঝে এসব ভাবতে ভাবতে নিজেকে আরো অস্থির করে তুলছে আবরার। এর মাঝে আয়রিন এসে নাস্তা করার জন্য ও মায়ে কি জন্য যেতে বলছে তাই ডেকে গেলো।

রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে মা চা হাতে সোফায় বসে টিভি দেখছে। আয়রিন নাস্তা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
আবরার চুপচাপ মায়ের পাশে গিয়ে ফ্লোরে বসে মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চুপ হয়ে রইলো। মা তার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বললো,
– কিরে এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে? কিছু বলবি?
আবরার কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বললো,
– মা,,,
মা এবার টিভির থেকে মনোযোগ সরিয়ে বলে,
– কি হয়েছে তোর?
– ছোট বেলা থেকে কখনো তোমাদের কথার অবাধ্য হয়েছি?
– না, কারণ আমার ছেলে তো অবাধ্য হওয়ার মতো না।
– কখনো তোমার কথার বাইরে কিছু বলিনি। তোমাদের চাওয়াকেই সব সময় প্রধান্য দিয়েছি। আচ্ছা মা, আমি যদি তোমাদের কাছে খুব বেশি কিছু একটা চেয়ে বসি, তাহলে দিবে আমাকে? যদি তোমাদের মনে আ’ঘাত লাগবে এমন কিছু?
– চাওয়া অনেক রকমেরই হয়। শুধু নিজেকে মিলিয়ে দেখতে হয় যে, আমি যেই জিনিস টা চাইছি তা আমার লাইফে কতটুকু দরকারি। আর এর মাঝে কি আমার উপকার হবে নাকি অপকার। সব মিলিয়ে চাওয়া গুলো হতে হবে সব থেকে উত্তম।
– আমি জানি না মা, আমার চাওয়াটা আমার জন্য কতটুকু বেষ্ট হবে। শুধু এটা জানি যে, চাওয়া টা পুরণ না হলে আমি কখনোই ভালো থাকতে পারবো না।
মা একটু হেসে বললো,
– চাওয়া টা কি ফারহা?
আবরার মুহুর্তেই অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে তাকে কিছুক্ষন।
– তুমি কিভাবে জানো মা?
মা আবারও হেসে বললো,
– ওটা পরে বললো। এখন কাজের কথা বল। তাকে পেলে তুই হ্যাপি হবি?
– জানিনা মা, তবে না পেলেও হ্যাপি থাকতে পারবো না। প্লিজ মা, এই একটাই চাওয়া তোমাদের কাছে। জীবনে কিচ্ছু চাইবো না, তোমরা যাই বলতে তাই করবো।
মায়ের হাসিটা আরো বেড়ে গেলো। হাসতে হাসতে বললো,
– তোর মাঝে আজ ঠিক সেই ছোট্ট কালের অভ্যেস গুলো ভেষে উঠেছে। ছোট বেলায়ও কিছু আবদার করলে ঠিক এভাবে বলতি।
– মা,,, আমি যদি ফারহাকে এখানে নিয়ে আসি তাহলে তোমরা মেনে নিবে, মা?
– যদি তোরা একে অপরকে মন থেকে ভালোবাসিস, আর তোরা যদি এতে সুখে থাকতে পারিস, তাহলে নিয়ে আয়।
– সত্যি মা?(আবরারের হাস্যজ্জল মুখ)
– হুম।
– কিন্তু বাবা?
– তোর বাবার কথা ভাবতে হবে না। আমি ম্যানেজ করে নিবো তাকে।
– থ্যাংক ইউ মা, লাভ ইউ। আমার দেখে পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ট মা টা হলে তুমি।
,
,
হসপিটালে ফারহার পাশে বসে আছে ফারদিন। পাশে ঘুমিয়ে আছে ফারহা। প্রথমে নিয়ে আসার পর অনেক ভয়ে ছিলো ফারদিন। এর পর ডাক্তার এসে দেখে গেলো। মেডিসিনও দিয়ে গেছে। এখন কিছুক্ষন লং টাইম রেস্ট নিলে মোটামুটি সুস্থ হয়ে যাবে।

রাত তখন ৯ টা। ফারদিনকে পাশে দেখে একপাশে লুকিয়ে গ্লাস ভেদ করে ফারহার দিকে চেয়ে আছে আবরার। ফারহা হসপিটালে ভর্তি হয়েছে শুনেই ছুটে এসেছিলো। এসেই ফারদিনকে ওর পাশে দেখে আর সামনে গেলো না। আড়াল থেকে তাকিয়ে রইলো। হয়তো বাসায় অনেক কিছুই হয়ে গেছে ফারহার সাথে। যার কারণে হসপিটাল পর্যন্ত আসতে হলো তাকে। আবরারের চোখের কোনে এক ফোটা জল জমে এলো। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটা সময় আছে, যেই সময়টা খুব খারাপ কাটে। তার জীবনে হয়তো এই সময়টা।
,
,
পর দিন বাসায় নিয়ে গেলো ফারহাকে। কিন্তু ফারহার এমন অবস্থা দেখেও মন গললো না কারো। কথা কখনো গোপন থাকে না। তেমনই খবটাও চলে গেলো আশে পাশের মানুষদের কানে।
ওই দিনের ঐ মহিলাটা কিছুক্ষন আগে এসে বললো,
– বলেছিলাম, বিয়ের বয়স হয়েছে মেয়েকে বিয়ে দিতে। না ওনি ঐ দিন আরো উল্টো কতো মহান মহান কথা শুনালো মেয়েকে নিয়ে। শেষে কি হলো? ওই যেই লাউ সেই কদু।

ফ্যামিলির অবহেলা, আশে পাশের মানুষদের এমন কথা সহ্য করে চুপচাপ রুমে বসে আছে ফারহা। আজ দুই দিন বাবা মা কেউই কথা বলছে না তার সাথে। ফারদিন খাবার নিয়ে আসে। এর পর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে যায়।

ফোনের স্কিনে আবরারের নাম্বার ভেষে উঠলে তা কেটে দেয় ফারহা।
কল লিষ্ট চেক করে দেখে, এই দুই দিনে অগনিত বার ফোন দিয়েছিলো আবরার। বাট সে রিসিভ করেনি। কিছুক্ষন ফোনের দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকলে আবারও ফোন আসে। এবার রিসিভ করে নিশ্চুপ হয়ে থাকে সে। ওপাশ থেকে আবরার বার বার কথা বললে, সে ছোট্ট করে বলে,
– কেনো ফোন দিচ্ছেন এতো বার?
– তুমি ফোন রিসিভ করছিলে না কেন?
– ভালো লাগছেনা তাই।
– বাসার পরিবেশ এখন কেমন?
– ভালো না।
– ওহ্,,,
– হুম, ভাইয়া ছারা আর কেউ ফিরেও তাকায় না আমার দিকে।
– ওই দিন খুব মে’রেছিলো তাই না?
– হুম,,
– এখন মেনে নিয়েছে?
– না, মা বলেছে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে আর বাবা দুই দিন ধরে বাড়িতে কিছুই খায়না। হয়তো আমি আছি বলে কিছুই সহ্য হচ্ছে না তাদের। শুধু ভাইয়াই কথা বলে আমার সাথে। একটুও ভালো লাগছে না আমার। দম বন্ধ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে দুরে কোথাও হারিয়ে যাই।
– খেয়েছো কিছু?
– না, ভাইয়া এখনো ফিরে আসেনি। সে বাইরে থেকে নিয়ে আসলে তখন খাবো।
– কেন বাইরে থেকে কেন?
– মা বলেছে বাসায় খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ আমার। আর বাসা থেকে চলে যেতে। আমাকে সহ্যই করতে পারছেনা কেউ। এতো কিছু আর নিতে পারছি না। ইচ্ছে করছে মরে গিয়ে সবাইকে মুক্ত করে দিই। তখন আপনিও মুক্তি পেয়ে যাবেন।
আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলো আবরার। একটা শ্বাস নিলো ফারহা। নিঃস্বঙ্কোচে আবরারের কাছে আজ বলে দিলো তার অভিযোগ গুলো। কে সে? কেউ না। সেও তো ভালোবাসে না আমায়। সব খারাপ, কেউ ভালো না।
,
,
ফারহার বাসার সামনে এসে ফোন দেয় আবরার, বলে এক্ষুনি রাস্তায় আসতে। নয়তে সে নিজেই ভেতরে চলে আসবে। রাত তখন ১১ টা। একটু আগে ফারদিন খাবার খাইয়ে বললো ঘুমাতে। বাড়ির সবাই হয়তো ঘুমিয়ে আছে।
রুম থেকে বেড়িয়ে চুপচাপ বাইরে চলে আসে ফারহা। আজ আর ভয় করছে না। সবাই ই তো জেনে গেছে সব। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর সে বাসা থেকে চলে গেলেই তারা হ্যাপি।

রাস্তায় এসে আবরারের সামনে দাড়ায় সে। শান্ত ভাবে বললো,
– যা বলার তারাতারি বলুন। আর কয়দিন বাকি আছে ডিবোর্সের?
– দিন গুনতে হবে না আর, চলো আমার সাথে।
– কোথায়?
– আমার বাসায়? এক সাথে থাকবে আমরা দুজন।
ফারহা একটু হাসির রেখা টেনে বললো,
– ভালোবাসা ছারা করুনা দেখাতে গিয়ে এমন করলে সুখি হতে পারবেন না। তার চেয়ে বিচ্ছেদই ভালো।
– ভালোবাসি বলেই, হাত ধরতে এসেছি, আর না বাসলে ছেরে দেওয়া হাত ছারাই থেকে যেতো।

আর কিছু না বলে ফারহার হাত চেপে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় আবরার। তখন গেট দিয়ে বেড়িয়ে আসে ফারদিন। আবরারের এমন শক্ত করে ধরে রাখা হাত দুটুর দিকে তাকিয়ে বললো,
– ওই দিন এই জন্যই বলেছিলাম, ফারহাকে ভালোবাসিস কি না? ওই দিন যদি ডিবোর্সের কথা না বললে এভাবে ভালোবাসি বলতি, তাহলে এতো কিছু হতো না। আমি নিজেই ফারহাকে তোর কাছে তুলে দিয়ে সব সামলে নিতাম। মা বাবা হয়তো আরে অনেকদিন এভাবে রাগ করে থাকবে। ধীরে ধীরে আমি মানিয়ে নিবো ওদের। তোরা হ্যাপি থাক এটাই চাই। চলে যা তোরা। এক্ষুনি চলে যা। নিজেদের মতো সব কিছু গুছিয়ে নে।
আবরার চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকলে ফারদিন করুন গলায় ডাকলো,
– আবরার,,,,
বলেই আবরারকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ওই দিনের ব্যাবহারের জন্য সরি রে। এখনও মন খারাপ করে থাকবি? আর শুন, ফারুকে কখনো কষ্ট দিস না। আমি যানি তোর কাছে থাকলে ও খুব ভালো থাকবে। আগলে রাকিস কেমন? কখনো কষ্ট দিস না আমার বোন টা কে।

To be continue……..

তোমার ছায়া পর্ব-১৭

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আবরার ও ফারহাকে একসাথে দেখে কিছুক্ষন স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো ফারদিন। অথচ এই আবরারই এক সময় তাকে নীয়ম-নীতি, ভালো-মন্দের বানী শুনাতো।
বন্ধুর বোন মানে নিজেরও বোন, কথাটা সবচেয়ে বেশি শুনেছিলো আবরারের মুখেই। যার কারণে ফারদিন ভালোবাসি শব্দটা কখনো ভালোবাসার মানুষটিকে বলার সাহস পায়নি।
চুপচাপ সব সহ্য করে মেনে নিয়েছে। এই টপিক টা নিয়ে সোহেলের সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করেছে। আয়রিনকেও হাসি মুখে অন্যের হয়ে যেতে দেখেছে।
আর আজ সেই আবরার কিনা, বিয়ের কথা চলছে দেখেও ফারহাতে নিয়ে নদীর তীরে একাকি সময় কাটাচ্ছে।

ফারহার সাথে দেখা করতে আসার সময় পথি মধ্যে একটা ছোট ছেলে কিছু ফুল নিয়ে এসে বললো, কয়টা ফুল নিতে। আজ সারা দিনে তেমন বেচা-কেনা হয়নি তার। কয়টা ফুল নিলে খুব উপকার হতো।
ছেলেটার প্রতি একটু মায়া জন্মালো তার। টেপ দিয়ে মোড়ানো দশটা ফুল একসাথে। ওগুলো নিলে হাসি মুখে সেখান থেকে চলে যায় ছেলেটা। আবরার ফুল হাতে হাসি মুখে নদীর তীরের দিকে চলে যায়। কারণ ফারহা বলেছিলো, এমন একটা নিরিবিলি জায়গায় দেখা করতে, যেখাতে তেমন একটা মানুষ জন থাকবে না।

ফারহা সম্পর্কে আবরারের স্ত্রী হলেও কখনো কিছু দেওয়া হয়নি তাকে। তাই কাঁপা হাতে ফুলগুলো ফারহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
– আসার সময় নিয়েছিলাম।

ফুল নেওয়ার সময় থমকে যায় ফারহা। বুকের ভেতর ধুক ধুক শব্দটা বেড়ে যায় দ্বিগুন। কিছুটা দুড়ে দাড়িয়ে থাকা ফারদিনের দিকে চেয়ে বললো,
– ভা ভা ভাইয়া,,,,,,
ভাইয়া শব্দটা শুনতেই পেছন ফিরে তাকায় আবরার। ফারদিন কে দেখে দুজনই উঠে দাড়ায়।
ফারদিন তাদের কাছে এগিয়ে এসে দুই হাত পকেটে গুজে স্ট্রেট হয়ে দাড়িয়ে বলে,
– এসব কি আবরার? খুবতো জ্ঞান দিতি এক সময়।
পাশ থেকে ফারহা বললো,
– ভাইয়া ওর কোনো দোষ নেই।
ফারহার মুখ থেকে কথা বের হওয়ার আগেই সজোড়ে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো ফারদিন। রাগ মিশ্রিত চাহোনিতে বললো,
– তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি?
আবরার ফুল হাতে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকলে ফারদিন তার বাম কাধে ধাক্কা দিয়ে বললো,
– কি হলো কথা বলছিস না কেন? কি এসব?
আবরার কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বললো,
– ওয়াইফ সে আমার।
ফারদিন এবার হতভম্ব হয়ে বলে,
– মানে?
বলেই ফারহার দিকে তাকালে দেখে সেও নিশ্চুপ।
– তোকে আমি বিষয়টা বুঝিয়ে বলছি। এখানে সিনক্রিয়েট না করে চল কোথাও গিয়ে বসে ঠান্ডা মাথায় বলি সব।
পারদিন সোজাসুজি ভাবে বলে,
– কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। যা বলার এখানেই দাড়িয়ে বলতে থাক। কান খোলা আছে আমার। শুনছি আমি।

ফারদিনের এমন কথা বার্তায় ভয়ে দুই হাত এক করে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে ফারহা।
নিজের ভালোবাসা হারানোর কষ্টটা যেন পুনরায় জেগে উঠেছে ফারদিনের। সেই সাথে নিজের বন্ধুর সাথে বোনকে দেখে রাগটা ও বেড়েছে অনেক।

অনেক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে পুরো কাহিনিটা শুনলো ফারদিন। সব শুনে কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে আবরারের দিকে চেয়ে কঠিন স্বরে বললো,
– ফারহাকে ভালোবাসিস?
প্রতি উত্তরে আবরার বললো,
– ভাই দেখ এখানে প্রশ্নটা ভালোবাসার নয়। বিষয়টা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। আর আমরা নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে চেয়েছিলাম। তাই কাউকে জানাইনি। এক মাস পর হয়তো আমাদের ডিবোর্সও হয়ে যাবে। তখন সব আবার আগের মতোই হয়ে যাবে। প্লিজ ভাই ভুল বুঝিস না আমায়।
রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে এবার অনেক্ষন মুষ্টিবদ্ধ হাত টা আবরারের মুখে বসিয়ে দেয় ফারদিন। হটাৎ এমন ঘু’ষির আঘাতে ছিটকে কিছুটা পেছনের দিকে চলে যায় আবরার।
আবরার নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও বললো,
– বিশ্বাস কর, আমাদের বিন্দু মাত্র কোনো দোষ নেই। সব হুটহাট হয়ে গিয়েছিলো,,,
বলতেই আরেকটা মে’রে দেয় ফারদিন। পেছন থেকে ফারহা দৌড়ে এসে ফারদিনের এক হাত চেপে ধরে বলে,
– প্লিজ ভাইয়া ওকে এভাবে মে’রো না।
ফারদিনের রাগটা এতোই বেশি ছিলো যে, ফারহার কথা কানে না নিয়ে তাকেও সজোড়ে একটা থা’প্পর মে’রে দেয়। ছিটকে কিছুটা দুড়ে গিয়ে ঘাসের মাঝে পরে ফারহা।
রাগি দৃষ্টিতে বলে,
– একটু বেশিই আদর করি আর ফ্রি-লি কথা বলি দেখে মাথায় চড়ে বসেছিস না?

ফারদিন এবার নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে চার দিকে তাকিয়ে দেখে, আর কিছুক্ষন এমন চলতে থাকলে লোক জড় হয়ে যাবে এখানে।
তাই ফারহার এক হাত চেপে ধরে টানতে টানতে মেইন রোডের দিকে হাটা ধরে সে।
ওদিকে নাক থেকে ঝড়ে পরা র’ক্ত টা হাত দিয়ে মুছে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে আবরার। ফারদিন এবার থেমে আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– বন্ধুত্বের মর্যাদা এভাবে দিবি তা ভাবিনি আমি। আজ থেকে ফারদিন নামক কোনো ফ্রেন্ড তোর জীবনে নেই।
বলেই পারহাকে টেনে হিছরে বাড়ির দিকে রওনা দিলো ফারদিন।
,
,
– আমাদের পছন্দের বিষয় নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত পাকা করেই আজ ফাইনাল কথা বলতে এসেছি। আর যেখানে আমাদের ছেলেই ফারহা মাকে পছন্দ করেছে সেখানে আমাদের আর দ্বি-মত নেই।
ফারহার বাবা একটু হাসি দিয়ে ঘরির দিকে তাকালো। ফারদিনও তো এখন আসবে বলেছিলো। বললো, আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। কিচুক্ষনের মাঝেই চলে আসার কথা, অথচ এখনো খবর নেই।

তখনই ফারহাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো ফারদিন। কাঁদেই চলছে ফারহা। বাবা বসা থেকে উঠে বললো,
– কি হলো ফারদিন, ফারু কাঁদছে কেন? আর ওকে কোথায় থেকে নিয়ে এলি? ফারু তো ঘরেই ছিলো।
পারদিন এখনও রাগি লুক নিয়ে বললো,
– ঘরেই ছিলে তোমার মেয়ে তাই না? মাকে জিজ্ঞেস করো কোথায় ছিলো এতোক্ষন?
ততোক্ষনে মা ড্রয়িং রুমে এসে বললো,
– ফারু তো পাঁচ মিনিটের কথা বলে বাইরে গিয়েছিলো। কেন কি হয়েছে?
– তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো কাহিনি কি?
ফারহা এবার কাঁদু কাঁদু ভাব নিয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে চিৎকার করে বললো,
– আমার হাসবেন্টের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমি। শুনছো তোমরা, আমার হাসবেন্ট আবরারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এখন তোমরাও আমাকে মা’রবে তাই না, মা’রো সবাই মা’রো আমাকে। আমার ইচ্ছে, আমার চাওয়া তো কখনো জানতে চাও নি তোমরা। কেন আমার জীবনের সব তোমাদের সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করবে? কেন আমার কোনো কিছু চাওয়ার কোনো অধিকার থাকবে না? কেন আমার মতামত একবার জানতে চাইলে না তোমরা? আমার জীবনে কি আমার চাওয়ার গুরুত্বটা একটুও নেই? শুনে রাখো সবাই, আবরারকে বিয়ে করে নিয়েছি আমি। এখন সে ছারা আর কারো ঘরে নিয়ে যাওয়ার অধিকার নেই আমাকে।

বলেই কাঁদতে কাঁদতে রুমের দিকে চলে গেলো ফারহা।
ওদিনে ছেলের বাবা ও মা হা করে বিষয় গুলো তাকিয়ে দেখছে।
পাশ থেকে ছেলের মা বলে উঠলো,
– ছি! এমন একটা দুঃচরিত্রা মেয়েকে কিভাবে আমাদের ছেলে পছন্দ করলো? বিয়ের আগেই অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক থাকার পরও এই মেয়েকে আমার ছেলের বৌ বানাতে এসেছি? ছি!
পাশ থেকে ছেলের বাবা বললো,
– বিয়ের কথাবার্তা নামে এই বাড়িতে ডেকে এনে মেয়ের কু-কর্ম দেখিয়ে অপমান করে মোটেও ঠিক করেন নি আপনারা। এর জবাব আপনাদের সবাইকে দিতে হবে।
বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো তারা। বের হওয়ার সময় ছেলের মা বলে গেলো,
– খুব তো বড় বড় কথা শুনতাম এই মেয়েকে নিয়ে। যে মেয়ে এমন, মেয়ে তেমন, বাবা মায়ের মুখের উপর কথা বলার ও সাহস নেই। খুব ভদ্র ঘরের মেয়ে। এখন দেখছি ঠিক তার উল্টো। না জানি আরো কতো কু-কর্ম ঢেকে মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছে তারা। বলেই ধম ধম শব্দে পা ফেলে বেড়িয়ে গেলো তারা।
বাবা কথা বলার শব্দ হারিয়ে সোফায় বসে গেলো ধপাশ করে। মা দেখি রক্তিম চোখে হাতের মুষ্ঠি বদ্ধ করে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিচ্ছে।

রুমে গিয়ে স্থির হয়ে কয়েকটা বড় বড় শ্বাস নিলো ফারদিন। এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে তার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। সবার ভালোবাসাই পূর্ণতা পাক এটাই সে চায়। কিন্তু আবরার? তাকে হিট করার আগ মুহুর্তেও ফারদিন জিজ্ঞেস করেছিলো, সে ফারহাকে ভালোবাসে কি না?
কিন্তু আবরারের উত্তরে না সুচক শব্দটাই খুজে পেয়েছিলো সে। কারণ সে বার বার বলছিলো, এটা একটা এক্সিডেন্ট, আর এক মাস পরই বিচ্ছেদ হলে সব আগের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু ফারহা, সে কি মেনে নিতে পারবে সব? আর একজন ডিবোর্সি মেয়ে সমাজে কতোটা অবহেলিত এটা ফারহার সাথে মিলাতেই নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারেনি সে। রাগে আবরারকে হি’ট করে বসে।

রুম থেকে বেড়িয়ে ফারহার রুমের দিকে এগিয়ে গেলেই দেখে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। ভেতর থেকে ঠাস টাস শব্দ আসতেই জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখে মা হাতে বাবার একটা বেল্ট নিয়ে নানান ধরনের কথা বলো বলে বেধরম পি’টাচ্ছে। আর বাবা ড্রায়িং রুমের সোফায় নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। এতো আদরের মেয়েটাকে বাচাতেও আসছে না আজ।
ফারদিন বার বার দরজায় থা’প্পর দিতে দিতে মাকে ডাকতে লাগলো। মায়ের এমন রুপ দেখেছিলো সেই ছোট বেলায়। বড় হওয়ার পর আজ প্রথম এমন ভাবে পি’টাচ্ছে ফারহাকে।
মায়ের বলা কথা গুলোর কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ ফ্লোরে বসে মা’র খাচ্ছে আর কান্না করছে ফারহা। কারণ মা সব সময়ই বলতো, তাদের কথার বাইরে কিছু করলে কে’টে নদীতে ভা’ষিয়ে দিবে। তবুও কোনো অন্যায়কে মেনে নিবে না সে।

To be continue…….

তোমার ছায়া পর্ব-১৬

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

‘আমার বয়ফ্রেন্ডকে ছারছেন না কেন?’
কথাটা শুধু দু’কান জুড়ে বাজছে আয়রিনের। তাহলে মাহিনের ইগনোরের কারণটা কি এটা ছিলো?
সে এবার মাহিনের নাম্বারে ফোন দেয়। দেখে ফোন বিজি। মিনিট দশেক পর ফোন দিলেও দেখে বিজি।
এদিক ওদিক পায়চারি করতে করতে এক রাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে ধপাশ করে বিছানায় বসে পরে সে।
,
,
– বাহ্, সিগারেট খাওয়াও ধরেছো দেখছি ভাইয়া?
হটাৎ ফারহার এমন কথায় উল্টোদিকে ঘুরে মুখ থেকে সিগারেট ফেলে তা পায়ের নিচে পিষে ফেলে ফারদিন। হাত দিয়ে ধোয়া তাড়িয়ে ফারহার দিকে তাকিয়ে বললে,
– এতো রাতে তুই এখানে? কিছু হয়েছে?
ফারদিনের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফারহা রেগে বলে,
– তার আগে বলো, তুমি সিগারেট খাওয়া শুরু করেছো কবে থেকে? কেন এসব পাগলামি গুলো নিজের মাঝে তৈরি করছো? সে হারিয়ে গেছে, নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিলে এমন আরো অনেক আয়রিন আসবে। বিষয় টা কেন বুঝছো না তুমি ভাইয়া?
ফারহার কথায় একটু হেসে দেয় ফারদিন। তারপর বলে,
– তার মতো অনেক পাবো এটা সত্য রে। কিন্তু তাকে তো আর ফিরে পাবো না।
ফারহা কিছুক্ষন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে শান্ত ভাবে বললো,
– আর কখনো সিগারেট খাবে না। আমার এটা পছন্দ না। আর কখনো খেলে তোমার সামনেও আসবো না আমি।
বলেই ঘরের দিকে চলে যায় ফারহা। তার মনেও যেন মুহুর্তেই একটা শব্দ কাঁটার মতো গেথে গেলো। কাউকে হারিয়ে ফেলার পর তার মতো অনেক মানুষকে লাইফে পেলেও, ওদের মাঝে সেই মানুষটাকে তো আর ফিরে পাবো না।
,
,
কলেজে আসার পর থেকেই আবরার একটা বিষয় খুব ভালো করে লক্ষ করছে। আর তা হলো ছোট আবরারের সাথে ফারহাকে। সকালে দেখলো একসাথে কলেজে আসলো। ক্যান্টিনেও দুজনকে একসাথে দেখলো। এর পর ছুটির পরও দুজনকে একসাথে কোচিং-এ আসতে দেখলো।
ইদানিং ফারহার প্রতি আবরারের নজরটা আগের থেকে থেকে অনেকটাি বেড়ে গেছে। ফারহা কখন কি করে, কার সাথে থাকে। এসব বিষয় গুলো কেন এতো লক্ষ করে তা সে নিজেও বুঝে উঠতে পারে না।

কোচিং শেষে ফারহাকে একপাশে ডেকে নেয় আবরার। আজ খুব অধিকার খাটানোর মতো করেই প্রশ্ন করে,
– ওই জুনিয়র ছেলেটার সাথে তোমার এতো কি?
ফারহা কিছুক্ষন আবরারের দিকে চেয়ে থেকে বলে,
– আপনি জেলাস?
আবরার একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– একধম কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবে না। ওই ছেলেটার সাথে তোমার এতো কি? কেন তোমার সাথে ওই ছেলে সারা দিন আটার মতো লেগে থাকে? আর তুমিও তার সাথে সময় কাটাও?
ফারহা এবার একটু সিরিয়াস ভাব নিয়ে বলে,
– ওই ছেলেটা আমাকে ব্লেকমেইল করে। তাই চাইলেও তাকে কিছু বলতে পারি না।
– হোয়াট? (আবরারের রাগটা একটু বেড়ে গেলো)
ফারহা আবারও বললো,
– হুম, সে বলে তার সাথে বন্ধুত্ব না করলে আমাদের বিষয়টা সবাইকে বলে দিবে।
আবরার এবার একটু অন্য রকম হয়ে বললো,
– মানে কি? ও এসব জানে কি করে?
– আমি নিজেও জানিনা, শুধু বলে আপনার সিক্রেট টা সবাইকে বলে দিবো।
আবরার একটু রেগে বললো,
– ওই ছেলেটাকে ডেকে আনো তো।

ফারহা ছেলেটাকে ডাক দিলে পাশে এসে দাড়ায় সে। আর হাসি মুখে বলে,
– দেখছেন স্যার, বলছিনা বয়স কোনো বিষয় না, ভালোবাসাটাই আসল। এখন তো আমাদের খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে।
কিন্তু আবরার বিষয়টা ফানি মুডে না নিয়ে সিরিয়াস ভাবে বললো,
– ওর কি সিক্রেট জানিস তুই বল।
ছেলেটা নিশ্চুপ পাশে দাড়িয়ে থাকলে আবরার ঠাস করে একটা থা’প্পর বসিয়ে দেয় ছেলেটার গালে। গালি দৃষ্টিতে বলে,
– চুপ করে আছিস কেন?
চ’র খেয়ে ছেলেটা গালে হাত দিয়ে এবার ভয়ার্ত গলায় বললো,
– আসলে কিছুই জানিনা। আপুকে এটা বললে দেখলাম খুব ভয় পেয়ে যায় তাই বলতাম।
আবরার অপর গালে আরেকটা চ’র দিয়ে বলে,
– এই বয়সে মেয়েদেরকে ব্লেকমেইল করা শিখেছিস না? সোজা ক্লাসে যা, আর এমন কোনো কান্ড করলে সোজা তোর বাবার কাছে কমপ্লেইন জানাবো।

ছেলেটা দুই গালে হাত দিয়ে চুপচাপ চলে গেলে ফারহার দিকে তাকিয়ে আবরার বলে,
– তুমি এতোটা বোকা, তা আগে জানা ছিলো না। সোজা বাসায় যাও। আর কোনো ছেলের সাথে দেখলে তোমার অবস্থাও এই ছেলের মতো হবে।
,
,
আজ দুইবার কল হওয়ার পর রিসিভ করলো মাহিন। আয়রিন প্রথমেই সোজাসুজি ভাবে বলে,
– দয়া করে আজ কোনো ব্যাস্ততা দেখাবেন না। আপনার সাথে কিছু জরুরি বিষয়ে কথা বলার আছে।
ওপাশ থেকে মাহিন একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
– দ্রুত বলো কি বলবে। সময় কম।
– আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে, যেই কারণে আমায় মেনে নিতে পারছেন না। বিষয় টা আমাকে সোজাসুজি ভাবে বললেই পারতেন।
মাহিন কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বলে,
– কিসব যা তা বলছো, আমার গার্লফ্রেন্ড মানে?
– দেখুন একধম না বুঝার ভান করবেন না। আমি আপনার সাথে ক্লিয়ারলি কথা বলছি। আপনার গার্লফ্রেন্ড গত কাল আমায় ফোন দিয়েছিলো।
– মানে কি, আমার কোনো গার্লফ্রেন্ডই নেই, আর তুমি কিসব বলছো ওটাই তো বুঝতে পারছি না। কে ফোন করেছিলো,আর কি বলেছিলো?
আয়রিন কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
– সত্যিই আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই?
– না।
– তাহলে কালকে কে ফোন দিয়ে বললো যে, আমার বয়ফ্রেন্ডকে ছারছেন না কেন?
– নাম কি ঐ মেয়ের?
– নাম বলেনি।
– বয়ফ্রেন্ডের নাম তো নিশ্চই বলেছিলো।
– জ্বি না, তাও বলেনি। শুধু বলেছিলো আমার বয়ফ্রেন্ড।
– তাহলে হয়তো কোনো রং নাম্বার ছিলো। নয়তো কোনো প্রাঙ্ক কল ছিলো।
– হুম, হতে পারে।
– আর এসব আজাইরা বিষয় নিয়ে একধম আমার সময় নষ্ট করবে না। বায়।

বলেই ফোন রেখে দিলো মাহিন। আয়রিন কিছুক্ষন স্থির হয়ে বসে থেকে গতকালকে আসা সেই নাম্বারে ফোন দিলো। কিন্তু ফোন ব্যস্ত দেখাচ্ছে। তাই হতাশ হয়ে ফোন রেখে পড়তে চলে গেলো সে। আর কয়েক মাস পরই এক্সাম।
,
,
সব কিছু খুব স্বাভাবিকই ছিলো এই কয়েক মাস। এক্সামটাও শেষ হলো সুন্দর ভাবে। এক্সাম শেষ হওয়ার সাথে শুরু হলো ফারহার বিয়ের কথা বার্তা। এই মাসেই বিয়ে নিয়ে উঠে পরে লেগেছে ছেলে পক্ষ।

আর এই কয়েক মাসে আবরারের সাথে মোটামুটি একটু ফ্রি হয়েছে ফারহা। এখন আর কথা বলতে আগের মতো ভয় বা জড়তা তেমন একটা কাজ করে না৷
তাদের বিয়ের বয়স এখন পাঁচ মাস। এর এক মাস পর চাইলেই দুজন আলাদা হয়ে যেতে পারবে। কিন্তু সমস্যাটা হলো এই মাসেই ফারহার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। ছেলে পক্ষের খুব তাড়া। ছেলে বিয়ের জন্য এক মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছে। হয়তো এই কয়েক দিনের মাঝেই সব ঠিক টাক হয়ে যাবে।

এপ্রিলে এক্সাম শেষ করে এখন মে মাস চলছে। কয়দিন পর পর বৃষ্টি নামে শহর জুড়ে। মাঝে মাঝে মেঘাচ্ছা পরিবেশে কেটে যায় বেলা। এক্সামের পর তেমন একটা দেখা হয়নি আবরার ও ফারহার মাঝে।
আজ এক হালকা পরিষ্কার মেঘাচ্ছন্ন বিকেলে একসাথে হলো দুজন। তাদের বিয়ের এখনো সমাপ্তি ঘটেনি। আর এমন অবস্থার আরেকটা বিয়ে কেমন করে হবে তার? তাই বিষয়টা নিয়ে আবরারের সাথে কথা বলতে ডেকেছে আজ।
মেঘাচ্ছন্ন এই বিকেলে বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে ছোট নদীটার পাড়ে ঘাসের চাদরে বসে আছ দুজন। কিছুটা দুরেই মেইন রোড। নদীর দিকে মুখ করে বসে আছে দুজন। কারণ এই একমাসের ভেতরেই হয়তো দুজনের এই গোপন বিষয়টা নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়ে যাবে।

ফারদিন নতুন চাকরি পেলো আজ দুই মাস। নিজেকে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে সে। আজ অপিস থেকে ছুটি নিয়ে আজ তারাতারিই বাসায় ফিরছিলো সে। রিক্সা দিয়ে আসার সময় চোখ পরে পাশের নদীটির তীরে আবরারের উপর। তার সাথে একটা মেয়ে। মুখটা ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছেনা পেছন থেকে।
ফারদিন রিক্সা থামিয়ে ওদিকটায় কিছুটা হেটে যেতেই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে গেলো। কারণ আবরারের পাশে মেয়েটা অন্য কেও না, তারই ছোট বোন ফারহা৷

To be continue…….